বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
দোয়া কেনো কবুল হয় না
ভূমিকাঃ আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, যে ঘুষখোর,
দুর্নীতিবাজ, সুদখোর, ডাকাত, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ তথা অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারী লোকেরা
অনেক টাকার মালিক। তাদের বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্সসহ আছে কোটি কোটি টাকা। এমন
অনেক লোক আছে, টাকা কোথায় ব্যয় করবে তার খাত খুঁজে পায় না। অনেকে বিদেশে টাকা জমায়।
সেখানে আছে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এইসব অবৈধ উপার্জনকারী লোকদের সন্তানগণ খুব নামি
দামী প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। পরিবারের সকলে মিলে বিলাসিতা
জীবন যাপন করে সময় অতিবাহিত করছে। অথচ এইসব লোকেরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে না।
কোনো দোয়ার আমল করে না। যাকাত দেয় না। সুনামের জন্যে কখনো হজ্জ করে, লোক দেখানো দান
খয়রাত করে। যা কবুলযোগ্য নয়। এরা যখন যা চাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তাই দিচ্ছেন। পাশাপাশি
দেখেন যে লোকটি সব সময় ইবাদতের মধ্যে বা জিকিরের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে তার অভাব,
বিপদ-আপদ এর শেষ নেই। দুই বেলা খেতে পারে না, পরনে কাপড় নেই। অর্থের অভাবে সন্তানদের
লেখাপড়া করাতে পারছে না। কিন্তু কেনো এমনটি হচ্ছে? সৎ লোকের অভাবের শেষ নেই অথচ তিনি
অভাব মোচনের দোয়া সবসময় পাঠ করছেন, বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া পাঠ করছেন। আবার অসৎ লোকেরা
সুখী স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপন করছে। আসুন জেনে নেই, আল্লাহ তায়ালা কেনো অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারীদের
দোয়া কবুল করেন আর অভাবী লোকদের দোয়া কবুল করছেন না। এর মূল রহস্য কী?
দুই হাত তুলে দোয়া করলে সেই হাত আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না
সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল
ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে)
খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫,
মু‘কামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু
হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অভাব অনটন, বিপদ-আপদ, বালা মসিবত, দুঃখে কষ্টে
থাকা লোকটি বছরের পর বছর ধরে দুই হাত তুলে দোয়া করছেন অথচ আমরা দেখছি সেই হাত আল্লাহ
তায়ালা ফিরিয়ে দিচ্ছেন তথা দোয়া কবুল করছেন না।
অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারী লোকদের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কেনো কবুল করেন
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি কেউ (ভালো কাজের বিনিময়ে)
পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, তাহলে পৃথিবীতেই আমি তাদের কর্মের পূর্ণ ফল দান
করি। এখানে তাদের কম দেওয়া হয় না। কিন্তু তাদের জন্য পরকালে (দোজখের) আগুন ছাড়া অন্য
কিছু নেই। পার্থিব জীবনে তারা যা করে, পরকালে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
(সুরা: হুদ, আয়াত: ১৫-১৬)।
রাসুল সাঃ বলেন,
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ ‘‘হে নবী! আপনি
আপনার সহধর্মিণীদের বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন এবং তার চাকচিক্য কামনা কর, তবে আস;
আমি তোমাদেরকে কিছু সম্বল প্রদান করি আর তোমাদেরকে সদ্ভাবে বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা
আল্লাহ তা‘আলাকে (এবং) তাঁর রাসূলকে চাও এবং কামনা কর পরলোক, তবে তোমার অন্তর্গত সৎকর্মশীলদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলা মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন’’- (আহযাবঃ ২৮-২৯)। আমি বললাম, এ
ব্যাপারে আমি আমার পিতা-মাতার কাছে কী পরামর্শ নিব? আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি
এবং পরকালীন (সাফল্য) পেতে চাই। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অন্য
সহধর্মিণীদেরকেও ইখতিয়ার দিলেন এবং প্রত্যেকে সে একই জবাব দিলেন, যা ‘আয়িশাহ (রাযি.)
দিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারী ২৪৬৮, ৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৮৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩০৬)। হাদিসের মান সহিহ।
অতএব দুনিয়ার ভোগবিলাসীগণ দুনিয়ার সুখ কামনা
বাসনা করে থাকে বলে তাদের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। কিন্তু তাদের জন্যে পরকালে
আছে ভয়ানক শাস্তি। আর আপনি দুনিয়া ও পরকাল দুইটাতেই সুখ চাচ্ছেন বলে দুনিয়ার সুখ শান্তির
জন্যে দোয়া কবুল নাও করতে পারে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
রাসুল সাঃ বলেন,
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম দু’আ করার সময় কোন গুনাহের
অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু’আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে এ তিনটির একটি
দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার
পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা তার মতো কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূরে
করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৭০, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫৫০/৭১০, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬৩৩, আহমাদ ১১১৩৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দুনিয়া হচ্ছে মুমিনগণের বিপদ-আপদ ও দুঃখ কষ্টের স্থান
(ক) আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদাপদের
সম্মুখীন করেনঃ
বিপদাপদ মহান প্রভুর পক্ষ থেকে এক বড় নে‘মত।
তিনি এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের
পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের
মাধ্যমে’। (বাক্বারাহ ২/১৫৫)।
সুতরাং আমরা যদি বিপদাপদকে সর্বোত্তমভাবে আলিঙ্গন
করতে পারি তবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণের স্বাদ আস্বাদন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে
দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ
চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন
তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৫৬৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, নেককার ব্যক্তিদের
বিপদে ফেলেনঃ
আল্লাহ তা‘আলা কোন নেককার ব্যক্তির কল্যাণ
চাইলে তাকে বিপদে ফেলেন। হাদীছে এসেছে,
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে
আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর উপর আমার হাত রাখলে তার গায়ের চাদরের উপর থেকেই তাঁর দেহের
প্রচন্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি
বলেনঃ আমাদের (নবী-রাসূলগণের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং
দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কার উপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ
আসে? তিনি বলেনঃ নবীগণের উপর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারপর কার উপর? তিনি বলেনঃ
তারপর নেককার বান্দাদের উপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র পীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার
কাছে তার পরিধানের কম্বলটি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল
থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৪, সহীহাহ ১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অপর এক হাদীছে এসেছে,
মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে
বর্ণিত আছে, তিনি সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!
কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক
থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে
পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় ততটা কঠিন। আর
যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ
দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ
করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০, দারেমী ২৭৮৩,
সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব
৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, দুনিয়ায়
তাকে শাস্তি ভোগ করানঃ
যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদেরকে তিনি দুনিয়াতেই
কিছু শাস্তি ভোগ করান। যাতে পরকালে তাঁর সেই বান্দাকে শাস্তি ভোগ করতে না হয়।
আনাস
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বান্দার
মঙ্গল কামনা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করা হয়। আর যখন
তিনি কোন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তিনি তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত
থাকেন। অবশেষে ক্বিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ আযাবে নিপতিত করেন’। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাত ১৫৬৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, বান্দার
দেহ, সম্পদ ও সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেনঃ
আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তার নিজের
এবং সম্পদ ও সন্তানের উপরে বিপদ দেন। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে তার পিতা ও দাদার
সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য
লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ
তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ
পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০৯০, সহীহাহ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
যার যতো বড় পরীক্ষা তার ততো বড় পুরস্কার
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার।
আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট
ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার
জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৫৬৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৫,
শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
বিভিন্নমুখী বিপদাপদ মুকাবিলা করতে করতে মুমিন
এক সময় যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তার আর কোন গোনাহ থাকবে না।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার
সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার
সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। (সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৩৯৯, হাকেম ৭৮৭৯, ছহীহ ইবনু হিববান ২৯২৪, ছহীহাহ ২২৮০)। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
পক্ষান্তরে দুষ্ট লোকদেরকে তাদের সীমাসংঘনে
ছেড়ে দেওয়া হবে ‘বরং আল্লাহ তাদের উপহাসের বদলা নেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে
ছেড়ে দেন বিভ্রান্ত অবস্থায়’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৫)।
অতঃপর ক্বিয়ামতের ময়দানে কঠিনভাবে পাকড়াও করা
হবে।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ
সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার
কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন।
তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এ দুনিয়াতে সর্বাধিক বিপদ গ্রস্থ কারা এমন
একটি প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলে করীম (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘এ দুনিয়ায় সবচেয়ে কঠিন বিপদগ্রস্থ
হ’লেন নবীগণ। তারপর ক্রমানুযায়ী সর্বোচ্চ নেককারগণ। মুমিন পরীক্ষিত হবে তার দ্বীন অনুযায়ী।
যদি সে দ্বীনের বিষয়ে কঠিন হয়, তবে তার পরীক্ষা সেই অনুযায়ী কঠিন হবে। আর যদি সে দ্বীনের
ব্যাপারে ঢিলা হয়, তার পরীক্ষা অনুরূপ হালকা হবে। মুমিনের উপরে এইভাবে পরীক্ষা চলতে
থাকবে। এমন এক সময় আসবে যে, সে যমীনের উপরে চলাফেরা করবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন গোনাহ
থাকবে না’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০,
দারেমী ২৭৮৩, সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ
আত্ তারগীব ৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কেননা তার বালা-মুছীবত তার গোনাহের কাফফারা
হয়ে থাকে, যদি সে ঐ মুছীবতে সন্তুষ্ট থাকে। যেমন-
আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৩, আহমাদ ৮০২৭, ইবনু হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া বা আমল কবুল না হলেও তা অব্যাহত রাখতে হবে
(ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে)
ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর
নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত
হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা
তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে,
তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান
দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না
তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ
করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য
নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩,
১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭,
২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০,
৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-
১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি
তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।
(গ) আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)......... 'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।
উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু
করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯,
১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০,
নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২,
২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২,
আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস
সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব আপনি যে বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে আমল করছেন
কিন্তু কবুল হচ্ছে না তবুও আমল ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সেই বিষয়ে কবুল
না করলেও হয়তো এর বিনিময়ে অন্য কোনো বিপদ দূর করে দিয়েছেন বা দিবেন। সেটাও যদি না হয়
তাহলে পরকালের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তা মজুদ করে রেখেছেন। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।
বিলম্ব হলেও দোয়া কবুল হয়
আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান
জু’ফী (রহঃ)....ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বাইতুল্লাহিল হারামের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ জাহল ও তার সাথীরা অদূরে উপবিষ্ট
ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিল। আবূ জাহল বলল, কে অমুক গোত্রের উটের
(নাড়ি-ভূড়িসহ) জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন সিজদারত হবে, তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে
হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহসি
করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো, আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম।
যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায়
রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাহকে খবর দিল।
ফাতিমাহ সাথে সাথে আসলেন। আর তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তার উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর
তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে মন্দাচারের বিষয়ে বলছিলেন। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চস্বরে তাদেরকে বদদুআ দিলেন আর তিনি
যখন দু’আ করতেন (সাধারণতঃ) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করতেন তখন তিনি তিনবার
করতেন।
তারপর তিনি তিন তিনবার বললেন "ইয়া আল্লাহ!
তোমার উপরেই কুরায়শদের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। যখন তারা তার আওয়াজ শুনতে পেল তখন
তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দু’আয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ!
আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবী’আহ, শাইবাহ ইবনু রাবী আহ, ওয়ালীদ ইবনু উকবাহ,
উমাইয়াহ ইবনু খালাফ ও উকবাহ ইবনু আবূ মুআয়তের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত। রাবী
বলেন, তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পরিনি। মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন,
তার কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি।
তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। আবূ ইসহাক বলেন, ওয়ালীদ
ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৫৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৯৪,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ৫২০, ২৯৩৪, ৩১৮৫, ৩৮৫৪, ৩৯৬০; আহমাদ ৩৭২২ ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৪৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এখানে উল্লেখ্য যে. রাসুল সাঃ বদদোয়া করেছিলেন
অনেক আগে আর তার প্রতিফল পেয়েছেন বদরের যুদ্ধে।
তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিত কবুল হয়
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির দো‘আ
নিশ্চিতভাবে কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
(ক) মাযলূমের দো‘আ,
(খ) মুসাফিরের দো‘আ ও
(গ) সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ।
(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে তিন লোকের
দু’আ কবূল হয়।
(ক) পিতার দু’আ,
(খ) মুসাফিরের দু’আ এবং
(গ) মাযলূমের (পীড়িতের) দু’আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫০, আবূ দাঊদ ১৫৩৬, তিরমিযী ১৯০৫,
ইবনু মাজাহ ৩৮৬২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৮৩০, মু‘জামুল আওসাত ২৪, শু‘আবূল ঈমান ৩৩২৩, সহীহ
ইবনু হিব্বান ২৬৯৯, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৪/৩২, রিয়াযুস্ সলিহীন ৯৮৭, সহীহাহ্ ৫৯৬,
সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(২) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে
পাঠাবার সময় বললেন, মু’আয! তুমি আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী ও খৃস্টান) নিকট যাচ্ছো। প্রথমতঃ
তাদেরকে এ লক্ষ্যে দীনের প্রতি আহবান করবে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের সামনে
এই ঘোষণা দেবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন।
তারা এটা মেনে নিলে তাদেরকে জানাবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের ওপর যাকাত ফরয করেছেন।
তাদের ধনীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করে তাদের গরীবদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। যদি তারা এ
হুকুমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাহলে তুমি (তাদের) ভাল ভাল মাল গ্রহণ থেকে বিরত
থাকবে, মাযলূমের ফরিয়াদ হতে বাঁচার চেষ্টা করবে। কেননা মাযলূমের ফরিয়াদ আর আল্লাহ তা’আলার
মধ্যে কোন আড়াল থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭২,
বুখারী ২১৪৯৬, মুসলিম ১৯, আবূ দাঊদ ১৫৮৪, আত্ তিরমিযী ৬২৫, নাসায়ী ২৫২২, ইবনু মাজাহ্
১৭৮৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২২৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২৭৬, শারহুস্ সুন্নাহ্
১৫৫৭, ইরওয়া ৭৮২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যাদের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না
(১) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করলে সেই দোয়া
কবুল হবে নাঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া
না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৮৮, আল-আদাবুল
মুফরাদ ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবু তাহির (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ)
এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ
সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দুআ
করে এবং (দুআয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া
করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তু আমি
দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ
করা পরিত্যাগ করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৬৪২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৮১, আল আদাবুল মুফরাদ ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৭৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ইচ্ছে হলে দোয়া কবুল করো বা যদি
চান এমন কথা বললেঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর
কাছে দু‘আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং
সে দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক
কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৫, ২২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৭৭, ৬৩৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭০৫-৬৭০৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৭৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৭, সুনান ইবনু
মাজাহ ৩৮৫৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৩, আহমাদ ৮২৩৭, মু‘জামুস্
সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৭৭, সহীহ আল জামি ৭৭৬৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৩) অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেঃ (অন্যায়ের
প্রতিবাদ করা ফরজ)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম
উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ
দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (আলে ইমরান- ১১০)।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ!
নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে
আল্লাহ তা’আলা শীঘ্রই তোমাদের উপর তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তার নিকট দুআ
করলেও তিনি তোমাদের সেই দু’আ গ্রহণ করবেন না। (সুনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৯, সহীহাহ ২৮৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমর আন নাকিদ এবং আবূ বকর ইবনু নাযর....আবদুল্লাহ
ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আমার পূর্বে আল্লাহ তা’আলা যে নবীকেই কোন উম্মতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে তার
জন্য একদল অনুসারী ও সাহাবা ছিল। তারা তার সুন্নাতকে সমুন্নত রাখত এবং তার নির্দেশের
অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা
বলে নিজেরা তা করে না। আর যা করে তার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি। অতএব যে ব্যক্তি
তাদের হাত (শক্তি) দ্বারা মুকাবিলা করবে, সে মু’মিন। যে ব্যাক্তি জিহ্বা (মুখ) দারা
মুকাবিলা করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যাক্তি অন্তর দ্বারা মুকাবিলা করবে সেও মু’মিন এরপর
আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান স্তর নেই। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ
৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলেঃ
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের
পাপ (অপরাধ)। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক
করে দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে,
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম দু’আ করার সময় কোন গুনাহের
অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু’আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা তাকে এ তিনটির একটি
দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন, (২) অথবা তা তার
পরকালের জন্য জমা রাখেন এবং (৩) অথবা তার মতো কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূরে
করে দেন। সাহাবীগণ বললেন, তবে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৭০, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫৫০/৭১০, সহীহ
আত্ তারগীব ১৬৩৩, আহমাদ ১১১৩৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করলেঃ
দোয়ার
সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না।
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ
আস্থা নিয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে দুআ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয়
অমনোযোগী ও অসাড় মনের দুআ কবুল করেন না। (সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৩৪৭৯, সহীহ হাদীস সিরিজ ৫৯৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) বিদআতি আমলের সাথে জড়িত থাকলেঃ
(ক) ইব্রাহীম
তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং
বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা
আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ
এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত
উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত।
আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা
হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের
মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও
তেমনি অভিসম্পাত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭২,
১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন
কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত হতে এ
পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন
বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার কোন
ফরজ কিংবা নফল ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর সকল মুসলিমের পক্ষ হতে নিরাপত্তা একই স্তরের।
সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দেয়া
নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের।
তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের
সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল
মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত কবূল হবে না। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭৯, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫২
প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে
বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”। (সুরা ফুরকান
২৩)।
বিদআতীদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না),
যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর
আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৭) যিনাকারী, মদখোর, চোর, ডাকাত ও গণিমতের
মাল খেয়ানতকারী বা সরকারি অর্থসম্পদ আত্মসাৎকারীদের দোয়া কবুল হয় নাঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে
ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন
তার আর ঈমান থাকে না। যখন ডাকাত (লুটতরাজকারী বা ছিনতাইকারী) এভাবে ডাকাতি করে যে,
যখন চোখ তোলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। এভাবে কেউ যখন গনীমাতের মালে খিয়ানাত
করে, তখন তার ঈমান থাকে না। অতএব সাবধান! (এসব গুনাহ হতে দূরে থাকবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭,
সুনানে আবূ দাঊদ ৪৬৮৯, সুনান আননাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সুনান আততিরমিযী
২৬২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, সহীহাহ্ ৩০০০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৫, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৭৮,
৮৭৮১, ৯৮৫৯, দারেমী ১৯৯৪, ২১০৬, রাওদুন নাদীর ৭১৬, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনু আবু শায়বাহ
৩৮-৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যখন এইসব অপকর্মে লিপ্ত থাকবে তখন তাদের দোয়া
বা ইবাদত কবুল হবে না। তাদেরকে খাছ দিলে তওবা করে এইসব অপকর্ম থেকে ফিরে আসতে হবে।
(৮) ইসলামি দল থেকে বেরিয়ে গেলে এবং জাহেলী যুগের রীতিনীতির দিকে ডাকলেঃ
(ক) হারিস আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ
করছি। যথা- ১. সর্বদা মুসলিম জামা’আতের সাথে থাকো, ২. আমীরের (শাসকদের) আদেশ-নিষেধ
মান্য করো, ৩. আমীরের (শাসকদের) আনুগত্য করো, ৪. হিজরত করো, ৫. আল্লাহর পথে জিহাদ করো।
আর যে ব্যক্তি মুসলিম জামা’আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যায়, সে যেন তার গর্দান
থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করে। আর যে ব্যক্তি জাহিলী
যুগের রসম-রিওয়াজের দিকে আহবান করে, সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। যদিও সে সওম পালন
করে, সালাত আদায় করে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৯৪, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৩, আহমাদ ১৭১৭০, সহীহ আল জামি ১৭২৪, সহীহ
আত্ তারগীব ৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার আমীরকে অনৈতিক
কোনো কিছু করতে দেখে, তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে কেউ ইসলামী জামা’আত থেকে
এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যায় এবং এ অবস্থায় মারা যায়, সে জাহিলিয়্যাত যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ
করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৭১৪৩, ৭০৫৩, মুসলিম ১৮৪৯, আহমাদ ২৪৮৭, দারিমী ২৫৬১, ইরওয়া ২৪৫৩, সহীহ আল
জামি ৬২৪৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমীরের (শাসকের) আনুগত্যের অবাধ্য হলো এবং মুসলিম
জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, এমতাবস্থায় সে মারা গেলে তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাত যুগের
উপর হবে। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকার নিচে যুদ্ধ করে যার হক বা বাতিল হওয়া সম্পর্কে অজানা;
বরং সে যেন দলীয় ক্রোধের বশীভূত হয়ে অথবা দলীয় স্বার্থ রক্ষায় লোকেদেরকে আহবান করে
কিংবা দলীয় প্রেরণায় মদদ জোগায়। এমতাবস্থায় সে মারা গেলে জাহিলিয়্যাতের উপরই মৃত্যুবরণ
করবে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিরুদ্ধে তরবারি উত্তোলন করল এবং ভালো-মন্দ সকলকে
নির্বিচারে আক্রমণ করতে লাগল। এমনকি তাত্থেকে আমার উম্মাতের কোনো মু’মিনেরও পরোয়া করল
না এবং আশ্রিত তথা নিরাপত্তায় অধিকারী ব্যক্তির সাথে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার চুক্তিও
পূরণ করল না, সে আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৬৮০-৪৬৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪৮, নাসায়ী ৪১১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৮,
আহমাদ ৮০৬১, সহীহাহ্ ৪৩৩, সহীহ আল জামি‘ ৬২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৩৩, ইসলামিক সেন্টার
৪৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(ঘ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার গোটা উম্মাতকে;
অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করবেন
না। আল্লাহ তা’আলার হাত (রহমত ও সাহায্য) জামা’আতের উপর রয়েছে। যে ব্যক্তি জামা’আত
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অবশেষে) জাহান্নামে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
(৯) দোয়ায় অতিরঞ্জিত করলেঃ
আনু নাআমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে
মুগাফ্ফাল (রাঃ) তার ছেলেকে বলতে শুনলেন, ’’হে আল্লাহ! আমি জান্নাতে প্রবেশ করে আপনার
নিকট জান্নাতের ডান দিকের শ্বেত প্রাসাদ প্রার্থনা করি’’। তখন তিনি বলেন, হে বৎস! আল্লাহর
নিকট জান্নাত প্রার্থনা করো এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে যারা দোয়ায়
অতিরঞ্জন করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৪, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৪১৮, সুনান আবূ দাউদ ৯৬, আহমাদ ১৬৩৫৪, ১৬৩৫৯, ২০০৩১, সহীহ আবু দাউদ ৮৬, ইরওয়া
১৪০, সহীহুল জামি ২৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে
দোয়া বা আমল করলেঃ
লোক দেখানো ইবাদত যেমন, সালাত, জিকির, সাওম,
হজ্জ বা দান-খয়রাত করলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহিত হবে না। আল্লাহ তায়ালা বান্দার অন্তরের
খবর জানেন। কে কোন উদ্দেশ্যে এসব আমল করেছে তা কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা সবার সামনে প্রকাশ
করে দিবেন।
(ক) আবূ
সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)- কে বলতে শুনেছি,
(কিয়ামতের দিন) যখন আমাদের প্রভু পায়ের নলা বা গোছা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার
নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই তাঁকে সিজদাহ্ করবে। আর বিরত থাকবে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে
রিয়া (লোক দেখানো) ও শুনানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা সিজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তাদের
পৃষ্ঠদেশ ও কোমর একটি কাষ্ঠফলকের মতো শক্ত হয়ে যাবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯১৯, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫৮৩,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
জুনদুবকে বলতে শুনেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য
কাউকে ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন’ এমন বলতে শুনিনি। আমি তাঁর নিকট গেলাম
এবং তাঁকে বলতে শুনলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক
শোনানো ’ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ’লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’।
আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ’ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ’লোক দেখানোর উদ্দেশ্য
প্রকাশ করে দেবেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৯৯,
৭১৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৬, আধুনিক প্রকাশনী
৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৫৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন বা রিযিক
দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল উপার্জন
বা রিযিক। হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ তার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
হালাল খাবার, বৈধ উপার্জন ও পবিত্র জীবন মুমিনের
জন্য অপরিহার্য। এ ছাড়া তার জীবনের কোনো আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ জন্য
পবিত্র কোরআনে বারবার হালাল আহার, অবৈধ উপার্জন ত্যাগ ও জীবনে পূত-পবিত্রতা অর্জনের
নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে
প্রদান করেছি তা হতে আহার করো।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত:
৫৭)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র বস্তু রিজিক হিসেবে
দিয়েছি, তা হতে আহার করো এবং তাতে সীমা লঙ্ঘন কোরো না।’ (সুরা:
ত্বহা, আয়াত: ৮১)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জানিয়েছেন,
হারাম খাবার, পানীয় ও বস্ত্র অর্থাৎ হারাম
উপার্জনে যাপিত জীবন দোয়া কবুলের অন্তরায়। যে ব্যক্তি হারাম পরিহার করতে পারে না, তার
দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায় না। বিপরীতে যার জীবিকা পবিত্র, তার দোয়া কবুল হওয়ার কথা
জানিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ (রা.)-কে বলেন, ‘হে সাদ! তোমার খাদ্য পবিত্র করো,
তাহলে মুস্তাজাবুদ দাওয়াত (যার দোয়া কবুল হয়) হতে পারবে।’ (আল মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৬৪৯৫)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)।
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি
তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আততিরমিযী
২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘মানুষের সম্মুখে এমন এক যুগ আসবে যে, কেউ পরওয়া করবে না কি উপায়ে মাল লাভ করল; হারাম
না হালাল উপায়ে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩, নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব
১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
হারাম উপায়ে উপার্জনের বিভিন্ন দিকসমূহ
(এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে নচেৎ দোয়া
কবুল হবে না)
(১) পরিমাণ ও ওযনে কমতি
করাঃ
ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেন-দেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ
ও ওযনে ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন জঘন্য কাজ। আল্লাহ তা‘আলা এহেন কারবারীর বিরুদ্ধে
তীব্র ভাষায় হুঁশিয়ার বাণী নাযিল করেছেন।
আল্লাহ বলেন,
“যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা
লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম
করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ
দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে”। (সূরা মুতাফফিফিন ১-৬)।
“তিনি
আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর
দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না”। (সূরা আর-রহমান ৭-৯)।
অন্যত্র
তিনি বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের
অতিরিক্ত কষ্ট দিই না।’ (সূরা আনআম ১৫২)।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম খাদ্যশস্য দু’বার ওজন না দেয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। একটি
হলো বিক্রেতার ওজন, অপরটি হলো ক্রেতার ওজন। (সুনান ইবনু
মাজাহ ২২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ
এব ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত
লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র
কুরআন ও হাদিসে এধরণের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ
হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ওজনে কম দিলে রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার
সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন
না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে
প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে
কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের
উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি
বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে
আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে,
তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ
সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা
ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত
বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের
পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ,
হাদিস ৪০১৯, সহীহাহ ১০৬, সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
রাসুল সাঃ বলেন,
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করতো।
অতএব মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) ’’মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম
দেয়’’ (৮৩:১)। এরপর থেকে তারা ঠিকভাবে ওযন করে। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) যাকাতের সম্পদ গোপন রাখাঃ
আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আছে যারা নিসাব
পরিমান সম্পদের মালিক। এদের মধ্যে ২% মুসমলমান তাদের সম্পদের হিসাব নিকাশ করে যাকাত
দেয়। বাকি কেহই তাদের সম্পদ হিসেব করে যাকাত দিতে দেখা যায় না। বছরের বিভিন্ন সময় যাকাত
দেয়ার নাম করে শুধু ফটোমেশন করে কিন্তু প্রকৃত সম্পদের হিসেব করে নয়।
নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও
যাকাত আদায় না করে নিঃস্ব-অভাবী লোকদের হক্ব নষ্ট করা এবং সম্পদের নিছাব গোপন করা পাপ।
এর পার্থিব শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ অনাবৃষ্টি ও খরা চাপিয়ে দেন।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে সম্প্রদায় তাদের সম্পদের
যাকাত প্রদান করে না, তাদেরকে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণও করা হ’ত না, যদি প্রাণীকুল না
থাকত’। (ইবনু মাজাহ হা/৪০১৯, হাদীছ ছহীহ; ছহীহাহ হা/৪০০৯)।
মূল হাদিসঃ
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে
মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা
ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির
উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে
কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, শাসকের তরফ থেকে অত্যাচার কঠিন বিপদ-মুসীবত
এবং যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে
চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন
জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয়
দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর
কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ
তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। (সুনান ইবনু
মাজাহ ৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অর্থাৎ প্রাণীদের কারণেই তাদেরকে বৃষ্টি দান
করা হয়। আর পরকালীন শাস্তিতো অত্যন্ত মর্মন্তুদ ও যন্ত্রণাদায়ক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘স্বর্ণ-রূপার মালিক যারা তার যাকাত আদায় করেনি,
ক্বিয়ামতের দিন তা পাত বানানো হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পার্শ্বদেশ,
কপাল ও পিঠে সেকা দেওয়া হবে। (সুরা তাওবা ৯/৩৫)।
যখন তা ঠান্ডা হয়ে যাবে আবার পূর্বের অবস্থায়
ফিরিয়ে নেয়া হবে, এমন দিনে যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। এভাবে সকল বান্দার
মধ্যে ফায়ছালা হবে। অতঃপর তাকে জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে রাস্তা দেখানো হবে’।
(ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৬১; ছাহীহাহ হা/৪০০৯)।
অনুরূপভাবে পশু-সম্পদ, অর্থসম্পদ, ওশর ইত্যাদির
যাকাত অনাদায়কারীকেও পরকালে শাস্তি দেওয়া হবে।
(৩) সুদের মাধ্যমে জীবিকা
নির্বাহ করাঃ
বর্তমান বিশেবর অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও
লেন-দেনে সূদের ব্যাপক ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয়। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূদ ভক্ষণকারী,
সূদদাতা, সূদের লেখক ও সাক্ষীকে অভিসম্পাত করেছেন।
জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন,
যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয়
তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে
সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী
২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার
৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আর এ অভিশপ্ত পন্থাকে মানুষ নানান ভাষা ব্যবহার
করে ছলেবলে কৌশলে সিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে।
কখনো একে Interest, কখনো মুনাফা, কখনো লাভ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে জীবিকা নির্বাহ
করছে। আর বস্ত্তত বিশ্বের দারিদ্র্য, অনাহার, নিঃস্বতা ইত্যাদি হচ্ছে সূদী লেনদেনের
বিষময় ফল। কেননা সূদ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-ছাদাক্বা
বৃদ্ধি করেন’। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/২৭৬)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই বিধ্বংসী কর্মকান্ড থেকে
বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাক।
ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সেগুলি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে
শরীক করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সূদ খাওয়া,
ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, মুমিনা সতী-সাধ্বী নারীদের
প্রতি অপবাদ আরোপ করা’। (বুখারী হা/২৭৬৬;মুসলিম হা/৮৯)।
মূল হাদিস
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে।
সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক
করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে
তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে
যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৬৬, ৫৭৬৪, ৬৮৫৭) (মুসলিম
১/৩৮ হাঃ ৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৫০, ৫১, মুস্তাদরাকে
হাকেম, হাদীস নং ২২৫৯; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৫, ইবনুস সালাম এর তাখরিজুল ঈমান ৯৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ
করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”। (মুসনাদে আহমদ ৫/২২৫;
সহীহ আল-জামে‘ ৩৩৭৫)।
সূদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা
হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এ সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে
তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হলো, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা
যতই স্ফীত হউক না কেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন
তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস
নং ২২৬২)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ
হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৯, আত-তালীক
৩/৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম।
যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর পাগল হয়ে হাশরের
ময়দানে উত্থিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে
শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে (৩)। এটা এ জন্য যে তারা বলে (৪), ‘ক্রয়-বিক্রয় তো
সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার
রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার
ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে
তারা স্থায়ী হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের
নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি
তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ
করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৪) ঠকবাজি, ধোকাবাজি, প্রতারনা ও জুয়াচুরিঃ
এটা বেশি হয়ে থাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে। যেমন
খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশানো, উৎকৃষ্ট মালের সাথে নিম্নমানের মাল মিলানো, অতিরিক্ত গ্রহণ
করা, এক জিনিস নির্ধারণ করে জোরপূর্বক অন্যটি দিয়ে দেয়া, মাপে কম দেয়া ইত্যাদি। অথচ
এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিক্রির জন্য) স্তূপীকৃত খাদ্যদ্রব্যের
পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এর ভিতর হাত ঢুকালে আঙুল ভিজা ভিজা অনুভব হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মালিককে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? সে উত্তর দিলো, বৃষ্টির পানিতে
এ খাদ্যদ্রব্যগুলো ভিজে গিয়েছিল; হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, ভিজাগুলোকে স্তূপের উপরে রাখলে না কেন, যাতে করে লোকেরা তা দেখতে পায়? প্রতারণাকারীর
সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৮৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২, সুনান আবূ দাঊদ
৪৩৫২, সুনান আততিরমিযী ১৩১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৪, আহমাদ ৭২৯২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৬৫,
ইবনু হিব্বান ৪৯০৫, ৫৫৫৫৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩২০, ইরওয়া ১৩১৯, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল
ঈমান ৭১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আমাদের সমাজে এই প্রকৃতির লোকের অভাব নেই।
(৫) ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণ করাঃ
বর্তমানে
ঘুষ-উৎকোচ গোটা দেশকে জাহেলিয়াতের প্রগাঢ় অমানিশায় নিক্ষেপ করেছে। এমন বহু নযীর রয়েছে
যে, কোন ব্যক্তির প্রাপ্য আদায়ে আবশ্যকিভাবে ঘুষের লেন-দেন করা হচ্ছে। বিচার বিভাগ,
প্রশাসন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়েও ব্যাপকহারে ঘুষের লেনদেন হচ্ছে প্রকাশ্যেই।
কিন্তু তারা যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অমিয় বাণীর দিকে লক্ষ্য করত, তবে কখনই অভিশপ্ত
এই পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করত না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার
উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান
আততিরমিযী ১৩৩৭, সুনান আবূ দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৫১১৪, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩,
সহীহ আত্ তারগীব ২২১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের
নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি
তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ
করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, আবূ দাঊদ ৩৫৪১,
সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি
এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে,
তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৪৮,
আবূ দাঊদ ২৯৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬০২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কোনো চাকরিজীবি নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে
(ক) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি
এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে,
তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৮,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬০২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ ইবনু
খুযায়মাহ্ ২৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের শাসনকার্যে নিযুক্ত হবে, তার যদি স্ত্রী
না থাকে তবে সে একজন স্ত্রীর ব্যবস্থা করতে পারে। আর যদি তার খাদিম না থাকে, তাহলে
একজন খাদিম রাখতে পারে। আর যদি তার কোনো ঘর না থাকে, তাহলে একটি ঘরেরও ব্যবস্থা করতে
পারে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, সে যদি তা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে, তবে তা খিয়ানাত হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৯৪৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আদী ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মানব সকল! তোমাদের কাউকে
যদি আমাদের কোনো কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর সে যদি তা থেকে একটি সুঁই পরিমাণ অথবা
তার চেয়ে অধিক কিছু লুক্কায়িত রাখে, তাহলে সে খিয়ানাতকারী বলে সাব্যস্ত হবে। কিয়ামতের
দিনে সে তা বহন করে উত্থিত হবে। তখন জনৈক আনসারী দাঁড়িয়ে বলে উঠলেনঃ হে আল্লাহর রসূল!
আপনি আমার ওপর যে কাজ অর্পণ করেছেন, তা অনুগ্রহপূর্বক প্রত্যাহার করে নিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেন এটা বলছ? লোকটি বলল, আমি শুনেছি যে, আপনি এরূপ এরূপ
(ভীতিকর) কথা বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আবারও
বলছি, যাকে আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি, তখন সে যেন তার কম ও বেশি যাই হোক (সবকিছু)
আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে যা কিছু দেয়া হবে, শুধু তাই গ্রহণ করবে। আর যা
থেকে নিষেধ করা হবে, তা থেকে সর্বদা বিরত থাকে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৫৮১, আহমাদ ১৭৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুমায়দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত
করলেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি
আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ
তুমি তোমার বাপ-মার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তা হলে দেখতে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠানো হয়
কি না? এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে
গেলেন এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করলেন ও আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব
আদায়কারীর অবস্থা কী হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে,
এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাপ-মার ঘরে বসেই থাকল
না কেন? তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না?
ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ কোন বস্তুতে খিয়ানত করলে, কিয়ামতের দিন
সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ
করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বক্রী হয় তবে ভ্যা ভ্যা
করতে থাকবে। আমি (বাণী) পৌঁছিয়ে দিলাম। রাবী আবূ হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উঠালেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা
দেখতে গেলাম। আবূ হুমায়দ বলেন, এ কথাগুলো যায়দ ইবনু সাবিতও আমার সঙ্গে শুনেছে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। কাজেই তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৩৬, ৯২৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৪৬৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৬, আহমাদ
২৩৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) চুরি, ডাকাতির মাধ্যমে জীবিকা অর্জনঃ
এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই,
লুটতরাজ ইত্যাকার কর্মকান্ড করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় নতুন ব্র্যান্ডের মোটর
সাইকেল, জীপ ছিনতাইয়ের সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে থাকে। গভীর রাতে রাস্তায় গাছ ফেলে
ডাকাতি করার ঘটনা এদেশে নতুন নয়। তাদের কি ঈমান হারানোর কথা অন্তকরণে সামান্যতমও জাগ্রত
হয় না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিনাকারী যখন যিনা করে তখন আর সে
ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পান করে তখন
তার আর ঈমান থাকে না। যখন ডাকাত (লুটতরাজকারী বা ছিনতাইকারী) এভাবে ডাকাতি করে যে,
যখন চোখ তোলে তাকিয়ে থাকে তখন তার ঈমান থাকে না। এভাবে কেউ যখন গনীমাতের মালে খিয়ানাত
করে, তখন তার ঈমান থাকে না। অতএব সাবধান! (এসব গুনাহ হতে দূরে থাকবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭,
সুনানে আবূ দাঊদ ৪৬৮৯, সুনান আননাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সুনান আততিরমিযী
২৬২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, সহীহাহ্ ৩০০০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৫, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৭৮,
৮৭৮১, ৯৮৫৯, দারেমী ১৯৯৪, ২১০৬, রাওদুন নাদীর ৭১৬, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনু আবু শায়বাহ
৩৮-৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ তার ঈমান এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত
উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
(৭) অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ
করাঃ
এ
ধরনের কাজের জন্য পরকালে কঠোর শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি আত্মসাৎ
করবে, সে ক্বিয়ামত দিবসে আত্মসাৎকৃত বস্ত্ত নিয়েই হাযির হবে’। (সুরা আলে ইমরান ৩/১৬১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আদী ইবনু
উমাইরাহ্ আল-কিন্দী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে আদায়কারী নিযুক্ত করি, আর সে
একটি সূচ পরিমাণ বা তার চাইতেও কম মাল আমাদের কাছে গোপন করে, তাই আত্মসাৎ বলে গণ্য
হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেন, তখন একজন কৃষ্ণকায় আনসারী
(সাহাবী) তার দিকে অগ্রসর হলেন, আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর
রসূল! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমার কী হয়েছে? তিনি আরয করলেন, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ (কঠিন ভাষা) বলতে শুনেছি।
তখন তিনি বললেন, আমি এখনও বলছি, তোমাদের মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর
সে অল্প বিস্তর যা-ই আদায় করে এনে উপস্থিত করে, তারপর তাকে যা-ই দেয়া হয় তা-ই গ্রহণ
করে এবং যা থেকে নিষেধ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার জন্য ভয়ের কারণ নেই)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খাওলাতাল আনসারিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু সংখ্যক মানুষ আল্লাহ
তা’আলার (যাকাত, বায়তুল মাল বা গনীমাতের) সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে থাকে। কিয়ামত
দিবসে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আহমাদ ২৭৩১৮, সহীহ আল
জামি‘ ২০৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা
সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা, ঘুষ, দুর্নীতি করা
এক মারাত্মক কবিরা গুণাহ। যেসব সরকারি চাকরিজীবি এসবের সাথে জড়িত তারা জাহান্নামী।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবদুল্লাহ
ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মালপত্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে মারা গেলে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ অনুসন্ধান করে তার সঈে
একটি কম্বল অথবা একটি আবা পেলো যা সে আত্মসাৎ করেছিল। (সুনান
ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৭৪, আহমাদ ৬৪৫৭, বায়হাকী ফিস সুনান
৩/৩৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) উবাদা
ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে গনীমতের উটের পাশে নামায পড়লেন। তারপর তিনি উটের দেহ
থেকে একটি পশম নিয়ে তা তাঁর দু’ আঙ্গুলের মাঝে রেখে বলেনঃ হে লোকসকল! অবশ্য এটা তোমাদের
গনীমতের মাল। সুতা এবং সুঁই, আর যা পরিমাণে তার চেয়ে বেশী এবং যা তার চেয়ে কম, সবই
তোমরা গনীমতের মালের মধ্যে জমা দাও। কেননা গনীমতের মাল চুরি করার ফলে কিয়ামতের দিন
তা চোরের জন্য অপমান ও গ্লানি এবং জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫০, ইরওয়া ৫/৭৪-৭৫, সহীহাহ ৯৮৫)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) খাওলাতাল আনসারিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু সংখ্যক মানুষ
আল্লাহ তা’আলার (যাকাত, বায়তুল মাল বা গনীমাতের) সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে থাকে।
কিয়ামত দিবসে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১১৮, আহমাদ ২৭৩১৮, সহীহ আল
জামি ২০৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
মিথ্যা শপথ করে অপর মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করা
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমদের অর্থ সম্পদ (যা তার
জিম্মায় আছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত
হবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ
‘‘যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে
--- এর শেষ পর্যন্ত’’- (আলে ‘ইমরান : ৭৭)। এরপর আশ‘আস (রাঃ) এসে বলেন, আবূ ‘আবদুর রহমান
(রাঃ) তোমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করছিলেন (সে হাদীসে বর্ণিত) এ আয়াতটি তো আমার সম্পর্কে
নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে
বিবাদ হওয়ায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর।
আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বললেন, তাহলে তাকে কসম খেতে হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! সে তো কসম করবে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস বর্ণনা করেন
এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৫৭, ২৪১৬, ২৫১৫, ২৬৬৬, ২৬৬৯,
২৬৭৩, ২৬৭৬, ৪৫৪৯, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, ২৩৫৩, ২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৭, ৪৫৫০,
৬৬৬০, ৬৬৭৭, ৭১৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৮, আহমাদ
৩৫৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২০২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩২৩, সুনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৬৯, ২৯৯৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৪৩, আহমাদ ৩৫৬৬,
৩৫৮৬, ৩৯৩৬, ৪০৩৯, ৪২০০, ৪৩৮১, রাওদুন নাদীর ২৪০, ৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) জুয়া ও বাজি ধরাঃ
ক্রিকেট ও ফুটবল খেলাকে ঘিরে যে কত শত কোটি
টাকার বাজি ধরা হয় দেশে তার ইয়ত্তা নেই। বাজিতে জেতা অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে
ধান্দাবাজ বাজিকররা। অথচ এসব হারাম। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই
মদ, জুয়া, প্রতিমা, ভাগ্যনির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে
বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও’। (সুরা মায়েদাহ
৫/৯০)।
(৯) পণ্য বিক্রয়ে অধিক কসম করাঃ
যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির ও হারমালাহ ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কসমে পণ্য-দ্রব্যের কাটতি হয়, তবে তা লাভ ধ্বংসকারী।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩৯৮০, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৭৯, মুসনাদ আবী ইয়ালা ৬৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ, মুহাম্মাদ ইবনু আল
মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ).....আবূ যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না,
তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক
শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার
পাঠ করলেন। আবূ যার (রাযিঃ) বলে উঠলেন, তার তো ধ্বংস হবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর
রাসূল! এরা কারা? তিনি বললেন, যে লোক পায়ের গোছার নীচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে, কোন কিছু
দান করে খোটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১, আহমাদ ২১৫৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১০) ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করাঃ
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
‘যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ গ্রাস করে,
তারা তো তাদের উদরে আগুন ভক্ষণ করল’। (সুরা নিসা ৪/১০)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিম পরিণত বয়ঃপ্রাপ্ত
না হওয়া পর্যন্ত তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। তবে সদুপায়ে (সম্পদের উন্নতি করার
লক্ষ্যে) তা ব্যবহার করা যাবে। আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করো। কেননা (কিয়ামতের দিন) প্রতিশ্রুতি
সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত
: ৩৪)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক
বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয়
কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক
করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪)
সুদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা।
(৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৭৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯, সুনান আননাসায়ী ৩৬৭১,
সুনান আবূ দাঊদ ২৮৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৪০০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬১, ইরওয়া ১২০২, সহীহ
আল জামি‘ ১৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৭০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) মজুতদারি করাঃ
মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় পণ্য মওজুদ করে রাখা
ইসলামে নিষিদ্ধ। এ সময় ব্যবসায়ী বেচাকেনা বন্ধ রাখে যাতে বাজার মূল্য চড়া হয়। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) এ বিষয়ে বলেন,
উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
মুসলিমের ওপর অভাব-অনটন সৃষ্টি করে খাদ্য-সামগ্রী গুদামজাত করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে
কুষ্ঠরোগে এবং দারিদ্রে নিপতিত করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৫, শু‘আবুল ঈমান ১১২১৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫৩৫১, য‘ঈফ
আত্ তারগীব ১১০২)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী খাদ্য
দ্রব্য বা অন্যান্য মালামাল গোপনে মজুদ করে রাখে। এতে রাষ্ট্রে খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য
মালামালের সংকট দেখা যায় ও দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। যারা এরুপ কাজ করে তারা পাপিষ্ঠ লোক।
মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নাদলা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাপিষ্ঠ ব্যক্তি
ছাড়া কেউ মজুতদারি করে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১২৬৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৪৭, আহমাদ ১৫৩৩১, ২৬৭০৩, দারেমী ২৫৪৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু’মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো (পাপীষ্ঠ লোকের) সঙ্গী
হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(১২) গুল ও জর্দার ব্যবসা করাঃ
গুল ও জর্দা এবং এ জাতীয় দ্রব্য মাদকতা আনয়ন
করে বিধায় এগুলি হারাম। আর মাদক সেবনের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে
ব্যক্তি মদপান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার ছালাত কবুল হয় না। সে মারা
গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
সে পুনরায় মদ্যপানে লিপ্ত হ’লে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করাবেন।
ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল! সেটা কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত
পুঁজ ও রক্ত’। (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৭; মিশকাত হা/৩৬৪৩, ছহীহাহ
হা/৭০৯)।
মূল হাদিস
আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে
এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ
করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব
পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা’আলা অবশ্যি তাকে ’’রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ’রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের
দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৭,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৪৩, সুনান আততিরমিযী ১৮৬২, সুনান আননাসায়ী ৫৬৬৪, ৫৬৭০,
আহমাদ ৬৬০৬, ৬৭৩৪, দারেমী ২০৯১, সহীহাহ ৭০৯, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ৯৩৯, তাখরীজুল
ঈমান লি ইবনুস সালাম ৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং এই কবীরা গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ
তার জন্য উপায় বের করে দেন’। (সুরা তালাক্ব ৬৫/২)।
তবে মাদকতার কারণে তার ইবাদত বিনষ্ট হবে না।
কেননা উপরোক্ত হাদীছে মাদকসেবীদের চল্লিশ দিনের ছালাত কবূল না হওয়ার অর্থ সে ঐ ছালাতের
ছওয়াব প্রাপ্ত হবে না। তবে ছালাত আদায়ের কারণে তার দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
অর্থাৎ সে ছালাত পরিত্যাগের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। (উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৪০০)।
(১৩) সুদী ব্যাংক বা সুদ কারবারী প্রতিষ্ঠানে
চাকরি করাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৬৩টি ব্যাংক আছে। এনজিও
আছে ২৫০১টি। এছাড়া স্থানীয় ভিত্তিক শত শত সমিতি আছে। উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাসমূহে
১০০% সুদ লেনদেন করা হয়। তবে কতিপয় ইসলামি ব্যাংক ব্যতীত।
উক্ত সুদী কারবারী প্রতিষ্ঠান সমূহে হাজার
হাজার মুসলমান নর-নারী চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তারা বাড়ী-গাড়িসহ
অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। কিন্তু কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তাদের এই জীবিকা নির্বাহ
বা উপার্জিত আয় সম্পূর্ণ হারাম। আর হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থে ক্রয়কৃত খাদ্য হারাম।
হারাম খাদ্যে গঠিত দেহও হারাম। এই হারাম দেহ নিয়ে ইবাদত করলে তার দোয়া আল্লাহ কিভাবে
কবুল করেন?
জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন,
যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয়
তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে
সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী
২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক
সেন্টার ৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহের সত্তর ভাগের ক্ষুদ্রতম
ভাগ হলো নিজের মায়ের সাথে যিনা করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮২৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৫১৩৩)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
অর্থ: “পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের
সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ২)।
(১৪)
কুকুরের ব্যবসা করা ও পতিতা বৃত্তি করাঃ
রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত
বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবুআবূ দাঊদ ৩৪২১, সুনান আততিরমিযী
১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫)
ভাগ্য গণনা ও হাতের রেখা গণনা করা হারাম তথা জ্যোতিষী ব্যবসা
হারামঃ
আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রয় মূল্য, যিনা-ব্যভিচারের
বিনিময় হতে ও গণকের গণনার মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২,
২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান আবূ
দাঊদ ৩৪২৮, সুনান আননাসায়ী ৪৬৬৬, সুনান আততিরমিযী ১১৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, আহমাদ
১৭০৭০, দারিমী ২৬৬১০, ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি
তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর(রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি
তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে
গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে
ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে
বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার
ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্
তারগীব ১৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৬) ছবি অংকন ব্যবসা
করা হারামঃ
আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও
যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা
চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর
প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৯, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৭)
গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম ও গান শিক্ষা দেয়া নিষেধঃ
আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গায়িকা বিক্রয় কর না, ক্রয়ও কর না এবং
তাদেরকে গানের প্রশিক্ষণও দিও না। এদের ব্যবসায়ের মধ্যে কোনরকম কল্যাণ নেই এবং এদের
বিনিময় মূল্য হারাম। এই আয়াত এ ধরণের লোকদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেঃ “মানুষের মধ্যে
কিছু এমন ধরণের লোকও আছে, যে মন ভুলানো কথা ক্রয় করে আনে, যেন আল্লাহ তা’আলার পথ হতে
লোকদেরকে তাদের অজান্তেই বিভ্রান্ত করতে পারে এবং আল্লাহ্ তা’আলার পথকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ
করে। এই ধরণের লোকদের জন্য আছে কঠিন ও অপমানজনক শাস্তি।" (সূরাঃ লুকমান-৬)। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৮২, সহীহা ২৯২২, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৭৮০, ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।
সন্দেহের বস্তুকে গ্রহণ করা যাবে না
(ক) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও
সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক
মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়
হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত
থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে
নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার
সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে
নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে
গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে
যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, ২০৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আততিরমিযী ১২০৫, সুনান আবূ দাঊদ ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩,
সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০,ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীটি মুখস্থ করে রেখেছি যে, যে
কাজে মনে সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে, সে কাজ পরিহার করে সংশয়-সন্দেহহীন কাজ করো। সত্য
ও ন্যায়ের মধ্যে প্রশান্তি আছে, আর মিথ্যা ও অন্যায়ের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি
হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৩, সুনান আননাসায়ী
৫৭১১, সুনান আততিরমিযী ২৫১৮, আহমাদ ১৭২৭, দারিমী ২৫৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৪৮, সহীহ
আত্ তারগীব ১৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার
সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৩১, ২০৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬, ইরওয়া ১৫৫৯,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হারাম মালে গঠিত দেহ জান্নাতে যাবে না
(ক) জাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান
৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয়
(কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ
না করা হবে? কিভাবে তার জীবনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল
করেছে; কোথা হতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি
কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২৪১৭, তাখরীজ ইকতিযাউল ইলমি আল-আমল ১৫/১, দারেমী ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আপনি এতো দোয়া করেন কিন্তু দোয়া কবুল হচ্ছে
না তাহলে বুঝতে হবে আপনার দেহের রক্ত মাংস হারাম মালে গঠিত। অথচ হারাম মাল ভক্ষণকারীদের
দোয়া আল্লাহ তায়ালা আগেই কবুল করেন। তখন বুঝতে হবে তাদের সুখ দুনিয়াবী। আর আপনি যদি
মনে করেন, আপনার আকিদাহ পরিশুদ্ধ, আপনি হালাল হারাম বেছে চলেন, আপনি শিরক, কুফর, নিফাক
ও বিদআত মুক্ত, “রাসুল সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো” বই এ উল্লেখিত ১৫০টি কারণের
সাথে আপনি জড়িত না, অথচ দোয়া করলে কবুল হয় না তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে
পরীক্ষা করছেন। এসময় আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আল্লাহর প্রশংসামূলক দোয়াসমূহ অধিকহারে
পাঠ করতে হবে, অল্পতে তুষ্ট হতে হবে আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
বান্দা তার বদ ও নেক আমল সরিষা দানা পরিমাণ হলেও দেখতে পাবে
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
সকল নেক কাজের ব্যাপারে এ আয়াতটিই যথেষ্ট
’’যে ব্যক্তি এক কণা পরিমাণ নেক ’আমল করবে তা সে দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি এক কণা
পরিমাণ বদ ’আমল করবে তাও সে দেখতে পাবে’’- (সূরাহ্ আয্ যিলযাল ৯৯: ৭-৮)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭৩, মুসলিম ৯৮৭, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৭৪১৮, সহীহ আত্ তারগীব ৭৫৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার গুণাহ থেকে মুক্ত
থাকতে ও অবস্থান ভেদে সকলের দোয়া কবুল করতে আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
(সমাপ্ত)
এসব বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক
করুন।
(১) দুই হাত তুলে দোয়া বা মুনাজাত করার সহিহনিয়ম।
(২) নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?(প্রথম অংশ)।
(৩) নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? (দ্বিতীয় অংশ)।
(৪) যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী।
(৫) জাহান্নামের বর্ণনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়। (তৃতীয় অংশ)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
.................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment