Search This Blog

Wednesday, December 27, 2023

তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত ও গুরুত্ব (সর্বাধিক দলিল সংবলিত)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত ও গুরুত্ব

সর্বাধিক দলিল সংবলিত

(আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়)


তাহাজ্জুদ কি?

বান্দা হিসেবে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেয়ার জন্য মুসলমানদেরকে ফরজ সালাত পড়তে হয়। ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন- সুন্নাত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তাওবা, তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে তাহাজ্জুদ।

উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত সালাতের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার সালাত পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর সালাত আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে সালাত আদায়ে সাওয়াব বেশি।

রাসূল (সা.) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ফরয সালাতের পর অধিক উত্তম সালাত হলো মাঝ রাত্রের সালাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৬, আহমাদ ১০৯১৫, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৪২১, শু‘আবুল ঈমান ২৮২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদ পড়ার হুকুম

যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা বলবেন,

“তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে”। (সূরা আযযারিয়াত আয়াত ১৭-১৮)।

রাসূল সা:-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেন, “এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন”। (সূরা আল ঈসরা আয়াত ৭৯)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আপনার রব জানেন যে, আপনি সালাতে দাঁড়ান কখনও রাতের প্ৰায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনও অর্ধাংশ এবং কখনও এক-তৃতীয়াংশ এবং দাঁড়ায় আপনার সঙ্গে যারা আছে তাদের একটি দলও”। (সূরা মুজাম্মিল আয়াত ২০)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,  “আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।” (সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৬৪)।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী”। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত ১৭)।

রাসূল (সা.) বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সালাতের জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও রহমত করেন যে রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার তার স্বামীকেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্যে উঠায়। যদি স্বামী ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৩০৮, সুনান আননাসায়ী ১৬১০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৩৩৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৮, ইবনু হিব্বান ২৫৬৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬৪, সুনান আল কুবরা ৪৩১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৫, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসূল (সা.) বলেন,

’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর পিতা ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রাত্রে আল্লাহর ইচ্ছা মতো সালাত  আদায় করতেন। রাত্রের শেষভাগে নিজ পরিবারকে সালাত আদায়ের জন্যে উঠিয়ে দিতেন। তিনি তাদের বলতেন, সালাত আদায় কর। তারপর এ আয়াত পাঠ করতেনঃ

“ওয়া’মুর আহলাকা বিস্সলা-তি ওয়াসত্বাবির ’আলায়হা- লা- নাস্আলুকা রিযকবান। নাহনু নারযুকুকা ওয়াল ’আ-ক্বিবাতু লিত্ তাক্বওয়া-’’।

অর্থাৎ ’’তোমার পরিবারের লোকজনদেরকে সালাতের আদেশ করতে থাকো। নিজেও (এ কষ্টের) জন্যে ধৈর্য ধারণ করতে থাকো। আমি তোমার নিকট রিজিক চাই না। রিযক্ব তো আমিই তোমাকে দান করি। আখিরাতের সফলতা তো মুত্তাক্বী লোকদের জন্য’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১৩২)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪০, মালিক ৩৮৯, সুনান আস্ সুগরা লিল বায়হাক্বী ৮০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (সা.) বলেন,

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট সকল সালাতের মাঝে দাঊদ (আঃ)-এর সালাত এবং সকল সওমের মাঝে দাঊদ (আঃ)-এর সওম সবচেয়ে বেশী প্রিয়। তিনি অর্ধেক রাত্র ঘুমাতেন। এক-তৃতীয়াংশ সালাত আদায় করতেন। তারপর রাতের ষষ্ঠাংশে আবার ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন সওম পালন করতেন এবং একদিন সওম ছেড়ে দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৬৫৭-১৬৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সারা রাত ঘুমানো ব্যক্তির কানে শয়তান পেশাব করে দেয়

’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক লোক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তাঁকে বলা হলো, লোকটি সকাল পর্যন্ত একটানা ঘুমিয়ে থাকে, সালাতের জন্যে উঠে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, এ লোকের কানে অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তার দু’কানে শায়ত্বন (শয়তান) পেশাব করে দিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদ পড়ার উত্তম সময়

সালাতুল লায়ল, ক্বিয়ামুল লায়ল ও তাহাজ্জুদ একই সালাতের বিভিন্ন নাম। যার ওয়াক্ত ’ইশার সালাতের পর থেকে ফাজর (ফজর) হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে এটাও বলা হয়ে থাকে যে, বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ ঐ সালাতকে বলা হয় যা শেষ রাতে আদায় করা হয়ে থাকে।

মাসরূক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সবচেয়ে প্রিয় ’আমল কোনটি- এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন, যে ’আমলই হোক তা সব সময় করা। তারপর আমি প্রশ্ন করলাম, রাত্রের কোন সময়ে তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাতের জন্যে সজাগ হতেন? তিনি বললেন, মোরগের ডাক শুনার সময়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মোরগ ফেরেস্তা দেখে বলেই তো আজানের সময় ডাক দিয়ে থাকে। মোরগ তাহাজ্জুদের সময় ডাক দেয় এবং সুবহে সাদিকের সময়ও ডাক দিয়ে থাকে। এই দুই সময় মোরগ ডাক দিয়ে থাকে। আল্লাহ তাকে এই ব্যাপারে অবগত করেছেন।

মোরগ ফেরেশ্তা দেখার হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ চাইবে; কেননা মোরগ একজন ফিরিশতাকে দেখেছে। আর যখন তোমরা গাধার চিৎকার শুনবে তখন শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। কেননা সে একটা শয়তানকে দেখেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কারণ সে সালাতের জন্য জাগায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তাহাজ্জুদ পড়ার জন্যে ঘুম থেকে জেগে যে দোয়া পড়তে হয়

(ক) শারীকুল হাওযানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে প্রশ্ন করেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে ঘুম থেকে সজাগ হওয়ার পর কোন জিনিস দিয়ে ’ইবাদাত আরম্ভ করতেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি আমাকে এমন বিষয় জিজ্ঞেস করেছ যা তোমার পূর্বে আমাকে কোন লোক জিজ্ঞেস করেনি। তিনি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর প্রথম দশবার ’আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করতেন। ’আলহামদু লিল্লা-হ’ বলতেন দশবার। ’’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী’’ পাঠ করতেন দশবার। ’’সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’ পাঠ করতেন দশবার। ’আস্তাগফিরুল্ল-হ’ পাঠ করতেন দশবার। ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করতেন দশবার। আর দশবার পড়তেন এ দু’আ, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন যীক্বিদ্ দুন্ইয়া ওয়া যীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়া-মাহ্’’। এরপর তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাত আরম্ভ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১১৬, সুনান আনআবূ দাঊদ ৫০৮৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে লোক রাত্রে ঘুম থেকে জেগে এ দু’আ পাঠ করবেঃ

“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি ওয়ালা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াল্ল-হু আকবার, ওয়ালা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ’’

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত গুনাহ হতে বাঁচার ও সৎকার্য করার ক্ষমতা কারো নেই।)।

তারপর বলবে, “রব্বিগ্ ফিরলী’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর) অথবা বললেন, পুনরায় দু’আ পাঠ করবে। তার দু’আ কবূল করা হবে। তারপর যদি উযূ করে ও সালাত আদায় করে, তার সালাত  কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তাহাজ্জুদের জন্যে দাঁড়িয়ে প্রথমতঃ এ দু’আ পাঠ করতেন,

“আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা, ওয়া ইসরা-ফীলা, ফাত্বিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ’আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি, আনতা তাহকুমু বায়না ’ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখতালিফূন, ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হকক্বি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহদী মান তাশা-উ ইলা- সিরাত্বিম মুসতাক্বীম।’’

অর্থাৎ ’’হে আল্লাহ! হে জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব, হে আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের অধিকারী! তুমিই তোমার বান্দাদের মতপার্থক্য ফায়সালা করে দিবে। হে আল্লাহ! সত্যের সম্পর্কে যে ইখতিলাফ করা হচ্ছে, এ সম্পর্কে আমাকে সরল সঠিক পথ দেখাও। কারণ তুমি যাকে চাও, সরল পথ দেখাও।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৮১, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে সজাগ হয়ে এ দু’আ পড়তেন, ’

“আল্ল-হুম্মা লাকাল হামদু, আনতা ক্বইয়্যিমুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদু, আনতা নূরুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না ওয়া লাকাল হামদু, আনতা মালিকুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, ওয়ামান ফীহিন্না, ওয়ালাকাল হামদু, আনতাল হাক্কু, ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু, ওয়ালিক্ব-উকা হাক্কুন, ওয়া ক্বওলুকা হাক্কুন, ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন, ওয়ান্না-রু হাক্কুন, ওয়ান্ নবীয়্যূনা হাক্কুন, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন, ওয়াস্ সা-’আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আসলামতু, ওয়াবিকা আ-মানতু, ওয়া ’আলায়কা তাওয়াক্কালতু, ওয়া ইলায়কা আনাবতু, ওয়াবিকা খ-সামতু, ওয়া ইলায়কা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা- ক্বদ্দামতু, ওয়ামা- আখখারতু, ওয়ামা- আসরারতু, ওয়ামা- আ’লানতু, ওয়ামা- আনতা আ’লামু বিহী মিন্নী, আনতাল মুক্বদ্দিমু, ওয়া আন্তাল মুআখখিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা, ওয়ালা- ইলা-হা গয়রুকা।’’

অর্থাৎ ’’হে আল্লাহ! সব প্রশংসাই তোমার। তুমিই আসমান জমিন এবং যা এ উভয়ের মাঝে আছে ক্বায়িম রেখেছ। সকল প্রশংসা তোমার। তুমি আসমান-জমিন এবং এ উভয়ের মধ্যে যা আছে সকলের বাদশাহ। সকল প্রশংসা তোমারই। তুমিই সত্য। তোমার ওয়া’দা সত্য। তোমার সাক্ষাৎ সত্য। তোমার কালাম সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। সকল নবী সত্য। মুহাম্মাদ (রসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছি। আমি তোমার ওপর ঈমান এনেছি। তোমার ওপরই ভরসা করেছি। তোমার দিকেই আমি ফিরেছি। তোমার মদদেই আমি শত্রুর মুকাবিলা করছি। তোমার নিকট আমার ফরিয়াদ। তুমি আমার আগের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দাও। আমার গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহ তুমি মাফ করে দাও। আমার ওসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও, যা আমার চেয়ে তুমি ভাল অবগত আছো। তুমি যাকে ইচ্ছা করবে আগে আনবে, যাকে ইচ্ছা করবে পেছনে সরিয়ে দিবে। তুমি ছাড়া (প্রকৃত) কোন মা’বূদ নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১২০, ৭৪৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৮, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) হুমায়দ ইবনু ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে গিয়েছিলাম। (তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম) আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত  আদায় করতে উঠলে তাঁকে আমি সালাতের সময় দেখতে থাকব। যাতে তিনি কিভাবে সালাত আদায় করেন তা আমি দেখতে পাই (পরে আমি সেভাবে ’আমল করব)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাত, যাকে ’আত্বামাহ্ বলা হয়, আদায় করার পর ঘুমিয়ে গেলেন (কিছু সময় আরাম করলেন)। তারপর তিনি সজাগ হলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকালেন ও এ আয়াত,

“রব্বানা- মা- খালাকতা হা-যা- বা-ত্বিলান..... ইন্নাকা লা- তুখলিফুল মি’আ-দ’’-

(সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯১-১৯৪) পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৯, সুনান আননাসায়ী ১৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অতঃপর মিসওয়াক করা

হুমায়দ ইবনু ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন, একবার আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে গিয়েছিলাম। (তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম) আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত  আদায় করতে উঠলে তাঁকে আমি সালাতের সময় দেখতে থাকব। যাতে তিনি কিভাবে সালাত আদায় করেন তা আমি দেখতে পাই (পরে আমি সেভাবে ’আমল করব)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাত, যাকে ’আত্বামাহ্ বলা হয়, আদায় করার পর ঘুমিয়ে গেলেন (কিছু সময় আরাম করলেন)। তারপর তিনি সজাগ হলেন। তারপর আকাশের দিকে তাকালেন ও এ আয়াত,

“রব্বানা- মা- খালাকতা হা-যা- বা-ত্বিলান..... ইন্নাকা লা- তুখলিফুল মি’আ-দ’’-

(সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯১-১৯৪) পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন।

তারপর তিনি বিছানার দিকে গেলেন। মিসওয়াক বের করলেন। এরপর তাঁর নিকট রাখা পানির পাত্র হতে পানি বের করলেন। মিসওয়াক করলেন। উযূ করলেন। সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। সালাত শেষ হওয়ার পর আমি মনে মনে বললাম, যত সময় তিনি ঘুমিয়েছেন তত সময় তিনি সালাত আদায় করেছেন। তারপর তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। শেষে আমি মনে মনে বললাম, যত সময় তিনি সালাত আদায় করেছেন তত সময় তিনি ঘুমিয়েছিলেন। এরপর তিনি সজাগ হলেন। আবার ওসব কাজ করলেন যা পূর্বে করেছিলেন এবং তাই বললেন যা পূর্বে বলেছিলেন (অর্থাৎ মিসওয়াক, উল্লিখিত আয়াত ইত্যাদি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) পূর্ব পর্যন্ত এভাবে তিনবার করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৯, সুনান আননাসায়ী ১৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

তাহাজ্জুদ সালাতের রাকাত সংখ্যা

প্রথমে দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত সালাত আদায় করা

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সালাত  আদায়ের জন্যে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর সালাতের আরম্ভ করতেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দিয়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৬৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৬, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রাত্রে সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠে, সে যেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দ্বারা (তার সালাত) আরম্ভ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৭, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদের সালাত ১১ রাকাত

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাতের পর ফজর পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্’আত সালাত  আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্’আত সালাতের পর সালাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্’আত দ্বারা বিতর আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্’আতে এত লম্বা সিজদা্ করতেন যে, একজন লোক সিজদা্ হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়াযযিনের ফজরের আযানের আওয়াজ শেষে ফজরের সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্’আত হালকা সালাত আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামতের অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৯৪, ৬১৯, ৬২৬, ৯৯৪, ১১৩৯, ১১৬৪-৬৫, ৬৩১০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৬, সুনান আততিরমিযী ৪৪০, ৪৪৩, ৪৪৯; সুনান আননাসায়ী ৬৮৫, ৯৪৬, ১৬৯৬, ১৭২৬, ১৭৪৯, ১৭৫৬-৫৮, ১৭৬২, ১৭৮০-৮১; সুনান আবূ দাঊদ ১২৫১, ১২৫৪-৫৫, ১২৬২, ১৩৩৪-৩৬, ১৩৩৮-৪০, ১৩৪২, ১৩৫৯-৬০; আহমাদ ২৩৭৯৭, ২৩৫৩৭, ২৩৫৫০, ২৩৫৫৩, ২৩৫৯৬, ২৩৬৪৭, ২৩৭১৬, ২৩৭৩৭, ২৩৭৪৮, ২৩৭৫০, ২৩৮১৯, ২৩৯২৫, ২৩৯৪০, ২৩৯৯৬, ২৪০১৬, ২৪০৫৬, ২৪১৯৪, ২৪২১১, ২৪৩৩৯, ২৪৩৭৯, ২৪৪৪৭, ২৪৪৮৬, ২৪৫৮১, ২৪৬২৩, ২৪৭৮৭, ২৪৭৯১, ২৪৮১৬, ২৪৯৫৮, ২৫০০২, ২৫০৩১, ২৫২৭৭, ২৫২৮৫, ২৫৩৭২, ২৫৩৯৮, ২৫৪৫২, ২৫৪৫৬, ২৫৪৯১, ২৫৫৭৫, ২৫৫৮৭, ২৫৬৩৬, ২৫৮৩৫, ২৫৮৫৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৬৪-৬৬, ২৬৮; দারিমী ১৪৩৯, ১৪৪৬-৪৭, ১৪৭৩-৭৫, ১৫৮১, ১৫৮৫; সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৫৮-৬০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৮৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদের সালাত সাত, নয় ও এগারো রাকাত

(ক) মাসরূক্ব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রের সালাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত ব্যতীত কোন কোন সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাত রাক্’আত, কোন কোন সময় নয় রাক্’আত, কোন কোন সময় এগার রাক্’আত আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুইলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে জাগলেন। মিসওয়াক করলেন ও উযূ করলেন। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন, ইন্না ফী খালকিস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি..... সূরার শেষ পর্যন্ত। এরপর তিনি দাঁড়ালেন, অতঃপর দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। সালাতে তিনি বেশ লম্বা ক্বিয়াম (কিয়াম), রুকূ’ ও সিজদা্  করলেন। সালাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন ও নাক ডাকতে শুরু করলেন। এ রকম তিনি তিনবার করলেন। তিনবারে তিনি ছয় রাক্’আত সালাত  আদায় করলেন। প্রত্যেকবার তিনি মিসওয়াক করলেন, উযূ করলেন। ঐ আয়াতগুলোও পঠ করলেন। সর্বশেষ বিতরের তিন রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৬,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৫৯, ইসলামীক সেন্টার ১৬৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নয় রাকআত সালাত  আদায় করতেন। (সুনান ইবনে মাজাহ ১৩৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৯, ৬২৬, ৯৯৪, ১১৩৯, ১১৬৪-৬৫, ৬৩১০; সহিহ মুসলিম ৭২৪, ৭৩১-২, ৭৩১-২, ৭৩৮; সুনান আততিরমিযী ৪৪০, ৪৪৩, ৪৪৯; সুনান আননাসায়ী ৬৮৫, ৯৪৬, ১৬৯৬, ১৭২৬, ১৭৪৯, ১৭৫৬-৫৮, ১৭৬২, ১৭৮০-৮১; আবূ দাঊদ ১২৫১, ১২৫৪-৫৫, ১২৬২, ১৩৩৪-৩৬, ১৩৩৮-৪০, ১৩৪২, ১৩৫৯-৬০; আহমাদ ২৩৭৯৭, ২৩৫৩৭, ২৩৫৫০, ২৩৫৫৩, ২৩৫৯৬, ২৩৬৪৭, ২৩৭১৬, ২৩৭৩৭, ২৩৭৪৮, ২৩৭৫০, ২৩৮১৯, ২৩৯২৫, ২৩৯৪০, ২৩৯৯৬, ২৪০১৬, ২৪০৫৬, ২৪১৯৪, ২৪২১১, ২৪৩৩৯, ২৪৩৭৯, ২৪৪৪৭, ২৪৪৮৬, ২৪৫৮১, ২৪৬২৩, ২৪৭৮৭, ২৪৭৯১, ২৪৮১৬, ২৪৯৫৮, ২৫০০২, ২৫০৩১, ২৫২৭৭, ২৫২৮৫, ২৫৩৭২, ২৫৩৯৮, ২৫৪৫২, ২৫৪৫৬, ২৫৪৯১, ২৫৫৭৫, ২৫৫৮৭, ২৫৬৩৬, ২৫৮৩৫, ২৫৮৫৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৬৪-৬৬, ২৬৮; দারিমী ১৪৩৯, ১৪৪৬-৪৭, ১৪৭৩-৭৫, ১৫৮১, ১৫৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদের সালাত ১৩ রাকাত

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর বাড়ীতে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাত্রে তাঁর বাড়ীতে ছিলেন। ’ইশার পর কিছু সময় তিনি তাঁর স্ত্রী মায়মূনার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর শুয়ে পড়েন। রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি সজাগ হলেন। আকাশের দিকে লক্ষ করে এ আয়াত পাঠ করলেনঃإِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّموتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَأَۤيَاتٍ لِّأُوْلِي الْأَلْبَابِ অর্থাৎ ’’আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করা, রাত ও দিনের ভিন্নতার (কখনো অন্ধকার কখনো আলোকিত, কখনো গরম কখনো শীত, কখনো বড়ো কখনো ছোট) মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শন’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৯০)। তিনি সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। তারপর উঠে তিনি পাত্রের কাছে গেলেন। এর বাঁধন খুললেন। পাত্রে পানি ঢাললেন। তারপর দু’ উযূর মাঝে মধ্যম ধরনের ভাল উযূ করলেন।

হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, (মধ্যম ধরনের উযূর অর্থ) খুব অল্প পানি খরচ করলেন। তবে শরীরে দরকারী পানি পৌঁছিয়েছেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। (এসব দেখে) আমি নিজেও উঠলাম। অতঃপর উযূ করে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কান ধরে তাঁর বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। তার তের রাক্’আত সালাত আদায় করা শেষ হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তাঁর নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে সালাত প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি সালাত আদায় করালেন। কোন উযূ করলেন না। তার দু’আর মাঝে ছিল,

“আল্ল-হুম্মাজ্’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াফী সাম্’ঈ নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া’আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহতী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্’আল্ লী নূরা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে ভরে দাও। আমার জন্যে কেবল নূরই নূর সৃষ্টি করে দাও।)।

কোন কোন বর্ণনাকারী এ শব্দগুলোও নকল করেছেন,

“ওয়াফী লিসা-নী নূরা-’’

(অর্থাৎ- আমার জিহবায় নূর পয়দা করে দাও)। (অন্য বর্ণনায় এ শব্দগুলোও) উল্লেখ করেছেন,

“ওয়া ’আসাবী ওয়া লাহমী ওয়াদামী ওয়া শা’রী ওয়া বাশারী’’

(অর্থাৎ- আমার শিরা উপশিরায়, আমার মাংসে, আমার রক্তে, আমার পশমে, আমার চামড়ায় নূর তৈরি করে দাও)। (বুখারী, মুসলিম)।

বুখারী ও মুসলিমেরই আর এক বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে,

“ওয়াজ্’আল ফী নাফসী নূরাওঁ ওয়া আ’যিম লী নূরা-’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার মনের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও এবং আমার মাঝে নূর বাড়িয়ে দাও)। মুসলিমের এক বিবরণে আছে,

“আল্ল-হুম্মা আ’ত্বিনী নূরা-’’

 (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দান করো)। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৫, বুখারী ৬৩১৬, মুসলিম ৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে তের রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। এর মাঝে বিতর ও ফাজ্রের (ফজরের) সুন্নাত দু’ রাক্’আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪০, ৬১৯, ৬২৬, ৯৯৪, ১১৩৯, ১১৬৪-৬৫, ৬৩১০; সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৫৯, ১৩৫৮, ১৩৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৭, ৭২৪, ৭৩১, ৭৩২, ৭৩৮,  ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৯০, ইসলামীক সেন্টার ১৫৯৭, সুনান আততিরমিযী ৪৪০, ৪৪৩, ৪৪৯; সুনান আননাসায়ী ৬৮৫, ৯৪৬, ১৬৯৬, ১৭২৬, ১৭৪৯, ১৭৫৬-৫৮, ১৭৬২, ১৭৮০-৮১; সুনান আবূ দাঊদ ১২৫১, ১২৫৪-৫৫, ১২৬২, ১৩৩৪-৩৬, ১৩৩৮-৪০, ১৩৪২, ১৩৫৯-৬০; আহমাদ ২৩৭৯৭, ২৩৫৩৭, ২৩৫৫০, ২৩৫৫৩, ২৩৫৯৬, ২৩৬৪৭, ২৩৭১৬, ২৩৭৩৭, ২৩৭৪৮, ২৩৭৫০, ২৩৮১৯, ২৩৯২৫, ২৩৯৪০, ২৩৯৯৬, ২৪০১৬, ২৪০৫৬, ২৪১৯৪, ২৪২১১, ২৪৩৩৯, ২৪৩৭৯, ২৪৪৪৭, ২৪৪৮৬, ২৪৫৮১, ২৪৬২৩, ২৪৭৮৭, ২৪৭৯১, ২৪৮১৬, ২৪৯৫৮, ২৫০০২, ২৫০৩১, ২৫২৭৭, ২৫২৮৫, ২৫৩৭২, ২৫৩৯৮, ২৫৪৫২, ২৫৪৫৬, ২৫৪৯১, ২৫৫৭৫, ২৫৫৮৭, ২৫৬৩৬, ২৫৮৩৫, ২৫৮৫৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৬৪-৬৬, ২৬৮; দারিমী ১৪৩৯, ১৪৪৬-৪৭, ১৪৭৩-৭৫, ১৫৮১, ১৫৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১৩ রাকাত সালাতে প্রথমে রাকাত দীর্ঘায়িত করা ও পরে ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা

(গ) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার ইচ্ছা করলাম, আজ রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত দেখব। প্রথমে তিনি হালকা দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর দীর্ঘ দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ করে। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক্’আত থেকে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্’আত আদায় করলেন যা পূর্বের আদায় করা দু’ রাক্’আত হতে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর তিনি আরো দু’ রাক্’আত যা আগে আদায় করা দু’ রাক্’আত হতে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু’ রাক্’আত আদায় করলেন যা আগের আদায় করা দু’ রাক্’আত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর তিনি বিতর আদায় করলেন। এ মোট তের রাক্’আত (সালাত) তিনি আদায় করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৪, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

১৩ রাকাত সালাত এর বিশ্লেষণ

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাত্রিকালে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ১৩ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৩৮, সুনান আততিরমিযী ৪৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু আববাস (রাঃ)-এর হাদীসে ১১ রাক‘আতের চেয়ে দু’রাক‘আত বৃদ্ধি পাওয়া যায়। এ বর্ধিত ২ রাক‘আত এর ব্যাখ্যা বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। নাসাঈ গ্রন্থে ইবনু আববাসের বর্ণিত হাদীসে- ১৩ রাক‘আতের বর্ণনা এসেছে। ৮ রাক‘আত রাত্রের সালাত, তিন রাক‘আত বিত্র ও দু’রাক‘আত ফজরের পূর্বের সুন্নাত। (নাসাঈ ৩/২৩৭, ফাতহুল বারী ২/৫৬২)।

ফাজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ধরে আয়িশাহ (রাযি.)-ও ১৩ রাক‘আতের কথা বর্ণনা করেছেন। দেখুন বুখারী হাদীস নং ১১৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৮, ফাতহুল বারী ২/৫৬২, বুখারীতে আয়িশাহ (রাযি.)-এর কোন কোন বর্ণনায় ১১ ও দু’রাক‘আতকে পৃথক করে দেখানো হয়েছে; হাদীস নং ৯৯৪, ১১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে সমস্ত বর্ণনায় ১৩ রাক‘আতের বিস্তারিত বর্ণনা আসেনি, সে সমস্ত বর্ণনায় ফজরের ২ ক‘আত কিংবা ইশার ২ রাক‘আত সুন্নাত উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী ২/৫৬২ পৃঃ)।

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) রাত্রের সালাত উদ্বোধন করতেন হালকা করে দু’রাক‘আত সালাত আদায়ের মাধ্যমে। হতে পারে এই ২ রাক‘আত নিয়ে ১৩ রাক‘আত। কিন্তু এই ২ রাক‘আত সালাত বিভিন্ন হাদীসের মাধ্যমে ইশার সুন্নাত বলেই প্রতীয়মান হয়।

রুকু ও সিজদাহ দীর্ঘ করা

হুযায়ফাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সালাত  আদায় করতে দেখেছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার

“আল্ল-হু আকবার’’

 বলে এ কথা বলেছেন :

“যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ’আযামাতি’। তারপর তিনি

“সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা”

পড়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়তেন। এরপর রুকূ’ করতেন। তাঁর রুকূ’ প্রায় ক্বিয়ামের মতো (দীর্ঘ) ছিল। রুকূ’তে তিনি

“সুবহা-না রব্বিআল ’আযীম”

বলেছেন। তারপর রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকূ’ সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়েছেন। (এ সময়) তিনি বলতেন,

“লিরব্বিয়াল হামদু”

অর্থাৎ সব প্রশংসা আমার রবের জন্যে। তারপর তিনি সিজদা্  করেছেন। তাঁর সাজদার সময়ও তাঁর ’ক্বাওমার’ বরাবর ছিল। সাজদায় তিনি বলতেন,

“সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা” ।

তারপর তিনি সিজদা্ হতে মাথা উঠালেন। তিনি উভয় সাজদার মাঝে সাজদার পরিমাণ সময় বসতেন। তিনি বলতেন,

“রব্বিগফির লী, ’রব্বিগফির লী”

হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করো। হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো। এভাবে তিনি চার রাক্’আত (সালাত) আদায় করলেন। (এ চার রাক্’আত সালাতে) সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্, আ-লি ’ইমরান, আন্ নিসা, আল মায়িদাহ্ অথবা আল আন্’আম পড়তেন। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী শু’বার সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, হাদীসে শেষ সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ উল্লেখ করা হয়েছে না সূরাহ্ আল আন্’আম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০০, সুনান আবূ দাঊদ ৮৭৪, সুনান আননাসায়ী ১০৬৯, ১১৪৫, আহমাদ ২৩৩৭৫, সুনান আস্ সুগরা লিল বায়হাক্বী ৪১৫, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিরাত উচ্চ স্বরে নাকি নীরবে

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) বিভিন্ন রকমের হতো। কোন সময় তিনি শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন, আবার কোন সময় নিচু স্বরে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০২, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বীয় বাড়ীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন আওয়াজে (সালাতে) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন যে, কামরার লোকেরা তা শুনতে পেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২৭, শামায়িল ৩১৪, আহমাদ ২৪৪৬, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৬৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাত্রে বাইরে এসে আবূ বকরকে সালাতরত অবস্থায় পেলেন। তিনি নীচু শব্দে কুরআন পাঠ করছিলেন। এরপর তিনি ’উমারের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি উচ্চ শব্দ করে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। আবূ ক্বাতাদাহ্ বলেন, (সকালে) যখন আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) দু’জনে রসূলের খিদমাতে একত্র হলেন; তিনি বললেন, আবূ বকর! আজ রাত্রে আমি তোমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তুমি নীচুস্বরে কুরআন কারীম পড়ছিলে। আবূ বকর আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাঁর নিকট মুনাজাত করছিলাম, তাঁকেই জানাচ্ছিলাম। তারপর তিনি ’উমার (রাঃ) কে বললেন, হে ’উমার! (আজ রাত্রে) আমি তোমার নিকট দিয়েও যাচ্ছিলাম। তুমি সালাতে উঁচু শব্দে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলে। ’উমার (রাঃ) আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি উঁচু শব্দে সালাত আদায় করে ঘুমে থাকা লোকগুলোকে সজাগ করছিলাম আর শায়ত্বন (শয়তান)-কে তাড়াচ্ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’জনের কথা শুনে আবূ বকরকে) বললেন, আবূ বকর! তুমি তোমার শব্দকে আরো একটু উঁচু করবে। (’উমার (রাঃ) কে বললেন) ’উমার! তুমি তোমার আওয়াজকে আরো একটু নীচু করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) রবী’আহ্ ইবনু কা’ব আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কামরার নিকট রাত্র কাটিয়েছি। আমি তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেতাম। তিনি রাতে তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে সজাগ হলে বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত “সুবহা-না রব্বিল ’আ-লামীন’’ পাঠ করতেন। তারপর আবার লম্বা সময় “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী’’ পড়তেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৮, সুনান আন্নাসায়ী ১৬১৮, আহমাদ ১৬৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত শেষে কিছুক্ষণের জন্যে ডান কাতে শুয়ে থাকা

রাসুল সাঃ তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের পর বিতর এক রাকাত আদায় করতেন এরপর তিনি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করার পর ডান পাঁজরের উপর তথা ডান কাত হয়ে কিছুক্ষণের জন্যে শুয়ে থাকতেন।

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাক্’আত সুন্নাত সালাত আদায় করে নিজের ডান পাঁজরের উপর শুয়ে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৮৭, ইসলামীক সেন্টার ১৫৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকেই এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নাত সালাত  (ঘরে) আদায়ের পর যদি আমি সজাগ হয়ে উঠতাম তাহলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আর আমি ঘুমে থাকলে তিনি শয়ন করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬০২, ইসলামীক সেন্টার ১৬০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ফাজ্রের (ফজরের) দু’ রাক্’আত (সুন্নাত) সালাত  আদায় করবে। সে যেন (জামা’আত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত) ডান পাশে শুয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৬, সুনান আত্ তিরমিযী ৪২০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১১২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৪৬৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বার্ধক্যজনিত বসে নফল সালাত আদায় করা

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছলে বার্ধক্যের কারণে তিনি ভারী হয়ে গেলেন। তখন তিনি অনেক সময়ে নফল সালাতগুলো বসে বসে আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৭৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সংক্ষিপ্ত নিয়ম

(১) তাহাজ্জুদ শুরু করার পূর্বে দু’রাক‘আত সংক্ষিপ্তভাবে পড়ে নেয়া।

হাদিসঃ

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাত্রে (তাহাজ্জুদের) সালাত  আদায়ের জন্যে দাঁড়াতেন তখন তিনি তাঁর সালাতের আরম্ভ করতেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দিয়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৬৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৬, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন রাত্রে সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠে, সে যেন দু’ রাক্’আত সংক্ষিপ্ত সালাত দ্বারা (তার সালাত) আরম্ভ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৯৪, ১১৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৭৭, ইসলামীক সেন্টার ১৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) অতঃপর দুই দুই রাক‘আত করে ৮ রাক‘আত পড়বে এবং শেষে একটানা তিন রাক‘আত বিতর পড়বে, মাঝে বৈঠক করবে না।

হাদিসঃ

আবূ সালামাহ্ ইবনু আবদুর রাহমান (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন? তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অথবা দুই দুই রাক‘আত করে দশ রাক‘আত পড়বে। শেষে এক রাক‘আত বিতর পড়বে।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ইশার সালাতের পর ফজর পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্’আত সালাত  আদায় করতেন। প্রতি দু’ রাক্’আত সালাতের পর সালাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্’আত দ্বারা বিতর আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্’আতে এত লম্বা সিজদা্ করতেন যে, একজন লোক সিজদা্ হতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়াযযিনের ফজরের আযানের আওয়াজ শেষে ফজরের সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু’ রাক্’আত হালকা সালাত আদায় করতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়াযযিন ইক্বামতের অনুমতির জন্যে তাঁর কাছে এলে তিনি মসজিদের উদ্দেশে বেরিয়ে যেতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৮৮, ইসলামীক সেন্টার ১৫৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (ছাঃ) নিয়মিত উক্ত পদ্ধতিতেই ছালাত আদায় করতেন। তবে কখনো কখনো বিতর ছালাতের সংখ্যা কম বেশী করে রাতের ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা কম বেশী করতেন। কারণ রাতের পুরো ছালাতই বিতর। দুই রাক‘আত করে পড়ে শেষে এক রাক‘আত পড়লেই সব বিতর হয়ে যায়।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ রাত্রের (নফল) সালাত দু’ রাক্’আত দু’ রাক্’আত করে (আদায় করতে হয়)। কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকাবোধ হলে সে যেন (দু’ রাক্’আতের) সাথে সাথে আরো এক রাক্’আত আদায় করে নেয়। তাহলে এ রাক্’আত পূর্বে আদায় করা সালাতকে বেজোড় করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৯,  ইফাবা ১৬১৮-১৬২১); বঙ্গানুবাদ মিশকাত ১১৮৫, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩০ এবং বঙ্গানুবাদ মিশকাত ১১৮৮, ৩/১৩১ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আর তিনি ১৩ রাক‘আতের বেশী পড়েছেন মর্মে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাক্’আত বিতরের সালাত আদায় করতেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চার ও তিন (অর্থাৎ সাত), আবার কখনো ছয় ও তিন (অর্থাৎ নয়), কখনো আট ও তিন (অর্থাৎ এগার) আবার কখনো দশ ও তিন (অর্থাৎ তের) রাক্’আত বিতরের সালাত  আদায় করতেন। তিনি সাত-এর কম ও তের-এর বেশী বিতরের সালাত আদায় করতেন না। (সুনানে আবূ দাঊদ ১৩৬২, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮০৪, বঙ্গানুবাদ মিশকাত ১১৯৫, ৩/১৩৫ পৃঃ, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; উল্লেখ্য যে, ‘১১ রাক‘আতের বেশী পড়’ মর্মে হাকেমে যে অংশটুকু এসেছে তার সনদ যঈফ ও মুনকার। হাকেম হা/১১৩৭; ক্বিয়ামে রামাযান পৃঃ ১৭; ছালাতুত তারাবীহ, পৃঃ ৯৯ ও ১১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) যদি কেউ প্রথম রাতে এশার পরে বিতর পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তবে শেষ রাতে শুধু তাহাজ্জুদ পড়বে। তখন আর বিতর পড়তে হবে না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতর পড়তে হয় না।

হাদিসঃ

ক্বায়িস ইবনু ত্বালক্ব (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রমাযান মাসে ত্বালক্ব ইবনু ’আলী (রাঃ) আমাদের সাথে দেখা করতে এসে এখানে সন্ধ্যা অতিবাহিত করেন এবং এখানেই ইফতার করেন। অতঃপর রাতে আমাদেরকে নিয়ে তারাবীহ ও বিতর সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি নিজেদের মসজিদের গিয়ে তার সাথীদেরকে নিয়েও সালাত আদায় করেন। অতঃপর বিতর সালাতের জন্য এক ব্যক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে দিয়ে বলেন, তোমার সাথীদেরকে বিতর পড়াও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ একই রাতে দুইবার বিতর হয় না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ১৪৩৯, সুনান আততিরমিযী ৪৭০, সুনা আননাসায়ী ১৬৭৮, আহমাদ (৪/২৩), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) বিতর ক্বাযা হয়ে গেলে সকালে অথবা যখন স্মরণ বা সুযোগ হবে, তখন পড়ে নেয়া যাবে’।

হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক বিতরের সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ল অথবা আদায় করতে ভুলে গেল সে যেন যখনই স্মরণ হয় বা ঘুম হতে সজাগ হয়ে আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৭৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৩১, সুনান আতআত্ তিরমিযী ৪৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৮৮, আহমাদ ১১২৬৪, ইওয়াউল গালীল ৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৫) যদি কেউ আগ রাতে বিতরের পর দু’রাকআত নফল ছালাত আদায় করে এবং শেষরাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে সক্ষম না হয়, তাহলে উক্ত দু’রাক‘আত ছালাত তার জন্য যথেষ্ট হবে’।

হাদিসঃ

সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে রাত্রে জেগে উঠা কষ্টকর ও কঠিন কাজ। তাই তোমাদের যে লোক রাতের শেষাংশে জাগরিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়, সে ঘুমাবার পূর্বে ’ইশার সালাতের পর বিতর আদায় করতে চাইলে যেন দু’ রাক্’আত আদায় করে নেয়। যদি তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে রাত্রে উঠে যায় তবে তো ভাল, উঠতে না পারলে ঐ দু’ রাক্’আত যথেষ্ট। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৮৬, দারিমী ১৬৩৫, সিলসিলা ছহীহাহ ১৯৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) রাতের নফল ছালাত নিয়মিত আদায় করা উচিৎ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ঐ ব্যক্তির মত হয়ো না, যে রাতের নফল ছালাতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু পরে ছেড়ে দিয়েছে’।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে ’আবদুল্লাহ! তুমি অমুক লোকের মতো হয়ো না। সে রাত্রে (সজাগ হয়ে) তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করত, পরে তা ছেড়ে দিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিয়মিত রাতের ছালাত আদায়কারী ব্যক্তি বিতর পড়ে শুয়ে গেলে এবং ঘুম বা অন্য কোন কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে না পারলে দিনের বেলায় দুপুরের আগে তা পড়ে নিতে পারবে।

হাদিসঃ

সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ’খুলুক’ (স্বভাব-চরিত্র) ব্যাপারে কিছু বলুন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? আমি বললাম, হ্যাঁ পড়ি। এবার তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নৈতিকতা ছিল আল-কুরআন। আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর ব্যাপারে বলুন। তিনি বললেন, (রাতের বিতর সালাতের জন্যে) আমি পূর্বে থেকেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর মিসওয়াক ও উযূর পানির ব্যবস্থা করে রাখতাম।

আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁকে ঘুম হতে সজাগ করতে চাইতেন, উঠাতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমে মিসওয়াক করতেন, তারপর উযূ করতেন ও নয় রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। অষ্টম রাক্’আত ব্যতীত কোন রাক্’আতে তিনি বসতেন না। আট রাক্’আত পড়া শেষ হলে (’তাশাহহুদে’) বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতেন। তারপর সালাম ফিরানো ব্যতীত নবম রাক্’আতের জন্যে দাঁড়িয়ে যেতেন। নবম রাক্’আত শেষ করে তাশাহুদ পাঠ করার জন্যে বসতেন। আল্লাহর যিকর করতেন। তাঁর প্রশংসা করতেন। তাঁর নিকট দু’আ করতেন (অর্থাৎ তাশাহুদ পড়তেন)। এরপর আমাদেরকে শুনিয়ে সশব্দে সালাম ফিরাতেন।

তারপর বসে বসে দু’ রাক্’আত আদায় করতেন। হে বৎস! এ মোট এগার রাক্’আত হলো। এরপর যখন তিনি বার্ধক্যে পৌঁছে গেলেন এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেল, তখন বিতরসহ সাত রাক্’আত সালাত আদায় করতেন। আর পূর্বের মতোই দু’ রাক্’আত বসে বসে আদায় করতেন। প্রিয় বৎস! এ মোট নয় রাক্’আত হলো। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সালাত  আদায় করলে, তা নিয়মিত আদায় করতে পছন্দ করতেন। কোন দিন যদি ঘুম বেশী হয়ে যেত অথবা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিত, যাতে তাঁর জন্যে রাত্রে দাঁড়ানো সম্ভব হত না, তখন তিনি দুপুরে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করে নিতেন। আমার জানা মতে, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এক রাতে সম্পূর্ণ কুরআন পড়েননি। অথবা ভোর পর্যন্ত সারা রাত্র ধরে সালাত আদায় করেননি এবং রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে গোটা মাস সওম পালন করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৬, মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/২৬৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬১৪, ইসলামীক সেন্টার ১৬১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) তাহাজ্জুদ ছালাতে ক্বিরাআত কখনো সশব্দে কখনো নিঃশব্দে পড়া যায়।

হাদিসঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাত্রের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) বিভিন্ন রকমের হতো। কোন সময় তিনি শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন, আবার কোন সময় নিচু স্বরে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০২, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বীয় বাড়ীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন আওয়াজে (সালাতে) ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন যে, কামরার লোকেরা তা শুনতে পেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২০৩, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২৭, শামায়িল ৩১৪, আহমাদ ২৪৪৬, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৬৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বিতর সালাতে সালাম ফিরানোর পর দোয়া

(ক) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতের সালাম ফিরাবার পর বলতেন,

“সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’

 অর্থাৎ ’পাক-পবিত্র বাদশাহ খুবই পবিত্র’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৭৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৩০, সুনান আননাসায়ী ১৬৯৯, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ)  নাসায়ীর একটি বর্ণনা ’আবদুর রহমান ইবনু আবযা তার পিতা হতে নকল করেছেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাম ফিরাতেন, তিনবার বলতেন ’’সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’, তৃতীয়বার উচ্চস্বরে বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৭৫, সুনান আননাসায়ী ১৭৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিতরের সালাত  শেষে তাশাহুদ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে এই দু’আ পাঠ করবেন

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিতরের সালাত  শেষে এ দু’আ পড়তেনঃ

“আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিকা ওয়া বিমু’আ-ফা-তিকা মিন ’উকূবাতিকা ওয়া আ’ঊযু বিকা মিনকা, লা- উহসী সানা-য়ান ’আলায়কা, আন্তা কামা- আসনায়তা ’আলা- নাফসিকা’’

(অর্থাৎ ’হে আল্লাহ! আমি পানাহ চাই তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার গজব থেকে, তোমার নিরাপত্তার মাধ্যমে তোমার ’আযাব থেকে। আমি পানাহ চাই তোমার নিকট তোমার [অসন্তোষ] থেকে। তোমার প্রশংসা বর্ণনা করে আমি শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি তোমার বিবরণ দিয়েছ।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৭৬, সুনানআবূ দাঊদ ১৪২৭, সুনান আতআত্ তিরমিযী ৩৫৬৬, সুনান আননাসায়ী ১৭৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৭৯, আহমাদ ৭৫১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৫০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪৩৭, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত ও গুরুত্ব

(১) ধনসম্পদ অবতরণ করা হয়ঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়িয়ে গিয়ে এ কথা বলতে বলতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন, ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ আজ রাত্রে কত ধন-সম্পদ অবতরণ করা হয়েছে। আর কত ফিতনাহ্ অবতরণ করা হয়েছে। হুজরাবাসিনীদেরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিবে কে? তিনি এর দ্বারা তাঁর স্ত্রীদেরকেই বুঝিয়েছেন। যেন তারা সালাত আদায় করে। কত মহিলা দুনিয়ায় কাপড় পরিধান করে আছে, কিন্তু আখিরাতে তারা উলঙ্গ থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) তাহাজ্জুদ সালাতের ওয়াক্ত দোয়া কবুলের সময়ঃ

(ক) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রাত্রে এমন একটা সময় অবশ্যই আছে, কোন মুসলিম যদি এ সময়টা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে তা অবশ্যই দান করেন। এ সময়টা প্রতি রাত্রেই আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৪০, ইসলামীক সেন্টার ১৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা’আলা শেষ রাত্রেই বান্দার বেশী নিকটতম হন। তাই সে সময় তোমরা আল্লাহর যিকরকারীদের মাঝে শামিল হওয়ার চেষ্টা করতে যদি পারো অবশ্যই করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৩৫৭৯, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬২, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৬৬৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ৫৪, সহীহ আল জামি ১১৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ)  আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ সময়ের দু’আ আল্লাহর নিকট বেশী কবূল হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাঝরাতের শেষ ভাগের দু’আ। আর ফরয সালাতের পরের দু’আ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩১,,আত্ তিরমিযী ৩৪৯৯, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৪৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) তাহাজ্জুদ নামাজিদেরকে আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছ বালাখানা প্রদান করবেনঃ

আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জান্নাতে এমনসব কক্ষ আছে যার বাইরের জিনিস ভেতর থেকে আর ভেতরের জিনিস বাইরে থেকে দেখা যায়। আর এ বালাখানা আল্লাহ তা’আলা ঐসব ব্যক্তির জন্যে তৈরি করে রেখেছেন, যারা অন্য ব্যক্তির সঙ্গে নরম কথা বলে। (গরীব-মিসকীনকে) খাবার দেয়। প্রায়ই (নফল) সওম পালন করে। রাত্রে এমন সময় (তাহাজ্জুদের) সালাত  আদায় করে যখন অনেক মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩২, ইবনু হিব্বান ৫০৯, ৬৪১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭০, শু‘আবুল ঈমান ২৮২৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬১৮, সহীহ আল জামি‘ ২১২৩, সুনান আততিরমিযী ২৫২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা হয়ঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলো এবং তাঁকে বলল, অমুক লোক রাত্রে সালাত আদায় করে কিন্তু ভোরে উঠে চুরি করে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খুব তাড়াতাড়ি তার সালাত তাকে এ ’আমল থেকে বাধা দিবে, তার যে ’আমলের কথা তুমি বলছ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৭, আহমাদ ৯৭৭৮, ইবনু হিব্বান ২৫৬০, শু‘আবুল ঈমান ২৯৯১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৪৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫)   তাহাজ্জুদের সালাত আদায়কারী স্বামী-স্ত্রীর নাম আল্লাহকে স্মরণকারী নর ও নারীদের দলের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হয়ঃ

 আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন লোক তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে উঠায় ও উভয়ে এক সাথে সালাত  আদায় করে অথবা তিনি এ কথা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকে দু’ রাক্’আত করে সালাত এক সাথে পড়ে, তাহলে এ দুই (স্বামী-স্ত্রী) লোকের নাম আল্লাহকে স্মরণকারী নর ও নারীদের দলের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৮, সুনানে আবূ দাঊদ ১৩০৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৩৩৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) সালাতে অধিক আয়াত পাঠ করার ফজিলতঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক দশটি আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে (রাতে) ক্বিয়াম (কিয়াম) করবে তাকে ’গাফিলীনের’ (অচেতনদের) মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যে লোক একশত আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে ক্বিয়াম (কিয়াম) করে তার নাম আনুগত্যশীলের মাঝে লিখা হবে। আর যে লোক এক হাজার আয়াত পাঠ করার মাধ্যমে ক্বিয়াম (কিয়াম) করবে তার নাম ’অধিক সাওয়াব পাওয়ার লোকদের’ মাঝে লিখা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত১২০১, সুনান আবূ দাঊদ ১৩৯৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪২, ১১৪৪, ইবনু হিব্বান ২৫২৭, সহীহাহ্ ৬৪২, সহীহ আত্ তারগীব ৬৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৩৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ)....আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কি চাও যে, যখন বাড়ী ফিরবে তখন বাড়ীতে গিয়ে তিনটি বড় বড় মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী দেখতে পাবে? আমরা বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা কেউ সালাতে তিনটি আয়াত পড়লে তা তার জন্য তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনীর চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৪২, ইসলামীক সেন্টার ১৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর রাযিয়াল্লাহু ’আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কয়দিনে কুরআন খতম করবো? তিনি বললেনঃ এক মাসে। তিনি বললেন, আমি এর চেয়ে অধিক শক্তি রাখি। আবূ মূসার বর্ণনায় রয়েছে অতঃপর আলোচনার মাধ্যমে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে অবশেষে বললেন, সাত দিনে খতম করবে। তিনি বললেন, আমি এর চেয়েও বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করে, সে কুরআনকে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৯০, তিরমিযী ২৯৪৯, ইবনু মাজাহ ১৩৪৭, নাসায়ী ৮০৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করা হয়ঃ

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে মুসলিম রাত্রে পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকর করে ঘুমিয়ে যায়, তারপর রাত্রে জেগে উঠে আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহ তাকে (দুনিয়া ও আখিরাতে) অবশ্যই কল্যাণ দান করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৫, সুনান আবূ দাঊদ ৫০৪২, সহীহ আত্ তারগীব ৫৯৮, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৫৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৮) শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়ঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন (রাতে) ঘুমিয়ে যায়, শায়ত্বন (শয়তান) তার মাথার পেছনের দিকে তিনটি গিরা লাগায়। প্রত্যেক গিরায় শায়ত্বন (শয়তান) তার মনে এ কথার উদ্রেক করে দেয় যে, এখনো অনেক রাত বাকী, কাজেই ঘুমিয়ে থাকো। সে যদি রাতে জেগে উঠে এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাহলে তার (গাফলতির) একটি গিরা খুলে যায়। তারপর সে যদি উযূ  করে, (গাফলতির) আর একটি গিরা খুলে যায়। যদি সে সালাত আরম্ভ করে তখন তার তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। বস্ত্ততঃ এ লোক পাক-পবিত্র হয়ে ভোরের মুখ দেখে, নতুবা অপবিত্র হয়ে ভোরের দিকে কলূষ অন্তর ও অলস মন নিয়ে উঠে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৭০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৮৯, ইসলামীক সেন্টার ১৬৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৯) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হওয়া যায়ঃ

মুগীরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাত্রে সালাত আদায় করতে পড়তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা ফুলে যেত। তাঁকে বলা হলো, আপনি কেন এত কষ্ট করছেন। অথচ আপনার পূর্বের ও পরের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে? (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, আমি কী কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী বান্দা হবো না? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৬৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৯২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০)  আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ দু’ লোকের ওপর আল্লাহ তা’আলা খুব সন্তুষ্ট হন। এক লোক, যে নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও প্রিয় স্ত্রী হতে আলাদা হয়ে তাহাজ্জুদ সালাতের জন্যে উঠে যায়। আল্লাহ এ সময় তার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাদের)-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকাও। সে আমার নিকট থাকা জিনিস পাওয়ার আগ্রহে (সাওয়াব, জান্নাত) এবং আমার নিকট থাকা জিনিসকে ভয় করে (জাহান্নাম ও ’আযাব) নিজের নরম তুলতুলে বিছানা ও স্ত্রীর মধুর নৈকট্য ত্যাগ করে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায়ের জন্যে উঠে পড়েছে। আর দ্বিতীয় হলো ঐ লোক, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছে। (কোন ওযর ছাড়া) যুদ্ধের ময়দান হতে সঙ্গী-সাথী নিয়ে ভেগে এসেছে। কিন্তু এভাবে ভেগে আসায় আল্লাহর শাস্তি ও ফেরত আসায় গুনাহর কথা মনে পড়ায় আবার যুদ্ধের মাঠে ফিরে আসছে। আল্লাহর শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছে। আল্লাহ তার মালায়িকাহ্-কে বলেন, আমার বান্দার দিকে লক্ষ্য করে দেখো, যারা আমার কাছে থাকা জিনিস (জান্নাত) পাওয়ার জন্যে ও আমার কাছে থাকা জিনিস (জাহান্নাম) থেকে বাঁচার জন্যে যুদ্ধের মাঠে ফিরে এসেছে, জীবনও দিয়ে দিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫১, ইবনু হিব্বান ২৫৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৩০, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৫২৪, সহীহাহ্ ৩৪৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১১) জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায়ঃ

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে মক্কা থেকে) মদীনায় এলেন তখন লোকেরা তাঁর নিকট যেতে লাগলো এবং বলাবলি হতে লাগলোঃ আল্লাহর রাসূল এসেছেন, আল্লাহর রাসূল এসেছেন,আল্লাহর রাসূল এসেছেন (তিনবার)। আমিও লোকজনের সাথে (তাঁকে) দেখতে গেলাম। আমি তাঁর মুখমন্ডল উত্তমরূপে দেখার পর বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা মিথ্যাবাদীর নয়। সর্বপ্রথম তাঁর মুখে আমার শোনা কথা এই যে, তিনি বললেনঃ হে লোকসকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন করো, আহার করাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন রাতের বেলা নামায পড়ো। শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৫১, সুনান আততিরমিযি ২৪৮৫, দারিমী ১৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(১২) রাতে নিয়মিত সালাত আদায়কারীগণ আল্লাহর মুহসিন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহর রহমত ও জান্নাতের হকদারঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন, রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাত আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকত। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)।

(১৩) আল্লাহ তাআলা নেককার ও রহমানের বান্দাদের প্রশংসার মধ্যে রাতে সালাত আদায়কারীদেরও প্রশংসা করেছেনঃ

তিনি বলেছেন: আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দন্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে। (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৪)।

(১৪) আল্লাহ তাআলা সাক্ষ্য দিয়েছেন রাতে সালাত আদায়কারীগণ পূর্ণ ইমানদারঃ

তিনি বলেছেন: আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেওয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহংকার করে না। তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।  (সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৫-১৬)।

(১৫) যারা রাতে সালাত আদায় করে ও যারা করে না তারা উভয় সমান নয়ঃ

আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে সে কি তার সমান যে এরূপ করে না বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান? বিবেকবান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।  (সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯)।

(১৬) রাতের সালাত গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনকারীঃ

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের জন্যে ক্বিয়ামুল লায়ল (তাহাজ্জুদের সালাত) আদায় করা আবশ্যক। কারণ এটা তোমাদের পূর্বের নেক লোকদের অভ্যাস। (তাছাড়াও এ) ক্বিয়ামুল লায়ল আল্লাহর নৈকট্য লাভ আর পাপের কাফফারাহ্। তোমাদেরকে পাপ থেকেও (এ ক্বিয়ামুল লায়ল) ফিরিয়ে রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৭, সুনান আতআত্ তিরমিযী ৩৫৪৯, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৩৫, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৩১৭, সহীহ আত্ তারগীব ৬২৪, সহীহ আল জামি‘ ৪০৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৭) ফরয সালাতের পর রাতের সালাত সর্বোত্তম সালাতঃ

কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের সওম এবং ফারয (ফরয) সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হচ্ছে রাতের সালাত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬২২, ইসলামীক সেন্টার ২৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৮) কিয়ামুল লাইল মুমিনদের সম্মানঃ

সাহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করলেন, অতঃপর বললেন:

হে মুহাম্মাদ যত দিন পার বেঁচে নেও, অতঃপর অবশ্যই তুমি মারা যাবে। যাকে ইচ্ছা মহব্বত কর, অবশ্যই তার থেকে তুমি বিচ্ছেদ হবে। যা ইচ্ছা আমল কর, তার প্রতিদান অবশ্যই তোমাকে দেওয়া হবে। অতঃপর বলেন, হে মুহাম্মাদ মুমিনের সম্মান হচ্ছে রাতের সালাত, আর তার ইজ্জত হচ্ছে মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতা। (হাকেম: (৪/৩২৫)।

(১৯)  রাতে সালাত আদায়কারী ঈর্ষার পাত্রঃ

কারণ এর সাওয়াব অধিক। এ সালাত দুনিয়া ও তার মধ্যে বিদ্যমান সবকিছু থেকে উত্তম।

(ক) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, ’আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি ব্যাপার ছাড়া ঈর্ষা পোষণ করা যায় না। একটি হ’ল- এমন ব্যক্তি যাকে মহান আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন। সে তদনুযায়ী রাত-দিন আমল করে। আরেক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’আলা অর্থ-সম্পদ দান করেছেন। সে রাত-দিন তা (আল্লাহর পথে) খরচে করে। (এ দু’ ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা পোষণ করা যায়। অর্থাৎ এদের সাথে আমল ও দানের ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুকূল ইলম ও মালের আকাঙ্ক্ষা করা যায়। তবে ঐ ব্যক্তির ইলম বিলুপ্ত হয়ে যাক কিংবা ঐ মালদারের মাল ধ্বংস হয়ে যাক- এরূপ কামনা করা যাবে না)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৭৯-১৭৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৭৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ক্বায়স বিন হাযিম (রহ.) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাযি.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবল দু’টি বিষয়ে ইর্ষা করা বৈধ; (১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; (২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তা’আলা প্রজ্ঞা দান করেছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩, ১৪০৯,৭১৪১,৭৩১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮১৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৬৬, ইসলামীক সেন্টার ১৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত আদায় করা

তাহাজ্জুদ শুরু করলে তা নিয়মিত পড়াই উত্তম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা রাতের ছালাত ছেড়ে দিয়ো না। কারণ রাসূল (ছাঃ) এ ছালাত ছাড়তেন না। যখন তিনি অসুস্থ বা দুর্বল বোধ করতেন তখন তা বসে আদায় করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩০৭, আহমাদ ২৬১৫৭, ৬/২৪৯, ইবনু খুযাইমাহ  ১১৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এছাড়া আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল তাই, যা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়।

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহর নিকট বান্দার সবচেয়ে প্রিয় ’আমল হলো সর্বদা তা করা যদি (পরিমাণে) কমও হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৬৪)।

(খ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ মর্মে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন ধরনের আমল সবচাইতে বেশী প্রিয়। জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ কম হলেও যে আমল স্থায়ী (সে আমল আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচাইতে বেশী প্রিয়)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৮, ইসলামীক সেন্টার ১৭০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু নুমায়র (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে এমন ’আমল সবচেয়ে প্রিয় যা কম হলেও স্থায়ীভাবে করা হয়। হাদীসের বর্ণনাকারী কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ বলেছেনঃ ’আয়িশাহ (রাযিঃ) কোন আমল শুরু করলে তা স্থায়ী ও অবশ্য করণীয় করে নিতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭০০, ইসলামীক সেন্টার, ১৭০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে ’আবদুল্লাহ! তুমি অমুক লোকের মতো হয়ো না। সে রাত্রে (সজাগ হয়ে) তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করত, পরে তা ছেড়ে দিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একখানা চাটাই ছিল। রাতের বেলা তিনি এ চাটাই দিয়ে একটি কামরা বানাতেন এবং তার মধ্যে সালাত আদায় করতেন। লোকজন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এ সালাত আদায় করত এবং দিনের বেলা বিছিয়ে নিত। এক রাতে লোকজন বেশী ভীড় করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকজনকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে লোকজন যতটা আমল তোমরা স্থায়ীভাবে করতে সক্ষম হবে ততটা আমল করবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ইবাদাতের সাওয়াব দিতে ক্লান্ত হবেন না। বরং তোমারই ইবাদাত বন্দেগী করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর কম হলেও আল্লাহর কাছে স্থায়ী ’আমল সর্বাপেক্ষা বেশী পছন্দনীয়। (বর্ণনাকার বলেন) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারী ও বংশধরগণ যে আমল করতেন তা স্থায়ীভাবে সর্বদাই করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৭১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮২,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৭০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৭, ইসলামীক সেন্টার ১৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন লোক রাতের বেলা তার নিয়মিত ’ইবাদাত অথবা তার আংশিক না করে শুয়ে গেল। তারপর সে ফাজ্র (ফজর) ও যুহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা করে নিলে যেন সে রাতেই তা পড়েছে বলে লিখে নেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬১৫, ইসলামীক সেন্টার ১৬১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিজের সাধ্য অনুযায়ী আমল করা

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয়ই দীন সহজ। কিন্তু যে লোক দীনকে কঠিন করে তুলে, দীন তাকে পরাভূত করে দেয়। অতএব দীনের ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন ও সাধ্য অনুযায়ী ’আমল কর (নিজকে ও অন্যকে) শুভ সংবাদ দাও, আর সকাল-সন্ধ্যা এবং রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত আদায়ে কোনো অযুহাত চলবে না

(ক)  ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাত  দাঁড়িয়ে আদায় করবে। যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে আদায় করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে (শুয়ে) কাত হয়ে আদায় করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)১১১৭, ১১১৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি কোন লোকের বসে বসে (নফল) সালাত আদায় করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি দাঁড়িয়ে পড়ত ভাল হতো। যে লোক বসে বসে নফল সালাত আদায় করবে সে দাঁড়িয়ে পড়া লোকের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। আর যে লোক শুয়ে সালাত আদায় করবে সে বসে পড়া ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১১৫, ১১১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ বসে (নফল) সালাত আদায় করলে, দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের অর্ধেক সাওয়াব পাওয়া যায়। তিনি [আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ)] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির হলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন। (সালাত শেষ হবার পর) আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর! কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তো বলা হয়েছে যে, আপনি ইরশাদ করেছেনঃ বসে সালাত আদায়কারীর সালাতে অর্ধেক সাওয়াব হয়। অথচ আপনি বসে বসে সালাত আদায় করছেন। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ তা-ই। কিন্তু আমি তো তোমাদের মতো নই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন.এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...