Search This Blog

Thursday, January 12, 2023

যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী

 

নারী জাতি হলো মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মানব জীবন পরিচালনার জন্য পারস্পরিক সহযোগী করেছেন। ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি। বরং ইসলামের আগমনেই নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারী সমাজ পেয়েছে মুক্তির সন্ধান। সারা দুনিয়াতে যখন নারীরা নিদারুণ অবস্থায় কালাতিপাত করছিল, আরব, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে তাদেরকে জন্তু-জানোয়ার বলে মনে করা হতো এবং মানুষ হিসাবে তাদের কোন মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করা হতো না, তখন ইসলাম নারীর যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে নারী জাতিকে সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক’। (বাক্বারাহ ১৮৭)।

তিনি আরো বলেন,

 ‘হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের স্বীয় প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই আত্মা (আদম) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ আত্মা হতে তাঁর জোড়া (হাওয়া)-কে সৃষ্টি করেছেন এবং এতদুভয় হতে বহু নর ও নারী বিস্তার করেছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পরের নিকট (স্বীয় হকের) দাবী করে থাক এবং আত্মীয়তা (এর হক বিনষ্ট করা) হতেও ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকলের খবর রাখেন’। (নিসা ১)।

এতো মর্যাদাবান নারী শুধুমাত্র তাদের স্বভাব বা আচরণের কারণে তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৪, ১৪৬২, ১৯৫১, ২৬৫৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯, আহমাদ ৫৪৪৩, আ.প্র. ২৯৩, ই.ফা. ২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বলতে খারাপ শুনালেও আসলে আমাদের সমাজের নারীদের বাস্তব চিত্র এ রকমই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আমি দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখী নারীকে দেখেছি তারা স্বামীর প্রতি অনেক সময় চরম অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। অনেক সময় সামান্য বিরক্ত হলে নিজ সন্তানদেরও অভিশাপ দেয়। নারীদের জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এ দুটো স্বভাব পরিহার করতে হবে অবশ্যই। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলার উদ্দেশ্য এটাই। তিনি নারীদের স্বভাব সংশোধন করার জন্যই এ কথা বলেছেন। নারীদের খাটো করা বা তাদের ভূমিকা অবমুল্যায়নের জন্য বলেন নি।

নারীগণ মারাত্মক ষড়যন্ত্রকারী বা ফেতনা সৃষ্টিকারী কিংবা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ”। (সুরা ইউসুফ ২৮)।

নারীদের ষড়যন্ত্র শয়তানের ষড়যন্ত্রের চেয়েও মারাত্মক। কারণ, নারীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র তো ভীষণ।” পক্ষান্তরে শয়তানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল”। (সূরা আন-নিসাঃ ৭৬)।

রাসুল সাঃ বলেন,

(১) উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৮, ৬৮৩৯,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪০, ২৭৪১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮০, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২, সহীহাহ ২৭০১, আধুনিক প্রকাশনী ৪৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭২৫), মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৮৫, সহীহ আল জামি ৫৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষন দিতে দাঁড়ালেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেনঃ নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে তোমাদেরকে খলীফা (শাসক) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে, তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সর্তক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সর্তক হও। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৯১, আহমাদ ১০৬৫১, ১০৭৫৯, ১০৭৮৫, ১১০৩৬, ১১১৯৩, ১১৩৮৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৫১), মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৮৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ রুহমের মুক্তদাস উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক নারীকে সুগন্ধি শেখে মসজিদে যেতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে মহাপরাক্রমশালীর বান্দী! কোথায় যাচেছা? সে বললো, মসজিদে। তিনি বললেন, সেজন্য সুগন্ধি মেখেছ? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী সুগন্ধি মেখে মসজিদের যায় তার নামায কবুল হয় না, যাবত না সে (তা) ধুয়ে ফেলে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৭৪, আত-তালীকু আলা ইবনু খুযাইমাহ ১৬৮২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৯৪, সহীহাহ ১০৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অধিকাংশ নারী জাহান্নামী

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আমি জান্নাতে তাকিয়ে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই হলো দরিদ্র। আর জাহান্নামে তাকিয়ে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী সম্প্রদায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৪১, ৫১৯৮, ৬৪৪৯, ৬৫৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬০২, সহীহুল জামি ১০৩০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২২৭৪, ২৫৮৬, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৬১০, মুসনাদে বাযযার ৫৩৪২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৫৫, শু’আবুল ঈমান ১০৩৮৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৯২৫৯, আল মুজামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১২৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেসব অধিকাংশ নারী জাহান্নামী

পূর্বে প্রকাশিত “নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?”  এর প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশে ১৫০টি কারণ উল্লেখ করেছি। এসব কারণের সাথে নারী পুরুষ যারাই জড়িত থাকবে তারাই জাহান্নামে যাবে। তবে নারীদের জন্যে আলাদা করে এই অংশ লেখার উদ্দেশ্য হলো নারীদেরকে সুনির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া যে, রাসুল সাঃ মিরাজে গিয়ে জাহান্নামে অধিকাংশ নারী দেখেছেন। জাহান্নামে অধিকাংশ কেনো নারী, কেনো তারা জাহান্নামে যাবে মূলত সেগুলো তুলে ধরা। পূর্বে প্রকাশিত “নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?”  এর প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ অবশ্যই জানা আবশ্যক। তাই প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ জানতে এদের উপর ক্লিক করুন।

(প্রথমঅংশ)

(দ্বিতীয়অংশ)

নারীদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণসমূহ

(১) নিজ স্বামীর অবাধ্য হলেঃ

কোন মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হওয়াও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় মহিলাদের জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েকটি শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

‘‘আর যে নারীদের তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও তথা আল্লাহ্ তা‘আলার আযাবের ভয়-ভীতি দেখাও, তাদেরকে শয্যায় পরিত্যাগ করো এবং প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করো। এতে করে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের ব্যাপারে আর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সমুন্নত মহীয়ান’’। (নিসা ৩৪)।

কোন মহিলা তার স্বামীর প্রয়োজনের ডাকে সাড়া না দিলে যদি সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকেন যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়।

 আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৩৭, ৫১৯৩, ৫১৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩৪৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৬, আহমাদ ৯৬৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন মহিলা নিজ স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় না করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না।

’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু’আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৮০, ইরওয়াহ ৭/৫৫-৫৬, আদাবুয যিফাফ ১৭৮, সহিহাহ ১২০৩, আহমাদ ৪/৩৮১,  ইব্নু হিববান/ইহ্সান  ৪১৫৯, বায়হাক্বী ৭/২৯২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

স্বামীর সন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জান্নাত এবং তার অসন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জাহান্নাম।

একদা জনৈকা সাহাবী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার স্বামীর কথা উল্লেখ করলে তিনি তাকে বলেন:

‘‘ভেবে দেখো তার সাথে তুমি কি ধরনের আচরণ করছো! কারণ, সেই তো তোমার জান্নাত এবং সেই তো তোমার জাহান্নাম’’। (আহমাদ ৪/৩৪১, নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ইব্নু আবী শাইবাহ্ ৪/৩০৪, হাকিম ২/১৮৯, বায়হাক্বী ৭/২৯১)।

কোনো মহিলা তার স্বামীর অবদানসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি কখনো সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন মহিলার দিকে (সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে) তাকান না যে নিজ স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; অথচ সে তার স্বামীর প্রতি সর্বদাই মুখাপেক্ষিণী’’। (নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ২৪৯, ২৫০; হা’কিম ২/১৯০ বায়হাক্বী ৭/২৯৪ খতীব ৯/৪৪৮)।

কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী তথা ’হূররা সে মহিলাকে তিরস্কার করতে থাকে।

মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয় (অর্থাৎ- অশ্রদ্ধা, অবাধ্যতা ইত্যাদির মাধ্যমে)। তখন উক্ত স্বামীর জান্নাতের রমণীগণ (হূরেরা) বলতে থাকে, তুমি তাকে কষ্ট দিও না, (যদি কর) তবে আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করবেন। তিনি তোমার নিকট (কিছু সময়ের দিনের) মেহমান, শীঘ্রই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৫৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২০১৪, আহমাদ ২২১০১, সহীহাহ্ ১৭৩, সহীহ আল জামি ৭১৯২, আদাবুল যিফাফ ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং স্বামীর আনুগত্যহীনতার কারণেই অধিকাংশ মহিলারা জাহান্নামে যাবে।

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে দরিদ্র লোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর বেশির ভাগ অধিবাসী নারী।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৪১, ৫১৯৮, ৬৪৪৯, ৬৫৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) যেসব নারী পুরুষ সাদৃশ্য পোশাক পরিধান করে ঘুরে বেড়ায়ঃ

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পুরুষের ওপর লা’নাত করেছেন যে নারীর পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর ওপর যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৮, ‍সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৩, সহীহুল জামি‘উস্ সগীর ৫০৯৫, আহমাদ ৮৩০৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫১, শু‘আবুল ইমান ৭৮০২, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯২৫৩, মুসতাদরাক ইবনু হাকিম ৭৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণী নারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেনঃ তাদেরকে তোমাদের ঘর হতে বের করে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪২৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৬, দারিমী ২৬৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০২, ইরওয়া ১৭৯৭, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৩১৫, মুসনাদে আহমাদ ১৯৮২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৪৫৯০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৫৮০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৪৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন- রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী’। (নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ্, ছহীহ তারগীব হা/২০৭০)।

(ঘ) আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলা হলো, জনৈকা মহিলা (পুরুষদের ন্যায়) জুতা পরিধান করেছিল। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তাকে বললেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সব মহিলাদের ওপর লা’নাত করেছেন : যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৭০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৯, হিজাবুল মার‘আতিল মুসলিমাহ্ ৫/৬৮, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৬৩৭৭, শু‘আবুল ঈমান ৭৮০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) যেসব নারী আটঁসাঁট ও পাতলা কাপড় পরিধান করে এবং মাথার খোঁপা উটের ন্যায় করে বেঁধে ঘুরে বেড়ায়ঃ

বর্তমান সমাজে দেখা যায়, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে বেশীরভাগ নারী শর্টকাট বা আঁটসাঁট কিংবা পাতলা শাড়ী বা সেলোয়ার কামিজ পরিধান করে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকের মাথার খোঁপা বাঁধার ধরণও আলাদা। নিজেকে এভাবে সাজসজ্জায় সজ্জিত করে ঘুরে বেড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরপুরুষদের আকৃষ্ট করা। বিভিন্ন পার্ক, পর্যটন কেন্দ্র, শপিংমল কিংবা বিয়ে বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে দু’টি এমন দল হবে যাদেরকে আমি দেখতে পাব না, কিন্তু তাদের একদল লোকের হাতে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। যা দিয়ে তারা লোকেদেরকে অনৈতিকভাবে মারধর করবে। আর দ্বিতীয় দলটি হবে ঐ সমস্ত মহিলারা, যারা কাপড় পরবে অথচ উলঙ্গের ন্যায় দেখা যাবে এবং তারা সদিচ্ছায় পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, সহীহাহ্ ১৩২৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৭৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ২০৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) যেসব নারী পরচুলা লাগায় ও উল্কি অংকন করেঃ

বেপর্দা নারী আর শিল্পিজগতের সাথে যারা জড়িত এদের অধিকাংশ নারী মূলত পরচুলা লাগায় ও অনেকে শরীরে উল্কি অংকন করে থাকে। যারা এরুপ কাজ করে তারা অভিশপ্ত।

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যে কৃত্রিম চুল সংযোজন করে এবং যে তা করায় এবং যে দেহে উল্কি অংকন করে এবং যে তা করায়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৫৯, ১৭৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৮, নাসায়ী ৫০৯৫, ৫২৫১, আহমাদ ৪৭১০, গায়াতুল মারাম ৬৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আমার মেয়ের সদ্য বিবাহ হয়েছে, কিন্তু রোগের কারণে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আমি কি তার মাথায় কৃত্রিম চুল জোড়া দিবো? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে নারী পরচুলা সংযোজন করে এবং যে সংযোজন করায়, আল্লাহ্ তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৫, ৫৯৩৬, ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, নাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮, ২৬৩৯১, ২৬৪৩৯, গায়াতুল মারাম ৯৮-৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা অন্যের দেহে আঁকে এবং যারা নিজেদের দেহে উল্কি অংকন করায়, যারা ভ্রূর চুল উপড়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে। আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নাম্নী মহিলার কাছে এ হাদীস পৌঁছলে, তিনি ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এসে বলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি এমন এমন কথা বলেছেন।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে কেন অভিসম্পাত করবো না যাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে উক্ত আছে! মহিলা বলেন, আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো তা পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি খেয়াল করে তা পড়লে, অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়োনি (অনুবাদ) ’’রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’ (সূরা হাশরঃ ৭)? মহিলা বললেন, হ্যাঁ।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহিলা বলেন, আমার মনে হয় আপনার পরিবার (স্ত্রী) এরূপ করে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি গিয়ে লক্ষ্য করে দেখো। অতএব সে গিয়ে লক্ষ্য করলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পেলো না। শেষে সে বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা কথা ঠিক হলে সে আমাদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮২, নাসায়ী ৩৪১৬, ৫০৯৯, ৫১০২, ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১০৯, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৪, ৫২৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৯, আহমাদ ৩৮৭১, ৩৯৩৫, ৪০৭৯, ৪১১৮, ৪২১৮, ৪২৭১, ৪৩৩১, ৪৩৮৯, ৪৪২০, ২৬৪৭, গায়তুল মারাম ৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হুমায়েদ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তার হাজ্জ পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের কাছ থেকে মহিলাদের একগুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন যে, হে মীনাবাসী! কোথায় তোমাদের আলিম সমাজ? আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ রকম পরচুলা ব্যবহার হতে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ ধরনের পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬৮, ৩৪৮৮, ৫৯৩২, ৫৯৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মু‘আবীয়াহ (রাঃ) শেষবারের মত যখন মাদ্বীনায় আসেন, তখন তিনি আমাদের সামনে খুৎবাহ দেন। তিনি এক গোছা চুল বের করে বললেন, আমি ইয়াহূদী ছাড়া অন্য কাউকে এ জিনিস ব্যবহার করতে দেখিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে অর্থাৎ পরচুলা ব্যবহারকারী নারীকে প্রতারক বলেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৮, ৩৪৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) কোনো নারী অকারণে স্বামীর নিকট  তালাক কামনা করলেঃ

অধিকাংশ নারী আছে যারা স্বামীর সাথে সামান্য কিছু হলেই তালাক চেয়ে থাকে। অনেক সময় বলে, আমাকে ছেড়ে দে তোর আর সংসার করবো না। কথায় কথায় যেসব নারী অকারণে তালাক চায় তারা জান্নাতে যাবে না।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী তার স্বামীর কাছে একান্ত অসুবিধা ছাড়া তালাক দাবি করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৭৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৮৬, ১১৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২২৬, আহমাদ ২১৮৭৪, ২১৯৩৪, দারেমী ২২৭০, ১৩১৬, ইরওয়াহ ২১৩৫, ২০৩৫, সহীহ আবী দাউদ ১৯২৮,  আহমাদ ২২৪৪০, সহীহ আল জামি ২৭০৬, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো অতিমাত্রায় ঝগড়াটে লোকঃ

নারীগণই সবচেয়ে বেশী হিংসুটে ও ঝগড়াটে। সামান্য কিছু হলেই এরা কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলে না। গ্রামাঞ্চলের অনেক নারী আছে যারা সর্বদা ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত থাকে। নারী পুরুষ যেই হোক যারাই একাজের সাথে জড়িত থাকবে তারাই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট লোক হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট হলে সে কী করে জান্নাতে যাবে।

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো অতিমাত্রায় ঝগড়াটে, অর্থাৎ বেশী বেশী সর্বদা ঝগড়া করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৭, ৪০২৩, ৭১৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৬৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৬৮, নাসায়ী ৫৪২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৭৬, আহমাদ ২৪২৭৭, সহীহাহ্ ৩৯৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) কোনো বেগানা পুরুষের সামনে কোনো মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করলেঃ

পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়।

আল্লাহ বলেন,

 “হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে”। (আ‘রাফ ৭/২৬)।

রাসুল সাঃ বলেন,

মুয়াবিয়াহ আল কুশাইরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের লজ্জাস্থানের কতখানি ঢেকে রাখবো, আর কতখানি খুলে রাখবো? তিনি বলেনঃ তোমার লজ্জাস্থান আপন স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হেফাজত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার অভিমত কী যে, লোকেরা যদি একত্রে বসবাস করে? তিনি বলেনঃ যদি তুমি তা কাউকে না দেখিয়ে পারো, তবে অবশ্যই তা দেখাবে না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নির্জন থাকে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ অধিক অগ্রগণ্য যে, মানুষের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি লজ্জাশীল হতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৬৯, ২৭৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৭, আহমাদ ২০০৩৪, ইরওয়া ১৮১০, সহীহ আল জামি ২০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কোনো বেগানা পুরুষের সামনে কোন মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন সাবালিকা হয় তখন এই দু’টো অঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রকাশ করা তার জন্য সংগত নয়, এ বলে তিনি তাঁর চেহারা ও দু’ হাতের কব্জির দিকে ইশারা করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’ প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্ধ লোকের সামনেও নারীদের পর্দা করতে হবে

উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন যে, তিনি ও মাইমূনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে হাযির ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা দু'জন তার নিকটে অবস্থানরত থাকতেই ইবনু উম্মু মাকতুম (রাঃ) তার নিকট এলেন। এটা পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা উভয়ে তার থেকে পর্দা কর। আমি (উম্মু সালামা) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতেও পারছেন না চিনতেও পারছেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরাও কি অন্ধ, তোমরাও কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১১২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৬, ইরওয়া ১৮০৬, আহমাদ ২৬৫৩৭, য‘ঈফাহ্ ৫৯৫৮, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৬৩৫)।

বর্তমান যুগে এমন সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরা হচ্ছে যে, বলাই মুশকিল, তা সেলাই করে পরা হয়েছে কিনা। আবার এমন খাটো কাপড়ও পরা হয় যে, বলতে ইচ্ছে হয়: যখন লজ্জার মাথা খেয়ে এতটুকুই খুলে দিলে তখন আর বাকিটাই বা খুলতে অসুবিধে কোথায়? আবার এমন খোলা কাপড়ও পরিধান করা হয় যে, বাতাস তাদের মনের গতি বুঝে তা উড়িয়ে দিয়ে তাদের সবটুকুই মানুষকে দেখিয়ে দেয়। তখনই তাদের লুক্কায়িত প্রদর্শনেচ্ছা সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়। আবার কখনো এমন স্বচ্ছ কাপড় পরিধান করা হয় যে, তা পরেও না পরার মতো। বরং তা পরার পর মানুষ তাদের দিকে যতটুকু তাকায় পুরো কাপড় খুলে চললে ততটুকু তাকাতো না। যেসব নারী এভাবে চলাফেরা করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

অতএব নারীদেরকে পর্দার বিধান মেনে বাহিরে বের হতে হবে। পর্দা করতে গিয়ে কোনো ফ্যাশন বোরখা পরিধান করা যাবে না। এমন টাইট বোরখা পরিধান করা যাবে না যা পরিধান করলে বাহিরে থেকে নারীর দেহ মাপকাঠি করা যায়।

যখন কোনো নারী বেপর্দায় বাহিরে বের হয় শয়তান তখন তার দিকে চেয়ে থাকে। সে অসুন্দর হলেও শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করে পুরুষের চোখে আকর্ষনীয় করে তোলো। যার ফলে পুরুষ সহজেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমণী মাত্রই আবরণীয় (বিষয়), যখন সে বের হয় তখন শায়ত্বন তাকে সুশোভিত করে তোলে বা শায়ত্বন হাত আড় করে তার প্রতি তাকায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৩, ইরওয়া ২৭৩, তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা ১৬৮৫. সহীহ আল জামি ৬৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ভিন্ন পুরুষের জন্য) যার সঙ্গে বিবাহ বৈধ এমন নারীর আগমন-প্রত্যাগমন শায়ত্বনরূপী। যখন তোমাদের কারো নিকট কোনো নারী ভালো লাগে (বা তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে) এবং তোমাদের কারো হৃদয়ে চাঞ্চল্যের (কামভাব) সৃষ্টি হয়, তখন সে যেন নিজ স্ত্রীর নিকট গমন করে সহবাস করে নেয়। এটা তার অন্তরের সব অবস্থা দূর করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৮, ৩৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৩, আহমাদ ১৪৭৪৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এজন্যেই রাসুল সাঃ বলেছেণ, হঠাৎ চোখের সামনে কোনো নারী  এসে পড়লে প্রথমবার তার দিকে নজর গেলে তখনই চোখ বা মাথা ঘুরিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার তার দিকে তাকানো যাবে না।

বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আলী (রাঃ)-কে বললেন, হে আলী! (কোনো নারীর প্রতি) আকস্মিক একবার দৃষ্টিপাতের পর আবার দৃষ্টিপাত করো না। তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি (অনিচ্ছার কারণে) জায়িয, পরবর্তী দৃষ্টি জায়িয নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ২৭৭৭, সুনান আবু আবূ দাঊদ ২১৪৯, আহমাদ ২২৯৯১, সহীহ আল জামি‘ ৭৯৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (৮) কোনো পুরুষের জন্য অন্য কোনো পুরুষের সতর এবং কোনো মহিলার জন্য অন্য কোনো মহিলার সতর দেখলেঃ

কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর দেখা এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা হারাম। আর কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা তো অবশ্যই হারাম তা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সতর বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মানব শরীরের যে অঙ্গ দেখা অন্যের জন্য হারাম উহাকেই বুঝানো হয়।

বিশুদ্ধ মতে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর হাত, পা, ঘাড় ও মাথা ছাড়া তার বাকি অংশটুকু তথা গলা বা ঘাড় থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অনুরূপভাবে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন বেগানা মহিলার পুরো শরীরটিই সতর। তবে কোন পুরুষের জন্য তার কোন মাহ্রাম (যাকে চিরতরে বিবাহ্ করা তার জন্য হারাম) মহিলার সতর ততটুকুই যতটুকু কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দিলেঃ

স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য সওম পালন বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ব্যতীত তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৯৫, ২০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) স্বামী ছাড়া অন্য কোনো আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোনো মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করলেঃ

স্বামী ছাড়া অন্য কোন আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোন মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম।

 যায়নাব বিনত আবূ সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সিরিয়া হতে আবূ সুফ্ইয়্যান (রাঃ)-এর মৃত্যুর খবর পৌঁছল, তার তৃতীয় দিবসে উম্মু হাবীবাহ (রাযি.) হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনয়ন করলেন এবং তাঁর উভয় গন্ড ও বাহুতে মথিত করলেন। অতঃপর বললেন, অবশ্য আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, স্ত্রীলোক আল্লাহ্ এবং কিয়ামতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮০, ১২৮১, ৫৩৩৪, ৫৩৩৯, ৫৩৪৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১১) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানালেঃ

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘হয়তোবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। হয়তোবা কোন মহিলা তার স্বামীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় ?! সাহাবায়ে কিরাম চুপ থাকলেন। কেউ কোন কিছুই বললেন না। তখন আমি (বর্ণনাকারী) বললাম: হ্যাঁ, আল্লাহ্’র কসম! হে আল্লাহ্’র রাসূল! মহিলারা এমন করে থাকে এবং পুরুষরাও। তিনি বললেন: না, তোমরা এমন করো না। কারণ, এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন যে কোন এক শয়তান অন্য শয়তানের সাথে রাস্তায় সহবাস করলো। আর মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো’’। (আল্বানী/আ’দাবুয্ যিফাফ  ১৪৪)।

(১২) যিনা বা ব্যভিচারের সাথে জড়িত থাকলেঃ

সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেন, যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৭, ৮৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, অধিকাংশ নারী পুরুষ যিনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত। বেয়াই বিয়াইন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে চলছে রমরমা দেহভোগ। বিভিন্ন পার্ক, হোটেল, মোটেল, ক্লাব, পর্যটন কেন্দ্রসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলে দেখা যায় তরুন তরুনীদের আর্থিং পজিশন। শুধু দৈহিকভাবেই যে যিনার কাজ হচ্ছে তা নয় বর্তমানে অডিও ভিডিও ও বিভিন্ন পর্নগ্রাফি দেখার মাধ্যমেও যিনার কাজ হচ্ছে।

যিনা বা ব্যভিচার হচ্ছে ৭ প্রকার। যথাঃ

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে, প্রাপ্ত হবে।

(ক) নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো,

(খ) দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা,

(গ) জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা,

(ঘ) হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা,

(ঙ) পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া,

(চ) হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা।

(ছ) আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) কোনো কিছুকে শুভ-অশুভ লক্ষন বা কুলক্ষণ মনে করাঃ

পুরুষদের চেয়ে নারীগণ কোনো কিছুকে অশুভ বা কুলক্ষণ মনে করে বেশী। অথচ  কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা কিংবা কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক।

আরবরা কোথাও যাত্রার প্রাক্কালে বা কোন কাজের পূর্বে পাখি উড়িয়ে তার শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করত। পাখি ডান দিকে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হ’তে বিরত থাকত। একেই ‘শুভলক্ষণ’ বা ‘কুলক্ষণ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘যখন ফেরাঊন ও তার প্রজাদের কোন কল্যাণ দেখা দিত, তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের ‘কুলক্ষণে’ বলে গণ্য করত’। (আ‘রাফ ১৩১)।

বর্তমানে মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয়। প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে কুলক্ষণে মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজকাল ১৩ সংখ্যাকে ‘অলক্ষুণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়। অনেক বিক্রেতা প্রথম ক্রেতার ক্রয় না করাকে অশুভ গণ্য করে। অনেকে কানা, খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। অথচ এ জাতীয় আক্বীদা পোষণ করা হারাম ও শিরক।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৩৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৬৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৩০, গয়াতুল মারাম ৩০৩, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৪০৭, সহীহুল জামি‘ ৩৯৬০, আবূ ইয়া‘লা ৫২১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২২, শু‘আবুল ঈমান ১১৬৭, আল মুসতাদরাক ৪৩, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়”। (ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২১৯৫)।

কেউ কোনো বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হলে তাকে এজন্য কাফ্ফারা দিতে হবে। কাফ্ফারা এখানে কোনো অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দোআ, যা আব্দুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত হাদীসে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোনো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয় সে শির্ক করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুলাল্লাহ! তার কাফফারা কী হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে:

উচ্ছারণ: আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা, ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা, ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।

“হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোনো কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোনো (হক) মা‘বুদও নেই”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭০৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১০৬৫)।

তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এর একমাত্র চিকিৎসা হ’ল আল্লাহর উপর পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৩৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৬৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৩০, গয়াতুল মারাম ৩০৩, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৪০৭, সহীহুল জামি‘ ৩৯৬০, আবূ ইয়া‘লা ৫২১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২২, শু‘আবুল ঈমান ১১৬৭, আল মুসতাদরাক ৪৩, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) যেসব নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে ঘুরে বেড়ায়ঃ

আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করছে। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।

আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৬৫, আত্ তিরমিযী ২৭৮৬, আবূ দাঊদ ৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু হিব্বান ৪৪২৪)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার সালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে”। (মুসনাদে আহমদ ২/৪৪৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৭০৩)।

বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে, এমনকি রমযানের রাতে মসজিদে আসার সময় তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। অথচ শরী‘আত তো শুধু মহিলাদের জন্য সে আতরের অনুমোদন দিয়েছে যার রঙ হবে প্রকাশিত পক্ষান্তরে গন্ধ হবে অপ্রকাশিত। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগণ্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেন।

(১৫) অশ্লীলভাষী হলেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

 ‘অশ্লীল কথা ও কর্ম মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাঊদ ৪৯৮৯, সহীহুল জামি‘ ৪০৭১, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৯৮, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ৬১৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৯৯, মুসনাদুল বাযযার ১৬৫৮, আহমাদ ৪০৯৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫১৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭২, শু‘আবুল ঈমান ৪৭৮৪, দারিমী ২৭১৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/৪৩, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৮৭১, আল মুসতাদরাক ৪৪০, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অধিকাংশ নারীকে দেখা যায়, যারা পুরুষের চেয়েও অশ্লীল ভাষায় বাকপটু। অথচ মুনাফিকের চারটি চিহ্নের মধ্যে একটি চিহ্ন হচ্ছে, অশ্লীল ভাষায় কথা বলা।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।

(১) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;

(২) কথা বললে মিথ্যা বলে;

(৩) অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং

(৪) বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। শু‘বা আ‘মাশ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৯, ৩৪, ৩১৭৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যারা মুনাফিক তাদের স্থান হবে জাহান্নামের নিম্নস্তরে।

আল্লাহ বলেন: -

“নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সুপারিশকারী কখনও পাবে না।” (সুরা: -আন নিসা, আয়াত: -১৪৫)।

আল্লাহ মুনাফিক সম্পর্কে রাসূল সা. কে বলেন: -

"আর তাদের (মুনাফিক) মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তার উপর কখনও নামায পড়বেন না এবং তার কবরে দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং রসূলের প্রতিও। বস্তুতঃ তারা নাফরমান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। (সুরা:-আত-তাওবাহ, আয়াত: -৮৪)।

(১৬) বিলম্ব করে সালাত আদায় করলেঃ

অধিকাংশ নারীকে দেখা যায় তারা সঠিক সময়ে সালাত আদায়ের বিষয়ে উদাসীন।

যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না, তাদের নামাজ কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,  ‘অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে  উদাসীন।’ (সুরা: মাউন, আয়াত : ৪-৫)।

যারা অলসতা বা অবহেলা বশতঃ সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করে না, তাদের ছালাত কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে  উদাসীন।’ (সুরা: মাউন, আয়াত: ৪-৫)।

 অর্থাৎ ‘যারা ছালাত থেকে উদাসীন ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত’। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আউয়াল ওয়াক্ত ছেড়ে যঈফ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করে। যারা জানা সত্ত্বেও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায় করে না। রুকূ-সিজদা, উঠা-বসা যথাযথভাবে করে না। ক্বিরাআত ও দো‘আ-দরূদ ঠিকমত পাঠ করে না। কোন কিছুর অর্থ বুঝে না বা বুঝবার চেষ্টাও করে না। আযান শোনার পরেও যারা অলসতাবশে ছালাতে দেরী করে বা জামা‘আতে হাযির হওয়া থেকে বিরত থাকে। ছালাতে দাঁড়াবার সময় বা ছালাতে দাঁড়িয়েও অমনোযোগী থাকে ইত্যাদি। (মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, পৃঃ ৫০১)।

আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারী এমনিতেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে না। আবার যারা আদায় করে তাদের অধিকাংশ নারীকে দেখা যায় সাংসারিক কাজের চাপের কারণে সময় মতো সালাত আদায় করে না। আবার যারা চাকরিজীবি তাদেরকে তো সালাত আদায় করতেই দেখা যায় না। অথবা যারা সালাত আদায় করে অফিসে তাদের জন্যে সুনির্দষ্ট সালাতের জায়গা না থাকায় তারা সালাত আদায় করতে পারে না। যাই হোক নারী হোক আর পুরুষ হোক প্রত্যেককেই সুনির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করতে হবে। নতুবা সালাত আদায় করেও জাহান্নামে যেতে হবে।

(১৭) স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো নারী বাহিরে বের হলেঃ

তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করো না; যে জামাআত ত্যাগ করে ইমামের অবাধ্য হয়ে মারা যায়, যে ক্রীতদাস বা দাসী প্রভু থেকে পলায়ন করে মারা যায়, এবং সেই নারী যার স্বামী অনুপস্থিত থাকলে---তার সাংসারিক সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বন্দোবস্ত করে দেওয়া সত্ত্বেও---তার অনুপস্থিতিতে বেপর্দায় বাইরে যায়। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪২নং)।

নারীদের জাহান্নাম থেকে রক্ষার পাওয়ার উপায়

(১) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যদি

(ক) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে,

(খ) রমাযানের সিয়াম পালন করে,

(গ) গুপ্তাঙ্গের হিফাযাত করে (যিনা/ব্যভিচার থেকে দূরে থাকে),

(ঘ) স্বামীর একান্ত অনুগত হয়।

তার জন্য জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশের সুযোগ থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৫৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩০৮)। (মিশকাতে হাদিসটি জঈফ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও অন্য দিক থেকে হাদিসটি সহিহ)।

(২) তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে; যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, বার-বার ভুল করে বার-বার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাজি (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাবই না। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৭ নং)।

(৩) স্বামীর সন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জান্নাত এবং তার অসন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জাহান্নাম।

একদা জনৈকা সাহাবী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার স্বামীর কথা উল্লেখ করলে তিনি তাকে বলেন:

‘‘ভেবে দেখো তার সাথে তুমি কি ধরনের আচরণ করছো! কারণ, সেই তো তোমার জান্নাত এবং সেই তো তোমার জাহান্নাম’’। (আহমাদ ৪/৩৪১ নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩ ইব্নু আবী শাইবাহ্ ৪/৩০৪; হা’কিম ২/১৮৯ বায়হাক্বী ৭/২৯১)।

কোন্ নারী উত্তম

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, কোন্ রমণী সর্বোত্তম? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

(ক) যে স্বামী স্ত্রীর প্রতি তাকালে তাকে সন্তুষ্ট করে দেয়,

(খ) স্বামী কোনো নির্দেশ করলে তা (যথাযথভাবে) পালন করে এবং

(গ) নিজের প্রয়োজনে ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৭২, নাসায়ী ৩২৩১, আহমাদ ৭৪২১, ইরওয়া ১৭৮৬, সহীহাহ্ ৮৩৩৮, সহীহ আল জামি‘ ৩২৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

নেক্কার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ কী বলেন

(ক) শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৮নং)।

(খ) স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী () বলেন, ‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। (ইবনে আবী শাইবাহ ,নাসাঈ, তাবারানী, হাকেম , প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৫পৃঃ)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো মানবকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৫৫, সুনান আত তিরমিযী ১১৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৫৩, ইরওয়া ১৯৯৮, সহীহ আল জামি‘ ৫২৩৯, সহীহ আত্ তারগীর ১৯৪০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ঘ) স্ত্রীর কাছে স্বামীর এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না। (হাকেম , ইবনে হিববান, ইবনে আবী শাইবাহ , সহীহুল জামে ৩১৪৮ নং)।

(ঙ) মহিলা যদি নিজ স্বামীর হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো। (ত্বাবারানী, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫২৫৯নং)।

(চ) তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না। (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিববান , আদাবুয যিফাফ ২৮৪পৃঃ)।

(ছ) দুই ব্যক্তির নামায তাদের মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে, সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।) (ত্বাবারানী, হাকেম , আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৮নং)।

(জ) তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৫০নং)।

(ঞ) স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৩পৃঃ)।

(ট) সুতরাং সাধবী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী। আল্লাহর হিফাযতে তারা তা হিফাযত করে। (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)।

স্বামীর দায়িত্ব বা কর্তব্য

আল্লাহ তাআলা স্বামীকে স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ববান ও দায়িত্বশীল বানিয়েছেন। যদি কোনো স্ত্রী অবাধ্য হয়ে যায় তবে তাকে সঠিক ফেরানোর দায়িত্বও স্বামীর। স্ত্রীকে সঠিক পথে ফেরানোর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে ওই স্বামীর জন্যও জাহান্নাম নির্ধারিত। কারণ আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বলেন-

‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (স্ত্রী-সন্তানদের জাহান্নামের) সেই আগুন থেকে রক্ষা কর। যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাবের ফেরেশতারা। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)।

এ আয়াতে স্ত্রী-সন্তানকে দুনিয়ার সব অবাধ্যতা ও অন্যায় কাজ থেকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং কারো স্ত্রী যদি অন্যায় কাজে জড়িত থাকে সেক্ষেত্রে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে সঠিক পথের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা না করে। কুরআনের দেয়া নিয়ম ও বিধান অনুযায়ী চেষ্টা না করে তবে স্বামীও হবে অপরাধী। তার এ অপরাধের কারণে স্বামীকেও জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।

স্ত্রীর ওপর স্বামীর যে দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয় বা অধিকার রয়েছে তা কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-

‘পুরুষরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চোখের অন্তরালেও তারা তার হেফাজত করে। আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)।

এ আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীকে যে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। স্ত্রীকে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পালনকালে স্ত্রীর সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, তা-ও দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আবার এ দায়িত্ব পালনকালে কোনো স্বামী যদি তা যথাযথভাবে পালন করতে অবহেলা করে, তবে স্বামীকে আল্লাহর কাঠগড়ায় জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। হাদিসে এসেছে-

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯২৮,  আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০, আল লুলু ওয়াল মারজান-১১৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

তাই আল্লাহর জবাবদিহি ও জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্ত পেতে স্বামীকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যখনই কোনো স্ত্রী অপরাধ কিংবা স্বামী-সন্তানের অধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো কাজে জড়িত হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীকে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে।

স্ত্রীকে সৎপথে ফিরে আনতে স্বামীর কর্তব্য

স্ত্রী যদি বিপদগামী হয়ে থাকে বা স্বামীর অবাধ্য হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর প্রথম কাজ হবে তাকে

(ক) উপদেশ দেওয়া। যদি তাতে কাজ না তাহলে

(খ) তার বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। এতেও কাজ না হলে মাথা গরম না করে

(গ) হালকা প্রহার করতে হবে। আল্লাহ বলেন, সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে। আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর। (নিসা ৪/৩৪)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ বকর ইবনু শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন,

‘মহিলাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর কালেমার সাহায্যে তাদের লজ্জাস্থানকে বৈধ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হ’ল, তারা এমন কাউকে তোমাদের বিছানা মাড়াতে দেবে না, যাকে তোমরা অপসন্দ কর। এমন করলে তাদেরকে হালকাভাবে প্রহার কর। আর প্রচলিত নিয়মে তাদের খাওয়া-পরার দায়িত্ব তোমাদের উপর। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৮৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২১৮ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫৫৫, সুনান আবূ দাঊদ ১৯০৫, নাসায়ী ২৭৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৪৭০৫, দারিমী ১৮৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম, এমন সময়ে জনৈকা রমণী এসে বলল, যখন আমি সালাত আদায় করি তখন আমার স্বামী সফ্ওয়ান ইবনু মু’আত্ত্বল আমাকে প্রহার করে, আমি যখন সওম পালন করি তখন সওম ভেঙ্গে দেয় এবং তিনি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত আদায় করে না। রাবী বলেন, সফ্ওয়ানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (অভিযোগের সত্যতা) তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তার অভিযোগ হলো সালাত আদায়কালে আমি তাকে প্রহার করি- এর উত্তর হলো, সে সালাতে দু’টি (বা দীর্ঘ) সূরা পাঠ করে, যা আমি তাকে নিষেধ করেছি।

রাবী বলেন, এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি সূরাই তো লোকেদের জন্য যথেষ্ট। আর তার (পরবর্তী) অভিযোগ- আমি তাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করি। অথচ (একাধারে সওম পালনে) এত ধৈর্য ধারণ করতে পারি না, আমি তো একজন যুবক পুরুষ। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো স্ত্রীলোক যেন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) সওম পালন না করে। আর তার (শেষ) অভিযোগ- সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাত আদায় করি না। এর কারণ হলো, আমাদের পরিবারের লোকেরা দীর্ঘ রাত পর্যন্ত জেগে (জমির পানি নিষ্কাশনে লিপ্ত) থাকার দরুন প্রায়ই সূর্যোদয়ের (সঠিক সময়ের) পূর্বে ঘুম হতে উঠতে পারি না। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে সফ্ওয়ান! যখনই ঘুম হতে জাগবে তখনই সালাত আদায় করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭৬২, আহমাদ ১১৭৫৯, সহীহাহ্ ২১৭২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হালকা প্রহার করেও কাজ নাহলে উভয় পক্ষের সালিশ বসাতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

“যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত”। (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)।

এসব চেষ্টাও যদি ব্যর্থ হয় এবং তার সাথে সংসার করা কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, তাহলে স্বামীর জন্য তালাক তথা বিবাহ বিচ্ছেদের পন্থা অবলম্বন করতে আর কোনো বাঁধা নেই। তবে এক্ষেত্রেও ভেবে-চিন্তে, সুস্থির হয়ে শরিয়ত নির্দেশিত পন্থা অবলম্বন করবে। (তাফসীরে রুহুল মাআনী-৩/২৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/৩২৯) ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

(সমাপ্ত)

একটি আদর্শ পরিবার গঠনে অভিভাবকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।

(অভিভাবকের ভূমিকা)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...