Search This Blog

Thursday, December 16, 2021

সালাতুল জুমআর সহিহ বিধান

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম

চতুর্থ খন্ড

মাসজিদ ও জুমআর সালাত

দ্বিতীয় অংশ

সালাতুল জুমআর সহিহ বিধান

আল জুমআঃ

জুমআ ইসলামের অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ঐতিহাসিকভাবে এ দিনের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। তবে এটি মুমিন মুসলমানদের জন্যে সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন হিসেবে নির্ধারিত।

এ দিনে মানুষ সালাত আদায়ের জন্য একত্রিত হয় বিধায় এর নামকরণ করা হয়েছে (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) বা একত্রিত হওয়ার দিন। আর জাহিলী যামানায় জুমু‘আর দিনকে বলা হতো ‘‘আরুবাহ্’’।

ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) জুমু‘আর দিনটা ইসলামী নাম, এটি জাহিলীতে ছিল না। নিশ্চয় জাহিলী যুগে এর নাম ছিল ‘‘আরবাহ্’’।

ইসলামী যুগে লোকজন এ দিনে সালাতে একত্রিত হওয়ার কারণে الْجُمُعَةِ (আল জুমু‘আহ্) বলে নামকরণ করা হয়। এরই সমর্থনে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ তাঁর তাফসীরে ইবনু সীরীন থেকে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা করেছেন সে ঘটনা, যাতে আস্ওয়াদ ইবনু যুরারার সাথে আনসারগণ একত্রিত হয়েছিল। আর তারা জুমু‘আর দিনকে ‘‘আরুবাহ্’’ বলত, অতঃপর তিনি তাদের সাথে সালাত আদায় করলেন এবং তাদের সাথে আলোচনা করলেন। অতঃপর তারা যখন এ দিনে জমায়েত হয়েছিল তখন এ দিনের নামকরণ করল ‘‘জুমুআর দিন’’

কেউ বলেছেন, এ দিনে সকল সৃষ্টিকুলকে একত্রিত করা হবে বিধায় এ দিনের নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু‘আহ্) রাখা হয়েছে। কেউ বলেছেন এ দিনে আদম (আঃ) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনে একত্রিত করা হয়েছে বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু‘আহ্) রাখা হয়েছে। যেমন- এ মতের সমর্থনে সালমান (রাঃ)বর্ণিত হাদীস আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ্ সংকলন করেছেন এবং আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত এর সমর্থনে বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা রয়েছে এবং হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) এ মতকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন।

কেউ বলেছেনঃ যেহেতু এ দিনে কা‘ব ইবনু লুয়াই তার ক্বওমের লোকদেরকে একত্রিত করত ও হারাম মাসগুলোর সম্মান রক্ষার নির্দেশ দিত বিধায় এর নাম الْجُمُعَةِ (আল জুমু‘আহ্) রাখা হয়েছে।

যা হোক ইবনুল ক্বইয়্যূম (রহঃ) তার ‘‘আল হুদা’’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১০২-১১৮ পৃষ্ঠায় জুমু‘আর দিনের ৩৩টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, যার কতক হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন।

এ দিনে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নির্দেশ পালনে ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্রিত হয় বলে দিনটিকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। কুরআনেও সে কথাটি ওঠে এসেছে-

‘হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পার।’ (আল জুমআ-৬২, আয়াত নং-৯)।

সালাতুল জুমআর সূচনাঃ

জুমআর সূচনা ও ফরজ হয় প্রথম হিজরি থেকে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র নগরী মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনার কুবায় গিয়ে অবস্থান করেন। সেখান থেকে জুমআর দিন মদিনায় যাওয়ার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছলে জোহরের সময় হয়ে যায়। তিনি সেখানেই জুমআ আদায় করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম জুমআ।

তবে হিজরতের পর জুমআর সালাত ফরজ হওয়ার আগে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের ১২তম বর্ষে মদিনায় নাকিউল খাজিমাতে ২ রাকাআত জুমআ পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে হজরত আসআদ বিন জুরারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতে শুক্রবার সে সালাত অনুষ্ঠিত হয়। আর সেটি ছিল নফল সালাত।

‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব হতে তার পিতা কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি অন্ধ হওয়ার পর ‘আবদুর রহমান হয়েছিলেন তার পরিচালক। তিনি (কা‘ব ইবনু মালিক) যখনই জুমু‘আহর দিন জুমু‘আহর সালাতের আযান শুনতেন তখন আস‘আদ ইবনু যুরারাহ (রাঃ) এর জন্য দু‘আ করতেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু কা‘ব বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি (জুমু‘আহর) আযান শুনলেই আস‘আদ ইবনু যুরারাহর জন্য রহমতের দু‘আ করেন কেন? তিনি বললেন, কারণ তিনিই সর্বপ্রথম ‘নাকীউল খাদামাত’ এর বনূ বায়াদার মালিকানাধীন হাররার ‘হাযম আন-নবীত’ নামক স্থানে আমাদেরকে নিয়ে জুমু‘আহর সালাত আদায় করেছেন। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, তখন আপনারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, চল্লিশজন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮২, ইবনু খুযাইমাহ ১৭২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জুমআর সালাত প্রত্যেক সাবালক জ্ঞান-সম্পন্ন পুরুষের জন্য জামাআত সহকারে ফরযঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা সত্বর আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (আল জুমআ-৬২, আয়াত নং-৯)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা মর্যাদার ব্যাপারে সবার পূর্বে। ব্যতিক্রম এই যে, আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তাদের সে দিন যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরজ করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ্ আমাদের হিদায়াত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইয়াহূদীদের (সম্মানীয় দিন হচ্ছে) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রোববার)।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬৩-১৮৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৪, ১৩৫৫,  আহমাদ ৭৩১৪, ৭৭০৭, দারিমী ১৫৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৪৫, সহীহ আল জামি ৬৭৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমুআহর সালাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ববর্তীদের পথভ্রষ্ট করেছেন। ইহূদীদের জন্য ছিল শনিবার এবং খ্রিস্টানদের জন্য রবিবার। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তারা হবে আমাদের পশ্চাঁদগামী। আমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে সর্বশেষ আগমনকারী, কিন্তু সৃষ্টিকুলের বিচার অনুষ্ঠানের দিক থেকে হবো সর্বপ্রথম। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৬, নাসায়ী ১৩৬৭-৬৮, আহমাদ ৭২৬৮, ৭৩৫১, ৭৬৪৯, ৮০৫৩, ৮২৯৮, ১০১৫২, তালীকুর রগীব ২৫০, সহীহ তারগীব ৭০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর আযান শুনতে পাবে, তার ওপর জুমু‘আর সালাত ফরয হয়ে যায়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭৫, ইরওয়া ৫৯৩, সহীহ আল জামি ৩১১২, দারাকুত্বনী ১৫৯০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৮১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমআয় উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।”

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোক সম্পর্কে বলেছেন, যারা জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয় না, তাদের সম্পর্কে আমি চিন্তা করে দেখেছি যে, আমি কাউকে আদেশ করব, সে আমার স্থানে লোকদের ইমামাত করবে। আর আমি গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেবো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৫৩৯, আহমাদ ৩৮১৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৫৩, সুনানুল বায়হাক্বী আল কুবরা ৪৯৩৫, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা যেন জুমু‘আর সালাত ছেড়ে না দেয়। (যদি ছেড়ে দেয়) আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরসমূহে মুহর মেরে দেবেন। অতঃপর সে ব্যক্তি অমনোযোগীদের মধ্যে গণ্য হবে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৯৪, দারিমী ১৫৭০, ১৬১১, নাসায়ী ১৩৭০, আহমাদ ২১৩৩, ২২৯০, ৩০৮৯, ৫৫৩৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৭১, শু‘আবুল ঈমান ১২৪৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৯৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৫, সহীহ আল জামি ৫৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবুল জা‘দ আয্ যুমায়রী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলা করে পরপর তিন জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দিলে মুহর লাগিয়ে দেবেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১১২৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫০০, নাসাযী ১৩৬৯, আহমাদ ১৫৪৯৮, ইবনূ খুযায়মাহ্ ১৮৫৮, ইবনু হিব্বান ২৭৮৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৭, সহীহ আল জামি ৬১৪৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৮২, দারিমী ১৬১২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৫৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত আবুল জা’দ যামরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমুআহ ত্যাগ করবে সে ব্যক্তি মুনাফিক।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭২৬নং)।

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী (সাঃ) জুমআর দিন খাড়া হয়ে খুতবা দানকালে বললেন, “সম্ভবত: এমনও লোক আছে, যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাযির হয় না।” দ্বিতীয় বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না।” অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে যে মদ্বীনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না তার হৃদয়ে আল্লাহ মোহ্‌র মেরে দেন।” (আবূ য়্যা’লা, সহিহ তারগিব ৭৩১নং)।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি পরপর ৩ টি জুমুআহ ত্যাগ করল, সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পিছনে ফেলে দিল।” (ঐ, সহিহ তারগিব ৭৩২নং)।

জুমআর দিনের মর্যাদা, ফযীলত ও বৈশিষ্ট্যঃ

(১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ও এ জুমু‘আর দিনেই ক্বায়িম হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৪, আত্ তিরমিযী ৪৮৮, আহমাদ ৯৪০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৫, সহীহ আল জামি ৩৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তূর (বর্তমান ফিলিস্তীনের সিনাই) পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে কা‘ব আহবার-এর সঙ্গে আমার দেখা হলো। আমি তার কাছে বসে গেলাম। তিনি আমাকে তাওরাতের কিছু কথা বলতে লাগলেন। আমি তার সামনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু হাদীস বর্ণনা করলাম। আমি যেসব হাদীস বর্ণনা করলাম তার একটি হলো, আমি তাঁকে বললাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। জুমু‘আর দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাঁকে জান্নাত থেকে জমিনে বের করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর তওবা্ কবূল করা হয়। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই ক্বিয়ামাত হবে।

আর জিন্ ইনসান ছাড়া এমন কোন চতুষ্পদ জন্তু নেই যারা এ জুমু‘আর দিনে সূর্য উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবার মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে। জুমু‘আর দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যে সময় যদি কোন মুসলিম সালাত  আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট কিছু চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন। কা‘ব আহবার এ কথা শুনে বললেন, এ রকম দিন বা সময় বছরে একবার আসে। আমি বললাম, বরং প্রতিটি জুমু‘আর দিনে আসে। তখন কা‘ব তাওরাত পাঠ করতে লাগলেন, এরপর বললেন, ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন।’’

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর কা‘ব-এর কাছে আমি যে হাদীসের উল্লেখ করেছি তা তাঁকেও বললাম। এরপর আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-কে এ কথাও বললাম যে, কা‘ব বলছেন, ‘এ দিন’ বছরে একবারই আসে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)বললেন, ‘‘কা‘ব ভুল কথা বলেছে।’’ তারপর আমি বললাম, কিন্তু কা‘ব এরপর তাওরাত পড়ে বলেছে যে, এ সময়টা প্রত্যেক জুমু‘আর দিনই আসে। ইবনু সালাম বললেন, কা‘ব এ কথা ঠিক বলেছে। এরপর বলতে লাগলেন, আমি জানি সে কোন সময়? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমাকে বলুন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, সেটা জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন সেটা জুমু'আর দিনের শেষে কি করে হয়, যেখানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মু’মিন বান্দা এ ক্ষণটি পাবে ও সে এ সময়ে সালাত  আদায় করে থাকে.....? (আর আপনি বলছেন সে সময়টি জুমু‘আর দিনের শেষ প্রহর। সে সময় তো সালাত আদায় করা হয় না। সেটা মাকরূহ সময়)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, (এটা তো সত্য কথা কিন্তু) এটা কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয় যে, যে ব্যক্তি সালাতের অপেক্ষায় নিজের স্থানে বসে থাকে সে সালাত অবস্থায়ই আছে, আবার সালাত পড়া পর্যন্ত। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি এ কথা শুনে বললাম, হ্যাঁ! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তাহলে সালাত অর্থ হলো, সালাতের জন্য অপেক্ষা করা। আর দিনের শেষাংশে সালাতের জন্য বসে থাকা নিষেধ নয়। সে সময় যদি কেউ দু‘আ করে, তা কবূল হবে। (মালিক, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম আহমাদও এ বর্ণনাটিصَدَقَ كَعْبٌ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৯,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৪, আহমাদ ১০৩০৩, ইবনু হিব্বান ২৭৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০২, শু‘আবুল ঈমান ২৭১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আওস ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন হলো তোমাদের সর্বোত্তম দিন। এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে। এ দিনে প্রথম শিঙ্গা ফুঁৎকার হবে। এ দিন দ্বিতীয় শিঙ্গা ফুঁৎকার দেয়া হবে। কাজেই এ দিন তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করবে। কারণ তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে। অথচ আপনার হাড়গুলো পচে গলে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, أَرَمْتَ (আরামতা) শব্দ দ্বারা সাহাবীগণ بَلِيْتَ (বালীতা) অর্থ বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আপনার পবিত্র দেহ পঁচে গলে মাটিতে মিশে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা নবী-রসূলদের শরীর মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন (অর্থাৎ মাটি তাদের দেহ নষ্ট করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬১, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৭, নাসায়ী ১৩৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৮৫, ১৬৩৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৬৯৭, আহমাদ ১৬১৬২, দারিমী ১৬১৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৩, ইবনু হিব্বান ৯১০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০২৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৩, ইরওয়া ৪, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯৬, ১৬৭৪, সহীহ আল জামি‘ ২২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) লুবাবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জুমু‘আর দিন’’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

(ক) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন।

(খ) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

(গ) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন।

(ঘ) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন।

(ঙ) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু‘আর দিনকে ভয় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি ২২৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন-বিধানকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার সকল নি‘আমাত পূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছি’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৩)। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ইয়াহূদী বসা ছিল। সে ইবনু ‘আব্বাসকে বলল, যদি এ আয়াত আমাদের ওপর নাযিল হত তাহলে আমরা এ দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে খুশীর উদযাপন করতাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এ আয়াতটি দু’ঈদের দিন, বিদায় হাজ্জ ও ‘আরাফার জুমু‘আর দিন নাযিল হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩০৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) জুমুআহ অর্থাৎ জমায়েত বা সমাবেশ ও সম্মেলনের দিন। এটি মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ ও বিশেষ ইবাদতের দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) এই দিনে গুনাহ মাফ হয়ঃ

(ক) উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার দু' জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করার পর জুমুআর সালাতে এলো, নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনল, তার পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক জুমুআহ পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ, যদি না কবীরা গুনাহ করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩, আহমাদ ৭০৮৯, ৮৯৪৪, ১০১৯৮, ২৭২৯০, সহীহ তারগীব ৬৮৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮)  জুমআর দিনে দোয়া কবুল হয়ঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আহর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৫, ৫২৯৪, ৫২৯৫, ৬৪০০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫৪-১৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯১, নাসায়ী ১৪৩০-৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৪৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪২-৪৩, দারিমী ১৫৬৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৫৭২, আহমাদ ৭১৫১, ৯৮৯২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৮, শু‘আবুল ঈমান ২৭১১, সহীহ আত্ তারগীব ৭০০, সহীহ আল জামে ২১২০, আহমাদ ৭১১১, ৭৪২৩, ৭৬৩১, ৭৭১১, ৭৭৬৪, ৮৯৫৩, ৯৮৭৪, ৯৯২৯-৩০, ৯৯৭০, ১০০৮২, ১০১৬৭, ২৭২৩৪, ২৭২৬৯, ২৭৩৩৫;)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেনঃ সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সালাতের সময় নয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। মুমিন বান্দা এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সালাতের মধ্যেই থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৯, আহমাদ ২৩২৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (কুরআনে বর্ণিত) ‘‘ইয়াওমুল মাও‘ঊদ’’ হলো কিয়ামতের দিন। ‘ইয়াওমুল মাশহূদ’ হলো ‘আরাফাতের দিন। আর ‘শাহিদ’ হলো জুমু‘আর দিন। যেসব দিনে সূর্য উদয় ও অস্ত যায় তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘‘জুমু‘আর দিন’’। এ দিনে এমন একটি সময় আছে সে সময়টুকু যদি কোন মু’মিন বান্দা পেয়ে যায়, আর ওই সময়ে সে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে সে কল্যাণ প্রদান করবেন। যে জিনিস থেকে সে আশ্রয় চাইবে, আল্লাহ অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৬৪, সহীহ আল জামি ৮২০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) এই মুহূর্তের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা হল ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।

আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু‘আর দিনের দু‘আ কবূলের সময় সম্পর্কে বলতে শুনেছেনঃ সে সময়টা হলো ইমামের মিম্বারের উপর বসার পর সালাত পড়াবার আগের মধ্যবর্তী সময়টুকু। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৩৯, দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৩, সুনানুল বায়হাক্বী ৫৯৯৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৯, রিয়াযুস সালিহীন ১১৬৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) অথবা তা হলো আসরের পর যে কোন একটি সময়। অবশ্য এ প্রসঙ্গে আরো অন্য সময়ের কথাও অনেকে বলেছেন। (যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৮৯-৩৯০)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন দু‘আ কবূল হবার সময়টির আকাঙ্ক্ষা করে, সে যেন ‘আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় খোঁজে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৮৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৭০১, সহীহ আল জামি‘ ১২৩৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৮, নাসায়ী ১৩৮৮, হাকিম (১/২৭৯) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) জুমআর দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করলেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন মুসলিম জুমু‘আর দিন অথবা জুমু‘আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১০৭৪, আহমাদ ৬৫৮২)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১০)  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আহর সালাত আদায়ের জন্য উত্তমরূপে অযু করে (মসজিদে) উপস্থিত হয়, অতঃপর চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুত্ববাহ শুনে, তার (ঐ) জুমু‘আহ হতে (পরবর্তী) জুমু‘আহ পর্যন্ত বরং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি পাথর কুচি অপসারণ বা নাড়াচাড়া করলো সে অনর্থক কাজ করলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, বায়হাক্বী (৩/২২৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমুআ যাদের উপর ফরয নয়ঃ

 (১) মহিলা, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি।

ত্বারিক্ব ইবনু শিহাব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর সালাত অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক। জুমু‘আর সালাত চার ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেক মুসলিমের ওপর জামা‘আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। ওই চার ব্যক্তি হলো

(১) গোলাম যে কারো মালিকানায় আছে,

(২) নারী,

(৩) বাচ্চা,

(৪) রুগ্ন ব্যক্তি।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৭, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫৭৮, সহীহ আল জামি ৩১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২) যে ব্যক্তি (শত্রু, সম্পদ বিনষ্ট, সফরের সঙ্গী ছুটে যাওয়ার) ভয়ে, অথবা বৃষ্টি, কাদা বা অত্যন্ত শীত বা গ্রীষ্মের কারণে মসজিদে উপস্থিত হতে অক্ষম।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মুআযযিনের (আযান) শোনে এবং কোন ওজর (ভয় অথবা অসুখ) তাকে জামাআতে উপস্থিত হতে বাধা না দেয়, তাহলে যে নামায সে পড়ে, তার সে নামায কবুল হয় না।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একদা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক বৃষ্টিময় জুমআর দিনে তাঁর মুআযযিনকে বললেন, ‘তুমি যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌’ বলবে তখন বল, ‘তোমরা তোমাদের ঘরে নামায পড়ে নাও।’ এ কথা শুনে লোকেরা যেন আপত্তিকর মনোভাব ব্যক্ত করল। কিন্তু তিনি বললেন, ‘এরুপ তিনি করেছেন যিনি আমার থেকে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ, আল্লাহর রসূল (সাঃ) এরুপ করেছেন। আর আমিও তোমাদেরকে এই কাদা ও পিছল জায়গার মাঝে বের হওয়াকে অপছন্দ করলাম।’  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০১, ৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, যারা দূরের মাঠে অথবা জঙ্গলে অথবা সমুদ্রে কাজ করে এবং আযান শুনতে পায় না, তাছাড়া কাজ ছেড়ে শহর বা গ্রামে আসাও সম্ভব নয়, তাদের জন্য জুমুআহ ফরয নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১৪, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৯৯)।

(৩) মুসাফিরঃ

মহানবী (সাঃ) জুমআর দিন সফরে থাকলে, জুমআর নামায না পড়ে যোহরের নামায পড়তেন। বিদায়ী হজ্জের সময় তিনি আরাফাতে অবস্থানকালে জুমআর নামায পড়েননি। বরং যোহ্‌র ও আসরের নামাযকে অগ্রিম জমা করে পড়েছিলেন। অনুরুপ আমল ছিল খুলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) দেরও।

উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য জুমআর নামায ফরয নয়। কিন্তু যোহরের নামায অবশ্যই ফরয। পরন্তু যদি তারাও জুমআর মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে জুমুআহ পড়ে নেয়, তাহলে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে তাদের জুমুআহ হয়ে যাবে এবং যোহরের নামায মাফ হয়ে যাবে।

একাধিক হাদীস এ কথা প্রমাণ করে যে, মহানবী (সাঃ) এবং খুলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) দের যুগে মহিলারা জুমুআহ ও জামাআতে উপস্থিত হয়ে নামায আদায় করত।

উল্লেখ্য যে, কোন মুসাফির জুমুআহ খুতবা দিলে ও ইমামতি করলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৩)।

জুমআর জামাআতে কোন মুসাফির যোহরের কসর আদায় করার নিয়ত করতে পারে না। কারণ, যোহ্‌র অপেক্ষা জুমআর ফযীলত অনেক বেশী। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫৭৪)।

জুমআর দিনে করণীয়ঃ

 (১) জুমআর ফজরের প্রথম রাকআতে সূরা সাজদাহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা দাহ্‌র (ইনসান) পাঠ করা। উভয় সূরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করাই সুন্নত। প্রত্যেক সূরার কিছু করে অংশ পড়া সুন্নত নয়।

অবশ্য অন্য সূরা পড়া দোষাবহ্‌ নয়। বরং কখনো কখনো ঐ দুই সূরা না পড়াই উচিৎ। যাতে সাধারণ মানুষ তা পড়া জরুরী মনে না করে বসে। বরং তা জরুরী মনে করে পড়া এবং কখনো কখনো না ছাড়া বা কেউতা না পড়লে আপত্তি করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ২৮১পৃ:)।

(২) সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া। আগে আগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিশেষ মাহাত্ম আছে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন নাপাকীর গোসলের মত গোসল করল। অতঃপর প্রথম সময়ে (মসজিদে গিয়ে) উপস্থিত হল, সে যেন এক উষ্ট্রী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে উপস্থিত হল, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট মেষ কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে পৌঁছল, সে যেন একটি ডিম দান করল। অতঃপর যখন ইমাম (খুতবাদানের জন্য) বের হয়ে যান (মিম্বরে চড়েন), তখন ফিরিশ্‌তাগণ (হাজরী খাতা গুটিয়ে) যিক্‌র (খুতবা) শুনতে উপস্থিত হন।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) জুমআর জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের দুর্গন্ধ দূর করা, সে জন্য গোসল করা, আতর ব্যবহার করাঃ

(ক) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসে সে যেন গোসল করে।  (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৮,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭৭, ৮৯৪, ৯১৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৩৬-১৮৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯২, ৪৯৪; নাসায়ী ১৩৭৬, ১৪০৫-৭; আহমাদ ৪৪৫২, ৪৫৩৯, ৪৯০১, ৪৯২৩, ৪৯৮৫, ৪৯৮৮, ৫০৫৮, ৫০৬৩, ৫১০৭, ৫১২০, ৫১৪৭, ৫১৮৮, ৫২৮৯, ৫৪২৭, ৫৪৫৮, ৫৪৬৪, ৫৭৪৩, ৫৭৯৪, ৫৯২৫, ৫৯৮৪, ৬২৩১, ৬২৯১, ৬৩৩৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩১, দারিমী ১৫৩৫-৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির গোসল করা কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৫৮, ৮৭৯-৮০, ৮৯৫, ২৬৬৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৬, নাসায়ী ১৩৭৫, ১৩৭৭, ১৩৮৩; আবূ দাঊদ ৩৪১, ৩৪৪, আহমাদ ১০৬৪৪, ১০৮৫৭, ১১১৮৪, ১১২৩১, ১১২৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩০, দারিমী ১৫৩৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত  (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু‘আহ্ ও আগের জুমু‘আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু‘আর সালাত আদায় করতে এসেছে ও যতটুকু সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করেছে, ইমামের খুত্ববাহ্ (খুতবা) শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রয়েছে। এরপর ইমামের সাথে সালাত (ফরয) আদায় করেছে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ থেকে বিগত জুমু‘আর মাঝখানে, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি ৬১৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৬)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

গোসল করা ওয়াজেব না হলেও ঈদ, জুমুআহ ও জামাআতের জন্য পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা একটি প্রধান কর্তব্য।

(৪) দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করাঃ

দাঁতন ব্রাশ করে দাঁত ও মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত করে নেওয়া জুমআর পূর্বে একটি করণীয় কর্তব্য। মহানবী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমআর দিন গোসল করা, মিসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘উবায়দ ইবনু সাব্বাক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জুমু‘আর দিন বলেছেনঃ হে মুসলিমগণ! এ দিন, যে দিনকে আল্লাহ তা‘আলা ঈদ হিসেবে গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা এ দিন গোসল করবে। যার কাছে সুগন্ধি আছে সে তা ব্যবহার করলেও কোন ক্ষতি নেই। তোমরা অবশ্য অবশ্যই মিসওয়াক করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ২১৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৩০১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০১৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) সুন্দর পোশাক পরাঃ

(ক) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সালাত আদায় করে ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে-তাহলে এটা তার জন্য এ জুমু‘আহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনহর কাফফারা হয়ে যাবে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে, সে যেন তার কাজ-কর্মের পোশাক ছাড়া জুমু‘আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬৫, সুনানুল বায়হাক্বী আল কুবরা ৫৯৫২, সহীহুল জামি ৫৬৩৫, নাসায়ী ১৩৭৪, দারিমী ১৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি তাদেরকে দৈনন্দিনের পোশাক পরিহিত দেখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কী হলো যে, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে কি তার কাজকর্মের পোশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহর সালাত এর জন্য আরো একজোড়া পোশাক গ্রহণ করতে পারে না? (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৬৫, সহীহ আবী দাউদ ৯৮৯,  গয়াতুল মারাম ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমুআহর সালাত এ এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দুজনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ২১০২৯)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জুমআর জন্য সাধারণ আটপৌরে পোশাক বা কাজের কাপড় ছাড়া পৃথক তোলা পোশাক ও কাপড় পরা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু জুমআর দিন মুসলিমদের সমাবেশের দিন। আর এ দিনে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। যাতে অপরের কাছে কেউ ঘৃণার পাত্র না হয়ে যায়। অথবা তার অপরিচ্ছন্নতায় কেউ কষ্ট না পায়।

(৬) বাসা/বাড়ী থেকে ওযু করে মসজিদে গমন করাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়াঃ

 আওস ইবনু আওস আস-সাকাফী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মসজিদে এসে ইমামের কাছাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) রাখ ও তার রাত জেগে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সমান সওয়াব রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, আত্ তিরমিযী ৪৯৬, নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮, আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, যে ব্যক্তি গাড়ি করে জুমুআহ পড়তে আসে, তার এ সওয়াব লাভ হয় না। বলা বাহুল্য, যে বাসা থেকে ১০০ কদম পায়ে হেঁটে জামে মসজিদে পৌঁছবে, তার আমল-নামায় ১০০ বছরের রোযা-নামাযের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে; যাতে একটি গোনাহও থাকবে না। আর তা এখানেই শেষ নয়। এইভাবে সে প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫২০০ বছরের নামায-রোযার সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আর এ হলো মুসলিম বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।

(৮) সূরা কাহ্‌ফ পাঠঃ

(ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ্ হতে আগামী জুমাহ্ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৯৬, ইরওয়া ৬২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৭৩৬, সহীহ আল জামি ৬৪৭০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল-কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)...বারা ইবনু আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি সূরাহ আল কাহফ পড়ছিল। সে সময় তার কাছে মজবুত লম্বা দু'টি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এ সময়ে একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে এসে হাজির হ’ল। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিল এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ঐ বিষয়টি বর্ণনা করল। এসব কথা শুনে তিনি বললেনঃ এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি যা কুরআন পাঠের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪১-১৭৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১১, ৩৬১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭২৬, ইসলামীক সেন্টার, ১৭৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, জুমআর সময় মসজিদে এই সূরা তেলাওয়াত করলে এমনভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যাতে অপরের ডিষ্টার্ব না হয়।

জ্ঞাতব্য যে, এ দিনে সূরা দুখান পড়ার হাদীস সহীহ নয়। (যইফ জামে ৫৭৬৭, ৫৭৬৮নং) যেমন আলে ইমরান সূরা পাঠ করার হাদীসটি জাল। (যইফ জামে ৫৭৫৯নং)।

তদনুরুপ জুমআর নামায পড়ে ৭ বার সূরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে অযীফা করার হাদীসদ্বয়ের ১টি জাল এবং অপরটি দুর্বল হাদীস। (যইফ জামে ৫৭৫৮, ৫৭৬৪, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৩০নং) সুতরাং এমন অযীফা পাঠ বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ১২২, ৩২৬পৃ:)।

৮। বেশী বেশী দরুদ পাঠঃ

জুমআর রাতে (বৃহ্‌স্পতিবার দিবাগত রাতে) ও (জুমআর) দিনে প্রিয়তম হাবীব মহানবী (সাঃ)-এর শানে অধিকাধিক দরুদ পাঠ করা কর্তব্য।

(ক) আওস ইবনু আওস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিনটি উৎকৃষ্ট। কাজেই এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের দরূদ আপনার কাছে কিভাবে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বললো, আপনি তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ নবীদের দেহকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) তিনি আরো বলেন, “জুমআর রাতে ও দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ কর। আর যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির উপর আল্লাহ ১০ বার রহ্‌মত বর্ষণ করবেন।” (বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৪০৭নং)।

(গ) আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ করে দরূদ পড়ো। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এ দিনে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) হাজির হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে, যে পর্যন্ত সে এর থেকে অবসর না হয়। আবুদ্ দারদা বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরও কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। অতএব নবীরা কবরে জীবিত এবং তাদেরকে রিযক্ব  দেয়া হয়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৬, ইরওয়াহ ১/৩৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬৩৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সকাল সকাল মসজিদে আসার ফজিলতঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন হলে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতাগণ অবস্থান করেন এবং লোকেদের আগমনের ক্রমানুসারে তাদের নাম লিখেন। যেমন প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে। ইমাম যখন খুতবাহ দিতে বের হন, তখন তারা তাদের নথি গুটিয়ে নেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শোনেন। সালাত এ প্রথম আগমনকারীর সাওয়াব একটি উট কুরবানীকারীর সমান, তারপরে আগমনকারীর সওয়াব একটি গরু কুরবানীকারীর সমান, তারপর আগমনকারীর সওয়াব একটি মেষ কুরবানীকারীর সমান, এমনকি তিনি মুরগী ও ডিমের কথা উল্লেখ করেন। সাহল ইবনু আবূ সাহলের রিওয়ায়তে আরো আছেঃ এরপর যে ব্যক্তি আসে, সে কেবল সালাত পড়ার সওয়াব পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৪,   সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯২,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮১, ৯২৯, ৩২১১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৪৯, ১৮৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫০,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫১,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৪৯৯, নাসায়ী ৮৬৪, ১৩৮৫-৮৮; আহমাদ ৭২১৭, ৭৪৬৭, ৭৭০৮, ৯৬১০, ১০০৯৬, ১০১৯০, ১০২৬৮; শারহু মা‘আনির আসার ৬২৪১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৬২, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২২৭, দারিমী ১৫৪৩-৪৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ সকাল সকাল আগমনের একটি উদাহরণ দেনঃ যেমন উট কুরবানীকারী, গরু কুরবানীকারী, বকরী কুরবানীকারী, এমনকি তিনি মুরগী পর্যন্ত উল্লেখ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জুমআর সময়ঃ

অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন ও ইমামগণের নিকট জুমআর সময় যোহরের সময় একই। অর্থাৎ, সূর্য ঢলার পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া (আসরের আগে) পর্যন্ত।

(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫০৩, আহমাদ ১৩৩৮৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাত  আদায় করার পূর্বে খাবারও গ্রহণ করতাম না, বিশ্রামও করতাম না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০২, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৮-৩৯, ৯৪১, ২৩৪৯, ৫৪০৩, ৬২৪৮, ৬২৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৫২৫, আবূ দাঊদ ১০৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জুমুআহর সালাত  পড়ে ফেরার সময় দেয়ালের এতটুকু ছায়াও দেখতাম না যার ছায়া আমরা গ্রহণ করতে পারি। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৭-১৮৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮৫, নাসায়ী ১৩৯১, আহমাদ ১৬০৬১, ১৬১১১; দারিমী ১৫৪৫-৪৬, ইরওয়াহ ৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমুআহর সালাত  পড়ে ফিরে আসার পর দুপুরের বিশ্রাম করতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীতের সময় জুমু‘আর সালাত সকাল সকাল (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর প্রচন্ড গরমের সময় দেরী করে আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৬, শারহু মা‘আনিল আসার ১১২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬৭৮, সহীহ আল জামি ৪৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য সূর্য ঢলার পূর্বেও জুমুআহ পড়া বৈধ। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ২২-২৫পৃ:)।

তবে সূর্য ঢলার পরই জুমুআহর (খুতবার) আযান হওয়া উত্তম। কারণ,

প্রথমতঃ এতে অধিকাংশ উলামার সাথে সহ্‌মত প্রকাশ হয়।

দ্বিতীয়তঃ যারা জুমআয় হাজির হয় না এবং সময়ের খবর না রেখে আযান শুনে নামায পড়তে অভ্যাসী (ওযরগ্রস্ত ও মহিলারা) সময় হওয়ার পূর্বেই নামায পড়ে ফেলে না। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৫/৩৪)।

প্রকাশ থাকে যে, সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ সহ্‌ অন্যান্য নফল পড়া সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকার সময়ে হলেও তা নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৫/৩৪)।

জুমআর জন্য নিম্নতম নামাযী সংখ্যাঃ

জুমআর নামায যেহেতু জামাআত সহকারে ফরয, সেহেতু যে কয়জন লোক নিয়ে জামাআত হবে, সে কয়জন লোক নিয়ে জুমআহও প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট লোক সংখ্যা হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়।

জুমআর স্থানঃ

জুমুআহ যেমন শহরবাসীর জন্য ফরয, তেমনি ফরয গ্রামবাসীর জন্যও। এর জন্য খলীফা হওয়া, শহর হওয়া, জামে মসজিদ হওয়া বা ৪০ জন নামাযী হওয়া শর্ত নয়। বরং যেখানেই স্থানীয় স্থায়ী বসবাসকারী জামাআত পাওয়া যাবে, সেখানেই জুমুআহ ফরয। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২২/৭৫, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪২৪)।

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে জুমু‘আহর সালাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথম জুমু‘আহর সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৯২, ৪৩৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৪১ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) মক্কা মুকার্রামা ও মদ্বীনা নববিয়ার মধ্যবর্তী পথে অবস্থিত ছোট ছোট জনপদে জুমুআহ প্রতিষ্ঠিত হতে লক্ষ্য করতেন। তিনি তাতে কোন আপত্তি জানাতেন না। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ)।

হযরত উমার (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক, সেখানেই জুমুআহ পড়।’ (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৩২পৃ:)।

পক্ষান্তরে পাড়া-গ্রামে জুমুআহ হবে না বলে হযরত আলী কর্তৃক যে হাদীস বর্ণনা করা হয়, তা সহীহ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৬/৩৫২-৩৫৪, ২২/৭৫)।

কোন অমুসলিম দেশে পড়াশোনা বা চাকরি করতে গিয়ে সেখানে মসজিদ না থাকলে বা যথেষ্ট সংখ্যক মুসলিম না থাকলেও ৩ জনেই যে কোন রুমে জুমুআহ কায়েম হবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৮৫)।

একই বড় গ্রাম বা শহরে বিচ্ছন্নতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নয়, বরং মসজিদ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে, অথবা দূর হওয়ার কারণে, অথবা ফিতনা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় প্রয়োজনে একাধিক মসজিদে জুমুআহ কায়েম করা যায়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৮/১১১, ১৯/১৬৫-১৬৬)।

কোন মসজিদে জুমুআহ পড়ার জন্য নির্মাণের সময় ঐ নিয়ত শর্ত নয়। অক্তিয়ারুপে নির্মাণের পর প্রয়োজনে সেখানে জুমুআহ পড়া যায়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৮/১১০)।

জুমআর আযানঃ

মহানবী (সাঃ), হযরত আবূ বাকর ও হযরত উমার (রাঃ)-এর যামানায় জুমআর মাত্র ১টি আযানই প্রচলিত ছিল। আর এ আযান দেওয়া হত, যখন ইমাম খুতবাহ্‌ দেওয়ার জন্য মিম্বরে চড়ে বসতেন তখন মসজিদের দরজার সামনে উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে। এইরুপ আযান চালু ছিল হযরত আবূ বাকর, উমারের খেলাফত কাল পর্যন্ত। অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) মদ্বীনার বাড়ি-ঘর দূরে দূরে এবং জনসংখ্যা বেশী দেখে উক্ত আযানের পূর্বে আরো একটি অতিরিক্ত আযান চালু করলেন। যাতে লোকেরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে জুমআর খুতবাহ্‌ শুনতে প্রথম থেকেই উপস্থিত হয়। আর এই আযান দেওয়া হত বাজারে যাওরা নামক একটি উঁচু ঘরের ছাদে। এ আযান শুনে লোকেরা জুমুআহর সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানতে পারত।

সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র একজন মুয়াযযিন ছিল। তিনি যখন (খুতবাহ দিতে) বের হতেন, তখন সে আযান দিতো এবং তিনি যখন (মিম্বার থেকে) নামতেন, তখন সে ইকামত দিতো। আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) এর আমলেও এ নিয়মই চালু থাকে। উসমান (রাঃ) এর আমলে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি বাজারে অবস্থিত আয-যাওরা নামক স্থান থেকে তৃতীয় আযান দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর তিনি যখন বের হতেন, তখন মুয়াযযিন আযান দিতো এবং তিনি মিম্বার থেকে নামলে সে ইকামত দিতো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯১২-১৩, ৯১৫-১৬; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১৬, নাসায়ী ১৩৯২-৯৪, আহমাদ ১৫৩০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এইভাবে দ্বিতীয় আযান প্রচলিত থাকল। এতে কেউ তাঁর প্রতিবাদ বা সমালোচনা করল না। অথচ মিনায় (২ রাকআতের জায়গায়) ৪ রাকআত নামায পড়ার কারণে লোকেরা তাঁর সমালোচনা করেছিল।(আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৮-৯পৃ:)।

বলাই বাহুল্য যে, যে কাজ একজন খলীফায়ে রাশেদ করেছেন তা বিদআত হতে পারে না। বিশেষ করে মহানবী (সাঃ)-এর বিরোধিতা নেই যেখানে সেখানে সাহাবীর ইজতিহাদ ও আমল আমাদের জন্যও সুন্নত। কেননা, মহানবী (সাঃ) বলেন,

ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে গেলেন। আমাদের উদ্দেশে এমন মর্মস্পর্শী নাসীহাত করলেন যাতে আমাদের চোখ গড়িয়ে পানি বইতে লাগল। অন্তরে ভয় সৃষ্টি হলো মনে হচ্ছিল বুঝি উপদেশ দানকারীর যেন জীবনের এটাই শেষ উপদেশ। এক ব্যক্তি আবেদন করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করার, (ইমাম বা নেতার) আদেশ শোনার ও (তাঁর) অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে হাবশী (কৃষ্ণাঙ্গ) গোলাম হয়। আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার (বিদ্‘আত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই [বা কাজ শারী‘আতে আবিষ্কার করা যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ করেননি তা] বিদ্‘আত এবং প্রত্যেকটা বিদ্‘আতই ভ্রষ্টতা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬০৭, আহমাদ ১৬৬৯৪, তিরমিযী ২৬৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২,  দারিমী ৯৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব যদি অনুরুপ প্রয়োজন বোধ করে মাঠে-ঘাটে ও অফিসে-বাজারে সর্বসাধারণকে জুমআর জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা জানানো একান্ত জরুরী হয়েই থাকে, তাহলে তৃতীয় খলীফার সে সুন্নত ব্যবহার করতে আমাদের বাধা কোথায়?

পক্ষান্তরে বিদআত ও বাধা হলো, একই উদ্দেশ্যে এর পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করা। যেমন, মাইকে জুমআর সময় বলে দেওয়া, ওযূ-গোসল সেরে মসজিদে আসতে অনুরোধ করা, সূরা জুমআর শেষ ৩টি আয়াত পাঠ করা, গজল পড়া, বেল বা ঘন্টা বাজানো ইত্যাদি। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১১, ৪২১)।

অবশ্য এই আযান দিতে হবে খুতবার আযানের সময়ের যথেষ্ট পূর্বে। নচেৎ, আযানের প্রধান উদ্দেশ্যই বাতিল হয়ে যাবে। যেমন ৫ বা ১০ মিনিট আগে হলে তাতে তেমন কিছু লাভ পরিলক্ষিত হবে না। অন্ততঃপক্ষে আধা থেকে এক ঘন্টা আগে হলে তবেই উদ্দেশ্য সফল হবে।

উল্লেখ্য যে, জুমআর দিন (খুতবার আগে দ্বিতীয়) আযান হওয়ার পর বেচা-কেনা (অনুরুপ সফর করা) হারাম হয়ে যায়। কারণ, মহান আল্লাহর আদেশ হল,

“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা সত্বর আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।” (আল জুমআ ৬২, আয়াত নং-৯)।

দ্বিতীয় আযান (মাইকে হলেও) দেওয়া উচিৎ মসজিদের সামনে কোন উঁচু জায়গায়। এ আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেওয়া বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ১৪-১৯পৃ:)।

জুমআর খুতবার আহ্‌কামঃ

জুমআর খুতবার দুটি অংশ। প্রথম অংশটি প্রথম খুতবা এবং শেষ অংশটি দ্বিতীয় খুতবা নামে প্রসিদ্ধ।

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জুমু‘আর দিন) দু’টি খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন। উভয় খুতবার মধ্যখানে তিনি কিছু সময় বসতেন। তিনি (খুতবায়) কিছু কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং লোকদেরকে উপদেশ শুনাতেন। সুতরাং তাঁর সালাত ও খুতবাহ্ উভয়ই ছিল নাতিদীর্ঘ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৫, ১১০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৬, ৮৬২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৯৪, ১১০১, ১১০৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫২৫৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৬৫৫, আহমাদ ২০৮৮৫, আত্ তিরমিযী ৫০৭, ৫৬০, নাসায়ী ১৪১৫, ১৪১৭-১৮, ১৫৮২-৮৪, দারিমী ১৫৯৮, ১৫৫৭, ১৫৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৭, আহমাদ ২০২৮৯, ২০৩০৬, ২০৩২২, ২০৩৩৫, ২০৩৬০, ২০৩৮৩, ২০৪১৩, ২০৪২২, ২০৪২৭, ২০৪৩৯, ২০৪৫২, ২০৪৬৫, ২০৫২০, ২০৫২৯, ২০৪৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) দুটি খুতবাহ দিতেন এবং দু খুতবাহর মাঝখানে কিছুক্ষণ বসতেন। বিশর (রহঃ)-এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তিনি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯২০, ৯২৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ১৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৫০৬, নাসায়ী ১৪১৬, আবূ দাঊদ ১০৯২, দারিমী ১৫৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুতবাহ্‌ মানে হল ভাষণ বা বক্তৃতা। এই ভাষণ দেওয়া ও শোনার বহু নিয়ম-নীতি আছে। যার কিছু নিম্নরুপঃ

খুতবার জন্য ওযূ হওয়া শর্ত নয়। তবে খুতবার পরেই যেহেতু নামায, তাই ওযু থাকা বাঞ্ছনীয়। খুতবা চলাকালে খতীবের ওযূ নষ্ট হলে খুতবার পর তিনি ওযূ করবেন এবং সে পর্যন্ত লোকেরা অপেক্ষা করবে। (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দার্ব, ইবনে উষাইমীন ১/২০৮)

আল্লাহর রসূল (সাঃ) দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। কখনো বসে খুতবাহ দিতেন নাঃ

(ক) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন, না বসে? তিনি বলেন, তুমি কি এ আয়াত পাঠ করোনি: এবং তারা তোমাকে রেখে গেল দাঁড়ানো অবস্থায় (সূরাহ জুমুআহ: ১১)?  (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ)....ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিন দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন, অতঃপর বসতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন, যেমন আজকাল তোমরা করে থাক। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৮৭১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) কা‘ব ইবনু উজরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি মসজিদে হাজির হলেন। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু উম্মুল হাকাম বসে বসে খুতবাহ্ দিচ্ছিলেন। কা‘ব বললেন, এ খবীসের দিকে তাকাও। সে বসে বসে খুতবাহ্ দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন তারা বাণিজ্য কাফেলা অথবা খেল-তামাশা দেখে, তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে চলে যায়’’- (সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ ৬২: ১১)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ্ দিতেন। এরপর তিনি বসতেন। আবার তিনি দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবাহ্ দিতেন। যে ব্যক্তি তোমাকে বলবে, তিনি বসা অবস্থায় খুতবাহ্ দিয়েছেন, সে মিথ্যাবাদী। আল্লাহর শপথ করে বলছি! আমি তাঁর সাথে দু’হাজারেরও বেশী সালাত  আদায় করেছি (তাঁকে বসে বসে খুতবাহ্ দিতে কোন দিন দেখিনি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬২, আহমাদ ২০৮৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মহানবী (সাঃ) খুতবায় দাঁড়াবার সময় লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেনঃ

(ক) শু‘আইব ইবনু রুযাইক্ব আত-ত্বায়িফী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবীর নিকট বসা ছিলাম, যার নাম আল-হাকাম ইবনু হাযন আল-কুলাফী। তিনি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমি সাত বা আট সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সপ্তম বা অষ্টমজন হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাই এবং তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বলি, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার সাক্ষাত পেয়েছি। আপনি মহান আল্লাহর নিকট আমাদের কল্যাণের জন্য দু‘আ করুন। তখন তিনি কিছু খেজুর দ্বারা আমাদের মেহমানদারী করতে আদেশ করলেন।

সে সময় (মুসলিমদের) অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। আমরা বেশ কয়েকদিন (মদীনাতে) অবস্থান করলাম। এ সময় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জুমু‘আহর সালাতও আদায় করেছি। জুমু‘আহর খুত্ববাহয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লাঠি অথবা ধনুকের উপর ভর দিয়ে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ কথার দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাঁর কতক হালকা, উত্তম ও পবিত্র গুণাবলী বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেনঃ হে জনগণ! তোমাদেরকে যা কিছুর আদেশ দেয়া হয়েছে সে সবের প্রতিটি নির্দেশই তোমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে সক্ষম হবে না। কাজেই তোমরা নিজেদের ‘আমলের উপর অটল থাকো এবং সুসংবাদ প্রদান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৯৬, আহমাদ (৪/২১২), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৪৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মহানবী (সাঃ) অধিকাংশ সময়ে মাথায় পাগড়ী ব্যবহার করতেন।

(খ) ‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ দিলেন। তখন তাঁর মাথায় ছিল কালো পাগড়ী। পাগড়ীর দু’মাথা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২০২-৩২০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৭৭, নাসায়ী ৫৩৪৩, ৫৩৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৪, ২৮২১, ৩৫৮৪, ৩৫৮৭, আহমাদ ১৮৭৩৪, ১৮২৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৫, সহীহাহ্ ৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে খুতবাহ প্রদানঃ

জুমআর খুতবা হবে কোন উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে। যাতে সকল নামাযীকে খতীব দেখতে পান এবং তাঁকে সকলে দেখতে পায়। এ ক্ষেত্রে ২ থাকি বা ৩ থাকি অথবা তার চেয়ে বেশী থাকির কোন প্রশ্ন নেই। আসল উদ্দেশ্য হল উঁচু জায়গা। অতঃপর সেই উঁচু জায়গায় পৌঁছনোর জন্য যতটা সিড়ির দরকার ততটা করা যাবে। এতে বাধ্যতামূলক কোন নীতি নেই। শুরুতে মহানবী (সাঃ) একটি খেজুর গাছের উপর খুতবা দিতেন। তারপর এক ছুতোর সাহাবী তাঁকে একটি মিম্বর বানিয়ে দিয়েছিলেন; যার সিড়ি ছিল ২টি।

(ক) আবূ হাযিম ইবনু দীনার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। কতিপয় লোক মসজিদের মিম্বার কোন কাঠের তৈরী ছিলো এ বিষয়ে সন্দিহান হলে তারা সাহল ইবনু সা‘দ আস-সাঈদী (রাঃ) এর নিকট এসে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তা কোন কাঠের তৈরী ছিলো তা আমি জানি। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয়েছিল তাও আমি অবগত আছি। আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যেদিন তার উপর বলেছিলেন আমি সেদিনও তা দেখেছি। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মহিলার (যার নাম সাহল (রাঃ) উল্লেখ করেছিলেন) এর নিকট কাউকে এ সংবাদসহ পাঠালেন যে, লোকদের উদ্দেশে বক্তব্য বা খুত্ববাহর সময় আমার বসার জন্য তোমার কাঠমিস্ত্রি ক্রীতদাসকে আমার জন্য কিছু কাঠ প্রস্তুত করতে (মিম্বার বানাতে) বলো। মহিলা তাকে তাই করতে আদেশ করলো।

ক্রীতদাসটি আল-গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তা তৈরী করে আনলে ঐ মহিলা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠিয়ে দেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে সেটি এ স্থানে রাখা হলো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এর উপর সালাত পড়তে, তাকবীর বলতে, রুকু‘ করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি পিছন দিকে সরে গিয়ে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা্ করেন। এরপর তিনি পুনরায় মিম্বারে উঠেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি লোকদের দিকে ঘুরে বলেনঃ হে লোকেরা! আমি এজন্যই এরূপ করেছি যাতে তোমরা আমাকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারো এবং আমার সালাত আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭১, আহমাদ ২২১৩৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। (বয়োঃবৃদ্ধির কারণে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীর ভারী হয়ে গেলে তামীম আদ-দারী (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহ রসূল! আমি কি আপনার জন্য একটা মিম্বার তৈরি করে দিবো না, যার উপর আপনার শরীরের ভার রাখবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। কাজেই তিনি তাঁর জন্য দুই ধাপবিশিষ্ট একটি মিম্বার তৈরী করে দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই দুই সিড়ি চড়ে তৃতীয় (শেষ) ধাপে মহানবী (সাঃ) বসতেন। বলা বাহুল্য, তাঁর মিম্বর ছিল তিন ধাপ বিশিষ্ট। আর এটাই হল সুন্নত। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩৩১) (এবং করতে হয় মনে করে) তার বেশী ধাপ করা বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৬৭পৃ:)।

বিশেষ করে জুমআর জন্য জুমআর দিন মিম্বরের উপর কার্পেট বিছানো বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৬৬পৃ:)।

মিম্বার রাখার স্থানঃ

সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার এবং (মসজিদের) দেওয়ালের মাঝখানে একটি বকরী চলাচল করার পরিমাণ ফাঁকা ছিলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মিম্বরে চড়ে মহানবী (সাঃ) মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে সালাম দিতেনঃ

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে সালাম দিতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৯, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২০৭৬) । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এরপর বসে যেতেন। মুআযযিন আযান শেষ করলে উঠে দাঁড়াতেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বারে দাঁড়াতেন, সাহাবাগণ তখন তাঁর মুখোমুখী হয়ে বসতেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিম্বারে দাঁড়াতেন, আমরা তাঁর মুখোমুখী হয়ে বসতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৪, আত্ তিরমিযী ৫০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খুতবাহ দেয়ার জন্য) মিম্বারে উঠে দাঁড়ালে তাঁর সাহাবীগণ তাঁর দিকে তাদের মুখ ঘুরিয়ে বসতেন।  (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৬, সহীহাহ ২০৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ)  খুতবায় কুরআনের আয়াত পাঠ করে লোকেদেরকে নসীহত করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৫, ১১০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৬, ৮৬২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৯৪, ১১০১, ১১০৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫২৫৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৬৫৫, আহমাদ ২০৮৮৫, আত্ তিরমিযী ৫০৭, ৫৬০, নাসায়ী ১৪১৫, ১৪১৭-১৮, ১৫৮২-৮৪, দারিমী ১৫৯৮, ১৫৫৭, ১৫৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৬১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৭,আহমাদ ২০২৮৯, ২০৩০৬, ২০৩২২, ২০৩৩৫, ২০৩৬০, ২০৩৮৩, ২০৪১৩, ২০৪২২, ২০৪২৭, ২০৪৩৯, ২০৪৫২, ২০৪৬৫, ২০৫২০, ২০৫২৯, ২০৪৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুতবাহ্‌ হবে মহান আল্লাহর প্রশংসা, মহানবীর নবুওয়াতের সাক্ষ্য, আল্লাহর তাওহীদের গুরুত্ব, ঈমান ও ইসলামের শাখা-প্রশাখার আলোচনা, হালাল ও হারামের বিভিন্ন আহ্‌কাম, কুরআন মাজীদের কিছু সূরা বা আয়াত পাঠ, লোকেদের জন্য উপদেশ, আদেশ-নিষেধ বা ওয়ায-নসীহত এবং মুসলিম সর্বসাধারণের জন্য দুআ সম্বলিত।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে বক্তৃতায় আল্লাহর একত্ব ও রিসালাতের সাক্ষ্য থাকে না তা পঙ্গু হাতের ন্যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৪১, জামে ৪৫২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উম্মু হিশাম বিনতু হারিসাহ্ ইবনুল নু‘মান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরআন মাজীদের ‘‘সূরাহ্ ক্বাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে শুনে শুনেই মুখস্থ করেছি। প্রত্যেক জুমু‘আয় তিনি মিম্বারে উঠে খুতবার প্রাক্কালে এ সূরাহ্ পাঠ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৯৯-১৯০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৭৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫২০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারে উঠে কুরআনের এ আয়াত পাঠ করতে শুনেছিঃ ‘‘জাহান্নামীরা (জাহান্নামের দারোগাকে) ডেকে বলবে, হে মালিক! (তুমি বলো) তোমার রব যেন আমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন’’- (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩: ৭৭)। অর্থাৎ তিনি খুতবায় জাহান্নামের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭১, আত্ তিরমিযী ৫০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৮০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর একটি খুতবা দিয়ে একটু বসতেন।

এ বৈঠকে পঠনীয় কোন দুআ বা যিক্‌র নেই। খতীব বা মুক্তাদী সকলের জন্যই এ সময়ে সূরা ইখলাস পাঠ করা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ১২২পৃ:)।

মহানবী (সাঃ) বসে কোন কথা বলতেন না। অতঃপর উঠে দ্বিতীয় খুতবা দিতেন।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি খুতবাহ্ (ভাষণ) দিতেন। তিনি মিম্বারে উঠে বসতেন। যে পর্যন্ত মুয়াযযিন আযান শেষ না করতেন। এরপর তিনি দাঁড়াতেন ও খুতবাহ্ শুরু করে দিতেন। তারপর আবার বসতেন। এ সময় তিনি কোন কথা বলতেন না। অতঃপর তিনি আবার দাঁড়াতেন ও (দ্বিতীয়) খুতবাহ্ দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৪৭, সহীহ আল জামি‘ ৪৯১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই সময় (দুই খুতবার মাঝে) কারো দুআ করা এবং তার জন্য হাত তোলা বিধেয় নয়। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭০পৃ:)।

তাঁর উভয় খুতবাতেই নসীহত হতো। সুতরাং একটি খুতবাতে কেবল ক্বিরাআত এবং অপর খুতবাতে কেবল নসীহত, অথবা একটি খুতবাতে নসীহত এবং অপরটিতে কেবল দুআ করা সঠিক নয়। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭১পৃ:)।

খুতবা হবে সংক্ষেপ অথচ ব্যাপক বিষয়ভিত্তিক। মহানবী (সাঃ)-এর খুতবা এবং নামায মাঝামাঝি ধরনের হতো।

হাসান ইবনুর রাবী’ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)....জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম। তার সালাত ও খুতবাহ ছিল মধ্যম (দীর্ঘও নয় অতি সংক্ষিপ্তও নয়)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮৮-১৮৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৬ ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৭৩, ইসলামীক সেন্টার ১৮৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আম্মার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তির দীর্ঘ সালাত ও সংক্ষিপ্ত খুতবাহ্ (খুতবা) তার বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। তাই তোমরা সালাতকে লম্বা করবে, খুতবাকে খাটো করবে। নিশ্চয় কোন কোন ভাষণ যাদু স্বরূপ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৯, আহমাদ ১৮৩১৭, দারিমী ১৫৫৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৬৩, শু‘আবুল ঈমান ৪৬৩৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৭, সহীহ আল জামি ২১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাদেরকে খুতবা ছোট করতে আদেশ দিয়েছেন।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমআর খুতবার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া এবং উচ্চস্বরে প্রভাবশালী ও হৃদয় গ্রাহী ভাষা ব্যবহার করে পরিবেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি সামনে রেখে ভাষণ দান করা খতীবের কর্তব্য।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ).....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুতবাহ (ভাষণ) দিতেন যখন তার চক্ষুদ্বয় রক্তিম বর্ণ ধারণ করত, কণ্ঠস্বর জোরালো হ'ত এবং তার রাগ বেড়ে যেত, এমনকি মনে হ’ত, তিনি যেন শত্রুবাহিনী সম্পর্কে সতর্ক করছেন আর বলছেনঃ তোমরা ভোরেই আক্রান্ত হবে, তোমরা সন্ধ্যায়ই আক্রান্ত হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ আমি ও কিয়ামত এ দুটির ন্যায় (স্বল্প ব্যবধান) প্রেরিত হয়েছি, তিনি মধ্যম ও তর্জনী আঙ্গুল মিলিয়ে দেখাতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলতেনঃ অতঃপর উত্তম বাণী হ'ল- আল্লাহর কিতাব এবং উত্তম পথ হ’ল মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদর্শিত পথ। অতীব নিকৃষ্ট বিষয় হ’ল (ধর্মের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবন (বিদ'আত)। প্রতিটি বিদ'আদ ভ্রষ্ট। তিনি আরো বলতেনঃ আমি প্রত্যেক মু'মিন ব্যক্তির জন্য তার নিজের থেকে অধিক উত্তম (কল্যাণকামী)। কোন ব্যক্তি সম্পদ রেখে গেলে তা তার পরিবার-পরিজনের প্রাপ্য। আর কোন ব্যক্তি ঋণ অথবা অসহায় সন্তান রেখে গেলে সেগুলোর দায়িত্ব আমার। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৭,  সুনান ইবনু মাজাহ ৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৫৩, ইবনু হিব্বান ১০, ইরওয়া ৬১১, সহীহ আত্ তারগীব ৫০, সহীহ আল জামি ৪৭১১, নাসায়ী ১৫৭৮, ১৯৬২, আহমাদ ১৩৭৪৪, ১৩৯২৪, ১৪০২২, ১৪২১৯, ১৪৫৬৬; দারিমী ২০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৭৫, ইসলামীক সেন্টার ১৮৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গান গাওয়ার মত সুর করে খুতবা দেওয়া বিধেয় নয়, বরং তা বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭২পৃ:)।

খতীবের উচিৎ, খুতবায় দুর্বল ও জাল হাদীস ব্যবহার না করা। প্রত্যেক খুতবা প্রস্তুত করার সময় ছাঁকা ও গবেষণালব্ধ কথা বেছে নেওয়া উচিৎ।

জুমুআহবারীয় খুতবার মধ্যে খতীব মুসলিম জনসাধারণকে সহীহ আকীদাহ্‌ শিক্ষা দেবেন, কুসংস্কার নির্মূল করবেন, বিদআত অনুপ্রবেশ করার ব্যাপারে ও তা বর্জন করতে আহবান জানাবেন। সচ্চরিত্রতা ও শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দেবেন। ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রকার সন্দেহের নিরসন ঘটাবেন। মার্জিত ভাষায় ও ভঙ্গিমায় বাতিল মতবাদ ও বক্তৃতা-লেখনীর খন্ডন করবেন। ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের ও ঐক্যের উপর বিশেষ জোর দিয়ে তার গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলবেন ভাষণের মাধ্যমে। উদ্বুদ্ধ করবেন মাযহাব, ভাষা, বর্ণ ও বংশ ভিত্তিক সকল প্রকার অন্ধ পক্ষপাতিত্ব ও তরফদারী বর্জন করতে।

বলা বাহুল্য, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এটা কোন মানবরচিত রাজনীতির আখড়া নয়। এখানে দ্বীন উঁচু করার কথা ছাড়া অন্য দল বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা আলোচিত হবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, আর অবশ্যই মসজিদসমূহ আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে আহবান করো না। (সুরা আল-জিন ৭২, আয়াত নং ১৮)।

খুতবাদানে বিভিন্ন উপলক্ষ্য সামনে রাখবেন খতীব। মৌসম অনুপাতে খুতবার বিষয়বস্তু পরিবর্তন করবেন। বারো চাঁদের খুতবার মত বাঁধা-ধরা খুতবা পাঠ করেই দায় সারা করে কর্তব্য পালন করবেন না।

সপ্তাহান্তে একবার এই বক্তৃতা একটি সুবর্ণ সুযোগ দ্বীনের আহ্‌বায়কের জন্য। যেহেতু এই দিনে নামাযী-বেনামাযী, আমীর-গরীব, মুমিন-মুনাফিক এবং অনেক সময় মুসলিম নামধারী নাস্তিকও কোন স্বার্থের খাতিরে উপস্থিত হয়ে থাকে। সুতরাং এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সকলের কাছে আল্লাহর বিধান পৌঁছে দেওয়া খতীবের কর্তব্য।

খুতবায় হাত তুলে দুআ বিধেয় নয়। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭২পৃ:)।

বরং এই সময় কেবল তর্জনীর ইশারায় দুআ করা বিধেয়। খতীবকে হাত তুলে দুআ করতে দেখে বহু সলফ বদ-দু’আ করতেন।

‘উমারাহ্ ইবনু রুওয়াইবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বিশর ইবনু মারওয়ান-কে মিম্বরের উপরে দু’হাত উঠিয়ে জুমু‘আর খুতবাহ্ দিতে দেখে বললেন, আল্লাহ তার এ হাত দু’টিকে ধ্বংস করুন। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণ পেশ করার সময় দেখেছি, তিনি তাঁর হাত এর অধিক উঁচুতে উঠাতেন না। এ কথা বলে ‘উমারাহ্ তর্জনী উঠিয়ে (রসূলের হাত উঁচুতে উঠাবার) পরিমাণের দিকে ইঙ্গিত দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১০৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৪৯৭, দারিমী ১৬০১, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৪৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৭৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৯, ইবনু হিব্বান ৮৮২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাসরুক বলেন, ‘(জুমআর দিন ইমাম-মুক্তাদী মিলে যারা হাত তুলে দুআ করে) আল্লাহ তাদের হাত কেটে নিন।’ (ইবনে আবী শাইবা ৫৪৯১ ও ৫৪৯৩ নং)।

বিধেয় নয় মুক্তাদীদের হাত তুলে দুআ। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭৩পৃ:)।

বরং ইমাম খুতবায় (হাত না তুলে) দুআ করলে, মুক্তাদীহাত না তুলেই একাকী নিম্নস্বরে বা চুপে-চুপে ‘আমীন’ বলবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪২৭, ৪২৮)।

হ্যাঁ, খুতবায় বৃষ্টি প্রার্থনা বা বৃষ্টি বন্ধ করার জন্য দুআ করার সময় ইমাম-মুক্তাদী সকলে হাত তুলে ইমাম দুআ করবেন এবং মুক্তাদীরা ‘আমীন-আমীন’ বলবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি জুমুআর দিন মসজিদে নবাবীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির ফলে) মাল সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দু'আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু হাত উঠিয়ে দু'আ করলেন, “আল্ল-হুম্মা আগিসনা- আল্ল-হুম্মা আগিসনা-, আল্ল-হুম্মা আগিসনা-” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন।)। (৩ বার)

আনাস (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! এ সময় আসমানে কোন মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিল না। আর আমাদের ও সালই পাহাড়ের মাঝে কোন ঘর-বাড়ী কিছুই ছিল না। (ক্ষণিকের মধ্যে) তার পেছন থেকে ঢালের ন্যায় অখণ্ড মেঘ উদিত হ'ল। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হ’ল। বর্ণনাকার বলেন, এরপর আল্লাহর শপথ আমরা সপ্তাহকাল যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি।

অতঃপর পরবর্তী জুমুআয় আবার এক ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব, আল্লাহর কাছে দু'আ করুন যেন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন, “আল্ল-হুম্মা হাওলানা- ওয়ালা- আলায়না- আল্ল-হুম্মা 'আলাল আ-কা-মি ওয়ায় যিরা-বি ওয়া বুতনিল আওদিয়াত ওয়া মানা-বিতিশ শাজার” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিও না। হে আল্লাহ! পাহাড়ী এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানো স্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।)।

এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে সূর্য তাপের মধ্যে চলাচল করতে লাগলাম। শারীক বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি? আনাস বললেন, আমার জানা নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৯৬৩-১৯৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩২, ৯৩৩, ১০১৩, ১০১৪, ১০১৫, ১০১৬, ১০১৭, ১০১৮, ১০১৯, ১০২১, ১০২৯, ১০৩৩, ৩৫৮২, ৬০৯৩, ৬৩৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন জরুরী কারণে খুতবা ত্যাগ করে প্রয়োজন সেরে পুনরায় খুতবা পূর্ণ করা খতীবের জন্য বৈধঃ

(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন। এমন সময় শিশু হাসান ও হুসাইন লাল রংয়ের জামা পরিহিত অবস্থায় আছাড় খেতে খেতে এগিয়ে এলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুত্ববাহ বন্ধ করে মিম্বার হতে নেমে তাদেরকে নিয়ে এসে মিম্বারে উঠে বললেনঃ আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদী ফিতনাহ স্বরূপ’’ (সূরাহ তাগাবুনঃ আয়াত ১৫)। আমি এ দু‘জনকে দেখে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারিনি। অতঃপর তিনি খুত্ববাহ দিতে লাগলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১০৯, তিরমিযী ৩৭৭৪, নাসায়ী ১৪১২, ইবনু মাজাহ ৩৬০০, আহমাদ (৫/৩৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ)....আবূ রিফা'আহ (রাযিঃ) বলেন, আমি যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলাম, তখন তিনি খুতবাহ দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকার বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এক আগন্তুক তার দীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছে। সে জানে না তার দীন কি? বর্ণনাকারী বলেন, একটি চেয়ার আনা হ’ল, মনে হয় এর পায়াগুলো ছিল লোহার। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে বসে আল্লাহ তাকে যা শিখিয়েছেন তা আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, অতঃপর এসে তার অবশিষ্ট খুতবাহ শেষ করেন।  (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৯৫, ইসলামীক সেন্টার ১৯০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামের মিম্বার থেকে নামার পর কথা বলা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন মিম্বার থেকে নেমে প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৭, তিরমিযী ৫১৭, নাসায়ী ১৪১৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১২০, আহমাদ ১১৮৭৫)। হাদিসের মানঃ শা'জ।

জুমআয় উপস্থিত ব্যক্তির কর্তব্যঃ

নামাযীর জন্য যথাসম্ভব ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা কর্তব্য।

সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিন খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসবে। কারণ কোন ব্যক্তি পেছনে থাকতে থাকতে (অর্থাৎ প্রথম সারিতে না গিয়ে পেছনের সারিতে থাকে) অবশেষে জান্নাতে প্রবেশেও পেছনে পড়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১০৮, আহমাদ ২০১১৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯২৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩৬৫, সহীহুল জামি ২০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমআর দিন নামাযী মসজিদে এসে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসে যাবেঃ

নামাযী দেরী করে এসে (সামনের কাতারে ফাঁক থাকলেও) কাতার চিরে সামনে যাওয়া এবং তাতে অন্যান্য নামাযীদেরকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক জুমআর দিনে এক ব্যক্তি লোকেদের কাতার চিরে (মসজিদের ভিতর) এল। সে সময় নবী (সাঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন। তাকে দেখে নবী (সাঃ) বললেন, “বসে যাও, তুমি বেশ কষ্ট দিয়েছ এবং দেরী করেও এসেছ।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭১৩ নং)।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জুমু‘আহর দিনে খুত্ববাহ দেয়ার উদ্দেশে মিম্বারে উঠে বললেন, সবাই বসে পড়ো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) একথা শুনে তাৎক্ষণিক মসজিদের দরজাতেই বসে পড়েন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেনঃ ওহে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ! তুমি এগিয়ে এসো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৯১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে। উত্তম পোশাক পরবে। তার কাছে থাকলে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদে গমন করবে। কিন্তু মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করবে না। এরপর যথাসাধ্য সালাত আদায় করবে। ইমাম খুতবার জন্য হুজরা হতে বের হবার পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকবে। তাহলে এ জুমু‘আহ্ হতে পূর্বের জুমু‘আহ্ পর্যন্ত তার যতো গুনাহ হয়েছে তা তার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধঃ

 জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জুমুআহর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। সে লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি বসো, তুমি (অন্যকে) কষ্ট দিয়েছ এবং অনর্থক কাজ করেছ। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৫, তালীকুর রগীব ১/২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার  শাস্তিঃ

সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনের জামা‘আতে যে ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে জাহান্নামের ‘পুল’ বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩১২৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৪৩৭, য‘ঈফ আল জামি ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মুসল্লীকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় বসা নিষেধঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিনে মসজিদে গমন করে কোন মুসলিম ভাইকে যেন তার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে নিজে না বসে। বরং সে বলতে পারে ভাই! একটু জায়গা করে দিন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৯৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫০০, ইসলামিক সেন্টার ৫৫২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সালাতের সময়) কাউকে অপরজনকে তার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে বসতে নিষেধ করেছেন। নাফি‘কে জিজ্ঞেস করা হলো, এটা কি শুধু জুমু‘আর সালাতের জন্য। উত্তরে তিনি বললেন, জুমু‘আর সালাত  ও অন্যান্য সালাতেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৫,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৯১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৭৬-৫৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুতবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য নামায নিষিদ্ধ। কিন্তু এই সময়ে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তার জন্য হাল্কা করে ২ রাকআত নামায পড়া বিধেয়। যেমন কাউকে নামায না পড়ে বসতে দেখলে খতীবের উচিৎ তাকে ঐ নামায পড়তে আদেশ করা। খুতবা শোনা ওয়াজেব হলেও এ নামাযের গুরুত্ব দিয়েছেন খোদ মহানবী (সাঃ)।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুতবাহ দানকালে সুলাইক আল-গাতাফানী মসজিদে প্রবেশ করেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তুমি দু রাকআত পড়ে নাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩০-৩১, ১১৭০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, তিরমিযী ৫১০, নাসায়ী ১৩৯৫, ১৪০৯; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৫-১৬, আহমাদ ১৩৭৫৯, ১৩৮৯৭, ১৩৯৯৬, ১৪৫৪২, ১৪৬৪৯; দারিমী ১৫৫১, ১৫৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবাহ দানকালে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলো। তিনি বলেনঃ তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তুমি দু রাকআত পড়ে নাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১১, নাসায়ী ১৪০৮, দারিমী ১৫৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতঃপর তিনি সকলের জন্য চিরস্থায়ী একটি বিধান দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেন,

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্‘আত (নফল) সালাত  আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৩৫, ইবনু হিব্বান ২৫০০, আহমাদ ১৪৪০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুল্লাহ ইবনু আবু সারহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জুমুআর দিন (মসজিদে) ঢুকলেন। মারওয়ান তখন খুতবা দিচ্ছিল। তিনি নামায আদায় করতে দাড়ালেন। মারওয়ানের চৌকিদার তাকে বসিয়ে দেওয়ার (নামায হতে বিরত রাখার) জন্য আসল। কিন্তু তিনি তা মানলেন না এবং নামায আদায় করলেন। তিনি অবসর হলে আমরা তার নিকট আসলাম। আমরা বললাম, আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর দয়া করুন, তারা আপনাকে পরাজিত করার জন্য এসেছিল। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটা করতে দেখেছি। এরপর আমি এ দুই রাকাআত কখনও ছাড়তে পারি না। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, জুমু'আর দিন এক ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে উস্ক খুস্ক অবস্থায় মসজিদে আসল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন জুমু'আর খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলে সে দুই রাকাআত নামায আদায় করল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে থাকলেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বলা বাহুল্য, খুতবা শুরু হলে লাল বাতি জ্বেলে দেওয়া, অথবা কাউকে ঐ ২ রাকআত নামায পড়তে দেখে চোখ লাল করা, অথবা তার জামা ধরে টান দেওয়া, অথবা খোদ খতীব সাহেবের মানা করা সুন্নাহ্‌-বিরোধী তথা বিদআত কাজ।

জুমআর আযানের সময় মসজিদে এলে দাঁড়িয়ে থেকে আযানের উত্তর না দিয়ে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ে খুতবা শোনার জন্য বসে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫, ৩৪৯)।

প্রকাশ থাকে যে, আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪০পৃ:)।

আর খুতবা শোনা ওয়াজেব। সুতরাং আযানের সময় পার করে খুতবা শুরু হলে নামায পড়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ওয়াজেব না হলেও ঐ সময় মহানবী (সাঃ)-এর মহা আদেশ পালন করা জরুরী।

ইমামের দিকে চেহারা করে বসা মুস্তাহাব। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) যখন মিম্বরে চড়তেন, তখন আমরা আমাদের চেহারা তাঁর দিকে ফিরিয়ে বসতাম।’ (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পরিধানে লুঙ্গি বা লুঙ্গি জাতীয় এক কাপড় পরে খুতবা চলাকালে বসার সময় উভয় হাঁটুকে খাড়া করে রানের সাথে লাগিয়ে উভয় পা-কে দুইহাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে অথবা কাপড় দ্বারা বেঁধে বসা বৈধ নয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ)বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৩, আবূ দাঊদ ১১১০, আত্ তিরমিযী ৫১৪, আহমাদ ১৫৬৩০, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮১৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯১২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮২, সহীহ আল জামি ৬৮৭৬, আহমাদ (৩/৪৩৯), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কারণ, এতে শরমগাহ্‌ প্রকাশ পাওয়ার, চট করে ঘুম চলে আসার এবং তাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই।

খুতবা শোনা ওয়াজেব। আর এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা, সালাম ও সালামের উত্তর, হাঁচির হামদের জবাব, এমনকি আপত্তিকর কাজে বাধা দেওয়াও নিষিদ্ধ।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমামের খুত্ববাহ চলাকালে যদি তুমি কাউকে বলো চুপ করো, তবে তুমি অনর্থক কাজ করলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৯৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১২,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১২, নাসায়ী ১৪০২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৪১৬, ইবনু হিব্বান ২৭৯৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮০, ইরওয়া ৬১৯, সহীহ আত্ তারগীব ৭১৬, আহমাদ ৭২৮৮, ৭৬২৯, ৭৭০৬, ৮৮৫৭, ৮৯০২, ৯৯২৭, ১০৩৪২, ১০৫০৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩২, দারিমী ১৫৪৮-৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনতে হবেঃ

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন ইমামের খুতবাহ দানকালে যখন তুমি তোমার সাথীকে বললে, চুপ করো তখন তুমি অনর্থক কাজ করলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৯৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১২,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১২, নাসায়ী ১৪০২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৪১৬, ইবনু হিব্বান ২৭৯৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮০, ইরওয়া ৬১৯, সহীহ আত্ তারগীব ৭১৬, আহমাদ ৭২৮৮, ৭৬২৯, ৭৭০৬, ৮৮৫৭, ৮৯০২, ৯৯২৭, ১০৩৪২, ১০৫০৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩২, দারিমী ১৫৪৮-৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ (খুতবাহ দিতে) দাঁড়িয়ে সূরাহ তাবারাকা (মুলক) পাঠ করেন এবং আমাদের উদ্দেশে আল্লাহ্‌র দিনসমূহের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আবূ দারদা অথবা আবূ যার(রাঃ) আমাকে খোঁচা মেরে বলেন, সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে? আমি তো তা এখনই শুনলাম। তিনি তার দিকে ইশারা করে বলেন, চুপ করুন। সাহাবীরা চলে গেলে তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে তা অবহিত করেননি? উবাই (রাঃ) বলেন, আজকে আপনার সালাত হয়নি, অনর্থক কাজই হয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে বর্ণনা করেন এবং উবাই যা বলেছেন, তাঁকে তাও অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উবাই ঠিকই বলেছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১১, আহমাদ ২০৭৮০, তালীকুর রগীব ২৫৭, সহীদ তারগীব ৭২০, ইরওয়াহ ৮০-৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘অসার বা অনর্থক কর্ম করবে’ এর একাধিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে; যেমন, তুমি জুমআর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা তোমারও কথা বলা হবে। অথবা তুমিও ভুল করবে। অথবা তোমার জুমুআহ বাতিল হয়ে যাবে। অথবা তোমার জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে -ইত্যাদি। তবে বিশেষজ্ঞ উলামাদের নিকট শেষোক্ত ব্যাখ্যাই নির্ভরযোগ্য। কারণ, এরুপ ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র বিন আস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করল, তার স্ত্রীর সুগন্ধি (আতর) থাকলে তা ব্যবহার করল, উত্তম লেবাস পরিধান করল, অতঃপর (মসজিদে এসে) লোকেদের কাতার চিরে (আগে অতিক্রম) করল না এবং ইমামের উপদেশ দানকালে কোন বাজে কর্ম করল না, সে ব্যক্তির জন্য তা উভয় জুমআর মধ্যবর্তী কৃত পাপের কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কর্ম করল এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করল সে ব্যক্তির জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে।” (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭২০নং)।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাবে, সেখানে (সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সালাত আদায় করে ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে-তাহলে এটা তার জন্য এ জুমু‘আহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনহর কাফফারা হয়ে যাবে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন প্রকারের লোক জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হয়। এক প্রকার হলো, যারা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ে হাজির হয়। জুমু‘আর দ্বারা তাদের এটাই হয় লাভ। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো, আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে চাইতে হাজির হয়। এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর কাছে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। আল্লাহ চাইলে তাদের তা দান করতে পারেন। আর ইচ্ছা না করলে নাও দিতে পারেন। তৃতীয় প্রকারের লোক হলো, শুধু জুমু‘আর সালাতের উদ্দেশে নিরবতার সাথে মসজিদে উপস্থিত হয়। সামনে যাবার জন্য কারো ঘাড় টপকায় না। কাউকে কোন কষ্ট দেয় না। এ ধরনের লোকদের এ জুমু‘আহ্ থেকে পরবর্তী জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সময়ে (সগীরাহ্) গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যায়। তাছাড়া আরো অতিরিক্ত তিন দিনের কাফফারাহ্ হবে এজন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন উত্তম কাজ করবে তার জন্য এর দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে’’-(সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬: ১৬০)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৩, সুনানুল বায়হাক্বী আল কুবরা ৫৮৩১, শু‘আবুল ঈমান ২৭৪২, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৩, সহীহ আল জামি ৮০৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আলকামাহ্‌ বিন আব্দুল্লাহর সাথে তাঁর এক সাথী খুতবা চলাকালে কথা বলছিল। তিনি তাকে চুপ করতে বললেন। নামাযের পর ইবনে উমার (রাঃ)-এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, ‘তোমার তো জুমুআহই হয়নি। আর তোমার সাথী হল একটা গাধা।’ (ইবনে আবী শাইবা ৫৩০৩নং)।

প্রকাশ থাকে যে, ইমাম মিম্বরের উপর বসে থাকা অবস্থায়, অর্থাৎ খুতবা বন্ধ থাকা অবস্থায় কথা বলা অবৈধ নয়। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৭৩পৃ:)।

যেমন ইমামের খুতবা শুরু না করা পর্যন্ত (প্রয়োজনীয়) কথাবার্তা (এমনকি আযানের সময়ও) বলা বৈধ। ষা’লাবাহ্‌ বিন আবী মালেক কুরাযী বলেন, হযরত উমার ও উসমানের যুগে ইমাম বের হলে আমরা নামায ত্যাগ করতাম এবং ইমাম খুতবা শুরু করলে আমরা কথা বলা ত্যাগ করতাম। (ইবনে আবী শাইবা, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪০পৃ:)।

খুতবা চলা অবস্থায় কেউ মসজিদ এলে মসজিদে প্রবেশ করার আগে রাস্তায় খুতবা শুনতে পেলে রাস্তাতেও কারো সঙ্গে কথা বলাও বৈধ নয়।

বৈধ নয় খুতবা চলা অবস্থায় হাতে কোন কিছু নিয়ে ফালতু খেলা করা। যেমন মিসওয়াক করা, তাসবীহ-মালা (?) নিয়ে খেলা করা, মসজিদের মেঝে, কাঁকর বা কুটো স্পর্শ করে খেলা করা ইত্যাদি।

উমাইয়্যাহ ইবনু বিস্তাম (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমুআর সালাতে আসল, অতঃপর সাধ্যমত (সুন্নাত) সালাত আদায় করল, অতঃপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকল, অতঃপর ইমামের সাথে (জুমুআর) সালাত আদায় করল, এতে তার দু' জুমুআর মধ্যকার দিনসমূহের এবং আরো তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।  (মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২-১৮৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৫৭, ইসলামীক সেন্টার ১৮৬৪, বায়হাক্বী (৩/২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুতবা চলাকালে তন্দ্রা (ঢুল) এলে জায়গা পরিবর্তন করে বসা বিধেয়ঃ

খুতবা চলাকালে তন্দ্রা (ঢুল) এলে জায়গা পরিবর্তন করে বসা বিধেয়। এতে তন্দ্রা দূরীভূত হয়ে যায়।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ মসজিদে বসে ঢুললে সে যেন তার বসার জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় বসে।” (আবূদাঊদ, সুনান ১১১৯ নং, তিরমিযী, সুনান, জামে ৮০৯নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু‘আর সালাতের সময় কারো যদি তন্দ্রা পেয়ে বসে তাহলে সে যেন স্থান পরিবর্তন করে বসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৯, আত্ তিরমিযী ৫২৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫২৫৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮৭, সহীহ আল জামি ৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে বসা, কেউ কোন কারণে জায়গা ছেড়ে উঠে গেলে এবং সে ফিরে আসবে ধারণা হওয়া সত্ত্বেও তার সেই জায়গায় বসা বৈধ নয়।

কিন্তু খুতবা শুনতে শুনতে ঘুম এলে (কথা না বলে) ইঙ্গিতে পাশের সাথীর সাথে জায়গা বদল করা উত্তম। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমাদের কেউ জুমআর দিন ঢুলতে শুরু করে, তখন তার উচিৎ তার সঙ্গীর জায়গায় গিয়ে বসা এবং তার সঙ্গীর উচিৎ তার ঐ জায়গায় বসা।” (বায়হাকী, জামে ৮১২নং)।

জ্ঞাতব্য যে, ইমামের কলেমা অথবা দরুদ পড়ার সাথে সাথে মুসল্লীদের সমস্বরে সশব্দে তা পড়া বিদআত। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ২৬৫পৃ:)।

প্রকাশ থাকে যে, বিশেষ করে জুমুআহ বা ঈদের নামাযে অত্যন্ত ভিড়ের ফলে যদি সিজদাহ করার জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলেও জামাআতে নামায পড়তে হবে। আর এই অবস্থায় সামনের নামাযীর পিঠে সিজদা করতে হবে। ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) আমাদের কাছে সিজদার সূরা পড়তেন। অতঃপর সিজদায় জায়গায় তিনি সিজদাহ করতেন এবং আমরাও সিজদাহ করতাম। এমনকি ভিড়ের ফলে আমাদের কেউ সিজদাহ করার মত জায়গা না পেলে অপরের (পিঠের) উপরে সিজদাহ করতাম।’ (বুখারী ১০৭৬নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা্ করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা্ করতাম। এতে এত ভীড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা্ করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৭৬, ১০৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

হযরত উমার বলেন, পিঠের উপর উপর সিজদাহ করতে হবে। এই মত গ্রহণ করেছেন কুফাবাসীগণ, ইমাম আহমাদ এবং ইসহাক। পক্ষান্তরে আত্বা ও যুহ্‌রী বলেন, সামনের লোকের উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করে সে উঠে গেলে তারপর সিজদাহ করবে। আর এমত গ্রহণ করেছেন ইমাম মালেক ও অধিকাংশ উলামাগণ। (কিন্তু এর ফলে ইমামের বিরোধিতা হবে।) ইমাম বুখারীর লিখার ভঙ্গিতে বুঝা যায় যে, তিনি মনে করেন, এই অবস্থায় নামাযী নিজ সামথ্য অনুযায়ী সিজদাহ করবে। এমনকি নিজ ভায়ের পিঠে সিজদাহ করতে হলে তাও করবে। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৬৫২)।

অবশ্য (মাসজিদুলহারামাইনে) সামনে মহিলা পড়লে সিজদাহ না করে একটু ঝুঁকে বা ইশারায় নামায আদায় করবে।

অযু নষ্ট হলে করণীয়ঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে তোমাদের কারো অযু নষ্ট হলে হলে সে যেন তার নাক চেপে ধরে বেরিয়ে যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১২২২, বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/২৫৪), হাকিম (১/১৮৪), দারাকুতনী (১/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমু‘আহর দিন সালাতের পূর্বে গোলাকার হয়ে বসা এবং ইমামের খুতবাহ দানকালে নিতম্বের উপর বসা নিষেধঃ

(ক) আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন (ফরয) সালাত পড়ার পূর্বে মসজিদে গোলাকার হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২২, নাসায়ী ৭১৪, আহমাদ ৬৬৩৮, তালীক ইবনু খুযাইমাহ ১৩০৪, ১০৩৫, ১৮১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আমর ইবনু শুআইব (রহ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমুআহর দিন ইমামের খুতবাহ দানকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিতম্বের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩৪, সহীহ আবী দাউদ ১০১৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

স্থানীয় ভাষা বা মাতৃভাষায় খুতবা প্রদানঃ

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-

"আমি প্রত্যেক রসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য।আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম: ৪)।

এর মানে হলো- প্রত্যেক রসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করলেন, যাতে হিদায়াতের রাস্তা বুঝতে কোন প্রকার জটিলতা না আসে।

জুময়ার বা ঈদের খুতবা মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত আবশ্যকীয় বিষয় বলে ইসলামি জীবনব্যবস্খায় এটির প্রয়োগের গুরুত্বও অপরিসীম। খুতবার মানে হলো বক্তব্য, যা উপস্থিত লোকদের জন্য দেয়া হয়। খুতবা দেয়ার উদ্দেশক উপস্থিতি আর লক্ষ্য হলো ইসলামী শরীয়ার বিবরণ ও সমসাময়িক বিষয়ে মানুষদের বুঝানো।

জুময়ার দিনে প্রথম মসজিদে প্রবেশকারীর সওয়াব সংক্রান্ত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত হাদিসে জিকির শব্দটি খুতবা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; রাসূল সা: বলেন, ‘…তারা মসজিদে প্রবেশ করে ও আল্লাহর জিকির (খুতবা) শুনতে থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

 জুময়ার খুতবা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ায়, রাসূল সা: মনোযোগসহকারে খুতবা শোনার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারি ও মুসলিম)।

যদি উপস্থিত লোকজন খুতবার মর্মই বুঝতে না পারলেন, তাহলে খুতবার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যর্থ আর "মনোযোগের" দাবী অমূলক।

মাতৃভাষায় খুতবার যৌক্তিকতা ও মাহাত্ম্যঃ

রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং ছাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নছীহত করতেন। এখন যারা নবীজির উত্তরসূরী হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।

এই বিষয়ে প্রথম যুগ থেকেই বিতর্ক ছিল। সুতরাং আরবী ছাড়া খুতবা দেওয়া বৈধ নয়,বা বিষয়টা নতুন সৃষ্ট" যারা বলেন তারা অসাড় কথা বলেন।

(ক) ইমাম আবু হানিফা এবং হাম্বলি ও শাফেয়ি মাজহাবের একদল আলেমের মতে সমর্থন থাক আর না থাক খুতবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য আরবি ভাষায় খুতবা প্রদান শর্ত নয়।

(খ) হেদায়াতে লেখা আছে-ইমাম আবু হানিফার মতে, সালাতও ফারসী ভাষায় বৈধ, এবং খুতবা -তাশাহহুদ -অনারব ভাষায় আযান দিলেও চলবে।

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)।

(গ) আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী ভাষায়ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)।

(ঘ) আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)।

(ঙ) হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসী ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ।

(চ) হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়।

যদি সালাত অন্য ভাষায় বৈধ বলা যায়, তাহলে খুতবা কেন নয়?

ইসলামের প্রথম যুগে অনারবি ভাষায় খুতবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত না হওয়ার কারণ স্পষ্ট; কেননা সে সময় ইসলামের বিস্তৃতি মূলত আরব ভূখণ্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল, আরব ছাড়া যেসব অনারব রাষ্ট্রে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে স্খান নিয়েছিল তারা অতি অল্পসময়ে আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।

খুতবার মূল দাবি " নসিহত" অনুসারে উপস্থিত লোকজনদের মাঝে অধিকাংশের বোধগম্য ভাষাতেই দেওয়া সঠিক ও যুক্তিযুক্ত।

কেননা-

(ক) খুতবা আলাদা কোনো ইবাদত নয়, এটা ঈদ ও জুমআর সাথে সংশ্লিষ্ট। সুতরাং এটাকে সালাতের সাথে মিলানো ঠিক নয়।

(খ) সালাতের সংজ্ঞায় রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- "নিশ্চয়ই এই সালাতে মানুষের কোনো কালাম নেই, এটা তাসবীহ ও কেরাতের নাম" (দ্রষ্টব্য সহীহ মুসলিম)।

সালাতের নিয়ম-পদ্ধতি ও পঠিত শব্দাবলী নির্দিষ্ট। খুতবার জন্য নির্দিষ্ট কোনো শব্দাবলী নেই এবং সবাই একই পদ্ধতিতে খুতবা দেয় না।

(গ) সালাতের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা আর খুতবার উদ্দেশক উপস্থিতির মধ্যে নসিহত।

বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞের মতে আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদান বৈধ ও জরুরি। এ সম্পর্কিত কয়েকটি ফতোয়া নিচে উল্লেখ করা হলো -

(ক) ইসলামি ফিকহ পরিষদ, ১৪০২ হিজরির ৮-১৬ রবিউস সানিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলনের পাঁচ নম্বর সিদ্ধান্ত। অনারব রাষ্ট্রগুলোতে অনারবি বা আঞ্চলিক ভাষায় খুতবা প্রদান ও নামাজে মাইক ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে (সিদ্ধান্ত নম্বর ৫) পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়:….এ বিষয়ে আমরা অধিকতর ন্যায়সঙ্গত যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি তা হলোন্ধ অনারব রাষ্ট্রগুলোয় জুময়া ও দুই ঈদের নামাজের খুতবা শুদ্ধ হওয়ার জন্য আরবি ভাষা শর্ত নয়। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হলো, খতিব খুতবার সূচনা, পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলো অবশ্যই আরবিতে উচ্চারণ করবেন। অবতীর্ণ আয়াত কুরআনের ভাষায় তিলাওয়াত করবে, যাতে অন্যান্য ভাষার মানুষ আরবি শিক্ষা ও কুরআনের ভাষা অনুশীলনে আগ্রহী হয় এবং মানুষের বোধগম্যতার খাতিরে খতিব খুতবার মূল আলোচনা স্খানীয় ভাষায় প্রদান করবেন। (পৃষ্ঠা- ৯৭/৯৮)

(খ) সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্খায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত। (৮/২৫৪-২৫৫, ফতোয়া নম্বর- ৬৮১২)।

(গ) সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ র:-এর দু’টি ফতোয়া (ফতোয়া শেখ বিন বাজ ১২/৩৭০-৩৭৫) যা বর্তমানে তার ওয়েবসাইটে চলমান রেখেছেন।

(ঘ) শেখ মোহাম্মদ বিন উছাইমিন র: বলেন: প্রকৃতপক্ষে উপস্খিত মুসল্লিদের দুর্বোধ্য ভাষায় জুময়ার খুতবা প্রদান বৈধ নয়। উদাহরণস্বরূপ যদি তারা অনারবি কোনো ভাষাভাষী হয় এবং তারা আরবি ভাষা ভালোভাবে অবগত না থাকে তবে খতিব তাদের মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান করবেন। কেননা খুতবার মূল উদ্দেশ্য উপস্খিত লোককে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের পদ্ধতি অনুশীলন ও বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামি নির্দেশনা প্রদান। তবে, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের আয়াতগুলো আরবিতেই তিলাওয়াত করবেন এবং আঞ্চলিক ভাষায় এর ব্যাখ্যা করবেন (ফতোয়া আরকানুল ইসলাম: পৃষ্ঠা ৩৯৩)।

উপরোল্লিখিত মতামতের সমর্থনে মহাগ্রন্থ আল কুরআন এবং হাদিসে রাসূল সা:-এর বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া যায় এবং সাধারণ বুদ্ধি-বিবেকও এটিকে সমর্থন করে। ভাষা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক উত্তম নেয়ামত এবং তার অস্তিত্বের প্রমাণ। তিনি বলেন: ‘তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে আকাশগুলো ও জমিনের সৃষ্টি আর তোমাদের ভাষাগুলো ও তোমাদের বর্ণের পার্থক্য।’ (সূরা রুম: ২২)।

"আমি যদি অনারবী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম, তাহলে ওরা অবশ্যই বলত, ‘এর আয়াতগুলি (বোধগম্য ভাষায়) বিবৃত হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, এর ভাষা অনারবী অথচ রসূল আরবী!’ বল, বিশ্বাসীদের জন্য এ পথনির্দেশক ও ব্যাধির প্রতিকার। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে এদের জন্য অন্ধকারস্বরূপ। এরা এমন যে, যেন এদেরকে বহু দূর হতে আহবান করা হয়। (সূরা হা-মিম সাজদাহ:৪৪)।

এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অহী করেছি; যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কাবাসীদেরকে এবং ওর আশেপাশের বাসিন্দাকে...(সূরা আশশূরা: ৭)।

"আমি এ অবতীর্ণ করেছি কুরআনরূপে আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা যুখরূফ: ৩)।

বোধগম্য ভাষাতে খুতবা না দেওয়াতে আমাদের সমাজে বিদআত চালু হয়েছে- খুতবার আগে নসিহতের নামে (মাতৃভাষায়) আরেকটি খুতবা।

অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে বলবে, নিজের ভাষায় নসিহত করলে দোষ কোথায়? মানুষ তা নাহলে দ্বীন বুঝবে কীভাবে? কুরআন ও হাদীসে নিষেধ কোথায়??? ইত্যারদি

তাদেরই বলব- খুতবা আরবী ছাড়া দেওয়া যাবে না, নিষেধ আছে কোথায়?

তাই বলব-

খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেননি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং বিদআত বর্জন করে খুতবাটাই বোধগম্য ভাষাতে দেয়া প্রয়োজন। এতেই উম্মাতের জন্য মঙ্গল।

এছাড়া জুমআর জমায়েত মুসলিমদের একটি প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। সাপ্তাহিক এই প্রশিক্ষণে মুসলিমের বিস্মৃত কথা স্মরণ হয়, চলার পথে অন্ধকারে আলোর দিশা পায়, সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহার গড়তে সহায়তা পায়, ঈমান নবায়ন হয়, হৃদয় নরম হয়, মৃত্যু ও পরকালের স্মরণ হয়, তওবা করতে অনুপ্রাণিত হয়, ভালো কাজ করতে এবং খারাপ কাজ বর্জন করতে উৎসাহ্‌ পায়, ইত্যাদি।

তাই খুতবার ভূমিকা আরবীতে হওয়ার পর স্থানীয় ভাষায় বাকী খুতবা পাঠ বৈধ। যেহেতু খুতবার আসল উদ্দেশ্য হল জনসাধারণকে শরীয়তের শিক্ষা ও উপদেশ দান করা। আর তা আরবীতে হলে উদ্দেশ্য বিফল হয়। সুতরাং যে খুতবা আরবীতে হতো তারই ভাবার্থ স্থানীয় ভাষায় হলে মুসলিমদেরকে সপ্তাহান্তে একবার উপদেশ ও পথ নির্দেশনা দান করার মত মহান উদ্দেশ্য সাধিত হয়। পক্ষান্তরে খুতবা নামাযের মত নয়। নামাযে অন্য ভাষা বললে নামায বাতিল। কিন্তু খুতবা তা নয়। যেমন খুতবা ছেড়ে অন্য কথা বলা যায়, নামাযে তা যায় না। ইত্যাদি। (দ্র: ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪২২-৪২৩, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৮৪)।

পক্ষান্তরে খুতবার আগে স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেওয়া বিধেয় নয়। কারণ, উপায় থাকতেও ডবল খুতবা হয়ে যায় তাতে। ডিষ্টার্ব হয় নামায, তেলাওয়াত ও যিক্‌ররত মুসল্লীদের। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৭১-৭২)।

উল্লেখ্য যে, কোন স্থানের জামাআতে খুতবা দেওয়ার মতো কোন লোক না থাকার ফলে যদি খুতবা দেওয়া না হয়, তাহলে সেই জামাআতের লোক জুমুআহ না পড়ে যোহ্‌র পড়বে। (ইবনে আবী শাইবা ৫২৬৯-৫২৭৬নং দ্র:)।

জ্ঞাতব্য যে, যিনি খুতবা দেবেন তাঁরই নামায পড়া জরুরী নয়। যদিও সুন্নত হল খতীবেরই ইমামতি করা। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১০, ৪১৩)।

জুমআর সালাত ও তার সুন্নতী ক্বিরাআতঃ

জুমআর নামায ফরয ২ রাকআত। এতে ক্বিরাআত হবে জেহরী। এ নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা বা আয়াত যথানিয়মে পড়া যায়। তবুও সুন্নত হল, প্রথম রাকআতে সূরা জুমুআহ (সম্পূর্ণ) এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা মুনাফিকূন (সম্পূর্ণ) পাঠ করা।

উবাঈদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারওয়ান ইবনুল হাকাম আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কে মদিনা্য় তার স্থলাভিষিক্ত করে মক্কা্য় যান। আবূ হুরাইরাহ আমাদের নিয়ে জুমুআহর দিন সালাত পড়লেন। তিনি প্রথম রাকআতে সূরাহ জুমুআহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরাহ ইযা জাআকাল মুনাফিকূন পড়েন। উবাঈদুল্লাহ্ (রহ ) বলেন, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সালাত থেকে অবসর হলে আমি তাকে বললাম, আপনি এমন দুটি সূরাহ পড়লেন, যা আলী (রাঃ) কূফায় পড়েছিলেন। আবূ হুরাইরাহ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ দুটি সূরাহ পড়তে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১২৪, ইরওয়াহ ৬৪, সহীহ আবী দাউদ ১০২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা প্রথম রাকআতে সূরা জুমুআহ (সম্পূর্ণ) এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়াহ্‌ পাঠ করা।

উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাহ্হাক ইবনু কায়েস (রহ ) নোমান ইবনু বাশীর (রাঃ) কে লিখে পাঠান যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ সূরাহ জুমুআহর সাথে আর কোন্ সূরাহ পড়তেন তা আপনি আমাদের অবহিত করুন। তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ সূরাহ পড়তেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৩৩, নাসায়ী ১৪২৩-২৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১২২-২৩, আহমাদ ১৭৯১৬, ১৭৯৪২, ১৭৯৬৩, ১৭৯৭০; দারিমী ১৫৬৮, ১৬০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১২৮১, ইবনু খুযাইমাহ  ১৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 অথবা প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়াহ্‌ পাঠ করা।

আবূ ইনাবা আল-খাওলানী থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ সাব্বিহ ইসমা রব্বিকাল আলা সূরাহ এবং হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ সূরাহ পড়তেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১২০, সহীহ আবী দাউদ ১০২৭, ১০৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমআর রাকআত ছুটে গেলে করণীয়ঃ

কারো জুমআর এক রাকআত ছুটে গেলে বাকী আর এক রাকআত ইমামের সালাম ফিরার পর উঠে পড়ে নিলে তার জুমুআহ হয়ে যাবে।

অনুরুপ কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ পেলেও ঐ রাকআত এবং তার সাথে আর এক রাকআত পড়লে তারও জুমুআহ হয়ে যাবে।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাত এর এক রাকআত পেলো, সে যেন তার সাথে আরো এক রাকআত মিলায় (পড়ে)। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১২১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩৮, ইরওয়াহ ৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাক্‘আত পেল, সে যেন পূর্ণ সালাত পেল।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৫৮-১২৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৭, নাসায়ী ৫৫৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ২০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৩৩৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮১৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪০০, ইবনু হিব্বান ১৪৮৩, সহীহ আল জামি ৫৯৯৪, ইরওয়া ৬২৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১২৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাতের বা অন্য সালাতের এক রাকআত পেলো, সে (পূর্ণ) সালাত পেয়ে গেলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১২৩, নাসায়ী ৫৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিন্তু যদি কেউ দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ থেকে ইমামের মাথা তোলার পর জামাআতে শামিল হয়, তাহলে সে জুমআর নামায পাবে না। এই অবস্থায় তাকে যোহরের ৪ রাকআত আদায়ের নিয়তে জামাআতে শামিল হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর ৪ রাকআত ফরয পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১৮, ৪২১)।

যেমন জামাআত ছুটে গেলে জুমআও ছুটে যাবে। এ ক্ষেত্রেও একাকী যোহ্‌র পড়তে হবে। কারণ জামাআত ছাড়া জুমুআহ হয় না।

 “যে ব্যক্তি এক রাকআত নামায পায় না, সে নামায পায় না।” এ জন্যই ইমাম তিরমিযী উক্ত হাদীসের টীকায় বলেছেন, ‘এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নবী (সাঃ)-এর অধিকাংশ সাহাবা ও অন্যান্য আহলে ইলমগণ এহাদীসের উপর আমল করেছেন। তাঁরা বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমআর এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের তাশাহহুদের) বৈঠক অবস্থায় জামাআত পায়, সে যেন যোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।” এ মত গ্রহণ করেছেন সুফয়্যান সওরী, ইবনুল মুবারক, শাফেয়ী, আহমাদ এবং ইসহাক (রহঃ)।’

ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর এক রাকআত পেয়ে যায়, সে ব্যক্তি যেন আর এক রাকআত পড়ে নেয়। কিন্তু যে (দ্বিতীয় রাকআতের) রুকূ না পায়, সে যেন যোহরের ৪ রাকআত পড়ে নেয়।” (ইবনে আবী শাইবা, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৬২১নং)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ইমামের সাথে) জুমু‘আর (সালাতের) এক রাক্‘আত পেয়েছে, সে যেন এর সাথে দ্বিতীয় রাক্‘আত যোগ করে। আর যার দু’ রাক্‘আতই ছুটে গেছে, সে যেন চার রাক্‘আত আদায় করে; অথবা বলেছেন, সে যেন যুহরের সালাত  আদায় করে নেয়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১১২১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫৩৩৫, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৫১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন কোন বর্ণনায় তাশাহহুদ পেলে নামায পেয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর তার মানে হল জামাআতের সওয়াব পেয়ে যাওয়া। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩/৮২)।

প্রকাশ থাকে যে, জুমআর খুতবা না শুনলেও; বরং ১ রাকআত নামায না পেলেও জুমুআহ হয়ে যাবে। যেমন, জুমআর খুতবা দিলে অথবা শুনলেও যদি নামাযের ১ রাকআতও না পায়, তাহলে তাকে যোহ্‌রই পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১০)।

উল্লেখ্য যে, জুমআর নামায পড়তে পড়তে যদি কারো ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এবং ওযূ করে ফিরে এসে যদি দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ পেয়ে যায়, তাহলে সে আর এক রাকআত পড়ে নেবে। নচেৎ সিজদা বা তাশাহহুদ পেলে যোহরের নিয়তে শামিল হয়ে ৪ রাকআত পড়বে। তদনুরুপ জামাআত ছুটে গেলেও যোহ্‌র পড়বে।

অনুরুপ কোন ইমাম সাহেব যদি বিনা ওযূতে জুমুআহ পড়িয়ে নামাযের শেষে মনে হয়, তাহলে মুক্তাদীদের নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর ইমাম ঐ নামায কাযা করতে ৪ রাকআত যোহ্র পড়বেন। (আল-মুন্তাকা মিন ফাতাওয়াল ফাওযান ৩/৬৮)।

জুমআর দুই রাকাত ফরজ সালাতের আগে চার রাকআত ‘কাবলাল জুমুআহ’:

জুমআর খুতবার পূর্বে চার রাকআত ‘কাবলাল জুমুআহ’ বলে কোনো নির্দিষ্ট রাকআত সুন্নত নেই। অতএব নামাযী মসজিদে এলে ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ ২ রাকআত সুন্নত পড়ে বসে যেতে পারে এবং দুআ, দরুদ তাসবীহ- যিকর বা তেলাওয়াত করতে পারে। আবার ইচ্ছা হলে নামাযও পড়তে পারে। তবে এ নামায হবে নফল এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যায়।

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করবে। উত্তম পোশাক পরবে। তার কাছে থাকলে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদে গমন করবে। কিন্তু মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করবে না। এরপর যথাসাধ্য সালাত আদায় করবে। ইমাম খুতবার জন্য হুজরা হতে বের হবার পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকবে। তাহলে এ জুমু‘আহ্ হতে পূর্বের জুমু‘আহ্ পর্যন্ত তার যতো গুনাহ হয়েছে তা তার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৭, আহমাদ ১১৭৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৬২, শারহু মা‘আনির আসার ২১৬৪, ইবনু হিব্বান ২৭৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬০, সহীহ আল জামি ৬০৬৭)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যখানে সালাত  আছে। অতঃপর তৃতীয়বার বললেনঃ এই সালাত ওই ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়, ঐ ব্যক্তির জন্য যে আদায় করতে চায়। সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-তে বর্ণিত আছে, যার ইচ্ছে হয় পড়তে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬২৪, ৬২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮২৫-১৮২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩৮,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৮৩, নাসায়ী ৬৮১, তিরমিযী ১৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১৬২, আহমাদ ১৬৭৯০, দারেমী ১৪৮০, সহীহ আল জামি ২৮৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীস দ্বারা কাবলাল জুমআর সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, বিদিত যে, জুমআর আযান ও ইকামতের মাঝে থাকে খুতবা। আর মহানবী (সাঃ)-এর যুগে পূর্বের আর একটি আযান ছিল না। আর সুন্নত প্রমাণ হলেও মুআক্কাদাহ ও নির্দিষ্ট সংখ্যক নয়।

তদনুরুপ “এমন কোন ফরয নামায নেই, যার পূর্বে ২ রাকআত নামায নেই।” (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২, জামে ৫৭৩০নং)।

এ হাদীস দ্বারাও জুমআর পূর্বে ২ রাকআত সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, জুমআর ফরয নামাযের পূর্বে খুতবা হয়। আর খুতবার পূর্বে ২ রাকআত নামায এ দ্বারা প্রমাণিত হয় না। (দ্র: সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২নং)।

সতর্কতার বিষয় যে, ইমামের খুতবা চলাকালে কেউ মসজিদে উপস্থিত হলে তাকে সেই অবস্থায় হাল্কা করে যে ২ রাকআত পড়তে হয়, তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নয়; বরং তা হল তাহিয়্যাতুল মাসজিদ।

জুমআর পরে “বা’দাল জুমআর” ৪ অথবা ২ রাকআত সুন্নতঃ

জুমআর পর মসজিদে সুন্নত পড়লে একটু সরে গিয়ে বা কারো সাথে কোন কথা বলার পরে ৪ রাকআত নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হয়।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমুআহর (ফরয) সালাতের পর আরো সালাত আদায় করতে চাইলে চার রাকআত (সুন্নাত) পড়বে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫২৩, নাসায়ী ১৪২৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৩১, আহমাদ ৭৩৫২, ৯৪০৬, ১০১০৮; দারিমী ১৫৭৫, ইরওয়াহ ৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমুআহ পড়ে, সে যেন তারপর কোন কথা না বলা অথবা বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায না পড়ে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম,সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৩২৯নং)।

দুই রাকআত ফরজ সালাতের পর মসজিদে থাকলে চার রাকআত আর নিজ ঘরে এলে দুই রাকআত সালাত আদায় করাঃ

(ক) যুহায়র ইবনু হারব, আমর আন নাকিদ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমুআর সালাতের পর সালাত আদায় করতে চাইলে সে যেন চার রাকাআত আদায় করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯০৮, ইসলামীক সেন্টার ১৯১৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জুমুআহর (ফরয) সালাত  পড়ার পর তার ঘরে এসে দু রাকআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩০, ১১৩১,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৭, ১১৬৯, ১১৭৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৯; সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫২১-২২, নাসায়ী ৮৭৩, ১৪২৭-২৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১২৭-২৮, ১১৩০, ১১৩২, ১২৫২; আহমাদ ৪৪৯২, ৪৫৭৭, ৪৯০২, ৫২৭৪, ৫৪২৫, ৫৪৫৬, ৫৬৫৫, ৫৭৭৩, ৬০২০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪০০, দারিমী ১৪৩৭, ১৫৭৩-৭৪, ইরওয়াহ ৯১, সহীহ আবী দাউদ ১০৩২, ১০৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমুআর সালাতের পর আরো সালাত আদায় করলে চার রাকাআত (সুন্নাত) আদায় কর। আমর (রহঃ) তার রিওয়ায়াতে আরো বলেন, ইবনু ইদরীস বলেছেন যে, সুহায়ল (রহঃ) বলেন, তোমরা তাড়াহুড়ায় থাকলে মসজিদে দু' রাকাআত এবং (বাড়িতে) ফিরে গিয়ে দু' রাক’আত আদায় করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯০৭, ইসলামীক সেন্টার ১৯১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ জুমু‘আহর (ফারয) সালাতের পর সালাত আদায় করতে চাইলে সে যেন চার রাক‘আত আদায় করে। ইবনু ইউনুসের বর্ণনায় রয়েছে, জুমু‘আহর সালাত আদায়ের পরে তোমরা চার রাক‘আত সালাত আদায় করবে। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! তুমি মসজিদে দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) আদায়ের পর গন্তব্যে পৌছলে অথবা বাড়িতে এলে সেখানেও দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৩১, নাসায়ী ১৪২৫, ৫২৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৩২, আহমাদ (২/২৪৯), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৮৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য যদি কেউ মসজিদে ২ রাকআত পড়ে তাও বৈধ। পরন্তু যদি কেউ ২ অথবা ৪ রাকআত বাসায় পড়ে তাহলে সেটাই উত্তম। কারণ, মহানবী (সাঃ) বলেন, “ ফরয নামায ছাড়া মানুষের শ্রেষ্ঠতম নামায হল তার স্বগৃহে পড়া নামায।” (নাসাঈ, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, সহিহ তারগিব ৪৩৭নং, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪১-৩৪২পৃ:)।

প্রকাশ থাকে যে, জুমআর পরে যোহরের নিয়তে ৪ রাকআত এহ্তিয়াতী যোহ্‌র পড়া বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭৪পৃ:, মু’জামুল বিদা’ ১২০, ৩২৭পৃ:)।

যেমন বিদআত রমযানের শেষ জুমআকে জুমআতুল বিদা নাম দিয়ে কোন খাস মসজিদে ঐ জুমুআহ পড়তে যাওয়া।

বিনা ওজরে জুমু‘আহর সালাত ত্যাগ করলে তার শাস্তিঃ

(ক) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ), আবূল জাদ আদ-দমরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অবহেলা করে একাধারে তিন জুমুআহ্ ত্যাগ করলো, তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়।

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১২৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫০০, সুনান ইবনু মাজাহ ১১২৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭১, নাসায়ী ১৩৬৯, তালীক ইবনু খুযাইমাহ ১৮৫৭-১৮৫৮, ইবনু হিব্বান ২৭৮৬, আহমাদ ১৫৪৯৮,মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৭, সহীহ আল জামি ৬১৪৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৮২, দারিমী ১৬১২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৫৫৭৬)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শোন! তোমাদের কেউ বকরী চরাবার জন্য এক বা দু মইল দূরে চলে গেল, অতঃপর সেখানে ঘাস না পেয়ে আরও দূরে চলে গেল, তারপর জুমুআহর দিন এলো, কিন্তু সে এসে জুমুআহর সালাত এ উপস্থিত হলো না। তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, শেষে তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১২৭, তালীকুর রগীব ২৬০, সহীহ তারগীব ৭৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ঈদের দিন জুমুআহ পড়লেঃ

 (ক) ইয়াস ইবনু আবূ রামলাহ আশ্-শামী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) যখন যায়িদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করছিলেন আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মু‘আবিয়াহ বললেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একই দিনে দুই ‘ঈদ (অর্থাৎ জুমু‘আহ ও ‘ঈদ) উদযাপন করেছেন। তিনি (যায়িদ) বললেন, হ্যাঁ। মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, তিনি তা কিভাবে আদায় করেছেন? যায়িদ ইবনু আরক্বাম বললেন, তিনি ‘ঈদের সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর জুমু‘আহর সালাত আদায়ের ব্যাপার অবকাশ দিয়ে বলেছেনঃ কেউ জুমু‘আহর সালাত আদায় করতে চাইলে আদায় করে নিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩১০, নাসায়ী ১৫৯০ আহমাদ (৪/৩৭২), দারিমী ১৬১২, ইবনু খুযাইমাহ ১৪৬৪, আহমাদ ১৮৮৩১, দারিমী ১৬১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ির (রাঃ) জুমু‘আহর দিনে আমাদেরকে নিয়ে ঈদের সালাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিশাকাশে একটু হেলে যাওয়ার পর আমরা জুমু‘আহর সালাতের জন্য গেলাম, কিন্তু তিনি না আসায় আমরা একা একা (যুহরের) সালাত আদায় করে নিলাম। এ সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তায়েফে ছিলেন। তিনি তায়েফ হতে ফিরে এলে আমরা তার কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ির সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছেন।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭১, নাসায়ী ১৫৯১, ইবনু খুযাইমাহ  ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ‘আত্বা (রহঃ) বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ির (রাঃ) এর যুগে জুমু‘আহ ও ঈদুল ফিত্বর একই দিনে হওয়ায় তিনি বলেন, একই দিনে দুই ঈদ একত্র হয়েছে। তিনি দুই সালাত (জুমু‘আহ ও ‘ঈদের সালাত) একত্র করেন এবং প্রত্যুষে মাত্র দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেন, এর অধিক করলেন না। অতঃপর তিনি ‘আসরের সালাত আদায় করেন।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজ তোমাদের এ দিনে দু‘টি ‘ঈদের সমাগম হয়েছে। তোমাদের কারোর ইচ্ছা হলে (জুমু‘আহ ত্যাগ করবে), তার জন্য ‘ঈদের সালাতই যথেষ্ট। তবে আমরা দুটিই (ঈদ ও জুমু‘আহর সালাত উভয়টি) আদায় করবো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৩,  সুনান ইবনু মাজাহ ১৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দূর্যোগকালীন জুমু‘আহর সালাত আদায়ের বিধানঃ

(ক) আবূ মালীহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। হুনাইনের যুদ্ধের দিনটি ছিলো বৃষ্টির দিন। ঐদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘোষণাকারীকে এ মর্মে ঘোষণা করতে আদেশ দেন যে, প্রত্যেকে যেন নিজ নিজ বাহনে বা শিবিরে সালাত আদায় করে। আবূ মালীহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। সেই (হুনাইনের) দিনটি ছিলো জুমু‘আহর দিন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫৭-১০৫৮, নাসায়ী ৮৫৩, আহমাদ (৫/৭৪), ইবনু খুযাইমাহ (১৬৫৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ মালীহ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি হুদায়বিয়ার সময় জুমু‘আহর দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসেন। সেদিন সামান্য বৃষ্টি হয়েছিলো যাতে জুতার তলাও ভিজে নাই। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৯৩৬, আহমাদ (৫/৭৪), ইবনু খুযাইমাহ ১৮৬৩, নাসায়ী ৮৫৪, আহমাদ ১৯৭৬৯, ২০১৮৮, ইরওয়াহ ৩৪১, ৩৪২, সহীহ আবী দাউদ ৯৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) নাফি‘ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা (শীতের রাতে) ইবনু ‘উমার দাজনান নামক স্থানে অবস্থানকালে এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে আদেশ করেন যে, প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে নেয়।

আইয়ূব (রহঃ) বলেন, নাফি‘ হতে ইবনু ‘উমার সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টি অথবা শীতের রাতে নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায়ের জন্য ঘোষককে ঘোষণা করতে নির্দেশ দিতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২, ৬৬৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৮৫-১৪৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৯৩৭, আহমাদ (২/৪), দারিমী ১২৭৫, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৫৫, নাসায়ী ৬৫৪,  আহমাদ ৪৪৬৪, ৪৫৬৬, ৫১২৯, ৫২৮০, ৫৭৬৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯, দারিমী ১২৭৫, ইরওয়াহ ৫৫৩, সহীহ আবূ দাউদ ১৭০,ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৭০, ইসলামীক সেন্টার ১৪৭৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) নাফি‘ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) দাজনান নামক জায়গায় সালাতের জন্য আযান দিলেন, অতঃপর ঘোষণা করলেন, সকলেই নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, অতঃপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, সফরে, বৃষ্টি কিংবা শীতের রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণাকারীকে সালাতের জন্য ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর সে ঘোষণা করতোঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গায় সালাত আদায় করে নাও।

ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালামাহ (রহঃ) আইয়ূব ও ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাতে বলেছেন, সফরে, প্রচন্ড শীত বা বৃষ্টির রাতে।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) নাফি‘ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রচন্ড শীত ও ঝড়ো হাওয়ার রাতে দাজনান নামক স্থানে সালাতের জন্য আযান দেন এবং আযান শেষে ঘোষণা করেন, সকলেই নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও, সকলেই নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরকালীন প্রচন্ড শীত কিংবা বৃষ্টির রাতে মুয়াযযিনকে ঘোষণা করতে আদেশ দিতেনঃ তোমরা সকলেই নিজ নিজ স্থানে সালাত আদায় করে নাও। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) নাফি‘ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ঝড়ো হাওয়া ও শীতের রাতে সালাতের জন্য আযান দিলেন এবং বললেন, সকলেই নিজ নিজ স্থানে সালাত আদায় করো। অতঃপর বললেন, শীত কিংবা বৃষ্টির রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াযযিনকে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিতেনঃ তোমরা নিজ নিজ জায়গাতে সালাত আদায় করে নাও।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৬৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। ঐ সময় বৃষ্টি হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কারোর ইচ্ছা হলে নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করতে পারে।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪০৯, আহমাদ (২/৩১২), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীনের চাচাতো ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা বৃষ্টির দিনে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তার মুয়াযযিনকে বললেন, আযানের মধ্যে তুমি যখন ‘‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’’ বলবে তখন এরপর ‘‘হাইয়্যা ‘আলাস-সালাহ’’ বলবে না। বরং বলবেঃ ‘সল্লু ফী বুয়ূতিকুম’ (তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত আদায় করো)। লোকেরা এটাকে অপছন্দ করলে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার চাইতে উত্তম যিনি তিনিও এরূপ করেছেন। নিঃসন্দেহে জুমু‘আহর সালাত ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ কাদা ও বৃষ্টির মধ্যে তোমাদেরকে হেঁটে আসতে (ঘর হতে বের করতে) আমি পছন্দ করি নাই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৬, ৬৬৮, ৯০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমার সালাত নিয়ে কিছু কর্মকান্ডের বিভ্রান্তি নিরসনঃ

 (১) জুম‘আর ছালাতের মুছল্লী নির্দিষ্ট করাঃ

ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিতে দুই জন ব্যক্তি হলেই জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে। কারণ জুম‘আর ছালাত অন্যান্য ফরয ছালাতের মতই ফরয ছালাত। কোন স্থানে দুইজন ব্যক্তি থাকলেও রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে আযান, ইক্বামতসহ জামা‘আত করে ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মূসাদ্দাদ (রহঃ)...মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন সালাতের সময় হয়, তখন তোমাদের দুজনের একজন আযান দিবে ও ইকামত বলবে। তারপর তোমাদের দুজনের মধ্যে যে অধিক বয়স্ক সে ইমামতি করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৮, ৬২৮, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)  ৬২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথচ সমাজে প্রচলিত আছে যে, ৪০ জন  ব্যক্তি ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না। কিন্তু এর পক্ষে ছহীহ কোন দলীল নেই। উক্ত মর্মে যত বর্ণনা এসেছে সবই ত্রুটিপূর্ণ।

(ক) জাবের (রাঃ) বলেন, সুন্নাত প্রচলিত আছে যে, প্রত্যেক তিনজনে ইমাম নির্ধারিত হবে, ৪০ জনের উপরে জুম‘আ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সাব্যস্ত হবে। (দারাকুৎনী হা/১৫৯৮, ২/৪; বায়হাক্বী ৩/১৭৭)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্দুল আযীয বিন ক্বারশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। (তানক্বীহ, পৃঃ ৪২৫; ইওয়াউল গালীল হা/৬০৩, ৩/৬৯ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে যে, মদ্বীনায় যখন প্রথম জুম‘আ চালু হয় তখন তার মুছল্লী সংখ্যা ছিল ৪০। উক্ত জামা‘আতের লোকসংখ্যা ছিল ৪০ জন। কিন্তু ৪০ জন না হলে ছালাত হবে না সে কথা তো বলা হয়নি। (ইরওয়াউল গালীল হা/৬০০, ৩/৬৯ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/১০৬৯, ১/১৫৩ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ৫০ জন ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না। (দারাকুৎনী হা/১৫৯৯, ২/৪; ত্বাবারাণী কাবীর ৮/২৯১)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল। এই বর্ণনায় জাফর বিন যুবাইর নামক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও নাসাঈ বলেন, সে পরিত্যক্ত। ইমাম হায়ছামীও তাকে নিতান্ত দুর্বল বলেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৭৬ পৃঃ; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৪২৬; ইরওয়া হা/৬০৩)।

 (২) জুম‘আর পূর্বে নির্দিষ্ট রাক‘আত ছালাত আদায় করাঃ

জুম‘আর ছালাতের পূর্বে কত রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে, তা হাদীছে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। মুছল্লী যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন থেকে ইমাম খুৎবা আরম্ভ করার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা তত ছালাত আদায় করতে পারবে। কিন্তু প্রায় মসজিদে মুছল্লীরা পূর্বে মাত্র চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত মর্মে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তা মিথ্যা ও বাতিল।

(ক) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু এর মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না। (ইবনু মাজাহ হা/১১২৯, পৃঃ ২০২)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর ছালাতের আগে ও পরে ৪ রাক‘আত করে ছালাত পড়তেন। কিন্তু মাঝে সালাম ফিরিয়ে পৃথক করতেন না। (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১২৬৭৪)।

তাহক্বীক্বঃ উভয় বর্ণনাই জাল। এই বর্ণনার প্রায় সকল রাবীই ত্রুটিপূর্ণ। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। মুবাশশির ইবনু উবাইদ মিথ্যা হাদীছ রচনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। আর হাজ্জাজ ও আতিইয়াহ দুইজনই যঈফ। (নাছবুর রাইয়াহ ২/২০৬ পৃঃ)।

বুছাইরী বলেন, বাক্বিয়াহ বিন ওয়ালীদও যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০১)।

ইমাম নববী বলেন, হাদীছটি বাতিল। (আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামে‘আহ, পৃঃ ৩০)।

(গ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) জুম‘আর আগে চার রাক‘আত এবং জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। (ত্বাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯ ও ১৬১৭)।

তাহ্ক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মুনকার বা ছহীহ হাদীছ বিরোধী। ত্বাবারাণী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, আত্তাব বিন বুশাইর ছাড়া এই হাদীছ খুছাইফ থেকে কেউ বর্ণনা  করেনি। (মু‘জামুল আওসাত হা/৩৯৫৯)।

উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন ছাহাবীর নামে উক্ত মর্মে আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে। তবে কোন বর্ণনাই বিশুদ্ধ নয়। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৯০ ও ১০১৬)।

(৩) গ্রামবাসীর উপর জুম‘আ নেই এবং শহর ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না বলে বিশ্বাস করাঃ

শহর ছাড়া জুম‘আর ছালাত হবে না বলে সন্দেহ করা এবং এজন্য জমু‘আর পরে ‘আখেরী যোহর’ পড়া সুন্নাত বিরোধী  আমল। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ জাল।

আলী (রাঃ) বলেন, শহর ছাড়া জুম‘আ ও তাশরীক নেই। (বায়হাক্বী , সুনানুল কুবরা হা/৫৮২৩; আবু ইউসুফ, আল-আছার হা/৬০)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। কারণ মারফূ‘ সূত্রে এর কোন ভিত্তি নেই। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯১৭, ২/৩১৭)।

উল্লেখ্য যে, উক্ত মিথ্যা বর্ণনা দ্বারাই হেদায়া লেখক গ্রামে জুম‘আর ছালাত শুদ্ধ হবে না বলে দাবী করেছেন। (হেদায়াহ ১/১৬৮ পৃঃ)।

অথচ নিম্নের ছহীহ হাদীছগুলো তার চোখে পড়েনি।

গ্রামে-গঞ্জে জুম‘আ পড়ার ছহীহ হাদীছ,

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয় মসজিদে নববীতে জুম‘আ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম যে জুম‘আ ছালাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেটা জুছা গ্রামে, যা ছিল বাহরাইনের কোন একটি গ্রাম। ওছমান (রাঃ) বলেন, আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের কোন এক গ্রামে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৮, ১/১৫৩ পৃঃ; বুখারী হা/৮৯২, ১/১২২ পৃঃ ও হা/৪৩৭১, (ইফাবা হা/৮৪৮, ২/১৭৩ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীছ উল্লেখ করার পূর্বে ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, بَابُ الْجُمُعَةِ فِى الْقُرَى وَالْمُدُنِ ‘গ্রামে ও শহর সমূহে জুম‘আর ছালাত’ অনুচ্ছেদ। ইমাম  আবুদাঊদ (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,  بَابُ الْجُمُعَةِ فِى الْقُرَى  ‘গ্রামে গ্রামে জুম‘আর ছালাত’ অনুচ্ছেদ। উল্লেখ্য যে, ‘হেদায়া’ কিতাবটি রচনা করা হয়েছে হাদীছের মূল গ্রন্থসমূহ সংকলনের প্রায় দুইশ’ বছর পরে। উক্ত হাদীছগুলো লেখকের দৃষ্টিগোচর হয়নি এমনটি বলা যাবে কি?

(ইয়ামনবাসীরা) ওমর (রাঃ)-এর নিকট চিঠি লিখে জিজ্ঞেস করল জুম‘আর ছালাত সম্পর্কে। তখন তিনি তার উত্তরে লিখে পাঠান, যেখানে তোমরা অবস্থান করবে সেখানেই জুম‘আর ছালাত আদায় করবে। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫১০৮; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৫৯৯-এর আলোচনা দ্রঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৩২)।

ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি মক্কা-মদ্বীনার মাঝের অঞ্চলের লোকদেরকে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে দেখতেন, কিন্তু তাদেরকে দোষারোপ করতেন না। (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫১৮৫; সনদ ছহীহ, ফাৎহুল বারী হা/৮৯২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; ইরওয়াউল গালীল হা/৫৯৯-এর আলোচনা দ্রঃ)।

অতএব গ্রামে জুম‘আ হবে না এমন দাবী সঠিক নয়। দুঃখজনক হল, জাল হাদীছের আমলই সমাজে চালু আছে। ছহীহ হাদীছের আমল সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে। ছহীহ হাদীছের প্রতি আত্মসমর্পণ না করে গ্রামের মসজিদে জুম‘আর ছালাত হবে না ভেবে ‘আখেরী যোহর’ চালু করা হয়েছে। একটি জাল হাদীছকে রক্ষা করতে গিয়ে আরেকটি বিদ‘আত চালু করা হয়েছে। একেই বলে মাযহাবী গোঁড়ামী। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯১৭-এর আলোচনা দ্রঃ)।

 (৪) আখেরী যোহর পড়াঃ

গ্রামে বা মহল্লায় জুম‘আর ছালাত হবে না সন্দেহ করে অনেক মুছল্লী জুম‘আর ছালাতের পর চার রাক‘আত যোহর ছালাত আদায় করে থাকে। এটা একটি বিদ‘আতী প্রথা। (আলবানী, আল-আজবেবাতুন নাফে‘আহ, পৃঃ ১৩৯, নং ৭২)।

তাছাড়া সন্দেহের উপর তো কোন ইবাদত হয় না।

 (৫) ইট-বালি-সিমেন্ট ও টাইলস দ্বারা তৈরি মিম্বারে বসে খুৎবা দান করাঃ

কোন মসজিদে পাথর বা টাইলস দ্বারা মিম্বার তৈরি করা হলে তাকে বর্জন করা উচিৎ। এমতাবস্থায় ইমামকে সুন্নাতের প্রতি কঠোর হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। কারণ সুন্নাত হল কাঠ দ্বারা মিম্বার তৈরী করা এবং মিম্বারের তিনটি স্তর হওয়া। যেমন হাদীছে এসেছে,

‘রাসূল (ছাঃ) জনৈক আনছারী মহিলার নিকট লোক পাঠান। তার নাম সাহল। এই মর্মে যে, তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রী গোলামকে নির্দেশ দাও সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের আসন তৈরি করে। যার উপর বসে আমি জনগণের সাথে কথা বলব। ঐ মহিলা তার গোলামকে উক্ত মর্মে নির্দেশ দিলে সে গাবার ঝাউ কাঠ দিয়ে তা তৈরি করে নিয়ে আসে। অতঃপর মহিলা তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেয়। রাসূল (ছাঃ) তাকে এই স্থানে স্থাপন করার নির্দেশ দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯১৭, ৩৭৭, (ইফাবা হা/৮৭১, ২/১৮৪ পৃঃ), মিশকাত হা/১১১৩, পৃঃ ৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৪৫, ৩/৬৫, ‘কাতারে দাঁড়ানো’ অনুচ্ছেদ),  মুসলিম ৫৪৪৪, আহমাদ ২২১৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীছ ইবনু খুযায়মাতে ছহীহ সনদে

এসেছে, فَعَمِلَ هَذِهِ الثَّلاَثَ الدَّرَجَاتِ مِنْ طَرْفَاءِ الْغَابَةِ ‘অতঃপর সে গাবার ঝাউ গাছ থেকে তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বার তৈরি করেছিল’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫২১; সুনান ইবনু মাজাহ ১৪১৪; মুসনাদে আহমাদ হা/২২৯২২; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬; সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ত্বাবারাণীতে এসেছে, তিন স্তর বিশিষ্ট করার জন্য রাসূল (ছাঃ)-ই নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সনদ ছহীহ, আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাতাব, পৃঃ ৪০৮; ত্বাবারাণী, আল- মু‘জামুল কাবীর হা/৫৭৪৮)।

এছাড়া রাসূল (ছাঃ) একদা মিম্বারের তিন স্তরে উঠে তিনবার আমীন বলেছিলেন মর্মেও ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (মুস্তাদরাক হাকেম হা/৭২৫৬, সনদ ছহীহ)।

অতএব মিম্বার তিন স্তরের বেশী করা সুন্নাতের বরখেলাফ। (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৫, ১/৩৩৪ পৃঃ)।

এধরনের মিম্বার সরিয়ে তিনস্তর বিশিষ্ট কাঠের মিম্বার তৈরি করে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ।

(৬) মিম্বরের পাশে বসা ব্যক্তিদের সাথে সালাম বিনিময় করাঃ

অনেক মসজিদে ইমাম পৌঁছে মিম্বারের পাশের ব্যক্তিদেরকে সালাম করেন। কিন্তু সুন্নাত হল, মিম্বরে বসে সকলকে লক্ষ্য করে সালাম দেয়া। আশে পাশের লোকদেরকে সালাম দেয়ার পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, জুম‘আর দিনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মিম্বরের কাছাকাছি পৌঁছতেন তখন মিম্বরের নিকটে বসা ব্যক্তিদের সালাম দিতেন। অতঃপর যখন মিম্বরে উঠে মানুষের দিকে মুখ করতেন তখন আবার সালাম দিতেন। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৫৮৫২)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ওয়ালীদ বিন মুসলিম এবং ঈসা বিন আব্দুল্লাহ নামে দুইজন মুদাল্লিস রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯৪)।

বরং ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) মিম্বরে উঠার সময় সালাম দিতেন।

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে উঠতেন তখন সালাম দিতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০৯, পৃঃ ৭৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৭৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) জুম‘আর খুৎবা দুই রাক‘আত ছালাতের সমানঃ

সমাজে উক্ত ধারণা প্রচলিত থাকলেও এর পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। বরং যেগুলো বর্ণিত হয়েছে তার সবই যঈফ।

(ক) ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, খুৎবাকে দুই রাক‘আতের সমান করা হয়েছে। সুতরাং যে খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত ছালাত পড়ে নেয়। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/৫৩৬৭, ২/১২৮)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। কারণ আমর ইবনু শু‘আইব ও ওমর (রাঃ)-এর মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। আর আমর ইবনু শু‘আইব ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি। অথচ হাদীছটি সরাসরি বর্ণনা করা হয়েছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২০০; ইরওয়াউল গালীল হা/৬০৫; তানক্বীহ, পৃঃ ৪৩৮)।

(খ) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খুৎবা পাবে তার জন্য জুম‘আর ছালাত দুই রাক‘আত। আর যে খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত পড়ে নেয়। (ত্বাবারাণী হা/৯৫৪৮)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি মুনকার। যদিও হাফেয নূরুদ্দ্বীন আলী ইবনে আবুবকর হায়ছামী (মৃঃ ৮০৭ হিঃ) এর রাবীদের নির্ভরযোগ্য বলেছেন। (মাজমাউয যাওয়াইদ হা/৩১৬৪)।

ছহীহ হাদীছ রয়েছে যে, যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত পাবে, সে আরেক রাক‘আত পড়ে নিবে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের এক রাক‘আত পাবে সে যেন তার সাথে পরের রাক‘আত পড়ে নেয়। (সুনান ইবনু মাজাহ হা/১১২১; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৬২২, ৩/৮৪ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৮) খুৎবার সময় ইমামের দিকে লক্ষ্য না করাঃ

ইমাম যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা শুরু করবেন, তখন সকল মুছল্লী তার দিকে লক্ষ্য করবেন। এটাই ছিল ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে বসতেন তখন আমরাও তাঁর আশে পাশে বসতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯২১ ও ১৪৬৫; মুসলিম ২৪৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আদী ইবনু ছাবেত (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মিম্বরে বসতেন তখন তাঁর ছাহাবীগণ তাদের মুখমন্ডলসহ তাঁর দিকে ঘুরে বসতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ হা/১১৩৬, সহীহাহ ২০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,

‘পরিত্যক্ত সুন্নাতগুলোর মধ্যে এটি একটি। সুতরাং যারা সুন্নাতকে মহববত করে তাদের উচিৎ তাকে পুনর্জ্জীবিত করা। তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের সম্মান দান করবেন এবং দয়া করবেন। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ও দয়ার বিনিময়ে আমাদের ও তাদের স্থান জান্নাতে নির্ধারণ করুন’। (তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৩৩)।

(৯) খুৎবার সময় মসজিদে এসে ছালাত না পড়েই বসে পড়াঃ

উক্ত কাজ সুন্নাত বিরোধী। ইমাম খুৎবা দিলেও দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত পড়ে বসতে হবে। নিষেধের পক্ষে যে হাদীছ প্রচার করা  হয় তা মিথ্যা।

(ক) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছ) বলেন, ইমাম খুৎবা দেওয়া অবস্থায় তোমরা ছালাত আদায় কর না। (আবু সাঈদ মালীনী, আল-ইহকামু উস্তা, ২/১১২ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। তাছাড়া ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী। (তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৪৩৩)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

(খ) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি যে, ইমাম খুৎবা দেওয়া অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন ইমাম খুৎবা শেষ করা পর্যন্ত কোন ছালাত নেইও কোন কথাও নেই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৮৪ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি বাতিল। শায়খ আলবানী

বলেন, وَإِنَّمَا حَكَمْتُ عَلَى الْحَدِيْثِ بِالْبُطْلاَنِ لِأَنَّهُ مَعَ ضَعْفِ سَنَدِهِ يُخَالِفُ حَدِيْثَيْنِ صَحِيْحَيْنِ. ‘আমি এই হাদীছের উপর বাতিল হওয়ার হুকুম আরোপ করেছি। কারণ এর সনদ যঈফ হওয়ার পাশাপাশি দুইটি ছহীহ হাদীছের বিরোধী’। (সিলসিলা যঈফাহ ১/১৯৯-২০১ পৃঃ, হা/৮৭)।

খুৎবার সময় ছালাত আদায় করার ছহীহ দলীল

জাবের (রাঃ) বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি জুম‘আর দিনে মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসূল (ছাঃ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি ঐ লোকটিকে বললেন, তুমি কি ছালাত আদায় করেছ? সে বলল, না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি দাঁড়াও দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩০, ৯৩১, ১১৬৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, আহমাদ ১৪৯১২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম বুখারী (রহঃ) নিম্নোক্ত মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,  بَابُ إِذَا رَأَى الْإِمَامُ رَجُلًا جَاءَ وَهُوَ يَخْطُبُ أَمَرَهُ أَنْ يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ  ‘ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় যখন কোন ব্যক্তিকে মসজিদে আসতে দেখবেন তখন তিনি তাকে নির্দেশ দিবেন সে যেন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে’ অনুচ্ছেদ। আরেকটি অধ্যায় রচনা করেছেন, بَابُ مَنْ جَاءَ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيْفَتَيْنِ ‘ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় যে মসজিদে আসবে সে যেন সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে’ অনুচ্ছেদ।

জাবের (রাঃ) বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদা খুৎবা প্রদানকালে বলেন, ইমাম খুৎবা দেয়া অবস্থায় জুম‘আর দিনে তোমাদের কেউ যদি মসজিদে আসে সে যেন দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে। আর এর মাঝে সংক্ষেপ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৩৫, ইবনু হিব্বান ২৫০০, আহমাদ ১৪৪০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব মসজিদে যখনই প্রবেশ করবে তখনই দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। উক্ত হাদীছগুলো জানার পরও যদি কেউ আমল না করে তাহলে তার পরিণাম কী হতে পারে? অথচ হেদায়ার মধ্যে জাল হাদীছের আলোকে এ সময় ছালাত আদায় করতে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে। (হেদায়া ১/১৭১ পৃঃ)।

(১০) লাঠি ছাড়া খুৎবা দেওয়াঃ

হাতে লাঠি নিয়ে জুম‘আর খুৎবা প্রদান করা সুন্নাত। হাকাম ইবনু হাযন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে জুম‘আর দিন হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৯৬, ইরওয়াউল গালীল হা/৬১৬, ৩/৭৮; বায়হাক্বী ৩/২০৬, সনদ ছহীহ; বুলূগুল মারাম হা/৪৬৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অনুরূপ ঈদের মাঠে এবং অন্যান্য স্থানেও বক্তব্যের সময় রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নিতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১৪৫, ইরওয়াউল গালীল হা/৬৩১, ৩/৯৯; আহমাদ ৩/৩১৪, সনদ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উল্লেখ্য, মিম্বর তৈরীর পর রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নেননি বলে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) দাবী করেছেন। কিন্তু উক্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই। (যাদুল মা‘আদ ১/৪১১ পৃঃ)।

শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত দলীল বিহীন বক্তব্য উল্লেখ করে শুধু জুম‘আর খুৎবার বিষয়টি সমর্থন করেছেন। তবে ঈদের খুৎবাসহ অন্যান্য বক্তব্যের সময় হাতে লাঠি নেওয়া যাবে বলে উল্লে¬খ করেছেন। (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৬৪, ২/৩৮০-৮৩ পৃঃ)।

মূল কথা হল, মিম্বর তৈরির পরও রাসূল (ছাঃ) হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিয়েছেন। কারণ মিম্বর তৈরি হয়েছে ৫ম হিজরীতে আর হাকাম বিন হাযন ৮ম হিজরীতে ইমলাম গ্রহণ করে মদ্বীনায় আগমন করেন এবং জুম‘আর দিনে রাসূল (ছাঃ)-কে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দিতে দেখেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১০৯৬, ইরওয়াউল গালীল হা/৬১৬, ৩/৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উল্লেখ্য, হাকাম বিন হাযন (রাঃ) কত সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন সে ব্যাপারে দু’টি মত পাওয়া যায়। আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী বলেন, ৮ম হিজরীই সঠিক। (ইতহাফুল কেরাম শরহে বুলূগুল মারাম, পৃঃ ১৩২)।

দ্বিতীয়তঃ হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার হাদীছটি ব্যাপক। রাসূল (ছাঃ) সব সময় হাতে লাঠি নিতেন বলে প্রমাণিত হয়।

তৃতীয়তঃ মিম্বর তৈরির পর  তিনি আর হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেননি, একথার পক্ষে কোন দলীল নেই।

চতুর্থতঃ ছাহাবীদের মধ্যেও মিম্বরে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে খুৎবা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। (তারীখে বাগদাদ ১৪/৩৮ পৃঃ)।

(১১) বিনা কারণে জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করলে কাফফারা দেওয়াঃ

জুম‘আর ছালাত পরিত্যাগ করা মহা অন্যায়। কোন কারণ ছাড়াই কেউ যদি জুম‘আ ত্যাগ করে, তবে তাকে মুনাফিকদের তালিকাভুক্ত করা হয়। (ছহীহ তারগীব হা/৭২৯)।

অলসতা করে পর পর তিন জুম‘আ পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫২, আত্ তিরমিযী ৫০০, নাসাযী ১৩৬৯, আহমাদ ১৫৪৯৮, ইবনূ খুযায়মাহ্ ১৮৫৮, ইবনু মাজাহ্ ১১২৬, ইবনু হিব্বান ২৭৮৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৭২৭, সহীহ আল জামি‘ ৬১৪৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৮২, দারিমী ১৬১২, সুনানুল কুবরা বায়হাক্বী ৫৫৭৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই ছুটে গেলে খালেছ অন্তরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তওবা করতে হবে। কাফফারা দেওয়ার কোন ছহীহ বর্ণনা নেই। এ সম্পর্কে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে তা যঈফ। যেমন-.

সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করবে সে যেন এক দ্বীনার ছাদাক্বা করে। আর তা যদি না থাকে তাহলে অর্ধ দ্বীনার ছাদাক্বা করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫৩, নাসাঈ হা/১৩৭২; ইবনু মাজাহ হা/১১২৮; মিশকাত হা/১৩৭৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১০৫৩, পৃঃ ১৬৬)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

কুদামা বিন ওয়াবারা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বিনা কারণে যার জুম‘আর ছালাত ছুটে যাবে সে যেন এক দিরহাম বা অর্ধ দিরহাম কিংবা এক ছা‘ বা অর্ধ ছা‘ গম ছাদাক্বা দেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫৪, পৃঃ ১৫১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ এটিও যঈফ। (যঈফ আবুদাঊদ হা/১০৫৪, পৃঃ ১৬৭)।

 (১২) ফযীলতের আশায় জুম‘আর দিন পাগড়ী পরিধান করাঃ

অধিক ফযীলত মনে করে অনেকে এই দিনে পাগড়ী পরে থাকে। জুম‘আর দিন পাগড়ী পরিধান করার ফযীলত সম্পর্কে যত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল।

আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এবং ফেরেশতামন্ডলী জুম‘আর দিনে পাগড়ী পরিধানকারী ব্যক্তিদের উপর রহম করেন। (হিলইয়া ৫/১৮৯-১৯০)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আইয়ূব ইবনু মুদরাক নামে মিথ্যুক রাবী রয়েছে। (ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯)।

ইমাম ইবনুল জাওযী এই বর্ণনাকে জাল হাদীছের গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (কিতাবুল মাওযূ‘আত ২/১০৫ পৃঃ)।

শায়খ আলবানীও জাল বলেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫৯, ১/২৯২-২৯৩ পৃঃ)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, পাগড়ী মাথায় দিয়ে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে পাগড়ী বিহীন ২৫ ওয়াক্ত ছালাতের সমান নেকী হয় এবং পাগড়ী পরে এক জুম‘আ পড়লে পাগড়ী বিহীন ৭০ জুম‘আর সমপরিমাণ নেকী হয়। নিশ্চয় ফেরেশতারা পাগড়ী পরে জুম‘আর ছালাতে শরীক হন। তারা পাগড়ী পরিহিত ব্যক্তিদের জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু‘আ করতে থাকেন। (ইবনু নাজ্জার, সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭, ১/২৪৯ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে আব্বাস ইবনু কাছীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৭-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/২৪৯ পৃঃ)।

ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, বর্ণনাটি জাল। (ইবনু হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান ৩/২৪৪ পৃঃ- هَذَا حَدِيْثٌ مَوْضُوْعٌ।)

জ্ঞাতব্যঃ উক্ত ফযীলতের আশা না করে কেউ চাইলে পাগড়ী পরতে পারে। রাসূল (ছাঃ) কখনো জুম‘আর দিন পাগড়ী পরে খুৎবা দিতেন। (ছহীহ মুসলিম হা/৩৩৭৭ ও ৩৩৭৮, ১/৪৩৯-৪৪০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৩১৭৭-৭৮); মিশকাত হা/১৪১০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩২৬, ৩/১৯৮ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ দিলেন। তখন তাঁর মাথায় ছিল কালো পাগড়ী। পাগড়ীর দু’মাথা তাঁর দু’কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২০২-৩২০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৫৯, আবী দাঊদ ৪০৭৭, নাসায়ী ৫৩৪৩ ৫৩৪৬, ইবনু মাজাহ্ ১১০৪,২৮২১, ৩৫৮৪, ৩৫৮৭. আহমাদ ১৮৭৩৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯৭৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৭৫, সহীহাহ্ ৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৩) দু‘আ চাওয়া এবং সালামের পর সম্মিলিত মুনাজাত করাঃ

জুম‘আর দিন দু‘আ চাওয়া একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। অনেক মসজিদে ফরয ছালাত কিংবা জুম‘আর ছালাতের পর কেউ কেউ পিতা-মাতা বা নিজের রোগমুক্তির জন্য সবার কাছে দু‘আ চায়। অনেকে ইমামের নিকট পত্র লিখে দু‘আ চায়। অথচ দু‘আ চাওয়ার এই নিয়মটি সুন্নাত সম্মত নয়। মূলতঃ ছালাতের পরে প্রচলিত মুনাজাত চালু থাকার কারণেই দু‘আ চাওয়ার এই পদ্ধতিও চালু আছে। অনেক মসজিদে অন্যান্য ছালাতের পরে বিদ‘আতী মুনাজাত হয় না কিন্তু জুম‘আর দিনে হয়। কারণ ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ সেদিন ছালাতে হাযির হয় এবং মসজিদে কিছু দান করে দু‘আ চায়। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের থেকে উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দু‘আ চাওয়ার নিয়ম হল- কোন সমস্যায় পড়লে বা রোগাক্রান্ত হলে এলাকার জীবিত পরহেযগার, দ্বীনদার, হক্বপন্থী আলেমের কাছে গিয়ে দু‘আর জন্য আবেদন করা। তখন তিনি প্রয়োজনে ওযূ করে ক্বিবলামুখী হয়ে হাত তুলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন। ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত পদ্ধতিতে দু‘আ চাইতেন।

আউত্বাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে তিনি স্বীয় ভাতিজা আবু মূসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে, তুমি আমার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম পৌঁছে দিবে এবং আমার জন্য ক্ষমা চাইতে বলবে। অতঃপর তাঁর কাছে বলা হল। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন,

নবী করীম (ছাঃ) পানি চাইলেন এবং ওযূ করলেন। অতঃপর দু’হাত তুলে দু‘আ করলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আবু আমের উবাইদকে ক্ষমা করে দিন। (রাবী বলেন) এ সময়ে আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন আপনি তাকে আপনার সৃষ্টি মানুষের অনেকের ঊর্ধ্বে করে দিন’।(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২৩, ২৮৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৮, আহমাদ ১৯৭১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা তুফাইল ইবনু আমর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! দাউস গোত্র অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে, আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন। তখন রাসূল (ছাঃ) ক্বিবলামুখী হলেন এবং দু’হাত তুললেন। লোকেরা ধারণা করল যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে বদ দু‘আ করবেন। কিন্তু তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি দাউস গোত্রকে হেদায়াত দান করুন এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখান’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দ্বিতীয়তঃ সবার কাছে দু‘আ চাইতে পারে। তখন সকলে নিজ নিজ ঐ ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে। তা ছালাতের মধ্যে হোক বা ছালাতের বাইরে হোক। ইমামও কারো পক্ষে থেকে সবার নিকট দু‘আ চাইতে পারেন যাতে সকলে নিজ নিজ তার জন্য দু‘আ করে। ইমাম জুম‘আর দিন তার জন্য খুৎবায় দু‘আ করতে পারেন আর বাকীরা আমীন আমীন বলতে পারে। (ফাতাওয়া লাজনা ৮/২৩০-৩১ ও ৩০২ পৃঃ; আল্লামা উছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃঃ ৩৯২)।

(১৪) জুম‘আর দিন চুপ থেকে খুৎবা শুনলে ৭ কোটি ৭ লক্ষ ৭০ হাযার নেকী হবেঃ

জুম‘আর দিন বাড়ি থেকে ওযূ করে মসজিদে গিয়ে ছালাতের শেষ পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকলে উক্ত ছওয়াব পাওয়া যাবে মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। উক্ত ফযীলত মিথ্যা ও কাল্পনিক। তবে জুম‘আর দিন মসজিদে গিয়ে সাধ্য অনুযায়ী ছালাত আদায় করে খুৎবার শেষ পর্যন্ত চুপ থাকার ফযীলত ছহীহ হাদীছ সমূহে পাওয়া যায়।

আউস ইবনু আউস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন কাপড় ধৌত করবে ও গোসল করবে এবং সকাল সকাল প্রস্ত্ততি নিবে ও সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে অতঃপর ইমামের কাছাকাছি বসবে এবং মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শ্রবণ করবে ও অনর্থক কোন কাজ করবে না, তার জন্য প্রত্যেক ধাপে এক বছরের নফল ছিয়াম ও এক বছরের নফল ছালাতের ছওয়াব হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৪৯৯০, ইবনুর হিব্বান ২৭৮১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৭৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৬৯০, সহীহ আল জামি‘ ৬৪০৫, নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, আহমাদ ১৬১৭৩, আত্ তিরমিযী ৪৯৬, নাসায়ী ১৩৮১, ১৩৮৪, ১৩৯৮; আহমাদ ১৫৭২৮, ১৫৭৩৯, ১৫৭৪২, ১৬৫১৩, ১৫৪৬-৪৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কেউ যদি জুম‘আর দিন গোসল করে মসজিদে আসে এবং সম্ভবপর কিছু ছালাত আদায় করতঃ খুৎবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকে, অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করে তাহলে তার দু’জুম‘আর মধ্যেকার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং আরো তিন দিন বেশী ক্ষমা করা হবে’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৩, ৯১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮২, ১৩৮১,   শারহুস সুন্নাত ১০৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৯, সহীহ আল জামি ৭৭৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫) জুম‘আর দিন আছর ছালাতের পর ৮০ বার দরূদ পড়াঃ

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে আমার উপর ৮০ বার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হল, কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, তুমি একাকী বসে বলবে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন, যিনি আপনার বান্দা, আপনার নবী ও আপনার নিরক্ষর রাসূল (ছাঃ)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনা মিথ্যা। এর সনদে ওয়াহাব ইবনু দাঊদ ইবনু সুলায়মান যারীর নামে মিথ্যুক রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফা হা/২১৫)।

উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন বইয়ে লেখা আছে, জুম‘আর দিন আছর ছালাতান্তে উক্ত স্থানে বসে ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি‘আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মী ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া সাল্লিম তাসলীমা’ এ দরূদটি ৮০ বার পাঠ করলে আল্লাহ ৮০ বছরের ছগীরা গোনাহ মাফ করে দেন এবং তার আমলনামায় ৮০ বছরের নফল ইবাদতের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। এগুলো বানোয়াট গালগল্প মাত্র।

(১৬) জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করাঃ

কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন নির্ধারণ করা যাবে না। যেকোন দিন যেকোন সময় কবর যিয়ারত করতে পারে। শুধু জুম‘আর দিন কবর যিয়ারত করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।  যেমন-

মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান (রহঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুম‘আর দিন তার মাতা-পিতার অথবা তাদের কোন একজনের কবর যিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে। (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯০১; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৮)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

তাহক্বীক্বঃ জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু নু‘মান নামের রাবী অপরিচিত। এছাড়া ইয়াহইয়া নামের রাবী মিথ্যুক। তার বর্ণিত হাদীছগুলো জাল। (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯০১; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬০৫, মিশকাত হা/১৭৬৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৬৭৬, ৪/১০৫ পৃঃ; দ্রঃ মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ, ১/১৮২ পৃঃ, হা/৩৬০)।

 (১৭) জুম‘আতুল বিদা পালন করাঃ

রামাযানের শেষ জুম‘আকে ‘জুম‘আতুল বিদা’ বলা হয়। অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে কথা প্রচলিত আছে তা ডাহা মিথ্যা।

যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় ক্বাযা ছালাতগুলো আদায় করবে, তার জীবনের ৭০ বছরের ছুটে যাওয়া প্রত্যেক ছালাতের ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (মোল্লা আলী আল-ক্বারী, আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮; মাওযূ‘আতুল কুবরা, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী, আল-আছারুল মারফূ‘আহ্ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ্ ১/৮৫; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ১/৫৪, নং ১১৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী)।

তাহক্বীক্বঃ মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,

‘এটি চূড়ান্ত মিথ্যা কথা। এটা ইজমার বিরোধী। কারণ কোন ইবাদত বিগত বছরের ছুটে যাওয়া বিষয়ের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। অতঃপর ছাহেবে ‘নেহায়া’র এই বর্ণনা উল্লেখ করার মধ্যে কোন উপদেশ নেই। অনুরূপ হেদায়ার ভাষ্যকারদের মধ্যেও যের নেই। কারণ তারা মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত নন। এমনকি তারা এই হাদীছকে হাদীছের কোন সনদ বিশ্লেষণকারীর দিকে সম্বন্ধ করেননি। (আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮)।

যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করবে তার ঐ বছরের (ত্রুটি মুক্ত) ফওত হয়ে যাওয়া ছালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আশ-শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ (বৈরুতঃ আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৭), হা/১১৫, পৃঃ ৫৪)।

তাহক্বীক্বঃ উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,

‘এটা যে জাল তাতে কোন জটিলতা নেই। লেখকগণ জাল হাদীছের গ্রন্থে যে সমস্ত হাদীছ জমা করেছেন সেই গ্রন্থ সমূহের মধ্যে আমি এই বর্ণনা পায়নি। তবে মদ্বীনার ছান‘আ অঞ্চলের ফক্বীহ শ্রেণীর লোকের মাঝে এটি খুব প্রসিদ্ধ। আর এটা বহু মানুষ আমলও করে থাকে। আমি জানি না কোন্ ব্যক্তি তাদের জন্য এটি জাল করেছে। তাই আল্লাহ মিথ্যুকদের উপর গযব বর্ষণ করুন। (আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ হা/১১৫-এর আলোচনা দ্রঃ, পৃঃ ৫৪)।

সুধী পাঠক! সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা ও উদ্ভট বিষয়কে নিয়ে সারা বিশ্বে ‘জুম‘আতুল বিদা’ পালন করা হয়। ঐ দিন মুছল্লীরা মসজিদে মসজিদে এত ভীড় জমায় তা কল্পনা করা যায় না। ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও আলেমগণ যদি শরী‘আতের দোহায় দিয়ে প্রচারণা চালান, তবে তাদের অবস্থা কী হবে? সাধারণ শিক্ষিত মানুষগুলোও এই মিথ্যা স্রোতে ভেসে যান। যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন মনে করেন না।

মহিলাদের জুমার সালাতের বিধি-বিধান

মহিলাদের জুমার সালাত সংক্রান্ত নিময়-পদ্ধতি ও এ সংক্রান্ত মাসায়েলগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

(ক) জুমার সালাত কেবল পুরুষদের জন্য ফরয; মেয়েদের জন্য নয়। সুতরাং মেয়েরা বাড়িতে যথা সময়ে নিয়ম মাফিক যোহরের সালাত আদায় করবে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

তারিক ইবনে শিহাব রা. থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জুমুআর নামায প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামাআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব (অবশ্য কর্তব্য/ফরয)। কিন্তু তা চার প্রকার লোকের উপর ওয়াজিব নয়ঃ ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও রুগ্ন ব্যক্তি।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৬৭, হাকিম (১/৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) কোন মহিলা যদি বাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপদ সালাতের ব্যবস্থা আছে এমন কনো মসজিদে যায় অথবা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (তথা পিতা, ভাই, সন্তান, দাদা, চাচা ইত্যাদি) এর সাথে জুমা মসজিদে যায় তাহলে সেখানে পুরুষদের সাথে তাদের মতই জুমার সালাত কায়েম করবে। যদিও মহিলাদের জন্য মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে সালাত পড়া অধিক উত্তম।

মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হলোঃ

(১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬৭, আহমাদ ৫৪৬৮, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২) আমর আন নাকিদ ও যুহারর ইবনু হারব (রহঃ).....সলিম থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো স্ত্রী তার স্বামীর কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের স্ত্রীরা মসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদের বাধা দিও না। রাবী (সালিম) বলেন, বিলাল ইবনু আবদুল্লাহ বললেনঃ আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। রাবী (সালিম) বলেন, আবদুল্লাহ (রাযিঃ) তার দিকে ফিরে তাকে অকথ্য ভাষায় তিরস্কার করলেন। আমি তাকে এর আগে কখনো এভাবে গালিগালাজ করতে শুনিনি। তিনি আরো বলেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছঃ আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমরা তাদেরকে বাধা দিব। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ).....ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বাদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিও না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৮৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার বিষয়টি ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিষয়। যদিও তাদের বাড়ির ভিতরে নামাজ পড়া বেশি উত্তম। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করবে না, তবে তাদের জন্য তাদের বাড়িতেই নামাজ পড়া বেশি উত্তম। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬৭)।

(২) এই হাদীসটির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, কোনো মহিলা যখন মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে, তখন বিপদমুক্ত পরিবেশ থাকলে তার স্বামী যেন তাকে অনুমতি প্রদান করে।

(৩) কোনো মহিলার জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে সুসজ্জিতা হয়ে আতর বা সুগন্ধি মেখে মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। কেননা, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো মহিলা কোনো মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪২ - (৪৪৩)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ).....আবদুল্লাহর স্ত্রী যাইনাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেনঃ তোমাদের কোন মহিলা যখন মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন সুগন্ধি স্পর্শ না করে (আসে)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৭৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর ঘরে (মসজিদে) যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা বের হওয়ার সময় যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬৫, আহমাদ (২/৪৩৮, ৪৭৫, ৫২৮) দারিমী ১২৭৯, ইবনু খুযাইমাহ ১৬৭৭৯, হুমাইদী ‘মুসনাদ (৯৭৮)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) বাড়িতে কেবল মহিলাদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার সালাত অথবা এককভাবে জুমার সালাত বৈধ নয়।

সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায় বলা হয়েছে:

“যদি কোন মহিলা ইমামের সাথে জুমার সালাত আদায় করে তাহলে তা যোহর সালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ পরে পুনরায় তার যোহর সালাত পড়ার প্রয়োজন নাই)। আর সে যদি একাকী সালাত পড়ে তাহলে সে কেবল যোহর পড়বে। এককভাবে তার জন্য জুমা পড়া বৈধ নয়।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমা/৭৩৩৭)।

জুমার দিন খুতবা এবং সালাত  একই ব্যক্তির মাধ্যমে হওয়া আবশ্যক কিনাঃ

জুমার দিন একজন খুতবা দিবে আর অন্যজন সালাত পড়াবে –এটি সঠিক কি না এ বিষয়ে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।

তবে সঠিক কথা হল, এমন কোন শর্ত নাই যে, যে খুতবা দিবে তাকেই সালাত পড়াতে হবে। অর্থাৎ যদি একজন খুতবা দেয় আর কোন সমস্যার কারণে অন্যজন সালাত পড়ায় তাহলে তা সালাতের বিশুদ্ধতায় কোনই প্রভাব ফেলবে না। কেননা, খুতবা একটি ইবাদত আর সালাত আরেকটি পৃথক ইবাদত। সুতরাং দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইবাদত দুজনে বাস্তবায়ন করলে তা নাজায়েয হওয়ার কোন কারণ নেই।

বরং একই সালাতের মধ্যেই ইমাম সাহেবের বিশেষ কোন সমস্যার কারণে সালাত চলাকালীন আরেকজনকে ইমামতির দায়িত্ব দিতে পারে। এতে যেমন নামায সহিহ হয় অনুরূপভাবে খুতবা আর সালাত আলাদা আলাদা ইবাদতে দুজন দায়িত্ব পালন করলে আরও যৌক্তিকভাবে তা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ।

তবে আমরা বলব, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এমনটি করা ঠিক নয়। কোন ওজর-আপত্তি দেখা দিলেই কেবল এমনটি গ্রহণযোগ্য; অন্যথায় নয়। কেননা, আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে যিনি খুতবা দিতেন তিনিই সালাত পড়াতেন। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা কেউই এর ব্যতিক্রম করেননি। সুতরাং এটাই সাধারণ সুন্নতি নিয়ম ও সর্বোত্তম-এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে তখন খুতবা ও নামাযে ব্যক্তির পরিবর্তন বৈধ হবে ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, জুমার অনুরূপ দুই ইদের খুতবার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

(সমাপ্ত)

সালাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম-প্রথমখন্ড।

(খ) সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধএবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি-দ্বিতীয় খন্ড।

(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোরপর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।

(ঘ) জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব,ফজিলতও সহিহ নিয়মাবলী (তৃতীয় খন্ড-প্রথম অংশ)।

(ঙ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্যএবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী (তৃতীয় খন্ড-দ্বিতীয় অংশ)।

(চ) কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতেরসহিহ বিধিবিধান-তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ)।

(ছ) মাসজিদ ও ক্বিবলার সহিহবিধান-চতুর্থ খন্ড (প্রথম অংশ)।

======================================

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...