Friday, August 2, 2019

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৪)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর

(পর্ব-০৪)

সম্পাদকীয়ঃ

আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল ১৬/১২৫)।

আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।

 
প্রশ্নোত্তর 

(৪ নং পর্বে মোট ২৪০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে---জুলাই--ডিসেম্বর  পর্যন্ত)

জুলাই/২০১৮

প্রশ্ন (১/৩৬১) : ‘শাওয়াল মাসের ৬টি ছিয়াম পালন করলে সারা বছরের ছিয়াম পালন করা হয়’ -এর তাৎপর্য কি।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রামাযানের ছিয়াম পালন শেষে শাওয়াল মাসের ৬টি ছিয়াম পালন করল, সে যেন সারা বছর ছিয়াম পালন করল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৭)। হাদীছটির ব্যাখ্যা এসেছে অন্য বর্ণনায়, যেখানে তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক সৎকর্মের জন্য ১০ গুণ নেকী নির্ধারণ করেছেন। অতএব রামাযানে ছিয়াম পালন, দশ মাসের (ছিয়াম পালনের) সমতুল্য গণ্য হয়। আর ‘ঈদুল ফিৎরে’র পর (শাওয়াল মাসের) ছয় দিন ছিয়াম পালন দুই মাস ছিয়াম পালনের সমতুল্য গণ্য হয়। ফলে তা পুরো বছর ছিয়াম পালনের সমতুল্য হয় (ইবনু মাজাহ, ছহীহ ইবনু খুযায়মা, ছহীহুত তারগীব হা/১০০৭)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রামাযানের ৩০টি ছিয়ামকে ১০ দিয়ে গুণ করলে (৩০´১০)=৩০০ দিন হয়। আর শাওয়াল মাসের ৬টি ছিয়ামকে ১০ দিয়ে গুণ করলে (৬´১০)=৬০ দিন হয়। মোট ৩৬০ দিন হয়। আর আরবী গণনা হিসাবে ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং রামাযানের ৩০টি ছিয়াম পালন করে যে ব্যক্তি শাওয়ালের ৬টি ছিয়াম পালন করল, সে যেন সারা বছর ছিয়াম পালন করল। মূলতঃ এখানে উদ্দেশ্য হ’ল ছওয়াব বর্ণনা করা (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ২/৮১-৮২)।
প্রশ্ন (২/৩৬২) : যোহর ও আছরের ছালাতে শেষ ২ রাক‘আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলানো যাবে কি? -নাজমুল হুদা, চরমোহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এ বিষয়ে সাধারণ নিয়ম হ’ল- যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সূরা ফাতিহাসহ অন্য সূরা পড়বে এবং ৩য় ও ৪র্থ রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়তেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৮)। ওমর, আলী, জাবের (রাঃ) সহ অধিকাংশ ছাহাবীর আমল ও নির্দেশনা উক্ত হাদীছ মোতাবেক ছিল (ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, দারাকুৎনী, ইরওয়া ২/২৮৩, ২৮৮, সনদ ছহীহ; মুগনী ১/৪১২।
তবে কখনো কখনো শেষের দু’রাক‘আতেও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যোহরের প্রথম দুই রাক‘আতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ কিরাআত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাক‘আতে পনের আয়াত পরিমাণ। অথবা বলেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। এবং আছরের প্রথম দুই রাক‘আতের প্রত্যেক রাক‘আতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরাআত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাক‘আতে এর অর্ধেক পরিমাণ’ (মুসলিম হা/৪৫২; আহমাদ হা/২৩১৪৬)। এছাড়া কোন কোন ছাহাবী সূরা মিলাতেন বলে জানা যায় (মুওয়াত্ত্বা, মির‘আত ১/৬০০ পৃঃ; ঐ ৩/১৩১ পৃঃ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ১০০)।
প্রশ্ন (৩/৩৬৩) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, হাদীছে সূরা ফাতিহা শেষে কেবল একবার নয় তিনবার আমীন বলার নির্দেশও এসেছে। সুতরাং হাদীছ নয়, বরং ফক্বীহগণ হাদীছ থেকে কি দলীল নিয়েছেন তা দেখতে হবে। একথা সঠিক কি? -মুরশেদ খান, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) সূরা ফাতিহা শেষে তিনবার আমীন বলেছেন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী (মু‘জামুল কাবীর হা/৩৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/২৬৬৭)। দ্বিতীয়তঃ অত্র হাদীছটি ইবনু মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু সেখানে তিনবার আমীন বলার কথা নেই (ইবনু মাজাহ হা/৮৫৫; মিশকাত হা/৮৪৫; ছহীহাহ হা/৪৬৫)। বরং অসংখ্য ছহীহ হাদীছে একবার আমীন বলার বর্ণনা রয়েছে (বুখারী হা/৭৮০; আবুদাউদ হা/৯৩২; মিশকাত হা/৮২৫)। অতএব উক্ত হাদীছের উপর ভিত্তি করে তিনবার আমীন বলা সিদ্ধ নয়।
প্রশ্ন (৪/৩৬৪) : ছালাতে দাঁড়ানোর সময় মুছল্লীর দুই পায়ের মাঝে কতটুকু ফাঁকা থাকবে? প্রচলিত আছে যে, চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা থাকবে’- একথার ভিত্তি আছে কি?
-মশীউর রহমান, সাহাপুর, নওগাঁ।
উত্তর : এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তবে হাদীছে ইঙ্গিত রয়েছে যে, কাতারে দাঁড়িয়ে শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য অনুযায়ী পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে যতটুকু ফাঁকা রাখার প্রয়োজন হয়, ততটুকু ফাঁকা রাখবে (বুখারী হা/৭২৫; আবুদাঊদ হা/৬৬২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৩৫৭)। আর সমাজে প্রচলিত কথা ‘দু’পায়ের মাঝে হস্ততালু পরিমাণ স্থান ফাঁকা রাখবে’ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮)।
প্রশ্ন (৫/৩৬৫) : আযানের দো‘আ হিসাবে আমাদের দেশে যে অতিরিক্ত অংশ পাঠ করা হয় তা সঠিক কি? -মুনীরুল আলম, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) যেক্ষেত্রে যে দো‘আ পাঠের নির্দেশনা দিয়েছেন, কোনরূপ কমবেশী ছাড়া হুবহু তার অনুসরণ করতে হবে (বুখারী হা/২৪৭)। বিভিন্ন গ্রন্থে দুর্বল সূত্রে আযানের দো‘আয় বিভিন্ন বাক্য এসেছে, যা আমলযোগ্য নয়। যেমনঃ
(১) বায়হাক্বীতে (১ম খন্ড ৪১০ পৃঃ) বর্ণিত আযানের দো‘আর শুরুতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি হাকক্বে হা-যিহিদ দাওয়াতে’ (শায) 
(২) একই হাদীছের শেষে বর্ণিত ‘ইন্নাকা লা তুখ্লিফুল মী‘আ-দ (শায) 
(৩) ইমাম ত্বাহাভীর ‘শারহু মা‘আনিল আছার’-য়ে বর্ণিত ‘আ-তি সাইয়িদানা মুহাম্মাদান’  (মুদরাজ ও শায) 
(৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী ‘আমালিল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’তে ‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা’ (বানোয়াট ও সংযোজন) 
(৫) রাফেঈ প্রণীত ‘আল-মুহার্রির’-য়ে আযানের দো‘আর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রা-হিমীন’ (ভিত্তিহীন) 
(৬) আযানের দো‘আয় যোগ করা ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ (বানোয়াট) 
(৭) শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ, ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা (বানোয়াট) (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩, পৃঃ ১/২৬০-৬১; ইবনু হাজার, তালখীছুল হাবীর ১/৫১৮ পৃঃ; মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাত ২/১৬৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ পৃঃ ১/৯২)। অতএব এসব পরিত্যাজ্য (দ্র: ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭৮-৭৯ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৬/৩৬৬) : আমাদের এলাকায় কেউ কেউ ৪০ দিনের জন্য ই‘তিকাফে বসে। এরূপ বিধান শরী‘আতে আছে কি? -আমীনুল ইসলাম, নালবাড়ী, আসাম, ভারত।
উত্তর : এরূপ কোন বিধান নেই। বরং রাসূল (ছাঃ) প্রত্যেক রামাযানে ১০ দিন ই‘তিকাফ করেছিলেন এবং জীবনের শেষ রামাযানে পূর্বের বছরের ছুটে যাওয়া ই‘তিকাফের ক্বাযাসহ ২০ দিন ই‘তিকাফ করেছিলেন (বুখারী হা/২০৪৪; আহমাদ হা/২১৩১৪)। 
প্রশ্ন (৭/৩৬৭) : আমার স্ত্রী আমাকে তালাক দেওয়ার তের দিনের মাথায় অন্যত্র বিবাহ করে। তার দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ হয়েছে কি? -কে. এম. হাসান, বাগেরহাট।
উত্তর : ‘খোলা’কারিনীর ইদ্দতকাল এক হায়েয। ছাবিত  বিন  ক্বায়সের  স্ত্রী  স্বামীর  নিকট  হ’তে খোলা‘  তালাক  গ্রহণ  করলে  নবী  করীম (ছাঃ) তার  ইদ্দতের  সময়  একটি  হায়েয  নির্ধারণ  করেন (আবুদাউদ হা/২২২৯; হাকেম হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ)। এক্ষণে ১৩ দিনের পূর্বে উক্ত নারী হায়েয থেকে পাক হয়ে গেলে বিবাহ বৈধ হবে, নইলে নয়। এক্ষণে বিবাহ বৈধ না হ’লে উভয়কে পৃথক করে দিতে হবে এবং উক্ত নারী ইদ্দতের বাকী দিনগুলি অতিবাহিত করবে (মুওয়াত্ত্বা মালেক, ইরওয়াউল গালীল হা/২১২৪-২৫)। সাথে সাথে কৃত গোনাহের জন্য একনিষ্ঠ চিত্তে তওবা করতে হবে।
প্রশ্ন (৮/৩৬৮) : এক ব্যক্তি চার শতক জমি ক্রয় করেছিল। বর্তমানে নকশায় দেখা যাচ্ছে তা আট শতক। এক্ষণে ক্রেতার জন্য অতিরিক্ত চার শতক জমি ভোগ করা জায়েয হবে কি?
-মুহাম্মাদ আলী, গাবতলী, বগুড়া।
উত্তর : অতিরিক্ত জমি ভোগ করা জায়েয হবে না। কারণ সেগুলোর মালিক বিক্রেতা। এক্ষণে বিষয়টি জমির মালিককে অভিহিত করে অতিরিক্ত অংশ তাকে বা তার উত্তরাধিকারীদের ফেরত দিতে হবে। এছাড়া বিষয়টি প্রশাসন বিভাগের ভুলেও হ’তে পারে। সেক্ষেত্রে সেখান থেকে তা সমাধান করার চেষ্টা করবে। কোন কূট-কৌশল অবলম্বন করা যাবে না। নইলে কঠিন গুনাহের ভাগিদার হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ যমীন জোর করে দখল করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক পরিমাণ যমীন বেড়ী রূপে পরিয়ে দেওয়া হবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৩৮)।
প্রশ্ন (৯/৩৬৯) : জনৈক আলেম বলেন, সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে। অতএব কোন ব্যক্তি ছিয়াম পালন করতে সক্ষম না হ’লে তাকে ফিদইয়া দিতে হবে না। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - নে‘মাতুল্লাহ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। ইমাম বুখারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, উক্ত আয়াতটি ‘মানসূখ’ নয়। বরং এর অর্থ হ’ল, যাদের ছিয়াম রাখার ক্ষমতা নেই যেমন অতি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা, তারা প্রতিদিনের ছিয়ামের বদলে একজন মিসকীন খাওয়াবেন (বুখারী হা/৪৫০৫ ‘তাফসীর’ অধ্যায় ২৫ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (১০/৩৭০) : জুম‘আর দিনে মৃত্যুবরণ করার বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?
-ফিরোয আলম, পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি হ’ল, ‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিনে বা রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হ’তে রক্ষা করেন’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৭৩)। উক্ত হাদীছটি শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ‘হাসান’ হিসাবে উল্লেখ করলেও শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব ও হুসাইন সালীম আসাদ হাদীছটি যঈফ সাব্যস্ত করেছেন (তাহকীক মুসনাদে আহমাদ হা/৬৫৮২; তাহকীক মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৪১১৩)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)ও এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহকে যঈফ বলেছেন (ফাৎহুল বারী ৩/২৫৩)। এছাড়া কোন ছাহাবী শুক্রবারে মৃত্যুর জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন বলেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর দিন তথা সোমবারে মৃত্যুর জন্য আকাঙ্ক্ষা করেছেন (বুখারী হা/১৩৮৭)। মোদ্দাকথা এরূপ গায়েবের বিষয় ত্রুটিপূর্ণ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত না করাই উত্তম হবে।
প্রশ্ন (১১/৩৭১) : রুকূর পূর্বে বেশ কিছুক্ষণ ‘সাকতা’ করে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যাবে কি? যদি না যায় তবে তা কখন পড়তে হবে? -যাকারিয়া, মেহেরপুর।
উত্তর : এ স্থানে সাকতা করার বিধান সম্বলিত হাদীছটি যঈফ (দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৫০৫, যঈফ আবুদাঊদ হা/৭৭৭-৭৮০)। সুতরাং তা আমলযোগ্য নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, والجمهور لا يستحبون ان يسكت الامام ليقرأ الماموم- ‘জমহূর বিদ্বানগণ এটা মুস্তাহাব মনে করেন না যে, ইমাম চুপ থাকুন, যাতে মুক্তাদী ক্বিরাআত পড়তে পারে’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমু‘আ ফাতাওয়া ২২/৩৩৯)। শায়খ আলবানী বলেন, ‘উপরোক্ত কথার মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠের পরে ইমামের চুপ থাকার এবং সেই সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠের কোন দলীল নেই। যেমন পরবর্তীকালে কেউ কেউ বলে থাকেন’ (আলবানী, মিশকাত হা/৮১৮-এর টীকা-৪)।
এক্ষণে সূরা ফাতিহা কখন পাঠ করতে হবে সে বিষয়ে ছহীহ হাদীছের ফায়ছালাই চূড়ান্ত। যেমন (১) ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন ফজরের ছালাত শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিছু পাঠ করে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন لاَ تَفْعَلُوْا إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لاَصَلاَةَ إِلاَّ بِهَا ‘তোমরা এরূপ করো না কেবলমাত্র সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা এটি পাঠ না করলে ছালাত সিদ্ধ হয় না’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৮৫৪ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ)। (২) জেহরী ছালাতে মুক্তাদী কখন কিভাবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে, এরূপ এক প্রশ্নের জবাবে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ ‘তুমি এটা মনে মনে পড়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৮২৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১২)। রাবী ও ছাহাবীর এধরনের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়ার পরে অন্য কারু বক্তব্য তালাশ করা মুমিনের কর্তব্য নয় (বিস্তারিত দ্রঃ আত-তাহরীক ৭ম বর্ষ জুলাই ২০০৪, প্রশ্ন নং ৪০/৪০০)।
প্রশ্ন (১২/৩৭২) : কাউকে দাফন করার পর সেখানে লোকেরা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে? -আমীর হামযা, মদনচক জামে মসজিদ, নওগাঁ।
উত্তর : দাফনের পর তার জন্য ইস্তিগফার ও কবরে প্রশ্নোত্তরে দৃঢ় থাকার জন্য দো‘আ করতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ অপেক্ষা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তিনি যেন মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দানের সময় দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য দো‘আ কর। কেননা তাকে এখুনি প্রশ্ন করা হবে’ (আবুদাঊদ হা/৩২২১; মিশকাত হা/১৩৩)। উল্লেখ্য যে, আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) একটি উট যবেহ করা ও তার গোশত বণ্টনের সময় পরিমাণ কবরের পাশে থাকার যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা তাঁর নিজস্ব মত মাত্র। যার সমর্থনে কোন ছাহাবীর আমল নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/১৩২)।
প্রশ্ন (১৩/৩৭৩) : হাদীছে আছে ‘বিবাহ করলে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয়, বাকীগুলির বিষয়ে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’। এক্ষণে কেউ বিবাহ না করলে কি দ্বীনের অর্ধেক পূরণ না করার কারণে জাহান্নামে যাবে? অথচ আমি ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ যাকাত ও অন্যান্য সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করি। ছহীহ হাদীছের আলোক জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আজমাঈন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : হাদীছে ‘বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক বা ঈমানের অর্ধেক’ কথাটি বিবাহের প্রতি উৎসাহ প্রদানের জন্য অলংকারপূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা তা মানুষের চারিত্রিক সংযম বজায় রাখা এবং অশ্লীল কর্ম হ’তে দূরে থাকার বড় মাধ্যম। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হ’ল বিবাহ মানুষকে যেনা থেকে পবিত্র রাখে। আর এই পবিত্রতা ঐ দু’টি স্বভাবের অন্যতম, যার হেফাযত করতে পারলে রাসূল (ছাঃ) তার জান্নাতের যামিনদার হবেন। যেমন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার (সন্তুষ্টির) জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্ত্ত (জিহবা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্ত্ত (লজ্জাস্থান)-এর হেফাযত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যামিনদার হব’ (বুখারী হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২; কুরতুবী, সূরা রা‘দ ১৩/৩৮ আয়াতের তাফসীর)।
স্মর্তব্য যে, বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। মানব বংশ রক্ষার জন্য এটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি চিরন্তন ব্যবস্থা। তবে এর অর্থ এই নয় যে, বিবাহ না করলে অর্ধেক ঈমান বিনষ্ট হবে।  
প্রশ্ন (১৪/৩৭৪) : আমার নিজস্ব দোকান থেকে মাল নিয়ে আমি ৫টি ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাজারের চেয়ে কিছুটা বেশী মূল্যে কিস্তিতে মাল বিক্রি করি। কারণ ভ্যানচালকদের বেতন ও বাকি টাকা উঠাতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। এরূপ ব্যবসা জায়েয হবে কি?
-হাবীবুর রহমান, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : এর জন্য প্রয়োজনমত কিছু সার্ভিস চার্জ নিতে পারেন। কিন্তু নগদে কম মূল্যে ও বাকীতে বেশী মূল্যে বিক্রয় করলে তা জায়েয হবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যবসায়ের মধ্যে দুই বিক্রয় নিষেধ করেছেন’ (তিরমিযী হা/১২৩১; মুওয়াত্ত্বা হা/২৪৪৪; নাসাঈ হা/৪৬৩২; আহমাদ হা/৯৫৮২; মিশকাত হা/২৮৬৮)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি ব্যবসায়ে দু’টি বিক্রয় করে সে কম মূল্যেরটা নিবে অথবা সূদ নিবে’ (আবুদাঊদ হা/৩৪৬১; হাকেম হা/২২৯২; ছহীহাহ হা/২৩২৬; বিস্তারিত দ্রঃ ‘বায়’এ মুআজ্জাল’ বই)।
প্রশ্ন (১৫/৩৭৫) : মুছল্লীরা সম্মিলিতভাবে তারাবীহর ছালাত শেষ রাতে জামা‘আতের সাথে পড়তে চাইলে সেটা করা যাবে কি? -মেহেদী হাসান, ছাতিয়ানতলা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ২৩, ২৫ ও ২৭ যে তিনদিন জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন সেই তিনদিন প্রথম রাতেই শুরু করেছেন। যা কখনো রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং শেষদিন সাহারীর পূর্ব পর্যন্ত ছালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত রাত্রির ছালাত আদায় করবে, তার জন্য সারা রাত্রি ছালাত আদায়ের নেকী লেখা হবে (আবুদাঊদ হা/১৩৭৫, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৯৮)। ইমাম আহমাদ (রাঃ)-কে তারাবীহর ছালাত শেষ রাত পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বললেন, না। বরং মুসলমানদের প্রচলিত আমলই আমার নিকটে অধিক প্রিয় (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/১২৫)। অতএব শেষরাতে নয়, বরং সন্ধ্যারাতে তারাবীহ শুরু করতে হবে।
প্রশ্ন (১৬/৩৭৬) : ওযূর সময় পরপরুষ থাকা অবস্থায় নারীদেরকে কি মাথার কাপড় সরিয়ে মাথা মাসাহ করা যাবে? এছাড়া নারী দেহের কোন অংশ পুরুষ দেখে ফেললে মহিলাদের ওযূ নষ্ট হয়ে যায় কি? -মাসঊদুর রহমান, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : না। বরং ওড়নার উপর দিয়ে মাথা মাসাহ করবে। রাসূল (ছাঃ) নিজে মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন (মুসলিম হা/২৭৫; তিরমিযী হা/১০১)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ কর’ (আহমাদ হা/২৩৯৩৯, সনদ ছহীহ)। অতএব এরূপ শারঈ কারণে নারী-পুরুষ সবার জন্য ওড়না বা পাগড়ীর উপর মাসাহ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ‘উমদাহ ১/২৬৫-৬৬)। আর নারী দেহের কোন অংশ পুরুষ কর্তৃক দেখে ফেলা ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। অতএব এতে ওযূ ভঙ্গ হবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২৭০)।
প্রশ্ন (১৭/৩৭৭) : মসজিদে গিয়ে ২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে চুপচাপ বসে থাকলে ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
-মেহেদী হাসান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে এবং যতক্ষণ ছালাত তাকে আটক রাখে, ততক্ষণ সে ছালাতের মধ্যে থাকে। তোমাদের কেউ যে মজলিসে ছালাত পড়েছে, তাতে যতক্ষণ সে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দো‘আ করতে থাকেন। তারা বলেন, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! তাকে অনুগ্রহ করুন। হে আল্লাহ! তার তওবা কবূল করুন। যতক্ষণ না তার ওযূ ছুটে যায় এবং যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় (ততক্ষণ এ দো‘আ চলতে থাকে) (মুসলিম হা/৬৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৭৯৯)।
প্রশ্ন (১৮/৩৭৮) : জেহরী ছালাতে সূরা ফাতিহার পর ইমাম কর্তৃক পঠিত সূরা সমূহের সাথে মুক্তাদী যদি মনে মনে একই সাথে তা পাঠ করে তাতে বাধা আছে কি?
-বারাকাত, কসবা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া।
উত্তর : এসময় সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য কোন সূরা পাঠ করা যাবে না। আল্লাহ বলেনআর যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাকো ... (আ‘রাফ ৭/২০৪)। ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন ফজরের ছালাত শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের দিকে ফিরে বললেন, সম্ভবতঃ তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে কিছু পাঠ করে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন ‘তোমরা এরূপ করো না কেবলমাত্র সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা এটি পাঠ না করলে ছালাত সিদ্ধ হয় না’ (আহমাদ হা/২২৭২৩; আবুদাঊদ হা/৮২৩; মিশকাত হা/৮৫৪ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) : ঔষধের দোকানে তরল জাতীয় কিছু ঔষধ পাওয়া যায়, যা রোগের উপশমের কাজ করে। আবার মানুষ বিভিন্ন উপায়ে তা নেশা করার জন্য ব্যবহার করে। এরূপ ঔষধ সেবন করা জায়েয হবে কি?
-রাশেদুয্যামান, ফুলতলা, পঞ্চগড়।
উত্তর : এরূপ ঔষধ সেবন করা জায়েয। কারণ হালাল জিনিসকে হারাম উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবহার করলে তা হারাম হয়ে যায় না (ফাতওয়া লাজনা দায়েমা ২২/১১০; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২৩১/৩)। যেমন তালের রস খাওয়া হালাল হ’লেও কেউ তা মদ হিসাবেও ব্যবহার করে। 
প্রশ্ন (২০/৩৮০) : পর্দা রক্ষার্থে কোন নারী তার দুলাভাই বা অন্য কোন গায়ের মাহরাম নিকটাত্মীয়র সাথে মোবাইলে বা সরাসরি কথা না বললে সম্পর্ক বিনষ্টের শামিল হবে কি?
-মুখতারুল ইসলাম, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : গায়ের মাহরাম পুরুষের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েয। তবে এক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষণীয় (১) তাদের সাথে এমন কোমল কণ্ঠে কথা বলা যাবে না, যাতে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা প্রলুব্ধ হয় (আহযাব ৩৩/৩২)। (২) এরূপ কারু সাথে একাকী হবে না (তিরমিযী হা/২১৬৫; মিশকাত হা/৩১১৮)। সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে। যাতে সম্পর্ক বিনষ্ট না হয়। আবার পর্দাও রক্ষা হয়। আর এরূপ কোন আত্মীয় অসৎ মানসিকতার হয়ে থাকলে তাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলবে।
প্রশ্ন (২১/৩৮১) : পুরাতন মদের বোতল পরিষ্কার করে তা পানি পানের জন্য ব্যবহার করা যাবে কি? -আব্দুল হাসীব, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর :  মদের বোতল ব্যবহার না করাই উত্তম। বাধ্যগত অবস্থায় ব্যবহার করতে হ’লে ভালোভাবে ধৌত করে নিয়ে ব্যবহার করবে। যাতে পাত্রে মদের কোন চিহ্ন বা ক্রিয়া না থাকে। আবু ছা’লাবা খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, আমরা আহলে কিতাবদের প্রতিবেশী এবং তারা তাদের হাঁড়িতে শূকরের গোশত রান্না করে ও তাদের পাত্রে মদ্যপান করে। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তবে তোমরা তাতে পানাহার করবে। আর যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র না পাও, তবে তোমরা তা উত্তমরূপে পানি দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করে তাতে পানাহার করতে পার’ (আবুদাউদ হা/৩৮৩৯; ইরওয়া হা/৩৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪০৬৬)।
প্রশ্ন (২২/৩৮২) : আমাদের বিবাহের সময় অফিসের সহকর্মীদের উপস্থিতিতে নিজেরাই পসন্দ অনুযায়ী বিবাহ করি। পরবর্তীতে উভয় পরিবার এটি মেনে নিয়েছে এবং আমাদের দু’টি সন্তান রয়েছে ১২ ও ৭ বছর বয়সের। সেসময় শরী‘আতের বিধান সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিল না। আমাদের বিবাহ কি সঠিক হয়েছিল? না হ’লে আমাদের করণীয় কি?
-আব্দুস সালাম, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। কারণ ওলী ছাড়া কোন নারীর জন্য বিবাহ সিদ্ধ নয় (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। এক্ষণে উভয়কে একনিষ্ঠ চিত্তে তওবা করতে হবে এবং নতুনভাবে নিয়মমাফিক বিবাহ করতে হবে। এছাড়া না জানার কারণে তারা যদি বিবাহ জায়েয হয়েছে মনে করে সহবাস করে, সেক্ষেত্রে তাদের একত্রবাস ‘সন্দেহপূর্ণ’ বিবাহের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় সন্তানদ্বয় পিতার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং পিতার সম্পদে তারা ওয়ারিছ হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/১০৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/৩৮৭)।
প্রশ্ন (২৩/৩৮৩) : যাকাত আদায়ের জন্য অধিক নেকীর আশায় রামাযান মাসকে নির্দিষ্ট করা যাবে কি? এছাড়া ব্যবসার সম্পদ একবছর পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তার যাকাত আদায় রামাযান মাস পর্যন্ত বিলম্বিত করা যাবে কি? -যিয়াউর রহমান, দাম্মাম, সঊদী আরব।
উত্তর : এরূপ করার কোন দলীল নেই। বরং নেকীর কাজ যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে হবে। কেননা বিপদাপদ ও প্রতিবন্ধকতা যে কোন সময় আপতিত হ’তে পারে। তাছাড়া মৃত্যু থেকে কেউ নিরাপদ নয় এবং বিলম্ব কখনোই প্রশংসিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ফিৎনাসমূহ উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক আমল সম্পাদন কর’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৮৩ ‘ফিৎনাসমূহ’ অধ্যায়)। বরং আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যাকাত আদায়ের অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দেন (তিরমিযী হা/৬৭৮)।
প্রশ্ন (২৪/৩৮৪) : শিশুরা বিভিন্ন প্রাণীর পুতুল নিয়ে খেলা-ধুলা করতে পারবে কি?
-উম্মে হাসীবা, রেহাইর চর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর সম্মুখে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম আর আমার কিছু সাথীও আমার সাথে খেলা করত। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রবেশ করতেন তখন তারা আত্মগোপন করত। কিন্তু তিনি তাদেরকে আমার নিকট পাঠিয়ে দিতেন, অতঃপর তারা আমার সাথে খেলত (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৪৩)।  নববী বলেন, মেয়েদের খেলনার বিষয়টি স্বতন্ত্র। কারণ এ ব্যাপারে ছাড় রয়েছে। খেলনাটি মানবাকৃতির হৌক বা প্রাণীর আকৃতির হৌক, দেহধারী হৌক বা দেহহীন হৌক, প্রাণীকুলের মধ্যে তার সাদৃশ্য থাক বা না থাক যেমন দু’ডানা ওয়ালা ঘোড়া (ফাৎহুল বারী ১০/৫২৭; তোহফা ৫/৩৫০)।
হাদীছ অনুযায়ী আয়েশা (রাঃ) মাটি দিয়ে নিজ হাতে এই পুতুলগুলো বানিয়েছিলেন। অতএব এভাবে মাটির পুতুল তৈরি করে তাকে কাপড় পরানো ও সেবাযত্ন করার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সন্তান প্রতিপালনের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এতে দোষ নেই। কিন্তু এই অজুহাতে বাজার থেকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রাণীর খেলনা পুতুল কিনে আনা জায়েয নয় (মুহাম্মাদ বিন জামীল যায়নু, তাওজীহাত ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ১১২, বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছবি ও মূর্তি’ বই)।
উল্লেখ্য, বর্তমানে প্লাস্টিক দ্বারা বা এর চেয়ে উন্নত কোন পদার্থ দ্বারা কুকুর, বানর, বিড়াল, হাতি, ঘোড়া, মাছ, সাপ ইত্যাদির মূর্তি তৈরি করা হচ্ছে এবং তা আলমারিতে, ঘরে বা গাড়িতে রেখে দেওয়া হচ্ছে বা ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে এগুলো পুতুলের নামে মূর্তি পূজার শামিল। অতএব খেলনা পুতুল এমনকি প্রাণীর মূর্তি বিশিষ্ট মিষ্টান্ন বানানো ও তা ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (২৫/৩৮৫) : মিথ্যা সার্টিফিকেট ও মিথ্যা অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে চাকুরী নিলে উক্ত উপার্জন হালাল হবে কি? -ফারূক হোসাইন, টাঙ্গাইল।
উত্তর : হালাল হবে না। কারণ এটা প্রতারণা মাত্র। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬০, ৩৫২০)।
প্রশ্ন (২৬/৩৮৬) : জনৈকা মহিলা বিগত বছরের কিছু ক্বাযা ছিয়াম পালন করেনি। যখন স্মরণ হয়েছে তখন পরবর্তী রামাযান উপস্থিত। এক্ষণে তাকে রামাযানের ছিয়াম না ক্বাযা ছিয়াম সর্বাগ্রে আদায় করতে হবে? -আব্দুল আলীম,খালতিপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : এমন অবস্থায় তাকে সর্বাগ্রে রামাযানের ছিয়াম পালন করতে হবে এবং পূর্বের ছুটে যাওয়া ছিয়াম রামাযানের পরে আদায় করবে। সাথে সাথে কাযা আদায়ে দেরী করে ফেলার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে (নববী, আল মাজমূ‘ ৩/৩৬৬; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৪৫১)।
 প্রশ্ন (২৭/৩৮৭) : ছালাতের শেষ তাশাহহুদে যোগদান করলে যেহেতু তা রাক‘আত হিসাবে গণ্য হয় না, সেহেতু তাশাহহুদে পঠিতব্য দো‘আগুলি পাঠ করতে হবে কি?
-রাকীবুল ইসলাম, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর : পাঠ করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করতে এসে ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, তখন ইমাম যেরূপ করে সেও যেন অনুরূপ করে’ (তিরমিযী হা/৫৯১; মিশকাত হা/১১৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬১)। এছাড়া রাক‘আত গণ্য না হ’লেও এর মাধ্যমে সে জামা‘আতের ছওয়াব পেয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/২২৪, ৭/৩২১; বাহূতী, কাশশাফুল কেনা‘ ১/৪৬০)।
প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) : সামাজিক ঐক্য রক্ষার্থে সাময়িকভাবে বিদ‘আতী আমল করা যাবে কি?
-সজীব আহমাদ, সফীপুর, গাযীপুর।
উত্তর :  জেনে বুঝে কখনোই বিদ‘আতে লিপ্ত হওয়া যাবে না। কারণ জেনে-শুনে বিদ‘আতকারীর কোন আমল কবুল হয় না, যতক্ষণ না সে তওবা করে ফিরে আসে’ (বুখারী হা/৩১৭২; মুসলিম হা/১৩১৭; মিশকাত হা/২৭২৮, ত্বাবারাণী, ছহীহুত তারগীব হা/৫৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করা হ’তে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫ ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২৯/৩৮৯) : ওয়ালীমা করা কি বিবাহের শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত? ওয়ালীমা করার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা আছে কি? -তরীকুল ইসলাম, বিটিইসি, টাঙ্গাইল।
উত্তর : ওয়ালীমা করা বিবাহের শর্ত নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ওয়ালীমা কর। একটি বকরী দিয়ে হ’লেও’ (বুখারী হা/২০৪৮, মিশকাত হা/৩২১০)। আর বাসর রাতের পরের দিন ওয়ালীমা করাই সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) যয়নব বিনতে জাহশ (রাঃ)-এর সাথে বাসর রাত অতিবাহিত করার পরদিন ওয়ালীমা করেছিলেন (বুখারী হা/৫১৭০; ইবনু তায়মিয়াহ. ফাতাওয়াউল কুবরা ৫/৪৭৮)। এছাড়া তিনি ছাফিয়াহ (রাঃ)-কে বিবাহের পর তিনদিন যাবৎ ওয়ালীমা খাইয়েছিলেন (মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৩৮৩৪, সনদ হাসান)।  
প্রশ্ন (৩০/৩৯০) : আমার ফুফা মৃত্যুর পূর্বে তার সঞ্চিত অর্থ আমার ফুফুর নিকটে রেখে যান। ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বড় ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই আমার ফুফু উক্ত অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট করে তিন মাস পরপর যা সূদ আসে তা বড় ছেলেকে দেন। এজন্য আমার ফুফু বা তা বড় ছেলে গুনাহগার হবেন কি? -রুবেল, ঢাকা।
উত্তর : এভাবে টাকা রেখে সূদের অর্থ সন্তানকে দান করা জায়েয নয়। কারণ সূদ সর্বাবস্থায় হারাম। এরূপ করার কারণে মূলত উক্ত মা গুনাহগার হবেন। এক্ষণে উক্ত টাকা উঠিয়ে মূল টাকা থেকে সন্তানের পিছনে খরচ করবেন। অথবা তা কোন বৈধ ব্যবসায় খাটিয়ে সেখান থেকে সন্তানদেরকে সহযোগিতা করবেন।
প্রশ্ন (৩১/৩৯১) : জোরে আমীন বললে মসজিদ থেকে অপমান করে বের করে দেয়। এক্ষণে করণীয় কি? বিশেষতঃ জুম‘আর ছালাতের ক্ষেত্রে করণীয় কি? সেটাও কি বাড়িতে পড়া যাবে? -ইশতিয়াক শাকীল, বাঘারপাড়া, যশোর।
উত্তর : বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলসম্পন্ন ইমামের পিছনে ছালাত আদায়ের চেষ্টা করবে। তবে বাধ্যগত অবস্থা্য় অনুচ্চস্বরে আমীন বলে হ’লেও জামা‘আতে ছালাত আদায় করবে। এক্ষেত্রে সুন্নাতের উপর আমল করায় বাধাদানকারী ব্যক্তি গুনাহগার হবে। উল্লেখ্য যে, উক্ত সুন্নাতের উপর রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম নিয়মিত আমল করতেন। ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূল (ছাঃ)-কে ‘গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়া লাযযোয়া-ল্লীন’ পড়ে জোরে আমীন বলতে শুনেছি’ (তিরমিযী হা/২৪৮; আবুদাঊদ হা/৯৩২; মিশকাত হা/৮৪৫)। জোরে ‘আমীন’ বলার প্রমাণে সতেরটি হাদীছ এবং তিনটি আছার রয়েছে (নায়লুল আওত্বার ২/১২২ পৃঃ)। এমনকি হানাফী আলেমদের নিকটেও নীরবে আমীন বলার হাদীছের সনদ ছহীহ নয়। যেমন আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘নীরবে আমীন’ বলার সনদে ত্রুটি আছে। সঠিক ফৎওয়া হ’ল জেহরী ছালাতে জোরে ‘আমীন’ বলা’ (শরহ বেকায়াহ ১৪৬ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৩২/৩৯২) : লাশের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি? এতে লাশের কষ্ট দূর হয় বলে কথিত আছে। এর সত্যতা জানতে চাই। -মুরাদ আলী, মীরগড়, পঞ্চগড়।
উত্তর : মৃত ব্যক্তির সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এরূপ কোন আমলের প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মৃত্যুর পর লাশের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা বিদ‘আত (আল-ইখতিয়ারাত ১/৪৪৭, ৯১)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে কবরের পার্শ্বে অথবা অন্য কোন স্থানে কুরআন তেলাওয়াত করা বিদ‘আত’ (যাদুল মা‘আদ ১/৫৮৩ পৃঃ)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াতকে বিদ‘আত বলতেন (ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১৯/০৫)। আলবানী (রহঃ) বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত ও তার মুখমন্ডল ক্বিবলার দিকে ঘুরানোর ব্যাপারে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি (আহকামুল জানায়েয ১/১১, মাসআলা নং ১৫)। কুরআন তেলাওয়াতে লাশের কষ্ট দূর হয় বলেন যা কথিত আছে, তা ভিত্তিহীন কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। কারণ মৃত ব্যক্তি কিছুই শুনতে পায় না (নমল ২৭/৮০)। অতএব তাকে কুরআন শুনানো পন্ডশ্রম মাত্র।
প্রশ্ন (৩৩/৩৯৩) : হাদীছে ইতিকাফ অবস্থায় প্রয়োজন ব্যতীত ই’তিকাফস্থল থেকে বের হ’তে নিষেধ করা হয়েছে। এক্ষণে কি কি প্রয়োজন এর অন্তর্ভুক্ত হবে?
-সোহেল, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : অবশ্য প্রয়োজনীয় বলতে মূলতঃ পায়খানা ও পেশাবের প্রয়োজনীয়তাকে বুঝানো হয়েছে (ইবনু হাজার, ফাৎহুলবারী হা/২০২৯-এর আলোচনা)। অতএব মসজিদে টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকলে বাড়ি থেকে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে আসতে পারে (বুখারী হা/২০২৯; মুসলিম হা/২৯৭)। এছাড়া অন্যান্য বাধ্যগত প্রয়োজনও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হ’ল, সে কোন রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে সহবাস করবে না এবং বাধ্যগত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না’... (আবুদাঊদ হা/২৪৭৩; মিশকাত হা/২১০৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১৯২)।
প্রশ্ন (৩৪/৩৯৪) : টয়লেটে প্রবেশের সময় মুখ ঢাকার ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা আছে কি? -আব্দুল মালেক, দুমকী, পটুয়াখালী।
উত্তর : টয়লেটে প্রবেশের সময় মুখ ঢাকার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন আমল প্রমাণিত নেই। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছসমূহ যঈফ (যঈফাহ হা/৪১৯১-৯২; যঈফুল জামে‘ হা/৪৩৯৩)। তবে আবুবকর (রাঃ) এসময় মাথা আবৃত করতেন মর্মে একটি আছার বর্ণিত হয়েছে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১১৩৩)। সেকারণ কোন কোন বিদ্বান টয়লেটে প্রবেশের সময় জুতা পরা ও কাপড় দ্বারা মাথা আবৃত করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১৩৮ ; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/৯৩)।
প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) : জমি সহ বিভিন্ন ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতার মাধ্যমে উপার্জন করা জায়েয হবে কি? -নূরুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : প্রতারণা না থাকলে বা অন্যের হক বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য না থাকলে জায়েয হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে যদি তা হালাল হয় (হাকেম হা/২৩১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭১৫)। ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘দালালের মজুরী’ শিরোনামে অধ্যায় রচনা করে বলেন,  ইবনু সীরীন, আতা, ইবরাহীম ও হাসান (রহঃ) দালালীর মজুরীতে কোন দোষ মনে করেননি। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ বলে যে, তুমি এ কাপড়টি বিক্রি করে দাও। এর উপর যা বেশী হয় তা তোমার, এতে কোন দোষ নেই। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহ.) বলেন, যদি কেউ বলে যে, এটা এত এত দামে বিক্রি করে দাও, লাভ যা হবে, তা তোমার, অথবা তা তোমার ও আমার মধ্যে সমান হারে ভাগ হবে, তবে এতে কোন দোষ নেই (বুখারী ৮/৩০১)। ক্বায়েস ইবনু আবী গারাযাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় আমাদের (ব্যবসায়ীদের) ‘সামাসিরাহ’ (السَّمَاسِرَةَ) বা দালাল বলা হ’ত। এরপর একদিন রাসূল (ছাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে গমন করেন এবং তিনি আমাদের পূর্বের নামের চাইতে উত্তম নামে আখ্যায়িত করে বলেন, হে ব্যবসায়ীদের দল (يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ) !   বেচা-কেনার মধ্যে (অনেক সময়) অনর্থক কথাবার্তা এবং কসম জড়িত হয়ে থাকে। তোমরা কিছু দান করে তাকে দোষমুক্ত করে নিবে (আবুদাউদ হা/৩৩২৬; তিরমিযী হা/১২০৮)।
উল্লেখ্য যে, দালালীর নামে কোন প্রতারণা করা যাবে না (বুখারী হা/৬৯৬৩)। যেমনটি এখন হাট-বাজারে হয়ে থাকে। যেমন কোন পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্য ছাড়াই কেবল দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত দাম বলা, মিথ্যা কসম করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন (৩৬/৩৯৬) : আমি মাঝে-মধ্যে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও আছরের ওযূতে মাগরিবের ছালাত আদায় করি। এতে আমার ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কিংবা শাস্তি পেতে হবে কি?
-নাজীব আব্দুল্লাহ, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : সন্দেহ দৃঢ় হ’লেই কেবল পুনরায় ওযূ করতে হবে; অন্যথায় নয় (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৬)। তবে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, ওযূ ব্যতীত ছালাত আদায় করলে তা কবুল না হওয়ার সাথে সাথে এর জন্য কবরে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে (মু‘জামুল কাবীর হা/১৩৬১০; ছহীহাহ হা/২৭৭৪)। এছাড়া প্রত্যেক ফরয ছালাতের জন্য পৃথকভাবে ওযূ করাই উত্তম (বুখারী হা/২১৪)।
প্রশ্ন (৩৭/৩৯৭) : বিবাহ করলে পিতা-মাতা থেকে বাসা আলাদা করে নিতে হবে। শরী‘আতে এরূপ কোন নির্দেশনা আছে কি? -তাওয়াবুল হক, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : না। তবে একাধিক সন্তান থাকলে যৌথ পরিবারে পর্দা পালনে অসুবিধা হয় বলে পৃথক আবাসস্থল থাকাই উত্তম। ছাহাবায়ে কেরামের জীবন পর্যালোচনায় দেখা যায় অনেক ছাহাবীর আমল এরূপই ছিল। যেমন আব্দুল্লাহ বিন আমর বিবাহের পর পৃথক বাড়িতে থাকতেন। পিতা আমর ইবনুল ‘আছ তার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর নিকট থেকে আব্দুল্লাহর খবর নিতেন (বুখারী হা/৫০৫২; নাসাঈ হা/২৩৮৯)। ওমর (রাঃ) ও তাঁর সন্তান আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) একইভাবে পৃথক অবস্থান করতেন (আব্দুর রাযযাক হা/১৯৮২২; শু‘আবুল ঈমান হা/৬৫৭৯, সনদ ছহীহ)। তবে সেসময় যৌথ পরিবার থাকার বিষয়টিও বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) শ্বশুর পরিবারের অনিষ্টের ভয়ে ফাতিমা বিনতে কায়েসকে শ্বশুর বাড়িতে ইদ্দত পালন করতে না দিয়ে ইবনু উম্মে মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেন (আবুদাউদ হা/২২৮৪; ইবনু হিববান হা/৪২৫৩; ইরওয়া হা/১৮০৪)। অতএব এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে।
প্রশ্ন (৩৮/৩৯৮) : ছিয়ামের ফিদইয়া নিজের বিধবা ও দরিদ্র মেয়েকে দেওয়া যাবে কি?
-যহীর, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা।
উত্তর : নিজ বিধবা ও দরিদ্র মেয়েকে ফিদইয়ার টাকা দেওয়া যাবে না। কারণ তাদের উপর খরচ করা পিতা-মাতার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তবে পিতা নিজে দরিদ্র হ’লে এবং তার উপর ফিদইয়া ওয়াজিব হ’লে উক্ত ফিদইয়া নিজ দরিদ্র সন্তানদের প্রদান করতে পারবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৪/১৭১)। যেমন রাসূল (ছাঃ) কাফফারা ওয়াজিব হওয়া ব্যক্তিকে ছাদাক্বার মাল নিজের পরিবারকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন (বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১)।
প্রশ্ন (৩৯/৩৯৯) : নারীদের পাত্র পসন্দ করার অধিকার আছে কি? পিতা যদি মেয়ের মতামত না নিয়ে বিয়ে ঠিক করে এবং মেয়ে যদি তাতে সম্মত না হয় তাহ’লে কোন গুনাহ হবে কি?
-মারজানা, বগুড়া।
উত্তর : পাত্র পসন্দ করার অধিকার মেয়েদের আছে। তবে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়ের বিবাহ শুদ্ধ হয় না। অভিভাবক অবশ্যই তার মেয়ের মতামত নিবেন। অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়ে যদি কুমারী হয় এবং চুপ থাকে, তাহ’লে চুপ থাকাটাই হবে তার সম্মতির লক্ষণ। আর বিধবা হ’লে মুখে স্পষ্ট স্বীকৃতি নিতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৭)। মেয়ে যদি সম্মত না হয়, তবে তাতে তার কোন গোনাহ হবে না।
প্রশ্ন (৪০/৪০০) : খারাপ মাল দ্বারা যাকাত প্রদান করলে যাকাত কবুল হবে কি? আর যাকাতদাতার উপর কোন গোনাহ বর্তাবে কি? -মুহাম্মাদ ইদ্রীস, বনশ্রী, ঢাকা।
উত্তর : উত্তম মাল থাকা সত্ত্বেও খারাপ মাল দিয়ে যাকাত আদায় করা শরী‘আত সম্মত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করতে মনস্থ করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ করো না’ (বাক্বারাহ ২৬৭)। আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে প্রবেশ করে নিম্নমানের খেজুর ঝুলানো দেখে বলেন, এই দানকারী ব্যক্তি ইচ্ছা করলে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মাল দান করতে পারত। অতঃপর বললেন, এই ব্যক্তি অবশ্যই ক্বিয়ামতের দিন ঐ নিম্নমানের খাদ্যই খাবে (আবুদাঊদ হা/১৬০৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮২১; সনদ হাসান)। সুতরাং উচ্চমানের মাল থাকা সত্ত্বেও নিম্নমানের মাল দ্বারা যাকাত আদায় করলে তা পাপের কারণ হবে।

আগস্ট/২০১৮

প্রশ্ন (১/৪০১) : আমি নও মুসলিম। ছুটির সময় অমুসলিম পিতা-মাতার সাথে মিলিত হ’লে তাদের রান্নাকৃত খাবার খাওয়া যাবে কি?
-ইউসুফ হাসান আবীর,পলাশপোল, সাতক্ষীরা।
উত্তর : অমুসলিম আত্মীয়ের রান্না করা খাদ্য খাওয়া জায়েয। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ইহুদীর রান্নাকৃত গোশত খেয়েছিলেন (বুখারী হা/২৬১৭; মুসলিম হা/২১৯০)। রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমদের দাওয়াত খেয়েছেন এবং তাদের উপহার গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৫-১৮, ‘মুশরিকদের নিকট থেকে হাদিয়া গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৯৩১)। তাছাড়া জনৈক ইহুদী রাসূল (ছাঃ)-কে যবের রুটি ও পুরাতন চর্বি দ্বারা আপ্যায়ন করলে তিনি তা গ্রহণ করেন (আহমাদ হা/১৩২২৪; ইবনু হিববান হা/৫২৯৩)। তবে তাদের যবেহকৃত কোন পশুর গোশত খাওয়া যাবে না (বাক্বারাহ ২/১৭৩)।
প্রশ্ন (২/৪০২) : অনেক সময় লাশ সামনে রেখে এলাকার আলেম ও রাজনৈতিক নেতাগণ পর্যায়ক্রমে মাইয়েতের প্রশংসায় দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য প্রদান করেন। এরূপ করা জায়েয হবে কি?
-আতাউর রহমান, বাউপাড়া, টাঙ্গাইল।
উত্তর : এরূপ করা সুন্নাত সম্মত নয়। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ব্যাপারে কোন আমল পাওয়া যায় না। তবে যিনি ইমামতি করবেন, তিনি উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ঈমান বর্ধক সংক্ষিপ্ত কিছু নছীহত করতে পারেন। যাতে উপস্থিতগণ মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন এবং এজন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন (বুখারী হা/৪৯৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৪১৯৫; আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; মিশকাত হা/১৬৩০)। এছাড়া মাইয়েতের ঋণের বিষয়ে বলা যেতে পারে, যেহেতু তা গুরুত্বপূর্ণ শারঈ বিষয়।
প্রশ্ন (৩/৪০৩) : জুম‘আ ও ঈদের খুৎবায় লাঠি ব্যবহার করা যাবে কি?
-মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন, দুর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : যেকোন খুৎবায় বা বক্তব্যের সময় হাতে লাঠি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত। হাকাম ইবনে হুযন আল-কুলফী বলেন, ‘আমি সপ্তম অথবা অষ্টম দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। অতঃপর বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছি। আপনি আমাদের কল্যাণের জন্য দো‘আ করুন। ... আমরা সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করলাম। অবশেষে আমরা একদিন তাঁর সাথে জুম‘আর ছালাতে যোগ দিলাম। তিনি লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবায় দাঁড়ালেন। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ‘হে মানবমন্ডলী! আমি যা আদেশ করছি  তোমরা  তা  পুরোপুরি  আদায় করতে সক্ষম নও। কাজেই মধ্যম পথ অবলম্বন কর এবং মানুষকে সুসংবাদ দাও’ (আবুদাঊদ, হা/১০৯৬, সনদ হাসান; ইরওয়া ৩/৭৮ পৃঃ, হা/৬১৬)।  
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লাঠির উপর ভর দিয়ে খুৎবা প্রদান করতেন’ (মুসনাদে আব্দুর রাযযাক হা/৫২৪৬; ইরওয়াউল গালীল ৩/৭৮ পৃঃ, সনদ ছহীহ)।
কোন কোন বিদ্বান মিম্বর তৈরীর পর রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নেননি বলে মত প্রকাশ করেছেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৪১১ পৃঃ)। কিন্তু এ মতের পক্ষে কোন দলীল নেই। বরং ফাতিমা বিনতে ক্বায়েস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদের মিম্বরে বসে তামীম আদ-দারীর প্রত্যক্ষকৃত দাজ্জালের হাদীছটি বর্ণনার সময় স্বীয় লাঠি দিয়ে মিম্বরে আঘাত করে বললেন, ত্বাইয়েবা অর্থাৎ মদীনা শহর... (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৮২)। এটি ছিল নবম হিজরীর ঘটনা। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিম্বরে বসা অবস্থাতেও তার হাতে লাঠি ছিল। এছাড়া ছাহাবীগণের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হিশাম বিন উরওয়া বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ)-কে খুৎবা দিতে দেখেছি। এমতাবস্থায় তাঁর হাতে লাঠি ছিল’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫৬৫৯)।
উল্লেখ্য যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসুস্থ থাকার কারণে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছিলেন’ বলে সমাজে প্রচলিত কথাটির স্বপক্ষেও কোন দলীল নেই। সুতরাং জুম‘আ এবং অন্যান্য যেকোন খুৎবা বা বক্তব্য প্রদানের সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নাত, যা পরবর্তী যুগেও অনুসৃত হয়েছে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরের উপর বক্তব্যের জন্য দাঁড়াতেন, তখন লাঠির ওপর ভর দিতেন। অতঃপর আবূ বকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)ও একইভাবে লাঠির উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন (মারাসীলু আবী দাঊদ, হা/৫৫)।

প্রশ্ন (৪/৪০৪) : জনৈক বক্তা বলেন, তিরমিযীর একটি হাদীছে এসেছে, যে দেশে আলেমদের নির্যাতন করা হয় সে দেশে স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। মাটি খরায় ফেটে যায়। মানুষের যৌন ক্ষমতা কমে যায়। এর কোন সত্যতা আছে কি?
-বযলুল করীম, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : সুনান তিরমিযীতে বা অন্য কোন হাদীছগ্রন্থে উক্ত মর্মের কোন হাদীছ পাওয়া যায়নি।    
প্রশ্ন (৫/৪০৫) : ওযূ করার সময় জুতার উপর মাসাহ করা যাবে কি?
-সাবিনা খাতুন, গোভীপুর, মেহেরপুর।
উত্তর : যদি ওযূ অবস্থায় মোযাসহ জুতা পরিধান করে থাকে, তবে জুতার উপর মাসাহ করা জায়েয, যদি মোযা গোড়ালী পর্যন্ত ঢাকা থাকে (তিরমিযী হা/৯৯; ইবনু বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১১১, ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৬৩)। তবে মোজাবিহীন কেবল জুতা পরে থাকলে শর্ত হ’ল জুতাটি গোড়ালী পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে। অন্যথায় তাতে মাসাহ করা জায়েয নয়। কেননা ওযূতে গোড়ালী ধৌত করা ফরয (মায়েদাহ ৫/৬)। আর এক্ষেত্রে কেউ যদি জুতা খুলে তবে পরবর্তীতে পুনরায় ওযূ করার সময় তাকে জুতা খুলে নিয়ম অনুযায়ী পা ধৌত করে ওযূ করতে হবে।
প্রশ্ন (৬/৪০৬) : স্ত্রী সন্তান গ্রহণে অনিচ্ছুক। এক্ষণে স্বামী তাকে বাধ্য করতে পারবে কি?
-ফয়ছাল আমীন, আকবর শাহ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কারণ না থাকলে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তান নিতে বাধ্য করতে পারবেন। কেননা সন্তান ধারণ ও বংশবৃদ্ধি বিবাহের প্রধানতম উদ্দেশ্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বেশী বেশী সন্তান দায়িনী মহিলাকে বিবাহ কর’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩০৯১; ছহীহাহ হা/২৩৮৩)। 
প্রশ্ন (৭/৪০৭) : জনতা ব্যাংকের জনৈক ম্যানেজারের দানের অর্থে মসজিদের মেঝে পাকা করা হয়েছে। অথচ ব্যাংকারদের উপার্জন হালাল নয়। এক্ষণে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? -আলী হোসাইন আমানুল্লাহ, টাঙ্গাইল।
উত্তর : এরূপ মসজিদে ছালাত আদায়ে কোন বাধা নেই। কেননা একজনের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না’ (নাজম ৩৮)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) কাফিরদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৫-২৬১৮)।
প্রশ্ন (৮/৪০৮) : জামা-কাপড়ে গরু-ছাগলের পেশাব লেগে গেলে উক্ত পোষাকে ছালাত হবে কি? -মুঈনুদ্দীন, বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : ছালাত হয়ে যাবে। কারণ যে সকল প্রাণীর গোশত হালাল, সেগুলির পেশাব অপবিত্র নয় (মুগনী ২/৬৫-৬৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩৭৮)। রাসূল (ছাঃ) একদল লোককে উটের পেশাব দ্বারা চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৫৭৮১)। অথচ তিনি হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ হারাম করেছেন। তাছা্ড়া তিনি ছাগলের খামারে ছালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছিলেন (মুসলিম হা/৩৬০; মিশকাত হা/৩০৫)। তবে যদি অপরিচ্ছন্নতা ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে এবং তা অপর মুছল্লীদের জন্য কষ্টদায়ক হয়, তবে উক্ত পোষাক ত্যাগ করে ভিন্ন পোষাক পরিধান করা উচিত। আল্লাহ বলেন, তোমরা প্রত্যেক ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)।
প্রশ্ন (৯/৪০৯) : মাযহাবী ভাইয়েরা ইফতারের সময় তিন/চার মিনিট বিলম্ব করেন। এর কারণ কী? -রাসেল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : সূর্য ডোবার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও বাড়তি সতর্কতার দোহাই দিয়ে তারা এটা করেন। যা সুন্নাত পরিপন্থী। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, সূর্যাস্তের সাথে সাথে ছায়েম ইফতার করবে (বুখারী হা/১৯৫৪; মুসলিম হা/১১০০; মিশকাত হা/১৯৮৫)। শুধু তাই নয়, দেরী করে ইফতার করাকে নিন্দা করে তিনি বলেন, ইহূদী-নাছারারা ইফতার পিছিয়ে দেয়’ (আবুদাঊদ হা/২২৫৩; মিশকাত হা/১৯৯৫)। তিনি বলেন, ‘লোকেরা অতদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে’ (বুখারী হা/১৯৫৭)। অতএব সতর্কতার নামে দেরী করে ইফতার করার নীতি বর্জনীয়।
প্রশ্ন (১০/৪১০) : ঈদায়েন সহ অন্যান্য সময়ে মসজিদের মাইকে ইসলামী গযল গাওয়া শরীআতসম্মত হবে কি?
-আল-আমীন, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : মসজিদের মাইক আযান ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তবে মসজিদে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ইসলামী কবিতা পাঠ ও শ্রবণে কোন বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সভাকবি হাসসান বিন ছাবেত (রাঃ) মসজিদে নববীতে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কবিতা বলতেন। তখন তিনি তার জন্য দো‘আ করে বলতেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকে পবিত্র আত্মা (জিব্রীল) দ্বারা শক্তিশালী কর’ (মুসলিম হা/২৪৮৫)
প্রশ্ন (১১/৪১১) : মসজিদে ইফতার দাতাদের তালিকা করার ক্ষেত্রে ২৭শে রামাযান ইফতার দেওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। উক্ত দিনে ইফতার খাওয়ানোর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি? -আব্দুল বারী, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : ২৭শে রামাযান ইফতার করানোর বিশেষ কোন ফযীলত নেই। বরং সাধারণভাবে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কেউ যদি কোন ছায়েমকে ইফতার করায় তবে তার জন্য অনুরূপ (ছিয়ামের) ছওয়াব হবে। কিন্তু এতে ছিয়াম পালনকারীর ছওয়াবে কোন ঘাটতি হবে না’ (তিরমিযী হা/৮০৭; ইবনু মাজাহ হা/১৭৪৬; মিশকাত হা/৮০৪)।
উল্লেখ্য যে, ইফতার দাতাদের তালিকা করে মসজিদে ইফতার করানোর রেওয়াজটি পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা এতে ইবাদতের পরিবর্তে লৌকিকতা প্রাধান্য পায়। এর পরিবর্তে যদি সমাজ থেকে প্রদত্ত ইফতার সমূহ কিংবা নগদ অর্থ একত্রিত করে তা দিয়ে মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়, সেটিই উত্তম ও তাক্বওয়াপূর্ণ হবে।
প্রশ্ন (১২/৪১২) : আমি জেদ্দা শহরে থাকি। আমার বাসা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাধা যাবে কি? -আনোয়ারুল ইসলাম,জেদ্দা, সঊদী আরব।
উত্তর : জেদ্দাবাসীরা নিজ বাসস্থান থেকেই ইহরাম বাঁধতে পারবে। কেননা জেদ্দা শহর ইয়ালামলাম মীক্বাতের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মীক্বাতের অভ্যন্তরভাগের অধিবাসীরা  সেখান থেকে ইহ্রাম বাঁধবে। আর মক্কাবাসীরা মক্কা থেকেই ইহ্রাম বাঁধবে’ (বুখারী হা/১৫২৪; মিশকাত হা/২৫১৬)।
প্রশ্ন (১৩/৪১৩) : জনৈক মুফতী একটি সমাবেশে কবরের আযাবের রেকর্ডকৃত ক্রন্দনধ্বনি শুনিয়েছেন। এক্ষণে কবরের আযাব শ্রবণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব কী?
-সাইফুল ইসলাম, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
উত্তর : জিন ও ইনসানকে কবরের আযাব শ্রবণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কেননা আল্লাহ বলেন, আর তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’ (মুমিনূন ২৩/১০০)।  রাসূল (ছাঃ) পাপী কবরবাসীর কথা উল্লেখ করে বলেন, অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে ভীষণ জোরে পিটানো শুরু হবে। তাতে সে এমন চীৎকার করতে থাকবে যে, জিন ও ইনসান ব্যতীত আশপাশের সবাই তা শুনতে পাবে’ (বুখারী হা/১৩৭৪; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের যদি ভয়ে কবর দেয়া পরিত্যাগ করার আশংকা না থাকত, তাহ’লে আমি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করতাম যেন তোমাদেরকে কবরের আযাব শুনানো হয়, যা আমি শুনতে পাচ্ছি’ (মুসলিম হা/২৮৬৮; মিশকাত হা/১২৯)। রাসূলকে আল্লাহ শুনিয়েছেন বলেই তিনি শুনতে পেয়েছেন। নইলে মানুষ হিসাবে তাঁর পক্ষেও এগুলি শোনা সম্ভব ছিল না (কাহফ ১৮/১১০)। এতদ্ব্যতীত কবরের বিষয়গুলি অদৃশ্য জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যদি তা শ্রবণযোগ্যই হ’ত, তবে তা অদৃশ্য জ্ঞান হিসাবে গণ্য হ’ত না। অতএব উক্ত বক্তা কর্তৃক কবরের আযাবের চিৎকার ধ্বনি শোনানো স্রেফ কাল্পনিক ব্যাপার মাত্র; যার কোন ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন (১৪/৪১৪) : পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম। এক্ষণে তারা স্বর্ণকার হিসাবে স্বর্ণের বেচা-কেনায় জড়িত থাকতে পারবে কি?
-আলী আদনান, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলনীতি হ’ল, ইবাহাত বা বৈধতা, যতক্ষণ না শরী‘আত কর্তৃক তা হারাম করা হয়। স্বর্ণ মৌলিকভাবে হালাল, অতএব তার ব্যবসা করাও হালাল। আর স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকার পুরুষদের জন্য হারাম হ’লেও মহিলাদের জন্য তা হালাল। রাসূল (ছাঃ) স্বর্ণ ব্যবসার মূলনীতি বর্ণনা করে বলেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম... সমান সমান, হাতে হাতে; অতঃপর যে ব্যক্তি বেশী দিবে বা বেশী চাইবে, সে ব্যক্তি সূদী কারবার করবে। গ্রহীতা ও দাতা উভয়ে সমান’ (মুসলিম হা/১৫৮৪; মিশকাত হা/২৮০৯)। তবে যদি বিক্রয় দ্রব্য পরস্পরে বিপরীত হয়, তাহ’লে তোমরা যেভাবে খুশী লেনদেন করতে পার, যখন তা হাতে হাতে নগদে হয়’ (মুসলিম হা/১৫৮৭; মিশকাত হা/২৮০৮)।
প্রশ্ন (১৫/৪১৫) : ইমাম ও মুছল্লী একই কাতারে ছালাত আদায় করলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কী? যদি হয় তবে ইমাম সামনে যাবে, না মুক্তাদী পিছনে যাবে? -এম.এম. বিল্লাহ, রাজশাহী।
উত্তর : ক্ষতি হবে না। তবে এক্ষেত্রে নিয়ম হ’ল দু’জন মুছল্লী হ’লে ইমাম বামে ও মুক্তাদী ডাইনে দাঁড়াবে (বুখারী হা/৬৯৭, ৬৯৯; মুসলিম হা/৭৬৩; মিশকাত হা/১১০৬)। আর দু’জনের জামা‘আত চলাকালে তৃতীয়জন হাযির হ’লে মুক্তাদীকে পিছনে টেনে নিবে এবং পিছনে জায়গা না থাকলে ইমামকে সামনে ঠেলে দিবে। আর কোন পার্শ্বেই জায়গা না থাকলে ইমামের কাতারে শামিল হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২৯২)। এমতাবস্থায় ইমামকে সামান্য এগিয়ে রেখে মুছল্লীদের কাতারবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কোন কোন বিদ্বান মত প্রকাশ করলেও এ সম্পর্কে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অতএব এরূপ ক্ষেত্রে ইমাম ও মুছল্লী সমান্তরালভাবেই দাঁড়াবে (মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৩২)। আর জায়গা প্রশস্ত থাকলে যথারীতি ইমাম সম্মুখে এবং মুক্তাদীগণ পিছনে কাতার করবে (মুসলিম হা/৩০১০; নাসাঈ হা/১০২৯; আবুদাঊদ হা/৬১৩; মিশকাত হা/১১০৭)।
প্রশ্ন (১৬/৪১৬) : সূরা কাহফের শেষ দশ আয়াত পাঠের কোন ফযীলত আছে কি?
-মাহদী হাসান, কানসাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সূরা কাহফের প্রথম বা শেষ দশ আয়াত পাঠের ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত বা শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে তাকে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখা হবে’ (মুসলিম হা/৮০৯; আহমাদ হা/২৭৫৫৬)। সূরা কাহফ সম্পূর্ণ পাঠেও ফযীলত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফ তেলাওয়াত করল.., ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য তার স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে (ছহীহুত তারগীব হা/১৪৭৩)। জুমআ‘র দিন সূরা কাহফ পাঠের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুম‘আর মধ্যবর্তী সময়টুকু আলোকিত করে দেয়া হবে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২১৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৭০)।
প্রশ্ন (১৭/৪১৭) : মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করতে হলে তাহ্ইয়াতুল ওযূ ও তাহ্ইয়াতুল মসজিদ আদায় করতে হবে কি? -ছফিউল্লাহ খান, কাঞ্চন, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করা হ’লে ছালাতের পূর্বে দু’রাক‘আত তাহ্ইয়াতুল মসজিদ ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এটি মসজিদের সাথে সম্পর্কিত সুন্নাত, ঈদের ছালাতের সাথে নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে না বসে (বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪)। সুতরাং ঈদের ছালাত মসজিদে আদায় করলে তার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যদিও তখন নিষিদ্ধ সময় হয় (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনু বায ১৩/১৫, শারহুল মুমতে‘ ৫/১৫৩)। আর ঈদগাহে আদায় করলে তার পূর্বে ও পরে কোন ছালাত নেই (বুখারী হা/৫৮৮৩; ইবনু মাজাহ হা/১২৯২)।
প্রশ্ন (১৮/৪১৮) : আমি পাইল্সের রোগী হওয়ায় পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হয়। এতে আমার ছিয়াম ভেঙ্গে যাবে কি? -ইমদাদুল ইসলাম, বি-বাড়িয়া।
উত্তর : ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ রক্ত বের হওয়া ছিয়াম ভঙ্গের কোন কারণ নয়। আর রাসূল (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় তাঁর দেহে শিঙ্গা লাগিয়েছেন (বুখারী হা/১৯৩৮; মিশকাত হা/২০০২)।
প্রশ্ন (১৯/৪১৯) : আমি প্রকাশ না করার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একজনের গোপন পাপ তার পিতা-মাতার নিকটে প্রকাশ করে দিয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল তার অভিভাবককে বলে তাকে সংশোধন করা। এক্ষণে ওয়াদা ভঙ্গের জন্য আমি গোনাহগার হব কি? এজন্য তার নিকটে ক্ষমা না নিলে ক্ষমা হবে কি? -মাহদী হাসান, মুগদা, ঢাকা।
উত্তর : এরূপ ওয়াদা ভঙ্গের কারণে গুনাহগার হবে না। আর এজন্য তার নিকট ক্ষমা চাইতেও হবে না (ইমাম শাফেঈ, আল-উম্ম, ৮/৬৩১)। কোন ব্যক্তিকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনা বৈধ বা তার গোপন কথা এমন ব্যক্তিকে বলা যায়, যার মাধ্যমে সে সংশোধন হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মানত করে যে, সে আল্লাহর নাফরমানী করবে, সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে (বুখারী হা/৬৭০০; মিশকাত হা/৩৪২৭)। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা করা যায়, যেমন (১) অত্যাচারীর অত্যাচার প্রকাশ করার জন্য (২) সমাজ থেকে অন্যায় দূর করা এবং পাপীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য (৩) হাদীছের সনদ যাচাই ও ফৎওয়া জানার জন্য (৪) মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনার ক্ষেত্রে (৫) পাপাচার ও বিদ‘আতে লিপ্ত হ’লে তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে (৬) কোন ব্যক্তির প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়া। যেমন : কানা, খোড়া ইত্যাদি। অবশ্য এরূপ নামে ডাকা তার মর্যাদাহানির উদ্দেশ্যে হওয়া যাবে না (নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন, ২৫৬ অনুচ্ছেদ, পৃ. ৫৭৫)।
প্রশ্ন (২০/৪২০) : যৌথ পরিবার থেকে প্রবাসে যাওয়ার পর আমাকে পাঠানোর পুরো খরচ পিতা-মাতাকে ফেরত দিয়েছি। কিন্তু পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা তা অস্বীকার করছে। তারা বলছে, টাকা না দিলে আমাকে বাড়িতে যেতে দেওয়া হবে না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-আব্দুল্লাহ, সিংগাপুর।
উত্তর : বর্ণনামতে পিতা-মাতা ও ভাইয়েরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যদি ভাইয়ের অবদান অস্বীকার করে এবং যুলুম করে, তাহ’লে তারা কবীরা গুনাহগার হবে। এক্ষেত্রে উক্ত প্রবাসী ভাই সমাজ নেতাদের সহায়তা নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিবেন। অথবা প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। অথবা তাদের বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিবেন ও তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেকের আয়-রোযগার তার নিজস্ব। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ সেটুকুই পায়, যেটুকুর জন্য সে চেষ্টা করে’ (নাজম ৫৩/৩৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের উপর হারাম হ’ল তার রক্ত, তার তার সম্পদ ও তার সম্মান’ (মুসলিম হা/২৫৬৪; মিশকাত হা/৪৯৫৯)।  তিনি বলেন, ‘কোন ব্যক্তির সম্পদ তার ভাই-এর জন্য হালাল নয়, যতক্ষণ না সে তাকে খুশী মনে তা প্রদান করে। আর তোমরা যুলুম করো না’...(বায়হাক্বী হা/১১৩০৪; ইরওয়া হা/১৪৫৯-এর আলোচনা ১/২৮১, সনদ হাসান)। যেহেতু ‘সন্তান তার পিতার পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত (তিরমিযী হা/১৩৫৮ প্রভৃতি;  মিশকাত হা/২৭৭০), সেহেতু তিনি সন্তানের উপার্জন থেকে নিজের প্রয়োজন মত নিতে পারেন। কিন্তু সেটি অন্য সন্তানকে দিতে পারেন না, যদি না সম্পদের মালিক খুশী মনে অনুমতি দেন।
বর্তমান কালে প্রায়শই প্রবাসীদের ওপর তাদের পরিবারের সদস্যরা অর্থ-সম্পদ প্রেরণের জন্য যে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন, তা নিতান্তই অন্যায়। এমন কর্ম থেকে  বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (২১/৪২১) : গরুর গোশত খাওয়াতে শারীরিক কোন ক্ষতি রয়েছে কি? এ ব্যাপারে শরী‘আতের নির্দেশনা জানাবেন। -রফীকুল ইসলাম,মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : গরুর গোশত খাওয়াতে যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু স্বাস্থ্যগত ক্ষতিও রয়েছে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এ্যালার্জি, এ্যাজমা, হাই-প্রেসার ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে ডাক্তাররা বিশেষত গরুর গোশত খেতে নিষেধ করেন।  রাসূল (ছাঃ) থেকে গরুর গোশতের ক্ষতি সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন তিনি বলেন, গরুর দুধে সুস্থতা রয়েছে, ঘিতে নিরাময় রয়েছে এবং গোশতে ব্যাধি রয়েছে (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৩৩)। উল্লেখ্য যে, গরুর গোশতে অপকারিতা থাকা সত্ত্বেও হালাল খাদ্য হিসাবে তা ভক্ষণ করতে বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের সময় গরু দ্বারা তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছিলেন (বুখারী হা/২৯৪; মুসলিম হা/১২১১)। আলবানী বলেন, গরুর গোশতে ব্যাধি রয়েছে এর অর্থ হল অধিকহারে খাওয়ার মধ্যে ব্যাধি রয়েছে। সীমিত খেলে ক্ষতি নেই (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, টেপ নং ৩৮৯)। হাদীছগুলির উদ্দেশ্য হ’ল খাদ্যবস্ত্তর মূল বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করা। এছাড়া উপকার ও ক্ষতি নির্ভর করে খাদ্যগ্রহণকারীর অবস্থার উপরে। যেমন লো-প্রেসারে গরুর গোশত উপকারী। আমাশয়ে ঘি ও দুধ ক্ষতিকর। আর যেকোন খাদ্য অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়।
প্রশ্ন (২২/৪২২) : কিছু অর্থ এক বছর যাবৎ জমা আছে। কিন্তু যাকাত প্রদানের পূর্বে আরো কিছু অর্থ জমা হ’ল। এক্ষণে পুরোটার যাকাত দিতে হবে কি? - আব্দুর রাক্বীববাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : প্রশ্নমতে পূর্বে জমাকৃত অর্থ যদি নিছাব পরিমাণ হয়, তবে বছরান্তে কেবল উক্ত অর্থেরই যাকাত দিতে হবে এবং অতিরিক্ত যোগ হওয়া অর্থ নতুনভাবে হিসাব করতে হবে। এরপর যদি পরবর্তী বছরান্ত পর্যন্ত তা জমা থাকে, তবে তার যাকাত একত্রিতভাবে আদায় করতে হবে। কিন্তু উক্ত জমাকৃত অর্থ যদি কোন ব্যবসায়ের লভ্যাংশ থেকে আসে, তবে সে অর্থ মূল সম্পদের সাথে মিলিয়ে একত্রিতভাবে যাকাত দিতে হবে। আর চাকুরীজীবীগণ যদি মাসে মাসে সম্পদ জমা করেন, তবে নিয়ম হল প্রতি মাসে তার সঞ্চয়ের হিসাব রাখবেন। অতঃপর যখন তা নিছাব পরিমাণ হবে ও তার ওপর এক বছর অতিক্রান্ত হবে তখন যাকাত দিবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৮০)।
প্রশ্ন (২৩/৪২৩) : জমি বা বাড়ী বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা আছে কি? -আবুল বারাকাত, খুলনা।
উত্তর : এ ব্যাপারে শরী‘আতের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। যৌথ মালিকানা বা প্রতিবেশী হওয়ার কারণে জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অংশীদারের কাছে কিংবা প্রতিবেশীর কাছে বিক্রয় করতে হবে। একে শরী‘আতের পরিভাষায় শুফ‘আ বলে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জমি অথবা (খেজুর) বাগানে যদি কারু কোন শরীক থাকে, তবে ঐ শরীকের অনুমতি না নিয়ে সে (অংশ) বিক্রি করতে পারবে না। সে চাইলে গ্রহণ করবে, না চাইলে ছেড়ে দিবে (মুসলিম হা/১৬০৮; মিশকাত হা/২৯৬২)। অর্থাৎ অংশীদার বা প্রতিবেশীকে জমি বিক্রয়ের কথা জানাবে। তারা না নিলে অন্যত্র বিক্রয় করবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীর শুফ‘আর অধিক হকদার। তাদের উভয়ের যাতায়াতের একই পথ হ’লে তার অনুপস্থিতিতে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে (আবুদাউদ হা/৩৫১৮; ইবনু মাজাহ হা/২৪৯৪; মিশকাত হা/২৯৬৭)। এ বিষয়ে আমর ইবনু শারীদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছটি বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য (বুখারী হা/২২৫৮)। শুফ‘আ দাবী করার জন্য মেয়াদ নির্ধারিত না থাকলেও দাবীদারদের কর্তব্য হবে বিষয়টি জানার পর দাবী উত্থাপনে বিলম্ব না করা (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৫/২৪১)।
প্রশ্ন (২৪/৪২৪) : স্বামী-স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সপরিবারে হজ্জে গমনের প্রাক্কালে হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু ঘটে। এক্ষণে স্ত্রী কি ইদ্দত পালন করবে না কি সন্তানের সাথে হজ্জে গমন করবে?
-হুমায়ূন কবীর, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন স্ত্রীর জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য (বাক্বারাহ ২/২৩৪, বুখারী হা/১২৮০, মুসলিম হা/১৪৮৬, মিশকাত হা/৩৩৩০)। এ সময় কেবল যরূরী প্রয়োজন ছাড়া তার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় হজ্জ পালন স্থগিত করবে এবং পরবর্তীতে সুযোগ মত আদায় করবে। উল্লেখ্য যে, হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলে বাড়ির নিকটবর্তী থাকলে ফিরে আসবে। আর দূরে চলে গেলে সেখানেই ইদ্দত পালন করবে। মেয়াদ পূর্ণ না হ’লে অবশিষ্ট দিনগুলো বাড়িতে এসে পালন করবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৮/১৬৭; মাজমু‘ ফাতাওয়া ইবনুল উছায়মীন ২১/৬৮)।
প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : ফজর বা আছরের ছালাতরত অবস্থায় সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হ’লে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি? -আব্দুর রঊফ, তালা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ছালাত বাতিল হবে না। বরং ছালাত পূর্ণ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আছরের ছালাতের এক সিজদা পায়, তাহ’লে সে যেন ছালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের ছালাতের এক সিজদা পায়, তাহ’লে সে যেন ছালাত পূর্ণ করে নেয় (বুখারী হা/৫৫৬; মিশকাত হা/৬০২)। কারণ কাযা ছালাত যে কোন সময় পড়া যায় এমনকি নিষিদ্ধ সময়েও। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার কাফ্ফারা হ’ল, যখনই তার স্মরণ হবে ছালাত আদায় করে নিবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার একমাত্র কাফ্ফারা হ’ল ঐ ছালাত আদায় করে নেয়া (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬০৩,৬০৪)। উলে­খ্য, যে তিনটি সময়ে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা মূলতঃ সাধারণ নফল ছালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ক্বাযা ছালাত, জানাযার ছালাত, তাহিইয়াতুল মাসজিদ, ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত নফল ছালাত প্রভৃতি বিশেষ কারণযুক্ত ছালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৮১)।
প্রশ্ন (২৬/৪২৬) : কাঁচা পেয়াজ-রসুন খেলে যদি ফেরেশতারা তার নিকট থেকে চলে যায়, তবে তা খাওয়া সব সময়ের জন্য হারাম হবে কি? -আকলীমা আখতার, কালিহাতি, টাঙ্গাইল।
উত্তর : পিয়াজ ও রসুন হালাল এবং অনেক উপকারী খাদ্যবস্ত্ত হওয়া সত্ত্বেও এর তীব্র গন্ধ অন্যের জন্য কষ্টকর হওয়ায় রাসূল (ছাঃ) কাঁচা পিয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এই নিষেধাজ্ঞা কেবল মসজিদে জামা‘আতের সাথে সম্পৃক্ত। অবশ্য রান্না করা পিয়াজ ও রসুন খেতে কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তোমরা খেতেই চাও, তবে রান্নার মাধ্যমে এ দু’টিকে মেরে ফেল (অর্থাৎ পাকিয়ে গন্ধমুক্ত করে ফেল)’ (আবুদাঊদ হা/৩৮২৭; মিশকাত হা/৭৩৬)। কাঁচা পিয়াজ-রসুন মাকরূহ হওয়ার মূল কারণটি হ’ল এর তীব্র গন্ধ। খাওয়ার পরে মিসওয়াক বা পেস্ট-ব্রাশের মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করলে ও গন্ধ দূর হ’লে আর সমস্যা থাকে না। একইভাবে অপরিষ্কার ও কটু গন্ধযুক্ত পোষাক পরে বা বিড়ি-সিগারেট খাওয়া মুখে মসজিদে বা মানুষের মধ্যে বসা অপসন্দনীয় কাজ। উল্লেখ্য, অনেকের মুখ থেকে সর্বদা দুর্গন্ধ বের হয়। যা তিনি বুঝতে পারেন না। অথচ পাশের লোক বিব্রত বোধ করে। এটি একটি রোগ। যা চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত নিরাময় করা আবশ্যক। 
প্রশ্ন (২৭/৪২৭) : ঘুমানোর সময় সূরা মারিয়াম পাঠ করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা আছে কি? -আতীকা, নতুনহাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ঘুমানোর সময় সূরা মারিয়াম পাঠের বিশেষ কোন ফযীলত নেই। উক্ত মর্মে  যে বর্ণনাটি বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে পাওয়া যায় তা ‘জাল’ (তাফসীরে ছা‘লাবী ৬/২০৫; তাফসীরুল ওয়াসীত্ব  ৩/১৭৪; যামাখশারী, বায়যাভী)। উক্ত বর্ণনায় সালামুত ত্বাবীল নামক একজন জাল বর্ণনাকারী আছে। তাছাড়া হারূণ বিন কাছীরও দুর্বল রাবী (ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ১/৩৩৯; লিসানুল মীযান ৬/১৮১)।
প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মসজিদে না গিয়ে বাসায় জামা‘আত করে ছালাত আদায় করা যাবে কি? -আছিফ মাহমূদ, ধাপ, রংপুর।
উত্তর : সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাসায় জামা‘আত করে ছালাত আদায় করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনলো এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামা‘আতে উপস্থিত হ’ল না, তার ছালাত হ’ল না’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩০০)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করবে, তার উচিত সে যেন এই ছালাত সমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে। যেখানে তার জন্য আযান দেওয়া হয় (অর্থাৎ মসজিদে)। কেননা মহান আল্লাহ তোমাদের নবী (ছাঃ)-এর নিমিত্তে হেদায়াতের পন্থা সমূহ নির্ধারণ করেছেন। আর নিশ্চয় এই ছালাত সমূহ হেদায়াতের অন্যতম পন্থা ও উপায়। যদি তোমরা (ফরয) ছালাত নিজেদের ঘরেই পড়, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোকগুলো নিজ নিজ ঘরে ছালাত পড়ে, তাহ’লে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করবে’ (মুসলিম হা/৬৫৪; মিশকাত হা/১০৭২)। তিনি আরও বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে হেদায়াতের রীতি-নীতি শিক্ষা দিয়েছেন। এই সকল রীতি-নীতির একটি হ’ল সেই মসজিদে ছালাত আদায় করা, যেখানে আযান দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম হা/৬৫৪; মিশকাত হা/১০৭২)।
প্রশ্ন (২৯/৪২৯) : মেহরাবের একপাশে আল্লাহ ও অপরপাশে মুহাম্মাদ লেখা মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? -সোহেল রানা, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : ছালাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা যারা এগুলি করেন, তারা অধিকাংশই বরকত মনে করে অথবা অজ্ঞতাবশে করে থাকেন। স্মর্তব্য যে, মসজিদের মেহরাবের উপরে এক পার্শ্বে ‘আল্লাহ’ অপর পাশে^র্ ‘মুহাম্মাদ’ লেখা শিরকের পর্যায়ভুক্ত। এতে আল্লাহ ও রাসূলকে তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে সমান গণ্য করা হয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, নং ৮৩৭৭, ১/৮২ পৃ.)। এইসব লেখার পিছনে সাধারণতঃ ছূফীদের চালুকৃত শিরকী আক্বীদা কাজ করে যে, যিনিই আল্লাহ তিনিই মুহাম্মাদ। অর্থাৎ আল্লাহই মুহাম্মাদ-এর রূপ ধারণ করে দুনিয়াতে এসেছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। যার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় ছূফীদের আবিষ্কৃত মীলাদ মাহফিলে পঠিত উর্দূ কবিতার মাধ্যমে। যেখানে বলা হয়, ‘ওহ্ জো মুস্তাবী আরশ থা খোদা হো কার, উতার পাড়া হ্যায় মদীনা মেঁ মোছতফা হো কার্’। অর্থ: আরশের অধিপতি আল্লাহ ছিলেন যিনি, মুছতফা রূপে মদীনায় অবতীর্ণ হ’লেন তিনি’ (নাঊযুবিল্লাহ)। অতএব আল্লাহ ও মুহাম্মাদ পাশাপাশি লেখা থেকে মসজিদকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
প্রশ্ন (৩০/৪৩০) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব ছালাতে একটি সিজদা ছুটে গেলে পরবর্তীতে পুরো রাক‘আত পড়ার ব্যাপারে বলা হ’লেও কেবল সাহো সিজদা দিয়ে শেষ করেছেন। এক্ষণে মুছল্লীদের জন্য করণীয় কি? -সজীব আলী, শ্যামপুর, মেহেরপুর।
উত্তর : রুকূ-সিজদা ছালাতের রুকন। আর কোন রুকন ছাড়া পড়লে ছালাত বাতিল হয়। তাই এরূপ অবস্থায় কেবল সহো সিজদা যথেষ্ট নয়, বরং অতিরিক্ত এক রাক‘আত আদায় করতে হবে এবং সহো সিজদা দিতে হবে (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৩/৩৭১-৭২; আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৭৭)।
স্মর্তব্য যে, ছালাতের কোন রুকন আদায় করতে ভুলে গেলে তা পুনরায় আদায় করতে হয় এবং সহো সিজদা দিতে হয়। একদা রাসূল (ছাঃ) ভুলবশতঃ রাক‘আত সংখ্যা কম হ’লে তিনি বাকী রাক‘আত আদায় করেন এবং সহো সিজদা দেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৭)। আর কোন ওয়াজিব বা সুন্নাত ছেড়ে দিলে কেবল দু’টি সহো সিজদা দিলেই যথেষ্ট হবে। যেমন একবার প্রথম তাশাহহুদ ছুটে গেলে তিনি কেবল সহো সিজদা দেন (বুখারী হা/৮২৯; মুসলিম হা/৫৭০; মিশকাত হা/১০১৮)।
প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : আমি হদযোগ্য বড় গুনাহ করে ফেলেছি। এক্ষণে আমার জন্য করণীয় কি? কুরআনী ঘোষণা অনুযায়ী কি আমার জন্য পুত-পবিত্র নারীকে বিবাহ করা হারাম?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর : এজন্য প্রথমে অনুতপ্ত হয়ে পুনরায় উক্ত পাপ না করার দৃঢ় প্রত্যয়ে তওবা করতে হবে  (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা হদযোগ্য পাপ থেকে দূরে থাক। যে ব্যক্তি এর শিকার হবে সে যেন তা গোপন রাখে এবং আল্লাহর নিকট তওবা করে। কেননা কারো অপরাধের কথা আমাদের সামনে প্রকাশ পেয়ে গেলে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আমরা হদ জারী করব (হাকেম হা/৭৬১৫; ছহীহাহ হা/৬৬৩)। আর নিজে পুত-পবিত্র হয়ে যাওয়ার পর কোন সতী নারীকে বিবাহ করায় কোন বাধা নেই। কুরআনে এসেছে, ‘আর ব্যভিচারী পুরুষ বিয়ে করতে পারে না ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারীকে ব্যতীত। (অনুরূপভাবে) ব্যভিচারিণী নারী বিয়ে করতে পারে না ব্যভিচারী বা মুশরিক পুরুষকে ব্যতীত (যে ব্যভিচারকে হারাম মনে করে না)। মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে’ (নূর ২৪/৩)। এই আয়াতের অর্থ ব্যভিচারী পুরুষেরাই কেবল ব্যভিচারী নারীদের সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, যদি সে তওবা করে তবেই কেবল উক্ত নারী বা পুরুষের সাথে অন্য মুমিন পুরুষ বা নারীর বিবাহ সিদ্ধ হবে, নইলে নয়’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নূর ৩ আয়াত)।
প্রশ্ন (৩২/৪৩২) : আমার এক লক্ষ টাকা আছে। কিন্তু নিজে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এক্ষণে মাসিক ২৫০০ টাকা লাভ প্রদানের শর্তে কাউকে উক্ত টাকা প্রদান করা যাবে কি?
-মামূন, জয়পুরহাট।
উত্তর : নির্ধারিত লাভের শর্তে অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে না। এমনটি করলে তা সূদ হিসাবে গণ্য হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যে ঋণের বিনিময় লাভ করা হয়, তা সূদ (ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯৭)। অতএব উক্ত টাকা কোন সৎ ব্যবসায়ীকে লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে প্রদান করতে হবে। পরস্পরে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায়ী তাকে লভ্যাংশ প্রদান করবে।
প্রশ্ন (৩৩/৪৩৩) : আমি দৈনিক পত্রিকা বিক্রয়ের ব্যবসা করি। অধিকাংশ পত্রিকায় অশালীন কিছু ছবি থাকেই। এক্ষণে এ ব্যবসা জায়েয হবে কি? -আব্দুল আযীয, হারাগাছ, রংপুর।
উত্তর : যে সকল পত্র-পত্রিকা মূলত সংবাদ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়, তার ব্যবসা মৌলিকভাবে নাজায়েয নয়। আর এতে যে সকল অশালীন ছবি প্রকাশিত হয়, তার জন্য বিক্রেতা দায়ী হবে না, বরং পত্রিকার প্রকাশকগণ দায়ী হবেন। তবে তাক্বওয়ার দাবী হ’ল, অশ্লীলতা প্রচারে সহায়ক হ’লে এ সকল পত্রিকার ব্যবসা পরিহার করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর। গোনাহ ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (৩৪/৪৩৪) : পূর্বে ডিভোর্স হওয়া কোন নারীকে পরবর্তীতে বিবাহ দেওয়ার সময় ডিভোর্সের বিষয়টি গোপন রাখা যাবে কি? -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সাতক্ষীরা।
উত্তর : এরূপ সংবাদ গোপন রাখা যাবে না। কারণ পরবর্তীতে জানাজানি হ’লে সংসারে অশান্তি নেমে আসতে পারে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না (বাক্বারাহ ২/৪২)। অপরদিকে এটা দোষ গোপন করার পাপ হবে।
প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : ঈদের দিনে ছালাতের পূর্বে মাইকে উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি দেওয়া কিংবা অন্যকে দিতে বলা যাবে কি? -মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, ধূরইল, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে। এভাবে তাকবীর ধ্বনি বলা ও বলতে বলা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। প্রখ্যাত তাবেঈ মুজাহিদ বলেন, আবু হুরায়রা ও ইবনু ওমর যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে বাযারে বের হতেন এবং সশব্দে তাকবীরধ্বনি দিতেন। তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিতেন। তারা কেবল এই কাজের জন্যই বাযারে আসতেন (ফাকেহী, আখবারু মাক্কা হা/১৬৪৪; বুখারী হা/৩৭৫, ৪/১২২ পৃ.; ইরওয়া হা/৬৫১, সনদ ছহীহ)। ওমর (রাঃ) মিনায় নিজের তাঁবুতে তাকবীর বলতেন। মসজিদের লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং তাদের তাকবীর শুনে বাযারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াযে গুঞ্জরিত হয়ে উঠত (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬০৬১; আখবারু মাক্কা হা/২৫৮০; বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। মায়মূনা (রাঃ) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান বিন ওছমান ও ওমর বিন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পিছনে আইয়ামে তাশরীক্বের রাত্রিগুলিতে মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন (বুখারী হা/৩৭৬, ৪/১২৪ পৃ.)। তবে এর মাধ্যমে যেন কেউ জামা‘আতবদ্ধ যিকিরের দলীল না নেন, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ জামা‘আতবদ্ধ যিকির বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/২৬৯)।
প্রশ্ন (৩৬/৪৩৬) : শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর প্রতি জামাইয়ের কর্তব্য কী কী?
-এম.এম. নূরুদ্দীন, সিংড়া, নাটোর।
উত্তর : শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর প্রতি জামাইয়ের অবশ্য পালনীয় শারঈ কোন কর্তব্য নেই, যেমনটি তার স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি রয়েছে। তবে নিকটাত্মীয় হিসাবে তাদের প্রতি সদাচরণ করবে এবং প্রয়োজনে তাদের জন্য খরচ করবে। আল্লাহ বলেন, তিনিই মানুষকে পানি হ’তে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বিবাহগত সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান’ (ফুরক্বান ২৫/৫৪)। অত্র আয়াতে নিজ বংশ ও শ্বশুর বংশের উল্লেখ করার মাধ্যমে উভয় বংশের গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝানো হয়েছে। অতএব উভয় বংশের সম্মান রক্ষা করা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল থাকা প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য। কারণ এই দুই বংশের মিলন ব্যতীত পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব লাভ সম্ভব হ’ত না। অতএব পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানীদের এমন চরিত্রের হওয়া উচিত, যেন সন্তানেরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে এবং নিজেরা উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতি উদ্বু্দ্ধ হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জেনে রেখ! তোমাদের যেরূপ অধিকার রয়েছে তোমাদের স্ত্রীদের উপর, তোমাদের স্ত্রীদেরও তদ্রূপ অধিকার রয়েছে তোমাদের উপর (কাজেই উভয়ের প্রতি উভয়ের অধিকার আদায় করা কর্তব্য) (তিরমিযী হা/১১৬৩)। অতএব স্ত্রীর পিতা-মাতা হিসাবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর প্রতি জামাইয়ের সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সদাচরণ করা কর্তব্য।
প্রশ্ন (৩৭/৪৩৭) : অবিবাহিত ছেলে ও মেয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে মেয়েটি গর্ভবর্তী হ’লে তাদের বিবাহ দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষণে গর্ভাবস্থায় বিবাহ কি জায়েয? আর পেটের সন্তানটির হুকুম কী হবে? -রহিদুল ইসলাম ফেরদৌস, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : বর্ণিত প্রেক্ষাপটে গর্ভে সন্তান আসা অবস্থায় বিবাহের হুকুম সম্পর্কে বিদ্বানদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মতে, তাদের মাঝে বিবাহ জায়েয (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ আল-কুয়েতিয়াহ ২৯/৩৩৮-৩৩৯)। কেননা প্রথমতঃ কোন হারাম কাজের কারণে হালাল বস্ত্ত হারাম হয় না। দ্বিতীয়তঃ এতে সেই সন্তানের পরিচয় নির্ধারণে সংমিশ্রণ সৃষ্টির আশংকা নেই। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তার প্রথম কাজটি হারাম এবং দ্বিতীয় কাজটি হালাল। আর যে ব্যক্তি তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবূল করেন  (আল-মুদাউওয়ানাহ ২/১৭৩)।
ইসলামী শরী‘আত মোতাবেক হদ্দের শাস্তি আরোপের পর এই বিবাহ সংঘটিত হবে। তবে এ দেশে ইসলামী আইন কার্যকর না থাকায় এই পাপের জন্য তাদেরকে খাঁটি তওবা করতে হবে। এমতাবস্থায় অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, পেটের সন্তানটি মায়ের দিকে সম্পৃক্ত হবে এবং কেবল তার সম্পদের ওয়ারিছ হবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ৬/৩৪৫; উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া, ৩/৩৭০)। কেননা ব্যভিচারের সন্তান পিতার দিকে সম্পৃক্ত হয় না এবং তার সম্পদের ওয়ারিছও হয় না (আহমাদ হা/৭০০২, আবূদাউদ হা/২২৬৫, সনদ হাসান)। অবশ্য যেনাকারী নারী অবিবাহিতা হ’লে সে সন্তান এমন পিতার দিকে সম্বন্ধিত হবে বলে মতপ্রকাশ করেছেন ইমাম আবূ হানীফা, ইবনু তায়মিয়া প্রমুখ বিদ্বান (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ৬/৩৪৫; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১২-১১৩)। যদিও প্রথম মতটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্ন (৩৮/৪৩৮) : মসজিদ বা ঈদগাহ নির্মাণের জন্য শর্ত সাপেক্ষে জমি ওয়াক্ফ করা যাবে কি? ওয়াক্ফকারী ব্যক্তি কি তাতে নিজস্ব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কোন শর্তারোপ করতে পারেন? তিনি কি সেই মসজিদ বা ঈদগাহে কাউকে আসতে নিষেধ করতে পারেন?
-মুহাম্মাদ এস. আলম,বেলঘরিয়াহাট, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : শর্ত সাপেক্ষে ওয়াক্ফ করা জায়েয, যদি তা বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত হয় (বুখারী হা/২৭৩৭; মিশকাত হা/৩০০৮, ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী ৬/৮)। কিন্তু প্রশ্নমতে মসজিদ, মাদরাসা, ঈদগাহ, কবরস্থান প্রভৃতি জনস্বার্থে প্রতিষ্ঠিত স্থানের জন্য ওয়াক্ফ করা জমিতে ব্যক্তিগত স্বার্থসূচক কোন শর্তারোপ করা যাবে না। কেননা এগুলি আল্লাহর জন্যই নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ওয়াক্ফের ক্ষেত্রে এমন কোন শর্তারোপ করা যাবে না যা আল্লাহর হুকুমের বিরোধী হয় এবং দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের লক্ষ্যে করা হয়। যদি এরূপ করা হয়, তবে তা বাতিল হবে। একজন মুমিনকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে, কিসে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। সুতরাং ছওয়াবের উদ্দেশ্যে ওয়াক্ফ করার পর এমন কোন শর্তারোপ করা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়, যাতে আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন এবং সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/৬৩-৬৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, লোকেদের কী হ’ল? তারা এমন সব শর্ত করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যদি কেউ এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, সে শর্ত বাতিল। যদিও তা একশ’ শর্ত হয়’ (বুখারী হা/২৫৬১; মুসলিম হা/১৫০৪; মিশকাত হা/২৮৭৭)।
অপরপক্ষে কোন মুসলিম অপর মুসলিমকে মসজিদে ছালাত আদায় থেকে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে না। মসজিদে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলিকে বিরান করার চেষ্টা চালায় (বাক্বারাহ ২/১১৪)। এক্ষণে উক্ত জমির ওয়াক্ফকারী হিসাবে নিজের বড়ত্ব যাহির করে এরূপ কাজ করলে তিনি অবশ্যই গোনাহগার হবেন। তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে এবং মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা ওয়াক্ফের নেকী থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।
প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : কোন ব্যক্তির মাঝে মুনাফিকের আলামত দেখা গেলে তাকে মুনাফিক বলে ডাকা যাবে কি? -আব্দুল মাজেদ, কাউনিয়া, রংপুর।
উত্তর : তাকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট (হুজুরাত ৪৯/১১)। সর্বোচ্চ হয়ত এতটুকু বলা যেতে পারে যে, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি আলামত রয়েছে (বুখারী হা/৩৪; মুসলিম হা/৫৮; মিশকাত হা/৫৬)। ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ছাঃ) সকালে আমার কাছে আসলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনু দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে না। তা শুনে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি এ কথা বলনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ বলে? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যে কোন বান্দা ক্বিয়ামতের দিন ঐ কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন (বুখারী হা/৬৯৩৮; মুসলিম হা/২৬৩)। অতএব অপরকে এমন গালি দেওয়া পরিহার করে নিজের আমল সংশোধনের চেষ্টায় রত হ’তে হবে।
প্রশ্ন (৪০/৪৪০) : শিশুকালে পিতা-মাতার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমি মামার বাড়িতে মানুষ হই। পিতা কখনো আমার কোন দায়িত্ব পালন করেননি। আর আমার সাথে কথা বলতে চাইলেও আমি কখনো বলিনি। এতে আমার কোন গোনাহ হবে কি? তিনি আমার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পালন না করায় তার প্রতি আমার কোন দায়িত্ব আছে কি?
-বদরুদ্দোজা শেখ, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : জন্মদাতা পিতা দায়িত্ব পালন না করলেও তার সাথে সদাচরণ করতে হবে। পিতা দায়িত্ব পালন না করার কারণে গুনাহগার হবেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। কিন্তু এই কারণে সন্তানও পিতার সাথে অসদাচরণ করলে সেও গুনাহগার হবে। কেননা শরী‘আতের নির্দেশ হ’ল সর্বাবস্থায় সাধ্যমত জন্মদাতা পিতার সাথে সদাচরণ করা (ইসরা ১৪/২৩,২৪)। আল্লাহ বলেন, যদি পিতা-মাতা তোমাকে শিরক করার জন্য চাপ দেয়, তবে তাদের আনুগত্য করো না। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের সাথে সদাচরণ বজায় রাখ’ (লোকমান ৩১/১৫)।

সেপ্টেম্বর/২০১৮

প্রশ্ন (১/৪৪১) : ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তাকাববালাল্লাহু... বলা সাথে সাথে ঈদ মোবারক বলা বিদ‘আত হবে কি?
-আব্দুল হালীম, মালদ্বীপ।
উত্তর : ঈদ মোবারক (আপনার ঈদ বরকতপূর্ণ হৌক) বলা বিদ‘আত নয়। কেননা এটি ইবাদত পালন বা বিশেষ ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় না। তাছাড়া ঈদের সময় অনেক ছাহাবী ও তাবেঈ এরূপ অভিনন্দনসূচক বাক্য ব্যবহার করেছেন। যেমন তাঁরা পরস্পর সাক্ষাৎকালে বলতেন, ‘তাকাববাল্লাহু মিন্না ও মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের পক্ষ থেকে কবূল করে নিন) (মু‘জামুল কাবীর হা/১২৩; শু‘আবুল ঈমান হা/৩৭২০; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন হা/৪০০; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩২৫৫; তামামুল মিন্না ১/৩৫৫, সনদ হাসান)। সুতরাং উক্ত দো‘আ বা আরও অনুরূপ দো‘আমূলক শব্দ ও বাক্য যেমন ঈদ মুবারাক, ঈদ সাঈদ প্রভৃতি ব্যবহার করায় দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ২৪/২৫৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১২৯; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৩/৩৭৭)।
প্রশ্ন (২/৪৪২) : মোবাইলে ব্যালান্স না থাকলে ইমারজেন্সী ব্যালান্স নিতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোম্পানী অল্প কিছু টাকা অতিরিক্ত কেটে নেয়। এটা সূদের অন্তর্ভুক্ত হবে কি?
-মাহফূয, পাবনা।
উত্তর : সার্ভিস চার্জ হিসাবে কাটলে সেটি সূদ হবে না। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, তাদের গৃহীত চার্জ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী, অর্থাৎ সার্ভিস চার্জ ব্যতীত অতিরিক্ত অর্থও কাটা হয়। প্রকৃতই যদি এরূপ অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে তা সূদ হবে। কেননা হাদীছে এসেছে ‘কোন ঋণ যদি লাভ নিয়ে আসে, তবে তা সূদ’ (সুনান বায়হাক্বী হা/১০৯৩৩)। হাদীছটি মারফূ‘ ও মাওকূফ বিভিন্ন সূত্রে যঈফ সনদে এলেও এর মর্মার্থ ছহীহ। সর্বোপরি সন্দেহজনক লেনদেন থেকে বিরত থাকাই উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সন্দিগ্ধ বিষয় পরিহার করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও। কেননা সত্যে রয়েছে প্রশান্তি এবং মিথ্যায় রয়েছে সন্দেহ’ (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭৩)।
প্রশ্ন (৩/৪৪৩) : শিরকের গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য তওবা করার পর নতুনভাবে কালেমা পাঠ এবং নতুনভাবে বিবাহ নবায়ন করতে হবে কি? -ছাবীহা আফরীন, আজিমপুর, ঢাকা।
উত্তর : কোন মুসলিম ব্যক্তি শিরক থেকে তওবা করার পর নতুনভাবে কালিমা পাঠ করতে হবে না কিংবা বিবাহ নবায়নেরও কোন প্রয়োজন নেই। কেননা শিরকের মত মহাপাপে জড়িত থাকলেও সে ব্যক্তি ইসলাম অস্বীকারকারী নয়।  অতএব  তার জন্য তওবাই যথেষ্ট।  আল্লাহ  তা‘আলা বলেন, ‘বল, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। ইবনু কাছীর বলেন, এটি সকল গুনাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে কেউ কুফরী কর্ম করল বা শিরক করল, সন্দেহ পোষণ করল, মুনাফিক্বী করল, মানবহত্যা করল, কোন ফাসিকী কর্ম করল কিংবা অনুরূপ কোন পাপ করল, অতঃপর এগুলো থেকে তওবা করল, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন (তাফসীর ইবনু কাছীর, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৪/৪৪৪) : ‘কালেমা তাইয়েবা’র বাক্যটি কি? এটা নিয়ে মতবিরোধের কারণ কি?
-ওমর ফারূক, পীরগাছা, রংপুর।
উত্তর : কালেমা তাইয়েবাহ হ’ল ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। কিছু অজ্ঞ ব্যক্তি এই কালেমার সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ যোগ করে একে ‘কালেমা তাইয়েবাহ’ বলে। অথচ মুহাম্মাদ যোগ করলে সেটি ‘কালেমা শাহাদাত’ হয়ে যায়। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কালেমা ত্বাইয়েবা হ’ল ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা ইবরহীম ২৪ আয়াত)। আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকল নবীরই কালেমা ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আম্বিয়া ২১/২৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম যিকির হ’ল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (তিরমিযী হা/৩৩৮৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৮০০; মিশকাত হা/২৩০৬; সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (৫/৪৪৫) : যাদের হজ্জ কবুল হয় তাদের নিক্ষিপ্ত কংকর আল্লাহ উঠিয়ে নেন। আর যাদের হয় না তাদেরগুলি সেখানেই পড়ে থাকে। উক্ত কথাটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত কি? -শাহ আলম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে মারফূ ও মাওকূফ সূত্রে বেশ কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীছগুলো যঈফ। তবে ওমর, ইবনু আববাস, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী থেকে কতিপয় আছারের সনদ ছহীহ। শায়খ আলবানী মাওকূফ সূত্রগুলোকে ছহীহ বলার পর উল্লেখ করেন, এগুলো মারফূ‘র হুকুম রাখে কি না আমার নিকট স্পষ্ট নয় (সিলসিলা যঈফাহ হা/২০৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। আবুত তুফায়েল (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেন, লোকেরা জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগে এত পাথর নিক্ষেপ করা সত্ত্বেও রাস্তা বন্ধ হয় না কেন? উত্তরে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যাদের পাথর কবুল করা হয় সেগুলো উঠিয়ে নেওয়া হয়। যদি এমনটি না হ’ত তাহ’লে এখানে পাথরের টিলা বা পাহাড় সৃষ্টি হয়ে যেত (ফাকেহী, আখবারে মাক্কাহ হা/২৫৮৬; ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৫৫৭৩, সনদ জাইয়েদ)। সাখাভী বলেন, আমার উস্তায হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘আমি এর আশ্চর্যজনক দৃশ্য অবলোকন করেছি। আমি এ বিষয়ে ভাবছিলাম। তারপর দেখলাম বহুলোক অনেক পাথর নিক্ষেপ করছে। কিন্তু কেবল গুটিকয়েক পাথরই মাটিতে পতিত হচ্ছে’ (সাখাভী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, হা/৯৭২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। সর্বোপরি মূল বিষয় আল্লাহ্ই অধিক অবগত।
প্রশ্ন (৬/৪৪৬) : কারণবশতঃ এক মসজিদে ই‘তিকাফ করে অন্য মসজিদে তারাবীহর ছালাতের ইমামতি করা যাবে কি? -আবুল কালাম আযাদ, মহিমাগঞ্জ, ময়মনসিংহ।
উত্তর : এরূপ সুযোগ নেই। কেননা ই‘তিকাফ অবস্থায় একান্ত বাধ্যগত অবস্থা ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ই‘তিকাফে থাকা অবস্থায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন (পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি) ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না’ (বুখারী হা/২০২৯; মুসলিম হা/২৯৭; মিশকাত হা/২১০০)। তিনি আরো বলেন, ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হ’ল, সে কোন রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে না এবং বাধ্যগত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না’... (আবুদাঊদ হা/২৪৭৩; মিশকাত হা/২১০৬; আল আছারুছ ছহীহ হা/৪২২; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১৯২)।
প্রশ্ন (৭/৪৪৭) : আমার স্বামীর কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য মাঝে মাঝে তার সাথে ঝগড়া হয়। একসময় আমি তার উপর অভিশাপ দেই যেন ঈমানহারা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরূপ অভিশাপ দেওয়া জায়েয কি? এর কোন কার্যকারিতা আছে কি?
-বিউটি বেগম, ময়মনসিংহ।
উত্তর : কোন মুমিন অপর মুমিনকে অভিশাপ দিতে পারে না (আহমাদ হা/৩৯৪৮, তিরমিযী হা/১৯৭৭, মিশকাত হা/৪৮৪৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুমিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার সমতুল্য’ (বুখারী হা/৬৬৫২; মুসলিম হা/১৭৬; মিশকাত হা/৩৪১০)। বিশেষত নারীদের অধিকহারে জাহান্নামের যাওয়ার বড় কারণ হিসাবে হাদীছে এসেছে যে তারা বেশী বেশী অভিশাপ প্রদান করে (বুখারী হা/৩০৪; মুসলিম হা/১৩২; মিশকাত হা/১৯)। সুতরাং স্ত্রীর জন্য এরূপ অভিশাপ প্রদান করা মোটেও ঠিক হয়নি এবং এজন্য তাকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। যদি স্বামী অনৈতিক কাজে জড়িত থাকে তবে তাকে সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে বুঝাতে হবে। এতে কাজ না হ’লে স্বামীর উপর ক্ষমতাবান ব্যক্তির মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করবে। এতেও কাজ না হ’লে তার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করবে অথবা ফিসখে নিকাহ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবুও তাকে অভিশাপ দেয়া যাবে না।
আর অভিশাপের কার্যকারিতা রয়েছে যদি অভিশাপপ্রাপ্ত ব্যক্তি সত্যিই তার উপযুক্ত হয়। আর যদি উপযুক্ত না হয়, তবে অভিশাপদাতার প্রতিই তা ফিরে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন বান্দা কোন বস্ত্তকে অভিশাপ দেয় তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপের আকাশে ওঠার পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের জন্য রওয়ানা হয়, কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেয়ায় সে ডানে বামে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোন পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার নিকট ফিরে আসে। তখন সেই বস্ত্ত যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার ওপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর ওপরই তা পতিত হয়’ (আবূ দাঊদ হা/৪৯০৫; মিশকাত হা/৪৮৫০; সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (৮/৪৪৮) : কোন নারীর জন্য গায়ের মাহরাম পুরুষদের সাথে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা করা বা দাওয়াতী কাজ করা জায়েয হবে কি?
-সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ।
উত্তর : বিশেষ প্রয়োজনে শারঈ আদব বজায় রেখে গায়রে মাহরামের সাথে যোগাযোগ করা যাবে। সেটা ম্যাসেঞ্জার, মোবাইল বা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যমে হোক। কেননা এগুলি দ্বারা হাদীছে নিষিদ্ধ নারী-পুরুষের ‘খালওয়া’ বা ‘নির্জনে একত্রিত হওয়া’ বুঝায় না। কিন্তু অপ্রয়োজনে এমনকি দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে হ’লেও যোগাযোগ করা যাবে না। কারণ এতে গোপনালাপ কিংবা অন্তরের রোগ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা তাকে পাপ ও ফিতনায় নিমজ্জিত করতে পারে। আর কোন মুসলিমের জন্য শয়তানের চক্রান্ত থেকে সর্বদা সতর্ক থাকা কর্তব্য। নতুবা শয়তান ভাল মানুষের বেশেই কাউকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। যে ব্যক্তি শয়তানের অনুসরণ করে, সে তো তাকে নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়’ (নূর ২৪/২১)।
প্রশ্ন (৯/৪৪৯) : মুমূর্ষু রোগীর নিকটে কী কী কাজ করা শরী‘আতসম্মত?
-হাফীযুল ইসলাম, তালবাড়িয়া, আলীপুর, সাতক্ষীরা।
উত্তর : মৃত্যুপথযাত্রীর প্রতি কর্তব্য হ’ল তাকে তালক্বীন করানো। তালক্বীন (التلقين) অর্থ কথা বুঝানো বা দ্রুত মুখস্থ করিয়ে দেওয়া। মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে রোগীর শিয়রে বসে তাকে কালেমায়ে ত্বাইয়িবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ানো উচিত (মুসলিম হা/৯১৭ (২); মিশকাত হা/১৬১৬)। যাতে সে দ্রুত মুখস্থ বা স্মরণ করে নেয়। তাওহীদের স্বীকৃতিবাচক এই কালেমাই তাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত), সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’(আবুদাঊদ হা/৩১১৬; মিশকাত হা/১৬২১)। জমহূর বিদ্বানগণ কেবল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ পড়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। কেননা হাদীছে কেবল এতটুকুই এসেছে  (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৫৬)।
উল্লেখ্য যে, তালক্বীনের অর্থ কেবল কালেমা শুনানো নয়। বরং তাকে কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করা (আহমাদ হা/১২৮৯৯, সনদ ছহীহ; তালখীছ ১১ পৃঃ)। কিন্তু কালেমা পড়ানোর জন্য চাপাচাপি করা উচিত নয়। তাতে মুখ দিয়ে বেফাস কথা বের হয়ে যেতে পারে। একবার বলানোর পরে দ্বিতীয়বার চেষ্টা না করা উচিত। যাতে এই কালেমাই তার শেষ বাক্য হয়। আর মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার হাদীছটি যঈফ (আহমাদ হা/২০৩১৬; আবুদাঊদ হা/৩১২১; ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬২২)।
প্রশ্ন (১০/৪৫০) : ১০. একজন ভাই কয়েক মাস পূর্বে তার চাকুরী হারিয়েছে। একদিন সে আমার কাছে এসে বলল যে, সে খুবই অর্থনৈতিক দুর্দশায় আছে। ইতিপূর্বে সে সচ্ছল জীবন যাপন করত। আমি তার দুরবস্থা দেখে আমার যাকাত ফান্ড থেকে ত্রিশ হাযার টাকা প্রদান করি। প্রশ্ন হ’ল এই দানটি যাকাত হিসাবে গণ্য করা যাবে কি? -জাহিদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থাই ধর্তব্য, পূর্বের অবস্থা নয়। অতএব যে ব্যক্তি মিসকীন হিসাবে গণ্য, তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করতে বাধা নেই (তওবাহ ৯/৬০)। সুতরাং যাকাত প্রদানের নিয়ত সহকারে দান করে থাকলে তা যাকাত হিসাবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন (১১/৪৫১) : আইয়ামে বীযের ছিয়াম এবং শাওয়ালের ৬টি ছিয়াম কি এক নিয়তের মধ্যে শামিল করা যাবে? -আব্দুল কাবীর, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।
উত্তর : আইয়ামে বীয ও শাওয়ালের ছিয়াম দু’টি পৃথক ইবাদত। একই নিয়তের মধ্যে শামিল করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং পৃথক নিয়তে স্বতন্ত্রভাবে দু’টি ইবাদত পালন করতে হবে (ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাকা ৫১/২৫)। তবে কেউ যদি আইয়ামে বীযের দিনগুলোতে কিংবা  সোমবার ও বৃহঃস্পতিবারে শাওয়ালের ছিয়াম পালন করে তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। যেমনভাবে মসজিদে ফজরের দু’রাকা‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করলে পৃথকভাবে ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ পড়ার আবশ্যকতা থাকে না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১৩-১৫)।
প্রশ্ন (১২/৪৫২) : জিনদের মধ্যে কোন্ নবীর আগমন ঘটেছিল? কেননা সূরা আল-আন‘আমের ১৩০ নং আয়াত থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কেবল মানবজাতির মধ্যে নয়, বরং জিনদের মধ্যেও নবী রয়েছে? -নাছির হোসাইন, বেসিক ব্যাংক, খুলনা।
উত্তর : জিনদের স্বতন্ত্র কোন ধর্মগ্রন্থ নেই বা তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকে কোন নবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়নি। বরং মানব জাতির নিকট যে নবী-রাসূল বা কিতাব প্রেরণ করা হয়েছিল, তাদের জন্যও একই নবী-রাসূল বা ধর্মগ্রন্থ প্রযোজ্য। আল্লাহ বলেন, ‘(স্মরণ কর) যখন আমরা একদল জিনকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যারা মনোযোগ দিয়ে কুরআন শুনছিল। অতঃপর যখন তারা সেখানে উপস্থিত হ’ল, তখন বলল, তোমরা চুপ থাক। তারপর যখন শেষ হয়ে গেল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে। তারা বলল, হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাব শুনেছি, যা মূসার উপর নাযিল হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়ন করে। যা সত্যের দিকে ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে (আহকাফ ৪৬/২৯-৩০)। অত্র আয়াতদ্বয় থেকে বুঝা যায় জিনেরা তাওরাত পেয়েছিল। পেয়েছিল কুরআনসহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কিতাবসমূহও। জিনেরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে কুরআন শুনে যেত। আল্লাহ বলেন, ‘ধাপনি বলুন (হে মুহাম্মাদ)! আমার প্রতি অহী করা হয়েছে এই মর্মে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শ্রবণ করেছে এবং বলেছে যে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি’ (জিন ৭৪/১)। আল্লাহ কুরআনে মানুষ ও জিনকে একই সাথে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে জিন ও ইনসান জাতি! তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেননি, যারা তোমাদের নিকট আমাদের আয়াতসমূহ বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের দিনে সাক্ষাতের ভয় প্রদর্শন করতেন?’(আন‘আম ৬/১৩০)।
তবে জিনদের মধ্যে পৃথক দাঈ বা সৎপথে অহবানকারী রয়েছে। যারা রাসূলগণের নিকট ধর্ম শিখে গিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রচার করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার কাছে এক জিন জাতির মধ্যস্থ আহবায়ক এসেছিল। আমি তার সঙ্গে গিয়ে তাদের কাছে কুরআন পড়লাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তাদের বিভিন্ন চিহ্ন ও তাদের আগুনের চিহ্ন দেখালেন। তারা তাঁর নিকট খাদ্য চেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর নাম উল্লেখ করে যে কোন হাড্ডির উপর তোমাদের হাত পড়বে, তা তোমাদের জন্য পর্যাপ্ত গোশতে পরিণত হবে। আর প্রত্যেক গোবর হবে তোমাদের পশুখাদ্য। অতঃপর তিনি (ছাহাবীদেরকে) বললেন, সুতরাং তোমরা ঐ দু’টি জিনিস দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে না। কারণ তা তোমাদের (জিন) ভাইদের খাদ্য’ (মুসলিম হা/৪৫০; তিরমিযী হা/৩২৫৮; ছহীহাহ হা/৩২০৯)।
প্রশ্ন (১৩/৪৫৩) : ক্বিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী, ঈসা (আঃ), দাজ্জাল, ইয়াজূজ-মাজূজ ইত্যাদির আগমন সহ ক্বিয়ামতের পূর্বে কি কি ঘটবে ধারাবাহিকভাবে তা জানতে চাই।
-আব্দুল হাই, কক্সবাজার।
উত্তর :  কিয়ামতের এমন কিছু আলামত আছে যেগুলো ঘটে গেছে। আবার কিছু আলামত আছে যা বর্তমানে ঘটছে। আর কিছু আলামত আছে যা ভবিষ্যতে ঘটবে। আর কিয়ামতের বড় আলামতগুলোর ধারাবাহিকতা নিয়ে হাদীছে বিভিন্নরূপ বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়। এ সকল হাদীছের আলোকে বলা যায় যে, ধারাবাহিকভাবে প্রথমে ইমাম মাহদী, এরপর দাজ্জাল ও ঈসা (আঃ)-এর আগমন ঘটবে। অতঃপর ইয়াজূজ-মা’জূজের আগমন, সূর্য পশ্চিম আকাশে উদিত হওয়া, ভূপৃষ্ট থেকে (দাববাতুল আরয) প্রাণীর আগমন, আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া,  তিন স্থানে তিনটি ভূমিধ্বস (যা কেবল কাফিররা দর্শন করবে), সর্বশেষ আগুন কর্তৃক লোকদের তাড়িয়ে হাশরের ময়দানে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটবে (ফাৎহুলবারী ১৩/৮২-৯০)। হুযায়ফা ইবনু আসীদ আল-গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা আলোচনা করছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূল (ছাঃ) আমাদের নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছ? তাঁরা বললেন, আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না তোমরা দশটি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধুম্র, দাজ্জাল, দাববাতুল আরয, পশ্চিম দিগন্ত হ’তে সূর্য উদিত হওয়া, মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ, ইয়াজূজ-মাজুজ এবং তিনবার ভূমি ধ্বসে যাওয়া তথা পূর্ব প্রান্তে একটি ভূমিধ্বস, পশ্চিম প্রান্তে একটি ভূমিধ্বস এবং আরব উপদ্বীপে একটি ভূমিধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। এ নিদর্শনসমূহের পর এক আগুন প্রকাশিত হবে ইয়ামান থেকে এবং মানুষকে তাড়িয়ে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে (মুসলিম হা/২৯০১; মিশকাত হা/৫৪৬৪)।
প্রশ্ন (১৪/৪৫৪) : আমি পরিচিত এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৪০ হাযার টাকা ধার করেছি। বর্তমানে আমি রোগে ভুগছি। যেকোন সময় মারা যেতে পারি। অসুস্থতার কারণে কোন চাকুরীতে ঢুকতে না পারায় পরিশোধ করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় মারা গেলে আমার কি শাস্তি হবে? ঋণের ব্যাপারে আমার করণীয় কি?
-আসাদুল্লাহ, বংশাল, ঢাকা।
উত্তর : ঋণ থাকা অবস্থায় মারা গেলে এবং তা পরিশোধ না করা হ’লে শাস্তি পেতে হবে। সেজন্য মৃত্যুর পূর্বে ঋণ পরিশোধ করা অত্যন্ত যরূরী। কারণ ঋণ বান্দার হক। তা বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে যতক্ষণ না তার পক্ষ হ’তে ঋণ পরিশোধ করা হয়’ (তিরমিযী হা/১০৭৮; আহমাদ ২/৪৪০ পৃঃ; রিয়াযুছ ছালিহীন হা/৯৪৩, সনদ হাসান)। ঋণ পরিশোধ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে হাশরের মাঠে নিজস্ব নেকী দিয়ে ঋণের দাবী পূরণ করতে হবে (বুখারী, মিশকাত হা/৫১২৬)। সুতরাং ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক। সম্ভব না হ’লে ঋণদাতার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। ঋণদাতা ঋণ মওকূফ না করলে সমাজ ও সরকারের নিকট থেকে সাহায্য নিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
প্রশ্ন (১৫/৪৫৫) : একজন ছাহাবীর মাত্র দুই দীনারের জন্য কবরের আযাব হয়েছিল এবং অন্য ছাহাবী যখন তার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছিলেন তখন তার কবরের আযাব বন্ধ হয়েছিল। হাদীছটি ছহীহ কি? -আমানুল্লাহ, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (আহমাদ হা/১৪৫৭৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৮১২)। অতএব ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৬/৪৫৬) : আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যে অন্য কারো নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে চায় সে যেন মৃত সৎ ব্যক্তিদের অনুসরণ করে’ উক্ত মর্মে বর্ণিত আছারটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-কিতাবুদ্দীন, পুরাতন সি এ্যান্ড বি ঘাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত মর্মে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত একটি আছার পাওয়া যায়, যার দ্বারা উদ্দেশ্য ছাহাবীগণ। আছারটির পূর্ণরূপ হ’ল- ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন তরীকা অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দ্বীনের ব্যাপারে) ফিৎনা হ’তে মুক্ত নয়। আর মৃত ব্যক্তিরা হ’লেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ, যারা পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসাবে, পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং বাহুল্যবর্জিত হওয়ার দিক থেকে এ উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রাসূলের সাথী ও দ্বীন ক্বায়েমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফযীলত ও মর্যাদা বুঝে নাও, তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মযবূতভাবে আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) ছিরাতুল মুস্তাকীমের পথিক ছিলেন (মু‘জামুল কাবীর হা/৮৭৬৪; মিশকাত হা/১৯৩; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৫০)। আল্লামা হায়ছামী এর সনদ ছহীহ বললেও শায়খ আলবানী এর সূত্রকে যঈফ বলেছেন। তবে ইবনু মাসঊদ ছাড়াও অনুরূপ বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে ইবনু ওমর ও হাসান বাছরী থেকে (হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৩০৫; যাম্মুত তা’বীল হা/৬৩)। ইবনু তায়মিয়াহ, শাতেবী প্রমুখ আলেমগণ তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে আছারটি উল্লেখ করেছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/১৫৮; আল-ই‘তিছাম ২/৮৫২; যাম্মুত তা’বীল হা/৬২, ১/৩২)। সুতরাং মর্মগতভাবে আছারটি ছহীহ।
প্রশ্ন (১৭/৪৫৭) : আমাদের এলাকায় মহিলারা তা‘লীম দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে তাদের তা‘লীমে না গেলে ঈমান থাকবে না। তাদেরকে না খাওয়ালে খাদ্যে বরকত হবে না। তাদের এরূপ দাওয়াতের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চাই।
-জামীলা খানম, কোনাবাড়ি, গাযীপুর।
উত্তর : তা‘লীমে না গেলে ঈমান থাকবে না বা খেতে না দিলে খাদ্যে বরকত হবে না- এ সকল কথা বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। বরং আমল-আক্বীদা শিরক ও বিদ‘আতপূর্ণ হ’লে কোনভাবেই তাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না।
স্মর্তব্য যে, নারীরা নিজস্ব পরিসরে তা‘লীম করতে পারে, তবে তাদেরকে কুরআন ও হাদীছের জ্ঞানে পারদর্শী হ’তে হবে (মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪)। এছাড়া সাধারণ তা‘লীমী বৈঠক, ওয়ায মাহফিল বা অন্য যেকোন দ্বীন শিক্ষার মজলিসে নারীরা শরীক হ’তে পারে। কেননা ইসলামী বিধান পালনের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সমগোত্রীয় (আবুদাউদ হা/২৩৬; মিশকাত হা/৪৪১; ছহীহাহ হা/২৮৬৩)। তবে সেখানে শারঈ পর্দা, নিরাপত্তা ও অভিভাবকের অনুমতি থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৮/৪৫৮) : কিছু কিছু মসজিদে দেখা যায় কিছু মুছল্লী নিজেদের জন্য স্থান নির্ধারণ করে রাখে এবং সেখানে নিজস্ব জায়নামায পেড়ে রাখে। এরূপ আমল কতটুকু শরী‘আত সম্মত? -নাজীবুল ইসলাম, শাজাহানপুর, বগুড়া।
উত্তর : মসজিদে ফরয ছালাত আদায়ের জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট করে নেয়া নিষিদ্ধ। কেননা রাসূল (ছাঃ) কাকের ঠোকরের ন্যায় (তাড়াতাড়ি) সিজদা করতে, চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বাহু বিছাতে এবং উটের ন্যায় মসজিদের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে নিষেধ করেছেন (আবূদাউদ হা/৮৬২, সিলসিলাহ ছহীহাহ হা/১১৬৮)। তবে নফল ছালাতের জন্য এমনভাবে স্থান নির্দিষ্ট করায় বাধা নেই (বুখারী হা/৫০২, মুসলিম হা/৫০৯)। আর কোন প্রয়োজন ছাড়া নিজস্ব জায়নামায বিছিয়ে ছালাত আদায় করা ঠিক নয়। কেননা এতে মুছল্লীর নিজের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হ’তে পারে এবং পার্শ্ববর্তী মুছল্লীরও ছালাতে একাগ্রতা বিঘ্নিত হ’তে পারে। হাদীছে এ ধরণের পরিস্থিতিকে ‘শয়তান কর্তৃক দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮২ ‘ছালাতের মধ্যে কি কি কাজ জায়েয ও নাজায়েয’ অনুচ্ছেদ)। তবে ইমামের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় কোন দোষ নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য বিশেষ জায়নামায ছিল (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৯ ‘ত্বাহারাৎ’ অধ্যায়, ‘ঋতু’ অনুচ্ছেদ)। এছাড়া ঈদের ছালাত আদায়ের জন্য ময়দানে কার্পেট বা কোন কিছু বিছানোর ব্যবস্থা না থাকলে সেখানে স্ব স্ব জায়নামায বা মাদুর সাথে নিয়ে যাওয়া যাবে।
প্রশ্ন (১৯/৪৫৯) : ইসলামী শরী‘আতে বিবাহের পূর্বে তালাক দেওয়ার কোন নিয়ম আছে কি? যেমন কোন ব্যক্তি যদি তার বাগদত্তা অর্থাৎ যাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে বিবাহের পূর্বেই তালাক প্রদান করে, তবে সেটি কি তালাক হিসাবে গণ্য হবে?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
উত্তর : বিবাহের পূর্বে তালাক দেওয়ার বিধান ইসলামী শরী‘আতে নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বিয়ের আগে তালাক নেই’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৮; মিশকাত হা/৩২৮১; ইরওয়া হা/২০৬৮, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি বলেন, ‘যে বস্ত্ত স্বীয় মালিকানায় নেই সেই বস্ত্ততে আদম সন্তানের মান্নত হয় না। যে (দাস) স্বীয় মালিকানায় নেই তাকে আযাদ করা যায় না। যে (স্ত্রীলোক) স্বীয় অধিকারে নেই তাকে তালাক দেওয়া যায় না’ (তিরমিযী হা/১১৮১; মিশকাত হা/৩২৮২; ছহীহাহ হা/২১৮৪)। এ ব্যাপারে আলী (রাঃ)-সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী ও তাবেঈ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, বিয়ের পূর্বে তালাক বর্তায় না’ (বুখারী ১৭/৪২৭; মুগনী ৯/৫২৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/১৯১)। সুতরাং বর্ণিত ক্ষেত্রে এটি তালাক হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা এখনও বিবাহ সংঘটিতই হয়নি।
উল্লেখ্য যে, মুয়াত্ত্বা মালেকে বর্ণিত ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর উক্তি ‘বিবাহের পূর্বে কারো নাম বা গোত্রের নাম উল্লেখ করে কেউ যদি বলে অমুক তালাক তাহ’লে বিবাহের পর তালাক হয়ে যাবে’ মর্মের বর্ণনাটি মুনকাতে‘ হওয়ার কারণে বাতিল (মুয়াত্ত্বা মালেক হা/১২১৫, ১২৭৫; জামেঊল উছূল ফী আহাদীছির রাসূল, তাহকীক আব্দুল কাদের আরনাউত হা/৫৭৭০)।
প্রশ্ন (২০/৪৬০) : আমার ৫০ দিনের ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ১৫ দিন যাবত রক্তপাত হচ্ছে। এক্ষণে উক্ত রক্ত নিফাসের রক্ত হিসাবে গণ্য হবে কি?
-হেলেনা আখতার, পদ্মা আবাসিক এলাকা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত রক্ত নিফাস হিসাবে গণ্য হবে না। বরং মুস্তাহাযা হিসাবে গণ্য হবে। কারণ সাধারণত বাচ্চার বয়স কমপক্ষে ৮০ দিন না হ’লে দৈহিক আকৃতি ফুটে ওঠে না। সুতরাং এর পূর্বে গর্ভপাত ঘটলে তার রক্ত নিফাস হিসাবে গণ্য হবে না। এ অবস্থায় তাকে ছালাত ও ছিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত করতে হবে। তার বিধানটি মুস্তাহাযার বিধান হিসাবে গণ্য হবে (হজ্জ ২২/৫; বুখারী হা/৩২০৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৪২২)।
প্রশ্ন (২১/৪৬১) : নিয়মিত লেখা-পড়া না করার কারণে শৈশবে আমার পিতা আমাকে রাগের মাথায় বলেছিলেন যে, পড়াশুনা না করলে রাখালের সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। কিন্তু সেখানে উপস্থিত রাখাল কিছু বলেনি। বরং আমি আমার পিতার কথার প্রতিবাদ করেছিলাম। বর্তমানে শৈশবের ঐ কথাটি মনে করে আমি অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এমনকি মানসিক রোগী হয়ে গেছি? উক্ত কথার কারণে বিবাহ কি সম্পন্ন হয়েছিল? যেহেতু হাদীছে বিবাহ, তালাক ও রাজা‘আত নিয়ে হাসি-তামাশা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর হাসি-তামাশা করে বললেও উক্ত তিনটি বিষয় সম্পন্ন হয়ে যায় বলে হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। ঐ বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকলে এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বিশ্বনাথপুর, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : পিতার উপরোক্ত কথা নিতান্তই কথার কথা, যা তার মনের কথা নয়। এমনকি মনের কথা হ’লেও যেহেতু যথাযথ পদ্ধতিতে বিবাহ পড়ানো হয়নি, অতএব পিতার উক্ত কথায় বিবাহ সংঘটিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ বলেন, ‘অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদের ধরবেন না। তবে ঐসব শপথের জন্য তিনি তোমাদের পাকড়াও করবেন, যা তোমরা মনের সংকল্প অনুযায়ী করে থাক। বস্ত্ততঃ আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও সহনশীল’ (বাক্বারাহ ২/২২৫)। সুতরাং এ বিষয়ে সৃষ্ট দুশ্চিন্তা কেবল মনের রোগ বা শয়তানের ধোঁকা মাত্র। এই ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য এরূপ চিন্তা এলেই সাথে সাথে বামদিকে তিনবার থুক মারবেন ও প্রতিবারে ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশশাইত্ব-নির রজীম’ পাঠ করবেন এবং উক্ত চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলবেন।
প্রশ্ন (২২/৪৬২) : প্রখ্যাত বিদ্বান ইমাম সুয়ূতী বর্ণনা করেন- ইমাম আবু হানীফা ৪০ বছর এশার ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন (তাবয়ীজুস ছহীফাহ) এবং আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী (তাকমীলুল ঈমান) লিখেছেন আবু হানীফা ১০০ বার স্বপ্নে আল্লাহকে দেখেছেন। এর সত্যতা আছে কি? -নযরুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত গ্রন্থসমূহে এসকল বর্ণনা পাওয়া গেলেও এর কোন গ্রহণযোগ্য ভিত্তি নেই আলবানী বলেন, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি এশার ওযূতে চল্লিশ বছর ফজরের ছালাত আদায় করেছেন, তাতে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। কারণ তাঁর থেকে এসকল ঘটনার কোন ভিত্তি নেই (আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিইয়াহ ১/১২৩; আছলু ছিফাতি ছালাতিন্নবী ২/৫৩১)। মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী বলেন, এগুলো ইমাম ছাহেবের প্রতি স্পষ্টভাবে মিথ্যা অপবাদ মাত্র। এরূপ কথা তাঁর দিকে সম্পর্কিত করা সমীচীন নয়। ...এগুলো মূর্খ পক্ষপাতদুষ্টদের রচিত গল্প মাত্র। তবে নিঃসন্দেহে তিনি মুত্তাকী ও ইবাদতগুযার মানুষ ছিলেন (আর-রাদ্দু ‘আলাল মু‘তারিয ১/৪৪)। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর প্রধান শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) বলেন, একদা আবু হানীফা (রহঃ)-এর সাথে হাঁটছিলাম তখন এক লোক বলল, ইনি আবু হানীফা, যিনি রাতে ঘুমান না। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! সে যেন আমার ব্যাপারে এমন কথা বর্ণনা না করে, যা আমি করি না (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৩৯৯; তাহযীবুল কামাল ২৯/৪৩৫; শাযারাতুয যাহাব ২/২৩০)। আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহঃ) বলেন, ইবাদতে বাড়াবাড়ি স্রেফ বিদ‘আত। যারা এসব কথা বলে, তারা সবচেয়ে বড় বিদ‘আতী ও বড় জাহিল (দ্রঃ মুক্বাদ্দামা শরহে বেক্বায়াহ (দেউবন্দ ছাপা) পৃ. ৩৬-৩৭)। এ ধরনের কল্পিত ঘটনা দ্বারা মূলত ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। অনুরূপ আরো অনেক অলৌকিক ঘটনা তাঁর নামে সমাজে প্রচলিত রয়েছে, যেগুলির কোন ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন (২৩/৪৬৩) : উদ হিন্দি বা আগর গাছ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলি ছহীহ কি? এর উপকারিতা কী? -আরিয়ান যারিফ, মুন্ডুমালা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ভারতীয় এই আগর কাঠ ব্যবহার করবে। কেননা তার মধ্যে সাত ধরনের চিকিৎসা (নিরাময়) রয়েছে। শ্বাসনালীর ব্যথার জন্য এর (ধোঁয়া) নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়। নিউমোনিয়া দূর করার জন্যও তা সেবন করা যায় (বুখারী হা/৫৬৯২; মুসলিম হা/২২১৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৬২)। উল্লেখ্য যে, প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিতেও ঔষধী গুনের কারণে আগর গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হ’ত। আধুনিক বিজ্ঞানেও এর অনেক উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। আধুনিক মেডিকেল শাস্ত্রে এটি মুত্রবর্ধক, কামোদ্দীপক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ এবং বাত, হাঁপানী, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।  
প্রশ্ন (২৪/৪৬৪) : তাওয়াফকালীন সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে করণীয় কি? সাময়িকভাবে ছেড়ে দিলে ছালাতের মত প্রথম থেকে শুরু করতে হবে কি? -মোর্শেদ, ইতালী।
উত্তর : তাওয়াফ করা অবস্থায় ক্লান্ত হয়ে পড়লে সঙ্গী-সাথীরা তাকে হুইল চেয়ারে বহন করে তাওয়াফ করানোর ব্যবস্থা করবে। আর যদি তাওয়াফ ছেড়ে বাইরে যেতে হয় কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তাহ’লে ফিরে এসে পুনরায় নতুনভাবে তাওয়াফ শুরু করবে। কেননা তাওয়াফ ছালাতের মত (তিরমিযী হা/৯৬০)। রাসূল (ছাঃ) তাওয়াফের মাঝে বিরতি নিতেন না বা ছেদ ঘটাতেন না (মুগনী ৩/৩৫৬)। তবে তাওয়াফের মধ্যে সাময়িক বিশ্রাম নিলে বা ছালাতের সময় উপস্থিত হ’লে ছালাতের পর নতুনভাবে তাওয়াফ শুরু করতে হবে না। বরং যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকে শুরু করবে। কিন্তু ১/২ ঘন্টার মত দীর্ঘক্ষণ দেরী করলে নতুনভাবে তাওয়াফ শুরু করবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২৯৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৮৫-৮৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/১৩-১৪)।
প্রশ্ন (২৫/৪৬৫) : একজন তালাকপ্রাপ্তা মহিলার পিতা বেঁচে নেই। তার মা ও বড় ভাই তাকে বলেছে, তোমার পসন্দ মতো বিয়ে করে নাও, আমাদের কোন আপত্তি নেই। অন্যদিকে এক লোককে তার স্ত্রী খোলা তালাক দিয়েছে। এই লোককিও তার পিতামাতা বলেছে, তোমার পসন্দ মতো বিয়ে করে নিও। আমাদের কোন আপত্তি নেই। এই দু’জনের বিবাহ হয় বিদেশে এবং দুই পরিবার বিবাহ সাদরে গ্রহণ করে নেয়। তবে বিদেশে বিয়ে হওয়ায় অভিভাবকরা অনুপস্থিত ছিল। এই বিবাহ বৈধ হবে কি? -ওয়ালিউল্লাহ, কাটাখালী, রাজশাহী।
উত্তর : যদি ওলী বা অভিভাবকের অনুমতিক্রমে ও দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে উক্ত বিবাহ সম্পাদিত হয়ে থাকে তাহ’লে বিবাহ বৈধ হয়েছে। কেননা বিদেশে থাকার কারণে অভিভাবক যদি ফোনের মাধ্যমে কাউকে তার পক্ষ থেকে ওলী নিয়োজিত করে এবং দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ঈজাব ও কবুল হয়, তাতেও বিবাহ হয়ে যাবে (উছায়মীন, আশ শারহুল মুমতে‘ ১২/৮৯-৯০; মুহাম্মাদ ইবনু ইবাহীম আলে শায়খ, ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ১০/৭৬)।
প্রশ্ন (২৬/৪৬৬) : গত ৪ বছর পূর্বে আমার জানা না থাকার কারণে ১ জন পুরুষ ও ১ জন নারী সাক্ষীর মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত বিবাহ সঠিক হয়েছে কি? সঠিক না হ’লে করণীয় কি? -আব্দুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : প্রশ্নমতে উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। কারণ সাক্ষীর ক্ষেত্রে একজন নারী পুরুষের তুলনায় অর্ধেক। আর বিবাহতে পূর্ণ দু’জন সাক্ষী থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের মধ্যেকার দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে। যদি দু’জন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী, ঐসব সাক্ষীদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা পসন্দ কর। যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দেয়’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ওলী ও ন্যায়পরায়ণ দু’জন সাক্ষী ব্যতীত বিবাহ সম্পন্ন হবে না (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/১৩৪২৩; ইরওয়া হা/১৮৬০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৭-৫৮)। এক্ষণে ওলী ও দু’জন সাক্ষীর সামনে নতুনভাবে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে। তবে এর জন্য পৃথকভাবে রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য যে, কাগজে-কলমে নারী ও পুরুষ মিলে দু’জন সাক্ষী থাকলেও যদি উক্ত বিয়ে বহু মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, তাহ’লে নতুনভাবে বিবাহ পড়ানোর প্রয়োজন নেই। কারণ বিবাহে সাক্ষীর উদ্দেশ্য লোকদের জানানো। আর অনুষ্ঠান হ’লে লোকেরা জেনেই ফেলে (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/১৩০)।
প্রশ্ন (২৭/৪৬৭) : জনৈক আলেম বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর অনুমতিক্রমে আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-কে রাসূলের পাশে কবর দেওয়া হয়েছিল। এর সত্যতা জানতে চাই।
-আব্দুল্লাহ, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর :  ঘটনাটি সত্য। আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বে আয়েশা (রাঃ)-কে ওছিয়ত করেছিলেন যাতে তাঁকে রাসূলের পার্শ্বে দাফন করা হয়। আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে আয়েশা (রাঃ) পিতার ওছিয়ত অনুসারে তাকে রাসূলের পার্শ্বে দাফন করেন (তাবাকাতু ইবনু সা‘দ ৩/২০৯; তারীখে তাবারী ২/৩৪৯)। আর ওমর (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বে ছেলে আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-এর মাধ্যমে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট রাসূলের পার্শ্বে কবরস্থ হওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তা মেনে নেন। এজন্য তাঁকেও  রাসূলের পার্শ্বে কবর দেওয়া হয় (বুখারী হা/১৩৯২; ইবনু হিববান হা/৬৯১৭)।
প্রশ্ন (২৮/৪৬৮) : আমার মা ক্যানসারের রোগী। যেকোন সময় মারা যেতে পারে। আমার নানা তার সমুদয় সম্পত্তি তার দ্বিতীয়া স্ত্রী ও সন্তানদেরকে লিখে দিয়েছে। এক্ষণে আমার মায়ের সম্পত্তিগুলো আমরা লিখে নিতে পারব কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী।
উত্তর : এরূপ কাজ করা যাবে না। কারণ উত্তরাধিকার সম্পদের বণ্টননীতি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত (নিসা ৪/১১)। অতএব যার যতটুকু প্রাপ্য তা বুঝিয়ে দিতে হবে। আর নানা তার প্রথমা স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গোনাহ করেছেন। এক্ষণে নানা জীবিত থাকলে হক্বদারদেরকে অবশ্যই তাদের প্রাপ্য সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে এবং খালেছ তওবা করতে হবে। আর জীবিত না থাকলে যে সকল উত্তরাধীকারী বর্তমানে অন্যায়ভাবে সেসব সম্পত্তি ভোগ করছে, তাদেরকে উক্ত সম্পদ পুনরায় সঠিক নিয়মে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা তারাও কঠিনভাবে পাপী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যুলুম করে অন্যের এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক (স্তর) যমীনের শেকল তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে (বুখারী হা/২৪৫২, ৩১৯৮; মুসলিম হা/১৬১০)। 
প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : জনৈক ব্যক্তির দু’জন স্ত্রী ছিল। এক্ষণে প্রথমা স্ত্রীর ছেলের সাথে দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাতনীর বিয়ে দেওয়া যাবে কি? -শহীদুল ইসলাম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর: এই বিবাহ জায়েয নয়। কারণ মেয়েটি সম্পর্কে ছেলেটির আপন ভাগ্নী। যার সাথে বিবাহ শরী‘আতে হারাম। এক্ষণে যদি দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাতনী পূর্বের স্বামীর সন্তানের মেয়ে হয় তাহ’লে এরূপ বিবাহ জায়েয (মুগনী ৭/১২৮)।
প্রশ্ন (৩০/৪৭০) : আমি কর্মসূত্রে মক্কা নগরীতে অবস্থান করছি। কিন্তু এখন শুনছি যে, ইহরাম ব্যতীত মক্কা নগরীতে প্রবেশ করা গোনাহের কাজ। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-আবুল কালাম, মক্কা, সঊদী আরব।
উত্তর : যারা হজ্জ বা ওমরার জন্য মক্কায় গমন করবে কেবল তাদের জন্য ইহরাম বাঁধা আবশ্যক। কেউ মক্কায় স্বীয় কর্মস্থল বা ব্যবসাস্থলে গেলে, তাওয়াফ করতে গেলে বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে ইহরাম বাঁধতে হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, হজ্জ ও ওমরার নিয়তকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য (বুখারী হা/১৫২৪; নাসাঈ হা/২৬৫৪)। অত্র হাদীছে ইহরামের বিষয়টিকে কেবল হজ্জ ও ওমরার সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।
প্রশ্ন (৩১/৪৭১) : বিবাহ ঠিক হয়েছে। কিন্তু কারণবশত তা অনুষ্ঠিত হবে দু’বছর পর। এদিকে মেয়ের ব্যাপারে আরো অনেক প্রস্তাব আসছে। এক্ষণে বিষয়টি নিশ্চিত করে রাখার জন্য সামাজিক প্রথা অনুযায়ী আংটি পরানোর মাধ্যমে এনগেজমেন্ট করে রাখা যাবে কি?
-নূরুল ইসলাম, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : বিবাহ নিশ্চিত করতে আংটি বিনিময়ের পদ্ধতিটি খৃষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা, যা প্রাচীন গ্রীকদের থেকে আগত। তারা বিশ্বাস করত যে, বামহাতের অনামিকায় আংটি পরালে হবু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয় (উইকিপিডিয়া)। সুতরাং এই রীতি অনুসরণ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা উচিৎ। আর যদি উক্ত ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে আংটি প্রদান করা হয়, তবে তা হারাম এবং শিরকের পর্যায়ভুক্ত হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১১২)। তবে সাধারণভাবে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশার্থে কোন অলংকার বা হাদিয়া প্রদানে দোষ নেই (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ২২/২)।
প্রশ্ন (৩২/৪৭২) : ফরয হজ্জ পালনের পূর্বে ওমরা করা যাবে কি?
-মাহবূবুর রহমান, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট।
উত্তর : ফরয হজ্জ করার পূর্বে ওমরা করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) হজ্জের পূর্বে ওমরা করেছেন (বুখারী হা/১৭৭৪; মিশকাত হা/২৫১৯)। বারা ইবনু আযেব বলেন, রাসূল (ছাঃ) হজ্জের পূর্বে দু‘বার ওমরা করেছেন (বুখারী হা/১৭৮১; মিশকাত হা/২৫১৯)। ইমাম নববী বলেন, হজ্জের পূর্বে ওমরা করা জায়েয। চাই সে পরবর্তীতে হজ্জ করুক বা না করুক (আল-মাজমূ‘ ৭/১৭০)।
প্রশ্ন (৩৩/৪৭৩) : অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান পিতা-মাতার সাথে হজ্জ করলে তার ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে কি? -আব্দুল্লাহ নাজীব, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : শিশু অবস্থায় হজ্জ পালন করলে হজ্জের ফরযিয়াত আদায় হবে না। পরবর্তীতে হজ্জ করতে হবে। কেননা তার জন্য শরঈ বিধান প্রযোজ্য নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন শিশু বালেগ হওয়ার পূর্বে হজ্জ করলেও পরবর্তীতে (সামর্থবান হ’লে) তাকে পুনরায় হজ্জ করতে হবে’ (হাকেম হা/১৭৬৯; ইবনু খুযায়মা হা/৩০৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮৫,২৭২৯; ইরওয়া হা/৬৮৬)। তবে শিশু সন্তান পিতা-মাতার সাথে হজ্জ করলে সে এবং তার পিতা-মাতা নেকী পাবে। জনৈক মহিলা স্বীয় শিশু সন্তানের হজ্জ কবুল হবে কি না জিজ্ঞেস করলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তার হজ্জ হয়ে যাবে এবং এজন্য তুমিও নেকী পাবে’ (মুসলিম হা/১৩৩৬; মিশকাত হা/২৫১০)। আর পিতা-মাতা সন্তান কোলে নিয়ে ত্বাওয়াফ-সাঈ করলে তা সন্তানের জন্য যথেষ্ট হবে, পৃথকভাবে করার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন (৩৪/৪৭৪) : ইহরাম অবস্থায় অধিক হাটহাটির ফলে দুই উরুতে ক্ষতের সৃষ্টি হ’লে তাতে ক্রিম ব্যবহার করা যাবে কি? -আব্দুর রহমান, সুরিটোলা, ঢাকা।
উত্তর : চিকিৎসার জন্য উক্ত ক্রিম ব্যবহার করা যাবে, যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এর দ্বারা সুগন্ধি ব্যবহার করা উদ্দেশ্য নয়। আর ইহরাম অবস্থায় অসুস্থ হ’লে যেকোন বৈধ পন্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে বাধা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/১৫৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/১৫৮)।
প্রশ্ন (৩৫/৪৭৫) : মুসলিম শিক্ষক স্কুলে হিন্দু ধর্ম পড়াতে পারবে কি?
-যহীরুল ইসলাম, ধানমন্ডি, ঢাকা।
উত্তর : মুসলিম শিক্ষক কেবল ইসলাম ধর্ম পড়াবে, অন্য কোন ধর্ম নয়। কর্তৃপক্ষেরও উচিৎ হবে না কোন মুসলিম শিক্ষককে এমন নির্দেশ দেয়া। বিকল্প শিক্ষক না থাকলে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ দায়িত্বে পাঠ করে নেবে।
প্রশ্ন (৩৬/৪৭৬) : ব্যবসায় রিযিকের ১০ ভাগের ৯ ভাগ রয়েছে মর্মে প্রচলিত হাদীছটির সত্যতা আছে কি? -আব্দুল হান্নান মিয়াঁ, ইন্দিরা রোড, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত হাদীছ যঈফ (আলবানী, যঈফাহ হা/৩৪০২; যঈফুল জামে‘ হা/২৪৩৪)। বিভিন্ন হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হ’লেও এই হাদীছের কোন সনদই ছহীহ নয় (তারীখু ইবনু মাঈন হা/৩০৮৯; ইবনু হাজার, আল-মাতালিবুল আলিয়া হা/১৪৭৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪০২)। তবে ব্যবসায়ের মধ্যে বরকত আছে যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে (তিরমিযী হা/১২০৯; মিশকাত হা/২৭৯৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৭৮২)। তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হ’ল, যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়’ (আহমাদ হা/১৭৩০৪; মিশকাত হা/২৭৮৩; ছহীহাহ হা/৬০৭)।
প্রশ্ন (৩৭/৪৭৭) : পড়াশোনার প্রয়োজনে তথা ভূমি গবেষণার জন্য আমাদেরকে রাতের পর রাত গভীর জঙ্গলে ছেলে-মেয়ে একত্রে কাটাতে হয়, অধ্যয়ন করতে হয়। একে অপরকে সাহায্য করতে হয়। কোন মেয়ে অসুস্থ হ’লে কয়েকজন পালাক্রমে তাকে বহন করে চলতে হয়। এর ফলে কি আমাদেরকে গুনাহগার হ’তে হবে?
-শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাছিরুদ্দীন,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
উত্তর : এই ধরনের পরিস্থিতি বর্তমান মুসলিম দেশগুলোতে অতীব দুঃখজনক এক বাস্তবতা। ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক শিক্ষা পরিবেশ প্রদান না করে কর্তৃপক্ষ এমন ভয়ংকরভাবে তাদেরকে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ব্যবস্থা করছে। নিঃসন্দেহে এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যেকেই গুনাহগার হবেন। কেননা এমন পরিস্থিতিতে নারী ও পুরুষ কারো পক্ষে যথাযথ ইসলামী পর্দা মেনে চলা সম্ভব নয়। অতএব এমন পর্দাহীন ও প্রতিনিয়ত গুনাহে লিপ্ত হওয়ার পরিবেশে গবেষণা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) : ইমাম ছাহেব অসুস্থ হওয়ার কারণে বসে ছালাত আদায় করতে পারবেন কি? যদি পারেন তবে মুছল্লীরাও কি বসে ছালাত আদায় করবেন?
-আব্দুল্লাহিল কাফী, মহিষবাথান, রাজশাহী।
উত্তর : অসুস্থ অবস্থায় ইমাম বসে ছালাতে ইমামতি করতে পারবেন। তবে দাঁড়িয়ে ইমামতি করার মত অন্য কেউ থাকলে তাকে ইমামতি করতে দেওয়া উত্তম (নববী, আল মাজমূ‘ ৪/২৬৪; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/১৬২)। এক্ষণে ইমাম বসে ছালাত শুরু করলে মুছাল্লীরাও বসে ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন ইমাম বসে ছালাত আদায় করেন, তখন তোমরা সকলেই বসে ছালাত আদায় কর (বুখারী হা/৬৮৯; মুসলিম হা/৪১১-১৩; মিশকাত হা/১১৩৯)। আর ইমাম দাঁড়িয়ে ছালাত শুরু করার পর যদি অসুস্থ হয়ে বসে ছালাত আদায় করেন, তবে মুছাল্লীরা বাকী ছালাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) অসুস্থ অবস্থায় জামা‘আতে অংশগ্রহণ করেন। যখন আবুবকর (রাঃ) ইমামতি করছিলেন। এসময় রাসূল (ছাঃ) আবুবকরের বামে বসে ইমামতি করছিলেন। আর আবুবকর দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে অনুসরণ করছিলেন। আর ছাহাবীগণ আবুবকরকে অনুসরণ করছিলেন (বুখারী হা/৬৬৪; মুসলিম হা/৪১৮; মিশকাত হা/১১৪০)।
প্রশ্ন (৩৯/৪৭৯) : শরী‘আতে একজন পুরুষের জন্য কতটুকু পরিমাণ স্বর্ণ ব্যবহার করা জায়েয? -শামীম, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
উত্তর : পুরুষের জন্য সকল প্রকার স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় আমার উম্মতের নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৯৫; আবুদাঊদ হা/৪০৫৭; মিশকাত হা/৪৩৯৪)। এক্ষণে কারো যদি নাক কেটে যায় বা দাঁত ভেঙ্গে যায় আর তা মেরামতের জন্য স্বর্ণের বিকল্প কিছু না থাকে তাহ’লে এক্ষেত্রে পুরুষেরা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে (তিরমিযী হা/১৭৭০; মিশকাত হা/৪৪০০; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩১২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৪/৫৬)।
প্রশ্ন (৪০/৪৮০) : অবহেলাবশত ছালাত পরিত্যাগকারী মৃত পিতার জন্য দো‘আ করা সন্তানের জন্য জায়েয হবে কি? -আব্দুল হান্নান,সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : যদি ছালাত অস্বীকারকারী না হয়, তবে অলসতা ও অজ্ঞতাবশে ছালাত পরিত্যাগকারী পিতার জন্য দো‘আ করা যাবে এবং সন্তানের দো‘আয় পিতা উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১২৪/১১৬)। আর সন্তানের দো‘আ পিতা-মাতার উপকারে আসে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবল ৩টি আমল ব্যতীত (১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ বা প্রবাহমান দান (২) এমন ইলম, যার দ্বারা জনগণের কল্যাণ সাধিত হয় এবং (৩) সুসন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। এ অবস্থা দেখে সে (নেক বান্দা) বলবে, হে আমার রব! আমার এ মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি হ’ল? তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্য মাগফিরাত কামনা করার কারণে (ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০; মিশকাত হা/২৩৫৪; ছহীহাহ হা/১৫৯৮)।

অক্টোবর/২০১৮

প্রশ্ন (১/১) : ব্যবসায় রিযিকের ১০ ভাগের ৯ ভাগ রয়েছে মর্মে প্রচলিত হাদীছটির সত্যতা আছে কি? -হান্নান মিয়া,ইন্দিরা রোড, ঢাকা।
উত্তর : হাদীছটি যঈফ (আলবানী, যঈফাহ হা/৩৪০২; যঈফুল জামে‘ হা/২৪৩৪)। তবে ব্যবসার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হ’ল, যা মানুষ নিজ হাতে করে এবং সৎ (প্রতারণা ও খেয়ানতমুক্ত) ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়’ (আহমাদ হা/১৭৩০৪; মিশকাত হা/২৭৮৩; ছহীহাহ হা/৬০৭)। এছাড়া সৎ ব্যবসায়ীর মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী ক্বিয়ামতের দিন নবী, ছিদ্দীক ও শহীদগণের সঙ্গে থাকবে’ (তিরমিযী হা/১২০৯; মিশকাত হা/২৭৯৬; ছহীহুত তারগীব হা/১৭৮২)।
প্রশ্ন (২/২) : প্রাপ্তবয়স্ক জনৈক ছেলের নিজস্ব কোন আয় নেই। পিতার উপার্জনের বড় অংশ হারাম পদ্ধতিতে অর্জিত। এক্ষণে উক্ত ছেলের জন্য পিতার সম্পদ গ্রহণ করা জায়েয হবে কি? -আব্দুন নূর শামীম, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ। তবে উক্ত সম্পদ মৌলিকভাবে হারাম হ’লে তা সন্তানের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও ঘুষ ইত্যাদির টাকা (উছায়মীন, আল-ক্বাওলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ ২/৩৫২)।
প্রশ্ন (৩/৩) : সূদী অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত জনৈক ব্যক্তির জমি ফসল ভাগাভাগির চুক্তিতে লিজ নেওয়া যাবে কি? -কাওছার মাহমূদ, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে। কেননা এখানে লিজ গ্রহীতা মালিক নয়। আর আল্লাহ বলেন, ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না’ (নাজম ৫৩/৫৫; আন‘আম ৬/১৬৪)।
প্রশ্ন (৪/৪) : আমাদের ৩০ বছর পূর্বের সংস্কারহীন জরাজীর্ণ মসজিদটি ভেঙ্গে বহুতল বিশিষ্ট মসজিদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন ঐ মসজিদের নীচ তলায় মার্কেট ও উপর তলায় মসজিদ করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? -মুহাম্মাদ যাকির হোসাইন, রাজবাড়ী।
উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। ওমর (রাঃ)-এর যুগে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)। একদা মসজিদ হ’তে বায়তুল মাল চুরি হ’লে সে ঘটনা ওমর (রাঃ)- কে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বের স্থানটি খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয় (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৮৯৪৯; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১০৬৫৪; হায়ছামী বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/২১৬-২১৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৪/২৯০ পৃঃ)।

প্রশ্ন (৫/৫) : সিজদারত অবস্থায় দুই পায়ের আঙ্গুল কি অবস্থায় রাখতে হবে?
-তানযীলুর রহমান, ঝিকাতলা, ঢাকা।
উত্তর : এসময় দুই পা খাড়া ও আঙ্গুলগুলি সাধ্যমত কেবলামুখী থাকবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৩, ‘সিজদা ও সিজদার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৪০ পৃঃ, হা/৮৩২; ইবনু হিববান হা/১৯৩৩; মির‘আত ৩/২০৪)।
প্রশ্ন (৬/৬) : আমার কাছে অনেক গল্প-উপন্যাসের বই আছে, শরী‘আত মোতাবেক যা পাঠ করা হারাম। এক্ষণে তা বিক্রি করে টাকা নেওয়া যাবে কি? -ছাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা।
উত্তর : এগুলি পুড়িয়ে বা মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। যাতে অন্য কেউ তা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জিনিস হারাম করেন তখন তার মূল্য গ্রহণও হারাম করেন’ (আহমাদ হা/২৬৭৮; ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮, সনদ ছহীহ)। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ইহূদীদের ধ্বংস করুন। আল্লাহ যখন তাদের জন্য মৃতের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে’ (বুখারী হা/২২৩৬; মুসলিম হা/১৫৮১; মিশকাত হা/২৭৬৬)।
প্রশ্ন (৭/৭) : রাসূল (ছাঃ) থেকে নির্দেশনা না থাকলেও অনেক সময় কোন ছাহাবী কোন আমল করেছেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তার ফযীলত বর্ণনা করেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন। যেমন প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ইখলাছ পাঠ করা, রববানা লাকাল হামদ-এর পর হামদান কাছীরান... ইত্যাদি। একইভাবে নেকীর আশায় ফরয ছালাতের পর হাত তুলে মুনাজাত করায় বাধা কোথায়? -মনযূর হোসাইন, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : বাধা হ’ল এই যে, কাজটি রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় করা হয়নি বা তিনি সমর্থনও করেননি। এ ব্যাপারে রাসূলের নির্দেশনা বা অনুমোদন না থাকাটাই তা বিদ‘আত হওয়ার বড় প্রমাণ। মালেক বিন আনাস (রহঃ) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীদের সময়ে যেসব বিষয় ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত ছিল না, বর্তমানকালেও তা ‘দ্বীন’ হিসাবে গৃহীত হবে না (শাত্বেবী, আল-ই‘তিছাম ১/৫৩৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যারা আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু প্রবর্তন করবে, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী হা/২৬৯৭; মিশকাত হা/১৪০)। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে যা ছিল না তা বর্তমান যুগেও আমলযোগ্য নয়, যদিও তা বাহ্যিকভাবে নেক আমল মনে হয়।
প্রশ্ন (৮/৮) : সমাজে দেখা যায়, খুশীর সংবাদে অনেকেই মিষ্টি বিতরণ করে। এটা জায়েয হবে কি? -শরীফ আহমাদ, এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : যেকোন খুশীর সংবাদে মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করায় কোন দোষ নেই (উছায়মীন, আল-ফাতাওয়াছ ছুলাছিয়া ১/৫৬)। এছাড়া খুশীর কারণে শুকরিয়া স্বরূপ আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বা করার একাধিক ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায়। কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) স্বীয় তওবা কবুলের সংবাদ পেয়ে সিজদা করেছিলেন ও তাঁর সম্পদসমূহ আল্লাহর রাস্তায় রাসূল (ছাঃ)-এর খেদমতে পেশ করেছিলেন (বুখারী হা/৪৪১৮; মুসলিম হা/২৭৬৯)। তবে খুশী প্রকাশের নামে অপচয় করা যাবে না।
প্রশ্ন (৯/৯) : রামাযান ব্যতীত অন্য সময়ে বিতর ছালাত জামা‘আতে আদায় করা যাবে কি?
-মাসঊদ রাণা, রাজশাহী।
উত্তর : যেকোন মাসে বিতর ছালাত জামা‘আতে আদায় করা যায়। কারণ এটি নফল ছালাত। আর ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) নফল ছালাত রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে জামা‘আতে আদায় করেছেন। তাছাড়া সালমান ও আবুদ্দারদা (রাঃ) জামা‘আতে নফল ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী হা/৬৮, ১১৭; মুসলিম হা/৭৬৯, ৭৭২, ৭৭৩)। তবে নিয়মিত করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবীগণ কেউ এরূপ আমল নিয়মিত করেননি (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১/১৭৪)।
প্রশ্ন (১০/১০) : আমরা জানি যে, পিতার অনুমতি ছাড়া নারীদের বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। এক্ষণে মুওয়াত্ত্বা মালিকের (হা/২০৪০) একটি হাদীছ হ’তে জানা যায় যে, আয়েশা (রাঃ) তাঁর আপন ভাইয়ের মেয়ে হাফছাকে পিতার অনুমতি ছাড়াই নিজ দায়িত্বে বিবাহ দিয়েছেন। মেয়ের পিতা সেসময় সিরিয়া সফরে থাকায় তিনি বিষয়টি পরে জানতে পারেন। এক্ষণে সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাধিত করবেন।
-হাফীযুর রহমান, খিলগাঁও, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত আছারটি ছহীহ। কিন্তু এর ব্যাখ্যা ভুল হয়েছে। আছারটির দু’টি অর্থ হ’তে পারে। ১. আয়েশা (রাঃ) উক্ত বিবাহে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সর্বাধিক পরিচিত ও নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে বর্ণনাকারী ওলী হওয়ার বিষয়টি তাঁর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। ঈসা বিন দীনার বলেন, মদীনায় এমন কোন প্রচলন ছিল না। কেননা ইমাম মালেক ও মদীনার ফকীহগণ নারী কর্তৃক বিবাহ সম্পাদনকে বৈধ মনে করতেন না। এরূপ বিবাহ হ’লে বাসরের পূর্বেই বা পরে হ’লেও ভেঙ্গে দেওয়া হ’ত। ২. আয়েশা (রাঃ) বিবাহের মোহর ও দিনক্ষণ ধার্য করে দিয়েছিলেন। অতঃপর বিবাহের সময় তার একজন নিকটাত্মীয়কে ওলী বানিয়ে বলেন, তোমরা বিবাহ সম্পন্ন কর। কারণ নারী কারো বিবাহে ওলী হ’তে পারে না। আর এ প্রথা ছাহাবীগণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল যে, নারী নিজে বিবাহ করতে পারে না এবং অন্যের বিবাহ দিতে পারে না (আল-মুনতাক্বা শারহুল মুওয়াত্ত্বা ৪/২৪)। উক্ত আছারের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, বিবাহ দিয়ে দেওয়ার অর্থ হ’ল- বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া, মোহর নির্ধারণ করা এবং তাতে সম্মত হওয়া। এর অর্থ বিবাহে ওলী হওয়া নয়। এরপর তিনি নিম্নের আছারটি বর্ণনা করেন (আল-ইস্তিযকার ৬/৩২)।-
ইবনু জুরাইজ বলেন, আয়েশা (রাঃ) যখন তার গোত্রের কোন মেয়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছা করতেন, তখন তাদের একদল লোককে ডেকে আলোচনা করতেন। যখন বিবাহ ঠিক হয়ে যেত তখন তাদের একজনকে বলতেন, হে অমুক! তার বিবাহ দিয়ে দাও। কারণ নারীরা কারো বিবাহ দিতে পারে না (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১০৪৯৯; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৫৯৫৯ ফাৎহুল বারী ৯/১৮৬-৯০, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (১১/১১) : একটি হাদীছে (আবূদাঊদ হা/৫৬০) এসেছে যে, কেউ খোলা মাঠে ছালাত আদায় করলে ৫০ গুণ নেকী পাবে। উক্ত ছালাত বলতে কোন ছালাতকে বুঝানো হয়েছে। এছাড়া একাকী পড়লেও কি উক্ত নেকী অর্জিত হবে?
-কামরুল হাসান, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত ছালাত বলতে খোলা মাঠে মুসাফিরের ছালাতকে বুঝানো হয়েছে। আর অতিরিক্ত ফযীলতের কারণ হ’ল এই যে, মুসাফির অধিক ক্লান্তি ও অবসাদ থাকা সত্ত্বেও রুকূ ও সিজদা সুন্দর ও পূর্ণভাবে আদায় করায় আল্লাহ তাকে ৫০ গুণ বেশী পুরস্কার দিবেন। এক্ষণে একাকী ছালাত আদায় করলেও এই বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ হাদীছে জামা‘আত বা একাকী হওয়ার উল্লেখ করা হয়নি (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৩/১৫৫)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে খোলা মাঠে একাকী ইক্বামত দিয়ে ছালাত আদায় করবে তার সাথে দু’জন ফেরেশতা অংশগ্রহণ করবে। আর যে আযান ও ইক্বামত দিয়ে ছালাত আদায় করবে সাথে আল্লাহর অসংখ্য ফেরেশতা যোগদান করবে (মু‘জামুল কাবীর হা/৬১২০; ছহীহুত তারগীব হা/২৪৯, ৪১৪)। স্মর্তব্য যে, জামা‘আতে ছালাতের ফযীলত সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য। তাই উক্ত ফযীলত লাভের আশায় জামা‘আত ছেড়ে খোলা ময়দানে ছালাত আদায় করতে যাওয়া নিতান্তই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় (ফয়যুল বারী শারহু ছহীহিল বুখারী ২/২০৯)।
প্রশ্ন (১২/১২) : গণকের নিকটে প্রশ্ন করলে ৪০ দিনের ছালাত কবুল হয় না। এক্ষণে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, তা পাঠ করলে কি উক্ত বিধান প্রযোজ্য হবে? আর কেউ গণকের নিকটে ভবিষ্যৎ জেনে পরে ভুল বুঝতে পারলে তাকে ৪০ দিনের ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি? -মাসঊদ, রাজবাড়ী।
উত্তর : বিশ্বাস নিয়ে এসকল বানোয়াট রাশিফল পাঠ করলে কেবল উক্ত বিধানই নয়, বরং তা কুফরী হিসাবে গণ্য হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, ঐ ব্যক্তি মুহাম্মাদ-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার সাথে কুফরী করল’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৫৯৯, সনদ ছহীহ)। এক্ষণে তওবা করার পর চল্লিশ দিনের ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ তওবা পূর্বের পাপকে মিটিয়ে দেয় (যুমার ৩৯/৫৩; ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)।
প্রশ্ন (১৩/১৩) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, ছালাতের শেষ বৈঠকে আল্লাহর নাম আসলে আঙ্গুল উঠাতে হবে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নাম আসলে আঙ্গুল নামাতে হবে। একথার সত্যতা আছে কি?
-ফারূক হোসাইন, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। বরং তাশাহহুদে বসার পর থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত আঙ্গুল নাড়াতে থাকবে। এসময়ে দৃষ্টি আঙ্গুলের দিকে থাকবে (আবুদাউদ হা/৯৮৮, ৯৯০; নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২, ৯১৭)।
প্রশ্ন (১৪/১৪) : চিকিৎসার মাধ্যমে উঁচু দাঁত সমান করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : দাঁতের দোষ-ত্রুটি দূর করার জন্য এমন কাজ করা যাবে। তবে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য করা যাবে না। ইবনু মাসউদ (রাঃ)  বলেন, আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হোক সেসব নারীদের উপর... যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত কেটে সরু করে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে’ (বুখারী হা/৪৮৮৬; মুসলিম হা/২১২৫; মিশকাত হা/৪৪৩১)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীছে সৌন্দর্যের জন্য দাঁতে কিছু করা হারাম হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত রয়েছে। তবে কেউ ত্রুটি দূরীকরণের জন্য বা চিকিৎসার প্রয়োজনে এরূপ করলে কোন দোষ নেই (নববী, শরহ মুসলিম ১৪/১০৭, ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা, মিরক্বাত হা/৪৪৩১; উছায়মীন, মাজমূঊল ফাতাওয়া ১৭/০৭)।
প্রশ্ন (১৫/১৫) : আমি সরকারী চাকুরীজীবি। আমাদের অফিস থেকে মসজিদ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান ইত্যাদির ধর্মীয় অবকাঠামো নির্মাণ করার নির্দেশনা ও ব্যয়ভার বহন করতে হয়। যার জন্য আমাকে ফাইলে স্বাক্ষর করতে হয়। এক্ষেত্রে আমি গোনাহগার হব কি?
-শফীকুল ইসলাম, ঢাকা।
উত্তর : গুনাহগার হ’তে হবে। কারণ মন্দির ও শ্মশান নির্মাণে সহযোগিতা করার অর্থই হ’ল শিরকী কাজে সহযোগিতা করা, যা হারাম (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৪/৪৮২)। ওমর (রাঃ) সিরিয়ার খৃষ্টানদের সাথে সন্ধি করার সময় শর্তারোপ করেছিলেন যে, সেখানে গির্জা বা মন্দির নির্মাণ করা যাবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/৬৫২; জামেঊর রাসায়েল ১/১০৪; ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুসতাক্বীম ১/১৯৯)। ছালেহ আল-ফাওযান বলেন, গির্জা-মন্দির ও অনুরূপ শিরকপূর্ণ ও গায়রুল্লাহর ইবাদত করা হয় এমন স্থানে কাজ করা মুসলমানের জন্য জায়েয নয়। কেননা এতে বাতিলকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তাদের সহযোগিতা করা হয় (আল-মুনতাকা ৫/৪০)&। এছাড়াও ইমাম শাফেঈ, ইবনু তায়মিয়াহ ও ইবনু কুদামা (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বানগণ এসব স্থানে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়াকে হারাম বলেছেন (কিতাবুল উম্ম ৪/২২৫; সুবকী ২/৩৬৯)। অতএব এমন চাকুরী পরিত্যাগ করতে হবে।

প্রশ্ন (১৬/১৬) : হাই কমোডে বসে পেশাব-পায়খানা করা জায়েয হবে কি? -মীযান, মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : হাই কমোড ব্যবহার করায় বাধা নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কাপড়ে অপবিত্রতা না লাগে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩৮)।
প্রশ্ন (১৭/১৭) : জুম‘আর দিন ফজরের পর থেকে জুম‘আর ছালাতের পূর্ব পর্যন্ত মসজিদের ভিতরে কোন ইসলামী আলোচনা বৈঠক করা যাবে কি? -আলে-ইমরান, গ্রীণ ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী।
উত্তর : ইসলামী আলোচনা বৈঠকসহ যে কোন বৈধ আলোচনায় কোন বাধা নেই। তবে তা জুম‘আর ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে সাধারণ মুছল্লীদের প্রবেশের পূর্বেই শেষ করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিন ছালাতের পূর্বে মসজিদে খুৎবা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে একত্রিত হ’তে নিষেধ করেছেন (আবূদাঊদ হা/১০৭৯; মিশকাত হা/৭৩২, সনদ হাসান)। খাত্ত্বাবী বলেন, জুম‘আর দিনে ইলম ও পারস্পরিক আলোচনাকে অপসন্দনীয় বলা হয়েছে। আর নফল ছালাত ও খুৎবা শ্রবণের জন্য চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (আওনুল মা‘বূদ ৩/২৯৪)।
প্রশ্ন (১৮/১৮) : কুরআন মজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে কুরআনের ওযনে ফকীর-মিসকীনকে চাউল দিতে হবে। একথার সত্যতা আছে কি? -তারেক, দূর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : এ কথার কোন ভিত্তি নেই। তবে কুরআন সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র গ্রন্থ (বুরূজ ২২)। অনিচ্ছাকৃতভাবে কুরআন পড়ে গেলে কিংবা পা লাগলে ভীতি ও শ্রদ্ধার সাথে তওবার মন নিয়ে ‘ইন্নালিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজে‘উন’ পাঠ করবে (বাক্বারাহ ২/১৫৬; উম্মে সালামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৬১৮ ‘জানায়েয’ অধ্যায়)। কুরআনের মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে সর্বদা সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে এবং কোনভাবেই যেন এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শত্রুভূমিতে কুরআন নিয়ে সফর করতেও নিষেধ করেছেন (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২১৯৭, ‘কুরআন পাঠের আদব’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (১৯/১৯) : জনৈক ব্যক্তির দু’জন স্ত্রী ছিল। এক্ষণে প্রথমা স্ত্রীর ছেলের সাথে দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাতনীর বিয়ে দেওয়া যাবে কি?-শহীদুল ইসলাম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর: এরূপ বিবাহ জায়েয হবে না। কারণ এ অবস্থায় আপন ভাগ্নীকে বিবাহ করা হবে, যা শরী‘আতে হারাম। তবে দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাতনী যদি পূর্বের স্বামীর সন্তানের ছেলে বা মেয়ে হয়, তাহ’লে এরূপ বিবাহ জায়েয (ইবনু কুদামা, মুগনী ৭/১২৮)।
প্রশ্ন (২০/২০) : জনৈক আলেম বলেন, আল্লাহ নিরাকার নন তা যেমন বলা যাবে না, তেমনি তাঁর আকার আছে একথাও বলা যাবে না। একথার সত্যতা আছে কি?
-মুখতারুল ইসলাম, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : আল্লাহ নিরাকার সত্তা নন। বরং তাঁর নিজস্ব আকার রয়েছে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা। এতে কোন কল্পিত ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ নেই। কেননা কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদীছে আল্লাহর হাত, পা, চেহারা তথা আকার-আকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তা সৃষ্টিজগতের কোন কিছুর সাথে তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ১১)।
প্রশ্ন (২১/২১) : হজ্জে তামাত্তু ও ক্বিরান পালনকারীগণ একই পরিবারের হ’লে সকলের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা দুম্বা কুরবানী দিলে যথেষ্ট হবে, না মাথাপ্রতি পৃথকভাবে দিতে হবে?
-আবুল হুসাইন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : হজ্জে তামাত্তু ও ক্বিরান পালনকারীগণ একই পরিবারভুক্ত হ’লেও প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথকভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ওমরাহর সাথে হজ্জ পালন করতে চাও, সে যা সহজলভ্য তাই কুরবানী করবে। তবে কেউ যদি কুরবানী না পায়, সে হজ্জের দিনগুলির মধ্যে তিনটি এবং বাড়ীতে ফিরে সাতটি ছিয়াম পালন করবে। এভাবে দশটি (ছিয়াম) পূর্ণ হবে’ (বাক্বারাহ ২/১৯৬)।
প্রশ্ন (২২/২২) : উপহার সামগ্রী বিক্রয় বা অন্যকে উপহার হিসাবে দেওয়া যাবে কি?
-জাহিদ হাসান মা‘ছূম, রহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : কারো নিকট থেকে পাওয়া উপহার সামগ্রী বিক্রয় করা যাবে এবং সেটি অন্যকে উপহার হিসাবেও দেওয়া যাবে। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, দুমা নিবাসী উকায়দির নবী করীম (ছাঃ)-কে একটি রেশমী কাপড় উপঢৌকন দিলে তিনি সেটি আলী (রাঃ)-কে দিয়ে বললেন, তুমি এটি ফেড়ে ফাতিমাদের মধ্যে ভাগ করে দাও। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মহিলাদের মধ্যে ভাগ করে দাও (বুখারী হা/২৪৭২; মুসলিম হা/২০৭১)। ওমর (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ) একটি জুববা উপহার দিয়েছিলেন। তিনি সেটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৯০৬; মুসলিম হা/২০৬৮)।
প্রশ্ন (২৩/২৩) : বিতর ছালাত আদায়কারীর সাথে কোন মুছল্লী ফরয ছালাতের নিয়তে জামা‘আতে দাঁড়ালে তার ছালাত হবে কি? -যাকির মোললা, দক্ষিণ বরগুনা, বরগুনা।
উত্তর : এরূপ অবস্থায় তথা নফল ছালাত আদায়কারীর পিছনে ফরয ছালাত আদায়কারীর ছালাত আদায় হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিতর আদায়কারীর জন্য তা বিতর হিসাবে গণ্য হবে আর ফরয আদায়কারীর জন্য ফরয হিসাবে গণ্য হবে। আর ইমাম যতক্ষণ ছালাতে থাকবে মুছল্লী তার অনুসরণ করবে। এরপর নিজে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/৫৭৫৫; মুসলিম হা/৪৬৫; নববী, শারহু মুসলিম ৪১/১৮১; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/২৫৮; আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৩০৪)।
প্রশ্ন (২৪/২৪) : রাসূল (ছাঃ) হজ্জের সময় জাবালে রহমতে খুৎবা প্রদান করেছিলেন। অথচ বর্তমানে মসজিদে নামিরায় কেন খুৎবা দেওয়া হচ্ছে?
-আসমাউল আলম, হরিমোহন সরকারী স্কুল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : জাবালে রহমত ও মসজিদে নামিরা উভয়টি আরাফার অন্তর্ভুক্ত। আর আরাফার যেকোন স্থানে খুৎবা দেওয়ায় কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি এখানে কুরবানী করছি এবং মিনার গোটা এলাকা কুরবানীর স্থান। অতএব তোমরা যার যার অবস্থানে কুরবানী কর। আর আমি এখানে অবস্থান করছি এবং গোটা আরাফাতই অবস্থানস্থল। মুযদালিফার সবই অবস্থানস্থল এবং আমি এখানে অবস্থান করছি (মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৯৩)। রাসূল (ছাঃ) সম্ভবত উঁচু স্থান হওয়ায় জাবালে রহমত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিয়েছিলেন। আর মসজিদে নামিরাহ সর্বপ্রথম নির্মিত হয় প্রথম হিজরী শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। এর অবস্থান আরাফা ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে আরাফাহ ও মুযদালিফার মধ্যবর্তী স্থানে। রাসূল (ছাঃ) মিনা থেকে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে এই নামিরা উপত্যাকায় অবতরণ করেন। বর্তমানে হজ্জের সময় প্রায় চার লক্ষ মুছল্লী এই মসজিদে যোহর ও আছরের ছালাত জমা‘ ও কছর সহকারে আদায় করে থাকেন। এটি মসজিদে আরাফাহ, মসজিদে ইবরাহীম খলীল প্রভৃতি নামেও পরিচিত। উল্লেখ্য যে, জাবালে রহমত আরাফাহ ময়দানের বিশেষ কোন ইবাদত স্থান নয়। কেউ যদি জাবালে রহমতে ইবাদত মনে করে আরোহণ করে, তবে তা সুস্পষ্ট বিদ‘আত হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/২০৬-২০৮; উছায়মীন, মাজমূ ফাতাওয়া ২৩/৩২)।
প্রশ্ন (২৫/২৫) : ফজরের ছালাতের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলে মিলে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করা কি শরী‘আত সম্মত? -আব্দুল লতীফ, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ হওয়ায় আমলযোগ্য নয় (তিরমিযী হা/২৯২২; মিশকাত হা/২১৫৭; যঈফুত তারগীব হা/৩৭৯)। এর সনদে খালিদ বিন ত্বাহমান নামে একজন শী‘আ রাবী রয়েছে (তাকরীবুত তাহযীব ১৬৪৯, ১/২৫৯)। উল্লেখ্য যে, ঘুমানোর পূর্বে সূরা হাশর পাঠের বিশেষ ফযীলত ও শেষ ছয় আয়াতকে ইসমে আযম বলে যে বর্ণনাগুলো রয়েছে তার সবগুলো জাল ও যঈফ (যঈফাহ হা/২৭৭৩, ২২১৭; যঈফুল জামে‘ হা/৩০৭)।
প্রশ্ন (২৬/২৬) : হজ্জব্রত পালনকালে কিছু কিছু মু‘আল্লিম হাজীদের নিকট থেকে কুরবানীর জন্য অর্থ গ্রহণ করেন কিন্তু কুরবানী করেন না। হজ্জপালন শেষে তা জানতে পারলে উক্ত হাজীদের করণীয় কি? -মুজাহিদ, খুলনা।
উত্তর : এমতাবস্থায় হজ্জ আদায় হয়ে যাবে এবং এর জন্য কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না। কেননা কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না (নাজম ৩৮)। তবে অভিযুক্ত মু‘আল্লিমগণ কঠিন গুনাহের ভাগিদার হবেন। এটা একদিকে যেমন প্রতারণা, অন্যদিকে হজ্জের একটি ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন। যার গুনাহ পুরোপুরি মু‘আল্লিমদের উপর বর্তাবে। উল্লেখ্য যে, বর্তমান সময়ে এরূপ প্রতারণা থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায় হ’ল, সরকারী বুথে কুরবানীর জন্য রসিদ নিয়ে নির্ধারিত ফী জমা দেওয়া।
প্রশ্ন (২৮/২৮) : জনৈক মহিলার প্রথম স্বামী একটি পুত্র সন্তান রেখে মারা যান। তার দ্বিতীয় স্বামীর পূর্বের স্ত্রীর গর্ভজাত একটি মেয়ে আছে। এক্ষণে এই দুই ছেলে মেয়ের বিবাহ জায়েয হবে কি? -ইবাতারুল ইসলাম, গাংনী, মেহেরপুর।
উত্তর : এদের মধ্যে বিবাহ জায়েয। কুরআনে যে ১৪ জন মাহরাম নারীর কথা বলা হয়েছে এরা তাদের অর্ন্তভুক্ত নয় (নিসা ৪/২৩)। ইবনু কুদামা বলেন, পিতার স্ত্রীর অন্য স্বামীর কন্যারা হারাম নয়। পিতার কন্যারা এজন্য হারাম যে তারা পিতার ঔরসজাত। কিন্তু তাদের মেয়েদের হারাম হওয়ার কোন কারণ নেই। এর মধ্যে এমন কোন কারণও নেই যা তাদের কন্যাদের হারাম করে। ফলে এরা নিম্নের আয়াতের আওতাভুক্ত হবে, যেখানে আল্লাহ বলেন, ‘এদের ব্যতীত তোমাদের জন্য সকল নারী হালাল করা হয়েছে এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে মালের বিনিময়ে কামনা করবে বিবাহের উদ্দেশ্যে, ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে নয়’ (নিসা ৪/২৪; মুগনী ৭/১১৭)।
প্রশ্ন (২৯/২৯) : অসুস্থ অবস্থায় স্বপ্নদোষ হ’লে কাপড় ও শরীরে বীর্য লাগা অবস্থায় তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করা যাবে কি? -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত অবস্থায় গোসলের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৩১)। আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, ‘যাতুস সালাসিল’ যুদ্ধে শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। অসুস্থ হবার আশংকায় গোসল না করে তায়াম্মুম করে ফজরের ছালাতে ইমামতি করলাম। পরে সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এই ঘটনা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি কি অপবিত্রাবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে ছালাত আদায় করেছ? তখন আমি গোসল না করার কারণ ব্যাখ্যা করলাম এবং বললাম আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন কর না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসলেন এবং চুপ থাকলেন (আবুদাঊদ হা/৩৩৪, ‘ঠান্ডা লাগার ভয় থাকলে অপবিত্র ব্যক্তি কি করবে’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩০/৩০) : মসজিদে ২জন একসাথে প্রবেশ করে দেখি সামনের কাতারে ১জন দাঁড়ানোর জায়গা আছে। এমতাবস্থায় আমরা কাতার ফাঁকা রেখেই পেছনের কাতারে দাঁড়াবো কি? -মুহাম্মাদ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
উত্তর : এমতাবস্থায় সামনের কাতারে একজন এবং পিছনে একজন একাকী দাঁড়াবে। একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে ছালাত হবে না মর্মে যে হাদীছ রয়েছে (আবুদাউদ হা/৬৮২; তিরমিযী হা/২৩১; মিশকাত হা/১১০৫) তা তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন সামনের কাতার অপূর্ণ থাকবে। অতএব এরূপ অবস্থায় মুছল্লী কাতারে একাকী দাঁড়ালে তার ছালাত হয়ে যাবে। কিন্তু সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ একাকী পেছনের কাতারে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে তার ছালাত হবে না (ইরওয়া হা/৫৪১-এর আলোচনা দ্রঃ ২/৩২৯)।
প্রশ্ন (৩১/৩১) : আমাদের অফিসে হিন্দু বাবুর্চি রান্না করে। তাদের হাতের রান্না খাওয়া যাবে কি ? -মাজেদুল ইসলাম, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর : অমুসলিমের রান্না করা খাবার খাওয়ায় কোন বাধা নেই (বুখারী হা/৩৪৪; মুসলিম হা/২৪৯১; আবুদাউদ হা/৪৫১০; মিশকাত হা/৫৮৮৪, ৫৮৯৫, ৫৯৩১)। তবে তাদের যবহকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না (আন‘আম ৬/১২১)। এক্ষেত্রে কোন মুসলিম বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করে দিলে এবং তারা রান্না করলে তা খাওয়ায় বাধা নেই।
প্রশ্ন (৩২/৩২) : আমাদের সমাজে দোকানগুলিতে দোকান খোলার পর প্রথম বিক্রি বাকিতে করা হয় না এবং এসময় বিক্রিত মাল ফেরৎও নেওয়া হয় না। তাদের ধারণা হল এসময় বাকীতে বিক্রি করলে সারাদিন ব্যবসা মন্দা যাবে। এর কোন ভিত্তি আছে কি?
-হাসান, ধীরগঞ্জ, হরিপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : এটা ভিত্তিহীন কুসংস্কার মাত্র। বরং কারো প্রতি সহানুভুতি দেখিয়ে বাকীতে মাল দেওয়া নেকীর কাজ। কেননা এটা ঋণ প্রদানের ন্যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দানের নেকী ১০ গুণ। আর ঋণদানের নেকী ১৮ গুণ (বায়হাক্বী, ছহীহাহ হা/৩৪০৭)। এছাড়া পণ্য বিক্রয়ের পর চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন লজ্জিত ক্রেতার সাথে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করল, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দিবেন’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫০২৯)।
প্রশ্ন (৩৩/৩৩) : সূরা মুদাছছিরের ৬ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না’। এর ব্যাখ্যা কি? -আখতারুল ইসলাম, গাংনী, মেহেরপুর।
উত্তর : আয়াতটি রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে। মুফাস্সিরগণ এই আয়াতের বিভিন্ন তাফসীর করেছেন, যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, দুনিয়ায় বেশী পাওয়ার আশায় তুমি  দান করো না। মুজাহিদ বলেন, নিজের আমলকে তুমি এমনভাবে বড় করে দেখ না যে, তুমি অনেক ভাল কাজ করছ। কারও মতে, তুমি লোক দেখানোর জন্য কোন ভাল কাজ করো না (কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। নাছের সা‘দী বলেন, কোন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার পর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট তার প্রতিদান কামনা করো না (তাফসীর নাছের সা‘দী)।
প্রশ্ন (৩৪/৩৪) : এক ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয হয়েছে। আর তার আরেকজনকে হজ্জ করানোর সামর্থ্য রয়েছে। এক্ষণে সে প্রথমে স্ত্রীকে না মাকে হজ্জ করাবে?
-আহমাদুল্লাহ, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে মাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ যত ছাহাবী অন্যের পক্ষ থেকে হজ্জ করার ব্যাপারে অনুমতি চেয়েছেন তাদের অধিকাংশই মাতা-পিতার পক্ষ থেকে। যেমন বিগত যুগে পাহাড়ের গুহায় আটকে পড়া তিন যুবকের মধ্যে একজন এমন ছিলেন, যিনি ছাগলের দুধ দোহন করে এনে স্ত্রী ও সন্তানাদির উপরে মাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ফলে এই একটিমাত্র পূণ্যের কারণে আল্লাহ তাকে কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি দেন (বুখারী হা/২২৭২; মুসলিম হা/২৭৪৩; মিশকাত হা/৪৯৩৮)।
প্রশ্ন (৩৫/৩৫) : আক্দ হয়েছে মিলন হয়নি এমন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার মাকে বিবাহ করা যাবে কি?--নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নীলফামারী।
উত্তর : আক্দ হওয়ার অর্থই হ’ল বিবাহ হওয়া। সুতরাং মিলন হৌক বা না হৌক উক্ত স্ত্রীর মাকে কোন অবস্থায় বিবাহ করা যাবে না। কেননা বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীর মা স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী, দুধ-মা, দুধ-বোন, শ্বাশুড়ী, সহবাসকৃত স্ত্রীদের (অন্য স্বামীর) কন্যা’ (নিসা ৪/২৩)।
ওমর ফারূক (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (১৩-২৩ হি.) ইরাকের কূফায় খেলাফতের পক্ষ হ’তে রাষ্ট্রীয় শিক্ষক ও রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বশীল থাকা অবস্থায় দু’টি বিষয়ে তিনি স্বীয় রায় অনুযায়ী ফৎওয়া দেন। একটি হ’ল (ক) জনৈক ব্যক্তি বিয়ের পরে তার শ্বাশুড়ীকে দেখে মুগ্ধ হয় এবং শ্বাশুড়ীকে বিয়ে করার জন্য (মিলনের পূর্বেই) স্ত্রীকে তালাক দেয়। এই সিদ্ধ হবে কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘এতে আর দোষ কি (لاَ بَأْسَ) একথা শোনার পর লোকটি উক্ত মহিলাকে (পূর্বতন শ্বাশুড়ীকে) বিয়ে করে এবং কয়েকটি সন্তান লাভ করে’।
অতঃপর ইবনু মাসঊদ (রাঃ) মদীনায় এলে তিনি উক্ত বিষয়ে  ছাহাবায়ে কেরামের নিকট জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বিয়ে সিদ্ধ না হওয়ার কথা বললেন। তখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন এবং (কূফায়) ফিরে এসে উক্ত ব্যক্তিকে খোঁজ করলেন। কিন্তু না পেয়ে অবশেষে তার গোত্রের নিকটে গেলেন ও তাদেরকে ডেকে বললেন ‘আমি যে ব্যক্তিকে তার পূর্বতন শ্বাশুড়ী বিয়ে করার ফৎওয়া দিয়েছিলাম ঐ বিয়ে সিদ্ধ হয়নি’ (দ্রঃ থিসিস ১৩৯-৪০ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩৬/৩৬) : যেকোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে পরে মনে পড়লে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালুহু ওয়া আখিরুহু’ সর্বক্ষেত্রে বলা যাবে কি?
-ওয়াহীদুয্যামান, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : খাওয়ার সময় ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ বললেই যথেষ্ট হবে। কারণ খাওয়ার সময়ের ব্যাপারে স্পষ্ট হাদীছ এসেছে (আবুদাউদ হা/৩৭৬৭; মিশকাত হা/৪২০২; ছহীহুত তারগীব হা/২১০৭)। অতএব কেউ কোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তখনই শুধু  বিসমিল্লাহ কিংবা বিসমিল্লাহি আওয়ালুহু ওয়া আখিরুহু বলবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩৪৫)।
প্রশ্ন (৩৭/৩৭) : মেয়ের অভিভাবক অশিক্ষিত হওয়ায় ছেলে পক্ষের জনৈক ব্যক্তিকে উকীল বানিয়ে বিবাহ পড়ানো হয়েছে। উক্ত বিবাহ সঠিক হয়েছে কি?
-আব্দুস সালাম, ইসলামপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : মেয়ের পিতার পক্ষ থেকে উকীল নিযুক্ত করায় উক্ত বিবাহ সঠিক হয়েছে। মেয়ের পিতা যে কাউকে ওলী নিযুক্ত করে বিবাহ পড়ানোর ব্যবস্থা করলে তা জায়েয (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৩৭, ৯৩)। অতএব এজন্য দ্বিতীয়বার বিবাহ পড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে যে, ওলী নিকটাত্মীয়দের মধ্যে হওয়াটা সর্বোত্তম। উল্লেখ্য যে, ইসলামী শরী‘আতে ‘উকীল বাপ’ বলে কিছু নেই, যা বর্তমান সমাজে চালু রয়েছে।
প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : মিনায় অবস্থিত মসজিদে খায়ফের নামকরণের কারণ কি? এই মসজিদের বিশেষ কোন মর্যাদা আছে কি? -মীর কাসেম আলী, মুরাদপুর, ফেনী।
উত্তর : খায়েফ বলা হয় এমন স্থানকে যা পাহাড়ের ঢালু অংশে এবং পানির প্রবাহ থেকে উঁচুতে অবস্থিত (আন-নিহায়াতু ফী গারীবিল আছার ২/১৯৪)। মিনার দক্ষিণে ছোট জামরার নিকটে এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। উক্ত মসজিদের মর্যাদা হ’ল এখানে মূসা (আঃ) সহ ৭০ জন নবী-রাসূল ছালাত আদায় করেছিলেন। রাসূল (ছাঃ) মিনায় অবস্থান কালে এই মসজিদে ছালাত আদায় করতেন (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৪০৭; ছহীহাহ হা/২০২৩; ছহীহুত তারগীব হা/১১২৭)। বর্তমানে বৃহদাকারে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে এবং একসঙ্গে এখানে প্রায় ৪৫ হাযার মুছল্লী ছালাত আদায় করতে পারে।
প্রশ্ন (৩৯/৩৯) : আহলে ছহীহ হাদীছ বলা যাবে কি? কোন ইমাম কি এরূপ নাম ব্যবহার করেছেন? -রূহুল আমীন,  বোঁচাগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : ’আহলে ছহীহ হাদীছ’ নাম সালাফে ছালেহীন থেকে বর্ণিত হয়নি। তার কোন প্রয়োজনও নেই। কেননা আহলে হাদীছ তথা হাদীছের অনুসারী বলতে ছহীহ হাদীছের অনুসারীকেই বুঝানো হয়। তাছাড়া আহলেহাদীছ শব্দটি কুরআন ও হাদীছ উভয়কে শামিল করে।
প্রশ্ন (৪০/৪০) : গ্রামে গেলে বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ব্যক্তি মালিকানাধীন ফল আমরা খেয়ে থাকি। এটা কতটুকু জায়েয হবে? -সোহেল রানা, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : খোলা বাগানে বৃক্ষের নীচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে খাওয়া জায়েয। আর যদি বাগান প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকে তাহ’লে মালিক বা তার প্রতিনিধিকে ডেকে অনুমতি নিবে। মালিক না থাকলে ফল কুড়িয়ে বা পেড়ে খাওয়া যাবে। তবে ফল বেঁধে বাড়ি নেওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ কোন বাগানের কাছ দিয়ে গেলে সে ইচ্ছা করলে ফল খাবে, কিন্তু কাপড়ে বেঁধে নিয়ে যাবে না (ইবনু মাজাহ হা/২৩০১, তিরমিযী হা/১২৮৭; মিশকাত হা/ ২৯৫৪; ইরওয়া হা/২৫১৭)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি গবাদিপশুর পালের নিকট পৌঁছে তার রাখালকে উচ্চৈঃস্বরে তিনবার ডাক দিবে। সে তোমার ডাকে সাড়া দিলে তো ভালো, অন্যথায় তুমি তার দুধ পান কর, ক্ষতিসাধন না করে। আর তুমি কোন ফলের বাগানে পৌঁছে বাগানের মালিককে তিনবার ডাক দিবে। সে তোমার ডাকে সাড়া দিলে তো ভালো, অন্যথায় তুমি ক্ষতি না করে তা থেকে পেড়ে খাও (ইবনু মাজাহ হা/২৩০০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৪)। উল্লেখ্য যে, কোন এলাকায় গাছের নীচে পড়ে থাকা ফল বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যদি সাধারণ নিয়ম থাকে তাহ’লে তা বেঁধে নিয়ে যাওয়াতে দোষ নেই (ইবনু কুদামা, মুগনী ৯/৪১৭; নববী, আল মাজমূ ৯/৫৪; উছায়মীন, আশ শারহুল মুমতে‘ ৬/৩৩৯)।
গোবারা বংশের জনৈক ছাহাবী ক্ষুধার্ত অবস্থায় মদীনার এক বাগানে গিয়ে ফল ছিঁড়ে কিছু খান এবং কিছু কাপড়ে বেঁধে নেন। এ সময় বাগানের মালিক এসে তাকে প্রহার করে এবং তার কাপড় কেড়ে নেয়। অতঃপর তিনি বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) কে অবহিত করলে তিনি লোকটিকে বললেন, তুমি তাকে খেতে দাওনি যখন সে ক্ষুধার্ত। তুমি তাকে শিখিয়ে দাওনি যখন সে অজ্ঞ। তিনি তাকে কাপড় ফেরত দিতে বললেন এবং এক ওয়াসাক্ব (৬০ ছা‘) অথবা আধা ওয়াসাক্ব খাদ্য প্রদানের আদেশ দিলেন (ইবনু মাজাহ হা/২২৯৮)।

নভেম্বর/২০১৮

প্রশ্ন (১/৪১) : ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ নামে এক যুদ্ধের কথা কোন কোন বক্তা প্রচার করে থাকেন। উক্ত যুদ্ধের সত্যতা ও বিবরণ সম্পর্কে জানতে চাই। এছাড়া আরেক শতাব্দী পর মুসলমানরা ইসলামী খেলাফত ফিরে পাবে মর্মে কোন ভবিষ্যদ্বাণী আছে কি?

উত্তর : ‘গাযওয়াতুল হিন্দ’ নামে এক যুদ্ধের বর্ণনা বিভিন্ন হাদীছে রয়েছে, যার মধ্যে একটিমাত্র ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ছাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের দু’টি দল রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। তাদের একটি দল হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আরেকটি দল যারা ঈসা (আঃ)-এর পক্ষে থাকবে’ (নাসাঈ হা/৩১৭৫; আহমাদ হা/২২৪৪৯; ছহীহাহ হা/১৯৩৪)। উপরোক্ত হাদীছে হিন্দুস্থানের যে যুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী রাসূল (ছাঃ) করেছিলেন, তা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। কেননা মুসলমানগণ হিন্দুস্থানে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছেন। যেমন ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সর্বপ্রথম ১৫ হিজরীতে ওছমান বিন আবুল ‘আছের নেতৃত্বে একটি সেনাদল প্রেরিত হয়। যারা হিন্দুস্থানের থানা, ব্রূছ ও দেবল বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। থানাকে বর্তমানে মুম্বাই, ব্রূছকে গুজরাট এবং দেবলকে করাচী বলা হয়। তারা এ সময় ‘সরনদীব’ জয় করেন। যাকে বর্তমানে শ্রীলঙ্কা বলা হয় (আতহার মুবারকপুরী, আল-ইক্বদুছ ছামীন ফী ফুতূহিল হিন্দ (কায়রো :  দারুল আনছার, ২য় সংস্করণ ১৩৯৯ হি./১৯৭৯) ১/২৬, ৪০, ৪২, ৪৪)। অতঃপর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (৪১-৬০ হি.) হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালিত হয় (আল-বিদায়াহ ৬/২২৩)। এরপর ৯৩ হিজরীতে খলীফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিকের আমলে (৮৬-৯৬ হি.) মুহাম্মাদ বিন কাসেম ছাক্বাফী-র নেতৃত্বে সিন্ধু ও হিন্দুস্থান বিজিত হয় (আল-বিদায়াহ ৯/৭৭, ৯৫; আল-ইক্বদুছ ছামীন ১/১৪১-৪২)। এছাড়া ৫ম শতাব্দী হিজরীর প্রথম দিকে গযনীর সুলতান মাহমূদ (৩৮৮-৪২১ হি.) হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি ভারতের বিখ্যাত সোমনাথ মন্দিরে প্রবেশ করে সকল মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করেন। অতঃপর বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন (আল-বিদায়াহ ৬/২২৩, ১২/৩০; আহলেহাদীছ আন্দোলন ২০৬-২০৮ পৃ.)।
অপরপক্ষে হযরত আবু হুরায়রাহ, কা‘ব ও ছাফওয়ান বিন ‘আমর (রাঃ) থেকে দুর্বল সূত্রে এ বিষয়ে কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ‘হিন্দুস্থানের নেতাদেরকে মুসলিম সেনারা বেড়ীবদ্ধ অবস্থায় শামে নিয়ে যাবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করবে’। যেগুলির সবই যঈফ (নাসাঈ হা/৩১৭৩-৭৪; আহমাদ হা/৭১২৮; হাকেম হা/৬১১; নু‘আঈম বিন হাম্মাদ, আল-ফিতান  হা/১২০২, ১২১৫, ১২৩৬)। এসকল যঈফ বর্ণনা থেকে অনেকে ধারণা করেন যে, এই গাযওয়াতুল হিন্দ ক্বিয়ামতের পূর্বকালে সংঘটিত হবে। দ্বিতীয়ত, ক্বিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর মাধ্যমে ইসলামী খেলাফত পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং যা সাত বছর অব্যাহত থাকবে-মর্মে রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে (আবূদাঊদ হা/৪২৮৪-৮৫; মিশকাত হা/৫৪৫৩-৫৪; ছহীহাহ হা/১৫২৯)। তবে সেই খেলাফত এখন থেকে এক শতাব্দীকাল পর প্রতিষ্ঠিত হবে, এমন কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট করার সুযোগ নেই।  
প্রশ্ন (২/৪২) : আমি আমার আত্মীয়ের নিকট থেকে বাজার মূল্যে জমি ক্রয় করব এবং রেজিস্ট্রেশনের সময় হেবা (দানপত্র) হিসাবে দেখাব। এটা জায়েয হবে কি?
-রফীকুল ইসলাম, গুলশান, ঢাকা।
উত্তর : সরকার কর্তৃক বর্তমানে অত্যধিক হারে গৃহীত জমি রেজিস্ট্রি ফী নিঃসন্দেহে জনগণের উপর যুলুম। তবুও তা ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রশ্নে উল্লেখিত কৌশল কিংবা কোন অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা উচিৎ হবে না। কেননা যালেম শাসকদের অধীনে বসবাসরত নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তাদের হক তাদের দিয়ে দাও এবং তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৭২)।

প্রশ্ন (৩/৪৩) : কুকুর আল্লাহর সৃষ্টি। অথচ তা বাড়িতে প্রতিপালন করা নিষেধ, এমনকি প্রতিদিনের বিপরীতে এক ক্বীরাত্ব বা দু’ক্বীরাত নেকী কমে যায়। এর কারণ কি?
-যামান, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : শূকরের মত কুকুরও সত্ত্বাগতভাবে নাপাক। সেকারণে কুকুর পালনে নিষেধ করা হয়েছে (মুসলিম হা/১৫৭৪, ২১০৬)। তাছাড়া কুকুরের লালা ও মলমূত্র মুছল্লীর কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হয়ে যায় (তায়সীরুল আল্লাম ২/২০৯)। এদের লালায় ভয়ংকর জীবাণু থাকে, যার স্পর্শকৃত পাত্র সাতবার ধৌত করার বিধান রয়েছে (মুসলিম হা/২৭৯, ২৮০, উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ৬/৪২৯-৪৩০)। এমনকি এই প্রাণী বাড়িতে থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করে না (বুখারী হা/৩৩২২)। তবে সব কুকুর পালন নিষিদ্ধ নয়। যেমন শিকারের কাজে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর এবং পাহারায় নিয়োজিত কুকুর পালন করা জায়েয (মায়েদা ৫/৪; বুখারী হা/২৩২২; মুসলিম হা/১৫৭৪)। তবে এমন কুকুরকেও গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না (বুখারী হা/৩৩২২)।
প্রশ্ন (৩/৪৩) : কুকুর আল্লাহর সৃষ্টি। অথচ তা বাড়িতে প্রতিপালন করা নিষেধ, এমনকি প্রতিদিনের বিপরীতে এক ক্বীরাত্ব বা দু’ক্বীরাত নেকী কমে যায়। এর কারণ কি?
-যামান, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : শূকরের মত কুকুরও সত্ত্বাগতভাবে নাপাক। সেকারণে কুকুর পালনে নিষেধ করা হয়েছে (মুসলিম হা/১৫৭৪, ২১০৬)। তাছাড়া কুকুরের লালা ও মলমূত্র মুছল্লীর কাপড়ে লাগলে কাপড় অপবিত্র হয়ে যায় (তায়সীরুল আল্লাম ২/২০৯)। এদের লালায় ভয়ংকর জীবাণু থাকে, যার স্পর্শকৃত পাত্র সাতবার ধৌত করার বিধান রয়েছে (মুসলিম হা/২৭৯, ২৮০, উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ৬/৪২৯-৪৩০)। এমনকি এই প্রাণী বাড়িতে থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতারা প্রবেশ করে না (বুখারী হা/৩৩২২)। তবে সব কুকুর পালন নিষিদ্ধ নয়। যেমন শিকারের কাজে ব্যবহৃত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর এবং পাহারায় নিয়োজিত কুকুর পালন করা জায়েয (মায়েদা ৫/৪; বুখারী হা/২৩২২; মুসলিম হা/১৫৭৪)। তবে এমন কুকুরকেও গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না (বুখারী হা/৩৩২২)।
প্রশ্ন (৪/৪৪) : সূরা রহমানের ‘ফাবিআইয়ে আলা-ই রবিবকুমা তুকাযযিবান’ পাঠ করার পর বা শোনার পর প্রতিবার কি ‘লা বি শায়ইন মিন নি‘আমিকা রববানা নুকাযি্যবু ফালাকাল হাম্দ’ বলতে হবে? -আবুল হোসাইন, লালপুর, নাটোর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) থেকে উক্ত দো‘আটি পাঠের কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে রাসূল (ছাঃ) জিনদের সামনে সূরা রহমান পাঠ করলে উক্ত আয়াতের জওয়াবে জিনেরা প্রতিবার উত্তরটি দিয়েছিল বলে রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন (তিরমিযী হা/৩২৯১; ছহীহাহ হা/২১৫০)। যা তাঁর অনুমোদনের ইঙ্গিতবাহী হিসাবে কোন কোন বিদ্বান দো‘আটি পাঠ করা মুস্তাহাব বলেছেন। যেহেতু উক্ত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীদের চুপ থাকা দেখে বলেছিলেন, ‘জিনেরা তোমাদের চাইতে উত্তম জবাবদাতা ছিল’ সেহেতু ক্বিরাআত শেষে অন্ততঃ একবার উক্ত দো‘আ পাঠের মাধ্যমে জওয়াব দেওয়া ‘মুস্তাহাব’ বলে অনুমিত হয়।
মিশকাত-এর ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ছালাতের মধ্যে হৌক বা বাইরে হৌক, পাঠকারীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। যা বর্ণিত হাদীছ সমূহে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু শ্রোতা বা মুক্তাদীর জন্য উপরোক্ত আয়াত সমূহের জওয়াব দেওয়ার প্রমাণে স্পষ্ট কোন মরফূ হাদীছ আমি অবগত নই। তবে আয়াতগুলিতে প্রশ্ন রয়েছে। সেকারণ জওয়াবের মুখাপেক্ষী। কাজেই পাঠকারী ও শ্রোতা উভয়ের জন্য উত্তর দেওয়া বাঞ্ছনীয় (মির‘আত (বেনারস, ভারত ১৪১৫/১৯৯৫) ৩/১৭৫ পৃ.)। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, বক্তব্যটি মুৎলাক্ব অর্থাৎ সাধারণভাবে এসেছে। অতএব তা ছালাত ও ছালাতের বাইরে এবং ফরয ও নফল সব ছালাতকে শামিল করে। তিনি ‘মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা’র বরাতে একটি ‘আছার’ উদ্ধৃত করেন এই মর্মে যে, ছাহাবী আবু মূসা আশ‘আরী ও মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) ফরয ছালাতে উক্ত জওয়াব দিতেন। ওমর ও আলী (রাঃ) সাধারণভাবে সকল অবস্থায় জওয়াব দিতেন (আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃ. ৮৬ হাশিয়া; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫১-৫২ পৃ.)।
তবে শায়খ বিন বায এবং উছায়মীন (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বান প্রথমোক্ত হাদীছটির দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করে দো‘আটি পাঠের ব্যাপারে আপত্তি করেছেন (দ্র. ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট : শায়খ বিন বায)।
প্রশ্ন (৫/৪৫) : আইয়ামে বীযের ছিয়াম মাসের যেকোন দিন রাখতে পারবে কি?
-আহমাদুল্লাহ, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : প্রতি আরবী মাসের মধ্যবর্তী ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ, আইয়ামে বীয-এর ৩ দিন ছিয়াম পালন করা মুস্তাহাব (তিরমিযী হা/৭৬১, নাসাঈ হা/২৪২৪; মিশকাত হা/২০৫৭)। তবে কোন সমস্যা থাকলে মাসের অন্য যেকোন দিনেও রাখতে পারে। যেমন আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে জানতে চাওয়া হ’ল যে, রাসূল (ছাঃ) কি প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম পালন করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মাসের কোন কোন দিন তিনি ছিয়াম পালন করতেন? তিনি বললেন, রাসূল (ছাঃ) মাসের যে কোন দিন ছিয়াম পালন করতে দ্বিধা করতেন না (মুসলিম হা/১১০৭; মিশকাত হা/২০৪৬)। ইমাম নববী বলেন, উক্ত তিন দিন ছিয়াম রাখা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে। তবে ঐ তিন দিন নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। জমহূর বিদ্বানগণ ১৩, ১৪, ১৫ তিন দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন (মির‘আত হা/২০৭৭ -এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৬/৪৬) : যারা সাপের কামড়ে মারা যায় তারা কি শহীদের মর্যাদা লাভ করবে?
-আবুল কালাম, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদের মর্যাদা লাভ করবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১১৬৮৬; যঈফাহ হা/৩৯৬৭)। তবে আলী (রাঃ) বলেন, মুমিন যেভাবেই মৃত্যুবরণ করুক না কেন তার মৃত্যু শাহাদতের মৃত্যু। তবে শাহাদতের মর্যাদায় স্তরভেদ রয়েছে (ফাৎহুল বারী ৬/৪৪, সনদ হাসান)। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল কোনটি সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ? তিনি বললেন, যার ঘোড়া (বাহন)-কে হত্যা করা হয়েছে এবং যার রক্ত ঝরানো হয়েছে (আহমাদ হা/৬৭৯২; মিশকাত হা/৪৬)। ইবনুত তীন বলেন, অপঘাতে মৃত্যুতে কষ্ট রয়েছে বলে তাতে গুনাহ মাফ হয় এবং ছওয়াব বৃদ্ধি পায়, যা তাকে মর্যাদায় শহীদের স্তরে পৌঁছে দেয়। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, উপরের হাদীছ সমূহ দ্বারা বুঝা যায় যে, শহীদ দু’প্রকার : একদল আখেরাতের হিসাবে শহীদ, যাদের ইখলাছ ও কর্মতৎপরতায় কোন খাদ নেই। এরা দুনিয়া ও আখেরাতে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা পাবেন। আরেকদল দুনিয়ার হিসাবে শহীদ, কিন্তু ইখলাছ ও তৎপরতায় খাদ রয়েছে। এরা আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে না  (ফাৎহুল বারী ৬/৪৪)।
প্রশ্ন (৭/৪৭) : আমার স্বামী বিয়ের চার মাসের মধ্যে প্রচন্ড রাগের মাথায় আমাকে এক তালাক দেয়। পরে অনুতপ্ত হয়ে আমাকে ফিরিয়ে নেয়। এর চার মাস পর প্রচন্ড রেগে গিয়ে আবার তালাক দেয়, তারপর আবার ফিরিয়ে নেয়। এর আট মাস পর আবার তালাক দেয়। উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালাক দেওয়ার সময় আমার মাসিক চলছিল। আর সে রেগে গেলে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে হুবহু পাগলের মত আচরণ করে। এক্ষণে এগুলি তালাক হিসাবে গণ্য হবে কি? আমরা এখন আবার সংসার করতে চাই। আমাদের জন্য করণীয় কী?
-ফরীদা ইয়াসমীন, বর্ণালী, রাজশাহী।
উত্তর : এগুলি দু’টি কারণে তালাক হিসাবে গণ্য হবে না। প্রথমত, বর্ণনা মতে ছেলেটি মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত এবং কারণে-অকারণে তার মধ্যে অদ্ভুত সব কার্যকলাপ ও অসংলগ্ন কথাবার্তা প্রকাশ পায়। অতএব এরূপ ব্যক্তির রাগান্বিত অবস্থায় প্রদত্ত তালাক ধর্তব্য হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্রোধান্ধ অবস্থায় কোন তালাক হয় না’ (আবূদাঊদ হা/২১৯৩; মিশকাত হা/৩২৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫২৫)। ইমাম আবূদাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘ইগলাক্ব’ গালাক্ব ধাতু হ’তে উৎপন্ন। যার অর্থ বন্ধ হওয়া। ক্রোধান্ধ, পাগল ও যবরদস্তির অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি লোপ পায়। তাই এ অবস্থাকে ‘ইগলাক্ব’ বলা হয় (ঐ, হাশিয়া ২/৪১৩ পৃঃ)। রাসূল (ছাঃ) আরও বলেন, ‘তিন ব্যক্তি হ’তে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (১) পাগল যতক্ষণ না সে সুস্থ হয় ... (আবূদাঊদ হা/৪৪০১; মিশকাত হা/৩২৮৭)। আলী (রাঃ) বলেন, পাগল ব্যক্তির তালাক ব্যতীত সকল তালাকই জায়েয (বুখারী তা‘লীক, ‘তালাক’ অধ্যায়, ‘ইগলাক্ব অবস্থায় তালাক’ অনুচ্ছেদ)। দ্বিতীয়ত, সে স্ত্রীর হায়েয অবস্থায় তালাক দিয়েছে। অধিকতর গ্রহণযোগ্য মতে, হায়েয অবস্থায় তালাক দিলে তা কার্যকর হবে না (তালাক ৬৫/১; বুখারী হা/৫২৫১, ৫৩৩২, মিশকাত হা/৩২৭৫, বিন বায, ফাতাওয়া তালাক ৪৪ পৃ.; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/৫৮; উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/২৬৮; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)। এক্ষণে তারা চাইলে তওবা করে সংসার করতে পারে। উল্লেখ্য যে, শরী‘আতে তালাক নিয়ে কোন প্রকার স্বেচ্ছাচারিতা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব ভবিষ্যতে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। 
প্রশ্ন (৮/৪৮) : হজ্জে ইফরাদকারীরা ৮ই যিলহজ্জের পূর্বে ইহরাম বাঁধলে ৮ই যিলহজ্জে কি তার জন্য পুনরায় ইহরাম বাঁধা আবশ্যক হবে? -আজমল ফুয়াদ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : পূর্বে ইহরাম বাঁধলে পরে আর বাঁধতে হবে না। সুন্নাত হ’ল ৮ই যিলহজ্জ যোহরের পূর্বে ইহরাম বেঁধে মিনায় গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/২৫১)। উল্লেখ্য যে, ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করা যায় (লাজনা দায়েমাহ, প্রশ্নোত্তর নং ৯৭৭৩)।
প্রশ্ন (৯/৪৯) : আমরা জানি যে, মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া যায় না। এক্ষণে যারা মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জে তামাত্তু করবে, তারা কার পক্ষ থেকে কুরবানী করবে? হজ্জের সময় তাদের নাম কিভাবে উল্লেখ করতে হবে? -আমীনুল ইসলাম, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : হজ্জে তামাত্তু পালনকারীদের জন্য হাদ্ই বা কুরবানী করা ওয়াজিব। যেহেতু এটি হজ্জের একটি অংশ, সেহেতু যার জন্য হজ্জ করা হবে তার পক্ষ থেকেই কুরবানী দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, বদলী হজ্জ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা শর্ত নয়। বরং অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে (আবূদাঊদ হা/১৮১১; মিশকাত হা/২৫২৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৭১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৮২)।
প্রশ্ন (১০/৫০) : কোন মানুষের নাম রববানী রাখা যাবে কি? এছাড়া কাউকে নাম হিসাবে রাববী বলে ডাকা যাবে কি?-ফযলে রাববী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : ‘রববানী’ নাম রাখাতে কোন বাধা নেই। কারণ ‘রববানী’ অর্থ আল্লাহওয়ালা। তবে ‘গোলাম রববানী’ নাম রাখা যাবে না। কেননা এর অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির গোলাম। আর রাববী নয়, বরং ফযলে রাববী নামে ডাকা যাবে। যার অর্থ আমার রবের অনুগ্রহ।
প্রশ্ন (১১/৫১) : জনৈক ইমাম ষাড়ের প্রজননের বিনিময়ে টাকা উপার্জন করেন। এরূপ কাজ জায়েয হবে কি? যদি এরূপ উপার্জন হারাম হয়, তাহ’লে ঐ ইমামের পিছনে ছালাত হবে কি?-আবুল কালাম আযাদ, রাজশাহী।
উত্তর : ষাড়ের প্রজননের বিনিময়ে টাকা উপার্জন করা তথা ব্যবসা হিসাবে গ্রহণ করা হারাম। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ষাড়ের প্রজননের বিনিময়ে উপার্জন করতে নিষেধ করেছেন’ (বুখারী হা/২২৮৪; মিশকাত হা/২৮৫৬ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। জাবের (রাঃ) বলেন, উট দ্বারা পাল দিয়ে তার মজুরী গ্রহণ করতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম হা/১৫৬৫; মিশকাত হা/২৮৫৭)। তবে প্রয়োজনে শর্তহীনভাবে সম্মানী বা হাদিয়া স্বরূপ কিছু গ্রহণ করা যেতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৫/৭৪-৭৫)। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, বনু কিলাবের জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে ষাড়ের পাল বা প্রজননের মজুরীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে তা করতে নিষেধ করলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ষাড়ের পাল দেয়ার বিনিময়ে কিছু হাদিয়া পেয়ে থাকি। তখন তিনি তাকে হাদিয়া গ্রহণের অনুমতি দিলেন’ (তিরমিযী হা/১২৭৪; মিশকাত হা/২৮৬৬, সনদ ছহীহ)। অতএব নিছক ব্যবসা হিসাবে এটি করা যাবে না।
প্রশ্নমতে যে ইমাম এমন কাজ করেন, তাকে নছীহত করতে হবে। যদি হাদীছ জানার পরেও না মানেন, তাহ’লে তাকে অপসারণ করা যাবে। তবে তার পিছনে ছালাত আদায় হয়ে যাবে। কেননা একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)।
প্রশ্ন (১২/৫২) : জনৈক ব্যক্তি তার মা, ভাই, বোন এবং ছেলে-মেয়ে রেখে মারা গেছেন। এক্ষণে তার মা ছেলের সম্পদ হ’তে কতটুকু অংশ পাবেন? -মুখলেছুর রহমান, রংপুর।
উত্তর : এরূপ অবস্থায় মা মৃত পুত্রের সম্পদ থেকে এক-ষষ্ঠাংশ পাবেন। আল্লাহ বলেন, ‘মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে’ (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (১৩/৫৩) : শেষ রাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আকাশে নেমে আসেন। এক্ষণে পৃথিবীর সর্বত্র একসাথে শেষ রাত হয় না। তাহ’লে হাদীছটির ব্যাখ্যা কী? -মামূন, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : প্রতি শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসেন, যা বহু ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/১১৪৫, মুসলিম হা/৭৫৮ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১২২৩)। কিন্ত তিনি কিভাবে নেমে আসেন তা অজ্ঞাত। এগুলি অদৃশ্য বিষয়ক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। যা স্রেফ আল্লাহর ইলমে রয়েছে। অতএব হাদীছে যেভাবে এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, তিনি প্রতি রাতেই অবতরণ করেন। তখন জিজ্ঞেস করা হ’ল, অবতরণের ফলে কি আরশ খালি হয়ে যায় না? জবাবে ইবনুল মুবারাক বললেন, ‘রে যঈফ! তিনি যেভাবে ইচ্ছা অবতরণ করেন’ (আক্বীদাতুস সালাফ, পৃঃ ২৯)। সুতরাং হাদীছের ভাষ্য মেনে নিতে হবে। এ বিষয়ে বিতর্ক উত্থাপন করা ছহীহ হাদীছে সন্দেহ করার শামিল। যা নেহায়েতই অন্যায় এবং অযৌক্তিক (বি. দ্র. থিসিস ১১৬-১১৭ পৃঃ)।
প্রশ্ন (১৪/৫৪) : বিয়েতে দেনমোহরের টাকা বাকী রাখলে কি ঐ বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে? দেনমোহরের সঠিক নিয়ম ব্যাখ্যাসহ জানতে চাই।
-রেযাউল ইসলাম, সফীপুর, গাযীপুর
উত্তর :  মোহর বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ (নিসা ৪/৪)। আর বিবাহের মোহর স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ প্রদান করাই উত্তম। তবে কারো নগদ অর্থ না থাকলে পরে দিতে পারে। এমনকি বিবাহের পূর্বে মোহর নির্ধারণ না করেই বিবাহ সম্পন্ন করতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ) একজন ব্যক্তিকে বললেন, অমুক মহিলার সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, অমুক ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি তাদের বিবাহ দিলেন। কিন্তু কোন মোহর নির্ধারণ করলেন না এবং মহিলাকে কিছু দিলেন না। ঐ ব্যক্তি হোদায়বিয়ার ছাহাবী ছিলেন। পরে তিনি খায়বারের গণীমতের অংশ পান। এ সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হ’লে তিনি বলেন, স্ত্রীর জন্য আমার কোন মোহর নির্ধারিত ছিল না। এক্ষণে আমি আমার খায়বারের প্রাপ্ত অংশ তাকে মোহর হিসাবে দান করলাম। যার মূল্য ছিল এক লক্ষ দেরহাম’ (হাকেম হা/২৭৪২; আবূদাঊদ হা/২১১৭; ইরওয়া হা/১৯৪০, সনদ ছহীহ)। নবী করীম (ছাঃ) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২)। আর মোহর না দেওয়ার নিয়ত করে থাকলে তাকে যেনাকারীর কাতারে দাঁড়াতে হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মোহরের বিনিময়ে কোন মহিলাকে বিবাহ করল, অথচ মোহর পরিশোধ করবে না বলে নিয়ত করল, সে যেনাকারী’ (বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান হা/৫৫৪৯; বাযযার হা/৮৭২১; ছহীহুত-তারগীব হা/১৮০৬, ছহীহ লিগায়রিহী)। বস্ত্ততঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা এবং পরে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া ধোঁকার শামিল। সেই সাথে সমাজে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার যে কুপ্রথা রয়েছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এমন কর্ম থেকে মুমিনকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। অতএব কাছে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে। আর মোহর আদায় না করলে দুনিয়া ও আখেরাতে স্ত্রীর নিকটে ঋণগ্রস্ত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (১৫/৫৫) : আমাদের এলাকায় মাইয়েতের সম্পদ দ্বারা জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। এরূপ কাজ জায়েয হবে কি? এছাড়া কোন নির্দিষ্ট দিন ধার্য ব্যতীত মৃতের পক্ষ থেকে খানার আয়োজন করা যাবে কি?
-ফখরুল ইসলাম, মাহিলাড়া, গৌরনদী, বরিশাল।
উত্তর : মাইয়েতের সম্পদ দ্বারা এটা করা যাবে না। জারীর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) বলেন, দাফনের পরে মাইয়েতের বাড়িতে সমবেত হওয়া এবং খানাপিনার আয়োজন করাকে আমরা বিলাপ হিসাবে গণ্য করতাম (যা নিষিদ্ধ)’ (আহমাদ হা/৬৯০৫; ইবনু মাজাহ হা/১৬১২, সনদ ছহীহ)। হানাফী বিদ্বান কামাল ইবনুল হুমাম বলেন, মাইয়েতের পরিবারের পক্ষ থেকে দাওয়াত করে খানাপিনার আয়োজন করা মাকরূহ... বরং জঘন্য বিদ‘আত (ফাৎহুল ক্বাদীর ২/১৪২)। এছাড়া ইমাম নববী, ইবনু তায়মিয়া, ইবনু কুদামা প্রমুখ বিদ্বান এরূপ কাজ শরী‘আতসিদ্ধ নয় বলে ফৎওয়া দিয়েছেন (রওযাতুল তালেবীন ২/১৪৫; মাজমূউল ফাতাওয়া ২৪/৩১৬; আল-মুগনী ৩/৪৯৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/১৪৫)।
বরং সুন্নাত হ’ল প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা মাইয়েতের পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবে। জাফর বিন আবু তালিব (রাঃ) মুতার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করলে রাসূল (ছাঃ) প্রতিবেশীদের নির্দেশ দেন যাতে তারা জাফর (রাঃ)-এর পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে (আবুদাউদ হা/৩১৩২; ইবনু মাজাহ হা/১৬১০; মিশকাত হা/১৭৩৯; ছহীহুল জামে হা/১০১৫)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, প্রতিবেশী ও নিকটতমরা মাইয়েতের পরিবারের জন্য একদিন ও এক রাতের খাবারের ব্যবস্থা করবে। এটি আমার নিকট পসন্দনীয় (কিতাবুল উম্ম ১/৩১৭)। ইবনু কুদামা বলেন, মাইয়েতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়া ও তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য তাদের জন্য খাবার পাঠানো প্রতিবেশীদের জন্য মুস্তাহাব (আল-মুগনী ৩/৪৯৬; বিস্তারিত দ্রঃ ‘কুরআন ও কলেমাখানী’ বই)।
প্রশ্ন (১৬/৫৬) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুধমাতা হালীমা সা‘দিয়া কি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? তাঁর কবর কোথায় অবস্থিত? -হারূণুর রশীদ, সাহাপুর, দারুসা, রাজশাহী।
উত্তর : বিশুদ্ধ মতে রাসূল (ছাঃ)-এর দুধমাতা হালীমা সা‘দিয়া (রাঃ) ইসলাম কবুল করেছিলেন। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তাকে ছাহাবীগণের মধ্যে গণ্য করেছেন (আল-ইছাবাহ ক্রমিক ১১০৫০, ৭/৫৮৪)। রাসূল (ছাঃ)-এর বিয়ের পর হালীমা ও তার স্বামী হারেছ বিন আব্দুল উযযা তাঁর নিকট আগমন করে এলাকায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করলে খাদীজা (রাঃ) তাদের চল্লিশটি ছাগল ও একটি উট দান করেন। রাসূলের নবুঅত লাভের পর পুনরায় আগমন করে তারা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন (ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ১/৬২; আল-বিদায়াহ ৪/৩৬৪; যিরিকলী, আল-আ‘লাম ২/২৭১)।
হালীমার কবর কোথায়, তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। বিশ্ব পর্যটক মরক্কোর মুহাম্মাদ ইবনু বতূতা (৭০৩-৭৭৯ হিঃ) হালীমার কবর বছরায় বলে উল্লেখ করেছেন (রিহলাহ ইবনু বতুতা ২/১৪)। কিন্তু এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা মুসলমানগণ বছরা জয় করেন ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (১৩-২৩ হিঃ)।
হালীমা সা‘দিয়া ছিলেন হাওয়াযেন গোত্রের বনু সা‘দ শাখার অন্তর্ভুক্ত। যারা মক্কার আশপাশের এলাকায় বসবাস করতেন। মক্কার নেতারা তাদের সন্তানদের খোলামেলা উন্নত পরিবেশে এবং শুদ্ধ ভাষা শিখানোর জন্য এদের নিকট সন্তান পালনের জন্য প্রদান করতেন। বর্তমানে মক্কা থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ৯০ কি.মি. দূরে ত্বায়েফ থেকেও ৮৫ কি.মি. দূরে বনু সা‘দ যেলায় হালীমা সা‘দিয়ার বাড়ী ও কবর রয়েছে বলে যা প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা ভিত্তিহীন। সঊদী সরকার কল্পিত উক্ত স্থানকে কয়েক বছর আগে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যা এযাবৎ বিদ‘আতের আখড়া হিসাবে পূজিত হচ্ছিল। এমনি করেই শয়তান বকধার্মিকদের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে শিরক ও বিদ‘আতের কেন্দ্র সমূহ গড়ে তোলে। যাতে প্রকৃত মুমিনগণ পথভ্রষ্ট হয়।
প্রশ্ন (১৭/৫৭) : ছোট ভাই একাই পিতা-মাতার যাবতীয় দেখা-শোনার দায়িত্ব পালন করে। এক্ষণে পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ছোট ভাইকে বড় ভাইদের তুলনায় অধিক সম্পদ দেওয়া যাবে কি?-ছাদ্দাম হোসেন, রংপুর।
উত্তর : সকল ভাই ও বোনদের সম্মতি থাকলে ছোট ভাইকে বেশী দেওয়া যাবে। কিন্তু কারো আপত্তি থাকলে কমবেশী  করার কোন সুযোগ নেই। কারণ উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টননীতি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত (নিসা ৪/১১-১২; বুখারী হা/২৫৮৭; মিশকাত হা/৩০১৯; ফাতাওয়াল জামেআ লি-মারাতিল মুসলিমা ৩/১১১৫-১১১৬)।
প্রশ্ন (১৮/৫৮) : জনৈক ইমাম রুকূ ও সিজদায় দীর্ঘ সময় থাকেন। এতে দিন দিন মুছল্লী কমে যাচ্ছে। ইমামকে বলা হ’লে তিনি বলেন, ছাহাবীদের রুকূ-সিজদা এমন ছিল যে তাদের পিঠে পাখি বসত। এক্ষণে সাধারণ মুছল্লীদের করণীয় কি? -ফয়ছাল আহমাদ, নাটোর।
উত্তর : ইমামের এমন আমল মোটেই সুন্নাত সম্মত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ইমামতি করবে, তখন ছালাত সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা তাদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল ও রোগী ব্যক্তি থাকে। আর যখন একাকী ছালাত আদায় করবে তখন যেভাবে মন চায় তা আদায় করবে’ (মুসলিম হা/৪৬৭; মিশকাত হা/১১৩৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতৃষ্ণার উদ্রেককারী রয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদেরকে নিয়ে ছালাত আদায় করবে, সে যেন সংক্ষিপ্ত করে (বুখারী হা/৭০৪; মুসলিম হা/৪৬৬; মিশকাত হা/১১৩২)। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) ছালাতে দীর্ঘ তেলাওয়াত করলে রাসূল (ছাঃ) তাকে ‘ফিৎনাকারী’ বলে ধমক দেন এবং ছালাত সংক্ষিপ্ত করতে বলেন (বুখারী হা/৭০৫; মুসলিম হা/৪৬৫; মিশকাত হা/৮৩৩)।
রুকূ অবস্থায় ছাহাবীগণের পিঠে পাখি বসে থাকত মর্মে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর আমলটি তাঁর ব্যক্তিগত আমল ছিল (ইমাম আহমাদ, আয-যুহ্দ হা/৭৩৫)। একাকী ছালাত আদায় করলে যে কেউ ইচ্ছামত ছালাত দীর্ঘায়িত করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) রুকূর সময় তার পিঠকে এমনভাবে সমান্তরাল করতেন যে, তাতে পানি ঢেলে দিলে তা গড়িয়ে পড়ত না (আহমাদ হা/৯৯৭; ছহীহাহ হা/৩৩৩১)। এর অর্থ এই নয় যে, এটি রুকূ দীর্ঘায়িত করার কারণে ছিল। বরং পিঠ সোজা করার কারণে ছিল (আহমাদ হা/৯৯৭; ছহীহাহ হা/৩৩৩১)। অতএব ইমামকে সুন্নাত অনুযায়ী আমল করা কর্তব্য।
প্রশ্ন (১৯/৫৯) : বড়শি দিয়ে মাছ ধরা মাছের সাথে প্রতারণার শামিল কি? -আশরাফ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
উত্তর : প্রতারণা হবে না। কারণ প্রতারণার বিধান কেবল মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, মাছ বা অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে নয়। মাছকে আল্লাহ মানুষের খাদ্য হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘(লোনা ও মিঠা পানির দু’টি সমুদ্র থেকেই) তোমরা তাযা গোশত (মৎস্য) ভক্ষণ করে থাক... যাতে তোমরা তাঁর  অনুগ্রহ  সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’ (ফাত্বির ৩৫/১২)। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তোমাদেরকে যে রূযী দান করেছি, তার মধ্যে পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর’ (বাক্বারাহ ২/৫৭)।
প্রশ্ন (২০/৬০) : তোমরা উন্নত মানের খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাক। কারণ তা মানুষের রন্ধ্রে শয়তানের চলার জন্য শক্তি বর্ধক’ মর্মে হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-ওয়ালীউল্লাহ, কাটাখালী, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (ইবনুল জাওযী, আল-মাওযূআত ৩/৩০; আলবানী, যঈফাহ হা/১৮৭৯)।
প্রশ্ন (২১/৬১) : আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কথা আছে যে গোসলের পর ভাত অথবা রুটি ছাড়া কোন ফল খাওয়া যাবে না। এটা কি সত্য?-এনামুল হক, জগতী, কুষ্টিয়া।
উত্তর : এতে কোন শারঈ বাধা নেই। তবে চিকিৎসকদের মতে, গোসলের পর খালি পেটে ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যা পেটে অ্যাসিড সৃষ্টি করে। কারণ প্রতিটি ফলেই থাকে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড। সাধারণত কেউ যখন গোসল করে আসে, তখন তার ক্ষুধা অনুভূত হয়। তাতে পেটের খালি অন্ত্রের বিভিন্ন কোষ থেকে নির্গত হয় নানা প্রকারের রস এবং অ্যাসিড। তখন ফল খেলে তার অ্যাসিড ও অন্ত্রের অ্যাসিড এবং বিভিন্ন পাচক রসের মধ্য বিক্রিয়ার ফলে অমল রোগ দেখা দিতে পারে। তাই খালি পেটে ফল না খাওয়াই উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্ষতি করো না ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)।
প্রশ্ন (২২/৬২) : সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর জন্ম-মৃত্যু ও বয়স জানতে চাই। -আব্দুল্লাহ, পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর জন্ম সাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তিনি পারস্যে এক অগ্নিপূজকের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ফলে প্রথম জীবনে তিনি অগ্নিপূজক ছিলেন। পরে খৃষ্টধর্ম এবং সবশেষে মদীনায় এসে ইসলাম কবুল করেন। তিনি হযরত ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ৩৩-৩৬ হিজরী সালের দিকে মৃত্যুবরণ করেন (যাহাবী, সিয়ার ১/৮৩-৮৬, ৫৫৫)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। ইবনুল আছীর বলেন, বিদ্বানদের মতে, তিনি সাড়ে তিনশত বছর জীবিত ছিলেন। আর আড়াইশ বছরের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই (উসদুল গাবাহ ১/৪৬৪)। যাহাবী বলেন, তাঁর দীর্ঘ জীবন লাভের ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। তবে এগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। আমার ধারণা তাঁর বয়স সম্ভবতঃ ৭০-এর অধিক ছিল এবং তা একশত অতিক্রম করেনি (যাহাবী, সিয়ার ১/৫৫৬)।  হাফেয ইবনু হাজার বলেন, তাঁর এত দীর্ঘজীবন লাভ ব্যতিক্রমী হ’লেও অসম্ভব নয়, যদি বর্ণনাসূত্রগুলি সঠিক হয়ে থাকে (আল-ইছাবাহ ৩/১৪১)। অতএব তাঁর মোট বয়স কত ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলার উপায় নেই।
প্রশ্ন (২৩/৬৩) : আমার ও আমার স্ত্রীর মাঝে বিবাহপূর্ব প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে আমরা নিজে নিজে বিয়ে করি মেয়ের পিতার বিনা অনুমতিতে। তখন আমি ছহীহ হাদীছ ও ছহীহ দ্বীনও জানতাম না। পারিবারিক এবং নিজেদের কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারণে আমি তাকে তালাকও দিয়ে দিয়েছি। আমাদের একটি মেয়ে সন্তান আছে। আমার প্রশ্নটা যেহেতু ওলীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে বাতিল, তাহ’লে আমি যে তাকে তালাক দিয়েছি এই তালাক কি গ্রহণযোগ্য হবে? আমি কি তাকে ফিরিয়ে নিতে পারব আবার তার ওলীর উপস্থিতিতে বিয়ের মাধ্যমে? না সে আমার জন্য হারাম? আমি আল্লাহকে ও তাঁর আযাবকে ভয় পাই। আমি কোন সুবিধা পাবার জন্য প্রশ্নটা করিনি। সঠিক ফৎওয়া জেনে সঠিক পথ অবলম্বন করতে চাই। যাতে করে আমার পক্ষ থেকে তার উপর যুলুম না হয়। -নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর : ওলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ হ’লেও সেটি বিবাহের অনুরূপই (শিবহে নিকাহ) ছিল। সুতরাং যদি তাকে তিন তুহ্রে তিন তালাক দেওয়া হয়ে থাকে, তাহ’লে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোন উপায় নেই। ইবনু কুদামা বলেন, মতপার্থক্যপূর্ণ বিবাহের ক্ষেত্রে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে। যেমন ওলীর অনুমতি ব্যতীত বিবাহ (আল- মুক্বনি‘ ফী ফিক্বহে ইমাম আহমাদ ১/৩৩৪; ইবনুল মুফলেহ, আল-মুবদী‘ ৬/২৯৯)। ইমাম আহমাদকে এব্যাপারে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, তালাক হয়ে যাবে। অতএব অন্যত্র বিবাহ হওয়ার পর তালাকপ্রাপ্তা না হ’লে ফিরিয়ে নিতে পারবে না (মাসায়েলে ইমাম আহমাদ ২/৩৩৮, মাসআলা নং ৯৭৫)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)ও অনুরূপ ফৎওয়া দিয়েছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৯৯-১০০)।

প্রশ্ন (২৪/৬৪) : সাপ, বানর ইত্যাদি পশু প্রাণীর খেলা দেখিয়ে টাকা উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা কি জায়েয হবে? -তাজমাউল শেখ, সঊদী আরব।
উত্তর : সাপ বিষাক্ত ও ক্ষতিকর প্রাণী। হাদীছে তা দৃষ্টিগোচর হ’লে মারার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে (বুখারী, হা/৩২৩৩, ৩২৯৯)। সুতরাং সাধারণভাবে সাপ পালন করা এবং তা দ্বারা খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা বিদ্বানদের ঐক্যমতে নাজায়েয (আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের ২৮০ পৃ., আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৭/২৮০)। আর বানরও কোন উপকারী প্রাণী নয়। এজন্য বিদ্বানগণ তা পালন করা অপসন্দনীয় এবং নিছক খেল-তামাশার জন্য তা ব্যবহার করা ও পয়সা উপার্জন করা অধিকতর মাকরূহ বলেছেন। তবে কেউ বাড়ী ও পশু পাহারা দেওয়ার জন্য বানর পালন করলে তাতে বাধা নেই (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ৩/৩৫১; মুগনী ৮/৪৮০; আল-ইনছাফ ৪/১৯৮)।
প্রশ্ন (২৫/৬৫) : আমার জানা মতে, আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) সূরা নাস ও ফালাক্বকে কুরআনের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করতেন না। একজন ছাহাবী কর্তৃক এটা কিভাবে সম্ভব?
-আশরাফ, সোনাতলা, বগুড়া।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। বরং কুরআনের সকল সূরা ও আয়াত সমূহ ‘মুতাওয়াতির’। এবিষয়ে কোন ছাহাবীর কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে বিদ্বানগণের বক্তব্য এই যে, তিনি এ সূরা দু’টিকে প্রথমে কুরআনের অংশ হিসাবে মনে করেননি। বরং ঝাড়-ফুঁকের দো‘আ হিসাবে গণ্য করেছিলেন। সেকারণ তাঁর মুছহাফে এটা লেখেননি। পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে একমত হন এবং এটিকে কুরআনের অংশ হিসাবে গণ্য করেন। (বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪৯৭৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২৬/৬৬) : আমার বন্ধু বিবাহের সময় কবরপুজার শিরকে পুরোপুরি লিপ্ত ছিল। অন্যদিকে তার স্ত্রী বিশুদ্ধ আক্বীদাসম্পন্ন ছিল। পরবর্তী সে শিরকী কার্যক্রম থেকে ফিরে আসে। বিবাহের সময় ভ্রষ্ট আক্বীদাসম্পন্ন হওয়ায় এখন পুনরায় বিবাহ পড়াতে হবে কি?
-যিয়াউর রহমান, মহাখালী, ঢাকা।
উত্তর : নতুনভাবে বিবাহের প্রয়োজন নেই। কারণ ইতিপূর্বে তিনি অজ্ঞতাবশে এটি করেছিলেন। যা তওবার কারণে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)। তিনি আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অজ্ঞতাবশে কোন মন্দকাজ করে, অতঃপর যদি সে তওবা করে ও নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে তিনি (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল ও দয়াবান (আন‘আম ৬/৫৪)। রাসূল (ছাঃ) আয়েশাকে বলেন, আর যদি তুমি কোন গুনাহে জড়িয়ে গিয়ে থাক, তাহ’লে আল্লাহর নিকট তওবা ও ইসতিগফার কর। কেননা বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তাওবা কবূল করেন (বুখারী হা/৪৭৫০; মুসলিম হা/২৭৭০)।
প্রশ্ন (২৭/৬৭) : রাসূল (ছাঃ) পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। এক্ষণে চা, কফি ফুঁ দিয়ে পান করা যাবে কি? -আবু সাঈদ, দক্ষিণ সালনা, গাযীপুর।
উত্তর : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন (তিরমিযী হা/১৮৮৮; মিশকাত হা/৪২৭৭, সনদ ছহীহ)। পানীয়তে ফুঁ দিলে তাতে নিঃশ্বাস থেকে নিঃসৃত জীবাণু মিশ্রিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্যই সম্ভবত রাসূল (ছাঃ) এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন (উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন, ৪/২৪৪)। অতএব গরম চা বা কফি ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে হ’লেও ফুঁ না দেয়াই উত্তম। শায়খ উছায়মীন বলেন, পানীয় ঠান্ডা করার জন্য ফুঁ দেওয়া প্রয়োজন সাপেক্ষে জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কতিপয় বিদ্বান মত দিয়েছেন। তবে উত্তম হচ্ছে পরিহার করা। খাদ্য গরম হ’লে অন্য পন্থায় ঠান্ডা করা যেতে পারে (শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ৪/২৪৪-৪৫)।
প্রশ্ন (২৮/৬৮) : ‘আমার উম্মতের মধ্যে সবার আগে আমি মদীনাবাসীর জন্য শাফা‘আত করব, অতঃপর মক্কাবাসীর, অতঃপর ত্বায়েফবাসীর জন্য’-মর্মে ত্বাবারাণীতে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি? -রোকনুয্যামান, সরকারী আযীযুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। কারণ এর সনদে কাসেম, ইবনু যুহায়ের ও হামযা নামে তিনজন অপরিচিত বর্ণনকারী রয়েছে (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৮২৭; আলবানী, যঈফাহ হা/৬৮২)।
প্রশ্ন (২৯/৬৯) : তেল বা সুগন্ধি ব্যবহার করা কি সুন্নাত? -মিনহাজ পারভেয, হড়গ্রাম, , রাজশাহী। রাজশাহী।
উত্তর : তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করা রাসূল (ছাঃ)-এর অভ্যাসগত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও আতরকে প্রিয় করা হয়েছে’ (আহমাদ হা/১২৩১৫; নাসাঈ হা/৩৯৩৯, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১২৪)। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এক ধরনের মিশ্রিত খোশবু ছিল, যা তিনি সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করতেন (আবূদাউদ হা/৪১৬২; মিশকাত হা/৪৪৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮৩১)। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কখনো সুগন্ধি দ্রব্য ফিরিয়ে দিতেন না (বুখারী হা/২৫৮২; মিশকাত হা/৩০১৭)। অন্যদিকে রাসূল (ছাঃ) নিজে তেল ব্যবহার করতেন এবং অপরকে ব্যবহার করতে বলতেন (মুসলিম হা/২৩৪৪; তিরমিযী হা/১৮৫১; ইবনু মাজাহ হা/৩৩১৯; মিশকাত হা/৪২২১)।
প্রশ্ন (৩০/৭০) : তিনবেলা খাদ্যগ্রহণের সুন্নাতী কোন সময় রয়েছে কি? -ছাকিবুল ইসলাম, রাজশাহী।
উত্তর : এরূপ কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। যখনই ক্ষুধা অনুভব করবে তখনই খাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ দিনে-রাতে সাধারণত দু’বেলা খাবার গ্রহণ করতেন। যেমন আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গ একদিনে দু’বেলা খানা খেলে একবেলা শুধু খেজুর খেয়েই কাটিয়ে দিতেন (বুখারী হা/৬৪৫৫)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পরিবার অনেক সময় এক বেলা খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিতেন। আর দু’বেলা খাওয়ার সুযোগ হ’লে একবেলা খেতেন খেজুর (ফাৎহুল বারী ১১/২৯২)।

প্রশ্ন (৩১/৭১) : কিছু কিছু মসজিদে যুবকদের মসজিদমুখী করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেমন একটানা ৪০ দিন জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে পুরস্কারের ব্যবস্থা। এরূপ করা জায়েয হবে কি? -শামীম, পাইকগাছা, খুল না। না।
উত্তর : যে কোন সৎকাজে উৎসাহমূলক পুরস্কার দেওয়া যায়। কেননা এতে লোকেরা ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত হয় (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফুরুসিয়া ৩১৮ পৃ.; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৫/১৭৯, ১৮৯)। আল্লাহ বলেন, ‘আর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৬)। তিনি আরো বলেন, ‘এরূপ (পরকালীন) সাফল্যের জন্যই (দুনিয়াতে) আমলকারীদের আমল করা উচিৎ’ (ছাফফাত ৩৭/৬১)।
প্রশ্ন (৩২/৭২) : জনৈক আলেম বলেন, পশ্চিম দিকে মাথা রেখে স্ত্রী সহবাস করা নাজায়েয। এটা কি দলীল সম্মত?
উত্তর : বক্তব্যটি দলীল সম্মত নয়। কেননা এ বিষয়ে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখিত হয়নি (ফাতাওয়া ইমাম নববী ১৯০-১৯১ পৃ.)।

-রাশীদুল হাসান, গাযীপুর।
প্রশ্ন (৩৩/৭৩) : ইমাম মেহরাবের ভিতরে না বাইরে দাঁড়াবে? এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাধিত করবেন। -আবু যর গিফারী, গোমস্তাপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ইমাম মেহরাবের ভেতরে বা বাইরে যে কোন স্থানে সুবিধামত দাঁড়াতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, পিছনের মুছল্লীগণ যেন ইমামকে দেখতে পায় (মিতালিবু উলিন নুহা ১/৬৯৬; আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/২৭৫)।
-রাশীদুল হাসান, গাযীপুর।
প্রশ্ন (৩৪/৭৪) : আমার আপন ভাই নানা প্রকার সূদী ঋণ নিয়ে বেশুমার খরচ করে এখন ঋণগ্রস্ত। একই সাথে তার নেশাখোর সন্তান নানাভাবে বহু অর্থ নষ্ট করে চলেছে। এক্ষণে তার ঋণমুক্তির জন্য আমরা ভাই-বোনেরা যাকাতের টাকা প্রদান করলে তা জায়েয হবে কি? উল্লেখ্য যে, বিষয়টি স্বভাবগত হওয়ায় হয়তবা সে আবারো ঋণগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায় করণীয় কি? -রূহুল হাসান, ধানমন্ডি, ঢাকা।
উত্তর : যাকাতের অর্থ থেকে ঋণগ্রস্ত ভাইকে দেওয়া যাবে (তাওবাহ ৯/৬০)। বরং আত্মীয়কে দিলে দ্বিগুণ ছওয়াব হবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মিসকীনকে ছাদাক্বা দিলে একটি নেকী হয়। কিন্তু সে যদি রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় হয়, তবে নেকী দ্বিগুণ হয়। এক- ছাদাক্বা এবং দুই-আত্মীয়তা (আহমাদ, তিরমিযী প্রভৃতি, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৯৩৯ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘শ্রেষ্ঠতম ছাদাক্বা’ অনুচ্ছেদ)। দু’জন মহিলা ছাহাবীকে নিজ নিজ দরিদ্র স্বামীকে ছাদাক্বা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, ‘তাদের জন্য দু’টির পুরস্কার রয়েছে : (১) আত্মীয়তার পুরস্কার (২) ছাদাক্বার পুরস্কার’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৩৪)। তবে প্রশ্নোল্লেখিত ভাইকে যাকাত প্রদান করলে যদি সে আবারও সূদী লেনদেনসহ আরও অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে তাকে যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাপ এবং সীমালংঘনের কাজে কাউকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। এমতাবস্থায় পাপ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার করলে তবেই তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে, নইলে নয়।
প্রশ্ন (৩৫/৭৫) : রাতে স্বপ্নদোষ হ’লেও বুঝতে না পারায় ওযূ করে ফজরের ছালাত আদায় করে নিয়েছে। পরবর্তীতে বুঝতে পারলে তখন করণীয় কি? -মেহেদী হাসান, কালি গাংনী, মেহেরপুর।
উত্তর : পরবর্তীতে বুঝতে পারলে গোসল করে উক্ত ছালাতের ক্বাযা আদায় করবে। কারণ অপবিত্র অবস্থায় ছালাত কবুল হয় না (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০০, ৩০১; উছায়মীন, মাজমূ ফাতাওয়া ১১/১৫৯, ১৬৬)। আয়েশা (রাঃ বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সে স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ করতে পারছে না, অথচ তার কাপড় (বীর্যপাতের কারণে) ভিজা মনে হয়। জবাবে তিনি বলেন, তাকে গোসল করতে হবে। অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু তার কাপড়ে কোন চিহ্ন দেখতে পায় না। জবাবে তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির গোসল করার প্রয়োজন নেই (আবূদাঊদ হা/২৩৬; মিশকাত হা/৪৪১, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩৬/৭৬) : আমার মা মারা যাওয়ায় পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন। আমার প্রতি তার বর্তমান আচরণ খুবই কষ্টকর। এক্ষণে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে পৃথকভাবে বসবাস করলে আমি গুনাহগার হব কি? -মা‘ছূম বিল্লাহ, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : আচরণ খারাপের কারণে পিতাকে ত্যাগ করা যাবে না। কারণ পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি (তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬)। আর আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদাচরণ করবে’ (লোকমান ৩১/১৫)। এক্ষণে পিতাকে তার খারাপ আচরণের বিষয়ে অবগত করতে হবে। নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে জানাতে হবে এবং পিতার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে। এরপরেও পিতা খারাপ আচরণ অব্যাহত রাখলে উত্তমভাবে আলাদা হয়ে যাবে। তবে পরকালীন স্বার্থকে সামনে রেখে পিতার হক আদায় করে যেতে হবে।
প্রশ্ন (৩৭/৭৭) : জীবিত বা মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করার ব্যাপারে শরী‘আতে কোন অনুমোদন আছে কি? -মুহাম্মাদ ফরহাদ, টঙ্গী, গাযীপুর।
উত্তর : জীবিত বা মৃত কারো পক্ষ থেকে কেবল তাওয়াফ করা ও এর ছওয়াব অন্যের জন্য বখশে দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ তওয়াফ ছালাতের মত (নাসাঈ হা/২৯২২)। আর ছালাতের মত শারঈ ইবাদত অন্যের পক্ষ থেকে আদায় করা যায় না। সুতরাং কেবলমাত্র কেউ যদি কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ বা ওমরাহ পালন করে, তাহ’লে সেটা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/২৩৬; বিন বায, মাজমূ ফাতাওয়া ৪/৩৩৪)।
প্রশ্ন (৩৮/৭৮) : চেয়ারে বসে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অপর মুছল্লীর সাথে পায়ে পা লাগাতে হবে কি? -কিফায়াতুল্লাহ, গোমস্তাপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এক্ষত্রে এমন চেয়ার ব্যবহার করা উচিৎ যাতে একজন মানুষের জায়গা দখল করে। আর পাশে যারা দাঁড়াবে চেয়ারের সাথে ঘেষে দাঁড়াবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) পায়ে সাথে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে বলেছেন (আবূদাঊদ হা/৬৬২)। এক্ষণে পুরো ছালাত বসে আদায় করলে চেয়ার কাতার বরাবর রাখবে। আর কিছু দাঁড়িয়ে কিছু বসে আদায় করলে ছোট চেয়ার ব্যবহার করবে (আসনাইল মাতালিব ১/২২২; তোহফাতুল মুহতাজ ২/১৫৭)। তবে মুছল্লীর জন্য উচিত হবে সাধ্যমত দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা এবং সিজদার সময় চেয়ার সামনে টেনে নেয়া। যাতে পিছনের মুছল্লীর সিজদা দিতে সমস্যা না হয়।
প্রশ্ন (৩৯/৭৯) : আমার মামাতো বোন ৩ বছর বয়সে আমার মায়ের দুধ পান করেছে। এক্ষণে সে কি আমার দুধবোন হিসাবে গণ্য হবে? তাকে বিবাহ করা যাবে কি?
-হযরত আলী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাযীপুর।
উত্তর : সে দুধবোন হিসাবে গণ্য হবে না। কারণ সে দুধপান করার সময় (২ বছর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর তা পান করেছে (তিরমিযী হা/১১৫২; মিশকাত হা/৩১৭৩)। দুধ মাতা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত। ১. দু’বছরের কম বয়সে দুধ পান করতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৩৩; দারাকুৎনী হা/৪৪১৩, ৪৩৬৫)। ২. পাঁচবারে দুধ পান করতে হবে (মুসলিম হা/১৪৫২; মিশকাত হা/৩১৬৭; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৯৭)। এক্ষণে সে দুধবোন সাব্যস্ত না হওয়ায় তাকে বিবাহ করাতে বাধা নেই।
প্রশ্ন (৪০/৮০) : লাইলী-মজনু নিয়ে সমাজে প্রচলিত কাহিনীসমূহের কোন ভিত্তি আছে কি? তাদের জান্নাতে বিবাহ হওয়ার বিষয়টির সত্যতা আছে কি?
-রায়হানুদ্দীন, চৌগাছা, যশোর।
উত্তর : লাইলী-মজনু খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে রচিত বিখ্যাত প্রেমমূলক কাব্যকাহিনীর দু’টি প্রধান চরিত্রের নাম। তাদের প্রেমের ঘটনাকে উপলক্ষ করে লায়লী-মজনু নামে খ্যাতনামা সুন্নী মুসলিম ফার্সী কবি নিযামী গাঞ্জাবী (১১৪১-১২০৯ খৃ.) মহাকাব্য রচনা করেন। মজনু ও লায়লা উভয়ে শৈশবকালে মেষ চরানোর সময় পরস্পরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাদের পরিবার তাদের বিয়েতে আপত্তি করে। ফলে মজনু লায়লার প্রেমে পাগল হয়ে ঘুরতে থাকেন ও অবশেষে মজনু (পাগল) নামেই বিখ্যাত কবি হিসাবে পরিচিত হন।
মজনুর প্রকৃত নাম সম্বন্ধে মতভেদ রয়েছে। যেমন ক্বায়েস বিন মুলাউয়াহ, বাখতারী বিন জা‘দ বা অন্য কিছু। তার গোত্রের নাম বনূ ‘আমের বিন ছা‘ছা‘আহ অথবা বনূ কা‘ব বিন সা‘দ। প্রেমিকা লায়লার নাম লায়লা বিনতে মাহদী আল-‘আমেরিয়াহ। আবু ওবায়দাহ বলেন, প্রেমে মত্ত হয়ে তিনি পাগল হয়ে যান। কথিত আছে যে, লায়লার গোত্র বাদশাহর নিকট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করে। ফলে বাদশাহ তার রক্ত মূল্যহীন ঘোষণা করেন। লায়লার গোত্র তাকে বাড়ী নিয়ে যায়। অন্যদিকে মজনু তার গোত্রে গিয়ে লায়লার প্রেমে আত্মহারা হয়ে কবিতা গাইতে থাকে। যা ছিল গভীর প্রেমমূলক। যা ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেমকাব্য হিসাবে স্থান পেয়েছে। পাগলপারা হয়ে মজনু কখনো নাজদে, কখনো শামে ও কখনো হিজাযে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে। একসময় তার মৃতদেহ বড় বড় পাথরসমূহের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। যা তার গোত্রের লোকেরা উঠিয়ে নিয়ে যায় (তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট)।
লায়লী-মজনুর এই ঘটনা ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া ও আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ)-এর শাসনকালে সংঘটিত হয়। যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি.) বলেন, লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনীকে অনেকে ভিত্তিহীন বলেছেন। তবে তারা তাদের দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করেননি (যাহাবী, সিয়ারু অ‘'লামিন নুবালা ৪/৫১১)। আরবী সাহিত্য সমালোচক ড. ত্বহা হোসাইন (১৩০৬-১৩৯৩ হি.) মনে করেন, লায়লী-মজনু নামে কিছুই নেই। বরং এগুলি বিভিন্ন যুগের কবিদের কল্পনা প্রসূত নাম। কবিগণ নিজেদের মজনু কল্পনা করে ও প্রেমিকাদের লায়লা ভেবে কবিতা রচনা করেছেন (হাদীছুল আরবি‘আ ১/১৭৪-১৮০)।  কিছু মানুষের ধারণা জান্নাতে তাদের বিবাহ হবে। এগুলি   স্রেফ কল্পকাহিনী। যার কোন ভিত্তি নেই।

ডিসেম্বর/২০১৮

  প্রশ্ন (১/৮১) : ঈসা (আঃ)-এর পর খালিদ বিন সিনান নামে কোন নবী এসেছিলেন কি? তার বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাই। -আলতাফ হোসাইন, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : এ মর্মে তাফসীর গ্রন্থসমূহে কিছু বর্ণনা পাওয়া গেলেও সেগুলির সূত্র যঈফ ও মুনকার (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৭৯-২৮১)। এছাড়া বিষয়টি কুরআন ও ছহীহ হাদীছেরও বিরোধী। কেননা ঈসা (আঃ) তাঁর পরবর্তী যে নবী সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন তিনি ছিলেন ‘আহমাদ’ (ছাফ ৬১/০৬)। অত্র আয়াতে ঈসার পরে নবী হিসাবে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি আহমাদ বা মুহাম্মাদ (ছাঃ)। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের সাথে সম্পর্কের দিক দিয়ে লোকদের মধ্যে আমিই সর্বোত্তম। কারণ নবীগণ পিতার দিক দিয়ে ভাই ভাই। আমার ও তার মধ্যে কোন নবী নেই’ (বুখারী হা/৩৪৪২;  মুসলিম হা/২৩৬৫, নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১০৪-৫)। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এই হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈসা (আঃ)-এর পর খালিদ বিন সিনান নামে কোন নবীর আগমন ঘটেনি, যেমনটি কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন (তাফসীর ইবনু কাছীর, তাফসীর আহযাব ৪০ আয়াত)।
  প্রশ্ন (২/৮২) : হাদীছে এস্তেঞ্জার সময় তিনটির কম ঢিলা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এক্ষণে টিস্যুপেপারও কি তিনবার ব্যবহার করতে হবে?-সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ।
উত্তর : এস্তেঞ্জার সময় কমপক্ষে তিনটি ঢিলা ব্যবহার করা আবশ্যক (মুসলিম হা/২৬২; আহমাদ হা/৭৪০৯; আবূ দাউদ হা/৮)। সুতরাং টিস্যু বা অনুরূপ কিছু ব্যবহার করলেও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য কমপক্ষে তিন বার ব্যবহার করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ৫/১২৫)। যদিও ইমাম মালেক ও দাউদ প্রমুখ মতপ্রকাশ করেন যে, বস্ত্তর সংখ্যা নয় বরং পরিচ্ছন্নতা অর্জনই শর্ত; তবে জমহূর বিদ্বানগণের মতে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ মোতাবেক সংখ্যাও সমানভাবে বিবেচ্য (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১০৪-৫)। উল্লেখ্য যে, পানি পাওয়া গেলে ঢিলা, টিস্যু বা অনুরূপ কিছু ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন (৩/৮৩) : সূদখোর কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী? -আহসানুল্লাহ, নওহাটা, রাজশাহী।
উত্তর : কুরআনে সূদখোরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী ঘোষণা করা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। তবে বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কারণ শিরককারী ব্যতীত অন্য কোন কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না, যা কুরআন ও হাদীছের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সেকারণ বিদ্বানগণ ‘চিরস্থায়ী’ পরিভাষাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। (১)  কুরআন  বা  হাদীছে  কাফিরদের ক্ষেত্রে যখন উক্ত পরিভাষা ব্যবহার করা হয় তখন তার অর্থ হবে সীমাহীন। (২) যখন তাওহীদবাদী পাপাচারীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে তার অর্থ হবে সীমাবদ্ধ। কারণ  খালেছ তাওহীদে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে আল্লাহ তার পাপের শাস্তি দেওয়ার পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার শাফা‘আত প্রাপ্ত সবচাইতে সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে খালেছ অন্তরে বলেছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’  (বুখারী হা/৯৯; মিশকাত হা/৫৫৭৪)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হ’ল মুসলিম পাপাচারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না, যেমনটি খারেজী ও মু‘তাযিলারা ধারণা করে থাকেন’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৬৭৯)।
প্রশ্ন (৪/৮৪) : আমার এক ছেলে অনেক ঋণের মধ্যে পড়েছে যা পরিশোধ করতে ২ বিঘা জমি বিক্রয় করতে হবে। এক্ষণে অন্য সন্তানদের অবহিত না করে আমার স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে তার ঋণ পরিশোধ করা জায়েয হবে কী?। -মুনীরুল ইসলাম, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : কোন সন্তান বিপদগ্রস্ত বা ঋণী হ’লে বিপদমুক্তি ও ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করতে বাধা নেই এবং এতে অন্য সন্তানদের সম্মতি থাকা অপরিহার্য নয়। কেননা বিপদগ্রস্ত সন্তানকে সহযোগিতা করা পিতার দায়িত্ব এবং তা ন্যায়বিচারেরই অন্তর্ভুক্ত। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর মতে, ঋণগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত সন্তানকে সহযোগিতা করলে বিপরীতে অন্য সন্তানদেরকে অনুরূপ সম্পদ প্রদান করা আবশ্যক নয় (আল-ইখতিয়ারাত ১/৫১৬; তায়সীরুল আল্লাম ফী শারহে ঊমদাতিল আহকাম ১/৫৪৩)।
প্রশ্ন (৫/৮৫) : আমার ভাই-ভাতিজা পুরোপুরি কবরপূজারী মুশরিক। তাই তারা আমার সম্পত্তিতে অংশীদার হবে ভেবে আমি আমার তিন মেয়ের নামে সকল সম্পদ লিখে দিয়েছি। এটা জায়েয হয়েছে কি? কবরপূজারীরা সম্পদের অংশীদার হবে কি?
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন, নিজখামার, খুলনা।
উত্তর : কোন মুসলমান কবরপূজারী হ’লে সে নিঃসন্দেহে শিরককারী ও কবীরা গোনাহগার। কিন্তু প্রকাশ্যে কালেমা শাহাদতকে অস্বীকার করেনি বিধায় সে প্রকৃত কাফির গণ্য হবে না এবং তার অন্তরের পাপের হিসাব আল্লাহর উপরেই ন্যস্ত হবে (বুখারী হা/২৫; মুসলিম হা/২১-২২; মিশকাত হা/১২)। সুতরাং সে অন্যান্যদের মত সম্পত্তির ওয়ারিছ হবে এবং তাকে বঞ্চিত করে কন্যাদের সম্পদ লিখে দেয়া যাবে না। কারণ মীরাছের বিধান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত (নিসা ৪/১৩-১৪)। তাছাড়া উক্ত কবরপূজারী যেকোন সময় তওবা করে ফিরেও আসতে পারে। আল্লাহ বলেন, যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসাবে পাবে’ (নিসা ৪/১১০)। তিনি আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অজ্ঞতাবশে কোন মন্দকাজ করে, অতঃপর যদি সে তওবা করে ও নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে তিনি (তার ব্যাপারে) ক্ষমাশীল ও দয়াবান (আন‘আম ৬/৫৪)। অবশ্য অনেক বিদ্বান এরূপ কবরপূজারীরা তওবা না করলে ওয়ারিছ হবে না মর্মে মত প্রকাশ করেছেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/১৮১)।
প্রশ্ন (৬/৮৬) : ত্বাওয়াফরত অবস্থায় ওযূ ভেঙ্গে গেলে করণীয় কী? -মহীদুল ইসলাম, রাজবাড়ী।
উত্তর : এমতাবস্থায় ওযূ করে পুনরায় ত্বাওয়াফ শুরু করা উত্তম। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছালাতের মতই। কিন্তু তাতে তোমরা কথা বলতে পারো (তিরমিযী হা/৯৬০; মিশকাত হা/২৫৭৬)। তবে ভিড়ের কারণে ওযূ করা কষ্টকর হ’লে ঐ অবস্থায় ত্বাওয়াফ শেষ করবেন এবং এর ক্বাযা করতে হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/২১১-১৩; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৩০০)। উল্লেখ্য যে, এরূপ অবস্থায় শেষের দু’রাক‘আত নফল ছালাত পুনরায় ওযূ করে হারামের যেকোন স্থানে পড়ে নিতে হবে (দ্রঃ হজ্জ ও ওমরাহ ৪র্থ সংস্করণ পৃঃ ৬৩)।
প্রশ্ন (৭/৮৭) : মারিয়া ক্বিবত্বিয়া কি রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন? এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই।-হাসান, দিনাজপুর।
উত্তর : স্ত্রী নন, বরং দাসী ছিলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর মোট চারজন দাসী ছিলেন, যাদের মধ্যে মারিয়াহ ক্বিবত্বিয়া ছিলেন অন্যতম (যাদুল মা‘আদ ১/১১০, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭৫৯ পৃ.)। তিনি ছিলেন মিসরীয় বংশোদ্ভূত। তাঁর গর্ভে রাসূল (ছাঃ)-এর  শেষ সন্তান ইব্রাহীম জন্ম নেওয়ায় তিনি মুক্ত হন এবং উম্মে ওয়ালাদের মর্যাদা লাভ করেন। তবে স্ত্রী নন। পুত্র সন্তানটি দুধ ছাড়ার আগেই মাত্র ১৮ মাস বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন (বুখারী হা/১০৬০; মুসলিম হা/৯০৬; রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/৯৮ পৃ.)।
প্রশ্ন (৮/৮৮) : মূসা (আঃ) মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত হওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সত্যতা আছে কি? -ছাকিব, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে হাদীছ ও তাফসীর গ্রন্থে কিছু বর্ণনা এসেছে, যার কোনটি জাল এবং কোনটি যঈফ (আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/৬৯৬; হাকেম হা/৪২৩১; ইবনুল জাওযী, মাওযূ‘আত ১/২০০)।
প্রশ্ন (৯/৮৯) : ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ গ্রন্থটির লেখক কে? গ্রন্থটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। -আব্দুর রহমান, দিনাজপুর।
উত্তর : গ্রন্থটির প্রকৃত নাম ‘তালখীছুল হাবীর ফী তাখরীজি আহাদীছির রাফেঈ আল-কাবীর’। তবে সাখাভী ও বেক্বাঈ  ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ নাম বলেছেন। এটি সংকলন করেছেন হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)। ৪ খন্ডে বিভক্ত এ গ্রন্থটি শাফেঈ মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিক্বহ গ্রন্থ ‘আশ-শারহুল কাবীর’ (যেটি ইমাম গাযালীর ‘আল-ওয়াজীয’ কিতাবের ব্যাখ্যা)-এর তাখরীজ গ্রন্থ। মূল কিতাবের সংকলক ইমাম আবুল কাসেম আর-রাফেঈ (মৃ. ৬২৩হিঃ)। তিনি এই কিতাবে ‘আহকাম’ সংক্রান্ত হাদীছসমূহ সংকলন করেছেন (তালখীছুল হাবীর, মুক্বাদ্দামা ১/১১৫-১১৬)। হাদীছ ও ফিক্বহ শাস্ত্রের পাঠক ও গবেষকদের জন্য কিতাবটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন (১০/৯০) : জিন জাতি পথভ্রষ্ট হয়েছিল বলে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু তখন তো ইবলীস ছিল না। তাহ’লে তাদেরকে কে বা কারা পথভ্রষ্ট করেছিল? মানবজাতির পূর্বে তারাই কি যমীনের অধিবাসী ছিল?-আশরাফুল ইসলাম, মেহেরপুর।
উত্তর : জিনদের কে বা কারা পথভ্রষ্ট করেছিল এবং কিভাবে তারা ধ্বংস হয়েছিল সে ব্যাপারে কুরআনে বা হাদীছে কিছু বর্ণিত হয়নি। তবে মানবজাতির পূর্বে যে জিনদের বসবাস ছিল, সেটি ফেরেশতাদের উত্তরে বুঝা যায়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তখন তারা বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে কেবল অশান্তি সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরাই সর্বদা আপনার গুণগান করছি ও আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না’ (বাক্বারাহ ২/৩০)।
আর তারা যে জিন জাতিই ছিল, সেটা অনুমান করা যায়। কেননা মানবজাতির পূর্বে সৃষ্ট ইবলীসের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেন, সে ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত (কাহফ ১৮/৫০)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যমীনের প্রথম বসবাসকারী হ’ল জিন জাতি। তারা সেখানে বিপর্যয় ঘটায়, রক্তপাত করে ও একে অপরকে হত্যা করে। এদের বিরুদ্ধে ইবলীসকে প্রেরণ করা হয়। পরে ইবলীস ফেরেশতাদের সহায়তায় জিনদের হত্যা করে এবং তাদের কাউকে পাহাড়ী অঞ্চলে তাড়িয়ে দেয় (তাফসীরে তাবারী হা/৬০১; ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ৩০ আয়াত)।
প্রশ্ন (১১/৯১) : কেউ যদি স্ত্রীকে বলে, ‘চলে যাও, তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই’। তাহ’লে কি এটা তালাক হয় যাবে? কেনায়া তালাক বলতে কি বুঝায়? -আব্দুর রশীদ, রংপুর।
উত্তর : যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর তালাকের নিয়তসহ এরূপ ইঙ্গিতবহ বাক্য উল্লেখ করে তালাক প্রদান করাকে ‘কেনায়া তালাক’ বলে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩০২)। যেমন আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, জাওনের কন্যাকে (ابْنَةُ الْجَوْنِ) যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট একটি ঘরে পাঠানো হ’ল আর তিনি তার নিকটবর্তী হ’লেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও’ (বুখারী হা/৫২৫৪; ইবনু মাজাহ হা/২০৫০)। আর এটাই ছিল তার জন্য তালাক।
প্রশ্ন (১২/৯২) : তিনটি মসজিদ ব্যতীত আর কোন মসজিদে নেকীর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা হারাম। কিন্তু মসজিদে ক্বোবায় গেলে ওমরাহ করার সমান নেকী পাওয়া যায়। এখন কেউ যদি মসজিদে ক্বোবায় নেকীর উদ্দেশ্যে গমন করে তাহ’লে কি সেটা হারাম কাজ হবে?
-ওবায়দুল্লাহ, দিনাজপুর।
উত্তর : দূর-দূরান্ত থেকে স্রেফ মসজিদে ক্বোবার ফযীলত লাভের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। এই ফযীলত কেবল অত্র মসজিদের আশ-পাশে বসবাসকারী বা অবস্থানকারীদের জন্য (ইবনু তায়মিয়াহ, ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২/৩৪০-৩৪৪)। মসজিদে ক্বোবায় ছালাত আদায়ের বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর ক্বোবা মসজিদে এসে এক ওয়াক্ত ছালাত পড়ে, তার জন্য একটি ওমরার সমান ছওয়াব রয়েছে’ (ইবনু মাজাহ হা/১৪১২; ছহীহুত তারগীব/১১৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৫৪)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে ক্বোবায় আসবে। তারপর এখানে ছালাত পড়বে। সেটি হবে তার জন্য একটি ওমরার সমতুল্য (নাসাঈ হা/৬৯৯; ছহীহাহ হা/৩৪৪৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতি শনিবার ক্বোবায় আসতেন। তিনি বাহনে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে এখানে আসতেন। ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ)ও অনুরূপ আমল করতেন (বুখারী হা/৭৩২৬; মুসলিম হা/১৩৯৯)। সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাসে ছালাত আদায় অপেক্ষা মসজিদে ক্বোবায় ছালাত আদায় করা আমার নিকট অধিক প্রিয় (হাকেম হা/৪২৮০; ছহীহুত তারগীব হা/১১৮৩)। অতএব কেউ মদীনায় অবস্থান করলে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বা বাহনে চড়ে মসজিদে ক্বোবায় গিয়ে ছালাত আদায় করতে পারেন, যেমনটি রাসূল (ছাঃ) করতেন। কিন্তু অন্য কোন শহর থেকে কেবল এই উদ্দেশ্যে আগমন করা যাবে না।
প্রশ্ন (১৩/৯৩) : ওযূ অবস্থায় শরীরে বা কাপড়ে কুকুরের স্পর্শ লাগলে ওযূ ভেঙ্গে যাবে কি? এমতাবস্থায় করণীয় কি? -আব্দুল্লাহ, রাজশাহী।
উত্তর : পরিচ্ছন্ন কুকুরের স্পর্শ লাগা ওযূ ভঙ্গের কারণ নয় এবং এ অবস্থায় পুনরায় ওযূ করার প্রয়োজন নেই। তবে কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা অপবিত্র হয়ে যায় এবং তা সাতবার পানি দিয়ে ধৌত করতে হয়। কেননা তার লালা অপবিত্র (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৭৯-১৮০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৫/৩৮০)। 
প্রশ্ন (১৪/৯৪) : সুস্থ ব্যক্তির পক্ষ থেকে ওমরাহ পালন করা যাবে কি?
-ওমর ফারূক, গোমস্তাপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর :  ওমরাহ নফল ইবাদত। আর শরী‘আতে কেবল ফরয বিধানের ক্ষেত্রে কারও পক্ষে বদলী ইবাদত করার অনুমতি রয়েছে, নফলের ক্ষেত্রে নয়। সুতরাং বিশুদ্ধ মতে তা সক্ষম বা অক্ষম কারো পক্ষ থেকেই আদায় করা জায়েয নয় (উছায়মীন, মাজমূ ফাতাওয়া ২১/১৪১; দ্রঃ হজ্জ ও ওমরাহ ৪র্থ সংস্করণ পৃঃ ২৪)।
প্রশ্ন (১৫/৯৫) : সূরা মুল্ক তেলাওয়াতের ফযীলত জানতে চাই। -হাসীন আবরার, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর : সূরা মুল্ক তেলাওয়াতকারীর জন্য কুরআন সুফারিশ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কুরআনে একটি সূরা আছে যাতে ত্রিশটি আয়াত আছে যেটি তার পাঠকারীর পক্ষে সুফারিশ করবে এবং তার সুফারিশেই তাকে জান্নাত প্রদান করা হবে। সেটি হ’ল সূরা মুল্ক (তাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৬৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৪৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সূরা মুলক কবরের আযাব থেকে বাধাদানকারী’ (ছহীহাহ হা/১১৪০; ছহীহুল জামে হা/৩৬৪৩)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, যখন মাইয়েতকে কবরে রাখা হবে এবং মাটি সবদিকে থেকে চাপ দিবে, তখন সূরা মূলক সবদিক থেকে মাটিকে প্রতিহত করবে (হাকেম হা/৩৮৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৭৫)। উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত মর্যাদা পেতে হ’লে নিয়মিত পাঠ করার পাশাপাশি তদনুযায়ী আমল করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৩৩৪-৩৫)।
প্রশ্ন (১৬/৯৬) : কয়েনের বিনিময়ে অধিক টাকা গ্রহণ বা ছেঁড়া টাকার বিনিময় হিসাবে কম টাকা প্রদানের ব্যবসা করা যাবে কি? -আব্দুল হালীম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : এধরনের ব্যবসা করা জায়েয নয়। কারণ ইসলামী শরী‘আতে সম মানসম্পন্ন একই দ্রব্য কমবেশীতে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সমান পরিমাণ ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রি করবে না, একটি অপরটি হ’তে কম-বেশী করবে না। সমান ছাড়া তোমরা রূপার বদলে রূপা বিক্রি করবে না ও একটি অপরটি হ’তে কম-বেশী করবে না। আর নগদ মুদ্রার বিনিময়ে বাকী মুদ্রা বিক্রি করবে না (বুখারী হা/২১৭৭; মিশকাত হা/২৮১০)। কেউ কমবেশী করে এমন বস্ত্ত ক্রয়-বিক্রয় করলে তা সূদ হিসাবে গণ্য হবে, যা হারাম (ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ ৪/৮৩)।

প্রশ্ন (১৭/৯৭) : ‘আমার প্রতি দরূদ পাঠের সংখ্যা যার যত বেশী হবে জান্নাতে তার তত বেশী স্ত্রী হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-মুহাম্মদ রফীকুল ইসলাম, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত মর্মে সনদবিহীন কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন ইবনুল জাওযী বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমার প্রতি দরূদের সংখ্যা যার যত বেশী হবে জান্নাতে তার তত বেশী স্ত্রী হবে (বুস্তানুল ওয়ায়েযীন ১/২৯৩)। কিন্তু তিনি কোন সনদ উল্লেখ করেননি। অনুরূপভাবে সাখাভী ও ইবনু হাজার হায়তামী বর্ণনাটি তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে উল্লেখ করলেও তারা কোন সনদ উল্লেখ করেননি। পরে তারা বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত আমরা এর সনদ সম্পর্কে জানতে পারিনি (আদ-দুর্রুল মানযূদ ১৭৪ পৃ.; আল-ক্বাওলুল বাদী‘ ১/১৩২)। সুতরাং হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (১৮/৯৮) : আমি বিবাহের সময় মোহরানা দিতে পারিনি। কয়েক বছর পর আমার স্ত্রীর জন্য একটি স্বর্ণের গহনা তৈরী করে তাকে দেই। কিন্তু দেওয়ার সময় মোহরানা হিসাবে দেওয়ার নিয়ত ছিল না। পরে তাকে বলি এটি তোমার মোহরানা একটি অংশ। এক্ষণে নিয়ত পরিবর্তন করে মোহরানা পরিশোধ করা যাবে কী?
-মুহাম্মাদ হোসাইন চৌধুরী, রূহুল্লাহ চৌধুরীবাড়ী, কর্নেলহাট, চট্টগ্রাম।
উত্তর : স্ত্রী রাযী থাকলে তা মোহরানা হিসাবেই গণ্য হবে। নিয়ত পরিবর্তন মূখ্য বিষয় নয়; বরং স্ত্রীর সম্মতি থাকাটিই মুখ্য বিষয়। কারণ মোহরানার মালিক স্ত্রী। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর (নিসা ৪/৪; বাক্বারাহ ২/২৩৭)। উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের ভিত্তিতে ইবনু কুদামাহ বলেন, স্ত্রী যদি তার অধিকারভুক্ত মোহর সন্তুষ্টি চিত্তে পুরোটা বা কিছু অংশ মাফ করে দেয় বা গ্রহণের পর স্বামীকে দান করে তবে জায়েয এবং শুদ্ধ। এ ব্যাপারে কোন মতভেদ আছে বলে আমার জানা নেই (আল-মুগনী ৭/২৫৫)।
প্রশ্ন (১৯/৯৯) : ‘তোমাদের প্রত্যেকে মৃত্যুবরণ করবে। তবে সৎ ব্যক্তিদের আগে উঠিয়ে নেওয়া হবে’ মর্মে হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই। -আহমাদুল্লাহ, নীলফামারী।
উত্তর : হুবহু উক্ত শব্দে হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে এর কাছাকাছি অর্থে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের বাছাই করা হবে, যেভাবে ভালো খেজুর মন্দ খেজুর থেকে বাছাই করা হয়। তোমাদের মধ্যকার নেককার লোকগুলো বিদায় নিবে এবং মন্দ লোকগুলো অবশিষ্ট থাকবে। অতএব সম্ভব হ’লে তোমরাও মৃত্যুবরণ কর (মৃত্যুকে শ্রেয় মনে কর) (ইবনু মাজাহ হা/৪০৩৮; ছহীহাহ হা/১৭৮১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে কিছু পাকা ও কিছু তাযা খেজুর দেওয়া হ’ল। তারা ভালো খেজুরগুলো খেয়ে ফেললেন। যখন কেবল আটি ও মূল্যহীন বস্ত্তগুলো পড়ে রইল তখন তিনি বললেন, তোমরা জানো এগুলো কি? তোমাদের ভালোরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবে। কেবল বাকী থাকবে তারা যারা এগুলোর (অাঁটির) মত মূল্যহীন (হাকেম হা/৮৩৩৬; ছহীহাহ হা/১৭৮১)। এরূপ ঘটনা ঘটবে ঈসা (আঃ)-এর দুনিয়া থেকে প্রস্থানের পর। পরিস্থিতি এমন হবে যে ‘আল্লাহ’ বলার মত কোন লোক থাকবে না। আর তখনই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে (মুসলিম হা/১৪৮; মিশকতা হা/৫৫১৬; ফায়যুল ক্বাদীর হা/৩২৭৭-এর ব্যাখ্যা)।
প্রশ্ন (২০/১০০) : মুসনাদ আহমাদ ২৫০৮৭ নং হাদীছে বলা হয়েছে যে, নারীরা বিবাহের ব্যাপারে একক অধিকার রাখে। এর ব্যাখ্যা জানতে চাই। -আতীকুল ইসলাম, ছোট বনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : হাদীছটির অনুবাদ হ’ল, বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক যুবতী নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, আমার পিতা তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে তার দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য আমাকে তার সাথে বিবাহ দিয়েছেন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিষয়টি মেয়েটির এখতিয়ারে ছেড়ে দেন। মেয়েটি বলল, আমার পিতা যা করেছেন তা আমি বহাল রাখলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা জেনে নিক যে, বিবাহের ব্যাপারে পিতাদের কোন একক এখতিয়ার নেই (আহমাদ হা/২৫০৮৭; ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৪; দারাকুৎনী হা/৩৬০১; তারাজু‘আতে আলবানী হা/১১৪; সনদ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে পিতা একক ক্ষমতাবলে বিবাহ দেবেন না। বরং মেয়ের অনুমতি নিয়ে বিবাহ দিবেন। অন্য হাদীছে এসেছে, যে মেয়ে তার অলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১৩১)। উভয় হাদীছের সমন্বয় এই যে, সাবালিকা মেয়ের সম্মতি সাপেক্ষে পিতা তার বিবাহ চূড়ান্ত করবেন। মেয়ের অসম্মতিতে বিয়ে সিদ্ধ হবে না।
প্রশ্ন (২১/১০১) : আযরাঈল মারা যাবেন কি? তার জান কবয করবে কে?
-মহীদুল ইসলাম, সোনাতলা, বগুড়া।
উত্তর : আযরাঈলও মারা যাবেন। কেননা আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল (ক্বাছাছ ২৮/৮৮; রহমান ৫৫/২৬-২৭)। আল্লাহ বলেন, ‘..এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত। অতঃপর দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন সকলে দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে’ (যুমার ৩৯/৬৮)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আসমান ও যমীনবাসী সকলে মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর সবশেষে মালাকুল মাউত মারা যাবেন এবং শুধুমাত্র আল্লাহ বাকী থাকবেন, যিনি চিরঞ্জীব (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা যুমার ৬৮ আয়াত)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সমস্ত সৃষ্টি মৃত্যুবরণ করবে, এমনকি ফেরেশতারাও। অবশেষে মালাকুল মাউতও (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২৫৯, ১৬/৩৪)।
প্রশ্ন (২২/১০২) : স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর নাম লাগানো যাবে কি?
-নাসীম মন্ডল, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : স্ত্রীর নামের শেষে স্বামীর নাম যোগ করার কোন প্রমাণ শরী‘আতে নেই। রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণ বা কোন মহিলা ছাহাবী নিজেদের নামের সাথে স্বামীর নাম যোগ করেছেন বলে জানা যায় না। অনুরূপভাবে ইসলামের ইতিহাসে এমন কোন প্রচলন দেখা যায় না। বরং আধুনিককালে এটি অনৈসলামী সংস্কৃতি থেকে আগত, যা পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (২৩/১০৩) : নবজাতকের মাথা না কামিয়ে অনুমান করে তার চুল পরিমাণ রূপা ছাদাকা করলে বৈধ হবে কি?,-আফীফা, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
উত্তর : ওযরবশত জায়েয হবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/১০৭)। তবে সুন্নাত হ’ল জন্মের সপ্তম দিনে নাম রেখে আকীকা করা এবং মাথা মন্ডন করে চুলের ওযনে রূপা বা তার পরিমাণ অর্থ ছাদাকা করা (তিরমিযী হা/১৫১৯; মিশকাত হা/৪১৫৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৬০)।
প্রশ্ন (২৪/১০৪) : আমার ছোটবোন একজন মহিলার দুধ পান করেছিল। এক্ষণে আমি সেই মহিলার ছেলেকে বিবাহ করতে পারবো কি? কারণ আমিতো দুধ পান করিনি।
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : এই বিবাহে কোন বাধা নেই। কেননা দুধপানের মাধ্যমে কেবল দুধপানকারী তার দুধ মাতার পরিবারের জন্য হারাম সাব্যস্ত হয়, দুধ পানকারীর অন্য ভাই-বোনেরা নয় (বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/২৬৪৫-এর আলোচনা; মিশকাত হা/৩১৬১-এর ব্যাখ্যা, মিরক্বাত; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৪/৩৩)।
প্রশ্ন (২৫/১০৫) : গ্রন্থ রচনা করে তা কোন ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করা যাবে কি?
-আহমাদুল্লাহ, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : নিজের দৈহিক আমল অন্যকে দেওয়া যায় না। কেননা কর্ম যার পুরষ্কার তারই (নাজম ৫৩/৩৯)। সুতরাং বই লিখে কারও উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার অর্থ যদি তার ছওয়াব পৌঁছানো হয়, তবে তা বিদ‘আত হবে। সালাফে ছালেহীন থেকে এমন কোন আমল পাওয়া যায় না। আর যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় স্রেফ কারু প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তবে তা মৌলিকভাবে জায়েয হ’লেও পরিত্যাগ করাই উত্তম। কেননা এটা পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুসরণমাত্র।
প্রশ্ন (২৬/১০৬) : লিখিতভাবে তালাক দেয়ার কোন সরাসরি দলীল হাদীছে আছে কি? যদি না থাকে তাহ’লে এভাবে তালাক দেয়া বৈধ হবার কারণ কি?-আব্দুল্লাহ সাজিদ, ঢাকা।
উত্তর : মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হ’ল লেখা। কুরআনে ঋণদানের ব্যাপারে উভয় পক্ষে লিখিত প্রমাণ রাখার কথা বলা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২৮২)। সুতরাং কেউ যদি স্ত্রীর নিকট স্থির সংকল্পে লিখিত তালাকনামা পাঠিয়ে দেয় এবং তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়, তাহ’লে তালাক হয়ে যাবে। আর এক্ষেত্রে তিন তুহরে তিন তালাক দিতে হবে (বাক্বারাহ ২/২২৮-২৯; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৪৮৬)। এক মজলিসে তিন তালাক নয়। দিলে সেটি এক তালাক রাজঈ হবে (আবুদাঊদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮ ৭; ইরওয়া ৭/১৪৪ পৃ.; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)।
প্রশ্ন (২৭/১০৭) : তালাকে মু‘আল­াক্ব বা শর্ত সাপেক্ষে তালাক দিলে তা গ্রহণীয় হবে কি?
-নযরুল ইসলাম, বরগুনা।
উত্তর : শর্ত সাপেক্ষে তালাক দিলে তালাক হয়ে যাবে। যেমন কেউ তার স্ত্রীকে বলল, তুমি তোমার পিতার বাড়ি গেলে তালাক হয়ে যাবে। অতঃপর সে যদি পিতার বাড়ি যায় তাহ’লে তালাক হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে তুমি আগামী মাসের অমুক তারিখে তালাক, তাহ’লে উক্ত মাসের নির্দিষ্ট দিনে তালাক হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে তালাকদাতা তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে তালাক সাব্যস্ত হবে না। কিন্তু তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। আর তা হ’ল, আল্লাহ বলেন, ‘কসম ভঙ্গের জন্য তোমরা দশজন অভাবগ্রস্তকে মধ্যম মানের খাদ্য প্রদান করবে যা তোমরা সাধারণতঃ খেয়ে থাক, অথবা তাদেরকে অনুরূপ মানের পোষাক প্রদান করবে অথবা একটি ক্রীতদাস বা দাসী মুক্ত করে দিবে। এগুলির কোনটা না পারলে একটানা তিনদিন ছিয়াম পালন করবে’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
উল্লেখ্য যে, কেউ যদি স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য তালাকের নিয়ত ছাড়া এরূপ কথা বলে, তাহ’লে তালাক পতিত হবে না। বরং তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৩/৪৬; আশ শারহুল মুমতে‘ ১৩/১২৭)। সমাজে বর্তমানে তালাক নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে। এগুলি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (২৮/১০৮) : হায়েয অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া বা স্পর্শ করা যাবে কি?
-মাহবূবুর রশীদ, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : হায়েযা নারী বা জুনুবী ব্যক্তি লাশকে গোসল করাতে পারে। কারণ তারা মৌলিকভাবে পবিত্র (ইবনু হাজার হায়তামী, তুহফাতুল মুহতাজ ৩/১৮৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩৬৯)। যেমন হজ্জের সময় নাপাক হ’লে রাসূল (ছাঃ) স্ত্রী আয়েশাকে বলেন তুমি তাওয়াফ ও ছালাত ব্যতীত সবই করতে পার (বুখারী হা/৩০৫; মুসলিম হা/১২১১; মিশকাত হা/২৫৭২)।
প্রশ্ন (২৯/১০৯) : আমার তিন মেয়ে, স্ত্রী ও ভাই আছে। আমি যদি এখন মারা যাই তাহ’লে কে কতটুকু অংশ পাবে?
-আফফান, রসূলপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী।
উত্তর : এরূপ অবস্থায় তিন মেয়ে পাবে দুই-তৃতীয়াংশ ও স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (নিসা ৪/১২)। এরপর বাকী অংশ ‘আছাবা’ হিসাবে ভাই পাবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অংশের হকদারদের নিকট মীরাছ পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বাকী থাকবে তা মাইয়েতের নিকটতম পুরুষের জন্য’ (বুখারী হা/৬৭৩৭; মুসলিম হা/১৬১৫)।
প্রশ্ন (৩০/১১০) : টয়লেটে প্রবেশের দো‘আ পাঠের সাথে বিসমিল্লাহ পাঠ করা যাবে কি?
-কুরবান আলী, সাপাহার, নওগাঁ।
উত্তর : টয়লেটে প্রবেশের দো‘আ পাঠের সাথে বিসমিল্লাহ পাঠ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জিনের দৃষ্টি ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মাঝখানে পর্দা হ’ল, টয়লেটে প্রবেশকালে বিসমিল্লাহ বলা (ইবনু মাজাহ হা/২৯৭; ছহীহুল জামে’ হা/৩৬১১)।  
প্রশ্ন (৩১/১১১) : জনৈক ব্যক্তির প্রথমা স্ত্রী ‘খোলা’র মাধ্যমে পৃথক হয়ে ৪টি সন্তান সহ বর্তমানে অন্যত্র বিবাহিত জীবন যাপন করছে। ঐ সন্তানদের সাথে পিতার তেমন কোন সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে পিতা পুনরায় বিবাহ করেছেন। কিন্তু সেই সংসারে তার কোন সন্তান নেই। এক্ষণে তিনি মারা গেলে তার সম্পদের মীরাছ বণ্টন হবে কিভাবে?
-হুমায়ূন কবীর, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে তার পূর্ব স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানেরা ‘ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুণ’ হারে পুরো সম্পত্তি পেয়ে যাবে এবং তার বর্তমান স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ পাবে (নিসা ৪/১১-১২)। কেননা পূর্বতন স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হ’লেও তার সন্তানেরা পিতার সন্তান হিসাবে যথারীতি তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে।
প্রশ্ন (৩২/১১২) : আমি একটি প্রতিষ্ঠানে মাল সরবরাহ করি। উক্ত প্রতিষ্ঠানে আমার ত্রিশ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এখন উক্ত টাকা উঠাতে বখশিশ প্রদান করা আবশ্যক। এ অবস্থায় আমার করণীয় কি? -সাজিদ, ঢাকা।
উত্তর : বখশিশ তথা ঘুষ আদান-প্রদান কবীরা গুনাহ। এদের উপর আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয় (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭৫৩)। তবে নিজের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের স্বার্থে বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার নিকট কেউ কিছু চাইলে আমি তাকে দেই। আর তা নিয়ে সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়। অথচ তা তাদের জন্য জাহান্নাম। ওমর (রাঃ) বললেন, তাহ’লে আপনি তাদের দেবেন কেন? তিনি বললেন, তারা না পেলে যাবে না (এজন্য দেই)। আর আল্লাহ কৃপণতাকে অপসন্দ করেন (আহমাদ হা/১১১৩৯; ছহীহুত তারগীব হা/৮৪৪)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হাবশায় পলায়নকালে সন্ত্রাসীরা তাকে আটক করলে তিনি তাদেরকে দুই দিরহাম উপহার দেন। তাতে তারা তাকে ছেড়ে দেয় (বায়হাক্বী হা/২০২৬৯, ১০/২১ পৃ.; ইবনু আবী শায়বাহ হা/২২৪২৪)। উক্ত হাদীছদ্বয়ের উপর ভিত্তি করে ইবনু তায়মিয়াহ, সুবকী, সুয়ূত্বী, যারকাশী প্রমুখ বিদ্বান বলেছেন, এরূপ বাধ্যগত অবস্থায় বখশিশ দেওয়া যাবে। আর এক্ষেত্রে ঘুষগ্রহীতা চরম গুনাহগার হবে, ঘুষদাতা নয় (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৫২, ৩১/২৭৮; ফাতাওয়া সুবকী ১/২০৪; আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের ১৫০ পৃ: আল-মাওসূআতুল ফিক্বহিয়া ৬/১৬৫-১৬৭)।
প্রশ্ন (৩৩/১১৩) : ক্বিয়ামতের পূর্বে শিঙ্গায় কে ফুঁক দিবেন। ছহীহ হাদীছের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন। -ডা. আব্দুল হান্নান, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : শিঙ্গায় কে ফুঁক দিবেন মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে কিছু যঈফ হাদীছে ইস্রাফীল (আঃ)-এর নাম উল্লেখ আছে (ত্ববারাণী আওসাত্ব হা/৯২৮৩ ও অন্যান্য)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে। তবে তিনি ইস্রাফীল (আঃ)-এর নাম প্রসিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করে হুলায়মীর বরাতে বলেন, তিনি যে ইস্রাফীল (আঃ) এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে (ফাৎহুল বারী ১১/৩৬৮ ব্যাখ্যা)। কুরতুবী বলেন, সঠিক মত হ’ল শিঙ্গা হবে নূরের, যাতে ইস্রাফীল (আঃ) ফুঁক দেবেন। তিনি আরো দাবী করেন যে, এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে (তাফসীর কুরতুবী ১৩/২৩৯, আন‘আম ৭৩ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধ বক্তব্য হ’ল ‘ছূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য শিঙ্গা, যাতে ইস্রাফীল (আঃ) ফুঁক দিবেন (তাফসীরে ইবনু কাছীর ৩/২৮১, আন‘আম ৭৩ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। ত্ববারাণী আওসাত্বে বর্ণিত হাদীছে যাতে ইস্রাফীল (আঃ)-এর নাম উল্লেখ রয়েছে, তার সনদকে হায়ছামী ও মুনযিরী ‘হাসান’ বলেছেন (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৩১০; সুয়ূতী, জামে‘উল কাবীর হা/১১১; আলবানী, যঈফুত তারগীব হা/২০৮২)। হাফেয ইরাকী এহইয়াউল উলূমে বর্ণিত হাদীছের সনদকে ‘জাইয়েদ’ (ভাল) বলেছেন (তাখরীজু আহাদীছি এহইয়াই উলূমিদ্দীন হা/৪৪৫১)। এক্ষণে যেহেতু সনদের পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে, সেহেতু এক্ষেত্রে নিরাপদ পন্থা হ’ল একথা বলা যে শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন ‘মালাকুছ ছূর’ অর্থাৎ এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। যেমন আমরা ‘আযরাইল’ না বলে ‘মালাকুল মাউত’ বা মৃত্যুর ফেরেশতা বলে থাকি।
প্রশ্ন (৩৪/১১৪) : মহিলাগণ গৃহাভ্যন্তরে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে সরবে তেলাওয়াত করতে পারবেন কি?-মামূন, পাবনা।
উত্তর : পারবেন। কেননা যে সকল ছালাতে পুরুষগণ সরবে ক্বিরাআত করেন, মহিলাগণও সেই সকল ছালাতে সরবে তেলাওয়াত করবেন। এ বিধান নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রে সমান (ইবনু কুদামাহ, মুগনী, ৩/৩৮. নববী, আল মাজমূ ৩/৩৯০)।
প্রশ্ন (৩৫/১১৫) : পাত্রের পিতা-মাতা উভয়ে মৃত। অভিভাবক হওয়ার মত কেউ নেই। এক্ষণে পাত্রীর পিতা-মাতার সম্মতি ও ব্যবস্থাপনায় বিবাহ সম্পন্ন করা যাবে কি? -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
উত্তর : বিবাহের জন্য পাত্রের অভিভাবক থাকা শর্ত নয়, যদিও পাত্রের পিতা-মাতার সম্মতি থাকা উত্তম। কিন্তু পাত্রীর অভিভাবকের সম্মতি থাকা অপরিহার্য (আবুদাঊদ হা/২০৮৫; মিশকাত হা/৩১৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)। সুতরাং প্রশ্নমতে পাত্রীর পিতার ব্যবস্থাপনায় উক্ত বিবাহে কোন বাধা নেই।
প্রশ্ন (৩৬/১১৬) : বিড়াল কিছু অংশ ভক্ষণ করলে বাকী খাবার খাওয়া জায়েয হবে কি?
-আবু জা‘ফর, বড়াইগ্রাম, নাটোর।
উত্তর : বিড়ালের মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া যেতে পারে। কারণ বিড়ালের লালা অপবিত্র নয়। অতএব কারো রুচি হ’লে খেতে পারে (আবুদাঊদ হা/৭৫; মিশকাত হা৪৮৩; ছহীহুল জামে হা/২৪৩৭; আল-মুগনী ১/৭০)।
প্রশ্ন (৩৭/১১৭) : আমি সঊদী প্রবাসী। কাজের চাপে আমি কোনদিন জুম‘আর ছালাত আদায় করতে পারি না। আমার জন্য করণীয় কি?-ইব্রাহীম খলীল মুনশী, নাজরান, সঊদী আরব।
উত্তর : জুম‘আর ছালাত আদায় করা প্রত্যেক সক্ষম পুরুষের জন্য ওয়াজিব (আবুদাঊদ হা/১০৬৯, ১৯১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১১১)। অতএব কাজের অজুহাতে তা পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমাদেরকে জুম‘আর দিন ছালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ’ (জুম‘আ ৬২/৯)। এক্ষণে উক্ত প্রতিষ্ঠানে জুম‘আর ছালাত আদায়ের ব্যবস্থা না থাকলে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবে। অনুমতি না পেলে অন্যত্র কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যরূরী কারণ ছাড়াই পর পর তিন জুম‘আ পরিত্যাগ করল, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন (ইবনু মাজাহ হা/১১২৬; ছহীহুত তারগীব হা/৭২৮)।
প্রশ্ন (৩৮/১১৮) : ‘লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল­া বিল­া-হ’ ৯৯টি রোগের ঔষধ। যার সর্বনিম্ন হ’ল দুশ্চিন্তা। উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-মিনহাজ পারভেয, হড়গ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল ও মুনকার (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৫৪১; যঈফাহ হা/৩২৬১)। এছাড়াও অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, উক্ত দো‘আটি সত্তুরটি মহা বিপদ থেকে রক্ষাকারী যার সর্বনিম্ন হ’ল দরিদ্রতা (তিরমিযী হা/৩৬০১; যঈফাহ হা/৬৬২২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে উক্ত দো‘আটি পাঠের ফযীলতে অন্যান্য ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু ক্বায়েসকে বললেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডারগুলোর একটি ভান্ডারের সন্ধান দেব না? তিনি বললেন, অবশ্যই দিবেন হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, সেটা হ’ল লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল­া বিল­া-হ  ‘নেই কোন শক্তি, নেই কোন ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত’ (বুখারী হা/৭৩৮৬; মুসলিম হা/২৭০৪; মিশকাত হা/২৩৬০৩)।
প্রশ্ন (৩৯/১১৯) : আমি বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা। বিদ্যুতের মিটার নিতে আসা লোকদের আমরা সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে থাকি। এর জন্য কখনো ঘুষ নেই না। কিন্তু মাঝে মাঝে কোন কোন গ্রাহক খুশী হয়ে টাকা দিয়ে যায়। এটা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে কি?
-সেলিম হাসান চৌধুরী, পিডিবি অফিস, নতুন বাজার, বরিশাল।
উত্তর : উক্ত অর্থ ঘুষ হিসাবেই গণ্য হবে। কেননা কর্মকর্তা না হয়ে বাড়িতে বসে থাকলে উক্ত টাকা গ্রাহকেরা দিয়ে যেত না। রাসূল (ছাঃ) ইবনুল লুৎবাহকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করলে সে এসে বলল যে, এগুলি যাকাত এবং এগুলি আমাকে দেওয়া হাদিয়া। এ ঘটনা শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, কর্মচারীদের কি হ’ল যে তারা এরূপ বলছে? সে তার পিতা-মাতার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক, কে তাকে হাদিয়া দেয়? যে সত্তার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! যা কিছুই সে গ্রহণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা কাঁধে নিয়ে সে হাযির হবে’ (বুখারী হা/২৫৯৭; মুসলিম হা/৮৪৪৩; মিশকাত হা/১৭৭৯)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কর্মচারীর হাদিয়া গ্রহণ করা আত্মসাৎ স্বরূপ’ (আহমাদ হা/২৩৬০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০২১)।
প্রশ্ন (৪০/১২০) : ক্রোধবশতঃ পৃথক জায়গায় ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি? মদীনার ‘মসজিদে যেরার’ ওয়াক্তিয়া ছিল, না জামে মসজিদ ছিল?
-আব্দুর রহমান, পিরুজালী, গাযীপুর।
উত্তর : একই সমাজে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে যদি নতুন মসজিদ তৈরী করা হয় এবং এর দ্বারা মুমিন সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি ও ক্ষতি করা উদ্দেশ্য হয়, তবে উক্ত মসজিদ ‘মসজিদে যেরার’ বা ‘ক্ষতিকর মসজিদ’ হিসাবে গণ্য হবে। কেননা এরূপ মসজিদ তৈরীর ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য থাকে না এবং তা তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় না (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত; আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব, পৃঃ ৩৯৮)। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মসজিদ নির্মাণ করে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, যিদ ও কুফরীর তাড়নায়, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই যুদ্ধকারীদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য। অথচ তারা কসম করে বলে যে, কল্যাণ ব্যতীত আমরা কিছুই কামনা করি না। আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী’ (তওবা ৯/১০৭)।
সুতরাং স্রেফ যিদ ও ক্রোধবশতঃ নতুন মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবেনা। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ক্ষতির উদ্দেশ্যে বা প্রয়োজন ব্যতীত দ্বিতীয় মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না’ (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৪৯)। ক্বাসেমী বলেন, ‘মসজিদে যেরার কোন মসজিদ নয়। এর কোন বিধান নেই, সম্মান নেই ও তাতে কোন দান করা যাবে না। আববাসীয় খলীফা রাযী বিল্লাহ (৩২২-৩২৯ হি.) এই ধরনের বহু মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছিলেন (তাফসীরে ক্বাসেমী ৫/৫০৫-৫০৬ পৃ.)। কুরতুবী বলেন, মসজিদের পাশে আরেকটি মসজিদ নির্মাণ জায়েয নয়। কেউ নির্মাণ করলে তাতে বাধা দেওয়া ও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব হবে, যাতে মুছল্লীরা প্রথম মসজিদে ফিরে যায়। তবে মসজিদে মুছল্লীদের স্থান সংকুলান না হ’লে সকলের সম্মতিক্রমে দ্বিতীয় মসজিদ নির্মাণে বাধা নেই (কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত, ৮/২৫৪ পৃ.; আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব ৩৯৮ পৃ.)।
অতএব তাক্বওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদের বিপরীতে মসজিদ নামক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং সবাইকে পুরাতন মসজিদে ফিরে আসতে হবে। তবে যদি মহল্লা পৃথক হয় ও মসজিদ বিভক্ত করার উদ্দেশ্য না থাকে এবং উভয় মসজিদের মাঝে যুক্তিসঙ্গত দূরত্ব ও ব্যবধান থাকে, তাহ’লে সকলের সম্মতি সাপেক্ষে নতুন মসজিদ নির্মিত হ’তে পারে (তিরমিযী হা/৫৯৪; মিশকাত হা/৭১৭; মির‘আত হা/৭২২-এর ব্যাখ্যা)। অনুরূপভাবে ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী আমল করার কারণে বিদ‘আতীরা যদি বের করে দেয় এবং সাধ্যমত চেষ্টা সত্ত্বেও আপোষের কোন পথ না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সম্ভবপর দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
রাসূল (ছাঃ)-এর সময় ৯ম হিজরীতে মুনাফিকরা যে মসজিদ নির্মাণ করেছিল, সেটি ওয়াক্তিয়া ছিল বলে অনুমিত হয়। কারণ তার অনতিদূরেই ১ম হিজরীতে নির্মিত ‘মসজিদে ক্বোবা’ মওজূদ ছিল। মুনাফিকদের নির্মিত মসজিদ নামক উক্ত স্থাপনাটি আল্লাহর হুকুমে রাসূল (ছাঃ) পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেন। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখতে পাওয়া যায়।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)

১৩তম পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন----

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

====================================================

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...