Search This Blog

Friday, February 7, 2020

জুমার সালাত ও রাকাত সংখ্যা। সহিহ হাদিসের আলোকে বিভ্রান্তি নিরসন।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জুমার সালাত ও রাকাত সংখ্যা। সহিহ হাদিসের আলোকে বিভ্রান্তি নিরসন।

জুমার সালাতের সূচনাঃ আল্লাহ মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “হে মুমিনগণ! জুম’আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও”(সুরা জুম’আ ৯)।” জুম’আর সালাহ ইসলামের একটি বিশেষ সালাহ, যা সপ্তাহে মাত্র একবার কায়েম করতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে এই সালাহ কায়েম করা যায় না, সামষ্টিকভাবে জামায়াতে, জুম’আ মসজিদে গিয়ে কায়েম করতে হয়। প্রশ্ন হলো- অন্যান্য সালাতের সঙ্গে জুম’আর সালাতের এই পার্থক্য কেন, জুম’আর বিশেষত্ব কি?
আল্লাহর রসুল ১৪০০ বছর আগে এই জাতিটিকে যেভাবে রেখে গিয়েছিলেন সেটা এখন আর সেই অবস্থানে নেই। তিনি রেখে গিয়েছিলেন একটি ইস্পাতের মত কঠিন ঐক্যবদ্ধ, একজন নেতার (ইমাম) অধীনে সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যশীল একটি উম্মাহ, যে উম্মাহ ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করে, মারামারি করে আজ হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত। তিনি রেখে গিয়েছিলেন এমন একটি জাতি যার প্রতিটি সদস্য ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, আর আজকের এই জাতি যে ইসলাম পালন করছে তা কেবল মৃত্যুভয়ে ভীত কাপুরুষ তৈরি করে। সেই প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীও জুম’আ কায়েম করতেন, তাদের সমাজ আর আজকে – আমাদের সমাজে আকাশ পাতাল ফারাক। সেই সমাজে সার্বভৌমত্ব ছিল আল্লাহর, আইন-কানুন, অর্থনীতি, দন্ডবিধি সমস্ত কিছু ছিল কোর’আন মোতাবেক আর আজকের আমাদের সমাজে সার্বভৌমত্ব মানুষের, পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার। মানুষের তৈরি মতবাদ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, দন্ডবিধি মানুষের তৈরি, অর্থনীতি সূদভিত্তিক। এভাবে সমগ্র জীবন ব্যবস্থাটাই মানবরচিত। যেহেতু জুম’আর সালাত সামষ্টিক তাই এর সঙ্গে সামষ্টিক জীবন ব্যবস্থাও ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এই বিপরীত প্রেক্ষাপটে এসে ১৪০০ বছর আগের সেই জুম’আকে বুঝতে হলে আমাদেরকে আনুষাঙ্গিক আরও কিছু বিষয়, কিছু ইতিহাস আলোচনা করতে হবে।
এ ইতিহাস সর্বজনবিদিত যে, যতদিন রসুলাল্লাহ (সাঃ) মক্কায় ছিলেন অর্থাৎ তাঁর হাতে রাষ্ট্রশক্তি ছিল না, ততদিন তিনি জুম’আর সালাত কায়েম করেননি কারণ জুম’আ একটি জাতীয়-রাষ্ট্রীয় ইবাদত। মক্কায় তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন, জুম’আর যা কাজ অর্থাৎ শাসন তা করার ক্ষমতা তখন তাঁর ছিল না। মদিনাতে আল্লাহর সার্বভৌত্বভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করার পরে তিনি আল্লাহর বিধান দিয়ে জাতিকে পরিচালনা করার অধিকার লাভ করলেন, তখনই তিনি জুম’আ কায়েম আরম্ভ করলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় রসুলাল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পথে কু’বা পল্লীতে অবস্থান করেছিলেন। ঐ সময় তিনি সর্বপ্রথম জুম’আর সালাত কায়েম করেন। তবে রসুলাল্লাহ (সাঃ) নিজে মদিনায় আসার আগেই পত্র লিখে মদিনায় অবস্থানরত মাস’আব ইবনে উমায়েরকে (রা:) জুম’আর দুই রাকাত সালাত কায়েমের হুকুম দেন। (আদ দারুল মনসুর- ৬ষ্ঠ খ-, পৃ: ২১৮, জুম’আ অধ্যায়)। ইবনে ইসহাক বলেন, কা’ব ইবনে মালেক স্বীয় পুত্র আব্দুর রহমানকে বলেন, বৎস! আবু উমামা আস আদ ইবনে জুরারাই (রা:) প্রথম ব্যক্তি যিনি আমাদের নিয়ে মদিনায় জুম’আর সালাত প্রতিষ্ঠা করেন (ইবনে হিশাম (২য় খ-), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃ: ১০৭)।
রসুলাল্লাহ (সাঃ) মক্কায় কোনদিন জুম’আ কায়েম করেননি। এর কারণ মক্কায় রসুলাল্লাহর (সাঃ) কোনো কর্তৃত্ব ছিল না, মোমিনদের সেখানে জামায়াতবদ্ধ হয়ে সালাত করারও কোনো পরিবেশ ছিল না, সেখানে তাঁর পক্ষে আল্লাহর কোন আইন-কানুন ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তিনি যখন মদিনায় হিজরত করে আসলেন, মদিনায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব (তওহীদ) প্রতিষ্ঠিত হলো, মদিনার আউস এবং খাজরাজ গোত্র রসুলাল্লাহকে (সাঃ) শাসক হিসাবে মেনে নিলেন, তখন মসজিদে নববী কেন্দ্রিক জুম’আর সালাতের কার্যক্রম আরম্ভ হল।
একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সর্বপ্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হলো জাতির একজন নেতা থাকতে হয় যিনি আল্লাহর প্রতিটি হুকুম বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, অনড়। সেই নেতার আদেশ জাতিকে বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় পালন করতে হয়। মুসলিম উম্মাহর রাষ্ট্রীয় কার্যালয় হলো মসজিদ। রসুলাল্লাহ (সাঃ) ও প্রকৃত ইসলাম যতদিন ছিল ততদিন মসজিদ থেকেই জাতির সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। সালাত কায়েম ছাড়াও মসজিদ থেকে প্রেরিত হতো সেনাবাহিনী, মসজিদেই খলিফার সাক্ষাৎ করতেন বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতগণ। মসজিদ ছিল প্রাণবন্ত, জীবন্ত। প্রতি ওয়াক্তে নারী ও পুরুষ প্রায় সকলেই সালাতে অংশ নিত। তাই মসজিদ ছিল সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মসজিদকে আল্লাহর ঘর বলার কারণও এটাই। ইমাম কেন্দ্রিক তথা মসজিদ কেন্দ্রিক এই জাতির একজন পুরুষ বা নারীও এই নেতৃত্বের, শৃঙ্খলার বাইরে ছিল না। যে এই ব্যবস্থার বাইরে থাকবে সে ইসলাম থেকেই বহির্গত হয়ে যাবে, অর্থাৎ উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত থাকবে না [আল হারিস আল আশয়ারী (রা:) থেকে আহমদ, তিরমিযি, বাব উল এমারত, মেশকাত]।
এইভাবে কেন্দ্রীভূত থাকার জন্য আল্লাহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বন্দোবস্ত দিয়েছেন। এই সালাতের মাধ্যমে জাতির মধ্যে যে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও আনুগত্য সৃষ্টি করা দরকার তার প্রশিক্ষণ হবে পাশাপাশি তারা তাদের নেতার সং¯পর্শে আসবে ও কোন দিক নির্দেশনা থাকলে তা জানবে। একইভাবে আল্লাহর রসুলের  (সাঃ) তৈরি জাতির সকল সদস্য ও সদস্যা সপ্তাহে একবার জুম’আ মসজিদে একত্রিত হতেন। সেখানে রসুলাল্লাহ, পরবর্তীতে খলিফা বা খলিফার প্রতিনিধিগণ এক কথা জাতির এমাম তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন। এই ভাষণই হচ্ছে খোতবা। এর মাধ্যমে তাঁরা জাতিকে দিক নির্দেশনা দিতেন, পরবর্তী কর্মসূচি, কাজের নীতিমালা ইত্যাদি ঘোষণা করতেন। জুম’আর সালাতের পরে আল্লাহর নাজেলকৃত বিধান মোতাবেক অপরাধীদের দন্ড কার্যকর করা হতো এবং খেয়াল রাখা হোত যেন জুম’আর দিনেই ঐ সপ্তাহের যাবতীয় বিচারকার্য সমাপ্ত হয়ে যায়, পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত যেন দীর্ঘায়িত না হয়। এসকল ব্যস্ততার কারণে আল্লাহ জুম’আর সালাত মাত্র দুই রাকাত করে দিয়েছেন। জুম’আর দিনে এতসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হতো বলেই জুম’আর সালাতের এতই গুরুত্ব, এজন্যই আল্লাহ জুম’আয় যাওয়ার জন্য আলাদাভাবে হুকুম করেছেন (জুম’আ ৯), রসুলাল্লাহও জুম’আয় অনুপস্থিত থাকলে তার বিষয়ে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন এবং খোতবা শোনাকে ওয়াজিব করেছেন।
ইসলামী বিশ্বকোষ বলছে: সালাতের ইমামত একটি বৃত্তি বা পেশা নহে, সর্বক্ষেত্রে ইহা যোগ্যতার মানদন্ডও নহে। তিনি যতক্ষণ সালাত পরিচালনায় নিয়োজিত থাকেন কেবল ততক্ষণই ইমাম থাকেন। আদি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রত্যেক এলাকার উল্লেখযোগ্য শহরের জামে মসজিদে ইমামতের কর্তব্য পালন করতেন খলিফার প্রতিনিধি (ওয়ালি) ও তাঁহাদের প্রতিনিধিগণ (নায়েব) এবং কেন্দ্রে স্বয়ং খলিফা। (প্রথম খ-, পৃ: ১৮০)
যতদিন ইসলামের শাসন অর্ধ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিন প্রতিটি এলাকার প্রশাসকরা খলিফার নির্দেশ ও নীতিসমূহ খলিফার পক্ষ থেকে তাদের স্ব-স্ব মসজিদে জুমার খোতবার মাধ্যমে বলে দিতেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ছাড়া জুম’আর অস্তিত্ব কল্পনাও করা যেত না। খোতবার প্রধান দিক হোল জাতির উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনা। রাষ্ট্রের পক্ষে যিনি এই ভাষণ দিবেন তিনিই খতিব। বর্তমানে আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত অর্ধ পৃথিবী জুড়ে শত শত ভাগে খন্ডবিখন্ড মুসলমান নামক এই যে বিশৃঙ্খল জনসংখ্যা পড়ে আছে তা যেন মরা প্রাণহীন। এজন্য এদের মসজিদগুলিও মরা, প্রাণহীন। এরা এখন দাজ্জালের পদানত ভৃত্ত। দোর্দন্ড প্রতাপশালী খলিফা তো নেই, অনেক এলাকায় তাই কাপড় সেলাইকারী দর্জিদেরকেই খলিফা বলে ডাকা হয়। ইসলামে কাজী বলতে বোঝায় যিনি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করেন অর্থাৎ বিচারক। অথচ আজ কাজী বলতে বোঝায় যে লোক সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিয়ে পড়ান। একইভাবে খতিবও এখন আর জুম’আর দিনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণদানকারী নন, তিনি কেবল নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জুম’আর সালাত পড়ান। তার দ্বারা বিচার ফায়সালা তো দূরের তিনি মসজিদ কমিটির চোখ রাঙানীর ভয়ে থাকেন সদা-তটস্থ। কি করুণ পরিণতি!
বড় দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আজ এই জাতির জাতীয় ও সামষ্টিক কাজের সঙ্গেই মসজিদের কোন যোগসূত্র নেই, জুম’আরও কোন যোগসূত্র নেই। বর্তমান মসজিদগুলো নিষ্প্রাণ অধিকাংশ সময়েই গেটে তালা ঝুলানো থাকে। সেখানে সালাত পড়া ছাড়া আর কোন কাজ করা নিষেধ, এমন কি অনেক মসজিদে লেখা থাকে মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম। রসুলাল্লাহর (সাঃ) জারি করে যাওয়া জুম’আর মতই আজও মসজিদে শুক্রবারে খোতবা দেওয়া হয়, কিন্তু সেই খোতবা দেওয়া হয় বই দেখে। তবে যিনি খোতবা দেন তিনি খলিফার প্রতিনিধি নন, মসজিদ কমিটির নিয়োজিত বেতনভুক্ত কর্মচারী, যদিও অতীত সংস্কারবশ্যে এখনও তাকে ‘ইমাম বা নেতা’ বলেই সম্বোধন করা হয়, যিনি প্রতিনিয়ত চাকরি হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকেন। সেই খোতবাতে জাতির নেতার কোন বক্তব্য থাকে না কারণ জাতির তো কোন নেতাই নেই। জুম’আর প্রকৃত আকিদা, উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়ার দরুণ আজকে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জুম’আ মসজিদে চোরের বিচার হওয়া দূরে থাক, চুরি যাওয়ার ভয়ে সাধারণত কেউ দামি জুতা পরে মসজিদে যান না। নিয়ে গেলেও তা সযত্নে সেজদার স্থানে বা জুতা রাখার বাক্সের মধ্যে রাখেন। সালাত শেষে সেই জুতা খুঁজে পেলে খুশিমনে বাড়ি ফিরে আসেন।

জুমার সালাতের ফজিলতঃ সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়।
জুমার সালাত ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার সালাত আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার সালাত।
শুক্রবারের দিন জোহরের সালাতের পরিবর্তে জুমার সালাতকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ সালাত ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ সালাতের  স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তার খুতবায়।
সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।
জুমার নামাজের ফযীলত ও তা আদায়কারীদের জন্য ঘোষিত পুরষ্কার-
(১) কুরবানী করার সমান সওয়াব অর্জিত হয়ঃ
দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
(২) মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা অগ্রগামীদের নাম তালিকাভুক্ত করেনঃ
জুমার সালাতে কারা অগ্রগামী, ফেরেশতারা এর তালিকা তৈরি করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা এসে হাজির হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকে। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে ঢুকেন তাদের জন্য উট, দ্বিতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য গরু, তৃতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থবারে যারা আসেন তাদের জন্য মুরগী, ও সর্বশেষ পঞ্চমবারে যারা আগমন করেন তাদের জন্য ডিম কুরবানী বা দান করার সমান সওাব্ব লিখে থাকেন। আর যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।” (বুখারী ৯২৯, ইফা ৮৮২, আধুনিক ৮৭৬)
(৩) দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ঃ
জুমার দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
‘যে ব্যাক্তি ভালভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিমঃ ৮৫৭)
(৪) জুমার আদব রক্ষাকারীর দশ দিনের গুনাহ মুছে যায়ঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমার সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুমা’য় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুমা’য় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমা’র মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)
(৫) প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়ঃ
যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুমার সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়।
আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জুমার দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)
(৬) দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাঃ
জুমার সালাত আদায়কারীদের জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিমঃ ২৩৩)
জুমার দিনে দোয়া কবুল:
জুমার ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের সালাতের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)।
জুমার দিনের আদব-শিষ্টাচার
সপ্তাহের অন্য কোনো দিনের চেয়ে জুমাবারের গুরুত্ব বেশি। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো। এ দিন ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে। জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তাআলার কাছে এতোখানি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাজিল করা হয়েছে।
সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হওয়ার কারণে জুমার দিনের বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। কিছু জুমার আগে, কিছু মসজিদের, কিছু খুতবার সময়ের আর কিছু নামাজের আগে-পরের। সেগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা-
এক. জুমার দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমা ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন (বুখারি, হাদিস নং: ৮৭৭, ৮৭৮)।
পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
দুই. জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৮০)
তিন. মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৮; বুখারি, হাদিস নং: ৮৮৭)
চার. গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৮৩)
পাঁচ. উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৭)
ছয়. মুসুল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিজি, হাদিস নং:৫০৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১১৩৬)
সাত. মনোযোগ সহ খুতবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৪, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫৭)
আট. আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারি, হাদিস নং:৮৮১, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫০)
নয়. পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৪৫)
দশ. জুমার দিন ফজরের সালাতে ১ম রাকাতে সুরা সাজদা (সুরা নং ৩২) আর ২য় রাকাতে সুরা দাহর (সুরা নং : ৭৬) পড়া। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৯১, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৭৯)
এগারো. সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা। অথবা সুরা আলা ও সুরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিম, হাদিস নং: ৮৭৭)
বারো. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দুরুদ পড়া। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৪৭)
তেরো. এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৫)
চৌদ্দ. মসজিদে মুসুল্লিদের মাঝে ফাঁক করে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারি, হাদিস নং:৯১০)
পনের. মুসুল্লিদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৪৩)
ষোল. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে, সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৯১১, মুসলিম, হাদিস নং: ২১৭৮)
সতের. খুতবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারি, হাদিস নং: ৯৩০)
আঠারো. জুমার দিন সালাতের আগে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১০৮৯)
উনিশ. কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ি, হাদিস নং: ৭১৪, বুখারি, হাদিস নং: ৯৩৪)
বিশ. মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারি, হাদিস নং: ৮৫৩)
একুশ. ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়াগা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
বাইশ. ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১১১০, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১১৩৪)
তেইশ. খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। (আবু দাউদ, হাদিস নং: ১১০৮)
চব্বিশ. জুমার দিন সুরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তাআলা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেম, হাদিস নং: ২/৩৬৮, বায়হাকি, হাদিস নং: ৩/২৪৯)
পঁচিশ. জুমার আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারি, হাদিস নং: ৯১২)
ছাব্বিশ. জুমার ফরজ সালাত আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করা। (বুখারি, হাদিস নং: ১৮২, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৮১)
সাতাশ. যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিম, হাদিস নং: ৭১০, বুখারি, হাদিস নং: ৮৪৮)
আটাশ. খুতবার সময় খতিবের কোনো কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাবদানে শরিক হওয়া জায়েজ। (বুখারি, হাদিস নং: ১০২৯, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৯৭)
ঊনত্রিশ. হানাফি আলেমগন বলেছেন, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লির পিঠের ওপর সেজদা দেওয়া জায়েজ। (আহমাদ, হাদিস নং: ১/৩২)। প্রয়োজনে পায়ের ওপরও দিতে পারবে। (আর রাউদুল মুরবি)
ত্রিশ. ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইস্তিগফার ও কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকা।

জুমার সালাত কতো রাকাত? ৯৫% আলেম সহিহভাবে জানেন না।
বাংলাদেশের ৯৭% মসজিদে আগত মুসল্লি ও ইমামগণসহ সকলেই প্রবেশ করে প্রথমে চার রাকাত কাবলাল জুমা পড়েন। যদি ইমামসাহেব বাংলা বা আরবী খোতবা দেয়া শুরু করে দেন তাহলে আর সালাত পড়তে দেয়া হয় না। বাংলা খোতবা শেষে ইমামসাহেব বলেন এখন চার রাকাত কাবলাল জুমা পড়ে নেন। অথচ এই চার রাকাত কাবলাল জুমার কোনো হাদিসই নেই। যারা হাদিস দেন তা সহিহ নয়।  এখানে জুমার সালাত নিয়ে একটি লেখা তুলে ধরা হলো যা বাংলাদেশের ৯৫% মুসলমান মেনে চলেন যা সহিহ নয়। লিখেছেন,  ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা, সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখাটি সোনালী নিউজ ডটকম এ প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার ১০:৫৭ এএম | 
তুলে ধরা হলোঃ
ঢাকা:  হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)
জুমার ফরজ নামাজ : জোহরের ফরজ নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার হলো দুই রাকাত। অবশ্য এর আগে দুইটি খুতবা রয়েছে, যা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। (আল-মুসান্নাফ লি ইবনে আবি শাইবা : ৫৩৬৭, ৫৩৭৪)। এজন্য খুতবার সময় উপস্থিত থাকা এবং তা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত প্রসঙ্গে হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘জুমার নামাজ দুই রাকাত, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সফরের নামাজ দুই রাকাত। এটাই পূর্ণ সংখ্যা, অসম্পূর্ণ নয়। এ বিধান স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মুখ নিসৃত।’ (নাসাঈ : ১৮৯৪, ইবনে মাজাহ : ১০৬৩)।
জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ : জুমার আগে চার রাকাত (ইহা সহিহ নয়) এবং পরে চার রাকাত নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। তবে জুমার পরের চার রাকাত সুন্নতের সঙ্গে আরও দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম।
হজরত আলী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং জুমার নামাজের পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। চার রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ১৬১৭)।
এ হাদিসের সনদের সব রাবি পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আস-সাহমি সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি তুললেও ইমাম ইবনে আদি তার আল-কামিল কিতাবে বলেছেন, ‘এ রাবির ব্যাপারে অসুবিধার কিছু নেই।’ (আল-কামিল : ১৯১-১৯২)। ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য রাবির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (কিতাবুস সিকাত : ৭২)। এ বিষয়ে আরও বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত : ৩৯৫৯, নাসবুর রায়াহ : ২৪৮)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) জুমার নামাজের আগে একসঙ্গে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (সুনানু ইবনে মাজাহ : ১১২৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করবে সে যেন এরপর চার রাকাত আদায় করে।’ (মুসলিম : ২০৭৫, তিরমিজি : ৫২৩)। হজরত সালেম (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (মুসলিম : ২০৭৮, তিরমিজি : ৫২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি : ৫২৩, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)।
হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পর চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবু ইসহাক বলেন, হজরত আলী (রা.) জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আবদুর রাজ্জাক এটিই গ্রহণ করেছেন। (মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক : ৫৫২৪)। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জুমার পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করা উচিত।’ (শারহু মায়ানিল আসার : ৯৫)।
জুমার দিনের নফল নামাজ : জুমার দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া উচিত এবং সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা এসে হাজির হন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে প্রবেশ করে তাদের জন্য উট, দ্বিতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য গরু, তৃতীয় ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থ ভাগে যারা আসে তাদের জন্য মুরগি ও সর্বশেষ পঞ্চম ভাগে যারা আসে তাদের জন্য ডিম কোরবানি বা দান করার সমান সওয়াব লেখেন।
আর যখন ইমাম খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন তখন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যান।’ (বোখারি: ৯২৯, মুসলিম : ২০২১)। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো পুরুষ জুমার দিন যদি গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরে যে সুগন্ধি আছে তা ব্যবহার করে অতঃপর জুমার নামাজে যায় ও বসার জন্য দুই জনকে আলাদা করে না এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে এবং ইমাম যখন কথা বলেন তখন চুপ থাকে, তাহলে তার অন্য জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করা হয়।’ (বোখারি : ৮৪৩)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার নামাজে যায়, এরপর যথাসাধ্য নামাজ পড়ে খুতবা শুনতে চুপ থাকে যতক্ষণ না ইমাম খুতবা শেষ করেন। এরপর তার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিনসহ ১০ দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম : ২০২৪)। এসব হাদিস থেকে বোঝা যায়, জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া উচিত এবং শুধু নির্ধারিত চার রাকাত নামাজ আদায় করা নয় বরং তাহিয়াতুল অজু দুই রাকাত ও তাহিয়াতুল মসজিদ দুই রাকাতসহ সাধ্যমতো বিভিন্ন নফল নামাজ আদায় করা উচিত। আরও বোঝা গেল, খুতবার সময় কোনো নামাজ নেই।
জুমার সালাত নিয়ে বিদআতী কর্মকান্ড ও বিভ্রান্তির নিরসনঃ (সহিহ হাদিসের আলোকে)
 (১) জুম‘আর ছালাতের জন্য দুই আযান দেওয়াঃ
জুম‘আর ছালাতের জন্য দুই আযান দেওয়ার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তা সুন্নাত সম্মত নয়। জুম‘আর আযান হবে একটি। ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য যখন মিম্বরে বসবেন, তখন মুয়াযযিন আযান দিবে।[1] রাসূল (ছাঃ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর আমলে এবং ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতের প্রথমাংশে জুম‘আর আযান একটিই ছিল। অতঃপর মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে গেল, তখন ওছমান (রাঃ) মসজিদে নববীর অনতিদূরে ‘যাওরা’ নামক বাজারে জুম‘আর পূর্বে আরেকটি আযান চালু করেন।[2]
ওছমান (রাঃ) যে কারণে আরেকটি আযান চালু করেছিলেন, কোথাও উক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলে তা এখনো চালু করা জায়েয। কারণ খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতের অনুসরণে ওছমান (রাঃ)-এর আযান যদি সকল মসজিদের জন্য পালনীয় হত, তাহলে তিনি মক্কায় চালু করলেন না কেন? অনুরূপ অন্যান্য মসজিদে চালু হল না কেন? আলী (রাঃ)-এর আমল পর্যন্ত অন্য কোথাও উক্ত আযান চালু হয়নি। এমনকি মক্কাতেও চালু হয়নি। বর্তমানে আমরা কি উক্ত আযান চালু করে ছাহাবীদের চেয়ে বেশী দ্বীনদারীর ভাব দেখাতে চাই? এ জন্যই হয়ত ইবনু ওমর (রাঃ) উক্ত আযানকে বিদ‘আত বলেছেন।[3] অনুরূপ ইমাম কুরতুবী (মৃঃ ৬৭১) ইমামের সামনে মিম্বরের নিকটে দেয়া প্রচলিত আযানকে বিদ‘আত বলেছেন।[4]
ওমর ইবনু আলী আল-ফাকেহানী (৬৫৪-৭৩৪/১২৫৬-১৩৩৪ খৃঃ) বলেন, ডাক আযান প্রথম বছরায় চালু করেন যিয়াদ এবং মক্কায় চালু করেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। আর আমার কাছে এখন খবর পৌঁছেছে যে, নিকট মাগরিবে অর্থাৎ আফ্রিকার তিউনিস ও আলজেরিয়ার পূর্বাঞ্চলের লোকদের নিকট কোন আযান নেই, মূল এক আযান ব্যতীত’।[5] আলী (রাঃ)-এর (৩৫-৪০ হিঃ) রাজধানী কূফাতেও এই আযান চালু ছিল না।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, উমাইয়া খলীফা হেশাম বিন আব্দুল মালেক (১০৫-২৫/৭২৪-৭৪৩ খৃঃ) সর্বপ্রথম ওছমানী আযানকে ‘যাওরা’ বাজার থেকে এনে মদ্বীনার মসজিদে চালু করেন।[7] ইবনুল হাজ্জ মালেকী বলেন, অতঃপর হেশাম খুৎবাকালীন মূল আযানকে মসজিদের মিনার থেকে নামিয়ে ইমামের সম্মুখে নিয়ে আসেন’।[8] এভাবে হাজ্জাজী ও হেশামী আযান সর্বত্র চালু হয়েছে।[9] অতএব বর্তমানে যে আযান চলছে সেটা রাসূল (ছাঃ)-এর আযানও নয়, ওছমান (রাঃ)-এর আযানও নয়। সুতরাং উক্ত বিদ‘আতী আযান অবশ্যই পরিত্যাজ্য। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে যে আযান চালু ছিল আমাদের সবাইকে সেই আযানে ফিরে যেতে হবে।
জ্ঞাতব্য : হেদায়ার লেখক উক্ত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বিদ‘আতী আযানের পক্ষে অবস্থান করে বলেছেন,
(وَإِذَا صَعِدَ الْإِمَامُ الْمِنْبَرَ جَلَسَ وَأَذَّنَ الْمُؤَذِّنُوْنَ بَيْنَ يَدِي الْمِنْبَرِ ) بِذَلِكَ جَرَى التَّوَارُثُ وَلَمْ يَكُنْ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ  إلَّا هَذَا الْأَذَانُ.
‘যখন ইমাম মিম্বরে উঠে বসবেন তখন মুয়াযযিন মিম্বরের সামনে আযান দিবে। আর এই আযানই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আর এই আযান ছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে অন্য কোন আযান চালু ছিল না।[10]
সুধী পাঠক! লেখক মসজিদের ভিতরের আযানের সমাধান দিয়েছেন, কিন্তু পূর্বের ডাক আযানের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তাহলে জুম‘আর ছালাতের আধা ঘণ্টা পূর্বে যে আযান দেয়ার প্রচলন হয়েছে তার ভিত্তি কি? লেখক রাসূল (ছাঃ), আবুবকর, ওমর (রাঃ)-এর সুন্নাতী আযানকে উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন কিন্তু ভিত্তিহীন বিদ‘আতী আযান উল্লেখ করতে ভুলেননি।[11] এটা যে মাযহাবী ফাঁদ, এখান থেকে তিনি মুক্ত হবেন কিভাবে? অতএব আমাদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর আযানই আকড়ে ধরে থাকতে হবে। অন্যগুলো সব প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
রাসুল (সা.) চার খলিফার কাজ/অনুমোদনকেও সুন্নাহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/৯১৫ ও ৯১৬, ১/১২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৬৯ ও ৮৭০, ২/১৮৩ পৃঃ)।
[2]. বুখারী হা/৯১২, ১/১২৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৬৬, ২/১৮১ পৃঃ); মিশকাত হা/১৪০৪, পৃঃ ১২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২০, ৩/১৯৬ পৃঃ।
[3]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৪৭৭-৫৪৮৩; আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, পৃঃ ৪।
[4]. তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১০১ পৃঃ, সূরা জুমু‘আ ৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[5]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/৪৯২।
[6]. তাফসীরে জালালাইন, ৪৬০ পৃঃ, টীকা ১৯; কুরতুবী ১৮/১০০ পৃঃ, তাফসীর সূরা জুম‘আ-৯।
[7]. মির‘ক্বাতুল মাফাতীহ (দিল্লী ছাপা : তাবি) ৩/২৬৩।
[8]. আওনুল মা‘বূদ শরহ আবুদাঊদ (কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) ৩/৪৩৩-৩৪ পৃঃ, হা/১০৭৪-৭৫-এর ব্যাখ্যা।
[9]. আওনুল মা‘বূদ ৩/৪৩৭-৩৮। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১৯৪ ও ১৯৫।
[10]. হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭১-১৭২।
[11]. আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, ৯৭, নং ৩০।
 (২) আরবী ভাষায় খুৎবা প্রদান করা এবং খুৎবার পূর্বে মিম্বরে বসে বক্তব্য দেওয়াঃ
প্রচলিত ডাক আযানকে বৈধ করার জন্য জুম‘আর ছালাতের খুৎবার পূর্বে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বা বসে মাতৃভাষায় বক্তব্য দেয়ার আরেকটি বিদ‘আত চালু হয়েছে। একটি বিদ‘আতকে রক্ষা করার জন্য আরেকটি বিদ‘আতের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তাছাড়া মূল খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়ার কারণে মুছল্লীরা কোনকিছু উপলব্ধি করতে পারে না। বিধায় এটা চালু করা হয়েছে। মূলতঃ খুৎবার পূর্বে আরেকটি খুৎবা দেয়ার যেমন শারঈ কোন ভিত্তি নেই, তেমনি আরবী ভাষায় খুৎবা দেয়ারও কোন বিধান নেই। তাছাড়া জুম‘আর খুৎবা বসে দেয়াও শরী‘আত বিরোধী।[1]
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সামনে আরবী ভাষায় জুম‘আর খুৎবা দেওয়া অর্থহীন এবং সুন্নাতের বরখেলাফ। রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানুষের সামনে আরবী ভাষায় খুৎবা দিতেন না; বরং তিনি তাঁর মাতৃভাষায় খুৎবা দিতেন, যা ছিল আরবী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُوْلٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ.   
‘আমি সকল রাসূলকে তার সম্প্রদায়ের ভাষাতেই প্রেরণ করেছি। যেন তিনি তাদের সামনে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন’ (ইবরাহীম ৪)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কুরআনকে তোমার ভাষায় সহজ করেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’ (দুখান ৫৮)। রাসূল (ছাঃ) কুরআনের আয়াত পাঠ করে উপস্থিত মুছল্লীদেরকে উপদেশ দান করতেন।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ كَانَتْ لِلنَّبِىِّ  خُطْبَتَانِ يَجْلِسُ بَيْنَهُمَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيُذَكِّرُ النَّاسَ.
জাবের ইবনু সামুরা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর দু’টি খুৎবা ছিল। উভয় খুৎবার মাঝে তিনি বসতেন। খুৎবাতে তিনি কুরআন পাঠ করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন।[2]
এছাড়া রাসূল (ছাঃ) প্রয়োজনে মুছল্লীদের সাথেও কথা বলতেন। মুছল্লীরাও কোন বিষয় রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে পেশ করতেন। যেমন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে তাকে দাঁড়াতে বলেন এবং সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ‘তাহ্ইয়াতুল মসজিদ’-এর ছালাত আদায় করতে বলেন।[3] পরপর দুই জুম‘আয় এক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বৃষ্টির ব্যাপারে আবেদন পেশ করেছিলেন।[4]
এক্ষণে যে সমস্ত মসজিদে আরবী ভাষায় খুৎবা দেওয়া হয়, সেখানে মুছল্লীরা কোন আবেদন করতে চাইলে কোন্ ভাষায় করবে? খুৎবা অবস্থায় ইমাম কোন্ ভাষায় জবাব দিবেন? খুৎবায় বাংলা বলা যদি নাজায়েয হয়, তাহলে ইমাম কি তখন আরবী ভাষায় জবাব দিবেন? মুক্তাদী কি তার ভাষা বুঝতে পারবে? প্রশ্ন করে তার কোন লাভ হবে কি? সুতরাং ইমাম মুক্তাদী সকলে আরবী ভাষী হতে হবে। অতএব মানুষের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা প্রদান করতে হবে।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৩৩, ১/২৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৬৬); মিশকাত হা/১৪১৫, পৃঃ ১২৪।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৩২, ১/২৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৬৫); মিশকাত হা/১৪০৫, পৃঃ ১২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২১, ৩/১৯৭ পৃঃ।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৯৩০ ও ৯৩১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, (ইফাবা হা/৮৮৩ ও ৮৮৪, ২/১৯০-১৯১ পৃঃ) ; ছহীহ মুসলিম হা/২০৫৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৭, (ইফাবা হা/১৮৯০)।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/১০২৯, ১/১৪০ পৃঃ; বুখারী হা/১০১৩ ও ১০১৪; ছহীহ মুসলিম হা/২১১৫।
 (৩) জুম‘আর ছালাতের মুছল্লী নির্দিষ্ট করাঃ
ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিতে দুই জন ব্যক্তি হলেই জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে। কারণ জুম‘আর ছালাত অন্যান্য ফরয ছালাতের মতই ফরয ছালাত। কোন স্থানে দুইজন ব্যক্তি থাকলেও রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে আযান, ইক্বামতসহ জামা‘আত করে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।[1] অথচ সমাজে প্রচলিত আছে যে, ৪০ জন  ব্যক্তি ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না। কিন্তু এর পক্ষে ছহীহ কোন দলীল নেই। উক্ত মর্মে যত বর্ণনা এসেছে সবই ত্রুটিপূর্ণ।
(أ) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ مَضَتِ السُّنَّةُ أَنَّ فِىْ كُلِّ ثَلاَثَةٍ إِمَامٌ وَفِىْ كُلِّ أَرْبَعِيْنَ فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ جُمُعَةً وَأَضْحًى وَفِطْرًا وَذَلِكَ أَنَّهُمْ جَمَاعَةٌ .
(ক) জাবের (রাঃ) বলেন, সুন্নাত প্রচলিত আছে যে, প্রত্যেক তিনজনে ইমাম নির্ধারিত হবে, ৪০ জনের উপরে জুম‘আ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সাব্যস্ত হবে।[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্দুল আযীয বিন ক্বারশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[3] উল্লেখ্য যে, ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে যে, মদ্বীনায় যখন প্রথম জুম‘আ চালু হয় তখন তার মুছল্লী সংখ্যা ছিল ৪০। উক্ত জামা‘আতের লোকসংখ্যা ছিল ৪০ জন। কিন্তু ৪০ জন না হলে ছালাত হবে না সে কথা তো বলা হয়নি।[4]
(ب) عَنْ أَبِى أُمَامَةَ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ  قَالَ عَلَى الْخَمْسِيْنَ جُمُعَةٌ لَيْسَ فِيْمَا دُوْنَ ذَلِكَ.
(খ) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ৫০ জন ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না।[5]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল। এই বর্ণনায় জাফর বিন যুবাইর নামক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও নাসাঈ বলেন, সে পরিত্যক্ত। ইমাম হায়ছামীও তাকে নিতান্ত দুর্বল বলেছেন।[6]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/৬৫৮, ১/৯০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬২৫, ২/৬২ পৃঃ); মুসলিম হা/১৫৭০, ১/২৩৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪০৭)- عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَأَذِّنَا وَأَقِيْمَا ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا.।
[2]. দারাকুৎনী হা/১৫৯৮, ২/৪; বায়হাক্বী ৩/১৭৭।
[3]. তানক্বীহ, পৃঃ ৪২৫; ইওয়াউল গালীল হা/৬০৩, ৩/৬৯ পৃঃ-
قال أحمد : اضرب على حديثه فإنها كذب موضوعة وقال النسائي ليس بثقة وقال الدارقطني : منكر الحديث وقال ابن حبان لا يجوز الإحتجاج به وقال البيهقي هذا الحديث لا يحتج به
[4]. ইরওয়াউল গালীল হা/৬০০, ৩/৬৯ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/১০৬৯, ১/১৫৩ পৃঃ -
عَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ كَانَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ تَرَحَّمَ لِأَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ فَقُلْتُ لَهُ إِذَا سَمِعْتَ النِّدَاءَ تَرَحَّمْتَ لِأَسْعَدَ بْنِ زُرَارَةَ قَالَ لِأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ جَمَّعَ بِنَا فِىٍ هَزْمِ النَّبِيْتِ مِنْ حَرَّةِ بَنِىْ بَيَاضَةَ فِىْ نَقِيْعٍ يُقَالُ لَهُ نَقِيْعُ الْخَضِمَاتِ قُلْتُ كَمْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ قَالَ أَرْبَعُوْنَ.।
[5]. দারাকুৎনী হা/১৫৯৯, ২/৪; ত্বাবারাণী কাবীর ৮/২৯১।
[6]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৭৬ পৃঃ; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৪২৬; ইরওয়া হা/৬০৩।
 (৪) জুম‘আর পূর্বে নির্দিষ্ট রাক‘আত ছালাত আদায় করাঃ
জুম‘আর ছালাতের পূর্বে কত রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে, তা হাদীছে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। মুছল্লী যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন থেকে ইমাম খুৎবা আরম্ভ করার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা তত ছালাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু প্রায় মসজিদে মুছল্লীরা পূর্বে মাত্র চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত মর্মে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তা মিথ্যা ও বাতিল।
(أ) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ  يَرْكَعُ مِنْ قَبْلِ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا لاَ يَفْصِلُ فِىْ شَىْءٍ مِنْهُنَّ.
(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু এর মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না।[1] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
 (ب) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  يَرْكَعُ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا لا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ.
(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর ছালাতের আগে ও পরে ৪ রাক‘আত করে ছালাত পড়তেন। কিন্তু মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না।[2]
তাহক্বীক্ব : উভয় বর্ণনাই জাল। এই বর্ণনার প্রায় সকল রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। মুবাশশির ইবনু উবাইদ মিথ্যা হাদীছ রচনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর হাজ্জাজ ও আতিইয়াহ দুইজনই যঈফ।[3] বুছাইরী বলেন, বাক্বিয়াহ বিন ওয়ালীদও যঈফ।[4] ইমাম নববী বলেন, হাদীছটি বাতিল।[5]
(ج) عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ كَانَ النَّبِىُّ  يُصَلِّىْ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا.
(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) জুম‘আর আগে চার রাক‘আত এবং জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[6]
তাহ্ক্বীক্ব : বর্ণনাটি মুনকার বা ছহীহ হাদীছ বিরোধী। ত্বাবারাণী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, আত্তাব বিন বুশাইর ছাড়া এই হাদীছ খুছাইফ থেকে কেউ বর্ণনা  করেনি।[7] উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন ছাহাবীর নামে উক্ত মর্মে আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে। তবে কোন বর্ণনাই বিশুদ্ধ নয়।[8]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ইবনু মাজাহ হা/১১২৯, পৃঃ ২০২।
[2]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১২৬৭৪।
[3].
سنده واه جدا فمبشر بن عبيد معدود في الوضاعين وحجاج وعطية ضعيفان. -নাছবুর রাইয়াহ ২/২০৬ পৃঃ।
[4].
هذا إسناد مسلسل بالضعفاء عطية متفق على تضعيفه وحجاج مدلس ومبشر بن عبيد كذاب وبقية بن الوليد يدلس تدليس التسوية-সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০১।
[5]. إنه حديث باطل-আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামে‘আহ, পৃঃ ৩০।
[6]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯ ও ১৬১৭।
[7]. لم يرو هذا الحديث عن حصيف إلا عتاب بن بشير -মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৯০ ও ১০১৬।
ছহীহ হাদীছের আলোকে জুম‘আর ছালাতের সুন্নাত
জুম‘আর পূর্বে কোন রাক‘আত নির্ধারিত নেই। যত ইচ্ছা তত পড়তে পারে। তবে জুম‘আর ছালাতের পর চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। আর বাড়ীতে গিয়ে পড়তে চাইলে মাত্র দুই রাক‘আত পড়বে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ  قَالَ مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّام.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুম‘আর ছালাতে আসবে অতঃপর তার সাধ্যানুযায়ী ছালাত আদায় করবে, তারপর ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত চুপ করে থাকবে; অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করবে, তার এই জুম‘আ ও পরবর্তী জুম‘আর মাঝের পাপ সমূহ ক্ষমা করা হবে। এমনকি অতিরিক্ত আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করা হবে।[1]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمُ الْجُمُعَةَ فَلْيُصَلِّ بَعْدَهَا أَرْبَعًا.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ জুম‘আর ছালাত আদায় করবে, তখন সে যেন জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে।[2]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ  لَا يُصَلِّىْ بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّىْ رَكْعَتَيْنِ فِىْ بَيْتِهِ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর পর বাড়ীতে না ফিরে ছালাত আদায় করতেন না। অতঃপর তিনি তাঁর বাড়ীতে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[3]
উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ) মসজিদে জুম‘আর পর সামনে এগিয়ে গিয়ে দুই রাক‘আত পড়তেন। অতঃপর আবার চার রাক‘আত পড়তেন।[4]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/২০২৪, ১/২৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৫৭); মিশকাত হা/১৩৮২, পৃঃ ১২২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩০০, ৩/১৮৮ পৃঃ; ছহীহ বুখারী হা/৮৮৩, ১/১২১ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩৯, ২/১৭০ পৃঃ); মিশকাত হা/১৩৮১, পৃঃ ১২২।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৭৩ ও ২০৭৫, ১/২৮৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৯০৬-১৯০৮); মিশকাত হা/১১৬৬, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৮, ৩/৯৩ পৃঃ।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/১১৬১, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৩, ৩/৯১ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/১১৩০, ১/১৬০ পৃঃ, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১৮৭, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৯, ৩/১০০ পৃঃ।
 (৫) গ্রামবাসীর উপর জুম‘আ নেই এবং শহর ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না বলে বিশ্বাস করাঃ
শহর ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না বলে সন্দেহ করা এবং এজন্য জমু‘আর পরে ‘আখেরী যোহর’ পড়া সুন্নাত বিরোধী  আমল। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ জাল।
عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لاَ جُمُعَةَ وَلاَ تَشْرِيْقَ إِلاَّ فِىْ مِصْرٍ جَامِعٍ.
আলী (রাঃ) বলেন, শহর ছাড়া জুম‘আ ও তাশরীক নেই।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। কারণ মারফূ‘ সূত্রে এর কোন ভিত্তি নেই।[2]  উল্লেখ্য যে, উক্ত মিথ্যা বর্ণনা দ্বারাই হেদায়া লেখক গ্রামে জুম‘আর ছালাত শুদ্ধ হবে না বলে দাবী করেছেন।[3] অথচ নিম্নের ছহীহ হাদীছগুলো তার চোখে পড়েনি।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. বায়হাক্বী , সুনানুল কুবরা হা/৫৮২৩; আবু ইউসুফ, আল-আছার হা/৬০।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯১৭, ২/৩১৭।
[3]. হেদায়াহ ১/১৬৮ পৃঃ-
لَا تَصِحُّ الْجُمُعَةُ إلَّا فِىْ مِصْرٍ جَامِعٍ أَوْ فِىْ مُصَلَّى الْمِصْرِ وَلَا تَجُوْزُ فِى الْقُرَى ) لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ
গ্রামে-গঞ্জে জুম‘আ পড়ার ছহীহ হাদীছ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ إِنَّ أَوَّلَ جُمُعَةٍ جُمِّعَتْ فِى الإِسْلاَمِ بَعْدَ جُمُعَةٍ جُمِّعَتْ فِىْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ  بِالْمَدِيْنَةِ لَجُمُعَةٌ جُمِّعَتْ بِجُوَاثَاءَ قَرْيَةٍ مِنْ قُرَى الْبَحْرَيْنِ. قَالَ عُثْمَانُ قَرْيَةٌ مِنْ قُرَى عَبْدِ الْقَيْسِ.
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় মসজিদে নববীতে জুম‘আ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম যে জুম‘আ ছালাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেটা জুছা গ্রামে, যা ছিল বাহরাইনের কোন একটি গ্রাম। ওছমান (রাঃ) বলেন, আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের কোন এক গ্রামে।[1]
উক্ত হাদীছ উল্লেখ করার পূর্বে ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, بَابُ الْجُمُعَةِ فِى الْقُرَى وَالْمُدُنِ ‘গ্রামে ও শহর সমূহে জুম‘আর ছালাত’ অনুচ্ছেদ। ইমাম  আবুদাঊদ (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, بَابُ الْجُمُعَةِ فِى الْقُرَى ‘গ্রামে গ্রামে জুম‘আর ছালাত’ অনুচ্ছেদ। উল্লেখ্য যে, ‘হেদায়া’ কিতাবটি রচনা করা হয়েছে হাদীছের মূল গ্রন্থসমূহ সংকলনের প্রায় দুইশ’ বছর পরে। উক্ত হাদীছগুলো লেখকের দৃষ্টিগোচর হয়নি এমনটি বলা যাবে কি?
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُمْ كَتَبُوْا إِلَى عُمَرَ يَسْأَلُوْنَهُ عَنِ الْجُمُعَةِ؟ فَكَتَبَ جَمِّعُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ.
(ইয়ামনবাসীরা) ওমর (রাঃ)-এর নিকট চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করল জুম‘আর ছালাত সম্পর্কে। তখন তিনি তার উত্তরে লিখে পাঠান, যেখানে তোমরা অবস্থান করবে সেখানেই জুম‘আর ছালাত আদায় করবে।[2]
عَنِ ابْنِ عُمَر أَنَّهُ كَانَ يَرَى أَهْلَ الْمِيَاهِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةَ يُجَمِّعُوْنَ فَلَا يَعِيْبُ عَلَيْهِمْ.
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি মক্কা-মদ্বীনার মাঝের অঞ্চলের লোকদেরকে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে দেখতেন, কিন্তু তাদেরকে দোষারোপ করতেন না।[3]
অতএব গ্রামে জুম‘আ হবে না এমন দাবী সঠিক নয়। দুঃখজনক হল, জাল হাদীছের আমলই সমাজে চালু আছে। ছহীহ হাদীছের আমল সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। ছহীহ হাদীছের প্রতি আত্মসমর্পণ না করে গ্রামের মসজিদে জুম‘আর ছালাত হবে না ভেবে ‘আখেরী যোহর’ চালু করা হয়েছে। একটি জাল হাদীছকে রক্ষা করতে গিয়ে আরেকটি বিদ‘আত চালু করা হয়েছে। একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী।[4]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/১০৬৮, ১/১৫৩ পৃঃ; বুখারী হা/৮৯২, ১/১২২ পৃঃ ও হা/৪৩৭১, (ইফাবা হা/৮৪৮, ২/১৭৩ পৃঃ)।
[2]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫১০৮; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৫৯৯-এর আলোচনা দ্রঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৩২।
[3]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫১৮৫; সনদ ছহীহ, ফাৎহুল বারী হা/৮৯২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; ইরওয়াউল গালীল হা/৫৯৯-এর আলোচনা দ্রঃ।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯১৭-এর আলোচনা দ্রঃ-
لَمَّا سَافَرْتُ فِىْ رَمَضَانَ سَنَةَ ১৩৯৬ إِلَى بَرِيْطَانِيَا سَرَّنِىْ جِدًّا أَنَّنِىْ رَأَيْتُ الْمُسْلِمِيْنَ فِىْ لَنْدَنْ يُقِيْمُوْنَ صَلاَةَ الْجُمُعَةِ وَالْعِيْدِ أَيْضًا وَبَعْضُهُمْ يُصَلُّوْنَ الْجُمُعَةَ فِىْ بُيُوْتٍ اِشْتَرَوْهَا أَوِ اسْتَأْجَرُوْهَا وَجَعَلُوْهَا ( مصليات ) يُصَلُّوْنَ فِيْهَا الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَالْجُمُعَاتِ فَقُلْتُ فِىْ نَفْسِىْ لَقَدْ أَحْسَنَ هَؤُلاَءِ بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى هَذِهِ الْعِبَادَةِ الْعَظِيْمَةِ هِنَا فِىْ بِلاَدِ الْكُفْرِ وَلَوْ تَعَصَّبُوْا لِمَذْهَبِهِمْ وَجَلِّهِمْ مِنَ الْحَنَفِيَّةِ لَعَطَّلُوْهَا وَصَلُّوْهَا ظُهْرًا! فَازْدَدْتُ يَقِيْنًا بِأَنَّهُ لاَ سَبِيْلَ إِلَى نَشْرِ الْإِسْلاَمِ وَالْمُحَافَظَةِ عَلَيْهِ إِلاَّ بِالْاِسْتِسْلاَمِ لِنُصُوْصِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَاتَّبَاعِ السَّلَفِ الصَّالِحِ الْمُسْتَلْزَم الْخُرُوْجُ عَنِ الْجُمُوْدِ الْمَذْهَبِىِّ إِلَى فَسِيْحِ دَائِرَةِ الْإِسْلاَمِ الَّذِىْ بِنُصُوْصِهِ الَّتِىْ لاَ تُبْلَى يَصْلُحُ لِكُلِّ زَمَانٍ وَمَكَانٍ وَلَيْسَ بِالتَّعَصُّبِ الْمَذْهَبِىِّ.।
 (৬) আখেরী যোহর পড়াঃ
গ্রামে বা মহল্লায় জুম‘আর ছালাত হবে না সন্দেহ করে অনেক মুছল্লী জুম‘আর ছালাতের পর চার রাক‘আত যোহর ছালাত আদায় করে থাকে। এটা একটি বিদ‘আতী প্রথা।[1] তাছাড়া সন্দেহের উপর তো কোন ইবাদত হয় না।
[1]. আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, পৃঃ ১৩৯, নং ৭২।
(৭) ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস দ্বারা তৈরি মিম্বারে বসে খুৎবা দান করাঃ
কোন মসজিদে পাথর বা টাইলস দ্বারা মিম্বার তৈরি করা হলে তাকে বর্জন করা উচিৎ। এমতাবস্থায় ইমামকে সুন্নাতের প্রতি কঠোর হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। কারণ সুন্নাত হল কাঠ দ্বারা মিম্বার তৈরী করা এবং মিম্বারের তিনটি স্তর হওয়া। যেমন হাদীছে এসেছে,
أَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ  إِلَى فُلَانَةَ امْرَأَةٍ مِنْ الْأَنْصَارِ قَدْ سَمَّاهَا سَهْلٌ مُرِىْ غُلَامَكِ النَّجَّارَ أَنْ يَعْمَلَ لِىْ أَعْوَادًا أَجْلِسُ عَلَيْهِنَّ إِذَا كَلَّمْتُ النَّاسَ فَأَمَرَتْهُ فَعَمِلَهَا مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ ثُمَّ جَاءَ بِهَا فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ  فَأَمَرَ بِهَا فَوُضِعَتْ هَا هُنَا.
‘রাসূল (ছাঃ) জনৈক আনছারী মহিলার নিকট লোক পাঠান। তার নাম সাহল। এই মর্মে যে, তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রী গোলামকে নির্দেশ দাও সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের আসন তৈরি করে। যার উপর বসে আমি জনগণের সাথে কথা বলব। ঐ মহিলা তার গোলামকে উক্ত মর্মে নির্দেশ দিলে সে গাবার ঝাউ কাঠ দিয়ে তা তৈরি করে নিয়ে আসে। অতঃপর মহিলা তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেয়। রাসূল (ছাঃ) তাকে এই স্থানে স্থাপন করার নির্দেশ দেন।[1]
উক্ত হাদীছ ইবনু খুযায়মাতে ছহীহ সনদে এসেছে, فَعَمِلَ هَذِهِ الثَّلاَثَ الدَّرَجَاتِ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ ‘অতঃপর সে গাবার ঝাউ গাছ থেকে তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বার তৈরি করেছিল’।[2] ত্বাবারাণীতে এসেছে, তিন স্তর বিশিষ্ট করার জন্য রাসূল (ছাঃ)-ই নির্দেশ দিয়েছিলেন।[3] এছাড়া রাসূল (ছাঃ) একদা মিম্বারের তিন স্তরে উঠে তিনবার আমীন বলেছিলেন মর্মেও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[4]
অতএব মিম্বার তিন স্তরের বেশী করা সুন্নাতের বরখেলাফ।[5] এধরনের মিম্বার সরিয়ে তিনস্তর বিশিষ্ট কাঠের মিম্বার তৈরি করে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৯১৭, ১/১২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৭১, ২/১৮৪ পৃঃ), ‘জুম‘আ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১১১৩, পৃঃ ৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৪৫, ৩/৬৫, ‘কাতারে দাঁড়ানো’ অনুচ্ছেদ।
[2]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫২১; ইবনু মাজাহ হা/১৪১৪; মুসনাদে আহমাদ হা/২২৯২২; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬; সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮।

[3]. সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮; ত্বাবারাণী, আল- মু‘জামুল কাবীর হা/৫৭৪৮-
مُرِىْ غُلامَكِ النَّجَّارَ يَعْمَلُ لِىْ أَعْوَادًا أُكَلِّمُ النَّاسَ عَلَيْهَا فَعَمِلَ لَهُ هَذِهِ الثَّلاثَ الدَّرَجَاتِ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ فَأَمَرَ بِهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْنِي الدَّرَجَاتِ
[4]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬, সনদ ছহীহ।
[5]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ।
 (৮) মিম্বরের পাশে বসা ব্যক্তিদের সাথে সালাম বিনিময় করা :
অনেক মসজিদে ইমাম পৌঁছে মিম্বারের পাশের ব্যক্তিদেরকে সালাম করেন। কিন্তু সুন্নাত হল, মিম্বরে বসে সকলকে লক্ষ্য করে সালাম দেয়া। আশে পাশের লোকদেরকে সালাম দেয়ার পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا دَنَا مِنْ مِنْبَرِهِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ سَلَّمَ عَلَى مَنْ عِنْدَهُ مِنَ الْجُلُوْسِ فَإِذَا صَعِدَ الْمِنْبَرَ اسْتَقْبَلَ النَّاسَ بِوَجْهِهِ ثُمَّ سَلَّمَ.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জুম‘আর দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মিম্বরের কাছাকাছি পৌঁছতেন তখন মিম্বরের নিকটে বসা ব্যক্তিদের সালাম দিতেন। অতঃপর যখন মিম্বরে উঠে মানুষের দিকে মুখ করতেন তখন আবার সালাম দিতেন।[1]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ওয়ালীদ বিন মুসলিম এবং ঈসা বিন আব্দুল্লাহ নামে দুইজন মুদাল্লিস রাবী আছে।[2] বরং ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) মিম্বরে উঠার সময় সালাম দিতেন।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِىَّ  كَانَ إِذَا صَعِدَ الْمِنْبَرَ سَلَّمَ.
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে উঠতেন তখন সালাম দিতেন।[3]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৫৮৫২।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯৪।
[3]. ইবনু মাজাহ হা/১১০৯, পৃঃ ৭৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৭৬।
(৯) জুম‘আর খুৎবা দুই রাক‘আত ছালাতের সমানঃ
সমাজে উক্ত ধারণা প্রচলিত থাকলেও এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। বরং যেগুলো বর্ণিত হয়েছে তার সবই যঈফ।
(أ) عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّهُ قَالَ إِنَّمَا جُعِلَتِ الْخُطْبَةُ مَكَانَ الرَّكْعَتَيْنِ فَإِنْ لَمْ يُدْرِكِ الْخُطْبَةَ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا.
(ক) ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, খুৎবাকে দুই রাক‘আতের সমান করা হয়েছে। সুতরাং যে খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত ছালাত পড়ে নেয়।[1]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। কারণ আমর ইবনু শু‘আইব ও ওমর (রাঃ)-এর মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। আর আমর ইবনু শু‘আইব ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি। অথচ হাদীছটি সরাসরি বর্ণনা করা হয়েছে।[2]
(ب) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ الْخُطْبَةَ فَالْجُمُعَةُ رَكْعَتَانِ وَمَنْ لَمْ يُدْرِكْهَا فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا.
(খ) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খুৎবা পাবে তার জন্য জুম‘আর ছালাত দুই রাক‘আত। আর যে খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত পড়ে নেয়।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মুনকার। যদিও হাফেয নূরুদ্দ্বীন আলী ইবনে আবুবকর হায়ছামী (মৃঃ ৮০৭ হিঃ) এর রাবীদের নির্ভরযোগ্য বলেছেন।[4] ছহীহ হাদীছ রয়েছে যে, যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত পাবে, সে আরেক রাক‘আত পড়ে নিবে।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ  قَالَ مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْجُمُعَةِ رَكْعَةً فَلْيُصَلِّ إِلَيْهَا أُخْرَى.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত পাবে সে যেন তার সাথে পরের রাক‘আত পড়ে নেয়।[5]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/৫৩৬৭, ২/১২৮।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২০০; ইরওয়াউল গালীল হা/৬০৫; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৩৮।
[3]. ত্বাবারাণী হা/৯৫৪৮।
[4]. মাজমাউয যাওয়াইদ হা/৩১৬৪।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১১২১; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৬২২, ৩/৮৪ পৃঃ।
 (১০) খুৎবার সময় ইমামের দিকে লক্ষ্য না করাঃ
ইমাম যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা শুরু করবেন, তখন সকল মুছল্লী তার দিকে লক্ষ্য করবেন। এটাই ছিল ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ।
عَنْ أَبِىْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ جَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ  عَلَى الْمِنْبَرِ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে বসতেন তখন আমরাও তাঁর আশে পাশে বসতাম।[1]
عَنْ عَدِىِّ بْنِ ثَابِتٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ  إِذَا قَامَ عَلَى الْمِنْبَرِ اسْتَقْبَلَهُ أَصْحَابُهُ بِوُجُوْهِهِمْ.
আদী ইবনু ছাবেত (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে বসতেন তখন তাঁর ছাহাবীগণ তাদের মুখমন্ডলসহ তাঁর দিকে ঘুরে বসতেন।[2] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
وَهَذِهِ مِنَ السُّنَنِ الْمَتْرُوْكَةِ فَعَلَى الْمُحِبِّيْنَ لَهَا إِحْيَاؤُهَا حَيَّاهُمُ اللهُ تَعَالَى وَبَيَّاهُمْ وَجَعَلَ الْجَنَّةَ مَأْوَانَا وَمَأْوَاهُمْ بِفَضْلِهِ وَكَرْمِهِ.
‘পরিত্যক্ত সুন্নাতগুলোর মধ্যে এটি একটি। সুতরাং যারা সুন্নাতকে মহববত করে তাদের উচিৎ তাকে পুনর্জ্জীবিত করা। তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের সম্মান দান করবেন এবং দয়া করবেন। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার বিনিময়ে আমাদের ও তাদের স্থান জান্নাতে নির্ধারণ করুন’।[3]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/২৪৭০; বুখারী হা/৯২১ ও ১৪৬৫; মিশকাত হা/১৬৩০।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/১১৩৬।
[3]. তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৩৩।
 (১১) খুৎবার সময় মসজিদে এসে ছালাত না পড়েই বসে পড়াঃ
উক্ত কাজ সুন্নাত বিরোধী। ইমাম খুৎবা দিলেও দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত পড়ে বসতে হবে। নিষেধের পক্ষে যে হাদীছ প্রচার করা  হয় তা মিথ্যা।
(أ) عَنْ عَلِىٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ   لاَتُصَلُّوْا وَ الْإِمَامُ يَخْطُبُ.
(ক) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছ) বলেন, ইমাম খুৎবা দেওয়া অবস্থায় তোমরা ছালাত আদায় কর না।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। তাছাড়া ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী।[2] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
(ب) عَنِ ابْنِ عُمَرَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ وَالْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ فَلاَ صَلاَةَ  وَلاَ كَلاَمَ  حَتَّى يَفْرُغَ الْإِمَامُ.
(খ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, ইমাম খুৎবা দেওয়া অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত কোন ছালাত নেইও কোন কথাও নেই।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি বাতিল। শায়খ আলবানী বলেন, وَإِنَّمَا حَكَمْتُ عَلَى الْحَدِيْثِ بِالْبُطْلاَنِ لِأَنَّهُ مَعَ ضَعْفِ سَنَدِهِ يُخَالِفُ حَدِيْثَيْنِ صَحِيْحَيْنِ. ‘আমি এই হাদীছের উপর বাতিল হওয়ার হুকুম আরোপ করেছি। কারণ এর সনদ যঈফ হওয়ার পাশাপাশি দুইটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী’। [4]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. আবু সাঈদ মালীনী, আল-ইহকামু উস্তা, ২/১১২ পৃঃ।
[2]. তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৪৩৩।
[3]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৮৪ পৃঃ।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ ১/১৯৯-২০১ পৃঃ, হা/৮৭।
খুৎবার সময় ছালাত আদায় করার ছহীহ দলীল
عَنْ جَابِرٍ قَالَ دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ   يَخْطُبُ فَقَالَ أَصَلَّيْتَ قَالَ لَا قَالَ قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ.
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি জুম‘আর দিনে মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূল (ছাঃ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি ঐ লোকটিকে বললেন, তুমি কি ছালাত আদায় করেছ? সে বলল, না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি দাঁড়াও দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। [1] ইমাম বুখারী (রহঃ) নিম্নোক্ত মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, بَابُ إِذَا رَأَى الْإِمَامُ رَجُلًا جَاءَ وَهُوَ يَخْطُبُ أَمَرَهُ أَنْ يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ ‘ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় যখন কোন ব্যক্তিকে মসজিদে আসতে দেখবেন তখন তিনি তাকে নির্দেশ দিবেন সে যেন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে’ অনুচ্ছেদ। আরেকটি অধ্যায় রচনা করেছেন, بَابُ مَنْ جَاءَ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ‘ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় যে মসজিদে আসবে সে যেন সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে’ অনুচ্ছেদ।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  وَهُوَ يخْطُبُ إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ وَلْيَتَجَوَّزْ فِيْهِمَا.
জাবের (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা খুৎবা প্রদানকালে বলেন, ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় জুম‘আর দিনে তোমাদের কেউ যদি মসজিদে আসে সে যেন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে। আর এর মাঝে সংক্ষেপ করে।[2]
অতএব মসজিদে যখনই প্রবেশ করবে তখনই দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। উক্ত হাদীছগুলো জানার পরও যদি কেউ আমল না করে তাহলে তার পরিণাম কী হতে পারে? অথচ হেদায়ার মধ্যে জাল হাদীছের আলোকে এ সময় ছালাত আদায় করতে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে।[3]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৯৩০ ও ৯৩১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৭, (ইফাবা হা/৮৮৩ ও ৮৮৪, ২/১৯০-১৯১ পৃঃ) ; ছহীহ মুসলিম হা/২০৫৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৭, (ইফাবা হা/১৮৯০, ১৮৯২)।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০৬১, (ইফাবা হা/১৮৯৪); মিশকাত হা/১৪১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩৭২, ৩/১৯৮ পৃঃ।
[3]. হেদায়া ১/১৭১ পৃঃ-(
وَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ تَرَكَ النَّاسُ الصَّلَاةَ وَالْكَلَامَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ )।
 (১২) লাঠি ছাড়া খুৎবা দেওয়াঃ
হাতে লাঠি নিয়ে জুম‘আর খুৎবা প্রদান করা সুন্নাত। হাকাম ইবনু হাযন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে জুম‘আর দিন হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিতে দেখেছি।[1] অনুরূপ ঈদের মাঠে এবং অন্যান্য স্থানেও বক্তব্যের সময় রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নিতেন।[2]
উলে­খ্য, মিম্বর তৈরীর পর রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নেননি বলে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) দাবী করেছেন। কিন্তু উক্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই।[3]। শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত দলীল বিহীন বক্তব্য উল্লেখ করে শুধু জুম‘আর খুৎবার বিষয়টি সমর্থন করেছেন। তবে ঈদের খুৎবাসহ অন্যান্য বক্তব্যের সময় হাতে লাঠি নেওয়া যাবে বলে উল্লে­খ করেছেন।[4]
মূল কথা হল, মিম্বর তৈরির পরও রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছেন। কারণ মিম্বর তৈরি হয়েছে ৫ম হিজরীতে আর হাকাম বিন হাযন ৮ম হিজরীতে ইমলাম গ্রহণ করে মদ্বীনায় আগমন করেন এবং জুম‘আর দিনে রাসূল (ছাঃ)-কে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিতে দেখেন।[5] উল্লেখ্য, হাকাম বিন হাযন (রাঃ) কত সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন সে ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী বলেন, ৮ম হিজরীই সঠিক।[6]
দ্বিতীয়তঃ হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার হাদীছটি ব্যাপক। রাসূল (ছাঃ) সব সময় হাতে লাঠি নিতেন বলে প্রমাণিত হয়। তৃতীয়তঃ মিম্বর তৈরির পর  তিনি আর হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেননি, একথার পক্ষে কোন দলীল নেই। চতুর্থতঃ ছাহাবীদের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।[7]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ আবুদাঊদ, সনদ হাসান, হা/১০৯৬, ১/১৫৬ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল হা/৬১৬, ৩/৭৮; বায়হাক্বী ৩/২০৬, সনদ ছহীহ; বুলূগুল মারাম হা/৪৬৩।
[2]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১১৪৫, ১/১৬২ পৃঃ, সনদ হাসান; ইরওয়াউল গালীল হা/৬৩১, ৩/৯৯; আহমাদ ৩/৩১৪, সনদ ছহীহ।
[3]. যাদুল মা‘আদ ১/৪১১ পৃঃ।
[4]. আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৪, ২/৩৮০-৮৩ পৃঃ।
[5]. ছহীহ আবুদাঊদ, সনদ হাসান, হা/১০৯৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৬১৬, ৩/৭৮।
[6]. ইতহাফুল কেরাম শরহে বুলূগুল মারাম, পৃঃ ১৩২।
[7]. তারীখে বাগদাদ ১৪/৩৮ পৃঃ।
 (১৩) বিনা কারণে জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করলে কাফফারা দেওয়া :
জুম‘আর ছালাত পরিত্যাগ করা মহা অন্যায়। কোন কারণ ছাড়াই কেউ যদি জুম‘আ ত্যাগ করে, তবে তাকে মুনাফিকদের তালিকাভুক্ত করা হয়।[1] অলসতা করে পর পর তিন জুম‘আ পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।[2] তাই ছুটে গেলে খালেছ অন্তরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তওবা করতে হবে। কাফফারা দেওয়ার কোন ছহীহ বর্ণনা নেই। এ সম্পর্কে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে তা যঈফ। যেমন-
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِىِّ  قَالَ مَنْ تَرَكَ الْجُمُعَةَ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلْيَتَصَدَّقْ بِدِيْنَارٍ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَبِنِصْفِ دِيْنَارٍ.
সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করবে সে যেন এক দ্বীনার ছাদাক্বা করে। আর তা যদি না থাকে তাহলে অর্ধ দ্বীনার ছাদাক্বা করে।[3]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ قُدَامَةَ بْنِ وَبَرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  مَنْ فَاتَتْهُ الْجُمُعَةُ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَلْيَتَصَدَّقْ بِدِرْهَمٍ أَوْ نِصْفِ دِرْهَمٍ أَوْ صَاعِ حِنْطَةٍ أَوْ نِصْفِ صَاعٍ.
কুদামা বিন ওয়াবারা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিনা কারণে যার জুম‘আর ছালাত ছুটে যাবে সে যেন এক দিরহাম বা অর্ধ দিরহাম কিংবা এক ছা‘ বা অর্ধ ছা‘ গম ছাদাক্বা দেয়।[5]
তাহক্বীক্ব : এটিও যঈফ।[6]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ তারগীব হা/৭২৯।
[2]. আবুদাঊদ হা/১৯৫২; মিশকাত হা/১৩৭১, সনদ ছহীহ।
[3]. আবুদাঊদ হা/১০৫৩, পৃঃ ১৫১; নাসাঈ হা/১৩৭২; ইবনু মাজাহ হা/১১২৮; মিশকাত হা/১৩৭৪।
[4]. যঈফ আবুদাঊদ হা/১০৫৩, পৃঃ ১৬৬।
[5]. আবুদাউদ হা/১০৫৪, পৃঃ ১৫১।
[6]. যঈফ আবুদাঊদ হা/১০৫৪, পৃঃ ১৬৭।
 (১৪) ফযীলতের আশায় জুম‘আর দিন পাগড়ী পরিধান করাঃ
অধিক ফযীলত মনে করে অনেকে এই দিনে পাগড়ী পরে থাকে। জুম‘আর দিন পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে যত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল।
عَنْ أَبِى الدَّرْدَاءِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى أَصْحَابِ الْعَمَائِمِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ.
আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এবং ফেরেশতামন্ডলী জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তিদের উপর রহম করেন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আইয়ূব ইবনু মুদরাক নামে মিথ্যুক রাবী রয়েছে।[2] ইমাম ইবনুল জাওযী এই বর্ণনাকে জাল হাদীছের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।[3] শায়খ আলবানীও জাল বলেছেন।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ إِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُوْلُ صَلاَةٌ بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ صَلاَةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ وَجُمُعَةٌ بِعِمَامَةٍ تَعْدِلُ سَبْعِيْنَ جُمُعَةً بِغَيْرِ عِمَامَةٍ إِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَيَشْهَدُوْنَ الْجُمُعَةَ مُعْتَمِّيْنَ وَلاَ يَزَالُوْنَ يُصَلُّوْنَ عَلَى أَصْحَابِ الْعَمَائِمِ حَتىَّ تَغْرُبَ الشَّمْسُ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, পাগড়ী মাথায় দিয়ে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে পাগড়ী বিহীন ২৫ ওয়াক্ত ছালাতের সমান নেকী হয় এবং পাগড়ী পরে এক জুম‘আ পড়লে পাগড়ী বিহীন ৭০ জুম‘আর সমপরিমাণ নেকী হয়। নিশ্চয় ফেরেশতারা পাগড়ী পরে জুম‘আর ছালাতে শরীক হন। তারা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকেন।[5]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্বাস ইবনু কাছীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, বর্ণনাটি জাল।[7]
জ্ঞাতব্য : উক্ত ফযীলতের আশা না করে কেউ চাইলে পাগড়ী পরতে পারে। রাসূল (ছাঃ) কখনো জুম‘আর দিন পাগড়ী পরে খুৎবা দিতেন।[8]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. হিলইয়া ৫/১৮৯-১৯০।
[2]. ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
[3]. কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯, ১/২৯২-২৯৩ পৃঃ।
[5]. ইবনু নাজ্জার, সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭, ১/২৪৯ পৃঃ।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/২৪৯ পৃঃ।
[7]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান ৩/২৪৪ পৃঃ-
هَذَا حَدِيْثٌ مَوْضُوْعٌ
[8]. ছহীহ মুসলিম হা/৩৩৭৭ ও ৩৩৭৮, ১/৪৩৯-৪৪০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩১৭৭-৭৮); মিশকাত হা/১৪১০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২৬, ৩/১৯৮ পৃঃ।
 (১৫) দু‘আ চাওয়া এবং সালামের পর সম্মিলিত মুনাজাত করাঃ
জুম‘আর দিন দু‘আ চাওয়া একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। অনেক মসজিদে ফরয ছালাত কিংবা জুম‘আর ছালাতের পর কেউ কেউ পিতা-মাতা বা নিজের রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দু‘আ চায়। অনেকে ইমামের নিকট পত্র লিখে দু‘আ চায়। অথচ দু‘আ চাওয়ার এই নিয়মটি সুন্নাত সম্মত নয়। মূলতঃ ছালাতের পরে প্রচলিত মুনাজাত চালু থাকার কারণেই দু‘আ চাওয়ার এই পদ্ধতিও চালু আছে। অনেক মসজিদে অন্যান্য ছালাতের পরে বিদ‘আতী মুনাজাত হয় না কিন্তু জুম‘আর দিনে হয়। কারণ ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ সেদিন ছালাতে হাযির হয় এবং মসজিদে কিছু দান করে দু‘আ চায়। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের থেকে উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দু‘আ চাওয়ার নিয়ম হল- কোন সমস্যায় পড়লে বা রোগাক্রান্ত হলে এলাকার জীবিত পরহেযগার, দ্বীনদার, হক্বপন্থী আলেমের কাছে গিয়ে দু‘আর জন্য আবেদন করা। তখন তিনি প্রয়োজনে ওযূ করে ক্বিবলামুখী হয়ে হাত তুলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন। ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাইতেন।
আউত্বাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে তিনি স্বীয় ভাতিজা আবু মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, তুমি আমার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম পৌঁছে দিবে এবং আমার জন্য ক্ষমা চাইতে বলবে। অতঃপর তাঁর কাছে বলা হল। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,
دَعَا النَّبِىُّ  بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِىْ عَامِرٍ وَرَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ثُمَّ قَالَ اللهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيْرٍ مِنْ خَلْقِكَ مِنَ النَّاسِ.
নবী করীম (ছাঃ) পানি চাইলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু আমের উবাইদকে ক্ষমা করে দিন। (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন আপনি তাকে আপনার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিন’।[1]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَدِمَ الطُّفَيْلُ بْنُ عَمْرِو الدَّوْسِى عَلَى رَسُوْلِ اللهِ  فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ دَوْسًا قَدْ عَصَتْ وَأَبَتْ فَادْعُ اللهَ عَلَيْهَا فَاسْتَقْبَلَ رَسُوْلُ اللهِ  الْقِبْلَةَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَظَنَّ النَّاسُ أَنَّهُ يَدْعُوْ عَلَيْهِمْ فَقَالَ اللهُمَّ! اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা তুফাইল ইবনু আমর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! দাউস গোত্র অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন। তখন রাসূল (ছাঃ) ক্বিবলামুখী হলেন এবং দু’হাত তুললেন। লোকেরা ধারণা করল যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদ দু‘আ করবেন। কিন্তু তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি দাউস গোত্রকে হেদায়াত দান করুন এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখান’।[2]
দ্বিতীয়তঃ সবার কাছে দু‘আ চাইতে পারে। তখন সকলে নিজ নিজ ঐ ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে। তা ছালাতের মধ্যে হোক বা ছালাতের বাইরে হোক। ইমামও কারো পক্ষে থেকে সবার নিকট দু‘আ চাইতে পারেন যাতে সকলে নিজ নিজ তার জন্য দু‘আ করে। ইমাম জুম‘আর দিন তার জন্য খুৎবায় দু‘আ করতে পারেন আর বাকীরা আমীন আমীন বলতে পারে।[3]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৪৩২৩, ৬৩৮৩, ২/৯৪৪ পৃঃ।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৬৩৯৭, ২/৯৪৬ পৃঃ।
[3]. ফাতাওয়া লাজনা ৮/২৩০-৩১ ও ৩০২ পৃঃ; আল্লামা উছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃঃ ৩৯২।
 (১৬) জুম‘আর দিন চুপ থেকে খুৎবা শুনলে ৭ কোটি ৭ লক্ষ ৭০ হাযার নেকী হবেঃ (মিথ্যা ও কাল্পনিক হাদিস)
জুম‘আর দিন বাড়ি থেকে ওযূ করে মসজিদে গিয়ে ছালাতের শেষ পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকলে উক্ত ছওয়াব পাওয়া যাবে মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। উক্ত ফযীলত মিথ্যা ও কাল্পনিক। তবে জুম‘আর দিন মসজিদে গিয়ে সাধ্য অনুযায়ী ছালাত আদায় করে খুৎবার শেষ পর্যন্ত চুপ থাকার ফযীলত ছহীহ হাদীছ সমূহে পাওয়া যায়।
عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ فَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَقُولُ مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنَ الإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا.
আউস ইবনু আউস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন কাপড় ধৌত করবে ও গোসল করবে এবং সকাল সকাল প্রস্ত্ততি নিবে ও সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে অতঃপর ইমামের কাছাকাছি বসবে এবং মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করবে ও অনর্থক কোন কাজ করবে না, তার জন্য প্রত্যেক ধাপে এক বছরের নফল ছিয়াম ও এক বছরের নফল ছালাতের ছওয়াব হবে।[1]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ  قَالَ مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কেউ যদি জুম‘আর দিন গোসল করে মসজিদে আসে এবং সম্ভবপর কিছু ছালাত আদায় করতঃ খুৎবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকে, অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে তাহলে তার দু’জুম‘আর মধ্যেকার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং আরো তিন দিন বেশী ক্ষমা করা হবে’।[2]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৩৪৫, ১/৫০ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২৯; তিরমিযী হা/৪৯৬; মিশকাত হা/১৩৮৮, পৃঃ ১২২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩০৬, ৩/১৯০ পৃঃ।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/২০২৪, ১/২৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৫৭); মিশকাত হা/১৩৮২, ১২২ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩০০, ৩/১৮৮ পৃঃ; ছহীহ বুখারী হা/৮৮৩, ১/১২১ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩৯, ২/১৭০ পৃঃ); মিশকাত হা/১৩৮১।
 (১৭) জুম‘আর দিন আছর ছালাতের পর ৮০ বার দরূদ পড়াঃ (মিথ্যে হাদিস)
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  مَنْ صَلَّى عَلَىَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثَمَانِيْنَ مَرَّةً غَفَرَ اللهُ لَهُ ذُنُوْبَ ثَمَانِيْنَ عَامًا فَقِيْلَ لَهُ وَكَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ تَقُوْلُ اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُوْلِكَ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَتَعْقُدُ وَاحِدًا.
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে আমার উপর ৮০ বার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল, কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, তুমি একাকী বসে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন, যিনি আপনার বান্দা, আপনার নবী ও আপনার নিরক্ষর রাসূল (ছাঃ)।
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা মিথ্যা। এর সনদে ওয়াহাব ইবনু দাঊদ ইবনু সুলায়মান যারীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে।[1]
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন বইয়ে লেখা আছে, জুম‘আর দিন আছর ছালাতান্তে উক্ত স্থানে বসে ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মী ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া সাল্লিম তাসলীমা’ এ দরূদটি ৮০ বার পাঠ করলে আল্লাহ ৮০ বছরের ছগীরা গোনাহ মাফ করে দেন এবং তার আমলনামায় ৮০ বছরের নফল ইবাদতের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। এগুলো বানোয়াট গালগল্প মাত্র।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. সিলসিলা যঈফা হা/২১৫।
(১৮) জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করাঃ
কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন নির্ধারণ করা যাবে না। যেকোন দিন যেকোন সময় কবর যিয়ারত করতে পারে। শুধু জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।  যেমন-
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ النُّعْمَانِ يَرْفَعُ الْحَدِيْثَ إِلَى النَّبِيِّ   قَالَ مَنْ زَارَ قَبْرَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فِي كُلِّ جُمُعَةٍ غُفِرَ لَهُ وَكُتِبَ بَرًّا.
মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান (রহঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুম‘আর দিন তার মাতা-পিতার অথবা তাদের কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে।[1]
তাহক্বীক্ব : জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান নামের রাবী অপরিচিত। এছাড়া ইয়াহইয়া নামের রাবী মিথ্যুক। তার বর্ণিত হাদীছগুলো জাল।[2]
হাদিসের উৎসঃ
[1]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯০১; মিশকাত হা/১৭৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬৭৬, ৪/১০৫ পৃঃ।
[2]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯০১; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬০৫, মিশকাত হা/১৭৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬৭৬, ৪/১০৫ পৃঃ; দ্রঃ মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ, ১/১৮২ পৃঃ, হা/৩৬০
 (১৯) জুম‘আতুল বিদা পালন করা
রামাযানের শেষ জুম‘আকে ‘জুম‘আতুল বিদা’ বলা হয়। অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে কথা প্রচলিত আছে তা ডাহা মিথ্যা।
مَنْ قَضَى صَلَوَاتٍ مِنَ الْفَرَائِضِ فِىْ أَخِرِ جُمُعَةٍ مِنْ رَمَضَانَ كَانَ ذَلِكَ جَابِرًا لِكُلِّ صَلاَةٍ فَائِتَةٍ مِنْ عُمْرِهِ إِلَى سَبْعِيْنَ سَنَةً.
যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় ক্বাযা ছালাতগুলো আদায় করবে, তার জীবনের ৭০ বছরের ছুটে যাওয়া প্রত্যেক ছালাতের ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।[1]
তাহক্বীক্ব :  মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,
بَاطِلٌ قَطْعِيًّا لِأَنَّهُ مُنَاقِضٌ لِلْإِجْمَاعِ عَلَى أَنَّ شَيْئًا مِنَ الْعِبَادَاتِ لاَ يَقُوْمُ مَقَامَ فَائِتَةِ سَنَوَاتٍ ثُمَّ لاَ عِبْرَةَ بِنَقْلِ صَاحِبِ النِّهَايَةِ وَلاَ بَقِيَةَ شُرَّاحِ الْهِدَايَةِ لِأَنَّهُمْ لَيْسُوْا مِنَ الْمُحَدِّثِيْنَ وَلاَ أَسْنَدُوا الْحَدِيْثَ إِلَى أَحَدٍ مِنَ الْمُخَرِّجِيْنَ.
‘এটি চূড়ান্ত মিথ্যা কথা। এটা ইজমার বিরোধী। কারণ কোন ইবাদত বিগত বছরের ছুটে যাওয়া বিষয়ের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। অতঃপর ছাহেবে ‘নেহায়া’র এই বর্ণনা উল্লেখ করার মধ্যে কোন উপদেশ নেই। অনুরূপ হেদায়ার ভাষ্যকারদের মধ্যেও যের নেই। কারণ তারা মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত নন। এমনকি তারা এই হাদীছকে হাদীছের কোন সনদ বিশ্লেষণকারীর দিকে সম্বন্ধ করেননি।[2]
مَنْ صَلَّى فِىْ آخِرِ جُمُعَةٍ مِنْ رَمَضَانَ الْخَمْسَ الصَّلَوَاتِ الْمَفْرُوْضَةَ فِى الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ قَضَتْ عَنْهُ مَا أَخَلَّ بِهِ مِنْ صَلاَةِ سَنَتِهِ.
যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করবে তার ঐ বছরের (ত্রুটি মুক্ত) ফওত হয়ে যাওয়া ছালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।[3]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,
هَذَا مَوْضُوْعٌ لاَ إِشْكاَلَ فِيْهِ وَلَمْ أَجِدْهُ فِىْ شَيْءٍ مِنَ الْكُتُبِ الَّتِىْ جَمَعَ مُصَنِّفُوْهَا فِيْهَا الْأَحَادِيْثَ الْمَوْضُوْعَةَ وَلَكِنَّهُ اشْتُهِرَ عِنْدَ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَفَقِّهَةِ بِمَدِيْنَةِ صَنْعَاءَ فِىْ عَصْرِنَا هَذَا وَصَارَ كَثِيْرٌ مِنْهُمْ يَفْعَلُوْنَ ذَلِكَ وَلاَ أَدْرِىْ مَنْ وَضَعَهُ لَهُمْ فَقَبَّحَ اللهُ الْكَذَّابِيْنَ.
‘এটা যে জাল তাতে কোন জটিলতা নেই। লেখকগণ জাল হাদীছের গ্রন্থে যে সমস্ত হাদীছ জমা করেছেন সেই গ্রন্থ সমূহের মধ্যে আমি এই বর্ণনা পায়নি। তবে মদ্বীনার ছান‘আ অঞ্চলের ফক্বীহ শ্রেণীর লোকের মাঝে এটি খুব প্রসিদ্ধ। আর এটা বহু মানুষ আমলও করে থাকে। আমি জানি না কোন্ ব্যক্তি তাদের জন্য এটি জাল করেছে। তাই আল্লাহ মিথ্যুকদের উপর গযব বর্ষণ করুন।[4]
সুধী পাঠক! সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা ও উদ্ভট বিষয়কে নিয়ে সারা বিশ্বে ‘জুম‘আতুল বিদা’ পালন করা হয়। ঐ দিন মুছল্লীরা মসজিদে মসজিদে এত ভীড় জমায় তা কল্পনা করা যায় না। ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও আলেমগণ যদি শরী‘আতের দোহায় দিয়ে প্রচারণা চালান, তবে তাদের অবস্থা কী হবে? সাধারণ শিক্ষিত মানুষগুলোও এই মিথ্যা স্রোতে ভেসে যান। যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন মনে করেন না।
হাদিসের উৎসঃ
[1]. মোল্লা আলী আল-ক্বারী, আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮; মাওযূ‘আতুল কুবরা, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী, আল-আছারুল মারফূ‘আহ্ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ্ ১/৮৫; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ১/৫৪, নং ১১৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ...।

[2]. আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮।
[3]. মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আশ-শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৭), হা/১১৫, পৃঃ ৫৪।
[4]. আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ হা/১১৫-এর আলোচনা দ্রঃ, পৃঃ ৫৪।

জুমার সালাত সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর
মহিলাদের জুমার সালাতের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি
প্রশ্ন: মহিলাদের জুমার সালাতের সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর:
মহিলাদের জুমার সালাত সংক্রান্ত নিময়-পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত মাসায়েলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল:
ক. জুমার সালাত কেবল পুরুষদের জন্য ফরয; মেয়েদের জন্য নয়। সুতরাং মেয়েরা বাড়িতে যথা সময়ে নিয়ম মাফিক যোহরের সালাত আদায় করবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ
“জুমুআর নামায প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য/ফরয)। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়ঃ ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি।” [সুনান আবু দাউদ (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة), হা/১০৬৭। হাদিসটিকে ইমাম আলাবানি সহীহুল জামে কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হা/৩১১১]
খ. কোন মহিলা যদি বাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপদ সালাতের ব্যবস্থা আছে এমন কনো মসজিদে যায় অথবা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (তথা পিতা, ভাই, সন্তান, দাদা, চাচা ইত্যাদি) এর সাথে জুমা সমজিদে যায় তাহলে সেখানে পুরুষদের সাথে তাদের মতই জুমার সালাত কায়েম করবে। যদিও মহিলাদের জন্য মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে সালাত পড়া অধিক উত্তম।
মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হল:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْـمَسَاجِدَ ، وَبُيُوْتُهُنَّ خَيْرٌ لَـهُنَّ
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম’’। [সহিহ আবু দাউদ-শাইখ আলবানী, হা/৫৬৭]
আরেকটি হাদিস: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে।তিনি বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ إِذَا اسْتَأْذَنَّكُمْ إِلَيْهَا
‘‘তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না যদি তারা তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়’’। [মুসলিম, হাদিস নং ৪৪২]
গ. তারা মসজিদে গেলে অবশ্যই পূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে, পরপুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করবে এবং আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لاَ تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ ، وَلَكِنْ لِيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلاَتٌ
‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দিদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা যেন ঘর থেকে বের হয় কোন রকম সাজ-সজ্জা ও সুবাস-সুগন্ধ না লাগিয়ে’’। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৫; আহমদ: (২/৪৩৮),সহীহুল জামে-শাইখ আলবানী, হা/৭৪৫৭]
ঘ. বাড়িতে কেবল মহিলাদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার সালাত অথবা এককভাবে জুমার সালাত বৈধ নয়।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায় বলা হয়েছে:
إذا صلت المرأة الجمعة مع إمام الجمعة كَفَتهَا عن الظهر ، فلا يجوز لها أن تصليَ ظهر ذلك اليوم ، أما إن صلت وحدها فليس لها أن تصلي إلا ظهرا ، وليس لها أن تصلي جمعةانتهى
“যদি কোন মহিলা ইমামের সাথে জুমার সালাত আদায় করে তাহলে তা যোহর সালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ পরে পুনরায় তার যোহর সালাত পড়ার প্রয়োজন নাই)। আর সে যদি একাকী সালাত পড়ে তাহলে সে কেবল যোহর পড়বে। এককভাবে তার জন্য জুমা পড়া বৈধ নয়।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা/৭৩৩৭)
আল্লাহু আলাম
জুমার সালাত পড়তে না পারলে
প্রশ্ন: ছেলেদের জন্য জুমার সালাতের বিধান কি? যদি কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে কোন কারণে জুমার সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?
আমরা ব্রাজিলে আছি। আমার ছেলের জন্য সালাত ফরজ হয়ে গেছে। এখানে জুমার দিন স্কুল খোলা থাকে। মসজিদ যেহেতু দূরে তাই ছেলেকে আমাকেই মসজিদে নিয়ে যেতে হয়। আমি যখন হায়েজ অবস্থায় থাকি তখন আমি ছেলেকে নিয়ে মসজিদে যেতে এবং তাতে অবস্থান করতে পারব কি?
উত্তর:
● প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য মসজিদে জামাতের সাথে জুমার সালাত আদায় করা ফরয।
● কোন ব্যক্তি ওজর বশত: তা আদায় করতে না পারলে যথানিয়মে যোহরের সালাত আদায় করবে।
● স্বামীর অনুপস্থিতিতে আপনি ঋতুস্রাব অবস্থায়ও আপনার ছেলেকে দূরের মসজিদে নিয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ছেলে মসজিদে সালাত আদায় করবে আর আপনি মসজিদ সংলগ্ন কোনও ঘরে অথবা মসজিদের বাইরে অবস্থান করবেন। তবে আলাদা ঘর বা বাইরে অবস্থান সম্ভব না হলে আপনি এই অবস্থায় মহিলাদের জন্য নির্ধারিত সালাতের কক্ষেও অবস্থান করতে পারেন।
● কিন্তু যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি নিজে না গিয়ে আপনাদের পরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে তাকে মসজিদে পাঠানোর চেষ্টা করবেন।
● তাও সম্ভব না হলে এবং ছেলে একাকী মসজিদে যাওয়াকে অনিরাপদ মনে করলে সে ক্ষেত্রে অনন্যপায় হয়ে সে পার্শ্ববর্তী ওয়াক্তিয়া মসজিদে বা বাড়িতে যথানিয়মে যোহরের সালাত আদায় করবে।
আল্লাহু আলাম
জুমার দিন কি খুতবা শোনা ওয়াজিব? ওয়াজিব হলে খুতবা চলাকালীন তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়ার বিধান কি??
প্রশ্ন :- জুমার দিন কি খুতবা শোনা ওয়াজিব? ওয়াজিব হলে খুতবা চলাকালীন তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়ার বিধান কি??
জুমার খুতবা চলাকালীন সময় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ ছাড়া বাকি খুতবা শুনা ওয়াজিব। খুতবা চলার সময় বেচা-কেনা, দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত থাকা, গল্প-গুজব করা এমনকি কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নিষেধ। বরং মুসল্লির কর্তব্য হবে, খুব মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শোনা। তবে এ অবস্থায় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদের সালাত আদায় করা এই বিধানের বাইরে।
কেননা, খুতবা চলাকালীন সময় কেউ মসজিদ প্রবেশ করলেও রাসুল সা. হালকা ভাবে দু রাকআত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সুলাইক আল গাতাফানী রা. নামক সাহাবীকে খুতবা চলাকালীন সময় বসা থেকে উঠিয়ে তারপর দু রাকআত সালাত পড়ার পর বসতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মর্মে সহীহ মুসলিমের জুআর সালাত অধ্যায়ে ‘ইমামের খুতবা চলাকালীন সময়ে দু রাকাআত তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মাসজিদের সালাত আদায়’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে একাধিক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে।
মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেয়ার বিধান
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন, ওয়াজ-নছীহত ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
“আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” (সূরা ইবরাহীম: ৪)
রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং ছাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নছীহত করতেন। এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।
💠 • এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)
💠 • আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী ভাষায়ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)
💠 • আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ.) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)
💠 • হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে, ফারসী ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ।
💠 • হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়।
💠 • হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে।
(কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) (আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা ১/৯৮-৯৯)
💠 খুতবারা আগে বয়ান একটি বিদআত:
নিজ ভাষায় খুতবা না দেয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতীবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত। কারণ খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেন নি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এজন্যই এ সঊদী আরবের বরেণ্য মুফতী শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ:)কে মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান সম্পর্কে সওয়াল করা হলে তিনি তা সরাসরি জায়েজ বলে মন্তব্য করেন এবং একথা স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, খতীবকে নিজ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। (দেখুন: শাইখ ইবনে উসাইমীনের ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম)
বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু জামে মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়া হয়ে থাকে। বস্তুত: এটাই সুন্নত। এর বিপরীত সুন্নত বিরোধী কাজ যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করুন এবং যাবতীয় বিদআত পরিত্যাগ করার তাওফীক দিন (আমীন)
জুমার দিন খুতবা এবং সালাত কি একই ব্যক্তির মাধ্যমে হওয়া আবশ্যক?
প্রশ্ন: জুমার দিন যে খতিব সাহেব খুতবা দিবেন তাকেই কি জুমার সালাত পড়াতে হবে? একজন খুতবা দিয়ে অন্যজন সালাত পড়ালে তা কি সহিহ হবে? আশা করি, এ বিষয়ে দলিল সহ বিশ্লেষণ মূলক জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর:
জুমার দিন একজন খুতবা দিবে আর অন্যজন সালাত পড়াবে –এটি সঠিক কি না এ বিষয়ে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
তবে সঠিক কথা হল, এমন কোন শর্ত নাই যে, যে খুতবা দিবে তাকেই সালাত পড়াতে হবে। অর্থাৎ যদি একজন খুতবা দেয় আর কোন সমস্যার কারণে অন্যজন সালাত পড়ায় তাহলে তা সালাতের বিশুদ্ধতায় কোনই প্রভাব ফেলবে না। কেননা, খুতবা একটি ইবাদত আর সালাত আরেকটি পৃথক ইবাদত। সুতরাং দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইবাদত দুজনে বাস্তবায়ন করলে তা নাজায়েয হওয়ার কোন কারণ নেই।
বরং একই সালাতের মধ্যেই ইমাম সাহেবের বিশেষ কোন সমস্যার কারণে সালাত চলাকালীন আরেকজনকে ইমামতির দায়িত্ব দিতে পারে। এতে যেমন নামায সহিহ হয় অনুরূপভাবে খুতবা আর সালাত আলাদা আলাদা ইবাদতে দুজন দায়িত্ব পালন করলে আরও যৌক্তিকভাবে তা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আমরা বলব, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা ঠিক নয়। কোন ওজর-আপত্তি দেখা দিলেই কেবল এমনটি গ্রহণযোগ্য; অন্যথায় নয়। কেননা, আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে যিনি খুতবা দিতেন তিনিই সালাত পড়াতেন। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা কেউই এর ব্যতিক্রম করেন নি। সুতরাং এটাই সাধারণ সুন্নতি নিয়ম ও সর্বোত্তম-এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে তখন খুতবা ও নামাযে ব্যক্তির পরিবর্তন বৈধ হবে ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, জুমার অনুরূপ দুই ইদের খুতবার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে ইনশাআল্লাহ।
(উৎস: সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. এবং islamqa.info এর ফতোয়া অবলম্বনে লিখিত)
আল্লাহু আলাম।

জুমার দিনে নারীরা কখন জোহরের সালাত পড়বেন ?

আল্লাহর বিধান পালন করা তাদের দ্বারাই সম্ভব যার প্রতি রয়েছে আল্লাহ অসীম রহমত। তাঁর রহমত ব্যতিত কারো পক্ষে ইবাদাত-বন্দেগিসহ কোনো নেক আমল করাই সম্ভব নয়। ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে সালাত। যা ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ।আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত আদায় করে আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তোমার ওপর অবতীর্ণ কিতাব এবং তোমার আগে যেসব কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে সেসবের ওপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে। আর আখেরাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এসব লোক তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সঠিক পথে রয়েছে এবং তারাই সফলতা লাভ করবে। (সূরা বাকারা : ৩-৫)।
জুমার সালাতের খুতবার সময় কি সালাত পড়া যাবে? পুরুষের জুমা পড়া শেষ হলে?
জুমার সালাতের খুতবার সময় সালাত আদায় করা জায়েজ। নারীদের জন্য জুমার সালাতের শেষ হওয়ার অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই, যেহেতু জুমার সালাত তাঁদের ওপর ওয়াজিব নয়। সুতরাং তাঁরা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন না, বরং যখনই আজান হবে, অর্থাৎ ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করে নেবেন, যদি তাঁরা জুমায় অংশগ্রহণ না করেন।
তবে নারীরা জুমাতে অংশগ্রহণ করলে তাঁরা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন এবং ইমামের সঙ্গে জুমার সালাত আদায় করবেন। দুটাই নারীদের জন্য জায়েজ।
নারীদের জুমাতে অংশগ্রহণ করার বিষয়েও আল্লাহর নবীর (সা.) নির্দেশনা রয়েছে এবং অংশগ্রহণ করতেও তিনি বাধা দেননি বা নিষেধ করেননি। যদি জুমাতে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকে জোহরের সালাত আদায় করা হয়ে যাবে, তাঁদের আর ভিন্নভাবে জোহর আদায় করতে হবে না।
কিন্তু যদি তাঁরা জুমার সালাতে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে জোহরের সালাত আদায় করতে পারেন। এর জন্য শর্ত নয় যে ইমাম সাহেব মসজিদে সালাত আদায় শেষ করবে অথবা খুতবা অথবা সালাত দুটোই শেষ করবে, তার পরে নারীরা ঘরে সালাত আদায় করবেন। বিষয়টি হলো যখনই ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করতে পারবেন নারীরা। এটি তাঁদের জন্য জায়েজ রয়েছে।

জুম’আ সংক্রান্ত ৬৬টি হাদিস
হাদিস গ্রন্থ-সহিহ বুখারী -তাওহীদ পাবলীকেশন
(হুবহু প্রকাশিত)
১১
জুমু'আ
                                  ৮৭৬ - ৯৪১
১১/১. অধ্যায়ঃ
জুমু’আ ফরয হবার বিবরণ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলার বাণীঃ ''জুমু'আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণের প্রতি ধাবিত হও এবং বন্ধ করে দাও বেচা-কেনা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।'' ----- অর্থ ধাবিত হও। (সূরা আল-জুমু’আ ৬২/৯)
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৭৬
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামাতের দিন আমরা মর্যাদার ব্যাপারে সবার পূর্বে। ব্যতিক্রম এই যে, আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তাদের সে দিন যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ্ আমাদের হিদায়েত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইয়াহূদীদের (সম্মানীয় দিন হচ্ছে) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রোববার)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২. অধ্যায়ঃ
জুমু'আর দিন গোসল করার তাৎপর্য। জুমু'আর দিবসে শিশু কিংবা নারীদের (সালাতের জন্য) উপস্থিতি কি প্রয়োজন?
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৭৭
 ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমু‘আর সালাতে আসলে সে যেন গোসল করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৭৮
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) জুমু‘আর দিন দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন, এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবা এলেন। ‘উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনে কেবল উযূ করে নিলাম। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের নির্দেশ দিতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৭৯
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮০
 ‘আমর ইব্‌নু সুলাইম আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্‌ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে।
‘আম্‌র (ইব্‌নু সুলায়ম) (রহঃ) বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা ওয়াজিব ৷ কিন্তু মিস্‌ওয়াক ও সুগন্ধি ওয়াজিব কিনা তা আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এ রকমই আছে।
আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ বুখারী (রহঃ) বলেন, আবূ বক্‌র ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ) হলেন মুহন্মাদ ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ)-এর ভাই ৷ কিন্তু তিনি আবূ বক্‌র হিসেবেই পরিচিত নন। বুকায়র ইব্‌নু আশাজ্জ, সা‘ঈদ ইব্‌নু আবূ হিলাল সহ অনেকে তাঁর হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মাদ ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ)-এর কুনিয়াত (উপনাম) ছিল আবূ বক্‌র ও আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌।
(মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৬, আহমাদ ১১২৫০) (আ.প্র. ৮২৯, ই. ফা. ৮৩৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৪. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর মর্যাদা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮১
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুত্‌বা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৫.
১১/৫.অধ্যায়ঃ
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮২
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জুমু‘আর দিন ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) খুত্‌বা দিচ্ছিলেন, এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে আসলে ‘উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাতে সময় মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্ত হও? তিনি বললেন, আযান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উযূ করেছি। তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, তোমরা কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর সালাতে রওয়ানা দেয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৬. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর জন্য তৈল ব্যবহার করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৩
সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুত্‌বা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু’আ হতে আরেক জুমু’আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৪
তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি ইব্‌নূ ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন গোসল কর এবং মাথা ধুয়ে ফেল যদিও তোমরা জুনুবী না হয়ে থাক এবং সুগন্ধি ব্যবহার কর। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, গোসল সম্পর্কে নির্দেশ ঠিকই আছে, কিন্তু সুগন্ধি সম্পর্কে আমি জানি না।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৫
তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন, জুমু‘আর দিন গোসল সম্বন্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইব্‌নূ ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পরিবার পরিজনের সঙ্গে অবস্থান করতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তেল ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, আমি তা জানি না
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৬
 ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমু‘আর দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন। ‘উমর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। ‘উমর ইব্‌নূ খাত্তাব (রাঃ) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৭. অধ্যায়ঃ            
যা আছে তার মধ্যে থেকে উত্তম পোশাক পরিধান করবে।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৬
 ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমু‘আর দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন। ‘উমর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। ‘উমর ইব্‌নূ খাত্তাব (রাঃ) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।
(৯৪৮,২১০৪, ২৬১২, ২৬১৯, ৩০৫৪, ৫৮৪১, ৫৯৮১, ৬০৮১ মুসলিম ৩৭/ আওয়ালুল কিতাব?, হাঃ ২০৬৮, আহমাদ ৫৮০১) (আ.প্র. ৮৩৫ ই.ফা. ৮৪২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৮. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর দিন মিস্‌ওয়াক করা।
আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি মিস্‌ওয়াক করতেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৭
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্‌ওয়াক করার হুকুম করতাম।
(৭২৪০; মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫২, আহমাদ ৭৪১৬) (আ.প্র. ৮৩৬, ই.ফা. ৮৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৮
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মিস্‌ওয়াক সম্পর্কে তোমাদের যথেষ্ট বলেছি।
(আ. প্র. ৮৩৭, ই. ফা. ৮৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৮৯
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন তখন দাঁত মেজে পরিস্কার করে নিতেন। (২৪৫)
(আ. প্র. ৮৩৮, ই.ফা. ৮৪৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৯. অধ্যায়ঃ
অন্যের মিস্‌ওয়াক দিয়ে মিস্‌ওয়াক করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯০
 ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বক্‌র (রাঃ) একটি মিস্‌ওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে প্রবেশ করলেন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে ‘আবদুর রহমান! মিস্‌ওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিস্‌ওয়াক করলেন।
(১৩৮৯, ৩১০০, ৩৭৭৪, ৪৪৩৮, ৪৪৪৬, ৪৪৪৯, ৪৪৫০, ৪৪৫১, ৫২১৭, ৬৫১০) (আ. প্র. ৮৩৯, ই.ফা. ৮৪৬)
হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়
১১/১০. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে কী পড়তে হবে?
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯১
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ এবং وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنْ الدَّهْرِ দু’টি সূরা তেলাওয়াত করতেন। (১০৬৮; মুসলিম ৭/৬৪, হাঃ ৮৮০) (আ.প্র. ৮৪০, ই.ফা. ৮৪৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১১. অধ্যায়ঃ
গ্রামে ও শহরে জুমু‘আর সালাত।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯২
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মসজিদে জুমু‘আর সালাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথম জুমু‘আর সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহ্‌রাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদে।
(৪৩৭১) (আ.প্র. ৮৪১, ই.ফা. ৮৪৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৩
 ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। লায়স ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস (রহঃ) বলেছেন, আমি একদা ইব্‌নু শিহাব (রহঃ)-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক (ইব্‌নু হুকায়ম (রহঃ) ইব্‌নু শিহাব (রহঃ)-এর নিকট লিখলেন, আপনি কী মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুমু‘আর সালাত আদায় করব? রুযায়ক (রহঃ) তখন সেখানে তাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযায়ক (রহঃ) সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইব্‌নু শিহাব (রহঃ) তাঁকে জুমু’আ কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম (রহঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) জিজ্ঞাস করা হবে। ইমাম [১] একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবার বর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদিম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
(২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫৬০০, ৭১৩৮) (আ.প্র. ৮৪২, ই.ফা. ৮৪৯)
[১] ইমাম’ শব্দ রাষ্ট্রের কর্ণধার, যে কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক ও সালাতের ইমাম অর্থে ব্যবহৃত হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১২. অধ্যায়ঃ
মহিলা, বালক-বালিকা এবং অন্য যারা জুমু‘আয় উপস্থিত হয় না, তাদের কি গোসল করা জরুরী?
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেছেন, যাদের উপর জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব, শুধু তাদের গোসল করা প্রয়োজন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৪
 ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে আসবে সে যেন গোসল করে।”
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৫
আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – বলেছেনঃ প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমু‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৬
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ার (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামাতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার পূর্বে। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়েত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহূদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৭
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৮
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহ্‌র হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনে একবার সে যেন গোসল করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৩. অধ্যায়ঃ
১১/১৩. অধ্যায়ঃ
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৮৯৯
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা মহিলাদেরকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০০
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ্‌ বিনত যায়দ) ফজর ও ‘ইশার সালাতের জামা‘আতে মসজিদে হাযির হতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, ‘উমর (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে কিসে বাধা দিচ্ছে যে, ‘উমর (রাঃ) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আল্লাহ্‌র দাসীদের আল্লাহ্‌র মসজিদে যেতে বারণ করো না।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৪. অধ্যায়ঃ
বৃষ্টির কারণে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত না হবার অবকাশ।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০১
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি তাঁর মুয়ায্‌যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্‌ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্‌ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, “সাল্‌লু ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) তা করেছেন। জুমু’আ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৫. অধ্যায়ঃ
কতদূর হতে জুমু‘আর সালাতে আসবে এবং জুমু’আ কার উপর ওয়াজিব?
(আরবী) কেননা, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, (তখন) আল্লাহ্‌র যিকরের দিকে দৌড়িয়ে যাওয়া। (সূরা আল-জুমু’আ ৬২/৯)
‘আত্বা (রহঃ) বলেছেন, যখন তুমি কোন বড় শহরে বাস কর, জুমু‘আর দিন সালাতের জন্য আযান দেয়া হলে, তা তুমি শুনতে পাও বা না পাও, তোমাকে অবশ্যই জামা‘আতে হাযির হতে হবে। আনাস (রাঃ) যখন (বস্‌রা হতে) দু’ ফারসাখ্‌ (ছয় মাইল) দূরে অবস্থিত জাবিয়া নামক স্থানে তাঁর বাড়িতে অবস্থান করতেন, তখন কখনো জুমু’আ পড়তেন, কখনো পড়তেন না।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০২
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা হতেও জুমু‘আর সালাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ হতে ঘাম বের হত। একদা তাদের একজন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৬. অধ্যায়ঃ
সূর্য হেলে গেলে জুমু‘আর সময় হয়
‘উমর, ‘আলী, নু‘মান ইব্‌নু বাশীর এবং ‘আম্‌র ইব্‌নু হুরায়স (রাঃ) হতেও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৩
ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌নু সা‘ঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ‘আম্‌রাহ (রহঃ)-কে জুমু‘আর দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ‘আম্‌রাহ (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমু‘আর জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাঁদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৪
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য হেলে যেত।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৫
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা প্রথম ওয়াক্তেই জুমু‘আর সালাতে যেতাম এবং জুমু‘আর পরে কাইলূলা (দুপুরের বিশ্রাম) করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৭. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর দিন যখন সূর্যের উত্তাপ প্রখর হয়।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৬
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করতেন। আর তীব্র গরমের সময় ঠাণ্ডা করে (বিলম্ব করে- সালাত আদায় করতেন। অর্থাৎ জুমু‘আর সালাত। ইউনুস ইব্‌নু বুকায়র (রহঃ) আমাদের বলেছেন, আর তিনি সালাত শব্দের উল্লেখ করেছেন, জুমু’আ শব্দের উল্লেখ করেননি। আর বিশ্‌র ইব্‌নু সাবিত (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট আবূ খালদা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জুমু‘আর ইমাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত কিরুপে আদায় করতেন?
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৮. অধ্যায়ঃ
জুমু‘আর জন্য পায়ে হেঁটে চলা
এবং আল্লাহ্‌র বাণীঃ “তোমরা আল্লাহ্‌র যিকরের জন্য দৌড়িয়ে আস”।
যিনি বলেন, ‘সাঈ এর অর্থ কাজ করা, গমন করা। কেননা, আল্লাহ্‌র বাণীঃ ----এর অন্তর্গত সাঈ-এর অর্থ হচ্ছে কাজ করা। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন (জুমু‘আর আযানের পর) যাবতীয় ক্রয়-বিক্রয় হারাম হয়ে যায়। আত্বা (রহঃ) বলেন, শিল্প-কারিগরির যাবতীয় কাজই তখন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইব্‌রাহীম ইব্‌ন সা‘দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, জুমু‘আর দিন যখন মুআয্‌যিন সফররত অবস্থায় আযান দেয় তখন তার জন্য জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া উচিত ৷
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৭
আবায়া ইব্‌নু রিফা‘আ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি জুমু‘আর সালাতে যাবার কালে আবূ আব্‌স্‌ (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, যার দু’পা আল্লাহ্‌র পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৮
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯০৯
আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত সালাতে দাঁড়াবে না। তোমাদের জন্য ধীর-স্থির থাকা অত্যাবশ্যক।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/১৯. অধ্যায় :
জুমু‘আর দিন দু’জনের মাঝে ফাঁক করে না।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১০
সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুত্‌বার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমু‘আ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২০. অধ্যায় :
জুমু‘আর দিন কোন ব্যক্তি তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসবে না।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১১
ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইব্‌নু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু’আ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২১. অধ্যায় :
জুমু‘আর দিনের আযান।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১২
সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-এর সময় জুমু‘আর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন ‘উসমান (রাঃ) খলীফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ হতে তৃতীয় [১] আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, ‘যাওরাহ’ হল মাদীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।
[১] এর পূর্বে কেবল খুত্‌বার আযান ও ইক্বামাত প্রচলন ছিল। এখানে থেকে তৃতীয় অর্থাৎ সালাতের জন্য বর্তমানে প্রচলিত আযানের প্রচলন শুরু হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২২. অধ্যায় :
জুমু‘আর দিন একজন মুয়ায্‌যিনের আযান দেয়া।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৩
সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
মদীনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আর দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইব্‌নু ‘আফ্‌ফান (রাঃ)।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় (জুমু‘আর জন্য) একজন ব্যতীত মুয়ায্‌যিন ছিল না এবং জুমু‘আর দিন আযান দেয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুত্‌বার পূর্বে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৩. অধ্যায় :
ইমাম মিম্বারের উপর বসে জবাব দিবেন, যখন আযানের আওয়ায শ্রবণ করেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৪
মু‘আবিয়াহ ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি মিম্বারে বসা অবস্থায় মুয়ায্‌যিন আযান দিলেন। মুয়ায্‌যিন বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” মুয়ায্‌যিন বললেন, “আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” তিনি বললেন এবং আমিও (বলছি “আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ”)। মুয়ায্‌যিন বললেন, “আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্‌” তখন মু‘আবিয়াহ বললেন এবং আমিও বললাম। যখন (মুয়ায্‌যিন) আযান শেষ করলেন, তখন মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার হতে যে বাক্যগুলো শুনেছ, তা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুয়ায্‌যিনের আযানের সময় এ মজলিসে বাক্যগুলো বলতে আমি শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৪. অধ্যায় :
আযানের সময় মিম্বারের উপর বসা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৫
সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ‘উসমান (রাঃ) জুমু‘আর দিন দ্বিতীয় আযানের নির্দেশ দেন। অথচ (ইতোপূর্বে) জুমু‘আর দিন ইমাম যখন (মিম্বারের উপর) বসতেন, তখন আযান দেয়া হতো।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৫. আধ্যায় :
খুত্‌বার সময় আযান।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৬
সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্‌র এবং ‘উমর (রাঃ)-এর যুগে জুমু‘আর দিন ইমাম যখন মিম্বারের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। অত:পর যখন ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফাতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আর দিন তৃতীয় [১] আযানের নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান হতে এ আযান দেয়া হয়, পরে এ আযানের সিলসিলা চলতে থাকে।
[১] সে যুগে ইকামত কে আযান হিসেবে গন্য করা হত।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৬. অধ্যায়ঃ
মিম্বারের উপর খুত্‌বা দেয়া।
আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে খুত্‌বা দিতেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৭
আবূ হাযিম ইব্‌নু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(একদিন) কিছু লোক সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা’ঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কো্ন কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহ্‌ল (রাঃ) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। অতঃপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদীনাহ হতে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবা’র ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি দেখেছি, এর উপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকূ’ করেছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা করেছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করেছেন, অতঃপর সালাত শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার অনুসরণ করতে এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৮
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (মসজিদে নাববীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুঁটি হতে দশ মাসের গর্ভবতী উট্‌নীর মত ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নেমে এসে খুঁটির উপর হাত রাখলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯১৯
 ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপর হতে খুত্‌বা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে আসে সে যেন গোসল করে নেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৭. অধ্যায়ঃ
দাঁড়িয়ে খুত্‌বা প্রদান করা।
আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিতেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২০
 ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৮. অধ্যায়ঃ
খুত্‌বার সময় মুসল্লীগণের ইমামের দিকে আর ইমাম মুসল্লীগণের দিকে মুখ করা।
ইব্‌নু ‘উমর ও আনাস (রাঃ) ইমামের দিকে মুখ করতেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২১
আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মিম্বারের উপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারদিকে (মুখ করে) বসলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/২৯. অধ্যায়ঃ
খুত্‌বায় আল্লাহ্‌র হাম্‌দের পর ‘আম্‌মা বা‘দু’ বলা।
‘ইক্বরিমাহ (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) – এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২২
আস্‌মা বিন্‌ত আবূ বক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (একদিন) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। লোকজন তখন সালাত আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কী হয়েছে? তখন তিনি মাথা দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করে, হ্যাঁ বললেন। (এরপর আমিও তাঁদের সঙ্গে সালাত যোগ দিলাম) অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিলাম। আমার পার্শ্বেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটা খুললাম এবং আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত সমাপ্ত করলেন এবং লোকজনের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা পেশ করলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ্‌র যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, আম্‌মা বা’দু। আসমা (রাঃ) বলেন, তখন কয়েকজন আনসারী মহিলা শোরগোল করছিলেন। তাই আমি চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। অতঃপর ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বললেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি আমি এ জায়গা হতে সব কিছুই দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদেরকে কবরে মাসীহ্ দাজ্জালের ফিত্‌নার ন্যায় অথবা তিনি বলেছেন, সে ফিত্‌নার কাছাকাছি ফিতনায় ফেলা হবে। (অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হবে) তোমাদের প্রত্যেককে (কবরে) উঠানো এবং প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি (রসূলুল্লাহ্) সম্পর্কে তুমি কী জান? তখন মু’মিন অথবা মুকিন (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’টোর মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে) বলবে, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল, তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তিনি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট দালীল ও হিদায়েত নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছি, তাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাঁকে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক, যেহেতু তুমি নেককার। তুমি যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর মুনাফিক বা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) (এ দু’টোর মধ্যে কোন্ শব্দটি বলেছিলেন এ সম্পর্কে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে)-কেও প্রশ্ন করা হবে যে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান? উত্তরে সে বলবে, আমি কিছুই জানি না। অবশ্য মানুষকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলতাম। হিশাম (রহঃ) বলেন, ফাতিমা (রাঃ) আমার নিকট যা বলেছেন, তা সবটুকু আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি। তবে তিনি ওদের প্রতি যে কঠোরতা করা হবে তাও উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৩
 ‘আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হলে তিনি তা বণ্টন করে দিলেন। বণ্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। অতঃপর তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, যাদের তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেনঃ ‘আম্‌মা বা‘দ। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেইনা সে, যাকে আমি দেই তাঁর চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখতে পাই; আর কিছু লোককে আল্লাহ্‌ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী ‘আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও [১] পছন্দ করি না।
[১] তৎকালীন আরবের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৪
 ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সালাত আদায় করলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চেয়ে অধিক সংখ্যক সাহাবা একত্রিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন এবং ফজরের সালাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ আম্‌মা বা’দ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৫
আবু হুমায়দ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক সন্ধ্যায় সালাতের পর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং শাহাদাত বাণী পাঠ করলেন। আর যথাযথভাবে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, ‘আম্মা বা’দ’।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৬
মিসওয়ার ইবনু মাখ্‌রামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাওহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠান্তে বলতে শুনলাম, ‘আম্‌মা বা’দ’।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৭
ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহ্‌র গুণকীর্তন করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আম্‌মা বা’দ’। শুনে রাখ, এ আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো মাফ করে দেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩০. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন দু’ খুত্‌বার মধ্যখানে বসা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৮
 ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ খুত্‌বা দিতেন আর দু’ খুত্‌বার মধ্যখানে বসতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩১. অধ্যায়ঃ
মনোযোগের সাথে খুত্‌বা শোনা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯২৯
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমু’আর দিন মসজিদের দরজায় মালাইকা (ফেরেশতাগণ) অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) তাঁদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুত্‌বা শ্রবণ করতে থাকেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩২. অধ্যায়ঃ
ইমাম খুত্‌বা দেয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু’ রাক’আত সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩০
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সামনে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও। [১]
[১] আধুনিক প্রকাশনী বুখারীর ৮৭৭ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেনঃ হাদীসের অন্য কতিপয় বর্ণনার ভিত্তিতে হানাফী মাযহাবে এই সময়ে সালাত না আদায় করাকে অধিকতর বিশুদ্ধ রীতি বলে গণ্য করা হয়েছে।
কিন্তু এটি নিতান্তই অনুবাদকের নিজস্ব মনগড়া মত ও সহীহ হাদীস বিরোধী কথা। বরং কোন সহীহ হাদীস নেই, একটি জাল হাদীসে রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়া সুন্নাত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক’আত সালাত পড়ার পূর্বে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বসার পূর্বে সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণীঃ আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে দু’ রাক’আত সালাত না পড়ে ততক্ষন পর্যন্ত যেন না বসে।
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত সালাত পড়ে। (বুখারী ১ম খণ্ড ৬৩, ১৫৬ পৃষ্ঠা। মিশকাত ৬৮ পৃষ্ঠা। বুখারী আঃ হক হাদীস ২৮৯। বুখারী ইঃফাঃ হাদীস নং ১০৮৯)
অতঃপর উক্ত হাদীসের উপর আমলার্থে জুমাআর খুত্‌বা চলাকালীনও এ সালাত আদায় করতে হবে।
আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, বুখারী ও মুসলিম যে হাদীসের ব্যাপারে ইত্তিফাক হয়েছেন সে সকল হাদীস অন্য সকল হাদীস হতে বেশী শক্তিশালী।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৩. অধ্যায়ঃ
ইমাম খুত্‌বা দেয়ার সময় যিনি মসজিদে আগমন করবেন তার সংক্ষেপে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩১
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক জুমা’আহ্‌র দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দু’রাক’আত সালাত আদায় কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৪. অধ্যায়ঃ
খুত্‌বায় দু’ হাত উত্তোলন করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩২
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক জুম’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’হাত প্রসারিত করলেন এবং দু’আ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৫. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন খুত্‌বায় বৃষ্টির জন্য দু’আ পাঠ করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৩
আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিচ্ছিলিন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খণ্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু’আর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্‌ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খণ্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদীনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৬. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিন ইমাম খুত্‌বাহ দেয়ার সময় অন্যকে চুপ করানো।
যদি কেউ তার সাথীকে (মুসল্লীকে বলে) চুপ থাক, তাহলে সে একটি অনর্থক কথা বললো।
সালমান ফারসী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৪
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্‌বা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৭. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর দিনের সে মুহূর্তটি।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৫
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৮. অধ্যায়ঃ
জুমু’আর সালাতে কিছু মুসল্লী যদি ইমামের নিকট হতে চলে যায় তাহলে ইমাম ও অবশিষ্ট মুসল্লীগণের সালাত বৈধ হবে।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৬
জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে (জুমু’আর) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত অধিক মনোযোগী হলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”- (সূরা জুমু’আ ৬২/১১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৩৯. অধ্যায় :
জুমু’আর (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৭
‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের পূর্বে দু’ রাক’আত ও পরে দু’ রাক’আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক’আত এবং ‘ইশার পর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু’আর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। [১]
[১] আধুনিক প্রকাশনীর বুখারীর ৮৮৪ নং হাদীসের টীকায় লিখেছেন : জুমু’আর আগে ও পরে ৪/২ রাক’আত সুন্নাত পড়া বিশুদ্ধতর। কিন্তু জুমু’আর পূর্বে দু’রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ ব্যতীত চার রাক’আত বলে নির্দিষ্ট করে কোন সংখ্যার সালাত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ মর্মে বর্ণিত হাদীসগুলো বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৪০. অধ্যায় :
মহান আল্লাহ্‌র বাণী : “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ তালাশ করবে।” (সুরাহ্ জুমু’আ ৬২/১০)
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৮
সাহ্‌ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুমু’আর দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মূলই এর গোশ্‌ত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমু’আর সালাত হতে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে রাখতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুমু’আর দিন উদগ্রীব থাকতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৩৯
সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আরো বলেছেন, জুমু’আ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হাল্‌কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১১/৪১. অধ্যায় :
জুমু’আর পরে কায়লুলাহ (দুপুরে শয়ন ও হালকা নিদ্রা)।
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৪০
হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন: আমরা সকাল সকাল জুমু’আয় যেতাম অতঃপর (সালাত শেষে) কায়লূলাহ করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী হাদিস নং-৯৪১
সাহ্‌ল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু’আর সালাত আদায় করতাম। অতঃপর দুপুরের বিশ্রাম ও হালকা নিদ্রা যেতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(সমাপ্ত)
 প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল
ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ

Please Share On

1 comment:

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...