Search This Blog

Saturday, January 18, 2020

সালাতে তাশাহুদ বৈঠকে শাহাদত আঙ্গুল উঠা নামা করা ও দৃষ্টির অবস্থান? (দ্বন্দ্ব নিরসন)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সালাতে তাশাহুদ বৈঠকে শাহাদত আঙ্গুল উঠা নামা করা ও দৃষ্টির অবস্থান? (দ্বন্দ্ব নিরসন)

ভূমিকাঃ যাঁর কথা মতো আমরা মুসলমান হয়েছি, যিনি আমাদেরকে কালিমা, সালাত, সাওম, হজ্জ ও যাকাতসহ সর্ব প্রকার ইবাদত পালনের নিয়ম কানুন শিক্ষা দিয়েছেন, সেই শিক্ষা আমরা ভুলে গিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় পডে আজ বিদআতি পথে চলছি। এক সালাতের মধ্যেই কতো নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাশাহুদ বৈঠকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাহাদত আঙ্গুল উঠা নামা করার অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। আমরা পালন করি ঠিকই শুধু মাত্র তাশাহুদের শেষ দিকে এক বার আঙ্গুল তুলে। অথচ এক বার আঙ্গুল তোলার কোনো সহিহ হাদিস নেই। বিদআতিদের খপ্পরে পড়ে আজ আমরা ইসলামের মূল থেকে অনেক শাখা প্রশাখায় প্রবেশ করেছি। যাই হোক, কারো কথায় কান না দিয়ে নিজেরা সহিহ নিয়মের সহিহ হাদিস পড়ুন, পাশাপাশি জাল-জইফ হাদিস পড়ুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি রাসুল সাঃ এর দেখানো ইবাদত পালন করবেন নাকি বিদআতিদের পথে চলে নিজের ইমান আমল নষ্ট করে শূণ্য হাতে জাহান্নামে যাবেন।

এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা : ২০৮)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন,

“হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না”। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

উল্লেখিত দুইটি আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আমরা ইমান্দার ব্যক্তি হতে পারি তবে পুরোপুরি মুসলমান নই। তানাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মুসলমান হতে বললেন কেনো?

আমাদেরকে পুরোপুরি মুসলমান হতে গেলে কি করতে হবে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক চলতে হবে। রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে আমরা কোরআন পেয়েছি আর কোরআনের ব্যাখ্যার স্বরুপ হাদিস পেয়েছি। অতএব রাসুল (সাঃ) যা করতে বলেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমনঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” ( সুরা হাশর, আয়াত নং-৭)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব ২১ আয়াত)।

 আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। (সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা নূর ৬৩ আয়াত)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহের প্রতি বিমুখ, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭৬)।

হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ (হেদায়েত থেকে) অনেক দুরে সরে পড়বে।(সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮২,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫)।

আবূ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (আবুদাউদ ৪৬০৭)।

আবূ মুসলিম মতান্তরে আবূ ইয়াস সালামাহ ইবনু ‘আমর ইবনু আকওয়া’

রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও। সে বলল, ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো। একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি। (মুসলিম ২০২১)।

সালাতে তাশাহুদ বৈঠকে শাহাদত আঙ্গুল উঠা নামা করা ও দৃষ্টির অবস্থান সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

বসা অবস্থায় দৃষ্টিঃ

বসা অবস্থায় দৃষ্টি আপন কোলের দিকে থাকবে। যেমন: দুই সিজদাহর মাঝখানে দোয়া পড়তে হয়। এময় আপনার দৃষ্টি আপন কোলের দিকে থাকবে।  (ফৎওয়ায়ে আলমগীরি ১/৭৩ পৃষ্ঠা)।
তাশাহুদ পড়ার সময় দৃষ্টিঃ
সহীহ দলীল হচ্ছেঃ রাসূল (ছাঃ) যখন তাশাহুদের জন্য বসতেন শাহাদত আঙ্গুলের মাধ্যমে কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।
(ইবনে হিব্বান হা/-১৯৪৭; ইবনে খুযায়ামা হা/-৭১৯, সনদ সহীহ)।
শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা সর্বদা ইশারা করা ও দৃষ্টির অবস্থানঃ
তাশাহুদ পড়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কিংবা শেষ বৈঠকে ছালাম ফিরানো পর্যন্ত ডান হাতের শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা সর্বদা ইশারা করবে। এ সময় দৃষ্টি থাকবে আঙ্গুলের মাথায়।
(নাসাঈ হা/১০৬০,১২৭৫)।
দোয়া পড়ার সময় আঙ্গুলের দৃষ্টি যেন ইশারার বাইরে না যায়।
(আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত হা/৯১১, ৯১৭; নাসাঈ হা/১২৭৫)।
ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নড়ানো ঠিক নয়, যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে।
(মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭)।
বৈঠকে দো’আ পড়ার সময় ডান হাতের আঙ্গুল গুলিকে বন্ধ (৫৩ এর ন্যায় মুষ্টি বদ্ধ) রেখে কেবল তর্জনী (শাহাদৎ) আঙ্গুল তুলে রাখতে হবে ও আঙ্গুল দিয়ে (তাওহীদ বা) ক্বিবলার দিকে ইশারা করতে হবে এবং দৃষ্টিটা আঙ্গুলের উপর রাখতে হবে।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৬,৯০৭, আহমাদ, মিশকাত হা/৯১৭)।
কখনো বা ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল দু’টি বন্ধ রেখে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মিলিয়ে গোলকার বালার মত বানিয়ে তর্জনী হেলিয়ে (তাওহীদের প্রতি) ইশারা করতে হবে।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৮, আবু দাউদ, দারেমী, মিশকাত হা/৯১১)।
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, এই আঙ্গুল অর্থাৎ তর্জনী শয়তানের জন্য লোহার চেয়েও কঠিন। (আহমাদ, বায়হাক্বী, বাযযার)।
৫৩ এর ন্যায় মুষ্টি বদ্ধ, তিনি উহা নাড়াতেন এবং দোয়া করতেন হাদীসের এই দু’টি বাক্যই প্রমাণ করে দেয় উপরোক্ত নিয়মটি ভিত্তিহীন। হাদীসে এসেছে রাসূল(ছাঃ) দুই সিজদাহর মাঝেও আঙ্গুল নাড়তেন বা ইশারা করতেন। যেমন ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) যখন সালাতে বসতেন—- তিনি বলেন, তিনি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন। অন্য শব্দে বলা হয়েছে, যখন তিনি তাশাহুদে বসতেন।
(মুসলিম, মসজিদে নামাযের স্থান, অধ্যায় নামাযে বসার স্থান)।
ইমাম ত্বাহাভী বলেন, আঙ্গুল নাড়ানো ও ইশারা অব্যাহত রাখা সুন্নাত।
ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সালাতে কি আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবে? তিনি বলেন,
অবশ্যই। ইমাম মালেক ও অন্যান্যদের মত এটাই।
(মাসায়েল আনিল ইমাম আহমাদ ইবনু হানি)।
সাবেক সৌদি বোর্ড প্রধান, উসাইমীন (রহঃ) বহু আলোচনার পর বলেন, যখন আপনি দোয়া করবেন, উপরের দিকে ইঙ্গিত করবেন কারণ নবী (ছাঃ)বিদায় হজ্জে খুৎবা প্রদান করে বললেন, আমি কি পৌছিয়েছি? তারা বললেন. হ্যাঁ। তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো। এ দ্বারা প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তুর উপরে অবস্থান করেন। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত ফিতারাতীভাবে। বিবেক যুক্তি ও ঐক্যমতের এই ভিত্তিতে যখন আপনি আল্লাহ তায়ালাকে ডাকবেন, তার কাছে দোয়া করবেন তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন আর অন্য অবস্থায় তা স্থীর থাকবেন। তাশাহুদে বসে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো, শুধুমাত্র দু’আর সময় হবে, পুরা তাশাহুদের মধ্যে নয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি উহা নাড়াতেন এবং দোয়া করতেন”।
(ফাতহুর রব্বানী ৩/১৪৭, হাসান সনদে)।
এখন আমরা অনুসন্ধান করি তাশাহুদে দু’আর স্থানগুলোঃ
(১) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতিল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ।
(২) আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন।
(৩) আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ ।
(৪) আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।
(৫) আউযু বিকা মিন আযাবি জাহান্নাম (৬) ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি।
(৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।
(৮) ওয়া মিন ফিতনাতুল মাসীহিদ্দাজ্জাল।
এই আটটি স্থানে আঙ্গুল উপরে উঠাবে। কেননা দু’আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে। এগুলো ছাড়াও অন্য কোন দোয়া পাঠ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে।(ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম বঙ্গঃ পৃষ্ঠা-২৮০, উসাইমীন (রহঃ))।
নবী করীম (ছাঃ) দুই সিজদাহর মাঝখানে শাহাদত আঙ্গুল ইশারা করতেন।
(মুসনাদে আহমাদ ৪/২১০ পৃষ্ঠা)।
এটা হল দুই সিজদাহর মাঝের জলসা। (হেদায়াতুন নবী ৭৫ পৃষ্ঠা)
ইবনু আবযা (রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসূল (ছাঃ) ছালাতে তার শাহাদৎ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।  (আহমাদ হা/১৫৪০৫;সহীহ সনদে সিলসিলা সহিহাহ হা/৩১৮১)।
এখানেও প্রমাণিত হয় যে, তিনি দোয়ার সময় আঙ্গুল ইশারা করতেন।
আঙ্গুল ইশারা করার বিভিন্ন মতঃ
হানাফী মতে, ‘লা’বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল তুলতে হবে ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় তা রেখে দিতে হবে।
মালেকীর মতে, আত্তাহিয়্যাতু শুরু থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত আঙ্গুলটি ডানে ও বামে নাড়াতে হবে।
শাফেঈদের মতে, ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় একবার মাত্র ইশারা করতে হবে। হাম্বলীদের মতে, যখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ হবে তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে কিন্তু তা নাড়াবে না।
(ফিকাহুস সুন্নাহ ১/১৩৬ পৃষ্ঠা)।
ইমাম নববী বলেন, তাশাহুদে ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় ইশারা করতে হবে। সুবুলুস সালামে বলা হয়েছে, বায়হাক্বীর বর্ণনা অনুসারে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় উঠাতে হবে।
আল্লামা তীবি ইবনে উমর বর্ণিত একটি হাদীসের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় ইশারা করতে হবে, যাতে কথায় ও কাজে তাওহীদের সামঞ্জস্য হয়ে যায়।
মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী বলেন, হানাফী মতে ‘লা ইলাহা’ বলার সময় তুলতে হবে এবং ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার সময় রেখে দিতে হবে।
আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, ঐ সব মতের কোনটারই প্রমাণের আমি কোন সহীহ (হাদীস) দলীল পাইনি।(তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২৪২)।
আলবানী (রহঃ) বলেন,প্রচলিত আছে যে, ‘লা ইলা-হা’ বলার সময় উঠাতে হবে। এগুলো সবই ব্যক্তি মতামত। হদীসে এ গুলোর কোন দলীল নেই। এমনকি কোন হাদীসের গ্রন্থেও নেই। বরং হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, সালাম পর্যন্ত নাড়াতে থাকতে হবে।
(আলবানী, তাহক্বীক মিশকাত হা/৯০৬-এর টিকা দ্রঃ ১/২৮৫পৃঃ)
‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাতে হবে ও ‘ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাতে হবে বলে আমাদের সমাজে যে বিষয়টি চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই। কোন সহীহ দলীল নেই। ফৎওয়ায়ে আলমগীরী ৯৭ এবং তাহাতাবী ৪৩ পৃষ্ঠায় এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। অপর পক্ষে মুনিয়াতে বলা হয়েছে ইশারা করা মাকরুহ। (প্রচলিত মাযহাবের মতেও এটা নেই। আল ফিকাহুল ইসলামী ১/৭৬৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে আঙ্গুল এসময়ে ইশারা করতে হবে এবং একেবারে নামানো (মিলানো) যাবে না অর্ধ নিমিত অবস্থায় ধরে রাখতে হবে সালাত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত)। পিস টিভির আলোচকগণ বলেন, আঙ্গুল উঠিয়ে নামানো সহীহ, যঈফ ও জাল সনদে কোন বর্ণনা নেই। (শায়খ মুযাফ্ফর বিন মহসিন)।
আঙ্গুল অর্ধনিমিত অবস্থায় ধরে রাখতেন, নাড়াতেন না মর্মে বর্ণিত হাদীসের সনদ ভিত্তিহীন ও যঈফ। (যঈফ আবূ দাউদ হা/৯৮৯, যঈফ নাসাঈ হা/১২৭০)।
ভিন্ন মতের যুক্তি
তাশাহুদের সময় আঙ্গুল নাড়াচাড়া করা যাবে কি?
প্রশ্নঃ হুজুর, আসসালামু আলাইকুম। তাশাহুদের সময় আঙ্গুল নাড়াচাড়া করা কি ফরজ, ওয়াজিব নাকি সুন্নাত? এর সঠিক পদ্ধতি কি? জানালে উপকৃত হব।
উত্তর দিয়েছেন-
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী
umyrkobbadi@gmail.com
জবাব:  
এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, তাশাহহুদের সময় তাওহীদের কালিমা তথা ﻟَﺎﺇﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ পাঠ করার সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা সুন্নাত। পদ্ধতি এই যে, আঙ্গুল উঠিয়ে আবার নামিয়ে নিবে, আঙ্গুল উঠিয়ে ধরে রাখবে না কিংবা ধরে রেখে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করবে না।
কেননা, এসম্পর্কে যত হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে কেবল আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করার কথা আছে, এর কোনোটিতে আঙ্গুল নাড়ানোর কথা নেই। যেমন, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০ এ এসেছে, أَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ ‘শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেছেন’, সহীহ মুসলিম ১৩৩৭ হাদীস নং এ এসেছে, وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ ‘আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করেছেন’, ১৩৩৮ নং হাদীসে এসেছে, وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ ‘শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেছেন’। মোটকথা, এভাবে এসম্পর্কীয় প্রায় বিশটি বর্ণনা আছে, যেগুলোতে কেবল ইশারা করার কথা আছে, আঙ্গুল নাড়ানোর কথা নেই। উপরন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
 كان النبي صلى الله عليه وسلم يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها রাসূলুল্লাহ  দুআ করার (অর্থাৎ, তাশাহুদ পড়ার) সময়ে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। আর তিনি এসময়ে আঙ্গুল নাড়াতেন না। (আবু দাউদ ৯৮৯ সুনানে নাসাঈ কুবরা ১১৯৩ বাইহাকী ২/১৩১ মুসান্নাফ আবদরুরাযযাক ৩২৪২ মুসনাদে আবী আওয়ানা ১৫৯৪ আততালখীসুলহাবীর ৪০৩)
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. বর্ণিত হাদীসটির স্তর : সহীহ। ইমাম নববী রহ. (আলমাজমূ’ ৩/৪৫৪) বলেন, إسناده صحيح এর সনদ সহীহ। শায়েখ হায়সামী রহ. বলেন, সনদের রাবীগণ সিক্বা  (মাযমাউজ জাওয়ায়িদ ২/১৪৩)। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান  (তাখরীজে মিশকাতুল মাসাবীহ ১/৪১১)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদের সময়ে ইশারা করতে গিয়ে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করবে না।
দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, উপরোক্ত নিয়মের বিপরীতে কেউ কেউ শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে থাকেন। তারা দলীল হিসেবে নাসাঈ বর্ণিত এ হাদীস পেশ করে থাকেন–ﺛُﻢَّ ﻗَﺒَﺾَ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻَﺎﺑِﻌِﻪِ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺣَﻠْﻘَﺔً، ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺇِﺻْﺒَﻌَﻪُ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻬَﺎ রসূলুল্লাহ  দু’টি আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্ত তৈরি করলেন আর আঙ্গুল উঠালেন। আমি দেখেছি তিনি সেটা নাড়াচাড়া করছেন; তা দ্বারা দুআ করছেন। (নাসাঈ ৮৯২)
হাদীসটি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য : এই হাদীসের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে খুযাইমা রহ. সহীহ ইবনে খুযাইমা ৭১৪ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন,ﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﺧْﺒَﺎﺭِ « ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ » ﺇِﻟَّﺎ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺨَﺒَﺮِﺯَﺍﺋِﺪٌ ﺫِﻛْﺮُﻩُ শুধু এই হাদীসটি ব্যতীত কোন হাদীসের মধ্যে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি নেই। এটা এ হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন,يحتمل أن يكون المراد بالتحريك الإشارة بها لا تكرير تحريكها  حتى لا يعارض حديث ابن الزبير আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়। (সুনানে বায়হাকী কুবরা ২৬১৫)
শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৭০ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন, ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺩﻭﻥ ﻗﻮﻟﻪ :  ‘ﻓﺮﺃﻳﺘﻪ ﻳﺤﺮﻛﻬﺎ ﻳﺪﻋﻮ ﺑﻬﺎ’  ﻓﻬﻮﺷﺎﺫ ﺍﻧﻔﺮﺩ ﺑﻪ ﺯﺍﺋﺪﺓﻭﻫﻮ ﺍﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ -ওয়াইল বিন হুজর রাযি.-এর হাদীসটি সহীহ। তবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি শাজ (বিরল)। কেননা, আছেম বিন কুলাইবের ছাত্রদের মধ্যে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ এঅংশটি বর্ণনা করেন নি।
আল্লামা ইবনে খুযাইমা রহ. ইমাম বায়হাকী রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউতের মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, এ হাদীসে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি সহীহ নয়। অথবা ওই বাক্য দ্বারা একবার নেড়ে ইশারা করা উদ্দেশ্য; বারবার নাড়াচাড়া করা উদ্দেশ্য নয়।
হাদিসসমূহ
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী / গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) / অধ্যায়ঃ ২/ সালাত
হাদিস নম্বরঃ ৯৮৭ | 987 | ۹۸۷
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৭। ‘আলী ইবনু ‘আবদুর রহমান আল-মু‘আবী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে সলাতের মধ্যে নুড়ি পাথর দিয়ে অনর্থক নাড়াচাড়া করতে দেখলেন। অতঃপর যখন তার সলাত শেষ হলো তিনি আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতে যা করতেন তুমিও তাই করবে। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতে কি করতেন? তিনি বললেন, সলাতরত অবস্থায় তিনি যখন বসতেন তখন তাঁর ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর রাখতেন এবং সব আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন আর বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের (শাহাদাত) অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন, আর বাম হাতের তালু বাম পায়ের উরুর উপর রাখতেন।[1]
সহীহ : মুসলিম।
[1] মুসলিম (অধ্যায় : মাসাজিদ, অনুঃ সলাতে বৈঠক করার নিয়ম), মালিক (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ জালসা বা বৈঠক করা, হাঃ ৪৮) উভয়ে মুসলিম ইবনু আবূ মারইয়াম হতে।
মাসআলাহ : তাশাহহুদে আঙ্গুল উত্তোলন ও নাড়ানো
(১) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন এবং ডান হাতের সবগুলো আঙ্গুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন। [মুসলিম, আবূ ‘আওয়ানাহ ও ইবনু খুযাইমাহ। হাদীসটি হুমাইদী স্বীয় মুসনাদে- (১৩১/১) এবং আবূ ই‘য়ালা (২৭৫/১) ইবনু ‘উমার থেকে সহীহ সনদে এ বর্ধিত অংশটুকু বর্ণনা করেন যে, ‘‘এটি শয়তানকে আঘাতকারী, কেউ যেন এমনটি করতে না ভুলে, (এই বলে) হুমাইদী স্বীয় অঙ্গুলি খাড়া করলেন, হুমাইদী বলেন, মুসলিম ইবনু আবূ মারইয়াম বলেছেন, আমাকে জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি স্বপ্নে নাবীগণকে সিরিয়ার এক গীর্জায় স্বাকারে সলাত আদায় অবস্থায় এমনটি করতে দেখেছেন (এই বলেন) হুমাইদী স্বীয় অঙ্গুলি উঠান।’’ আলবানী (রহঃ) বলেন, এটি একটি দুষ্প্রাপ্য অজানা উপকারী তথ্য, এর সানাদ ঐ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সহীহ]
(২) অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করা কালে কখনও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার উপর রাখতেন। (মুসলিম ও আবূ ‘আওয়ানাহ)
(৩) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো উক্ত অঙ্গুলিদ্বয় দ্বারা গোলাকৃতি করতেন এবং অঙ্গুলি উঠিয়ে নাড়ানো পূর্বক দু‘আ করতেন। [আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনুল জারুদ ‘আল-মুনতাক্বা’ (২০৮), ইবনু খুযাইমাহ (১/৮৬/১-২), সহীহ ইবনু হিব্বান (৪৮৫) সহীহ সনদে। ইবনু মুলাক্বিন একে সহীহ বলেছেন (২৮/২)। অঙ্গুলি নাড়ানোর হাদীসের পক্ষে ইবনু ‘আদীতে সাক্ষ্যমূলক বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে (২৮৭/১)। ‘উসমান ইবনু মুকসিম বর্ণনাকারী সম্পর্কে বলেন, তিনি এমন পর্যায়ের যঈফ রাবী যার হাদীস লিখা যাবে। হাদীসের শব্দ ‘এর মাধ্যমে দু‘আ করতেন’ এর মর্ম সম্পর্কে ইমাম ত্বাহাবী বলেন, এতে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, এটি সলাতের শেষাংশে ছিল]
(৪) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ এটি (তর্জনী) শয়তানের বিরুদ্ধে লোহা অপেক্ষা কঠিন। [আহমাদ, বাযযার, আবূ জা‘ফার, বাখতূরী ‘আল-আমালী’ (৬০/১), ত্বাবারানী ‘আদ্দু‘আ’ (ক্বাফ৭৩/১), ‘আবদুল গনী মাক্বসিদী ‘আস-সুনান’ (১২/২) হাসান সনদে, রুইয়ানী তার মুসনাদ (২৪৯/২) এবং বায়হাক্বী]
(৫) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ (এটা পরিত্যাগের উপরে) একে অপরকে জবাবদিহি করতেন অর্থাৎ অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার বেলায় তারা এমনটি করতেন। [ইবনু আবূ শায়বাহ (২/১২৩/২) হাসান সনদে]
(৬) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় তাশাহহুদেই এই ‘আমাল করতেন। (নাসায়ী ও বায়হাক্বী সহীহ সনদে)
(৭) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দুই অঙ্গুলি দিয়ে দু‘আ করতে দেখে বললেনঃ একটি দিয়ে কর, একটি দিয়ে কর এবং তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। [ইবনু আবূ শায়বাহ (১২/৪০/১, ২/১২৩/২), নাসায়ী, ইমাম হাকিম একে সহীহ প্রমাণ করেছেন এবং ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন এবং এর সাক্ষ্যমূলক বর্ণনা ইবনু আবূ শায়বাহর নিকট রয়েছে]
এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত ও পর্যালোচনাঃ
ইমাম নাববী বলেনঃ তাশাহহুদের ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় ইশারা করতে হবে। সুবুলুস সালাম প্রণেতা বলেনঃ বায়হাক্বীর বর্ণনানুসারে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় এরূপ করতে হবে। আল্লামা ত্বীবী ইবনু ‘উমার বর্ণিত একটি হাদীসের বরাত দিয়ে বলেনঃ ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় ইশারা করতে হবে, যাতে কথায় ও কাজে তাওহীদের সামঞ্জস্য হয়ে যায়। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানফী বলেনঃ হানাফী মতে ‘লা ইলাহা’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল তুলতে হবে এবং ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় তা রেখে দিতে হবে। আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেনঃ ঐসব মতের কোনটারই প্রমাণে আমি কোন সহীহ হাদীস পাইনি। (দেখুন, তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২৪২)
উল্লেখ্য, শাফিঈদের মতেঃ ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙ্গুল দিয়ে একবার ইশারা করতে হবে। মালিকীদের মতেঃ আত্তাহিয়্যাতুর শুরু থেকে সালাম পর্যন্ত আঙ্গুলটিকে ডানে ও বামে নাড়াতে হবে। আর হাম্বালীদের মতেঃ যখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ হবে তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে, কিন্তু তা নাড়াবে না। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭০, আইনী তুহফা)
সলাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রন্থে রয়েছেঃ তাশাহহুদের বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর কিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে- (মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৬, ৯০৭)। সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে- (মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৭-৯০৮, আবূ দাউদ, নাসাঈ, দারিমী)। ইশারার সময় আঙ্গুল সামান্য হেলিয়ে উঁচু রাখা যায়- (নাসাঈ হা/১২৭৫)। একটানা নাড়াতে গেলে এমন দ্রুত নাড়ানো উচিত নয়, যা পাশের মুসল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়- (মুত্তাঃ মিশকাত হা/৭৫৭, মিরআত ১/৬৬৯)। ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ‘ইল্লাল্লা-হু’ বলার সময় আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই- (তাহক্বীক্ব মিশকাত অনুঃ ‘তাশাহহুদ’ হা/৯০৬, টিকা নং ২)। মুসল্লীর নযর ইশারা বরাবর থাকবে। তার বাইরে যাবে না- (আহমাদ, আবূ দাউদ, মিশকাত হা/৯১১, ৯১২, ৯১৭)।
* হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, তখন বাম ঊরূর উপর বাম হাত এবং ডান ঊরূর উপর ডান হাত রাখতেন। ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইংগিত করতে থাকতেন। এ সময় আঙ্গুলটি পুরোপুরি দাঁড় করাতেন না, আবার নিচু করেও রাখতেন না, বরং উপরের দিকে ঈষৎ উঠিয়ে রাখতেন এবং নাড়াতে থাকতেন। বুড়ো আঙ্গুল মধ্যমার উপর রেখে একটা বৃত্তের মতো বানাতেন আর শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) উঁচিয়ে দু‘আ করতে থাকতেন এবং সেটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখতেন। এ সময় বাম ঊরূর উপর বাম হাত বিছিয়ে রাখতেন। (দেখুন, যাদুল মা‘আদ)
তিনি দুই সাজদাহর মাঝখানের বৈঠকেও অনুরূপ করতেন। তিনি শাহাদাত অঙ্গুলি উপরের দিকে উঠিয়ে দু‘আ পড়তে থাকতেন এবং সেটিকে নাড়াতেন। এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)।
আবূ দাউদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর থেকে এ সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ পড়ার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতে থাকতেন, নাড়াতেন না।’’
এই ‘নাড়াতেন না’ কথাটি পরবর্তীতে কেউ (কোন বর্ণনাকারী) বাড়িয়ে বলেছেন বলে মনে হয়। কারণ এ কথাটুকুর বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থেও ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-এর সূত্রে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি এই বর্ধিতাংশ অর্থাৎ ‘নাড়াতেন না’ কথাটি উল্লেখ করেননি। বরং তাতে তিনি এভাবে বলেছেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সলাতে বসতেন তখন বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর রাখতেন। ডান হাত ডান উরূর উপর রাখতেন এবং তর্জনী দিয়ে ইশারা করতেন।’’ আবূ দাউদের হাদীসে যে ‘নাড়াতেন না’ কথাটি আছে, সেটা এখানে নেই। তাছাড়া আবূ দাউদের হাদীসের এই ‘নাড়াতেন না’ কথাটি যে সলাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে কথা বলা হয়নি। এক্ষেত্রে ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)-এর হাদীস মজবুত ও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। তাছাড়া আবূ হাতিম তাঁর সহীহ সংকলনে বলেছেন, এটি সহীহ হাদীস।
* শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ মুসল্লীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে তাশাহহুদের সময় ডান হাতের অঙ্গুলিগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করবে এবং দু‘আকালে তাওহীদের ইশারা স্বরূপ তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে ও হালকাভাবে নাড়াবে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায, ১১/১৮৫)
* শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেছেনঃ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দু‘আর সময় হবে। পুরো তাশাহহুদে নয়। যেমনটি হাদীসে এসেছেঃ ‘‘তিনি তা নাড়াতেন ও দু‘আ করতেন।’’- (ফাতহুর রব্বানী-৩/১৪৭, সানাদ হাসান)। এর কারণ হচ্ছেঃ দু‘আ আল্লাহর কাছেই করা হয়। আর মহান আল্লাহ আসমানে আছেন। তাই তাঁকে আহবান করার সময় উপরে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা কি নিরাপদে আছো সেই সত্ত্বা থেকে যিনি আসমানে আছেন...’’- (সূরাহ মুলক : আয়াত ১৬-১৭)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর আমানতদার’’- (বুখারী ও মুসলিম)। এ কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জে খুত্ববাহ্ প্রদান করে বলেন, ‘‘আমি কি পৌঁছিয়েছি?’’ তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুল উঠালেন এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন এবং বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো।’’ এর দ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ সকল বস্ত্তর উপরে অবস্থান করেন। এ বিষয়টি বিবেক যুক্তি ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সুষ্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত। এ ভিত্তিতে আপনি যখনই আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকবেন তাঁর কাছে দু‘আ করবেন, তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন। আর অন্য অবস্থায় তা স্থির রাখবেন।
এখন আমারা অনুসন্ধান করি তাশাহহুদে দু‘আর স্থানগুলোঃ (১) আসসালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। (২) আসসালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস্ সলিহীন। (৩) আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ। (৪) আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ। (৫) আ‘উযুবিল্লাহি মিন ‘আযাবি জাহান্নাম। (৬) ওয়া মিন ‘আযাবিল ক্বাবরি। (৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাত। (৮) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল। এ আটটি স্থানে আঙ্গুল নাড়াবে এবং তা আকাশের দিকে উত্থিত করবে। এগুলো ছাড়া অন্য কোন দু‘আ পাঠ করলেও আঙ্গুল উপরে উঠাবে। কেননা দু‘আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম, ২৫৪ নং প্রশ্নের জবাব)
* শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ সুন্নাত হলো সালাম ফিরানো পর্যন্ত আঙ্গুলের ইঙ্গিত ও দু‘আ চালু রাখা, কেননা দু‘আর ক্ষেত্র সালামের পূর্বে, এটি ইমাম মালিক ও অন্যান্যদের গৃহিত মতও বটে। ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, সলাতে কি মুসল্লী ব্যক্তি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কঠিনভাবে। এটি ইবনু হানি স্বীয় মাসায়িলি আনিল ইমাম আহমাদ গ্রন্থে (৮০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন।
আমি বলতে চাইঃ এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদে আঙ্গুলি নাড়ানো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুসাব্যস্ত সুন্নাত। যার উপরে ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য হাদীসের ইমামগণ আমল করেছেন। অতএব যেসব লোকেরা এ ধারণা পোষণ করেন যে, এটি সলাতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অনর্থক কাজ এবং এ কারণে সাব্যস্ত সুন্নাত জানা সত্ত্বেও অঙ্গুলি নাড়ায় না- উপরন্তু আরবী বাকভঙ্গির বিপরীত ব্যাখ্যার অপচেষ্টা চালায় যা ইমামগণের বুঝেরও বিপরীত, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে। আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তাদের কেউ এই মাসআলাটি ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে হাদীস বিরোধী কথায় ইমামের সাফাই গায় এই যুক্তিতে যে, ইমামের ভুল ধরা তাকে দোষারোপ ও অসম্মান করার নামান্তর। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা সে কথা ভুলে গিয়ে এই সুসাব্যস্ত ও প্রমাণিত হাদীস পরিত্যাগ করে এবং এর উপর ‘আমালকারীদেরকে বিদ্রূপ করে। অথচ সে জানুক বা না জানুক তার এ বিদ্রূপ ঐসব ইমামদেরকেও জড়াচ্ছে যাদের বেলায় তার অভ্যাস হলো বাত্বিল দ্বারা হলেও তাদের সাফাই গাওয়া। বস্ত্তত এক্ষেত্রে তাঁরা (ঐসব ইমামগণ) সুন্নাত সম্মত কথাই বলেছেন। বরং তার এ বিদ্রূপ স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গড়াচ্ছে। কেননা তিনিই তো আমাদের নিকট এটি নিয়ে এসেছেন। অতএব এটিকে কটাক্ষ করা মুলতঃ তাঁকে কটাক্ষ করাই নামান্তর। আর ইঙ্গিত করার পরেই আঙ্গুল নামিয়ে ফেলা অথবা ‘লা’ বলে উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লাহু’ বলে নামানো- হাদীসে এগুলোর কোনই প্রমাণ নেই। বরং (‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল উঠিয়ে তা নাড়ানোর মাধ্যমে দু‘আ করতেন’’- সহীহ সনদে বর্ণিত) এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী তা হাদীস বিরোধী কাজ। এমনিভাবে যে হাদীসে আছে যে, তিনি অঙ্গুলি নাড়াতেন না- এ হাদীস সনদের দিক থেকে সাব্যস্ত নয়। যেমন আমি তা যঈফ আবূ দাউদে তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ করেছি। আর যদি সাব্যস্ত ধরেও নেয়া হয় তথাপি এটি হচ্ছে না বোধক। হাঁ বাচক না বাচকের উপর প্রাধান্যযোগ্য- যা আলিম সমাজে জানা-শুনা বিষয়। সুতরাং অস্বীকারকারীদের কোন প্রমাণ অবশিষ্ট থাকলো না। (দেখুন, সিফাতু সলাতিন্ নাবী- সাঃ)
হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আলী ইবনু আবদুর রহমান মু'আবী (রহঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৯৮৮ | 988 | ۹۸۸
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৮। ‘আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতে (তাশাহহুদ) বৈঠকে তাঁর বাম পা ডান উরু ও নলার নীচে রাখতেন এবং ডান পা বিছিয়ে দিতেন, বাম হাত বাম হাটুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন ও (শাহাদাত) আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। বর্ণনাকারী ‘আফফান বলেন, ‘আবদুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ আমাদেরকে শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করে দেখিয়েছেন।[1]
সহীহ : মুসলিম।
[1] মুসলিম (অধ্যায় : মাসাজিদ, অনুঃ সলাতে বৈঠক করার নিয়ম) মুহাম্মাদ ইবনু মা‘মার ইবনু রবঈ আত-তায়মী হতে ইবনু যিয়াদ থেকে।
হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনুয্-যুবায়র (রাঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৯৮৯ | 989 | ۹۸۹
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাতে দু‘আ পাঠকালে আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন, অবশ্য আঙুল নাড়তেন না।
দুর্বল।
ইবনু জুরাইজ বলেন, ‘আমর ইবনু দীনারের বর্ণনায় একথাও আছে যে, ‘আমির তাকে জানান যে, তার পিতা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু‘আর সময় আঙুল দ্বারা ইশারা করতে দেখেছেন এবং তখন তিনি তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন।[1]
সহীহ।
[1] নাসায়ী (অধ্যায় : সাহু, অনুঃ বাম হাত হাঁটুর উপর বিছিয়ে দেয়া, হাঃ ১২৬৯), বায়হাক্বী (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা, ২/১৩১, ১৩২), তাবরীযী একে ‘মিশকাত’ গ্রন্থে সলাত অধ্যায়ে তাশাহহুদ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন (হাঃ ৯১২)।
হাদিসের মানঃ  সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
বর্ণনাকারী রাবীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনুয্-যুবায়র (রাঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৯৯০ | 990 | ۹۹۰
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৯০। ‘আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তার পিতার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি (শাহাদাত আঙুলের) ইশারাকে অতিক্রম করতো না। আর হাজ্জাজ বর্ণিত হাদীসটি অধিক পরিপূর্ণ।[1]
হাসান সহীহ।
[1] নাসায়ী (অধ্যায় : সাহু, অনুঃ ইশারা করার সময় দৃষ্টি রাখার স্থান, হাঃ ১২৭৪), আহমাদ (৩/৪) উভয়ে ইয়াহইয়া হতে।
হাদিসের মানঃ  হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারী রাবীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনুয্-যুবায়র (রাঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৯৯১ | 991 | ۹۹۱
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৯১। মালিক ইবনু নুমাইর আল-খুযাঈ (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করে যে, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সলাতে তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে শাহাদাত আঙুল অর্ধনমিত অবস্থায় উচিয়ে রাখতে দেখেছি। [1]
দুর্বল।
[1] নাসায়ী (অধ্যায় : সাহু, অনুঃ ইশারার সময় তর্জনী অঙ্গুলি অর্ধনমিত করা, হাঃ ১৯৭৩)। এর সনদে মালিক ইবনু নুমাইর আল-খুযাঈ রয়েছে। তার সম্পর্কে হাফিয ‘আত-তাক্বরীব’ গ্রন্থে বলেন : মাকবুল।
হাদিসের মানঃ  যঈফ (Dai'f)
সহিহ মতঃ উপরোক্ত হাদিসসমূহ পর্যালোচনা করে এটাই প্রমাণিত যে, বসা অবস্থায় দৃষ্টি আপন কোলের দিকে থাকবে।
সালাতের শেষ বৈঠকে তথা তাশাহুদ পড়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতো দোয়া পড়া হবে তথা সালাম ফিরানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বৃদ্ধাঙ্গলি ও মধ্যমা আঙ্গুল গোলাকৃতি পাকিয়ে শাহাদাত আঙ্গুল উপরে উঠাতে হবে ও নীচে নামাতে হবে (ধীর স্থিরভাবে)। এসময় দৃষ্টি শাহাদাত আঙ্গুলের মাথার দিকে থাকবে।
আমরা নিচের লিংকে ক্লিক করে দেখবো-মক্কার ইমাম সাহেব কিভাবে তাশাহুদে শাহাদাত আঙ্গুল উঠা নামা করছেন।

ভন্ড ও বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের করুণ পরিনতির দলীলসমূহঃ
১। হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।
২। যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)।
৩। সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (কোরআন-৪:১১৫)।
৪। “তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ  করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন। (বাকারা-৮৫)।
৫। “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।
৬। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি)  কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৭। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।
আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান ইব্‌নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্‌ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) - কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪, সহিহ বুখারী-হাদিস নং-৭০৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৮। “হোজায়ফা  (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম সমাজে এমন লোকদের আবির্ভাব হইবে যাহারা আমার নীতি ছাড়া অন্য নীতিও অবলম্বন করিবে। তাহাদের কোন কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ মন্দও দেখিতে পাইবে।”(বুখারী)।
৯। “যে ব্যক্তি নিজের মতবাদকে কেন্দ্র করে তার নিয়ন্ত্রনে কোরআনের ব্যাখ্যা করে- যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে স্বীয় মতবাদ স্থির করে না; বরং স্বীয় মতবাদের  নির্দেশ  অনুসারে কোরআনের ব্যাখ্যা করে, শাব্দিক অর্থে ঐ ব্যাখ্যা শুদ্ধ হলেও বস্তুত তা ভুল পরিগণিত।” (মেশকাত)।
১০। নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন: হযরত হারিসুল আশয়ারী (রঃ)হতে বর্ণিতঃ
নবি করিম সা: ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি (১) জামায়াত বদ্ধ হবে (২) নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে (৩) তার আদেশ মেনে চলব (৪) আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করবে (৫) আর আল্লাহর পথে জিহাদ করবে, যে ব্যক্তি ইসলামি সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত দূরে সরে গেল, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল, তবে সে যদি সংগঠনে প্রত্যাবর্তন করে তো স্বতন্ত্র কথা। আর যে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের নিয়ম নীতির দিকে (লোকদের) আহবান জানায় সে জাহান্নামী। যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)।
১১। আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।
১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
 তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
তিরমিযী ২৬৪৯, ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮।
১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)-আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২।
১৪। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
 তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী ১০০, ৭৩০৭, মুসলিম ২৬৭৩, তিরমিযী ২৬৫২, ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯)
১৫। কা’ব বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (তিরমিযী ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৬। আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (বুখারী ১০৬, মুসলিম ২)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৭। সালামাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (বুখারী ১০৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
১৮। মুগীরাহ বিন শু’বাহথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার পক্ষ থেকে কোন এমন হাদীস বর্ণনা করে যার বিষয়ে সে মনে করে যে তা মিথ্যা, তাহলে সে (বর্ণনাকারী) মিথ্যাবাদীদের একজন।” (মুসলিম, সহীহুল জামে’ ৬১৯৯)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
১৯।  আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে (বিদআতী পির-অলি ও আলেম), যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে, যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ পুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম ১৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২০। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আখেরী যামানায় বহু ধোকাবাজ মিথ্যাবাদী হবে; যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা তোমরা এবং তোমাদের বাপদাদারাও কোন দিন শ্রবণ করেনি। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেন তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে।” (মুসলিম ১৬)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
২১। উক্ত আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ১১০, ৬১৯৭, মুসলিম ৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২২। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “বিনা ইল্মে যাকে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফতোয়া দ্বারা সে ভুল কর্ম করে) তবে তার পাপ ঐ মুফতীর উপর এবং যে ব্যক্তি তার ভাইকে এমন পরামর্শ দেয় অথচ সে জানে যে তার জন্য মঙ্গল অন্য কিছুতে আছে, তবে সে ব্যক্তি তার খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) করে।” (আবূ দাঊদ ৩৬৫৯, হাকেম ৩৫০, সহীহুল জামে’ ৬০৬৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৩। আবূ সাঈদ খুদরীথেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তার দ্বারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর, তাদের পূর্বে পূর্বে যারা কুরআন শিক্ষা করে তার দ্বারা দুনিয়া যাচনা করবে। যেহেতু কুরআন তিন ব্যক্তি শিক্ষা করে; প্রথমতঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা বড়াই করবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে তার দ্বারা উদরপূর্তি করবে এবং তৃতীয়তঃ সেই ব্যক্তি যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে তেলাঅত করবে।’ (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২৬৩০, সিঃ সহীহাহ ২৫৮)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৪। আবু দারদা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।” (বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৫। জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন শাস্তি ভোগ করান।” (আহমাদ ৪/৩৬৪, আবূ দাউদ ৪৩৩৯, ইবনে মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, সহীহ আবূ দাউদ ৩৬৪৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৬। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহবান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।” (মুসলিম ৬৯৮০ প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৭। আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (বুখারী ৩২৬৭, মুসলিম ৭৬৭৪)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৮। আনাস (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
২৯। উমার বিন খাত্তাব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “ইসলাম বিজয় লাভ করবে। যার ফলশ্রুতিতে বণিকদল সমুদ্রে বাণিজ্য-সফর করবে। এমন কি অশ্বদল আল্লাহর পথে (জিহাদে) অবতরণ করবে। অতঃপর এমন একদল লোক প্রকাশ পাবে; যারা কুরআন পাঠ করবে (দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে ক্বারী ও আলেম হবে)। তারা (বড়াই করে) বলবে, ‘আমাদের চেয়ে ভালো ক্বারী আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় আলেম আর কে আছে? আমাদের চেয়ে বড় ফকীহ (দ্বীন-বিষয়ক পন্ডিত) আর কে আছে?’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাগণের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের মধ্যে কি কোন প্রকারের মঙ্গল থাকবে?” সকলে বলল, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’তিনি বললেন, “ওরা তোমাদেরই মধ্য হতে এই উম্মতেরই দলভুক্ত। কিন্তু ওরা হবে জাহান্নামের ইন্ধন।”(ত্বাবারানীর আউসাত্ব ৬২৪২, বাযযার, সহীহ তারগীব ১৩৫)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩০। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
“তোমরা অনুসরণ কর, নতুন কিছু রচনা করো না। কারণ তোমাদের জন্য তাই যথেষ্ট। আর তোমরা পুরাতন পন্থাই অবলম্বন কর।” (সহীহ, সিলসিলা যায়ীফাহ ২/১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩১। আলী বিন আবী তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে নিজ পিতামাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন দুষ্কৃতকারী বা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় এবং আল্লাহর অভিসম্পাত সেই ব্যক্তির উপর যে ভূমির (জমি-জায়গার) সীমা-চিহ্ন পরিবর্তন করে।” (মুসলিম ৫২৪০নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩২। আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ---ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (মুসলিম ৪০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৩। ইবনে মাসঊদ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, ৬০৪৪, মুসলিম ২৩০, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৪। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৫। সুহাইল থেকে বর্ণিতঃ
একদা (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাতির ছেলে) হাসান বিন হাসান বিন আলী আমাকে কবরের নিকট দেখলেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেই সময় তিনি ফাতেমার বাড়িতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। আমি উপস্থিত হলে তিনি বললেন, ‘এসো খানা খাও।’ আমি বললাম, ‘খাবার ইচ্ছা নেই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘কী ব্যাপার যে, আমি তোমাকে কবরের পাশে দেখলাম?’ আমি বললাম, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সালাম দিলাম।’ তিনি বললেন, ‘যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দেবে।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিয়ো না। তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট (ফেরেশতার মাধ্যমে) পৌঁছে যায়। আল্লাহ ইয়াহুদকে অভিশাপ করুন। কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ (সিজদা ও নামাযের স্থান) বানিয়ে নিয়েছে।” (এ ব্যাপারে এখানে) তোমরা এবং উন্দুলুসের লোকেরা সমান।’ (সুনান সাঈদ বিন মানসূর, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ২২০পৃঃ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৬। আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন) অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৩৭। আরফাজাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “অদূর ভবিষ্যতে বড় ফিতনা ও ফাসাদের প্রার্দুভাব ঘটবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতিকে (নষ্ট করে) বিচ্ছিন্নতা আনতে চাইবে সে ব্যক্তিকে তোমরা তরবারি দ্বারা হত্যা করে ফেলো; তাতে সে যেই হোক না কেন।” (মুসলিম ৪৯০২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৮। ষাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমি আমার উম্মতের উপর ভ্রষ্টকারী ইমাম (আলেম ও নেতা প্রভৃতি)র দলকেই ভয় করি।” (আহমাদ ২২৩৯৩, আবূ দাঊদ ৪২৫৪, তিরমিযী ২২২৯ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৩৯। আবূ সাঈদ (রাঃ)ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “আমার উম্মতের মাঝে মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হবে। একদল হবে যাদের কথাবার্তা সুন্দর হবে এবং কর্ম হবে অসুন্দর। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা (সেইরূপ দ্বীনে) ফিরে আসবে না, যেরূপ তীর ধনুকে ফিরে আসে না। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। শুভ পরিণাম তার জন্য, যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং যাকে তারা হত্যা করবে। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে মানুষকে আহবান করবে, অথচ তারা (সঠিকভাবে) তার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে না। যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সে হবে বাকী উম্মত অপেক্ষা আল্লাহর নিকটবর্তী। তাদের চিহ্ন হবে মাথা নেড়া।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহুল জামে’ ৩৬৬৮ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৪০। আবূ বাকরাহ থেকেবর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “----- এক জাতি হবে যারা গরুর লেজ ধরে চাষবাস করবে এবং জিহাদে বিমুখতা প্রকাশ করবে, তারা হবে ধ্বংস।” (আবূ দাঊদ ৪৩০৬, মিশকাত ৫৪৩২ নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪১। আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম ৫০৪০, আবূ দাঊদ ২৫০৪ নং)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪২। মাসরূক থেকে বর্ণিতঃ
আমি আয়েশা (রাঃ)র নিকট হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘হে আবূ আয়েশা! যে ব্যক্তি তিনটের মধ্যে একটি কথা বলে, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করেঃ
(ক) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালক (আল্লাহ)কে দেখেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। যেহেতু আল্লাহ বলেন, “দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, কিন্তু দৃষ্টিসমূহ তাঁর আয়ত্বে আছে এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী; সম্যক পরিজ্ঞাত।”
(আনআমঃ ১০৩)
(খ) “কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা কোন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে; আর তখন আল্লাহ যা চান তা তাঁর অনুমতিক্রমে অহী (প্রত্যাদেশ) করেন; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।” (শূরাঃ ৫১)
(গ) বর্ণনাকারী মাসরূক বলেন, আমি হেলান দিয়ে বসে ছিলাম। এ কথা শুনে সোজা হয়ে বসে বললাম, ‘হে উন্মুল মু’মিনীন! একটু থামুন, আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবেন না। আল্লাহ তাআলা কি বলেননি যে,
“নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।” (নাজ্‌মঃ ১৩) “অবশ্যই সে তাকে স্পষ্ট দিগন্তে দর্শন করেছে।” (তাকভীরঃ ২৩)
মা আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন,
“তিনি হলেন জিব্রীল। তাঁকে ঐ দুইবার ছাড়া অন্য বারে তার সৃষ্টিগত আসল রূপে দর্শন করিনি। যখন তিনি আসমানে অবতরণরত ছিলেন, তাঁর বিরাট সৃষ্টি-আকৃতি আকাশ-পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল!”
(২) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মদ আল্লাহর অবতীর্ণ কিছু অহী গোপন করেছেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর (যদি তা না কর, তাহলে তো তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।)” (সূরা মাইদাহ ৬৭ আয়াত)
(৩) যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, মুহাম্মাদ ভবিষ্যতের খবর জানেন, সে আল্লাহর প্রতি বিরাট মিথ্যা আরোপ করে। অথচ আল্লাহ বলেন, “বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।” (নাম্‌লঃ ৬৫), (মুসলিম ৪৫৭নং, তিরমিযী ৩০৬৮নং, প্রমুখ)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
৪৩। বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধঃ
(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
(খ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
(গ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।
(ঘ) তিনি অন্যত্র বলেছেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
(ঙ) তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
৪৪। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
(ক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯নং)
(খ) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।” (৪৫৯০নং)-হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
৪৫। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’(এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বান্দা (ঈসা (আঃ) বলেছিলেন, “যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’(সূরা মায়েদা ১১৭) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’(বুখারী ৩৩৪৯, মুসলিম ৭৩৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

বিদআতী পির-অলি ও আলেমদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)। 
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সুপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার হাজার বিদআতী পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতিমধ্যে ভন্ডরা হাদিস নামে মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এক সময় তারা যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু বর্তমানে কোরআন ও হাদিসের সহিহ চর্চার কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করায় সকল শিক্ষিত মুসলমানরা যখন আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে পারল যে, এতোদিন ভন্ড আলেমরা শুধুই মনগড়া মিথ্যে ওয়াজ করেছে আর বর্তমানে এসবের বিরোধীতা করায় তথা বিদআতীদের গোপন রহস্য ফাঁস করায়  এই সব ভন্ড আলেমদের ধর্ম ব্যবসায় ধ্বস নামা শুরু হয়েছে। আফসোসের বিষয় এদের মধ্যে আছে কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ বা মুফতি, মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা  এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে তেমনি এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল নষ্ট করে দিচ্ছে।
এই দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশের তথা কথিত ভন্ড পির বা অলি এবং আরেক শ্রেণির ওয়াজকারী ধর্ম ব্যবসায়ী।
আপনারা একটা কথা মনে রাখবেন, আল্লাহকে ডাকতে কোনো মাধ্যম লাগে না। কোরআন আছে পড়বেন, জানবেন, মানবেন আর সহিহ হাদিস কোথায় পাবেন? বোখারীতেও জাল হাদিস, মিশকাতেও জাল হাদিস, এখন সাধারন মুসলমানরা বুঝবে কেমনে? আপনাদেরকে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। আপনারা আমার ব্লগে নিয়মিত অধ্যায়ন করতে থাকুন, দেখবেন ধাপে ধাপে সব পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ।

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)
===============================================

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।



-------------------------------------------------------------------
Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...