Search This Blog

Friday, April 1, 2022

একটি আদর্শ পরিবার গঠনে অভিভাবকের ভূমিকা

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

একটি আদর্শ পরিবার গঠনে অভিভাবকের ভূমিকা

প্রথম খন্ড

দাইউস অভিভাবক-জাহান্নামি পরিবার

দ্বিতীয় খন্ড

নারীর সতীত্ব রক্ষার গুরুত্ব ও উপায় এবং অভিভাবকের করণীয়

 


প্রথম খন্ডের বিস্তারিত আলোচনা

দাইউস অভিভাবক-জাহান্নামি পরিবার

ভূমিকাঃ মুসলমান ঘরে জন্ম গ্রহণ করলেই সে মুসলমান নয়। তাকে মুসলমান হতে হয়। আল্লাহ তায়ালা সে নির্দেশ দিয়েই বলেছেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না।” (সুরা আলে ইমরানঃ ১০২। 

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাকারা ২, আয়াত ২০৮)।

সুতরাং মুসলমান হয়ে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে চাইলে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর আদেশ নিষেধ মোতাবেক চলতে হবে। কোন্ পথে চললে জান্নাত আর কোন্ পথে চললে জাহান্নামে যাওয়া যাবে তার সুস্পষ্ট গাইড লাইন কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে।

মানুষের ভাল মন্দ পথের নির্দেশক হিসেবে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অনেক নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘আর এমন কোনো জাতি নেই, যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক প্রেরিত হয়নি।’ (সুরা: ফাতির, আয়াত ২৪)।

 ‘তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতগুলো পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত: ২)।

 ‘আমি সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসুল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসুল আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত: ১৬৫)।

 ‘আল্লাহর পথে মানুষকে হিকমত ও উত্তম উপদেশ সহকারে দাওয়াত দাও।’ (সুরা: নাহল, আয়াত: ১২৫)।

 ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করিনি; কিন্তু এটা তাদেরই উপদেশের জন্য, যারা ভয় করে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত: ১-৩)।

আমাদের মাঝে বর্তমানে কোনো নবি-রাসুল নেই। আছে শুধু দুইট জিনিস। তাহলো কুরআন ও রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ বা হাদিস।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, বিদায়ী হজ্জে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাঝে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এই মাটিতে তার উপাসনা হবে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত তোমরা যে সমস্ত কর্মসমূহকে অবজ্ঞা কর, তাতে তার আনুগত্য করা হবে—এ নিয়ে সে সন্তুষ্ট। সুতরাং তোমরা সতর্ক থেকো! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)। (হাকেম ৩১৮, সহীহ তারগীব ৩৬, হাদীস সম্ভার ১৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন ও হাদিস থাকার পরও দেখা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত মুসলমানগণ সরল সঠিক পথ ছেড়ে বক্র বা বাঁকা পথে হাঁটছে। মুসলমানগণ রাসুল এর তরিকা বাদ দিয়ে তারা নিত্য নতুন পথ-মত তৈরী করে চলছে। অধিকাংশ মুসলমান নিজেদের কর্মকান্ড দিয়ে প্রমাণ করছে তারা কাফির, মুনাফিক, মুশরিক ও বিদআতি। মুসলিম সমাজে মুসলিম নেতারাই চালু করেছে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, লটারীসহ সব ধরনের নৈসলামিক কার্যকলাপ। গ্রাম গঞ্জ, শহর বন্দর, কর্মস্থান, শপিংমলসহ হাট-বাজারে বেপর্দা নারীর অবাধ বিচরন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পার্কসহ সব জায়গায় চলছে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও যিনা/ব্যভিচার। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা পাশ্চাত্য তথা ইহুদি-খৃস্টানদের অনুকরনে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে ঘুরাফেরা করতে খুবই সাচ্ছন্দবোধ করছে। বর্তমান সময়ে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনা প্রায় প্রতিটি মুসলিম পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। সেই সব মুসলিম পরিবারের অভিবাবকগণ একই সাথে সালাত আদায় করছে, হজ্জ পালন করছে, সাওম পালন করছে, হাতে তাশবিহ নিয়ে জিকির করছে আবার তাদের পরিবারের মেয়েরা পাতলা শাড়ি, কেউবা শার্ট প্যান্ট, কেউবা শর্ট কাট জামা পরিধান করে বাহিরে আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা তারা সঠিকভাবে পালন করছে না।

এখন ঘুণে ধরা এই সমাজকে উদ্ধার করার দায়িত্ব কার?

যেহেতু আমাদের মাঝে নতুন করে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না, তাই এই দায়িত্ব কারা পালন করবে তা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ বলেন,

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো। রাসূল ও উলিল আমরের আনুগত্য করো। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ ঘটে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট ফিরে যাবে; যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতকে বিশ্বাস কর। এটাই তোমাদের জন্যে সুন্দর ও উত্তম উপায়”। (সূরা ৪/নিসা – ৫৯)।

‘উলুল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোনো বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। সে কারণেই ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ ও হাসান বসরী রাহিমাহুমাল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণ ওলামা ও ফোকাহা সম্প্রদায়কে ‘উলুল আমর’ সাব্যস্ত করেছেন। তারাই হচ্ছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নায়েব বা প্রতিনিধি ৷ তাদের হাতেই দ্বীনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত। মুফাসসিরীনের অপর এক জামা'আত-যাদের মধ্যে আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ সাহাবায়ে কেরামও রয়েছেন-বলেছেন যে, ‘উলুল আমর’ এর অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। ইমাম সুদ্দী এ মত পোষণ করেন। এছাড়া তাফসীরে ইবন কাসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ শব্দটির দ্বারা (ওলামা ও শাসক) উভয় শ্রেণীকেই বোঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। আল্লামা আবু বকর জাসসাস এতদুভয় মত উদ্ধৃত করার পর বলেছেন, সঠিক ব্যাপার হলো এই যে, এতদুভয় অর্থই ঠিক। কারণ, ‘উলুল আমর’ শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অবশ্য এতে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন যে, উলুল আমর বলতে ফকীহগণকে বোঝানো যেতে পারে না। তার কারণ, أُولُو الْأَمْر (উলুল আমর) শব্দটি তার শাব্দিক অর্থের দিক দিয়ে সে সমস্ত লোককে বোঝায়, যাদের হুকুম বা নির্দেশ চলতে পারে। বলাবাহুল্য, এ কাজটি ফকীহগণের নয়। প্রকৃত বিষয় হলো এই যে, হুকুম চলার দুটি প্রেক্ষিত রয়েছে। (এক) জবরদস্তিমূলক। এটা শুধুমাত্র শাসকগোষ্ঠী বা সরকার দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। (দুই) বিশ্বাস ও আস্থার দরুন হুকুম মান্য করা। আর সেটা ফকীহগণই অর্জন করতে পেরেছিলেন এবং যা সর্বযুগে মুসলিমদের অবস্থার দ্বারা প্রতিভাত হয়। দ্বীনী ব্যাপারে সাধারণ মুসলিমগণ নিজের ইচ্ছা ও মতামতের তুলনায় আলেম সম্প্রদায়ের নির্দেশকে অবশ্য পালনীয় বলে সাব্যস্ত করে থাকে। তাছাড়া শরীআতের দৃষ্টিতেও সাধারণ মানুষের জন্য আলেমদের হুকুম মান্য করা ওয়াজিবও বটে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রেও ‘উলুল আমর’-এর প্রয়োগ যথার্থ হবে।

উলিল আমরের অর্থ শুধুই নেতা নয়

এ আয়াতটি অনুবাদ করার সময় অনেকেই ‘উলিল আমরের’ অর্থ করেন –‘নেতা’। কিন্তু উলিল আমরের অর্থ যদি “নেতা” করা হয়, তাহলে কুর’আনের অন্য একটি আয়াতের সাথে বৈপরীত্য তৈরি হয়। কেননা, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীরা আল্লাহর নিকট অভিযোগ করে বলবে–“আমরা আমাদের নেতার আনুগত্য করেছিলাম বলে তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।”

 “হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের বা মুরব্বীদের কথা মেনে নিয়েছিলাম, তাই তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল”। (সূরা ৩৩, আহযাব, আয়াত  ৬৭)।

তাহলে এখানে উলিল আমরের সঠিক অর্থ কি হবে?

উলিল আমর [أُو۟لِى ٱلْأَمْرِ ] দুটি শব্দ–উলিল ও আমর। উলিল শব্দের অর্থ অধিকারীগণ, অভিভাবকগণ, বা, সহযোগীগণ। “আমর” শব্দটি কুর’আনে অসংখ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনঃ

কুর’আনে সবচেয়ে বেশি ‘আমর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে “কাজ” অর্থে। মানুষ যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার জন্যে ওয়াদাবদ্ধ হয়, তখন সেই কাজের কর্মকর্তাকে উলিল আমর বলা হয়। (সূরাঃ ২৪/ আন-নূর: ৬২)।

‘আমর’ শব্দের  অর্থ হলো ওহী বা আল-কুর’আন। যারা কুর’আনের অধিকারী বা কুর’আনের জ্ঞানে জ্ঞানী তাদেরকে ‘উলিল আমর’ বলা হয়। (সূরাঃ ২১/ আল-আম্বিয়া : ৭৩)।

‘আমর’ শব্দের অর্থ হলো ইসলামী শরিয়াহ বা ইসলামী আইন। যারা ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ বা বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তাদেরকে ‘উলিল আমর’ বলা হয়।

(সূরাঃ ৪৫/ আল-জাসিয়া: ১৮)।

 ‘আমর’ শব্দের অর্থ হলো রূহ। রূহের অধিকারী স্বচ্ছ ও সুন্দর হৃদয়কে ‘উলিল আমর’ বলা হয়। (সূরাঃ ১৭/ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) ৮৫)।

কোনো ধরণের প্রতিদানের আশা না করে যারা আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকে, তাদেরকেও ‘উলিল আমর’ বলা হয়। (সূরাঃ ১০/ ইউনুস: ৭২, সূরাঃ ৩/ আলে-ইমরান : ১০৪)।

সমাজের যে কোনো জ্ঞানী মানুষদেরকেও ‘উলিল আমর’ বলা হয়। (সূরাঃ ৫২/ আত-তূর ৩২,  সূরাঃ ২১/ আল-আম্বিয়া: ৭]

সুতরাং, ‘উলিল আমর’ হলো – কুর’আনের জ্ঞানে জ্ঞানী, সাধারণ জ্ঞানের জ্ঞানী, ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ, স্বার্থহীন সৎকাজের আদেশকারী, কোনো কাজের দায়িত্বশীল, মাতা-পিতা, শিক্ষক, এবং নিজের আকল-বুদ্ধি।

অতএব উল্লেখিত আলোচনায় জানতে পারলাম যে, উলিল আমর বলতে শুধু নেতা বুঝাবে না, কোনো পির-সুফিকেও বুঝাবে না। বৈধ সব কাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে উলিল আমর বুঝাবে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে কিয়ামতে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাঃ বলেন,

(১) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯২৮,  আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০, আল লুলু ওয়াল মারজান-১১৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২) তারপর সেই দিনের কথা মনে করো যেদিন আমি মানুষের প্রত্যেক দলকে তাদের নেতা সহকারে ডাকব। সেদিন যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেওয়া হবে তারা নিজেদের কার্যকলাপ পাঠ করবে এবং তাদের ওপর সামান্যতম জুলুমও করা হবে না। (সুরাঃ ১৭/ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) ৭১)।

উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা জানতে পারলাম যে, একটি পরিবারের একজন অভিভাবকও উলিল আমর। তিনি তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তার অধীনস্থ পরিবারের সদস্যগণ কে কি করছে সেসবের খোঁজ খবর রাখা, তাদেরকে ইসলামের পথে পরিচালিত করা, ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা, পরিবারে সালাত প্রতিষ্ঠা করা, পর্দার বিধান চালু করা ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করা একজন অভিভাবকের ইমানি দায়িত্ব। একজন অভিভাবক তার পরিবারের সদস্যগণের অশ্লীলতা বা বেহায়াপনাকে যদি বাঁধা প্রদান না করে কিংবা তার পরিবারের মেয়েরা যদি বেপর্দায় বাহিরে বের হয় আর অভিভাবক দেখেও যদি কিছু না বলে তাহলে সেই অভিভাবক দাইউস বলে পরিগণিত হবে এবং তার শেষ পরিনতি হবে জাহান্নাম। পরিবারের সমস্যগণ কিয়ামতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা কিংবা ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের জন্যে যখন জাহান্নামি বলে ঘোষিত হবে তখন এই সদস্যগণই সেই সেই অভিভাবককে দোষারুপ করে বলবে যে, তিনি তাদেরকে ইসলামের আদেশ নিষেধ করেননি।

এখানে আর একটি বিষয় যে, পির বা কথিত অলিগণ (সূরাঃ ৪/ আন-নিসা ৫৯) এই আয়াতে উল্লেখিত উলিল আমর দ্বারা পিরকে বুঝিয়ে থাকেন। এটা তাদের ধর্ম ব্যবসাকে জায়েজ করার জন্যেই মূলত এর অপব্যাখ্যা করে এককভাবে তারাই দাবী করে যে, উলিল আমর বলতে এখানে পিরকে বুঝায়। উল্লেখিত দলিলের ভিত্তিতে  উলিল আমর বলতে পিরকে বুঝায় না। তারা ধর্মীয় নেতা হিসেবে উলিল আমর হতে পারেন। তবে এককভাবে তারাই যে উলিল আমর তা নয়। যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিই উলিল আমর। তবে ইসলামি রাষ্ট্রে রাষ্ট্র শাসক নেতাগণই উলিল আমর।

দাইউস কাকে বলে?

দাইউস হলো সে ব্যক্তি যে কিনা তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না এবং পরিবার পরিজন সঠিক ভাবে না চললেও ভালো মনে করেন বা প্রতিবাদ করেন না।

যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ করে দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়।

দাইয়ুস সম্পর্কে রসুলুল্লহ স. বলেছেন,“ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।” (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-কন্যা সহ পরিবারের অধিনস্ত অন্য সদস্যদের বেপর্দা চলাফেরা ও অশ্লীল কাজকর্ম বা ব্যভিচারকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে অথবা কোনরূপ বাধা না দিয়ে মৌনতা অবলম্বন করে।

ইমাম যাহাবী রহ. বলেছেন, ‘দাইয়ূস’ সে ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে এ ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’। (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের- ১/৫০)।

হাদিসটির ব্যাখ্যা বিস্তারিত। তবে এখানে মুল বিষয় হল ফাহেশা বা অশ্লীলতা। যে তার নিজ পরিবারে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে শিথিলতা প্রদর্শন করে, স্ত্রী-কন্যাদেরকে পর্দার আদেশ করে না, পর্দাপালনে উৎসাহিতও করে না, ঘরে নিষিদ্ধ গান-বাদ্য দিব্যি চলে, এর কোনো প্রতিবাদ করে না; এ রকম সকল শরীয়াহ বিরোধী অশ্লীলতাকে মেনে নেয় – সে ব্যক্তি 'দাইয়ুস'।

রাসূল () বলেছেন :

এমন বেহায়া, যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। [আহমাদ ৫৩৭২, ৬১১৩]।

বেহায়া হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না। (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ১০৮০০)।

فَاحِشَةٌ (ফাহিশা) হলো : নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা। তবে কুরআনে ব্যভিচারকেও فًاحِشَة (অশ্লীলতা) বলে গণ্য করা হয়েছে। [সূরা ইস্রাঈল : ৩২]। 

আর এখানে ব্যভিচারের একটি মিথ্যা খবর প্রচার করাকেও আল্লাহ অশ্লীলতা বলে অভিহিত করেছেন এবং একে দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির কারণ হিসাবে গণ্য করেছেন।

উল্লেখ্য যে একটি পরিবারের কর্তা/ প্রধান অভিভাবক হতে পারে পিতা, বড় ভাই, স্বামী, পুত্র। এদের অধীনস্থ কেউ যদি অশ্লীলতা করে বেড়ায় অথচ সে তাতে বাধা প্রধান না করে তাহলে উক্ত পাপের দায়ভার উক্ত অভিভাবকদের উপর বর্তাবে। এরাই হচ্ছে দাইউস।

দাইউস ও এর পরিণতি সম্পর্কে রসুলুল্লহ স. এর হাদিসের ভাষ্য তো স্পষ্ট এবং আল্লাহর রসুল স. বলেও দিলেন আমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং অধীনস্থদের সম্পর্কে আমরা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবো। উপরন্তু আল্লাহ তা’আলা আদেশও করেছেন বান্দা যেনো নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচায়। তাই সমস্ত অধীনস্থদেরকে তথা পরিবার-পরিজনদেরকে যাবতীয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা-অন্যায়-পাপাচার এবং বে-পর্দায় চলাফেরা করা থেকে বিরত রাখা এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো আমাদের উপর ফরয।

মনে রাখবেন দাইউস অভিভাবক যতোই আমল বা ইবাদত বন্দেগী করুক না কেনো তাদের কোনো আমল কিয়ামতে কাজে আসবে না এবং তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত।

“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।” (সূরাঃ ২৪/ আন-নূর ১৯)।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

আল্লাহ সুবহানাল্লাহ ওয়া তা’আলা বলেছেন, “হে বিশ্বাসী বান্দাগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুণ থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা তা-ই করে যা করতে তাদের আদেশ করা হয়।” (সূরা তাহরিম-৬)।

যেসব কারনে অভিভাবক দাইউস এ পরিনত হয়

পরিবারের সদস্যগণের যেসব অশ্লীলতা বা বেহায়াপনা কিংবা ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের জন্যে অভিভাবক দাইউস বলে পরিগণিত হবে এবং যেসব কর্মকান্ডের জন্যে অভিভাবকসহ পরিবারের সদস্যগণ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ও একজন অভিভাবকের করণীয় কী তার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

নারীদের পর্দার বিধান-যাদের সামনে ফরজ।

মাহরামদের সামনে পর্দার বিধান

পর্দার বিধান মেনে চলতে বাধ্য করা এটি একটি পারিবারিক শিক্ষা। শিশুকাল থেকেই ছেলে মেয়েরা তার পিতা মাতা ও বড় ভাই বোনদের অনুসরন-অনুকরনে বেড়ে ওঠে। এছাড়া পারিপার্শ্বিক প্রভাবও ছেলে মেয়েদের উপর পড়ে। তাই শিশু যে পরিবেশে বড় হয় সেই পরিবেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি বা কৃষ্টি কালচার ধারণ করেই বড় হয়। শিশুদের ইসলামি আদর্শে গড়ে তুলতে হলে প্রথমত অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মাহরামদের সামনে পর্দার বিধান করতে হবে কিনা। প্রথমে আমাদের জানা দরকার যে, মাহরাম কাকে বলে?

নারীর জন্য মাহরাম হচ্ছে ঐসব পুরুষ যাদের সাথে উক্ত নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক চিরতরে হারাম; সেটা ঘনিষ্ট আত্মীয়তার কারণে। যেমন পিতা, যত উপরের স্তরে হোক না কেন। সন্তান, যত নীচের স্তরের হোক না কেন। চাচাগণ। মামাগণ। ভাই। ভাই এর ছেলে। বোনের ছেলে।

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুরী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে– নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।” (সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩-২৪)।

ভিন্ন পরিবারের দুই ছেলে মেয়ে একই মায়ের দুধ পান করলে তাদের মধ্যে বিবাহ হারাম

‘উক্বাহ ইব্নু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বিয়ে করলাম। এরপর একজন কালো মহিলা এসে বলল, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি। এরপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে এসে বললাম, আমি অমুকের কন্যা অমুককে বিয়ে করেছি। এরপর এক কালো মহিলা এসে আমাদেরকে বলল যে, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি; অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এসে বললাম, সে মিথ্যাচারী। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কী করে বিয়ে হতে পারে যখন তোমাদের দু’জনকেই ঐ মহিলা দুধ পান করিয়েছে- এ কথা বলছে। কাজেই, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও। রাবী ইসমাঈল শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুল দু’টো তুলে ইশারা করেছে যে, তার উর্ধ্বতন রাবী আইউব এমন করে দেখিয়েছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)-৫১০৪, ৮৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

দুধ ভাই কমপক্ষে দুই বছর দুধ মায়ের দুধ পান না করলে সে দুধ ভাই বলে গণ্য হবে না। তথা সে মাহরাম পুরুষ হবে না। তার সাথে বিবাহ বৈধ বিধায় তার সামনে পর্দা করতে হবে।

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে এলেন। সে সময় এক লোক তার কাছে বসা ছিল। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর চেহারায় ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেল, যেন তিনি এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ আমার ভাই। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যাচাই করে দেখ, তোমাদের ভাই কারা? কেননা দুধের সম্পর্ক কেবল তখনই কার্যকরী হবে যখন দুধই হল শিশুর প্রধান খাদ্য।  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১০২, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস। (সন্তানের দু’বছর বয়সের মধ্যে যদি দুধপান ক’রে থাকে, তবে দুধের সম্পর্ক হবে, নইলে হবে না।)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “যে ব্যক্তি দুধপান কাল পূর্ণ করাতে ইচ্ছুক তার জন্যে মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’ বৎসরকাল স্তন্য দান করবে।” (সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/২৩৩)।

দুধ-মা এর স্বামীর সাথে বিবাহ হারাম। কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে। যেমন- মা এর স্বামী। স্বামীর পিতা, যত উপরের স্তরের হোক না কেন। স্বামীর সন্তান, যত নীচের স্তরের হোক না কেন।

নীচে বিস্তারিত মাহরামের পরিচয় তুলে ধরা হলোঃ

রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে যারা মাহরাম তাদের কথা সূরা নূর এ আল্লাহ্র এ বাণীতে উল্লেখ করা হয়েছে: “তারা যেন তাদের সাজসজ্জা প্রকাশ না করে, তবে নিম্নোক্তদের সামনে ছাড়া স্বামী, বাপ, স্বামীর বাপ, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে...। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)।

তাফসিরকারকগণ বলেন: নারীর রক্ত সম্পর্কীয় মাহরাম পুরুষগণ হচ্ছেন- এ আয়াতে যাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে কিংবা এ আয়াতে যাদের ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে; তারা হচ্ছে-

এক: পিতাগণ। অর্থাৎ নারীর পিতাগণ, যত উপরের স্তরের হোক না কেন। সেটা বাপের দিক থেকে হোক কিংবা মায়ের দিক থেকে হোক। অর্থাৎ পিতাদের পিতারা হোক, কিংবা মাতাদের পিতারা হোক। তবে, স্বামীদের পিতাগণ বৈবাহিক সম্পর্কের দিক থেকে মাহরাম হবে, এ ব্যাপারে একটু পরে আলোচনা করা হবে।

দুই: ছেলেরা। অর্থাৎ নারীর ছেলেরা। এদের মধ্যে সন্তানের সন্তানেরা অন্তর্ভুক্ত হবে, যত নীচের স্তরের হোক না কেন, সেটা ছেলের দিক থেকে হোক, কিংবা মেয়ের দিক থেকে হোক। অর্থাৎ ছেলের ছেলেরা হোক কিংবা মেয়ের ছেলেরা হোক। পক্ষান্তরে, স্বামীর ছেলেরা: আয়াতে তাদেরকে ‘স্বামীর অন্য স্ত্রীর ছেলে’ বলা হয়েছে; তারা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম হবে; রক্ত সম্পর্কের কারণে নয়। একটু পরেই আমরা সেটা বর্ণনা করব।

তিন: নারীর ভাই। সহোদর ভাই হোক; কিংবা বৈমাত্রেয় ভাই হোক; কিংবা বৈপিত্রীয় ভাই হোক।

চার: ভ্রাতৃপুত্রগণ; যত নীচের স্তরের হোক না কেন, ছেলের দিক থেকে কিংবা মেয়ের দিক থেকে। যেমন- বোনের মেয়েদের ছেলেরা।

পাঁচ: চাচা ও মামা। এ দুই শ্রেণী রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হিসেবে মাহরাম। কিন্তু, উল্লেখিত আয়াতে তাদেরকে উল্লেখ করা হয়নি। কেননা তারা পিতামাতার মর্যাদায়। মানুষের কাছেও তারা পিতামাতার পর্যায়ভুক্ত। চাচাকে কখনও কখনও পিতাও বলা হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমরা কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বললঃ আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বললো, আমরা তোমার পিতৃ-পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্যের ইবাদত করবো। তিনি একক উপাস্য।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৩৩)।

ইসমাঈল (আঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর সন্তানদের চাচা ছিলেন। [তাফসির আল-রাযি (২৩/২০৬), তাফসির আল-কুরতুবী (১২/২৩২, ২৩৩), তাফসির আল-আলুসি (১৮/১৪৩), ফাতহুল বায়ান ফি মাকাসিদ আল-কুরআন (৬/৩৫২)]।

দুধ পানের কারণে যারা মাহরাম

নারীর মাহরাম কখনও দুধ পানের কারণে সাব্যস্ত হতে পারে। তাফসিরে আলুসিতে এসেছে, যে মাহরামের সামনে নারীর সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা বৈধ সে মাহরাম রক্ত সম্পর্কের কারণে যেমন সাব্যস্ত হয় আবার দুধ পানের কারণেও সাব্যস্ত হয়। তাই, নারীর জন্যে তার দুধ পিতা ও দুধ সন্তান এর সামনে সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা বৈধ। [তাফসিরে আলুসি (১৮/১৪৩)]।

কেননা দুধ পান এর কারণে যারা মাহরাম হয় তারা রক্ত সম্পর্কীয় মাহরামের ন্যায়; এদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক চিরতরে নিষিদ্ধ। পূর্বোক্ত এই আয়াতটির তাফসির করাকালে ইমাম জাস্সাস এ দিকে ইশারা করে বলেন: “আল্লাহ্ তাআলা যখন পিতৃবর্গের সাথে সেসব মাহরামদেরও উল্লেখ করলেন যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন চিরতরে হারাম এতে করে এ প্রমাণ পাওয়া গেল যে, মাহরাম হওয়ার ক্ষেত্রে যে তাদের পর্যায়ে তার হুকুম তাদের হুকুমের মতই। যেমন- শাশুড়ি ও দুধ পান সম্পর্কীয় মাহরামবর্গ প্রমুখ। [আহকামুল কুরআন (৩/৩১৭)]।

রক্ত সম্পর্কীয় কারণে যারা যারা মাহরাম হয় দুগ্ধ সম্পর্কীয় কারণে তারা তারাই মাহরাম হয়: হাদিসে এসেছে, রক্ত সম্পর্কীয় কারণে যারা যারা মাহরাম হয় দুগ্ধ সম্পর্কীয় কারণে তারা তারাই মাহরাম হয়। এ হাদিসের অর্থ হল, বংশীয় সম্পর্কের কারণে যেমন কিছু লোক নারীর মাহরাম হয়; তেমনি দুগ্ধ সম্পর্কীয় কারণেও কিছু লোক নারীর মাহরাম হয়। সহিহ বুখারীতে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর আবু কুয়াইস এর ভাই আফলাহ একবার আয়েশা (রাঃ) এর সাথে দেখা করার অনুমতি চাইল; তিনি হচ্ছেন- আয়েশা (রাঃ) এর দুধ চাচা। কিন্তু, আয়েশা (রাঃ) অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন তখন আয়েশা (রাঃ) বিষয়টি জানালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অনুমিত দেয়ার নির্দেশ দেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হবার পর তাঁর [‘আয়িশার (রাঃ)] দুধ সম্পর্কীয় চাচা আবূল কু’আয়াসের ভাই ‘আফলাহ্’ তাঁর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। এরপর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন। আমি যা করেছি, সে সম্পর্কে তাঁকে জানালাম। তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে আমাকে নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১০৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩২, সহিহ মুসলিম বিশারহিন নাবাবি ১০/২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কের চাচা এলেন এবং আমার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন; কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর কাছে অনুমতি নেয়া ব্যতিত তাকে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসার পর তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি হচ্ছে তোমার চাচা। কাজেই তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে মহিলা দুধ পান করিয়েছেন, কোন পুরুষ আমাকে দুধ পান করায়নি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তোমার চাচা, কাজেই তাঁকে তোমার কাছে আসার অনুমতি দাও। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এটা – পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হবার পরের ঘটনা। তিনি আরও বলেন, জন্মসূত্রে যারা হারাম, দুধ সম্পর্কেও তারা হারাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

নারীর দুগ্ধ সম্পর্কীয় আত্মীয় রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের মত

ফিকাহবিদগণ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে স্পষ্টাভাবে উল্লেখ করেছেন যে, দুগ্ধপানের কারণে যারা কোন নারীর মাহরাম হয় তারা রক্ত সম্পর্কীয় মাহরামদের ন্যায়। তাই দুগ্ধ সম্পর্কীয় আত্মীয়দের কাছে সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা বৈধ; ঠিক যেভাবে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের কাছে সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা বৈধ। সে সব মাহরামের জন্যে উক্ত মহিলার ঐ সব অঙ্গ দেখা জায়েয আছে রক্ত সম্পর্কীয় মাহরামের জন্যে যা কিছু দেখা জায়েয আছে।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে বসে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যক্তি হাফসাহ (রাঃ) - এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যক্তি হাফ্সার দুধের সম্পর্কের চাচা। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি অমুক ব্যক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারতাম)? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হাঁ, রক্ত সম্পর্কের কারণে যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অতএব দুধ সম্পর্কীয় চাচা মাহরাম পুরুষ বলে গণ্য হবে।

বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম হয়

বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে সেসব পুরুষ মাহরাম হয় যাদের সাথে বিবাহ চিরতরে নিষিদ্ধ। যেমন, বাপের স্ত্রী, ছেলের বউ, স্ত্রীর মা। [শারহুল মুন্তাহা ৩/৭]।

অতএব, বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম হবে: পিতার স্ত্রীর ক্ষেত্রে সে হবে এ নারীর অন্য ঘরের সন্তান। সন্তানের স্ত্রী যেহেতু তিনি পিতা। স্ত্রীর মা, যেহেতু তিনি স্বামী। আল্লাহ্ তাআলা সূরা আল-নূর এ বলেন: “আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র... ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। [সূরা নূর, আয়াত: ৩১]।

শ্বশুর, স্বামীর পুত্র বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে মাহরাম। আল্লাহ্ তাআলা এ শ্রেণীকে নারীর নিজের পিতা ও পুত্রের সাথে উল্লেখ করেছে এবং সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সমান বিধান দিয়েছেন। [আল-মুগনী (৬/৫৫৫)]।

এক নজরে মাহরাম পুরুষঃ

(১) স্বামী(দেখা দেওয়া,সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)।

(২) পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।

(৩) শ্বশুর, আপন দাদা ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।

(৪) আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী তথা নিজ মেয়ে জামাই।

(৫) স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র তথা সতীনের ছেলে।

(৬)  আপন ভাই,সৎ ভাই।

(৭) ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে।

(৮) ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে।

(৯) এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই।

আল্লাহ বলেন, ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা নুর ২৪:৩১ ]।

(১০)  দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ।

(১১) দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান।

(১২) দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোনো পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যক্তি হাফসাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যক্তি হাফসার দুধের সম্পর্কে চাচা। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, যদি অমুক ব্যক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সঙ্গে দেখা করতে পারতাম)? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাঁ, রক্ত সম্পর্কের কারণে যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯৯, ২৬৪৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(আল্লাহ্ বলেন,), “তোমাদের জন্য দুধমাকে (বিয়ে) হারাম করা হয়েছে।” (সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩)।

(১৩)  আপন চাচা, সৎ চাচা।

(১৪) আপন মামা, সৎ মামা।

আল্লাহ বলেন,

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। [সুরা নিসা ৪:২৩]।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা মাহরাম পুরুষদের সম্পর্কে জানতে পারলাম। এদের সাথে নারীদের বিবাহ হারাম বিধায় তাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ নেই। মাহরাম পুরুষদের সামনে নারীর পর্দার বিধান প্রযোজ্য নয়।

গায়রে মাহরামদের সামনে পর্দার বিধান

যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্যশরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহবন্ধন বৈধ তাদেরকে গায়রে মাহরাম বলে।  (বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগহয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দাকরে সামনে যাবে। তবে একাকী কখনো যাবে না)।

গায়রে মাহরাম কারা?

মাহরাম বাদে বিশ্বেযতো পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম। যেমনঃ

নিজ পরিবারেচাচাত/ খালাত/মামাত/ফুফাত সব ভাই,নিজ দুলাভাই,দেবর,ভাসুর,(আপন, দাদা  ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা-মামা-খালু-ফুফা শ্বশুর, নিজ খালু/ফুফা এরা সবাই গায়রে মাহরাম।তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এরহুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করা ফরজ। পর্দার বিধান মেনে তাদের সাথে কথা বলা, তাদের সামনে যাওয়া-আসা কিংবা অন্যান্য যদি কোনো কাজ থাকে তা পালন করতে হবে।

আল্লাহ বলেন,

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সুরা নুর ২৪:৩১]।

গায়রে মাহরামদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, তাদের সামনে কিভাবে যেতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের বিভিন্ন নিয়ম কানুন কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক এখানে আলোচনা করা হয়েছে। এখানকার আলোচ্য বিষয়গুলো অভিভাবকদের জন্যে ইসলামি পন্থায় একটি আদর্শ পরিবার গঠনে গাইড লাইন হিসেবে কাজ করবে। আপনারা অভিভাবক হিসেবে এগুলো জানবেন এবং পরিবারের সদস্যদেরকে সেইভাবে গড়ে তুলবেন। যদি এর কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে আপনি দাইউস হিসেবে গণ্য হবেন এবং শেষ পরিনতি হবে জাহান্নাম। সেই সাথে পরিবারের সদ্যনগণও জাহান্নামি হবে, তারা ইসলামি অনুশাসন মেনে না চলার কারনে। তাছাড়া এই সদস্যগণই কিয়ামতে আল্লাহর নিকট আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে যে, আপনি অভিভাবক হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালন করেননি। সেই দিন আপনার নিজেস্ব অন্যান্য ইবাদত বা আমল রক্ষা করতেদ পারবে না। তাই নিজে শিখুন ও পরিবারকে গাইড করুন। যেসব বিষয় শিখবেন ও পরিবারের উপর প্রয়োগ করে তা মেনে চলতে বাধ্য করাবেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

পর্দা বা হিজাব পরিধান

হযরত মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ্ হযরত যায়নাব রাযি আল্লাহু আনহাকে বিবাহ করেন এবং তারপর প্রথম পর্দার বিধান জারী করা হয় হিজরী ৫ম সনে, তখন হযরত আনাস (রাঃ) ইবনে হযরত উম্মু সুলাইম (রাঃ) ১৫ বৎসরের যুবক, তাঁহার সামনে প্রথম পর্দার আয়াত নাযিল হয় :

ঊসুরা আহযাব, আয়াত-৫৪। অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীগৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করোনা।

পর্দা কি?

পর্দার পারিভাষিক সংজ্ঞা হলঃ

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই তাদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপর থেকে আড়ালে রাখার জন্য ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাকে হিজাব বা পর্দা বলা হয়। (আল মু‘জামুল ওয়াসীত, ১ম খ-, ১৫৬ পৃষ্ঠা)।

ইবনে জাওযীর থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমদ (র.) বলেছেন, নারীদের প্রকাশ্য সৌন্দর্য হল কাপড় আর নারীদের শরীরের সবকিছু এমনকি নখও পর্দার অর্ন্তভুক্ত। (যাদুল মাসীর ৬/৩১)।

আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)।

এই আয়াতে প্রমাণ হয় রাসূল (সাঃ) স্ত্রীগণ ও গায়রে মাহরাম থেকে পর্দা করতেন।

ঘরোয়া পরিবেশে পর্দা  সম্পর্কে  আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন : আর তোমরা (মহিলাগণ) তোমাদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করো। পূর্বের জাহিলিয়াতের মতো নিজেদের রূপ সৌন্দর্য ও দেহ প্রদর্শন করে বেড়িওনা। (সূরা আহযাব, আয়াত-৩৩)।

এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) লিখেছেনঃ অর্থঃ তোমাদের ঘরকে তোমরা আঁকড়ে থাকো এবং বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেনা।

হে নবী! তোমার স্ত্রী, কন্যা ও মুসলিম মহিলাদেরকে বল, তারা যেন সকলে ঘর থেকে বাহিরে যাবার সময় মাথার উপর তাদের চাদর ঝুলিয়ে দেয়। এভাবে বের হলে তাদেরকে চেনা খুব সহজ হবে, ফলে কেউ তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবেনা। (সূরা- আল্ আহযাব, আয়াত-৫৯)।

হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া আর কারো ঘরে প্রবেশ করোনা যতক্ষণ তোমরা তোমাদের সম্পর্কে পরিচিতি করিয়ে না নেবে এবং ঘরের লোকদের প্রতি সালাম না পাঠাবে। এ নীতি অনুসরণ করা তোমাদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। সম্ভবতঃ তোমরা এ উপদেশ গ্রহণ করে তদানুযায়ী। কাজ করবে। (সুরা-আন নূর, আয়াত-২৭)।

যদি সেখানে কোন পুরুষ ব্যক্তি না থাকে এবং জরুরী ভিত্তিতে সে বাড়ী থেকে কিছু সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়, তবে তার বিধানও দয়াময় আল্লাহ্ দিয়েছেন।

এরশাদ হচ্ছে : যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাবে, পর্দার আড়াল থেকেই চাবে। (সত্যি কথা বলতে কি) তোমাদের ও তাদের দিলের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এটাই উত্তম পন্থা। (সূরা আল আহযাব, আয়াত- ৫৩)। 

হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে। এবং মুমিন মহিলাদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (সুরা আন নূর, আয়াত- ৩০-৩১)।

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, "আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আমাকে দেখে চিনে ফেলল। কেননা সে আমাকে হিজাবেব হুকুম হওয়ার আগে দেখেছিল।

তখন সে ইন্নালিল্লাহ বলে উঠল, আমি তার ইন্নালিল্লাহ বলার শব্দে আমি জেগে উঠি তখন আমি ওড়না দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ফেলি।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৭০, জামে তিরমিযী হাদিস ৩১৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৬৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৮১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদিসটিও অকাট্য দলিল-

উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন যে, তিনি ও মাইমূনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশে হাযির ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা দু'জন তার নিকটে অবস্থানরত থাকতেই ইবনু উম্মু মাকতুম (রাঃ) তার নিকট এলেন। এটা পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা উভয়ে তার থেকে পর্দা কর। আমি (উম্মু সালামা) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতেও পারছেন না চিনতেও পারছেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরাও কি অন্ধ, তোমরাও কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১১২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৬, ইরওয়া ১৮০৬, আহমাদ ২৬৫৩৭, য‘ঈফাহ্ ৫৯৫৮, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

নারী পর্দার সাথে বাইরে বের হলেও সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা জরুরী

আর দূরে সফরের ক্ষেত্রে এটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে হাদিসে মাহরাম পুরুষ ছাড়া নারীকে বের হতেই নিষেধ করা হয়েছে!

(ক) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

"মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে,তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন ও এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়"। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৫৭-৩১৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৩৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৭২৩, সুনান ইবনে মাজাঃ ২৮৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যয়নাব বিন্ত জাহশ্কে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন। লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন, কিন্তু লোকেরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যক্তি বসেই রইল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনও বসে রয়েছে [তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন]। এরপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। অতঃপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপর আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করেনঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর গৃহে প্রবেশ করো না...শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৯১, ৪৭৯২, ৪৭৯৩, ৪৭৯৪, ৫১৫৪, ৫১৬৩, ৫১৬৬, ৫১৬৮, ৫১৭০, ৫১৭১, ৫৪৬৬, ৬২৩৮, ৬২৩৯, ৬২৭১, ৭৪২১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২৮, আহমাদ ১৩৪৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাহ্রামের বিনা উপস্থিতিতে কোন পুরুষ কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে না। এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার স্ত্রী হাজ্জ করার জন্য বেরিয়ে গেছে এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহনের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্জ সম্পন্ন কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩৩, ১৮৬২, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

উপরোক্ত কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনায় আমরা পর্দা করা সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর হুকুম ও পর্দার গুরুত্ব জানতে পারলাম। আমরা মুসলমান ইসলামকে শুধু সালাত, সাওম, হজ্জ, জিকির ও লোক দেখানো দান খয়রাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। এর বাহিরে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর যে আরো শত শত হুকুম তথা ফরজ ইবাদত আছে সেগুলো মানতে চাই না। এসবের মধ্যে পর্দা একটি অন্যতম। পর্দাকে কতিপয় মুসলিম অভিভাবক সামান্য পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে খেল তামাশায় পরিনত করেছে। আবার অধিকাংশ নারী পর্দার নামে টাইট ফ্যাশন ড্রেস পরিধান করে বাহিরে বের হচ্ছে। পর্দা করার নিয়ম জানা সত্বেও সেইসব নারীগণ পরপুরুষের মনোরঞ্জনের জন্যে নিজেকে সেইভাবেই উপস্থাপন করে। যাই হোক, আপনার পরিবার পর্দা করে কিনা সেইটা আগে ভাবতে হবে। আপনি যদি দাইউস হয়ে জাহান্নামে যেতে না চান, নিজ পরিবারকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করতে চান তাহলে সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই পর্দার বিধান শিক্ষা দিন। ছোট বেলা থেকেই কালিমা, সালাত ও সাওম পালনের অভ্যাস গড়ে তুলুন। কুরআন ও হাদিস শিক্ষা দিন। সহিহ হাদিস গ্রন্থ ও হাদিসের গল্পের বই ঘরে রাখুন। সেগুলো পড়ার তাগিদ দিন। যারা বড় হয়েছে তাদেরকে ইসলামের বিধিবিধানগুলো মানার জোড় তাগিদ দিন এবং সেগুলো যথাযথ পালন করছে কিনা তা ফলোআপ করুন।

পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্যে অতিরিক্ত সাজে সজ্জিত হয়ে বাহিরে বের হওয়া

নারীগণ বাহিরে বের হলে তাদেরকে মেকআপ করতে হবে, পাতলা শাড়ি পরধিান করতে হবে যাতে বাহিরে থেকে ব্লাউজ ও ব্রা দেখা যায়, নাভির নীচে কাপড় পড়তে হবে যাতে নাভির গভীরতা দেখা যায় ও পরপুরুষ তার দিকে চেয়ে থাকে, ভ্রু প্লাক করতে হবে, শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে লিপিস্টিক লাগাতে হবে, শ্যাম্পু দিয়ে চুলগলো ফুরফুরা করে ছেড়ে দিয়ে এলোমেলো কেশে হাঁটতে হবে, হরেক রকম ডিজাইনের অলংকার পড়তে হবে যাতে অলংকারে সূর্যের আলোকচ্ছটা বা রাতে রেডিয়াম আলোর ঝলকানীতে পরপুরুষের অন্তর কেঁপে ওঠে, বিদেশী সেন্ট বা বডি স্প্রে করতে হবে, দাঁতগুলো সরু করতে হবে যাতে পরপুরুষের সামনে হাসি দিলে পুরুষ যেনো তিন দিন চোখে আলো আধারী দেখে ইত্যাদি ইত্যাদি সাজে সজ্জিত হেতে হবে। আর বর্তমান যুগে এটাই হচ্ছে নারীর আধুনিক ড্রেস বা ফ্যাশন পোশাক। আমাদের সমাজে শহর, বন্দর, হাট বাজারে বা শপিং মলে, বিয়ের অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন পার্টিতে যাদেরকে দেখা যায় তাদের ৯৫% মুসলিম নারী। স্ত্রী, মেয়ে কিংবা ছেলের বৌ এমনি সাজে সজ্জিত হয়ে বাহিরে যাচ্ছে আর আপনি অভিভাবক তশবিহ হাতে নিয়ে জিকিরে কিংবা মোরাকাবায় ধ্যানে মগ্ন। এই মিয়া আপনি কার ইবাদত করেন? যান ইবাদত করছেন সেই মহান আল্লাহই তো বলেছেন, পর্দার করে বাহিরে যেতে। আর আপনি সেটা সুনিশ্চিত করবেন। তা না করে আপনি একদিকে ইবাদত করছেন অন্যদিকে আপনার মেয়ে বা স্ত্রী কবিরাহ ছগিরাহ গুণাহ করে বাসায় ফিরছে আর আপনি তাদেরকে বাহবা দিচ্ছেন। সাবধান! এমন ইবাদত কিয়ামতে কাজে আসবে না। আপনি দাইউস। আপনার স্থান হবে জাহান্নামে।

তাই আসুন, জাহান্নামে যাতে না যেতে হয় সেজন্যে নারীর সাজ সজ্জা কেমন হবে তা ইসলামি বিধান মোতাবেক জেনে নেই।

সাজ-সজ্জা

মহিলার লেবাসের শর্ত অনুসারে আমরা বুঝতে পারি যে টাইট্ফিট আটষাট (চুশ) পোশাক কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে বাড়ির ভিতর পরিধান বৈধ। অবশ্য কোন এগানা ও মহিলার সামনে, এমন কি পিতা-মাতা বা ছেলে-মেয়েদের সামনেও ব্যবহার উচিত নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৫)।

যে পোশাকে অথবা অলঙ্কারে কোন প্রকারের মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি অঙ্কিত থাকে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেহেতু ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী। (আল-ফাতাওয়া আল-ইজতিমাইয়্যাহ, ইবনে বায, ইবনে উষা¬ইমীন ৪০পৃঃ)।

যে লেবাস বা অলঙ্কারে ছয় কোণবিশিষ্ট তারকা, ক্রুশ, শঙ্খ, সর্প বা অন্যান্য কোন বিজাতীয় ধর্মীয় প»তীক (অথবা হারাম বাদ্য-যন্ত্র) চিত্রিত থাকে মুসলিমের জন্য তাও ব্যবহার করা বৈধ নয়। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৭পৃঃ)।

সোনা, রূপা বা অন্য কোন ধাতুর অলংকারে কুরআনের আয়াত অথবা আল্লাহর নাম অঙ্কিত করে তা দেহে ব্যবহার করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/৪৫৮)।

বৈধ নয় কোন শির্কী কথা অঙ্কিত করে মঙ্গল আনয়ন এবং অমঙ্গল দূরীকরণের ব্যবস্থা।

নিউ মোডেল বা ফ্যাশনের পরিচ্ছদ ব্যবহার তখনই বৈধ, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোন হিরো-হিরোইন বা কাফেরদের অনুকরণ হবে না। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১২পৃঃ)।

স্ক্যার্ট-ব্লাউজ বা স্ক্যার্ট-গেঞ্জি মুসলিম মহিলার ড্রেস নয়। বাড়িতে এগানার সামনে সেই ড্রেস পরা উচিত; যাতে গলা থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত পর্দায় থাকে। আর (বিনা বোরকায়) বেগানার সামনে ও বাইরে গেলে তো নিঃসন্দেহে তা পরা হারাম। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২১পৃঃ)।

প্যান্ট্-শার্ট মুসলিমদের ড্রেস নয়। কিছু শর্তের সাথে পুরুষদের জন্য পরা বৈধ হলেও মহিলারা তা ব্যবহার করতে পারে না; যদিও তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাইটফিট না হয়। এই জন্য যে, তা হলো পুরুষদের ড্রেস। আর পুরুষের বেশধারিণী নারী অভিশপ্তা। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৩০-৩১পৃঃ)।

মহিলার মাথা

মহিলার মাথার কেশ একটি প্রকৃতিগত সৌন্দর্য। সুকেশিনী নারী মুগ্ধ করে তার স্বামীর চক্ষু ও মন। সুতরাং সেই সৌন্দর্যেরও আদব রয়েছে ইসলামে। কেশবিন্যাসে মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক সাইডে সিঁথি করতে পারে না। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৭)।

সাধারণতঃ বাঁকা সিঁথির এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।

আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামবাসী হবে যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। তন্মধ্যে প্রথম শ্রেণী হল সেই লোক, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক; যার দ্বারা তারা লোকেদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই মহিলাদল, যারা কাপড় পরা সত্ত্বেও যেন উলঙ্গ থাকবে, (যারা পাতলা অথবা খোলা লেবাস পরিধান করবে।) এরা (পর পুরুষকে নিজের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (তার প্রতি) আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের কুজের মত। তারা জান্নাত প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ এত-এত দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।’’ (মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১২৮)।

উক্ত হাদীসে ‘মাইলাত’ (আকৃষ্টা)র ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, যারা মাথার একপাশে বাঁকা সিঁথি কাটে। যা সাধারণতঃ বেশ্যাদের অভ্যাস। (শারহুন নওবী দ্রঃ)।

বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে -একথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে। যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩০, ফাতাওয়াল মারআহ ৯৪পৃঃ)।

অনুরূপ কারণে বৈধ নয় গাডার বা ক্লিপ দিয়ে সমস্ত চুলকে পিছন দিকে টাইট করে গোড়ায় বেঁধে ঘোড়ার লেজের মত উঁচু করে ছেড়ে রাখা।

প্রিয় রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি) তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্না; যাদের মাথা কৃশ উটের কুঁজের মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’ (আহমাদ ২/২২৩, ইবনে হিববান, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা.হা/২৬৮৩)।

এ ভবিষ্যৎবাণী যে কত সত্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

মাথার ঝরে-পরা-কেশ মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম। যেহেতু বিশেষ করে মহিলার চুল উল্লেখযোগ্য দীর্ঘ হলে তা যুবকদের মন কাড়ে। পরন্তু ঐ চুল নিয়ে যাদুও করা যায়। তাই যেখানে-সেখানে না ফেলাই উচিত। (ফাতাওয়াল মারআহ ৯৯পৃঃ)।

মহিলার চুল ও কেশদাম অমূল্য সম্পদ, তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। মহিলারা পাকা চুলে খেযাব বা কলপ ব্যবহার করতে পারে। তবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার হারাম। বাদামী, সোনালী, লালচে প্রভৃতি কলপ দিয়ে রঙাতে পারে। তবে তাতে যেন কোন হিরোইন বা কাফের নারীর অনুকরণ বা বেশধারণ উদ্দেশ্য না হয়। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ২৫পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত, সালেহ আল ফাউযান ৩০পৃঃ)।

সতর্কতার বিষয় যে, এক প্রকার মোটা কলপ চুলে দিলে, গোসলের সময় চুলে পানি পৌঁছে না। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ফরয গোসল শুদ্ধ হবে না।

সিঁথিতে সিঁদুর দিতে এই জন্য পারে না যে, সালাফ মহিলাগণ সিঁথিতে রঙ ব্যবহার করেননি। তাছাড়া তাতে বিজাতির অনুকরণ হবে। যেহেতু কোন কোন ধর্মের মহিলাদের ধর্মীয় অভ্যাস ছিল যে, বিবাহের পর সতীত্ব প্রমাণের জন্য প্রথম রমণে সতীচ্ছদ ছিন্ন হওয়ার ফলে ক্ষরিত রক্ত কপালে লাগিয়ে দেখাতো। যা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রক্তের বদলে সিঁদুর প্রচলিত হয়ে যায়। অতএব মুসলিম মহিলার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ নয়।

ইসলামে বিবাহিতা-অবিবাহিতা চেনার কোন উপায় নেই। তা চিনে কোন ফায়দাও নেই। তাছাড়া সে তো অচেনাদের কাছে পর্দার অন্তরালে অবস্থান করবে। অতএব সে সব চিহ্ন দেখার সুযোগই কোথায়?

মহিলাদের মাথার চুল নেড়া করা হারাম। অবশ্য সৌন্দর্যের জন্য সামনের বা পিছনের কিছু চুল ছাঁটা অবৈধ নয়। তবে তা কোন হিরোইন বা কাফের মহিলাদের অনুকরণ করে তাদের মত অথবা পুরুষদের মত করে ছেঁটে ‘ডিয়ানা-কাট’, ‘লায়ন-কাট’,  ‘সাধনা-কাট’, ‘হিপ্পি-কাট’ ইত্যাদি অবৈধ। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৬-৮৩১, ফাতাওয়াল মারআহ ১০৭-১১১পৃঃ)।

তাছাড়া সুদীর্ঘ কেশদাম সুকেশিনীর এক মনোলোভা সৌন্দর্য, যা ছেঁটে নষ্ট না করাই উত্তম। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৫১২-৫১৫)।

স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে-অর্থের অপচয় না হলে-মেশিন দ্বারা চুল কুঁচকানো বা থাক্থাক্ করা বৈধ। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৯)।

তবে তা কোন পুরুষ সেলুনে অবশ্যই নয়। মহিলা সেলুনে মহিলার নিকট এসব বৈধ। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, রাখুঃ ১০৩পৃঃ)।

কেশ বেশী দেখাবার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা পরচুলা (টেসেল) অথবা বস্ত্রখন্ড বা তুলোর বল আদি ব্যবহার হারাম, স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। প্রিয় রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘‘যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।’’ (সহীহুল জা’মে হা/২৭০৫)।

হুমায়েদ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মু‘আবিয়া ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তার হাজ্জ পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের কাছ থেকে মহিলাদের একগুচ্ছ চুল নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন যে, হে মীনাবাসী! কোথায় তোমাদের আলিম সমাজ? আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ রকম পরচুলা ব্যবহার হতে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ ধরনের পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬৮, ৩৪৮৮, ৫৯৩২, ৫৯৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মু‘আবীয়াহ (রাঃ) শেষবারের মত যখন মাদ্বীনায় আসেন, তখন তিনি আমাদের সামনে খুৎবাহ দেন। তিনি এক গোছা চুল বের করে বললেন, আমি ইয়াহূদী ছাড়া অন্য কাউকে এ জিনিস ব্যবহার করতে দেখিনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে অর্থাৎ পরচুলা ব্যবহারকারী নারীকে প্রতারক বলেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৮, ৩৪৬৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৫০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে মেয়েরা মাথায় পরচুলা লাগিয়ে বড় খোঁপা প্রদর্শন করে আল্লাহ রসূল (সাঃ) তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪)।

আসমা (বিন্ত আবূ বকর) (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার এক মেয়ের বসন্ত রোগ হয়ে মাথার চুল পড়ে গেছে। আমি তাকে বিয়ে দিয়েছি। তার মাথায় কি পরচুলা লাগাব? তিনি বললেনঃ পরচুলা লাগিয়ে দেয় ও পরচুলা লাগিয়ে নেয় এমন নারীকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৪১, ৫৯৩৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, আহমাদ ২৪৮৫৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য কোন মহিলার মাথায় যদি আদৌ চুল না থাকে, তবে ঐ ত্রুটি ঢাকার জন্য তার পক্ষে পরচুলা ব্যবহার বৈধ। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩৬, ফাতাওয়াল মারআহ ৮৩পৃঃ)।

মাথার পোশাক ও অলঙ্কার

মহিলার মাথার পোশাক হল ওড়না। অবশ্য তা পাতলা হবে না এবং তা দিয়ে মাথা সহ ঘাড় ও বক্ষঃস্থল ঢাকা যাবে। আর তার মাথার যাবতীয় অলঙ্কার; টায়রা, ক্লিপ, চুল-আঁটা, বেল্ট্ প্রভৃতি মহিলা, স্বামী ও মাহরাম আত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারবে না।

কান ও তার অলঙ্কার

কান আল্লাহর দেওয়া একটি নিয়ামত। এই নিয়ামত সম্পর্কে কিয়ামতে সকলকে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব কানে তাই শোনা উচিত, যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুমতি আছে। আল্লাহর দেওয়া এই কান দিয়ে গান-বাজনা, গীবত, চুগলী ইত্যাদি শোনা হারাম। হারাম কানাচি পেতে কারো গোপন কথা শোনা। কান ফুঁড়িয়ে অলঙ্কার ব্যবহার মহিলার জন্য বৈধ। কথিত আছে যে, সর্বপ্রথম বিবি হাজার (হাজেরা) কান ফুঁড়িয়েছিলেন। (আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ ১/১৫৪)।

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সাক্ষী রেখে বলছি, কিংবা পরবর্তী বর্ণনাকারী ‘আত্বা (রহ.) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাসকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঈদের দিন পুরুষের কাতার থেকে) বের হলেন আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল (রাযি.)। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করলেন যে, দূরে থাকার জন্য তাঁর নাসীহাত মহিলাদের নিকট পৌঁছেনি। ফলে তিনি তাঁদের নাসীহাত করলেন এবং দান-খায়রাত করার উপদেশ দিলেন। তখন মহিলারা কানের দুল ও হাতের আংটি দান করতে লাগলেন। আর বিলাল (রাযি.) সেগুলো তাঁর কাপড়ের প্রান্তে গ্রহণ করতে লাগলেন। ইসমা‘ঈল (রহ.) ‘আত্বা (রহ.) সূত্রে বলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাক্ষী রেখে বলছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৮, ৮৬৩, ৯৬২, ৯৬৪, ৯৭৫, ৯৭৭, ৯৭৯, ৯৮৯, ১৪৩১, ১৪৪৯, ৪৮৯৫, ৫২৪৯, ৫৮৮০, ৫৮৮১, ৫৮৮৩, ৭৩২৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮৪, আহমাদ ৩০৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

চেহারা

চেহারা দেহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশীল ও দর্শনীয় অঙ্গ। সুন্দর-অসুন্দর বিবেচিত হয় এই অঙ্গেরই নিকষে। তাই তো বেগানার কাছে মর্যাদাসম্পন্না স্বাধীনা মহিলারা তাও গোপন করে থাকেন। তাই তো শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে যে, মহিলা আঘাতের উপযুক্তা হলেও তার চেহারায় যেন আঘাত না করা হয়।

চেহারার রঙ উজ্জ্বল করার জন্য কোন মেডিসিন দিয়ে চেহারার উপরিভাগের ছাল তুলে ফেলা বৈধ নয়। বৈধ নয় প্লাস্টিক সার্জারি করে নতুন রূপ আনয়ন করা। বৈধ নয় বৃদ্ধার ভাঁজ পড়া চেহারা থেকে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাঁজ দূর করে যুবতীর নকল রূপ আনয়ন করা। যেহেতু এ কাজও আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যে রূপ দান করেছেন, মহিলাকে সেই রূপ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। অর্থ আছে বলে অর্থের অপচয় ঘটিয়ে ধার করা রূপ আনাতে ইসলামের সম্মতি নেই। অবশ্য বিকৃত মুখম-ল অথবা কোন অঙ্গ স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনতে ইসলাম অনুমতি দেয়।

দেগে মুখে-হাতে নক্সা করা বৈধ নয়। এরূপ দেগে নক্সা যে বানিয়ে দেয় এবং যার জন্য বানানো হয় উভয়কেই রসূল (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন। (সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, তামবীহুল মু’মিনাত ২৯পৃঃ)।

মহিলার চেহারায় যদি অস্বাভাবিক লোম গজিয়ে ওঠে; যেমন গালে, ঠোঁটে বা চিবুকে লোম দেখা দেয়, তাহলে তা যে কোন প্রকারে দূর করে স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে আনাতে কোন দোষ নেই। (ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ ২১৭৭৮)।

কপাল

ইসলামে মহিলাদের জন্য কপালে ব্যবহার্য কোন অলঙ্কার বা সাজ-সজ্জার বিধান নেই। সুতরাং সেখানে কোন রঙ (ফোঁটা, টিপ) বা অলঙ্কার ব্যবহার যদি অমুসলিম মহিলাদের অনুকরণ করে হয়ে থাকে তাহলে তা অবৈধ। বিশেষ করে লাল টিপ ও ফোঁটাতে ঐ ছিন্ন সতীচ্ছদের রক্তের রং ও রূপ রয়েছে। আর আল্লাহই অধিক জানেন।

ভ্রূ ও তার সৌন্দর্য

ভ্রূর রূপ হল প্রকৃতিগত। তাতে আল্লাহর দেওয়া রূপ মানুষের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং তা চেঁছে সরু চাঁদের মত করে সৌন্দর্য আনয়ন বৈধ নয়। স্বামী চাইলেও নয়। যেহেতু ভ্রূ ছেঁড়া বা চাঁছাতে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়; যাতে তাঁর অনুমতি নেই। তাছাড়া রসূল (সাঃ) এমন মেয়েদেরকেও অভিশাপ করেছেন। (সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, ফাতাওয়াউল মারআহ ৭২,৯৪পৃ.)।

অনুরূপ কপাল চেঁছেও সৌন্দর্য আনা অবৈধ। (সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৬৯২)।

অনুরূপভাবে ভ্রূর লোমকে অথবা চামড়াকে কোন রঙ বা কেমিক্যাল দিয়ে রঙিয়ে রূপসী সাজাও বৈধ নয়।

চোখ ও তার প্রসাধন

মহিলার উচিত, প্রত্যেক হারাম জিনিস দেখা হতে চক্ষুকে অবনত ও সংযত করা। চোখের চাহনিকে বোরকার পর্দায় গোপন করা, আঁখির বাঁকা ছুরিকে কোন পরপুরুষের গলায় চালানো থেকে বিরত থাকা। চোখ ঠারা, চোখ মারা ও চোখের অবৈধ ইশারা থেকে দূরে থাকা। চোখের ব্যভিচার থেকে শত ক্রোশ দূরে থাকা।

সুর্মা সুরমার চোখে মনোরমা লাগে এবং তা ব্যবহার সুন্নাত। কাজলে চোখের কোন ক্ষতি না থাকলে তা ব্যবহার বৈধ, নচেৎ না। পলকের পালিশ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই বিধান। জেনে রাখা দরকার যে, ঐ সকল রঙ এমন কেমিক্যাল (রাসায়নিক পদার্থ) দিয়ে তৈরী থাকে যে, তা ব্যবহার করলে চোখের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এই জন্যই মহিলাদের উচিত, এমন পেন্ট্ লাগিয়ে সঙ বা হিরোইন সাজার চেষ্টা না করা।

চোখের পাতার উপর প্রকৃতিগতভাবে যে লোম থাকে, মহিলাকে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। সুনয়না সাজার জন্য নকল লোম ব্যবহার তার জন্য বৈধ নয়। যেহেতু তা নকল চুল (পরচুলা) ব্যবহার করারই অনুরূপ।

চিকিৎসার খাতিরে কন্ট্যাক্ট লেন্স্ (নেত্রপল্লবের ভিতরে স্থাপিত প্লাস্টিক-নির্মিত পরকলা) ব্যবহার বৈধ। কিন্তু সুন্দরী সাজার জন্য বিভিন্ন রঙের কসমেটিক লেন্স্ ব্যবহার বৈধ নয়।

চোখে চশমা যদি প্রয়োজনে হয়, তাহলে অবৈধ নয়। কিন্তু গগলস লাগিয়ে মস্তান সাজা কোন দ্বীনদার মহিলার কাজ নয়।

গাল ও তার প্রসাধন

মহিলার জন্য বাজারে অসংখ্য (আসল ও নকল) গালের ক্রিম ও প্রসাধন পাওয়া যায়। এ সব ব্যবহার কেবল একটা ভিত্তিতে বৈধ এবং তা এই যে, তা ব্যবহারে মহিলার যেন উপকার থাকে এবং কোন প্রকার অপকার না থাকে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, মহিলা তা কোন ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার না করে এবং মাসে মাসে একটার পর আর একটা পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে করতে গালের ত্বকই নষ্ট করে ফেলে। অথচ নানা ক্রিম ও পাউডারের প্রলেপ হল গালে মেছেতা বা অন্য অবাঞ্ছিত দাগ পড়ার অন্যতম কারণ। সুতরাং এ ব্যাপারে মুসলিম মা-বোনদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

পূর্বেই বলা হয়েছে, মহিলার গালে বা ওষ্ঠের উপরে পুরুষের দাড়ি-মোচের মতো দু-একটা বা ততোধিক অস্বাভাবিক চুল থাকলে তা তুলে ফেলায় দোষ নেই। কারণ, বিকৃত অঙ্গে স্বাভাবিক আকৃতি ও শ্রী ফিরিয়ে আনতে শরীয়তের অনুমতি আছে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩২, ফাতাওয়া মারআহ ৯৪পৃ.)।

অবশ্য অনেকের মতে আল্লাহর দেওয়া ঐ সুন্দর্য (শ্রী) নিয়ে মহিলাকে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যেহেতু মহান আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টিকেই সুন্দর আকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। (সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/৪০৯)।

নাক, নাকের পরিচ্ছন্নতা ও অলঙ্কার

নাক পানি দিয়ে পরিষ্কার রাখা প্রকৃতিগত একটি সুন্নাত। আর তার জন্য রয়েছে ওযূর বিধান।

নাক ছিদ্র করার প্রথা রসূল (সাঃ) বা তাঁর সাহাবার যুগে ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে দেশের প্রথা হিসাবে মহিলা নাক ফুড়িয়ে তাতে কোন অলঙ্কার ব্যবহার করতে পারে। (ফাতাওয়া মারআহ ৮২পৃঃ)।

ব্যবহার করতে পারে লাগামের মত নাকের নথ। (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ৪/১৩৭)।

ওষ্ঠাধর

প্রকৃতিগতভাবে মহিলার গোঁফ হয় না। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে তা যদি হয়েই থাকে, তাহলে তা তুলে ফেলা বৈধ; যেমন এ কথা পূর্বে আলোচিত হয়েছে।

স্বামীর দৃষ্টি ও মন আকর্ষণের জন্য ঠোঁট-পালিশ (লিপ্স্টিক), গাল-পালিশ প্রভৃতি অঙ্গরাগ ব্যবহার বৈধ; যদি তাতে কোন প্রকার হারাম বা ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত না থাকে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৯)।

তবে লিপস্টিক লাগিয়ে লালে রঞ্জিত হয়ে পরপুরুষকে আকৃষ্ট করতে এসব ব্যবহার করে বাহিরে বের হওয়া যাবে না।

দাঁত, দাঁতের যত্ন

দাঁতের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে পুরুষের মত মহিলারও দাঁতন করার বিধান রয়েছে ইসলামে।

রূপচর্চায় দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান ঘষে ফাঁক-ফাঁক করে চিরনদাঁতীর রূপ আনা বৈধ নয়। এমন নারীও রসূল (সাঃ) এর মুখে অভিশপ্তা। (সহীহুল জা’মে হা/৫১০৪, আদাবুয যিফাফ ২০৩পৃঃ)।

অবশ্য কোন দাঁত অস্বাভাবিক ও অশোভনীয় রূপে বাঁকা বা অতিরিক্ত (কুকুরদাঁত) থাকলে তা সিধা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। (তামবীহুল মু’মিনাত ২৮পৃঃ, ফাতাওয়া মারআহ ৯৪পৃঃ)।

যেমন মহিলার জন্য সোনার দাঁত ব্যবহার করা বৈধ।

ঘাড় ও গলা

মহিলাদের ঘাড়ের অলঙ্কার হিসাবে হার ও মালা পরার প্রথা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগেও প্রচলিত ছিল। (বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৮৮১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে বের হলেন এবং (ঈদের) দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। তার পূর্বে এবং পরে আর কোন নফল সালাত আদায় করেননি। তারপর তিনি মহিলাদের নিকট আসেন এবং তাদের সদাকাহ করার জন্যে নির্দেশ দেন। মহিলারা তাদের হার ও মালা সদাকাহ করতে থাকল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮১, ৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৪৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং তা আজও মহিলার সৌন্দর্যবর্ধক এক শ্রেণীর অলংকার।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মহিলার গলার আওয়াজ বেগানা পুরুষের জন্য শোনা বৈধ হলেও তার কণ্ঠস্বরে যেন মিষ্টতা ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিমা না থাকে। রোগা মনের পুরুষ যাতে তার কোমল কণ্ঠে প্রলুব্ধ না হয়ে যায়, তার জন্য কুরআনে এ বিধান দেওয়া হয়েছে। (সূরা আহযাব-৩৩:৩২ আয়াত)।

বক্ষঃস্থলঃ

নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য গোপন থাকে তার বুকের মাঝে। সেহেতু বক্ষঃস্থল তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ। লেবাসের ভিতরেও এ অঙ্গ আকর্ষণীয় (উঁচু) করে রাখা বোরকা-ওয়ালীদের জন্যও বৈধ নয়।

কেবল স্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্রা ব্যবহার বৈধ। অন্যের জন্য ধোকার উদ্দেশ্যে তা অবৈধ। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ১/৪৭০)।

বক্ষের ভিতরে আছে হৃদয়। এই হৃদয় হল মানুষের মূল। হৃদয় ভালো হলে, তার সব ভালো। নচেৎ তা খারাপ হলে সব খারাপ।

উল্লেখ্য যে, বাহ্যিক দেহে সৌন্দর্য আনার আগে হৃদয়-মনে সৌন্দর্য আনতে হবে। দেহের সৌন্দর্য নিবেদন করার সাথে সাথে হৃদয়ের সৌন্দর্যও নিবেদন করতে হবে স্বামীকে। তবেই হবে সৌন্দর্যের প্রকৃত মূল্যায়ন।

আসলে আত্মার সৌন্দর্য মানুষকে পরিপূর্ণতা দান করে। আর সত্যিকারের সৌন্দর্য মনের চোখ দিয়েই দেখা যায়।

হাত ও তার অলঙ্কার

মেহেন্দি লাগিয়ে হাত রঙিয়ে রাখাই মহিলার কর্তব্য। যাতে মহিলার হাত থেকে পুরুষের হাত পৃথক বুঝা যায়। রাসুল (সাঃ) এর যুগে মহিলারা মেহেন্দি দ্বারা রঙিয়ে রাখত।

হাতের চুড়ি প্রচলিত ছিল তখনও। অবশ্য তা বিবাহিত মহিলা চিহ্নরূপে প্রচলিত ছিল না। বলাই বাহুল্য যে, বিবাহিত মহিলার হাতে চুড়ি রাখা জরুরী ভাবা, চুড়ি খুললে স্বামীর কোন ক্ষতি হবে ধারণা করা অথবা হাত খালি করতে নেই মনে করা শির্ক ও বিদআত।

যেমন বেগানা পুরুষের হাতে চুড়ি পরা মুসলিম মহিলার জন্য হারাম ও অতি ধৃষ্টতার পরিচয়। হারাম হল চুড়ির ঝন্ঝনানি দ্বারা পর-পুরুষের মন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

হাতের বাজুতে বাজুবন্দ বা আর্মলেট, হাতে ঘড়ি বা ব্রেসলেট ব্যবহার অবৈধ নয়। তবে তা বেগানা পুরুষের চোখের সামনে গোপন করতে হবে।

অনেকের মতে মহিলার কব্জি পর্যন্ত উভয় হাতও গোপনীয় অঙ্গ। অতএব তা বেগানা পুরুষের সামনে বোরকা বা চাদর দ্বারা অথবা হাত মোজা বা দস্তানা দ্বারা পর্দা করা ওয়াজেব। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগে মহিলারা দস্তানা ব্যবহার করত। তাই ইহরামের সময় তা পরতে নিষেধ করা হয়েছে।

হাতের চামড়া দেগে বা সূচিবিদ্ধ করে নকশা করা বা উলকি আঁকাঁ  বৈধ নয়। এমন যে করে ও করায় সে অভিশপ্তা।

হযরত ইবনে মসঊদ (রাঃ) বলতেন, ‘(হাত বা চেহারায় সুচ বিদ্ধ করে) যারা উলকি-নকশা করে দেয় অথবা করায়, চেহারা থেকে যারা লোম তুলে ফেলে (বা ভ্রূ চাঁছে), সৌন্দর্য আনার জন্য যারা দাঁতের মাঝে ঘসে (ফাঁক ফাঁক করে) এবং আল্লাহর সৃষ্টি-প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটায় (যাতে তাঁর অনুমতি নেই) এমন সকল মহিলাদেরকে আল্লাহ অভিশাপ করুন।’

বনী আসাদ গোত্রের উম্মে ইয়াকূব নামক এক মহিলার নিকট এ খবর পৌঁছলে সে এসে ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে বলল, ‘আমি শুনলাম, আপনি অমুক অমুক (কাজের) মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘যাদেরকে আল্লাহর রসূল (সাঃ) অভিশাপ করেছেন এবং যার উল্লেখ আল্লাহর কিতাবে রয়েছে তাদেরকে অভিশাপ করতে আমার বাধা কিসের?’ উম্মে ইয়াকূব বলল, ‘আমি (কুরআন মাজীদের) আদ্যোপান্ত পাঠ করেছি, কিন্তু আপনি যে কথা বলছেন তা তো কোথাও পাইনি।’ ইবনে মসঊদ (রাঃ) বললেন, ‘তুমি যদি (গভীরভাবে) পড়তে, তাহলে অবশ্যই সে কথা পেয়ে যেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়নি?’

অর্থাৎ, রসূল তোমাদেরকে যা(র নির্দেশ) দেয় তা গ্রহণ (ও পালন) কর এবং যা নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক।’’ ( সূরা হাশর-৫৯:৭)।

উম্মে ইয়াকূব বলল, ‘অবশ্যই পড়েছি।’ ইবনে মসঊদ (রাঃ) বললেন, ‘তাহলে শোন, তিনি ঐ কাজ করতে নিষেধ করেছেন।’ মহিলাটি বলল, ‘কিন্তু আপনার পরিবারকে তো ঐ কাজ করতে দেখেছি।’ ইবনে মসঊদ (রাঃ) বললেন, ‘আচ্ছা তুমি গিয়ে দেখ তো।’

মহিলাটি তাঁর বাড়ি গিয়ে নিজ দাবী অনুযায়ী কিছুই দেখতে পেল না। পরিশেষে ইবনে মসঊদ (রাঃ) তাকে বললেন, ‘যদি তাই হতো তাহলে আমি তার সাথে সহবাসই করতাম না।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮; মুসলিম ৩৭/৩৩, হাঃ ২১২৫, আহমাদ ৪৩৪৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫২১, আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা ২১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আঙ্গুল ও তার সৌন্দর্য

রাসুল (সাঃ) এর যুগে মহিলারা আংটি ব্যবহার করত। তবে লোহার আংটি ব্যবহার বৈধ নয়। বৈধ নয় পয়গামের আংটি। যেমন কোন বালা-মসীবত দূর করার জন্য কোন আংটি ব্যবহার করা শির্ক।

কোন বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য অপারেশন বৈধ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)।

পক্ষান্তরে অতিরিক্ত আঙ্গুল বা মাংস হাতে বা দেহের কোন অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা বৈধ। (যীনাতুল মারআতিল মুসলিমাহ ১২২ পৃঃ)।

কোন আঙ্গিক ত্রুটি ঢাকার জন্য কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহার দূষণীয় নয়। যেমন, সোনার বাঁধানো নাক, দাঁত ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮৩৩)।

পা ও তার অলঙ্কার

মহিলাদের পায়ের অলঙ্কার রসূল (সাঃ) এর যুগেও প্রচলিত ছিল। বর্তমানেও পায়ের মল, নুপুর বা তোড়া যদি বাজনাহীন হয় এবং বেগানা পুরুষ থেকে গুপ্ত রাখা হয়, তাহলে তা বৈধ।

মহিলার পায়ে ঘুঙুর ও বাজনাবিশিষ্ট নুপুর স্বামী ও এগানা ছাড়া অন্যের কাছে প্রকাশ পাওয়া হারাম। যেহেতু প্রত্যেক বাজনার সাথে শয়তান থাকে। আর সেই শয়তান পর-পুরুষের মন ও দৃষ্টিকে ঐ ভাবুনী মহিলার দিকে আকৃষ্ট করে। সে মহিলা হয়তো বা নিজে পর-পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং পর-পুরুষকেও নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। তাইতো সৃষ্টিকর্তা মহিলাদেরকে সতর্ক করে বলেন,

অর্থাৎ, তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে-(সূরা নূর-২৪:৩১)।

অনেকের মতে মহিলাদের জন্য বেগানার সামনে পায়ের পাতা ঢাকাও ওয়াজেব। আর তার জন্য পা-মোজা ব্যবহার করা কর্তব্য।

জুতার আদব

মহিলাদের জন্য হিল তোলা জুতা ব্যবহার বৈধ নয়। বিশেষ করে পেনসিল হিল জুতা মুসলিম মহিলাদের জন্য পরাই উচিত নয়।

হাই হিল জুতা পরা একাধিক কারণে নিষিদ্ধ

(ক) নিজেকে লম্বা দেখাবার উদ্দেশ্যে এই জুতা পরার মানে হল, আল্লাহর সৃষ্টি আকৃতির ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ।

(খ) লম্বা ও উঁচু দেখানোর উদ্দেশ্যে পরলে লোককে ধোকা দেওয়া হয়।

(গ) এই জুতা পরে মহিলার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশী থাকে। আর যদি কোন লোকমাঝে পড়ে, তাহলে তার উপর হাততালি ও উপহাসের পাথর বর্ষণ করা হয়। আর বেকায়দায় বা খারাপ জায়গায় পড়লে বেপর্দা হয় অথবা দেহে আঘাত খায়।

(ঘ) এই জুতা পরে আকর্ষণীয় আওয়াজ এবং চলনে দৃষ্টি-আকর্ষী আজব ভঙ্গিমা সৃষ্টি হয়। তাতে পুরুষের দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট ও প্রলুব্ধ হয়। (ইলা রাববাতিল খুদূর, আবু আনাস আলী ৮৬পৃঃ)।

(ঙ) এই জুতা পরলে পশ্চিমা নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়।

(চ) এই জুতা পরে মনে মনে গর্ব ও অহংকার সৃষ্টি হতে পারে।

(ছ) এই জুতা পরে স্বাস্থ্যগত অনেক ক্ষতির আশঙ্কা আছে। যেমনঃ পিঠে ব্যথা হয়, পায়ের রলার পেশী শক্ত হয়ে যায় ইত্যাদি।

আসলে এই শ্রেণীর দৃষ্টি ও মন আকর্ষনীয় জুতা পরে যে মহিলা প্রদর্শন করে বেড়ায়, সে আসলে সেই মহিলাদের দলভুক্ত হতে পারে, যাদের সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘--এরা (পর পুরুষকে নিজের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (তার প্রতি) আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের কুজের মত। তারা জান্নাত প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ এত-এত দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।’’ (মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১২৮)।

অতএব ঐ শ্রেণীর অন্ধ মেয়েরা দৃষ্টি ফিরে পাবে কি?

হাত-পায়ের নখঃ

নখ কেটে ফেলা মানুষের এক প্রকৃতিগত রীতি। প্রতি সপ্তাহে একবার না পারলেও ৪০ দিনের ভিতর কেটে ফেলতে হয়। (মুসলিম, আবূ দাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ২০৬পৃঃ)।

কিন্তু এই প্রকৃতির বিপরীত করে কতক মহিলা নখ লম্বা করায় সৌন্দর্য আছে মনে করে। অথচ সভ্য দৃষ্টিতে তা পশুবৎ লাগে এবং ঐ নখে নানা ময়লা জমা হতে থাকে। নিছক পাশ্চাত্যের মহিলাদের অনুকরণে অসভ্য লম্বা ধারালো নখে নখ-পালিশ লাগিয়ে বন্য সুন্দরী সাজে। কিন্তু ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে সে সেই জাতিরই দলভুক্ত।’’ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, আদাবুয যিফাফ ২০৫পৃঃ)।

প্রকাশ থাকে যে, কৃত্রিম নখ ব্যবহারে উলামাগণ অনুমতি দেন না। যেহেতু তাতে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

নখে নখপালিশ ব্যবহার অবৈধ নয়, তবে ওযুর পূর্বে তুলে ফেলতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না। (ইলা রাববাতিল খুদূর ১০১পৃঃ)।

অবশ্য এর জন্য উত্তম সময় হল মাসিকের কয়েক দিন। তবে গোসলের পূর্বে অবশ্যই তুলে ফেলতে হবে।

মহিলাদের চুলে, হাতে ও পায়ে মেহেদী ব্যবহার মাসিকাবস্থাতেও বৈধ। বরং মহিলাদের নখ সর্বদা মেহেদী দ্বারা রঙ্গিয়ে রাখাই উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪১৬৬, নাসায়ী ৫০৮৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৮৮১, শু‘আবুল ঈমান ৬৪১৯, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৩৭৬৫, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯৩৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এতে এবং অনুরূপ আলতাতে পানি আটকায় না। সুতরাং না তুলে ওযু-গোসল হয়ে যাবে। (ফাতাওয়াল মারআহ ২৬পৃঃ)।

লজ্জাস্থানঃ

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মহিলার দেহের প্রায় সবটাই হল লজ্জাস্থান। সুতরাং সেই লজ্জাস্থানকে গোপন করে লজ্জাশীলতা আনয়ন করা মহিলার একটি প্রকৃতিগত স্বভাব। আর এই প্রকৃতিগত লজ্জাশীলতা ও গোপনীয়তায়ই রয়েছে মহিলার প্রকৃত সৌন্দর্য। আর সে সৌন্দর্য দেখার অধিকারী হল একমাত্র স্বামী।

লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার ব্যাপারে পুরুষের মতই মহিলারও বিধান রয়েছে। অবশ্য পুরুষের চেয়ে মহিলাই এ বিষয়ে অধিক তৎপর।

প্রকাশ থাকে যে, গুপ্তাঙ্গের লোম আদি (বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে) পরিষ্কার করতে কোন মহিলার কাছেও লজ্জাস্থান খোলা বৈধ নয়। (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ১৩পৃঃ, ইলা রাববাতিল খুদূর ১০৩পৃঃ)।

মহিলাদের জন্য খতনার বিধান আছে ইসলামে। তবে পুরুষের মত জরুরী হিসাবে নয়। মুস্তাহাব হিসাবে তা কেউ চাইলে করতে পারে। কথিত আছে যে, সর্বপ্রথম বিবি হাজার (হাজেরা) খতনা করেছিলেন। (আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ ১/১৫৪)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

এই পাঠে একজন নারীর সাজ সজ্জা বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো নিজে অধ্যয়ন করুন এবং পরিবারের সদস্যদেরকে অধ্যয়ন করতে বাধ্য করুন। বিবাহিত নারীগণ যতো প্রকার সাজ সজ্জা আছে সবই শুধু মাত্র তার স্বামীর জন্যে। পরপরুষের সামনে সাজ সজ্জা করে নিজেকে উপস্থান করা সম্পূর্ণ হারাম। আর অবিবাহিত নারীগণ সাজ সজ্জা করে কখনই বাহিরে বের হবে না। সাজলেও তা যেনো বোরখার মধ্যে লুকায়িত থাকে। কোনোক্রমেই মাহরাম তথা যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ তাদের সামনে খোলা মেলা অবস্থায় যাওয়া যাবে না। ইসলামের এসব বিধান আপনার পরিবারের সদস্যগণ মেনে চলছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা আপনি অভিভাবক হিসেবে একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। বার বার নিষেধ সত্বেও যারা মানছে না তাদেরকে ইসলামি অনুশাসনের আওতায় আনতে হবে।

জিন্স প্যান্ট বা টাইট প্যান্ট/শর্ট জামা বনাম উলঙ্গ ড্রেস পরিধান করে বাহিরে বের হওয়াঃ

দিন যতোই যাচ্ছে ততোই আধুনিকতার ছোঁয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির মুসলিম নারী পর্দা ছিড়ে বাহিরে বের হয়ে আসছে। নারীকে পর্দা থেকে বাহিরে বের করে আনতে আমাদের সমাজে অনেক ধরনের নারীবাদী সংগঠন আছে। তারা বিভিন্ন সময় সভা, সেমিনার, মিটিং, মিছিল, অবস্থান ধর্মঘটসহ টিভি টকশো করে যাচ্ছে এবং মুসলিম নারীদের বুঝাচ্ছে যে, এই যুগে ইসলামি পর্দার বিধান আর চলে না। এসব নাকি সেকালে ছিলো। পর্দাকে নিয়ে তারা হরহামেশোই কটাক্ষ করে যাচ্ছে। এদের সাথে তাল মিলিয়ে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এক শ্রেণির নারী পর্দার বিধান ছেড়ে তারা আজকাল জিন্স প্যান্ট বা টাইট প্যান্ট বা শর্ট জামা পরিধান করে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। এইসব টাইট জামা কাপড় আবার অনেকে এমন পাতলা জামা পরিধান করে যা বাহিরে থেকে সেই নারীর দেহকে অনায়াসে পরিমাপ করা যায়। আসলে এরুপ হয়ে বাহিরে চলাফেরার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের দেহকে অন্যের সামনে তুলে ধরা যাতে সকল পুরুষ এদের দিকে তাকায় আর এটাই হচ্ছে এদের ক্রেডিট। আগে এক সময় শুধু বড় লোক বা শহরাঞ্চলের মেয়েদের এরুপ পোশাক পরিহিত অবস্থায় চলাফেরা করতে দেখা যেতো। এখন এদের দেখাদেখি ও টিভি চ্যানেলের নায়িকাদের দেখে সর্বত্রই এমন পোশাকের নারীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। অনেক মেয়ে হিজাব পড়ে আবার সাথে টাইট প্যান্ট ও টাইট জামাও পড়ে। এগুলো আসলেই ফ্যাশান।

যেসব নারী এমনিভাবে এই দুনিয়ায় চলাফেরা করছে এদের জন্যে আছে ভয়ানক শাস্তি।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে) : (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, রিয়াদুস সলেহীন ১৬৪১, আহমাদ ৮৪৫১, ৯৩৩৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীসে كَاسِيَاتعَارِيَات এর ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, তারা আল্লাহর নেয়ামতের লেবাস পরে থাকবে, কিন্তু তাঁর শুকর আদায় থেকে নগ্ন বা শূন্য হবে। অথবা তারা এমন পোশাক পরবে, যাতে তারা তাদের দেহের কিছু অংশ ঢাকবে এবং সৌন্দর্য ইত্যাদি প্রকাশের জন্য কিছু অংশ বের ক’রে রাখবে। অথবা তারা এমন পাতলা পোশাক পরিধান করবে, যাতে তাদের ভিতরের চামড়ার রঙ বুঝা যাবে।হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

মহিলাদের টি শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরিধানের বিধান

হাদিসে পুরুষদের জন্য নারীদের এবং নারীদের জন্য পুরুষদের বেশ-ভূষা অবলম্বন করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা কবিরা গুনাহ।

সুতরাং যে কোন অবস্থায় নর-নারীর জন্য বিপরীত লিঙ্গের পোশাক-আশাক, জুতা ইত্যাদি পরিধান করা হারাম। এমনকি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সামনেও তা করতে পারবে না।

অত:পর কথা হল, কোন মহিলা যদি মহিলাদের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে তৈরিকৃত জিন্সের প্যান্ট বা টিশার্ট পরিধান করে আর তা বোরকা বা জিলবাব দ্বারা পরিপূর্ণভাবে ঢাকা থাকে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা এতে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য থাকছে না। তাছাড়া সে তা বোরকার নিচে পরিধান করেছে। বরং এতে দ্বিগুণ পর্দা হল। উপরে বোরকা তার নিচে অন্য পোশাক।

অনুরূপভাবে একজন মহিলা তার স্বামীর সামনে মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত টি শার্ট, জিন্সের প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করতে পারে। শরীয়তে এতে কোনো বাধা নেই। তবে সর্বাবস্থায় বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

আর মহিলারা মহিলাদের মহলে অথবা মাহরাম পুরুষদের সামনেও ঢিলেঢালা ও শালীন পোশাক পরিধান করবে। এমন পাতলা বা টাইট পোশাক পরিধান করবে না যাতে তার শরীরের বিশেষ অঙ্গগুলো দৃশ্যমান হয় বা বা ফুটে উঠে।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

ওহে অভিভাবক আপনার মেয়ে আপনার সামনে দিয়ে জিন্সের প্যান্ট, জিন্সের শার্ট বা পাতলা পোশাক পড়ে বাহিরে যাচ্ছে আপনি বাঁধা দিলেন না। আপনি কি জানেন? এই মেয়েটি কতো ছেলেকে যিনা/ব্যভিচারর গুনাহ করাবে। আপনি ভাই মেয়েকে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে ঘরের কোণায় বা মসজিদের কোণায় যতোই হাতে তাশবিহ জপেন বা ইবাদতই করেন না কেনো, কোনো ইবাদত বা আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে না। কারন আপনি দাউস বলে পরিগণিত। তাই নিজেকে বাঁচতে ও পরিবারকে বাঁচাতে এমন পোশাক পরিধান করে নিজেরে মেয়েকে, স্ত্রীকে, ছেলের স্ত্রীকে কিংবা নাতনী ও ভাতিজিদেরকে বাহিরে যেতে কেঠোরভাবে নিষেধ করবেন। সকলকে ইসলামি বিধান মোতাবেক পর্দার বিধান মানতে বাধ্য করবেন। তবেই এই অংশে নাজাত পাবেন।

বোরখার নামে টাইট ফ্যাশন ড্রেস পরিধান করে বাহিরে বের হওয়া

কেমন হবে মুমিন নারীর পোশাক?

পোশাক আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে পোশাকের মাধ্যমে সম্মানিত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে পোশাককে তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানব সন্তান, আমি তোমাদের পোশাক দান করেছি, যেন তোমরা তোমাদের আব্রু ঢাকতে পারো এবং তা (তোমাদের জন্য) সৌন্দর্য। আর খোদাভীতির পোশাকই উত্তম। এটা (পোশাক) আল্লাহর নিদর্শন, যদি তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬)।

তাফসিরবিদগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ এই আয়াতে পোশাককে যেমন তাঁর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তেমনি মুমিন নারী ও পুরুষের পোশাক কেমন হবে সে নির্দেশনাও দিয়েছেন। তা হলো, তাদের পোশাক হবে শালীন ও সুন্দর। তাদের পোশাকে আল্লাহর ভয় প্রকাশ পাবে। ‘খোদাভীতির পোশাক’-এর ব্যাখ্যায় তাঁরা এমন পোশাকের কথা বলেন, যাতে শালীনতা, বিনয়, সংযম, পরকালমুখিতা প্রকাশ পায় এবং যা কোনোভাবেই অপব্যয়, অপচয়, অহংকার ও লজ্জাহীনতার পরিচায়ক হবে না।

শালীন ও সুন্দর পোশাকের ক্ষেত্রে আল্লাহ নারী ও পুরুষে কোনো তারতম্য করেননি; বরং উভয়কে তা মান্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা লজ্জা ও শালীনতার এই সীমা অমান্য করবে, আল্লাহ তাদের শয়তানের প্ররোচনার শিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পরের আয়াতেই আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘হে মানব সন্তান, শয়তান যেন তোমাদের প্রলুব্ধ না করে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম ও হাওয়া আ.) করেছিল। তাঁদের বিবস্ত্র করেছিল যেন পরস্পরের সামনে তাঁদের লজ্জাস্থান প্রকাশ পায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৭)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস থেকেও পোশাকের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়, যাতে পোশাককে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার উদ্দেশ্য লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্য গ্রহণ বলা হয়েছে। উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নতুন পোশাক বানায়, তা তৈরি হওয়ার পর তা পরিধান করে, তখন সে বলবে, সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এমন পোশাক দান করেছেন, যার মাধ্যমে আমি লজ্জাস্থান আবৃত করতে পারি এবং জীবনে সৌন্দর্য গ্রহণ করতে পারি।’ (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৫৭, তিরমিযী ৩৫৬০, মিশকাত ৪৩৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১০০, যইফাহ ৪৬৪৯, যইফ আল-জামি ৫৮২৭।)।  হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

মৌলিকভাবে নারী ও পুরুষ উভয়কে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষাকারী পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দিলেও পোশাকের ক্ষেত্রে উভয়কে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যেন নারী ও পুরুষ দুজনই আপন সীমানায় থেকে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে ও প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে চলে আসা মানব আচরণ থেকেও এটা স্পষ্ট যে নারী ও পুরুষের ‘আব্রু’র ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের তুলনায় নারী অনেক বেশি মোহনীয় ও কমনীয়। তাই পুরুষের তুলনায় নারীর ‘আব্রু’ রক্ষায় ইসলাম বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে। নারীর প্রতি ইসলামের মমত্ব ও দায়বোধ থেকেই ইসলাম নারীকে পোশাকে বেশি সংযত হওয়ার আদেশ দিয়েছে। যেন পৃথিবীতে তার পথচলা মসৃণ হয়, সে নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে, পুরুষের লালসার শিকার না হয়। চিন্তাশীল আলেমরা মনে করেন, বর্তমান সমাজে ক্রমবর্ধমান নারী নিগ্রহের ঘটনা ইসলামের পোশাকনীতিকে যৌক্তিক ও অপরিহার্য প্রমাণ করে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামবেত্তাগণ মুমিন নারীর পোশাকের যে বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো—

(১) শরীর ও সৌন্দর্যকে আড়াল করবে : মুমিন নারীর পোশাকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তা তার শরীর ও সৌন্দর্যকে আড়াল করবে। যেন তা পুরুষের কামুক দৃষ্টির শিকার না হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না, তবে যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)।

(২) খুব বেশি পাতলা বা মোটা হবে না : মুমিন নারী এমন পাতলা পোশাক পরিধান করবে না, যা পরিধানের পরও শরীর দেখা যায়। আব্রু প্রকাশ পায়। আবার এমন মোটা পোশাক পরিধান করবে না, যাতে গরমে তার কষ্ট হয়; বরং অস্বচ্ছ মধ্যম পোশাক পরিধান করবে। একাধিক হাদিসে অতিরিক্ত পাতলা পোশাক পরিধানকে কেয়ামতের নিদর্শন বলা হয়েছে।

(৩) ঢিলেঢালা হবে : ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছে। শরীরের অবয়ব প্রকাশ পায়—এমন আঁটসাঁট পোশাক মুমিন পুরুষও পরিধান করবে না। আর নারী তো নয়ই। কেননা এমন পোশাক অন্যকে প্রলুব্ধ করতে পারে। অনেক সময় তা বোরকা, হিজাব ও পর্দার উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করে।

(৪) পুরো শরীর ঢেকে রাখবে : ইসলাম নারীকে এমন পোশাক পরিধান করতে বলেছে, যা তার পুরো শরীরকে ঢেকে রাখবে। শরীর বের হয়ে থাকে—এমন পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীদের বলে দিন, যেন তাদের চাদর নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে এবং তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)।

আলোচ্য আয়াতে ইসলাম নারীকে যে শালীন ও সংযত পোশাক পরিধান করতে বলেছে, তার কারণ বিবৃত হয়েছে। তা হলো, পুরুষের কামুক দৃষ্টি, অশালীন মন্তব্য ও যৌন সহিংসতা থেকে নারীকে রক্ষা করা।

(৫) পুরুষের পোশাকের মতো হবে না : ইসলাম নারীকে নারীসুলভ এবং পুরুষকে পুরুষসুলভ পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছে। শরিয়তের বিধানমতে, নারী যেমন পুরুষের পোশাক পরিধান করবে না, তেমন পুরুষও নারীর মতো পোশাক পরিধান করবে না। উভয় পোশাক ও সাজসজ্জা হবে ভিন্ন ভিন্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিন নারী-পুরুষকে সতর্ক করেছেন।

(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর লা‘নাত সে পুরুষদের ওপর যারা নারী সাদৃশ্য ধারণ করে এবং সে সকল নারীদের ওপর যারা পুরুষ সাদৃশ্য ধারণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪২৯,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৫, সহীহুল জামি ৫১০০, আল জামি‘উস্ সগীর ৯২৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৬৪৯৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৪৮১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ১৪৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ এবং পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারিণী নারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেনঃ তাদেরকে তোমাদের ঘর হতে বের করে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪২৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৮৬, দারিমী ২৬৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ৪৯২৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০২, ইরওয়া ১৭৯৭, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৩১৫, মুসনাদে আহমাদ ১৯৮২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৪৫৯০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১৫৮০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৪৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পুরুষের ওপর লা‘নাত করেছেন যে নারীর পোশাক পরিধান করে এবং এমন নারীর ওপর যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯০৩, সহীহুল জামি‘উস্ সগীর ৫০৯৫, আহমাদ ৮৩০৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫১, শু‘আবুল ইমান ৭৮০২, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯২৫৩, মুসতাদরাক ইবনু হাকিম ৭৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের পোশাকগুলোই মূলত নারীর জন্য আল্লাহভীতির পোশাক। ইসলাম মুমিন নারীকে এমন পোশাক পরিধানেরই নির্দেশ দেয়।

দেবর/দুলাভাইসহ অনুরুপ পুরুষদের সাথে ঘনিষ্ঠতা ও তাদের সাথে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া

শ্যালিকা নেই যার পোড়া কপাল তার। এই প্রবাদ বাক্যটি এজন্যেই এসেছে যে, আমাদের সমাজে কতিপয় অভিভাবক বড় মেয়েরে সাথে জামাইকে ছোট মেয়েকেও উপপত্নী হিসেবে উপহার দিয়ে থাকে। তাদের সামনে দিয়েই দুলাভাই শ্যালিকার হাত ধরে রিকশা বা মোটর সাইকেল যোগে সিনেমা হল থেকে গোপনীয় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ অভিভাবক কিছুই বলছে না। শুধূ দুলাভাই না একই বাড়িতে বসবাসরাত চাচাতো ভাই/জেঠাতো ভাই কিংবা খালাতো ভাই/মামাতো ভাইসহ বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বা আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে অথচ ডিজিটাল পিতা-মাতা মেয়েকে কিছুই বলছে না। আর সেই মেয়েটি যখন ঘরে ফিরে তখন দেখা যায় তার নাজেহাল অবস্থা। এসব দৃশ্য আমাদের চোখের সামনেই অহরহ ঘটছে। আবার ভাবীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় অতি আদরের দেবরের মাধ্যমে। বড় ভাই বিয়ে করে প্রথমে নিজ বাড়িতেই থাকে। অনেকে পৃথক হয়ে অন্যত্র বাড়ি করে আবার বেশীর ভাগ একান্নবতী। তথা একই হাড়িতে সকলে খায়। ভাই ভাবিকে নিয়ে একত্রে থাক বা না থাক ছোট ভাইকে তো পৃথক করতে পারে না। সে কিন্তু অনায়াসে ভাবির সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক ঠিকই রাখে। অনেক ভাই বিয়ে করে বিদেশ চলে যায় বা দেশের মধ্যেই অন্য কোথাও চাকরি করে। সেক্ষেত্রে বড় ভাই এর সংসার দেখা শোনার দায়িত্ব পালন  করে থাকে এই ছোট ভাই। দেবরের সাথে ভাবির অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠার এটা একটা মহাসুযোগ। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে আমরা এইসব দৃশ্য দেখে আসছি। আর হ্যাঁ আপনার পরিবারেও আছে। এখানে একটা লক্ষণীয় বিষয় যে, এইসব পরিবারে বা এইসব ক্ষেত্রে পর্দার বিধান নেই বললেই চলে। অনেকে বাহিরে বের হতে হিজাব বা বোরখা পরিধান করলেও ঘরে ফিরে সবই এক। অথচ দেবর ও দুলাইভাইকে রাসুল সাঃ মৃত্য সমতুল্য বলেছেন। কিন্তু আমরা তা মানি না।

(ক) উক্বা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে) জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন, ‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ)  ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫৩৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৩৭, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

(গ)  বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের পক্ষে মুজাহিদদের স্ত্রীদের মর্যাদা তাদের নিজেদের মায়ের মর্যাদার মত। স্বগৃহে অবস্থানকারী লোকদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদ ব্যক্তির পরিবারের প্রতিনিধিত্ব (দেখা-শুনা) করে, অতঃপর তাদের ব্যাপারে সে তার খেয়ানত ক’রে বসে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে মুজাহিদের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে এবং সে তার নেকীসমূহ থেকে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছামত নেকী নিয়ে নেবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে বললেন, ‘‘তোমাদের ধারণা কী? (সে কি তখন তার কাছ থেকে নেকী নিতে ছাড়বে?]’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৪৯৬, নাসায়ী ৩১৮৯, ৩১৯০, ৩১৯১, আহমাদ ২২৪৬৮, ২২৪৯৫), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৪৭৫৬) । হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

নারীর হাত স্পর্শ করা/হ্যান্ড শেক করা/করমর্দন করা হারাম

আজকের সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অবারিতভাবে চলছে। ফলে অনেক নারী-পুরুষই নিজেকে আধুনিক হিসাবে যাহির করার জন্য শরী‘আতের সীমালংঘন করে পরস্পরে মুসাফাহা করছে। তাদের ভাষায় এটা হ্যান্ডশেক বা করমর্দন। আল্লাহর নিষেধকে থোড়াই কেয়ার করে বিকৃত রূচি ও নগ্ন সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে তারা এ কাজ করছে এবং নিজেদেরকে প্রগতিবাদী বলে যাহির করছে। আপনি তাদেরকে যতই বুঝান না কেন বা দলীল-প্রমাণ যতই দেখান না কেন তারা তা কখনই মানবে না। উল্টো আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল, সন্দেহবাদী, মোহাচ্ছন্ন, আত্মীয়তাছিন্নকারী ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করবে।

চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন, ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুসাফাহা করা তো এসব লোকদের নিকট পানি পানের চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেওয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য হালাল নয়”। (ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২২৬)।

নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। করতল চেপে ধরা এবং সুড়সুড়ি দেওয়াও হলো তার ইঙ্গিত! কোনো গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো মানুষের হাত, পা ও চোখের ব্যভিচার।

 ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) যা বলেছেন ‘লামাম (আকর্ষণীয় বড় গুনাহ) বিষয়ে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোন বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন, নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দু’চোখের ব্যভিচার দেখা, যবানের ব্যভিচার, পরস্পর কথোপকথনের ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী: ২২৬)।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন,

“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৩; সহীহুল হাদীস, হাদীস নং ২৫০৯)।

তিনি আরও বলেছেন,

“আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না”। (ত্বাবরাণী; কাবীর, ২৪/৩৪২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৭০৫৪)।

আবূ তাহির আহমাদ ইবনু 'আমর ইবনু সারহ (রহঃ)....নবী সহধর্মিণী আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন মহিলাগণ যখন হিজরাত করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (মদীনায়) আসতেন তখন আল্লাহ তা'আলার বাণী অনুযায়ী পরীক্ষা করা হতো। (সে বাণী হচ্ছে) "হে নবী। যখন মুমিন মহিলাগণ আপনার কাছে এ মর্মে বাই’আত হতে আসে যে তারা আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না.." (সূরাহ মুমতাহিনাহ্ ৬০: ১২) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।

আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, মু'মিন মহিলাদের যে কেউ এসব অঙ্গীকারাবদ্ধ হতো এতেই তারা বাই’আতের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হতো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যখন তারা মৌখিকভাবে এসব অঙ্গীকার করতো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলতেন, তোমরা চলে যাও, তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাতকে স্পর্শ করেনি। তবে তিনি মৌখিকভাবে বাই’আত গ্রহণ করতেন।

আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম আল্লাহর নির্দেশিত পথ ছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিন মহিলাদের ওয়াদা গ্রহণ করেননি এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তাদের ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পরই তিনি মৌখিকভাবে বলে দিতেন, তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২৮-৪৭২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৮১, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং আধুনিক সাজতে গিয়ে যারা নিজেদের বন্ধুদের সাথে মুসাফাহা না করলে স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার হুমকি দেয় তারা যেন হুঁশিয়ার হয়। জানা আবশ্যক যে, মুসাফাহা কোনো আবরণের সাহায্যে হোক বা আবরণ ছাড়া হোক উভয় অবস্থাতেই হারাম।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

দেবর-ভাবি, শ্যালিকা-দুলাভাই, চাচাতো, খালাতো, মামাতো ভাই বোন, বন্ধূ বান্ধব ও অন্যান্য পরপরুষের সামনে ১০০% পর্দার বিধান কার্যকর করতে হবে। যেখানে নারীর হাত স্পর্শ করা ইসলামে নিষেধ সেখানে কি করে আপনার মেয়ে বা ছেলে একই বিছানায়, একই সাথে উঠা বসা, সিনেমা দেখতে যাওয়া, একই রিকশায় ওঠা, মাহরাম ছেলেদের সাথে পাশাপাশি বসে গল্প গুজব করা কিংবা গলায় গলায় পিড়িত কিভাবে করে? আপনার সন্তানকে দূরে কোথাও পড়তে দিয়েছেন। তারা হোস্টেলে থাকে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতর ও বাহিরে বা আশে পাশে জোড়ায় জোড়ায় যাদেরকে দেখছি তারা কার সন্তান? নিশ্চয় আমার, আপনার, আমাদের। এইসব সন্তান যখন কাছে থাকে তখন এরা ফেরেশ্তাভাব দেখায়। চোখের আড়াল হলেই আবার কপোতের সাথে মিলিত হয়। সন্তানকে এইসব অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখতে চাইলে ছোট বেলা থেকেই ইসলামি শিক্ষা দিন। কুরআন ও হাদিস শিক্ষা দিন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। পবিত্র থাকার গুরুত্ব শিক্ষা দিন। দেখবেন তার সতীত্ব সে নিজেই রক্ষা করে চলবে।

যার স্বামী বিদেশ থাকে তার নিকট গমন নিষিদ্ধ

ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোনো এমন মহিলার নিকট কোনো গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে সাধারণত: যৌন ক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেজগার হোক, তবুও না। এ বিষয়ে নীতি-বিজ্ঞানী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তা'আলা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেনো কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ অপর (মাহরাম নয় তথা বিবাহ বৈধ এমন) নারীর সাথে নিঃসঙ্গে দেখা হলেই শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, ২১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

এ বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে অভিভাবকের মূল দায়িত্ব হবে। কানেকশন বিচ্ছিন্ন রাখা। তবে কখনো মাহরাম পুরুষ প্রবাসী স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাইলে ১০০% পর্দার বিধান মেনে ও আরো এক-দুই জন লোক সাথে নিয়ে দেখা করবে। নির্জনে কেউ দেখা করতে পারবে না। স্বামীর উচিত হবে বেশী দিন বিদেশ না থাকা। দেখা যায় অনেক স্বামী সেই যে বিদেশ গেছে তার আর খোঁজ নেই। সেক্ষেত্রে স্ত্রী ইচ্ছে করলে খোলা তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে পারবে। অভিভাবককে সামগ্রীক বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে।

কোনো নারী কোনো পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না

নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়।

উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ অপর (মাহরাম নয় তথা বিবাহ বৈধ এমন) নারীর সাথে নিঃসঙ্গে দেখা হলেই শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, ২১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।”

উক্বা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে) জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন, ‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অতএব দেবরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।

তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে নির্জনে গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা মুরিদের একান্তে বয়াত ও তা‘লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।

বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।

তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের নির্জন বাস, কোনো হিজরে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোনো একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোনো সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না পাওয়া গেলে কোনো মহিলার জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে। প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।

ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মেলা-মেশা, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে, বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে অবাধ মেলা-মেশা করা অবৈধ।

মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?

পরপুরুষদের সামনে কোমল কন্ঠে কথা বলা

আল্লাহ বলেন, হে নবী পত্নীগন ! (উদ্দেশ্য উম্মতের সকল মহিলা) তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের সাথে এমন কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে কু-বাসনা করবে । আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলন। (সূরা আহযাব, আয়াত ৩২)।

উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত । আয়াতে فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি পরপরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কন্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও লাজুকতা কৃত্রিমভাবে পরিহার করবে । অর্থাৎ, এমন কোমলতা বা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন সুযোগ দিবে না ।

যেমন এর পরে এরশাদ হয়েছে ,অর্থাৎ এরুপ কোমল কন্ঠে বাক্যালাপ করো না, যা ব্যধিগ্রস্থ অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষন সৃষ্টি করে ।

মোদ্দাকথা, নারীদেরকে পরপুরুষের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে পর্দার এমন উন্নত স্তর অর্জন করা উচিত, যাতে কোন অপরিচিত দূর্বল ঈমান বিশিষ্ট লোকের অন্তরে কোন কামনা ও লালসা সৃষ্টি করা তো দূরের কথা, তার নিকটেও ঘেষবা না । বরং তার বিরুদ্ধে অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । (মা’আরিফুল কোরআন-৭/১৩২)।

স্বর্ণযুগের সোনার মানুষ পুন্যাত্মা নবী-পত্নীগনকে যদি স্বর্ণযুগের স্বর্ণমানব সাহাবায়ে কেরামের সাথে পর্দার আড়াল করা সত্ত্বেও কথা বলার ক্ষেত্রে এমন কড়া নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে যে, তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে । তাহলে আধুনিক যুগের নারী-পুরুষদের কি পর্দার প্রয়োজন নেই ? অথবা পর্দার প্রয়োজন থাকলেও তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন রাখার প্রয়োজন নেই ? অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষনের পর সে প্রয়োজন আরো তীব্রভাবে অনুভূত হয় ।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

দুষ্ট প্রকৃতির মেয়েরা বিভিন্ন মাধ্যমে পুরুষকে উত্তেজিত করে তোলে। যেমনঃ

(ক)  শর্ট, টাইট বা পাতলা কাপড় পরিধান করে চলা ফেরা করা।

(খ) সুগন্ধি ব্যবহার ও অতিরিক্ত সাজ সজ্জা করা।

(গ) চোখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করা।

(ঘ) লাল ঠোটে মুচকি হাসি দেয়া।

(ঙ) বিভিন্ন ভঙ্গিমায় হেলে দুলে হাঁটা। ও

(চ) নরম, সুরেলা বা কোমল কন্ঠে কথা বলা।

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন কোম্পানির কল সেন্টার বা কাস্টোমার কেয়ার থেকে সুরেলা বা নরম কন্ঠে কোনো নারী ফোনে কথা বলে। এছাড়া রিংটোন থেকে বিজ্ঞাপনের ভাষ্যকার বা অভিনয়ে নারীদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধু মাত্র পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্যে। এখানে কোম্পানিগুলো পরপুরুষকে নাম দিয়েছে কাস্টোমার। যাই হোক এইসব কাজে নিয়োজিত নারীরা সে কার সন্তান? আপনি কি কখনো দেখেছেন একটি ইসলামি আদর্শে গড়া কোনো পরিবারের মেয়েকে এইসব কাজে নিয়োজিত হতে? উলঙ্গ বেহায়পনা নারীর পিতা মাতাও উলঙ্গপনা। আর এটাই স্বাভাবিক। আবার দেখবেন সেইসব পিতা মাতা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও আদায় করে। আপনি কি চান এমন মেয়ের অভিভাবক কিয়ামতে দাইউস নামে অভিহিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে।

মহিলাদের মুখের দিকে তাকানো

একদম কট্টরপন্থী ইসলামি আদর্শে গড়া মুসলমান ব্যতীত এমন কোনো নারী পুরুষ দেখা যায় না যে, একে অপরের দিকে না তাকায়। দুষ্ট প্রকৃতির পুরুষ বা ছেলেরা, মেয়েদের সাধারনত তিনটি অঙ্গের দিকে তাকায়। প্রথমত মুখের দিকে তাকায়, দ্বিতীয়ত বুকের দিকে এবং সামনে থেকে পিছনে যাওয়ার পর হিপ এর দিকে তাকায়। এই তিনটি অঙ্গের দিকে তাকিয়ে পুরুষ মেয়েটির পুরো দেহটা মনের মধ্যে অংকন করে স্বপ্নে ভাসতে থাকে। খোলা মেলা ড্রেসের নারী বা শর্ট, টাইট কিংবা পাতলা কাপড় পরিহিত নারী হলে তার প্রতিচ্ছবি দ্রুত মনের মধ্যে অংকিত হয়। আর পর্দানশীলা নারী হলে এইসব অঙ্গ দেখতেও পায় না আর মনের মধ্যে প্রতিচ্ছবিও আনতে পারে না। দুষ্ট প্রকৃতির একজন নারী ইচ্ছে করলে একই রাতে হাজার হাজার যুবকের স্বপ্ন দোষ ঘটাতে পারে। আর পুরুষের মনে একজন নারীর প্রতিচ্ছতি একবার গেঁথে গেলে তার স্মৃতি ভ্রম হতে কয়েক যুগ লেগে যায়। এজন্যেই ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কেই পর্দা করতে হুকুম দিয়েছে।

(ক)  আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৬৫, ৬২২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার আব্বা আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (গৃহের সম্মুখের উন্মুক্ত) উঠানে বসে গল্প-গুজব করতেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং আমাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন, রাস্তা-ঘাটে বসে বৈঠকে করা তোমাদের কি আচরণ? রাস্তাঘাটে মাজলিস করা তোমরা ছেড়ে দাও। আমরা বললাম, আমরা তো কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশে বসিনি। আমরা বসে শলা-পরামর্শ ও আলোচনা করছি। তিনি বললেন, যদি তা না করলেই নয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে- আর তা হলো চোখ নিচু রাখা, সালামের উত্তর দেয়া এবং ভাল কথা বলা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬২, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৪) (মুসলিম ২১৬১, আহমাদ ১৫৯৩২) রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩২। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)......জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আচমকা নজর পড়া ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেনো আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৬, আবূ সুনান দাউদ ২১৪৮, আহমাদ ১৮৬৭৯, ১৮৭১৫, ১৯১৬০, দারেমী ২৬৪৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭১, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৩। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, হে ‘আলী! (কোনো নারীর প্রতি) আকস্মিক একবার দৃষ্টিপাতের পর আবার দৃষ্টিপাত করো না। তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি (অনিচ্ছার কারণে) জায়িয, পরবর্তী দৃষ্টি জায়িয নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১০, তিরমিযী ২৭৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪৯, আহমাদ ২২৯৯১, সহীহ আল জামি ৭৯৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

নারী-পুরুষের ৮০% নোংরামী সৃষ্টি হয় একে অপরের দিকে তাকানোর মাধ্যমে। তাই ইসলাম নারীদের দিকে তাকানো নিষেধ করেছে। তবে আচমকা চোখের সামনে পড়লে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে হবে এবং নারীদের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া পাঠ করতে হবে।

চলাফেরার সময় পায়ের শব্দ হওয়া

ইসলাম নারীদের সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার্থে কথা বার্তা বলা ও চলা ফেরা করার খুব সুন্দর বিধান বলে দিয়েছে। আমরা মুসলমান হিসেবে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর দিক নির্দেশনা মেনে চলবো। পরপুরুষের সামনে যেমন কোমল কন্ঠে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে তেমনি নারী কিভাবে হাঁটবে বা চলাফেরা করবে তারও দিক নির্দশনা দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

নারীরা যেনো তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। (সূরা নূর : ৩১)।

অর্থাৎ নারীরা যেন সজোরে পদক্ষেপ না করে, যার দরুন অলঙ্কারাদির আওয়াজ ভেসে উঠে এবং তাদের বিশেষ সাজ-সজ্জা পুরুষদের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। (ফাতহুল কাদীর)।

মূলত উচ্চ স্বরে কথা বলা, অট্ট হাসি দেয়া, জোড়ে শব্দ করে হাঁটা, শর্ট জামা পড়া, জিন্সের প্যান্ট পড়া, হাই হিল পড়ে হাঁটা ইত্যাদি এগুলো হচ্ছে ইহুদি-নাসারাদের কৃষ্টি কালচার। বিজাতীদের অনুকরন-অনুসরন করা মুসলমানদের জন্যে নিষেধ।

রাসুল সাঃ বলেন,

“যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করে সে সেই জাতির দলভুক্ত”। (আহমদ, হাদিস: ৫১১৪)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

যেসব মেয়ে অট্ট হাসি দেয়, উচ্চ স্বরে কথা বলে এবং জোড়ে পা ফেলে শব্দ করে হাঁটে তাদেরকে নিষেধ করা এবং ইসলামের দিক নির্দেশাগুলো শিক্ষা দেয়া একজন অভিভাবক হিসেবে একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

অন্যের লজ্জা স্থানের দিকে দৃষ্টি দেয়া

 আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬৭৪, আহমাদ ১১২০৭) , রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

"কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নিচে ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না।" এর দ্বারা উদ্দেশ্য উভয়ের উলঙ্গ অবস্থায় যখন শরীরে কোন প্রকার কাপড় থাকবে না। (নবাবী)

অভিভাবকের করণীয়ঃ

এই হাদিসে বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। এগুলো নিজে যেমন মেনে চলবো তেমনি হাদিসের এই উপদেশ বাণীগুলো সন্তানকে শিক্ষা দিবো।

স্বামীর গল্প অন্য নারীর সামনে বলা

(ক) আবূ বাকর ইবনু আবূ শয়বাহ (রহঃ).....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযীঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩৪৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৭, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৬, বুলগুল মারাম-১০১৭, আহমাদ ১১২৫৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ করায়ব (রহিমাহুমাল্লাহ).....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষ বড় আমনাত খিয়ানাতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৮, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

অনেক নারী পুরুষ আছে যারা নিজেদের স্বামী স্ত্রীর গোপনীয় বিষয়গুলো গল্পেচ্ছলে বলে ফেলে। অনেকে এসব বলে মজাও পায়। কিন্তু ইসলামে এসব করা নিষেধ। তাই নিজে মেনে চলার পাশাপাশি পরিবারকে এসব বিষয় শিক্ষা দেয়া অভিভাবকের দায়িত্ব।

ভ্রু প্লাক করা

 ‘আবদুল্লাহ্ বিন মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা অন্যের দেহে আঁকে এবং যারা নিজেদের দেহে উল্কি অংকন করায়, যারা ভ্রূর চুল উপড়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে। আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকূব নাম্নী মহিলার কাছে এ হাদীস পৌঁছলে, তিনি ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এসে বলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি এমন এমন কথা বলেছেন।

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে কেন অভিসম্পাত করবো না যাদেরকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে উক্ত আছে! মহিলা বলেন, আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছি, কিন্তু কোথাও তো তা পাইনি। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি খেয়াল করে তা পড়লে, অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়োনি (অনুবাদ) ‘‘রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’’ (সূরা হাশরঃ ৭)? মহিলা বললেন, হ্যাঁ।

‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহিলা বলেন, আমার মনে হয় আপনার পরিবার (স্ত্রী) এরূপ করে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি গিয়ে লক্ষ্য করে দেখো। অতএব সে গিয়ে লক্ষ্য করলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পেলো না। শেষে সে বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা কথা ঠিক হলে সে আমাদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮৮৬, ৪৮৮৭, ৫৯৩১, ৫৯৩৯, ৫৯৪৩, ৫৯৪৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৫, তিরমিযী ২৭৮২, নাসায়ী ৩৪১৬, ৫০৯৯, ৫১০২, ৫১০৭, ৫১০৮, ৫১০৯, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৪, ৫২৫৫, আবূ দাউদ ৪১৬৯, আহমাদ ৩৮৭১, ৩৯৩৫, ৪০৭৯, ৪১১৮, ৪২১৮, ৪২৭১, ৪৩৩১, ৪৩৮৯, ৪৪২০, ২৬৪৭, গায়তুল মারাম ৯৩, দারেমী ২৬৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

সুগন্ধি ব্যবহার করা

আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করছে। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।

আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৬৫, আত্ তিরমিযী ২৭৮৬, আবূ দাঊদ ৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু হিব্বান ৪৪২৪)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার সালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে”। (মুসনাদে আহমদ ২/৪৪৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৭০৩)।

বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে, নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে, এমনকি রমযানের রাতে মসজিদে আসার সময় তথা সর্বত্র মহিলারা যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। অথচ শরী‘আত তো শুধু মহিলাদের জন্য সে আতরের অনুমোদন দিয়েছে যার রঙ হবে প্রকাশিত পক্ষান্তরে গন্ধ হবে অপ্রকাশিত। আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগণ্ড নর-নারীর কাজের জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেন।

পরচুলা ব্যবহার করা

(ক) আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ

এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মেয়ে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আর আমি তার বিয়েও দিয়েছি। এখন কি আমি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যার লাগানো হয় উভয় মহিলাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৫, ৫৯৩৬, ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, নাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮, ৩৬৩৯১, ২৬৪২০, ২৬৪৩৯,১৬৫০-রিয়াদুস সলেহীন)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

(খ) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ

উক্ত-রূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫৪৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৩, নাসায়ী ৫০৯৭, আহমাদ ২৪২৮২, ২৪৩২৯, ২৫৩৮১, ২৫৪৩৮, ২৫৫৯৭, ২৫৬৭৪, ১৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) হুমাইদ ইবনে আব্দুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি হজ্জ করার বছরে মুআবিয়া (রাঃ)-কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন---ঐ সময়ে তিনি জনৈক দেহরক্ষীর হাত থেকে এক গোছা চুল নিজ হাতে নিয়ে বললেন, ‘হে মদীনাবাসীগণ!তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ জিনিস (ব্যবহার) নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলতেন, ‘‘বানী ইস্রাঈল তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তাদের মহিলারা এই জিনিস ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছিল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬৮, ৩৪৮৮, ৫৯৩৩, ৫৯৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭, সুনান আত তিরমিযী  ২৭৮১, নাসায়ী ৫২৪৫, ৫২৪৬, সুনান আবূ দাউদ ৪১৬৭, আহমাদ ১৬৩৮৮, ১৬৪০১, ১৬৪২৩, ১৬৪৮২, ২৭৫৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৬৫,১৬৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরচুলা যে মহিলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উলকি উৎকীর্ণ করে ও যে উলকি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৪, সুনান আত তিরমিযী ১৭৫৯, ২৭৮৩, নাসায়ী ৩৪১৬, ১৫৯৫, ৫২৫১, সুনান আবূ দাউদ ৪১৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, আহমাদ ৪৭১০,১৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঙ) হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবূ যুবায়র (রহঃ).....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। যে মহিলা তার মাথায় কোন কিছু সংমিশ্রণ করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধমক দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯২, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পরচুলা সাধারণত যারা ব্যবহার করে তারা নায়িকা বা গায়িকা কিংবা শিল্পি জগতের সাথে যারা জড়িত তারাই মূলত এসব ব্যবহার করে বেশি। আরেক শ্রেণির নারী আছে যারা বিভিন্ন সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়ে বাহিরে ঘুরে বেড়ায়। আবার বিবাহের সময় পাত্রীকে আরো আকর্ষনীয় হতে পরচুলা ব্যবহার করে থাকে। তবে যে উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করা হোক না কেনো এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরপুরুষকে চুলের সৌন্দর্য  দিয়ে আকৃষ্ট করা। যেসব নারী অবাধ বিচরণে অভ্যস্ত তারা এসব ব্যবহার করতে পছন্দ করে। কোনো পর্দানশীলা নারী এসব ব্যবহার করে না।

ঝুনুর ঝুনুর শব্দ হয় এমন নুপুর/ঘুঙুর পরে চলাফেরা করা

নুপুর বা ঘুঙুর পায়ে দিয়ে সাধারনত গানের মঞ্চে নাচনেওয়ালীরা নেচে থাকে। যেসব নুপুর বা ঘুঙুর পায়ে দিয়ে হাঁটলে শব্দ হয় এমন জিনিস নারীদের পড়া ইসলামে নিষেধ।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই কাফেলার সঙ্গে (রহমতের) ফিরিশতা থাকেন না, যাতে কুকুর কিম্বা ঘুঙুর থাকে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১১৩, তিরমিযী ১৭০৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫৫৫, আহমাদ ৭৫১২, ৮০৩৬, ৮২৩৭, ৮৩২৩, ৮৭৭২, ৮৮৪৫, ৯০৯৮, ৯৪৪৫, ৯৮০৫, ১০৫৫৮, দারেমী ২৫৭৬, রিয়াদুস সলেহীন-১৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

উক্ত রাবী থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ঘণ্টা বা ঘুঙুর শয়তানের বাঁশি।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১১৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫৫৬, আহমাদ ৮৫৬৫, ৮৬৩৪, রিয়াদুস সলেহীন-১৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

শব্দ হয় এমন নুপুর বা ঘুঙুর পড়া যেহেতু ইসলামে নিষেধ তাই সন্তানকে কখনো এগুলো ক্রয় করে দেয়া যাবে না। সন্তানকে নাচ-গান শিক্ষা দেয়া হারাম। ভবিষ্যতে যাতে এসবের প্রতি আকৃষ্ট হতে না পারে সেজন্যে ইসলামি আদর্শ শিক্ষা দেয়া অভিভাবকের একান্ত দায়িত্ব।

চুলের স্টাইল করা

যুবক যুবতী এমনকি বয়স্ক নারী পুরুষরাও চুলের বিভিন্ন স্টাইল করে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে বাহিরে ঘুরতে বের হয়। দেশের বিভিন্ন আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে বিউটি পার্লার। পুরুষদের জন্যে রয়েছে নরসুন্দর। এসব  জায়গায় গিয়ে উচ্ছন্নে যাওয়া নারী পুরুষরা স্টাইল করে  চুল কেটে নেয়। অনেক অভিভাবককে দেখা যায়, ছোট বেলা থেকেই শিশুদের এমন স্টাইলে চুল কেটে নেয়। আমাদের সমাজে তারা কিন্তু মুসলমান। অথচ  স্টাইল করে চুল কাটা কিংবা স্টাইল করে চুল বেঁধে বাহিরে বের হওয়া ইসলামে নিষেধ। আর এই নিষেধ জিনিসটাই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে করে যাচ্ছি। আসুন জেনে নেই, ইসলাম কি বলে।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘কাযা’ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। রাবী ‘উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘কাযা’ কী? তখন ‘আবদুল্লাহ আমাদের ইঙ্গিতে দেখিয়ে বললেনঃ শিশুদের যখন চুল কামানো হয়, তখন এখানে ওখানে চুল রেখে দেয়। এ কথা বলার সময় ‘উবাইদুল্লাহ তাঁর কপাল ও মাথার দু’পাশে দেখালেন। ‘উবাইদুল্লাহকে আবার জিজ্ঞেস করা হলঃ বালক ও বালিকার জন্য কি একই নির্দেশ? তিনি বললেনঃ আমি জানি না। এভাবে তিনি বালকের কথা বলেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ বলেনঃ আমি এ কথা আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ পুরুষ শিশুর মাথার সামনের ও পিছনের দিকের চুল কামানো দূষণীয় নয়। আর (অন্য এক ব্যাখ্যা মতে) ‘কাযা’ বলা হয়- কপালের উপরে কিছু চুল রেখে বাকী মাথার কোথাও চুল না রাখা। তেমনিভাবে মাথার চুল একপাশ থেকে অথবা অপর পাশ থেকে কাটা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯২০, ৫৯২১,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২০, নাসায়ী ৫০৫০, ৫০৫১, ৫২২৮-৫২৩১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৯৩, ৪১৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৩৭, ৩৬৩৮, আহমাদ ৪৪৫৯, ৪৯৫৩, ৫১৫৩, ৫৩৩৩, ৫৫২৩, ৫৫২৫, ৫৫৮৩, ৫৮১২, ৬৪২৩, রিয়াদুস সলেহীন ১৬৪৬, আধুনিক প্রকাশনী ৫৪৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

চুলের স্টাইল করা যেহেতু ইসলামে নিষেধ তাই সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই অন্যের দেখাদেখি যাতে স্টাইল কাটিং বা চুলের স্টাইল করতে না পারে সেজন্যে সন্তানকে ইসলামের নিষেধাবলী শিক্ষা দেয়া আপনার ইমানি দায়িত্ব।

পুরুষদের পায়ের গিটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে ও রেশমের কাপড় পরিধান করা

(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে নিজের পোশাক মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! খেয়াল না করলে আমার লুঙ্গি ঢিলে হয়ে নেমে যায়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তাদের শ্রেণীভুক্ত নও, যারা তা অহংকারবশতঃ করে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, ৬০৬২,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৫, তিরমিযী ১৭৩০, ১৭৩১, নাসায়ী ৫৩২৭, ৫৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, সুনান আবূ দাউদ ৪০৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৬৯, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৬৬৯, ৪৭৫৯, ৪৮৬৯, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩০, ৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩১৮, ৫৩২৮, ৫৩৫৪, ৫৪১৬, ৫৪৩৭, ৫৫১০, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৬, ১৬৯৮,রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৭, আহমাদ ৮৭৭৮, ৮৯১০, ৯০৫০, ৯২৭০, ৯৫৪৫, ৯৮৫১, ১০১৬৩, ২৭২৫৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৮, রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮৭, নাসায়ী ৫৩৩০, ৫৩৩১ , আহমাদ ৭৪১৭, ৭৭৯৭, ৯০৬৪, ৯৬১৮, ১০১৭৭, রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ) আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন।’ আবূ যার্র বললেন, ‘তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯, ৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ ৪০৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঙ) আবূ জুরাই জাবের ইবনে সুলাইম থেকে বর্ণিতঃ আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যাঁর মতানুযায়ী লোকে কাজ করছে, তাঁর কথা তারা মেনে নিচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ লোকটি কে?’ লোকেরা বলল, ‘ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ আমি তাঁকে ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ’ দু’বার বললাম। তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। ‘আলাইকাস সালাম’ তো মৃতদের জন্য অভিবাদন বাণী। তুমি বলো ‘আসসালামু আলাইকা।’’

জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি সেই আল্লাহর রসূল, যাঁকে কোনো বিপদের সময় যদি ডাকো, তাহলে তিনি তোমার বিপদ দূর করে দেবেন। যদি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, তাহলে তিনি তোমার জন্য যমীন থেকে ফসল উৎপাদন করবেন। কোন গাছপালা বিহীন জনশূন্য মরুভূমিতে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যদি তাঁর নিকট দো‘আ কর, তাহলে তিনি তোমার বাহন তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন।’’

জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে বিশেষ উপদেশ দান করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কাউকে কখনো গালি-গালাজ করো না।’’ সুতরাং তারপর থেকে আমি না কোন স্বাধীন-পরাধীন ব্যক্তিকে, না কোন উট আর না কোন ছাগলকে গালি দিয়েছি।

(দ্বিতীয় উপদেশ হচ্ছে এই যে,) ‘‘কোন পুণ্যকর্মকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না। নিঃসন্দেহে সহাস্য বদনে কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বাক্যালাপ করা নেকীর কাজ। নিজ লুঙ্গি পায়ের অর্ধ রলা পর্যন্ত উঁচু রেখো। তা যদি মানতে না চাও, তাহলে গাঁট পর্যন্ত ঝুলাতে পার। লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে দূরে থেকো। কেননা, এতে অহংকার জন্মায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারকে পছন্দ করেন না। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় অথবা এমন দোষ ধরে তোমাকে লজ্জা দেয়, যা তোমার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানে, তাহলে তুমি তার এমন দোষ ধরে তাকে লজ্জা দিয়ো না, যা তার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানো। যেহেতু তার কুফল তার উপরই বর্তাবে (তোমার উপর নয়)।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭২১, আহমাদ ১৫৫২৫, রিয়াদুস সলেহীন-৮০০)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

(চ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের লুঙ্গি অর্ধ গোছা পর্যন্ত ঝুলানো উচিত। গাঁটের উপর পর্যন্ত ঝুললে ক্ষতি নেই। যে অংশ লুঙ্গি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলবে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলিয়ে লুঙ্গি পরবে, তার দিকে আল্লাহ (করুণার দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৭০, ৩৫৭৩, আহমাদ ১০৬২৭, ১০৬৪৫, ১০৮৬৩, ১১০০৪, ১১০৯৫, ১১৫১৫, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৯, রিয়াদুস সলেহীন-৮০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি স্বীয় লুঙ্গি (পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে সালাত আদায় করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ যাও, অযু করে আস। সে অযু করে এলে তিনি আবার বললেনঃ যাও, অযু করে আস। সে পুনরায় অযু করে আসল। একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তাকে (অযু থাকাবস্থায় পুনরায়) অযু করতে কেন বললেন? তিনি বললেন, সে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে সালাত আদায় করছিল। মহান আল্লাহ (পায়ের গিরার নিচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সালাত আদায়কারীর সালাত কবুল করেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৩৮, আহমাদ (৪/৬৭))। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(জ) মু‘আয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিনয়বশতঃ তা পরিহার করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা দেবেন, সে যেন ঈমানের (অর্থাৎ ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য থেকে যে কোন জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান করে।’’ (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৮১, আহমাদ ১৫২০৪, রিয়াদুস সলেহীন-৮০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

পুরুষদের পায়ের গিড়ার উপর এবং মহিলাদের আপদ মস্তক ঢেকে রাখা এটা ইসলামি বিধান।  আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল সাঃ এর হুকুম। তাই এই হুকুম যাতে পরিবারের সদস্যগণ অমান্য না করে সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

রেশমের কাপড় পরিধান

(ক) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (পুরুষরা) রেশমের কাপড় পরিধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমের কাপড় পরিধান করবে, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। (অর্থাৎ সে জান্নাত হতে বঞ্চিত হবে।)’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮২৮, ৫৮৩০, ৫৮৩২, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩০৩, ৫৩১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৯, ২০৭৩, নাসায়ী ৫৩১২, ৫৩১৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৮৮, আহমাদ ৯৩, ২৪৪, ৩০৩ , ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭, রিয়াদুস সলেহীন-৮০৮, গায়াতুল মারাম ৭৮, সহীহাহ ৩৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, একদা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেনঃ এ দু’টি জিনিস আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৫৭, নাসায়ী ৫১৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৯৫, রিয়াদুস সলেহীন-৮১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

রেশমের কাপড় পরিধান করা যেহেতু ইসলামে নিষেধ তাই এই জাতীয় পোশাক নিজের ও পরিবারের জন্যে ক্রয় না করা। ভবিষ্যতে সন্তানগণ যাতে ক্রয় না করে সেজন্যে হাদিসগুলো শিক্ষা দেয়া আপনার দায়িত্ব।

যিনা/ব্যভিচারের সাথে জড়িত

যিনা বা ব্যভিচারঃ যিনা বা ব্যভিচার বলতে বুঝায়, ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধন ছাড়া অবৈধ পন্থায় যৌন তৃপ্তি লাভ। ইসলামি শরীয়াতে অবৈধ পন্থায় যৌন সম্ভোগ সম্পূর্ণ হারাম এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ধর্ষণঃ ধর্ষণ হচ্ছে মেয়ের অনিচ্ছায় জোড় পূর্বক যৌন সঙ্গম। ধর্ষণ এক পুরুষ কর্তৃকও হতে পারে আবার একাধিক পুরুষ মিলেও গণধর্ষণ হতে পারে।

মানব রচিত আইনে যিনা বা ব্যভিচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। কারণ যিনা বা ব্যভিচারে মেয়ের সম্মতি থাকে। যেমন পরকিয়া প্রেম, পতিতা বৃত্তি বা লিভটুগেদার কিংবা মোবাইল প্রেম, বিভিন্ন পার্ক, আবাসিক হোটেলে সাময়িক তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা ইত্যাদি। এসব Sexual  কাজে উভয়ের সম্মতি থাকে এমনকি অন্যের বিবাহিত স্ত্রীও যদি অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হয় আর স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয় বলে আদালত রায় দিয়ে থাকে।

কিন্তু ইসলাম সম্মতিক্রমে হোক আর জোড়পূর্বক ধর্ষণ যাই হোক নারী-পুরুষ বিবাহ বহির্ভুত অবাধ মেলামেশা হলেই তার জন্যে শাস্তি নির্ধারিত। ইসলাম উভয়ের লজ্জা স্থানের অংশটুকুর যৌন তৃপ্তিকেই যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে না, মানব দেহের আরো ছয়টি অংশের যৌন তৃপ্তি লাভকেও যিনা বা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করে।

(ক) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য ব্যভিচারের অংশ লিখে দিয়েছেন; যা সে অবশ্যই পাবে। সুতরাং চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ) দর্শন। কর্ণদ্বয়ের ব্যভিচার (অবৈধ যৌনকথা) শ্রবণ, জিভের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ) কথন, হাতের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ) ধারণ এবং পায়ের ব্যভিচার (সকাম অবৈধ পথে) গমন। আর হৃদয় কামনা ও বাসনা করে এবং জননেন্দ্রিয় তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৪৩, ৬৬১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৬৬২, ৮১৫৬, ৮৩২১, ৮৩৩৪, ৮৩৯২, ৮৬২৬, ৯০৭৬, ৯২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যেনা ও গোপন প্রবৃত্তি”। (আত-তারগীব হা/৩৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী’। (আত-তারগীব হা/৩৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

যিনা/ব্যভিচারের বিধান

ইসলামের মূল লক্ষ্যসমুহের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য হল, মানুষের ইজ্জত-আবরু ও বংশের হেফাজত করা। যিনার মাধ্যমে ইসলামের এ মহান উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয় বিধায় ইসলামে এটি হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যে সব মানবিক অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এটি তন্মধ্যে গুরুতর ও অন্যতম। ব্যভিচার একটি মহাপাপ যা অনেকগুলো অপরাধের নায়ক। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:

(ক) “তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি অশ্লীল কাজ ও অসৎ পন্থা।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২)

তিনি অন্য স্থানে বলেন:

(খ) “কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনআম: ১৫১)

অশ্লীল কাজসমূহের মধ্যে যিনা বা ব্যভিচার সর্বাধিক অশ্লীল কাজ। ইসলাম পর্দার বিধান পালন, দৃষ্টি অবনতকরণ ও পরনারীর সাথে নির্জনে অবস্থান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যভিচারের পথ ও মাধ্যম রুদ্ধ করে দিয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেনো বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৫, ৫০৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬, বুলগুলমারাম, ৯৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৮১। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এমন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তবে তিন শ্রেণীর মানুষকে হত্যা করতে হয়। (১) এমন মানুষ যে বিবাহ করার পর যেনা করল। তাকে রজম করতে হবে। (২) এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে অবস্থান করল, তাকে হত্যা করা হবে, না হয় শূলী দেওয়া হবে, না হয় যমীন হতে নির্বাসন করা হবে। (৩) এমন ব্যক্তি যে কাউকে হত্যা করল, তাকে হত্যা করা হবে’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

যিনা/ব্যভিচার ৭টি জিনিস দিয়ে হয়

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।

কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। (ক) দুই চোখের যিনা তাকানো, (খ) কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, (গ) মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, (ঘ) হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর (ঙ) পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং (চ) মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (ছ) আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬২৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৭১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ক) মনঃ এখান থেকেই ব্যভিচারের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়।

(খ) চোখঃ চোখের ব্যভিচার সবচেয়ে বড় ব্যভিচার্। কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে পাপ হয়না কিন্তু ২য় বার তাকালে বা ১ম বার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে যিনা তথা ব্যভিচার হয়।

(গ) জিহ্বাঃ জিহ্বা দ্বারা ব্যভিচার হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে কথা বলে রক্ত ও স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া।

(ঘ) কানঃ এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন নর/নারীর কথা শুনা হয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলে সমাস্যা নেই।

(ঙ) হাতঃ এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন কোন বিবাহিত/ অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোন অংশ স্পর্শ বা ধরা হয়।

(চ) পাঃ এটা দিয়ে ব্যভিচার হয় যখন পায়ে হেটে কাঙ্খিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়।

(ছ) গুপ্ত অঙ্গঃ এটা দিয়েই শুধু ব্যভিচার হয় মানুষ তা ভাবলেও এটার স্থান সবার পরে। কেননা উপরে ৬টিকে দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাযত করা যাবে।

লজ্জাস্থানের হেফাজত জান্নাতের গ্যারান্টি

যারা অবৈধ যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থেকে নিজেদের লজ্জাস্থানকে অবৈধ ব্যবহার থেকে হেফাজত করে তাদের জন্য পরকালে জান্নাতের গ্যারান্টি রয়েছে। মহান আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের পরিচয় প্রদান করতে যেয়ে বলেন:

(ক) “আর তারা নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহকে সংযত রাখে, তাদের স্ত্রী ও তারা যাদের মালিক হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ছাড়া এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এ ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমা লংঘণকারী। এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী; আর যারা নিজেদের নামাযে যত্নবান থাকে। তারাই হবে উত্তরাধিকারী; উত্তরাধিকারী হবে ফেরদাউসের, যাতে তারা স্থায়ী হবে।” (সূরা আল-মুমিন: ৫-১১)

(খ) সাহ্ল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪, ৬৮০৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬, রিয়াদুস সলেহীন ১৫২১, আধুনিক প্রকাশনী ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০৩০, তা’লীকুর রাগীব (৩/১৯৭))। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান) এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪০৯,  সহীহাহ ৫১০, রিয়াদুস সলেহীন ১৫২৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

সন্তানের লজ্জা স্থানের হেফাজত রাখা বর্তমান সময়ে খুব কঠিন কাজ। একমাত্র ইসলামি শিক্ষা ছাড়া পৃথিবীর কোনো থিওরি লজ্জা স্থানের হেফাজতের গ্যারান্টি দিতে পারবে না। তাই সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা আপনার একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

পরকিয়া প্রেমে আসক্ত

আমাদের সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ, বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা।

ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি।

বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরণের সর্ম্পক কিংবা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?

এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।

এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(ক) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(খ) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(গ)  তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(ক) সে আল্লাহর অসন্তোষ,

(খ)  কঠিন হিসাব ও

(গ)  জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

পরকিয়া প্রেম একটি বড় ধরনের রোগ। দেখা যায়, স্বামীর অপারগতা ও উদাসীনতার জন্যে স্ত্রী পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ছে। আবার স্ত্রীর কারনেও স্বামী পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো পরিবারে স্বামী স্ত্রী উভয়েই পরকিয়া প্রেমে আসক্ত। আবার দেখা যায়, যে নারীর স্বামী বিদেশ থাকে সে নিজেকে প্রশমন করতে গোপনে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনা অনেক সময় ফাঁস হলে সংসার ভেঙ্গে যায়।

বর্তমান সমাজে ধর্ষনের চেয়েও সম্মতিক্রমের এই যিনা/ব্যভিচার বা পরকিয়া প্রেম ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। সম্মতিক্রমে যৌন লালসায় জড়িয়ে পড়লে আইনীগতভাবে সমর্থন থাকলেও ইসলাম এটা সমর্থন করে না। ইসলামি দন্ডবিধির মধ্যে এই ধরনের অপকর্ম জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই অভিভাবক তথা পিতা মাতা, স্বামী স্ত্রী ও বড় ভাইদের সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, তার পবিারের সদস্যগণ কোনোক্রমেই যেনো এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে না পারে।

গায়ক/গায়িকা, বিজ্ঞাপনের মডেল নায়ক-নায়িকা, সিনেমা/নাটকের নায়ক-নায়িকা বানানো

যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল রীতির প্রচলন করবে এবং পরবর্তীকালে সে অনুযায়ী আমল করা হয় তাহলে আমলকারীর সাওয়াবের সমপরিমাণ সাওয়াব তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হবে। এতে তাদের সাওয়াবের কোন রূপ ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন কুরীতির (মন্দ কাজের) প্রচলন করবে এবং তারপরে সে অনুযায়ী আমল করা হয় তাহলে ঐ আমলকারীর মন্দ ফলের সমপরিমাণ গুনাহ তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হবে। এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র হ্রাস হবে না। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৫৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মিডিয়া একটি ব্যাপক বিষয়। তাই আমভাবে মিডিয়াতে কাজ করাকে হারাম বলা যাবে না। যেসব কাজ করা হারাম, সেসব কাজ মিডিয়ায় করাও হারাম। যেসব কাজ এমনিতে জায়েজ সেসব কাজ মিডিয়াতে করাও জায়েজ।

বেগানা ছেলে মেয়েকে দেখা সাক্ষাৎ, অহেতুক কথা ইত্যাদি সবই হারাম কাজ। যা নাটক ও সিনেমা ইত্যাদিতে করা হয়। তাই এসব নাটক সিনেমা, মেয়ে নির্ভর বিজ্ঞাপন হারাম হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এমনিতে সংবাদ বা হারাম বিষয় ছাড়া যদি কোন অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে তা নাজায়েজ নয়।

আর এসব হারাম কাজ মিডিয়ার মাধ্যমে করার দ্বারা গোনাহ আরো বেশি হয়। কারণ এসবের দ্বারা আরো অনেক মানুষকে এসব অশ্লীল প্রেম-ভালবাসা করার প্রতি আরো অনেক মানুষকে দাওয়াত হচ্ছে। যা সর্বদার জন্য গোনাহে জরিয়া হিসেবে টিকে থাকবে। তাই অভিনেতা ইন্তেকাল করলেও তার অভিনীত নাটক সিনেমা দেখে যত মানুষ গোনাহে লিপ্ত হবে, এর একটি পাপের ভাগিদার উক্ত অভিনেতা ও অভিনেত্রী ও পাবে। তাই এসব কাজ থেকে সকল মুসলিমের বিরত থাকা উচিত।

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। {সূরা লুকমান-৬}।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে পথ প্রদর্শন করে, যে ব্যক্তি তার পথ অনুসরণ করবে, তার সওয়াবে কমতি করা ছাড়াই তার সমপরিমাণ সওয়াব পথ প্রদর্শনকারী পাবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি পথভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, এর দ্বারা যে ব্যক্তি গোনাহে লিপ্ত হবে, তার গোনাহের মাঝে কম করা ছাড়াই এর সমপরিমাণ গোনাহ আহবানকারী পাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

আমাদের দেশে গান ও অভিনয় শিল্পী জগতের সাথে যারা জড়িত তারা কার সন্তান। অবশ্যই আমাদের প্রতিবেশীর কারো না কারো সন্তান। তারা কিন্তু মুসলমান। পেশার দোহাই দিয়ে এরা নিজেরা যেমন জাহান্নামের রাস্তায় হাঁটছে তেমনি কোটি কোটি মানুষকেও জাহান্নোমের সাথী বানিয়ে নিচ্ছে।

অবশ্য আমাদের সমাজে নাচ-গান ও অভিনয় শেখার সরকারি বেসরকারি অনেক সংগঠন বা সংস্থা আছে যারা সংস্কৃতির উন্নয়ন নামে মুসলমানদের ইমান আমল নষ্ট করছে। আর এই কাজে এক শ্রেণির অভিভাবক লক্ষ লক্ষ টাকাও খরচ করছে। সেইসব অভিভাবক হজ করে এসে তাসবিহ হাতে মসজিদে বসে থাকে। অন্য দিকে তাদের ছেলে মেয়েরা নেচে গেয়ে ও বিভিন্ন অভিনয়ের মাধ্যমে যুব সমাজকে উত্তেজিত করে অপিবত্র করছে। এর জন্যে দায়ী কে? নিশ্চয় ঐ অভিভাবক যিনি অর্থ ও শ্রম দিয়ে সন্তানকে সমর্থন দিয়েছেন। এমন অভিভাবক ও সন্তান কি করে জান্নাতের আশা করে। তবে আমাদের সমাজে এরা একটা সংঘবদ্ধ গ্রুপ ও নির্দিষ্ট।

আপনি একজন অভিভাবক হিসেবে নিশ্চয় আপনার মেয়েকে খোলা মেলা ড্রেসে পরপুরুষের মনোরঞ্জনের জন্যে স্টেজে উঠাবেন না। তাই যদি হয় তাহলে আপনার সন্তানকে এই জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখতে হবে। ইহকাল ও পরকালে মুক্তি পেতে চাইলে সন্তানকে এসবের অপকারিতা ও কুরআন হাদিস শিক্ষা দিন। সন্তান বড় হতে থাকলে তাদের মনমানসিকতার দিকে খেয়াল রাখুন।

পর্ণোগ্রাফি বা নোংরা ফিল্ম দেখা, অশ্লীল পত্র-পত্রিকা পড়া, নাটক সিনেমা ও গান শোনা

যৌবনের কামনায় যৌন-চেতনা বা উত্তেজনা বলে একটা জিনিস আছে। যার অর্থ এই যে, যৌন-কামনা ঘুমিয়ে থাকে বা তাকে সুপ্ত রাখা যায় এবং কখনো কখনো তা প্রশান্ত থাকে বা তাকে প্রশমিত রাখা সম্ভব। বলা বাহুল্য নোংরা ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা এবং গান হলো এমন জিনিস, যা সুপ্ত যৌনকামনাকে জাগ্রত করে এবং প্রশান্ত যৌন-বাসনাকে উত্তেজিত করে। এ ছাড়া এ উম্মতের সম্মানিত উত্তরসূরীগণ বলতেন যে, ‘গান হলো ব্যভিচারের মন্ত্র।’

মোবাইলে প্রেমালাপ করা, ভিডিও কলিং এ একে অপরকে দেখাদেখি, হাসাহাসি করা যেনা বা ব্যভিচারের মধ্যে গণ্য৷ শেষ পরিনতি জাহান্নাম৷

বর্তমান ইন্টারনেট যুগে ৯০% ছেলে মেয়ে মোবাইল প্রেমে আসক্ত। এর মধ্যে ৭৫% ছেলে মেয়ে মোবাইল সেক্স করে থাকে৷ এসব মানুষকে দিন দিন হারামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ উপরন্তু বিনা প্রয়োজনে এরূপ কথা-বার্তা ও কার্যকলাপ যেনার শামিল।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘চোখের যেনা তাকানো, কানের যেনা শ্রবণ করা, জিহবার যেনা কথা বলা, হাতের যেনা স্পর্শ করা এবং পায়ের যেনা ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে চলা’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬২৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫২, আহমাদ ৭৭১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি ১৭৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়’। (আহযাব ৩৩/৩২)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

 ‘অশ্লীল কথা ও কর্ম মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়’।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬০৭, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাঊদ ৪৯৮৯, সহীহুল জামি‘ ৪০৭১, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৯৮, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আসার ৬১৬৮, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৯৯, মুসনাদুল বাযযার ১৬৫৮, আহমাদ ৪০৯৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫১৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭২, শু‘আবুল ঈমান ৪৭৮৪, দারিমী ২৭১৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/৪৩, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৭৮৭১, আল মুসতাদরাক ৪৪০, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য, বর্তমান সমাজে মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে খুন, ধর্ষণ, পরকীয়াসহ নানা অশ্লীলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুব চরিত্র।

তাই এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা একান্ত জরুরী৷ নিভৃতে আপনার ছেলে মেয়ে মোবাইলে কি করছে একটু খোঁজ খবর রাখেন৷ প্রকাশ্য যেনার চেয়ে এই মোবাইল যেনা আরো মারাত্মক৷

টিভি দেখার বিধান

টিভি দৃশ্য দেখার একটি মাধ্যম মাত্র। যা ধারণকৃত বা সরাসরি কোন দৃশ্য বা চিত্রকে উপস্থাপন করে থাকে।

সুতরাং টিভি স্ক্রীণে ঐ বস্তু দেখা নাজায়েজ হবে, যা স্ক্রীণ ছাড়া দেখা নাজায়েজ। স্ক্রীণে ঐ বস্তু দেখা জায়েজ হবে, যা স্ক্রীণ ছাড়া দেখা জায়েজ।

যদিও টিভি স্ক্রীণে দৃশ্যমান ছবি হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত কি না? এ নিয়ে মতভেদ আছে। শাইখুল ইসলাম মুফতী তাক্বী উসমানী দামাত বারাকাতুহসহ অনেক বিজ্ঞ উলামাগণের মতে তা নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভূক্ত নয়।

সহজতার উপর ভিত্তি করে আমরা এ মতটিকে প্রাধান্য দেই। যদিও তা নিষিদ্ধ ছবি মনে করাই তাক্বওয়া পরহেযগারীর দাবী।

যাইহোক, এখন টিভি দেখা বিষয়ে আমাদের মতামত হল, টিভিতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে নাজায়েজ বস্তু দেখা বৈধ নয়। তবে জায়েজ বস্তু দেখা জায়েজ আছে।

কিন্তু বর্তমানের টিভিগুলোতে, বিজ্ঞাপনের নামে অশ্লীলতা, নাটক সিনেমার নামে নোংরামী, বেগানা নারীদের উদ্দাম নৃত্য, গান বাজনা, হারাম প্রেম, বেপর্দা নারীদের সংবাদ উপস্থাপনসহ শরীয়তে হারাম নানাভিদ বিষয় থাকায় টিভি দেখা বৈধ নয়।

এ থেকে পরহেয করা প্রতিটি মুমিনের উপর আবশ্যক।

তবে যদি এমন কোন চ্যানেল থাকে, যাতে উপরোক্ত নিষিদ্ধ কোন কিছুই না থাকে, শুধুই ইসলামী বিষয় প্রচার করে, দ্বীনী দাওয়াত, প্রয়োজনীয় বিষয়াদী প্রদর্শন করে থাকে, তাহলে উক্ত চ্যানেল দেখাকে হারাম বলাও যাবে না।

টিভি দেখার বৈধতা ব্যবহারকারী দর্শকের মানসিকতা ও চ্যানেলের অবস্থার উপর নির্ভরশীল। হারাম বিষয় থাকলে হারাম। জায়েজ বিষয় থাকলে জায়েজ।

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা নূর-৩০-৩১)।

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। (সূরা আহযাব-৩২)।

অর্থ: আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)।

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৯, মুসনাদুল বাজ্জার ২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা ১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৫৯৮, ইরওয়া ২৭৩, সহীহ আল জামি ৬৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২}। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। (সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০)।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জমানায় আমার উম্মত বানর ও শুকরে রূপান্তরিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা সাক্ষি দিবে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল এবং রোযা রাখার পরও?

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, হ্যাঁ।

বলা হলো, তাদের অপরাধ কি?

বললেন, তারা বাদ্য, গায়িকা এবং দফের বাজনা গ্রহণ করবে। মদ খাবে, রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘুমাবে। আর সকালে দেখবে তারা বানর ও শুকরে পরিণত হয়ে গেছে। (হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১১৯)।

হিন্দি -ইংরেজি সিনেমা দেখার বিধান

সিনেমা হারাম হবার এক দু’টি কারণ নয় অনেক কারণই বিদ্যমান রয়েছে। যেমন-

(১) পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়।

(২) শরীয়তে হারাম গান বাদ্য দেখা হয়।

(৩) অহেতুক সময় নষ্ট হওয়ার পাপ হয়।

শুধু তাই নয়, এসব সিনেমা সামাজিক পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। হাতে কলমে সন্ত্রাস, কিডন্যাপ, খুনাখুনি, সমাজ অস্বীকৃত অশ্লীল প্রেম শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। {সূরা নূর-৩০,৩১}

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২}। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর একশ্রেণীর লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য। (সূরা লুকমান : ৬)।

উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর। (মাআরিফুল কুরআন ৭/৪)।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত নাযিল করেন।

আবূ মালেক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০২০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮৮, আহমাদ ২২৩৯৩, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ ১/১৩৮-১৩৯, সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯০৯১, নাসায়ী ৫৬৫৮, সহীহুল জামি ৮০৯১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৩৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮০৯৮, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৯০, দারিমী ২১০০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১০৬৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৮৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

বাদ্য যন্ত্রসহ গান বাজনা করা, দেখা এবং গোপনে পর্নোগ্রাফি দেখা নিঃসন্দেহে ইসলামে হারাম। অথচ এই হারাম কাজে আপনার পরিবার ও আপনি জড়িত। কট্টর ইসলামপন্থী কতিপয় মুসলমান ব্যতীত কার ঘরে টিভি ও ডিস এর লাইন নেই। টিভিতে শিক্ষনীয় বিষয়ের চেয়ে অশিক্ষনীয় বিষয়ই বেশী। এর মধ্যে নাটক ও সিনেমা অন্যতম। হিন্দি সিরিয়াল নাটক দেখা নিয়ে শত শত পরিবার ভেঙ্গে গেছে। আবার নাটক সিনেমার নায়ক নায়িকাদের অনুকরনে পোশাক তৈরীরও একটা বাতিক সৃষ্টি হয়েছে। এইসব পোশাক ক্রয় করা নিয়ে অনেক মেয়ের আত্ম হত্যা করারও ঘটনা আছে।  যাইা হোক, নিজ ঘরে নাটক সিনেমা চালু রেখে মসজিদে গিয়ে আল্লাহু জিকিরের কোনো মূল্য নেই। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রথমে নিজের আত্মশুদ্ধি এরপর পরিবার তারপর প্রতিবেশী এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়। তাই পরিবারেই প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করুন। যাতে পরিবারের সদস্যগণ একদিকে সালাত আদায় করবে আবার দৌঁড়ে এসে সিরিয়াল দেখা শুরু করবে এমন না হয়। অনেক ছেলে মেয়ে রাত জেগে পর্নোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত। আপনি কি কখনো খোঁজ নিয়েছেন আপনার ছেলে মেয়েরা গোপনে কি করে। হয়তো নেয়া সম্ভব নয়। গোপনে যাতে এসব নোংরামী কাজে অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে সেজন্যে সন্তানকে ছোট বেলা থেকেই ইসলামি শিক্ষা দিতে হবে। তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পরিবর্তন ঘটানোর উত্তম মাধ্যম হচ্ছে ছোট বেলা থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ে অব্যস্ত করে গড়ে তোলা, কুরআন ও হাদিস শিক্ষা দেয়া, পাক পবিত্র থাকার গুরুত্ব অনুধাবন করতে শেখা এবং ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার মনমানসিকতা গড়ে তোলা।

জনপ্রিয় টিকটক, এ বিষয়ে ইসলাম যা বলে

বর্তমানে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের কাছে জনপ্রিয় একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ টিকটক। অবশ্য এর আইওএস ভার্সনও এখন বাজারে আছে। এটি অত্যন্ত অল্প সময়ে পৃথিবীব্যাপী তার অবস্থান শক্ত করে নিয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৭৫টি ভাষায় এই অ্যাপটি বানানো হয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, গোটা পৃথিবীতে এই অ্যাপটি প্রায় ৮০০ মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে। আমেরিকার বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা জিমি ফ্যালন ও টনি হৌকের মতো বড় বড় সেলিব্রেটিও এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট করেছেন।

ছোট ভিডিওর জন্য বিখ্যাত এই অ্যাপসের মাধ্যমে এরই মধ্যে নিজেকে সেলিব্রেটি বানিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। বিভিন্ন গানের অংশ, সিনেমা ও নাটকের কৌতুক ডায়ালগগুলোর সঙ্গে অভিনয় করে অনেকেই বানিয়েছেন হাজার হাজার ফলোয়ার। রাতারাতি সেলিব্রেটি হওয়ার নেশায় কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের অংশবিশেষকে কেটে নিয়ে তা দিয়েও টিকটক ভিডিও বানাচ্ছেন। কিছু অবুঝ টিকটক ভিডিও নির্মাতা ফান ফান করতে করতে কখন যে ধর্ম নিয়েও ফান করা শুরু করে দিয়েছেন তা হয়তো নিজেও উপলব্ধি করতে পারেননি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চকে যাঁরা কৌতুকের মঞ্চে পরিণত করেন, তাঁদেরও দায় কম নয়। কৌতুকের ছলে এই সর্বনাশা অ্যাপটি দ্রুত ধ্বংসের মুখে ঢেলে দিচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মুসলমানদের। জাতিকে এই সর্বনাশা মহামারি থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও এই অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদি এখনো অনেকে ভিপিএন ব্যবহার করে এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। নিম্নে তার কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো :

মানুষ এ ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহার করে বিনোদনের জন্য। যা মানুষের অনেক সময় নষ্ট করে, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা নষ্ট করে। ঈমানদারদের আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল রাখে। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের সব কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ওইগুলো হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)।

আমাদের সবার জানা, এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা কৌতুক, গান-বাজনা ইত্যাদির মাধ্যমে বিনোদনের জন্য। যা ইসলামে হারাম। যারা এগুলো বানাবে, আর যারা দেখবে উভয়েই গুনাহগার হবে। বিপদের কথা হলো, যতজন মানুষ এই ভিডিওগুলো দেখে গুনাহ করবে, ভিডিও নির্মাতাও তাদের সবার গুনাহের একটি অংশ পেয়ে যাবে। যা ভিডিও নির্মাতার গুনাহের পাল্লা প্রতি মুহূর্তেই ভারী করবে। এমনকি ভিডিও নির্মাতার মৃত্যুর পরও যদি কেউ ভিডিও দেখে তার গুনাহও তার আমলনামায় পৌঁছে যাবে।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার দাওয়াত পেয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ কেউ আবার টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে অন্যকে নিয়ে ট্রল করে মজা নেওয়ার চেষ্টা করে। এটি জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)।

বর্তমানে উঠতি বয়সী কিছু ছেলে-মেয়ে সব কিছু নিয়ে ট্রল করার চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন আলেম, রাজনীতিবিদও তাদের ট্রলের শিকার হয়ে যান। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কারো প্রতি (খারাপ) ধারণা থেকে বিরত থাকো। কেননা কারো প্রতি (খারাপ) ধারণা করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হইয়ো না। বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থেকো।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৪, ৫১৪৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

টিকটক ভিডিও আমরা অনেকে দেখেছি। ভিডিওতে দেখা যায়, উঠতি বয়সের কতিপয় যুবক যুবতী কিছু ঘটনা বানিয়ে অভিনয় করছে। মূলত তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফান করা এবং অন্যকে হাসানো। আর এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউটিউবে মার্কেট পাওয়া এবং ইনকাম করা। এসব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এইসব যুবক যুবতীরা দিন দিন ইসলামি আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হয়ে পড়ছে। তাদের পোশাক, চুলের স্টাইল ও অভিনয় সম্পূর্ণ বিজাতীয়দের অনুকরনয়ী-অনুসরনীয়। যা ইসলাম সমর্থন করে না। যেসব যুবক যুবতীরা এসব কাজের সাথে জড়িত তারা আমাদেরই কারো না কারো সন্তান। আর তারা মুসলমান নামে পরিচিত। তাই ইহুদি-খৃস্টানদের চক্রান্তে আমাদের ছেলে মেয়েরা যাতে উচ্ছন্নে  যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা একজন অভিভাবকের প্রধান দায়িত্ব। 

কার্টুন দেখা, কার্টুন গেমস খেলা জায়েজ কি?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন,

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান-৬)।

কার্টুনও যেহেতু অবান্তর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের শামিল তাই তা দেখা জায়েজ হবে না।

কুরআনুল কারিমের অন্য জায়গায় আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দার পরিচয়ে বলছেন, মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে। যারা নামাজে বিনয়ী ও নম্র। যারা অর্থহীন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে। (সুরা মুমিন-১-৩)।

নামাজে বিনয়ী হওয়া আর অর্থহীন কাজ থেকে বিরত থাকা সমমর্যাদার দাবি করছে কোরআন। তাফসিরে মায়ারেফুল কুরআন বলছে, যে কাজ ধর্মীয় কোনো উপকার নেই, বরং ক্ষতির আশঙ্ক রয়েছে এমনাটাই অনর্থক কাজ। অনর্থক কাজ উচ্চস্তরের গোনাহ। এর থেকে থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।

গেমস কার্টুন খেলা ও দেখা কি খুব উপকারের কাজ?শিশু-কিশোর ও তরুণদের মেধা-সময় কি তখন উপযুক্ত কাজে ব্যয় হচ্ছে?

আমেরিকার শিশু প্রতিদিন সাত ঘন্টা টিভি দেখা, মুম্বাইয়ে শিশু দালান থেকে লাফ দেয়ার চিত্র যে আগামী প্রজন্মকে ল্যাংড়া- লুলা করে প্রস্তুত করছে তা বুঝার জন্য বিজ্ঞানি হওয়ার প্রয়োজন নেই।

তারপরও একটি জরিপে আমরা দেখি, কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানিরা বলছেন, অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে শিশুরা মুটিয়ে যাচ্ছে, মারাত্মক রোগের শিকার হচ্ছে।

রক্তে ফ্যাট, হাইপারটেনশন, হাইব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বিস্তার ঘটছে। এছাড়া ভিডিও গেমসসহ এ জাতীয় অন্যান্য গেমস শিশুদের মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অঞ্চলকে উত্তেজিত করে।

গেমস কার্টুনে ডুবে থাকার কাজটি কি কোরআনের অর্থহীন কাজের অন্তর্ভূক্ত নয়? হাদিসে রাসুলের বক্তব্য হলো, কোনো মানুষ যখন অনর্থক কাজ থেকে দূরে থাকে, তার কাজে ইসলামের সুন্দর্য ফোটে ওঠে।

ইসলামি ভাবধারার ভিডিও কার্টুন প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলবা এই সব কার্টুনেও বিভিন্ন প্রাণীর ছবি, নারী-পুরুষের ছবি, বিভিন্ন সত্যমিথ্যা ডায়ালগ ইত্যাদি থাকে।

ইতিহাস ভিত্তিক কার্টুনে হজরত মুসা নবি সা. ও ফেরাওনের বিবরনে তাদের কৃত্তিম ছবি আকা হয়। বিবি আসিয়াও এসে হাজির হয়। বাচ্চাদের হজরত মুসা নবির গল্প শিখাতে গিয়ে একজন নবির কৃত্তিম ছবি আকার অনুমোতি ইসলাম আমাকে দিয়েছে কি?

আদম আ. এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হাবিল কাবিলের ছবি অঙ্কন ইসলাম আমাকে অনুমতি দেয়?সদকার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মানুষের ছবি দিয়ে বুঝানো সেখানে নারীর কার্টুন তৈরি করার অনুমতি আমাকে দিয়েছে ইসলাম?

ইসলামের সূতিকাঘর হজরত সাহাবার মুখ থেকে শুনুন। সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রহ.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।

এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আব্বাস রা.তাঁকে বলেন, এ বিষয় রাসুল সা. কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব।

নবিজিকে আমি বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি আঁকবে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দিবেন, যে পর্যন্ত সে ছবিতে প্রাণ দিতে না পারবে।

আর সে ছবিতে কখনোই প্রাণ দিতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য! তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা আঁকতে পার। (সহিহ বুখারি, চতুর্থ খন্ড, হাদিস- ২০৮৪ ইসলামিক ফাউন্ডেশান)।

এছাড়াও মা আয়েশা রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সা. তাবুক যুদ্ধের সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম।

তাতে ছিল প্রাণীর অনেকগুলো ছবি। নবীজি সা. যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, কিয়ামতের সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আজাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টি প্রাণীর অনুরূপ ছবি তৈরি করবে। । (সহিহ বুখারি,৯/৫৫৩০ ইফা)।

হাদিস শরিফে আছে, আবদুল্লা ইবনে আব্বাস সূত্রে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়। (বুখারি-৯/৫৫২৬ ইফা)।

ছবি আঁকা ও ছবি বানানোর প্রশ্নে কোরআন সুন্নাহর ভাষ্য যদি এতোটাই কঠিন হয়; তাহলে আমাদের কি অধিকার আছে ইসলামি ভাবধারার ভিডিও বানানোর?

সম্প্রতি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ অ্যানিমেটেড কার্টুনগুলোর বিরুদ্ধে অবৈধের ঘোষণা দিয়েছে।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

বর্তমানে ছোট বাচ্চাদের কার্টুন দেখা ও গেমস খেলা একটা নেশায় পরিনত হয়েছে। কার্টুন দেখা ইসলাম সমর্থন করে না। আর গেমস খেলা  পুরোটাই হারাম। সম্প্রতি পাবজি গেম নিয়ে ইসলাম বিরোধী অনেক তথ্য আসছে। তাই সন্তানকে এসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দিতে হবে এবং ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ সময়ের সাথে যাই পরিবর্তন ঘটুক না কেনো ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এমন বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার মনমানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

নিজের ছবি/অডিও/ভিডিও ইন্টারনেটে পোস্ট করা

ফেইসবুকে ছবি আপলোড করার হুকুম কী?

মহিলাদের ছবি হলে বৈধ নয়। পুরুষদের ছবি জায়েজ পদ্ধতিতে প্রদর্শিত হলে জায়েজ আছে। তবে উত্তম নয়। বিশেষ করে সমাজের পথিকৃত যেমন উলামায়ে কেরামগণকে এ কর্ম থেকে বিরত থাকাই তাক্বওয়ার দাবী।

কিন্তু এসব ছবি প্রিন্ট করা জায়েজ নয়। [তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম-৪/১৬৪]

আসলে বর্তমানে ছবি তোলা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যদিও অনেক উলামায়ে কেরাম কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রীণে থাকা অবস্থার ছবিকে জায়েজ বলেছেন, কিন্তু তা যে তাক্বওয়া ও পরহেযগারীর খেলাফ তাতে কারো কোন দ্বীমত নেই।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েরা ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুকে নিজেদের বিভিন্ন ঢং এ তোলা ছবি আপলোড করে থাকে। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। অনেক অভিভাবক পরিবারের ছবি দিয়ে পরবর্তীতে বিপদে পড়ে। অর্থাৎ সন্তান হাইজ্যাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আর মেয়েদের ছবি নিয়ে অনেক দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে সফটওয়ার দিয়ে ন্যাকেট করে ফেলে। এতে যেমন মেয়েটির চরিত্রে কালিমা পড়ে তেমনি অভিভাবক সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হোন। তাই অভিভাককে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং সন্তানকে এর ভয়াবহতা বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।

মোবাইল প্রেমে আসক্ত হওয়া

বেগানা পুরুষের সাথে বেগানা নারীর প্রেম পিরিত হারাম। ইসলামে প্রেম জায়েজ তবে সেটা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে। কিন্তু সেই প্রেম হতে হবে বাবার প্রতি সন্তানের যে প্রেম থাকে, প্রতিবেশির প্রতি প্রতিবেশির যে প্রেম থাকে। যদি আপনার কোন যুবতী মেয়ের প্রতি যৌন উত্তেজিত প্রেম থাকে তাহলে সেই প্রেম একেবারেই জায়েজ নয়। বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। “স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না”। (সূরা আল মায়িদা: ৫)।

এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। ৩১ নং আয়াতে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। জিনা তথা অবৈধ শারীরীক সম্পর্ক হারাম। (সূরা ইসরা আয়াতঃ ৩২) (সূরা ফুরকানঃ ৬৮)।

জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ।বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। (সূরা বাকারাঃ১৬৫)।

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত নং ৯০ থেকে ৯১)। আসলে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায় বলে দেয়।প্রেম করলে শয়তান অবশ্যই জিনা করতে প্রলুব্ধ করবে। ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম করা হারাম।

ফেইসবুকে নারী বন্ধু বানানো ও তাদের সাথে কথা বলার হুকুম কী?

ফ্রেন্ডশীপ মানে বন্ধুত্ব। যা একে অপরের প্রতি মোহাব্বত ও ভালবাসার নিদর্শন। কিন্তু ফেইসবুকের যে ফ্রেন্ডশীপ হয়ে থাকে, এর সাথে সত্যিকার বন্ধুত্বের মূলত কোন সম্পর্ক নেই। এটি কেবলি একটি বাহ্যিক বন্ধুত্ব।তবে অনেক সময় তা সত্যিকার বন্ধুত্বেও রূপ নেয়।

আমাদের ফেইসবুককে দেখতে হবে অফলাইনের জীবনের অবস্থা অনুপাতে। যেমন অফলাইনে বেগানা নারীদের সাথে অহেতুক কথা বলা, তাদের সাথে দেখা করা, তাদের ছবি দেখা হারাম। তেমনি অনলাইনের বিধানও তা’ই হবে।

যেমন অফলাইনে বেগানা নারীদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ, দ্বীনী দাওয়াত দেয়া জায়েজ, কিন্তু আকৃষ্ট হবার আশংকা থাকলে কথা বলা বৈধ নয়। তেমনি অনলাইনেও বেগানা নারীদের দ্বীনী দাওয়াত দেয়া, ও প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েজ আছে। কিন্তু ছবি দেখা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, আকৃষ্ট হবার শংকা থাকলে বন্ধুত্ব করা ও চ্যাটিং করা কোনটিই বৈধ হবে না।

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৩}। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মেয়েদের সাথে ফেইসবুক ইন্টারনেটে কথা বলার হুকুম কী?

যদি দ্বীনী উপকার নিহিত থাকে, সেই সাথে গোনাহে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে জায়েজ আছে। কিন্তু গোনাহে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা থাকলে জায়েজ নয়।

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}।

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬-৬৬৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৩}। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফেইসবুকে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করার হুকুম কি?

এ বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পেতে আমরা প্রথমে দু’টি আয়াত দেখে নেই-

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা নূর-৩০-৩১)।

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। (সূরা আহযাব-৩২)।

উক্ত সমূহে পরিস্কার ভাষায় মেয়েদের অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে, আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা পরিস্কার ভাষায় জানাচ্ছে যে, ফেইসবুকে প্রয়োজন ছাড়া মেয়েদের বন্ধু বানানো, তাদের সাথে কথা বলা জায়েজ নয়।

দ্বীনী কোন বিষয় থাকলে কম কথায় শেষ করে নিবে। অযথা কথা বলা হারাম।

অর্থ: আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)।

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

মোবাইল আসর আগে ছেলে মেয়েরা প্রেম করতো পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে। তখন পত্র বাহককে ঘুষ দেয়া লাগতো। আর এটা ছিল খুবই গোপনীয় ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়। পারিবারিক ও সামাজিকতার ভয়ে একত্রিত হওয়া খুবই মুশকিল ছিল। এখন কিন্তু প্রেম করা খুব সহজ। আপনার চোখের সামনে আপনার ছেলে মেয়েরা দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা মোবাইলে প্রেমালাপ করছে আপনি দেখেও কিছু বলছেন না। হয় আপিন বোঝেন না, না হয় স্বাধীনতা দিয়েছেন। মূলত অভিভাবকের উদাসীনতা ও অতি আদরের ফলে আপনার ছেলে মেয়ে আপনার সামনেই উচ্ছন্নে যাচ্ছে। এতে করে তাদের সময়, অর্থ ও দৈহিক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়ায় সন্তানরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারছে না। প্রেম সামনা সামনি করলে যে পাপ মোবাইলে করলে একই পাপ। আর এই পাপের জন্যে আপনি দায়ী। কারন মোবাইল ক্রয় করার টাকা আপনি দিয়েছেন। তবে বর্তমানে মোবাইল যোগাযোগের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হওয়ায় এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

মনে করুন, আপনি খুব কড়া শাসনের একজন অভিভাবক। মোবাইলে প্রেম করা আপনি সহ্য করতে পারেন না। এমন অবস্থা দেখলে সন্তান রাগারাগি অনেক ক্ষেত্রে মারধোরও করেন। আপনার ভয়ে ছেলে-মেয়েরা প্রকাশ্যে কারো সাথে ফোনালাপ বা প্রেম করে না। কিন্তু যখন বাহিরে যায় বা আপনার অনুপস্থিতে বা রাতে দরজা দিয়ে একাকি ঠিকই কিন্তু মোবাইলে প্রেম করছে। এ থেকে সন্তান বের করে আনা মুশকিল। কারন সে এখন ম্যাচিউর্ড। আপনি যাই বলুন না কেনো সে তার কাজ গোপনে হলেও চালিয়ে যাবে।

এখন করনীয় হচ্ছে, সন্তান সময় ও সুযোগ পেয়েও যাতে এই গর্হিত কাজে মনোনিবেশ করতে না পারে সে জন্যে সন্তানের সেই মনমাসকিতা ছোট বেলা থেকেই গড়াতে হবে। বড় হওয়ার পর হঠাৎ শাসন করবেন তা সেটা পজিটিভ হিসেবে নিবে না। তথা কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ঠাস ঠাস।

বন্ধুদের সাথে অবৈধ মেলামেশায় মত্ত থাকা

স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের দিকে তাকালে দেখা যায় এদের বেশীর ভাগ ছেলে মেয়েদের ব্যক্তিগত একজন করে বন্ধু রয়েছে। এছাড়া ধনীক বা বড় লোক শ্রেণির আদরের দুলাল দুলালীরা বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন পার্ক, হোটেল বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে বিভিন্ন কৌশলে অবৈধ মেলামেশায় মত্ত থাকে। যেখানে এইস ব দৃশ্য দেখা যায় তাদের ৯৭% মুসলিম ছেলে মেয়ে। আমার আপনার পরিবারেরই কেউ না কেউ। অখবা প্রতিবেশী কারো সন্তান। এইসব  ছেলে মেয়েদের অভিভাবক মুসলমান। তারা সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে, হজ্জ পালন করে, যাকাত দেয় ও দান খয়রাতও করে অথচ তাদেরই সন্তানরা অবৈধ কাজে লিপ্ত। অভিভাবক যেহেতু তাদেরকে অন্যায় কাজে বাঁধা দেয় না এবং ইসলামি আদব কায়দা শিক্ষা দেয়নি তাই তারা দাইউস হিসেবে গণ্য হবে। আসুন জেনে নেই ইসলাম কি বলে?

পরনারীর প্রতি আসক্তি মানুষের বিকৃত মানসিকতা ও মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ। মানবতা ও বিশুদ্ধতার একমাত্র জীবন ব্যবস্থা দিয়েছে ইসলাম। কোনো গর্হিত কাজই ইসলাম অনুমোদন দেয় না। আর বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষের আসক্তি কিংবা সম্পর্ক সবচেয়ে গর্হিত নিষিদ্ধ কাজ।

উক্বা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে) জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন, ‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭২, তিরমিযী ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

স্ত্রীর জন্য দেবর আর স্বামীর জন্য শ্যালিকা মৃত্যুর সমতুল্য মানেই হলো একে-অপরের সঙ্গে অবাধ দেখা-সাক্ষাৎ এবং আসক্তিমূলক সম্পর্ক হারাম বা নিষিদ্ধ। ইসলামে এ সবের শাস্তিও খুব ভয়াবহ।

দেবর কিংবা শ্যালিকার ব্যাপারে যদি ইসলামের এ রকম কঠোর নির্দেশনা আসে তবে পরনারী কিংবা পরপুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিধান কেমন হতে পারে? তা বিবেকবানদের জন্য অনুমেয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই নারীকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে নারী তার জন্য হালাল নয়।’ (তাবারানি)।

ইসলামে বিবাহবিহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক, আসক্তিমূলক আচরণ, সামাজিকতার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফাহেশা কথা-বার্তা বা চ্যাটিং সবই হারাম তথা নিষেধ।

যৌন সম্পর্ক, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা তো দূরের কথা, বিবাহবহির্ভূত নারী-পুরুষরা কোমল বা নরম ভাষায় সরাসরি, মোবাইলে কিংবা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আসক্তিমূলক কথা-বার্তাও বলা যাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-

‘হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা উত্তম (সংযত) কথাবার্তা বলো।’ (সুরা আহযাব: আয়াত ৩২)।

আবার নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি বিনিময়েও রয়েছে সুস্পষ্ট হুকুম। এ প্রসঙ্গে কুরআনে পাকে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করেছেন।

পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তাআলা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)।

‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও (এমন) বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারো সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (এমনকি) তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)।

কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ, আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা। নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।

সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই ছোট হাদিসটির ওপর আমল করা জরুরি। যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের গ্যারান্টি। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করবে; আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’

হাদিসগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন-

রাসুল সাঃ বলেছেন,

“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী: ২২৬)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১), রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৭। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

তিনি আরো বলেন,

“কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনি হয়”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, গায়াতুল মারাম ১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়িশা রাঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেছেন, কোনো নারীর হাত স্পর্শ করা হারাম।

প্রিয় অভিভাবকঃ একটু খেয়াল করুন। আপনার মেয়ে বাহিরে যাচ্ছে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কর্মস্থলে। ক্যাম্পসে, বিভিন্ন পার্কে, হোটেলে কিংবা রিকশায় জোড়া লেগে যেসব ছেলে মেয়ে বিবাহের পূর্বেই অবাধ মেলামেশায় মত্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে এরা কারা?

আপনি যদি ছোট বেলা থেকেই পর্দার বিধানসহ ইসলামি শিক্ষায় গড়ে তুলতেন তাহলে আপনার মেয়ে কখনই বন্ধুদের সাথে এভাবে অবাধ মেলামেশা বা আড্ডায় নিজের সতীত্ব নষ্ট করতো না। নিজের ইজ্জত নিজেই রক্ষা করে চলতো। সম্মতি কিংবা অসম্মতিক্রমে ধর্ষিত হতো না। অতএব এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনার মেয়ে কোনোক্রমেই যেনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা কিংবা অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হতে না পারে।

মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা

মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা ব্যভিচার ও ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ নগ্না ও প্রায় পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)।

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৩,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩১০৯, সহীহ আল জামি ৬৬৯০, ইরওয়া (২৭৩), তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা ১৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম এবং তাঁর নিকট মাইমূনাহ (রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) (অন্ধ সাহাবী) এলেন। ঘটনাটি আমাদের উপর পর্দার হুকুম নাযিলের পরের। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে ও চিনতে পারছে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদিও সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছো না?

ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট। তুমি কি ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়িতে ফাতিমাহ বিনতু কায়িস (রাঃ)-এর ইদ্দত পালনের বিষয়টি লক্ষ করো না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ বিনতু কায়িস (রাঃ)-কে বলেছেনঃ ‘‘তুমি ইবনু উম্মু মাকতূমের বাড়িতে ইদ্দত পালন করো। কারণ সে অন্ধ লোক। তুমি সেখানে খোলামেলা পোশাকে থাকতে পারবে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১১২)।

উক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। কোন পুরুষ যেমন কোন পর নারীর প্রতি তাকাতে পারবে না, কোন নারীও তেমনি কোন পর পুরুষের দিকে তাকাতে পারবে না। এখানে সু-দৃষ্টি আর কু-দৃষ্টিরও কোন পার্থক্য নেই। কারন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম যেমন একজন পূত পবিত্র স্বভাবের অধিকারী, পূন্যবান মহান বুযুর্গ সাহাবী; অপরদিকে হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) (রাঃ) ও মাইমূনা (রাঃ) উভয়ই হলেন উম্মত-জননী এবং প্রিয়তম নবী (সঃ) এর জীবন সঙ্গিনী । সুতরাং, এ ক্ষেত্রে কু-দৃষ্টির কথা চিন্তাই করা যায় না । তারপরও পর্দা করতে আদেশ করা হয়েছে । কাজেই সহজেই অনুমেয় যে, পর্দা কত গুরুত্বপূর্ন বিষয় এবং তা পালন করা কত জরুরী ।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন সাবালিকা হয় তখন এই দু’টো অঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রকাশ করা তার জন্য সংগত নয়, এ বলে তিনি তাঁর চেহারা ও দু’ হাতের কব্জির দিকে ইশারা করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে বেগানা পরপুরুষের কথা উল্লেখ নাই । সুতরাং গৃহে অবস্থানকালে যদি পরপুরুষ না থাকে তাহলে সেখানে মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখায় সমস্যা নেই ।

কিন্তু অন্য বর্ননায় বেগানা পরপুরুষের সামনে মেয়েদের মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া - ৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী - ৫/৩৮৮)।

যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-

হযরত কায়স ইবনে শামমাস (রাঃ) বর্ননা করেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর দরবারে এলো। তাকে উম্মে খাল্লাদ বলে ডাকা হত । তার মুখ ছিল নেকাবে ঢাকা । সে আল্লাহর পথে তার শহীদ পুত্র সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট জানতে এসেছিল । তখন তাকে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পুত্র সম্পর্কে জানতে এসেছ, আর মুখে নেকাব । হযরত উম্মে খাল্লাদ (রাঃ) তাকে উত্তরে বললেন, আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে এক বিপদে পড়েছি, এখন লজ্জা হারিয়ে তথা মুখমন্ডলসহ গোটা শরীর পর্দা না করে কি আরেক বিপদে পড়ব ? (আবু দাউদ - ১/৩৩৭)।

উপরোক্ত হাদীস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মেয়েদের পর্দা তথা মোটা ও ঢিলাঢালা কাপড় দ্বারা চেহারাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা জরুরী। পরপুরুষকে শরীরের কোন অংশ তারা দেখাতে পারবে না ।

হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, হে আলী ! তুমি হঠাত্ কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ার পর দ্বিতীয়বার ইচ্ছা করে তাকাবে না। কারন প্রথমবার অনিচ্ছাকৃত তাকানো তোমার জন্য মাফ হলেও দ্বিতীয়বার ইচ্ছাকৃত তাকানো মাফ নয়। (আবু দাউদ শরীফ-১/২৯২)

বর্তমান যুগের মেয়েরা ওড়নাবিহীন অবস্থায় চলাফেরা করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকে ওড়না গলায় ঝুলিয়ে বেড়ায়।আবার অনেকে এমন টাইট জামা পরিধান করে যা বাহিরে থেকে সেই মেয়ের পুরো বডি মাপা যায়। এমন পোশাক পরেও মেয়েরা উলঙ্গ। রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে): (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫-৫৪৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, আহমাদ ৮৪৫১, ৯৩৩৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

ঘর থেকে বের হলেই চোখের সামনে পড়ে পর্দাহীন নারী। যাদেরকে দেখা যায়, কেহ এমন পাতলা শাড়ী বা ব্লাউজ পরিধান করেছে যার ভিতর দিয়ে অন্তর্বাস দেখা যায়। কেহ টাইট শার্ট প্যান্ট, কেহ হাফ শার্ট প্যান্ট, কেহ ওড়না গলায় জড়িয়ে তথা নগ্ন অর্ধ নগ্ন অবস্থায় যারা চলাফেরা করছে তারা কারা? নিশ্চয় আপনার আমার বা প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয় স্বজনের কারো মেয়ে হবে। দাইউস হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট যে, আপনার মেয়ে/স্ত্রী/ছেলের বৌ/নাতনী/ভাগিনী/ভাতিজিকে এমন অবস্থায় বাহিরে যেতে অনুমতি দিচ্ছেন। এখানেই আপনাকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে যে, কোনোক্রমেই বাড়ির নারীগণ বাহিরে বের হলে যেনো পর্দাহীনভাবে বের না হয়। আবার অনেকে পর্দা করে ঠিকই কিন্তু টাইট পর্দা। আসলে এটাকে পর্দা বলে না, পর্দা নামের ফ্যাশন ড্রেস। এরকম ড্রেস পড়লে অনায়াসে বাহিরে থেকে মেয়েটির বডি মাপ যোগ করা যায়। রাসুল সাঃ এরুপ পোশাক পরাকেও উলঙ্গ নামে অভিহিত করেছেন। এতএব আমাদেরকে এসব বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। তাহলে আপনি যতোই ইবাদত করেন না কেনো তা কখনই আল্লঅহর নিকট গৃহিত হবে না।

অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করা

ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে না দিলে তারা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করলে ইসলাম নিষেধ করে না। অয়িশা রাঃ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি হতে বোঝা যায়, কোনো মেয়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে শিথিলযোগ্য।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক।

(সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, ১৮৮০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১০২, ১১০৩ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৮৩, আহমাদ ২৩৮৫১, ২৪৭৯৮, ২২৬০, ২৩৬৮৫,  ২৫৭০৩,  দারেমী ২১৮৪, ইরওয়াহ ১৮৪০, সহীহ আবী দাউদ ১৮১৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

ছেলে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তার সম্মতিক্রমে বিয়ের ব্যবস্থা করা। ছেলে মেয়েদের প্রেমে জড়িয়ে পড়া, গোপনে অজানা স্থানে মিলিত হয়ে যৌন সুখ ভোগ করা কিংবা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার যাতে সুযোগ না পায় সেদিকে কড়া দৃষ্টি বা নজরা রাখা অভিভাবকের জন্যে ফরজে আইন। অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ার পূর্বেই বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

মনিবের অনুমতি ব্যতিরেকে দাসের বিবাহের বিধান

বর্তমান যুগে দাস প্রথা আর নেই। তবে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এখন কাজের বুয়া আছে। দাস-দাসী ও কাজের বুয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। পূর্ব যুগে দাস-দাসী আজীবনের জন্যে ক্রয় করে নেয়া হতো। দাসীকে ইচ্ছে করলে যৌন সঙ্গম করতো।  তবে ইসলামের বিধান মোতাবেক দাসীকে মুক্ত করে দিয়ে মোহর নির্ধারন পূর্বক বিয়ে করলে তার জন্যে রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আপন ক্রীতদাসীকে শিক্ষা দেয় এবং উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং উত্তমভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এরপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। ঐ আহলে কিতাব, যে তার নবীর ওপর ঈমান আনে এবং আমার ওপরে ঈমান এনেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। আর ঐ গোলাম, যে তার প্রভুর হক আদায় করে এবং আল্লাহরও হাক্ব আদায় করে তার জন্যে দ্বিগুণ সাওয়াব। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘মুক্ত করে মাহর নির্ধারণ করে বিয়ে করে’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৮৩,  ৫০৮৬, ৯৭, ২৫৪৪, ২৫৪৭, ২৫৫১, ৩০১১, ৩৪৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৪, আধুনিক প্রকাশনী ৪৭১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পূর্ব যুগের দাস প্রথা আইন ও বর্তমান যুগের কাজের বুয়া আইন এক নয়।  যাই হোক, নিম্নোক্ত হাদিস বর্তমান যুগের কাজের বুয়ার জন্যে প্রযোজ্য নয়।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে দাস তার মুনিবের বা আপনজনের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করবে সে ব্যভিচার বা যিনাকারী বলে গণ্য হবে।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৫৯, ১৯৬০, বুলগুল মারাম-৯৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ১১১১, ১১১২, ১৪৬১৩, ১৪৬৭৩, ইরওয়াহ ১৯৩৩, দারেমী ২৩৩৩, ২৩৩৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বিবাহের পূর্বে কুমারী বা বিধবা উভয়ের সম্মতি গ্রহণ আবশ্যক

ছেলে মেয়ের বিবাহের পূর্বে অবশ্যই তাদের সম্মতি নেয়া আবশ্যক। জোড় করে বিবাহ দেয়া ইসলাম সমর্থন করে না। বিধবা কিংবা কুমারী ঊভয়েরই সম্মতি নিতে হবে। লোকেরা রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কুমারী মেয়ের সম্মতি কেমনে নেয়া হবে। তিনি বললেন, তাদের চুপ থাকাটাই হচ্ছে সম্মতির অনুমতি।

নিম্নে দলিলসহ আলোচনা করা হলোঃ

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিধবা মহিলা (বিয়ের ব্যাপারে) তার অভিভাবকের চেয়ে নিজেই অধিক হকদার এবং কুমারীর বিয়ের ব্যাপারে তার সম্মতি নিতে হবে, তার নীরব থাকা তার সম্মতি গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২১, মুয়াত্তা মালিক ৮৮৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৮, সুনানে দারেমী ২২৩৪, সুনানে তিরমিজী ১১০৮, সুনানে নাসায়ী ৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান ৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী ৩৫৭৬।) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৩৬, ৬৯৭০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪১৯, আহমাদ ৯৬১১, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৬০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি।

এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। (সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদীসিল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১)।

(ঘ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একটি কুমারী মেয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তাকে জানায় যে, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছে। ফলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেয়েটিকে ঐ বিবাহ বহাল রাখা বা বহাল না রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিলেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৭৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৯৬, বুলগুল মারাম-৯৮৮, তাওযিহুল আহকাম ৫/২৭৬ পৃঃ), মুসনাদে আহমাদ ২৪৬৯, সুনানুল কুবরা নাসায়ী ৫৩৬৬, সুনানে দারা কুতনী ৩৫৬৬। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

 (ঙ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিবাহ দিবে না। কেননা যে নারী স্বউদ্যোগে বিবাহ করে সে যেনাকারিণী। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৮২, ইরওয়াহ ১৮৪১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) হযরত আয়শা সিদ্দিকা রা. নিজেই তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়া নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে।

(মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুসসাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং ১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫।)

তবে অভিভাবকবিহীন বিবাহ বৈধ হলে ইসলামী শরীয়ত এ ধরনের বিবাহে নিরুৎসাহিত করে। মাতা পিতাকে কষ্ট দেয়া ইসলামী শরীয়তে বৈধ নয়। তাই বাবা মাকে না জানিয়ে তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে বিবাহ করলে তা সম্পন্ন হলেও বিধিসম্মত হবে না। তাই যে করেই হোক মাতা পিতাকে সন্তুষ্ট করেই বিবাহ করা চাই।

এক্ষেত্রে মাতা পিতাকেও ছেলে মেয়েদের চাহিদার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আমাদের সমাজে অভিভাবকপক্ষ মেয়েদেরকে এক প্রকার জোর করেই বিবাহ দেন। মেয়ের সম্মতি অসম্মতির প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করেন না। এ ধরনের বিবাহ বস্তুত শুদ্ধ হয় কি না তা বিবেচনার দাবি রাখে।

কারণ বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের পছন্দ ও সম্মতিটাই হলো মূল বিষয়। উপরন্তু বিবাহের ক্ষেত্রে জানাজানি একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। হাদীসে বিবাহের ক্ষেত্রে ঘোষণা ও জানানোর বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। গোপন বিবাহের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়।

অভিভাবকের করণীয়ঃ

হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে আর অভিভাবক যদি বিয়ে দিতে বিলম্ব করে সেক্ষেত্রে ছেলে মেয়েরা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করতে পারবে। সেজন্যে অভিভাবকের এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে যে, ছেলে মেয়েরা বিয়ের জন্যে উপযুক্ত সে নিজেকে মনে করছে আর আপনারা তা বুঝতে না পেরে বিলম্ব করায় তারা এক সময় অজানা দেশে পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ দিন নিরুদ্দেশ তথা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা,তাতে আপনাদের যেমন সমাজে মুখ খাওয়া হবে তেমনি তাদের জন্যেও বিষয়টি সুখের হবে না। এ জন্যে আভিভাবকের উচিৎ হবে, ছেলে মেয়েদের গতিবিধি লক্ষ্য করা এবং সুপাত্রস্থ করা।

বিবাহের সময় পাত্রী দেখা

বিবাহের পূর্বে পাত্র পাত্রী উভয়ে দেখা নেয়া অবশ্য কর্তব্য। কিছু দিন পূর্বে ফেসবুকে একটা ঘটনা প্রকাশিত যে, মোবাইলে এক ছেলে মেয়ের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। পরে মেয়েটি দেখার জন্যে ছেলের নিকট এসে দেখে সে একটা প্রতিবন্ধী। এরুপ হাজার হাজার ঘটনা মোবাইলে ঘটছে। অনেক অভিভাবক আছেন, যারা নিজেরা পূর্ব থেকে পাত্র পাত্রী নির্বাচন করে রেখে কাউকে পূর্বে দেখতে না দিয়ে সরাসরি বিয়ের দিন পাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে দেখাদেখির ব্যবস্থা করা হয়। তাতে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে পাত্র অথবা পাত্রীর পছন্দ না হওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আবার অনেক অভিভাবক জোড় পূর্বক বিয়ে করতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে কিন্তু সেই বিয়ে সুখের হয় না। অনেক ক্ষেত্রে সংসার ভেঙ্গে যায়।

আমাদের সমাজে পাত্রী দেখার সময় পর্দার বিধান মানা হয় না। পাত্র পক্ষ পাত্রীকে গরুর মতো উল্টে পাল্টে দেখা শুরু করে। অনেক সময় পাত্রীকে উলঙ্গ করার মতো করে সম্মিলিতভাবে দেখে নেয়। এগুলো সম্পূর্ণ ইসলামে নিষিদ্ধ। আপনি যদি দ্বীনদার পরিবার গঠন করতেন তাহলে এসব ঘটনা কখনই ঘটতো না। কারন আপনি দ্বীনদার হলে দ্বীনদার পরিবারেই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার চষ্টো করবেন আর সেই পরিবারের লোকজন এসব নোংরামো কাজ কখনই করবে না। যাই হোক, পর্দার বিধান বজায় রেখে পাত্র পাত্রী দেখার কাজ সমাপ্ত করতে হবে। এখানে হাদিস ভিত্তিক কিছু নিয়ম কানুন আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, সে মোতাবেক কাজগুলো করবেন।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিবাহের পয়গাম বা প্রস্তাব দিবে তখন দেখা সম্ভব হলে, যে বিষয় বিবাহের জন্য তাকে আহ্বান করে তা যেন দেখে নেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৮২, বুলগুল মারাম-৯৭৪, আহমাদ ১৪১৭৬, ১৪৪৫৫।) হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

 ইবনু আবূ উমর (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তার নিকট এসে তাকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি তাকে একবার দেখেছে? সে বলল, না। তিনি বললেন, যাও! তুমি তাকে এক নযর দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছুটা ক্রটি আছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৫০, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৪৯, বুলগুল মারাম ৯৭৭, নাসায়ী ৩২৩৪. আহমাদ ৭৭৮৩, ৭৯১৯।) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

বিস্তারিতঃ

পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সবচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।

এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।

পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে। (মুগনী ৬/৫৫৩)।

 আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।

পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়। (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নযরিল খাত্বিব, মুসাইদ আল-ফালিহ ২৮পৃঃ)।

পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম। এছাড়া পাত্রীর গলায় পাত্র নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারণা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি। (আফরাহুনা, অজ্ঞাতদ ১০ পৃঃ, আজিঃ ২১২পৃঃ)।

অনুষ্ঠান করে ক্ষণিকের দেখায়, পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রতঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও দেখা যায়।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’ (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৭নং)।

সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৯৯নং)।

পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

‘‘যে (কাউকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (ইর ১৩১৯নং)।

পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ-বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া হবে। (হাশিয়াতু রওযিল মুরাববা’ ৬/২৫৪)।

পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে (টোঁ-টোঁ কোম্পানী) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।

পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে পাত্রী ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।

অবশ্য প্রগতিশীল (দুর্গতিশীল) অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার জন্য ভয়ংকর।

‘‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’’ (সূরা আন-নিসা (২৪) : ৬৩)।

পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন এবং ত্রুটি গোপন করা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই জানে।

পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ্ করতে পারে। (দলীলুত্ব ত্বালিব, ফী হুক্মি নাযারিল খাত্বিব,৩৫পৃঃ)।

বিশেষ করে অপাত্র, বিদআতী, মাযারী, বেনামাযী, ফাসেক, ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, বদমেজাজী প্রভৃতি দেখে ও শুনে তাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়াই ওয়াজেব। কিন্তু হায়! সে সুপাত্র আর ক’জন সুশীলার ভাগ্যে জোটে। আর সে সুশীলাই বা আছে ক’জন? পক্ষান্তরে দ্বীন ও চরিত্রের অনুকূল কোন বিষয় অপছন্দ করে অমত প্রকাশ করা আধুনিকাদের নতুন ফ্যাশান। তাই তো কেউ পাত্র অপছন্দ করে এই জন্যে যে, পাত্রের দাড়ি আছে! অথবা বোরকা পরতে হবে। বাইরে যেতে পাবে না! সিনেমা ও মেলা-খেলা দেখতে পাবে না। পাত্র প্যান্ট্ পরে না, পাত্রের হিপ্পি নেই, সোজা টাইপের তাই -যদিও সে খোজা নয়! তাই তো যুবকরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের প্রিয়তমা ও প্রণয়িনীদের একান্ত অনুগত হতে শুরু করেছে। নচেৎ হয়তো বিয়েই হবে না অথবা প্রেয়সীর মনসঙ্গ পাবে না! পণের গরম বাজারেও এরূপ উদাহরণ যথেষ্ট পরিদৃষ্ট হয়! কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরের অভাব নেই কোথাও! বরং এই বেগুন ও তার খদ্দের দিয়েই হাটের প্রায় সমস্ত স্থান পূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর পানাহ।

একশ্রেণীর সভ্য (?) মানুষ যারা বউ দেখতে গিয়ে দ্বীন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ‘নামায পড়ে কি না, কুরআন পড়তে জানে কি না’--এসব বিষয় জানার কোন প্রয়োজনই মনে করে না। পক্ষান্তরে নাচ-গান জানে কি না, সেতারা-বেহালা বাজাতে পারে কি না---সে সব বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন থাকে! আহা! পাঁচজনকে খোশ করতে পারলে তবেই তো বউ নিয়ে গর্ব হবে! এই শ্রেণীর মানুষ সভ্য (?) হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ‘মুসলিম’ নয়।

পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব’লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য। (ই’লামুল মুআক্কিঈন ২/৫০)।

পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারণে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৮৮, সুনান আত তিরমিযী ২৬৩২, আবূ দাঊদ ৬৭৬৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৩৭ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিৎ নয়।

অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও ‘পণে’ পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুঁত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়। নও-সম্বন্ধের ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ‘ওরা মানুষের মান জানে না’ দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী রদ্ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস হলে, বিয়ের পাক্কা ইরাদা না নিয়ে (যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে, নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি নয়।

বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ-গুণ খুলে বলা অবশ্যই উচিৎ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৮০, সুনান আবূ দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, আহমাদ ২৭৩২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে, তার জানতে-শুনতে কোন বেদ্বীন বা বিদআতী ও নোংরা পরিবেশে প্রেমসূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জন করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানোও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৬৬, মুসলিম ৯৫-(৫৫), নাসায়ী ৪২০০, তিরমিযী ১৯২৬, আবূ দাঊদ ৪৯৪৪, ইরওয় ২৬, গয়াতুল মারাম ৩৩২, সহীহুল জামি‘ ১৬১০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩১৫, মা‘রিফাতুস্ সনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ১০৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ১১৫২, আহমাদ ১৬৯৪০, আবূ ইয়া‘লা ২৩৭২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৭৫, শু‘আবুল ঈমান ৫২৬৫, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৭৮২০, দারিমী ২৭৫৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৫১, আল মুজামুল আওসাত্ব ১১৮৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭০৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ লক্ষ্যে পৌঁছনো সকল মুসলিমের কর্তব্য।

পরন্তু ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভায়ের কোন বিপদ বা কষ্ট দূর করে আল্লাহ কিয়ামতে তার বিপদ ও কষ্ট দূর করবেন।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কন্যাদায় আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এক চরম বিপদ। এ বিপদেও মুসলিম ভাইকে সাহায্য করা মুসলিমের কর্তব্য। অর্থ, সুপরামর্শ ও সুপাত্রের সন্ধান দিয়ে উপকার, বড় উপকার। অবশ্য এমন উপকারে নিজের ক্ষতি এবং বদনামও হতে পারে। কারণ, পাত্র দেখে দিয়ে মেয়ের সুখ হলে তার মা-বাবা বলবে, ‘আল্লাহ দিয়েছে।’ পক্ষান্তরে দুখ বা জবালা-জবলন হলে বলবে, ‘অমুক দিলে বা বিপদে ফেললে।’ অথচ সুখ-দুঃখ উভয়ই আল্লাহরই দান; ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া জেনে-শুনে কেউ কষ্টে ফেলে দেয় না। কিন্তু অবুঝ মানুষ অনিচ্ছাকৃত এসব বিষয়ে উপকারীকেও অপকারীরূপে দোষারোপ করে থাকে; যা নির্ঘাত অন্যায়। আর এ অন্যায়ে সবর করায় উপকারীর অতিরিক্ত সওয়াব লাভ হয়।

দ্বীনদার সুপাত্র পেলে অভিভাবকের উচিৎ বিলম্ব না করা। বাড়িতে নিজেদের খিদমত নেওয়ার উদ্দেশ্যে, আরো উঁচু শিক্ষিতা করার উদ্দেশ্যে (যেহেতু বিয়ের পরও পড়তে পারে) অথবা তার চাকুরির অর্থ খাওয়ার স্বার্থে অথবা গাফলতির কারণে মেয়ে বা বোনের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া বা ‘দিচ্ছি-দিব’ করা তার জন্য বৈধ নয়। (আর-রাসাইলু অল ফাতাওয়ান নিসাইয়্যাহ, ইবনে বায ৫৫পৃঃ, ইসলাম মেঁ হালাল অ হারামঃ ২৩৬পৃঃ)।

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের নিকট কেউ বিবাহের প্রস্তাব পাঠায়, তখন দীনদারী ও সচ্চরিত্রের মূল্যায়ন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কর। যদি তোমরা তা না করো, তাহলে দুনিয়াতে বড় রকমের ফিতনা-বিশৃঙ্খলা জন্ম দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৬৭, ইরওয়া ১৮৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তখন ঐ মেয়ের পদস্খলন ঘটলে কোর্টকাছারি বা দাঙ্গা-কলহও হতে পারে।

প্রকাশ যে, যুবতীর বয়স হলে উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়েদ সাবেক ২/১২৮)।

নচেৎ কেবলমাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন অপাত্রের সাথে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে বের হয়ে গিয়ে কোর্টে ‘লাভ ম্যারেজ’ করা এবং অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তার অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করা হারাম ও বাতিল। সাধারণতঃ ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চিরজীবন ব্যভিচার করে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৩১,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৮৩, তিরমিযী ১১০২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, আহমাদ ২৪২০৫, ২৩৮৫১, ২৪৭৯৮, দারিমী ২২৩০, ২১৮৪, ইরওয়া ১৮৪০, সহীহ আল জামি ২৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো নারী তার ওয়ালীর (অভিভাবকের) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে; তার বিয়ে বাত্বিল (না-মঞ্জুর, পরিত্যক্ত), তার বিয়ে বাত্বিল, তার বিয়ে বাত্বিল। যদি এরূপ বিয়েতে স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে তার (লজ্জাস্থান) উপভোগ (হালাল) করার জন্যে। আর যদি তাদের (ওয়ালীগণের) মধ্যে আপোসে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার ওয়ালী নেই শাসক (প্রশাসন) তার ওয়ালী (বলে বিবেচিত) হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৩১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১০২, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, আহমাদ ২৪২০৫, ২৩৮৫১, ২৪৭৯৮, . দারিমী ২২৩০, ২১৮৪, ইরওয়া ১৮৪০, আবূ দাঊদ ৩০৮৩, সহীহ আল জামি ২৭০৯, সহীহ আবী দাউদ ১৮১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পরন্তু প্রেম হল ধূপের মত; যাতে সুবাসের আমেজ থাকলেও তার সূত্রপাত হয় জবলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে। তাই প্রেমে পড়ে আগা-পিছা চিন্তা না করে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচন করায় ঠকতে হয় অধিকাংশে।

ছেলের বয়স হলেও সত্বর বিবাহ দেওয়া অভিভাবকের কর্তব্য। ছেলেকে ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। ছেলে ‘বিয়ে করব না’ বললেও তারা কর্তব্যে পিছপা হবে না। কারণ, ‘‘পুরুষের একটা বয়স আছে; যখন নারী-নেশা গোপনে মনকে পেয়ে বসে। অবস্থার চাপে সে বিয়ে করবে না বললেও, সত্যি সত্যি ‘না’ করলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নারী-সান্নিধ্যের কথা পরের মুখ দিয়ে শুনতেও মন্দ লাগে না। মন বলে, ‘চাই চাই’, মুখ বলে, ‘চাইনে।’’ অবস্থা এই হলে তার বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকেও সে রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক সতর্ক হলে পাপ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।

পক্ষান্তরে অভিভাবক যদি যুবককে বিয়েতে বাধা দেয় অথবা দ্বীনদার সুপাত্রীকে বিয়ে করতে না দিয়ে তার কোন আত্মীয় অপাত্রীকে বউ করে আনতে চায় অথবা পণে পছন্দ না হয়ে বিয়েতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেই যায় তবে সে ক্ষেত্রে মা-বাপের অবাধ্য হওয়া পাপ নয়। ব্যভিচারের ভয় হলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বাধ্য হওয়াই মুসলিম যুবকের উচিৎ।

তবে নিছক কারো প্রেমে পড়ে সুপাত্রী দ্বীনদার যুবতী ছেড়ে মা-বাপের কথা না মেনে নিজের ইচ্ছামত অপাত্রী বিবাহ করা বা ‘লাভ ম্যারেজ’ করায় পিতামাতার তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ যাতে রাজী, তাতে মা-বাপ বা সাতগুষ্ঠি রাজী না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে যাতে আল্লাহ রাজী নন, তাতে মা-বাপ ও চৌদ্দগুষ্ঠিকে রাজী করা যুবকের আত্মীয় ও মাতৃপিতৃভক্তি নয় বরং প্রবৃত্তি ও আত্মতৃপ্তির পরিচয়।

কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী বা পাত্রীপক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তাঁর দ্বীনদার বান্দা-বান্দীকে সঠিক পথ নির্দেশ করেন। (সহীহ নাসাঈ, আল্লামা আলবানী ৩০৫০নং)।

পাত্র-পাত্রী পছন্দ এবং বাগদানের পর তাদের আপোসের মধ্যে আসা-যাওয়া, পত্রালাপ, টেলিফোনে দূরালাপ, একান্তে ভ্রমণ, একে অপরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য অবাধ মিলামিশা, কোর্ট্শিপ বা ইউরোপীয় প্রথায় তাদের আপোসের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া প্রভৃতি ইসলামে বৈধ নয়। ‘বিয়ে তো হবেই’ মনে ক’রে বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বাগদত্তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার, নির্জনতা অবলম্বন, একাকী কুরআন শিক্ষা দেওয়া প্রভৃতিও হারাম। (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২৬/১৩৬)।

অবশ্য বিবাহ আক্দ সম্পন্ন হয়ে থাকলে তার সাথে (সারার পূর্বেও) স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে এবং কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি দিতে পারে। সমাজে তা নিন্দনীয় হলেও শরীয়তে নিন্দনীয় নয়। (ফাতাওয়া উসাইমীনঃ২/৭৪৮)।

বিবাহের সময় মেয়ের দ্বীনদারী দেখা

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ গোটা দুনিয়াই হলো সম্পদ। আর দুনিয়ার মধ্যে পুণ্যবতী স্ত্রীলোকের চেয়ে অধিক উত্তম কোন সম্পদ নাই। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৫৫, মুসলিম ১৪৬৭, নাসায়ী ৩২৩২, আহমাদ ৬৫৩১, যঈফাহ ৫১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৪টি বিশেষ গুণের অধিকারী মেয়েকে বিয়ের জন্য পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে বলেছেন।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৯০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৬৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭১৯, বুলগুল মারাম-৯৭১, নাসায়ী ৩২৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৫৮, আহমাদ ৯২৩৭, ৯৫২৬, দারেমী ২১৭০।) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

যে সব কারণে একজন পুরুষ বিশেষ একটি মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করার জন্য উৎসাহিত ও আগ্রহান্বিত হতে পারে তা হচ্ছে চারটি। (১) সৌন্দর্য (২) সম্পদ (৩) বংশ (৪) দীনদারী। এ গুণ চতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে দীনদারী ও আদর্শবাদিতার গুণ। আর এ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হল- দীনদারীর গুণসম্পন্না কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অপর কোন গুণসম্পন্না মহিলাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়। (সুবুলুস সালাম)।

চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই থাক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী তো দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারী বিয়ে করাই উচিত নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না- কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্তুত একজন দীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভাল। (ইবনে মাজাহ, বাযযার, বাইহাকী)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- বিয়ের জন্য কোন্ ধরনের মেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না। (মুসনাদে আহমাদ)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী। (মুসনাদে আহমাদ)।

উক্ত হাদীসগুলো থেকে সে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই হাদিসে স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি খেয়াল করে কনের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ ধর্মপরায়ণতাকে সবশেষে উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু পরেই বরের সফলতা ওই গুণটির মধ্যেই নিহিত, তা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সবশেষে এ উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যঞ্জক আরও একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন। (শরহে নববি : ৩/২১২)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিবাহ করো আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গৌরব করবো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৬৩, সহীহ আবী দাউদ ১৭৮৯, আদবুয যিফাফ ১৬, ৫৩, ইরওয়াহ ১৭৮৪, যঈফাহ ২৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘সতী স্ত্রী এক সৌভাগ্যের সম্পদ; যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করে, আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে। পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। যে তোমার ওপর মানুষের হামলা চালায়। আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে না।’ (সিলসিলা সহিহা ১৮২, ইবনে হিব্বান)।

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সোনা-রূপা (মূল্যবান সম্পদ) পুঞ্জীভূত করে রাখার সমালোচনায় কুরআনের আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কিরাম বলেন, তাহলে আমরা কোন্ সম্পদ ধরে রাখবো? ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমি তা জেনে তোমাদের বলে দিবো। অতঃপর তিনি তার উটকে দ্রুত হাঁকিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত পেয়ে গেলেন। আমিও তার পিছনে পিছনে গেলাম। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল আমরা কোন্ সম্পদ সঞ্চয় করবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন অর্জন করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী জিহ্বা এবং আখেরাতের কাজে তাকে সহায়তাকারী ঈমানদার স্ত্রী। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৫৬, তিরমিযী ৩০৯৪, রওযা ১৭৯, যঈফাহ ২১৭৬, তা’লীকুর রগীব ৩/৬৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

মেয়েদের চারটি গুনের মধ্যে তিনটি গুণ নাও থাকতে পারে। তবে অবশ্যই ছোট বেলা থেকেই মেয়েকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, একটা নষ্টা মেয়ের ধনীর দুলালের সাথে বিয়ে হয়। আপততঃ দৃষ্টিতে আর্থিকভাবে সুখী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী নয়। আর এদের ঘর সংসার কচুর পাতার পানির মতো। যেকোনো সময় সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। কিন্তু একজন দ্বীনদার মেয়ে তার পিতা মাতার জন্যে যেমনি গর্ব তেমনি সে তার স্বামীর নিকট মাথার মুকুট। অতএব মেয়েকে ইহকাল ও পরকালে সুখী রাখতে চাইলে তাকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আপনি নিজে যেমন জাহান্নাম থেকে বাঁচবেন তেমনি আপনার মেয়ে ও তার পরবর্তী বংশধরও জাহান্নাম থেকে বাঁচবে।

বিবাহে বিলম্ব করা

ছেলে মেয়েদের বিলম্বে বা দেরীতে বিবাহ দেয়া যিনা/ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারন। অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা বা লিভটুগেদার তথা তাদের উভয়ের সম্মতিক্রমে একই রুমে বিবাহ বহির্ভুত স্বামী স্ত্রীর মতো বসবাস। বিশিষ্ট গবেষকগণ গবেষণা করে নাকি বের করেছেন যে, ছেলে মেয়েদের অনুরুপ বসবাসে তাদের সময় নষ্ট কম হয়, তাদের ব্রেইন সুস্থ থাকে, মনমানসিকতা ঠিক থাকে আর সে জন্যে তারা পড়াশোনা ও দৈনন্দিন কাজে আরো বেশী মনোযোগী হয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা বিবাহে তেমন আগ্রহী না। কারন বিবাহের কাজগুলো তারা অনেকের সাথেই সেরে ফেলছে। আর এটা এখন খুব সহজ। আবার দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ে লেখা পড়া করছে, ছাত্র জীবনটা অনেক বন্ধুর সাথে ওপেন সেক্স করে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে, গোপনে অনেক অবৈধ সন্তানও জন্ম দিয়েছে, অভিভাবকের অনেকে জানে আবার অনেকে জানে না, এভাবে এক সময় লেখা পড়া শেষে সরকারি একটা চাকরি পেয়ে গেলো তখন দেখা যায় অনেক ছেলে তাকে বিয়ে করার জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মেয়েটির সতীত্বের দিকে তাকায় না। বড় লোকদের টাকা আছে, সেই টাকার লোভে অনেকে বিয়ে করছে। বর্তমানে মুসলিম সমাজে এই প্রচলন ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এসবের বিরুদ্ধে কথা বললেই সে মৌলবাদি, নারী বিদ্বেষী, জঙ্গি ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এই সমস্ত ছেলে মেয়েদের অভিভাবক তারাও মুসলমান।

বিভিন্ন দেশে বিয়ের বয়স

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের বয়সের আইনি অনুমতি ছেলেদের জন্য সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২২ এবং মেয়েদের জন্য সর্বনিম্ন ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৯। তবে সৌদি আরব ও ইয়েমেনে বিয়ের জন্য কোন বয়সসীমা নির্ধারিত নেই। ছেলেদের বয়স বেশি থাকার কারণ হল মানব প্রজাতিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পরিণত হতে দুই থেকে তিন বছর বেশি সময় লাগে। এদের মধ্যে অনেক দেশে ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত বয়ঃস্বন্ধিকেই বিয়ের বয়স হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অধিকাংশ দেশেই বাবা-মায়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে ইন্দোনেশিয়া জর্দানসহ বেশ কিছু দেশে বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত বয়সের নিচেও বিয়ে করা যায়। বাংলাদেশে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ বছর এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর। ২০১৪ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশে বিয়ের বয়স ছেলেদের জন্য ১৮ এবং মেয়েদের জন্য ১৬ কে অনুমোদন দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও পরবর্তীতে তা বাতিল হয়।[১] ২০১৬ সালের ২৫শে নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার মেয়েদের জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে (পিতামাতার সম্মতি এবং আদালতের অনুমতিক্রমে) ১৮ ।বছরের নিচে বিয়ের অনুমতিসহ বিয়ের বয়স পুনরায় ১৮ বছর নির্ধারণ করে।

ইসলামে বিয়ের বয়স

কুরআনে, "বিবাহের বয়স" বয়ঃসন্ধির সাথে মিলিত হয়। ইসলামিক আইন (শরিয়া) এর বিবাহযোগ্য বয়স নেই, কারণ কোনও ন্যূনতম বয়স নেই যেখানে বয়ঃসন্ধি ঘটতে পারে। সুতরাং বয়স প্রতিটি পৃথক পৃথক এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন সময়ের মধ্যে বৈকল্পিক হতে পারে।

আল্লাহ্তা‘আলার কালাম ‘‘এবং যারা ঋতুমতী হয়নি’’-(সূরাহ আত-ত্বলাকঃ৪) এই আয়াতকে দলীল হিসাবে ধরে নাবালেগার ইদ্দাত তিন মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর এবং নয় বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর ঘর করেন এবং তিনি তাঁর সান্নিধ্যে নয় বছর কাল ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৫১৩৩, ৩৮৯৪, আধুনিকপ্রকাশনী- ৪৭৫৪, ইসলামিকফাউন্ডেশন- ৪৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হিন্দু বা সনাতনঃ

হিন্দু ধর্ম সূত্রে বলা আছে যে, বয়ঃসন্ধি হওয়ার পরে মেয়েকে বিবাহ করানো উচিত।

ইসলাম বিয়ে করাকে উৎসাহিত করে

 ‘আলকামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৫, ৫০৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩২৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬,বুলগুল মারাম-৯৬৭।) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না।

অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশিঅনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪, ১৩১২২, ১৩৩১৬, নাসায়ী ৩২১৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩, বুলগুল মারাম-৯৬৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

আপনার ছেলে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তাদের দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করা আপনার ইমানি দায়িত্ব ও কর্তব্য। নতুবা তাদের গোপন যৌনচার, চাই সেটা উভয় লিঙ্গের অবৈধ মিলন হোক অথবা নিজের দৈহিক প্রশোমন এর জন্যে হস্ত মৈথুন করে হোক, সেই পাপের ভার আপনার উপরও বর্তাবে।

বিয়ের অনুষ্ঠান বা বৌভাতে যতোসব নোংরামী

আমাদের দেশে বিয়ে পড়ানোর দিনে বৌভাত বা বিয়ে যেদিন হয় তারপরে সময়  মতো বৌভাতের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।এইসব  অনুষ্ঠানে  দেখা যায়, মেয়েরা কে কতো সাজে সজ্জিত হতে পারে। কার মেয়ে বা স্ত্রী কতো সুন্দর তা খোলা মেলা ড্রেসে এই দিনে দেখা যায়। এইসব  অনুষ্ঠানে পর্দানশীলা কোনো নারী এলে বেপর্দা নারীগণ টেরা চোখে দেখে।

এছাড়া অনুষ্ঠানের দিন নাচ গানসহ যতো অনৈসলামিক নোংরামী আছে সব সেদিন দেখা যায়। সন্ধ্যার পর যুবক যুবতীদের প্রেমের আলিঙ্গন করতেও দেখা যায়। অপরিচিত কোনো সুন্দরী মেয়ে এলে বখাটে ছেলেগুলো উঠে পড়ে লেগে যায় তাকে কিভাবে নষ্ট করা যায়। অনেক প্রমাণ আছে যে, এইসব  নোংরামী অনুষ্ঠানের দিন অনেক যুবতী নারী গোপন ধর্ষনের শিকার হয়। প্রেম বিনিময় হয় এবং নতুন প্রেম গড়ে ওঠে। বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন এইসব নোংরামী ইসলাম সমর্থন করেনা। তবে বিয়ের দিন রাসুল সাঃ আনন্দ ফুর্তি ও অলিমা অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। তবে তা হতে হবে ইসলামি বিধান মোতাবেক।

দলিলঃ

রুবাই বিনত মুআব্বিয ইবনু আফরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং আমার বিছানার ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার কাছে বসে আছ। সে সময় আমাদের ছোট মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ-চাচাদের শোকগাঁথা গাচ্ছিল। তাদের একজন বলে বসল, আমাদের মধ্যে এক নবী আছেন, যিনি আগামী দিনের কথা জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা বাদ দাও, আগে যা বলছিলে, তাই বল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৪৭, ৪০০১, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে, অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হলে তারা তা করে অতি গোপনে কেউ যেন জানতে না পারে। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটি হল এর বিপরীত। এখানে দু’টি নর-নারীর মধ্যে যে বৈধ মিলন ঘটতে যাচ্ছে তা আশেপাশের লোকজনকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই জানবে ওমুক ছেলের সঙ্গে ওমুক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। দফ বা একমুখী ঢোল বাজানো যেমন আওয়াজ করে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যম, তদুপরি বিয়ের উৎসবে আনন্দের উৎস বটে। দফ বাজিয়ে ছোট ছোট বালকরা এমন গান গাইবে যা যৌনাচার বা অশ্লীলতার দিকে মানুষকে উত্তেজিত করে না। ইসলামের প্রতি প্রেরণাদায়ক এবং যুদ্ধাভিযানের বীরত্বব্যঞ্জক গৌরব গাঁথা ও গান দফ বাজিয়ে পরিবেশন করা বিয়ের মজলিসের একটি পছন্দনীয় কাজ। এতে একাধারে সকলে বিয়ের কথা জানতে পারবে, ইসলামী জীবন বিধানে উদ্বুদ্ধ হবে এবং বড় বাদ্যযন্ত্রের ভয়াবহ আওয়াজ থেকেও রক্ষা পাবে।

ওয়ালীমার যিয়াফাতঃ বিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারের দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে ওয়ালীমার যিয়াফাত করা। ওয়ালিমাহ করার নির্দেশ ও নিয়ম স্বামীর জন্য। বিবাহোত্তর এটি করতে হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে মেয়ে পক্ষকে খাবার দাবারের জন্য বিরাট অংকের টাকা খরচ করানোর নিয়ম নীতির প্রচলন রয়েছে যা সুন্নাতী বিবাহের পরিপন্থী। তবে মেয়ে পক্ষ যদি স্বেচ্ছায় ওয়ালিমার ব্যবস্থা করে তবে তা জায়িয।

নিজেদের ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের একত্রিত করা একান্তই বাঞ্ছনীয়। ইমাম তাবারানী আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে রসূল সাঃ এর নিম্নোক্ত ঘোষণা বর্ণনা করেছেন- ওয়ালীমা করা হচ্ছে একটি অধিকার, একান্তই কর্তব্য। ইসলামের স্থায়ী নীতি। অতএব যাকে এ যিয়াফাতে শরীক হওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়া হবে, সে যদি তাতে উপস্থিত না হয়, তাহলে সে নাফারমানি করল। রসূল সাঃ আব্দুর রহমান বিন আওফকে (রাঃ) ওয়ালীমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজে যয়নব বিনতে জাহাস ও সাফিয়া (রাযি.)কে বিয়ে করে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেছেন। আলী (রাযি.) যখন ফাতিমা (রাযি.) এর সাথে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন নাবী সাঃ বলেছিলেন- এ বিয়েতে ওয়ালীমা অবশ্যই করতে হবে- মুসনাদে আহমাদ। ওয়ালীমার যিয়াফাত করা স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং তা করা উচিত বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য। রসূল সাঃ বলেছেন- সেই ওয়ালীমার খানা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট যেখানে কেবল ধনী লোকদেরই দাওয়াত দেয়া হবে আর গরীব লোকদের বাদ দেয়া হবে- বুখারী, মুসলিম। বিয়ের উৎসবাদিতে স্ত্রীলোক ও শিশুদের উপস্থিত হওয়া বা করা খুবই ভাল ও পছন্দনীয়। নাবী সাঃ যয়নাব (রাযি.) এর সাথে মিলন রাত যাপনের পর সকালের দিকে লোকেদের দাওয়াত দিয়েছিলেন।

তবে বর্তমান যুগে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে যে বেপর্দা আর বেহায়াপনা লক্ষ্য করা যায় তাতে যদি মেয়েদের ওয়ালীমা খাওয়ার স্থান পৃথক করে মহিলা পরিবেশক দ্বারা খানা পরিবেশনের ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে এরূপ বিয়েতে পর্দা করা ফরয এরূপ কোন মুসলিম মেয়ে বা মহিলার উপস্থিত হওয়া উচিত হবে না। এছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে অনৈসলামিক কোন কিছু করা হলে সে বিয়ের দাওয়াত কোন মুসলিম নর ও নারীর গ্রহণ করাই জায়েয নয়। সামাজিকতার দোহাই দিয়ে বর্তমানে বহু কিছু করা হচ্ছে। অথচ ইসলামী বিধান ও নীতি মেনে চলাই হচ্ছে মুসলিম সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য।

অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

অভিভাবক নিজে দ্বীনদার হলে কখনই তিনি তার ছেলে-মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসব নোংরামী কার্যকলাপ হতে দিবেন না। এজন্যে প্রথমে নিজেকে ইসলামি আদর্শে আদর্শিত হতে হবে। সেই সাথে পরিবারের সদস্যদেরকে ছোট বেলা থেকেই ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুললে সে নিজ থেকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকবে। ইসলামি মাইন্ডেড কোনো পর্দানশীলা নারী কখনই পরপরেুষের ডাকে সাড়া দিবে না। তার সতীত্ব সে নিজেই রক্ষা করে চলবে। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে ছেলে-মেয়েদেরকে ইসলামি শিক্ষা দেয়া এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন উভয় পক্ষ বসে সিদ্ধান্ত নেয়া যে, ইসলামি বিধান মোতাবেক বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন করা। এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীনদার পরিবার দেখে ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিলে অটোমেটিক এসব কাজ বন্ধ থাকবে। তাই সিদ্ধান্ত আপনার।

ব্যভিচারিনী/পতিতা/বেশ্যা/অসতী নারীকে কোনো মুমিন পুরুষের বিয়ে করা নিষিদ্ধ

কোন মুসলিম কোন ব্যভিচারিণী নারীকে বিবাহ করতে পারে না। বরং ঐ ব্যাপারে ঐরূপ নারী মনোমুগ্ধকর সুন্দরী রুপের ডালি বা ডানা কাটা পরি হলেও মুসলিম পুরুষের তাতে রুচি হওয়াই উচিৎ নয়। একান্ত প্রেমের নেশায় নেশাগ্রস্থ হলেও তাকে সহধর্মিণী করা হারাম।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক বলেন,

“ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা অংশীবাদিনীকে এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা অংশীবাদী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। আর মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হল।”(নূরঃ ৩)।

আমর ইবনু শু‘আইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। মারসাদ ইবনু আবূ মারসাদ আল-গানবী (রাযি.) মক্কা থেকে বন্দীদেরকে বহন করতেন। সে সময় মক্কাতে ‘আনাক’ নাস্মী নামক এক ব্যভিচারিনী ছিলো। সে ছিলো মারসাদের বান্ধবী। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি ‘আনাক’ কে বিয়ে করবো? মারসাদ (রাযি.) বলেন, তিনি চুপ থাকলেন। অতঃপর আয়াত অবতীর্ণ হলো।’ ব্যভিচারিনীকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে করবে না। (সূরা আন-নূরঃ ৩)। তিনি আমাকে ডেকে এনে আয়াতটি শুনান এবং বলেনঃ তুমি তাকে বিয়ে করো না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০৫১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তরাং অসতী নারী মুশরিকের উপযুক্ত; মুসলিমের নয়। কারণ উভয়েই অংশীবাদী; এ পতির প্রেমে উপপতিকে অংশীস্থাপন করে ও করে একক মা’বুদের ইবাদতে অন্য বাতিল মাবুদকে শরীক। (অবশ্য অসতী হলেও কোন মুশরিকের সাথে কোন মুসলিম নারীর বিবাহ বৈধ নয়।)

পক্ষান্তরে ব্যভিচারিনী যদি তওবা করে প্রকৃত মুসলিম নারী হয়, তাহলে এক মাসিক অপেক্ষার পর তবেই তাকে বিবাহ করা বৈধ হতে পারে। গর্ভ হলে গর্ভাবস্থায় বিবাহ বন্ধন শুদ্ধ নয়। প্রসবের পরই বিবাহ হতে হবে। ৫৫১ (ইউঃ ২/৭৮০)।

অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে কোন মেয়েকে গর্ভবতী করার পর গর্ভাবস্থায় তাকে বিয়ে করা

বিবাহপূর্ব বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যকার যেকোন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম (ইসরা ১৭/৩২)। অনুরূপভাবে গর্ভাবস্থায় নারীকে বিবাহ করা নাজায়েয, যতক্ষণ না সে সন্তান জন্ম দেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে মিলিত হওয়া যাবে না। (আবূদাউদ হা/২১৫৭; মিশকাত হা/ ৩৩৩৮; ছহীহুল জামে হা/৭৪৭৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১১০)।

সুতরাং এই বিবাহের পদ্ধতি সঠিক নয়। তবে যেহেতু গর্ভের সন্তানটি যিনার সন্তান এবং তা বিবাহকারীর নিজের, সেজন্য এখানে নতুন বিবাহের প্রয়োজন নেই বলে অধিকাংশ বিদ্বান মত প্রকাশ করেছেন (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১৩০; হাশিয়াহ ইবনু আবেদীন ৩/৪৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৯/৩৩৮)।

উল্লেখ্য যে, এই বিবাহপূর্ব সন্তান মাতার দিকে সম্বন্ধিত হবে এবং সে পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২২৬৫; সুনান ইবনু মাজাহ হা/২৭৪৬; সনদ হাসান; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৩৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 

একজনের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা

আমাদের বর্তমান সমাজে বউ পালিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখে মনে হচ্ছে  বিবাহিত নারী পুরুষগণ তাদের নিজ নিজ স্বামী স্ত্রীতে সন্তুষ্ট নয়। পত্রিকা বা ইন্টারনেট খুললেই প্রতিনিয়ত দেখা যায়, অমুকের নব বিবাহিত স্ত্রী বা দুই সন্তানের জননী বা প্রবাসীর স্ত্রী কিংবা এক বন্ধু আরেক বন্ধুর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়েছে। এই ধরণের সম্পর্ককে বলে পরকিয়া প্রেম। এই পরকিয়া প্রেমে আসক্ত নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যভিচারে লিপ্ত। একদিকে অন্যের স্ত্রীকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করা যেমন হারাম তেমনি ব্যভিচারের দায়ে তাদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মহান আল্লাহ যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম বলেছেন, তার মধ্যে একজন হলো বিবাহিত মহিলা, যে কোন স্বামীর বিবাহ বন্ধনে বর্তমানে সংসার করছে এবং তালাক হয়নি। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এ হল আল্লাহ্‌র বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ব্যাতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল; এই শর্তে যে, তোমরা তাঁদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।” (নিসাঃ ২৪)।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

তেমনি কোন বিবাহিত স্বামীওয়ালী সধবা মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তার তালাক হয়েছে অথবা তার স্বামী মারা গেছে এবং তার নির্ধারিত ইদ্দত কাল অতিবাহিত হয়েছে।

যিনাকারী/ব্যভিচারীর শাস্তি

ইহকালীন শাস্তি

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা আন নূর ২৪:২)।

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার নিকট হতে তোমরা জেনে নাও। তাদের (যিনাকারীদের) জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটি রাস্তা (ব্যবস্থা) করে দিয়েছেন। বিবাহিত পুরুষ ও স্ত্রীলোক পরস্পর যিনা করলে তাদের প্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হবে, তারপর পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। অবিবাহিত পুরুষ বা স্ত্রীলোক যিনা করলে তাদের প্র্রত্যেককে একশত ঘা চাবুক মারতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসনে পাঠাতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৩০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯০, তিরমিযী ১৪৩৪, ১৪৫১, আবূ দাউদ ৪৪১৫, আহমাদ ২২১৫৮, ২২১৯৫, ২২২০৮, ২২২২৩, ২২২৭৪, দারেমী ২৩২৭, ইরওয়া ২৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

পাথর মেরে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করতে হবে

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন: নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আর তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়াদির একটি ছিল রজমের আয়াত। আমরা সে আয়াত পড়েছি, বুঝেছি, আয়ত্ত করেছি। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর মেরে হত্যা করেছেন। আমরাও তাঁর পরে পাথর মেরে হত্যা করেছি। আমি আশংকা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর কোন লোক এ কথা বলে ফেলতে পারে যে, আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর কিতাবে পাথর মেরে হত্যার আয়াত পাচ্ছি না। ফলে তারা এমন একটি ফর্য ত্যাগের কারণে পথভ্রষ্ট হবে, যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির উপর পাথর মেরে হত্যা অবধারিত যে বিবাহিত হবার পর যিনা করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে অথবা গর্ভ বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, তিরমিযী ১৪৩১, ১৪৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪১৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, দারেমী ২৩২২, বুলগুলমারাম ১২০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৮২৯, ৬৮৩০, ৭৩২৩, আহমাদ ১৫৫, ১৯৮, ২৫১, ২৭৮, ৩০১, ৩৩৩, ৩৫৪, ৩৯৩, মুয়াত্তা মালেক ১৫২০, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২১৩, আল-হাকিম ফিল মুসতাদরাক ৪/৩৫৭, ইরওয়া ২৩৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

আবদুল মালিক ইবনু শু'আয়ব ইবনু লায়স ইবনু সা'দ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) বরাতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলো। তখন তিনি মসজিদে বসে ছিলেন। সে তখন উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে লোকটি তার (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) চেহারার দিকে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করল। এরপর সে যখন চারবার নিজের উপর সাক্ষ্য দিল, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং বললেন, তোমার মধ্যে কি পাগলামী আছে? সে বলল, না। তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যাঁ। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর।

ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে যিনি হাদীস শ্রবণ করেছেন তিনি আমার কাছে বলেন যে, জাবির (রাযিঃ) বলেছেন, পাথর নিক্ষেপকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা তখন তাকে (ঈদের) সালাত পড়ার স্থানে পাথর নিক্ষেপ করলাম। যখন তার উপর পাথর পড়তে লাগল তখন সে পলায়ন করল। আমরা তাকে 'হাররা' নামক স্থানে ধরে ফেললাম এবং পাথর মেরে হত্যা করলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি

 “যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৭, মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(ক)  তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(খ)  তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(গ)  তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(ক) সে আল্লাহর অসন্তোষ,

(খ) কঠিন হিসাব ও

(গ) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)।

বৃদ্ধ যিনাকারীর শাস্তি

বাধ্যর্কে উপনীত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তবে তার শাস্তি আরো কঠোর ও নির্মম হবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন প্রকার মানুষ আছে, কিয়ামতের দিন যাদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করবেন না। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আর তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন। তারা হচ্ছে- বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী গরীব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১০৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭, সহীহুল জামি ৫৩৮০, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৯৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৮৫, মুসনাদুল বাযযার ৪০২৩, আহমাদ ১০২২৭, শু‘আবুল ঈমান ৫৪০৫, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৯২৮, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৬৬৪, আস্ সুনানুল কুবরা ১৭০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯৭, ইসলামিক সেন্টার ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী’ (আত-তারগীব হা/৩৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

যিনা/ব্যভিচারিনীর দোয়া কবুল হয় না

ওছমান ইবনে আবিল আছ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘অর্ধরাতে আকাশের দরজা খোলা হয়। তখন আল্লাহ আহ্বান করে বলেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে কি তার প্রার্থনা কবুল করা হবে? কোন সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তি আছে কি তাকে সাহায্য করা হবে? কোন সংকটে নিমজ্জিত ব্যক্তি আছে কি তার সংকট দূর করা হবে? এ সময় কোন মুসলমান দোআ করলে তার দো‘আ কবুল করা হয়। তবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত যে নারী তার প্রার্থনা কবুল হয় না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর মাখলূকের পাশে থাকেন। যে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করেন। তবে যে নারী অশ্লীল কাজে লিপ্ত তাকে ক্ষমা করেন না। (আহমাদ, আত-তারগীব হা/৩৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

কোনো মুসলিমের সাথে কোনো অমুসলিমের বিবাহ  বৈধ  কিনা

কোনো মুসলিম মহিলার কোনো অমুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ বৈধ নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন,

“অংশীবাদী রমণী যে পর্যন্ত না (ইসলাম ধর্মে) বিশ্বাস করে, তোমরা তাঁদেরকে বিবাহ করোনা। অংশীবাদী নারী তোমাদেরকে চমৎকৃত করলেও নিশ্চয় (ইসলাম ধর্মে) বিশ্বাসী ক্রীতদাসী তার থেকেও উত্তম। (ইসলাম ধর্মে)বিশ্বাস না করা পর্যন্ত অংশীবাদী পুরুষের সাথে (তোমাদের কন্যার) বিবাহ না। অংশীবাদী পুরুষ তোমাদেরকে চমৎকৃত করলেও (ইসলাম ধর্মে)বিশ্বাসী ক্রীতদাস তার থেকেও উত্তম। কারণ, ওরা তোমাদের আগুনের দিকে আহবান করে এবং আল্লাহ তোমাদের স্বীয় ইচ্ছায় বেহেশত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন। তিনি মানুষের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।” (বাকারাহঃ ২২১)।

“হে বিশ্বাসীগন! তোমাদের নিকট বিশ্বাসী নারীরা দেশ ত্যাগ করে আসলে, তোমরা তাঁদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান (বিশ্বাস) সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জানতে পার যে, তারা বিশ্বাসিনী, তবে তাঁদেরকে অবিশ্বাসীদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ো না। বিশ্বাসী নারীরা অবিশ্বাসীদের জন্য বৈধ নয়। অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসী নারীদের জন্য বৈধ নয়। অবিশ্বাসীরা যা ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। অতঃপর তোমরা তাদেকে বিবাহ করলে তোমাদের কোন অপরাধ হবে না; যদি তোমরা তাঁদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও। তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ, তা ফেরত চেয়ে নাও এবং অবিশ্বাসীরা ফেরত চেয়ে নিক, যা তারা ব্যয় করেছে। এটাই আল্লাহ্র ফয়সালা। তিনি তোমদের মধ্যে ফয়সালা করেছেন। আর আল্লাহ্র সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (মুমতাহিনাহঃ ১০)।

বলা বাহুল্য, ইসলাম গ্রহণ করলেও তার সাথে মুসলিম মহিলার বিবাহ বৈধ।

অনুরূপ কোন মুসলিম পুরুষও কোন অমুসলিম মহিলাকে বিবাহ করতে পারে না। অবশ্য কিছু শর্তের সাথে কেবল ইয়াহুদী-খ্রিস্টান মহিলাকে বিবাহ করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

“বিশ্বাসী সচ্চরিত্রা নারীগণ ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীগণ (তোমাদের জন্য বৈধ করা হল); যদি তোমরা তাঁদেরকে মোহর প্রদান করে বিবাহ কর, প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা উপপত্নীরূপে গ্রহণ করার জন্য নয়।”(মায়িদাহঃ ৫)।

কিন্তু কোনো মুসলিম মহিলা কোনো ইয়াহুদি-খ্রিস্টান পুরুষকে বিবাহ করতে পারে না। কারণ মুসলিমরা তাদের নবীর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু তারা মুসলিমদের নবীর প্রতি ঈমান রাখে না।

বিবাহিত পুরুষ কোনো নারীকে দেখে কামভাব জাগ্রত হলে নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে নেয়া

(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ভিন্ন পুরুষের জন্য) যার সঙ্গে বিবাহ বৈধ এমন নারীর আগমন-প্রত্যাগমন শায়ত্বনরূপী। যখন তোমাদের কারো নিকট কোনো নারী ভালো লাগে (বা তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে) এবং তোমাদের কারো হৃদয়ে চাঞ্চল্যের (কামভাব) সৃষ্টি হয়, তখন সে যেন নিজ স্ত্রীর নিকট গমন করে সহবাস করে নেয়। এটা তার অন্তরের সব অবস্থা দূর করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৩, আহমাদ ১৪৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা নারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ হওয়ায় (তাঁর মনে তা প্রভাব পড়ায়) তিনি তৎক্ষণাৎ স্বীয় স্ত্রী সাওদাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। ঐ সময়ে সাওদাহ্ (রাঃ) সুগন্ধি প্রস্তুত করছিলেন এবং তাঁর কাছে কয়েকজন নারী বসে ছিল। তারা রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে সাওদাহ্ (রাঃ)-কে একাকী ছেড়ে চলে গেল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ চাহিদা পূরণ করলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন যে, অপর নারী দর্শনে কোনো পুরুষের হৃদয়ে চাঞ্চল্যের (কামভাবের) সৃষ্টি হলে সে যেন স্বীয় স্ত্রীর নিকট যায়। কেননা ঐ নারীর সদৃশ তার (প্রত্যেক) স্ত্রীর নিকটও আছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১০৮, দারিমী ২২৬১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan।

স্ত্রীর মাসিক চলাকালীন ও স্ত্রীর পায়ু পথে সহবাস নিষিদ্ধ

এ বিষয়টি এখানে আলোচনা করার উদ্দেশ্য হলো, অধিকাংশ নবদম্পত্তি মাসিক চলাকালীন সহবাসে লিপ্ত হয় এবং অনেকে উত্তেজনাবশতঃ স্ত্রীর পায়ু পথ ব্যবহার করে থাকে। এভাবে সহবাস করা যে গুণাহ তা অনেকেই জানে না। আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয়- ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)। তাই সামনের দিক হতে বা পিছন দিক হতে সহবাস কর; কিন্তু গুহ্যদ্বার (মলদ্বার) ও ঋতুবতী (মাসিক থাকাকালীন) হতে বিরত থাক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৫,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৫, সুনান আবূ দাউদ ২১৬৩,  আহমাদ ২৭০৩, সহীহ আল জামি ১১৪১, দারেমী ১১৩২, ২২১৪, ইরওয়াহ ৭/৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.)-কে ক্ষমা করুন, তিনি ভুল করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, আনসারদের এই জনপদের লোকেরা মূর্তিপূজারী ছিলো। তারা আহলে কিতাব ইয়াহুদীদের সাথে বসবাস করতো এবং ইয়াহুদীরা জ্ঞানের দিক দিয়ে মূর্তিপূজারীদের উপর নিজেদের মর্যাদা দিতো। সুতরাং তারা নিজেদের কাজকর্মে ইয়াহুদীদের অনুসারী ছিলো। আহলে কিতাবদের নিয়ম ছিলো, তারা স্ত্রীদেরকে কেবল চিৎ করে শুইয়ে সঙ্গম করতো এবং বলতো, মহিলাদের সতর এ নিয়মে অধিক সংরক্ষিত। আনসার সম্প্রদায়ও তাদের এ কাজে আহলে কিতাবদের নিয়ম অনুসরণ করতো। কিন্তু কুরাইশরা নারীদেরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে সঙ্গম করতো এবং তাদেরকে সামনাসামনি, পেছনের দিকে এবং চিৎ করে শুইয়ে বিভিন্নভাবে সঙ্গম করতো।

অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মদীনাহয় আসলেন তখন তাদের এক ব্যক্তি জনৈক আনাসারী নারীকে বিয়ে করে তার সাথে ঐভাবে সঙ্গম করতে চাইলো যেভাবে তারা মক্কার নারীদের সাথে করতো। কিন্তু মহিলাটি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা শুধু এক অবস্থায়ই সঙ্গম করি। সুতরাং তোমাকেও সেভাবেই সঙ্গম করতে হবে অন্যথায় আমার থেকে দূরে থাকো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা করো তোমাদের ক্ষেতে গমন করো।’’অর্থাৎ সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে বা চিৎ করে শুইয়ে তার লজ্জাস্থানেই সঙ্গম করো (পায়ু পথে নয়)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৪)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সত্য প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন না, তোমরা তোমাদের স্ত্রীগণের গুহ্যদ্বারে সহবাস করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯২,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৪, দারিমী ১১৪৪, ১১৮১,  আহমাদ ২১৮৬৫, ২১৩৪৩, ২১৩৬৭,  সহীহ আল জামি ১৮৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২৭, ইরওয়া ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ লোক অভিশপ্ত, যে তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২, আহমাদ ৯৭৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে আল্লাহ তার প্রতি (রহমত, করুণা নিয়ে) দৃষ্টিপাত করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৪, আহমাদ ৭৬৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২২৯৭, ইবনু মাজাহ ১৯২৩, আবূ দাউদ ২১৬২, সহীহ আল জামি ১৬৯১, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৯১, আহমাদ ৭৬২৭, ৮৩২৭, ৯৪৪০, ৯৮৫০, দারেমী ১১৪০, বায়হাকী ৭/৭৩৪, আদাবুয যিফাফ ৩০, সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(চ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি (রহমত ও করুণার) দৃষ্টিপাত করেন না, যে কোনো পুরুষের সাথে সহবাস করে অথবা নারীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ছ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফ্ফারাহ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কিত বর্ণিত, যে হায়িয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করেছে। তিনি বলেনঃ সে এক অথবা অর্ধ দীনার সাদাকাহ করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৮, ২১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সমকামিতা বা পায়ুপথ ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(ক) পুংমৈথুনের অর্থ হলো: সমকামিতা ও পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া। এই কুকর্ম ঘটে থাকে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে জ্ঞান বুদ্ধির অভাব রয়েছে এবং যাদের মধ্যে ধর্মের প্রভাব কম রয়েছে। পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার মধ্যে কুফলও খুব বেশি রয়েছে। তাই এই ঘৃণিত কুকর্মের কারণে সৃষ্টি হয় রোগ, ব্যাধি এবং মহামারী। এবং এর মাধ্যমে চারিত্রিক, সামাজিক এবং দৈহিক ক্ষতির প্রভাবও খুব কম নয়। তাই সর্বদিক দিয়ে এই অপকর্মটিকে নিকৃষ্ট, ঘৃণিত এবং স্বাভাবিক মানবতা বিরোধী অশ্লীল আচরণ বলেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে গণ্য করা হয়। তাই লূতের সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অশ্লীল যৌনসঙ্গম ছড়িয়ে পড়ার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:

“অতঃপর যখন পুংমৈথুনকারীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার আদেশ এসেছিলো, তখন আমি তাদের জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিয়েছিলাম এবং ক্রমাগত তাদের উপরে পাথুরে মাটি বর্ষণ করেছিলাম”। (সূরা হূদ, আয়াত নং ৮২)।

(খ) পুংমৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম একই প্রকারের পাপী বলে গণ্য করে। তাই উভয়েরই একই শাস্তি, আর তা হলো উভয়কে হত্যা করা। এই বিষয়ে সমস্ত সাহাবী এক মত, তাই এই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তবে কি পদ্ধতিতে তাদেরকে হত্যা করতে হবে, এই বিষয়ে মুসলিম শাসক বা তাঁর প্রতিনিধি যে পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তিনি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে তাদের শিরচ্ছেদ করতে পারেন। অথবা তাদের উভয়ের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। কিংবা তাদেরকে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদের উপরে দেয়াল ইত্যাদি ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন।

তবে যে ব্যক্তিকে বলপূর্বক পুরুষের সাথে পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত করা হবে, সে ব্যক্তিকে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। অনুরূপভাবে পাগল ও নাবালকদেরকেও পুংমৈথুন করার কারণে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। কিন্তু পাগল ও নাবালকদেরকে পুংমৈথুন করার কারণে কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দিতে হবে। 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৭,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া

এ হল লজ্জাশীলতার পরিচয়। পরন্ত শরীয়তে তা হারাম নয়। অর্থাৎ রুম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। স্বামী স্ত্রী একে অন্যের লেবাস। উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

(সফল মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী। (মুমিনূনঃ ৫-৬, মাআরিজঃ ২৯-৩১)”।

মুয়াবিয়াহ আল কুশাইরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের লজ্জাস্থানের কতখানি ঢেকে রাখবো, আর কতখানি খুলে রাখবো? তিনি বলেনঃ তোমার লজ্জাস্থান আপন স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হেফাজত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার অভিমত কী যে, লোকেরা যদি একত্রে বসবাস করে? তিনি বলেনঃ যদি তুমি তা কাউকে না দেখিয়ে পারো, তবে অবশ্যই তা দেখাবে না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নির্জন থাকে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ অধিক অগ্রগণ্য যে, মানুষের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি লজ্জাশীল হতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৬৯, ২৭৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৭,  আদাবুয যিফাফ ৩৬ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুতরাং উভয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে কোন দোষ নেই। (ইবনে উষাইমীন)।

সহবাসের সময় পরনারী-পুরুষকে কল্পনা করা এক প্রকার ব্যভিচার

এই শ্রেণির কল্পিত পরপুরুষ বা পরস্ত্রীর সহবাস এক প্রকার ব্যভিচার। সহবাসের সময় স্ত্রীর জন্য বৈধ নয় অন্য কোন সুন্দর অন্য সুস্বাস্থ্যবান পুরুষকে কল্পনা করা এবং স্বামীর জন্যও বৈধ নয় অন্য সুন্দরী সুস্বাস্থ্যবতী যুবতীকে কল্পনা করা। বৈধ নয়, পরপুরুষ বা পরস্ত্রীর নাম নিয়ে উভয়ের তৃপ্তি নেওয়া অথবা উত্তেজনা বৃদ্ধি করা। মনে মনে যাকে ভালবাসে, তার সাথে মিলন করছে খেয়াল করা। উলামাগন বলেন, “ যদি কেউ এক গ্লাস পানি মুখে নিয়েও কল্পনা করে যে, সে মদ খাচ্ছে, তাহলে তা পান করা হারাম।” (মাদখাল ২/১৯৪, ফুরু ৩/৫১, ত্বারহুত তাষবীর ২/১৯)।

স্বামী-স্ত্রী উলঙ্গ হয়ে ঘুমানো যাবে কিনা

লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়। পর্দার ভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের সময় বা প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের সময় লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ওয়াজেব। নাবি (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, ‘ হে আল্লহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।” (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৬৯, ২৭৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৭,  আদাবুয যিফাফ ৩৬ নং পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এখানে “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর--এর মানে এই নয় যে, স্ত্রী ও ক্রীতদাসীর কাছে সর্বদা নগ্ন থাকা যাবে। উদ্দেশ্য হল, তাদের মিলনের সময় অথবা অন্য প্রয়োজনে লজ্জাস্থান খোলা যাবে, অপ্রয়োজনে নয়।

তাছাড়া উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমালে আকস্মিক বিপদের সময় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়।

স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধ সময়

দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ নয়।

(ক) স্ত্রীর মাসিক অথবা প্রসবোত্তর খুন থাকা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ বর্জন কর এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)।

 (খ) রমযানের দিনের বেলায় রোযা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (বাকারাহঃ ১৮৭)।

আর বিদিত যে, রমযানের রোযা অবস্থায় সঙ্গম করলে যথারীতি তার কাফফারা আছে। একটানা দুইমাস রোযা রাখতে হবে, নচেৎ অক্ষম হলে ষাট জন মিসকীন খাওয়াতে হবে।

(গ) হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।” (বাকারাহঃ ১৯৭)।

এ ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে সহবাস বৈধ। (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)।

যে স্ত্রী স্বামীকে কষ্ট দেয়

মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার আয়তালোচনা হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকেঃ ওহে! আল্লাহ্ তোমার সর্বনাশ করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার নিকট অল্প দিনের মেহমান। অচিরেই সে তোমাকে ত্যাগ করে আমাদের নিকট চলে আসবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০১৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৪, সহীহা ১৭৩, আদাবুল যিফাফ ১৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

স্ত্রীদের প্রহার করা নিকৃষ্ট কাজ

(ক) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যাম‘আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন, অতঃপর মহিলাদের উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে লোকজনকে উপদেশ দিলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ কেন তার স্ত্রীকে দাসীর মত বেত্রাঘাত করে? অথচ দিনের শেষেই সে আবার তার শয্যাসঙ্গী হয়! (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৩, সহীহুল বুখারী ৪৯৪২, ৫২০৪, মুসলিম ২৮৫৫, তিরমিযী ৩৩৪৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০, গায়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯, ইরওয়াহ ২০৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৪, সহীহুল বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, মুসলিম ২৩২৮, আবূ দাউদ ৪৭৮৫, ৪৭৮৬, আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪৩০৯, ২৪৪৬৪, ২৫৪২৫, ২৭৬৫৮, মুয়াত্তা মালেক ১৬৭১, দারেমী ২২১৮, গয়াতুল মারাম ২৫২, মুখতাসার শামাইল ২৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইয়াস ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর দাসীদের প্রহার করো না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! নারীরা তো তাদের স্বামীদের অবাধ্যাচরণ করছে। তিনি তাদেরকে মারার অনুমতি দিলেন এবং তারা প্রহৃত হলো। পরে অনেক নারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাড়িতে সমবেত হলো। সকাল বেলা তিনি বলেনঃ ‘‘আজ রাতে মুহাম্মাদের পরিবারে সত্তরজন মহিলা এসে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তোমরা মারপিটকারীদেরকে তোমাদের মধ্যে উত্তম হিসাবে পাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪৬, দারেমী ২২১৯, গায়াতুল মারাম ২৫১, সহীহ আবী দাউদ ১৮৬৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

স্বামী সহবাসের পর গোসল করার পূর্বে মহিলার জন্য ঘর সংসারের কাজকর্ম ও রান্না-বান্না করা

স্বামী সহবাসের পর গোসল করার পূর্বে মহিলার জন্য ঘর সংসারের কাজকর্ম ও রান্না-বান্না করা অবৈধ নয়। যা অবৈধ, তা হল, নামায, কা’বা-ঘরের তওয়াফ, মসজিদে অবস্থান, কুরআন স্পর্শ ও তিলাওয়াত। এ ছাড়া অন্যান্য কাজ বৈধ।

যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার মদীনার কোন এক রাস্তায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি (আবূ হুরাইরাহ) তখন (জানাবাত) অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। এ কারণে তিনি আস্তে করে পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং গোসল করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খোঁজ করলেন। যখন তিনি আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আবূ হুরাইরাহ তুমি কোথায় ছিলে"? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্রাবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার মাজলিসে বসা ভাল মনে করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুবহানাল্লাহ! মুমিন তো অপবিত্র হয় না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ মুসলিম অভ্যান্তরিকভাবে অপবিত্র হলেও বাহ্যিকভাবে সে অপবিত্র হয় না বা অস্পৃশ্য হয়ে যায় না।

ফরজ গোসলের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সাংসারিক কাজ কর্ম করতে পারবে তবে নাপাকী ধুয়ে ফেলে অযু করে নিতে হবে।

হিল্লা বা হালালা বিবাহ বৈধ কি?

মানব জীবনে পারিবারিক বন্ধন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে এই পরিবার গড়ে ওঠে। বিবাহের মাধ্যমেই এ সম্পর্কের সূত্রপাত। আবার কখনো যদি সম্পর্কের টানাপোড়নে একত্রে বসবাস সম্ভব না হয়, তাহ’লে তালাকের মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি ঘটে।

কুরআন ও হাদিসে তালাকঃ

ইসলাম নারী-পুরুষের বিবাহকে একটি পবিত্র বন্ধন মনে করে। এই বন্ধনের পবিত্রতা ও শুদ্ধতার উপর তাদের ভবিষ্যৎ বংশধারার পবিত্রতা নির্ভর করে। এর ভিত্তিতেই তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ণীত হয়। তাই এহেন বন্ধনকে ছিন্ন করা ইসলাম পসন্দ করে না। ইসলাম কেবল অনন্যোপায় অবস্থায় তালাক বৈধ করেছে।

তালাক দান কালে স্বামীকে সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাধীন হ’তে হবে। পাগল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অন্য কর্তৃক বল প্রয়োগের ফলে প্রদত্ত তালাক কার্যকর হবে না। (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০০-২০১)।

এখন তালাক কিভাবে দিলে শরী‘আতসম্মত হবে তা আমাদের দেখতে হবে। স্ত্রীর কারণে যদি তালাকের পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তবে সূরা নিসার ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াত অনুসারে কাজ করা ভাল। আল্লাহ বলেন,

‘পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দান করেছেন এবং এজন্য যে, তারা (নারীদের ভরণ-পোষণের জন্য) তাদের মাল-সম্পদ হ’তে ব্যয় করে থাকে। অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে। আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহ’লে তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোচ্চ ও মহীয়ান...। আর যদি তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশংকা কর, তাহ’লে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন শালিস নিযুক্ত কর। যদি তারা উভয়ে মীমাংসা চায়, তাহ’লে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে (সম্প্রীতির) তাওফীক দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও ভিতর-বাহির সবকিছু অবহিত’। (নিসা ৪/৩৪-৩৫)।

উভয়ের মধ্যে আপোষ হ’লে ভাল, নচেৎ তালাকের প্রশ্ন দেখা দেবে। স্বামী তখন তালাক দিতে চাইলে সূরা বাক্বারার ২২৯ আয়াত, সূরা তালাকের ১ ও ২ আয়াত এবং ইবনু ওমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর স্ত্রীকে যেভাবে তালাক দিতে বলেছিলেন ঐ নিয়ম মেনে তালাক দেবে। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘তালাক হবে দু’বার। অতঃপর হয় তাকে ন্যায়ানুগভাবে রেখে দিবে, নয় সদাচরণের সাথে পরিত্যাগ করবে। আর তাদেরকে তোমরা যা কিছু দিয়েছ, তা থেকে কিছু ফেরৎ নেওয়া তোমাদের জন্য সিদ্ধ নয়। তবে যদি তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা ঠিক রাখতে পারবে না বলে আশংকা করে। এক্ষণে যদি তোমরা ভয় কর যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা ঠিক রাখতে পারবে না, তাহ’লে স্ত্রী কিছু বিনিময় দিলে তা গ্রহণে উভয়ের কোন দোষ নেই। এটাই আল্লাহর সীমারেখা। অতএব তোমরা তা অতিক্রম করো না। যারা আল্লাহর সীমারেখা সমূহ অতিক্রম করে, তারা হ’ল সীমালংঘনকারী। (বাক্বারাহ ২/২২৯)।

‘হে নবী! (তুমি মুমিনদের বলে দাও) যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দেবে তখন তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদেরকে তালাক দেবে এবং ইদ্দতের হিসাব রাখবে। তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বের করে দেবে না। আর তারাও বেরিয়ে যাবে না। যদি না তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর বিধান। যে আল্লাহর বিধান লংঘন করবে সে নিজের উপর যুলুম করবে। তুমি জান না হয়ত আল্লাহ এর পর কোন উপায় করে দেবেন। তারপর যখন তাদের ইদ্দত পূরণের কাল কাছাকাছি হবে তখন তোমরা হয় বিধি অনুযায়ী তাদের রেখে দেবে অথবা বিধি অনুযায়ী তাদের বিচ্ছিন্ন করে দেবে এবং তোমাদের মধ্য হ’তে দু’জন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে’। (তালাক্ব ৬৫/১-২)।

‘আবদুল্লাহ্ ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল এর যুগে তাঁর স্ত্রীকে হায়েয অবস্থায় তালাক দেন। ‘উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে নির্দেশ দাও, সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং নিজের কাছে রেখে দেয় যতক্ষণ না সে মহিলা পবিত্র হয়ে আবার ঋতুমতী হয় এবং আবার পবিত্র হয়। অতঃপর সে যদি ইচ্ছে করে, তাকে রেখে দিবে আর যদি ইচেছ করে তবে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দেবে। আর এটাই তালাকের নিয়ম, যে নিয়মে আল্লাহ্ তা’আলা স্ত্রীদের তালাক দেয়ার বিধান দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৫১, ৪৯০৮, ৫২৫২, ৫২৫৩, ৫২৫৮, ৫৩৩২, ৬০৩৩, ৭১৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৫৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৭১, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৪৭৬২, তিরমিযী ১১৭৫, ১১৭৬, নাসায়ী ৩৩৮৯, ৩৩৯০, ৩৩৯১, ৩৩৯২, ৩৩৯৬, ৩৩৯৭, ৩৩৯৮, ৩৩৯৯, ৩৪০০, ৩৫৫৫, ৩৪৪৫, ৩৫৫৬, ৩৫৫৭, ৩৫৫৮, ৩৫৫৯, আবূ দাউদ ২১৭৯, ২১৮১, ২১৮২, ২১৮৪, ২১৮৫, আহমাদ ৪৪৮৬, ৪৭৭৪, ৫০০৫, ৫১০০, ৫১৫২, ৫২০৬, ৫২৪৬, ৫২৭৭, ৫২৯৯, ৫৪১০, ৫৪৬৫, ৫৪৮০, ৫৪৯৯, ৫৫০০, ৫৭০৮, ৬০২৫, ৬০৮৪, ৬১০৬, ৬২৯৩, মুয়াত্তা মালেক ১২২০, ২২৬২, ২২৬৩, ইরওয়াহ ২০৫৯, সহীহ আবী দাউদ ১৮৯২, ১৮৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর লজ্জিত হয়ে ভুল বুঝতে পেরে তাকে ফিরে পেতে চাইলে হিল্লা বা হালালা পন্থায় ফেরত নিতে হবে। কিভাবে ফেরত নিতে হবে তার পদ্ধতি রাসুল সাঃ বলে দিয়েছেন। যেমনঃ

(ক) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করল। পরে দ্বিতীয় স্বামীও তাকে তালাক দিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল মহিলাটি কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে? তিনি বললেনঃ না, যতক্ষণ না সে দ্বিতীয় স্বামী তার স্বাদ গ্রহণ করবে, যেমন স্বাদ গ্রহণ করেছিল প্রথম স্বামী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৬১, ২৬৩৯,   সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩৪২১, ৩৪২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা‘আ কুরাযীর স্ত্রী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমি রিফা‘আর স্ত্রী ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে বায়েন তালাক দিয়ে দিল। পরে আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবাইরকে বিয়ে করলাম। কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে কাপড়ের আঁচলের মতো নরম কিছু (অর্থাৎ তার পুরুষত্ব নাই)। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে কি তুমি রিফা‘আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, তা হয় না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আবু বাকর (রাঃ) তখন তাঁর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। আর খালিদ ইবনু সা‘ঈদ ইবনু ‘আস (রাঃ) দ্বারপ্রান্তে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! এই নারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে উচ্চ আওয়াজে যা বলছে, তা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না? (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৩৯, ৫২৬০, ৫২৬৫, ৫৩১৭, ৫৭৯২, ৫৮২৫, ৬০৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৪১৮-৩৪১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বার ১৪৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী ২৪৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৪৬৩, তিরমিযী ১১১৮, আহমাদ ২৪০৯৮, ইরওয়া ১৮৮৭, নাসায়ী ৩২৮৩, ৩৪০৭, ৩৪০৮, ৩৪০৯, ৩৪১১, ৩৪১২, আহমাদ ২৪১৫৩, ২৩৫৩৮, ২৩৫৭৮, ২৫০৭৭, ২৫৩৬৪, ২৫৩৮৯, মুয়াত্তা মালেক ১১২৭, দারেমী ২২৬৭, ২২৬৮, ইরওয়াহ ১৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু ইয়্যাস (রহ.) সূত্রে বর্ণিত। একদা ইবনু ‘আব্বাস, আবূ হুরাইরাহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রাযি.)-কে এক যুবতী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বললেন, ‘‘ঐ স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ না তাকে অন্য স্বামীর সাথে বিয়ে না দেয়া হয়।’’ ইমাম আবূ দাঊদ (রহ.) বলেন, ইমাম মালিক (রহ.) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদের মাধ্যমে মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ আইয়াশ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ঐ ঘটনার সময় সেখানে উপস্থি ছিলেন, যখন মুহাম্মাদ ইবনু ইয়্যাস ইবনুল বুকাইর এসে ইবনু যুবায়র ও ‘আসিম ইবনু উমার (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেছেন।

তারা বলেছেন, তুমি ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ হুরাইরাহর নিকট যাও। আমি তাদের উভয়কে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট রেখে এসেছি। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহ.) বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)-এর বক্তব্য হলো, স্ত্রীর সাথে সহবাস হোক বা না হোক, তিন তালাকে সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। অন্য স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে তার জন্য বৈধ হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে, শরঈ বিধান মোতাবেক তালাক হওয়ার পর সেই মহিলা অন্যত্র দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতেও পারে নাও করতে পারে। যদি অন্যত্র বিয়ে করে আর সেই স্বামী শরঈ বিধান মোতাবেক যদি কোনো দিন তালাক দেয় বা মারা যায় তখন সেই মহিলাকে প্রথম স্বামী প্রথম যেভাবে বিয়ে করেছিল সেই একই পদ্ধতি মোতাবেক বিয়ে করতে হবে। এখানে আরো একটি শর্ত যে, দ্বিতীয় স্বামী অবশ্যই সেই মহিলার সাথে সহবাস করবে।

হিল্লা বা হালালা বিবাহ কখন হারাম হয়

তালাকে বায়েন-এর পর এক রাত্রির জন্য অন্য একজন পুরুষের নিকটে সাময়িক বিবাহ দিয়ে তার নিকট থেকে তালাক নিয়ে পুনরায় পূর্ব স্বামীর নিকটে ফিরিয়ে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করাকে এদেশে ‘হীলা’ বিবাহ বা হিল্লা বিয়ে বলা হয়ে থাকে। এ ‘হিল্লা’ একটি জাহেলী প্রথা।

আমাদের সমাজে দেখা যায়, স্ত্রীকে হালাল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বা চুক্তি মোতাবেক কোনো বন্ধু বা চাচাতো-মামাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ দিয়ে এক রাত্রি বাস করে তালাক দিলে পরে ইদ্দতের পর নিজে বিবাহ করে নেয়। এই প্রকারের হিল্লা বিয়ে এক ধরণের ধোঁকা এবং ব্যভিচার।

মূলত দ্বিতীয় স্বামী এক রাত্রি ব্যভিচার করে এবং প্রথম স্বামী ঐ স্ত্রীকে হালাল মনে করে ফিরে নিয়েও তার সাথে চিরদিন ব্যভিচার করতে থাকে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে স্ত্রী ঐভাবে তার জন্য হালাল হয় না।

তালাক দেয়ার পর তাকে ফেরত নিতে এক রাত্রির জন্যে অন্যের নিকট পাঠানো মানে ভাড়াটিয়া ষাড় বা পাঠার নিকট পাঠানো।

যে ব্যক্তি হালাল করার জন্য ঐরূপ বিবাহ করে, হাদীসের ভাষায় সে হল ‘ধার করা ষাঁড়’।  (ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯)।

এই ধরণের বিয়ের সাথে জড়িত প্রথম স্বামী ও দ্বিতীয় স্বামী অভিশপ্ত।

‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হীলাকারী (২য় স্বামী) এবং যার জন্য হীলা করা হয় (তথা প্রথম স্বামীর), উভয়ের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩২৯৬,  দারিমী ২২৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রচলিত হিল্লা বিবাহ করে সংসার যতোদিন করবে ততোদিন এরা ব্যভিচারের সাথে জড়িত থাকবে এবং ব্যভিচারের কারণে এদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি পেতে হবে।

এ জন্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে  যতোই ঝগড়া হোক তালাকের কথা কখনোই মুখে আনা যাবে না। আর তালাক দিলে তাকে ফেরত নেয়ার কথা ভুলে যেতে হবে।

কর্মস্থলে নারীদের নিরব ধর্ষণ

দিন যতোই যাচ্ছে, যুগ যতোই ডিজিটাল হচ্ছে নারীগণ ততোই পর্দা ছিড়ে বাহিরে বের হচ্ছে। এতে নারীর স্বাধীনতার নামে যিনা/ব্যভিচার ও অশ্লীলতা বেড়ে যাচ্ছে। এজন্যেই রাসুল সাঃ নারীদের ঘরে থাকতে বলেছেন।

যাই হোক, যুগ ডিজিটাল হচ্ছে, নারী শিক্ষার হার বেড়ে যাচ্ছে, নারী তার নিজ পায়ে দাঁড়ানোর জন্যে নিজের কর্ম নিজে বেছে নিচ্ছে। ইসলাম নারীদের কর্ম করতে বাঁধা দেয় না। তবে বৈধ যে কর্মই করুক না কেনো তা হতে হবে শালীনতা বজায় রেখে।

আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছি যে, নারীদের সরকারি-বেসরকারি যে অফিসেই চাকরি হোক না কেনো সেখানে ৮৫% নারী নিরব ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ৫% নারী মুখ খোলে বাকি কেউ চাকরি যাওয়ার ভয়ে মুখ খোলে না। তবে অধিকাংশ নারী অধিক আর্থিক লোভের কারনে যাকে তাকে দেহ দান কিছুই মনে করে না। এটা তারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।

পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে, নিরব ধর্ষনের হার সরকারি সংস্থাগুলোর চেয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে ৯৭% বেশী।

চাকরি করতে এসে নারীগণ দুইটি কারনে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ধর্ষনের শিকার হয়।

প্রথমতঃ

অধিক আর্থিক লোভের কারনে স্বেচ্ছায়। এক্ষেত্রে বিবাহিত নারীগণের ৯০% স্বামী তার স্ত্রীর কুকর্মের কথা জেনেও কাঁচা টাকার গন্ধে নিরব সম্মতি দিয়ে থাকে। যারা অবিবাহিত  এরা বিয়ের সময় এমন  সতী নারীর ভান ধরে যে, অধিক চালাক স্বামীকেও বোকা বানিয়ে দেয়।

দ্বিতীয়তঃ

পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিরব ধর্ষন। এক্ষেত্রে দেখা যায়, অফিসের বস বা সহকর্মী প্রথমে কুপ্রস্তাব দেয়, রাজি না হলে বিভিন্ন হুমকি ধমকি, চাকরিচ্যূত ইত্যাদি প্রেষণে রেখে কায়দা কৌশল করে ধর্ষণ করে। তাতে দেখা যায়, মান-সম্মানের ভয়ে ৪০% নারী চাকরি ছেড়ে চলে যায়। বাকিগুলো অর্থিক সংকটের কারনে নিরব কান্নায় চোখের জলে বুক ভাসিয়ে থেকে যায়।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বন্ধুদের দ্বারা এবং কর্মস্থলে সহকর্মীর দ্বারা তার সতীত্ব নষ্ট হয়নি এমন নারী ৫% খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখানে সতীত্ব বলতে বিপরীত লিঙ্গের ক্রোস কানেকশন তাই শুধু নয়, শারীরিকভাবে স্পর্শকরনও  বুঝাবে। 

অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ

আমি বলবো, আপনি জেনে শুনে আপনার মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আসলে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং কর্মজীবনে সৎ বস বা সহকর্মী আশা করা যায় না। এমন পরিবেশ আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। সব জায়গায় শুধু খাই খাই। তাই পরিবেশ, পরিস্থিতি দেখে মেয়েদের শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করুন। প্রত্যেক অভিভাবকই চায় তার মেয়ের সতীত্ব বজায় রেখে সৎপাত্রস্থ করা। কিন্তু মেয়েরে ধর্ষনের কথা যখন কানে আসে তখন এর তুল্য কষ্টের আর কিছু নেই। নিজেকে ধিক্কার মনে হবে। এখনো সময় আছে নিজে শুধরে যান এবং সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করুন।

 (প্রথম খন্ড সমাপ্ত)

দ্বিতীয় খন্ড “নারীর সতীত্ব রক্ষার গুরুত্ব ও উপায় এবং অভিভাবকের করণীয়” দেখতে চাইলে এ্রর উপর ক্লিক করুন।

(দ্বিতীয় খন্ড-অপেক্ষা করুন)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...