Search This Blog

Thursday, June 6, 2019

রাসুল (ছাঃ)-এর উপর অধিকহারে দরুদ পড়ার ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

রাসুল (ছাঃ)-এর  উপর অধিকহারে দরুদ পড়ার ফজিলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠে সমস্ত বালা-মসিবত, পেরেশানী-হয়রানী, মনের কষ্ট, দুঃখ-দূর্দশা ও অভাব-অনটন দূর হয় এবং রিজিকের প্রশস্ততা আসে। এছাড়া তার গুণাহ মাফ করা হয়। যেমনটি অনুমিত হয় নিম্নোক্ত হাদীস থেকে।

উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক-তৃতীয়াংশ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমর জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, সুনান আততিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭০, মুস্তাদরাক  ৭৬৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার আখেরী রাসূল। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ দূত। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে।আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ। তাই তাঁর জন্য হৃদয়ের গভীরে মহববত ও ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে দুআ করা প্রত্যেক উম্মতির ইমানি কর্তব্য। কুরআন মজীদে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দরূদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দুআ করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের মর্যাদার প্রমাণ, অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দুআ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব: ৫৬)।

আয়াতের তাফসীরঃ

(এক) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ নবীর প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী৷ তিনি তার প্রশংসা করেন। তার কাজে বরকত দেন৷ তার নাম বুলন্দ করেন। তার প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তারা তাকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তার শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাকে একমাত্র মাহমুদ তথা সবোর্চ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বর্ণনা পরস্পরায় একথা কেন বলা হয়েছ তা পরিষ্কার অনুভব করা যায়৷ তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলামের দুশমনরা এ সুস্পষ্ট জীবন ব্যবস্থার বিস্তার ও সম্প্রসারণের ফলে নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য নবী করীমের (সা) বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা একথা মনে করছিল যে, এভাবে কাঁদা ছিটিয়ে তারা তার নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে। অথচ এ নৈতিক প্রভাবের ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল। এ অবস্থায় আলোচ্য আয়াত নাযিল করে আল্লাহ দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দেন যে, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা আমার নবীর দুর্নাম রটাবার এবং তাকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা চালাক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হবে৷ কারণ আমি তার প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্ব জাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তার সহায়ক ও প্রশংসাকারী। আমি যেখানে তার নাম বুলন্দ করছি। এবং আমার ফেরেশতারা তার প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তার নিন্দাবাদ করে তারা কি লাভ করতে পারে? আমার রহমত ও বরকত তার সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে, হে রব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদের (সা.) মর্যাদা আরো বেশী উঁচু করে দাও এবং তার দীনকে আরো বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করো৷ এ অবস্থায় তারা বাজে অস্ত্রের সাহায্যে তার কি ক্ষতি করতে পারে? (তাফসীর ফি যিলালিল কুরআন ও জালাইন)।

(দুই) এ আয়াতে মুসলমানদেরকে দু’টো জিনিসের হুকুম দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, “সাল্লু আলাইহে অর্থাৎ তার প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে, ” ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা” অর্থাৎ তার প্রতি সালাম ও প্রশান্তি পাঠাও ৷ “সালাত” শব্দটি যখন “আলা” অব্যয় সহকারে বলা হয় তখন এর তিনটি অর্থ হয়ঃ এক, কারো অনুরক্ত হয়ে পড়া! দুই, কারো প্রশংসা করা। তিন, কারো পক্ষে দোয়া করা। এ শব্দটি যখন আল্লাহর জন্য বলা হবে তখন একথা সুম্পষ্ট যে, তৃতীয় অর্থটির জন্য এটি বলা হবে না। কারণ আল্লাহর অন্য কারো কাছে দোয়া করার ব্যাপারটি একেবারেই অকল্পনীয়৷ তাই সেখানে অবশ্যই তা হবে শুধুমাত্র প্রথম দুটি অর্থের জন্য। কিন্তু যখন এ শব্দ বান্দাদের তথা মানুষ ও ফেরেশতাদের জন্য বলা হবে তখন তা তিনটি অর্থেই বলা হবে। তার মধ্যে ভালোবাসার অর্থও থাকবে, প্রশংসার অর্থও থাকবে এবং দোয়া ও রহমতের অর্থও থাকবে। কাজেই মু’মিনদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে “সাল্লু আলাইহে”- এর হুকুম দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর ভক্ত-অনুরক্ত হয়ে যাও তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দোয়া করো। (মায়ারেফুল কুরআন, মুল মুফতি শফী, বাংলা অনুবাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান)।

দরূদ পাঠের ফজিলত

নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা তাঁর উম্মতের প্রতি অবশ্য পালনীয় একটি ইবাদত। এই ইবাদত পালনের মাধ্যমে দরূদ পাঠকারী অনেক ছওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে, যা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি ফজিলত উল্লেখ করা হলোঃ-

(১) আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত লাভঃ

দরূদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২১,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৮, সুনান আবূ দাঊদ ১৫৩০, সুনান আননাসায়ী ১২৯৬, সুনান আততিরমিযী ৪৮৫, আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬, রিয়াযুছ ছালেহীন ১৩৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবো? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার ওপর একবার সালাম পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাবো? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৮, সুনান আননাসায়ী ১২৮৩, ছহীহুল জামে ৭১, দারিমী ২৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য রহমত। তিনি বান্দার সকল ভাল কাজকেই ১০ গুণ করে বৃদ্ধি করেন। (সুরা আন‘আম ৬/১৬০)।

’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। এখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দরবারে সাজদারত হলেন। সিজদা্ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভীত হয়ে পড়লাম। আল্লাহ না করুক তাঁকে তো আবার আল্লাহ মৃত্যুমুখে পতিত করেননি? ’আবদুর রহমান বলেন, তাই আমি তাঁর কাছে এলাম, পরখ করে দেখার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠালেন এবং বললেন, কি হয়েছে? আমি তাঁকে আমার আশংকার কথা বললাম। ’আবদুর রহমান বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন আমাকে বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আমি কি আপনাকে এই সুসংবাদ দিবো না যা আল্লাহ তা’আলা আপনার ব্যাপারে বলেন? যে ব্যক্তি আপনার ওপর দরূদ পাঠ করবে আমি তার প্রতি রহমত বর্ষণ করব। যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম পাঠাবে আমি তার প্রতি শান্তি নাযিল করব।

(নবী করীম (ছাঃ) বলেন) ‘আর এজন্য আমি শুকরিয়ার সিজদা করি’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩৭, আহমাদ ১৬৬৫, ১৬৬৪, সহীহ আত তারগীব ১৬৫৮, হাকিম ২০১৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২) ফেরেশতা কর্তৃক আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য দো‘আঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর নিকটে দো‘আ করে থাকেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব  দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৬, ইরওয়াহ ১/৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তিনি আরো বলেন,

আমের ইবনু রবীআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন মুসলিম ব্যাক্তি আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকেন। অতএব বান্দা চাইলে তার পরিমাণ (দরূদ পাঠ) কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৭; ছহীহুল জামে‘ ৫৭৪৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) পাপ মোচন, ছওয়াব ও মর্যাদা লাভঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ গুনাহ মাফ, ছওয়াব ও মর্যাদা লাভের অন্যতম মাধ্যম।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তা’আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২২, সুনান আননাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ক্বিয়ামতের দিন মর্যাদা লাভঃ

দুনিয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি যারা যত বেশী দরূদ পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন তারা রাসূল (ছাঃ)-এর তত বেশী নিকটবর্তী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি হবে যে আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠ করেছে। (সুনান আততিরমিযী ৪৮৪, রিয়াযুছ ছালেহীন ১৩৯৮; ছহীহ আত-তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(৫) রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভঃ

দরূদ পাঠের আরেকটি ফযীলত হলো ক্বিয়ামতের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল অথবা আমার জন্য ‘অসীলার’ দো‘আ করল ক্বিয়ামতের দিন তার ব্যাপারে শাফা‘আত করা আমার জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে’। (ইমাম ইসমাঈল বিন ইসহাক্ব আল-কাযী (১৯৯-২৮২ হিঃ) : ফাযলুছ ছালাত ‘আলান নাবী (ছাঃ), তাহক্বীক : আলবানী (বৈরূত : মাকতাবা ইসলামিয়া, ২য় প্রকাশ, ১৩৮৯ হিঃ ১৯৯৬ খৃঃ), পৃঃ ৫১, নং ৫০)।

তিনি আরো বলেন,

’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসীলা’র দু’আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৪, সুনান আবূ দাঊদ ৫২৩, সুনান আননাসায়ী ৬৭৮, সুনান আততিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি‘ ৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা লাভঃ

জান্নাতে উচ্চমর্যাদা লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠের কোন বিকল্প নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

ব্যক্তি যত বেশী আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি (জান্নাতে) মর্যাদায় তত বেশী আমার নিকটবর্তী হবে’। (বায়হাক্বী; আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৪৯; ছহীহ  তারগীব হা/১৬৭৩)।

(৭) ফেরেশতারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে দরূদ পৌঁছানঃ

দুনিয়াতে রাসূলের উপরে কেউ দরূদ পাঠ করলে বা সালাম পেশ করলে ফেরেশতারা তা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে পৌঁছে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা) আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৪, সুনান আননাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী ২৮১৬, আহমাদ হা/৩৬৬৬, ৪২১০; ইবনে হিববান ৯১৪; ছহীহ  তারগীব ১৬৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

তোমরা আমার প্রতি বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কেননা আল্লাহ আমার কবরের কাছে ফেরেশতা নিয়োজিত করে রেখেছেন। যখন আমার উম্মতের কোন লোক আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, তখন ফেরেশতা আমাকে জানায় যে, নিশ্চয়ই অমুকের ছেলে অমুক আপনার প্রতি এই সময়ে দরূদ পাঠ করেছে’। (ছহীহুল  জামে‘ হা/১২০৭)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের উপর একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে থাকেন এবং যখনই কেউ দরূদ পাঠ করে তখনই তাকে বলেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! অমুকের ছেলে অমুক আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করেছেন। (ছহীহ  আত-তারগীব ও তাহযীব ২/২৯৬; হা/১৬৬৭)।

উল্লেখ্য যে, এই দরূদ পাঠের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের কাছে যাওয়া শর্ত নয়; বরং বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময় দরূদ পাঠ করলেই রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে তা পৌঁছানো হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়’।

মূল হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৬, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলিম সমাজে বর্তমানে ধর্মের নামে আলেম-ওলামার কবরকে কেন্দ্র করে যে অনুষ্ঠানগুলো হচ্ছে সেগুলোর কোনটিই জায়েয নয়। এজন্য রাসূল (ছাঃ) সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,

‘সাবধান, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো তাদের নবী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছিল। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করছি’।

মূল হাদিসঃ

 আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) [শব্দাবলী আবূ বকর এর] ... জুনদুব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মাসজিদ (সাজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা কবরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭, ছহীহুল জামে‘ ২৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উবাইদুল্লাহ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবন ’উতবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। আয়িশাহ ও ’আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের (নবীদের) কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক করেছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৫, ৪৩৬, ১৩৩০, ১৩৯০, ৩৪৫৩, ৩৪৫৪, ৪৪৪১, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪, ৫৮১৫, ৫৮১৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩১; আহমাদ ১৮৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক সালামের জবাব দানঃ

কেউ যদি সালাম পেশ করে তাহলে রাসূল (ছাঃ) সেই সালমের জবাব দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৫, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪১, সহীহ আল জামি‘ ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৯) দরূদ পাঠের মাধ্যমে চিন্তা দূর হয়ঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠের কারণে চিন্তা দূর হয় এবং পাপ মোচন হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী দরূদ পাঠ করি। আপনি আমাকে বলে দিন আমি (দু’আর জন্য যতটুকু সময় বরাদ্দ করে রেখেছি তার) কতটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠাবার জন্য নির্দিষ্ট করব? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। আমি আরয করলাম, যদি এক-তৃতীয়াংশ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়, যদি আরো বেশী কর তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, যদি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার মন যতটুকু চায় কর। যদি আরো বেশী নির্ধারণ কর তাহলে তোমর জন্যই ভালো। আমি বললাম, যদি দুই-তুতীয়াংশ করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মন যা চায়। যদি আরো বেশি নির্ধারণ কর তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি আরয করলাম, তাহলে আমি আমার দু’আর সবটুকু সবসময়ই আপনার উপর দরূদ পড়ার কাজে নির্দিষ্ট করে দেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, তোমার দীন-দুনিয়ার মকসুদ পূর্ণ হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৯, তিরমিযী ২৪৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) দরূদ পাঠের দ্বারা অন্তর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করলে অন্তর পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। নিশ্চয়ই আমার উপর তোমাদের দরূদ তোমাদের (অন্তরের) পবিত্রতা। আর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও’।  (সিলসিলা ছহীহা হা/৩২৬৮)।

(১১) দো‘আ কবুল হয়ঃ

হামদ ও ছানা তথা আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠ করার পরে দো‘আ করা হলে তা কবুল হয়।

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ)। সালাত শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলাম। তারপর আমি আমার নিজের জন্য দু’আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩১, সুনান আততিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অপর দিকে দরূদ পাঠ না করে দো‘আ করলে তা আল্লাহর কাছে পৌঁছতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দো‘আ দরূদ পাঠ না করা পর্যন্ত আড়াল করে রাখা হয়’। (আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫২৩; ছহীহাহ হা/২০৩৫)।

(১২) বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হওয়া থেকে রক্ষাঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ বান্দাকে দুনিয়া ও আখেরাতে বিপদ ও আশাহত হওয়া থেকে রক্ষা করবেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সমস্ত লোক কোন দরবারে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তা’আলার যিকর করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তা’আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮০, সহীহাহ ৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সহিহ হাদিস ভিত্তিক কয়েকটি দরুদ

(১) আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি? উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’ কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে প্রতি ‘সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা বলো,

‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-

(অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৯ সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল,

‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- সল্লায়তা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ওয়াবা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- বা-রকতা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো এবং মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি তোমার কল্যাণ নাযিল করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ নাযিল করেছো। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯২০,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬০, ৩৩৬৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৯৭৯, সুনান আননাসায়ী ১২৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৯০৫, আহমাদ ২৩৬০০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ মুহাম্মদ কা‘ব ইবনে ‘উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট এলে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-

“আল্লাহুম্মা সল্লি আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লাইত আলা- আ-লি ইবরহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা রা-রিক আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা আলা- আ-লি ইবর-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।"

যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৬, সুনান আততিরমিযী ৪৮৩, সুনান আননাসায়ী ১২৮৭-১২৮৯, সুনান আবূ দাউদ ৯৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৯০৪, আহমাদ ১৭৬৩৮, ১৭৬৩১, ১৭৬৬৭, দারেমী ১৩৪২)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(৪) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ)....আবূ মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সাদ ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) এর বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বাশীর ইবনু সাদ (রাযিঃ) তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কিভাবে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করব? রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আফসোস করে বললাম, সে যদি তাকে এ প্রশ্ন না করত।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল-

"আল্লাহুম্মা সল্লি আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লাইতা আলা- আ-লি ইবর-হীমা ওয়াবা-রিক আলা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা আলা আ-লি ইবর-হীমা ফিল আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ"

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবার পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করো যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজনকে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করো যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।" আর সালাম দেয়ার নিয়ম যা তোমরা ইতিপূর্বে জেনেছ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৫, সুনান আততিরমিযী ৩২২০, সুনান আননাসায়ী ১২৮৫, ১২৮৬, সুনান আবূ দাউদ ৯৭৯, আহমাদ ১৬৬১৯, ১৬৬২৪, ২১৮৪৭, মুওয়াত্তা মালিক ৩৯৮, দারেমী ১৩৪৩, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০২)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

সাত অবস্থায় নবী সাঃ এঁর উপর দরুদ ও সালাম পড়া মাকরুহ বা অপছন্দনীয়

১. স্ত্রী সহবাসকালে।

২.পেশাব পায়খানার সময়।

৩. ব্যবসার মাল চালু করার সময়।

৪. হোছট খাওয়ার সময়।

৫. আশ্চর্যজনক সংবাদ শ্রবণের সময়।

৬. যবেহ করার সময়।

৭. হাঁচি দেওয়ার সময়। (ফতোয়ায়ে শামী,১/৩৮৩ পৃষ্ঠা)।

দুআ মাসূরার পূর্বে দরুদ পাঠের গুরুত্ব

প্রত্যেক ছালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়তে হয়। নবী করীম (ছাঃ) নিজের উপর তাশাহহুদ ও তাশাহহুদের পরে দরূদ পাঠ করতেন এবং উম্মতদেরকে পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর মতে তাশাহহুদের পর দরূদ পড়া ওয়াজিব। আর ইমাম আবু হানীফা ও মালেক (রহঃ)-এর মতে সুন্নাত। (আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান বিন ছালেহ আল-বাসসাম, তায়সীরুল আল্লাম শরহে উমদাতিল আহকাম (কুয়েত : জামইয়াতু ইহইয়াইত তুরাছ আল-ইসলামী, ১৯৯৪ খৃঃ/১৪১৪ হিঃ) ১/২৬৮)।

ফুযালাহ্ ইবনু ’উবায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। তখন একজন লোক এলেন। তিনি সালাত  আদায় করলেন এবং এই দু’আ পড়লেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও আমার ওপর রহম কর)। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! তুমি তো নিয়ম ভঙ্গ করে বড্ড তাড়াহুড়া করলে। তারপর তিনি বললেন, তুমি সালাত শেষ করে দু’আর জন্য বসবে। আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরূদ পড়। তারপর তুমি যা চাও আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।

ফুযালাহ্ (রাঃ)বলেন, এরপর আর এক ব্যক্তি এলো, সালাত আদায় করলো। সে সালাত শেষে আল্লাহর প্রশংসা করলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালাত আদায়কারী! আল্লাহর কাছে দু’আও কর। দু’আ কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৩০, সুনান আততিরমিযী ৩৪৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৩, নাসায়ী ১/১৮৯, আহমাদ ৬/১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর এ জন্যই তিনি বলেছেন, “ফরয নামাযের পশ্চাতে দুআ অধিকরুপে শোনা (কবুল করা) হয়।”

মূল হাদিসঃ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ (সময়ের) দুআ (আল্লাহর কাছে) বেশী শ্রুতি হয়। তিনি বললেন, শেষ রাতের মধ্যের (দুআ) এবং ফরয সালাতের শেষের দুআ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৯৬৮, সুনান আততিরমিযী ৩৪৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বলা বাহুল্য এটাই হলো আল্লাহর সাথে প্রকৃত মুনাজাতের সময়। কারণ “নামাযী মাত্রই নামাযে আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে।” (মালেক, মুঅত্তা, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৬, ৪/৩৪৪)।

দরুদ বনাম মিলাদ কিয়াম

আল্লাহতায়ালা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও”। (সুরা আহযাব ৩৩/৫৬)।

রাসুল সাঃ এর উপর কিভাবে দরুদ ও সালাম পেশ করতে হয় তা আমরা উপরোল্লিখিত আলোচনায় জানতে পেরেছি। দরুদ ও সালাম পেশ করার ভাষা বা শব্দাবলী কি সেটাও আমরা শিখেছি। এর বাহিরে দরুদ ও সালাম পেশ করার অন্য কোনো শব্দাবলী তৈরী করা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির আলেম দরুদ ও সালাম পেশ করার রাসুল সাঃ এর তরিকার বাহিরে মিলাদ ও কিয়াম বানিয়েছে যা সম্পূর্ণ বিদআত। এইসব মিলাদ কিয়াম গানের সুরে, নেচে নেচে, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে গাওয়া হয়। মিলাদ কিয়ামের পক্ষে যেসব দলিল পেশ করা হয় তা কুরআন হাদিস সমর্থিত নয়।

বর্তমান সমাজে দেখা যায়, মারেফতপন্থী লোকেরা সহীহ হাদিসে উল্লেখিত দরুদগুলো বাদ দিয়ে তারা নিজেরা মনগড়া মতো দরুদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন: দরুদে মাহি, দরুদে তাজ, দরুদে হক্বানী, দরুদে তুনাজ্জিনা, দরুদে ফুতুহাত, দরুদে রুইয়াতে নবী (সাঃ), দরুদে শিফা, দরুদে খইর, দরুদে আকবার, দরুদে লাখী, দরুদে হাজারী, দরুদে রুহী, দরুদে বীর, দরুদে নারীয়া, দরুদে শাফেয়ী, দরুদে গাওসিয়া, দরুদে মুহাম্মদীএরকম শত শত। আধুনিক যুগের কথিত পির-আউলিয়াগণও তাদের মতো করে দরুদ বানিয়ে নিয়েছে। তাদের রচিত পুস্তকগুলোতে সহীহ হাদিসে উল্লেখিত দরুদগুলো দেখা যায় না। সেইসব পুস্তকে তাদের মুরিদদেরকে সলাতে দরুদে ইব্রাহিম এর পরিবর্তে  বানানো দরুদ দিয়ে সলাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া আছে।

আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) পড়তে বলেছেন দরুদ, সেখানে তারা আবিষ্কার করলো মিলাদ ও কিয়াম। এগুলো সবই বিদআত। আমরা রাসুল (সাঃ) এর উম্মত হিসেবে কুরআন ও সহীহ হাদিসের বাহিরে যাবো না। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

------------------------------

Please Share On

Wednesday, June 5, 2019

রিজিক বৃদ্ধির প্রথম আমল -আল্লাহর উপর ভরসা করা।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


রিজিক বৃদ্ধির প্রথম আমল -আল্লাহর উপর ভরসা করা

মো: ইজাবুল আলম, এম এ, সি ইন এড, ইসলামিক স্টাডিজ (রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক, মহাপরিচালক, পিএমএমআরসি, ।




রিজিক বৃদ্ধির প্রথম- আমল আল্লাহর উপর ভরসা করা

আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তাঁর নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, 
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” (সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩)
অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আনুগত্য দেখাবে, আল্লাহ তার সকল সংকট দূর করে দেবেন এবং তার কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। আর যে কেউ তার উদ্দেশ্য হাসিলে একমাত্র আল্লাহর শরণাপন্ন হয় তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বলা বাহুল্য এই তাকওয়ার পরিচয় মেলে হালাল উপার্জনে চেষ্টা এবং সন্দেহযুক্ত কামাই বর্জনের মধ্য দিয়ে।
(১) ইবনু রজব (রহঃ) বলেছেন, ‘দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কাজে মঙ্গল লাভ ও অমঙ্গল প্রতিহত করতে আন্তরিকভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করাকে তাওয়াক্কুল বলে’।(ইবনু রজব, জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম, পৃঃ ৪৩৬।)
(২) হাসান (রহঃ) বলেছেন,‘মালিকের উপর বান্দার তাওয়াক্কুলের অর্থ, আল্লাহই তার নির্ভরতার স্থান- একথা সে মনে রাখবে’(ইবনু রজব, জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম, পৃঃ ৪৩৭।)
(৩) ইবনু উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘কল্যাণ অর্জনে ও অকল্যাণ দূরীকরণে সত্যিকারভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং এতদসঙ্গে আল্লাহ যে সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতে বলেছেন তা অবলম্বন করাকে তাওয়াক্কুল বলে’।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ও রাসাইলু ইবনে উছায়মীন ১/৬৩।)
এই সংজ্ঞাটি তাওয়াক্কুলের উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা, যার মধ্যে সব দিকই শামিল রয়েছে। (এতে একদিকে আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা এবং অন্যদিকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার কথা রয়েছে।
(৪) ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, ‘তাওয়াক্কুল দ্বীনের অর্ধেক; বাকী অর্ধেক হ’ল ইনাবা’। কেননা দ্বীন হ’ল সাহায্য কামনা ও ইবাদতের নাম। এই সাহায্য কামনা হ’ল তাওয়াক্কুল এবং ইবাদত-বন্দেগী হ’ল ইনাবা। আরবী ‘ইনাবা’ অর্থ আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ ও তওবা করে ফিরে আসা।
আল্লাহর উপর ভরসার মর্যাদা ও গুরুত্ব ব্যাপক জায়গা জুড়ে রয়েছে। তাওয়াক্কুল সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপকতা এবং বিশ্ববাসীর প্রয়োজনের আধিক্যের ফলে তাওয়াক্কুলকারীদের দ্বারা এর আঙিনা সদাই ভরপুর থাকে। (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ২/১১৩।)
সুতরাং তাওয়াক্কুল জড়িয়ে আছে ওয়াজিব (ফরয), মুস্তাহাব, মুবাহ সবকিছুরই সাথে। এমনকি যেসব নাস্তিক আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে ক্ষেত্রবিশেষে তারাও নিজেদের লক্ষ্য পূরণে আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করে। আসলে মানুষের প্রয়োজনের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। কাজেই প্রয়োজন পূরণার্থে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর উপর নির্ভর করতে হয়।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, বান্দা যদি কোন পাহাড় সরাতে আদিষ্ট হয় আর যদি সে কাজে সে আল্লাহ তা‘আলার উপর যথার্থভাবে ভরসা করতে পারে, তবে সে পাহাড়ও সরিয়ে দিতে পারবে।(ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ১/১৮১।)
সুতরাং একজন মুসলিম তার যাবতীয় কাজে আল্লাহর উপর ভরসাকে একটা মুস্তাহাব বিষয় ভাবতে পারে না; বরং সে তাওয়াক্কুলকে একটি দ্বীনী দায়িত্ব বা আবশ্যিক কর্তব্য বলে মনে করবে।
শায়খ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) বলেন, যে মূল থেকে ইবাদতের নানা শাখা-প্রশাখা উদগত হয়েছে তা হ’ল : আল্লাহর উপর ভরসা, তাঁর নিকট সত্য দিলে আশ্রয় নেওয়া এবং আন্তরিকভাবে তাঁর উপর নির্ভর করা। তাওয়াক্কুলই আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকারোক্তির সারকথা। এর মাধ্যমেই তাওহীদের চূড়ান্তরূপ নিশ্চিত হয়। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালবাসা, ভয়, রব ও উপাস্য হিসাবে তাঁর নিকট আশা-ভরসা এবং তাঁর নির্ধারিত তাকদীর বা ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকার মত মহতী বিষয়গুলো তাওয়াক্কুল থেকেই উৎপত্তি লাভ করে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাওয়াক্কুল বান্দার নিকট বালা-মুছীবতকে পর্যন্তউপভোগ্য বিষয় করে তোলে, সে তখন বালা-মুছীবতকে আল্লাহর দেওয়া নে‘মত মনে করতে থাকে। বস্ত্ততঃ পবিত্র সেই মহান সত্তা তিনি যাকে যা দিয়ে ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন। তিনি মহা অনুগ্রহশীল। (শায়খ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ, তায়সীরুল আযীযিল হামীদ, পৃঃ ৮৬।)
তাওয়াক্কুলের হুকুম :
নিশ্চয়ই আল্লাহর উপর ভরসা করা শীর্ষস্তরের ফরযসমূহের অন্তর্গত একটি বড় ফরয। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহর উপর ভরসা করা ফরয। এটি উচ্চাঙ্গের ফরয সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহর জন্য ইখলাছ বা বিশুদ্ধচিত্তে কাজ করা ফরয। ওযূ ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতার জন্য গোসলের ব্যাপারে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা একটি আয়াতে একবার বলে তা ফরয সাব্যস্ত করেছেন, সেখানে একাধিক আয়াতে তিনি তাঁর উপর ভরসা করার আদেশ দিয়েছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্যের উপর ভরসা করতে নিষেধ করেছেন’। (মাজমু‘ ফাতাওয়া ৭/১৬।)
বরং তাওয়াক্কুল ঈমানের শর্ত। এজন্য আল্লাহর বাণী “আল্লাহর উপরে তোমরা ভরসা কর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’ (মায়েদাহ ৫/২৩) এই আয়াতের মর্মার্থ এই দাঁড়াচ্ছে যে, বান্দার থেকে তাওয়াক্কুল দূর হয়ে গেলে সাথে সাথে ঈমানও দূর হয়ে যাবে।
তাওয়াক্কুল তাওহীদে উলূহিয়্যা বা উপাস্যের একত্ববাদের যেসব ভিত্তি রয়েছে তন্মধ্যে একটি। সূরা ফাতিহার পাঁচ নং আয়াত একথার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং একমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতিহা ১/৫)।
তাওয়াক্কুলের মাহাত্ম্য ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণমূলক আয়াত সমূহ :
তাওয়াক্কুল শব্দটি কুরআন মাজীদে ৪২ জায়গায় এসেছে। কখনো তা একবচনে, কখনো বহুবচনে, কখনো অতীতকালের শব্দে, কখনো বর্তমান ও ভবিষ্যত কালের শব্দে, কখনোবা আদেশবাচক শব্দে। সবগুলো শব্দই আল্লাহর উপর ভরসা ও নির্ভরতা এবং তাঁর নিকট কার্যভার অর্পণ অর্থে এসেছে।
তাওয়াক্কুলের মাহাত্ম্য ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে কুরআন মাজীদের বর্ণনাভঙ্গি নানারূপ ধারণ করেছে। এখানে তার কিছু তুলে ধরা হ’ল।
(ক) আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবীকে তাওয়াক্কুলের আদেশ :
কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে তাঁর নবীকে তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করার আদেশ দিয়েছেন। যেমন : ‘অতএব তুমি আল্লাহর উপর ভরসা কর। তুমি তো স্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত’ (নামল ২৭/৭৯)
আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তুমি তাঁর ইবাদত কর ও তাঁর উপরেই ভরসা কর’ (হূদ ১১/১২৩)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর তুমি ভরসা কর সেই চিরঞ্জীব সত্তার উপর, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তুমি তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা কর। বস্তুতঃ জান্নাতী বান্দাদের পাপসমূহের খবর রাখার ব্যাপারে তিনিই যথেষ্ট’ (ফুরক্বান ২৫/৫৮)।
আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
মহান আল্লাহ বলেন,فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ- ‘এতদসত্ত্বেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাঁর উপরেই আমি ভরসা করি। আর তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের মালিক’ (তওবা ৯/১২৯)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘তুমি বল, তিনি তো সেই দয়াময় (আল্লাহ)। আমরা তাঁর উপর ঈমান এনেছি এবং ভরসা করেছি। অতঃপর কারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে ছিল তা অচিরেই তোমরা জানতে পারবে’ (মুলক ৬৭/২৯)।
আর আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবীকে তাওয়াক্কুল করার হুকুম দেওয়ার অর্থ তাঁর উম্মতকে হুকুম দেওয়া।
(খ) আল্লাহ কর্তৃক তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর উপর ভরসা করার আদেশ : আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর উপর ভরসা করতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (আলে ইমরান ৩/১২২)।
(গ) মুমিনরা তাদের রবের উপর ‘তাওয়াক্কুলকারী’ বিশেষণে বিশেষিত : আল্লাহর উপর ভরসা করা দয়াময় আল্লাহর বান্দাদের একটি বড় গুণ। এটি তাদের এমন একটি প্রতীক, যা দ্বারা অন্যদের থেকে তাদের পৃথক করা যায়। মুমিনদের জন্য এটি একটি সুস্পষ্ট চিহ্ন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তর সমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আনফাল ৮/২)।
‘তারা তাদের মালিকের উপরই ভরসা করে’- বাক্যটির মর্মার্থ হ’ল- তারা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে আকাঙ্ক্ষা করে না; তিনি ছাড়া কেউ তাদের উদ্দেশ্য নয়; তারা তাঁর নিকট ছাড়া কোথাও আশ্রয় নেয় না; তারা কেবলই তাঁর নিকট তাদের প্রয়োজন পূরণের আবেদন জানায়; তারা তাকে ছাড়া আর কারো প্রতি আকর্ষণ বোধ করে না। তারা জানে যে, তিনি যা চান তাই হয় এবং তিনি যা চান না তা হয় না। তিনিই ক্ষমতার একচ্ছত্র প্রয়োগকারী, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর হুকুম রদ করার শক্তিও কারো নেই এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যাই দিয়েছেন হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ)।
( তাফসীর ইবনে কাছীর ২/৩৭৯।)
(ঘ) নবীগণের তাওয়াক্কুলের কতিপয় উদাহরণ :
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে গ্রহণের জন্য আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথীদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরতম আদর্শ’ (মুমতাহিনা ৬০/৪)।
আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদের নিকট তাদের সম্পর্কে বলেছেন যে, তারা তাদের ঈমানী শক্তির কারণে বলেছিল,‘হে আমাদের মালিক! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আর তোমার নিকটেই তো প্রত্যাবর্তন স্থল’ (মুমতাহিনা ৬০/৪)। অর্থাৎ আমাদের যাবতীয় কাজে আমরা তোমারই উপর ভরসা করি এবং তোমারই নিকট সব কাজ সমর্পণ ও সোপর্দ করেছি। এমনিভাবে তারা আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন এবং যাবতীয় কাজ আল্লাহর কাছে নিঃশর্তভাবে সমর্পণ করেছিলেন। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তারা তাওয়াক্কুলকে সাথী করে নিয়েছিলেন। দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তারা তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যয় করেছিলেন।
ইবরাহীম (আঃ)-কে তো তাঁর জাতি পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করেছিল। এজন্য তারা প্রচুর জ্বালানী কাঠ যোগাড় করেছিল। সুদ্দী বলেন, সে সময় একজন মহিলা অসুস্থ হ’লে সে মানত করত যদি সে সুস্থ হয়ে ওঠে তাহ’লে ইবরাহীমকে পোড়ানোর জন্য এক বোঝা কাঠ সে বয়ে দিয়ে আসবে। (তাফসীর ইবনে কাছীর ৩/৩৭৪।)
তারপর তারা ইবরাহীম (আঃ)-কে পোড়ানোর জন্য বড় একটা গর্ত খুঁড়ে তাতে কাঠ জমা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন যখন খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তার লেলিহান শিখা বিস্তার করতে থাকে, তখন মিনজানীক নামক এক ধরনের যন্ত্রে করে তারা ইবরাহীম (আঃ)-কে ঐ আগুনে ফেলে দেয়। ফেলে দেওয়ার সময় ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’! (আলে ইমরান ৩/১৭৩)। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে তিনি বলেন, ‘ইবরাহীম (আঃ)-কে যখন আগুনে ফেলা হয় তখন তিনি বলেছিলেন ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’।(ছহীহ বুখারী হা/৪৫৬৩।)
মূসা (আঃ)-কে দেখুন, কিভাবে তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করেছিলেন এবং তাঁর জাতিকে তার উপর ভরসা করতে হুকুম দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,  ‘আর মূসা (তার নির্যাতিত কওমকে সান্ত্বনা দিয়ে) বলল, হে আমার কওম! যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাক, তাহ’লে তাঁর উপরেই তোমরা ভরসা কর। যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হয়ে থাক’ (ইউনুস ১০/৮৪)।
শায়খ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহঃ) বলেন, আয়াতের অর্থ এই যে, মূসা (আঃ) তাঁর উম্মাতকে আল্লাহ কর্তৃক তাদের জন্য নির্ধারিত পবিত্র ভূমিতে প্রবেশের আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, তারা যেন স্বৈরাচারীদের ভয়ে পিছটান না দেয়; বরং সামনে এগিয়ে যায়, তাদের ভয় না করে, তাদের দেখে তটস্থ ও সন্ত্রস্ত না হয়। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে তারা যেন আল্লাহর উপর ভরসা করে। তারা যেন বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার সত্যি-সত্যিই বাস্তবায়ন করবেন, যদি তারা মুমিন হয়।(তায়সীরুল আযীযিল হামীদ, পৃঃ ৪৩৮।)
উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। ওহোদ যুদ্ধের প্রাক্কালের ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, নিশ্চয়ই তারা (কুরায়েশ বাহিনী) তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদের থেকে ভীত হও। একথা শুনে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা বলে ‘আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক’! (আলে ইমরান ৩/১৭৩)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম কর্ম বিধায়ক’- বাক্যটি ইবরাহীম (আঃ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, আর মুহাম্মাদ (ছাঃ) এটি বলেছিলেন যখন কাফিররা বলেছিল, ‘যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, নিশ্চয়ই তারা (কুরায়েশ বাহিনী) তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। অতএব তোমরা তাদের থেকে ভীত হও। একথা শুনে তাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং তারা বলে, ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক’! (আলে ইমরান ৩/১৭৩)। (বুখারী হা/৪৫৬৩)।
সুতরাং যখন ইসলাম বিরোধীরা মুসলমানদের হুমকি দেয় এবং শত্রুপক্ষের জনশক্তি ও অস্ত্র শক্তির ভয় দেখায়, তখন এই তাওয়াক্কুলই মুমিনদের একমাত্র অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়।
আল্লাহর উপর ভরসাকারীদের কিছু সত্য ঘটনা :
আল্লাহর উপর ভরসাকারী নেককারদের কাহিনী শুনলে বান্দা আল্লাহর উপর অবশ্যই তাওয়াক্কুলে উদ্বুদ্ধ হবে। আল্লাহর উপর সত্য ভরসা করে তারা কী ফল লাভ করেছে তা জানলে নিশ্চয়ই তার আগ্রহ বাড়বে। আর ভরসাকারীদের শিরোমণি তো আমাদের রাসূল (ছাঃ)।
নবী করীম (ছাঃ) ও তরবারিওয়ালা :
জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে নজদের (বর্তমানে রিয়ায অঞ্চল) দিকে জিহাদে রওয়ানা হ’লেন। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাড়ী ফিরতে লাগলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরলেন। রাস্তায় প্রচুর কাটাগাছে ভরা এক উপত্যকায় তাঁদের দুপুরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হ’ল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (বিশ্রামের জন্য) নেমে পড়লেন এবং ছাহাবীগণও গাছের ছায়ার খোঁজে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি বাবলা গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে স্বীয় তরবারি ঝুলিয়ে দিলেন। আর আমরা অল্পক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলাম। অতঃপর হঠাৎ (আমরা শুনলাম যে,) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে ডাকছেন। সেখানে দেখলাম, একজন বেদুঈন তার কাছে রয়েছে। তিনি বললেন, আমার ঘুমের অবস্থায় এই ব্যক্তির হাতে আমার তরবারিখানা খোলা অবস্থায় দেখলাম। (তারপর) সে আমাকে বলল, আমার নিকট হ’তে তোমাকে (আজ) কে বাঁচাবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এ কথা আমি তিনবার বললাম। তিনি তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। অতঃপর তিনি বসে গেলেন। (অথবা সে বসে গেল) (বুখারী ও (মুসলিম হা/৮৪৩।))।
অন্য বর্ণনায় আছে, জাবের (রাঃ) বলেন যে, আমরা ‘যাতুর রিক্বা’-তে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর (ফেরার সময়) যখন আমরা ঘন ছায়া বিশিষ্ট একটি গাছের কাছে আসলাম, তখন তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। (তিনি বিশ্রাম করতে লাগলেন।) ইতিমধ্যে একজন মুশরিক আসল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তরবারি গাছে ঝুলানো ছিল। তারপর সে তা (খাপ থেকে) বের করে বলল, তুমি কি আমাকে ভয় করছ? তিনি বললেন, না। সে বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? তিনি বললেন, আল্লাহ।
আবু বকর ইসমাঈলীর ছহীহ গ্রন্থে রয়েছে, সে বলল, আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে? তিনি বললেন, আল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তার হাত থেকে তরবারিটি পড়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তরবারিখানা তুলে নিয়ে বললেন, (এবার) তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? সে বলল, তুমি উত্তম তরবারিধারক হয়ে যাও। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, না। কিন্তু আমি তোমার কাছে অঙ্গীকার করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে কখনো লড়বো না। আর আমি সেই সম্প্রদায়ের সঙ্গীও হব না, যারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে। সুতরাং তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট এসে বলল, আমি তোমাদের নিকটে সর্বোত্তম মানুষের নিকট থেকে আসলাম (বুখারী হা/২৯১০, ২৯১৩, ৪১৩৫, ৪১৩৭)
একেই বলে ভরসা, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা।
নবী করীম (ছাঃ) গিরিগুহায় :
আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(ছাওর) গিরিগুহায় থাকাকালে আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, (হে আল্লাহর রাসূল!) কেউ যদি তার দু’পায়ের নিচ দিয়ে তাকায় তাহ’লে তো সে অবশ্যই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবুবকর! দু’জন ভাবছ কি? আল্লাহ তো তাদের (আমাদের) তৃতীয়জন’। (বুখারী হা/৩৬৫৩; মুসলিম হা/২৩৭১।)
এই হ’ল ভরসা ও আল্লাহতে সমর্পণ, যা ভীষণ সঙ্কট কালে বান্দার থেকে খোলাখুলি ফুটে উঠেছে। বান্দা অন্তর থেকে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার উপর ভরসা করেছে এবং তার নিকটেই নিজের যাবতীয় কাজ অর্পণ করেছে, বিশেষ করে যখন আল্লাহর নিকট সমর্পণ ব্যতীত তার আর কোন অবলম্বন অবশিষ্ট নেই।
জনৈকা মহিলা ও তার ছাগপাল :
মহিলা ও তার ছাগল পালের ঘটনায় তাওয়াক্কুলের গুরুত্বের চূড়ান্ত রূপ ধরা পড়েছে। ভরসা করলে একজন মানুষ কী ফল লাভ করতে পারে সে কথাও এ ঘটনা থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে।
ইমাম আহমাদ (রহঃ) তাঁর গ্রন্থে নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগের এ ঘটনাটি সংকলন করেছেন।
 ‘জনৈকা মহিলা মদীনায় বাড়ীতে ছিল। অতঃপর সে মুসলিম সেনাদলের সাথে যুদ্ধে যাত্রা করেছিল। বাড়ীতে সে ১২টা ছাগল এবং তার কাপড় বুননের একটা তাঁত/কাঁটা/মাকু রেখে গিয়েছিল। বাড়ী ফিরে এসে সে দেখে, তার ছাগপাল থেকে একটা ছাগল আর তার সেই তাঁত/কাঁটা/মাকু নেই। সে তখন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলল, হে আমার মালিক! তুমি তো তোমার রাস্তায় যে বের হবে তার হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছ। এদিকে আমি তোমার রাস্তায় বের হয়ে ফিরে এসে দেখছি আমার ছাগপাল থেকে একটা ছাগল আর আমার কাপড় বুননের তাঁত/কাঁটা/মাকু নেই। আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, আমার ছাগল ও তাঁত/কাঁটা/মাকু ফিরিয়ে দাও। উক্ত মহিলা তার মালিকের নিকট কঠিনভাবে যে শপথ করেছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বার বার তার উল্লেখ করলেন। অবশেষে মহিলাটি সকাল বেলা তার ছাগল ও অনুরূপ একটা ছাগল আর তাঁত/কাঁটা/মাকু এবং অনুরূপ একটা তাঁত/ কাঁটা/মাকু ফিরে পেল’। (আহমাদ হা/২০৬৮৩; ছহীহাহ হা/২৯৩৫, হাদীছ ছহীহ।) সুবহানাল্লাহ! কী ভীষণ ব্যাপার!!
এই মহিলা আল্লাহর উপর প্রকৃত অর্থে ভরসা করেছিল। ফলে আল্লাহ কেবল তার ছাগলই হেফাযত করেননি; বরং তাওয়াক্কুলের বরকতে তাকে দ্বিগুণ করে দিয়েছেন।
জনৈকা মহিলা ও তার চুলা :
ইমাম আহমাদ (রহঃ) আরেকটি ঘটনা তাঁর সনদে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,
‘অতীতকালে দু’জন স্বামী-স্ত্রী ছিল। ধন-সম্পদ বলতে তাদের কিছুই ছিল না। স্বামী বেচারা একদিন সফর করে বাড়ী ফিরে এল। সে ছিল প্রচন্ড ক্ষুধার্ত। ক্ষুধায় অবসন্ন হয়ে সে তার স্ত্রীর নিকটে বলল, তোমার কাছে খাবার মত কিছু আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, সুসংবাদ শোন তোমার নিকট আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক এসেছে। [তার কাছে আসলে কিছুই ছিল না, কেবলই আল্লাহর উপর আশা-ভরসা ও নির্ভর করে সে একথা বলেছিল]। পুরুষ লোকটা বলল, তোমার ভাল হোক, তোমার কাছে কিছু থাকলে একটু জলদি কর। সে বলল, হ্যাঁ আছে বৈকি। একটু ছবর কর, আমরা আল্লাহর রহমতের আশা করছি। এভাবে যখন তার ক্ষুধা দীর্ঘায়িত হয়ে চলল তখন সে তার স্ত্রীকে বলল, তোমার উপর রহম হোক, ওঠো, দেখ, তোমার কাছে রুটি-টুটি থাকলে তা নিয়ে এস। আমি তো ক্ষুধায় একবারে শেষ হয়ে গেলাম। স্ত্রী বলল, এই তো চুলা পেকে এল বলে, তাড়াহুড়ো কর না। এভাবে কিছুক্ষণ কেটে গেলে যখন স্বামীটা আবার কথা বলবে বলবে এমন সময় স্ত্রী মনে মনে বলল, আমি উঠে গিয়ে আমার চুলাটা দেখি না। সে গিয়ে দেখল, চুলা ছাগলের সিনার/রানের গোশতে ভরপুর হয়ে আছে, আর তার যাঁতা দু’টো থেকে আটা বের হয়ে চলেছে। সে যাঁতার নিকট গিয়ে তা ঝেড়ে মুছে আটা বের করে নিল এবং চুলা থেকে ছাগলের সিনার/রানের গোশত বের করে আনল। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যাঁর হাতে আবুল কাসেম মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবন তাঁর শপথ! মহিলাটি যদি তার দু’যাঁতায় যা আটা ছিল এবং ঝাড়ামুছা না করত তাহ’লে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত যাঁতাটি তাকে আটা দিয়ে যেত’। (আহমাদ হা/৯৪৪৫, হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে (হা/১৭৮৭৪)এর বর্ণনাকারীদের নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। তবে শায়খ আলবানী ও শু‘আয়েব আরনাউত যঈফ বলেছেন। ছহীহাহ হা/২৯৩৭-এর আলোচনা দ্রঃ।)
ওমর (রাঃ) ও কুষ্ঠরোগী এবং খালিদ (রাঃ) ও বিষ :
হাদীছের গ্রন্থগুলোতে দু’টি ঘটনার উল্লেখ আছে কিছু লোক যা দুষ্কর মনে করে।
একটি ঘটনা ইবনু ওমর (রাঃ)-এর সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর সাথে বসে খেয়েছিলেন। (তিরমিযী হা/১৮১৭, সনদ যঈফ; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/২৫০২২; মূল বইয়ে ভুলবশতঃ ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব ছাপা হয়েছে।)
দ্বিতীয় ঘটনা হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর বিষ পানের সাথে জড়িত। আবুস সাফার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার খালিদ বিন ওয়ালীদ হিরা নগরে অবস্থান করছিলেন। তখন লোকেরা তাকে বলল, ‘আপনি কিন্তু সাবধানে থাকবেন, অনারবরা যেন আপনাকে বিষ পান না করিয়ে দেয়। তিনি তখন বললেন, তোমরা আমার নিকট বিষ নিয়ে এস। তাঁর নিকট বিষ নিয়ে আসা হ’ল। তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তা পান করে নিলেন। বিষে তার মোটেও কোন ক্ষতি হ’ল না’। (মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৭১৮৬।)
হযরত ওমর (রাঃ)-এর ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলার উপর তাঁর কঠিন তাওয়াক্কুলের নিদর্শন মেলে।
আলেমগণ এ ঘটনার বেশ কিছু দিক উল্লেখ করেছেন। যেমন-
(১) ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রোগ সংক্রমণের বিষয়কে দৃঢ়ভাবে নাকচ করতে চেয়েছেন এবং কুষ্ঠরোগী থেকে নবী করীম (ছাঃ)-এর দূরে থাকার আদেশ লঙ্ঘন করতে চাননি।
(২) ওমর (রাঃ) কুষ্ঠ রোগীকে সমবেদনা জানাতে এরূপ করেছিলেন।
(৩) যে আল্লাহর উপর শক্তিশালী ভরসা রাখে সে হাদীছلاَ عَدْوَى ‘রোগ সংক্রমণ বলে কিছু নেই’-এর উপর আমল করবে; আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলে দুর্বল সে ‘কুষ্ঠরোগী থেকে পালিয়ে যাও’ (فِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ) হাদীছের উপর আমল করবে। (বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭।)
আর খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ)-এর ঘটনা থেকে বুঝা যায় তিনি আল্লাহ তা‘আলার উপর যথার্থ ভরসা করেছিলেন বলেই বিষ তাঁর উপর কোনই ক্রিয়া করতে পারেনি। তাই বলে অন্য কারো জন্য বিষ পানে খালিদ (রাঃ)-এর অনুকরণ আদেশ সিদ্ধ হবে না। বিদ্বানগণ তাঁর ঘটনারও বেশ কিছু দিক তুলে ধরেছেন। যেমন-
(১) এটি ছিল খালিদ (রাঃ)-এর কারামত। তাই অন্য কারো পক্ষে তার অনুসরণ বৈধ হবে না। নচেৎ বিষের প্রভাবে সে নিহত হ’তে পারে।
(২) হ’তে পারে যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে খালিদের জন্য এমন কোন অঙ্গীকার ছিল যে, বিষ তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাই খালিদ (রাঃ) আল্লাহর উপর ভরসা করে তা পান করে নিয়েছিলেন।[24]
(৩) কিছু বর্ণনায় এসেছে, শত্রুপক্ষ যাতে এ দৃশ্য দেখে তার অনুগত হয় এবং মুসলমানদের জান-মালের কোন ক্ষতি না করে সেজন্য তিনি বিষ পান করেছিলেন।
ঋণ গ্রহিতা ও আল্লাহকে স্বাক্ষী মানা
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর ব্যক্তির নিকট এক হাযার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদের সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর ঋণদাতা বলল, তাহ’লে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যিই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাযার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাযার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান, আমি অমুকের নিকট এক হাযার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাযী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তাতে সে রাযী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথা সময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম। এই বলে সে কাষ্ট খন্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠ খন্ডটি সমুদ্রে ভেসে চলল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠ খন্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ট খন্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাযার দীনার নিয়ে হাযির হ’ল এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহন খুঁজেছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হ’তে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাযার দীনার নিয়ে ফিরে চলে এল। (বুখারী হা/২২৯১, ‘কিতাবুল কিফালাহ’)।
আল্লাহর উপর ভরসাতেই খাদ্যের ব্যবস্থা
নবি করিম (সাঃ) একদিন সাহাবী মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) কে বললেন, মুয়াজ ইবনে জাবাল তুমি ইয়েমেনে যাও। সেখানে তুমি ইসলামের দাওয়াত দাও। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) ইয়েমেনে চলে গেলেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। কিছু দিনের মধ্যে সেখানে মুসলমানের সংখ্যা ২/৩শ ছাড়িয়ে গেল। এ অবস্থা দেখে কাফের-মুশরিকদের মাথা নষ্ট হয়ে গেল। তারা মুসলমানদের উপর অন্যায় অত্যাচার শুরু করে দিল। অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পেলে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) নবি করিম (সাঃ) এর নিকট চিঠি লিখলেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করলেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এখানকার অবস্থা ভাল না, ইতিমধ্যে এখানে ২/৩শ মুসলমান হয়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে কাফের-মুশরিকরা আমাদের উপর অনেক অন্যায় অত্যাচার করছে। এখন আমরা কী করবো। উত্তরে নবি করিম (সাঃ) মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে বললেন, হে মুয়াজ ইবনে জাবাল, তুমি মুসলমানদের নিয়ে মদিনায় চলে এসো। আদেশ পেয়ে মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) মুসলমানদের নিয়ে মদিনায় চলে এসে নবি করিম (সাঃ)-কে সালাম দিলেন। নবি করিম (সাঃ)মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে বললেন, হে মুয়াজ তুমি এই ইয়েমেনবাসীদের নিয়ে ঐ মরুভূমিতে বসবাস শুরু করে দাও। ওখানে তাদেরকে ইমাম দিবো, মুয়াজ্জিন দিবো, যাতে ইয়েমেনবাসী দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। এরপর কোনো সমস্যা হলে তোমরা আমার নিকট এসো। বসবাসের বেশ কিছু দিন পর তাদের খাদ্য সংকট দেখা দিল। ইয়েমেনবাসী সকলে মিলে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে খাদ্যের জন্যে নবি করিম (সাঃ) এর নিকট পাঠালেন। আব্দুল্লাহ হাঁটতে হাঁটতে মসজিতে নব্বিতে পৌঁছতে সকাল প্রায় সাতটা বেজে গেছে। এসে দেখেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইশরাকের সলাত আদায় করছেন এবং সলাতে  সুরা হুদ তেলোয়াত করছেন। পিছনে থেকে আব্দুল্লাহ সেই তেলোয়াত শুনছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তেলোয়াত করছেন, وَمَا مِن دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ إِلاَّ عَلَى اللّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। (সুরা হুদ-আয়াত-৬)।
আব্দুল্লাহ এই তেলোয়াত শুনে, ভাবতে লাগলেন- সকল প্রাণীর রিজিক যেখানে আল্লাহ তায়ালা ব্যবস্থা করেন, সেখানে রাসুল (সাঃ) এর নিকট খাদ্য চেয়ে কোনো লাভ হবে না। আব্দুল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত না করেই নিজ এলাকায় ফিরে এসে সবাইকে ঘোষণা দিলেন যে, খাদ্য আসছে। কিন্তু সারা দিন যায় খাদ্য আসে না, রাত হয়ে যায় খাদ্য আসে না। ইয়েমেনবাসী আব্দুল্লাহকে বলল কোথায় খাদ্য? সকলে তো ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। আব্দুল্লাহ বলল, খাদ্য আসছে। রাত প্রায় ১০টার দিকে দেখা গেলো, দুইজন লোক খাদ্য রান্না করে নিয়ে তাদের নিকট হাজির। ইয়েমেনবাসী সকলে পরম তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খেল এবং বেশ কিছু খাদ্য অবশিষ্ট রয়ে গেল। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, উক্ত অবশিষ্ট খাদ্য তারা রাসুল (সাঃ)-কে প্রদান করবেন। পরদিন সকালে উক্ত খাদ্যগুলো নিয়ে ৫/৬ জন লোক (আব্দুল্লাহসহ) রাসুল (সাঃ) এর নিকট হাজির হলো এবং বলল যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আপনি যে খাদ্যগুলো প্রেরণ করেছিলেন, তার কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে এগুলো আমরা আপনাকে দিতে এসেছি। রাসুল (সাঃ) একথা শুনে বললেন, আমি তো কোনো খাদ্য প্রেরণ করিনি। আর আমার নিকট তো কেউ আসেনি। ইয়েমেনবাসী বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমাদের খাদ্য সংকট দেখা দিলে আমরা এই আব্দুল্লাহকে আপনার নিকট গতকাল প্রেরণ করেছিলাম। রাসুল (সাঃ) বললেন, আব্দুল্লাহ তো আমার নিকট আসে নি। আব্দুল্লাহ বলল, আমি এসেছিলাম। এসে দেখি, আপনি ইশরাকের সলাত আদায় করছেন এবং সলাতে সুরা হুদ তেলোয়াত করছেন। আর বলছেন, সকল জীবের খাদ্যদাতা একমাত্র আল্লাহ। তাই আপনার নিকট খাদ্য না চেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ফিরে গেলাম। এরপর এই ঘটনা ঘটল।
একথা শুনে রাসুল (সাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, আল্লাহ তায়ার পক্ষ থেকে এ খাদ্য রান্না করে পাঠানো হয়েছে।
প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা উল্লেখিত ঘটনাগুলো এটাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা সকল কাজে কর্মে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপরই ভরসা করবো। সকল সমস্যার সমাধানকারী যেখানে আল্লাহ। সেখানে আমরা কেনো অন্যের নিকট সাহায্য চাইবো? (সমাপ্ত)


ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...