Search This Blog

Thursday, November 28, 2019

রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করা মুছল্লীগণ সুন্নাত বিরাগী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করা মুছল্লীগণ সুন্নাত বিরাগী


আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ বা উদাসীন মনোভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।


ভূমিকা:
মুসলমানের সংজ্ঞা হতে আমরা জানি, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে মহান প্রতিপালক হিসেবে গ্রহন করবে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে নিজের জীবন চালাবে, হালাল কে হালাল বলে মানবে এবং হারামকে বয়কট করবে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করবে, সাওম পালন করবে, নিসাবের অধিকারী হলে যাকাত আদায় করবে এবং হজ্জে গমন করবে এমনসব গুনাবলীর অধিকারী হলে তাকে মুসলিম বলা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে চলেন? তাঁকে কি অনুসরন করে চলেন? কিংবা তাঁর হাদিস বা সুন্নাহ মোতাবেক কি নিজের জীবন, পারিবারিক, সাংসারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করেন? আপনি যতোটুকু ইসলাম মানেন তা হিসেব করলে দেখা যাবে আপনি একজন প্রকৃত মুসলামানের তুলনায় ১০০% এর অনেক নীচে। অথচ আপনি নিজেকে বলছেন আপনি নাকি আশেকে রাসুল বা রাসুল প্রেমিক। কিন্তু আপনি সহিহ হাদিসের শতকরা ১০ ভাগও মেনে চলেন না।

এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা : ২০৮)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন,

“হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না”। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

উল্লেখিত দুইটি আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আমরা ইমান্দার ব্যক্তি হতে পারি তবে পুরোপুরি মুসলমান নই। তানাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মুসলমান হতে বললেন কেনো?

আমাদেরকে পুরোপুরি মুসলমান হতে গেলে কি করতে হবে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও সহিহ সুন্নাহ মোতাবেক চলতে হবে। রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে আমরা কোরআন পেয়েছি আর কোরআনের ব্যাখ্যার স্বরুপ হাদিস পেয়েছি। অতএব রাসুল (সাঃ) যা করতে বলেছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমনঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” ( সুরা হাশর, আয়াত নং-৭)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব ২১ আয়াত)।

 আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। (সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা নূর ৬৩ আয়াত)।

আল্লাহ বলেন,

যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল। (সূরা নিসা ৮০)।

আল্লাহ বলেন,

সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজম ৩-৪)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০,আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত,

তিনি বলেন, হে কুরআন পাঠকারী সমাজ! তোমরা (কুরআন ও সুন্নাহর উপর) সুদৃঢ় থাক। নিশ্চয়ই তোমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছ। আর যদি তোমরা ডানদিকের কিংবা বামদিকের পথ অনুসরণ কর তাহলে তোমরা সঠিকপথ বহু দূরে সরে পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ নাজীহ ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত,

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত ক’রে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (আবুদাউদ ৪৬০৭,  তিরমিযী ২৬৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২, হাদীস সম্ভার ১৪৮৬, আহমাদ ১৬৬৯২, দারিমী ৯৫, ইরওয়াহ ২৪৫৫, মিশকাত ১৬৫, ফিলাল ২৪-২৬, সালাতুত তারাবীহ ৮৮-৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমরা নিজেকে মুসলমান দাবী করি, নিজেকে আশেকে রাসুল বলি, মিলাদ কিয়ামে ইয়া নাবি, ইয়া নাবি বলে বেহুঁশ হয়ে যাই অথচ রাসুল সাঃ এর আদেশ নিষেধ তথা তাঁর সুন্নাহকে পুরোপুরি অনুসরন করি না। ইসলামের দুই তিনটা বিষয় পালন করেই নিজেকে মুত্তাকী বলে থাকি বা মুমিন ব্যক্তি বলে থাকি।  আসলে আমরা শতকরা কতো ভাগ মুসলমান তা নিম্নের রাফেউল ইয়াদাইন করা, না করা- সহিহ হাদিস মানা, না মানার আলোচনা থেকেই বুঝতে পারবো।  আপনি ইসলাম মানবেন কার কথা মতো? রাসুল সাঃ এর নাকি কোনো মুরুব্বীর? আপনি কি আশেকে রাসুল? নিজেকে যাচাই করুন।

রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করা মুছল্লীগণ সুন্নাত বিরাগী

 (বিস্তারিত আলোচনা)

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, “তোমরা সেইরুপ ছালাত আদায় করো, যেইরুপ আমাকে করতে দেখেছ”। (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১, ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

রাসুল (সাঃ) যেভাবে সালাত আদায় করেছেন সেভাবে বাংলাদেশের ৯০% মুসলামানকে ছালাত আদায় করতে দেখা যায় না। তারা বিভিন্ন জাল-জঈফ হাদিস আর মনগড়া যুক্তি দিয়ে রাসুল সাঃ এর সালাতকে এক ভিন্নরুপে রুপান্তরিত করেছে।

এইসব মুছল্লী ভিন্ন ভিন্ন তরীকা মোতাবেক সালাত আদায় করতে গিয়ে একদিকে যেমন নিজেদের সালাত কবুল হচ্ছে না তেমনি তাদের অনুসারীদেরকেও বিপদগামী করছে। তথা রাসুল সা. এর তরীকা থেকে বঞ্চিত করছে।

রাসুল সা. সালাতকে সহিহ করতে তথা আল্লাহর নিকট কবুল হতে সালাতে যেসব বিষয় পালন করতেন তার মধ্যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন অন্যতম। রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে যতো হাদিস এসেছে ততো হাদিস অন্য বিষয়ে আসেনি।

ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। এর পক্ষে শত শত ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অধিকাংশ মুছল্লী উক্ত সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উক্ত ঠুনকো যুক্তিগুলোর অন্যতম হলো, কতিপয় জাল ও যঈফ হাদীছ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা পেশ করা হলোঃ

(১) ‘আলকামাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত কিরূপ ছিল তা শিক্ষা দেব না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং তাতে কেবলমাত্র একবার হাত উত্তোলন করলেন।

ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি একটি দীর্ঘ হাদীসের সারসংক্ষেপ। উপরোক্ত শব্দে হাদীসটি সহীহ নয়।

(আবুদাঊদ হা/৭৪৮, ১/১০৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৫৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৯; নাসাঈ হা/১০২৬, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৭; বায়হাক্বী ২/৭৮)।

তাহক্বীক্বঃ তিরমিযী (অধ্যায়ঃ সালাত, হাঃ ২৫৭, অনুঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল প্রথমবারই হাত উঠিয়েছেন), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ তাত্ববীক, অনুঃ ঐরূপ না করার অনুমতি প্রসঙ্গে, হাঃ ১০৫৭) উভয়ে ওয়াকী থেকে। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং ইবনু হাযাম বলেছেন সহীহ। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামগণ এটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম নাববী, ইমাম শাওকানী (রহঃ) প্রমুখ ইমামগণ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। (আল-মাজমু‘আহ ফী আহাদীসিল মাওযু‘আহ, ২০ পৃঃ)।

ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন, রফ‘উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে বড় দলীল হলেও এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে যা একে বাতিল গণ্য করে। (নায়লুল আওত্বার ৩/১৪, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৪, ‘আওনুল মা‘বূদ)।

হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে বলেন, ইবনুল মুবারক বলেছেন, হাদীসটি আমার নিকট প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত নয়। ইবনু আবূ হাতিম বলেন, এ হাদীসটি ভুল ও ত্রুটিযুক্ত। ইমাম আহমাদ ও তাঁর শায়খ ইয়াহইয়া ইবনু আদম বলেন, হাদীসটি দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম দারাকুতনী বলেন, হাদীসটি প্রমাণিত নয়। ইমাম বায়হাক্বী এবং ইমাম দারিমী (রহঃ)ও হাদীসটিকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বললেও তিনি নিজেই আবার ‘আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ)-এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। (আওনুল মা‘বূদ, নায়লুল আওত্বার, জামি আ-তিরমিযী ও অন্যান্য)।

আল্লামা শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবদী (রহঃ) বলেন, তাকবীরে তাহরীমাহ ব্যতীত অন্যত্র রফ‘উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে এ হাদীসটিকে দলীল হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু হাদীসটি দলীলযেগ্য নয়। কেননা হাদীসটি দুর্বল ও অপ্রমাণিত।

আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু মাসঊদের সূত্র চাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে রফ‘উল ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সহীহ সুন্নাহ সাব্যস্ত হয়নি। আর ইবনু মাসঊদের এ হাদীসটিকে সহীহ মেনে নিলেও তা রফ‘উল ইয়াদাইন এর পক্ষে বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীতে পেশ করা যাবে না এবং ইবনু মাসঊদের এ হাদীসের উপর ‘আমঅল করা উচিত হবে না। কেননা এটি না বোধক আর ঐগুলি হাঁ বোধক।

ইলমে হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী হাঁ বোধক হাদীস না বোধক হাদীসের উপর অগ্রাধিকারযোগ্য।

মাযহাবী থিওরীতেও বলা হয়েছে, হানাফী ও অন্যদের নিকট যখন হাঁ সূচক ও না সূচকের সাথে দ্বন্দ্ব দেখা দিবে তখন না সূচকের উপর হাঁ সূচক অগ্রাধিকার পাবে। এরূপ নীতি বলবৎ হয় যদি হাঁ সূচকের পক্ষে একজনও হয় তবুও। সুতরাং সেখানে বিরাট এক জামা‘আত হা সূচকের পক্ষে সেখানে অন্য কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না। যেমনটি এ মাসআলার ক্ষেত্রে। সুতরাং দলীল সাব্যস্ত হওয়ার পর গোড়ামী না করাটাই উচিত....। (হাশিয়া মিশকাত: আলবানী ১/১৫৪, ও যঈফাহ ৫৬৮)।

ইমাম খাত্তাবী (রহঃ) বলেন, রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর পর রফ‘উল ইয়াদাইন করার পক্ষে যে সমস্ত সহীহ হাদীসাবলী বর্ণিত হয়েছে তা ইবনু মাসঊদের হাদীসের চেয়ে অগ্রগণ্য। প্রমাণ্যযোগ্য হাঁ বোধক হাদীস না বোধকের উপর প্রাধাণ্যযোগ্য।

* ইবনু মাস‘উদের হাদীস সম্পর্কে ইবরাহীম নাখায়ীল ধারণামূলক উক্তিঃ ইবনু মাসঊদের হাদীস সম্পর্কে ইবরাহীম নাখায়ীর এক বিতর্কের কথা কতিপয় গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আমর ইবনু মুররাহ বলেন, আমি মসজিদে হাযরামাউতে প্রবেশ করে দেখি, আলকামাহ ইবনু ওয়ায়িল তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু‘র পূর্বে ও পরে রফ‘উল ইয়াদাইন করেছেন। অতঃপর আমি ইবরাহীম নাখায়ীর নিকট বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, তিনিই শুধু দেখেছেন আর ইবনু মাসঊদ ও তার ছাত্ররা দেখেনি? (ত্বাহাভী ১/২২৪)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবরাহীম নাখায়ী বলেন, ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) একজন গ্রাম্য লোক। তিনি ইসলামের বিধি বিধান জানেন না। তিনি যদি রফ‘উল ইয়াদাইন করতে একবার দেখে থাকেন তাহলে ইবনু মাসঊদ পঞ্চাশবার না করতে দেখেছেন, ইত্যাদি। (আবূ ইউসূফের আসার ২১ পৃঃ, জামি‘উল মাসানিদ ১/৩৫৮, ত্বাহাভী ১/১২০)।

কিন্তু ইবরাহীম নাখায়ীর এ মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কেবল ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) নন বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসংখ্য সাহাবায়ি কিরাম রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাঁদের সংখ্যা মুতাওয়াতির পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সুতরাং ‘‘ইবনু মাসঊদ পঞ্চাশবার রফ‘উল ইয়াদাইন না করতে দেখেছেন’’- এটা ইবরাহীম নাখায়ীর শুধু দাবীমাত্র। তাই তো হাদীস সম্রাট ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ এটা ইবরাহীম নাখায়ীর শুধু ধারণা যে, ওয়ায়িল ইবনু হুজর ‘‘একবার রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন।’’ অথচ ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) নিজে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণকে বহুবার রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন’ এবং ওয়ায়িল ঐরূপ ধারণার মুখাপেক্ষী নন। কারণ তাঁর চোখে দেখা এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা অন্যের (ইবরাহীম নাখায়ীর) ধারণার চেয়ে অনেক উত্তম। (দেখুন, জুযউল ক্বিরাআত, পৃঃ ২৩)।

ইমাম বায়হাক্বী ‘আলমা‘রিফাহ গ্রন্থে বলেনঃ ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেনঃ উচিত হচ্ছে, ওয়ায়িলের বক্তব্যকে গ্রহণ করা। কেননা তিনি একজন জলীলুল কদর সাহাবী (রাঃ)। এমতাবস্থায় তাঁর হাদীসকে কিভাবে প্রত্যাখ্যান করা যায় এমন লোকের কথায় যিনি সাহাবী নন? বিশেষ করে ওয়ায়িলের পাশাপাশি অসংখ্য সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ)-ও রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)।

ফাক্বীহ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) বলেনঃ (ইবরাহীম নাখায়ীর) এ উক্তি দোষণীয়, এর উপর নির্ভর করা যায় না। কেননা রফ‘উল ইয়াদাইন করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে, অতঃপর খুলাফায়ি রাশিদীন থেকে, অতঃপর সাহাবীগণ ও তাবিঈগণ থেকে। আর ইবনু মাসঊদের রফ‘উল ইয়াদাইন ভুলে যাওয়া এটা ওয়াজিব করে না যে, এ সমস্ত সাহাবায়ি কিরামগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখেননি।

ইমাম বায়হাক্বী, শায়খ আবূল হাসান সিন্দী হানাফী ও ফাক্বীহ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমুখগণ বলেনঃ বরং ইবনু মাসঊদ এমন কিছু বিষয় ভুলে গেছেন যে ব্যাপারে মুসলিমগণ মতভেদ করেননি। যেমনঃ

(১) তিনি সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম ও মুসলিম উম্মাহর বিপরীতে সূরাহ নাস ও সূরাহ ফালাক্বকে কুরআনের অংশ মনে করতেন না।

(২) তিনি তাতবীক অর্থাৎ রুকু‘র সময় দু’ হাঁটুর মাঝখানে দু’ হাত জড়ো করে হাঁট দ্বারা চেপে রাখতে বলতেন। অথচ এরূপ ‘আমল রহিত হয়ে যাওয়া এবং তা বর্জন করার উপর সকল ‘আলিমগণ যে একমত হয়েছেন তাও তিনি ভুলে গেছেন।

(৩) ইমামের সাথে দু’ জন মুক্তাদী হলে মুক্তাদীদ্বয় কোথায় কিভাবে দাঁড়াবেন তাও তিনি ভুলে গেছেন। তিনি বলতেন, ইমামের বরাবর দাঁড়াতে হবে। অথচ এটা হাদীসের সম্পূর্ণ খেলাফ।

(৪) তিনি ভুলে গিয়েছিলেন বিধায় এরূপ বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন ফজরের সালাত সঠিক সময়ে পড়তেন না বরং ঈদের সালাতের পূর্বে পড়তেন। অথচ এটা সমস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধ মত। এ ব্যাপারে সমস্ত ‘আলিমগণের ঐক্যমতের কথাও তিনি ভুলে গেছেন।

(৫) তিনি ভুলে গেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফা ময়দানে কী নিয়মে দু’ ওয়াক্ত সালাত একত্রে আদায় করেছেন।

(৬) তিনি সিজদার সময় মাটিতে হাত বিছিয়ে রাখতে বলতেন। অথচ এটি হাদীসের পরিপন্থি হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিমগণ মতভেদ করেননি বরং একমত পোষণ করেছেন, তাও ইবনু মাসঊদ ভুলে গেছেন।

(৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম وما خلق الذكر والأنثى আয়াতটি কিভাবে পড়তেন তাও তিনি ভুলে গেছেন।

অতএব এ সমস্ত ভুল যাঁর হয়েছে, তাঁর সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন না করা এবং সে বিষয়ে হাদীস না জানা বা না বলাও ভুলের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট এ কথা প্রসিদ্ধ যে, ইবনু মাসঊদের শেষ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে স্মৃতি ভ্রম ঘটে। সুতরাং রফ‘উল ইয়াদাইন না করার হাদীসটিও সে সবের অন্তর্ভুক্ত হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। (দেখুন, মাওয়াহিবু লাতীফা ১/২৬০, ইমাম বুখারী জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, ইমাম যায়লায়ী’ হানাফীর নাসবুর রায়াহ ৩৯৭-৪০১ পৃঃ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৪, শারহু মুসনাদে ইমাম আবূ হানিফা ১৪১ পৃঃ, বালাগুল মুবীন ১/২২৯, ও অন্যান্য)।

* ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আরো কয়েকটি হাদীসঃ

(ক) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তাঁরা সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করেননি। সালাতের শুরুতে ছাড়া।’’ (বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ ২/১১৩, ১১৪, দারাকুতনী ১/২৯৫, ইবনু আদী কামিল ফিয যু‘আফা ৬/১৫২, উক্বাইলী ২/৪২৯, ইবনু হিববান ‘আল-মাজরুহীন ২/২৭০)।

এ হাদীসকে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ), আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ), ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) ও ইমাম শাওকানী (রহঃ) বানোয়াট (মাওযু) বলেছেন- (দেখুন, তাসহীলুল ক্বারী, আল-ফাওয়ায়িদুল মাওযু‘আহ, আল-লাআ-লিল মাসনু‘আহ ফিল আহাদীসিল মাওযু‘আহ ২/১৯, এবং অন্যান্য)। ইবনুল জাওযী (রহঃ) হাদীসটিকে তার ‘আল-মাওযু’আত’ কিতাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তিনি ইমাম আহমাদ সূত্রে বলেছেনঃ এর বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু জাবির কিছুই না। তার থেকে কেবল এমন লোকই হাদীস বর্ণনা করে থাকেন যিনি তার চেয়েও নিকৃষ্ট। হাফিয ‘আত-তাক্বরীব’ (২/১৪৯) গ্রন্থে তাকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ এতে মুহাম্মাদ ইবনু জাবির একক হয়ে গেছেন। তিনি দুর্বল। হাম্মাদ থেকে ইবরাহীম সূত্রে। হাদীসটি হাম্মাদ ছাড়াও ইবরাহীম থেকে মুরসালভাবে ইবনু মাসঊদ সূত্রে মাওকূফভাবে বর্ণিত হয়েছে, মারফূভাবে নয়। আর এটাই সঠিক অর্থাৎ মাওকূফ। বায়হাক্বী তার ‘সুনান’ গ্রন্থে বলেনঃ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন হাম্মাদ ইবনু সালামাহ, হাম্মাদ ইবনু আবূ সুলায়মান থেকে, তিনি ইবরাহীম থেকে ইবনু মাসঊদ সূত্রে মুরসালভাবে।

(খ) উক্ত রিওয়ায়াতটিই বর্ণনা করেছেন বায়হাক্বী তার ‘খুলাফিয়াত’ গ্রন্থে তারই সনদে ইবরাহীম সূত্রে এভাবেঃ ‘‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সালাত আরম্ভকালে তাকবীর দিয়ে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন কেবল একবার। এরপর আর রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন না।’’ ইমাম হাকিম বলেনঃ এটাই সঠিক অর্থাৎ মাওকূফ। ইবরাহীম ইবনু মাসঊদের সাক্ষাৎ পাননি। সুতরাং বর্ণনাটি মুনকাতি (বিচ্ছিন্ন)। এছাড়া সনদের মুহাম্মাদ ইবনু জাবির সম্পর্কে হাদীসবিশারদ ইমামগণ সমালোচনা করেছেন। তার ব্যাপারে উত্তম কথা হচ্ছেঃ তিনি হাদীস চুরি করতেন। তার হাদীসে মুনকার ও মাওযু‘আতের আধিক্য রয়েছে। ইবনু ‘আদী বলেন, ইসহাক্ব ইবনু আবূ ইসরাঈল মুহাম্মাদ ইবনু জাবিরকে তার একদল শায়খের উপর মর্যাদা দিতেন। তার থেকে আইয়ূব, ইবনু ‘আওন, হিশাম ইবনু হাসসান, সাওরী, শু‘বাহ, ইবনু উ‘আইনাহ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন। তিনি সমালোচিত। তথাপি তার হাদীস লিখে রাখা হতো। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দুর্বল। (দেখুন, নাসবুর রায়াও অন্যান্য)।

(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে,আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-এর পিছনে ১২ বছর এবং ‘আলীর পিছনে কুফায় ৫ বছর সালাত আদায় করেছি। এরা কেউ রফ‘উল ইয়াদাইন করেননি।’’ এটাও বানানো হাদীস। এর বর্ণনাকারী আসবাগ ইবনু খালীল মালিকী মাযহাবের মুফতি ছিলেন। হাদীসের জ্ঞান ছিলো না। ইলমে হাদীস ও আসহাবে হাদীসের দুশমন ছিলেন। তিনি মালিকী মাযহাবের পক্ষে এ হাদীস তৈরী করেন। ইবনু মাসঊদের মৃত্যু হয় উসমানের খিলাফাতকালে। সুতরাং তার উক্তি ‘‘আমি আলীর পিছনে ৫ বছর সালাত আদায় করেছি’’ কত হাস্যকর। এ থেকে বুঝা যায় আসবাগ ইতিহাসের জ্ঞানে দুর্বল ছিলেন। তা না হলে এমন অপ্রয়োজনীয় ভুল করতেন না। (দেখুন, তাযকিরাতুল মাওযু‘আত, পৃঃ ৩৯)।

(ঘ) ইবনু মাসঊদ বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠাতেন আমরাও হাত উঠাতাম। তিনি হাত উঠানো ছেড়ে দিলেন আমরাও ছেড়ে দিলাম।’’ এ বর্ণনা বানানো এবং সনদ বিহীন।

(ঙ) ত্বাহাবী শারহু মাআনীতে বর্ণনা করেন যে, ইবরাহীম নাখায়ী বলেনঃ ‘‘ইবনু মাসঊদ কেবল সালাতের শুরুতে হাত উঠাতেন, এছাড়া অন্যত্র হাত উঠাতেন না।’’ এর সনদ মুনকাতি। ইমাম ত্বাহাবী বলেনঃ ইবরাহীম নাখায়ী ইবনু মাসঊদ সূত্রে সেই হাদীসকেই মুরসালভাবে বর্ণনা করেন, যা তার নিকট সহীহ ও একাধিকসূত্রে পৌঁছেছে।

রফ‘উল ইয়াদাইন না করার অন্যান্য দুর্বল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা

একঃ বারা‘আ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। যা সহীহ নয় বরং ভিত্তিহীন। সামনে ৭৪৯ ও ৭৫২ নং হাদীসের টিকায় এর আলোচনা আসবে।

দুইঃ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন, পরে ছেড়ে দিয়েছেন।’’- এর কোনই ভিত্তি নেই। বরং ইবনু যুবায়র (রাঃ) সূত্রে রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষেই সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।

তিনঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসঃ

(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু‘র সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তুলতেন। পরবর্তীতে তিনি সালাত শুরুর সময় বাদে অন্যত্র দু’ হাত তুলেননি।’’ এটিও ভিত্তিহীন হাদীস। বরং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে সহীহভাবে রুকু‘ কালে ও রুকু থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস বর্ণিত আছে।

ইবনুল জাওযী (রহঃ) ‘আত-তাহক্বীক্ব’ গ্রন্থে বলেনঃ হানাফীদের ধারণা, ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবায়র বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা রফ‘উল ইয়াদাইন মানসূখ হয়ে গেছে। অথচ হাদীস দু’টির কোনো ভিত্তিই নেই। বরং ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) সূত্রে এর বিপরীতে রফ‘উল ইয়াদাইনের পক্ষেই সুরক্ষিত (মাহফূয) বর্ণনা রয়েছে। তা হলোঃ একদা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে মায়মূন আল-মাক্বী বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ)-কে সালাতের শুরুতে, রুকু‘র সময়, সিজদার প্রাক্কালে এবং তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়ানোর সময় দু’ হাতে ইশারা (রফ‘উল ইয়াদাইন) করতে দেখেছি। এ কথা শুনে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখতে পছন্দ করো তাহলে ইবনু জুবায়রের সালাতের অনুকরণ করো। (হাদীস সহীহ, দেখুন, আবূ দাঊদ, ত্বাবারানী ‘কাবীর’ ১১/১৩৩, আহমাদ ১/২৫৫, ২৮৯)।

ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ যদি উক্ত বর্ণনাদ্বয় সহীহ হতো, তথাপি মানসুখ হওয়ার দাবী করা সঠিক হতো না। কেননা (কোনো হাদীস) নাসিখ হওয়ার জন্য সেটি মানসুখের চেয়ে অধিক মজবুত হওয়া শর্ত। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ ও অন্যান্য)।

(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বানানো আরেকটি বর্ণনা। তিনি বলেনঃ ‘‘দশজন সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন না।’’ হাদীসটি বানানো। মৌলভী ‘আব্দুল হাই ফিরিংগী বলেনঃ এটার সনদ না পাওয়া পর্যন্ত এর কোনো মূল্য নেই। (দেখুন, আত-তা‘লিকুল মুমাজ্জাদ, পৃঃ ৭১)।

(গ) ‘‘সাতটি স্থান ব্যতীত অন্যত্র হাত উঠানো যাবে না, যথাঃ সালাত আরম্ভকালে, মাসজিদুল হারামে প্রবেশের সময় বাইতুল্লাহ দেখাকালে, মারওয়াতে দাঁড়িয়ে, লোকদের সাথে আরাফায় অবস্থানকালে, জাম‘আতে এবং জামরাতে পাথর নিক্ষেপের সময় উভয় মাকামে।’’ (ত্বাবারানী কাবীর)।

উপরোক্ত শব্দে হাদীসটি বাতিল। এর কয়েকটি দোষণীয় দিক রয়েছে। যেমনঃ

(১) হাদীসটি বর্ণনায় ইবনু আবূ লায়লাহ একক হয়ে গেছেন। তার দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, তিনি মজবুত নন। বাযযার বলেন, তিনি হাফিয নন। তিনি এটি কখনো মারফূ আবার কখনো মাওকূফভাবে বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুল হাক্ব ইশাবিলী ‘আল-আহকাম’ (১/১০২) গ্রন্থে বলেনঃ একাধিক সূত্রে এটি মাওকূফভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং ইবনু আবূ লায়লাহ হাফিয নন। হাফিয ‘আত-তাক্ববীর’ গ্রন্থে বলেন, একাধিক সূত্রে এটি মাওকূফভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং ইবনু আবূ লায়লাহ হাফিয নন। হাফিয ‘আত-তাক্ববীর’ গ্রন্থে বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু স্মরণশক্তি খারাপ। ইমাম যাহাবী ‘যুআফা’ গ্রন্থে বলেন, তার স্মরণশক্তি খারাপ। এজন্য তার বর্ণিত হাদীস সাধারণ দুর্বলের অন্তর্ভুক্ত না করে কঠিন দুর্বল হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

(২) এ হাদীস যারা ইবনু আবূ লায়লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে ওয়াকী‘ সবচেয়ে প্রমাণযোগ্য। তিনি এটি ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমারের মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

(৩) তাবেঈনদের একদল সহীহ সনদসমূহ দ্বারা বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমার রুকু‘র সময় ও রুকু‘ থেকে উঠে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন।

(৪) শু‘বাহ বলেন, মুকসিম থেকে হাকাম শুধুমাত্র চারটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে এ হাদীসটি নেই।

(৫) হাদীসটির শব্দগত গড়মিল রয়েছে। কখনো এটি ‘লা তারফাউ’ শব্দে আবার কখনো কেবল ‘তারফাউ’ শব্দে বর্ণিত হয়েছে। সঠিক হচ্ছে ‘লা’ শব্দযোগে।

(৬) হাদীসটি অন্যান্য সহীহ হাদীসসমূহের পরিপন্থি। কেননা

মুতাওয়াতিরভাবে সহীহ হাদীসসমূহে উক্ত সাতটি স্থান ছাড়াও অন্যত্র রফ‘উল ইয়াদাইন করার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ দু‘আ করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত উত্তোলন, সালাতে হাত উঠিয়ে দু‘আ করা এবং এ জন্য নির্দেশ প্রদান করা, কুনুতে নাজিলা ও বিতরের কুনুতে হাত উত্তোলন, জানাযার সালাতে প্রতি তাক্ববীরে হাত উত্তোলন, ইসতিসকার সালাতে হাত উত্তোলন, রুকু‘র আগে রুকু‘র পরে এবং দু’ রাক‘আত শেষে তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময় হাত উত্তোলন ইত্যাদি।

জ্ঞাতব্যঃ ‘মাযমাউয জাওয়ায়িদ’ গ্রন্থে হাইসামীর বক্তব্যঃ ‘এর সনদে ইবনু আবূ লায়লাহ রয়েছে। তার স্মরণশক্তি খারাপ এবং তার হাদীস হাসান ইনশাআল্লাহ।’ শায়খ আলবানী বলেনঃ কিন্তু তার এ বক্তব্য মুসতাকিম নয়। কেননা যে বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তি খারাপ হয় তার বর্ণনা মারদূদ (প্রত্যাখ্যাত বর্ণনার) অন্তর্ভুক্ত হয়। যা উসলুল হাদীসে স্বীকৃত বিষয়। তিনি যদি এ কথার দ্বারা তার (মুতলাক) সাধারণ বর্ণনাকে বুঝান যা প্রকাশ্য (তবে সে কথা ভিন্ন)। কিন্তু তিনি যদি তার এ হাদীসকে হাসান বুঝান তাহলে তা কিভাবে সম্ভব? এর কোনো শাহিদ বর্ণনা নেই যা একে শক্তিশালী করবে যার দ্বারা এটি হাসান রূপান্তরিত হবে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু‘র সময়, রুকু‘র পরে, ইসতিসকার দু‘আ ও অন্যত্র দু’ হাত উঠিয়েছেন। আমাদের জন্য হাদীসটি প্রত্যাখ্যানের জন্য এ কথা উল্লেখ করা যথেষ্ট হবে যা ইমাম জায়লায়ী হানাফী ‘নাসবুর রায়াহ’ গ্রন্থে বলেছেন। ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) ‘নাসবুর রায়াহ’ গ্রন্থে বলেনঃ স্পষ্ট কথা এই যে, হাদীসটি মারফূ‘ ও মাওকুফ কোনোভাবেই সহীহ নয়।

অতঃপর তাবারানীর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বাহ রয়েছে। তার সম্পর্কে বহু সমালোচনা আছে। অন্তত পক্ষে বিরোধপূর্ণ বিষয়ে তার হাদীস দলীলযোগ্য নয়। এই বৈশিষ্ট্য এখানে বিদ্যমান।

‘‘লা তারফাউ...’’ হাদীসটি ‘‘ওয়া ‘আলাল মাইয়্যিত’’ শব্দযোগে বর্ণিত হয়েছে। সেটির সনদও দুর্বল। সনদে ইবনু যুরাইজ এবং মুকসিমের মাঝে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) ঘটেছে। সম্ভবতঃ তাদের মাঝে ইবনু আবূ লায়লাহ ছিলো। এছাড়া সনদে সাঈদ ইবনু সালিমের স্মরণশক্তি খারাপ। (বিস্তারিত দেখুন, নাসবুর রায়াহ, সিলসিলাতুল আহদিসিস যঈফাহ, হা- ১০৫৪ ও অন্যান্য)।

(ঘ) ‘‘সিজদা দিতে হয় সাতটি অঙ্গে। যথাঃ দু’ হাত, দু’ পা, দু’ হাটু ও কপাল। আর হাত উত্তোলন করতে হয় কা‘বা দেখাকালে। সাফা ও মারওয়াতে, আরাফায়, জামা‘আতে, পাথর নিক্ষেপের সময় এবং সালাত ক্বায়িমের সময়।’’ (ত্বাবারানী কাবীর)।

উল্লেখিত হাদীসে ‘হাত উত্তোলন করতে হয়...’ কথাগুলো মুনকার। হাদীসের এ দ্বিতীয় অংশটি বর্ণনাকারী ‘আত্বা ইবনু সায়িব একা বর্ণনা করেছেন। তার কারণে সনদটি দুর্বল। ‘আত্বা সংমিশ্রণ করতেন। যেমনটি হায়সামী, ইবনু হিব্বান ও অন্যান্যরা বলেছেন। (বিস্তারিত দেখুন, সিলসিলাহ যঈফাহ হাঃ/১০৫৩)।

চারঃ জাবির ইবনু সামুরাহ থেকে বর্ণিত, একদা আমাদের সালাতের হাত উত্তোলন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেনঃ ‘‘কি ব্যাপার! দুষ্ট ঘোড়ার লেজের ন্যায় হাত উত্তোলন করছো? সালাতে স্থিরতা অবলম্বন করো।’’

এ হাদীসের সাথে রুকু‘র আগে ও পরে রফ‘উল ইয়াদাইনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। হাদীসটি সমস্ত মুহাদ্দিসগণই সালাম ও তাশাহুদ পরিচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন, সহীহ মুসলিমে অনুচ্ছেদঃ সালাতে স্থিরতার নির্দেশ ও হাত দ্বারা ইশারা করা নিষেধ এবং সালামের সময় হাত উঁচু করা নিষেধ।’’, সহীহ ইবনু খুযাইমাহর অনুচ্ছেদঃ ‘‘সালাতরত অবস্থায় ডান ও বাম হাতের ইশারা করার ব্যাপারে তিরস্কার।’’, ইমাম নাসায়ী অনুচ্ছেদ বেঁধেছেন এভাবেঃ ‘‘সালাতরত অবস্থায় হাত দিয়ে সালাম দেয়া’’ ইত্যাদি। ইবনু হিব্বান, আবূ ‘আওয়ানাহ, ইমাম বায়হাক্বী এবং অন্যান্য মুরশিদগণও অনুরূপ পরিচ্ছেদ বেঁধেছেন।

তাই তো ইমাম নাববী (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু সামুরাহর হাদীস দ্বারা তারা অতি আশ্চর্য বস্তুর ন্যায় দলীল গ্রহণ করে এবং সুন্নাত দ্বারা অধিক নিন্দনীয় অজ্ঞতাপূর্ণ দলীল গ্রহণ করে। কেননা রুকু‘র আগে ও রুকু‘র পরে রফ‘উল ইয়াদাইন সম্পর্কে ঐ হাদীসটি বর্ণিত হয়নি। (দেখুন, সারাহ্ সহীহ মুসলিম ৩/৪০৩)।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ঘটনাটি ছিলো তাশাহুদের অবস্থায় ক্বিয়ামের অবস্থায় নয়। তাঁদের (সাহাবীগণ) কেউ কেউ একে অন্যকে সালাতের মধ্যে সালাম দিতেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদে হাত উঠাতে নিষেধ করলেন। যাদের সামান্যতম জ্ঞান আছে তারা এ ধরণের হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেননি। আর এটা সুপরিচিত, প্রসিদ্ধ, এতে কোনো মতভেদ নেই। আর যদি ব্যাপারটি ঐরূপ হয় তাহলে তো তাক্ববীরে তাহরীমায় হাত উত্তোলন, ঈদের সালাতে হাত উত্তোলনও নিষেধ হয়ে যাবে। কেননা এতে এক রফ‘উল ইয়াদাইন থেকে আরেক রফ‘উল ইয়াদাইনকে পার্থক্য করা হয়নি। জাবির ইবনু সামুরাহ বর্ণিত আরেক হাদীস বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করেছে। তা হলোঃ জাবির ইবনু সামুরাহ বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায়কালে বলতাম, আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম। মিস‘আর তার দু’ হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি হলো! এরা তাদের হাত দ্বারা ইশারা করছে, যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজের ন্যায়? তাদের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে তারা তাদের হাতকে রানের উপর রাখবে, অতঃপর ডান দিকেও বাম দিকের ভাইকে সালাম করবে। (দেখুন, বুখারী জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।

পাঁচঃ ‘‘ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসঃ তিনি যখন সালাত শুরু করতেন তখন দু’ হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর এরূপ আর করতেন না।’’ এ হাদীসটি বাতিল ও বানোয়াট। এটি বায়হাক্বী তার ‘খুলাফিয়াত’ গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনু গালিব থেকে তিনি আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল বারতি থেকে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আওন আল-খাররায থেকে তিনি মালিক থেকে তিনি যুহরী থেকে তিনি সালিম থেকে তিনি ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আমি (আলবানী) বলছিঃ বাহ্যিকভাবে সনদটি ভালো। এর দ্বারা কোনো কোনো হানাফী মতাবলম্বী ধোঁকায় পড়েছেন। হাফিয মুগলাতাই বলেনঃ তার সনদে সমস্যা নেই।

জানি না কিভাবে এ ধরণের হাফিয ব্যক্তি এমন কথা বলেন। অথচ বুখারী, মুসলিম, সুনানুল আরবাআহ ও মাসানীদ গ্রন্থসমূহ মালিক থেকে উক্ত সনদে ইবনু উমার থেকে রুকু‘তেও (যাওয়ার ও উঠার সময়) দু’ হাত উঠানোর প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে হাদীসটি বর্ণনাকারী বায়হাক্বী ও তার শায়খ হাকিম উভয়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ ‘হাদীসটি বাতিল, বানোয়াট। আশ্চর্য হবার ও তার ত্রুটি বর্ণনা করার উদ্দেশ্য ছাড়া এটিকে উল্লেখ করাই জায়িয নয়। আমরা মালিক থেকে সুস্পষ্ট বহু সনদে এর বিপরীত হাদীস বর্ণনা করেছি।

হাদীসের অনুসারীদের বিপক্ষে হানাফী মাযহাবের চরম ভক্ত শায়খ মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ আন নুমানী ‘মাতামুসসু ইলাইহিল হাজাতু লিমান ইউতালিউ সুনান ইবনু মাজাহ’ (পৃঃ ৪৮-৪৯) গ্রন্থে বায়হাক্বী ও হাকিমের সমালোচনা করে বলেনঃ ‘ত্রুটির বিবরণ না দিয়ে শুধুমাত্র হাদীসটির দুর্বল হুকুম লাগানোর দ্বারা দুর্বলতা সাব্যস্ত হয় না। ইবনু উমারের এ হাদীসটি বর্ণনাকারীগণ সহীহ বর্ণনাকারী। এরপরে হাদীসটির দুর্বলতার কোনো কারণ দেখছি না।... এ হাদীসটি আমার নিকট সহীহ’!

আমি (আলবানী) বলছিঃ তার এ বক্তব্য দু’টি বস্তুর একটি প্রমাণ বহন করেঃ হয় এ ব্যক্তি মুহাদ্দিসগণের নিকট নির্ধারিত নিয়মনীতির পরোয়া করেন না, না হয় তিনি সেই বিষয়ে অজ্ঞ। অধিকাংশ ধারণা প্রথমটাই তার কাছে বিদ্যমান। কারণ আমি এমন ধারণা রাখি না যে, অজ্ঞতা হেতু তিনি সহীহ হাদীসের সংজ্ঞাই জানেন না। যে হাদীস সনদে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে ন্যায়পরায়ণ (নির্ভরযোগ্য) এবং পূর্ণাঙ্গ আয়ত্তশক্তি ও হিফযের গুণাবলী সম্মলিত বর্ণনাকারীর মাধ্যমে শায এবং ত্রুটিহীনভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাকেই বলা হয় সহীহ হাদীস।

যখন অবস্থা এই তখন বলতে হচ্ছে যে, মুহাদ্দিসগণের নিকট সহীহ হাদীস কাকে বলে সে সম্পর্কে তিনি হয় অজ্ঞ, না হয় তিনি সহীহ হাদীসের কোনো একটি শর্তের বিষয়ে অজ্ঞ। আর সেটি হচ্ছে হাদীসটি শায না হওয়া। ইমাম হাকিম ও বায়হাক্বী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, হাদীসটি শায থেকে নিরাপদ নয়। তাদের উভয়ের এ কথা ‘আমরা মালিক থেকে সুস্পষ্ট বহু সনদে এর বিপরীত হাদীস বর্ণনা করেছি।’ তারই প্রমাণ বহন করেছে।

আমি (আলবানী) বলছিঃ হাকিম ও বায়হাক্বী শুধু দাবীর দ্বারা হাদীসটি বাতিল হওয়ার হুকুম লাগাননি। যেমন আন-নুমানী শাহেব বর্ণনা করেছেন। বরং যিনি বুঝাবেন তার জন্য তার সঙ্গে দলীলও নিয়ে এসেছেন। সেটি হচ্ছে শায হওয়া। (গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি তার মতই একাধিক বা তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির বিরোধিতা করে যে, হাদীসটি বর্ণনা করেন সেটিকে বলা হয় শায হাদীস)। এছাড়া হাদীসটির উপর যে হুকুম লাগানো হয়েছে তাকে শক্তিশালী করবে এরূপ আরো দলীল সামনের আলোচনায় আসবে।

যদি হাদীসটি বাতিল হওয়ার জন্য অন্য কোনো দলীল নাও থাকতো তাহলে ইমাম মালিকের ‘আল-মুয়াত্তা’ (১/৯৭) গ্রন্থে এর বিপক্ষে হাদীস বর্ণিত হওয়ায় তাই তা বাতিলের জন্য যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু আমরা দেখছি বহু গ্রন্থ রচনাকারী ও বর্ণনাকারী ইমাম মালিক থেকে আলোচ্য হাদীসটির বিপরীত হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী (২/১৭৪), আবূ আওয়ানাহ (২/৯১), নাসায়ী (১/১৪০, ১৬১-১৬২), দারিমী (১/২৮৫), শাফিঈ (১৯৯), ত্বাহাবী ‘শারহু মা‘আনিল আসার’ (১/১৩১) ও আহমাদ (৪৬৭৪, ৫২৭৯) বিভিন্ন সূত্রে ইমাম মালিক থেকে তিনি ইবনু শিহাব থেকে তিনি সালিম ইবনু ‘আব্দুল্লাহ থেকে তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’ হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন যখন সালাত আরম্ভ করতেন, যখন রুকু‘র জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকু‘ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন।’’ (আল-হাদীস) ভাষাটি ইমাম মালিক থেকে ইমাম বুখারীর।

বাস্তবতা এই যে, বাতিল হাদীসটির বিপরীতে এ হাদীসটি এ বাক্যে ইমাম মালিক থেকে মুতাওয়াতির বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘আবদুল বার ইমাম মালিক থেকে বর্ণনাকারীগণের নাম উল্লেখ করেছেন। যারা সংখ্যায় ত্রিশজনের মতো।

তাছাড়া একদল নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব থেকে সহীহ হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে তার (মালিকের) সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।

এ হাদীসটিও ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবূ আওয়ানাহ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, ত্বাহাবী, দারাকুতনী, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ বিভিন্ন সূত্রে ইবনু শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন।

‘‘... তাতে বলা হয়েছে ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি সালাত শুরু করার সময়, রুকু‘রেত যাওয়ার সময়, রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত উঠাতেন।’’

ইবনু উমারের দাস নাফি‘ বর্ণনাকারী সালিমের মুতাবা‘আত করেছেন। তাতে চার স্থানে হাত উঠানোর কথা বলা হয়েছে। চতুর্থ স্থানটি হচ্ছে দু’রাক‘আত শেষ করে তৃতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে।

এটি ইমাম বুখারী, আবূ দাঊদ, বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন্ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে এরূপ আরো বর্ণনা এসেছে। আমরা যখন এটি বুঝলাম, তখন ইবনু উমার (রাঃ) থেকে এ সব বর্ণনা ও সহীহ সূত্রগুলো আলোচ্য হাদীসটি। বিভিন্নভাবে বাতিল হওয়ার প্রমাণ বহন করেঃ

১। আলোচ্য হাদীসে একজন বর্ণনাকারী ইমাম মালিক থেকে সকল বর্ণনাকারীর বিপরীত বর্ণনা করেছেন। যে দিকে ইমাম হাকিম ও বায়হাক্বী ইঙ্গিত করেছেন। বিশেষকরে যাদের বিরোধীতা করে বর্ণনা করা হয়েছে তারা সংখ্যায় মুতাওয়াতির পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন। একজন ব্যক্তি কর্তৃক এর চেয়ে কম সংখ্যক বর্ণনাকারীর বিরোধীতা করাতেই তার হাদীসটি শায ও পরিত্যক্ত হিসেবে গণ্য হয়।

২। ইমাম মালিকের নিকট যদি জানা থাকতো যে, এ আলোচ্য হাদীসটি তার থেকেই বর্ণনাকৃত, তাহলে তিনি সেটি অবশ্যই ‘আল-মুয়াত্তা’ গ্রন্থে বর্ণনা করতেন এবং তার উপর আমল করতেন। কিন্তু উভয়টি তার থেকে সংঘটিত হয়নি। কারণ তিনি আলোচ্য হাদীসের বিপরীত বর্ণনা করেছেন এবং তার উল্টা আমল করেছেন। ইমাম খাত্তাবী ও কুরতুবী বলেনঃ ইমাম মালিকের এটিই হচ্ছে শেষ মত।

৩। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যৃর পরে উল্লেখিত সময়গুলোতে হাত উঠানোর উপরেই আমল করেছেন। যেমনটি পূর্বের হাদীস উল্লেখ করার সময় বুঝা গেছে। তাছাড়া তার নিকট যদি আলোচ্য হাদীসটি সাব্যস্ত হতো তাহলে তিনি অবশ্যই তার উপর আমল করতেন। কিন্তু তার থেকে তা না হয়ে উল্টাটি সাব্যস্ত হয়েছে। ‘‘তিনি যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুক‘ করার সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত উঠাচ্ছেন না তখন তিনি তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতেন।’’ এটি ইমাম বুখারীর ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ (পৃঃ ৮) গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবনু ইমাম আহমাদ ‘মাসায়িল আন আবীহ’ গ্রন্থে এবং দারাকুতনী (১০৮) তা থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম ত্বাহাবী যে তার থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি শুধু মাত্র প্রথম তাক্ববীরের সময় হাত উঠিয়েছেন, সেটিও শায।

৪। ইবনু উমার (রাঃ) থেকে যিনি আলোচ্য হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তাদের ধারণামতে তিনি হচ্ছেন তারই ছেলে সালিম। অথচ সালিম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি উল্লিখিত সময়গুলোতে সালাতে দু’ হাত উঠাতেন। যেমনটি তিরমিযী তার থেকে বর্ণনা করেছেন। যে হাদীসটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, তিনি (সালিম) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন সেটি যদি সত্য হতো তাহলে অবশ্যই তিনি তার বিরোধীতা করে উল্টা আমল করতেন না।

অতএব এ সব কিছু প্রমাণ করছে যে, হাকিম ও বায়হাক্বী হাদীসটি বাতিল বলে যে হুকুম লাগিয়েছেন তাই সঠিক।

শায়খ আন-নু‘মানি যে বলেছেনঃ এটি আমার নিকট সহীহ। তা অসম্ভব কথা।

উক্ত শায়খ যে বলেছেনঃ সর্বোচ্চ বলা যেতে পারে যে, ইবনু উমার (রাঃ) কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাত উঠাতে দেখেছেন। ফলে তিনি সেই অবস্থার সংবাদ দিয়েছেন। আর কখনো কখনো তাঁকে হাত উঠাতে দেখেননি। তখন তিনি সেই অবস্থার সংবাদ দিয়েছেন। তার প্রত্যেকটি হাদীস এরূপ প্রমাণ বহন করে না যে, নির্দিষ্ট করে তিনি একটি উপর সর্বদা আমল করেছেন। এছাড়া ‘কানা শব্দটি স্থায়িত্বের প্রমাণ বহন করে না।’ অধিকাংশ সময়ের প্রমাণ বহন করে।

আমি (আলবানী) বলছিঃ দু’টি বর্ণনাকে এভাবে একত্রিত করাও বাতিল। কারণ দু’টি বর্ণনাকে একত্রিত করার শর্ত হচ্ছে এই যে, উভয়টি সাব্যস্ত হতে হবে। এখানে একটি সহীহ আর অপরটি বাতিল। অতএব এরূপ দু’ মেরুর বর্ণনাকে একত্রিত করা জায়িয নয়। কিভাবে এটি সম্ভব যে, একই বর্ণনাকারী একবার বললেনঃ তিনি হাত উঠাতেন না আবার বললেন যে, তিনি হাত উঠাতেন। বর্ণনাকারী নিজেও কি একবারের জন্য উভয় ভাষাকে একত্রিত করেছেন? করেননি। এরূপ একত্রিত করণের দৃষ্টান্ত হাদীসের মধ্যে রয়েছে বলে আমরা জানি না! দু’টি সহীহ বর্ণনার ক্ষেত্রে একত্রিত করণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে, বুঝলাম হাদীসটি বাতিল। তবে এ সমস্যাটি কার থেকে সৃষ্টি হয়েছে? এ সমস্যা ইমাম মালিক থেকে বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু আওন আল-খাররায থেকে, নাকি তার নীচের বর্ণনাকারী থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তরঃ মুহাম্মাদ ইবনু গালিব ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে এরূপ ভুলের সন্দেহ করা যায় না। তার উপাধি হচ্ছে তামতাম। যদিও তাকে দারাকুতনী নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেনঃ তিনি ভুল করতেন। তিনি কতিপয় হাদীসের সন্দেহ করেছেন। ইবনুল মানাবী বলেনঃ তার থেকে লোকেরা লিখেছেন। অতঃপর হাদীস ও অন্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে তার মন্দ খাসলতের কারণে তার থেকে অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

বাহ্যিকতা প্রমাণ করেছে যে, আলোচ্য হাদীসটির ক্ষেত্রে তিনি ভুল করেছেন। সম্ভবতঃ তার এ হাদীসটি সেই সবগুলোর একটি যেগুলোর দিকে দারাকুতনী ইঙ্গিত করেছেন। (দেখুন, শায়খ আলবানীর যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ, হাঃ- ৯৪৩)।

* ইবনু উমার সূত্রে আরো কয়েকটি ভিত্তিহীন মাওকূফ বর্ণনাঃ

(ক) মুজাহিদ বলেনঃ ‘‘আমি ইবনু উমারের সাথে দশ বছর ছিলাম কিন্তু আমি তাকে রফ‘উল ইয়াদাইন করতে দেখিনি।’’ এটি সনদহীন এবং মিথ্যা বর্ণনা।

(খ) সিওয়ার ইবনু মুসআব থেকে আতিয়্যাহ আল-আওফী সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ সাঈদ খুদরী ও ইবনু উমার (রাঃ) কেবল তাকবীরে তাহরীমাহর সময় হাত উঠাতেন এরপর হাত উঠাতেন না। (বায়হাক্বী)।

ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেনঃ ‘ইমাম হাকিম বলেছেনঃ বর্ণনাকারী আতিয়্যাহর অবস্থা মন্দ, এবং তার সূত্রে বর্ণনাকারী সিওয়ারের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ।’ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ সিওয়ার ইবনু মুসআব মুনকারুল হাদীস। ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দলীলের অযোগ্য। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ ও অন্যান্য)।

ছয়ঃ ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ)-এর নামে বাতিল ও মিথ্যা বর্ণনাঃ

(ক) ‘‘যে ব্যক্তি সালাতে তার দু’ হাত উঠাবে তার সালাত নষ্ট হয়ে যাবে।’’ বর্ণনাটি বাতিল ও ভিত্তিহীন। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এ বর্ণনার কারণে আমির কাতিবুন ইতকানী অজ্ঞাতভাবে তার উপর ভিত্তি করে রফ‘উল ইয়াদাইন দ্বারা সালাত বাতিল হওয়ার বিবরণ দিয়ে একটি কিতাব রচনা করেছেন। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি তার কথায় চলেছে সে এ বর্ণনার দ্বারা অতর্কিত আক্রমণ করে কোনো হানাফী ব্যক্তির শাফিঈর পিছনে সালাতে ইকতিদা করা নাজায়িয হওয়ার ফায়সালা দিয়েছেন। কারণ তারা সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইন করেন! (নাউযুবিল্লাহ)। যদিও ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) থেকে এ বর্ণনাটি বাতিল, যেমনটি আল্লামা আবূল হাসনাত লাখনৌভী (রহঃ) ‘আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফীয়্যাহ’ গ্রন্থে তাহক্বীক্ব করেছেন। (দেখুন, আলবানীর ‘যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ’ ২য় খ, ৫৬৮৯ হাদীসের নীচে)।

(খ) মিথ্যা মুযারা তৈরীঃ একদা ইমাম আওযায়ী (রহঃ) ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-কে বললেনঃ এ কি ব্যাপার! আপনি রুকু‘র পূর্বে ও পরে রফ‘উল ইয়াদাইন করেন না? ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বললেনঃ কারণ এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীস নেই। ইমাম আওযায়ী (রহঃ) বলেনঃ কিভাবে সহীহ নয়? আমার কাছে ইমাম যুহরী, সালিম এবং আবদুল্লাহ ইবনু উমারের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে, রুকু‘র পূর্বে ও রুকু‘র পরে রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন।’ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বললেনঃ আমাকে হাম্মাদ বলেছেন ইবরাহীম ও আলকামার মাধ্যমে, ইবনু মাসঊদ বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে হাদ উঠিয়েছেন এরপর আর হাত উঠাননি। (ফাতহুল কাদীর ১/২১৯, কাবীরী ১১৬ পৃঃ)।

উক্ত ঘটনার সনদ ও মাতান উভয়ই মিথ্যা সাজানো। যেমনঃ

১। মুনাযারার সালাত বিশ্লেষণঃ এ বির্তকের বর্ণনাসূত্রে তিনজন বর্ণনাকারী অর্থাৎ সুলাইমান শাযকূনী, হারিসী ও মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম হাদীস জালকারী। (দেখুন, আত-তাহক্বীকুল রাসিখ ১৭৫ পৃঃ আবূ যুহরা রচিত হায়াতে আবূ হানীফা গ্রন্থে ৪৩৯ পৃঃ টিকা, সালাতুল মুসলিমীন ৪৬১ পৃঃ, সালাতে মুস্তাফা ১২১ পৃঃ)।

২। মুনাযারার মাতান বিশ্লেষণঃ ‘মাসায়েলে রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে এর মাতান বিশ্লেষণে যে আলোচনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

একঃ ইমাম আবূ হানীফার উক্তিঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রফ‘উল ইয়াদাইনের কোনো সহীহ হাদীস নেই।’’- ইমাম ইবনু আবূ হানীফা (রহঃ) এর দিকে এ কথা সম্পৃক্ত করা কত বড় হাস্যকর ব্যাপার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুয়াত্তা ইমাম মালিকের শ্রেষ্ঠতম সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। এ সময় হাদীসের সনদে রাবী দীনের বড় বড় ইমাম ছিলেন। যেমন, ইমাম যুহরী (রহঃ), ইমাম সালিম (রহঃ), ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)। বলুন তো, এদের মধ্যে কোনো যঈফ রাবী আছেন কি? আবূ দাঊদের সনদের রাবীগণ হলেন- ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ), ইমাম সুফয়ান (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ), ইমাম সালিম (রহঃ), ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)। কত বড় উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ইমামগণ এই হাদীসের সনদে আছেন। এছাড়া অসংখ্য সাহাবীদের অসংখ্য সহীহ সনদে রফ‘উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে। কেবল পক্ষের লোকই নয় বরং বিপক্ষের লোকেরাও এর সহীহ হওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

ইমাম আবূ হানীফাহর (রহঃ)-এর নিকট নিশ্চয়ই এ হাদীস পৌঁছেছে। এ হাদীসগুলোর রাবীগণ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর উস্তাদও ছিলেন এবং এরা সকলেই রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। যেমন, ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম ‘আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ (রহঃ), ইমাম আওযায়ী (রহঃ), ইমাম মাকহূল (রহঃ), ইমাম আমর ইবনু মুররাহ (রহঃ), ইমাম তাউস (রহঃ), ইমাম আবদুল্লাহ বিন দীনার (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ), ইমাম উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ), ইমাম সালিম (রহঃ), ইমাম মুহাররব (রহঃ), ইমাম কাতাদাহ (রহঃ), ইমাম শু‘বাহ (রহঃ), ইমাম আসিম (রহঃ), ইমাম আবদুর রাহমান ইবনু আরায (রহঃ), ও অন্যান্য ইমামগণ। এটা কি করে সম্ভব যে, এই ইমামগণের ছাত্র হওয়ার পরও ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস জানতেন না? এ সমস্ত ইমামগণ কি তাহলে স্বীয় ছাত্রের কাছে রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস গোপন করেছেন? স্বীয় ছাত্রকে এ সমস্ত হাদীস পড়াননি?

এবার ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর ছাত্রদের দিকে তাকানো যাক। দেখা যাবে তারাও রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন, ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ), ইমাম ‘আফিয়াহ (রহঃ), ইমাম ফাযল ইবনু দাকীন (রহঃ), ইমাম ইবরাহীম ইবনু ত্বাহমান (রহঃ) এবং আরো অনেকে। এরা সকলেই রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসের রাবী। এরপর ইয়াহইয়াহ ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান, ইমাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারাক, ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) ও ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর ছাত্র। এরা রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সালাতে রফ‘উল ইয়াদাইনও করেছেন। তারপর তাদের ছাত্ররাও দ্বীনের বড় বড় ইমাম ছিলেন। তারাও রফ‘উল ইয়াদাইনের হাদীসের রাবী এবং আমলকারী। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর উপরে ও নীচের মুহাদ্দিসগণ রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। মাঝখান থেকে ইমাম আবূ হানীফা বাদ থেকে যাচ্ছেন। এই আলোচনার মূল দাবী হলো- ‘‘ রফ‘উল ইয়াদাইনের কোনো সহীহ হাদীস নেই’’- এ কথাটি ইমাম আবূ হানীফার প্রতি ভুল ও মিথ্যা আরোপ।

দুইঃ যদি মেনে নেয়া হয় তথা কথিত উক্ত ঘটনা ইমাম আবূ হানীফাহ (রহঃ)-এর দাবী সত্য ছিলো অর্থাৎ রফ‘উল ইয়াদাইনের কোনো সহীহ হাদীস নেই, তাহলে ইমাম আওযায়ী যখন সনদসহ হাদীস বর্ণনা করলেন, তখন স্বীয় দাবী অনুযায়ী ঐ হাদীসের সনদকে যঈফ প্রমাণ করার দরকার ছিলো। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলে প্রকারন্তে তিনি হাদীসটিকে সহীহ প্রমাণ করলেন।

তিনঃ ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এক সহীহ হাদীসের মুকাবিলায় আর এক সহীহ হাদীস পেশ করলেন। এটা হাদীস উপস্থাপনের উত্তম পন্থা নয়। এর মাধ্যমে তো হাদীসের মধ্যে দন্দ্ব সৃষ্টি করা হলো। যদি দু’টোই সহীহ হয়, তাহলে দু’টোকেই মানতে হবে। তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের রুকু‘র সময় হাত উঠানোর সুস্পষ্ট বর্ণনা নেই। (দেখুন, মাসায়িলের রফ‘উল ইয়াদাইন)।

অতএব প্রমাণিত হলো, ‘‘ রফ‘উল ইয়াদাইনের কোনো সহীহ হাদীস নেই।’’- এটা ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর উক্তি নয়। বরং উক্ত ঘটনা তাঁর নামে সাজানো মিথ্যামাত্র।

উল্লেখ্য, ইমাম বুখারী, ইমাম বায়হাক্বী এবং আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ (রহঃ) ইমাম আবূ হানীফার সাথে ইবনুল মুবারাকের এক বির্তকের বর্ণনা দিয়েছেন। তা এরূপঃ ওয়াকি (রহঃ) বলেন, ‘‘একদা আমি কুফার মসজিদে সালাত আদায় করি। তখন সেখানে আবূ হানীফা ও আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রহঃ) পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাকত (রহঃ) রুকু‘র সময় ও রুকু‘ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তুলছিলেন কিন্তু আবূ হানীফাত তুলছিলেন না। সালাত শেষে আবূ হানীফা (রহঃ) ইবনুল মুবারাক (রহঃ)-কে বললেন, কি ব্যাপার! তুমি অধিক হস্তদ্বয় উত্তোলন করছো, তুমি কি পাখি হয়ে উড়ে যেতে চাচ্ছো নাকি? অতঃপর ইবনুল মুবারাক বললেন, হে আবূ হানীফা! তোমাকে দেখলাম সালাত আরম্ভের সময় দু’ হাত উত্তোলন করছো, অতএব তুমি কি পাখি হয়ে উড়ে যেতে চাচ্ছো? জবাব শুনে আবূ হানীফা চুপ হয়ে গেলেন।’’ ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে রয়েছেঃ ইবনুল মুবারাক বললেন, আমি যদি প্রথমবারে উড়ে না যাই, তাহলে দ্বিতীয়বারেও উড়বো না।’’ আর আবদুল্লাহ বিন আহমাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘‘ইবনুল মুবারাক বললেন, হে আবূ হানীফা! তুমি যদি প্রথমবারে উড়ে যেয়ে থাকো তাহলে আমি প্রথমবার ছাড়াও উড়ে থাকি।’’

ওয়াকী (রহঃ) বলেন, ইবনুল মুবারাকের উপর আল্লাহ রহম করুন! এটা ছিলো উপস্থিতি উত্তর। ইমাম আবূ হানীফাকে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক একবার বা দু’ বার যে উত্তর দিয়েছেন তা ছিলো অতি উত্তম উত্তর। তাকে এর চেয়ে আর অধিক উপস্থিত উত্তর দিতে দেখিনি। (দেখুন, বুখারীর জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন, বায়হাক্বী ২/৮২, কিতাবুস সুন্নাহ ১/২৭২)।

সাতঃ আর একটি বানোয়াট হাদীসঃ ‘‘যে ব্যক্তি সালাতে তার দু’ হাত উঠাবে তার সালাতই হবে না।’’

হাদীসটি ইবনু ত্বাহীর তাজকিরাতুল মাউযু‘আত গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, এর সনদে মামূন ইবনু আহমাদ আল-হারাবী রয়েছে। সে হাদীস জালকারী। ইমাম যাহাবী বলেন, সে মহাবিপদ ও অপদস্থমূলক বস্তু নিয়ে এসেছে। সে নির্ভরযোগ্যদের সূত্র দিয়ে হাদীস জাল করে, এটি সেগুলোর একটি। আবূ নুয়াইন বলেন, সে জালকারী খবীস, সে নির্ভরযোগ্যদের সূত্র দিয়ে জাল হাদীস বর্ণনা করে।

সহীহুল বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তাসহীলুল ক্বারী‘তে রয়েছেঃ রফ‘উল ইয়াদাইন করলে সালাত হবে না’ এ মর্মে আনাস সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ‘উকাশাহ এবং আবূ হুরাইরাহ সূত্রে মামূন ইবনু আহমাদ মিথ্যা হাদীস বানিয়েছেন। (দেখুন, তাসহীলুল ক্বারী শারহে বুখারী)।

আনাস বর্ণিত হাদীসটি হাকিম ‘মুদখাল’ গ্রন্থে বর্ণনার পর বলেন, হাদীসটি মাওযু (বানোয়াট) তিনি ‘বাদরুল মুনীর’ গ্রন্থে বলেনঃ এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু উকাশাহ রয়েছে। তার সম্পর্কে ইমাম দারাকুতনী বলেন, সে হাদীস বানাতো। আর ইবনু জাওযী আবূ হুরাইরাহর হাদীসকে বানোয়াট হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (দেখুন, নায়লুল আওতার)।

আটঃ আসওয়াদ বলেনঃ আমি দেখেছি, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) প্রথমবার তাক্ববীরে তাহরীমার সময় হাত উঠিয়েছেন। এরপর আর উঠাননি।’ তিনি আরো বলেন, আমি ইবরাহীম ও শা‘বীকেও দেখেছি। (ত্বাহাবী)।

ইমাম ত্বাহাবী বলেন, ‘উমার (রাঃ) কেবল প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন মর্মে আসারটি সহীহ। কিন্তু ইমাম হাকিম তার বিরোধীতা করে বলেনঃ এ বর্ণনাটি শায। এর দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হবে না। বিশুদ্ধ হাদীসসমূহ এর বিরোধীতা করছে। যেমন, তাউস ইবনু কায়সান থেকে ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘‘‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন।’’ (দেখুন, নাসবুর রায়াহ ও অন্যান্য)।

নয়ঃ বায়হাক্বী ‘আল-খিলাফিয়াত’ গ্রন্তে বর্ণিত আছে যে, ‘উব্বাদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভের সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। এরপর সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন না।’’- এ বর্ণনাটিও দলীলের অযোগ্য। প্রথমতঃ এটি মুরসাল বর্ণনা। কারণ বর্ণনাকারী উব্বাদ একজন তাবেঈ। দ্বিতীয়তঃ এর তিনজন বর্ণনাকারী দুর্বল। যেমন,

১. বর্ণনাকারী হাফস ইবনু গিয়াসের স্মরণশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

২. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ইয়াহইয়া সমালোচিত।

৩. মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব ইবনু ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ উক্বাসা হাদীস বানাতো। (দেখুন, তাসহীলুল ক্বারী)।

দশঃ আলী (রাঃ)-এর মাওকূফ বর্ণনাঃ আবূ বাকর আন-নাহশালী থেকে ‘আসিম ইবনু কুলাইব থেকে তার পিতার মাধ্যমে বর্ণিতঃ ‘আলী (রাঃ) সালাতে প্রথমে তাক্ববীরে তাহরীমাহর সময়ে দু’ হাত উঠাতেন। এরপর হাত উঠাতেন না। (ত্বাহাবী)।

ইমাম ত্বাহাবী বলেনঃ এ আসারটি সহীহ। কিন্তু শায়খ ‘আল-ইমাম’ গ্রন্থে বলেনঃ ‘উসমান ইবনু সাঈদ আত-দারিমী বলেনঃ ‘এটি দুর্বল বর্ণনা। এর সনদ সূত্র নিকৃষ্ট। আর ‘আলী (রাঃ) সম্পর্কে এরূপ ধারণা করা যায় না যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মের উপর নিজের কর্মকে প্রাধান্য দিবেন। কেননা ‘আলী (রাঃ) নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন।’ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে আলী (রাঃ)-এর সূত্রে উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফী‘র হাদীসটি অধিক সহীহ। তা হচ্ছেঃ ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফারয সালাতে দাঁড়িয়ে তাক্ববীর বলে তাঁর দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। তিনি ক্বিরাআত শেষে রুকু‘তে গমনকালে এবং রুকু‘ থেকে উঠার সময়ও অনুরূপ করতেন। তবে বসে সালাত আদায়কালে তিনি এরূপ হাত তুলতেন না। তিনি দু’ সিজদার পর (অর্থাৎ দু’ রাক‘আত শেষে) দাঁড়ারে হাত উঠিয়ে তাক্ববীর বলতেন।’’ (আবূ দাঊদ- অধ্যায়ঃ সালাত, হাঃ ৭৪৪, তিরমিযী- অধ্যায়ঃ দা‘ওয়াত, হাঃ ৩৪২৩, ইবনু মাজাহ- অধ্যায়ঃ সালাত ক্বায়িম, অনুঃ রফ‘উল ইয়াদাইন, হাঃ ৮৬৪, আহমাদ ১/৯৩, সকলে সুলাইমান ইবনু দাঊদ সূত্রে। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। শায়খ আলবানী (রহঃ)ও হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির বলেনঃ এর সনদ সহীহ। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)-কে ‘আলীর এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ হাদীসটি সহীহ)।

* উল্লেখ্য কতিপয় নির্বোধ লোকের উক্তি আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে নতুন ঈমান আনা লোকেরা না কি সালাতে বোগলে পুতুল বা অস্ত্র রাখতেন, সেজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রফ‘উল ইয়াদাইন করার হুকুম করেন। পরে তাদের ঈমান মজবুত হলে রফ‘উল ইয়াদাইন রহিত হয়ে যায়। এরূপ উক্তি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আর এ ধরণের কথা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষণ ও সহাবায়ি কিরামের উপর মিথ্যা অপবাদেরই নামান্তর। আল্লাহ আমাদের এরূপ মিথ্যা থেকে হিফাযাত করুন- আমীন!

সারকথাঃ উপরোল্লিখিত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হলো যে, রফ‘উল ইয়াদাইন না করার কোনো মজবুত দলীল নেই। বরং এ সম্পর্কিত হাদীসসমূহ দোষযুক্ত। সেহেতু এগুলো বর্জন করা শ্রেয়।

(২) আব্দুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করেছি, কিন্তু তারা ছালাত আরম্ভের তাকবীর ছাড়া আর কোথাও হাত উত্তোলন করেননি। (দারাকুৎনী ১/২৯৫; বায়হাক্বী কুবরা হা/২৬৩৬, ২/৭৯ ও ৮০; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন। (মুসনাদে আবী ইয়ালী হা/৫০৩৯, ৮/৪৫৩)।

ইমাম বায়হাক্বী ও দারাকুৎনী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু জাবের এককভাবে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছে। হাম্মাদ থেকে এবং সে ইবরাহীম থেকে যঈফ হাদীছ বর্ণনাকারী। (বায়হাক্বী হা/২৬৩৬-এর মন্তব্য দ্রঃ; দারাকুৎনী হা/১১৪৪)।

(৩) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন দুই কানের নিকটবর্তী পর্যন্ত দুই হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর তিনি আর এরূপ করতেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হা/৭৪৯, ১/১০৯ পৃঃ; ত্বাহাবী হা/১২৪৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘রুকূর জন্য তাকবীর’ অনুচ্ছেদ ; দারাকুৎনী ১/২৯৩; বায়হাক্বী ২/৭৬)।

তাহক্বীক্বঃ আহমাদ (৪/৩০১) ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ সূত্রে- ‘‘তিনি এরপর আর হাত উঠাননি’’ এ কথাটি বাদে। উল্লেখ্য কয়েকটি দোষের কারণে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়ঃ

একঃ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দুর্বল। হাফিয ‘আত-ত্বাকরীব’ গ্রন্থে বলেনঃ দুর্বল। বৃদ্ধ বয়সে তার স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে যায়। ফলে তিনি তালকীন করতেন। তিনি ছিলেন শিয়া। ‘খুলাসাত’ গ্রন্থে রয়েছেঃ তিনি বড় মাপের শিয়া ইমাম ছিলেন। ইবনু ‘আদী বলেন, তার হাদীস লিখা হতো। হাফিয যাহাবী ‘আত-তাহযীব’ গ্রন্থে ইবনু মাঈন সূত্রে বলেনঃ তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। তার হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না।

দুইঃ হাদীসে বর্ণিত ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ কথাটি অপ্রমাণিত। ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি বারাআ ইবনু ‘আযিবের নয়। বরং উক্ত হাদীসের এক বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদের। তিনি হাদীসটি দুইভাবে বর্ণনা করেছেন।

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে হাত উঠাতেন। অথবা

দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে, রুকু‘র পূর্বে ও রুকু‘র পরে হাত উঠাতেন- (বায়হাক্বী ২/৭৭)।

*ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এতে প্রতিয়মান হয়, ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ হাদীসটি কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। বেশ কিছুদিন তিনি উক্ত শব্দে সংক্ষিপ্তভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। পরে যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে যান, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়, তখন কুফাবাসীরা তাকে ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ শব্দটি শিখিয়ে দেন। তখন তিনিও ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলতে লাগলেন। (দেখুন, নায়লুল আওতার)।

* সুফয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ) বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ মক্কাহতে ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লাহ থেকে বারাআ ইবনু আযিবের মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে, রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। অতঃপর একদা আমি কুফায় গেলাম। তখন আমি ইয়াযীদকে ঐ হাদীস এভাবে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে হাত উঠাতেন এরপর আর উঠাতেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, কুফাবাসীরা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে- (বায়হাক্বী)। সুফয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ) আরো বলেনঃ যখন ইয়াযীদ বৃদ্ধ হয়ে গেলেন, তখন লোকেরা তাকে ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ শিখিয়ে দিলো। তখন তিনিও ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলতে শুরু করেন। (জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।

* ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে বলেনঃ ‘সমস্ত হাফিযের হাদীসগণ যারা প্রথমে ইয়াযীদ থেকে এ হাদীস শুনেছে যথা- শারঈ, শু‘বাহ, যুহাইর তারা কেউই ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি বর্ণনা করেননি।’ ইমাম বুখারী (রহঃ) আরো বলেনঃ ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আদাম সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনু ইদ্রিসের কিতাবে ‘আসিম ইবনু কুলাইবের হাদীসটি দেখেছি। কিন্তু তার মধ্যে ‘‘এর পর তিনি আর হাত উত্তোলন করেননি’’ কথাটি উল্লেখ নেই। আর এটাই হচ্ছে অধিক সহীহ কথা। কেননা জ্ঞানীদের কিতাব অধিক সংরক্ষিত। জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো কোনো কথা বলে পুনরায় কিতাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তিনি কিতাবের মতো হয়ে যান। (দেখুন, জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।

*ইবনু হিববান (রহঃ) ‘কিতাবুস যুআফা’ গ্রন্থে বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ সত্যবাদী ছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কেউ তাকে যা শিখিয়ে দিতো তিনি তাই বলতেন। অতএব কুফা শহরে প্রবেশের পূর্বে তার থেকে যারা হাদীস শ্রবণ করেছেন তাদের শ্রবণ বিশুদ্ধ। পক্ষান্তরে কুফায় প্রবেশের পর তার থেকে যারা শ্রবণ করেছেন তাদের শ্রবণ সঠিক নয়। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)।

* ইমাম হুমাইদ (রহঃ) বলেনঃ ইয়াযীদ ‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’ কথাটি বৃদ্ধি করেছেন।

* ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ নয়। এ হাদীসটি নিকৃষ্ট, ভ্রান্ত। ইয়াযীদ এক সময় পর্যন্ত এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কিন্তু তিনি ‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’ বর্ণনা করেননি। পরে যখন কুফাবাসীরা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে তখন তিনি তা বর্ণনা করেন। (দেখুন, নায়লুল আওতার, নাসবুর রায়াহ)।

* ইমা হাকিম বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ হিফযের মাধ্যমে (মুখস্তের দ্বারা) হাদীস বর্ণনা করতেন। বৃদ্ধ বয়সে তার হিফয (স্মরণশক্তি) নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তিনি সনদসমূহ ওলটপালট করে ফেলতেন এবং হাদীসের মতনে বৃদ্ধি করতেন এবং তাতে কোনো পার্থক্য করতেন না। (বায়হাক্বীর ‘সুনানুল কুবরা’ ২/১১০, ১১১)।

* ইমাম বায়হাক্বী ‘আল-মা‘রিফাহ’ গ্রন্থে বলেনঃ এটাই প্রমাণিত যে, ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি ইয়াযীদকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। কেননা প্রথম সময়কার বর্ণনাকারীগণ ইয়াযীদ থেকে ঐ অংশটি বর্ণনা করেননি। যেমন সুফয়ান সাওরী, শু‘বাহ, হুশাইম, যুহাইর ও অন্যান্যরা। বরং ঐ বর্ধিত অংশটি নিয়ে এসেছে ঐ লোকেরা যারা ইয়াযীদ থেকে তার শেষ বয়সে বর্ণনা করেছে। আর তখন তো ইয়াযীদের স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তখন সংমিশ্রণও করতেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)।

তিনঃ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ নিজেই ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটির সঠিকতা অস্বীকার করেছেন। একদা আলী ইবনু ‘আসিমের সামনে তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেন। তখন তিনি ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলেননি। ফলে ‘আলী ইবনু ‘আসি, বললেনঃ আপনি তো ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ও বলেন। তখন তিনি বলেন, আমার মনে নেই। (দেখুন, দারাকুতনী)।

চারঃ হাদীসটি স্বয়ং বারাআ সূত্রে বর্ণিত অপর হাদীস বিরোধী। সুফয়ান থেকে... বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (বায়হাক্বী, হাকি, নাসবুর রায়াহ)।

পাঁচঃ ইযতিরাব ও ইদরাজ। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)

 (৪) আবু সুফিয়ান আমাদের কাছে উক্ত সনদে হাদীছ বর্ণনা করে বলেন যে, তিনি প্রথমবার দুই হাত উত্তোলন করেছেন। তাদের কেউ বলেন, মাত্র একবার। (আবুদাঊদ ১/১০৯ পৃঃ, হা/৭৫১)।

তাহক্বীক্বঃ একবার হাত উত্তোলন করা যে কূফার আমল, তা সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-এর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে। যা পূর্বেও বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ইমাম বুখারী ও ইবনু আবী হাতেম এ সংক্রান্ত বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (নাছবুর রাইয়াহ ১/৩৯৬ পৃঃ; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৩৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।

তাছাড়া কারো ব্যক্তিগত আমল শরী‘আতের দলীল হতে পারে না। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)

(৫) বারা ইবনু আযেব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন দু’হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর ছালাত শেষ করা পর্যন্ত তিনি আর দু’হাত উত্তোলন করতেন না। (আবুদাঊদ, ১/১১০ পৃঃ, হা/৭৫২)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। এর সনদে ইবনু আবী লায়লা নামে যঈফ রাবী আছে। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬৩২)।

তাছাড়া ইমাম আবুদাঊদ হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন, ‘এই হাদীছ ছহীহ নয়’। (যঈফ আবুদাঊদ ১/১১০, হা/৭৫২)।

আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মুনযিরী বলেন, সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনূ আবূ লায়লাহ দুর্বল। হাফিয ‘আত-ত্বাকরীব’ গ্রন্তে বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার স্মরণশক্তি খুবই মন্দ। ইমাম নাসায়ী বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। (দেখুন, আওনুল মা‘বূদ)।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইবনু আবূ লায়লাহ এটি মুখস্থ থেকে বর্ণনা করেছেন। যারা ইবনু আবূ লায়লাহর কিতাব থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তারা এটি বর্ণনা করেছেন ইবনু আবূ লায়লাহ থেকে ইয়াযীদ সূত্রে। ফলে হাদীসটি পৌঁছেছে ইয়াযীদের উভয় মিলিত স্থানে এবং সংরক্ষিত হলো যেটা ইয়াযীদ থেকে সাওরী, শু‘বাহ ও ইবনু ওয়াইনাহ পূর্বে বর্ণনা করেছেন। (দেখুন, জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)।

ইমাম যায়লায়ী হানাফী (রহঃ) ‘নাসবুর রায়াহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ লায়লাহ হাদীস বিশারদগণের নিকট ইবনুল যিয়াদের চেয়েও দুর্বল। তাছাড়া এর সনদ বর্ণনায় তিনি মতপার্থক্য করেছেন। একবার বলা হয়েছেঃ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ লায়লাহ তার ভাই ঈসা থেকে..., আর এক বার বলা হয়েছেঃ ইবনু আবূ লায়লাহ হাকাম ইবনু উত্ববাহ থেকে তিনি ইবনু আবূ যিয়াদ থেকে, আবার বলা হয়েছেঃ তিনি ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ থেকে ইবনু আবূ লায়লাহ সূত্রে। অতএব হাদীসটি যিয়াদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করলো। ‘আবদুল্লাহ বিন আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) বলেন, আমার পিতা হাকাম ও ঈসার হাদীসটি অস্বীকার (ইনকার) করতেন এবং তিনি বলতেনঃ এটি হচ্ছে ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদের হাদীস। ইবনু আবূ লায়লাহর স্মরণশক্তি মন্দ এবং আবূ যিয়াদ হাফিয নন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(৬) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আর তুলতেন না। (বায়হাক্বী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩; তানযীমুল আশতাত ১/২৯২, দ্রঃ জরুরী মাসায়েল, পৃঃ ১১)।

তাহক্বীক্বঃ ইমাম বায়হাক্বী ও হাকেম বলেন, বর্ণনাটি বাতিল ও মিথ্যা। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩)।

(৭) মুজাহিদ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করলাম। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া আর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন না। (ত্বাহাবী হা/১৩৫৭, ১/১৩৩ পৃঃ; ছহীহ বুখারীর হাশিয়া দ্রঃ ১/১০২)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবুবকর ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে। ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ তাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৭-এর বিশ্লেষণ দ্রঃ )।

আলবানী বলেন, ‘বর্ণনাটি শায। কারণ এটি অতি পরিচিত হাদীছের বিরোধী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ)।

জ্ঞাতব্যঃ কেউ কেউ উক্ত বর্ণনাগুলোর আলোকে বলতে চেয়েছেন, ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। (ত্বাহাবী হা/১৩৫৭-এর আলোচনা দ্রঃ)।

কিন্তু উক্ত দাবী সঠিক নয়। কারণ অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) আজীবন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে ছালাত আদায় করেছেন। সরাসরি বুখারী ও মুসলিমে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-.

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন রুকূ করতেন তখনও দুই হাত উঠাতেন, যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। ইবনু ওমর (রাঃ) এই বিষয়টিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে সম্বোধন করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯৪, বুখারী ৭৩৯, আবূ দাঊদ ৭৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৮১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে না, তখন তিনি তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন। (ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৪, পৃঃ ১৫; সনদ ছহীহ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৯)।

সুধী পাঠক! যারা যঈফ, জাল ও মিথ্যা বর্ণনার পক্ষে উকালতি করেন, তারা এখন কী জবাব দিবেন?

(৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, তার ছালাত হয় না’। (ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ৩/৪৬; তানক্বীহ, পৃঃ ২৮২)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি বাতিল বা মিথ্যা। (ইবনুল জাওযী, আল-মাওযূ‘আত ২/৯৬; ইমাম শাওকানী, আল-আবাতিল ২/১২; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৮)।

মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী বলেন, ‘এর সনদে মামূন বিন আহমাদ আল-হারূবী রয়েছে, সে দাজ্জাল। সে হাদীছ জালকারী। (তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৮৭)।

আবু নু‘আইম বলেন, ‘সে খাবীছ, হাদীছ জালকারী। সে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির নামে মিথ্যা হাদীছ রচনাকারী’। (সিলসিলা যঈফাহ ২/৪১)।

 (৯) আবু জা‘ফর বলেন, আবু হুরায়রা আমাদের সাথে একদা ছালাত আদায় করলেন, তিনি ছালাতে উঠা-বসা করার সময় তাকবীর দিলেন। কিন্তু শুধু ছালাত শুরুর সময় হাত উঠালেন। (মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ হা/১০৪; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৮১; শরহে বুখারী ২/৩৫৫ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত শব্দে বর্ণনাটি পরিচিত নয়। বরং এটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী। কারণ প্রসিদ্ধ হাদীছের মধ্যে একবার রাফ‘উল ইয়াদায়েনের কথা নেই। (দেখুন : ছহীহ বুখারী হা/৭৮৫, ১/১০৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৪৯, ২/১২৩ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৩৯২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সালামাহ...আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, তিনি তাদের সঙ্গে সালাত আদায় করতেন এবং প্রতিবার উঠা বসার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আমার সালাতই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৮৫, ৭৮৯, ৭৯৫, ৮০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৫৩-৭৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯২, আহমাদ ৮২২৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাছাড়া আবু হুরায়রা (রাঃ) ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে ছহীহ বর্ণনা এসেছে। যেমন-

আবু হুরায়রা (রাঃ) যখন তাকবীর দিতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৭, পৃঃ ১৮)।

সুতরাং আবু হুরায়রা (রাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না- এমন দাবী সঠিক নয়।

(১০) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার ছালাত হবে না। (আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকিম, আল-মাদখাল, পৃঃ ১০১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, ‘মুহাম্মাদ ইবনু উকাশা নামক রাবী হাদীছ জালকারী’। (তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৮৩)।

ইমাম জাওযকানী বলেন, ‘এই হাদীছ বাতিল। এর কোন ভিত্তি নেই। মামূন বিন আহমাদ দাজ্জাল, মিথ্যুক, হাদীছ জালকারী। (তানক্বীহ, পৃঃ ২৮২)।

 (১১) আবু হানীফা (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তার ছালাত নষ্ট হয়ে যাবে। (সিলসিলা যঈফাহ, ২/৪১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) উক্ত বর্ণনা তার জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই হাদীছটি মুহাম্মাদ বিন উকাশা আল-কিরমানী জাল করেছে। আল্লাহ তার উপর গযব নাযিল করুন’। (ঐ, আল-আসরারুল মারফূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৮১;সিলসিলা যঈফাহ ২/৪১ পৃঃ)।

(১২) আবু হানীফা হাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবরাহীম থেকে, ইবরাহীম আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রথম তাকবীরে হাত উত্তোলন করতেন। অতঃপর আর হাত উত্তোলন করতেন না। এটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এরই নিয়ম। (মুসনাদে ইমাম আযম হা/৮০১, ২/৫০১; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৭৮)।

তাহক্বীক্বঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনা সম্পর্কে আমরা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছি। সুতরাং এই বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া এই বর্ণনা অনেক ত্রুটিপূর্ণ। কারণ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নামে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে, মুহাদ্দিছগণ সেগুলোর ব্যাপারে অনেক আপত্তি তুলেছেন। (বিস্তারিত দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল ২/২৭৮ পৃঃ)।

জ্ঞাতব্যঃ রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আওযাঈ (রহঃ)-এর মাঝে কথোপকথন হয়েছিল মর্মে একটি ঘটনা প্রচলিত আছে। এতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/৩১১ পৃঃ; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৩/৩০২ পৃঃ; বুখারী ১/১০২ পৃঃ, টীকা দ্রঃ; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে পৃঃ ২৮৫)।

অথচ এটা চরম মিথ্যাচার। ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, ‘হানাফীদের মাঝে ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ। কিন্তু যার যৎ-সামান্য জ্ঞান-বুদ্ধি আছে, তার নিকট পরিষ্কার যে, এটি একটি বানোয়াট গল্প ও অভিনব মিথ্যাচার’। (মির‘আতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ ৩/৭১ পৃঃ)।

এমনকি ‘মুসনাদুল ইমামুল আযম’ গ্রন্থে উক্ত ঘটনা উল্লেখ করা হলেও তার টীকাকার ভিত্তিহীন বলেছেন। (মুসনাদুল ইমামুল আযম, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৮৪, হা/৭৭৮)।

(১৩) আছেম ইবনু কুলাইব তার পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, আমি আলী (রাঃ)-কে ফরয ছালাতের প্রথম তাকবীরে দুই হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। এছাড়া তিনি অন্য কোথাও হাত তুলতেন না। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৫৭; ত্বাহাবী হা/১৩৫৩; মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/১০৫; জরুরী মাসায়েল, পৃঃ ১১; নবীজীর নামায, পৃঃ ১৮৪; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৮১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি নিতান্তই দুর্বল। মুহাদ্দিছ ওছমান দারেমী বলেন, আলী (রাঃ)-এর নামে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, আলী সম্পর্কে এই ধারণা সঠিক নয় যে, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর কর্মের উপর নিজের কর্ম প্রাধান্য দিয়েছেন। বরং এর রাবী আবুবকর নাহশালীই দুর্বল। কারণ সে এমন রাবী নয়, যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় এবং কোন সুন্নাত সাব্যস্ত হয়। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, আলী, ইবনু মাস‘ঊদ এবং তাদের থেকে যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তারা ছালাতের শুরুতে ছাড়া রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না মর্মে যে কথা বর্ণিত হয়েছে তা সঠিক নয়। (বায়হাক্বী, আন-সুনানুল কুবরা আল-জাওহারুন নাক্বী সহ হা/২৬৩৭, ২/৮০ পৃঃ)।

(১৪) আবু ইসহাক্ব বলেন, আব্দুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) ও আলী (রাঃ)-এর সাথীরা কেউই ছালাতের শুরুতে ছাড়া তাদের হাত উঠাতেন না। ওয়াকী বলেন, তারা আর হাত উঠাতেন না। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/২৪৬১, ১/২৬৭)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনাও মুনকার। কারণ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর পক্ষে কিছু বর্ণনা পাওয়া গেলেও আলী (রাঃ) সম্পর্কে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (সুনান (আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৪৪; বায়হাক্বী, আন-সুনানুল কুবরা আল-জাওহারুন নাক্বী সহ হা/২৬৩৭, ২/৮০ পৃঃ; ১০ নং হাদীছের আলোচনা দ্রঃ)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুতরাং উপরের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয ছালাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্থায় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন এবং তাকবীর দিতেন। (ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৪৪, ১/১০৯ পৃঃ)।

সুধী পাঠক! যারা উক্ত মিথ্যা বর্ণনার পক্ষে উকালতি করেন, তারা কি আলী (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্য প্রমাণ করতে চান?

(১৫) আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, আমি ওমর (রাঃ)-কে একবার দুই হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি আর করতেন না। (ত্বাহাবী হা/১৩৬৪, ১/১৩৩ পৃঃ; নবীজীর স. নামায, পৃঃ ১৮৪; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৮০)।

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে ওমর (রাঃ)-এর নামে আরো কিছু বর্ণনা এসেছে। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/২৪৫৪, ১/২১৪ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনা যঈফ। ইমাম হাকেম বলেন, ‘বর্ণনাটি অপরিচিত। এর দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করা যাবে না’। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৯৫ পৃঃ)।

যদিও ইমাম তাহাবী তাকে বিশুদ্ধ বলতে চেয়েছেন। (ত্বাহাবী হা/১৩৬৪, ১/১৩৩ পৃঃ)।

কিন্তু ইবনুল জাওযী তার দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (আল-বাদরুল মুনীর ৩/৫০১ পৃঃ)।

মূলতঃ ওমর (রাঃ)-এর নামে এ সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করাই মিথ্যাচার। কারণ ওমর (রাঃ) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (বায়হাক্বী, মা‘আরিফুস সুনান ২/৪৭০; সনদ ছহীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৯৫ পৃঃ)।

(১৬) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যে দশজন ছাহাবীর জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউই ছালাতের শুরুতে ছাড়া রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। (উমদাতুল ক্বারী, ৯/৫ পৃঃ, ‘আযান’ অধ্যায়, ‘ছালাতের শুরুতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ অনুচ্ছেদ; জরুরী মাসায়েল, পৃঃ ১১)।

তাহকবীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। আলাউদ্দ্বীন আল-কাসানী (মৃঃ ৫৮৮) তার ‘বাদাইউছ ছানায়ে‘-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে আল্লামা বদরুদ্দ্বীন আইনী ছহীহ বুখারী ও আবুদাঊদের ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেউই কোন সূত্র উল্লেখ করেননি। মূলতঃ উক্ত বর্ণনা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ড. তাক্বিউদ্দ্বীন বলেন,  ‘এই সনদে কোন উপদেশ নেই। কারণ এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিকটেই এর সনদে কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাছাড়াও হাদীছের গ্রন্থ সমূহে এর বিরোধী দলীলই বিদ্যমান’। (মুওয়াত্ত্ব মালেক, তাহক্বীক্ব, পৃঃ ১৭৯)।

কারণ ইবনু আব্বাস (রাঃ) নিজে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

বনী আসাদের গোলাম আবু হামযাহ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৩; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৬, সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।

আত্বা (রাঃ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি, তারা সকলেই ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।

(১৭) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন, সাতটি স্থান ব্যতীত হাত উত্তোলন করা যাবে না। যখন ছালাত শুরু করবে, যখন মসজিদে হারামে প্রবেশ করে কা‘বা ঘর দেখবে, যখন ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠবে, যখন আরাফার ময়দানে সকলে একত্রে অবস্থান করবে এবং যখন পাথর মারবে তখন দুই স্থানে হাত উত্তোলন করবে। (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১১৯০৪; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৬৫; ত্বাহাবী হা/৩৫৩৮ ও ৩৫৪২)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৫৪)।

এমনকি ‘হেদায়ার’ ভাষ্যকার ইবনুল হুমামও তার বিরোধিতা করেছেন। যেমন-

 ‘হাকাম মাক্বসাম থেকে মাত্র চারটি হাদীছ শুনেছে। সেগুলোর মধ্যেও এটি নেই। সুতরাং তা মুরসাল ও অরক্ষিত। তাছাড়া আমাদের মাযহাবের লোকেরা ঈদ ও জানাযার তাকবীরের ব্যাপারে বিরোধীতা করেছে। (ফাৎহুল কাবীর ১/৩১০ পৃঃ)।

দুঃখজনক হল, উক্ত বাতিল বর্ণনার আলোকেই ‘হেদায়া’ কিতাবে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে নিষেধ করে বলা হয়েছে যে,وَلَا يَرْفَعُ يَدَيْهِ إلَّا فِي التَّكْبِيْرَةِ الْأُولَى  ‘প্রথম তাকবীর ছাড়া আর হাত উঠাবে না’। উক্ত বর্ণনাটি যাচাই না করেই ‘হেদায়া’ গ্রন্থকার রাফ‘উল ইয়াদায়েনের বিরুদ্ধে উক্ত বর্ণনা পেশ করেছেন। (হেদায়া ১/১১০ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ আল-হিদায়াহ ১ম খন্ড, পৃঃ ৮৬)।

সুধী পাঠক! জাল ও যঈফ হাদীছ পেশ করে যদি সুন্নাতের উপর আমল করতে বাধা প্রদান করা হয়, তবে মানুষ কিভাবে হাদীছের দিকে ফিরে আসবে? পরবর্তীতে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) যে উদারতা প্রদর্শন করেছেন তাও ‘হেদায়া’ সংকলক দেখাতে পারেননি। মাওলানা রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পক্ষে লিখেছেন, ‘রুকু করার নিয়মঃ রাসূলুল্লাহ (ছ) কেরাআত শেষে সামান্য কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তার পর তাকবীরে তাহরীমার সময়ের মত উভয় হাত তুলে তাকবীর বলতেন এবং রুকুতে যেতেন’। পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ১৭৮।

মানসূখ সংক্রান্ত বর্ণনা : হাদীছ জাল করার এক অভিনব কৌশল

অবশেষে যখন রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে প্রতিরোধ করার আর কোন পথ পাওয়া যায়নি তখন বলা হয়েছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলো মানসূখ বা হুকুম রহিত হয়ে গেছে। অথচ উক্ত দাবীর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয় তা ডাহা মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।

 (১৮) একদা আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, ছালাতে রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হতে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে। তিনি তখন বললেন, তুমি এটা কর না। কারণ এগুলো সবই রাসূল (ছাঃ) করেছেন, তবে পরবর্তীতে বাদ দিয়েছেন। (ছহীহ বুখারী, ১/১০২ পৃঃ টীকা দ্রঃ)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও বাতিল। রাফ‘উল ইয়াদায়েনের প্রসিদ্ধ আমলকে প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত মিথ্যা বর্ণনা রচনা করা হয়েছে। কারণ উক্ত বর্ণনা কোন হাদীছ গ্রন্থে পাওয়া যায় না। যেমন মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদের ভাষ্যকার বলেন,

‘কিন্তু এই আছারের সন্ধান কোন মুহাদ্দিছ কোন হাদীছ গ্রন্থে পাননি। বরং ইমাম বুখারী তার ‘জুযউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) রুকূতে যাওয়া ও রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, তাহক্বীক্ব : ড. তাক্বিউদ্দীন নাদভী হা/১০৪-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।

অথচ ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তা মূলতঃ ইসলামের প্রথম যুগের বিষয়। যেমন ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে’। (হেদায়া ১/১১১ পৃঃ)।

সেই সাথে হেদায়ার টীকাকার হাশিয়ার মধ্যে ইবনু যুবাইরের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (হেদায়াহ ১/১১১ পৃঃ, টীকা নং-৬; আল-ইনায়াহ শারহুল হেদায়াহ ২/৪ পৃঃ)।

তাছাড়া বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদকমন্ডলী টীকায় উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (আল-হিদায়াহ ১ম খন্ড, পৃঃ ৮৬)।

অথচ তার যে কোন ভিত্তি নেই সে বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। এই মিথ্যাচার সম্পর্কে অনুবাদকমন্ডলীকে জিজ্ঞেস করলে তারা কী জবাব দিবেন?

আরো আফসোসের বিষয় হল, ইমাম বুখারী ছহীহ বুখারীতে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পাঁচটি হাদীছ পেশ করেছেন। সেই হাদীছগুলোকে রদ করার জন্য তার টীকায় ভাষ্যকার আহমাদ আলী সাহারাণপুরী উক্ত মিথ্যা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (বুখারী (ভারতীয় ছাপা) ১/১০২ পৃঃ, টীকা দ্রঃ)।

অনুরূপভাবে আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল-বুখারীতে রাফঊল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলোকে যবাই করার জন্য উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করা হয়েছে এবং এই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতকে বাতিল আখ্যা দেয়া হয়েছে। (সহীহ আল-বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ৩২১-৩২২)।

অনুবাদকমন্ডলী এবং প্রকাশক বিচারের মাঠে আল্লাহর সামনে কী জবাব দিবেন?

সুধী পাঠক! এটাই হল ফেক্বহী গ্রন্থের আসল চেহারা। মাযহাবকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাদীছের উপর এভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)-এর উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ তিনি যে নিজেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন তার প্রমাণে ইমাম বুখারী ছহীহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

আত্বা (রাঃ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবাইর (রাঃ)-কে দেখেছি, তারা সকলেই ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ; বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৬ ও ৫৭)।

অতএব পাঠক সমাজকে ছহীহ দলীলের দিকে ফিরে আসতে হবে। বানোয়াট বর্ণনা ও প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন- আমীন!

(১৯) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে উঠতেন, তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন। পরে তিনি শুধু ছালাত শুরু করার সময় করতেন। আর অন্যান্য স্থানে ছেড়ে দিতেন। (নাছবুর রাইয়াহ ১/২৯২ পৃঃ; আল-বাদরুল মুনীর ৪/৪৮৪ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল ও বানোয়াট। ইবনুল জাওযী বলেন,  (ইবনু আব্বাস ও যুবাইর-এর নামে বর্ণিত) ‘এই দুই হাদীছের কোন ভিত্তি নেই। বরং তাদের থেকে এর বিরোধী যা বর্ণিত হয়েছে, তা-ই ছহীহ’। ড. তাক্বিউদ্দ্বীন বলেন,  ‘বরং এটি এমন আছার, মুহাদ্দিছগণই যার সন্ধান পাননি। বরং তাঁদের নিকট থেকে এর বিরোধী বর্ণনাই প্রমাণিত’। (তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্বা, পৃঃ ১৭৯; নাছবুর রাইয়াহ ১/২৯২ পৃঃ)।

সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ) যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দেন, তাহলে ইবনু আব্বাস (রাঃ) নিজে কেন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবেন? মূলতঃ উক্ত বর্ণনাটি পেশ করে তার নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ ছহীহ হাদীছে এসেছে,

বনী আসাদের গোলাম আবু হামযাহ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৩; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৬, সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।

 (২০) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) হাত উত্তোলন করতেন আমরাও করতাম। তিনি ছেড়ে দিয়েছেন আমরাও ছেড়ে দিয়েছি। (আলাউদ্দীন আল-কাসানী (মৃঃ ৫৮৭), বাদায়েউছ ছানায়ে‘ ফী তারতীবিশ শারাঈ (বৈরুত : দারুল কিতাব আল-আরাবী, ১৯৮২), ১/২০৮ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আলাউদ্দ্বীন আল-কাসানী উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে মানসূখ সাব্যস্ত করতে চেয়েছেন। (বাদায়েউছ ছানায়ে‘ ১/২০৮ পৃঃ)।

একজন জলীলুল ক্বদও ছাহাবীর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করার পূর্বে যাচাই করার দরকার ছিল। এ সমস্ত মাযহাবী গোঁড়ামী অত্যন্ত দুঃখজনক।

জ্ঞাতব্যঃ রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে রহিত করার জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়েকজন ছাহাবীর নামে উক্ত হাদীছগুলো জাল করা হয়েছে। যাতে করে সহজেই সাধারণ মানুষকে উক্ত প্রতারণার জালে আটকানো যায়। বাস্তবতাও তাই। অসংখ্য মুছল্লী এই ধোঁকায় পড়ে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উক্ত সুন্নাত থেকে মুছল্লীদেরকে বিরত রাখার জন্য গভীর খাল খনন করেছেন ‘দলিলসহ নামাযের মাসায়েল’ বইয়ের লেখক আব্দুল মতিন। তার সামনে ছহীহ হাদীছগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরও মানসূখ বলে বাতিল সাব্যস্ত করেছেন এবং জাল ও যঈফ বর্ণনা দ্বারা সুন্নাতের বিরোধিতা করেছেন। (দলিলসহ নামাযের মাসায়েল, পৃঃ ৭১-৮২)।

এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা হয়ত তিনি ভুলে গেছেন (সূরা নিসা ১১৫)।

মানসূখ কাহিনী : ঐতিহাসিক মিথ্যাচার

রাফ‘উল ইয়াদায়েনের সুন্নাতকে প্রতিরোধ করার জন্য হুকুম রহিত হওয়ার যে কাহিনী পেশ করা হয় তা মূলতঃ মিথ্যাচার। কারণ রাসূল (ছাঃ) যদি পরবর্তীতে উক্ত আমল ছেড়ে দিতেন, তাহলে ছাহাবায়ে কেরাম কেন করবেন? বরং রাসূল (ছাঃ) নিজেই মৃত্যু পর্যন্ত উক্ত আমল অব্যাহত রেখেছিলেন।

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, যখন রুকূতে যেতেন এবং যখন রুকূ হতে মাথা উত্তোলন করতেন, তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। সিজদার সময় তিনি এমনটি করতেন না। আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তাঁর ছালাত সর্বদা এরূপই ছিল। (বায়হাক্বী, ইবনু হাজার আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ১/৫৩৯ পৃঃ, হা/৩২৭; আদ-দিরায়াহ ফী তাখরীজি আহাদীছিল হিদায়াহ ১/১৫৩ পৃঃ; নাছবুর রাইয়াহ ১/৪১০; সিরাজুদ্দীন আল-মিছরী (মৃঃ ৮০৪), আল-বাদরুল মুনীর ফী তাখরীজিল আহাদীছ ওয়াল আছার ৩/৪৫৯ পৃঃ; তাহক্বীক্ব মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ ১/১৮৩ পৃঃ-এর টীকা দ্রঃ; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্রঃ)।

আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর দশ জন ছাহাবীর কাছে বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে আপনাদের অপেক্ষা অধিক অবগত। তাঁরা বললেন, তাহলে আমাদের কাছে পেশ করুন। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য দাঁড়াতেন, তখন দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তাকবীর বলতেন। তারপর ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর তাকবীর বলতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠাতেন। অতঃপর রুকূ করতেন এবং দুই হাতের তালু দুই হাঁটুর উপরে রাখতেন। এ সময় পিঠ সোজা রাখতেন। অতঃপর রুকূ করতেন ও ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদার জন্য যমীনের দিকে ঝুঁকে সিজদা করতেন। এ সময় দুই হাত দুই পার্শ্ব হতে পৃথক রাখতেন এবং দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহ ক্বিবলার দিকে মুড়িয়ে দিতেন। তারপর বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসতেন, যাতে প্রত্যেক হাড় নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যায়। অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদা করতেন। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা উঠাতেন এবং বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। এমনভাবে বসতেন, যাতে সমস্ত হাড় নিজ জায়গায় ফিরে যায়।

অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করতেন। অতঃপর যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন, যেমন প্রথম তাকবীরের সময় করেছিলেন। অবশিষ্ট ছালাতেও তিনি অনুরূপ করতেন। অবশেষে যখন শেষ রাক‘আতে পৌঁছতেন, তখন বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং বাম নিতম্বের উপর বসতেন। অতঃপর সালাম ফিরাতেন। তখন উক্ত ছাহাবীরা বললেন, আপনি সত্যিই বলেছেন। রাসূল (ছাঃ) এভাবেই ছালাত আদায় করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৩০, ৯৬৩; সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮২৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০১, ৭৯২; ১৮৬৪;  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০৪; সুনান ইবনু মাজাহ ১০৬১, ৮৬২, ৮৬৩, ইবনু হিববান  নাসায়ী ১০৩৯, ১১৮১; আহমাদ ২৩০৮৮, ইরওয়াহ ৩০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ছাহাবীরা কিভাবে ছালাত আদায় করতেন, তার বাস্তব চিত্র উক্ত হাদীছে ফুটে উঠেছে। তাহলে মানসূখ কাহিনী কোথায় পাওয়া গেল?

হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ যখন রুকূ করতেন এবং যখন রুকূ হতে তাদের মাথা উঠাতেন, তখন তারা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। তাদের হাতগুলো তখন পাখার মত মনে হত। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬২৬; সনদ ছহীহ, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর ব্যাখ্যা)।

সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ)-কে ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটা এমন একটি কর্ম যার দ্বারা মুছল্লী তার ছালাতকে সৌন্দর্যপূর্ণ করে। রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ ছালাত শুরু করার সময়, রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে মাথা উঠানোর সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬২৭; সনদ ছহীহ সনদ ছহীহ, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর ব্যাখ্যা)।

সুধী পাঠক! ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার হুকুম যদি রহিতই হবে, তবে উক্ত হাদীছগুলো কী প্রমাণ করে?

অপব্যাখ্যা ও তার জবাব

(১) রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে মুসলিম সমাজ থেকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য যঈফ ও জাল হাদীছ এবং বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী ছাড়াও ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন নিম্নের হাদীছটির ব্যাপারে ড. ইলিয়াস ফয়সাল ‘নবীজীর স. নামায’ বইয়ে অনেক চর্বিতচর্বণ করেছেন। (ঐ, পৃঃ ১৮২-১৮৩; মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে, পৃঃ ২৭৯-২৮০)।

আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন সালাত শেষে ডান-বাম দিকে হাত ইশারা করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলতাম। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ নাড়ার মত হাত ইশারা করছ কেন? (সালাতের বৈঠকে) উরুর ওপর হাত রেখে ডানে-বামে অবস্থিত তোমাদের ভাইকে (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতূল্লাহ’ বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৮৫৪, ৮৫৫, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পর্যালোচনাঃ উক্ত মর্মে ছহীহ মুসলিমে পরপর তিনটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটিতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, তাশাহ্হুদের সময় হাত তুলে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনটি হাদীছ একই রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। অথচ অপব্যাখ্যা করে বলা হচ্ছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মুসলিম যদি এই হাদীছকে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের বিরুদ্ধে পেশ করতে চাইবেন, তবে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার পক্ষে কেন তিনি পাঁচটি হাদীছ উল্লেখ করলেন? (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) হা/৭৪৭, ৭৪৮, ৭৪৯, ৭৫০, ৭৫১= ৫টি;  (ইফাবা হা/৭৪৫-৭৪৯), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯)।

অবশ্য যারা অপব্যাখ্যা করেন, তাদের অন্তরও হয়ত সঠিক বিষয়টি জানে। মাযহাবী গোঁড়ামীর কারণে তারা প্রকাশ করেন না। তবে আল্লাহ গোপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন। আল্লাহ রক্ষা করুন এবং হেদায়াত দান করুন!

জ্ঞাতব্যঃ উক্ত মর্মে একটি জাল হাদীছও বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য সেটা হয়ত তাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা না করে এটি পেশ করলেও ততটা আফসোস হত না।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমি এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে রয়েছি, যারা আমার পরে আসবে। তারা অবাধ্য ঘোড়ার লেজের ন্যায় ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে । (মুসনাদুর রবী‘ হা/২১৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মিথ্যা ও মুনকার। কারণ ছহীহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, এটি তার বিরোধী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪)।

(২) মিথ্যাচার করা হয় যে, মূর্তিপূজার ভালবাসা ছাড়তে না পেরে ছাহাবীরা গোপনে বগলে পুতুল রাখতেন। ফলে তাদেরকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই যুগে যেহেতু কেউ পুতুল রাখে না সুতরাং রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার প্রয়োজন নেই।

পর্যালোচনাঃ প্রথমতঃ উক্ত ঘটনার কোন প্রমাণ নেই। এটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন? মূতলঃ হাদীছ জাল করার মত এটাও একটি সাজানো মিথ্যা কাহিনী। দ্বিতীয়তঃ ছাহাবীদের বিরুদ্ধে মূর্তি পূজা ও তার প্রতি ভক্তির মিথ্যা অপবাদ কী পরিমাণ জঘন্য কাজ হতে পারে? ছাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা সম্পর্কে না জানার কারণেই তাদের উপর এই অপবাদ দেয়া হয়েছে। মূল কথা হড়, তাদের পক্ষে যদি রাসূল (ছাঃ)-এর নামে জাল হাদীছ রচনা করা সম্ভব হয়, তাহলে এটা তো কোন ব্যাপারই নয়।

(৩)‘হানাফীদের কয়েকটি জরুরী মাসায়েল’ নামক পুস্তকের প্রণেতা মাওলানা মোঃ আবুবকর সিদ্দীক এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কতিপয় উদ্ভট ও অসত্য কথা লিখেছেন। যেমন- ‘ইমাম বুখারী যে ১৭ জন ছাহাবার রফে ইয়াদাইনের হাদীছ বর্ণনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে হযরত উমর, হযরত আলী, ইবনে উমার, আবূ সাঈদ, ইবনে যোবায়ের রফে ইয়াদাইন ত্যাগ করেছিলেন।... সুতরাং ইমাম বুখারীর রফে ইয়াদাইনের হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়’। (ঐ, পৃঃ ১৩)।

পর্যালোচনাঃ উক্ত মন্তব্য অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। মূলতঃ মানসূখ কাহিনী রচনা করার জন্য যে সমস্ত বর্ণনা জাল করা হয়েছে, সেগুলো উক্ত লেখকের উপর ভর করেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে গেছে। আল্লাহ হেদায়াত দান করুন-আমীন!

দৃষ্টি আকর্ষণঃ

(ক) উপরিউক্ত বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমলটি জাল হাদীছের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। আর এর কারখানা ছিল ইরাকের কূফা ও বছরায়। তাই ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) বলেন,  ‘এটা সুফিয়ান ছাওরী ও কূফাবাসীর বক্তব্য’। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৭,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০৯, আবূ দাঊদ ৭৪৮, নাসায়ী ১০৫৮)।

একটি যঈফ বর্ণনায় এসেছে, একবার শুধু হাত উত্তোলন করতেন আর কোন স্থানে হাত উঠাতেন না। উক্ত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইমাম আবুদাঊদ (২০৪-২৭৫ হিঃ) বলেন,  ‘সুফিয়ান বলেন, ‘পুনরায় আর হাত তুলতেন না’ কথাটি পরবর্তীতে কূফায় আমাদেরকে বলা হয়েছে’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৫০, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩)।

এছাড়া অন্যান্য কতিপয় বিষয়ও কূফাবাসী পরিবর্তন করে দিয়েছে। ঈদের তাকবীর, জানাযার তাকবীর, তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যা ইত্যাদি অন্যতম।

(খ) উপরে অনেক জাল ও যঈফ হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে। সংখ্যা দেখে কেউ যেন ধোঁকায় না পড়ে। কারণ ‘জিরোর’ পর যত জিরোই বসানো হোক, তার যেমন কোন মূল্য নেই, তেমনি হাযারো জাল হাদীছ থাকলেও একটি ছহীহ হাদীছের সামনে সেগুলোর কোন মূল্য নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছোট্ট একটি বাণীই উক্ত ধাঁধার জবাব হতে পারে :

‘মানুষের কী হল যে, তারা বেশী বেশী শর্তারোপ করছে, অথচ তা আল্লাহর বিধানে নেই? মনে রেখ, যে শর্ত আল্লাহর সংবিধানে নেই তা বাতিলযোগ্য, যদিও তা একশ’ শর্তের বেশী হয়। মনে রেখ, আল্লাহর সিদ্ধান্তই সর্বাধিক অভ্রান্ত এবং তাঁর শর্তই সর্বাধিক চূড়ান্ত’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭২৯, ছহীহ মুসলিম ৩৮৫২, মিশকাত ২৮৭৭, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৪৬, হা/২৭৫২ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার ছহীহ হাদীছ সমূহ :

(১) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এমন করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪৭-৭৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয ছালাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্থায় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন এবং তাকবীর দিতেন।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৪৪,   সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৫৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৮৬৪, মুসলিম ৭৫১, নাসায়ী ৮৯৭, আহমাদ ৭৩১, ৮০৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৬৬, দারিমী ১২২৮।।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) নাফি' (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সালাত  আদায় শুরু করতে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন এবং দু’ হাত উপরে উঠাতেন। রুকূ‘ হতে উঠার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলার সময়ও দুই হাত উঠাতেন। এরপর দু’ রাক্‘আত আদায় করে দাঁড়াবার সময়ও দু’ হাত উপরে উঠাতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এসব কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে জানিয়েছেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৯,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৮১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবূ কিলাবাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাযিঃ) কে দেখলেন যে, তিনি যখন রুকু’তে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও উভয় হাত উত্তোলন করলেন এবং যখন রুকূ’ থেকে মাথা তুললেন তখনো হাত উত্তোলন করলেন। তিনি আরো বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),৭৫০-৭৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুধী পাঠক! মাত্র কয়েকটি বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হলো। তবে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সংখ্যা অনেক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হা/৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯= ৫টি; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) হা/৭৪৭, ৭৪৮, ৭৪৯, ৭৫০, ৭৫১= ৫টি; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হা/৭২১, ৭২২, ৭২৩, ৭২৫, ৭২৬, ৭২৮, ৭২৯, ৭৩০, ৭৪১, ৭৪২, ৭৪৩, ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৪৬, ৭৪৭,, ৭৬১= ১৬টি; নাসাঈ হা/৮৭৬, ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৭৯, ৮৮০, ৮৮১, ৮৮৯, ১০২৪, ১০২৫, ১০২৫৫, ১০৫৬, ১০৫৭, ১০৫৯= ১৩টি; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৮, ৮৫৯, ৮৬০, ৮৬১, ৮৬২, ৮৬৩, ৮৬৪, ৮৬৫, ৮৬৬, ৮৬৭, ৮৬৮= ১১টি; তিরমিযী হা/২৫৫। শুধু ‘কুতুবে সিত্তাহর’ মধ্যেই ৫১টি হাদীছ এসেছে।

রুকূতে যাওয়া ও রুকূ হতে উঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ রয়েছে। একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী আছেন। (ফাৎহুল বারী ২/২৫৮ পৃঃ, হা/৭৩৭-এর ব্যাখ্যা, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৪)। এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চার শত। (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী (৭২৯-৮১৭ হিঃ), সিফরুস সা‘আদাত (লাহোর : ১৩০২ হিঃ, ফার্সী থেকে উর্দূ), ১৫ পৃঃ; গৃহীতঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১০৮)।

এ জন্য ইমাম সুয়ূত্বী, আলবানীসহ প্রমুখ বিদ্বান ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে স্বীকৃতি দান করেছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬ পৃঃ; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১২৮। ফালিল্লা-হিল হামদ)।

সালাতের ভিতর চার সময়ে দুই হাত উঠাতে হয়ঃ

(ক) তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত উঠাতে হয়ঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এমন করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭,৭৩৯ মুসলিম ৪/৯, হাঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যখন রুকুতে যাওয়া হয়ঃ  (১নং দ্রষ্টব্য)।

(গ) যখন রুকু থেকে উঠা হয়ঃ (১নং দ্রষ্টব্য)।

(ঘ) যখন তৃতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়ানো হয়। অর্থাৎ যে সালাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়ানো হয়ঃ

নাফি‘ (রহ.) বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমার (রাযি.) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’ হাত উঠাতেন আর যখন রুকূ‘ করতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন। অতঃপর যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন এবং দু’রাক‘আত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(এছড়াও দেখুন-বুখারী ১ম খণ্ড ১০২ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১০৪,১০৫ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা। ইবনু খুযায়মাহ ৯৫,৯৬। মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। ইবনে মাজাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা। যাদুল মা‘আদ ১ম খণ্ড ১৩৭,১৩৮,১৫০ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম ১৯০ পৃষ্ঠা। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম হাদীস নং ৬৯২, ৬৯৩, ৬৯৫। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩২-৪৩৪। বুখারী ইসলামীক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৭-৭০১ অনুচ্ছেদসহ। মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪৫-৭৫০। আবূ দাঊদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম হাদীস নং ৮৪২-৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ২৫৫। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৮-৭৩৯, ৭৪১,৭৪৫। বুলূগুল মারাম ৮১ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৬-১২৯ পৃষ্ঠা)।

রাফ‘উল ইয়াদায়েনের গুরুত্ব ও ফযীলত :

(১) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ভূমিকা-

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় ইবনু ওমর (রাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে দেখতেন যে, সে রুকূতে যাওয়া ও উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে না, তখন তিনি তার দিকে পাথর ছুড়ে মারতেন। (ইমাম বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৪, পৃঃ ১৫; সনদ ছহীহ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৯)।

(২) উক্ববা বিন আমের (রাঃ)-এর দাবী- 

রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবী উক্ববা ইবনু আমের আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, যখন মুছল্লী রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে, তখন তার জন্য প্রত্যেক ইশারায় দশটি করে নেকী হবে। (বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৮৩৯; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১২৯)।

শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেন, একটি হাদীছে কুদসী এই কথার সাক্ষী। আল্লাহ বলেন, .. যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করবে অতঃপর তা করে ফেলবে, আল্লাহ তার জন্য ১০ থেকে ৭০০ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’। (বুখারী হা/৬৪৯১, ২/৯৬০ পৃঃ; মুসলিম হা/৩৪৯-৩৫৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাদীসে কুদসী স্বরূপ) তাঁর প্রতিপালক হতে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ্ ভাল-মন্দ লিখে দিয়েছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে করল না, আল্লাহ্ তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ সাওয়াব লিখবেন। আর সে ভাল কাজের ইচ্ছা করল এবং তা বাস্তবেও করল তবে আল্লাহ্ তাঁর কাছে তার জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অধিক সাওযাব লিখে দেন। আর যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ্ তাঁর কাছে তার জন্য পূর্ণ সাওয়াব লিখবেন। আর যদি সে মন্দ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে, তবে তার জন্য আল্লাহ্ মাত্র একটা গুনাহ লিখেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৯১, মুসলিম ১/৫৯, হাঃ ১৩১, আহমাদ ৩৪০২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) ইমাম বুখারীর উস্তায আলী ইবনুল মাদ্বীনী (১৬১-২৩৪ হিঃ) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীছ সম্পর্কে বলেন,

‘এই হাদীছ আমার নিকটে সমগ্র উম্মতের জন্য দলীল স্বরূপ। প্রত্যেকে যে এই হাদীছ শুনবে তার উপরই আমল করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কারণ এই হাদীছের সনদে কোন ত্রুটি নেই’। (তালখীছুল হাবীর ১/৫৩৯ পৃঃ)।

(৪) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হিঃ) বলেন,

‘ছাহাবীদের মধ্যে কোন একজনের পক্ষ থেকেও প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সনদের চেয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ আর কোন সনদ নেই’। (ফৎহুল বারী হা/৭৩৬-এর আলোচনা দ্রঃ)।

(৫) ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,

‘ইমাম বুখারী ১৭ জন ছাহাবী থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছ বর্ণনা করেছেন। হাকেম ও আবুল ক্বাসেম মান্দাহ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন ছাহাবী থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেয আবুল ফাযল অনুসন্ধান করে ছাহাবীদের থেকে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, তার সংখ্যা ৫০ জনে পৌঁছেছে’। (ফৎহুল বারী হা/৭৩৬-এর আলোচনা দ্রঃ)।

(৬) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন, وَالَّذِيْ يَرْفَعُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّنْ لاَّ يَرْفَعُ فَإِنَّ أَحَادِيْثَ الرَّفْعِ أَكْثَرُ وَأَثْبَتُ ‘যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, ঐ ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয়- ঐ ব্যক্তির চেয়ে, যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না। কারণ রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর হাদীছ সংখ্যায় বেশী ও অধিকতর মযবুত’। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১০ পৃঃ)।

(৭) আলবানী বলেন,

‘এই রাফ‘উল ইয়াদায়েনের আমল রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের হাদীছ দ্বারা অনুমোদিত। রুকূ থেকে উঠে দাঁড়িয়েও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে। এটা তিন ইমামের মাযহাব এবং অন্যান্য অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ও ফক্বীহর মাযহাব। ইমাম মালেকও এর উপরই মৃত্যু বরণ করেছেন’। (আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১২৮-১২৯)।

ইমাম বুখারী (রহঃ) রচিত জুজ'উল রাফায়েল ইয়াদাইন হতে ৫৬টি সহিহ হাদিস নিম্নে দেয়া হলোঃ

(১) আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাতের (তাকবীরে তাহরিমার) জন্য তাকবীর বলতেন, তখন কাঁধ বরাবর দু'হাত উঠাতেন, যখন তিনি রুকূ’ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। আর যখন রুকূ’ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন তখনও (ঐরুপ করতেন)। আর যখন দু’রাকাআত শেষে (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) উঠতেন তখনও অনুরূপ করতেন।”

এটি উত্তম (হাসান) সনদে বর্ণিত হয়েছে।

মুসনাদে আহমাদ (৯১/১), ইমাম তিরমিয়ী (৩৪২৩) একে হাসান সহীহ বলেছেন, ইবনু খুযাইমাহ (৫৮৪), ইবনু হিব্বান (উমদাতুল কারী ২৭৭/৫) উভয়ে তাদের সহীহাইনে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমাদ ও অন্যরা এটিকে সহীহ (নির্ভরযোগ্য) বলে মত দিয়েছেন। এর বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বিন আবু যিনাদ বিশ্বস্ত (সিকাহ) ও হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যক্তি। ইমাম যাহাবী বলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি খর্ব হওয়ার পূর্বের বর্ণনাগুলো হাসান। (দেখুন সিয়ারে আলামুন নুবালা ৮ম খণ্ড, ১৬৮, ৭০ পৃষ্ঠা)। ইবনুল মাদীনী একে শক্তিশালী (কাউয়ি) বলে মত পোষণ করেছেন। এ বর্ণনাটি আবদুর রহমান বিন আবু যিনাদ এর স্মৃতিশক্তি খর্ব হওয়ার পূর্বেকার। (নূরুল আইনাইন: ৮৩, ৮৪ পৃষ্ঠা)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(২) সালেম বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (সালাতে) দু'হাত উত্তোলন করতে দেখেছি। যখন তিনি (তাকবীরে তাহরিমার জন্য) তাকবীর বলতেন, যখন রুকূ’ করতেন ও যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন। কিন্তু তিনি দু' সাজদাহর মাঝে এমনটি করতেন না।

আলী বিন আবদুল্লাহ- যিনি তৎকালীন সময়ে বড় বিদ্বান ছিলেন, তিনি বলেন, যুহরী সালেম হতে, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, রাফ্উল ইয়াদায়ন প্রতিটি মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। হাদীসটি মারফু'। এই বর্ণনাটি অক্ষরে অক্ষরে নির্ভরযোগ্য।

 (৩) মুহাম্মাদ বিন আমর থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দশজন সাহাবীসহ আবু হামিদের নিকট ছিলাম, আবু কাতাদা তাঁদেরই একজন, তিনি বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূলের সালাত বিষয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, কী রকম? আল্লাহর কসম! তুমিতো আমাদের চেয়ে বেশি সাহচর্য লাভ করনি। আর অনুসরণে আমাদের চেয়ে বেশি অগ্রগামীও ছিলে না। তিনি বললেন, কিন্তু আমি তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতাম। তারা বলল, তার বর্ণনা দাও। তিনি বললেন, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তাঁর দু'হাত উঠাতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন ও রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, আর যখন তিনি দুরাকাআত শেষে (তৃতীয় রাকাআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও অনুরূপ করতেন।” হাদীসটি সহীহ ও মারফু'।

ইবনু খুযাইমাহ, ইবনু হিব্বান, ইবনুল জারুদ, তিরমিয়ী ও ইবনু তাইমিয়্যা একে সহীহ বলেছেন। আবদুল হামীদ বিন জাফর হচ্ছেন। সহীহ মুসলিমের রাবী।

 (৪) আব্বাস বিন সাহল থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ ও মুহাম্মদ বিন মাসলমাহ (রাবীত্রয়) একত্রিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের বর্ণনা দিলেন। অতঃপর আবু হুমাইদ বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে বেশি জানি। তিনি (সালাতের জন্য) দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলতেন, তখন তাঁর দু' হাত উঠাতেন, এরপর যখন তিনি রুকূ’’র জন্য আল্লাহু আকবার বলতেন তখন দু'হাত উঠাতেন, এরপর তিনি (যখন) রুকূ’ করতেন, তখন তার দু'হাত তাঁর দু'হাঁটুর উপর স্থাপন করতেন” এ হাদীসটি মারফু' ও হাসান।

ইবনু খুযাইমা ৫৮৯, ৬০৮, ৬৩৭, ৬৪০, ৬৮৯, ইবনু হিব্বান। ৪৯৪, তিরমিয়ী ২৬০ সকলেই একে সহীহ বলেছেন। মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া আয যাহলী বলেন, যে ব্যক্তি এ হাদীস জানার পর রুকূ’র পূর্বে ও পরে রাফ্উল ইয়াদায়ন করবে না, তার সালাত অপূর্ণাঙ্গ। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৫) আল আব্বাস আস সাঈদী থেকে বর্ণিতঃ

আল আব্বাস আস সাঈদী থেকে আমাদেরকে খবর দিচ্ছেন, তিনি বলেন, আমি আবু কাতাদা, আবু উসাইদ ও আবু হুমাইদ এর সঙ্গে বাজারে অবস্থান করছিলাম, এমতাবস্থায় তারা সকলেই বলল, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে বেশি জানি। তখন তাদের একজন (আবু উসাইদকে) বললেন, তুমি সালাত আদায় কর। তখন তিনি তাকবীর দিয়ে কিরাআত পাঠ করলেন, এরপর পুনরায় তাকবীর দিয়ে দু'হাত উঠালেন, এরপর তারা (তিনজন) বললেন, তুমি সঠিকভাবেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত আদায় করেছ।” এ বর্ণনাটি হাসান।

ইবনু ইসহাক মুদাল্লিস, কিন্তু সহীহ ইবনু খুযাইমাতে তার শ্ৰবণের ব্যাপারটিকে বলিষ্ঠ করা হয়েছে।

নোট: এটি যে কপি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, সেই জুযউ রফইল ইয়াদায়নের যহিরিয়্যা নুসখাটি (কপি) তে আবু ইসহাককে সহীহ ইবনু খুযাইমার বরাতে বিশ্বস্ত হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জুযউ রাফ্উল ইয়াদায়নের ভারতীয় কপিতে আবু ইসহাক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি বিশুদ্ধ নন। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৬) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর (তাহরীমা) দিয়ে দু'হাত উঠাতেন, আর যখন রুকূ’ করতেন ও রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন।”

হাদীসটি মারফু' ও এর সনদ সহীহ।

ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ এর মধ্যে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। দেখুন হাদীস নং ৬৬। এটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের প্রামাণ্য দলীল যে, আবু কিলাবা (বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী) মালিক বিন হুওয়াইরিসকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর রুকূ’র পূর্বে ও পরে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতে দেখেছেন। আবু কিলাবার উপর নাবিয়্যান্তের যে অভিযোগ, আর নাসর বিন আসিমের খারেজি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। মালিক বিন হুওয়াইরিস থেকে এমন কোন বিশুদ্ধ প্ৰমাণ ভিত্তিক বর্ণনা নেই যে, তিনি সাজদাহতে রাফ্উল ইয়াদায়ন করেছেন। সুনান নাসাঈর বর্ণনাটি কাতাদার তাদলীসের কারণে যইফ। ক্বাতাদাহ শু'বা থেকে বর্ণনা করেন নি। বরং সাঈদ বিন আরূবা থেকে বর্ণনা করেছেন। (নাসাঈ ৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৭) আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি (আনাস (রাঃ)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ’’ করতেন তখন তিনি তার দু’হাত উঠাতেন। হাদীসটি মারফু’।

(৮) আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফরয সালাত (আদায়ের) উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন, তখন আল্লহু আকবার বলতেন ও তাঁর দু’হাত দু’কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এরপর যখন তিনি রুকূ’’ করার ইচ্ছাপোষণ করতেন, তখনও তিনি তা করতেন, এরপর যখন তিনি রুকূ’’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপ করতেন, তিনি তাঁর সালাতে বসাবস্থায় (হাত) উঠাতেন না, আর যখন দু’সাজদা (রাকাআত) শেষ করে দাঁড়াতেন তখনও ঐ ভাবে দু’হাত উঠাতেন আর তাকবীর দিতেন। হাদীসটি মারফূ’ ও হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৯) আবূ নুআঈম আল ফযল বিন দুকাইন থেকে বর্ণিতঃ

আবূ নুআঈম আল ফযল বিন দুকাইন আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, কায়স বিন সুলাইম আল আম্বারী আমাদেরকে খবর দিয়েছেন, তিনি বলেন, আমি আলকামা বিন ওয়ায়িল বিন হুজুরকে বর্ণনা করতে শুনেছি, আমার পিতা (ওয়ায়িল বিন হুজুর) আমাকে বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাকবীর দিতেন ও দু’হাত উঠাতেন। অতঃপর তিনি যখন রুকূ’ করার ইচ্ছাপোষণ করতেন ও রুকূ’র পরে ও দুহাত উঠাতেন।

এর সনদ সহীহ। ইমাম নাসাঈ ও কায়স বিন সালীম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১০) আবদুল্লাহ বিন ইউসুফ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ বিন ইউসুফ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি মালিক থেকে, তিনি ইবনু শিহাব থেকে, তিনি সালিম বিন আবদুল্লাহ থেকে, তিনি তাঁর পিতা (আবদুল্লাহ বিন উমার) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, আর যখন রুকূ’’র জন্য তাকবীর বলতেন ও রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন ও অনুরূপ দু’হাত উঠাতেন। তিনি সাজদায় এরূপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন না।

এ বর্ণনাটি সহীহুল বুখারিতে (৭৩৫) রয়েছে। ইমাম মালিক তার মুয়াত্তায় (ইবনুল কাসিম ও মুহাম্মাদ আল শাইবানী থেকে) প্রায় একই রকম শব্দ অর্থে এটি বর্ণনা করেছেন। রাফ্উল ইয়াদায়ন না করার প্রমাণে ইমাম মালিক থেকে বিশুদ্ধ সনদে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। আল মুদাওয়ানা একটি অনির্ভরযোগ্য সনদবিহীন একটি গ্রন্থ। পক্ষান্তরে রাফ্উল ইয়াদায়ন করা বিষয়ে ইমাম মালিক থেকে একাধিক হাদীস বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। ই. জি. আত তামহীদ।

 (১১) সালিম আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

সালিম আব্দুল্লাহ, তাঁর পিতা (আবদুল্লাহ ইবনু উমার) যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন ও যখন (তাশাহুদের পরে) দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

হাদীস টি মাওকূফ ও এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১২) নাফে’ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার যখন সালাত শুরু করতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’’ করতেন, যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন, যখন দু’সাজদাহ (রাকআত) থেকে উঠে দাঁড়াতেন, তখন (তিনি) তাকবীর দিতেন ও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি মওকূফ ও সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৩) নাফে’ থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু উমার (রাঃ) যখন কোন (অজ্ঞ) ব্যাক্তিকে রুকূ’র সময় ও রুকূ’ থেকে উঠার পর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতে না দেখতেন, তখন তার দিকে পাথর নিক্ষেপ করতেন। হাদিসটি মাওকূফ ও এর সনদ সহীহ।

ইমাম নববী তার আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব গ্রন্থে (৩য় খণ্ড ৪০৫ পৃষ্ঠা) এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অত্র হাদীস থেকে আরও জানা যায়, সুন্নাহ পরিত্যাগকারীকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রহার করা বৈধ। তবে এটি অবশ্যই শাসক কর্তৃক হওয়া বাঞ্ছনীয়, যেমন অত্র হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনু উমার যে কাজটি করেছেন, তিনি তৎকালীন আমিরুল মুমিনীন ছিলেন। আর সুন্নাহ পরিত্যাগকারী অপরিচিত ব্যক্তিটির কাজের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়যে, সে অপরিচিত লোকটি সাহাবী ছিলনা। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৪) আত্বা থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আমি ইবনু আব্বাস, ইবনু যুবায়র, আবূ সাঈদ (আল খুদরী) ও জাবির (ইবনু আবদুল্লাহ) [রাঃ]-কে দেখেছি, তাঁরা যখন সালাত শুরু করতেন ও রুকূ’’ করতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। এ হাদীসটি হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(১৫) আব্দুর রহমান আল আরাজ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি (আবূ হুরাইরা) যখন (সালাত শুরুর) তাকবীর দিতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’’ করতেন ও যখন রুকূ’’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন ও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। এটি সহীহ হাদীস।

যদিও মুহাম্মাদ বিন ইসহাকের তাদলীসের কারণে এটি দুর্বল কিন্তু ১৮ নং হাদীসটি সহীহ। ভিন্ন সনদের দুটি হাদীসের মতন যেহেতু এক, সুতরাং হাদীসটি সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৬) আসিম আল আহওয়াল থেকে বর্ণিতঃ

আসিম আল আহওয়াল থেকে আমাদের হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন সালাত শুরু করতেন, তখন আল্লাহু আকবার বলতেন ও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, আর প্রত্যেক রুকূ’তে (যাওয়ার সময়) ও রুকূ’’ থেকে মাথা উঠিয়েও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি মাওকূফ ও এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৭) আবূ হামযাহ থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হামযাহ থেকে আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি (আবদুল্লাহ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যখন (তাহরিমার) তাকবীর বলতেন, আর যখন রুকূ’ করতেন এবং যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি মাওকূফ ও এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৮) আত্বা থেকে বর্ণিতঃ

আত্বা থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি, তিনি যখন (সালাত শুরুর) তাকবীর দিতেন ও রুকূ’ করতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি মাওকূফ ও এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৯) আমর বিন মুররাহ থেকে বর্ণিতঃ

আমর বিন মুররাহ থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি হাযারা মাউতু এলাকার একটি মাসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে আলকামা বিন ওয়ায়িল তার পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা করছেন, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লা’হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’র পূর্বে ও পরে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি মারফূ‘ ও সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২০) খাত্তাব বিন উসমান ইসমাঈল থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আবদে রব্বিহী বিন সুলাইমান বিন উমাইর থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি উম্মুদ দারদা (রা:)-কে দেখেছি, তিনি সালাতে কাঁধ বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

হাদীসটি মারফূ‘ ও হাসান। হাদীসটি ইমাম বুখারীর তারীখ আল কাবীরেও (৬ষ্ঠ খন্ড ৭৮ পৃষ্ঠায়) বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(২১) মুহাম্মদ বিন মুকাতিল আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মদ বিন মুকাতিল আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক থেকে খবর দিয়েছেন, তিনি ইসমাঈল থেকে, তিনি আবদু রব্বিহী বিন সুলাইমান বিন উমাইর থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি উম্মুদ দারদা (রা:)-কে দেখেছি তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন, যখন রুকূ’‘ করতেন, আর যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন তখন কাঁধ বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। আর তিনি বলতেন, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ।

ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের কতিপয় স্ত্রী তাদের চেয়ে (শরীয়তের বিষয়ে) বেশি জানতেন। এমনকি তারা সালাতে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটি হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(২২) ইসহাক বিন ইবরাহীম আল হানযালী মুহাম্মদ বিন ফুযাইল থেকে বর্ণিতঃ

ইসহাক বিন ইবরাহীম আল হানযালী মুহাম্মদ বিন ফুযাইল থেকে। তিনি আসিম বিন কুলাইব থেকে, তিনি মাহারিব বিন দীনার থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি (আবদুল্লাহ) ইবনু উমার (রাঃ)- কে দেখেছি, তিনি রুকূ’তে (যাওয়ার পূর্বে) রাফ্উল ইয়াদায়ন করেছেন, আমি তাকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দু’রাকাআত শেষে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর দিতেন ও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। হাদীসটির সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২৩) মুসলিম বিন ইবরাহীম শু‘বাহ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি আসিম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়ায়িল বিন হুজুর আল হাযরামী (রাঃ) থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছেন, যখন (তাহরিমার) তাকবীর বলতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, অতঃপর যখন রুকূ’ করার ইরাদা করতেন তখনও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

ইমাম বুখারী (রহ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব, জাবির বিন আবদুল্লাহ, আবূ হুরাইরা, উবাইদুল্লাহ বিন উমাইর, তার পিতা, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও আবূ মূসা (রাঃ) থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’তে (যাওয়ার পূর্বে) ও রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে রাফ্উল ইয়াদায়ন করেছেন। ইমাম বুখারী বলেন, আমরা যা কিছু উল্লেখ করলাম তা একজন অতি অল্প জানা লোকের জন্যও যথেষ্ট, ইনশা আল্লাহু তা‘আলা।

এর সনদ সহীহ। ইবনুল খুযাইমাহ (৬৯৮, ৬৯৭) একে সহীহ’র মধ্যে গণ্য করেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২৪) মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

তিনি ইবনু জুরাইজ থেকে পাঠ করা শুনেছেন, তিনি বলেন, আল হাসান বিন মুসলিম আমাকে এ মর্মে খবর দিয়েছেন যে, তিনি ত্বাউস থেকে সালাতে রাফ্উল ইয়াদায়ন সম্পর্কিত হাদীস শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উমার, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (তার তিনজনই) রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। ত্বাউস বলেন, সালাত শুরুর প্রাক্কালে যে প্রথম তাকবীর দেয়া হয় সেখানে বাকী তাকবীরগুলোর চেয়ে কিছুটা বেশি হাত উঁচু করতে হয়। (ইবনু জুরাইজ বলেন,) আমি আত্বা (বিন আবূ রিবাহ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নিকট কি এমন (কথা) পৌঁছেছে, প্রথম তাকবীরে অন্য তাকবীরগুলোর চেয়ে হাত বেশি উঠাতে হবে? তিনি বললেন, না। এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২৫) বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

এমনকি মুসাদ্দাদ আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করে বলেছেন, ইয়াযীদ বিন যুরাই‘ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি সাঈদ থেকে, তিনি ক্বাতাদাহ থেকে, তিনি আল হাসান থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহচরগণের হাতগুলো দৃশ্যত পাখা সদৃশ, যখন রুকূ’তে যেতেন, আর যখন রুকূ’ থেকে তাদের মাথাগুলো উঠাতেন তখন তারা সেগুলো (হাতগুলো) উঠাতেন।

সহীহ। মূল কপিতে (মাখতূতাহ) শু‘বার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে অন্য কপিতে সাঈদ বিন আরুবাহর উল্লেখ রয়েছে, যা ঠিক নয়। এ বর্ণনাটি শাহেদ থাকার কারণে সহীহ। ক্বাতাদাহ থেকে শু‘বা কর্তৃক বর্ণনাটিও বিশুদ্ধ। তাই ক্বাতাদাহর তাদলীসের বিষয়টি প্রত্যাখ্যাত। আবূ দাঊদের বর্ণনায় (১ম খন্ড ১১০ পৃষ্ঠা) صدرهمإلى (প্রথম তাকবীরে বক্ষ পর্যন্ত রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন) আছে, যা শারীক আল কূফীর তাদলীসের কারণে দুর্বল।

 (২৬) মূসা বন ইসমাঈল আবূ হেলাল থেকে বর্ণিতঃ

তিনি হুমাইদ বিন হিলাল থেকে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহচরবৃন্দ যখন সালাত আদায় করতেন তাদের হাতগুলো পাখা সদৃশ কান পর্যন্ত উঠতো।

[ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] আল হাসান (আল বাসরী) ও হুমাইদ বন হিলাল কোন একজন সাহাবীকেও বাদ দেননি। (অর্থাৎ তাবেয়ীগণের কথা অনুযায়ী বলা যায়, সকল সাহাবী কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই রাফ্উল ইয়াদায়ন করেছেন)

-এ বর্ণনাটি হাসান। আবূ হিলাল মুহাম্মদ বিন সালীম আল বাসরী দুর্বল রাবী (দেখুন তুহফা আল আকয়িয়্যাহ ৯৮, ১৭ পৃষ্ঠা) কিন্তু এর পূর্বে বর্ণিত শাহেদ হাদীসটির কারণে এটি হাসান বলে পরিগণিত হয়েছে। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৩৫) আবূল ইয়ামান থেকে বর্ণিতঃ

আবূল ইয়ামান আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি শু’আইব থেকে, তিনি যুহরী থেকে, তিনি সালিম বিন আবদুল্লাহ থেকে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-কে দেখেছি, যখন তিনি সালাতে (শুরুর) তাকবীর বলতেন, তখন তাকবীর বলার সঙ্গে দু’হাত তাঁর দু’কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর যখন তিনি রুকূ’র জন্য তাকবীর বলতেন, তখন তাকবীর বলার সঙ্গে দু’হাত তাঁর দু’কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর যখন তিনি রুকূ’র জন্য তাকবীর বলতেন, তখনও অনুরূপ করতেন, যখন তিনি সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন, তখনও ঐরূপ করতেন, আর বলতেন, রাব্বানা লাকাল হামদ। আর তিনি যখন সাজদাহ করতেন, তখন ঐরূপ করতেন না। আর যখন তিনি সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও ঐরূপ করতেন না।

হাদীসটি সহীহ। বর্ণনাটি সহীহ বুখারীতেও (৭৩৮) উল্লেখ আছে। সালীম থেকে যুহরীর শ্রবণের বাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। (দেখন অত্র পুস্তকের ৩৮ নং হাদীস)

ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, ইবনুল মুবারক রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, আমাদের জানা মতে জ্ঞানের দিক দিয়ে তিনি তৎকালীন সময়ের বড় বিদ্বান ছিলেন। যদিও অজ্ঞ ব্যক্তি যারা সালাফদের সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ইবনুল মুবারককে (দলীলসহ) অনুসরণ করা উচিত যিনি (ইবনুল মুবারক) রাসূলুল্লাহ (সাঃ), সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণকে মান্য করতেন। অজ্ঞ লোকেদের নিকট থেকে দলীল গ্রহণ করার চেয়ে এটা তার জন্য অধিক উত্তম হবে। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ইমাম ইবনুল মুবারকের রাফ্উল ইয়াদায়ন করাটা মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। (দেখুন সুনান তিরমিযী), বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তাদের মধ্যকার কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে ইবনু উমার (রাঃ) ছোট ছিলেন। অথচ নাবী (সাঃ) তার সৎ হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৩৬) ইয়াহইয়া বিন সুলাইমান থেকে বর্ণিতঃ

ইয়াহইয়া বিন সুলাইমান আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনু ওয়াহব থেকে, তিনি ইউনুস থেকে, তিনি ইবনু শিহাব থেকে, তিনি সালিম বিন আবদুল্লাহ থেকে, তিনি তাঁর পিতা (আবদুল্লাহ বিন উমার) থেকে, তিনি (উম্মুল মু’মিনীন) হাফসা থেকে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, অবশ্যই আবদুল্লাহ ইবনু উমার সৎ ব্যক্তি।

হাদীসটি সহীহ। ইমাম বুখারী হাদীসটিকে সহীহুল বুখারী (৩৭৪১, ৩৭৪০) এ বর্ণনা করেছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

(৩৭) আলী বিন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ

আলী বিন আবদুল্লাহ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি সুফইয়ান থেকে, তিনি বলেন, আমর (বিন দীনার) বলেছেন, ইবনু উমার বলেন, অবশ্যই আমার পিতা যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, সে সময়কার কথা বলব, (কাফিররা) বলল, উমার নাস্তিক (ধর্মত্যাগী) হয়ে গেছে। উমার নাস্তিক (ধর্মত্যাগী) হয়ে গেছে। তখন আল আসী বিন ওয়ায়িল এসে বলল, উমার নাস্তিক (ধর্মত্যাগী) হয়ে গেছে তো কী হয়েছে? আমি তার প্রতিবেশী (তার সাহায্যকারী)। তখন তারা তাকে [উমার (রাঃ)] ছেড়ে দিল।

ইমাম বুখারী বলেন, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেছেন, আামি যদি কারো ব্যাপারে জান্নাতী হওয়ার সাক্ষ্য দিতাম, তাহলে অবশ্যই ইবনু উমারের জন্যই সাক্ষ্য দিতাম। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ বলেন, নাবী (সাঃ)-এর তরিকা আঁকড়ে ধরা ও পুঙ্খাণুপুঙ্খভাবে তাঁর অনুসরণকারী ইবনু উমারের চেয়ে বেশি কেউ ছিল না।

ইমাম বুখারী বলেন, কতিপয় অজ্ঞ লোক ওয়ায়িল বিন হুজর সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন (যে সমালোচনা বাতিল)। সন্দেহাতীতভাবে ওয়ায়িল বিন হুজর ছিলেন ইয়ামানের রাজপুত্র। তিনি যখন নাবী (সাঃ)-এর নিকট আগমন করেন তখন নাবী (সাঃ) তাকে সম্মানিত করেন এবং তাকে একখণ্ড জমি বরাদ্দ দেন। আর তার সঙ্গে মুআবিয়া বিন আবূ সুফইয়ানকে প্রেরণ করেন।

ইমাম বুখারী এ হাদীসটিকে একই সনদে স্বীয় সহীহুল বুখারীর (৩৮৬৫) মধ্যে উল্লেখ করেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৩৮) হাফস বিন উমার থেকে বর্ণিতঃ

হাফস বিন উমার আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি জামে’ ইবনু মাত্বার থেকে, তিনি আলকামা বিন ওয়ায়িল থেকে, তিনি তাঁর পিতা (ওয়ায়িল বিন হুজর) থেকে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় নাবী (সাঃ) তাঁকে (ওয়ায়িল বিন হুজরকে) হাযরামাওত এলাকায় এক টুকরা জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এর সনদ সহীহ। ইমাম তিরমিযী (১৩৮১) একে হাসান বলেছেন। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৩৯) আবদুল্লাহ বিন সালিহ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ বিন সালিহ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আল লাইস থেকে, তিনি ইউনুস (বিন ইয়াযীদ আল আইলী) থেকে, তিনি ইবনু শিহাব (আর যুহরী) থেকে, তিনি সালিম আবদুল্লাহ থেকে, নিশ্চয় আবদুল্লাহ ইবনু উমার বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দেখেছি, যখন তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন, তখন কাঁধ বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, অতঃপর তাকবীর বলতেন। যখন তিনি রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপ (কাঁধ বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন। অতঃপর বলতেন, সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। আর তিনি যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি এরূপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন না।

হাদীসটি সহীহ। জমহুর মুহাদ্দিসগণের নিকট ইউনুস বিন ইয়াযীদ আল আইলী বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী এবং তার হাদীস সহীহ। তার ব্যাপারে সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য। (তাহযীবুত তাহযীব প্রমুখ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪০) আবূ আন-নু’মান (মুহাম্মাদ বিন ফযল আরিম) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ আন-নু’মান (মুহাম্মাদ বিন ফযল আরিম) আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল ওয়াহিদ বিন যিয়াদ আশ শাইবানী থেকে, তিনি মুহারিব বিন দিসার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ বিন উমারকে দেখেছি, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন, তখন তাকবীর দিতেন ও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। যখন তিনি রূকূ করার মনন্থ করতেন তখনও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। যখন তিনি রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও (অনুরূপ রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন)। এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪১) আল আইয়াম ইবনুল ওয়ালিদ থেকে বর্ণিতঃ

আল আইয়াম ইবনুল ওয়ালিদ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল আ’লা থেকে, তিনি উবাইদুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি’ থেকে, তিনি ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাকবীর (তাহরীমা) বলে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। আর যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন। আর ইবনু উমার রাফ্উল ইয়াদায়ন করে বলেন, নাবী (সাঃ)-ও অনুরূপ করতেন।

এ হাদীসটি সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪২) ইবরাহীম ইবনুল মুনযির থেকে বর্ণিতঃ

ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি মা’মার থেকে, তিনি ইবরাহীম বিন ত্বহমান থেকে, তিনি আবুয যুবায়র থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে দেখেছি। তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি কান বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। যখন তিনি রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। আর যখন তিনি (দু’রাকআত শেষে দাঁড়াতেন তখনও অনুরূপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন।

হাদীসটি সনদ হাসান। মাসায়িলে আবদুল্লাহ বিন আহমাদ (১/২৪৪, ২৪৩) ও আত তাহমীদ (৯/১২৭) গ্রন্থে এর শাহেদ হাদীস রয়েছে। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৪৩) আবদুল্লাহ বিন সালিহ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ বিন সালিহ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আল লাইস থেকে, তিনি নাফি’ থেকে বর্ণনা করেছেন। (তিনি বলেন, আবদুল্লাহ) ইবনু উমার যখন সালাতের জন্য উদ্যত হতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন, আর যখন রুকূ’ থেকে মাথা উত্তোলন করতেন, আর যখন দুই সিজদাহ (রাকআত) থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর বলে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

সহীহ। ইমাম বুখারীর মত অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ যখন আবদুল্লাহ বিন সালিহ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তখন তার হাদীস সহীহ। (তাহযীবুত তাহযীব, হাদীউস সারী মুকাদ্দামা ফাতহুল বারী, প্রমুখ) সুতরাং “কাসীরুল গালাত” কর্তৃক এ বর্ণনার দোষ-ত্রুটি নির্ণয়টি বাতিল। এ হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪৪) মূসা বিন ইসমাঈল থেকে বর্ণিতঃ

মূসা বিন ইসমাঈল আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি হাম্মাদ বিন সালামাহ থেকে, তিনি আইয়ূব থেকে, তিনি নাফি’ থেকে, তিনি ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেছেন। নাবী (সাঃ) যখন (তাহরিমার) তাকবীর বলতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন তখন, যখন রুকূ’ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন (তখনও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন)।

হাদীসটি সহীহ। মূসা বিন ইসমাঈল থেকেও ইমাম বাইহাকী তার মা’রিফাতুস সুনান (১/৪২) এটি বর্ণনা করেছেন। হাম্মাদ বিন সুলাইমানের স্মৃতিশক্তি খর্ব হওয়ার পূর্বে বর্ণিত হাদীস এটি। (আল কাওয়াকিবুন নিরাত, প্রমুখ) তাছাড়া এর বহু শাহেদ রয়েছে। ইমাম মুসলিমও এটি ক্বাতাদাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। (৩৯১/৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪৫) মূসা বিন ইসমাঈল থেকে বর্ণিতঃ

মূসা বিন ইসমাঈল আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি হাম্মাদ বিন সালামাহ থেকে, তিনি ক্বাতাদাহ থেকে, তিনি নাসর বিন আসিম থেকে, তিনি মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সহীহ।

নিশ্চয়ই নাবী (সঃ) যখন সালাতে প্রবেশ করতেন তখন কানের ছিদ্র বরাবর দু’হাত উঠাতেন (রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন)। যখন রুকূ’তে যেতেন তখন, যখন রুকূ’ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন। হাদীসটি সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪৬) মাহ্মুদ থেকে বর্ণিতঃ

মাহ্মুদ আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ইবনু উলাইয়াহ থেকে, তিনি খালিদ থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ কিলাবা যখন রুকূ’তে যেতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন, যখন রুকূ’ থেকে তাঁর মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন। যখন তিনি সাজদায় যাওয়ার জন্য ঝুঁকতেন তাঁর দু’হাঁটু দিয়ে শুরু করতেন। যখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন দু হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তিনি হাদীসটি মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস থেকে উল্লেখ করেছেন।

হাদীসটি যঈফ। এখানে দুজন মাহমুদ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। যদি মাহমুদ বিন গাইলান হয় তাহলে হাদীসটি সহীহ। আর যদি মাহমুদ বিন ইসহাক আল খাযাঈল হয়ে থাকে তাহলে হাদীসটি মুনকাতি। এরকম অনিশ্চয়তার কারণে হাদীসটিকে যঈফ হিসেবেই ধরে নেয়া হলো। আল্লাহই ভালো জানেন। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস।

(৪৭) আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ থেকে বর্ণিতঃ

আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবূ আমির থেকে, তিনি ইব্রাহীম বিন ত্বাহমান থেকে, তিনি আবু যুবায়র থেকে, তিনি ত্বাউস থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আব্বাস যখন সালাতের জন্য দাড়াতেন তখন তাঁর দু’কান বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। যখন তিনি রুকূ’ থেকে তাঁর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাড়াতেন তখনও অনুরুপ করতেন।

হাদিসটি সহীহ। আবূ যুবায়র তাদলিসের কারণে হাদিসটি দূর্বল হলেও এর অনেকগুলো শাহেদ হাদিস থাকার কারণে সহীহ বলে স্বীকৃত। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪৮) মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ থেকে, তিনি ইসমাঈল থেকে, তিনি স্বালিহ বিন কাইসান থেকে, তিনি আবদুর রহমান আল আ’রাজ থেকে, তিনি আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ () যখন সালাত শুরু করতেন আর যখন রুকূ’তে যেতেন তখন তাঁর কাঁধ বরাবর (দু’হাত উঠিয়ে ) রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

হাদিসটির মতন সহীহ। ইসমাইল বিন আইয়াশের সিরিয়ার বাইরের লোক থেকে বর্ণনার কারণে এর সনদ দুর্বল। (ইসমাইল বিন আইয়াশের সিরিয়ার নন এমন ব্যক্তি থেকে বর্ণনার কারণে দুর্বল মনে করা হয়েছে )। কিন্তু এর অনেক শাহেদ হাদীস আছে । (দেখুন সহীহ ইবনু খুযাইমাহ (১/৩৪৪) ভারতীয় ছাপার মধ্যে মুহাম্মাদ বিন মুকাতিল এর পর “আখবারানা আফিয়া” কথাটি ভুল। সঠিক শব্দ হল “আখবারানা আবদুল্লাহ” যা আসল যহিরিয়্যাহ কপিতে উল্লেখ আছে। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৪৯) ইসমাঈল থেকে বর্ণিতঃ

ইসমাঈল আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি মালিক থেকে, তিনি নাফি’ থেকে বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার যখন সালাত আরম্ভ করতেন আর যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন তাঁর কাধ বরাবর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

হাদিসটি সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৫০) মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ (ইবনুল মুবারক) থেকে, তিনি (মুহাম্মাদ) বিন আজলান থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আল নু’মান বিন আবূ আইয়াশকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি জিনিসের একটি সৌন্দর্য রয়েছে, আর সালাতের সৌন্দর্য হচ্ছে তোমার রাফ্উল ইয়াদায়ন করা, যখন তুমি (সালাত শুরুর) তাকবীর দিবে, যখন রুকূ’তে যাবে, আর যখন রুকূ’ থেকে মাথা উত্তোলন করবে (তখন রাফ্উল ইয়াদয়ন করা)। এর সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৫১) মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ (ইবনুল মুবারক) থেকে, তিনি আল আওযাঈ থেকে, তিনি হাসান বিন আত্বিয়্যাহ থেকে, তিনি আল কাসিম বিন মুখাইমিরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাফ্উল ইয়াদায়ন হচ্ছে তাকবীরের জন্য। তিনি বলেন, আমি যখন ঝুকতাম তখন তাকে দেখেছি (অর্থাৎ যখন রুকূ’র জন্য ঝুকতাম তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতাম)। হাদিসটির সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৫২) মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল্লাহ (ইবনুল মুবারক) থেকে, তিনি শারীক থেকে, তিনি আল লাইস থেকে, তিনি আত্বা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি জাবির বিন আবদুল্লাহ ও আবূ সাঈদ আল খুদরী ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)–কে দেখেছি, তারা যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন তখন, যখন রুকূ’’ থেকে তাঁদের মাথা উঠাতেন তখনও (রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন)।

হাদিসটি হাসান। মূল জহিরিয়া নুসখার মধ্যে হাদ্দাসানা মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল লেখা আছে যেখানে ভারতীয় ছাপায় শুধু হাদ্দাসানা মাকাতিল লেখা রয়েছে। যা ভুল। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৫৩) মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল থেকে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ বিন মাকাতিল আমাদেরকে খবর দিয়েছেন। তিনি আবদুল্লাহ (ইবনুল মুবারক) থেকে, তিনি ইকরামাহ বিন আম্মার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি সালিম বিন আবদুল্লাহ, আল কাসিম বিন মুহাম্মাদ, আত্বা, ও মাকহূলকে দেখেছি, তারা সালাতে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখন রুকূ’তে যেতেন ও যখন (রুকূ’ থেকে মাথা) উঠাতেন।

এর সনদ হাসান। যদিও ইকরামাহ বিন আম্মার হাদিস শ্রবণের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তথাপি তিনি হাসানুল হাদিস। (যার বর্ণিত হাদিস হাসান) হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৫৪) লাইস থেকে বর্ণিতঃ

জারীর লাইস থেকে বর্ণনা করে বলেন, আত্বা ও মুজাহিদ উভয়ে সালাতে রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন। নাফি’ ত্বাউসও অনুরুপ (রাফ্উল ইয়াদায়ন) করতেন।

হাদিসটি হাসান। এটি পূর্ণ সনদ সহকারে যদিও পাওয়া যায়নি, তথাপি আত্বা, মুজাহিদ, নাফি’ ও ত্বাউস কর্তৃক রাফ্উল ইয়াদায়নের হাদিস বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৫৫) লাইস থেকে বর্ণিতঃ

তিনি উমার, সাইদ বিন যুবায়র ও ত্বাউস সূত্রে বর্ণনা করেন, তারা ও তাঁদের সঙ্গী সাথীরা যখন রুকূ’ করতেন তখন রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন।

হাদিসটি হাসান। এটি মুত্তাসিল সনদে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর অনেক শাহেদ হাদিস থাকার কারণে হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

(৫৬) মূসা বিন ইসমাঈল থেকে বর্ণিতঃ

মূসা বিন ইসমাঈল আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি আবদুল ওয়াহিদ বিন যিয়াদ, তিনি আসিম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ)–কে দেখেছি, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাকবীর বলতেন, অতঃপর রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন, যখনই রুকূ’তে যেতেন ও রুকূ’ থেকে মাথা উঠাতেন (তখনও রাফ্উল ইয়াদায়ন করতেন)। হাদিসটির সনদ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

ছালাতে রাফ‘উল  ইয়াদাইন না করার শেষ পরিনতিঃ

ছালাতে রাফ‘উল  ইয়াদাইন করতে হবে তা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল (সাঃ) ছালাতে রাফ‘উল  ইয়াদাইন করেছেন আমরাও সালাতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিটি কাজ-কর্মকে অনুকরন-অনুসরন করবো। তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলবো।

আমাদের সমাজের ৯০% মুসলমান ছালাতে রাফ‘উল  ইয়াদাইন করে না। অথচ  তারা বিতর  ছালাতে দোয়া কুনুত পাঠ করার পূর্বে  হাত তোলে। এইটা তারা কোথায় পেলেন? এটা তো কোনো হাদিসেই নেই। আবার যে পদ্ধতিতে বিতর ছালাত আদায় করা হয় এবং যে দোয়া কুনুত (কুনূতে নাযেলাহ)  পাঠ করা হয় এটা তো পুরোটাই ভুল পদ্ধতি। সহিহ হাদিছে বিতর সালাতে কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করার কথা উল্লেখ  নেই। কোনো জাল-জইফ হাদিসেও নেই। এই পদ্ধতি শুধু মাত্র ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত এবং মুরুব্বীদের অন্ধ অনুকরন ছাড়া কিছুই না। ছালাত সহিহ না হলে অন্যান্য আমলও  সহিহ হবে না। আর এই কারনে কারো দোয়াও আল্লাহর নিকট গৃহিত  হবে না। যেহেতু এই বিশাল সংখ্যক মুসলমানদের সাথে আমাদের বসবাস তাই আমরাও মহাবিপদের মধ্যে আছি।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃ) বলেছেন,  যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাত আদায় করেও জাহান্নামে যাবে ঐসব মুছল্লী যারা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করেঃ

অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّى ‘তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখ, ঠিক সেভাবেই ছালাত আদায় কর’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১, ৬২৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৩, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৫৮, সহীহ আল জামি ৮৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন, সেভাবে ছালাত আদায় করতে গেলে অবশ্যই ছহীহ হাদীছের আলোকেই ছালাত আদায় করতে হবে। কোন ইমাম, তরীকা বা মাযহাবের পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করলে সেটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পদ্ধতির ছালাত হবে না। যেমন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাক্ষাতে তিন, তিন বার ছালাত আদায় করেও তা সঠিক বলে গণ্য হয়নি।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,

‘রাসূল (ছাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে ছালাত আদায় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি যাও, পুনরায় ছালাত আদায় কর। কেননা তুমি ছালাত আদায় করনি। এভাবে লোকটি তিন বার ছালাত আদায় করল। রাসূল (ছাঃ) তাকে তিন বারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি ছালাত আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে ছালাত শিখিয়ে দিন! অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যখন তুমি ছালাতে দাঁড়াবে তখন তাকবীর দিবে। অতঃপর কুরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হবে, তা পাঠ করবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ করবে। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সাথে সিজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যেক ছালাত এভাবে আদায় করবে’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৭, ৭৯৩, ৬২৫১, ৬২৫২, ৬৬৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭১-৭৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৯০, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)৮৫৬, নাসায়ী ৮৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯০, ইরওয়াহ ২৮৯, আহমাদ ৯৬৪১, ৯৬৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৭১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিজ্ঞ পাঠক! উপরের হাদীছ দ্বারা ছালাতে দ্রুততার সাথে কিয়াম-কুউদ ও রুকূ-সিজদা করার পরিণতি জানা গেল। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ঐ ব্যক্তি যে তার ছালাত চুরি করে। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কিভাবে ছালাত চুরি করে? তিনি বললেন, সে ছালাতে রুকূ ও সিজদা পূর্ণ করে না’। (মুসনাদে আহামাদ হা/২২৬৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৮৬;  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় বড় চোর হচ্ছে যারা ছালাতের মধ্যে চুরি করে। পার্থিব জীবনে মানুষ মানুষের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা চুরি করে, এটাকে সামান্য চুরি বলা যেতে পারে। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মহামূল্যবান সম্পদ, জান্নাতে যাওয়ার পুঁজি, কত ইবাদতের মাঝে শ্রেষ্ঠ ইবাদত চুরি করে সেই প্রকৃতপক্ষে বড় চোর।

বস্তুতঃ রুকূ-সিজদা যথাযথভাবে না করলে ছালাতই হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘ছালাতের ছওয়াব তিনভাগে বিভক্ত। এক-তৃতীয়াংশ পবিত্রতা, এক-তৃতীয়াংশ রুকূ ও এক-তৃতীয়াংশ সিজদায়। যে এইগুলি পূর্ণ আদায় করল তার ছালাত কবুল হ’ল এবং তার সমস্ত আমলও কবুল হ’ল। আর যার ছালাত কবুল করা হবে না, তার কোন আমলই কবুল হবে না’। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫৩৯)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার ছালাতের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যে ছালাতে রুকূ ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৪, আহমাদ ১৫৮৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই কোন মছুল্লী ৬০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে, কিন্তু তার ছালাত কবুল হচ্ছে না। হয়ত সে পূর্ণভাবে রুকূ করে কিন্তু সিজদা পূর্ণভাবে করে না। অথবা পূর্ণভাবে সিজদা করে কিন্তু পূর্ণভাবে রুকূ করে না’। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৯৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫২৯; ছহীহাহ হা/২৫৩৫, সনদ হাসান)।

অন্য বর্ণনায় আছে আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুছল্লীর ছালাত ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে না যতক্ষণ সে রুকূ ও সিজদায় তার পীঠ সোজা না করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৮,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৮৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৫, নাসায়ী ১০২৭, ইবনু মাজাহ ৮৭০, দারিমী ১৩৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ৫২২, ৫২৮, তাবরানী কাবীর ৩৭৪৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ আপনারা শুধু মুখেই বলবেন আশেকে রাসুল। কিন্তু বাস্তবে রাসুল (সাঃ) এর আদেশ নিষেধ মানবেন না তথা তাঁর পুরোপুরি আনুগত্য মেনে নিবে না তাহলে তো আপনারা মুসলমানই না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ বলেন:

 “রাসূল তোমাদের যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর: ৭)।

রাসুল (সাঃ) এর আনুগত্য করা ফরজঃ

 আনুগত্যঃ ইসলামের জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই হল আনুগত্য। সূরা সূরা আন নেসার (৫৯-৭০) আয়াতে ইসলামের সমগ্র ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের আনুগত্যের মূলনীতিসমূহ বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনার চেষ্টা করা হলো। আল্লাহ বলেনঃ

(১) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়, তবে তাতে কি হল! অতঃপর তারা আপনার কাছে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে ফিরে আসবে যে, মঙ্গল ও সম্প্রীতি ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কেও আল্লাহ তা’আলা অবগত। অতএব, আপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোন কথা বলুন যা তাদের জন্য কল্যাণকর। বস্তুতঃ আমি একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাঁদের আদেশ-নিষেধ মান্য করা হয়। আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিল, তখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত। (সূরা আন নেসার (৫৯-৭০)।

(২) তাদেরকে বলোঃ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো। তারপর যদি তারা তোমাদের এ দাওয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ এমন লোকদের ভালোবাসবেন না, যারা তাঁর ও তাঁর রাসূলদের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে। (সূরা আলে ইমরান-৩২)।

(৩) তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রাসূলের অনুগত হও এবং আত্মরক্ষা কর। কিন্তু যদি তোমরা বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, নিঃসন্দেহ আমাদের রসূলের উপরে হচ্ছে মাত্র স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া। (সূরা মায়েদা-৯২)।

(৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না। আর তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা শোনেনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় তারাই মূক (বোবা) ও বধির, যারা উপলদ্ধি করে না। (সূরা আনফাল-২০-২২)।

(৫) আর আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা রয়েছেন ধৈর্যশীলদের সাথে। (সূরা আনফাল-৪৬)।

(৬) আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো। কিন্তু তোমরা যদি আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে সত্যকে স্পষ্টভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমার রাসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই। (সূরা তাগাবুন-১২)।

(৭) হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমল ধ্বংস করো না। (সূরা মুহাম্মদ-৩৩)।

(৮) মু’মিন তো আসলে তারাই যারা অন্তর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মানে এবং যখন কোন সামষ্টিক কাজে রাসূলের সাথে থাকে তখন তার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না। যারা তোমার কাছে অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী। (সূরা নূর-৬২)।

(৯) মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রাসূলও চলে গেছেন। যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন, তাহলে কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন। (সূরা আলে ইমরান: ১৪৪)।

(১০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করল। আর যে আমার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা করল। আর যে আমীরের (নেতার) আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। যে আমীরের অবাধ্যতা করল, সে আমারই অবাধ্যতা করল। (মিশকাতুলমাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২৯৫৭, ৭১৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৪১-৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৫, সহীহ আল জামি ৬০৪৪, আধুনিক প্রকাশনী ২৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৭৪৮, নাসায়ী ৫৫১০, ৪১৯৩, আহমাদ ৮১৩৪, ৭৩৮৬, ৭৬০০, ২৭৩৫০, ৮৩০০, ৮৭৮৮, ৯১২১, ৯৭৩৯, ১০২৫৯, আয-যিলাল ১০৬৫, ১০৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো বিকলাঙ্গ কুৎসিত গোলামকেও তোমাদের শাসক (নেতা) নিযুক্ত করা হয়। আর সে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালিত করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬২, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৬১, সহীহ আল জামি ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩০২৯-৩০, ৪৬৫২-৪৬৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৯৮, ১৮৩৮, তিরমিযী ১৭০৬, নাসায়ী ৪১৯২, আহমাদ ১৬২১০, ২৬৭১৫, ২৬৭২৩, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/৩৩০, আয-যিলাল ১০৬২, ১০৬৩।। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শুনো এবং আনুগত্য করো, যদিও তোমাদের ওপর হাবশী গোলাম শাসক নিযুক্ত করা হয়, যার মাথা কিসমিসের ন্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৪২, ৬৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৬০, আহমাদ ১২১২৬, সহীহ আল জামি ৯৮৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৫/২৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মনঃপূত হোক বা না হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭১৪৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৬৫৭-৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৩৯, আবূ দাঊদ ২৬২৬, তিরমিযী ১৭০৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৯৩, আহমাদ ৬২৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যখন (নির্বাসনে) রাবাযা নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন নামাযের একামত হচ্ছিল। এক ক্রীতদাস লোকেদের নামাযে ইমামতি করছিল। (তাকে) বলা হলো, ইনি আবূ যার (রাঃ)। (এ কথায়) ক্রীতদাস পেছনে সরে আসতে উদ্যত হলে আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ওসিয়াত করেছেনঃ আমি যেন (নেতৃ-আদেশ) শ্রবণ করি ও আনুগত্য করি, যদিও সে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত কাফ্রী ক্রীতদাস হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৬২, আহমাদ ২০৯১৮, ২০৯৯০, মুসলিম ১৮৬৭, আয-যিলাল ১০৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরোল্লিখিত কুরআন হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারলাম যে, রাসুল সা. এর হুকুম বা আদেশ নিষেধ মেনে চলা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের জন্যে ফরজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক”। (সূরা হাশর ৭)।

তিনি আরো বলেন,

“সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়”। (সূরা নাজম ৩-৪)।

আনুগত্যহীনতার পরিনাম

আনুগত্য পরিহারকারী দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি পাবে।

(১) আল্লাহ বলেন, রাসূলের হুকুমের বিরুদ্ধাচারণকারীদের ভয় করা উচিত যেন তারা কোন বিপর্যয়ের শিকার না হয় অথবা তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব না এসে পড়ে । (সূরা নূর-৬৩)।

 (২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। * (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

* যারা আল্লাহর রাসূলের সহীহ হাদীসকে জেনে বুঝে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পরিত্যাগ ক’রে কারো স্বকপোল কল্পিত রায় কিয়াসের অনুসরণ করে তারা আল্লাহর রাসূলের অবাধ্য।

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।

(সূরা আলে ইমরান আয়াত নং- ১০২)।

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইমানদার ব্যক্তিদেরকে মুসলমান হতে বলেছেন। এই  জন্য বলা হয়েছে যে, ইমান তো শুধু বিশ্বাসের বিষয় আর কাজে কর্মে বাস্তবায়িত করার নামই হচ্ছে মুসলমান হওয়া। এই ক্ষেত্রেই আমাদের কতো ঘাটতি। এই  জন্যেই আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা : ২০৮)।

আমরা মুসলমান দাবী করি কিন্তু আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর হুকুম মানি না।

প্রিয় মুসল্লী! ছালাতের ক্ষেতে যেসব হুকুম আছে তা আমাদেরকে মেনে চলতে হবে। যারা এতোদিন ভুল ভ্রান্তির মধ্যে আছেন, তারা তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসুন। তানাহলে “সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন”। (সুরা নিসা-৪, আয়াত ১১৫)।

উপসংহারঃ বর্তমান যুগে মুসলমানরা তিনভাগে বিভক্ত। (১) মডার্ন মুসলমান, যারা শুধুই মুসলমান নামে ব্যবহৃত মুসলমান। এরা ইসলামের কিছুই মানে না। মূলত অমুসলিমদের এরা প্রকৃত এজেন্ট। বর্তমান যুগে এদের দ্বারাই ইসলামের মূল ক্ষতি হচ্ছে। (২) মডারেট মুসলমান, যারা ইসলামকে শুধু কালিমা, সালাত, সাওম, হজ্জ ও যাকাত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। এই গ্রুপের মধ্যে আছে, আমাদের দেশের কথিত পির-অলি, মুফতি, মুহাদ্দিস ও অনৈসলামিক দলের মুসলিম নেতা কর্মী। এছাড়া ইলিয়াসী তাবলীগ জামায়াত অন্যতম।। এদের মধ্যে হানাফী মাজহাবের আধিক্য বেশী, যারা ৯০% সহিহ হাদিস মানে না। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে রাফ্উল ইয়াদায়ন সম্পর্কে সহিহ ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশের ৯০% মুসলমান রাফ্উল ইয়াদায়ন করে না। কিন্তু তারা বিতর সালাতে দোয়া কুনুত পাঠ করার আগে দুই হাত তোলে। অথচ বিতর সালাতে দুই হাত তোলার কোনো হাদিস নেই। এছাড়া যে কুনুত পাঠ করা হয় সেটাও ভুল পদ্ধতি। বাংলাদেশে বিতর সালাতে যে কুনুত পাঠ করা হয় তা বিতর সালাতে পড়ার জন্য নয়। তাই আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতি জানতে হবে।

সুধী পাঠকঃ আজ আমরা  বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ। আমাদের যারা ওস্তাদ আবার তাদের যারা ওস্তাদ মূলত তারাই সহিহভাবে হাদিস শিখেন নি। বর্তমানে কিছু দায়ীদের লক্ষ্য করা যাচ্ছে যারা উঠে পড়ে লেগে আছে বিদআত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এদের দলীল হচ্ছে জাল-জইফ হাদিস আর বট তলার চটি বই এবং বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরন-অনুকরন। এরা কোরআন ও সহিহ হাদিস ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেরা যেমন গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত আবার সাধারন মুসলমানদেরকেও ভুল পথে পরিচালিত করছে। এজন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। তার আগে নিজের জীবনকে কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক গড়তে হবে, জানতে হবে। সকল বিষয়ে সহিহ জানতে আমার সাথে থাকুন। নিয়মিত ব্লগ স্টাডি করুন। দেখবেন আপনিও একদিন ইসলামের সহিহ পথে অন্যকে দাওয়াত দেয়া শিখে গেছেন। আর ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরজ। একটা কথা মনে রাখবেন, বর্তমান বাংলাদেশের কথিত পির-অলি আর তাবলীগ জামায়াত যে দাওয়াতী কাজ করছে তা কিন্তু প্রকৃত দাওয়াতী কাজ নয়। এদের সমস্ত কর্মকান্ড কিন্তু জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক। এদের থেকে সাবধান। আল্লাহ আমাদের সকলকে শিরক, কুফর ও বিদআত থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।

সম্প্রতি মাজহাবীদের মধ্যে অনেক মারামারি চলছে। একে অপরকে গালিগালাজ করছে। একজন অন্য জনকে কাফির বলছে। আসলে বিষয়টা হলো আমরা সকলেই চার মাজহাবের লোক। এককভাবে কোনো পন্থী নই। যদি তা কোরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক হয়। এই কথাটা চার মাজহাবের ওস্তাদগণই বলে দিয়েছেন। কোরআন ও সহিহ হাদিসের সাথে তাদের কথার মিল থাকলে তা মানতে হবে, মিল না থাকলে তাদের কোনো কথাই মেনে নেয়া যাবে না। যেমনঃ

আবু হানীফা (রহ:)  বলেনঃ

(১) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন ১/৬৩; রাসমুল মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)।

(২) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯)।

(৩) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)।

(৪) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – (ঐ)

(৫) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর কিবাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)।

ইমাম মালেক (রহ:)  বলেনঃ

(১) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)।

(২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।

(৩) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি ‘তাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)।

ইমাম শাফেরী (রহ:)  বলেনঃ

(১) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)।

(২) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)।

(৩) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)।

(৪) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)।

(৫) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)।

(৬) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)।

ইমাম আহমাদ (রহ:)  বলেনঃ

(১) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)।

(২) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)।

(৩) আওযাঈঃ ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল সাহাবী ও তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা)।

মাজহাবপন্থী ভাইদের বলছি, এই লেখা পড়ার পর তৎক্ষণাত তওবা করে কোরআন ও সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসা উচিত। তানাহলে আপনাদের কোনো আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। চার ইমাম কোরআন ও সহীহ হাদিস বিরোধী ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে অন্ধের মতো অনুসরন-অনুকরন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ৯০% মুসলমান সহীহ হাদিস বাদ দিয়ে জাল, জইফ বা মিথ্যে কিংবা দূর্বল হাদিসের উপর আমল করছে। এভাবে সহীহ হাদিস বাদ দিয়ে অন্যের মতামত বা অভিমতকে অন্ধের মতো অনুসরন করা বিদআত। আমরা মুসলমান আমাদের মূল দলীল হবে কোরআন ও সহীহ হাদিস। আশা করি এখান থেকে আপনারা শিক্ষা গ্রহণ করবেন।

বিদআতীদের করুণ পরিনতির দলীলসমূহঃ

(১) হে নবি বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না  কোন কোন লোক নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ? এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যারা ইহকালের জীবনে ভ্রান্ত পথে চলে এবং মনে করে যে তারা ঠিক পথ ধরেই চলেছে। এরা তারাই, যারা তাদের প্রতিপালক প্রভুর আয়াতগুলোকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তার দরবারে প্রত্যাবর্তনের প্রতি অবিশ্বাস পোষন করে। এ জন্যে তাদের সকল আমল নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিয়ামতের দিন তাদের কোনই গুরত্ব থাকবে না। তারা যে কুফরী করেছিলো আর আমার আয়াত  ও রাসুলগণের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো তার প্রতি দানে তারা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। (কাহাফঃ ১০৩-১০৫)।

(২) যারা তাঁর (রাসুলসঃ)  হুকুমের বিরুদ্ধাচারন করে  এ বিষয় তাদের সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য যে, তারা মহাবিপদ গ্রস্ত হবে অথবা যন্ত্রনা দায়ক আযাব তাদেরকে পাকড়াও করবে।  (নূর-৬৩)।

(৩) সঠিক পথ প্রদর্শনের পরও যারা বিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্য কারও অনুকরন করে এবং মতানৈক্য  ও বিরোধিতা করছে আল্লাহর রাসুল নবি করিম  (সঃ) কে তবু তাদেরকে তিনি তার পছন্দ মতো বিপথে চলতে দেবেন এবং জাহান্নামের অগ্নিতে জ্বালাবেন। (নিসা-৪, আয়াত-১১৫)।

(৪) “তোমরা কি কোরআনের কোন কোন অংশ (আয়াত) মানো আর কোন কোন অংশ মানো না? অত:পর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য থেকে এরুপ কাজ  করবে – পার্থিব জীবনে প্রকাশ্য লাঞ্চণা ভোগ করা আর কিয়ামতের দিনে ভীষণ শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার আর কী সাজা হতে পারে! আর আল্লাহ তো তোমাদের কার্য কলাপ সম্বন্ধেবে- খবর নন। (বাকারা-৮৫)।

(৫)  “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। আখেরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫)।

(৬)  আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকবো। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হবো, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলবো, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি)  কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৯, ৬৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৭)  সাহ্ল ইব্নু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউজের ধারে তোমাদের আগে হাজির থাকব। যে সেখানে হাজির হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউজ থেকে পান করবে সে কখনই পিপাসিত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে হাজির হবে যাদের আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এরপরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা দাড় করে দেয়া হবে।

আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমন সময় নু’মান ইব্নু আবূ আয়াস আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি সাহ্ল থেকে হাদীসটি এরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ)-কে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয় জানেন না যে, আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে (নতুন নতুন ধর্মীয় নিয়ম, যা আপনি করতে বলেননি) । এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা (বিদআতী পির-অলি ও আলেম) দূর হোক, দূর হোক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৫০, ৬৫৮৩, ৬৫৮৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(৮)  আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করে। তারা বললেনঃ কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেনঃ যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯)  আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহুআনহু হতে বর্ণিত,

 তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।”  (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৬৬, আহমাদ ৭৫১৭, ৭৮৮৩, ৭৯৮৮, ৮৩২৮, ৮৪২৪, ১০০৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুবাসও পাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

 তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।”  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০০, ৭৩০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৮৯-৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৫২, আহমাদ ৬৪৭৫, ৬৭৪৮, ৬৮৫৭, দারেমী ২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২)  কা’ব বিন মালিক(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, “যে ব্যক্তি উলামাদের সাথে তর্ক করার জন্য, অথবা মূর্খ লোকেদের সাথে বচসা করার জন্য এবং জন সাধারণের সমর্থন (বা অর্থ) কুড়াবার জন্য ইল্ম অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ জাহান্নাম প্রবেশ করাবেন।” (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৫৪, ইবনে আবিদ্দুনয়্যা, হাকেম ২৯৩, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭২, সহীহ তারগীব ১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৩)  আলী (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা আমার উপর মিথ্যা বলো না। যেহেতু যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখে প্রবেশ করল।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৪)  সালামাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা বানিয়ে বলে, সে যেন নিজের ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৫)  আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে, সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১০, ৩৫৩৯, ৬১৮৮, ৬১৯৭, ৬৯৯৩; মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৬)  জারীর বিন আব্দুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে সম্প্রদায় যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকে, যার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যদি তারা তাদেরকে বাধা না দেয় (এবং ঐ পাপাচরণ বন্ধ না করে), তাহলে (তাদের জীবদ্দশাতেই) মহান আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপকভাবে তাঁর কোন শাস্তি ভোগ করান।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০০৯, ইবনে হিব্বান, আহমাদ ১৮৭৩১, ১৮৭৬৮, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৭)  আবূ যায়দ উসামাহইবনে যায়দ ইবনে হারেষাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৬৭, ৭০৯৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৩০২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩০৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৮) আনাস (রাঃ) থেকেবর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি যারা আগুনের কাঁচি দ্বারা নিজেদের ঠোঁট কাটছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে জিবরীল! ওরা কারা?’ তিনি বললেন, ‘ওরা আপনার উম্মতের বক্তাদল (বিদআতী পির-অলি ও আলেম); যারা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিত, অথচ ওরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন করত, তবে কি ওরা বুঝত না।” (আহমাদ ১২২১১, ১২৮৫৬ প্রভৃতি, ইবনে হিব্বান ৫৩, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ২৮৩২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১৭৭৩, আবূ য়্যা’লা ৩৯৯২, সহীহ তারগীব ১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৯)  আবূ উমামা (রাঃ)থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; (বিবেকহীন) অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী ৮০০৫, সহীহুল জামে’ ৩৭৯৮ নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(২০)  বিদআত এবং (দ্বীনে) নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধঃ

(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,

অর্থাৎ, সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কি আছে? (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)।

(খ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ক্রটি করিনি। (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)।

(গ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ, কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।

(ঘ) তিনি অন্যত্র বলেছেন,

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলবে। (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)।

(ঙ) তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ, বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)।

(২১) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এ শরী‘আতে নাই এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত[*]।’ ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু জা‘ফর মাখরামী (রহ.) ও ‘আবদুল ওয়াহিদ ইবনু আবূ ‘আউন, সা‘দ ইবনু ইব্রাহীম (রহ.) হতে তা বর্ণনা করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৩৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, আহমাদ ২৬০৯২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫১৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

[*] অত্র হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, শরীআর দৃষ্টিতে ওটাকে বিদ’আত বলা হয় যা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিস্কার ৷ অতএব দুনিয়াবী আবিষ্কার যেমন বাস, ট্রেন, উড়োজাহাজ, পানি জাহাজ প্রভৃতিতে চড়া বিদ’আত নয়। কারণ এগুলোতে চড়ার মাধ্যমে কেউ সাওয়াবের আশা করে না। দুঃখের বিষয় হলেও অতি সত্যকথা যে, আমরা ‘ইবাদাত করতে এত ব্যস্ত যে, ঐ ‘ইবাদাতটি নবীর তরীকা মুতাবিক হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করারও সময় নেই ৷ এজন্যই অজান্তে দেদারসে এমন কিছু ‘আমাল সাওয়াব পাওয়ার নিমিত্তে করে যাচ্ছি যেগুলি জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। যেমনঃ মীলাদ, শবে বরাত, চল্লিশা, খতমে জালালী, খতমে ইউনুস, কুরআন খানি, ফাতিহা খানি, শবীনা খতম, দরুদে তাজ, দরুদে লাক্ষী, দু‘আয়ে গাঞ্জুল আরশ, কুম কুম ইয়া হাবীবা ওযীফা, উরস, কবরে চাদর দেয়া, কবর পাকা করা, কবরের উপর লেখা, তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা, সেখানে আগর বাতি-মোমবাতি জ্বালানো, সেখানে নযরানা পেশ করা, মুখে নিয়্যাতের গদ উচ্চারণ করা (নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া ----- বলে), ফরজ সালাতান্তে, জানাযা সালাতান্তে সস্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করা প্রভৃতি। এগুলো এমন ‘আমাল যার মধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরীকা বিদ্যমান না থাকায় নিঃসন্দেহে বিদ’আত- যার পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নয়। অনেকে বলে থাকেন, বুঝলাম এগুলো বিদ’আত কিন্তু বিদ’আত তো দুই প্রকার-

(১) বিদ‘আতে হাসানাহ (উত্তম বিদ‘আত)

(২) বিদ‘আতে সায়্যিআহ (মন্দ বিদ‘আত)। অতএব এগুলো বিদ‘আত হলেও মন্দ বিদ‘আত নয় বরং উত্তম বিদ‘আত। তাই বলি: বিদ‘আতকে উক্ত দুই ভাগে ভাগ করাও একটি বিদ‘আত। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বিদ‘আতের এই বিভাজন আদৌ প্রমাণিত নেই। বরং তিনি সমস্ত বিদ‘আতকে ভ্রষ্টতা বলেছেন- (নাসায়ী ৩/১৮৮-১৮৯, ইবনু খুযাইমাহ হাঃ ১৭৮৫)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন : সমস্ত বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা যদিও মানুষ তাকে উত্তম মনে করে- (সলাতুত তারাবীহ- আলবানী ৮১ পৃষ্ঠা)।

মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়াবী বিষয়ে সকল বিষয়ই বৈধ বা হালাল, শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে যে সকল বস্তুকে হারাম করা হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। আর ‘ইব৷দাতের ক্ষেত্রে সকল প্রকার ‘ইবাদাত হারাম বা অবৈধ শুধুমাত্র কুরআন ও সুন্নাহয় যেগুলোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেগুলো ব্যতীত। ‘আমাল সহীহ ও সুন্নাতী পদ্ধতিতে হবার জন্য ছয়টি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো হলো

(১) কারণ : (যেমন চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের কারণে সালাত আছে কিন্তু আল্লাহ্র রসূল এর জন্ম বা মৃত্যূর কারণে কোন ‘ইবাদাত নেই, তাই সেখানে ‘ইবাদাত না করা)।

(২) প্রকার : (যত প্রকার মহিলাকে বিব৷হ করা হারাম তত প্রকার ব্যতীত অন্য সকল প্রকার নারীকে বিবাহ বৈধ, কিংবা যত প্রকারের জানোয়ার আল্লাহ্র রসূল কুরবানী করেছেন সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকা, যেমন আল্লাহ্র রসূল ঘোড়া কুরবানী করেননি বা মোরগ মুরগী কুরবানী করেননি তাই তা না করা)।

(৩) পরিমাণ : (যতটুকু করেছেন তারচেয়ে কম বা বেশী না করা, যেমন যুহরের চার রাকা‘আতে স্থলে ৩ বা ৫ করা যাবে না)।

(৪) সময় : (যে সময়ে করেছেন সে সময়ে করা, যেমন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা, যুহরের সালাতে ‘আসরের সময় আর ‘আসরের সালাত যুহরে আদায় না করা)।

(৫) স্থান : (যে স্থানে করেছেন, যেমন হাজ্জের মীকাত, মীনায় অবস্থান, ‘আরফায় অবস্থান, ফরজ সালাত মসজিদে আদায় ইত্যাদি)।

(৬) পদ্ধতি : (যে ভাবে করেছেন সেভাবেই করতে হবে, পদ্ধতি পরিবর্তন না করা)।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১। এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ধর্মের কর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মে নতুন কোনো কর্মের উদ্ভাবন করার বিষয়টি হলো ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্যুতি হওয়া এবং বাতিল পন্থার অনুগামী হওয়ার অন্তর্ভুক্ত।

২। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীস মেনে চলার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে এবং তাতে কোনো প্রকার বিকৃতি বা নিষ্ক্রিয় করার পথ অবলম্বন করা থেকে সতর্ক করে।

৩। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের কর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্মে নতুন কোনো কর্মের উদ্ভাবন করার বিষয়টি হলো মুসলিম জাতির অধঃপতনের উপাদান এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হতে বিপথগামী হওয়ার উপকরণ।

(২২)  ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, “হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪)।

জেনে রাখো!  ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশর ময়দানে খালি পা, বস্ত্রহীন এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ যেভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই- (আম্বিয়াঃ ১০৪)। আর কিয়ামতের দিন সবার আগে যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হবেন ইবরাহীম (আঃ)। আর আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী। এ সময় আল্লাহ বললেন, যখন আপনি এদের নিকট হতে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহর নেক বান্দা [ঈসা (আঃ)] যেমন বলেছিলেন; তেমন আমি বলব, হে আল্লাহ! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি ক্ষমতাধর হিকমতওয়ালা-(আল-মায়িদাহ ১১৭-১১৮)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৪৯, ৪৩৩৭, ৪৬২৫, ৪৬২৬, ৪৬৪০, ৬৫২৪, ৬৫২৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিদআতীদের তওবাও কবুল হয় না যতক্ষণ না---

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতীর তওবা ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত রাখেন (গ্রহণ করেন না), যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার বিদআত বর্জন না করেছে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৪২০২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৯৪৫৭, সহীহ তারগীব ৫৪নং)।  হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

সুপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরাঃ আমাদের সমাজে সম্প্রতি হাজার হাজার বিদআতী পির-অলি ও আলেমের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব ভন্ড আলেম আগেও ছিল বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতোমধ্যে ভন্ডরা মিথ্যে কিচ্ছা কাহিনী বলে বলে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এক সময় তারা যা বলতো সাধারন মুসলমান তাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু বর্তমানে কুরআন ও হাদিসের সহিহ চর্চার কারনে বিশেষ করে ইসলামি ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাদিস গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করায় সকল শিক্ষিত মুসলমানরা  আদ্যোপান্ত পড়ে বুঝতে পারলো যে, এতোদিন ভন্ড আলেমরা শুধুই মনগড়া কথা আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে ওয়াজ করে আসছে। আফসোসের বিষয় এদের মধ্যে আছে কুরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ বা মুফতি, মুহাদ্দিস, পির, অলি আবার অনেকে আছে ডক্টরেট পাশ। কিন্তু এরা সকলেই জাল-জইফ হাদিস ভিত্তিক যেমন ওয়াজ করে তেমনি বিভিন্ন বিদআতী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এরা  এক দিকে যেমন গোমরাহী হয়ে জাহান্নামী হচ্ছে তেমনি এদের সাগরেদ বা মুরিদ কিংবা অনুসারীদেরকেও জাহান্নামী বানাচ্ছে। ইমান আমল নষ্ট করে দিচ্ছে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল সাঃ এর তরীকা মোতাবেক সালাতসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।

“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনী ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...