বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
রমযান বিষয়ে জাল ও দুর্বল হাদিসসমূহ
(১)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
রমযান কাছে এলে আমরা অনেকে
নিম্নের দোয়াটি পড়ি, তবে এমন লোক খুব কম আছি যারা এর শুদ্ধতা ও অশুদ্ধতা সম্পর্কে অবগত-“হে
আল্লাহ, আপনি রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত রাখুন এবং আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত
পৌঁছার তাওফিক দিন”।
হাদিসের সনদ:
এ হাদিসের সনদে দু’টি দোষ
বা সমস্যা রয়েছে, হাদিস বিশারদগণের নিকট যার পরিভাষিক নাম হচ্ছে ইল্লত, অর্থাৎ হাদিসে
দু’টি ইল্লত রয়েছে: প্রথম ইল্লতঃ এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন যায়েদা ইব্ন আবির
রাকাদ, তার সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের মূল্যায়ন দেখুন: আবু হাতেম বলেছেন: যায়েদা ইব্ন
আবির রাকাদ যিয়াদ ইব্ন নুমাইরি থেকে মারফূ সনদে মুনকার হাদিস বর্ণনা করে, জানি না এ
সমস্যা তার থেকে না তার উস্তাদ যিয়াদ থেকে। সে যিয়াদ ব্যতীত অন্য কারো থেকে হাদিস বর্ণনা
করেছে কিনা তাও জানি না, যার সূত্র ধরে তার হাদিস যাচাই করব। বুখারি বলেছেন: তার হাদিস
মুনকার। আবু দাউদ বলেছেন: তার হাদিস সম্পর্কে কিছু জানি না। নাসাঈ বলেছেন: তাকে চিনি
না। যাহাবি “দেওয়ানে দুয়াফাতে” বলেছেন: সে কোন দলিল নয়।
ইব্ন হাজার বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার
(২)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“রমযান মাসের প্রথম অংশ রহমত,
মধ্যম অংশ মাগফেরাত ও শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির।”
এ হাদিস মুনকার।
দেখুন: “কিতাবুদ দুয়াফা”
লিল উকাইলি: (২/১৬২), “আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইব্ন আদি: (১/১৬৫), “কিতাবু
ইলালিল হাদিস” লি ইব্ন আবি হাতেম: (১/২৪৯), “সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ”
লিল আলবানি: (২/২৬২) ও (৪/৭০)
হাদিসের মানঃ মুনকার
(৩)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“যে ব্যক্তি কোন কারণ ছাড়া
রমযানের একদিন সওম ভঙ্গ করল অথবা অসুস্থতা ব্যতীত, পুরো বছরেও তার কাযা হবে না, যদিও
সে পুরো বছর সওম পালন করে।”
হাদিসটি দুর্বল।
মাসআলা: যদি কোন সওম পালনকারী
রমযানের দিনে শরয়ী কোন কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস ব্যতীত সওম ভঙ্গ করে, যেমন পানাহার,
অথবা ধুমপান, অথবা যৌনাঙ্গ ব্যতীত স্ত্রীর সাথে মেলা-মেশার কারণে বীর্য বের হল, অথবা
স্ত্রীকে উপভোগ করার সময় বীর্য বের হল ইত্যাদি। তার উপর কাযা ওয়াজিব। ইমাম আহমদ ও ইমাম
শাফীর এক ফতোয়া অনুযায়ী তাকে এক সওমের পরিবর্তে একটি সওম কাযা করতে হবে। কারণ ওযর থাকা
সত্বেও আল্লাহ তা‘আলা অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির উপর কাযা ওয়াজিব করেছেন, তাই ওযরহীন
এর উপর অবশ্যই কাযা ওয়াজিব হবে। অবশিষ্ট দিন তাকে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে, যেহেতু
সে কারণ ছাড়া সওম ভঙ্গ করেছে। তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। ইমাম আবু হানিফা, মালেক
ও ইমাম শাফীর এক ফতোয়া মোতাবেক তার উপর কাযাসহ কাফ্ফারা ওয়াযিব হবে। তবে কেউ যদি দিনের
শুরু থেকে সওম না রাখে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। সওমের কাফ্ফারা সূরা মুজাদালায়
বর্ণিত জিহারের কাফ্ফারার অনুরূপ। অর্থাৎ একটি গোলাম আযাদ করা, অথবা লাগাতার ষাটটি
সওম পালন করা, অথবা ষাটজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা। (দেখুন: সূরা মুজাদালা:৩-৪)
ইমাম বুখারি তার সহিহ গ্রন্থে
হাদিসটি টিকা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রমযান অধ্যায়: (৪/১৯৪), হাদিসটি তিনি দুর্বল ক্রিয়া
দ্বারা উল্লেখ করে বলেন: এ হাদিস আবু হুরায়রা থেকে মারফূ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
ইমাম আবু দাউদ: (২৩৯৬), তিরমিযি:
(৭২৩), ইব্ন মাজাহ: (১৬৭২), ইব্ন খুযাইমাহ: (৩/২৩৮), হাদিস নং: (১৯৮৮), আহমদ: (২/৩৭৬)
প্রমুখগণ সাওরি ও শুবা থেকে, তারা উভয়ে হাবিব ইব্ন আবি সাবেত থেকে, সে উমারা ইব্ন উমাইর
থেকে, সে আবুল মিতওয়াস থেকে, সে তার পিতা থেকে, সে আবু হুরায়রা থেকে মুত্তাসিল সনদে
উল্লেখ করেছেন।
তিরমিযি বলেন: এ সনদ ব্যতীত
অন্য কোনভাবে আবু হুরায়রার হাদিস জানতে পারেনি, আমি মুহাম্মদ (অর্থাৎ বুখারী) কে বলতে
শুনেছি: আবুল মিতওয়াসের নাম ইয়াজিদ ইব্ন মিতওয়াস, এ হাদিস ব্যতীত তার সনদে বর্ণিত অন্য
কোন হাদিস সম্পর্কে জানি না।
ইব্ন খুযাইমাহ তার সহিহ:
(৩/২৩৮), গ্রন্থে হাদিস নং: (১৯৮৮)-তে বলেন: যদি হাদিসটি সহিহ হয়, তবুও আমি ইব্ন মিতওয়াস
ও তার পিতার পরিচয় জানি না।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৪)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালন কর সুস্থ থাক।”
হাদিসটি দুর্বল
দেখুন: “তাখরিজুল ইহইয়া”
লিল ইরাকি: (৩/৭৫), “আল-কামেল ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইব্ন আদি: (২/৩৫৭), “কিতাবুশ
সাজারাহ ফিল আহাদিসিল মুশতাহেরাহ” লি ইব্ন তুলুন: (১/৪৭৯), “আল-ফাওয়েদুল মাজমুআহ ফিল
আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৯), “মাকাসিদুল হাসানাহ” লিস সাখাভি: (১/৫৪৯),
“কাশফুল খাফা” লিল আজুলুনি: (২/৫৩৯), “সিলসিলাতিল আহাদিসুস দায়িফা ওয়াল মাওদুয়াহ” লিল
আলবানি: (১/৪২০)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৫)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“প্রত্যেক ইফতারের সময় জাহান্নাম
থেকে আল্লাহর কিছু মুক্তি প্রাপ্ত বান্দা থাকে।”
হাদিসটি দুর্বল।
দেখুন: “তানজিহুশ শারিয়াহ”
লিল কিনানি: (২/১৫৫), “আল-ফাওয়াদুল মাজমুআহ ফিল আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৭),
“কাশফুল ইলাহি আন শাদিদিদ দায়িফ ওয়াল মাওদু ওয়াল ওয়াহি” লিত তারাবুলসি: (১২/২৩০),
“জাখিরাতুল হিফাজ” লিল কায়সারানি: (২/৯৫৬), “শুআবুল ঈমান” লিল বায়হাকি: (৩/৩০৪), “আল-কামেল
ফি দুয়াফায়ির রিজাল” লি ইব্ন আদি: (২/৪৫৫)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৬)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“বান্দারা যদি জানত যে, রমযানে
কি রয়েছে, তাহলে তারা আশা করত পুরো বছর যেন রমযান হয়, নিশ্চয় জান্নাতকে বছরের শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত রমযানের জন্য সুসজ্জিত করা হয়।”
হাদিসটি দুর্বল।
দেখুন: “আল-মাওদুয়াত” লি
ইব্ন জাওজি: (২/১৮৮), “তানজিহুশ শারিয়াহ” লিল কিনানি: (২/১৫৩) “আল-ফাওয়াদুল মাজমুআহ
ফিল আহাদিসিল মাওদুয়াহ” লিশ শাওকানি: (১/২৫৪), “মাজমাউজ জাওয়ায়েদ” লিল হায়সামি: (৩/১৪১)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৭)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
নিশ্চয় জান্নাত এক বছরের
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রমযান আগমনের জন্য সজ্জিত ও পরিপাটি করা হয়। জান্নাতী হুররা
বলেঃ “হে আল্লাহ এ মাসে তোমার বান্দাদের থেকে আমাদের জন্য স্বামী নির্বাচন কর।”
ত্বাবারানি “আওসাত” ও “কাবির”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এ হাদিসের সনদে ওলিদ ইবনুল ওলিদ আল-কালানাসি বিদ্যমান, সে দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৮)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ইফতারের সময় বলতঃ হে আল্লাহ আপনার জন্য সওম পালন করছি এবং আপনার
রিযকের দ্বারাই ইফতার করছি।”
হাদিসটি দুর্বল।
দেখুন: “খুলাসাতুল বাদরুল
মুনির” লি ইব্নুল মুলাক্কিন: (১/৩২৭), হাদিস নং: (১১২৬), “তালখিসুল হাবির” লিল হাফেজ
ইব্ন হাজার: (২/২০২), হাদিস নং: (৯১১), “আল-আযকার” লিন নববী: (পৃ.১৭২), “মাজমাউজ জাওয়ায়েদ”
লিল হায়সামি: (৩/১৫৬), “দায়িফুল জামে” লিল আলবানি, হাদিস নং: (৪৩৪৯)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৯)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলেঃ আমি চাঁদ দেখেছি, তিনি বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও
যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ? সে বললঃ হ্যাঁ, তিনি বললেনঃ
হে বেলাল মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামী কাল সওম পালন করে।
শায়খ আলবানি “ইরওয়াউল গালিল”:
(৯০৭) গ্রন্থে হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।
আবু দাউদ: (২৩৪০), তিরমিযী:
(৬৯১), নাসায়ি ফিল কুবরা: (২৪৩৩), (২৪৩৪), (২৪৩৫) (২৪৩৬), ইব্ন মাজাহ: (১৬৫২), তারা
হাদিসটি বর্ণনা করেন সাম্মাক ইব্ন হারব সূত্রে, সে ইকরিমা থেকে, সে ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে।
সাম্মাক ইব্ন হারব সূত্রে
বর্ণিত ইকরিমার হাদিসে ইজতেরাব রয়েছে, কখনো সে ইত্তেসাল সনদে বর্ণনা করে, কখনো মুরসাল
সনদে।
যারা মুরসাল বর্ণনাকে গ্রহণ
করেছেন তাদের মধ্যে ইমাম তিরমিযি অন্যতম, তিনি বলেন: ইব্ন আব্বাসের হাদিসে ইখতিলাফ
রয়েছে, সুফইয়ান সাওরি প্রমুখগণ সাম্মাক সূত্রে ইকরিমা থেকে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন। সাম্মাকের অধিকাংশ ছাত্র সাম্মাকের সনদে
ইকরিমা থেকে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুরসাল বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১০)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
আমের ইব্ন মাসউদ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ “শীতকালীন সওম হচ্ছে ঠাণ্ডা গনিমত”। অর্থাৎ কষ্টহীন
পূণ্য।
হাদিসটি দুর্বল।
১. এ হাদিস ইব্ন মাসউদ থেকে
আহমদ: (৪/৩৩৫), তিরমিযি: (৭৯৪), ইব্ন মাজাহ: (৩/৩০৯) প্রমুখগণ বর্ণনা করেছেন। এ সনদে
দু’টি ইল্লত: নুমাইর ইব্ন আরিব অপরিচিত। দ্বিতীয়ত হাদিসটি মুরসাল।
২. আনাস থেকে ত্বাবারানি
ফিল কাবির: (৭১৬), শাজারি তার আমালি গ্রন্থে: (২/১১১) এবং ইব্ন আদি: (৩/১২১০) বর্ণনা
করেছেন। এ সনদে তিনটি ইল্লত: সায়িদ ইব্ন বাশীর আযদি দুর্বল। ওলিদ ইব্ন মুসলিম ‘আনআনা’
দ্বারা বর্ণনা করেছে, এবং হাদিসটি মওকুফ।
৩. জাবের থেকেও ইব্ন আদি
বর্ণনা করেছেন: (৩/১০৭৫), এ সনদে চারটি ইল্লত: আব্দুল ওয়াহহাব বালখি, সে হাদিসের ক্ষেত্রে
পরিত্যক্ত, বরং আবি হাতেম তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ওলিদ ইব্ন মুসলিমের ‘আনাআনা’। শামিদের
থেকে বর্ণনার ক্ষেত্রে জুহাইর ইব্ন মুহাম্মদ তামিমির দুর্বলতা, আর এটা সে শামিদের থেকেই।
সনদের বৈপরিত্ব। দেখুন: যাখিরাতুল হুফ্ফাজ: (৩৪৩৭), আসনাল মাতালেব: (৮৩৬), তাবইদুস
সাহিফা: (২৮),
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১১)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।
হাদিসটি দুর্বল, কিন্তু তার
অর্থ সঠিক।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১২)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমার নিকট প্রিয় বান্দা তারাই যারা
দ্রুত ইফতার করে।”
তিরমিযি: (৭০০), আহমদ: (২/৩২৯),
তিরমিযি বলেছেনঃ এ হাদিস হাসান, গরিব।
বিশেষ জ্ঞাতব্য:
বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত দ্রুত ইফতার করা সুন্নত, তাতে রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। অতএব আমাদের উচিত এসব
দুর্বল হাদিসের দিকে না তাকিয়ে সহিহ হাদিস গ্রহণ করা, যেমন:
সাহাল ইব্ন সাদ বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লোকেরা যত দিন পর্যন্ত দ্রুত ইফতার করবে,
তারা কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” বুখারি: (১৯৫৭), মুসলিম: (১০৯৮)
শায়খ আহমদ শাকের “আল-মুসনাদ”:
(১২/২৩১) গ্রন্থে হাদিসটি সহিহ বলেছেন, হাদিস নং: (৭২৪০) এ হাদিসের সনদে কুররা ইব্ন
আব্দুর রহমান ইব্ন হাইউল নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি বিতর্কিত:
ইমাম আহমদ বলেন: তার হাদিস
খুব মুনকার। ইমাম ইয়াহ ইব্ন মায়িন বলেন: তার হাদিস দুর্বল। ইমাম আবু জুরআহ বলেন: সে
মুনকার হাদিস বর্ণনা করে। ইমাম আবু হাতেম ও নাসায়ি বলেছেন: সে নির্ভরযোগ্য নয়। ইমাম
আবু দাউদ বলেছেন: তার হাদিসগুলো মুনকার। ইমাম মুসলিম অন্যদের সাথে তার হাদিস বর্ণনা
করেছেন, এককভাবে তার কোন হাদিস বর্ণনা করেননি।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
(১৩)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি ঘুমের সময় সুগন্ধি যুক্ত সুরমার নির্দেশ দিয়েছেন এবং
বলেছেন সওম পালনকারীর এর থেকে বেঁচে করা জরুরী”।
আবু দাউদ: (২৩৭৭), বুখারি
ফিত তারিখিল কাবির: (৭/৩৯৮) আবু দাউদ বলেছেন: আমাকে ইয়াহ ইব্ন মায়িন বলেছেন: এটা মুনকার
হাদিস, অথাৎ সুরমার হাদিস।
জায়লায়ি লিখেছেন: “তানকিহ”:
এর লেখক বলেছেন: মা’বাদ ও তার ছেলে উভয় অপরিচিত, আর আব্দুর রহমানকে ইব্ন মায়িন দুর্বল
বলেছেন, আবু হাতেম আমাকে বলেছে সে সাদুক”। জায়লায়ি: (২/৪৫৭)
ইমাম তিরমিযি সুরমা বিষয়ে
বলেন: এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস প্রমাণিত নয়।
আরেকটি হাদিস:
“সওম অবস্থায় দিনে সুরমা
ব্যবহার কর না”। আবুদাউদ (২৩৭৭), ইব্ন মায়িন বলেছেন, এটা মুনকার হাদিস।
সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার
প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস:
আনাস ইব্ন মালেক বলেন: “এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে: আমার চোখে সমস্যা আমি
সওম অবস্থায় সুরমা লাগাতে পারব? তিনি বললেন: হ্যাঁ”। তিরমিযি: (৭২৬), তিনি বলেন: আনাসের
হাদিসের সনদ শক্তিশালী নয়, এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ
কোন বর্ণনা নেই, আবু আতেকাকে দুর্বল বলা হয়। আবু আতেকার মূল নাম হচ্ছে তারিফ ইব্ন সালমান,
তাকে সালমান ইব্ন তারিফও বলা হয়।
আবু হাতেম বলেছেন: সে হাদিস
ভুলে যায়। বুখারি বলেছেন: তার হাদিস মুনকার।
সুরমা সংক্রান্ত আরেকটি হাদিস:
মুহাম্মদ ইব্ন উবাইদুল্লাহ
নিজ পিতা থেকে, সে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন”। ইব্ন খুযাইমা: (২০০৮), হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে অবতরণ করেন, আমিও তার সাথে অবতরণ করি। তিনি আমাকে ইসমিদের
সুরমা আনতে বললেন, অতঃপর তিনি সওম অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করলেন। এ ইসমিদ শরীরের সাথ
আঠার ন্যায় লেগে থাকা ইসমিদ নয়।
হাদিসের মানঃ মুনকার
(১৪)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
কাব ইব্ন আসেম আশআরি বলেন:
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “সফরে সওম পালন করা
নেকির কাজ নয়।
আহমদ: (৫/৪৩৪), তাবরানি ফিল
“কাবির”: (১৯/১৭২), হাদিস নং: (৩৮৭), তাবরানি ইমাম আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ সূত্রে ইমাম
আহমদ থেকে বর্ণনা করেন এ শব্দে: ليس من
ام
بر
ام
صيام
في
ام
سفر
.
হাদিসটি বায়হাকি তার “সুনান”:
(৪/২২), গ্রন্থে আব্দুর রাজ্জাক সূত্রে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
(১৫)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
আব্দুর রহমান ইব্ন সামুরা
আত-তাওয়িল এর হাদিস: “আমি গত রাতে এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছি। আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে
দেখলাম পিপাসায় কাতরাচ্ছে, যখনই সে আমার হাওজের কাছে আসে তাকে নিষেধ করা হয় ও তাড়িয়ে
দেয়া হয়, অতঃপর তার সওম এসে তাকে পান করায় ও তার তৃষ্ণা নিবারণ করে।”
ত্বাবারানি দু’টি সনদে এ
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, তার একটি সনদে রয়েছে সুলাইমান ইব্ন আহমদ আল-ওয়াসেতি, আর অপরটি
আছে খালেদ ইব্ন আব্দুর রহমান আল-মাখজুমি, তারা উভয়ে দুর্বল। দেখুন: “ইতহাফুস সাদাতুল
মুত্তাকিন” (৮/১১৯), ইব্ন রজব হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১৬)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালনকারীদের মুখ থেকে
মিসকের সুগন্ধি বের হবে এবং আরশের নিচে তাদের জন্য দস্তরখান বিছানো হবে।”
সুয়ূতি “দুররুল মানসুর”
(১/১৮২) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইব্ন রজব প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১৭)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালনকারীর নিকট যখন
ভক্ষণ করা হয়, তার জন্য ফেরেশতাগণ তখন ইস্তেগফার করে।”
ইব্ন খুজাইম, তিরমিযি: (৭৮৪),
ইব্ন মাজাহ: (১৭৪৮), তায়ালিসি: (১৬৬৬), এ হাদিসটি দুর্বল। দেখুন: “সিলসিলাতুল আহাদিসুস
দায়িফাহ”: (১৩৩২)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১৮)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালনকারীর ঘুম ইবাদত।”
হাদিসটি ইমাম সুয়ূতি “জামে
সাগির”: (৯২৯৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি বায়হাকির বরাতে উল্লেখ করে, বর্ণনাকারী
আব্দুল্লাহ ইব্ন আবু আওফার কারণে হাদিসটি দুর্বল বলেন। জায়নুদ্দিন ইরাকি, বায়হাকি ও
সুয়ূতি প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন। দেখুন: “আল-ফিরদাউস”: (৪/২৪৮), “ইতহাফুস সাদাত”:
(৪/৩২২)
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(১৯)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“অনেক সওম পালনকারী আছে,
যাদের সওম হচ্ছে ক্ষুধা ও পিপাসা। অনেক রাত জাগরণকারী আছে, যাদের রাত জাগা হচ্ছে শুধু
বিনিদ্রা রাত কাটানো।”
ইব্ন মাজাহ (১৬৯০), এর সনদে
উসামা বিন যায়েদ আদাভি রয়েছে সে দুর্বল। তবে হাদিসের অর্থ সঠিক।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২০)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“রযমানে এশার সালাত যে জামাতের
সাথে পড়ল, সে লাইলাতুল কদর লাভ করল।”
ইস্পাহানি ও আবু মুসা মাদিনি
হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম মালেক তার “মুয়াত্তা” (১/৩২১) গ্রন্থে হাদিসটি বালাগানি
বলে উল্লেখ করেছেন, এটা মূলত ইবনুল মুসাইয়্যিব এর বাণী। ইব্ন খুযাইমাহ: (২১৯৫), ইব্নুল
মাদিনি বলেছেন এর সনদে বিদ্যমান উকবা ইব্ন আবিল হাসনা অপরিচিত, সে দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২১)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“রমযানের শেষ দিন প্রবেশ
করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের থেকে পৃথক থাকতেন ও দুই আযানের মধ্যবর্তী
গোসল করতেন এবং রাতের খাবারকে সেহরি হিসেবে খেতেন।”
হাদিসটি বাতিল, এ সনদে হাফস
ইব্ন ওয়াকেদ রয়েছে। ইব্ন আদি বলেছেন: এ হাদিসটি আমাদের দেখা সব চেয়ে বেশী মুনকার। আরো
কয়েকটি সনদে এ হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল হাদিস
(২২)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
ঈদুল ফিতরের পর যে ব্যক্তি
একদিন সওম রাখল, সে যেন পুরো বছর সওম পালন করল।”
হাদিস: “রমযানের পর সওম পালনকারী
পালায়নের পর ফিরে আসা ব্যক্তির ন্যায়।” দেখুন: “কানজুল উম্মাল”: (২৪১৪২) মূলত, এটি
কোন সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
(২৩)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“যে বক্তি রমযান, শাওয়াল,
বুধবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
আহমদ: (৩/৪১৬), এ হাদিসে
একজন বর্ণনাকারী নাম উল্লেখ করা হয়নি, হাদিসটি দুর্বল এতে সন্দেহ নেই।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২৪)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“রমযানে আল্লাহকে স্মরণকারী
ক্ষমা প্রাপ্ত।”
হাদিসটি উল্লেখ করেছেন সুয়ূতি
“জামেউস সাগির”: (৪৩১২) গ্রন্থে, “আওসাত” গ্রন্থে তিনি ত্বাবারানির বরাতে উল্লেখ করেছন।
হাদিসটি আরো উল্লেখ করেছেন বায়হাকি “শু’আবুল ঈমান” গ্রন্থে। এ হাদিসের সনদে হিলাল ইব্ন
আব্দুর রহমান বিদ্যমান সে দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২৫)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“তোমরা সেহরি দ্বারা দিনের
সওম এবং দিনের কায়লুলা দ্বারা রাতের কিয়ামের জন্য সাহায্য গ্রহণ কর।”
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন হাকেম
ও ইব্ন মাজাহ, এ হাদিসের সনদে জামআহ ইব্ন সালেহ ও সালমা ইব্ন হিরাম বিদ্যমান, তারা
উভয়ে দুর্বল, তাই হাদিসও দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২৬)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“তিনটি বস্তুর কারণে সওম
পালনকারী সওম ভঙ্গ হবে না তা হল শিঙা, বমি ও স্বপ্ন দোষ।”
তিরমিযি: (৭১৯), তিনি হাদিসটি
দুর্বল বলেছেন।
মাসআলা: স্বপ্ন দোষের কারণে
সওম ভঙ্গ হবে না।
•হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২৭)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালনকারীর হাদিয়া হচ্ছে
তৈল ও ধূপদানি।”
তিরমিযি: (৮০১), তিনি হাদিসটি
দুর্বল বলেছেন, এ সনদে বিদ্যমান সাদ ইব্ন তারিফ দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(২৮)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“নিশ্চয় আল্লাহ প্রতি রাতে
ছয় লাখ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যখন সর্ব শেষ রাত আসে, তখন তিনি পূর্বের সম
পরিমাণ মুক্ত করেন।”
বায়হাকি, এটা মুরসাল, হাসান
বসরির কথা।
হাদিসের মানঃ মুরসাল
(২৯)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“আমার উম্মতের নপুংসকতা হচ্ছে
সওম।”
আলবানি “মিশকাতুল মাসাবিহ”:
(১/২২৫), গ্রন্থে বলেন: এর সনদ জানতে পারিনি, কিন্তু শায়খ ক্বারি: (১/৪৬১), মিরাক থেকে
বলেন, এতে সমস্যা রয়েছে।
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
(৩০)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম ধৈর্যের অর্ধেক।”
এর সনদে মুসা ইব্ন উবাইদাহ
বিদ্যমান, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সবাই একমত। তিরমিযি: (৩৫১৯), ইব্ন মাজাহ: (১৭৪৫),
আহমদ ও বায়হাকি। আলবানি “দায়িফুল জামে” গ্রন্থে হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৩১)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“যে ঈদের রাত জাগ্রত থাকে”
অন্য বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি ঈদের রাত সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থাকে, তার অন্তর মারা
যাবে না, যে দিন সকল অন্তর মারা যাবে।”
ইব্ন মাজাহ, এ হাদিস দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৩২)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওমের রিয়া বা লৌকিতা নেই।”
বায়হাকি। সনদটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৩৩)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“মদিনায় এক রমযান সওম, অন্যান্য
শহরে হাজার মাসের সওমের সমান।” অন্য বর্ণনায় আছে, “দুনিয়ার অন্যান্য শহরে হাজার রমযানের
তুলনায় উত্তম।”
বায়হাকি, তিনি হাদিসটি দুর্বল
বলেছেন [তাবরানি ফিল কাবির, দিয়া ফিল মুখতারাহ] হায়সামি বলেছেন: এ হাদিসের সনদে আব্দুল্লাহ
ইব্ন কাসির বিদ্যমান, সে দুর্বল। ইমাম যাহাবী তার মিজানুল ই‘তিদাল গ্রন্থে বলেছেন:
এর সনদ অন্ধকার।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(৩৪)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সকল মাসের সরদার হচ্ছে রমযান,
সব চেয়ে বেশী সম্মানিত হচ্ছে জিলহজ্জ।”
বাযযার ও দায়লামি। হাদিসটি
সঠিক নয়।
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
(৩৫)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“আসমানে এত সংখ্যাক ফেরেশতা
রয়েছে, যার সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না, যখন রমযান আগমণ করে, তখন তারা উম্মতে
মুহাম্মদির সাথে রমযানের তারাবিতে অংশ গ্রহণ করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে।”
বায়হাকি ফি শু’আবুল ঈমান
(৩/৩৩৭), তিনি আলির কথা হিসেবে এটা বর্ণনা করেছেন। সুয়ূতি দুররুল মানসুর (৮/৫৮২) একে
দুর্বল বলেছেন। কানজুল উম্মাল: (৮/৪১০)
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
(৩৬)
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
“সওম পালনকারীর ইফতারের সময়
দোয়া প্রত্যাখ্যান করা হয় না।”
আহমদ (২/৩০৫), তিরমিযি:
(৩৬৬৮), ইব্ন খুযাইমাহ: (১৯০১), ইব্ন মাজাহ: (১৭৫২), এ হাদিসের সনদে বিদ্যমান ইসহাক
ইব্ন উবাইদুল্লাহ মাদানি অপরিচিত। ইবনুল কাইয়্যেম হাদিসটি “যাদুল মায়াদ” গ্রন্থে দুর্বল
বলেছেন। ইমাম তিরমিযিও হাদিসটি দুর্বল বলেছেন। হাদিসটি দুর্বল।
জ্ঞাতব্য: আলেমদের বিশুদ্ধ
অভিমত অনুযায়ী দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা যাবে না, না ফাযায়েলে, না আহকামে, না অন্য
কোন বিষয়ে। আমরা শুধু তারই অনুসরণ করব, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। দুর্বল হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত
করা বৈধ নয়, তবে মানুষদের জানানো জন্য ও দুর্বলতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলে তা বর্ণনা
করা যাবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উপর যে এমন কথা বলল,
যা আমি বলেনি, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়”।
আল্লাহ ভাল জানেন।
হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস
(সমাপ্ত)
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের
লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের
Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই
শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ
কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে
ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে,
আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও
একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি
ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে
বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর),
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment