Search This Blog

Monday, May 25, 2020

বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত কেনো আসে ? এবং তা থেকে পরিত্রানের উপায়।


বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত কেনো আসে ? এবং তা থেকে পরিত্রানের উপায়।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।  সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।


                                                                                                                  
বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের উপর নেমে আসে। কখনো আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বিপদে ফেলেন আবার মানুষের কৃত কর্মের জন্যে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি-
মানুষের উপর বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে দুইভাবে।
(১) আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য।
(২) মানুষের কৃত কর্মের জন্য।
আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে।
মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত যা কিছুই ঘটুক না কেন, তা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরের নয়। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই এখানে ঘটছে না?
তবে কি আমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আসে, তাও কি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন? আল্লাহ কি ইচ্ছা করেই আমাদের বিভিন্ন বিপদ-আপদে ফেলেন? অনেকভাবেই এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।
তবে সহজে বলতে গেলে, জীবন একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার প্রেক্ষিতেই আমাদের এই জীবনে যেমন সুখ ও সাফল্যের আগমন ঘটে, ঠিক তেমনি দুঃখ ও বিপদ-আপদ আসে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বলেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।”
(সূরা মুলক, আয়াত: ২)
দুঃখ ও বিপদ-আপদের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি আমাদের নিজেদের। কেন এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন, তা সম্পর্কেও আমরা সচেতন হতে পারি।
ফলে আমরা জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে সক্ষম হতে পারি।
একবার রাসুল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, মানুষের মধ্যে কারা সবচাইতে বেশি বিপদে পড়ে? উত্তরে তিনি বলেন, নবী-রাসুলরা, আর এরপরে আল্লাহ যাকে যত বেশি ভালোবাসেন তাকে তত বেশি পরীক্ষায় ফেলেন।
মানুষ ঈমানদার হোক আর কাফের হোক, নেককার হোক আর পাপী হোক, সবার জীবনে বিপদ-আপদ আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদিও আমরা অপছন্দ করি, তারপরেও কেনো আমাদের জীবনে এইরকম বিপদ-আপদ আসে বা আল্লাহ কেনো আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন?
কোরআন-হাদিস থেকে এর যে কারণগুলো জানা যায় তার মধ্যে রয়েছে:
১। মানুষকে পরীক্ষা করা: প্রকৃতপক্ষে কে ঈমানদার, কে মুনাফিক, কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা জেনে নেয়া। মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানদারেরা অনেক সময় সুখ–স্বাচ্ছন্দ্যের সময় আল্লাহকে মনে রাখে, তার প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ-আপদ আসে তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, কুফুরী করে বা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। আবার অনেক সময় এর বিপরীতও হয়। যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখন অনেক কাফের মুশরেককেও আল্লাহর কাছে মনে প্রাণে দুয়া করতে দেখা যায়। আর যখন আল্লাহ তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, তার নিয়ামতকে অস্বীকার করে অহংকার প্রদর্শন করে, বলে এতো আমার প্রাপ্য। আবার কখনো আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে বসে, আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিপদ-মুক্তির কারণ মনে করে।
এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করার জন্য, অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে কে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তা পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন,
“মানুষ কি মনে করে যে “আমরা ঈমান এনেছি” - এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি অবশ্যই তাদের পূর্বে যারা ছিলো তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।”
সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩। এছাড়া অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন,
“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যানপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে তাহলে সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরিতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।
সুরা হাজ্জ, আয়াত ১১।
২। দুনিয়াতেই পাপের সামান্য শাস্তি দেওয়া, যাতে করে সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে ও নিজেকে পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেও ঈমানের দুর্বলতার কারণে বা পার্থিব জীবনের লোভ-লালসার কারণে আল্লাহর অবাধ্য হয়। আল্লাহ তখন বিপদ-আপদ দিয়ে তাকে অসহায় করে দেন, যাতে করে সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে আর পরকালের কথা স্মরণ করে। আল্লাহ বলেন,
“কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।”
সুরা সাজদাহ, আয়াত ২১।
এই আয়াতে “হালকা শাস্তি” দ্বারা পার্থিব জীবনের বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, রোগ-শোক ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া সুনানে নাসায়ীতে রয়েছে, হালকা শাস্তির অর্থ হলো দুর্ভিক্ষ।
(তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে নেওয়া)
৩। এছাড়া আল্লাহ তার কিছু প্রিয় বান্দাকে পরীক্ষায় ফেলেন, যাতে করে পরকালে তার মর্যাদা ও জান্নাতের নেয়ামত বৃদ্ধি করেন। অনেক সময় আল্লাহ তার বান্দাদেরকে যে মর্যাদা দিতে চান তা ঐ বান্দা তার আমল দ্বারা অর্জন করার মতো হয়না। তখন  আল্লাহ তাকে পরীক্ষায় ফেলেন, যদি সে এতে ধৈর্য ধারণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে ঐ মর্যাদায় উন্নীত করেন।
সুতরাং, বিপদে পড়লে আমাদের এই বিশ্বাস রাখা জরুরী, আমি পাপী হলেও আল্লাহ আমাকে ভালোবাসেন। আর এই জন্য আমাকে বিপদে ফেলে আমাকে সংশোধন করতে চাচ্ছেন, যাতে করে পরকালে যা আমদের আসল ঠিকানা, সেখানে আমাদেরকে অনন্ত সুখের জীবন দান করেন।
মানুষের কৃত কর্মের জন্য বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে।
মূলত পৃথিবীতে যতো বড় বড় বিপদ আপদ বালা মুসিবত এসেছে তার মূল কারণ হলো মানুষের পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। পূর্বে যেসব পাপের কারনে আল্লাহ তায়ালা গজব নাজিল করেছিল, বর্তমানে সেইসব পাপের চেয়েওে মারাত্মক পাপকার্য আরো বেশী সংঘটিত হচ্ছে। যেমন:
সমকামিতার প্রচলন ও আল্লাহর গজব
লুত আঃ এর জাতির বসবাস ছিল  ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থানে। এই জাতির কেন্দ্রীয় শহর ছিল ‘সাদুম’ নগরী।  সাদুম ছিল সবুজ শ্যামল এক নগরী। কারণ এখানে পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। ফলে ভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর এবং শস্যে ভরপুর। এমন প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রা বেপরোয়া করে তোলে তাদের। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে তাদের মধ্যেই সর্বপ্রথম সমকামিতার প্রবণতা দেখা দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত।
অবশেষে একদিন আল্লাহর গজব নাজিল হয় ওই পাপাচারী জাতির বিরুদ্ধে। তাদের ওপর মহাপ্রলয় নেমে আসে। এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে দেয়। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান।
লুত (আ.)-এর জাতির ধ্বংসস্থলটি বর্তমানে ‘বাহরে মাইয়েত’ বা ‘বাহরে লুত’ নামে খ্যাত। এটি ডেড সি বা মৃত সাগর নামেও পরিচিত। ফিলিস্তিন ও জর্দান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল অঞ্চলজুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে এটি। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ নিচু। এর পানিতে তেলজাতীয় পদার্থ বেশি। এতে কোনো মাছ, ব্যাঙ, এমনকি কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘মৃত সাগর’ বলা হয়।
সাদুম উপসাগরবেষ্টিত এলাকায় এক ধরনের অপরিচিত উদ্ভিদের বীজ পাওয়া যায়, সেগুলো মাটির স্তরে স্তরে সমাধিস্থ হয়ে আছে। সেখানে শ্যামল উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার ফল কাটলে তার মধ্যে পাওয়া যায় ধুলাবালি ও ছাই।
এখানকার মাটিতে প্রচুর গন্ধক পাওয়া যায়। এই গন্ধক উল্কাপতনের অকাট্য প্রমাণ। ১৯৬৫ সালে ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানকারী একটি আমেরিকান দল ডেড সির পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক বিরাট কবরস্থান দেখতে পায়, যার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি কবর আছে। এটি থেকে অনুমান করা হয়, কাছেই কোনো বড় শহর ছিল। কিন্তু আশপাশে এমন কোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ নেই, যার সন্নিকটে এত বড় কবরস্থান হতে পারে। তাই সন্দেহ প্রবল হয়, এটি যে শহরের কবরস্থান ছিল, তা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে।
সাগরের দক্ষিণে যে অঞ্চল রয়েছে, তার চারদিকেও ধ্বংসলীলা দেখা যায়। জমিনের মধ্যে গন্ধক, আলকাতরা, প্রাকৃতিক গ্যাস এত বেশি মজুদ দেখা যায় যে এটি দেখলে মনে হয়, কোনো এক সময় বিদ্যুৎ পতনে বা ভূমিকম্পে গলিত পদার্থ বিস্ফোরণে এখানে এক ‘জাহান্নাম’ তৈরি হয়েছিল।
শুধু মাত্র একটি নগরীর লোকজন সমকামিতায় লিপ্ত হওয়ার কারনে সেই নগরীটিকে আল্লাহ তায়ালা ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করে দেন। কিন্তু এই সমকামিতা বর্তমান যুগে পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রেই ব্যাপকভাবে প্রচলিত। যেসব দেশে অইনগতভাবে সমকামিতা বৈধ তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
সম্প্রতি ভারতে বৈধতা পেয়েছে সমকামিতা। এর আগে অনেক দেশেই সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে।
আসুন জেনে নেই এমন কিছু দেশ সম্পর্কে যেসব দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ।
অস্ট্রেলিয়াঃ
অস্ট্রেলিয়ায় সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেতে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়৷ এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৬টি এবং বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৪টি ভোট৷ এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস বা এবিএস ঘোষণা করে যে, দেশটির জনগণ সমকামী বিয়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ সমকামী বিয়ে বৈধতা আইনে গণভোটের পক্ষে ভোট দেন ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ৷
অস্ট্রিয়াঃ
অস্ট্রিয়ায় এবার অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে রক্ষণশীল দল৷ কিন্তু জনগণ সমকামিতার পক্ষে মত দিয়েছে৷ চলতি বছরে ওস্টেরাইস পত্রিকা একটি জরিপ করে, যেখানে দেখা গেছে দেশটির ৫৯ ভাগ মানুষ সমকামী বিয়ের পক্ষে, বিপক্ষে ২৫ শতাংশ মানুষ৷ ফলে অস্ট্রিয়াতেও খুব শিগগিরই সমকামী বিয়ে বৈধতা পাচ্ছে বলে আশা করা যায়৷
জার্মানিঃ
চলতি বছরের ৩০ জুন জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷ অর্থাৎ ইউরোপের ১৫তম দেশ হিসেবে জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল৷ জার্মান পার্লামেন্টের পক্ষে ৩৯৩টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ২২৬টি ভোট৷ চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সমকামী বিয়ের বিপক্ষে থাকলেও, সংসদীয় নির্বাচনের ক’মাস আগে হঠাৎ করেই মার্কেল ঘোষণা করেন যে, এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে৷
মাল্টাঃ
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাল্টায় সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়, যদিও এর বিরোধিতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ৷
বলিভিয়াঃ
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বলিভিয়া৷ কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের নানারকম অধিকার দেয়াকে সমর্থন করে৷ ২০১৭ সালের জুনে ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে বিয়ের বৈধতা দেয় রক্ষণশীল এই দেশটি৷
তাইওয়ানঃ
তাইওয়ানের সাংবিধানিক আদালত ২০১৮ সালের মে মাসে সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়ের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এশিয়ার মধ্যে এই দেশটিই সর্বপ্রথম সমকামী বিয়েকে বৈধতা দিল৷ ২০১৯ সাল থেকে এই রায় কার্যকর হয়েছে৷
সমকামিতার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা এখন শহর বন্দর সব জায়াগাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে পতিতা ব্যবসার মতো ইহাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রিয় পাঠকঃ এখানে মানুষের দ্বারা সংঘটিত পাপসমূহের মধ্যে সমকামিতা সম্পর্কে জানলাম। যে পাপ আদি যুগ থেকে এখনো বিদ্যমান। আর এই পাপের কারনে একটি জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। যার জ্বলন্ত প্রমান এখনো আছে। অথচ মানুষ সেখান থেকে শিক্ষা না নিয়ে উল্টো সমকামিতাকে পার্লামেন্টে আইন পাশ করে বৈধতা দিচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা পুরো পৃথিবীটাকে এখনো যে ধ্বংস করে দেন নাই, সে জন্যে আল্লাহর নিকট হাজার হাজার শুকরিয়া।
সমকামিতা ছাড়াও আরো যেসব পাপের কারনে বিপদ আপদ নেমে আসে তার কিছু নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১) পাপের সীমা ছাড়িয়ে গেলেঃ
মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়।  পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে।’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)
নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে।  অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে   হয়েছে। বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা মান্না ও
সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা সম্প্রদায়ের
সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে। আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও  তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ  করতে হবে।
২) বিধর্মী কার্যকলাপের ফলেঃ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন
(১) সরকারি মালকে নিজের মাল মনে করা হয়, (২)আমানতের মালকে নিজের মালের মতো ব্যবহার করা হয়, (৩)জাকাতকে জরিমানা মনে করা হয়,
(৪) ইসলামী আকিদাবর্জিত বিদ্যা শিক্ষা করা হয়,
(৫) পুরুষ স্ত্রীর অনুগত হয়,
(৬) মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়,
(৭) বন্ধুদের আপন মনে করা হয়,
(৮) বাবাকে পর ভাবা হয়,
(৯) মসজিদে শোরগোল করা হয়,
(১০) পাপী লোক গোত্রের নেতা হয়,
(১১) অসৎ ও নিকৃষ্ট লোক জাতির চালক হয়,
(১২) ক্ষতির ভয়ে কোনো লোককে সম্মান করা হয়,
(১৩) গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন অধিক হয়,
(১৪) মদ্য পানের আধিক্য ঘটে,
(১৫) পরবর্তী সময় লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের বদনাম করে—তখন যেন তারা অপেক্ষা করে লু হাওয়া (গরম বাতাস), ভূমিকম্প, ভূমিধস, মানব আকৃতি বিকৃতি, শিলাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি ইত্যাদি কঠিন আজাবের, যা একটার পর আরেকটা আসতে থাকবে, যেমন   সুতা ছিঁড়ে গেলে মুক্তার দানাগুলো একটার পর একটা পড়তে থাকে। (তিরমিজি)
৩) ব্যভিচার, মাপে কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের ফলেঃ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন,‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাজিরদের উদ্দেশ করে
বলেছেন, ‘পাঁচটি মন্দ কাজ এমন আছে, যদি তোমরা তাতে জড়িয়ে  পড়ো বা তা তোমাদের মধ্যে বাসা  বাঁধে, তবে খুবই খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যেন এ  পাঁচটি মন্দ কাজ তোমাদের মধ্যে জন্ম না নেয়।’
(ক)  ব্যভিচার যদি কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের মধ্যে এমন এমন রোগ দেখা দেবে, যা আগে ছিল না।
(খ) ‘মাপে কম দেওয়া।’ এ মন্দ কাজ যদি কোনো জাতির মধ্যে জন্ম নেয়, তবে তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং তারা অত্যাচারী শাসকের শিকারে পরিণত হয়।
(গ) ‘জাকাত’ না দেওয়া। এ মন্দ কাজ যাদের মধ্যে দেখা দেয়, তাদের ওপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি সে অঞ্চলে পশু বা পাখি না থাকত, তবে আদৌ বৃষ্টি হতো না।
(ঘ) আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। এ মন্দ কাজ যখন সমাজে  দেখা দেয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অমুসলিমদের আধিপত্য চাপিয়ে দেন। আধিপত্যবাদীরা তখন মুসলমানদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়।
(ঙ) ‘কিতাব অনুযায়ী শাসনকার্য না চালানো।’ যদি মুসলমান শাসকরা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী  শাসনকার্য না চালায়, তবে আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করে দেন। তারা নিজেদের মধ্যে  পরস্পর  লড়াইয়ে  জড়িয়ে  পড়ে  এবং  সমাজে  সন্ত্রাস    খুন- খারাবি  শুরু  হয়ে  যায়।’  (বায়হাকি, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০১৯)
হজরত ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বীনের কার্যকলাপে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তরে ভয়-ভীতি ঢেলে দেওয়া হয়, কোনো সম্প্রদায়ে জিনা ব্যভিচার  বৃদ্ধি  পেলে  তাদের  মধ্যে  মৃত্যুর  হার  বৃদ্ধি  পায়,  কোনো  সম্প্রদায়ের  লোক  মাপে  কম   দিলে  তাদের  রিজিক  সংকুচিত  করে  দেওয়া  হয়,  কোনো  সম্প্রদায়ে  অন্যায়ভাবে  বিচার- ফয়সালা  করা  হলে  সে  গোত্রে  রক্তপাত  বৃদ্ধি  পায়,  কোনো  সম্প্রদায়ের  লোক  অঙ্গীকার  ভঙ্গ  করলে  তাদের  মধ্যে  শত্রুতা  প্রবল  করে দেওয়া হয়। (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত : পৃ. ৪৫৯)
৪) অন্যায় কাজে বাধা না দেওয়ার ফলেঃ
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা দেওয়া ফরজ। মুমিন এ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ তাঁর শপথ! তোমরা অবশ্যই ন্যায় কাজের আদেশ করবে এবং  অন্যায় কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর আজাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে এবং তোমাদের দোয়াও কবুল করা  হবে না।’ (তিরমিজি)
৫) অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলেঃ
অন্যায়ভাবে হত্যা করা হারাম। কথিত আছে, হজরত আদম (আ.)-এর পুত্র কাবিল যেদিন হাবিলকে হত্যা করে, সেদিনই পৃথিবীতে প্রথম ভূমিকম্প হয়। কেননা  অন্যায়ভাবে হত্যাকাণ্ড আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হলো জাহান্নাম, সে সদা সেখানে  অবস্থান করবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা  জিজ্ঞাসা করলেন—ইয়া রাসুলুল্লাহ! বিষয়গুলো কী কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন : ১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক  করা। ২. জাদুটোনা করা। ৩. যথাযথ কারণ বাদে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। ৪. সুদ খাওয়া। ৫. এতিমের সম্পদ গ্রাস করা। ৬. রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা। ৭. মুসলিম সরলা নির্দোষ মহিলাদের নামে ব্যভিচারের দুর্নাম রটনা করা। (মিশকাত, প্রথম খণ্ড, বাবুল কাবাইর ওয়া আলামাতুন নিফাক, সহীহ বুখারি, কিতাবুল ওয়াসায়া, হাদিস নম্বর : ২৭৬৬)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন—তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ কোনো অমুসলিমকে হত্যা করে,  তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া  যায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৬৮৬, সুনানে নাসাঈ, হাদিস  : ২৫)
৬) দুনিয়া প্রীতি বৃদ্ধি পেলেঃ
মুমিন দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে অধিক ভালোবাসে। সাহাবায়ে কিরাম দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে প্রাধান্য দিতেন এবং দ্বীনের জন্য মরণকে বেশি পছন্দ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—আমার উম্মতের ওপর এমন দুঃসময় আসবে, যখন অন্যান্য জাতি তোমাদের ওপর এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যেন ক্ষুুধার্ত মানুষ খাদ্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—না, বরং তোমরা সংখ্যায় অনেক হয়েও বন্যার ফেনার মতো ভেসে যাবে। দুশমনদের অন্তর  থেকে তোমাদের ভয়ভীতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি উঠে যাবে। তোমাদের অন্তরে ওহান (কাপুরুষতা) সৃষ্টি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ওহান কী? রাসুল (সা.) বললেন, দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়।  (আবু দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি বিষয় ক্ষতিকর : ক. চোখ নষ্ট হওয়া, খ. কলব শক্ত হওয়া, গ. দীর্ঘ আশা করা ও ঘ. পার্থিব লোভ।
৭) ধনীরা কৃপণ হলেঃ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে উত্তম লোকরা তোমাদের নেতা (রাষ্ট্রপ্রধান) হয়, ধনীরা দানশীল হয় এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়, তখন তোমাদের জন্য জমিনের নিম্নভাগ  থেকে জমিনের উপরিভাগ উত্তম। আর যখন তোমাদের মধ্যে ধনী লোকরা কৃপণ হয়, কার্যাবলি মহিলাদের নির্দেশমতো চলে, তখন তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগ থেকে জমিনের  নিম্নভাগ উত্তম।’ (তিরমিজি, পৃষ্ঠা : ৪৫৯)
পৃথিবীতে মহাবিপর্যয়/ মহামারী কেনো আসে?
(কোরআন ও হাদিস হতে দলীল)
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন,
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (আলকোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
(২) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
তোমরা এমন ফিতনাকে ভয় করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম (অত্যাচারী-অপরাধী) কেবল তাদিগকেই ক্লিষ্ট করবে না এবং জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর। (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ২৫)।
(৩) কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন,
সময়ের শপথ! মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা ছাড়া যারা ইমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে। (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)।
(৪) সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০১৯
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। সহীহাহ ১০৬। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
(৫) উপদেশ, হাদিস নং-৮৩।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
ইতিহাসের ভয়াবহ সব মহামারীগুলো
সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে। বর্তমানে নতুন করোনা ভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এমন সংক্রামক রোগের অতীত ইতিহাস বেশ দীর্ঘ।
ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গুটিবসন্ত প্রভৃতি বিভিন্ন রোগ নানা সময়ে মহামারীর রূপ নিয়েছে। মানবসভ্যতা যত উন্নত হয়েছে, মহামারীর প্রাবল্য তত বেড়েছে। কারণ ধীরে ধীরে শহর, গ্রাম গড়ে উঠেছে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য। ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও তৈরী হয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ভয়ংকর মহামারীর কাহিনী, যা অগণিত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। বদলে দিয়েছিল ইতিহাসের গতিধারা।
১. খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ :
পেলোপনেসিয়ান যুদ্ধের সময় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে একটি রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমান লিবিয়া, ইথিওপিয়া ও মিসর ঘুরে তা গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগে ঐ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়। ঐ রোগের মূল লক্ষণ ছিল জ্বর, প্রচন্ড পিপাসা, গলা ও জিহবা রক্তাক্ত হওয়া, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া ও ক্ষত সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি। ধারণা করা হয়, এটি ছিল টাইফয়েড জ্বর। বলা হয়ে থাকে, এমন মহামারীর কারণেই স্পার্টানদের কাছে যুদ্ধে হারতে হয়েছিল এথেনিয়ানদের।
২. জাস্টিনিয়ান প্লেগ (৫৪১ খ্রিষ্টাব্দ) :
মিসরে প্রথম এই রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ফিলিস্তীন ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যজুড়ে এই মহামারী বিস্তার লাভ করে। পরে পুরো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এই প্লেগ তান্ডব চালায়। সম্রাট জাস্টিনিয়ান ঐ সময় রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাইজেন্টাইনকে একীভূত করার পরিকল্পনা করছিলেন। মহামারীতে সব ভেস্তে যায়। শুরু হয় অর্থনৈতিক সংকট। এই রোগ পরবর্তী আরও দুই শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সময়ে মহামারী আকার নিয়েছিল। মারা গিয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। তখনকার হিসাবে এটি ছিল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশ। এই প্লেগের মূল বাহক ছিল ইঁদুর। মূলত মানুষের চলাচলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে।
৩. কুষ্ঠ (১১০০ খ্রিষ্টাব্দ) :
কুষ্ঠরোগের অস্তিত্ব ছিল আগে থেকেই। কিন্তু মধ্যযুগে ইউরোপে এই রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। কুষ্ঠ ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত কুষ্ঠ ছিল প্রাণঘাতী রোগ। বর্তমানেও বছরে লাখ লাখ লোক কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের কারণে আর এই রোগে মানুষের প্রাণহানী হয় না।
৪. কালো মৃত্যু (১৩৪৬ সাল) :
কালো মৃত্যু বা কালো মড়ক মানবসভ্যতার ইতিহাসে একটি বীভৎস, লোমহর্ষক ও কালো ইতিহাস বহন করছে। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ৭ থেকে ২০ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অন্য হিসাবে সেসময় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়েছিল।
দ্য ব্ল্যাক ডেথ নামে প্রসিদ্ধ এই মহামারী প্রথমে এশিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরে তা বণিকদের জাহাযে বসবাস করা কালো ইঁদুর ও ইঁদুর মাছি নামক দুটি প্রজাতির মাধ্যমে পশ্চিমে ছড়ায়। একপর্যায়ে পুরো ইউরোপ এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ নারী ও পুরুষ এই পতঙ্গের কামড়ে বুবোনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়েছিল। ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৩০-৬০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। শুধু এই মহামারীর কারণে ঐ সময়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ থেমে যায়।
ইউরোপে প্লেগটির আগমন ঘটে ১৩৪৭ সালের অক্টোবরে, যখন কৃষ্ণ সাগর থেকে আসা ১২টি জাহায নোঙর ফেলে ইতালীর মেসিনা শহরের সিসিলিয়ান বন্দরে। জাহাযগুলো হাযির হওয়ার পর বন্দরে উপস্থিত জনতা আবিষ্কার করে যে, জাহাযগুলোতে থাকা অধিকাংশ নাবিকই মরে পড়ে আছে। আর যারা বেঁচে আছে, তাদের অবস্থাও শোচনীয়। সারা গা ভরে গেছে কালো রঙের পুঁজে। অনেকের ফোঁড়াগুলো পচে গিয়ে পুঁজও বের হচ্ছে।
সবকিছু প্রত্যক্ষ করে সিসিলিয়ান বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুতই নির্দেশ দেয় যেন সকল জাহায অতিসত্বর বন্দর ত্যাগ করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। কালো মৃত্যু ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের মাটিতেও, যা পরবর্তী পাঁচ বছরে কেড়ে নেয় মহাদেশটির দুই কোটির উপর মানুষের প্রাণ। এই মহামারীর কবলে পড়ে চর্তুদশ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে।
কালো মৃত্যুর লক্ষণ ছিল- প্রথমে এই রোগে আক্রান্ত নারী ও পুরুষ কবজি বা বগলের কোন স্থানে টিউমারের মত কোন কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করত। ধীরে ধীরে সেটি বড় হত। এক পর্যায়ে এটি আপেল বা ডিমের আকৃতির মত ধারণ করত ও ছড়িয়ে পড়তে থাকত। কালো রঙের এই ফোঁড়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক হ’ত। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তার সারা শরীরে এটি দেখতে পেত। এক পর্যায়ে এগুলো পচে যেত এবং পুঁজ বের হত এবং মাত্র তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে মৃত্যু হত।
৫. দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন (১৬৬৫ সাল) :
এটিও ছিল বুবোনিক প্লেগ। এতে লন্ডনের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে রোগের উৎস হিসাবে কুকুর-বিড়ালের কথা ভাবা হয়েছিল। রোগের আতঙ্কে তখন নির্বিচারে শহরের কুকুর-বিড়াল মেরে ফেলা হয়।
৬. প্রথম কলেরা মহামারী (১৮১৭ সাল) :
কলেরা রোগের প্রথম মহামারীর শুরুটা হয়েছিল রাশিয়ায়। সেখানে এতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। দূষিত পানির মাধ্যমে এই রোগ পরে ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে ছড়ায়। পরে তা ভারতে ছড়ায়, যাতে ১০ লাখের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেও কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেন, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, চীন, জাপান, ইতালী, জার্মানী ও আমেরিকায়ও কলেরা ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে। এসব অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে সব মিলিয়ে ২২-২৩ লাখ লোক মারা যায়। এখনো প্রতিবছর কয়েক হাযার মানুষ এই রোগে প্রাণ হারায়। চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
৭. তৃতীয় প্লেগ মহামারী (১৮৫৫ সাল) :
চীন থেকে এর সূত্রপাত হয়েছিল। পরে তা ভারত ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই মহামারীর শিকার হয়েছিল। ভারতে এই মহামারী সবচেয়ে প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছিল। ইতিহাসবিদেরা বলে থাকেন, এই মহামারীকে উপলক্ষ হিসাবে নিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শাসকেরা নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নেয় এবং সেসবের মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করে।
৮. রাশিয়ান ফ্লু (১৮৮৯ সাল) :
ফ্লুর মাধ্যমে সৃষ্ট প্রথম মহামারী ছিল এটি। সাইবেরিয়া ও কাজাখস্তানে এর সূত্রপাত। তারপর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল এই ফ্লু। ১৮৯০ সালের শেষ নাগাদ এই রোগে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাযার মানুষের মৃত্যু হয়।
৯. স্প্যানিশ ফ্লু (১৯১৮ সাল) :
বিশ শতকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ যে মহামারী দেখা দিয়েছিল তার নাম ‘স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮-১৯ সালে এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি। মৃত্যুবরণ করেছিল প্রায় ১০ কোটি মানুষ। তন্মধ্যে ভারতবর্ষেই মারা গিয়েছিল দেড় কোটির বেশী মানুষ। দুই বিশ্বযুদ্ধে নিহত মানুষের যোগফলও এর চেয়ে কম ছিল।
রোগটি প্রথম ধরা পড়েছিল আমেরিকার কানসাসের এক সামরিক দুর্গে। ১৯১৮ সালের ১১ই মার্চ সকালে রান্নাঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক সৈন্য। কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতে না গড়াতেই ঐ ক্যাম্পের শত শত সৈন্য ও কর্মকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কানসাসের প্রাথমিক সংক্রমণ কেটে গিয়েছিল অল্প সময়ে। কিন্তু মাস ছয়েক পর ভাইরাসটি ভয়ানক রূপ ধারণ করে মরণ কামড় বসাতে থাকে। এক হিসাবে দেখা গেছে, ১৯১৮-এর সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। শুধু অক্টোবরেই ১ লাখ ৯৫ হাযার আমেরিকান মৃত্যুবরণ করেছিল। আমেরিকায় মোট প্রাণহানি ঘটে ৬ লাখ ৭৫ হাযার মানুষের। অথচ প্রথম মহাযুদ্ধের সময় সমগ্র আমেরিকায় ১ লাখ ১৬ হাযার সৈন্য নিহত হয়েছিল। আমেরিকানদের কাছে এ মহামারী ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কা।
তবে তাদের সংখ্যাটি যতই বড় মনে হোক, স্প্যানিশ ফ্লু সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণটি করেছিল ভারতবর্ষে। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯১৮ সালের এক মধ্যরাতে বোম্বাই (বর্তমানে মুম্বাই) বন্দরে এসে নোঙর করে একটি জাহায। সেই জাহায থেকে নামেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সেনারা। তারপর এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে বেশী দেরি হয়নি। বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এবং হাযারে হাযার মানুষ মরতে থাকে প্রতিদিন। বছর গড়াতেই সংখ্যাটি কোটির ঘর পেরিয়ে যায়। সেসময় মাহাত্মা গান্ধীও এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থতার মধ্যে তরল জাতীয় খাবার খেয়ে এবং ঘরে একা একা থেকে দিন কাটাতেন। এভাবে কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশনের মধ্য দিয়ে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থতা লাভ করেন।
স্প্যানিশ ফ্লু এতই ভয়ংকর ছিল যে কোন কোন আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নেয়ার আগেই দ্রুত মৃত্যুবরণ করত। এমনও ঘটেছে যে, কেউ একজন ঘুম থেকে উঠে দেখল, তার জ্বর এসেছে। তারপর নাশতা সেরে অফিসে বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেছে।
অসুখের লক্ষণগুলো ছিল এ রকম- প্রথমে জ্বর আসে, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেনের অভাবে মুখমন্ডল নীল বর্ণ ধারণ করে, ফুসফুসে রক্ত জমে যায়, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ এর হাত থেকে নিস্তার পায়নি।
অনেক অঞ্চলেই এই ফ্লুর কারণে স্থানীয় চিকিৎসকরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কারণ এই ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে তারাই প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করতেন। ফলে তারাও অবধারিতভাবে এ মহামারীর কবলে পড়ত। এমনও দেখা গেছে, কোন শহরে স্প্যানিশ ফ্লু মারাত্মক আকার ধারণ করলেও সেখানে কোন চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যেত না।
প্রাণহানির সংখ্যায় ভারতের পর ছিল চীনের অবস্থান। সে সময়ে চীনে ৪০-৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। ইরানে ১০-২৪ লাখ, ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জে ১৫ লাখ, জাপানে ৪ লাখ, ব্রাজিলে ৩ লাখ, ব্রিটেনে আড়াই লাখ ও ফ্রান্সে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এগুলো বড় বড় হিসাব। এর বাইরে এশিয়া-আফ্রিকা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে আক্রান্ত হয়েছিল লাখ লাখ মানুষ। আফ্রিকার বেশ কিছু উপজাতি সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। কিছু কিছু শহরের জনসংখ্যা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল। এছাড়া পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ব্রাজিলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মারাজোতে শুধু এই ভাইরাস সংক্রমণের কোন রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
১০. এশিয়ান ফ্লু (১৯৫৭ সাল) :
হংকং থেকে এই রোগ চীনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। এতে প্রায় ১৪ হাযার মানুষের মৃত্যু হয়ে। ১৯৫৮ সালের শুরুর দিকে এশিয়ান ফ্লু দ্বিতীয়বারের মতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় এশিয়ান ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গিয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাযার মানুষ। পরে ভ্যাকসিন দিয়ে ঐ মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল।
উপরোক্ত বিবরণে বুঝা যায় যে, পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু মহামারীর ঘটনা ঘটেছে এবং এসব মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেছে কোটি কোটি মানুষ। চলমান করোনা ভাইরাস পূর্ববর্তী মহামারীগুলোর চেয়ে ব্যাপকতা লাভ করবে কি-না তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা অনুযায়ী অধিকাংশ দেশে এখনও এ মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
তথ্যসূত্র :
1. history.com, www.wikipedia.com
2. Disease: The Story of Disease and Mankind's Continuing Struggle Against It, Mary Dobson, 2007.
3. Encyclopedia of pestilence, pandemics, and plagues, Joseph P. Byrne, 2008.
4. The evolution of pandemic influenza: Evidence from India, 1918-19, Siddharth Chandra and Eva Kassens-Noor, 2014.
২০২০ সালের মহামারীর বাস্তবতা (করোনা ভাইরাস)
২০২০ সাল... করোনা ভাইরাস....৩ লাখেরও বেশী মৃত্যু ৷ এখনোও সে মৃত্যুর মিছিল চলমান ৷ সারা বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১০ জন করে লোক মারা যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৮টি দেশ করোনায় আক্রান্ত।
মনে হচ্ছে প্রতি ১০০ বছর পর পর আল্লাহ তায়ালা একটা ইশারা করছে আমাদেরকে ৷ আমাদের উচিত সময় থাকতে সংশোধন হওয়া ৷
বর্তমানে করোনা ভাইরাস কোথায় গিয়ে থামবে সেটা একমাত্র মহান আল্লাহই ভালো জানেন ৷
মহামারী থেকে আত্মরক্ষায় বিদআতি আমলের পরিণতি
ছাহাবী-তাবেঈদের যুগে অনেকবার মহামারী দেখা দিয়েছে। যেমন ১৮ হিজরীতে ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ‘ত্বাঊনে আমওয়াস নামে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়লে পঁচিশ হাজার মানুষ মারা যায়। যাদের মধ্যে ছাহাবী আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ ও মুআয বিন জাবাল (রাঃ) অন্যতম। ৬৯ হিজরীতে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-এর শাসনামলে ছড়িয়ে পড়া জারিফ মহামারীতে মাত্র তিন দিনে বছরা নগরীর দুই লক্ষ দশ হাজার মানুষ মারা যায় (নববী, শরহ মুসলিম ১/১০৬)।
মহামারীর প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য যুগে যুগে মানুষ বহু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এমনকি অনেক সময় বিদআতী আমলে লিপ্ত হতেও দেখা গেছে। তবে তা যে উল্টো ফলই বয়ে আনে, নিম্নোক্ত ঘটনায় তা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
ঘটনাটি ৮৩৩ হিজরীর। মিসরে এসময় ভয়াবহ মহামারী দেখা দেয়। এতে মানুষের সাথে সাথে সামুদ্রিক প্রাণী, বনের পশু-পাখির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। নীল নদে অসংখ্য কুমির ও মাছ মৃত অবস্থায় ভেসে থাকতে দেখা যায়। বন-জঙ্গলে মৃত বাঘ, হরিণ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুরো মিসর জুড়ে জীবন বিনাশী এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। এই মহামারী ছহীহ বুখারীর প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এতে তাঁর তিন কন্যা মারা যায়। তাদের শোকে সেসময় তিনি ‘বাযলুল মাঊন ফী ফাযলিত-ত্বাঊন নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।
যাই হোক ৮৩৩ হিজরী, জুমাদাল উলার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার। এদিন কায়রোতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, প্রত্যেকে যেন তিন দিন ছিয়াম পালন করে এবং নিজ নিজ পাপ পরিত্যাগ করে তওবা করে। আর যালেমরা যেন যুলুম বন্ধ করে।
৪ দিন পর রবিবার সবাইকে কায়রোর বাইরে মরুভূমিতে একত্রিত করা হয়। যেখানে বিচারপতি ছালেহ বালকীনী লোকদেরকে উদ্দেশ্যে নছীহত করেন। লোকেরা সেখানে বিনয় প্রদর্শন করে এবং চিৎকার করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোআ-দরূদ পাঠ করে। তারপর তারা ফিরে যায়। কিন্তু পরের দিন দেখা যায়, মৃতের স্যংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কেবল ইসকান্দারিয়ায় প্রতিদিন একশত মানুষ মারা যাচ্ছিল। কায়রো ও আশ-পাশের মহল্লাগুলোতে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক মানুষের জানাযা পড়তে হচ্ছিল। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা দেখে চল্লিশজনের একটি দল নৌকাযোগে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু গন্তব্যস্থানে পৌঁছার পূর্বে তাদের সকলেই মারা যায়। সে সময়ে কোন ব্যক্তি সকালে অসুস্থ হলে সন্ধ্যার আগেই সে মারা যাচ্ছিল। ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ কাফনের কাপড়ের অভাবে তা চুরি করছিল। চারিদিকে গণকবর দেওয়া শুরু হয়েছিল।
এরই প্রেক্ষিতে ১৫ই জুমাদাল আখেরা শুক্রবার সাইয়েদ শিহাবুদ্দীন আহমাদ নামে তদানীন্তন জনৈক গভর্ণর মিসর সুলতানের নির্দেশে খুঁজে খুঁজে সাইয়েদ বংশের ৪০ জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে সমবেত করেন। যাদের প্রত্যেকের নাম মুহাম্মাদ। তাদের প্রত্যেকের হাতে পাঁচ হাযার দিরহাম তুলে দিয়ে জামে আযহারের মসজিদে বসে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলা হয়। ফলে তারা জুমআর ছালাতের পর থেকে একযোগে তেলাওয়াত শুরু করেন।
এদিকে কতিপয় অনারব ব্যক্তি পরামর্শ দিলেন যে, সমবেতকণ্ঠে মুনাজাত করলে এবং আযান দিলে মহামারী উঠে যাবে। কারণ তাদের দেশে এমন মহামারী ঘটলে এরূপ সম্মিলিত আমল করা হলে ভাইরাস উঠে যায়। তাদের পরামর্শে গোটা নগরীর জনগণকে জামে আযহারের মসজিদে সমবেত করা হয়। এরপর শুরু হয় সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জামাআতবদ্ধ মুনাজাত।
তারপর ঐ ৪০ জন সাইয়েদ মসজিদের ছাদে উঠে সমবেত কণ্ঠে আযান দিলেন। অতঃপর সকলে স্ব স্ব গৃহে ফিরে গেল। কিন্তু পরদিন দেখা গেল মহামারী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি গভর্নর শিহাবুদ্দীন আহমাদও এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, ‘তাদের সেই সম্মিলিত আমলের পর মহামারীর প্রাদুর্ভাব পূর্বের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। এই ভয়াবহতার পরে সুলতানের হুঁশ ফেরে। তিনি আলেমগণের নিকট ফৎওয়া জানতে চান যে, মহামারীর জন্য সম্মিলিত মুনাজাত করবে, নাকি ছালাতে কুনূতে নাযেলা পড়বে? তখন তারা পরামর্শ দেন যে, মহামারী থেকে বাঁচার পথ হল, আল্লাহর নিকটে তওবা করা, বিনীতভাবে দোআ করা, যুলুম পরিত্যাগ করা, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা (বিস্তারিত দ্রঃ ইবনু হাজার, ইনবাউল গুমুর বিআবাইল ঊমুর ৮/২০০-২০৪; জামালুদ্দীন ইউসুফ আতাবেগী, আন-নুজূমুয যাহেরা ফী মূলুকে মিসর ওয়াল ক্বাহেরা, ৪/১৪২-১৪৫)।
শিক্ষা :
(১) যেকোন মহামারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির জন্য সতর্ক বার্তা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং নিজ নিজ আমলকে সংশোধন করে নিতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, মহামারীর মধ্যে মুসলমানদের আমল সংশোধনের সুযোগ রয়েছে (মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩৮৬৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৪০৮)।
(২) সর্বাবস্থায় বিদআতী আমল থেকে দূরে থাকতে হবে।
(৩) স্মরণ রাখতে হবে যে, রাসূল (ছাঃ) মহামারীকে কাফেরদের জন্য আযাব হিসাবে গণ্য করলেও মুমিনদের জন্য ‘রহমত বলে আখ্যায়িত করেছেন (বুখারী হা/৩৪৭৪; মিশকাত হা/১৫৪৭)। আর তিনি এতে মৃত্যুবরণকারীকে শহীদ গণ্য করেছেন (মুসলিম হা/১৯১৬)। অতএব এথেকে বাঁচার জন্য সম্ভবপর চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর উপরে দৃঢ় ভরসা রাখতে হবে।
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায়
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে পাঠিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে। সুতরাং মানুষ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, এটা তার জন্য ফরয কর্তব্য। কিন্তু মানুষ বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, তাঁর অবাধ্য হয়। সে আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে গিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। স্রষ্টার প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে গিয়ে নিজেকে পৃথিবীতে শক্তিধর হিসাবে যাহির করার চেষ্টা করে। আর এই স্পর্ধা থেকে নানা অনাচার-পাপাচার করে পৃথিবীকে কলুষিত করে তোলে। ফলে তাদের উপরে নেমে আসে আল্লাহর আযাব-গযব হিসাবে নানা ধরনের বালা-মুছীবত। নিম্নে এসব বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করা হল।-
বালা-মুছীবতের কারণ সমূহ : বিভিন্ন কারণে মানুষের উপরে বালা-মুছীবত আপতিত হয়। তন্মধ্যে আল্লাহর সাথে শিরক ও কুফরী, মানুষের উপরে যুলুম-নির্যাতন করা, অধিক পাপাচার করা ও সৎকাজের আদেশ কম করা, অবাধ্যতা ও অহংকার করা, মিথ্যাচার করা, আল্লাহ প্রদত্ত নেমতের অস্বীকৃতি, দুনিয়াবী বিষয়ে প্রতিযোগিতা ও কৃপণতা, রাসূল (ছাঃ)-কে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা, ছালাত পরিত্যাগ করা, যাকাত অস্বীকার করা, জিহাদ পরিত্যাগ করা, অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো, আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, সূদ-ঘুষ আদান-প্রদান করা বা হারাম ভক্ষণ করা,  আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দ্বারা ফায়ছালা না করা ইত্যাদি কারণে মানুষের উপরে বালা-মুছীবত নেমে আসে।
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায়গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক. বালা-মুছীবত নাযিল হওয়ার পূর্বে করণীয় ।
খ. বালা-মুছীবত নাযিল হওয়ার পরে করণীয়।
ক. বালা-মুছীবত নাযিল হওয়ার পূর্বে করণীয় :
মানুষ আল্লাহর বিধান মেনে চললে তাদের উপরে আল্লাহর আযাব-গযব হিসাবে বালা-মুছীবত নেমে আসবে না।  বালা-মুছীবত যাতে না আসে সেজন্য কিছু করণীয় আছে। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।-
১. আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা : আল্লাহর আদেশ প্রতিপালন করা এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করা বালা-মুছীবত থেকে মুক্তি লাভের অন্যতম উপায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেন,
يَا غُلاَمُ إِنِّى أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوْكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَضُرُّوْكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ.
হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ্ তা'আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ্ তাআলার বিধানের প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তাআলাকে তুমি তোমার সামনে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তাআলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ্ তাআলার নিকটেই কর। আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তারা তোমার ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি তারা সকলে তোমার ক্ষতি করার জন্য সমবেত হয়, তাহলে তারা তোমার ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তাআলা তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।[1] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ وَاحْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ أَمَامَكَ، وَتَعَرَّفْ اِلَى الله فِي الرَّخَاءِ، يَعْرِفْكَ فِي الشِّدَّةِ، ‘তুমি আল্লাহর বিধান হেফাযত কর আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহর বিধান হেফাযত কর আল্লাহকে তোমার সামনে পাবে। তুমি সুখের সময় আল্লাহকে স্মরণে রাখ, বিপদের সময় আল্লাহ তোমাকে স্মরণে রাখবেন।[2]
২. উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া : সচ্চরিত্র মানুষকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে। যেমন হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَرْجُفُ فُؤَادُهُ، فَدَخَلَ عَلَى خَدِيْجَةَ بِنْتِ خُوَيْلِدٍ رضى الله عنها فَقَالَ زَمِّلُوْنِى زَمِّلُوْنِى فَزَمَّلُوْهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الْخَبَرَ لَقَدْ خَشِيْتُ عَلَى نَفْسِى فَقَالَتْ خَدِيجَةُ كَلاَّ وَاللهِ مَا يُخْزِيْكَ اللهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ، وَتَقْرِى الضَّيْفَ، وَتُعِيْنُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ. ‘অতঃপর এ আয়াত নিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর হৃদয় তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিনতু খুওয়ায়লিদের নিকটে এসে বললেন, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর। অতঃপর তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করা হল। এমনকি তাঁর শংকা দূর হল। তখন তিনি খাদীজা (রাঃ)-এর নিকটে ঘটনা জানিয়ে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, ‘কখনোই না। আল্লাহর কসম! তিনি কখনোই আপনাকে অপদস্থ করবেন না। আপনি আত্মীয়দের সঙ্গে সদাচরণ করেন, দুস্থদের বোঝা বহন করেন, নিঃস্বদের কর্মসংস্থান করেন, অতিথিদের আপ্যায়ন করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন।[3]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,قَالَ الْعُلَمَاءُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ مَعْنَى كَلَامِ خَدِيجَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِنَّكَ لَا يُصِيبُكَ مَكْرُوهٌ لِمَا جَعَلَ اللهُ فِيكَ مِنْ مَكَارِمِ الْأَخْلَاقِ وَكَرَمِ الشَّمَائِلِ وَذَكَرَتْ ضُرُوبًا مِنْ ذَلِكَ وَفِي هَذَا دَلَالَةٌ عَلَى أَنَّ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ وَخِصَالَ الْخَيْرِ سَبَبُ السَّلَامَةِ مِنْ مَصَارِعِ السُّوْءِ، ‘বিদ্বানগণ বলেন, খাদীজা (রাঃ)-এর কথার অর্থ হচ্ছে, আপনার উপরে কোন কষ্ট-ক্লেশ বা অপসন্দনীয় কিছু আপতিত হবে না। কেননা আল্লাহ আপনার মধ্যে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও উত্তম গুণাবলী দান করেছেন। যেগুলি তিনি উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উত্তম চরিত্র ও সৎ স্বভাব ধ্বংস-যজ্ঞ বা বিনাশ হওয়া থেকে রক্ষা করে।[4]
ইমাম কিরমানী (রহঃ) বলেন,وفيه أن خصال الخير سببٌ للسلامة من مَصارِع السوء، والمكارم سببٌ لدفع المكاره،
আর এতে (খাদীজা রাঃ-এর বক্তব্যে) রয়েছে যে, উত্তম স্বভাব-চরিত্র ধ্বংস থেকে নিরাপত্তা লাভের উপায়। সচ্চরিত্র কষ্ট-ক্লেশ বা অপসন্দনীয় বিষয় প্রতিরোধের উপায়।[5]
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) বলেন,فِيهِ أَنَّ مَكَارِم الْأَخْلَاق وخصال الْخَيْر سَبَب للسلامة من مصَارِع الشَّرّ والمكاره فَمن كثر خَيره حسنت عاقبته ورجى لَهُ سَلامَة  الدِّيْن وَالدُّنْيَا، ‘এতে (খাদীজা রাঃ-এর বক্তব্যে) রয়েছে যে, উত্তম স্বভাব-চরিত্র ধ্বংস ও কষ্ট-ক্লেশ থেকে নিরাপত্তা লাভের মাধ্যম। অতএব যার সৎকর্ম বেশী তার পরিণতি সুন্দর হবে। আর তার জন্য দ্বীন ও দুনিয়ার নিরাপত্তার আশা করা যায়।[6]
৩. তওবা ও ইস্তেগফার করা : পরীক্ষা ও বিপদে পতিত হওয়া গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যম। তবে শর্ত হল ঐ পরীক্ষা ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং তার জন্য ছওয়াবের আশা পোষণ করতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে এবং তাঁর নিকটে তওবা করতে হবে। কেননা কুরআন ও হাদীছ প্রমাণ করে যে, মানুষের গোনাহের কারণেই বিপদ-মুছীবত আপতিত হয় এবং তওবা ব্যতীত তা দূরীভূত হয় না। সুতরাং মানুষকে বেশী বেশী তওবা করতে হবে। দুনিয়াতে আমরা যে বিপদে-আপদে পতিত হই, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য বা সেগুলো হালকা হওয়ার জন্য মুছীবত দূরীভূত হওয়ার উপায়সমূহ অবলম্বন করা উচিত।
আল্লাহ বান্দাকে তওবার নির্দেশ দিয়ে বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا تُوْبُوْا إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَّصُوْحاً- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খাঁটি তওবা কর (তাহরীম ৬৬/৮)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَاسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট গুনাহ মাফ চাও এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো (হূদ ১১/৯০)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে (নূর ২৪/৩১)। তিনি আরো বলেন,وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيْهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ- ‘অথচ আল্লাহ কখনো তাদের উপর শাস্তি নাযিল করবেন না যতক্ষণ তুমি (হে মুহাম্মাদ) তাদের মধ্যে অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে (আনফাল ৮/৩৩)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, مَنْ لَزِمَ الاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجاً، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجاً، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ- ‘যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হতে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হতে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে রিযিক দান করেন এমন স্থান হতে যা সে কখনো কল্পনা করে না।[7]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলল, أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُوْمُ وَأتُوْبُ إلَيْهِ، غُفِرَتْ ذُنُوْبُهُ، وإنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ- (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাই। যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নিকটে তওবাকারী) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের মাঠ হতে পলায়ণ করে থাকে।[8]
৪. তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা : তাক্বওয়া হচ্ছে সকল আমল সংশোধনের উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلًا سَدِيْدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দিবেন ও তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)।
মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ- ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (মুক্তির) পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযক দান করবেন (তালাক ৬৫/২-৩)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাকে ইহকালীন ও পরকালীন সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিবেন।[9]
আল্লাহভীতি অর্জন করলে দুনিয়াবী বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। ছামূদ সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,وَأَمَّا ثَمُوْدُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمَى عَلَى الْهُدَى فَأَخَذَتْهُمْ صَاعِقَةُ الْعَذَابِ الْهُوْنِ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ، وَنَجَّيْنَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ، ‘আর ছামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমরা তাদেরকে পথ-নির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে ভ্রান্তপথ অবলম্বন করেছিল। অতঃপর তাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আঘাত হানল তাদের কৃতকর্মের পরিণাম স্বরূপ। আমরা উদ্ধার করলাম তাদেরকে যারা ঈমান এনেছিল এবং যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করত (হা-মীম আস-সাজদা ৪১/১৭-১৮)।
অর্থাৎ তাদের পরে উল্লিখিতদের কোন অনিষ্ট স্পর্শ করেনি এবং তারা কোন ক্ষতির শিকার হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের নবী ছালেহ (আঃ)-এর সাথে রক্ষা করেছেন তাদের ঈমান ও আল্লাহভীতির কারণে।[10] আল্লাহ তাআলা বলেন,وَإِنْ مِِّنْكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا، ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا- ‘আর তোমাদের প্রত্যেকেই তা অতিক্রম করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্ত ক্বীদেরকে উদ্ধার করব এবং যালিমদেরকে সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দেব (মারিয়াম ১৯/৭১-৭২)।
৫. খাদ্য-পানীয়ের পাত্র সমূহ ঢেকে রাখা :
খাদ্য ও পানপাত্র সমূহ ঢেকে রাখার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথা এতে রোগজীবাণু প্রবেশ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, غَطُّوْا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ فَإِنَّ فِى السَّنَةِ لَيْلَةً يَنْزِلُ فِيْهَا وَبَاءٌ لاَ يَمُرُّ بِإِنَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ غِطَاءٌ أَوْ سِقَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ وِكَاءٌ إِلاَّ نَزَلَ فِيْهِ مِنْ ذَلِكَ الْوَبَاءِ. ‘খাদ্য-পাত্র ঢেকে রাখো এবং মশক বন্ধ রাখো। কেননা বছরে এমন এক রাত্রি আছে, যে রাত্রে বিভিন্ন প্রকারের বালা-মুছীবত নাযিল হয়। ঐসব বালার গতিবিধি এমন সব পাত্রের দিকে হয় যা ঢাকা নয় এবং এমন পান-পাত্রের দিকে হয় যার মুখ বন্ধ নয়, ফলে তা তার মধ্যে প্রবেশ করে।[11]
৬. বিভিন্ন দোআ করা :
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের জন্য ঐসব নাযিল হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন সময় ও ক্ষেত্রে পঠিতব্য নানা রকম দোআ রাসূল (ছাঃ) শিখিয়েছেন। সেগুলি নিয়মিত পাঠ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ فَعَلَيْكُمْ عِبَادَ اللهِ بِالدُّعَاءِ. ‘যে বিপদ-আপদ এসেছে আর যা (এখনও) আসেনি তাতে দোআয় কল্যাণ হয়। অতএব হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দোআকে আবশ্যিক করে নাও।[12]
সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য দোআ : রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَالَ بِسْمِ اللهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلاَءٍ حَتَّى يُصْبِحَ وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلاَءٍ حَتَّى يُمْسِىَ. ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে, অর্থ : ‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোন বস্ত্তই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোন আকস্মিক বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোন আকস্মিক বিপদ আসবে না।[13]
দোআ ইউনুস বেশী বেশী পাঠ করা : মহান আল্লাহ বলেন,وَذَا النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ، فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ، ‘আর স্মরণ কর মাছওয়ালা (ইউনুস)-এর কথা। যখন সে ক্রুদ্ধ অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং বিশ্বাসী ছিল যে, আমরা তার উপর কোনরূপ কষ্ট দানের সিদ্ধান্ত নেব না। অতঃপর সে (মাছের পেটে) ঘণ অন্ধকারের মধ্যে আহবান করল (হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর আমরা তার আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করলাম। আর এভাবেই আমরা বিশ্বাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি (আম্বিয়া ২১/৮৭-৮৮)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,دَعْوَةُ ذِى النُّوْنِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِىْ بَطْنِ الْحُوْتِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّى كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ. فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِىْ شَىْءٍ قَطُّ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ. ‘যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দোআ করেছিলেন তা হলো- ‘তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয়ই যালিমদের দলভুক্ত (আম্বিয়া ২১/৮৭)। যে কোন মুসলিম কোন বিষয়ে কখনো এর মাধ্যমে দোআ করলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তার দোআ কবুল করেন।[14]
সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার দোআ : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,لَمْ يَكُنْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَدَعُ هَؤُلاَءِ الدَّعَوَاتِ حِيْنَ يُصْبِحُ وَحِيْنَ يُمْسِى اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِىْ وَدُنْيَاىَ وَأَهْلِى وَمَالِى اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِىْ وَآمِنْ رَوْعَاتِىْ اللَّهُمَّ احْفَظْنِى مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِىْ وَعَنْ يَمِيْنِىْ وَعَنْ شِمَالِىْ وَمِنْ فَوْقِى وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِىْ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকাল-সন্ধ্যায় এসব দোআ করা পরিত্যাগ করতেন না- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দ্বীন ও দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদ বিষয়ে ক্ষমা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গোপন ব্যাপারগুলো গোপন রাখো। ভয়-ভীতি থেকে আমাকে নিরাপত্তা দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নিরাপদে রাখ, আমার সম্মুখের বিপদ হতে, পশ্চাতের বিপদ হতে, ডানের বিপদ হতে, বামের বিপদ হতে, আর ঊর্ধ্বদেশের গযব হতে। তোমার মহত্ত্বের দোহাই দিয়ে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নিম্নদেশ হতে আগত বিপদে আকস্মিক মৃত্যু হতে।[15]
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوْءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ. ‘নবী করীম (ছাঃ) বালা-মুছীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইতেন।[16]
বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় দোআ : রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ فَقَالَ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ قَالَ يُقَالُ حِينَئِذٍ هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ فَتَتَنَحَّى لَهُ الشَّيَاطِينُ فَيَقُولُ لَهُ شَيْطَانٌ آخَرُ كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِىَ وَكُفِىَ وَوُقِىَ- ‘যখন কোন ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবে, বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছ, রক্ষা পেয়েছ ও নিরাপত্তা লাভ করেছ। সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে পারবে, যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে।[17]
খ. বালা-মুছীবত নাযিল হওয়ার পরে করণীয় :
বিপদাপদ ও বালা-মুছীবত নাযিল হলে কিছু করণীয় রয়েছে, যা করলে মানুষ ঐসব থেকে রক্ষা পেতে পারে। নিম্নে সে করণীয়গুলো উল্লেখ করা হলো।-
১. বেশী বেশী ইবাদত করা : বিপদ আসলে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করা উচিত। যাতে আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং তিনি দয়াপরবশ হয়ে আপতিত বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، لاَ يَنْخَسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوْا اللهَ وَكَبِّرُوْا، وَصَلُّوْا وَتَصَدَّقُوْا. ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দোআ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং ছালাত আদায় করবে ও ছাদাক্বাহ করবে।[18]
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,قَالَ الطِّيبِيُّ أُمِرُوْا بِاسْتِدْفَاعِ الْبَلاَءِ بِالذِّكْرِ وَالدُّعَاءِ وَالصَّلاَةِ وَالصَّدَقَةِ، ‘ত্বীবী বলেন, বালা-মুছীবত প্রতিরোধের জন্য যিকর, দোআ, ছালাত ও ছাদাক্বার মাধ্যমে তা প্রতিরোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[19]
হাফেয ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন,والنبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أمر بالكسوف بالصلاة والعتاقة والمبادرة إلى ذكر الله تعالى والصدقة، فإن هذه الأمور تدفع أسباب البلاء. ‘নবী করীম (ছাঃ) চন্দ্রগ্রহণের সময় ছালাত, দাসমুক্তি, বেশী বেশী যিকর ও দান-ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা এসব কাজ বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণ লাভের মাধ্যম।[20]
ক. নফল ছালাত আদায় করা : বালা-মুছীবত আসলে নফল ছালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে তা থেকে রক্ষার জন্য দোআ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، وَلَكِنَّهُمَا آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ يُرِيهِمَا عِبَادَهُ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَافْزَعُوْا إِلَى الصَّلاَةِ، ‘সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে এ হলো দুটি নিদর্শন, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন ভীত অবস্থায় ছালাতের দিকে আসবে।[21]
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তিনজন শিশু ব্যতীত কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। প্রথম জন ঈসা (আঃ), দ্বিতীয় জন বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে জুরাইজ নামে ডাকা হতো। একদা ইবাদতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না ছালাত আদায় করতে থাকব। তার মা বলল, হে আল্লাহ! ব্যাভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরাইজ তার ইবাদতখানায় থাকত। একবার তার নিকট এক মহিলা আসল। তার সঙ্গে কথা বলল। কিন্তু জুরাইজ তা অস্বীকার করল। অতঃপর মহিলা একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল এটি কার থেকে? মহিলা বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার নিকট আসল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি-গালাজ করল। তখন জুরাইজ ওযূ করে ছালাত আদায় করল। অতঃপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করল হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল, ঐ রাখাল। তারা বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বলল, না, তবে মাটি দিয়ে।[22]
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হল যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম! তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই-বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হলো।
সারা ওযূ করে ছালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দোআ করলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফেরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, হে আল্লাহ! এ অবস্থায় যদি সে মারা যায় তবে লোকেরা বলবে, মহিলাটি একে হত্যা করেছে। তখন সে জ্ঞান ফিরে পেল। এভাবে দুবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকটে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর।
সারাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তাআলা কাফেরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদীকে হাদিয়া হিসাবে দিয়েছে?[23]
খ. তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করা : আবূ উমামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّهُ دَأْبُ الصَّالِحِيْنَ قَبْلَكُمْ وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ. ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক।[24]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ، ‘আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক রাতেই নিকটবর্তী আকাশে (১ম আকাশে) অবতীর্ণ হন, যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং বলতে থাকেন, কে আছে যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে যে আমার নিকট কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব এবং কে আছে যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।[25] সুতরাং এসময়ে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে বালা-মুছীবত  থেকে  আশ্রয়  প্রার্থনা  করলে  তিনি তা থেকে
মুক্তি দিবেন।
গ. যিকর করা : যিকর করা আল্লাহর করুণা লাভের মাধ্যম। তাই বালা-মুছীবত আসলে বেশী বেশী আল্লাহর যিকর করার মাধ্যমে তাঁর রহমত লাভের চেষ্টা করা উচিত। যাতে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে বান্দাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَاذْكُرُوا اللهَ، ‘নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দুটির গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে তখনই আল্লাহর (যিকর) স্মরণ করবে।[26]
ঘ. ছাদাক্বাহ করা : জান-মালের উপরে বিপদাপদ ও আল্লাহর অসন্তোষ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হচ্ছে দান-ছাদাক্বাহ করা। আর অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা। আল্লাহ বলেন,إِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيْبٌ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী (আরাফ ৭/৫৬)। তিনি আরো বলেন,مَا عَلَى الْمُحْسِنِيْنَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيْمٌ، ‘বস্ত্ততঃ সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে কোনরূপ অভিযোগ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান (তওবা ৯/৯১)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُوْرِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ ظِلِّ صَدَقَتِهِ- ‘নিশ্চয়ই দান কবরের শাস্তিকে মিটিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার দানের ছায়াতলে ছায়া গ্রহণ করবে।[27]
তিনি আরো বলেন, صَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِيُ غَضَبَ الرَّبِّ- ‘গোপন দান প্রতিপালকের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়।[28]
হাফেয ইবনুল ক্বায়্যিম (রহঃ) বলেন,فإن للصدقة تأثيراً عجيباً في دفع أنواع البلاء ولو كانت من فاجر أو من ظالم بل من كافر، فإن الله تعالى يدفع بها عنه أنواعاً من البلاء، وهذا أمر معلوم عند الناس خاصتهم وعامتهم، وأهل الأرض كلهم مقرون به لأنهم جربوه. ‘দান-ছাদাক্বার অত্যাশ্চর্য প্রভাব রয়েছে বিভিন্ন প্রকার বালা-মুছীবত প্রতিরোধে। যদিও সে (দানকারী) পাপী, অত্যাচারী, এমনকি ছোট-খাট কুফরীকারী হয়। আল্লাহ তাআলা দানের দ্বারা দানকারী থেকে নানা ধরনের বালা-মুছীবত প্রতিহত করেন, যা নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট সকল মানুষের জানা বিষয়। দুনিয়াবাসী এর দ্বারা স্থায়ীত্ব লাভ করে। কেননা তারা তা দ্বারা পরীক্ষিত।[29]
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,أَنَّ الصَّدَقَةَ تَدْفَعُ الْعَذَابَ وَأَنَّهَا قَدْ تُكَفِّرُ الذُّنُوْبَ، ‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বা আযাব প্রতিরোধ করে এবং তা গোনাহ মিটিয়ে দেয়।[30]
২. বেশী বেশী নেক আমল বা সৎকাজ করা : আমলে ছালেহের মাধ্যমে আপতিত বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,صَنَائِعُ المَعْرُوْفِ تَقِي مَصَارِعَ السُّوْءِ وَالآفَاتِ وَالْهَلَكَاتِ، وَأَهْلُ المَعْرُوْفِ فِي الدُّنْيَا هُمْ أَهْلُ الْمَعْرُوْفِ فِي الآخِرَةِ، ‘সৎকর্ম করা বালা-মুছীবত, বিপদাপদ ও ধ্বংস থেকে রক্ষার মাধ্যম। আর দুনিয়াতে যিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্গত, আখিরাতে তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।[31]
হাফেয ইবনুল ক্বায়্যিম (রহঃ) বলেন,وَمِنْ أَعْظَمِ عِلَاجَاتِ الْمَرَضِ فِعْلُ الْخَيْرِ وَالْإِحْسَانِ وَالذّكْرُ وَالدّعَاءُ وَالتّضَرّعُ وَالِابْتِهَالُ إلَى اللهِ وَالتّوْبَةُ وَلِهَذِهِ الْأُمُورِ تَأْثِيْرٌ فِيْ دَفْعِ الْعِلَلِ وَحُصُوْلِ الشّفَاءِ، ‘আর রোগ থেকে আরোগ্যের বড় প্রতিষেধক হল সৎকাজ করা, দান-ছাদাক্বা করা, যিকর-আযকার ও দোআ করা, কাকুতি-মিনতি করা এবং বিনীত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করা। রোগ প্রতিরোধে এবং আরোগ্য লাভে এসব কাজের প্রভাব রয়েছে।[32]
৩. আল্লাহর নিকটে বিনীতভাবে দোআ করা : আযাব-গযব ও বিপদাপদ থেকে রক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহর নিকটে বিনীতভাবে দোআ করা। কাকুতি-মিনতি সহকারে তাঁর নিকটে পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর সন্তোষ কামনা করা। তাহলে আল্লাহ দোআ কবুল করবেন এবং পাপীদেরকে ধ্বংস করবেন না। আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ، فَلَوْلا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ،
আমরা তোমার পূর্বেকার সম্প্রদায় সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হ’ল না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখালো (আনআম ৬/৪২-৪৩)। তিনি আরো বলেন,وَمَا أَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَخَذْنَا أَهْلَهَا بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُوْنَ، ‘কোন জনপদে যখন আমরা কোন নবী পাঠাই, তখন সেখানকার অধিবাসীদেরকে (পরীক্ষা করার জন্য) নানাবিধ কষ্ট ও বিপদে আক্রান্ত করি। যাতে তারা অনুগত হয় (আরাফ ৭/৯৪)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، وَإِنَّهُمَا لاَ يَخْسِفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ، وَإِذَا كَانَ ذَاكَ فَصَلُّوْا وَادْعُوْا حَتَّى يُكْشَفَ مَا بِكُمْ. ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দুটোর গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন গ্রহণ হবে, তা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ছালাত আদায় করবে এবং দোআ করতে থাকবে। এ কথা নবী করীম (ছাঃ) এ কারণেই বলেছেন যে, সেদিন তাঁর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ)-এর মৃত্যু হয়েছিল এবং লোকেরা সে ব্যাপারে পরস্পর বলাবলি করছিল।[33]
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের জন্য নিম্নোক্ত দোআগুলো পড়া যায়।
ক. দোআ ইউনুস পড়া : রাসূল (ছাঃ) বলেন,ألاَ أُخْبِرُكمْ بِشَيْءٍ إذَا نَزَلَ بِرَجُلٍ مِنْكمْ كَرْبٌ أوْ بَلاءٌ مِنْ أمْرِ الدُّنْيا دَعَا بِهِ فَفُرِّجَ عَنْهُ دُعَاءُ ذِيْ النُّوْنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أنْتَ سُبْحَانَكَ إنِّّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ، ‘আমি তোমাদেরকে এমন কোন বিষয়ের সংবাদ দিব যে, তোমাদের কারো উপরে যখন দুনিয়াবী কোন কষ্ট-ক্লেশ অথবা বালা-মুছীবত নাযিল হয়, তখন তার মাধ্যমে দোআ করলে তা দূরীভূত হয়। তাহলো মাছ ওয়ালা ইউনুস (আঃ)-এর দোআ- ‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাক ইন্নী কুনতু মিনায যলেমীন।[34]
খ. اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ ‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনূনি ওয়াল জুযা-মি ওয়া মিন সাইয়িইল আসক্বা-ম। (হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেতরোগ, মস্তিষ্ক বিকৃতি, কুষ্ঠ এবং সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে)।[35]
গ. أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ ‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্টকারিতা হতে পানাহ চাচ্ছি)।[36]
৪. আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা : আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করলে আল্লাহ খুশি হন এবং ক্রন্দনকারীকে রক্ষা করেন। যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা বলেন,وَيَخِرُّوْنَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا، ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়চিত্ততা আরও বৃদ্ধি পায় (ইসরা ১৭/১০৯)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِى الضَّرْعِ وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِىْ سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ. ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে যাবে না। দুধ যেমন গাভীর ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথের ধূলা এবং জাহান্নামের আগুন এক সাথে জমা হবে না।[37] তিনি আরো বলেন, عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِى سَبِيلِ اللهِ. ‘দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়।[38] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ خَافَ أَدْلَجَ وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ أَلاَ إِنَّ سِلْعَةَ اللهِ الْجَنَّةُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে সে রাতে ইবাদত করে আর যে রাতে ইবাদত করে সে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যায়। মনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সম্পদ দামী। মনে রেখ নিশ্চয়ই আল্লাহর সম্পদ হচ্ছে জান্নাত।[39]
৫. আক্রান্ত এলাকায় গমন না করা : যে এলাকায় মহামারী দেখা দেয়, সেখানে গমন করতে রাসুল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ. ‘তোমরা যখন কোন স্থানে প্লেগের ছড়াছড়ি শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখানে যেয়ো না। আর যখন প্লেগ এমন জায়গায় দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছ, তখন সে স্থান হতে পালানোর লক্ষ্যে বের হয়ো না।[40]
পরিশেষে বলব, উপরোক্ত নির্দেশনা সমূহ পালনের মাধ্যমে আমরা বালা-মুছীবত নাযিল হওয়ার পূর্বে তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। আর বালা-মুছীবত আপতিত হয়ে গেলে সৎকর্ম, তত্তবা-এস্তেগফার ও দোআর মাধ্যমে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বালা-মুছীবত থেকে বিশেষ করে চলমান করোনা মহামারী থেকে রক্ষা করুন-আমিন।
দলিলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২; ছহীহুল জামে হা/৭৯৫৮; যিলালুল জান্নাহ হা/৩১৬-৩১৮।
[2]. হাকেম হা/৬৩০৩; যিলালুল জান্নাহ হা/৩১৫, সনদ ছহীহ।
[3]. বুখারী হা/৪৯৫৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল অধ্যায়, ‘অহি-র সূচনা অনুচ্ছেদ। 
[4]. নববী, শরহু মুসলিম, ২/২০২।
[5]. শরহুল কিরমানী আলা ছহীহিল বুখারী, ১ম খন্ড (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়া), পৃঃ ২০৬।
[6]. বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল ক্বারী শরহু ছহীহিল বুখারী, (বৈরূত : দারু ইহয়াইত তুরাছিল আরাবী), ১/৬৩ পৃঃ।
[7]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৩৩৯।
[8]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৫৩।
[9]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৮/১৪৬; কুরতুবী ১৮/১৫৯; ফাতহুল কাদীর ৭/২৪৩।
[10]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৭/১৬৯ পৃঃ, সূরা হা-মীম সাজদাহ ১৭-১৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।
[11]. মুসলিম হা/২০১৪; মিশকাত হা/৪২৯৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৭; ইরওয়া হা/৩৯; ছহীহুল জামে হা/৭৬০৮।
[12]. তিরমিযী হা/৩৫৪৮; ছহীহুল জামে হা/৩৪০৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬৩৪; মিশকাত হা/২২৩৯।
[13]. আবূদাঊদ হা/৫০৮৮; তিরমিযী হা/৩৩৮৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৯; মিশকাত হা/২৩৯১।
[14]. তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২; ছহীহুল জামে হা/৩৩৮৩।
[15]. আহমাদ হা/৪৭৮৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২০০, সনদ ছহীহ।
[16]. বুখারী হা/৬৩৪৭, ৬৬১৬; মুসলিম হা/২৭০৭; মিশকাত হা/২৪৫৭।
[17]. আবূদাঊদ হা/৫০৯৫; মিশকাত হা/২৪৪৩; ছহীহল জামে হা/৪৯৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬০৫।
[18]. বুখারী হা/১০৪৪; নাসাঈ হা/১৫০০; মিশকাত হা/১৪৮৩।
[19]. ফৎহুল বারী, ২/৫৩১ পৃঃ; উমদাতুল ক্বারী, ৭/৭১ পৃঃ; মিরআত ৫/১৪৮ পৃঃ।
[20]. ইবনুল কায়্যেম, আল-ওয়াবিলুছ ছায়ব মিনাল কামিতি তাইয়েব, (কায়রো : দারুল হাদীছ, ৩য় প্রকাশ, ১৯৯৯ খৃঃ), ১/১৪২ পৃঃ।
[21]. বুখারী হা/১০৫২; ছহীহুল জামে হা/১৬৪৪।
[22]. বুখারী হা/৩৪৩৬; মুসলিম হা/২৫৫০।
[23]. বুখারী হা/২২১৭, ২৬৩৫, ২৩৫৭, ২৩৫৮, ৫০৮৪, ৬৯৫০।
[24]. তিরমিযী হা/৩৫৪৯; মিশকাত হা/১২২৭; ছহীহুল জামে হা/৪০৭৯; ইরওয়া হা/৪৫২।
[25]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩।
[26]. বুখারী হা/১০৫৮।
[27]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮১৬/৩৪৮৪।
[28]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৪০।
[29]. আল-ওয়াবিলুছ ছায়ব মিনাল কামিতি তাইয়েব, ১/৩১ পৃঃ।
[30]. ফৎহুল বারী, ১/৪০৬।
[31]. ত্বাবারানী, আল-আওসাত; ছহীহুল জামে হা/৩৭৯৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৮৯০। 
[32]. ইবনু কায়্যেম, যাদুল মাআদ, ৪/১২৪।
[33]. বুখারী হা/১০৬৩, ১০৪০; মিশকাত হা/১৪৮৩।
[34]. ছহীহুল জামে হা/২৬০৫; ছহীহাহ হা/১৭৪৪।
[35]. আবূদাঊদ হা/১৫৫৪; মিশকাত হা/২৪৭০।
[36]. মুসলিম হা/২৭০৮; মিশকাত হা/২৪২২।
[37]. তিরমিযী হা/১৬৩৩, ২৩১১; নাসাঈ হা/৩১০৮; মিশকাত হা/৩৮২৮; ছহীহুল জামে হা/৭৭৭৮। 
[38]. তিরমিযী হা/১৬৩৯; মিশকাত হা/৩৮২৯; ছহীহুল জামে হা/৪১১৩।
[39]. তিরমিযী, আত-তারগীব হা/৪৭৮৭।
[40]. বুখারী হা/৩৪৭৩; মুসলিম হা/২২১৮।


রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যত বাণী ও তার বাস্তবতা

(হাদিসগুলো সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন থেকে নেয়া হয়েছে)

সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৩৬
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যেনাকারী যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পানে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। আর লুটতরাজ ও ছিনতাইকারী যখন লুটতরাজ ও ছিনতাই করে এবং লোকজন তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তখন সে মুমিন থাকে না। [৩২৬৮]
 [৩২৬৮] সহীহুল বুখারী ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, মুসলিম ৫৭, তিরমিযী ২৬২৫, নাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, আবূ দাউদ ৪৬৮৯, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৮৭, ৮৭৮১, ৯৮৫৯,
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৩৭
ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ছিনতাই ও লুটতরাজ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [৩২৬৯]
 [৩২৬৯] তিরমিযী ১১২৩। মিশকাত ২৯৪৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৪৩
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেনঃ তোমাদের জন্য আপসোস! তোমাদের জন্য দুর্ভাগ্য! আমার পরে তোমরা পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে কুফরীতে ফিরে যেও না। [৩২৭৫]
 [৩২৭৫] সহীহুল বুখারী ৬১৬৬, ৬৮৬৮, ৭০৭৭, মুসলিম ৬৬, নাসায়ী ৪১২৫, ৪১২৬, ৪১২৭, আবূ দাউদ ৪৬৮৬, আহমাদ ৫৫৫৩, ৫৫৭২, ৫৭৭৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫০
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মাত পথভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। তোমরা মতভেদ দেখতে পেলে অবশ্যই সর্ববৃহৎ দলের সাথে থাকবে। [৩২৮২]
তাহকীক আলবানীঃ প্রথম বাক্যটি ব্যতীত খুবই দুর্বল কারণ প্রথম বাক্যটি সহীহ।
 [৩২৮২] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মিশকাত ১৭৩-১৭৪, দঈফাহ ২৮৯৬, সহীহ আল-জামি‘ ১৮৪৮
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫১
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। তিনি অবসর হলে আমরা বললাম, বা তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আপনি নামায দীর্ঘায়িত করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি আশাব্যঞ্জক ও ভীতিজনক নামায পড়েছি। আমি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট আমার উম্মাতের জন্য তিনটি জিনিস প্রার্থনা করেছি। তিনি আমাকে দু’টি দান করেছেন এবং একটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমি তাঁর নিকট প্রার্থনা করলাম যে, তাদের ব্যতীত তাদের শত্রুপক্ষ যেন আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তিনি আমাকে এটা দান করলেন। আমি তাঁর নিকট আরো প্রার্থনা করলাম যে, আমার গোটা উম্মাতকে যেন পানিতে ডুবিয়ে মারা না হয়। তিনি এটাও আমাকে দান করেছেন। আমি তাঁর নিকট আরো প্রার্থনা করলাম যে, আমার উম্মাত যেন পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে। তিনি আমার এ প্রার্থনা আমাকে ফেরত দিলেন। [৩২৮৩]
 [৩২৮৩] আহমাদ ২১৫৭৭, ২১৬০৩, ২১৬২০। সহীহাহ ১৭২৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫২
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার জন্য পৃথিবীকে গুটিয়ে দেয়া হলো। ফলে আমি তার পূর্ব-পশ্চিম সবদিক দেখতে পেলাম। আমাকে হরিদ্রাভ বা লাল এবং সাদা বর্ণের দু’টি খনিজ ভাণ্ডার অর্থাৎ সোনা-রূপার ভাণ্ডার দেয়া হয়েছে। আমাকে বলা হলো, পৃথিবীর যতখানি তোমার জন্য গুটানো হয়েছিল, তোমার রাজত্ব সেই সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। অতঃপর আমি মহান আল্লাহর নিকট তিনটি জিনিস প্রার্থনা করলামঃ আমার উম্মাত যেন ব্যাপকভাবে দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তার দ্বারা ধ্বংস না হয়। তাদেরকে দলে উপদলে বিচ্ছিন্ন করে তাদের এক দলকে অপর দলের সশস্ত্র সংঘর্ষের স্বাদ আস্বাদন না করানোর আবেদন করলাম। আমাকে বলা হলো, “আমি কোন ফয়সালা করলে তা মোটেও পরিবর্তিত হওয়ার নয়। তবে আমি তোমার উম্মাতকে দুর্ভিক্ষপীড়িত করে তাদের ধ্বংস করবো না এবং তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল বিরোধী শক্তিকে যুগপৎ একত্র করবো না, যতক্ষণ না তারা পরস্পরকে ধ্বংস করে এবং একে অপরকে হত্যা করে”। আমার উম্মাতের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হলে কিয়ামত পর্যন্ত আর অস্ত্রবিরতি হবে না। আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে অধিক ভয় করছি পথভ্রষ্ট নেতৃবৃন্দের। অচিরেই আমার উম্মাতের কোন কোন গোত্র বা সম্প্রদায় প্রতিমা পূজায় লিপ্ত হবে এবং আমার উম্মাতের কতক গোত্র মুশরিকদের সাথে যোগ দিবে। অচিরেই কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী দাবি করবে। আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, মহান আল্লাহর চূড়ান্ত নির্দেশ (কিয়ামত) না আসা পর্যন্ত। তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আবূ হাসান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) এ হাদীস বর্ণনা শেষে বললেন, কতই না ভয়াবহ এ হাদীস। [৩২৮৪]
 [৩২৮৪] মুসলিম ৩৫৪৪, ৫১৪৪, তিরমিযী ২১৭৬, ২২২৯, আবূ দাঊদ ৪২৫২, আহমাদ ২১৮৮৮, ২১৮৯৭, ২১৯৪৬, দারিমী ২০৯। রাওদুন নাদীর ৬১, ১১৭০, সহীহাহ ৪/২৫২, ১৯৫৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫৪
আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে যখন সকাল বেলা মানুষ মুমিন থাকবে, বিকেল বেলা কাফের হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে দ্বীনের জ্ঞানের বদৌলতে জীবিত রাখবেন তার কথা স্বতন্ত্র। [৩২৮৬]
তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল, তবে (আরবী) শব্দ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ যা ৩৯৬১ নং হাদীসের মাঝে আসবে।
 [৩২৮৬] দারিমী 338। দঈফাহ 3696।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫৬
আবদুর রহমান বিন আবদে রব্বিল কা‘বাহ থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছে দেখলাম, তিনি কাবা ঘরের ছায়ায় উপবিষ্ট এবং তার চারপাশে জনতার ভীড়। আমি তাকে বলতে শুনলাম, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফরে ছিলাম। তিনি এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলেন। আমাদের কেউ তাঁবু টানাচ্ছিলাম, কেউ তীর-ধনুক ঠিক করছিলো এবং কেউ পশুপাল চরাতে গেলো। এই অবস্থায় তাঁর মুয়াজ্জিন সলাতের জন্য সমবেত হতে ডাক দিলেন। আমরা সমবেত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ আমার পূর্বে যে নবীই অতিক্রান্ত হয়েছেন, তিনিই তাঁর উম্মাতের জন্য কল্যাণকর বিষয় বলে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর বিষয়ে লিপ্ত হতে তাদের নিষেধ করেছেন। আর তোমাদের এই উম্মাতের প্রথম পর্যায়ে রয়েছে নিরাপত্তা এবং শেষ পর্যায়ে বালা-মুসীবত আসতে থাকবে এবং তোমাদের জ্ঞাত অন্যায় কার্যকলাপের প্রসার ঘটবে। তারপর এমনভাবে বিপদ আসতে থাকবে যে, একটি অপরটির (পরেরটির) চেয়ে লঘুতর মনে হবে। মুমিন ব্যক্তি বলতে থাকবে, এই বিপদে আমার ধ্বংস অনিবার্য। অতঃপর সে বিপদ কেটে যাবে এবং আরেকটি বিপদ এসে পতিত হবে। তখন মুমিন ব্যাক্তি বলবে, হায়! এ বিপদে আমার ধ্বংস অনিবার্য। অতঃপর সেই বিপদও দূরীভূত হবে। অতএব যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে এবং জান্নাতে প্রবেশ লাভ করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন আল্লাহর প্রতি ও আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমানদার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং লোকেদের সাথে এমন ব্যবহার করে, যেমনটি সে নিজের জন্য কামনা করে। যে ব্যক্তি ইমামের নিকট আনুগত্যের বায়আত করলো এবং প্রতিশ্রুতি দিলো, সে যেন যথাসাধ্য তার আনুগত্য করে। পরে অপর কেউ নেতৃত্ব দখলে তার সাথে বিবাদে লিপ্ত হলে এই শেষোক্ত জনকে হত্যা করো। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি (একথা শুনে) লোকেদের ভীড় থেকে আমার মাথা বের করলাম এবং আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ হাদীস শুনেছেন? তিনি তার হাত দ্বারা তার দু’ কানের দিকে ইশারা করে বলেন, আমার দু’ কান তাঁর নিকট এ হাদীস শুনেছে এবং আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। [৩২৮৮]
 [৩২৮৮] মুসলিম ১৮৪৪, নাসায়ী ৪১৯১, আবূ দাঊদ ৪২৪৮, আহমাদ ৬৪৬৫, ৬৭৫৪। সহীহাহ ২৪১। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫৭
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অচিরেই এমন যুগ আসবে যখন উত্তম লোকেদেরকে ছাঁটাই করা হবে এবং নিকৃষ্ট লোকেরা বহাল থাকবে, তাদের অংগীকার, প্রতিশ্রুতি ও আমানত বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা মতবিরোধে লিপ্ত হবে, তখন তোমাদের কী অবস্থা হবে? তিনি এই বলে তার আঙ্গুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢুকালেন। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যখন অবস্থা এরূপ হবে তখন আমরা কী করবো? তিনি বলেনঃ যেসব বিষয় তোমরা উত্তম দেখবে তা গ্রহণ করবে এবং যা কিছু কদর্য লক্ষ্য করবে তা বর্জন করবে, নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা-ফিকির করবে এবং সাধারণের কার্যকলাপ বর্জন করবে। [৩২৮৯]
 [৩২৮৯] আবূ দাঊদ ৪৩৪২, সহীহাহ ২০৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৫৯
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেনঃ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে “হারজ” হবে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! “হারজ” কী? তিনি বলেনঃ ব্যাপক গণহত্যা। কতক মুসলমান বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এখন এই এক বছরে এত মুশরিককে হত্যা করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তা মুশরিকদের হত্যা করা নয়, বরং তোমরা পরস্পরকে হত্যা করবে; এমনকি কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে, চাচাতো ভাইকে এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনকে পর্যন্ত হত্যা করবে। কতক লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তখন কি আমাদের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অধিকাংশ লোকের জ্ঞান লোপ পাবে এবং অবশিষ্ট থাকবে নির্বোধ ও মুর্খ। অতঃপর আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি ধারণা করেছিলাম যে, হয়তো এ যুগ তোমাদেরকে ও আমাকে পেতো, তাহলে তা থেকে আমার ও তোমাদের বের হয়ে আসা মুশকিল হয়ে যেতো, যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, আমরা ঐ অনাচারে যতো সহজে জড়িয়ে পড়বো তা থেকে আমাদের নিষ্ক্রমণ ততোধিক দুষ্কর হবে। [৩২৯১]
 [৩২৯১] আহমাদ ১৯২১৮। সহীহাহ ১৬৮২।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৬১
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় চরম বিপর্যয় আসতে থাকবে। ঐ সময় সকাল বেলা যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যাবেলা কাফের হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যাবেলা যে ব্যক্তি মুমিন থাকবে সে সকাল বেলা কাফের হয়ে যাবে। এ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে, দণ্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে এবং চলমান ব্যক্তি দ্রুত ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। এ সময় তোমরা তোমাদের ধনুক ভেঙ্গে ফেলো, ধনুকের ছিলা কেটে ফেলো এবং তোমাদের তরবারিগুলো পাথরের উপর আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলো। তোমাদের কারো ঘরে বিপর্য়য় ঢুকে পড়লে সে যেন আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’ পুত্রের মধ্যে উত্তম জনের (হাবিল) ন্যায় হয়ে যায়। [৩২৯৩]
 [৩২৯৩] আবূ দাঊদ ৪২৫৯। ইরওয়া’ ২৪৫১, সহীহাহ ১৫৩৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৭০
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে এবং তাকে দূষণীয় মনে করে না। অথচ এই কথার দরুন সত্তর বছর ধরে সে জাহান্নামে পতিত হতে থাকবে। [৩৩০২]
 [৩৩০২] সহীহুল বূখারী ৬৪৭৭, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪, মুওয়াত্তা’ মালিক ১৮৪৯। সহীহাহ ৫৪০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৮১
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: অচিরেই এমন কতক নৈরাজ্যকর বিপর্যয় সৃষ্ঠি হবে, যার সম্মুখভাগে থাকবে জাহান্নামের দিকে আহবানকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে তুমি যদি বৃক্ষের কান্ড আঁকড়ে ধরে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে পারো তবে তা তোমার জন্য ওদের কারো আহবানে সাড়া দেওয়া থেকে উত্তম। [৩৩১৩]
 [৩৩১৩] সহীহুল বূখারী ৩৬০৬, মুসলিম ১৮৪৭, আবূ দাঊদ ৪২৪৪, আহমাদ ২২৯৩৯। সহীহাহ ১৭৯১।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯১
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইহূদী জাতি একাত্তর ফেরকায় (উপদলে) ভিক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মাত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। [৩৩২৩]
 [৩৩২৩] তিরমিযী ২৪৬০, আবূ দাঊদ ৪৫৯৬, আহমাদ ২৭৫১০। রাওদুন নাদীর ৫০, সহীহাহ ২০৩, আত তা’লীকু আলাত তানকীল ২/৫৩।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯২
আওফ বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইহূদী জাতি একাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী এবং অবশিষ্ট সত্তর ফেরকা জাহান্নামী। খৃস্টানরা বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একাত্তর ফেরকা জাহান্নামী এবং একটি ফেরকা জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! অবশ্যই আমার উম্মাত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। তার মধ্যে একটি মাত্র ফেরকা হবে জান্নাতী এবং অবশিষ্ট বাহাত্তরটি হবে জাহান্নামী। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ফেরকাটি জান্নাতী। তিনি বলেনঃ জামাআত (একতাবদ্ধ দলটি)। [৩৩২৪]
 [৩৩২৪] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আয যিলাল ৬৩, সহীহাহ ১৪৯২।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯৩
আনাস মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল একাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মাত বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। একটি ফেরকা ব্যতীত সকলেই হবে জাহান্নামী। সেটি হচ্ছে জামাআত। [৩৩২৫]
[৩৩২৫] আহমাদ ১১৭৯৮, ১২০৭০। আয যিলাল ৬৪, সহীহাহ ২০৪, ১৪৯২।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯৪
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (পথভ্রষ্ট হয়ে) তোমাদের পূর্ববতীদের রীতিনীতি অনুসরণ করবে বাহুতে বাহুতে, হাতে হাতে, বিঘতে বিঘতে। এমনটি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও ঢোকে, তবে তোমরাও অবশ্যই তাতে ঢোকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (পূর্ববর্তীগণ কি) ইহুদী-খৃস্টান জাতি? তিনি বলেনঃ তবে আর কারা! [৩৩২৬]
 [৩৩২৬] সহীহুল বুখারী ৭৩১৯, আহমাদ ৮১০৯, ৮১৪০, ৮২২৮, ৮৫৮৭, ২৭২২৭, ১০২৬৩, ১০৪৪৬। আয যিলাল ৭২, ৭৪, ৭৫। তাখরীজু ইসলাহিল মাসাজিদ ৩৮।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯৭
আমর বিন আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি আমির বিন লুয়াই-এর মিত্র ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) কে বাহরাইনে জিয্য়া আদায় করার জন্য পাঠান। তিনি বাহরাইনবাসীদের সাথে সন্ধিচুক্তি করেছিলেন এবং আলা ইবনুল হাদরামী (রাঃ) কে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবায়দা (রাঃ) বাহরাইন থেকে ধন-সম্পদ নিয়ে (মদীনায়) ফিরে আসেন। আনসারগণ তার আগমনের কথা শুনতে পেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযান্তে ঘুরে বসলে তারা তাঁর সামনে হাযির হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলেনঃ আমার মনে হয় তোমরা শুনতে পেয়েছো যে, আবূ উবায়দা বাহরাইন থেকে কিছু নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা বলেন, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং তা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে এই আশা রাখো। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। আমি তোমাদের ব্যাপারে আশংকা করি যে, তোমাদের পূর্বকালের লোকেদের জন্য পৃথিবী যেমনিভাবে প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিলো, তদ্রূপ তা তোমাদের জন্যও প্রশস্ত হবে। অতঃপর তোমরাও তাদের মত (সম্পদের) প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়বে। অবশেষে এই প্রতিযোগিতা তাদের মত তোমাদেরও ধ্বংস ডেকে আনবে। [৩৩২৯]
 [৩৩২৯] সহীহুল বূখারী ৩১৫৮, মুসলিম ২৯৬১, তিরমিযী ২৪৬২, আহমাদ ১৬৭৮৩। ইরওয়া’ ৫/৮৯,৯০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৩৯৯৮
উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না। [৩৩৩০]
 [৩৩৩০] সহীহুল বূখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৮৪০, ২৮৪১, তিরমিযী ২৮৮০, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২। সহীহাহ ২৭০১।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০০২
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক নারীকে সুগন্ধি মেখে মসজিদে যেতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে মহাপরাক্রমশালীর বান্দী! কোথায় যাচ্ছো? সে বললো, মসজিদে। তিনি বললেন, সেজন্য সুগন্ধি মেখেছ? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী সুগন্ধি মেখে মসজিদে যায় তার নামায কবুল হয় না, যাবত না সে (তা) ধুয়ে ফেলে। [৩৩৩৪]
 [৩৩৩৪] আবূ দাঊদ ৪১৭৪, আত তা’লীকু আলা ইবনু খুযায়মাহ ১৬৮২, আত তা’লীকুর রাগীব ৩/৯৪, সহীহাহ ১০৩১।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০০৩
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে নারী সমাজ! তোমরা অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো এবং অধিক সংখ্যায় ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি তোমাদের বহু নারীকে জাহান্নামবাসী দেখেছি। তাদের মধ্যকার এক বুদ্ধিমতী নারী বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কী কসুর যে, আমাদের অধিক সংখ্যক দোযখবাসী হবে? তিনি বলেনঃ তোমরা বেশী বেশী অভিশাপ দাও এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকো। আমি তোমাদের স্বল্পবুদ্ধ ও দ্বীনের ব্যাপারে সংকীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধিমান বিচক্ষণ পুরুষদের উপর বিজয়ী হতে পারঙ্গম আর কাউকে দেখিনি। মহিলা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! বিবেক-বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে কমতি কী? তিনি বলেনঃ বুদ্ধির স্বল্পতা এই যে, তোমাদের দু’জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান। আর তোমাদের দ্বীনের স্বল্পতা এই যে, তোমরা কয়েক দিন নামায থেকে বিরত থাকো এবং রমাদান মাসের কায়েক দিন রোযা থেকে বিরত থাকো। [৩৩৩৫]
 [৩৩৩৫] মুসলিম ৮০, আবূ দাঊদ ৪৬৭৯, আহমাদ ৫৩২১। ইরওয়া’ ১৯০, আয যিলাল ৯৫৫, ৯৫৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০০৪
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে এমন সময় আসার পূর্বে যখন তোমরা দুআ’ করবে কিন্তু তা কবূল হবে না। [৩৩৩৬]
 [৩৩৩৬] আহমাদ ২৪৭২৭। আত তা’লীকুর রাগীব ৩/১৭২, আর রাদ্দু আলাল বালীক ৩২১। তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০০৫
কায়স বিন আবূ হাযিম থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো (অনুবাদ): “হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না” (সূরা মাইদাঃ ১০৫)। আমরা রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ করতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্ট না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। আবূ উসামা (রাঃ)-এর অপর সনদে এভাবে উক্ত হয়েছেঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। [৩৩৩৭]
[৩৩৩৭] তিরমিযী ২১৬৮। মিশকাত ৫১৪২, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮। সহীহাহ ১৫৬৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০০৯
জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। [৩৩৪১]
 [৩৩৪১] আবু দাউদ ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১,১৮৭৬৮। আত তা’লীকুর রাগীব ৩/১৭০।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০১০
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সমুদ্রের মুহাজিরগণ (হাবশায় হিজরতকারী প্রথম দল) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলে, তিনি বলেনঃ তোমার হাবশায় যেসব অনিষ্ঠজনক বিষয় প্রত্যক্ষ করেছো তা কি আমার নিকট ব্যক্ত করবে না? তাদের মধ্য থেকে এক যুবক বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! একদা আমরা বসা ছিলাম, আমাদের সামনে দিয়ে সেখানকার এক বৃদ্ধা রমণী মাথায় পানি ভর্তি কলসসহ যাচ্ছিল। সে তাদের এক যুবককে অতিক্রমকালে সে তার কাঁধে তার এক হাত রেখে তাকে ধাক্কা দিলে সে উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে যায় এবং এর ফলে তার কলসটি ভেঙ্গে যায়। সে উঠে দাঁড়িয়ে যুবকের দিকে তাকিলে বললো, “হে দাগাবাজ! তুমি অচিরেই জানতে পারবে যখন আল্লাহ তাআলা ইনসাফের আসনে উপবিষ্ট হয়ে পূর্বাপর সকল মানুষকে সমবেত করবেন এবং হাত-পাগুলো তাদের কৃতকর্মের বিবরন দিবে তখন তুমিও জানতে পারবে সেদিন তোমার ও আমার অবস্থা কি হবে। জাবির(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই বৃদ্ধা সত্য কথাই বলেছে, সত্য কথাই বলেছে। আল্লাহ তাআলা সেই উম্মাতকে কিভাবে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন, যাদের সবলদের থেকে দুর্বলদের প্রাপ্য আদায় করে দেয়া হয় না।” [৩৩৪২]
[৩৩৪২] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মুখতাসারুল উলু ৫৯/৪৬।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০১৩
আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ান ঈদের দিন ঈদের মাঠে মিম্বার বের (স্থাপন) করলো এবং ঈদের সালাতের পূর্বে খুতবা দিলো। এক ব্যাক্তি বলল, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের বিপরীত করেছো, তুমি আজকের এই দিনে মিম্বার বের (স্থাপন) করছো, অথচ এই দিন তা বের করা (ঈদের মাঠে মিম্বার নেয়া) হতো না। উপরন্তু তুমি সালাতের আগে খুতবা শুরু করছো, অথচ সালাতের পূর্বে খুতবা দেয়া হতো না। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, এই ব্যাক্তি তার দায়িত্ব পালন করেছে। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে এবং তার দৈহিক শক্তি দিয়ে প্রতিহত করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন তা সেভাবেই প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন মুখের কথা দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন মনে মনে ঘৃণা করে। তা হলো সবচেয়ে দুর্বল ঈমান। [৩৩৪৫]
 [৩৩৪৫] সহীহুল বূখারী ৯৫৬, মুসলিম ৪৯, তিরমিযী ২১৭২, নাসায়ী ৫০০৮, ৫০০৯, আবূ দাঊদ ১১৪০, ৪৩৪০, আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১৪৬৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০১৯
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। [৩৩৫১]
 [৩৩৫১] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহাহ ১০৬।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০২০
আবু মালিক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপাসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তাআলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করবেন। [৩৩৫২]
[৩৩৫২] আবূ দাঊদ ৩৬৮৮, আহমাদ ২২৩৯৩। মিশকাত ৪২৯২, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ ১/১৩৮-১৩৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০২২
সাওবান(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সৎকর্ম ব্যাতীত অন্য কিছু আয়ুস্কাল বাড়াতে পারে না এবং দুআ’ ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। [৩৩৫৪]
তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) কথাটি ব্যতীত হাসান
হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০২৩
সা’দ বিন আবু ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় কঠিন। আর যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ করে।[৩৩৫৫]
 [৩৩৫৫] তিরমিযী ২৩৯৮, আহমাদ ১৪৮৪,১৪৯৭,১৫৫৮,১৬১০, দারিমী ২৭৮৩। মিশকাত ১৫৬২, সহীহাহ ১৪৩।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০২৭
আনাস বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখের সামনের পাটির চারটি দাঁতের একটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং তাঁর মাথায় আঘাত লাগায় তাঁর মুখমন্ডল বেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তিনি তাঁর মুখমন্ডলের রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেনঃ যে জাতি তাদের নবীর মুখমন্ডল রক্তরঞ্জিত করে সেই জাতি কিভাবে মুক্তি পেতে পারে। অথচ তিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনের আহবান জানাচ্ছেন। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন(অনুবাদ): “এই বিষয়ে তোমার কিছু করণীয় নাই” (সূরা আল ইমরানঃ১২৮)। [৩৩৫৯]
 [৩৩৫৯] মুসলিম ১৭৯১, তিরমিযী ৩০০২, ৩০০৩, আহমাদ ১১৫৪৫, ১২৪২০, ১২৬৭০, ১২৭২৫, ১৩২৪৫, ১৩৬৫৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৩১
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনুরূপ বিরাট হবে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যে কেউ তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে কেউ তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি। [৩৩৬৩]
 [৩৩৬৩] তিরমিযী ২৩৯৬। মিশকাত ১৫৬৬, সহীহাহ ১৪৬।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৩৫
মুআবিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ দুনিয়াতে বালা-মুসীবত ও ফিতনা-ফাসাদ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। [৩৩৬৭]
 [৩৩৬৭] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৩৬
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই লোকেদের উপর প্রতারনা ও ধোঁকাবাজির যুগ আসবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী গন্য করা হবে, আমানতের খিয়ানতকারীকে আমানতদার আমানতদারকে খিয়ানতকারী গন্য করা হবে এবং রুওয়াইবিয়া হবে বক্তা। জিজ্ঞাসা করা হলো, রুওয়াইবিয়া কী? তিনি বলেনঃ নীচ প্রকৃতির লোক সে জনগনের হর্তাকর্তা হবে। [৩৩৬৮]
 [৩৩৬৮] আহমাদ ৭৮৫২। সহীহাহ ১৮৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৩৭
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না এক ব্যাক্তি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলবে, হায়! আমি যদি এই কবরবাসীর পরিবর্তে এই স্থানে থাকতাম। তার ধর্মের কারনে এই কথা বলবে না, বরং বালা-মুসীবতের কারনে বলবে। [৩৩৬৯]
 [৩৩৬৯] সহীহুল বূখারী ৭১১৫, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, আহমাদ ৭১৮৬, ১০৪৮৫, মুওয়াত্তা’ মালিক ৫৭০। সহীহাহ ৫৭৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৩৯
আনাস বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দিনে দিনে বিপদাপদ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। দুনিয়াতে অভাবঅনটন ও দুর্ভিক্ষ বাড়তেই থাকবে এবং কৃপণতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নিকৃষ্ট লোকেদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। ঈসা বিন মারয়াম (আঃ)-ই মাহদী। [৩৩৭১]
তাহকীক আলবানীঃ “.....আরবী ” বাক্যটি ব্যাতীত খুবই দুর্বল।
 [৩৩৭১] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। রাওদুন নাদীর ১৪৩,৬৪৭, দঈফাহ ৭৭।
হাদিসের মানঃ অন্যান্য
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৪২
আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধকালে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর ভেতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আওফ! ভেতরে এসো।আমি বললাম,হে আল্লাহর রাশুল! আমি কি সম্পুর্ন প্রবেশ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ, সম্পুর্নভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আওফ! কিয়ামতের পূর্বকার ছয়টি আলামত স্বরন রাখবে। সেগুলোর একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু। আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। তিনি বলেনঃ তুমি বলো, প্রথমটি। অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদাত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন। এরপর তোমাদের সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি মাথাপিছু শত দীনার (স্বর্নমুদ্রা) পেয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হবে না। তোমাদের মধ্যে এমন বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা থেকে কোন মুসলমানের ঘরই রেহাই পাবেনা। এরপর বনু আসফার (রোমক খৃস্টান) এর সাথে তোমাদের সন্ধি হবে। কিন্তু তারা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। প্রতিটি পতাকার অধীনে থাকবে বারো হাজার সৈন্য। [৩৩৭৪]
 [৩৩৭৪] সহীহুল বূখারী ৩১৭৬, আবূ দাঊদ ৫০০০, আহমাদ ২৩৪৫১, ২৩৪৫৯, ২৩৪৬৫, ২৩৪৭৬। ফাদাইলু আহলুশ শাম ৩০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৪৪
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকজনের সাথে বসা ছিলেন। তখন তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? তিনি বলেনঃ জিজ্ঞাসিত ব্যাক্তি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞাত নয়। তবে আমি তোমাকে এর কতক আলামত সম্পর্কে অবহিত করবো। যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে, এটি কিয়ামতের একটি আলামত। যখন নগ্নপদ ও নগ্ন দেহবিশিষ্ট লোকেরা জনগনের নেতা হবে, এটি কিয়ামতের একটি আলামত। যখন মেষপালের রাখালেরা সুরম্য অট্টালিকায় বসবাস করবে। এগুলো হলো কিয়ামতের আলামত। এমন পাঁচটি বিষয় আছে যে সম্পর্কে আল্লাহ ব্যাতীত আর কেউ জানে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): “কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকট রয়েছে। তিনি বৃষ্টি বর্ষন করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে রয়েছে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না সে কোন স্থানে মারা যাবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত”(সূরা লোকমানঃ৩৪)। [৩৩৭৬]
 [৩৩৭৬] সহীহুল বূখারী ৫০, ৪৭৭৭, মুসলিম ৯, ১০, নাসায়ী ৪৯৯১, আহমাদ ৯২১৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৪৫
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের জন্য এমন একটি হাদীস বর্ণনা করবো না, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শুনেছি? আমার পরে সেই হাদীস আর কেউ তোমাদের নিকট বর্ণনা করবে না। আমি তাঁর কাছে শুনেছি যে, কিয়ামতের কতক আলামত এই যে, এলেম উঠিয়ে নেয়া হবে, অজ্ঞতার বিস্তার ঘটবে, যেনা-ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, মদ পান করা হবে, পুরুষ লোকের অধিক হারে মৃত্যু হবে, অধিক হারে নারীরা বেঁচে থাকবে, এমনকি পঞ্চাশজন নারীর রক্ষণাবেক্ষণকারী হবে একজনমাত্র পুরুষ। [৩৩৭৭]
 [৩৩৭৭] সহীহুল বূখারী ৮০, ৬৮০৮, মুসলিম ২৬৭১, তিরমিযী ২২০৫, আহমাদ ১২১১৮, ১২৩৯৫, ১২৬৮২, ১২৮১৮, ১৩৪৭০, ১৩৬৬৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৪৭
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ধন-সম্পদের প্রাচুর্য, কলহ-বিপর্যয়ের প্রকাশ ও হারাজ-এর আধিক্য না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। লোকজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারাজ কী? তিঁনি বলেনঃ গণহত্যা, গণহত্যা, গণহত্যা (তিনবার একথা বলেন)। [৩৩৭৯]
 [৩৩৭৯] মাজাহ ৪০৫২, সহীহুল বূখারী ৮৫, ১০৩৬, ১৪১২, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, আহমাদ ৭১৪৬, ৭৪৯৬, ৭৮১২, ৯১২৯, ৯৮১৭, ২৭৩৫১, ২৭৭৮৯, ১০৪৮১, ১০৪০৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৪৮
যিয়াদ বিন লাবীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেনঃ এটা এলেম বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময়ের কথা। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এলেম কিভাবে বিলুপ্ত হবে? অথচ আমরা কুরআন পড়ি, আমাদের সন্তানদের তা পড়াই এবং আমাদের সন্তানরাও তাদের সন্তানদের কিয়ামত পর্যন্ত তা শিক্ষা দিবে। তিঁনি বললেনঃ হে যিয়াদ! তোমার মা তোমার জন্য বিলাপ করুক! আমি তোমাকে মদীনার শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান ব্যক্তি মনে করতাম। এই যে ইহূদী ও খৃস্টানরা কি তাওরাত ইনজীল পড়ে না? কিন্তু তারা তো এই দুই কিতাবে যা আছে তদনুযায়ী কাজ করে না। [৩৩৮০]
[৩৩৮০] আহমাদ ১৭০১৯। মিশকাত ২৪৫, ২৭৭, তাখরীজুল ইলম লি আবূ খায়সামাহ ৫২, তাখরজু ইকতিদা’ আল-ইলম ৮৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৫২
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যমানা সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, এলেম হ্রাস পাবে এবং কৃপণতার বিস্তার ঘটবে, কলহ-বিপর্যয়ের বিস্তার ঘটবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারজ কী? তিঁনি বলেনঃ গণহত্যা। [৩৩৮৪]
 [৩৩৮৪] মাজাহ ৪০৪৭, সহীহুল বূখারী ৮৫, ১০৩৬, ১৪১২, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, আহমাদ ৭১৪৬, ৭৪৯৬, ৭৮১২, ৯১২৯, ৯৮৭১, ২৭৩৫১, ২৭৭৮৯, ১০৪৮১।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৫৫
আবূ সারীহাহ হুযায়ফাহ বিন আসীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এক হুজরা থেকে আমাদের দিকে উঁকি মেরে তাকালেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেনঃ দশটি নিদর্শন (আলামত) প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, মসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব, ধোঁয়া নির্গত হওয়া, দাব্বাতুল আরদ প্রকাশ পাওয়া, ইয়াজূয-মাজূজের আবির্ভাব, ঈসা বিন মরিয়ম আলাইহিস সালামের (উর্দ্ধজগত থেকে) অবতরণ, তিনটি ভূমিধ্বস প্রাচ্যদেশে একটি, পাশ্চাত্যে একটি এবং আরব উপদ্বীপে একটি, এডেনের নিম্নভূমি আব্য়ান এর এক কূপ থেকে অগ্ন্যুৎপাত হবে যা মানুষকে হাশরের ময়দানে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। তারা রাতে নিদ্রা গেলে এই আগুন থেমে থাকবে এবং তারা চলতে থাকলে আগুনও তাদের অনুসরণ করবে (তারা দুপুরে বিশ্রাম নিলে, আগুনও তখন তাদের সাথে থেমে থাকবে)। [৩৩৮৭]
 [৩৩৮৭] মুসলিম ২৯০১, তিরমিযী ২১৮৩, আবূ দাঊদ ৪৩১১, আহমাদ ১৫৭৮, ১৭১০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৫৬
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ছয়টি বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই সৎ কাজে অগ্রবর্তী হও। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, ধোঁয়া নির্গত হওয়া, দাব্বাতুল আরদ এর আত্মপ্রকাশ, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং বিশেষ বিপদ ও ব্যাপক বিপদ। [৩৩৮৮]
[৩৩৮৮] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহাহ ৭৫৯।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৫৯
আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে চেহারা বিকৃতি, ভূমিধ্বস ও প্রস্তরবৃষ্টি হবে। [৩৩৯১]
 [৩৩৯১] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। রাওদুন নাদীর ১০০৪, সহীহাহ ১৭৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৬০
সাহল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মতের শেষ যমানায় ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি ও প্রস্তরবৃষ্টি হবে। [৩৩৯২]
 [৩৩৯২] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সহীহাহ ৪/৩৯৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৬১
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট এসে বললো, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম জানিয়েছে। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, সে নতুন জিনিস (বিদ’আত) উদ্ভাবন করেছে। যদি বাস্তবিকই সে নতুন কোন প্রথা উদ্ভাবন করে থাকে, তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম দিও না। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের অথবা এই উম্মাতের মধ্যে চেহারা বিকৃতি, ভূমিধ্বস ও প্রস্তরবৃষ্টি হবে। এটা কাদারিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘটিত হবে। [৩৩৯৩]
 [৩৩৯৩] [তিরমিযী ২১৫২, আবূ দাউদ ৪৬১৩। মিশকাত ১০৬, ১১৬, রাওদুন নাদীর ১০০৪।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৬৮
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। তা উদিত হলে সমগ্র পৃথিবীবাসী তা দেখে ঈমান আনবে। কিন্তু পূর্বে যারা ঈমান আনেনি তাদের এই ঈমান তাদের কোন উপকারে আসবে না। [৩৪০০]
 [৩৪০০] সহীহুল বূখারী ৪৬৩৫, ৪৬৩৬, ৬৫০৬, ৭১২১, মুসলিম ১৫৭, ১৫৮, তিরমিযী ৩০৭২, আবূ দাঊদ ৪৩১২, আহমাদ ৭১২১, ২৭৩৫৫, ৮৩৯৩, ৮৬৩৩, ৮৯২১, ১০৪৭৬। রাওদুন নাদীর ১১২
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭১
হুযায়ফাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাজ্জালের বাম চোখ হবে অন্ধ এবং তার মাথায় থাকবে পর্যাপ্ত চুল। তার সাথে থাকবে (কৃত্রিম) জান্নাত ও জাহান্নাম। আসলে তার জাহান্নাম হবে জান্নাত এবং জান্নাত হবে জাহান্নাম। [৩৪০৩]
 [৩৪০৩] মুসলিম ২৯৩৪, আহমাদ ২২৭৩৯, ২২৮৫৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭২
আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, দাজ্জাল প্রাচ্যের খোরাসান অঞ্চল থেকে বের হবে। এমন সব জাতি তার অনুসরণ করবে যাদের মুখাবয়ব হবে ঢালের মত চ্যাপ্টা ও মাংসল। [৩৪০৪]
 [৩৪০৪] তিরমিযী ২২৩৭। রাওদুন নাদীর ১১৮৪, তাখরীজুল মুখতার ৩৩-৩৭, সহীহাহ ১৫৯১।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭৫
নাওয়াস বিন সামআন অল-কিলাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন একদা, সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি তার ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতার কথা তুলে ধরেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, সে হয়তো খেজুর বাগানের ওপাশেই অবস্থান করছে। আমরা বিকেল বেলা পুনরায় তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি আমাদের মাঝে দাজ্জাল-ভীতির আলামত লক্ষ্য করে বলেনঃ তোমাদের কী হয়েছে? আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ভোরবেলা আপনি আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং তার ভয়াবহতা ও নিকৃষ্টতার কথা এমন ভাষায় তুলে ধরেছেন যে, আমাদের মনে হলো যে, সে বোধহয় খেজুর বাগানের পাশেই উপস্থিত আছে। তিনি বলেনঃ আমার কাছে দাজ্জালই তোমাদের জন্য অধিক ভয়ংকর বিপদ। সে যদি আমার জীবদ্দশায় তোমাদের মাঝে আত্মপ্রকাশ করে তবে আমিই তোমাদের পক্ষে তার প্রতিপক্ষ হবো। আর আমার অবর্তমানে যদি সে আত্মপ্রকাশ করে তাহলে তোমরাই হবে তার প্রতিপক্ষ। আর প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহই আমার পরিবর্তে সহায় হবে। সে (দাজ্জাল) হবে কুঞ্চিত চুলবিশিষ্ট, স্থির দৃষ্টিসম্পন্ন যুবক এবং আবদুল উযযা বিন কাতান সদৃশ। তোমাদের কেউ তাকে দেখলে সে যেন তার বিরুদ্ধে সূরা কাহফের প্রাথমিক আয়াতগুলো পাঠ করে। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী খাল্লা নামক স্থান থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। অতঃপর সে ডানে-বামে ফেতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে বেড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা দৃঢ়তার সাথে স্থির থাকবে।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে পৃথিবীতে কতো দিন অবস্থান করবে? তিনি বলেনঃ চল্লিশ দিন। তবে এর এক দিন হবে এক বছরের সমান, এক দিন হবে এক মাসের সমান, এক দিন হবে এক সপ্তাহের সমান এবং অবশিষ্ট দিনগুলো হবে তোমাদের বর্তমান দিনগুলোর সমান। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে একদিনের নামায পড়লেই কি তা আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বলেনঃ তোমরা সে দিনের সঠিক অনুমান করে নিবে এবং তদনুযায়ী নামায পড়বে। রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, সে পৃথিবীতে কতো দ্রুত গতিতে বিচরণ করবে? তিনি বলেনঃ বায়ু চালিত মেঘমালার গতিতে।
অতঃপর সে কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে নিজের দলে ডাকবে। তারা তার ডাকে সাড়া দিবে এবং তার উপর ঈমান আনবে। অতঃপর সে আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণের আদেশ দিবে এবং তদনুযায়ী বৃষ্টি বর্ষিত হবে। অতঃপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিবে এবং তদনুযায়ী ফসল উৎপাদিত হবে। অতঃপর বিকেল বেলা তাদের পশুপাল পূর্বের চেয়ে উচুঁ কুঁজবিশিষ্ট, মাংসল নিতম্ববিশিষ্ট ও দুগ্ধপুষ্ট স্তনবিশিষ্ট হয়ে (খোঁয়াড়ে) ফিরে আসবে। কিন্তু তারা তার আহবান প্রত্যাখ্যান করবে। ফলে সে তাদের কাছ থেকে ফিরে যাবে। পরদিন ভোরবেলা তারা নিজেদেরকে নিঃস্ব অবস্থায় পাবে এবং তাদের হাতে কিছুই থাকবে না। অতঃপর সে এক নির্জন পতিত ভূমিতে গিয়ে বলবে, তোর ভেতরের ভাণ্ডার বের করে দে। অতঃপর সে সেখান থেকে প্রস্থান করবে এবং তথাকার ধনভান্ডার তার অনুসরণ করবে, যেভাবে মৌমাছিরা রাণী মৌমাছির অনুসরণ করে।
অতঃপর সে এক পূর্ণ যৌবন তরুণ যুবককে তার দিকে আহবান করবে। তাকে সে তরবারির আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। তার দেহের প্রতিটি টুকরা দু’ ধনুকের ব্যবধানে গিয়ে পড়বে। অতঃপর সে তাকে ডাক দিবে, অমনি সে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তার কাছে এসে দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) কে পাঠাবেন। তিনি হলুদ রং –এর দু, টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় দু’ জন ফেরেশতার পাখায় ভর করে দামিশকের পূর্ব প্রান্তের এক মসজিদের সাদা মিনারে অবতরণ করবেন। তিনি তাঁর মাথা উত্তোলন করলে বা নোয়ালে ফোঁটায় ফোঁটায় মণি– মুক্তার ন্যায় (ঘাম) পড়তে থাকবে। তার নিঃশ্বাস যে কাফেরকেই স্পর্শ করবে সে তৎক্ষণাৎ মারা যাবে। আর তিনি “লুদ্দ’’ নামক স্থানের দ্বারদেশে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এমন এক সম্প্রদায়ে আসবেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা (দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে) রক্ষা করেছেন। তিনি তাদের মুখমণ্ডলে হাত বুলাবেন এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা করবেন। তাদের এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট ওহী পাঠাবেন, হে ঈসা! আমি আমার এমন বান্দাদের পাঠাবো যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নাই। অতএব তুমি আমার বান্দাদের তূর পাহাড়ে সরিয়ে নাও।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইয়াজূজ-মাজূজের দল পাঠাবেন। আল্লাহ তাআলার বাণী অনুযায়ী তাদের অবস্থা হলোঃ “তারা প্রতিটি উচ্চভূমি থেকে ছুতটে আসবে” ( সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬)। এদের প্রথম দলটি (সিরিয়ার) তাবারিয়া হ্রদ অতিক্রমকালে এর সমস্ত পানি পান করে শেষ করে ফেলবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দল এখান দিয়ে অতিক্রমকালে বলবে, নিশ্চয় কোন কালে এতে পানি ছিলো।
আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) তাঁর সঙ্গীগণসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তারা (খাদ্যাভাবে) এমন এক কঠিন অবস্থায় পতিত হবেন যে, তখন একটি গরুর মাথা তাদের একজনের জন্য তোমাদের আজকের দিনের একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়েও মূল্যবান (উত্তম) মনে হবে। তারপর আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সাথীগণ আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে দুআ’ করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের (ইয়াজূজ-মাজূজ বাহিনীর) ঘাড়ে মহামারীরূপে নাগাফ নামক কীটের সৃষ্টি করবেন। ভোরবেলা তারা এমনভাবে ধ্বংস হবে যেন একটি প্রাণের মৃত্যু হয়েছে।
তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সাথীগণ (পাহাড় থেকে) নেমে আসবেন। তারা সেখানে এমন এক বিঘত জায়গাও পাবেন না, যেখানে সেগুলোর পচা দুর্গন্ধময় রক্ত-মাংস ছড়িয়ে নাই। তারা মহান আল্লাহর নিকট দুআ’ করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের নিকট উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা ঘাড়বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি পাঠাবেন। সেই পাখিগুলো তাদের মৃতদেহগুলো তুলে নিয়ে আল্লাহর ইচ্ছামত স্থানে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের উপর এমন বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা সমস্ত ঘরবাড়ি ,স্থলভাগ ও কঠিন মাটির স্তরে গিয়ে পৌঁছবে এবং সমস্ত পৃথিবী ধুয়ে মুছে আয়নার মতো ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
অতঃপর যমীনকে বলা হবে, তোর ফল উৎপন্ন কর এবং তোর বরকত ফিরিয়ে দে। তখন অবস্থা এমন হবে যে, একদল লোকের আহারের জন্য একটি ডালিম যথেষ্ট হবে এবং একদল লোক এর খোসার ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারবে। আল্লাহ তাআলা দুধেও এতো বরকত দিবেন যে, একটি দুধেল উষ্ট্রীর দুধ একটি বৃহৎ দলের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি গাভীর দুধ একটি গোত্রের লোকেদের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি বকরীর দুধ একটি ক্ষুদ্র দলের জন্য যথেষ্ট হবে।
তাদের এ অবস্থায় আচানক আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দিয়ে মৃদুমন্দ বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহিত করবেন। এ বায়ু তাদের বগলের অভ্যন্তরভাগ স্পর্শ করে প্রত্যেক মুসলমানের জান কবয করবে। তখন অবশিষ্ট নর-নারী গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে যেনায় লিপ্ত হবে। তাদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। [৩৪০৭]
 [৩৪০৭] মুসলিম ২৯৩৭, তিরমিযী ২২৪০, আবূ দাঊদ ৪৩২১। তাখরীজু ফাদাইলুশ শাম ২৫, সহীহাহ ১৭৮০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭৬
নাওওয়াস বিন সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানগণ অচিরেই ইয়াজূজ ও মাজূজের তীর-ধনুক, বর্শাফলক এবং ঢালসমূহ সাত বছর ধরে জ্বালানী কাঠরূপে ভস্মীভূত করবে। [৩৪০৮]
 [৩৪০৮] মুসলিম ২৯৩৭, তিরমিযী ২২৪০, আবূ দাঊদ ৪৩২১। সহীহাহ ১৯৪০।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭৮
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইনসাফগার ইমাম হিসাবে অবতরণ না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযয়া মওকুফ করবেন এবং ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি তা কেউ গ্রহণ করবে না। [৩৪১০]
 [৩৪১০] সহীহুল বূখারী ২২২২, ২৪৭৬, ৩৪৪৮, মুসলিম ১৫৫, তিরমিযী ২২৩৩, আবূ দাঊদ ৪৩২৪, আহমাদ ১০০৩২, ১০৫৬১। সহীহাহ ২৪৫৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৭৯
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইয়াজূজ-মাজূজকে ছেড়ে দেয়া হবে, অতঃপর তারা বের হবে, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে ছুটে আসবে” (সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬) এবং তারা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। মুসলমানগণ তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট মুসলমানরা তাদের শহরে ও দূর্গে আশ্রয় নিবে। সেখানে তারা তাদের গবাদি পশুও সাথে করে নিয়ে যাবে। ইয়াজূজ ও মাজূজের অবস্থা এই হবে যে, তাদের লোকগুলো একটি নহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তার পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে, এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট থাকবে না। এরপর এদের দলের অবশিষ্টরা তাদের অনুসরণ করবে। তখন তাদের মধ্যে কেউ বলবে, এখানে হয়তো কখনো পানি ছিলো। পৃথিবীতে তারা আধিপত্য বিস্তার করবে। অতঃপর তাদের কেউ বলবে, আমরা তো পৃথিবীবাসীদের থেকে অবসর হয়েছি। এবার আমরা আসমানবাসীদের বিরুদ্ধে লড়বো। শেষে এদের কেউ আকাশের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করবে। তা রক্তে রঞ্জিত হয়ে ফিরে আসবে। তখন তারা বলবে, আমরা আসমানবাসীদেরও হত্যা করেছি। তাদের এ অবস্থায় থাকতে আল্লাহ তাআলা টিড্ডি বাহিনী পাঠাবেন এবং সেগুলো ঘাড়ে প্রবেশ করার ফলে এরা সকলে ধ্বংস হয়ে একে অপরের উপর পড়ে মরে থাকবে। মুসলমানগণ সকালবেলা উঠে তাদের বীভৎস চীৎকার শুনতে না পেয়ে বলবে, এমন কে আছে যে তার নিজের জীবনকে বিক্রয় করবে এবং ইয়াজূজ-মাজূজেরা কী করছে তা দেখে আসবে? তখন তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি ইয়াজূজ-মাজূজ কর্তৃক নিহত হওয়ার পূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে বের হয়ে এসে এদেরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে মুসলমানদের ডেকে বলবে, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের শত্রুরা ধ্বংস হয়েছে। লোকজন (তার ডাক শুনে) বের হয়ে আসবে এবং তাদের গবাদি পশু চারণভূমিতে ছেড়ে দিবে। সেগুলোর চারণভূমিতে ইয়াজূজ-মাজূজের গোশত ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। ওরা তাদের গোশত খেয়ে বেশ মোটাতাজা হবে, যেমন কখনো ঘাস– পাতা খেয়ে মোটা তাজা হয়। [৩৪১১]
 [৩৪১১] [ আহমাদ ১১৩২৩ । সহীহাহ ১৭৯৩ ।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৮০
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় ইয়াজূজ-মাজূজ প্রতিদিন সুড়ঙ্গ পথ খনন করতে থাকে। এমনকি যখন তারা সূর্যের আলোকরশ্মি দেখার মতো অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন তাদের নেতা বলে, তোমরা ফিরে চলো, আগামী কাল এসে আমরা খনন কাজ শেষ করবো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা (রাতের মধ্যে) সেই প্রাচীরকে আগের চেয়ে মজবুত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। যখন তাদের আবির্ভাবের সময় হবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মানবকুলের মধ্যে পাঠাতে চাইবেন, তখন তারা খনন কাজ করতে থাকবে। শেষে যখন তারা সূর্যরশ্মি দেখার মত অবস্থায় পৌঁছবে তখন তাদের নেতা বলবে, এবার ফিরে চলো, ইনশাআল্লাহ আগামী কাল অবশিষ্ট খনন কাজ সম্পন্ন করবো। তারা ইনশাআল্লাহ শব্দ ব্যবহার করবে। সেদিন তারা ফিরে যাবে এবং প্রাচীর তাদের রেখে যাওয়া ক্ষীণ অবস্থায় থেকে যাবে। এ অবস্থায় তারা খনন কাজ শেষ করে লোকালয়ে বের হয়ে আসবে এবং সমুদ্রের পানি পান করে শেষ করবে। মানুষ তাদের ভয়ে পালিয়ে দূর্গে মধ্যে আশ্রয় নিবে। তারা আকাশপানে তাদের তীর নিক্ষেপ করবে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে তা তাদের দিকে ফিরে আসবে। তখন তারা বলবে, আমরা পৃথিবীবাসীদের চরমভাবে পরাভূত করেছি এবং আসমানবাসীদের উপরও বিজয়ী হয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ঘাড়ে এক ধরনের কীট সৃষ্টি করবেন। কীটগুলো তাদের হত্যা করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! ভূপৃষ্ঠের গবাদি পশুগুলো সেগুলোর গোশত খেয়ে মোটাতাজা হয়ে মাংসল হবে।[৩৪১২]
 [৩৪১২] তিরমিযী ৩১৫৩। সহীহাহ ১৭৩৫৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৮৩
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাহদী আমার উম্মাত থেকেই আবির্ভুত হবে। তিনি কমপক্ষে সাত বছর অন্যথায় নয় বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। তার যুগে আমার উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে ইতোপূর্বে কখনো তদ্রুপ হয়নি। পৃথিবী তার সর্ব প্রকার খাদ্যসম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না। সম্পদের স্তুপ গড়ে উঠবে। লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহদী, আমাকে দান করুন। তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও। [৩৪১৫]
[৩৪১৫] [তিরমিযী ২২৩২, আবূ দাউদ ৪২৮৫। রাওদুন নাদীর ৬৪৭।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৮৫
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাহদী আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে একরাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন। [৩৪১৭]
 [৩৪১৭] আহমাদ ৬৪৬ সহীহাহ ২৩৭১ রাওদুন নাদীর ২/৫৩।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৮৬
সাঈদ ইবনুল মুস্যায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। আমরা পরস্পর মাহদী সম্পকে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, মাহদী ফাতেমার বংশধর। [৩৪১৮]
 [৩৪১৮] আবূ দাঊদ ৪২৮৪। দঈফাহ ১/১০৮, রাওদুন নাদীর ২/৫৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯০
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হবে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা মাওয়ালীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সেনাবাহিনী পাঠাবেন। তারা হবে সমগ্র আরবে সর্বাধিক দক্ষ অশ্বারোহী এবং উন্নততর সমরাস্ত্রে সজ্জিত। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের দ্বারা দ্বীন ইসলামের সাহায্য করবেন। [৩৪২২]
 [৩৪২২] হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তাখরীজু ফাদাইলুশ শাম ২৮, সহীহাহ ২৭৭৭।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯১
নাফি’ বিন উতবাহ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্ তা তোমাদের অধীনে করে দিবেন। অতঃপর তোমরা রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্ সেখানেও তোমাদের বিজয়ী করবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্ তার বিরুদ্ধেও তোমাদের জয়যুক্ত করবেন। জাবির (রাঃ) বলেন, রোম বিজিত না হওয়া পর্যন্ত দাজ্জাল আবির্ভূত হবে না।[৩৪২৩]
 [৩৪২৩] মুসলিম ২৯০০, আহমাদ ১৮৪৯৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯৫
আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অচিরেই তোমাদের ও বনু আসফারের (রোমক) মধ্যে চুক্তি হবে। অতঃপর তারা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তারা তোমাদের বিরুদ্ধে (যুদ্ধের জন্য) আশিটি পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে। প্রতিটি পতাকার অধীনে থাকবে বারো হাজার সৈন্য। [৩৪২৭]
 [৩৪২৭] সহীহুল বূখারী ৩১৭৬, আবূ দাঊদ ৫০০০, আহমাদ ২৩৪৫১, ২৩৪৫৯, ২৩৪৬৫, ২৩৪৭৬। সহীহ আল-জামি’ ২৯৯১।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯৬
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়াতম সংঘটিত হবে না, যাবত না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমী পাদুকা পরিধান করে। কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবত না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যারা হবে ক্ষুদ্র চোখ বিশিষ্ট।[৩৪২৮]
 [৩৪২৮] সহীহুল বুখারী ২৯২৮, ২৯২৯, মুসলিম ২৯১্ তিরমিযী ২২১৫, আবু দাউদ ৪২০৩, ৪৩০৪, আহমাদ ৭২২২, ৭৬১৯, ৭৯২৭, ২৭৪৬০, ৮৯২১, ৯৭৯৬, ১০০২৪, ১০৪৭৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯৭
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুদ্র চোখ এবং উন্নত ও চপ্টা নাকবিশিষ্ট এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তাদের চেহারা হবে রক্তিম বর্ণ। তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যাদের পাদুকা হবে পশমযুক্ত।[৩৪২৯]
 [৩৪২৯] সহীহুল বূখারী ২৯২৮, ২৯২৯, মুসলিম ২৯১২, তিরমিযী ২২১৫, আবূ দাঊদ ৪২০৩, ৪৩০৪, আহমাদ ৭২২২, ৭৬১৯, ৭৯২৭, ২৭৪৬০, ৮৯২১, ৯৭৯৬, ১০০২৪, ১০৪৭৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯৮
আমর বিন তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যাদের মুখাবয়ব হবে চওড়া ও রক্তিমাভ। কিয়ামতের আরেকটি নিদর্শন এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমী জুতা পরিধান করে। [৩৪৩০]
 [৩৪৩০] সহীহুল বূখারী ২৯২৭, আহমাদ ২০১৫১, ২০১৫৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদিস নং-৪০৯৯
আবূ সাঈদ আল-খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবত না তোমরা ক্ষুদ্র চোখ এবং চেপ্টা মুখাবয়ববিশিষ্ট এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের চোখ হবে ফড়িং-এর চোখের মত। তাদের চেহারাগুলো হবে রক্তিমাভ। তারা পশমী জুতা পরিধান করবে এবং আত্মরক্ষার্থে চামড়ার ঢাল ব্যবহার করবে। তারা তাদের ঘোড়াগুলো খেজুর গাছের সাথে বেঁধে রাখবে। [৩৪৩১]
[৩৪৩১] আহমাদ ১০৮৬৮। সাহীহাহ ২৪২৯।
হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ 
(সমাপ্ত)


মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিলফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা- আলিয়াঢাকাবাংলাদেশ।
========================================================
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)
===============================================
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিলফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা- আলিয়াঢাকাবাংলাদেশ।

--------------------------------------------------------------

(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে BBC এর উপর ক্লিক করুন।


(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।

GAIBANDHA PEACE TV


(3) ইসলামের সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে ও এক সাথে পেতে MSHRC এর উপর ক্লিক করুন।


-------------------------------------------------------------------

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...