বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের
প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)
সম্পাদকীয়ঃ
আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান
করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল
১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ
তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ
১০২।
আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ
যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত
রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত
হা/৫১৩৭)।
প্রশ্নোত্তর
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিতা-মাতা জান্নাতি নাকি জাহান্নামি?
(১)
প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিতা-মাতা কোথায় অবস্থান
করছেন? জান্নাতে নাকি জাহান্নামে? আমরা আশা করি আপনি এমন একটি হাদিস আমাদেরকে
বলবেন, যার মাধ্যমে এর জবাব প্রমাণিত হয়।
উত্তরঃ
আলহামদূলিল্লাহ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর পক্ষ থেকে একটি হাদিস রয়েছে যা এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে যে, তারা উভয়ে জাহান্নামে রয়েছেন।
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে মুসলিম (২০৩) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি বললোঃ হে
আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা কোথায়? তিনি বললেনঃ জাহান্নামে। অতঃপর যখন সে পিঠ ফিরিয়ে
চলে যেতে লাগলো তখন তিনি তাকে বললেনঃ আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামে।
নাওয়াওয়ী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি প্রমাণ
করে যে, যে কেউ কুফরি অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে যাবে। আর আল্লাহর নিকটবর্তী
কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত হাওয়া তার কোন উপকারে আসবে না। এটি আরও প্রমাণ করে
যে, যে ব্যক্তি ফাতরাহ এর সময়কালে (ঈসা আঃ ও মুহাম্মাদ সাঃ এর নবুয়াতের মধ্যবর্তী
সময়কালে) মৃত্যুবরণ করেছিল এবং সে সময়ে আরবদের পথ অনুসরণকারী ছিল, যে পথ ছিল
মূর্তিপূজার পথ, সেও জাহান্নামি লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (দ্বীনের) আহ্বান তাদের
নিকট না পৌঁছার কোন অজুহাত এক্ষেত্রে নেই। কেননা ইবরাহিম (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের
আহ্বান তাদের নিকট পৌঁছেছিল।
মুসলিম (৯৭৬) বর্ণনা করেছেন যে, আবু
হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বললেনঃ আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি
চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবরের কাছে
যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো।
আওনাল মাবুদ কিতাবে বলা হয়েছেঃ “কিন্তু
আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো না” অর্থাৎ তিনি (রাসূল সাঃ এর মাতা) ছিলেন একজন কাফির আর
কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি নেই।
নাওয়াওয়ী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি প্রমাণ
করে যে, কাফিরদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়।
..সুয়ূতি (রহিমাহুল্লাহ) মতামত প্রকাশ করেন
যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিতামাতাকে (জাহান্নাম থেকে)
রক্ষা করা হবে, মৃত্যুর পর আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় জীবিত করেছিলেন এবং তারা তাঁর
প্রতি ঈমান এনেছিল। এ মতামতটি অধিকাংশ আলিম প্রত্যাখ্যান করেছেন, যারা এরূপ
হাদিসকে মিথ্যা (মাওদ্বু) অথবা অত্যন্ত দূর্বল (দ্বয়িফ জিদ্দান) হিসেবে আখ্যায়িত
করেছেন।
আওনাল মাবুদ কিতাবে বলা হয়েছেঃ নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিতামাতাকে পুনরায় জীবিত করা হয়েছিল এবং
তারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং তারা (জাহান্নাম থেকে) রক্ষা পেয়েছিল মর্মে যে
সকল দলিল বর্ণিত হয়েছে তার অধিকাংশই বানোয়াট ও মিথ্যা। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি
অত্যন্ত দূর্বল এবং কোন অবস্থাতেই সেগুলো সহীহ হতে পারে না। কেননা হাদিসের ইমামগণ
এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, উক্ত বর্ণনাগুলো বানোয়াট। যেমনঃ দ্বারাকুতনি,
যাওজাক্বানি, ইবনে শাহীন, আল খাতীব, ইবনে আসাকির, ইবনে নাসির, ইবনুল জাওযী, আস
সুহাইলি, আল ক্বুরতুবি, আল মুহিব, আত তাবারী, ফাতহুল দ্বীন ইবনে সায়্যিদ আন নাস,
ইব্রাহিম আল হালাবি ও অন্যান্যরা।
শাইখ ইব্রাহিম আল হালাবি পৃথক একটি প্রবন্ধে
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
পিতামাতাকে জাহান্নামকে থেকে মুক্তি প্রদান করা হয় নি, যেমনটি আলী আল-ক্বারী
“শারহুল ফিকহুল আকবার” কিতাবে এবং পৃথক একটি প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন। এ অভিমতের ভিত্তি
হলো উক্ত হাদিসের বিশুদ্ধতা (আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামে)।
শাইখ জালালুদ্দিন সুয়ূতি অন্যান্য হাফেজ ও
আলিমগণের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, তারা ঈমান আনয়ন করেছিলেন
ও মুক্তি লাভ করেছিলেন। আর তিনি এ বিষয়ে “আল তাযীম ওয়াল মিন্নাহ ফি আন্না আবওয়া
রসূলিল্লাহ ফিল জান্নাহ” সহ আরও অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ
(রহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
থেকে কি এমন কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় যে, আল্লাহ তাঁর পিতামাতাকে পুনরায় জীবিত
করেছিলেন যেন তারা মুসলিম হতে পারেন, তারপর তারা (আবারও) মারা গিয়েছেন?
তিনি উত্তরে বলেনঃ হাদিস বিশেষজ্ঞদের নিকট
থেকে এ বিষয়ে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং আলিমগণ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে,
এটি একটি নব-উদ্ভাবিত মিথ্যা….। আলিমদের মধ্যে এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই যে, এটি একটি
অন্যতম সুস্পষ্ট মিথ্যা, যেমনটি আলিমগণ উল্লেখ করেছেন। এটি হাদিসের কোন
নির্ভরযোগ্য কিতাবে, কোন সহীহ অথবা সুনান অথবা মুসনাদ অথবা হাদিসের প্রসিদ্ধ কোন
কিতাবেও খুঁজে পাওয়া যায় না। মাগাযী অথবা তাফসীরের কোন কিতাবের লেখক এটি উল্লেখ
করেন নি, যদিও তারা (তাদের কিতাবে) সহীহ বর্ণনার পাশাপাশি অনেক দ্বয়ীফ (দূর্বল)
বর্ণনাও উল্লেখ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তির দ্বীন সম্পর্কে
জ্ঞান রয়েছে তার নিকট এ কথা স্পষ্ট যে, এটি একটি মিথ্যা ঘটনা। যদি সত্যিই এমন কোন
ঘটনা ঘটতো তাহলে তা প্রচার করার জন্য অধিক পরিমাণে উৎসাহ প্রদান করা হতো। কেননা এ
ঘটনা দুটি দিক দিয়ে অসাধারণঃ মৃত ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করা এবং মৃত্যুর পর ঈমান
আনয়ন করা। এমন একটি বিষয় অন্যান্য যে কোন বিষয়ের তুলনায় প্রচারিত হওয়ার অধিক
উপযুক্ত। যেহেতু কোন বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনায় এটি প্রচারিত হয়নি, সেহেতু বুঝাই যায়
যে, এটি একটি মিথ্যা ঘটনা। তাছাড়া এটি কুরআন, সহীহ সুন্নাহ এবং আলিমগণের ইজমার
বিরুদ্ধে চলে যায়।
আল্লাহ বলেনঃ (ভাবার্থ) নিশ্চয়ই যারা
অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে বসে, তারপর সত্বর তাওবাহ করে, এরাই তারা যাদের তাওবাহ
আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞানী। এমন লোকেদের তাওবাহ নিস্ফল যারা
গুনাহ করতেই থাকে, অতঃপর মৃত্যুর মুখোমুখি হলে বলে, আমি এখন তাওবাহ করছি এবং
(তাওবাহ) তাদের জন্যও নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য
ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। [সূরা নিসা, আয়াত ১৭-১৮]
সুতরাং আল্লাহ বলেছেন যে, কাফির হিসাবে
মৃত্যুবরণকারী জন্য তাওবার কোন সুযোগ নেই। আর আল্লাহ বলেনঃ (ভাবার্থ) তারা যখন
আমার শাস্তি দেখলো তখন তাদের ঈমান (গ্রহণ) তাদের কোন উপকারে আসলো না। আল্লাহর (এ)
বিধান তাঁর বান্দাহদের উপর পূর্ব হতেই চলে আসছে। আর এ ক্ষেত্রে কাফিররাই
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। [সূরা গাফির, আয়াত ৮৫]
তাই তিনি তাঁর দাসদের প্রতি তাঁর আচরণ বিধি
সম্পর্কে আমাদের বলছেন যে, একবার শাস্তি দেখে নেওয়ার পর ঈমান আনয়ন করা কোন উপকারে
আসবে না, তাহলে মৃত্যুর পর কিভাবে তা উপকারে আসতে পারে? আর এ সম্পর্কে অনুরূপ আরও
দলিল রয়েছে। এরপর তিনি ঐ দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যা আমরা আমাদের উত্তরের শুরুতে
উল্লেখ করেছিলাম।
মাজমূ আল ফাতওয়া, ৪/৩২৫-৩২৭।
(২) ছূফী মতবাদের জন্ম হয় কবে? ছূফীদের পিছনে ছালাত আদায় করা
যাবে কি?
উত্তর : ছূফী মতবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ। এটি রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও
তাবেঈদের যুগে পরিচিত ছিল না। এমনকি হিজরী তৃতীয় শতক পর্যন্ত ছূফীবাদ বিশেষ
প্রসিদ্ধি লাভ করেনি (ইবনু
তায়মিয়াহহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ১১/০৫)। হিন্দু, পারসিক ও গ্রীক দর্শনের
কু-প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে মা‘রেফাতের নামে ছূফীবাদের
সূচনা হয়। সর্বপ্রথম ইরাকের বছরা নগরীতে যুহ্দ বা দুনিয়া ত্যাগের প্রেরণা থেকে এটা
শুরু হয়। প্রবল আল্লাহভীতি ও দুনিয়াত্যাগের বাড়াবাড়ি, সার্বক্ষণিক যিকর, আযাবের
আয়াত পাঠে বা শুনে অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয়
ছূফীবাদের যাত্রা। ছূফীবাদের পরিভাষায় এই অবস্থাকে ‘হাল’ বলে। তাদের আক্বীদাকে
তিনটি মাযহাবে ভাগ করা যায়।
১- প্রাচ্য দর্শনভিত্তিক মাযহাব, যা দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের
নিকট থেকে এসেছে। এই মাযহাবের অনুসারী ছূফীরা মা‘রেফাত হাছিল করার জন্য দেহকে
চরমভাবে কষ্ট দিয়ে স্বীয় ক্বলবকে তাদের ধারণা মতে জ্যোতির্ময় করার চেষ্টা করে
থাকে। প্রায় সকল ছূফীই এরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন।
২- খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে আগত মাযহাব, যা ‘হুলূল’ ও ‘ইত্তেহাদ’
দ’ুভাগে বিভক্ত। হুলূল অর্থ ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’। হিন্দু মতে ‘নররূপী
নারায়ণ’। ইরানের আবু ইয়াযীদ বিস্তামী (মৃঃ
২৬১ হিঃ) ওরফে বায়েযীদ বুস্তামী ছিলেন এই মতের হোতা। এই মাযহাবের
অন্যতম নেতা হুসাইন বিন মনছূর হাল্লাজ (মৃঃ
৩০৯ হিঃ) নিজেকে সরাসরি আল্লাহ (আনাল হক্ব) বলে দাবী করায় মুরতাদ
হওয়ার কারণে তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
৩- ইত্তেহাদ বা ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে অদ্বৈতবাদী দর্শন বুঝায়, যা
‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এর অর্থ হ‘ল আল্লাহর অস্তিত্বের
মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী
সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন
পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ) -এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ
আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং
সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব, মানষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য
নেই। যে ব্যক্তি মুর্তিপুজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পুজা করে, সে
মূলতঃ আল্লাহকেই পুজা করে। সবকিছুর মধ্যে মুমিন আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ
রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা কাফের এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই
প্রভূ বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহ’লে তারা কাফের হ’ত না। বলা
বাহুল্য এটাই হ‘ল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব
কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট হ’লেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃঃ ৬৩৮হিঃ)।
বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন
হ‘ল এই যে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের
অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা
সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে।
মাসীবী বলেন, আমরা একদিন ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, জনৈক
নাছীবী বলল, হে আবু আব্দিল্লাহ! আমাদের এলাকায় ছূফী নামে কিছু লোক রয়েছে, যারা
অনেক খায়। এরপর ক্বাছীদাহ (দীর্ঘ কবিতা) আবৃত্তি করে এবং একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে নেচে
নেচে যিকির শুরু করে। ইমাম মালেক বললেন, তারা কি শিশু? সে বলল, না। তিনি বললেন,
তারা কি পাগলের দল? সে বলল, না বরং আলেম-ওলামা। তিনি বললেন, কোন মুসলমান এমনটি করে
বলে জানি না (কাযী
ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ২/৫৩-৫৪; ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)।
মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ দামেশকী বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের নিকট দ্বীন নিরাপদ নয়-
ছূফী, গল্পকার ও বিদ‘আতী’ (কাযী
ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ৩/২২৬)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি
দিনের প্রথম প্রহরে ছূফী মতবাদ গ্রহণ করে তাহ’লে তুমি তাকে যোহরের সময় হ’তে না
হ’তেই একেবারে আহম্মক অবস্থায় পাবে (বায়হাক্বী,
মানাক্বিবুশ শাফেঈ ২/২০৭)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ছূফী
মতবাদে ঢুকে থাকবে সে আর কখনো সুস্থ আক্বীদায় ফিরতে পারবে না’ (ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস
১/৩২৭)। তিনি আরো বলেন, আমি ছূফীদের সংস্পর্শে গিয়ে কেবল দু’টি বিষয়ে
উপকৃত হয়েছি। তারা বলে, ‘সময় তরবারী তুল্য। তুমি যদি তাকে না কাটো তাহ’লে সে
তোমাকে কাটবে। আর তুমি যদি আল্লাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হও, তাহ’লে বাতিল তোমাকে নিয়ে
ব্যস্ত হবে’ (ইবনুল
ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/১২৪)। আবু যুর‘আকে ছূফী হারেছ মুহাসেবী
ও তার কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই এই কিতাবগুলো
থেকে দূরে থাকবে। কারণ সেগুলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতায় ভরপুর। তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল
হাদীছের অনুসরণ করা। তাতে তোমরা এমন কিছু পাবে, যা তোমাদের জন্য যথেষ্ট (যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ১/৪৩১)।
আবুবকর তুরতুশী বলেন, ‘ছূফী মাযহাব বাতিল এবং মূর্খতা ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ। কেবল
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীছের মধ্যে ইসলাম রয়েছে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা ত্বোয়াহা ৯০
আয়াত, ১১/২৩৮)। ইমাম কুরতুবী বলেন, ছূফী তরীকা সত্য থেকে অনেক দূরে,
মানুষের জন্য অনুপযোগী ও সুন্নাতের সাথে সাংঘর্ষিক (তাফসীরে কুরতুবী ১১/২৩৮)।
এছাড়া ইবনু তায়মিয়াহহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু কুদামাহ, যাহাবী,
ইবনুল জাওযী (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান উক্ত মতবাদের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র গ্রন্থ
সমূহ রচনা করেছেন (বিস্তারিত
দ্র. দ্রঃ দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, আত-তাহরীক, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা,
জানুয়ারী ১৯৯৯; আব্দুর রহমান আল-ওয়াকীল, হাযিহী হিয়াছ ছূফিয়াহ, ১-১৮৮ পৃ.; ড.
সাঈদ আব্দুল আযীম জামীল গাযী, আছ-ছূফিয়াহ)।
সুতরাং ছূফীদের মধ্যে যারা বিশেষত হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা অদ্বৈতবাদী
ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে, যা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত সেসব
ইমামের পিছনে জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।
(৩) রাসূল
(ছাঃ) বহু বিবাহ করায় জনৈক ব্যক্তি তাঁকে যেনাকার বলে গালি দিয়েছে। ঐ ব্যক্তি কি মুসলিম
থাকবে? তার কী শাস্তি হবে?
-রায়হান কবীর, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা ধর্মত্যাগী কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।
ছাহাবীগণসহ সর্বযুগের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে ঐ ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ
এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব (ইবনু
তায়মিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ২/১৩-১৬)। তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষে
বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কুরতুবী)।
সরকার এ দায়িত্ব পালন না করলে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে
হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা এক ইহূদীকে জনৈক মুসলিম হত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তার
দিয়াত বা রক্তমূল্য বাতিল করে দেন (আবূদাঊদ
হা/৪৩৬১, ৪৩৬৩, নাসাঈ হা/৪০৭৬)।
তবে এধরনের কুফরী কর্ম জনসম্মুখে প্রকাশের পূর্বে তাকে বার বার
বুঝাতে হবে এবং তার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে। এতে সে ভ্রান্ত ধারণা থেকে তওবা
করতে পারে (উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৫০-১৫২)।
(৪) পাগড়ীর ন্যায় টুপির
উপরও মাসাহ করা যাবে কী?
-ইব্রাহীম হোসাইন
তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : ওযূর ক্ষেত্রে টুপির
উপর মাসাহ করা জায়েয নয়। কেননা পাগড়ী পুরো মাথা আবৃত করে, যা খুলে মাসাহ করা
মুছল্লীর জন্য কষ্টদায়ক। অপরদিকে টুপি মাথার একটি অংশ আবৃত করে এবং তা খুলে মাসাহ
করা সহজ। সেকারণ টুপি খুলে মাথা মাসাহ করার ব্যাপারেই প্রাচীন ও পরবর্তীকালের
অধিকাংশ বিদ্বান ঐক্যমত পোষণ করেছেন (ইবনু
কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৫৪; আলবানী, সিলসিলাতুল
হুদা ওয়ান নূর, ক্লিপ নং ১৯০)।
(৫)
টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ছালাত শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোনটিকে অগ্রাধিকার
যরূরী হবে?
-আল-মামূন, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : এমতাবস্থায় টয়লেটের কাজ সম্পন্ন করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য
উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৭)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘ছালাত শুরুর প্রাক্কালে তোমাদের কারো যদি পেশাব-পায়খানার চাপ
হয়, তবে সে যেন প্রথমে পায়খানার প্রয়োজন সম্পন্ন করে (আবুদাঊদ হা/৮৮; বায়হাক্বী
হা/৪৮০৮, সনদ ছহীহ)। অন্যত্র এসেছে, আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (আহমাদ হা/২২২০৬; ইবনু মাজাহ
হা/৬১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৩২)। তবে ছালাতের খুশু-খুযূ বিনষ্ট হবে না,
এমনটি হ’লে ছালাত বাতিল হবে না (ইবনু
কুদামা, মুগনী ১/৪৫০)।
(৬) ইমামের
সাথে ছালাতরত অবস্থায় ঘুমের কারণে আমার একটি সিজদা ছুটে যায়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
-মুহিউদ্দীন আহমাদ
শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : রুকূ-সিজদা ছালাতের রুকন। আর রুকন তরক করলে ছালাত বাতিল হয়। তাই
এরূপ অবস্থায় এক রাক‘আত অতিরিক্ত আদায় করতে হবে এবং সহো সিজদা দিতে হবে (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৩/৩৭১-৭২;
আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৭৭)।
(৭) রাসূল
(ছাঃ)-এর কবরকে রওযা বা মাযার বলা যাবে কি?
-তাওহীদুল ইসলাম
রহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ‘রওযা’ ও ‘মাযার’ উভয়টি আরবী শব্দ। প্রথমটির অর্থ বাগান এবং
দ্বিতীয়টির অর্থ যিয়ারত বা পরিদর্শনের স্থান। উক্ত শব্দদ্বয়কে মূলতঃ পথভ্রষ্ট ও
ভ্রান্ত আক্বীদাসম্পন্ন একদল মানুষ তাদের পীর-আউলিয়াদের কবরস্থানের বিশেষ গুরুত্ব
বুঝানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। অথচ নববী যুগ থেকে শুরু করে ছাহাবায়ে কেরাম,
তাবেঈনে ইযাম থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর বা অন্য কারু কবরকে এরূপ রওযা বা মাযার নামে
অভিহিত করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর কবরকে এসব বিদ‘আতী নামে
আখ্যায়িত করা যাবে না।
স্মর্তব্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কবর নয় বরং হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-এর
মিম্বার ও তাঁর বাড়ির মধ্যবর্তী স্থানকে রিয়াযুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান বলা
হয়েছে (বুখারী
হা/১১৯৫; মিশকাত হা/৬৯৪)।
(৮) ফজরের
পর সফরে বের হয়ে মাগরিবের পর সফর শেষ হয়। এর মধ্যকার যোহর ও আছর ছালাত মাগরিবের ছালাতের
সাথে পড়তে হবে? না ফজরের সময় এক সাথে সকল ছালাত পড়ে নিয়ে সফরে বের হ’তে হবে?
-মঈনুদ্দীন আহমাদ
নওহাটা, রাজশাহী।
উত্তর : যোহর ও আছরের ছালাত কোন বিরতিস্থলে বা যানবাহনে জমা ও ক্বছর
করবে (আবুদাঊদ
হা/১২০৮; মিশকাত হা/১৩৪৪; মুসলিম হা/৬৮৬; মিশকাত হা/১৩৩৫)। সুযোগ না
মিললে পরবর্তী ওয়াক্তের সাথে ক্বাযা আদায় করে নিবে। কিন্তু পথিমধ্যে ছালাত ছুটে
যাওয়ার আশংকায় নির্ধারিত ওয়াক্তের পূর্বে ফজরের সাথে বাকী সব ছালাত জমা করা যাবে
না (উছায়মীন,
মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/২১৬; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ১৪০, ১৮৮)।
(৯) ফজরের
পর ঘুমানোর ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? এসময় মানুষের রিযিক বণ্টন করা
হয় মর্মে কোন দলীল আছে কি?
-আল-আমীন
মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : ফজরের পর ঘুমানোর ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি। আর এসময়
রিযিক বণ্টনের বিষয়ে যে ক’টি হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলো যঈফ (যঈফাহ হা/৫১৭০, ৬৯৯১; যঈফুত
তারগীব হা/১০৪৫-১০৪৮; যঈফুল জামে‘ হা/৮১৮)। তবে বিভিন্ন দলীলের
মাধ্যমে বুঝা যায় যে, শরী‘আতে ফজরের পর ঘুমানোর বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
কেননা আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন রাতকে বিশ্রাম এবং দিনকে জীবিকার্জনের জন্য সৃষ্টি
করেছেন (নাবা
৭৮/১০-১১)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার উম্মতের
জন্য ভোরের কর্মের মধ্যে বরকত দান করো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন কোথাও
ক্ষুদ্র সেনাদল বা বৃহৎ সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন তখন তাদেরকে দিনের প্রথমাংশে পাঠাতেন।
রাবী ছাখার আল-গামেদী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসাদলকে দিনের শুরুতেই
পাঠিয়ে দিতেন। ফলে তিনি ধনী হন এবং তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় (আবুদাঊদ হা/২৬০৬; মিশকাত হা/৩৯০৮;
ছহীহুল জামে‘ হা/১৩০০)।
(১০) সালাম
ফিরানোর ক্ষেত্রে ইমাম উভয় সালাম না প্রথম সালাম শেষ করার পর মুক্তাদী সালাম ফিরাবে?
-কামরুল ইসলাম
কুলিয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ইমামের পিছে পিছে সালাম ফিরাবে। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইমাম
নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণের জন্য’ (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। তিনি বলেন, হে লোকসকল! আমি তোমাদের ইমাম।
সুতরাং তোমরা রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম কোন কিছুই আমার পূর্বে করবে না’ (মুসলিম হা/৪২৬; মিশকাত হা/১১৩৭)।
ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছালাত আদায়
করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরান তখন আমরাও সালাম ফিরাই (বুখারী হা/৮৩৮)। অতএব
ছালাতের প্রত্যেকটি কাজ শুরু করতে হবে ইমাম শুরু করার পর।
(১১) জনৈক
বক্তা বলেন, দো‘আর পর মুখমন্ডল মাসাহ করা সুন্নাত। এর বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-আযহারুল ইসলাম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ‘আল্লাহর নিকট যখন কিছু চাইবে, তখন দু’হাত প্রসারিত কর এবং দো‘আর
শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মাসাহ কর’ মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১১৮১; বায়হাক্বী,
মিশকাত হা/২২৫৫; ইরওয়া হা/৪৩৩-৩৪; উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৪/১৫৭; ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৫১৯)।
আলবানী বলেন, দো‘আর পরে দু’হাত মুখে মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ
হাদীছ নেই (মিশকাত
হা/২২৫৫-এর হাশিয়া ২/৬৯৬ পৃ.)।
(১২) ওয়ায
মাহফিল, ইসলামী ক্লাস ইত্যাদি চলা অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া বা আযানের দো‘আ পাঠ করার
বিধান কি?
-আব্দুল কাদের
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : আযানের জওয়াব দেওয়া সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন আযান
শুনবে তখন মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও তাই বল’ (বুখারী হা/৬১১; মুসলিম হা/৩৮৩)। যে
ব্যক্তি আন্তরিকভাবে আযানের উত্তর দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম হা/৩৮৫; মিশকাত হা/৬৫৮)।
অতএব যিনি যে অবস্থায় থাকবেন, সে অবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়া কর্তব্য। উল্লেখ্য
যে, একাধিক আযানের মধ্যে যেকোন একটির উত্তর দিলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
(১৩) পবিত্র
কুরআন মুখস্থ ও দেখে তেলাওয়াত করার মধ্যে ছওয়াবের কোন তারতম্য আছে কি?
-আব্দুস সালাম
নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : কোন তারতম্য নেই। কুরআন দেখে পড়া হোক বা মুখস্থ পড়া হোক
প্রতি হরফে দশটি করে নেকী হবে (তিরমিযী
হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭)। উল্লেখ্য, কুরআন মূল মুছহাফ দেখে পাঠ করার
পৃথক ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছের কোনটি যঈফ, কোনটি জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৫৬, ১৫৮৬,
১৭১০)।
(১৪) পেশাব-পায়খানা
করা অবস্থায় যদি হাঁচি আসে, তাহ’লে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা যাবে কি?
-লোকমান
পাশুন্ডী, চারঘাট,
রাজশাহী।
উত্তরঃ পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা
যাবে না। কারণ এ সময় যিকর করা হ’তে নবী করীম (ছাঃ) বিরত থাকতেন। সেকারণ হাজত
সম্পন্ন করার পর তিনি ‘গুফরা-নাকা’ বলে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাইতেন (তিরমিযী হা/৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত
হা/৩৫৯)।
(১৫) ওছমান
(রাঃ) জুম‘আর দ্বিতীয় আযান চালু করে কি সুন্নাতবিরোধী আমল করেছিলেন?
-মোবারক হোসাইন, রাণীবাজার, রাজশাহী।
উত্তর : ওছমান (রাঃ) মুছল্লীদের সময়মত জুম‘আর ছালাতে উপস্থিতির জন্য সাময়িক
পদক্ষেপ হিসাবে অতিরিক্ত আযান চালু করেছিলেন। ওমর (রাঃ)-এর তিন তালাকের ফৎওয়ার
ন্যায় এটিও ওছমান (রাঃ)-এর একটি ইজতিহাদী ফৎওয়া ছিল। এটি তাঁর সামগ্রিক কোন
নির্দেশনা ছিল না। সেকারণ তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী যাওরা বাযার ব্যতীত অন্য
কোন স্থানে এই প্রথা চালুর ‘আম নির্দেশ দেননি। সুতরাং তিনি সুন্নাত লঙ্ঘন করেননি।
স্মর্তব্য যে, জুম‘আর দিন একটি আযানই সুন্নাত। আর বর্তমান
পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ)-এর গৃহীত সাময়িক ইজতিহাদী পদক্ষেপকে অনুসরণ করা আবশ্যক
নয়। কেননা যে পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ) যাওরা বাযারে প্রথম আযান চালু করেছিলেন, সেই
কারণ অবশিষ্ট নেই। তখন মানুষের হাতে ঘড়ি-মোবাইল ও মাইকে আযানের ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া
বর্তমানে একই মসজিদে দু’টি আযান প্রদান করা হয়, যা ওছমান (রাঃ)-এর নির্দেশনার
বিপরীত (আলবানী,
আল-আজওয়াবাতুন নাফে‘আহ পৃ. ২০; আহমাদ শাকের, শরহ সুনান তিরমিযী ২/৩৯২-৯৩; দ্র.
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৯৪-১৯৬ পৃ.)।
(১৬) শায়খ
আলবানী কি এক মুষ্টির উপর দাড়ি কেটে ফেলা ওয়াজিব বলেছেন? এ বিষয়ে স্পষ্ট জানতে চাই।
-মুহায়মিনুল হক, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : আল্লামা নাছেরুদ্দীন আলবানী ইবনু ওমর (রাঃ)-এর হজ্জকালীন
একটি আমলের উপর ভিত্তি করে এমন ফৎওয়া দিয়েছেন (সিলসিলা যঈফাহ ৫/৩৭৮; সিলসিলাতুন নূর ওয়াল হুদা টেপ
নং ৮৭৬)। তবে তার এই ফৎওয়া শায তথা বিচ্ছিন্ন। অতীতের কোন বিদ্বান
এরূপ ফৎওয়া দেননি। বরং দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে, এটিই সুন্নাত।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং দাড়িকে নিজের অবস্থায়
ছেড়ে দাও। আর গোঁফ ছোট কর (বুখারী
হা/৫৮৯২; মুসলিম হা২৫৯; মিশকাত হা/৪৪২১)। দাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে হাদীছে
ছয় ধরনের শব্দ এসেছে। যেমন- আওফিরূ, আওফূ, আরখূ, ওয়াফ্ফিরূ, আরজূ, আ‘ফূ (أَوْفِرُوا، وَأَوْفُوا، وَأَرْخُوا، وَوَفِّرُوا، أَرْجُوا، أعْفُوا)। শব্দগুলি সব একই মর্ম বহন করে। আর তা হ’ল, দাড়িকে তার নিজ
অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। দাড়ি কাটা বা ছাঁটার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং এটি রাসূল
(ছাঃ)-এর আদর্শের পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, দাড়ি ছাঁটার পক্ষে তিরমিযীতে যে হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে, তা জাল (তিরমিযী
হা/২৭৬২; মিশকাত হা/৪৪৩৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৮)। আবু হুরায়রা (রাঃ)
হ’তে এক মুষ্টির অধিক দাড়ি কাটা সম্পর্কে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে, সেটি যঈফ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৫৪৮১; আবূদাউদ হা/৪২০১)।
শায়খ আলবানী যে হাদীছটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন সেখানে বলা
হয়েছে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন হজ্জ বা ওমরাহ করতেন তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে
ধরতেন এবং মুষ্টির বাহিরে যতটুকু বেশী থাকত, তা কেটে ফেলতেন (বুখারী হা/৫৮৯২)। এই
হাদীছের ব্যাখ্যায় কিরমানী বলেন, তিনি হয়ত উক্ত মৌসুমে সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াতের আলোকে
মাথা মুন্ডন করে ও দাড়ি ছেঁটে উভয়টির নেকী পেতে চেয়েছিলেন। আর এটাকে তিনি দাড়ি
ছেড়ে দেওয়ার সাধারণ নির্দেশ থেকে হজ্জ ও ওমরার জন্য খাছ ভেবে করেছিলেন’। ইবনুত তীন
ইবনু ওমরের এক মুষ্টি দাড়ি কাটার কথার প্রতিবাদ করে বলেন, এর অর্থ তিনি এলোমেলো বা
অধিক লম্বা দাড়ি ছেঁটে গোছালো করতেন’ (ফাৎহুল
বারী হা/৫৮৯২-এর ব্যাখ্যা ১০/৩৫০-৫১ পৃ.)। এতদ্ব্যতীত এটি ছিল তাঁর
ব্যক্তিগত আমল। অন্য কোন ছাহাবী এমনটি করতেন মর্মে কোন বিশুদ্ধ দলীল পাওয়া যায় না।
আর তিনি কাউকে করার জন্য নির্দেশও দেননি। দ্বিতীয়তঃ তিনি শুধু হজ্জ ও ওমরার সময়
করেছেন, অন্য সময় নয়। তৃতীয়তঃ এটি ব্যাখ্যাগত বিষয়, যা স্পষ্ট দলীলের বিপরীতে
গ্রহণযোগ্য নয়।
স্মর্তব্য যে, সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াত রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছে।
কিন্তু তিনি দাড়ি ছাঁটার কথা বলেননি। তাছাড়া ওমর (রাঃ)-এর একটি আমলের সাথে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আমলের দ্বন্দ্ব হ’লে করণীয় সম্পর্কে ইবনু ওমরকে প্রশ্ন করা
হ’লে তিনি উত্তরে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য, না কি ওমরের সুন্নাত’ (মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ)।
ইমাম নববী বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ
ছাটা সিদ্ধ নয় (ফাৎহুল
বারী ১০/৩৫১)। তিনি বলেন, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই বিশুদ্ধ।
যেভাবে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে’ (আল-মাজমূ‘
শারহুল মুহাযযাব ১/২৯০)।
সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এ ব্যাপারে বলেন যে, দাড়ি মুন্ডন
বা দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হ’তে কিছু কেটে নেওয়া বৈধ নয়। এটা রাসূল (ছাঃ)-এর
সুন্নাত বিরোধী কাজ (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমাহ ৫/১৩৭)। শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা
শেষনবী (ছাঃ) এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)।
শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১০/৯৬-৯৭)। অতএব সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে দাড়ি কাট-ছাঁট করা সঠিক নয়।
বরং দাড়ি তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই সৌন্দর্য। যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।
আর আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)।
অতএব সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণই কাম্য (বিস্তারিত দ্র. আত-তাহরীক ১৪/৬
সংখ্যা, মার্চ ২০১১ প্রশ্নোত্তর ২২/২২৮)।
(১৭) মাসবূক
মুছল্লীদের ব্যাপারে দেখা যায় যে, ইমাম প্রথম সালাম ফিরাতেই তারা বাকী রাক‘আতের জন্য
দাঁড়াতে শুরু করেন। এটা শরী‘আসম্মত কি?
-কামরুল ইসলাম
কুলিয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : সুন্নাত হ’ল, ইমাম উভয় সালাম ফিরানোর পর মাসবূক মুছল্লী
অবশিষ্ট ছালাত শেষ করার জন্য দন্ডায়মান হবে। কারণ ইমামের দু’সালাম পর্যন্ত
মুক্তাদীকে ইমামের অনুসরণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইমাম নির্ধারণ
করা হয় তার অনুসরণ করার জন্য’ (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। ইমাম শাফেঈ ও ইবনুল মুনযিরসহ জমহূর
বিদ্বানগণের মতে, যদি প্রথম সালামের পর মাসবূক দাঁড়িয়ে যায়, তবে তা জায়েয হবে।
কিন্তু উত্তম হ’ল দ্বিতীয় সালাম শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানো (ইবনু কুদামাহ ১/৩৯৬; নববী,
আল-মাজমু ৩/৪৮৩; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়াহ ৩৭/১৬৩)।
(১৮) জনৈক
ব্যক্তি তার পিতা-মাতার জন্য প্রতি ওয়াক্তে দু’রাক‘আত ছালাত অতিরিক্ত আদায় করে বখশিয়ে
দেন। উক্ত আমল সঠিক হচ্ছে কি?
-ইমদাদুল হক
বড়গাছি, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : এগুলো ধর্মের নামে চালু হওয়া সামাজিক কুসংস্কার মাত্র। রাসূল
(ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এরূপ কোন আমল পাওয়া যায় না। ছালাত দৈহিক ইবাদত। যা
জীবদ্দশায় যেমন কাউকে দেওয়া যায় না, মৃত্যুর পরেও তেমনি কাউকে দেওয়া যায় না। বরং
আমল যার, ফলাফল তার। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি নেক আমল করল, সেটি তার নিজের জন্যই করল।
আর যে ব্যক্তি মন্দ কর্ম করল, তার পাপ তার উপরেই বর্তাবে’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৪৬)।
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘কেউ কারো পক্ষ থেকে ছিয়াম রাখতে পারে না বা ছালাত আদায় করতে
পারে না’ (মুওয়াত্ত্বা
হা/১০৬৯, পৃ. ৯৪; মিশকাত হা/২০৩৫)। কতিপয় বিদ্বান মৃত ব্যক্তিকে নফল
ছালাতের ছওয়াব বখশানো যাবে বলে মনে করলেও তার পক্ষে কোনই দলীল নেই (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ
দারব)।
ইমাম নববী বলেন, ‘মাইয়েতের জন্য দো‘আ করা, ছাদাক্বা করা, হজ্জ করা
ও তার ঋণ পরিশোধ করার ছওয়াব মাইয়েত পাবেন, এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত। তবে
মাইয়েতের জন্য কুরআন পাঠ করা, ছালাত আদায় করা এবং এধরনের কোন দৈহিক সৎকর্ম করার
বিষয়ে জমহূর বিদ্বানগণের মাযহাব হ’ল তার ছওয়াব মাইয়েতের নিকট পৌঁছবে না’ (মুসলিম শরহ নববী হা/১৬৩১-এর
আলোচনা ১১/৮৫ পৃ.; বিস্তারিত দ্রঃ ‘কোরআন ও কলেমাখানী সমস্যা সমাধান’ বই ৯-১০ পৃ.)।
(১৯) আউয়াল
ওয়াক্তে ফরয ছালাত আদায় করে বিলম্বিত ওয়াক্তে মসজিদে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে মুছল্লী
কি নফল ছালাতের নিয়ত করবে?
-রাজীবুল ইসলাম
বদরগঞ্জ বাযার, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : এমতাবস্থায় মুছল্লী নফল ছালাতের নিয়ত করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৬০০)।
(২০) জান্নাতে
আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর ভাষা কী ছিল?
-আতীকুল ইসলাম
নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : আদম (আঃ)-এর ভাষা কি ছিল বা জান্নাতের ভাষা কি হবে সে
ব্যাপারে কুরআন বা ছহীহ হাদীছে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে এটা নিশ্চিত
যে, আল্লাহ আদম (আঃ)-কে জান্নাতে সকল প্রকার নাম ও ভাষা শিখিয়েছিলেন (বাক্বারাহ ২/৩১)।
সেমতে তার সন্তানগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা
তিনটি কারণে আরবদের ভালবাস। আমি আরবীভাষী। কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা
হবে আরবী (হাকেম
হা/৬৯৯৯; মিশকাত হা/৫৯৯৭; যঈফাহ হা/১৬০, হাদীছটি জাল)। একইভাবে আবু
হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি আরবীভাষী, কুরআন আরবী ও
জান্নাতীদের ভাষা আরবী’ (ত্বাবারাণী
আওসাত্ব হা/৯১৪৭; যঈফাহ হা/১৬১, হাদীছটি জাল)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে
অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ জান্নাতীদের নিকট কুরআন তেলাওয়াত
করবেন (আবু নু‘আইম,
ছিফাতুল জান্নাহ হা/২৭০; হাকীম তিরমিযী, নাওয়াদেরুল উছূল ২/৯০; যঈফুল জামে‘
হা/১৮৩৪)। উক্ত হাদীছ সমূহের ভিত্তিতে একদল বিদ্বান মনে করেন যে, আদম
(আঃ)-এর ভাষা ছিল আরবী এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবী। তবে হাদীছগুলি জাল হওয়ায় ইমাম
ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ আলবানীসহ বহু বিদ্বান উক্ত মতকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন (মিশকাত হা/৫৯৯৭-এর টীকা
‘কুরায়েশের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; যঈফাহ হা/১৬০-১৬২; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ
ছিরাতিল মুস্তাকীম ১/১৫৮)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা
হ’লে তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষ কোন ভাষায় কথা বলবে এবং আল্লাহ তাদের সাথে
কোন ভাষায় কথা বলবেন, তা জানা যায় না। কেননা আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাঃ) এ বিষয়ে
আমাদের কোন খবর দেননি। সেদিন জাহান্নামীদের ভাষা ফার্সী হবে এবং জান্নাতীদের ভাষা
আরবী হবে, এ মর্মে ছাহাবীগণ নিজেদের মধ্যে কোন বিতর্ক করেননি। বরং সবাই এ ব্যাপারে
চুপ থেকেছেন। কেননা এ ব্যাপারে কথা বলা অনর্থক মাত্র। যদিও পরবর্তীদের মধ্যে এ
বিষয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে যে, জান্নাতীগণ আরবীতে পরস্পরে আহবান করবে এবং
জাহান্নামীরা ফার্সীতে জওয়াব দিবে (মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ৪/৩০০ পৃ.)।
তবে সৃষ্টির সূচনায় জান্নাতে আদম (আঃ)-এর ভাষা আরবী ছিল বলে অনুমিত
হয়। কেননা তখন জান্নাতে আদম কেবল একাই ছিলেন। পরবর্তীতে দুনিয়ায় নেমে আসার পর বংশ
বিস্তৃতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আদম সন্তানদের ভাষায় ভিন্নতা আসে। যেসব
ভাষার তাওফীক আল্লাহ পূর্বেই আদমের মধ্যে সৃষ্টি করেছিলেন। আর জান্নাতীদের ভাষা
আরবী হবে। কারণ আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ নবীর উপর সর্বশেষ গ্রন্থ কুরআন নাযিল করেছেন
আরবী ভাষায় এবং শেষনবীর ভাষাও ছিল আরবী। আর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আযান, ছালাত ও
অন্য সকল ইবাদত এবং পরস্পরের সালাম হয় আরবীতে। এজন্য শায়খ বিন বায বলেন, জান্নাতের
ভাষা হবে আরবী (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব,)।
হাফেয ইবনু হাজার বলেন, কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন আরবী ভাষায় হবে বলে ছহীহ হাদীছ
দৃষ্টে বুঝা যায়। তথাপি প্রত্যেকে স্ব স্ব ভাষায় জিজ্ঞাসিত হবে বলেই ধারণা
হয় (ইবনু হাজার,
আল-ইমতা‘ ১২২ পৃ.)।
মোটকথা কবরে প্রশ্নোত্তর, জান্নাতী ও জাহান্নামীদের পারস্পরিক
কথোপকথন, সুফারিশ করার জন্য নবীদের নিকট মানুষের অনুরোধকরণ, দেহের
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য প্রদান এবং জান্নাতীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সালাম প্রদান
প্রভৃতি আখেরাতের সবকিছু আরবী ভাষায় হওয়াটা মোটেই বিচিত্র কিছু নয়। ‘আর সেটা
আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়’ (ইব্রাহীম
১৪/২০; ফাত্বির ৩৫/১৭)।
(২১) একসাথে
একাধিক মাইয়েতের উপর একবার জানাযার ছালাত পড়লে তা কি ছহীহ হবে? নাকি প্রত্যেকের জন্য
পৃথক জানাযা করতে হবে?
-তাওহীদুল ইসলাম
মাষ্টারপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : একসাথে একাধিক জানাযা উপস্থিত হ’লে একবারে জানাযা পড়া
সুন্নাত। পৃথক জানাযা করতে হবে না। ওহোদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশজন দশজন
শহীদের জানাযা একত্রে পড়েছেন (ইবনু
মাজাহ হা/১৫১৩; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১০৩)। উম্মে কুলছূম ও তার
ছেলের জানাযা একই সাথে পড়া হয়েছিল (আবুদাউদ
হা/৩১৯৩)। ইবনু ওমর (রাঃ) নয় জনের জানাযা এক সাথে পড়ে ছিলেন যাতে
মহিলাদের ক্বিবলার দিকে ও পুরুষদের ইমামের পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। উক্ত জানাযায়
ইবনু আববাস, আবু সাঈদ, আবু হুরায়রা ও আবু ক্বাতাদাহ উপস্থিত ছিলেন। এবিষয়ে জিজ্ঞেস
করা হ’লে তারা বলেন, এটি সুন্নাত (নাসাঈ
হা/১৯৭৮; আছার ছহীহাহ হা/৪৪১; আহকামুল জানায়েয ১/১০৩, সনদ ছহীহ; বিস্তারিত দ্রঃ
ছালাতুর রাসূল পৃঃ ২১৫)।
(২২)
আমার পরিচিত জনৈকা মহিলার বাসায় প্রত্যেক জুম‘আর দিন ৭০ বছর বয়স্ক একজন মসজিদের ইমাম
ছাহেব এসে কুরআনের আলোচনা পেশ করেন। এরূপ আলোচনা শরী‘আত সম্মত কি?
-নূরে আখতার, শঠিবাড়ি, রংপুর।
উত্তর : মহিলারা নিরাপদ পরিবেশে পর্দার মধ্যে থাকা অবস্থায় পুরুষের নিকট
থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) মহিলাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৫৩)।
তবে নারী একাকী থাকলে সাথে মাহরাম থাকা অথবা একাধিক মহিলা থাকা যরূরী। কারণ রাসূল
(ছাঃ) বলেন, মাহরাম ব্যতীত কোন নারী যখন পরপুরুষের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত হয়,
সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান’ (তিরমিযী,
মিশকাত হা/৩১১৮)। অনেকে পর্দা না টাঙ্গিয়ে পরপুরুষের সামনে মুখোমুখি
বসে ওয়ায শুনেন ও প্রশ্নোত্তর করেন। যা পর্দার বরখেলাফ।
(২৩) নতুন
বাড়ীতে ওঠা উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দো‘আ-দরূদ পাঠ করে জিন-ভূতের আছর বন্ধ করা
হয়। এটা করা জায়েয হবে কি?
-ইব্রাহীম খলীল, তুলাগাঁও, কুমিল্লা।
উত্তর : নতুন বাড়ী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা শরী‘আত সম্মত নয়। কেবল
বিসমিল্লাহ বলে উঠবে। আর শয়তানের ক্ষতি হ’তে বাঁচার জন্য যেকোন সময় সূরা বাক্বারাহ
বা তার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয়ই শয়তান
এমন বাড়ী থেকে পালায়, যে বাড়ীতে সূরা বাক্বারাহ পড়া হয়’ (মুসলিম হা/৭৮০; মিশকাত হা/২১১৯)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে বাড়ীতে (বা অন্যত্র) তিন রাত সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই
আয়াত পাঠ করা হয়, শয়তান সে বাড়ীর নিকটবর্তী হয় না’ (তিরমিযী হা/২৮৮২; মিশকাত হা/২১৪৫)।
(২৪)
প্রথম কাতারে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব কি? মসজিদে যদি কেবল একটিই কাতার থাকে সেক্ষেত্রে
উক্ত মর্যাদা পাওয়া যাবে কি?
-ইলিয়াস হোসাইন, কাঞ্চন, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : প্রথম কাতারে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যধিক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘মানুষ যদি জানত আযানে এবং প্রথম কাতারে কি নেকী রয়েছে। তাহ’লে লটারীর মাধ্যমে
হ’লেও আযান দেওয়ায় ও প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর জন্য অংশগ্রহণ করত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৮
‘ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)। তিনি বলেন, ছালাতের প্রথম কাতার
ফেরেশতাদের কাতারের মত। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফযীলত জানতে তাহ’লে অবশ্যই দৌঁড়ে
যেতে (আবূদাঊদ
হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬)। তিনি বলেন, প্রথম কাতারের (মুছল্লীদের) উপর
আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)।
তিনি আরো বলেন, ‘পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার’ (মুসলিম হা/৪৪০; মিশকাত হা/১০৯২)।
এক্ষণে মসজিদে কেবল একটি কাতার থাকলেও সেটি প্রথম কাতার হিসাবে গণ্য হবে এবং এর
যাবতীয় ফযীলত অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা প্রথম কাতার বলতে ইমামের পিছনের
কাতারকেই বুঝানো হয়েছে (ইবনু
হাজার, ফাৎহুল বারী ২/২০৮)।
(২৫) চার
রাক‘আত সুন্নাতের শেষ দু’রাক‘আতে কী অন্য সূরা মিলাতে হয়?
-নুহা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।
উত্তর : যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরা
পড়বে এবং ৩য় ও ৪র্থ রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে। যেমন আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য
দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়তেন।... অনুরূপ করতেন
আছরে...’ (বুঃ মুঃ
মিশকাত হা/৮২৮)। একই নিয়মে চার রাক‘আত সুন্নাতের শেষ দু’রাক‘আতে পড়বে।
তবে শেষের দু’রাক‘আতেও কোন কোন ছাহাবী সূরা মিলাতেন বলে জানা যায় (মুওয়াত্ত্বা হা/২৬০; মির‘আত
৩/১৩১)। জানা আবশ্যক যে, ফরয-নফল সব ছালাতে সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য
সূরা পাঠ করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ছালাত সিদ্ধ নয় সূরা
ফাতিহা ব্যতীত (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/৮২২)।
(২৬) কবরে
রাসূলের ছবি দেখিয়ে কি বলা হবে ইনি কে?
-মোশাররফ হোসাইন
রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : কবরে রাসূল ছাঃ)-এর ছবি প্রদর্শন করা হবে মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত
হয়নি। বরং বলা হবে, তোমাদের মাঝে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? (আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; আহমাদ হা/১৮৬৩৭;
মিশকাত হা/১৩১, ১৬৩০; ছহীহাহ হা/২৬২৮)।
(২৭) ‘বেহেশতী
জেওর’ বইয়ে উল্লেখ আছে যে, রাতের অন্ধকারে স্ত্রী মনে করে কন্যা বা শ্বাশুড়ীর শরীর
স্পর্শ করলে, সে পুরুষ তার নিজ স্ত্রীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। ফৎওয়াটি সঠিক কি?
-মাহফূযা আখতার
ধামুইরহাট, জয়পুরহাট।
উত্তর : বেহেশতী জেওরে বর্ণিত মাসাআলাটি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ
দ্বারা প্রমাণিত নয়। সঠিক কথা এই যে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এধরনের অনাকাংখিত আচরণ হয়ে
গেলে স্ত্রী তার উপর হারাম হবে না। কেননা একটি হারাম কাজ অপর একটি হালালকে হারাম
করতে পারে না। এরূপ কাজ হয়ে গেলে তাকে খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু
আববাস (রঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার শ্বাশুড়ী ও শ্যালিকার সাথে যেনা করে
ফেললে তিনি বলেন যে, এ কাজের জন্য তার স্ত্রী তার উপর হারাম হবেনা’ (মুহাম্মাদ ইবনু আবী শায়বাহ,
বায়হাক্বী; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৮৮১ , ৬/২৮৮)।
(২৮) ইবলীস
শয়তান কি একাই মানব ও জিন জাতিকে পথভ্রষ্ট করে, নাকি তার সন্তানরা রয়েছে যারা এ কাজে
তাকে সহায়তা করে?
-মুহাম্মাদ ইমরান মোল্লা
রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : ইবলীস শয়তান একাই নয় বরং তার গোত্র মিলে সম্মিলিতভাবে মানুষ ও জিন
জাতিকে পথভ্রষ্ট করে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার
বংশধরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছ?’ (কাহফ
১৭/৫০)। এই আয়াত প্রমাণ করে যে, তার বংশধর রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘তুমি যদি পার, তাহ’লে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হবে না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ
প্রস্থানকারী হবে না। কারণ বাজার শয়তানের আড্ডাখানা; সেখানে সে আপন ঝান্ডা গাড়ে,
সেখানে সে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা জন্ম দেয় (মুসলিম
হা/২৪৫১; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৬১১৮, ৬১৩১)। অন্যত্র এসেছে, ‘ইবলীস
শয়তান সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে
ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের
মধ্যে সে শয়তানই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিৎনায়
নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিৎনা মানুষের
মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি।
তিনি বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি,
এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, শয়তান এ কথা শুনে
তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ‘মাশ বলেন, আমার মনে
হয় জাবের (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, অতঃপর ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে (মুসলিম হা/২৮১৩; মিশকাত হা/৭১)।
(২৯) একটি
মসজিদ নির্মাণকালে মিস্ত্রির ভুলে মসজিদের কিবলা মূল কিবলা থেকে কয়েক ডিগ্রী সরে যায়।
বর্তমানে কিবলা সঠিক করতে গেলে মসজিদ ভাঙ্গতে হবে। এমতবস্থায় করণীয় কি?
-আহমাদুল্লাহ, শাসনগাছা, কুমিল্লা।
উত্তর : উক্ত মসজিদেই ছালাত আদায় করবে। খুব অল্প হ’লে উক্ত কাতারেই ছালাত
আদায় করবে। আর একটু বেশী হ’লে কাতার করার সময় যত ডিগ্রী বাঁকা হয়েছে বলে মনে হয় তত
ডিগ্রী এঙ্গেলে কাতার হয়ে জামা‘আত শুরু করবে। ইনশাআল্লাহ নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে
এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/২১৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩১৩)।
(৩০) একই
পাপ বারবার করে বহুবার তওবা করেছি। এভাবে বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করলে তওবা কবুলযোগ্য হবে
কি?
-শহীদুয্যামান, কাথুলী রোড, মেহেরপুর।
উত্তর : কবুলযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ্। একই পাপ একাধিক বার করা বড় অন্যায়। তবে
তা তওবা কবুলের জন্য প্রতিবন্ধক নয়। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এক বান্দা
গুনাহ করল। তারপর সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার
গুনাহ মাফ করে দাও। আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন
প্রতিপালক আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন? (সে যদি জেনে-বুঝে
ক্ষমা প্রার্থনা করে থকে) তাহলে আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে
আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল বিরত থাকার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হ’ল এবং একইভাবে
ক্ষমা প্রার্থনা করল। তখন আল্লাহ একই জবাব দিয়ে আবারো তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তার
কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মত গুনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ রাববুল আলামীন
সেবারও তার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলেন’ (বুখারী
হা/৭৫০৭; মুসলিম হা/২৭৫৭; মিশকাত হা/২৩৩৩)।
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’বার বা
হাযারবার বা তার চেয়ে বেশীবারও পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা
কবুল করবেন। এমনকি সকল পাপের জন্য একবার তওবা করলেও তার তওবা শুদ্ধ হবে (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫;
ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)। অতএব নিরাশ না হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় ইচ্ছার
সাথে তওবা করতে হবে। সাথে সাথে ভালো মানুষদের সাথে উঠা-বসা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর
তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে ডাকে
তাঁর দীদার লাভের কামনায় এবং তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব
জীবনের সৌন্দর্য কামনায়’ (কাহফ
১৮/২৮)।
(৩১) হযরত
ওমর (রাঃ) তিন তালাককে তিন তালাক হিসাবে গণ্য করেছেন। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর ফয়ছালার খেলাফ
নয় কি? তার এরূপ ফয়ছালা যদি সেসময় গ্রহণযোগ্য হয়, তাহ’লে বর্তমানে আমাদের জন্য বৈধ
না হওয়ার কারণ কি?
-আহসান হাবীব, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : তালাকের ব্যাপারে ওমর (রাঃ)-এর ফয়ছালা প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে গৃহীত
তাঁর সাময়িক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এতে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সেকারণ মৃত্যুর
পূর্বে তিনি অনুতপ্ত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, ইগাছাতুল লাহফান, ১/২৭৬)।
কেবল তিনিই নন, বরং এ ধরনের ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত অন্য খলীফাগণও নিয়েছিলেন। যেমন
মদ্য পানকারীকে রাসূল (ছাঃ) চড়-থাপ্পড়, খেজুরের ডাল দিয়ে পিটানো, জুতাপেটা ইত্যাদি
করতেন। আবুবকর (রাঃ) খেলাফতকালে ৪০ বেত এবং ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের শেষদিকে
ফাসেক্বী বেড়ে গেলে তিনি ৮০ বেত্রাঘাত করেন (মুসলিম হা/১৭০৬; বুখারী হা/৬৭৭৯; মিশকাত হা/৩৬১৬)।
আবুবকর (রাঃ) জনৈক পায়ুকামীকে এবং আলী (রাঃ) তাঁকে ‘আল্লাহর অবতার’ দাবীকারী একদল
যিন্দীককে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন। অথচ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন প্রাণীকে আগুনে
পুড়িয়ে মারতে নিষেধ করেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম গর্ভাবস্থা দেখেই যেনার শাস্তি এবং
মদের গন্ধ পেয়েই মদ্যপানের শাস্তি দিয়েছিলেন সাক্ষীর অপেক্ষা করেননি। ওমর (রাঃ)
মদের দোকান ও মদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ৩য় খলীফা ওছমান (রাঃ) কুরায়শী
ক্বিরাআতের বিপরীতে কুরআনের অন্য সকল মুছহাফ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল
মুওয়াকক্বেঈন (বৈরূত : দারুল জীল, ১৯৭৩) ৪/৩৭২-৭৪ পৃ.)। মদীনার বাযারে
লোক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি জুম‘আর খুৎবার মূল আযানের পূর্বে ‘যাওরা’ বাযারে
আরেকটি আযানের প্রচলন করেন (বুখারী
হা/৯১২; মিশকাত হা/১৪০৪)। এমনিভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সময় ও
প্রেক্ষিত বিবেচনায় ইজতিহাদের ভিত্তিতে বেশ কিছু প্রশাসনিক নির্দেশ সাময়িকভাবে
জারী করা হয়েছিল, যা চিরস্থায়ীভাবে জারী রাখার দলীল নয়। কেননা এলাহী বিধানই
একমাত্র চিরন্তন ও চিরস্থায়ী (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩৩/৯৭-৯৮; দ্র. তালাক ও তাহলীল বই, পৃ. ৪৬-৪৭)।
(৩২)
জনৈক লেখক ইমাম সুয়ূতীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পিতা কবর থেকে উঠে
ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এর সত্যতা কতটুকু?
-রবীউল ইসলাম, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।
উত্তর : কেবল পিতা নন, বরং পিতা-মাতা উভয়কেই আল্লাহ কবর থেকে জীবিত উঠান
এবং তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট ইসলাম কবুল করেন, মর্মে সুয়ূতীর আল-হাভী গ্রন্থে
বর্ণিত হাদীছটি জাল। উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে ইবনুল জাওযী (রহঃ)
বলেন, নিঃসন্দেহে এটি জাল। এই জালকারীরা স্বল্প বিদ্যাধারী মূর্খ। কেননা তারা জানে
না যে, কাফের অবস্থায় মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন পেয়ে ঈমান আনলেও তা কোন কাজে আসে
না’ (আল-মাওযূ‘আত
১/২৮৩)।
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে মুশরিক অবস্থায় মৃত তার পিতা
সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ও তোমার পিতা জাহান্নামে’ (মুসলিম হা/২০৩)।
রাসূল (ছাঃ) মুশরিক অবস্থায় মৃত তার মায়ের জন্য ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার
অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে অনুমতি দেননি। কেবল কবর যেয়ারতের অনুমতি দেন’ (মুসলিম হা/৯৭৬)।
(৩৩) যে মসজিদের
জমি ওয়াকফকৃত নয়, সে মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে কি?
-প্রফেসর এম. মনযূর আলম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর : জমির মালিকের কোন আপত্তি না থাকলে ছালাত জায়েয হবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য মসজিদ এবং মাটিকে পবিত্র করা হয়েছে, যখন
পানি না পাওয়া যায়’ (মুসলিম
হা/৫২২; মিশকাত হা/৫২৬)। তবে মসজিদের নামে স্থানটি ওয়াকফ করা
যরূরী (বুখারী
হা/২৭৭৪; মুসলিম হা/৫২৪)।
(৩৪) আযান
চলাকালীন সময়ে আযানের জওয়াব দিতে হবে, নাকি সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হবে?
-রেযাউল করীম, রসূলপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : আযান চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হ’লে প্রথমে আযানের জওয়াব দিতে
হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তদ্রূপ
বল’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৬৫৭)। অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের
পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা
অলা-ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি
আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮)।
অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই
দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯)।
অনুরূপ একটি প্রশ্নের উত্তরে শায়েখ বিন বায বলেন, এমতাবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়া
অতঃপর সুন্নাত ছালাত আদায় করা উত্তম হবে। কেননা তাতে আযান ও সুন্নাত ছালাত দু’টিরই
ফযীলত অর্জিত হবে (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ২৯/১৪৪-১৪৫)।
(৩৫) ফরয
ছালাতের জন্য ওযূ করে মসজিদে গেলে হজ্জের ছওয়াব পাওয়া যায় মর্মে কোন হাদীছ আছে কি?
-মুরাদ হোসাইন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে
ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে ওযূ করে ফরয ছালাতে আদায়ের উদ্দেশ্যে গমন করে, সে
ইহরাম বেঁধে হজ্জে গমনকারীর ন্যায় ছওয়াব লাভ করে’ (আবূদাঊদ হা/৫৫৮; মিশকাত হা/৭২৮;
ছহীহুত তারগীব হা/৩২০, ৬৭৫)।
(৩৬) ক্বিয়ামতের
দিন মানবজাতির বিচার কি একদিনেই সম্পন্ন হবে না একাধিক দিনে?
-মুনীরুল ইসলাম, দারুশা, রাজশাহী।
উত্তর : হিসাবের দিন এক দিনই হবে। তবে সেই দিনটি পৃথিবীর হিসাবে পঞ্চাশ
হাযার বছরের সমান হবে (মা‘আরেজ
৭০/৩-৪; মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩)। উল্লেখ্য যে, আরবীতে ৭০,
৭০০, ১০০০, ৫০০০০ সংখ্যাগুলি সাধারণতঃ আধিক্য বুঝানোর অর্থে বলা হয়। সুতরাং উক্ত
আয়াত ও হাদীছসমূহের বর্ণিত সময়টি আযাব বা শাস্তির সাথে সম্পৃক্ত। কাফেরদের উপর এই
দিনটি ৫০ হাযার বছরের সমান ভারী হবে। অর্থাৎ দিনটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে।
কষ্ট ও শাস্তির আধিক্যের কমবেশীর কারণে ক্বিয়ামতের দিনের স্থায়িত্ব তাদের কাছে
হাযার হাযার বছরের সমান মনে হবে। আরবরা খুশীর দিনকে ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং কষ্টের দিনকে
‘দীর্ঘ’ বলে বুঝাতো (কুরতুবী)।
অন্যদিকে মুমিনদের জন্য এই দিনটি হবে খুব সংক্ষিপ্ত। যেমন আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিনদের জন্য কিয়ামতের দিনটি যোহর থেকে আছরের মধ্যবর্তী
সময়ের মত হবে (হাকেম
হা/২৮৪; ছহীহাহ হা/২৪৫৬; ছহীহুল জামে হা/৮১৯৩)। অপর হাদীছে এসেছে, এই
দিনটি মুমিনের জন্য এক ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করার থেকেও সংক্ষিপ্ত মনে হবে (আহমাদ হা/১১৭৩৫, ইবনু হিববান
হা/৭৩৩৪, সনদ দুর্বল; তবে হায়ছামী এবং ইবনু হাজার একে ‘হাসান’ বলেছেন)।
সুতরাং এই দিনের দীর্ঘতা কিংবা সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্য তার আমলের অবস্থা
অনুযায়ী বিভিন্ন রূপ অনুভূত হবে।
(৩৭)
ফজরের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ অংশটুকু যোগ করা কি বিদ‘আত?
-দূর্রুল হুদা, গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : এটা বিদ‘আত নয়। উক্ত বাক্যটি ফজরের সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি
বেলাল (রাঃ)-এর মাধ্যমে হ’লেও পরবর্তীতে তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত হিসাবে
গৃহীত হয়। যেমন বেলাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা তিনি ফজরের আযান দেওয়ার জন্য রাসূল
(ছাঃ)-এর নিকটে আসলেন। তাকে বলা হ’ল যে, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন বেলাল (রাঃ) বললেন,
اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ (ঘুম থেকে ছালাত
উত্তম)। অতঃপর এই শব্দাবলী ফজরের আযানের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হ’ল এবং বিষয়টি
এভাবেই সাব্যস্ত হয়ে গেল’ (ইবনু
মাজাহ হা/৭১৬, সনদ ছহীহ)। আবু মাহযূরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ)
তাকে আযানের বাক্যসমূহ শিক্ষাদানের সময় বলেন, ‘অতঃপর যদি এটা ফজরের ছালাত হয়,
তাহ’লে তুমি বলবে, আছছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’...। (আবুদাঊদ হা/৫০০, মিশকাত
হা/৬৪৫ ‘আযান’ অধ্যায়; সনদ ছহীহ)। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের ছালাতের
আযানের সাথে এটি যুক্ত এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত হিসাবে গৃহীত।
(৩৮) পর্দার
ক্ষেত্রে নারীদের পোষাকে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক?
-এরশাদুল বারী, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : নারীদের পর্দার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা
আবশ্যক। যথা- (১) তাকওয়াপূর্ণ পোষাক পরিধান করা (আ‘রাফ ৭/২৬)। (২) এমন পোষাক পরা, যা পুরো
দেহ আবৃত করে (নূর
২৪/৩১, আহযাব ৩৩/৫৯,
আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)। (৩) পাতলা কাপড় না পরা, যাতে গোপন
সৌন্দর্য্য প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (মুওয়াত্ত্বা
হা/৩৩৮৩; মিশকাত হা/৪৩৭৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুই শ্রেণীর মানুষকে
জাহান্নামী বলেছেন, তাদের একজন হ’ল পোষাক পরিধানকারী উলঙ্গ নারী, যারা পুরুষদেরকে
নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকত হা/৩৫২৪)।
(৪) ঢিলা-ঢালা ও বড় পোশাক পরিধান করা, যাতে শরীরের আকৃতি অস্পষ্ট থাকে (আহমাদ হা/২১৮৩৪; ত্বাবারাণী কাবীর
হা/৩৭৬, সনদ হাসান)। (৫) ঘরের বাইরে সুগন্ধি ব্যবহার না করা (তিরমিযী, নাসাঈ হা/৫১২৬; মিশকাত
হা/১০৬৫)। ৬. পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া (বুখারী হা/৫৪৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৯)।
(৬) কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া (আবূদাঊদ
হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। (৭) নযরকাড়া পোষাক পরিধান না করা (ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; আবুদাউদ
হা/৪০২৯; মিশকাত হা/৪৩৪৬)।
(৩৯) নিয়ামুল
কুরআন ও মকছূদুল মুমিনীন বই দু’টিতে কি নির্ভরযোগ্য? এগুলি পড়ে আমল করা যাবে কি?
-ইউসুফ, কামারপাড়া, মাগুরা।
উত্তর : উক্ত বইদ্বয় মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। এ সমস্ত বই ক্রয় করা
যাবে না, পড়াও যাবে না। নিয়ামুল কুরআনে এমন কিছু কল্পিত দরূদ আছে যেগুলো পড়লে শিরক
হবে। অনুরূপভাবে মকছুদুল মুমিনীন বইটি জাল, যঈফ, মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনীতে ভরপুর।
(৪০) হস্তমৈথুন
কেমন পাপ? এই অপকর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজশাহী।
উত্তর : হস্তমৈথুন বা যেকোন উপায়ে বীর্য স্খলন করা নিষিদ্ধ। এটি
কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজ স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত অন্যকে
কামনা করে, তারা সীমালংঘনকারী’ (মুমিনূন
২৩/৬-৭; মা‘আরিজ ৭০/৩০-৩১)। এটি এমন এক আত্মঘাতি পাপ, যা মানুষের
জীবন-যৌবন ধ্বংস করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো
না’ (ইবনু মাজাহ
হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)। ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মুখ বন্ধ হবে এবং
হাত-পা সাক্ষ্য দিবে’ (ইয়াসীন
৩৬/৬৫)।
অতএব এই পাপীদের এখুনি তওবা করতে হবে। আর এত্থেকে বাঁচার জন্য যখনই
বাজে চিন্তা মাথায় আসবে, তখনই বাম দিকে তিনবার থুক মেরে ‘আঊযুবিল্লাহ’ পড়বে (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত
হা/৭৭)। অতঃপর অন্য কাজে মন দিবে অথবা স্থান পরিবর্তন করবে।
এছাড়া ‘আল্লা-হুম্মাগফির
যানবী ওয়া তাহহির ক্বালবী ওয়া হাছছিন ফারজী (হে আল্লাহ! তুমি
আমার গুনাহ ক্ষমা কর, আমার হৃদয়কে পবিত্র কর এবং আমার লজ্জাস্থানকে হেফাযত কর)
দো‘আটি পাঠ করা যায়। রাসূল (ছাঃ))-এর নিকটে এক যুবক যেনা করার অনুমতি চাইলে তিনি
তাঁর জন্য এই দো‘আ করেন (আহমাদ,
ছহীহাহ হা/৩৭০)।
এছাড়া এত্থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচার পথ হ’ল, বিবাহ করা অথবা নিয়মিত
নফল ছিয়াম রাখা (বুখারী
হা/১৯০৫; মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৮০)। এছাড়া নিয়মিত জামা‘আতের সাথে ছালাত
আদায় করা, দ্বীনী পরিবেশে থাকা, মোবাইল-কম্পিউটার-ইন্টারনেট-টিভির যাবতীয় অশ্লীলতা
হ’তে দূরে থাকা, ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়াশুনায় অভ্যস্ত হওয়া, নির্জনতা বর্জন করে
পারিবারিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অধিকহারে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি কার্যাবলীর মাধ্যমে
এত্থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
(৪১) ঘুমানোর
আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়ে ঘুমালে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ঐ ব্যক্তির প্রতিটি নিঃশ্বাসে
নেকী লেখা হৌক। সত্যতা জানতে চাই।
-আহমাদ আলী, মীরগড়, পঞ্চগড়।
উত্তর : এধরনের বর্ণনা মনগড়া এবং ভিত্তিহীন। এগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা
যাবে না (শায়খ বিন
বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব, অডিও টেপ নং ৪৭৩)।
(৪২) তিন
ব্যক্তির দো‘আ কবুল হয় না; যে তার চরিত্রহীনা স্ত্রীকে তালাক দেয় না, যে ঋণ প্রদান
করে সাক্ষী রাখে না এবং যে মূর্খ বা বুদ্ধিহীন ব্যক্তি (অপচয়কারী)-এর হাতে অর্থ প্রদান
করে। উক্ত হাদীছের বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-রফীকুল ইসলাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (বায়হাক্বী; ছহীহাহ হা/১৮০৫)।
(৪৩) জিনের
সাথে মানুষের শারীরিক সম্পর্ক হওয়া সম্ভব কি? এথেকে নিস্কৃতি পাওয়ার উপায় কি?
-জাহিদুল ইসলাম, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : ইবনুল জাওযী সূরা রহমানের ৫৬ আয়াত ‘সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ,
যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এই আয়াতে
দলীল রয়েছে যে, জিনের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে জিনের শারীরিক মিলন
সম্ভব (যাদুল মাসীর
৪/২১৪)। আর মানুষের সাথে জিনের মিলন সম্ভব বলেই রাসূল (ছাঃ) মিলনের
পূর্বে পঠিতব্য দো‘আ শিখিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহুম্মা
জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা (বুখারী হা/৫১৬৫; ফাৎহুল বারী,
উক্ত হাদীছের আলোচনা ৯/২২৯ পৃ.)। আর এটি দু’ভাবে হ’তে পারে। (১) ঘুমের
মধ্যে স্বপ্নে (২) জাগ্রত অবস্থায় অনুভবের মাধ্যমে। এতে বীর্যস্খলন হ’লে ফরয গোসল
করতে হবে। এক্ষণে জিনের আছর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যার আমল সমূহ ও
ছালাতের পরে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ নিয়মিত পাঠ করতে হবে। তাছাড়া ঘুমানোর
পূর্বে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করে গোটা শরীরে হাত বুলাবে এবং
আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে।
(৪৪) স্ত্রীকে
এক তালাক দেওয়ার পর সময়ের মধ্যে রাজ‘আত না করে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী হিসাবে
গ্রহণ করলে স্বামী কি আবারো তিন তালাকের অধিকারী হবে?
-হাফেয রূহুল আমীন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি রয়েছে। (১) যদি স্বামী তালাক দেওয়ার পর
ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত করে, তাহ’লে সে তত তালাকের অধিকারী থাকবে যত তালাক সে দেয়নি।
অর্থাৎ এক তালাক দিয়ে থাকলে দুই তালাকের অধিকারী থাকবে। আর দুই তালাক দিয়ে থাকলে
এক তালাকের অধিকারী থাকবে। (২) যদি স্বামী স্ত্রীকে এক বা দুই তালাক দেওয়ার পর
ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত না করে এবং নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে আসে তাহ’লে তত
তালাকেরই মালিক হবে যত তালাক অবশিষ্ট রয়েছে। (৩) যদি স্বামী স্ত্রীকে এক বা
দু’তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত না করে এবং স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হয়
অতঃপর তালাকপ্রাপ্তা হয় এবং প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করে তাহ’লে স্বামী তত তালাকেরই
মালিক হবে যত তালাক অবশিষ্ট রয়েছে। (৪) স্বামী যদি স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অতঃপর স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হয় এবং কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয়
ও প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করে তাহ’লে সে তিন তালাকের অধিকারী হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
১৩/১৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/১৬২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/২৮৮)।
প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী দুই তালাক প্রদানের অধিকারী হবেন।
(৪৫) মসজিদে
উঁচু মিনার তৈরি করা যাবে কি? আর তাতে চাঁদের ছবি অাঁকানো বা আল্লাহু আকবার লেখা যাবে
কি?
-আব্দুল হালীম, সন্তোষপুর, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : আযান দেওয়ার জন্য মসজিদে উঁচু মিনার তৈরি করা যাবে। কারণ এতে
দূরবর্তী লোকদের আযান শোনানো সহজ হয়। আর আযানের স্বর যত উচ্চ হয়, ততই উত্তম (আবুদাঊদ হা/৪৯৯, সনদ ছহীহ; ইবনু
কুদামা, আল-মুগনী ১/৩০৮)। আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব বলেন, সুন্নাত হ’ল
আযান মিনারে হবে এবং ইক্বামত মসজিদে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এভাবেই আমল
করতেন (মুছান্নাফ
ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩৪৫; তামামুল মিন্নাহ ১/১৪৬, সনদ ছহীহ)।
আর মিনারে চাঁদের প্রতীক স্থাপন নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের নিয়তের
উপরে। যদি সেটিকে মসজিদ বুঝানোর জন্য স্থাপন করা হয় তাহ’লে জায়েয। আর অন্যকোন
উদ্দেশ্য হ’লে জায়েয হবে না। সাধারণভাবে চাঁদ-তারা কোন ইসলামী নিশানা হওয়ার
ব্যাপারে শারঈ কোন দলীল নেই। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম এমনকি পরবর্তী যুগেও এর
কোন অস্তিত্ব ছিল না। তবে মধ্যযুগে তুর্কী শাসকগণ খৃষ্টানদের ক্রুসের বিপরীতে
ইসলামী নিদর্শন হিসাবে চাঁদ-তারা নির্বাচন করেছিলেন এবং এটি তুর্কী সাম্রাজ্যের
প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র ও
ইসলামী সংস্থাসমূহ তাদের পতাকায় ক্রুসের বিপরীতে ইসলামী নিদর্শন হিসাবে চিহ্নটি
ব্যবহার করে থাকে (উইকিপিডিয়া)।
এতে ওলামায়ে কেরাম বিশেষ কোন আপত্তি তোলেননি। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ইহূদী
ও নাছারাদের বিপরীত কর’ (ছহীহ
ইবনু হিববান হা/২১৮৬)। তবে কতিপয় বিদ্বান কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বনের
সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকতে এমন চিহ্ন ব্যবহার না করাই উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন (উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া
১৬/১৭৮)।
একইভাবে মিনারের উপরে ‘আল্লাহু আকবার’ লেখার বিষয়টি নির্ভর করবে
কর্তৃপক্ষের নিয়তের উপর। এর দ্বারা যদি অমুসলিমদের উপাসনালয় সমূহের বিপরীতে
মুসলিমদের মসজিদ বুঝানো হয়, সেক্ষেত্রে এটি জায়েয হ’তে পারে। তবে সাধারণভাবে কোন
মসজিদের মিনারে এরূপ লেখার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। বিশেষতঃ মিনারের উপরে শুধুমাত্র
‘আল্লাহ’ লেখা আদৌ জায়েয নয়। একইভাবে তা গাড়ীতে বা বাড়ীতে লেখা বা ঝুলানো জায়েয
নয়। কারণ আল্লাহ কোন সাইনবোর্ড নয়, বরং তিনি হ’লেন মা‘বূদ। যাঁকে বান্দা হৃদয়ে
স্মরণ করবে ও তাঁর ইবাদত করবে।
(৪৬) কবরে
যারা মুক্তি পেয়ে সুখে-শান্তিতে অবস্থান করবে, বিচারের পর তাদের জাহান্নামে যাওয়ার
সম্ভাবনা আছে কি?
-জসীমুদ্দীন, দক্ষিণপাড়া, মহাখালী, ঢাকা।
উত্তর : যারা কবরে শান্তিতে থাকবেন, তারা ক্বিয়ামতের দিন হিসাবের পরেও
জান্নাতে প্রবেশ করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আখেরাতের মনযিলসমূহের
মধ্যে প্রথম মনযিল হ’ল কবর। যদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিল
সমূহে মুক্তি পাওয়া সহজতর হবে। আর যদি এখানে মুক্তি না পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী
মনযিলগুলি আরও কঠিন হয়ে যাবে’... (ইবনু
মাজাহ হা/৪২৬৭; মিশকাত হা/১৩২, সনদ হাসান)।
তবে যারা বান্দার হক নষ্ট করার অপরাধে অভিযুক্ত তাদের জন্য
জাহান্নামে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের
উপর যুলুম করেছে সে যেন আজই তার থেকে মাফ নিয়ে নেয়, তার ভাই তার কাছ থেকে এর জন্য
নেকী কেটে নেওয়ার পূর্বে। কেননা সেখানে (হাশরের ময়দানে) কোন দীনার বা দিরহাম পাওয়া
যাবে না। তার কাছে যদি নেকী না থাকে তবে তার (মযলূম) ভাইয়ের গোনাহ তার উপর ছুঁড়ে
মারা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (বুখারী হা/৬৫৩৪; মুসলিম হা/২৫৮১;
মিশকাত হা/৫১২৭)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে? ছাহাবায়ে
কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত নেই, সে-ই নিঃস্ব। তিনি বললেন,
ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি নিঃস্ব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে
ছালাত-ছিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে। কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকদেরকেও নিয়ে আসবে,
যাদেরকে সে গালি দিয়েছে, কারু বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,
কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। এসব ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলি দিয়ে
কাফফারা দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকী শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো
বাকী থাকবে, তখন পাওনাদারদের গোনাহ তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম
হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।
(৪৭) মুক্বীম
অবস্থায় কোন কারণ ছাড়াই ছালাত জমা করায় বাধা আছে কি?
-আব্দুল কাদের, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : জায়েয আছে। তবে বিনা কারণে এটা করা সমীচীন নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মদীনায় যোহর ও আছরের ছালাত এবং মাগরিব
ও এশার ছালাত একত্রে জমা করে পড়লেন, কোন ভয়-ভীতি কিংবা সফরের ওযর ছাড়াই। জিজ্ঞেস
করা হ’ল, কেন তিনি এটা করলেন? উত্তরে ইবনু আববাস বললেন, যাতে উম্মতের কষ্ট না
হয়’ (বুখারী
হা/৫৪৩; মুসলিম হা/৭০৫)। এটি জায়েয রাখা হয়েছে এজন্য যে, বিশেষ
অবস্থায় যেন উম্মত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে অনীহা বোধ না করে। ইমাম আহমাদ সহ
জমহূর বিদ্বানগণের মতে, এই হাদীছ বিশেষ শারঈ ওযর যেমন বৃষ্টি, ভয়, অসুস্থতা
ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব ওযর ব্যতীত স্বাভাবিক অবস্থায় এভাবে নিয়মিত
ছালাত জমা করা ঠিক হবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) জীবনে মাত্র একবারই এরূপ করেছিলেন।
আর ছাহাবী ও তাবেঈদের মধ্যেও কোন শারঈ ওযর ব্যতীত এটির আমল পাওয়া যায় না (নববী, শরহ মুসলিম ৫/২১৮; বিন বায,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩০৪-৫)। যেভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল ছিল
ফজরের ছালাত গালাসে (অন্ধকারে) পড়া। কিন্তু মাত্র একবার তিনি ইসফারে অর্থাৎ ফর্সা
হ’লে পড়েন (আবুদাঊদ
হা/৩৯৪; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৫৩-৫৪
পৃ.)। শুধুমাত্র বিশেষ অবস্থায় জায়েয রাখার জন্য। কিন্তু হানাফী
মাযহাবের ভাইয়েরা সেটাকেই স্থায়ী রীতি করে নিয়েছেন।
(৪৮) জিন
কি মারা যায়? তাদের দাফন-কাফন কিভাবে হয়?
-লিয়াকত আলী খান, তেরখাদা, খুলনা।
উত্তর : অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় জিনদেরও মৃত্যু হয় (আহক্বাফ ১৮; ক্বাছাছ ৮৮) এবং
তাদেরকেও কবর থেকে পুনরুত্থান ঘটানো হবে (আন‘আম
১৩০; হূদ ১১৯)। তবে তারা কত বছর বাঁচে বা কিভাবে তাদের কাফন-দাফন করা
হয় অথবা ইবলীসের মত তারাও ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে কি-না এসব বিষয়ে আল্লাহই
সর্বাধিক অবগত। এ ব্যাপারে কুরআন বা হাদীছে সরাসরি কোন কিছু বর্ণিত হয়নি।
(৪৯)
সুন্নাত ছালাত আদায় করার সময় দেখা যায়, মুছল্লীরা সামনে দিয়ে যাতায়াত করে। এমন অবস্থায়
সুৎরা রেখে অতিক্রম করলে শরী‘আত সম্মত হবে কি?
-আমীরুল ইসলাম, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া।
উত্তর : এমতাবস্থায় তার সিজদার স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে (বুখারী হা/৪৯৬; মুসলিম হা/৫০৮;
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সুৎরার বিবরণ’ অনুচ্ছেদ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোন বস্ত্তকে সম্মুখে রেখে ছালাত আদায় করবে যা তাকে লোকদের
থেকে সুৎরা বা পর্দা স্বরূপ হবে, এমতাবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে (সুৎরার মধ্য দিয়ে)
যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়, তাহ’লে সে যেন তাকে বাধা দেয়। কেননা সে শয়তান’ (বুঃমুঃ মিশকাত হা/৭৭৭ ‘ছালাত’
অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ। আজকাল বিভিন্ন মসজিদে সুৎরা বানিয়ে রাখা হয়।
যা মুছল্লীর সামনে রেখে যাতায়াত করা হয়। এটি সামনে দিয়ে যাবার শামিল। শরী‘আতে এর
কোন প্রমাণ নেই।
(৫০) যারা
ছালাত পড়ে না, তাদের সালাম না দিলে গুনাহগার হ’তে হবে কি?
-মুকাররম হোসাইন, বায়পুরা, নরসিংদী।
উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে
অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু
যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা
উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি ফাসেক (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল
(ছাঃ) ৩২-৩৫ পৃ.)। ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়াই ছিল সালাফে
ছালেহীনের রীতি। যেমন ছাহাবী জাবের (রাঃ) ফাসেক গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সালাম
দেননি (বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৫)। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি পরিচিত বা
অপরিচিত সকলকে সালাম দাও’ (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/৪৬২৯)। সে হিসাবে হেদায়াতের উদ্দেশ্যে ফাসেককে সালাম
দেওয়া যেতে পারে।
(৫১) পালকপুত্র
ওয়ারিছ হ’তে পারে কি? তাকে কতটুকু অছিয়ত করা যাবে?
-নূরুল ইসলাম,
ভাড়ালীপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : পালকপুত্র নিজের পুত্র
নয়। অতএব সে ওয়ারিছ হবে না (আনফাল
৭৫)। তবে পালক পিতা চাইলে সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত যে কাউকে অছিয়ত করতে
পারেন (বুখারী হা/১২৯৫; মুসলিম
হা/১৬২৮; মিশকাত হা/৩০৭১)।
(৫২) ছালাতের
শেষ বৈঠকে কুরআনী দো‘আ পাঠ করার ক্ষেত্রে আঊযুবিল্লাহ বা বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে কি?
-মোরশেদুল ইসলাম
কালিয়াকৈর, গাযীপুর।
উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠকে কুরআনী দো‘আ পাঠ করলে সে সময়
আঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে না। কারণ এটি দো‘আর উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়,
তেলাওয়াতের জন্য নয়। আর ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করার বিধান কেবল
তেলাওয়াতের সূচনাতে (নাহল
১৬/৯৮)।
(৫৩) কুমিল্লার
মুরাদনগরে আল্লাহর ৯৯টি নাম সম্বলিত একটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে আল্লাহর নাম
লেখা জায়েয হবে কি?
-শহীদুযযামান, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : যে মুমিন আসমাউল হুসনার ৯৯টি নাম অর্থ অনুধাবন সহ পূর্ণ ঈমান ও
আনুগত্যের সাথে এবং আল্লাহর উপর অটুট নির্ভরতার সাথে মুখস্ত করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে (বুখারী
হা/৭৩৯২; মুসলিম হা/২৬৭৭; ফাৎহুল বারী ১১/২২৬-২২৭)। কিন্তু এর অর্থ
এটা নয় যে, পিলার নির্মাণ করে এগুলির প্রদর্শনী করা হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ
দেননি’ (মুসলিম
হা/২১০৭; মিশকাত হা/৪৪৯৪; আবুদাঊদ হা/৪১৫৩)। অতএব এগুলি প্রদর্শনীর
বিষয় নয়। বরং ঈমান ও আমলের বিষয়।
আজকাল বিভিন্ন মুসলিম দেশে শিল্পকর্ম হিসাবে কিংবা রাস্তার
শোভাবর্ধনে এধরণের ক্যালিগ্রাফীর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে বিগত যুগের নির্ভরযোগ্য
ওলামায়ে কেরাম পিলারে বা দেওয়ালে এগুলো লেখাকে সমর্থন করতেন না। হানাফী বিদ্বান
ইবনুল হুমাম বলেন, ‘আল্লাহর কিতাব এবং তার নামসমূহ দিরহাম, মেহরাব ও দেওয়ালে লেখা
মাকরূহ (ফাৎহুল
কাদীর ১/১৬৯)। অপর হানাফী বিদ্বান ইমাম যায়লাঈ অনুরূপ মন্তব্য করে
বলেন, এতে কিছু লেখা মিটে যায়, ফলে কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নামের বিকৃতি হ’তে পারে
যা কুরআনকে অসম্মানের শামিল (তাবীনুল
হাক্বায়েক্ব ১/৫৮)। শায়খ উছায়মীন এ ধরনের কর্মকে বিদ‘আত বলে সতর্ক
করেছেন (লিক্বাউল
বাবিল মাফতূহ ১৩/১৯৭)। এ ব্যাপারে সঊদী স্থায়ী ফৎওয়া বোর্ডকে জিজ্ঞাসা
করা হ’লে তারাও এধরনের কাজকে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ বিরোধী বলে
মতপ্রকাশ করেন (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ৪/৫৬-৫৮)। সুতরাং এগুলি থেকে বিরত থাকাই সমীচীন।
(৫৪) মসজিদ
ও মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চিত থাকে। সেগুলোর উপর কি যাকাত ফরয হবে?
-আব্দুল্লাহ, কেশরহাট, রাজশাহী
উত্তর : এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদে যাকাত ফরয হবে না। কারণ এগুলি
ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। বরং এইসব তহবিলে বিভিন্ন দান-ছাদাক্বার মাল জমা হয়’ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩৭;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৯৫-৯৬, ফাৎওয়া নং ৫১৬১)।
(৫৫) হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : ‘হেযবুত তওহীদ’ বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ধর্মীয়
সংগঠন। ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার (উইকিপিডিয়া)। ১৯৯৫
সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার গ্রামের পন্নী পরিবারের সন্তান মোহাম্মাদ বায়াজিদ খান
পন্নী (১৯২৫-২০১২ খ্রি.) দলটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনীতিক, শিকারী ও
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। প্রথম যৌবনে তিনি এনায়াতুল্লাহ মাশরেক্বী (১৮৮৮-১৯৬৩
খ্রি.)-এর বৃটিশবিরোধী ‘খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক
সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরিবিলি জীবন-যাপন শুরু করেন। এক সময় তার ধারণা হয় যে,
বর্তমান ইসলাম বিকৃত ইসলাম। এজন্য তিনি মানুষকে ‘প্রকৃত ইসলাম’-এর পথ দেখাতে দলটির
সূচনা করেন। বর্তমান যুগে একশ’ বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে কেবল তার অনুসারী ‘পাঁচ
লক্ষ’ মানুষকে তিনি ‘প্রকৃত মুসলমান’ মনে করেন (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১১)। তিনি
নিজেকে এই যুগের ইমাম বা এমামুয্যামান হিসাবে দাবী করেন। এই দলের অনুসারীদের
বিশ্বাস হ’ল, বায়াজিদ খান পন্নীকে আল্লাহ বর্তমান যুগে সমগ্র মানবজাতির ত্রাতা
হিসাবে পাঠিয়েছেন (হিজবুত
তওহীদের গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৩)।
তাদের মতে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর একশত বছরের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত
হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে (হেযবুত তওহীদের) এই পবিত্র কর্মসূচি
থেকে মাহরুম, বঞ্চিত রাখার পর আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয়
মাননীয় এমামুয্যামানকে বোঝার তাওফীক দিয়েছেন (ঐ, পৃ. ৬৯, ৭১)।
তারা অন্য মুসলমানদের সাথে ছালাত আদায় করে না এবং তাদের সাথে কোন
ইবাদতেও অংশগ্রহণ করে না। এই দলে যারা যুক্ত হবে তাদের শপথবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে
যে, এই দলভুক্ত যারা নয় অর্থাৎ বাকি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট ও বিকৃত
ইসলামের অনুসারী। অতএব তাদের সাথে কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেবল এই
আন্দোলনের সাথে যুক্তদের সাথেই এবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে (ঐ, পৃ. ৭৩)। এই দলটি
আলেম-ওলামার প্রতি চূড়ান্ত বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তারা মনে করে যে, হাদীছ, তাফসীর,
ফিকহসহ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়; বরং
মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির কারণ (ঐ,
পৃ. ১৩; আকিদা, পৃ. ২৩)।
তারা মনে করে যে, আল্লাহ ‘হেযবুত তওহীদ’কেই মানবজাতির উদ্ধারকর্তা
হিসাবে মনোনীত করেছেন। কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন-মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক
দিক-নির্দেশনা, সত্যপথ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি
নেই। ‘হেযবুত তওহীদে’র মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম প্রচার হবে। এটা আল্লাহরই
নির্দেশ (http://www.hezbuttawheed.org)।
পন্নী আল্লাহর পক্ষ থেকে মু‘জেযা প্রাপ্তির দাবী করে প্রকারান্তরে
নিজেকে নবী দাবী করেছেন। যেমন তিনি নিজের একটি ১০ মিনিটের ভাষণকে আল্লাহর মু‘জেযা
হিসাবে দাবী করেন এবং প্রচার করেন যে, এই মু‘জেযার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে এবং হেযবুত
তওহীদকে হক হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হতে পারে? যে
মো‘জেযা তিনি নবীদের সময় ঘটাতেন একটা একটা করে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো‘জেযা
১০ মিনিটের মধ্যে ঘটিয়ে দিলেন’ (আল্লাহ
মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৯)।
তাদের গঠনতন্ত্রে লেখা হয়েছে, ‘হেযবুত তওহীদে’র সবচেয়ে বড় মাইলফলক
হচ্ছে, ২রা ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান অলৌকিক ঘটনা (মো‘জেযা)
সংঘটন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা : হেযবুত তওহীদ হক
(সত্য), এর ইমাম আল্লাহর মনোনীত হক ইমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে
আল্লাহর সত্য দীন প্রতিষ্ঠিত হবে’। শুধু তাই নয় তারা এই ভাষণটিকে কুরআনের মর্যাদা
দিয়ে বলে, ‘কোরআন ও ইমামের এই ভাষণটি একই পর্যায়ভুক্ত। যারা বায়াজিদ খান পন্নীর
উপর আল্লাহ প্রদত্ত এই মো‘জেযায় বিশ্বাস করবে না এবং এতে সন্দেহ রাখবে, তারা
কুরআনকে অবিশ্বাস করার মত অপরাধী এবং তাদের জন্য উভয় জাহানে রয়েছে ভয়াবহ
শাস্তি’ (গঠনতন্ত্র,
পৃ. ১৬; আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ১১-১৭, ৩৩, ৯৩;
মহাসত্যের আহবান, পৃ. ২৬-২৭)।
তাদের মতে, হাদীছে বর্ণিত দাজ্জাল কোন প্রাণী নয়, বরং দাজ্জাল হ’ল
‘ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা’। আধুনিক যুগে এমামুয্যামান তথা পন্নী প্রথম এই দাজ্জালকে
চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্ত্তবাদী ইহুদী-খৃষ্টান
যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে সেই দাজ্জাল, যেই দানব ৪৮১ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার
শৈশব-কৈশোর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দন্ড প্রতাপে সারা
পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে। আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভূ
বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সিজদায় পড়ে আছে (দাজ্জাল?
ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৫; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ১৩)।
তারা নিজ দলের সদস্যদেরকে শেষ যামানায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যোদ্ধা ভাবে এবং তাদের
পুরুষ ও নারী সদস্যদের যথাক্রমে মোজাহিদ ও মোজাহিদা সম্বোধন করে। শুধু তাই নয়,
মুজাহিদ হিসাবে শাহাদত লাভের প্রমাণ হিসাবে তাদের কর্মীদের মৃত লাশ অন্যদের মত
শক্ত বা শীতল হয় না বলে তারা দাবী করে।
পন্নীর ভাষ্যমতে, কোন ব্যক্তি ‘হেযবুত তওহীদে’ যোগ দিলেই দুই
শহীদের মর্যাদা পাবে, যদি সে শেষ পর্যন্ত থাকে। শুধু তাই নয়, ‘হেযবুত তওহীদে’ যারা
সত্যিকারভাবে এসেছে তাদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের
অবকাশ নেই। এখন কে কোন জান্নাতে যাবে তা আমলের উপর নির্ভর করবে (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের
বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫)।
এই দলের নিকট প্রকৃত ইসলাম হ’ল তাওহীদ ও জিহাদ। আর ইবাদত হ’ল
খেলাফত। অর্থাৎ প্রকৃত ইবাদত হ’ল আল্লাহর দেয়া দীন (জীবন-ব্যবস্থা) মোতাবেক তাঁর
পক্ষ হয়ে শাসন করা। ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত এগুলো প্রকৃত ইবাদতের কাজ নয় বরং
এগুলো জীবন পরিচালনার জন্য কিছু বিধান মাত্র (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৮৭)।
এই ইবাদত তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের আক্বীদা ও ঈমানের মূল কেন্দ্রবিন্দু
হ’ল জিহাদ। এমনকি ঈমানের মূল শর্তই হ’ল জিহাদ (ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪২)। তাই
সশস্ত্র জিহাদ ত্যাগ করলে সে আর মুমিন থাকে না, বরং দ্বীন থেকেই সে বহিষ্কৃত হয়ে
যায়। ছালাতকে তারা মনে করেন জিহাদের প্রশিক্ষণ। এজন্য তারা সামরিক কুচকাওয়াজের মত
সটান ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নব্য এক ছালাত রীতি চালু করেছে। তারা মনে করে, উম্মতে
মুহাম্মাদী সম্পূর্ণ জাতিটাই সামরিক বাহিনী (ঐ, পৃ. ১৩, ১৯, ৩০-৩১, ৩৫)।
হজ্জ সম্পর্কে তাদের ধারণা, এটি কোন ইবাদত নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ
সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুসলমানদের বার্ষিক সম্মেলন। তাদের ভাষায়- ‘হজ্জ কোন তীর্থ
যাত্রা নয়, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও
এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আক্বীদায় হজ্জ আজ সম্পূর্ণরূপে একটি
আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- আল্লাহ
সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অণু-পরমাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর
সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট করে দূরে যেতে হবে কেন?’
তারা বলে, দাড়ি-টুপি-বোরকা ইত্যাদি ইসলামের কোন লেবাস নয়। তাদের
আক্বীদা হ’ল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন ধর্মকেই বাতিল করেননি, বরং সবগুলোকে সংরক্ষণ
ও সত্যায়ন করেছেন। তাই সব ধর্মই সত্য। সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা (http://www.hezbuttawheed.org)।
তারা ইতিমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পত্রিকা দৈনিক দেশের পত্র ও দৈনিক
বজ্রকণ্ঠ প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের বিকৃত আক্বীদা ও আমল ব্যাপকভাবে প্রচার করছে এবং
বাংলাদেশের বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। অতএব এদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকা
একান্ত যরূরী।
(৫৬) বর্তমানে
নারীদের বোরক্বা ও হিজাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রং বেরঙের কাপড় ব্যবহার করে আকর্ষণীয়
করা হয়। এরূপ আকর্ষণীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত বোরক্বা ও হিজাব পরা জায়েয হবে কি?
-মাহফূযা বেগম, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : বোরক্বার জন্য নির্ধারিত কোন রঙ নেই। সেটা কালো বা সাদা বা
যে কোন রঙের হ’তে পারে। তবে শর্ত হ’ল তা যেন সাদাসিধে ও ঢিলেঢালা হয় এবং পরপুরুষের
জন্য আকর্ষণ সৃষ্টিকারী না হয় (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ১৭/১০৮-১০৯)। সুতরাং বোরক্বা বা হিজাব এমন নকশাদার হবে
না বা এতে এমন সাজ-সজ্জা জায়েয হবে না, যা তাক্বওয়া পরিপন্থী এবং পর্দার উদ্দেশ্য
বিরোধী। আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা
তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে
আল্লাহভীতির পোষাকই সর্বোত্তম (আ‘রাফ
৭/২৬)।
(৫৭) সহো
সিজদা দেওয়ার বিধান কি? কেউ যদি তা দিতে ভুলে যায় এবং অনেকদিন পর তা স্মরণ হয় তার জন্য
করণীয় কি? সহো সিজদা সালাম ফিরানোর পূর্বে না পরে দেওয়া উত্তম?
-জাহাঙ্গীর আলম, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : রাক‘আত সংখ্যা কম হ’লে বা বেশী হ’লে অথবা কত রাক‘আত হয়েছে তা
নির্ণয় করতে না পারলে কিংবা তাশাহহুদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দেয়া ওয়াজিব (মুসলিম হা/৫৭১; ইবনু তায়মিয়া,
মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৮/২৩)। শাওকানী বলেন, ওয়াজিব ছাড়া পড়লে সহো সিজদা
ওয়াজিব হবে, সুন্নাত ছাড়া পড়লে সহো সিজদা সুন্নাত হবে (আস-সায়লুল জার্রার ১/২৭৪)।
যদি সহো সিজদা দিতে ভুলে যায় তবে পরে স্মরণ হ’লেই সহো সিজদা দিবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৫;
উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৫৩৭)। আর সহো সিজদা সালামের পূর্বে ও পরে
উভয়ই জায়েয আছে। তবে পূর্বে দেওয়াই উত্তম (ইবনু
আব্দিল বার্র, আত-তাহমীদ ১০/২০১-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/১৪৮; ছালাতুর রাসূল
(ছাঃ) ১৫২-১৫৩ পৃ.)।
(৫৮) ইসলামে
রূপচর্চা করার বিধান কি? কালো চেহারাকে ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার করা যাবে কি? এটা কি
সৃষ্টির পরিবর্তনের পর্যায়ভুক্ত গুনাহ?
-ইসমাঈল হোসেন সিরাজী
নিজবলাইল, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : দেহের কোন অঙ্গের পরিবর্তন না ঘটিয়ে রূপচর্চায় কোন দোষ নেই।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)।
রং ফর্সাকারী ক্রীম প্রভৃতি সৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায় না। অতএব এতে বাধা নেই।
তবে প্লাস্টিক সার্জারী বা অন্য কোন ঔষধের মাধ্যমে শরীরের রঙে স্থায়ী পরিবর্তন
ঘটানো যাবে না (উছায়মীন,
ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/২)। অনুরূপভাবে ভ্রূ উত্তোলন বা চিকন করা,
পরচুলা ব্যবহার করা ও অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করা যাবে না (নববী, শরহ মুসলিম ১৩/১০৭)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে পরচুলা লাগিয়ে নিল এবং যে লাগিয়ে দিল উভয়ের উপর আল্লাহ
তা‘আলার অভিশাপ (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেন এমন সব নারীর উপর যারা অপরের অঙ্গে উল্কি
করে এবং নিজের অঙ্গেও করায়, যারা কপাল বা ভ্রূর চুল উপড়িয়ে ফেলে, যারা সৌন্দর্যের
জন্য দাঁত সরু ও এর ফাঁক বড় করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পাল্টিয়ে দেয়’। এসময়
জনৈকা মহিলা ইবনে মাসঊদের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনতে পেলাম আপনি নাকি এরূপ
এরূপ নারীদের লা‘নত করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কেন তাদের উপর লা‘নত করব না,
যাদের উপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লা‘নত করেছেন? (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ‘পোষাক’ অধ্যায় হা/৪৪৩১)।
(৫৯) জিন
জাতির কি বংশ বিস্তার হয়? তাদের স্ত্রী ও সন্তান আছে কি?
-হাফেয লুৎফর রহমান, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : জিন জাতি বিবাহ করে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তবে তারা
কিভাবে বিবাহ করে ও সন্তান-সন্ততি হয় তা অজ্ঞাত। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা আমার
পরিবর্তে তাকে (শয়তান) ও তার বংশধরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের
শত্রু (কাহফ ১৬/৫০)।
অত্র আয়াতে স্পষ্টভাবে জিনদের সন্তানের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে
আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি’ (আর-রহমান ৫৫/৫৬)।
ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, জিনদের স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততি রয়েছে (আল-ফাতাওয়াল
হাদীছিইয়াহ ৬৬ পৃ:)। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে
যে, ঈমানদার জিনেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। যামরাহ বিন হাবীবকে জিজ্ঞেস করা হ’ল,
জিন কি জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেখানে তারা নারী জিনকে বিবাহ
করবে। যেমন ঈমানদার পুরুষেরা তাদের নারীদের বিবাহ করবে’ (ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, জিন জাতি তিন প্রকার। একপ্রকার জিনের ডানা আছে, তারা শূন্যে উড়ে
বেড়ায়। দ্বিতীয় প্রকারের জিন সাপ ও কুকুরের আকৃতি ধারণ করে। আর তৃতীয় প্রকারের জিন
কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে অন্যত্র চলেও যায় (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬১৫৬; মিশকাত
হা/৪১৪৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৩৮৬)।
(৬০) মাক্বামে
মাহমূদ কি? এটা কি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ? কোন ব্যক্তি এই অবস্থান লাভের জন্য দো‘আ
করতে পারবে কি?
-জাহাঙ্গীর আলম, আজীজুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তর : ‘মাক্বামে মাহমূদ’ বা প্রশংসিত স্থান হ’ল এমন একটি স্থান যেখানে
দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য সুফারিশ করবেন (বুখারী হা/৭৪৪০; মুশকিলুল আছার
হা/৮৫০; ছহীহাহ হা/২৩৬৯)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর রাত্রির কিছু অংশে
তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক
তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (ইসরা
১৭/৭৯)। এই স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ)
স্বয়ং এই স্থানকেই সুফারিশ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)
বলেছেন, ‘মাক্বামে মাহমূদ হচ্ছে সুফারিশ’ (আহমাদ
হা/১০২০৩; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২১)। তিনি আরো
বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষকে উঠানো হবে। আমি ও আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর
থাকব। আমার প্রতিপালক আমাকে সবুজ আলখেল্লা পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি
দেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হচ্ছে মাক্বামে মাহমূদ’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৭০, ২৪৬০,
ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৪৪৫)। উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের জন্য
আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠাবেন। আর সে স্থানটিই মাক্বামে মাহমূদ। উক্ত স্থানটি
কেবল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্য খাছ, অন্য কারু জন্য নয়। অতএব উক্ত স্থান নিজে লাভ
করার জন্য দো‘আ করার সুযোগ নেই। বরং আযানের দো‘আয় ‘ওয়াব‘আছহু মাক্বামাম মাহমূদা
নিল্লাযী ওয়াআদতাহ’ বাক্য দ্বারা আমরা আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত এই প্রার্থনা করি যে,
আল্লাহ যেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর প্রতিশ্রুত এই স্থানটি প্রদান করেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযানের এই দো‘আটি পাঠ করবে তার জন্য
ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’ (বুখারী
হা/৬১৪)।
(৬১) ছালাতের সকল দো‘আ আরবী ভাষায় পড়তে হবে, মাতৃভাষায়
পড়লে ছালাত কবুলযোগ্য হবে না- একথা সঠিক কি? এর পিছনে দলীল কি?
-জাহিদ আলী, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : ছালাতের ভাষা আরবী। তাই দো‘আও আরবীতেই পাঠ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘আমাদের এ ছালাতে মানুষের কথাবার্তা সিদ্ধ নয়। এটা হ’ল তাসবীহ, তাকবীর এবং
তেলাওয়াতে কুরআন’ (মুসলিম
হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৯৭৮)। ছালাতের মধ্যে অন্য ভাষায় দো‘আ করার ব্যাপারে
কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এর মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের ক্ষেত্রে ঐক্যের সূক্ষ্ম
তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। যেমন আযান, সালাম ও দো‘আ সমূহ পাঠ ইত্যাদি। ইমাম ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষের উচিত কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত মাসনূন দো‘আসমূহ পাঠ
করা (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১/৩৪৬)। যদি নিজের বিশেষ কোন প্রার্থনা থাকে, তবে সেটা মাসনূন
দো‘আর মাধ্যমেই চাইতে হবে। এজন্য বাংলা ভাষাতে উচ্চারণ করে প্রার্থনার কোন প্রয়োজন
নেই। বরং মনের নিয়তই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার মনের খবর রাখেন।
(৬২) জেহরী
ছালাতের ইমামের সূরা ফাতিহা পড়ার পর কেউ জামা‘আতে শামিল হ’লে তার করণীয় কী? সে ইমামের
ক্বিরাআত শুনবে না সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?
-আহসান তালুকদার, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : সূরা ফাতিহা পাঠ করে ইমামের ক্বিরাআত শুনবে। কারণ সূরা
ফাতিহা পাঠ ছাড়া ছালাত হবে না (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)।
(৬৩) জুম‘আর
ছানী খুৎবায় দরূদ পাঠ করা কি যরূরী?
-আবুল বাশার, হুজুরীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : জুম‘আর খুৎবায় দরূদ পাঠ করা সুন্নাত। সেটি প্রথম বা দ্বিতীয় খুৎবায়
হ’তে পারে। তবে এটি পাঠ করা আবশ্যিক নয়। উছায়মীন বলেন, এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না,
যার মাধ্যমে খুৎবায় দরূদ পাঠ করাকে ওয়াজিব বলা যায় (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৩)।
তবে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াসহ একদল বিদ্বান দরূদ পাঠকে ওয়াজিব এবং খুৎবার রুকন
বলে উল্লেখ করেছেন (মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ২২/৩৯১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৯/১৭৭)। উল্লেখ্য যে,
খুৎবায় তাশাহহুদ পাঠ করা ওয়াজিব। তথা খুৎবাতুল হাজত পাঠ করা ওয়াজিব (আলবানী, ছহীহাহ হা/১৬৯-এর আলোচনা
দ্রষ্টব্য)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘যেসব খুৎবায় (বক্তৃতায়) তাশাহহুদ পাঠ
করা হয় না তা পঙ্গু হাতের সমতুল্য’ (আবূদাঊদ
হা/৪৮৪১; মিশকাত হা/৩১৫০; ছহীহাহ হা/১৬৯; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৩৯১)।
(৬৪) একটি
হাদীছে অসুখের জন্য সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা নাস, ফালাক্ব, বাক্বারা, আলে-ইমরান,
হাশর, মুমিনূন, জীন প্রভৃতি সূরার কিছু কিছু আয়াত পড়ার কথা এসেছে। উক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা
কোন অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে কি?
-হাফীযুর রহমান, কুষ্টিয়া।
উত্তর : প্রথমতঃ উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৯, আহমাদ
হা/২১২১২)। তবে পবিত্র কুরআনের যেকোন অংশ পড়ে ফুঁক দেওয়া যাবে।
কেননা কুরআনকে আল্লাহ ‘শিফা’ বা ‘আরোগ্য’ বলেছেন (বনু ইসরাঈল ১৭/৮২)। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর
কালাম দ্বারা অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করায় কোন বাধা নেই (বুখারী হা/৫৭৩৬)।
(৬৫)
হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণোভী একত্রে তিন তালাক সম্পর্কে যে ফৎওয়াটি দিয়েছেন
তা বিস্তারিত জানতে চাই।
-আব্দুর রঊফ, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হানাফী আলেম আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী
(১২৬৪-১৩০৪ হি./১৮৪৮-১৮৮৭ খৃ.) একত্রিত তিন তালাক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে
বলেন, এই অবস্থায় হানাফী মাযহাব অনুযায়ী তিন তালাক পতিত হবে এবং ‘তাহলীল’ ব্যতীত
তার সাথে পূর্ব স্বামীর পুনর্বিবাহ সিদ্ধ হবে না। কিন্তু এমন যরূরী অবস্থায় যেমন
স্বামীর নিকট থেকে উক্ত মহিলার পৃথক হওয়া কঠিন কিংবা তাতে ক্ষতির আশংকা বেশী, সেই
অবস্থায় অন্য কোন ইমামের তাক্বলীদ করায় ক্ষতি নেই। যেমন এর দৃষ্টান্ত রয়েছে
নিরুদ্দিষ্ট স্বামীর ক্ষেত্রে। এখানে হানাফীগণ ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব (চার
বছর)-এর উপরে আমল করা জায়েয মনে করেন। অতএব তিন তালাকের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম হবে
যে, ঐ ব্যক্তি যেন কোন শাফেঈ আলেমের নিকট থেকে ফৎওয়া জেনে নিয়ে তার উপরে আমল
করে’ (ফাতাওয়া
রশীদিয়াহ, করাচী : মুহাম্মাদ আলী কারখানায়ে কুতুব, তাবি ৪৬২ পৃ.)।
(৬৬)
রাসূল (ছাঃ)-এর মুওয়াযযিন কতজন ছিলেন? কারা কোথায় আযান দিতেন?
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন, শেখপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : চারজন। তন্মধ্যে মদীনায় ছিলেন দু’জন- (১) বেলাল বিন রাবাহ ও
(২) আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ), তাঁকে আমরও বলা হয়। ক্বোবায় ছিলেন- (৩)
‘আম্মার বিন ইয়াসিরের মুক্তদাস সা‘দ আল-ক্বারয এবং মক্কায় ছিলেন (৪) আবু মাহযূরাহ
আউস বিন মুগীরাহ আল-জুমাহী (যাদুল
মা‘আদ ১/১২০; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ৩য় মুদ্রণ, ৮২৭ পৃ.)।
(৬৭)
নারীরা কি জামা‘আতে বা একাকী চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করতে পারে?
-মুফাখখারুল ইসলাম, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : মহিলাগণ পুরুষদের পিছনে দাঁড়িয়ে জামা‘আতে সূর্যগ্রহণ বা
চন্দ্রগ্রহণের ছালাত আদায় করতে পারেন। হযরত আয়েশা, আসমা ও আনছার মহিলাগণ পুরুষের
জামা‘আতের পিছনে এই ছালাত আদায় করেছিলেন (বুখারী
হা/৯২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূর্য গ্রহণের দীর্ঘ ছালাত শেষে খুৎবায়
বলেন, সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণ কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং এর দ্বারা
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভয় দেখান। অতএব যখন তোমরা এগুলি দেখবে, তখন আল্লাহর শাস্তি
থেকে বাঁচার জন্য তোমরা দ্রুত তাঁর স্মরণ, দো‘আ ও ক্ষমাপ্রার্থনার দিকে ধাবিত
হবে’ (বুখারী
হা/১০৫৯; মুসলিম হা/৯১২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ না গ্রহণ দূর
হয়’ (মুসলিম
হা/৯১৫)।
উপরোক্ত হাদীছের আদেশ মুমিন নর-নারী সকলের জন্য প্রযোজ্য। অতএব
উক্ত ‘আম হাদীছের নির্দেশ অনুযায়ী মহিলাগণ বাড়িতে জামা‘আতের সাথে বা একাকী উক্ত
ছালাত পড়বেন। জামা‘আতের সাথে পড়লে তারা খুৎবা দিবেন না। তবে উক্ত বিষয়ে তাদের
মধ্যে থেকে একজন আলোচনা করবেন (নববী,
আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/৫৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩১০)।
(৬৮) সূর্য
ওঠার সামান্য পূর্বে ঘুম ভেঙ্গেছে। এমতাবস্থায় ফরয ছালাত আদায় করে তারপর কি সুন্নাত
পড়তে হবে? আর সেটি হ’লে সেটা কি সূর্যোদয়ের পর পড়তে হবে?
-আয়েশা আখতার, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : এমতাবস্থায় সুন্নাত সহই ফজরের দু’রাক‘আত ফরয ছালাত আদায়
করবে। সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। কেননা ঘুম ভাঙ্গার উপর বান্দার কোন
এখতিয়ার নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ ছালাত ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা
হ’ল, ঘুম ভাঙ্গলে অথবা স্মরণে আর সাথে সাথে সেটি আদায় করা। এটি ব্যতীত তার কোন
কাফফারা নেই (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/৬০৩-৪)। কোন কারণে ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ক্বাযা হ’লে
তা ফজরের ছালাতের পরে আদায় করে নিবে (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/১০৪৩; আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১০৪৪; দ্র. ছালাতুর রাসূল ১৩৫
পৃ.)।
(৬৯) একটি
কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে কি?
-পারভিন বেগম, হেতম খাঁ, কলাবাগান, রাজশাহী।
উত্তর : স্বাভাবিকভাবে একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন অনুচিৎ। তবে স্থান
সংকুলান না হ’লে বা মহামারির কারণে একাধিক কবর খনন করার মত লোক পাওয়া না গেলে কেবল
তখনই এক কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৪৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
৫/৩৬৯)। ওহোদ যুদ্ধের দিন একাধিক শহীদকে একই কবরে দাফন করা
হয়েছিল (দ্র.
সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৮৫ পৃ.)। হিশাম ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা
ওহোদের দিন রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক
শহীদের জন্য পৃথক পৃথক কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,
তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে গভীর কর এবং দু’জন বা তিন জনকে এক এক কবরে দাফন কর।
ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশী
জানে তাকে প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম
ছিলেন’ (নাসাঈ
হা/২০১০; ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০; মিশকাত হা/১৭০৩)।
(৭০) চার
রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদে ভুলক্রমে দরূদ পড়লে কি সহো সিজদা দিতে হবে?
-মোবারক হোসাইন, বনানী, ঢাকা।
উত্তর : না, এজন্য সহো সিজদা দিতে হবে না।
(৭১) ক্বিয়ামতের
দিন কি মানুষকে তার বুঝ মোতাবেক বিচার করা হবে? পথে-ঘাটে, রেলস্টেশনে বাস্ত্তহারা বহু
মানুষ দেখা যায় যারা ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং কোন আমলও করে না। মূলতঃ এদের
মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে কোন বোধশক্তিই নেই। এদের বিচার কিভাবে হবে?
-যিল্লুর রহমান, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে। (১) বধির
(الأصم) (২) নির্বোধ (الأحمق) (৩) অতিবৃদ্ধ (الهرم) এবং (৪) যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি (من ماة في الفةرة)। বধির বলবে, হে
আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম
আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে,
ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি। আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া
ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার নিকট আসেনি। অতঃপর আল্লাহ
তা‘আলা তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের নিকট একজন দূত প্রেরণ
করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার জীবন
তাঁর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার উপর ঠান্ডা ও
শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
হবে (ত্বাবারাণী
কাবীর হা/৮৪১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।
উক্ত হাদীছের আলোকে ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, হাফেয ইবনু
কাছীর, ইবনু হাজার, শায়খ উছায়মীন সহ বহু বিদ্বান ফৎওয়া প্রদান করেছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ৪/৩০৩-৪; আহকামু
আহলিল যিম্মাহ ২/১১৪৮-৫২; ফাৎহুল বারী ৩/২৪৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৫৮; মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১২/০৭)। সর্বোপরি এদের বিচার সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
তবে إنَّمَا أُجَازِي الْعِبَادَ عَلَى قَدْرِ عُقُولِهِمْ ‘আমি মানুষকে তার জ্ঞান অনুযায়ী প্রতিদান দেব’ বলে যে হাদীছ
বর্ণিত হয়েছে সেটি মুনকার বা যঈফ (বায়হাক্বী,
শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেন, হাদীছটি জাবের (রাঃ)-এর নিজস্ব
বক্তব্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সম্ভবতঃ তিনি আহলে কিতাবদের নিকট থেকে বর্ণনাটি
শুনেছিলেন। অতএব এ ঘটনা বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের প্রয়োজন নেই (সিলসিলা যঈফাহ, ১৪/৮৭৯ পৃ.)।
(৭২) প্রতিদিন
সূরা ইখলাছ ২০০ বার পড়লে ৫০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। শুধু ঋণ মাফ হয় না হাদীছটি কি
ছহীহ?
- আব্দুল করীম, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফাহ
হা/৩০০; মিশকাত হা/২১৫৮)। তবে সূরা ইখলাছ পাঠের অনন্য ফযীলত রয়েছে।
যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেন, সূরা ইখলাছ একবার পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সমান নেকী
পাওয়া যায় (মুসলিম,
মিশকাত হা/২১২৭ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়)।
(৭৩) যেসব
নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অথবা তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাকী বিদেশে চাকুরী করছে,
তাদের স্বামীরা কি দাইয়ূছ হিসাবে গণ্য হবে? এছাড়া স্বামী উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বে্ও
এরূপ স্ত্রীর উপার্জন তার জন্য হালাল হবে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ওমরপুর, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম
করেছেন। (১) নিয়মিত মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে তার
পরিবারে ফাহেশা কাজ স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ
হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২; মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহাহ হা/৬৭৪)। উক্ত
হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, যার চুপ থাকার কারণে তার স্ত্রী-কন্যা,
দাসী প্রভৃতি নিকটতম মহিলাদের মধ্যে ব্যভিচার, মদ্যপান ও ব্যভিচারমূলক কাজ-কর্ম
স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতা লাভ করে (মিরক্বাত,
হা/৩৬৫৫)।
যাহাবী বলেন, ‘দাইয়ূছ’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ
সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে।
অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে
স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’ (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের ১/৫০
পৃঃ)।
প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী যেহেতু স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধ করেছেন এবং
চুপ থাকেননি, সেহেতু তিনি ‘দাইয়ূছ’ হবেন না। বরং স্ত্রী গোনাহগার হবে। কেননা
প্রথমতঃ সে স্বামীর অবাধ্যতা করেছে। দ্বিতীয়তঃ উপার্জনের জন্য একাকী বিদেশে গমন
করেছে। তবে তার উপার্জন স্বামী ও সন্তানদের জন্য অবৈধ নয়। কারণ একের পাপের বোঝা
অন্যে বহন করবে না (আন‘আম
৬/১৬৪)। এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ গ্রহণ না করাই
উত্তম হবে এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কোনভাবেই স্ত্রীকে
ফিরানো না গেলে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে তালাক প্রদান করবে।
(৭৪)
বিতর ছালাতের পরে আর কোন ছালাত আছে কি?
-ইকরামুল হোসাইন, জলঢাকা, নীলফামারী।
উত্তর : বিতর ছালাতকে রাতের শেষ ছালাত হিসাবে আদায় করা উত্তম। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘তোমরা রাতের শেষ ছালাত হিসাবে বিতর আদায় কর’ (বুখারী হা/৯৯৮; মুসলিম হা/৭৫১;
মিশকাত হা/১২৫৮)। তবে বিতর ছালাত আদায়ের পরেও নফল ছালাত আদায় করা যায়।
সেক্ষেত্রে তার প্রথম বিতরটিই যথেষ্ট হবে। কারণ এক রাতে দু’বার বিতর আদায়ের বিধান
নেই (তিরমিযী
হা/৪৭০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৬৭)। ক্বায়েস ইবনু ত্বালক্ব (রহঃ) বলেন,
একদা রামাযান মাসে ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) আমাদের সাথে দেখা করতে এসে সন্ধ্যা
অতিবাহিত করেন এবং ইফতার করেন। অতঃপর রাতে আমাদেরকে নিয়ে তারাবীহ ও বিতর ছালাত
আদায় করেন। অতঃপর তিনি নিজেদের মসজিদে গিয়ে তার সাথীদেরকে নিয়ে পুনরায় ছালাত আদায়
করেন। অতঃপর বিতর ছালাতের জন্য এক ব্যক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে দিয়ে বলেন, তোমার
সাথীদেরকে বিতর পড়াও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এক রাতে দু’বার
বিতর হয় না’ (আবূদাউদ
হা/১৪৩৯; ইবনু হিববান হা/২৪৪৯)। অতএব বিতরের পর কেউ ছালাত আদায় করতে
চাইলে করতে পারে (ছহীহাহ
হা/১৯৯৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
এছাড়া কোন কারণে ঘুম না ভাঙ্গার আশংকা থাকলে রাতের প্রথম ভাগে বিতর
ছালাতের পর দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করলে সেটাই তার রাত্রির নফল ছালাতের
স্থলাভিষিক্ত হবে (দারেমী,
মিশকাত হা/১২৮৬; ছহীহাহ হা/১৯৯৩)।
(৭৫) রাসূল
(ছাঃ) কতবার কুরবানী করেছিলেন?
-উম্মে হালীমা, ফুলকুঁড়ি, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর
কুরবানী করেছেন (তিরমিযী
হা/১৫০৭; মিশকাত হা/১৪৭৫, সনদ যঈফ হলেও মর্ম ছহীহ)। সে হিসাবে রাসূল
(ছাঃ) দশবার কুরবানী করেছেন। কারণ তিনি সফরে থাকা অবস্থাতেও কুরবানী পরিত্যাগ
করেননি (মুসলিম
হা/১৯৭৫; ইরওয়া হা/১১৫৮)। রাসূল (ছাঃ) প্রতি বছর দু’টি করে কুরবানী
দিতেন। একটি তাঁর ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে, আরেকটি তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা
কুরবানী করেনি, তাদের পক্ষ থেকে (বুঃ
মুঃ মিশকাত হা/১৪৫৩; আবুদাঊদ হা/২৮১০)।
(৭৬) জুম‘আর
দিনে খুৎবা দীর্ঘ হ’লে মুছল্লীরা বিভিন্ন কথা বলে। আবার কেউ কেউ ঘড়ি দেখায়। এক্ষেত্রে
খতীবের করণীয় কী?
-নাজীবুল ইসলাম, বৃ-কুষ্টিয়া, বগুড়া।
উত্তর: খুৎবা আখেরাতমুখী, সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হওয়া বাঞ্ছনীয় (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৫-০৬)।
তবে প্রয়োজনমাফিক খুৎবা দীর্ঘ হওয়াতে বাধা নেই। যেমন জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ)
বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে, খুৎবার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দু’চোখ উত্তেজনায় লাল
হয়ে যেত। গলার স্বর উঁচু হ’ত ও ক্রোধ ভীষণ হ’ত। যেন তিনি কোন সৈন্যদলকে হুঁশিয়ার
করছেন’ (মুসলিম
হা/৮৬৭; মিশকাত হা/১৪০৭; মির‘আত ৪/৪৯৬-৯৭)। ছাহেবে মির‘আত বলেন,
‘অবস্থা অনুযায়ী এবং মুছল্লীদের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা দেওয়ার ব্যাপারে জাবের বিন
সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটিই হ’ল প্রথম দলীল’ (মির‘আত হা/১৪১৮-এর আলোচনা দ্রঃ,
৪/৪৯৪-৯৫)।
উম্মে হিশাম বলেন, আমি সূরা ক্বাফ মুখস্থ করেছি রাসূল (ছাঃ)-এর মুখ
থেকে শুনে, যা তিনি প্রতি জুম‘আয় খুৎবা দানকালে পাঠ করতেন’ (মুসলিম হা/৮৭৩; মিশকাত হা/১৪০৯)।
অতএব খুৎবা মধ্যম মানের হবে। খত্বীব ছাহেব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে
খুৎবা শেষ করার চেষ্টা করবেন। আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে মুছল্লীদের যেকোন ধরনের
প্রতিক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) খুৎবা চলাকালীন সময়ে পাশের মুছল্লীকে
চুপ থাকার কথা বলতেও নিষেধ করেছেন (বুখারী
হা/৯৩৪; মিশকাত হা/১৩৮৫)।
(৭৭) কোন
ব্যক্তির আমলনামা সমান সমান হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না জাহান্নামে
প্রবেশ করবে?
উত্তর : যাদের আমলনামা সমান হবে তাদেরকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে
‘আরাফ বাসী’। ‘আরাফ’ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থানের নাম। যা
প্রাচীর স্বরূপ। যাদের নেকী সেই পরিমাণ হবে না যার ফলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে
এবং গোনাহও সেই পরিমাণ হবে না যার ফলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের স্থান
হবে এই ‘আ‘রাফে’। অর্থাৎ গোনাহ ও নেকী সমান সমান হওয়ার কারণে না জাহান্নামে যাবে,
না তারা জান্নাতে যাবে (আ‘রাফ
৭/৪৬-৪৭)।
(৭৮) ছালাতে
সালাম ফেরানোর সময় ডানে এবং বামে পূর্ণ মুখ ঘুরিয়ে তারপর সালাম বলতে হবে নাকি সালামের
শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে হবে?
-মিনহাজ পারভেয, হড়গ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : সালামের শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে হবে।
কেননা সালামই মুখ ঘুরানোর কারণ। অতএব সালাম সহকারেই ডানে-বামে মুখ ঘুরাতে হবে, মুখ
পূর্ণভাবে ঘুরিয়ে তারপর সালাম বলা সঠিক পদ্ধতি নয় (মুগনী ১/৩৯৮; আল-ইনছাফ ২/৮২-৮৩;
ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৮/০২)।
(৭৯)
দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদে জামা‘আতে ছালাতের রুকূ ধরার জন্য সামনের কাতার খালি রেখেই পেছনের
কাতারে দাঁড়ানো এবং নীচ তলায় কাতার ফাঁকা রেখেই উপরের তলায় গিয়ে ছালাত আদায় করার হুকুম
কি?
-তাওয়াবুল হক, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর : সামনের কাতার পূরণ না করে পিছনে কাতার বানানো বা নীচের তলায়
ফাঁকা রেখে উপর তলায় দাঁড়ানো সিদ্ধ নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) সামনের কাতার পূরণ করে
পিছনের কাতার পূর্ণ করার আদেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ফেরেশতারা তাদের
প্রতিপালকের নিকটে যেরূপ সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হয়ে থাকে তোমরা ঐরূপ করো না
কেন?... তিনি বললেন, তারা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূরণ করে, অতঃপর পর্যায়ক্রমে
কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং তারা কাতারে দন্ডায়মান হওয়ার সময় পরস্পর মিলে
দাঁড়ায়’ (মুসলিম
হা/৪৩০; মিশকাত হা/১০৯১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কাঁধ
সমূহ সমানভাবে মিলাও, ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন স্থান ফাঁকা রেখো না।
কেননা যে ব্যক্তি কাতারে মিলে দাঁড়াল, আল্লাহ তার সঙ্গে থাকেন। আর যে ব্যক্তি তা
কর্তন করল, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন’ (আবুদাঊদ হা/৬৬; মিশকাত হা/১১০২; ছহীহাহ হা/৭৪৩)।
কেউ যদি সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়ায়, তাহ’লে
তার ছালাত বাতিল হবে এবং পুনরায় পড়তে হবে (তিরমিযী
হা/২৩০; মিশকাত হা/১১০৫)। এক্ষণে যদি কেউ নীচ তলায় জায়গা থাকা
সত্ত্বেও উপরে উঠে যায় এবং উভয় তলাতেই মুছল্লী যোগদান করে, তাহ’লে তার ছালাত হয়ে
যাবে। যদিও সেটি ত্রুটিপূর্ণ হবে (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪১০)।
(৮০) কুরআন
তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলা ঠিক হবে কি?
-আব্দুল ওয়াহীদ, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলার কোন দলীল পাওয়া
যায় না। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম এমনকি তাবেঈগণের আমল থেকেও এর বর্ণনা পাওয়া
যায় না। সেজন্য অনেক বিদ্বান একে বিদ‘আত বলেছেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৩৩০-৩১; উছায়মীন, ইযালাতুস
সাত্তার আনিল জাওয়াবিল মুখতার ৭৯-৮০ পৃ.)। বরং এর পরিবর্তে কুরআন
তেলাওয়াত শেষে এ দোআটি পড়া যেতে পারে-سُبْحَانَكَ اَللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أشْهَدُ أنْ لاَ اِلَهَ إلاَّ اَنْتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা
ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।
অনুবাদ : ‘মহা পবিত্র তুমি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা
প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)। (আবুদাউদ হা/৪৮৫৭; মিশকাত হা/২৪৫০;
ছহীহাহ হা/৩১৬৪; ইমাম নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লি হা/৩০৮)।
(৮১) ছালাতের
বাইরে সিজদার আয়াত পড়ার সাথে সাথে কি সিজদা করতে হবে, না কি পরে কোন এক সময় দিলে হবে।
-সাইফুল ইসলাম, কাজলা, রাজশাহী।
উত্তর : সিজদার আয়াত যখনই পাঠ করবে বা শ্রবণ করবে তখনই সিজদা দেওয়া
সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং
আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম।
এতে এত ভিড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত
না (বুখারী
হা/১০৭৬; মিশকাত হা/১০২৫)। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে
সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না,
ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৩-৫৪ পৃ.;
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৪ পৃ.)।
(৮২) সরকারী
জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?
-নযরুল ইসলাম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায়ে
কোন দোষ নেই। আনাস (রাঃ) বলেন, মদীনায় হিজরত করার পর মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাজ্জারকে বললেন, তোমরা তোমাদের বাগানটি আমার নিকটে বিক্রয়
করে দাও। জবাবে তারা বলল, আমরা আপনার নিকট থেকে এর বিনিময়ে কোন মূল্য নেব না। কেবল
আল্লাহর নিকট থেকে বিনিময় চাই। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের সম্মতিক্রমে সেটি
গ্রহণ করলেন ও সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন’ (বুখারী হা/১৮৬৮; মুসলিম হা/১২০১; আবুদাঊদ হা/৪৫৩;
নাসাঈ হা/৭১০, ইবনু মাজাহ হা/৭৯১)। তাছাড়া সাধারণভাবে যেকোন স্থানে
ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য ছালাতের স্থান
এবং মাটিকে পবিত্র করে দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৫২৬)।
(৮৩) ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ঘুরার
সময় কোন দিকে দিয়ে ঘুরবে?
-কাওছার মল্লিক, পলাশপোল, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ইমাম সালাম ফিরানোর পর ডাইনে অথবা বামে
ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসতে পারবে এবং এটিই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর
নিয়মিত সুন্নাত (বুখারী
হা/৮৫২; মুসলিম হা/৭০৭; মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬; ফাৎহুল বারী ২/৩৩৪)। ডান
দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো পড়েছেন, ‘রবিব ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা
তাব‘আছু ইবা-দাকা’ (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে
বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে) (মুসলিম হা/৭০৯; মিশকাত হা/৯৪৭;
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ১২৩)।
(৮৪) বিখ্যাত ছূফী দার্শনিক ইবনুল আরাবী ও তাঁর আক্বীদা সম্পর্কে জানতে
চাই।
উত্তর : মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী (৫৫৮-৬৩৮ হিঃ) একজন প্রসিদ্ধ ছূফী সাধক ও
দার্শনিক ছিলেন। যিনি স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং দামেশকে মৃত্যুবরণ করেন। ছূফীদের
নিকট তিনি ‘আশ-শায়খুল আকবার’ নামে খ্যাত। ইয়ামনের বিখ্যাত দানবীর হাতেম তাঈ তাঁর
পূর্বপুরুষ হওয়ায় ‘আত-তাঈ’ উপনামেও তার প্রসিদ্ধি রয়েছে। তাঁর আক্বীদা ছিল কুফরীতে
পূর্ণ। সেজন্য তৎকালীন বহু ওলামায়ে কেরাম তাকে ‘কাফের’ বলে ফৎওয়া দিয়েছেন। তিনি
হুলূল ও ইত্তেহাদে বিশ্বাসী ছিলেন। অর্থাৎ বান্দার আত্মা আল্লাহর পরমাত্মার মধ্যে
প্রবেশ করে। অতঃপর সেটি আল্লাহর অংশ হয়ে যায়। আর সেখান থেকেই চালু হয়েছে ‘যত কল্লা
তত আল্লাহ’। এটাকে ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’ বা অদ্বৈতবাদী দর্শন বলে। ‘হুলূল’-এর পরবর্তী
পরিণতি হ’ল ‘ইত্তেহাদ’। যার অর্থ হ’ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া।
অতঃপর স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক হয়ে যাওয়া। এই দর্শনমতে অস্তিত্ব জগতে যা কিছু দৃশ্যমান,
সবই একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও
সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না।
তাদের মতে সৃষ্টজীব সবই স্রষ্টার অংশ। নবুঅত অপেক্ষা বেলায়াত
শ্রেষ্ঠ, যা তারা লাভ করে বলে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, মারেফতাপন্থীরা আল্লাহকে
দেখতে পায়। অথচ স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)ও আল্লাহকে দেখেননি। তারা মনে করে, আল্লাহর দর্শন
নারীরা বেশী পায়। আর বিবাহের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে (নাঊযুবিল্লাহ)। এদের
মতে, মূসা (আঃ)-এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল।
তাদের মতে, ফেরাঊন পূর্ণ ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই
আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান। অতএব মানুষের মধ্যে
মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মূর্তিপূজা করে বা গাছ, পাথর,
মানুষ, তারকা ইত্যাদি পূজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পূজা করে’ (দ্রঃ ইবনুল আরাবী রচিত
আল-ফুতূহাতুল মাক্কিয়াহ ২/৬০৪; আল-ফুছূছুল হিকাম ১/৭৬-৭৭,৮৩, ১৯১-১৯৫, ২১৭;
যাখায়েরুল আ‘লাক্ব শরহ তারমুজানুল আশওয়াক্ব ১/৩৮-৩৯)।
বস্ত্ততঃ এই আক্বীদার সাথে হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’ আক্বীদার তেমন
কোন পার্থক্য নেই। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু হওয়া এই সকল কুফরী আক্বীদার
অন্যতম প্রচারক হ’লেন মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী
ছূফীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ’ল, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের
মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে।
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয যাহাবী, আবু যুর‘আ ইরাক্বী, ইবনু
খালদূন, আলাউদ্দীন বুখারী, ইয্যুদ্দীন আব্দুস সালাম, তাক্বীউদ্দীন সুবক্বী,
তাক্বীউদ্দীন ফাসী, আবু হাইয়ান আন্দালুসী, হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী,
সিরাজুদ্দীন বালক্বীনী, সাখাভী, তাফতাযানী, জুরজানী, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী সহ
বহু বিদ্বান তার ‘ফুছূছুল হিকাম’ ও ‘ফুতূহাতে মাক্কীয়াহ’ বইয়ে লিখিত কুফরী আক্বীদা
সমূহের কারণে তাকে কাফির, পথভ্রষ্ট, মূর্খ, মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কৃত,
চিরস্থায়ী জাহান্নামী ইত্যাদি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন’ (দ্র. তাক্বীউদ্দীন আল-ফাসী, আক্বীদাতু
ইবনে ‘আরাবী ওয়া হায়াতুহ; সাখাভী, আল-ক্বাউলুল মুনাববী আন তারজুমাতে ইবনুল আরাবী
প্রভৃতি)।
বস্ত্ততঃ ইসলামী আক্বীদার সাথে মা‘রেফাতের নামে প্রচলিত ছূফীবাদী
আক্বীদার কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম ও প্রচলিত ছূফীদর্শন সরাসরি সাংঘর্ষিক। ছূফীবাদের
ভিত্তি হ’ল কথিত আউলিয়াদের স্বপ্ন, কাশ্ফ, মুরশিদের ধ্যান ও ফয়েয ইত্যাদির উপর।
পক্ষান্তরে ইসলামের ভিত্তি হ’ল আল্লাহ প্রেরিত ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের
উপর। ছূফীদের আবিষ্কৃত তরীকা সমূহ তাদের কপোলকল্পিত। এর সাথে কুরআন, হাদীছ, ইজমায়ে
ছাহাবা, ক্বিয়াসে ছহীহ কোন কিছুরই দূরতম সম্পর্ক নেই। ছূফীদের ইমারত খৃষ্টানদের
বৈরাগ্যবাদের উপরে দন্ডায়মান। ইসলাম যাকে প্রথমেই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে (হাদীদ ২৭; দ্র. দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন,
২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯)।
সুতরাং ছূফীদের মধ্যে যারা হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা কুফরীর
পর্যায়ভুক্ত অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে- সেসব
ইমামের পিছনে জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।
(৮৫) শী‘আ মসজিদে ছালাত
আদায় করা যাবে কি?
-মুহাম্মাদ
শহীদুয্যামান, ধানমন্ডি ১৫, ঢাকা।
উত্তর : শী‘আদের ইমামতিতে ছালাত
আদায় করা যাবে না। কারণ তারা প্রথম তিন খলীফাসহ অধিকাংশ ছাহাবীকে কাফির মনে করে।
তারা আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে নিকৃষ্ট আক্বীদা পোষণ করে। এর বিপরীতে তারা আলী (রাঃ)
সম্পর্কে চরম বাড়াবাড়ি করে থাকে।
পবিত্রতা ও ছালাতের নিয়ম-কানূনের ক্ষেত্রেও আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে তাদের পদ্ধতি ভিন্ন। তারা আমাদের কুরআনকে অস্বীকার করে
এবং মুছহাফে ফাতেমা-কে মূল কুরআন হিসাবে দাবী করে। যার মধ্যে বর্তমান কুরআনের কিছু
নেই। তারা বুখারী শরীফ সহ মুসলিম উম্মাহর গৃহীত হাদীছ গ্রন্থ সমূহকে অস্বীকার করে।
এছাড়াও তাদের রয়েছে বহু বাজে আক্বীদা ও আমল।
অনুরূপভাবে তাদের মসজিদে ছালাত আদায় করাও সমীচীন
নয়। কারণ তারা অধিকাংশ সময় বরকত হাছিলের উদ্দেশ্যে তাদের ইমামদের কবরের উপর মসজিদ
নির্মাণ করে থাকে। তবে তাদের কোন ব্যক্তি শিরকী আক্বীদা পোষণ না করলে বা তাদের কোন
মসজিদ কবরের উপর প্রতিষ্ঠিত না হ’লে সেখানে ছালাত আদায় করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৯১; বিন বায,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ১২/১০৭ )।
(৮৬) ফরয ছালাতের পর
যিকিরের সময় দরূদে ইবরাহীম পড়া যাবে কি?
-বাঁধন আখতার,
ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট।
উত্তর : ফরয ছালাতের পর নিয়মিত
দরূদ পাঠের পক্ষে দলীল নেই। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, হাফেয আবু মূসা ও
অন্যান্যরা ফরয ছালাতের পর দরূদ পাঠের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারা একটি
কাল্পনিক ঘটনা ব্যতীত কোন দলীল উল্লেখ করেননি (জালাউল আফহাম ১/৪৩৪)। তবে রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা একটি
গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত যার ব্যাপারে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
অতএব কেউ যদি এই ফযীলতের প্রতি লক্ষ্য রেখে দরূদ পড়তে চায়, তবে ব্যক্তিগতভাবে পড়তে
পারে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে সরবে ছালাতের পর দরূদ পড়া বিদ‘আত।
(৮৭) আলী (রা:)-এর সাথে
ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহের পর মুহাম্মাদ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে একাধিক বিবাহ করতে নিষেধ
করেছিলেন, যাতে ফাতেমা (রাঃ)-এর অসুবিধা না হয়। এটা কি সত্য?
-শরাফত আলী, দক্ষিণ
দাঘবপুর, পাবনা।
উত্তর : ফাতেমা (রাঃ)-এর
অসুবিধার জন্য নয় বরং প্রস্তাবিত নারীরা আবু জাহলের বংশধর ছিল বলে রাসূল (ছাঃ) আলী
(রাঃ)-কে বিবাহের অনুমতি দেননি। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, বনু হিশাম ইবনু মুগীরা
আলীর কাছে তাদের মেয়েকে বিবাহ দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু আমি
অনুমতি দিব না, আমি অনুমতি দিব না, আমি অনুমতি দিব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী আমার
কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে বিবাহ করতে পারে। কেননা ফাতেমা
হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট
দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়’ (বুখারী
হা/৫২৩০; মুসলিম হা/২৪৪৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আলী (রাঃ) আবু জাহলের
মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে
হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের কন্যা এবং আল্লাহর শত্রুর
কন্যা একত্রিত হ’তে পারে না’ (বুখারী
হা/৩১১০; মুসলিম হা/২৪৪৯)। উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-এর মৃত্যুর
পর একই সময়ে চারজন রেখে ক্রমান্বয়ে মোট আটজন নারীকে বিবাহ করেছিলেন।
(৮৮) নবী করীম
(ছাঃ) বা কোন ছাহাবী হ’তে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর আগমন সম্পর্কে কোন
ভবিষ্যদ্বাণী আছে কি?
-ওমর ফারূক,
মিরপুর-১, ঢাকা।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বা কোন
ছাহাবী থেকে ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী নেই। বরং উক্ত বিষয়ে বর্ণিত
হাদীছ দ্বারা প্রখ্যাত ছাহাবী সালমান ফারেসী ও তাঁর জাতিকে বুঝানো হয়েছে। হাদীছটির
অনুবাদ হ’ল- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বসেছিলাম। এসময়
তাঁর উপর সূরা জুম‘আ অবতীর্ণ হ’ল, যার একটি আয়াত হ’ল- ‘এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও
যারা এখনও তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি’ (৬২/৩)।
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন
উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারেসী উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) সালমানের
উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকট থাকলেও কিছু লোক বা তাদের
এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে’ (বুখারী
হা/৪৮৯৭)। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, যদি দ্বীন ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের
নিকটেও থাকত, তবুও পারস্যের একজন ব্যক্তি তা নিয়ে আসত বা পারস্যের সন্তানদের কেউ
তা পেয়ে যেত’ (মুসলিম হা/২৫৪৬)।
ছহীহ ইবনে হিববানের বর্ণনায় আরো স্পষ্টভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) এসময় সালমানের
উরুতে হাত মেরে বললেন, এই ব্যক্তি ও তার জাতি (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭১২৩)।
তবে রাদ্দুল মুহতারে ইমাম সুয়ূতী (রহঃ)-এর একটি
উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে এ মর্মে যে, তিনি বলেন, এ হাদীছ দ্বারা ইমাম আবু হানীফা
(রহঃ)-এর ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে (রাদ্দুল মুহতার ১/৫৩; বঙ্গানুবাদ তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন ১২৬৩ পৃঃ,
মুহাম্মাদ ৩৮ আয়াতের ব্যাখ্যা), যার কোন ভিত্তি নেই।
(৮৯) যোহরের ফরয
ছালাতের আগের ৪ বা ২ রাক‘আত সুন্নাত পড়তে না পারলে তা কি যোহরের ফরয ছালাতের পর
আদায় করা যাবে? এই অবস্থায় কোন সুন্নাতটি আগে পড়ব?
-মুহাম্মাদ বিলাল,
ওয়ারী, ঢাকা।
উত্তর : ছুটে যাওয়া সুন্নাত
যোহরের ফরয ছালাতের পর আদায় করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যদি
যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত না আদায় করতেন তবে যোহরের (ফরযের) পর তা আদায়
করতেন’ (তিরমিযী হা/৪২৬; ইবনু
মাজাহ হা/১১৫৮, সনদ হাসান)। পূর্বের সুন্নাত ও পরের সুন্নাত আগ-পিছ করার
ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। তবে উত্তম হ’ল পরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়ে নেয়ার পর
পূর্বের চার বা দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়া (ওছায়মীন, ফাৎহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম ২/২২৫)।
(৯০) আযানের হাদীছগুলো
থেকে কি এটা প্রমাণিত হয় না যে ওলী-আউলিয়াদের কাছে স্বপ্নের মাধ্যমে অহী আসতে
পারে?
-মুহাম্মাদ রনি
হুসাইন, শফীপুর, গাযীপুর।
উত্তর : না, আযানের হাদীছগুলো এর কোন প্রমাণ বহন করে
না। কারণ কেবল দু’জন ছাহাবীর স্বপ্নের মাধ্যমে আযানের বিধান সাব্যস্ত হয়নি। বরং
রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমোদনের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। আর স্বপ্ন তখনই অহী হিসাবে গণ্য
হবে যখন তা রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক স্বীকৃত হবে। সুতরাং ওলী-আওলিয়াদের কাছে স্বপ্নযোগে
অহী আসার কোন দলীল নেই। তবে নেককার ব্যক্তিদের ভাল স্বপ্ন কখনও সত্য হ’তে পারে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ’ (বুখারী হা/৬৯৮৩; মুসলিম হা/২২৬৩; মিশকাত
হা/৪৬২২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের মধ্যে কিছু
লোক ছিলেন মুহাদ্দাছ (আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত), আমার উম্মতের মধ্যে যদি
কেউ এমন থেকে থাকে তবে সে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাবই হবে’ (বুখারী, মুসলিম হা/২৩৯৮; তিরমিযী হা/৩৬৯৩)।
(৯১) জুম‘আর খুৎবা
চলাকালীন কোন কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে কী?
-মুবারক হোসাইন,
ইশ্বরদী, পাবনা।
উত্তর : খুৎবা চলাকালীন মসজিদের
বাইরে অবস্থান করলে খাওয়া ও পান করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু মসজিদে অবস্থানকালে পানাহারসহ
দুনিয়াবী কাজ করা নিষিদ্ধ। তবে অসুস্থ হ’লে বা বাধ্যগত অবস্থায় পড়লে খাদ্য বা পানি
গ্রহণে দোষ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫২৯;
বাহুতী, কাশ্শাফুল কেনা‘ ৩/৩৮৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/১৮৫; উছায়মীন,
তা‘লিকাতুল আলা কাফী লি ইবনু কুদামাহ ২/২৩৭)।
(৯২) আলী (রাঃ) কি
যয়নাব বিনতে জাহাশ ও উম্মে সালামা (রাঃ)-কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত
হয়েছিলেন? তাদের জন্য তার থেকে উত্তম স্বামী পাওয়ার ব্যাপারে দো‘আ করেছিলেন এবং
নিজের জন্যও তাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রীর দো‘আ করেছিলেন। ফলে ফাতেমা (রাঃ)-এর সাথে
তাঁর বিবাহ হয়?
-মু‘তাছিম বিল্লাহ,
কলারোয়া, সাতক্ষীরা
উত্তর : উক্ত ঘটনার কোন ভিত্তি
নেই। বরং যয়নব বিনতে জাহাশ যায়েদ বিন হারেছার নিকট থেকে তালাকপ্রাপ্তা হ’লে রাসূল
(ছাঃ) তাকে বিয়ে করেন (বায়হাক্বী,
সুনানুল কুবরা হা/১৩৫৬০)। আবু সালামা (রাঃ) মৃত্যুকালে দো‘আ করেছিলেন যেন
উম্মে সালামা তার মৃত্যুর পর তার অপেক্ষা অধিক উত্তম স্বামী পান। তার দো‘আ কবুল
হয়েছিল। উম্মে সালামাকে রাসূল (ছাঃ) বিয়ে করেন। ফলে উম্মে সালামা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
মানুষকে স্বামী হিসাবে পান (মুসলিম
হা/৯১১; হাকেম হা/৬৭৫৯; আহমাদ হা/২৬৭১১)।
(৯৩) অনেকে বলেন,
খুৎবার সময় তাশাহহুদের হালতে বসতে হবে। এর প্রমাণে কোন দলীল আছে কি?
-আমীরুল ইসলাম,
শান্তিনগর, জয়পুরহাট।
উত্তর : জুম‘আর খুৎবা শ্রবণের
জন্য বসার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। মুছল্লী আদব বজায় রেখে সুবিধামত বসবে। তবে
সাধারণ অবস্থায় যেভাবে বসা সমীচীন নয় মসজিদেও সেভাবে বসা উচিৎ নয় (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২৩৫)।
যেমন হাদীছে এসেছে, ছাহাবীগণ বলেন, রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিন ইমামের খুৎবা চলাকালে
কাউকে হাঁটু উপরে উঠিয়ে কাপড় জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/১১১০; মিশকাত হা/১৩৯৩; ছহীহুল
জামে‘ হা/৬৮৭৬)। সর্বোপরি ইমামের খুৎবা চলাকালে মুছল্লী এমনভাবে বসবে যেন
ইমামের চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করতে পারে (তিরমিযী হা/৫০১; মিশকাত হা/১৪১৪; বায়হাকী,
সুনানুল কুবরা হা/৫৫০৩; ছহীহাহ হা/২০৮২)।
(৯৪) আমাদের মসজিদের
ইমাম জুম‘আর খুৎবার শেষে মিম্বারে থাকা অবস্থায় ছালাতের আগে মুছল্লীদের নিয়ে
দু’হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ করেন। এভাবে দো‘আ করা কি জায়েয?
-মেহেদী হাসান,
কানসাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : খুৎবা চলাকালীন ইমাম ও
মুক্তাদীদের হাত তুলে মুনাজাত করা বিদ‘আত। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম এভাবে
হাত উত্তোলন করে দো‘আ করেননি। কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে
কেরাম বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য হাত তুলে দো‘আ করেছিলেন। বর্তমানেও এরূপ পরিস্থিতি
আসলে দো‘আ করতে পারে। কিন্তু এটিকে দলীল হিসাবে নিয়ে নিয়মিত খুৎবায় হাত তুলে দো‘আ
করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর পরে কোন ছাহাবী এভাবে দো‘আ করেননি। অথচ রাসূলের
আদর্শ বাস্তবায়নে ছাহাবীগণই অধিক অগ্রগামী ছিলেন (নববী, শারহু মুসলিম হা/৮৭৪-এর আলোচনা ৬/১৬২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১২/৩৩৯)। বরং কেউ খুৎবায় হাত উত্তোলন করে মুনাজাত করলে ছাহাবায়ে কেরাম বাধা
দিয়েছেন বলে দলীল পাওয়া যায়। যেমন একদিন বিশর ইবনু মারওয়ান জুম‘আর খুৎবা
প্রদানকালে দো’আ করার সময় উভয় হাত উপরে তুললেন। এতে ছাহাবী উমারা বললেন, আল্লাহ এই
বেঁটে হাত দু’টিকে কুৎসিত করুন। আমি নিশ্চিতরূপে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি,
তিনি নিজের হাত দিয়ে (ইশারা)-এর বেশী কিছু করতেন না (মুসলিম হা/৫৩; তিরমিযী হা/৫১৫; আবুদাউদ হা/১১০৪; ইবনু খুযায়মাহ
হা/১৭৯৩, সনদ ছহীহ)। তবে ইমাম যদি দো‘আ পাঠ করেন আর মুছল্লীরা নিম্নস্বরে
আমীন বলে তবে তাতে কোন দোষ নেই। কারণ এটা দো‘আ কবুলের সময় বলে হাদীছে বর্ণিত
হয়েছে (ঊছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ
১/৬৯৫)।
(৯৫) স্বামী ও স্ত্রী
জামা‘আতে ছালাত পড়তে পারবে কি?
-আব্দুল হাকীম,
মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : স্বামীর ইমামতিতে
স্ত্রী জামা‘আতে ছালাত আদায় করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পিছনের
কাতারে দাঁড়াবে (ফাতাওয়া ইসলামিয়া
১/৫৫৯)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা একদিন রাসূলের সাথে ছালাতে দাঁড়ালাম। তখন
আমি ও ইয়াতীম বালক তার পেছনে দাঁড়ালাম এবং বৃদ্ধা মহিলা আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন (বুখারী হা/৩৮০; মুসলিম হা/৬৫৮)। অন্য
বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একবার নবী (ছাঃ) তাকে, তার মা ও খালাসহ
ছালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। আর
মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে (মুসলিম
হা/৬৬০; মিশকাত হা/১১০৯)।
(৯৬) ছালাতরত
অবস্থায় মোবাইলে রিং বেজে উঠলে তা সাথে সাথে বন্ধ করা যাবে কি?
-রাশিদুল ইসলাম,
কুমিল্লা।
উত্তর : মোবাইল বন্ধ করেই
ছালাতে আসবে। ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করে ছালাত শুরু করলে এবং ছালাতরত অবস্থায়
মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা যাবে। কেননা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কাজ ছালাত
অবস্থায় প্রতিহত করা যায় (আহমাদ,
আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫)।
(৯৭) হাদীছে আছে যদি
কেউ ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করার পর একই স্থানে বসে থেকে যিকির করতে থাকে এবং
সূর্য উঠার পর ইশরাকের ছালাত আদায় করে তাহ’লে এক ওমরা এবং এক হজ্জের ছওয়াব পাওয়া
যায়। কিন্তু ঘুমের কারণে জামা‘আত না পেলে বাসায় একাকী একই আমল করলে কি এই নেকী
পাওয়া যাবে?
-মুহাম্মাদ মামূনুর
রশীদ, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত
হাদীছে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। অতএব নিয়মিত এই আমলকারী ব্যক্তি যদি
কোনদিন শারঈ ওযর তথা ভীতি বা অসুস্থতার মত বাধ্যগত কারণে বাড়িতে জামা‘আতে ছালাত
আদায় করে এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকর-আযকার পাঠ শেষে ইশরাকের ছালাত আদায় করে,
তাহ’লে পূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার ছওয়াব হাছিল করবে ইনশাআল্লাহ (ফাৎহুল বারী ৬/১৩৭; হাশিয়াতুল আদাভী ১/২৮৫;
হাশিয়াতুত ত্বাহত্বাভী ১/১৮১; উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ১/৩৬)।
(৯৮) পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাতের মধ্যে কোন ওয়াক্তের ছালাত রাসূল (ছাঃ) সর্বপ্রথম আদায় করেছিলেন?
-রিয়াযুল ইসলাম,
মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) তাঁর উপর
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পর সর্বপ্রথম যোহরের ছালাত আদায় করেছিলেন। যেমন
হাদীছে এসেছে, আবু বারাযাহ আসলামী (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের সময় সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত যাকে তোমরা প্রথম
ছালাত বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন’ (বুখারী হা/৫৪৭; মিশকাত হা/৫৮৭)। হাসান বলেন, রাসূল (ছাঃ) প্রথম যে
ছালাত আদায় করেছিলেন তা ছিল যোহরের ছালাত। এসময় জিব্রীল (আঃ) আসেন। তিনি সামনে
দাঁড়ান, তাঁর পিছনে রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর পিছনে ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়
করেছিলেন (মুছান্নাফে আব্দুর
রাযযাক হা/১৭৭১; ফাৎহুল বারী ২/২৭; ফাৎহুল বারী ৩/৮১; ইহ্কামুল আহকাম ১/১৬৭;
সুবুলুল হুদা ৩/১১৩)।
(৯৯) প্রশ্নঃ বিবস্ত্র
হয়ে গোসল করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয আছে তবে এটা একেবারে অনুত্তম কাজ
, সুন্নতের পরিপন্থী। আল্লাহর রাসুল সা: কখনো এরকম করেনি। মোস্তাহাব ও উত্তম হল
লুঙ্গি ইত্যাদি বেঁধে গোসল করা ও মেয়েরা নিচে পায়জামা বা উড়না সাদৃশ্য ও বুকে
গামছা সদৃশ্য কিছু রাখবে। কেননা আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ লজ্জাশীল ও
পর্দাকারীদের পছন্দ করেন। তাই তোমাদের কেউ যখন গোসল করে তখন সে যেন পর্দা করে নেয়।
(তাহতাবী)
গোসলখানায় যদি কোনো পর্দাহীনতা না হয় তাহলে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা
জায়েয আছে। তবে এটা না করাই উত্তম। কেননা শয়তান তখন ধোকা দেয়। এটা নিন্দনীয় কাজ। (
ফতুয়ায়ে মাহমুদিয়া ৪/৩৮৭)
(এমনিভাবে পর্দার ক্রটি না হলে খোলাস্থানেও উলঙ্গ হয়ে গোসল করা
জায়েয আছে তবে এটা ঠিক নয়। সর্ব অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা এবং গোসলের অযুতে নামায
জায়েয)
পর্দার মধ্যে কাপড় খোলে গোসল করা জায়েয আছে তবে না করাই উত্তম। এমনিভাবে
খোলা মাঠে পুরুষের নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত কাপড় বেঁধে বাকী অংশ খোলা রেখে গোসল করা
জায়েয আছে। তাঁর নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত (যা পুরুষের সতর) কারো সামনে খোলা হারাম।
(আপকে মাসায়েল : উন কা হল) দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ৮১)
মেয়েরা পেন্টি পরে ও পুরুষেরা জাঙ্গিয়া পরে গোসল করলে যদি কাপড়ের
নিচে পানি পৌঁছে যায় এবং শরীরের ঢাকা অংশও ধোয়ে ফেলা যায়, তাহলে গোসল ছহীহ হবে।
(আপকে মাসায়েল ২য় খন্ডঃ পৃঃ ৮১)
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে হাইদা রা: বলেন রাসুল সা : বলিয়াছেন তুমি তোমার
স্ত্রী ও হালালকৃত দাসি ব্যাতিত কারো সামনে নিজের সতর খুলবে না। তিনি প্রশ্ন করলেন
তাহলে যখন আমরা নির্জনে একাকিত হয় তখনো কি সতর খুলব ( উলঙ্গ) হব না? রাসুল সা :
বলেন তখনো আল্লাহকে লজ্জা কর। কেননা তিনি দেখছেন তোমরা কি অবস্থায় আছ। (জামে
তিরমিযী, হাদিসে সহিহ ৭২৬৯)
রাসুল সা: জনৈক সাহাবীকে আদেশ দিলেন যে যখন তোমরা স্বামী স্ত্রী
একত্রে সহবাস করবে তখন তোমাদের উপরে একটি লম্বা চাদর দিয়ে দুইজনের শরীর ঢেকে নিবে।
আরএম-৩৩/১৪-০৫ (ধর্ম ডেস্ক)
(১০০) মাথার চুল রাখার
সুন্নাতী তরীকা কি কি?
আলতাফ হোসাইন,
জামিরা, রাজশাহী।
উত্তর : মাথার চুল লম্বা ও খাটো উভয়টিই রাখা
জায়েয। তবে এটি ‘সুনানুয যাওয়ায়েদ’ বা ব্যবহারগত অতিরিক্ত সুন্নাত সমূহের
অন্তর্ভুক্ত। যার উপর আমল করা উত্তম। তবে ছেড়ে দেওয়া অপসন্দনীয় নয়’ (শরীফ জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত, বৈরূত ছাপা
১৪০৮/১৯৮৮ ‘সুন্নাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ, পৃঃ ১২২)।
বড় চুল তিন পদ্ধতিতে রাখা যায়। যথা (১) ওয়াফরা,
যা কানের লতি পর্যন্ত (আবুদাঊদ
হা/৪২০৬) (২) লিম্মা, যা ঘাড়ের মধ্যস্থল পর্যন্ত (মুসলিম হা/২৩৩৭) (৩) জুম্মা, যা
ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত (নাসাঈ হা/৫০৬৬)।
আবু ইসহাক বলেন, আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম আহমাদ) কে
এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যার মাথায় লম্বা চুল ছিল। তিনি বলেন, এটি
উত্তম সুন্নাত। যদি আমরা সক্ষম হই, তাহলে আমরাও অনুরূপ লম্বা চুল রাখব। তিনি আরো
বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জুম্মা চুল ছিল। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
৯ জন ছাহাবীর লিম্মা চুল ছিল। ১০ জন ছাহাবীর জুম্মা চুল ছিল। ইমাম আহমাদ নিজে
মধ্যম সাইজের চুল রাখতেন (ইবনু
কুদামা, আল-মুগনী ১/৭৩-৭৪ পৃঃ চুল ছাঁটা ও মুন্ডনের হুকুম অনুচ্ছেদ)।
ছাহাবী ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) একদিন লম্বা চুল
নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) মাছি বসবে, মাছি বসবে বলে
অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। ফলে তিনি ফিরে গিয়ে পরে চুল কেটে খাট করে এলেন। তখন
রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটি সুন্দর (هذا أحسن) (আবুদাঊদ হা/৪১৯০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৭৩-৭৪ পৃঃ
চুল ছাঁটা ও মুন্ডনের হুকুম অনুচ্ছেদ)।
(১০১) দাঁড়ি রাখা সম্পর্কে শরীয়তী বিধান কি?
إِنَّ
الْحَمْدُ
للهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
সকল
প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে ইসলামকে এমন একটি
পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে দান করেছেন, যার মধ্যে মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের
প্রয়োজন হয় না। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁরই রাসূলের প্রতি, যিনি রিসালাতের দায়িত্ব¡
পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছেন এবং কোথাও কোন কার্পণ্য করেননি। দ্বীন হিসেবে যা কিছু এসেছে
তিনি তা উম্মাতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন। তাঁর সাহাবায়ে
কিরামের প্রতি মহান আল্লাহর রহমাত বর্ষিত হোক, যারা ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মাদীর আদর্শ
ও মহান আল্লাহর রাসূল - এর সুন্নাহ পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী।
দাঁড়ি
রাখার আবশ্যকতা সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ। অনেকেই দাঁড়িকে সাধারণ সুন্নাত বা আরবদের অভ্যাস
করে থাকে। ফলে আজ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ আদর্শটি সম্পর্কে
মুসলিমরা উদাসীনতা দেখাচ্ছে। অনেকে এর অপব্যাখ্যা করছে। অথচ দাঁড়ি রাখার ওপর কুরআন,
হাদীস ও উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধটিতে আমি উক্ত বিষয়টিকে গুরুত্ব
সহকারে তুলে ধরে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
দাঁড়ি
রাখা সম্পর্কে আমাদের একটি ধারনা রয়েছে, সেটা হলো - “দাঁড়ি রাখা সুন্নাত, অতএব দাঁড়ি
রাখলে ভালো আর না রাখলে তেমন কোনো সমস্যা নেই, একটা সুন্নাত পালন করা হলো না, এই আর
কি।” জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণই একটি ভুল ধারণা।
দাঁড়ি
হলো ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আধুনিক আমেরিকান বিজ্ঞানীরাও একথা বলতে বাধ্য
হয়েছেন যে, গোফঁ কাটার দরুন চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। দাঁড়ি বৃদ্ধির ফলে মানুষের যৌবনত্ব
বৃদ্ধি পায়। দাঁড়ি রাখা সম্পর্কে উলামাগনের কেউ বলেছেন যে, দাঁড়ি রাখা ফরয। কারণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিত কোনো কথা বলতেন না।
আর তাই দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ মানে
আল্লাহর নির্দেশ। আবার কেউ বলেছেন যে, দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব, আবার কেউ বলেছেন সুন্নাতে
মুয়াাক্কাদা। আল্লাহ ভালো জানেন।
অধিকন্তু
বলা যায় যে - দাঁড়ি রাখা কোন অর্থে সুন্নাত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব, আগে সেটা
বুঝার চেষ্টা করুন। ইসলামে শরীয়তের বিধানের প্রধান সূত্র হচ্ছে কুরআন ও রাসূল ﷺ এর
সুন্নাহ অর্থাৎ হাদীস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেসকল বিষয়ে আদেশ
ও নিষেধসূচক শব্দমালা ব্যবহার করেছেন, তা পালন করা আমাদের জন্য ফরজ। আশা করি বিষয়টি
সকলের কাছেই পরিষ্কার অর্থাৎ বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। এবার আসুন, দাড়ি রাখা কোন অর্থে
সুন্নাত আর কোন অর্থে ফরয বা ওয়াজিব, সেটা জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।
১।
পবিত্র কুরআনের আলোকে দাঁড়ি রাখার বিধান পর্যালোচনা :
পবিত্র
কুরআনে সরাসরি দাঁড়ি রাখার কথা বলা হয়নি। তবে হারুন আলাইহিসসালাম এর ঘটনায় দাড়ির
কথা উল্লেখ রয়েছে। কুরআনে দাড়ি সম্পর্কিত আয়াতটি হলো – মূসা আলাইহিসসালাম ও তাঁর
কওমের নিকট ফিরে এসে যখন দেখলেন তাঁর কওম গোমরা হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন আলাইহিসসালাম-কে
প্রশ্ন করলেন এবং হারুন আলাইহিসসালাম জবাবে বলেন, “হে আমার মায়ের ছেলে! আমার দাড়ি
ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনো না।” [সূরা ত্বোয়া-হা : ২০/৯৪]
উক্ত
আয়াত অনুসারে বুঝা যাচ্ছে যে - হারুন আলাইহিসসালাম এর দাঁড়ি ছিলো আর মূসা আলাইহিসসালাম
তাঁর দাঁড়ি ধরে ছিলেন।
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর নির্দেশ মেনে চলার জন্য আমাদের বলেছেন। তার মানে হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যে সকল বিষয়ে আমাদের আদেশ ও নিষেধ করেছেন, তা মেনে চলাও আমাদের জন্য ফরয
ওয়াজিব। কুরআনের আয়াতগুলো এখানে দেওয়া হলো -
“রাসূলের
আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মতো গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন,
যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা
এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে
গ্রাস করবে।” [সূরা আন-নুর : ২৪/৬৩]
“আর
তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।” [সূরা আল-ইমরান
: ৩/১৩২]
“যদি
তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমাকে (মুহাম্মাদ ﷺ) অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে
ভালোবাসেন।” [সূরা আল-ইমরান : ৩/৩১]
“হে
ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শুনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো
না।” [সূরা আল-আনফাল : ৪৮/২০]
“আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন
ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত
হয়।” [সূরা আল-আহযাব : ৩৩/৩৬]
“বলুন
আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে
তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে
তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল
সুস্পষ্টরূপে পৌঁছে দেওয়া।” [সূরা আন-নূর : ২৪/৫৪]
“রাসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে
ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” [সূরা আল-হাশর : ৫৯/৭]
২।
দাঁড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ -
ইবনে
উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, “তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে। দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে।” [সহীহ
বুখারী, হা : ৫৪৭২]
তাহলে
বুঝা গেলো যে, শারী’আতের বিধানের দ্বিতীয় সূত্র যেহেতু হাদীস, কাজেই সেই অর্থে দাঁড়ি
রাখা সুন্নাত। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। কাজেই সেই অর্থে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ মেনে চলা আমাদের জন্য ফরয। আরও একটি
বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহিসসালাম)
এর মাধ্যমে প্রাপ্ত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নির্দেশ ব্যতিত কোনো কথা বা কাজের
নির্দেশ বা নিষেধ করতেন না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ভালো জানেন।
উপসংহার
:
সুতরাং
বলা যায় যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ি রাখার আদেশ করেছেন।
এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, দাড়ির বিধানটি শরী’আতের একটি মৌলিক ও সাধারণ বিধান।
একে নিছক আরবীয় রীতি বা বিশেষ স্থান-কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করা মারাত্মক ভ্রান্তি।
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই।” [সূরা আর-রুম :
৩০/৩০]
এ
প্রসঙ্গে শয়তানের একটা উদ্বৃত ঘোষণাও আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, শয়তান বললো, “আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য
থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করবো। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো, তাদেরকে আশ্বাস দেবো; তাদেরকে
পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলবো এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেবো।
যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।
এবং তাদেরকে আদেশ করবো, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।” [সূরা আন-নিসা : ৪/১১৮-১১৯]
আয়াতের
এ অংশের আলোচনায় শাববীর আহমদ উসমানী রাহ. বলেছেন, ‘দাঁড়ি মুণ্ডানোও এ আকৃতি পরিবর্তনের
মধ্যে পড়ে।’ [দেখুন : তাফসীরে উসমানী (মূল) পৃ. ১২৫; (অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১/৪৪৬)]
আল্লাহর
সৃষ্টিকে বিকৃত করার প্রসঙ্গে তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে বলা হয়েছে, এটা ফাসেকী কাজকর্মের
অন্তর্ভুক্ত। যেমন দাড়ি মুণ্ডানো, শরীরে উল্কি আঁকা ইত্যাদি। [তাফসীরে বয়ানুল কুরআন
: ১/২/১৫৭]।
দাঁড়ি
রাখা যা-ই হোক না কেন, প্রকৃত মুসলিম দাঁড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দাড়িতে
ভালো লাগুক বা না লাগুক, আমরা আল্লাহ ও রাসূল ﷺ কে ভালবেসে দাঁড়ি রাখবো।
আশা
করি, এবার সকলের দাঁড়ি রাখার বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকবে না। এখন আপনি নিজেই ভেবে
দেখুন, আপনি কী করবেন। আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ
মানবেন, নাকি সমাজের মানুষের অন্ধ অনুসরণ করবেন? আল্লাহ্ আমাদের সকলকে কুরআন ও সুন্নাহ
মেনে জীবন চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।
(১০২) প্রস্রাব-পায়খানার
সময় কিবলা সামনে বা পিছনে রাখার বিধান কি?
এ মাসআলায় বিদ্বানদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়ঃ
একদল বিদ্বান বলেন, বন্ধ ঘর ছাড়া অন্য কোথাও কিবলা সামনে বা
পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা হারাম। তারা আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ)এর হাদীছকে দলীল
হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
] ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺗَﻴْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻐَﺎﺋِﻂَ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺴْﺘَﻘْﺒِﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻘِﺒْﻠَﺔَ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﺪْﺑِﺮُﻭﻩَﺍ ﺑِﺒَﻮْﻝٍ ﻭَﻟَﺎ ﻏَﺎﺋِﻂٍ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺷَﺮِّﻗُﻮﺍ ﺃَﻭْ ﻏَﺮِّﺑُﻮﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺃَﻳُّﻮﺏَ ﻓَﻘَﺪِﻣْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ ﻓَﻮَﺟَﺪْﻧَﺎ ﻣَﺮَﺍﺣِﻴﺾَ ﻗَﺪْ ﺑُﻨِﻴَﺖْ ﻗِﺒَﻞَ ﺍﻟْﻘِﺒْﻠَﺔِ ﻓَﻨَﻨْﺤَﺮِﻑُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ [
“তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময়
কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।” আবু
আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কা’বার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা
তা ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম।
এ বিষয়টি ছিল খোলা মাঠে। কিন্তু বন্ধ ঘরের মধ্যে যদি হয়, তবে কিবলা সামনে বা পিছনে
রাখাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু ওমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি বলেনঃ
ﺍﺭْﺗَﻘَﻴْﺖُ ﻓَﻮْﻕَ ﺑَﻴْﺖِ ﺣَﻔْﺼَﺔَ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘْﻀِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘَﻪُ ﻣُﺴْﺘَﺪْﺑِﺮَ ﺍﻟْﻘِﺒْﻠَﺔِ ﻣُﺴْﺘَﻘْﺒِﻞَ ﺍﻟﺸَّﺄْﻡِ
“আমি একদা হাফসার বাড়ীর ছাদে উঠলাম। দেখলাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) শামের দিকে মুখ করে কা’বার দিকে পিছন ফিরে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করছেন।”
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ঘেরা স্থানে হোক বা খোলা স্থানে হোক কোন সময়ই কিবলা
সম্মুখে বা পশ্চাতে রাখা যাবে না। তাদের দলীল হচ্ছে পূর্বেল্লিখিত আবু আইয়্যুব আনসারীর
হাদীছ। আর ইবনু ওমরের হাদীছ সম্পর্কে তাদের জবাব হচ্ছেঃ
প্রথমতঃ ইবনু ওমারের হাদীছটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের।
দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে
স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের
বিধানই গ্রহণযোগ্য।
তৃতীয়তঃ আবু আইয়্যুব বর্ণিত হাদীছ নবী (সাঃ)এর উক্তি। আর ইবনু ওমারের হাদীছ তাঁর কর্ম।
রাসূল (সাঃ)এর মৌখিক নির্দেশের হাদীছ কর্মের হাদীছের সাথে সংঘর্ষশীল হতে পারে না। কেননা
কর্মে বিশেষত্ব ও ভুলের সম্ভাবনা থাকে বা অন্য কোন ওযরেরও সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এ মাসআলায় আমার মতে, প্রাধান্যযোগ্য কথা হচ্ছে,
খোলা ময়দানে ক্বিবলা সামনে বা পিছনে রেখে শৌচকার্য করা হারাম। চার
দেয়ালে ঘেরা স্থানে কিবলাকে পিছনে রাখা জায়েয হবে সামনে রাখা জায়েয নয়। কেননা কিবলার
সম্মুখবর্তী হওয়ার হাদীছ সংরক্ষিত। এখানে বিশেষত্বের কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পশ্চাতে
রাখার নিষেধাজ্ঞাকে নবীজীর কর্ম দ্বারা বিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্মুখে রাখার
চাইতে পশ্চাতে রাখার বিষয়টি সহজ, এই কারণে (আল্লাহ ভাল জানেন) ঘেরার মধ্যে থাকলে বিষয়টিকে
হালকা করা হয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে কিবলাকে সম্মুখে বা পশ্চাতে না রাখা। গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা।
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment