বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক আযান, দোয়া ও ইক্বামত এর সহিহ বিধান
সংজ্ঞা, সুচনা ও ফযীলতঃ
সংজ্ঞাঃ ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা, ধ্বনি।
পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত
আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে
ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা
হয়।
১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন হয়।
(মির‘আত ২/৩৪৪-৩৪৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘আযান’ অনুচ্ছেদ-৪)।
সূচনাঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘নাকুস’ (ঘণ্টা
ধ্বনি) দিয়ে লোকদের সালাতের জন্য একত্র করা নির্দেশ দিলেন, তখন আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম,
এক ব্যক্তি হাতে ঘন্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘন্টাটি বিক্রি
করবে কি? লোকটি বললঃ তা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, আমরা এর সাহায্যে লোকদের সালাতের
জন্য ডাকব। লোকটি বলল, আমি কি তোমাকে এর চাইতে উত্তম জিনিস অবহিত করব না? আমি বললাম,
অবশ্যই।
লোকটি বলল, তুমি বলবেঃ ‘‘আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ; হাইয়্যা ‘আলাল
ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’
(অর্থঃ আল্লাহু মহান, আল্লাহু সর্বশ্রেষ্ঠ (দুইবার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
অন্য কোন ইলাহ নেই (দুইবার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর রসূল (দুইবার), এসো সালাতের দিকে (দুইবার), এসো সফলতার দিকে (দুইবার), আল্লাহু
মহান, আল্লাহু মহান, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।)
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি
কিছুটা দূরে গিয়ে বলল, যখন সালাতের জন্য দাঁড়াবে তখন বলবেঃ ‘‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু
আকবার, আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লালল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা
‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, ক্বাদ্ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’
অতঃপর ভোর হলে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বপ্নে দেখা বিষয়টি অবহিত করি।
তিনি বললেনঃ এটা স্বপ্ন সত্য, ইনশাআল্লাহ। তুমি উঠো, বিলালকে সাথে নিয়ে গিয়ে তুমি স্বপ্নে
যা দেখেছো তা তাকে শিখিয়ে দাও, যেন সে (ঐভাবে) আযান দেয়। কারণ তার কণ্ঠস্বর তোমার কণ্ঠস্বরের
চেয়ে উচ্চ। অতঃপর আমি বিলালকে নিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে (আযানের শব্দগুলো) শিখাতে থাকলাম,
বিলাল ঐগুলো উচ্চস্বরে বলতে লাগল। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিজ ঘর থেকে আযান শুনতে
পেয়ে তৎক্ষনাৎ চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ঐ মহান
সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্নে দেখেছি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫০, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৭০৬, সুনান আদ-দারেমী ১২১৯, ইরওয়া ২৪৬,
আওনুল মা‘বূদ ৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন
ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। (মিরক্বাত
শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ)।
উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত
স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি।
(আবুদাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ)।
আযানের ফযীলত
(১) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদূর পর্যন্ত
মানুষ, জিন্ বা অন্য কিছু মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনি শুনবে তারা সকলেই কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৪৮, ৬০৯, নাসায়ী ৬৪৪, আহমাদ
১১৩০৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৬১, সহীহ আল জামি ২৪৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের
দিন মুয়াযযিনগণ সবচেয়ে উঁচু ঘাড় সম্পন্ন লোক হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৭৩৮-৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৭,
ইবনু মাজাহ্ ৭২৫, আহমাদ ১৬৮৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৬৯, সহীহ আল জামি‘ ১০৩১, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৭৩৬, ইসলামিক সেন্টার ৭৫১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়াযযিন, তাকে মাফ
করে দেয়া হবে। তার আযানের আওয়াজের শেষ সীমা পর্যন্ত তার জন্য সাক্ষ্য দেবে প্রতিটা
সজীব ও নির্জীব জিনিস। যে সালাতে উপস্থিত হবে, তার জন্য প্রতি সালাতে পঁচিশ সালাতের
সাওয়াব লিখা হবে। মাফ করে দেয়া হবে তার দুই সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৭২৪, সহীহ আল জামি ৬৬৪৪, নাসায়ী ৬৪৬, সহীহ আল জামি ১৮৪১, আহমাদ ৪/২৮৪,
(৯২/২৬৬), ইবনু খুযাইমাহ (৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের জন্য আযান দিতে
থাকলে শায়ত্বন (শয়তান) পিঠ ফিরিয়ে পালায় ও বায়ু ছাড়তে থাকে, যাতে আযানের শব্দ তার কানে
না পৌঁছে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে ফিরে আসে। আবার যখন ইক্বামাত শুরু হয় পিঠ ফিরিয়ে পালাতে
থাকে। ইক্বামাত শেষ হলে আবার ফিরে আসে। সালাতে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে থাকে।
সে বলে, অমুক বিষয় স্মরণ কর। অমুক বিষয় স্মরণ কর। যেসব বিষয় তার মনে ছিল না সব তখন
তার মনে পড়ে যায়। পরিশেষে মানুষ অবচেতন হয় আর বলতে পারে না কত রাক্‘আত সালাত আদায় করা
হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৮,
১২২২, ১২৩১, ১২১৩২, ৩২৮৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪২, ১১৫২-১১৫৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৯, আহমাদ ৯৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৮১, সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৬, নাসায়ী ৫৭০, সহীহ আল জামি ৮১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বারো বছর পর্যন্ত আযান দিবে তার আযানের বিনিময়ে
প্রতিদিন তার ‘আমলনামায় ষাটটি নেকী ও প্রত্যেক ইক্বামাত এর পরিবর্তে ত্রিশ নেকী লেখা
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৭২৮, সহীহাহ ৪২,
সহীহ তারগীব ২৪২, ২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যিম্মাদার আর মুয়াযযিন
আমানাতদার। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু‘আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ!
তুমি ইমামদেরকে হিদায়াত দান কর। আর মুয়াযযিনদেরকে মাফ করে দাও’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৩, আহমাদ ৯৬২৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫১৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৭, মুসনাদে শাফি‘ঈ ১৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আযানের কালেমা সমূহ
আযানের কালেমা সমূহ ১৫টি। যথাঃ
(১) আল্লা-হু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ....৪ বার
(২) আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ
أَشْهَدُ أَن لاَّ إلَهَ إِلاَّ اللهُ ....২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)
(৩) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ ...২ বার
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
আল্লাহর রাসূল)
(৪) হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ (ছালাতের জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ...২ বার
(৫) হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (কল্যাণের
জন্য এসো) حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ...২বার
(৬) আল্লা-হু আকবার (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) اللهُ أَكْبَرُ ...২ বার
(৭) লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (আল্লাহ
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ১ বার মোট= ১৫ বার।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৯, সুনান ইবনু
মাজাহ ৭০৬, সুনান আদ-দারেমী ১২১৯, ইরওয়া ২৪৬,
আওনুল মা‘বূদ ৪৯৪-৪৯৫, ২/১৬৫-৭৫, মির‘আত ৬৫৫, ২/৩৪৪-৩৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ফজরের আযানের সময় হাইয়া ‘আলাল
ফালা-হ এর পরে আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’
(নিদ্রা হতে ছালাত উত্তম)
২ বার বলবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি [আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ)] বলেন, (আমার কথা শুনে)
তিনি আমার অথবা এবং বললেন, বলোঃ আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু
আকবার। এ বাক্যগুলো তুমি খুব উচ্চস্বরে বলবে। এরপর তুমি নিম্নস্বরে বলবে, আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রসূলুল্ল-হ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ। তুমি পুনরায় উচ্চস্বরে শাহাদাত বাক্য
বলবেঃ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, হাইয়্যা ‘আলাস্
সলা-হ্, হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্; হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ। এ আযান
ফজরের (ফজরের) সালাতের জন্য হলে বলবে, আস্সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম, আস্সলা-তু খয়রুম
মিনান্ নাওম। আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার। লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ । (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০০, আহমাদ
(৩/৪০৮), বুখারী ‘আফ‘আলুল ‘ইবাদ’ ১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু রাসলান, আমীরুল ইয়ামানী ও
শায়খ আলবানী একে তাহাজ্জুদের আযানের
সাথে যুক্ত বলেন (সুবুলুস সালাম হা/১৬৭-এর ব্যাখ্যা,
১/২৫০; তামামুল মিন্নাহ ১৪৭ পৃঃ)। আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, বরং
ফজরের আযানের সাথে হওয়াটাই ‘হক’ এবং
এটাই ব্যাপকভাবে গৃহীত মাযহাব’ (তুহফা ১/৫৯৩, হা/১৯৮- এর
ব্যাখ্যা দ্রঃ); রিয়াদ, লাজনা দায়েমাহ
ফৎওয়া নং ১৩৯৬)।
এক্বামত
‘এক্বামত’ (الإقامة) অর্থ দাঁড় করানো।
উপস্থিত মুছল্লীদেরকে ছালাতে দাঁড়িয়ে
যাওয়ার হুঁশিয়ারী শুনানোর জন্য ‘এক্বামত’ দিতে হয়।
জামা‘আতে হউক বা একাকী হউক সকল
অবস্থায় ফরয ছালাতে আযান ও এক্বামত দেওয়া সুন্নাত।
‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই
মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও
সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা সে সময় তার
মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয়
করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায়
করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে
দিলাম। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২০৩, সুনান আন-নাসায়ী
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৬৭-৬৬৮, সহীহাহ ৪১, ইরউয়াউল
গালীল ২১৪, ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ)
প্রমুখাৎ আবুদাঊদে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীছ অনুযায়ী-
এক্বামতের কালেমা ১১টি। যথাঃ
(১) আল্লা-হু আকবার (২ বার)
(২) আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,
(৩) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লা-হ,
(৪) হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ,
(৫) হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ,
(৬) ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ, (২
বার),
(৭) আল্লা-হু আকবার (২ বার),
(৮) লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ = সর্বমোট ১১।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘নাকুস’ (ঘণ্টা
ধ্বনি) দিয়ে লোকদের সালাতের জন্য একত্র করা নির্দেশ দিলেন, তখন আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম,
এক ব্যক্তি হাতে ঘন্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘন্টাটি বিক্রি
করবে কি? লোকটি বললঃ তা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, আমরা এর সাহায্যে লোকদের সালাতের
জন্য ডাকব। লোকটি বলল, আমি কি তোমাকে এর চাইতে উত্তম জিনিস অবহিত করব না? আমি বললাম,
অবশ্যই।
আজানের বিধান
লোকটি বলল, তুমি বলবেঃ ‘‘আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাস সালাহ; হাইয়্যা ‘আলাল
ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’
(অর্থঃ আল্লাহু মহান, আল্লাহু সর্বশ্রেষ্ঠ (দুইবার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া
অন্য কোন ইলাহ নেই (দুইবার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহর রসূল (দুইবার), এসো সালাতের দিকে (দুইবার), এসো সফলতার দিকে (দুইবার), আল্লাহু
মহান, আল্লাহু মহান, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।)
ইক্বামাতের বিধান
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি
কিছুটা দূরে গিয়ে বলল, যখন সালাতের জন্য দাঁড়াবে তখন বলবেঃ ‘‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু
আকবার, আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লালল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা
‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, ক্বাদ্ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’
অতঃপর ভোর হলে আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বপ্নে দেখা বিষয়টি অবহিত করি।
তিনি বললেনঃ এটা স্বপ্ন সত্য, ইনশাআল্লাহ। তুমি উঠো, বিলালকে সাথে নিয়ে গিয়ে তুমি স্বপ্নে
যা দেখেছো তা তাকে শিখিয়ে দাও, যেন সে (ঐভাবে) আযান দেয়। কারণ তার কণ্ঠস্বর তোমার কণ্ঠস্বরের
চেয়ে উচ্চ। অতঃপর আমি বিলালকে নিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে (আযানের শব্দগুলো) শিখাতে থাকলাম,
বিলাল ঐগুলো উচ্চস্বরে বলতে লাগল। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিজ ঘর থেকে আযান শুনতে
পেয়ে তৎক্ষনাৎ চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ঐ মহান
সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্নে দেখেছি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৯,
সুনান ইবনু মাজাহ ৭০৬, বুখারী (‘আফ‘আলুল ‘ইবাদ’ (হাঃ ১৩৭), দারিমী (১১৮৭), আহমাদ (১১৮৭)
আহমাদ (৩/৪৩), ইরওয়াহ ২৪৬, ‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
(সালাতে শরীক হবার জন্য ঘোষণা প্রসঙ্গে) আগুন জ্বালানো ও শিঙ্গায় ফুঁক দেবার প্রস্তাব
হলো। এটাকে কেউ কেউ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রথা বলে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলালকে নির্দেশ দিলেন আযান জোড়া শব্দে ও ইক্বামাত বেজোড় শব্দে
দেয়ার জন্য।
হাদীস বর্ণনাকারী ইসমা‘ঈল বলেন,
আমি আবূ আইয়ূব আল আনসারীকে ইক্বামাত বেজোড় দেয়া সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন,
তবে ‘‘ক্বদ্ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্’’ ছাড়া (অর্থাৎ- ‘ক্বদ্ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্’ জোড় বলতে
হবে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৩, ৬০৫, ৬০৬, ৬০৭, ৩৪৫৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭২৪-৭২৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বার ৩৭৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪১,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৭২৯-৭৩০, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্
৩৬৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৭৮, নাসায়ী ৬২৭,
আধুনিক প্রকাশনী ৫৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬, আহমাদ ১১৫৯০, ১২৫৫৯; দারিমী ১১৯৪-৯৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৮ম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের
পর মদ্বীনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বেলালকে মসজিদে নববীতে স্থায়ীভাবে
মুওয়ায্যিন নিযুক্ত করেন। ১১ হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে বেলাল
(রাঃ) সিরিয়ায় হিজরত করেন এবং নিজ শিষ্য সা‘দ আল-ক্বারাযকে মদ্বীনায় উক্ত দায়িত্বে
রেখে যান। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায়
আযান দু’বার ও এক্বামত একবার করে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল,
‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’ দু’বার
ব্যতীত।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় আযানের বাক্য
দু’ দু’বার ও ইক্বামাত এর বাক্য এক একবার ছিল। কিন্তু ‘‘ক্বদ্ ক্ব-মাতিস্ সলা-হ্’’-কে
(অর্থাৎ- সালাতে দাঁড়ানোর সময় নিকটবর্তী হয়েছে) মুয়াযযিন দু’বার করে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১০, নাসায়ী
৬২৮, দারিমী ১১৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
প্রকাশ থাকে যে, এখানে দু’বার
আল্লা-হু আকবার-কে একটি জোড়া হিসাবে ‘একবার’ (মার্রাতান) গণ্য করা হয়েছে। তাছাড়া ‘আল্লাহ’শব্দের
হামযাহ (ا) ‘ওয়াছ্লী’ হওয়ার কারণে প্রথম ‘আল্লা-হু আকবার –এর
সাথে পরের ‘আল্লাহু আকবার’
মিলিয়ে পড়া যাবে। একবার ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালাহ’ এবং প্রথমে
ও শেষে একবার করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলার মতামতটি ‘শায’ (شاذ) যা অগ্রহণযোগ্য। (নায়লুল
আওত্বার, ‘আযানের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ, ২/১০৬)।
কেননা আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু
মাজাহসহ অনেক হাদিস গ্রন্থে আযান ও এক্বামতের
কালেমা সমূহের যথাযথ বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৯, তিরমিযী ১৮৯, ইবনু মাজাহ ৭০৬, বুখারী ‘আফ‘আলুল ‘ইবাদ’ (হাঃ ১৩৭),
দারিমী (১১৮৭), আহমাদ (১১৮৭) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, মক্কা মদ্বীনাসহ সমগ্র হিজায, সিরিয়া,
ইয়ামন, মিসর, মরক্কো এবং ইসলামী
বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একবার
করে এক্বামত দেওয়ার
নিয়ম চালু আছে এবং
এটাই প্রায় সমস্ত ওলামায়ে ইসলামের মাযহাব। (‘আওনুল
মা‘বূদ ২/১৭৫, হা/৪৯৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
ইমাম বাগাভী বলেন, এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের
মাযহাব। (নায়লুল আওত্বার ‘আযানের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ, ২/১০৬)।
দু’বার এক্বামত-এর
রাবী হযরত আবু মাহযূরাহ (রাঃ) নিজে ও তাঁর পুত্র হযরত বেলাল (রাঃ)-এর অনুসরণে একবার করে ‘এক্বামত’
দিতেন। (আবুদাঊদ (‘আওনুল মা‘বূদ সহ), হা/৪৯৫-এর ভাষ্য পৃঃ ২/১৭৫ দ্রষ্টব্য)।
ইক্বামতের বাক্যগুলো জোড়া জোড়া দেয়ার পক্ষে গোঁড়ামী করা
ইক্বামতের শব্দগুলো জোড়া জোড়া
বলা জায়েয। এর পক্ষে দু’একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (আবুদাঊদ
হা/৫০১ ও ৫০২, ১/৭২ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৩৩)।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছেঃ আসসালাতু
খাইরুম মিনান-নাওম, আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম-(এটা) ফজরের প্রথম আযানে (বলবে)। ইমাম
আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুসাদ্দাদের বর্ণনা এর চেয়ে বেশি স্পষ্ট। তাতে রয়েছেঃ তিনি আমাকে
ইক্বামাত এর শব্দগুলো দুই দুইবার করে শিখিয়েছেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু
আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ, হাইয়্যা
‘আলাস্-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাল্-ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল-ফালাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
‘আবদুর রাযযাক্ব বলেন, সালাতের
ইক্বামাত দেয়ার সময় ‘ক্বাদ্ ক্বামাতিস সালাতু, ক্বাদ ক্বামাতিস্ সলাহ’ দু’বার বলবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মাহযূরাহ (রাঃ)-কে বললেন, (আমি যেভাবে আযান
ও ইক্বামাত এর শব্দগলো শিখালাম) তুমি কি তা ঠিকমতো শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেন, আবূ মাহযূরাহ
তার কপালের চুল কাটতেন না এবং সেগুলো পৃথকও করতেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কপালে (এই চুলের উপর) হাত বুলিয়েছিলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০১, নাসায়ী ৬৩২, ইবনু মাজাহ ৭০৮, আহমাদ
(৩/৪০৯), ইবনু খুযাইমাহ (৩৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযানের শব্দ ঊনিশটি আর ইক্বামাত এর
শব্দ সতেরটি শিখিয়েছেন। আযানের শব্দগুলো হচ্ছেঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশ্হাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা
‘আলাস্-সলাহ হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আর ইক্বামাত এর শব্দগুলো হচ্ছেঃ আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ হাইয়্যা ‘আলাস্-সলাহ, হাইয়্যা ‘আলাল
ফালাহ হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ, আল্লাহু
আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০২, তিরমিযী ১৯২, নাসায়ী ৬২৯, ইবনু মাজাহ ৭০৯, আহমেদ (৬/৪০১) দারিমী
১১৯৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কিন্তু এর উপর যিদ ও গোঁড়ামী করার
কোনো সুযোগ নেই।
কারণ ইক্বামত একবার করে বলাই উত্তম
এবং এর প্রতি আমল করাই উচিৎ। এর পক্ষেই বেশী হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
বরং আবু মাহযূরা (রাঃ) ছাড়া যে
সমস্ত ছাহাবী উক্ত মর্মে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তারা সকলেই একবারের কথা উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়া অনুধাবন করার বিষয় হলো, রাসূল (ছাঃ) এর
নিযুক্ত মুয়াযযিন ছিলেন বেলাল
(রাঃ)। আর তিনি তাকে
একবার করে ইক্বামত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তাহলে কোন্ আমলটি গ্রহণ করা উত্তম?
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
বেলাল (রাঃ)-কে আযান দুইবার করে আর ইক্বামত একবার করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৩, ৬০৫, ৬০৬, ৬০৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৭২৪-৭২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪১,
সুনান ইবনু মাজাহ ৭২৯-৭৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬, নাসাঈ হা/৬২৭, ১/৭৩ পৃঃ; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩৬৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৭৮,
সহীহাহ্ ২৭১, আহমাদ ১১৫৯০, ১২৫৫৯; দারিমী ১১৯৪-৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর
যুগে আযান ছিল দুই বার দুইবার করে এবং ইক্বামত ছিল একবার একবার করে। তবে ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালাহ’ দুইবার ছিল। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৩, নাসায়ী ৬২৮, দারিমী ১১৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
জ্ঞাতব্যঃ ইক্বামতের শব্দগুলো একবার করে
বলা যাবে না বলে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে, তা
জাল। যেমন-
(ক) যে ব্যক্তি একবার করে ইক্বামত দিবে সে আমার উম্মত নয়’। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫)।
তাহক্বীকঃ বর্ণনাটি জাল। এর কোন
সনদ নেই। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫)।
(খ) আওউন বিন আবী জুহায়ফাহ তার পিতার
সূত্রে বর্ণনা করেন যে, বেলাল (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সময় আযান দিতেন জোড়া জোড়া করে।
আর ইক্বামতও দিতেন অনুরূপভাবে। (ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব
হা/৭৮২০)।
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৫; ইবনুল জাওযী (৫১০-৫৯৭ হিঃ), আল-মাওযূ‘আত ২/৯২ পৃঃ; আল-আওসাত্ব হা/৭৮২০)।
ইক্বামত সম্পর্কে মূল কথা হলোঃ
উপরোক্ত দলিল ভিত্তিক আমরা জানতে
পারলাম যে, ইক্বামাতের বাক্যগুলো একবার করে বলার সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তথাপিও আধুনিক
প্রকাশনীর টীকায় লেখা “হানাফীগণ অন্য এক হাদীসের ভিত্তিতে ইক্বামাতের বাক্যগুলো দু’বার
করে বলেন।” এ কথার জবাবে সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশে মুহাদ্দিসীনদের কতিপয় মতামত পেশ করা
হলোঃ
হাফিয আবূ ‘উমার বিন ‘আবদুর বর
বলেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন রাহওয়াইহি, দাঊদ বিন আলী, মোহাম্মদ বিন জরীর
প্রভৃতি ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার বা দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমত গ্রহণ করেছেন।
তাঁদের দৃষ্টিতে উভয় নিয়মই বিশুদ্ধ, বৈধ ও গ্রহণযোগ্য এবং ঐচ্ছিক ব্যাপার যে ইচ্ছা
করবে একবারও বলতে পারবে এবং অপরপক্ষে যে ইচ্ছা করবে দু’বার করেও বলতে পারবে। (তুহফা সহ তিরমিযী ১ম খণ্ড ১৭৪ পৃঃ)।
হাফিয আবূ আওয়ানাহ তদীয় মসনদ গ্রন্থে
১ম খণ্ড ৩৩০ পৃষ্ঠায় বলেন, বিলালের আযানের ইক্বামাত একবার করে বলার নিয়ম মনসূখ হয়নি।
আবূ মাহযূরাহ্র হাদীস হতে ইক্বামাত দু’বার করে বলা প্রমাণিত হলেও তা হতে অধিক সহীহ
আনাসের হাদীসে একবার করে বলা প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং উসূলে হাদীস শাস্ত্রের বিধান ও
ন্যায়নীতির ভিত্তিতে বিরোধক্ষেত্রে যা অধিক সহীহ তা-ই গ্রহণ করা উত্তম ও একান্ত বাঞ্ছনীয়।
ইমাম আবদুল ওয়াহহাব শা’রানী হানাফী
‘কাশ্ফুল গুম্মা’ ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠায় আবদুল্লাহ বিন যায়দের আযানের সাথে উল্লেখিত ইক্বামাতের
শব্দগুলি একবার করে বলার নিয়মের উল্লেখ করেছেন। উক্ত গ্রন্থে ১২৯ পৃষ্ঠায় তিনি রসূলুল্লাহ
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে আযানের শব্দগুলি দু’বার করে এবং ইক্বামাতের
শব্দগুলো একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীসের উল্লেখ করেছেন।
শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)
তদীয় সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘গুনিয়াতুত্ তালেবীন’-এর ৮ পৃষ্ঠায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার
করে বলার স্বপক্ষে তাঁর নিজের মন্তব্য পেশ করেছেন।
মোটের উপর আমরা ইমাম আহমাদ, ইসহাক
বিন রাহওয়াইহি এবং অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের ন্যায় ইক্বামাতের শব্দগুলি একবার করে অথবা
দু’বার করে বলার উভয়বিধ অভিমতের বৈধতা ও প্রামাণিকতা স্বীকার করি; অধিকন্তু আমরা উভয়বিধ
‘আমলকে জায়েয বলে মনে করি। কিন্তু যেহেতু ইকামাতের শব্দগুলি দু’বার করে বলার নির্দেশ
সম্বলিত হাদীস হতে একবার করে বলার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস অধিক প্রামাণ্য ও বিশুদ্ধ
এবং তা বহু সূত্রে বর্ণিত এমনকি ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয় কর্তৃক গৃহীত, কাজেই আমরা
ইকামাতের শব্দগুলি একবার করে বলা সর্বোত্তম মনে করি।
কতিপয় অপব্যাখ্যা ও সহিহ জবাব
ইক্বামতে ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালাহ’-এর জবাবে ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলাঃ
‘ক্বাদক্বা-মাতিছ ছালাহর’ জবাবে ‘আক্বা-মাহাল্লাহু
ওয়া আদা-মাহা’ বলার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। বরং উত্তরে
‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ’-ই
বলতে হবে। উক্ত বাক্যের
পক্ষে
যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে,
তার সনদ যঈফ।
আবু উমামা কিংবা রাসূল (ছাঃ)-এর
কোন এক ছাহাবী বর্ণনা করেন, বেলাল (রাঃ) যখন ইক্বামতে ‘ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ’ বলেন,
তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আক্বা-মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৮, আমালুল ইয়াওমি
ওয়াল লায়লাহ হা/২১;
বায়হাক্বী ১/৪১১; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭০, ইরওয়া ২৪১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ
ইবনু ছাবেত আল-আবদী ও শাহর ইবনু হাওশাব এবং তাদের দুইজনের মাঝখানে আরেকজন রাবী আছে
অপরিচিত। ইমাম বায়হাক্বী, ইবনু হাজার আসক্বালানী, শায়খ আলবানীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিছ উক্ত
হাদীছকে একেবারেই দুর্বল বলেছেন। (ইরওয়াউল গালীল
হা/২৪১, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৫৮; যঈফ আবুদাঊদ হা/৫২৮)।
বিঃ দ্রঃ যখন হাদীসটির দুর্বলতা প্রমাণিত
হয়ে যায় তখন সে হাদীসের প্রতি দু’টি কারণে ‘আমল করা যাবে না। প্রথমত হাদীসটি ফাযীলাত
সংক্রান্ত নয় কারণ قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ -এর সময় أَقَامَهَا اللّهُ وَأَدَامَهَا বলা শারী‘আতসম্মত নয় এবং অন্য
কোন হাদীসে এর ফাযীলাত বর্ণিত হয়নি যে, বলা হবে এটি ফাযীলাত সংক্রান্ত ‘আমল যার প্রতি
‘আমল করা যাবে। পক্ষান্তরে এটিকে কেবলমাত্র এ ধরনের দুর্বল হাদীস দ্বারা প্রমাণিত করে
শারী‘আত সম্মত করাটা শারী‘আতের নীতির অনেক দূরবর্তী বিষয় যা গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত
এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপক উক্তির পরিপন্থী। যেখানে তিনি বলেছেন
যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান বা ইক্বামাত বলতে শুনবে তখন তোমরা তার মতো বলো....। তাই
হাদীসটি তার ব্যাপকতার উপর রাখাটাই আবশ্যক। অতএব, আমরা ইক্বামাতের সময় قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ বলবো।
ইক্বামতের শেষে আল্লাহু আকবার’ একবার বলা
একবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলার কোন
প্রমাণ নেই। (নায়লুল আওত্বার ২/২০ পৃঃ)।
অনেকে একটি বাক্য বলতে হবে মনে
করে ইক্বামতের শেষে একবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে থাকে। আসলে একটি বাক্য ধরে ‘আল্লাহু আকবার ’আল্লহু
আকবার ’ বলতে হবে। কারণ উহা
দু’টি বাক্য নয়। যেমন ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু’-কে অর্ধেক করা যায় না। তাছাড়া
হাদীছে স্পষ্টভাবে ইক্বামতের
শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন
নেই।
যেমন রাসূল (ছাঃ) মুয়াযযিনকে নির্দেশ দেন, যখন তুমি ছালাতের
এক্বামত দিবে তখন বলবে,
‘‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,
আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লালল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, হাইয়্যা
‘আলাস সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ, ক্বাদ্ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ,
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪৯৯, তিরমিযী ১৮৯, ইবনু মাজাহ ৭০৬, বুখারী (‘আফ‘আলুল ‘ইবাদ’ (হাঃ ১৩৭), দারিমী (১১৮৭),
আহমাদ (১১৮৭) আহমাদ (৩/৪৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব ইক্বামতের শেষে ‘আল্লাহু
আকবার’ কয়বার বলতে হবে তা অন্যের নিকট থেকে জানার প্রয়োজন নেই।
মূল জামা‘আত হয়ে গেলে পরে ইক্বামত না দেওয়া
উক্ত ধারণা সঠিক নয়; বরং নতুন
জামা‘আত শুরু করার সময় ইক্বামত দিয়েই শুরু করতে
হবে। এটাই সুন্নাত। (মিশকাত ৬৮৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে
রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য
রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের
দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল
(অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে
লাগলো।
এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন,
রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে বললেন,
বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের সালাত আদায়
করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের কথা ভুলে
গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘‘সালাত ক্বায়িম কর
আমার স্মরণে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৬-৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ
৬৯৭, তিরমিযী ৩১৬৩, নাসায়ী ৬১৮-২০, ৬২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫, ইরওয়াহ ২৯২, সহীহ ইবনু
হিব্বান ২০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মহিলারা ইক্বামত না দেয়া
পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ছালাতের
পার্থক্য নির্ধারণ করতে গিয়ে মহিলাদের ইক্বামত নেই বলে ফৎওয়া দেয়া হয়েছে। তাই অধিকাংশ
মহিলা ছালাতে ইক্বামত দেয় না। অথচ ফরয ছালাতে পুরুষের জন্য ইক্বামত দেয়া যেমন সুন্নাত,
তেমনি মহিলাদের জন্যও ইক্বামত দেয়া সুন্নাত। কারণ এখানে রাসূল (ছাঃ) নারী ও পুরুষের
জন্য কোন পৃথক বিধান দেননি। সবার জন্য একইনির্দেশ। (বুখারী
৬৫৮; ৬৩১, তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৪৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) মালিক ইব্নু হুওয়াইরিস (রাযি.)
সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে র্বর্ণিত, তিনি বলেন: সালাতের সময় হলে তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে
এবং ইক্বামাত বলবে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে অধিক বড় সে ইমামাত করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৮, ৬২৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হলাম।
বিশদিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা
আমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি
আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। অতঃপর
তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের
(দ্বীন) শিক্ষা দাও, এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাযি) আরও
কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায়
করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে
যেন তোমাদের ইমামত করে।(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এছাড়াও মহিলাদের ইক্বামত দেয়া
সম্পর্কে কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (মুছান্নাফ
ইবনে আবী শায়বা হা/২৩৩৮, ১/২৫৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৭৯-এর আলোচনা দ্রঃ)।
তবে তারা যেনো ইক্বামত না দেয়
সে জন্য অনেক যঈফ ও জাল কথা রচনা করা হয়েছে। (মুছান্নাফ
ইবনে আবী শায়বা হা/২৩২৬-২৩৩৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৭৯)।
সুতরাং এগুলো
থেকে সাবধান!
মসজিদের বাম পার্শ্ব থেকে আযান দেয়া আর ডান পার্শ্ব থেকে ইক্বামত দেয়া
সমাজে উক্ত প্রথা চালু থাকলেও
শরী‘আতে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং সুবিধা অনুযায়ী যে কোন পার্শ্ব থেকে আযান
ও ইক্বামত দেওয়া যাবে।
আযানের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা,
কুরআনের আয়াত পড়া, ইসলামী গযল বলা, বিভিন্ন
দু‘আ পড়া, মানুষকে ডাকাডাকি করা, ফজরের
আযানের পূর্বে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান্নাঊম’ বলা।
আযানের পূর্বে উল্লেখিত কাজগুলো
করা সম্পূর্ণ শরী‘আত বিরোধী।
অনুরূপ রামাযান মাসে সাহারীর সময়
আযান না দিয়ে সাইরেন বাজানো, ডাকাডাকি করা, ঢাক পেটানো, দলধরে চিৎকার করা ইত্যাদি জাহেলী
রীতি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯১৯, ৬১৭, ৬২০, ৬২৩, ১৯১৮, ২৬৫৬,
৭২৪৮; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪২৬-২৪৩০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৯২, নাসায়ী ৬৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৩, আহমাদ ৪৫৫১, দারেমী
১২২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৭০, ইরওয়া ২১৯, ফাৎহুল বারী ৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,
বরং সুন্নাত অনুযায়ী
সাহারীর জন্য আযান দিতে
হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯১৯, ৬১৭,
৬২০, ৬২৩, ১৯১৮, ২৬৫৬, ৭২৪৮; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৪২৬-২৪৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৯২, নাসায়ী ৬৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৩,
আহমাদ ৪৫৫১, দারেমী ১২২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৭০, ইরওয়া ২১৯, ফাৎহুল বারী ৬২১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
আযান দেওয়ার
পূর্বে কোনো কিছু বলা বা দু‘আ পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়
না।
আযানের পর মাইকে উচ্চকণ্ঠে দু‘আ পড়াও ঠিক নয়।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৯২, ৪২০২, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৬৬১০, ৭৩৮৬,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫-৬৭৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, আহমাদ ১৯৬১৯, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ২৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৮১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু
আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত
কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৯৯২, ৪২০২, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৬৬১০, ৭৩৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫-৬৭৬১, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৭০৪, আহমাদ ১৯৬১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৮১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অনুরূপ আযানের
পর মসজিদে আসার জন্য পুনরায় ডাকা যাবে না। যেমন বহু মসজিদে চালু আছে।
এটা স্পষ্ট বিদ‘আত। (আবুদাঊদ হা/৫৩৮, ১/৭৯ পৃঃ,
সনদ হাসান)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুজাহিদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি যুহর কিংবা ‘আসরের সালাতের
জন্য তাসবীব (পুনরায় আহবান) করায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, চল আমরা এখান থেকে বেরিয়ে
যাই। কারণ এটা বিদ‘আত।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৫৩৮, ‘আবদুর রাজ্জাক ‘মুসান্নাফ’ (১৮৩২),কানযুল ‘উম্মাল (৮/৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
তারজী‘ আযান
তারজী‘ অর্থ ‘পুনরুক্তি’।
আযানের মধ্যে দুই শাহাদাত কালেমাকে
প্রথমে দু’বার করে মোট চারবার নিম্নস্বরে, পরে দু’বার করে মোট চারবার উচ্চৈঃস্বরে বলাকে
তারজী‘ বা পুনরুক্তির আযান বলা হয়।
তারজী‘ আযানের কালেমা সংখ্যা হবে
মোট ১৫+৪=১৯টি।
তারজী‘ আযানের হাদীছটি হযরত আবু
মাহযূরাহ (রাঃ) কর্তৃক আবু দাঊদে বর্ণিত হয়েছে। (আবুদাঊদ
হা/৫০০, ৫০৩; (‘আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৬, মিশকাত হা/৬৪৫)।
হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বললাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি [আবূ মাহযূরাহ্ (রাঃ)] বলেন, (আমার কথা শুনে)
তিনি আমার অথবা এবং বললেন, বলোঃ আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু
আকবার। এ বাক্যগুলো তুমি খুব উচ্চস্বরে বলবে। এরপর তুমি নিম্নস্বরে বলবে, আশহাদু আল্লা-
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ এবং আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রসূলুল্ল-হ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লহ। তুমি পুনরায় উচ্চস্বরে শাহাদাত বাক্য
বলবেঃ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ, হাইয়্যা ‘আলাস্
সলা-হ্, হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্; হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালা-হ। এ আযান
ফজরের (ফজরের) সালাতের জন্য হলে বলবে, আস্সলা-তু খয়রুম মিনান্ নাওম, আস্সলা-তু খয়রুম
মিনান্ নাওম। আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার। লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০০, ৫০২,
৫০৩, ৫০৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৯, ৭০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭২৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৭৯, তিরমিযী ১৯১-৯২, নাসায়ী ৬২৯-৩৩, আহমাদ ১৪৯৫১, ১৪৯৫৫, ২৬৭০৮; দারিমী ১১৯৬,
ইবনু খুযাইমাহ (৩৭৯), ইবনু খুযাইমাহ (৩৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাইরীয (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। আবূ মাহযূরা তাকে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে আযানের ঊনিশটি এবং ইকামতের সতেরটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। আযানের বাক্যগুলো হলঃ
আল্লাহ্ মহান,আল্লাহ্ মহান,আল্লাহ্ মহান,আল্লাহ্ মহান; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্
ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই (২বার); আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল (২ বার), সালাতের দিকে এসো (২বার), কল্যানের দিকে
এসো (২বার), আল্লাহ্ মহান (২ বার), আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই (১বার)
ইকামতের সতেরটি বাক্য হলঃ আল্লাহ্
মহান,আল্লাহ্ মহান,আল্লাহ্ মহান,আল্লাহ্ মহান; আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ছাড়া
আর কোন ইলাহ নেই (২বার); আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল (২ বার), সালাতের দিকে এসো (২ বার), কল্যানের দিকে এসো
(২ বার), সালাত কায়েম হয়েছে (২ বার) আল্লাহ্ মহান (২ বার), আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ
নেই (১বার)।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৭০৯, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৪, তিরমিযী ১৯১-৯২, নাসায়ী ৬২৯-৩৩, আহমাদ ১৪৯৫১, ১৪৯৫৫, ২৬৭০৮;
দারিমী ১১৯৬-১১৯৭, সহীহ সহীহুল জামি ২৭৬৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
ছহীহ মুসলিমে একই মর্মে একই রাবী
হ’তে বর্ণিত অপর একটি রেওয়ায়াতে আযানে প্রথম তাকবীরের সংখ্যা চার-এর স্থলে দুই বলা
হয়েছে। (মুসলিম ৩৭৯)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মালিক ইবনু
আবদুল ওয়াহিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... আবূ মাহযুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ আযান শিক্ষা দিয়েছেনঃ
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার" (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান)। পাঠে (চারবার)।
"আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া
প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই), "আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্ল-হ" (আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই)। "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার
রসূলুল্ল-হ" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল), "আশহাদু আন্না
মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ" (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল)। আবার
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ",
"আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ-" দু'বার। "হাইয়্যা আলাস সলাহ"
(সালাতের জন্যে এসো) দু'বার। "হাইয়্যা 'আলাল ফালা-হ" (কল্যাণের জন্যে এসো)
দু'বার। ইসহাক তার বর্ণনায় আরো দুটি বাক্য উল্লেখ করেছেন, "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার" এবং “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৭২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তখন কলেমার সংখ্যা
দাঁড়াবে তারজীসহ ১৭টি।
আবু মাহযূরাহ
বর্ণিত সুনানের হাদীছে
এক্বামতের কালেমা ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ
ছালা-হ’ সহ মোট ১৭টি বর্ণিত
হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ হা/৪৯৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য,
২/১৭৬)।
এটি মূলতঃ তা‘লীমের জন্য ছিল।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৭০৯, মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৪৪, তিরমিযী ১৯১-৯২, নাসায়ী ৬২৯-৩৩, আহমাদ ১৪৯৫১, ১৪৯৫৫, ২৬৭০৮;
দারিমী ১১৯৬-১১৯৭, সহীহ সহীহুল জামি ২৭৬৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এক্ষণে ছহীহ হাদীছ মতে আযানের পদ্ধতি
দাঁড়ালো মোট তিনটি ও এক্বামতের পদ্ধতি দু’টি।
(১) আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণিত
বেলালী আযান ও এক্বামত যথাক্রমে ১৫টি ও ১১টি
বাক্য সম্বলিত, যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মক্কা-মদ্বীনাসহ সর্বত্র
চালু ছিল।
(২) আবু মাহযূরাহ
(রাঃ) বর্ণিত তারজী‘ আযানের
১৯টি ও ১৭টি এবং এক্বামতের
১৭টি। সবগুলোই জায়েয।
তবে দু’বার করে আযান ও একবার করে এক্বামত
বিশিষ্ট বেলালী আযান ও
এক্বামত-এর পদ্ধতিটি নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য,
যা মুসলিম উম্মাহ
কর্তৃক সকল যুগে সমাদৃত।
সাহারীর আযান
সাহারীর আযান দেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ
ও সাহারীর আযান বেলাল
(রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ
ইবনে উম্মে মাকতূম
(রাঃ) দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘বেলাল রাত্রি থাকতে আযান দিলে তোমরা (সাহারীর জন্য) খানাপিনা
করো, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়।
কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত
আযান দেয় না’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০, ‘দেরীতে
আযান’ অনুচ্ছেদ-৬; নায়ল ২/১২০)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ)রাত থাকতে আযান দেয়। তাই তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর আযান
না দেয়া পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করতে থাকবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম
(রাঃ) অন্ধ ছিলেন। ‘ভোর হয়ে গেছে, ভোর হয়ে গেছে’ তাকে না বলা পর্যন্ত তিনি আযান দিতেন
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৭,
৬২০, ৬২৩, ১৯১৮, ২৬৫৬, ৭২৪৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১০৯২, নাসায়ী ৬৩৮, তিরমিযী ২০৩, আহমাদ ৪৫৫১, দারেমী ১২২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৭০,
ইরওয়া ২১৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
তিনি আরও বলেন, ‘বেলালের আযান যেনো
তোমাদেরকে সাহারী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা সে রাত্রি থাকতে আযান দেয় এজন্য যে, যেন তোমাদের
তাহাজ্জুদ গোযার মুছল্লীগণ
(সাহারীর জন্য) ফিরে আসে ও তোমাদের
ঘুমন্ত ব্যক্তিগণ (তাহাজ্জুদ
বা সাহারীর জন্য) জেগে ওঠে’। (মুসলিম, মিশকাত
হা/৬৮১; কুতুবে সিত্তাহর সকল গ্রন্থ তিরমিযী ব্যতীত, নায়ল ২/১১৭-১৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলালের আযান
ও সুবহে কাযিব তোমাদেরকে সাহরী খাওয়া হতে যেন বিরত না রাখে। কিন্তু সুবহে সাদিক যখন
দিগন্তে প্রসারিত হয় (তখন খাবার-দাবার ছেড়ে দেবে)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৩৪-২৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১০৯৪, তিরমিযী ৭০৬, ইরওয়া ৯১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এটা কেবল রামাযান মাসের জন্য ছিল
না। বরং অন্য সময়ের জন্যও ছিল। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর যামানায় অধিক সংখ্যক ছাহাবী
নফল ছিয়াম রাখতেন। (মির‘আত ২/৩৮২, হা/৬৮৫-এর আলোচনা
দ্রষ্টব্য)।
আজও রামাযান মাসে সকল মসজিদে এবং
অন্য মাসে যদি কোন মসজিদের অধিক সংখ্যক প্রতিবেশী নফল ছিয়ামে যেমন আশূরার দু’টি ছিয়াম, আরাফাহর
একটি ছিয়াম, শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম ও তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত
হন, তাহ’লে ঐ মসজিদে নিয়মিতভাবে
উক্ত আযান দেওয়া যেতে পারে।
যেমন মক্কা ও মদ্বীনায় দুই হারামে
সারা বছর দেওয়া হয়ে থাকে।
সুরূজী প্রমুখ কিছু সংখ্যক হানাফী
বিদ্বান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানার উক্ত আযানকে সাহারীর জন্য
লোকজনকে আহবান ও সরবে যিকর বলে দাবী করেছেন। ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, এই দাবী ‘ মারদূদ’ বা প্রত্যাখাত। কেননা লোকেরা
ঘুম জাগানোর নামে আজকাল যা করে, তা সম্পূর্ণরূপে‘
বিদ‘আত’ যা ধর্মের
নামে নতুন সৃষ্টি। উক্ত আযান-
এর অর্থ
সকলেই ‘আযান’ বুঝেছেন।
যদি ওটা আযান না হয়ে অন্য কিছু
হ’ত, তাহ’লে লোকদের ধোঁকায় পড়ার প্রশ্নই
উঠতো না। আর রাসূল (ছাঃ)-কেও সাবধান করার দরকার
পড়তো না। (ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহ বুখারী ‘ফজরের পূর্বে
আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১২৩-২৪)।
আযানের জওয়াব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তদ্রুপ
বল’ ...। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭ ‘ছালাত’
অধ্যায়-৪, ‘আযানের ফযীলত ও তার জবাব’ অনুচ্ছেদ-৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের
আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে।
কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার
রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’
হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন।
আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের
(কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের
বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘হাইয়া‘আলাল ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা
অলা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
(নেই কোন ক্ষমতা,
নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে,
সে ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে। (মিশকাত হা/৬৫৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুয়ায্যিন যখন ‘‘আল্লা-হু
আকবার’’ বলে তখন তোমাদের কেউ যদি (উত্তরে) অন্তর থেকে বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ ‘‘আল্লা-হু
আকবার’’, এরপর মুয়ায্যিন যখন বলেন, ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’ সেও বলে,
‘‘আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’’। অতঃপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্
রসূলুল্ল-হ’’, সেও বলে ‘‘আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্ল-হ’’, তারপর মুয়ায্যিন
যখন বলে, ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস্ সলা-হ্’’, সে তখন বলে, ‘‘লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা-
বিল্লা-হ’’; পরে মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘আল্লা-হু আকবার ‘আল্লা-হু আকবার’’, সেও বলে,
‘‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার’’ এরপর মুয়ায্যিন যখন বলে, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ,’’
সেও বলে ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৫২৭, সহীহ আল জামি ৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৭৪৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব আযান ও এক্বামতে
‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ’ ও ‘ফালাহ’ বাদে বাকী বাক্যগুলির
জওয়াবে মুওয়ায্যিন যেমন বলবে, তেমনই বলতে হবে। ইক্বামতের জবাব একইভাবে
দিবে। কেননা আযান ও ইক্বামত
দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’
বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে,
(১) ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম
মিনান নাঊম’ এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা
ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই, কোনো দলীল নেই। (মির‘আত ২/৩৬৩, হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য)। ইহা বলা যাবে না।
(২) অমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ
ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-
মাহাল্লাহু ওয়া আদা-মাহা’ বলা
সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
(আবুদাঊদ হা/৫২৮, মিশকাত হা/৬৭০;
আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ, ইরওয়া ২৪১। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
কারণ এর সানাদে একজন অপরিচিত ও দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।
ইহা বলা যাবে না।
(৩) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’এর
জবাবে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না।
রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ করেছেন যে,
মুয়াযযিন যা বলবেন, উত্তরে তাই বলতে হবে। শুধু ‘হায়্যইয়া আলাছ ছালাহ’
ও ‘হায়্যইয়া আলাল ফালাহ’ ব্যতীত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭-৬৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ
আল জামি ৬১৩, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাই আযান ও ইক্বামতের
সময় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’-এর জবাবে
‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা যাবে না।
বরং ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদা
রাসূলুল্লাহ্’-ই বলতে হবে। তবে
অন্য সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে
বা পড়লে সংক্ষিপ্ত দরূদ হিসাবে
‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলবে।
(তিরমিযী হা/৩৫৪৫ মিশকাত হা/৯২৭
ও ৯৩৩, মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬,
সনদ ছহীহ; ছহীহ তারগীব হা/৯৯৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি,
যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক
সেই ব্যক্তি, যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত
হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা
তাকে জান্নাতে পৌঁছায় না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৯২৭, ৯৩৩, তিরমিযী ৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ৯৯৫, হাকিম ১/৫৪৯, ইরওয়া ৫, আহমাদ ১৭৩৬। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
আজানের জওয়াব শেষে আযানের দো‘আসমূহ
(১) আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে
দরূদ পড়বে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের
আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে।
কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার
রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’
হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন।
আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, কিয়ামতের
দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৫২৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান
শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’। (মিশকাত হা/৬৫৯)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে (ও
এর উত্তর দেয়ার ও দরূদ পড়ার পর) এ দু‘আ পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয়
হয়ে পড়ে। দু‘আ হলোঃ
‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ্
দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল
ফাযীলাহ্, ওয়াব্‘আসহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদা-নিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ্’’
[অর্থাৎ- হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ
আহবান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
দান কর ওয়াসীলা; সুমহান মর্যাদা ও প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও তাঁকে (মাক্বামে মাহমূদে),
যার ওয়া‘দা তুমি তাঁকে দিয়েছ।] কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত আবশ্যকীয়ভাবে
হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৫৯, বুখারী ৬১৪, নাসায়ী ৬৮০, আবূ দাঊদ ৫২৯, ইরওয়া ২৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২৩, তিরমিযী
২১১, ইবনু মাজাহ্ ৭২২, আহমাদ ১৪৮১৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে
দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের
দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের
দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের
অন্য দো‘আও রয়েছে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্ ৭২১, আহমাদ ১৫৬৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি ৬৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) আযানের দো‘আ পাঠের পর কালিমা
শাহাদাত পাঠ করতে হবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
মুয়াযযিনের আযান শুনে এই দু‘আ পড়বে,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহূ, রযীতু
বিল্লা-হি রববাওঁ ওয়াবি মুহাম্মাদিন রসূলান ওয়াবিল ইসলা-মি দীনা’’
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,
আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব,
দীন হিসেবে ইসলাম, রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানি ও
মানি) এর উপর আমি সন্তুষ্ট, তাহলে তার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৬১, মুসলিম ৩৮৬, আবূ দাঊদ ৫২৫, নাসায়ী ৬৭৯, তিরমিযী ২১০, ইবনু মাজাহ্ ৭২১, আহমাদ ১৫৬৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) সবশেষে আবার দরুদ পড়বে। কারন
হাদিসে আছে, রাসুল সাঃ এর উপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত সেই দোয়া ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
“আনাস রা. বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতক্ষণ রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরূদ
পড়া হবে না ততক্ষণ তা বাধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকবে (অর্থাৎ আল্লাহর নিকট পৌঁছবে না এবং
দুআও কবুল করা হয় না।) [ত্বাবরানী: ২০৩৫ শাইখ আলবানী
বলেন: অন্যান্য শাওয়াহেদ এর মাধ্যমে হাদিসটি হাসান]।
আযানের দো‘আয় বাড়তি বিষয়সমূহ পড়া যাবে না
আযানের দো‘আয় কয়েকটি বিষয় বাড়তিভাবে
চালু হয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করে বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার
নামে মিথ্যারোপ করল, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রকাশ থাকে যে, আযান একটি ইবাদত। এতে
কোনরূপ কমবেশী করা জায়েয
নয়। তবুও আযানের দো‘আয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য যোগ হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপ:
অতিরিক্তি শব্দ বা বাক্য পাঠ করা বিদআত।
(১) বায়হাক্বীতে (১ম খন্ড ৪১০ পৃ:)
বর্ণিত আযানের দো‘আর শুরুতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বে হাকক্বে
হা-যিহিদ দাওয়াতে’
(২) একই হাদীছের শেষে বর্ণিত ‘ইন্নাকা
লা তুখ্লিফুল মী‘আ-দ
(৩) ইমাম ত্বাহাভীর ‘শারহু মা‘আনিল
আছার’-য়ে বর্ণিত ‘আ-তে সাইয়িদানা মুহাম্মাদান’
(৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমে
ওয়াল লায়লাহ’তে ‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা’
(৫) রাফেঈ প্রণীত ‘আল-মুহার্রির’-য়ে
আযানের দো‘আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রাহেমীন’। (দ্রষ্টব্য:
আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩ পৃঃ ১/২৬০ ৬১; মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাত ২/১৬৩)।
(৬) আযান বা ইক্বামতে ‘আশহাদু আন্না
সাইয়েদানা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা। (ফিক্বহুস
সুন্নাহ পৃঃ ১/৯২)।
(৭) বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ
টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্ব না শাফা ‘আতাহূ
ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে।
যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায়
না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী ‘আতা
এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।
(৮) মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা, অতঃপর
শেষে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ, ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম
বলা।
আযানের অন্যান্য পরিত্যাজ্য বিষয়
(১) আযানের আগে ও পরে উচ্চৈঃস্বরে যিকরঃ জুম‘আর দিনে এবং অন্যান্য ছালাতে বিশেষ করে ফজরের আযানের আগে ও পরে বিভিন্ন মসজিদে মাইকে বলা হয়ঃ-
(ক) ‘বিসমিল্লাহ,আছ্ছালাতু ওয়াসসালামু
‘আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ.ইয়া হাবীবাল্লাহ, ইয়া রহমাতাল লিল ‘আলামীন। এভাবে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)কে সালাম দেওয়ার পরে সরাসরি আল্লাহকেই সালাম দিয়ে বলা হয়, আছ্ছালাতু ওয়াসসালামু
‘আলায়কা ইয়া রববাল ‘আলামীন’।
এটা বিদ‘আত তো বটেই , বরং
চরম মূর্খতা। কেননা আল্লাহ নিজেই
‘সালাম’। তাকে কে সালাম দিবে? তাছাড়া
হাদীছে আল্লাহকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাশাহহুদ’
অনুচ্ছেদ-১৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত
আদায় করতাম তখন এ দু‘আ পাঠ করতাম,
‘‘আসসালা-মু ‘আলাল্ল-হি ক্ববলা
‘ইবা-দিহী, আসসালা-মু ‘আলা- জিবরীলা, আসসালা-মু ‘আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু ‘আলা- ফুলা-নিন’’-
(অর্থাৎ- আল্লাহর ওপর সালাম তাঁর
বান্দাদের ওপর পাঠাবার আগে, জিবরীলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর ওপর সালাম। সালাম অমুকের
উপর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘আল্লাহর ওপর
সালাম’’ বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।
অতএব তোমাদের কেউ সালাতে বসে বলবে,
‘‘আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্
সলাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বইয়্যিবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারহমাতুল্ল-হি
ওয়াবার-কা-তুহু আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন’’
(অর্থাৎ-সব সম্মান, ‘ইবাদাত, উপাসনা
ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের ওপর সালাম)।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে
পৌঁছবে। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহু’’-
(অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,
আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান
দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৯০৯, হীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) (৮৩১, ৮৫৩, ১২০২, ৬২৩০, ৬২৬৫, ৬৩২৮, ৭৩৮১, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮৩-৭৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৯৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৯৯, তিরমিযী ২৮৯, নাসায়ী ১১৬২-৬৪, ১১৬৬-৭১, ১২৯৮; আহমাদ ৩৫৫২,
৩৬১৫, ৩৯০৯, ৩৯২৫, ৩৯৯৬, ৪০০৭, ৪০৫৪, ৪০৯০, ৪১০১, ৪১৪৯, ৪১৬৬, ৪১৭৮, ৪২৯৩, ৪৩৬৯, ৪৪০৮;
দারিমী ১৩৪০-৪১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালাতু রাহেমাকুমুল্লাহ’
বলে বারবার উঁচু স্বরে আহবান করা । (ইরওয়া ১/২৫৫)।
এতদ্ব্যতীতঃ
(গ) হামদ, না‘ত, তাসবীহ, দরূদ, কুরআন
তেলাওয়াত, ওয়ায, গযল ইত্যাদি শোনানো। অথচ কেবল মাত্র ‘আযান’ ব্যতীত এসময় বাকী সবকিছুই
বর্জনীয়। এমনকি আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালাত, আছছালাত’ বলে ডাকাও হযরত আব্দুল্লাহ বিন
ওমর (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ ‘বিদ‘আত’ বলেছেন। (তিরমিযী,
মিশকাত হা/৬৪৬-এর টীকা; ঐ, ইরওয়া হা/২৩৬, ১/২৫৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯৩)। হাদিসের মানঃ
যঈফ (Dai'f)।
তবে ব্যক্তিগতভাবে
যদি কেউ কাউকে ছালাতের জন্য ডাকেন বা জাগিয়ে দেন, তাতে
তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন।
(বুখারী হা/৫৯৫,‘ছালাতের সময়কাল’
অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৩৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৪ ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬)। মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৬-৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৬৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৭, তিরমিযী ৩১৬৩, নাসায়ী
৬১৮-২০, ৬২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৬৯, ইরওয়াহ ২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) ‘তাকাল্লুফ’ করাঃ যেমন-
আযানের দো‘আটি ‘বাংলাদেশ বেতারের’
কথক এমন ভঙ্গিতে পড়েন, যাতে প্রার্থনার আকুতি থাকে না। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
কারণ নিজস্ব স্বাভাবিক
সুরের বাইরে যাবতীয় তাকাল্লুফ বা ভান
করা ইসলামে দারুণভাবে অপছন্দনীয়। (রাযীন, মিশকাত হা/১৯৩; ‘রিয়া হ’ল ছোট শিরক’ আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫৩৩৪ ‘‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, ‘লোক দেখানো
ও শুনানো’ অনুচ্ছেদ-৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৫১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্ (তরিকা) অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের
পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ্
হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ,
যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক
দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রসূলের
সাথী ও দীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা
বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত
করে আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন।
(রযীন-মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৩, হিল্ইয়াহ্ ১/৩০৫-৩০৬, ইবনু ‘আবদুল
বার ২/৯৭)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(খ) মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
নবী (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের জন্য যে ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি আশঙ্কা করছি তা হলো
ছোট শিরক। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রসূল! ছোট শিরক কি? তিনি (সা.) বললেন, লোক
দেখানো ‘আমল।
আর ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ)
শুআবূল ঈমানে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, বান্দাদের ‘আমালের বিনিময়ের দিন আল্লাহ তা'আলা
ঐ সমস্ত লোকেদেরকে বলবেন, যাও তোমরা সেই সমস্ত লোকদের কাছে, যাদেরকে দেখিয়ে দুনিয়াতে
‘আমল করেছিলে আর লক্ষ্য করো তাদের নিকট থেকে কোন বিনিময় বা কোন কল্যাণ পাও কি না?
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৫৩৩৪, শুআবূল ঈমান ৬৮৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩২, আল মুজামুল কাবীর লিত তবারানী
৪১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) গানের সুরে আযান দেওয়াঃ গানের সুরে আযান দিলে একদা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) জনৈক মুওয়ায্যিনকে ভীষণভাবে
ধমক দিয়ে বলেছিলেন
إِنِّيْ لَأُبْغِضُكَ فِي ا للهِ ‘আমি তোমার সাথে অবশ্যই বিদ্বেষ করব আল্লাহর জন্য’।
(ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘আযান’ অধ্যায়,
মাসআলা ২১/৩, বুখারী ৭৫২৭, ৫০২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৯২, ২১৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৮, ২১০৪৬, মুসলিম
৭৯২, আবূ দাঊদ ১৪৭৩, নাসায়ী ১০১৭, আহমাদ ৭৬৭০, দারিমী ১৫২৯, শু‘আবূল ঈমান ১৯৫৬, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৭৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) বিপদে আযান দেওয়াঃ বালা মুছীবতের সময় বিশেষভাবে আযান দেওয়ারও কোন দলীল
নেই। কেননা আযান কেবল ফরয ছালাতের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কিছুর জন্য নয়।
(৫) এতদ্ব্যতীত শেষ রাতে ফজরের আযানের
আগে বা পরে মসজিদে মাইকে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন
তেলাওয়াত করা, ওয়ায করা ও এভাবে মানুষের
ঘুম নষ্ট করা ও রোগীদের
কষ্ট দেওয়া এবং তাহাজ্জুদে
বিঘ্ন সৃষ্টি করা কঠিন গোনাহের কাজ। (ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৯৩ ‘আযান’ অধ্যায়, মাসআলা ২১ (৫)।
(৬) আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানোঃ আযান ও এক্বামতের
সময় ‘মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনে বিশেষ দো‘আ সহ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো, আযান
শেষে দুই হাত তুলে আযানের দো‘আ পড়া কিংবা উচ্চৈঃ
স্বরে তা
পাঠ করা ও মুখে হাত মোছা ইত্যাদির কোন
শারঈ ভিত্তি নেই।
(ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘আযান’ অধ্যায়,
মাসআলা-২১/২, ১/৯২ পৃঃ; বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২২৫৫, টীকা ৪; ইরওয়া হা/৪৩৩-৩৪), আবূ
দাঊদ ১৪৯২, আহমাদ ১৭৯৪৩, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৩১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর
৩১০, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৩৯৯)। হাদিসের মানঃ যঈফ
(Dai'f)।
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনে শাহাদাত আঙ্গুলে চুম্বন করা
ও চোখে মাসাহ করা যাবে নাঃ
উক্ত আমল শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ
এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। যে বর্ণনাগুলো এসেছে, তা জাল বা মিথ্যা। যেমন-
খিযির (আঃ) বলেন, মুয়াযযিন যখন
‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন যে ব্যক্তি
বলবে, আমার প্রিয় ব্যক্তিকে স্বাগত,
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর কারণে আমার চক্ষু শীতল হয়েছে,
অতঃপর তার দুই হাতের বৃদ্ধা আংগুলে
চুম্বন করবে ও দুই চোখ মাসাহ করবে, সে কখনো
অন্ধ হবে না এবং তার চোখও ওঠবে না। (ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আল-জার্রাহী, কাশফুল
খাফা ২/২০৬ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৪)।
তাহক্বীক্বঃ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বর্ণনা।
এর কোন সনদই নেই। (আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, পৃঃ
৬০৫; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০)।
আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
যখন মুয়াযযিনের ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’বলা শুনতেন, তখন তিনি অনুরূপ
বলতেন। অতঃপর দুই শাহাদাত আঙ্গুলের পেটে চুম্বন করতেন এবং দুই চোখ মাসাহ করতেন। তখন
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার বন্ধু যা করল তা যদি কেউ করে,
তবে আমার শাফা‘আত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যাবে। (তাযকিরাতুল
মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৪)।
তাহক্বীক্বঃ এটি ডাহা মিথ্যা বর্ণনা।
এর কোন সনদ নেই। (আব্দুর রহমান আস-সাখাবী, আল-মাক্বাছিদুল
হাসানাহ ফী বায়ানি কাছীরিন মিনাল আহাদীছিল মুশ্তাহারা আলাল আলসিনাহ, পৃঃ ৬০৫; শাওকানী,
আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০)।
হাত তুলে আযানের দু‘আ পাঠ করা এবং শেষে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদার
রাসূলুল্লাহ’ বলা যবে নাঃ
আযান শেষ হওয়ার পর দুই হাত তুলে
দু‘আ করা ও উক্ত বাক্য বলার যে প্রচলন রয়েছে, শরী‘আতে তার কোন ভিত্তি
নেই। রাসূল (ছাঃ) কিংবা ছাহাবায়ে
কেরাম উক্ত আমল করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ
পাওয়া যায় না। এই আমল সত্বর পরিত্যাজ্য।
উল্লেখ্য যে, আযান ও ইক্বামতের
মাঝে দু‘আ করলে আল্লাহ সেই দু‘আ ফেরত দেন
না মর্মে ছহীহ
হাদীছ রয়েছে। তাই আযান ও ইক্বামতের
মাঝে সাধারণভাবে দু‘আ করা যাবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাত এর মধ্যবর্তী সময়ের
দু‘আ আল্লাহ তা‘আলার দরবার হতে ফেরত দেয়া হয় না।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৬৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১২, সহীহ আত্
তারগীব ২৬৫, আহমাদ ৩/১৫৫ ও ২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কাতার সোজা হওয়ার পর ইক্বামত দেওয়া
‘ইক্বামত’ অর্থ দাঁড়ানো। তাই ইক্বামত
হল, জামা‘আতে দাঁড়ানো ও কাতার সোজা করার ঘোষণা। কিন্তু বর্তমানে চালু হয়েছে কাতার সোজা
করার পর ইক্বামত দেওয়া। এই আমল থেকে বিরত থাকা
জরুরি।
আযানের অন্যান্য মাসায়েল
(১) মুওয়াযযিন ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে
উচ্চকণ্ঠে আযান দিবে। দুই কানে আংগুল প্রবেশ করাবে, যাতে আযানে জোর হয়।
‘হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ ও ফালাহ’ বলার সময় যথাক্রমে ডাইনে
ও বামে মুখ ঘুরাবে, দেহ নয়।
অসুস্থ হ’লে বসেও আযান দেওয়া যাবে।
(বায়হাক্বী, ইরওয়া ১/২৪২ পৃঃ)।
(২) যে ব্যক্তি আযান হওয়ার পর (কোন
জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল, সে ব্যক্তি আবুল ক্বাসেম [মুহাম্মাদ
(ছাঃ)]-এর অবাধ্যতা করল। (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৭৫ ‘জামা‘আত
ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ শা‘সা (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, এক লোক আযান শেষে মাসজিদ থেকে চলে গেলে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, এ লোক
আবুল ক্বাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৭৫, মুসলিম ৬৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) যিনি আযান দিবেন, তিনিই এক্বামত
দিবেন। অন্যেও দিতে পারেন।
অবশ্য মসজিদে নির্দিষ্ট মুওয়াযযিন থাকলে তার অনুমতি
নিয়ে অন্যের আযান ও এক্বামত দেওয়া উচিৎ। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে যে কেউ আযান
দিতে পারেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯০, ৯২ পৃঃ; মাসআলা-১৩,
২০)।
(৪) আযানের উদ্দেশ্য হবে স্রেফ আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোন মজুরী চাওয়া যাবে না। তবে বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ
করা যাবে। কেননা নিয়মিত ইমাম ও মুওয়াযযিনের
সম্মানজনক জীবিকার দায়িত্ব
গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের
উপরে অপরিহার্য কর্তব্য। (আবুদাঊদ ২৯৪৩-৪৫ মিশকাত, নায়লুল আওত্বার ২/১৩১-৩২)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত
করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে,
তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৩৭৪৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৩, সহীহ আল জামি ৬০২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ
ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(খ) ইবনুল সাঈদী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করলেন। আমি তা সমাপ্ত করলে
তিনি আমাকে বেতন প্রদানের নির্দেশ দেন। আমি বললাম, আমি আল্লাহর জন্যই এ কাজ করেছি।
তিনি বললেন, যা দেয়া হচ্ছে তা নাও। ‘আমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সরকারী দায়িত্বে ছিলাম। তিনি আমাকে পারিশ্রমিক প্রদান করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আল-মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রহঃ)
সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
যে আমাদের কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছে সে যেন (সরকারী খরচে) একজন স্ত্রী সংগ্রহ করে। খাদেম
না থাকলে সে যেন একটি খাদেম সংগ্রহ করে এবং বাসস্থান না থাকলে সে যেন একটি বাসস্থান
সংগ্রহ করে। যে ব্যক্তি এর অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করবে সে প্রতারক বা চোর গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) আযান ওযূ অবস্থায় দেওয়া উচিৎ।
তবে বেওযূ অবস্থায় দেওয়াও জায়েয আছে।
আযানের জওয়াব বা অনুরূপ যেকোন তাসবীহ, তাহলীল ও দো‘আসমূহ
এমনকি নাপাক অবস্থায়ও পাঠ করা জায়েয আছে।
(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২)।
(৬) এক্বামতের পরে দীর্ঘ বিরতি হ’লেও
পুনরায় এক্বামত দিতে হবে না। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৯,
৯২ পৃঃ ; ছালাতুর রাসূল, তাখরীজ : আব্দুর রঊফ, ১৯৮ পৃঃ)।
(৭) আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে
এলে কেবল এক্বামত দিয়েই জামা‘আত ও ছালাত আদায়
করবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ ‘আযান’ অধ্যায়, মাসআলা-১৮)।
(৮) ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের জন্য আযান আবশ্যিক নয়। কেবল এক্বামতই
যথেষ্ট হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৬৮৪, মুসলিম ৬৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৭, সহীহ ইবনু
হিব্বান ২০৬৯, তিরমিযী ৩১৬৩, নাসায়ী ৬১৮-২০, ৬২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫, ইরওয়াহ ২৯২,মির‘আত
২/৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি
কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি,
গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য
করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social
Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে
দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের
(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ
থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে
পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের
মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।
ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ
ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের
প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর
যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে।
এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল
থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি
মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন,
হাদিস নং ১৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনী ৩২০৩,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
====================================
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক
লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment