Search This Blog

Wednesday, October 19, 2022

নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? (প্রথম অংশ)

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

নবি (সাঃ) এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?

জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়

দ্বিতীয় অংশ দেখতে এখানে ক্লিক করুন (PMMRC)

(প্রথম অংশ)

ভূমিকাঃ বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৭৫৫ কোটি যার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৯০ কোটি। বিশ্বের প্রায় ৫৬ টি দেশ মুসলিম প্রধান। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ মুসলমান। আর মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে বসবাস করে।

রাসুল সাঃ নব্যুয়ত লাভ করেন ৬১০ সালে। নব্যুয়ত লাভের পর থেকে রাসুল সাঃ এর দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর ৬১০ সাল থেকে ২০২২ সালের পূর্ব পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মুসলমান মৃত্যুবরণ করেছেন। জীবিত ও মৃত্যু প্রত্যেক মুসলমানের একটাই আশা যে, তারা জান্নাতে যাবে। কেউ জাহান্নামে যেতে চায় না। বাংলাদেশে শত শত পির-অলির দরবার আছে। প্রত্যেক পির তাদের মুরিদদের আশ্বাস দিয়েছে যে, কিয়ামতে তারা সুপারিশ করে মুরিদদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। এরকম বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে তারাও জান্নাতে যেতে ইচ্ছুক। আবার বিভিন্ন ইসলামি দলসহ অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠন আছে তারাও জান্নাতে যাবে। আবার মাজহাবের দিক থেকে আহলে হাদিস বা সালাফিগণ মনে করেন তারাই সহিহ আমল করেন, তারাই রাসুল সাঃ এর সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত সে জন্যে তারাই জান্নাতে যাবে। হাদিসে বর্ণিত ৭৩ দলের মধ্যে যে এক দল জান্নাতে যাবে আহলে হাদিস বা সালাফিগণ দাবী করেন তারাই সেই দলের। সেই অনুসারে অন্যান্য সকল মুসলমান জাহান্নামী। আসলে জান্নাত কিন্তু এতো সহজ নয়। রাসুল সাঃ বলেন, কারো আমলই তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না, আল্লাহর রহমত ব্যতীত। তাহলে জান্নাতে যেতে হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে ও আদেশ নিষেধ মানার  মাধ্যমে। আবার বলেছেন, কিয়ামতে যার হিসেব নেয়া হবে সে ধ্বংস হবেই। তবে রাসুল সাঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবন বিধান তথা গাইড লাইন দিয়ে গেছেন। আমরা যদি সেই গাইড লাইন মোতাবেক চলতে পারি তাহলে আল্লাহর রহমতে জান্নাতি দলে থাকতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমি এখানে কুরআন ও সহিহ  হাদিস ভিত্তিক ব্যাপক দলিলসহ “নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়” তার বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছি। আশা করি বইটি ধৈর্য্যসহকারে পড়বেন আর পড়তে গিয়ে যদি আপনার কোনো আমল বা কর্মকান্ডের সাথে মিলে যায় যা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে তাহলে সাথে সাথে তওবা করে ছেড়ে দিবেন, কারণ মৃত্যু যেকোনো মুহুর্তে হতে পারে। আসুন পড়তে থাকি।

৭৩টি দলের মধ্যে ১টি দল জান্নাতী

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইহূদী জাতি একাত্তর ফেরকায় (উপদলে) বিভক্ত হয়েছে এবং আমার উম্মাত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৯৬, আহমাদ ২৭৫১০, রাওদুন নাদীর ৫০, সহীহাহ ২০৩, আত-তালীক আলাত তানকীল ২/৫৩)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আওফ ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইহূদী জাতি একাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একটি ফেরকা জান্নাতী এবং অবশিষ্ট সত্তর ফেরকা জাহন্নামী। খৃস্টানরা বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে। তার মধ্যে একাত্তর ফেরকা জাহান্নামী এবং একটি ফেরকা জান্নাতী। সেই মহান সত্তার শপথ যাঁর হতে মুহাম্মাদের প্রাণ! অবশ্যই আমার উম্মাত তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। তার মধ্যে একটি মাত্র ফেরকা হবে জান্নাতী এবং অবশিষ্ট বাহাত্তরটি হবে জাহান্নামী। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ফেরকাটি জান্নাতী। তিনি বলেনঃ জামাআত (একতাবদ্ধ দলটি)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯২, আয-যিলাল ৬৩, সহীহাহ ১৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল একাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মাত বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। একটি ফেরকা ব্যতীত সকলেই হবে জাহান্নামী। সেটি হচ্ছে জামাআত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯৩, আহমাদ ১১৭৯৮, ১২০৭০, আয-যিলাল ৬৪, সহীহাহ ২০৪, ১৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতের ওপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বনী ইসরাঈলের ওপর এসেছিল। যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ঠিক সমান হয়। এমনকি বনী ইসরাঈলের মধ্যে যদি কেউ তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে কুকর্ম করে থাকে, তাহলে আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন লোক হবে যারা অনুরূপ কাজ করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরক্বায় (দলে) বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মাত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৪১, সহীহুল জামি‘ ৫৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

কিয়ামতে যার হিসাব নেয়া হবে, সে ধ্বংস হবে

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন যার হিসাব নেয়া হবে, সে অবশ্যই ধ্বংস হবে। [’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন,] আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা কি এ কথা বলেননি, “শীঘ্রই তার নিকট থেকে সহজ হিসাব নেয়া হবে”। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, সেটা হলো শুধু পেশ করা মাত্র। কিন্তু যার হিসাব খুটিনাটি যাচাই করা হবে, সে ধ্বংস হবেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৩৯, ১০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৯, সহীহুল জামি ৬২২০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৫৯৪, আবূ ইয়া'লা ৪৪৫৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন কোন সালাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ-কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সা.) বলতেন]। (اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرً) (হে আল্লাহ! আমার নিকট থেকে সহজ হিসাব নিও) আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! সহজ হিসাব কি? তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ তার বান্দার ’আমলনামার প্রতি দৃষ্টিদান মাত্র, অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। হে ’আয়িশাহ্! জেনে রাখ, সেদিন যার হিসাবে যাচাই-বাছাই করা হবে, সে নিঃসন্দেহে ধ্বংস হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৬২, মুসনাদে আহমাদ ২৪২৬১, য'ঈফ আবূ দাউদ-এর আলোচনায় ৫৫৭নং, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৮৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৭২, শু’আবূল ঈমান ২৭০, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৩৬৪৯, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৭২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

নবি সাঃ এর উম্মত জান্নাতবাসীদের হবে এক-চতুর্থাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক

(ঙ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। একদিন তিনি (সা.) বললেন: (কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আদম আলায়হিস সালাম-কে লক্ষ্য করে বলবেন, হে আদম! আদম আলায়হিস সালাম উত্তরে বলবেন, হে আমার প্রভু! আমি উপস্থিত! আপনার আনুগত্যই আমার জন্য সৌভাগ্য। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার আওলাদের মধ্য হতে জাহান্নামের দলকে বের কর। আদম আলায়হিস সালাম বলবেন, জাহান্নামের দলে কতজন? আল্লাহ তা’আলা বলবেন, প্রত্যেক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক সন্তানধারী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। আর তোমরা লোকেদেরকে দেখবে নেশাগ্রস্ত, মূলত তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বরং আল্লাহর আযাবই কঠিন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আমাদের মধ্য থেকে কে হবে সেই একজন? তিনি বললেন, বরং তোমরা এ সুসংবাদ জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্য থেকে একজন এবং ইয়াজুজ-মাজুজদের থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, সে মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা করি যে, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক-চতুর্থাংশ। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমরা সকলে আল্লা-হু আকবার বলে উঠলাম। অতঃপর বললেন, আমি আশা করি, তোমরা হবে জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ। তখন আমরা পুনরায় বললাম ’আল্লা-হু আকবার’। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। এ কথা শুনে আমরা আবার বললাম, আল্লা-হু আকবার। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, মানুষের মধ্যে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে যেমন একটি সাদা গরুর চামড়ার মধ্যে একটি কালো লোম অথবা একটি কালো গরুর চামড়ার মধ্যে একটি সাদা লোম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৪১, ৩৩৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২২, সহীহুল জামি ১৪১০২, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবি সা: এর উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোককে আল্লাহ তায়ালা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার প্রভু আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের ওপর ’আযাবও হবে না। আবার উক্ত প্রত্যেক হাজারের সাথে সত্তর হাজার এবং আমার প্রভুর তিন অঞ্জলি ভর্তি লোকও জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৫৬, মুসনাদে আহমাদ ২২৩৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৮৬, সহীহুল জামি' ৭০৬২, সহীহ আত তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৬১৪, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৯০৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৭১৪, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৪৪২৭, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ এর শাফাআতের বদৌলতে ’জাহান্নামী’ নামের একদল জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে

ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার শাফাআতের বদৌলতে ’জাহান্নামী’ নামের একদল জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩১৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৬৬, তিরমিযী ২৬০০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৪০, আহমাদ ১৯৩৯৬,আধুনিক প্রকাশনী- ৬১১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১২০))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জান্নাতে নাজাতপ্রাপ্ত জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামী বলে ডাকা হবে

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: কিছু সংখ্যক লোক তাদের কৃত গুনাহের কারণে শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের আগুনে জ্বলে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর রহমত ও দয়ায় তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে সেখানে তাদেরকে জাহান্নামী বলে ডাকা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৮৪, ৫৫৮৫,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৫০, ৬৫৫৯,  মুসনাদে আহমাদ ১২৫১১, আবূ ইয়া'লা ২৯৭৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারো আমল তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন। কাজেই মধ্যমপন্থা গ্রহণ কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বয়স দ্বারা) তার নেক ’আমল বৃদ্ধি হতে পারে। আর খারাপ লোক হলে সে তওবা করার সুযোগ পাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৭৩, ৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫২৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬৭৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের ’আমল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি ’আমল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৪৬৩, ৩৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৬, আধুনিক প্রকাশনী ৬০১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(হাদীসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু আমলের দ্বারা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না-ফাতহুল বারী)।

(গ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কোন লোকের আমলই তাকে পরিত্রাণ দিতে পারবে না। এ কথা শুনে এক লোক বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমাকেও না। তবে যদি আল্লাহ তা’আলা তার করুণা দ্বারা আমাকে ঢেকে নেন। তোমরা অবশ্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০০৪, ৭০০৬, ৭০০৭, ৭০০৮, ৭০০৯, ৭০১০, ৭০১৪, ৭০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৫১, ইসলামিক সেন্টার ৬৯০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমিও নই। তবে আমার পালনকর্তা যদি তার অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৮৫২, ৬৮৫৫, ৬৮৬০, ৬৮৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কে জান্নাতী কে জাহান্নামী সেটা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত

মুসলিম ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কুরআনের এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ ’’(হে মুহাম্মাদ!) আপনার রব যখন আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের সব সন্তানদেরকে বের করলেন’’ (সূরাহ্ আল আ’রাফ ৭: ১৭২) (...আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। ’উমার (রাঃ) বললেন, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় এবং তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আপন ডান হাত তাঁর পিঠ বুলালেন। আর সেখান থেকে তাঁর (ভবিষ্যতের) একদল সন্তান বের করলেন। অতঃপর বললেন, এসবকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি, তারা জান্নাতীদের কাজই করবে। আবার আদমের পিঠে হাত বুলালেন এবং সেখান থেকে (অপর) একদল সন্তান বের করলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং তারা জাহান্নামীদেরই ’আমল করবে। একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে ’আমলের আর আবশ্যকতা কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জান্নাতীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সে জান্নাতীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। এভাবে আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজই করিয়ে নেন। পরিশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করেই মৃত্যুবরণ করে, আর এ কারণে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৯৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০০১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(দুনিয়ায় মুসলমানদের বিভিন্ন কর্মকান্ড বা আমল দেখেই বুঝা যায় পরকালে তার ফয়সালা কী হবে।)

উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারলাম যে, রাসুল সাঃ এর উম্মত ৭৩ দলের মধ্যে ৭২ দল অথবা এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ বা অর্ধেক কিংবা পরকালে কারো হিসেব নিলে তার জন্যে জাহান্নাম সুনিশ্চিত। জান্নাতে যে যাবেন তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালার রহমত ছাড়া কারো কোনো আমল তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে না। আর আল্লাহর রহমত পেতে চাইলে দুনিয়ায় থাকা অবস্থাতেই আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজ বা আমল চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ ও রাসুল সাঃ যেসব আদেশ নিষেধ দিয়েছেন তা মেনে চলতে হবে। কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলো মুসলমান হয়েও জেনে বা নাজেনে করে থাকে আর সেগুলো জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আসুন কোন কাজগুলো করলে মুসলমান হয়েও জাহান্নামে যেতে হবে সেগুলো বিস্তারিত জেনে নেই।

(১) কুরআনকে রাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসেবে মেনে না নেয়াঃ

বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, অধিকাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মানবরচিত সংবিধান বা মানুষের তৈরী আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অথচ রাসুল সাঃ এর আবির্ভাবই ঘটেছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে। রাসুল সাঃ যদি শুধু দাওয়াতী কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতেন তাহলে তাঁকে সশরীরে ১৯টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে হতো না, এতো রক্তপাত হতো না, তাঁকে এতো নির্যাতিত হতে হতো না। অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর রাসুল সাঃ আরবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ইসলামি রাষ্ট্র সমাজ ব্যবস্থা। তিনি যেমন ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নেতা, তেমনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শই পরবর্তীতে সাহাবাগণ অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। কিন্তু এখন রাসুল সাঃ নেই, সাহাবাগণ নেই, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণ নেই, কিন্তু রেখে গেছেন কুরআন ও হাদিস এবং উলিল আমর যারা রাসুল সাঃ এর অবর্তমানে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন। উলিল আমর সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

 “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো। রাসূল ও উলিল আমরের আনুগত্য করো। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ ঘটে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট ফিরে যাবে; যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতকে বিশ্বাস কর। এটাই তোমাদের জন্যে সুন্দর ও উত্তম উপায়”। (সূরা ৪/নিসা  ৫৯)।

’’উলুল আমর’’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোনো বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ ও হাসান বসরী রাহিমাহুমাল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণ ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে ‘উলুল আমর’ সাব্যস্ত করেছেন। তারাই হচ্ছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নায়েব বা প্রতিনিধি ৷ তাদের হাতেই দ্বীনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত। মুফাসসিরীনের অপর এক জামা'আত-যাদের মধ্যে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন-বলেছেন যে, ’’উলুল আমর’’ এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। ইমাম সুদ্দী এ মত পোষণ করেন।

কিন্তু বর্তমান যুগের উলিল আমরগণ বা মুসলিম রাষ্ট্রীয় নেতাগণ কী করছেন। তারা আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন না করে মানুষের তৈরী আইন বাস্তবায়ন করে চলছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বার বার বলছেন তোমরা কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠিত করো।

(ক)  আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি পূর্ণ কোরআন শরীফ পরম সত্যতার সাথে এ জন্যেই নাযিল করেছি যে, তুমি সে অনুযায়ী মানুষের উপর আল্লাহর প্রদর্শিত পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং বিচার ফায়সালা করবে। (কোরআনকে যারা এ কাজে ব্যবহার করতে চায় নি তারা এ মহান আমানতের খিয়ানত করে) তুমি এ খিয়ানতকারীদের সাহায্য পক্ষ সমর্থনকারী হয়ো না। (নিসা:১০৫)।

(খ) আল্লাহ বলেন, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মানুষের মধ্যে ফায়সালা করো, তাদের মনের খেয়াল খুশী ও ধারনা বাসনা অনুসরন করো না। (মায়েদা: ৪৯)।

(গ)  আল্লাহ বলেন, তুমি কি জান না যে, আকাশ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহর। (বাকারাঃ ১০৭)।

(ঘ) “হুকুম বা বিধান একমাত্র আল্লাহরই”। (সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৪০)।

 তিনি আরও বলেন,

(ঙ) “তারা কি তবে জাহেলিয়াতের বিধান চায়? দৃঢ়-বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে?” (সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫০)।

(চ) “আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি সহকারে পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব (বিধি-বিধান) ও মানদণ্ড পাঠিয়েছি যাতে লোকেরা ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর আমি লৌহ অবতীর্ণ করেছি যাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানবমণ্ডলীর জন্য বিবিধ কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আর এর উদ্দেশ্য হচ্ছে,আল্লাহ্ জেনে নেবেন,কে গায়েবকে আশ্রয় করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ মহাশক্তিধর ও মহা পরাক্রান্ত।” (সূরা হাদীদ: ২৫)।

(ছ) রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই বিধান অনুসারে জীবন যাপন করবে, সে উহার প্রতিফল লাভ করবে।যে উহার অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তার শাসন সুবিচার পূর্ণ হবে এবং যে উহাকে দৃঢ় রুপে আকড়িয়ে ধরবে সে সঠিক এবং সত্যিকার কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারবে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহই হলেন বিধান-দাতা, আর তাঁর নিকট থেকেই বিধান নিতে হবে”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৫৫; নাসাঈ, (৮/২২৬); বায়হাকি (১০/১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলিম রাষ্ট্রীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে কিন্তু কুরআনের কিছু অংশ মানে তথা এরাও সালাত আদায় করে, কালিমা পাঠ করে, হজ্জে যায়, দান করে এবং জনকল্যাণমূলক কাজ করে আবার কুরআনের কিছু অংশ মানে না তথা ইসলামি আইন, বিচার, জিহাদ ও দাওয়াত সংক্রান্ত যেসব আয়াত আছে তা মানে না আর সেজন্যেই এদেরকে পরকালে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করা হবে।

আল্লাহ বলেন,

“তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ  করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন”। (বাকারা-৮৫)।

(২) ইসলামি আইন  দিয়ে বিচার/ফয়সালা না করলেঃ

মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা করা বা কোনো অপরাধের শাস্তির রায় দেয়া মুসলিম বিচারকদের জন্যে সম্পূর্ন নিষেধ। যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানব রচিত আইনে বিচারের রায় দেয় তারা মুসলমান হয়েও কাফের, জালেম ও ফাসেক। এরা  জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আল্লাহ বলেন,

(ক) “আর আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিচার-ফয়সালা ও শাসনকার্য পরিচালনা করেনি,তারা কাফের।” (সূরা মায়েদাহ্  ৪৪)।

(খ) “আর আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিচার ও শাসনকার্য পরিচালনা করে নি তারা জালেম।” (সূরা মায়েদাহ্  ৪৫)।

(গ) “আর আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী যারা বিচার ও শাসনকার্য পরিচালনা করে নি তারা ফাসেক (পাপাচারী)।” (সূরা মায়েদাহ্  ৪৭)।

(ঘ) “(হে নবী!) অতএব,আল্লাহ্ তায়ালা যা নাযিল করেছেন,তার ভিত্তিতে আপনি তাদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করুন এবং আপনার নিকট যে সত্যের আগমন ঘটেছে,তার পরিবর্তে তাদের প্রবৃত্তির (দাবীর) অনুসরণ করবেন না।” (সূরা মায়েদাহ্  ৪৮)।

(ঙ) “তারা কি জাহেলীয়াতের (মূর্খতাজাত) বিচার-ফয়সালা পেতে চায়? প্রত্যয়ের অধিকারী লোকদের জন্য বিচার-ফয়সালা প্রদানের প্রশ্নে আল্লাহর চেয়ে কে অধিকতর উত্তম হতে পারে?” (সূরা মায়েদাহ্  ৫০)।

(চ) “হে রাসূল! তাদের বলে দিন:) আর তোমরা এ বিষয়ে (আল্লাহর অভিভাবকত্ব সম্বন্ধে) যে মতভেদই করো না কেনো, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছেই সোপর্দ। তিনিই আল্লাহ্-আমার প্রতিপালক; আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তাঁরই অভিমুখী হই।” (সূরা শুরা  ১০)।

(ছ) “হে ঈমানদারগণ! ন্যায়কে আশ্রয় করে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হিসাবে দণ্ডায়মান হয়ে যাও এমনকি যদি তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা ও ঘনিষ্ঠ জনদের বিরুদ্ধেও হয়; সে ব্যক্তি ধনীই হোক বা গরীব হোক তাদের উভয়ের (বিরোধে লিপ্ত পক্ষদ্বয়ের) জন্য আল্লাহ্ই অধিকতর ঘনিষ্ঠ। অতএব,ভারসাম্য ও ন্যায়নীতি বজায় রাখার ব্যাপারে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর তোমরা যদি ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল বা পাশ কাটিয়ে যাও,তা হলে (জেনে রাখ) তোমরা যা কিছু করছ অবশ্যই আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অবহিত।” (সূরা নিসা : ১৩৫)।

(জ) “(হে নবী!) অবশ্যই আমি সত্য সহকারে আপনার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ্ আপনাকে যা প্রদর্শন করেছেন তার সাহায্যে লোকদের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করেন। আর আপনি খেয়ানতকারীদের (অন্যায়কারীদের) সপক্ষে বিতর্ককারী হবেন না।” (সূরা নিসা ১০৫)।

(ঞ) “হে দাউদ! নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ধরণির বুকে (আমার) প্রতিনিধি বানিয়েছি, অতএব, সত্যতা সহকারে লোকদের মাঝে বিচার-ফয়সালা কর।” (সূরা সাদ  ২৬)।

(ট) আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু’ (বিবদমান) পক্ষের মধ্যকার বিচারকার্য পরিচালনা না করে। রাবী হিশাম (রাঃ) তার হাদীসে বলেনঃ রাগান্বিত অবস্থায় দু’ (বিবদমান) পক্ষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করা বিচারকের জন্য সংগত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩৪, নাসায়ী ৫৪০৬, ৫৪২১, আবূ দাউদ ৩৫৮৯, আহমাদ ১৯৮৬৬, ১৯৮৭৬, ১৯৮৮০, ১৯৯৫৪, ১৯৯৯৯, ইরওয়া ২৬২৬, রাওদুন নাদীর ৯২৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামেনে বিচারক হিসাবে প্রেরণ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে বিচারক করে ইয়ামেনে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন নব যুবক, বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বলেনঃ আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার অন্তরকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে পথ দেখাবেন এবং তোমার কথাকে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। যখন তোমার সামনে বাদী-বিবাদী বসবে তখন তুমি যেভাবে এক পক্ষের বক্তব্য শুনবে অনুরূপভাবে অপর পক্ষের বক্তব্য না শোনা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিবে না। এতে তোমার সামনে মোকদ্দমার আসল সত্য প্রকাশিত হবে। আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্দেহ পতিত হইনি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৮২, বুলগুল মারাম ১৩৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩১, আহমাদ ৬৬৮, ১১৫৯, ১৩৪৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ড) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা (ইয়াহুদীরা) তোমার নিকট এলে তোমার এখতিয়ার রয়েছে তাদের বিচার মীমাংসা করার অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করার (সূরা আল-মায়িদাহঃ ৪২)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আলোচ্য আয়াত এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছেঃ ’’অতএব আপনি আল্লাহর অবতীর্ণ করা আইন মোতাবেক লোকদের যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করুন।’’ (সূরা আল-মায়িদাহঃ ৪৮)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঢ)  ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ’’তারা যদি আপনার নিকট (নিজেদের মোকদ্দমা নিয়ে), আসে, তাহলে আপনার এখতিয়ার রয়েছে তাদের বিচার করার অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করার। যদি আপনি (বিচার করতে) অস্বীকার করেন তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর বিচার করলে ইনসাফের সাথেই করবেন। কেননা আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালবাসেন’’ (সূরা আল মায়িদাহঃ ৪২) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, বনী নাযীরের এক ব্যক্তি বনী কুরাইযাহর এক লোককে হত্যা করলে তারা দিয়াতের অর্ধেক পরিশোধ করতো। পক্ষান্তরে বনী কুরাইযাহ বনী নাযীরের কাউকে হত্যা করলে তাদেরকে পূর্ণ দিয়াত দিতে হতো। উক্ত আয়াত অবর্তীণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে সমতা প্রতিষ্ঠা করলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৯১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত আলোচনায় এটাই প্রমাণিত যে, মুসলিম শাসক বা বিচারককে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর আইন দ্বারা বিচার ফয়সালা করতে হবে। কোনো মানব রচিত আইন দ্বারা বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। যারা করবে তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে কাফির, জালিম ও ফাসিক বলে গণ্য হবে। আর কাফির, জালিম ও ফাসিক জান্নাতে যাবে না।

আল্লাহ বলেন,

“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন আইন/ধর্ম/পথ/মত গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত”। (সুরা ইমরান ৮৫০)।

দুই শ্রেণির বিচারক জাহান্নামীঃ

আবূ বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিচারক তিন শ্রেণীর হয়। তন্মধ্যে এক প্রকারের (বিচারকদের) জন্য জান্নাত আর দু’ প্রকারের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সে বিচারক জান্নাতে যাবেন, যিনি হক চিনলেন এবং তদানুযায়ী ফায়সালা করেন। আর যে বিচারক হক উপলব্ধি করেও বিচার-ফায়সালার মধ্যে অন্যায়-অবিচার করে, সে বিচারক জাহান্নামী এবং যে বিচারক অজ্ঞতার সাথে বিচার-ফায়সালা করে, সেও জাহান্নামী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৭৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩২২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৫, ইরওয়া ২৬১৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৪৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ২১৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) মানুষ/নরহত্যা করলেঃ

পৃথিবীতে যতো রকমের গুনাহের কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা। এরপর সবচেয়ে বড় গুনাহ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। হত্যাকারীর জন্য মহান আল্লাহ দুনিয়ায় বড় শাস্তি এবং আখেরাতে তীব্র আযাবের ঘোষণা দিয়েছেন।

আল্লাহ  তায়ালা বলেন,

“কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। ...আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯২-৯৩)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল”। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩২)।

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের (অপরাধের) মধ্যে সর্বপ্রথম নরহত্যার (অপরাধের) বিচার করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৩৩, ৬৮৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১৫, ২৬১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯৬, ১৩৯৭, নাসায়ী ২৯৯১, ২৯৯২, ২৯৯৩, ২৯৯৪, ২৯৯৬, আহমাদ ৩৬৬৫, ৪২০১, সহীহাহ ১৭৪৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬০৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়লো, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকলো। অতএব তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারিকে নষ্ট করো না। যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে তলব করে এনে উল্টো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ অবশ্যই চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৮৬, ২৬৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৬৬, ৬৯১৪, নাসায়ী ৪৭৫০, গায়াতুল মারাম ৪৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রিফা’আ ইবনে শাদ্দাদ আল-কিতবানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমর ইবনুল হামিক আল-খুযাঈ (রাঃ) -র নিকট আমি যে বাক্যটি শুনেছি তা না থাকলে আমি মুখতারের মাথা ও দেহের মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করতাম (তাকে হত্যা করতাম)। আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোকের জানের নিরাপত্তা দেয়ার পর তাকে হত্যা করলো সে কিয়ামতের দিন বিশ্বাসঘাতকতার ঝান্ডা বয়ে বেড়াবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৮৮, আহমাদ ২১৪৩৯, ২১৪৪, রাওদুন নাদীর ৭৫১, ৭৫২, সহীহাহ ৪৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নরহত্যা- একটি সমীক্ষাঃ

০৩ মার্চ ২০২২ তারিখে ”কালের কন্ঠ” পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য হলো, খুনের ঘটনায় ২০২১ সালে সারা দেশে তিন হাজার ৪৫৮টি মামলা হয়েছে। ২০২০ সালে মামলা হয়েছে তিন হাজার ৪৮৫টি।  ২০২০ সালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ জন করে খুন হয়েছে। ২০২১ সালে গড়ে দৈনিক সাতজন করে খুন হয়েছে।

সারাদেশে  হত্যাকাণ্ড কত?

২০১৫ সালে সারাদেশে  হত্যাকাণ্ড হয়েছে চার হাজার ৩৩৫টি। ২০১৬ সালে তিন হাজার ৫৯১টি, ২০১৭  সালে তিন হাজার ৫৪৯টি, ২১৮ সালে তিন হাজার ৮৩০টি।  আর ২০১৯ সালে পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে মোট  হত্যাকাণ্ডের কথা লেখা আছে ৩৫১টি। অথচ ডিএমপির হিসাব বলছে ২০১৯ সালে ঢাকা শুধু ঢাকা শহরেই ২১৯টি  হত্যাকাণ্ডের  ঘটনা ঘটেছে। বছরে হত্যাসহ নানা অপরাধে প্রায় দুই লাখ মামলা হয়।

নারী হত্যা–আত্মহত্যাঃ

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের প্রথম ৭ মাসে মোট ৩ হাজার ৩৭৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন বা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। বছর অনুযায়ী আলাদা করে বললে, ২০১৭ সালে ৫৯৭ জন, ২০১৮ সালে ৫২৮, ২০১৯ সালে ৫৮৭, ২০২০ সালে ৬৬১, ২০২১ সালে ৬৮৪ ও ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসে ৩১৯ জন নারীর জীবনে এই চরম ঘটনা ঘটেছে; অর্থাৎ মাসে গড়ে ৫০ জনের বেশি নারী হারিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে আত্মহত্যার চেয়ে হত্যার সংখ্যাই বেশি।

এই হত্যাকান্ডগুলো যে কারনেই হোক না কেনো তবে ইচ্ছেকৃতভাবেই হত্যাকান্ডগুলো ঘটানো হয়েছে। তাই এদের দুনিয়ার শাস্তি মানবরচিত আইনে যাই হোক না কেনো এদের স্থান হবে জাহান্নামে।

অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করলে তার শাস্তিঃ

অবৈধভাবে কেউ কাউকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে তার শাস্তি হচ্ছে, ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা অথবা দিয়াত তথা ক্ষতিপূরণ স্বরূপ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সম্পদ। তবে এ ব্যাপারে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা রাজি থাকতে হবে অথবা আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে নির্ধারিত সম্পদ। অনুরূপভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা হত্যাকারীকে একেবারে ক্ষমাও করে দিতে পারে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর নিহতদের ব্যাপারে ক্বিসাস্ তথা হত্যার পরিবর্তে হত্যা নির্ধারণ করা হলো। স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী। তবে কাউকে যদি তার ভাই (মৃত ব্যক্তি) এর পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা করে দেয়া হয় তথা মৃতের ওয়ারিশরা ক্বিসাসের পরিবর্তে দিয়াত গ্রহণ করতে রাজি হয় তবে ওয়ারিশরা যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে তা আদায়ের ব্যাপারে তাগাদা দেয় এবং হত্যাকারী যেন তা সদ্ভাবে আদায় করে। এ হচ্ছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে লঘু সংবিধান এবং (তোমাদের উপর) তাঁর একান্ত করুণা। এরপরও কেউ সীমালংঘন করলে তথা হত্যাকারীকে হত্যা করলে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’’। (বাক্বারাহ্  ১৭৮)।

ক্বিসাস সত্যিকারার্থে কোন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়। বরং তাতে এমন অনেকগুলো ফায়েদা রয়েছে যা একমাত্র বুদ্ধিমানরাই উদ্ঘাটন করতে পারেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বিসাসের ফায়েদা বা উপকার সম্পর্কে বলেন:

‘‘হে জ্ঞানী লোকেরা! ক্বিসাসের মধ্যেই তোমাদের সকলের বাস্তব জীবন লুক্কায়িত আছে। (কোন হত্যাকারীর উপর ক্বিসাসের বিধান প্রয়োগ করা হলে অন্যরা এ ভয়ে আর কাউকে হত্যা করবে না। তখন অনেকগুলো তাজা জীবন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে) এতে করে হয়তো বা তোমরা আল্লাহ্ভীরু হবে’’। (বাক্বারাহ্ ১৭৯)।

রাসুল সাঃ বলেন,

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, তাকে হত্যা করা বৈধ নয় তিনটি অপরাধের যে কোনো একটিতে লিপ্ত না হলেঃ (১) বিবাহিত লোক ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করবে, (২) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে অথবা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হবে অথবা তাকে দেশ থেকে নির্বাসন দেয়া হবে, (৩) আর কাউকে হত্যা করলৈ তার বিনিময়ে কিসাসস্বরূপ তাকেও হত্যা করা যাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫৩, নাসায়ী : ৭/৯১; হাকিম : ৪/৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

 সাঈদ ইবনু আবূ সাঈদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সুরাই আল কাবি (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শোনো হে খুযাআহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছো। আর আমি তার রক্তমূল্য পরিশোধ করবো। আমার এ কথার পর যাদের কোনো লোককে হত্যা করা হবে তখন নিহতের পরিবার দু’টি বিকল্প অবস্থার যে কোনো একটি গ্রহণ করতে পারবে। দিয়াত গ্রহণ করবে অথবা হত্যা করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫০৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন,

যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ্ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মক্কাহ (মক্কা) বিজয় দান করলেন- তখন তিনি লোকদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চিত আল্লাহ তা’আলা হস্তী বাহিনীর মক্কায় (মক্কায়) প্রবেশে বাধা প্রদান করেছেন এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিনদেরকে মক্কাহ (মক্কাহ) অভিযানে বিজয়ী করেছেন। আমার পূর্বে কারও জন্য এখানে রক্তপাত বৈধ ছিল না। আর আমার জন্যও একদিনের কিছু সময় এখানে যুদ্ধ করা হালাল করা হয়েছিল। আমার পরে আর কারও জন্য তা কখনও হালাল করা হবে না। অতএব এখানকার শিকারের পশ্চাদ্ধাবণ করা যাবে না, এখানকার কাটাদার গাছও উপড়ানো যাবে না এবং এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা প্রদানকারী (তা তুলে নিতে পারবে)।

কারও কোন আত্মীয় নিহত হলে তার জন্য দুটি অবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার রয়েছেঃ হয় ফিদয়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে নতুবা হত্যাকারীকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করতে হবে। আব্বাস (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু ইযখির ঘাস যা আমরা কবরে দিয়ে থাকি এবং আমাদের ঘরের চালায় ব্যবহার করি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিন্তু ইযখির ঘাস (এর কাটার অনুমতি দেয়া হল)। ইয়ামানের অধিবাসী আবূ শাহ (রাযিঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (এ কথাগুলো) লিখে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও।

ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি আওযাঈ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ "হে আল্লাহর রসূল! আমাকে লিখে দেয়ার ব্যবস্থা করুন"-তাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বললেন, যে ভাষণ তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিতে শুনলেন তা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫০৫; সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১৭১, ইসলামীক সেন্টার ৩১৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) মক্কা-বিজয় দান করলেন তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকদের সামনে দাড়িয়ে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেনঃ যার আপন কেউ নিহত হয়েছে সে দুটি বিকল্পের মধ্যে একটি গ্রহণ করতে পারে। সে চাইলে খুনীকে ক্ষমাও করতে পারে অথবা তাকে হত্যাও করতে পারে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১২, ২৪৩৪, ৬৮৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০৫, নাসায়ী ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, ৪৫০৫, আহমাদ ৭২০১, ইরওয়া ৪/২৪৯, ৭/২৫৮, ২১৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে বিচারকের দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি সর্বপ্রথম হত্যাকৃতের ওয়ারিশদেরকে ক্ষমার পরামর্শ দিবেন।

রাসুল সাঃ বলেন,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোনো কিসাস জনিত বিবাদ পেশ করা হলে তিনি ক্ষমা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পিতা-মাতা অথবা দাদা-দাদী তাদের কোন সন্তানকে হত্যা করলে তাদেরকে তার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে না।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ সন্তান হত্যার অপরাধে পিতাকে হত্যা করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪০০, ইরওয়া ২২১৪, আহমাদ : ১/২২ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৭৮৮ বায়হাক্বী : ৮/৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে তাদেরকে সন্তান হত্যার দিয়াত অবশ্যই দিতে হবে এবং তারা হত্যাকৃতের ওয়ারিসি সম্পত্তি হিসেবে উক্ত দিয়াতের কোন অংশই পাবে না।

আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। মুদলিজ গোত্রীয় আবূ কাতাদা নামক এক ব্যক্তি নিজ পুত্রকে হত্যা করে। উমার (রাঃ) তার থেকে একশত উট আদায় করেন, যার মধ্যে ছিল তিরিশটি হিক্কা, তিরিশটি জাযাআ এবং চল্লিশটি গর্ভবতী উষ্ট্রী। অতঃপর তিনি বললেন, নিহতের ভাই কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ হত্যাকারীর জন্য (নিহতের) উত্তরাধিকার স্বত্ব নাই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৬, আহমাদ ৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১৬২০, ইরওয়া ১৬৭০, ১৬৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ছাড়াও হত্যাকারী ব্যক্তি হত্যাকৃত ব্যক্তির যে কোন ধরনের ওয়ারিশ হলেও সে উক্ত ব্যক্তির ওয়ারিসি সম্পত্তির কিছুই পাবে না। এমনকি দিয়াতের কোন অংশও নয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হত্যাকারী (নিহতের) ওয়ারিস হবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১০৯, ইরওয়া ১৬৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হত্যাকারী কোন মুসলিমকে কোন কাফির হত্যার পরিবর্তে ক্বিসাস্ হিসেবে হত্যা করা যাবে না। বরং তাকে উক্ত হত্যার পরিবর্তে দিয়াত দিতে হবে।

(ক) আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট এমন কোন জ্ঞান আছে কি যা অন্যদের অজ্ঞাত? তিনি বলেন, না, আল্লাহর শপথ! লোকেদের নিকট যে জ্ঞান আছে তা ব্যতীত বিশেষ কোন জ্ঞান আমাদের নিকট নাই। তবে আল্লাহ যদি কাউকে কুরআন বুঝবার জ্ঞান দান করেন এবং এই সহীফার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দিয়াত ইত্যাদি প্রসঙ্গে যা আছে (তাহলে স্বতন্ত্র কথা)। এই সহীফার মধ্যে আরো আছেঃ কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১১, ১৮৭০, ৩০৪৭, ৩০৩৪, ৩১৭২, ৩১৮০, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৭৩০০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪১২, ২১২৭, নাসায়ী ৪৭৩৪, ৪৭৩৫, ৪৭৪৪, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, ৪৫৩০, আহমাদ ৬০০, ৬১৬, ৪৮৪, ৯৬২, ৯৯৪, ১০৪০, দারেমী ২৩৫৬, ইরওয়া ২২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪১৩, ইরওয়া ২২০৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না এবং চুক্তিভুক্ত কোন যিম্মীকেও তার চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হত্যাকারী যে কোন পুরুষকে যে কোন মহিলা হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে। অনুরূপভাবে হত্যাকারী ব্যক্তি যেভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবেই হত্যাকারীকে হত্যা করা হবে।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ইয়াহূদী একটি দাসীর মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দিয়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এরূপ করেছে? অমুক ব্যক্তি, অমুক ব্যক্তি? যখন জনৈক ইয়াহূদীর নাম বলা হল- তখন সে দাসী মাথার দ্বারা হ্যাঁ সূচক ইশারা করল। ইয়াহূদীকে ধরে আনা হল। সে অপরাধ স্বীকার করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। তখন তার মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষে দেয়া হল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪১৩, ২৭৪৬, ৫২৯৫, ৬৮৭৬, ৬৮৭৭, ৬৮৭৯, ৬৮৮৪, ৬৮৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬৫, ২৬৬৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯৪, নাসায়ী ৪০৪৪, ৪৭৪১, ৪৭৪২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫২৭, ৪৫২৮, ৪৫২৯, ৪৫৩৫, ১২৩৩৭, ১২৫৯৪, ১২৬৯৪, দারেমী ২৩৫৫, ইরওয়া ১২৫২, আত-তালীকু আলাত তানকীল ২/৮৮,আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হত্যাকারী ছাড়া অন্য কাউকে কারোর হত্যার পরিবর্তে হত্যা করা যাবে নাঃ

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। কোন পাপীই অন্যের পাপের বোঝা নিজে বহন করবে না’’। (আন্‘আম: ১৬৪)।

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

‘‘কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার ওয়ারিশকে আমি (আল্লাহ্) ক্বিসাস্ গ্রহণের অধিকার দিয়ে থাকি। তবে (হত্যার পরিবর্তে) হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে। (যেমন: হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্য নির্দোষকে হত্যা, হত্যাকারীর সঙ্গে অন্য নিরপরাধকেও হত্যা অথবা হত্যাকারীকে অমানবিকভাবে হত্যা করা ইত্যাদি)। কারণ, তার এ কথা জেনে রাখা উচিৎ যে, ক্বিসাস্ নেয়ার ব্যাপারে তাকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রা’ঈল: ৩৩)।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আম্র (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘মানব জাতির মধ্য থেকে তিন ব্যক্তিই আল্লাহ্ তা‘আলার সঙ্গে সব চাইতে বেশি গাদ্দারী করে থাকে। তারা হচ্ছে: (মক্কা-মদীনার) হারাম এলাকায় কাউকে হত্যাকারী। যে ব্যক্তি হত্যাকারীর পরিবর্তে অন্যকে হত্যা করে। শত্রুতাবশত: অন্যকে হত্যাকারী। যা বরবর যুগের নিয়ম ছিলো’’। (আহমাদ: ২/১৭৯, ১৮৭ ইব্নু হিববান: ১৩/৩৪০)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সন্তানকে হত্যার অপরাধে পিতাকে হত্যা করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬১, ২৬৬২, তিরমিযী ১৪০১, ইরওয়া ৭/২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আমর ইবনুল আহ্ওয়াস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হজ্জের দিন বলতে শুনেছিঃ সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়বদ্ধ করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৫৯, ৩০৮৭, ইরওয়া ৭/৩৩৩-৩৩৪, সহীহাহ ১৯৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারিক আল-মুহারিবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর হস্তদ্বয় এতো উপরে তুলে বলতে শুনেছি যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছেঃ সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৭০, নাসায়ী ৪৮৩৯, ইরওয়া ৭/৩৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উসামা ইবনে শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজনের অপরাধের জন্য অপরজনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ কাউকে এমন বস্ত্ত দিয়ে হত্যা করলে যা কর্তৃক সাধারণত কেউ কাউকে হত্যা করে না সে জন্য তাকে অবশ্যই দিয়াত দিতে হবে। এ জাতীয় হত্যা ‘‘তুলনামূলক ইচ্ছাকৃত হত্যা’’ নামে পরিচিত। এ হত্যার সাথে ইচ্ছাকৃত হত্যার কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। কারণ, তাতে হত্যার সামান্যটুকু ইচ্ছা অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে উক্ত হত্যাকে নিরেট ইচ্ছাকৃত হত্যা এ কারণেই বলা হয় না যে, যেহেতু তাতে এমন বস্ত্ত ব্যবহার করা হয়নি যা কর্তৃক সাধারণত কাউকে হত্যা করা হয়। অনুরূপভাবে এ জাতীয় হত্যাকান্ডে ক্বিসাস্ নেই বলে ভুলবশত: হত্যার সঙ্গেও এর সামান্যটুকু সাদৃশ্য থেকে যায়।

কারোর হত্যাকারীর পরিচয় পাওয়া সম্ভবপর না হলেও তার দিয়াত দিতে হয়। কারণ, কোন মুসলিমের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেয়া হবে না। তবে সরকারই সে দিয়াত বহন করবে। সে জন্য কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন: কোন ভিড় শেষ হওয়ার পর সেখানে কাউকে মৃত পাওয়া গেলে।

কোন ব্যক্তি কারোর ক্বিসাস্ অথবা দিয়াত বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করলে তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার অভিশাপ নিপতিত হয় ও তার ফরজ নফল কোনো ইবাদত কবুল হবে নাঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্ধ বিদ্বেষ অথবা গোত্রীয় বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে পাথর, চাবুক অথবা লাঠির আঘাতে হত্যাকান্ড ঘটায় তার উপর কতলে খাতার দিয়াত ধার্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার উপর কিসাস বাধ্যকর হবে। আর যে ব্যক্তি হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণের মধ্যে প্রতিবন্ধক হবে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের এবং মানবজাতির অভিসম্পাত। তার নফল অথবা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৩৯,  নাসায়ী ৪৭৮৯, ৪৭৯০,  সহীহ আল জামি আস-সগীর ৬৪৫০, ৬৪৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেসব আঘাতে কিসাস নেইঃ

(ক) আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মস্তিকের মূলে (আঘাত) না পৌঁছলে, পেটের অভ্যন্তরে (আঘাত) না পৌঁছলে এবং হাড় ভেঙ্গে স্থানচ্যুত না হলে তাতে কিসাস নেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩৭, সহীহাহ ২১৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ জাহম ইবনে হুযায়ফা (রাঃ) কে যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করে পাঠান। এক ব্যক্তি তার যাকাতের ব্যাপারে তার সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়। আবূ জাহম (রাঃ) তাকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। সেই গোত্রের লোকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কিসাস দাবি করছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা এতো এতো পরিমাণ মাল পাবে। কিন্তু তারা তাতে রাজী হলো না। তিনি বলেনঃ তোমরা এতো এতো পরিমাণ মাল পাবে। এবার তারা রাযী হয়ে গেলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি লোকেদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তোমাদের রাযী হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিবো? তারা বললো, হ্যাঁ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দেন এবং বলেনঃ এই লাইস গোত্রের লোকজন আমার নিকট কিসাসের দাবি নিয়ে এসেছে। আমি তাদেরকে এতো এতো পরিমাণ মাল প্রদানের প্রস্তাব করে জিজ্ঞেস করলামঃ তোমরা কি সম্মত হলে? তারা বললো, না। এতে মুহাজিরগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে শাস্তি দিতে উত্যত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বিরত হতে নির্দেশ দিলে তারা বিরত হন। তিনি মালের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তাদেরকে পুনরায় প্রস্তাব দিয়ে বলেনঃ তোমরা কি সম্মত হলে? তারা বললো, হ্যাঁ। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩৮, নাসায়ী ৪৭৭৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যে সব অপরাধের প্রতিবিধান নেইঃ

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশুর আঘাতে দন্ড নেই, খনিতে দন্ড নেই এবং কূপে পড়াতে দন্ড নেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৭৩, ২৬৭৪, ২৬৭৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৯৯, ২৩৫৫, ৬৯১২, ৬৯১৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬৪২, ১৩৭৭, নাসায়ী ২৪৯৫, ২৪৯৭, ২৪৯৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৯৩, ৪৫৯৪, আহমাদ ৭৪০৭, ৭৬৪৭, ৭৭৬৯, ২৭৪৭২, ৮৭৭৯, ৯০১৩, ৯৫৭২, ২৭২৬৩, ১০০৪৪, ১০১০৬, ১০১৩৭, ১০২০৯, মুয়াত্তা মালেক ১৬২২, দারেমী ১৬৬৮, ২৩৭৭, ২৩৭৮, ২৩৭৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৯। রাওদুন নাদীর ১১০৬, ১১১৪, ইরওয়া ৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আগুনে পতিত হওয়ায় দন্ড নেই এবং কূপে পতিত হওয়ায়ও দন্ড নেই। (ইবনু মাজাহ ২৬৭৬, ২৬৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৯৯, ২৩৫৫, ৬৯১২, ৬৯১৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬৪২, ১৩৭৭, নাসায়ী ২৪৯৫, ২৪৯৭, ২৪৯৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৯৩, ৪৫৯৪, আহমাদ ৭৪০৭, ৭৬৪৭, ৭৭৬৯, ২৭৪৭২, ৮৭৭৯, ৯০১৩, ৯৫৭২, ২৭২৬৩, ১০০৪৪, ১০১০৬, ১০১৩৭, ১০২০৯, মুয়াত্তা মালেক ১৬২২, দারেমী ১৬৬৮, ২৩৭৭, ২৩৭৮, ২৩৭৯, সহীহাহ ২৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

দিয়াত বা ক্ষতিপূরণের পরিমানঃ

(ক) আমর ইবনে শু’আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি (কাউকে) ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে নিহত ব্যক্তির অভিভাবকদের নিকট সোপর্দ করা হবে। তারা ইচ্ছা করলে তাকে হত্যা করবে অথবা ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করবে। আর দিয়াত হলো তিরিশটি হিক্কা (চার বছরের উট), তিরিশটি জাযাআ (পাঁচ বছরের উট) এবং চল্লিশটি খালিফা (গর্ভধারী উষ্ট্রী)। এটাই হলো ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার দিয়াত। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা (সোলেহ)-ও হতে পারে। আর এটা হলো কঠোর দিয়াত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬২৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৮৭, ইরওয়া ২১৯৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ভুলবশত নিহত হলো তার দিয়াত ৩০টি বিনতে মাখায (এক বছরের উষ্ট্রী), ৩০টি বিনতে লাবূন (দু বছরের উষ্ট্রী), ৩০টি হিক্কা (চার বছরের উষ্ট্রী) এবং দশটি ইবনে লাবূন (দু বছরের উট)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রামবাসীদের বেলায় এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করেন চারশত দীনার অথবা তার সমতুল্য রৌপ্য মুদ্রা। তিনি দিয়াতের নগদ মূল্য নির্ধারণ করতেন উটের বাজার দর অনুসারে।

উটের বাজার দর বৃদ্ধি পেলে দিয়াতের পরিমাণও বেড়ে যেতো এবং উটের বাজার দর হ্রাস পেলে দিয়াতের পরিমানও হ্রাস পেতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এর মূল্য চারশত দীনার থেকে আটশত দীনার পর্যন্ত অথবা এর সমমূল্যের (রৌপ্য) মুদ্রায় আট হাজার দিরহাম পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সিদ্ধান্তও দিয়েছিলেন যে, গরুর মালিক গরুর দ্বারা তাদের দিয়াত পরিশোধ করতে চাইলে দুইশত গরু এবং বকরীর মালিক বকরী দ্বারা দিয়াত পরিশোধ করতে চাইলে দু’ হাজার বকরী দিতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩০, নাসায়ী ৪৮০১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৪১, আহমাদ ৬৯৯৪, আত-তালীক আলার রাওদাহ ২/৩০৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভস্থ ভ্রুণের দিয়াত বাবত একটি ক্রীতদাস অথবা একটি ক্রীতদাসী নির্ধারণ করেন। তিনি যার উপর দিয়াত ধার্য করেন সে বললো, আমরা কি এমন মানুষের দিয়াত দিবো যে না পান করেছে, না চীৎকার করেছে আর না শব্দ করে কেঁদেছে? এর রক্ত (দিয়াত) তো বাতিল, অর্থহীন! রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লোকটি তো কবি সুলভ কথা বলছে। ভ্রুণের জন্য একটি ক্রীতদাস অথবা একটি ক্রীতদাসী দিয়াতস্বরূপ দিতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৫৮, ৫৭৬০, ৬৭৪০, ৬৯০৪, ৬৯০৯, ৬৯১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪১০, ২১১১, নাসাঈ ৪৮১৭, ৪৮১৮, ৪৮১৯, ৪৫৭৬, ৪৫৭৯, আহমাদ ১০০৮৯, ৭১৭৬, ১০৫৩৩, ১০৫৭০, মুয়াত্তা মালিক ১৬০৮, দারিমী ২৩৮২, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/১১৩, ১১৫, ইবনু হিব্বান ৬০২২, দারাকুতনী ৩/১১৫, ইরওয়া ২২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হান্যালী (রহঃ)...মুগীরাহ ইবনু শুবাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা তার সতীনকে কুঁড়ে ঘরের খুঁটি দ্বারা আঘাত করল। সে ছিল গর্ভবতী মহিলা। (আঘাতকারী মহিলা আঘাত দিয়ে) তাকে মেরে ফেলল। বর্ণনাকারী বলেন যে, তাদের একজন ছিল লিহইয়ান গোত্রের মহিলা। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারী মহিলার ওয়ারিসগণের ওপর নিহত মহিলার হত্যার (দিয়াত) ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং গর্ভে নিহত হওয়া (সন্তানের) জন্য একটি দাস (ক্ষতিপূরণ হিসেবে) প্রদানের হুকুম দিলেন। তখন হত্যাকারী মহিলার গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, আমরা এমন শিশুর কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেব যে খায়নি, পান করেনি এবং কোন শব্দও করেনি? সে তো এলো আর গেল। এ বাতিলযোগ্য। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যেন বেদুঈনের মত ছন্দযুক্ত বাক্যে কথা বলল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাদের উপর (দিয়াত) ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯০৭, ৬৯০৮, ৭৩১৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪১১, নাসায়ী ৪৮২১, ৪৮২২, ৪৮২৩, ৪৮২৪, ৪৮২৫, ৪৮২৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৬৮, ৪৫৭০, আহমাদ ১৭৬৮০, ১৭৬৭২, ১৭৬৮২, ১৭৭১২, ১৭৭৪৮, দারেমী ৬৪২, ২৩৮০, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/৯১, ১১৩, ১১৫, ইবনু হিব্বান ৬০২২, দারাকুতনী ৩/১১৫, ইরওয়া ৭/২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪২৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) লোকজনের নিকট গর্ভস্থ ভ্রুণের (দিয়াতের) ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফয়সালা জানতে চাইলেন। তখন হামল ইবনে মালেক ইবনে নাবিগা (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি আমার দু’ স্ত্রীর মাঝখানে ছিলাম। তাদের একজন তাঁবুর কিলক দ্বারা অপরজনকে আঘাত করে তার গর্ভস্থ ভ্রুণসহ তাকে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার এবং গর্ভস্থ ভ্রুণের দিয়াতস্বরপ একটি ক্রীতদাস প্রদানের নির্দেশ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৭২, আহমাদ ১৬৬২৮৮, দারেমী ২৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(চ) আমর ইবনে শু’আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফয়সালা দেন যে, দু’ আহলে কিতাব সম্প্রদায় অর্থাৎ ইহূদী ও নাসারাদের দিয়াত হবে মুসলিমদের দিয়াতের অর্ধেক। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪১৩, নাসায়ী ৪৮০৬, ৪৮০৭, ইরওয়া ২২৫১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ছ) আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, কোন নারীর উপর দিয়াত বাধ্যকর হলে তার তার বিদ্যমান (বংশীয়) আত্মীয়গণ পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা তার ওয়ারিস হবে না। তবে তার ওয়ারিসদের প্রদানের পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা তারা পেতে পারে। কোন নারী নিহত হলে তা দিয়াত পাবে তার ওয়ারিসগণ। তারাই হত্যাকারীকে (কিসাসস্বরূপ) হত্যা করার অধিকারী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৭, নাসায়ী ৪৮০১, আহমাদ ৭০৫২, ইরওয়া ২৩০২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(জ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারী নারীর উপর ধার্যকৃত দিয়াত প্রদানের দায় তার বংশীয় আত্মীয়গণের উপর আরোপ করেন। তখন নিহত নারীর বংশীয় আত্মীয়রা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার মীরাছ কি আমরা পাবো? তিনি বলেনঃ না, তার মীরাছ তার স্বামী ও সন্তানের প্রাপ্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৭৫, ইরওয়া ২৬৪৯, আস-সাহীহ ২৫৯৯, ২৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাঁতের কিসাস বা ক্ষতিপূরণঃ

(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার ফুফু রুবায়্যি একটি বালিকার সামনের পাটির দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। অপরাধীর গোত্র ক্ষমা প্রার্থনা করলে আহতের গোত্র তা অস্বীকার করে। তারা দিয়াত প্রদানের প্রস্তাব দিলে তাও তারা প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নিকট উপস্থিত হলে, তিনি কিসাস গ্রহণের নির্দেশ দেন। তখন আনাস ইবনুন নাযর (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রুবায়্যির সামনের পাটির দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হবে। সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আনাস! আল্লাহর কিতাবের বিধান হলো কিসাস। রাবী বলেন, তখন আহত মেয়েটির গোত্র সম্মত হয়ে (কিসাস) ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা অবশ্যই পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৪৯, সহীহুল সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৯৪, ২৭০৩, ২৮০৬, ৪৪৯৯, ৪৫০০, ৪৬১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৭৫, নাসায়ী ৪৭৫৫, ৪৭৫৬, ৪৭৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৯৫, আহমাদ ১২২৯৩, ১৩৬১৪, মুশকিলাতুল ফিকর ১২৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সব দাঁতের মূল্য ও মর্যাদা সমান। সামনের দাঁত ও মাড়ির দাঁত (দিয়াতের ক্ষেত্রে) এক সমান। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৫৯, ইরওয়া ২২৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি দাঁতের দিয়াত পাঁচটি উট নির্ধারণ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫১, ইরওয়া ২২৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আঙ্গুলসমূহের দিয়াত বা ক্ষতিপূরণঃ

(ক) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এটা এবং এটা অর্থাৎ কনিষ্ঠা, ও বৃদ্ধাঙ্গুলির (দিয়াত) সমান। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫২, ২৬৫৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৫৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯২, নাসায়ী ৪৮৪৭, ৪৮৪৮, আহমাদ ২০০০, ৬১৪০, দারেমী ২৩৮০, ইরওয়া ৭/৩১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর ইবনে শু’আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সবগুলো আঙ্গুল (দিয়াত) সমান। প্রতিটি আঙ্গুলের দিয়াত দশটি করে উট। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫৩, নাসায়ী ৪৮৫০, ৪৮৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৬২, আহমাদ ৬৬৪৩, ৬৭৩৩, ইরওয়া ৭/৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাড় উন্মুক্তকারী যখম (মাওযিহা):

আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হাড় উন্মুক্তকারী প্রতিটি যখমের দিয়াত পাঁচটি করে উট। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৬৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৯০, নাসায়ী ৪৮৫২, আহমাদ ৬৬৪৩, ৬৭৩৩, ৬৮৯৪, ৬৯৭৩, ৬৯৯৪, দারেমী ২৩৭২, ইরওয়া ২২৮৫-২২৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত কামড়ে ধরলে এবং সে তার হাত টান দেয়ার ফলে প্রথমোক্ত ব্যক্তির সামনের দাঁত পড়ে গেলেঃ

উমায়্যার পুত্রদ্বয় ইয়ালা ও সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা করলাম। আমাদের সাথে এক সাথীও ছিল। পথিমধ্যে সে এবং অপর এক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হয়। রাবী বলেন, আমাদের লোকটি তার প্রতিপক্ষের হাত কামড়ে ধরলো। সে তার মুখ থেকে নিজের হাত মুক্ত করার জন্য সজোরে টান দিলো। এতে তার সামনের পাটির দাঁত উপড়ে পড়ে গেলো। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার দাঁতের দিয়াত দাবি করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে ষাঁড়ের মত কামড়ে ধরে, অতঃপর এসে দিয়াত দাবি করে। এর কোন দিয়াত নেই। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাঁতের দিয়াতের দাবি নাকচ করে দিলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৮৪, নাসায়ী ৪৭৬৩, ৪৭৬৪, ৪৭৬৫, ৪৭৬৬, ৪৭৬৭, ৪৭৬৯, ৪৭৭১, ৪৭৭২, আহমাদ ১৭৪৮৯, ১৭৫০৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১২২ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হত্যাকারী সনাক্ত করা না গেলে রাষ্ট্র তার ক্ষতিপূরণ দিবেঃ

সাহল ইবনে আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাকে তার কওমের কয়েকজন সম্ভ্রান্ত লোক জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে সাহল এবং মুহাইয়্যাসা দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে খায়বার এলাকায় গেলেন। অতঃপর মুহাইয়্যাসার নিকট লোক মারফত খবর পৌঁছলো যে, আবদূল্লাহ ইবনে সাহলকে হত্যা করে তার লাশ খায়বারের একটি গর্তে অথবা একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছে। মুহাইয়্যাসা (রাঃ) ইহূদীদের নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমরাই তাকে হত্যা করেছো। তারা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি।

অতঃপর তিনি তার গোত্রে ফিরে এসে তাদের নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি ও তার বড় ভাই হুয়াইয়্যাসা এবং আবদুল রহমান ইবনে সাহল (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন। খায়বারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুহাইয়্যাসা (রাঃ) কথা বলতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ জ্যেষ্ঠকে, জ্যেষ্ঠকে অগ্রাধিকার দাও। তিনি বয়সে বড় বুঝাতে চাচ্ছিলেন। হুওয়াইয়্যাসা কথা বললেন, তারপর মুহাইয়্যাসা কথা বললেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইহূদীরা হয় তোমাদের সঙ্গীর দিয়াত প্রদান করবে অথবা যুদ্ধের ঘোষণা দিবে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি সম্পর্কে পত্র লিখলে ইহূদীরা প্রতি উত্তরে লিখে পাঠায়, আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুওয়াইয়্যাসা, মুহাইয়্যাসা ও আবদুর রহমান (রাঃ)-কে বললেনঃ তোমরা কি শপথ করে তোমাদের সঙ্গীর খুনের বদলা দাবি করতে পারো? তারা বললো, (আমরা শপথ করবো) না। তিনি বলেনঃ তারা তো মুসলিম নয় (মিথ্যা শপথ করবে)।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের অর্থাৎ (রাষ্ট্রের) পক্ষ থেকে তার দিয়াত পরিশোধ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট একশত উষ্ট্রী পাঠান এবং সেগুলি তাদের বসতিতে পৌঁছে গেলো। সাহল (রাঃ) বলেন, সেগুলির মধ্যকার একটি লাল উষ্ট্রী আমাকে লাথি মেরেছিল। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৭৭, ২৬৭৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭০২, ৩১৭৩, ৬১৪২, ৬৮৯৮, ৭১৯২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪২২, নাসায়ী ৪৭১০, ৪৭১১, ৪৭১২, ৪৭১৩, ৪৭১৪, ৪৭১৫, ৪৭১৬, ৪৭১৭, ৪৭১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৬৩৮, ৪৫২০, ৪৫২১, ৪৫২২, ৪৫২৩, আহমাদ ১৫৬৬৪, ১৬৬২৫, মুয়াত্তা মালেক ১৬৩০, ১৬৩১, দারেমী ২৩৫৩, ইরওয়া ১৬৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ভুলবশতঃ হত্যা করলে ক্ষতির পরিমাণঃ

 আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ভুলবশত হত্যা (কাতলে খাতা) হলো শিবহে আম্দ-এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন চাবুক বা লাঠির আঘাতে মৃত্যু। এতে এক শত উট (দিয়াতস্বরূপ) দিতে হবে। তার মধ্যে চল্লিশটি হতে হবে গর্ভবতী। (সুনান ইবনু মাজাহ  ২৬২৭, ২৬২৮, নাসায়ী ৪৭৯১, ৪৭৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)৪৫৪৭, দারেমী ২৩৮৩, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/৬৫, ইরওয়া ২১৯৭, ২৫৭, আত-তালীকু আলাত তানকীল ৪/৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুনীকে ক্ষমা করবে কে, রাষ্ট্রপতি নাকি নিহতের পরিবার?

বাংলাদেশ সংবিধানের ১ম পরিচ্ছেদ ৪৯ নং ধারায় উল্লেখ আছে  “কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে”।

উক্ত ধারার ক্ষমতাবলে একজন রাষ্ট্রপতি যেকোনো খুনীসহ যেকোনো অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন।

কিন্তু ইসলামে ক্ষমা করার বিষয়টি ছেড়ে দেয়া হয়েছে নিহতের পরিবারের উপর। কেউ কাউকে খুন করলে নিহতের পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে ইসলাম তাকে তিনটি শর্ত দিয়ে দেয়। শর্ত তিনটি হচ্ছে,

(ক)  নিহতের পরিবার খুনের পরিবর্তে খুনীকে খুন করবে তথা কিসাস আদায় করবে।

(খ)  অথবা দিয়াত বা ক্ষতিপূরণ আদায় করবে।

(গ)  নতুবা ক্ষমা করে দিবে।

এখানে তিনটির যেকোনো একটি করতে হবে। দুইটি এক সাথে আদায় করা যাবে না।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা, আল্লাহর এই আইন আজ মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে চালু নেই। (ব্যতীক্রম ১/২টি রাষ্ট্র)। যেসব রাষ্ট্রে অনৈসলামিক দল ক্ষমতায় আছে সেইসব রাষ্ট্রে ইসলামি কোনো সমাজ ব্যবস্থা নেই। অথচ মুসলিম নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল যে, তারা সরকার গঠন করলে ইসলামি আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে কিন্তু সেই দায়িত্ব থেকে তারা সরে এসে মানবরচিত আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এর জন্যে দায়ী মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সেইসব ভোটার যারা তাদেরকে ভোট দিয়ে ইসলাম বিমূখী হতে সহযোগীতা করেছে।

(৪) ন্যায়বিচারে স্বজনপ্রীতি করা নিষেধঃ

প্রত্যেক কাজে স্বজনদের অগ্রাধিকার দেয়াকে স্বজনপ্রীতি বলে। এটা শরী‘আতে নিষিদ্ধ।

আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর স্বাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্টতর”। (সূরা আন-নিসা : ১৩৫)।

তিনি আরো বলেন, “কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করবে, এটা তাক্বওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী”। (সূরা আল-মায়েদাহ: ৮)।

স্বজনপ্রীতি সমাজ নষ্ট করার বড় একটি মাধ্যম। ইসলামে কোনদিনই স্বজনপ্রীতিকে স্থান দেয়া হয়নি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। মাখযূম গোত্রের এক চোর নারীর ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুললো। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয়তম উসামা বিন যায়িদ (রাঃ) এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমাঙ্ঘনকারিণীর সাজা মাওকুফের সুপারিশ করছ? অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুত্বায় বললেন, তোমাদের পূর্বের জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোন অসহায় গরীব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার উপর হদ্ জারি করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতিমাহ চুরি করত তাহলে আমি তার অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৪৭৫, ২৬৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) অনৈসলামিক দলকে সমর্থন করলে ও ভোট দিলেঃ

পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ডানপন্থী ও বামপন্থী রাজনৈতিক দল আছে। ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যে কিছু দল আছে যারা ইসলামকে সমর্থন করে কিন্তু ইসলামি আইন অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করে না। এরাও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যে আর কিছু দল আছে যারা সরাসরি ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বা ইসলামি আইন অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনায় লড়াই করে যাচ্ছে।

বামপন্থী দলগুলো ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে থাকে। ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম বা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা কিংবা ইসলামি আইন অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করা তাদের সংবিধানে নেই। এ নিয়ে তারা কথাও বলেন না কাজও করেন না। বরঞ্চ তারা ক্ষমতায় থাকলে ইসলামপন্থী দলগুলোর উপর দমন, নিপিড়ন, নির্যাতন, জেলবন্দী, মামলা, হামলা, অপহরণ, গুম, খুন ইত্যাদি করে থাকে। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে যারা মুসলমান তারাও সালাত আদায় করে, কালিমা পাঠ করে, হজ্জ করে, সাওম রাখে, দান করে তথা ইসলামি কিছু কর্মকান্ড পালন করে থাকে। কিন্তু এরা ইসলামি আইন, জিহাদ, ইসলামি দাওয়াতীর কাজের ঘোর বিরোধী।

অনৈসলামিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ

(ক)  কুরআনকে এরা সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না।

(খ) ইসলামি আইন অনুসারে এরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে না।

(গ)  ইসলামি আইন অনুসারে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে না।

(ঘ)  তারা সমাজে সালাত প্রতিষ্ঠা করে না।

(ঙ) যাকাত আদায় করে না।

(চ)  তারা সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাঁধা দেয় না।

অথচ আল্লাহ বলেন,

“আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ) ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে। আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে”। (সুরা আল হজ্জ ৪১)।

(ছ)  পর্দার বিধান প্রতিষ্ঠিত করে না।

(জ) রাষ্ট্রীয়ভাবে অশ্লীলতা/বেহায়াপনা বন্ধের ব্যবস্থা করে না।

(ঝ)  মদের আমদানী, মদের উৎপাদন, মদ বিক্রি ও মদ পানের লাইসেন্স দিয়ে থাকে।

(ঞ) রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাজে সুদের প্রচলন করে থাকে। এরকম শত শত ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড আছে যেগুলো অনৈসলামিক দলের নেতাগণ ক্ষমতায় গেলে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে থাকে।

এখন আপনি একজন মুসলিম ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যখন অনৈসলামিক দলের প্রতীকে সিল মারলেন আর তখনই ঘোষণা দিয়ে বললেন যে, আমি আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর আইন মানি না। তথা বিরুদ্ধাচরন করলেন। তাহলে আপনি একজন মুসলমান হিসেবে এযাবত যতো আমল করলেন সব বরবাদ হয়ে যাবে। আসুন আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এ সম্পর্কে কী বলেন তা জেনে নেই।

(ক) আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা হবে চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত”। (সুরা আল মুজাদালা ২০)।

(খ) আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং বিশ্বাসীদের পথ ভিন্ন (ইসলামি দল ব্যতীত) অন্য পথ (অনৈসলামিক দল) অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!”। (সুরা নিসা ১১৫)।

(গ) আল্লাহ বলেন, “তোমরা সীমালংঘনকারী অপরাধী পাপিষ্ঠদের (নেতৃত্বের) আনুগত্য করো না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং সংস্কার সংশোধন করে না।” (সূরা আশ শুয়ারা ১৫১-১৫২)।

(ঘ) আল্লাহ আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর এবং তাঁর রাসূলের আর সেই সব লোকের , তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত (আমীর) হয়েছে।” (সূরা আন নিসা ৫৯)।

(ঙ) আল্লাহ বলেন, “যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সাক্ষ্য (সৎ লোক) বর্তমান রয়েছে তা যদি সে গোপন করে (অসৎ লোককে ভোট দেয়) তবে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে? জেনে রেখ, তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ মোটেই বেখবর নন।” (সূরা আল বাকারাহ ১৪০)।

(চ) আল্লাহ বলেন, “কল্যাণকর কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কর, আর গুনাহ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করো না।” (সূরা আল মায়িদাহ ২)।

(ছ) আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।” (সূরা আলে ইমরান ২৮)।

(জ) আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠা করো।” (সূরা আত তালাক ২) ।

(ঝ) আল্লাহ আরও বলেন, “তোমরা কখনই সাক্ষ্য গোপন করবে না, যে সাক্ষ্য গোপন করে তার মন পাপের কালিমাযুক্ত।” (সূরা আল বাকারাহ ২৮৩)।

(ঞ) আল্লাহ বলেন, “হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দাও; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়। সে বিত্তবান হোক অথবা বিত্তহীনই হোক, আল্লাহ উভয়েরই যোগ্যতর অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়-বিচার করতে খেয়াল-খুশীর অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কেটে চল, তাহলে (জেনে রাখ) যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন”। (সুরা নিসা ১৩৫)।

(ট) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা করল। আর যে আমীরের (নেতার) আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। প্রকৃতপক্ষে ইমাম (নেতা) হলেন ঢাল স্বরূপ। তার পিছন থেকে যুদ্ধ করা হয়, তার দ্বারা (শত্রুদের কবল থেকে) নিরাপত্তা পাওয়া যায়। সুতরাং শাসক যদি আল্লাহর প্রতি ভয়প্রদর্শন পূর্বক প্রশাসন চালায় এবং ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে এর বিনিময়ে সে সাওয়াব (প্রতিদান) পাবে। কিন্তু সে যদি এর বিপরীত কর্ম সম্পাদন করে, তাহলে তার গুনাহও তার ওপর কার্যকর হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৫৭, ৭১৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৫, আহমাদ ৮১৩৪, সহীহ আল জামি ৬০৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯৫, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো বিকলাঙ্গ কুৎসিত গোলামকেও তোমাদের শাসক (নেতা) নিযুক্ত করা হয়। আর সে আল্লাহ তা’আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালিত করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬২, ৩৬৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৯৮, সহীহ আল জামি ১৪১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩০০৪, ইসলামীক সেন্টার ৩০০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মনঃপূত হোক বা না হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৪৪, ২৯৫৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৬২৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৯৩, আহমাদ ৬২৭৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের নেতা হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং নামায নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করবো? তিনি বলেনঃ হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৬৫, আহমাদ ৩৭৮০, সহীহাহ ২/১৩৯, সহীহ আবু দাউদ ৪৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

উল্লিখিত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান যে, আল্লাহ ও রাসুল সাঃ যা করতে বলেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ইসলাম বিচ্যূত হওয়া যাবে না। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনাকে অবশ্যই ইসলামি দলকে ভোট প্রদান করতে হবে। যদি তা না করে, অন্য দল বা পথ মতকে সমর্থন করেন তাহলে আপনার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

আল্লাহ বলেন,

“আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন আইন/ধর্ম/পথ/মত গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত”। (সুরা ইমরান ৮৫০)।

আপনি একদিকে মুসলমান হিসেবে ধর্মকর্ম পালন করবেন আবার ভোটের সময় অন্য দলকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে সমাজে মদ, সুদ, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা প্রতিষ্ঠার কাজে সহযোগীতা করবেন, আপনি কেমন মুসলমান?

আল্লাহ বলেন,

”আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।” (সূরা মায়িদা: ২)।

আপনি নিজেকে যখন মুসলমান হিসেবে দাবী করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে ইসলামের আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে। নিষেধমূলক কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সহযোগীতা করা যাবে না।

আল্লাহ বলেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা যথার্থভাবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং তোমরা মুসলিম (পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না”। (সুরা আলে ইমরান ১০২)।

এখানে আল্লাহ তায়ালা একজন মুমিন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ  মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করতে নিষেধ করলেন কেনো? তার মানে আপনি উপরোক্ত কর্মকান্ডের জন্যে পুরোপুরি মুসলমান না। এরকম আরো আছে।

বর্তমান যুগে কোন্ পদ্ধতিতে ইসলামি খিলাফত বা ইসলামি রাষ্ট্র বা ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে?

আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালানো বা বিচার-ফয়সালা করা তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তাতে আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, পরিপূর্ণ রাজত্ব এবং পরিচালনা ক্ষমতার দাবী অনুযায়ী তাঁর হুকুম কার্যকর করার নামান্তর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলিম ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু এ আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র এক মা‘বূদের ইবাদাত করবে, যিনি ব্যতীত মা‘বূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয়। তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১)।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসেবে নামকরণ করেছেন। কারণ, তারাও আল্লাহর বিধানের মতো বিধান রচনা করতো। তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে ঐ সব পাদ্রি ও আলিমদের কাছে নতি স্বীকার করতো এবং তাদের অনুসরণ করতো। আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, তারা তো তাদের ইবাদাত করে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে। আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে। এটার নামই ইবাদাত।

আপনি জেনে নিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না; বরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়, তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফিক), দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফির, যালেম ও ফাসিক বলা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফিকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তখন কেমন হবে? অতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যে, কল্যাণ ও সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত।

অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোনো কথা বলুন, যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণের) আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবান রূপে পেত। অতএব, তোমার রবর কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০-৬৫)।

এখানে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবীদার মুনাফিকদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেনঃ

(১) মুনাফিকদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাগুতের নিকট বিচার-ফায়সালার জন্য গমণ করে থাকে। প্রত্যেক ঐ বিষয় বা ব্যক্তির নামই তাগুত, যে আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে। সমস্ত বিচার-ফায়সালা এবং হুকুমের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “জেনে রাখো! তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ করা। আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের রব।” (সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪)।

(২) তাদেরকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে আহ্বান করা হলে তারা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

(৩) তারা কোনো বিপদে পড়লে অথবা তাদের কৃতকর্ম মানুষের কাছে প্রকাশিত হয়ে গেলে শপথ করে বলে থাকে যে, সৎ উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। বর্তমানে যারা ইসলামের বিধান বাদ দিয়ে বানব রচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালায়, তাদের কথাও একই রকম। তারা বলে, আমাদের উদ্দেশ্য হলো যুগোপযোগী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের উপকার সাধন করা।

আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত চরিত্রের অধিকারী মুনাফেকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের খবর জানেন এবং তাদেরকে নসীহত করার জন্য এবং কঠোর ভাষায় কথা বলার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ দিয়েছেন। রাসূল পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, যাতে শুধুমাত্র তাঁদেরই অনুসরণ করা হয়। অন্য মানুষের অনুসরণ নয়। তাদের চিন্তাধারা ও মতবাদ যতই শক্তিশালী হোক না কেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজের রুবূবীয়্যাতের শপথ করে তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতীত কারও ঈমান সংশোধন হবে না।

(ক) সকল প্রকার বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের দিকে ফিরে আসা।

(খ) রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য অন্তরকে প্রশস্ত করা।

(গ) পরিপূর্ণভাবে রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নেওয়া এবং কোনো প্রকার শীথিলতা ব্যতীত তা বাস্তবে রূপদান করা।

দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতসমূহে আল্লাহ বলেন,

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা কাফির।” (সূরা আলমায়েদা, আয়াত: ৪৪)।

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা যালেম।” (সূরা আলমায়েদা, আয়াত: ৪৫)।

“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে না, তারা ফাসিক।” (সূরা আলমায়েদা, আয়াত: ৪৭)।

যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনটি আয়াতে পরপর কাফির, যালেম এবং ফাসিক বলেছেন। তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে? অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল না, সে কাফির, ফাসিক এবং যালেমও বটে। কেননা আল্লাহ কাফিরদেরকে যালেম এবং ফাসিক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ বলেন, “বস্তুতঃ কাফিররাই প্রকৃত যালেম।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৪)।

আল্লাহ বলেন, “তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফুরী করেছে এবং ফাসিক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৮৪)।

সুতরাং যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ মনে করে এবং অন্য বিধানকে অধিক উপযোগী ও উপকারী মনে করে তার মাধ্যমে মানুষের বিচার-ফায়সালা করে, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যাবে। এদের অন্তর্ভুক্ত ঐ সমস্ত লোক, যারা মানুষের জন্য পথ হিসাবে ইসলাম বিরোধী বিধান রচনা করে। তারা তাদের রচিত বিধানকে মানুষের জন্য অধিক উত্তম ও উপযোগী মনে করেই তৈরি করে থাকে। এ কথা স্বাভাবিকভাবেই জ্ঞাত হওয়া যায় যে, মানুষ এক পথ ছেড়ে দিয়ে যখন অন্য পথে চলে, তখন এটা মনে করেই চলে যে, প্রথম পথের চেয়ে দ্বিতীয় পথটি উত্তম।

উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রমানিত যে, আল্লাহর আইন দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা ও যাবতীয় বিচারিক কার্যক্রম চালাতে হবে। মুসলিম নেতাগণ কোনোক্রমেই মানুষের তৈরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না।

এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহর আইন আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করবে কারা?

এই পৃথিবীটা বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত। কোনো কোনো রাষ্ট্রে মুসলমানের সংখ্যা বেশী আবার কোনো কোনো রাষ্ট্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, খৃস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের সংখ্যা বেশী। যেসব রাষ্ট্রে মুসলমানের সংখ্যা বেশী সেইসব রাষ্ট্রের মুসলিম নেতৃবৃন্দের উচিৎ ছিল সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। কিন্তু তা না করে মুসলিম নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু দল আছে যারা ইসলাম পন্থী আর কিছু দল আছে ইসলাম পরিপন্থী। ইসলাম পরিপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সংবিধানে কুরআন ও সুন্নাহকে আইনের উৎস হিসেবে লিপিবদ্ধ নেই। তারা ক্ষমতায় গেলে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে মানবরচিত আইনে রাষ্ট্র শাসন করে থাকে। তারা বিশ্বাস করে “সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ” যা ইসলামে শিরক/কুফরি বাক্য হিসেবে পরিচিত। এ কারণেই অনেক আলেম বর্তমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটদানকে নাজায়েজ ঘোষণা দিয়েছে।

অনেক আলেম আছেন যারা ইক্বামাতে দ্বীন বা খেলাফত প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তারা বলেন যে, আগে তাওহীদের দাওয়াত দিতে  হবে। সমাজ থেকে আগে বিদআত, শিরক. কুফর উচ্ছেদ করতে হবে। আমি সেইসব আলেমদের বলছি, হ্যাঁ আগে তাওহীদের দাওয়াতই দিতে হবে। রাসুল সাঃ সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াতই দিতেন। আপনারা কি জানেন, রাসুল সাঃ এর তাওহীদের দাওয়াত দেয়াই মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল না, তাঁর মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। (এখানে তাওহীদ বলতে কালিমা, নামাজ রোজা, হজ্জ, যাকাত, ইসলামি শাসন ব্যবস্থা বা বিচার ব্যবস্থাসহ সকল প্রকার ইবাদত এবং আল্লাহ ও রাসুল সা এর আদেশ নিষেধ ও আল্লাহর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা)।

কাফির মুশরিকগণ যখন বুঝতে পেরেছে যে, রাসুল সাঃ এর কালিমার দাওয়াত শুধু দাওয়াতই না এটাকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করে তাদের কর্তৃত্ব বিনাশ করা বা তাদের দেব দেবীর প্রভুত্ব ধ্বংশ করা তখনই তারা সম্মিলিতভাবে রাসুল সাঃ কে সমূলে নির্মূল করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

এখানে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসুল সাঃ নবুয়তপ্রাপ্ত হোন ৬১০ সালে, হিজরত করেন ৬২২ সালে, হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের অভিযান-মার্চ ৬২৩ সালে, উবায়েদ ইবনে আল হারিসের অভিযান-এপ্রিল ৬২৩ সালে, আল খাররার অভিযান-মে ৬২৩ সালে, আবওয়া অভিযান-আগস্ট ৬২৩ সালে, বুওয়াত অভিযান-সেপ্টেম্বর ৬২৩ সালে, সাফওয়ান অভিযান-সেপ্টেম্বর ৬২৩ সালে, উশাইরা অভিযান-ডিসেম্বর ৬২৩ সালে, নাখলা আক্রমণ-জানুয়ারি ৬২৪ সালে, এরপর রাসুল সাঃ বদরের যুদ্ধে অংশ নেন ২ হিজরির ১৭ রমজান, ৬২৪ সালে। এভাবে রাসুল সাঃ এর জীবদ্দশায় ২৭টি বড় ধরনের যুদ্ধ (গাজওয়া), ৬০টি ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ (সারিয়া) সংঘটিত হয়। এর মধ্যে রাসুল সাঃ সশরীরে ১৯টি যুদ্ধে অংশ নেন।

আবূ ইসহাক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনু আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়টি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, ঊনিশটি। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কয়টি যুদ্ধে তাঁর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরটিতে। বললাম, এসব যুদ্ধের কোনটি সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল? তিনি বললেন, ‘উশাইরাহ বা ‘উশায়র। বিষয়টি আমি ক্বাতাদাহ (রহ.)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনিও বললেন, ‘উশায়র। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৪৯, ৪৪০৪, ৪৪৭১,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৯২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে, রাসুল সাঃ এর দাওয়াতী কাজ সমাপ্তই হয়নি কেবল চলমান তাতেই কাফির মুশরিকদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে।

যারা বলেন আগে দাওয়াত পরে খেলাফত, তাদেরকে আমি বলছি আমাদের সমাজ থেকে দাওয়াতী কাজ দিয়ে সুদ আর মদ উচ্ছেদ করে দেখান দেখি। সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাইলে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রয়োজন। আপনি এমন এক রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেন, যারা সরকার গঠন করে সুদের প্রচলন ঘটালো, মদের লাইসেন্স দিলো, সেখানে দাওয়াতী কাজ  দিয়ে ১০০ বছরেও সেসব উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। সমাজ ও রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হলে এমন এক দল প্রতিনিধি বা খলিফা বা নেতা নির্বাচিত করতে হবে বা ক্ষমতায় বসাতে হবে যারা সরকার গঠন করে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে।

এখন প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে কারা বা কিভাবে কায়েম হবে?

এখানে অনেকের একটা ভুল ধারণা আছে যে, রাসুল সাঃ সশস্ত্রে জিহাদে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। এই ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে মুসলিম সমাজের কিছু জিহাদী কর্মী সশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বোমা ফাটিয়ে বা অতর্কিত হামলা চালিয়ে জান মালের ক্ষতি করে বসে। এরুপ কর্মকান্ডের জন্যে বহির্বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের নিকট ইসলামি ফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদেরকে জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করছে।

এখানে আসল কথা হলো, রাসুল সাঃ ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় কাফির মুশরিকদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েননি। যখন বাঁধা এসেছে সেই বাঁধাকে প্রতিহত করতে তিনি যুদ্ধে গিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাঃ কে প্রেরণ করে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন। রাসুল সাঃ আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধি। এখানে জনগণের পরামর্শক্রমে রাসুল সাঃ কে নির্বাচিত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু রাসুল সাঃ এর ইন্তেকালের পর পরবর্তী যারা প্রতিনিধি বা খলিফা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা ঠিকই অন্যান্য সাহাবাগণের পরামর্শক্রমেই হয়েছেন।

নির্বাচন একটি প্রাচীন পদ্ধতি ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি বিধান। ইসলামের ইতিহাসে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, আল্লাহর নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর দাফন-কাফনের আগে ইসলামী বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান এবং খলিফা নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে হজরত আবু বকর (রা.)-কে সাহাবাদের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত করা হয়।

নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ইসলাম সর্বদা ব্যক্তির সততা, যোগ্যতা, খোদাভীতি, ঈমান-আমল, জ্ঞান ও চারিত্রিক গুণাবলীকে প্রাধান্য দিয়েছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া যেমন জরুরি, প্রার্থী বা নির্বাচিত ব্যক্তিও তেমন সৎ-যোগ্য, জ্ঞানী-গুণী, চরিত্রবান, খোদাভীরু, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, দেশপ্রেমিক, মানবদরদি ও দায়িত্বানুভূতিসম্পন্ন হওয়া তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন।

আপনি কাকে ভোট দিবেন?

যে সরকার আল্লাহর নাযিলকৃত আইন দিয়ে শাসন করে না, শরিয়া আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না কোন মুসলমানের জন্য সে সরকারে যোগ দেয়ার প্রত্যাশায় নিজেকে মনোনীত করা জায়েয নয়। তাই এ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য কোন মুসলমানের নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে নির্বাচিত করা জায়েয নেই। তবে কোন মুসলমান যদি এ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয় কিংবা অন্যকে নির্বাচিত করে যে, এর মাধ্যমে এ শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে, নির্বাচনে অংশ গ্রহণকে তারা বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর আধিপত্যবিস্তার করার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে সেটা জায়েয। তবে, সে ক্ষেত্রেও যে ব্যক্তি প্রার্থী হবেন তিনি এমন কোন পদ গ্রহণ করতে পারবেন না যা ইসলামি শরিয়ার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

রাসুল সাঃ এর সময়ে দাওয়াতী কাজের বাঁধাকে প্রতিহত করতে রাসুল সাঃ সাহাবাদের সাথে নিয়ে আল্লাহর হুকুমে সশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জিহাদে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন ঠিক বর্তমান যুগে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা লক্ষ্যে একটি ইসলামি দলকে ভোট প্রদানের মাধ্যমে সরকার গঠনে সহযেগিীতা করা এক প্রকার জিহাদ। তাই হয় নিজে একটি ইসলামি দল গঠন করে সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন অথবা অন্য একটি ইসলামি দলে যোগদান করে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন তাওহীদের দাওয়াতী কাজ আর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কাজ একই সাথে চালিয়ে যেতে হবে। যে দাওয়াতী কাজে বাঁধা নেই সেটা কোনো দাওয়াতী কাজ নয়।

অতএব, যে বলবে তিনি মুসলমান তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর তৈরী আইনের মধ্য দিয়েই জীবন যাপন করতে হবে। আপনি কিন্তু সেই শর্ত মেনে নিয়েই মুসলমান হয়েছেন বা নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিচ্ছেন। মুসলমান হিসেবে আপনাকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো আইন, মতবাদ বা পথ গ্রহণ করা যাবে না। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে আপনাকে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন এর সাথে সম্পৃক্ত রাখা চলবে না। আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরে রাখতে চাইলে জামায়াত বদ্ধ হয়ে ইসলামের রাজনীতি অবশ্যই করতে হবে। কোনো ক্রমেই অনৈসলামিক দলকে বা রাজনীতিকে ভোট দেয়া বা সমর্থন করা কিংবা মিটিং মিছিলে যোগ দেয়া যাবে না। কারণ অনৈসলামিক দলের নেতাগণ ভোটে নির্বাচিত হয়ে মানুষের তৈরী আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আর ইসলামি দলের নেতাগণ বিজয়ী হলে আল্লাহর আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এখন আপনি মুসলমান হিসেবে কাকে ভোট দিয়ে কার পক্ষে থাকতে চান? এখানে বিবেকের উপর নির্ভর করে জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারণ করার দায়িত্ব আপনার। যদিও জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত, এখন শুধু সত্যায়নটা করে দেখাবেন আপনার স্থানটা কোথায়?

(৬) রাষ্ট্র প্রধান বা শাসক ব্যতীত অন্য কারো হাতে বা পিরের হাতে বায়াত গ্রহণ করা ইসলামে নিষেধঃ

কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য মোতাবেক বায়াতের অর্থ হচ্ছে চুক্তিবদ্ধ হওয়া, অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া, আনুগত্যশীল হওয়া ইত্যাদি। ভারত উপমহাদেশে ভন্ড পির-অলিগণ বায়াতের মাধ্যমে সহজ সরল মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে মুরিদ বানায়। মুরিদ হওয়ার সময় লোকজন পিরের প্রতি আনগত্যশীল হওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। আসুন আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাঃ এসম্পর্কে কী বলেন তা জেনে নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয় যারা আপনার কাছে বাই’আত করে তারা তো আল্লাহরই হাতে বাই’আত করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। তারপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম বর্তবে তারই উপর এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, তবে তিনি অবশ্যই তাকে মহাপুরস্কার দেন”। (সুরা আল ফাতহ ১০)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনগণের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নীচে আপনার কাছে বাই’আত গ্ৰহণ করেছিল, অতঃপর তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি জেনে নিয়েছেন; ফলে তিনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয়ে পুরস্কৃত করলেন”। (সুরা আল ফাতহ ১০)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে নবী! মুমিন নারীগণ যখন আপনার কাছে এসে বাই’আত করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন আপনি তাদের বাই’আত গ্ৰহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। (সুরা মুমতাহিনা ১২)।

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)...আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে , তারা কষ্ট ও ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে আল্লাহ! সুখের জীবন আখিরাতের জীবন। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও। প্রত্যুত্তরে তারা বলে উঠেনঃ আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে জিহাদের বায়আত গ্রহন করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকি। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২৬৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৩৪, ২৮৩৫, ২৯৬১, ৩৭৯৫, ৩৭৯৬, ৪০৯৯, ৪১০০, ৬৪১৩, ৭২০১, আহমাদ ১২৭৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (বাইআত করার উদ্দেশ্যে) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনি ন’জনের বাইআত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই। অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইআত নিলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে। (হাদীস সম্ভার ৩৭৯৩, আহমাদ ১৭৪২২, হাকেম, সিলসিলাহ সহীহাহ ৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদিসটি প্রমাণ করে যে, শিরক ও বিদআতি পন্থায় যারা চলে তাদের বায়াত নেই।

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ).....উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা কোন এক মাজলিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন যে, তোমরা আমার কাছে এর উপর বাই’আত কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ব্যভিচার করবে না, চুরি করবে না এবং কাউকে হত্যা করবে না যাকে হত্যা করা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কিন্তু ন্যায়সঙ্গতভাবে (অর্থাৎ- কিসাস হিসেবে কিংবা বিয়ের পর যিনা করলে)। অতএব, তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তা পূর্ণ করবে, সে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে পাবে। আর যদি কেউ উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করে যাকে, তবে তাই তার জন্য কাফফারা (বদলা) হয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যক্তি উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয় অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তা গোপন রাখেন, তবে বিষয়টি মহান আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৫৩, ৪৩৫৫, ৪৩৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১২, ইসলামিক সেন্টার ৪৩১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন রকম লোকের সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (এক) ঐ ব্যক্তি, যে পথের পাশে অতিরিক্ত পানির মালিক কিন্তু মুসাফিরকে তাত্থেকে পান করতে দেয় না। (দুই) ঐ ব্যক্তি যে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে ইমামের বায়’আত গ্রহণ করে। (বাদশাহ্) ঐ লোকের মনের বাসনা পূর্ণ করলে সে তার বায়’আত পূর্ণ করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বায়’আত ভঙ্গ করে। (তিন) সে ব্যক্তি যে ’আসরের পর অন্য লোকের নিকট দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করতে গিয়ে এমন কসম খায় যে, আল্লাহর শপথ! এটার এত দাম হয়েছে। ক্রেতা সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে সে জিনিস কিনে নেয়। অথচ সে জিনিসের এত দাম হয়নি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২১২, ২৩৫৮, আহমাদ ১৪১৯, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭১৯, নাসায়ী ৪৪৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পৃথিবীতে যতো পির ও ভন্ড অলি আছে, এরা সব সময় মুরিদকে বুঝায় যে, তাদের নিকট বাইয়াত করা ফরজ। এখানেও এরা কুরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করেছে। আমি অপব্যাখ্যাগুলো তুলে না ধরে আসলে কার নিকট বাইয়াত করতে হয় সেটুকু আলোচনা করছি।

বাইআত করতে হয় শুধুমাত্র মুসলিম শাসকের হাতে। আহলে হিল্ল ও আকদ তাঁর হাতে বাইআত করবেন। আহলে হিল্ল ও আকদ হচ্ছে- আলেম সমাজ, সম্মানিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। এ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করার মাধ্যমে তাঁর কর্তৃত্ব সাব্যস্ত হবে। সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করতে হবে না। বরং তারা তার আনুগত্য করবে যতক্ষণ না সেটা গুনাহর আওতায় না পড়ে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল-এর নবীগণ তাদের ওপর শাসন পরিচালনা করতেন, যখন একজন নবী ইন্তেকাল করতেন তখন অপর আরেকজন নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই, তবে অনেক খলীফা হবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তখন আমাদের প্রতি করণীয় দিক-নির্দেশনা দিন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ প্রথমজনের বায়’আত পূর্ণ করো, অতঃপর তাদের হক আদায় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা শাসিতদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তাদের ব্যাপারে যাদের ওপর শাসক নিযুক্ত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৭১, আহমাদ ৭৯৬০, সহীহ আল জামি‘ ৪৪৬৬, ইরওয়া ২৪৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

এরপর তিনি (’উবাদাহ) বললেন, আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণরূপে শোনা ও মানার উপর বাই’আত করলাম। আরও (বাই’আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝাগড়া করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৫৬, ৭২০০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬৫ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৮, তিরমিযী ১৪৩৯, নাসায়ী ৪১৪৯, ৪১৫১৪, ৪১৫২, ৪১৫৩, ৪১৫৪, ৪১৬১, ৪১৬২, ৪১৭৮, ৪২১০, ৫০০২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬০০, ২৮৬৬, আহমাদ ৪৩৮৮, ১৫২২৬, ২২১৬০, ২২১৯২, ২২২০৯, ২২২১৮, ২২২৪৮, ২২২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬১৯, ইসলামিক সেন্টার ৪৬২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল-মাজেরি বলেন:

শুধু তারা ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করলে যথেষ্ট; সর্বসাধারণের বাইআত করা ওয়াজিব নয়। প্রত্যেক ব্যক্তিকে সশরীরে তার কাছে হাযির হয়ে হাতে হাত রাখতে হবে এটা জরুরী নয়। বরং প্রত্যেকে তার আনুগত্য করবে, তার কথা মেনে চলবে, তার বিরোধিতা করবে না, তার বিপক্ষে যাবে না।” (ফাতহুল বারী থেকে সংকলিত)।

ইমাম নববী ‘শরহে সহিহ মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন:

বাইআতের ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে, বাইআত শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইআত করতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। আহলে হিল্ল ওয়াল আকদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইআত করতে হবে সেটাও শর্ত নয়। বরং শর্ত হচ্ছে- আলেমসমাজ, নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালী লোকদের মধ্যে যাদেরকে একত্রিত করা সম্ভব হয় তাদের বাইআত করা...। প্রত্যেক ব্যক্তিকে ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে এসে হাতে হাত রেখে বাইআত করতে হবে এমনটি ওয়াজিব নয়। বরং সকলের উপর ওয়াজিব হচ্ছে- রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশ মেনে চলা, তার বিরোধিতা না করা, বিদ্রোহী না হওয়া।” ।

যেসব হাদিসে বাইআতের কথা এসেছে সেখানে বাইআত দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা উদ্দেশ্য। যেমন- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল কিন্তু তার গর্দানে বাইআত নেই সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমাম বা শাসকের আনুগত্য থেকে দূরে সরে গেল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, তার ঘাড়ে কোনো বায়’আত নেই, সে জাহিলিয়্যাতের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫১, সহীহাহ্ ৯৮৪, সহীহ আল জামি ৬২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাষ্ট্র প্রধান বা তার প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কেউ বায়াত গ্রহণ করলে তাকে হত্যা করার নির্দেশঃ

 আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’ খলীফার বায়’আত করা হয়, তখন তাদের দ্বিতীয়জনকে হত্যা করে ফেলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫৩, সহীহাহ্ ৩০৮৯, সহীহ আল জামি ৪২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।

’আরফাজাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে শীঘ্রই কলহ-বিবাদ ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভব হবে। সুতরাং উম্মাতের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত থাকার পরও যে ব্যক্তি বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করে ফেলো, সে যে কেউ হোক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৭, ৩৬৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৬২, নাসায়ী ৪০২২, আহমাদ ১৮২৯৫, ইরওয়া ২৪৫২, সহীহ আল জামি ২৩৯৩, ৫৯৪৬,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খলীফার (ইমামের) বায়’আত করল, স্বীয় হাতে হাত দিয়ে আনুগত্যের অঙ্গীকারাবদ্ধ হলো এবং অন্তর দিয়ে সে বায়’আতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল। সে যেন পরিপূর্ণরূপে তার আনুগত্য করে। তথাপিও যদি কেউ এসে (খিলাফাতের দাবি করে) প্রথম ইমামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে তোমরা তার গর্দান ভেঙ্গে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৪৮, নাসায়ী ৪১৯১, আহমাদ ৬৫০৩, সহীহাহ্ ১৪১, সহীহ আল জামি‘ ২৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬২৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এ হাদিসগুলো প্রত্যেকটি রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা সংক্রান্ত; এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

বিভিন্ন দলের হাতে বাইআত করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শাইখ সালেহ আল-ফাওযান বলেন: বাইআত শুধুমাত্র মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে করতে হবে। এ ছাড়া যতো বাইআত আছে এগুলো বিদআত। এ বাইআতগুলো অনৈক্যের কারণ। একই দেশের একই রাজ্যের মুসলমানদের উপর আবশ্যকীয় হলো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করা। একাধিক বাইআত করা নাজায়েয। (আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়াস শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ১/৩৬৭)।

রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বাইআত করার পদ্ধতিঃ

পুরুষের বাইআত করার পদ্ধতি হবে মৌখিকভাবে ও কর্মের মাধ্যমে অর্থাৎ মুসাফাহা করে। আর নারীদের ক্ষেত্রে শুধু মৌখিকভাবে। এ পদ্ধতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে সাহাবায়ে কেরামের বাইআতের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) এর উক্তি হচ্ছে- “না, আল্লাহর শপথ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত কখনো কোন নারীর হাতকে স্পর্শ করেনি। তিনি তাদেরকে মৌখিকভাবে বাইআত করাতেন।”

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

’উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার নারী যখন হিজরত করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসত, তখন তিনি আল্লাহরএ নির্দেশঃ- “হে মু’মিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের কাছে হিজরত করে আসে তখন তাদেরকে পরখ করে দেখ’’ অনুসারে তাদেরকে পরখ করতেন। (তারা সত্যিই ঈমান এনেছে কি না).....আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।’’ (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ১০)।

“আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ ঈমানদার নারীদের মধ্যে যারা আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত। তাই যখনই তারা এ সম্পর্কে মুখে স্বীকারোক্তি করত তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলতেন যাও, আমি তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! কথার দ্বারা বাই’আত গ্রহণ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনো কোন নারীর হাত স্পর্শ করেনি। আল্লাহর কসম! তিনি কেবল সেসব বিষয়েই বাই’আত গ্রহণ করতেন, যে সব বিষয়ে বাই’আত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাই’আত গ্রহণ শেষে তিনি বলতেনঃ আমি কথা দ্বারা তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ৫২৮৮, ২৭১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬, আহমাদ ২৬৩৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৫) ।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

ইমমা নববী (রহঃ) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন:

এ হাদিসে মহিলাদের হাত না ধরে মৌখিকভাবে বাইআত করানোর দলিল রয়েছে এবং পুরুষের হাত ধরে ও মৌখিকভাবে বাইআত করানোর দলিল রয়েছে।”

উল্লেখিত তথ্যের আলোকে এটাই প্রতীয়মান যে, শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক কোনো পির-অলির নিকট বায়াত গ্রহন করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। রাষ্ট্র প্রধান কিংবা তার প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কারো নিকট বায়াত করা হারাম। তাই আসুন পির-মুরিদী বর্জন করে আল্লাহ ও রাসুল সা: এর দেয়া বিধান মোতাবেক ইসলামের পথে চলি। যারা আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান মানবে না তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

(৭) যে জাতি নারী নেতৃত্ব মেনে নেয় বা নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পন করে সে জাতির কল্যাণ হবে নাঃ

আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ আসলো যে, পারস্যের (ইরানের) অধিবাসীরা কিস্রার কন্যাকে তাদের সম্রাজ্ঞী নিযুক্ত করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হতে পারে না, যারা দেশের শাসনভার কোনো মহিলার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪২৫, ৭০৯৯, নাসায়ী ৫৩৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৬২, সহীহাহ্ ২৬১৩, ইরওয়া ২৪৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) কোন দুনিয়ার স্বার্থের জন্য প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাঃ

কোন দুনিয়ার স্বার্থের জন্য প্রশাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন রকম লোকের সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (এক) ঐ ব্যক্তি, যে পথের পাশে অতিরিক্ত পানির মালিক কিন্তু মুসাফিরকে তাত্থেকে পান করতে দেয় না। (দুই) ঐ ব্যক্তি যে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে ইমামের বায়’আত গ্রহণ করে। (বাদশাহ্) ঐ লোকের মনের বাসনা পূর্ণ করলে সে তার বায়’আত পূর্ণ করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বায়’আত ভঙ্গ করে। (তিন) সে ব্যক্তি যে ’আসরের পর অন্য লোকের নিকট দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করতে গিয়ে এমন কসম খায় যে, আল্লাহর শপথ! এটার এত দাম হয়েছে। ক্রেতা সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে সে জিনিস কিনে নেয়। অথচ সে জিনিসের এত দাম হয়নি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২১২, ২৩৫৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭১৯, নাসায়ী ৪৪৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) রাষ্ট্রীয় কোনো পদ নিজে থেকে চেয়ে নেয়া নিষেধঃ

’আব্দুর রাহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আব্দুর রাহমান ইবনু সামুরাহ! রাষ্ট্রীয় পদ চেয়ে নিবে না। কারণ তোমার চাওয়ার কারণে তোমাকে পদ দেয়া হলে এর দায়-দায়িত্ব তোমার উপরই বর্তাবে (তুমি আল্লাহর সাহায্য পাবে না)। আর চাওয়া ছাড়া তোমাকে নেতৃত্ব পদ দেয়া হলে তুমি দায়িত্ব পালনে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সাহায্য পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী শাসক সর্বনিকৃষ্টঃ

আয়িয ইবনু ’আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শাসকদের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট শাসক সে, যে অত্যাচারী ও নিপীড়নকারী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩০, আহমাদ ২০৬৩৭, সহীহাহ্ ২৮৮৫, সহীহ আল জামি ২০৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৮১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যায় অত্যাচারী বা যুলুমকারী পরকালে আমলের দিক থেকে নিঃস্ব হয়ে জাহান্নামে যাবে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারী ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)। হাদিসের মান সহিহ।

(১১)  রাষ্ট্র প্রধান জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলেঃ

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তিকে যদি আল্লাহ তা’আলা প্রজাপালনের দায়িত্ব প্রদান করেন। আর সে তাদের জন্য কল্যাণকর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বা না পারে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২,দারিমী ২৮৩৮, সহীহাহ্ ২৬৩১, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৪০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) রাষ্ট্র প্রধান বা শাসক আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করলেঃ

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম জনতার ওপর যদি কোনো শাসক নিযুক্ত হয়, অতঃপর সে আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) ইসলামি শাসক বা নেতার আনুগত্য থেকে দূরে সরে গেলেঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ইসলামি) শাসক বা নেতার আনুগত্য থেকে দূরে সরে গেল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, তার ঘাড়ে কোনো বায়’আত নেই, সে জাহিলিয়্যাতের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৪৬৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫১, সহীহাহ্ ৯৮৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৪০, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) জিহাদের কামনা বাসনা না করলেঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, সে জিহাদ করেনি এবং মনে জিহাদের আকাঙ্ক্ষাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিক্বী অবস্থায় মারা গেলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫) জিম্মিকে কতল করলেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৬৬, ৬৯১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬)  অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলেঃ

(ক) কায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো (অনুবাদঃ) ’’হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা মাইদাঃ ১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। আবূ উসামা (রাঃ) -এর অপর সনদে এভাবে উক্ত হয়েছেঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৮, তাখরীজুল মুখতার ৫৪-৫৮, সহীহাহ ১৫৬৪, সহীহুল জামি ১৯৭৪, আহমাদ ৩০, আবূ ইয়া‘লা ১৩১, অন্য রিওয়ায়তে আবূ দাঊদ ৪৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের পাপাচারীদের বাধা দেয় না, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৭) বিদআতি আমলের সাথে জড়িত থাকলেঃ

বিদআতের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের প্রায় ৯০% মুসলমান বিভিন্নভাবে বিদআতি কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। বিদআতকে নির্মূল করতে যুগ যুগ ধরে চলছে ওয়াজ নসিহত, তর্কবিতর্ক ও লেখালেখি। বিদআত এতোই মধুর যে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দলিলসহ দেখিয়ে দিলেও বিদআতি আমল থেকে মুসলমানকে ফিরানো যাচ্ছে না। এতো বলার পরও যারা বিদআতি আমল চালিয়ে যাবে এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু হলে

(১ ) হাওযে কাওসারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে,

(২) তাদের ফরজ-নফল কোনো ইবাদত কবুল হবে না।

আসুন রাসুল সাঃ এসম্পর্কে কী বলেছেন তা জেনে নেই।

বিদআতিদেরকে হাওযে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে

(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: (হে লোক সকল!) কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, খালি দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- “আমি তোমাদেরকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনব যেমন প্রথমবার তৈরি করেছিলাম, এটা আমার প্রতিশ্রুতি, যা আমি অবশ্যই পূরণ করব"- (সূরাহ আল আম্বিয়া ২১: ১০৪)। [অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন,] সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরিধান করানো হবে, তিনি হবেন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমি দেখব যে, আমার উম্মতের কিছুসংখ্যক লোককে গ্রেফতার করে বামদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি বলব, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক, তারা যে আমার উম্মতের কিছু লোক। (কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?) তখন আল্লাহ বলবেন, যখন থেকে আপনি তাদেরকে রেখে পৃথক হয়ে চলে এসেছেন, তখন হতেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করে উল্টা পথে চলেছিল। তিনি (সা.) বলেন, তখন আল্লাহর নেক বান্দা ’ঈসা আলায়হিস সালাম যেমন বলেছিলেন অনুরূপ বলব, ’আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম ততদিনই আমি তাদের অবস্থা অবহিত ছিলাম....আপনি সর্বশক্তিমান ও মহাজ্ঞানী’ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৪৭, ৩৩৪৯, ৪৩৩৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৬৪০, ৬৫২৪, ৬৫২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭০৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪২৩, নাসায়ী ২০৮১, সহীহুল জামি ৭৮৭০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৫৭৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৩৪৬৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৪৩৯৫, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৪৮৩, মুসনাদে বাযযার ২০২৩, মুসনাদে আহমাদ ১৯৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের কাছে পৌছব। যে ব্যক্তি আমার কাছে পৌছবে, সে তার পানি পান করবে। আর যে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদেরকে আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, তারা তো আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হবে, আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে তারা যে কি সকল নতুন নতুন মত পথ তৈরি করেছে। তা শুনে আমি বলব, যারা আমার অবর্তমানে আমার দীনকে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক (অর্থাৎ এ ধরনের লোক আমার শাফা’আত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৪, সহীহুল জামি ২৪৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩১৬৬৭, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৭৭৯, মুসনাদে আহমাদ ৩৮১২, আবূ ইয়া'লা ৭৪৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯৮৫, শু’আবূল ঈমান ৩৬০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৪০৯৯, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৭৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসলামে নতুন কিছু প্রবর্তন করলে তা বর্জনীয়

(চ) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করবে যা তাতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। ইবনু ঈসা (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি আমাদের আচার-অনুষ্ঠানের বিপরীত কোনো কিছু প্রবর্তন করলে তা বর্জনীয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬০৬,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, আহমাদ ২৬০৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতে রাসুল সাঃ  হাওজে কাওসারের নিকট  সকল উম্মতের মধ্যে যাদের মুখ ও হাত-পা উজ্জ্বল দেখবেন তাদেরকে তিনি তারঁ উম্মত বলে চিনতে পারবেন

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার হাওযের (উভয় পার্শ্বের) দূরত্ব আয়লাহ ও ’আদন-এর মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকেও অধিক। তার পানি বরফের চেয়ে অধিক সাদা এবং দুধমিশ্রিত মধুর তুলনায় অনেক মিষ্ট। তার পানপাত্রসমূহ নক্ষত্রের সংখ্যা অপেক্ষা অধিক। আর আমি আমার হাওযের কাওসারে আগমন করা থেকে লোকেদেরকে (অন্যান্য উম্মতদেরকে) তেমনিভাবে বাধা দেব, যেমনিভাবে কোন লোক তার নিজের হাওয থেকে অন্যের উটকে পানি পানে বাধা দিয়ে থাকে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন কি আপনি আমাদেরকে চিনতে পারবেন? তিনি (সা.) বললেন, হ্যাঁ, সেদিন তোমাদের বিশেষ চিহ্ন থাকবে যা অন্যান্য উম্মাতের কারো জন্য হবে না। তোমরা আমার কাছে এমন অবস্থায় আসবে যে, তোমাদের মুখমগুল এবং হাত-পা উযূর কারণে উজ্জ্বল থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৬৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৭, সহীহুল জামি ৩৮২১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ১১৪৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ২৬১৮, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ১৪১৪৬, মুসনাদে বাযযার ৫০৫৬, মুসনাদে আহমাদ ২৭৯৬, সহীহ ইবনু খুযায়মা ২৭৩৩, শু’আবূল ঈমান ৪০৩৪, দারিমী ২৮৩৭, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ভালভাবে অযু করে কতোজনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। যারা সালাত আদায় করে না তাদেরকে কিয়ামতে রাসুল সাঃ চিনতে পারবেন না)

বিদআতিদের কোনো ফরজ-নফল ইবাদত আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না

(ক)  ইব্রাহীম তাইমী (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব ও এই সহীফায় যা আছে, এছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি। তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ এবং আইর পর্বত থেকে সওর পর্যন্ত মদিনা্ হারাম হবার বিধান। যে ব্যক্তি এর মধ্যে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা বিদ্আতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরজ ‘ইবাদাত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা ব্যতীত অন্যকে মাওলা হিসেবে গ্রহণ করে, তার উপর একই রকম লা‘নত। আর নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একইভাবে দায়িত্বশীল এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও তেমনি অভিসম্পাত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭২, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত হতে এ পর্যন্ত মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদ্‘আত উদ্ভাবণ করে কিংবা কোন বিদ্‘আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা, ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা’নত। তার কোন ফরজ কিংবা নফল ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর সকল মুসলিমের পক্ষ হতে নিরাপত্তা একই স্তরের। সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দেয়া নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করবে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত গৃহীত হবে না। আর যে স্বীয় মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার উপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত এবং ফেরেশতামন্ডলী ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরজ ‘ইবাদাত কবূল হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৭৯, ১১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫২ প্রথমাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আমি ওদের কৃতকর্মগুলির প্রতি অভিমুখ করে সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণা (স্বরূপ নিষ্ফল) করে দেব”। (সুরা ফুরকান ২৩)।

সাধারণ পাপীর চেয়ে বিদআতিরা বেশী কষ্টদায়ক আজাব ভোগ করবে

বিদাতীরা বেশি কষ্টদায়ক আযাবের শিকার হবে। কেননা বিদআত অবাধ্যতা থেকেও মারাত্মক। শয়তানের নিকট অন্যান্য পাপের চেয়ে বিদআত বেশি প্রিয়। কেননা অবাধ্যচারী ব্যক্তি তাওবাহ করে পক্ষান্তরে বিদাতীরা খুবই কম তাওবাহ করে। তার কারণ হলো বিদাতী মনে করে, সে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে পাপাচারী জানে যে, সে একজন পাপী/গুনাহগার। আর বিদাতী মনে করে সে একজন আনুগত্যশীল বান্দা, এগুলো ইবাদতের অংশ। আর এভাবেই বিদআত পাপাচার/অবাধ্যতা থেকে অধিকতর ক্ষতিকর হয়ে যায়। বিদআত অন্যান্য পাপাচার থেকে মারাত্মক হওয়ার কারণে বিদাতীদের সাথে উঠাবসা করা থেকে বারণ করা হয়। তাদের অনিষ্ট বড়ই মারাত্মক, যারাই তাদের সাথে চলাফেরা করে তারা তাদের প্রত্যেককেই প্রভাবিত করে। নিঃসন্দেহে অন্যান্য পাপাচার থেকে বিদআত বেশি খারাপ। বিদাতীর অনিষ্ট পাপাচারীর অনিষ্ট থেকে বেশি মারাত্মক।

(১) রসূল (সাঃ) বলেনঃ ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তাওবাহকে বিদাতীদের থেকে দূরে রাখেন।’’ (আছ সহীহাহঃ ১৬২০)।

(২) ইমাম সুফইয়ান আছ্ ছাওরী (রহ.) বলেনঃ "শয়তানের নিকট অবাধ্যতা বা পাপাচার থেকে বিদআত বেশি প্রিয়। কেননা পাপকাজ থেকে তাওবাহ করা হয়ে থাকে পক্ষান্তরে বিদআত থেকে তাওবাহ করা হয় না।" (মুসনাদে ইব্ন আল-জা‘দ ১৮৮৫, মাজমু‘ ফাতওয়া ১১/৪৭২)।

(৩) আবুল হাসান আল বাসরী (রহ.) বলেনঃ "তুমি কোন বিদাতীর সাথে বসো না। তার সাথে বসলে সে তোমার অন্তরকে অসুস্থ বানিয়ে দেবে।" (আল-ই‘তিসাম ০১ /১৭২, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া পৃ. ৫৪)।

(৪)  শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বিদাতীদের অনিষ্ট বিষয়ে বলেনঃ "যদি কেউ তাদের মুক্বাবিলা না করত তাহলে দীন ধ্বংস হয়ে যেত। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদলের আক্রমণ থেকে তাদের আক্রমণ মারাত্মক। কেননা তারা বিজয়ী হলে শুধু আনুগত্যই করে নিতে পারে; মন-মানসিকতা এবং দীন ধ্বংস করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিদাতীরা প্রথমেই মন-মানসিকতা নষ্ট করে দেয়।" (মাজমূ‘ ফাতওয়া ২৮/২৩২)।

(৫) শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বলেনঃ "সুন্নাহ ও ইজমা‘ দ্বারা প্রমাণিত যে প্রবৃত্তিপূজারী পাপী থেকে বিদাতী বেশি মারাত্মক।" (মাজমু‘ ফাতওয়া ২০/১০৩)।

বিদআতিকে সালাম দেয়া অনূচিত

আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ কিতাবে সালাম সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, ইমাম নববী রাহ আল-আযকার কিতাবে লিখেন,

বিদাতি এবং বড় গোনাহকে স্বীকারকারী যে আবার তাওবাহও করেনি,এমন ব্যক্তিদ্বয়কে সালাম না করাই উচিৎ এবং তাদের সালামের জবাব না দেয়াই উচিৎ। (আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ  ২৫/২৬৭)।

সুতরাং মিলাদ কিয়ামসহ বিভিন্ন বিদ'আতে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে সালাম না করাই উচিৎ। কেননা এতে তারা বিদ'আতের প্রতি আরো উৎসাহিত হবে এবং তাদেরকে সম্মান প্রদানের দরুণ সমাজে আরো বিদ'আত বেশী হবে।

নাফি’ ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এসে বললো, অমুক আপনার প্রতি সালাম জানিয়েছেন। তখন তিনি বলেন: আমার নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, সে নতুন বিষয় (বিদ’আত/মুহদাছ) উদ্ভাবন করেছে। ফলে যদি সে বিদ’আত সৃষ্টি করে, তবে তুমি তাকে আমার সালাম জানাবে না। (সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি) ৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যৎবাণী ও আমাদের করণীয়ঃ

আব্দুর রাহমান ইবনু আমর আস-সুলামী ও হুজর ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, একদা আমরা আল-ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট আসলাম। যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্তঃ ’’তাদেরও কোনো অপরাধ নেই যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য এলে তুমি বলেছিলেঃ আমি তোমাদের জন্য কোনো বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না।’’ (সূরা আত-তওবাঃ ৯২)।

আমরা সালাম দিয়ে বললাম, আমরা আপনাকে দেখতে, আপনার অসুস্থতার খবর নিতে এবং আপনার কাছ থেকে কিছু অর্জন করতে এসেছি। আল-ইরবাদ (রাঃ) বললেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করলেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্য জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন, তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তরগুলো বিগলিত হলো।

তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন কারো বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে (আমীর) একজন হাবশী গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদ’আত এবং প্রতিটি বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রচলিত বিদআতসমূহঃ

(১) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম উপলক্ষে ঈদে মীলাদুন্ নবী পালন করা।

(২) সকল প্রকার মিলাদ কিয়াম।

(৩) কবর, মাযার ও বিভিন্ন স্থান থেকে বরকত লাভ করা।

(৪) ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ইবাদত তৈরী করা।

(৫) ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা ও  উচ্চস্বরে যিকির করা।

(৬)  যিকির করার সময় আল্লাহর নাম মোবারকে কমবেশ করা।

(৭) দেড় লক্ষবার আয়াতে কারীমার যিকিরের জন্য মাহফিল অনুষ্ঠান করা।

(৮) মোহাররমের প্রথম রাত্রিকে যিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করা।

(৯) সফর মাসকে অশুভ মনে করা।

(১০) ২৭ রজবকে শবে মেরাজ মনে করে যিকিরের ব্যাবস্থা করা।

(১১) ১৫ শাবান যিকিরের মাহফিল অনুষ্ঠান করা।

(১২) সায়্যেদ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) নামে ওযীফা পড়া।

(১৩) সায়্যেদ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) নামে নেসবতকৃত সারা সপ্তাহে ওযীফা পড়া।

(১৪) দোয়া গান্জুল আরশ, দোয়া জামিলা, দোয়া সুরয়ানী, দোয়া আক্কাশাহ, দোয়া হিযবুল বাহার, দোয়া আমন, দোয়ায়ে হাবীব, আহাদ নামা, দরূদে তাজ, দুরূদে শাহী, দুরূদে তুনাজ্জিনা, দুরুদে আকবর, হফত্ হায়কল শরীফ, চেহেল কাফ, কাদহে মুআয্যাম, শশ কুফল, ইত্যাদি ওযীফাসমূহ গুরুত্বের সহিত পড়া।

(১৫) শব-ই বরাত পালন ও এর উদ্দেশ্যে রোজা থাকা।

(১৬) শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম বা এ উপলক্ষে কোন ইবাদাত করা।

(১৭) মৃত ব্যাক্তির জন্য- কুর’আন পড়া(মাদ্রাসা/হাফিজ খানা থেকে হুজুর/ছাত্র দিয়ে বা নিজে), কুলখানি, চল্লিশা, দু’আর আয়োজন, সওয়াব বখশে দেয়া।

(১৮) নাওয়ায়তুয়ান দিয়ে শুরু সকল নিয়্যাত পড়া।

(১৯) প্রসাবের পর ঢিলা কুলুখ নিয়ে ৪০ কদম হাঁটা, কাঁশি দেয়া উঠা বসা করা, লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে হাটাহাটি ইত্যাদি নির্লজ্জতা।

(২০) জায়নামাজের দুআ পড়া।

(২১) কবরে হাত তুলে সবাই একএে দূ’আ করা।

(২২) খতমে ইউনুস, তাহলীল, খতমে কালিমা, বানানো দরুদ পড়া এবং যতো প্রকার তাজবীহ খতম আছে সবই বিদাত, তাজবীহ দানা গননা করাও বিদাত।

(২৩) ১৩০ ফরজ মানা।

(২৪) ইলমে তাসাউফ বা সুফীবাদ মানা।

(২৫) জন্মদিন, মৃত্যুদিবস, মা, বাবা দিবস বিবাহবার্ষিকী, ভ্যালেন্টাইন ডে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস পালন করা ইত্যাদি।

আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ করো এবং ভিন্ন পথ (যেমন-সুফিবাদ বা তরিকত পন্থা, শিরক, কুফর ও বিদআতী পন্থা) অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে”। (সূরা আনআম ১৫৩)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে?” (সূরা ইউনুস ৩২)।

বিদআতি কর্মকান্ড নির্মূল করার উপায় কী?

যুগ যুগ ধরে মুসলিম সমাজ থেকে বিদআতকে নির্মূল করতে ওয়াজ নসিহত, বাহাস, পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি ও বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশিত হয়ে আসছে। এভাবে দাওয়াত দেয়ায় মুষ্ঠিমেয় মুসলমান তাদের আকিদাহ পরিবর্তন করে সহিহ আকিদায় ফিরে এসেছে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই নগন্য।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষপট যদি ধরি তাহলে দেখা যাচ্ছে, সকল বিদআতের মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী সরকারি ও বেসরকারিভাবে অতি জাকজমকের সহিত প্রতি বছর পালিত হচ্ছে। ঈদে মিলাদুন্নবীকে নিয়ে যতোই লেখালেখি আর তর্কবিতর্ক চলুক না কোনো তা সরকারি হস্তক্ষেপ ব্যতীত বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই শুধু দাওয়াতি কাজ দিয়ে এই সমাজ থেকে শিরক ও বিদআত নির্মূল করা যাবে না। এসব নির্মূল করতে চাইলে দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি এমন এক সরকার প্রয়োজন যারা আইন দিয়ে এসব বন্ধ করবে। সৌদি আরবে পির পূজা, মাজার পূজাসহ বিদআতি কর্মকান্ড নেই কারণ সেখানে এসব কেহ করতে চাইলে তাকে সৌদি পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। তাই বাংলাদেশেও এসব বন্ধ করতে চাইলে চাই শিরক ও বিদআতমুক্ত সরকার।

(১৮) শিরকমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেঃ (দ্বিতীয় অংশে পাবেন)

(১৯) কুফরীমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেঃ

শরীয়তের পরিভাষায় ঈমানের বিপরীত অবস্থানকে কুফরী বলা হয়।কেননা কুফরী হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক। বরং তাদের ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয় ও সন্দেহ, উপেক্ষা কিংবা ঈর্ষা, অহংকার কিংবা রাসূলের অনুসরণের প্রতিবন্ধক কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ কুফরীর হুকুমে কোন পরিবর্তন আনয়ন করবেনা। যদিও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী বড় কাফির হিসাবে বিবেচিত। অনুরূপভাবে ঐ অস্বীকারকারী ও বড় কাফির, যে অন্তরে রাসূলগণের সত্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হিংসাবশতঃ মিথ্যা সাব্যস্ত করে থাকে। (মাজমু আল ফাতওয়া, ৩৩৫)।

কুফর দুই প্রকারঃ

(ক) এমন কুফর যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়ঃ ইহা পাঁচ প্রকার:

(১) মিথ্যারোপের কুফরিঃ আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে অস্বীকার করে তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? জাহান্নামই কি কাফেরদের আবাস নয়? (সূরা আনকাবূত ৬৮)।

(২) সত্য বলে জানার পরও অহংকার করার কুফরিঃ আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: এবং যখন আমি ফেরেশ্তাগণকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সিজদা কর তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহঙ্কার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল। (সূরা বাকারা ৩৪)।

(৩) সন্দেহের কুফরিঃ আর এটি হচ্ছে খারাপ ধারণা করা। আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: এ ভাবে নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল: আমি মনে করি না যে এটা কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং এটাও মনে করি না যে, কিয়ামত হবে, আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই তবে অবশ্যই আমি ইহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তদুত্তরে তার বন্ধু তাকে বলল: তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ? যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মানুষ্য আকৃতিতে? (সূরা কাহফ ৩৫-৩৭)।

(৪) প্রত্যাখ্যান করার কুফরিঃ এর দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: আর যারা কাফের তাদেরকে যা থেকে সতর্ক করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা আহকাফ ৩)।

(৫) নেফাকী কুফরিঃ এর দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: এটা এ জন্যে যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরি করেছে ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে, পরিণামে তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। (সূরা মুনাফিকূন ৩)।

(খ) ছোট কুফরিঃ

এর দ্বারা ইসলাম থেকে বের হবে না। আর এটি হচ্ছে নেয়ামতের অস্বীকার বা কুফরি।

এর দলীল হিসেবে আল্লাহ বলেন:

অর্থাৎ: আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এক জনপদের; যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিত, যেখানে সর্বদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ আসতো; অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল ফলে তারা যা করত তজ্জন্যে তাদেরকে আল্লাহ ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের স্বাদ গ্রহন করালেন। (সূরা নাহল ১১২)।

তিনি আরও বলেন:

অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মানুষ অতি মাত্রায় যালিম অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইব্রাহীম ৩৪)।

(২০) রাসুল সাঃ এর প্রতি মিথ্যারোপ করলেঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পক্ষ হতে (মানুষের কাছে) একটি বাক্য হলেও পৌঁছিয়ে দাও। বনী ইসরাঈল হতে শোনা কথা বলতে পারো, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮, বুখারী ৩৪৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সামুরাহ্ বিন জুনদুব ও মুগীরাহ্ বিন শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হতে এমন হাদীস বলে, যা সে মিথ্যা মনে করে, নিশ্চয়ই সে মিথ্যাবাদীদের একজন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামকে তার আবাস বানালো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৫৭, ২৬৫৯, রওযুন নাসীর ৭০৭, ৮৮৫, সহীহাহ ১৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(ঘ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ করো না। কেননা আমার প্রতি মিথ্যারোপ জাহান্নামে প্রবেশ করাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৬০, আহমাদ ৫৮৫, ৬৩০ ১০০৩, ১০৭৮, ১২৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২১) সুদের ব্যবসা করলে বা সুদ খেলেঃ

বর্তমানে আমাদের এই সমাজটা সুদী কারবারী অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। তথা কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে শুরু করে সকল ব্যাংক, সকল এনজিও, সকল সমিতি, সকল লাইফ ইন্সুরেন্সসহ সকল অনুরুপ প্রতিষ্ঠানে সুদভিত্তিক অর্থ লেনদেন করা হয়। এছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে দাদন ব্যবসা প্রথা চালূ আছে। যারা চড়া সুদে এই কারবারী করে থাকে। সম্প্রতি কিছু ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে বের হয়ে ইসলামি প্রথা মোতাবেক লেনদেন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এছাড়া অন্যান্য সুদী ব্যাংকে আপনার যদি একটি একাউন্ট থাকে আর একাউন্টে টাকা জমা থাকলে বছর শেষে পাঁচ পয়সা হলেও সুদের অংশ আপনার একাউন্টে জমা হচ্ছে। যতো চাকরিজীবি আছে তাদের বেতন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, তারাও সুদের অংশ উত্তোলন করছে। এছাড়া পেনশনে আসার পর ৯৮% চাকরিজীবিই যে প্রতিষ্ঠান বেশী সুদ দেয় সেখানে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখে মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিক সুদের অংশ তুলে সংসার চালায়। আবার এদিকে লম্বা তসবিহ হাতে, মাথায় টুপি পড়ে আল্লাহু আল্লাহ জিকির করে, অনেকে হজ্জে যায় তথা উপরি উপরি পাক্কা ঈমানদার সেজে সমাজে ঘুরে বেড়ায়। ইচ্ছে না থাকলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ সুদীকারবারীর সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ইচ্ছে অনিচ্ছে যাই থাকুক না কেনো সুদ প্রথা যেহেতু চালু আছে তাই সরকার যেমন দায়ী তেমনি আপনি ভোটার হিসেবে আরো বেশী দায়ী। কারণ আপনার সমর্থন নিয়েই সরকার এই  সুদী সমাজ ব্যবস্থা চালু করেছে। আসুন আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাঃ সুদ সম্পর্কে কী বলেন তা জেনে নেই।

আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকাওয়া অবলম্বন কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” । (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৮-২৭৯)।

আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির ন্যায় কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত হয়, সূদের অতলগহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সূদী কারবারে মূল দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে অভিশপ্ত।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী ২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই। মোটকথা, সূদের সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যে কোনোভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৫০, ৫১, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২২৫৯; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৫, ইবনুস সালাম এর তাখরিজুল ঈমান ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”। (মুসনাদে আহমদ ৫/২২৫; সহীহ আল-জামে‘ ৩৩৭৫)।

সূদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এ সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হলো, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা যতই স্ফীত হউক না কেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ২২৬২)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৯, আত-তালীক ৩/৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম। যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর পাগল হয়ে হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে(৩)। এটা এ জন্য যে তারা বলে(৪), ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রব-এর পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)।

যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও মহান রাব্বুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন।

তিনি বলেন,

“যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯)।

মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার থেকেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদহীন ভালো কোনো উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয নেই। বরং যে কোনো উপায়ে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, তা (ছওয়াবের নিয়তে) দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র বস্তু ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোনো কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। না পানাহারে, না পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন, স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের ওপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দায় মুক্তির জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।

কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশের পর কোনো হাদিয়া (উপহার) গ্রহণ করলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২২) সুদী ব্যাংকে বা সুদী কারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেঃ

সূদী ব্যাংকের বিষয়টি স্পষ্ট। সুদী কারবার করে এমন ব্যাংকে চাকুরী করা হারাম। কারণ, এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:  “পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ২)।

আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন এবং সূদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন (বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

হাম্মাদ ইবনু সাববাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ).....জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অতএব সূদী ব্যাংকে চাকুরীজীবি সূদ ভক্ষণকারীর ন্যায় পাপী হবে এবং তার যাবতীয় উপার্জন হারাম হবে। কিয়ামতের দিন পাপীদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আর আমরা তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব’। (ফুরক্বান ২৫/২৩)।

(২৩) কোনো মুসলমান মুনাফিকীকরণ বা চোগলখুরী বা দ্বিমুখীনীতি অবলম্বন করলেঃ

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে অন্তরে কুফরি ও ইসলামবিরোধিতা রেখে মুখে ও প্রকাশ্যে ইসলাম প্রকাশ করে এবং মুসলমান হওয়ার দাবি করে। এরা কেন এ কাজ করে, এর ব্যাখ্যায় কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, “তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না”। (সুরা বাকারা, আয়াত  ৯)।

অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা মূলত কাফিরদের কাছ থেকে মান-মর্যাদা পেতে চায়”।  (সুরা আন-নিসা, আয়াত ১৩৯)।

মুনাফিক মুসলমানদের  চিহ্নসমূহ,

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ

(১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;

(২) যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং

(৩) আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক্ব এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিক্বের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে-

(১) যখন তার নিকট কোন আমানত রাখা হয় সে তা খিয়ানত করে,

(২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে,

(৩) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং

(৪) যখন কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪, ২৪৫৯,৩১৭৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৭৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুনাফিক বা চোগলখোর বা দ্বিমুখী মুসলমানদের শাস্তিঃ

(ক) আল্লাহ বলেন.

“মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতমস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোন সহায় পাবেন না”। (সুরা নিসা ১৪৫)।

(খ) আল্লাহ  আরো বলেন.

“হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের (অবিশ্বাসীদের ও কপটদের) বিরুদ্ধে জিহাদ করুন আর তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। আর কত খারাপ তাদের পরিণতি।” (সূরা তওবা: ৭৩)।

(গ) উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আনবারী (রহঃ)...যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ ত্যাগ করে চলে এলো। তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়লো। কেউ বললো, আমরা তাদের হত্যা করে ফেলবো, আর কেউ বললো, না (আমরা তাদের হত্যা করব না)। তখন নাযিল হল, “তোমাদের কি হলো, তোমরা মুনাফিকদের সমন্ধে দু’দল হয়ে গেলে, যখন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাকে সৎ পথে পরিচালিত করতে চাও এবং আল্লাহ কাউকে পথভ্রষ্ট করলে তুমি তার জন্য কখনো কোন পথ পাবে না।” (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় কতিপয় মুনাফিক ব্যক্তির অভ্যাস এই ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যু্দ্ধের জন্যে বের তখন তারা পশ্চাতে থাকতো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করতো। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাগমন করলে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে ওজুহাত পেশ করতো, শপথ করতো এবং আশা করতো যেন তারা যা করেনি এমন কার্যের প্রশংসা করা হয়। তখন নাযিল হলঃ "যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে আপনি কখনো এরূপ মনে করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।" (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যে কোন মানুষের সাথে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এ জাতীয় লোক হবে সর্ব নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম।

(ঙ) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ব্যক্তিদের খনিজ ও গুপ্তধনের ন্যায় দেখতে পাবে। অতএব যারা জাহিলী যুগে উত্তম ছিল তারা ইসলামেও উত্তম বলে বিবেচিত হবে। যখন তারা দীনী জ্ঞানের অধিকারী হবে। কিংবা তোমরা এ ব্যাপারে অর্থাৎ ইসলামে উত্তম ব্যক্তি দেখতে পাবে যারা তার পূর্বে চরমভাবে ইসলামকে ঘৃণা করত। আর তোমরা সবচেয়ে খারাপ ব্যক্তি হিসেবে দেখতে পাবে সে সকল লোককে, যারা দ্বিমুখী চরিত্রের লোক- এরা এ দলের নিকট একমুখী কথা বলে পুনরায় অপর এক দলের নিকট এসে আরেক ধরনের রূপ নিয়ে উপস্থিত হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২২৪, ইসলামিক সেন্টার ৬২৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আম্মার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াতে দ্বিমুখী স্বভাবের লোকের কিয়ামতের দিন আগুনের দু’টি জিহ্বা হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো দ্বিমুখী চরিত্রের লোক। তারা এক দলের নিকট এক চেহারা নিয়ে এবং অপর দলের নিকট অন্য চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২৪) পর্ণ ও অশ্লীল-নগ্ন ভিডিও দেখলেঃ

আমাদের জানা জরুরি যে, আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন।

আল্লাহ বলেন, “আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছে এবং হারাম করেছেন পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” (সূরা আরাফ: ৩৩)।

ইসলামে পরপুরুষ বা পরনারীর দিকে কামনা-বাসনা সহকারে তাকানো হারাম। অনুরূপভাবে পরপুরুষ-পরনারীর লজ্জা স্থানের দিকে তাকানো হারাম। চাই তা সরাসরি হোক, বা ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক। পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে চোখের যিনা হয়।

অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা ইসরা: ৩৬)।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আচমকা নজর পড়া ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে, প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতের দিন আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। যেমন: আল্লাহ বলেন, “আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।” (সূরা ইয়াসিন: ৬৫)।

শুধু তাই নয়, আমরা প্রকাশ্যে বা গোপনে যা কিছু করি সব কিছু আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ফেরেশতামণ্ডলী রেকর্ড রাখছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের সব গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে-যদি আমরা তওবা না করি।

তাই চোখ ও মনের যিনা থেকে বাঁচতে অশ্লীল ভিডিও কিংবা পর্ণ ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকি।

(২৫) থার্টি ফার্স্ট নাইট, নববর্ষ দিবস কিংবা মঙ্গলশোভা যাত্রা  পালন করলেঃ

ইসলাম ধর্মে মুসলিমদের উৎসবের দিন দুইটি ১. ঈদুল আযহা ২. ঈদুল ফিতর। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে এ দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যে দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে, একে অপরের মধ্যে আনন্দ ভালোবাসা সুখ দুখ বিনিময় করবে। তাই ইসলামে উপরোক্ত দুটি উৎসবের দিন ছাড়া বাকি সব যেমন:- থার্টিফার্স্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, নববর্ষ দিবস, স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস, জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস, শোক দিবস,মা দিবস, বাবা দিবস, মে দিবস ইত্যাদি যত দিবস আছে এবার হোক সেটা আরবি, বা বাংলা, অথবা ইংরেজি,এক কথায় সকল দিবস পালন করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত এবং নিষিদ্ধ হারাম। তাই এই সকল দিবসে অংশগ্রহণ করা তো দূরের কথা দূর থেকে দেখাও যাবে না।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে এসে দেখেন, মদীনাহবাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু’টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধুলা করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৩৪, নাসায়ী ১৫৫৫, আহমাদ ৩/১৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসূল তো চাইলে বলতে পারতেন যে, তোমাদের দুই দিন থাক। সাথে এই দুটিও নাও। কিন্তু তিনি তা বলেননি। কারণ ইসলাম এসেছে হক প্রতিষ্ঠা করতে বাতিলকে বিলুপ্ত করতে প্রাচীন অপসংস্কৃতি জাহেলিয়াতকে অপসৃত করতে। ইসলাম আর জাহেলিয়াত কখনো এক হতে পারে না। উপরোক্ত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের জীবনে এই দুটি দিবস ছাড়া অন্য কোনো দিবস থাকতে পারে না সুতরাং এই সকল দিবস নিষিদ্ধ হওয়ার কয়েকটি কারন নিচে উল্লেখ্য করা হল।

প্রথমতঃ এই সকল দিবস রাসূল সাঃ নিজে অথবা তার ছাহাবীগণ কখনো নিজেরা পালন করেননি এবং এদিনগুলো কে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো আমল করেননি। তাছাড়া সব ধরনের দিবস পালন বিজাতীয় অপসংস্কৃতি ইহুদী-খ্রিস্টানদের অনুকরণ মাত্র। যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৩১, তিরমিযী ২৬৯৫, সিলসিলা ছহীহাহ ২১৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অপর বর্ননায় রাসূল (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (পথভ্রষ্ট হয়ে) তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অনুসরণ করবে বাহুতে বাহুতে, হাতে হাতে, বিঘতে বিঘতে। এমনকি তারা যদি দব্বের গর্তেও ঢোকে, তবে তোমরাও অবশ্যই তাতে ঢোকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! (পূর্ববর্তীগণ কি) ইহূদী-খৃস্টান জাতি? তিনি বলেনঃ তবে আর কারা! (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩১৯, আহমাদ ৮১০৯, ৮১৪০, ৮২২৮, ৮৫৮৭, ২৭২২৭, ১০২৬৩, ১০৪৪৬, আয-যিলাল ৭২, ৭৪, ৭৫, তাখরীজুল ইসলাহিল মাসাজিদ ৩৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮২০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দ্বিতীয়তঃ শারঈ কোন নির্দেশনা নেই এমন কোন কাজ মুসলিমরা করতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে। (সূরা আল-আহযাব ২১)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬০৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪, আহমাদ ২৩৯২৯, ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৫০২, ২৫৬৫৯, ২৫৭৯৭, ২৬০৩৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৬, ইরওয়া ৮৮, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৭০, সহীহাহ্ ২৩০২, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তৃতীয়তঃ এসকল দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের দ্বারা বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়। আল্লাহ বলেন, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই । (সূরা বনী ইসরাঈল ২৭)।

অপচয়কারীর জন্য আখেরাতে রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ বলেন,আর বাম পাশের দল। কতই না হতভাগ্য তারা! তারা থাকবে উত্তপ্ত বায়ু ও ফুটন্ত পানির মধ্যে। যা শীতল নয় বা আরামদায়ক নয়। ইতিপূর্বে তারা ছিল ভোগ-বিলাসে মত্ত’। (সূরা ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৪১-৪৫)।

চতুর্থতঃ এসব অনুষ্ঠান সমাজে অশ্লীলতা ও বেলাল্লাপনা প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। আর মহান আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা করা দুরে থাক অশ্লীলতার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন। (সূরা বনি ইসরাইল:৩২ আন‘আম ১৫১)।

পঞ্চমতঃ এই সকল দিবসকে কেন্দ্র করে সমাজে যা প্রচলিত আছে তার সবই বিজাতীয় কুসংস্কার অনেক ক্ষেত্রে শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী সভ্যতায় এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। কেননা নির্ধারিত দিনে কোনো কল্যাণ বা বরকত রয়েছে মনে করা শিরক। আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী [রাযিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ [ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হুনায়নের যুদ্ধে বের হলেন, তখন তিনি মুশরিকদের এমন এক গাছের নিকট দিয়ে গমন করলেন, যাতে তারা নিজেদের অস্ত্রসমূহ ঝুলিয়ে রাখত। উক্ত গাছটিকে ‘যাতু আনওয়াত’ বলা হত। এটা দেখে কোন কোন নতুন মুসলিমরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সমস্ত মুশরিকদের মতো আমাদের জন্যও একটি ‘যাতু আনওয়াত’ ধার্য করে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ >ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম][বিস্ময় প্রকাশে] বললেন, ‘সুবহা-নাল্ল-হ মূসা [আলাইহিস সালাম]-এর সম্প্রদায়ও তাকে বলেছিল, ‘হে মুসা! আমাদের জন্য এরূপ উপাস্য নির্ধারণ করে দিন যেরূপ ঐ কাফের সম্প্রদায়ের উপাস্য রয়েছে’। (আল আ’রাফ, ৭/১৩৮)।

আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ) হতে বর্ণিত। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হুনায়নের যুদ্ধে বের হলেন, তখন তিনি মুশরিকদের এমন এক গাছের নিকট দিয়ে গমন করলেন, যাতে তারা নিজেদের অস্ত্রসমূহ ঝুলিয়ে রাখত। উক্ত গাছটিকে ’যাতু আনওয়াত’ বলা হত। এটা দেখে কোন কোন নতুন মুসলিমরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! ঐ সমস্ত মুশরিকদের মতো আমাদের জন্যও একটি ’যাতু আনওয়াত’ ধার্য করে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) (বিস্ময় প্রকাশে) বললেন, ’সুবহা-নাল্ল-হ মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায়ও তাকে বলেছিল, “...(হে। মুসা!) আমাদের জন্য এরূপ উপাস্য নির্ধারণ করে দিন যেরূপ ঐ কাফির সম্প্রদায়ের উপাস্য রয়েছে...”(সূরাহ আল আ’রাফ ৭: ১৩৮)। তোমরাও তো সেরূপ কথা বললে, সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয় তোমরা ঐ সকল লোকদের পথ অনুকরণ করে চলবে, যারা তোমাদের আগে অতীত হয়ে গেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৪০৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৮০, মা'রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী ৫৬, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭৩৭৫, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৮৪৮, মুসনাদে আহমাদ ২১৯৪৭, আবূ ইয়া'লা ১৪৪১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭০২, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৩২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ষষ্ঠঃ মুসলিমদের অনেকেই বর্ষবরণ করতে দিয়ে শিরকের মত সবচেয়ে বড় পাপে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারা হচ্ছে। এই দিনে আর তাদের শ্লোগান হচ্ছে- “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরাঅগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা।”

উক্ত শ্লোগানে অগ্নিপূজকদের আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাস সু-স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ অগ্নিকে সম্মান করা, আগুনের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ধারণা করা শিরক। আর আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তার সাথে শিরক কারীকে ক্ষমা করবেন না।” (সূরা নিসাঃ৪৮)।

অপর আয়াতে শিরক কারীদের জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করেছেন। (সূরা মায়েদাহ:৭২)।

(২৬) বিবাহ বার্ষিকীতে ফটোগ্রাফারের কাজ করলেঃ

আমাদের অজানা নয় যে, বর্তমানে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি একটা পেশায় পরিণত হয়েছ। তরুণ-তরুণীরা বিয়ের উৎসবকে রীতিমত শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। নিত্যনতুন থিম, পোশাকের আইডিয়া, লোকেশন দিয়ে আনছে নতুনত্ব বিয়ের উৎসবে। ওয়েডিং ফটোগ্রাফি মানে শুধু বর-কণের ছবি নয় বরং বিয়েতে অংশ গ্রহণকারী তরুণ-তরুণী, দম্পতি, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি নানা জনের নানান পোজে ছবি তোলা। আমাদের সমাজে কথিত গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, বিয়ের মূল পর্ব আর সবার শেষ দিনে বৌ ভাত (ওলিমা অনুষ্ঠান) ইত্যাদি প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা যেন এক অপরিহার্য অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে!

যাহোক, ইসলামের বিধান হল, যে কাজটা হারাম সে কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা, তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা, তাতে অংশ গ্রহন করা, তাতে কোনও ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা, প্রচার-প্রসার করা এবং এ সংশ্লিষ্ট সব কিছুই হারাম।

সুতরাং যে সব বিয়ে অনুষ্ঠানে ফ্রি মিক্সিং তথা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হয়, বেপর্দা নারীর উপস্থিতি থাকে, নাচ-গান, অশ্লীলতা ও নানা ধরণের শরিয়া বিরোধী কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় সে সব অনুষ্ঠানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা তো দূরের কথা দাওয়াত খাওয়ার জন্যও অংশ গ্রহণ করা হারাম। শুধু তাই নয়, এ সব কাজের জন্য ক্যামেরা, মাইক, ডেক সেট, স্টেজ, প্যান্ডেল ইত্যাদি ভাড়া দেয়াও হারাম। কারণ এর মাধ্যমে হারাম কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি শয়তানকে খুশি করা হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর তোমা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।” (সূরা মায়িদা: ২)।

আরেকটি বিষয় হল, ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি দরকার ছাড়া মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু ইত্যাদির ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ).....আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের দিবসে মানুষের মধ্যে (কঠিন শাস্তি ভোগকারী হবে ছবি তৈরিকারীরা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৩০-৫৪৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ইবনুল মুসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ).....ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা ছবি প্রস্তুত করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে আর বলা হবে, তোমরা যা তৈরি করেছে তাকে জীবিত করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকেও এ সব অনুষ্ঠানের ছবি-ভিডিও করা, ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কোনটাই জায়েজ নয়।

আল্লাহ আমাদেরকে হালালভাবে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সব ধরণের হারাম কর্মকাণ্ড থেকে হেফাজত করুন।

(২৭) গান-বাদ্য কিংবা মিউজিক শুনাঃ

গান-বাদ্য কিংবা মিউজিক শুনাও হারাম কাজ এবং কবীরা গুনাহ্।

আবূ মা’লিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৫১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার কসম খেয়ে বলেন: আল্লাহ্’র বাণী:

“‘মানুষের মধ্য থেকে তো কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত: আল্লাহ্ তা‘আলার পথ থেকে অন্যদেরকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য তথা গান (কিংবা সেগুলোর আসবাবপত্র) খরিদ করে এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে (পরকালে) অবমাননাকর শাস্তি’’। (লুক্বমান : ৬)।

ইব্নু মাস্’ঊদ্ (রাঃ) কসম খেয়ে বলেন: উপরোক্ত আয়াত থেকে একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে গান-বাদ্য।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদ্যকে অভিসম্পাতও করেন। তিনি বলেন:

‘‘দুই ধরনের আওয়াজ দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নতপ্রাপ্ত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুখের সময়ের বাদ্য। আর অপরটি বিপদের সময়ের চিৎকার’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৮০১)।

বর্তমান যুগে নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের দ্রুত আবিষ্কার, গায়ক-গায়িকা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীর সরগরম বাজার, আধুনিক সুরের রকমফের, গানের ভাষা ও ইঙ্গিতের ভয়ানকতা ব্যাপারটিকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সুতরাং তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আর কারোর সামান্যটুকু সন্দেহের অবকাশও থাকতে পারে না। উপরন্তু গান হচ্ছে ব্যভিচারের প্রথম ধাপ এবং গান মানুষের মধ্যে মুনাফিকীরও জন্ম দেয়।

(২৮) হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যে কথা বললেঃ

বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, তার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছিঃ সেই লোক ধ্বংস হোক যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩১৫, গাইয়াতুল মারাম ৩৭৬,  তাহকীক ছানী ৪৮৩৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২৯) গিবত বা পরনিন্দা করলেঃ

গিবত বা পরনিন্দা ব্যাভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। গিবত মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। পার্থিব ও অপার্থিব কল্যাণ দূর করে দেয়। ইসলামে কাউকে সামনে থেকে নিন্দা করাও মারাত্মক অপরাধ।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, গীবত কী? তিনি বললেন, তোমার ভাইয়ের ব্যাপারে তোমার এমন কিছু বলা যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয়। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে বর্তমান থাকে? তিনি বললেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস”। (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ০১)।

একই সুরায় শাস্তির কথা বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায় (জাহান্নামের একটি স্তর)। আর কিসে তোমাকে জানাবে হুতামা কি? আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন। যা হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। নিশ্চয় তা তাদের আবদ্ধ করে রাখবে। প্রলম্বিত স্তম্ভসমূহে।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ০৪)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। (সুরা হুজরাত, আয়াত: ১১)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ পছন্দ করে? অনন্তর তোমরা তা অপছন্দ কর”। (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

 ‘আর তুমি আনুগত্য করো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক কসমকারী, লাঞ্চিত। পিছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখুরী করে বেড়ায়। ভালো কাজে বাধা দানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ। দুষ্ট প্রকৃতির, তা ছাড়া নিচু বংশীয় (কোনো কোনো অনুবাদে ‘যানিম’ এর অর্থ ‘নিচুবংশীয়’ এর স্থলে ‘জারজ’ও করা হয়েছে)।’ (সুরা ক্বালাম, আয়াত: ১০-১৩)।

‘গীবত’-এর পরিচয় প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জান গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভালো জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার মুসলিম ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা তার কাছে খারাপ লাগবে। জিজ্ঞেস করা হলো, যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সে ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তুমি যে দোষ-ত্রুটির কথা বললে, তার মধ্যে সে দোষ-ত্রুটি থাকলেই তো তুমি গীবত করলে। আর যদি দোষ-ত্রুটি বর্তমান না থাকে, তবে তুমি ’’বুহতান’’ (মিথ্যারোপ) করলে।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, যদি তুমি তোমার ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে রয়েছে, তবে তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তার সম্পর্কে এমন দোষের কথা বলো, যা তার মধ্যে নেই, তবে তুমি তার প্রতি ’’বুহতান’’ (মিথ্যা অপবাদ) দিলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৯, সহীহুল জামি ৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৪৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫৮, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৫১৮, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৬৯৫, সুনানুদ্ দারিমী ২৭১৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪৯৩, আহমাদ ৮৯৮৫, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাঊদ ৪৮৯৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের মানসম্মানের হস্তক্ষেপ করা ব্যাপকতর সুদের অন্তর্ভুক্ত (মহাপাপ)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মি’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমন্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো (গীবত করতো) এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল-মুসতাওরিদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক লোকমা ভক্ষন করবে আল্লাহ তাকে এজন্য জাহান্নাম থেকে সমপরিমাণ ভক্ষন করাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষত্রুটি বর্ণনার পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে অনুরূপ জাহান্নামের পোশাক পরাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির (কুৎসা) রটিয়ে খ্যাতি ও প্রদর্শনীর স্তরে পৌঁছবে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর জায়গাতেই (জাহান্নামে) স্থান দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান ও জীবনে হস্তক্ষেপ করা হারাম। কোনো ব্যক্তির নিকৃষ্ট প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ধারণা করা হতে বেঁচে থাক, কারণ, ধারণা করা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারও দোষ অনুসন্ধান করো না, দোষ বের করার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করো না, একে অন্যের হিংসা করো না, পরস্পরে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ আল্লাহর বান্দাহ হয়ে যাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭২৪, ৫১৪৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৩০) মুসলিম নারী খেলোয়াড় বনাম পর্দা ও শেষ পরিনতিঃ

খেলার মাধ্যমে একটি দেশ পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করে। যার ফলে প্রতিটি দেশেই বিভিন্ন প্রকার খেলার অনুশীলন করা করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলার মধ্যে রয়েছে, ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি, টেনিস ইত্যাদি। প্রতিটি খেলাতেই দেখা যায়, খেলোয়াড়গণ হাফ প্যান্ট ও জার্সি পরিধান করে। মহিলা খেলোয়াড়গণও একই পোশাক পরিধান করে খেলায় নামে। একজন মুসলিম যুবতী খেলোযাড় হাফ প্যান্ট ও জার্সি পরিধান করে খেলার মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়ি করবে আর তার খেলার পারফরমেন্স দেখে এবং সেই সাথে তার প্রদর্শিত অঙ্গসৌষ্ঠব দেখে দর্শকগণ বাহবা দিবে ইসলাম সেটাকে কোন দৃষ্টিতে দেখে।

একজন নারী খেলোয়াড় যখন মাঠে নামে তখন,

(ক) তার শরীরে পর্দার কোনো বিধান থাকে না।

(খ) অঙ্গসৌষ্ঠবগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় দর্শকদের চোখের ও মনের যিনা হয়।

(গ) খেলোয়াড়দের মধ্যে যারা সুন্দরী তাদেরকে নিয়ে যাদের মনের অসুখ আছে তারা কল্পনায় হাবুডুবু খেতে থাকে।  

(গ) পরপুরুষদের সাথে মেলামেশার সুযোগ হয়। যার ফলে অনেকে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় ইত্যাদি। এভাবে খেলাধুলা করায় পর্দার বিধান লংঘিত হওয়ায় ইসলাম নারী খেলাকে সমর্থন করে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(ক) “আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। (সুরা আননূর ৩১)।

(খ) আল্লাহ আরো বলেন,

“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমন্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াল”। (সুরা আহযাব ৫৯)।

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী বলেন, ভদ্র ঘরের মেয়েরা যেন নিজেদের পোশাক আশাকে বাদীদের মতো সেজে ঘর থেকে বের না হয়। তাদের চেহারা ও কেশদাম যেন খোলা না থাকে। বরং তাদের নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়া উচিত। ফলে কোন ফাসেক তাদেরকে উত্যক্ত করার দুঃসাহস করবে না।” (জামে উল বায়ান ২২/৩৩)।

আল্লামা আবু বকর জাস্‌সাস বলেন, “এ আয়াতটি প্রমাণ করে, যুবতী মেয়েদের চেহারা অপরিচিত পুরুষদের থেকে লুকিয়ে রাখার হুকুম দেয়া হয়েছে। এই সাথে ঘর থেকে বের হবার সময় তাদের ‘পবিত্রতাসম্পন্না’ হবার কথা প্ৰকাশ করা উচিত। এর ফলে সন্দেহযুক্ত চরিত্র ও কর্মের অধিকারী লোকেরা তাদেরকে দেখে কোন প্রকার লোভ ও লালসার শিকার হবে না।” (আহকামুল কুরআন ৩/৪৫৮)।

যামাখশারী বলেন, “তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের চাদরের একটি অংশ লটকে নেয় এবং তার সাহায্যে নিজেদের চেহারা ও প্রান্তভাগগুলো ভালোভাবে ঢেকে নেয়।” (আল-কাশশাফ ২/২২১)।

আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী বলেন, “নিজেদের ওপর চাদরের একটি অংশ লটকে দেয়। এভাবে মেয়েদেরকে মাথা ও চেহারা ঢাকার হুকুম দেয়া হয়েছে।” (গারায়েবুল কুরআন ২২/৩২)।

ইমাম রাযী বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকেরা যেন জানতে পারে এরা দুশ্চরিত্রা মেয়ে নয়। কারণ যে মেয়েটি নিজের চেহারা ঢাকবে, অথচ চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার কাছে কেউ আশা করতে পারে না যে, সে নিজের সতর অন্যের সামনে খুলতে রাজী হবে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি জানবে, এ মেয়েটি পর্দানশীন, একে যিানার কাজে লিপ্ত করার আশা করা যেতে পারে না।” (তাফসীরে কবীর ২/৫৯১)।

(গ) আল্লাহ বলেন,

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত”। (সুরা আন-নূর ৩০)।

(ঘ) আল্লাহ বলেন,

“হে নবী স্ত্রীগণ তোমরা অন্যান্য নারীদের মত নয়, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরের মানুষ প্রলুব্ধ হয়।” (সূরা আল-আহযাব: ৩২)।

(ঙ) আল্লাহ বলেন,

“(হে পুরুষগণ!) তোমরা তাদের (নারীদের) নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাইবে। এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র”। (সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৩)।

(চ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আচমকা নজর পড়া ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৯, সহীহ আল জামি ৬৬৯০, ইরওয়া ২৭৩, তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা ১৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ হে আসমা! মহিলা যখন বালেগা হয়, তখন তার শরীরের কোন অঙ্গ দৃষ্ট হওয়া উচিত নয়, তবে কেবলমাত্র এটা এবং এটা এ বলে তিনি তাঁর মুখ এবং তাঁর দু’ হাতের তালুর দিকে ইঙ্গিত করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩৭২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১০৪, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ১০৫১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৪৫, আল জামি‘উস্ সগীর ১৩৮০৫, সহীহুল জামি‘ ৭৮৪৭, ইরওয়া ১৭৯৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৭৯৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৮৭৮, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২৪৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তা’আলা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোন মেয়ের সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে যতক্ষণ না ঐ মেয়ের কোন মাহরাম তার সাথে থাকে। কারণ সে সময় তৃতীয়জন থাকে শয়তান।” (মুসনাদে আহমাদ ১/১৮)।

(ট) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫৩৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর বান্দার উপর ফার্য (ফরয)কৃত হাজ্জ আমার বয়োঃবৃদ্ধ পিতার উপর ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হাঁ (আদায় কর)। ঘটনাটি বিদায় হাজ্জের সময়ের। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫১৩, ১৮৫৪, ১৮৫৫, ৪৩৯৯, ৬২২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৩৪, আহমাদ ৩০৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ড) উকবাহ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, আহমাদ ১৭৩৫২, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে, প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রমানিত যে, মেয়েরা সাবালিকা হলে তাদেরকে পর্দা মেনে বাহিরে বের হতে হবে, পরপুরুষের সামনে কোমল কন্ঠে কথা বলা যাবে না, দৃষ্টি নারী-পুরুষ উভয়কে অবনত ও সংযত রাখতে হবে, লজ্জার স্থানের হেফাজত করতে হবে, পাতলা কাপড় পরিধান করা যাবে না, কোনো নারীর দিকে তাকানো যাবে না ইত্যাদি।

আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ উভয়ের যেখানে পর্দার বিধান ফরজ করেছে সেখানে নারীগণ বেপর্দায় পরপুরুষের সামনে চলাফেরা বা খেলাধুলা করবে তা আল্লাহ তায়ালার বিধানের বিরুদ্ধাচরণের  সামিল।

আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের কোনো রকম (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার থাকবে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল, সে নিঃসন্দেহে সুস্পষ্টভাবে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হলো।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন

“শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌঁছানো এবং তাঁর রিসালাতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে- কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।” (সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ২৩)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর, আর তোমরা তোমাদের আমলগুলো বিনষ্ট করো না।” (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৩)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন

“কাজেই যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপদ বা বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩)।

বেপর্দা নারীদের পরিনতিঃ

(ক) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু প্রকার লোক জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে দেখিনি। এক প্রকার ঐ সব লোক যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় ছড়ি থাকবে। তারা এর দ্বারা লোকেদের পিটাবে। দ্বিতীয় প্রকার ঐ শ্রেণীর মহিলা, যারা কাপড় পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ প্রায়, মানুষকে আকৃষ্টকারিণী ও স্বয়ং বিচ্যুত। যাদের মাথার খোপা বুখতী উটের পিঠের উঁচু কুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধি অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৮৬, ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৩০, ইসলামিক সেন্টার ৬৯৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮৪, ২৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৭, ৪৯৩০, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৮, ২১২৪, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯, রওয ৪৪৭, আল-আদাব ৪৪৭, হিজাবুল মারআহ ৬৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নারী খেলোয়াড় যখন মাঠে খেলতে নামে তখন যেমন এদের পর্দার কোনো বিধান থাকে না তেমনি সিনেমা, নাটক বা মঞ্চ নাটক, নৃত্যানুষ্ঠান ও গানসহ অনুরুপ শিল্পজগতের সাথে যারা জড়িত তারাও পর্দার বিধান মেনে চলে না। যেসব নারী পুরুষ অবাধ চলাফেরা, অবাধ মেলামেশা ও বিভিন্ন হোটেল, মদের বারসহ বিভিন্ন পার্ক, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট কিংবা শিক্ষাঙ্গনে বসে বসে ডেটিং করে এরা পর্দার বিধান মেনে চলে না। বর্তমান সমাজে আধুনিক অবৈধ মেলামেশা যেমন লিভটুগেদার, গ্রুপ চ্যাটিং ও সমকামিতা বেড়েই চলছে। এছাড়া ডিজিটাল মেলামেশার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ভিডিও কলিং এ্যাপস। এসব মাধ্যমে তরুন-তরুনীরা নিজের শরীর খুলে এমনকি বিভিন্ন সেক্সটয় দিয়ে সেক্সজুয়াল বিষয়গুলো দেখিয়ে অপজিট লিঙ্গকে উত্তেজিত করে তুলছে।

উল্লিখিত বিষয়ে পর্দার বিধান বলতে কিছু নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে গেছে যে, ইসলামের বিধিনিষেধ কী তারা জানতেও পারছে না, মেনেও চলছে না। পুরো সমাজটা যেনো এক পতিতালয়ে পরিনত হয়েছে।

অতএব ইসলামি বিধান মোতাবেক বেপর্দা নারী যেমন জাহান্নামী তেমনি এদের অভিভাবকগণও দাইযুস হিসেবে জাহান্নামী। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

(৩১) নিজ পরিবারের সদস্যদের অশ্লীলতা বন্ধের উদ্যোগ না নিলে (দাইয়ুস):

ঐ ব্যক্তিকে "দাইয়ুস" বলে - যে তার স্ত্রী'কে ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয় বা সুযোগ করে দেয় এবং সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয়। যে তার স্ত্রী পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। "দাইয়ুস" জাহান্নামী এবং কবিরা গুনাহকারী"।

রাসুল(সাঃ) বলেনঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসুল (সাঃ) আরো বলেনঃ

তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেনঃ  যে মদ তৈরী করে,  যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে এবং ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি(দাইয়ুস) যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচার করতে সুযোগ দেয়। (আহমাদঃ ৫৮৩৯)।

তিনি বলেন,

তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যাবে না। মা-বাবার অবাধ্য, দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীন নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না) এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম ২৬)।

(৩২) ঘুষ/দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলেঃ

ঘুষ/দুর্নীতি করে না এমন সৎলোক কতোজন আছে। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি, দামী গাড়ি, শাড়ি গহনা এগুলো আসে কোথা থেকে। আমি নিজে গোয়েন্দা হিসেবে সরকারি চাকরি করতাম। আমি যখন যে জেলায় যেতাম সেখানে গিয়ে দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরী করা হতো। আমি দেখেছি কোন বিভাগ কিভাবে ঘুস নেয় আর দুর্নীতি করে। আপনার বাড়ির আশে পাশে তাকালেই দেখায় যায় ঘুষখোরদের বিলাশবহুল অট্টালিকা। এরা আবার মসজিদের হর্তাকর্তা, এরা প্রথম সারিতে বসে। এরা সালাতও আদায় করে, হজ্জে যায় আবার ঘুষ/দুর্নীতিও করে। এদের উপার্জিত সকল অর্থ হারাম। আর হারাম দেহ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বিস্তারিত দলিল পাবেন “হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে”। রাসুল সাঃ বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৩৭, আবূ দাউদ ৩৫৮০, ৬৫৯৬, ৬৭৩৯, ৬৭৯১, ৬৯৪৫, ইরওয়া ২৬২০, মিশকাত ৩৭৫৩, রাওদুন নাদীর ৫৮৩, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৪৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৩) হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলেঃ

হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ উপার্জনের মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া, মিথ্যে কথা বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।

হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।

প্রথমতঃ ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।

রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : ’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩,  নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(ক) “হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (বাক্বারাহ  ১৬৮)।

(খ) “হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (বাক্বারাহ  ১৭২)।

(গ) “হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত”। (মুমিনূন ৫১)।

হারাম উপায়ে উপার্জিত কিছু খাতঃ

 (ক) রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৩৪২১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ২৩৪৬, ৫৭৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, ২২৮২, ৫৩৪৬, ৫৭৬১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৩৩, ১২৭৬, নাসায়ী ৪২৯২, ৪৬৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪২৮, ৩৪৮১, আহমাদ ১৬৬২২, ১৬৬২৬,১৬৬৩৯ মুয়াত্তা মালেক ১৩৬৩, দারেমী ২৫৬৮,  ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ  ২০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য ও পাঠার ভাড়া গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৪, নাসায়ী ৪২৯৩, ৪৬৭৩, আহমাদ ৭৯১৬, ৮১৮৯, ৯১০৮, ১০১১১, দারেমী ২৬২৩, ২৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়ালের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৭৯, নান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮০, নাসায়ী ৪২৯৫, ৪৬৬৮, আহমাদ ১৪২৪২, ১৪৩৫৩, ১৪৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, ২০৮৬, আহমাদ ১৮৭৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (চ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা করো না তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা করে তাদের ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ- ’’কতক মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।’’- (সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৮২, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহিহাহ ২৯২২)। (হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)-ইবনে মাজাহ সূত্রে)।

(ছ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (জ)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন পথে পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ খেজুর যাকাত বা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) হবার সন্দেহ না থাকলে আমি উঠিয়ে খেয়ে নিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৩১, ২০৫৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ১৮৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৬, ইরওয়া ১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাতি হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) সদাক্বার খেজুর হতে একটি খেজুর উঠিয়ে মুখে পুরলেন। (তা দেখে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খেজুরটি মুখ থেকে বের করে ফেলো, বের করে ফেলো। (তিনি এ কথাটি এভাবে বললেন যেন হাসান তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দেয়)। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা (বানী হাশিম) সদাক্বার মাল খেতে পারি না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৯, আহমাদ ৯৩০৮, দারিমী ১৬৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩২৩১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঞ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তথায় অবস্থানকালে বলেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃতজমত্ত, শুকর ও মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে কী বলেন? কারণ এটি নৌকায় লাগানো হয়, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহৃত হয় এবং লোকেরা তা দিয়ে বাতিও জ্বালায়। তিনি বলেনঃ না, এগুলোও হারাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করলে তারা এটি গলিয়ে বিক্রয় করে এবং এর মূল্য ভোগ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, ৪৬৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৭, নাসায়ী ৪২৫৬, ৪৬৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৬, বায়হাকী ৯/৩৫৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩৭, ইরওয়া ১২৯০, রাওদুন নাদীর ৪৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এগুলো ছাড়াও হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন খাত রয়েছে, যেমন সুদ খাওয়া, সুদীকারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা, ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি করা, সুপারিশের করে টাকা নেয়া, নাটক সিনেমায় অভিনয় করা, চাঁদাবাজি করা, টেন্ডারবাজি করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা, যেকোনো অবৈধ ব্যবসা করা, ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলাদাভাবে রোগী দেখে টাকা নেয়া কিংবা অন্য কোথাও রেফার্ড করে বা টেস্ট করিয়ে তার কমিশন নেয়া, ঘুষ নিয়ে রায় দেয়া, ঘুষ নিয়ে মামলার রিপোর্ট পরিবর্তন করা আর কতো লিখবো এরকম হাজার হাজার অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের খাত আছে। যারা এসব খাতের সাথে জড়িত তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। হারাম খেলে দেহও হারাম হয়ে যায়। তাদের ইবাদত, আমল বা দান খয়রাত আল্লাহ তায়ালা কখনো কবুল করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবূল করেন না এবং হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের দান-খয়রাত কবূল করেন না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১, আহমাদ ৪৬৮৬, ৪৯৪৯, ৫১০২, ৫১৮৩, ৫৩৯৬, ইরওয়াহ ১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করঃ

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুমাইদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পার্থিব জীবনোপকরণ লাভে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজতর করা হয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪২, আত-তালীকুর রাগীব ২/৭, সহিহাহ ৮৯৮, ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্দ্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৭, সহিহাহ ২৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৩৪) ব্যবসায়ীক মালপত্র/খাদ্য দ্রব্য মজুদদারী করলেঃ

অধিক মুনাফা লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য মালামাল গোপনে মজুদ করে রাখে। এতে রাষ্ট্রে খাদ্য দ্রব্য বা অন্যান্য মালামালের সংকট দেখা যায় ও দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। যারা এরুপ কাজ করে তারা পাপিষ্ঠ লোক।

মা’মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নাদলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ছাড়া কেউ মজুতদারি করে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬০৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৬৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৪৭, আহমাদ ১৫৩৩১, ২৬৭০৩, দারেমী ২৫৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু’মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো (পাপীষ্ঠ লোকের) সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩৫) খাদ্যশস্য বিক্রিতে ধোকা দিলেঃ

 আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন সে খাদ্যশস্য বিক্রয় করছিল। তিনি খাদ্যশস্যের স্তুপের মধ্যে তার হাত ঢুকালেন এবং আদ্রতা অনুভব করলেন। রাসূলুল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩১৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫২, আহমাদ ৭২৫০, ২৭৫০০, ইবনু হিব্বান ৪৯০৫, ৫৫৫৫৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩২০, ইরওয়া ১৩১৯, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৬) কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করাঃ

কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে দালালি করা আরেকটি হারাম কাজ। দালালি বলতে নিলামে বিক্রি কোন মাল তো তার কেনার কোন ইচ্ছে নেই; অথচ সে উক্ত পণ্যের বেশি দাম হাঁকিয়ে ওর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কাজ করতে সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রয় করবে না। আর তোমরা (মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশে) দালালী করবে না। কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়ের উপরে দাম না বাড়ায় এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের (বিবাহের) প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (সতীনের) পাত্রের অধিকারী হওয়ার উদ্দেশে তার তালাকের চেষ্টা না করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭২৩, ২১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্তমান যুগে নিলামে গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে এমন অপতৎপরতা বেশি দেখা যায়। গাড়ির দাম হাঁকার সময় গাড়ির মালিক, তার বন্ধুবান্ধব অথবা কোন দালাল ক্রেতার বেশে ক্রেতাদের মাঝে সতর্কভাবে ঢুকে পড়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়; অথচ পণ্যটি কেনার তাদের কোন ইচ্ছে নেই। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হয়। কারণ, তারা তখন পণ্যটি আসল দামের চাইতে অনেক বেশি দামে কিনতে বাধ্য হয়; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত অপতৎপরতাকে জাহান্নামের কারণ বলে আখ্যায়িত করেন।

ক্বাইস্ বিন্ সা’দ্ ও আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘ধোঁকা ও ষড়যন্ত্র জাহান্নামে যাওয়ার বিশেষ কারণ’’। (ইব্নু ‘আদি’ ২/৫৮৪ বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান ২/১০৫/২; হা’কিম ৪/৬০৭)

(৩৭) সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করলেঃ

সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা, ঘুষ, দুর্নীতি করা এক মারাত্মক কবিরা গুণাহ। যেসব সরকারি চাকরিজীবি এসবের সাথে জড়িত তারা জাহান্নামী। রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মালপত্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে মারা গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে জাহান্নামী। সাহাবীগণ অনুসন্ধান করে তার সঈে একটি কম্বল অথবা একটি আবা পেলো যা সে আত্মসাৎ করেছিল। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৭৪, আহমাদ ৬৪৫৭, বায়হাকী ফিস সুনান ৩/৩৮৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে গনীমতের উটের পাশে নামায পড়লেন। তারপর তিনি উটের দেহ থেকে একটি পশম নিয়ে তা তাঁর দু’ আঙ্গুলের মাঝে রেখে বলেনঃ হে লোকসকল! অবশ্য এটা তোমাদের গনীমতের মাল। সুতা এবং সুঁই, আর যা পরিমাণে তার চেয়ে বেশী এবং যা তার চেয়ে কম, সবই তোমরা গনীমতের মালের মধ্যে জমা দাও। কেননা গনীমতের মাল চুরি করার ফলে কিয়ামতের দিন তা চোরের জন্য অপমান ও গ্লানি এবং জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫০, ইরওয়া ৫/৭৪-৭৫, সহীহাহ ৯৮৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩৮) মিথ্যা শপথ করে অপর মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করলেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমদের অর্থ সম্পদ (যা তার জিম্মায় আছে) আত্মসাৎ করার উদ্দেশে মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট থাকবেন। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ ‘‘যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে --- এর শেষ পর্যন্ত’’- (আলে ‘ইমরান : ৭৭)। এরপর আশ‘আস (রাঃ) এসে বলেন, আবূ ‘আবদুর রহমান (রাঃ) তোমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করছিলেন (সে হাদীসে বর্ণিত) এ আয়াতটি তো আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গায় আমার একটি কূপ ছিল। (এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিবাদ হওয়ায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার সাক্ষী পেশ কর। আমি বললাম, আমার সাক্ষী নেই। তিনি বললেন, তাহলে তাকে কসম খেতে হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো কসম করবে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে সত্যায়িত করে এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৫৭, ২৪১৬, ২৫১৫, ২৬৬৬, ২৬৬৯, ২৬৭৩, ২৬৭৬, ৪৫৪৯, ৬৬৫৯, ৬৬৭৬, ৭১৮৩, ৭৪৪৫, ২৩৫৩, ২৪১৭, ২৫১৬, ২৬৬৭, ২৬৭০, ২৬৭৭, ৪৫৫০, ৬৬৬০, ৬৬৭৭, ৭১৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৮, আহমাদ ৩৫৭৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২১৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২০২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৬৯, ২৯৯৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৪৩, আহমাদ ৩৫৬৬, ৩৫৮৬, ৩৯৩৬, ৪০৩৯, ৪২০০, ৪৩৮১, রাওদুন নাদীর ২৪০, ৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩৯) অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করলেঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে ঘুষ দিও না”। (সুরা আল বাকারা ১৮৮)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে(৩) ব্যবসা করা বৈধ এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু”। (সুরা আন নিসা ২৯)।

অন্যের সম্পদ দখল করা আর জাহান্নামের টিকিট বুকিং দেয়া এক জিনিস।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও মান-সম্মানে হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলিমের জন্য হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কা’নাব (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে অগোচরে শত্রুতা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকো। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার তার বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইযযত-আবরু হারাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩০৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে একটি বিবাদ ছিল। ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, হে আবূ সালামাহ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৩, ৩১৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য সাধারণ গুনাহ করলে বা আল্লাহর হকের সাথে জড়িত কোনো হুকুম লঙ্ঘন করলে এত বড় সমস্যা নেই যত বড় সমস্যা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করলে রয়েছে। কারণ এটি বান্দার হক। আর বান্দার হক নষ্ট করলে সেটি আল্লাহ নিজে মাফ করবেন না। কিন্তু আল্লাহর হক নষ্ট করলে চাইলে আল্লাহ মাফও করতে পারেন, আবার শাস্তিও দিতে পারেন।

হক দুই প্রকারঃ

(এক) আল্লাহর হকঃ

আল্লাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহ চাইলে শিরক ব্যতীত অন্য যে কোনো গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন বলে আমাদের বলেছেন! নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে কাউকে শরীক করে! এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন! যে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়! (সূরা নিসা: ১১৬)।

তবে এই আয়াতে উল্লেখিত গুনাহ হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করার গুনাহ!

(দুই) বান্দার হকঃ

বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেননি! যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১ টি টাকাও নিয়ে নিই, কোনো কথা বা গালির সাহায্যে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক (যার হক নষ্ট করলাম) সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না!

বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,

আবদুল্লাহ্ ইবনু ’আমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম (প্রকৃত) সেই, যার যবান ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত) মুহাজির সেই, আল্লাহ্ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৮৪, ১০, আধুনিক প্রকাশনী ৬০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূল (সা:) বলেন,

একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে! এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম! (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩০৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহান আল্লাহ, সুরা হুজুরাত-এর পরপর তিনটি আয়াতে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছেন!

ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেয়া

“মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।”  (সুরা আল-হুজুরাত ১০)।

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কুবা-এর অধিবাসীদের মধ্যে লড়াই বেধে গেল। এমনকি তারা পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করল। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খবর দেয়া হলে তিনি বললেন, ‘চল যাই তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেই।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৩, ৬৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৩, ২৪৪৪, ৬৯৫২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৫৫, সহীহুল জামি ১৫০২, সহীহ আত্ তারগীব ২২৩৫, আহমাদ ১১৯৪৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩৮৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৬৮, শু‘আবুল ঈমান ৭৬০৬, দারিমী ২৭৫৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৯৪, আল মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে!

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সাদাকাহর চেয়েও ফাযীলাতপূর্ণ কাজের কথা বলবো না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ’আলী ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ’আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুনিয়াতে যদি আপনি কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেন, কৌশলে নিজের নামে লিখিয়ে নেন, আইল ঠেলে জায়গা বাড়িয়ে নেন, বিদেশ থেকে ভাই টাকা পাঠিয়েছে আপনি কৌশলে সেই টাকা নিজের নামে জমা করেন, এগুলো হারাম।

মনে রাখতে হবে কিয়ামতের ময়দানে কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। সুতরাং মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। কেউ আমল একটু কম করুন, কিন্তু কারো সম্পদ আত্মসাৎ করবেন না। রাসুল সাঃ বলেন,

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি ঈমানদারদেরকে তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়ার ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখবে। দেহের কোন একটি অঙ্গ যদি ব্যথা পায়, তবে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর কারণে জাগরণ ও জ্বরের মাধ্যমে ঐ ব্যথার অংশীদার হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৬, আহমাদ ১৮৩৭৩, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৮৫, আল মু‘জামুস্ সগীর ৩৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

আবূ মূসা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য প্রাচীর বা ইমারতের মতো, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় করে। এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক হাতের অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলির মধ্যে প্রবেশ করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮১, ২৪৪৬, ৬০২৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮৫, নাসায়ী ২৫৬০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯২৮, সহীহুল জামি‘ ৬৬৫৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৪৪১৩, আহমাদ ১৯৬২৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩১, শু‘আবুল ঈমান ৭৬১১, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ২৩৪১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪০, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৭১৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪০) অন্যের জিনিস নিজের দাবী করলেঃ

যুহারর ইবনু হারব (রহ) ... আবূ যার (রযিঃ) বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজ পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে কুফুরী করল। আর যে ব্যক্তি এমন কিছুর দাবী করে যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্থল বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে ডাকলে বা আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকল, যদি সে তা না হয় তাহলে এ কুফুরী সম্বোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩১৯, আহমাদ ২০৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২১, ইসলামিক সেন্টারঃ ১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(৪১)  সন্ত্রাস, অপহরণ, দস্যুতা, ছিনতাই ও লুটতরাজ করলেঃ

সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কবীরা গুনাহ্গুলোর অন্যতম। চাই সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হোক অথবা নাই হোক। কারণ, তারা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। তবে সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা হলে অবশ্যই হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। আর সেগুলোর পাশাপাশি কাউকে হত্যা করা না হলে সে অঘটনগুলো সম্পাদনকারীদেরকে চারটি শাস্তির যে কোন একটি শাস্তি দিতে হবে। হত্যা করতে হবে অথবা ফাঁসী দিতে হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলতে হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখতে হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এমনকি তারা শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করার ব্যাপারে কয়েকজন অংশ গ্রহণ করলেও তাদের সকলকেই হত্যা করা হবে। যদি তারা সরাসরি উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘যারা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য শত্রুতা পোষণ করে অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধি-বিধানের উপর হঠকারিতা দেখায় এবং (হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মাধ্যমে) ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসী দেয়া হবে অথবা এক দিকের হাত এবং অপর দিকের পা কেটে ফেলা হবে অথবা অন্য এলাকার জেলে বন্দী করে রাখা হবে যতক্ষণ না তারা খাঁটি তাওবা করে নেয়। এ হচ্ছে তাদের জন্য ইহলোকের ভীষণ অপমান এবং পরকালেও তাদের জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তোমরা তাদেরকে গ্রেফতার করার পূর্বে যদি তারা স্বেচ্ছায় তাওবা করে নেয় তাহলে জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু’’। (মা’য়িদাহ্ : ৩৩)।

তবে মানুষের হৃত অধিকার তাদেরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু বাশশার (রহ.) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একটি বালককে গোপনে হত্যা করা হয়। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, যদি গোটা সান্’আবাসী এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম।

মুগীরাহ ইবনু হাকীম (রহ.) আপন পিতা হাকীম থেকে বর্ণনা করেন যে, চারজন লোক একটি বালককে হত্যা করেছিল। তখন ’উমার (রাঃ) ঐরকম কথা বলেছিলেন। আবূ বকর ও ইবনু যুবায়র, ’আলী ও সুওয়ায়দ ইবনু মুকাররিন (রাঃ) চড়ের বিষয়ে কিসাসের নির্দেশ দেন। ’উমার (রাঃ) ছড়ি দিয়ে মারার ব্যাপারে কিসাসের নির্দেশ দেন। আর ’আলী (রাঃ) তিনটি বেত্রাঘাতের জন্য কিসাসের নির্দেশ দেন এবং শুরায়হ্ (রহ.) একটি বেত্রাঘাত ও নখের আঁচড়ের জন্য কিসাস বলবৎ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং সন্ত্রাস, দস্যুতা, ছিনতাই, লুন্ঠন, অপহরণ ইত্যাদি এগুলো কবিরা গুণাহ। এগুলোর সাথে যারা জড়িত তারা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসুল সাঃ বলেন,

ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ছিনতাই ও লুটতরাজ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৯৪৭, আহমাদ ১৯৯৪৬, সহীহ আল জামি ৩২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যেনাকারী যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ যখন মদ পানে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয় তখন সে মুমিন থাকে না। আর লুটতরাজ ও ছিনতাইকারী যখন লুটতরাজ ও ছিনতাই করে এবং লোকজন তার দিকে চোখ তুলে তাকায়, তখন সে মুমিন থাকে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬২৫, নাসায়ী ৪৮৭০, ৪৮৭১, ৪৮৭২, ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৯, আহমাদ ২৭৪১৯, ৮৬৭৮, ৮৭৮১, ৯৮৫৯, দারেমী ১৯৯৪, ২১০৬, রাওদুন নাদীর ৭১৬, সহীহাহ ৩০০০, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনু আবু শায়বাহ ৩৮-৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ১১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪২) কোনো চাকরিজীবি নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলেঃ

(ক) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো লোককে যদি আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি এবং তাকে সে কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেই। অতঃপর যদি সে অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে তা হলো খিয়ানাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৪৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৬০২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৭৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের শাসনকার্যে নিযুক্ত হবে, তার যদি স্ত্রী না থাকে তবে সে একজন স্ত্রীর ব্যবস্থা করতে পারে। আর যদি তার খাদিম না থাকে, তাহলে একজন খাদিম রাখতে পারে। আর যদি তার কোনো ঘর না থাকে, তাহলে একটি ঘরেরও ব্যবস্থা করতে পারে। অপর এক বর্ণনাতে আছে, সে যদি তা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে, তবে তা খিয়ানাত হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আদী ইবনু ’উমায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মানব সকল! তোমাদের কাউকে যদি আমাদের কোনো কাজে নিযুক্ত করা হয়। অতঃপর সে যদি তা থেকে একটি সুঁই পরিমাণ অথবা তার চেয়ে অধিক কিছু লুক্কায়িত রাখে, তাহলে সে খিয়ানাতকারী বলে সাব্যস্ত হবে। কিয়ামতের দিনে সে তা বহন করে উত্থিত হবে। তখন জনৈক আনসারী দাঁড়িয়ে বলে উঠলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার ওপর যে কাজ অর্পণ করেছেন, তা অনুগ্রহপূর্বক প্রত্যাহার করে নিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেন এটা বলছ? লোকটি বলল, আমি শুনেছি যে, আপনি এরূপ এরূপ (ভীতিকর) কথা বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আবারও বলছি, যাকে আমরা কোনো কাজে নিযুক্ত করি, তখন সে যেন তার কম ও বেশি যাই হোক (সবকিছু) আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে যা কিছু দেয়া হবে, শুধু তাই গ্রহণ করবে। আর যা থেকে নিষেধ করা হবে, তা থেকে সর্বদা বিরত থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৬৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৮১, আহমাদ ১৭৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯১, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুমায়দ সা’ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত করলেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তোমার বাপ-মার ঘরে বসে থাকলে না কেন? তা হলে দেখতে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠানো হয় কি না? এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করলেন ও আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব আদায়কারীর অবস্থা কী হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে, এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাপ-মার ঘরে বসেই থাকল না কেন? তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না?

ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ কোন বস্তুতে খিয়ানত করলে, কিয়ামতের দিন সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বক্রী হয় তবে ভ্যা ভ্যা করতে থাকবে। আমি (বাণী) পৌঁছিয়ে দিলাম। রাবী আবূ হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উঠালেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা দেখতে গেলাম। আবূ হুমায়দ বলেন, এ কথাগুলো যায়দ ইবনু সাবিতও আমার সঙ্গে শুনেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। কাজেই তোমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৩৬, ৯২৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪৬, আহমাদ ২৩৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪৩) ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করলেঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর[1] এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না”। (সুরা আলে ইমরান ১০২)।

পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং তার অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন। আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয় সেটার উপর জোর দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে ঈমানদারের অবস্থান হবে আশা-নিরাশার মধ্যে। সে একদিকে আল্লাহর রহমতের কথা স্মরণ করে নাজাতের আশা করবে, অপরদিকে আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার ভয় করবে। কিন্তু মৃত্যুর সময় তাকে আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা নিয়েই মরতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সকলেই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৭০২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার আশা থাকবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।

ঈমান হল মূল ও শাখাসহ হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম। প্রথম দু’টি মূল ও শেষেরটি হ’ল শাখা, যেটা না থাকলে পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা সত্যসহ উপস্থিত হয়েছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তারাই তো মুত্তাক্বী, তারা যা চাইবে সব কিছুই আছে তাদের প্রতিপালকের নিকট। এটাই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান”। (যুমার ৩৯/৩৩-৩৪)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “এমনিভাবেই আমিই ইব্রাহীমকে আসমান ও যমীনের রাজত্ব অবলোকন করিয়েছি, যাতে সে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়”। (আন‘আম ৬/৭৫)।

তিনি আরো বলেন, “তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করে না”। (হুজুরাত ৪৯/১৫)।

আসলে ঈমান হচ্ছে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়া, তাঁদের আদেশ নিষে মেনে চলা। শুধু মুখে ঈমান আনলাম আর আপনি মুসলমান হয়ে গেলেন তা হবে না। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। তথা আপনাকে ইসলামি বিধান মোতাবেক পুরো জীবনটাই অতিবাহিত করতে হবে। যারা কুরআনের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ মানে না তারা প্রকৃত ঈমানদার নয়। এরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। এজনে। এজন্যেই রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে প্রতিপালকের হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম! এ উম্মাতের যে কেউই চাই ইয়াহূদী হোক বা খ্রীষ্টান, আমার রিসালাত (রিসালাত) ও নুবূওয়্যাত মেনে না নিবে ও আমার প্রেরিত শারী’আতের উপর ঈমান না এনেই মৃত্যুবরণ করবে, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৩, আহমাদ ৮৬০৯, সহীহাহ্ ১৫৭, সহীহ আল জামি‘ ৭০৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪৪) সালাত ত্যাগ করলেঃ

(ক) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ-কাফির হয়ে যাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬২১, নাসায়ী ৪৬৩,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০৭৯ সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৪, আহমাদ ২২৯৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত  ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করবে তার ওপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না, কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮০, ৫৪০, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৭, ইরওয়া ২০৮৬))। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বেনামাজী ছেলে মেয়ের সাথে নামাজী ছেলে মেয়ের বিবাহ দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ

যেসব ছেলে মেয়ে সালাত আদায় করে না তারা কাফের। রাসুল সাঃ বলেন,

বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ-কাফির হয়ে যাবে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬২১, নাসায়ী ৪৬৩,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০৭৯ সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৪, আহমাদ ২২৯৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত  ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করবে তার ওপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না, কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮০, ৫৪০, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৫৬৭, ইরওয়া ২০৮৬))। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুতরাং এ দুইটি হাদিস দ্বারা জানা গেল, সালাত পরিত্যাগ করা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুপ্রমাণিত সুস্পষ্ট কুফরী।

রাসুল সাঃ বলেন যে,

 উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ওপর এমন শাসকবর্গ নিযুক্ত হবে যারা ভালো-মন্দ উভয় প্রকারের কাজ করতে দেখতে পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তার অসৎ কাজের প্রতিবাদ করল, সে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেল। আর যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ঘৃণা করল, সেও নিরাপদ হয়ে গেল। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল ও শাসকের আনুগত্য করল, তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এমতাবস্থায় কি আমরা তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত কায়িম করে। না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সালাত কায়িম করে। রাবী বলেন, প্রতিবাদ ও মন্দ জানার অর্থ হলো, যে ব্যক্তি অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করে ও অগ্রাহ্য করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৬৫, আহমাদ ২৬৫২৮, সহীহ আল জামি ২৩৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ  আরো বলেন যে,

’আওফ ইবনু মালিক আল আশজা’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ শাসকই সর্বোত্তম, যাদের তোমরা ভালোবাসো এবং তারা তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য দু’আ করো এবং তারাও তোমাদের জন্য দু’আ করে। আর তোমাদের মধ্যে ঐ শাসকই সর্বনিকৃষ্ট, যাদের প্রতি তোমরা ক্রোধান্বিত হও এবং তারাও তোমাদের প্রতি ক্রোধ ও শত্রুতা পোষণ করে। আর তাদের প্রতি তোমরা অভিসম্পাত করো এবং তারাও তোমাদের প্রতি অভিসম্পাত করে। রাবী বলেন, তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এমতাবস্থায় কি আমরা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করব না (তবুও কি বায়’আতের উপর থাকব)? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠা করে। (পুনরায় বললেনঃ) না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মাঝে সালাত প্রতিষ্ঠা করে। সাবধান! যে ব্যক্তিকে তোমাদের প্রতি শাসক নিযুক্ত করা হয় আর তার মধ্যে যদি আল্লাহ তা’আলার নাফরমানি পরিলক্ষেত হয়, তাহলে তার সে নাফরমানির কাজটি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে অপছন্দ কর, কিন্তু তার আনুগত্য থেকে পিছপা হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৭১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৫৫, আহমাদ ২৩৯৮১, দারিমী ২৮৩৯, সহীহাহ্ ৯০৭, সহীহ আল জামি‘ ৩২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৫১, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং এ দুইটি হাদিস দ্বারাও জানা গেল, সালাত পরিত্যাগ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপ্রমাণিত সুস্পষ্ট কুফরী।

সালাত পরিত্যাগকারী মুশরিকঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮০, তারগীব ৫৬৫, ১৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ্ কুরআনে বলেন,

“আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম। যদিও তাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে।” (সূরা বাক্বারা- ২২১)।

অতএব যেসব ছেলে মেয়ে সালাত আদায় করে না তারা কাফের ও মুশরিক হওয়ার কারণে তাদের সাথে নামাজী ছেলে মেয়েদের বিবাহ দেয়া নিষেধ।

আল্লাহ্ বলেন,

“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনাঃ ১০)।

যে ছেলের সাথে  মেয়ের বিবাহ দিবেন। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের নিকট কেউ বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়, তখন দীনদারী ও সচ্চরিত্রের মূল্যায়ন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কর। যদি তোমার তা না কর, তাহলে দুনিয়াতে বড় রকমের ফিতনা-বিশৃঙ্খলা জন্ম দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৯০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৬৭, ইরওয়া ১৮৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অনুরুপভাবে যে মেয়ের সাথে ছেলেকে বিবাহ করাবেন। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৬৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২৬, ৯২৩৭, আধুনিক প্রকাশনী ৪৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭১৯, নাসায়ী ৩২৩০, দারেমী ২১৭০, ইরওয়াহ ১৭৮৩, গায়াতুল মারাম ২২, সহীহ আবী দাউদ ১৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ দুইটি হাদিস থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বাধিক যে বিষয়টির গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক, তা হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে- ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রবান হওয়া। আর আল্লাহ্ভীরু ও দায়িত্ব সচেতন অভিভাবকের জন্য আবশ্যক হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। কেননা ক্বিয়ামত দিবসে এ বিষয়ে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহ্ বলেন,

“আর সেদিন আল্লাহ্ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলগণের আহবানে কি সাড়া দিয়েছিলে?” (সূরা ক্বাছাছ- ৬৫)।

 তিনি আরো বলেন,

“অতএব আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, যাদের কাছে রাসূল প্রেরীত হয়েছিল এবং আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করব রাসূলগণকে। তাদের উপর সব কিছুর বিজ্ঞচিতভাবে বর্ণনা প্রদান করব। আর আমি অনুপসি'ত ছিলাম না। ” (সূরা আ’রাফ- ৬-৭)।

সুতরাং বিাবাহ দেয়ার আগে ছেলে মেয়ে উভয়ের ধর্মভীরুতা ও সচ্চরিত্রবান হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে করতে হবে।

যারা মোটেও সালাত আদায় করে না তারা কাফের, ইসলাম থেকে বহিস্কৃত। তাদের তওবা করা জরুরী। যদি খালেছভাবে তওবা নাসূহা করে ছালাত আদায় শুরু করে, তবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু তওবা না করলে তাকে কাফের ও মুরতাদ অবস্থায় হত্যা করতে হবে। গোসল না দিয়ে, কাফন না পরিয়ে, জানাযা না পড়িয়ে, দাফন করতে হবে। মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করা যাবে না। তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ

কুরআনের দলীলঃ আল্লাহ্ বলেন,

“অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।” (সূরা মারইয়াম- ৫৯-৬০)।

এখানে ‘কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।’ একথা দ্বারা বুঝা যায়, ছালাত বিনষ্ট ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করার সময় তারা ঈমানদার ছিল না।

আল্লাহ্ আরো বলেন,

“যদি তারা তওবা করে ও ছালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (সূরা- তওবা- ১১)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, ছালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান না করলে দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্ত হবে না। অতএব ছালাত প্রতিষ্ঠা করা ঈমানী ভ্রাতৃত্বের শর্ত হিসেবে অবশিষ্ট রইল। তাই এর দাবী হচ্ছে তা পরিত্যাগ করা কুফরী। এই কারণে বেনামাযীর সাথে ঈমানী ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট হয়ে যায়। বেনামাযী ফাসেক নয় বা ছোট কাফের নয়। কেননা ফাসেক্বী এবং ছোট কুফরী ঈমানী ভ্রাতৃত্ব থেকে বের করে দেয় না। যেমনটি মু‘মিনদের পরস্পর দু’টি দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে, তাদের সংশোধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ বলেন,

“মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পরস্পরের মাঝে সংশোধন কর।” (সূরা হুজুরাত- ১০)।

পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত দুইটি দল ঈমানের গন্ডি থেকে বের হয়ে যায়নি। অথচ মু’মিনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি ছহীহ্ বুখারীতে আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

যুবায়দ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (রহ.)-কে মুরজিআ’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, ‘‘আবদুল্লাহ (ইবন মাস‘ঊদ) আমার নিকট বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮, ৬০৪৪,৭০৭৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪, আহমাদ ৩৬৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এগুলো হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দলীল প্রমাণ। ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের ও মুশরিক। মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত।

বর্তমান সমাজের অবস্থাঃ

বর্তমানে অভিভাবকদের দেখা যায়, পাত্র ঘুষ দুর্নীতি করে বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স করেছে কিনা, তার মেয়েকে ভরণপোষণ দিতে সক্ষম কিনা সেইরুপ পাত্রের সাথে মেয়েকে বিবাহ দেয়। তারা দেখে না যে, পাত্রের আয়ের উৎস হালাল কিনা। আবার দেখা যায়, কয়েকজন জামাইয়ের মধ্যে যে বেশী ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ তার কদর ততো বেশী।

আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাত্রী যদি সরকারি চাকরিজীবি হয় তাহলে পাত্র পক্ষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই মেয়েকে বিবাহ করতে যদিও মেয়েটি বিবাহের আগেই অবাধ চলাফেরা আর অবাধ মেলামেশা করতে গিয়ে কয়েকটি অবৈধ সন্তান নষ্ট করেছে। বলা হয়েছে, পাত্র পাত্রী উভয়ের আল্লাহভীরুতা ও চরিত্রবান দেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে কিন্তু বর্তমান সমাজ সেটা ভুলে একটা নষ্ট পরিবার গঠনে মূখ্য ভুমিকা পালন করছে।

আর একটি বিষয় হচ্ছে,

বেনামাযী স্বামীর সাথে মুসলিম নামাযী স্ত্রীর বসবাস করার বিধান কি?

কোনো নারী যদি এমন লোককে বিবাহ করে, যে ছালাত আদায় করে না, জামাআতের সাথেও না বাড়ীতেও একাকি না। তার বিবাহ বিশুদ্ধ নয়। কেননা ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের। বেনামাজী কাফের ও মুশরেক হওয়ার দলিল উপরে বর্ণিত হয়েছে।

এখানে মূল বিধান হলোঃ

বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী ছালাত পরিত্যাগ করা শুরু করে তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কতক বিদ্বান বলেছেন, বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে তবে নতুন চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে। উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে বেনামাযী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে তওবা করে ছালাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের।

এ উপলক্ষে মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক ও নসীহত করা যাচ্ছে যে, তারা যেনো কোনো বেনামাযীর সাথে মেয়েদের বিবাহ সম্পন্ন না করেন। কেননা বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। এক্ষেত্রে তারা যেনো নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কোন আপোষ না করেন।

বেনামাজী কাফের ও মুশরেক হওয়ার কারণে এদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলা, এদের সাথে আত্মীয়তা করা ইসলামে নিষেধঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

“ঈমানদারগণ, তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফিররা) তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ।শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও”। (সূরা আলে ইমরান: ১৮)।

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

“দুনিয়াবী সম্মান লাভের জন্য যাতে এটা না করা হয়, সেজন্য বলা হয়েছে, যারা মুমিনদের বাদ দিয়ে কাফিরদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান কামনা করে? জেনে রেখো সর্বপ্রকার ইযযতের মালিকানা স্রেফ আল্লাহর”। (নিসা ৪/১৩৯)।

এমনকি নিজের বাপ-ভাই যদি ঈমানের উপরে কুফরীকে ভালবাসে, তবে তাদেরকেও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।

আল্লাহ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পিতৃবর্গ ও ভাতৃবৃন্দ যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই যালিম”। (সূরা তওবাহ ৯/২৩)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“আর মুমিনগণ বলবে, এরাই কি তারা, যারা আল্লাহর নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করেছিল যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের সঙ্গেই আছে? তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়েছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে”। (সূরা মায়েদা, ৫/৫১-৫৩)।

রাসুল সাঃ বলেন,

আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)...আমর ইবনু আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চুপে চুপে নয় স্পষ্ট বলতে শুনেছি যে, জেনে রেখ! অমুক বংশ (আত্মীয়তার কারণে) আমার বন্ধু নয়, বরং আল্লাহর এবং নেককার মুমিনগণই হলেন আমার বন্ধু। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব, ইহুদি-খৃস্টাগণ যেমন কাফের মুশরেক তেমনি বেনামাজী ব্যক্তিও কাফের মুশরেক। এদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক যেমন গড়ে তোলা যাবে না, তেমনি আত্মীয়তার বন্ধনও তৈরী করা যাবে না। আপনার সন্তান কার সাথে ঘুরাফেরা করছে তা খেয়াল রাখতে হবে। যে যার সাথে সম্পর্ক তার রীতিনীতিই সে গ্রহণ করে থাকে। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৭৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৩৩, সহীহাহ ৯২৭,  সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৭, সহীহুল জামি ৩৫৪৫, আহমাদ ৮৪১৭, শু‘আবুল ঈমান ৯৪৩৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১৬৫, আল মুসতাদরাক ৭৩১৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতএব অসৎ বা দুশ্চরিত্রবান ছেলে মেয়েদের নিকট থেকে নিজের সন্তানকে দূরে রাখুন, তাদের প্রতি খেয়াল রাখুন।

(৪৫) নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় না করলেঃ

(ক) আব্দুল্লাহ ইবনুস সুনাবিহী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মুহাম্মাদের মতে, বিতর সালাত ওয়াজিব। একথা শুনে ’উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা (ভুল) বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু’ ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন অন্যথায় শাস্তি দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৫, ১৪২০; সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০১, আহমাদ (৫/৩১৭), নাসায়ী ৪৬০, ৪৬১, নাসায়ীর ‘সুনানুল কুবরা’ ৩১৪,  দারিমী ১৫৭৭, মালিক ৫/২১০, আহমাদ ২২১৮৫, ২২১৯৬, ২২২৪৬, ২৭৭৪০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৭০, সহীহ আবী দাউদ ৪৫১, ১২৭, নাসায়ী ৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৭০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সালাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩০, ইবনু মাজাহ ১৪০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) উম্মু ফারওয়াহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সালাতের ওয়াক্ত হওয়ায় সাথে সাথে (প্রথম ওয়াক্তেই) সালাত আদায় করা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০, আহমাদ ৬/৩৭৫, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৪৩৪), দারাকুতনী (১/১২), হাকিম ১/১৮৯, দারাকুতনী ১/১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু ও রুকু’ সিজদা্ সহকারে নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সার্মথ্য থাকলে হজ করবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবূ দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কি? তিনি বলেন, জুনুবী হলে গোসল করা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৯, ত্বাবারানী ১/৪৭, আত-তারগীব ১/২৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! যখন তোমার শাসকগণ সালাতকে মেরে ফেলবে বা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করবে, অতঃপর তাদেরকে ঐ ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে দেখলে তাদের সাথেও আদায় করে নিবে। সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩১, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৫৬, নাসায়ী ৭৭৮, আবূ দাঊদ ৪৩১, আহমাদ ২০৯০৮, ২০৯৭৯; দারিমী ১২২৭-২৮, দারিমী ১২২৮, আবূ ‘আওয়ানাহ ‘মুসনাদ’ (১/৩৪৪) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আমর ইবনু মায়মূন আল-আওদী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দূত হিসেবে মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) ইয়ামানে আমাদের নিকট আসলেন। আমি ফজরের সালাতে তাঁর তাকবীর শুনতে পেলাম। তিনি উচ্চ কণ্ঠস্বর বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। তার সাথে আমার ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ায় তার মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর সাহচর্য ত্যাগ করিনি। অতঃপর তার মৃত্যু হলে সিরিয়ায় তাকে দাফন করি। এরপর আমি ভাবলাম, তার পরবর্তী সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে হতে পারে? অবশেষে আমি ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর কাছে যাই এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তার সাহচর্যে থাকি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যখন তোমাদের উপর এমন শাসকদের আর্বিভাব ঘটবে যারা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন তোমরা কি করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কি? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করবে। আর পুনরায় তাদের সাথে আদায়কৃত সালাতকে নফল হিসেবে ধরে নিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩২, ইবনু হিব্বান ৩৭৬, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১২৪), আহমাদ ৩৮৭৯, ৪০২০, ৪৩৩৪, নাসায়ী ৭৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৫৫, বায়হাক্বী (৩/১২৭-১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সালাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি ঐ সালাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছেঃ লোকটি বলল, আমি তাদের সাথে ঐ সালাত পেলে তাদের সাথেও আদায় করব কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৫৭, আহমাদ (৫/৩১৫), ‘যিয়দাতে মুসনাদ’ (৫/৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) কাবীসাহ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে তোমাদের এমন শাসকগণ আসবে, যারা বিলম্বে সালাত আদায় করবে। এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই, বরং তাদের জন্যই ক্ষতিকর। যতদিন পর্যন্ত তারা কিবলামুখী হয়ে সালাত আদায় করবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে সালাত আদায় করতে থাকবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৪, ইবনু সা‘দ ‘তাবাকাতুল কুবরা’ (৭/৫৬), ত্বাবারানী ‘মু’জামুল কাবীর’ (১৮/৩১৫; হাঃ ৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(৪৬) প্রথম কাতার থেকে সবসময় পিছনের কাতারে থাকলেঃ

জুমার সালাত আদায় করতে গেলে দেখা যায় প্রথম কাতারের অনেক জায়গা ফাঁকা। ইমাম প্রথম কাতার পূরণ করতে বললেও অনেকে আসে না। আবার দেখা যায় পিছন থেকে কিছু মুসল্লী ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে চলে যায়। অথচ ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধ। যেসব মুসল্লী সবসময় সামনের কাতার পূরণ না করে পিছনের কাতারে থাকে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দিবেন। রাসুল সাঃ বলেন,

’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিছু লোক সব সময়ই সালাতে প্রথম কাতার থেকে পেছনে থাকে, এমনকি আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১০৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৬৭৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৯৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪৭) সালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানোঃ

সালাতরত অবস্থায় আকাশের দিকে তাকানো হারাম।

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হবে।  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অতএব সালাত পড়তে পড়তে উপর বা আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করা হারাম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩১৫)।

(৪৮) কোনো মুসল্লী সালাতরত অবস্থায় তার সামনে দিয়ে চলাঃ

কোনো মুসল্লী সালাতরত অবস্থায় তার সামনে দিয়ে চলা হারাম।

আবূ মা‘মার (রহ.) ও আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহ.)....আবূ সালেহ সাম্মান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.)-কে দেখেছি। তিনি জুমু‘আর দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসেবে কোন কিছু সামনে রেখে সালাত আদায় করছিলেন। আবু মু‘আইত গোত্রের এক যুবক তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখলো যে, তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। এজন্যে সে পুনরায় তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবারে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) প্রথমবারের চেয়ে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবূ সা‘ঈদ (রাযি.)-কে তিরস্কার করে সে মারওয়ানের নিকট গিয়ে আবূ সা‘ঈদ (রাযি.)-এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবূ সা‘ঈদ (রাযি.)-ও মারওয়ানের নিকট গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেনঃ হে আবূ সা‘ঈদ! তোমার এই ভাতিজার কী ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে শয়তান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫০৯, ৩২৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৭৭, আহমাদ ১১২৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ৭০০, আহমাদ ১১০৭, দারেমী ১৪৫১, সহীহ আল জামি ৬৩৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন নামাযীর সামনে দিয়ে হাঁটা কতো যে মারাত্মক তা অনুমান করা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত বাণী থেকে।

বুসর ইবনু সা’ঈদ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, যায়দ ইবনু খালিদ (রাযি.) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাযি.)-এর নিকট পাঠালেন, যেন তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীর সম্পর্কে তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কী শুনেছেন। তখন আবূ জুহায়ম (রাযি.) বললেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো।

আবুন-নাযর (রহ.) বলেনঃ আমার জানা নেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা মাস কিংবা চল্লিশ বছর বলেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭০১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৭৬, নাসায়ী ৭৫৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৬, আহমাদ ১৭৫৪০, দারেমী ১৪৫৭, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৩৬৬, সহীহ আল জামি ৫৩৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(৪৯) ধন-সম্পদের জাকাত না দিলেঃ

যারা যাকাত আদায়ে উদাসীনতা দেখায় এবং কৃপণতা করে তাদের বিষয়ে কুরআনে করীমে কঠিন হুমকি এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’’। (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬)।

যে সম্পদের যাকাত দেওয়া হয় না, তা অবশ্যই তা গচ্ছিত মাল যদ্বারা তার মালিককে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোনা-রূপার অধিকারী যেসব লোক এ হাক (হক) (যাকাত) আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার ঐ সোনা-রূপা দিয়ে তার জন্য আগুনের অনেক পাত তৈরি করা হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে কপালদেশ ও পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই ঠাণ্ডা হয়ে আসবে পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে। এরূপ করা হবে এমন একদিন যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। আর তার এরূপ শাস্তি লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। অতঃপর তাদের কেউ পথ ধরবে জান্নাতের আর জাহান্নামের দিকে।

জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! উটের (মালিকের) কী অবস্থা হবে? তিনি বললেন, যে উটের মালিক তার উটের হাক (হক) আদায় করবে না তার উটের হকগুলোর মধ্যে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করে অন্যদেরকে দান করাও একটি হাক (হক), যখন কিয়ামতের দিন আসবে তাকে এক সমতল ময়দানে উপুড় করে ফেলা হবে। অতঃপর তার উটগুলো মোটাতাজা হয়ে আসবে। এর বাচ্চাগুলোও এদের অনুসরণ করবে। এগুলো আপন আপন খুর দ্বারা তাকে পায়ে মাড়াতে থাকবে এবং মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখন একটি পশু তাকে অতিক্রম করবে অপরটি অগ্রসর হবে। সারাদিন তাকে এরূপ শাস্তি দেয়া হবে। এ দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর বান্দাদের বিচার শেষ হবে। তাদের কেউ জান্নাতের দিকে আর কেউ জাহান্নামের দিকে পথ ধরবে।

অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো- হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের (মালিকদের) কী অবস্থা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যেসব গরু ছাগলের মালিক এর হাক (হক) আদায় করবে না কিয়ামতের দিন তাকে এক সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলে রাখা হবে। আর তার সে সব গরু ছাগল তাকে শিং দিয়ে আঘাত করতে থাকবে এবং খুর দিয়ে মাড়াতে থাকবে। সেদিন তার একটি গরু বা ছাগলের শিং বাকা বা শিং ভাঙ্গা থাকবে না এবং তাকে মাড়ানোর ব্যাপারে একটিও অনুপস্থিত দেখতে পাবে না। যখন এদের প্রথমটি অতিক্রম করবে দ্বিতীয়টা এর পিছে পিছে এসে যাবে। সারাদিন তাকে এভাবে পিষা হবে। এ দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর বান্দাদের বিচার শেষ হবে এবং তাদের কেউ জান্নাতের দিকে আর কেউ জাহান্নামের দিকে পথ ধরবে।

অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! ঘোড়ার (মালিকের) কী অবস্থা হবে? তিনি (উত্তরে) বললেন, ঘোড়া তিন প্রকারের- (ক) যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য গুনাহের কারণ হয়, (খ) যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে আবরণ স্বরূপ এবং (গ) যে ঘোড়া মালিকের জন্য সাওয়াবের কারণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সে ঘোড়াই তার মালিকের জন্য বোঝা বা গুনাহের কারণ হবে, যা সে লোক দেখানোর জন্য অহংকার প্রকাশের জন্য এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার উদ্দেশে পোষে। আর যে ব্যক্তি তার ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য পোষে এবং এর পিঠে সওয়ার হওয়া এবং খাবার ও ঘাস দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হাক (হক) ভুলে না, এ ঘোড়া তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার জন্য আবরণ হবে।

আর যে ব্যক্তি মুসলিমদের সাহায্যের জন্য আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া পোষে এবং কোন চারণভূমি বা ঘাসের বাগানে লালন পালন করতে দেয় তার এ ঘোড়া তার জন্য সাওয়াবের কারণ হবে। তার ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানে যা কিছু খাবে তার সমপরিমাণ তার জন্য সাওয়াব লেখা হবে। এমনকি এর গোবর ও প্রস্রাবে সাওয়াব লেখা হবে। আর যদি তা রশি ছিড়ে একটি বা দুটি মাঠেও বিচরণ করে তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরের সমপরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে। এছাড়া মালিক যদি কোন নদীর তীরে নিয়ে যায়- আর সে নদী থেকে পানি পান করে অথচ তাকে পানি পান করানোর ইচ্ছা মালিকের ছিল না তথাপি পানির পরিমাণ তার ’আমলনামায় সাওয়াব লেখা হবে।

অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! গাধা সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, গাধা সম্পর্কে কোন আয়াত আমার কাছে অবতীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক এ আয়াতটি আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ একটি ভাল কাজ করবে সে তার শুভ প্রতিফল পাবে আর যে এক অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তার মন্দ ফল ভোগ করবে (অর্থাৎ আলোচ্য আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, গাধার যাকাত দিলে তারও সাওয়াব পাওয়া যাবে)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৮০-২১৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৫৯, ইসলামীক সেন্টার ২১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু ও ছাগলের মালিকদের বিষয়ে আলোচনা করেন যারা তাদের পশুর যাকাত আদায় করে না। তিনি তাদের জানিয়ে দেন যে, নিশ্চয় তাদেরকে কিয়ামতের দিন যাকাত না দেওয়ার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন, অথচ সে ঐ ধন-সম্পদের যাকাত আদায় করেনি, সে ধন-সম্পদকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন টাকমাথা সাপে পরিণত হবে। এ সাপের দু’ চোখের উপর দু’টি কালো দাগ থাকবে (অর্থাৎ বিষাক্ত সাপ)। এরপর ঐ সাপ গলার মালা হয়ে ব্যক্তির দু’ চোয়াল আঁকড়ে ধরে বলবে, আমিই তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত ধন-সম্পদ। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ ’’যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে এটা তাদের জন্য উত্তম বরং তা তাদের জন্য মন্দ। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন অচিরেই যা নিয়ে তারা কৃপণতা করছে তা তাদের গলার বেড়ী করে পরিয়ে দেয়া হবে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৮০) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৭৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪০৩, ৪৫৬৫, ৪৬৫৯, ৬৯৫৭, আহমাদ ৮৬৬১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩১১৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৬০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার বাণী তিলাওয়াত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত”। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০)।

(৫০) নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিলেঃ

ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয় এবং যে মেয়েকে কবর দেয়া হয়, উভয়ই জাহান্নামী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১২, সহীহুল জামি‘ ৭১৪২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫১)  রাসুল সাঃ এর অবাধ্য হলেঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ৪৫১৩, আহমাদ ৮৭২৮, সহীহাহ্ ৩১৪১, (আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে) বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য এর পুরস্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭১৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৯, ৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৫, নাসায়ী ৪১৯৩, ৫৫১০, আহমাদ ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৭৩৯, ১০২৫৯, আয-যিলাল ১০৬৫, ১০৭৮,  ইরওয়াউল গালীল ৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫২) জামায়াত/মুসলিম ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেঃ

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার আমীরকে অনৈতিক কোনো কিছু করতে দেখে, তাহলে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে কেউ ইসলামী জামা’আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যায় এবং এ অবস্থায় মারা যায়, সে জাহিলিয়্যাত যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৪৩, ৭০৫৩, মুসলিম ১৮৪৯, আহমাদ ২৪৮৭, দারিমী ২৫৬১, ইরওয়া ২৪৫৩, সহীহ আল জামি ৬২৪৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমীরের (শাসকের) আনুগত্যের অবাধ্য হলো এবং মুসলিম জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, এমতাবস্থায় সে মারা গেলে তার মৃত্যু জাহিলিয়্যাত যুগের উপর হবে। আর যে ব্যক্তি এমন পতাকার নিচে যুদ্ধ করে যার হক বা বাতিল হওয়া সম্পর্কে অজানা; বরং সে যেন দলীয় ক্রোধের বশীভূত হয়ে অথবা দলীয় স্বার্থ রক্ষায় লোকেদেরকে আহবান করে কিংবা দলীয় প্রেরণায় মদদ জোগায়। এমতাবস্থায় সে মারা গেলে জাহিলিয়্যাতের উপরই মৃত্যুবরণ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিরুদ্ধে তরবারি উত্তোলন করল এবং ভালো-মন্দ সকলকে নির্বিচারে আক্রমণ করতে লাগল। এমনকি তাত্থেকে আমার উম্মাতের কোনো মু’মিনেরও পরোয়া করল না এবং আশ্রিত তথা নিরাপত্তায় অধিকারী ব্যক্তির সাথে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার চুক্তিও পূরণ করল না, সে আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৮০-৪৬৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪৮, নাসায়ী ৪১১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৮, আহমাদ ৮০৬১, সহীহাহ্ ৪৩৩, সহীহ আল জামি‘ ৬২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৩৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার গোটা উম্মাতকে; অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করবেন না। আল্লাহ তা’আলার হাত (রহমত ও সাহায্য) জামা’আতের উপর রয়েছে। যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অবশেষে) জাহান্নামে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৬৭)।   হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(৫৩) জানা জ্ঞান গোপন করলেঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে এমন কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে, অথচ গোপন রাখে (বলে না), কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১, ২৬২, ২৬৬, আহমাদ ৭৮৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৫৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৪৯, সহীহুল জামি ৬২৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫৪) আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্যে অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জণ্যে অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে জ্ঞান অর্জন করলেঃ

(ক) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৫৪, সহীহুল জামি‘ ১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি নির্বোধের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা আলিমদের উপর বাহাদুরি প্রকাশের জন্য অথবা তার প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জ্ঞানার্জন করে, সে জাহান্নামী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৫৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা আলিমদের উপর বাহাদুরী প্রকাশের জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং জনসভার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করো না। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে, তার জন্য রয়েছে আগুন আর আগুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৪, সহীহ তারগীব ১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা আলিমগণের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য অথবা নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য অথবা সাধারণ মানুষের মনোযোগ তোমাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করো না। যে তা করবে সে জাহান্নামী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আলিমদের উপর বাহাদুরি জাহির করার জন্য, নির্বোধদের সাথে ঝগড়া করার জন্য এবং নিজের দিকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬০, আহমাদ ৮২৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫৫) পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে জ্ঞান অর্জন করলেঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ইলম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫২, সহীহুত্ তারগীব ১০৫, আহমাদ ৮২৫২।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫৬) যে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার উদ্দেশে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়ঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার উদ্দেশে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে নিশ্চয় (জাহান্নামের) আগুন কামনা করে। (এটা জানার পর) সে কম বা অধিক চাইতে থাকুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২২৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৩৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৬৭৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৭১, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৬২৭৮, আহমাদ ৭১২৩,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৬৭, ইসলামীক সেন্টার ২২৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে হাত পাততে থাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমন্ডলে গোশত (গোশত/গোশত/গোসত) থাকবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৭৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৮৬-২২৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪০, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ২৩৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ৭৯১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।

(৫৭)  যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন পড়ে নাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুর করে কুরআন পড়ে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih ২১৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪৬, আধুনিক প্রকাশনী ৭০০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫৮) পেশাব থেকে অসাবধনতা হলেঃ

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার কোন বাগানের বাইরে গেলেন। তখন তিনি এমন দু’জন লোকের শব্দ শুনলেন, যাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ তাদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে। তবে বড় গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। আর তা হলো কবীরা গুনাহ। এদের একজন প্রস্রাবের সময় সতর্ক থাকত না। আর অন্য ব্যক্তি চোগলখোলী করে বেড়াতো। তারপর তিনি একটা কাঁচা ডাল আনিয়ে তা ভেঙ্গে দু’ টুকরো করে, এক কবরে এক টুকরো আর অন্য কবরে এক টুকরো গেড়ে দিলেন এবং বললেনঃ দু’টি যতক্ষণ পর্যন্ত না শুকাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আযাব হালকা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৫৫, ৬০৫২, ২১৬, ৬০২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৭০, নাসায়ী ৩১, ২০৬৮; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০, আহমাদ ১৯৮১, দারিমী ৭৩৯, ইরওয়া ১৭৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেশির ভাগ কবরে আযাব পেশাব থেকে অসতর্কতার কারণেই হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৮, আহমাদ ৮১৩১, ৮৮০০, ইরওয়াহ ২৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ বাকারহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি কবর অতিক্রম করার সময় বলেনঃ নিশ্চয় এই দু কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে কোন কঠিন অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজনকে পেশাবের (অসতর্কতার) কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং অপরজনকে গীবত করার কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৪৯, আহমাদ ১৯৮৬০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫৯) অযুর সময় পায়ের গোড়ালী সঠিকভাবে না ভেজালেঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে উযূ করতে দেখলেন, কিন্তু তাদের পায়ের গোড়ালি (না ভেজায়) চমকাচ্ছিল। তিনি বলেনঃ পায়ের গোড়ালিসমূহের জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। তোমরা পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪৫০, বুখারী ৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬০) ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলেঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্‌র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৬৩৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৪, আহমাদ ৯০৩৫, ৯৮১১; দারিমী ১১৩৬, ইরওয়াহ ২০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যাক্তি তার ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলো, তার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে এক দ্বীনার বা অর্ধ দ্বীনার দান-খয়রাত করবে। (ইবনু মাজাহ  ৬৪০, ৬৫০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩৬-৩৭, নাসায়ী ২৮৯, ৩৭০; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৬৪-৬৬, ২১৬৮-৬৯, আহমাদ ২০৩৩, ২১২২, ২২০২, ২৪৫৪, ২৫৯০, ২৭৮৪, ২৮৩৯, ৩১৩৫, ৩৪১৮, ৩৪৬৩; ১১০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার- দৃষ্টিতে) তাকান না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫,  সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮০১, আহমাদ ৭৬২৭, ৮৩২৭, ৯৪৪০, ৯৮৫০, দারেমী ১১৪০, বায়হাকী ৭/৭৩৪, আদাবুয যিফাফ ৩০, সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) খুযাইমা ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (অতঃপর বলেন) তোমরা মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৪, আহমাদ ২১৩৪৩, ২১৩৬৭, দারেমী ১১৪৪, ইরওয়াহ ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯, মিশকাত ৩১৯২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। 

(৬১) পুরুষের বেশধারিণী নারী এবং নারীর বেশধারী পুরুষঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের বেশধারিণী নারীকে এবং নারীর বেশধারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৩, আদাবুয যিফাফ ১২২১)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, ৫৮৮৬, ৬৮৩৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮৪, ২৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৭, ৪৯৩০, আহমাদ ১৯৮৩, ২০০৮, ২১২৪, ৩৪৪৮, দারেমী ২৬৪৯, রওয ৪৪৭, আল-আদাব ৪৪৭, হিজাবুল মারআহ ৬৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬২) হিল্লা বিয়ে করলেঃ

(ক) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহলীলকারী (হিল্লাকারী)এবং যার জন্য তাহলীল (হিল্লা) করা হয়, তাদের (উভয়কে) অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৩৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ২০৭৬, আহমাদ ৬৩৬, ৬৬২, ৬৭৩, ৭২৩, ৮৪৬, ৯৮৩, ১২৯১, ১৩৬৮, বায়হাকী ৫/৬১, হাকিম ফিল মুসতাদরাক ১/৪৫৪, ইরওয়াহ ৬/৩০৮, ৩০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উকবা ইবনু ’আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলেনঃ সে হলো তাহলীলকারী। আল্লাহ্ তাহলীলকারী এবং যার জন্য তাহলীল করা হয় তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৩৬, ইরওয়াহ ৬/৩০৯-৩১০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬৩) মনিবের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলেঃ

ইবনে ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গোলাম তার মনিবের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলে সে ব্যভিচারী। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৯৫৯, ১৯৬০, দারেমী ২২৩৩, ২২৩৪, ইরওয়াহ ১৯৩৩, ইরওয়া ১৯৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬৪) পরচুলা লাগালে ও উল্কি অংকন করলেঃ

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যে কৃত্রিম চুল সংযোজন করে এবং যে তা করায় এবং যে দেহে উল্কি অংকন করে এবং যে তা করায়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৫৯, ১৭৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৮, নাসায়ী ৫০৯৫, ৫২৫১, আহমাদ ৪৭১০, গায়াতুল মারাম ৬৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আমার মেয়ের সদ্য বিবাহ হয়েছে, কিন্তু রোগের কারণে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আমি কি তার মাথায় কৃত্রিম চুল জোড়া দিবো? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে নারী পরচুলা সংযোজন করে এবং যে সংযোজন করায়, আল্লাহ্ তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৫, ৫৯৩৬, ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, নাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮, ২৬৩৯১, ২৬৪৩৯, গায়াতুল মারাম ৯৮-৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা অন্যের দেহে আঁকে এবং যারা নিজেদের দেহে উল্কি অংকন করায়, যারা ভ্রূর চুল উপড়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে। আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নাম্নী মহিলার কাছে এ হাদীস পৌঁছলে, তিনি ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এসে বলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি এমন এমন কথা বলেছেন।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে কেন অভিসম্পাত করবো না যাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে উক্ত আছে! মহিলা বলেন, আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো তা পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি খেয়াল করে তা পড়লে, অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়োনি (অনুবাদ) ’’রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’ (সূরা হাশরঃ ৭)? মহিলা বললেন, হ্যাঁ।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহিলা বলেন, আমার মনে হয় আপনার পরিবার (স্ত্রী) এরূপ করে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি গিয়ে লক্ষ্য করে দেখো। অতএব সে গিয়ে লক্ষ্য করলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পেলো না। শেষে সে বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি। ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা কথা ঠিক হলে সে আমাদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮২, নাসায়ী ৩৪১৬, ৫০৯৯, ৫১০২, ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১০৯, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৪, ৫২৫৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৬৯, আহমাদ ৩৮৭১, ৩৯৩৫, ৪০৭৯, ৪১১৮, ৪২১৮, ৪২৭১, ৪৩৩১, ৪৩৮৯, ৪৪২০, ২৬৪৭, গায়তুল মারাম ৯৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬৫) কোনো নারী অকারণে তালাক কামনা করলেঃ

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী তার স্বামীর কাছে একান্ত অসুবিধা ছাড়া তালাক দাবি করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৭৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৮৬, ১১৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২২৬, আহমাদ ২১৮৭৪, ২১৯৩৪, দারেমী ২২৭০, ১৩১৬, ইরওয়াহ ২১৩৫, ২০৩৫, সহীহ আবী দাউদ ১৯২৮,  আহমাদ ২২৪৪০, সহীহ আল জামি ২৭০৬, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬৬) ছবি বা চিত্র অংকন করলেঃ

 উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তিনি একটি ছবিওয়ালা বালিশ ক্রয় করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখতে পেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন, ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি ভাব দেখতে পেলাম। তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে তওবা করছি। আমি কী অপরাধ করেছি? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বালিশের কী ব্যাপার? ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, আমি বললাম, আমি এটি আপনার জন্য ক্রয় করেছি, যাতে আপনি টেক লাগিয়ে বসতে পারেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবি তৈরীকারীদের কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যা তৈরী করেছিলে, তা জীবিত কর। তিনি আরো বলেন, যে ঘরে এ সব ছবি থাকে, সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১০৫, ৩২২৪, ৫১৮১, ৫৯৫৭, ৫৯৬১, ৭৫৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১০৭, আহমাদ ২৬১৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫১, নাসায়ী ৫৩৬২, ৫৩৬৩, আহমাদ ২৫৫৫৯, রওদুন নাদীর ৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯৬০ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬৭) আল্লাহ কিয়ামতের দিন নয় শ্রেণির লোকের সাথে কথা বলবেন নাঃ

(ক) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেনঃ (১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বললেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মু’আবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) (ক) ব্যভিচারী বুড়ো, (খ) মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও (গ) অহঙ্কার দরিদ্র ব্যক্তি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী  ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

(১) যার নিকট নির্জন প্রান্তরে অতিরিক্ত পানি আছে, সে তা পথিক মুসাফিরকে পান করতে বাধা দেয়।

(২) যে বিক্রেতা আসরের পর তার পণ্য ক্রেতার নিকট বিক্রয় করে আর আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, সে এতো এতো মূল্যে তা ক্রয় করেছে এবং ক্রেতা তার কথা বিশ্বাস করেছে, অথচ আসল ব্যাপার তার বিপরীত।

(৩) যে ব্যক্তি কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের অভিপ্রায়ে শাসকের আনুগত্য করার শপথ করে, শাসক তাকে কিছু দিলে শপথ পূর্ণ করে এবং না দিলে শপথ ভঙ্গ করে। (ইবনু মাজাহ ২২০৭, ২৮৭০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৯৫, নাসায়ী ৪৪৬২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৭৪, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৮৬৬, বায়হাকী ফিস সুনান ১০/১৭৭, বায়হাকী ফিশ শু'আব ৩৪৪৪, আল-হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ২/৬, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ২০৯৯৯, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ৯৫৫)। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih))।

(৬৮) তিন ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিতঃ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত। (১) যে ব্যক্তি মক্কার হারাম এলাকার মধ্যে নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ করে। (২) যে ব্যক্তি ইসলামে থেকে (ইসলাম-পূর্ব) জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি অনুকরণ করে। (৩) যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে শুধু অন্যায়ভাবে (রক্তপাতের উদ্দেশে) কোন লোকের রক্তপাত ঘটায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৯০২, সহীহাহ্ ৭৭৮, সহীহ আল জামি‘ ৪০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬৯) সর্বনিকৃষ্ট গুনাহ হলো তিনটিঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট গুনাহ হলো- ১. আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, ২. মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, ৩. মিথ্যা কসম করা। (সাবধান) যখন কোনো কসমকারী নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কসম করে এবং তাতে মাছির ডানার পরিমাণও মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তখনই তার অন্তরে একটি দাগ পড়ে যায় যা কিয়ামত অবধি থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৭৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০২০, সহীহ আল জামি ২২১৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭০) আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো অতিমাত্রায় ঝগড়াটে লোকঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক হলো অতিমাত্রায় ঝগড়াটে, অর্থাৎ বেশী বেশী সর্বদা ঝগড়া করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৭, ৪০২৩, ৭১৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৬৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৬৮, নাসায়ী ৫৪২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৭৬, আহমাদ ২৪২৭৭, সহীহাহ্ ৩৯৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭১) কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তায়ালা নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবেঃ

বিশর ইবনু মারহুম (রহঃ)..আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যাক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যাক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যাক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৭, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ২০৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭২) যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করলে অথবা যুলুমে সহায়তা করলেঃ

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করে অথবা যুলুমে সহায়তা করে, তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই সে আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৯৭, ইরওয়া ৭/৩৫০, সহীহাহ ৪৩৮, ১০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৭৩) অন্যের ক্ষতি করলে বা কষ্ট দিলে কিংবা অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করলেঃ

(ক) আবূ সিরমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৩৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৩৫, আহমাদ ১৫৩২৮, ইরওয়া ৮৯৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭৪) মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার ইচ্ছে পোষণ করলেঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার অভিপ্রায় গ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪১১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩৮৭, আহমাদ ৮৫১৬, ৯১৩৫, গায়াতুল মারাম ৩৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭৫) নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে বাপ বলে পরিচয় দিলেঃ

(ক) আবূ উসমান আন-নাহ্‌দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাদ (রাঃ) ও আবূ বকরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি এবং তাদের প্রত্যেকেই বলেছেন, আমার উভয় কান শুনেছে এবং আমার অন্তর মুখস্থ রেখেছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সজ্ঞানে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য লোককে বাপ বলে পরিচয় দেয়, জান্নাত তার জন্য হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২৭, ৬৭৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৫৭, ১৫০০, ১৫৫৬, ১৯৮৮৩, ১৯৯৫৩, দারেমী ২৫৩০, ২৮৬০, গায়াতুল মারাম ২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতীত অন্যের সাথে জন্মসূত্র স্থাপন করে অথবা নিজের মনিব ব্যতীত অন্যকে মনিব বানায়, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতাকুল ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬০৯, আহমাদ ২৮১২, ২৯০৭, ৩০২৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৮৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচ শত বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৬১১, আহমাদ ৬৫৫৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৮৮, রাওদুন নাদীর ৫৮৭, সহীহাহ ২৩০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(ঘ) আমর ইবনে খারিজা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্তুযানে আরোহিত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। জন্তুটি তখন জাবর কাটছিল এবং এর মুখের লালা আমার উভয় কাঁধের মাঝখান দিয়ে পড়ছিল। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা (মৃতের) পরিত্যক্ত মালে প্রত্যেক ওয়ারিসের অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই কোন ওয়ারিসের অনুকূলে ওসিয়াত করা জায়েয নয়। সন্তান যার অধীন সন্তানের মালিকানা তার, যেনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যের সন্তান বলে পরিচয় দেয় অথবা নিজের মনিবকে ত্যাগ ক’রে অপরকে মনিব বলে পরিচয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তার নফল বা ফরয কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭১২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১২১, নাসায়ী ৩৬৪১, ৩৬৪২, ৩৬৪৩, আহমাদ ১৭২১০, ১৭৬১৫, ১৭৬২১, দারেমী ৩৫২৯, ৩২৬০, ইরওয়া ৬/৮৮-৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঙ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোকের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কবিতা বলতে গিয়ে তার গোটা গোত্রের কুৎসা করে এবং যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতৃপরিচয়ে নিজের মাকে ব্যভিচারিণী বানায়, তারা হলো মানুষের মধ্যে সর্বাধিক ঘৃণ্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭৬) নিজ বংশের লোককে অস্বীকার করলে কিংবা নিজ বংশীয় লোক দাবী করা যাকে কেউ চিনে নাঃ

আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এমন লোককে নিজ বংশীয় দাবি করা কুফরী যাকে লোকে চিনে না, অথবা সামান্য সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নিজের বংশের লোককে অস্বীকার করাও কুফরী। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৭৪৪, আহমাদ ৬৯৮০, রাওদুন নাদীর ৫৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭৭)  বিশ্বাসঘাতকতা করলেঃ

মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সে অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করে এবং কারো সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। মুনাফিকের চরিত্র এর সম্পূর্ণ বিপরীত। মুনাফিকরা অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে। আমানতের খেয়ানত করে। বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। জীবন চলার পথে প্রতিনিয়ত মানুষকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, সেগুলো পূরণের ব্যাপারে ইসলাম জোরালো তাগিদ দিয়েছে। এ ব্যাপারে সামান্যতম শৈথিল্য প্রদর্শন মানবসমাজে মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ জন্য পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করবে, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে”।  (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)।

প্রতিশ্রুতি পূরণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি অঙ্গীকার পূরণ করে, যা সে আল্লাহর সঙ্গে করছে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন”।  (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ১০)।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “এ কিতাবে ইসমাইলের বৃত্তান্তও বিবৃত করো। নিশ্চয়ই সে ছিল প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে সত্যবাদী এবং রাসুল ও নবী”।  (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৪)।

বিশ্বাসঘাতকতার পরিনতি

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে এবং বলা হবে, এটা অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৭২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৪২৯, ৪৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৮, ১৭৩৬, আহমাদ ৩৮৯০, ৬৯৪৯, দারেমী ২৫৪২, রাওদুন নাদীর ৫৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭৮) দাবা বা পাশা খেললেঃ

দাবা খেলা আরেকটি হারাম কাজ। এতে করে জুয়ার প্রশস্ত পথ খুলে যায় এবং প্রচুর মূল্যবান সময় বিনষ্ট হয়। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দাবা বা পাশা খেলে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যাচরণ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৬২, আবূ দাউদ ৪৯৩৮, আহমাদ ১৯০২৭, ১৯০৫৭, ১৯০৮৩, মুয়াত্তা মালেক ১৭৮৬, ইরওয়া ২৬৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা বা পাশা খেললো, সে যেন শুকরের গোশত ও রক্তের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৩৯, আহমাদ ২২৪৭০, ২২৫১৬, ২২৫৪৭, ইরওয়া ৮/২৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬৯৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৭৯) যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দোয়া করে নাঃ

গুণাহ করে তওবা করলে আল্লাহ যেমন খুশি হোন তেমনি আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চাইলে আল্লাহও খুশি হোন। দুই হাত তুলে আল্লাহর নিকট কিছু চাইলে আল্লাহ খালি হাতে ফিরান না। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট চায় না তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হোন। আল্লাহ অসন্তুষ্ট সে জান্নাতে যাবে কিভাবে?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৩, সহীহাহ ২৬৫৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৮০) মুসলিমকে গালি দিলে ও তাকে হত্যা করলেঃ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৩৯, ৩৯৪০, ৩৯৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮, ৬০৪৪, ৭০৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৯৮৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, নাসায়ী ৪১০৫, ৪১০৬, ৪১০৭, ৪১০৮, ৪১০৯, ৪১১০,৪১১১ ৪১১২, ৪১১৩, আহমাদ ৩৬৩৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭, ৪১১৫, ৪১৬৭, ৪২৫০, ৪৩৩২, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮১) লোকদেরকে গোত্রবাদের দিকে আহবান করলেঃ

শাইবান ইবনু ফাররূখ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্ৰপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্র প্রীতির দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকে না) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। আর যে ব্যক্তি আমার উন্মাতের উপর আক্রমণ করে, আমার উম্মাতের ভালমন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করে। মু’মিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে ওয়াদাবদ্ধ হয় তার ওয়াদাও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয়, আমিও তার কেউ নই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৪৮, নাসায়ী ৪১১৪, আহমাদ ৭৮৮৪, ৮০০০,৯৯৬০, সহীহাহ ৪৩৩, ৯৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৩৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮২) দুই মুসলিম পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলেঃ

(ক) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দু’জন মুসলিম পরস্পর সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’ মুসলিম তাদের তরবারিসহ পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত হলে হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো হত্যাকারী, কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী হলো? তিনি বলেনঃ সেও তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করতে উদ্যত ছিলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৪, নাসায়ী ৪১১৮, ৪১১৯, ৪১২৪, আহমাদ ১৯১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ).....আহনাফ ইবনু কায়স (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি বের হলাম। এ লোকটিকে সহযোগিতা করা আমার অভিপ্রায় ছিল। এমন সময় আবু বাকরাহ (রাযিঃ) এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। তখন তিনি বললেন, হে আহনাফ! তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাই আলী (রাযিঃ)-কে সহযোগিতা করার জন্য আমি যেতে চাচ্ছি। আহনাফ (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে আহনাফ চলে যাও। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর যুদ্ধ করে তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি দু’জনেই জাহান্নামী হবে। এ কথা শুনে আমি বললাম অথবা বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারীর অবস্থা তো এ-ই, তবে নিহত ব্যক্তির অপরাধ কি? জবাবে তিনি বললেন, সে তার সাথীকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় জড়িয়ে ছিল।  (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৬৫, নাসায়ী ৪১১৭, আহমাদ ১৯৯১১, সহীহাহ ১২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৭০৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮৩) মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলে ও ধোকা দিলেঃ

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়্যান (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭৫, আহমাদ ৮১৫৯, ২৮৫০০, ইবনুস সালাম এর তাখরীজুল ঈমান ৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮৪) আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বললে এবং তাকে দূষণীয় মনে না করলেঃ

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে এবং তাকে দূষণীয় মনে করে না। অথচ এই কথার দরুন সত্তর বছর ধরে সে জাহান্নামে পতিত হতে থাকবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪, মুয়াত্তা মালেক ১৮৪৯, সহীহাহ ৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অন্যথা নীরব থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১৮, ৬১৩৬, ৬১৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫০০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৫৪, আহমাদ ৭৫৭১, ৯৩১২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩১৭, রাওদুন নাদীর ২৯৩, ৩২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮৫) নারীদের সৃষ্ট বিপর্যয়ঃ

(ক) উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৮, ৬৮৩৯,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪০, ২৭৪১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৮০, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২, সহীহাহ ২৭০১, আধুনিক প্রকাশনী ৪৭২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭২৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষন দিতে দাঁড়ালেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেনঃ নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে তোমাদেরকে খলীফা (শাসক) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে, তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সর্তক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সর্তক হও। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৯১, আহমাদ ১০৬৫১, ১০৭৫৯, ১০৭৮৫, ১১০৩৬, ১১১৯৩, ১১৩৮৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ রুহমের মুক্তদাস উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক নারীকে সুগন্ধি শেখে মসজিদে যেতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে মহাপরাক্রমশালীর বান্দী! কোথায় যাচেছা? সে বললো, মসজিদে। তিনি বললেন, সেজন্য সুগন্ধি মেখেছ? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী সুগন্ধি মেখে মসজিদের যায় তার নামায কবুল হয় না, যাবত না সে (তা) ধুয়ে ফেলে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৭৪, আত-তালীকু আলা ইবনু খুযাইমাহ ১৬৮২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৯৪, সহীহাহ ১০৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৮৬) দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকলেঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক”। (সুরা আল আলা)”।

এই দুনিয়া ক্ষণ স্থায়ী আর আখেরাত হচ্ছে চির স্থায়ী। এই সত্যকে জানার পরও অধিকাংশ মুসলমান দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে। আখেরাত নিয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করে না। দুনিয়ার জীবনকে তারা প্রাধান্য দিয়ে থাকে বেশী। যারা এরুপ কাজ করবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত, তার পার্থিব চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত থাকে তার যে কোন উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোন পরোয়া নাই। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহাপবিত্র আল্লাহ বলেনঃ হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করবো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১০৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৬৬, সহীহাহ ১৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া মুমিনের জেলখানা (কারাগার) এবং কাফেরের বেহেশতখানা (জান্নাত)। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭৩০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৫৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩২৪, আহমাদ ৮০৯০, ৯৯১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮৭) গর্ব-অহংকারকারী বা অবাধ্য, আহাম্মক কিংবা দাম্ভিকতা করলেঃ

“নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করে এবং তা থেকে অহংকারবশে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তাদের জন্য আকাশের দুয়ার সমূহ উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না ছুঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা পাপীদের বদলা দিয়ে থাকি”। (আ‘রাফ ৭/৪০)।

অত্র আয়াতে আল্লাহ কুফরী বশে বা অজ্ঞতা বশে বলেননি। বরং ‘অহংকার বশে’ বলেছেন। ফলে অহংকারী কাফেরের জান্নাতে প্রবেশ করা ঐরূপ অসম্ভব, যেরূপ ছুঁচের ছিদ্রপথে উটের প্রবেশ অসম্ভব। কাফের তওবা করে ঈমান আনতে পারে, অজ্ঞ ব্যক্তি জানার পরে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু অহংকারী ব্যক্তি স্বীয় অহংকারের উপরে দৃঢ় থাকে ও এক সময় সে ধ্বংস হয়ে যায়। অহংকার তাই মারাত্মক পাপ। যা অন্য অধিকাংশ পাপের উৎস। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ মানুষকে অহংকারের পাপ ও তার ভয়াবহ পরিণতি বিষয়ে সাবধান করেছেন।

অহংকারের আরবী নাম কিব্র (الْكِبْر)। যার অর্থ বড়ত্ব। অন্যের চাইতে নিজেকে বড় মনে করাই এর অন্তর্নিহিত অর্থ। এর পারিভাষিক অর্থ, সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। নিম্নের হাদিসটিতে এর পরিণতি বর্ণিত হয়েছে।

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও (সামান্যতম) অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৭৩, ৪১৭৫, মুসলিম ১৩১, তিরমিযি ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবু দাউদ ৪০৯১, আহমাদ ৩৭৭৯, ৩৯০৩, ৩৯৩৭, ৪২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘অহংকার শিরকের চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা অহংকারী ব্যক্তি আল্লাহর দাসত্বের বিরুদ্ধে অহংকার করে। আর মুশরিক আল্লাহর ইবাদত করে এবং সাথে অন্যেরও করে’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ৩য় প্রকাশ ১৯৯৬ খৃঃ) ২/৩১৬)।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,সমস্ত পাপের উৎস হ’ল তিনটি : (১) অহংকার, যা ইবলীসের পতন ঘটিয়েছিল। (২) লোভ, যা জান্নাত থেকে আদম-কে বের করে দিয়েছিল। (৩) হিংসা, যা আদম (আঃ)-এর এক সন্তানের বিরুদ্ধে অপর সন্তানকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছিল। যে ব্যক্তি উক্ত তিনটি বস্ত্তর অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে সে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। কেননা কুফরীর মূল উৎস হ’ল ‘অহংকার’। পাপকর্মের উৎস হ’ল ‘লোভ’। আর বিদ্রোহ ও সীমালংঘনের উৎস হ’ল ‘হিংসা’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৩৯৩/১৯৭৩) ৫৮ পৃঃ)।

অহংকার ও আত্মম্ভরিতা দু’টিই বড়াই ও বড়ত্বের একক উৎস থেকে উৎসারিত। বস্তুত এই রোগে যে আক্রান্ত হয়, সে নিজেকে নিজে ধ্বংস করে। তার দ্বারা সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ধ্বংস হয়।

পরিণতি

দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হ’ল লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে এর পরিণতি হ’ল ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ জাহান্নামীদের পুঁজ-রক্ত পান করা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হ্রাস পাবে। যদি কারু অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে, তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। বোধশক্তি লোপ পায়। সে অন্যের চাইতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। কাম্য সম্মান না পেলে সে মনোকষ্টে মরতে বসে। তার চেহারায় ও আচরণে, যবানে ও কর্মে অহংকারের দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। ফলে মানুষ তার থেকে ছিটকে পড়ে। এক সময় সে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। একাকীত্বের যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে থাকে। কিন্তু বাইরে ঠাট বজায় রাখে। এভাবেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায়। বদরের যুদ্ধে আবু জাহল মরার সময় বলেছিল, ‘আমার চাইতে বড় কোন মানুষকে তোমরা হত্যা করেছ কি’? অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মদীনার ঐ চাষারা ব্যতীত যদি অন্য কেউ আমাকে হত্যা করত’?

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ জাহাল-এর অবস্থাটি আমাদেরকে কে জানাতে পারবে? এ ঘোষণা শুনামাত্রই ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) চলে গেলেন এবং গিয়ে দেখলেন যে, ’আফরা-এর দু’ পুত্র তাকে এমনভাবে আঘাত করেছে যে, সে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। (আনাস (রাঃ) বলেন) অতঃপর ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) তার দাঁড়ি টেনে ধরে বললেনঃ তুমিই কি আবূ জাহাল? আবূ জাহাল বলল, তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, এতে আনন্দোল্লাস বা কৃতিত্বের কী আছে?

অন্য এক সূত্রে বর্ণিত আছে, আবূ জাহাল (আক্ষেপ ও অনুশোচনা ভরে) বলল, আমাকে যদি চাষীর ছেলেরা ব্যতীত অন্য কেউ হত্যা করত (তবে সান্তবনা পেতাম)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২০, ৩৯৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৫৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮০০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ বলেন,

হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে জান্নাতবাসী লোকেদের কথা বলে দেব কি? তারা হলেন বৃদ্ধ ও দুর্বল লোক। তারা যদি আল্লাহর দরবারে কসম করে, তখন আল্লাহ তাদের সে শপথকে সত্যে পরিণত করে দেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী লোকেদের কথা বলে দেব? তারা হলো, মিথ্যা ও তুচ্ছ বস্তু নিয়ে খুব বিবাদকারী, শান্ত মস্তিষ্কে ধন-সম্পদ সঞ্চয়কারী ও অহংকারী।

মুসলিম-এর এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক সম্পদ সঞ্চয়কারী কৃপণ, জারজ ও অহংকারী।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১০৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯১৮, ৬৬৫৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৫৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪১১৬, সহীহুল জামি‘ ২৫৯৮, আহমাদ ১৮৭২৮, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬১২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৭৯, শু‘আবুল ঈমান ৮১৭৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩১৭৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৩২৬, তাখরীজু মুশকিলাতুল ফিকর ১২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ হকপন্থী মুমিনগণ দুনিয়াবী দৃষ্টিতে দুর্বল হ’লেও আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে সবল। কেননা তাদের দো‘আ দ্রুত কবুল হয় এবং আল্লাহর গযবে অহংকারী ধ্বংস হয়।

পবিত্র কুরআনে জাহান্নামীদের প্রধান দোষ হিসাবে তাদের অহংকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,

“কাফিরদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে’... ‘তখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা জাহান্নামের দরজা সমূহে প্রবেশ কর সেখানে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য। অতএব অহংকারীদের বাসস্থান কতই না নিকৃষ্ট”। (সুরা যুমার ৭১-৭২)।

এখানে কাফিরদের বাসস্থান না বলে ‘অহংকারীদের বাসস্থান’ বলা হয়েছে। কেননা কাফিরদের কুফরীর মূল কারণ হ’ল তাদের অহংকার।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার আমার চাদর, মহানত্ব আমার লুঙ্গি। কেউ এ দু’টির কোন একটি নিয়ে আমার সাথে বিবাদ করলে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৭৪,  ৪১৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯০, আহমাদ ৭৩৩৫, ৮৬৭৭, ৯০৯৫, ৯২২৪, ৯৪১০, রাওদুন নাদীর ৬৭৭, সহীহাহ ৫৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

রাসুল সাঃ এর উপদেশঃ

ইয়াদ ইবনু হিমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ মহামহিম আল্লাহ আমার নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, নম্রতা অবলন্বন করো, এমনকি একজন যেন অপরজনের উপর অহংকার প্রকাশ না করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৯৫, সহীহাহ ৫৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অবাধ্য, আহাম্মক ও দাম্ভিকতা করলে

হারিসা ইবনে ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করবো না যে, কারা জান্নাতী হবে? যারা দুর্বল এবং যাদেরকে দুর্বল মনে করা হয়। আমি কি তোমাদের অবহিত করবো না যে, কারা জাহান্নামী হবে? প্রত্যেক অবাধ্য, আহাম্মক ও দাম্ভিক ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৫৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬০৫, আহমাদ ১৮২৫৩, তাখরীজু মুশকিলাতুল ফিকর ১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮৮) অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি হলেঃ

অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি লোকদেরকে সমাজের কেই পছন্দ করে না কারণ এরা সমাজে কলহ-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। মুনাফিকের একটা চিহ্ন হচ্ছে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা। উগ্র ভাষায় কথা বললে ভালবাসা কিংবা বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। তাই এইসমস্ত লোকদেরকে ইসলাম পছন্দ করে না। যারা অশ্লীলভাষী ও উগ্রমেজাজী এরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা ঈমানের অংগ। আর ঈমানের অবস্থান হলো জান্নাতে। আর অশ্লীলতা হলো অত্যাচার (জুলুম), আর অত্যাচার থাকবে জাহান্নামে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮৯) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলেঃ

মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত। মানুষের মাঝের এই সম্পর্কের নাম হচ্ছে ‘আত্মীয়তা’। পরস্পরের সাথে জড়িত মানুষ হচ্ছে একে অপরের ‘আত্মীয়’। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্ক সর্বতোভাবে জড়িত। আত্মীয় ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়দের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা নিয়েই মানুষ এ পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় না থাকলে জীবন হয়ে যায় নীরস, আনন্দহীন, একাকী ও বিচ্ছিন্ন। তাই পার্থিব জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

(ক)  আল্লাহ বলেন,

“পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যই রয়েছে লা’নত এবং তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের মন্দ আবাস”। (সুরা রাদ ২৫)।

(খ) আল্লাহ বলেন,

“ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন”। (সুরা মোহাম্মাদ ২২-২৩)।

(গ) আবূ বকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত মারাত্মক আর কোন গুনাহ নাই, যার শাস্তি আল্লাহ ত্বরিতে দুনিয়াতে দেন এবং আখেরাতের জন্যও জমা রাখেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২১১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০২,আহমাদ ১৯৮৬১, ১৯৮৮৫, সহীহাহ ৯১৭, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) যুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবু মূসা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও যাদুতে বিশ্বাসী”। (আহমদ, হাদীস নং ১৯৫৮৭; হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৫৩৪৬)।

(চ) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে (আল্লাহ তা‘আলার নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না”। (আহমদ, হাদীস নং ১০২৭৭)।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মতো অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতি দ্রুত আযাব দেয়ার পরও আখিরাতের আযাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে ’রাহিম’ (রক্ত সম্পর্কে) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার হতে থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, ’’ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করবে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৩০, ৪৮৩১, ৪৮৩২, ৫৯৮৭, ৭৫০২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাবী সুফ্ইয়ান বলেন, আ’মাশ এ হাদীস মারফূ’রূপে বর্ণনা করেননি। অবশ্য হাসান (ইবনু ’আমর) ও ফিতর (রহ.) একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৯১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার আত্মীয়-স্বজন আছেন। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি; কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করে থাকি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সহনশীলতা প্রদর্শন করে থাকি আর তারা আমার সঙ্গে মূৰ্খসুলভ আচরণ করে। তখন তিনি বললেন, তুমি যা বললে, তাহলে যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয় তুমি যেন তাদের উপর জলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৯৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করলে আল্লাহ তায়ালাও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন মহামহিম আল্লাহ যাবতীয় মাখলুকের সৃষ্টি সম্পন্ন করলেন তখন “রেহেম” (আত্মীয়তার বন্ধন) উঠে দাড়ালো। তিনি বলেন, কি ব্যাপার! সে বললো, এ হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে যুক্ত রাখবো এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো? রেহেম বললো, হে প্ৰভু! তিনি বলেন, এটাই তোমার প্রাপ্য। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা চাইলে পড়তে পারোঃ “তোমরা আধিপত্য লাভ করলে হয়তো পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে”। (মুহাম্মাদ ৪৭/২২)। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,

আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমার নাম রহমান, দয়াময়। আমি রেহেম (জরায়ু, আত্মীয় সম্পর্ক)-কে সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে তার নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে তাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে আমার সাথে যুক্ত রাখবো এবং যে তাকে ছিন্ন করবে আমিও তাকে আমার থেকে ছিন্ন করবো। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯০) মুখ ও লজ্জাস্থানের কারণেঃ

মানুষের কিছু কিছু অঙ্গ এমন যে এগুলো মানুষের জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে। যদি কেউ এই অঙ্গের সঠিক ব্যবহার করে তাহলে এই অঙ্গগুলো তাদের জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম হবে, আর যদি কেউ এই অঙ্গগুলো গুনাহের কাজে ব্যবহার করে, তবে এই অঙ্গগুলো তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দুটি এমন আছে, যেগুলো মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হবে।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের বদৌলতে বেশীর ভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি অংগ- মুখ ও লজ্জাস্থান। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০০৪, আহমাদ ৭৮৪৭, ৮৮৫২, ৯৪০৩, সহীহাহ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরো বলেন,

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুখের অপব্যবহারে বেশির ভাগ গুনাহঃ যেমন বেশির ভাগ গুনাহ মুখের দ্বারা সংঘটিত হয়। মিথ্যা বলা, গিবত করা, গালি দেওয়া, ধমক দেওয়া, হারাম খাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো এই অঙ্গ। এ কারণে আল্লাহর রাসুল (সা.) এই অঙ্গের সঠিক ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে আল্লাহ্ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে ক্লেশ না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৫, ৫১৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের এই ছোট অঙ্গ এতটাই শক্তিশালী যে এর থেকে বের হওয়া একটি শব্দের কারণে অনেক বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত এই অঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া।

রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৭, ৬৪৭৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্যঃ রাসুল (সা.) যে দুটি অঙ্গ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, তার মধ্যে দ্বিতীয় অঙ্গটি হলো, লজ্জাস্থান। পবিত্র কোরআনে যারা অঙ্গটির হেফাজত করে, তাদের সফল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, “অবশ্যই সফল হয়েছে মুমিনগণ... আর যারা তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষিত রাখ”।  (সুরা : মুমিনুন, আয়াত ৫)।

অর্থাৎ প্রকৃত মুমিনের গুণ হলো, যৌনাঙ্গকে হেফাজত করা। তারা নিজের দেহের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখে। অর্থাৎ উলঙ্গ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করে এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান খোলে না। আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষণ করে। অর্থাৎ যৌন স্বাধীনতা দান করে না এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন হয় না। অর্থাৎ যারা স্ত্রী ও (হালাল) দাসীদের ছাড়া সব পর নারী থেকে যৌনাঙ্গকে হেফাজতে রাখে এবং এই দুই শ্রেণির সঙ্গে শরিয়তের বিধি মোতাবেক কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কোনো অবৈধ পন্থায় কামবাসনা পূর্ণ করতে প্রবৃত্ত হয় না। কারণ অবৈধ পদ্ধতিতে কামবাসনা পূর্ণ করা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন গুনাহটি সবচেয়ে বড়? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে শারীক করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটি অবশ্যই বড় গুনাহ্। এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার সন্তান তোমার সঙ্গে খাবে এ ভয়ে তাকে হত্যা করা। আমি বললাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, এরপর তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫২০, ৪৪৭৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৭০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯১) খোঁটাদানকারী, অবাধ্য সন্তান ও মদ পান করলেঃ

দান করে খোঁটা  দ্বারা  কেবল  দান-খয়রাত    পরোপকারের  ছওয়াবই  নষ্ট  হয়  না;  বরং  এটা  একটা  কঠিন  পাপও  বটে। কেননা  এর  দ্বারা  উপকৃত  ব্যক্তির  অন্তরে  আঘাত  দেওয়া হয়। মানুষের  মনে  আঘাত  দেওয়া  কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়।

(ক)  আল্লাহ তাআলা বলেন:

“যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনো কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান পাবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না”। (সূরা বাকারা : ২৬২)।

(খ)  আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অত:পর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল”। (সূরা বাকারা: ২৬৪)।

(গ)  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:  “সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যে উপকার করে খোটা দেয়। (সুনান নাসাঈ, হা/ ৫৬৮৮)।

(ঘ)  আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারী এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ি : ৫৫৭৭)।

(ঙ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? তারা তো বিফল হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেনঃ (১) যে ব্যক্তি পায়ের গোছার নিচে পরিধেয় ঝুলিয়ে পরে, (২) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে নিজের মাল বিক্রয় করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, গায়াতুম নারাম ১৭০, ইরওয়া ৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯২)  লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করলেঃ

লোক দেখানো ইবাদত যেমন, সালাত, জিকির, সাওম, হজ্জ বা দান-খয়রাত করলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহিত হবে না। আল্লাহ তায়ালা বান্দার অন্তরের খবর জানেন। কে কোন উদ্দেশ্যে এসব আমল করেছে তা কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা সবার সামনে প্রকাশ করে দিবেন।

(ক)  আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, (কিয়ামতের দিন) যখন আমাদের প্রভু পায়ের নলা বা গোছা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই তাঁকে সিজদাহ্ করবে। আর বিরত থাকবে ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে রিয়া (লোক দেখানো) ও শুনানোর জন্য সিজদাহ্ করত, তারা সিজদাহ করতে চাইবে কিন্তু তাদের পৃষ্ঠদেশ ও কোমর একটি কাষ্ঠফলকের মতো শক্ত হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯১৯, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুবকে বলতে শুনেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য কাউকে ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন’ এমন বলতে শুনিনি। আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং তাঁকে বলতে শুনলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ’ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ’লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ’ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ’লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৯৯, ৭১৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৬, আধুনিক প্রকাশনী ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৫৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯৩) নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট  দিলেঃ

নিজ প্রতিবেশীকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। যে ব্যক্তি নিজ প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় সে সত্যিকারের মু’মিন নয়।

আবূ শুরায়হ্ (রাঃ) থেকে বণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলছিলেনঃ আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে সে লোক? তিনি বললেনঃ যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১৬, আহমাদ ৮৮৬৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে কষ্ট দিয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিজ প্রতিবেশীর প্রতি দয়াশীল হওয়া সত্যিকারের ঈমানের পরিচায়ক।

হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানদের সমাদর করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রাযিঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা রাত্রিবেলায় নফল নামায পড়ে এবং দিনের বেলায় নফল রোযা রাখে অথচ সে কর্কশভাষী তথা নিজ মুখ দিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার মধ্যে কোন কল্যাণ নিহিত নেই। সে জাহান্নামী’’। (হা’কিম ৪/১৬৬)।

জিব্রীল (আঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজ প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে এতো বেশি তাকিদ দিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ প্রতিবেশীকে তাঁর ওয়ারিশ বানিয়ে দেয়ার আশঙ্কা পোষণ করেছেন।

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার ধারণা হয় যে, শীঘ্রই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস করে দিবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ৬০১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২৫, আহমাদ ২৬০৭২, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জিনিস যতই সামান্য হোক না কেন তা প্রতিবেশীকে দিতে লজ্জাবোধ করবেন না। কারণ, কিছু না দেয়ার চাইতে সামান্য দেয়াই ভালো।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশী মহিলা যেন তার অপর প্রতিবেশী মহিলাকে (হাদিয়া ফেরত দিয়ে) হেয় প্রতিপন্ন না করে। তা ছাগলের পায়ের ক্ষুরই হোক না কেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০১৭, ২৫৬৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ কামিল আল জাহদারী ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...আবু যার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবু যার! যখন তুমি তরকারি রান্না করবে তখন তাতে পানি (শুরুয়া বা ঝোল) বেশি দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে কিছু প্রদান করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৮২, ৬৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৪৯, ইসলামিক সেন্টার ৬৫০০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জিনিস কম হলে তা নিকটতম প্রতিবেশীকেই দিবে।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। আমি তাদের কার কাছে হাদিয়া পাঠাব? তিনি বললেনঃ যার দরজা তোমার বেশি কাছে, তার কাছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০২০, ২২৫৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত যে, প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরন করতে হবে, তাদের সাথে ঝগড়া করা যাবে না, অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা যাবে না, প্রতিবেশীকে সাহায্য সহযোগীতা করতে হবে পক্ষান্তরে যারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দিবে তারা জাহান্নামী।

(প্রথম অংশ এখানেই সমাপ্ত)

দ্বিতীয় অংশ দেখতে এখানে ক্লিক করুন (PMMRC)

দ্বিতীয় অংশে যা থাকছে,

(১) জাহান্নামে যাওয়ার অবশিষ্ট কারণসমূহ।

(২) “যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী” দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...