Search This Blog

Friday, September 1, 2023

রুহ কবজ ও কবরের শাস্তির সত্যতা


রুহ কবজ ও কবরের শাস্তির সত্যতা

রূহ কবয

মুসলিম ও কাফিরের অবস্থাঃ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘হে নবী! আপনি যদি অত্যাচারীদের দেখতেন, যখন তারা মৃত্যুকষ্টে পতিত হয়, ফেরেশ্স্তাগণ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের আত্মা বের করে দাও। ফেরেশতাগণ এ সময় বলেন, আজ হ’তে তোমাদেরকে প্রতিফল স্বরূপ অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হবে। আর অপমানজনক শাস্তির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য আরোপ করতে এবং অহংকার করে তার আয়াত সমূহ এড়িয়ে চলতে’। (সুরা আন‘আম ৯৩)।

বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় কবরের কাছে গেলাম। (তখনো কবর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ কবরস্থ করা হয়নি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, কবরের ’আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মু’মিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য।

তাঁদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ কথা শুনে মু’মিন বান্দার রূহ তার দেহ হতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হতে পানির ফোঁটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ ’পবিত্র রূহ কার’ জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার ’আমলনামা ’ইল্লীয়্যিনে’ লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে (কবরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে কবরের) সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাক (ফেরেশতা) (মুনকির নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব ’আল্লাহ’। আবার তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দীন ’ইসলাম’। আবার তারা দু’ মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি ’আল্লাহর কিতাব’ পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী (আল্লাহ) আহবান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে)।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়া’দা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক ’আমল। মু’মিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে ’আযাবের মালায়িকাহ্ নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা! আল্লাহর ’আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হতে টেনে বের করা হয় (আর এতে পশম আটকে থাকে)।

মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিশিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুর্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দলীল হিসেবে) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (অনুবাদ) ’’ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুঁইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।’’

এবার আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তার ’আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্ত্তত কাফিরদের রূহ (নিচে) নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’(অনুবাদ) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়)। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে (উড়িয়ে নিয়ে) দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়)।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) দু’জন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন,

তোমার রব কে? (সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে) বলবে, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।

তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করবেন, তোমার দীন কি? সে (কাফির ব্যক্তি) বলবে, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।

তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।

তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। (তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে) জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তার কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, (দু’পাশ মিলে যাবার পর) তার পাঁজরের এদিকের (হাড়গুলো) ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে।

তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। এ কুৎসিত লোকটি (কবরে শায়িত লোকটিকে) বলতে থাকবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়া’দা (দুনিয়ায়) তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন (ভাল) খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, “আমি তোমার বদ ’আমল’’। এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার! “তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করো না।’’

আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার (মু’মিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহমত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তা’আলার কাছে এ মু’মিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় (যাতে এ মালাক মু’মিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারে।) আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন। আসমানের দরজার বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ (আল্লাহর নিকট) আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩০, আহমাদ ১৮৫৩৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে চামড়ার অথবা (বর্ণনাকারী উমরের সন্দেহ) কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল। তিনি তাঁর হাত ঐ পানির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর নিজ চেহারা দু হাত দ্বারা মাসহ(মাসেহ) করতেন আর বলতেন ’লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ঃ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা। এরপর দুহাত তুলে বলতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ্! উচ্চ মর্যাদা সম্পন্নদের সঙ্গে করে দেন। এ অবস্থাতেই তার (জান) কবয করা হলো। আর তাঁর হাত দুটো এলিয়ে পড়ল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১০, ৮৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু ’উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে, (কবরে) প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তার জান্নাত অথবা জাহান্নামের ঠিকানা তার সামনে পেশ করা হয়। এবং বলা হয় যে, এই হলো তোমার ঠিকানা তোমার পুনরুত্থান পর্যন্ত (এটা তোমার সামনে পেশ করা হতে থাকবে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১৫, ১৩৭৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরের শাস্তির সত্যতা

মানুষের মরণের পর বড় ভয়াবহ কঠিন ও জটিল তিনটি স্থান রয়েছে যথা বরযখ, কেয়ামত ও আখেরাত। যেখানে মানুষের কোনো সহযোগী থাকবে না। সেখানে মানুষ হবে বড় অসহায় ও নিরুপায়। সেদিন ভুল ধরা পড়লে সংশোধনের কোন পথ থাকবে না। সেদিন মানুষ কত অসহায় হয়ে পড়বে যা ভাষায় ও কলমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যেমন নদীর স্রোত একবার চলে গেলে তাকে ফিরে আনা সম্ভব নয়। তেমনি মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে সে ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তার একটি ভয়াবহ স্থান হচ্ছে কবর।

এখানে কবর দ্বারা উদ্দেশ হচ্ছে “আলামুল বারযাখ’’। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

অর্থাৎ- “পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তারা বারযাখে থাকবে।’’ (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩: ১০০)।

আর বারযাখ হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝের এক পৃথিবী। এখানে কবর দ্বারা মৃত্যু বরণকারী লাশকে দাফন করার গর্ত উদ্দেশ্য নয়। কেননা, অনেক মৃত ব্যক্তি আছে। যেমন, পানিতে ডুবে যে মৃত্যুবরণ করেছে অথবা আগুনে পুড়ে অথবা প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলেছে এগুলোকে দাফন করা হয় না অথচ এদেরকেও শাস্তি দেয়া হয় এবং নি’আমাতও দান করা হয়।

এখানেإثبات عذاب القبر বলে শুধুমাত্র শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে দু’টি কারণে।

এক- গুরুত্বারোপ করা।

দুই- শাস্তি যাদেরকে দেয়া হবে সেই কাফির বেঈমানদের সংখ্যা বেশী।

বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে যখন কবরে জিজ্ঞেস করা হয় তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবূদ নেই এবং নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। ’’যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে অটল ও অবিচল রাখেন- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)। আল্লাহর এ বাণীর অর্থ হলো এটাই।

অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’’ইউসাব্বিতুল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানূ বিল ক্বওলিস্ সা-বিতি- এ আয়াত কবরের ’আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কবরে মৃতকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে? সে বলে, আমার রব মহান আল্লাহ তাআলা। আর আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫, সহিহ বুখারী ৪৬৯৯, সহিহ মুসলিম ২৮৭১, সুনান আবূ দাঊদ ৪৭৫০, সহীহ আল জামি ৬৭০৮, সহীহাহ্ ৩৯৬৩, সুনান আননাসায়ী ২০৫৭, সুনান আততিরমিযী ৩১২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরের শাস্তি সম্পর্কে অনেক ছহীহ হাদীছ ও কুরআনের আয়াত রয়েছে, যার কিছু নমুনা পেশ করা হলো।

কবরের শাস্তি-১

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘হে নবী! আপনি যদি অত্যাচারীদের দেখতেন, যখন তারা মৃত্যুকষ্টে পতিত হয়, ফেরেশ্স্তাগণ তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের আত্মা বের করে দাও। ফেরেশতাগণ এ সময় বলেন, আজ হ’তে তোমাদেরকে প্রতিফল স্বরূপ অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হবে। আর অপমানজনক শাস্তির কারণ হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য আরোপ করতে এবং অহংকার করে তার আয়াত সমূহ এড়িয়ে চলতে’। (সুরা আন‘আম ৯৩)।

অত্র আয়াতে অত্যাচারীদের মৃত্যু যন্ত্রণার কথা উল্লেখ হয়েছে। মৃত্যুর সময় তাদেরকে অপমান করা হয়, তা স্পষ্ট করা হয়েছে এবং মরণের পর হতেই তাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হয়। আর মরণের পর হতে যে শাস্তি দেয়া হয় তাকেই কবরের শাস্তি বলে।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,

‘ফেরাউন বংশীয় একজন মুমিনকে আল্লাহ ফেরাউনদের কবল হ’তে রক্ষা করেন। অবশেষে এদেরকে আল্লাহর কঠোর শাস্তি ঘিরে ধরে। আর এ কঠোর শাস্তি তাদের সামনে সকাল-সন্ধ্যা পেশ করা হয়’। (সুরা মুমিন ৪৫-৪৬)।

অত্র আয়াতে সকাল-সন্ধ্যা যে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবরের শাস্তি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘অচিরেই আমি তাদেরকে বারবার শাস্তি দিব। অতঃপর তারা মহা কঠিন শাস্তির দিকে ফিরে যাবে’। (সুরা তাওবা ১০১)।

অত্র আয়াতে বারবার শাস্তি বলে কবরের শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে অবিচল রাখবেন সে সকল লোককে যারা ঈমান এনেছে প্রতিষ্ঠিত বাণীতে’। (সুরা ইবরাহীম ২৭)।

এ আয়াত কবরের আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীগণ (আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব) সেখান থেকে চলে আসে, আর তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। তার নিকট (কবরে) দু’জন মালাক (ফেরেশতা) পৌঁছেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, তুমি দুনিয়াতে এই ব্যক্তির (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) ব্যাপারে কী জান? এ প্রশ্নের উত্তরে মু’মিন বান্দা বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, ঐ দেখে নাও, তোমার ঠিকানা জাহান্নাম কিরূপ (জঘন্য) ছিল। তারপর আল্লাহ তা’আলা তোমার সে ঠিকানা (জাহান্নামকে) জান্নাতের সাথে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তখন সে বান্দা দু’টি ঠিকানা (জান্নাত-জাহান্নাম) একই সঙ্গে থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও কাফিরকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়াতে এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কী ধারণা পোষণ করতে? তখন সে উত্তর দেয়, আমি বলতে পারি না (প্রকৃত সত্য কী ছিল)। মানুষ যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তাঁকে বলা হয়, তুমি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েও বুঝতে চেষ্টা করনি এবং (আল্লাহর কুরআন) পড়েও জানতে চেষ্টা করনি। এ কথা বলে তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে কঠিনভাবে মারতে থাকে, এতে সে তখন উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে। এ চীৎকারের শব্দ (পৃথিবীর) জিন আর মানুষ ছাড়া নিকটস্থ সকলেই শুনতে পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৬, সহিহ বুখারী ১৩৭৪, সহিহ মুসলিম ২৮৭০, সুনান আননাসায়ী ২০৫১, আহমাদ ১২২৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১২০, সহীহ আল জামি ১৬৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মরণের পর মানুষ প্রশ্নের মুখামুখি হবে। প্রশ্নগুলি কি হবে তা নবী করিম (সা.) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন এবং তার উত্তরও বলে দিয়েছেন। কবরে যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে তার পরিণাম হবে বড় ভয়াবহ। হাতুড়ি দ্বারা কঠিনভাবে পিটানো হবে। তখন সে বিকট শব্দ করে চিৎকার করতে থাকবে। মানুষ এবং জিন ছাড়া জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ ও জড় বস্ত্ত সব কিছুই শুনতে পাবে।

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, (কবরে) তাকে সকাল-সন্ধ্যায় তার (ভবিষ্যৎ) অবস্থান দেখানো হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তার অবস্থান জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে তার অবস্থান জাহান্নাম দেখানো হয়। আর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার প্রকৃত অবস্থান। অতঃপর কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাকে উঠিয়ে সেখানে প্রেরণ করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৭, সহিহ বুখারী ১৩৭৯, সহিহ মুসলিম ২৮৬৬, সুনান আননাসায়ী ২০৭০, আহমাদ ৫৯২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১৩০, সহীহ আল জামি‘ ৭৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 অত্র হাদীছে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় কবরবাসীর সামনে জাহান্নাম বা জান্নাত পেশ করা হয় এবং বলা হয় এটাই তোমার আসল স্থান। তাকে জাহান্নাম দেখিয়ে সর্বদা আতঙ্কিত করা হয়। অথবা জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়।

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ইয়াহুদী নারী তাঁর কাছে এলো। সে কবরের আযাব প্রসঙ্গে কথা উঠাল এবং বলল, হে আয়িশাহ্! আল্লাহ তা’আলা তোমাকে কবরের ’আযাব থেকে মুক্তি দিন। অতঃপর আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের আযাবের সত্যতা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হাঁ, কবরের ’আযাব সত্য। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি কক্ষনো এমন দেখিনি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন অথচ কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট মুক্তির দু’আ করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৮, বুখারী ১৩৭২, মুসলিম ৯০৩, আহমাদ ২৫৪১৯, সহীহাহ্ ১৩৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৪৭। হাদীসের শব্দগুলো বুখারীর)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরের শাস্তি চূড়ান্ত সত্য। নবী করীম (সা.) যখনই ছালাত আদায় করতেন, তখনই কবরের আযাব হতে পরিত্রাণ চাইতেন। তাই আমাদেরও উচিৎ প্রত্যেক ছালাতের মধ্যে কবরের শাস্তি হতে পরিত্রাণ চাওয়া।

কবরের শাস্তি-২

 যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী নাজ্জার গোত্রের একটি বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে ছিলাম। হঠাৎ খচ্চরটি লাফিয়ে উঠল এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রায় মাটিতে ফেলে দেবার উপক্রম করল। দেখা গেল, সামনে পাঁচ-ছয়টি কবর রয়েছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ কবরবাসীদের কে চেনে? এক ব্যক্তি বললো, আমি! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এরা কবে মারা গেছে? সে বললো, শির্কের যুগে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ উম্মাত তথা কবরবাসীরা তাদের কবরে পরীক্ষায় পড়েছে (শাস্তির কবলে পড়েছে)। তোমরা মানুষকে ভয়ে কবর দেয়া ছেড়ে দিবে (এ আশংকা না থাকলে) আমি আল্লাহর কাছে দু’আ করতাম, তিনি যেন তোমাদেরকেও কবরের ’আযাব শুনান, যে কবরের ’আযাব আমি শুনতে পাচ্ছি।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা সকলে জাহান্নামের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। সকলে একত্রে বললেন, আমরা জাহান্নামের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তারা সকলে একত্রে বললেন, আমরা কবরের ’আযাব হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা সকলে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। তখন সকলে একত্রে বললেন, আমরা সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা দাজ্জালের সকল ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে আশ্রয় চাও। সকলে বললেন, আমরা দাজ্জালের ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৯,  মুসলিম ২৮৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষ কবরে এমন ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে, যা মানুষকে শুনানো সম্ভব নয়। মানুষ কবরের শাস্তি শুনতে পেলে বেঁচে থাকতে পারবে না এবং কাউকে কবরে দাফন করতেও চাইবে না। এজন্য নবী করীম (সা.) আমাদের সাবধান ও সর্তক করে বলেছেন, ‘তোমরা সর্বদা কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাও’।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃতকে যখন কবরে শায়িত করা হয় তখন তার নিকট নীল চোখবিশিষ্ট দু’জন কালো মালাক (ফেরেশতা) এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে মুনকার, অপর একজনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃতকে (রসূলের প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তির ব্যাপারে দুনিয়াতে তুমি কি ধারণা পোষণ করতে? সে বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। তখন মালাক দু’জন বলবেন, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয়, ঘুমিয়ে থাক। তখন কবরবাসী বলবে, (না,) আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই এবং তাদের এ সুসংবাদ দিতে চাই। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বলবেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের বরের ন্যায় ঘুমাতে থাক, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারে না। অতঃপর সে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন না আসা পর্যন্ত এভাবে ঘুমিয়ে থাকে। যদি মৃত ব্যক্তি মুনাফিক্ব হয় তাহলে সে বলবে, লোকেদেরকে তাঁর সম্পর্কে যা বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম, কিন্তু আমি জানি না। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, আমরা পূর্বেই জানতে পেরেছিলাম যে, তুমি এ কথাই বলবে। অতঃপর জমিনকে বলা হবে, তার উপর চেপে যাও। সুতরাং জমিন তার উপর এমনভাবে চেপে যাবে, যাতে তার এক দিকের হাড় অপর দিকে চলে যাবে। কবরে সে এভাবে ’আযাব ভোগ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে) আল্লাহ তা’আলা তাকে কবর থেকে না উঠাবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩০,  সুনান আততিরমিযী ১০৭১, সহীহুত্ তারগীব ৩৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃতব্যক্তিকে কবরে রাখার পরপরই ভয়াবহ আকৃতিতে দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তারা জিজ্ঞেস করেন। জিজ্ঞাসার উত্তর ঠিক হ’লে কবরকে প্রশস্ত করা হয় এবং কবরকে আলোকিত করা হয়। আর বাসর ঘরের দুলার ন্যায় নিরাপদে ঘুমাতে বলা হয়। উত্তর সঠিক দিতে না পারলে মাটিকে বলা হয় তুমি একে দু’দিক থেকে চেপে পিশে একাকার করে দাও। তখন মাটি তাকে এভাবে চেপে পিশে একাকার করতে থাকে আর এরূপ হ’তে থাকবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত।

বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবরে মৃত ব্যক্তির (মু’মিনের) নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) আসেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাকে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

তোমার রব কে? সে উত্তরে বলে, আমার রব হলেন আল্লাহ।

তারপর মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কী? সে ব্যক্তি উত্তর দেয়, আমার দীন হলো ইসলাম।

আবার মালায়িকাহ্ জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল, তিনি কে? সে বলে, তিনি হলেন আল্লাহর রসূল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

 তারপর মালায়িকাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করেন, এ কথা তোমাকে কে বলেছে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার উপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সমর্থন করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এটাই হলো আল্লাহ তা’আলার এ বাণীর ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ তা’আলা সেসব লোকেদেরকে (দীনের উপর) প্রতিষ্ঠিত রাখেন যারা প্রতিষ্ঠিত কথার (কালিমায়ে শাহাদাতের) উপর ঈমান আনে... আয়াতের শেষ পর্যন্ত- (সূরাহ্ ইবরাহীম ১৪: ২৭)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আকাশমণ্ডলী থেকে একজন আহবানকারী ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও। আর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। অতএব তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের বাতাস ও সুগন্ধি দোলা দিতে থাকবে এবং দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তারপর তার রূহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাকে দু’জন মালাক এসে তাকে উঠিয়ে বসান এবং বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন,

তোমার রব কে?। তখন সে উত্তরে বলে, হায়! হায়!! আমি তো কিছুই জানি না।

তারপর তারা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কী? সে বলে, হায়! হায়!! তাও তো আমার জানা নেই।

তারপর তারা জিজ্ঞেস করেন, এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে, হায়! হায়!! এটাও তো জানি না।

তারপর আকাশ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও। আর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তার কবরকে তার জন্য সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়, যাতে তার একদিকের হাড় অপরদিকের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর একজন অন্ধ ও বধির মালাক নিযুক্ত করে দেয়া হয়, যার সাথে লোহার এক হাতুড়ি থাকে। সে হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে সে পাহাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে মাটি হয়ে যাবে। সে অন্ধ মালাক এ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে তাকে আঘাত করতে থাকে। (তার বিকট চীৎকারের শব্দ) পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত জিন্ ও মানুষ ছাড়া সকল মাখলূক্বই শুনতে পাবে। এর সাথে সাথে সে মাটিতে মিশে যাবে। অতঃপর পুনরায় তার মধ্যে রূহ্ ফেরত দেয়া হবে (এভাবে অনবরত চলতে থাকবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩১,  সুনান আবূ দাঊদ ৪৭৫৩, আহমাদ ১৮০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, কবরে থাকতেই মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে। কবরে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে। জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে, জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দেয়া হবে। এছাড়া কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যাতে তার হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। এরপরও এমন একজন ফেরেশতা নির্ধাণ করা হবে যে অন্ধ ও বধির অর্থাৎ যার নিকট কোন দয়ার আশা করা যায় না। কেননা চক্ষু দিয়ে দেখলে অন্তরে দয়ার প্রভাব হয় আর কান দিয়ে শুনলেও অন্তরে দয়ার প্রভাব হয়। কিন্তু এমন একজন ফেরেশ্তা যে চোখেও দেখে না কানেও শুনে না। তাই তার নিকট দয়ার কোন আশা করা যায় না।

কবরের শাস্তি-৩

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মৃত যখন কবরের ভিতরে পৌঁছে, তখন (নেক) বান্দা কবরের ভিতর ভয়-ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্ত হয়ে উঠে বসে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? তখন সে বলে, আমি দীন ইসলামে ছিলাম। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? সে বলে, এ ব্যক্তি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর রসূল। আল্লাহর নিকট হতে আমাদের কাছে (হিদায়াতের জন্য) স্পষ্ট দলীল নিয়ে এসেছেন এবং আমরাও তাঁকে (পরিপূর্ণ) বিশ্বাস করেছি। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হয়, তুমি আল্লাহকে কক্ষনো দেখেছ কি? সে উত্তরে বলে, দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর জাহান্নামের দিকে তার জন্য একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। সে সেদিকে তাকায় এবং দেখে, আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তখন তাকে বলা হয়, দেখ! তোমাকে কি কঠিন বিপদ হতে আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। তারপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হয়। এখন সে জান্নাতের শোভা সৌন্দর্য ও এর ভোগ-বিলাসের প্রতি তাকায়। তাকে তখন বলা হয়, এটা তোমার (প্রকৃত) স্থান। কেননা তুমি দুনিয়ায় ঈমানের সাথে ছিলে, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছ। ইন-শা-আল্লাহ, ঈমানের সাথেই তুমি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন উঠবে।

অপরদিকে বদকার বান্দা তার কবরের মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কোন্ দীনে ছিলে? উত্তরে সে বলবে, আমি তো কিছুই জানি না। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? উত্তরে সে বলবে, আমি মানুষদেরকে যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্রপথ খুলে দেয়া হবে। এ পথ দিয়ে সে জান্নাতের সৌন্দর্য ও এতে যা (সুখ-শান্তির উপায়-উপকরণ, সাজ-সরঞ্জাম) রয়েছে তা দেখবে। তখন তাকে বলা হবে, এসব জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দাও যেসব জিনিস হতে আল্লাহ তোমাকে ফিরিয়ে রেখেছেন। তারপর তার জন্য আর একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর সে সেদিকে দেখবে আগুনের লেলিহান শিখা একে অপরকে দলিত-মথিত করে তোলপাড় করছে। তাকে তখন বলা হবে, এটা তোমার (প্রকৃত) অবস্থান। তুমি সন্দেহের উপরেই ছিলে, সন্দেহের উপরই তুমি মৃত্যুবরণ করেছ। ইনশা-আল্লা-হ, এ সন্দেহের উপরই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তোমাকে উঠানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

বারা ইবনে আযিব (রা.) বলেন, আমরা একবার নবী করীম (সা.) -এর সাথে আনছারদের এক লোকের জানাযায় গেছিলাম। আমরা কবরের নিকট গেলাম, কিন্তু তখনও কবর খোড়া হয়নি, তখন নবী করীম (সা.) বসলেন, আমরাও তার আশেপাশে বসলাম। আমরা এমন চুপচাপ বসে ছিলাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন নবী করীম (সা.) -এর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল, যা দ্বারা তিনি চিন্তিত ব্যক্তির ন্যায় মাটিতে দাগ কাটতেছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন আল্লাহর নিকট কবর আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাও। তিনি কথাটি দুই-তিন বার বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩০, আহমাদ ১৮৫৩৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরের শাস্তি গভীরভাবে ভাববার বিষয়। কবরের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার জন্য নবী করীম(সা.) আদেশ করেছেন। কথাটি তিনি বারবার বলে মানুষকে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।

’উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন, কেঁদে দিতেন, (আল্লাহর ভয়ে চোখের পানিতে) তার দাড়ি ভিজে যেত। একদা তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ হলে, আপনি কাঁদেন না। আর আপনি এ জায়গায় (কবরস্থানে) দাঁড়িয়ে কাঁদছেন? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আখিরাতের মঞ্জীলসমূহের মধ্যে কবর হলো প্রথম মঞ্জীল। কেউ যদি এ মঞ্জীলে মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে পরের মঞ্জীলসমূহ অতিক্রম করা তার জন্য সহজসাধ্য হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মঞ্জীলে মুক্তি লাভ করতে পারলো না, তার জন্য পরবর্তী মঞ্জীলসমূহ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি [’উসমান (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাও বলেছেন, কবর থেকে বেশি কঠিন কোন ভয়ঙ্কর জায়গা আমি কক্ষনো দেখিনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২, সুনান আততিরমিযী ২৩০৮, সহীহুত্ তারগীব ৩৫৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ হ’তে বুঝা গেল যে, পরকালের ভয়াবহ স্থানসমূহের প্রথম স্থান হচ্ছে কবর। কবরের বিপদ হ’তে রক্ষা পেলে, বাকি সব স্থানে রক্ষা পাওয়া যাবে। কবরের ভয়-ভীতি মনে করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা এবং কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাওয়া উচিত।

কবরের শাস্তি - ৪

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এই [সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)] সে ব্যক্তি যার মৃত্যুতে ’আর্শ (আরশ)-ও কেঁপেছিল (তার পবিত্র রূহ্ ’আর্শে পৌঁছলে ’আর্শের নিকটতম মালায়িকাহ্ খুশীতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল) এবং আসমানের দরজা খুলে দিয়েছিল। তার জানাযায় সত্তর হাজার মালাক উপস্থিত হয়েছিলেন। অথচ তার কবর সংকীর্ণ হয়েছিল। (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’আর বারাকাতে) পরে তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬,  সুনান আননাসায়ী ২০৫৫, সহীহুল জামি ৬৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, ভাল মানুষের কবরও সংকীর্ণ হতে পারে।

আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে নাসীহাত করার জন্য দাঁড়ালেন এবং কবরের ফিত্নাহ্ (ফিতনা) সম্পর্কে বর্ণনা করলেন। মানুষ কবরে যে ফিতনার সম্মুখীন হয় তা শুনে লোকজন ভয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। ইমাম বুখারী এ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।

আর ইমাম নাসায়ীর বর্ণনায় আরো রয়েছেঃ (কবরের ফিতনার কথা শুনে ভয়ে ভীত বিহ্বল হয়ে) মুসলিমরা চীৎকারের কারণে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (মুখ থেকে বের হওয়া) কথাগুলো বুঝতে পারিনি। চীৎকার বন্ধ হবার পর অবস্থা শান্ত হলে আমি আমার নিকটে বসা এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তোমায় কল্যাণ দান করুন, শেষের দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন? সে ব্যক্তি উত্তরে বলল, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার ওপর এ ওয়াহী এসেছে যে, তোমাদেরকে কবরে ফিতনায় ফেলা হবে। আর এ ফিতনাহ্ দাজ্জালের ফিতনার মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭, বুখারী ১৩৭৩, নাসায়ী ২০৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের সামনে কবরের আলোচনা হওয়া উচিত। কবরের শাস্তি ও ফেতনার ভয়ে কান্নাকাটি করা উচিত।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস, মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০৭, সুনা আত্ তিরমিযী ২৩০৭, সুনান আননাসায়ী ১৮২৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩২৭, আহমাদ ৭৯২৫, ইবনু হিব্বান ২৯১২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৯০৯, আত্ তিরমিযী ৩৩৩৩, সহীহু আল জামি‘ আস্ সগীর ১২১০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতিয়মাণ হয় যে, মানুষের সবচেয়ে স্মরণীয় কথা হচ্ছে মরণ। আর মরণই মানুষের জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাকে শেষ করে দেয়।

 ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক আনসারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে তাকে সালাম দিলো। অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বলেনঃ স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস কররো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেনঃ তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান। (সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৫৯, সহীহাহ ১৩৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মরণকে যারা বেশী বেশি স্মরণ করে তারাই বেশী বুদ্ধিমান এবং তারাই পরবর্তী জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এদের দু’ জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গুনাহর জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে না (যা হতে বিরত থাকা) দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না, আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগে বিভক্ত করলেন, অতঃপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বললেনঃ ডাল দু’টি না শুকানো পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হাল্কা করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬১, ২১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পেশাব হতে সতর্ক না থাকলে কবরে শাস্তি হবে।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বদরে নিহত) গর্তবাসীদের দিকে ঝুঁকে দেখে বললেনঃ ‘‘তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তোমরা বাস্তবে পেয়েছো তো?’’- (আল-আ‘রাফ (৭) : ৪৪)। তখন তাঁকে বলা হল, আপনি মৃতদের ডেকে কথা বলছেন? (ওরা কি শুনতে পায়?) তিনি বললেনঃ ‘‘তোমরা তাদের চেয়ে অধিক শুনতে পাও না, তবে তারা জবাব দিতে পারছে না’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭০, ৩৯৮০, ৪০২৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭৯, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১২৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, নবী করীম (সা.) বদরের যুদ্ধে নিহত কাফিরদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তোমরা মরণের পর যে শাস্তি ভোগ করছ এ শাস্তির কথাই আমি তোমাদের বলতাম। এ শাস্তির ব্যাপারেই আল্লাহ সতর্ক করেছিলেন। যা তোমরা অস্বীকার করেছিলে। আর এটা হচ্ছে কবরের শাস্তি। জাহান্নাম-জান্নাতের বিষয়টি বিচারের পর।

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, নিশ্চয়ই তারা এখন ভালভাবে জানতে (ও বুঝতে) পেরেছে যে, (কবর আযাব প্রসঙ্গে) আমি তাদের যা বলতাম তা বাস্তব। আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা করেছেনঃ ‘‘আপনি (হে নবী!) নিশ্চিতই মৃতদের (কোন কথা) শোনাতে পারেন না’’- (আন্-নামালঃ ৮০)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৭১, ৩৯৭৯, ৩৯৮১, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯৩২)  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু ইসহাক আস-সাবীঈ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, খালিদ ইবনু উরফুতা (রাঃ)-কে সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) অথবা সুলাইমান (রাঃ)-কে খালিদ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছেনঃ "যে লোককে পেটের পীড়া মৃত্যু দিয়েছে কবরে সে লোককে কোন রকম শাস্তি দেয়া হবে না"। তাদের একজন অন্যজনকে বললেন, হ্যাঁ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৬৪, সুনান আননাসাঈ ২০৫২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনুআমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৭, সুনান আতআত্ তিরমিযী ১০৭৪, আহমাদ ৬৫৮২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৬২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কবরের শাস্তি চূড়ান্ত যা অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণ হয়। জুম’আর দিন কোন মুসলমান মারা গেলে তাকে কবরের শাস্তি হতে রক্ষা করা হয়।

কবরের শাস্তি - ৫

মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

(১) তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়,

(২) কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়,

(৩) (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে;

(৪) তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে;

(৫) আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেয়া হবে এবং

(৬) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা’আত করার অনুমতি দেয়া হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯৪, সহীহাহ্ ৩২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমর ইবনু সাওওয়াদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আবূ আইয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যাস্তের পর বের হলেন, তখন এক শব্দ শুনে বললেন যে, ইয়াহুদিদের কবরে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুলায়মান ইবনু দাঊদ (রহঃ)...আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে লোকজন যে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে দাঁড়িয়ে তার উল্লেখ করতে থাকলে মুসলিমগণ এমন উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলেন যে, আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনতে বাধা সৃষ্টি হতে লাগল। যখন কান্নাকাটি থেমে গেল তখন আমি আমার নিকটবর্তী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে আল্লাহ তায়ালা রহম করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার শেষে কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা দাজ্জালের ফিৎনার ন্যায় কবরে ফিৎনার সম্মুখীন হবে। ( সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূলায়মান ইবনু দাঊদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার কাছে আসলেন তখন আমার কাছে একজন ইয়াহুদী রমনী ছিল। সে বলছিল যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখিন হবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্থিরতার সাথে বললেন, ইয়াহুদিরাই ফিৎনার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, কয়েক রাত্র এভাবে অতিবাহিত হবার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট ওহী এসেছে যে, তোমরা কবরের ফিৎনার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি। ( সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুতায়বা (রহঃ)..আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের ফিৎনা এবং কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং তিনি বলতেন, তোমরা নিজ নিজ কবরে আযাবের সম্মুখিন হবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হান্নাদ (রহঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী রমনী তার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আয়িশা (রাঃ) তাকে ভিক্ষা দিলে সে বলনো আল্লাহ তা’আলা তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এতে আমি চিন্তান্বিত হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলে তাঁর কাছে আাম তা বললাম। তিনি বললেন, তারা নিজ নিজ কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হবে যা চতুষ্পদ জন্তুসমুহ শুনতে পাবে। ( সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 মুহাম্মাদ ইবনু কুদামাহ (রহঃ)...আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনার ইয়াহুদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা আমার কাছে আসল। তারা বলল যে, কবরবাসীরা নিজ নিজ কবরে আযাবের সমুখীন হবে। তখন আমি তাদের মিথ্যাবাদী মনে করলাম; সত্যবাদী মনে করতে চাইলাম না। তাই তারা বের হয়ে গেল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলে আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! মদীনার ইয়াহুদী বৃদ্ধাদের থেকে দুইজন বৃদ্ধা বললো যে, কবরবাসীগণ তাদের কবরে আযাবের সম্মুখীন হবে। তিনি বললেন যে, তারা সত্যই বলেছে; তারা কবরে এমন আযাবের সম্মুখীন হবে যে, তা সকল চতুষ্পদ জন্তু শুনতে পাবে। তারপর আমি তাকে এমন কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি যাতে তিনি কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা না করতেন। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরের শাস্তি - ৬

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তিনটি জিনিস মৃত লাশের সাথে যায়। দুটি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে গমন করে আত্মীয়স্বজন, মাল-সম্পদ এবং তার ’আমল। পরে জাতি-গোষ্ঠী ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার ’আমল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৬০, সুনান আননাসায়ী ১৯৩৭, সহীহুল জামি' ৮০১৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১০৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ২০৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৭২০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ যেদিন নিরুপায় হবে, সে দিন মানুষের কোন সহযোগী থাকবে না, সে দিন তার সহযোগী হবে একমাত্র তার আমল।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একজন ইহুদী মহিলা আমার দরজায় এসে খেতে চাইল, সে বলল, আমাকে খেতে দিন, আল্লহ আপনাদেরকে দাজ্জালের ফিতনা ও কবরের আযাবের ফেতনা হ’তে পরিত্রাণ দিবেন। তখন আমি রাসূল (সা.) বাড়ী আসা পর্যন্ত তাকে ধরে রাখলাম। রাসূল (সা.) যখন আসলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) ! এ ইহুদী মহিলা কি বলে? নবী করীম (সা.) বলেন, সে কি বলছে? আমি বললাম, সে বলছে আল্লাহ আপনাদেরকে দাজ্জালের ফেতনা ও কবরের আযাবের ফেতনা হ’তে রক্ষা করুন। তখন রাসূল(সা.) দাঁড়ালেন এবং হাত তুলে দোআ করলেন, এ সময় তিনি দাজ্জালের ফিতনা এবং কবরের আযাবের ফেতনা হ’তে পরিত্রাণ চাচ্ছিলেন। (আহমাদ হা/২৪৯৭০; তাফসীর দুররুল মানছূর ৫/৩৪ পৃঃ, হাদীছ ছহীহ)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পূর্বের লোকেরাও কবরের আযাবকে ভয় করত এবং পরিত্রাণ চাইত। নবী করীম (সা.) কবরের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাওয়ার সময় হাত তুলে প্রার্থনা করেন এবং প্রার্থনায় কবরের আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাইলেন।

কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির উপায়

এ ব্যাপারে ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তিদানকারী কারণসমূহ দুই প্রকার। সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত।

সংক্ষিপ্ত কারণ: সেই সকল কারণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা কবরের শাস্তি বয়ে আনে। কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো, মানুষ ঘুমের পূর্বে এক ঘন্টা সময় আল্লাহর জন্য ব্যয় করবে, তাতে সে পুরো দিনের লাভ লোকসানের হিসাব সম্পর্কে নিজেকে জিজ্ঞাসা করবে। অতঃপর এর জন্য আল্লাহর নিকট তাওবা নাসূহা করে ঘুমাবে এবং দৃঢ় সংকল্প করবে যেন ঘুম থেকে জেগে পূনরায় অপরাধে লিপ্ত না হয়। এভাবে প্রত্যেক রাত্রিতে করবে, অতঃপর সে যদি ঐ রাত্রিতে মারা যায় তাহলে সে তাওবার ওপর মারা যাবে। আর যদি ঘুম থেকে জেগে যায়, তবে সময় বেশি পাওয়ায় আনন্দ চিত্তে কাজের জন্য ভবিষ্যত সুখী হয়ে জাগল যেন সে তার রবের দিকে অগ্রসর হয়ে হারানো জিনিস পেতে পারে। এ প্রকার ঘুম থেকে বান্দার জন্য আর কোনো জিনিস নেই। বিশেষকরে ঘুম না আসা পর্যন্ত সে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ওপর আমল করে এবং যিকির-আযকারর করে। আর এ কাজের তাওফীক আল্লাহ তাকেই দিয়ে থাকেন, তিনি যার মঙ্গল চান, নিশ্চয় তিনি সর্ব শক্তিমান।

বিস্তারিত বর্ণনা: কবরের ‘আযাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কতোগুলো হাদীস উল্লেখ করবো।

আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু বাহরাম দারিমী (রহঃ)...সালমান (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদাতে রাত জাগার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব জারী থাকবে যে আমল সে করত এবং তার (শহীদসুলভ) রিযক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিৎনাসমূহ থেকে নিরাপদে থাকবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৮৫, ইসলামীক সেন্টার ৪৭৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রিবাত: শব্দের অর্থ কাফিরদের হাত থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষার জন্য সীমান্তে অবস্থান করা।

ছুগুর: বলা হয় প্রত্যেক এমন জায়গাকে, যার অধিবাসী শত্রু দ্বারা আতঙ্কিত এবং শত্রুরা তাদের দ্বারা আতঙ্কিত। রিবাতের ফযীলত অনেক বেশি এবং পূণ্যও অধিক। তন্মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট রিবাত হলো, যে সীমান্তে আতঙ্ক বেশি থাকে। (মুগনী, ইবন কুদামা ১৩/১৮-২০)।

এতে কি নিরাপত্তা বাহিনী শামিল হবে? যারা মুসলিমদের মঙ্গলের জন্য সার্বিক দিক দিয়ে পাহারা দেয়? বাহ্যিকভাবে বলা যায়, হ্যাঁ, তারাও এতে শামিল হবে; কিন্তু পূণ্যের আশা-আকাঙ্খা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বাণী উল্লেখ করা যেতে পারে।

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামের আগুন কক্ষনো দু’টি চক্ষুকে স্পর্শ করবে না। একটি চক্ষু, যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে ক্রন্দনরত হয়। অপর চক্ষু, যা আল্লাহর পথে (কোনো কাজে বা সীমান্ত) পাহারা দেয় বিনিদ্রা অবস্থায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮২৯, সুনান আততিরমিযী ১৬৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৪১১৩, সহীহ আত্ তারগীব ১২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মিকদাম ইবনে মাদীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

(১) তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়,

(২) কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়,

(৩) (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে;

(৪) তাকে ঈমানের চাদর পরানো হবে;

(৫) আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেয়া হবে এবং

(৬) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফা’আত করার অনুমতি দেয়া হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৬৬৩, আহমাদ ১৬৭৩০, বায়হাকী ফিস সুনান ৯/১৬৪, বায়হাকী ফিশ শুআব ১০৮২৩, ১০৮২৪, আল-আহকাম ৩৬ নং পৃষ্ঠা, আত-তালীকুর রাগীব ২/১৯৪, সহীহাহ্ ৩২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ শব্দগুলো ইবন মাজাহ, তিরমিযীতে এসেছে যে, তার মাথায় ইয়াকুত পাথরের টুপি পরিয়ে দেওয়া হবে, যা পৃথিবী এবং এর সকল জিনিস থেকে উৎকৃষ্ট। বায়াত্তর জন হুরের সাথে বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে সত্তর জনের ব্যাপারে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এটা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং এতে শহীদ হওয়ার কতিপয় ফযীলত।

কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আরো এসেছে যা আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ এবং নাসাঈতে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুরআন মজীদে তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফা’আত করবে, শেষে তাকে ক্ষমা করা হবে। তা হলোঃ তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল ’’মুলক’’ (সূরা মুলক)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬, সুনান আততিরমিযী ২৮৯১, সুনানআবূ দাউদ ১৪০০, রাওদুন নাদীর ৬৪, আত-তালীকুর রাগীব ২/২২২, ২২৩, সহীহ আবু দাউদ ১২৬৫, সুনান আননাসাঈ ৭১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদীসসহ সাহাবীদের এরকম যত আমল রয়েছে তা প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি সূরা মূলক নিয়মিত পাঠ করবে এবং এর প্রতি আমল করবে, নিশ্চয় তাকে কবরের ‘আযাব থেকে তা রক্ষা করবে।

কবরের ‘আযাব থেকে মুক্তির আরো উপায় হলো: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আবু ইসহাক আস-সাবীঈ (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, খালিদ ইবনু উরফুতা (রাঃ)-কে সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) অথবা সুলাইমান (রাঃ)-কে খালিদ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছেনঃ "যে লোককে পেটের পীড়া মৃত্যু দিয়েছে কবরে সে লোককে কোন রকম শাস্তি দেয়া হবে না"। তাদের একজন অন্যজনকে বললেন, হ্যাঁ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৬৪; সুনান নাসাঈ ৪/৯৮, আল আহকাম ৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তির পেটের রোগ হবে তাকে হায় হুতাশ না করে ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর নিকট পুণ্যের আশা করতে হবে, আর যদি তার পরিবারও এ আশা করে তারাও সাওয়াব পাবে।

এ অধ্যায়ে আরো যা আনা ভালো মনে হয় তাহলো ইবন হিব্বান তার সহীহ’তে এবং অন্যান্যরা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন মৃত ব্যক্তিকে তার কবরে রাখা হয়, তখন সে তার নিকট থেকে ফিরে যাওয়া সাথীদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। অতঃপর সে যদি মুমিন হয় তবে সালাত তার মাথার দিকে, সাওম তার ডান দিকে, যাকাত তার বাঁ দিকে এবং সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকাজ ও মানুষকে অনুগ্রহ করা -এ সকল ভালো কাজ তার পায়ের দিকে থাকে। অতঃপর কবরের ‘আযাব যখন তার মাথার দিক দিয়ে আসে তখন সালাত বলে, আমার দিক দিয়ে কোনো রাস্তা নেই। তারপর যখন তার ডান দিক দিয়ে আসে সাওম বলে: আমার নিকট দিয়ে প্রবেশ করার কোনো পথ নেই। তারপর যখন তার বাঁ দিক দিয়ে আসে যাকাত বলে, আমার দিক দিয়ে কোনো রাস্তা নেই। পায়ের দিক দিয়ে আসলে সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকর্ম এবং মানুষকে অনুগ্রহ করা -এ সকল ভালো কাজ বলতে থাকে, আমার নিকট দিয়ে প্রবেশ করার কোনো পথ নেই। তখন তাকে উঠতে বললে সে উঠে বসে। অতঃপর তার জন্য প্রায় অস্ত যাওয়া একটি সূর্য তুলে ধরে বলা হয় তোমাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছিল তাকে তুমি চেন কি? তার ওপর তুমি কিসের সাক্ষ্য দাও? সে বলে প্রথমে আমাকে সালাত পড়তে দাও, তারা বলে নিশ্চয় তা করবে। আমরা যা জিজ্ঞাসা করেছি তার উত্তর দাও। তোমাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি ছিল তাঁর সম্পর্কে তুমি কি জান? তাঁর ওপর কিসের সাক্ষ্য দাও? তিনি বলেন, তখন সে বলে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয় তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা হবে -এর ওপর জীবন কাটিয়েছ, এর ওপর মারা গিয়েছ এবং এর ওপরই আবার উঠানো হবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে দিয়ে বলা হবে এটাই তোমার স্থান, এর মধ্যে সব কিছুই আল্লাহ তোমার জন্য তৈরি করেছেন। তখন তার আনন্দ ও গর্ব বেড়ে যাবে। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দিয়ে বলা হবে, যদি তুমি আল্লাহর নাফরমানী করতে তাহলে তোমার স্থান হতো এটি এবং এতে যা কিছু রয়েছে সবই তোমার জন্য তৈরি ছিল, তাতে তার আনন্দ ও গর্ব আরো বেড়ে যাবে। তারপর তার কবরকে তার জন্য সত্তর গজ প্রশস্ত করে তা নূর দিয়ে আলোকিত করে দেওয়া হবে এবং পূর্বের ন্যায় তার শরীর ফিরিয়ে দিয়ে তার আত্মা ভালো আত্মাসমূহের অন্তর্ভুক্ত করে দিবেন। আর তা হলো জান্নাতের বৃক্ষে ঝুলানো একটি পাখী। তিনি বলেন: এটাই আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

“আল্লাহ মুমিন বান্দাদেরকে পৃথিবী এবং আখিরাতে মজবুত বাক্য দ্বারা শক্তিশালী করেন।” (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ২৭)।

তারপর পুরো হাদীস উল্লেখ করেন। (ইবন হিব্বান পৃষ্ঠা নং ৭৮১; মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৮০-৩৮১; হায়ছামী/মাজমা‘আ যাওয়ায়েদ ৩/৫২; ফতহুল বারী ৩/২৩৭-২৩৮)।

এতে প্রমাণিত হয় যে, ঐসকল আমল হলো সালাত, সাওম, যাকাত, সদকা, আত্মীয়তা বন্ধন, সৎকর্ম সম্পাদন এবং মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করা ইত্যাদি ভালো ভালো কাজ কবরের ‘আযাব, দুঃখ-যাতনা এবং ফিতনা থেকে মুক্তির উপায়।

মোটকথা আল্লাহর দেওয়া কর্তব্য আদায় এবং হারাম থেকে বিরত থাকা, বেশি বেশি তাওবা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং বেশি ফযীলত বিশিষ্ট আমল করা এবং কবরের ‘আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলাকে প্রকৃত ভয় করা হয় বা পরহেজগারীতা বাস্তবায়িত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“নিশ্চয় যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” (সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৩)।

হে আল্লাহ আমাদের এবং আমাদের সকল মুসলিম ভাইদের কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দাও। হে করুনাময়, তুমি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে আমাদেরকে বাঁচাও।

কবরের আযাব থেকে পরিত্রানের আমলসমূহ

(১) আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ ও আবু কুরায়ব (রহঃ)...আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ পাঠের মাধ্যমে দুআ করতেন,

"আল্ল-হুম্মা ফাইন্নী আউযুবিকা মিন্‌ ফিতনাতিন না-রি ওয়া ‘আযা-বিন্‌ না-রি ওয়া ফিতনাতিল কবরি ওয়া ‘আযা-বিল্‌ কবরি ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল গিনা ওয়ামিন শার্‌রি ফিতনাতিল ফাক্‌রি ওয়া আউযুবিকা মিন্‌ শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল, আল্ল-হুম্মাগসিল খতা-ইয়া-ইয়া বিমা-য়িস্ সালজি ওয়াল বারাদ, ওয়ানক্কি কলবী মিনাল খতা-ইয়া- কামানাক্কাইতাস্ সাওবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাস ওয়া বা-ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খতা- ইয়া-ইয়া কামা-বা-’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব, আল্ল-হুম্মা ফা-ইন্নী আউযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়াল হারামি ওয়াল মা’সামি ওয়াল মাগ্রাম।"

অর্থাৎ-"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের ফিতনাহ থেকে আশ্রয় চাই, জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই, কবরের ফিতনাহ, কবর শাস্তি ও ধন-সম্পদের ফিতনাহ এবং অসচ্ছলতার ফিতনার খারাবী হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমি আপনার নিকট মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার বিভ্রান্তির অপকারিতা থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ আমার গুনাহসমূহ বরফ ও কুয়াশার স্নিগ্ধ-শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। আমার অন্তর পবিত্র করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা হতে পরিষ্কার করে দেন। আমি ও আমার গুনাহসমূহের মাঝে দূরত্ব করে দিন যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অলসতা, বার্ধক্য, গুনাহ ও ধার-কৰ্জ হতে আশ্রয় চাই।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ).....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

"আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউয়ুবিকা মিনাল আজ্যি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুব্নি ওয়াল হারামি ওয়াল বুখলি ওয়া আউয়ুবিকা মিন আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত"।

অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য, বখিলতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার নিকট আরও আশ্রয় চাচ্ছি কবরের শাস্তি, জীবন ও মরণের ফিতনার খারাবী থেকে।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবু বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ)....আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আসমূহ পাঠ করতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বুখ্লি ওয়াল কাসালি ওয়া আরযালিল উমুরি ওয়া আযা-বিল কবরি ওয়া ফিতনাতিল মাহইয়া- ওয়াল মামা-ত”।

অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে বখিলতা, অলসতা, নিকৃষ্ট জীবন-যাপন, কবরের শাস্তি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ থেকে আশ্রয় চাই।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) যায়দ ইবনু আরক্বম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া ‘আযা-বিল কবরি, ‘আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়াযাক্কিহা- আন্তা খয়রু মিন্ যাক্কা-হা- আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়ামাও লা- হা-, আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘ইল্মিন লা- ইয়ানফা‘উ ওয়ামিন্ কলবিন লা- ইয়াখশা‘উ ওয়ামিন্ নাফসিন লা- তাশবা‘উ ওয়ামিন্ দা‘ওয়াতিন্ লা- ইউসতাজা-বু লাহা-’’

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের ‘আযাব হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ! তুমি আমার আত্মাকে সংযমী করো ও একে পবিত্র করো। তুমিই শ্রেষ্ঠ পুতঃপবিত্রকারী, তুমি তার অভিভাবক ও রব। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ঐ জ্ঞান লাভ হতে আশ্রয় চাই, যে জ্ঞান (আত্মার) কোন উপকারে আসে না, ঐ অন্তর হতে মুক্তি চাই যে অন্তর তোমার ভয়ে ভীত হয় না। ঐ মন হতে আশ্রয় চাই যে মন তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে, যে দু‘আ কবূল করা হয় না।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৬০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১২৪, সহীহাহ্ ৪০০৫, সহীহ আল জামি ১২৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) “আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী সাম্‘ঈ আল্লা-হুম্মা ‘আ-ফিনী ফী বাসারী। লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি ওয়াল-ফাক্বরি ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”। (৩ বার)।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শরীরে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার শ্রবণশক্তিতে। হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপত্তা দিন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুফরি ও দারিদ্র্য থেকে। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” (আবূ দাউদ ৪/৩২৪, নং ৫০৯২; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ২২; ইবনুস সুন্নী, নং ৬৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭০১। আর শাইখ আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের পৃ. ২৬ এ এর সনদকে হাসান বলেছেন)।

আমল করার নিয়ম

উপরোক্ত দোয়াগুলো ফরজ সালাতে তাশাহুদ বৈঠকে সালাম ফিরানোর আগে পাঠ করবেন। সালাম ফিরানোর পর, একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে পাঠ করবেন। এছাড়া সকাল ও বিকেলে দোয়াগুলো আমল করতে পারেন।

প্রতি রাতে সূরা মূলক পাঠ করা

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুরআন মজীদে তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফা’আত করবে, শেষে তাকে ক্ষমা করা হবে। তা হলোঃ তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল ’’মুলক’’ (সূরা মুলক)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬, সুনান আততিরমিযী ২৮৯১, সুনানআবূ দাউদ ১৪০০, রাওদুন নাদীর ৬৪, আত-তালীকুর রাগীব ২/২২২, ২২৩, সহীহ আবু দাউদ ১২৬৫, সুনান আননাসাঈ ৭১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯০, সহীহাহ ১১৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(গ) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আলিফ লাম-মীম তানয়ীল ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯২, সহীহাহ ৫৮৫, আর-রওয ২২৭, মিশকাত তাহকীক সানী ২১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কবরের আজাব থেকে পরিত্রাণ দান করুন। আমিন।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...