বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন
বিষয়ের প্রশ্নোত্তর
(পর্ব-০৬)
সম্পাদকীয়ঃ
আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান
করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল
১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ
তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ
১০২।
আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ
যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত
রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত
হা/৫১৩৭)।
প্রশ্নোত্তর
জানুয়ারি/২০১৭
প্রশ্ন (১/১২১) : জনৈকা স্ত্রী তার স্বামীকে অশ্লীল ভাষায়
গালিগালাজ করে। শরী‘আতে এর শাস্তি কি?
উত্তর : কোন মুসলিমকে গালি দেওয়া কাবীরা গুনাহ (নববী, শরহ মুসলিম
হা/৬৪-এর ব্যাখ্যা)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার
সাথে যুদ্ধ করা কুফরী (বুখারী হা/৪৮; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪)।
লাক্বীত্ব বিন ছাবেরাহ (রাঃ) বলেন, ‘একদিন আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
বললাম, আমার একজন স্ত্রী রয়েছে যে নোংরা কথা বলে ও গালি-গালাজ করে। তিনি বললেন,
তালাক দিয়ে দাও। আমি বললাম, তার ঘরে আমার একটি সন্তান রয়েছে এবং সে আমার পুরানো
সঙ্গিনী। তিনি বললেন, তাকে উপদেশ দাও। যদি তার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকে, তাহ’লে সে
তা গ্রহণ করবে। তবে তুমি তোমার শয্যাসঙ্গিনীকে বাঁদীর ন্যায় মারবে
না’ (আবুদাঊদ হা/১৪২; মিশকাত হা/৩২৬০)।
প্রশ্ন (২/১২২) : বিবাহের পর স্বামী স্ত্রীর নিকটে মোহর আদায় থেকে
ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে এবং স্ত্রীও ক্ষমা করে দিয়েছে। এরূপ করা জায়েয হয়েছে কি?
-আল-আমীন, পোতাহাটী, ঝিনাইদহ।
উত্তর : এরূপ করা জায়েয নয়। কারণ মোহর পরিশোধ করা ফরয। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা
স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে
তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ
কর’ (নিসা ৪/৪)। অতএব এটাকে ফরয মনে করেই বিয়ের সময় স্ত্রীকে নগদ অথবা পরে যত
দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হবে। বিয়ের রাতে বা মৃত্যুর পূর্বে স্ত্রীর নিকট মোহরানা
মাফ করিয়ে নেওয়ার রেওয়াজ নিঃসন্দেহে প্রতারণা মূলক। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে
মোহর নগদ না দিলে স্ত্রী হালাল হয় না, একথা ভিত্তিহীন।
প্রশ্ন (৩/১২৩) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেহারা
স্বপ্নে দেখলে তার জন্য জাহান্নামের আযাব হারাম হয়ে যাবে। এ মর্মে ছহীহ কোন দলীল
আছে কি?
উত্তর :
উক্ত বর্ণনাটি ভিত্তিহীন (ফৎওয়া শায়খ বিন বায ৪/৪৪৫, ২৫/১২৬)। এছাড়াও তিরমিযীতে বর্ণিত ‘যে
আমাকে বা আমার কোন ছাহাবীকে দেখল, সে মুসলমানকে আগুন স্পর্শ করবে না’ বর্ণনাটিও
যঈফ (তিরমিযী হা/৩৮৫৮; যঈফুল জামে‘ হা/৬২৭৭)।
প্রশ্ন (৪/১২৪) : তাবলীগী কুতুবখানা থেকে প্রকাশিত ছহীহ বুখারীর
বঙ্গানুবাদে লেখা আছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর ৯৯টি নাম রয়েছে। এর সত্যতা আছে কি?
-যিয়াউর রহমান, আশুলিয়া, ঢাকা।
উত্তর : কথাটি ঠিক নয়। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। যেমন
তিনি বলেন, ‘আমার অনেকগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ। আমি মাহী; আমার
দ্বারা আল্লাহ সমস্ত কুফরী দূর করবেন। আমি হাশির; আমার পেছনে সমস্ত মানুষকে
একত্রিত করা হবে এবং আমি আকিব, যার পরে কোন নবী নেই (বুখারী হা/৪৮৯৬; মুসলিম
হা/২৩৫৪; মিশকাত হা/৫৭৭৬)। অন্য বর্ণনায় তিনি নিজেকে নবীউর রহমাহ (রহমতের নবী),
‘নবীউত তওবাহ’, ‘নাবীউল মালহামাহ’ (যুদ্ধের নবী) বলে আখ্যায়িত করেছেন (আহমাদ
হা/১৯৬৬৮; মুসলিম হা/২৩৫৫; মিশকাত হা/৫৭৭৭)। এছাড়া আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম
(ছাঃ)-কে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মুতাওয়াক্কিল (বুখারী হা/২১২৫),
মুবাশশির, হাদী, আমীন, মুয্যাম্মিল, শাহেদ, বাশীর, নাযীর ইত্যাদি। ইমাম নববী,
সুয়ূতী প্রমুখ বিদ্বানগণ কুরআনে উল্লেখিত নামসমূহকে তাঁর গুণবাচক নাম বলে আখ্যায়িত
করেছেন (তাহযীবু আসমাইল লুগাহ ১/৪৯; তানবীরুল হাওয়ালিক ১/২২৭)। কেউ কেউ রাসূল
(ছাঃ)-এর এক হাযার নাম আছে বলে উল্লেখ করেছেন (মু‘জামুল মানাহিল লাফযিয়া ৩৬১
পৃঃ)। তবে তা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
প্রশ্ন (৭/১২৭) : ফজরের ছালাতের পূর্বে গোসল ফরয হ’লেও ঠান্ডা লেগে
যাওয়ার ভয়ে আমি দুপুরে গোসল করি। এভাবে নিয়মিতভাবে ছালাত ক্বাযা করা শরী‘আতসম্মত
হবে কি?
-মৌসুমী, ফুলপুর, ময়মনসিংহ।
উত্তর : এটি
শরী‘আত সম্মত নয়। গরম পানি করে গোসল করবে। তার ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করে
ছালাত আদায় করবে (আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৫৩১)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস
সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার আশংকায় গোসল
না করে তায়াম্মুম করে সাথীদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করলাম। পরে সাথীরা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি
কি অপবিত্র অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার
কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম আল্লাহ বলেছেন, ‘নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো
না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ
হা/৩৩৪ ‘ঠান্ডা লাগার ভয় থাকলে অপবিত্র ব্যক্তি কি করবে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ;
ইরওয়া হা/১৫৪)। এছাড়া আহত ব্যক্তিও গোসল না করে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করতে
পারবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৬, ৩৬৭, ‘আহত ব্যক্তির তায়াম্মুম করা’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৮/১২৮) : আমেরিকায় সিটিজেনশীপ পাওয়ার জন্য ডিভি লটারীর
টিকিট ক্রয়ে কোন বাধা আছে কি?
-তোফায়েল আহমাদ, আশাশুনি, সাতক্ষীরা।
উত্তর : এরূপ লটারী বৈধ (দ্রঃ বুখারী হা/২৬৮৮ ‘কিতাবুশ
শাহাদাত’; আবূদাঊদ হা/৩১৩৮; নাসাঈ হা/৩৪৮৮; ইবনু মাজাহ হা/২৩৪৮)। তবে জীবিকা
অর্জনের জন্য অমুসলিম দেশে না গিয়ে মুসলিম দেশে অবস্থান করাই উচিৎ।
কারণ ঐসব দেশে দ্বীনী পরিবেশ ও স্বাধীনতা নেই। অতএব দুনিয়া অর্জনের চাইতে দ্বীন
রক্ষা করা অধিক যরূরী (শূরা ৪২/২০)
প্রশ্ন (১০/১৩০) : রাস্তায় সহ যেকোন স্থানে
হাঁটা-চলার সময় দৃষ্টি কোন দিকে থাকা উচিৎ? রাস্তায় চলার আদব কি কি?
-আয়নাল হক, কাদাকাটি, সাতক্ষীরা।
উত্তর : রাস্তায় চলার আদব হ’ল- দৃষ্টি অবনমিত রাখবে (নূর ২৪/৩০-৩১)।
এদিক সেদিক তাকাবে না (হাকেম হা/৭৭৯৪; ছহীহাহ হা/২০৮৬)। সতর্কতার সাথে পথ
চলবে, যাতে অন্যের বা নিজের কোন ক্ষতি না হয় (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ
হা/২৫০)। অহংকার পরিহার করে বিনয়ের সাথে পথ চলবে (ইসরা ১৪/৩৭; ফুরকান ২৫/৬৩)।
মধ্যম গতিতে পথ চলবে (লোকমান ৩১/১৯)। নারীরা রাস্তার মধ্যস্থল দিয়ে না চলে
একপার্শ্ব দিয়ে চলবে (আবুদাঊদ হা/৫২৭২; ইবনু হিববান, ছহীহাহ হা/৮৫৬)।
প্রশ্ন
(১১/১৩১) : সিজদার সময় দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাটির সাথে ঠেকিয়ে রাখা যাবে কি?
-রুস্তম আলী, সারদা, রাজশাহী।
উত্তর : না। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তুমি সিজদা করবে, তখন হাতের
তালু মাটিতে এবং উভয় কনুই উঁচু রাখবে (মুসলিম হা/৪৯৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
উঁচু করবে এবং খাড়া করে রাখবে (ইবনু হিববান হা/১৯১৬; মিশকাত হা/৮৮৯)। তিনি
বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন (সিজদায়) কুকুরের ন্যায় যমীনে হাত বিছিয়ে না
দেয়’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৮)।
প্রশ্ন (১২/১৩২) : ইস্তেখা-রার দো‘আ ফরয ছালাতের
শেষ তাশাহহুদের মধ্যে পাঠ করা যাবে কি?
-রুকসানা ইয়াসমীন, খুলনা।
উত্তর : যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) তা নফল ছালাতে পাঠের জন্য বলেছেন। জাবের
(রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে সকল কাজে ‘ইস্তেখা-রাহ’ শিক্ষা দিতেন,
যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন
কোন কাজের সংকল্প করবে, তখন ফরয ব্যতীত দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। অতঃপর বলবে,...
(বুখারী হা/১১৬২; মিশকাত হা/১৩২৩)। অতএব ইস্তেখা-রার দো‘আ নফল ছালাতে
পড়বে (নায়লুল আওত্বার ৩/৩৫৪, ‘ইস্তেখা-রাহ্’র ছালাত’ অনুচ্ছেদ; ছালাতুর রাসূল
(ছাঃ) ২৬৩ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৩/১৩৩) : আমাদের এখানে
একজন আলেম বলেছেন, জান্নাতীদেরকে সত্তর বছর যাবৎ
জান্নাতী গান শুনানো হবে। তারপর যথাক্রমে দাঊদ ও মুহাম্মাদ (ছাঃ) গান গাওয়ার পর
আল্লাহ তা‘আলা নিজেই গান গেয়ে শুনাবেন। এ বক্তব্যের কোন সত্যতা আছে কি?
-সাঈদ আহমাদ, বশীরহাট, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : এসব নিতান্তই ভিত্তিহীন বানোয়াট বক্তব্য। এমনকি আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল জান্নাতবাসীদের কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাবেন মর্মের বর্ণনাগুলোর কোনটি যঈফ
আবার কোনটি জাল (যঈফুল জামে‘ হা/১৮৩৪, ৪১৫৮; দায়লামী, মীযান ৪/৭৪; যঈফাহ
হা/১২৪৮, ৩২৮২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৪১১)। দাউদ (আঃ) আল্লাহর
নির্দেশে জান্নাতে তাঁর প্রশংসা করে গান গাইবেন মর্মে বর্ণিত বর্ণনাটিও
দুর্বল (মুসনাদু আবদ বিন হুমাইদ হা/৮৫১; যঈফুত তারগীব হা/২১৮৪)। তবে জান্নাতে
হূরগণ গান গেয়ে শুনাবে মর্মে বহু ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ছহীহুত তারগীব
হা/৩৭৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫৬১)।
প্রশ্ন (১৪/১৩৪) : কোন মেয়ে যদি ভুল করে স্বামীকে ‘বাবা’ বলে
সম্বোধন করে তাহ’লে সেটি ‘যিহার’ হবে কি? ঐ মেয়ের বা তার স্বামীর করণীয় কি?
-মামূন আল-হাসান, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
উত্তর : স্ত্রীর পক্ষ থেকে যিহার হয় না (ফাতাওয়া মারআতুল মুসলিমাহ
২/৮০৩ পৃঃ; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব-১৯)। করলে তা বাজে কথার অন্তর্ভুক্ত
হবে। যা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন অনর্থক কথা বা কাজ থেকে বিরত
থাকে (মুমিনূন ২৩/১-৩)। অতএব এ ধরনের কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা
যরূরী (দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৮/৬০ ‘যিহার’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (১৬/১৩৬) : আমাদের দেশে অধিকাংশ জানাযার পূর্বে লাশ সামনে
রেখে ইমাম ছাহেব বা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কিছু বক্তব্য পেশ করে থাকেন। এরূপ
করা শরী‘আতসম্মত কি?
-আল-আমীন, পোতাহাটী, ঝিনাইদহ।
উত্তর : এসময় কেবল ইমাম ছাহেব উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে লক্ষ্য করে ঈমান বর্ধক
কিছু সংক্ষিপ্ত কথা বলতে পারেন (বুখারী হা/১৩৬২; মিশকাত হা/৮৫,
১৬০৩) এবং উত্তরাধিকারীদের মধ্য হ’তে মাইয়েতের ঋণ পরিশোধ বিষয়ে বলতে
পারেন (বুখারী, মিশকাত হা/২৯০৯)। আর জানাযার আগে বা পরে সকলে ব্যক্তিগতভাবে
মাইয়েতের গুণাবলী বর্ণনা করতে পারেন। কেননা মুমিন বান্দাগণ এ পৃথিবীতে আল্লাহর জন্য
সাক্ষী স্বরূপ’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৬২, ‘জানাযা’ অধ্যায়)। তবে
জানাযার সময় উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘মাইয়েত ভাল ছিলেন’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার
রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত (তালখীছ পৃঃ ২৬; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ২২৪)।
প্রশ্ন (১৮/১৩৮) : আমার অতি নিকটের কিছু মানুষ আমাকে মন্দ কাজে উৎসাহিত
করছে। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?
-আব্দুর রাযযাক, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : কেউ মন্দ কাজে প্ররোচিত করলে তা করা যাবে
না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ ;মিশকাত হা/৩৬৬৪)। এমনকি পিতা-মাতা হ’লেও
নয় (লোকমান ৩১/১৫)। এমতাবস্থায় তাদের প্রতি সদাচরণ বজায় রাখতে হবে, উত্তমরূপে
বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে এবং প্রয়োজন ব্যতীত এড়িয়ে চলতে হবে (নাহল ১৬/১২৫;
আ‘রাফ ৭/১৯৯)। তাই বলে স্থায়ীভাবে সম্পর্কচ্ছিন্নও করা যাবে না। কারণ রাসূল
(ছাঃ)-এর স্পষ্ট ঘোষণা, আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে
না (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯২২)।
প্রশ্ন
(১৯/১৩৯) : নিয়মিত নেশা করা, কালো খেযাব ব্যবহার করা, টাখনুর নীচে কাপড় পরা
প্রভৃতি কবীরা গোনাহে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য ফরয ইবাদত করার কোন প্রয়োজন আছে কি?
-এম, এ, মুঈদ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
উত্তর :
এসব ব্যক্তিকেও ফরয ইবাদতসহ অন্যান্য ইবাদত করতে হবে। কারণ তার ইবাদতই হয়ত তাকে
একসময় পাপ থেকে ফিরিয়ে আনবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম
(ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, অমুক ব্যক্তি রাতে ছালাত আদায় করে, কিন্তু ভোরে উঠে সে
চুরি করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, শীঘ্রই ছালাত তাকে তা হ’তে নিবৃত্ত
রাখবে (আহমাদ হা/৯৭৭৭; মিশকাত হা/১২৩৭; ছহীহাহ হা/৩৪৮২; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)
৩৫ পৃ.)।
প্রশ্ন (২১/১৪১) : ‘আল্লাহপাক আদম (আঃ)-কে আপন
আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির প্রকৃত ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত
করবেন।
-সোহরাব, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : হাদীছটির
পটভূমিতে বলা হয়েছে, জনৈক ব্যক্তি এক বালকের গালে চপেটাঘাত করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
তাকে এভাবে গালে চপেটাঘাত করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, خَلَقَ اللهُ آدَمَ عَلَى صُوْرَتِهِ ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা‘আলা আদমকে স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/২৮৪৬)। এ বাক্য প্রয়োগের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মূলতঃ মানুষের
মুখমন্ডলের মর্যাদা নির্দেশ করেছেন এবং মানবদেহের মর্যাদাপূর্ণ এই অঙ্গে আঘাত করতে
নিষেধ করেছেন। বাকী থাকে হাদীছাংশে উল্লেখিত সর্বনাম (ه)-এর
প্রত্যাবর্তন স্থল কোন দিকে? এর জবাবে মুহাদ্দিছগণের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও
হাদীছটির পটভূমির আলোকে এর প্রত্যাবর্তনস্থল হবে ‘আদম’। অর্থাৎ
আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে তাঁর (আদমের) নিজস্ব আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। কারণ তিনি
পৃথিবীর প্রথম মানুষ ছিলেন যার উচ্চতা ছিল ষাট হাত (নববী, শরহ মুসলিম
হা/২৮৪১-এর ব্যাখ্যা)। ইবনু হাজার বলেন, ...এ হাদীছগুলো শক্তিশালী করে যে, উক্ত
সর্বনামের প্রত্যাবর্তনস্থল আদম (আঃ) (বুখারী হা/৬২২৭-এর ব্যাখ্যা)। আলবানী
বলেন, صُورَتِهِ তে
সর্বনামের প্রত্যাবর্তনস্থল ‘আদম’। যে হাদীছে এর প্রত্যাবর্তন স্থল আল্লাহর দিকে
করা হয়েছে তা মুনকার ও যঈফ (ছহীহাহ হা/৪৪৯, ৮৬২; যঈফাহ হা/১১৭৬)। অতএব আদম
(আঃ)-কে স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। পৃথিবীতে যত মানুষ আসবে আদমের মত হাত-পা,
নাক, কান, মুখ ও অন্যান্য অঙ্গ দিয়েই সৃষ্টি করা হবে। তাদের অন্য কোন আকৃতিতে
সৃষ্টি করা হবে না।
প্রশ্ন (২২/১৪২) : আবুদাঊদ হা/৩৮৯৩ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে,
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) তাবীয লিখে তা সন্তানদের গায়ে লটকিয়ে দিতেন। এক্ষণে
তাবীযের বিধান কি হবে?
-হারূনুর রশীদ, ডাকবাংলা বাজার, ঝিনাইদহ।
উত্তর : আছারটির মধ্যেকার দো‘আটি ছহীহ হ’লেও (আবুদাউদ হা/৩৮৯৩; মিশকাত
হা/২৪৭৭) ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)-এর আমলের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তা
যঈফ (আলবানী, আল-কালিমুত তাইয়্যিব হা/৪৯)। এছাড়া এর বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর
স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকাবে
আল্লাহ যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন এবং যে কড়ি লটকাবে আল্লাহ যেন তাকে আরোগ্য
দান না করেন’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক
করল’ (আহমাদ, সিলসিলা ছাহীহাহ হা/৪৯২)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে
ব্যক্তি কোন কিছু লটকাবে তার দায়-দায়িত্ব তার উপরেই বর্তাবে’ অর্থাৎ
আল্লাহ তার কোন দায়িত্ব নিবেন না’ (আবুদাঊদ, সনদ হাসান; মিশকাত হা/৪৫৫৬ ‘চিকিৎসা
ও ঝাড়-ফুঁক’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২৩/১৪৩) : বর্তমানে মোবাইলে পরিচিত-অপরিচিত যুবক-যুবতীরা
অনেক গল্প বা প্রেমালাপ করে থাকে। এরূপ কথা-বার্তায় গুনাহ হবে কি?
-খোকন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : হবে। এসব মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়। উপরন্তু বিনা প্রয়োজনে
এরূপ কথা-বার্তা যেনার শামিল। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘চোখের যেনা তাকানো, কানের যেনা শ্রবণ করা, জিহবার যেনা কথা বলা, হাতের যেনা
স্পর্শ করা এবং পায়ের যেনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে চলা’ (মুসলিম, মিশকাত
হা/৮৬)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে
যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়’ (আহযাব ৩৩/৩২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘অশ্লীল কথা ও কর্ম মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/৪৮২৪ ‘আদব’ অধ্যায়)।
উল্লেখ্য, বর্তমান সমাজে মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা
সম্পর্কের মধ্য দিয়ে খুন, ধর্ষণ, পরকীয়া সহ নানা অশ্লীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুব চরিত্র। তাই এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা একান্ত যরূরী।
প্রশ্ন (২৪/১৪৪)
: নবম শ্রেণীর ইসলাম শিক্ষা বইয়ে ১৬৯ পৃষ্ঠায় আছে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)
একাধারে ত্রিশ বছর রোযা রেখেছেন ও চল্লিশ বছর যাবৎ
রাতে ঘুমাননি। অর্থাৎ এশার ওযূতে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন। বর্ণনাটি
কতটুকু সত্য?
-আনীস, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : এসব বর্ণনা মুক্বাদ্দামা শরহ বেকায়াহ ৩৬-৩৭ পৃষ্ঠা সহ বিভিন্ন
গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। তবে তার সবই যঈফ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২২/৩০৩. ফাতাওয়াউল কুবরা ২/১৩৭)। আলবানী বলেন, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাপারে
যা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এশার ওযূতে চল্লিশ বছর ফজরের ছালাত আদায় করেছেন, তাতে
তোমরা প্রতারিত হয়ো না। কারণ তাঁর থেকে এসকল ঘটনার কোন ভিত্তি
নেই (আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিইয়াহ ১/১২৩; আছলু ছিফাতি ছালাতিন্নবী ২/৫৩১)।
মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী বলেন, এগুলো ইমাম ছাহেবের প্রতি স্পষ্টভাবে মিথ্যা অপবাদ
মাত্র। এরূপ কথা তাঁর দিকে সম্পর্কিত করা সমীচীন নয়। ...এগুলো মূর্খ
পক্ষপাতদুষ্টদের রচিত গল্প মাত্র। তবে তিনি মুত্তাকী ও ইবাদত গুযার মানুষ
ছিলেন (আর-রাদ্দু ‘আলাল মু‘তারিয ১/৪৪)। তাঁর প্রধান শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ
(রহঃ) বলেন, একদা আবু হানীফা (রহঃ)-এর সাথে হাঁটছিলাম তখন এক লোক বলল, ইনি আবু
হানীফা, যিনি রাতে ঘুমান না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! সে যেন আমার ব্যাপারে
এমন কথা বর্ণনা না করে, যা আমি করি না (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৩৯৯;
তাহযীবুল কামাল ২৯/৪৩৫; শাযারাতুয যাহাব ২/২৩০)।
প্রশ্ন (২৫/১৪৫) : আমরা জানি টিকটিকি মারলে নেকী হয়। অথচ বিনা
কারণে প্রাণী হত্যা গুনাহের কাজ। এক্ষণে এর পিছনে কারণ কি?
-আল-আমীন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : প্রথমতঃ
এটা রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ। সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
টিকটিকি মারার আদেশ দিয়েছেন এবং একে ছোট ফাসিক বলে নামকরণ করেছেন’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৪১২০)। দ্বিতীয়তঃ ইবরাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হ’লে আগুনকে
প্রজ্বলিত করার জন্য এই প্রাণীটি আগুনে ফুঁক দিয়ে ছিল (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত হা/৪১১৯)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যখন সকল প্রাণী আগুন নিভানোর চেষ্টায় লিপ্ত
ছিল তখন টিকটিকি তাতে ফুঁক দিয়েছিল (আগুন আরও প্রজ্বলিত করার জন্য) (ইবনু
মাজাহ হা/৩২৩১; ছহীহাহ হা/১৫৮১)। তৃতীয়তঃ এটি ক্ষতিকর প্রাণী। এর লেজে ক্ষতিকর
মাদকতা রয়েছে।
শ্ন (২৬/১৪৬) :
জনৈক আলেম বলেন, টয়লেটে থাকা অবস্থাতেও সালাম প্রদান বা গ্রহণ করতে হবে। একথার
সত্যতা আছে কি?
-মামূন. মুহাম্মাদপুর, ঢাকা।
উত্তর : না।
বরং এসময় উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে এসে উত্তর দিতে হবে। এটাই রাসূল (ছাঃ)-এর
সুন্নাত (বুখারী হা/৩৩৭; আবুদাঊদ হা/১৭; মিশকাত হা/৪৬৭, ৫৩৫)।
প্রশ্ন (২৭/১৪৭) : কুরআন মাজীদ মুখস্থ পড়ায় এক হাযার এবং দেখে পড়ায়
দুই হাযার নেকী হয়। এর সত্যতা আছে কি?
-মহীউদ্দীন, তালা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : এ
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২১৬৭; যঈফুল জামে‘
হা/৪০৮১)। এছাড়া কুরআন দেখে পড়া বা মুখস্থ পড়ার মধ্যে ছওয়াবের
পার্থক্যের বিষয়ে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না। এবিষয়ে যত হাদীছ আছে সবগুলিই
যঈফ ও জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৫৬, ৪০১১)। মূলতঃ কুরআন অনুধাবন সহকারে পাঠ
করতে হবে (ছোয়াদ ৩৮/২৯; মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)। যিনি যতবেশী অনুধাবন করবেন এবং তা
বাস্তবে আমল করবেন, তিনি ততবেশী নেকীর অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (২৮/১৪৮) : ইমাম ছালাত শুরু করার পূর্বে ভুলবশতঃ নিজেই
ইক্বামত দিয়েছেন। এজন্য মুক্তাদীদের মধ্যে কাউকে পুনরায় ইক্বামত দিতে হবে কি?
-খলীলুযযামান সরোজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : ইমাম
ইক্বামত দেওয়ায় কোন দোষ নেই। যে কেউ ইক্বামত দিতে পারে। আর আযান দাতাকেই ইক্বামত
দিতে হবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/১৯৯; মিশকাত হা/৬৪৮; যঈফাহ
হা/৩৫)।
প্রশ্ন (২৯/১৪৯) : ইমাম সালাম ফিরানোর সময় ডান দিকের চেয়ে বাম
দিকের সালামে স্বর কিছু নীচু করবেন মর্মে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা আছে কি?
-ফরীদুদ্দীন, আসাম, ভারত।
উত্তর : বাম দিকের সালামে স্বর নীচু করতে হবে মর্মে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা
নেই। বরং জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত-এর বৈঠকে হাটুর ওপর হাত
রেখে ডানে বামে তোমাদের ভাইদের (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’
বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট (মুসলিম হা/৪৩১; আবুদাউদ হা/৯৯৯)। ইবনু মাসউদ (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সালাম ফিরানোর সময় ডানে ও বামে বলতেন, ‘আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্লাহ’ (নাসাঈ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৯৫০)।
উল্লেখ্য যে, কয়েকটি বর্ণনার ভিত্তিতে অনেক বিদ্বান প্রথম সালাম
ফিরানো ফরয এবং দ্বিতীয় সালাম ফিরানো সুন্নাত বলেছেন (ছহীহাহ হা/৩১৬-এর
আলোচনা দ্রঃ)। যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এর সাথে স্বর উঁচু-নীচুর কোন সম্পর্ক
নেই।
প্রশ্ন (৩১/১৫১) : ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকী ছালাত আদায়ের জন্য
দাঁড়িয়ে প্রথমে রাফউল ইয়াদায়েন করতে হবে কি?
-মাযহারুল ইসলাম, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
উত্তর : হ্যাঁ। কেননা সে তাশাহহুদ থেকে দাঁড়িয়েছে। আর তাশাহহুদ থেকে
দাঁড়িয়ে বাকী ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথমে রাফউল ইয়াদায়েন করাই শরী‘আতের
নির্দেশনা (বুখারী হা/৭৩৯; ওছায়মীন, ইসলাম কিউএ ফতওয়া নং ২১৫০৬)।
প্রশ্ন (৩২/১৫২) : সূরা বাক্বারাহ ১১৫ আয়াতের সঠিক অর্থ জানতে চাই।
-আবু আব্দুল্লাহ, ইসলামপুর, জামালপুর।
উত্তর : উক্ত
আয়াতের অর্থ হল, ‘আর আল্লাহর জন্যই পূর্ব ও পশ্চিম। অতএব যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও
সেদিকেই রয়েছে আল্লাহর চেহারা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী ও সর্বজ্ঞ’।
উল্লেখ্য যে, তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআনের বঙ্গানুবাদে বলা হয়েছে,
‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান’। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এই
ভ্রান্ত ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই উক্ত ভুল অনুবাদ করা হয়েছে। অন্যদিকে
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদে বলা হয়েছে, ‘যেদিকেই মুখ ফিরাও সেই দিকই আল্লাহর
দিক’। উক্ত অনুবাদ দু’টির কোনটিই সঠিক হয়নি। বস্ত্ততঃ আল্লাহর হাত, পা, চেহারা
ইত্যাদি সম্পর্কে কুরআনে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই অনুবাদ করতে হবে। কোনরূপ দূরতম
ব্যাখ্যা বা রূপক অর্থ করা যাবে না। কেননা আল্লাহর নিজস্ব আকার আছে যার তাঁর
উপযোগী, যা অন্যকিছুর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি বলেন, ‘তার তুলনীয় কিছু নেই। তিনি
সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ৪২/১১)।
মূল ঘটনাটি ছিল এই যে, একদা কতিপয় ছাহাবী কোন এক অজ্ঞাত স্থানে
ছালাত আদায় করার সময় ক্বিবলার দিক ভুলে উল্টা দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। তারা রাসূল
(ছাঃ)- কে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলে উক্ত আয়াত নাযিল হয় (তিরমিযী হা/২৯৫৭, সনদ
হাসান)।
প্রশ্ন (৩৩/১৫৩) : থার্টিফার্স্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, নববর্ষ
ইত্যাদি পালন সম্পর্কে শরী‘আতের বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আবুল কালাম, খুলশী, চট্টগ্রাম।
উত্তর : অমুসলিমদের
অনুকরণে এসব দিবস পালিত হয়। যা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এগুলি স্রেফ জাহেলিয়াত এবং
বিজাতীয় সংস্কৃতি মাত্র। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের
সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত
হবে’ (আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)। দ্বিতীয়তঃ এসব
অনুষ্ঠান সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। আর আল্লাহ প্রকাশ্য
ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতার নিকটবর্তী হ’তে নিষেধ করেছেন (আন‘আম ৬/১৫১)। এর
ফলে নারী নির্যাতন ও হত্যাকান্ড পর্যন্ত সংঘটিত হচ্ছে। অতএব এসব থেকে বিরত থাকতে
হবে।
প্রশ্ন (৩৪/১৫৪) : পিতা
ও মাতার মধ্যে সন্তানের নিকট অধিক সেবা পাওয়ার হকদার কে?
-মুহসিন, খুলনা।
উত্তর : উভয়ে
সমান হকদার। আল্লাহ বলেন, তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের
মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি
উহ শব্দটিও করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট
অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে
ছোট অবস্থায় দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’ (ইসরা ১৭/২৩-২৪)। তবে পরিবার প্রধান
হিসাবে পিতা অধিক আনুগত্য পাওয়ার হকদার (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩৬৮৫)। আর
মাতা বিশেষ তিনটি কষ্টের কারণে অগ্রাধিকার পাবেন। (১) কষ্টের সাথে গর্ভধারণ (২)
সীমাহীন প্রসব বেদনা সহ্যকরণ (৩) এবং অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে সন্তান পালন। এসবে
পিতার কোন অংশীদারিত্ব নেই। এজন্য জনৈক ছাহাবী পিতা-মাতার সেবার কথা জিজ্ঞেস করলে
রাসূল (ছাঃ) মায়ের কথা তিনবার ও পিতার কথা একবার বলেন (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত হা/৪৯১১-১২)।
প্রশ্ন (৩৫/১৫৫) : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছোঁয়াচে কোন রোগ নেই। কিন্তু
বিজ্ঞান বলছে, বসন্ত, চোখ ওঠা ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগ। উভয়ের মধ্যে সমন্বয় কি?
-তানভীর, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, কোন কিছুতে
অশুভ নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং ছফর মাসেও কোন অশুভ নেই। একথা শুনে জনৈক
বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে পালের মধ্যে একটা চর্মরোগী উট আসলে বাকীগুলি
চর্মরোগী হয় কেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে চর্মরোগী
বানালো কে? (বুখারী হা/৫৭৭০; মুসলিম হা/২২২০; মিশকাত হা/৪৫৭৭-৭৮ ‘চিকিৎসা
ও মন্ত্র’ অধ্যায় ‘শুভ ও অশুভ লক্ষণ’ অনুচ্ছেদ-১)। উক্ত হাদীছে ছোঁয়াচে রোগ নেই তা
বলা হয়নি। বরং জাহেলী যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে কিছু ছোঁয়াচে রোগ আছে যেগুলি
প্রকৃতিগতভাবেই অন্যকে সংক্রমিত করে। এ বিশ্বাস অপনোদনের জন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন
যে, ছোঁয়াচে রোগ থাকলেও তা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়
না।
যেমন একই হাদীছে তিনি বলেছেন, তবে কুষ্ঠরোগী হ’তে এমনভাবে পলায়ন
কর, যেভাবে তোমরা বাঘ থেকে পলায়ন কর’ (বুখারী হা/৫৭০৭)। তিনি আরো বলেছেন,
তোমরা সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না (বুখারী হা/৫৭৭৪)।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা
শিরক। কিন্ত আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে অশুভ লক্ষণের ধারণার উদ্রেক হয় না।
অথচ আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ তা দূরীভূত করে
দেন’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৫৮৪)। অতএব ছোঁয়াচে রোগ আছে। তবে
আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন রোগই ছড়ায় না। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও বিজ্ঞানের মধ্যে
কোন বিরোধ নেই।
প্রশ্ন (৩৬/১৫৬) : ‘ভারতের রাজা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আদাভর্তি কলস
উপহার পাঠিয়েছিলেন’ মর্মের বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?
-মাসঊদ আহমাদ, রংপুর।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ। আবু হাতেম ও আবু যুর‘আ বলেন, আমর
বিন হুক্কাম বর্ণিত উক্ত হাদীছটি মুনকার। কারণ তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এটি বর্ণনা
করেছেন বলে আমরা জানি না’ (ইলালুল হাদীছ ১/৩০২)। হায়ছামী বলেন, বর্ণনাটি
যঈফ (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮০৩৯)।
তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তি হ’ল মুরসাল ও যঈফ বর্ণনাসমূহ।
তাই বিধানগত বিষয়ে এগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তথ্যগত বিষয়ে গ্রহণযোগ্য। যেমন
সূরা নিসা ৬৫ আয়াতের শানে নুযূলে দু’জন বদরী ছাহাবীর মধ্যে একজন আনছার ছাহাবীর নাম
ছহীহ হাদীছে পাওয়া যায়নি। অথচ সেটি একটা যঈফ হাদীছে পাওয়া যায়। সেবিষয়ে মন্তব্য
করে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল। কিন্তু এর মধ্যে আনছার ব্যক্তির নাম পাওয়ার
ফায়েদা রয়েছে’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)।
প্রশ্ন (৩৭/১৫৭) : জিনিসপত্র নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা
জায়েয আছে কি?
-মোবারক হোসাইন, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : একদামে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। কারণ ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হওয়ার মৌলিক
শর্ত হ’ল উভয়ের সন্তষ্টি (নিসা ৪/২৯; ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/১২৮৩) এবং
ধোঁকা না থাকা (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২০)। সুতরাং একদামে ক্রয়-বিক্রয়ে
কোন বাধা নেই। তবে যে কোন বস্ত্ত দরদাম যাচাই করে ক্রয় করাই উত্তম। ছাহাবীগণ দরদাম
যাচাই করেই কেনা-কাটা করতেন (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইরওয়া হা/১২৮৫)।
প্রশ্ন (৩৮/১৫৮) : মায়ের হাতে বা পায়ে চুমু খাওয়া জায়েয হবে কি?
-আব্দুল হালীম, মালদ্বীপ।
উত্তর : চুমু খাওয়া বা কদমবূসী করা ইসলামী রীতি নয়। একদা আনাস (রাঃ) রাসূল
(ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যখন তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ
করবে, তখন সে কি তার জন্য মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বললেন, তবে কি
তাকে জড়িয়ে ধরবে বা কোলাকুলি করবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। বরং তার সাথে
মুছাফাহা করবে’ (তিরমিযী হা/২৭২৮, ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২, মিশকাত হা/৪৬৮০;
ছহীহাহ হা/১৬০)। অতএব সাক্ষাৎকালে মুছাফাহা করাই সুন্নাত।
এক্ষণে হাতে চুমু দেওয়া মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, আবদুল
ক্বায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দল মদীনায় আগমন করে রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে চুম্বন
করেন (আবুদাউদ হা/৫২২৫; মিশকাত হা/৪৬৮৮), সেটি ইসলামী রীতি হিসাবে ছিল না।
কারণ তারা নওমুসলিম হিসাবে প্রথম মদীনায় এসেছিলেন এবং তাদের পূর্ব রীতি হিসাবে এটা
করেছিলেন। অতএব সুন্নাত মনে করে মায়ের হাতে চুমু খাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য যে, পায়ে চুম্বন করা সম্পর্কিত হাদীছসমূহ যঈফ (যঈফ
আবুদাঊদ হা/১১১৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৫-৭৬)।
প্রশ্ন (৩৯/১৫৯) : ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সকল ফৎওয়াই
কি ছহীহ হাদীছের উপর প্রদান করেছেন? যদি না করে থাকেন তবে তা অন্ধভাবে অনুসরণ করা
যাবে কি?
-আবুবকর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া।
উত্তর : অনুসরণীয়
চার ইমামের মধ্যে ইমাম শাফেঈ (রহঃ) ব্যতীত বাকী তিনজনের কেউই ফিক্বহী বিষয়ে কোন
গ্রন্থ রচনা করে যাননি। যদি ‘ফিক্বহে আকবর’ ও ‘মুসনাদে আবু হানীফা’-কে তাঁর কিতাব
বলে ধরেও নেওয়া হয়, তাহ’লে বলা হবে যে, প্রথমোক্ত ছোট পুস্তিকাটি আক্বায়েদের উপরে
লিখিত এবং শেষোক্তটি হাদীছের সংক্ষিপ্ত সংকলন। অতএব ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ফৎওয়াসমূহ কি ছিল এবং সেগুলি ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়েছে
কি-না, তা যাচাই করার কোন সুযোগ নেই।
তিনি যে ফৎওয়া বিষয়ে কোন কিতাব রচনা করেননি, তার অন্যতম
প্রমাণ এই যে, একদা তিনি স্বীয় প্রধান শিষ্য আবু ইউসুফকে ধমক দিয়ে বলেন, সাবধান হে
ইয়াকূব (আবু ইউসুফ)! আমার নিকট থেকে যা-ই শুনো তাই-ই লিখে নিয়ো না। কেননা আমি আজকে
যে রায় দেই, কালকে তা পরিত্যাগ করি। কাল যে রায় দেই, পরশু তার প্রত্যাহার করি’।
আরেকবার তিনি বলেন, ‘তোমাদের ধ্বংস হৌক তোমরা এইসব কিতাবগুলিতে আমার উপরে কত
মিথ্যারোপ করেছ, যা আমি বলিনি’ (তারীখু বাগদাদ, ১৩/৪০২; ১৪/২৫৮)।
এক্ষণে চার ইমামের মাযহাব বলে গৃহীত মাসআলা সমূহের সংকলন হিসাবে যে
সকল বিরাট বিরাট ফিক্বহগ্রন্থ পরবর্তীকালে রচিত ও প্রচারিত হয়েছে, পরীক্ষায় দেখা
যাবে যে, সেগুলিতে সংকলিত অধিকাংশ মাসআলা কিংবা সবগুলোই তাঁদের অনুসারী পরবর্তী
বিদ্বানদের রচিত। যেমন ইবনু দাক্বীকুল ঈদ (রহঃ) চার মাযহাবে প্রচলিত ছহীহ হাদীছ
বিরোধী ফৎওয়া সমূহের যে বিরাট সংকলন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, তার ভূমিকাতে
তিনি ঘোষণা করেন যে, ‘এই মাসআলাগুলি চার ইমামের নামে চার মাযহাবে চালু থাকলেও
এগুলোকে তাঁদের দিকে সম্পর্কিত করা হারাম’। এগুলির মাধ্যমে তাঁদের উপরে মিথ্যারোপ
করা হয়েছে মাত্র। তাফ্তাযানী, শা‘রাবী, অলিউল্লাহ দেহলভী, মোল্লা মুঈন সিন্ধী,
আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী প্রমুখ বিদ্বানগণ সকলেই একথা স্বীকার করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী (রহঃ) বলেন, কতইনা নির্ভরযোগ্য
কিতাব রয়েছে, যার উপরে বড় বড় ফক্বীহগণ নির্ভর করে থাকেন, যা মওযূ বা জাল হাদীছসমূহ
দ্বারা পরিপূর্ণ। বিশেষ করে ফাৎওয়ার
কিতাবসমূহ। ... তুমি কি দেখনা ‘হেদায়াহ’ লেখকের দিকে? যিনি নেতৃস্থানীয় হানাফী
বিদ্বানগণের অন্যতম। আল-ওয়াজীযের ভাষ্যকার রাফেঈ-র দিকে, যিনি নেতৃস্থানীয় শাফেঈ
বিদ্বানগণের অন্যতম। তাঁরা যদিও এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের দিকে
অঙ্গুলিসংকেত করা হয় এবং বড় বড় পন্ডিতগণ যাদের উপর নির্ভর করে থাকেন। তাঁরা তাদের
কিতাবসমূহে এমন সব বিষয় বর্ণনা করেছেন, যার পক্ষে হাদীছে দক্ষ ব্যক্তিদের নিকটে
কোন প্রমাণ নেই (নাফে‘ কাবীর পৃ. ১৩; আল-আজওয়াবাতুল ফাযেলাহ পৃ. ২৯;
বিস্তারিত দ্রঃ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ থিসিস পৃ.১৭১-৭২; ১৭৯-৮২)। অতএব ইমাম আবু
হানীফা (রহঃ) সহ চার ইমামের নামে প্রচলিত ফৎওয়াসমূহ
অন্ধভাবে অনুসরণের কোন সুযোগ নেই। কেননা তাঁরা প্রত্যেকে বলেছেন, যখন ছহীহ হাদীছ
পাবে, জেনে রেখ সেটাই আমাদের মাযহাব (শা‘রানী, কিতাবুল মীযান ১/৭৩)।
প্রশ্ন (৪০/১৬০) : মাকরূহ বলে শরী‘আতের কোন উৎস আছে কি?
-নাসীম আহমাদ, শিকটা, জয়পুরহাট।
উত্তর : আছে।
‘মাকরূহ’ অর্থ- অপসন্দনীয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এশার ছালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং
এশার পরে কথা বলাকে অপসন্দ করতেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৭ ‘জলদী
ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে, অনেক বিদ্বান মাকরূহকে তানযীহী ও তাহরীমী
দু’ভাগে ভাগ করেছেন। মূলতঃ তাহরীমীটা হারাম, যা নিষিদ্ধ। যেমন তামাক ও তামাকজাত
দ্রব্য খাওয়া। কেননা এগুলি মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। অথচ এটাকে অনেকে ‘মাকরূহ
তাহরীমী’ বলে খেয়ে থাকেন।
ফেব্রুয়ারি/২০১৭
প্রশ্ন
(১/১৬১) : থুতনির নীচে দাড়ি রেখে গালের দু’পাশের দাড়ি কামানো যাবে কি?
উত্তর : না। কারণ রাসূল (ছাঃ) দাড়ি ছাটতেন বা কাটতেন মর্মে কোন দলীল নেই।
বরং উম্মতের উদ্দেশ্যে তিনি বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি লম্বা
কর, গোঁফ ছোট কর’ (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত হা/৪৪২১)। তিনি দাড়ি ছাটতেন
মর্মে তিরমিযীতে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা মাওযূ‘ বা জাল (যঈফ তিরমিযী
হা/২৭৬২; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৮, ১/৪৫৬ পৃঃ)। আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘জেনে রাখ হে
পাঠক! দাড়ি ছাটার পক্ষে রাসূল (ছাঃ) থেকে একটি ছহীহ হাদীছও প্রমাণিত হয়নি। না তার
কথা দ্বারা ... না তার কাজ দ্বারা’ (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ৫/৩৭৬ পৃঃ,
হা/২৩৫৫)।
উল্লেখ্য, অনুরূপভাবে হজ্জ বা ওমরা করার সময় ইবনু ওমর (রাঃ) এক
মুষ্টির অধিক দাড়ি কেটে ফেলতেন মর্মে যে বর্ণনা এসেছে, সেটা তার ব্যক্তিগত আমল।
হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি এরূপ করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং
তা দলীল হিসাবে গ্রহণীয় নয় (ফাৎহুল বারী ১০/৪২৮-২৯, হা/৫৮৯২-এর ব্যাখ্যা
দ্রঃ)। বরং গ্রহণযোগ্য হ’ল জনৈক ব্যক্তির প্রতি তাঁর স্পষ্ট নির্দেশনা-
‘তোমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য না ওমরের সুন্নাত?’ (আহমাদ
হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ)।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, দাড়ি বিষয়ে হাদীছে পাঁচ ধরনের শব্দ এসেছে,
যার সবগুলি একই অর্থ বহন করে যে, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া (শরহ
মুসলিম ৩/১৫১)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ
করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী (ছাঃ)
এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)।
শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১০/৯৬-৯৭)। অতএব দাড়ির কোন অংশে কাট-ছাঁট করার কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন (২/১৬২) : জনৈক ব্যক্তি বলেছেন যে, ওযূ করার সময় ডান হাত
দিয়ে পা ধোয়া যাবে না। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
-মকবূল রহমান, বংশাল, ঢাকা।
উত্তর : শারঈ
ওযর ব্যতীত ডান হাত দিয়ে পা ধোয়া উচিত নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ডান
হাত ছিল পবিত্রতা অর্জন ও খাওয়ার জন্য এবং বাম হাত ছিল শৌচকর্মও অন্যান্য
অপসন্দনীয় কাজসমূহ করার জন্য’ (আবুদাঊদ হা/৩৩; মিশকাত হা/৩৪৮, সনদ
ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘তিনি ওযূর ক্ষেত্রে ডান হাত ব্যবহার
করতেন’ (আহমাদ হা/২৬৩২৮)। তবে ‘তোমাদের কেউ ওযূ করার সময় ডান হাত দ্বারা
দু’পায়ের নিম্নভাগ ধৌত করবে না’ মর্মে বর্ণিতহাদীছটি জাল (দায়লামী হা/১২২১;
সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫২৫)।
প্রশ্ন (৩/১৬৩) : মুওয়াযযিনের আযান ও ইক্বামতের জবাব দেওয়া ও
পরবর্তী দো‘আসমূহ পাঠ করার ফযীলত কি?
-শওকত ইসলাম, শেরপুর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) আযান ও ইক্বামতের জবাব এবং আযান পরবর্তী দো‘আ পাঠের
অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে
আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে..., সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করবে’ (মুসলিম হা/৩৮৫; মিশকাত হা/৬৫৮, ৬৭৬)। অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যখন
তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তদ্রূপ বল’। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়।
কেননা যে আমার উপর একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর
আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও...। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’ চাইবে
তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে’ (মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/৬৫৭)।
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা...
রাযীতু বিল্লাহি... ওয়াবিল ইসলামে দীনা’ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা
হবে (মুসলিম হা/৩৮৬; মিশকাত হা/৬৬১)।
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল! মুওয়াযযিনরা তো আমাদের উপর ফযীলত প্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা কিভাবে
তাদের সমান ছওয়াব পাব? তিনি বলেন, মুওয়াযযিনরা যেরূপ বলে তুমিও তদ্রূপ বলবে। অতঃপর
যখন আযান শেয করবে! তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রূপ ছওয়াব প্রাপ্ত
হবে’ (আবুদাউদ হা/৫২৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৬)। আর ইক্বামতের জবাব একইভাবে
দিবে। উল্লেখ্য যে, আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই হাদীছে ‘আযান’ বলা
হয়েছে (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৬২)।
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : সুন্নাত বা ফরয ছালাতের পর একাকী হাত তুলে
মুনাজাত করা যাবে কি?
-মানছূর রহমান, টঙ্গী, গাযীপুর।
উত্তর : যাবে। ছালাতের পরে বা যেকোন সময় যেকোন প্রয়োজনে একাকী হাত তুলে
মুনাজাত করা যাবে। হাত তুলে দো‘আ করলে আল্লাহ্ শূন্য হাত ফিরিয়ে দেন
না’ (আবুদাঊদ হা/১৪৮৮; তিরমিযী হা/৩৫৫৬)। তবে মুখে হাত মাসাহ করার হাদীছ
যঈফ (আবুদাঊদ; মিশকাত হা/২২৫৫)।
প্রশ্ন (৬/১৬৬) : ওযূর জন্য ব্যবহৃত পানির কিছু অংশ ওযূ শেষে দাড়িতে থেকে যায়।
উক্ত পানি কি অপবিত্র?
-সোহেল চৌধুরী, ওমান।
উত্তর : অপবিত্র
নয়। কারণ ওযূতে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র নয় (বুখারী হা/১৮৭-৮৮)। তাছাড়া অপবিত্র
বস্ত্ত মিশ্রিত না হ’লে কোন পানিই অপবিত্র হয় না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১৯/২৩৬)।
প্রশ্ন (৭/১৬৭) : কারু উপকার করার কারণে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’
বললে তার উত্তরে কি বলা উচিত?
-মিনহাজুদ্দীন, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
উত্তর : এর জওয়াবে একই উত্তর দেওয়া যায়। একদা উসাইদ বিন হুযায়ের (রাঃ) কোন
এক প্রেক্ষিতে শুকরিয়া স্বরূপ রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বা
‘জাযাকাল্লাহু আত্বইয়াবাল জাযা’। উত্তরে তিনি বললেন, ‘ফা জাযাকুমুল্লাহু
খায়রান’ (হাকেম হা/৬৯৭৪; ইবনে হিববান হা/৭২৭৯; ছহীহাহ হা/৩০৯৬)।
উল্লেখ্য যে, পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ‘জাযাকাল্লাহু
খায়রান’ বলার অভ্যাস খুবই গুরুত্ববহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হ’লে সে
যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান
দিন) তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত
হা/৩০২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৬৮)। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বলাতে কি
কল্যাণ রয়েছে লোকেরা তা যদি জানত, তাহ’লে পরস্পরকে বেশী বেশী বলত (ইবনু আবী
শায়বাহ হা/২৭০৫০)। এছাড়া কেউ ‘বারাকাল্লাহু ফীকুম’ বলে দো‘আ করলে তার জওয়াবে অনুরূপ
বলবে (নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০১৩৫, সনদ জাইয়িদ)।
প্রশ্ন (৮/১৬৮) : খুৎবা চলাকালীন সময়ে
প্রয়োজনীয় বাক্যালাপ করা যাবে কি?
-ইলিয়াস, রংপুর।
উত্তর : খুৎবা চলাকালীন সময়ে পারস্পরিক বাক্যালাপ শরী‘আত সম্মত নয়। এমনকি
রাসূল (ছাঃ) কাউকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধে করেছেন। যেমন তিনি বলেন, জুম‘আর দিন ইমাম
খুৎবারত অবস্থায় যদি তুমি তোমার পাশের মুছল্লীকে ‘চুপ কর’ বল, তাহ’লে তুমি অনর্থক
কথা বললে’ (বুখারী হা/৯৩৪; মিশকাত হা/১৩৮৫)। এছাড়া খুৎবা চলাকালীন সময়ে চুপ
থাকার প্রভূত ফযীলত বর্ণিত হয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৮১-৮২)।
তবে যরূরী প্রয়োজনে ইমাম ও মুছল্লী পরস্পরে কথা বলতে পারেন। জনৈক
ছাহাবী খুৎবা চলাকালীন সময়ে রাসূল (ছাঃ)-কে অনাবৃষ্টির অভিযোগ করলে এবং পরে অতি
বৃষ্টি বন্ধের আবেদন করলে তিনি খুৎবারত অবস্থায় হাত তুলে মুনাজাত
করেছিলেন (বুখারী হা/৯৩৩; মিশকাত হা/৫৯০২)।
প্রশ্ন (৯/১৬৯) : ইবলীস কখনো
আল্লাহর ইবাদত করেছিল কি? সে কি ফেরেশতাদের সর্দার ছিল?
-ওয়ালিউর রহমান, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
উত্তর : ইবলীস আল্লাহর ইবাদত করত। তবে সে ফেরেশতাদের সর্দার ছিল না। বরং
আল্লাহ বলেন, সে জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর সে তার রবের আদেশের অবাধ্যতা
করল’ (কাহফ ১৮/৫০)। তবে ইবলীস তার ইবাদতে ফেরেশতাদের সদৃশ হয়েছিল। একারণে
তাকে তাদের সাথে সম্বোধন করা হয়েছে (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা কাহফ ৫০ আয়াত)।
পরে অহংকার ও অবাধ্যতা করলে আল্লাহ তাকে বহিষ্কার করেন এবং অভিশপ্ত হিসাবে ঘোষণা
করেন (আ‘রাফ ৭/১৮; হিজর ১৫/৩৪)।
প্রশ্ন (১০/১৭০) : বসে ছালাত আদায় করলে
রাফঊল ইয়াদায়েন করতে হবে কি?
-দুররুল হুদা, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : বসে ছালাত আদায় করলেও যথাস্থানে রাফঊল ইয়াদায়েন করতে হবে। কারণ
দৈহিক অক্ষমতার কারণে যতটুকু অনুসরণ করা সম্ভব হয় না, ততটুকুর ব্যাপারে শরী‘আতে
ছাড় রয়েছে, তার বেশী নয়। তবে কেউ কেউوَلاَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلاَتِهِ وَهُوَ قَاعِدٌ ‘তিনি
ছালাতে বসা অবস্থায় কোন কিছুতেই রাফঊল ইয়াদায়েন করেননি’ (আবুদাউদ
হা/৭৪৪; তিরমিযী হা/৩৪২৩) মর্মের হাদীছ থেকে এ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ
করেছেন। অথচ এর অর্থ হ’ল, তিনি দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় রাফঊল ইয়াদায়েন
করেননি, যা অন্য হাদীছে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে (মুসলিম হা/৩৯০; আবুদাঊদ
হা/৭২২; তামামুল মিন্নাহ ১/১৭২)। অতএব ছালাতের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় যা করতে হয়,
বসা অবস্থায়ও তাই করতে হবে।
প্রশ্ন (১২/১৭২) : ছালাতের দুই সালামের মাঝে কোন দো‘আ পাঠ করতে হয়
কি?
-শরীফ আলম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : উক্ত স্থানে পঠিতব্য কোন দো‘আ হাদীছে পাওয়া যায় না। সুতরাং কিছু
পাঠ করা যাবে না।
প্রশ্ন (১৩/১৭৩) : ফরয ছালাতে ইমাম দুই দিকে সালাম ফিরানোর পর
মুক্তাদীগণ সালাম ফিরাবেন? নাকি ইমাম এক সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীগণ সালাম
ফিরাবেন?
-আব্দুর রহমান, বংশাল, ঢাকা।
উত্তর : ইমাম ডানে সালাম ফিরানোর পর মুছল্লী ডানে এবং বামে সালাম ফিরানোর
পর বামে সালাম ফিরাবে। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে
অনুসরণের জন্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। তিনি বলেন, হে লোকসকল! আমি
তোমাদের ইমাম। সুতরাং তোমরা রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম কোন কিছুই আমার পূর্বে
করবে না’ (মুসলিম হা/৪২৬; মিশকাত হা/১১৩৭)। বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) সিজদায় গিয়ে মাটিতে চেহারা না রাখা পর্যন্ত আমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থা থেকে
পিঠ ঝুঁকাতো না (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৬)। তিনি বলেন, ‘মুক্তাদী
যদি ইমামের আগে মাথা উঠায়, তবে (ক্বিয়ামতের দিন) তার মাথা হবে গাধার মাথা’ (অর্থাৎ
তার ছালাত কবুল হবে না) (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৪১, ১১৩৮)। অতএব
ছালাতের প্রত্যেকটি কাজ শুরু করতে হবে ইমাম শুরু করার পর।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : দাঁত পরিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রচলিত পেস্ট-ব্রাশ
ব্যবহার করে মিসওয়াক করার নেকী পাওয়া যাবে কি?
-মুত্ত্বালিব, রিয়ায, সঊদী আরব।
উত্তর : যাবে। কারণ মিসওয়াক করার উদ্দেশ্য হ’ল মুখ পরিষ্কার রাখা। আয়েশা
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসওয়াক হচ্ছে মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের উপায়’ (আহমাদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৮১, হাদীছ ছহীহ)। এছাড়া
রাসূল (ছাঃ) মিসওয়াকের জন্য কোন কিছু নির্দিষ্ট না করে একাধিক গাছের ডাল দ্বারা
মিসওয়াক করেছেন (বুখারী হা/২২৮; আহমাদ হা/৩৯৯১)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
মিসওয়াকের বিধান দেওয়া হয়েছে মুখকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য (শরহ
উমদাতুল ফিক্বহ ১/২১৮)। অতএব কোন ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলে পেস্ট-ব্রাশ ব্যবহারে কোন
বাধা নেই। উছায়মীন বলেন, ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহার করায় সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কারণ এর
ছওয়াব বস্ত্তর কারণে নয়, বরং কাজ ও তার ফলাফলের উপর। আর শুধুমাত্র মিসওয়াক
ব্যবহারের চেয়ে ব্রাশ-পেস্ট ব্যবহারে অনেক বেশী ফলাফল অর্জিত হয় (উছায়মীন,
ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ৭/২)।
প্রশ্ন (১৭/১৭৭) : ‘ঈমান ছুরাইয়া নক্ষত্রের নিকটে থাকলেও আমার
উম্মতের কিছু লোক বা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে’। এ হাদীছ দ্বারা ইমাম
আবু হানীফা (রহঃ)-কে বুঝানো হয়েছে কি?
-মীম, দক্ষিণ মুগদা, ঢাকা।
উত্তর : না।
বরং এর দ্বারা সালমান ফারেসী ও তাঁর জাতিকে বুঝানো হয়েছে। হাদীছটির অনুবাদ হ’ল,
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বসেছিলাম।
এসময় তার উপর সূরা জুম‘আ অবতীর্ণ হ’ল, যার একটি আয়াত হ’ল- ‘এবং তাদের অন্যান্যের
জন্যও যারা এখনও তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি’ (৬২/৩)। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস
করলাম, তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের
মাঝে সালমান ফারেসী উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) সালমানের উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান
ছুরাইয়া নক্ষত্ররাজির নিকট থাকলেও কিছু লোক বা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে
যাবে’ (বুখারী হা/৪৮৯৭)। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, যদি দ্বীন ছুরাইয়া নক্ষত্র
রাজির কাছেও থাকত, তবুও পারস্যের একজন ব্যক্তি তা নিয়ে আসত বা পারস্যের সন্তানদের
কেউ তা পেয়ে যেত’ (মুসলিম হা/২৫৪৬)। ছহীহ ইবনে হিববানের বর্ণনায় আরো
স্পষ্টভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) এসময় সালমানের উরুতে হাত মেরে বললেন, এই ব্যক্তি
ও তার জাতি (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭১২৩)।
হাদীছটির ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাছীর বলেন, অত্র হাদীছ দলীল হ’ল এ
বিষয়ে যে, রাসূল (ছাঃ) আরব-আজমের সকল মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন’। ত্বীবী বলেন,
জাতি উল্লেখ করে সালমান ফারেসী (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। অথবা এর দ্বারা আরবের
বিপরীতে অনারবদের বুঝানো হয়েছে (মিরক্বাত হা/৬২১২-এর ব্যাখ্যা)। যেমন বুখারী,
মুসলিম সহ কুতুবে সিত্তাহর মুহাদ্দিছগণ সকলেই অনারব ছিলেন।
তবে রাদ্দুল মুহতারে ইমাম সুয়ূতী (রহঃ)-এর একটি উক্তি উদ্ধৃত করা
হয়েছে এ মর্মে যে তিনি বলেন, এ হাদীছ দ্বারা ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাপারে
সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে (রাদ্দুল মুহতার ১/৫৩; বঙ্গানুবাদ তাফসীর মা‘আরেফুল
কুরআন ১২৬৩ পৃ., মুহাম্মাদ ৩৮ আয়াতের ব্যাখ্যা)। এর কোন ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : ছালাতের কাতারসমূহের
মাঝে কতটুকু ফাঁক রাখা শরী‘আতসম্মত?
-আব্দুল লতীফ, সিঙ্গাপুর।
উত্তর : দুই কাতারের মাঝে এমন ফাঁক রাখতে হবে, যাতে সহজে সিজদা করা যায়।
তবে এমন ফাঁক রাখা যাবে না, যার মাঝে আরেকটি কাতার করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘তোমরা ছালাতের কাতারে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং কাতার পরস্পর কাছাকাছি রাখবে। আর
তোমাদের কাঁধসমূহ সোজা রাখবে। সেই আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার জীবন, নিশ্চয়ই আমি
শয়তানকে দেখি কাল ছাগলের বাচ্চার ন্যায় কাতারসমূহের ফাঁকে প্রবেশ
করে’ (আবুদাঊদ হা/৬৬৭; মিশকাত হা/১০৯৩)। ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘ক্বারিবূ বায়নাহা’
অর্থ কাতারসমূহ পরস্পরে এমন নিকটবর্তী রাখতে হবে, যাতে দুই কাতারের মাঝে আরেকটি
কাতার করার সুযোগ না থাকে (মির‘আত হা/১০৯৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্ন (২১/১৮১) : মিথ্যা কসম, কুরআন অবমাননা প্রভৃতি কারণে অনেক
মানুষের ব্যাপারে শোনা যায় যে তাদের আকৃতি কুকুর, বানর ইত্যাদিতে পরিবর্তিত হয়ে
গেছে। এসব ঘটনার কোন সত্যতা আছে কি?
-মাহবূব আলম, নওহাটা, রাজশাহী।
উত্তর : আল্লাহ এরূপ করতে পারেন, যেভাবে তিনি প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণকারী
শনিবারওয়ালাদেরকে শাস্তিস্বরূপ নিকৃষ্ট বানরে পরিণত করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর
তোমরা তাদের বিষয়ে সম্যক অবগত আছো, যারা তোমাদের মধ্যে শনিবারের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি
করেছিল। তখন আমরা তাদের বলেছিলাম যে, তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও (বাক্বারাহ
২/৬৫; আ‘রাফ ৭/১৬৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস,
আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব ও দৈহিক রূপান্তরগত শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব
তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে। অন্য
বর্ণনায় এসেছে, যখন ঘৃণ্য পাপাচার সমূহের প্রকাশ ঘটবে (তিরমিযী হা/২২১২,
২১৮৫; ছহীহাহ হা/৯৮৭, ২২০৩)।
তবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা এরূপ নানা ভিডিও চিত্রের সত্যতা
সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ প্রযুক্তির উৎকর্ষতার
এই যুগে এসব ভিডিও কৃত্রিমভাবে তৈরী করা খুবই সহজ।
প্রশ্ন (২২/১৮২) : ‘হে আলী! তুমি ও তোমার অনুসারীরা জান্নাতবাসী
হবে’ মর্মে বর্ণিত মারফূ‘ হাদীছটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই।
-রাকীবুল ইসলাম, সঊদী আরব।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছসমূহ মওযূ‘ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ
হা/৫৫৯০-৯১, ৬২৬৬, ৬৫৪১)। ইবনুল জাওযী বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে এমর্মে কোন ছহীহ
হাদীছ বর্ণিত হয়নি (আল-ইলালুল মুতানাহিয়া ১/১৬১-১৬৫; আল-মাওযূ‘আত ১/৩৯৭)।
ইমাম বায়হাক্বী বলেন, এই মর্মে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলো
যঈফ (দালায়েলুল নবুঅত ৮/২৪)।
প্রশ্ন (২৩/১৮৩) : বহুল প্রচারিত একটি ইসলামী পত্রিকার প্রশ্নোত্তর
কলামে বলা হয়েছে যে, কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সূরা ইয়াসীন ও ফাতেহাসহ অন্যান্য সূরা
পাঠ করা যাবে। এতে কবরের আযাব মাফ হবে এবং মৃত ব্যক্তি উক্ত তেলাওয়াতের নেকী পাবে।
এ বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।
-ডা. মীযানুর রহমান, আমতলা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : উক্ত
বক্তব্য সঠিক নয়। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছসমূহ যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৪৬,
৪১৪০)। সেখানে কুরআন তেলাওয়াতের নেকী মৃত ব্যক্তি পাবেন না। তিরমিযীর ভাষ্যকার
আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ইবাদতে বদনী, যেমন কুরআন তেলাওয়াত, ছালাত,
ছিয়াম ইত্যাদির ছওয়াব মাইয়েত পাবেন মর্মে কোন ছহীহ ও স্পষ্ট হাদীছ প্রমাণিত হয়নি।
এরূপ দৈহিক ইবাদতের ছওয়াব তারা পাবেন মর্মে যেসব হাদীছ বলা হয়ে থাকে, তা সবই যঈফ’। (বিস্তারিত
দ্রঃ মাওলানা আহমাদ আলী, কোরআন ও কলেমাখানী বই ১০, ৫৬ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৪/১৮৪) : ইসলাম গরীব অবস্থায় শুরু হয়েছিল... গরীবদের
মাঝেই তা ফিরে যাবে। এখানে গরীব বলতে মক্কা-মদীনাকে বুঝানো হয়েছে কি? হাদীছটির
বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চাই।
-উম্মে হাবীবা, রংপুর।
উত্তর : এখানে
‘গরীব’ বলতে অল্প সংখ্যক লোকদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ শেষ যামানায় অল্প সংখ্যক
লোকের মধ্যেই খাঁটি ইসলাম কেন্দ্রীভূত হবে। বংশগত ও নামধারী মুসলমানের সংখ্যা
বাড়বে। কিন্তু প্রকৃত মুসলমানের সংখ্যা কমবে এবং কমতে কমতে তা এক পর্যায়ে
মুষ্টিমেয় লোকদের মাঝে তা কেন্দ্রীভূত হবে। যেমন শুরুতে অল্প সংখ্যক লোকের মাধ্যমে
ইসলামের সূচনা হয়েছিল। অতঃপর নবুঅতের বরকতে এবং খেলাফতে রাশেদাহর মাধ্যমে
বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় সাধিত হয়। কিন্তু খেলাফতের অবর্তমানে মুসলমানের আদর্শিক
অবনতি দ্রুততর হয়, যা ইমাম মাহদীর আগমনের প্রাক্কাল অবধি চলতে থাকবে। একসময়
ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। নানাবিধ শিরক ও বিদ‘আতে ডুবে
গিয়ে মুসলমান সেগুলিকেই ইসলাম ভাববে। অথচ প্রকৃত ইসলাম হবে তা থেকে অনেক দূরে।
হাদীছটির ব্যাখ্যায় ক্বাযী আয়ায বলেন, ইসলাম শুরু হয়েছিল অল্প
সংখ্যক মানুষের দ্বারা। অতঃপর তা প্রকাশিত হয় এবং ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর অচিরেই তাতে
আবার ঘাটতি বা কমতি দেখা দিবে। অতঃপর সূচনাকালের ন্যায় অল্প কিছু মানুষের মধ্যেই
ইসলাম অবশিষ্ট থাকবে (নববী, শরহ মুসলিম হা/১৪৭-এর ব্যাখ্যা)।
অতঃপর হাদীছটির বাকী অংশে বলা হয়েছে, ‘সুসংবাদ সেই
অল্পসংখ্যক লোকদের জন্যই’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৯ ‘ঈমান’ অধ্যায়; ‘কুরআন ও
সুন্নাহকে দৃঢ় ভাবে ধারণ করা’ অনুচ্ছেদ)।
অন্য বর্ণনায় সেই অল্প সংখ্যক মানুষের পরিচয় দিয়ে রাসূল (ছাঃ)
বলেন, সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক লোকদের জন্য। যারা আমার পরে লোকেরা (ইসলামের) যে
বিষয়গুলি বিনষ্ট করে, সেগুলিকে পুনঃ সংস্কার করবে’ (আহমাদ হা/১৬৭৩৬; মিশকাত
হা/১৭০; ছহীহাহ হা/১২৭৩)। এরাই হ’লেন ফিরক্বা নাজিয়াহ। ৭৩ ফিরক্বার মধ্যে কেবল
তারাই শুরুতে জান্নাতী হবে’ (তিরমিযী হা/২৬৪১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৭১; ছহীহাহ
হা/১৩৪৮; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ‘ফিরক্বা নাজিয়াহ’ বই)।
প্রশ্ন (২৭/১৮৭) : ঘুমের মধ্যে ভয় লাগায় জনৈক মাওলানার নিকটে
চিকিৎসা নেই। তিনি একটি সূরার নকশা দিয়ে সেটি বালিশের নীচে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
এক্ষণে কুরআনের আয়াত এভাবে রাখা যাবে কি?
-তুষার আহমাদ*, পুঠিয়া, রাজশাহী ।
[শুধু ‘আহমাদ’ নাম রাখুন। ‘তুষার’ নয় (স.স.)।]
উত্তর : উক্ত
চিকিৎসা মনগড়া ও শরী‘আত পরিপন্থী। তাই বালিশের নীচে কুরআনের আয়াতের নকশা রাখা যাবে
না। বরং ভয় থেকে বাঁচার জন্য সুন্নাতসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়।... কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সে
যেন আ‘ঊযুবিল্লাহি... রজীম পাঠ করে এবং বাম দিকে তিনবার থুক মারে। আর
কারু কাছে যেন সেটা প্রকাশ না করে। এতে তার কোন ক্ষতি হবে না’ (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬১২)। ছহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, বাম দিকে ৩ বার থুক মারবে,
৩ বার আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম বলবে ও পার্শ্ব পরিবর্তন
করবে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬১৩-১৪ ‘স্বপ্ন’ অধ্যায়)।
অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যদি ঘুমের মধ্যে ভীত হয়, তবে সে যেন পাঠ করে- ‘আ‘ঊযু
বিকালিমা-তিল্লা-হিত তাম্মা-তি মিন গাযাবিহী ও ইক্বাবিহী ওয়া শার্রি ইবাদিহী
ওয়ামিন হামাঝাতিশ শায়াত্বীনি ওয়া আইঁ ইয়াহযুরূন। অর্থাৎ আমি আল্লাহর আশ্রয়
প্রার্থনা করছি তাঁর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি হ’তে,
তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হ’তে এবং শয়তানের খটকা সমূহ হ’তে, আর সে যেন আমার নিকট
উপস্থিত হ’তে না পারে। কেননা সে তাকে ক্ষতি করতে পারবে না’ (তিরমিযী হা/৩৫২৮;
আবুদাঊদ হা/৩৮৯৩; মিশকাত হা/২৪৭৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬০১)।
প্রশ্ন (২৮/১৮৮)
: সূরা ফাতিহার মোট কয়টি নাম রয়েছে। ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
-এরশাদ আলী, ফুলবাড়িয়া, মংমনসিংহ।
উত্তর : বিভিন্ন
হাদীছ, আছার ও বিদ্বানগণের নামকরণের মাধ্যমে অন্যূন ৩০টি নাম বর্ণিত হয়েছে।
তন্মধ্যে ছহীহ হাদীছসমূহে এসেছে ৮টি। যেমন : (১) উম্মুল কুরআন (কুরআনের মূল)। (২)
উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল)। (৩) আস-সাব‘উল মাছানী (সাতটি বারবার পঠিতব্য আয়াত)।
(৪) আল-কুরআনুল ‘আযীম (মহান কুরআন) (হিজর ১৫/৮৭; বুখারী তা‘লীক্ব হা/৪৭০৪;
তিরমিযী হা/৩১২৪, আবুদাঊদ হা/১৪৫৭)। (৫) আল-হামদু (যাবতীয় প্রশংসা)। (৬)
ছালাত (মুসলিম হা/৩৯৫, নাসাঈ হা/৯০৯; মিশকাত হা/৮২৩)। (৭) রুক্বিয়াহ
(ফুঁকদান) (বুখারী হা/৫৭৩৬)। (৮) ফাতিহাতুল কিতাব (বুখারী
হা/৭৫৬, মুসলিম হা/৩৯৪, ৮০৬)। এ নামে সকল বিদ্বান একমত। কারণ এ সূরা দিয়েই
কুরআন পাঠ শুরু হয়। কুরআনুল কারীম লেখা শুরু হয় এবং এটা দিয়েই ছালাত শুরু
হয় (কুরতুবী)।
এতদ্ব্যতীত অন্য নামগুলি যেমন : (৯) শিফা (দারেমী হা/৩৩৭০;
মিশকাত হা/২১৭০, মুহাক্কিক : হুসাইন আসাদ সালীম, সনদ মুরসাল ছহীহ), (১০) আসাসুল
কুরআন (কুরআনের ভিত্তি)। ইবনু আববাস (রাঃ) এ নামকরণ করেছেন (ইবনু কাছীর)।
(১১) কাফিয়াহ (যথেষ্ট)। ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাছীর এ নামকরণ করেছেন। কারণ এটুকুতেই
ছালাত যথেষ্ট এবং এটি ব্যতীত ছালাত হয় না (কুরতুবী)। (১২) ওয়াফিয়াহ (পূর্ণ)।
সুফিয়ান বিন উয়ায়না এ নামকরণ করেছেন। কারণ এ সূরাটি সর্বদা পূর্ণভাবে পড়তে হয়।
আধাআধি করে দু’রাক‘আতে পড়া যায় না (কুরতুবী)। (১৩) ওয়াক্বিয়াহ (হেফাযতকারী)।
(১৪) কান্য (খনি)। এছাড়াও ফাতিহাতুল কুরআন, সূরাতুল হাম্দ, শুক্র, ফাতিহাহ,
মিন্নাহ, দো‘আ, সওয়াল, মুনাজাত, তাফভীয, মাসআলাহ, রা-ক্বিয়াহ, নূর,
আল-হাম্দুলিল্লাহ, ইল্মুল ইয়াক্বীন, সূরাতুল হাম্দিল ঊলা, সূরাতুল হাম্দিল কুছরা’।
এইভাবে নাম বৃদ্ধির ফলে সূরা ফাতিহার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে (আব্দুস সাত্তার
দেহলভী, তাফসীরে সূরায়ে ফাতিহা ১/৬৮-৯২; বিস্তারিত দ্রঃ তাফসীরুল কুরআন, ৩০তম পারা
৮-৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৯/১৮৯) : আমাদের এখানে অনেক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর
পিতা-মাতা জান্নাতী। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কবর থেকে উঠিয়ে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ
করিয়েছেন। এর সত্যতা আছে কি?
-আবু তাহের, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
উত্তর : এ বিষয়ে আবুদাঊদের আরবী ভাষ্যকার শামসুল হক আযীমাবাদী বলেন, কোন
কোন বিদ্বান রাসূল (ছাঃ)-এর পিতা-মাতাকে জীবিতকরণ, ঈমান আনয়ন ও নাজাত প্রাপ্তি
সম্পর্কে কিছু দলীল পেশ করার চেষ্টা করেছেন, যার অধিকাংশই মুহাদ্দিছ ওলামায়ে
কেরামের নিকটে মিথ্যা ও জাল এবং বাকীগুলি খুবই দুর্বল (আওনুল মা‘বূদ ১২/৩২৪,
হা/৪৭১৮-এর আলোচনা)।
রাসূল (ছাঃ)-এর পিতা-মাতার জাহান্নামী হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট ছহীহ
হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকটে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা কোথায়? রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তোমার পিতা জাহান্নামে। একথা শ্রবণ করে লোকটি দুঃখিত হয়ে ফিরে যাচ্ছিল, তখন রাসূল
(ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন, আমার পিতা এবং তোমার পিতা উভয়েই
জাহান্নামী (মুসলিম হা/২০৩; আবুদাঊদ হা/৩৯৪৯; ছহীহাহ হা/২৫৯২)। একবার রাসূল
(ছাঃ) মা আমেনার কবর দেখতে গেলেন। তখন তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর সাথীগণও
কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করার অনুমতি চেয়েছিলাম; কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। অতঃপর তাঁর কবর যিয়ারতের
অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা তা মৃত্যুকে স্মরণ
করিয়ে দেয়’ (মুসলিম হা/৯৭৬; মিশকাত হা/১৭৬৩ ‘কবর’ যিয়ারত’ অনুচ্ছেদ)।
উপরোল্লিখিত হাদীছদ্বয় থেকে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিতা-মাতা জান্নাতী
হবেন না।
প্রশ্ন (৩০/১৯০) : এক শ্রেণীর আলেম ও ইমাম গুল ও জর্দা খান। তাদেরকে
সালাম দেওয়া বা তাদের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
-মুনীরুল ইসলাম, বদরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : এসব নেশাদার দ্রব্য পান করা হারাম (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৬৫২)।
তাই এগুলি যারা খান, তারা কবীরা গোনাহগার। কিন্তু কাফির নন। অতএব তাদের পিছনে
ছালাত হবে এবং তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন, তোমার রুকূকারীর পিছনে রুকূ
কর (বাক্বারাহ ২/৪৩)। আর পরস্পরে সালাম বিনিময় করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল।
তবে এরূপ ব্যক্তিকে ইমামতির মত গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা উচিত নয়। আর যে তিন শ্রেণীর
মানুষের ছালাত কবুল হয় না তাদের একজন হচ্ছে সেই ইমাম, লোকেরা যাকে অপসন্দ করা
সত্ত্বেও সে ইমামতি করে’ (আবুদাঊদ হা/৫৯৩; মিশকাত হা/১১২৩)।
প্রশ্ন (৩১/১৯১) : মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করার উদ্ভব কখন থেকে
হয়?
-রফীকুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ইবনু
তায়মিয়া (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর একটি উক্তির ভুল ব্যাখ্যার
মধ্য দিয়ে মুখে নিয়ত পাঠের সূচনা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেন,بِأَنَّ الصَّلَاةَ فِي أَوَّلِهَا كَلَامٌ ‘ছালাতের
পূর্বে কালাম বা বাক্য রয়েছে। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এ ব্যাপারে বলেন,
বিদ্বানগণের ঐক্যমতে নিয়তের স্থান হ’ল অন্তর। কেউ যদি অন্তরে নিয়ত করে, মুখে
উচ্চারণ না করে তাহ’লে তা যথেষ্ট হবে। শাফেঈ মাযহাবের কিছু অনুসারী ইমাম শাফেঈ-এর
উক্তি ভুল বুঝে নতুন পথ বের করেছে। তিনি তাকবীরে তাহরীমা ও ছালাতের মধ্যে পার্থক্য
করার জন্য বলেছেন যে, এর দ্বারা কিছু অনুসারী মনে করেছেন যে, তিনি এর দ্বারা
মুখে নিয়ত পাঠ করা বুঝিয়েছেন। অথচ তিনি এর দ্বারা তাকবীরে তাহরীমা
বুঝিয়েছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/২৬২, ২২/২২১, ২২/২৩০)। ইমাম শাফেঈর বক্তব্যের
ভুল ব্যাখ্যা করার বিষয়টি ইমাম নববীও সমর্থন করেছেন (নববী, শারহুল মুহাযযাব
৩/২৪৩)।
এছাড়া হেদায়া লেখক আল-মারগীনানী (৫১১-৫৯৩ হি.) সহ পরবর্তী কালের
কিছু ফক্বীহ অন্তরে নিয়ত করার সাথে সাথে মুখে তা পাঠ করাকে ‘সুন্দর’ বলে গণ্য
করেন। যেমন হেদায়া-তে বলা হয়েছে, ‘নিয়ত অর্থ সংকল্প করা। তবে শর্ত হ’ল এই যে,
মুছল্লী কোন ছালাত আদায় করবে, সেটা অন্তর থেকে জানা। মুখে নিয়ত পাঠ করার কোন
গুরুত্ব নেই। তবে হৃদয়ের সংকল্পকে একীভূত করার স্বার্থে মুখে নিয়ত পাঠকে সুন্দর
গণ্য করা চলে’ (অর্থাৎ সংকল্পের সাথে সাথে মুখে তা উচ্চারণ করা) [হেদায়া
(দেউবন্দ, ভারত: মাকতাবা থানবী ১৪১৬ হিঃ) ১/৯৬ পৃঃ ‘ছালাতের শর্তাবলী’ অধ্যায়]।
মোল্লা আলী ক্বারী, কামাল ইবনুল হুমাম, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী
(রহঃ) প্রমুখ খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বানগণ এ মতের বিরোধিতা করেছেন ও একে ‘বিদ‘আত’
বলে আখ্যায়িত করেছেন (মিরক্বাত শরহ মিশকাত ১/৪০-৪১ পৃঃ; হেদায়া ১/৯৬ পৃঃ
টীকা-১৩ দ্রষ্টব্য)। অন্যান্য স্থান সহ ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমানের মধ্যে
‘নাওয়াইতু ‘আন উছাল্লিয়া’ পাঠের মাধ্যমে মুখে নিয়ত পড়ার প্রথা চালু রয়েছে। অথচ এর
কোন শারঈ ভিত্তি নেই। ছালাতের শুরু হ’তে শেষ পর্যন্ত পুরা অনুষ্ঠানটিই আল্লাহর
‘অহি’ দ্বারা নির্ধারিত। এখানে ‘রায়’ বা ‘ক্বিয়াস’-এর কোন অবকাশ নেই। অতএব মুখে
নিয়ত পাঠ করা ‘সুন্দর’ নয় বরং ‘বিদ‘আত’- যা অবশ্যই ‘মন্দ’ ও পরিত্যাজ্য (ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৪৬ টীকা-১১২ দ্র.)।
প্রশ্ন (৩২/১৯২) : জনৈক আলেম বলেন, কারো
মৃত্যুর খবরে প্রথমে আল-হামদুলিল্লাহ বলতে হবে তারপর ইন্নালিল্লাহ বলবে। একথার কোন
ভিত্তি আছে কি?
-হারূনুর রশীদ, চোরকোল, ঝিনাইদহ।
উত্তর : কারো মৃত্যুতে বা কোন বিপদে ‘ইন্না লিল্লাহি... রাজেঊন’ বলাই
যথেষ্ট (বাক্বারাহ ২/১৫৬)। এছাড়া এক্ষেত্রে ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী
মুছীবাতী...’ দো‘আটিও পাঠ করা যাবে (বাক্বারা ২/১৫৬; মুসলিম হা/৯১৮, মিশকাত
হা/১৬১৮)। তবে একটি হাদীছে এসেছে যে, জনৈক ব্যক্তি স্বীয় সন্তানের মৃত্যুতে
‘আল-হামদুলিল্লাহ’ পাঠ করে তাকদীরের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের চরম পরাকাষ্ঠা
দেখালে, আল্লাহ তা‘আলা খুশী হয়ে ফেরেশতামন্ডলীকে তার জন্য জান্নাতে ‘বায়তুল হামদ’
নামে একটি গৃহ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন (তিরমিযী হা/১০২১;
ছহীহাহ হা/১৪০৮)। এটি বিশেষ অবস্থার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র।
মানুষের জীবন-মৃত্যুসহ যাবতীয় কর্মকান্ডের একমাত্র মালিক ও
নিয়ন্ত্রক আল্লাহ (মুলক ২, গাফের ৬৪)। আল্লাহ তা‘আলা পিতা-মাতার মাঝে
সন্তানের প্রতি এমন ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন যে, জীবদ্দশায় সন্তানের মৃত্যু
পিতা-মাতার জন্য মেনে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সবই যে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এ
বিশ্বাস থাকলেও এসময় তা কাজে আসে না। তাই এই কঠিন মূহূর্তেও যারা তাকদীরের উপর
পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে সক্ষম হয়, তাদের পুরস্কারের কথা উক্ত হাদীছে বিবৃত
হয়েছে। এর অর্থ এটা নয় যে, মৃত্যুর খবর শুনে আগে আলহামদুলিল্লাহ পড়তে হবে। বরং
নিয়ম হ’ল আগে ইন্না লিল্লাহি... পড়া। যেটা কুরআন আয়াত ও হাদীছের মাধ্যমে
উপরে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই ছাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
প্রশ্ন (৩৩/১৯৩) :
নিয়মিতভাবে বিতর ছালাত আদায় না করলে সে কি কবীরা গুনাহগার হিসাবে গণ্য হবে?
-আবু যাহরাহ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : না। কারণ বিতর ছালাত আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হ’লেও তা ফরয
নয়। যে কারণে এটি আদায় না করলে তাকে শাস্তিও দেওয়া হবে না (ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমাহ ৭/১৭২)। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীর প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দিন-রাতে পাঁচ
ওয়াক্ত ছালাত ফরয। সে বলল, আমার উপর এছাড়া আরো ছালাত আছে কি? তিনি বললেন, না, তবে
নফল আদায় করতে পার (বুখারী হা/৪৬; মুসলিম হা/১১; মিশকাত হা/১৬)। নববী বলেন, এ
হাদীছ প্রমাণ করে যে, বিতরের ছালাত ওয়াজিব নয় (নববী, শরহ মুসলিম ১/১৬৯)। ইবনু
হাজার বলেন, দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ব্যতীত কোন ছালাত ওয়াজিব নয় (ফাৎহুল
বারী ১/১০৭)।
বিতর ছালাত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৩;
নাসাঈ হা/১৬৭৬)। এটি খুবই ফযীলতপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাড়ীতে বা সফরে কোন
অবস্থায় বিতর ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পরিত্যাগ করতেন না (ইবনুল ক্বাইয়িম,
যাদুল মা‘আদ ১/৪৫৬)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বিতর ছালাতকে
তোমাদের জন্য অতিরিক্ত হিসাবে দান করেছেন। তোমরা এটি এশা ও ফজর ছালাতের মধ্যবর্তী
সময়ে আদায় কর (হাকেম হা/১১৪৮; আহমাদ হা/২৩৯০২; ছহীহাহ হা/১০৮৭)। তিনি
বলেন, যে ব্যক্তি বিতরের ছালাত আদায়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়ে বা ভুলে যায়, জাগ্রত হওয়া
বা স্মরণ হওয়া মাত্রই যেন সে উক্ত ছালাত আদায় করে নেয় (তিরমিযী হা/৪৬৫;
মিশকাত হা/১২৭৯, সনদ ছহীহ)। আলী (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই বিতর বাধ্যতামূলক ছালাত নয়
এবং তোমাদের ফরয ছালাতের সম-পর্যায়ভুক্তও নয়। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) বিতরের ছালাত
আদায় করেছেন, অতঃপর বলেছেন, হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতর ছালাত পড়ো। নিশ্চয়ই আল্লাহ
বিতর (বেজোড়), তিনি বিতরকে ভালবাসেন (আবুদাউদ হা/১৪১৬; ইবনু মাজাহ
হা/১১৬৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৯০, ৫৯৩)।
প্রশ্ন (৩৭/১৯৭) : সুলতান সোলায়মান নামক একটি টিভি সিরিয়ালে সূরা যুমারের
৪২ আয়াতের ভিত্তিতে যিম্মী তথা অঙ্গীকারাবদ্ধ কোন ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা
করা জায়েয ফৎওয়া দেওয়া হয়েছে। উক্ত আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা কি?
-মোবারক হোসেন, রাজশাহী সেনানিবাস, রাজশাহী।
উত্তর : এটি আদৌ জায়েয নয়। কেননা আয়াতটির অর্থ হ’ল, ‘আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ
হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য
তিনি মৃত্যুর ফায়ছালা করেন, তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন
রয়েছে (যুমার ৩৯/৪২)।
আয়াতের মর্ম এই যে, মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে তাদের রূহ আল্লাহ নিজ
ক্ষমতায় উঠিয়ে নেন। এরপর যাদের মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে তাদের রূহ আর ফেরত দেন না। আর
যাদের মৃত্যুর সময় হয়নি, তাদের রূহ নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল পূর্ণ হওয়ার জন্য ফেরত
দেন (ইবনু কাছীর অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি তোমাদেরকে রাত্রিতে (ঘুমের মাধ্যমে) মৃত্যু দান
করেন...। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন, যাতে তোমাদের নির্ধারিত
আয়ুষ্কাল পূর্ণ হয়। পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল...’ (আন‘আম
৬/৬০-৬১)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন
পড়ে, হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে
আবার উঠবো। যদি আপনি ইতিমধ্যে আমার জান কবয করে নেন, তাহ’লে তার উপর রহম করবেন। আর
যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হেফাযত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক
বান্দাদের হেফাযত করে থাকেন’ (বুখারী হা/৬৩২০; মিশকাত হা/২৩৮৪)। এজন্য
মৃত্যুকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ওফাতে কুবরা তথা মৃত্যু ও ওফাতে ছুগরা তথা
ঘুম (ইবনু কাছীর ৭/১০১-১০২)।
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা যায় যে, উক্ত আয়াতে যিম্মীকে ঘুমন্ত অবস্থায়
হত্যা করার কোন দলীল নেই। বরং এটি চূড়ান্তভাবে একটি খেয়ানত মাত্র।
প্রশ্ন (৩৮/১৯৮) : জনৈক ব্যক্তি বলেন,
বাদ্যযন্ত্র নিষেধ মর্মে কোন হাদীছই ছহীহ নয়। এমনকি এ মর্মে বুখারীতে বর্ণিত
মু‘আল্লাক্ব হাদীছটিও যঈফ। এই বক্তব্যের সত্যতা আছে কি?
-আবু যাহরাহ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উক্ত
বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং ইসলাম বিরোধী। ইসলামে বাদ্যযন্ত্র হারাম। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, ‘লোকদের মধ্যে কিছু লোক অজ্ঞতা বশে বাজে কথা খরিদ করে মানুষকে আল্লাহর পথ
থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে
মর্মন্তুদ শাস্তি’ (লোক্বমান ৩১/৬)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এখানে ‘বাজে
কথা’ অর্থ গান-বাজনা (ইবনু কাছীর, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার,
রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত
হা/৫৩৪৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাদ্যযন্ত্রকে مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ ‘শয়তানের
বাদ্য’ বলেছেন (আবুদাঊদ হা/২৫৫৬)। নাফে‘ বলেন, ‘আমি রাস্তায় ইবনু ওমরের সাথে
ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের আওয়ায শুনে তাঁর দু’কানে দু’আঙ্গুল প্রবেশ করালেন এবং
রাস্তার অন্য ধারে সরে গেলেন। অতঃপর দূরে গিয়ে বললেন, নাফে‘! তুমি কি এখন কিছু
শুনতে পাচ্ছ? (নাফে‘ বলেন,) আমি বললাম, না। তখন তিনি তার কান থেকে আঙ্গুল সরালেন
এবং বললেন, আমি একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাঁশীর আওয়াজ শুনে এরূপ
করেছিলেন’ (আহমাদ হা/৪৫৩৫, ৪৯৬৫; আবুদাঊদ হা/৪৯২৪; মিশকাত হা/৪৮১১, সনদ
ছহীহ)।
এক্ষণে উপরে বর্ণিত ছহীহ বুখারীর মু‘আল্লাক্ব
হাদীছটিকে (হা/৫৫৯০) ইবনু হাযম আন্দালুসী দুর্বল বললেও ইবনুল ক্বাইয়িম,
ইবনু হাজার, আলবানী প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ ছহীহ বলেছেন এবং ইবনু হাযম-এর গবেষণাগত
ত্রুটি তুলে ধরেছেন (আলবানী, ছহীহাহ হা/৯১-এর আলোচনা ও ‘তাহরীমু আলাতিত
ত্বারাব’ বই দ্রঃ)।
প্রশ্ন (৩৯/১৯৯) : জনৈক ব্যক্তি লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে নামকাওয়াস্তে
পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সে তওবা করতে চায়।
স্থায়ীভাবে হারাম ভক্ষণের গুনাহ থেকে বাঁচতে চায়। এক্ষণে তার করণীয় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গাইবান্ধা।
উত্তর : উক্ত
পদে যোগ্য হয়ে থাকলে সে খালেছ নিয়তে তওবা করবে এবং চাকুরীরত থাকবে। কারণ যোগ্য
হওয়া সত্ত্বেও যুলুম প্রতিরোধের জন্য বা বাধ্যগত অবস্থায় ঘুষ দিলে সেক্ষেত্রে
ঘুষগ্রহীতা পাপের বোঝা বহন করবে, ঘুষদাতা নয় (মুহাল্লা ৮/১১৮ মাসআলা নং ১৬৩৮;
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/২৮৬)।
তবে
ঘুষ দাতা অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অন্যের হক নষ্ট করে ঘুষের জোরে চাকুরী নিয়ে থাকলে
চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট তওবা করবে। রাসূল (ছাঃ) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার উপর
লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৩৭৫৩)।
মার্চ/২০১৭
প্রশ্ন
(১/২০১) : ‘হায়াতুন্নবী’ সম্পর্কিত বিশুদ্ধ আক্বীদা ও শিরকী আক্বীদা কি কি?
উত্তর : ‘হায়াতুন্নবী’
সম্পর্কিত বিশুদ্ধ আক্বীদা হ’ল, রাসূল (ছাঃ) সহ সকল নবী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের
রূহ ‘আলমে বারযাখে’ জীবিত আছে। যা দুনিয়াবী জীবন থেকে পৃথক। যে জগত সম্পর্কে
আল্লাহ ব্যতীত কেউ অবগত নন (আলবানী, ছহীহাহ হা/৬২১-এর আলোচনা)। আল্লাহ
বলেন, ‘আর তাদের (মৃতদের) সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন
২৩/১০০)। আর উক্ত পর্দা ভেদ করে দুনিয়াবী জীবনের সাথে সম্পর্ক করা কোন মৃতের
পক্ষে সম্ভব নয়।
অতঃপর এ বিষয়ে শিরকী আক্বীদা হ’ল, রাসূল (ছাঃ) কবরে দুনিয়াবী
জীবনের ন্যায় বেঁচে আছেন এবং তিনি মানুষের প্রার্থনা শোনেন ও ভাল-মন্দ করেন বলে
ধারণা করা।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ আমাকে সালাম দিলে আল্লাহ তা‘আলা আমার দেহে
রূহ ফেরত দেন। অতঃপর আমি উক্ত সালামের উত্তর দেই (আবুদাউদ হা/২০৪১; মিশকাত
হা/৯২৫; ছহীহাহ হা/২২৬৬)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন,
لِأَنَّهُ بَعْدَ مَوْتِهِ وَإِنْ كَانَ حَيًّا فَهِيَ حَيَاةٌ أُخْرَوِيَّةٌ لاَ تُشْبِهُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ‘রাসূল
(ছাঃ) মৃত্যুর পরে যদিও জীবিত আছেন, তবুও সেটি পরকালীন জীবন। দুনিয়াবী জীবনের সাথে
যা সামঞ্জস্যশীল নয়’। নবীগণ তাদের প্রভুর নিকটে জীবিত আছেন শহীদদের ন্যায়’ (ফাৎহুল
বারী হা/৪০৪২-এর ব্যাখ্যা, ৭/৩৪৯ পৃ.)। অতএব বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বারযাখী
জীবনের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে মানুষের হায়াত বা মঊত বলে কিছু নেই। তাই রূহ ফেরত
দেওয়ার অর্থ তাঁকে অবহিত করানো এবং তিনি তা বুঝতে পারেন। আর সেটাই হ’ল তাঁর উত্তর
দেওয়া’ (মির‘আত হা/৯৩১-এর ব্যাখ্যা, ৪/২৬২-৭৪)।
অতএব তিনি শুনছেন এরূপ ধারণায় তাঁর কবরের পাশে গিয়ে দরূদ পাঠ করা
সুস্পষ্টভাবে শিরক। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত
ব্যক্তিকে’ (নামল ২৭/৮০)। আর ‘তুমি শুনাতে পারো না কোন
কবরবাসীকে’ (ফাত্বির ৩৫/২২)। এছাড়া ‘যে ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর কবরে
গিয়ে দরূদ পাঠ করবে, তিনি তার জন্য সাক্ষী হবেন ও সুফারিশকারী হবেন’, ‘যে ব্যক্তি
আমার কবর যেয়ারত করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’, ‘আমি তার জন্য
ক্বিয়ামতের দিন সাক্ষী হব’ ইত্যাদি মর্মে যেসব হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সবগুলিই
জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭, ২০৩, ১০২১; ইরওয়াউল গালীল হা/১১২৭-২৮
প্রভৃতি)।
প্রশ্ন (৩/২০৩) : জামা‘আতে ছালাতরত অবস্থায় মুক্তাদী স্বীয় ভুলের
কারণে সহো সিজদা দিতে পারবে কি?
মুফাছছিল হুসাইন
বড়লেখা, মৌলভীবাজার।
উত্তর : এমতাবস্থায় সহো সিজদা দিতে হবে না। কারণ জামা‘আতে ছালাতরত অবস্থায়
ইমামের অনুসরণ করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়
অনুসরণের জন্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। আত্বা, ইবরাহীম নাখঈ,
মাকহূল, যুহরী, হাম্মাদ, ক্বাতাদা প্রমুখ তাবেঈগণ বলেন, মুক্তাদীর জন্য কোন সহো
সিজদা নেই (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪৫৬০-৪৫৬২; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক
হা/৩৫০৭)। আলবানী, উছায়মীন প্রমুখ ওলামায়ে কেরামও এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
তবে মুক্তাদী মাসবূক হ’লে এবং বাকী ছালাতে ভুল করলে সহো সিজদা দিবে (ইরওয়া
২/১৩২; শারহুল মুমতে‘ ২/৩২০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/১৩৮)।
প্রশ্ন (৫/২০৫) : আমি একজন সালাফী। ভারতে বহু সালাফী আলেম বিভিন্ন
মাসআলায় একেকজনের একেক মত। সাধারণ মানুষ বলে, স্থানীয় আলেমদের অনুসরণ করতে। এক্ষণে
আমার করণীয় কি?
আলম,
শিলচর, আসাম, ভারত।
উত্তর : স্থানীয় আলেমদের অনুসরণ করা অপরিহার্য নয়। তবে কোন বিষয়ে উভয়
পক্ষের দলীল যদি ছহীহ হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত ছহীহ আমলকে অগ্রাধিকার
দেওয়াই উত্তম হবে। আর ফৎওয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল স্তরের মানুষের জন্য যরূরী হ’ল,
দলীল জেনে নেওয়া। ছাহাবীগণ একটি বিষয়ে একাধিক ছাহাবীর কাছে জানতেন (আবুদাঊদ
হা/৪৬৯৯, ৩৬৪১ প্রভৃতি, মিশকাত হা/১১৫, ২১২) এবং পরস্পরের নিকট দলীলও
চাইতেন (তিরমিযী হা/৩০০০ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৩৫৫৪)। তবে দলীল বুঝার ক্ষমতা না
থাকলে যিনি যিদ ও হঠকারিতা থেকে মুক্ত এবং যিনি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী
ফৎওয়া দেন, সেরূপ যোগ্য ও আল্লাহভীরু আলেমের নিকট থেকে ফৎওয়া গ্রহণ করতে
হবে (নাহল ১৬/৪৩-৪৪)। এরপরেও কোন আলেম যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দলীলবিহীন ফৎওয়া দেন,
তাহ’লে তার দায়িত্ব তার উপরেই (আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ প্রভৃতি, মিশকাত হা/২৪২)।
প্রশ্ন (৬/২০৬) : একটি মেয়ে একটি ছেলের সাথে পালিয়ে বিবাহ করে
সংসার করছে। পিতা মেয়েকে ত্যাজ্য করেছে। উক্ত বিবাহ ও ত্যাজ্যকরণ সঠিক হয়েছে কি?
এক্ষণে পিতার করণীয় সম্পর্কে শরী‘আতের নির্দেশনা কি?
সাইফুযযামান,
চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : বৈধ অভিভাবকের অনুমতি ও দু’জন ন্যায়বান সাক্ষী ছাড়া সম্পন্ন হওয়ায়
উক্ত বিবাহ বাতিল (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪০৭৫; আবুদাঊদ হা/২০৮৩ প্রভৃতি;
মিশকাত হা/৩১৩১)। তবে এজন্য সন্তানকে ত্যাজ্য করার কোন বিধান শরী‘আতে নেই। কোন
পিতা এরূপ করে থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এরূপ করলে পিতা-মাতা রক্ত সম্পর্ক
ছিন্নকারী কবীরা গোনাহগার হিসাবে গণ্য হবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘রক্ত সম্পর্ক
ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম
হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২)। এক্ষণে এরূপ ক্ষেত্রে যদি উভয়ের মাঝে দ্বীনী ও
চারিত্রিক সমতা থাকে, তাহ’লে স্বেচ্ছায় অনুমতি দিয়ে উভয়কে তওবা করিয়ে নতুনভাবে
বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহ’লে ব্যভিচারের কঠিন গুনাহ থেকে উভয়েই মুক্তি পাবে।
তবে তা না থাকলে সন্তানের মাঝে ঈমানী চেতনা সৃষ্টি করে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
করতে হবে।
প্রশ্ন (৭/২০৭) : মহান আল্লাহ বিচারের মাঠে বান্দাদের সব পাপ ক্ষমা
করবেন যদি শিরক না থাকে। তাহ’লে কি তিনি বান্দার সাথে সম্পর্কিত গোনাহও মাফ করবেন?
নাসীফুল মুশফিক,
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : শিরকের গুনাহ আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে
তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হক বান্দার সাথে
সংশ্লিষ্ট, যা বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তার নিজস্ব তওবা
এক্ষেত্রে কোন কাজে আসবে না (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : রিয়াযুছ ছালেহীন ‘তওবা’
অনুচ্ছেদ-২-এর আলোচনা)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, শহীদদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় তার ঋণ
ব্যতীত (মুসলিম হা/১৮৮৬; মিশকাত হা/২৯১২)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ঋণ বলে
এখানে বান্দার সকল প্রকারের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে (নববী, শরহ
মুসলিম ১৩/২৯, হা/১৮৮৫-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
মাযলূমের হক কেবলমাত্র তওবা দ্বারা পূরণ হয় না।... বরং তওবা তখনই পূর্ণতা পাবে,
যখন সে যুলুমের প্রতিদান মাযলূমকে বুঝিয়ে দিবে। যদি সে দুনিয়াতে তা পূরণ না করে,
তবে আখেরাতে তাকে তা পূরণ করতে হবে ...(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১৮৭-১৮৯)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমার
উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে ছালাত-ছিয়াম-যাকাত ইত্যাদি আদায়
করে আসবে। সাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারু উপরে অপবাদ
দিয়েছে, কারু মাল গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব
পাওনাদারকে ঐ ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার
নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।
প্রশ্ন (৮/২০৮) : ছালাতের সময় জামার হাতা গুটিয়ে রাখায় কোন বাধা
আছে কি?
আরীফ,
কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : ছালাত অবস্থায় পুরুষের জন্য জামার হাতা সমূহ বা কাপড় গুটিয়ে রাখা
উচিত নয়। বরং খোলামেলা ছেড়ে দিতে হবে (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭,
‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; ছিফাতু ছালাতিন্নবী পৃ. ১২৫)।
প্রশ্ন (৯/২০৯) : মহিলাদের জামা‘আতে মহিলা ইমাম ক্বিরা’আত ও আমীন
সশব্দে পড়তে পারবে কি?
মাযহারুল ইসলাম
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
উত্তর : পারবে। তবে কোন গায়ের মাহরাম পুরুষ তা শ্রবণের সম্ভাবনা থাকলে
নিম্নস্বরে ক্বিরাআত করবে (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৪৩ পৃ.)। কারণ মহিলাদের
কণ্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত (আহযাব ৩৩/৩২; বুখারী হা/১২০৩; মুসলিম হা/৪২২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নারী জাতি লজ্জার বস্ত্ত’ (তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত
হা/৩১০৯)। তার কণ্ঠস্বরটাও লজ্জার অন্তর্ভুক্ত। সেকারণেই তাকে উচ্চকণ্ঠে আযান দিতে
নিষেধ করা হয়েছে। লোকমা মুখে না বলে হাতের পিঠে হাত মারতে বলা হয়েছে (বুখারী
হা/১২০৩; মুসলিম হা/৪২২; মিশকাত হা/৯৮৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৩ পৃ.)।
প্রশ্ন (১০/২১০) : আগুনে পোড়ানো গোশত খাওয়া যাবে কি? এতে শরী‘আতে
কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?
ইমামুল হোসাইন,
দোহার, কাতার।
উত্তর : শারঈ পন্থায় পশু যবহ করার পর যেকোন উপায়ে খাদ্যোপযোগী করে তা খাওয়া
যাবে। পুড়িয়ে খাওয়ার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং এটাই প্রমাণিত যে,
রাসূল (ছাঃ) দুম্বার পোড়ানো পাঁজরের হাড্ডি খেয়েছেন (আহমাদ হা/২৬৬৬৪; তিরমিযী
হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩২৫)।
প্রশ্ন (১২/২১২) : ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার কিছু পূর্বেই আমাকে
গাড়িতে চাকুরীস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’তে হয়। বাসায় ফজর পড়লে ওয়াক্ত হয় না আবার
গাড়িতে পড়লে বার বার দিক পরিবর্তন হয়। এক্ষণে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে আমার করণীয়
কি?
নাঈম,
সিঙ্গাপুর।
উত্তর : সফররত অবস্থায় ছালাতের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং
যানবাহন থেকে নামার কোন সুযোগ না থাকলে যানবাহনেই প্রবল ধারণার ভিত্তিতে
ক্বিবলামুখী হয়ে ছালাত আদায় করবে। নইলে যেকোন দিকে ফিরে ছালাত আদায়
করবে (বাক্বারাহ ২/২৩৮; বুখারী হা/৪৫৩৫, ইবনু মাজাহ হা/১০২০; বিস্তারিত দ্রঃ
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৪০ পৃ.)।
প্রশ্ন
(১৩/২১৩) : আমি ছালাত আদায়ের সময় আমার বাচ্চা আমার সামনে গিয়ে বসে থাকে। ফলে সিজদা
করার সময় হাত দিয়ে সরিয়ে সিজদা করতে হয়। এতে আমার ছালাত হবে কি?
সাইফুল্লাহ,
গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ।
উত্তর : ছালাত হয়ে যাবে। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে
লোকদের ইমামতি করতে দেখেছি, অথচ তখন আবুল ‘আছের কন্যা উমামা (অর্থাৎ নাতনী) তাঁর
কাঁধের উপর ছিল। তিনি যখন রুকূ করতেন তাকে নামিয়ে দিতেন, আর যখন সিজদা হ’তে মাথা
তুলতেন পুনরায় উঠিয়ে নিতেন (বুখারী হা/৫৯৯৬; মুসলিম হা/৫৪৩; মিশকাত হা/৯৮৪)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদা রাসূল (ছাঃ) হাসান বা হোসাইন (রাঃ)-কে কোলে নিয়ে ছালাতে
আসেন এবং তাকে পাশে রেখে ছালাত শুরু করেন। অতঃপর ছালাতের মধ্যে একটি সিজদা এত
লম্বা করেন যে, একজন ছাহাবী কোন অঘটন ঘটেছে কি-না তা দেখতে মাথা উঁচু করে দেখেন
যে, হাসান বা হোসাইন (রাঃ) রাসূলের পিঠের উপরে চড়ে রয়েছে। অতঃপর সালাম ফিরানোর পর
এত লম্বা সময় সিজদায় থাকার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার নাতি আমার
উপর চড়েছিল। তাই আমি তাড়াহুড়া করতে অপসন্দ করলাম। যাতে তার খাহেশ পুরণ হয়ে যায়
(অর্থাৎ সে নেমে যায়) (নাসাঈ হা/১১৪১)। তবে এতে যেন ছালাতের খুশূ-খুযূ‘
বিনষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রশ্ন (১৪/২১৪) : কোন মুছল্লী জেহরী ছালাতের কিছু অংশ পাওয়ার পর
বাকী অংশে সরবে না নীরবে ক্বিরাআত করবে?
একরামুল হক,
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
উত্তর : এমতাবস্থায় মাসবূক মুছল্লী বাকী ছালাতে নীরবে অথবা নীচু স্বরে
ক্বিরাআত করবেন (আবুদাউদ হা/১৩৩২; ছহীহাহ হা/১৬০৩)।
প্রশ্ন (১৫/২১৫) : মহিলারা কয়জন পুরুষের সামনে
বিনা পর্দায় যেতে পারে?
আব্দুল্লাহ বিন যহীর
আবুধাবী, আরব আমিরাত।
উত্তর : কেবল
মাহরাম পুরুষদের সামনে যেতে পারবেন। এ বিষয়ে সূরা নূর ৩১ আয়াতে ১০ জন পুরুষের কথা
বলা হয়েছে, যাদের সাথে নারী সাধারণ পোষাকে সাক্ষাৎ করতে পারে। যেমন স্বামী, পিতা
(দাদা-নানা, চাচা-মামা), শ্বশুর (জামাতা), পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা
(বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয়), ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগিনীপুত্র, কামনাহীন পুরুষ এবং
নারী-অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ শিশু’। এতদ্ব্যতীত দুগ্ধসম্পর্কীয় ভাই ও অন্যান্যগণ
রক্তসম্পর্কীয় ভাই ও অন্যান্যগণের ন্যায় (বুখারী হা/২৬৪৫, ৫১০৩)। তবে সকলে
হারাম হ’লেও তাদের সাথে ব্যবহারে তারতম্য থাকবে। যেমন স্বামী, পিতা, পুত্র, ভ্রাতা
এবং অন্যান্যগণ সমান নয়।
প্রশ্ন (১৭/২১৭) : একাধিক মহিলা ও পুরুষের জানাযার ছালাত একত্রে
আদায় করা যাবে কি?
লুৎফর রহমান,
র্যাব-৫, রাজশাহী।
উত্তর : একাধিক নারী ও পুরুষের একই সাথে জানাযার ছালাত আদায় করায় কোন বাধা
নেই। এক্ষেত্রে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি সম্মুখে রাখবে। তারপর মহিলার লাশ
রাখবে। ইবনু ওমর (রাঃ) একই সাথে নয়জন নারী-পুরুষের জানাযার ছালাত আদায় করেন এবং
নারীদের ক্বিবলার দিকে ও পুরুষদের ইমামের সামনে তার কাছাকাছি স্থানে রাখেন। এই
জানাযায় ইবনু আববাস, আবু সাঈদ, আবু হুরায়রা ও আবু ক্বাতাদাহ উপস্থিত ছিলেন। এবিষয়ে
জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা বলেন, এটি সুন্নাত (নাসাঈ হা/১৯৭৮; আছার ছহীহাহ হা/
৪৪১; আহকামুল জানায়েয ১/১০৩, সনদ ছহীহ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল পৃঃ ২১৫)।
প্রশ্ন (১৮/২১৮) : ছালাতে উভয় তাশাহহুদেই কি আঙ্গুল নাড়াতে হবে?
তোফাযযল হোসাইন
ইসলামপুর, জামালপুর।
উত্তর : উভয় তাশাহহুদেই আঙ্গুল নাড়ানো সুন্নাত। এ ব্যাপারে বর্ণিত
হাদীছসমূহে প্রথম বা শেষ তাশাহহুদ বলে পৃথক করা হয়নি। বরং উভয় তাশাহহুদের
বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে (আবুদাউদ হা/৯৮৮, ৯৯০; নাসাঈ হা/১২৭৫;
মিশকাত হা/৯১২)।
প্রশ্ন (১৯/২১৯) : টয়লেটের মধ্যে ওযূ করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা
যাবে কি?
ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ,
মির্জাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : ওযূর পূর্বে সর্বাবস্থায় বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। এটি পাঠ করা
গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত (তিরমিযী হা/২৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪০২; ফাতাওয়া লাজনাহ
দায়েমাহ ৫/৯৪; শারহুল মুমতে‘ ১/১৬০)। এছাড়া টয়লেটের ভিতরে যেকোন দো‘আ পাঠে বাধা
নেই (মুসলিম হা/৩৭৩; মিশকাত হা/৪৫৬)। কেবল পেশাব-পায়খানারত অবস্থায় দো‘আ সহ
সকল প্রকার যিকির থেকে বিরত থাকবে (বুখারী হা/৩৩৭; মুসলিম হা/৩৬৯; মিশকাত
হা/৫৩৫)।
প্রশ্ন (২০/২২০) : কুরবানীর চামড়া বিক্রি থেকে
প্রাপ্ত অর্থ মসজিদের উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে কি?
আরশাদ আলী
মুজিবনগর, মেহেরপুর।
উত্তর : কুরবানীর চামড়া মসজিদের উন্নয়নে লাগানো যাবে না। কারণ সূরা তওবাহর
৬০ আয়াতে যাকাতের যে ৮টি খাত উল্লেখ করা হয়েছে, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রশ্ন (২২/২২২) : বর্ণিত আছে যে, খলীফা থাকাকালীন
সময়ে ওমর (রাঃ) সন্তানদের জন্য ঈদের কাপড় ক্রয় করতে না পেরে বায়তুল মাল-এর প্রধান
আবু ওবায়দা (রাঃ)-কে তার এক মাসের অগ্রিম বেতন দেয়ার জন্য চিঠি পাঠান। পত্র পেয়ে
তিনি অশ্রুসিক্ত হ’লেও উত্তর লিখলেন যে, অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য দু’টি বিষয়
বিবেচনা করতে হবে। প্রথমতঃ আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি-না? দ্বিতীয়তঃ
বেঁচে থাকলেও মুসলমানেরা আপনাকে খিলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কি-না? উত্তর পাঠ
করে ওমর (রাঃ) এত বেশী ক্রন্দন করেন যে তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। তিনি আবু ওবায়দার জন্য
আল্লাহর নিকটে রহমত ও হায়াত বৃদ্ধির জন্য দো‘আ করলেন। ফলে আর ঈদের কাপড়ও কেনা হ’ল
না। এ ঘটনার সত্যতা আছে কি?
নাছিরুদ্দীন,
মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : ঘটনাটি শিক্ষণীয় ও বহুল প্রচলিত হ’লেও শুদ্ধ বা অশুদ্ধ কোন সূত্রে
এটি পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এটি ওমর (রাঃ)-এর আত্মসম্মানের বরখেলাফ।
প্রশ্ন (২৩/২২৩) : নিজ মায়ের সৎ খালাকে বিবাহ
করা যাবে কি?
ইশতিয়াক্ব,
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : না।
কারণ মায়ের সৎ খালা তার আপন খালার ন্যায়। কারণ হাদীছে এসেছে, الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ ‘খালা
মায়ের মর্যাদা সম্পন্ন’ (বুখারী হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/৩৩৭৭)। অতএব নানী হিসাবে
তিনি মাহরাম পর্যায়ভুক্ত (নিসা ৪/২৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৭৫)।
প্রশ্ন (২৫/২২৫) : লোকমান কে ছিলেন? তার নামে সূরা নাযিল হওয়ার
কারণ কি?
হুমায়ূন কবীর,
সাঘাটা, গাইবান্ধা।
উত্তর : লোকমান
অত্যন্ত উঁচুদরের একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। সুফিয়ান ছওরী ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে,
ক্বাতাদাহ জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব সহ অধিকাংশ
সালাফের মতে তিনি নবী নন; বরং তিনি একজন সৎ বান্দা ছিলেন। যে আছার দ্বারা তাঁর নবী
হওয়া প্রমাণিত হয় তা যঈফ (ইবনে কাছীর, তাফসীর সূরা লোকমান ৩১/১২ আয়াত)। লোকমানকে
আল্লাহ বিশেষ ‘হিকমত’ দান করেছিলেন (লোকমান ৩১/১২)। যেমন খিযিরকে বিশেষ
‘ইল্ম’ দান করেছিলেন (কাহফ ১৮/৬৫)। তাঁর জ্ঞানপূর্ণ উপদেশসমূহ কুরআনে বর্ণিত
হয়েছে এবং তার নামে একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এর কারণ হ’ল এখানে লোকমান কর্তৃক তাঁর
সন্তানকে প্রদত্ত মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় কিছু উপদেশ ও অছিয়ত সম্পর্কিত ঘটনার
বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যেমনভাবে বাক্বারাহ, কাহফ, আলে ইমরান, ইসরা প্রভৃতি সূরার
নামকরণ অনেকসময় ঘটনার প্রেক্ষিতে হয়েছে। তার পিতা-মাতা, বংশ পরিচয়, প্রজ্ঞা
ইত্যাদি ব্যাপারে অনেক ঘটনা বিভিনণ তাফসীর গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে। তবে সেগুলি
প্রমাণিত নয়।
প্রশ্ন (২৬/২২৬) : কবর থেকে বরকত গ্রহণ করা যদি শিরক হয়, তাহ’লে
ইমাম বুখারী রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের পাশে বসে বুখারীর তরজমাতুল বাব রচনার কারণ কি?
মীযান, ফরিদপুর।
উত্তর : ইমাম বুখারী (রহঃ) ছহীহ বুখারীর তরজমাতুল বাব রচনার সময় রাসূল
(ছাঃ)-এর কবরের দ্বারা বরকত গ্রহণ করেছেন ইমাম বুখারী একথা বলেননি। বরং তিনি রাসূল
(ছাঃ)-এর কবর এবং তাঁর মিম্বারের মাঝে মসজিদে বসে তরজমাতুল বাব রচনা করেছিলেন এবং
প্রতিটি তরজমাতুল বাব রচনার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেছিলেন (ফাৎহুল
বারী ১/৪৮৯; নববী, তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত ১/১০১)। হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-এর বাসগৃহ
এবং তাঁর মিম্বরের মাঝের স্থানটিকে জান্নাতের বাগিচাসমূহের একটি বাগিচা বলে অভিহিত
করা হয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৪)। তাই তিনি সেই জান্নাতের বাগিচায়
বসে ছহীহ বুখারীর তরজমাতুল বাব রচনা করেছেন এবং তা কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট
দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে প্রার্থনা করেছেন। এতে কবর থেকে বরকত হাছিল করা প্রমাণ
হয় না।
প্রশ্ন (২৭/২২৭) : তাফসীর মাহফিলে জনৈক মুফতী বললেন, কোন আলেম
কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ৪০ দিনের কবরের আযাব মাফ হয়। এ বক্তব্য কি ঠিক?
ফযলুল হক,
নাটোর।
উত্তর : উক্ত
বক্তব্য সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তবে আলেম হোক বা সাধারণ মুমিন হোক কবরের
পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে কবরবাসীর জন্য দো‘আ করলে মৃত মুমিন ব্যক্তি উপকৃত
হবেন (মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৬৪ ‘জানাযা’ অধ্যায় ‘কবর যিয়ারত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩১/২৩১) : স্বপ্নদোষ হ’লে পুরো পোষাক ও বিছানা পরিষ্কার করতে হবে কি? না
কেবল নাপাকী লাগা স্থানটি ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হবে?
সোহেল রাণা,
পবা, রাজশাহী।
উত্তর : কেবল অপবিত্র স্থানটুকু পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট হবে। পুরো পোশাক বা
পুরো বিছানা ধোয়ার কোন প্রয়োজন নেই। একবার এক ব্যক্তি আয়েশা (রাঃ)-এর মেহমান হ’ল।
অতঃপর সকালে সে তার কাপড় ধুতে লাগল। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি যদি (কাপড়ে) তা
(বীর্য) দেখতে পাও, তবে তোমার জন্য শুধু সে জায়গাটা ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট হবে। আর যদি
তা না দেখ, তবে তার আশেপাশে পানি ছিটিয়ে দিবে। আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড় থেকে তা নখ
দিয়ে ভাল করে খুঁচে ফেলতাম। অতঃপর তিনি তা পরে ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম
হা/২৮৮, আবুদাঊদ হা/৩৭১)।
প্রশ্ন (৩২/২৩২) : তাফসীরে ইবনে আববাস কতটুকু ছহীহ? উক্ত তাফসীর
যদি ছহীহ ও সকলের জন্য যথেষ্ট হয় তাহ’লে অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থের প্রয়োজন কি?
সাইফুল ইসলাম,
লাকসাম, কুমিল্লা।
উত্তর : ইবনু আববাস (রাঃ) তাফসীর বা অন্য কোন গ্রন্থ রচনা করে যাননি।
‘তাফসীর ইবনু আববাস’ নামে যে তাফসীর গ্রন্থ প্রচলিত রয়েছে তা পরবর্তীতে রচিত। তাই
তাঁর প্রতি এই তাফসীর গ্রন্থটি সম্বন্ধিত করা যাবে না।
ইবনু আববাসের তাফসীর হিসাবে একটি তাফসীর রচনা করেছেন মূসা বিন
আব্দুর রহমান। তার ব্যাপারে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সে মিথ্যুকদের
অন্তর্ভুক্ত। ইবনু আদী বলেন, সে মুনকিরুল হাদীছ। ইবনু হিববান বলেন, সে দাজ্জাল ও
হাদীছ জালকারী। সে ইবনু আববাস থেকে আতা হয়ে ইবনু জুরাইজের সূত্রে মুক্বাতিল ও
কালবীর বক্তব্য জমা করে ইবনু আববাসের নামে একটি তাফসীর রচনা করে (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/২৫৯)।
‘তানবীরুল মিক্বয়াস মিন তাফসীরে ইবনে আববাস’ নামে আরেকটি তাফসীর
রয়েছে। যে ব্যাপারে মুহাম্মাদ হোসাইন যাহাবী (১৯১৫-১৯৭৭ ইং) বলেন, বৃহদায়তন এই
তাফসীরটি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। যা ‘তানবীরুল মিকয়াস মিন
তাফসীরে ইবনে আববাস’ নামে মিসর থেকে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে। যা আবু তাহের
মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব ফিরোযাবাদী শাফেঈ জমা করেছেন...। তিনি বলেন, কিন্তু এটা ইবনু
আববাসের দিকে সম্পর্কিত করা ঠিক নয়। বরং ফিরোযাবাদী এটি জমা করেছেন এবং
ইচ্ছাকৃতভাবে ইবনু আববাসের দিকে বাজে বর্ণনা সমূহ সম্পর্কিত করেছেন। সূত্রটি হ’ল-
ইবনু আববাস থেকে আবু ছালেহ, তার থেকে কালবী, তার থেকে মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান
সুদ্দী (আত-তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরূন ২/২৬)।
এর মধ্যে মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান ‘মিথ্যাবাদী’ হিসাবে অভিযুক্ত,
কালবী প্রসিদ্ধ হাদীছ জালকারী, আর আবু ছালেহ ইবনু আববাসের সাক্ষাৎ লাভ
করেননি (যাহাবী, মীযানুল ই‘তেদাল ৪/৩২; ৩/৫৫৭-৫৫৯)।
আল্লামা সুয়ূতীও এব্যাপারে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন (আল-ইৎক্বান
ফি ঊলূমিল কুরআন ২/৪৯৭-৪৯৮)। তবে বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থ থেকে কেবলমাত্র বিশুদ্ধ
সূত্রে বর্ণিত ইবনু আববাসের তাফসীরসমূহ জমা করে বেশ কিছু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। যেমন-
আব্দুল আযীয হুমাইদীর ‘তাফসীর ইবনু আববাস ওয়া মারবিয়াতুহূ ফিত তাফসীর মিন কুতুবিস
সুন্নাহ’ এবং আদম মুহাম্মাদ আলীর ‘ইবনু আববাস ওয়া মানহাজুহূ ফিত তাফসীর’। জানা
আবশ্যক যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর তাফসীরই যথেষ্ট নয়। বরং অন্যান্য ছাহাবী ও তাবেঈগণ
থেকে এবং পরবর্তী বিদ্বানগণ থেকে তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। কেননা আল্লাহ সব জ্ঞান
একজনের নিকট সীমাবদ্ধ রাখেননি।
প্রশ্ন (৩৩/২৩৩) : চাকুরী বা অন্য কোন কাজে সুফারিশকারী ব্যক্তিকে
গিফ্ট বা উপঢৌকন দেওয়া যাবে কি? পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত
করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক,
সিঙ্গাপুর।
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত কারণে গিফ্ট বা উপঢৌকন প্রদান করা নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কারু জন্য সুফারিশ করল, অতঃপর এর
বিনিময়ে তাকে কোন বস্ত্ত প্রদান করা হ’লে সে তা গ্রহণ করল, ঐ ব্যক্তি একটি বড়
ধরনের সূদ গ্রহণ করল’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৪১; মিশকাত হা/৩৭৫৭ সনদ হাসান,
‘ইমারত’ অধ্যায়; ছহীহুল জামে হা/৬৩১৬)।
জানা আবশ্যক যে, বৈধ কাজে সুফারিশকারী ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে
পুরস্কৃত হবেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِشْفَعُوْا تُؤْجَرُوْا ‘তোমরা
অপরের জন্য সুফারিশ কর, পুরস্কৃত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৫১৩২)।
প্রশ্ন (৩৪/২৩৪)
: পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে জীবনের কোন অস্তিত্ব আছে কি? এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে
কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় কি?
শহীদ হাসান,
ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
উত্তর :
পৃথিবী ছাড়াও অন্যত্র জীবনের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আসমান ও
যমীনে যত প্রাণী আছে, সবই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতাগণ। আর তারা অহংকার করে
না’ (নাহল ১৪/৪৯)। উক্ত আয়াত থেকে অনুমতি হয় যে, আসমানে ফেরেশতা ছাড়াও অন্য
সৃষ্টি রয়েছে। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন (৩৬/২৩৬) : বিবাহের পূর্বে দেনমোহর নিয়ে অভিভাবকের সাথে
পাত্রের বনিবনা না হওয়ায় বিবাহ ভেঙ্গে যায়। পরে তারা পালিয়ে গিয়ে কাযী অফিসের
মাধ্যমে বিবাহ করে। কিছুদিন পর যুবকটি তাকে তিন মাসে তিন তালাক দেয়। এক্ষণে তারা
পুনরায় সংসার করতে ইচ্ছুক। তাদের জন্য করণীয় কি?
আবু তাহের খান,
ভালুকা, ময়মনসিংহ।
উত্তর : বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। সেকারণ তালাক প্রযোজ্য হবে
না। কেননা কন্যার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিবাহ বৈধ নয় (ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৯;
মিশকাত হা/৩১৩১, ৩১৩৭)। অতএব যতদিন তারা বসবাস করেছে, ততদিন তারা ব্যভিচারে লিপ্ত
ছিল। এক্ষণে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে চাইলে প্রথমে অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করবে।
অতঃপর অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে শরী‘আসম্মতভাবে বিবাহের সার্বিক কার্যাবলী
সম্পন্ন করবে।
মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ)-এর বোনকে তার স্বামী তালাক দেওয়ার পর
ইদ্দত শেষ হ’লে তার নিকটে আবার বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু মা‘কিল তাতে অমত
করে। এসময় আয়াত নাযিল হয়- ‘আর যখন তোমরা স্ত্রীদের (রাজ‘ঈ) তালাক দাও। অতঃপর তাদের
ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যায়। তখন তারা উভয়ে যদি ন্যায়ানুগভাবে পরস্পরে সম্মত হয়, সে
অবস্থায় স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদের বাধা দিয়ো
না’ (বাক্বারাহ ২/২৩২; বুখারী হা/৫৩৩১)। উক্ত ঘটনার মাধ্যমে বিবাহের ক্ষেত্রে
একদিকে অভিভাবকের অনুমতির গুরুত্ব, অন্যদিকে পাত্রীর পসন্দ মেনে নেওয়ারও গুরুত্ব
ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন (৩৭/২৩৭) : আমার পিতা সূদী ব্যাংকে চাকুরী করেন। মৃত্যুর পর
তার রেখে যাওয়া সম্পদের অংশীদার হওয়া আমার জন্য জায়েয হবে কি?
মেহেদী হাসান,
ডিমলা, নীলফামারী।
উত্তর : সূদী ব্যাংকসহ যেকোন সূদী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর কারণে উপার্জিত
সম্পদ কেবল উপার্জনকারীর জন্য হারাম। উপার্জনকারীর ওয়ারিছ হিসাবে বৈধ পন্থায়
গ্রহণকারী এ জন্য দায়ী হবে না (উছায়মীন, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৫৭ আয়াত
১/১৯৮)। অতএব পিতার মৃত্যুর পর ওয়ারিছরা তার উত্তরাধিকারী হবে। তবে কোন
উত্তরাধিকারী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক সম্পদ লাভের আশায় উপার্জনকারীকে তার জীবদ্দশায়
এথেকে বাধা না দেয়, তবে সে গুনাহগার হবে।
এছাড়া সম্পদের মৌলিকত্ব যদি হারাম হয় এবং তা জানা যায়, তাহ’লে তা
গ্রহণ করা ও ভোগ করা বৈধ হবে না। যেমন চুরি ও লুণ্ঠন কৃত সম্পদ (উছায়মীন,
লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৮৮; মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ১৯/১৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
২৬/৩৩২)।
প্রশ্ন (৩৮/২৩৮) : পুরুষের জন্য হোয়াইট গোল্ড-এর আংটি, ঘড়ি বা অন্য
কোন অলংকার ব্যবহার করায় কোন বাধা আছে কি?
মীযানুর রহমান,
সিলেট।
উত্তর : হোয়াইট
গোল্ড বা সিটি গোল্ড যে নামকরণই করা হৌক না কেন যদি তাতে স্বর্ণের কোন অংশ থাকে,
তাহ’লে পুরুষদের জন্য তা ব্যবহার করা হারাম। যদি না থাকে তাহ’লে
জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭৬/২৪, ২৪/৬১)। তবে বাজারে প্রচলিত হোয়াইট গোল্ড
অলংকারগুলি বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার সাথে অন্য ধাতু মিশিয়ে তৈরী করা হয় বলে জানা
যায়, যা নিঃসন্দেহে পুরুষের জন্য হারাম।
প্রশ্ন (৪০/২৪০) : কাশফ কি? যেকোন বুযর্গের কাশফ হওয়া সম্ভব কি?
ফাযায়েল-এর কিতাবগুলিতে যেসব কাশফের বর্ণনা আছে তার সত্যতা আছে কি?
সাইফুল ইসলাম,
খিলক্ষেত, ঢাকা।
কাশ্ফ অর্থ উন্মুক্ত করা। আল্লাহ কর্তৃক তার কোন বান্দার
নিকট অহী মারফত এমন কিছুর জ্ঞান প্রকাশ করা, যা অন্যের নিকট অপ্রকাশিত। আর এটি
কেবল নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (জুরজানী, কিতাবুত তা‘রিফাত ৩৪ পৃঃ)।
তবে কখনও কখনও রীতি বহির্ভূতভাবে অন্য কারু নিকটে প্রকাশিত হ’তে পারে বা অলৈাকিক
কিছু ঘটতে পারে। যেমন ছাহাবীগণ থেকে হয়েছে। এটাকে ‘কারামত’ বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ্
তাকে এর দ্বারা সম্মানিত করেন। যেমন ওমর (রাঃ) প্রায় ১ মাস দূরত্বে থাকা সৈন্যদলের
অবস্থান সম্পর্কে অনুধাবন করে তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন (মিশকাত হা/৫৯৫৪,
সনদ হাসান; ছহীহাহ হা/১১১০-এর আলোচনা)।
আর এরূপ কোন মুমিন থেকেও প্রকাশিত হ’তে পারে। তবে কারামাত বা ইলহাম
শরী‘আতের কোন দলীল নয় এবং আল্লাহ্র অলী হওয়ার কোন প্রমাণ নয়। বস্ত্ততঃ মুসলমানদের
জন্য অনুসরণীয় হ’ল কুরআন ও সুন্নাহ। অন্য কিছু নয় (আব্দুর রহমান, আল-ফিকরুছ
ছূফী ফী যূইল কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ ১/১৪৬; ত্বাবাকাতুছ ছূফী ১/৭৬)। আর কাশফের কোন
আইনী বা শারঈ ভিত্তি নেই।
এপ্রিল/২০১৭
প্রশ্ন
(১/২৪১) : আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে তাবীয বা এ জাতীয়
কিছু ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর :
আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন, তাবীয নয়। ঔষধের ক্রিয়া আছে,
কিন্তু তাবীযের নিজস্ব কোন ক্রিয়া নেই। এটি মানুষকে আল্লাহর উপর ভরসা বিনষ্ট করে
মাত্র। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক করল’ (আহমাদ,
ছহীহাহ হা/৪৯২)। অন্য হাদীছে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকাবে আল্লাহ যেন তার
উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন এবং যে কড়ি লটকাবে আল্লাহ যেন তাকে আরোগ্য দান না
করেন’ (হাকেম হা/৭৫০১; আহমাদ হা/১৭৪৪০)। এছাড়া শয়তানী কোন প্রভাব থেকে বাঁচার
জন্য কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত বিশুদ্ধ দো‘আসমূহ পাঠ করবে। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায়
সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ এবং নিয়মিত আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে সকল প্রকার বিপদ থেকে
যথেষ্ট হবে (তিরমিযী, আবুদাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/২১৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪০৬)।
প্রশ্ন (৪/২৪৪) : আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিয়ম অনুযায়ী আমার মূল
বেতনের ১৫% কাটা হয় এবং বেপজা এর সাথে ১৫% যোগ করে। চাকুরী হ’তে অবসর নেয়ার পর
উভয়ের জমাকৃত টাকার দ্বিগুণ টাকা অবসরগ্রহণকারীকে দেওয়া হয়। এক্ষণে উক্ত অর্থ
কতটুকু গ্রহণ করা জায়েয হবে?
-আমীনুল ইসলাম
উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ), বেপজা, ঢাকা।
উত্তর : চাকুরী শেষে শুধুমাত্র মূল বেতন থেকে কর্তিত অর্থ এবং প্রতিষ্ঠান
কর্তৃক অনুরূপ জমাকৃত অর্থ গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া সূদের অংশটি আলাদা করে নেকীর আশা
ব্যতীত সমাজ কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। আর যে কোন মূল্যে সূদ থেকে বেঁচে থাকা
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত কর্তব্য। কারণ হারাম রূযী দ্বারা পরিপুষ্ট দেহ
কখনোই জান্নাতে যাবে না’ (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৭৮৭; ছহীহাহ হা/২৬০৯)।
প্রশ্ন (৫/২৪৫) : শুনেছি কফিতে ক্যাফেইন নামক ক্ষতিকর মাদক থাকে।
এটি খাওয়া যাবে কি?
-বদরুল মীম, ঢাকা।
উত্তর : শরী‘আত দু’টি বস্ত্ত খাওয়া নিষিদ্ধ। (১) যা মাদকতা
আনে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৯১)। (২) যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর (ইবনু
মাজাহ, ছহীহাহ হা/২৫০)। কফির উৎস একপ্রকার ফলের বীজ থেকে। এটি পানে ঝিমুনি ভাব
কেটে গিয়ে শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে মাদকতা আসে না এবং মানব দেহের কোন ক্ষতিও
করে না। অতএব এটি হারাম নয় (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, অডিও রেকর্ড
নং ৩৩৩)।
প্রশ্ন (১০/২৫০) : টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণের ব্যাপারে
শরী‘আতের কোন নির্দেশনা আছে কি?
-আব্দুছ
ছবূর মিয়াঁ, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত বিষয়ে নিম্নের দু’টি পদ্ধতি গ্রহণে কোন বাধা
নেই। (১) স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের শুক্রানু ও ডিম্বানু পরাগায়ন করে স্ত্রীর রেহেমে
পুশ করা। (২) স্বামীর শুক্রানু নিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে স্ত্রীর রেহেমে পুশ করা।
এছাড়া অন্য সকল পদ্ধতি শরী‘আত বিরোধী (মাজমা‘ঊল ফিক্বহিল ইসলামী, জর্দান, পৃ.
৩৪)।
প্রশ্ন (১২/২৫২) : হিন্দু বা অমুসলিমদের বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : হিন্দু
বা অমুসলিমদের বাসা ভাড়া দেওয়ায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই, যদি তাদের থেকে কোন ক্ষতির
আশংকা না থাকে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ ১/২৮৬; আল-মাবসূত্ব ১৬/৩৯)। তবে
তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডের জন্য বা শরী‘আতে হারাম এরূপ কোন কাজের জন্য ভাড়া দেওয়া
যাবে না (ইবনু কুদামা, মুগনী ৫/৪০৮)। তাদের ধর্মীয় কাজে সমর্থন, অংশগ্রহণ বা
কোনরূপ সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (১৪/২৫৪) : ছালাতুত তাসবীহ পড়া যাবে কি?
-রাসেল মিয়াঁ, পালবাড়ী, নরসিংদী।
উত্তর : না পড়াই উত্তম। কারণ এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। অধিক তাসবীহ
পাঠের কারণে এই ছালাতকে ‘ছালাতুত তাসবীহ’ বলা হয়। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)
বর্ণিত এ সম্পর্কিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’ কেউ ‘মওযূ’ বা জাল
বলেছেন। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) এরূপ হাদীছ দ্বারা ছালাতুত তাসবীহ সাব্যস্ত করা
জায়েয হবে না বলে মন্তব্য করেছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৫৭৯)। সঊদী আরবের স্থায়ী
ফৎওয়া কমিটি ‘লাজনা দায়েমা’ এই ছালাতকে বিদ‘আত বলে ফৎওয়া দিয়েছে (ফৎওয়া নং
২১৪১)। উছায়মীন (রহঃ) এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছ সমূহকে যঈফ বলেছেন (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৪/৩২৭)। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্র সমূহ পরস্পরকে
শক্তিশালী করে মনে করে তাকে ‘ছহীহ’ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী ও ছাহেবে
মির‘আত একে ‘হাসান’ স্তরে উন্নীত বলেছেন। তবুও এরূপ বিতর্কিত, সন্দেহযুক্ত ও
দুর্বল ভিত্তির উপরে কোন ইবাদত বিশেষ করে ছালাত প্রতিষ্ঠা করা যায় না। অতএব এথেকে
দূরে থাকাই উচিত (আবুদাঊদ হা/১২৯৭-৯৯, ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৬-৮৭; ঐ, মিশকাত
হা/১৩২৮, ‘ছালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০: বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল ২৬৬ পৃঃ)।
প্রশ্ন (১৫/২৫৫) : যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত ছেড়ে দিবে, তার চেহারার
উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। যোহরের ছালাত ছাড়লে বরকত কমে যাবে। আছরের ছালাত ছাড়লে
শক্তি কমে যাবে। মাগরিব ছাড়লে সন্তান কাজে আসবে না। এশা ছাড়লে নিদ্রা হবে না। এ
মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সত্যতা জানতে চাই।
-মুরাদ, পঞ্চগড়।
উত্তর : এটি কোন হাদীছ নয় এবং হাদীছের কোন কিতাবে এটি খুঁজে পাওয়া যায়
না (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা ৩/২৫৯)। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর নামে এরূপ মিথ্যা
প্রচার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কথা বলল, যা আমি
বলিনি। সে তার স্থান জাহান্নামে করে নিল’ (বুখারী হা/১০৯)।
প্রশ্ন (২১/২৬১) : আমাদের অফিসে সবগুলো টয়লেটে কমোড বসানো। তাই বসে
পেশাব করার কোন উপায় নেই। এক্ষণে দাঁড়িয়ে পেশাব করা জায়েয হবে কি?
-আনোয়ারুল ইসলাম
পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
উত্তর : এরূপ
বাধ্যগত পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করা যায়। হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
রাসূল (ছাঃ) একদা একটি গোত্রের ডাষ্টবিনে দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। বলা হয়েছে যে, সেটি
ছিল ওযর বশতঃ (বুখারী হা/২২৪; মুসলিম হা/২৭৩; মিশকাত হা/৩৬৪ ‘পবিত্রতা’
অধ্যায়)। তবে যেন পেশাবের ছিটা কাপড়ে না লাগে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৩৮)। বসে পেশাব করাই শরী‘আতের বিধান। তাই অফিস কর্তৃপক্ষকে শরী‘আতের বিধানটি
জানিয়ে বসার উপযোগী কমোড স্থাপনের জন্য জোর দাবী জানাতে হবে।
প্রশ্ন (২৩/২৬৩) : টিভিতে সংবাদ পাঠকারী বেপর্দা মহিলা হ’লে সেই
খবর দেখা যাবে কি?
-জাহিদ কাযী
বাগহাটা, নরসিংদী।
উত্তর : দেখা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা
যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে’ (নূর ২৪/৩০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘চোখের যেনা হ’ল
(বেগানা) নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা’ (বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত
হা/৮৬)।
প্রশ্ন (২৫/২৬৫) : রাসূল (ছাঃ)-এর নামের শেষে (ছাঃ) সংক্ষিপ্তভাবে
লেখা শরী‘আতসম্মত হবে কি?
-জিবরীল জিবরান, পাংশা, রাজবাড়ী।
উত্তর : সংক্ষেপে এরূপ লেখায় কোন বাধা নেই। আরবী, বাংলা, ইংরেজী সব ভাষাতেই
এরূপ সংক্ষেপে বলার নিয়ম আছে। তবে পাঠক মুখে পুরাটাই বলবেন। শায়খ আলবানী বলেন,
কেবল (ص) লেখায় কোন বাধা নেই। কারণ এটি রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠের ইঙ্গিতবহ
অক্ষরে পরিণত হয়েছে। ফলে এটি বোধগম্য হ’তে কোন অসুবিধা হয় না (আলবানী,
সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, অডিও ক্লিপ নং ১৬৫)।
প্রশ্ন (২৯/২৬৯) : পেশাবযুক্ত পানির ফোঁটা কাপড়ে লাগলে তা দ্বারা
ছালাত আদায় করা যাবে কি?
-হাসিনা খাতুন, রংপুর।
উত্তর : পেশাবের
ছিটাযুক্ত স্থানের কাপড় ধুয়ে পবিত্র করতে হবে। জেনে-শুনে এরূপ পেশাবযুক্ত কাপড়ে
ছালাত আদায় করলে উক্ত ছালাতের ক্বাযা আদায় করতে হবে। কারণ ছালাত আদায়ের জন্য পোষাক
পবিত্র হওয়া শর্ত (মুদ্দাছছির ৭৪/৪; ইবনু হিববান হা/২৩৩৩; ইবনু খুযায়মা
হা/১০১৭)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা পেশাবের অপবিত্রতার ব্যাপারে সতর্ক
থাক। কারণ অধিকাংশ কবরের আযাব এর কারণে হয়ে থাকে (দারাকুৎনী হা/৪৭৬; ছহীহুল
জামে‘ হা/৩০০২)। তবে দুগ্ধপোষ্য ছেলে শিশুর পেশাবে কাপড়ের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়ে
ছালাত আদায় করবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৭)।
প্রশ্ন (৩০/২৭০) : জনৈক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি
প্রত্যেক ছালাতের পর সূরা তওবার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে, সে হাশরের ময়দানে রাসূল
(ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভ করবে এবং দৈনিক ৪১ বার উক্ত আমল করলে স্বপ্নে রাসূল (ছাঃ) কে
দেখবে। এ হাদীছ ছহীহ কি?
-ছায়েম আহমাদ
ছাতিহাটি, কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
উত্তর :
হুবহু উক্ত অর্থে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। কাছাকাছি অর্থে যে সকল বর্ণনা প্রচলিত
আছে, তা ছহীহ নয়। আর সূরা তওবার শেষ আয়াতটি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করার ব্যাপারে যে
বর্ণনা এসেছে তা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৮৬)। আনাস (রাঃ)-এর সাথে
হাজ্জাজ বিন ইউসুফের যে কথোপকথন ও সূরা তওবার শেষ দুই আয়াত পাঠের ফযীলত মর্মে যা
বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলো যঈফ (ত্বাবারাণী, আদ-দো‘আ হা/১০৫৯; সনদ যঈফ,
ইরাক্বী, তাখরীজুল ইহ্ইয়া হা/১১৮০)।
প্রশ্ন (৩১/২৭১) : ফ টো স্টুডিও-র ব্যবসা করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?
-রোকনুযযামান
দুর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সাধারণভাবে প্রাণীর ছবি তোলা নিষিদ্ধ (বুঃ মুঃ মিশকাত
হা/৪৪৯৮, ‘ছবিসমূহ’ অনুচ্ছেদ)। ছবি সম্পর্কিত হাদীছসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
যে, সম্মানের উদ্দেশ্যে অর্ধদেহী বা পূর্ণদেহী সকল প্রকার প্রাণীর ছবি টাঙানো বা
স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কেবল বাধ্যগত কারণে, জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে, রেকর্ড রাখার
স্বার্থে ও হীনকর কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলা যায় (দ্রঃ ‘ছবি ও মূর্তি’
বই)। সে হিসাবে পাসপোর্ট, ভিসা, আইডেন্টিটি কার্ড, লাইসেন্স, পলাতক আসামী ধরার
জন্য, গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রাখার জন্য ইত্যাদি যরূরী কারণে ছবি তোলা জায়েয। আল্লাহ
বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬; বাক্বারাহ ২/২৩৩, ২৮৬)।
তবে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে কেবল এসব কাজের জন্য উক্ত ব্যবসা পরিচালনা করা
কঠিন।
প্রশ্ন (৩৩/২৭৩) : ফেরেশতাগণ কি ক্বিয়ামতের পূর্বে মৃত্যুবরণ করবেন
এবং পুনরায় তাদের জীবিত করা হবে কি?
-জাহিদুল ইসলাম, শনির আখড়া, ঢাকা।
উত্তর : ফেরেশতাগণও মৃত্যুবরণ করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি আল্লাহর সাথে
অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করো না। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। প্রত্যেক বস্ত্তই
ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত। বিধান কেবল তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমরা ফিরে
যাবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৮)। তিনি আরো বলেন, ..এবং শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা
ব্যতীত। অতঃপর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন সকলে দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে
থাকবে (যুমার ৩৯/৬৮)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আসমান ও
যমীনবাসী সকলে মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর সবশেষে মালাকুল মাউত মারা যাবেন এবং
শুধুমাত্র আল্লাহ বাকী থাকবেন, যিনি চিরঞ্জীব (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা যুমার
৬৮ আয়াত)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সমস্ত সৃষ্টি মৃত্যুবরণ করবে,
এমনকি ফেরেশতারাও। অবশেষে মালাকুল মউতও (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২৫৯, ১৬/৩৪)। তবে
পরবর্তীতে তাদেরকেও জীবিত করা হবে। কেননা তারাই পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশমত
যাবতীয় কর্মকান্ড সম্পাদন করবেন।
প্রশ্ন (৩৫/২৭৫) : ছালাতের সময় জামার হাতা গুটিয়ে রাখায় কোন বাধা
আছে কি?
-আরীফ, কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : ছালাত অবস্থায় পুরুষের জন্য জামার হাতা সমূহ বা কাপড় গুটিয়ে রাখা
উচিত নয়। বরং খোলামেলা ছেড়ে দিতে হবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৮৮৭, ‘সিজদা ও তার
ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩৭/২৭৭) : দ্বীনী ইলম অর্জনে লিপ্ত থাকা
প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যিক কি? ন্যূনতম কতটুকু দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করলে
ফরযিয়াত আদায় হবে?
-আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
বংশাল, ঢাকা।
উত্তর : দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন, যা সকল মুসলমানের জন্য
আবশ্যিক। সেগুলি হ’ল- ঈমান ও তা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ, বিশুদ্ধ ও বাতিল আক্বীদা,
তাওহীদ-শিরক, হালাল-হারাম, ছালাত-ছিয়াম, হজ্জ-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ফরয ইবাদত
পালনের নিয়ম-পদ্ধতি সমূহ (আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ হা/১৬৩)। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ
হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)। অতএব ন্যূনতম উক্ত ইলম অর্জন করলে ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে
ইনশাআল্লাহ।
এসব জ্ঞানার্জন ছাড়াই দুনিয়াবী জ্ঞান নিয়ে যারা পড়ে আছে তাদের ব্যাপারে
আল্লাহ তা‘আলার সতর্কবাণী- ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের সাথে সাক্ষাতের আশা করে না এবং
পার্থিব জীবন নিয়েই তৃপ্ত থাকে ও তার মধ্যেই নিশ্চিন্ত হয় এবং যারা আমাদের
নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন। এসব লোকদের ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম তাদের কৃতকর্মের
কারণে (ইউনুস ১০/৭-৮)।
দ্বিতীয় প্রকার ইলম হ’ল দ্বীনের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় গভীর জ্ঞান
অর্জন করা। যা ‘ফরযে কিফায়াহ’ তথা কিছু মুসলিম তা অর্জন করলে বাকীরা দায়মুক্ত হবে।
আল্লাহ বলেন, অতএব তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের
জ্ঞান অর্জন করে এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে (আল্লাহর নাফরমানী হ’তে) ভয় প্রদর্শন করে
যাতে তারা সতর্ক হয় (তওবা ৯/১২২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ইলম হাছিলের জন্য কোন পথ
অবলম্বন করে, আল্লাহ তার মাধ্যমে তাকে জান্নাতের পথ সমূহের একটি পথে পৌঁছে দেন।...
আলেমগণের মর্যাদা আবেদগণের উপরে ঐরূপ, পূর্ণিমার রাতে চাঁদের মর্যাদা অন্যান্য
তারকাসমূহের উপরে যেরূপ। নিশ্চয়ই আলেমগণ হ’লেন নবীগণের উত্তরাধিকারী... (তিরমিযী,
আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২১২)।
উছায়মীন (রহঃ) বলেন, কল্যাণের পথ বহু রয়েছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে
আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয হ’ল শারঈ ইলম অর্জন
করা (উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ২/১৫০)।
প্রশ্ন (৩৮/২৭৮) : কোন বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা
নারীকে বিবাহ করার ক্ষেত্রে তার পূর্বস্বামীর সন্তানের খরচ বহন করা যরূরী কি? উক্ত
নারী কি নতুন বিবাহের পর উক্ত সন্তানদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে?
-সামীর আলী, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত সন্তানদের খরচ বহন করা অপরিহার্য নয়। বরং মায়ের অধীনে থাকলে
অভিভাবক হিসাবে মা তাদের খরচ বহন করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হবে। তবে মা
যেহেতু ব্যক্তির স্ত্রী হিসাবে তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেহেতু অশেষ ছওয়াবের
আশায় উক্ত সন্তানদের খরচ বহন করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রী সাওদা (রাঃ)-এর
পূর্ব স্বামীর পাঁচটি বা ছয়টি সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্বসহ তাকে বিবাহ
করেন (আহমাদ হা/২৯২৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৫২৩)। এছাড়া তিনি অপর স্ত্রী উম্মে
সালামার পূর্ব স্বামীর সন্তানদের লালন-পালন করেছিলেন (বুখারী হা/৫৩৭৬; মুসলিম
হা/২০২২)।
প্রশ্ন (৩৯/২৭৯) : দেশের বিভিন্ন এলাকায় দোকানে বা ব্যবসা
প্রতিষ্ঠানে সকাল-সন্ধ্যায় আগরবাতি জ্বালানোর প্রচলন রয়েছে। শারঈ দৃষ্টিকোন থেকে
বিষয়টি বৈধ কি?
-মাযহারুল ইসলাম, মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : সাধারণভাবে এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিক লাভ বা
কল্যাণের উদ্দেশ্যে এরূপ আগরবাতি জ্বালালে তা অবশ্যই শিরক হবে। দোকান, বাড়ী বা
নিজেকে সুগন্ধিময় রাখা উত্তম অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, দুনিয়ার
তিনটি বস্ত্ত রাসূল (ছাঃ)-এর পসন্দ ছিল। যার দু’টি তিনি পেয়েছিলেন, একটি পাননি।
তিনি নারী ও সুগন্ধি লাভ করেছিলেন। কিন্তু খাদ্য অর্জন করতে পারেননি (আহমাদ,
মিশকাত হা/৫২৬০ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, ‘দারিদ্রের ফযীলত ও নবী করীম (ছাঃ)-এর জীবন
যাপন’ অনুচ্ছেদ)। অন্য এক বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার নিকট পসন্দনীয় হচ্ছে
সুগন্ধি, নারী ও ছালাত, যে ছালাতকে আমার চোখের জন্য শীতল করে দেওয়া
হয়েছে (নাসাঈ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান)।
মে/২০১৭
প্রশ্ন
(১/২৮১) : নারীদের টাখনুর উপরে কাপড় পরতে হবে কি?
উত্তর : না। বরং নারীরা টাখনুর নীচে কাপড় পরবে। উম্মে সালামা (রাঃ)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মহিলারা তাদের কাপড়ের আঁচলের ক্ষেত্রে কি
করবে? তিনি বললেন, তারা (মধ্যহাঁটু থেকে) এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। তিনি বললেন,
এতে তো তাদের পা প্রকাশ হয়ে যাবে। তিনি বললেন, তবে তারা এক হাত পর্যন্ত ঝুলিয়ে
রাখবে, এর বেশী করবে না’ (তিরমিযী হা/১৭৩১; প্রভৃতি, মিশকাত হা/৪৩৩৫; ছহীহাহ
হা/৪৬০)। আল্লাহ বলেন, আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন
সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় (নূর ২৪/৩১)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু হযম বলেন,
আয়াতটি প্রমাণ করে যে, নারীদের পা ও পায়ের নলা তাদের গোপনাঙ্গের অন্তর্ভুক্ত, যা
প্রকাশ করা হালাল নয় (আল-মুহাল্লা, মাসআলা নং ৩৪৯, ২/২৪৭)। বিদ্বানগণ এবিষয়ে
একমত যে, গোড়ালীর নীচে কাপড় ঝুলানো পুরুষদের জন্য হারাম, নারীদের জন্য নয় (মিরক্বাত
হা/৪৩১৪-এর ব্যাখ্যা)। তবে বাইরে বের হওয়ার সময় নারীদের পায়ে কালো মোযা ব্যবহার
করা উত্তম হবে।
প্রশ্ন (৩/২৮৩) : অনেক সময় গণকদের কথা সত্য হয়। এর ব্যাখ্যা জানতে
চাই।
-খন্দকার নাসীফ, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : গণকের নিকট যাওয়া যাওয়া যাবে না। কারণ সে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বলে।
গণকদের কিছু কথা কখনো সত্যের সাথে মিলে যেতে পারে। কিন্তু সেটি শয়তানের চুপিসারে
শ্রুত কথা মাত্র। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ফেরেশতাগণ মেঘমালার উপরে অবতরণ করেন এবং
আকাশে (আল্লাহর) নির্ধারিত বিধান আলোচনা করেন। তখন শয়তানেরা চুরি করে তা শোনার
চেষ্টা করে এবং তার কিছু শুনেও ফেলে। এরপর তারা তা গণকের কাছে পৌঁছে দেয়। অতঃপর
সেই শোনা কথার সাথে তারা নিজেদের পক্ষ থেকে শত মিথ্যা মিলিয়ে (মানুষের কাছে)
বলে’ (বুখারী হা/৩২১০; মিশকাত হা/৪৫৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৫৫)। অন্য বর্ণনায়
এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা যখন আকাশে কোন ফায়ছালা করেন। অতঃপর তা নিয়ে ফেরেশতাগণের আলাপ
করেন, তখন শয়তান চুরি করে তার কিছু কিছু শ্রবণ করে এবং প্রথমজন তার নীচের জনকে এবং
সে তার নীচের জনকে জানিয়ে দেয়। এমনিভাবে এ খবর দুনিয়ার জাদুকর ও জ্যোতিষীদের কাছে
পৌঁছে যায়। অতঃপর তারা তাতে শত মিথ্যা মিশিয়ে মানুষের কাছে বলে। এরপর লোকেরা
বলাবলি করে যে, সে কি অমুক দিন অমুক অমুক কথা আমাদের বলেনি? অতঃপর আসমান থেকে
শ্রুত কথাগুলি সত্য হয়ে যায় (বুখারী হা/৪৮০০; মিশকাত হা/৪৬০০)।
কিন্তু এগুলোতে বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে, তার ৪০ দিনের ছালাত কবুল হয়
না’ (মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের
কাছে গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, ঐ ব্যক্তি মুহাম্মদ-এর প্রতি যা অবর্তীর্ণ
হয়েছে, তার সাথে কুফরী করল’ (আবুদাঊদ হা/৩৯০৪; মিশকাত হা/৪৫৯৯)।
প্রশ্ন (১৪/২৯৪) : একই ওযূর পানি দিয়ে একাধিক ব্যক্তি ওযূ করতে
পারবে কি?
-ডা. সালমান খন্দকার, জুড়ী, মৌলভীবাজার।
উত্তর : একই পানি দিয়ে একাধিক ব্যক্তি ওযূ করতে পারে। কারণ পানি পবিত্র।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই পানি পবিত্র। তাকে কোন বস্ত্ত অপবিত্র করতে পারে
না’ (আবুদাঊদ হা/৬৭; মিশকাত হা/৪৭৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না তা
নাপাকী বহন করে (আবুদাঊদ হা/৬৩; মিশকাত হা/৪৭৭)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায়
ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, পানি কম হৌক বেশী
হৌক, সেখানে নাপাকী পড়ায় যদি তার স্বাদ, রং বা গন্ধে কোন পরিবর্তন আসে, তাহ’লে
সেটা অপবিত্র হবে (মির‘আত হা/৪৮১, ২/১৭৩)।
প্রশ্ন (১৬/২৯৬) : নারীরা সন্তান জন্মদানের কতদিন পর ছালাত শুরু
করবে। কাযা ছাওম ও ছালাতগুলি কি পুনরায় আদায় করতে হবে?
-ইনসান আলী, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : নিফাসের নিম্ন সময়ের কোন মেয়াদ নেই। যখনই পবিত্র হবে, তখনই ছালাত ও
ছিয়াম শুরু করবে (তিরমিযী হা/১৩৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৪৫৮)। তবে এর
ঊর্ধ্ব সময়সীমা হ’ল ৪০ দিন। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, নিফাসগ্রস্ত মহিলাগণ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে ৪০ দিন অপেক্ষা করতেন’ (আবুদাঊদ হা/৩১১; তিরমিযী
হা/১৩৯; ইরওয়া হা/২০১, সনদ ছহীহ)। অতএব ৪০ দিন পরও যদি কারো স্রাব বন্ধ না হয়,
তাহ’লে বুঝতে হবে যে, এটি এস্তেহাযা, যা এক প্রকার প্রদর রোগ। এমতাবস্থায় গোসল করে
ছালাত আদায় করবে এবং প্রতি ছালাতের পূর্বে ওযূ করবে’ (বুখারী হা/২২৮; মুসলিম
হা/৩৩৩; মিশকাত হা/৫৫৭)। নিফাস চলাকালীন সময়ের ছুটে যাওয়া ছিয়ামের কাযা আদায় করতে
হ’লেও ছালাতের কোন কাযা আদায় করতে হবে না। নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণ নিফাসের সময়
চল্লিলশ দিন পর্যন্ত বসে থাকতেন। নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে নিফাসকালীন ছালাত কাযা করার
নির্দেশ দিতেন না’ (আবুদাউদ হা/৩১২; ইরওয়া হা/২০১, সনদ হাসান)। তবে ছিয়ামের
কাযা আদায়ের নির্দেশ দিতেন (মুসলিম হা/৩৩৫; মিশকাত হা/২০৩২)।
প্রশ্ন (২৫/৩০৫) : ফজরের ফরয ছালাতের পর যিকির-আযকারের নেকী পেতে
চাই। কিন্তু শহরের মসজিদগুলি ফজরের ছালাতের পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক্ষণে উক্ত
ইবাদত করার উপায় কি? এছাড়া সুন্নাত ছালাতের ৩য় বা ৪র্থ রাক‘আতে সূরা মিলাতে হবে
কি?
-আব্দুল্লাহ যামান, দিনাজপুর।
উত্তর : মসজিদ যতক্ষণ খোলা থাকে ততক্ষণ মসজিদে বসে যিকর-আযকার করবে। নইলে
বাড়িতে এসে দু’রাক‘আত নফল ছালাত পড়ে মুছাল্লায় বসে যিকির-আযকার করবে। আর নফল ইবাদত
বাড়ীতে করাই সুন্নাত (ইবনু মাজাহ হা/১৩৭৮)।
চার রাক‘আত বিশিষ্ট ‘নফল ছালাতে’র শেষ দু’রাক‘আতে অন্য সূরা
মিলাবেন’ (মুসলিম হা/৩৯৪)।
প্রশ্ন (৩৩/৩১৩) : পরনিন্দা বা গীবত করলে ওযূ ও ছিয়াম নষ্ট হবে কি?
-মোহাইমিন, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল। যেমন- আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেছেন, ‘পাঁচটি কর্ম ছিয়াম ও ওযূকে বিনষ্ট করে : (১) মিথ্যা কথা (২) গীবত বা
পরনিন্দা (৩) চোগলখুরী (অর্থাৎ একের কথা অন্যকে লাগিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে
দেওয়া) (৪) যৌনাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অন্যের দিকে তাকানো (৫) মিথ্যা কসম
করা’ (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৭০৮)। গীবত বা পরনিন্দা করা
শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কিন্তু তাতে ওযূ বা ছিয়াম নষ্ট হবে কথাটি সঠিক নয়। তবে এটি
কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ছিয়াম ত্রুটিপূর্ণ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের
মধ্যে কেউ যখন ছিয়াম পালন করে, তখন সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং উচ্চৈঃস্বরে ঝগড়া
না করে (বুখারী হা/১৯০৪, মিশকাত হা/১৯৫৯)।
রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, ‘অনেক ছিয়াম পালনকারী রয়েছে, যার ছিয়াম
দ্বারা ক্ষুৎ-পিপাসা ব্যতীত কোনই লাভ হয় না এবং কত রাত্রী জাগরণকারী আছে, যাদের
রাত্রি জাগরণ নিদ্রাহীন থাকা ব্যতীত কোনই উপকারে আসে না (ইবনু মাজাহ হা/১৬৯০;
মিশকাত হা/২০১৪)।
প্রশ্ন (৩৬/৩১৬) : পোর্টে ব্যবসার সময় টাকা ঋণ নিতে হয়। যাতে ৪-৫
ঘণ্টা ব্যবধানে লাখে ১০ হাযার টাকা লাভ দিতে হয়। এরূপ কারবার শরী‘আত সম্মত হবে কি?
না হ’লে করণীয় কি?
-আশরাফুল আলম, কলাবাগান, ঢাকা।
উত্তর : এরূপ কারবার শরী‘আত সম্মত নয়। এটি সুস্পষ্ট সূদ যা ইসলামে হারাম।
আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সূদকে হারাম করেছেন (বাক্বারাহ
২/২৭৫)। অতএব সম্ভব হ’লে সূদ মুক্ত ঋণ দ্বারা ব্যবসা করতে হবে। নইলে ছেড়ে দিতে
হবে।
জুন/২০১৭
প্রশ্ন (৩/৩৪৩) : কেউ কাউকে দাওয়াত দিল। কিন্তু সে যাওয়ার সময়
আরেকজনকে সাথে নিয়ে গেল। তার জন্য উক্ত দাওয়াত খাওয়া জায়েয হবে কি?
-হাফীযুল ইসলাম, পলাশবাড়ী, নীলফামারী।
উত্তর : এমতাবস্থায় দাওয়াত দাতার অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় ফিরে যাবে। আবু
মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু শু‘আইব নামক জনৈক আনছারী রাসূল (ছাঃ)-কে
দাওয়াত দিলে তিনি তাঁর সাথে অতিরিক্ত একজন নিয়ে আসলেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন,
‘এ আমাদের সঙ্গে এসেছে। তুমি ইচ্ছা করলে একে অনুমতি দিতে পার। আর তুমি যদি চাও সে
ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। ছাহাবী বললেন, না, আমি তাকে অনুমতি
দিলাম’ (বুখারী হা/২০৮১; মুসলিম হা/২০৩৬; মিশকাত হা/৩২১৯)।
প্রশ্ন (৭/৩৪৭) : নামের শেষে ভুইয়া, চৌধুরী, পন্ডিত, হাওলাদার,
মজুমদার ইত্যাদি যোগ করা কি জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত?
-হাবীব, দিনাজপুর।
উত্তর : এগুলি উপমহাদেশে সুলতানী আমল, মোগল ও বৃটিশ ভারতে প্রচলিত বিভিন্ন
পরিচিতি মূলক পদবী মাত্র। এরূপ পদবী নামের শেষে যোগ করায় কোন বাধা নেই। তবে সর্বদা
নিম্নোক্ত হাদীছটি স্মরণ রাখতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লোকেরা যেন তাদের
বাপ-দাদার নামে গর্ব করা হ’তে বিরত থাকে...। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের থেকে
জাহেলিয়াতের অহমিকা ও বাপ-দাদার অহংকার দূরীভূত করে দিয়েছেন। এক্ষণে সে আল্লাহভীরু
মুমিন অথবা হতভাগ্য পাপী মাত্র। মানবজাতি সবাই আদমের সন্তান। আর আদম হ’ল মাটির
তৈরী’ (অতএব অহংকার করার মত কিছুই নেই) (তিরমিযী হা/৩৯৫৫; মিশকাত হা/৪৮৯৯;
ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৬৮)।
প্রশ্ন (১০/৩৫০) : ছালাতরত অবস্থায় ছেলে শিশু গায়ে পেশাব করে দিলে
সেক্ষেত্রে করণীয় কি?
-আযাদ শেখ, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : ছালাত ছেড়ে দিয়ে তা পরিষ্কার করে পুনরায় ছালাতে যোগদান করবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, মেয়েদের পেশাব ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ছেলেদের পেশাবে পানি ছিটাতে
হবে’ (আহমাদ হা/৫৬৩; মিশকাত হা/৫০১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৪২)। উম্মু কায়েস
বিনতে মিহছান (রাঃ) বলেন, দুধপানকারী একটি ছেলে শিশু রাসূল (ছাঃ)-এর কোলে পেশাব
করে দিলে তিনি কেবল কাপড়ের উপর পানি ছিটিয়ে দিলেন (বুখারী হা/২২৩; মিশকাত
হা/৪৯৭)।
প্রশ্ন (১৫/৩৫৫) : আমাদের এখানে পীরের মাজারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর
ঐতিহ্যবাহী ওরস হয়। এ উপলক্ষে মেলা এবং বিরানী খাওয়ানো হয়। উক্ত মেলা থেকে কিছু
কেনাকাটা বা তাদের বিতরণকৃত বিরানী খাওয়া যাবে কি?
-আতীকুর রহমান, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।
উত্তর : যাবে না। এসব স্পষ্টভাবে বিদ‘আতী অনুষ্ঠান। এছাড়া এসব স্থানে বহু
শিরকী কর্মকান্ড হয়ে থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে
এমন কিছু নতুন আবিষ্কার করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা
প্রত্যাখ্যাত’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০)। তাদের যেকোন কাজে
সহযোগিতা করা বা তাদের খাবার খাওয়া যাবে না (মায়েদা ৫/২; ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমা ১৬/১৭৬, ২/২৫৭-২৬৪)।
প্রশ্ন (১৬/৩৫৬) : ফরয ছালাতের কোন রাক‘আতে মুছল্লী সূরা ফাতিহা
পাঠ করতে ভুলে গেলে তার জন্য করণীয় কি? উক্ত রাক‘আত পুনরায় আদায় বা সাহু সিজদা
দিলে হবে কি?
-ইমরোজ হাসান, খলিশাগাড়ি, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : মুছল্লী কোন রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে ভুলে গেলে ইমামের সালাম
ফিরানোর পর উঠে এক রাক‘আত ছালাত পৃথকভাবে আদায় করবে এবং সহো সিজদা দিবে। কারণ সূরা
ফাতিহা ব্যতীত ছালাত হয় না (বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২;
ছহীহ ইবনু খুযায়মা, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ১/২৪৬-৪৭ পৃঃ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল
(ছাঃ) ৯৬-৯৮ পৃঃ)।
প্রশ্ন (১৯/৩৫৯) : নাভীর নীচে কাপড় পরা কি হারাম? আমি যদি প্যান্ট
বা লুঙ্গী নাভীর নীচে পরি এবং পাঞ্জাবী দিয়ে দেহ ঢাকি, তাহ’লে কি সতর ঢাকা হবে?
-কাওছার হাবীব, ভাঙ্গুড়া, পাবনা।
উত্তর : পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী হ’তে হাঁটুর নীচ
পর্যন্ত (ছহীহ জামে‘উছ ছাগীর হা/৫৫৮৩; ইরওয়াউল গালীল হা/২৭১)। তাই নাভী
ও হাঁটু সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং নাভীর নিচ থেকে হাঁটুর উপর সতর (আল-মুগনী
১/৪১৪; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/১৭৩)। এ অংশ সর্বদা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। আর নাভীর নীচে
কাপড় পরে অন্য কাপড় দ্বারা ঢেকে দিলেও তা সতর ঢাকা হিসাবেই গণ্য হবে।
প্রশ্ন (২২/৩৬২) : সন্তান প্রসবের সময় মা মৃত্যুবরণ করলে তিনি কি
শাহাদতের মর্যাদা লাভ করবেন?
-রোজী, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর।
উত্তর : সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় বা প্রসবের সময় এমনকি নিফাস চলাকালীন
অবস্থায় মুমিন নারী মারা গেলে তিনি শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি ছাড়া আরও সাত জন ‘শহীদ’ রয়েছে।
তারা হ’ল : (১) মহামারীতে মৃত (মুমিন) ব্যক্তি (২) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি (৩)
‘যাতুল জাম্ব’ নামক কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি (যেসব গর্ভবর্তী মেয়েদের পেটে বাচ্চা
মারা যায় এবং প্রসূতি মাও মারা যায়, ঐ নারীকে যাতুল জাম্ব-এর রোগিনী বলা হয়। ইবনু
হাজার বলেন, এটিই প্রসিদ্ধ (ফৎহুল বারী হা/২৮২৯-এর ব্যাখ্যা, ৬/৫১ পৃঃ)। (৪)
(কলেরা বা অনুরূপ) পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি (৫) আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি (৬) ধ্বসে
চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি ও (৭) গর্ভাবস্থায় মৃত মহিলা’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত
হা/১৫৬১; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৯৮)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নিফাসী নারী যার সন্তান
নাড়ীসহ তাকে জান্নাতে টেনে নিয়ে যায়’ (আহমাদ হা/১৬০৪১, সনদ ছহীহ লেগায়রিহী)।
প্রশ্ন (২৪/৩৬৪) : ছালাতে উচ্চৈঃস্বরে ‘রববানা লাকাল হামদ’ বলা
যাবে কি?
-আব্দুল্লাহ হারিছ, নওগাঁ।
উত্তর : রুকূ থেকে উঠে যে দো‘আটা পড়তে হয় তা নীরবে পড়াই উত্তম। আল্লাহ
বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাক, বিনীতভাবে ও চুপে চুপে’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)।
মক্কা ও মদীনার হারামে মুকাবিবর এটি মাইকে জোরে পড়েন সম্ভবতঃ ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত
হাদীছটির উপর ভিত্তি করে। যেখানে বলা হয়েছে, নবী করীম (ছাঃ) রুকূ থেকে উঠে
‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললে, জনৈক ছাহাবী সশব্দে ‘রববানা লাকাল হাম্দ
হামদান...’ দো‘আটি পাঠ করেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি
ত্রিশের অধিক ফেরেশতাকে ব্যস্ত হ’তে দেখলাম, কে ঐ কথাটি আগে লিখবে’ (বুখারী
হা/৭৯৯; মিশকাত হা/৮৭৭ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩)। তবে যেহেতু উক্ত দো‘আটি অন্য কেউ সরবে
পড়েননি, সেহেতু সাধারণ নির্দেশের আলোকে নিম্নস্বরে পড়াই উত্তম।
প্রশ্ন (৩৩/৩৭৩) : ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত
ছালাতের পর বা যেকোন সময় পাঠ করা যাবে কি?
-মশীউর রহমান, কুষ্টিয়া।
উত্তর : পড়া যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু আকবর
একবার সরবে, অতঃপর তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং
একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা
ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে (বুখারী
হা/৮৪২; মুসলিম হা/৫৮৩, ৫৯১, ৫৯২; মিশকাত হা/৯৫৯-৬১)। সুতরাং এটি সকল ছালাতের
জন্য প্রযোজ্য। আর ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু
আকবর, আয়াতুল কুরসী প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে।
অতএব সেগুলি সেখানে পাঠ করাই উত্তম হবে (আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর
আলোচনা)। তবে সাধারণভাবে এগুলি যেকোন ছালাতের পর পড়া যায় (ফাৎহুল বারী
১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১৬৯)।
প্রশ্ন (৩৬/৩৭৬) : সুন্নাত বা নফল ছালাতে বাংলায় দো‘আ
করা যাবে কি? হারামের ইমামদের দেখা যায় তাঁরা রামাযান মাসে বিতর ছালাতে ইচ্ছামত
লম্বা দো‘আ আরবী ভাষায় পড়েন। এক্ষণে আরবীতে পড়লে জায়েয, কিন্তু বাংলায় পড়লে
নাজায়েয হবে কি?
-শো‘আইব আহমাদ, ডুইসবার্গ, জার্মানী।
উত্তর : ছালাতের ভাষা আরবী। তাই দো‘আও আরবীতেই পাঠ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘আমাদের এ ছালাতে মানুষের কথাবার্তা সিদ্ধ নয়। এটা হ’ল তাসবীহ, তাকবীর এবং
তেলাওয়াতে কুরআন’ (মুসলিম হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৯৭৮)। ছালাতের মধ্যে অন্য ভাষায়
দো‘আ করা যায় মর্মে কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এর মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের
ক্ষেত্রে ঐক্যের সূক্ষ্ম তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। যেমন আযান, সালাম ও দো‘আ সমূহ পাঠ
ইত্যাদি। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষের উচিত কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত শারঈ
দো‘আসমূহই পাঠ করা (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৩৪৬)।
এমতাবস্থায় শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে অর্থ বুঝে ‘রববানা
আ-তেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা
আযা-বান্নার’ পাঠ করবে। আর কুনূতে নাযেলায় পরিস্থিতির চাহিদামত যেকোন দো‘আ আরবীতে
পাঠ করা যেতে পারে। এই কুনূতের জন্য কোন নির্দিষ্ট দো‘আ নেই (মির‘আত ৪/৩০২)।
প্রশ্ন (৪০/৩৮০) : জনৈক আলেম বলেন, একজন
ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর রক্ত পান করেছিলেন। এর কোন সত্যতা আছে কি?
-মুশতাক আহমাদ, আসাম, ভারত।
উত্তর : উক্ত মর্মের বর্ণনাগুলি দুর্বল। (ক) রাসূল (ছাঃ) একবার তাঁর
হাজামতের রক্ত গোপন স্থানে ফেলার জন্য আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরকে আদেশ করলে তিনি তা
বাইরে নিয়ে গিয়ে নিজেই পান করেন। জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, কে তোমাকে
রক্তপানের নির্দেশ দিল? মানুষের পক্ষ থেকে তোমার জন্য আফসোস! মানুষের জন্য তোমার
পক্ষ থেকে আফসোস! (হাকেম হা/৬৩৪৩, যাহাবী চুপ থেকেছেন; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ
হা/১৪০১০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি আরো বলেন, জাহান্নামের আগুন তোমাকে স্পর্শ
করবে না (দারাকুৎনী হা/৮৯৪, সনদ যঈফ)। (খ) আবু সাঈদ খুদরীর পিতা মালেক ইবনু
সিনান ওহোদের যুদ্ধের দিন রাসূল (ছাঃ)-এর ললাট হ’তে রক্ত চেটে খেয়ে ফেলেন। তখন
রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার রক্ত যার রক্তকে স্পর্শ করেছে, তাকে জাহান্নাম স্পর্শ করবে
না’ (ইবনু হিশাম ২/৮০, সনদ যঈফ; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৬৮ পৃ. টীকা-৫০২)।
উল্লেখ্য যে, প্রবাহিত রক্ত পান করা হারাম (আন‘আম ৬/১৪৫; ছহীহাহ হা/৩০০-এর
আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
জুলাই/২০১৭
প্রশ্ন (১/৩৬১) : বাড়ীতে কাজের
ঝামেলায় যোহরের ছালাত ও বাজারে বেচা-কেনার ভীড়ে আছরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করা
সম্ভব হয় না। এভাবে দুনিয়াবী কারণে নিয়মিত জামা‘আত ত্যাগ করলে গুনাহগার হ’তে হবে
কি?
উত্তর : এরূপ নিয়মিত করা যাবে না। উপরোক্ত কারণসমূহ গ্রহণযোগ্য কোন শারঈ
ওযর নয়। বরং ছালাতের সময় দোকান বন্ধ রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন জুম‘আর দিন
ছালাতের আযান হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দৌড়ে যাও এবং ব্যবসা ছাড়’ (জুম‘আ
৬২/৯)। এটি কেবল জুম‘আর ছালাতের জন্য নয়, সকল ফরয ছালাতের জন্য প্রযোজ্য।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল, অথচ জামা‘আতে এলো না, তার ছালাত
হ’ল না। তবে বিশেষ ওযর ব্যতীত’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; ছহীহ ইবনু হিববান
হা/২০৬৪; মিশকাত হা/১০৭৭)। অতএব বিনা ওযরে বাড়িতে বা দোকানে ফরয ছালাত আদায় করলে
ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে নিয়মিতভাবে ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে গুনাহগার
হ’তে হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭
প্রশ্ন (২/৩৬২) : সিজদাকালীন সময়ে দেহের পিছনের কিছু অংশের সতর
অনিচ্ছাকৃতভাবে উন্মুক্ত হয়ে গেলে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
-মারযূক হোসাইন, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : অনিচ্ছাকৃতভাবে এরূপ ঘটে গেলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে
না (বুখারী হা/৪৩০২; মিশকাত হা/১১২৬; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ২/১৭২)। তবে
বুঝতে পারার সাথে সাথে সতর ঢেকে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন (৪/৩৬৪) : হযরত ওমর (রাঃ) একবার একজন ছাহাবীকে সেনাপতি করে
পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি খুৎবা দিতে দিতে বলে উঠলেন তোমরা পিছনে তাকাও! শত্রু
তোমাদের ঘিরে ফেলেছে। তার একথা সেনাপতি শুনতে পেলেন। এঘটনার সত্যতা আছে কি? যদি
থাকে তবে গায়েব তো কেবল আল্লাহ জানেন?
-মুহাম্মাদ মা‘রূফ, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : ঘটনাটি হ’ল- আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ওমর
ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) স্বীয় খেলাফতকালে (ইরানের দক্ষিণ হামদান এলাকার
নাহাওয়ান্দে) ‘সারিয়াহ’ নামক জনৈক সেনাপতির অধীনে একদল সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের
এক পর্যায়ে তারা পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। তখন ওমর (রাঃ) মদীনার মসজিদে নববীতে খুৎবা
দিচ্ছিলেন (যেখানে ওছমান ও আলী (রাঃ) সহ বহু ছাহাবী তাবেঈ ও মুছল্লী উপস্থিত
ছিলেন)। এ সময় ওমর (রাঃ) চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, হে সারিয়া! পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এই
গায়েবী আওয়ায যুদ্ধ ক্ষেত্রে সবাই শুনতে পায়। তখন তারা পিছনে হটে পাহাড়ে আশ্রয়
নেন। অতঃপর পুনরায় যুদ্ধ করে জিতে যান’ (বায়হাক্বী দালায়েল হা/২৬৫৫, ৭/১৮৬;
মিশকাত হা/৫৯৫৪; ছহীহাহ হা/১১১০)।
ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, এটি ওমর (রাঃ)-এর একটি মহান কারামত ও
অত্যুচ্চ মর্যাদার প্রমাণ। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় রয়েছে। যেমন যুদ্ধ ক্ষেত্রের
দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠা। তাঁর আওয়ায সেখানে পৌঁছে যাওয়া। প্রত্যেকে সে আওয়ায
শোনা। সেনাদলের বিজয় লাভ করা এবং তার দো‘আর বরকতে তাদের সাহায্যপ্রাপ্ত
হওয়া (মিরক্বাত)।
এটি ইলমে গায়েব হ’লেও ওমর (রাঃ) গায়েব জানতেন না। বরং গায়েবের
মালিক আল্লাহ তাঁর প্রতি ইলহাম করেছিলেন। যেমনটি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কখনো
কখনো করে থাকেন। যেমন তিনি করেছিলেন মূসা (আঃ)-এর মায়ের প্রতি এবং আরও অনেকের
প্রতি। এভাবে তিনি তার নেক বান্দাদের সম্মানিত করেন। যাকে ‘কারামত’ বা ‘সম্মান’
বলা হয়। অতএব এটি ছিল ওমর (রাঃ)-এর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম বা প্রক্ষেপণ।
যা দ্বারা তিনি ইসলামী বাহিনীকে বিজয়ী করেন।
ইসলামী শরী‘আতে ইলহাম বা কারামত বিশুদ্ধ হাদীছ সমূহ দ্বারা
প্রমাণিত (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৯৮, ১০/২৯-৩০; ‘আহলেহাদীছ
আন্দোলন’ ডক্টরেট থিসিস (প্রকাশকাল : ১৯৯৬ খৃ. ১১০ পৃ.)।
প্রশ্ন (৭/৩৬৭) : কত বছর বয়স থেকে নারীদের বোরকা পরা ও নেকাব
ব্যবহার করা আবশ্যক?
-নাঈমা, রংপুর।
উত্তর : কন্যা শিশু সাবালিকা হ’লে এবং তার শারীরিক গঠনে পরিবর্তন দেখা দিলে
তাকে পর্দার পোষাক পরাতে হবে। তবে সাবালিকা হওয়ার পূর্ব থেকেই পর্দার অভ্যাস গড়ে
তোলা যরূরী (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৭/২১৯)। কেননা রাসূল (ছাঃ) সাত বছর বয়স
থেকে শিশুদের ছালাতের আদেশ দানের জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ
দিয়েছেন (আবুদাঊদ হা/৪৯৫; আহমাদ হা/৬৬৮৯; মিশকাত হা/৫৭২)। ছাহাবায়ে কেরাম
তাদের শিশুদের ছালাত ও ছিয়ামের প্রশিক্ষণ দিতেন। এমনকি মায়েরা ছিয়ামরত শিশুদের
খেলনা দিয়ে খাবারের কথা ভুলিয়ে রাখতেন (বুখারী হা/১৯৬০; মুসলিম হা/১১৩৬)।
প্রশ্ন (৮/৩৬৮) : কারো স্ত্রী (কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন) যদি কোন
পরপুরুষের সাথে যেনা করে ফেলে, সেক্ষেত্রে উক্ত স্বামীর করণীয় কি?
-আতীকুর রহমান, ময়মনসিংহ।
উত্তর : এমতাবস্থায়
তাকে আটকে রাখতে হবে এবং এরূপ অন্যায় থেকে বিরত রাখতে হবে। জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল
(ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার একজন স্ত্রী আছে। সে এমনই যে, কাউকে ফিরিয়ে
দেয় না। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। সে বলল, আমি তাকে ভালোবাসি।
তাই তাকে ছাড়া ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তিনি বললেন, তাহ’লে তাকে আটকে রাখ এবং তার
থেকে স্বাদ আস্বাদন কর’ (আবুদাঊদ হা/২০৪৯; নাসাঈ হা/৩২২৯; মিশকাত হা/৩৩১৭
‘বিবাহ’ অধ্যায় ‘লি‘আন’ অনুচ্ছেদ)। আটকে রেখেও যদি তাকে বিরত রাখা না যায়, তাহ’লে
অবশ্যই তাকে তালাক দিতে হবে। নইলে জেনে-শুনে এরূপ মহিলাকে নিয়ে ঘর করলে স্বামী
দাইয়ূছদের অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির উপর আল্লাহ জান্নাতকে
হারাম করেছেন। (১) নিয়মিত মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে
তার পরিবারে ফাহেশা কাজ স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২; মিশকাত
হা/৩৬৫৫; ছহীহাহ হা/৬৭৪)।
প্রশ্ন (১০/৩৭০) : চাকুরী বা জীবিকা বৃদ্ধির জন্য দরূদে নারিয়াহ
পাঠ করা যাবে কি? এর ফযীলত সম্পর্কে বলা হয়, যে ব্যক্তি এ দরূদ ৪৪৪৪ বার পাঠ করবে
সেসব রকম বিপদাপদ থেকে নিরাপদে থাকবে এবং তার যেকোন ধরনের অভাব-অভিযোগ পূরণ হবে।
এর কোন ভিত্তি আছে কি?
-মাখদূম আহমাদ, গাযীপুর।
উত্তর :
উক্ত দরূদের কোন ভিত্তি নেই। এটি ছূফীদের সৃষ্ট বিদ‘আত মাত্র। এছাড়া দো‘আটি শিরকী
বক্তব্যে পরিপূর্ণ। যেমন সেখানে বলা হয়েছে, (হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নেতা
মুহাম্মাদের উপর পূর্ণ অনুগ্রহ ও পর্যাপ্ত শান্তি বর্ষণ কর। যার মাধ্যমে বন্ধন
মুক্ত হয়, বিপদ দূরীভূত হয়, প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ হয়, উত্তম কর্ম সমূহ পৌঁছানো হয়,
শেষ আমল সুন্দর হয়। যার মহান চেহারার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়। আর শান্তি
বর্ষিত হৌক তাঁর পরিবারবর্গের উপর ও তাঁর ছাহাবীগণের উপর প্রতি মুহূর্তে ও প্রতি
নিঃশ্বাসে, সবকিছু আপনার জানার পরেও’)। এটি হাযার বার পর্যন্ত পড়া হয়ে
থাকে’ (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/৩০৭)।
এখানে রাসূল (ছাঃ)-এর অসীলায় বিপদমুক্তি কামনা করা হয়েছে। যা বড়
শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী!) তুমি বলে দাও যে, আমি তোমাদের কোনরূপ
ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখি না’ (জিন ৭২/২১)।
প্রশ্ন (১১/৩৭১) : আমাদের এলাকায় কিছু যুবক শিয়ালের গোশত খায় এবং
তাতে হাঁটু, মাজা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথ্যা ভালো হয় বলে জানায়। এক্ষণে এর
গোশত খাওয়া যাবে কি?
-আবুল হোসাইন
কাঞ্চন, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : শিয়ালের গোশত খাওয়া হারাম। কেননা তা তীক্ষ্ণ দন্তধারী ও হিংস্র
জন্তুর অন্তর্ভুক্ত। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তীক্ষ্ণ
দন্তধারী হিংস্র জন্তু এবং নখ ও থাবা দ্বারা শিকারী পাখি খেতে নিষেধ
করেছেন’ (মুসলিম হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/৪১০৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
২২/৩১০)।
প্রশ্ন (১৩/৩৭৩) : হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতের
কোন আবশ্যকতা আছে কি?
-আব্দুন নূর, নযরপুরা, নরসিংদী।
উত্তর : আবশ্যকতা নেই। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারত হজ্জ বা ওমরার কোন
অংশ নয়। শায়খ বিন বায বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারত করা ওয়াজিব নয় বা হজ্জের
কোন শর্তও নয়, যেমনটি সাধারণ মানুষ ধারণা করে থাকে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১১১)।
উল্লেখ্য যে, হজ্জের সময় রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতের ব্যাপারে যতগুলি বর্ণনা
এসেছে, তার সবগুলি যঈফ অথবা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫-৪৭; দ্রঃ ‘হজ্জ
ও ওমরাহ’ বই ১৩৯-৪০ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৪/৩৭৪) : জনৈক আলেম বলেন, হজ্জের পূর্বে বিবাহ করা
গুনাহের কাজ। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
-আমীনুর রহমান, কেশবপুর, যশোর।
উত্তর : এমর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল। যেখানে বলা হয়েছে ‘যে ব্যক্তি হজ্জের
পূর্বে বিবাহ করল সে গুনাহ দ্বারা সূচনা করল’ (সিলসিলা যঈফাহ হা/২২১-২২২)।
অতএব এর উপর বিশ্বাস বা আমল করা যাবে না।
প্রশ্ন (১৫/৩৭৫) : মোহর পরিশোধের নিয়ত ব্যতীত স্ত্রী সহবাস করলে ঐ
ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন ব্যভিচারী হিসাবে গণ্য হবে কি?
-আশরাফুল আলম
রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট, রাজশাহী।
উত্তর : হ্যাঁ।
কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মোহরের বিনিময়ে কোন মহিলাকে বিবাহ করল, অথচ
মোহর পরিশোধ করবে না বলে নিয়ত করল, সে যেনাকারী’ (বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান
হা/৫৫৪৯; বাযযার হা/৮৭২১; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৮০৬, ছহীহ লিগায়রিহী)। বিবাহে মোহর
আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান
কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা
সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৪)। বস্ত্ততঃ লোক দেখানোর
উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা এবং পরে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া ধোঁকার
শামিল। আর মোহর আদায় না করলে দুনিয়া ও আখেরাতে স্ত্রীর নিকটে ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকতে
হবে।
আগস্ট/২০১৭
প্রশ্ন
(১/৪০১) : রামাযান মাসে ইফতারীর কিছু পূর্বে নারীদের ঋতু শুরু হ’লে ঐদিনের ছিয়ামটি
রাখা যাবে কি?
উত্তর :
ইফতারীর সামান্য পূর্বে হ’লেও ছিয়াম ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং পরবর্তীতে এর ক্বাযা
আদায় করতে হবে (মুসলিম হা/৩৩৫; মিশকাত হা/২০৩২)।
প্রশ্ন (২/৪০২) : দুনিয়াবী চাপমুক্তির জন্য
আল্লাহর নিকটে মৃত্যু কামনা করা যাবে কি?
-আল-আমীন, ঢাকা।
উত্তর : যাবে না। রাসূল (ছাঃ) মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি
বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেককার হ’লে হয়তো অধিক
নেকী অর্জন করবে এবং বদকার হ’লে সম্ভবত তওবা করে আল্লাহর সন্তোষ লাভে সমর্থ
হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৫৯৮ ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুর
স্মরণ’ অনুচ্ছেদ)। তবে নিতান্তই কেউ যদি মৃত্যু কামনা করতে চায়, তবে সে বিষয়ে
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার নিকটে বিপদ পৌঁছার কারণে মৃত্যু কামনা না
করে। তবে সে যদি মৃত্যু কামনা করতেই চায়, তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রেখ
যে পর্যন্ত আমার জীবন কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন মৃত্যু আমার জন্য
কল্যাণকর হয়’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬০০)।
প্রশ্ন (৩/৪০৩) : বর্তমানে অনেক সালাফী আলেম
তারাবীহর ছালাত ৮ রাক‘আত পড়া উত্তম এবং ২০ রাক‘আত বা তার বেশী পড়া জায়েয বলছেন।
এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?
-মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
দিঘলিয়া, খুলনা।
উত্তর : উত্তমটিই পালনযোগ্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে
এবং রাসূল (ছাঃ)-এর অন্য কোন স্ত্রী ও ছাহাবী থেকে ১১ বা ১৩ রাক‘আতের ঊর্ধ্বে
তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই (বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম
হা/৭৩৮; মুওয়াত্ত্বা, ৭১ পৃঃ, টীকা-৮ দ্রষ্টব্য)। বর্ধিত রাক‘আত সমূহ পরবর্তীকালে
সৃষ্ট। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাত্রির ছালাত ১১ বা ১৩
রাক‘আত আদায় করতেন। পরবর্তীকালে মদীনার লোকেরা দীর্ঘ ক্বিয়ামে দুর্বলতা বোধ করে।
ফলে তারা রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে, যা ৩৯ রাক‘আত পর্যন্ত পৌঁছে যায়’ (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৩/১১৩)। খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আনোয়ার শাহ কাষ্মীরী
(রহঃ) বলেন, একথা না মেনে উপায় নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
তারাবীহ ৮ রাক‘আত ছিল (আল-‘আরফুশ
শাযী শরহ তিরমিযী হা/৮০৬-এর আলোচনা দ্রঃ ২/২০৮ পৃঃ; মির‘আত ৪/৩২১)।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম
আদর্শ নিহিত রয়েছে, (আহযাব ৩৩/২১)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন ‘তোমরা ছালাত আদায়
কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’... (বুখারী হা/৬৩১)। আলবানী
বলেন, খাছ হাদীছ চলে আসার পর আম হাদীছের উপর নির্ভর করে অতিরিক্ত (তারাবীহ) ছালাত
আদায় করা জায়েয হবে না।... যেমন ফজর, যোহর ইত্যাদি ছালাতের সুন্নাত সমূহের রাক‘আত
সংখ্যায় কম-বেশী করা জায়েয নয়’ (তামামুল মিন্নাহ ১/২৫৩)। অতএব তিন রাক‘আত
বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাক‘আত তারাবীহর ছালাত আদায় করাই তাক্বওয়াশীল মুমিনের কর্তব্য।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন ‘সৃষ্টিজগতের প্রতি রহমত স্বরূপ’ (আম্বিয়া ২১/১০৭) এবং
বেশী না পড়াটা ছিল উম্মতের প্রতি তাঁর অন্যতম রহমত। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর
অনুসরণের মধ্যেই কল্যাণ ও সকল বিতর্কের সমাধান রয়েছে (বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর
রাসূল ১৭১-১৮১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪/৪০৪) : ইমাম হিসাবে আমি তারাবীহর
ছালাত ২ রাক‘আত করে ১০ রাক‘আত ছালাত আদায় করে ১ রাক‘আত বিতর পড়াই। এ পদ্ধতি সঠিক
কি?
-বেলালুদ্দীন, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত পদ্ধতি সঠিক। তারাবীহর ছালাত রাসূল (ছাঃ) এভাবেও আদায়
করেছেন (বুখারী হা/৬২৬; মুসলিম হা/৭৩৬; মিশকাত হা/১১৮৮)। তবে এভাবে নিয়মিত
করা ঠিক নয়।
প্রশ্ন (৬/৪০৬) : ছিয়াম অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে
বীর্যপাত করলে কাফফারা দিতে হবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কালিহাতী, টাঙ্গাইল।
উত্তর : রামাযান মাসে ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত করালে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে
এতে স্ত্রী সহবাসের ন্যায় কাফফারা দিতে হবে না। বরং সেই দিনের ক্বাযা আদায় করতে
হবে এবং অধিকহারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর স্ত্রী সহবাসের সাথে এর তুলনা করা
যাবে না (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১২৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/২৫৬, ২২/৬১;
উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৬/৩৭৪-৭৫)। কারণ স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হ’লে বীর্যপাত হৌক বা
না হৌক ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাফফারা হিসাবে একাধারে ষাটটি ছিয়াম পালন বা গোলাম
মুক্তকরণ অথবা ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে’ (বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১;
মিশকাত হা/২০০৪; মওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৫/৫৫)।
প্রশ্ন (৮/৪০৮) : ঈদের খুৎবা একটি না দু’টি? ছহীহ হাদীছের আলোকে
জানিয়ে বাধিত করবেন।
-তৈয়েবুর
রহমান
নাচোল আল-জামে‘আহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : ঈদায়নের খুৎবা ১টি। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে বের হ’লেন এবং সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করলেন।
অতঃপর খুৎবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাদের কাছে আসলেন, তাদেরকে ওয়ায-নছীহত করলেন এবং
দান-ছাদাক্বার নির্দেশ দিলেন... (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৯,
‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঈদের দিনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে
ছালাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম যে, তিনি আযান ও ইক্বামত ছাড়াই খুৎবার পূর্বে
ছালাত শুরু করলেন। যখন তিনি ছালাত শেষ করলেন তখন বেলালের গায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন।
অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন এবং লোকদের উপদেশ দিলেন, পরকালের কথা
স্মরণ করালেন এবং আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর মহিলাদের দিকে
অগ্রসর হ’লেন। এমতাবস্থায় তাঁর সাথে বেলাল ছিল। তাদেরকে তিনি আল্লাহভীতির উপদেশ
দিলেন এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করালেন (নাসাঈ, মিশকাত হা/১৪৪৬ ‘ঈদায়নের ছালাত’
অনুচ্ছেদ)। উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
ঈদের খুৎবার মাঝে বসতেন না এবং তাঁর খুৎবা ছিল একটি (উছায়মীন, আশ-শারহুল
মুমতে‘ ৫/১৪৬)। দুই খুৎবার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই, বরং যা আছে তা যঈফ ও
মুনকার (ইবনু মাজাহ হা/১২৮৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৩২৩৯, যঈফাহ
হা/৫৭৮৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩২২ পৃঃ)।
ইমাম বায়হাক্বী, ছান‘আনী
ও ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে
ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। খুৎবা শেষে বসে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার রেওয়াজটিও
হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটাই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে
দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ, উপদেশ, দো‘আ সবই
ছিল (বায়হাক্বী ৩/২৯৯ পৃঃ হা/৬০০৬-এর পরের আলোচনা; মির‘আত
২/৩৩০-৩৩১; ৫/৩১; সুবুলুস সালাম ১/৪৩২)।
উল্লেখ্য, যারা ঈদায়নের
দু’টি খুৎবা সমর্থন করেন, তারা মূলত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে
গ্রহণ করেন। যেমন সিমাক (রাঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন? তিনি বলেন, তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন।
তারপর অল্প বসতেন, অতঃপর পুনরায় দাঁড়াতেন (নাসাঈ হা/১৫৮৩-৮৪, ১৪১৮)। অত্র
হাদীছে দু’খুৎবার মাঝে বসা প্রমাণিত হয়। কিন্তু সেটি জুম‘আর খুৎবা না ঈদের খুৎবা
তা প্রমাণিত হয় না। কিন্তু জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে সরাসরি জুম‘আর কথা বলা হয়েছে (নাসাঈ
হা/১৪১৭; আবুদাঊদ হা/১০০৩)। এছাড়া হাদীছটি কুতুবে সিত্তাহসহ প্রায় সকল মুহাদ্দিছ
‘জুম‘আর খুৎবা’ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। কেউই ঈদের ছালাত অধ্যায়ে বর্ণনা করেননি।
এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এটা জুম‘আর জন্য খাছ।
আলবানী (রহঃ) বলেন,
দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট, ঈদের সাথে নয় (যঈফাহ
হা/৫৭৮৯)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, দু’খুৎবার মাঝে বসার বিষয়টি জুম‘আর সাথে
সংশ্লিষ্ট। অতএব ঈদায়নের জন্য একটি খুৎবাই সুন্নাত। (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ)’ ২০৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (৯/৪০৯) : যাকাত ও
ট্যাক্সের মধ্যে পার্থক্য কি? বর্তমানে মোটা অংকের অর্থ সরকার আরোপিত ট্যাক্সের
পিছনে ব্যয় হয়। যা যাকাতের চেয়ে অনেক বেশী হয়ে যায়। এক্ষণে ট্যাক্স দিলে যাকাতের
ফরযিয়াত আদায় হবে কি?
-আবিদ
আঞ্জুম
মুর্শিদাবাদ, ভারত।
উত্তর : যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যা আল্লাহর
ওয়াস্তে প্রদান করলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায় (তওবা ৯/১০৩; বাক্বারাহ
২/২৭৬)। এটি প্রত্যেক মুমিনের জন্য আর্থিক ফরয ইবাদত। অন্যদিকে ট্যাক্স হ’ল সরকারী
কর। এর সাথে যাকাতের কোন সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ ট্যাক্সই দেওয়া হোক না
কেন, তাতে যাকাত আদায় হবে না। বরং ট্যাক্স পরিশোধের পর সম্পদ নিছাব পরিমাণ থাকলে
এবং তা এক বছর অতিবাহিত হ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
৯/২৮৫)।
প্রশ্ন (১১/৪১১) : সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে অভাব-অনটন দূর হয় কি?
-ফয়ছাল মাহমূদ, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে বেশ কিছু বর্ণনা রয়েছে, যার কোনটি যঈফ কোনটি জাল (সিলসিলা
যঈফাহ হা/২৮৯-২৯১; মিশকাত হা/২১৮১)।
প্রশ্ন (১২/৪১২) : আমি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে
ইহূদী, খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠ করতে চাই। এটা করা যাবে কি?
-রাহাত হোসাইন, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : পবিত্র
কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে পূর্বের সমস্ত আসমানী কিতাবের বিধান রহিত হয়ে
গেছে (আলে ইমরান ৩/৮৫)। তাই জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কুরআন ব্যতীত অন্য কোন
ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা জায়েয নয়। জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে,
একদিন যখন ওমর (রাঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, আমরা ইহূদীদের নিকটে তাদের অনেক পুরানো
ধর্মীয় কাহিনী শুনি, যা আমাদের নিকটে চমৎকার বোধ হয়, অতএব তার কিছু কিছু লিখে
রাখার জন্য আপনি আমাদের অনুমতি দিবেন কি? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি
দিকভ্রান্ত হয়েছ, যেমন ইহূদী-নাছারারা দিকভ্রান্ত হয়েছে? অথচ আমি তোমাদের কাছে
এসেছি উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন দ্বীন নিয়ে। যদি আজকে মূসাও বেঁচে থাকতেন, তাহ’লে তাঁর
পক্ষেও আমার অনুসরণ ব্যতীত গত্যন্তর থাকতো না’ (আহমাদ হা/১৫১৫৬; মিশকাত
হা/১৭৭, সনদ হাসান)। তবে অমুসলিমদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য সমূহের জবাবদানের
উদ্দেশ্যে শরী‘আত অভিজ্ঞ আলেমদের জন্য এগুলি পাঠ করা সাময়িকভাবে জায়েয (আলে
ইমরান ৩/১৯৩; বুখারী হা/৪৫৫৬; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/১০৯-১০)।
প্রশ্ন (১৩/৪১৩) : ফরয ও সুন্নাত ছালাতের জন্য
পৃথক পৃথক ছানা আছে কি? ফরয ছালাতের ছানা সুন্নাতে পাঠ করা যাবে কি?
-আযহারুদ্দীন
হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : ফরয
ও সুন্নাত ছালাতের জন্য পৃথক কোন ছানা বর্ণিত হয়নি। অতএব হাদীছে বর্ণিত যেকোন ছানা
ফরয ও সুন্নাত উভয় ছালাতে পাঠ করা যাবে (মিশকাত হা/৮১২-১৫, ৮২০;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা প্রশ্নোত্তর নং ১৮৫৯১)।
প্রশ্ন (১৫/৪১৫) : তিন রাক‘আত বিশিষ্ট বিতর
ছালাতের দ্বিতীয় রাক‘আতে বৈঠক করা যাবে কি?
-মামূনুর রশীদ, দামপাড়া, চট্টগ্রাম।
উত্তর : যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মাগরিবের ছালাতের ন্যায়
(মাঝখানে বৈঠক করে) বিতর ছালাত আদায় করো না’ (দারাকুৎনী হা/১৬৩৪-৩৫, সনদ
ছহীহ)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। তিনি শেষের রাক‘আতে
ব্যতীত বসতেন না’ (হাকেম হা/১১৪০; বায়হাক্বী হা/৪৮০৩, সনদ ছহীহ)। তিনি বলেন,
রাসূল (ছাঃ) বিতর ছালাত পাঁচ রাক‘আত আদায় করলেও শেষের রাক‘আত ব্যতীত বসতেন
না (ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৪৩৯, সনদ ছহীহ)। ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না (মুছান্নাফ
আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩/২৭ পৃঃ)।
অতএব ‘এক রাক‘আত বিতর সঠিক নয় এবং এক রাক‘আতে কোন ছালাত হয় না’।
‘বিতর তিন রাক‘আতে সীমাবদ্ধ’। ‘বিতর ছালাত মাগরিবের ছালাতের ন্যায়’। ‘তিন রাক‘আত
বিতরের উপরে উম্মতের ইজমা হয়েছে’ বলে যেসব কথা সমাজে চালু আছে, শরী‘আতে এর কোন
ভিত্তি নেই’ (দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৬৫ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৭/৪১৭) : এক্সিডেন্টে দাঁত পড়ে গেলে
কৃত্রিম দাঁত সংযোজনে বাধা আছে কি?
-রাসেল আহমাদ, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর : চিকিৎসার্থে বা কোন দোষ-ক্রটি দূরীকরণার্থে এরূপ করায় শরী‘আতে কোন
বাধা নেই (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৪০০, সনদ হাসান; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/২৫৬;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/৫৬)।
প্রশ্ন (১৯/৪১৯) : আমাদের পাশে একদল যুবক-যুবতী
প্রতিদিন রাতে অসামাজিক কর্মকান্ড করে। আমাদের কিছু দ্বীনী ভাই তাদেরকে পিটিয়ে
তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা ঠিক হবে কি?
-গালিব, নূর আহমাদ রোড, চট্টগ্রাম।
উত্তর : এরূপ করা ঠিক হবে না। তাতে হিতে বিপরীত হ’তে পারে। বরং প্রথমে
তাদেরকে বুঝানোর মাধ্যমে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং সামাজিকভাবে
চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এতে ব্যর্থ হ’লে প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নিতে হবে। আইন নিজে হাতে তুলে নিলে কেবল বিপর্যয়ই সৃষ্টি হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি
মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং
তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’ (নহল ১৬/১২৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অন্যায়
কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর
দিয়ে ঘৃণা করবে’ (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।
প্রশ্ন (২০/৪২০) : হাদীছে বর্ণিত নিষিদ্ধ তিন
সময়ে জানাযার ছালাত আদায় ও লাশ দাফন করা যাবে কি?
-মুজাহিদুল ইসলাম
রেহাইর চর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : যাবে না। উক্ববা বিন ‘আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) তিনটি সময়ে আমাদেরকে জানাযার ছালাত আদায় ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে নিষেধ
করতেন (১) যখন সূর্যোদয় আরম্ভ হয়, তখন থেকে সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত; (২) ঠিক
দ্বিপ্রহরের সময়, পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং (৩) যখন সূর্য
অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হয়, তখন থেকে সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত (মুসলিম
হা/৮৩১; মিশকাত হা/১০৪০)। তবে একান্ত প্রয়োজনে যেমন লাশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে
এই তিন সময়েও জানাযার ছালাত আদায় বা লাশ দাফন করা যাবে (আলবানী, তামামুল
মিন্নাহ ১/১৪৩; আহকামুল জানায়েয ১/১৩০)।
প্রশ্ন (২২/৪২২) : রামাযান ব্যতীত অন্য মাসে তাহাজ্জুদ ছালাত
নিয়মিতভাবে জামা‘আতের সাথে আদায় করা যাবে কি?
-আমানুল্লাহ,
ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা।
উত্তর : রামাযানের বাইরে নিয়মিতভাবে জামা‘আতের সাথে
রাত্রির নফল ছালাত আদায় করা বিদ‘আত। তবে মাঝে মাঝে করা যেতে পারে। যেমন রাসূল
(ছাঃ) কখনো ইবনু আববাস (বুখারী হা/১৩৮; মুসলিম হা/৭৬৩; মিশকাত হা/১১৯৫), কখনো
ইবনু মাসঊদ (বুখারী হা/১১৩৫), কখনো হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (আহমাদ
হা/২৩৪২৩)-কে সাথে নিয়ে নিজ বাড়িতে রাতের নফল ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছেন।
প্রশ্ন (২৩/৪২৩) : ঈদের মাঠে সামিয়ানা টাঙানো বা
মাঠ পাকা করা যাবে কি?
-আহমাদ, নয়াপাড়া, গাযীপুর।
উত্তর : ঈদগাহের জন্য মেঝে পাকা করা, ছায়ার জন্য সামিয়ানা টাঙানো, ফ্যান
ঝুলানো, এসি করা বা ছাদ করা কোনটাই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল
থেকে প্রমাণিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার মৃত্যুর পরে তোমরা অনেক মতভেদ দেখতে
পাবে। তখন তোমাদের উপর আবশ্যিক হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত অাঁকড়ে
ধরা এবং তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/১৬৫;
ছহীহাহ হা/২৭৩৫)। রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববীর মাত্র ৫০০ গজ পূর্বে ‘বাত্বহান’
সমতলভূমিতে খোলা ময়দানে ঈদের ছালাত আদায় করতেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭,
মির‘আত ৫/২২ পৃঃ)। আমাদেরও সেটাই করা কর্তব্য।
প্রশ্ন (২৪/৪২৪) : ছহীহ মুসলিম ২৬১ নং হাদীছে
গোফ খাটো করা, দাড়ি ছেড়ে দেওয়া, বগলের লোম উপড়ানো ও নাভীর নীচের লোম কাটা ফিৎরাতের
অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। এক্ষণে এগুলি কি মুস্তাহাব আমল হিসাবে গণ্য হবে?
-আব্দুস সালাম
ইসলামপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : না। বরং চল্লিশ দিনের মধ্যে গোফ খাটো করা, বগলের লোম উপড়ানো ও
নাভীর নীচের লোম কাটা রাসূল (ছাঃ) নির্দেশিত সুন্নাত (মুসলিম, মিশকাত হ/৪৪২২)।
নির্ধারিত সময়সীমা হওয়ায় এটা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করা জায়েয নয় (নায়লুল
আওত্বার ১/১৪৩)।
আর দাড়ি রাখা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা
মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি লম্বা কর, গোঁফ ছোট কর’ (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত
হা/৪৪২১)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, দাড়ি বিষয়ে হাদীছে পাঁচ ধরনের শব্দ এসেছে, যার
সবগুলি একই অর্থ বহন করে যে, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া (শরহ মুসলিম
৩/১৫১)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা
যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী (ছাঃ) এবং তার পূর্বের কোন নবী
দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)।
প্রশ্ন (২৬/৪২৬) : সিজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ম কি?
ওযূবিহীন অবস্থায় সিজদায়ে তেলাওয়াতের আয়াত পাঠ করলে সিজদা দেওয়া যাবে কি? এসময়
নারীদের পর্দার পোষাক পরিধান করতে হবে কি?
-রফীকুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সিজদায়ে তেলাওয়াতের নিয়ম হ’ল- প্রথমে তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবে।
অতঃপর দো‘আ পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক
হা/৫৯৩০; বায়হাক্বী ২/৩২৫, সনদ ছহীহ; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ২৬৯ পৃঃ)। সিজদা
মাত্র একটি হবে। এতে তাশাহ্হুদ নেই, সালামও নেই (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬৪)।
এটি ছালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সেকারণ এর জন্য ওযূ, ক্বিবলা বা
নারীদের পর্দা কোনটিই শর্ত নয়। ইবনু ওমর (রাঃ) ওযূ ছাড়াই তেলাওয়াতের সিজদা
দিয়েছেন (বুখারী ৪/৩০৩; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪৩৫৪)। শাওকানী বলেন,
সিজদায়ে তেলাওয়াতের হাদীছগুলো প্রমাণ করে না যে, সিজদাকারীকে ওযূ অবস্থায় থাকা
যরূরী। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে উপস্থিত সকলে তেলাওয়াতের সিজদা করতেন। কিন্তু কোথাও
বর্ণিত হয়নি যে, তিনি কাউকে ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন (নায়লুল আওতার ৩/১২৫;
ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৭/২৬২-৬৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩১২)।
প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : আযান দেওয়ার সময় কানে হাত
রাখলেই চলবে না ছিদ্রের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিতে হবে?
-রোকনুযযামান
আযীযুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তর : কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিতে হবে। এসময় মাথা ঘুরবে, দেহ নয়। আবু
জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বেলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে দেখলাম এবং তাকে মুখ ঘুরাতে
দেখলাম। এসময় তার (দুই হাতের) দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল (তিরমিযী
হা/১৯৭; ইরওয়া হা/২৩০)।
প্রশ্ন (২৯/৪২৯) : আমাদের মসজিদে মহিলাদের
ছালাতে ব্যবস্থা রয়েছে মসজিদের উত্তর পাশে। ফলে পুরুষের দ্বিতীয় কাতার বরাবর
মহিলাদের কাতার হয়। এতে ছালাতে কোন বাধা আছে কি?
-আব্দুল বাসেত
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সাধারণভাবে মহিলারা পুরুষদের পিছনের কাতারে দাঁড়াবে (বুখারী
হা/৩৮০; মুসলিম হা/৬৫৮)। এরপরেও ব্যবস্থাপনা না থাকলে ওযরবশতঃ পুরুষদের কাতারের
ডানে বা বামে পর্দা বা দেওয়াল দ্বারা ঘেরা স্থানে মহিলারা দাঁড়াতে পারে (নববী,
আল-মাজমূ‘ ৩/২৫২; আল-মাবসূত্ব ১/১৮৩)।
প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : ঘরের বিভিন্ন স্থানে কুরআনের
আয়াত, দো‘আ, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদির ক্যালিগ্রাফী টানিয়ে রাখা যাবে কি?
উত্তর : যাবে না। কারণ (১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যে
কুরআনের আয়াত, দো‘আ ইত্যাদি দ্বারা বিভিন্ন রঙের ডিজাইনে নকশা করা হয়। অথচ কুরআন
নাযিল হয়েছে মানুষকে হেদায়াতের জন্য, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়। অতএব এরূপ কাজ
কুরআনকে তাচ্ছিল্য করার শামিল। (২) কেউ ঝুলিয়ে রাখে বরকত হাছিলের জন্য, যা স্পষ্ট
বিদ‘আত। (৩) কেউ টাঙিয়ে রাখে নানা বিপদাপদ বা শয়তানের অনিষ্টকারিতা হ’তে রক্ষা
পাওয়ার জন্য। যা স্পষ্ট শিরক। বস্ত্ততঃ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের যামানায় এরূপ
কার্যকলাপের কোন অস্তিত্ব ছিল না। অতএব এসব বিদ‘আতী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা
আবশ্যক (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৯৭)।
বর্তমানে কুরআনের আয়াতসমূহ ক্যালিগ্রাফিক ডিজাইনে লিখে মসজিদের
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক (ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমা ৫/১৯০)।
প্রশ্ন (৩৩/৪৩৩) : শরী‘আত সম্পর্কে মূর্খ ও অজ্ঞ
লোকদের আমল আল্লাহর নিকটে গ্রহণযোগ্য হয় কি?
-ডা. আযীয আলী
বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : ইবাদত কবুল হওয়ার মৌলিক শর্ত ৩টি : (১) আক্বীদা ছহীহ হওয়া (কাহফ
১১০) (২) তরীকা ছহীহ হওয়া (মুসলিম হা/১৭১৮)। (৩) আমল ইখলাছপূর্ণ
হওয়া (যুমার ৩৯/১১)। এই শর্তগুলি পূরণ হ’লে আমল কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ
বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, আমরা তার পুরষ্কার বিনষ্ট করি না’ (কাহফ
১৮/৩০)। তিনি আরো বলেন, অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে (যিলযাল
৯৯/৭)। তবে দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন, যা সকল মুসলমানের জন্য
আবশ্যিক। সেগুলি হ’ল- ঈমান ও তা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ, বিশুদ্ধ ও বাতিল আক্বীদা,
তাওহীদ-শিরক, হালাল-হারাম, ছালাত-ছিয়াম, হজ্জ-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ফরয ইবাদত
পালনের নিয়ম-পদ্ধতি সমূহ (আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ হা/১৬৩)। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ
হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)।
প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ছালাতে সিজদারত অবস্থায় দু’পা
কিভাবে রাখতে হবে? দু’পা মিলিয়ে না ফাঁকা রাখবে?
-আব্দুল লতীফ, কলারোয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : হযরত
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘এক রাত্রিতে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিছানায় না
পেয়ে আমার হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর আমার হাত তাঁর দু’পায়ের উপর পতিত হয়। তখন
তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টি খাঁড়া ছিল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৩,
‘সিজদা ও সিজদার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এ সময় তাঁর
গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল এবং পায়ের অঙ্গুলি সমূহ কিবলার দিকে ছিল’ (মুস্তাদরাক
হাকেম ১/৩৪০ পৃঃ, হা/৮৩২; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৬৫৪, ইবনু হিববান হা/১৯৩৩)। ইবনু
আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট
হয়েছি। নাকসহ চেহারা, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’ (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭)। এখানে ‘দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’-এর ব্যাখ্যায়
ছাহেবে মির‘আত বলেন, দু’পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী থাকবে এবং দু’গোড়ালি খাড়া
থাকবে’ (মির‘আত ৩/২০৪)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, দু’গোড়ালীর মাঝে এক বিঘত ফাঁক
থাকবে (নায়ল ৩/১২১)। মূলতঃ দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু’পা ফাঁক থাকে, সিজদা অবস্থায়ও
সেভাবে থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। এক্ষণে ইবনু হিববান, ইবনু খুযায়মা ও
হাকেম বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর দু’গোড়ালি মিলানো সম্পর্কে যে বর্ণনাটি এসেছে, সে
সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন, ‘এই হাদীছ ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ গোড়ালী মিলানোর কথা
বর্ণনা করেছেন বলে আমি জানি না (হাকেম ১/৩৫২)। তাই ছহীহ মুসলিম ও অন্যান্য
হাদীছে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত দু’গোড়ালি খাড়া রাখার হাদীছই অগ্রাধিকারযোগ্য। সর্বোপরি
বিষয়টি মুস্তাহাব। অতএব খাড়া বা মিলানো যেভাবে সহজ হবে সেভাবেই রাখবে। এতে কোন
বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রশ্ন (৩৬/৪৩৬) : জনৈক নারীকে তার মা ও ভাই-বোন
জোরপূর্বক বিবাহ দিয়েছিল। তিনি বিবাহের সময় সম্মতি দেননি এবং কাবিননামাতেও
স্বাক্ষর করেননি। ৮ বছরের সংসারে তার ১টি সন্তান রয়েছে। বর্তমানেও তিনি উক্ত
বিবাহের ব্যাপারে নারায। এক্ষণে উক্ত বিবাহ কি সঠিক হয়েছে? না হ’লে করণীয় কি?
-ফাতেমা, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
উত্তর : সে আট বছর সংসার করেছে এবং তার সন্তান হয়েছে। এটাই তার সম্মতির
প্রমাণ। অতএব বিবাহ সঠিক বলে গণ্য হবে (নববী, শরহ মুসলিম ৯/২০৪, হা/১৪১৯-এর
আলোচনা দ্রষ্টব্য)। এক্ষণে দু’জনে চাইলে সংসার করতে পারে। নইলে ‘খোলা’ বা
‘তালাকে’র মাধ্যমে উভয়ে পৃথক হ’তে পারে।
প্রশ্ন (৩৭/৪৩৭) : আমাদের এলাকায় প্রচলিত আছে,
ক্বদরের রাতে সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহকে সিজদা করে। এসময় জাগ্রত থেকে ইবাদতকারীগণই
কেবল এদৃশ্য দেখতে পায়। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
-আব্দুর রহমান, মুর্শিদাবাদ, ভারত।
উত্তর : একথা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। বরং সকল সৃষ্টি সর্বাবস্থায় আল্লাহকে
সিজদা করে। আল্লাহ বলেন, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে
নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে... সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা,
জীবজন্তু ও বহু মানুষ? (হজ্জ ২২/১৮)। অবিশ্বাসী কাফেররা আল্লাহকে সিজদা না
করলেও তাদের জড় দেহ আল্লাহর আনুগত্য করে। আর সেজন্যেই তারা তাদের বার্ধক্য ও
জ্বরাকে প্রতিরোধ করতে পারে না। সৃষ্টি সমূহের সিজদা করার দৃশ্য ‘ক্বদর রাত্রিতে
আল্লাহর ইবাদতকারীগণই দেখতে পান’ কথাটি স্থূল দৃষ্টিতে আদৌ সম্ভব নয়। তবে জ্ঞানজগতে
অনুভব করা যায়। প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তিই সর্বাবস্থায় তা বুঝতে পারেন। কেবল ক্বদর
রাত্রিতে নয়।
প্রশ্ন (৩৮/৪৩৮) : জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব না
ওয়াজিব?
-রূহুল
আমীন, ঢাকা।
উত্তর : ফরয গোসল ব্যতীত সকল গোসলই নফল। গুরুত্ব
বিবেচনায় এসব গোসল কখনো মুবাহ, কখনো মুস্তাহাব, কখনো ওয়াজিব হিসাবে গণ্য হয়। যারা
দৈনিক গোসল করেন এবং যারা সপ্তাহে একদিন গোসল করেন, তারা সমান নন। জুম‘আর দিনের
বিবেচনায় এদিনের গোসলকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ মুস্তাহাব, কেউ সুন্নাতে
মুওয়াক্কাদাহ, কেউ ওয়াজিব বলেছেন। ইবনু দাক্বীকুল ঈদ বলেন, অধিকাংশ বিদ্বান
‘মুস্তাহাব’ বলেছেন। সাইয়েদ সাবেক্ব একে মুস্তাহাব গোসল সমূহের মধ্যে শামিল
করেছেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৩-৫৫)। ছাহেবে মির‘আত একে ‘ওয়াজিব’
বলেছেন (মির‘আত হা/৫৪০-এর ব্যাখ্যা)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
জুম‘আর দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব’ (বুখারী হা/৮৭৯; মিশকাত
হা/৫৩৮)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি জুম‘আয় যাবে সে যেন গোসল করে (বুখারী
হা/৮৮২; মুসলিম হা/৮৪৫)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন শুধু ওযূ করল সেটাই
তার জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি গোসল করল, গোসল করাই উত্তম’ (তিরমিযী হা/৪৯৭;
মিশকাত হা/৫৪০)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, জুম‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব নয়; তবে
উত্তম। তাতে গোসলকারীর অধিকতর পবিত্রতা অর্জিত হয়’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৩; মিশকাত
হা/৫৪৪)। উপরোক্ত হাদীছগুলি থেকে বুঝা যায় যে, জুম‘আর দিনে গোসল করা গুরুত্বপূর্ণ
কাজ। যে সকল হাদীছে ওয়াজিব শব্দটি এসেছে তার অর্থ ফরয নয় বরং গুরুত্ব বুঝানোর জন্য
রাসূল (ছাঃ) এরূপ শব্দ ব্যবহার করেছেন (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১০/১৭১)। তবে কোন ব্যক্তি যদি ঘর্মাক্ত হয় এবং শরীরের দুর্গন্ধ অন্য মুছল্লীদের
জন্য কষ্টকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তার জন্য গোসল করা ওয়াজিব হবে (ইবনু
তায়মিয়াহ, ফাতাওয়া কুবরা ৫/৩০৭)।
প্রশ্ন (৪০/৪৪০) : কাউকে দান করার পর তার নিকটে
দো‘আ চাওয়া যাবে কি?
-লতীফুল ইসলাম, চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তর : কাউকে কোন কিছু দান করার পর দো‘আ চাওয়া অনুচিৎ। কেননা এটি দানের
বিনিময়ে প্রতিদান চাওয়ার মত হয়ে যায়। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন
যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর ছায়ার নিচে আশ্রয় পাবে, তাদের অন্যতম হ’ল, যে ব্যক্তি
ডান হাতে দান করে, অথচ বাম হাত টের পায় না’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৭০১)।
অন্যদিকে জান্নাতী বান্দাদের দুনিয়াবী বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তারা
কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মিসকীন, ইয়াতীম ও কয়েদীদের খাদ্য দান করে
থাকে’। ‘তারা বলে, আমরা কেবল আল্লাহর চেহারা অন্বেষণের জন্য তোমাদের খাদ্য দান করে
থাকি। আমরা তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’ (দাহর
৭৬/৮-৯)।
তবে যাকে বা যে প্রতিষ্ঠানে ছাদাক্বা করা হ’ল, তাদের উচিৎ দানকারীর
জন্য দো‘আ করা (তওবাহ ৯/১০৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমাদের কোন
উপকার করল, তোমরা তাকে উত্তম বিনিময় প্রদান কর। সক্ষম না হ’লে অন্ততঃপক্ষে তার
জন্য দো‘আ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তোমরা তাকে উপযুক্ত উপঢৌকন প্রদান
করেছ’ (আবুদাঊদ হা/৫১০৯; মিশকাত হা/১৯৪৩)। যেমন রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করে
বলতেন, বা-রাকাল্লা-হু লাকা ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা’ অথবা বহুবচনে ‘কুম’
(আল্লাহ আপনার জন্য আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন)’ (বুখারী হা/৩৭৮০;
ইবনু মাজাহ হা/১৯০৬-০৭)।
আর মুমিনগণ পরস্পরের নিকট দো‘আ চাওয়া জায়েয। যেমন ছাফওয়ান (রাঃ)
বলেন, আমি শামে গেলাম আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর সাক্ষাতের জন্য। কিন্তু তিনি ঐসময়
বাড়িতে ছিলেন না। তখন উম্মুদ্দারদা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি হজ্জে যাবে? আমি
বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমাদের জন্য কল্যাণের দো‘আ করো। কেননা রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলতেন, ‘কোন মুসলমান কারু জন্য তার পিছনে খালেছ মনে দো‘আ করলে, সে দো‘আ কবুল
হয়। সেখানে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখনই ঐ ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে,
তখনই উক্ত ফেরেশতা বলে ‘আমীন’। তোমার জন্যও অনুরূপ হৌক’ (মুসলিম হা/২৭৩৩)। এ
ব্যাপারে ইমাম নববী মুসলিম উম্মাহর ইজমা‘ উদ্ধৃত করেছেন (নববী, আল-আযকার
‘উত্তম ব্যক্তির নিকট দো‘আ চাওয়া’ অনুচ্ছেদ)। তবে যদি এই দো‘আ কোন মৃত ব্যক্তির
নিকট চাওয়া হয়, তবে সেটি হারাম হবে। আর যদি কোন জীবিত ব্যক্তির নিকট দো‘আ চাওয়ার
মধ্যে তার উপরেই ভরসা করা হয়, তবে সেটাও নিষিদ্ধ। যদি এই বিশ্বাস করা হয় যে, তার
দো‘আ কবুল হবেই, সেটাও নিষিদ্ধ। সর্বাবস্থায় ভরসা ও প্রার্থনা কেবলমাত্র আল্লাহর
নিকটেই করতে হবে।
সেপ্টেম্বর/২০১৭
প্রশ্ন
(১/৪৪১) : ছিফফীনের যুদ্ধে উভয় পক্ষই ছিল মুসলমান। উভয় দলেই ছিল অনেক ছাহাবায়ে
কেরাম। এক্ষণে উক্ত যুদ্ধের পিছনে কারণ কি ছিল?
উত্তর : ৩৬ হিজরীতে সংঘটিত উষ্ট্রের যুদ্ধের ন্যায় ৩৭ হিজরীর ছিফফীন
যুদ্ধেরও মূল কারণ ছিল ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকারী বিদ্রোহীদের গভীর ষড়যন্ত্র। ৩৫
হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে ওছমান (রাঃ) শাহাদত বরণ করলে লোকেরা আলী (রাঃ)-এর হাতে
বায়‘আত গ্রহণ করে। বিদ্রোহীরাও আলী (রাঃ)-এর হাতে বায়‘আত নেয়। আলী (রাঃ) প্রথমে
রাষ্ট্রীয় শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য এবং বিদ্রোহীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে বিরূপ
বাস্তবতার নিরিখে বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা বিলম্ব করেন। এতে
ওছমান (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই সিরিয়ার আমীর মু‘আবিয়া (রাঃ) ও তার সাথীরা তাঁর প্রতি
রুষ্ট হন। যদিও মু‘আবিয়া হযরত আলী (রাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্বকে দ্ব্যর্থহীনভাবে স্বীকার
করতেন। কিন্তু তিনি ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বায়‘আত
করতে অস্বীকার করেন। ফলে আলী (রাঃ) ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী
হয়ে ওঠে।
আলী (রাঃ)-এর খেলাফত ছিল সর্বসম্মত। আর কারো অবাধ্যতার জন্য খেলাফত
ত্যাগ করা হাদীছ সম্মত নয়। কেননা তাতে খেলাফতের ঐক্য বিনষ্ট হয়। যেমন ওছমান
(রাঃ)-এর প্রতি অছিয়ত করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন, ‘হয়ত আল্লাহ তোমাকে একটি
জামা পরিধান করাবেন। পরে যদি লোকেরা তোমার সেই জামাটি খুলে নিতে চায়, তখন তুমি
তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী জামাটি খুলে ফেলো না’ (তিরমিযী হা/৩৭০৫; ইবনু মাজাহ
হা/১১২; মিশকাত হা/৬০৬৮)। এখানে জামাটি অর্থ খেলাফত (মিরক্বাত)।
অতঃপর ৩৭ হিজরীর ছফর মাসে ছিফফীন যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাবেঈ বিদ্বান
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (৩৩-১১০ হি.)-এর ধারণা মতে, তিন দিন তিন রাতের এই যুদ্ধে ৭০
হাযার মুসলমান নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান বিন আবযী বলেন, লোকেরা ধারণা
করে যে, ৭০ হাযারের মধ্যে ৪৫ হাযার সিরীয় পক্ষে এবং ২৫ হাযার ইরাকীদের পক্ষে নিহত
হন (আকরাম যিয়া, ‘আছরুল খিলাফাহ ৪৭১-৭২ পৃ.)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল ইসলামের
ইতিহাসে একটি মহা বিপর্যয়কর ঘটনা।
ছিফফীন যুদ্ধের কারণ : (১) ওছমান হত্যাকারীদের বিচারে বিলম্ব করা। (২) দ্রুত বিচারের জন্য
যিদ করা। (৩) ওছমান হত্যাকারীদের গোপন ষড়যন্ত্র। যাতে তারা বেঁচে যেতে পারে। (৪)
হাদীছের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে না পারা। যেমন (ক) জুবায়ের বিন
নুফায়ের বলেন, ওছমান হত্যার পর আমরা মু‘আবিয়ার সেনাবাহিনীতে ছিলাম। অতঃপর একদিন
কা‘ব বিন মুররা আল-বাহযী দাঁড়িয়ে বলেন, আমি যদি রাসূল (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ না
শুনতাম তাহ’লে এ স্থানে যুদ্ধ করতে আসতাম না। রাসূল (ছাঃ)-এর
নাম শুনে লোকেরা তার চার পাশে বসে পড়ল। তখন তিনি বললেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর
সাথে বসা ছিলাম। এমন সময় ওছমান (রাঃ) পায়ে হেঁটে অতিক্রম করছিলেন। তখন আল্লাহর
রাসূল বললেন, অবশ্যই এই পদদ্বয়ের নিচ থেকে ফিৎনার আবির্ভাব ঘটবে। সেদিন এই ব্যক্তি
ও তার অনুসারীরা হেদায়াতের উপর থাকবে। তিনি বলেন, আমি উঠে গিয়ে ওছমানের কাঁধে হাত
দিয়ে বললাম, ইনি কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেদিন এই ব্যক্তি ও তার অনুসারীরা
হেদায়াতের উপর থাকবে। এমন সময় আব্দুল্লাহ ইবনু হাওয়ালা আনছারী মিম্বরের কাছ থেকে
উঠে গিয়ে বললেন, আপনি নিজে এটা শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! আমি ঐ
মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। আমি যদি জানতাম যে, সৈন্যদের মাঝে আমার কোন সত্যায়নকারী
হবে, তাহ’লে আমি প্রথমেই এ বিষয়ে কথা বলতাম’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৫৩; আহমাদ
হা/১৮০৯২; ছহীহাহ হা/৩১১৯)। অর্থাৎ ওছমান (রাঃ) হক-এর উপর ছিলেন বলেই তাঁর পক্ষ
অবলম্বনকারী মু‘আবিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি।
(খ) গৃহবন্দী অবস্থায় অনুমতি নিয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) খলীফার
নিকট গেলে সেখানে দাঁড়িয়ে হাম্দ ও ছানার পর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, আমার পরে সত্বর তোমরা বহু মতভেদ ও ফিৎনায় জড়িয়ে পড়বে। তখন লোকদের
মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে অবস্থায় আপনি আমাদের কি নির্দেশ দিচ্ছেন?
তিনি ওছমানের দিকে ইশারা করে বললেন, তোমরা আমীর ও তাঁর সাথীদের সাথে থাকবে’ (হাকেম
হা/৮৩৩৫ ৪/৪৮০; মিশকাত হা/৬০৭৩, সনদ ছহীহ)। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে,
‘আমীন’ (বিশ্বস্ত) (আহমাদ হা/৮৫২২)।
(গ) গৃহবন্দীত্বকালে ওছমান (রাঃ)-এর গোলাম আবু সাহলাহ তাঁকে
জিজ্ঞেস করেন, আমরা কি আপনার পক্ষে যুদ্ধ করবো না? জবাবে তিনি বললেন, না।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে একটি বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। অতএব আমি নিজেকে তার উপরে অবিচল
রাখব’ (হাকেম হা/৪৫৪৩; মিশকাত হা/৬০৭২, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ আমি যেন খেলাফত
পরিত্যাগ না করি এবং তা রক্ষার জন্য যুদ্ধ না করি (মিরক্বাত)।
পর্যালোচনা : উপরোক্ত
হাদীছগুলির কারণে অনেক ছাহাবী ওছমান হত্যার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। কারণ
তারা ভেবেছিলেন যে, ওছমানের পক্ষ হওয়ায় তারা হেদায়াতের উপর আছেন। কিন্তু এজন্য আলী
(রাঃ)-এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাঁদের সঠিক হয় নি। কেননা এ সময়
খলীফা ছিলেন আলী (রাঃ)। সর্বাগ্রে তাঁর প্রতি শর্তহীন আনুগত্য অপরিহার্য ছিল। তাছাড়া
ওছমান (রাঃ) নিজে স্বীয় খেলাফত বা জীবন রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেননি এবং অন্যদের
অনুমতি দেননি। আর হত্যায় উদ্যত ব্যক্তির বিরুদ্ধে করণীয় কি হবে, সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ (রাঃ)-এর এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, তুমি আদমের
উত্তম সন্তানটির মত হও’ (আবুদাঊদ হা/৪২৫৭)। ফিৎনার সময় করণীয় কি হবে, এমন
প্রশ্নের উত্তরেও রাসূল (ছাঃ) একই কথা বলেছিলেন (আবুদাঊদ
হা/৪২৫৯; মিশকাত হা/৫৩৯৯)। এজন্য বহু ছাহাবী যুদ্ধ হ’তে বিরত ছিলেন।
ভুল যখন ভাঙল :
ওছমান (রাঃ) হত্যার প্রতিশোধকামী ছাহাবীগণের ভুল ভাঙ্গে তখন, যখন
(ক) ‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) ছিফফীন যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। কারণ রাসূল (ছাঃ)
‘আম্মারের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘আম্মারের জন্য দুঃখ! তাকে বিদ্রোহী দলের
লোকেরা হত্যা করবে। সে লোকদের জান্নাতের পথে আহবান করবে। আর তারা তাকে জাহান্নামের
দিকে ডাকবে। ‘আম্মার (রাঃ) বলতেন, আমি আল্লাহর নিকট ফিৎনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করছি (বুখারী হা/৪৪৭; আহমাদ হা/১১৮৭৯)।
(খ) অতঃপর ছিফফীন যুদ্ধ থেকে ফিরে কূফার অনতিদূরে ‘নাহরোওয়ান’ নামক
স্থানে ৩৮ হিজরীর মুহাররম মাসে আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহাব রাসেবী-র নেতৃত্বে ৪ হাযার
খারেজী বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ হয়। সেখানে তাদের অন্যতম নেতা ত্রুটিপূর্ণ হাতের
অধিকারী ‘মুখদাজ’ নিহত হয়। যুদ্ধ শেষে আলী (রাঃ) তাকে খুঁজে বের করতে বলেন। তখন
নিহতদের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়। এটা দেখে আলী (রাঃ) তাকবীর ধ্বনি করেন এবং বলেন,
আল্লাহ ও তার রাসূল সত্য কথা বলেছেন। অতঃপর তিনি শুকরিয়ার সিজদা করেন এবং বলেন,
তোমরা সবাই সুসংবাদ গ্রহণ কর। এ সময় লোকেরা তাকবীর ধ্বনি করে ওঠে। কেননা এরা যে
ইসলাম থেকে বহির্গত দল, তার নিদর্শন হিসাবে উক্ত ব্যক্তির কথা রাসূল (ছাঃ) বলে
গিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি মিথ্যা বলিনি এবং আমাকেও মিথ্যা বলা
হয়নি’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৭৯২৭; আহমাদ হা/৬৭২, সনদ হাসান
লেগায়রিহী)। অত্র যুদ্ধে মাসঊদীর হিসাব মতে, খারেজীদের সবাই নিহত হয়। মাত্র কয়েকজন
পালিয়ে বাঁচে। যাদের সংখ্যা দশ-এর কম। আর আলী (রাঃ)-এর পক্ষে দু’জন বা তার কিছু
বেশী নিহত হন। এতে বুঝা গেল যে, মু‘আবিয়ার বিরুদ্ধে ছিফফীন ও খারেজীদের বিরুদ্ধে
নাহরাওয়ান উভয় যুদ্ধে আলী (রাঃ) হক-এর উপর ছিলেন।
উভয় দলের অবস্থা :
এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী উভয় দল ইসলামের উপরেই কায়েম ছিল। তারা কেউ
কাউকে কাফের বলেননি। (ক) আবু বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী (ছাঃ)-কে
মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি, ঐ সময় হাসান (রাঃ) তাঁর পার্শ্বে ছিলেন। তিনি একবার
উপস্থিত লোকদের দিকে আবার হাসান (রাঃ)-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমার এই সন্তান
হচ্ছে নেতা। আল্লাহ তা‘আলা তার মাধ্যমে বিবদমান বিরাট দু’দল মুসলমানের মধ্যে
সমঝোতা করিয়ে দিবেন (বুখারী হা/৩৭৪৬; আবুদাউদ হা/৪৬৬২)। আলী (রাঃ)-এর
শাহাদতের পর হাসান (রাঃ)-এর মাধ্যমে বিবদমান দু’দলের মাঝে সমাধান হয়েছিল এবং সমঝোতার
ভিত্তিতে মু‘আবিয়া পরবর্তী খলীফা হন। (খ) ছিফফীন যুদ্ধের দিন জনৈক ব্যক্তি
সিরীয়দের লা‘নত করলে আলী (রাঃ) বলেন, ‘সিরীয়দের গালি দিয়ো না। কেননা তাদের মধ্যে
রয়েছেন বহু ‘আবদাল’ (৩ বার)’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২০৪৫৫, সনদ ছহীহ)।
(গ) এ সময় জনৈক ব্যক্তি সিরীয়দের কাফের বললে ‘আম্মার বিন ইয়াসির বলেন, কখনো এরূপ
বলো না। আমাদের নবী ও তাদের নবী এক। আমাদের ক্বিবলা ও তাদের ক্বিবলা এক। কিন্তু
তারা ফিৎনায় পড়ে গেছে এবং সত্যভ্রষ্ট হয়েছে। ফলে আমাদের উপর কর্তব্য হয়ে গেছে
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যাতে তারা সত্যের দিকে ফিরে আসে’ (মুছান্নাফ ইবনু
আবী শায়বাহ হা/৩৮৯৯৬, সনদ হাসান লেগায়রিহী)। এই অনাকাংখিত যুদ্ধের জন্য
প্রথমতঃ খারেজীদের গোপন ষড়যন্ত্র এবং দ্বিতীয়তঃ ওছমান (রাঃ) হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ
নিয়ে ছাহাবীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিই ছিল মূলতঃ দায়ী।
প্রশ্ন (২/৪৪২) : আমার এক নিকটাত্মীয় সূদী
ব্যাংকে চাকুরী করে। মাঝে মাঝে আমার বাসায় বেড়াতে আসলে দামী উপহার ও খাবার-দাবার
নিয়ে আসে। এক্ষণে সেগুলি গ্রহণ ও ভক্ষণ করা জায়েয হবে কি?
-আনোয়ারুল হক, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : যাবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না’ (আন‘আম
৬/১৬৪)। ইহূদী-নাছারারা সূদী লেন-দেনে জড়িত ছিল জেনেও রাসূল (ছাঃ) তাদের হাদিয়া
গ্রহণ করেছেন এবং তাদের তৈরী খাবার খেয়েছেন (মুমতাহিনা ৬০/৮; বুখারী হা/১৪৮১,
৩১৬৯; মিশকাত হা/৫৯৩৫)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন,
‘তোমার জন্য এটি বিনা কষ্টের অর্জন এবং এর গোনাহ তার উপরে’ (মুছান্নাফ আব্দুর
রাযযাক হা/১৪৬৭৫, ইমাম আহমাদ আছারটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন; ইবনু রজব হাম্বলী, জামেঊল
উলূম ওয়াল হিকাম, ২০১ পৃঃ)। সাঈদ ইবনু জুবায়ের, মাকহূল ও যুহরী (রহঃ) বলেন, যে
সম্পদে হালাল ও হারামের মিশ্রণ রয়েছে তা খাওয়াতে কোন বাধা নেই। এ মর্মে হাসান
বছরীকে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, হ্যাঁ গ্রহণ করবে। এটি বিনা কষ্টের উপার্জন। আর
গুনাহ হবে তার’ (শারহুস সুন্নাহ ৮/১৫)। তবে যদি উক্ত খাদ্য বা হাদিয়া মদ,
শুকরের গোশত ইত্যাদির ন্যায় সত্তাগতভাবে হারাম হয়, তাহ’লে তা গ্রহণ করা হালাল
নয়’ (শারহুস সুন্নাহ ৮/১৫)।
প্রশ্ন (৪/৪৪৪) : আমার পিতা-মাতার মাঝে বৈবাহিক
সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। পিতা আমাদের কোন খরচ বহন করেন না। আমি মায়ের সাথে থাকি। তার
নির্দেশনা অনুযায়ী গত পাঁচবছর যাবৎ পিতার সাথে কোন সম্পর্ক রাখি না। এজন্য আমি
গুনাহগার হব কি?
-যাকিরুল ইসলাম, বগুড়া।
উত্তর : পিতার সাথে যথাসম্ভব সম্পর্ক রাখতে হবে এবং সদাচরণ করতে হবে। নইলে
গুনাহগার হ’তে হবে। কেননা পিতা-মাতার হক সন্তানের উপর অপরিসীম, যা কখনো পূরণীয় নয়।
তাঁরা সদাচরণ করুন বা না করুন, তাদের সেবা করা সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এমনকি
তারা শিরক করতে চাপ দিলেও তা থেকে বিরত থেকে তাদের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে (লোকমান ৩১/১৫)। তারা অমুসলিম হ’লেও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না তাদের
সম্পর্কে, যারা তোমাদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে যুদ্ধ করেনি’ (বুখারী হা/৫৯৭৮,
মুমতাহিনা ৬০/৮; মুসলিম হা/১০০৩; মিশকাত হা/৪৯১৩)। তবে পিতার দায়িত্ব সন্তানের খরচ
বহন করা (বাক্বারাহ ২/২৩৩; মুসলিম হা/১১৫৯; মিশকাত হা/২০৫৪)। এতে অবহেলা করায়
তিনি গুনাহগার হবেন এবং এজন্য তাঁকে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে (বুখারী
হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫)।
প্রশ্ন (৫/৪৪৫) : মসজিদের বামে বা ডানে কবর থাকলে এবং মসজিদ ও
কবরস্থানের মাঝে কোন দেয়াল না থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত হবে কি?
-রবীউল
আলম, অলীপুর, চাঁদপুর।
উত্তর : কবর সামনে না থাকায় ছালাত হবে। তবে মসজিদের
প্রাচীরের পাশাপাশি কবরস্থানের আলাদা প্রাচীর থাকা উত্তম (ইবনু তায়মিয়াহ,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/১২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৭)। কারণ রাসূল (ছাঃ)
কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭২; নাসাঈ হা/৭৬০;
ছহীহাহ হা/১০১৬)।
প্রশ্ন (৬/৪৪৬) : আমার বড় বোনের স্বামী পূর্বের স্ত্রীর এক কন্যা রেখে তাকে
(পূর্বের স্ত্রীকে) তালাক দেয়। এক্ষণে আমি ঐ মেয়েকে বিবাহ করতে পারব কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, পাথরঘাটা, বরগুনা।
উত্তর : পারবে। কারণ কুরআনে যে সকল নারীকে হারাম করা হয়েছে দুলাভাইয়ের অন্য
স্ত্রীর মেয়ে তার মধ্যে গণ্য নয় (নিসা ৪/২৩)।
প্রশ্ন (৭/৪৪৭) : রাসূল (ছাঃ) জনৈক মহিলাকে বলেন
যে, মেহমান তোমার গৃহ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় সবধরনের ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ে যায়। আর
মেহমানদারীর জন্য এটাই তোমার প্রাপ্তি। বর্ণনাটির কোন সত্যতা আছে কি?
-আব্দুল্লাহ, মুর্শিদাবাদ, ভারত।
উত্তর : একই
মর্মে নয়, তবে কাছাকাছি মর্মে একটি বর্ণনা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ‘মেহমান
তার রিযিক নিয়ে প্রবেশ করে এবং মানুষের গোনাহসমূহ নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে তাদের
গোনাহসমূহ মিটে যায়’। তবে বর্ণনাটি মওযূ বা জাল (যঈফুল জামে‘ হা/৩৬০৪)।
প্রশ্ন (৮/৪৪৮) : ইমাম মালেক (রহঃ) দুই হাত ছেড়ে দিয়ে ছালাত আদায়
করতেন কি?
-রূহুল আমীন, খুলনা।
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইমাম মালেক (রহঃ) বাম
হাতের উপর ডান হাত রেখেই ছালাত আদায় করতেন। তাঁর স্বীয় মুওয়াত্ত্বা গ্রন্থে অধ্যায়
রচনা করা হয়েছে, ‘ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা’, অতঃপর তাতে সাহল বিন সা‘দের
প্রসিদ্ধ হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে (মুওয়াত্ত্বা হা/২৯১)। কারু মতে, কোন একদিন
হাতে চরম আঘাত প্রাপ্ত হ’লে তিনি আর হাত বেঁধে ছালাত আদায় করতে পারেননি। অতঃপর
ইমাম মালেকের ছাত্ররা ইমামের এরূপ অবস্থা দেখে হাত ছেড়ে ছালাত আদায় শুরু করে।
পরবর্তীতে নিজেদের মাযহাব শক্তিশালী করার জন্য যে সকল আম হাদীছে হাত বাঁধার কথা
উল্লেখ নেই সেই হাদীছগুলো উপস্থাপন করে মাযহাবী ফৎওয়া দিতে থাকেন। অথচ একটি উছূল
সবার জানা যে, আম হাদীছের উপর খাছ হাদীছ আসলে আম হাদীছের আমল গ্রহণযোগ্য নয়।
মুতাওয়াতির সূত্রে খাছ হাদীছে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) ছালাতে বুকের উপর হাত
বেঁধেছেন (ফাতাওয়া লাজানা দায়েমা ৬/৩৫৩-৩৬০)। উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপরে
ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত
হয়নি এবং এটাই জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি (নায়লুল আওত্বার ৩/২২;
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯)।
প্রশ্ন (৯/৪৪৯) : আমাদের দেশের ঔষধ কোম্পানীগুলো তাদের
রিপ্রেজেন্টিটিভদের মাধ্যমে ডাক্তার ও ফার্মেসী দোকানদারদের নিজ নিজ কোম্পানীর ঔষধ
প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করার জন্য দামী দামী গিফট দেয়, ডাক্তারদের সাথে মোটা অংকের
আর্থিক চুক্তি করে। ফলে ঐ ডাক্তার নির্দিষ্ট কোম্পানীর বাইরে কোন ঔষধ লেখেন না। এর
ফলে অনেক রোগী নিম্নমানের ঔষধ খেয়ে ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। এরূপ চাকুরী করা জায়েয
হবে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে না। এরূপ উপহার প্রদান-গ্রহণ উভয়টিই নিষিদ্ধ। কারণ অধিকাংশ
ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ নির্বিশেষে উপহার প্রদানকারী কোম্পানীর ঔষধ রোগীদেরকে
লিখে দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করতেই উক্ত গিফট প্রদান করা হয়ে থাকে। যা ঘুষ হিসাবে
গণ্য (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ২৩/৫৭০)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি
বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঘুষখোর ও ঘুষ প্রদানকারীকে লা‘নত করেছেন (তিরমিযী হা/১৩৩৬;
মিশকাত হা/৩৭৫৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২১১)।
প্রশ্ন (১১/৪৫১) : এক বা একাধিক বছরের জন্য
আমবাগানের জমি লীজ দেওয়া যাবে কি? উল্লেখ্য, এখানে আম গাছ ছাড়া অন্য কোন ফসল হওয়ার
ব্যবস্থা নেই।
-মুবীনুল ইসলাম, রহনপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : যাবে না। কারণ জমির সাথে ফলদার বৃক্ষ রয়েছে, যা মূল লক্ষ্য। জাবের
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) কয়েক বছরের জন্য জমি বিক্রি ও কয়েক
বছরের জন্যে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/১৫৩৬; মিশকাত হা/২৮৪১;
ছহীহুল জামে‘ হা/৬৯৩২)। এছাড়া এটা ফল পাকার পূর্বে জমি বিক্রয়ের নামান্তর, যে
ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বলত, আল্লাহ তা‘আলা যদি ফল নষ্ট করে দেন, তবে কিসের
বিনিময়ে তোমার ভাইয়ের মাল গ্রহণ করবে’? (বুখারী হা/২২০৮; মুসলিম হা/১৫৫৫)।
অতএব এরূপ ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। বরং গাছ সমূহের আম ‘মুযারাবা’ অংশীদারী চুক্তিতে
বর্গা দিতে হবে (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/২৫৩৪-৩৫; ইরওয়া ৫/২৯২, হা/১৪৬৯-এর
আলোচনা ‘মুযারাবা’ অনুচ্ছেদ)। অর্থাৎ জমির মালিক ও ফলের ক্রেতার মধ্যে লাভ-লোকসান
অংশীদারী ভিত্তিতে ব্যবসায়িক চুক্তি হবে।
প্রশ্ন (২০/৪৬০) : আমি সতের বছর যাবত জেলে
ছিলাম। আমার স্ত্রী আমার নিকট তালাক না নিয়েই অন্যত্র বিবাহ করেছে। কিছুদিন পর
উক্ত স্বামীও মারা যায়। এক্ষণে আমি জেল থেকে বের হ’লে আমি ও সে কিভাবে সংসার করতে
পারব। ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আব্দুর রঊফ, মোল্লাহাট, বাগেরহাট।
উত্তর : স্বামী জেলে থাকলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয় না। এক্ষণে মহিলা যা করেছে
তা ভুল করেছে। যা যেনার শামিল। অতএব স্ত্রী তওবা করবে। অতঃপর বিবাহ ছাড়াই সংসার
শুরু করবে। স্মর্তব্য যে, দীর্ঘদিনের জন্য স্বামী কারান্তরীণ থাকলে প্রয়োজনে
স্ত্রী স্বামীর নিকটে তালাক চাইতে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াউল কুবরা
৫/৪৮১-৪৮২)। অথবা নিজে ‘খোলা’-র মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
প্রশ্ন (২২/৪৬২) : বেনামাযী ও নেশাকারী
ব্যক্তিদের সাথে ক্রয়-বিক্রয়, চলাফেরাসহ সামাজিক সম্পর্ক রাখা যাবে কি?
-আবুল বাশার, সুজায়েতপুর, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : এধরনের লোকদের একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত এড়িয়ে চলতে হবে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘তুমি মুমিন ব্যতীত কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে না এবং তোমার খাদ্য যেন
কেবল মুত্তাকীরা খায়’ (আবুদাঊদ হা/৪৮৩২; মিশকাত হা/৫০১৮)। তিনি আরো বলেন,
‘মানুষ তার বন্ধুর রীতির উপর হয়ে থাকে। অতএব দেখ সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব
করছে’ (আবুদাঊদ হা/৪৮৩২; মিশকাত হা/৫০১৯)। তবে সুযোগ পেলেই তাদেরকে সঠিক পথে
ফিরে আসার জন্য উপদেশ দিতে হবে। আর এধরনের লোকদের পরিত্যাগ করাতে তাদের বা নিজের
অধিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বাহ্যিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন (২৩/৪৬৩) : ফজরের আযানের পর মসজিদে এসে
নির্দিষ্ট দু’রাক‘আত সুন্নাত ব্যতীত তাহিইয়াতুল ওযূ ও তাহিইয়াতুল মসজিদ ছালাত আদায়
করা যাবে কি?
-মুহায়মিনুল হক, ঢাকা।
উত্তর : যাবে। তবে ফজরের নির্দিষ্ট সুন্নাত মসজিদে এসে আদায় করলে তা
তাহিইয়াতুল মসজিদ ও তাহিইয়াতুল ওযূর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। অবশ্য বাড়িতে সুন্নাত
আদায় করে মসজিদে আসলে তাহিইয়াতুল মসজিদ আদায় করা সুন্নাত। কেননা রাসূল (ছাঃ)
মসজিদে এসে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসতে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/১১৬৩;
শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৮/১৮৯)।
প্রশ্ন (২৪/৪৬৪) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, মানুষকে
প্রতিদিন নছীহত করা বা মসজিদে প্রতিদিন হাদীছ পাঠ করা শরী‘আতসম্মত নয়। এর স্বপক্ষে
তিনি বুখারীর একটি হাদীছ পেশ করেন। একথার সত্যতা জানতে চাই।
-আব্দুল্লাহ, ঢাকা।
উত্তর : ছালাতের পরে নছীহত করা বা হাদীছ পাঠে শারঈ কোন বাধা নেই। তবে
পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনমত উপদেশ প্রদান করাই সমীচীন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
৮/২৮১)। আল্লাহ বলেন, এবং উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে (যারিআত
৫১/৫৫)। হাদীছ পাঠে অল্প সময়ের ব্যাপার। এটুকুতে যারা বিরক্ত বোধ করেন, তাদের
ঈমানে ঘাটতি আছে। এরূপ তুচ্ছ অজুহাত তুলে মসজিদে বা অন্যত্র হাদীছ পাঠে বাধা দেওয়া
অন্যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও
সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’ (নাহল
১৬/১২৫)।
প্রশ্ন (২৭/৪৬৭) : হাদীছে উত্তমরূপে ওযূ করে
কেবল ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আগমনকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কারের কথা বর্ণিত
হয়েছে। এর ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য কি?
-যহীর শেখ, আসাম, ভারত।
উত্তর : অধিক আগ্রহ, মসজিদের সাথে হৃদয় লটকিয়ে থাকা এবং পবিত্র অবস্থায়
কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করার কারণে আল্লাহ এই মর্যাদা দান করবেন। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং
পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার
বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হয়। তবে কবীরা গোনাহ ব্যতীত’ (মুসলিম হা/২২৮;
মিশকাত হা/২৮৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১)। অন্য হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি
বাড়ি থেকে পাক-পবিত্র হয়ে (ওযু করে) ফরয ছালাত আদায় করার জন্য পায়ে হেঁটে আল্লাহর
কোন ঘরে (মসজিদে) যায় তার প্রতি পদক্ষেপে একটি করে পাপ ঝরে পড়ে এবং একটি মর্যাদার
স্তর বৃদ্ধি পায় (মুসলিম হা/৬৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৫৫)।
প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : জুম‘আর খুৎবা প্রদানের সুন্নাতী পদ্ধতিসমূহ কি
কি?
-শামীম
ইসলাম. ঝিনাইদহ।
উত্তর : জুম‘আর জন্য দু’টি খুৎবা দেওয়া সুন্নাত, যার
মাঝখানে বসতে হয় (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫)। ইমাম মিম্বরে বসার সময় মুছল্লীদের
উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন (ইবনু মাজাহ হা/১১০৯; ছহীহাহ হা/২০৭৬)। আবুবকর ও ওমর
(রাঃ) এটি নিয়মিত করতেন। আবু হানীফা ও মালেক (রহঃ) প্রমুখ মসজিদে প্রবেশকালে সালাম
দেওয়াকেই যথেষ্ট বলেছেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩০; নায়ল ৪/২০১)। খত্বীব হাতে
লাঠি নিবেন (আবুদাঊদ হা/১০৯৬; ইরওয়া হা/৬১৬)। নিতান্ত কষ্টদায়ক না হ’লে
সর্বদা দাঁড়িয়ে খুৎবা দিবেন। ১ম খুৎবায় হাম্দ, দরূদ ও ক্বিরাআত ছাড়াও সকলকে নছীহত
করবেন, অতঃপর বসবেন। দ্বিতীয় খুৎবায় হাম্দ ও দরূদ সহ সকল মুসলমানের জন্য দো‘আ
করবেন (জুম‘আ ৬২/১১; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫)। প্রয়োজনে এই সময়ও কিছু নছীহত
করা যায় (নাসাঈ হা/১৪১৭-১৮; তিরমিযী হা/৫০৬)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) হাম্দ, দরূদ ও
নছীহত তিনটি বিষয়কে খুৎবার জন্য ‘ওয়াজিব’ বলেছেন। যাতে কুরআন থেকে একটি আয়াত হ’লেও
পাঠ করতে হবে। এতদ্ব্যতীত সূরায়ে ক্বাফ-এর প্রথমাংশ বা অন্য কিছু আয়াত তেলাওয়াত
করা মুস্তাহাব (মির‘আত ২/৩০৮, ৩১০; ঐ, ৪/৪৯৪, ৪৯৮-৯৯; মুসলিম, মিশকাত
হা/১৪০৯)। খুৎবা আখেরাত মুখী, সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হওয়া বাঞ্ছনীয় (মুসলিম,
মিশকাত হা/১৪০৫-০৬)। তবে দীর্ঘ হওয়াও জায়েয আছে (মুসলিম
হা/৭২৬৭)।
খুৎবার সময় কেউ মসজিদে
প্রবেশ করলে সংক্ষিপ্তভাবে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ ছালাত পড়ে
বসবেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১১; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৯৭ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩০/৪৭০) : কোন নারীর মন্দ চরিত্রের
ব্যাপারে কাউকে তার কবল থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে জানালে তা গীবত হিসাবে গণ্য হবে
কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : বিষয়টি বক্তার দৃষ্টিতে সত্য হ’লে গীবত হিসাবে গণ্য হবে না। বরং
তাকে সংশোধন বা তার বা অন্য কারো কল্যাণে এরূপ নারীর কথা গোপনে বলা যাবে (নববী,
রিয়াযুছ ছালেহীন, ২৫৬ অনুচ্ছেদ, পৃঃ ৫৭৫)।
প্রশ্ন (৩১/৪৭১) : তারাবীহ ছালাতে প্রতি দুই
রাক‘আত পরপর ছানা পড়তে হবে কি?
-মঈনুদ্দীন আহমাদ, নওহাটা, রাজশাহী।
উত্তর : ফরয
ছালাত হোক অথবা নফল ছালাত হোক প্রত্যেক ছালাতের শুরুতে দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা
পাঠ করা সুনণাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখনই ছালাত আরম্ভ করতেন, তখনই তাকবীরে তাহরীমার
পর দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পড়তেন (বুখারী হা/৭৪৪, মিশকাত হা/৮১২-১৩)।
যেহেতু তারাবীহর প্রত্যেক দুই রাক‘আত পৃথক পৃথক ছালাত, সেহেতু
প্রত্যেক দুই রাক‘আতের শুরুতে দো‘আ ইস্তেফতাহ বা ছানা পড়া সুন্নাত।
প্রশ্ন (৩২/৪৭২) : ছালাত রত অবস্থায় শরীরে
মশা-মাছি বা অন্য কোন পোকা পড়লে তা তাড়ানো এবং প্রয়োজনে শরীরের কোন জায়গায় চুলকানো
যাবে কি?
-রাশেদ আলম, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : যাবে।
তবে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে যেন ছালাতের খুশূ‘-খুযূ‘ নষ্ট না হয়। মু‘আইক্বেব (রাঃ)
নবী করীম (ছাঃ)-কে ছালাতের মধ্যে সিজদার স্থানের মাটি সমানকারী ব্যক্তি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘যদি তা তোমাকে করতেই হয়, তবে শুধু একবার করবে (বুখারী
হা/১২০৭, মুসলিম হা/৫৪৬, মিশকাত হা/৯৮০)। অন্য এক বর্ণনায় ছালাতের মধ্যে হাই আসলে
মুখে হাত রাখতে বলা হয়েছে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৯৯৩)। অন্য
বর্ণনায় ছালাত অবস্থায় সাপ ও বিচ্ছুকে মারতে বলা হয়েছে (নাসাঈ, মিশকাত
হা/১০০৪)। এ সকল হাদীছ প্রমাণ করে যে, ছালাত রত অবস্থায় প্রশ্নে উল্লেখিত প্রয়োজন
মিটালে ছালাতের ক্ষতি হবে না। তবে অবশ্যই ছালাতের বিনয়-নম্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখবে
এবং নচেৎ ছালাত কবুল হবে না।
প্রশ্ন (৩৩/৪৭৩) : ‘রাসূল (ছাঃ) রোদের মধ্যে পথ চললে তাঁর শরীরে রোদ
লাগত না, এক খন্ড মেঘ তাঁকে ছায়া করে থাকত’ এ কথা কি সঠিক?
-আরীফ,
খালিশপুর, খুলনা।
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন দলীল নেই। যদিও কোন কোন জীবনীকার
এগুলি লিখেছেন। যার কোন ভিত্তি নেই। তবে আল্লাহর বিশেষ রহমতে মু‘জিযা হিসাবে কখনো
কখনো মেঘ, গাছ ইত্যাদি তাঁকে ছায়া করত (তিরমিযী হা/৩৬২০; মুসলিম হা/৩০১২;
মিশকাত হা/৫৯১৮, ৫৮৮৫)। উল্লেখ্য যে, বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত (মিশকাত
হা/১১৯৫) দো‘আয় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর নিকট নিজের হৃদয়ে, চোখে-কানে,
ডাইনে-বামে, উপরে-নীচে যে নূর প্রার্থনা করেছেন, তার অর্থ ইলম ও হেদায়াতের
নূর (মিরক্বাত)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যার বক্ষকে আল্লাহ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত
করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার প্রতিপালকের দেওয়া জ্যোতির মধ্যে রয়েছে, (সে কি অন্যের
মত হ’তে পারে?) (যুমার ৩৯/২২)।
প্রশ্ন (৩৪/৪৭৪) : জুম‘আর খুৎবায় ইমাম ছাহেব
বিদ‘আতপূর্ণ কথা বলেন। একারণে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরী করা যাবে কি?
-আব্দুর রকীব, ঝিনাইদহ।
উত্তর : যথাসময়ে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে। নতুবা মুছল্লী বহু নেকী থেকে
বঞ্চিত হবে (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৮১-৮৪, ১৩৮৮)। প্রয়োজনে যে
মসজিদে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক খুৎবা হয় সেখানে যেতে হবে। ইবনু তায়মিয়াহ
(রহঃ) বলেন, মুছল্লী যদি জানতে পারে যে তার ইমাম এমন বিদ‘আতী, যে বিদ‘আতের পথে
আহবান করে। অথবা সে ফাসেকী কাজে লিপ্ত। কিন্তু সে নিয়মিত ইমাম, যার পিছনে ছালাত
আদায় করতেই হয়। যেমন জুম‘আ, ঈদায়েন, আরাফার হজ্জের ইমাম ইত্যাদি। এমতাবস্থায়
মুছল্লী তার পিছনেই ছালাত আদায় করবে (আল-ফাতাওয়াউল কুবরা ২/৩০৭)। স্বর্তব্য
যে, নিরুপায় অবস্থায় বিদ‘আতী ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘অনেকেই তোমাদেরকে ছালাত আদায় করায়। তারা যদি ঠিক করে তাহলে তোমাদের জন্য নেকী
রয়েছে। আর তারা যদি ভুল করে, তাতে তোমাদের নেকী হবে আর তাদের গোনাহ হবে’ (বুখারী,
মিশকাত হা/১১৩৩)। হাসান বাছরী বলেন, বিদ‘আতীর পিছনে ছালাত আদায় কর। বিদ‘আতের গোনাহ
তার উপর বর্তাবে (বুখারী, ‘বিদ‘আতীর ইমামতি’ অনুচ্ছেদ হা/৬৯৫)।
প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) : রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে
কুরবানী করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন অনুমোদন আছে কি?
-জাহিদ হাসান, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বা কোন মৃতের জন্য পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন বিধান
নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)- এর অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা
কুরবানী করেছিলেন মর্মে যে বর্ণনা এসেছে (আহমাদ হা/১২৭৮; তিরিমিযী হা/১৪৯৫;
মিশকাত হা/১৪৬২), তা নিতান্তই যঈফ। কোন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য বা রাসূল (ছাঃ)
তার প্রিয় স্ত্রী ও সন্তানাদি বা প্রিয় চাচা হামযা বা অন্য কোন মৃতব্যক্তির জন্য
এভাবে কুরবানী করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব এসব থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৩৯/৪৭৯) : কিছু কিছু মাসআলার ক্ষেত্রে
দেখা যায় একজন সালাফী আলেম সেটাকে বিদ‘আত বলছেন, অপরজন সেটাকে সুন্নাত বলছেন। যেমন
রুকুর পরে উঠে পুনরায় বুকে হাত বাঁধার বিষয়টি। এজন্য কোন আলেমকে বিদ‘আতী বলে
আখ্যায়িত করা যাবে কি?
-মনীরুযযামান, টাঙ্গাইল।
উত্তর : বলা
যাবে না। কারণ বিদ‘আত বলা এবং বিদ‘আতী বলা এক জিনিস নয়। ইজতিহাদী বা ব্যাখ্যাগত
ভুলের কারণে কাউকে বিদ‘আতী বলা যায় না।
শায়েখ আলবানী (রহঃ) বলেন, একজন আলেম কোন বিদ‘আত করার অর্থ এই নয় যে
তিনি বিদ‘আতী। কোন আলেম যদি ইজতিহাদের মাধ্যমে কোন হারাম কাজকে হালাল সাব্যস্ত
করেন, তার অর্থ এই নয় যে, তিনি হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছেন। হ্যাঁ আমরা বলতে পারি যে,
এই আমলটি বিদ‘আত, কেননা তা সুন্নাতবিরোধী; কিন্তু এর কারণে আমরা বলি না যে, স্বয়ং
ঐ ব্যক্তি বিদ‘আতী। ...সঊদী আরবের অনেক ভাইয়ের মধ্যে এটি অনুপস্থিত, যখন তারা একটি
বক্তব্যের জন্য আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। যেখানে আমি বলেছি, রুকূ থেকে উঠার পর
ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা বিদ‘আত। (তারা বলেন) ‘কিভাবে আপনি একে বিদ‘আত বলতে
পারেন অথচ অমুক অমুক শায়েখ এটাকে সুন্নাত বলেন!... তবে কি তারা সবাই বিদ‘আতী!! এখন
আপনারা নিশ্চয়ই উত্তরটি পেয়েছেন! না, তাঁরা বিদ‘আতী নন। তবে আমার দলীল ও
দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী উক্ত আমলটি বিদ‘আত (সিলসিলাতুল হূদা ওয়ান নূর, অডিও
ক্লিপ নং ৭৮৫)। সুতরাং কোন কুফরী কাজের জন্য যেমন কাউকে কাফির বলা যায় না। তেমনি
কোন বিদ‘আতী আমলের জন্য সহসা কাউকে বিদ‘আতী আখ্যা দেয়া যায় না।
প্রশ্ন (৪০/৪৮০) : হজ্জকারী ব্যক্তির নামের
শুরুতে ‘আলহাজ্জ’ বা ‘হাজী’ লেখা হয় কেন? এগুলো লেখা যাবে কি?
-আব্দুল্লাহ, কানসাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : বিগত
দিনে আমাদের দেশের যেসব প্রবীণ ব্যক্তি দীর্ঘ সফরের মাধ্যমে হজ্জ করে ফিরে আসতেন
এবং সকল অন্যায় কাজ-কর্ম হ’তে দূরে থেকে নিজেকে দ্বীনী কাজে লিপ্ত রাখতেন, তাদেরকে
নাম ধরে না ডেকে বিশেষ শ্রদ্ধার সাথে ‘আলহাজ্জ’ বা ‘হাজী ছাহেব’ বলে সম্বোধন করা
হ’ত। বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষকে এভাবে সম্মান করে ডাকা আদৌ অন্যায়
নয়।
বরং উত্তম লকবে ডাকা ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। যেমন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হযরত আবুবকর-কে ছিদ্দীক্ব, আয়েশা-কে হোমায়রা, আলী-কে আবু তুরাব,
আব্দুর রহমান-কে আবু হুরায়রা, হুযায়ফা-কে নওমান, আব্দুল্লাহ-কে যুল-বিজাদায়েন,
খিরবাক্ব-কে যুল-ইয়াদায়েন (দ্রঃ দরসে কুরআন ‘দ্বন্দ্ব নিরসন’ ২০/৯ জুন’১৭),
খালেদ বিন অলীদকে ‘সায়ফুল্লাহ’ (আল্লাহর তরবারী) এবং জাফর বিন আবু তালিবকে
‘আত-ত্বইয়ার’ লকবে ডেকেছেন (দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘মুতার যুদ্ধ’ অধ্যায়)।
এমনকি ইবনু হাজার বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, রাসূল (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-কে প্রথম
‘ফারূক্ব’ লকব দিয়েছিলেন (ফাৎহুল বারী ‘ওমরের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ
হা/৩৬৭৯-এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
তবে অহংকার প্রকাশার্থে নিজের নামের সাথে উক্তরূপ লকব যুক্ত করা
নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে
না, যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমান অহংকার রয়েছে’ (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত
হা/৫১০৮)। তাছাড়া সেটি রিয়া ও শ্রুতির অন্তর্ভুক্ত হবে, যা হারাম (বুখারী
হা/৬৪৯৯; মুসলিম হা/২৯৮৬; মিশকাত হা/৫৩১৬)।
অক্টোবর/২০১৭
প্রশ্ন
(১/১) : আমার পূর্বে ক্রয়কৃত পিয়ানো ও গিটার আছে। দ্বীন বুঝার পর এখন সেগুলি
বিক্রি করে ইসলামী বই ক্রয় করতে চাই। এরূপ করা জায়েয হবে কি? নতুবা সেগুলি নিয়ে
করণীয় কি?
উত্তর : এগুলো বিক্রয় করে উপকৃত হওয়া যাবে না। কারণ এগুলি হারাম কাজের
উদ্দেশ্যে তৈরী। অতএব এগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এক
ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এক মশক শরাব হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে আসে। রাসূল (ছাঃ)
তাকে বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা হারাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর
সে এক ব্যক্তির সাথে কানাকানি করল। রাসূল (ছাঃ) সে ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি
তাকে গোপনে কি বললে? সে বলল, আমি তাকে তা বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর তিনি
বললেন, যিনি তা পান করা হারাম করেছেন। তিনি তার বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। রাবী
বলেন, এরপর সে মশকের মুখ খুলে দিল এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল সব পড়ে গেল (মুসলিম
হা/১৫৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৮৯)।
প্রশ্ন (৩/৩) : কাতারের সম্মুখে মশার কয়েল
জ্বালিয়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি? এতে কি অগ্নিপূজকদের সাদৃশ্য হবে?
-ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারী
উত্তর নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : এভাবে ছালাত আদায় করা যাবে। এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না এবং এটি
কারো সাথে সাদৃশ্যপূর্ণও হবে না। কারণ কয়েল বা হারিকেন পূজা করার জন্য জ্বালানো হয়
না। আর বান্দার সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল (বুখারী হা/১)। রাসূল
(ছাঃ) সূর্যগ্রহণের ছালাতে জাহান্নামের আগুন দেখেছেন অথচ ছালাত ত্যাগ করেননি (বুখারী
হা/১২১২)।
প্রশ্ন (৯/৯) : কায়িক শ্রমরত ঘর্মাক্ত শ্রমিক
ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে সময়স্বল্পতার কারণে কেবল ওযূ করে ছালাতে যোগদান করতে
পারবে কি, না গোসল করতে হবে?
-ইদ্রীস মিয়া, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত অবস্থায় কেবল ওযূ করলেই যথেষ্ট হবে। কারণ ছালাতের জন্য শর্ত
হ’ল ওযূ করা (মায়েদাহ ৫/৬)। তবে এমতাবস্থায় গোসল করার সুযোগ থাকলে তা করাই
উত্তম হবে। কেননা শরীরে অতিরিক্ত ঘাম থাকলে, তার গন্ধে পাশের মুছল্লী কষ্ট পেতে
পারে (বুখারী হা/৯০২; মুসলিম হা/৮৪৭)। আর পাশের মুছল্লী কষ্ট পায় এমন কোন কাজ
করা যাবে না (ইবনু হিববান হা/২০৯০, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (১০/১০) : আল্লাহর প্রভূত নে‘মতের
শুকরিয়া আদায় করে প্রত্যেক ছালাতের পর নিয়মিতভাবে সিজদায়ে শুকর আদায় করা যাবে কি?
-আশিকুর রহমান, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : এভাবে
নিয়মিত সিজদায়ে শুকর আদায় করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিকট থেকে
এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেবল নতুন নে‘মত প্রাপ্ত হ’লে বা কোন বিপদ দূর হ’লে
সিজদায়ে শুকুর আদায় করতে হয় (হাকেম হা/২০১৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬৫৮)। রাসূল
(ছাঃ)-এর নিকট খুশির সংবাদ আসলে তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন (ইবনু মাজাহ
হা/১৩৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০১)। ছাহাবীগণ থেকেও এরূপ বর্ণনা পাওয়া
যায় (বুখারী হা/৪৪১৮; মুসলিম হা/২৭৬৯)।
প্রশ্ন (১২/১২) : ঘুম না ভাঙ্গার কারণে
সূর্যোদয়ের পর ফজরের ছালাত আদায় করলে সশব্দে কিরাআত করতে হবে কি?
-কামরুল ইসলাম, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।
উত্তর : সশব্দে পড়াই উত্তম। রাসূল (ছাঃ)-এর একবার ফজরের ছালাত ছুটে গেলে
সূর্যোদয়ের পর তিনি অন্যান্য দিনের মতই সশব্দে তা আদায় করেন (মুসলিম হা/৬৮১;
মিশকাত হা/৫৯১১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/১৪০)। তবে একাকী পড়ার ক্ষেত্রে নীরবে
বা সরবে পড়ার বিষয়টি মুছল্লীর ইচ্ছাধীন (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৪৭)।
প্রশ্ন (১৩/১৩) : যমযম কূপ ঈসমাঈল (আঃ)-এর পায়ের
আঘাতে সৃষ্টি হয়েছে না ফেরেশতা কর্তৃক খননকৃত?
-আলমগীর, পটুয়াখালী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, জিব্রীলের পায়ের গোড়ালি বা ডানার আঘাতে যমযম
কূপের সৃষ্টি হয়েছে (বুখারী হা/৩৩৬৪-৬৫, ‘নবীদের কাহিনী’ অধ্যায়, ৯ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (১৪/১৪) : পিতা-মাতা আমার কল্যাণের জন্য
মাযারে ছাগল মানত করেছেন। কিন্তু আমি এতে বিশ্বাস করি না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-ইউসুফ আলী, গাযীপুর।
উত্তর : প্রশ্ন অনুযায়ী এজন্য পিতা-মাতা গুনাহগার হবেন, সন্তান নয়। এক্ষণে
সন্তানের জন্য কর্তব্য হবে পিতা-মাতাকে উক্ত শিরকী কাজ থেকে ফেরানোর জন্য নছীহত
করা। যেমন ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় মূর্তিপূজারী পিতাকে নছীহত করেছিলেন (মারিয়াম
১৯/৪২-৪৫)।
প্রশ্ন (১৫/১৫) : মিসওয়াক করার সময় হাঁটাহাঁটি
করা যাবে, না নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এরূপ কোন বিধান আছে কি?
-মুনীরুযযামান, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : এ ব্যাপারে শরী‘আতে কোন বিধি-নিষেধ নেই। বরং মানুষকে বেশী বেশী
মিসওয়াক করার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বাড়িতে প্রবেশ করে প্রথমে
মিসওয়াক করতেন (মুসলিম হা/২৫৩; মিশকাত হা/৩৭৭)। তিনি দিনে বা রাতে যেকোন সময়
ঘুম থেকে জাগ্রত হ’লে মিসওয়াক করতেন (আবুদাউদ হা/৫৭; মিশকাত হা/৩৮৩; ছহীহুল
জামে‘ হা/৪৮৫৩)। এছাড়া প্রত্যেক ছালাতের পূর্বে মিসওয়াক করতে উৎসাহিত করতেন (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৬)।
প্রশ্ন (১৬/১৬) : সফর অবস্থায় তাহাজ্জুদ ছালাত
আদায়ে কোন বাধা আছে কি?
-শামীম ইসলাম, ঢাকা।
উত্তর : কোন
বাধা নেই। বরং সফর অবস্থাতেও তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ)
সফরে আরোহীর উপরে তাহাজ্জুদ ও বিতর আদায় করতেন (বুখারী হা/১০০০; মিশকাত
হা/১৩৪০)। তবে ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকলে রাতের প্রথম প্রহরে বিতরের পর দুই রাক‘আত
ছালাত আদায় করলে তা রাত্রির নফল ছালাতের স্থলাভিষিক্ত হবে (দারেমী, মিশকাত
হা/১২৮৬; ছহীহাহ হা/১৯৯৩)।
প্রশ্ন (১৭/১৭) : দেশের মধ্যে অন্য কোন স্থানে
বা বিদেশে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণের সংবাদ পেলে সূর্য গ্রহণের ছালাত আদায় করা যাবে
কি?
-মাহমূদ, মধ্য বাসাবো, ঢাকা।
উত্তর : যে দেখবে বা যে এলাকায় দেখা যাবে কেবল তারাই সূর্য বা চন্দ্র
গ্রহণের ছালাত আদায় করবে (নাসাঈ হা/১৪৮৩, ১৫০২; শায়েখ বিন বায, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৩/৩২)।
প্রশ্ন (১৮/১৮) : নবী করীম (ছাঃ) সাপ মারতে
বলেছেন। অথচ আল্লাহ বিনা কারণে জীব-জন্তু মারতে নিষেধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে করণীয়
কি?
-আব্দুল মোত্ত্বালেব, মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : বিনা কারণে জীব-জন্তু হত্যা করা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কিন্তু যে সকল
প্রাণী মানুষের ক্ষতি করে সেগুলো মারার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাপ ক্ষতিকর
প্রাণী। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সাপের ভয়ে সাপ হত্যা করল না, সে আমার
শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত নয়’ (আবুদাঊদ হা/৫২৪৯; মিশকাত হা/৪১৪০)। তিনি বলেন, ‘তোমরা
সকল প্রকার সাপ মেরে ফেল। বিশেষ করে পিঠে দু’টি কালো রেখা বিশিষ্ট এবং লেজ কাটা
সাপ অবশ্যই মারবে। কেননা এ সাপ চোখের জ্যোতি নষ্ট করে দেয় এবং নারীদের গর্ভপাত
ঘটায়’ (বুখারী হা/৩২৯৭; মুসলিম হা/২২৩৩; মিশকাত হা/৪১১৭)।
প্রশ্ন (২২/২২) : নিজস্ব জমিতে মায়ের কবর রয়েছে।
এখন সন্তানেরা উক্ত কবর সরিয়ে সরকারী কবরস্থানে দাফন করতে এবং উক্ত জমি বিক্রয়
করতে চায়। এটা জায়েয হবে কি?
-আদিল, কোরপাই, কুমিল্লা।
উত্তর : শারঈ প্রয়োজন ব্যতীত কবর স্থানান্তর করা জায়েয নয় (বুখারী
হা/১৩৫১-৪২; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৩০৩; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৭৩;
উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৬৯)। এক্ষণে কবর স্থানান্তরের উদ্দেশ্য যদি কেবল
দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিল করা হয়, তবে একাজ থেকে বিরত থাকা যরূরী।
প্রশ্ন (২৩/২৩) : জুম‘আর দিন অনেকে তাদের মৃত
পিতা-মাতার জন্য দো‘আ চাইলে ইমাম ছাহেব সূরা ফাতিহা সহ দো‘আ-দরূদ পাঠ করে সকলকে
নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেন এবং সবাইকে সিন্নী খাওয়ানো হয়। এতে অংশগ্রহণ করা যাবে
কি?
-আব্দুল হাই আল-হাদী, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া।
উত্তর : এরূপ
কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কারণ এগুলো স্পষ্ট বিদ‘আত, যা অবশ্যই
বর্জনীয় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০)।
প্রশ্ন (২৪/২৪) : ছালাতরত অবস্থায় শরীরের কোন
স্থান থেকে রক্ত বের হ’তে দেখলে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি?
-মোকাম্মাল, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : রক্ত বের হওয়ার কারণে ছালাত ছাড়বে না। কেননা রক্ত বের হওয়া ওযূ
ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হ’লে ওযূ করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা
যঈফ (দারাকুৎনী; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০; মিশকাত হা/৩৩৩)। বরং বাকর (রহঃ) বলেন,
আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তার মুখমন্ডলে উঠা ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু
রক্ত বের হ’ল। তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু
ওযূ করেননি (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; সিলসিলা যঈফাহ
হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ)। যাতুর রিক্বা যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মুসলিম বাহিনী
পাহারারত ছাহাবী ‘আববাদ বিন বিশরের উপরে ছালাতরত অবস্থায় পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ
করা হ’লে তিনি আহত হন এবং প্রচুর রক্তপাত হয়। কিন্তু তিনি ছালাত ছেড়ে দেননি (আবুদাঊদ
হা/১৯৮; আহমাদ হা/১৪৭৪৫, সনদ হাসান)।
আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হ’লে ওযূ করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন
ছহীহ হাদীছ নেই। রক্ত কম হোক বা বেশী হোক (আলবানী, মিশকাত হা/৩৩৩-এর টীকা
দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২৫/২৫) : এক্সিডেন্টে আহত মুমূর্ষু
ছাগল, গরু, মুরগীর ক্ষেত্রে করণীয় কি?
-আলতাফ হোসেন, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রাণীর প্রতি দয়া দেখানো
কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ যদি চড়ুই পাখি যবহের ক্ষেত্রেও তার প্রতি অনুগ্রহ
করে, ক্বিয়ামতের দিনে আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন (আল-আদাবুল মুফরাদ,
ছহীহাহ হা/২৭)। কিন্তু প্রাণীটি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা না থাকলে যবেহ করে খেয়ে নিতে
হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৬/১৭৮)।
প্রশ্ন (২৬/২৬) : কোন কোন আলেম জিহাদের গুরুত্ব তুলে ধরে এটাকে
ইসলামের ৬ষ্ঠ রুকন হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এটা সঠিক কি?
-আব্দুর রহীম, গন্ধর্বপুর, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : আরকানুল
ইসলাম ৫টি (বুখারী হা/৮)। এখানে যোগ-বিয়োগের কোন সুযোগ নেই। কুরআন-হাদীছ বা
সালাফে ছালেহীন থেকে জিহাদকে ৬ষ্ঠ রুকন হিসাবে আখ্যায়িত করার কোন দলীল পাওয়া যায়
না। তবে হুযায়ফা (রাঃ)-এর একটি আছার পাওয়া যায়। যেখানে তিনি জিহাদকে ইসলামের আটটি
অংশের একটি হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হ’ল যার কোন একটি অংশ
নেই’ (আবু ইয়া‘লা হা/৫২৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৭৪১, সনদ হাসান)।
তবে জিহাদ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। ইমাম আহমাদ (রহঃ)
বলেন, ‘ফরয ইবাদতের পরে জিহাদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আমল অন্য কিছু জানি না (মুগনী
৯/১৯৯)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘আমার জানা মতে আলেমদের ঐক্য
রয়েছে যে, নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে জিহাদ সর্বশ্রেষ্ঠ’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২৮/৪১৮)। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্র রয়েছে। যা বিবেচনায় না নেয়ায়
অনেকেই বিভ্রান্তিতে পতিত হন। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে উদ্ভূত
ফিৎনার সময় এক ব্যক্তি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আবূ আব্দুর রহমান! আপনি
এক বছর হজ্জ করেন এবং এক বছর ওমরাহ করেন। অথচ আল্লাহর পথে জিহাদ ত্যাগ করেছেন?
নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আল্লাহ এই জিহাদ সম্পর্কে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন!
ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, হে ভাতিজা! ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি বস্ত্তর
উপর। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি ঈমান, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত প্রতিষ্ঠা,
রামাযানের ছিয়াম পালন, যাকাত প্রদান ও হজ্জ পালন (অর্থাৎ তিনি যেন বুঝাতে চাইলেন
যে, জিহাদ ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে নয়)। তখন সে ব্যক্তি বলল, আল্লাহ
তা‘আলা স্বীয় কিতাবে কী বলেছেন তা আপনি শুনেননি? ..অতঃপর সে সূরা হুজুরাতের ৯ এবং
আনফালের ৩৯ আয়াত পাঠ করল। (আয়াতদ্বয় শ্রবণ করার পর) ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, আমরা এ
কাজ রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে করেছি এবং তখন ইসলামের অনুসারীগণ স্বল্প সংখ্যক ছিল। যদি
কোন ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে ফিতনায় পতিত হ’ত, তখন হয় তাকে হত্যা করা হ’ত অথবা
শাস্তি প্রদান করা হ’ত। এভাবে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেল। তখন আর কোন ফিতনা
রইল না (অর্থাৎ আর যুদ্ধের প্রয়োজন রইল না) (বুখারী হা/৪৫১৪)।
ইবনু
রজব (রহঃ) বলেন, জিহাদ অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল হওয়া সত্ত্বেও ইবনু ওমরের হাদীছে
জিহাদের কথা উল্লেখ নেই (জামেঊল
ঊলূম ওয়াল হিকাম ১/১৫২)।
প্রশ্ন (২৭/২৭) : শালা-শ্যালিকা, তাদের স্বামী
বা স্ত্রী ও সন্তানেরা কোন পর্যায়ের আত্মীয়? তাদের সাথে সাধারণ মুসলিম ভাইয়ের মত
আচরণ করলেই যথেষ্ট হবে কি?
-এস. আহমাদ, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উপরোক্ত
ব্যক্তিরা বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়। আত্মীয় তিন ধরনের। পিতৃ বংশগত, শ্বশুর বংশগত বা
বৈবাহিক সূত্রের ও দুগ্ধসম্পর্কীয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই মানুষকে পানি হ’তে
সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বিবাহগত সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন’ (ফুরক্বান
২৫/৫৪)। এছাড়া দুগ্ধসম্পর্কীয় আত্মীয়ও রয়েছে। যারা বংশগত আত্মীয়ের ন্যায় (নিসা
৪/২৩)। শ্যালক-শ্যালিকা হ’ল শশুর বংশগত বা বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়দের অন্তর্ভুক্ত।
অনুরূপ তাদের স্ত্রী ও স্বামীরাও। তাই তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বিনা
কারণে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯২২)। তবে
দ্বীনী কারণে সাময়িকভাবে কাউকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/৭০১)।
প্রশ্ন (২৯/২৯) : আমার ছোট ভাই হিন্দুর মেয়েকে
ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে ইসলামী বিধি মোতাবেক বিবাহ করেছে। এক্ষণে মেয়ের পরিবারের
সাথে আমাদের পরিবারের অন্যান্য হিন্দু সদস্যদের সাথে কিরূপ আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায়
রাখা উচিত?
-রোকনুযযামান, দুর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : তাদের
সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাদের সাথে উঠা-বসা, দাওয়াত আদান-প্রদান করা যাবে। তবে
তাদের যবেহকৃত পশু-পাখি খাওয়া যাবে না (আন‘আম ৬/১২১) এবং তাদের ধর্মীয়
উৎসবে যোগদান করা যাবে না (ফুরকান ৭২; আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)।
প্রশ্ন (২৮/২৮) : রাসূল (ছাঃ) জিন জাতির মাঝে
দ্বীন প্রচার করেছিলেন কি?
-মানিক হোসাইন, দিনাজপুর।
উত্তর : রাসূল
(ছাঃ) জিন জাতির নিকটও ইসলাম প্রচার করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে জিন ও মানব
সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেননি, যাঁরা
তোমাদেরকে আমার বিধানসমূহ বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনে সাক্ষাতের
ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করতেন? (আন‘আম ৬/১৩০)। মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানব ও জিন সহ
সমস্ত সৃষ্টির নিকটে নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন (মুসলিম হা/৫২৩; তিরমিযী
হা/১৫৫৩; মিশকাত হা/৫৭৪৮)।
মুমিন জিনগণ রাসূল (ছাঃ) সহ সকল নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করতেন।
আল্লাহ বলেন, তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার
পরে নাযিল হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়ন করে। যা সত্যের দিকে ও সরল
পথের দিকে পরিচালিত করে (আহক্বাফ ৪৬/৩০)। এছাড়া জিনেরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে
আসতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, জিনদের একটি দল তার কাছে এসে কুরআন শ্রবণ করে বলেছিল যে,
আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি (জিন ৭২/১)।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘একবার আমরা সবাই মক্কার বাইরে রাত্রিকালে
রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। কিন্তু এক সময় তিনি হারিয়ে গেলেন। ...(অবশেষে তাকে
খুঁজে পেলে) তিনি আমাদের বললেন, জিনদের একজন প্রতিনিধি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি গিয়ে তাদেরকে কুরআন শুনালাম’। ...অতঃপর বললেন, তোমরা শুকনা হাড্ডি ও গোবর
ইস্তিঞ্জাকালে ব্যবহার করো না। এগুলি তোমাদের ভাই জিনদের খাদ্য’ (মুসলিম
হা/৪৫০)।
প্রশ্ন (৩১/৩১) : শেষ যামানায় ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে
আগমন করে কত বছর অবস্থান করবেন?
-রায়হান কবীর, আদাবর, ঢাকা।
উত্তর : ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। আবু হুরায়রা
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, আমার ও তাঁর অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর মাঝে
কোন নবী নেই। ...তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন
এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করবে’ (আহমাদ হা/২৪৫১১; আবুদাঊদ হা/৪৩২৪;
ছহীহাহ হা/২১৮২)। তবে কোন কোন বিদ্বান মুসলিমের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে ঈসা (আঃ)-এর
অবস্থানকালীন সময় সাত বছর বলেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা
করার পর লোকেরা সাত বছর অবস্থান করবে (মুসলিম হা/২৯৪০)। কিন্তু এখানে
হাদীছটির অর্থ হবে, ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পর মানুষ সাত বছর অবস্থান করবে, যা
মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। যেখানে বলা হয়েছে ثُمَّ يَلْبَثُ النَّاسُ بَعْدَهُ سِنِيْنَ سَبْعًا ‘তার
পরে লোকেরা সাত বছর অবস্থান করবে’ (আহমাদ হা/৬৫৫৫)।
প্রশ্ন (৩২/৩২) : ব্যাংকে যদি কারো ৪ লক্ষ টাকা
জমা থাকে এবং প্রতি মাসে সে ১০ হাযার টাকা করে জমা করতে থাকে। তবে প্রতিবছর সে
কিভাবে যাকাত দিবে? কারণ প্রতিমাসেই তো তার টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
-ছাদিক, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : এক্ষেত্রে প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে জমাকৃত পুরো অর্থের উপর
যাকাত বের করলেই যথেষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে কিছু অর্থের উপর বছর পূর্ণ না হ’লেও
অসুবিধা নেই। বরং তা অগ্রিম যাকাত হিসাবে গণ্য হবে। যাকাত দানকারীর জন্য এটাই
নিরাপদ ও প্রশান্তিদায়ক পদ্ধতি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৮০)।
প্রশ্ন (৩৩/৩৩) : জনৈক আলেম বলেন, আলেমদের সাথে
তর্ক- বিতর্ক করলে জাহান্নামে যেতে হবে। একথার সত্যতা আছে কি?
-লোকমান, খিলক্ষেত, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। তবে হাদীছে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ছাঃ)
এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইলম শিখে এজন্য যে, তার দ্বারা সে আলেমদের সাথে বিতর্ক করবে
ও মূর্খদের সঙ্গে ঝগড়া করবে কিংবা মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করবে, আল্লাহ তাকে
জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন (তিরমিযী হা/৩১৩৮, মিশকাত হা/২২৫)। আর প্রয়োজনে
শারঈ বিষয়ে দলীলের ভিত্তিতে শালীনতা বজায় রেখে তর্ক-বিতর্ক করা যায়। আল্লাহ বলেন,
‘তাদের সাথে বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল ১৬/১২৫)।
প্রশ্ন (৩৪/৩৪) : বিতরের কুনূতে হাত উত্তোলন করা
যাবে কি?
-সুলতান, মীরের চক, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে। হযরত ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ, আনাস, আবু হুরায়রা (রাঃ)
প্রমুখ ছাহাবী থেকে কুনূতে বুক বরাবর হাত উঠিয়ে দো‘আ করা প্রমাণিত আছে।
মুহাদ্দিছগণ এর দ্বারা কুনূতে বিতর বুঝেছেন (বায়হাক্বী ২/২১১-১২, মির‘আত
৪/৩০০; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৫৬৭, ইরওয়াউল গালীল ২/১৮১)। তাবেঈ বিদ্বান আব্দুল্লাহ
বিন মুবারক বিতর ছালাতে হাত উঠাতেন এবং দো‘আ করতেন (বায়হাকী, আস-সুনানুল
কুবরা হা/৩১৫২)। ইবরাহীম নাখঈ বিতরের কুনূতে হাত উঠিয়ে দো‘আ করতেন (মুছান্নাফ
আব্দুর রাযযাক্ব হা/৫০০১)। ইমাম আহমাদকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,
কুনূতে নাযেলার উপর ক্বিয়াস করে কুনূতে রাতেবাতেও হাত উঠিয়ে দো‘আ করা যায় (মারওয়াযী,
মুখতাছার কিয়ামুল লায়ল ১/৩১৮)। শায়খ বিন বায বলেন, বিতরের কুনূতে হাত উত্তোলন করা
শরী‘আত সম্মত। কেননা তা কুনূতে নাযেলার মতই (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/৫১)। উছায়মীন
বলেন, ওমর (রাঃ) হ’তে ছহীহ সূত্রে বিতরের ছালাতে হাত উঠানোর বর্ণনা রয়েছে (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৪/৮১)। ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, বিতরের কুনূতের সময় দু’হাতের তালু
আসমানের দিকে বুক বরাবর উঁচু থাকবে। ইমাম ত্বাহাবী ও ইমাম কারখীও এটাকে পসন্দ
করেছেন (মির‘আত ২/২১৯; ঐ, ৪/৩০০ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩৬/৩৬) : আমি পূর্ণ পর্দার সাথে
মেডিকেলে পড়াশুনা করি। দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও আমার পিতা আমাকে নেকাব ব্যবহারে
নিষেধ করেন। শুনেছি নেকাব ব্যবহার করা নারীর জন্য আবশ্যক নয়। এক্ষণে আমার করণীয়
কি?
-শায়লা, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর।
উত্তর : নারীর জন্য নেকাব ব্যবহার করা ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘মহিলারা যেন
তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণভাবে প্রকাশ পায়, তা ব্যতীত’ (নূর
২৪/৩১)। নারী সৌন্দর্যের কেন্দ্রস্থল হ’ল তার মুখমন্ডল। সেকারণ নিষেধ থাকা
সত্ত্বেও হজ্জের সময়ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণ বেগানা পুরুষ দেখলে মুখ
ঢাকতেন (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৮৮৩২; ইরওয়া হা/১০২৩; মিশকাত হা/২৬৯০, সনদ
ছহীহ)। অতএব পিতাকে বুঝিয়ে নেকাব পরিধান করে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন (৩৭/৩৭) : বেকার স্বামীর জন্য স্ত্রীর
উপার্জন থেকে পরিবার পরিচালনার যাবতীয় ব্যয় করা জায়েয হবে কি?
-আবু হানীফ, বাগাতিপাড়া, নাটোর।
উত্তর : স্ত্রীর সম্মতি থাকলে জায়েয হবে। স্ত্রী স্বামীর সংসারে খরচ করলে
দ্বিগুণ নেকী পাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বা দিলে একটি
ছাদাক্বা হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়।
এক-ছাদাক্বা এবং দুই-আত্মীয়তা (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৯৩৯)। যয়নব (রাঃ)
স্বীয় স্বামী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে যাকাতের অর্থ দিতে চাইলে রাসূল (ছাঃ)
তাকে অনুমতি দিয়ে বলেন, এতে দ্বিগুণ নেকী রয়েছে। (১) ছাদাক্বার নেকী (২) আত্মীয়তা
সম্পর্ক বজায় রাখার নেকী’ (বুখারী হা/১৪৬৬; মুসলিম হা/১০০০; মিশকাত
হা/১৯৩৪-৩৫)।
প্রশ্ন (৪০/৪০) : মাথা ও পা বিহীন প্লাস্টিক ডল
দিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা করা যাবে কি?
-ইউসুফ আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এগুলি মূর্তিপূজার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করে। অতএব এগুলি থেকে দূরে
থাকতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে প্লাষ্টিক বা অন্য বস্ত্তর দ্বারা পূর্ণদেহী পুতুল
তৈরী করা হয়। যার মুখ, চোখ, নাক, কান সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হুবহু মানুষের বা
প্রাণীর আকৃতির ন্যায়। এ ধরনের পুতুল অবশ্যই বর্জনীয়।
নভেম্বর/২০১৭
প্রশ্ন (২/৪২) : জনৈক পীর ছাহেব বলেন, সূরা
হূদের ২নং আয়াতে ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দটি রয়েছে। তাই আমরা ‘ইল্লাল্লাহ’ যিকির করি।
একথার সত্যতা আছে কি?
-আব্দুল মালেক মাস্টার
দুমকী, পটুয়াখালী।
উত্তর : উক্ত আয়াতের অর্থ : ‘তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারু ইবাদত করো না।
নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ হ’তে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা’ (হূদ
১১/০২)। উক্ত আয়াতে ‘ইল্লাল্লাহ’ বলে যিকির করতে বলা হয়নি। বরং আল্লাহ ব্যতীত
অন্যের ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এটি কালেমায়ে ত্বইয়েবার দ্বিতীয় অংশ, যার অর্থ ‘আল্লাহ
ব্যতীত’। এটি অসম্পূর্ণ ও অর্থহীন একটি বাক্যাংশ। মূলতঃ ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ বা
‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দে কোন যিক্র নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি রয়েছে তার অর্থ হ’ল ‘লা
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (আহমাদ হা/১৩৮৬০; হাকেম হা/৮৫১২; মিশকাত হা/৫৫১৬; ছহীহাহ
হা/৩০১৬)। আলবানী বলেন, ‘শুধু আল্লাহ শব্দে যিকর করা বিদ‘আত। সুন্নাহতে যার কোন
ভিত্তি নেই’ (মিশকাত হা/ ১৫২৭-এর ১ নং টীকা)। সর্বোত্তম যিক্র হচ্ছে ‘লা
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮০০; মিশকাত হা/২৩০৬)।
আর আল্লাহর যিকর করতে হবে নীরবে (আ‘রাফ ৭/২০৫; আ‘রাফ ৭/৫৫)।
অনেকে বলেন, ‘লা-ইলাহা’ আমার অন্তরে আছে আর ‘ইল্লাল্লাহ’ মুখে প্রকাশ করি। এটি ঠিক
নয়। বরং অন্তরে ও মুখে একই যিকর হবে।
প্রশ্ন (৩/৪৩) :
আমাদের ইমাম ছাহেব খুৎবায় বলেন, আব্দুর রহমান, আব্দুল খালেক এসব নামে আল্লাহর
গুণাবলী প্রকাশ পাওয়ায় এরূপ নাম রাখা জায়েয নয়। একথা সঠিক কি?
-আনীসুর রহমান
দারিয়া, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : এরূপ কথা ভিত্তিহীন। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর
নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম হ’ল আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান (মুসলিম হা/২১৩২;
মিশকাত হা/৪৭৫২)। অতএব ‘আবদ’ যুক্ত নাম রাখাই উত্তম। এতে বান্দার বার বার স্মরণ
হবে যে, সে আল্লাহর দাস। তবে কেবল রহমান বা খালেক বলে কাউকে আহবান করা ঠিক নয়।
কারণ তা আল্লাহর ছিফাতী নাম (বিস্তারিত দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’
বই)।
প্রশ্ন (৪/৪৪) : অনেক সময় মসজিদে ভীড়ের কারণে এমন কাতারে দাঁড়াতে
হয়, যার মাঝখানে পিলার রয়েছে। বাধ্যগত অবস্থায় এভাবে দাঁড়ালে ছালাত সিদ্ধ হবে কি?
-রেযওয়ানুল ইসলাম
কাদিরগঞ্জ, রাজশাহী।
উত্তর : সাধারণভাবে জামা‘আতে ছালাত আদায় করার সময় দুই পিলারের মাঝে কাতার
করা যাবে না। কারণ এতে কাতারে বিছিন্নতা আসে (ইবনু মাজাহ হা/১০০২;
ছহীহাহ হা/৩৩৫)। তবে ভীড়ের কারণে বাধ্যগত অবস্থায় এভাবে দাঁড়ালে ছালাত সিদ্ধ হবে
ইনশাআল্লাহ। আব্দুল হামীদ বিন মাহমূদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা জনৈক
আমীরের পেছনে ছালাত আদায় করলাম। এসময় ভীড় এত বেশী হ’ল যে, আমরা বাধ্য হয়ে দুই
খুঁটির মাঝখানে ছালাতে দাঁড়ালাম। যখন ছালাত শেষ করলাম, তখন আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা
রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে (এভাবে দাঁড়ানো) এড়িয়ে যেতাম’ (তিরমিযী হা/২২৯, সনদ
ছহীহ)।
প্রশ্ন (৫/৪৫) : সুন্নাতে খাৎনা দেওয়ার সর্বোচ্চ
ও সর্বনিম্ন বয়স কত?
-যাকির, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।
উত্তর : সুন্নাতে খাৎনা করার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে সাবালক হওয়ার
পূর্বে করাই উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩০৩)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ
(রহঃ) বলেন, খাৎনা যখন ইচ্ছা করা যায়। তবে সাবালক হওয়ার পূর্বেই করা উচিৎ যেমনটি
আরবরা করে থাকে... (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ১/২৭৫)। ইবনুল মুনযির বলেন, খাৎনা করার
সময় সম্পর্কে এমন কোন সংবাদ নেই যার দিকে ফিরে যাওয়া যায় এবং এমন কোন সুন্নাত নেই
যার উপর আমল করা যায় (আল-ইশরাফ ৩/৪২৪)।
উল্লেখ্য, রাসূল (ছাঃ) সপ্তম দিনে হাসান ও হোসাইন (রাঃ)-এর খাৎনা
করেছিলেন মর্মে যে হাদীছ এবং সপ্তম দিনে খাৎনা করা সুন্নাত মর্মে যে আছার বর্ণিত
হয়েছে, তা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৪৩২; ইরওয়াউল গালীল ৪/৩৮৩)।
প্রশ্ন (৭/৪৭) : ‘আল্লাহুম্মা ছল্লে ‘আলা
মুহাম্মাদ...’ মর্মে বর্ণিত দো‘আটি জুম‘আর দিন পাঠ করায় প্রভূত নেকী হয় কি?
বিশেষতঃ এদিন আছরের পর ৮০ বার পাঠ করলে ৮০ বছরের গোনাহ ঝরে যায় এবং ৮০ বছর ইবাদতের
নেকী লিপিবদ্ধ হয়। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
-আনাম হুদা
ইসলামপুর, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলির কোনটি জাল কোনটি যঈফ (ইবনু
হাজার, নাতাইজুল আফকার ৫/৫৬; ইবনুল জাওযী, আল-আহাদীছুল ওয়াহিয়াহ হা/৭৯৬; সিলসিলা
যঈফাহ হা/২১৫, ৩৮০৪)।
প্রশ্ন (৮/৪৮) : দুনিয়াতে কতজন
ছাহাবী জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন?
-আতাউর রহমান
সন্নাসবাড়ী, বান্দাইখাড়া, নওগাঁ।
উত্তর : দুনিয়াতে
জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবীদের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে ১- ১০ জন ‘আশারায়ে
মুবাশশারাহ’ নামে খ্যাত। তাঁরা হ’লেন, (১) আবুবকর ছিদ্দীক (২) ওমর (৩) ওছমান (৪)
আলী (৫) ত্বালহা (৬) যুবায়ের (৭) আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (৮) সা‘দ বিন আবু
ওয়াকক্বাছ (৯) সাঈদ ইবনু যায়েদ এবং (১০) আবু ওবায়দাহ ইবনুল জার্রাহ (তিরমিযী
হা/৩৭৪৭; মিশকাত হা/৬১০৯)। ২- ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৩১৩ জন ছাহাবী (বুখারী
হা/৩৯৮৩)। (৩) ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার সন্ধির পূর্বে বায়‘আতে রিযওয়ানে
অংশগ্রহণকারী ১৪০০ ছাহাবীর একজন বাদে (মুসলিম হা/২৪৯৬, ২৭৮০)। (৪) রোমকদের
রাজধানী (কনস্টান্টিনোপল) জয়ের জন্য প্রথম অভিযানকারীগণ (বুখারী হা/২৯২৪)।
যদি তারা পরে মুরতাদ না হয়। ৫২ হিজরীতে এই যুদ্ধ করেছিলেন আমীর মু‘আবিয়া ও তাঁর
পুত্র ইয়াযীদ এবং বহু জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ ছাহাবীগণ (ঐ, ফাৎহুল বারী)। (৫)
এতদ্ব্যতীত নবীপত্নীগণ সহ নবী পরিবার (মুসলিম হা/২৪২৪, ২৪০৮; আহযাব
৩৩/৩৩; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৭৫৯ পৃ.)।
(৬) এছাড়া আরো যেসব ছাহাবী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে রাসূল
(ছাঃ)-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন তাদের মাঝে আছেন (১) উক্কাশাহ বিন
মিহছান (রাঃ) (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫২৯৬)। (২) ইয়াসির (৩) ‘আম্মার (৪)
সুমাইয়া (হাকেম হা/৫৬৬৬) (৫) বেলাল বিন রাবাহ (তিরমিযী হা/৩৬৮৯) (৬)
উছায়রিম ‘আমর বিন ছাবেত (আহমাদ হা/২৩৬৮৪) (৭) ছাবেত বিন ক্বায়েস (মুসলিম
হা/১১৯) (৮) হারেছাহ বিন সুরাক্বাহ (বুখারী হা/২৮০৯) (৯) হুযায়ফা
ইবনুল ইয়ামান (মুসলিম হা/১৭৮৮) (১০) যায়েদ বিন হারেছাহ (১১) আব্দুল্লাহ
বিন রওয়াহা (আহমাদ হা/২২৬০৪; ইবনু হিববান হা/৭০৪৮) (১২) সা‘দ বিন
মু‘আয (মুসলিম হা/২৪৬৮) (১৩) সালমান ফারেসী (তিরমিযী হা/৩৭৯৭)(১৪)
আব্দুল্লাহ বিন সালাম (বুখারী হা/৩৮১২;) (১৫) জাবের (রাঃ)-এর পিতা
আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (তিরমিযী হা/৩০১০) (১৬) আবুদ্দাহদাহ আনছারী (মুসলিম
হা/৯৬৫) (১৭) রুমায়ছা বিনতে মিলহান (বুখারী হা/৩৬৭৯) (১৮) উম্মে
যুমার হাবাশীয়া (বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭৬) প্রমুখ।
প্রশ্ন (৯/৪৯) : হে আল্লাহ আপনি
আমাকে মিসকীন বেশে দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখুন এবং মিসকীনদের সাথে পুনরুত্থান ঘটান’
মর্মে বর্ণিত দো‘আটি রাসূল (ছাঃ) সর্বদা করতেন কি?
-শবনম মুশতারী
দুর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সর্বদা নয়, মাঝে-মধ্যে করতেন (ইবনু মাজাহ হা/৪১২৬; ছহীহাহ
হা/৩০৮; মিশকাত হা/৫২৪৪)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হ’ল ‘আমাকে ভীত
ও বিনয়ী হিসাবে বাঁচিয়ে রাখুন’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩২৬, ৩৫৭)। ইমাম বায়হাক্বী
(রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঐ দীনতা কামনা করতেন না, যার অর্থ দরিদ্রতা। বরং তিনি ঐ
দীনতা কামনা করতেন, যার অর্থ বিনয় ও নম্রতা (ইবনু হাজার, তালখীছুল হাবীর
হা/১৪১৫-এর আলোচনা)।
প্রশ্ন (১০/৫০) :
স্বামী-স্ত্রী একত্রে ফরয ছালাত আদায়কালে স্ত্রী ইমামতি করতে বা ইক্বামত দিতে
পারবে কি?
-রবীউল আলম, গুলশান, ঢাকা।
উত্তর : ইমামতি
করবে না বা ইক্বামত দিবে না। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল বিদ্বান একমত
যে, নারীরা ৎংরুষের ইমামতি করতে পারবে না (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২৫৫; ইবনু
কুদামা, আল-মুগনী ২/১৪৬; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ২/১৬৭)। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষেরা
নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। তাছাড়া এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন
নির্দেশনা এবং তাঁর ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এর কোন নযীর নেই। আর এটাই স্বতঃসিদ্ধ
যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় যা দ্বীন ছিল না, পরে তা দ্বীন
হিসাবে গৃহীত হবে না। বরং তা বিদ‘আত হবে (আহমাদ হা/১৭১৮৪; নাসাঈ, দারেমী
হা/৯৫; মিশকাত হা/১৬৫)। নারীরা নিজেরা ছালাত আদায় করলে ইক্বামত দিবে। আর স্বামীর
পিছনে ছালাতের সময় স্বামীই ইক্বামত দিবেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৮৪;
ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩২২ পৃঃ)।
প্রশ্ন (১১/৫১) : আলী (রাঃ) কোন এক যুদ্ধে
তীরবিদ্ধ হ’লে ৭/৮ জন মিলে চেষ্টা করে তা বের করতে অক্ষম হন। তখন তিনি বললেন, আমি
ছালাতে দাঁড়ালে তোমরা তীরটি বের করে নিয়ো। অতঃপর ছালাত অবস্থায় তার পা থেকে উক্ত
তীর বের করে নিলেও তিনি তা অনুভব করতে পারেননি’। এ ঘটনার কোন সত্যতা আছে কি?
-মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর : ঘটনাটি বানোয়াট কাহিনী মাত্র। শী‘আদের বইসমূহে কাহিনীটি
সনদবিহীনভাবে বর্ণিত হয়েছে (মুহাম্মাদ ছালেহ আল-হুসাইনী, আল-মানাক্বিবুল
মুরতাযাবিইয়াহ পৃ. ৩৬৪)। যা অগ্রহণযোগ্য।
প্রশ্ন (১২/৫২) :
মাগরিবের ছালাতের এক ঘণ্টার বেশী সময় পর এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। এক্ষণে অন্যান্য
ওয়াক্তের মত মাগরিবও কি এশার পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যাবে?
-মাহবূব আলম, গাযীপুর।
উত্তর : আদায় করা যাবে। তবে সেটি সুন্নাতের বিরোধী হবে। কেননা সূর্যাস্তের
সাথে সাথেই রাসূল (ছাঃ) মাগরিবের ছালাত আদায় করতেন (নাসাঈ হা/৫২৭)। রাফে‘ বিন
খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মাগরিবের ছালাত আদায় করতাম। অতঃপর
আমাদের কেউ ফিরে যাওয়ার সময় তীর পড়ার স্থান দেখতে পেত (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/৫৯৬)। অতএব সূর্যাস্তের পরপরই মাগরিবের ছালাত আদায় করা কর্তব্য।
প্রশ্ন (১৩/৫৩) : বর্তমানে সুন্নাত গণ্য করে আতর বা সুগন্ধি
ব্যবহারে যেরূপ বাড়াবাড়ি ও অপব্যয় করা হচ্ছে, তা শরী‘আতসম্মত কি?
-আবুবকর, জেদ্দা, সঊদী আরব।
উত্তর : আতর
ব্যবহার করা রাসূল (ছাঃ)-এর অভ্যাসগত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন,
‘দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও আতরকে প্রিয় করা হয়েছে’ (আহমাদ হা/১২৩১৫;
নাসাঈ হা/৩৯৩৯, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১২৪)। এক্ষণে বাড়াবাড়ির বিষয়টি আপেক্ষিক।
সম্পদশালী ব্যক্তি যদি উন্নতমানের সুগন্ধি অধিক অর্থ ব্যয়ে ক্রয় করেন, তবে সেটি
অপব্যয়ের শামিল হবে না। কিন্তু উক্ত সুগন্ধি যদি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের কেউ
ক্রয় করে, তবে তা অপচয়ের শামিল হবে (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৮/২৪)।
কারণ এক্ষেত্রে সাধারণতঃ গর্ব-অহংকার ও সামাজিক মর্যাদা প্রকাশার্থে এটি করা হয়।
অতএব বাড়াবাড়ি পরিত্যাগ করে সুন্নাত অনুসরণের নেকী অর্জনের লক্ষ্যে আতর ব্যবহার
করা উচিৎ।
প্রশ্ন (১৫/৫৫) : আমাদের এলাকায় একজন পুরুষ তার
বৈমাত্রেয় বোনের মেয়েকে বিবাহ করেছে এবং তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। উক্ত
বিবাহ শরী‘আতসম্মত হয়েছে কি? না হ’লে এখন করণীয় কি?
-হাবীবুর রহমান, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : বৈমাত্রেয় বোন স্বীয় পিতার ঔরসজাত হ’লে উক্ত বিবাহ বাতিল হিসাবে
গণ্য হবে। কারণ সৎ বোনের মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। এক্ষণে তাকে বিবাহ বিচ্ছেদ করে
আলাদা হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সন্তান কোলের শিশু হ’লে অন্যত্র বিবাহ হওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত মায়ের প্রতিপালনাধীনে থাকবে। অতঃপর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার পর মাতা বা
পিতা যার সাথে থাকতে চায় তার নিকট থাকবে (আবুদাউদ হা/২২৭৭; মিশকাত হা/৩৩৮০)।
আর বৈমাত্রেয় বোন সৎ মায়ের আগের স্বামীর হ’লে বিবাহ শরী‘আত সম্মত
হয়েছে। কারণ কুরআনে যেসকল নারীকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে এরূপ বোন তাদের মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত নয় (নিসা ৪/২৪; ছালেহ আল-ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ৮৯/১৭, ৫/২৫৮)।
প্রশ্ন (১৬/৫৬) : যে গার্মেন্টসে আমি কাজ করি
সেখানে অনেক নারী ও পুরুষ একত্রে কাজ করে। এক্ষণে আমার চাকুরী করা জায়েয হবে কি?
-মিরাজ আহমাদ, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : বর্তমান সমাজে অশ্লীলতা প্রসারের অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল বিভিন্ন
ক্ষেত্রে বেগানা নারী-পুরুষের সহাবস্থান। তাই এরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী না করাই
উত্তম। বাধ্যগত অবস্থায় এসব স্থানে চাকুরী করতে হ’লে তাকে সাধ্যমত পূর্ণ পর্দা ও
তাক্বওয়া বজায় রেখে চলতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষের পৃথক কর্মক্ষেত্র ও
পূর্ণ পর্দার বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন (১৭/৫৭) : আমাদের এলাকায় পুরাতন মসজিদ
ভেঙ্গে নীচতলায় মার্কেট ও ওপর তলায় মসজিদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা সঠিক
হয়েছে কি?
-মাহদী হাসান, কানসাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সঠিক হয়েছে এবং এতে কোন দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘
ফাতাওয়া, ৩১/২১৭-২১৮)। মসজিদের দোকানপাটে শরী‘আত বিরোধী কোন প্রকার গান-বাজনা,
অশ্লীল ছবি ও অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৮/৫৮) : র্যাব-এর পোষাকে শার্টের বাম হাতে গোখরা সাপের
ছবি রয়েছে। ডিউটিতে থাকা অবস্থায় উক্ত পোষাকে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
-ছাদ্দাম হোসাইন
র্যাব অফিস, কুর্মিটোলা, ঢাকা।
উত্তর : ছালাতে
বা ছালাতের বাইরে কোন সময়ই ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) প্রাণীর
ছবিযুক্ত কোন কিছু দেখলে তা বিনষ্ট করে দিতেন (বুখারী হা/৫৯৫২; মিশকাত হা/৪৪৯১)।
এক্ষণে বাধ্যগত অবস্থায় ছবিযুক্ত পোষাক পরিধান করতে হ’লে ছালাতের সময় সেটি আবৃত
রেখে ছালাত আদায় করবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৯৪)।
প্রশ্ন
(২৪/৬৪) : কোন সন্তান নিয়মিত ছালাত আদায় না করলে পিতা হিসাবে তাকে সম্পদের অংশ
দেওয়া যাবে কি?
-ইয়াকুব, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : অলসতাবশতঃ
ছালাত ত্যাগ করলে সম্পদের অংশ দেওয়া যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৪৯-৫০)। আর
যদি ছালাতকে বিশ্বাসগতভাবে অস্বীকার করে, তাহ’লে সে কাফির হিসাবে গণ্য হবে এবং
মুসলিম পিতা বা আত্মীয়ের সম্পদে অংশীদার হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুসলিম কোন কাফিরের
ওয়ারিছ হবে না এবং কাফির কোন মুসলিমের ওয়ারিছ হবে না’ (বুখারী হা/৬৭৬৮;
মুসলিম হা/১৬১৪; মিশকাত হা/৩০৪৩)।
প্রশ্ন (২৬/৬৬) : মসজিদের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায়
ঘণ্টাধ্বনি বাজানো ঘড়ি রাখা যাবে কি?
-রাশেদুল ইসলাম
বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর :
রাখা যাবে না। বরং শব্দবিহীন ঘড়ি রাখবে। রাসূল (ছাঃ) ঘণ্টাধ্বনিকে শয়তানের বাঁশী
বলে আখ্যায়িত করেছেন (আবুদাঊদ হা/২৫৫৬)।
প্রশ্ন (২৮/৬৮) : সুন্নাত ছালাতের ক্বাযা যেকোন
সময় পড়া যাবে কি?
-ছালেহা খাতুন, উত্তর দিনাজপুর, ভারত।
উত্তর : যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ বিতর রেখে ঘুমিয়ে গেলে অথবা ভুলে
গেলে যখন স্মরণ হবে অথবা যখন ঘুম থেকে জাগবে, তখন সে যেন বিতর পড়ে নেয়’ (তিরমিযী
হা/৪৬৫; ইবনু মাজাহ হা/১১৮৮; মিশকাত হা/১২৭৯)। রাসূল (ছাঃ) কারণবশতঃ সুন্নাত পড়তে
না পারলে পরে তা আদায় করে নিয়েছেন (বুখারী হা/১২৩৩; তিরমিযী হা/৪২৬; ইবনু
মাজাহ হা/১১৫৮)।
প্রশ্ন (২৯/৬৯) : ক্যাঙ্গারুর গোশত খাওয়া হালাল
হবে কি?
-শামসুল আলম, কক্সবাজার।
উত্তর : ক্যাঙ্গারুর গোশত খাওয়া হালাল। কারণ তা হিংস্র বা তীক্ষ্ণ
দন্ত ও নখর বিশিষ্ট নয়। ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তীক্ষ্ণ দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু এবং
ধারালো নখ বিশিষ্ট পাখি খেতে নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/৪১০৫)।
আর শরী‘আতের বিধান হ’ল- কোন প্রাণীর গোশত ততক্ষণ হারাম হবে না যতক্ষণ না তা হারাম
হওয়ার দলীল পাওয়া যায়। অতএব এর গোশত খাওয়ায় কোন বাধা নেই।
প্রশ্ন (৩০/৭০) : ‘আল্লাহ তা‘আলা পানিতে ৬০০ ও
স্থলভাগে ৪০০ মোট এক হাযার উম্মত সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ
করবে ফড়িং’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি সত্যতা আছে কি?
-ছাদরুল হক, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত
মর্মে প্রচলিত বর্ণনাটি মওযূ‘ (ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ২/২৫৭; ইবনুল জাওযী,
আল-মাওযূ‘আত ৩/১৪; হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/১২৪৩৩)।
প্রশ্ন (৩১/৭১) : ওযূ ভেঙ্গে যাওয়ায় একজন মুছল্লী ছালাত ছেড়ে চলে
গেলে সামনের কাতারে ফাঁক তৈরী হয়। এক্ষণে পিছনে দু’জন থাকলে একজন সামনে গিয়ে কাতার
পূর্ণ করবে, না পিছনের কাতার ঠিক রাখবে?
-আবুল কালাম
মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : একজনের জায়গা থাকলে একজন সামনে যাবে ও আরেকজন পিছনে একাকী
দাঁড়াবে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিইয়াহ ১/৪৩৩; আলবানী, যঈফাহ
হা/৯২২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। উল্লেখ্য যে, পিছনে একাকী ছালাত আদায় করার কারণে
রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে আদেশ দেন (আবুদাঊদ হা/৬৮২;
মিশকাত হা/১১০৫), তার কারণ ছিল তিনি সামনে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পিছনে একাকী
দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করেছিলেন (আলবানী, যঈফাহ হা/৯২২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৩৪/৭৪) : অসুস্থতার কারণে আমার মেয়ের
হাতে গাছ বা গাছের পাতা বিসমিল্লাহ বলে একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে
এতে কিছু পড়া হয়নি। এটা শিরক হবে কি?
-হাসান, বারুনাতাইল, মাগুরা।
উত্তর : আল্লাহর উপর ভরসা রেখে গাছ বা গাছের পাতা ঔষধ হিসাবে দেহের যেকোন
স্থানে লাগানো বা সেবন করায় কোন বাধা নেই। তবে আরোগ্য লাভের ধারণায় শরীরে কোন কিছু
ঝুলালে তা শিরক হবে। চাই তা তাবীয হোক বা অন্য কিছু হোক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি শরীরে কোন কিছু ঝুলাল, তাকে তার কাছেই সোপর্দ করা হ’ল’ (আহমাদ
হা/১৮৮০৩; তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬, সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (৩৫/৭৫) : আমাদের এখানে আলেমরা বলেন, কম জানো এবং বেশী আমল
কর। কথাটা কি শরী‘আতসম্মত?
-আবু সাঈদ
গোপালপুর, টাঙ্গাইল।
উত্তর : কথাটি শরী‘আতসম্মত নয়। বরং এটাই বলা উচিৎ যে, যতটুকু জানো ততটুকু
আমল কর। বস্ত্তত দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা ফরযে ‘আয়েন, যা সকল মুসলমানের জন্য
আবশ্যিক (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)। অর্থাৎ ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদী
ফরয এবং তাওহীদ ও শিরক, সুন্নাত ও বিদ‘আত, হালাল ও হারাম প্রভৃতি। অতএব সাধ্যমত
শরী‘আতের বিধান সমূহ জানতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন
বান্দা তার ইলম অনুযায়ী আমল করেছে কি-না সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে (তিরমিযী
হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭; ছহীহাহ হা/৯৪৬)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমাদের লোকেরা
দশটি আয়াতের জ্ঞান অর্জন করতেন। তখন তাতেই সীমাবদ্ধ থাকতেন যতক্ষণ না সেগুলোর অর্থ
জানতেন এবং আমল করতেন (শু‘আবুল ঈমান হা/১৯৪৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১১৬৬৫)।
প্রশ্ন (৩৬/৭৬) : কোন নারীর স্বামী যদি কয়েক বছর
যাবৎ স্ত্রীর খোঁজ না নেয় এবং সম্পর্ক না রাখে সেক্ষেত্রে কি আপনা-আপনি তালাক হয়ে
যাবে, না স্বামীকে খুঁজে বের করে তালাক নিতে হবে?
-আলতাফ হোসাইন, নরসিংদী।
উত্তর : আপনা-আপনি তালাক হবে না। ওযর ব্যতীত স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে থাকলে
বা কোন ধরনের খোঁজ-খবর না নিলে স্ত্রী আদালত বা সমাজের দায়িত্বশীল নেতার মাধ্যমে
‘খোলা’ করে বিচ্ছিন্ন হ’তে পারে (বুখারী, মিশকাত হা/৩২৭৪)। তবে স্বামী যদি
কোন ইঙ্গিত ছাড়াই নিখোঁজ হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীর জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করা উচিৎ।
ওমর (রাঃ) নিখোঁজ স্বামীর জন্য স্ত্রীকে চার বৎসর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
বলতেন (বায়হাক্বী হা/১৫৩৪৫, মুহাল্লা ৯/৩১৬ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩৭/৭৭) : আহলে বায়েত বলতে কি বুঝায়? তারা কারা?
-মুহাম্মাদ, কিষানগঞ্জ, ভারত।
উত্তর : ‘রাসূল পরিবার’ (أَهْلُ الْبَيْتِ) বলতে তাঁর স্ত্রীগণ এবং
আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনকে বুঝানো হয়’ (মুসলিম হা/২৪২৪)। যারা ছিলেন
উম্মতের সবচেয়ে মর্যাদাবান পরিবার। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী পরিবারের সদস্যগণ! আল্লাহ
চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র
রাখতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)। তবে অন্য এক বর্ণনায় ‘আহলে বায়েত’ বলতে তাদেরকে বুঝানো
হয়েছে, যাদের উপর চিরদিন ছাদাক্বা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। তাঁরা হ’লেন, আলী, ‘আক্বীল,
জা‘ফর ও আববাস (রাঃ)-এর বংশধরগণ’ (মুসলিম হা/২৪০৮, ‘আলীর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ)।
ইবনু কাছীর বলেন, ‘আহলে বায়েত’ বলতে কেবল নবীপত্নীগণ নন। বরং তাঁর পরিবারগণও এর
অন্তর্ভুক্ত। আর এটিই এ বিষয়ে বর্ণিত কুরআন ও হাদীছসমূহকে শামিল করে (ইবনু
কাছীর, তাফসীর সূরা আহযাব ৩৩ আয়াত; বিস্তারিত দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ
৭৬০ পৃ.)। আর আহলে বায়েত থেকেই ইমাম মাহদী আগমন করবেন (ইবনু মাজাহ
হা/৪০৮৫-৮৬; ছহীহাহ হা/২৩৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৩৪-৩৫)।
প্রশ্ন (৩৮/৭৮) : জনৈক ইমাম ১৫ বছর যাবৎ এশার
ছালাতে সূরা তীন ও তাকাছুর এবং ফজরের ছালাতে সূরা ক্বদর ও কাফেরূন পাঠ করেন। তার
বক্তব্য, এগুলি তিনি নিজের জন্য বেছে নিয়েছেন এবং আজীবন পড়ে যাবেন। এরূপ কাজ সঠিক
কি?
-ইমরান হোসাইন, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : এভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে উক্ত সূরা দু’টি আজীবনের জন্য বেছে নেওয়ার
কোন দলীল নেই। বরং তার জন্য কুরআনের যে অংশ সহজ হবে তা পাঠ করবে (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০)। তবে ছালাতে সাময়িকভাবে একই সূরা বা একই আয়াত বারবার পড়া
যায় (আবুদাঊদ হা/৮১৬; ইবনু মাজাহ হা/১৩৫০; মিশকাত হা/৮৬২, মির‘আতুল
মাফাতীহ ৪/১৯১)।
প্রশ্ন (৩৯/৭৯) :
জনৈক আলেম বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে মুছল্লীরা কে কি করছে তা দেখতেন, সে
হিসাবে আমিও আপনাদের দেখি। আমার দেখা মতে আমি তাকে আড় চোখে মুছল্লীদের দেখতে
দেখেছি। এটা শরী‘আতসম্মত কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইটাগাছা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : না। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি হ’ল- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) ক্বিবলাহর দিকে? আল্লাহর
কসম! আমার নিকট তোমাদের খূশু (বিনয়) ও রুকূ কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার
পেছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই’ (বুখারী হা/৪১৮; মিশকাত হা/১০৮৬)। অন্য বর্ণনায়
এসেছে যে, আল্লাহর কসম! আমি সামনের দিকে যেভাবে দেখতে পাই পিছনেও সেভাবেই দেখতে
পাই (মুসলিম হা/৪২৩)।
বিষয়টি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ। যা তাঁর মু‘জিযা সমূহের
অন্তর্ভুক্ত (ফাৎহুল বারী হা/৪১৮-এর ব্যাখ্যা; মির‘আত)। এটি অন্য কারু ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য নয়। বরং রাসূল (ছাঃ) ছালাত অবস্থায় ডানে-বামে আড় চোখে তাকাতে নিষেধ
করেছেন (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮২-৮৩)।
প্রশ্ন (৪০/৮০) : আমাদের মক্তবে বহুদিনের পুরাতন
ছেড়া-ফাটা কিছু কুরআনের কপি রয়েছে, যা পড়ার উপযোগী নয়। এগুলি কি করা উচিৎ?
-রফীক সরদার
গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
উত্তর : কুরআন
ও হাদীছের ছেঁড়া পাতা ও বই-পুস্তক পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কুরআন ও হাদীছ অতীব
পবিত্র ও সম্মানের বস্ত্ত। এগুলির ছিন্ন পাতা বা কিতাব কোনভাবে যাতে অসম্মানিত না
হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই সম্ভবতঃ ছাহাবায়ে কেরাম এগুলি পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন। মূল কুরায়শী আরবীতে কুরআন নাযিল হয়েছিল। পরে অন্য উপভাষাতেও কুরআন
পাঠের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাতে শব্দ ও মর্মগত বিপত্তি দেখা দিলে ৩য়
খলীফা ওছমান (রাঃ) কুরআনের মূল কুরায়শী কপি রেখে বাকী সব কপি পুড়িয়ে দেওয়ার
নির্দেশ দেন। বর্তমানে কেবল সেই কুরআনই সর্বত্র পঠিত হয় (বুখারী হা/৪৯৮৭,
মিশকাত হা/২২২১)।
মাসিক আত-তাহরীক-ডিসেম্বর/২০১৭
প্রশ্ন
(১২/৯২) : আত-তাহরীক একাধিকবার ফৎওয়া প্রদান করেছে যে, ইসলামী ব্যাংকের সাথে
লেনদেন সূদের পর্যায়ভুক্ত। অথচ এর বিকল্প কোন সমাধান দেওয়া হয় না। তাহ’লে কি ইসলাম
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অপূর্ণাঙ্গ? না-কি ফৎওয়া বোর্ডের ব্যর্থতা?
উত্তর : ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। রাজনীতি, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই এটি
পূর্ণাঙ্গ (বাক্বারাহ ২০৮; মায়েদাহ ৩)। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের হাতেই
এর রাজনীতি ও অর্থনীতি উপেক্ষিত। অথচ দু’টি পরস্পরে সম্পর্কিত।
ইসলামী অর্থনীতি এবং প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভিন্ন বিষয়।
কেবল মাসিক আত-তাহরীক-এর ফৎওয়া বোর্ড নয় বরং ইসলামী ব্যাংকের জনক বলে পরিচিত শেখ
ছালেহ কামেল সহ সংশ্লিষ্টগণই এ ব্যাপারে স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, প্রচলিত ইসলামী
ব্যাংকিং ব্যবস্থা বহু ক্ষেত্রেই সূদমুক্ত নয়। তাছাড়া প্রচলিত ব্যাংকিং-এর ধারণা
পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপজাত ও সহগামী; যা পুঁজি সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করে, পুঁজির প্রবাহ
সৃষ্টি করে না। এতে ধনী ও গরীবের অস্বাভাবিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। সেজন্য এটি ইসলামী
অর্থনীতির কল্যাণমুখী ধারণার সাথে তা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে ইসলামী
ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিশুদ্ধি কিংবা বিকল্প অনুসন্ধানের জন্য ইসলামী অর্থনীতিবীদগণ
প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : প্রবন্ধ-ইসলামী ব্যাংকিং-এর
অগ্রগতি : সমস্যা ও সম্ভাবনা, মাসিক আত-তাহরীক ডিসেম্বর’১২ ও জানুয়ারী’১৩ সংখ্যা)।
আমরা আশাবাদী যে, অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোন তাক্বওয়াশীল নেতৃত্বের
অধীনে এমন ‘বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান’সমূহ গড়ে উঠবে যা সম্পূর্ণ সূদমুক্তভাবে মুসলিম
উম্মাহর চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিকল্পের অনুসন্ধানে থাকতে
হবে। বিকল্প সমাধান না পাওয়ার অর্থ এটা নয় যে, সমস্যা এড়িয়ে যেতে হবে এবং প্রচলিত
ব্যবস্থাকে শরী‘আত সম্মত বলতে হবে। বরং সমস্যা চিহ্নিত করার মধ্য দিয়েই সমাধান
বেরিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (২/৮২) : বাংলাদেশের বর্তমান আদালতগুলি বৃটিশ আইনে পরিচালিত
হয়। এক্ষণে এখানে আইন পেশায় অংশগ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-মিছবাহুল ইসলাম, পাবনা।
উত্তর : সাধারণভাবে
আইনী সহায়তা কোন নাজায়েয পেশা নয়। তবে সেখানে সর্বদা সত্যকে বিজয়ী করা, যুলুমের
প্রতিরোধ করা এবং মানুষকে তার হক ফেরত দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। যাতে কোন
নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হয় এবং অপরাধী ছাড়া না পায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা
নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করে এবং পাপ ও শত্রুতার কাজে সাহায্য
করো না’ (মায়েদাহ ৫/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/২৩১; উছায়মীন,
ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/৬০৯-৬১০)। আর বৃটিশ আইন প্রচলনের দায়ভার বর্তাবে
সরকারের উপর। যতদিন ইসলামী আইনের বিপরীতে তা চালু থাকবে, ততদিন সংশ্লিষ্ট
দায়িত্বশীলগণ পাপী হ’তে থাকবে। কেননা আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্যের বিধান কোন
অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় (ইউসুফ ৪০, মায়েদাহ ৫০ প্রভৃতি)। সুতরাং যিনি
আইনজীবী হিসাবে কাজ করবেন তার আবশ্যিক দায়িত্ব হবে সত্যের সাক্ষ্য দেয়ার পাশাপাশি
নিজ অবস্থানে থেকে ইসলামী আইন প্রবর্তন এবং তার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা। এটা তার
ঈমানী দায়িত্ব (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।
এতদ্ব্যতীত প্রচলিত আইনের সবকিছুই যে শারঈ আইনের বিরোধী, তা নয়।
যেমন সিভিল আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন প্রভৃতি। সুতরাং একজন আল্লাহভীরু আইনজীবী
সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং আল্লাহর আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখে এ পেশায় জড়িত
থাকতে পারেন।
প্রশ্ন (৩/৮৩) : শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সূরা ক্বাছাছ ৮৮
আয়াতের তা’বীলের কারণে ইমাম বুখারীকে কাফের আখ্যায়িত করেছেন কি?
-গোলাম কাদের, চট্টগ্রাম।
উত্তর : নাঊযুবিল্লাহ! ইমাম বুখারী (রহঃ)-কে কাফের আখ্যায়িত করার প্রশ্নই
আসে না। আলবানীসহ সকল যুগের বিদ্বানগণের নিকট ইমাম বুখারী (রহঃ)
পরম শ্রদ্ধার পাত্র। মূলতঃ বিষয়টি যে প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয়েছে তা হ’ল, আল্লাহর
বাণী ‘সব কিছুই ধ্বংস হবে তাঁর চেহারা ব্যতীত’ (ক্বাছাছ
৮৮) আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘ইল্লা ওয়াজহাহু’ (তাঁর চেহারা ব্যতীত)-এর অর্থ ইমাম
বুখারী (রহঃ) ‘তাঁর রাজত্ব’ করেছেন (বুখারী ৬/১১২, সূরা ক্বাছাছের আলোচনা)।
যা বাহ্যদৃষ্টিতে তা’বীল মনে হয়। এর উত্তর হ’ল, প্রথমতঃ ছহীহ বুখারীর নাসাফী
বর্ণিত নুসখা মোতাবেক তাফসীরটি ইমাম বুখারীর নয়, বরং মা‘মারের (ফাৎহুল বারী
৮/৫০৫)। দ্বিতীয়তঃ এটি যদি তাঁর নিজের বক্তব্যও হয়ে থাকে, তবে তাঁর উদ্দেশ্য
আল্লাহর ছিফাতের তা’বীল করা নয়, বরং লাযেম দ্বারা মালযূম উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহর
চেহারা বাকী থাকার অর্থ আল্লাহর সত্তা এবং তাঁর রাজত্ব বাকী থাকা। সালাফে ছালেহীন
কখনও কখনও এমন সম্পূরক তাফসীর করতেন, যা মূলতঃ তা’বীল নয় এবং পরস্পর বিরোধীও
নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমু‘ ফাতাওয়া ৬/৩৯০)। আর ইমাম বুখারী (রহঃ) যে সালাফে
ছালেহীনের মতই আল্লাহর বিভিন্ন ছিফাতে বিশ্বাস করতেন, তার প্রমাণ ছহীহ বুখারীর
বিভিন্ন অধ্যায়েই রয়েছে। যেমন, (বুখারী ৯/১২৪)। সুতরাং এ ব্যাপারে
সন্দেহের অবকাশ নেই। শায়খ আলবানীকে ইমাম বুখারীর উক্ত তাফসীর সম্পর্কে প্রশ্ন করা
হ’লে, তিনি বিদ্বানসূলভ জাযবায় বলেছিলেন যে, ‘এরূপ কথা কোন মুমিন মুসলমান বলতে
পারে না’। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি এমন তাফসীর ইমাম বুখারীর নিজস্ব কি-না তাতে সংশয়
প্রকাশ করে বলেন, ‘মূলকথা হ’ল, আমরা ইমাম বুখারী এই আয়াতের তা’বীল করেছেন-
এমন ধারণা থেকে তাঁকে মুক্ত করতে চাই। কেননা তিনি হাদীছের ইমাম এবং আল্লাহর
ছিফাতের ক্ষেত্রে তিনি সালাফে ছালেহীনের আক্বীদা পোষণকারী
আলহামদুলিল্লাহ (মওসূ‘আতুল আলবানী ফিল আক্বীদাহ ৬/৩২৬, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান
নূর, ক্যাসেট নং ৭৩৮)। সুতরাং শায়খ আলবানী ইমাম বুখারীকে কাফের বলেছেন, একথা
নিতান্তই ভিত্তিহীন এবং অপবাদ মাত্র।
প্রশ্ন (৫/৮৫) : কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে বেশী
ছওয়াব পাওয়ার জন্য কষ্টকর অবস্থাকে বেছে নেয়া কি ব্যক্তির জন্য শরীআ‘তসম্মত? যেমন-
গরম পানি থাকা সত্ত্বেও ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযূ করা কিংবা নিকটে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও
দূরের মসজিদে যাওয়া। কারণ আমি শুনেছি, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্টকর বিষয় খুঁজে
বেড়ায় সে ছওয়াব পাবে না। সঠিক উত্তর জানতে চাই।
-পারভেয আলম সরদার, বিনোদপুর, রাজশাহী।
উত্তর : ইবাদত
করার জন্য অধিকতর কষ্টকর অবস্থাকে ছওয়াব হাছিলের লক্ষ্য বানানো শরী‘আতসম্মত নয়।
এতে কোন ছওয়াব নেই। কেননা কৃচ্ছ্রতা সাধন ইসলামী ইবাদতের ঈপ্সিত লক্ষ্য নয়। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন
বিজয়ী হয়ে যাবে (অর্থাৎ সে পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে)। সুতরাং তোমরা সঠিক পথে থাক
এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর’ (বুখারী হা/৩৯; মিশকাত হা/১২৪৬)। রাসূল
(ছাঃ)-কে দু’টি বিষয়ে ইখতিয়ার দেওয়া হ’লে তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন (বুখারী
হা/৬৭৮৬; মুসলিম হা/২৩২৭)। উদাহরণস্বরূপ যদি কেউ পায়ে হেঁটে হজ্জ করে, যাতে হজ্জ
পালনে কষ্ট হয় এবং ছওয়াব বেশী হয়; তবে তা শরী‘আতসম্মত হবে না। কেননা এটা শরী‘আত
প্রণেতার উদ্দেশ্য বিরোধী (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/২৮১; শাত্বেবী,
আল-মুওয়াফাক্বাত ২/২২২)।
প্রশ্ন (৭/৮৭) : জনৈক ব্যক্তি মসজিদের
পার্শ্ববর্তী বাড়ী থেকে শয়তান তাড়ানোর জন্য আযান দিয়ে থাকে। এর কোন ভিত্তি আছে কি?
-আনোয়ার হোসাইন, শাখারীপাড়া, নাটোর।
উত্তর : মুওয়াযযিন আযান ও ইক্বামত দিলে শয়তান
বায়ু নিঃসরণ করতে করতে পালিয়ে যায়’ (বুখারী হা/৬০৮; মুসলিম হা/৩৮৯; মিশকাত
হা/৬৫৫)। কিন্তু শয়তান তাড়ানোর জন্য পৃথকভাবে আযান দেওয়ার কোন বিধান নেই। তবে
এজন্য ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্ব-নির রজীম’ পাঠ করা যায় (বুখারী হা/৬১১৫;
মুসলিম হা/২৬১০; মুমিনুন ২৩/৯৭-৯৮)। এছাড়া সূরা বাক্বারাহ ও হাদীছে বর্ণিত
দো‘আগুলো পাঠ করা যেতে পারে (মুসলিম হা/৭৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৫৮)।
বিশেষতঃ নিম্নের দো‘আটি পাঠ করা যায়- আ‘ঊযুবি কালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মাতি মিন
শার্রি মা-খলাক্ব (মুসলিম হা/২৭০৮; মিশকাত হা/২৪২৩)।
প্রশ্ন (৮/৮৮) : মায়ের গোসলের পানি দ্বারা বরকত
হাছিল করা যাবে কি?
-মুবারক হোসাইন, আটঘরিয়া, পাবনা।
উত্তর : এটি বিদ‘আতী কাজ। রাসূল (ছাঃ) ব্যতীত অন্য কারো পানি বা অন্য কিছু
দ্বারা বরকত হাছিলের কামনা করা বিদ‘আত (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৬৭; বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৬৫)। ইমাম শাত্বেবী বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর
ছাহাবীগণ এমনকি চার খলীফা থেকে এমন কর্মের মাধ্যমে বরকত হাছিলের পক্ষে কোন দলীল
নেই। দলীল না থাকাই তা পরিহার করার ব্যাপারে ছাহাবীগণের ঐক্যমতের প্রমাণ বহন
করে (আল-ই‘তিছাম ১/৪৮২)।
প্রশ্ন (৯/৮৯) : ফেরাঊন যখন নীল নদে পানিতে ডুবে
যাচ্ছিল তখন জিব্রীল (আঃ) তার মুখে মাটি প্রবেশ করিয়েছিলেন যাতে সে কালেমা পড়ে
আল্লাহর রহমত লাভ করতে না পারে। উক্ত ঘটনাটি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
-আব্দুল আহাদ, মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : হাদীছটি বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ফেরাঊনকে যখন পানিতে ডুবিয়ে
দিলেন তখন সে বলল, ‘আমি ঈমান আনলাম তার প্রতি, যার উপর বনু ইসরাঈল ঈমান এনেছে।
নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই’ (ইউনুস ১০/৯০)। জিব্রীল বললেন, হে
মুহাম্মাদ! আপনি যদি আমাকে ঐ সময় দেখতেন যখন আমি সমুদ্র হ’তে কালো কাদামাটি তুলে
তার মুখে ঢালছিলাম যাতে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ তাকে পরিবেষ্টন না করে (তিরমিযী
হা/৩১০৭-০৮; আলবানী উক্ত বর্ণনার সনদ হাসান লিগায়রিহি বলেছেন (ছহীহাহ
হা/২০১৫)। আরনাঊত্ব ইবনু আববাস থেকে মওকূফ বলেছেন (আহমাদ হা/২১৪৪, ২২০৩)।
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ফেরাঊন যখন আযাব প্রত্যক্ষ করল, তখন সে
ঈমান আনার সংকল্প করল। কিন্তু জিব্রীল তার মুখে মাটি ভরে দিলেন। তখন সে জিব্রীলের
নিকট সত্তুর বার সাহায্য প্রার্থনা করল। কিন্তু জিব্রীল তাকে সাহায্য করলেন না।
তখন আল্লাহ জিব্রীলকে ভৎর্সনা করে বললেন, ফেরাঊন তোমার নিকট ৭০ বার সাহায্য চাইল
তুমি তাকে সাহায্য করলে না? আমার ইয্যতের কসম! সে যদি আমার নিকট সাহায্য চাইত
তাহ’লে আমি তাকে সাহায্য করতাম (সুয়ূতী, ই‘জাযুল কুরআন ২/৩৬৯-৭০)। বর্ণনাটি
সনদবিহীন, যা অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া বর্ণনাটি মুনকার ও কুরআন বিরোধী। কারণ ফেরাঊন
ঈমান আনার কথা বলেছিল এবং আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চেয়েছিল (গাফের ৪০/ ৮৪-৮৫)।
কিন্তু আল্লাহ তার শেষ মুহূর্তের ঈমান কবুল করেননি। তিনি বলেন, ‘এখন? অথচ
ইতিপূর্বে তুমি অবাধ্যতা করেছিলে এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে’ (ইউনুস
১০/৯১)।
প্রশ্ন (১০/৯০) : নারীদের ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের
হ’লে তা কি হায়েয হিসাবে গণ্য হবে এবং এ অবস্থায় ছিয়াম পালন করা যাবে কি?
-হেলেনা আখতার, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর : এটি হায়েয হিসাবে গণ্য হবে না। বরং প্রদর রোগ। অতএব ছিয়াম পালনে
কোন বাধা নেই। ‘হায়েয’ বলা হয় প্রবহমান রক্তকে, যা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবিরতভাবে
নির্গত হয়। কিন্তু প্রশ্নে বর্ণিত বিষয়টি তা নয়। উছায়মীন বলেন, এ অবস্থায় তার
ছিয়াম সঠিক। কারণ এই রক্ত শিরা থেকে বের হয়েছে, যা কিছুই নয়। আলী (রাঃ) থেকে এ
মর্মে আছার বর্ণিত হয়েছে (আহকামুল হায়েয ১/১২১)।
প্রশ্ন (১১/৯১) : জুম‘আর ছালাতে খত্বীব ছাহেবের
জন্য ছালাতের ইমামতি করা সুন্নাত কি?
-আব্দুল আলীম, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।
উত্তর : হ্যাঁ সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাঃ) নিজে খুৎবা দিতেন এবং তিনিই
ইমামতি করতেন। ইবনু কুদামা বলেন, সুন্নাত হ’ল যিনি খুৎবা দিবেন তিনিই ইমামতি
করবেন। কেননা নবী করীম (ছাঃ) উভয়টি নিজেই করতেন। অনুরূপভাবে পরে খুলাফায়ে রাশেদীনও
এমনটি করেছেন। তবে ওযরের কারণে একজন খুৎবা দিলে এবং অপরজন ইমামতি করলে তা জায়েয
হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৮৬)।
প্রশ্ন (১৪/৯৪) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, এই দুনিয়ায়
ওলীগণ আমাদের সাহায্যকারী। তারা আমাদের বিপদে সাহায্য করে থাকেন যেমন আব্দুল
ক্বাদের জীলানী (রহঃ)। তারা দলীল হিসাবে সূরা মায়েদাহ ৫৫ আয়াতটি পেশ করে থাকে। এই
বক্তব্যের কোন সত্যতা আছে কি?
-নূর জাহান বেগম, কালিয়াকৈর, গাযীপুর।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। সূরা মায়েদাহ ৫৫ আয়াতের অনুবাদ হ’ল-
‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ। যারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত
আদায় করে এবং তারা হয় বিনয়ী’। অত্র আয়াতে ওলী বলে আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের বুঝানো
হয়েছে। আর মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা ছালাত আদায়কারী,
যাকাত প্রদানকারী ও বিনয়ী হবে। অত্র আয়াতের শেষে ইহূদী ও নাছারাদের বন্ধু হিসাবে
গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। যার মর্ম হ’ল তোমরা সাহায্যকারী হিসাবে আল্লাহকে ও
বন্ধু হিসাবে রাসূল (ছাঃ) ও মুমিনদেরকে গ্রহণ করবে; অন্যথায় বিপাকে পড়বে (ত্বাবারী,
কুরতুবী, তাফসীর উক্ত আয়াত)। অতএব অত্র আয়াত থেকে মৃত ও জীবিত কোন পীর উদ্দেশ্য
নয়। বরং সকল মুমিন ব্যক্তিই আল্লাহর ওলী বা বন্ধু।
প্রশ্ন (১৮/৯৮) : হাদীছে
বর্ণিত হয়েছে যে, অচিরেই ফোরাত নদী তার মধ্যস্থিত স্বর্ণভান্ডার উন্মুক্ত করে
দিবে। কিন্তু তা গ্রহণ করা যাবে না। হাদীছটির ব্যাখ্যা কি?
-আব্দুল ওয়াজেদ, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
উত্তর : এটি ক্বিয়ামতের আলামতসমূহের অন্যতম, যা এখনও প্রকাশিত হয়নি।
আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ ইবনু নাওফাল (রহঃ) বলেন, আমি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর সাথে
দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন, মানুষ বিভিন্নভাবে দুনিয়াবী সম্পদ উপার্জনে
ব্যস্ত থাকবে। আমি বললাম, হ্যাঁ, ঠিকই। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে
শুনেছি, শীঘ্রই ফোরাত নদী তার গর্ভস্থিত স্বর্ণ পাহাড় বের করে দিবে। এ কথা
শুনামাত্রই লোকজন সেদিকে ছুটে যাবে। তখন সেখানকার লোকেরা বলবে, আমরা যদি লোকদেরকে
ছেড়ে দেই, তবে তারা সবকিছুই নিয়ে যাবে। ফলে তারা পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং এতে
প্রতি একশ’-র মধ্যে নিরানববই জনই নিহত হবে’ (মুসলিম হা/২৮৯৫; আহমাদ হা/২১২৯৭;
মিশকাত হা/৫৪৪৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রত্যেকে বলবে, আমি এ যুদ্ধে বেঁচে যাব এবং
স্বর্ণের পাহাড়টি দখল করে নেব (মুসলিম হা/২৮৯৪; মিশকাত হা/৫৪৪৩)।
প্রথম হাদীছে ‘কানযুম মিনায যাহাব’ বলা হয়েছে, যার অর্থ ‘লুক্কায়িত
স্বর্ণভান্ডার’। এতে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়
হাদীছে বলা হয়েছে ‘জাবালুম মিনায যাহাব’ অর্থ ‘স্বর্ণের পাহাড়’। এতে প্রকাশিত
হওয়ার পরের অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) আরেক বর্ণনায় হুঁশিয়ারী উচ্চারণ
করে বলেন, ‘সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন তা (স্বর্ণ) থেকে কিছুই গ্রহণ না
করে’ (বুখারী হা/৭১১৯; মুসলিম হা/২৮৯৪; মিশকাত হা/৫৪৪২)। কারণ সেখানে পৌঁছতে হ’লে
তার নিজের জন্য এবং অপরের জন্য সমূহ ক্ষতির আশংকা রয়েছে (দলীলুল ফালেহীন
৮/৬৪৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৮১)।
প্রশ্ন (২০/১০০) : সূরা বাক্বারাহ ৩০ আয়াতে
মানুষকে আল্লাহর খলীফা বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কি?
-তানভীর আহমাদ, আড়াইহাযার, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : ‘খলীফা’ অর্থ প্রতিনিধি বা স্থলাভিষিক্ত। মানুষকে যেহেতু জিন জাতির
পর পৃথিবীকে আবাদ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু তাদেরকে খলীফা বা জিন জাতির
স্থলাভিষিক্ত বলা হয়েছে (তাফসীর ত্বাবারী হা/৬০১, ১/৪৫০)। ইবনু কাছীর বলেন,
এর দ্বারা এমন জাতিকে বুঝানো হয়েছে যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী এবং বংশ পরম্পরায়
আগমন করতে থাকবে (ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ৩০ আয়াত)। এই আয়াতের ভিত্তিতে
মুসলিম সমাজে নেতা বা খলীফা নির্বাচন আবশ্যিক বলে ইমাম কুরতুবী মন্তব্য করেছেন,
যার কথা শোনা হয় ও আনুগত্য করা হয় এবং যার মাধ্যমে খলীফা সংশ্লিষ্ট হুকুম-আহকাম
বাস্তবায়ন করা যায় (তাফসীরে কুরতুবী ১/২৬৪, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২১/১০১) : আমি গ্রীসে পুলিশের
হেফাযতে শরণার্থী ক্যাম্পে আছি। এখানে মুরগীর গোশত, কাবাব ও অন্যান্য খাবার দেয়,
যা খৃষ্টানদের যবেহকৃত। এগুলি খাওয়া যাবে কি?
-শফীউল ইসলাম, গ্রীস।
উত্তর : আহলে কিতাব তথা ইহূদী এবং খৃষ্টানদের যবেহ করা হালাল পশু খাওয়া
জায়েয, যদি তারা যবহের সময় আল্লাহর নাম নেয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর আহলে কিতাবদের
যবেহকৃত পশু তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের যবেহকৃত পশু তাদের জন্য হালাল’ (মায়েদাহ
৫/৫)। যবেহের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছে কি-না সে ব্যাপারে যদি সন্দেহ থাকে,
সেক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া যেতে পারে (বুখারী হা/৭৩৯৮; আবুদাঊদ
হা/২৮২৯; মিশকাত হা/৪০৬৯)। তবে সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য তা বর্জন করাই
উত্তম (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২; তিরমিযী হা/২৫১৮; নাসাঈ হা/৫৭১১;
মিশকাত হা/২৭৭৩)।
প্রশ্ন (২৪/১০৪) : কবরে তিনটি
প্রশ্ন করা হবে যার শেষটি নবী সম্পর্কে। এক্ষণে নবীকে শেষ প্রশ্নটি কিভাবে করা
হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
-নাঈমা খাতুন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : এ ব্যাপারে কুরআনে বা হাদীছে কোন বর্ণনা নেই। তবে একদল বিদ্বান মনে
করেন, যেমনভাবে শহীদগণ কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না’ (নাসাঈ হা/২০৫৩),
তেমনি নবীগণও কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না (ইবনুল ক্বাইয়িম, কিতাবুর রূহ
১/৮১-৮২)।
প্রশ্ন (২৫/১০৫) : হাদীছে বর্ণিত আছে যে, আলী
(রাঃ) ছালাতের রুকূ অবস্থায় তার হাতের আংটিটি ছাদাক্বা করলে সূরা মায়েদার একটি
আয়াত নাযিল হয়। বর্ণনাটির সত্যতা জানতে চাই।
-মুকতাদির হোসেন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত
মর্মের বর্ণনাটি জাল। যা শী‘আ রাফেযীরা আলী (রাঃ)-এর প্রতি অতিভক্তির আতিশয্যে
তৈরী করেছে (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৯২১)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, কতিপয়
মহামিথ্যুক বর্ণনা করেছে যে, আলী (রাঃ) ছালাতরত অবস্থায় হাতের আংটি দান করলে সূরা
মায়েদাহ ৫৫ আয়াতটি নাযিল হয় (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৯)। এক্ষণে উক্ত আয়াতের
অর্থ দাঁড়াবে ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ। যারা ছালাত কায়েম
করে, যাকাত আদায় করে এবং তারা হয় বিনয়ী’ (মায়েদাহ ৫/৫৫)। অর্থাৎ যারা কোনরূপ
ভীতি, শ্রুতি ও প্রদর্শনী ছাড়াই স্রেফ আল্লাহর রেযামন্দী হাছিলের জন্য বিনীতভাবে
ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।
প্রশ্ন (২৭/১০৭) : জোববা ও পায়জামা পরিহিত
অবস্থায় তা টাখনুর নীচে নেমে গেলে গোনাহগার হ’তে হবে কি?
-যয়নাল আবেদীন, চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে
টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরলে গোনাহগার হ’তে হবে। হাদীছে পোশাক ঝুলিয়ে টাখনু বা
গোড়ালীর নীচে পরতে নিষেধ করা হয়েছে। তা জুববা, পায়জামা বা লুঙ্গী হ’লেও বিধান একই
থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘টাখনুর নীচে কাপড়ের যতটুকু যাবে, ততটুকু জাহান্নামে
পুড়বে’ (বুখারী হা/৫৭৮৭; মিশকাত হা/৪৩১৪)। টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরলে
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না, তার সাথে কথা বলবেন না এবং তাকে
(গোনাহ থেকে) পবিত্রও করবেন না (মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫ ‘ক্রয়-বিক্রয়’
অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২৮/১০৮) : জানা সত্ত্বেও মাযহাবী কারণে
ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক ছালাত আদায় না করলে তা কবুলযোগ্য হবে কি?
-সাদমান, কলাবাগান, ঢাকা।
উত্তর : এভাবে ছালাত কবূলযোগ্য হবে না। কারণ আল্লাহ অজান্তে কৃত অপরাধ
ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ জানা সত্ত্বেও কেবল মাযহাবী গোঁড়ামীর
কারণে তা ছেড়ে দিলে অবশ্যই সে ব্যক্তি গোনাহগার হবে। কেননা ইবাদত কবূলের শর্ত ২টি।
(১) ইখলাছ থাকা (বাইয়েনাহ ৫; বুখারী হা/১; মুসলিম হা/৫৩০০) এবং (২)
রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত মোতাবেক হওয়া (মুসলিম হা/৩২৪৩, তিরমিযী হা/২৬০০)।
তিনি যদি ইমাম হন, তবে তার কারণে যত লোক বিভ্রান্ত হবে, সকলের পাপের সমপরিমাণ বোঝা
তার উপরে চাপানো হবে (নাহল ২৫; মুসলিম, মিশকাত হা/২১০)।
প্রশ্ন (২৯/১০৯) : রাসূল (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত না
হ’লেও সম্মানিত ইমামগণ থেকে বর্ণিত অনেক দো‘আ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহু আকবার
কাবীরা.... আছীলা। এক্ষণে এসব দো‘আ পাঠ উত্তম বা সুন্নাত বলা যাবে কি?
-আব্দুর রহমান, পীরগঞ্জ, নাটোর।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত দো‘আটি জনৈক ছাহাবী পাঠ করলে রাসূল (ছাঃ) তার ফযীলত
বর্ণনা করে বলেন, আমি বিস্মিত হ’লাম যে, তার জন্য আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া
হ’ল (মুসলিম হা/৬০১; মিশকাত হা/৮১৭)। এটি প্রমাণ করে যে, দো‘আটি রাসূল
(ছাঃ) কর্তৃক অনুমোদিত। তবে দো‘আটি ইমাম শাফেঈ ঈদায়েনের তাকবীর হিসাবে পড়তেন, যা
রাসূল (ছাঃ) থেকে সরাসরি প্রমাণিত নয়। এতদসত্ত্বেও যেহেতু রাসূল (ছাঃ) ঈদের তাকবীর
পাঠের জন্য আমভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তাই এর উপর আমল করা যাবে। অবশ্য একে সুন্নাত
বলা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ম, বাণী ও মৌন সম্মতিকেই কেবল সুন্নাত বলা
হয়। অনুরূপভাবে ছাহাবীগণের আমল বা বাণীর উপর শর্তসাপেক্ষে আমল করা যায় (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১৪)। যেমন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে আরেকটি
আছার বর্ণিত হয়েছে, যা সমাজে প্রসিদ্ধ- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ’ (মুছান্নাফ
ইবনে আবী শায়বাহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩০/১১০) : চুরি, মদ্যপান, জুয়া খেলা ও মিথ্যা কথা বলায়
অভ্যস্ত জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে তওবা করতে চাইলে তিনি তাকে কেবল
মিথ্যা বলা থেকে নিষেধ করেন। লোকটি তা মেনে নিয়ে বাকী তিনটি কাজ করতে চায়। কিন্তু
সত্য কথা বলতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে সে বাকী কাজগুলি থেকে তওবা করতে বাধ্য হয়। এ
কাহিনীটির কোন সত্যতা আছে কি?
-মামূন, মালিটোলা, ঢাকা।
উত্তর : কাহিনীটি ভিত্তিহীন। তবে এটি বিভিন্ন গল্প ও সাহিত্যের বইপুস্তকে
পাওয়া যায় (জাহিয, আল-মাহাসিন ওয়াল আযদাদ ১/৬০; যামাখশারী, রবী‘ঊল আবরার
৪/৩৪০; মুবাররাদ, আল-কামিল ফিল আদাব ২/১৫৬)। তাই রাসূল (ছাঃ)-এর নামে উক্ত কাহিনী
বর্ণনা করার কোন সুযোগ নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে
মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নিল’ (বুখারী হা/৩৪৬১;
মুসলিম হা/৪; মিশকাত হা/১৯৮, ২৩২)।
প্রশ্ন (৩১/১১১) : শিরক-বিদ‘আত সম্পর্কে জানা
সত্ত্বেও যেসব সমাজ প্রধানগণ উক্ত কাজে বাধা না দিয়ে বরং প্ররোচিত করে, ক্বিয়ামতের
দিন তাদের শাস্তি কি হবে?
-নাজমুল হোসাইন, চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজে
নিষেধ করবে। নইলে সত্বর আল্লাহ তার পক্ষ হ’তে তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন।
অতঃপর তোমরা দো‘আ করবে, কিন্তু তা আর কবুল করা হবে না’ (তিরমিযী হা/২১৬৯;
মিশকাত হা/৫১৪০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোন জাতির মধ্যে পাপ হ’তে থাকলে এবং ক্ষমতা
থাকা সত্ত্বেও তা প্রতিরোধ না করলে সত্বর আল্লাহ তাদের উপরে ব্যাপক প্রতিশোধ
নামিয়ে দিবেন’ (আবুদাঊদ হা/৪৩৩৮; মিশকাত হা/৫১৪২)। সুতরাং অন্যায়ের প্রতিরোধে
সমাজনেতাদের দায়িত্ব অনেক বেশী। যদি তারা সেটা না করে অন্যায় কাজে লিপ্ত হন এবং
অপরকে অন্যায়ের প্রতি প্ররোচনা দেন, তবে তাদের শাস্তি সাধারণের তুলনায় অনেক বেশী
হবে। কিয়ামতের দিন পাপীরা এরূপ নেতাদেরকে দায়ী করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক!
আমরা আমাদের নেতাদের ও বড়দের আনুগত্য করতাম। অতঃপর তারাই আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল’।
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে তুমি দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে মহা অভিশাপ
দাও’ (আহযাব ৩৩/৬৭-৬৮)।
প্রশ্ন (৩৩/১১৩) : আমার কবরপূজারী জনৈক আত্মীয় জীবনের শেষ দিন
পর্যন্ত এক পীরের মুরীদ হিসাবে কবরপূজায় লিপ্ত ছিলেন। এক্ষণে তার জানাযা পড়া বা
তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েয হবে কি?
-জালালুদ্দীন, ধুনট, বগুড়া।
উত্তর : এরূপ ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েয নয়। আল্লাহ বলেন,
‘নবী ও মুমিনের উচিত নয়, মুশরিকদের মাগফিরাত কামনা করা, যদিও তারা আত্মীয় হয়। এ
কথা স্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামী’ (তওবা ৯/১১৩)। আবু হুরায়রা (রাঃ)
বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ) মা আমেনার কবর যিয়ারতে গেলেন। তখন তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং
তাঁর সাথীগণও কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট মায়ের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম; কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। অতঃপর
তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা
তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৬৩)।
প্রশ্ন (৩৪/১১৪) : স্যান্ডো গেঞ্জীর সাথে পাতলা
জামা পরিধান করলে কাঁধ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কি?
-আব্দুল ওয়াদূদ, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : ছালাতের ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে এ থেকে বেঁচে থাকা উত্তম।
কেননা এর দ্বারা সত্যিকার অর্থে কাঁধ ঢাকা হয় না। আর উভয় কাঁধ পূর্ণরূপে ঢেকে
রাখাই সুন্নাত (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৪)। অতএব সতর ঢাকার স্বার্থে
পাতলা কাপড় নারী-পুরুষ সবারই পরিহার করা কর্তব্য। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও
তাক্বওয়াপূর্ণ সুন্দর পোষাক পরে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়া যরূরী। আল্লাহ বলেন,
তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)।
প্রশ্ন (৩৫/১১৫) : কাফেরদের সাদৃশ্যের প্রকৃত ব্যাখ্যা ও হুকুম সম্পর্কে জানতে
চাই। কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোষাক পরা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে কি?
-সুরাইয়া, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে
তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। এর ব্যাখ্যায় ত্বীবী
বলেন, এর দ্বারা চেহারায়, চরিত্রে ও পোষাকে সাদৃশ্য বুঝানো হয়েছে। তবে পোষাকে
সাদৃশ্যই প্রধান’। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী বলেন, পোশাক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে
কাফিরদের সাথে কিংবা ফাসিক, পাপাচারী কিংবা ছূফী ও নেককার ব্যক্তিদের সাথে সাদৃশ্য
রাখা, অর্থাৎ ভালো কিংবা খারাপ যে সকল মানুষের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই
দলভুক্ত হবে (মিরক্বাত হা/৪৩৪৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, ৭/২৭৮২)। মানাভী বলেন,
তাদের মতে পোষাক পরিধান করা, তাদের পথে পরিচালিত হওয়া, পোষাকে ও কাজে তাদের
সাদৃশ্য অবলম্বন করা (ফায়যুল ক্বাদীর ৬/১০৪, হা/৮৫৯৩-এর ব্যাখ্যা)। যেমন
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমার পরিধানে হলুদ রংয়ের
দু’টি পোষাক দেখে বললেন, ‘এগুলো কাফিরদের পোষাক। অতএব তুমি এসব পরবে না’ (মুসলিম
হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘তোমাদের কারো নিকট দু’টি কাপড়
থাকলে সে যেন ঐগুলি পরেই ছালাত আদায় করে। আর একটিমাত্র কাপড় থাকলে সে যেন তা কোমরে
বেঁধে নেয় এবং ইহূদীদের ন্যায় দু’কাঁধে ঝুলিয়ে না রাখে’ (আবুদাঊদ হা/৬৩৫;
ইবনু খুযায়মা হা/৭৬৬)।
এক্ষণে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
১. অবৈধ সাদৃশ্য। অর্থাৎ জেনেশুনে কাফিরদের এমন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য রাখা, যা
তাদের ধর্ম-কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ইসলামী শরী‘আতে যার সমর্থন নেই। এরূপ
সাদৃশ্য হারাম এবং ক্ষেত্রবিশেষে কবীরা গুনাহ। ২. বৈধ সাদৃশ্য। অর্থাৎ যা মৌলিকভাবে
কাফেরদের গৃহীত রীতি-নীতি থেকে গৃহীত হয়নি। বরং মুসলমানরা পরিধান করে এবং তারাও
করে’ (দ্র. সুহায়েল হাসান, কিতাবুস সুনান ওয়াল আছার ফিন নাহিয়ে আনিত
তাশাববুহে বিল কুফফার ৫৮-৫৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩৬/১১৬) : পবিত্র কুরআনে দাওয়াতী
ক্ষেত্রে হিকমত অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এক্ষণে উক্ত নির্দেশনার ভিত্তিতে সত্য
গোপন করা বা নিফাকের আশ্রয় নেওয়া কি জায়েয হবে? হিকমতের প্রকৃত ব্যাখ্যা কি?
-মুস্তাফীযুর রহমান, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর : কোন অবস্থাতেই সত্য গোপন বা নিফাকের আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে না।
হিকমত বলতে প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি
মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে’ (নাহল
১৬/১২৫)। ‘হিকমত’ বলতে দলীল-প্রমাণ ও সঠিক জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ
অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিশেষ প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে উক্ত প্রজ্ঞা
দান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়’ (বাক্বারাহ ২/২৬৯)। হিকমতের আরেক
অর্থ সুন্নাহ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের প্রতি তিনি যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন
এবং তোমাদের উপর যে কিতাব ও হিকমাহ (সুন্নাহ) নাযিল করেছেন, তা স্মরণ কর’ (বাক্বারাহ
২/২৩১)। তিনি আরো বলেন, ‘আর আল্লাহ্ তোমার উপর কুরআন ও সুন্নাহ অবতীর্ণ
করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। বস্ত্ততঃ তোমার উপর আল্লাহর
অসীম করুণা রয়েছে’ (নিসা ৪/১১৩)। তিনি বলেছেন, ‘তিনি তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ
শিক্ষা দিবেন’ (জুম‘আ ৬২/২)। অতএব হিকমতের নামে কোন অবস্থাতে প্রতারণা,
মিথ্যা এবং নিফাকের আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বরং সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা ও যথাযোগ্য
আচরণ বজায় রেখে ইসলামী দাওয়াতের কাজ করে যেতে হবে।
প্রশ্ন (৩৮/১১৮) : আল্লাহ কুরআনকে
‘শিফা’ বা আরোগ্য বলেছেন। এক্ষণে দ্রুত কল্যাণ লাভের জন্য কুরআনের বিভিন্ন আয়াত
যেমন ‘রবিব ইন্নী বিমা আনঝালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাক্বীর’ ৪০ বার, পাগলামী থেকে
আরোগ্যের জন্য ‘ইন্নাকা লামিনাল মুরসালীন’ ১৩১ বার ইত্যাদি পাঠ করা যাবে কি?
-আবু তালেব, সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : ছহীহ হাদীছের প্রমাণ ব্যতীত কুরআনের নির্দিষ্ট কোন আয়াত নির্দিষ্ট
উদ্দেশ্যে ও নির্দিষ্টবার পাঠ করা যাবে না। এটা বিদ‘আত। তবে কুরআন মানসিক ও
শারীরিক ব্যাধির মহৌষধ (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/৩২২-৩২৩)। তাই
কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থবোধক আয়াত অনির্দিষ্টবার পাঠ করায়
কোন বাধা নেই। কারণ একই দো‘আ বার বার পাঠ করা যায় (উছায়মীন, ফৎওয়া নূরুন আলাদ
দারব ১/৩৬)। রাসূল (ছাঃ) অধিকাংশ সময় তিনবার করে দো‘আ পড়তেন (মুসলিম হা/১৭৯৪;
মিশকাত হা/৫৮৪৭)। এছাড়াও তিনি কোন দো‘আ ৩ বার, ৭ বার, ৩৩ বার এবং ১০০ বার করে পাঠ
করেছেন। যা ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত।
প্রশ্ন (৪০/১২০) : মহিলা ও পুরুষের কাফনের
কাপড়ের সংখ্যায় কোন পার্থক্য আছে কি?
-শফীক, সাপাহার, নওগাঁ।
উত্তর : মহিলা
ও পুরুষের কাফনের কাপড়ে কোন পার্থক্য নেই। উভয়কে তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিতে
হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৩৫)। মহিলাদের জন্য প্রচলিত পাঁচ কাপড়ের
হাদীছ যঈফ (আবূদাঊদ হা/৩১৫৭, সনদ যঈফ)।
প্রশ্ন (৪/৮৪) : আমার সৎমা আমার সহোদর ভাইয়ের
ছেলেকে দুধ পান করিয়েছেন। তিনি কত ঢোক পান করিয়েছেন এ নিয়ে তার সন্দেহ আছে। একারণে
কি তিনি মাহরাম সাব্যস্ত হবেন? কারণ আমার এই ভাইপো আমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব
দিয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
-আব্দুল মজীদ, ঝিকরগাছা, যশোর।
উত্তর : ঢোক
নয় বরং অধিকতর গ্রহণযোগ্য মতে, পৃথক পৃথক সময়ে পাঁচবার দুধ পান করালেই একজন নারী
দুধ মা হিসাবে সাব্যস্ত হবেন (মুসলিম হা/১৪৫১; মিশকাত হা/৩১৬৭; আশ-শারহুল
মুমতে‘ ১২/১১২-১১৩, ১৩/৪২৭)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘একবার বা দু’বার দুধপান অথবা এক
চুমুক বা দু’চুমুক হারাম সাব্যস্ত করে না (মুসলিম হা/১৪৫১; মিশকাত হা/৩১৬৪)।
প্রশ্নমতে দুধ পান করানোর সংখ্যায় যেহেতু সন্দেহ বিদ্যমান, সেহেতু
প্রথমতঃ নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সন্দিগ্ধ বিষয়
পরিহার করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও। কেননা সত্যে রয়েছে প্রশান্তি এবং
মিথ্যায় রয়েছে সন্দেহ’ (তিরমিযী হা/২৫১৮, মিশকাত হা/২৭৭৩)। আর যদি নিশ্চিত
হওয়া না যায়, তবে সেক্ষেত্রে মূল বিধান হ’ল, মাহরাম সাব্যস্ত না হওয়া’ (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ক্রমিক ১৫০১৮, ২১/১২)। এমতাবস্থায় এ বিয়েতে বাধা নেই।
No comments:
Post a Comment