বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে রাসুল সাঃ এর ছালাত ও
জাল-জইফ হাদিসের ছালাত
ভূমিকাঃ সম্মানিত ইমাম, খত্বীব ও আলেমগণ, সাধারণ মানুষকে
সংশোধনের দায়িত্ব মূলতঃ আমাদের উপরই অর্পিত হয়েছে। তাই ছালাতের সঠিক পদ্ধতি জেনে মুছল্লীদেরকে
বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। প্রয়োজনে জুম‘আর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে
ছালাত শিক্ষা দেয়া।[8] তবে অনেক হক্বপন্থী আলেম সঠিক বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সামাজিক
মর্যাদার কারণে প্রকাশ করেন না। তারা কি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় পান না? (রহমান
৪৬; নাযিয়াত ৪০)। তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যাবতীয় সম্মানের মালিক আল্লাহ (আলে ইমরান
২৬; নিসা ১৩৯)। অতএব তারা উক্ত দায়িত্বে অবহেলা করলে মুছল্লীদের ভুল ছালাতের পাপের
ভার ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকেও বহন করতে হবে।[9] আর যদি গোঁড়ামী করে জাল, যঈফ ও ভিত্তিহীন-বানোয়াট
হাদীছ কিংবা বিদ‘আতী পদ্ধতিতে ছালাত শিক্ষা দেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতকে অবজ্ঞা
করেন, তবে তাদের শাস্তি আরো কঠোর হবে।[10] উক্ত ইমাম, খত্বীব ও আলেমগণ যেন আল্লাহকে
ভয় করেন। আল্লাহ তাদের অন্তরের খবর রাখেন (হূদ ৫)।
সুপ্রিয়- দ্বীনের দাঈ, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ও পরিবারের অভিভাবকগণ, যে সমস্ত দাঈ সমাজের সর্বস্তরে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করেন,
আলোচনা, বক্তব্য, সেমিনার, সম্মেলন, জালসা ইত্যাদি করে থাকেন, তারা আক্বীদা সংশোধনের
দাওয়াত প্রদান করার পর বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব আলোচনা করবেন এবং তার পদ্ধতি
তুলে ধরবেন।[11] তারা যদি ছহীহ দলীল ছাড়া দাওয়াতী কাজ করেন, তবে তা হবে জাহেলিয়াতের
দাওয়াত, যার পরিণাম অত্যন্ত ভায়াবহ।[12] মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যদি এক্ষেত্রে
ভূমিকা পালন করেন, তবে সমাজে দ্রুত এর প্রভাব পড়বে। কারণ তারা কিতাব দেখে, পর্যালোচনা
করে সঠিক সিদ্ধান্ত পেশ করতে পারবেন।[13] অনুরূপ পরিবারের অভিভাবকগণ যদি তাদের সন্তানদেরকে
শুরুতেই রাসূল (ছাঃ)-এর তরিক্বায় ছালাত শিক্ষা দেন, তবে সমাজ থেকে প্রচলিত বিদ‘আতী
ছালাত দ্রুত বিদায় নিবে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ সন্তানদেরকে
ছালাত শিক্ষা দেয়ার মূল দায়িত্ব অভিভাবকের।[14] পক্ষান্তরে তারা যদি অবহেলা করেন এবং
বিদ‘আতী ছালাতকেই চালু রাখেন, তবে তারাও আল্লাহর কাছে মুক্তি পাবেন না। তাদের সন্তানেরা
উল্টা তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে (আহযাব ৬৭-৬৮; ফুছি্ছলাত ২৯)।
সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী ও নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তিবর্গ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, কলেজের শিক্ষক ও বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অনেক
জ্ঞানী ব্যক্তিও ছালাত আদায় করেন। প্রশাসনিক ব্যক্তি হিসাবে বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট,
সচিব, ডিসি, এসপি, ওসি এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান, পরিচালক,
সভাপতি, দায়িত্বশীল বিভিন্ন শ্রেণীর অনেকেই ছালাত আদায় করেন। তারা নিজেদের ছালাত যাচাই
করে আদায় করলে সমাজ উপকৃত হবে। কারণ সাধারণ জনগণ তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখে। তারাও মসজিদের
ইমামকে বা অন্যান্য মুছল্লীদেরকে ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে
পারেন। ছালাত যেহেতু অন্যায়-অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে, তাই বিশুদ্ধ ছালাত প্রতিষ্ঠার
মাধ্যমে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিতে পারেন। কিন্তু অশনিসংকেত হল, এই শ্রেণির
অধিকাংশ মানুষই সমাজে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে শিরক ও বিদ‘আতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে
থাকেন। এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। পৃথিবীতে যে যে শ্রেণিরই মানুষ হোন না কেন আল্লাহর
কাছে তাক্বওয়া ছাড়া কোন কিছুর মূল্য নেই।[15] অতএব তারা যদি ক্ষমতা ও দম্ভের কারণে
ছহীহ হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেন, তবে তাদেরকেও নমরূদ, আযর, ফেরআউন, হামান, কারূনও আবু
জাহলদের ভাগ্যবরণ করতে হবে। ইবরাহীম (আঃ)-এর পিতা আযরের জন্য সুপারিশ করলেও আল্লাহ
কবুল করবেন না। বরং তাঁর সামনে আযরকে পশুতে পরিণত করা হবে, নর্দমায় ডুবানো হবে এবং
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[16] কারণ ইবরাহীম (আঃ) তাকে অহির দাওয়াত দিয়েছিলেন কিন্তু
সে দাপট দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল (মারইয়াম ৪২-৪৬)। তারা বহু বছর রাজত্ব করেও চরম
অপমান ও লাঞ্ছনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। বর্তমান নেতারা স্বল্প সময়ের ক্ষমতা
পেয়ে দাপট দেখাতে চান। কিন্তু পূর্ববর্তীদের কথা এতটুকুও চিন্তা করেন না। বর্তমানে
বিভিন্ন সমাজে ও মসজিদে সমাজপতিদের দাপটে অসংখ্য বিদ‘আত চালু আছে। অতএব ক্ষমতাশীনরা
সাবধান!
তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজ, তারুণ্যের ঢেউ ও যৌবনের
উদ্যমকে যে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে তাঁর
আরশের নীচে ছায়া দান করবেন।[17] সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল ছালাত। তারা উন্মুক্ত ও স্বাধীনচেতা
কাফেলা হিসাবে যদি যাচাই সাপেক্ষে খোলা মনে ছালাতের সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করে তবে সমাজ
সংস্কার দ্রুত সম্ভব হবে। বরং যারা নেতৃত্বের আসনে বসে প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখিয়ে সুন্নাত
বিরোধী আমল চালু রাখতে চায়, তাদেরকেও তারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু যে সমস্ত
ছাত্র ও যুবক বিদ‘আতী ছালাতে অভ্যস্ত থাকে এবং ছালাতকে যাচাই না করে তবে তাদের মত হতভাগা
আর কেউ নেই। কারণ তারা এর জবাব না দেয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামতের মাঠে পার পাবে না।[18]
গ্রন্থকার, লেখক, কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক, গবেষক,
সাংবাদিক, আইনজীবী। তাদের মধ্যেও অনেকে ছালাতে অভ্যস্ত এবং দ্বীনদার তাক্বওয়াশীল মানুষ
আছে। সমাজে তাদের যেমন মর্যাদা আছে তেমনি ব্যক্তি প্রভাবও আছে। রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত
প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারাও অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু তারা যদি নিজেদের ছালাত বিশুদ্ধভাবে
আদায় না করেন, তবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অন্যদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। কারণ সমাজে
তারা শ্রদ্ধার পাত্র। মানুষ তাদেরকে অনুসরণ করে। তাই তাদের দায়িত্বও বেশী। তারা নিজেদের
পেশার ব্যাপারে যতটা সচেতন ও তথ্য উদ্ঘাটনে যতটা অনুসন্ধানী, বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের
ক্ষেত্রে ততটা অনুরাগী নন। অথচ এটা চিরস্থায়ী আর অন্যান্য বিষয় ক্ষণস্থায়ী।
জাল-যঈফ হাদীছ মিশ্রিত প্রচলিত ছালাত উঠিয়ে
রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠা করা নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে নিম্নের বিষয়গুলোকে
প্রাধান্য দিলে ইনশাআল্লাহ মাযহাবী গোঁড়ামী ও প্রাচীন ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করা সহজ
হবে।
(১) ছালাতের যাবতীয় আহকাম ছহীহ দলীল ভিত্তিক হতে হবে।
ছালাত ইবাদতে তাওক্বীফী যাতে দলীল বিহীন ও
মনগড়া কোন কিছু করার সুযোগ নেই। প্রমাণহীন কোন বিষয় পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যাগ
করতে হবে। কত বড় ইমাম, বিদ্বান, পন্ডিত, ফক্বীহ বলেছেন বা করেছেন তা দেখার প্রয়োজন
নেই। কারণ প্রমাণহীন কথার কোন মূল্য নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, সুতরাং তোমরা যদি না
জান তবে স্পষ্ট দলীলসহ আহলে যিকিরদের জিজ্ঞেস কর’ (সূরা নাহল ৪৩-৪৪)। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা দলীলের ভিত্তিতেই মানুষকে আহবান জানাতেন।[19]
ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুহাদ্দিছ
ওলামায়ে কেরামও দলীলের ভিত্তিতে মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ)
বলেন, ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না আমরা উহা
কোথা থেকে গ্রহণ করেছি’।[20]
ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪হিঃ) বলেন, ‘যখন তুমি আমার
কোন কথা হাদীছের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুড়ে
মারবে’।[21] ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯হিঃ), ইমাম আহমাদ (১৬৪-২৪১হিঃ) সহ অন্যান্য ইমামও একই
কথা বলেছেন।[22]
(২) জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সকল প্রকার আমল নিঃসঙ্কোচে ও নিঃশর্তভাবে
বর্জন করতে হবে।
জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা কোন শারঈ বিধান প্রমাণিত
হয় না। জাল হাদীছের উপর আমল করা পরিষ্কার হারাম।[23] সে কারণ ছাহাবায়ে কেরাম যঈফ ও
জাল হাদীছের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। আস্থাহীন, ত্রুটিপূর্ণ, অভিযুক্ত, পাপাচারী,
ফাসিক্ব শ্রেণীর লোকের বর্ণনা তারা গ্রহণ করতেন না। প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও
এর বিরুদ্ধে ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর চূড়ান্ত মূলনীতি ছিল যঈফ হাদীছ ছেড়ে কেবল
ছহীহ হাদীছকে অাঁকড়ে ধরা। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে
তিনি ঘোষণা করেন,‘যখন হাদীছ ছহীহ হবে সেটাই আমার মাযহাব’।[24]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই
যে আলেম হাদীছের ছহীহ-যঈফ ও নাসিখণ্ডমানসূখ বুঝেন না তাকে আলেম বলা যাবে না’। ইমাম
ইসহাক্ব ইবনু রাওয়াহাও একই কথা বলেছেন।[25] ইমাম মালেক, শাফেঈ (রহঃ)-এর বক্তব্যও অনুরূপ।[26]
মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন, হাদীছ মিথ্যা
প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে শয়তানের খাদেম’।[27] অতএব ইমাম হোন আর
ফক্বীহ হোন বা অন্য যেই হোন শরী‘আত সম্পর্কে কোন বক্তব্য পেশ করলে তা অবশ্যই ছহীহ দলীলভিত্তিক
হতে হবে। উল্লেখ্য যে, কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে মুহাদ্দিছ বলে ঘোষণা করছে এবং না জেনেই
যেকোন হাদীছকে যখন তখন ছহীহ কিংবা যঈফ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এরা আলেম নামের
কলঙ্ক। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ ‘যঈফ ও জাল হাদীছ
বর্জনের মূলনীতি’ শীর্ষক বই)।
(৩) প্রচলিত কোন আমল শারঈ দৃষ্টিকোন থেকে ভুল প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তা
বর্জন করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র গোঁড়ামী করা যাবে
না। পূর্বপুরুষদের মাঝে চালু ছিল, বড় বড় আলেম করে গেছেন, এখনো অধিকাংশ আলেম করছেন,
এখনো সমাজে চালু আছে, এ সমস্ত জাহেলী কথা বলা যাবে না।
ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত। মানুষ মাত্রই
ভুল করবে, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে ভুল করার পর যে সংশোধন করে নেয় সেই সর্বোত্তম।
আর যে সংশোধন করে না সে শয়তানের বন্ধু। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক আদম সন্তান
ভুলকারী আর উত্তম ভুলকারী সে-ই যে তওবাকারী’।[28] যারা ভুল করার পর তওবা করে এবং সংশোধন
করে নেয় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং ইহকাল ও পরকালে চিন্তামুক্ত রাখবেন (আন‘আম
৪৮, ৫৪)। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও ভুল করেছেন এবং সংশোধন করে নিয়েছেন।[29]
সাহো সিজদার বিধানও এখান থেকেই চালু হয়েছে। অনুরূপ চার খলীফাসহ অন্যান্য ছাহাবীদেরও
ভুল হয়েছে।[30] বিশেষ করে ওমর (রাঃ) ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও
অনেক বিষয় অজানা ও স্মরণ না থাকার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। কিন্তু সঠিক বিষয়
জানার পর বিন্দুমাত্র দেরী না করে তার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন।[31] তাই একথা অনুস্বীকার্য
যে, আগের আলেমগণ অনেক কিছু জানতেন। তবে তারা সবকিছু জানতেন, তারা কোন ভুল করেননি এই
দাবী সঠিক নয়। কারণ তিনি আদম সন্তান হলে ভুল করবেনই। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা যাকে নির্বাচন
করে মুজাদ্দিদ হিসাবে পাঠান, তিনিও ভুল করতে পারেন বলে রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।[32]
সুতরাং সাধারণ আলেমের ভুল হবে এটা অতি স্বাভাবিক। তাই যিদ না করে ভুল সংশোধন করে নেয়াই
উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ছাঃ) কোন বিধানকে
রহিত করেছেন এবং তার স্থলে অন্যটি চালু করেছেন (বাক্বারাহ ১০৬)। তখন সেটাই সকল ছাহাবী
গ্রহণ করেছেন। গোঁড়ামী করেননি, কোন প্রশ্ন করেননি। তাদের থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
কারণ ভুল সংশোধন না করে বাপ-দাদা বা বড় বড় আলেমদের দোহাই দেওয়া অমুসলিমদের স্বভাব
(বাক্বারাহ ১৭০; লোকমান ২১)। তাছাড়া এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে, অসংখ্য পথভ্রষ্ট আলেম
থাকবে যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।[33] ইসলামের নামে অসংখ্য ভ্রান্ত দল থাকবে।
তারা নতুন নতুন শরী‘আত আবিষ্কার করবে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করবে।[34] এগুলো রাসূল
(ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। সুতরাং উক্ত আলেম ও দলের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। তাদের
দোহাই দেয়া যাবে না।
(৪) খুঁটিনাটি বলে কোন সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যাবে না :
ইসলামের কোন বিধানই খুঁটিনাটি নয়। অনুরূপ কোন
সুন্নাতই ছোট নয়। রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য ছোট বড় যা কিছু বলেছেন সবই আল্লাহর
পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত।[35] সুতরাং উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে বেরিয়ে এসে রাসূল
(ছাঃ)-এর যেকোন সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। কেননা সুন্নাতকে
অবজ্ঞা করা ও খুঁটিনাটি বলে তাচ্ছিল্য করা অমার্জনীয় অপরাধ। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ
এই অবহেলাকে মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বারা ইবনু আযেব
(রাঃ)-কে ঘুমানোর দু‘আ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তার এক অংশে তিনি বলেন, ‘(হে আল্লাহ!) আপনার
নবীর প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। আর বারা (রাঃ) বলেন, ‘এবং আপনার
রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। উক্ত কথা শুনে রাসূল (ছাঃ) তার
হাত দ্বারা বারার বুকে আঘাত করে বলেন, বরং
‘আপনার নবীর প্রতি ঈমান আনলাম যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’।[36] এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
‘নবীর’ স্থানে ‘রাসূল’ শব্দটিকে বরদাশত করলেন না। জনৈক ছাহাবী ছালাতের মধ্যে সামান্য
ত্রুটি করলে তিনি তাকে ডেকে বলেন, হে অমুক! তুমি কি আল্লাহকে ভয় কর না। তুমি কি দেখ
না কিভাবে ছালাত আদায় করছ?[37]
রাসূল (ছাঃ) একদিন ছালাতের জন্য তাকবীরে তাহরীমা
বলতে শুরু করেছেন। এমতাবস্থায় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে সম্মুখে
একটু বেড়ে গেছে তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দারা! হয় তোমরা কাতার সোজা করবে, না
হয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা সমূহকে বিকৃতি করে দিবেন’।[38] নবী (ছাঃ) একদা এক
ব্যক্তিকে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে ছালাত আদায় করতে দেখে তিনি ডান হাতটাকে বাম হাতের
উপর করে দেন।[39]
অতএব ছালাতের যেকোন আহকামকে খুঁটিনাটি বলে
অবজ্ঞা করা যাবে না। বরং সেগুলো পালনে বাহ্যিকভাবে যেমন নানাবিধ উপকার রয়েছে, তেমনি
অঢেল নেকীও রয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্যের
যুগ। সে সময় যে ব্যক্তি সুন্নাতকে শক্ত করে অাঁকড়ে ধরে থাকবে সে তোমাদের সময়ের ৫০ জন
শহীদের নেকী পাবে’।[40] বর্তমান যুগের প্রত্যেক সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তির জন্যই এই
সুসংবাদ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (কাতারের
মধ্যে দু’জনের) ফাঁক বন্ধ করবে, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন
এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন’।[41] যে ব্যক্তি ছালাতে স্বশব্দে আমীন বলবে
এবং তা ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করা হবে।[42]
উক্ত সুন্নাতগুলো সাধারণ কিন্তু নেকীর ক্ষেত্রে কত অসাধারণ তা কি আমরা লক্ষ্য করি?
সবচেযে বড় বিষয় হল, এই সুন্নাতগুলো সমাজে চালু
করতে শত শত হক্বপন্থী আলেমের রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে, অন্ধ
কারাগারে জীবন দিতে হয়েছে, দীপান্তরে কালাপানির ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। যেমন বুকের উপর
হাত বাঁধা, জোরে আমীন বলা, রাফঊল ইয়াদায়েন করা ইত্যাদি। আর সেই সুন্নাত সমূহকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য
করা কত বড় অন্যায় হতে পারে?
(৫) সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করতে গিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই যে, কতজন লোক
তা করছে, কোন্ মাযহাবে চালু আছে, কোন্ ইমাম কী বলেছেন বা আমল করেছেন কিংবা কোন্ দেশের
লোক করছে আর কোন্ দেশের লোক করছে না :
আল্লাহ প্রেরিত সংবিধান চিরন্তন, যা নিজস্ব
গতিতে চলমান। এই মহা সত্যকেই সর্বদা অাঁকড়ে ধরে থাকতে হবে একাকী হলেও। ইবরাহীম (আঃ)
নানা যুলুম-অত্যাচার সহ্য করে একাই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাই তিনি বিশ্ব ইতিহাসে
মহা সম্মানিত হয়েছেন (নাহল ১২০; বাক্বারাহ ১২৪)। সমগ্র জগতের বিদ্রোহী মানুষরা তার
সম্মান ছিনিয়ে নিতে পারেনি। সংখ্যা কোন কাজে আসেনি। মূলকথা হল- অহীর বিধান সংখ্যা,
দেশ, অঞ্চল, বয়স, সময়, মেধা কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। অনেকে বলতে চায়, চার ইমামের
পরে মুহাদ্দিছগণের জন্ম। সুতরাং ইমামদের কথাই গ্রহণযোগ্য। অথচ ছাহাবীরা সুন্নাতকে অগ্রাধিকার
দিতে বয়স্ক ব্যক্তি উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৬/৭ বছরের বাচ্চাকে দিয়ে ছালাত পড়িয়ে
নিয়েছেন।[43] ওমর (রাঃ) কনিষ্ঠ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরীর নিকট থেকে কারো বাড়ীতে গিয়ে
তিনবার সালাম দেওয়া সংক্রান্ত হাদীছের পক্ষে সাক্ষী গ্রহণ করেন। কারণ তিনি এই হাদীছ
জানতেন না।[44] অতএব মহা সত্যের উপর কোন কিছুর প্রাধান্য নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,
‘হক্ব-এর অনুসারী দলই হল জামা‘আত যদিও তুমি একাকী হও’।[45] অতএব হক্বপন্থী ব্যক্তি
একাকী হলেও সেটাই জান্নাতী দল।
দলীলের উৎসঃ
[8]. ছহীহ বুখারী হা/৯১৭, ১/১২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৭১,
২/১৮৪ পৃঃ), ‘জুম‘আ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; ছহীহ মুসলিম হা/১২৪৪, ১/২০৬ পৃঃ; মিশকাত
হা/১১১৩, পৃঃ ৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৪৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৬৫।
[9]. সূরা নাহল ২৫; আহযাব ৬৭-৬৮;
মায়েদাহ ৬৭; ছহীহ বুখারী হা/১৩৮৬, ১/১৮৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩০৩, ২/৪২৭ পৃঃ), ‘জানাযা’
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৩; মিশকাত হা/৪৬২১, পৃঃ ৩৯৫-৩৯৬।
[10]. আন‘আম ১৪৪; নাহল ২৫; হা-ক্কাহ
৪৪-৪৬; ছহীহ বুখারী হা/১০৯, ১/২১, (ইফাবা হা/১১০, ১/৭৮ পৃঃ), ‘ইলম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮।
[11]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৭২,
২/১০৯৬ পৃঃ, ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[12]. আহমাদ হা/১৭৮৩৩; তিরমিযী
হা/২৮৬৩, ‘আমছাল’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪।
[13]. সূরা তওবা ১২২; ছহীহ বুখারী
হা/৭২৪৬, ২/১০৭৬ পৃঃ, ‘খবরে আহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[14]. সূরা ত্ব-হা ১৩২; আবুদাঊদ
হা/৪৯৫, পৃঃ ৭১, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/৫৭২, পৃঃ ৫৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৫২৬, ২/১৬১ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[15]. হুজুরাত ১৩; আহমাদ হা/২৩৫৩৬।
[16]. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৫০,
১/৪৭৩ পৃঃ, ‘নবীদের ঘটনাবলী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/৫৫৩৮, পৃঃ ৪৮৩, ‘হাশর’
অনুচ্ছেদ।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/১৪২৩,
১/১৯১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩৪০, ৩/১৯ পৃঃ), ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬; মিশকাত হা/৭০১,
পৃঃ ৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৪৯, ২/২১৬ পৃঃ।
[18]. তিরমিযী হা/২৪১৬, ২/৬৭
পৃঃ, ‘ক্বিয়ামতের বর্ণনা’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৫১৯৭, পৃঃ ৪৪৩, ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়।
[19]. সূরা ইউসুফ ১০৮; নাজম
৩-৪; হা-ক্কাহ ৪৪-৪৬; ছহীহ বুখারী হা/৫৭৬৫, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৫৮, ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮;
আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবু আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা (বৈরুত : দারুল
কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১১/১৯৯১), হা/১১১৭৪, ৬/৩৪৩ পৃঃ; আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দির রহমান
আবু মুহাম্মাদ আদ-দারেমী, সুনানুদ দারেমী (বৈরুত : দারুল কিতাব আল-আরাবী, ১৪০৭ হিঃ),
হা/২০২; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৯, ১/১২৩ পৃঃ; ছহীহ বুখারী
হা/১৪৬৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯৮, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/৫১৬২।
[20] . ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল
মুআক্কেঈন আন রাবিবল আলামীন (বৈরুত : দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, ১৯৯৯৩/১৪১৪), ২য় খন্ড,
পৃঃ ৩০৯; ইবনু আবেদীন, হাশিয়া বাহরুর রায়েক্ব ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৯৩; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন
আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ) মিনাত তাকবীর ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায
: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১/১৪১১), পৃঃ ৪৬।
[21]. আল-খুলাছা ফী আসবাবিল
ইখতিলাফ, পৃঃ ১০৮; শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ
(কায়রো : আল-মাতবাআতুস সালাফিয়াহ, ১৩৪৫হিঃ), পৃঃ ২৭।
[22]. শারহু মুখতাছার খলীল লিল
কারখী ২১/২১৩ পৃঃ; ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ, পৃঃ ২৮।
[23]. সূরা আন‘আম ১৪৪; আ‘রাফ
৩৩; হুজুরাত ৬; ছহীহ বুখারী হা/৫১৪৩ ও ৬০৬৪, ২/৮৯৬ পৃঃ; ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম বিন
হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, ছহীহ মুসলিম (দেওবন্দ : আছাহহুল মাতাবে‘ ১৯৮৬), হা/৬৫৩৬, ২/৩১৬;
মিশকাত হা/৫০২৮, পৃঃ ৪২৭।
[24]. আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রাণী,
মীযানুল কুবরা (দিল্লী : ১২৮৬ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩০।
[25]. আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ২০০০/১৪২১), ১/৩৯, ভূমিকা দ্রঃ; আবু আব্দিল্লাহ
আল-হাকিম, মা‘রেফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৬০।
[26]. ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ
দ্রঃ, ১/১২ পৃঃ, ‘যা শুনবে তাই প্রচার করা নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৩; প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ
আল-খত্বীব, আস-সুন্নাহ ক্বাবলাত তাদবীন (রৈরুত : দারুল ফিকর, ১৯৮০/১৪০০), পৃঃ ২৩৭।
[27]. মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী,
তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত (বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫/১৪১৫), পৃঃ ৭; ড.
ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ (দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১),
১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৩।
[28]. ছহীহ তিরমিযী হা/২৪৯৯,
২/৭৬ পৃঃ,; মিশকাত হা/২৩৪১, পৃঃ ২০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২৩২, ৫/১০৪ পৃঃ।
[29]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/১২২৯, ১/১৬৪ পৃঃ এবং ১/৬৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৫৭, ২/৩৪৬); মিশকাত হা/১০১৭; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৯৫১, ৩/২৫ পৃঃ।
[30]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল
মুআক্কেঈন ২/২৭০-২৭২।
[31]. বুখারী হা/৪৪৫৪, ২/৬৪০-৬৪১
পৃঃ, (ইফাব হা/৪১০২, ৭/২৪৪ পৃঃ), ‘মাগাযী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৩; ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৫৩,
২/২১০ পৃঃ, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭।
[32]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৫২,
২/১০৯২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৮৫০, ১০/৫১৮ পৃঃ), ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-২১; মিশকাত হা/৩৭৩২, পৃঃ ৩২৪।
[33]. বুখারী হা/৭০৮৪, ২/১০৪৯
পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৬০৫, ১০/৩৮০ পৃঃ), ‘ফিতনা সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মুসলিম হা/৩৪৩৫;
মিশকাত হা/৫৩৮২, পৃঃ ৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৪৯, ১০/৩ পৃঃ।
[34]. আবুদাঊদ হা/৪৫৯৭, ২/৬৩১
পৃঃ, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৭২, পৃঃ ৩০, সনদ ছহীহ, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে
অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[35]. আবুদাঊদ হা/১৪৫, পৃঃ ১৯;
মিশকাত হা/৪০৮, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭৪, ২/৮৩ পৃঃ, ‘ওযূর সুন্নাত’ অনুচ্ছেদ।
[36]. آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِيْ أَنْزَلْتَ وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ قَالَ الْبَرَاءُ فَقُلْتُ وَبِرَسُوْلِكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ قَالَ فَطَعَنَ بِيَدِهِ فِيْ صَدْرِيْ ثُمَّ قَالَ وَنَبِيِّكَ الَّذِيْ أَرْسَلْتَ -তিরমিযী হা/৩৩৯৪, ২/১৭৬-১৭৭, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘ঘুমানোর জন্য বিছানায়
গিয়ে দু‘আ পড়া’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ বুখারী হা/৬৩১১, ২/৯৩৪ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮৩,
অনুচ্ছেদ-৬; ছহীহ মুসলিম হা/৭০৫৭, ২/৩৪৮ পৃঃ, ‘দু‘আ ও যিকির’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭।
[37]. আহমাদ হা/৯৭৯০, সনদ ছহীহ,
মিশকাত হা/৮১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৫৫, ২/২৬২ পৃঃ।
[38]. خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتَّى كَادَ يُكَبِّرُ فَرَأَى رَجُلاً بَادِيًا صَدْرُهُ مِنَ الصَّفِّ فَقَالَ عِبَادَ اللهِ لَتُسَوُّنَّ صُفُوْفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوْهِكُمْ-ছহীহ মুসলিম হা/১০০৭,
১/৮২ পৃঃ, ‘ছালাতে কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১০৮৫, পৃঃ ৯৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১০১৭।
[39]. عَنْ جَابِرٍ قَالَ مَرَّ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَجُلٍ وَهُوَ يُصَلِّي وَقَدْ وَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى الْيُمْنَى فَانْتَزَعَهَا وَوَضَعَ الْيُمْنَى عَلَى الْيُسْرَى -মুসনাদে আহমাদ হা/১৫১৩১; ছহীহ
আবুদাঊদ হা/৭৫৫, পৃঃ ১১০, সনদ হাসান।
[40]. إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ زَمَانَ صَبْرٍ لِلمُتَمَسِّكِ فِيْهِ أَجْرُ خَمْسِيْنَ شَهِيْدًا فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ، مِنَّا أَوْ مِنْهُمْ؟ قَالَ مِنْكُمْ. -ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল
কাবীর হা/১০২৪০; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ-ছহীহাহ ওয়া শাইয়ুন
মিন ফিক্বহিহা ওয়া ফাওয়াইদিহা (বৈরুত : আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), হা/৪৯৪;
সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/২২৩৪।
[41]. مَنْ سَدَّ فُرْجَةً فِيْ صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَبَنَى لَهُ بَيْتًا فِى الْجَنَّةِ -ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৫৭৯৭;
সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২।
[42]. বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ
হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬।
[43]. ছহীহ বুখারী হা/৪৩০২,
২/৬১৫-৬১৬ পৃঃ, ‘মাগাযী’ অধ্যায়-৬৭, অনুচ্ছেদ-৫০; মিশকাত হা/১১২৬, পৃঃ ১০০; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/১০৫৮, ৩/৭১ পৃঃ।
[44]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৬২৬,
২/২১০ পৃঃ, ‘আদব’ অধ্যায়, ‘অনুমতি’ অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৪৬৬৭, পৃঃ ৪০০; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৪৪৬২ ৯/১৯ পৃঃ।
[45]. إِنَّ الْجَمَاعَةَ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَ إِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ -ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাষ্ক ১৩/৩২২ পৃঃ; সনদ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত
হা/১৭৩-এর টীকা দ্রঃ, ১/৬১ পৃঃ; ইমাম লালকাঈ, শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ ১/১০৮ পৃঃ।
প্রচলিত ফেক্বহী গ্রন্থ ও বাজারের নামায শিক্ষা বই সম্পর্কে হুঁশিয়ারী
:
রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সমাজ থেকে উঠে যাওয়ার
কারণ হল, বিভিন্ন মাযহাব ও তরীক্বার নামে প্রণীত ফেক্বহী গ্রন্থ ও বাজারে প্রচলিত
‘নামায শিক্ষা’ বই। এগুলোই বিদ‘আতী ছালাতের ভিত্তি। লেখকগণ জাল ও যঈফ হাদীছ এবং মিথ্যা
কাহিনীর মর্মান্তিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেননি। নিজেদের মাযহাবের কর্মকান্ডকে প্রমাণ
করার জন্য জাল ও যঈফ হাদীছের আশ্রয় নিয়েছেন এবং নিজ নিজ মাযহাবের জন্য পৃথক পৃথক ফিক্বহী
গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনুরূপভাবে অন্য মাযহাবের দলীল খন্ডন করার জন্য রচনা করেছেন পৃথক
পৃথক ফিক্বহী উছূল। ফক্বীহগণের এই করুণ বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে আল্লামা মারজানী
হানাফী বলেন,
‘ফক্বীহদের বক্তব্যে ভুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা
থেকে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, সেগুলো সনদ বিহীন। .. নিঃসন্দেহে তা জাল হওয়ারই প্রমাণ
বহন করে, যা অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে’।[47] আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী
(রহঃ) ফিক্বহ গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন,
‘অনেক বিশ্বস্ত কিতাব, যার উপর বড় বড় ফক্বীহগণ
নির্ভরশীল, সেগুলো জাল হাদীছ সমূহে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে ফাতাওয়ার কিতাব সমূহ। গভীর
দৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, ঐ সকল গ্রন্থ প্রণয়নকারীগণ যদিও পূর্ণ
ইলমের অধিকারী, কিন্তু হাদীছ সংকলনের ক্ষেত্রে তারা ছিলেন শিথিলতা প্রদর্শনকারী’।[48]
অন্যত্র তিনি আরো পরিষ্কারভাবে সকলকে সাবধান করে দিয়ে বলেন,
(হে পাঠক!) তুমি কি হেদায়া রচনাকারীকে দেখ
না, যিনি শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্যতম? এছাড়া ‘আল-ওয়াজীয’-এর ভাষ্যকার রাফেঈকে দেখ
না, যিনি শাফেঈদের শীর্ষস্থানীয়? এই দু’জন ঐ সকল প্রধান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের
দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয় এবং যাদের উপর শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যক্তিগণ নির্ভর করে
থাকেন। অথচ উক্ত কিতাবদ্বয়ে তারা এমন অনেক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, মুহাদ্দিছগণের নিকট
যেগুলোর কোন চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায় না’।[49] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮হিঃ)
বহু পূর্বেই প্রভাবিত ফক্বীহদের সম্পর্কে বলে গেছেন,
‘মাশাআল্লাহ দু’একজন ব্যতীত মাযহাবী গোঁড়ামী
প্রদর্শনকারীদের কেউই কুরআন-সুন্নাহ বুঝেন না; বরং তারা অাঁকড়ে ধরেন যঈফ ও জাল হাদীছের
ভান্ডার, বিভ্রান্তিকর রায়-এর বোঝা এবং কতক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ও কথিত আলেমদের কল্প-কাহিনীর
সমাহার’।[50]
সুধী পাঠক! আমাদের আলোচনা পড়লেই উক্ত মন্তব্যগুলোর বাস্তবতা
প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ। উক্ত ফেক্বহী গ্রন্থ ছাড়াও অনেক বড় বড় বিদ্বান ছালাত সম্পর্কে
বই লিখেছেন কিন্তু সেগুলোও জাল, যঈফ ও বানোয়াট কথাবার্তায় পরিপূর্ণ। প্রচলিত ‘তাবলীগ
জামাআত’ কর্তৃক প্রণীত ‘ফাযায়েলে আমল’ বা ‘তাবলীগী নিছাব’ তার অন্যতম। বিভিন্ন ত্বরীকা
ও যিকিরপন্থীদের বইগুলো তো মিথ্যা কাহিনীর ‘উপন্যাস সিরিজ’। বর্তমানে মুখরোচক শিরোনামে
কিছু বই বাজারে ছাড়া হচ্ছে, যেগুলো প্রতারণা ও শঠতায় ভরপুর। তাই মুছল্লী হিসাবে ছালাত
সংক্রান্ত মাসআলাগুলো যাচাই করা আবশ্যক।
সম্মানিত মুছল্লী!
বর্তমান সমাজে যে ছালাত প্রচলিত আছে, তা জাল
ও যঈফ হাদীছ ভিত্তিক বানোয়াট ছালাত। রাসূল (ছাঃ) যে পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করতেন, সেই
পদ্ধতি কোন মসজিদেই চালু নেই বললেই চলে। ২৪১ হিজরীর পূর্বে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল
(১৬৪-২৪১ হিঃ) বলে গেছেন, ‘তুমি যদি এই যুগের একশ’ মসজিদেও ছালাত আদায় করো, তবুও তুমি
কোন একটি মসজিদেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) ছালাত দেখতে পাবে না।
অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের নিজেদের ছালাত এবং তোমাদের সাথে যারা ছালাত
আদায় করে, তাদের ছালাতের প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখ’।[51]
বারোশ’ বছর পর আমরা যদি আজ তাঁর কথাটি বিশ্লেষণ
করি, তাহলে আমরা আমাদের ছালাতের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাব। তাই ভেজালমুক্ত ছালাত
মুছল্লীর সামনে তুলে ধরার জন্যই ‘জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত’ শীর্ষক
এই লেখনী। ওযূ ও তায়াম্মুম সংক্রান্ত আলোচনার পর ফরয ছালাতসহ অন্যান্য ছালাতে যে সমস্ত
ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সেগুলো উক্ত লেখনীতে সন্নিবেশিত হয়েছে। অতঃপর সঠিক পদ্ধতি তুলে
ধরা হয়েছে। তাই নিজের ছালাতকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক মুছল্লীর কাছে এই বইটি থাকা
অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। সেই সাথে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিৎ অন্য মুছল্লীর
নিকট বইটি পৌঁছে দিয়ে সহযোগিতা করা। ফলে ঐ মুছল্লী বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায় করে যত ছওয়াব
পাবেন, তার সমপরিমাণ ছওয়াব ঐ ব্যক্তিও পাবেন, যিনি সহযোগিতা করলেন।[52]পরিশেষে আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করছি- তিনি যেন আমাদের এই খেদমতটুকু কবুল করেন। যারা বইটি প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ
করেছেন এবং প্রকাশনায় সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ যেন তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত
কল্যাণ দান করেন- আমীন!!
দলীলের উৎসঃ
[46]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮
পৃঃ, (ইফাবা হা/৪২৫), ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৮১, পৃঃ ৩৮; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৮ পৃঃ।
[47]. নাযেরাতুল হক্ব-এর বরাতে
আল-ইরশাদ, পৃঃ ১৪৬; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, পৃঃ ১৪৬।
[48]. আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী,
জামে‘ ছাগীর-এর ভূমিকা নাফে‘ কাবীর, পৃঃ ১৩; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৩৭।
[49]. আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী,
আজওয়াবে ফাযেলাহ-এর বরাতে আল-ইরশাদ, পৃঃ ১৫৭; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, পৃঃ ১৫১।
[50]. ইমাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ,
মাজমূউ ফাতাওয়া ২২/২৫৪-২৫৫।
[51]. আবুল হুসাইন ইবনে আবী
ইয়ালা, ত্বাবাক্বাতুল হানাবিলাহ ১/৩৫০ পৃঃ- لَوْ صَلَّيْتَ فِىْ مِائَةِ مَسْجِدٍ مَا رَأَيْتَ أَهْلَ مَسْجِدٍ وَاحِدٍ يُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ عَلَى مَا جَاءَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَنْ أَصْحَابِهِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَانْظُرُوْا فِىْ صَلاَتِكُمْ وَصَلاَةَ مَنْ يُّصَلِّىْ مَعَكُمْ
[52]. মুসলিম হা/৫০০৭; মিশকাত
হা/২০৯।
(১)
কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ছালাত আদায়ের পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে
ছালাত আদায় করতে দেখছ। (বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪,
অনুচ্ছেদ-৬)
১. ছালাতের সংজ্ঞা
‘ছালাত’ -এর আভিধানিক অর্থ দো‘আ, রহমত, ক্ষমা
প্রার্থনা করা ইত্যাদি।[1] পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে
আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘ছালাত’
বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1] . আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব,
পৃঃ ১৬৮১।
[2] .আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী,
মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাতের
বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
২. ছালাতের ফরযিয়াত ও রাক‘আত সংখ্যা
নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই ছালাত ফরয হয়। তবে
তখন ছালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে
বলেন, আপনি আপনার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন সূর্যাস্তের পূর্বে ও সূর্যোদয়ের পূর্বে’।[3]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে ছালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[4] এছাড়া রাসূল
(ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের
ছালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল ছালাত
আদায় করতেন।[5] মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয়।[6] উক্ত পাঁচ
ওয়াক্ত ছালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। [7] এছাড়া রয়েছে জুম‘আর ফরয ছালাত,
যা সপ্তাহে একদিন শুক্রবার দুপুরে পড়তে হয়। [8] জুম‘আ পড়লে যোহর পড়তে হয় না। কেননা
জুম‘আ হ’ল যোহরের স্থলাভিষিক্ত। [9]
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাতে দিনে-রাতে মোট ১৭ রাক‘আত
ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন(১)
ফজর : ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয (২) যোহর : ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর
৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৩) আছর : ৪ রাক‘আত ফরয (৪) মাগরিব : ৩ রাক‘আত
ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত (৫) এশা : ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর
শেষে এক রাক‘আত বিতর।
জুম‘আর ছালাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে
প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা
২ রাক‘আত সুন্নাত। উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত
এবং ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত, [10] যা অত্র বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সমূহে দ্রষ্টব্য।
দলীলের উৎসঃ
[3] . গাফির/মুমিন ৪০/৫৫; মিরআত
২/২৬৯।
[4] . মুসলিম হা/৬৮৫; আবুদাঊদ
হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১।
[5] . মুযযাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে
কুরতুবী।
[6] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম,
মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।
[7] . আবুদাঊদ হা/৩৯১, ৩৯৩
‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১।
[8] . জুম‘আ ৬২/৯; মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৫৪, ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২।
[9] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৭।
[10]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা ‘ছালাত’
অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩।
সহিহ পদ্ধতি (সংক্ষিপ্তভাবে)
অনুধাবন করুন আপনার প্রভুর বাণী- ‘সফলকাম হবে
সেই সব মুমিন যারা ছালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে’।
(১) তাকবীরে তাহরীমা:
মুছল্লী ওযূ করার পর মনে মনে ছালাতের সংকল্প
করবে। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাতে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ‘তাকবীরে তাহরীমা’
সহ দু’হাত কান অথবা কাঁধ বরাবর উঠিয়ে বুকের উপর বাঁধবে।[1] এ সময় বাম হাতের উপরে ডান
হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম হাতের কব্জির উপরে ডান হাতের কব্জি রেখে বুকের উপরে
হাত বাঁধবে।[2] জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করলে কাতারের মাঝে পরস্পরের পায়ের সাথে পা,
টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।[3] সেই সাথে সিজদা বা তার
এরিয়ার মধ্যে দৃষ্টি রাখবে।[4]
অতঃপর ছানা পাঠ করবে-
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া,
কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া,
কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল
মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি’।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহ সমূহের
মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে।
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গোনাহ সমূহ হতে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা
কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে ছাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ
দ্বারা ও শিশির দ্বারা’।[5]
একে ‘ছানা’ বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার
জন্য অন্য দো‘আও রয়েছে। তবে এই দো‘আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।
(২) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ :
ছানা পাঠ শেষ করে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্ব-নির
রজীম মিন হামযিহী, ওয়া নাফখিহী ওয়া নাফছিহী[6] ও ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’সহ সূরা
ফাতিহা পাঠ করবে।[7] এভাবে পড়বে প্রথম রাক‘আতে। পরের রাক‘আতগুলো ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির
রহীম’ বলে সূরা ফাতিহা শুরু করবে। জেহরী ছালাতে ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বে[8] এবং ফাতিহা
শেষে উচ্চৈঃস্বরে ‘আমীন’ বলবে।[9] জেহরী ছালাতে মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে সাথে শুধু সূরা
ফাতিহা পড়বে।[10] ক্বিরাআত শেষে ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীও তার সাথে মিলে এক
সঙ্গে আমীন বলবে।[11] উল্লেখ্য, ইমামের আমীন বলার আগেই মুক্তাদীর আমীন বলার যে অভ্যাস
চালু তা বর্জন করতে হবে।
(৩) ক্বিরাআত:
সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম হলে কিংবা মুছল্লী
একাকী হলে প্রথম দু’রাক‘আতে কুরআন থেকে অন্য সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করবে। তবে মুক্তাদী
হলে জেহরী ছালাতে ইমামের সাথে সাথে শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর ইমামের অন্য ক্বিরাআত
মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে।[12] আর যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম মুক্তাদী উভয়ে প্রথম দুই
রাক‘আতে সূরা ফাতিহাসহ অন্য সূরা পড়বে।[13] আর শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ
করবে।[14]
(৪) রুকূ :
ক্বিরাআত শেষে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে দু’হাত
কান কিংবা কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকূতে যাবে।[15] হাঁটুর উপরে
দু’হাতে ভর দিয়ে পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে। এ সময় বাহুসহ দুই হাত ও হাঁটুসহ দুই পা শক্ত
করে সোজা রাখবে।[16] অতঃপর রুকূর দু‘আ পড়বে।[17]
(৫) কওমা :
অতঃপর রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে
দাঁড়াবে এবং কান বা কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করবে।[18] এ সময় ‘সামি‘আল্লা-হু
লিমান হামিদাহ’ বলে দু‘আ পাঠ করবে।[19] তারপর বলবে- رَبَّنَا
لَكَ
الْحَمْدُ
‘রববানা লাকাল হাম্দ’ বলবে। অথবা বলবে- رَبَّنَا
وَلَكَ
الْحَمْدُ
حَمْدًا
كَثِيْرًا
طَيِّبًا
مُّبَارَكًا
فِيْهِ
‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’।[20] সেই সাথে
দুই হাত স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দিবে।[21]
(৬) সিজদা :
অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও
পরে দু’হাঁটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও দু‘আ পড়বে।[22] এ সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী
করে মাথার দু’পাশে কাঁধ বরাবর মাটিতে রাখবে।[23] হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখবে।[24]
কনুই উঁচু রাখবে ও বগল ফাঁকা রাখবে।[25] হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না।[26] সিজদা লম্বা
হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।[27] দুই
পা খাড়া করে এক সঙ্গে মিলিয়ে রাখবে।[28] এ সময় আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করে রাখবে।[29]
অতঃপর سُبْحَانَ
رَبِّيَ
الْأَعْلَى
বলবে কমপক্ষে তিনবার বলবে।[30]। (সহিহ হাদিস ভিত্তিক আরো অনেক দোয়া আছে যা সালাতের
মধ্যে পঠিতব্য দোয়াসমূহ অধ্যায়ে জানবো)
সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে
ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় প্রশান্তির সাথে বসবে এবং বলবে ‘হে আল্লাহ! আপনি
আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন
করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[31]
অতঃপর ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায়
যাবে ও দু‘আ পড়বে। ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময় সিজদা থেকে উঠে শান্তভাবে বসবে।
অতঃপর মাটিতে দু’হাত রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।[32] উল্লেখ্য যে, রুকূ ও সিজদায় কুরআন
থেকে কোন দু‘আ পড়বে না।[33]
(৭) বৈঠকঃ
২য়
রাক‘আত শেষ করার পর বৈঠকে বসবে। ১ম বৈঠক হলে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়বে।[34] তারপর
মাটির উপর দুই হাত রেখে ভর দিয়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে।[35] আর যদি শেষ বৈঠক
হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দু‘আয়ে মাছূরাহ পড়বে।[36] ১ম বৈঠকে বাম পায়ের
পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের
উপরে বসবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে ও আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করবে।[37] এ সময় আঙ্গুলগুলো
সাধারণভাবে খোলা রাখবে।[38] বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুল বাম হাঁটুর উপর ক্বিবলামুখী
করে রাখবে। আর ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল মধ্যমা আঙ্গুলের পিঠে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত
আঙ্গুল দ্বারা সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করবে।[39] অন্য হাদীছে এসেছে, ৫৩-এর
ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতে
থাকবে।[40] এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দিকে দৃষ্টি রাখবে।[41] দুই তাশাহ্হুদেই ইশারা করবে।[42]
(৮) সালামঃ
‘আত্তাহিইয়া-তু’, ‘দরূদ’, দু‘আ মাছূরা ও অন্যান্য
দু‘আ পড়া শেষ করে ডানে ও বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম ফিরাবে।[43]
উল্লেখ্য যে, প্রথম সালামের সাথে ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ যোগ করা যায়।[44] সালাম ফিরিয়ে
প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ বলবে।[45] তারপর তিনবার বলবে ‘আস্তাগফিরুল্লা-হ’।
সেই সাথে বলবে ‘হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা
ও সম্মানের মালিক’।[46]
এ সময় ইমাম হলে প্রত্যেক ছালাতে ডানে অথবা
বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীদের দিকে মুখ করে বসবে।[47] অতঃপর ইমাম মুক্তাদী সকলে সালামের
পরের যিকির সমূহ পাঠ করবে।[48] সালাম ফিরানোর পর পরই দ্রুত উঠে যাবে না। এটা বদ অভ্যাস।[49]
বরং এ সময় ‘আয়াতুল কুরসী’সহ অন্যান্য দু‘আ পাঠ করবে।[50]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/৯১২, ১/১৭০ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭৬৯); বুখারী হা/৬৬৬৭, ২/৯৮৬ পৃঃ; মিশকাত হা/৭৯০; বুখারী হা/৭৩৫; মিশকাত
হা/৭৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৭, ২/২৫২ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/৮৯১; আবুদাঊদ হা/৭২৬,
৭৪৫; ইরওয়াউল গালীল হা/৩৫১, ২/৬৬ পৃঃ।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৭৪০, ১/১০২
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭০৪, ২য় খন্ড, পৃঃ ১০২); নাসাঈ হা/৮৮৯, ১/১০২ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৭২৭,
১/১০৫ পৃঃ; আহমাদ হা/১৮৮৯০; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৪৮০; ইবনু হিববান হা/১৮৬০, সনদ ছহীহ।
[3]. আবুদাঊদ হা/৬৬৬, ১ম খন্ড,
পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১০২, পৃঃ ৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৩৪, ৩/৬১ পৃঃ; আবুদাঊদ
হা/৬৬২, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ; ছহীহ বুখারী হা/৭২৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা
হা/৬৮৯, ২/৯৫ পৃঃ); ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৫৭৯৫; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৩৮২৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২।
[4]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৭৬১;
বায়হাক্বী, সনানুল কুবরা হা/১০০০৮; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৮৯; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল
গালীল হা/৩৫৪-এর আলোচনা দ্রঃ।
[5]. বুখারী হা/৭৪৪, ১/১০২ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭০৮, ২/১০৩ পৃঃ); মিশকাত হা/৮১২, পৃঃ ৭৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৫৬, ২/২৬৬
পৃঃ।
[6]. আবুদাঊদ হা/৭৭৫, ১/১১৩
পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪২, ১/৫৭ পৃঃ; সূরা নাহল ৯৮; ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ৯৫।
[7]. ছহীহ বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৫; ছহীহ মুসলিম ১/১৬৯ পৃঃ,
মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ৯০৬, ৯০৭ (ইফাবা হা/৭৫৮, ৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); মিশকাত পৃঃ
৭৮, হা/৮২২ ও ৮২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৫, ২/২৭২ পৃঃ, ‘ছালাতে ক্বিরআত পাঠ করা’
অনুচ্ছেদ; দারাকুৎনী হা/১২০২; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৪৮৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১৮৩;
ছহীহুল জামে‘ হা/৭২৯।
[8]. বুখারী হা/৭৪৩, ১/১০৩ পৃঃ.
(ইফাবা হা/৭০৭, ২/১০৩ পৃঃ); মুসলিম হা/৯১৪; মিশকাত হা/৮২৪ ও ৮২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৭৬৭ ও ৭৬৬, ২/২৭৩ পৃঃ।
[9]. বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ
হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬।
[10]. বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ); মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ১/১৬৯, (ইফাবা হা/৭৫৮,
৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৮৪১; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫।
[11]. বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ
হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬।
[12]. বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ); মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ১/১৬৯, (ইফাবা হা/৭৫৮,
৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৮৪১; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/২৮০৫।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, পৃঃ
৬১; সনদ ছহীহ, আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৬, ২/২৮৮ পৃঃ।
[14]. বুখারী হা/৭৭৬, ১/১০৭
পৃঃ; মিশকাত হা/৮২৮, পৃঃ ৭৯।
[15]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ
বুখারী হা/৭৩৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০২; এছাড়া হা/৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯ দ্রঃ, (ইফাবা হা/৬৯৯-৭০৩,
২/১০০-১০১ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৮, (ইফাবা
হা/৭৪৫-৭৪৯)।
[16]. মুসলিম হা/১১৩৮; মিশকাত
হা/৭৯১; বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২; আবুদাঊদ হা/৮৫৯।
[17]. বুখারী হা/৭৯৪ ও ৮১৭;
ইবনু মাজাহ হা/৮৮৮; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৩৩৩।
[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ
বুখারী হা/৭৩৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০২; এছাড়া হা/৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯ দ্রঃ; ছহীহ মুসলিম হা/৮৮৭,
৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৮।
[19]. বুখারী হা/৭৯৫।
[20]. বুখারী হা/৭৯৯; মিশকাত
হা/৮৭৭।
[21]. বুখারী হা/৮২৮, ১/১১৪
পৃঃ; মিশকাত হা/৭৯২; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১৩৯।
[22]. আবুদাঊদ হা/৮৪০, ১/১২২
পৃঃ; নাসাঈ হা/১০৯১, ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৮৯৯; ত্বাহাবী হা/১৪০৫; ছহীহ ইবনু খুযায়মা
হা/৬২৭, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৮২১; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৭৪৪; আলবানী,
মিশকাত ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮২, টীকা নং ১।
[23]. আবুদাঊদ হা/৭৩৪, ১/১০৭
পৃঃ; তিরমিযী হা/২৭০, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৮০১, পৃঃ ৭৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪৫,
২/২৫৭ পৃঃ।
[24]. হাকেম হা/৮১৪; বলূগুল
মারাম হা/২৯৭, সনদ ছহীহ, ছহীহ আবুদাঊদ হা/৮০৯-এর আলোচনা দ্রঃ।
[25]. বুখারী হা/৮০৭, (ইফাবা
হা/৭৭০, ২/১৩৫ পৃঃ), ও ৩৫৬৪; মুসলিম হা/১১৩৪ ও ১১৩২; মিশকাত হা/৮৯১।
[26]. বুখারী হা/৮২২, (ইফাবা
হা/৭৮৪, ২/১৪১ পৃঃ); মুসলিম হা/১১৩০; মিশকাত হা/৮৮৮; আবুদাঊদ হা/৭৩০; মিশকাত হা/৮০১।
[27]. মুসলিম হা/১১৩৫; আবুদাঊদ
হা/৮৯৮; মিশকাত হা/৮৯০, পৃঃ ৮৩।
[28]. ছহীহ মুসলিম হা/১১১৮,
১/১৯২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৯৭২) ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘রুকূ ও সিজদায় কী বলবে’ অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত
হা/৮৯৩, পৃঃ ৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৩৩, ২/২৯৯ পৃঃ, ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[29]. বুখারী হা/৮২৮, ১/১১৪
পৃঃ; মিশকাত হা/৭৯২।
[30]. ইবনু মাজাহ হা/৮৮৮; সনদ
ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৩৩৩।
[31]. তিরমিযী হা/২৮৪, ১/৬৩
পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৮৫০, ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৯০০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪০, ২/৩০১ পৃঃ।
[32]. বুখারী হা/৮২৩, ১/১১৩
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৮৫ ও ৭৮৬, ২/১৪১ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪০, ২/২৫৪
পৃঃ; বুখারী হা/৮২৪, ১/১১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৬৮৭; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৯১৯।
[33]. মুসলিম হা/১১০২; মিশকাত
হা/৮৭৩।
[34]. মুসলিম হা/১১৩৮; মিশকাত
হা/৭৯১; ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১৬০।
[35]. বুখারী হা/৮২৩, ১/১১৩
পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৮৫ ও ৭৮৬, ২/১৪১ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪০, ২/২৫৪
পৃঃ; বুখারী হা/৮২৪, ১/১১৪ পৃঃ।
[36]. বুখারী
হা/৮৩৫, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫০; মুসলিম হা/১৩৫৪, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬;
মিশকাত হা/৯৪০।
[37]. বুখারী হা/৮২৮, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১১৪, (ইফাবা হা/৭৯০, ২/১৪৪ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৬, ২/২৫২
পৃঃ, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।
[38]. আবুদাঊদ হা/৭৩০; মিশকাত
হা/৮০১।
[39]. ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৬,
১৩৩৮, ১/২১৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮৪); মিশকাত হা/৯০৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৭, ২/৩০৪
পৃঃ।
[40]. ছহীহ মুসলিম হা/১৩৩৮,
১/২১৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৮৬); মিশকাত হা/৯০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৬, ২/৩০৩ পৃঃ।
[41]. নাসাঈ হা/১২৭৫, ১১৬০,
১/১৩০ পৃঃ ও ১/১৪২ পৃঃ।
[42]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৯০৩; সনদ ছহীহ, ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১৫৯।
[43]. বুখারী হা/৮৩৪ ‘আযান’
অধ্যায়, অনুচ্ছে-১৪৯; মিশকাত হা/৯৪২, পৃঃ ৮৭ ‘তাশাহহুদে দু‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
[44]. আলবানী, ছহীহ আবুদাঊদ
হা/৯১৫, ১/১৪৩ পৃঃ; উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদের কোন ছাপায় ‘ওয়া বারাকাতুহু’ অংশটুকু নেই।
আবুদাঊদ হা/৯৯৭ (রিয়ায ছাপা)। আরো উল্লেখ্য যে, বলূগুল মারামে দুই দিকেই উক্ত অংশ যোগ
করার যে বর্ণনা এসেছে, তা ভুল হয়েছে। বলূগুল মারাম হা/৩১৬, পৃঃ ৯৫। তাছাড়া দুই দিকেই
‘ওয়া বারাকাতুহু’ যোগ করা সম্পর্কে ইবনে হিববানে যে হাদীছ এসেছে তা যঈফ- ইবনে হিববান
হা/১৯৯৩; ইরওয়াউল গালীল হা/৩২৬-এর আলোচনা দ্রঃ ২/২৯ পৃঃ।
[45]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/৮৪২, ১/১১৬ পৃঃ; মুসলিম হ/১৩৪৪ ও ১৩৪৫, ১/২১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/৯৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৮৯৭, ৩/১ পৃঃ।
[46]. মুসলিম হা/১৩৬২, ১/২১৮
পৃঃ; মিশকাত হা/৯৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৯৯, ৩/২ পৃঃ, ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[47]. ছহীহ বুখারী হা/৮৪৫, ১/১১৭
পৃঃ (ইফাবা হা/৮০৫, ২/১৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫৬; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৮১,
১/২২৯ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪০; মিশকাত হা/৯৪৪, পৃঃ ৮৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৮৮৩, ২/৩১৮ পৃঃ, ‘তাশাহহুদে দু‘আ করা’ অনুচ্ছেদ। বুখারী হা/৬২৩০; মুসলিম হা/১৬৭৬;
মিশকাত হা/৯০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৮, ২/৩০৪ পৃঃ।
[48]. বুখারী হা/৮৪৪, ১/১১৭
পৃঃ; মুসলিম হা/১৩৬৬, ১/২১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/৯৬২; আবুদাঊদ হা/১৫২২ প্রভৃতি।
[49]. আহমাদ হা/২৩১৭০; সনদ ছহীহ,
সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৪৯।
[50]. নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮,
৬/৩০ পৃঃ; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহা হা/৯৭২; বলূগুল মারাম হা/৩২২, পৃঃ ৯৬। উল্লেখ্য
যে, বায়হাক্বীর সূত্রে মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে তার সনদ যঈফ- বায়হাক্বী হা/২১৬৭; সিলসিলা
যঈফাহ হা/৫১৩৫; মিশকাত হা/৯৭৪, পৃঃ ৮৯।
ছালাত আদায়ের বিস্তারিত পদ্ধতি জানতে এখানে ক্লিক করুন।
(২) ছালাতের গুরুত্ব
1) কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে ছালাতের স্থান।[11]
2) ছালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, যা মি‘রাজের
রাত্রিতে ফরয হয়।[12]
3) ছালাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভ[13] যা ব্যতীত
ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।
4) ছালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ৭
বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়।[14]
5) ছালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসাবে
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।[15]
6) পবিত্র কুরআনে সর্বাধিকবার আলোচিত বিষয়
হ’ল ছালাত।[16]
7) মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরয হ’ল
ছালাত, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।[17]
8) ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে, তা হ’ল
তার শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হ’ল ‘ছালাত’। [18]
9) দুনিয়া থেকে ‘ছালাত’ বিদায় নেবার পরেই ক্বিয়ামত
হবে।[19]
10) ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব
নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের
হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।[20]
11) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসাবে ‘ছালাত’-কে ফরয
করা হয়েছে, যা অন্য কোন ফরয ইবাদতের বেলায় করা হয়নি।[21]
12) মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য
হ’ল ‘ছালাত’।[22]
13) জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে, সে ছালাত
বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয় (মারিয়াম ১৯/৫৯)।
14) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকটে নিজের জন্য
ও নিজ সন্তানদের জন্য ছালাত কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৪০)।
15) মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সর্বশেষ
অছিয়ত ছিল ‘ছালাত’ ও নারীজাতি সম্পর্কে।[23]
দলীলের উৎসঃ
[11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২
‘যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১।
[12] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫
‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।
[13] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
হা/২৯ (..عموده
الصلاة..)
‘ঈমান’ অধ্যায়-১।
[14] . مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ
بِالصَّلاَةِ
وَهُمْ
أَبْنَاءُ
سَبْعِ
سِنِيْنَ
وَاضْرِبُوْهُمْ
عَلَيْهَا
وَهُمْ
أَبْنَاءُ
عَشْرِ
سِنِيْنَ
وَفَرِّقُوْا
بَيْنَهُمْ
فِي
الْمَضَاجِعِ
= আবুদাঊদ হা/২৪৭, মিশকাত হা/৫৭২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, পরিচ্ছেদ-২।
[15] . মারিয়াম ১৯/৫৯ (فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا)
[16] . কুরআনে অনূন্য ৮২ জায়গায় ‘ছালাতের’
আলোচনা এসেছে। - আল-মু‘জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল কুরআনিল কারীম (বৈরূত : ১৯৮৭)।
[17] . বাক্বারাহ ২/২৩৮-৩৯; নিসা ৪/১০১-০৩।
[18] ও [19]. عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَتُنْقَضَنَّ عُرَى الْإِسْلاَمِ عُرْوَةً عُرْوَةً فَكُلَّمَا انْتَقَضَتْ عُرْوَةٌ تَشَبَّثَ النَّاسُ بِالَّتِيْ تَلِيْهَا وَأَوَّلُهُنَّ نَقْضًا الْحُكْمُ وَآخِرُهُنَّ الصَّلاَةُ
আহমাদ, ছহীহ ইবনু হিববান; আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব
ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, ছহীহ জামে‘ ছাগীর হা/৫০৭৫, ৫৪৭৮।
[20] عَنْ
أَنَسِ
بْنِ
حُكَيْمٍ
عَنْ
أَبِيْ
هُرَيْرَةَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ:
أَوَّلُ
مَا
يُحَاسَبُ
بِهِ
الْعَبْدُ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
الصَلاَةُ
، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ
ত্বাবারাণী আওসাত্ব, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব
হা/৩৬৯, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮; আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০
‘ছালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০।
[21] মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫
‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ; নিসা ৪/১০৩।
[22]. عَنْ جَابِرَ
بْنَ
عَبْدِ
اللهِ
قَالَ
سَمِعْتُ
رَسُولَ
اللهِ
صَلَّى
اللهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ
يَقُولُ:
بَيْنَ
الرَّجُلِ
وَبَيْنَ
الشِّرْكِ
وَالْكُفْرِ
تَرْكُ
الصَّلاَةِ
= মুসলিম হা/১৩৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়; ঐ, মিশকাত হা/৫৬৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৮০।
[23] . عَنْ عَلِيٍّ
قَالَ
كَانَ
آخِرُ
كَلاَمِ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ
الصَّلاَةُ
وَمَا
مَلَكَتْ
أَيْمَانُكُمْ
= ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮ ‘অছিয়তসমূহ’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৩।
(৩) ছালাতের ফযীলত সমূহ
(১) আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে
নির্লজ্জ ও অপসন্দনীয় কাজ সমূহ হতে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।
আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, তিনটি বস্ত্ত
না থাকলে তাকে ছালাত বলা যায় না।
(ক) ইখলাছ (الإخلاص) বা একনিষ্ঠতা, যা তাকে
সৎ কাজের নির্দেশ দেয়
(খ) আল্লাহভীতি (الخشية), যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত
রাখে
(গ) কুরআন পাঠ (ذكر القرآن), যা তাকে ভাল-মন্দের নির্দেশনা
দেয়।[34] আবু হুরায়রা (রাঃ)
বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) ছালাত পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে।
জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখবে,
যা তুমি বলছ (إِنَّهُ
سَيَنْهَاهُ
مَا
تَقُوْلُ)’।
[35]
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে পরবর্তী রামাযানের মধ্যকার
যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাকে (যা
তওবা ব্যতীত মাফ হয় না)’।[36]
(৩) তিনি বলেন, তোমাদের কারু ঘরের সম্মুখ দিয়ে
প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকে কি?... পাঁচ
ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।[37]
(৪) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত
করল, ছালাত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাতের কারণ হবে....। [38]
(৫) আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘বান্দা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত
গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি
যখন রুকূ বা সিজদায় গমন করে, তখন গুনাহ সমূহ ঝরে পড়ে’। [39]
(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
(ক) যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত নিয়মিত আদায়
করে, সে জাহান্নামে যাবে না’। ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। [40]
(খ) দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আছরের
ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন,
তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে
যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) ছালাত অবস্থায়’।[41]
কুরআনে ফজরের ছালাতকে ‘মাশহূদ’ বলা হয়েছে(ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় ফেরেশতা বদলের
কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়। [42]
গ) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর
যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে।[43]
(৭) তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে
আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করবে,
ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশূ‘-খুযূ‘ পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য
আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোন অঙ্গীকার
নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছা করলে আযাব দিতে পারেন’।[44]
(৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী
করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে
আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল
ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি।
অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে
যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে
সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার নিকটে কোন কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি।
যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি’....।[45]
(৪) মসজিদে ছালাতের ফযীলত :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর
নিকটে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ এবং নিকৃষ্টতর স্থান হ’ল বাজার’। [46]
(২) ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’।
[47]
(৩) তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি
যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন এবং ঐ ব্যক্তি বেশী পুরস্কৃত হন, যিনি আগে এসে অপেক্ষায়
থাকেন। অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন।[48] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের
কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি
ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[49]
(৪) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে
যে সাত শ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের
সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে।[50]
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যত্র ছালাত
আদায়ের চেয়ে আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মাসজিদুল হারামে
ছালাত আদায় করা এক লক্ষ গুণ উত্তম।[51]
উল্লেখ্য যে ‘অন্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে
ছালাত আদায় করলে পাঁচশত গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়া যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
[52]
(৫) জামা‘আতে ছালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ঘরে অথবা বাজারে
একাকী ছালাতের চেয়ে মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায়ে ২৫ বা ২৭ গুণ ছওয়াব বেশী।’ তিনি বলেন,
দুই জনের ছালাত একাকীর চাইতে উত্তম। ...এভাবে জামা‘আত যত বড় হয়, নেকী তত বেশী হয় (وما كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللهِ)।[70]
(২) তিনি বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর
কসম করে বলছি, আমার মন চায় আযান হওয়ার পরেও যারা জামা‘আতে আসে না, ইমামতির দায়িত্ব
কাউকে দিয়ে আমি নিজে গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে আসি’।[71]
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, (ক) আল্লাহ ও
ফিরিশতাগণ ১ম কাতারের লোকদের উপর বিশেষ রহমত নাযিল করে থাকেন। কথাটি আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ) তিনবার বলেন। অতঃপর বলেন, ২য় কাতারের উপরেও।[72] অন্য বর্ণনায় এসেছে, সামনের
কাতার সমূহের উপরে (عَلَى
الصُّفُوْفِ
الْمُقَدَّمَةِ)।[73]
(খ) তিনি বলেন, যদি লোকেরা জানত যে, আযান, প্রথম কাতার ও আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ে
কি নেকী রয়েছে, তাহ’লে তারা পরস্পরে প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা
ও ফজরের ছালাতে কি নেকী রয়েছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও ঐ দুই ছালাতে আসত’।[74]
(গ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন অর্ধরাত্রি ছালাতে কাটাল
এবং যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ল, সে যেন সমস্ত রাত্রি ছালাতে অতিবাহিত করল’।[75]
(ঘ) তিনি বলেন, মুনাফিকদের উপরে ফজর ও এশার চাইতে কঠিন কোন ছালাত নেই।[76] (ঙ) তিনি
বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ৪০ দিন তাকবীরে ঊলা সহ জামা‘আতে ছালাত আদায় করল, তার
জন্য দু’টি মুক্তি লেখা হয়। একটি হ’ল জাহান্নাম হ’তে মুক্তি। অপরটি হ’ল নিফাক্ব হ’তে
মুক্তি।[77] ইবনু হাজার বলেন, ‘তাকবীরে ঊলা’ (التكبيرة
الأولى)
পাওয়া সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সালাফে ছালেহীন ইমামের সাথে প্রথম তাকবীর না পেলে ৩ দিন
দুঃখ প্রকাশ করতেন। আর জামা‘আত ছুটে গেলে ৭ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন’। [78]
(৪) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন গ্রাম বা
বস্তিতে যদি তিন জন মুসলমানও থাকে, যদি তারা জামা‘আতে ছালাত আদায় না করে, তাহ’লে তাদের
উপর শয়তান বিজয়ী হবে। আর বিচ্ছিন্ন বকরীকেই নেকড়ে ধরে খেয়ে ফেলে’।[79]
(৫) ‘যখন কোন মুছল্লী সুন্দরভাবে ওযূ করে ও
স্রেফ ছালাতের উদ্দেশ্যে ঘর হ’তে বের হয়, তখন তার প্রতি পদক্ষেপে আল্লাহর নিকটে একটি
করে নেকী হয় ও একটি করে মর্যাদার স্তর উন্নীত হয় ও একটি করে গোনাহ ঝরে পড়ে। যতক্ষণ
ঐ ব্যক্তি ছালাতরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করতে থাকে ও বলে যে, ‘হে আল্লাহ!
তুমি তার উপরে শান্তি বর্ষণ কর’। ‘তুমি তার উপরে অনুগ্রহ কর’। যতক্ষণ সে কথা না বলে
ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা আরও বলতে থাকে, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর’ ‘তুমি তার
তওবা কবুল কর’।[80]
(৬) যখন জামা‘আতের এক্বামত হ’বে, তখন ঐ ফরয
ছালাত ব্যতীত আর কোন ছালাত নেই।[81] অতএব ফজরের জামা‘আতের ইক্বামতের পর সুন্নাত পড়া
জায়েয নয়, যা প্রচলিত আছে। বরং জামা‘আত শেষ হওয়ার পরেই সুন্নাত পড়বে।[82]
(৭) যে অবস্থায় জামা‘আত পাওয়া যাবে, সেই অবস্থায়
শরীক হবে এবং ইমামের অনুসরণ করবে।[83] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে
ওযূ করল। অতঃপর মসজিদে রওয়ানা হ’ল এবং জামা‘আতে যোগদান করল, আল্লাহ তাকে ঐ ব্যক্তির
ন্যায় পুরস্কার দিবেন, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করেছে ও শুরু থেকে হাযির রয়েছে। তাদের
নেকী থেকে তাকে মোটেই কম করা হবে না’।[84]
(৮) জামা‘আতের পরে আসা মুছল্লীগণ এক্বামত দিয়ে
পুনরায় জামা‘আত করবেন। একজন হ’লে আরেকজন মুছল্লী (যিনি ইতিপূর্বে ছালাত আদায় করেছেন)
তার সঙ্গে যোগ দিতে পারেন জামা‘আত করার জন্য এবং এর নেকী অর্জনের জন্য।[85] তবে স্থানীয়
মুছল্লীদের নিয়মিতভাবে জামা‘আতের পরে আসা উচিৎ নয়।
(৯) তিনি বলেন, তোমরা সামনের কাতারের দিকে
অগ্রসর হও। কেননা যারা সর্বদা পিছনে থাকবে, আল্লাহ তাদেরকে (স্বীয় রহমত থেকে) পিছনে
রাখবেন (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম পর্যন্ত পিছিয়ে দিবেন
(আবুদাঊদ)।[86]
ছালাতের নিষিদ্ধ স্থান :
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এরশাদ করেন যে, সমগ্র পৃথিবীই সিজদার স্থান, কেবল কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত’।
[87] সাতটি স্থানে ছালাত নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীছটি যঈফ।[88]
দলীলের উৎসঃ
[34] ইবনু কাছীর, তাফসীর আনকাবুত
২৯/৪৫।
[35] . আহমাদ হা/৯৭৭৭; বায়হাক্বী-শু‘আব,
মিশকাত হা/১২৩৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ-৩৩; মির‘আত
৪/২৩৫।
[36] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪
‘ছালাত’ অধ্যায়-৪।
[37] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৫৬৫।
[38] . আহমাদ হা/৬৫৭৬, ‘হাসান’;
দারেমী হা/২৭২১, ‘ছহীহ’; মিশকাত হা/৫৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, আলবানী প্রথমে ‘জাইয়িদ’ ও
পরবর্তীতে ‘যঈফ’ বলেছেন (তারাজু‘আত হা/২৯)।
[39] . ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী;
আলবানী, ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭১।
[40] .মুসলিম, মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪-২৫,‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[41] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬২৬।
[42] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫।
[43] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৭।
[44] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মালেক,
নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭০।
[45] . বুখারী হা/৬৫০২, ‘হৃদয়
গলানো’ অধ্যায়-৮১, ‘নম্রতা‘ অনুচ্ছেদ-৩৮; মিশকাত হা/২২৬৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আল্লাহর
স্মরণ ও তাঁর নৈকট্যলাভ’ অনুচ্ছেদ-১।
[46] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৬,
‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[47] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬৯৮।
[48] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬৯৯।
[49] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত
হা/১০৬৬ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[50] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৭০১, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[51] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬৯২; ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬; আহমাদ হা/১৪৭৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৩৮।
[52] . ইবনু মাজাহ হা/১৪১৩;
ঐ, মিশকাত হা/৭৫২।
[53] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬৯৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৭।
[54] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ,
মিশকাত হা/৭৩৭।
[55] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত
হা/৭১৮-১৯, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[56] . ইবনু মাজাহ হা/১৪১৪;
বুখারী হা/৯১৭-১৯; ফাৎহুল বারী ২/৪৬২-৬৩, ‘জুম‘আ’ অধ্যায়-১১, ‘মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা
প্রদান’ অনুচ্ছেদ-২৬।
[57] . সূরা
নিসা ৪/৪৮, ১১৬।
[58] . মির‘আত ২/৪২৮।
[59] .মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত
হা/৪৪৮৯, ৯২;‘পোষাক’ অধ্যায়-২২,‘ছবি সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[60] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৪৮,
১১২৬, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৯২।
[61] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/১০৫৯-৬০।
[62] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/২৩৭৪, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯।
[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৭০৪।
[64] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৮৯।
[65] . মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৬।
[66] . ইবনু মাজাহ হা/১৪২৯;
আবুদাঊদ হা/৮৬২।
[67] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬৯৩।
[68] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৩৬৮৫ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়-১৮।
[69] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/২৭২৮ ‘মানাসিক’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-১৫।
[70] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৭০২,১০৫২; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬। অত্র হাদীছে মসজিদ, বাড়ী ও বাজারের
তুলনামূলক গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, বর্ণিত ২৭ গুণ ছওয়াব কেবল মসজিদের
জন্য নির্ধারিত। অধিকন্তু বাড়ীতে ছালাত আদায় করা বাজারে ছালাত আদায়ের চাইতে উত্তম।
অনুরূপভাবে বাড়ীতে কিংবা বাজারে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা সেখানে একাকী ছালাত
আদায়ের চাইতে উত্তম। =দ্রঃ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল
মাছাবীহ (, দিল্লী : ৪র্থ সংস্করণ ১৪১৫/১৯৯৫) ২/৪০৯ পৃঃ; ত্বাবারাণী, বাযযার, ছহীহ
আত-তারগীব হা/৪১১-১২; মির‘আত হা/১০৭৩-এর ব্যাখ্যা, ৩/৫১০ পৃঃ।
[71] . বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৩, ‘জামা‘আত
ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[72] . আহমাদ, দারেমী, ত্বাবারাণী,
মিশকাত হা/১১০১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৩৯ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[73] . নাসাঈ হা/৬৬১; ছহীহুল
জামে‘ হা/১৮৪২।
[74] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬২৮ ‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।
[75] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৩০,
অনুচ্ছেদ-৩।
[76] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৬২৯; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬; মির‘আত ৩/৫০৮।
[77] . তিরমিযী হা/২৪১; ঐ, মিশকাত
হা/১১৪৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-২৮, পরিচ্ছেদ-২।
[78] . মির‘আত ৪/১০২।
[79] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ,
মিশকাত হা/১০৬৭, ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[80] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৭০২; মুসলিম, মিশকাত হা/১০৭২, অনুচ্ছেদ-৭ ও ২৩।
[81] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৮
‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[82] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু
মাজাহ, মিশকাত হা/১০৪৪ ‘ছালাতের নিষিদ্ধ সময় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২২।
[83] . তিরমিযী হা/৫৯১; আবুদাঊদ
হা/৫০৬; ঐ, মিশকাত হা/১১৪২, অনুচ্ছেদ-২৮, পরিচ্ছেদ-২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬১।
[84] . আবুদাঊদ হা/৫৬৪; ঐ, মিশকাত
হা/১১৪৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘মুক্তাদীর কর্তব্য ও মাসবূকের হুকুম’ অনুচ্ছেদ-২৮, পরিচ্ছেদ-২।
[85] . আবুদাঊদ হা/৫৭৪, ‘ছালাত’
অধ্যায়-২, ‘এক মসজিদে দু’বার জামা‘আত করা’ অনুচ্ছেদ-৫৬; তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১৪৬,
অনুচ্ছেদ-২৮।
[86] . মুসলিম, আবুদাঊদ, মিশকাত
হা/১০৯০, ১১০৪ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪।
[87] . اَلْأَرْضُ كُلُّهَا مَسْجِدٌ إِلاَّ الْمَقْبَرَةَ وَالْحَمَّامَ আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী
, মিশকাত হা/৭৩৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[88] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ,
মিশকাত হা/৭৩৮ আলবানী, ইরওয়া হা/২৮৭; যঈফুল জামে‘ হা/৩২৩৫।
(৬) ছালাতের ওয়াজিব সমূহ
রুকন-এর পরেই ওয়াজিব-এর স্থান, যা আবশ্যিক।
যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায় এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সহো’
দিতে হয়। যা ৮টি। [118] যেমন-
১. ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।[119]
২. রুকূতে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রব্বিয়াল
‘আযীম’ বলা।[120]
৩. ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’
বলা।[121]
৪. ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’
অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা। [122]
৫. সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না
রবিবয়াল আ‘লা’ বলা।[123]
৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ
পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে ‘রবিবগফিরলী’ ২ বার বলা।[124]
৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।[125]
৮. সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করা।[126]
দলীলের উৎসঃ
[118] . মুহাম্মাদ বিন আব্দুল
ওয়াহ্হাব, ‘ছালাতের আরকান ও ওয়াজিবাত’ গৃহীত: মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: দারুল
ইফতা, ১৪০৫ হিঃ) পৃঃ ৭৮।
[119] . বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য,
মিশকাত হা/৭৯৯, ৮০১, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২০।
[120] . নাসাঈ, আবুদাঊদ তিরমিযী,
মিশকাত হা/৮৮১ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[121] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/ ৮৭০, ৭৪, ৭৫, ৭৭।
[122] . বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮,
‘আযান’ অধ্যায়, ৮২, ৮৩ ও ৮৫ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৮৬৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৯০৪,
৯১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[123] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী,
মিশকাত হা/ ৮৮১।
[124] . ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭;
আবুদাঊদ হা/৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪; নাসাঈ হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০, ৯০১ ‘সিজদা ও উহার
ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; নায়ল ৩/১২৯ পৃঃ; মজমু‘আ রাসা-ইল ৭৮ পৃঃ।
[125] . আহমাদ, নাসাঈ, নায়ল
৩/১৪০; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[126] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী,
ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৯৫০-৫১, ‘তাশাহহুদের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৬
পৃঃ।
(৭) ছালাতের সুন্নাত সমূহ
ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ছালাতের বাকী সব আমলই
সুন্নাত। যেমনঃ
(১) জুম‘আর ফরয ছালাত ব্যতীত দিবসের সকল ছালাত
নীরবে ও রাত্রির ফরয ছালাত সমূহ সরবে পড়া।
(২) প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে আ‘ঊযুবিল্লাহ...
চুপে চুপে পাঠ করা।
(৩) ছালাতে পঠিতব্য সকল দো‘আ
(৪) বুকে হাত বাঁধা
(৫) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা
(৬) ‘আমীন’ বলা
(৭) সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখা
(৮) ‘জালসায়ে ইস্তেরা-হাত’ করা
(৯) মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো
(১০) ছালাতে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নযর রাখা
(১১) তাশাহহুদের সময় ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ
করা ও শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকা। এছাড়া ফরয-ওয়াজিবের বাইরে সকল বৈধ কর্মসমূহ।
১০. ছালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ ( مفسدات الصلاة)
১. ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া
বা পান করা।
২. ছালাতের স্বার্থ ব্যতিরেকে অন্য কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে
কথা বলা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বাহুল্য কাজ বা ‘আমলে কাছীর’
করা। যা দেখলে ধারণা হয় যে, সে ছালাতের মধ্যে নয়।
৪. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে ছালাতের কোন রুকন
বা শর্ত পরিত্যাগ করা।
৫. ছালাতের মধ্যে অধিক হাস্য করা।[127]
[127] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০৫ পৃঃ।
(৮)
ছালাতের নিষিদ্ধ সময়
:
সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে ছালাত
শুরু করা সিদ্ধ নয়। [138]
অনুরূপভাবে আছরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত এবং ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন ছালাত নেই’। [139]
তবে এ সময় ক্বাযা ছালাত আদায় করা জায়েয আছে।
[140]
বিভিন্ন হাদীছের আলোকে অনেক বিদ্বান নিষিদ্ধ
সময়গুলিতে ‘কারণবিশিষ্ট’ ছালাত সমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিইয়াতুল মাসজিদ, তাহিইয়াতুল
ওযূ, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার ছালাত ইত্যাদি। [141]
জুম‘আর ছালাত ঠিক দুপুরের সময় জায়েয আছে।
[142]
অমনিভাবে কা‘বা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় ছালাত
ও ত্বাওয়াফ জায়েয আছে। [143]
দলীলের উৎসঃ
[138] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০ ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮১-৮৩ পৃঃ।
[139] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/১০৪১, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
[140] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/১০৪৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১২৭৭।
[141] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২
পৃঃ।
[142] . তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ
তিরমিযী, দ্রষ্টব্য: হা/১৮৩-এর ব্যাখ্যা, ১/৫৪১ পৃঃ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[143] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী,
মিশকাত হা/ ১০৪৫, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
(৯) ছালাত পরিত্যাগকারীর হুকুম
ছালাত
পরিত্যাগকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি
করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬)। আর শ্রেষ্ঠ ও প্রধান ইবাদত হল ছালাত। ছালাত
পরিত্যাগকারীর জন্য মহান আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ
বলেন,‘সুতরাং তারা যদি তওবা করে, ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবেই তারা তোমাদের
দ্বীনী ভাই’ (তওবা ১১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদের পর আসল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা ছালাত
নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীরে)
পতিত হবে’ (মারইয়াম ৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে,
তোমাদের কিসে সাক্বার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারী
ছিলাম না’ (মুদ্দাছ্ছির ৪১-৪৩)।
উক্ত আলোচনা প্রমাণ করে ছালাত পরিত্যাগকারী
ব্যক্তি মুসলিম ভাই হতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম হিসাবে আগামী
কাল আল্লাহর সাথে মুলাক্বাত করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাযথভাবে
আদায় করে। যেখানেই উক্ত ছালাতের আযান দেয়া হোক’।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে, মিহজান নামক
এক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বৈঠকে বসে ছিলেন। অতঃপর আযান হলে রাসূল (ছাঃ) ছালাত
আদায় করেন এবং মজলিসে ফিরে আসেন। তখন উক্ত মিহজান বসেছিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ النَّاسِ؟ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ ‘তোমাকে কিসে মুছল্লীদের
সাথে ছালাত আদায় করতে বাধা দিল? তুমি কি একজন মুসলিম ব্যক্তি নও’? ছাহাবী বললেন, আমি
বাড়ীতে ছালাত আদায় করেছি।[2]
অতএব উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে- ছালাত আদায়
করা মুসলিম ব্যক্তির মূল পরিচয়। অন্য হাদীছে আরো কঠিন বক্তব্য এসেছে,
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল
(ছা)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি আর মুশরিক ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য হল,
ছালাত পরিত্যাগ করা’।[3]
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাঃ) তার পিতা হতে
বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক) মধ্যে
যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা হল ছালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে, সে কুফুরী করবে’।[4]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে সে শিরক করবে’।[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব উকায়লী (রাঃ) বলেন,
রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফুরী বলতেন না, ছালাত
ব্যতীত।[6]
অতএব যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে না, সে নিঃসন্দেহে
কুফুরী করবে। অলসতা ও অবহেলায় কোন মুসলিম নামধারী যদি ছালাত আদায় না করে তাহলে উক্ত
অপরাধের কারণে জাহান্নামে যাবে। শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় কালেমা ত্বাইয়েবার
বরকতে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।[7] কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে
দিলে বা অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।[8]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫২০, ১/২৩২
পৃঃ, (ইফাব হা/১৩৬১), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, ‘জামা‘আতে ছালাত আদায় করা সুনানুল হুদার
অন্তর্ভুক্ত’ অনুচ্ছেদ-৪৫; মিশকাত হা/১০৭২, পৃঃ ৯৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০০৫, ৩/৫১
পৃঃ, ‘জামা‘আত ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[2]. নাসাঈ হা/৮৫৭, ১/৯৮ পৃঃ;
মালেক মুওয়াত্ত্বা হা/৪৩৫; মিশকাত হা/১১৫৩, পৃঃ ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৮৫, ৩/৮৭
পৃঃ, ‘এক ছালাত দুইবার আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/২৫৬ ও ২৫৭,
১/৬১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৯ ও ১৫০), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; মিশকাত হা/৫৬৯।
[4]. তিরমিযী হা/২৬২১, ২/৯০
পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত ত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ হা/৪৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১০৭৯;
মিশকাত হা/৫৭৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫২৭, ২/১৬২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮০, পৃঃ
৭৫, ‘ছালাত কায়েম করা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭, সনদ ছহীহ।
[6]. তিরমিযী হা/২৬২২, ২/৯০
পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত’ পরিত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৭৯, পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৫৩২, ২/১৬৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৬০, পৃঃ
৭, সনদ ছহীহ।
[8]. দেখুন: শায়খ আলবানী, হুকমু
তারিকিছ ছালাহ, পৃঃ ৬।
(১০) ছালাতের ওয়াক্তসমূহ
(১) ফজর ছালাতের ওয়াক্ত
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত
আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে
ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ একই ছালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই
স্থানে একই ছালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে।
কোন স্থানে একাধিক মসজিদ থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না; বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে
অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতে ছালাত আদায়
করার যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা একেবারে ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা
রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা। উল্লেখ্য যে, অনেক
মসজিদে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই আযান দেয়া হয়। এটা অতিরিক্ত পরহেযগারিতা ও বাড়াবাড়ি। উক্ত
অভ্যাস বর্জন করতে হবে।
ফজর ছালাতের ওয়াক্ত :
ছুবহে ছাদিকের পর হতে ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত
শুরু হয়।[1] সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত
আদায় করা যায়।[2] আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়
করা সর্বোত্তম হিসাবে[3] রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। পূর্ব আকাশ
ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ দলীল নেই। মূলতঃ ছহীহ হাদীছের
মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে দেরী করে ছালাত আদায় করা হয়। অনেক মসজিদে ফর্সা হলে ছালাত
শুরু করা হয় এবং বিদ্যুৎ বা আলো বন্ধ করে কৃত্রিম অন্ধকার তৈরি করে ছালাত আদায় করা
হয়। এটা শরী‘আতের সাথে প্রতারণা করার শামিল। নিম্নের জাল বর্ণনাটি লক্ষণীয়-
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি বলে দিলেন, হে মু‘আয! যখন শীতকাল আসবে তখন ফজর ছালাত অন্ধকারে
পড়বে এবং মানুষের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে ক্বিরাআত লম্বা করবে। তাদের উপর কঠিন করো
না। আর যখন গ্রীষ্মকাল আসবে, তখন ফজরের ছালাত ফর্সা করবে। তখনকার রাত যেহেতু ছোট, আর
মানুষ যেহেতু ঘুমায় সেহেতু তাদেরকে অবকাশ দিবে, যেন তারা ছালাত পায়।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে মিনহাল
ইবনুল জার্রাহ নামক একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম বলেছেন, সে অস্বীকৃত
রাবী। ইবনু হিববান বলেছেন, সে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করত এবং মদ পান করত।[5] অতএব উক্ত
হাদীছের আলোকে ফজরের ছালাত দেরী করে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু বর্ণনাটি জাল।
ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা :
‘রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল
(ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর। কারণ নেকীর জন্য উহা সর্বাধিক
উত্তম।[6] উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কিছু যঈফ হাদীছও আছে।[7]অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল
(ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন,
‘তুমি
ফজর ছালাতের মাধ্যমে ফর্সা কর। যতক্ষণে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দেখতে
পায়’।[8] উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ এই হাদীছের
সনদ ছহীহ’।[9]
উক্ত হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে,
ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে। কারণ এটাই সর্বোত্তম। ‘হেদায়া’ কিতাবে প্রথম
আলোচনায় সঠিক সময় উল্লেখ করা হয়েছে।[10] কিন্তু পরে পৃথক আলোচনায় বলা হয়েছে, وَيَسْتَحِبُّ
الْإِسْفَارُ
بِالْفَجْرِ‘ফর্সা
করে ফজর ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব’।[11] অথচ উক্ত ব্যাখ্যা চরম বিভ্রান্তিকর এবং ছহীহ
হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধী। কারণ-
(ক) ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) উক্ত হাদীছ
বর্ণনা করে বলেন,
‘ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব বলেন, ‘ইসফার’
হল, ফজর প্রকাশিত হওয়া, যাতে কোন সন্দেহ না থাকে। তারা কেউ বর্ণনা করেননি যে, ইসফার
অর্থ ছালাত দেরী করে পড়া।[12]
(খ) ইমাম ত্বাহাবী (২৩৯-৩২১ হিঃ) বলেন,
‘(উক্ত হাদীছের অর্থ হল) অন্ধকারে ফজরের ছালাত
শুরু করা এবং ফর্সা হলে শেষ করা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে বর্ণনা
করেছি। আর সেটাই আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কথা’। তিনি আরো বলেন,
‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর’ অর্থাৎ ফজরের
ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা কর। এর অর্থ এটা নয় যে, তারা যেন ফর্সা হওয়ার সময় ছালাতে প্রবেশ
করে। বরং ফর্সা হওয়ার সময় তারা ছালাত থেকে বের হবে’।[13]
(গ) আলবানী বলেন,
‘হাদীছের শব্দ সমূহ একত্রিত করলে প্রমাণিত
হয় যে, এর অর্থ হবে- ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ছালাতের ক্বিরাআত লম্বা করা। আর এভাবে ফর্সা
করাই সর্বোত্তম এবং নেকীর দিক থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। যেমনটি পূর্বের শব্দগুলো
থেকে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ‘ইসফার’ অর্থ এটা নয় যে, ফর্সা করে ছালাত শুরু করতে হবে,
যেমনটি হানাফীদের মাঝে প্রচলিত আছে’।[14]
অতএব ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দেরীতে ফজর
ছালাত আদায় করা মহা অন্যায়। ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা,
আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ (রহঃ)ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলীয় কারণে কুরআন-হাদীছের অর্থ
বিকৃতি করা আরো বড় অপরাধ। তাছাড়া ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতে ৬০-১০০
আয়াত পাঠ করতেন।[15] যদি ফর্সা হওয়ার পর ছালাত শুরু করা হয়, আর ৬০ থেকে ১০০ টি আয়াত
পাঠ করা হয়, তবে সূর্য উঠতে কতক্ষণ বাকী থাকবে?
ফজর ছালাতের সঠিক সময় :
রাসূল (ছাঃ) কোন্ সময় ফজরের ছালাত আদায় করতেন,
তা নিম্নের হাদীছগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত
আদায় করতেন। অতঃপর মহিলারা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে
চেনা যেত না।[16]
(২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল
(ছাঃ) অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুমিন মহিলারা ছালাত শেষ করে চলে যেত।
কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না অথবা পরস্পরকে তারা চিনতে পারত না।[17]
(৩) আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুমিন মহিলারা চাদর
আবৃত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাতে উপস্থিত হত। অতঃপর যখন ছালাত শেষ হত, তখন
তারা তাদের বাড়ীতে ফিরে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।[18]
(৪) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢুলে যেত। আর আছরের ছালাত আদায় করতেন এই দুই
সময়ের মাঝখানে। যখন সূর্য ডুবে যেত তখন মাগরিবের ছালাত আদায় করতেন। আর শাফাক্ব ডুবে
গেলে এশার ছালাত আদায় করতেন। ফজরের ছালাত আদায় করতেন যখন ফজর উদিত হত তখন থেকে দৃষ্টি
প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত।[19]
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমরা একদা
জাবের (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন,
তিনি দুপুরে যোহরের ছালাত পড়তেন, আছর পড়তেন যখন সূর্য পরিষ্কার থাকত, সূর্য ডুবে গেলে
মাগরিব পড়তেন। আর এশা পড়তেন যখন মানুষ বেশী হত তখন তাড়াতাড়ি পড়তেন এবং লোক কম হলে দেরীতে
পড়তেন। আর ফজর ছালাত আদায় করতেন অন্ধকারে।[20] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
(৬) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত এমন সময় পড়তেন,
যখন আমাদের কেউ পার্শ্বে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত না, যাকে সে আগে থেকেই চিনে। তিনি
ফজর ছালাতে ৬০ থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করতেন।[21] অন্য হাদীছে এসেছে,
(৭) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত একবার অন্ধকারে
পড়েছিলেন। অতঃপর একবার পড়তে পড়তে ফর্সা করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাসূল
(ছাঃ)-এর ছালাত ছিল অন্ধকারে। তিনি আর ফর্সা করতেন না।[22] অর্থাৎ তিনি ছালাত অধিক
লম্বা করতেন না।
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, একবার তিনি দীর্ঘ
ক্বিরাআত করে ফর্সা করেছিলেন। যা সর্বাধিক উত্তম। এরপর থেকে অন্ধকার থাকতেই ছালাত শেষ
করতেন।
সুধী পাঠক! উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে
যে, ফজরের ছালাত অন্ধকারেই আদায় করতে হবে। তাই ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করা
সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করা ছাড়া কিছু নয়। জানা আবশ্যক যে, ফজরের ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ
ছালাত। এই ছালাত সঠিক সময়ে আদায় করা প্রত্যেকের জন্যই অপরিহার্য। তাই আপনি একজন মুছল্লী
হিসাবে আপনার করণীয় নির্ধারণ করুন। আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার প্রস্ত্ততি আপনিই গ্রহণ
করুন।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৮৭২, ১/১২০
পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩০, ২/১৬৩ পৃঃ); নাসাঈ হা/৫৫২, ১/৬৫ পৃঃ, ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-২৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৩৩ ও ১২৭৪৬।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯
পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৯, ২/১৮ পৃঃ) ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১, পৃঃ ৬১।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬, ১/৬১
পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭, পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৫৫৯, ২/১৭৯ পৃঃ।
[4]. শারহুস সুন্নাহ ১/৯৫ পৃঃ।
[5]. يكذب في الحديث ويشرب الخمر সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫৫, ২/৩৭১ এবং হা/৫৪৪০, ১১/৭৪৬ পৃঃ।
[6]. তিরমিযী হা/১৫৪, ১/৪০ পৃঃ;
আবুদাঊদ হা/৪২৪, ১/৬১ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৭০; মিশকাত হা/৬১৪,
পৃঃ ৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬৫, ২/১৮১ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯৪
ও ৩৭৬৮।
[8]. মুসনাদে ত্বায়ালীসী হা/৯১,
সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[9]. ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ।
[10]. হেদায়া ১/৮০ পৃঃ।
[11]. হেদায়া ১/৮২ পৃঃ।
[12]. তিরমিযী হা/১৫৪-এর আলোচনা
দ্রঃ, ১/৪০ পৃঃ।
[13]. ত্বাহাবী হা/১০০৬।
[14]. ইরওয়াউল গালীল ১ম খন্ড,
পৃঃ ২৮৬।
[15]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭
পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯,
১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮,
১/৫৮ পৃঃ।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ
বুখারী হা/৮৬৭, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮২৫, ২/১৬১ পৃঃ); মুসলিম হা/১৪৮৯ ও ১৪৯১, ১/২৩০
পৃঃ; মিশকাত হা/৫৯৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫০, ২/১৭৬ পৃঃ।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/৮৭২, ১/১২০
পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৩০, ২/১৬৩ পৃঃ)।
[18]. ছহীহ বুখারী হা/৫৭৮, ১/৮২
পৃঃ, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘ফজরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ-২৭, (ইফাবা হা/৫৫১, ২/২৮ পৃঃ)।
[19]. নাসাঈ হা/৫৫২, ১/৬৫ পৃঃ,
‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৯; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৩৩ ও ১২৭৪৬।
[20]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৭,
১/৫৮ পৃঃ।
[21]. ছহীহ বুখারী হা/৫৪১, ১/৭৭
পৃঃ, ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১, (ইফাবা হা/৫১৪, ২/১২ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১০৫৯,
১/১৮৭ পৃঃ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ফজর ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৮,
১/৫৮ পৃঃ।
[22]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৪,
১/৫৮ পৃঃ।
(২) যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত
সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে যাওয়ার সাথে সাথে
যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। আর কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে শেষ হয়। কিন্তু
যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করার কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে তা
ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-
(১) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, যখন ছায়া দেড় হাত থেকে দুই হাত হয়, তখন তোমরা যোহরের ছালাত আদায় কর।[1] অনেকে
উক্ত বর্ণনা পেশ করে যোহরের ছালাত দেরীতে আদায় করার দাবী করেন।
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আছরাম
ইবনু হাওশাব নামে একজন রাবী আছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, হায়ছামীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে
মিথ্যুক বলেছেন।[2] ইমাম হায়ছামী বলেন, ‘এর সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আছে, সে মিথ্যুক’।[3]
(১) আব্দুল আযীয ইবনু রাফী বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মেঘলা দিনে দিনের ছালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর এবং মাগরিব দেরীতে আদায়
কর।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি দুর্বল। আব্দুল আযীয ইবনু রাফী
মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছে।[5]
যোহরের ছালাতের সঠিক সময় :
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) বলেন, যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে যাবে। কোন ব্যক্তির ছায়া তার
সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ আছরের সময় হওয়া পর্যন্ত...।[6]
আবু বারযাহ (রাঃ) বলেন, যখন সূর্য ঢুলে পড়ত
তখন রাসূল (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন। আর আছর ছালাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের
কেউ ছালাত আদায় করে মদ্বীনার দূর প্রান্তে চলে যেত এবং ফিরে আসত অথচ সূর্য উজ্জ্বল
থাকত।[7]
জ্ঞাতব্য : যোহরের ছালাত সূর্য ঢুলে পড়ার পর
আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করাই শরী‘আতের নির্দেশ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে যোহরের ছালাত একটু দেরী
করে আদায় করতে বলা হয়েছে। সেই হাদীছকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুছল্লী দেরী করে আদায় করে
থাকে। এটা মূলতঃ মাযহাবী গোঁড়ামী। কারণ সারা বছর দেরী করতে বলা হয়নি।
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কারণ গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ।[8]
আবু যার গেফারী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। মুওয়াযযিন যোহরের আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তুমি ঠান্ডা কর। অতঃপর যখন আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন আবার বললেন, তালূল দেখা পর্যন্ত
দেরী কর। অতঃপর তিনি বললেন, গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। সুতরাং যখন গরম বেশী হবে
তখন তোমরা ছালাত দেরী করে পড়।[9]
সুধী পাঠক! হাদীছের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে
সারা বছর এদেশে যোহরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এটা সুন্নাতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন
করার শামিল। রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসারী হিসাবে একজন মুছল্লীর পক্ষে এভাবে যোহরের ছালাত
দেরী করে আদায় করা কি উচিৎ? গ্রীষ্মকালের হাদীছের আলোকে সে কি সারা বছর দেরী করে আদায়
করবে? কখনোই নয়।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন
১/১৮৩; উকাইলী, আয-যু‘আফা ১/১১৮; ইবনু আদী ১/৪৩৫।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯৭;
যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৪; মিশকাত হা/৫৮৫; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৪।
[3]. فيه أصرم بن حوشب وهو كذاب -মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩০৬; আল-ফাওয়াইদুল
মাজমূ‘আহ ফী আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৩৫।
[4]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৬২৮৮; আবুদাঊদ, আল-মারাসীল হা/১৩।
[5]. আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/৩৮৫৬, ৮/৩১৭ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৪।
[6]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২৩
পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ, ‘ছালাত’
অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[7]. আবুদাঊদ হা/৩৯৮, ১/৫৮ পৃঃ;
বুখারী হা/৫৪১ ও ৭৭১।
[8]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৮, ১/৭৬
পৃঃ, (ইফাবা হা/৫১১, ২/১০ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; মিশকাত
হা/৫৯১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৩, ২/১৭৪ পৃঃ।
[9]. ছহীহ বুখারী হা/৫৩৯, ১/৭৬
পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৩১।
(৩) আছরের ছালাতের ওয়াক্ত
আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার যে প্রথা সমাজে
চালু আছে তার ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে সেগুলো সবই
যঈফ ও জাল।
(ক) আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু রাফে‘ বলেন, আমি একদা
মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন মুওয়াযযিন আছরের আযান দিল। রাবী বলেন, তখন এক বৃদ্ধ মসজিদে
বসেছিলেন। তাই মুয়াযযিন তার নিকটে আসল। তখন তিনি বললেন, আমার আব্বা আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার নির্দেশ দিতেন।[1]
তহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[2] ইমাম দারাকুৎনী
বলেন, এর সনদে আব্দুল্লাহ বিন রাফে‘ বিন খাদীজ বিন রাফে‘ নামে একজন রাবী আছে। সে নির্ভরযোগ্য
নয়।[3] অন্যত্র তিনি বলেন, এই হাদীছের সনদ যঈফ। ... রাফে‘ সহ অন্য কোন ছাহাবী থেকে
এই হাদীছ ছহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি।[4]
(খ) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি একদা প্রশাসকদের নিকট পত্র লিখলেন যে, আমার নিকট আপনাদের সমস্ত কাজের মধ্যে ছালাতই
অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি তার হেফাযত করে এবং যথাযথভাবে তার উপর অটল থাকে, সে
তার দ্বীনকে রক্ষা করে। আর যে তাকে বিনষ্ট করে সে তা ব্যতীত অন্যগুলোকে আরো অধিক বিনষ্টকারী।
অতঃপর তিনি লিখলেন, যোহর আদায় করবে যখন ছায়া এক হাত হবে, তোমাদের প্রত্যেকের ছায়া তার
সমান হওয়া পর্যন্ত। আছর আদায় করবে যখন সূর্য উচ্চে পরিষ্কার সাদা অবস্থায় থাকবে, যাতে
একজন ভ্রমণকারী ব্যক্তি সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দুই বা তিন মাইল অতিক্রম করতে পারে।
যখনই সূর্য ডুবে যাবে তখনই মাগরিব আদায় করবে। যখন লালিমা ডুবে যাবে তখন এশা আদায় করবে,
রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। এর পূর্বে যে ঘুমাবে তার চক্ষু না ঘুমাক। এ কথা তিনি
তিনবার লিখেছিলেন। আর ফজর আদায় করবে যখন তারকারাজি পরিষ্কার হয় এবং চমকে।[5] মূলতঃ
উক্ত হাদীছে যোহর, আছর ও মাগরিবের ছালাতের সময়কে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হিসাবে পেশ করা
হয়েছে। বিশষ করে আছরের সময়। কারণ ছহীহ হাদীছে চার মাইলের কথা এসেছে।[6]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদ বিচ্ছিন্ন। কারণ
নাফে‘ ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি।[7]
(গ) যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ বলেন, আমরা
একদা আলী (রাঃ)-এর সাথে বড় মসজিদে বসেছিলাম। কূফাতে সে সময় অনেক কুঁড়ে ঘর ছিল। অতঃপর
মুওয়াযযিন এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আছরের ছালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, তুমি
বস। তাই সে বসল। মুয়াযযিন পুনরায় ফিরে এসে একই কথা বলল। তখন আলী (রাঃ) বললেন, এই কুকুরটি
আমাদেরকে সুন্নাত শিক্ষা দিতে চাচ্ছে! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং আমাদেরকে নিয়ে আছরের
ছালাত আদায় করলেন। তারপর ছালাত থেকে ফিরে ঐ স্থানে ফিরে আসলাম যেখানে আমরা বসেছিলাম।
অতঃপর সূর্য ডুবে যাওয়ার কারণে আমরা সওয়ারীর উপর হাঁটু গেড়ে বসে গেলাম।[8]
তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। হাকেম একে ছহীহ বলে উল্লেখ
করলেও তা যঈফ।[9] ইমাম দারাকুৎনী এর ত্রুটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ
নাখঈ অপরিচিত। আব্বাস বিন যুরাইহ ছাড়া অন্য কেউ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি।[10]
মূলতঃ আলী (রাঃ)-এর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করে আছরের ছালাত বিলম্ব করার প্রতি উৎসাহিত
করা হয়।
(ঘ)
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আছরের ছালাত দেরী করে আদায় করতেন।[11]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব নামে
ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। সে আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ থেকে সঠিকভাবে হাদীছ বর্ণনা করেনি।[12]
(ঙ) ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান তার পিতা থেকে
দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা মদ্বীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি সূর্য
উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকা পর্যন্ত আছরের ছালাত দেরী করতেন।[13]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে মুহাম্মাদ
ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম
নববী বলেন, বাতিল হাদীছ।[14]
(চ)
আবু আমর বলেন, ঐ সময়টা হল, যখন সূর্যের আলো যমীনে হলুদ আকারে পড়বে।[15]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ওয়ালীদ বিন মুসলিম নামে
একজন মুদাল্লিস রাবী আছে, তার শ্রবণশক্তি ভাল ছিল না।[16]
আছরের ছালাতের সঠিক সময় :
কোন বস্ত্তর ছায়া যখন মূল ছায়ার সমপরিমাণ হবে
তখন আছরের ছালাতের সময় শুরু হবে। আর দ্বিগুণ হলে শেষ হবে। তবে কোন সমস্যাজনিত কারণে
সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে।[17]
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আছরের ছালাত
তখন পড়তেন, যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। অতঃপর কেউ আওয়ালী বা উঁচু স্থানগুলোর
দিকে যেত এবং পুনরায় তাদের নিকট ফিরে আসত, তখনও সূর্য উপরেই থাকত। আর আওয়ালীর কোন কোন
স্থান মদ্বীনা হতে চার মাইল বা অনুরূপ দূরে অবস্থিত।[18]
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন সূর্য তার ঘরের
মধ্যে থাকত তখন রাসূল (ছাঃ) আছর পড়তেন। তখনো ছায়া ঘর থেকে বের হয়ে যায়নি।[19]
(খ) রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে আছরের ছালাত আদায় করতাম। অতঃপর একটি উট যবহে করতাম। তারপর তাকে দশ ভাগে
ভাগ করতাম। অতঃপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই আমরা তার পাক করা গোশত খেতাম ।[20]
(গ) আলা ইবনু আব্দুর রহমান বছরাতে একদিন যোহরের
ছালাত আদায় করে ফেরার সময় আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-এর বাড়ীতে গেলেন। আর মসজিদের পার্শ্বেই তার বাড়ী ছিল। রাবী বলেন, আমরা
যখন তার কাছে গেলাম, তখন তিনি বললেন, তোমরা কি আছরের ছালাত আদায় করেছ? আমরা বললাম,
এই মাত্র আমরা যোহরের ছালাত আদায় করে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা আছরের ছালাত আদায় করে
নাও। অতঃপর আমরা চলে গেলাম এবং ছালাত আদায় করলাম। আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন তিনি বললেন,
এটা হল মুনাফিকের ছালাত। সে বসে বসে অপেক্ষায় থাকে। যখন সূর্য লাল হতে থাকে এমনকি শয়তানের
দুই শিংয়ের মাঝে যায়, তখন সে দাঁড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে। সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ
করে।[21]
(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, জিবরীল (আঃ) কা‘বার নিকট দুইবার আমার ইমামতি করেছেন। একবার তিনি আমাকে
যোহর পড়ালেন যখন সূর্য ঢুলে পড়ল। আর তা ছিল জুতার দোয়ালির পরিমাণ। আছর পড়ালেন, যখন
প্রত্যেক বস্ত্তর ছায়া তার একগুণ হল। মাগরিব পড়ালেন যখন ছায়েম ইফতার করে। আর এশা পড়ালেন
যখন লালিমা দূর হল। ফজর পড়ালেন যখন ছায়েম ব্যক্তির উপর খানাপিনা হারাম হয় (সাহারীর
সময়ের পর)।
পরের দিন তিনি আমাকে যোহর পড়ালেন, যখন প্রত্যেক
বস্ত্তর ছায়া তার একগুণ হল। আর আছর পড়ালেন যখন প্রত্যেক বস্ত্তর ছায়া তার দ্বিগুণ হল।
মাগরিব পড়ালেন যখন ছায়েম ব্যক্তি ইফতার করে। এশা পড়ালেন যখন রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ
হল। অবশেষে ফজর পড়ালেন এবং খুব ফর্সা করে ফেললেন। অতঃপর তিনি আমার প্রতি লক্ষ্য করে
বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! ইহা আপনার পূর্বের নবীগণের সময়। ছালাতের সময় আসলে এই দুই
সময়ের মাঝের সময়’।[22] অন্য হাদীছে এসেছে, সর্বোত্তম আমল হল, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়
করা।[23]
জ্ঞাতব্য : জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল
(ছাঃ)-কে ছালাতের আউয়াল ও আখের দুইটি ওয়াক্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত
হল যে, বস্ত্তর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে আছরের ছালাতের শেষ ওয়াক্ত চলে আসে। অথচ অধিকাংশ
মুছল্লী এই শেষ ওয়াক্তে আছরের ছালাত আদায় করে থাকে, যা রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় গর্হিত
অন্যায়।
সুধী পাঠক! উপরে ত্রুটিপূর্ণ হাদীছ এবং ছহীহ
হাদীছ দুই ধরনের হাদীছই পেশ করা হল। নিঃসন্দেহে মুছল্লীর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে,
আছর ছালাত সে কোন্ ওয়াক্তে আদায় করবে। বিশেষ করে ছাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন উদাহরণ, পদ্ধতি
ও জায়গা উল্লেখ করে আছরের ছালাতের সময়টা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। অথচ কতিপয় যঈফ ও জাল
হাদীছের কারণে উক্ত গুরুত্ব মূল্যহীন হয়ে গেছে। এরপরও যদি সে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে
গ্রহণ না করে, তবে কবরে ও ক্বিয়ামতের মাঠে টিকতে পারবে কি? মনে রাখা আবশ্যক যে, রাসূল
(ছাঃ)-এর আগমনের পর পূর্বের কোন নবী-রাসূলের আনুগত্য করলেও সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। পবিত্র
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপস্থিতিতে যদি পূর্বে কোন নাযিলকৃত কিতাবের অনুসরণ করা হয় তবুও
সে রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বেরিয়ে যাবে।[24] অতএব পীর-ফকীর, ইমাম-খতীব এবং তাদের
রচিত মনগড়া কল্পিত ধর্মের অনুসরণ করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।
দলীলের উৎসঃ
[1]. দারাকুৎনী হা/১০০৩, ১/২৫১;
ত্বাবারাণী কবীর ৪/২৬৭; ।
[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪২০
পৃঃ, হা/১৫৯; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৫।
[3]. দারাকুৎনী ১/২৫১ পৃঃ عبد الله بن رافع بن خديج بن رافع هذا ليس بقوي।
[4].هذا حديث ضعيف الإسناد.. ولايصح هذا الحديث عن رافع ولا عن غيره من الصحابة..। -তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৫।
[5]. মালেক হা/৯; মিশকাত হা/৫৮৫,
পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮, ২/১৭১ পৃঃ।
[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/৫৫০, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪, ২/১৬ পৃঃ); মিশকাত হা/৫৯২, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৫৪৪, ২/১৭৪ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[7]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৮৫,
১/১৮৬ পৃঃ।
[8]. দারাকুৎনী ১/২৫১; হাকেম
হা/৬৯০, ১/১৯২।
[9]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬।
[10]. زِيَادُ بْنُ عَبْدِ اللهِ النَّخَعِىُّ مَجْهُوْلٌ لَمْ يَرْوِ عَنْهُ غَيْرُ الْعَبَّاسِ بْنِ ذَرِيحٍ দারাকুৎনী ১/২৫১।
[11]. আব্দুর রাযযাক হা/২০৮৯;
ত্বাবারাণী কাবীর ৯/২৯৬।
[12]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬;
তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪১৮ পৃঃ, হা/১৫৯।
[13]. আবুদাঊদ হা/৪০৮, ১/৫৯
পৃঃ।
[14]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৪০৮।
[15]. আবুদাঊদ হা/৪১৫, ১/৬০
পৃঃ।
[16]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৬৪।
[17]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯
পৃঃ ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১।
[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/৫৫০, ১/৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৪, ২/১৬ পৃঃ); মিশকাত হা/৫৯২, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/৫৪৪, ২/১৭৪ পৃঃ, ‘জলদি ছালাত আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[19]. বুখারী হা/৫৪৫, ১/৭৮ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৫১৮, ২/১৩ পৃঃ)।
[20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ
বুখারী হা/২৪৮৫, ১/৩৩৮ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৪৬, ১/২২৫ পৃঃ (ইফাবা হা/১২৮৯); মিশকাত
হা/৬১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৬৬।
[21]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪৪৩,
১/২২৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৮৬) ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়-৬, ‘জলদি করে আছর পড়া’ অনুচ্ছেদ-৩৫;
মিশকাত হা/৫৯৩, পৃঃ ৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৫, ২/১৭৫ পৃঃ।
[22]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৩৯৩,
১/৫৬ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহ তিরমিযী হা/১৪৯, ১/৩৮
পৃঃ; মিশকাত হা/৫৮৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৬, ২/১৬৯ পৃঃ।
[23]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬,
১/৬১ পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৯,
২/১৭৯ পৃঃ।
[24]. আহমাদ হা/১৫১৯৫; বায়হাক্বী,
শু‘আবুল ঈমান হা/১৭৪; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৭৭ ও ১৯৪, পৃঃ ৩০ ও ৩২, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে
অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ; ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯, ৬/৩৪ পৃঃ।
(৪) মাগরিবের ওয়াক্ত
মাগরিবের ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কেও কিছু যঈফ
ও জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(১)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাগরিবের প্রথম সময় হল যখন সূর্য ডুবে যায়। আর শেষ সময় যখন
শাফাক্ব ডুবে যায়।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[2] ইবনু হাজার আসক্বালানী
বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, ‘এটি গরীব। অর্থাৎ ভিত্তিহীন।[3]
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে
যে, মাগরিবের শেষ সময় হল, দিগন্তে যখন কালো রেখা দেখা যাবে।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[5] ইবনু হাজার আসক্বালানী
বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’।[6]
(৩) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, শাফাক্ব হল, লালিমা।
যখন লালিমা দূরীভূত হবে তখন ছালাত ওয়াজিব হবে।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আতীক্ব ইবনু ইয়াকুব
নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[8] তাছাড়া উক্ত বর্ণনা এশার ছালাতের জন্য প্রযোজ্য, মাগরিবের
জন্য নয়। মূলতঃ লালিমা দূর হওয়ার পর মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে না। কিন্তু উক্ত বর্ণনাগুলোতে
দাবী করা হয়েছে।
(৪)
ইবনু ওমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, শাফাক্ব হল লালিমা।[9]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[10]
মাগরিব ছালাতের সঠিক সময় :
সূর্য ডুবার পরেই মাগরিবের ছালাতের সময় শুরু
হয়। আর সূর্যের লালিমা থাকা পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে।[11]
দলীলের উৎসঃ
[1]. যায়লাঈ ১/২৩০।
[2]. তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭।
[3]. আদ-দিরায়াহ ১/১০২।
[4]. নাছবুর রায়াহ ১/২৩৪ পৃঃ;
ইবনু হাজার আদ-দিরায়াহ ১/১০৩।
[5]. তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৭।
[6]. আদ-দিরায়াহ ১/১০৩ পৃঃ।
[7]. বায়হাক্বী হা/১৮১৬; দারাকুৎনী
১/২৬৯।
[8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯।
[9]. দারাকুৎনী ১/২৬১; বায়হাক্বী
১/৩৭৩।
[10]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯-এর
ব্যাখ্যা দ্রঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৬।
[11]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯,
১/২২৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ,
‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত ছালাতের সময়
মুযাফফর বিন মুহসিন
(৫) এশার ওয়াক্ত :
ফিক্বহী গ্রন্থ সমূহে এশার ছালাতের সময় সম্পর্কেও
কিছু জাল ও যঈফ হাদীছ প্রচলিত আছে।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এশার ছালাতের শেষ
সময় হল ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত।[1]
তাহক্বীক্ব : যাকারিয়া বিন গোলাম কাদের এবং
শায়খ আলবানী বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।[2] ‘হেদায়া’র ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম বলেন,
ছালাতের ওয়াক্ত সংক্রান্ত হাদীছের মধ্যে কোথাও এটা পাওয়া যায় না।[3] আল্লামা যায়লাঈ
বলেন, গরীব বা ভিত্তিহীন।[4] ইবনু হাজার আসক্বালানীও অনুরূপ বলেছেন।[5] কিন্তু ইমাম
তাহাবী মাযহাবী মোহে এর পক্ষে মত দিয়েছেন, যা কাম্য নয়।[6] মূলতঃ মধ্য রাত পর্যন্ত
এশার ছালাতের সময় থাকে।[7] ফজর পর্যন্ত নয়।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ছালাতের প্রথম ও শেষ সময় আছে। যোহরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে
যাবে আর তার শেষ ওয়াক্ত হল, যখন আছরের ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আছরের প্রথম ওয়াক্ত হল,
যখন উহা তার ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন সূর্য হলুদ রং ধারণ করবে। মাগরিবের
প্রথম ওয়াক্ত হল যখন সূর্য ডুবে যাবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে।
এশার প্রথম ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে আর এর শেষ সময় হল রাত্রির মধ্যভাগ।
ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন ফজর উদিত হবে। আর শেষ সময় হল সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী
(রহঃ) বলেন,
‘আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি
যে, ছালাতের সময়ের ব্যাপারে মুজাহিদ থেকে আ‘মাশের বর্ণিত হাদীছ মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের
হাদীছের চেয়ে অধিকতর ছহীহ। মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের হাদীছ ভুল। সে হাদীছ বর্ণনায় ভুল করেছে।[9]
এশার ছালাতের সঠিক সময় :
মাগরিবের ছালাতের সময়ের পর থেকে এশার ওয়াক্ত
শুরু হয় এবং মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সমাস্যজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে।
তবে রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন। তাই মাগরিবের পরপরই এশার
ছালাত পড়া উচিৎ নয়, যা এদেশে চালু আছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, যখন সূর্য ঢুলে যায়, তখন যোহরের সময় শুরু হয়। কোন ব্যক্তির ছায়া তার দৈর্ঘ্যের
সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত উক্ত সময় থাকে। অর্থাৎ আছরের সময় উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত। আছরের
সময় বস্ত্তর মূল ছায়ার সমপরিমাণ হওয়া থেকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সময়
(সূর্যাস্ত হতে) লালিমা দূর হওয়া পর্যন্ত। আর এশার সময় রাত্রির মধ্য ভাগ পর্যন্ত। আর
ফজর ছালাতের সময় ঊষার উদয় হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। যখন সূর্য উঠবে, তখন ছালাত থেকে বিরত
থাকবে। কারণ সূর্যোদয় হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে।[10]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ) একদা রাত্রির
অর্ধেক পর্যন্ত ছালাত দেরী করলেন। এমনকি মসজিদের মুছল্লীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হল। অতঃপর
তিনি বের হয়ে ছালাত আদায় করেন। তারপর বললেন, আমি যদি আমার উম্মতের উপর ভারী না মনে
করতাম, তবে এই সময়টাই এশার ছালাতের সময় হত।[11]
দলীলের উৎসঃ
[1]. নাছবুর রাইয়াহ ১/১৩৪।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫৬১,
১৪/১৩৮ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭।
[3]. ঐ, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/১৯৬
পৃঃ।
[4]. নাছবুর রাইয়াহ ১/২৩৪।
[5]. আদ-দিরায়াহ ১/১০৩।
[6]. তাহাবী হা/৮৫৯-এর ব্যাখ্যা
দ্রঃ; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪৩০ পৃঃ।
[7]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯, ১/২২২
পৃঃ; মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ।
[8]. তিরমিযী হা/১৫১, ১/৩৯ পৃঃ;
আহমাদ ২/২৩২; তাহাবী ১/১৪৯-১৫০।
[9]. তিরমিযী হা/১৫১, ১/৩৯ পৃঃ।
[10]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪১৯,
১/২২২, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃঃ।
[11]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪৭৭,
১/২২৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩১৮)।
(১১) ছালাতের সময় সম্পর্কে অন্যান্য যঈফ ও জাল হাদীছ
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি আর শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর ক্ষমা।[1]
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল।[2] এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[3]
ইবরাহীম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ছালাতের
প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি, মধ্যম ওয়াক্ত আল্লাহর রহমত এবং শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর
ক্ষমা।[4]
তাহক্বীক্ব :
বর্ণনাটি জাল।[5] এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে।[6]
দলীলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/১৭২, ১/৪৩ পৃঃ;
ইরওয়াউল গালীল হা/২৫৯।
[2]. যঈফ তিরমিযী হা/১৭২; ইরওয়াউল
গালীল হা/২৫৯; মিশকাত হা/৬০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৮, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭৯।
[3]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৬০৬-এর
টীকা দ্রঃ, ১/১৯২ পৃঃ।
[4]. দারাকুৎনী হা/২২।
[5]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০;
যঈফুল জামে‘ হা/২১৩১।
[6]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০,
১/২৮৮ পৃঃ-
(১২) আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব :
আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন,
‘নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (নিসা ১০৩)।
উম্মু ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন্ আমল সর্বাধিক উত্তম?
তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।[1]
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছি, আর
একটি অঙ্গীকার করেছি যে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি সেগুলোকে ওয়াক্ত অনুযায়ী যথাযথভাবে আদায়
করে উপস্থিত হবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে না,
তার জন্য আমার কোন অঙ্গীকার নেই।[2] উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ উপমহাদেশীয় ছাপা আবুদাঊদে
নেই।
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
আমরা একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে
বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে দেখতে
পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে না। সুতরাং সূর্যোদয়ের পূর্বের
ছালাত ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের ছালাতের প্রতি যত্নশীল হও। অতঃপর তিনি এই আয়াত পড়েন,
‘সুতরাং তোমরা প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্য ডুবার
পরে’।[3]
আব্দুল্লাহ ইবনু ফাযালা তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা আমাকে কিছু বিষয় শিক্ষা দান করেন। তার মধ্যে
রয়েছে, তুমি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের ব্যাপারে যত্নবান হও। আমি বললাম, এই সময়গুলো আমার
জন্য খুব ব্যস্ততার। সুতরাং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে নির্দেশ দিন। যখন আমি তা
পালন করব, তখন যেন আমার জন্য তা যথেষ্ট হয়। তিনি বললেন, তুমি দুই আছরকে যথাযথভাবে আদায়
কর। এই ভাষা আমার জানা ছিল না। আমি বললাম, দুই আছর কী? তিনি বললেন, সূর্য উঠার পূর্বের
ছালাত এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের ছালাত।[4]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৬, ১/৬১
পৃঃ; তিরমিযী হা/১৭০, ১/৪২ পৃঃ; সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৯,
২/১৭৯ পৃঃ।
[2]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪৩০, সনদ
হাসান।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫৫৪, ১/৭৮
পৃঃ, (ইফাবা হা/৫২৭, ২/১৭ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়-১৩, ‘আছরের ছালাতের ফযীলত’
অনুচ্ছেদ-১৫।
[4]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪২৮, ১/৬১
পৃঃ।
(১৩) জামা‘আতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্ত বেশী গুরুত্বপূর্ণ :
আবুযার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেছেন,
আমীরগণ যখন ছালাতের ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে ছালাত দেরী করে পড়বে বা ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে
মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রাসূল
(ছাঃ) বললেন, ছালাতের সময়েই ছালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সাথে যদি আদায় করতে পার,
তাহলে আদায় কর। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে।[1]
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একা পর্বত শিখরে
দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য
করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর! সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং ছালাত
আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।[2]
সুধী পাঠক! উক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ সমূহের মাধ্যমে
আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনকি জামা‘আতে ছালাত
আদায়ের চেয়ে ওয়াক্তকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ত অনুযায়ী ছালাত আদায় করলে আল্লাহ
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী
একাকী ছালাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। অতএব দেরী
করে নয়, বরং ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ছালাত আদায় করা অপরিহার্য। বিশেষ করে রাসূল (ছাঃ)
ফজর ও আছর ছালাতের ব্যাপারে খুব কঠোরতা আরোপ করেছেন। অথচ ফজর ও আছর ছালাতের ক্ষেত্রেই
বেশী অবহেলা করা হয়। এত ছহীহ হাদীছ থাকতে অধিকাংশ মুছল্লী কেন জাল ও যঈফ হাদীছের আলোকে
ছালাত আদায় করছে? এটা কি কোন অদৃশ্যের চক্রান্ত? মুসলিম উম্মাহকে কোনদিন ঐক্যবদ্ধ হতে
দিবে না- এটাই তার নীল নকশা। আমরা মুসলিম হিসাবে মাযহাবী গোঁড়ামীকে অগ্রাধিকার দেব,
না রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে অগ্রাধিকার দেব এখন সেটাই দেখার বিষয়।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/১৪৯৭, ১/২৩০
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৩৩৮); মিশকাত হা/৬০০, পৃঃ ৬০-৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫২, ২য় খন্ড,
পৃঃ ১৭৭।
[2]. আবুদাঊদ হা/১২০৩, ১/১৭০
পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৬৬, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬৬৫, পৃঃ ৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪, ২/২০২
পৃঃ।
(১৪) ফযীলতের আশায় মাথায় পাগড়ী বাঁধা :
ফযীলত মনে করে ছালাতের সময় পাগড়ী বাঁধার কোন
ছহীহ হাদীছ নেই। এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে, সেগুলো সবই জাল।
(ক) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন,
পাগড়ী পরে দুই রাক‘আত ছালাত পড়া পাগড়ী বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার চেয়েও উত্তম।[1]
তাহকবীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আহমাদ ইবনু ছালেহ
নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। সে হাদীছ জাল করত।[2]
(খ) আনাস (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করা দশ হাযার নেকীর সমপরিমাণ।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আবান
ও ইবনু আর্রাক নামে দুইজন মিথ্যুক রাবী আছে।[4]
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
বলেন, পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করা পাগড়ী বিহীন পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায়ের সমান, পাগড়ী
পরে এক জুম‘আ আদায় করা সত্তর জুম‘আ আদায়ের সমান। জুম‘আর দিনে ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত
ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাদের জন্য দু‘আ করেন।[5]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্বাস ইবনু কাছীর
নামে মিথ্যুক রাবী আছে।[6] ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, বর্ণনাটি জাল।[7]
(ঘ) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহর এমন কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা জুম‘আর দিনে জামে মসজিদের দরজায় নিযুক্ত
থাকেন। তারা সাদা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[9] এর সনদে ইয়াহ্ইয়া বিন
শাবীব নামে মিথ্যুক রাবী আছে।
(ঙ) আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ও ফেরেশতামন্ডলী জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের উপর রহমত
বর্ষণ করেন।[10]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। উক্ত বর্ণনার
সনদে আইয়ূব ইবনু মুদরাক নামে মিথ্যুক রাবী রয়েছে।[11]
(চ) তবালহা বিন ইয়াযীদ বিন রুকানা তার পিতা
হতে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত ততদিন ফিৎরাতের উপর
থাকবে, যত দিন তারা টুপির উপর পাগড়ী পরবে।[12]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ বিন
ইউনুস আল-কুদাইমী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। এছাড়া আরো দুইজন রাবী দুর্বল রয়েছে।[13]
(ছ) রুকানা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
টুপির উপর পাগড়ী পরিধান করা মুসলিম ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য। ক্বিয়ামতের দিন পাগড়ীর
প্রত্যেক পাক তার মাথার উপর জ্যোতি স্বরূপ ঘুরবে।[14]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি বাতিল।[15]
(জ) রুকানা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমাদের ও মুশরিকদের মাঝের পার্থক্য হল- টুপির উপর পাগড়ী
পরিধান করা।[16]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন,
‘এই হাদীছ দুর্বল। এর সনদ ভিত্তিশীল নয়। আমরা আবুল হাসান আসক্বালানীকেও চিনি না এবং
ইবনু রুকানাকেও চিনি না। ইমাম মিযযী বলেন, এর সনদে আবু জা‘ফর নামে একজন অপরিচিত রাবী
আছে।[17]
(ঝ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
নিশ্চয় মহান আল্লাহ আমাকে বদর ও হুনাইনের যুদ্ধের দিন ঐ সমস্ত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য
করেছেন, যারা পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। নিশ্চয় এই পাগড়ী কুফর ও ঈমানের মাঝের প্রাচীর।[18]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি নিতান্তই যঈফ। এর সনদে আশ‘আছ
বিন সাঈদ এবং আব্দুল্লাহ বিন বুসর নামে দুইজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে।[19]
(ঞ) যে ব্যক্তি পাগড়ী পরিধান করবে, তার প্রত্যেক
পাকে একটি করে নেকী হবে। আর যে পাক কম করে দিবে তার জন্য কমিয়ে দেয়া প্রত্যেক পাকে
পাপ হবে।[20]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[21] উল্লেখ্য যে, উক্ত
মর্মে আরো অনেক জাল হাদীছ প্রচলিত আছে।[22]
সুধী পাঠক! উক্ত জাল বর্ণনাগুলোর কারণেই আজ
সমাজে পাগড়ী প্রথা চালু আছে। মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকায় পড়ে অসংখ্য মানুষ লম্বা লম্বা পাগড়ী
পরাকে অধিক গুরুত্ব দেয়। সচেতন ব্যক্তিদেরকে এই প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। উল্লেখ
যে, উক্ত ফযীলতের আশা না করে কেউ চাইলে মাথায় পাগড়ী বা রূমাল ব্যবহার করতে পারে।[23]
তবে তা শুধু ছালাতের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
দলীলের উৎসঃ
[1]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯৯,
১২/৪৪৬ পৃঃ।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৯৯,
১২/৪৪৬ পৃঃ ।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
[4]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৯।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭,
১/২৪৯ পৃঃ।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭-এর
আলোচনা দ্রঃ।
[7]. লিসানুল মীযান ৩/২৪৪ পৃঃ-
هذا حديث موضوع।
[8]. সুয়ূত্বী, আল-ফাতাওয়া ১/৫৮
পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৯৫-এর
আলোচনা দ্রঃ।
[10]. আবু নু‘আইম, আল-হিলইয়া
৫/১৮৯-১৯০ পৃঃ; ত্বাবারাণী, আল-কাবীর, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
[11]. ইবনুল জাওযী, কিতাবুল
মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯।
[12]. দায়লামী ৩/১৭৫ পৃঃ; সিলসিলা
যঈফাহ হা/৬০৭২।
[13]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২-এর
আলোচনা দ্রঃ।
[14]. বাওয়ারদী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/১২১৭।
[15]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১২১৭,
৩/৩৬২ পৃঃ।
[16]. তিরমিযী হা/১৭৮৪, ১/৩০৮
পৃঃ, ‘পোশাক’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৪৩৪০; সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
[17]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৭২।
[18]. মুসনাদে ত্বায়ালিসী হা/১৫৪;
সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৫২।
[19]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৫২-এর
আলোচনা দ্রঃ।
[20]. ইমাম হায়ছামী, আহকামুল
লিবাস ২/৯ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৭১৮।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৭১৮।
[22]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৩৪৭,
১৫৯৩, ১২৯৬; সাখাবী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯৩।
[23]. ছহীহ মুসলিম হা/৩৩৭৫-৩৩৭৮;
মিশকাত হা/১৪১০।
(১৫) ছালাতের সময় টুপি না পরা
:
অনেক মুছল্লীকে দেখা যায় গোঁড়ামী করে টুপি
পরে না। এমনকি উন্মুক্ত মাথায় ছালাত আদায় করে। এটা নিঃন্দেহে সৌন্দর্যের খেলাপ। রাসূল
(ছাঃ) টুপি পরেছেন মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। কারণ তিনি পাগড়ী পরতেন। ওযূ
করার সময় রাসূল (ছাঃ) পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন এবং তাতে ছালাত আদায় করেছেন বলে প্রমাণিত
হয়।[1] তিনি খালি মাথায় ছালাত আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাসান বাছরী
(রহঃ) বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও টুপির উপর সিজদা করতেন।[2] এতে বুঝা যায়
যে তারা ছালাতে টুপি বা পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করতেন। খালি মাথায় ছালাত আদায়কে অপসন্দ
করতেন। যেমন-
ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একাদা তিনি তার
গোলাম নাফে‘ (রাঃ)-কে খালি মাথায় ছালাত আদায় করতে দেখলেন। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি যদি
কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করতে যাও তাহলে কি তুমি খালি মাথায় তার সাথে
সাক্ষাৎ করতে পারবে? তিনি বললেন, না। তখন ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ অধিক হক্বদার-
তাঁর জন্য সৌন্দর্য বর্ধন করা’।[3] খালি মাথায় ছালাত আদায় করা একদিকে অপসন্দনীয় কাজ,
অন্যদিকে খালি মাথায় থাকা খৃস্টানদের নিদর্শন।[4]
তাছাড়া ছালাত হোক বা ছালাতের বাইরে হোক মাথা
ঢেকে রাখা মুসলিমদের জন্য সৌন্দর্যের প্রতীক।[5] টুপি, পাগড়ী, রুমাল যা দিয়েই হোক।
আর ছালাতের মধ্যে মাথা ঢাকা সৌন্দর্যের অন্যতম। আল্লাহ বলেন, خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর
পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৩১)।[6] রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথায় বড় রুমালও ব্যবহার করেছেন।[7]
অবশ্য ছাহাবায়ে কেরাম অনেক সময় জুতা, মোজা, টুপি, জামা ছাড়াও চলেছেন।[8]
দলীলের উৎসঃ
[1].ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬,১ম
খন্ড,পৃঃ ১৩৪;মিশকাত হা/৫১৮;বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৩,২/১৩০ পৃঃ-।
[2]. বুখারী হা/৩৮৫, ১/৫৬ পৃঃ,
‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩-এর আলোচনা, (ইফাবা হা/৩৭৮-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ১/২১৯
পৃঃ); এবং হা/১১৯৮, ১/১৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১২৪-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ২/৩৩০ পৃৃৃঃ),
‘ছালাতের মধ্যে বিভিন্ন কাজ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১-এর আলোচনা দ্রঃ।
[3]. ইবনু তায়মিয়াহ, হিজাবুল
মারআহ ওয়া লিবাসুহা ফিছ ছালাহ, পৃঃ ৩; দুরূসুন লিশ শায়খিল আলবানী, পৃঃ ২৫; তামামুল
মিন্নাহ, পৃঃ ১৬৪।
[4]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন
নাবী, পৃঃ ১/১৬৬ পৃঃ-।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫৩৮-এর
শেষ আলোচনা দ্রঃ-।
[6]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৬৯।
[7]. বুখারী হা/৫৮০৭, ২/৮৬৪
পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬, (ইফাবা হা/৫৩৯১, ৯/৩২২ পৃঃ)।
[8]. মুসলিম হা/২১৭৭, ১/৩০১
পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘রোগীর সেবা’ অনুচ্ছেদ-৭, (ইফাবা হা/২০০৭)।
(১৬) জায়নামাযের দু‘আ পাঠ করা ও মুখে নিয়ত বলা :
‘জায়নামাযের দু‘আ’ বলে শরী‘আতে কোন দু‘আ নেই।
যদিও উক্ত দু‘আ সমাজে খুব প্রচলিত। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খানও ‘জায়নামাযে দাঁড়িয়ে পড়বার
দো’আ’ শিরোনামে ‘ইন্নী ওয়াজ্জাহতু... দু‘আ লিখেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ পেশ করেননি।[1]
যেহেতু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই, সেহেতু তা পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।
যেকোন ছালাতের জন্য মনে মনে নিয়ত করবে।[2]
নিয়ত শব্দের অর্থ মনে মনে সংকল্প করা।[3] মুখে নিয়ত বলা একটি বিদ‘আতী প্রথা। রাসূল
(ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করেছেন মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায়
না। অথচ বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ বইগুলোতে ফরয এবং সুন্নাত মিলে যত ছালাত রয়েছে
সমস্ত ছালাতের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত উল্লেখ করে মুছল্লীদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
যেমন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তার ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা’ বইয়ে ১০১-১০৭ পৃষ্ঠা
পর্যন্ত সকল ছালাতের নিয়ত আরবীতে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য উক্ত বইয়ের টীকা লিখতে গিয়ে
মাওলানা আজিজুল হক লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে নিয়ত মুখে উচ্চারণের বাধ্যবাধকতা স্বরূপ
যে কিছু গৎবাঁধা শব্দের প্রচলন আছে, তা নিষ্প্রয়োজন। নিয়ত পড়ার বিষয় নয়; বরং তা করার
বিষয় এবং এর সম্পর্ক অন্তরের সাথে। মুখে গৎবাঁধা কিছু শব্দোচ্চারণের সঙ্গে নিয়তের কোন
সম্পর্ক নেই’।[4] অতএব মুখে নিয়ত পাঠের অভ্যাস ছাড়তে হবে।
দলীলের উৎসঃ
[1]. তালীমুস-সালাত, পৃঃ ৩১।
[2]. বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১।
[3]. ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ
৮৫।
[4]. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ১৪৩।
(১৭) জেহরী ছালাতে ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়া :
অনেক মসজিদে উক্ত আমল দেখা যায়। ঐ সমস্ত ইমামদের
কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছালেও কোন গুরুত্ব দেন না। এটা গোঁড়ামী মাত্র। কারণ ‘আঊযুবিল্লাহ’
ও ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবেই পড়তে হবে। ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার পক্ষে যে বর্ণনা রয়েছে তা
যঈফ। আর ‘আঊযুবিল্লাহ’ জোরে বলার কোন দলীলই নেই।
একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) মদ্বীনার মসজিদে এশার
ছালাতের ইমামতি করেন। সেখানে তিনি সরবে ক্বিরাআত করেন। কিন্তু ‘সূরা ফাতিহার সাথে
‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম’ পড়লেন না। এরপর অন্য সূরা পাঠ করার সময়ও ‘বিসমিল্লাহ’
পড়লেন না। যখন রুকূতে গেলেন তখন তাকবীরও দিলেন না। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন বিভিন্ন
দিক থেকে আনছার ও মুহাজির ছাহাবীরা এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ছালাত চুরি করলেন না
ভুলে গেলেন? তারপর থেকে তিনি আর কখনো সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার সাথে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া
ছাড়েননি অর্থাৎ সরবে পড়েছেন।[1]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী উক্ত
আছার বর্ণনা করেই তাকে যঈফ বলেছেন। কারণ এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন উবাইদ
বিন উমাইর নামক যঈফ রাবী আছে।[2] ইবনু মাঈন, নাসাঈ, আলী ইবনুল মাদ্বীনী প্রমুখ মুহাদ্দিছ
যঈফ বলেছেন।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. দারাকুৎনী হা/১১৯৯ ও ১২০০।
[2]. দারাকুৎনী হা/১১৯৯ ও ১২০০।
[3]. নাছবুর রাইয়াহ ১/৩৫৩ পৃঃ।
(১৮)‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে বলার ছহীহ হাদীছ :
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ), আবুবকর
ও ওমর (রাঃ) ‘আল-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ দ্বারা ছালাত শুরু করতেন।[1]
আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ), আবুবকর,
ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। তারা ‘আল-হামদু লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’
দ্বারা ছালাত শুরু করতেন। ক্বিরাআতের প্রথমে বা শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’
উল্লেখ করতেন না।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৭৪৩; মিশকাত
হা/৮২৩।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/৯১৪, ‘ছালাত’
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩।
(১৯) ক্বিরাআতের জবাব প্রদানে ত্রুটি :
(ক) সূরা ত্বীনের শেষে ‘বালা ওয়া আনা ‘আলা
যা-লিকা মিনাশ শা-হেদ্বীন’ বলা (খ) সূরা মুরসালাত-এর শেষে ‘আ-মান্না বিল্লাহ’ বলা
(গ) ক্বিয়ামাহ শেষে ‘বালা’ বলার হাদীছ যঈফ। এর সনদে একজন রাবী আছে, যার কোন পরিচয় পাওয়া
যায়নি। শুধু তার পরিচয় বলা হয়েছে ‘আরাবী’। [1]
(ঘ) বাক্বারাহ শেষে ‘আমীন’ বলা যঈফ।[2]
(ঙ) সূরা যোহা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সকল সূরা
শেষে ‘আল্লাহু আকবার’ বলার যে বর্ণনা এসেছে তা মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য।[3]
(চ) সূরা জুম‘আ শেষে ‘আল্ল-হুম্মারযুক্বনা
রিযক্বান হাসানাহ’ বলার কোন ভিত্তি নেই। (ছ) সূরা বাণী ইসরাঈল শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার
কাবীরা’ বলা (জ) সূরা ওয়াক্বিয়াহ ও হাক্কাহ শেষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আযীম’ বলা (ঝ) মুলক
শেষে ‘আল্লাহু ই’য়াতীনা ওয়া হুয়া রাববুল আলামীন’ বলার যে প্রথা চালু আছে, তার কোন ছহীহ
ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য যে, এছাড়া বিভিন্ন প্রেস থেকে প্রকাশিত
কুরআনের শেষে কুরআন তেলাওয়াত শেষ করার দু‘আ হিসাবে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলে যে দু‘আ
যোগ করা হয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই। এই দু‘আ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।[4] রাসূল (ছাঃ) মজলিস
শেষে এবং কুরআন তেলাওয়াত শেষে নিম্নোক্ত দু‘আটি পড়তেন।[5] উক্ত দু‘আ বৈঠক শেষের দু‘আর
ন্যায়।[6] তবে বায়হাক্বী ‘শু‘আবুল ঈমানের’ মধ্যে কুরআন খতমের যে লম্বা দু‘আ বর্ণিত
হয়েছে, সেই হাদীছের সনদ জাল।[7]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৮৮৭, ১/১২৯
পৃঃ; মিশকাত হা/৮৬০; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৫৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪২৪৫।
[2]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/৮০৬২; তাহক্বীক্ব তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৩৭৪।
[3]. হাকেম হা/৫৩২৫; সিলসিলা
যঈফাহ হা/৬১৩৩।
[4]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ফৎওয়া
নং ৩৩০৩।
[5]. তিরমিযী হা/৩৪৩৩, নাসাঈ
কুবরা হা/১০১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩১৬৪।
[6]. নাসাঈ হা/১৩৪৪।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬১৩৫
ও ৬৩২২।
(২০) যে যে সূরা ও আয়াতের জবাব দিতে হবে
যে যে সূরা ও আয়াতের জবাব দিতে হবে :
(ক) সূরা আ‘লার প্রথম আয়াত পাঠ করলে বলবে سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى (সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা)।[1]
(খ) সূরা ক্বিয়ামাহ-এর শেষে বলবে سُبْحَانَكَ فَبَلَى (সুবহা-নাকা ফা বালা)।[2]
(গ) সূরা রহমানের আয়াত ‘ফাবি আইয়ে আ-লা-ই রাবিবকুমা
তুকায্যিবা-ন’ -এর জবাবে বলবে لاَ
بِشَىْءٍ
مِنْ
نِعَمِكَ
رَبَّنَا
نُكَذِّبُ
فَلَكَ
الْحَمْدُ
(লা বিশায়ইম মিন নি‘আমিকা রববানা নুকায্যিবু ফালাকাল হাম্দ)।[3]
(ঘ) সূরায়ে গাশিয়া-র শেষে اللهُمَّ
حَاسِبْنِىْ
حِسَابًا
يَسِيْرًا
(আল্লা-হুম্মা হা-সিবনী হিসা-বাঁই ইয়াসীরা) বলা যায়।[4] উল্লেখ্য, হাদীছে সূরা গাশিয়া উল্লেখ নেই। রাসূল (ছাঃ) কোন ছালাতে এভাবে বলতেন।
ছালাতের মধ্যে কুরআন তেলাওয়াতের সময় হিসাব নেয়ার কথা আসলে এটা বলা যাবে। উত্তম হল নফল
ছালাতে বলা।[5] তবে যেকোন ছালাতে শেষ তাশাহহুদে বসে দরূদের পর পড়া যাবে।[6]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৮৮৩, ১/১২৮
পৃঃ, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৮৫৯, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ।
[2]. আবুদাঊদ হা/৮৮৪, ১/১২৮
পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[3]. তিরমিযী হা/৩২৯১, ২/১৬৪
পৃঃ, ‘সূরা রহমানের তাফসীর’ অনুচ্ছেদ, সনদ হাসান; মিশকাত হা/৮৬১; ছহীহাহ হা/২১৫০।
[4]. আহমাদ হা/২৪২৬১; ছহীহ ইবনে
হিববান হা/৭৩২৮, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৫৬২, ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়, ‘হিসাব ও মীযান’
অনুচ্ছেদ।
[5]. আলবানী, তামামুল মিন্নাহ,
পৃঃ ১৮৫।
[6]. আহমাদ হা/২৪২৬১; ছহীহ ইবনে
হিববান হা/৭৩২৮, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৫৬২; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১৮৪।
(২১) ছালাতের সময় লুঙ্গি, প্যান্ট গুটিয়ে নিয়ে ছালাত আদায় করা :
সমাজের অধিকাংশ মানুষই টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে
পরে থাকে। এই নোংরা স্বভাবের বিরুদ্ধে হাদীছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোন গুরুত্ব নেই।
যারা মুছল্লী তারা শুধু ছালাতের সময় টাখনুর উপরে কাপড় রাখার চেষ্টা করে। অথচ এটা এক
ধরনের প্রতারণা। কারণ সর্বাবস্থায় টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। এটি গর্হিত
অন্যায়। অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় পরবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার
সাথে কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেন না এবং তাকে পবিত্র করবেন না; বরং তার জন্য রয়েছে
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।[1] বিশেষ করে ছালাত সম্পর্কে অন্য হাদীছে এসেছে,
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ছালাতের মধ্যে টাখনুর নীচে কাপড় পরে, সে হালালের মধ্যে আছে,
না হারামের মধ্যে আছে তা আল্লাহর যায় আসে না’।[2] উক্ত হাদীছে টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে
ছালাত আদায়কারী মুছল্লীর জন্য সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, জামা বা জামার
হাতা গুটিয়ে ও বোতাম খুলে ছালাত আদায় করা উচিৎ নয়; বরং স্বাভাবিক রাখতে হবে।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/৩০৬, ১/৭১ পৃঃ;
মিশকাত হা/২৭৯৫; আবুদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৩৩২।
[2]. আবুদাঊদ হা/৬৩৭, ১/৯৩ পৃঃ,
সনদ ছহীহ; আওনুল মা‘বূদ ২/৩৪০।
[3]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/৮০৯, ১/১১২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৭২, ২/১৩৬ পৃঃ); মুসলিম হা/১১২৩; মিশকাত হা/৮৮৭; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৮২৭, ২/২৯৭ পৃঃ।
(২২) কাতারের মধ্যে পরস্পরের মাঝে ফাঁক রেখে দাঁড়ানো নিষেধ :
জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করার সময় কাতারের
মাঝে পরস্পরের মধ্যে ফাঁক রাখা সুন্নাতের বরখেলাফ। উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি।
পরস্পরের পায়ের মাঝে ‘চার আঙ্গুল’ পরিমাণ ফাঁক রাখতে হবে এবং পায়ে পা মিলালে অন্যকে
অপমান করা হয় মর্মে সমাজে যে কথা প্রচলিত আছে, তা এক প্রকার জাহেলিয়াত। এটি সুন্নাতকে
অবজ্ঞা করার অপকৌশল এবং চূড়ান্ত মিথ্যাচার। কারণ যারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, তারা
যদি পরস্পরে দাঁড়িয়ে পায়ে পা মিলিয়ে ছালাত পড়তে পারেন, তাহলে আমাদের সম্মানের হানি
হবে কেন? আমাদেরকেও তাঁদের পদাংক অনুসরণ করতে হবে। কারণ পায়ে পা, টাখনুর সাথে টাখনু
ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বহু হাদীছে নির্দেশ করেছেন।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবে, এর বিনিময়ে আললাহ তার
একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।[1]
সুধী পাঠক! মুরববীরা বলে থাকেন, পায়ের সাথে
পা মিলালে সম্মান নষ্ট হয়। আর রাসূল (ছাঃ) বলছেন, আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আমি
তাহলে কার কথা গ্রহণ করব? অতএব সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরুন। রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভে
ধন্য হৌন!
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়
আল্লাহ এবং ফেরেশতগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারবন্দী হয়ে ছালাত আদায়
করেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা
বৃদ্ধি করে দেন।[2]
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করবে, বাহুসমূহকে
বরাবর রাখবে, ফাঁক সমূহ বন্ধ করবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতের সাথে নম্রতা বজায় রেখে
মিলিয়ে দিবে; মধ্যখানে শয়তানের জন্য ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে মিলিয়ে
দাঁড়ায়, আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটবর্তী করে নেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে পৃথক করে
দেয় আল্লাহও তাকে পৃথক করে দেন।[3]
নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
মুছল্লীদের দিকে মুখ করতেন অতঃপর বলতেন, তোমরা কাতার সোজ কর। এভাবে তিনি তিনবার বলতেন।
আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করবে অথবা আল্লাহ তোমাদের অন্তরের
মাঝে ফাটল সৃষ্টি করে দিবেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি দেখতাম, মুছল্লী তার সাথী ভাইয়ের
কাঁধে কাঁধ, হাঁটুর পার্শ্বের সাথে হাঁটুর পার্শ্ব এবং টাখনুর সাথে টাখনু ভিড়িয়ে দিত।[4]
বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কাতারের
এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বরাবর করতেন। তিনি আমাদের বুক ও কাঁধ স্পর্শ
করতেন এবং বলতেন, তোমরা পৃথক পৃথক হয়ে দাঁড়াইয়ো না। অন্যথা তোমাদের অন্তরসমূহ পৃথক
হয়ে যাবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের মুছল্লীদের
উপর রহমত নাযিল করেন।[5]
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকে দেখতে
পাই। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের একজন অপরজনের কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পায়ে মিলিয়ে দাঁড়াতেন।[6]
ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,
‘ছালাতে কাতারের মধ্যে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা
মিলানো অনুচ্ছেদ’। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি মুছল্লীকে দেখতাম, সে তার টাখনুকে
তার পার্শ্বের ভাইয়ের টাখনুর সাথে মিলিয়ে দিত।[7]
শায়খ আলবানী (রহঃ) দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,
‘দুঃখজনক বিষয় হল, কাতার সোজা করার সুন্নাতকে
মুসলিমরা অবজ্ঞা করে চলেছে; বরং কিছু সংখ্যক মানুষ ব্যতীত অন্যরা সবাই এই সুন্নাতকে
নষ্ট করেছে। নিশ্চয় আমি সেই দলগুলোর মধ্যে ‘আহলেহাদীছ’ ব্যতীত অন্য কারো মধ্যে উক্ত
সুন্নাত দেখিনি। আমি মক্কায় (১৩৬৮ হিঃ) তাদেরকে দেখেছি, তারা রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যান্য
সুন্নাতকে যেমন অাঁকড়ে ধরে আছে, তেমনি এই সুন্নাতকেও অাঁকড়ে ধরার প্রতি অতীব অনুরাগী।
চার মাযহাবের অনুসারীদের বিপরীতে তারাই একে অাঁকড়ে ধরে আছে। হাম্বলীদেরকেও আমি এদের
মধ্য থেকে পৃথক করি না। কারণ তাদের মধ্য হতে এটা সম্পূর্ণই উঠে গেছে। বরং তারা এই সুন্নাতকে
পরিত্যাগ করা এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পথ অবলম্বন করছে। অধিকাংশ মাযহাব এই সুন্নাহর
বিরুদ্ধে দলীল পেশ করছে যে, কাতারে দাঁড়ানোর সময় উভয় মুছল্লীর পায়ের মাঝে ‘চার আঙ্গুল’
ফাঁক রাখতে হবে। যদি এর অতিরিক্ত ফাঁক হয় তবে অপসন্দনীয়। যেমন ‘আল-ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল
আরবা‘আহ’ (১/২০৭ পৃঃ) গ্রন্থের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা এসেছে। অথচ সুন্নাহর মধ্যে উক্ত
পরিমাণের কোন ভিত্তি নেই; স্রেফ কল্পনা মাত্র’। [8]
আবু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতে
আমাদের বাহুগুলোকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, সোজা হয়ে দাঁড়াও; পৃথক পৃথক
হয়ে দাঁড়াইয়ো না। অন্যথা তোমাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা
বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারাই যেন আমার নিকটে থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের ন্যায়,
তারা যেন থাকে। অতঃপর যারা উভয় দিক থেকে নিকটবর্তী তারা যেন থাকে। আবু মাসঊদ বলেন,
তোমরা আজ অত্যধিক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছ।[9]
আনাস (রাঃ) বলেন, একদা ছালাতের ইক্বামত দেওয়া
হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা
কর এবং পরস্পরে মিলে দাঁড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।[10]
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘তোমরা কাতার সমূহে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং পরস্পরকে কাছে টেনে নিবে। আর তোমাদের
ঘাড় সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখবে। আমি ঐ সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ
রয়েছে, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে, কাল ভেড়ার বাচ্চা
ন্যায়।[11]
সুধী পাঠক! কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা,
টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। উক্ত
হাদীছ সমূহ জানার পরও কেউ যদি এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে সে সরাসরি রাসূল
(ছাঃ)-এর আদেশ লংঘন করবে। হাদীছে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত দাঁড়াতে বলা হয়েছে, যেমন একটি
ইট আরেকটি ইটের উপর রেখে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সুতরাং পরস্পরের পায়ের মাঝে কোন ফাঁক
থাকবে না। উল্লেখ্য, অনেক মসজিদে শুধু কনিষ্ঠা আঙ্গুলের সাথে মিলানো হয়। উক্ত মর্মেও
কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল
আওসাত্ব হা/৫৭৯৫; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৮২৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/৯৯৫; মুসনাদে
আহমাদ হা/২৪৬৩১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫৩২।
[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬৬৬, ১ম
খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১০২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৩৪, ৩/৬১ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/৬৬২, ১ম খন্ড,
পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ।
[5]. আবুদাঊদ হা/৬৬৪, ১ম খন্ড,
পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ।
[6]. ছহীহ বুখারী হা/৭২৫, ১ম
খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৯, ২/৯৫ পৃঃ)।
[7]. ছহীহ বুখারী ‘আযান’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৪৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা অনুচ্ছেদ-৪৬৮, ২/৯৫ পৃঃ)।
[8]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২-এর
আলোচনা দ্রঃ।
[9]. ছহীহ মুসলিম হা/১০০০, ১/১৮১
পৃঃ, (ইফাবা হা/৮৫৪), ‘ছালাত’ অধ্যায়-৫, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৮; মিশকাত হা/১০৮৮;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০২০, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ।
[10]. ছহীহ বুখারী হা/৭১৯, ১ম
খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা হা/৬৮৪, ২/৯৩ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনচ্ছেদ-৪৩; মিশকাত হা/১০৮৬;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০১৮, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৫৬।
[11]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৬৬৭,
১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭, সনদ ছহীহ ; মিশকাত হা/১০৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০২৫, ৩য় খন্ড,
পৃঃ ৫৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ।
(২৩) ছালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল নড়াচড়া করা যাবে না
বলে ধারণা করা
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এর পক্ষে কোন
দলীল নেই। একশ্রেণীর মুরববী উক্ত প্রথার আমদানী করেছেন। অথচ ছালাতের মধ্যে প্রয়োজনে
মুছল্লী তার স্থান থেকে সামনে বা পিছনে, ডানে বা বামে সরে যেতে পারে।
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ছালাতে
দাঁড়ালেন আর আমি তাঁর বাম পার্শ্বে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে
ঘুরিয়ে তার ডান দিকে করে নিলেন। অতঃপর জাববার ইবনু ছাখর এসে রাসূল (ছাঃ)-এর বাম দিকে
দাঁড়ালেন। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদের উভয়ের হাত ধরে তাঁর পিছনে ঠেলে দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।[1]
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি একদা
আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রে ছিলাম। রাসূল (ছাঃ) ছালাতের জন্য দাঁড়ালেন।
অতঃপর আমি তাঁর বামে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরলেন এবং তাঁর পিঠের পিছন দিয়ে আমাকে
ডান পার্শ্বে নিয়ে আসলেন।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/৭৭০৫, ২/৪১৬
পৃঃ, ‘যুহদ’ ও মন গলানো’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৯; মিশকাত হা/১১০৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৩৯,
৩/৬৩ পৃঃ, ‘ছালাতে দাঁড়ান’ অধ্যায়।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৬৯৯, ১/৯৭
পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৬৫, ২/৮৪ পৃঃ); ছহীহ মুসলিম হা/১৮৩৭; মিশকাত হা/১১০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১০৩৮, ৩/৬৩ পৃঃ।
(২৪) ছালাত অবস্থায় এদিক সেদিক লক্ষ্য করা :
অনেক মুছল্লী তার ছালাতে স্থির থাকে না। অমনোযোগী
হয়ে এদিক সেদিক তাকানোর বদ অভ্যাস আছে। এটা মূলতঃ শয়তানের প্রলোভন।[1] ফলে ছালাতে একাগ্রতা
থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের মুছল্লীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না।
আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বান্দা
ছালাতে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে সর্বদা তাকিয়ে থাকেন, যতক্ষণ সে এদিক সেদিক
না তাকায়। যখন অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরায়, আল্লাহ তাঁর দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।[2]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে
তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দান করেছেন এবং তিনটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। আমাকে মোরগের মত ঠোকরাতে,
কুকুরের মত বসতে এবং শিয়ালের মত এদিক সেদিক তাকাতে নিষেধ করেছেন।[3] অতএব ছালাতের মধ্যে
সর্বদা সিজদার স্থানে বা তার কাছাকাছি দৃষ্টি রাখবে।[4]
দলীলের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/৭৫১; মিশকাত
হা/৯৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯১৯, ৩/১২ পৃঃ।
[2]. তিরমিযী হা/২৮৬৩; আবুদাঊদ
হা/৮৪৩ (৯০৯); ছহীহ তারগীব হা/৫৫৪; সনদ হাসান। উল্লেখ্য যে, আলবানী প্রথমে যঈফ বলেছিলেন।
পরে সাক্ষী থাকার কারণে হাসান বলেছেন; মিশকাত হা/৯৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৩০, ৩/১৬
পৃঃ।
[3]. মুসনাদে আবী ইয়ালা, আহমাদ
হা/৮০৯১; ছহীহ তারগীব হা/৫৫৫, সনদ হাসান।
[4]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৭৬১;
বায়হাক্বী, সনানুল কুবরা হা/১০০০৮; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ৮৯; সনদ ছহীহ, ইওয়াউল গালীল
হা/৩৫৪-এর আলোচনা দ্রঃ।
(২৫) সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাঁটু রাখা ও হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠা
:
সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাত রাখাই সুন্নাত।
আগে হাঁটু রাখার পক্ষে যে কয়টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
(ক) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) যখন সিজদা করতেন, তখন তাকে দেখেছি তিনি দুই হাত রাখার আগে দুই হাঁটু রাখতেন এবং
যখন তিনি উঠতেন, তখন হাঁটুর আগে দুই হাত উঠাতেন।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, উক্ত
হাদীছের সনদে শারীক নামক এক ব্যক্তি রয়েছে, সে দুর্বল রাবী। সে এককভাবে এটি বর্ণনা
করেছে। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, ‘শারীক নামক রাবী এককভাবে এই হাদীছ বর্ণনা করেছে, যা নির্ভরযোগ্য
নয়’।[2] শায়খ আলবানীও যঈফ বলেছেন।[3]
(খ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ সিজদা দিবে তখন সে যেন দুই হাত দেওয়ার পূর্বে দুই হাঁটু
দিয়ে শুরু করে। উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু
সাঈদ নামে এক ব্যক্তি রয়েছে, সে অত্যন্ত দুর্বল। ইবনু সাঈদ বলেন, ইবনু ফাল্লাস বলেন,
সে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হাদীছ বর্ণনাকারী, পরিত্যক্ত রাবী। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, সে
পরিত্যক্ত, হাদীছ জালকারী।[5]
(গ) সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, আমরা
দুই হাঁটুর পূর্বে দুই হাত রাখতাম। অতঃপর আমাদেরকে দুই হাতের পূর্বে দুই হাঁটু রাখার
নির্দেশ দেওয়া হল।[6]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে ইবরাহীম এবং তার
পিতা ইসমাঈল রয়েছে। তারা নিতান্তই যঈফ রাবী। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাদেরকে পরিত্যক্ত
রাবী বলেছেন।[7]
(ঘ) ইবরাহীম নাখঈ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন, তিনি মাটিতে দুই হাত রাখার আগে দুই হাঁটু রাখতেন।[8]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ
নামে একজন যঈফ রাবী আছে।[9]
(ঙ) ইবনু ওমর (রাঃ) যখন সিজদা করতেন, তখন দুই
হাত রাখার আগে দুই হাঁটু রাখতেন এবং যখন তিনি দাঁড়াতেন, তখন দুই হাঁটুর পূর্বে দুই
হাত উঠাতেন।[10]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি দুর্বল। এর সনদে ইবনু আবী লায়লা
নামে রাবী আছে। সে যঈফ। স্মৃতি শক্তি দুর্বল।[11] তাছাড়া ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন-
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন
সিজদা করতেন, তখন দুই হাঁটু রাখার পূর্বে আগে দুই হাত রাখতেন। আর তিনি বলতেন, নবী
(ছাঃ) এমনটি করতেন।[12] ইমাম হাকেম, যাহাবী, মারূযী, আলবানী, প্রমুখ মুহাদ্দিছ উক্ত
হাদীছকে ছহীহ বলেছেন।[13]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৮৩৮ ও ৮৩৯,
১/১২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৬৮; নাসাঈ হা/১০৮৯; ইবনু মাজাহ হা/৮৮২, দারেমী, মিশকাত হা/৮৯৮;
ইরওয়াউল গালীল হা/৩৫৭; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯২৯ ও ৯৬৮।
[2]. দারাকুৎনী হা/১৩২৩ تفرد به شريك وليس بالقوى فيما يتفرد به।
[3]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৮৯৮-এর
টীকা দ্রঃ।
[4]. ইবনু শায়বাহ ১/২৬৩; ত্বাহাবী
১/২৫৫; বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা ২/১০০।
[5]. متروك ذاهب الحديث তানকীহ, পৃঃ ২৯৬।
[6]. ইবনু খুযায়মাহ ১/৩১৯; বায়হাক্বী
২/৯৮।
[7]. তানকীহ, পৃঃ ২৯৭-৯৮।
[8]. ত্বাহাবী ১/২৫৬।
[9]. তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ
২৯৮।
[10]. ইবনু আবী শায়বাহ ১/২৬৩।
[11]. ইবনু আবী শায়বাহ ১/২৬৩।
[12]. ত্বাহাবী হা/১৪০৫; ছহীহ
ইবনু খুযায়মা হা/৬২৭, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৮২১; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৭৪৪; আলবানী, মিশকাত ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮২, টীকা নং ১।
[13]. আলবানী, মিশকাত ১ম খন্ড,
পৃঃ ২৮২, টীকা নং ১।
(২৬)
আগে হাত রাখার ছহীহ হাদীছসমূহ :
সুন্নাত হল সিজদায় যাওয়ার সময় আগে মাটিতে হাত
রাখা। উক্ত মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করবে, তখন যেন উটের শয়নের মত না করে। সে যেন দুই হাঁটুর
আগে দুই হাত রাখে’।[1]
উক্ত হাদীছ সম্পর্কে আব্দুল হক আল-আশবীলী বলেন,
পূর্বের হাদীছের চেয়ে এই হাদীছের সনদ অধিক উত্তম।[2] অন্যত্র তিনি এই হাদীছকে ছহীহ
বলেছেন।[3] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর সনদ ছহীহ।[4] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
এই হাদীছ ওয়ায়েল ইবনু হুজুরের হাদীছের চেয়ে অধিক শক্তিশালী’। অতঃপর তিনি বলেন, ‘প্রথম
হাদীছের জন্য ইবনু ওমর (রাঃ)-এর হাদীছটি সাক্ষী, যাকে ইবনু খুযায়মাহ ছহীহ বলেছেন এবং
ইমাম বুখারী (রহঃ) তা‘লীকসূত্রে মওকূফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন’।[5]
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ সম্পর্কে আবু সুলাইমান
আল-খত্বীব বলেন, এই হাদীছের চেয়ে ওয়ায়েল বিন হুজরের হাদীছ অধিক প্রামাণ্য। মানসূখও
বলা হয়।[6] এর জবাবে শায়খ আলবানী বলেন,.
‘দুই দিক থেকে উক্ত কথা সত্য থেকে বহু দূরে।
প্রথমতঃ এই হাদীছের সনদ ছহীহ আর ওয়ায়েলের হাদীছ যঈফ। দ্বিতীয়তঃ এটা রাসূলের কথা আর ঐটা কাজ। আর বিরোধের সময় কাজের উপর কথা প্রাধান্য
পায়। তৃতীয়তঃ রাসূল (ছাঃ)-এর কাজও তার সাক্ষী হিসাবে বর্ণিত হয়েছে’।[7]
অনুরূপভাবে আগ হাঁটু রাখার পক্ষে যাদুল মা‘আদের
মধ্যে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করেছেন, তার ভাষ্যকার শু‘আয়েব
আরনাঊত্ব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত্ব সেগুলোর পর্যালোচনা করে মন্তব্য করেন যে, লেখকের
সকল দলীল তাঁর বিপক্ষে গেছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত আগে হাত রাখার হাদীছ নিঃসন্দেহে
ছহীহ এবং ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছ যঈফ।[8]
হাঁটুর ব্যাখ্যা :
অনেকে উক্ত হাদীছের প্রথম অংশকে দ্বিতীয় অংশের
বিরোধী মনে করেছেন। কারণ উটের বসা গরু-ছাগলের বসার মতই। চতুষ্পদ জন্তুর সামনের দু’টিকে
হাত ও পেছনের দু’টিকে পা বলা হয়। উট বসার সময় প্রথমে হাত বসায়। অথচ হাদীছের প্রথম অংশে
উটের মত বসতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ রুকূ থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাত রাখতে
নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু হাদীছের শেষ অংশে
প্রথমে হাত রাখতে বলা হয়েছে। তাই হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) সহ অনেকে প্রথমে হাঁটু
রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
কিন্তু উক্ত যুক্তি সঠিক নয়। কারণ চতুষ্পদ
জন্তুর হাতেই হাঁটু। যার প্রমাণে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও
আবুবকর (রাঃ) হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে মদ্বীনার দিকে রওয়ানা হন, তখন কুরাইশ নেতারা
রাসূল (ছাঃ)-কে হত্যা করতে পারলে একশত উট দেওয়ার পুরস্কার ঘোষণা দেয়। এই পুরস্কারের
লোভে সুরাকাহ বিন জু‘শুম ঘোড়া ছুটিয়ে যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটবর্তী হল, তখন সে বলে
যে, আমার ঘোড়ার হাত দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে দেবে গেল’।[9]
ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘নিশ্চয় উটের দুই হাঁটু
হল দুই হাতে। অনুরূপ প্রত্যেক চতুষ্পদ জন্তুরই তাই। আদম সন্তান তাদের মত নয়।[10] জাহেয
বলেন, চতুষ্পদ জন্তুর হাঁটু হল হাতে এবং মানুষের হাঁটু হল পায়ে।[11]
অতএব উট ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তুর হাতেই হাঁটু।
তাই রাসূল (ছাঃ) সিজদায় যাওয়ার সময় উটের মত প্রথমে হাঁটু না দিয়ে হাত রাখার নির্দেশ
দান করেছেন। তাছাড়া নিম্নের হাদীছ দ্বারাও আগে হাত রাখার আমল স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়
:
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন
সিজদা করতেন, তখন দুই হাঁটু রাখার পূর্বে আগে দুই হাত রাখতেন। আর তিনি বলতেন, নবী
(ছাঃ) এমনটি করতেন।[12] অতএব উটের হাঁটুর ব্যাখ্যা না করলেও চলে। দলীলের সামনে আত্মসমর্পণ
করলেই মতানৈক্য দূরিভূত হয়।
উল্লেখ্য যে, অনেকে আগে হাঁটু রাখার আমলের
পক্ষেই অবস্থান নেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সিজদায় যাওয়ার সময় আগে হাত রাখেন এবং উঠার সময়
হাতের উপর ভর দিয়ে উঠেন। ইমাম আওযাঈ বলেন, আমি লোকদেরকে পেয়েছি এই অবস্থায় যে, তারা
তাদের হাতকে হাঁটুর পূর্বে রাখত।[13] ইবনু হাযম আগে হাত রাখাকে ফরয ও অপরিহার্য বলেছেন।[14]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/৮৪০, ১/১২২
পৃঃ; নাসাঈ হা/১০৯১, ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৮৯৯।
[2]. إنه أحسن إسنادا من الذى قبله কিতাবুত তাহাজ্জুদ ১/৫৬।
[3]. আল-আহকামুল কুবরা ১/৫৪
পৃঃ।
[4]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৮৯৯-এর
টীকা দ্রঃ।
[5]. বুলূগুল মারাম হা/৩০৬,
পৃঃ ৮২; বুখারী ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২৮, হা/৮০৩ -এর আলোচনা দ্রঃ, ১/১১০ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭৬৭-এর আলোচনা দ্রঃ, ২/১৩০ পৃঃ)।
[6]. মিশকাত হা/৮৯৮ حديث وائل بن حجر أثبت من هذا قيل منسوخ।
[7]. মিশকাত হা/৮৯৯, ১/২৮৩ পৃঃ;
৮৯৮ নং হাদীছের টীকা সহ দ্রঃ।
[8]. যাদুল মা‘আদ (বৈরূত ১৪১৬/১৯৯৬)
১/২২৩ টীকা-১।
[9]. বুখারী হা/৩৯০৬, ১/৫৫৪
পৃঃ, ‘মর্যাদা’ অধ্যায়, ‘নবী (ছাঃ)-এর হিজরত’ অনুচ্ছেদ-৪৫।
[10]. ত্বাহাবী হা/১৪০৭-এর আলোচনা
দ্রঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৯৫।
[11]. জাহেয, কিতাবুল হায়ওয়ান,
২/৩৫৫ পৃঃ।
[12]. ত্বাহাবী হা/১৪০৫; ছহীহ
ইবনু খুযায়মা হা/৬২৭, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৮২১; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৭৪৪; আলবানী, মিশকাত ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮২, টীকা নং ১।
[13]. মাসায়েল ১/১৪৭ পৃঃ; আলবানী,
ছিফাতু ছালাতিন নবী (ছাঃ), পৃঃ ১৪০।
[14]. মুহাল্লা, মাসআলা নং ৪৫৬,
৪/১২৮ পৃঃ- فرض على كل مصل ان يضع إذا سجد يديه على الارض قبل ركبتيه ولا بد ।
(২৭) দুই সিজদার মাঝে দু‘আ না পড়া :
রাসূল (ছাঃ) দুই সিজদার মাঝে দু‘আ পড়তেন। কিন্তু
উক্ত সুন্নাত সমাজ থেকে উঠে গেছে। অধিকাংশ মুছল্লী আমল করে না। এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে
একটি সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করা গর্হিত অন্যায়।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)
দুই সিজদার মাঝে এই দু‘আ পড়তেন- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম
করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমকে সৎপথ প্রদর্শন করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।[1]
অথবা বলবে ‘রবিবগ্ফিরলী’ ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’। দুইবার বলবে।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/২৮৪, ১/৬৩ পৃঃ;
আবুদাঊদ হা/৮৫০, ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৯০০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪০, ২/৩০১ পৃঃ।
[2]. নাসাঈ হা/১১৪৫; মিশকাত
হা/৯০১, সনদ ছহীহ।
(২৮) দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের
জন্য উঠার সময় সিজদা থেকে উঠে না বসে সরাসরি উঠে যাওয়া :
সিজদা থেকে উঠে প্রশান্তির সাথে বসে তারপর
দুই হাত মাটির উপর রেখে ভর করে দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতে হবে। কিন্তু
সিজদা থেকে সরাসরি উঠে যাওয়ার যে প্রথা চালু আছে, তার হাদীছ জাল বা মিথ্যা।
(ক) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) হতে
বর্ণিত, তিনি তীরের মত দাঁড়িয়ে যেতেন, দুই হাতের উপর ভর দিতেন না।[1]
তাহক্বীক্ব : এর সনদে খাছীব বিন জাহদার নামে মিথ্যুক
রাবী আছে।[2] তাছাড়াও ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ রাসূল (ছাঃ) ধীরস্থিরভাবে বসতেন এবং
হাত দিয়ে মাটির উপর ভর করে দাঁড়াতেন।[3]
(খ) আলী (রাঃ) বলেন, সুন্নাত
হল দুই রাক‘আতের বসার পর যখন তুমি দাঁড়াবে, তখন তুমি দুই হাতের উপর ভর দিয়ে উঠবে না।[4]
তাহক্বীক্ব : নিতান্তই যঈফ।[5]
(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ছালাতে কোন ব্যক্তি
যখন বসা থেকে দাঁড়াবে তখন হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন।[6]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার বা ছহীহ হাদীছের বিরোধী।
এর সনদে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল মালেক আল-গাযযাল নামে যঈফ রাবী আছে। উক্ত হাদীছের দুইটি
অংশ। প্রথম অংশ ছহীহ।[7]
(ঘ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে দুই
পায়ের অগ্রভাগের উপর ভর করে দাঁড়াতেন।[8]
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে খালেদ ইবনু ইলিয়াস নামে
দুর্বল রাবী আছে। ইমাম তিরমিযী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, মুহাদ্দিছগণের নিকটে সে
দুর্বল।[9]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৬৫৬৩;
সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬২।
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬২।
[3]. বুখারী হা/৮২৩, ১/১১৩ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭৮৫ ও ৭৮৬, ২/১৪১ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪০, ২/২৫৪
পৃঃ; বুখারী হা/৮২৪, ১/১১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৬৮৭; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৯১৯।
[4]. ইবনু আবী শায়বাহ ১/৩৯৫;
বায়হাক্বী ২/১৩৬; ইবনু আদী ৪/৩০৫।
[5]. তানকীহ, পৃঃ ৩১০।
[6]. আবুদাঊদ হা/৯৯২, ১/১৪২
পৃঃ; বায়হাক্বী ২/১৩৫।
[7]. যঈফ আবুদাঊদ হা/৯৯২, ১/১৪২
পৃঃ; তানকীহ, পৃঃ ৩১১।
[8]. তিরমিযী হা/২৮৮, ১/৬৪ পৃঃ।
[9]. তিরমিযী হা/২৮৮, ১/৬৫ পৃঃ-
خَالِدُ بْنُ إِلْيَاسَ هُوَ ضَعِيفٌ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيث
(২৯) হাতের উপর ভর করে উঠার ছহীহ হাদীছ :
মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) যখন বেজোড় রাক‘আতে থাকতেন, তখন সুস্থির হয়ে না বসে দাঁড়াতেন না।[1] অন্য হাদীছে
এসেছে যে, ‘যখন তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতে সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, তখন বসতেন এবং যমীনের
উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন’।[2]
অনেকে ব্যাপক ভিত্তিক হাদীছের আলোকে সরাসরি
উঠে যান।[3] অথচ উক্ত হাদীছদ্বয়ে নির্দিষ্ট আমল বর্ণিত হয়েছে। আর এই হাদীছই বেশী। ইমাম
বুখারীও একে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।[4] তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে হাতের উপর ভর দিয়ে উঠা ছাড়া
কোন উপায় থাকে না। তাই ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাহওয়াইহ
(রহঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) থেকে এই সুন্নাত চলে আসছে যে, মুছল্লী যুবক হোক আর বৃদ্ধ
হোক দুই হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে।[5] সুতরাং শান্তিপূর্ণভাবে বসে তারপর দাঁড়াতে হবে।
দলীলের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/৮২৩, ১/১১৩ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭৮৫ ও ৭৮৬, ২/১৪১ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯৬।
[2]. বুখারী হা/৮২৩, ১/১১৩ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭৮৫ ও ৭৮৬, ২/১৪১ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৪০, ২/২৫৪
পৃঃ; বুখারী হা/৮২৪, ১/১১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৬৮৭; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/২৯১৯।
[3]. বুখারী হা/৬২৫১, ৬৬৬৭।
[4]. বুখারী হা/৭৫৭, ১/১০৫ পৃঃ,
(ইফাবা হা/৭২১, ২/১১০ পৃঃ) এবং হা/৭৯৩, ৬২৫২; ছহীহ মুসলিম হা/৯১১।
[5]. ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ
১৫৫।
(৩০) ক্বিরাআত, রুকূ-সিজদা ও ছালাতের অন্যান্য আহকাম খুব তাড়াহুড়া করে আদায়
করা :
ছালাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ছালাত বিশুদ্ধ
হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত। বর্তমান সমাজে যে ছালাত চালু আছে, তাতে একাগ্রতা মোটেও নেই।
কোন মুছল্লীর মাঝে ধীরস্থিরতার অনুভূতি ও একাগ্রতার মানসিকতা থাকলেও ইমামদের কারণে
তা অর্জন করতে পারে না। অধিকাংশ ইমাম ছালাতে দাঁড়িয়ে এমন তাড়াহুড়া শুরু করেন মনে হয়
তার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিল কিংবা টগবগে গরম তেলের মধ্যে তাকে চুবানো হল; ছালাত শেষ
করেই তিনি ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিবেন। এই তাড়াহুড়ার শুরুটা হয় ইক্বামতের সময় থেকেই।
কারণ মুয়াযযিন ইক্বামত শেষ না করতেই ইমাম ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলে ফেলেন। আর শেষ হয় অতি
সংক্ষেপে কয়েক সেকেন্ড মুনাজাত করে দ্রুত উঠে যাওয়ার মাধ্যমে। দুঃখজনক হল, এই অন্যায়ের
প্রতিবাদ করার সাহস কোন মুছল্লীর হয় না। ইমামের প্রতি ভক্তি আর চলমান রীতি তাদেরকে
বন্ধ্যা করে দিয়েছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, রাজা-প্রজা, মনীব-চাকর সব এক রকম হয়ে গেছে।
তাদের আসল-নকল বুঝার বোধ নষ্ট হয়ে গেছে। নিম্নের হাদীছগুলো লক্ষণীয়-
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ঐ ব্যক্তি, যে তার ছালাত চুরি করে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস
করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কিভাবে ছালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে ছালাতে
রুকূ এবং সিজদা পূর্ণ করে না। [1]
ত্বালক ইবনু আলী আল-হানাফী (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার ছালাতের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যে ছালাতে রুকূ
ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না।[2]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় কোন মুছল্লী
৬০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। কিন্তু তার ছালাত কবুল হচ্ছে না। হয়ত সে পূর্ণভাবে রুকূ
করে কিন্তু সিজদা পূর্ণভাবে করে না। অথবা পূর্ণভাবে সিজদা করে কিন্তু পূর্ণভাবে রুকূ
করে না।[3] উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে রুকূ ও সিজদা উভয়ই যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, মুছল্লীর ছালাত ততক্ষণ যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ সে রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা
না করবে।[4]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি মসজিদে
প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম
দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি পুনরায় ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি
ছালাত আদায় করনি। এইভাবে লোকটি তিনবার ছালাত আদায় করল। রাসূল (ছাঃ) তাকে তিনবারই ফিরিয়ে
দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন,
তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে ছালাত
শিখিয়ে দিন! অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর
কুরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হবে, তা পাঠ করবে। তারপর প্রশান্তিসহ রুকূ
করবে। অতঃপর দাঁড়িয়ে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করবে। তারপর প্রশান্তির সাথে সিজদা করবে। অতঃপর
মাথা উঠিয়ে প্রশান্তিসহ বসবে। প্রত্যেক ছালাতে এভাবে করবে।[5]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২৬৯৫;
মিশকাত হা/৮৮৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮২৫, ২/২৯৫ পৃঃ।
[2]. আহমাদ হা/১৬৩২৬; মিশকাত
হা/৯০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৪৪, ২/৩০২ পৃঃ।
[3]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ
হা/২৯৬৩; ছহীহ তারগীব হা/৫২৯, সনদ হাসান।
[4]. আবুদাঊদ হা/৮৫৫, ১/১২৪
পৃঃ; মিশকাত হা/৮৭৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮১৮, ২/২৯২ পৃঃ; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৩৭৪৮;
ছহীহ তারগীব হা/৫২৮।
[5]. ছহীহ বুখারী হা/৭৫৭; মিশকাত
হা/৭৯০ ও ৮০৪, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।
(৩১) ছালাতে ধীরস্থিরতা না থাকার মূল কারণ ফেক্বহী মূলনীতি :
উক্ত হাদীছে ছালাতের মধ্যে তা‘দীলে আরকানকে
রুকুন গণ্য করা হয়েছে, যা ব্যতীত ছালাত হবে না। অথচ ফিক্বহী মূলনীতি রচনা করতে গিয়ে
উক্ত হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যেমন-
‘তা‘দীলে আরকান বা ধীরস্থিরতাকে সম্পৃক্ত করা
জায়েয নয়। আর সেটা হল, রুকূ ও সিজদায়, রুকূর পর দাঁড়ানো অবস্থায় এবং দুই সিজদার মাঝে
ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। রুকূ ও সিজদার আদেশের কারণে’।[1]
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তা‘আলা যেহেতু শুধু রুকূ ও সিজদা করার
কথা বলেছেন, ধীরস্থিরতার কথা বলেননি (হজ্জ ৭৭)। আর হাদীছে এসেছে ধীরস্থিরতা অবলম্বন
করতে হবে। তাই হাদীছের হুকুম এখানে গ্রহণযোগ্য নয়।[2]
সুধী পাঠক! কে না জানে যে, হাদীছ পবিত্র কুরআনের
ব্যাখ্যা? আল্লাহ রুকূ ও সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু কিভাবে করতে হবে তা রাসূল
(ছাঃ) বাস্তবে শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ উক্ত মূলনীতি রচনা করে হাদীছের হুকুমকে হত্যা করা
হয়েছে। তা‘দীলে আরকান না থাকার কারণে উক্ত মুছল্লীকে রাসূল (ছাঃ) তিনবার ছালাত আদায়
করার নির্দেশ দিলেন। যার উপর আমল না করলে ছালাতই হবে না। আর সেই হাদীছকে উদ্ভট মূলনীতি
দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মূলতঃ মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে এটি সূক্ষ্ম চক্রান্ত।
এ কারণেই দুই সিজদার মাঝের দু‘আকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাড়াহুড়ার কারণে রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে
করা যায় না এবং তাসবীহও পাঠ করা যায় না।
হে ইমাম ও আলেম ছাহেব! আপনার হৃদয়ে কি সামান্যতম
আল্লাহর ভয় নেই? আল্লাহ কি আপনাকে পাকড়াও করতে পারবেন না? আপনার কাছে কি মরণের ফেরেশতা
আসবেন না? কবরে কি আপনার হিসাব হবে না? আপনার মনগড়া ছালাতের কারণে কত মুছল্লীর ছালাত
নষ্ট হচ্ছে তা কি আপনি কখনো ভেবে দেখছেন? শ্বাস বন্ধ হওয়ার পূর্বেই নিজে সংশোধন হৌন
এবং মুছল্লীদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা করুন।
দলীলের উৎসঃ
[1]. নূরুল আনওয়ার (ঢাকা : ইমদাদিয়া
পুস্তকালয়, ১৯৭৬), পৃঃ ১৮।
[2]. নূরুল আনওয়ার, পৃঃ ১৮।
(৩২) সালামের বৈঠকে নিতম্বের উপর না বসে বাম পায়ের উপর বসা :
শেষ তাশাহ্হুদে বসার নিয়ম হল- বাম পা ডান পায়ের
নীচ দিয়ে বের করে দিয়ে নিতম্বের উপর বসা। এটাই সুন্নাত।[1] যেমন- ‘আর যখন রাসূল (ছাঃ)
শেষ রাক‘আতে বসতেন তখন বাম পাকে সামনে বাড়াতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন। আর তিনি তার
নিতম্বের উপর বসতেন’।[2] উক্ত আমল ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল। হাদীছটি দশ জন ছাহাবী
কর্তৃক সত্যয়নকৃত। কিন্তু উক্ত সুন্নাত আজ সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। অধিকাংশ মুছল্লী
আমল করে না।
উল্লেখ্য যে, মাওলানা আব্দুল মতিন ‘দলিলসহ
নামাযের মাসায়েল’ বইয়ে উক্ত ছহীহ হাদীছ গোপন করে উক্ত সুন্নাতকে অস্বীকার করেছেন। বরং
দুই রাক‘আতে বসার হাদীছগুলো পেশ করে মুছল্লীদেরকে ধোঁকা দিতে চেয়েছেন এবং সুন্নাত আমলকারীদেরকে
তীব্র ভাষায় তাচ্ছিল্য করেছেন।[3] তাছাড়া বুখারী থেকে যে হাদীছ পেশ করেছেন তার পরের
হাদীছটি উল্লেখ করেননি। আল্লাহ রহম করুন।
দলীলের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/৮২৮, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১১৪, (ইফাবা হা/৭৯০, ২/১৪৪ পৃঃ); মিশকাত হা/৭৯২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৬, ২/২৫২
পৃঃ, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ। আবুদাঊদ হা/৯৬৩, ৯৬৪, ৯৬৫, ১/১৩৮ পৃঃ; ছহীহ ইবনে হিববান
হা/১৮৬৭; ছহীহ ইবনে খুযায়মাহ হা/৬৪৩ ও ৭০০।
[2]. বুখারী হা/৮২৮, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১১৪, (ইফাবা হা/৭৯০, ২/১৪৪ পৃঃ)।
[3]. দলিলসহ নামাযের মাসায়েল,
পৃঃ ৯৫-৯৭।
(৩৩) দ্বিতীয় সালামের শেষে ‘ওয়াবারাকা-তুহু’ যোগ করা :
সালাম ফিরানোর সময় বাম দিকের সালামের সাথে
অনেক মুছল্লী ‘ওয়া বারাকা-তুহু’ যোগ করে থাকে। এটা সঠিক নয়। বরং শুধু ডান দিকের সালামের
সাথে যোগ করা যাবে।[1] উল্লেখ্য যে, বুলূগুল মারামে আবুদাঊদের উদ্ধৃতি দিয়ে দুই দিকেই
যোগ করে যে হাদীছ উল্লিখিত হয়েছে, তা ভুলক্রমে হয়েছে। মূল আবুদাঊদে তা নেই।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ইরওয়াউল গালীল হা/৩২৬-এর
আলোচনা দ্রঃ, ২/২৯ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৯৭, ১/১৪৩ পৃঃ।
[2]. বুলূগুল মারাম হা/৩২০;
আবুদাঊদ হা/৯৯৭, ১/১৪৩ পৃঃ।
(৩৪) সালাম ফিরানোর পর ইমামের ঘুরে না বসা :
অধিকাংশ মসজিদে দেখা যায়, ইমাম সালাম ফিরানোর
পর ক্বিবলামুখী হয়ে বসে থাকেন। শুধু ফজর ও আছর ছালাতে ঘুরে বসেন। এটা সুন্নাত বিরোধী
কাজ। বরং সুন্নাত হল, প্রত্যেক ফরয ছালাতে মুক্তাদীদের দিকে ঘুরে বসা। যেমন হাদীছে
এসেছে-
সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) বলেন, নবী (ছাঃ)
যখনই কোন ছালাত আদায় করতেন, তখনই আমাদের দিকে মুখ করে ঘুরে বসতেন।[1] রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেক
ছালাতেই সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ঘুরে বসতেন।[2] অতএব শুধু ফজর ও আছর ছালাতে
ঘুরে বসা ঠিক নয়। কারণ এর পক্ষে কোন দলীল নেই।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৮৪৫, ১/১১৭
পৃঃ (ইফাবা হা/৮০৫, ২/১৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫৬; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৮১,
১/২২৯ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪০; মিশকাত হা/৯৪৪ ও ৯০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮৮৩,
২/৩১৮ পৃঃ ‘তাশাহহুদে দু‘আ’ অনুচ্ছেদ।
[2]. ছহীহ বুখারী হা/৪০১, ৬৬১,
৮৪৭, ৯৭৬।
(৩৫) সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে উঠে যাওয়া :
উক্ত কাজ সুন্নাত বিরোধী এবং বদ অভ্যাস। দেশের
প্রায় সব মসজিদেই উক্ত বাজে অভ্যাস চালু আছে। মুছল্লীরা সালাম ফিরানোর পরপরই তাড়াহুড়া
করে উঠে যায়। অথচ এটা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে অপরাধযোগ্য। ওমর (রাঃ) একজনকে ঘাড় ধরে বসিয়ে
দিলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ওমর তুমি ঠিক করেছ।[1]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আহমাদ হা/২৩১৭০; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/২৫৪৯।
(৩৬) সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়া :
সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত রেখে দু‘আ পড়ার
প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। বরং যা বর্ণিত হয়েছে, তার সবই জাল ও যঈফ।
(ক) কাছীর ইবনু সুলায়মান আবু সালামা বলেন,
আমি আনাসের নিকট শুনেছি, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত আদায় করতেন, তখন ডান হাত তার মাথায়
রাখতেন এবং বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি পরম করুণাময়,
দয়ালু। হে আল্লাহ! আমার থেকে চিন্তা ও শঙ্কা দূর করে দিন।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে কাছীর বিন সুলাইম
নামে রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী ও আবু হাতিম বলেন, সে মুনকার রাবী। শায়খ আলবানী (রহঃ)
বলেন, এই হাদীছের সনদ নিতান্তই যঈফ।[2] তিনি আরো বলেন, এটা জাল।[3]
(খ)
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন তার ছালাত শেষ করতেন, তখন ডান হাত দ্বারা
তার মাথা মাসাহ করতেন এবং উক্ত দু‘আ পড়তেন।[4]
তাহক্বীক্ব : এর সনদ জাল। সালাম আল-মাদাইনী অভিযুক্ত।
সে ছিল দীর্ঘ পুরুষ, ডাহা মিথ্যাবাদী।[5] উক্ত মর্মে আরো বর্ণনা আছে।[6] তবে সেগুলোর
সনদও জাল।[7]
অতএব সালাম ফিরানোর পর মাথায় হাত দিয়ে দু‘আ
পড়ার প্রথা বর্জন করতে হবে। কারণ জাল হাদীছ দ্বারা কখনো কোন আমল প্রমাণিত হয় না।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৩১৭৮,
পৃঃ ৪৫১।
[2]. وهذا سند ضعيف جدا সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬০, ২/১১৪-১৫।
[3]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬০,
২/১১৪-১৫।
[4]. ইবনুস সুন্নী হা/১১০।
[5]. و هذا إسناد موضوع و المتهم به سلام المدائني و هو الطويل و هو كذاب সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৮, ৩/১৭১ পৃঃ।
[6]. ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লায়লাহ হা/১১০।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৯,
৩/১৭২ পৃঃ।
(৩৭) আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুঁক দেয়া :
ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়া অত্যন্ত
ফযীলতপূর্ণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে,
তাকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারবে না।[1] তবে এ সময় বুকে ফুঁক দেয়ার শারঈ কোন ভিত্তি নেই।
যদিও আমলটি সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। অতএব এই বিদ‘আতী প্রথা পরিত্যাগ করতে হবে।
[1]. নাসাঈ, আল-কুবরা হা/৯৯২৮; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/৯৭২। উল্লেখ্য যে, মিশকাতে যে বর্ণনা এসেছে, তার সনদ যঈফ। আলবানী, মিশকাত হা/৯৭৪,
১/৩০৮ দ্রঃ।
(২৩) ‘ফাকাশাফনা আনকা গিত্বাআকা’.. পড়ে চোখে
মাসাহ করা :
সূরা ক্বাফ-এর (২২ নং) উক্ত আয়াত পড়ে বৃদ্ধা
আঙ্গুলে ফুঁক দিয়ে চোখে মাসাহ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবৎ। কিন্তু নির্দিষ্ট
করে উক্ত আয়াত পড়ার কোন প্রমাণ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আরোগ্য দানকারী বিধান। তাই যেকোন
আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আরোগ্য কামনা করা যায় (সূরা বাণী ইসরাঈল ৮২)।
(৩৮) ফজর ছালাতের পর ১৯ বার ‘বিসমিল্লাহ’
বলা :
উক্ত মর্মে ছহীহ বা যঈফ সূত্রে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে ‘বিসমিল্লা-হ’-এর ফযীলত বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ (রাঃ) থেকে একটি বক্তব্য এসেছে- ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করে যে, আযাবের ১৯ জন
ফেরেশতা হতে আল্লাহ তাকে পরিত্রাণ দেবেন, সে যেন ‘বিসমিল্লা-হির রহমান-নির রহীম’ পড়ে’।
কারণ ‘বিসমিল্লা-হ’-তে ১৯টি বর্ণ রয়েছে। আর প্রতিটি বর্ণ তার জন্য ঢাল স্বরূপ এবং উক্ত
বর্ণ তাকে আযাবের ১৯ জন ফেরেশতা হতে বাঁচাবে’। কিন্তু উক্ত বর্ণনার ছহীহ কোন ভিত্তি
নেই। ইবনু আত্বিয়াহ বলেন, هَذَا
مِنْ
مُلَحِ
التَّفْسِيْرِ
‘এগুলো চটকদার তাফসীরের অন্তর্ভুক্ত’।[1]
দলীলের উৎসঃ
[1]. তাফসীরে কুরতুবী ১/৯২ পৃঃ,
‘বিসমিল্লাহ’ অনুচ্ছেদ।
(৩৯) ক্বাযা ছালাত আদায় করতে বিলম্ব করা এবং নিষিদ্ধ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার অপেক্ষা
করা :
ক্বাযা ছালাত আদায় করতে দেরী করা এবং নিষিদ্ধ
সময়ে ক্বাযা ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে যে ধারণা সমাজে চালু আছে তা ছহীহ হাদীছের
বিরোধী। বরং যখনই স্মরণ হবে কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখনই ধারাবাহিকভাবে ক্বাযা ছালাত
আদায় করে নিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ ভুলে গেলে কিংবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা
হল, ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণ হলে সাথে সাথে ক্বাযা ছালাত আদায় করা’।[1] অন্য হাদীছে রাসূল
(ছাঃ) বলেন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
তোমাদের কেউ যদি সূর্য ডুবার পূর্বে আছর ছালাত এক রাক‘আত পড়তে পারে তাহলে সে যেন তার
ছালাত পূর্ণ করে নেয়। অনুরূপ কেউ যদি সূর্য উঠার পূর্বে ফজর ছালাতের এক রাক‘আত পড়তে
পারে তাহলে সে যেন তার ছালাত পূর্ণ করে নেয়।[2]
অতএব স্পষ্ট হল যে, ক্বাযা ছালাতের জন্য কোন
নিষিদ্ধ ওয়াক্ত নেই।[3] আর মূল ওয়াক্তে যেভাবে
ছালাত আদায় করা হয় ঠিক ঐ নিয়মেই ছালাত আদায় করবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ছাহাবীদেরকে নিয়ে মাগরিবের পর যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা এই চার ওয়াক্ত ছালাত এক
আযান ও চারটি পৃথক ইক্বামতে পরপর জামা‘আতের সাথে আদায় করেন। উক্ত ছালাতগুলো স্ব স্ব
ওয়াক্তে যেভাবে আদায় করতেন ঐ নিয়মেই আদায় করেন।[4]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪
পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি
ছালাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, ‘মসজিদ সমূহ’
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, ৬৮৪, ৬৮৭, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৬৩৬, ২/২১০ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/৫৫৬, (ইফাবা
হা/৫২৯, ২/১৮ পৃঃ); মিশকাত হা/৬০২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৪, ২/১৭৮ পৃঃ, ‘তাড়াতাড়ি
ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ।
[3]. আলবানী, মিশকাত হা/৬০২-এর
টীকা দ্রঃ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯১।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮,
১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে
যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; ছহীহ মুসলিম
হা/১৪৬২, ১/২২৭, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; নাসাঈ হা/৬৬১ ও ৬৬২।
(৪০) ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে না পড়া :
ক্বাযা ছালাত জাম‘আত করে না পড়ার প্রথাই সমাজে
চালু আছে। অথচ একাধিক ব্যক্তির ছালাত ক্বাযা হলে সেই ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায় করাই
সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাঃ) ক্বাযা ছালাত ছাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে আদায় করেছেন।[1]
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮,
১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯ ও ৫৭১, ২/৩৫-৩৬ পৃঃ), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে
যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; নাসাঈ হা/৬৬১
ও ৬৬২।
(৪১) ‘উমরী ক্বাযা’ আদায় করা :
যারা পূর্বে ছালাত আদায় করত না তারা ছালাত
শুরু করার পর অতীতের বকেয়া ছালাত সমূহ ফরয ছালাতের পর আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত আমলের
পক্ষে কোন দলীল নেই। মূলতঃ এটি একটি বিদ‘আতী প্রথা’।[1] রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের
স্বর্ণযুগে উক্ত প্রথার অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং পূর্বের ছুটে যাওয়া ছালাতের জন্য আল্লাহর
কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ চাইলে পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিতে
পারেন এবং তা নেকীতে পরিণত করতে পারেন (ফুরক্বান ৭০-৭১; যুমার ৫৩)। তাছাড়া ইসলাম তার
পূর্বেকার সবকিছুকে ধসিয়ে দেয়।[2] সম্ভবতঃ একাধিক ছালাত ক্বাযা হওয়ার কারণেই মহিলাদের
মাসিক অবস্থার ছালাত পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়নি; বরং ছিয়াম ক্বাযা করার কথা বলা হয়েছে।[3]
উল্লেখ্য যে, রামাযানের শেষ জুম‘আয় পূর্বের ক্বাযা হওয়া ছালাত আদায় করার যে ফযীলত বর্ণনা
করা হয়, তা মিথ্যা।
দলীলের উৎসঃ
[1]. আলোচনা দ্রষ্টব্য : আলবানী-মিশকাত
হা/৬০৩, টীকা-২।
[2]. মুসলিম হা/৩৩৬, ১/৭৬ পৃঃ,
(ইফাবা হা/২২১), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/২৮, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/৭৮৯, ১/১৫৩
পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৫৪), ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; মিশকাত হা/২০৩২, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়,
‘ক্বাযা ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ।
(৪২) সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করে পড়াকে অবজ্ঞা করা :
‘ক্বছর’ অর্থ কমানো। চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতকে
দু’রাক‘আত করে পড়াকে ‘ক্বছর’ বলে। ক্বছর করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ বা রহমত।
‘জমা’ অর্থ একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার ছালাত এক সঙ্গে আদায় করা। এ
ব্যাপারে সরাসরি হাদীছ থাকলেও অধিকাংশ মুছল্লী অতি পরহেযগারিতা দেখাতে গিয়ে এই সুন্নাতকে
প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং পূর্ণ ছালাত আদায়
করতে গিয়ে গাড়ী ধরার ব্যস্ততায় ছালাতকে তাড়াহুড়ায় পরিণত করে। সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর
ও জমা করার যে হিকমত, তা অনেকেই বুঝতে চায় না। সময়ের ঘাটতি, স্থান পাওয়া, পবিত্রতা
হাছিলের জন্য সুযোগ মত পানি পাওয়া, ছালাতের
চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা, প্রশান্তির সাথে ছালাত আদায় করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে
তারা কখনো চিন্তা করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যখন
তোমরা সফর কর, তখন তোমাদের ছালাতে ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে,
কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (নিসা ১০১)।
ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) বলেন, আমি একদা ওমর
ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে নিম্নের আয়াত পড়ে বললাম, ‘তোমাদের ছালাত ‘ক্বছর’ করায় কোন
দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে’। মানুষ এখন নিরাপদ
হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হয়েছ আমিও তেমনি এতে আশ্চর্য হয়েছিলাম। অতঃপর
আমি রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ‘এটা ছাদাক্বাহ। আল্লাহ
তোমাদের প্রতি ছাদাক্বাহ করেছেন। তোমরা তার ছাদাক্বাহ গ্রহণ কর’।[1]
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল
(ছাঃ) তাবূক যুদ্ধে অবস্থান করছিলেন। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ঢুলে পড়ত, তখন তিনি
যোহর ও আছর জমা করতেন। আর যদি সূর্য ঢুলে পড়ার পূর্বে সওয়ার হতেন, তখন যোহরকে দেরী
করতেন আছর পর্যন্ত। অনুরূপ করতেন মাগরিবের ছালাতের ক্ষেত্রে। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি
সূর্য ডুবে যেত, তাহলে মাগরিব ও এশা জমা করতেন। আর সূর্য ডুবার পূর্বে যদি সওয়ার হতেন,
তখন মাগরিবকে দেরী করতেন এবং এশার ছালাতের জন্য নেমে পড়তেন। অতঃপর মাগরিব ও এশা জমা
করতেন।[2]
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন সফর
অবস্থায় থাকতেন, তখন যোহর ও আছর জমা করতেন। অনুরূপ মাগরিব ও এশাও জমা করে আদায় করতেন।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/১৬০৫, ১ম খন্ড,
পৃঃ ২৪১, (ইফাবা হা/১৪৪৩), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৩৩৫,
পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৫৭, ৩/১৬৭ পৃঃ।
[2]. আবুদাঊদ হা/১২০৮, ১/১৭০
পৃঃ, ‘দুই ছালাত’ জমা করা অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১৩৪৪, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৬৬,
৩/১৭১ পৃঃ, ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
[3]. বুখারী হা/১১০৭, ১ম খন্ড,
পৃঃ ১৪৯, (ইফাবা হা/১০৪২, ২/২৮৭ পৃঃ); মিশকাত হা/১৩৩৯, পৃঃ ১১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১২৬১, ৩/১৬৯ পৃঃ।
(৪৩) ক্বছরের জন্য ৪৮ মাইল
নির্ধারণ করা :
হাদীছে কোন নির্দিষ্ট দূরত্বের কথা নেই। এক
হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তিন মাইল কিংবা তিন ফারসাখ বা ৯ মাইল যাওয়ার পর দুই রাক‘আত
পড়তেন।[1] শুরাহবীল ইবনু সামত ১৭ বা ১৮ মাইল পর পড়তেন।[2] ইবনু ওমর ও ইবনু আব্বাস
(রাঃ) চার বুরদ বা ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল অতিক্রম করলে ক্বছর করতেন।[3] নির্দিষ্ট
কিছু বর্ণিত হয়নি। অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হলে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই ‘ক্বছর’
করা যায়।
আনাস (রাঃ) বলতেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে
মদ্বীনায় যোহরের ছালাত চার রাক‘আত পড়েছি। আর যিল হুলায়ফা গিয়ে আছরের ছালাত দুই রাক‘আত
পড়েছি।[4]
রাসূল (ছাঃ) একটানা ১৯ দিন ‘ক্বছর’ করেছেন।[5]
অর্থাৎ যত দিন তিনি অবস্থান করেছেন, ততদিন ক্বছর করেছেন। তাই স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত
ছালাত ক্বছর ও জমা করে পড়া যাবে। অনেক ছাহাবী দীর্ঘ দিন সফরে থাকলেও ক্বছর করতেন।[6]
ছাহাবীগণ সফরে থাকা অবস্থায় ক্বছর করাকেই অগ্রাধিকার দিতেন।[7] অতএব সফরে ছালাতকে ক্বছর
ও জমা করার সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ মুসলিম হা/১৬১৫, ১/২৪২
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৫৩)।
[2]. মুসলিম হা/১৬১৬, ১/২৪২
পৃঃ।
[3]. বুখারী ‘ক্বছর ছালাত’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৪, ১/১৪৭ পৃঃ।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/১০৮৯, ১/১৪৮
পৃঃ, (ইফাবা হা/১০২৮, ২/২৮২ পৃঃ), ‘ক্বছর ছালাত’ অধ্যায়; ছহীহ মুসলিম হা/১৬১৪, ১/২৪২
পৃঃ।
[5]. বুখারী হা/১০৮১, ১/১৪৭
পৃঃ; মিশকাত হা/১৩৩৭।
[6]. মিরক্বাত ৩/২২১; ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/২১৩-১৪।
[7]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উ
ফাতাওয়া ২৪/৯৮; মিশকাত হা/১৩৪৭-৪৮ ।
(৪৪) ফজরের ছালাতের জামা‘আত চলা অবস্থায় সুন্নাত পড়তে থাকা :
ইক্বামত হওয়ার পর এবং রীতি মত জামা‘আত চলছে
এমতাবস্থায় বহু মসজিদে ফজর ছালাতের সুন্নাত আদায় করতে দেখা যায়। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন
খান লিখেছেন, ‘জামাআত শুরু হওয়ার পর কোন নফল নামায শুরু করা জায়েয নয়। তবে ফজরের সুন্নত
এর ব্যতিক্রম’।[1] অথচ উক্ত দাবী সুন্নাত বিরোধী। কারণ যখন ফরয ছালাতের ইক্বামত হয়ে
যায়, তখন সুন্নাত পড়া যাবে না।
عَنْ أَبِىْ
هُرَيْرَةَ
عَنِ
النَّبِىِّ
قَالَ
إِذَا
أُقِيْمَتِ
الصَّلاَةُ
فَلاَ
صَلاَةَ
إِلاَّ
الْمَكْتُوْبَةُ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ)
বলেন, ‘যখন ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হবে তখন ফরয ছালাত ব্যতীত আর কোন ছালাত নেই’।[2]
উল্লেখ্য যে, ‘ফজর ছালাতের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত
ছালাত নেই’[3] এই ব্যাপক ভিত্তিক হাদীছের আলোকে বলা হয়, ফজর ছালাতের সুন্নাত আগে পড়তে
না পারলে, সূর্য উঠার পর পড়তে হবে। সেকারণ উক্ত আমল সমাজে চালু আছে। অথচ উক্ত হাদীছের
উদ্দেশ্য অন্য যেকোন ছালাত। কারণ ফজরের পূর্বে সুন্নাত পড়তে না পারলে ছালাতের পরপরই
পড়ে নেয়া যায়। উক্ত মর্মে স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
ক্বায়েস ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
একদা ফজরের ছালাতের পর এক ব্যক্তিকে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন,
ফজরের ছালাত দুই রাক‘আত। তখন ঐ ব্যক্তি বলল, আমি ফজরের পূর্বের দুই রাক‘আত আদায় করিনি।
তাই এখন সেই দুই রাক‘আত আদায় করলাম। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) চুপ থাকলেন।[4]
অতএব প্রচলিত অভ্যাস পরিত্যাগ করে সুন্নাতকে
প্রাধান্য দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, বহু মসজিদে লেখা থাকে লাল বাতি জ্বললে সুন্নাত পড়বেন
না। উক্ত লেখা সুন্নাত বিরোধী হলেও সব ছালাতের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়, কিন্তু ফজরের
সুন্নাতের ব্যাপারে তা অনুসরণ করা হয় না। কারণ এটা সুন্নাত তাই।
দলীলের উৎসঃ
[1]. তালীমুস্-সালাত, পৃঃ ১৭৭।
[2]. ছহীহ মুসলিম হা/১৬৭৮-১৬৭৯
ও ১৬৮৪, ১/২৪৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫১৪ ও ১৫২১) ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯;
ছহীহ বুখারী হা/৬৬৩, ১/৯১ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৩০, ২/৬৪ পৃঃ) ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৮;
মিশকাত হা/১০৫৮, পৃঃ ৯৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৯১, ৩/৪৬ পৃঃ, ‘জামা‘আত ও তার ফযীলত’
অনুচ্ছেদ।
[3]. বুখারী হা/৫৮৬, ১/৮৩ পৃঃ;
মিশকাত হা/১০৪১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৪, ৩/৩৭ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/১২৬৭, ১/১৮০
পৃঃ; মিশকাত হা/১০৪৪, পৃঃ ৯৫ সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৭, ৩/৪০ পৃঃ, ‘ছালাতের
নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ।
(৪৫) মাগরিবের পূর্বের দুই রাক‘আত ছালাতকে অবজ্ঞা করা :
যেকোন ছালাতের আযানের পর দুই রাক‘আত ছালাত
আদায় করা যায়। উক্ত মর্মে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[1] এছাড়াও নির্দিষ্টভাবে মাগরিবের
পর দুই রাক‘আত ছালাতের কথা বলা হয়েছে। কেউ চাইলে পড়তে পারে। কিন্তু উক্ত ছালাতকে বর্তমান
মসজিদগুলোতে অবজ্ঞা করা হয়। এমনকি উক্ত ছালাত সম্পর্কে অধিকাংশ মুছল্লী খবরই রাখে না।
অবশ্য এর পিছনেও একটি ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দাহ (রাঃ) তার পিতার
সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় প্রত্যেক আযানের পর দুই রাক‘আত
ছালাত রয়েছে। তবে মাগরিব ব্যতীত।[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মুনকার। ‘মাগরিব ব্যতীত’
শেষের অংশটুকু ভুলক্রমে সংযোজিত হয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর
বলেন, وَهَذَا
مِنْهُ
خَطَأٌ
فِى
الْإِسْنَادِ
وَالْمَتْنِ
جَمِيْعًا
وَكَيْفَ
يَكُوْنُ
ذَلِكَ
صَحِِيْحًا؟
‘এর অতিরিক্ত অংশের সনদ ও মতন উভয়েই ভুল রয়েছে। কিভাবে ছহীহ হতে পারে?’। অতঃপর তিনি
বলেন, ইবনু বুরায়দা নিজেই মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ছহীহ বুখারী হা/৬২৭, ১/৮৭
পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৯৯, ২/৫০ পৃঃ); মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশকাত হা/৬৬২, পৃঃ ৬৫; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৬১১, ২/২০১ পৃঃ, ‘আযানের ফযীলত ও মুয়াযযিনের উত্তর দান’ অনুচ্ছেদ।
[2]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা
হা/৪৬৬৯।
[3]. বায়হাক্বী, সুনানুস ছুগরা
হা/৫৬৮; সনদ ছহীহ, ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৫৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৬২-এর আলোচনা দ্রঃ।
(৪৬) মাগরিবের পূর্বে সুন্নাত পড়ার ছহীহ দলীল :
আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর, তোমরা মাগরিবের পূর্বে
দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। তৃতীয়বার বলেন, যার ইচ্ছা সে পড়বে। এজন্য যে লোকেরা যেন
তাকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ না করে।[1]
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদ্বীনায় থাকতাম
তখন এমন হত যে, মুয়াযযিন মাগরিবের ছালাতের যখন আযান দিত, তখন লোকেরা কাতারে দাঁড়িয়ে
যেত। অতঃপর তারা দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করত। এমনকি কোন অপরিচিত লোক
মসজিদে প্রবেশ করলে ধারণা করত, অবশ্যই মাগরিবের ছালাত হয়ে গেছে। এত মানুষ উক্ত দুই
রাক‘আত ছালাত আদায় করত।[2]
অনুধাবনযোগ্য : স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ থাকতে একটি
ভুল ও মিথ্যা বর্ণনার উপরে ভিত্তি করে উক্ত সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যায় কি?
দলীলের উৎসঃ
[1]. বুখারী হা/১১৮৩, ১/১৫৭
পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১২ ও ১১১৩, ২/৩২৩ পৃঃ); মুসলিম হা/১৯৭৫, ১/২৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৮);
মিশকাত হা/১১৬৫, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৭, ৩/৯২ পৃঃ।
[2]. মুসলিম হা/১৯৭৬, ১/২৭৮
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৯); মিশকাত হা/১১৮০, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১২, ৩/৯৭ পৃঃ,
‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সুন্নাত ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
(৪৭) মাগরিবের পর ছালাতুল আউয়াবীন পড়া :
মাগরিবের পর ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ পড়ার প্রমাণে
কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যে সমস্ত বর্ণনা পাওয়া যায়, তার সবই জাল বা মিথ্যা।
(ক)
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর ৬ রাক‘আত
ছালাত পড়বে কিন্তু মাঝে কোন ত্রুটিপূর্ণ কথা বলবে না, তার জন্য উহা ১২ বছরের ইবাদতের
সমান হবে’।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম তিরমিযী বলেন,
আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদীছটি গরীব। আমরা ওমর
ইবনে আবী খাছ‘আম কর্তৃক বর্ণিত যায়েদ ইবনু হুবাবের হাদীছ ছাড়া আর কিছু জানি না। ইমাম
বুখারীকে ওমর ইবনে আব্দুল্লাহ আবী খাছ‘আম সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, সে অস্বীকৃত রাবী।
তিনি তাকে নিতান্তই যঈফ বলেছেন’।[2]
(খ) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ২০ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি
ঘর নির্মাণ করবেন।[3]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। এর সনদে ইয়াকূব ইবনু ওয়ালীদ
মাদানী নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন।[4]
(গ) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ছালাত আদায় করবে সেটা তার জন্য
‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ হবে।[5]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ছাখর নামে
যঈফ রাবী আছে। সে মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির-এর যুগ পায়নি।[6]
জ্ঞাতব্য : মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খান বলেন, ‘মাগরিবের
পরে ছয় রাকআত, একে আওয়াবীনও বলা হয়।... আওয়াবীন নামাযের সর্বাধিক রাকআত সংখ্যা বিশ।
দু’ কিংবা চার রাকআতও জায়েয। নবী (সা.) আওয়াবীনের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন’।[7] ‘নবীজীর
নামায’ শীর্ষক বইয়ে ড. ইলিয়াস ফায়সাল মাগরিবের পর অতিরিক্ত ছালাত আদায় করার দাবী করেছেন।
তার প্রমাণে একটি উদ্ভট বর্ণনা পেশ করেছেন।[8] এটা বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। অবশ্য
মাওলানা নূর মোহাম্মদ আ’জমী (রহঃ) লিখেছেন, ‘মাগরিবের পরের ছয় রাকআতের নাম ‘সালাতুল
আওয়াবীন’ বলিয়া কোন হাদীসে উল্লেখ নাই’।[9]
দলীলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ;
ইবনু মাজাহ হা/১১৬৭; মিশকাত হা/১১৭৩, পঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৫, ৩/৯৫ পৃঃ।
[2]. যঈফ তিরমিযী হা/৬৬, পৃঃ
৪৮-৪৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৬৬১।
[3]. তিরমিযী হা/৪৩৬, ১/৯৮ পৃঃ;
মিশকাত হা/১১৭৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১০৬, ৩/৯৫ পৃঃ।
[4]. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৭৪-এর
টীকা দ্রঃ।
[5]. ইবনু মুবারক, কিতাবুয যুহদ,
পৃঃ ১৪; ইবনু নছর, কিতাবুল কিয়াম, পৃঃ ৪৪।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬১৭।
[7]. তালীমুস্-সালাত, পৃঃ ১৭৬-১৭৭।
[8]. ঐ, পৃঃ ২৮২।
[9]. বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৩য় খন্ড,
পৃঃ ১৫৫।
(৪৮) ছহীহ হাদীছের আলোকে ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ :
হাদীছে একই ছালাতকে তিনটি নামে উল্লেখ করা
হয়েছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার সাথে সাথে পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’, সূর্য একটু
উপরে উঠার পর আদায় করলে ‘ছালাতুয যোহা’ এবং আরো একটু উপরে উঠার পর আদায় করলে তাকে
‘ছালাতুল আউয়াবীন’ বা ‘আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল বান্দাদের ছালাত’ বলা হয়েছে। যেকোন
একটি পড়লেই চলবে। যেমন-
(ক) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজর ছালাত আদায় করবে অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে
বসে যিকির করবে; তারপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ এবং পূর্ণ
একটি ওমরার নেকী রয়েছে।[1] অন্য হাদীছে এসেছে,
(খ) বুরায়দা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, মানুষের দেহে তিনশ’ ষাটটি গ্রন্থি রয়েছে। তাই প্রত্যেক গ্রন্থির বিনিময়ে
ছাদাক্বাহ করা উচিৎ। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কার পক্ষে এটা সম্ভব? তিনি বললেন, মসজিদ থেকে থুথু মুছে দিবে এবং রাস্তা
থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দিবে। এটা না পারলে চাশতের দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।[2]
(গ) যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
কিছু লোককে চাশতের ছালাত আদায় করতে দেখেন। অতঃপর বলেন, তারা অবগত আছে যে, এই সময়ের
চেয়ে অন্য সময়ে পড়া অধিক উত্তম। নিশ্চয় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতুল আউয়াবীন’ তখন
পড়বে, যখন উটের বাচ্চা রৌদ্রে তাপ অনুভব করে।[3]
অতএব মাগরিবের পর ছালাতুল আউয়াবীন নামে কোন
ছালাত নেই। তাই উক্ত তিন সময়ের মধ্যে যেকোন এক সময়ে উক্ত ছালাত আদায় করলেই যথেষ্ট হবে।
কিন্তু সূর্য উঠার পর পরই পড়লে ফযীলত অনেক বেশী। সুতরাং জাল ও যঈফ হাদীছ পরিত্যাগ করে
ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়াই একজন মুছল্লীর কর্তব্য।
জ্ঞাতব্য : ‘ছালাতুল আউয়াবীন’-এর রাক‘আত সংখ্যা
সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ আট।[4] ১২ রাক‘আত পড়ার যে হাদীছ রয়েছে তা যঈফ।[5] এর সনদে
মূসা ইবনু ফুলান ইবনু আনাস নামে অপরিচিত রাবী আছে।[6]
দলীলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/৫৮৬, ১/১৩০
পৃঃ; মিশকাত হা/৯৭১, পৃঃ ৮৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯০৯, ৩/৬ পৃঃ, ‘ছালাতের পর যিকির’
অনুচ্ছেদ।
[2]. আবুদাঊদ হা/৫২৪২, ২/৭১১
পৃঃ; মিশকাত হা/১৩১৫, পৃঃ ১১৬, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৩৯, ৩/১৫৭ পৃঃ।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/১৭৮০ ও
১৭৮১, ১/২৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬১৬), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-১৯; মিশকাত হা/১৩১২,
পৃঃ ১১৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৩৭, ৩/১৫৬ পৃঃ।
[4]. বুখারী হা/১১৭৬, ১/১৫৭
পৃঃ, (ইফাবা হা/১১০৬, ২/৩২১ পৃঃ), ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩১; মুসলিম হা/১৭০৪;
মিশকাত হা/১৩১১, ১৩০৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৩৪ ও ১২৩৬, ৩/১৫৫-৫৬
পৃঃ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৮০, পৃঃ
৯৮; তিরমিযী হা/৪৭৩; মিশকাত হা/১৩১৬, পৃঃ ১১৬।
[6]. আলবানী, মিশকাত হা/১৩১৬-এর
টীকা দ্রঃ, ১/৪১৩ পৃঃ।
(৪৯) ফরয ছালাতের স্থানে সুন্নাত ছালাত আদায় করা
সুন্নাত ছালাত আদায় করার সময় স্থান পরিবর্তন
করা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ। কিন্তু অধিকাংশ মসজিদে মুছল্লীরা ফরয ছালাতের স্থানেই সুন্নাত
ছালাত আদায় করে থাকে। স্থান পরিবর্তন করার প্রয়োজন মনে করেন না।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছঃ)
বলেছেন, তোমরা কি সক্ষম হবে যখন সে ছালাত আদায় করবে তখন সামনে বা পিছনে কিংবা ডানে
বা বামে সরে যাবে? অর্থাৎ সরে গিয়ে সুন্নাত আদায় করবে।[1]
উক্ত হাদীছে স্থান পরিবর্তন করে সুন্নাত ছালাত
আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি ইমামকেও তার স্থানে সুন্নাত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।[2]
দলীলের উৎসঃ
[1]. ইবনু মাজাহ হা/১৪২৭, পৃঃ
১০৩; আবুদাঊদ হা/১০০৬, ১/১৪৪ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সুন্নাত ছালাত ফরয ছালাতের স্থান
থেকে সরে গিয়ে পড়া’ অনুচ্ছেদ।
[2]. আবুদাঊদ হা/৬১৬, ১/৯১;
ইবনু মাজাহ হা/১৪২৮, পৃঃ ১০৩।
(৫০) সুন্নাত ছালাত পড়ার ফযীলত সমূহ
যে সমস্ত সুন্নাত ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত
সেগুলো পড়াই একজন মুছল্লীর জন্য যথেষ্ট। বানোয়াট, মিথ্যা, জাল ও ভিত্তিহীন কথার উপর
আমল করা উচিৎ নয়।
উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি দিনে রাতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা
হবে। সেগুলো হল- যোহরের পূর্বে চার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পর দুই এবং ফজরের
পূর্বে দুই।[1] অন্য বর্ণনায় ১০ রাক‘আতের কথা এসেছে। সেখানে যোহরের পূর্বে দুই রাক‘আত
বলা হয়েছে।[2]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ফজরের
দুই রাক‘আত ছালাত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু তা হতে উত্তম।[3]
উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি যোহরের আগে চার রাক‘আত এবং পরে চার রাক‘আত আদায়
করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।[4]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/১৭২৯, ১/২৫১
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫৬৪), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত
হা/১১৫৯, পৃঃ ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯১, ৩/৯০ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/১১৮০; তিরমিযী
হা/৪৩৩; মিশকাত হা/১১৬০, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯২, ৩/৯১ পৃঃ।
[3]. মুসলিম হা/১৭২১, ১/২৫১
পৃঃ; মিশকাত হা/১১৬৪, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৬, ৩/৯২ পৃঃ।
[4]. আবুদাঊদ হা/১২৬৯, ১/১৮০
পৃঃ; তিরমিযী হা/৪২৮, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১১৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৯, ৩/৯৩ পৃঃ।
(৫১) ছালাতুত তাসবীহ আদায় করা
ছালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে[1]
সেগুলোকে অধিকাংশ মুহাদ্দিছ যঈফ ও মুনকার বলেছেন। সঊদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ
মন্তব্য করেছেন,
‘ছালাতুত তাসবীহ’ বিদ‘আত। এর হাদীছ প্রমাণিত
নয়; বরং মুনকার বা অস্বীকৃত। কোন কোন মুহাদ্দিছ জাল হাদীছের মধ্যে একে উল্লেখ করেছেন।[2]
এ সম্পর্কিত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’
এবং কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্রসমূহ
পরস্পরকে শক্তিশালী মনে করে তাকে হাসান ছহীহ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী ‘হাসান’
স্তরে উন্নীত বলে মন্তব্য করেছেন। এরূপ বিতর্কিত ও সন্দেহযুক্ত হাদীছ দ্বারা ইবাদত
সাব্যস্ত করা যায় না।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/১২৯৭; ইবনু
মাজাহ হা/১৩৮৭; মিশকাত হা/১৩২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২৫২, ৩/১৬৪ পৃঃ।
[2]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ
৮/১৬৪ পৃঃ।
[3]. দ্রঃ ইবনু হাজার আসক্বালানী
বিস্তারিত আলোচনা; আলবানী, মিশকাত পরিশিষ্ট, ৩ নং হাদীছ ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ, ইবনু
মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাক্বী ৩/৫২; আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলু ইমাম
আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ।
(৫২) ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া
অনেক মসজিদে ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া হয়।
দু‘আ হিসাবে ‘কুনূতে নাযেলা’ না পড়ে বিতরের কুনূত পড়া হয়। এটা আরো দুঃখজনক। কুনূতে
নাযেলা প্রত্যেক ফরয ছালাতে পড়া যায়। সে অনুযায়ী ফজর ছালাতেও পড়বে।[1] কিন্তু নির্দিষ্ট
করে নিয়মিত শুধু ফজর ছালাতে পড়া যাবে না। কারণ এর পক্ষে যতগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে
সবই যঈফ। যেমন-
(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত
ফজরের ছালাতে কুনূত পড়েছেন।[2]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আবু
জা‘ফর রাযী নামে একজন মুযতারাব রাবী আছে। সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম বর্ণনা করেছে।[3]
(খ) উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ফজরের ছালাতে কুনূত পড়তে নিষেধ করেছেন।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। ইমাম দারাকুৎনী বলেন,
মুহাম্মাদ ইবনু ইয়ালী, আমবাসা ও আব্দুল্লাহ ইবনু নাফে সকলেই যঈফ। উম্মে সালামা থেকে
নাফের শ্রবণ সঠিক নয়।[5] ইবনু মাঈন বলেন, সে হাদীছ জাল করত। ইবনু হিববান বলেন, সে জাল
হাদীছ বর্ণনাকারী। যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।[6] অতি বাড়াবাড়ি করে উক্ত হাদীছ জাল করে
নিষেধের দলীল তৈরি করা হয়েছে।
অতএব ফজর ছালাতে নিয়মিত কুনূত পড়া থেকে বিরত
থাকতে হবে। নিয়মিত পড়াটা ছাহাবীদের চোখেই বিদ‘আত বলে গণ্য হয়েছে। যেমন-
আবু মালেক আশজাঈ (রাঃ) বলেন, আমি আব্বাকে বললাম,
আপনি তো রাসূল (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছেন। এমনকি
কূফাতে আলী (রাঃ)-এর পিছনে পাঁচ বছর ছালাত আদায় করেছেন। তারা কি কুনূত পড়তেন? তিনি
বললেন, হে বৎস! এটা বিদ‘আত।[7]
দলীলের উৎসঃ
[1]. আবুদাঊদ হা/১৪৪৩, ১/২০৪
পৃঃ; মিশকাত হা/১২৯০, পৃঃ ১১৪।
[2]. আব্দুর রাযযাক ৩/১১০; দারাকুৎনী
২/৩৯; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ২/২০১; আহমাদ হা/১২৬৭৯, ৩/১৬২।
[3]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৫৭৪;
তানক্বীহ, পৃঃ ৪৪৯।
[4]. দারাকুৎনী ২/৩৮; বায়হাক্বী,
আস-সুনানুল কুবরা ২/২১৪।
[5]. দারাকুৎনী হা/১৭০৭-এর আলোচনা
দ্রঃ محمد بن يعلى وعنبسة وعبد الله بن نافع كلهم ضعفاء ولا يصح لنافع سماع من أم سلمة.।
[6]. صاحب أشياء موضوعة وما لاأصل له-তানক্বীহ, পৃঃ ৪৫১।
[7]. তিরমিযী হা/৪০২; মিশকাত
হা/১২৯২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২১৯, ৩/১৪৪ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল হা/৪৩৫, সনদ ছহীহ।
(৫৩)
রাতের ছালাত
রাতে ঘুম থেকে উঠে ছালাত আদায়কে ‘তাহাজ্জুদ’
বলে। মূলতঃ তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামুল লায়েল, তারাবীহ, ক্বিয়ামে রামাযান সবই ‘ছালাতুল লায়েল’
বা রাতের ছালাত। রাতের শেষ অংশে পড়লে তাকে ‘তাহাজ্জুদ’ বলা হয় এবং প্রথম অংশে পড়লে
‘তারাবীহ’ বলা হয়। প্রথম রাতে তারাবীহ পড়লে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে হয় না। রাসূল
(ছাঃ) একই রাত্রে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দু’টিই পড়েছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই।[1]
রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের ছালাতে উঠে আকাশের
দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের ১৯০ আয়াত থেকে সূরার শেষ অর্থাৎ ২০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ
করতেন। অতঃপর মিসওয়াক করে ওযূ করতেন।[2] ছালাত শুরু করার পূর্বে ‘আল্লাহু আকবার’,
‘আল-হামদুলিল্লাহ’, সুবহানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস, আস্তাগফিরুল্লাহ,
লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযূবিকা মিন যীকিদ্দুনিয়া ওয়া মিন যীক্বি
ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ’ বলতেন। উক্ত বাক্যগুলো প্রত্যেকটিই দশবার দশবার করে বলতেন।[3] নিম্নের
দু‘আটিও পড়া যায়। তবে আরো দু‘আ আছে।[4]
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু
লা শারীকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লা-হি
ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার; ওয়ালা হাওলা ওয়ালা
কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। অতঃপর বলবে, ‘রবিবগফির্লী’।[5] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)
তাহাজ্জুদের ছালাতে বিভিন্ন ‘ছানা’ পড়েছেন।[6]
(৫৪) তাহাজ্জুদ ছালাতের নিয়ম :
(ক) তাহাজ্জুদ শুরু করার পূর্বে দু’রাক‘আত
সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে নিবে।[7] (খ) অতঃপর দুই দুই রাক‘আত করে ৮ রাক‘আত পড়বে এবং শেষে একটানা
তিন রাক‘আত বিতর পড়বে, মাঝে বৈঠক করবে না।[8] অথবা দুই দুই রাক‘আত করে দশ রাক‘আত পড়বে।
শেষে এক রাক‘আত বিতর পড়বে।[9] রাসূল (ছাঃ) নিয়মিত উক্ত পদ্ধতিতেই ছালাত আদায় করতেন।
তবে কখনো কখনো বিতর ছালাতের সংখ্যা কম বেশী করে রাতের ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা কম বেশী
করতেন। কারণ রাতের পুরো ছালাতই বিতর। দুই রাক‘আত করে পড়ে শেষে এক রাক‘আত পড়লেই সব বিতর
হয়ে যায়।[10] আর তিনি ১৩ রাক‘আতের বেশী পড়েছেন মর্মে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না।[11]
(গ) যদি কেউ প্রথম রাতে এশার পরে বিতর পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে শেষ রাতে শুধু তাহাজ্জুদ
পড়বে। তখন আর বিতর পড়তে হবে না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতর পড়তে হয় না।[12] (ঘ) বিতর
ক্বাযা হয়ে গেলে সকালে অথবা যখন স্মরণ বা সুযোগ হবে, তখন পড়ে নেয়া যাবে’।[13] (ঙ) যদি
কেউ আগ রাতে বিতরের পর দু’রাকআত নফল ছালাত আদায় করে এবং শেষরাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে
সক্ষম না হয়, তাহলে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত তার জন্য যথেষ্ট হবে’।[14] (চ) রাতের নফল
ছালাত নিয়মিত আদায় করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ঐ ব্যক্তির মত হয়ো না,
যে রাতের নফল ছালাতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু পরে ছেড়ে দিয়েছে’।[15] নিয়মিত রাতের ছালাত
আদায়কারী ব্যক্তি বিতর পড়ে শুয়ে গেলে এবং ঘুম বা অন্য কোন কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে না
পারলে দিনের বেলায় দুপুরের আগে তা পড়ে নিতে পারবে।[16] (ছ) তাহাজ্জুদ ছালাতে ক্বিরাআত
কখনো সশব্দে কখনো নিঃশব্দে পড়া যায়।[17]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/১৭১৮, ১/২৫৪
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫৫৫), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪; বুখারী হা/২০১০, ১/২৬৯
পৃঃ; মিশকাত হা/১৩০১, পৃঃ ১১৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২২৭, ৩/১৫১ পৃঃ; আল্লামা আনওয়ার
শাহ কাশ্মীরী, আল-আরফুয যাশী শরহে তিরমিযী ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৬; ফায়যুল বারী ২য় খন্ড,
পৃঃ ৪২০; মির‘আত ৪/৩১১ পৃঃ, হা/১৩০৩-এর আলোচনা দ্রঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘রামাযান মাসে
রাত্রি জাগরণ’ অনুচ্ছেদ।
[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/১১৯৮, ১/১৫৯ পৃঃ; মুসলিম হা/১৮৩৫, ১/২৬০ পৃঃ; মিশকাত হা/১১৯৫, পঃ ১০৬, ‘ছালাত’ অধ্যায়,
‘রাতের ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
[3]. আবুদাঊদ হা/৭৬৬, ১/১১১
পৃঃ, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১২১৬, পৃঃ ১০৮।
[4]. মুসলিম হা/১৮৩৫, ১/২৬০
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬৫৮); মিশকাত হা/১১৯৫, পৃঃ ১০৬; আবুদাঊদ হা/৮৭৪; মিশকাত হা/১২০০।
[5]. বুখারী হা/১১৫৪, ১/১৫৫
পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৮৭, ২/৩১২ পৃঃ), ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/১২১৩, ‘রাত্রিতে উঠে
কি বলবে’ অনুচ্ছেদ।
[6]. মুসলিম হা/১৮৪৭, ১/২৬৩
পৃঃ, ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১২১২; আবুদাঊদ হা/৭৭৫; মিশকাত
হা/১২১৭।
[7]. মুসলিম হা/১৮৪২-৪৩, ১/২৬২
পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬৭৫-১৬৭৬), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৬; মিশকাত হা/১১৯৩-৯৪,
৯৭, ‘রাতের ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
[8]. বুখারী হা/১১৪৭, ২০১৩,
১/২৬৯ পৃঃ; মুসলিম হা/১৭৫৭।
[9]. মুসলিম হা/১৭৫১ ও ১৭৫২,
১/২৫৩ পৃঃ, ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭।
[10]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ
বুখারী হা/৯৯০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫ পৃঃ), ‘বিতর ছালাত’ অধ্যায়-২০,
অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম হা/১৭৮২, ১৭৮৪, ১৭৮৫, ১৭৮৬, ১/২৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬১৮-১৬২১);
মিশকাত হা/১২৫৪, পৃঃ ১১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৮৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩০ এবং বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/১১৮৮, ৩/১৩১ পৃঃ।
[11]. আবুদাঊদ হা/১৩৬২, ১/১৯৩
পৃঃ; মিশকাত হা/১২৬৪, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৫, ৩/১৩৫ পৃঃ, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ;
উল্লেখ্য যে, ‘১১ রাক‘আতের বেশী পড়’ মর্মে হাকেমে যে অংশটুকু এসেছে তার সনদ যঈফ ও মুনকার।-
হাকেম হা/১১৩৭; ক্বিয়ামে রামাযান পৃঃ ১৭; ছালাতুত তারাবীহ, পৃঃ ৯৯ ও ১১২।
[12]. আবুদাঊদ হা/১৪৩৯, ১/২০৩
পৃঃ; নাসাঈ হা/১৬৭৯, সনদ ছহীহ।
[13]. আবুদাঊদ হা/১৪৩১, ১/২০৩
পৃঃ; সনদ ছহীহ, ইওয়াউল গালীল হা/৪৪২; মিশকাত হা/১২৭৯ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ।
[14]. দারেমী হা/১৬৪৭; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/১৯৯৩; মিশকাত হা/১২৮৬, পৃঃ ১১৩ সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১২১৩, ৩/১৪১
পৃঃ।
[15]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী
হা/১১৫২, ১/১৫৪ পৃঃ, ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২৭৯০; মিশকাত হা/১২৩৪, পৃঃ ১০৯,
‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ।
[16]. মুসলিম হা/১৭৭৩, ১৭৭৭,
১/২৫৬ পৃঃ, ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৮; মিশকাত হা/১২৫৭, পৃঃ ১১১, ‘বিতর’
অনুচ্ছেদ। রাসূল (ছাঃ) উক্ত ছালাত ১২ রাক‘আত পড়েছেন (তন্মধ্যে তাহাজ্জুদের ৮ রাক‘আত
ও ছালাতুয যোহা ৪ রাক‘আত)। -মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/২৬৬।
[17]. আবুদাঊদ হা/২২৬; তিরমিযী
হা/৪৪৯; মিশকাত হা/১২০২-০৩, ‘রাত্রির ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
(৫৫) রাতের ছালাতের ফযীলত
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘ফরয ছালাতের পরে সর্বোত্তম ছালাত হল রাতের
ছালাত’।[1] অন্য হাদীছে এসেছে,
‘আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের
শেষ তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ যে আমাকে ডাকবে
আর আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছ যে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে দান করব? কে আছ যে
আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এভাবে আল্লাহ
ফজর পর্যন্ত আহবান করতে থাকেন’।[2] যদি কেউ তাহাজ্জুদের নিয়তে শুয়ে যায় এবং পরে ঘুম
থেকে জাগতে না পারে, তাহলে সে পূর্ণ নেকী পাবে এবং উক্ত ঘুম তার জন্য ছাদাক্বা হবে।[3]
দলীলের উৎসঃ
[1]. মুসলিম হা/২৮১২; মিশকাত
হা/২০৩৯, ‘ছওম’ অধ্যায়, ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ।
[2]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী
হা/১১৪৫, ১/১৫৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/১০৭৯, ২/৩০৮ পৃঃ), ‘তাহাজ্জুদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৪;
মুসলিম হা/১৮০৮ ও ১৮০৯, ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৪; মিশকাত হা/১২২৩, পৃঃ
১০৯, ‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ।
[3]. নাসাঈ হা/১৭৮৪ ও ১৭৮৭;
ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৪, ৯৫; সনদ ছহীহ, ইরওয়া হা/৪৫৪।
(সমাপ্ত)
ছালাত সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় জানতে এদের উপর ক্বিলক করুনঃ
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা
অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার
বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন,
মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ
উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের
আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর
কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি
সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
« مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا »
“যে হেদায়েতের প্রতি
আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার
ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস
করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও,
যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে
ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয়
জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং
১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment