Search This Blog

Sunday, March 17, 2019

সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দো'আসমূহঃ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দো'আসমূহ

(কোরআন ও সহিহ হাদিস এর আলোকে  বিদআত মুক্ত  রাসুল (সাঃ) এর সালাত)


আমরা সাধারণত সালাতের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দোয়া যেমন: তাকবীরে তাহরীমার পর ছানা পড়া, রূকতে “সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম” পড়া, রুকু হতে উঠার পড় সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় “রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ” পড়া, সিজদায় গিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা” পড়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতো, দরুদে ইবরাহিম ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করে থাকি। এর বেশী কিছু জানি না বা পড়ি না। আমাদের স্থানীয় ইমাম, মোয়াজ্জিনগণ বা মাওলানাগণ এর বেশী কাউকে কিছু বলেন না বা শিক্ষা দেন না। কিন্তু সালাতের মধ্যে উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু দোয়া আছে যেগুলো পড়লে নিজের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করা যায়। পুরো সালাতটিই যেহেতু এক প্রকার দোয়া আর নবি সা: যখনই কোনো সমস্যার সম্মুখিন হতেন বা কোনো বিপদ দেখলেই তিনি সালাত আদায় করতেন এবং সমস্যার ধরণ অনুযায়ী তিনি দোয়া করতেন। তাই নবি সা: সালাতের মধ্যে যে যে স্থানে উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত যে দোয়াগুলো পড়তেন সেগুলো আমরা অনুসরন করবো। সালাত শব্দের মূল অর্থ দোয়া করা। যেমন: সুরা তাওবাহর ১০৩ নং আয়াতে সালাত শব্দটি দোয়া করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
আমরা সাধারনত রুকুতে বলে থাকি-সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম, সিজদায় বলে থাকি-সুবহানা রব্বিয়াল ‘আলা, তাশাহুদ বৈঠকে আত্যাহিয়্যাতু, দরুদ ও প্রচলিত দোয়া মাছুরা পড়ে সালাত শেষ করে থাকি। কিন্তু এগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত অনেক দোয়া আছে যেগুলো রাসুল সাঃ সালাতের মধ্যে পাঠ করতেন। তিনি এতো অধিক সময় নিয়ে রুকু, সিজদাহ করতেন সাহাবাগণ ভাবতেন রাসুল সাঃ হয়তো ভুলে গেছেন। 
এখন প্রশ্ন হতে পারে, অতিরিক্ত দোয়াগুলো জামাতে পড়তে গেলে সময় পাওয়া যাবে না। তাহলে কখন পড়বো?
উত্তরঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেনো সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭, তিরমিযী ২৩৬, নাসায়ী ৮২৩, আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, মুওয়াত্তা মালেক ৩০৩,বুলগুলমারাম-৪১০।)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস   

উল্লেখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, জামাতে সালাত আদায়কালে সংক্ষিপ্তভাবে তবে সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর সব দোয়া পড়তে হবে। এছাড়া একাকী সালাত আদায়কালে ধীরস্থিরভাবে ও সালাতের জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত দোয়াগুলো পাঠ করবো।

সালাতের মধ্যে অতিরিক্ত দোয়া পড়ার দলিল:
 ১। রুকুর সময়:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেন, শোন! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যে, আমি যেনো রুকু বা সিজদাহ অবস্থায় কুরআন না পড়ি। সুতরাং রুকুতে তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো। আর সিজদায় অধিকাধিক দুয়া করার চেষ্টা করো। কারণ তা (আল্লাহর নিকট) গ্রহণযোগ্য। (সহীহ মুসলিম-হা/৪৭৯)
২। সিজদার সময়:
(ক) রাসুল (সাঃ) বলেন, সিজদায় সাধ্যমত দোয়া করার চেষ্টা করো। আশা করা যায় তোমার দোয়া কবুল করা হবে। (সহীহ মুসলিম-হা/৪৯০, ৮০৯, ৮১২ দা.ফা)
(খ) ইবনু আব্বাস (রা;) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো, কেননা সিজদাহ হচ্ছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়”।(সহিহ মুসলিম,হাদিস নং-১১০২, মিশকাত, হাদিস নং-৮৭৩)।
(গ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষ সিজদাহ অবস্থায় তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং-১১১১, মিশকাত, হাদিস নং-৮৯৪।
(ঘ) রুকু ও সিজদায় কোরআনের আয়াত দ্বারা দোয়া করা  নিষিদ্ধ। (মুসলিম-৮৭৩)।
এক্ষেত্রে নবি সা: যে দোয়াগুলো পড়তেন সেগুলো আমরা পড়বো।
(ঙ) রাসুল (সাঃ) বলেন, রুকুতে আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো আর সিজদাতে দুয়াতে মনোনিবেশ করো। (মুসলিম-৪৭৯)
(চ) সিজদাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্ব শেষ স্থান। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদাহ করো এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) ।
(ছ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘সিজদাহ অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য অর্জন করে। সুতরাং সিজদায় তোমরা বেশি বেশি দুআ করো।’(মুসলিম:৭৪৪)।
(জ) কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন-সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সে যে সলাত চুরি করে। সাহাবীগণ বললেন, কিভাবে সলাত চুরি করে? রাসুল  (সাঃ) বললেন, যে তার রুকু সিজদাহ পূর্ণ করে না। (আহমদ-হা/২২৬৯৫, মিশকাত-হা/৮৮৫)। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রুকু ও সিজদায় তাড়াহুড়া করা যাবে না। ধীর স্থির ও সময় নিয়ে রুকু সিজদাহ করতে হবে এবং রুকু ও সিজদায় নবি (সাঃ) যে সমস্ত দোয়া পাঠ করতেন সেগুলো সময় নিয়ে আমরাও পাঠ করবো। তাহলে রুকু ও সিজদায় চুরি আর হবে না।
৩। সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পর:- রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮৩৫)। উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া করা যায়। চাই তা কোরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।
সলাতের জন্য কাতারে দাঁড়ানোর পর পড়ার দোয়া:

কাতারে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে :-  
আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাছীরান তয়্যিবান মুবা-রকান ফীহ।
অর্থ: অসংখ্য,অগণিত, বরকতময় ও সর্বোত্তম প্রশংসা আল্লাহর জন্যই।
এক লোক কাতারে দাঁড়িয়ে এ দুয়া পড়লে সালাত শেষে রাসুল সা: বলে, আমি বারো জন ফেরেস্তাকে দেখলাম , তারা কে কার আগে এ কথাটি আল্লাহর কাছে পৌঁছাবে তা নিয়ে প্রতিযোগীতা করছে। সহীহ মুসলিম: ৬০০।
তাকবীরে তাহরীমার পর দো'আ:

ছানা: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা। (মুসলিম)
অর্থ: হে আল্লাহ! সকল দোষ হতে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তোমারই সকল প্রশংসা, তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার মর্যাদা-বড়ত্ব অতি উচ্চে এবং তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ বা উপাস্য নেই।
উক্ত ছানার স্থলে পড়ার অতিরিক্ত দোয়া বা ছানাসমূহ (যেকোনো ১টি পড়তে হবে):

১। ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। (সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯)
 অর্থ: আমি সব দিক থেকে মূখ পিরেয়ে বিশেষ ভাবে কেবল মাত্র সেই মহান সত্তাকেই ইবাদত জন্য নির্দিষ্ট করলাম,যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই । এই দোয়াটিকে  আমরা এতো দিন জায়নামাজের দোয়া বলে আসছি। অর্থাৎ সালাতের জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আমরা এই দোয়াটি পড়ে থাকি। কিন্তু জায়নামাজে দাঁড়িয়ে এই দোয়াটি পড়ার হাদিস থেকে কোনো দলিল নেই। কোনো সাহাবী পড়েছেন কিনা সে সংক্রান্তও কোনো দলিল নেই। ইহা এক প্রকার ছানা। আর ছানা পড়তে হয় তাকবীরে তাহরীমার পর।
২। আল্ল-হু আকবার কাবীরান, ওয়ালহামদু লিল্লা-হি কাসীরান, ওয়াসুবহানাল্ল-হি বুকরাতাও ওয়াআসীলা।
অর্খ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়, অতীব বড়, আর আল্লাহর জন্যই আনেক ও অজস্র প্রশংসা, সকালে ও বিকালে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোসণা করছি।
এক লোক সালাতের শুরুতে এ দুয়াটি পড়লে রাসুলুল্লাহ সা: বলেন, কথাগুলো আমার কাছে বিষ্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। (সহিহ মুসলিম-৬০১।)
৩। আল্লাহুম্মা বা‘ইদ বাইনী ও বাইনা খাতায়াইয়া কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতায়াইয়া কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগসিলনী মিন খাতায়াইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত করে দাও। (বুখারী-মুসলিম)

সুরা ফাতিহার পূর্বে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়াঃ

সালাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পাঠ করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। তাই কিছু প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করবো, সালাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পাঠ করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া যাবে কি যাবে না। তারপর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছবো। প্রথমে জেনে নেই 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' কি সূরা ফাতিহার অংশ?
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' কুরআনের একটি আয়াত এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। সূরা আন-নামলে এভাবে উদ্ধৃত রয়েছে- 'এই চিঠি সুলায়মানের নিকট থেকে এসেছে এবং তা দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ্ তা'আলার নামে শুরু করা হয়েছে।'
কিন্তু 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' সূরা ফাতিহাসহ অন্যান্য সূরার অংশ কিনা? এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মত রয়েছে। নিম্নে তা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো-
ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ এবং মদীনা, বসরা ও শামের ফুকাহায়ে কেরামদের মতে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরার অংশ নয়। শুধু বরকত লাভের উদ্দেশ্যে ও দু'সূরার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করার জন্য তা নাযিল করা হয়েছে। তবে এটি সূরা নামলের আয়াত এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই।
ইমাম শাফেয়ী, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহিমাহুল্লাহ এবং মক্কা ও কুফার কারীগণের অভিমত হলো 'বিসমিল্লাহি..'সূরা ফাতিহার অংশ। এজন্য তারা সালাতে সশব্দে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' পড়তেন।
অধিকাংশ আলিমগণ চুপিচুপি 'বিসমিল্লাহ...'পড়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাবরানী, ইবনে খুজাইমা এবং আবু দাউদ রহিমাহুল্লাহর বর্ণনায় রয়েছে- 'রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে 'বিসমিল্লাহ...'আস্তে আস্তে পাঠ করতেন এবং 'আলহামদুলিল্লাহ...'সশব্দে পড়তেন।
“বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’’ পড়ে সব কিছু শুরু করাই শরীয়াতের হুকুম। পশু-পাখি জবাই করাকালে বিসমিল্লাহ বলা অপরিহার্য। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কেউ আল্লাহ্ তা'আলার নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করে শয়তান তার সাথে খেতে পারেনা, আর তাঁর নাম উচ্চারণ না হলে শয়তান অবশ্যই ঐ খাবারে শরীক হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে কাজ বিসমিল্লাহ্ ব্যতীত আরম্ভ হয়, তাতে কোন বরকত থাকেনা। অন্য এক হাদীসে বর্ণীত রয়েছে ঘরের দরজা বন্দ করতেবিসমিল্লাহ্ বলবে, বাতি নেভাতে বিসমিল্লাহ বলবে, পাত্র আবৃত করতেও বিসমিল্লাহ বলবে।
উল্লেখ্য কুরআন তিলাওয়াত করার সময় 'বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম' পড়ার পূর্বে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানর রজিম' পড়াও আবশ্যক। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।'(সূরা নাহল,আয়াত-৯৮)
তথ্যসূত্র:
তাফসির আল জালালাইন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান।
সঠিক সিদ্ধান্ত: আলেমগণের একাধিক অভিমতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে- সালাতে প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পূর্বে আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া এবং প্রতি রাকাতে অন্য সুরা পাঠ করার পূর্বে শুধু বিসমিল্লাহ  পাঠ করা সুন্নত । অতএব যে যাই বলুক আমরা এই সঠিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করবো ইন শা আল্লাহ।

সুরা ফাতিহার শেষে আমিন বলা প্রসঙ্গেঃ

ছালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। সালাতে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ (একা সালাত আদায়কারী)-এর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুকতাদির জন্যও ইমামের ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত। ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার (কল্পনা করার) বিষয় নয়; বরং সালাতের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। তবে তাঁদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। 
ছালাতে নিরবে আমীন বলা সংক্রান্ত হাদীছগুলো দুর্বল ও মুহাদ্দিছগণের নিকট অগ্রহণীয়, আমলযোগ্য নয়। এর বিপরীতে ছালাতে জোরে আমীন বলার দলীলসমূহ বিশুদ্ধতার মানদন্ডে অধিক শক্তিশালী ও আমলযোগ্য। আর দুর্বল বা অশুদ্ধ হাদীছের পরিবর্তে বিশুদ্ধ হাদীছই হ’ল মুমিন জীবনের উৎকৃষ্ট পাথেয়।

সর্বাধিক সহীহ দলীলসহ জানতে         (এখানে ক্লিক করুন)

রূকুর অতিরিক্ত দো'আঃ
১।সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’
অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।(মুসলিম) তিনবার বা তার চেয়ে বেশি বলবেন।
২।‘সুবহানা রব্বীয়াল আ‘যীম ওয়া বিহামদিহি’’
অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (আহমাদ, আবু দাউদ, দারাকুতুনী, ত্ববারানী এবং বায়হাকী)
৩। ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী।’’
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)
এবং বলবেনঃ
৪। ‘সুব্বূহুন কুদ্দূ-সুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’
অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র।(মুসলিম)
৫। আল্লাহুম্মা লাকা রকা’তু ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সামঈ, ওয়াবাসারী, ওয়া মুক্ষী, ওয়া আযমী, ওয়া আসাবী, ওয়া মাসতাক্বাল্লাত বিহী ক্বদামী, লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন।
অর্থ: হে, আল্লাহ, আমি তোমার উদ্দেশ্যে রুকু করছি, তোমার ওপর ইমান এনেছি, তোমার উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ  করেছি, তুমি আমার প্রতিপালক। আমার কান, চোখ, মগজ, শিরা তোমার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত । আর আমার পদযুগল যা কিছু বয়ে এনেছে সবই বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্য সুনির্ধারিত ।
৬। সুবহা-না যিল জাবারুতি ওয়াল মালাকুতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল আযামাতি।
অর্থ: প্রতাপ, রাজত্ব, অহংকার, ও বড়ত্বের মালিক পবিত্র ও মহান।
আউফ ইবনু মালিক  বলেন, রাসুল সা: রকুতে এ দুয়াটি বলতেন। সুনান আবু দাউদ-৮৭৩। কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে এটি তিনি সিজদায় গিয়েও পড়তেন।
৭। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসুল সাঃ রুকু ও সিজদায় বলতেন:-
 “সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা”।
অর্থ: প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি। তোমার নিকট ক্ষমা চাই ও তোমার নিকট তাওবা করি। (মুসনাদে বাঝ্ঝার-হা: নং-১৯৭০, সিলসিলা সহীহা-হা: নং-৩০৩২)

 রুকু হতে উঠার পর দো‘আঃ
(সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়)
১. রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ।
২. অথবাঃ রব্বানা লাকাল হামদু।
৩. অথবাঃ আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদু।
উল্লেখিত সবগুলিই বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
তবে একেকবার একেকটি পড়তে হবে, যদিও উত্তম হলো নিম্নরূপে বলাঃ
“রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি, মিলয়াস সামাওয়াতি ওয়া মিলয়ালারদি ওয়া মিলয়া মা বায়নাহুমা ওয়া মিলয়া মা-শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু, আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি- আহাক্কু মাক্বলাল আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন, লা মা-নি‘য়া লিমা আ‘ত্বাইতা ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।” (মুসলিম)
অর্থ: হে আল্লাহ্! তোমারই জন্য সর্ববিধ উত্তম ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা যা আকাশসমূহ, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে যত কিছু রয়েছে সব কিছু পরিপূর্ণ, এগুলি ছাড়াও তুমি যত চাও সমস্ত পরিপূর্ণ প্রশংসা, তুমি সকল স্তুতি ও মর্যাদার অধিকারী। তোমার বান্দা যে প্রশংসা করে তার চেয়ে তুমি অধিক প্রাপ্য, আমরা প্রত্যেকেই তোমার বান্দা, তুমি যা দান কর তা বন্ধ করার কেউ নেই। আর তুমি যা বন্ধ রাখ তা দানকারী কেউ নেই। কোনো সম্মানিত ব্যক্তি সম্মান কাজে আসবে না তোমার নিকট থেকেই প্রকৃত সম্মান। (মুসলিম, সহীহ বুখারী-৪৭৮)

 সিজদার অতিরিক্ত দো‘আঃ

সিজদায় অতিরিক্ত দোয়া পাঠ করার দলীলঃ

সিজদাহ হলো সলাতের অন্যতম প্রধান রুকন। সিজদাহ নষ্ট হলে সলাত বিনষ্ট হবে। আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করার সর্বোত্তম স্থান হলো সিজদাহ।

(ক) রাসুল (সাঃ) বলেন, সিজদায় সাধ্যমত দোয়া করার চেষ্টা করো। আশা করা যায় তোমার দোয়া কবুল করা হবে। (সহীহ মুসলিম-হা/৪৯০, ৮০৯, ৮১২ দা.ফা)
(খ) ইবনু আব্বাস (রা;) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো, কেননা সিজদাহ হচ্ছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়”।(সহিহ মুসলিম,হাদিস নং-১১০২, মিশকাত, হাদিস নং-৮৭৩)।
(গ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষ সিজদাহ অবস্থায় তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং-১১১১, মিশকাত, হাদিস নং-৮৯৪।
(ঘ) রুকু ও সিজদায় কোরআনের আয়াত দ্বারা দোয়া করা  নিষিদ্ধ। (মুসলিম-৮৭৩)।
এক্ষেত্রে নবি সা: যে দোয়াগুলো পড়তেন সেগুলো আমরা পড়বো।
(ঙ) রাসুল (সাঃ) বলেন, রুকুতে আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো আর সিজদাতে দুয়াতে মনোনিবেশ করো। (মুসলিম-৪৭৯)
(চ) সিজদাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্ব শেষ স্থান। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদাহ করো এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) ।
(ছ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘সিজদাহ অবস্থায় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নৈকট্য অর্জন করে। সুতরাং সিজদায় তোমরা বেশি বেশি দুআ করো।’(মুসলিম:৭৪৪)।
(জ) কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন-সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সে যে সলাত চুরি করে। সাহাবীগণ বললেন, কিভাবে সলাত চুরি করে? রাসুল  (সাঃ) বললেন, যে তার রুকু সিজদাহ পূর্ণ করে না। (আহমদ-হা/২২৬৯৫, মিশকাত-হা/৮৮৫)। উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রুকু ও সিজদায় তাড়াহুড়া করা যাবে না। ধীর স্থির ও সময় নিয়ে রুকু সিজদাহ করতে হবে এবং রুকু ও সিজদায় নবি (সাঃ) যে সমস্ত দোয়া পাঠ করতেন সেগুলো সময় নিয়ে আমরাও পাঠ করবো। তাহলে রুকু ও সিজদায় চুরি আর হবে না।
উল্লেখিত দলীলসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, নিজেদের উন্নতি, ইহকালীন-পরকালীন মুক্তি লাভ, সকল সমস্যার সমাধান ও বরকত লাভের জন্য আমরা অবশ্যই সিজদায় বেশী বেশী নবি সাঃ যে দোয়াগুলো সিজদায় পাঠ করতেন সেগুলো সময় নিয়ে পাঠ করবো।

সিজদার ফজিলত:

(ক) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যখন জাহান্নামীদের কাউকে দয়া করতে চাইবেন তখন ফিরিশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন ঐ সকল লোকদেরকে বের করার জন্য, যারা আল্লাহর ইবাদত করতো। অত:পর তাদেরকে বের করা হবে। তারা তাদেরকে সিজদার চিহ্ন সমূহ দেখে চিনে নিবেন। আল্লাহ আগুনের উপর সিজদার চিহ্ন সমূহ ভক্ষণ হারাম করে দিয়েছেন। এভাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। বস্তুত: আদম সন্তানের সর্বাঙ্গ আগুন ভক্ষণ করবে শুধু সিজদার স্থান ব্যতীত। (বুখারী-২/১৩৪, মুসলিম-২/১৫০, নাসায়ী-১/৮৬)
(খ) সিজদাহ হলো দোয়া কবুলের সর্বোত্তম সময়। রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদাহ করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব, তোমরা বেশী বেশী সিজদাহ করো। (ইবনে মাজাহ-হা/১৪২৪, সলাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-২০১)।
সিজদায় প্রথমে পাঠ করবো- “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আলা”
অর্থঃ আমার মহান সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (তিনবার) [সহীহ আত তিরমিযী ১/৮৩]
এরপর নিম্নের অতিরিক্ত দোয়াগুলো পাঠ করবোঃ সবগুলো দোয়া এক সিজদায় পাঠ করা সম্ভব না হলে এক এক সিজদায় এক এক দোয়া পাঠ করবো।
১। সুবহানা রবিবয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহি। (আবু দাউদ, দারা কুতুনী, আহমাদ, ত্ববারানী ও বাইহাকী)
অর্থ: আমার মহান রব্বের প্রশংসাপূর্ণ পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
অথবা চাইলে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেঃ
২। ‘‘সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা রব্বানা-ওয়া বিহামদিকা,আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী।’’
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর।
আয়েশা রা: বলেন, নবি সা: তার রুকু ও সিজদায় এই দুয়াটি বলতেন।
(বুখারী-৪২৯৩, মুসলিম-১১১৩)।
৩। ‘‘সুববূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’
অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম ১/৫৩৩)
৪। সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজামাতি।
অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশীল, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)
৫। আল্লাহুম্মাগফিরলি যামবি কুল্লাহু দিক্বক্বাহু ওয়াজিল্লাহু ওয়া আউওয়ালাহু ওয়াআ-খিরাহু ওয়ালা-নিয়াতাহু ওয়াসিররাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমা করো অঅমার সকল পাপ, ছোট পাপ, বড় পাপ, প্রথম পাপ, শেষ পাপ, প্রকাশ্য পাপ ও গোপন পাপ।
আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসুল সা: সিজদায় গিয়ে এদুয়াটি পড়তেন। সহীহ মুসলিম-৪৮৩।
৬।“আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা।[মুসলিম ১/৫৩৪]
৭।“আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযু বিরিদাকা মিন সাখাতিকা, ওয়া বিমু’আ-ফাতিকা মিন ‘উক্কুবাতিকা ওয়া ‘আউযু বিকামিনকা, লা-উহসী সানা-আন ‘আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিক”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই তোমার অসন্তুষ্টি হতে তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে, তোমার শাস্তি হতে তোমার ক্ষমার মাধ্যমে, আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তোমার গজব হতে। তোমার প্রশংসা গুণে শেষ করা যায় না; তুমি সেই প্রশংসার যোগ্য নিজের প্রশংসা যেরূপ তুমি নিজে করেছ।[মুসলিম ১/৩৫২]
৮। হজরত আবি মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় এ দোয়াটিও পড়তেন-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি খাত্বিয়াতি ওয়া ঝাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি ওয়া আংতা আ’লামু বিহি মিন্নি; আল্লাহুম্মাগফিরলি ঝিদ্দি ওয়া হাযলি ওয়া খাত্বায়ি ওয়া আ’মদি ওয়া কুল্লু জালিকা ইংদি; আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লানতু আংতা ইলাহি লা ইলাহা আংতা। (বুখারি ও মুসলিম)।
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমার অসতর্কতা বশত কৃত গুনাহ, অজ্ঞতা বশত অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালংঘন এবং তুমি আমার ঐ সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমার চেষ্টাপ্রসূত, হাসি-ঠাট্ট্রা প্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গুনাহ্ মা’ফ করে দাও। উপরোক্ত সকল প্রকার অপরাধই আমার মধ্যেই রয়েছে। হে আল্লাহ! আমার পূর্বের, পরের, প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও। তুমিই আমার একমাত্র উপাস্য। তুমি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই
৯। রব্বি আ‘তি নাফসী তাক্বওয়া-হা, যাক্কিহা-আনতা খয়রু মান যাক্কা–হা, আনতা ওয়া লিয়্যুহা-ওয়া মাওয়ালাহা।
অর্থ: আমার রব! আমার নফসকে তাকওয়া দান করো এবং আমার নফসকে পরিশুদ্ধ করো, তুমিই নফসের সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। তুমিই তো তার অভিভাবক ও মুরুব্বী।
আয়েশা রা: বলেন, রাসুল সা:কে সিজদায় এ দুয়াটি পড়তে শুনেন। মুসনাদ আহমদ-২৫৭৫৭।

 দুই সিজদার মাঝে বসার দো‘আ

সিজদায় যে পরিমান সময় ব্যয় হবে এখানেও প্রায় সে পরিমান সময় ব্যয় করতে হবে। বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সলাতে দাঁড়ানো বসা অবস্থা ব্যতীত রাসুল (সাঃ) এর রুকু, সিজদাহ এবং দুই-সিজদার মধ্যবর্তী সময় ও রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমান ছিল। ( সহীহ বুখারী-হা/৭৯২ দা.ফা, তা.হা/৭৫৬ আ.ফা,হা/৭৪৮ আ., সহীহ মুসলিম হা/৪৭১ দা.ফা। সিজদারত অবস্থায় ও দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় শান্ত হতে ও তাড়াহুড়া না করতে রাসুল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। দুই সিজদার মাঝে বৈঠকে পরিপূর্ণ শান্তভাবে না বসলে তার সলাত হবে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
দোয়াসমূহ:
১। রব্বিগফিরলী, রব্বিগফিরলী।
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (আবু দাউদ-ইবনে মাজাহ্)
২। আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার হামনী ওয়া ‘আফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি রহম কর, আমাকে সুস্থতা দান কর, সঠিক পথে পরিচালিত কর এবং রিযিক দান কর। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

আত্তাহিয়্যাতু-দরূদের পর সালাম ফিরানোর পূর্ব মুহূর্তের দোয়াসমূহঃ

সালাত মানুষের জন্য ফরজ ইবাদাত। ফরজ সালাত ছাড়াও রয়েছে ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল সালাতসহ অনেক সালাত। সালাতে রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ, দরূদসহ অনেক দোয়া ও নিয়ম কানুন রয়েছে। সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বেও রয়েছে দোয়া। যা পড়া সুন্নাত।
রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮৩৫)। উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া করা যায়। চাই তা কোরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।
আত্তাহিয়্যাতুর পর দরুদসহ যতো প্রকার দোয়া পড়া হয় সবই দোয়া মাসুরা নামে পরিচিত। তারপরও সমাজে প্রচলিত একটি দোয়া মাসুরা আছে। 
যাই হোক তাশাহুদ বৈঠকে কি িকি দোয়া পড়তে হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
(১) প্রথমে আত্তাহিয়্যাতু।
(২) এরপর দরুদ (দরুদে ইব্রাহিম)।
(৩) তারপর সমাজে প্রচলিত দোয়া মাসুরা।
দোয়া মাসুরাঃ হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দিন, যা আমি আমার সলাতের মধ্যে পড়ব। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বল, 
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা- ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা- আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার উপর অত্যধিক অত্যাচার করেছি এবং তুমি ব্যতিত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (বুখারি-হা/৮৩৪ দা.ফা/তাওহীদ, হা/৭৯৫ ই.ফা., মুসলিম, মিশকাত)
(৪আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ, সালাম ফিরবার আগে) এই দু‘আ পড়তেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখ্‌খিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই।
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৩২, মুসলিম ৭৭১, তিরমিযী ৩৪২২, ৩৪২৩, আবূ দাউদ ৭৬০, ১৫০৯, নাসায়ী ১৬১৯, ইবনু মাজাহ ১৩৫৫), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) তাশাহহুদ (অর্থাৎ, আত্-তাহিয়্যাত) পড়বে, তখন সে এ চারটি জিনিস হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে; বলবে,
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম, অমিন আযা-বিল ক্বাব্র, অমিন ফিতনাতিল মাহয়্যা অলমামা-ত, অমিন শার্রি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৩১, সহীহুল বুখারী ১৩৭৭, মুসলিম ৫৮৮, তিরমিযী ৩৬০৪, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৯, ৫৫১১, ৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, আবূ দাউদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ ৯০৯, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৪৪), হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৬) হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোককে বলতে শুনলেন-

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস্আলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আংতাল আহাদুসসামাদুল্লাজি লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়া লাম্ ইউলাদ্ ওয়া লাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তুমি একক অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ (আবু দাউদ)

তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্যই সে আল্লার্হ এমন নামে ডেকেছে, যে নামে চাওয়া হলে প্রদান করেন এবং প্রার্থনা করা হলে কবুল করেন।
(৭) উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবি (সাঃ) এর সহধর্মিনী আয়েশা (রাঃ) তাকে বলেছেন যে, রাসুল (সাঃ) সলাতে এ বলে দুয়া করতেন,
উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আযাবি জাহান্নামা, ওয়া আউজুবিকা মিন আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত, আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়া মিনাল মাগরামি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের আজব হতে আশ্রয় চাই, কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কানা দাঝঝালের পরীক্ষা ফিতনা থেকে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে এবং তোমার নিকট আশ্রয় চাই পাপ ও ঋণের বোঝা হতে।’ (বুখারি-হা/৮৩২ দা.ফা/তাওহীদ, হা/৭৯৪ ই.ফা.বা , মুসলিম, মিশকাত)
(৮) সা'দ ইবনে আবী অক্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযসমূহের শেষাংশে এই দুআ পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ্দুন্‌য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাব্র।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
(রিয়াদুস সালেহীন, হাদিস নং-১৪২৯, সহীহুল বুখারী ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, তিরমিযী ৩৫৬৭, নাসায়ী ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৭৮, ৫৪৭৯, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(৯) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আবু দাউদ-৭৯২।
(১০) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।(আবু দাউদ-১৪৯৫, তিরমিযি-৩৫৪৪)।
(১১) মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না, ‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্‌রিকা ওয়া শুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্‌র (স্মরণ), শুক্‌র (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৩০, আবূ দাউদ, সহীহ সানাদ, আবূ দাউদ ১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ- ২১৬২১, মিশকাত/৯৪৯, বাংলা মিশকাত/৮৮৮)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

রাসুল সাঃ রুকু, সিজদাহ ও শেষ বৈঠকে অধিক সময় নিয়ে সালাত আদায় করতেন। সাহাবাগণ পিছন থেকে মনে মনে ভাবতেন রাসুল সাঃ রুকু বা সিজদাহ থেকে উঠতে হয়তো ভুলে গেছেন। কিন্তু সালাতের এইসব স্থানে রাসুল সাঃ অধিক সময় নিয়ে কি করতেন? তিনি এইসব স্থানে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির জন্য কল্যাণ, ক্ষমা বা প্রার্থনামূলক দোয়াগুলো পাঠ করতেন। 
রুকু ও সিজদায় কোরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলো পাঠ করতে হবে। আর তাশাহুদ বৈঠকে উল্লিখিত দোয়াগুলো ছাড়াও নিম্নের অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াগুলো পাঠ করতে পারেন। জামায়াতের সহিত যখন সালাত আদায় করবেন তখন ইমামের গতিবিধি লক্ষ্য করে দোয়া পাঠ করতে হবে। আর একাকি যখন পড়বেন বিশেষ করে ফরজ সালাতে ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন। দোয়াগুলোর ফলাফল পেতে তাহাজ্জুদ সালাতে বেশী বেশী পাঠ করবেন। আপনি বর্তমান সময়ে কোন সমস্যায় ভুগছেন সেই সংক্রান্ত দোয়া এখানে খুঁজে পাবেন। সেগুলোর আমল বেশী করবেন। 

কোরআন ও সহীহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ  যিকির ও দোয়াসমূহ

সালাতের মধ্যে সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআন ও হাদিস থেকে যে কোন দোয়া পড়া বৈধ। (বুখারি-হা/৬৩২৮, কিতাবুদ দাওয়াত, সহীহ মুসলিম-হা/৯২৪, মিশকাত-হা/৯০৯)। তাই সহীহ হাদিস মোতাবেক আমরা কোরআন ও সহীহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ পাঠ করবো। নিম্নোক্ত দোয়াগুলো সলাতের বাহিরে যেকোনো সময় পড়া যাবে। তবে সলাতের মধ্যে সালাম ফিরানোর পূর্বে দোয়াসমূহ পাঠ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। আপনি যে সমস্যায় ভুগছেন সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কোরআন ও সহীহ হাদিস হতে অনেক দোয়া আছে। আপনার উচিৎ হবে সলাতের মধ্যে সেইসব দোয়াগুলো বেশী বেশী পাঠ করা। 


কোরআন ও সহীহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ  যিকির ও দোয়াসমূহ

কোরআন হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ  যিকির ও দোয়াসমূহ

(১) রাসুল (সাঃ) হিজরতের প্রাক্কালে বলেছিলেনঃ-
 রব্বি আদখিলনি মুদখলা সিদক্বিওঁ ওয়া আখরিজনি মুখরজা সিদক্বিওঁ ওয়াজআললি মিল্লাদুনকা সুলত্বানান নাসিরা।” (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮০)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে, বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন আমাকে নিজের নিকট থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য।’
  (২) একদা ক্বাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসুল (সাঃ) কোন দোয়াটি বেশী বেশী পড়তেন। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুল (সাঃ) বেশী বেশী বলতেনঃ-
“রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাঁও ওয়াক্বিনা -আযা-বান্নার”
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম কল্যাণ দান করো এবং আগুনের আযাব হতে আমাদের রক্ষা করো।
(বাক্বারাহঃ২০১, সহীহ মুসলিম, হা/২৬৯০, আবু দাউদ, হা/১৫১৯)।
(৩) নবি করিম (সাঃ) কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় তা গ্রহণের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে নবি! আপনি বলুন,
“রব্বি যিদনী ইলমা’।
অর্থঃ- হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (ত্বহাঃ১১৪)।
(৪) আদম আঃ ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া তাঁদের ভুলের ক্ষমা চেয়ে বলেছিনে,
রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”
অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)
(৫) ইবরাহিম আঃ কা‘বা ঘর নির্মানের পর বলেছিলেন,
 "রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস ছামিউল আলিম- রব্বানা ওয়াজ আলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়া মিন জুররি ইয়াতিনা উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাকা ওয়া আরিনা মানাসিকানা ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম।”
 অর্থ : "হে আমাদের প্রভু! আমাদের এ কাজ গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। হে আমাদের প্রভু! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত উম্মত করবেন। আমাদেরকে ইবাদতে নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" (সূরা-আল বাকারা : ১২৭ ও ১২৮)। 
(৬) পিতা-মাতার জন্য দোয়া সমূহ:
(ক) আল্লাহ তা‘আলা রাসুল (সাঃ) –কে বলেন, হে নবি! আপনি বলুন,
“রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়া-নী সগিরা’।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের (পিতা-মাতা) প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন পালন করেছেন। (সুরা ইসরা-২৪) 
(খ) “রব্বিগফিরলি' ওয়ালি ওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিমান দাখলা বাইতিয়া মু'মিনা, ওয়া লিলমু'মিনীনা ওয়াল মু'মিনা'তি ওয়ালা' তাযিদিজ জ'লিমি'না ইল্লা তাবা র'।
অর্থ:- হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিন হয়ে আমার ঘরে যারা প্রবেশ করবে এমন সব লোককে এবং মুমিন পুরুষ এবং মহিলাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আর যালেমদের জন্যে ধ্বংস ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করো না।। (সুরা নূহ: ২৮)
(গ) ইবরাহিম আঃ পিতা মাতা, ছেলে-মেয়ে ও মুমিনদের প্রার্থনায় বলেছিলেন,
“রব্বিজ আলনী মুক্বীমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিইয়াতি রব্বানা- ওয়া তাক্বব্বাল  দো’আ-রব্বানাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়া লি-দাইয়া ওয়া লিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।”
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সলাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দোয়া কবুল করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে,, আমার পিতা মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যে দিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইব্রাহিম-৪০,৪১)।
(৭) ইবরাহিম আঃ প্রার্থনা করেছিলেন,
“রব্বি হাবলি হুকমাঁও ওয়ালহিক্বনী বিস্সলিহীন ওয়াজ আল লী লিসা-না স্বিদকিন ফীল আ-খিরীন ওয়াজ আলনী মিঁও ওয়ারাছাতি জান্নাতিন নাঈম।”
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে হিকমত দান করুন এবং সঃকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (হে প্রভু!) আপনি পরকালে আমাকে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং “নাঈম” জান্নাতের উত্তরাধীকারী করুন।” (শু‘আরাঃ৮৩-৮৫)।
(৮) মুসা আঃ ফিরাউনের দরবারে গমনের সময় বলেছিলেন,
 “রব্বিশ রহলি' সদরি' ওয়াসসিরলি' আমরি' ওয়াহলুল উকদাতাম মিল লিছানি' ইয়াফক্বাহু ক্বওলি"।
অর্থ:- হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কর্ম সহজ করে দিন, আমার জিহ্ববার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। ( সুরা ত্বহা- ২৫-২৮)
(৯) রব্বি আওঝি’নি আন্ আশকুরা নি’মাতাকা-ল্লাতি আন্‌ আ’মতা আ’লাইয়্যা ওয়া আ’লা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা স-লিহান্ তারযহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ই’বাদিকাস সলিহিন।”
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে সামর্থ দা, যেনো আমি তোমার সেই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা মাতাকে দান করেছো এবং যেনো আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো। (নমল-২০)
(১০) আল্লাহ তা‘আলা মুসা আঃ-কে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠের নির্দেশ দিয়েছিলেনঃ-
(ক) “ রব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতা খইরুর রহিমীন”।
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা কর ও দয়া কর, আর তুমিইতে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াময়। (মুমিনুনঃ১১৮)।
(খ) “রব্বি ইন্নী যলামতু নাফসী ফাগফিরলি’।
অর্থঃ- হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের প্রতি যুলুম করেছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। (ক্বাছাছঃ১৬)।
(১১) সুলায়মান আঃ বলেছিলেন,
“রব্বিগফিরলী ওয়া হাবলী মুলকাল লা ইয়ামবাগী লি আহাদিম মিম্ বা‘দী ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।”
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান করুন, যা আমার পরে কারো জন্য শোভনীয় হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড় দাতা। (ছোয়াদঃ৩৫)।
(১২) ”রব্বানা-লা-তুঝিগ কুলুবানা-বাদা ইয হাদাইতানা-ওয়া হাবলানা- মিল্লাদুনকা রাহমাতানইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব, রব্বানা- ইন্নাকা জা-মি‘উন না-স, লিইয়াওমিল লা -রইবা ফিহ, ইন্নাল্ল-হা লা-ইউখলিফুল মি-আ-দ।”
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনৃগ্রহ দান করুন। আপনিই সব কিছুর দাতা। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি মানুষকে একদিন একত্রিত করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। (আলে ইমরান-৮-৯)।
(১৩) “রব্বানা-লা-তুআ-খিযনা-ইন নাসিনা-আও আখত্ব‘না, রব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাযিনা মিন ক্ববলিনা, রব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা-ত্ব ক্বাতালানা বিহ, ওয়া‘ফু আন্না ওয়াগফিরলানা  ওয়ারহামনা আন্তা মাওলানা ফানসুরনা আলাল ক্বওমিল কা-ফিরিন।”
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পন করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর করেছ, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করাইও না , যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ সমূহ মোচন করো। তুমি আমাদের ওলী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। (বাকারাহ:২৮৬)
(১৪) “রব্বানা –আ-মান্না ফাগফিরলানা ওয়ার হামনা ওয়া আন্তা খয়রুর রহিমিন।”
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করো ও আমাদের প্রতি রহম করো।(মুমিনুন:১০৯)
(১৫) রব্বানা –ইন্নানা-আ-মান্না-ফাগফিরলানা –যুনুবানা –ওয়াক্বিনা আযা-বান না-র”।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ইমান এনেছি, কাজেই আমাদের গুণাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করো। (আলে ইমরানঃ ১৬)।
 (১৬) “রব্বানা –আতমিম লানা-নুরনা-ওয়াগফিরলানা-ইন্নাকা আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর।”
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পূর্ণ আলো দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চই আপনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (তাহমীমঃ৮)।
(১৭) “রব্বানা-আ-তিনা-মিল লাদুনকা রহমাতাওঁ ওয়া হাইয়ি’ লানা মিন আমরিনা-রশাদা”।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন’। (কাহাফঃ১০)।
(১৮) “রব্বি আ’উযুবিকা মিন হামাযা-তিশ শায়া-ত্বীন, ওয়া আ’উযুবিকা রব্বি ইয়াহ যুরুন।”
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রতিপালক! তাদের উপস্থিতি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুমিনুনঃ ৯৭-৯৮)।
(১৯) “রব্বানা –লিইউক্বীমুছ সলাতা ফাজ‘আল আফয়িদাতাম মিনাননাসি তাহবী ইলাইহিম ওয়ারঝুক্বহুম মিনাছ ছামারা-তি লা’আল্লাহুম ইয়াশকুরুন”।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! তারা যেনো সলাত কায়েম করে। মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও এবং তাদেরকে ফল-ফলাদি দ্বারা রুযী
দান করো। সম্ভবত তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। (ইব্রাহিম-৩৭)।
(২০) রব্বানা-হাবলানা-মিন আঝওয়া জিনা ওয়া যুররিইয়া-তিনা –কুররতা আ‘য়ুনিউ ওয়াজ’ আলনা-লিল মুত্তাক্বীনা ইমা-মা”।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য আদর্শ স্বরুপ করো। (ফুরক্বানঃ৭৪)।

 সহীহ হাদিস হতে অধিক ফজিলতপূর্ণ  যিকির ও দোয়াসমূহ

(১) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল ফাক্বরি  ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি  ওয়া আ’উযুবিকা মিন আন আযলিমা আও উযলিমা”। (আবু দাউদ-হা/১৫৪৪)।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট অভাব, স্বল্পতা ও অপমান হতে আশ্রয় চাই,  আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে।
(২) আনাস (রাঃ) বলেন, নবি সা: বলতেন-
“আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন গালাবাতিদ দ্বীনি ওয়া কাহরির রিজালি।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২))
(৩) “আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’ (তিরমিজি, হা/৩৫৬৩ মিশকাত, হা/৩৪৪৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)।
(৪)  সর্বোত্তম ইস্তেগফার দোয়া (সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার):
এমন একটি দোয়া আছে যেটা পাঠ করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। অর্থাৎ দিনে পাঠ করলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যদি মারা যায় তাহলে ব্যক্তিটি জান্নাতি, তেমনি রাত্রি বেলায় পাঠ করলে যদি সকাল হওয়ার আগেই মারা যায় তাহলেও সে জান্নাতি। রাসূল (সা:) বলেছেন : যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধা হওয়ার আগেই

সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে।

দোয়া (সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার)-
“আল্ল-হুম্মা আনতা রব্বী লা- ইলাহা ইল্লা আনতা খলাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাআতু আউযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা।”
অর্থ:- হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়াঁমত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
[সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৬, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১৭, আবু দাউদ, হা/৫০৭০, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৭২, তিরমিজি, হা/ ৩৩৯৩, নাসাঈ, হা/ ৫৫২২, মিশকাত, হা/২৩৩৫]।
(৫) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবি সা: বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চেয়ে বল: 
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“ 
অর্থ” আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের  আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।
  (বুখারী-৬৩৪৭,৬৬১৬, মুসলিম-২৭০৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২, ৭৩০৮, মিশকাত, হা/২৪৫৭, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৬৯)।
(৬) “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি অমিন শার্রিল গিনা ওয়াল ফাক্ব।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ( বুখারী-৮৩৩,২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৫৩৭৫, ৫৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, মুসলিম-৫৮৭, ৫৮৯, নাসাঈ- ১৩০৯, ৫৪৫৪, ৫৪৬৬, ৫৪৭২, ৫৪৭৭, ৫৪০৪, ইবনে মাজাহ- ৩৮৩৮, আহমদ- ২৪০৫৭, ২৪০৬১, ২৫৭৯৫, তিরমিযি- ৩৪৮৯, আবু দাউদ- ১৫৪৩)
(৭) “ আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা,আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি লা ইলাহা ইল্লা আনতা।”( [আবু দাউদ:৫০৯২ নাসায়ি কুব [রা.]৯৮৫০]।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার শরীরে সুস্থতা দান করো, হে আল্লাহ! আমার শ্রবণশক্তিতে সুস্থতা দান করো, হে আল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তিতে সুস্থতা দান করো, তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কুফুরি ও দরিদ্রতা থেকে, এবং তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আজাব থেকে। তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।
(৮) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল আফওয়া ওয়াল আ-ফিয়াহ, ফিদ দুনইয়া-ওয়াল আখিরাহ।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ইহকাল ও পরকালের ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাচ্ছি। (আদাবুল মুফরাধ, হা/৬৯৮, আবু দাউদ, হা/৫০৭৪, মান-সহীহ হাদিস)
(৯) “আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নী।“
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।
 (মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৪২, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৫০, তিরমিজি, হা/৩৫১৩, মিশকাত, হা/২০৯৩)
(১০) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল হুদা ওয়াত-তুক্বা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা।“
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হিদায়াত, পরহেযগারিতা, নৈতিক পবিত্রতা এবং সামর্থ্য কামনা করছি। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭২১, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩২, তিরমিজি, হা/৩৪৮৯, মিশকাত, হা/২৪৮৪)
(১১)  “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়াল হারামি ওয়া আযাবিল ক্ববরি। আল্ল-হুম্মা আ-তি নাফসী তাকওয়া-হা- ওয়া যাক্কিহা-আন্তা খইরু মান যাক্কা-হা আন্তা ওয়ালিয়্যুহা- ওয়া মাওলাহা- আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইলমিন লা- ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বলবিন লা-ইয়াখশা-উ ওয়া মিন নাফসিন লা-তাশবা’উ ওয়া মিন দা’ ওয়াতিন লা-ইউসতাজা-বু লাহা।”
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্যয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধ্যকতা ও ক্বরেরর আযাব হতে। হে আল্লাহ! আমার আত্মাকে সংযম দান করুন, একে পবিত্র করুন, আপনি শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী, আপনি তার অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এমন ইলম হতে যা উপকার করে না। এমন অন্তর হতে যা ভয় করে না। এমন আত্মা হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং এমন দোয়া হতে যা কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭২২, আবু দাউদ, হা/১৫৪৮, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩৭, মিশকাত, হা/২৪৬০)
(১২)  আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এ দোয়া পড়তেন-
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন যা-ওয়া-লি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওঁবুলি আ-ফিয়াতিকা ওয়া ফুজা-আতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামী’ঈ সাখাতিক।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার নি’আমতের হ্রাসপ্রাপ্তি, তোমার শান্তির বিবর্তন, তোমার শাস্তির হঠাৎ আক্রমণ এবং সমস্ত অসন্তোষ হতে। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭৩৯, আবু দাউদ, হা/১৫৪৫, মিশকাত, হা/২৪৬১)
(১৩) মা আয়েশাহ (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলতেন,
“ আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন শাররি মা- আমিলতু ওয়া মিন শাররি মা-লাম আমাল।”
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি যা আমি করেছি তার অনিষ্ট হতে, আর যা আমি করিনি তার অপকারিতা হতে। (সহীহ মুসলিম, হা/২৭১৬, আবু দাউদ, হা/১৫৫০, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩৯, মিশকাত, হা/২৪৬২)
(১৪) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলতেন,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুযামি ওয়াল জুনুনি ওয়া মিন সায়ইল আসক্বম।”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি অপনার নিকট আশ্রয় চাই শ্বেত রোগ, কুষ্ঠ রোগ, পাগলামি, ও খারাপ রোগ সমূহ হতে। (আবু দাউদ, হা/১৫৫৪, মিশকাত, হা/২৪৭০)।
(১৫) “আল্ল-হুম্মা লা-ত্বয়রা ইল্লা ত্বয়রুকা, ওয়া লা খয়রা ইল্লা খয়রুকা, ওয়া লা ইলা হা গয়রুকা”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি কিছু ক্ষতি না করলে অশুভ বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই এবং তোমার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। তুমি ছাড়া কোনো হক্ব মা’বুদ নেই। ( সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৬৫, বায়হাকী, হা/১১৮০)
(১৬) “ আ’উযু বিকালিমা তিল্লাহিত্তাম্মা তি  মিন শার্রি মা খলাক্ব”।
 অর্থঃ আমি আল্লাহর পূর্ণ নামের সাহায্যে তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই।
(ইবনু মাজাহ, হা/৩৫১৮, মিশকাত, হা/২৪২২-২৩, সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৫)
 (১৭) ““আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্‌কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান।”
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।” (ইবন মাজাহ্‌, নং ৯২৫; নাসাঈ, হাদীস নং ১০২, মিশকাত, হা/২৪৯৮ )
(১৮) “হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম “।
অর্থঃ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।” (আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১।)
(১৯) “ বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।
অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৬৯, তিরমিযি,হা/৩৩৮৮, আবু দাউদ, হা/৫০৮৮, সনদ সহীহ, মিশকাত, হা/২৩৯১)
(২০)  “ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি র-জিউন, আল্ল-হুম্মা আজিরনী ফি মুসিবাতি ওয়াখলুফ লী খইরম মিনহা”।
অর্থঃ আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার নিকটেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দাও। (সহীহ মুসলিম,হা/২১৬৫, মিশকাত, হা/১৬১৮)।
(২১)  “লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল হালীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।”
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রতিপালক। (সহীহ বুখারী,হা/ ৬৩৪৫-৪৬, সহীহ মুসলিম, হা/৭০৯৭, মিশকাত, হা/২৪১৭)।
(২২) “ আল্ল-হুম্মা মুসাররাফাল কুলুবি সাররাফ কুলুবানা আলা তা -আতিকা”
অর্থ: হে অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের প্রতি পরিবর্তন করো। ( সহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৪, মিশকাত, হা/৮৯)।
(২৩) “ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা”
অর্থঃ হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো। (তিরমিযি, হা/ ২১৪০, ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৩৪, মিশকাত, হা/১০২- হাদিস সহীহ,  আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৮৩)।
(২৪) “আল্ল-হম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন শাররি সামঈ ওয়া মিন শাররি বাসরী ওয়া মিন শাররি লিসা-নী ওয়া মিন শাররি ক্বলবি ওয়া মিন শাররি মানিয়্যী”
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই আমাদের কর্ণ , আমাদের চক্ষূ, আমাদের জিহবা ও আমাদের অন্তরের অনিষ্ট হতে এবং আমার শুক্রাণু অবৈধ স্থানে পতিত হওয়া থেকে। (আবু দাউদ, হা/১৫৫১, তিরমিযি, হা/৩৪৯২, মিশকাত, হা/২৪৭২, রিয়াদুস সালিহীন, হা/১৪৮৩)।
(২৫) “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা- ‘আ’লামু  ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা-লা-আ’লামু”।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আর অজানা অবস্থায় শিরক হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (সহীহুল জামে, হা/৬০৪৪, ৩য় খন্ড, পৃ: ২৩৩)

লক্ষণীয় বিষয়:

প্রকাশ থাকে যে, সালাতের মধ্যে সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআন ও হাদিস থেকে যে কোন দোয়া পড়া বৈধ। (বুখারি-হা/৬৩২৮, কিতাবুদ দাওয়াত, সহীহ মুসলিম-হা/৯২৪, মিশকাত-হা/৯০৯)। তবে সালাতের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পাঠ করা যাবে না এবং কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত দোয়াগুলো অনুবাদ করে পড়াও চলবে না। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ভাষাকে সালাতের মধ্যে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত মানুষের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্র নয়। এটাতো কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্যই সুনির্দিষ্ট।’ (সহীহ মুসলিম-১২২৭, আবু দাউদ-৭৯৫, নাসাঈ-১২১৮, মুসনাদে আহমদ-২৩৮১৬, দারিমী-১৫০২, বুলগুল মারাম-২১৭, মিশকাত-৯৭৮)
বিতর সালাতে সালাম ফিরানোর পর দোয়া

‘‘সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দুস’’
অর্থ: আমি মহাপবিত্র মালিকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
সালাতের মধ্যে পঠিতব্য যে অতিরিক্ত দোয়াগুলো উল্লেখ করা হলো সেগুলো সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। উক্ত দোয়াগুলোর মধ্যে কোনোটি গুনাহ মাফের, কোনোটি বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া, কোনোটি রিযিক বৃদ্ধি, কোনোটি জান্নাত লাভ আবার কোনোটি দোযখ থেকে মুক্তি লাভসহ আল্লাহ তায়ালার প্রশংসামূলক দোয়া। সুতরাং সলাত আদায় করার সময় তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে সলাতের বিভিন্ন স্থানে দোয়াগুলো পাঠ করবো। সলাতের মাধ্যমেই যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় সেহেতু আমরা সলাত আদায়কালে আল্লাহর নিকট আমাদের সব সমস্যাগুলো কোরআস- হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে পেশ করবো এবং আদায় করে নেব -ইনশা আল্লহ।

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-

মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিলফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা- আলিয়াঢাকাবাংলাদেশ।
========================================================
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)

ইসলামের উপর লেখা সকল অধ্যায় এক সাথে দেখতে চাইলে নীচে ক্লিক করুন।



--------------------------------------------------------------
(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।


(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।



-------------------------------------------------------------------
Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...