Search This Blog

Thursday, June 18, 2020

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)
mshrc.blogspot.com

প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন (১) : মক্কা-মদীনা সর্বদা মহামারী ও আল্লাহর গযব থেকে নিরাপদ থাকবে- একথা সঠিক কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, মদীনার দরজা সমূহে ফেরেশতাগণ পাহারায় রয়েছেন। তাই এতে প্লেগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারী হা/১৮৮০; মুসলিম হা/১৩৭৯; মিশকাত হা/২৭৪১)। অপর বর্ণনায় মক্কা ও মদীনা উভয়ের কথা বলা হয়েছে (আহমাদ হা/১০২৭০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৫৮৩৪, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, মক্কা ও মদীনায় কখনো প্লেগ প্রবেশ করেনি (আল-আযকার ১৩৯ পৃ.)।
আর প্লেগ একটি বিশেষ ঘা, যা দেহের প্রতিটি অঙ্গ তথা হাত, পা, বগল, পেট, পিঠসহ পুরো দেহে দেখা যায়। যাতে শরীর ফুলে যায় এবং এতে প্রচন্ড ব্যথাও হ’তে পারে (নববী, শরহ মুসলিম ১৪/২০৪; সুয়ূতী, শরহ মুসলিম ৫/২৩১)।
অপরদিকে ওয়াবা বা মহামারী হ’ল সকল প্রকারের ছোঁয়াচে রোগের সমষ্টি, যার মধ্যে একটি হ’ল ত্বাঊন বা প্লেগ (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৪)। তাই মক্কা-মদীনায় প্লেগ ব্যতীত অন্যান্য ওয়াবা বা মহামারী প্রবেশ করতেও পারে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর খেলাফতকালে একবার মহামারী দেখা দেয়, যাতে অন্যান্যদের সাথে বহু ছাহাবীও মারা যান। আবুল আসওয়াদ (রহঃ) বলেন, ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে আমি একবার মদীনায় আসলাম। সেখানে তখন মহামারী দেখা দিয়েছিল। এতে ব্যাপকহারে লোক মারা যাচ্ছিল (বুখারী হা/২৬৪৩; আহমাদ হা/১৩৯)। অতএব ত্বা‘ঊন বা প্লেগ থেকে মুক্ত হ’লেও মক্কা-মদীনায় ওয়াবা তথা অন্যান্য বিভিন্ন মহামারী প্রবেশ করতে পারে।
প্রশ্ন (২) : বাউলদের উৎপত্তি কোথা থেকে? বাউল-ফকীরদের আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : বাউল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়। তাদের নিজস্ব তত্ত্ব- দর্শন ও সাধন-পদ্ধতি রয়েছে। এই লোকধর্মের সাধকদের তত্ত্ব ও দর্শন সম্বলিত গানকে ‘বাউল গান’ বলে। বাউলরা সঙ্গীতাশ্রয়ী, মৈথুন ও দেহভিত্তিক গুপ্ত সাধনার অনুসারী। এই সাধনায় সহজিয়া ও ছূফী ভাবধারার সম্মিলন ঘটেছে। তারা না মুসলিম, না হিন্দু। তারা নিজেদেরকে মানবধর্মের অনুসারী বলে দাবী করে। তারা মসজিদ বা মন্দিরে যায় না। কোন ধর্মগ্রন্থে তাদের বিশ্বাস নেই। তারা কোন ধর্মীয় আচারও পালন করে না। তাদের জানাযাও হয় না বা তাদের লাশ পোড়ানোও হয় না। তারা সামাজিক বিবাহ বন্ধনকেও স্বীকার করে না। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বসবাসকে দর্শন হিসাবে অনুসরণ করে।
এদের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, প্রাচীন ফিলিস্তীনে রাস-সামারায় বা‘আল নামের এক প্রজনন দেবতার উপাসনা করা হ’ত। বা‘আল প্রজনন দেবতা হওয়ায় মৈথুন এই ধর্মের অংশ হয়ে পড়ে। অষ্টম-নবম দশকে পারস্যে ছূফী সাধনার উদ্ভবকালে বা‘আল নামক এক ছূফী ধারা গড়ে ওঠে। তারা মরুভূমিতে গান গেয়ে বেড়াত। অন্যান্য ছূফী সাধকদের মত তারা পারস্য থেকে ভারত উপমহাদেশে আগমন করে এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই বাংলায় বাউল সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে। কারো মতে, সংস্কৃত শব্দ বাতুল (পাগল) কিংবা ফার্সী শব্দ বা‘আল (পাগল, বন্ধু) থেকে বাউল শব্দের উদ্ভব। প্রেমাস্পদের উদ্দেশ্যে সংসারত্যাগী ও উন্মাদ হয়ে গান গেয়ে বেড়ানোর কারণে তাদেরকে বাউল বলা হয়। গান-বাজনা হ’ল তাদের ধর্মপ্রচারের একমাত্র মাধ্যম। বিভিন্ন খানকা, মাযার, আখড়া তাদের ধর্ম প্রচারকেন্দ্র (বাংলাপিডিয়া, ড. আনোয়ারুল করীম, ‘বাংলাদেশের বাউল’ ১৫-১৭ পৃ.)।
ড. আহমাদ শরীফের মতে, ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমন্বয়ে যে মিশ্র সম্প্রদায় গড়ে ওঠে তারা এক সময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলে তারা পুরনো প্রথাতেই ধর্ম সাধনা করে চলছে। ফলে বাউল মত না ইসলাম, না হিন্দু ধর্মের অনুসরণ করে। বরং তারা নিজের মনের মত করে পথ তৈরী করে নিয়েছে। এজন্য তারা বলে, কালী, কৃষ্ণ, গড, খোদা/ কোন নামে নাহি বাধা/মন কৃষ্ণ গড খোদা বল রে (বাউল তত্ত্ব, পৃ. ৫৩-৫৪)।
বাউলদের বিশ্বাস হ’ল, তারা সর্বেশ্বরবাদী। দেহ ও কামাচার এদের কাছে ঐশ্বরিক। দেহের বাইরে কিছু নেই। এখানেই আল্লাহ, নবী, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা, পরমাত্মা একাকার। অর্থাৎ ঈশ্বর ও বিশ্বজগৎ অভিন্ন দুই সত্তা। যখন কেউ সাধনার শীর্ষে আরোহণ করে তখন সে ঈশ্বর (আনাল হক) হয়ে যায়। প্রচলিত ছূফীবাদের মত বাউল ধর্মেও দেহের মধ্যে পরমাত্মার উপস্থিতি স্বীকার করা হয়। এর চূড়ান্ত অবস্থায় নিজেকে ঈশ্বরের পর্যায়ভুক্ত মনে করা হয়। একে অপরের মধ্যে ফানা (বিলীন) হয়ে যায় (উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, বাংলার বাউল, পৃ. ৪৮২)। তাদের আল্লাহ ও রাসূলের নাম নেওয়া এবং আরবী ও ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করা দেখে অনেকে তাদেরকে মুসলিম মনে করে। অথচ তাদের জীবনাচরণ মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় দর্শন ও উপাসনা রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত।
বাউলরা গুরুবাদী। গুরু বা সাঁইকে এরা ঈশ্বরের অবতার মনে করে। এরা বিশ্বাস করে যে, গুরু অসন্তুষ্ট হ’লে তার ইহকাল, পরকাল সবই বিনষ্ট হ’তে পারে। গুরুকে তুষ্ট করাই এদের সাধনার অঙ্গ। বাউল সম্প্রদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হ’ল ফকীর লালন শাহ (১৭৭২-১৮৯০খ্রি.)। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণকারী এই বাউল সাধকের মাধ্যমেই বাংলায় বাউল গানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। তার ধর্মপরিচয় জানা যায় না। কেননা তিনি কোন ধর্মীয় রীতি-নীতি মানতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, সকল মানুষের মধ্যে বাস করে একজন ‘মনের মানুষ’, যার কোন ধর্ম, জাত-পাত, বর্ণ, লিঙ্গ নেই। সেই অজানা, অস্পৃশ্য ও রহস্যময় মনের মানুষই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান, যাকে তিনি ঈশ্বর মনে করতেন। তার মতে, পার্থিব দেহ সাধনার ভেতর দিয়ে দেহোত্তর জগতে পৌঁছানোর মাধ্যমে সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে। আর তাতেই হবে মোক্ষ বা মহামুক্তি লাভ। যেহেতু কোন ধর্ম অনুসরণ করতেন না, তাই তার মৃত্যুর পর তার লাশ ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করা হয়নি। তবে তার শিষ্যরা তাকে নবী বা সাঁইজি মনে করে। তার মাযারকে তাদের তীর্থভূমি মনে করে। তাদের কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ লালন রাসূলুল্লাহ (সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, পৃ. ৯৪-৯৫)। 
বাউলদের মতে, জন্ম-জীবন সবসময় উপভোগ্যময়। গানকে ধারণ করে মনকে তারা আনন্দময় করে তুলতে চায়। বাউল সাধনায় অবাধ যৌনাচার ও গাঁজা সেবন আবশ্যক। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। সঙ্গিনী ছাড়া তাদের সাধনা অচল। তারা মনে করে, মদ খাওয়া অনৈতিক, কেননা তা উশৃঙ্খল করে তোলে। কিন্তু তামাক ও গাঁজার নেশা মানুষকে আত্মমগ্ন করে মনকে উর্ধ্বগামী করে দেয়। তারা সাদামাটা, বৈরাগী জীবনযাপনের নামে নোংরা ও জটাধারী থাকতে পসন্দ করে। রোগমুক্তির জন্য তারা স্বীয় মূত্রও পান করে। এছাড়া সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মূত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরী করে তা ভক্ষণ করে (বাংলাদেশের বাউল পৃ. ৩৫০, ৩৮২)।
সুতরাং বাউল একটি সর্বেশ্বরবাদী, পথভ্রষ্ট ও বৈরাগী জীবনধারায় অভ্যস্ত সম্প্রদায়। এদের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে এবং এদের মুসলিম নামের কারণে সাধারণ মুসলমানরা তাদের কেবল মুসলমানই মনে করে না, বরং তাদেরকে ছূফী-সাধকের মর্যাদায় বসায়। অথচ এরা আক্বীদা ও আমলগতভাবে মুসলিম নয়; বরং এক মিশ্র ধর্মের অনুসারী। সুতরাং এদের আক্বীদা, উপসনাপদ্ধতি ও গান-গযল থেকে সর্বোতভাবে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৩) : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হ’লে ফরয ছিয়াম পালনের বিধান কি? এমতাবস্থায় মারা গেলে ক্বাযা ছিয়ামের কি হবে?
উত্তর : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য যদি ছিয়াম পালন ক্ষতির কারণ হয়, তবে ছিয়াম ছেড়ে দেবে এবং তা গণনা করে পরবর্তীতে সুস্থ হ’লে আদায় করবে (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। আর এ অবস্থায় মারা গেলে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না, কেননা সে অপারগ ছিল (নববী, আল মাজমূ‘ ৬/৩৬৭)। আর যদি ক্বাযা আদায়ের সময় পাওয়ার পরও তা আদায় না করে, তবে তার উত্তরাধিকারীগণ প্রতিটি ক্বাযা ছিয়ামের বিনিময়ে ফিদইয়া প্রদান করবে অর্থাৎ ১ মুদ চাউল (৬২৫ গ্রাম) প্রতি ছিয়ামের বদলে দিবেন অথবা এক বেলা পেট ভরে খাইয়ে দিবেন। বেশী দিলে বেশী নেকী পাবেন’ (বায়হাক্বী হা/৮৪৭৫-৭৬; দ্র. ‘ছিয়াম ও ক্বিয়াম’ বই ৭৯-৮১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪) : জনৈক নারী স্বীয় স্বামীকে বিভিন্ন সন্দেহের বশবর্তী হয়ে অভিশাপ দেয়। এভাবে এক মুসলিম অপর মুসলিমকে অভিশাপ দিতে পারে কি?
উত্তর : কোন মুমিন অপর মুমিনকে অভিশাপ দিতে পারে না (আহমাদ হা/৩৯৪৮, তিরমিযী হা/১৯৭৭, মিশকাত হা/৪৮৪৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৮৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুমিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার সমতুল্য’ (বুখারী হা/৬৬৫২; মুসলিম হা/১৭৬; মিশকাত হা/৩৪১০)। বিশেষত স্ত্রীর জন্য এটা আরও গর্হিত অপরাধ। কেননা নারীদের অধিকহারে জাহান্নামে যাওয়ার বড় কারণ হিসাবে হাদীছে এসেছে যে, তারা (স্বামীদের) বেশী বেশী অভিশাপ দেয় (বুখারী হা/৩০৪; মুসলিম হা/১৩২; মিশকাত হা/১৯)। সুতরাং স্বামীকে এরূপ অভিশাপ স্ত্রীর জন্য দেয়া অন্যায় হয়েছে। এজন্য তাকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। যদি স্বামী অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে, তাহ’লে তাকে উপদেশের মাধ্যমে বুঝাতে হবে। এতে কাজ না হ’লে স্বামীর উপর ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করবে। এতেও কাজ না হ’লে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে অথবা ‘খোলা’ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
প্রশ্ন (৫) : কুরআন তেলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত পাওয়া গেলে কখন সিজদা করতে হবে? এ সময় কী দো‘আ পাঠ করতে হয়?
উত্তর : সিজদার আয়াত যখনই পাঠ করবে বা শ্রবণ করবে তখনই সিজদা দেওয়া সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভিড় হ’ত যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না (বুখারী হা/১০৭৬; মিশকাত হা/১০২৫)। একস্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৪ পৃ.)। সিজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ম হ’ল- প্রথমে তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবে। অতঃপর দো‘আ পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫৯৩০; বায়হাক্বী ২/৩২৫, সনদ ছহীহ; তামামুল মিন্নাহ ২৬৯ পৃ.)। সিজদা মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহহুদ নেই, সালামও নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪)। এক্ষণে তেলাওয়াতে সিজদার সময় সুবহানা রাবিবয়াল আ‘লা পাঠ করবে বা নিমেণর দো‘আ পাঠ করবে- সাজাদা ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়া শাক্ক্বা সাম‘আহু ওয়া বাছারাহু বিহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী; ফাতাবা-রাকাল্লাহ-হু আহসানুল খা-লেক্বীন। অর্থ : ‘আমার চেহারা সিজদা করছে সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় ক্ষমতা ও শক্তি বলে এতে কর্ণ ও চক্ষু সন্নিবেশ করেছেন। অতএব মহা পবিত্র আল্লাহ যিনি সুন্দরতম সৃষ্টিকর্তা’ (আবূদাঊদ হা/১৪১৪; মিশকাত হা/১০৩৫)।
প্রশ্ন (৬) : পঙ্গপাল কি পশু-পাখির অন্তর্ভুক্ত এবং তা খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : পঙ্গপাল এক প্রকারের বড় জাতের ফড়িংসদৃশ প্রাণী, যা ভক্ষণ করা হালাল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের জন্য দু’টি মৃত জীব হালাল করা হয়েছে, মাছ ও জারাদ (পঙ্গপাল) (ইবনু মাজাহ হা/৩৩১৪; ছহীহাহ হা/১১১৮)। ছাহাবীগণ বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি (বুখারী হা/৫৪৯৫; মুসলিম হা/১৯৫২; মিশকাত হা/৪১১৩)। সুতরাং কারো রুচি হ’লে তা খেতে পারে।
প্রশ্ন (৭) : ছালাতে যোগদান করার সময় পিছনের কাতারে একা হয়ে গেলে সামনের কাতার থেকে একজনকে টেনে আনতে হবে নাকি? একাকী দাড়ানো যাবে?
উত্তর : এমতাবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে। সামনের কাতার থেকে টেনে নেওয়া মর্মে বর্ণিত হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ (ত্বাবরাণী আওসাত্ব হা/৭৭৬৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/২৫৩৭; যঈফাহ হা/৯২১-৯২২)। তাছাড়া সামনের কাতার থেকে মুছল্লীকে পিছনে টেনে আনলে কাতারে শূন্যতা সৃষ্টি হয় (ফাতাওয়া উছায়মীন ১৩/৩৮)। উল্লেখ্য যে, একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে ছালাত হবে না মর্মে যে হাদীছ (আবুদাউদ হা/৬৮২; তিরমিযী হা/২৩১; মিশকাত হা/১১০৫) বর্ণিত হয়েছে তা ঐ সময় প্রযোজ্য যখন সামনের কাতার অপূর্ণ থাকবে। অতএব সামনের কাতার পূর্ণ হয়ে গেলে পরের কাতারে মুছল্লী একাকীই দাঁড়াবে। এতে তার ছালাত হয়ে যাবে। কিন্তু সামনের কাতারে জায়গা থাকতেও কেউ একাকী পিছনের কাতারে ছালাত আদায় করলে তার ছালাত হবে না (ইরওয়া হা/৫৪১-এর আলোচনা দ্র., ২/৩২৯)।
প্রশ্ন (৮) : আল্লাহকে প্রভু, প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা যাবে কি?
উত্তর : আল্লাহকে তাঁর গুণবাচক নামে ডাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্য সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সেসব নামেই তোমরা তাঁকে ডাক (আ‘রাফ ৭/১৮০)। তবে কেউ নিজ ভাষায় কুরআন বা হাদীছে বর্ণিত ছিফাতী নামের সঠিক অর্থবোধক শব্দ যেমন প্রভু, প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি ব্যবহার করলে তা জায়েয হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন তা আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কোন অর্থে ব্যবহৃত না হয়। যেমন গড, ভগবান, ঈশ্বর ইত্যাদি (ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা, ৬/২৮১; ইবনু তায়মিয়া, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ৬/৫৬৮)। উল্লেখ্য যে, অনেকে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ নাম লুকিয়ে অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করেন, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (৯) : বছরের কোন কোন দিন ছিয়াম পালন করা হারাম?
উত্তর : বছরে পাঁচ দিন ছিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ। সেগুলো হ’ল- দুই ঈদের দিন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার দিন ছিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/১৯৯১, মুসলিম হা/১১৩৭, মিশকাত হা/২০৪৮)। এছাড়া আইয়ামে তাশরীক্ব তথা ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিন (মুসলিম হা/১১৪১, মিশকাত হা/২০৫০; আবূদাঊদ হা/২৪১৯)। তবে কুরবানীদাতার জন্য ঈদের দিন কুরবানীর গোশত খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত না খেয়ে থাকা সুন্নাত (তিরমিযী হা/৫৪২, মিশকাত হা/১৪৪০)। উল্লেখ্য যে, শুক্রবার বা শনিবারেও নিয়মিতভাবে ছিয়াম পালন করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই কেউ যেন স্রেফ জুম‘আর দিনে ছাওম না রাখে। তবে যদি তার একদিন আগে কিম্বা পরে রাখে তাহ’লে তাতে ক্ষতি নেই (বুখারী হা/১৯৮৫; মিশকাত হা/২০৫১)। শনিবারের ব্যাপারে তিনি বলেন, তোমাদের উপর ফরযকৃত ছিয়াম ছাড়া তোমরা শনিবারে আর অন্য কোন ছিয়াম পালন করো না’ (আবূদাউদ হা/২৪২১; মিশকাত হা/২০৬৩; ছহীহুত তারগীব হা/১০৪৯)। কারণ এই দিনটিকে ইহূদীরা সম্মান করে থাকে (তিরমিযী হা/৭৪৪)।
প্রশ্ন (১০) : শয়তান কি কখনো মানুষের কানে পেশাব করতে পারে? এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) কিছু বলেছেন কি?
উত্তর : হ্যাঁ পারে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে এক ব্যক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হ’ল, যে সকাল বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়েছে, ফজরের ছালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, শয়তান তার কানে পেশাব করে দিয়েছে (বুখারী হা/১১৪৪; মুসলিম হা/৭৭৪; মিশকাত হা/১২২১)। এখানে শয়তানের পেশাব প্রকৃত অর্থেই হ’তে পারে। কারণ সে খায় ও পান করে। আবার রূপক অর্থেও হ’তে পারে তথা মানুষকে বিভ্রান্ত করা বা মাথার চুলে দীর্ঘ রাতের ঘুমের গিট মারা অর্থও হ’তে পারে (ফাৎহুল বারী ৩/২৮)।
প্রশ্ন (১১) : জনৈক আলেম বলেছেন, পিতা যদি সন্তানকে হত্যাও করে, তবে তার কোন হদ বা শাস্তি নেই- এ কথা কতটুকু সত্য?
উত্তর : মানব হত্যা মহাপাপ। সে সন্তান হোক বা অন্য কেউ হোক (আন‘আম ১০১; নিসা ৪/৯৩)। তবে পিতা কর্তৃক সন্তান নিহত হ’লে তার উপরে শরী‘আত নির্ধারিত হদ কার্যকর হবে না। আদালত তার জন্য ভিন্ন শাস্তি নির্ধারণ করবে এবং সে মীরাছ থেকে বঞ্চিত হবে। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, সন্তান (হত্যার) কারণে পিতাকে হত্যা করা যাবে না (তিরমিযী হা/১৪০০; ইবনু মাজাহ হা/২৬৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৪৪, ইরওয়া হা/২২১৪)। অন্য হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি তার ছেলেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করল। এ ব্যাপারে ওমর (রাঃ)-এর নিকট বিচার পেশ করা হ’লে তিনি তার পিতাকে একশ’ উট জরিমানা করে বললেন, হত্যাকারী তার ওয়ারিছ হবে না। তিনি আরো বললেন, রাসূল (ছাঃ)-কে যদি বলতে না শুনতাম যে, সন্তান হত্যাকারী পিতার উপর হদ জারী করা যাবে না, তাহ’লে অবশ্যই তোমাকে হত্যা করতাম (আহমাদ হা/৯৮, ৩৪৬; দারাকুৎনী হা/৩৩২১; ইরওয়া ৭/২৭০)। আর এটিই জমহুর বিদ্বানের অভিমত। তবে আলী ইবনুল মাদীনী, তিরমিযী, ইবনুল মুলাক্কিনসহ বেশ কিছু মুহাদ্দিছ এ বিষয়ক হাদীছগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ ও যঈফ বলেছেন (ইবনুল মুলাক্কিন, আল-বাদরুল মুনীর ৮/৩৭৪; ইবনু আব্দিল হাদী, তানকীহুত তাহকীক ৪/৪৭৪)। এজন্য ইমাম মালেকসহ একদল বিদ্বানের মতে, পিতার উপরও হদ জারী করতে হবে। শায়খ উছায়মীনও অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন (ইবনু কুদামা, মুগনী ৮/২৭৭; আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৪/৪৩)।
প্রশ্ন (১২) : প্লেগ ও অন্যান্য মহামারীর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর : ত্বাউন বা প্লেগ রোগ হ’ল একটি বিশেষ ঘা, যা দেহের প্রতিটি অঙ্গ তথা হাত, পা, বগল পেট, পিঠসহ পুরো দেহে দেখা যায়, যাতে শরীর ফুলে যায় এবং এতে প্রচন্ড ব্যথাও হ’তে পারে (নববী, শরহ মুসলিম ১৪/২০৪; শারহুস সুয়ূতী আলা মুসলিম ৫/২৩১)। আর মহামারী (ওয়াবা) হ’ল সকল প্রকারের ছোঁয়াচে রোগের সমষ্টি, যার মধ্যে প্লেগ (ত্বাঊন) অন্যতম। অর্থাৎ প্রত্যেক প্লেগই মহামারী। কিন্তু প্রত্যেক মহামারীই প্লেগ নয় (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩৪)। আবার কোন কোন হাদীছে মহামারীকে প্লেগ অর্থে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মহামারী তথা বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগে যেমন বহু মানুষ মারা যায়, তেমনি প্লেগেও বহু মানুষ মারা যায় (বুখারী হা/৫৭২৯; মুসলিম হা/২২১৯)।
প্রশ্ন (১৩) : আমি যেখানে চাকুরী করি, সেই কোম্পানীরই ডরমেটরীতে থাকি। কোম্পানী করোনা ভাইরাসের জন্য বন্ধ করে দিলে বাড়ি যেতে পারব কি? এটা হাদীছ বিরোধী কাজ হবে কি?
উত্তর : কর্মস্থলের এলাকাটি মহামারী আক্রান্ত হয়ে পড়লে সেখান থেকে বের হ’তে পারবে না। কেননা এতে তার দ্বারা অপর মানুষও আক্রান্ত হতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা কোন এলাকায় মহামারী বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে মহামারীর বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বের হয়ো না (বুখারী হা/৫৭২৮; মুসলিম হা/১০৬৫)। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য না থাকলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিয়ে যেতে পারবে।
প্রশ্ন (১৪) : বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসকে কি রহমত বলা যাবে?
উত্তর : যে কোন মহামারী মূলতঃ আল্লাহর গযব। তবে ধৈর্যশীল মুমিনদের জন্য এটা রহমতে পরিণত হতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, এটি একটি আযাব। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার উপর এটি প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর মুমিন বান্দাগণের জন্য এটাকে ‘রহমত’ স্বরূপ করেছেন। ফলে কোন ব্যক্তি যদি মহামারী এলাকায় ধৈর্যের সাথে ও ছওয়াবের আশায় অবস্থান করে এবং হৃদয়ে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তাই হবে, তবে সে একজন শহীদের সমান পুরস্কার লাভ করবে’ (বুখারী হা/৩৪৭৪; মিশকাত হা/১৫৪৭)।
প্রশ্ন (১৫) : ফরয ছালাত ব্যতীত অন্য ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : ফরয ব্যতীত নফল ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। কারণ এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের কোন আমল দ্বারা প্রমাণিত নয় (হায়তামী, তোহফাতুল মুহতাজ ৬/৩৮)।
প্রশ্ন (১৬) : জনৈক মেয়ে বিয়ের তিনদিনের মাথায় ‘খোলা‘ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কোন নির্জনবাস হয়নি। এক্ষণে ঐ মেয়েকে কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে?
উত্তর : এমন অবস্থায় উক্ত নারীকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা মুমিন নারীদের বিবাহ করবে, অতঃপর তাকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিবে, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর কোন ইদ্দত নেই যা তোমরা গণনা করবে’ (আহযাব ৩৩/৪৯)। তবে যদি স্বামী মারা যান, তাহ’লে সহবাস না হ’লেও তার জন্য তাকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৩৪)।
প্রশ্ন (১৭) : ফজরের ছালাতে দেরীতে ঘুম ভাঙ্গার পর ছালাত আদায় করতে গিয়ে দেখি সূর্যোদয় হচ্ছে। এমতাবস্থায় কয় মিনিট অপেক্ষা করতে হবে?
উত্তর : এমতাবস্থায় অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। বরং ঘুম ভাঙ্গা মাত্রই ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কোন ব্যক্তি কোন ছালাত ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই যেন ছালাত আদায় করে’ (বুখারী হা/৫৯৭; মুসলিম হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৪)।
প্রশ্ন (১৮) : হাই উঠার সময় করণীয় কি?
উত্তর : হাই উঠার সময় মুখে হাত দিয়ে বাধা দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হ’তে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন তা সাধ্যমত রোধ করবে। হাই তোলার সময় যেন ‘হা’ না বলে, কেননা শয়তান তাতে হাসে (বুখারী হা/৩২৮৯; মিশকাত হা/৯৮৬)। তিনি বলেন, যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে (মুসলিম হা/২৯৯৫; মিশকাত হা/৯৮৫)। এক্ষণে হাইকে দাঁতের সাথে দাঁত ও ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চেপে রেখে প্রতিহত করা যায়। আবার হাত দ্বারাও প্রতিহত করা যায়। ডান বা বাম দু’হাত দ্বারাই প্রতিহত করা যায়। তবে বাম হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা প্রতিহত করাকে বিদ্বানগণ মুস্তাহাব বলেছেন (মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর ১/৪০৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব ৬১/১৩)। উল্লেখ্য ‘হাই উঠার সময় যে ব্যক্তি মুখে হাত দেয় না তার মুখে শয়তান পেশাব করে দেয়’ মর্মে প্রচলিত বর্ণনাটি ভিত্তিহীন। এছাড়া অনেকে হাই উঠলে ‘লা হওলা ওয়ালা কুওয়াতা...’ পাঠ করেন, যা দলীলভিত্তিক নয়।
প্রশ্ন (১৯) : বাড়ি পাশের মসজিদের সামনের দেওয়ালে পৃথক ঘরে দু’টি কবর আছে এবং সেখানে প্রতিদিন আগরবাতি ও লাইট জ্বালানো হয়। অন্য মসজিদ দূরে অবস্থিত। এক্ষণে আমি ঘরে না মসজিদে ছালাত আদায় করব?
উত্তর : মসজিদের বাইরে যদি কবর থেকে পৃথককারী প্রাচীর থাকে, তবে সেই মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে, অন্যথায় নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩১/১২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৭; আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ১২৭)। কারণ রাসূল (ছাঃ) কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭২; নাসাঈ হা/৭৬০; ছহীহাহ হা/১০১৬)। এক্ষণে বর্ণনামতে কবর দু’টি মসজিদের দেওয়ালের সাথে লাগোয়া হ’লে এবং পৃথক প্রাচীর না থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা যাবে না। আর অন্য মসজিদের অবস্থান যদি আযান শোনা যায়, এমন দূরত্বে হয়, তবে সে মসজিদে যেতে হবে।
প্রশ্ন (২০) : ছালাতের উদ্দেশ্য ছাড়া যেকোন প্রয়োজনে মসজিদে প্রবেশ করলেই কি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে?
উত্তর : অবস্থানের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্বাদাহ। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত (তাহিয়াতুল মসজিদ) আদায় করার পূর্বে যেন না বসে (বুখারী হা/১১৬৩; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪)। তবে কেউ যদি মসজিদে বসার পূর্বে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তাহ’লে তার উপর থেকে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত রহিত হয়ে যায়। তাছাড়া নির্মাণ, মেরামত বা পরিচ্ছন্নতার কাজে প্রবেশ করলে এটি আদায় করা যরূরী নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৫৪৪; ফাৎহুল বারী ১/৫৩৮-৩৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/১৩৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩৫৪)।
প্রশ্ন (২১) : শী‘আ নারীকে বিবাহের ক্ষেত্রে শারঈ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?
উত্তর : বারো ইমামের অনুসারী শী‘আ ও রাফেযী নারীদের বিবাহ করা যাবে না। কারণ তাদের আক্বীদা মুশরিকদের ন্যায়। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে (বাক্বারাহ ২/২২১)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাফেযা নারীকে বিয়ে করা কোন মুসলমানের জন্য সমীচীন নয় (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৬১)। সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছে (ফৎওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৩৭৩)। যদি তওবা করে ও সঠিক দ্বীনে ফিরে আসে তাহ’লে বিবাহে কোন বাধা নেই।
প্রশ্ন (২২) : জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা কখন পাঠ করতে হবে? ইমাম অন্য সূরা পাঠ করার সময় মুক্তাদী ইমামের সাথে মিলিয়ে পাঠ করতে পারবে কি?
উত্তর : জেহরী ছালাতে মুক্তাদীরা ইমামের সাথেই চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে (আহমাদ হা/২২৭৯৭-৮০২; বিন বায মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২২১; ঊছায়মীন,  ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ৩২২ পৃ.)। আর ইমামের সূরা ফাতিহা সম্পন্ন হওয়ার পরে জামা‘আতে যোগদান করলে নিজে নিজে নিরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নিবে (মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/২৪২; মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/১২৮; তোহফাতুল আহওয়াযী ২/২১০)।
প্রশ্ন (২৩) : আমার কোন ছেলে-মেয়ে নেই। এক ভাই ও চার বোন এবং পালক ছেলে-মেয়ে আছে। এক্ষণে কে কতটুকু সম্পদ পাবে?
উত্তর : এক্ষেত্রে মোট সম্পদের ৩৩.৩৩ শতাংশ পাবে সহোদর ভাই। আর ৪ সহোদর বোন প্রত্যেকে ১৬.৬৭ শতাংশ করে পাবে। আর পালক পুত্র বা পালক মেয়ে উত্তরাধিকারী না হওয়ায় নির্ধারিত কোন সম্পত্তি পাবে না। তবে সম্পত্তির মালিক চাইলে তাদের জন্য কিছু অছিয়ত করে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অছিয়ত পূরণ করার পর বাকী সম্পদ উক্ত অংশ মোতাবেক উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে।
প্রশ্ন (২৪) : মহিলাদের জন্য নার্সের চাকুরী করা কতটুকু শরী‘আতসম্মত?
উত্তর : গৃহই নারীর মূল কর্মস্থল (আহযাব ৩৩/৩৩)। বিশেষ প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যেতে হ’লে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করতে হবে। আর চিকিৎসা যেহেতু মানুষের মৌলিক অধিকার, সেহেতু প্রয়োজনে নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর চাকুরী করা নারীদের জন্য শরী‘আতসম্মত। সেক্ষেত্রে হাসপাতালগুলিতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক বিভাগ থাকা আবশ্যক। কিন্তু যদি এরূপ ব্যবস্থা না থাকে, তবে সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা এবং পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সাপেক্ষে নারীরা নার্সিং বা চিকিৎসা পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্ন (২৫) : বর্তমানে কিছু ব্যক্তি তাদের নিজস্ব সিলসিলার অলি-আওলিয়াদের নামের শেষে রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু যোগ করছে। এভাবে ছাহাবায়ে কেরাম বাদ দিয়ে সালাফদের নামের শেষে রাযিঃ...বাক্য ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর : বিদ্বানদের মাঝে প্রচলন হ’ল- ‘রাযিয়াল্লাহ আনহু’কে ছাহাবীদের সাথে খাছ করা হয় এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ‘রহমাতুল্লাহ’কে। ইমাম যায়লাঈ বলেন, ছাহাবীগণের ক্ষেত্রে রাযিয়াল্লাহ আনহু, তাবেঈ ও সালাফদের ক্ষেত্রে রাহিমাহুল্লাহ ও সাধারণ আলেমদের ক্ষেত্রে গাফারাহুল্লাহ বলে দো‘আ করা উত্তম (আদ-দুর্রুল মুখতার ৬/৭৫৪; আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া  ৫১/২৯৭)। এর মাধ্যমে ছাহাবী ও অন্যান্যদের পার্থক্য করারও হিকমত নিহিত রয়েছে। তবে সাধারণভাবে প্রত্যেক মুমিনের জন্য ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’ দো‘আ করা জায়েয  (তাওবা ৯/১০০; ইবনুল উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/১৪)। কিন্তু প্রশ্নমতে, বিশেষ কিছু সিলসিলার মানুষের জন্য ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’ ব্যবহার অসৎউদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং তাদেরকে বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত করণের অপপ্রয়াস, যা অগ্রহণযোগ্য।
প্রশ্ন (২৬) : করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতিরোধে মসজিদে জুম‘আর ছালাত পরিহার করে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : মহামারীর বিস্তৃতি রোধে মসজিদের জামা‘আত বন্ধ থাকাবস্থায় জুম‘আর ছালাতের পরিবর্তে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায় করা জায়েয। কারণ এমতাবস্থায় মসজিদে একত্রিত হ’লে একে অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে পারে। আর ইসলামের মূলনীতি হ’ল, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করা (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; আহমাদ হা/২৮৬৭; ছহীহাহ হা/২৫০)। মহামারীকালীন সতর্কতাস্বরূপ রাসূল (ছাঃ) বলেন, অসুস্থ প্রাণীকে যেন সুস্থ প্রাণীর মাঝে প্রবেশ করানো না হয় (বুখারী হা/৫৭৭১; মুসলিম হা/২২২১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, কুষ্ঠরোগী হ’তে এমনভাবে পলায়ন কর, যেভাবে তোমরা বাঘ থেকে পলায়ন কর’ (বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭; ছহীহাহ হা/৭৮৩)। রাসূল (ছাঃ) নিজেও এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতেন। হাদীছে এসেছে- ‘ছাকীফদের প্রতিনিধিদলে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তি ছিল। তখন নবী করীম (ছাঃ) তার কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, নিশ্চয় আমি তোমার বায়‘আত গ্রহণ করেছি। অতএব তুমি ফিরে যাও। ফলে তিনি শহরের বাইরে থেকেই বাড়ি ফিরে যান (মুসলিম হা/২২৩১; মিশকাত হা/৪৫৮১; ছহীহাহ হা/১৯৬৮)। এছাড়াও রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে অতি বৃষ্টির কারণে মানুষকে জুম‘আয় অংশগ্রহণের ব্যাপারে অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর মুয়াযযিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে, তখন হাইয়া আলাছ-ছালাহ বলবে না, বলবে, ছাল্লু ফী বুয়ূতিকুম (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে ছালাত আদায় কর)। কিন্তু লোকেরা তা অপসন্দ করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূল (ছাঃ) তা করেছেন। জুম‘আ নিঃসন্দেহে যরূরী। তবে আমি অপসন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে (বুখারী হা/৯০১; মুসলিম হা/৬৯৯)।
প্রশ্ন (২৭) : আমার দুই জায়গায় বাসা রয়েছে। আমি কর্মস্থলে এক সপ্তাহ থেকে বৃহস্পতি ও শুক্রবার পরিবারের নিকট ফিরে যাই। এক্ষণে আমি গৃহে কছর ছালাত আদায় করতে পারব কি?
উত্তর : এমতাবস্থায় কর্মস্থলকে মূল আবাসস্থল ধরতে হবে। সেই মোতাবেক নিজের গৃহ যদি সফরের দূরত্বে হয়, তবে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনও থাকলেও সেখানে ছালাত ক্বছর করা যাবে (শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২১৭; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/২১৪; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ২৩/৫৮)। আল্লাহ বলেন, ‘সফর অবস্থায় ছালাতে ‘ক্বছর’ করলে তোমাদের জন্য কোন গোনাহ নেই’ (নিসা ৪/১০১; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সফরের ছালাত’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২৮) : করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির জানাযার ছালাত আদায়ের বিধান কি?
উত্তর : করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির জানাযার ছালাত আদায় করতে হবে। ওমর (রাঃ)-এর আমলে ভাইরাসে বহু মানুষ মারা যায়, যাদের জানাযার ছালাত আদায় করা হয়েছিল (বুখারী হা/২৬৪৩; আহমাদ হা/১৩৯; ইবনু হিববান হা/৩০২৮)। ইবনু কুদামা বলেন, যে সকল লোক হত্যা ব্যতীত শহীদ হয়, যেমন মহামারীতে মৃত... ব্যক্তিদের গোসল দেওয়াতে হবে এবং তাদের জানাযার ছালাত আদায় করতে হবে (মুগনী ২/৩৯৯; ফাৎহুল বারী ৬/৪৩; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ৫১ পৃ.)। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দেশনা মোতাবেক যদি গোসল দেওয়াতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তবে তায়াম্মুম করাবে এবং সাধ্যমত নিয়মানুগভাবে কাফন ও দাফনকার্য সমাধা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কোন ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।
প্রশ্ন (২৯) : মহামারী ছড়ানোর ভয়ে মসজিদে মাস্ক ব্যবহার করে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন (আবূদাউদ হা/৯৬৬; তিরমিযী হা/৩৭৮; সনদ হাসান)। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে মুখ ঢেকে বা মাস্ক ব্যবহার করে ছালাত আদায় করা যাবে (বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ১/২৬৮; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/১১৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪১/১৩৫)। ইমাম নববী বলেন, ছালাতে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধের হাদীছটি অপসন্দনীয়তা জ্ঞাপক, নিষেধাজ্ঞামূলক নয় (আল-মাজমূ‘ ৩/১৭৯)। শায়খ উছায়মীন বলেন, সর্দি-কাশি, ধুলা-বালি, ঠান্ডা বা দূর্গন্ধের কারণে মুখ ঢেকে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে (ফাতাওয়া নুরুন ‘আলাদ দারব ১৫৪/১৪)। সুতরাং করোনার ভয়াবহতার কারণে মসজিদে আগত মুছল্লীরা মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রশ্ন (৩০) : গরমে ঘামের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে আরব আমিরাতের তৈরী ‘ফা’ নামক ডিউডোরেন্ট কিনেছি। এতে অন্যান্য উপাদানের সাথে এ্যালকোহলও আছে। এটা ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর : দুর্গন্ধনাশক স্প্রে বা জীবাণুনাশক স্যানিটাইজারে অত্যধিক মাত্রায় এ্যালকোহল থাকলে তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ যা মাদকতা আনে তা খাওয়া, পান করা, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় সবই হারাম (তিরমিযী হা/১২৯৫; মিশকাত হা/২৭৭৬, সনদ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৮/৩৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৫৪, ২২/১৪৪; আল-মাউসূ‘আতুল ফিকহিয়াহ ৫/২৫)। তবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যদি মাদকতা আনে না এমন সামান্য পরিমাণ এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়, তবে তা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৫৪; উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া নং ২৮৭; ১২/৩৭০)।
প্রশ্ন (৩১) : ঋণ নিয়ে ফিৎরা দেওয়া যাবে কি? ফকীর-মিসকীন কিভাবে ফিৎরা আদায় করবে?
উত্তর : যাবে। কারণ ফিৎরা ধনী-গরীব সকলের উপর ফরয। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫)। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরের ঋণ পরিশোধ করে দিতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৮৪)। যেহেতু জানের ছাদাক্বা হিসাবে ফিৎরা সকলের উপর ফরয, সেহেতু ফকীর-মিসকীনকেও ফিৎরা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সে ফিৎরা দিবে এবং ফিৎরা গ্রহণও করবে। কিছু বিদ্বানের মতে, কোন স্বাধীন মুসলিম ব্যক্তির নিকট যদি তার পরিবার-পরিজনের জন্য একদিনের চেয়ে অধিক পরিমাণ খাদ্য মওজূদ থাকে, তাহ’লে তার উপর ফিৎরা আদায় করা ওয়াজিব’ (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১২-১৩)। আর ক্রীতদাসের ফিৎরা মনিব আদায় করবে।
প্রশ্ন (৩২) : ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহ সজ্জিত করার হুকুম কি?
উত্তর : ঈদগাহকে সজ্জিত করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ ঈদগাহ হ’ল ইবাদতের স্থান। আর ইবাদতের স্থানকে সাজ-সজ্জায় সুশোভিত করা সিদ্ধ নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মসজিদ সমূহকে চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি’। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তোমরা একে সুসজ্জিত করবে যেভাবে ইহূদী-নাছারাগণ করত (আবূদাঊদ হা/৪৪৮; মিশকাত হা/৭১৮)।
প্রশ্ন (৩৩) : করোনা আতঙ্কে জামা‘আতে ছালাত আদায়কালে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক কাতার না মিলিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঁড়ালে ছালাত হবে কি?
উত্তর : মুছল্ল¬ীদের পায়ের সাথে পা ও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ছালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ (বুখারী হা/৭২৩; মুসলিম হা/৪৩৩; মিশকাত হা/১০৮৭)। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মহামারীর বিস্তৃতি রোধে ও নিজেকে হেফাযতের লক্ষ্যে জামা‘আতে ছালাত আদায়কালে সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা এতে শারঈ ওযর বিদ্যমান (বাক্বারাহ ২/১৭৩)।
প্রশ্ন (৩৪) : করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কুনুতে নাযেলা পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : যেহেতু বিপদ-আপদ থেকে আশ্রয় চেয়ে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা হয়, সেহেতু মহামারীর মত বিপদ থেকে রক্ষা পেতেও তা পাঠ করা যায় (হাশিয়াতু ইবনে আবেদীন ২/১১; মিরআ‘তুল মাফাতীহ ৪/৩০৩)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ বক্তব্য হ’ল, মুসলমানদের উপর শত্রু উপস্থিত হ’লে এবং দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অনাবৃষ্টি, দুনিয়াবী ক্ষতি বা অনুরূপ যেকোন বিপদাপদের সময় পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে (শরহ নববী ৫/১৭৬; ‘আওনুল মা‘বূদ ৪/২২২)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যেকোন বিপদে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সুন্নাত, যা মুহাদ্দিছ ফক্বীহগণসহ খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল দ্বারা প্রমাণিত (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/১০৯-১১০)। তবে একদল বিদ্বানের মতে, মহামারী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে কুনূতে নাযেলা পাঠ করার বিষয়ে স্পষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায় না। অতএব কুনূতে নাযেলার পরিবর্তে মহামারীতে বিপদমুক্তির জন্য পঠিতব্য সাধারণ যে কোন দো‘আ পাঠ উচিৎ (মারদাভী, আল-ইনছাফ, ২/১৭৫; মুহাম্মাদ ইবনু মুফলিহ, কিতাবুল ফুরূ‘ ২/৩৬৭)। 
প্রশ্ন (৩৫) : সূরা ইনশিরাহ সাতবার পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে তা পান করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কথাটির সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য  ভিত্তিহীন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৭৬)। কেবল সূরা ইনশিরাহ নয়, বরং যেকোন সূরা পাঠ করে ঝাড়-ফূঁক করা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আমরা কুরআন নাযিল করি, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও রহমত স্বরূপ’ (ইসরা ১৭/৮২)।
প্রশ্ন (৩৬) : যদি পিতা ও পুত্র একই সাথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, তাহ’লে কে কার ওয়ারিছ হবে?
উত্তর : এ অবস্থায় কেউ কারো ওয়ারিছ হবে না। বরং জীবিত আত্মীয়রা উত্তরাধিকারী হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তি অপর মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছ হবে না যতক্ষণ না জানা যাবে যে, কে আগে মারা গেছে (হাকেম হা/৮০১০; ইমাম মালিক, আল-মুদাউওয়ানাহ ২/৫৯৩৩)।
প্রশ্ন (৩৭) : আমি একজন ডেকোরেটরের মালিক। আমাকে কি আসবাবপত্রের যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : ভাড়ায় ব্যবহৃত ব্যবসায়িক পণ্যে যাকাত নেই (বুখারী হা/১৪৬৪; মুসলিম হা/৯৮২; ইবনুল উছায়মীন, মাজমু‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ১৮/২০৮)। যেহেতু ডেকোরেটরের পণ্য ভাড়ায় ব্যবহৃত হয়, অতএব এতে যাকাত নেই। তবে ভাড়া থেকে প্রাপ্ত সম্পদের উপর যাকাত ধার্য হবে, যদি তা নিছাব পরিমাণ হয়। 
প্রশ্ন (৩৮) : মসজিদে প্রবেশকালে উচ্চৈস্বরে সালাম প্রদান করা যাবে কি?
উত্তর : মসজিদে মুছল্ল¬ীদের উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক স্বরে সালাম দেয়া যাবে (বুখারী হা/৭৫৭; মুসলিম হা/৩৯৭; মিশকাত হা/৭৯০)। রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থাতেও কেউ সালাম দিলে আঙ্গুলের ইশারায় তার জবাব দিতেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৯১; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১০১৩)। তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় উচ্চৈঃস্বরে সালাম না দেওয়াই উত্তম। কেননা এতে মুছল্লীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হ’তে পারে (আবুদাউদ হা/৯২৩, ৯২৮; ছহীহাহ হা/৩১৮; মিশকাত হা/৯৭৯)।
প্রশ্ন (৩৯) : কবরে মাটি দেওয়ার সময় কোন দো‘আটি পাঠ করতে হবে?
উত্তর : কবরে মাটি দেওয়ার সময়ে পঠিতব্য কোন দো‘আ হাদীছে বর্ণিত হয়নি। সুতরাং কেবল বিসমিল্ল¬াহ বলাই যথেষ্ট (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৮/৯২)। এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ (ত্বোয়াহা ২০/৫৫) পড়ার ব্যাপারে বর্ণিত দো‘আটির সনদ জাল (আহমাদ হা/২২২৪১; তালখীছ পৃঃ ১০২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১৫৩, টীকা দ্রঃ, মাসআলা নং ১০৬ দ্রঃ)। অনুরূপভাবে আল¬া-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বা-নি ওয়া মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরে... পড়ার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই (ইবনু মাজাহ হা/১৫৫৩, সনদ যঈফ)।
প্রশ্ন (৪০) : করোনা ভাইরাসের কারণে ধারাবাহিকভাবে জুম‘আর ছালাত পরিত্যাগ করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় মসজিদের পরিবর্তে বাড়িতে বা মহল্লায় জুম‘আ কায়েম করা যাবে কি?
উত্তর : শারঈ ওযরের কারণে জুম‘আর পরিবর্তে বাড়িতে জামা‘আতে যোহরের ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনেছে এবং কোন ওযর বা অসুবিধা তাকে তার অনুসরণ করতে বাধা দেয়নি, তার আদায়কৃত ছালাত আল্লাহ কবুল করবেন না (আবূদাঊদ হা/৫৫১; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)। আর ভয়-ভীতি বা অসুস্থতা ও মহামারী ছড়িয়ে পড়া একটি বড় ওযর। সেজন্য বাড়িতে ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে জুম‘আ রহিত করে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৯০১; মুসলিম হা/৬৯৯)।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে জুম‘আ কায়েম করার ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। একদল বিদ্বানের মতে, জুম‘আর ছালাতের জন্য কেবল জামা‘আত শর্ত। এজন্য মসজিদ বা নির্ধারিত সংখ্যক মুছল্লী শর্ত নয় (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/২৪৬-৪৮; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/২৫০; শাওকানী, আস-সায়লুল জার্রার ১৮২ পৃ.)। সুতরাং বিশেষ ওযরবশত কমপক্ষে দু’জন মুছল্লী থাকলে একজন খুৎবা পাঠের মাধ্যমে বাড়িতে জুম‘আ কায়েম করা যাবে। যেমন বাহরায়েনবাসীর প্রতি এক লিখিত ফরমানে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক, জুম‘আ আদায় কর’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, আলবানী, ইরওয়া হা/৫৯৯, ফাৎহুল বারী হা/৮৯২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ছালাতুর রাসূল ১৯০-৯২ পৃ.)। এছাড়া একটি গ্রামে বা মহল্লায় সর্বনিমণ তিনজন ব্যক্তি থাকলেই জুম‘আ কায়েম করা যাবে। তবে শর্ত হ’ল খুৎবা এবং জামা‘আত হ’তে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ২/৮৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২১০, ২৬৩; উছায়মীন, নূরুন ‘আলাদ দারব ১৮৮/৩৯)। তবে সমকালীন অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, এমতাবস্থায় বাড়িতে বাড়িতে সাময়িক জুম‘আ কায়েম করা সিদ্ধ হবে না। কেননা জুম‘আ সাধারণ জামা‘আতের মত নয়। এতে জুম‘আর মূল তাৎপর্য ব্যাহত হবে এবং এর বিশেষত্ব নষ্ট হবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিন বৃষ্টির কারণে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জুম‘আর নির্দেশ দেননি। সুতরাং মহামারীর কারণে মসজিদে যেতে না পারলে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায় করবে এবং এতেই সে জুম‘আর ছওয়াব পেয়ে যাবে (বুখারী হা/২৯৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/১৯৬)। এই মতটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ বাড়িতে জুম‘আ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, ‘যে ব্যক্তি অলসতা করে (বিনা কারণে) পরপর তিনটি জুম‘আ ত্যাগ করে, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন’ (আবূদাউদ হা/১০৫২; তিরমিযী হা/৫০০; ইবনু মাজাহ হা/১১২৬) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি বর্তমান অবস্থায় প্রযোজ্য নয়। কেননা বর্তমানে শারঈ ওযর বিদ্যমান।
প্রশ্ন (৪১) : ওয়ায মাহফিলের সভাপতি বা প্রধান অতিথি করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি অধিক পরিমাণে দান করার ওয়াদা করেছে। এরূপ চুক্তিভিত্তিক দান গ্রহণ করা মাহফিল কর্তৃপক্ষের জন্য জায়েয হবে কি?
উত্তর : এরূপ দান সুস্পষ্ট রিয়ার শামিল, যা আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য নয়। সুতরাং দাতা যদি ব্যক্তিস্বার্থে বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে দান করে থাকে, তবে সে ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানগুলিকে বিনষ্ট করো না। সেই ব্যক্তির মত, যে তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং সে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে না। ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ প্রস্তরখন্ডের মত, যার উপরে কিছু মাটি জমে ছিল। অতঃপর সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হ’ল ও তাকে পরিষ্কার করে রেখে গেল। এভাবে তারা যা কিছু উপার্জন করে, সেখান থেকে কোনই সুফল তারা পায় না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৪)। রাসূল (ছাঃ) লোক দেখানো আমল থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন (মুসলিম হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২০৫)। সুতরাং উক্ত ব্যক্তির দান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কেননা এতে তার এই প্রকাশ্য দুষ্কর্মের প্রতি সমর্থন জানানো হয় এবং মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়।
প্রশ্ন (৪২) : পরিবারকে সাথে নিয়ে গৃহাভ্যন্তরে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পুরুষ সদস্য একজন হ’লে নারী সদস্য ইক্বামত দিতে পারবে কি? এছাড়া পুরুষ সদস্য কারণবশতঃ ইমামতি করতে না পারলে নারী সদস্য ইমামতি করতে পারবে কি?
উত্তর : পুরুষের উপস্থিতিতে কোন নারী ছালাতে ইক্বামত দিতে পারবে না। বরং পুরুষ একা হ’লেও নিজেই ইক্বামত দিয়ে ছালাত শুরু করবে। আর কোন অবস্থাতেই নারীর জন্য  পুরুষের ইমামতি করা সিদ্ধ নয়। যদি কোন পুরুষ নারীর ইমামতিতে ছালাত আদায় করে তাহ’লে তাকে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/১৯১, ১/১৬৪;  ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ২/১৬৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১৫২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৩০)।
প্রশ্ন (৪৩) : স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী স্বামী গৃহে অবস্থান করতে ভয় পেলে উক্ত গৃহ ত্যাগ করে অন্যত্র ইদ্দত পালন করা তার জন্য জায়েয হবে কি?
উত্তর : স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী মূলতঃ স্বামীর গৃহে অবস্থান করেই ইদ্দত পালন করবে। বাধ্যগত কারণ ব্যতীত এসময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না (তালাক ৬৫/১; আবুদাউদ হা/২৩০০; মিশকাত হা/৩৩৩২)। তবে নিরাপত্তার আশংকা থাকলে অন্য কোন নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ) একজন মহিলাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়ীতে ইদ্দত পালন করতে বলেছিলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩২৪)।
প্রশ্ন (৪৪) : হাশরের ময়দানে বিচারের পর সর্বপ্রথম জান্নাতী হবেন কোন ব্যক্তি?
উত্তর : সর্বপ্রথম জান্নাতী হবেন শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। তখন দায়িত্বরত ফেরেশতা বলবে, আপনি কে? আমি বলব, মুহাম্মাদ! তখন সে বলবে, আমি এই মর্মে আদিষ্ট হয়েছি যে, আপনার পূর্বে কারো জন্য আমি এই দরজা খুলব না (মুসলিম হা/১৯৭; ছহীহাহ হা/৭৭৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমিই হব সর্বাধিক অনুসারী উম্মতের নবী এবং আমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করব (মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমরা পরবর্তীরাই প্রথম হব এবং আমরাই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব (মুসলিম হা/৮৫৫; মিশকাত হা/১৩৫৪)।
প্রশ্ন (৪৫) : জনৈক বিদ্বান বলেন, দাজ্জাল ও ইমাম মাহদী আসার পূর্বে ছোট ছোট দাজ্জাল ও ইমাম মাহদী আসবে। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্যের পক্ষে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং দাজ্জাল হবে একজন এবং ইমাম মাহদীও হবেন একজন (ফাৎহুল বারী ১৩/৯১; মানাভী, ফায়যুল ক্বাদীর ৩/৫৩৯)। তবে দাজ্জালের মত বহু মহামিথ্যুক আসতে পারে, যারা নবুঅতের দাবী করবে। তাদেরকে হাদীছে শাব্দিক অর্থে দাজ্জাল বলা হয়েছে (বুখারী হা/৬৩০৯; মুসলিম হা/৭, ১৫৭; মিশকাত হা/৫৪১০)।
প্রশ্ন (৪৬) : নফল ছালাতে কুরআন দেখে পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : যাদের কুরআনের আয়াত তেমন মুখস্থ নেই তারা নফল ছালাতে দেখে দেখে কুরআন পাঠ করতে পারে। আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম যাকওয়ান রামাযান মাসে কুরআন দেখে আয়েশা (রাঃ)-এর ইমামতি করেছেন (বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, ৫৪ অনুচ্ছেদ ১/১৪০; বায়হাক্বী হা/৩১৮৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৯৯)। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হ’লে তিনি বলেন, ক্বিয়ামুল লায়লে কুরআন দেখে দেখে তেলাওয়াতে কোন দোষ নেই। তবে ফরয ছালাতের ব্যাপারে আমি কিছুই শুনিনি (ইবনু কুদামা, মুগনী ১/৩৩৫)। অতএব নফল ছালাতে দেখে দেখে কুরআন পাঠে কোন দোষ নেই। তবে এমতাবস্থায় কুরআন মুখস্থ পড়াই উত্তম। কারণ দেখে পড়লে ছালাতের খুশূ‘-খুযূ বিনষ্ট হ’তে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘৪/২৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১১৭)।
প্রশ্ন (৪৭) : কালোজিরা কি সকল রোগের ঔষধ? তবে এতে অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় না কেন?
উত্তর : মূলতঃ বিষয়টি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। যখন আল্লাহর হুকুম হয়, তখনই এর কার্যকারিতা প্রকাশ পায়, নতুবা নয়। উল্লেখ্য যে, কালোজিরার সঠিক ব্যবহারের নিয়ম জানা না থাকার কারণেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। তাছাড়া কারো যদি কোন রোগে মৃত্যু নির্ধারিত থাকে তাহ’লে কোন ঔষধই কাজ করবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৮/৬১)। কোন কোন বিদ্বান বলেন, এটি সর্বরোগের জন্য নয়, মূলত ঠান্ডাজনিত যে কোন রোগের মহৌষধ (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৪-৪৫; যাদুল মা‘আদ ৪/২৯৭)। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, আম দ্বারা খাছ উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে। কারণ পৃথিবীতে এমন কোন উদ্ভিদ নেই যার মধ্যে সকল প্রকারের ঔষধি গুণ রয়েছে (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৫)। কালোজিরা যেকোন মৌসুমী রোগেও উপকার করে। আর এজন্য জানতে হবে সঠিক ব্যবহার (ফাৎহুল বারী ১০/১৪৫; ঊমদাতুল কারী ২১/২৩৭; তোহফাতুল আহওয়াযী ৬/১৬৩-৬৪)। কালোজিরা রোগ ভেদে বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া যায়। কখনো শুধুই দানা, কখনো ৫/৭টি বা ২১টি দানা পিষে মধুর সাথে, কখনো যয়তুন তেলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া বা ড্রপ হিসাবে নাকে  দেওয়া ইত্যাদি রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/১৪৪)। এজন্য অধিকতর গবেষণা করে এর সঠিক প্রয়োগ ও পদ্ধতি আবিষ্কার করা যরূরী। একটি যুদ্ধাভিযানে গালিব বিন আবজার অসুস্থ হ’লে ইবনু আবী আতীক তাঁকে দেখতে আসেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা এই কালোজিরা সাথে রেখ। এথেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যায়তুনের কয়েক ফোটা তেল ঢেলে দিয়ে তা নাকের উভয় ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবেশ করাবে। কেননা আয়েশা (রাঃ) আমার নিকটে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘এই কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ঔষধ’ (বুখারী হা/৫৬৮৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৪৯; ছহীহাহ হা/১০৬৯)। অতএব আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে ঔষধ হিসাবে বিভিন্ন উপায়ে কালোজিরা ব্যবহার করতে হবে। তাহ’লেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৪৮) : জনৈক ব্যক্তি অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে কোন মেয়েকে গর্ভবতী করার পর গর্ভাবস্থায় তাকে বিয়ে করে। উক্ত বিবাহ কি সঠিক হয়েছে?
উত্তর : বিবাহপূর্ব বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যকার যেকোন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম (ইসরা ১৭/৩২)। অনুরূপভাবে গর্ভাবস্থায় নারীকে বিবাহ করা নাজায়েয, যতক্ষণ না সে সন্তান জন্ম দেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে না’ (আবূদাউদ হা/২১৫৭; মিশকাত হা/ ৩৩৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৭৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০)। সুতরাং এই বিবাহের পদ্ধতি সঠিক নয়। তবে যেহেতু গর্ভের সন্তানটি যিনার সন্তান এবং তা বিবাহকারীর নিজের, সেজন্য এখানে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই বলে অধিকাংশ বিদ্বান মত প্রকাশ করেছেন (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১৩০; হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন ৩/৪৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৯/৩৩৮)। উল্লেখ্য যে, এই বিবাহপূর্ব সন্তান মাতার দিকে সম্বন্ধিত হবে এবং সে পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না (আবূদাউদ হা/২২৬৫; ইবনু মাজাহ হা/২৭৪৬; সনদ হাসান; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৩৮৭)।
প্রশ্ন (৪৯) : ছালাতের পর তাসবীহ গণনার সুন্নাতী পদ্ধতি কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে সুন্নাত হ’ল- (১) আঙ্গুলের মাধ্যমে গণনা করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তাসবীহ সমূহ আঙ্গুলে গণনা কর। কেননা আঙ্গুল সমূহ ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে এবং তারা কথা বলবে’ (আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩১৬)। (২) ডান হাতে গণনা করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতেন (আবূদাঊদ হা/১৫০২; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা)। তিনি যেকোন কাজ ডান দিক থেকে করা পসন্দ করতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪০০)। (৩) গণনা কড়ে আঙ্গুল দিয়ে শুরু করা। কেননা ডান হাতের ডান পাশ কড়ে আঙ্গুল দিয়েই শুরু হয়েছে এবং এ আঙ্গুল দিয়ে গণনা শুরু করাটাই সহজ ও স্বভাবগত (বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল পৃঃ ১৫০)। আর ডান হাতে গণনা করতে অক্ষম হ’লে বাম হাতে গণনা করতে পারে। উল্লেখ্য যে, তাসবীহ গণনার জন্য পুঁথিদানা, ডিজিটাল গণনা মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কেননা এতে স্বভাবতই রিয়া আসে। তাছাড়া বিভিন্ন বিদ‘আতী যিকির-আযকারের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হয় তাসবীহদানা। এজন্য বিদ্বানগণ তাসবীহদানা ব্যবহারকে অপসন্দ করেছেন (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৩/৩০)। এমনকি শায়খ আলবানী একে বিদ‘আত আখ্যায়িত করেছেন, কেননা এটি বহু মানুষের কাছে ধর্মীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে (সিলসিলা যঈফাহ ১/১১০)।
প্রশ্ন (৫০) : তাশাহহুদ কি রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে আল্লাহর জন্য মি‘রাজের বিশেষ তোহফা ছিল?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত ঘটনাটি ভিত্তিহীন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৬-৭; মির‘আত ৩/২৩৩)। কিছু তাফসীর, হাদীছের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ছূফীদের কিছু গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের ৫৮ আয়াতের তাফসীরে এ ধরনের ঘটনা সনদবিহীনভাবে  বর্ণনা করা হয়েছে (তাফসীর রূহুল মা‘আনী, সূরা আন‘আম ৫৪ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য; মিরকাত ২/৭৩২; ‘আইনী, শরহ আবূদাঊদ ৪/২৩৮)। সুতরাং এই ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (৫১) : আত্মহত্যাকারী জানাযা পড়া যাবে কি?
উত্তর : আত্মহত্যা মহাপাপ। তবে আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে। কেননা এই পাপের কারণে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় না। কিন্তু তার জানাযায় মসজিদের ইমাম বা কোন বুযুর্গ আলেম শরীক হবেন না। বরং অন্যেরা ছালাত পড়াবেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট জনৈক আত্মহত্যাকারীকে আনা হ’লে তিনি তার জানাযা পড়াননি (মুসলিম হা/৯৭৮; নাসাঈ হা/১৯৬৪)। আর এটি ছিল অন্যদের জন্য শিক্ষাস্বরূপ’ (ইবনু মাজাহ হা/১৫২৬)। যাতে জীবিতরা বুঝতে পারে যে, এরূপ মহাপাপে জড়িয়ে পড়লে আমাদের জানাযাতেও তারা অংশগ্রহণ করবে না (নববী, শরহ মুসলিম ৭/৪৭)।
প্রশ্ন (৫২) : ছালাতের শুরুতে অনেকে বিসমিল্লাহ জোরে বলেন এবং রুকূ থেকে উঠে বুকে হাত বাঁধেন। এরূপ করলে ছালাত ক্ষতিগ্রস্ত বা বাতিল হবে কি?
উত্তর : বিসমিল্লাহ নীরবে পাঠ করাই রাসূল (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর সুন্নাত (আহমাদ হা/১২৮৬৮)। তবে কেউ যদি বিসমিল্লাহ সরবে পাঠ করে তাহ’লে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২২/২৬৮-৬৯, ৪৩৬-৩৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১০৯)। অনুরূপভাবে রুকূর পরে বুকে হাত বাধার বিষয়ে জমহূর বিদ্বানগণের মত হ’ল, রুকূর পর হাত ছেড়ে দেয়াই সুন্নাত। কেননা রাসূল (ছাঃ) রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে এমনভাবে দাঁড়াতেন যেন মেরুদন্ডের জোড়সমূহ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে (বুখারী হা/৮২৮; মিশকাত হা/৭৯২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না অস্থিসমূহ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে’ (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০৪ দ্র. ছালাতুর রাসূল ১০৭ পৃ.)। তবে পূর্বযুগে হায়তামী, ইবনু হাযম এবং সমকালীন যুগে ইবনু বায, ইবনুল উছায়মীনসহ হাদীছের আম ব্যাখ্যার ভিত্তিতে কিছু বিদ্বান পুনরায় হাত বাঁধার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন (ইবনু হাজার হায়তামী, আল-ফাতাওয়াল ফিকহিয়া আল-কুবরা ১/১৩৯; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/২৯; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৮/২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৪৫)। সর্বোপরি প্রথম মতটিই অগ্রাধিকারযোগ্য। তবে ব্যাখ্যাগত ভিন্নতার কারণে কেউ হাত বাঁধলে ছালাতের ক্ষতি হবে না।
প্রশ্ন (৫৩) : মহামারীর কারণে কা‘বা শরীফে ছালাত-তাওয়াফ বন্ধ রয়েছে এবং আসন্ন হজ্জ পালন বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এভাবে সকল ইবাদত বন্ধ করা কি জায়েয? ইতিপূর্বে কখনো হজ্জ বন্ধ হয়েছে কি?
উত্তর : মানুষের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ছালাত, তাওয়াফ এমনকি হজ্জ বন্ধ রাখা জায়েয। কেননা মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা রক্ষা করা ইসলামী শরীআ‘তের অন্যতম মূলনীতি (বাক্বারাহ ২/১৯৫; নিসা ৪/২৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না এবং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না (আহমাদ হা/২৮৬৭; ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)। অর্থাৎ নিজেকে দিয়ে অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না এবং অন্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবে না। মহামারীর সময়ে জাতিকে সতর্ক করে রাসূল (ছাঃ) বলেন, অসুস্থ প্রাণীকে যেন সুস্থ প্রাণীর মাঝে প্রবেশ করানো না হয় (বুখারী হা/৫৭৭১; মুসলিম হা/২২২১)। অতএব বর্তমান বিশ্ব মহামারী করোনার সময়ে হাজীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে হজ্জ বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা নেই। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে যুদ্ধ ও মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে বহুবার হজ্জ ও তাওয়াফ বন্ধ হয়েছে। যেমন- (১) ৩১৭ হি./৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বাহরাইনের শাসক আবু তাহের কারামিয়ার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সর্ববৃহৎ হাজীদের কাফেলায় আক্রমণ করে এবং অনেক নারী-পুরুষকে হত্যা করে। ফলে ৩১৭ হিজরী থেকে ৩২৭ হিজরী পর্যন্ত হজ্জের কার্যক্রম বন্ধ ছিল’ (যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ২৩/৩৭৪)। (২) ১০৩৮ হি./১৬২৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় ব্যাপক বন্যা হয়। ফলে কা‘বার দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। সুলতান চতুর্থ মুরাদের নির্দেশে কা‘বা পুনর্নির্মাণের সময় হজ্জ ও ওমরাহর কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ছিল কা‘বার সর্বশেষ নির্মাণ। (৩) ১৮১৪ সালে হেজাজ প্রদেশে প্লেগের কারণে ৮০০০ মানুষ মারা যাওয়ায় হজ্জ বাতিল করা হয়। (৪) ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রকাশ পাওয়া কলেরায় আক্রান্ত হয়ে তিন-চতুর্থাংশ হাজী মারা যায়। ফলে সে বছর হজ্জ বাতিল হয়। এছাড়াও ১৮৩৭ থেকে ১৮৫৮ সালের মধ্যে মহামারীর কারণে তিনবারে মোট সাত বছর হজ্জ বন্ধ ছিল (তথ্যসূত্র : হারামাইনের ওয়েবসাইট)।
প্রশ্ন (৫৪) : ইফতারের পর আমরা ‘যাহাবায যামাউ’ যে দো‘আটি পাঠ করি, সেটি কি ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি হাসান, যার উপর আমল করা যায়। শায়খ আলবানী ও শু‘আইব আরনাউত উভয়ে হাদীছের সনদকে হাসান বলেছেন (আবূদাউদ হা/২৩৫৭; ইরওয়া হা/৯২০; মিশকাত হা/১৯৯৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৭৮)। এছাড়াও দারাকুৎনী, ইবনু হাজার, হাকেম, ইবনু হিববানসহ বহু মুহাদ্দিছ এর সনদকে হাসান বলেছেন (ইরওয়া ৪/৩৯)।
প্রশ্ন (৫৫) : মসজিদের জন্য জমি ওয়াকফ করা কি শর্ত? সরকারী পতিত জমিতে কি স্থায়ীভাবে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে?
উত্তর : এটি শর্ত নয়। বরং অনুমতি শর্ত। তবে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে মসজিদের নামে স্থানটি ওয়াকফ করা যরূরী (বুখারী হা/২৭৭৪; মুসলিম হা/৫২৪)। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সরকারী জমিতে স্থায়ীভাবে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। তবে অনুমতি না থাকলে স্থায়ীভাবে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না (মুগনিল মুহতাজ ১০/১১৯; ইবনুল মুফলেহ, আল-মুবনি‘ শারহুল মুক্বনি‘ ৫/১৭৬-৭৭)। তাছাড়া যেকোন পবিত্র ভুমিতে ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য মসজিদ এবং মাটিকে পবিত্র করা হয়েছে, যখন পানি না পাওয়া যায়’ (মুসলিম হা/৫২২; মিশকাত হা/৫২৬)।
প্রশ্ন (৫৬) : দো‘আ কুনূতের শেষাংশে ‘ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নাতূবু ইলাইক, ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলান নাবী’-অংশটি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর :  উক্ত শব্দগুলো যোগ করে পাঠ করার ব্যাপারে যে বর্ণনা রয়েছে তা যঈফ (নাসাঈ হা/১৭৪৬; ইরওয়া ২/১৭৬; বুলুগুল মারাম হা/৩০৮; মিরকাত ৩/৯৫০)। তবে অধিকাংশ বিদ্বান মনে করেন, দো‘আ কুনূতের শেষে এধরনের অর্থবোধক শব্দ যোগ করাতে কোন দোষ নেই। বরং শরী‘আত সম্মত। কারণ এগুলোর উপর সালাফদের আমল রয়েছে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৭৭-৭৮; তামামুল মিন্নাহ ১/২৪৩;  মির‘আত ৪/২৮৫; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৫২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৬৩/৩৪)। তাছাড়া হাসান (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক শিক্ষা দেওয়া দো‘আতে যেমন শব্দের ভিন্নতা রয়েছে তেমনি হাসান ব্যতীত অন্যদের শিক্ষা দেওয়া কুনূতে দো‘আর ভিন্নতা রয়েছে (আবূদাউদ হা/১৪২৭; ইবনু মাজাহ হা/১১৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৮০; মিশকাত হা/১২৭৬)। অতএব বিতরের কুনূতে বৃদ্ধি করা যায়। (দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ১৬৮ টীকা ৭৬৮)।
প্রশ্ন (৫৭) : দশ বছর পূর্বে কোন ব্যক্তি তার বোনের একটি স্বর্ণালংকার চুরি করে। এখন সে এজন্য অনুতপ্ত এবং চুরির মাল ফেরৎ দিতে চায়। এক্ষেত্রে কি সে তার বোনকে না জানিয়ে তাকে কোন স্বর্ণালংকার বা তার অর্থমূল্য দিয়ে অপরাধমুক্ত হ’তে পারবে? আর এক্ষেত্রে কি চুরিকৃত বস্ত্তর অনুরূপই দিতে হবে না অর্থমূল্যই যথেষ্ট?
উত্তর : চুরিকৃত স্বর্ণালংকার মজুদ থাকলে তাকে সেটাই ফেরত দিতে হবে। আর মজুদ না থাকলে অনুরূপ স্বর্ণালংকার বা সমমূল্য দিলেই দায় মুক্ত হবে। তবে বোনকে অবহিত করে অনুতপ্ত হয়ে স্বর্ণালংকার বা সমমূল্য ফেরত দেয়াই উত্তম হবে (উছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ৩১; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৪/১৬২)। বিশেষ কারণে চুরির কথা না জানিয়ে চুরিকৃত মাল ফেরত দেওয়াতেও কোন দোষ নেই (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৪/১৬৫)।
প্রশ্ন (৫৮) : চেয়ারে বসে কুরআন তেলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আসলে কি বসে থাকা অবস্থাতেই কি সিজদা করা যাবে?
উত্তর : যার সামর্থ্য ও সুযোগ রয়েছে মাটিতে নেমে সিজদা করার সে মাটিতে সিজদা দিবে। আর যে চেয়ারে বসেই ছালাত আদায় করে সে মাথা নীচু করে ইশারায় সিজদা দিবে। আবার কেউ গাড়িতে থাকলে এবং তেলাওয়াত করলে বা শুনলে ইশারাতেই সিজদা দিবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৭৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/১৬৭)।
প্রশ্ন (৫৯) : যাকাতের অর্থ অমুসলিমদেরকে প্রদান করা কি নিষিদ্ধ?
উত্তর : যাকাতের অর্থ থেকে কোন অমুসলিমকে দেওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনে প্রেরণের সময় বলেছিলেন, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে এই মর্মে যে, আল্লাহ তাদের উপরে ছাদাক্বা ফরয করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে নেওয়া হবে ও তাদের গরীবদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে (মুসলিম হা/১৯; মিশকাত হা/১৭৭২)। এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, কাফেরকে যাকাতের মাল দেওয়া যাবে না (নববী, শরহ মুসলিম হা/১৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। ইবনু কুদামা বলেন, যাকাতের মাল থেকে কাফেরদের দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের মতপার্থক্য আছে বলে আমার জানা  নেই (মুগনী ২/১৮৭)। ইবনুল মুনযির বলেন, এ ব্যাপারে আলেমগণের ঐক্যমত রয়েছে যে, যাকাতের মাল কাফেরদের দেওয়া যাবে না (আল-ইজমা‘ ১/৪৮)। তবে অমুসলিম ফকীর-মিসকীনদের মাঝে সাধারণ ছাদাক্বা বিতরণে বাধা নেই (বুখারী হা/১০৪৯; মুসলিম হা/৯০৩; মিশকাত হা/১২৮)।
প্রশ্ন (৬০) : সাহারী খাওয়ার সময় আযান দেয়া অবস্থায় প্লেট পূর্ণ থাকলে তা কি আর খাওয়া যাবে, না রেখে দিতে হবে? আর যদি খাওয়া যায়, তবে কতটুকু খেতে পারবে?
উত্তর : নিয়ম হ’ল আযানের পূর্বেই খানা সম্পন্ন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা (রামাযানের রাতে) খানাপিনা কর, যতক্ষণ না (রাত্রির) কালো রেখা হ’তে ভোরের শুভ্ররেখা স্পষ্ট হয় (বাক্বারাহ ২/১৮৭)। কোন কারণে পাত্রে খাবার অবশিষ্ট থাকলে তা দ্রুত খেয়ে নিবে। কিন্তু কোনক্রমেই নতুনভাবে খাবার নিতে পারবে না বা খাওয়া শুরু করবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ খাবার পাত্র অথবা পানির পাত্র হাতে নেয় আর এমতাবস্থায় আযান হয়ে যায়, তখন সে যেন তা রেখে না দেয়; বরং খাওয়া শেষ করে’ (আবুদাঊদ হা/২৩৫০; মিশকাত, হা/১৯৮৮ ‘ছওম’ অধ্যায়; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩৩৩; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ৪/৩৬৭)।
প্রশ্ন (৬১) : করোনা থেকে বাঁচার জন্য সম্মিলিত দো‘আ ও তওবার আয়োজন করা যাবে কি?
উত্তর : মহামারী পরিস্থিতিতে সম্মিলিত মুনাজাত বা তওবার আয়োজন করা যাবে না। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনদের যুগে বহু মহামারী আঘাত হেনেছে। কিন্তু তাঁদের কেউ সম্মিলিত মুনাজাত ও তওবার আয়োজন করেননি। বরং এই বিদ‘আতী পন্থায় ৮৩৩ হিজরী সনে মিসরে সম্মিলিত দো‘আ ও তওবার আয়োজন করার পর সেখানে মহামারীর প্রাদুর্ভাব অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল (ইবনু হাজার, ইনবাউল গুমরি বিআবনাইল ঊমর ফিত-তারীখ ৮/২০০-২০৪; জামালুদ্দীন আতাবেগী, আন-নুজূমুয যাহেরা ফী মুলূকে মিসর ওয়াল ক্বাহেরা ৪/১৪২-১৪৫; মাক্বরীযী, আস-সুলূকু ৩/৩৩৩-৩৩৫)। সুতরাং বিদ‘আতী পন্থায় বালা-মুছীবত দূর করার কোন চেষ্টা নাজায়েয।
প্রশ্ন (৬২) : লাইভে প্রচারিত জামা‘আতের ইক্তিদা করা যাবে কি না?
উত্তর : লাইভে প্রচারিত জামা‘আতের ইক্তিদা করে ছালাত আদায় করা জায়েয নয়। এভাবে কেউ ছালাত আদায় করলে তার ছালাত বাতিল হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২৯-৩১)। কারণ হাদীছে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম হিসাবে আগামী কাল আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হ’তে চায় সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাযথভাবে আদায় করে। যেখানেই উক্ত ছালাতের আযান দেয়া হোক’ (মুসলিম হা/৬৫৪; মিশকাত হা/১০৭২)। এখানে মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। অতএব বাড়িতে বসে থেকে লাইভ সম্প্রচার দেখে ইমামের সাথে ফরয-নফল কোন ছালাতই পড়া যাবে না। তাছাড়া জামা‘আত হওয়ার জন্য শর্ত হ’ল কাতারের সাথে কাতার মিলে থাকা এবং ইমাম বা অন্য মুছল্লীদের দেখতে পাওয়া বা ইমামের আওয়াজ শুনতে পাওয়ার মাধ্যমে স্থানিক ঐক্য সাধিত হওয়া, যা লাইভ সম্প্রচারে সম্ভব নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২০০; মুগনী ৩/৪৫; কাশশাফুল কেনা‘ ১/৪৯১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/২১৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩১-৩২)।
প্রশ্ন (৬৩) : কারণবশতঃ একটি ছাগল দিয়ে পুত্র সন্তানের আক্বীক্বা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি? এছাড়া আক্বীক্বার নিয়তে ছাগল কিনে ইয়াতীমখানায় দান করলে আক্বীক্বা হবে কি?
উত্তর : সামর্থ্যহীন ব্যক্তির জন্য একটি পশু দ্বারাও পুত্র সন্তানের আক্বীক্বা দেয়া জায়েয। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা আক্বীক্বা করেছেন’ (আবূদাঊদ হা/২৮৪১; মিশকাত হা/৪১৫৫; ইরওয়া হা/১১৬৭)। ইমাম নববী বলেন, সুন্নাত হ’ল ছেলের জন্য দু’টি  বকরী  এবং  মেয়ের  জন্য একটি বকরী। কেউ একটি দিলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে (আল-মাজমূ‘ ৮/৪০৯)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যদি কারো নিকট একটি ছাগল থাকে তাহ’লে একটিই যথেষ্ট হবে। তবে সামর্থ্য থাকলে ছেলের জন্য দু’টি ছাগল আক্বীক্বা দেওয়াই উত্তম’ (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৯২)। আর এর গোশত বণ্টনের বিষয়টি কুরবানীর গোশতের মত। অর্থাৎ তিন ভাগে ভাগ করে ফকীর-মিসকীন, প্রতিবেশীকে দিবে ও নিজে খাবে (বাহুতী, আর-রওযুল মুরাববা‘ ১/১৯৮)। আর আক্বীকার নিয়তে ছাগল কিনে ইয়াতীমখানায় দান করলেও আক্বীকা হয়ে যাবে। তবে সবটুকু দান না করে নিয়ম মাফিক বণ্টন করাই উত্তম (মুগনী ২২/৪)।
প্রশ্ন (৬৪) : বেনামাযী মুসলিম কসাই আল্লাহর নামে পশু যবেহ করলে তা খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : যেকোন মুসলিম কর্তৃক বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করা পশুর গোশত খাওয়া জায়েয। গাফলতির কারণে কেউ ছালাত পরিত্যাগ করলে তাকে ছালাত আদায়ের উপদেশ দিতে হবে। কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত মহাপাপ (মুসলিম হা/৮২; মিশকাত হা/৫৬৯)। তবে সে যদি ছালাত অস্বীকারকারী হয়, তাহ’লে তার যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ এমতাবস্থায় সে কাফির’ (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/২৭৪-৭৬)।
প্রশ্ন (৬৫) : খালাতো বোনের সাথে আমার বিবাহ পারিবারিকভাবে ঠিক হয়ে আছে। এক্ষণে আমি কি তার সাথে প্রয়োজনীয় কথা বা সাক্ষাৎ করতে পারব?
উত্তর : খালাতো বোন মাহরামদের অন্তর্ভুক্ত নয় (নিসা ৪/২৪)। সুতরাং বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সাথে একাকী নিভৃতে যাওয়া যাবে না। তবে পর্দার মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় কথা বলা বা খোঁজ-খবর নেওয়ায় দোষ নেই (বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ২/১৫৫; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)।
প্রশ্ন (৬৬) : নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নির্ধারিত যাকাতের অর্থ থেকে যাকাত ও ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবে কি?
উত্তর : যাকাতের মাল থেকে ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবে না। কারণ যাকাত হ’ল ইবাদত, যা নির্দিষ্ট নিয়মে ও নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে হয়। আর ট্যাক্স সরকারী কর, যা মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য প্রযোজ্য। এটিই জমহুর ওলামায়ে কেরামের মত (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৫৪২-৫৫০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/২৮৫, প্রশ্ন ৬৫৭৫; ফিক্বহুয যাকাত ২/১১৭৫-৭৮)।
প্রশ্ন (৬৭) : ‘ছুরাইয়া তারকা উদিত হ’লে মহামারী দূরীভূত হয়’-এ বক্তব্যের সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : ছুরাইয়া তারকা উদিত হ’লে মহামারী দূরীভূত হয় এমন কোন প্রমাণ নেই। কারণ যে সকল হাদীছে ছুরাইয়া উদিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে সেখানে মূলত ফসলের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ছুরাইয়া তারকা উদিত হ’লে খেজুরসহ অন্যান্য ফসলের উপর থেকে বিপদ উঠে যাবে। এতে ছুরাইয়া তারকার নিজস্ব কোন ক্ষমতা ও প্রভাবের কথা বলা হয়নি; বরং চন্দ্র-সূর্যের মত সময় নির্দেশক তারকা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাঃ) ছুরাইয়া তারকা উদিত হওয়ার পর ফলের হলুদ ও লাল রংয়ের পূর্ণ প্রকাশ না ঘটা পর্যন্ত তাঁর বাগানের ফল বিক্রি করতেন না (বুখারী হা/২১৯৩; মুসলিম হা/২৫৪৬)। আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বালা-মুছীবত দূর হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল কখন বালা-মুছীবত দূর হয়? তিনি বললেন, ছুরাইয়া উদিত হ’লে (আহমাদ হা/৫০১২, সনদ ছহীহ)। হাফেয ইবনু হাজার বলেন, ছুরাইয়া তারকা উদিত হয় গ্রীষ্মের শুরুতে, যখন প্রচন্ড গরম পড়ে (ফাৎহুল বারী ৪/৩৯৫; নায়ল ৫/২০৬)। আর গরমের কারণেই মৌসুমী ফলগুলো পাকে। সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনাগুলো ফল পাকার সাথে সংশ্লিষ্ট। মহামারীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
তবে একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, সকালে তারকা তথা ছুরাইয়া উদিত হ’লে সকল দেশ থেকে বালা-মুছীবত উঠে যায় (আহমাদ হা/৮৪৭৬, ৫০১২, সনদ ছহীহ)। উক্ত হাদীছের সনদকে শায়খ আরনাঊত্ব ছহীহ ও হাসান বললেও শায়খ আলবানী যঈফ বলেছেন (যঈফাহ হা/৩৯৭)। কোন কোন বর্ণনায় আছে, বালা উঠে যাবে বা প্রশমিত হবে (আহমাদ হা/৯০২৭; যঈফুল জামে‘ হা/৫০৯৬)। এই হাদীছটিকে ছহীহ ধরে নিয়ে কতিপয় ব্যাখ্যাকার বলেছেন, যেদিন সকালে ছুরাইয়া উদিত হবে সেদিন লোকদের উপর থেকে মহামারী ও রোগ-ব্যাধি উঠে যাবে এবং ফসলের উপর থেকে বিপদ কেটে যাবে (মানাভী, আত-তায়সীর ২/৩৫২; ফায়যুল ক্বাদীর ৫/৪৫৪; তাফসীরে সাম‘আনী ৬/৩০৬)। সর্বোপরি নিঃসন্দেহে কোন তারকার নিজস্ব ক্ষমতার কারণে নয়; বরং একমাত্র আল্লাহ চাইলেই বিপদ দূর হ’তে পারে।
প্রশ্ন (৬৮) : করোনা পরিস্থিতিতে যাকাতের টাকা থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : কর্মচারী তার পরিশ্রমের বিনিময়ে বেতন পাওয়ার হক্বদার। সুতরাং কোন অবস্থাতেই যাকাতদাতার জন্য যাকাতের অর্থ থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া সিদ্ধ নয় (হাশিয়াতুল জামাল আলা শারহিল মানহাজ ২/২৪৮, ৭/৩৭৭, ৪/১৫৮)। তবে যদি কর্মচারীরা যাকাতের হক্বদার হয় তাহ’লে তাদের যাকাত হিসাবে অর্থ দিতে পারে, বেতন হিসাবে নয় (তওবাহ ৯/৬০)।
প্রশ্ন (৬৯) : জনৈক ব্যক্তির চার ভাই ও দু’বোন আছে। তিন ভাই ও দু’বোন আগেই মারা গেছে। এক্ষণে এক ভাই জীবিত আছে যার কোন সন্তান নেই। সেও মারা গেল কিছুদিন আগে। জীবিত আছে তার স্ত্রী, এক ভাইয়ের ৮ ছেলে, ১ মেয়ে; অন্য ভাইয়ের চার ছেলে ও ছয় মেয়ে এবং আরেক ভাইয়ের তিন ছেলে ও চার মেয়ে। কে কতটুকু সম্পদ পাবে?
উত্তর : স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে। যেহেতু তার সন্তান বা পুত্রের সন্তান নেই। আর সহোদর ভাইয়ের পুত্ররা একমাত্র অবশিষ্টভোগী ‘আছাবাহ’ হিসাবে অবশিষ্ট সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, সম্পদ অংশীদারদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বণ্টন কর। তারপর যা অবশিষ্ট থাকবে তা নিকটতম পুরুষের প্রাপ্য (বুখারী হা/৬৭৪৬; মুসলিম হা/১৬১৫)।
প্রশ্ন (৭০) : হাদীছে এসেছে যে, ১৫ই শা‘বানের পর ছিয়াম রাখা যাবে না। আবার এসেছে রাসূল (ছা.) এ মাসের পুরোটাই প্রায় ছিয়াম রাখতেন। এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : হাদীছে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অর্থ হ’ল যারা শা‘বান মাসের শুরু থেকে ছিয়াম রাখেন, তারা যেন ১৫ই শা‘বানের পর আর না রাখেন। কেননা এতে শারিরীক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তবে সামর্থ্যবান হ’লে ১৫ই শা‘বানের পরও ছিয়াম পালন করা যাবে। এছাড়া যারা সাপ্তাহিক ছিয়াম পালন করেন তারা করতে পারেন (বুখারী হা/১৯৭০; মুসলিম হা/১১৫৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩৯৯-৪০০; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৪/১২৯)।
প্রশ্ন (৭১) : হাদীছে এসেছে যে, ১৫ই শা‘বানের পর ছিয়াম রাখা যাবে না। আবার এসেছে রাসূল (ছা.) এ মাসের পুরোটাই প্রায় ছিয়াম রাখতেন। এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : হাদীছে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অর্থ হ’ল যারা শা‘বান মাসের শুরু থেকে ছিয়াম রাখেন, তারা যেন ১৫ই শা‘বানের পর আর না রাখেন। কেননা এতে শারিরীক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তবে সামর্থ্যবান হ’লে ১৫ই শা‘বানের পরও ছিয়াম পালন করা যাবে। এছাড়া যারা সাপ্তাহিক ছিয়াম পালন করেন তারা করতে পারেন (বুখারী হা/১৯৭০; মুসলিম হা/১১৫৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩৯৯-৪০০; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৪/১২৯)।
প্রশ্ন (৭২) : টয়লেটে বালতি ভরে পানি রেখে সেই পানিতে পরের দিন ওযূ করা যাবে না। কেননা শয়তান তাতে প্রস্রাব করে দেয়- একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। পানিতে প্রকাশ্য কোন অপবিত্রতা না থাকলে কোন সমস্যা নেই। তবে টয়লেট একটি অপবিত্র স্থান, যেখানে জিন-শয়তানেরা অবস্থান করে। সেজন্য বালতিতে পানি রাখলে ঢেকে রাখা উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এই সকল স্থানে সাধারণত শয়তান উপস্থিত হয়ে থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যাওয়ার ইচ্ছা করে তখন সে যেন বলে, ‘আমি আল্লাহর নিকট স্ত্রী ও পুরুষ উভয় শয়তানের অনিষ্ট হ’তে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (ইবনু মাজাহ হা/২৯৬; মিশকাত হা/৩৫৭; ছহীহাহ হা/১০৭০)।
প্রশ্ন (৭৩) : জনৈক বক্তা বলেন, সুরা নিসার ৫৮-৫৯ আয়াতের আলোকে ভোট দেয়া ফরযে আইন। একথা কি সঠিক?
উত্তর : আয়াতের অর্থ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথার্থ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোত্তম উপদেশ দান করছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৮-৫৯)।
এখানে ‘আমানত’ কথাটি বহুবচনে এসেছে। যার দ্বারা আমভাবে কথা ও কাজসহ সবধরনের আমানত বুঝানো হয়েছে। বিগত দিনের সবচেয়ে বড় আমানত হ’ল ‘আহদে আলাস্ত্তর আমানত। যেদিন রূহানী জগতে সকল মানুষকে সামনে রেখে আল্লাহ বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের প্রভু নই। জবাবে সবাই বলেছিল, হ্যাঁ’ (আ‘রাফ ৭/১৭২)। অথচ দুনিয়াতে এসে মানুষ অনেকে কাফির-মুনাফিক হয়ে গেছে এবং ফেলে আসা সেই স্বীকৃতি দানের আমানতের কথা ভুলে গেছে। অনুরূপভাবে নেতৃত্বের আমানতও এর অন্তর্ভুক্ত। সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন অযোগ্য ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তোমরা ক্বিয়ামতের অপেক্ষা কর’ (বুখারী হা/৫৯; মিশকাত হা/৫৪৩৯)। অনুরূপভাবে শরী‘আতের যাবতীয় বিধি-বিধানকেও বান্দার জন্য আমানত বলা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এই ‘আমানত’ অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল। কিন্তু মানুষ তা বহন করল’ (আহযাব ৩৩/৭২)। এখানে আমানত অর্থ আনুগত্য, শরী‘আতের বিধি-বিধান, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ প্রভৃতি (তাফসীর ইবনু কাছীর ৬/৪৮৮-৮৯)। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত আয়াতের আলোকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচন বা ভোট প্রদান করা ফরযে আইন সাব্যস্ত করা কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল। পূর্বসূরী কোন মুফাস্সির এই আয়াতের ব্যাখ্যা এভাবে করেননি। উল্লেখ্য যে, নেতৃত্ব নির্বাচন, রাজনৈতিক সমর্থন বা ভোট প্রদান সকলের জন্য আমানত নয়। এটা শুধু বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা শূরা সদস্যদের জন্য আমানত, যারা নেতা নির্বাচনের জন্য আদিষ্ট।
প্রশ্ন (৭৪) : নিজের অজান্তে ব্যক্তি কোন শিরক করে ফেললে তার জন্য ক্ষমা পাওয়ার কোন সুযোগ আছে কি?
 উত্তর : নিজের অজান্তে কেউ শিরক করে ফেললে এবং তওবা না করলে আল্লাহ তাকে মাফ করতেও পারেন, নাও করতে পারেন। আল্লাহ বলেন, অতএব তোমরা জেনে-শুনে কাউকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ নির্ধারণ করো না (বাক্বারাহ ২/২২)। সুতরাং যখনই সে শিরকের বিষয় জানবে তখনই সে তওবা করবে। তাহ’লে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন (যুমার ৫৩; মায়েদাহ ৫/৭৩-৭৪; মুসলিম হা/১২১)। রাসূল (ছাঃ) অজ্ঞাতসারে কৃত শিরকসহ যাবতীয় শিরক থেকে বাঁচার জন্য দো‘আ শিখিয়েছেন এ মর্মে যে,اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ، ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি তোমার সাথে জেনে-শুনে শিরক করা থেকে এবং সেই শিরক থেকে ক্ষমা চাচ্ছি যে সম্পর্কে আমি জ্ঞাত নই’ (ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৬৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩৬)।
প্রশ্ন (৭৫) : গর্ভবতী ও বাচ্চাওয়ালা প্রাণীকে শিকার করা যাবে কি?
উত্তর : সাধারণভাবে গর্ভবতী ও ছোট বাচ্চাওয়ালা প্রাণী শিকার করা জায়েয। তবে যদি কোন প্রাণী সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, প্রাণীটি এখন গর্ভবতী বা এমন ছোট বাচ্চা রয়েছে মায়েদের শিকার করলে বাচ্চার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হবে তাহ’লে উক্ত প্রাণীকে শিকার করা হ’তে বিরত থাকাই উত্তম (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২২/৫১২; ঊছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭৫/১; ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ১২/২২৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শনকে আবশ্যক করেছেন। অতএব কাউকে (প্রাণী) হত্যা করলে উত্তম পন্থায় হত্যা করবে এবং কোন কিছু যবেহ করলে উত্তম পন্থায় যবেহ করবে (মুসলিম হা/১৯৫৫; মিশকাত হা/৪০৭৩)।
প্রশ্ন (৭৬) : কারো নিকটতম আত্মীয় মরে যাওয়ার কারণে বলল, হে আল্লাহ তুমি আমার সাথে এটা করলে কেন? এমন কথা বলা যাবে কি?
উত্তর : এমন কথা বলা তাক্বদীরের প্রতি আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। কোন মানুষের বা সৃষ্টজীবের অধিকার নেই আল্লাহর কর্মের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা। আল্লাহ বলেন, তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। বরং তারাই জিজ্ঞাসিত হবে (আম্বিয়া ২১/২৩)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যা করেন, সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। বরং  মানুষই জিজ্ঞাসিত হবে। এটি কেবল তার ক্ষমতা বা পরাক্রমশীলতার কারণে নয়; বরং তার প্রতিটি বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান, ক্ষমতা, অনুগ্রহ ও প্রজ্ঞার কারণে। কারণ তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক, সর্বাধিক দয়ালু এমনকি সন্তানের প্রতি পিতার দয়ার চেয়েও তিনি বান্দার প্রতি দয়ালু। তিনি সবকিছুকে সর্বোত্তমভাবে সৃষ্টি করেছেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৮/৭৯)। অতএব তাক্বদীরের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে যে কোন বিপদকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মনে করে মেনে নিতে হবে। এর মধ্যেই তার জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে (মুসলিম হা/২৯৯৯)।
প্রশ্ন (৭৭) : আল্লাহ রূহ সৃষ্টি করার পর কাউকে জান্নাতী কাউকে জাহান্নামী হিসাবে আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। এক্ষণে কোন জান্নাতী স্বীয় বদআমলের কারণে যেমন আত্মহত্যা করার কারণে জাহান্নামে যেতে পারে কি?
উত্তর : প্রত্যেকে নিজ নিজ অপকর্মের কারণে শাস্তি পাবে। কেউ আত্মহত্যা করলে তাকে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী করে সৃষ্টি করার ব্যাখ্যা আলাদা। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের ও কেউ মুমিন। আর তোমরা যা কিছু কর, সবই আল্লাহ দেখেন’ (তাগাবুন ৬৪/২)। অত্র আয়াতে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হয় সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মুমিন হবে, অথবা অবিশ্বাসী কাফের হবে। আল্লাহর উপর বিশবাসী হ’লে তার সার্বিক জীবন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী গড়ে উঠবে। আর অবিশ্বাসী হ’লে তার সার্বিক জীবন শয়তানী খেয়াল অনুযায়ী গড়ে উঠবে। পরিণতির দিক দিয়েও এক দল জান্নাতী হবে, এক দল জাহান্নামী হবে (শূরা ৪২/৭)।
অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের ও কেউ মুমিন বলার মধ্যে একটি মৌলিক দর্শনের সন্ধান রয়েছে যে, আল্লাহ কাফের-মুমিন এবং কুফর ও ঈমান সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু বান্দা তার ইচ্ছামত কুফর বা ঈমানকে বেছে নেয় ও সেমতে সে কাজ করে। যেটি আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা যা কর, সবই আল্লাহ দেখেন। আর সে হিসাবে তার পুরস্কার অথবা শাস্তি হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাকে সুপথ প্রদর্শন করেছি। এক্ষণে সে কৃতজ্ঞ হৌক কিংবা অকৃতজ্ঞ হৌক’ (দাহর ৭৬/৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই, যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লেখা হয়নি। একথা শুনে একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাহ’লে সকল আমল ত্যাগ করে আমাদের লিখিত ভাগ্যের উপর ভরসা করব না? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা সৎকর্ম করে যাও। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি কুরআন থেকে পাঠ করলেন, অতঃপর যে ব্যক্তি দান করে ও আল্লাহভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে (তাওহীদকে) সত্য বলে বিশ্বাস করে, অচিরেই আমরা তাকে সরল পথের জন্য সহজ করে দেব। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, অচিরেই আমরা তাকে কঠিন পথের জন্য সহজ করে দেব (লায়েল ৯২/৫-৭, বুখারী হা/৪৯৪৯;  মিশকাত হা/ ৮৫)।
প্রশ্ন (৭৮) : রাতে পশু শিকার করা যাবে কি?
উত্তর : রাতে প্রাণী শিকারে কোন বাধা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু’ (বাক্বারাহ ২/২৯)। তবে অনেক ক্ষেত্রে শিকারীর জন্য রাতে শিকার বিপদজনক হ’তে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। আর ‘তোমরা রাতে পাখিদের বাসায় আক্রমণ করে শিকার করো না’ মর্মে প্রচলিত কথাটির কোন শারঈ ভিত্তি নেই (উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ১১১/৯৪-৯৫)।
প্রশ্ন (৭৯) : ভুলবশতঃ তিন তাকবীরে জানাযার ছালাত আদায় করা হয়ে গেলে করণীয় কী?
উত্তর : জানাযার ছালাত চার তাকবীরে আদায় করা সুন্নাত। এছাড়া পাঁচ থেকে নয় তাকবীর পর্যন্তও আদায় করা যায় (বুখারী হা/১৩৩৩; আবুদাউদ হা/৩১৯৭; তালখীছু আহ্কামিল জানায়েয ১/৫৪, ৭৫)। কিন্তু ইমাম ভুলবশতঃ তিন তাকবীরে সালাম ফিরালে মুছল্লীরা ইমামকে লোকমা দিবে। আর বিষয়টি সালাম শেষে জানা গেলে ইমাম সবাইকে কাতারবদ্ধ করে আরেকবার তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে। আনাস (রাঃ) তিন তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরালে তাকে লোকমা দেওয়া হয়। তখন তিনি লোকদের কাতারবদ্ধ করে আরেক তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরান (বুখারী ৫/২৩৭; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৬৪১৭; ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩০৮০)। তবে যদি না দেয়, তাতেও দোষ নেই (দ্র. ছালাতুর রাসূল ২১৩ পৃ.)।
প্রশ্ন (৮০) : রাসূল (ছাঃ) ছাওমে বেছাল তথা দু’দিন একটানা ছিয়াম পালন করতেন এবং তাতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাকে খাওয়ান ও পান করান। এক্ষণে এই খাওয়া ও পান করা
 উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে খাওয়ানোর অর্থ তিনটি হ’তে পারে। প্রথমতঃ রাসূল (ছাঃ)-এর পাকস্থলীতে খাদ্য ও পানীয়ের যোগান দেওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-এর পাকস্থলীতে খাদ্য ও পানীয়ের যোগান দিতেন, যার কারণে তিনি ক্ষুধার্ত হ’তেন না। দ্বিতীয়তঃ বাস্তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জান্নাতী খাবার দিতেন যেমন কারামত হিসাবে অন্যান্য নবী ও মরিয়ামকে জান্নাতী খাবার দিয়েছিলেন (ইমরান ৩/৩৭; ফাৎহুল বারী ৪/২০৬-৭)। জান্নাতী খাদ্য গ্রহণের কারণে তিনি ক্ষুধার্ত হ’তেন না। আর এভাবেই তিনি একাধারে কয়েক দিন ছিয়াম পালন করতে পারতেন। তবে প্রথম অর্থটি সঠিক বলে মন্তব্য করেছেন ইমাম নববীসহ একদল বিদ্বান (শারহু মুসলিম ৭/২১২-১৩; ফাৎহুল বারী ৪/২০৭; মিরকাত ৪/১৩৮২; মির‘আত ৬/৪০৭)। তৃতীয়তঃ আত্মিক খাদ্য যা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে ক্ষুধা নিবারণের কাজ করে। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর ইবাদতে এমনভাবে মশগূল হয়ে পড়তেন যে ক্ষুধার কথা ভুলে যেতেন (ফাৎহুল বারী ৪/২০৭)।
প্রশ্ন (৮১) : করোনা ভাইরাসের সাথে ইমাম মাহদীর আগমনের সম্পর্ক আছে কি?
 উত্তর : করোনা ভাইরাসের সাথে ইমাম মাহদীর কোন সম্পর্ক  শরী‘আত দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এটাই সঠিক যে, আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির আমল সংশোধনের জন্য মাঝে-মধ্যেই মহামারী পাঠিয়ে থাকেন (ছহীহুত তারগীব হা/১৪০৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩৮৬৯)। উল্লেখ্য যে, একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ‘ইমাম মাহদী আগমনের পূর্বে পৃথিবী বালা-মুছীবত বা মহামারীতে ভরে যাবে’ যার সনদ অত্যন্ত যঈফ (হাকেম হা/৮৪৩৮ ; মিশকাত হা/৫৪৫৭, সনদ যঈফ)। এই যঈফ বর্ণনার ভিত্তিতে করোনা ভাইরাসকে ইমাম মাহদী আগমনের পূর্ব লক্ষণ ধারণা করা গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন  (৮২) : দাঁত পড়ে যাওয়া পশু কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তর:রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মোট চার ধরণের পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। যথা স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণ-শীর্ণ(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৪৬৫)। হাতমা)الْهَتْمَاءُ(অর্থাৎ কিছু দাঁত পড়ে যাওয়া পশুএর অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এরূপ পশু কুরাবানী করায় কোন বাধা নেই। তবে নিখুঁত ও সুন্দর পশু ক্রয় করাই উত্তম(মাজমূ‘ ফাতাওয়াইবনু তায়মিয়াহ ২৬/৩০৮; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৩২)।
প্রশ্ন (৮৩) : হাদীছে বর্ণিত নিষিদ্ধ তিন সময়ে জানাযার ছালাত আদায় ও লাশ দাফন করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। উক্ববা বিন ‘আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিনটি সময়ে আমাদেরকে জানাযার ছালাত আদায় ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে নিষেধ করতেন (১) যখন সূর্যোদয় আরম্ভ হয়, তখন থেকে সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত; (২) ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়, পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং (৩) যখন সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন থেকে সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত (মুসলিম হা/৮৩১; মিশকাত হা/১০৪০)। তবে একান্ত প্রয়োজনে যেমন লাশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এই তিন সময়েও জানাযার ছালাত আদায় বা লাশ দাফন করা যাবে (আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১/১৪৩; আহকামুল জানায়েয ১/১৩০)।
প্রশ্ন (৮৪) : জীবিত বা মৃত পিতা-মাতার নামে উন্মুক্ত পাঠাগার করা যাবে কি? যাতে মানুষ সেখান থেকে সঠিক জ্ঞানার্জন করতে পারে?
উত্তর : যাবে এবং এটি ছাদাক্বায়ে জারিয়া হিসাবে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবল ৩টি আমল ব্যতীত। (১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ (২) এমন ইলম, যার দ্বারা জনগণের কল্যাণ সাধিত হয় এবং (৩) সুসন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩)।
প্রশ্ন (৮৫) : এক্সিডেন্টে দাঁত পড়ে গেলে কৃত্রিম দাঁত সংযোজনে বাধা আছে কি?
উত্তর : চিকিৎসার্থে বা কোন দোষ-ক্রটি দূরীকরণার্থে এরূপ করায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৪০০, সনদ হাসান; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/২৫৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/৫৬)।
প্রশ্ন (৮৬) : তিন রাক‘আত বিশিষ্ট বিতর ছালাতের দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মাগরিবের ছালাতের ন্যায় (মাঝখানে বৈঠক করে) বিতর ছালাত আদায় করো না’ (দারাকুৎনী হা/১৬৩৪-৩৫, সনদ ছহীহ)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে ব্যতীত বসতেন না’ (হাকেম হা/১১৪০; বায়হাক্বী হা/৪৮০৩, সনদ ছহীহ)। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বিতর ছালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলেও শেষের রাক‘আত ব্যতীত বসতেন না (ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৪৩৯, সনদ ছহীহ)। ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩/২৭ পৃঃ)।
অতএব ‘এক রাক‘আত বিতর সঠিক নয় এবং এক রাক‘আতে কোন ছালাত হয় না’। ‘বিতর তিন রাক‘আতে সীমাবদ্ধ’। ‘বিতর ছালাত মাগরিবের ছালাতের ন্যায়’। ‘তিন রাক‘আত বিতরের উপরে উম্মতের ইজমা হয়েছে’ বলে যেসব কথা সমাজে চালু আছে, শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই’ (দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৬৫ পৃ.)।
প্রশ্ন (৮৭) : ই‘তিকাফ করার সময় কারো যদি মসজিদে খাবার দেওয়ার কেউ না থাকে, তবে সে সামান্য দূরে বাড়ি থেকে সাহারী ও ইফতার করে আসতে পারবে কি?
উত্তর : উপরোক্ত অবস্থায় উপায়ান্তর না থাকলে খাবার আনার জন্য বাড়িতে যাওয়া যাবে। খাবার এনে মসজিদে বসে খাবে। অথবা বাড়ীতে গিয়ে খেয়ে চলে আসবে। কোনরূপ অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে না। এটি একান্ত প্রাকৃতিক প্রয়োজন হিসাবে গণ্য হবে ইনশাআল্লাহ। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ই‘তিকাফে থাকা অবস্থায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন (পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি) ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না’ (বুখারী হা/২০২৯; মুসলিম হা/২৯৭; মিশকাত হা/২১০০)। তিনি বলেন, ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হ’ল, সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে সহবাস করবে না এবং বাধ্যগত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না’... (আবুদাঊদ হা/২৪৭৩; মিশকাত হা/২১০৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১৯২)।
প্রশ্ন (৮৮) : ফরয ও সুন্নাত ছালাতের জন্য পৃথক পৃথক ছানা আছে কি? ফরয ছালাতের ছানা সুন্নাতে পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : ফরয ও সুন্নাত ছালাতের জন্য পৃথক কোন ছানা বর্ণিত হয়নি। অতএব হাদীছে বর্ণিত যেকোন ছানা ফরয ও সুন্নাত উভয় ছালাতে পাঠ করা যাবে (মিশকাত হা/৮১২-১৫, ৮২০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা প্রশ্নোত্তর নং ১৮৫৯১)
প্রশ্ন (৮৯) : আমি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে ইহূদী, খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠ করতে চাই। এটা করা যাবে কি?
উত্তর : পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পূর্বের সমস্ত আসমানী কিতাবের বিধান রহিত হয়ে গেছে (আলে ইমরান ৩/৮৫)। তাই জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কুরআন ব্যতীত অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা জায়েয নয়। জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, একদিন যখন ওমর (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, আমরা ইহূদীদের নিকটে তাদের অনেক পুরানো ধর্মীয় কাহিনী শুনি, যা আমাদের নিকটে চমৎকার বোধ হয়, অতএব তার কিছু কিছু লিখে রাখার জন্য আপনি আমাদের অনুমতি দিবেন কি? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি দিকভ্রান্ত হয়েছ, যেমন ইহূদী-নাছারারা দিকভ্রান্ত হয়েছে? অথচ আমি তোমাদের কাছে এসেছি উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে। যদি আজকে মূসাও বেঁচে থাকতেন, তাহ’লে তাঁর পক্ষেও আমার অনুসরণ ব্যতীত গত্যন্তর থাকতো না’ (আহমাদ হা/১৫১৫৬; মিশকাত হা/১৭৭, সনদ হাসান)। তবে অমুসলিমদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য সমূহের জবাবদানের উদ্দেশ্যে শরী‘আত অভিজ্ঞ আলেমদের জন্য এগুলি পাঠ করা সাময়িকভাবে জায়েয (আলে ইমরান ৩/১৯৩; বুখারী হা/৪৫৫৬; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/১০৯-১০)।
প্রশ্ন (৯০) : সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে অভাব-অনটন দূর হয় কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বেশ কিছু বর্ণনা রয়েছে, যার কোনটি যঈফ কোনটি জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৯-২৯১; মিশকাত হা/২১৮১)।
প্রশ্ন (৯১) : যাকাত ও ট্যাক্সের মধ্যে পার্থক্য কি? বর্তমানে মোটা অংকের অর্থ সরকার আরোপিত ট্যাক্সের পিছনে ব্যয় হয়। যা যাকাতের চেয়ে অনেক বেশী হয়ে যায়। এক্ষণে ট্যাক্স দিলে যাকাতের ফরযিয়াত আদায় হবে কি?
উত্তর : যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যা আল্লাহর ওয়াস্তে প্রদান করলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায় (তওবা ৯/১০৩; বাক্বারাহ ২/২৭৬)। এটি প্রত্যেক মুমিনের জন্য আর্থিক ফরয ইবাদত। অন্যদিকে ট্যাক্স হ’ল সরকারী কর। এর সাথে যাকাতের কোন সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ ট্যাক্সই দেওয়া হোক না কেন, তাতে যাকাত আদায় হবে না। বরং ট্যাক্স পরিশোধের পর সম্পদ নিছাব পরিমাণ থাকলে এবং তা এক বছর অতিবাহিত হ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৮৫)।
প্রশ্ন (৯২) : ঈদের খুৎবা একটি না দু’টি? ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : ঈদায়নের খুৎবা ১টি। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে বের হ’লেন এবং সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করলেন এবং দান-ছাদাক্বার নির্দেশ দিলেন... (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯, ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি আযান ও ইক্বামত ছাড়াই খুৎবার পূর্বে ছালাত শুরু করলেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বেলালের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন এবং লোকদের উপদেশ দিলেন, পরকালের কথা স্মরণ করালেন এবং আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর মহিলাদের দিকে অগ্রসর হ’লেন। এমতাবস্থায় তাঁর সাথে বেলাল ছিল। তাদেরকে তিনি আল্লাহভীতির উপদেশ দিলেন এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করালেন (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৪৬ ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের খুৎবার মাঝে বসতেন না এবং তাঁর খুৎবা ছিল একটি (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১৪৬)। দুই খুৎবার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই, বরং যা আছে তা যঈফ ও মুনকার (ইবনু মাজাহ হা/১২৮৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৩৯, যঈফাহ হা/৫৭৮৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩২২ পৃঃ)।
ইমাম বায়হাক্বী, ছান‘আনী ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই ছিল (বায়হাক্বী ৩/২৯৯ পৃঃ হা/৬০০৬-এর পরের আলোচনা; মির‘আত ২/৩৩০-৩৩১; ৫/৩১; সুবুলুস সালাম ১/৪৩২)।
উল্লেখ্য, যারা ঈদায়নের দু’টি খুৎবা সমর্থন করেন, তারা মূলত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেন। যেমন সিমাক (রাঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তারপর অল্প বসতেন, অতঃপর পুনরায় দাঁড়াতেন (নাসাঈ হা/১৫৮৩-৮৪, ১৪১৮)। অত্র হাদীছে দু’খুৎবার মাঝে বসা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটি জুম‘আর খুৎবা না ঈদের খুৎবা তা প্রমাণিত হয় না। কিন্তু জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে সরাসরি জুম‘আর কথা বলা হয়েছে (নাসাঈ হা/১৪১৭; আবুদাঊদ হা/১০০৩)। এছাড়া হাদীছটি কুতুবে সিত্তাহসহ প্রায় সকল মুহাদ্দিছ ‘জুম‘আর খুৎবা’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কেউই ঈদের ছালাত অধ্যায়ে বর্ণনা করেননি। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটা জুম‘আর জন্য খাছ।
আলবানী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট, ঈদের সাথে নয় (যঈফাহ হা/৫৭৮৯)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব ঈদায়নের জন্য একটি খুৎবাই সুন্নাত। (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ২০৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (৯৩) : দুনিয়াবী চাপমুক্তির জন্য আল্লাহর নিকটে মৃত্যু কামনা করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেককার হ’লে হয়তো অধিক নেকী অর্জন করবে এবং বদকার হ’লে সম্ভবত তওবা করে আল্লাহর সন্তোষ লাভে সমর্থ হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৫৯৮ ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুর স্মরণ’ অনুচ্ছেদ)। তবে নিতান্তই কেউ যদি মৃত্যু কামনা করতে চায়, তবে সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার নিকটে বিপদ পৌঁছার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। তবে সে যদি মৃত্যু কামনা করতেই চায়, তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রেখ যে পর্যন্ত আমার জীবন কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬০০)।
প্রশ্ন (৯৪) : টয়লেট সহ বাথরুমে ওযু করার পর ওযুর দো‘আ পাঠ করা যাবে কি? না বাইরে এসে দো‘আ পড়তে হবে?
উত্তর : টয়লেটের ভিতরে উক্ত দো‘আ পাঠে বাধা নেই। কেবল পেশাব-পায়খানারত অবস্থায় দো‘আ সহ সকল প্রকার যিকির থেকে বিরত থাকবে(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৫)। সাধারণভাবে বাথরুমে দো‘আ পড়া যাবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকর করতেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৬)
প্রশ্ন (৯৫) : দাঁত পড়ে যাওয়া পশু কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তর:রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মোট চার ধরণের পশু কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন। যথা স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণ-শীর্ণ(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৪৬৫)। হাতমা)الْهَتْمَاءُ(অর্থাৎ কিছু দাঁত পড়ে যাওয়া পশুএর অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এরূপ পশু কুরাবানী করায় কোন বাধা নেই। তবে নিখুঁত ও সুন্দর পশু ক্রয় করাই উত্তম(মাজমূ‘ ফাতাওয়াইবনু তায়মিয়াহ ২৬/৩০৮; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৩২)।
প্রশ্ন (৯৬) : ফেরেশতাগণকে জিবরীল, আযরাঈল, মিকাঈল ইত্যাদিনামে নামকরণ করার বিষয়টি কি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত? যেমন মালাকুল মাউতকে আযরাঈল বলা ইত্যাদি।
উত্তর : ফেরেশতাগণের নামগুলি কুরআন এবং ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। জিবরীল এবং মীকাঈলেরনাম কুরআনে বর্ণিত হয়েছে(বাক্বারাহ ৯৮)। কুরআনে মীকাল আসলেও হাদীছে মীকাঈল শব্দে এসেছে(বুখারী হা/৩২৩৬)। এছাড়া ইসরাফীলের নাম হাদীছে পাওয়া যায়(মুসলিম হা/৭৭০, মিশকাত হা/১২১২)। আর যে ফেরেশতা জান কবয করেন তার নাম মালাকুল মাঊত(সাজদাহ ১১)। ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে যিনি সিংগায় ফুঁক দিবেন তার নাম ইসরাফীল(ইবনু কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ৯৮ আয়াতের ব্যাখ্যা)। যারা কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাদের নাম মুনকার এবং নাকীর(তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩০)। আব্দুর রহমান বিন সাবাত্ব বলেন, দুনিয়াবী কর্মসমূহ পরিচালনা করেন চার জন ফেরেশতা। জিব্রীল, মীকাঈল, মালাকুল মাঊত যার নাম আযরাঈল এবং ইস্রাফীল(কুরতুবী, তাফসীর সূরা নাযে‘আত ৭৯/৫)। তিনি বলেন, মালাকুল মউতের নাম হ’ল আযরাঈল। যার অর্থ আব্দুল্লাহ(কুরতুবী, শাওকানী, আয়সারুত তাফাসীর, তাফসীর সূরা সাজদাহ ৩২/১১)। তবে আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘মালাকুল মাঊত’ কুরআনে বর্ণিত নাম। কিন্তু মানুষের মাঝে প্রচলিত তার ‘আযরাঈল’ নামকরণের কোন শারঈ ভিত্তি নেই। এটা ইসরাঈলী বর্ণনা মাত্র(আলবানী, তা‘লীক্ব ‘আলাত তাহাবী পৃঃ ৭২)।
প্রশ্ন (৯৭) : আমি একজন মুওয়াযযিন। আমার দুই স্ত্রী এবং ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে আছে। সম্পদের ৪ ভাগের ৩ ভাগ আমি ছেলেমেয়েদের মাঝে হেবা বিল এওয়ায মোতাবেক বণ্টন করেছি। কিন্তু ইমাম ছাহেব বলছেন, মালিকজীবিত অবস্থায় বণ্টন করা জায়েয নয়। তাই তা ফেরত না নিলে চাকুরী করা যাবে না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর :উত্তরাধিকার সম্পদ মৃত্যুর পরে বণ্টন হওয়াই শরী‘আত নির্দেশিত বিধান, যা সকলের জন্যকল্যাণকর। তবে মৃত্যুর পূর্বে পিতা সন্তানদের মাঝে কিছু বণ্টন করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সকলকে সমানভাবে প্রদান করতে হবে।
একদা নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) তার এক ছেলেকে একটি গোলাম দান করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-কে জানালে তিনি তাকেতার অন্য ছেলেদের একই সমান প্রদানের নির্দেশ দেন(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০১৯)।
অতএব জীবিত অবস্থায় শরী‘আত মোতাবেক হকদারকে কিছু সম্পদ প্রদান করা জায়েয। এজন্য মুওয়াযযিনকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কোন কারণ নেই।
প্রশ্ন (৯৮) : একজন শরী‘আত সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি কোন বিষয়ে দু’জন আলেমের নিকটে দু’রকমমাসআলা পেলে তার জন্য করণীয় কি হবে?
উত্তর :ফৎওয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল স্তরের মানুষের জন্য যরূরী হ’ল, দলীল জেনে নেওয়া। ছাহাবীগণ একটি বিষয়ে একাধিক ছাহাবীর কাছে জানতেন(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১১৫)
এবং পরস্পরের নিকট দলীলও চাইতেন(তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৫৫৪)।
তবে দলীল বুঝার ক্ষমতা না থাকলে যিনি যিদ ও হঠকারিতা থেকে মুক্ত এবং যিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ফৎওয়া দেন, সেইরূপ যোগ্য ও আল্লাহভীরু আলেমের নিকট থেকে ফৎওয়া গ্রহণ করতে হবে। এরপরেও এরূপ আলেম যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দলীলবিহীন ফৎওয়া দেন, তাহ’লে তার পাপ তার উপরেই বর্তাবে(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪২)।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক আলেমের কর্তব্য হ’ল জেনে-শুনে যাচাই-বাছাই করে ছহীহ দলীলভিত্তিক ফৎওয়া দেওয়া। আর জানা না থাকলে ‘আল্লাহ ভালো জানেন’ বলা(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭২)।
ইমাম মালেক (রহঃ) দুই-তৃতীয়াংশ ফৎওয়ার ক্ষেত্রে না জানার ওযর পেশ করেছেন। তিনি বলতেন, ‘আলেমেররক্ষাকবচ হ’ল ‘আমি জানি না বলা’। যদি সে এ রক্ষাকবচ ব্যবহারে গাফেল হয়, তাহ’লে সে ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হবে’(সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/১৬৭)।
প্রশ্ন (৯৯) : মাযার কেন্দ্রিক মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর: মাযার কেন্দ্রিক মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে না।
কারণ এর উদ্দেশ্যই হ’ল শিরকের প্রতি মুছল্লীদের প্রলুব্ধ করা ও তাদেরকে মাযারমুখী করা। জানা-অজানা কবর ও ভুয়া কবর নিয়েই বহু স্থানে মাযার নাম দিয়ে নযর-নেয়ায ও ওরসের জমজমাট ব্যবসা চলছে। আর এইসব স্থানে দ্বীনদার মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য বানানো হয় মসজিদ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে কুফরীর উদ্দেশ্যে মুনাফিকরা ক্বোবায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিল, যা ‘মসজিদে যেরার’ নামে খ্যাত(তওবা ৯/১০৭)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশে সেই মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ যুগের এইসব মসজিদ শিরকের উদ্দেশ্যে নির্মিত। অতএব এখানে ছালাত জায়েয হবে না।রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭২)।
প্রশ্ন (১০০) : মৌসুমে ইট আগাম কিনে রেখে অন্য সময়ে তা বেশী দামে বিক্রয় করা এবং খাদ্যদ্রব্য যেমন ধান-চাল, আলু- পিঁয়াজ ইত্যাদি স্টক রেখে পরে তা বিক্রয় করা যাবে কি? এছাড়া মাছ চাষের সময় টাকা বিনিয়োগ করেপরে মাছ বিক্রয়ের সময় মনপ্রতি কিছু টাকা লাভ নেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর :ইট খাদ্যদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এতে ইহতিকার হয় না। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করাই হ’ল ‘ইহতেকার’, যা হারাম। মা‘মার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বেশী দামের আশায় সম্পদ জমা রাখেসে গুনাহগার (মুসলিম হা/১৬০৫, আবুদাঊদ হা/৩৪৪৭)।
তবে সাধারণভাবে উৎপাদনের মৌসুমে হরাসপ্রাপ্ত মূল্যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে অন্য মৌসুমে প্রচলিত বাজার মূল্যে বিক্রয় করায় কোন দোষ নেই।
কেননাখাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে তা জায়েয (আউনুল মা‘বূদ ৫/২২৬-২২৮ পৃ, ‘ইহতেকার নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; নায়ল, ৫/২২২ পৃঃ, ‘ইহতেকার’ অনুচ্ছেদ)।
আর মাছ চাষের ক্ষেত্রে যদি ‘মুযারাবা’ পদ্ধতিতে একজনের অর্থে অপরজন ব্যবসা করে এবং লভ্যাংশ চুক্তি অনুপাতে উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হয়, তবে তা জায়েয।
(আবুদাঊদ হা/৪৮৩৬; সনদ ছহীহ, নায়ল হা/২৩৩৪-৩৫)।
প্রশ্ন (১০১) : কোন নারী ধর্ষণের শিকার হ’লে সে কি অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে?
উত্তর : এক্ষেত্রে উক্ত নারী অত্যাচারিতা ও নিরপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে জনৈকা মহিলা মসজিদে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হন। একজন লোক তাকে একা পেয়ে কাপড়ে ঢেকে নেয় এবং তাকে ধর্ষণ করে। মহিলা চিৎকার শুরু করলে লোকটি চলে যায়। সেখান দিয়ে মুহাজিরদের একদল লোক যাচ্ছিলেন। মহিলাটি তাদেরকে বললেন যে, ঐ লোক আমার সাথে এরূপ আচরণ করেছে। তখন লোকেরা তাকে ধরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে নিয়ে আসলে তিনি মহিলাকে বললেন, তুমি চলে যাও। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর তিনি ঐ ধর্ষণকারী পুরুষকে রজম করার আদেশ দিলেন । (আবুদাঊদ হা/৪৩৭৯; তিরমিযী হা/১৪৫৪, মিশকাত হা/৩৫৭২, হাদীছটি হাসান, ‘হুদূদ’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (১০২): যারা বিনা উযরে সিয়াম ভঙ্গ করে তাদের শাস্তি কী হবে?
উত্তরঃ তারা ভীষণ শাস্তির সম্মুখীন হবে। এ বিষয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল :
(১) আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমযান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)
(2)  যে ব্যক্তি (রমাযানের) এ মুবারক মাসেও আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না, সে বড়ই দুর্ভাগা।
(ইবনে হিববান)
(৩) যে ব্যক্তি শরীয়তী উযর ছাড়া এ (রমযান) মাসে একটি রোযাও ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলে সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবু তার পাপের খেসারত হবে না। (ছহীহুল বুখারী)
 প্রশ্ন (১০৩) : যে সকল স্ত্রী তাদের স্বামী ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে করে, শরী‘আতে তাদের বিধান কি?
উত্তর : স্বামী থাকতে অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। যে নারী এরূপ করবে সে ব্যভিচারিণী হিসেবে গণ্য হবে। আর বিবাহিত ব্যভিচারী নারী বা পুরুষের বিধান হ’ল, পাথর মেরে তাকে হত্যা করা (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৫৫৭ ‘দন্ডবিধিসমূহ’ অধ্যায়)। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।
প্রশ্ন (১০৪):  অনেক গর্ভবতী মহিলা রাত্রে ঘর হতে বের হওয়ার সময় জিন-ভূতের আছর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাতে আগুন, ম্যাচ কিংবা লোহা জাতীয় কোন জিনিষ নিয়ে বের হয়। এটা কি জায়েয?
উত্তর : এগুলো সামাজিক কুসংস্কার মাত্র। এ ধরনের আকীদা রাখা শিরক। এ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আগুন, ম্যাচ বা লোহা কারো উপকার বা ক্ষতি করা করার ক্ষমতা রাখে না। জিন ভূতের আছর হতে রক্ষা পাওয়ার শারঈ পন্থা হল, দৈনন্দিন সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব, নাস, সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত পাঠ করা ও বিভিন্ন আযকার নিয়মিত আমল করা। ইনশাআল্লাহ কোন জিন-ভুতের আছর হবে না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১২৫ ও ২১৩২)
প্রশ্ন (১০৫):  ধনীরা আগে জান্নাতে যাবে, না গরীবেরা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তরঃ মুমিন গরীব-মিসকীনরা ধনীদের আগে জান্নাতে যাবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছা:) এরশাদ করেন, (মিরাজের রাতে) আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, যারা তাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন।
আর বিত্তবান সম্পদশালীরা আটকা পড়ে আছে,
(বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত হা/৫২৩৩ 'গরীবদের ফযীলত ও নবী (ছা:) এর জীবন যাপন' অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫০০৪)।
অন্য হাদীছে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছা:) এরশাদ করেন, আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই হ'ল গরীব-মিসকীন।
আর জাহান্নামে দেখলাম যে, উহার আদিবাসীদের অধিকাংশই নারী (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫০০৫)।
.প্রশ্ন (১০৭): কালো চুলকে আরো বেশী কালো করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায়। এগুলি ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তরঃ সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কালো চুলকে আরো বেশী কালো করা যায়, (মুসলিম, মিশকাত হা ৫১০৮)।
তবে সাদা বা পাকা চুলকে কালো করা জায়েয নয়, (মুসলিম, মিশকাত হা/ ৪৪২৪)। সাদা চুলে মেহেদী ব্যবহার করা রাসূল (ছাঃ) এর সুন্নাত।
প্রশ্নঃ (১০৮): ক্বিয়ামতের দিন কাকে সর্বপ্রথম কবর থেকে উঠানো হবে?
উত্তরঃ ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম আমাদের রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ছা:)-কে কবর থেকে উঠানো হবে।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেছেন, 'আমিই ক্বিয়ামতের দিন আদম সন্তানের সরদার (হব)।
আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে প্রথমে কবর থেকে উঠানো হবে এবং আমিই সর্বপ্রথম আল্লাহর নিকট সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই প্রথমে কবুল করা হবে'
(মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪১; 'ফাযায়েল ও শামায়েল' অনুচ্ছেদ) ।
প্রশ্ন (১০৯): রাসূলুল্লাহ (ছা:)-এর জানাযার সালাত (নামাজ) কে পড়িয়েছিলেন?
উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ (ছা:)-এর জানাযার সালাত (নামাজ) নির্ধারিত কোন ইমামের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠিত হয় নি।
সাহাবায়ে কেরাম দশজন করে পালাক্রমে তাঁর জানাযা পড়েছেন। ইমাম ছাড়াই প্রথমে তাঁর পরিবার, অতঃপর ক্রমান্বয়ে মুহাজির, আনছার এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পুরুষ মহিলা ও শিশুগণ জানাযার সালাত আদায় করেন
(আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃষ্টা ৪৭১ 'রাসূলুল্লাহ (ছা:)-এর কাফন-দাফন' অনুচ্ছেদ) ।
প্রশ্ন (১১০): টাকার বিনিময়ে জমি লিজ বা খায়খালাসী নেয়া যাবে কি?
উত্তর : যাবে। রাফে‘ ইবনে খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমার দুই চাচা নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে জমি বর্গা দিতেন এভাবে যে, নালার পাশে যে শস্য হবে তা তাদের অথবা জমির মালিক শস্য নেয়ার জন্য কিছু কিছু জমি নির্দিষ্ট করে দিতেন। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করলেন। হানযালা (রাঃ) বলেন, আমি রাফে ইবনে খাদীজ (রাঃ)-কে বললাম, স্বর্ণমুদ্রা ও রোপ্যমুদ্রার বিনিময়ে জমির ভাড়া দেয়া যাবে কি? তিনি বললেন, এতে কোন আপত্তি নেই (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৭৪)।
প্রশ্ন (১১১): আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্ক করে অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ছে। পরে অনেকের বিবাহ হচ্ছে, অনেকের হয় না। এর পরিণতি কি?
উত্তর : পরবর্তীতে বিবাহ হোক আর না হোক এ কাজ কবীরা গোনাহ। যা তওবা ব্যতীত মাফ হবে না। এমন মানুষ অবিবাহিত হলে তার শাস্তি হচ্ছে একশ’ বেত্রাঘাত (নূর ২)। আর বিবাহিত হলে শারঈ ফায়ছালা অনুযায়ী তাকে রজম করতে হবে (বুখারী হা/৬৮৩১; মিশকাত হা/৩৫৫৬ ও ৩৫৫৭ ‘দন্ডবিধি’ অধ্যায়)। যেটি আদালতের দায়িত্ব।
প্রশ্ন (১১২): জ্ঞান_গোপনকারী আলেমদের শাস্তি কি হবে ?
উত্তর: আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে এমন কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে, অথচ গোপন রাখে (বলে না), ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে।* (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1] *ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি কোন বিদ্বানকে দীনে শারী‘আত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং জিজ্ঞাসাকারী ঐ বিষয়ে ‘ইলম ধারণ করার যোগ্যতা রাখে এবং জিজ্ঞাসার বিষয় যদি দীনের আবশ্যকীয় কোন বিষয় হয় যেমন- ইসলাম, সলাতের শিক্ষা, হারাম ও হালাল তাহলে অবশ্যই সম্ভাব্যতা অনুযায়ী জিজ্ঞাসু ব্যক্তিকে উত্তর দিতে হবে। যদি জিজ্ঞাসাকারীকে উত্তর দেয়া না হয় তাহলে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে বিদ্বান ব্যক্তিকে বাকশক্তিহীন চতুষ্পদ জন্তুর মতো মুখে আগুনের লাগাম লাগিয়ে উপস্থিত করা হবে। পক্ষান্তরে যদি দীনের কোন নফল বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তাহলে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির এ বিষয়ে উত্তর দেয়া বা না দেয়া ইচ্ছাধীন।* [1] সহীহ : আহমাদ ৭৮৮৩, আবূ দাঊদ ৩৬৫৮, তিরমিযী ২৬৪৯, সহীহুল জামি‘ ৬২৮৪। ইমাম হাকিম ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এর শাহিদ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন। যাহাবীও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)হাদিস নম্বরঃ ২২৩ হাদিসের মানঃ সহিহ
প্রশ্ন (১১৩): মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায় কি?
উত্তরঃ মানুষের মধ্যে কিছু বদ ও খারাপ অভ্যাস আছে যেগুলো বাদ দিলে মিথ্যার হাত থেকে বাঁচা যাবে। যেমন-
(১) শ্রুত বিষয় যাচাইবিহীন প্রচার না করা : মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক প্রবণতা আছে যে, অন্যের নিকট থেকে শোনা বিষয় যাচাই-বাছাই ছাড়াই প্রচার করা। অথচ এটি মিথ্যাবাদী হওয়ার অন্যতম কারণ। কেননা মানুষের কাছ থেকে শোনা কথা সত্য নাও হতে পারে। তাই মিথ্যা থেকে
বাঁচতে হলে শোনা কথা যাচাই না করে প্রচার করা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায়’। 
(২) মন্দ ধারণা না করা : কোনো বিষয়ে সঠিক কিছু না জেনে শুধু ধারণা ও অনুমানের ভিত্তিতে কথা ও কাজের কারণে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক পরিবারে ও সংসারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। তাই মহান আল্লাহ বল, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অধিক ধারণা হতে বিরত থাক। নিশ্চয়ই
কিছু কিছু ধারণা পাপ’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারো সম্পর্কে (মন্দ) ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা আনুমানিক ধারণা বড় ধরনের মিথ্যা’।
(৩) মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রণ না করা : মিথ্যাবাদীকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করলে তার প্রভাব অনুসারীদের উপর পড়বে। ফলে অনুসারীরাও মিথ্যায় অভ্যস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তুমি মিথ্যাবাদীদের অনুসরণ করো না’ (ক্বালাম ৬৮/৮)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুনাফিককে নেতা হিসাবে গ্রহণ কর না। কেননা মুনাফিক যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে।’
(৪) ওয়াদা পালন করা ও আমানত রক্ষা করা : ওয়াদা রক্ষা করা ও আমানত পূর্ণ করা মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম। এর দ্বারা মানুষ ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ওয়াদা পূর্ণ করো। কেননা ওয়াদা সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৪)।
(৫) শিশুকে ধোঁকা না দেয়া : পিতা-মাতা বা অন্য কেউ শিশুদেরকে সান্তনা দেয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কিছু দেয়ার আশ্বাস দিলে অবশ্যই তাকে তা দিতে হবে। অন্যথা সে মিথ্যুকদের অন্তভুর্ক্ত হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার বাচ্চাকে বলল, এসো, নাও। অতঃপর তাকে তা দিল না
তবে সে মিথ্যুক হবে।’ 
(৬) অধিক ওয়াদা করা হতে বিরত থাকা : ওয়াদা পালন না করা মুনাফিকের আলামত। তাই অধিক পরিমাণে ওয়াদা করার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। তাহলে মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।
আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘যে মিথ্যাকে ভয় করে সে ওয়াদা কম করে। দু’টি কাজ মিথ্যা থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না। অধিক পরিমাণে ওয়াদা করা ও বেশি বেশি ওযর পেশ করা।’ 
(৭) ঠাট্টা ও কৌতুক বর্জন করা : ইসলামী শরী‘আতে নির্দোষ কৌতুক নিষিদ্ধ নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) সত্য কথা ও বাস্তব বিষয় নিয়ে কৌতুক ও রসিকতা করেছেন। কিন্তু মিথ্যা, ঘৃণ্য বা তিরস্কারমূলক ঠাট্টা ও কৌতুক হারাম। অনেকে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা হাস্যকর কথা বলে থাকে।
মিথ্যা থেকে দূরে থাকতে ওগুলো সর্বোতভাবে বর্জন করা আবশ্যক।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস’। তিনি আরো বলেন, ‘আমি তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দিতে যামিন, যে তর্ক পরিহার করে হক্ব হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দিতে যামিন, যে মিথ্যা পরিহার করে কৌতুক করে হলেও এবং আরো একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ে দিতে যামিন, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে।’
 (৮) স্বল্পভাষী হওয়া : মিথ্যা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা ত্যাগ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো
কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে’।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মিথ্যাই সব অধঃপতন, অশান্তি ও অধঃগতির মূল। ইহকাল ও পরকালে মিথ্যা মানুষকে ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত করে। বর্তমানে মিথ্যার সয়লাব চলছে। দিশেহারা জাতি অধঃপতনের অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। জাতির উত্তরণের জন্য সর্বস্তরে সততা ও
সত্যবাদিতার চর্চা হওয়া জরুরি।  
মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ আমাদেরকে সত্যবাদিতা অবলম্বন করার এবং মিথ্যার ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
সূত্র: আবুদাঊদ হা/৪৯৭৭; মিশকাত হা/৪৭৮০, হাদীছ ছহীহ। আহমাদ হা/৯৮৩৫; ছহীহাহ হা/৭৪৮। আল-আদাবুশ শারঈয়্যাহ, ১/৬৯; গৃহীতঃ মাসিক আত-তাহরীক ১১/৩ ডিসেম্বর ২০০৭, পৃ. ৩১। বুখারী হা/৬১২৯; মুসলিম হা/২১৫০; মিশকাত হা/৪৮৮৪। তিরমিযী হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৩৮৩৪; গায়াতুল মারাম হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান। আবূদাঊদ হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩। বুখারী হা/৬০১৮; মুসলিম হা/৪৭; তিরমিযী হা/১৯৬৭।
প্রশ্নঃ (১১৪) যাদুকরের শাস্তি কী?
উত্তরঃ যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, তাকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতে হবে। ইমাম তিরমিযী জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
 “তলোয়ার দিয়ে গর্দান উড়িয়ে দেওয়াই যাদুকরের শাস্তি। [1] ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর বলেনঃ হাদীছটি মাওকুফ সূত্রে সহীহ; মারফু সনদে সহীহ নয়। তিনি আরো বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কতিপয় সাহাবী ও অন্যান্য আলেমগণ এই হাদীছের উপর আমল করেছেন। এটিই হচ্ছে ইমাম মালেক বিন আনাসের মাজহাব।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ যাদুকরকে তখনই হত্যা করতে হবে, যখন তার যাদু কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আর যদি যাদুকর এমন কাজ করে, যা কুফরীর স্তরে পৌঁছে নি, তাহলে তিনি যাদুকরকে হত্যা করা বৈধ মনে করেন নি।    উমার ইবনুল খাত্তাব, তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ্, কন্যা হাফসা, উছমান বিন আফ্ফান, জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ্, জুন্দুব বিন কাব, উমার বিন আব্দুল আযীয, আহমাদ বিন হাম্বাল, আবু হানীফা (রঃ) এবং অন্যান্য আলেম থেকে যাদুকরকে হত্যা করার কথা বর্ণিত হয়েছে।
[1]-তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হুদুদ। হাদীছটি মারফু সূত্রে সহীহ নয়। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে হাদীছটি মাওকুফ।
প্রশ্ন (১১৫) নিষিদ্ধ ঝাড়ফুঁক কী কী?
উত্তরঃ যা কুরআন ও সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয় এবং যার ভাষা আরবী নয়; বরং তা শয়তানী কাজ এবং শয়তানের পছন্দনীয় কাজ দ্বারা তার নৈকট্য হাসিল করা হয়েছে- এমন বিষয় দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা নিষিদ্ধ। যেমন অনেক মিথ্যুক ভেলকিবাজ ও ধোঁকাবাজরা করে থাকে। তারা ‘শামসুল মাআরেফ ও ‘শামুসুল আনওয়ার এবং মন্দিরের কিতাবসমূহ ও যাদুমন্ত্রের অন্যান্য কিতাবাদি পাঠ করে থাকে। ইসলামের শত্রুরা এগুলো ইসলামের ভিতরে প্রবেশ করিয়েছে। ইসলাম ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে এর সম্পর্ক থাকা তো দূরের কথা ইসলামী জ্ঞানের ছায়ারও অন্তর্ভূক্ত নয়। এব্যাপারে আমি সুল্লামুল উসুলের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
প্রশ্ন (১১৬) গণকের হুকুম কি?
উত্তরঃ গণকরা হচ্ছে মানুষকে বিপদগামীকারী এবং আল্লাহদ্রোহী তাগুত। তারা ও শয়তানের বন্ধু। শয়তানেরা তাদেরকে শয়তানী শিক্ষা দিয়ে থাকে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ  
 “শয়তানরা নিজেদের সঙ্গি-সাথীদের মনে এমন কিছু কুমন্ত্রনা প্রবেশ করিয়ে দেয়, যেন তারা তোমাদের সাথে ঝগড়া করে’’। (সূরা আনআমঃ ১২১) শয়তানেরা তাদের বন্ধুদের নিকট অবতীর্ণ হয় এবং ফেরেশতাদের নিকট থেকে শ্রবণকৃত তথ্য তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। আর শয়তানের বন্ধু গণকরা তার সাথে আরো একশটি মিথ্যা জড়িয়ে দেয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “তোমাদের কি জানাব শয়তানরা কার নিকট অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যবাদী ও পাপীর নিকট। তারা কান পেতে থাকে। তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। (সূরা শুআরাঃ ২২১-২২৩) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অহী অবতীর্ণের হাদীছে বলেনঃ
 ‘’যখন আল্লাহ্ তাআলা আকাশে কোন বিষয়ে ফয়সালা করেন এবং অহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর কথার প্রতি অনুগত হয়ে পাখা ঝাপটাতে থাকেন। এতে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার শব্দের ন্যায় শব্দ হতে থাকে, ‘‘পরে যখন তাদের অন্তর হতে ভয় দূর হয় তখন তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেঃ তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? উত্তরে তারা বলেনঃ যা সত্য তিনি তাই বলেছেন। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান” (সূরা সাবাঃ ২৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ শয়তানেরা ফেরেশতাদের কথোপকথন চুরি করে শুনে নেয়। এই চোরেরা একজন অপরজনের ঘাড়ে বসে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। উপরের শয়তান তার নিকটের শয়তানের কাছে সংবাদ পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর সে তার কাছের শয়তানের নিকট পৌঁছায়। এভাবে সর্বনিম্নস্থ শয়তানের নিকট খবরটি আসলে সে যাদুকর বা গণকের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। কখনও এরকম হয় যে, কথাটি দুনিয়ার যাদুকর বা গণকের কাছে আসার পূর্বেই আকাশের কথা বহনকারী শয়তানের শরীরে জ্বলন্ত উল্কা পিন্ড নিক্ষেপ করা হয়। আবার কখনও উল্কার আক্রমণের পূর্বেই সে কথাটি গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ফলে গণকরা তার সাথে আরো একশটি মিথ্যা কথা সংযোগ করে।[1] এমনিভাবে যমীনে কাঠি দিয়ে রেখা টেনে কোন জিনিষের তথ্য অনুসন্ধান করা বা ভবিষ্যৎবাণী করা এবং রাস্তায় যাদুমন্ত্রের পাথর নিক্ষেপ করাও গণকের কাজের অন্তর্ভূক্ত।
[1]-বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।
 প্রশ্নঃ (১১৭) যে ব্যক্তি গণকের কথা বিশ্বাস করে তার হুকুম কী?
 উত্তরঃ যে ব্যক্তি গণকের কথা বিশ্বাস করল সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর দ্বীনকে অস্বীকার করল। কেননা আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “হে নবী! আপনি বলুনঃ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না। (সূরা নামলঃ ৬৫) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে। তিনি ছাড়া কেউ জানে না। (সূরা আনআমঃ ৫৯) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “তাদের কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে, যা তারা লিখে রাখে? (সূরা কালামঃ ৪৭) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “তার নিকটে কি গায়েবের জ্ঞান আছে যে, সে সবকিছু দেখবে?’’ (সূরা নাজমঃ ৩৫) ) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “আর আল্লাহ্ অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও। (সূরা বাকারাঃ ২১৬)
  নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল এবং তার কথা বিশ্বাস করল সে মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর অবতীর্ণ কিতাবকে অস্বীকার করল।[1] তিনি অন্য এক হাদীছে বলেনঃ
 “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট এসে তাকে অদৃশ্যের কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল এবং তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হবে না”।[2]
[1]-আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব। ইমাম হাকেম হাদীছটি মুস্তাদরাকে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।
[2]-সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ তাহ্রীমুল কুহানাহ।
প্রশ্নঃ (১১৮) জ্যোতিষ শাস্ত্রের হুকুম কী?
 উত্তরঃ যাদু বিদ্যা শিক্ষার মতই জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা করা হারাম ও নাজায়েয। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “আর তিনিই তোমাদের জন্যে নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা এগুলোর সাহায্যে জলে ও স্থলে পথ পেতে পার। (সূরা আনআমঃ ৯৭) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “আর আমি দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা এবং ওগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি। (সূরা মুল্কঃ ৫) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “আর নক্ষত্ররাজিও তাঁর হুকুমের অধীন। (সূরা নাহলঃ ১২) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ 
“যে ব্যক্তি ইলমে নুজুমের বা জ্যোতিষ বিদ্যার একটি শাখা শিক্ষা করল, সে যাদু বিদ্যার একটি শাখা শিক্ষা গ্রহণ করল। যে ব্যক্তি যত বেশী ইলমে নজুম শিক্ষা করল সে তত বেশী যাদু শিক্ষা করল।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অন্য একটি সহীহ হাদীছে বলেনঃ
“আমি আমার উম্মাতের মধ্যে ইলমে নুজুমের উপর বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়া, তাকদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং শাসকদের পক্ষ হতে যুলুম-নির্যাতনের ভয় করছি।[2]
যারা أباجاد (আবযাদ)[3] থেকে নাম্বার বের করে এবং আকাশের তারকাসমূহের প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস করে তাদের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ
“যারা এরূপ করে তাদের জন্যে আল্লাহর নিকট কিছু আছে বলে আমি মনে করি না’’।[4] কাতাদা (রঃ) বলেনঃ
 “আল্লাহ্ তাআলা তিনটি উদ্দেশ্যে এই তারকাগুলো সৃষ্টি করেছেন। আকাশের সৌন্দর্যের জন্যে, শয়তানকে বিতাড়িত করার জন্যে এবং রাতের অন্ধকারে মানুষের পথের নিদর্শন স্বরূপ। যে ব্যক্তি উপরোক্ত তিনটি কারণ ব্যতীত তারকাগুলোর সৃষ্টির অন্য কোন রহস্য বর্ণনা করবে সে নিজেকে ভুলের মধ্যে প্রবেশ করাল, নিজের অংশকে নষ্ট করল এবং এমন বিষয়ের চর্চা করল, যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই।[5]
[1]-আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, (৩/৯৯)।
[2]-মুসনাদে আহমাদ, (৫/৯০), তাবরানী, (১/৯২)। হাদীছটি যঈফ। কারণ হাদীছের সনদে রয়েছে মুহম্মাদ বিন কাসিম আল-আসাদী। আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ সে মিথ্যুক। ইবনে আদী বলেনঃ তার বর্ণনাসমূহ অন্য কোন হাদীছ দ্বারা সমর্থিত নয়। দেখুনঃ তাহ্যীব (৯/৪০৭)
[3]-আবাযাদ বলা হয়, এমন কিছু অক্ষরকে যা একটি বৃত্তের ভিতরে লিখা হয়। জ্যোতিষরা অক্ষরগুলোকে নির্দিষ্ট কতিপয় নাম্বারের সংকেত হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। জ্যোতিষরা বিশ্বাস করে যে, উক্ত সাংকেতিক নাম্বারটির মাধ্যমে মহাশূণ্যে লুকায়িত তাকদীর উন্মুক্ত করা সম্ভব। তারা আরো বিশ্বাস করে যে, যমীনের বড় বড় ঘটনাগুলোর উপর আকাশের তারকাসমূহের প্রভাব রয়েছে। এ সবকিছুই মিথ্যা ও ধোকাবাজির অন্তর্ভূক্ত। জিন ও মানব জাতির শয়তানরা এগুলোর মাধ্যমে খেল-তামাশা করে থাকে। হে আল্লাহ! আপনি মুসলমানদেরকে এ সমস্ত মিথ্যুকদের প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আমীন

[4]-ইবনে আববাসের উক্তিটি ইমাম তাবরানী মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি মাজমাউজ্ যাওয়াদে আছারটি উল্লেখ করে বলেনঃ এর সনদে রয়েছে খালেদ বিন ইয়াযীদ আল-উমারী। সে ছিল একজন মিথ্যুক। দেখুনঃ মাজমাউজ্ যাওয়াদ, কিতাবুত্ তিবব, (৫/১১৭)
[5]-ইমাম বুখারী মুআল্লাক সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। দেখুনঃ কিতাবু বাদ-ইল খাল্ক। তবে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারীতে বলেনঃ আবদ্ বিন হুমায়েদ হাদীছটি শায়বানের সনদে মুত্তাসেল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। দেখুনঃ ফাত্হুল বারী, (৬/২৯৫)।
 প্রশ্নঃ (১১৯) প্রত্যেক মানুষের জন্য তাওবার দরজা কখন বন্ধ হয়ে যায়?
উত্তরঃ বনী আদমের যখন মওতের টান এসে যায় এবং মালাকুল মাওতকে চোখের সামনে উপস্থিত দেখতে পায় তখন তার জন্যে তাওবার সুযোগ শেষ হয়ে যায়। এ সময় তাওবা করলেও কোন কাজ হবে না। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুল বশতঃ মন্দকাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হলো সে সব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (সূরা নিসাঃ ১৭)
সাহাবীগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, পাপ কাজে লিপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই জাহেল তথা মূর্খ। চাই সে পাপ কাজ করার সময় হারাম জেনে ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ কাজে লিপ্ত হোক বা না জেনে এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে লিপ্ত হোক। যেহেতু মূর্খতা বশতঃ মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে, তাই মৃত্যুর অল্প সময় পূর্বে এবং মওতের আলামত প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে যদি তাওবা করে তখন তার তাওবা কবুল হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কয়েক বছর পূর্বে তাওবা করা আর কয়েক মিনিট পূর্বে তাওবা করা একই কথা। কারণ মৃত্যুর পূর্বে যা কিছু হবে, তা মৃত্যুর অতি নিকটবর্তী সময়েই হয়েছে বলে ধরতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আরো বলেনঃ
 “আল্লাহ্ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর গড়গড়ানী শুরু হয়।[1] এ ব্যাপারে আরো সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
আর বান্দা যখন মালাকুল মাওতের ভয়াবহ চেহারা দেখবে, তার রূহ বক্ষদেশ থেকে বের হয়ে কন্ঠণালীতে পৌঁছে যাবে এবং মরণের গড়গড়ানী শুরু হবে ও প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে, তখন কোন প্রকার তাওবা কবুল হবে না এবং মৃত্যু হতে পলায়নের কোন সুযোগও থাকবে না। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “কিন্তু তখন পরিত্রাণের কোন উপায় ছিল না। (সূরা সোয়াদঃ ৩) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
 “আর তাদের জন্য ক্ষমা নেই, যারা ঐ পর্যন্ত পাপ করতে থাকে যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলেঃ নিশ্চয়ই আমি এখন তাওবা করছি। (সূরা নিসাঃ ১৮)
[1] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাসান গরীব। হাকেম তাঁর মুস্তাদরাকে হাদীছটি বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন। দেখুন মুস্তাদরাকুল হাকেম, (৪/২৫৭)।
প্রশ্নঃ (১২০) দুনিয়ার কোন্ বয়সে তাওবার দরজা বন্ধ হবে?
উত্তরঃ কিয়ামতের পূর্বে যখন পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে, তখন তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
 “তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম। (সূরা আনআমঃ ১৫৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি।[1] অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
“তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম। (সূরা আনআমঃ ১৫৮) এই অর্থে একদল সাহাবী থেকে অনেকগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যা হাদীছের বড় বড় কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে। এক হাদীছে এসেছে, সাফওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) বলেনঃ
“আল্লাহ্ তাআলা পশ্চিম দিকে একটি তাওবার দরজা খুলে রেখেছেন। তার দৈর্ঘ্য হচ্ছে সত্তর বছরের দূরত্বের সমান। পশ্চিম দিকে সূর্য্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত সেই দরজা বন্ধ করা হবে না।[2]
[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।
[2] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।
প্রশ্নঃ (১২১) আল্লাহর অলী কারা?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করে সেই আল্লাহর অলী।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
 “মনে রেখো যে, আল্লাহর অলীদের কোন ভয় নেই। আর তারা বিষন্নও হবেনা। তারা হচ্ছে সেই সমস্ত লোক যারা ঈমান এনেছে এবং পরহেজগারিতা অবলম্বন করে থাকে। তাদের জন্যে সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও। (সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৪) এই আয়াতে আল্লাহর অলীর সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “আল্লাহই হচ্ছেন ঈমানদারদের অলী (বন্ধু)। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। আর যারা কাফের তাদের বন্ধু হচ্ছে তাগুত (শয়তান) তারা তাদেরকে আলো হতে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৭) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
 “আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণই হচ্ছেন তোমাদের অলী (বন্ধু)। যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং রুকু করে। আর যে আল্লাহ্ তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, (তারাই আল্লাহর দলভুক্ত) নিশ্চয়ই আল্লাহর দল বিজয়ী। (সূরা মায়িদাঃ ৫৫-৫৬)
এই আয়াতে আল্লাহর অলীর সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পুরোপুরি অনুসারীর হাতে যদি আল্লাহ কারামাত বা অলৌকিক কিছু বের করেন তবে তিনি আল্লাহর অলী হিসেবে গণ্য হবেন।  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
 “অমুকের পিতার সন্তানেরা আমার বন্ধু নয়। মুত্তাকীরাই কেবল আমার বন্ধু।[1] হাসান (রাঃ) বলেনঃ একদল লোক আল্লাহর ভালবাসা প্রকাশ করলে আল্লাহ্ তাদেরকে এই আয়াত দ্বারা পরীক্ষা করলেন।
 “হে নবী! আপনি বলে দিনঃ তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন। (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)    ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ যখন তুমি দেখবে কোন লোক পানির উপর দিয়ে হাঁটছে অথবা শূণ্যে উড়ছে তখন তুমি তাকে অলী হিসেবে বিশ্বাস করো না কিংবা তার দ্বারা প্রতারিত হয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা জেনে নিবে সে রাসূলের অনুসরণ করে কি না। ইমাম শাফেয়ীর কথাটি ভন্ড অলী ও সঠিক অলী চেনার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাপকাঠি। [1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)

========================================================

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)
===============================================

(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।


(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।



-------------------------------------------------------------------
Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...