Search This Blog

Friday, March 6, 2020

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর

(পর্ব-০৭)

সম্পাদকীয়ঃ

আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল ১৬/১২৫)।

আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।

প্রশ্নোত্তর

January-March/2020)
প্রশ্ন (১/১২১) : ওছমান (রাঃ) জুম‘আর দ্বিতীয় আযান চালু করে কি সুন্নাতবিরোধী আমল করেছিলেন?
-মোবারক হোসাইন, রাণীবাজার, রাজশাহী।
উত্তর : ওছমান (রাঃ) মুছল্লীদের সময়মত জুম‘আর ছালাতে উপস্থিতির জন্য সাময়িক পদক্ষেপ হিসাবে অতিরিক্ত আযান চালু করেছিলেন। ওমর (রাঃ)-এর তিন তালাকের ফৎওয়ার ন্যায় এটিও ওছমান (রাঃ)-এর একটি ইজতিহাদী ফৎওয়া ছিল। এটি তাঁর সামগ্রিক কোন নির্দেশনা ছিল না। সেকারণ তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী যাওরা বাযার ব্যতীত অন্য কোন স্থানে এই প্রথা চালুর ‘আম নির্দেশ দেননি। সুতরাং তিনি সুন্নাত লঙ্ঘন করেননি।
স্মর্তব্য যে, জুম‘আর দিন একটি আযানই সুন্নাত। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ)-এর গৃহীত সাময়িক ইজতিহাদী পদক্ষেপকে অনুসরণ করা আবশ্যক নয়। কেননা যে পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ) যাওরা বাযারে প্রথম আযান চালু করেছিলেন, সেই কারণ অবশিষ্ট নেই। তখন মানুষের হাতে ঘড়ি-মোবাইল ও মাইকে আযানের ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া বর্তমানে একই মসজিদে দু’টি আযান প্রদান করা হয়, যা ওছমান (রাঃ)-এর নির্দেশনার বিপরীত (আলবানী, আল-আজওয়াবাতুন নাফে‘আহ পৃ. ২০; আহমাদ শাকের, শরহ সুনান তিরমিযী ২/৩৯২-৯৩; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৯৪-১৯৬ পৃ.)

প্রশ্ন (২/১২২) : শায়খ আলবানী কি এক মুষ্টির উপর দাড়ি কেটে ফেলা ওয়াজিব বলেছেন? এ বিষয়ে স্পষ্ট জানতে চাই।

-মুহায়মিনুল হক, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : আল্লামা নাছেরুদ্দীন আলবানী ইবনু ওমর (রাঃ)-এর হজ্জকালীন একটি আমলের উপর ভিত্তি করে এমন ফৎওয়া দিয়েছেন (সিলসিলা যঈফাহ ৫/৩৭৮; সিলসিলাতুন নূর ওয়াল হুদা টেপ নং ৮৭৬)। তবে তার এই ফৎওয়া শায তথা বিচ্ছিন্ন। অতীতের কোন বিদ্বান এরূপ ফৎওয়া দেননি। বরং দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে, এটিই সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং দাড়িকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও। আর গোঁফ ছোট কর (বুখারী হা/৫৮৯২; মুসলিম হা২৫৯; মিশকাত হা/৪৪২১)। দাড়ি ছাড়ার ব্যাপারে হাদীছে ছয় ধরনের শব্দ এসেছে। যেমন- আওফিরূ, আওফূ, আরখূ, ওয়াফ্ফিরূ, আরজূ, আ‘ফূ (أَوْفِرُوا، وَأَوْفُوا، وَأَرْخُوا، وَوَفِّرُوا، أَرْجُوا، أعْفُوا)। শব্দগুলি সব একই মর্ম বহন করে। আর তা হ’ল, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। দাড়ি কাটা বা ছাঁটার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং এটি রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শের পরিপন্থী। উল্লেখ্য যে, দাড়ি ছাঁটার পক্ষে তিরমিযীতে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা জাল (তিরমিযী হা/২৭৬২; মিশকাত হা/৪৪৩৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৮)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে এক মুষ্টির অধিক দাড়ি কাটা সম্পর্কে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে, সেটি যঈফ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৫৪৮১; আবূদাউদ হা/৪২০১)। 
শায়খ আলবানী যে হাদীছটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন সেখানে বলা হয়েছে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন হজ্জ বা ওমরাহ করতেন তখন তিনি তাঁর দাড়ি মুষ্টি করে ধরতেন এবং মুষ্টির বাহিরে যতটুকু বেশী থাকত, তা কেটে ফেলতেন (বুখারী হা/৫৮৯২)। এই হাদীছের ব্যাখ্যায় কিরমানী বলেন, তিনি হয়ত উক্ত মৌসুমে সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াতের আলোকে মাথা মুন্ডন করে ও দাড়ি ছেঁটে উভয়টির নেকী পেতে চেয়েছিলেন। আর এটাকে তিনি দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সাধারণ নির্দেশ থেকে হজ্জ ও ওমরার জন্য খাছ ভেবে করেছিলেন’। ইবনুত তীন ইবনু ওমরের এক মুষ্টি দাড়ি কাটার কথার প্রতিবাদ করে বলেন, এর অর্থ তিনি এলোমেলো বা অধিক লম্বা দাড়ি ছেঁটে গোছালো করতেন’ (ফাৎহুল বারী হা/৫৮৯২-এর ব্যাখ্যা ১০/৩৫০-৫১ পৃ.)। এতদ্ব্যতীত এটি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত আমল। অন্য কোন ছাহাবী এমনটি করতেন মর্মে কোন বিশুদ্ধ দলীল পাওয়া যায় না। আর তিনি কাউকে করার জন্য নির্দেশও দেননি। দ্বিতীয়তঃ তিনি শুধু হজ্জ ও ওমরার সময় করেছেন, অন্য সময় নয়। তৃতীয়তঃ এটি ব্যাখ্যাগত বিষয়, যা স্পষ্ট দলীলের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।
স্মর্তব্য যে, সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াত রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি দাড়ি ছাঁটার কথা বলেননি। তাছাড়া ওমর (রাঃ)-এর একটি আমলের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আমলের দ্বন্দ্ব হ’লে করণীয় সম্পর্কে ইবনু ওমরকে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি উত্তরে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য, না কি ওমরের সুন্নাত’ (মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ)
ইমাম নববী বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছাটা সিদ্ধ নয় (ফাৎহুল বারী ১০/৩৫১)। তিনি বলেন, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই বিশুদ্ধ। যেভাবে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে’ (আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ১/২৯০)
সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এ ব্যাপারে বলেন যে, দাড়ি মুন্ডন বা দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হ’তে কিছু কেটে নেওয়া বৈধ নয়। এটা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বিরোধী কাজ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৩৭)। শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী (ছাঃ) এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯৬-৯৭)। অতএব সৌন্দর্যের দোহাই দিয়ে দাড়ি কাট-ছাঁট করা সঠিক নয়। বরং দাড়ি তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই সৌন্দর্য। যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ নিজে সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)। অতএব সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণই কাম্য (বিস্তারিত দ্র. আত-তাহরীক ১৪/৬ সংখ্যা, মার্চ ২০১১ প্রশ্নোত্তর ২২/২২৮)

প্রশ্ন (৩/১২৩) : ওমর (রাঃ) বলেন, ‘যদি ফোরাত নদীর কূলে একটি ভেড়ার বাচ্চাও হারানো অবস্থায় মারা যায়, তাতে আমি ভীত হই যে, সেজন্য আমাকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে’- এ মর্মে বর্ণিত আছারটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই?

-আব্দুর রহমান, মনোহরদী, নরসিংদী।
উত্তর : উক্ত আছারটির সনদ হাসান (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৪১৫; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬২৭; ইবনু হাজার, আল-মাত্বালিবুল ‘আলিয়া হা/৩৮৮৮, সনদ হাসান লিগাইরিহী।)

প্রশ্ন (৪/১২৪) : অনেক সময় দেখা যায় যে, টেলিভিশনে বক্তা মুনাজাত করছেন। এক্ষণে আমি দর্শক হয়ে আমীন আমীন বলতে পারব কি?

-রিয়াযুল ইসলাম, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর : যেকোন দো‘আ যেকোন মাধ্যমে শ্রবণ করলে তার সমর্থনে আমীন বলা যায়। কিন্তু কোন রেকর্ডকৃত দো‘আর বিপরীতে আমীন আমীন বলা যরূরী নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/২৫৬)। উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে হাত তুলে দলবদ্ধ মুনাজাতের কোন দলীল নেই। বরং একাকী বিনীত হৃদয়ে নিজের দো‘আ নিজে করা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো বিনীত ভাবে ও চুপে চুপে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালংঘনকারীদের ভালবাসেন না’ (আ‘রাফ ৭/৫৫)
প্রশ্ন (৫/১২৫) : জীবিকার তাগিদে অমুসলিম রাষ্ট্রে গমন করা যাবে কী?
-মাহবূবুল আলম, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : সাধারণভাবে জীবিকার জন্য অমুসলিম রাষ্ট্রে যাওয়া উচিৎ নয়। কেননা এতে তাদের দ্বারা দ্বীন প্রভাবিত হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে যে সকল মুসলমান বসবাস করে আমি তাদের দায়িত্ব হ’তে মুক্ত...’ (আবুদাঊদ হা/২৬৪৫; মিশকাত হা/৩৫৪৭; ছহীহাহ হা/৬৩৬)। তিনি বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস কর না, তাদের সংসর্গেও যেয়ো না। যে মানুষ তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে সে তাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হবে’ (তিরমিযী হা/১৬০৫; ছহীহাহ হা/২৩৩০, সনদ হাসান)। তবে বাধ্যগত কারণে তাদের মাঝে বসবাস করতে হ’লে নিজ ধর্মের বিধি-বিধান মেনে চলবে এবং সুযোগমত তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে’ (নাহল ১৬/১২৫, মুমতাহিনাহ ৬০/৮; ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ৬/৪০৩; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৪৩)। এছাড়া মূলতঃ তিনটি শর্ত সাপেক্ষে কোন মুসলিম অমুসলিম রাষ্ট্রে যেতে পারে। (১) হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী জ্ঞান থাকা (২) প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার মত ঈমানী মযবুতী থাকা (৩) এমন অভাবী হওয়া যে, জীবিকার বিকল্প পথ না থাকা (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/২৪)। 

প্রশ্ন (৬/১২৬) : কা‘বা ঘরের দরজায় কে প্রথম সোনার প্রলেপ দেয়? এটি কি শরী‘আতসম্মত?

-তহীরুয্যামান, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : কা‘বাগৃহকে সর্বপ্রথম স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা কারুকার্যখচিত করেন উমাইয়া খলীফা ওয়ালীদ বিন আব্দুল মালিক (৮৬-৯৬ হি.)। সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে কা‘বা ঘরের দরজা ২৮২ কেজি স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে সুসজ্জিত করেন সঊদী বাদশাহ খালিদ বিন আব্দুল আযীয আলে সঊদ (১৯৭৫-১৯৮২ খৃ.)। অধিকাংশ বিদ্বান স্বর্ণ-রৌপ্য সহ বিভিন্ন বস্ত্ত দ্বারা মসজিদকে অলংকৃত করাকে অপসন্দনীয় বলেছেন। কেননা তা ইসলামের সহজ-সরল সৌন্দর্যের পরিপন্থী এবং মুছল্লীদের একাগ্রতা বিনষ্টকারী। সেকারণ রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মসজিদসমূহকে চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তোমরা একে জাঁকজমকপূর্ণ করবে যেভাবে ইহূদী-নাছারাগণ করত (আবুদাঊদ হা/৪৪৮; মিশকাত হা/৭১৮)। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল এই যে, লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে’ (আবুদাঊদ হা/৪৪৯; মিশকাত হা/৭১৯)। অতএব মসজিদকে এভাবে সুসজ্জিত করা উচিত নয় এবং তা নিঃসন্দেহে অপচয়ের শামিল (বিস্তারিত দ্র. আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৩/২১৮-১৯; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য’ অনুচ্ছেদ পৃ. ৩৮)

প্রশ্ন (৭/১২৭) : স্বামী মাসিক মাত্র দুই হাযার টাকা বেতনের চাকুরী করায় তার পক্ষে স্ত্রীসহ দু’সন্তানের জীবিকা নির্বাহ করা খুবই কষ্টকর। এক্ষণে স্ত্রী একটি মাদ্রাসায় কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে চাকুরী করতে চায়। কিন্তু স্বামী এতে রাযী নয়। এক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কী?

-নাজমুল হুদা, সরকারী মহিলা কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : স্বামীর শরী‘আতসম্মত যেকোন নির্দেশ মেনে চলা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক (নিসা ৪/৩৩, তিরমিযী হা/১১৫৯; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৪৬, ৩২৫৭)। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্ত্রী যদি সত্যিই প্রয়োজন বোধ করে এবং মাদ্রাসায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও পূর্ণ পর্দার পরিবেশ আছে বলে নিশ্চিত হয়, তবে স্বামীকে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করবে। এরপরও সম্মতি না পেলে অল্পে তুষ্ট থাকতে হবে এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের যিম্মা আল্লাহ নেননি (হূদ ১১/৬)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য রাস্তা খুলে দেন এবং তাকে রূযী দান করেন এমন উৎস হ’তে যে বিষয়ে তার কোনরূপ পূর্ব ধারণা ছিল না’ (তালাক ৬৫/২-৩)। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর শিখানো দো‘আটি নিয়মিত পাঠ করতে হবে- আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ‘ইলমান নাফি‘আ, ওয়া ‘আমালাম মুতাক্বাববালা, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়েবা (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী ইলম, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রূযী প্রার্থনা করছি’) (ইবনু মাজাহ হা/৯২৫, মিশকাত হা/২৪৯৮)
আর স্বামীকে স্মরণ রাখতে হবে যে, তিনি স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ করার ব্যাপারে দায়িত্বশীল। বৈধভাবে এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হ’লে স্বামীকে ক্বিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫)। রাসূল (ছাঃ) স্বামীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যা খাও এবং পরিধান কর, স্ত্রীদেরকে তা খাওয়াও এবং পরিধান করাও। তাদেরকে প্রহার করো না এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো না’ (আবুদাঊদ হা/২১৪৪)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) পরিবারের জন্য ব্যয়কে সর্বোত্তম ব্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন (মুসলিম হা/৯৯৪,  মিশকাত হা/১৯৩২)

প্রশ্ন (৮/১২৮) : ময়না তদন্ত সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? মৃতদেহে প্রয়োজনে এমন কাঁটাছেড়া করা জায়েয হবে কি?

-মহিদুর রহমান, তানোর, রাজশাহী।
উত্তর : মুসলিম মাইয়েত জীবিত ব্যক্তির ন্যায় সম্মানিত। সুতরাং আইনতঃ বাধ্যগত অবস্থা ছাড়া ময়না তদন্তের নামে মুসলিম মৃতদেহ কাঁটাছেড়া করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা জীবিত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গার ন্যায় (আবুদাঊদ হা/৩২০৭; মিশকাত হা/১৭১৪)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘মৃত মুমিনকে কষ্ট দেওয়া তাকে জীবিত অবস্থায় কষ্ট দেওয়ার ন্যায়’ (আওনুল মা‘বূদ হা/৩১৯১, ৯/২৪ পৃঃ)। তবে অপরাধী চিহ্নিতকরণের উদ্দেশ্যে বাধ্যগত অবস্থায়  ও আদালতের নির্দেশে লাশের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন সাপেক্ষে কবরস্থ লাশ উত্তোলন করা বা ময়না তদন্ত করা যাবে। জাবের (রাঃ) বলেন, আমার পিতাকে একজন লোকের পাশে দাফন করা হয়েছিল। এটা আমার কাছে পসন্দনীয় ছিল না। ফলে দাফনের ছয়মাস পর লাশ কবর থেকে বের করলাম। অতঃপর আমি তার কিছুই অপসন্দনীয় পেলাম না, মাটির সাথে লাগা কয়েকটা দাড়ি ব্যতীত। অন্য বর্ণনায় আছে, তার কান ব্যতীত কিছুই নষ্ট হয়নি (বুখারী হা/১৩৫১; আবূদাঊদ হা/৩২৩২, হাদীছ ছহীহ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৩০৩; ফাৎহুল বারী ৩/২৭৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১-২)। 

প্রশ্ন (৯/১২৯) : মাসবূক মুছল্লীদের ব্যাপারে দেখা যায় যে, ইমাম প্রথম সালাম ফিরাতেই তারা বাকী রাক‘আতের জন্য দাঁড়াতে শুরু করেন। এটা শরী‘আসম্মত কি?

-কামরুল ইসলাম
কুলিয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : সুন্নাত হ’ল, ইমাম উভয় সালাম ফিরানোর পর মাসবূক মুছল্লী অবশিষ্ট ছালাত শেষ করার জন্য দন্ডায়মান হবে। কারণ ইমামের দু’সালাম পর্যন্ত মুক্তাদীকে ইমামের অনুসরণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণ করার জন্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। ইমাম শাফেঈ ও ইবনুল মুনযিরসহ জমহূর বিদ্বানগণের মতে, যদি প্রথম সালামের পর মাসবূক দাঁড়িয়ে যায়, তবে তা জায়েয হবে। কিন্তু উত্তম হ’ল দ্বিতীয় সালাম শেষ হওয়ার পর দাঁড়ানো (ইবনু কুদামাহ ১/৩৯৬; নববী, আল-মাজমু ৩/৪৮৩; আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়াহ ৩৭/১৬৩)

প্রশ্ন (১০/১৩০) : জনৈক ব্যক্তি তার পিতা-মাতার জন্য প্রতি ওয়াক্তে দু’রাক‘আত ছালাত অতিরিক্ত আদায় করে বখশিয়ে দেন। উক্ত আমল সঠিক হচ্ছে কি?

-ইমদাদুল হক
বড়গাছি, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : এগুলো ধর্মের নামে চালু হওয়া সামাজিক কুসংস্কার মাত্র। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এরূপ কোন আমল পাওয়া যায় না। ছালাত দৈহিক ইবাদত। যা জীবদ্দশায় যেমন কাউকে দেওয়া যায় না, মৃত্যুর পরেও তেমনি কাউকে দেওয়া যায় না। বরং আমল যার, ফলাফল তার। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি নেক আমল করল, সেটি তার নিজের জন্যই করল। আর যে ব্যক্তি মন্দ কর্ম করল, তার পাপ তার উপরেই বর্তাবে’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৪৬)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘কেউ কারো পক্ষ থেকে ছিয়াম রাখতে পারে না বা ছালাত আদায় করতে পারে না’ (মুওয়াত্ত্বা হা/১০৬৯, পৃ. ৯৪; মিশকাত হা/২০৩৫)। কতিপয় বিদ্বান মৃত ব্যক্তিকে নফল ছালাতের ছওয়াব বখশানো যাবে বলে মনে করলেও তার পক্ষে কোনই দলীল নেই (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)
ইমাম নববী বলেন, ‘মাইয়েতের জন্য দো‘আ করা, ছাদাক্বা করা, হজ্জ করা ও তার ঋণ পরিশোধ করার ছওয়াব মাইয়েত পাবেন, এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত। তবে মাইয়েতের জন্য কুরআন পাঠ করা, ছালাত আদায় করা এবং এধরনের কোন দৈহিক সৎকর্ম করার বিষয়ে জমহূর বিদ্বানগণের মাযহাব হ’ল তার ছওয়াব মাইয়েতের নিকট পৌঁছবে না’ (মুসলিম শরহ নববী হা/১৬৩১-এর আলোচনা ১১/৮৫ পৃ.; বিস্তারিত দ্রঃ ‘কোরআন ও কলেমাখানী সমস্যা সমাধান’ বই ৯-১০ পৃ.)

প্রশ্ন (১১/১৩১) : পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ করা কি কন্যা সন্তানের জন্য ফরয, না এটা কেবল ছেলে সন্তানদের দায়িত্ব। যদি দায়িত্ব না হয় তবে মেয়ে কি তার পিতা-মাতাকে যাকাতের টাকা দিতে পারবে?

-তাজবীরুল হক
চকবাজার, চট্টগ্রাম।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদেরর সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৩০; নাসাঈ হা/৪৪৫০; মিশকাত হা/৩৩৫৪)। এতে বুঝা যায় যে, পিতা-মাতার দায়িত্ব পুত্র বা কন্যা সবার উপরে সমভাবে প্রযোজ্য। তবে পুত্র সন্তান যেহেতু উপার্জনের মূল দায়িত্ব পালন করে এবং পিতা-মাতার সম্পদে দ্বিগুণ ওয়ারিছ হয়, সেকারণ তারাই এক্ষেত্রে মূল দায়িত্বশীল (ইবনুল মুনযির, মুগনিল মুহতাজ ১৫/৬১)। ইমাম শাফেঈ বলেন, পুত্র সন্তান আছাবা হওয়ায় তাদের উপর পিতা-মাতার জন্য খরচ করা আবশ্যক   (কিতাবুল উম্মমুগনী ৮/২১৯)। তবে কন্যা সন্তান যদি সম্পদশালী হয় এবং সে সম্পদ ব্যয়ে তার স্বাধীনতা থাকে, সেক্ষেত্রে সে তার পিতা-মাতার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করবে। আর বিদ্বানগণ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, পিতা-মাতা বা সন্তান-সন্ততিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না। কেননা তা প্রকারান্তরে নিজেকেই যাকাত প্রদানের শামিল (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, ২/২৬৯)। তবে ইবনু তায়মিয়াসহ কতিপয় বিদ্বান কেবল ঋণ পরিশোধের নিমিত্তে পিতা-মাতা বা সন্তানদেরকে যাকাত প্রদান জায়েয বলে মত প্রকাশ করেছেন (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে ৬/২৫৯-২৬০; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৩৭৩)
প্রশ্ন (১২/১৩২) : বাযারে প্রচলিত যে টিউব মেহেদী কিনতে পাওয়া যায়, তা হাতে দিলে ওযূ হবে কি?
-সালমা খাতূন
অভয়নগর, যশোর।
উত্তর : টিউব মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয। শরী‘আতের দৃষ্টিতে এতে কোন দোষ নেই। এটা ওযূ-গোসলে কোন ক্ষতি করবে না। তবে বাযারে কিছু টিউব মেহেদী রয়েছে, যাতে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল রয়েছে বলে জানা যায়। সেগুলি পরিহার করা যরূরী।
প্রশ্ন (১৩/১৩৩) : হিসাববিজ্ঞান পড়ানোর ক্ষেত্রে সূদী লেনদেন সংশ্লিষ্ট অনেক হিসাব বিধি শিক্ষা দিতে হয়। এটা পড়া বা পড়ানো জায়েয হবে কি?
-মাহিদুল হাসান তাহসীন
দক্ষিণখান, ঢাকা।
উত্তর : হিসাব বিজ্ঞান শেখা ও শেখানোয় কোন দোষ নেই। কারণ উক্ত শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদান করা মৌলিকভাবে জায়েয  (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/২৩২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৩১)। তবে শিক্ষার্থীদেরকে সূদী কারবার হারাম হওয়ার বিষয়টি যথার্থরূপে শিক্ষা দিতে হবে। যাতে সূদের শারঈ বিধান সম্পর্কে তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরী হয়।
প্রশ্ন (১৪/১৩৪) : আউয়াল ওয়াক্তে ফরয ছালাত আদায় করে বিলম্বিত ওয়াক্তে মসজিদে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে মুছল্লী কি নফল ছালাতের নিয়ত করবে?
-রাজীবুল ইসলাম
বদরগঞ্জ বাযার, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : এমতাবস্থায় মুছল্লী নফল ছালাতের নিয়ত করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৬০০)
প্রশ্ন (১৫/১৩৫) : একটি সূদী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের খরচে প্রতিবছর হজ্জে পাঠানো হয়। উক্ত অর্থ দিয়ে হজ্জ করলে তা কবুলযোগ্য হবে কি?
-ফারূক হোসাইন, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : অন্যের খরচে হজ্জ পালনে বাধা নেই। এতে হজ্জের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৬৫৯৩)। কেননা হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ কেবল উপার্জনকারীর জন্য হারাম। উপার্জনকারীর নিকট থেকে বৈধ পন্থায় গ্রহণকারী এর জন্য দায়ী হবে না। যেমন রাসূল (ছাঃ) ইহূদীদের সাথে লেনদেন করতেন, যদিও তারা সূদ-ঘুষে অভ্যস্ত ছিল (উছায়মীন, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৫৭ আয়াত ১/১৯৮)। উল্লেখ্য যে, হারাম উপার্জনের জন্য সূদী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারী সকলেই গোনাহগার হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) যারা সূদ খায়, সূদ দেয়, সূদের হিসাব লেখে এবং সূদের সাক্ষ্য দেয় তাদের সকলের উপর লা‘নত করেছেন। তিনি বলেন, পাপের ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান’ (মুসলিম হা/১৫৯৮; মিশকাত হা/২৮০৭)
প্রশ্ন (১৬/১৩৬) : বিবাহের সম্মতি জ্ঞাপন করতে গিয়ে অনেকে কবূল না বলে আলহামদুলিল্লাহ বলেন। এটা সঠিক হবে কি?
-আলাল বিন কায়েস
বদরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর : সরাসরি সম্মতিসূচক শব্দ ব্যবহার করাই উত্তম। তবে নিয়তের সাথে ইঙ্গিতবহ বাক্য যেমন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললেও বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৩৬)
প্রশ্ন (১৭/১৩৭) : বর্তমানে প্রবাসীরা কোন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে ২% হিসাবে প্রণোদনা পাচ্ছে। এটা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-আব্দুল লতীফ
সেন্তাসা, সিঙ্গাপুর।
উত্তর : এধরনের প্রণোদনা গ্রহণ করায় কোন দোষ নেই। কারণ ব্যাংক এটি সূদ হিসাবে দিচ্ছে না। বরং হুন্ডি বা অনিয়মিত লেনদেন বন্ধ করার জন্য এবং সরকারী নিয়ম অনুসরণে উৎসাহ দেওয়ার জন্য পুরস্কার হিসাবে প্রদান করছে। সেজন্য এমন হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/২৮৮)
প্রশ্ন (১৮/১৩৮) : জান্নাতে আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর ভাষা কী ছিল?
-আতীকুল ইসলাম
নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : আদম (আঃ)-এর ভাষা কি ছিল বা জান্নাতের ভাষা কি হবে সে ব্যাপারে কুরআন বা ছহীহ হাদীছে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহ আদম (আঃ)-কে জান্নাতে সকল প্রকার নাম ও ভাষা শিখিয়েছিলেন (বাক্বারাহ ২/৩১)। সেমতে তার সন্তানগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা তিনটি কারণে আরবদের ভালবাস। আমি আরবীভাষী। কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা হবে আরবী (হাকেম হা/৬৯৯৯; মিশকাত হা/৫৯৯৭; যঈফাহ হা/১৬০, হাদীছটি জাল)। একইভাবে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি আরবীভাষী, কুরআন আরবী ও জান্নাতীদের ভাষা আরবী’ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৯১৪৭; যঈফাহ হা/১৬১, হাদীছটি জাল)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ জান্নাতীদের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করবেন (আবু নু‘আইম, ছিফাতুল জান্নাহ হা/২৭০; হাকীম তিরমিযী, নাওয়াদেরুল উছূল ২/৯০; যঈফুল জামে‘ হা/১৮৩৪)। উক্ত হাদীছ সমূহের ভিত্তিতে একদল বিদ্বান মনে করেন যে, আদম (আঃ)-এর ভাষা ছিল আরবী এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবী। তবে হাদীছগুলি জাল হওয়ায় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ আলবানীসহ বহু বিদ্বান উক্ত মতকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন (মিশকাত হা/৫৯৯৭-এর টীকা ‘কুরায়েশের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; যঈফাহ হা/১৬০-১৬২; ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাকীম ১/১৫৮)
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষ কোন ভাষায় কথা বলবে এবং আল্লাহ তাদের সাথে কোন ভাষায় কথা বলবেন, তা জানা যায় না। কেননা আল্লাহ ও তার রাসূল (ছাঃ) এ বিষয়ে আমাদের কোন খবর দেননি। সেদিন জাহান্নামীদের ভাষা ফার্সী হবে এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী হবে, এ মর্মে ছাহাবীগণ নিজেদের মধ্যে কোন বিতর্ক করেননি। বরং সবাই এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। কেননা এ ব্যাপারে কথা বলা অনর্থক মাত্র। যদিও পরবর্তীদের মধ্যে এ বিষয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে যে, জান্নাতীগণ আরবীতে পরস্পরে আহবান করবে এবং জাহান্নামীরা ফার্সীতে জওয়াব দিবে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৪/৩০০ পৃ.)
তবে সৃষ্টির সূচনায় জান্নাতে আদম (আঃ)-এর ভাষা আরবী ছিল বলে অনুমিত হয়। কেননা তখন জান্নাতে আদম কেবল একাই ছিলেন। পরবর্তীতে দুনিয়ায় নেমে আসার পর বংশ বিস্তৃতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আদম সন্তানদের ভাষায় ভিন্নতা আসে। যেসব ভাষার তাওফীক আল্লাহ পূর্বেই আদমের মধ্যে সৃষ্টি করেছিলেন। আর জান্নাতীদের ভাষা আরবী হবে। কারণ আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ নবীর উপর সর্বশেষ গ্রন্থ কুরআন নাযিল করেছেন আরবী ভাষায় এবং শেষনবীর ভাষাও ছিল আরবী। আর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আযান, ছালাত ও অন্য সকল ইবাদত এবং পরস্পরের সালাম হয় আরবীতে। এজন্য শায়খ বিন বায বলেন, জান্নাতের ভাষা হবে আরবী (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)। হাফেয ইবনু হাজার বলেন, কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্ন আরবী ভাষায় হবে বলে ছহীহ হাদীছ দৃষ্টে বুঝা যায়। তথাপি প্রত্যেকে স্ব স্ব ভাষায় জিজ্ঞাসিত হবে বলেই ধারণা হয় (ইবনু হাজার, আল-ইমতা‘ ১২২ পৃ.)
মোটকথা কবরে প্রশ্নোত্তর, জান্নাতী ও জাহান্নামীদের পারস্পরিক কথোপকথন, সুফারিশ করার জন্য নবীদের নিকট মানুষের অনুরোধকরণ, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য প্রদান এবং জান্নাতীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর সালাম প্রদান প্রভৃতি আখেরাতের সবকিছু আরবী ভাষায় হওয়াটা মোটেই বিচিত্র কিছু নয়। ‘আর সেটা আল্লাহর জন্য মোটেই কঠিন নয়’ (ইব্রাহীম ১৪/২০; ফাত্বির ৩৫/১৭)
প্রশ্ন (১৯/১৩৯) : একসাথে একাধিক মাইয়েতের উপর একবার জানাযার ছালাত পড়লে তা কি ছহীহ হবে? নাকি প্রত্যেকের জন্য পৃথক জানাযা করতে হবে?
-তাওহীদুল ইসলাম
মাষ্টারপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
উত্তর : একসাথে একাধিক জানাযা উপস্থিত হ’লে একবারে জানাযা পড়া সুন্নাত। পৃথক জানাযা করতে হবে না। ওহোদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশজন দশজন শহীদের জানাযা একত্রে পড়েছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৫১৩; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১০৩)। উম্মে কুলছূম ও তার ছেলের জানাযা একই সাথে পড়া হয়েছিল (আবুদাউদ হা/৩১৯৩)। ইবনু ওমর (রাঃ) নয় জনের জানাযা এক সাথে পড়ে ছিলেন যাতে মহিলাদের ক্বিবলার দিকে ও পুরুষদের ইমামের পাশাপাশি রাখা হয়েছিল। উক্ত জানাযায় ইবনু আববাস, আবু সাঈদ, আবু হুরায়রা ও আবু ক্বাতাদাহ উপস্থিত ছিলেন। এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা বলেন, এটি সুন্নাত (নাসাঈ হা/১৯৭৮; আছার ছহীহাহ হা/৪৪১; আহকামুল জানায়েয ১/১০৩, সনদ ছহীহ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল পৃঃ ২১৫)
প্রশ্ন (২০/১৪০) : মৃতপ্রায় রোগীকে লাইফ সাপোর্টে জীবিত রাখতে প্রচুর খরচ হয়। এক্ষণে খরচের ভয়ে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সাপোর্ট দেয়া বন্ধ করে দিলে গুনাহগার হ’তে হবে কি?
-সানজীদুল ইসলাম
বায়া, রাজশাহী।
উত্তর : কেবলমাত্র খরচের ভয়ে রোগীর স্বজনগণ এরূপ করলে তারা গুনাহগার হবেন। কারণ যতক্ষণ তার জীবন থাকবে, ততক্ষণ সে জীবিত বলে ধর্তব্য হবে। তবে চিকিৎসক যদি তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হন অথবা স্বজনগণ সবদিক থেকে একেবারে নিরুপায় হয়ে যান, সেক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে সাপোর্ট বন্ধ করা যেতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার নিকটে বিপদ পৌঁছার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। তবে সে যদি মৃত্যুই চায়, তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রেখ যে পর্যন্ত আমার জীবন কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬০০)
প্রশ্ন (২১/১৪১) : দশ বছরের সন্তান থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় স্বামী তাকে তালাক দেয়। উক্ত মহিলাও তার স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চায় না। এমতাবস্থায় পরবর্তীতে সম্পর্ক করা ঐ ব্যক্তির সাথে বিবাহ করায় কোন বাধা আছে কি?
-মিরাজুল ইসলাম, বীরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর : বাধা নেই। ওলীর অনুমতিক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে। আবুবকর (রাঃ)-এর আমলে দু’জন নারী-পুরুষ যেনায় লিপ্ত হ’লে তাদের একশ’ বেত্রাঘাত করে বিবাহ দিয়ে দেওয়া হয়। ইবনু আববাস (রাঃ)-কে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, প্রথমটি ছিল ব্যভিচার আর দ্বিতীয়টি বিবাহ। অতএব ব্যভিচার বিবাহকে হারাম করতে পারে না। ইবনু ওমর ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে (বায়হাক্বী হা/১৪২৪৯; কুরতুবী, তাফসীর সূরা নূর ৩ আয়াত)। তবে শর্ত হ’ল যদি নারীর সাথে অবৈধ মিলন হয়ে থাকে। তাহ’লে তাকে তওবা করতে হবে এবং এক হায়েয পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে তার সন্তান প্রসবের আগে এবং কোন মহিলার সাথে তার হায়েয হ’তে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সহবাস করবে না’ (আবুদাউদ হা/২১৫৭; মিশকাত হা/৩৩৩৮; আহমাদ হা/১১৮৪১, সনদ ছহীহ)
প্রশ্ন (২২/১৪২) : আমার পরিচিত জনৈকা মহিলার বাসায় প্রত্যেক জুম‘আর দিন ৭০ বছর বয়স্ক একজন মসজিদের ইমাম ছাহেব এসে কুরআনের আলোচনা পেশ করেন। এরূপ আলোচনা শরী‘আত সম্মত কি?
-নূরে আখতার, শঠিবাড়ি, রংপুর।
উত্তর : মহিলারা নিরাপদ পরিবেশে পর্দার মধ্যে থাকা অবস্থায় পুরুষের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) মহিলাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৫৩)। তবে নারী একাকী থাকলে সাথে মাহরাম থাকা অথবা একাধিক মহিলা থাকা যরূরী। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মাহরাম ব্যতীত কোন নারী যখন পরপুরুষের সঙ্গে নির্জনে একত্রিত হয়, সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১১৮)। অনেকে পর্দা না টাঙ্গিয়ে পরপুরুষের সামনে মুখোমুখি বসে ওয়ায শুনেন ও প্রশ্নোত্তর করেন। যা পর্দার বরখেলাফ।
প্রশ্ন (২৩/১৪৩) : নতুন বাড়ীতে ওঠা উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দো‘আ-দরূদ পাঠ করে জিন-ভূতের আছর বন্ধ করা হয়। এটা করা জায়েয হবে কি?
-ইব্রাহীম খলীল, তুলাগাঁও, কুমিল্লা।
উত্তর : নতুন বাড়ী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা শরী‘আত সম্মত নয়। কেবল বিসমিল্লাহ বলে উঠবে। আর শয়তানের ক্ষতি হ’তে বাঁচার জন্য যেকোন সময় সূরা বাক্বারাহ বা তার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীকে কবরে পরিণত করো না। নিশ্চয়ই শয়তান এমন বাড়ী থেকে পালায়, যে বাড়ীতে সূরা বাক্বারাহ পড়া হয়’ (মুসলিম হা/৭৮০; মিশকাত হা/২১১৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে বাড়ীতে (বা অন্যত্র) তিন রাত সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত পাঠ করা হয়, শয়তান সে বাড়ীর নিকটবর্তী হয় না’ (তিরমিযী হা/২৮৮২; মিশকাত হা/২১৪৫)
প্রশ্ন (২৪/১৪৪) : প্রথম কাতারে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব কি? মসজিদে যদি কেবল একটিই কাতার থাকে সেক্ষেত্রে উক্ত মর্যাদা পাওয়া যাবে কি?
-ইলিয়াস হোসাইন, কাঞ্চন, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর প্রথম কাতারে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব অত্যধিক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষ যদি জানত আযানে এবং প্রথম কাতারে কি নেকী রয়েছে। তাহ’লে লটারীর মাধ্যমে হ’লেও আযান দেওয়ায় ও প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর জন্য অংশগ্রহণ করত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৮ ‘ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)। তিনি বলেন, ছালাতের প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের মত। তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফযীলত জানতে তাহ’লে অবশ্যই দৌঁড়ে যেতে (আবূদাঊদ হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬)। তিনি বলেন, প্রথম কাতারের (মুছল্লীদের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দো‘আ করেন’ (ইবনু মাজাহ হা/৯৯৭)। তিনি আরো বলেন, ‘পুরুষদের জন্য সর্বোত্তম কাতার হ’ল প্রথম কাতার’ (মুসলিম হা/৪৪০; মিশকাত হা/১০৯২)। এক্ষণে মসজিদে কেবল একটি কাতার থাকলেও সেটি প্রথম কাতার হিসাবে গণ্য হবে এবং এর যাবতীয় ফযীলত অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা প্রথম কাতার বলতে ইমামের পিছনের কাতারকেই বুঝানো হয়েছে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/২০৮)
প্রশ্ন (২৫/১৪৫) : আমার পৈত্রিক সম্পদের বেশ কিছু অংশ আমার কতিপয় আত্মীয়-স্বজন অবৈধভাবে ভোগ করছে। এখন তা ফিরিয়ে নিতে গেলে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এক্ষণে সম্পদ না আত্মীয়তা কোনটিকে অগ্রাধিকার দিব?
-রফীকুল হক, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : সম্পদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরিয়ে নিতে হবে। আবার আত্মীয়তার বন্ধনও রক্ষা করতে হবে। আর এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে সহনশীল হতে হবে। নইলে হঠকারী পক্ষ দায়ী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কারু এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে দখল করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীনের বেড়ী পরানো হবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৯৩৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, অন্যায়ভাবে ভোগ করা সমস্ত মাটি তার মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে তা বহন করতে বাধ্য করা হবে (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৫৯)
প্রশ্ন (২৬/১৪৬) : পরবর্তীতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় আলু-পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য স্টক রাখার ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কি?
-মাহফূযুর রহমান
মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা হারাম। মা‘মার (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বেশী দামের আশায় সম্পদ জমা রাখে সে পাপী (মুসলিম হা/১৬০৫; আবূদাঊদ হা/৩৪৪৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, মূল্যবৃদ্ধির আশায় অপরাধী ব্যতীত আর কেউ খাদ্য-শস্য মওজুদ করে না (মুসলিম হা/১৬০৫; ইবনু মাজাহ হা/২১৫৪)
উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করে এবং তখন বিক্রি না করে অধিক মূল্য বৃদ্ধির আশায় তা সঞ্চিত রাখে, সে ব্যক্তি পাপী হবে। তবে যদি তা খাদ্যশস্য না হয়, তবে তাতে দোষ নেই (শরহ নববী)। অতএব পেঁয়াজ ও লবন মওজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীরা তওবা করুন।
তবে সাধারণভাবে উৎপাদনের মৌসুমে হ্রাসপ্রাপ্ত মূল্যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে অন্য মৌসুমে প্রচলিত বাজারমূল্যে বিক্রয় করায় কোন দোষ নেই। কেননা খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে তা জায়েয (আওনুল মা‘বূদ ৫/২২৬-২২৮ পৃঃ, ‘ইহতেকার নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; নায়ল, ৫/২২২ পৃঃ, ‘ইহতেকার’ অনুচ্ছেদ)
প্রশ্ন (২৭/১৪৭) : কারো বিরুদ্ধে যেনার অপবাদ দিলে এবং তা প্রমাণিত না হ’লে শরী‘আতে অভিযোগকারীর জন্য কি শাস্তি রয়েছে?
-আব্দুল আলীম, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : মিথ্যা অপবাদ হ’ল কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৮)। কারো উপর যেনার অপবাদ দিয়ে প্রচার করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা অপবাদ দানকারীর শাস্তি হ’ল ৮০ বেত্রাঘাত। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়। অথচ চারজন (প্রত্যক্ষদর্শী) সাক্ষী হাযির করতে পারে না। তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর। আর তোমরা কখনোই তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। বস্ত্ততঃ এরাই হ’ল পাপাচারী’ (নূর ২৪/৪-৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে, সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে (ফৎহুল বারী ১২/১৮১)। উল্লেখ্য, শরী‘আত নির্ধারিত  দন্ডবিধি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের, অন্যদের নয় (কুরতুবী)
প্রশ্ন (২৮/১৪৮) : আমরা জানি আল্লাহর দু’হাতই ডান হাত। তবে মিশকাতে একটি হাদীছে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর ডান ও বাম দু’হাতই রয়েছে। কোনটি সঠিক?
-আব্দুল আযীয
ফার্মেসী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর : আল্লাহর দু’হাত রয়েছে এবং ডান ও বাম হাতও রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশমন্ডলী পেঁচিয়ে নিবেন। তারপর তিনি আকাশমন্ডলীকে ডান হাতে ধরে বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় শক্তিশালী লোকেরা! কোথায় অহংকারীরা? এরপর তিনি বাম হাতে গোটা পৃথিবী গুটিয়ে নিবেন এবং বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় অত্যাচারী লোকেরা, কোথায় বড়ত্ব প্রদর্শনকারীরা?’ (মুসলিম হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/৫৫২৩)। অত্র হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ডান ও বাম হাত রয়েছে। তবে তা সৃষ্টজীবের মত নয়। অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টজীব বাম হাত দ্বারা সাধারণত দুর্বল বা অপরিষ্কার কাজগুলো করে থাকে। সে অর্থে আল্লাহর দু’হাতই ডান হাত। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ন্যায়বিচারকগণ (ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বর সমূহে মহিমান্বিত দয়ালু (আল্লাহ্)-এর ডানপার্শ্বে উপবিষ্ট থাকবেন। আর তার উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ সমান মহিমান্বিত)। (সেই ন্যায়পরায়ণ হচ্ছে) ঐসব লোক, যারা তাদের শাসনকার্যে, তাদের পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সমূহের ব্যাপারে সুবিচার করে (মুসলিম হা/১৮২৭; মিশকাত হা/৩৬৯০)। অর্থাৎ সম্মান-মর্যাদা, ক্ষমতা ও দোষ-ত্রুটির ক্ষেত্রে সৃষ্টজীবের বাম হাতের সাথে তাঁর হাত তুলনীয় নয় (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১২৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/১৬৫)। অতএব হাদীছ দু’টির মধ্যে কোন বিরোধ নেই।
প্রশ্ন (২৯/১৪৯) : বৃটিশ আইনে পরিচালিত বাংলাদেশের কোন আদালতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করা শরী‘আতসম্মত হবে কি?
-সেলিম হোসাইন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : আদালত ব্যবস্থাপনা সমাজের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। সেকারণ আদালতের যেকোন চাকুরী বৈধ। তবে সেখানে সর্বদা সত্যকে বিজয়ী করা, যুলুমের প্রতিরোধ করা এবং মানুষকে তার হক ফেরত দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হয় এবং অপরাধী ছাড়া না পায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করে এবং পাপ ও শত্রুতার কাজে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/২৩১)। আর ইসলামী আইনের বিপরীতে প্রচলিত বৃটিশ আইনের দায়ভার বর্তাবে সরকারের উপর। যতদিন তা চালু থাকবে, ততদিন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ পাপী হ’তে থাকবে। কেননা আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্যের বিধান কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় (ইউসুফ ৪০, মায়েদাহ ৫০ প্রভৃতি)
প্রশ্ন (৩০/১৫০) : সূরা কাওছারে রাসূল (ছাঃ)-কে কুরবানী করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষণে কুরবানী করা কি ফরয?
-ইউসুফ আহমাদ
কুলনিয়া, পাবনা।
উত্তর : কুরবানী করা ফরয নয়। বরং সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং ছাহাবীগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন। তাই সামর্থ্যবানদের জন্য এটা পালন করা যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে’ (আহমাদ, ইবনু মাজাহ, হাকেম; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩২;  এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব, ওমর ফারূক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ কখনো কখনো কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১১৩৯; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১০)


প্রশ্ন (৩১/১৫১) : চার রাক‘আত সুন্নাতের শেষ দু’রাক‘আতে কী অন্য সূরা মিলাতে হয়?

-নুহা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী।
উত্তর : যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং ৩য় ও ৪র্থ রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে। যেমন আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরা ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পড়তেন।... অনুরূপ করতেন আছরে...’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৮২৮)। একই নিয়মে চার রাক‘আত সুন্নাতের শেষ দু’রাক‘আতে পড়বে। তবে শেষের দু’রাক‘আতেও কোন কোন ছাহাবী সূরা মিলাতেন বলে জানা যায় (মুওয়াত্ত্বা হা/২৬০; মির‘আত ৩/১৩১)। জানা আবশ্যক যে, ফরয-নফল সব ছালাতে সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য সূরা পাঠ করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ছালাত সিদ্ধ নয় সূরা ফাতিহা ব্যতীত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৮২২)।  
প্রশ্ন (৩২/১৫২) : রাসূল (ছাঃ) অহি প্রাপ্তির পর কখনো কি হেরা গুহায় আরোহন করেছেন?
-মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) হেরা গুহায় অহি লাভের পর সেখানে আর গমন করেননি। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘নবুঅতের প্রাক্কালে রাসূল (ছাঃ) হেরা গুহাতে গিয়ে ইবাদত করতেন এবং তাতেই সর্বপ্রথম ওহী অবতীর্ণ হয়। কিন্তু ওহী নাযিলের পর কখনও তিনি সেখানে উঠেননি, এমনকি তিনি তার নিকটবর্তীও হননি। পরবর্তীকালে তার কোন ছাহাবীও সেখানে যাননি। রাসূল (ছাঃ) নবুঅত প্রাপ্তির পর তের বছর মক্কাতেই অবস্থান করেছেন। আবার হিজরতের পর তিনি মক্কাতে কয়েকবার এসেছেন, যেমন- হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়, মক্কা বিজয়ের বছর এবং সেখানে তিনি প্রায় ২০দিন অবস্থান করেছেন, কিন্তু তিনি কখনও সেখানে যাননি। আর সেখানে না যাওয়ার কারণ হয়ত ছিল এই যে, জাহেলী যুগের লোকেরা সেখানে গিয়ে ধ্যান করত। এমনকি রাসূলের দাদা আব্দুল মুত্তালিব তার সূচনা করেছিল বলেও বর্ণিত হয়েছে। ফলে যাতে মুসলমানরা উক্ত জায়গাটিকে বিশেষ মর্যাদা মন্ডিত মনে না করে, এজন্য রাসূল (ছাঃ) আর কখনো সেখানে যাননি (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১০/৩৯৪)

প্রশ্ন (৩৩/১৫৩) : কবরে রাসূলের ছবি দেখিয়ে কি বলা হবে ইনি কে?
-মোশাররফ হোসাইন
রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : কবরে রাসূল ছাঃ)-এর ছবি প্রদর্শন করা হবে মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। বরং বলা হবে, তোমাদের মাঝে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? (আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; আহমাদ হা/১৮৬৩৭; মিশকাত হা/১৩১, ১৬৩০; ছহীহাহ হা/২৬২৮)
প্রশ্ন (৩৪/১৫৪) : খারেজী আক্বীদার অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাই।
-শফীকুর রহমান
বাহাদুরপুর, পাংশা, রাজবাড়ী।
উত্তর : খারেজীদের বৈশিষ্ট্য হ’ল, (১) তারা কবীরা গোনাহগার শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ওয়াজিব মনে করে এবং কবীরা গোনাহগার মুমিনকে ঈমানশূন্য কাফের, হত্যাযোগ্য অপরাধী এবং তওবা না করে মারা গেলে তাদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হিসাবে গণ্য করে (শাহরস্তানী, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১/১১৪ পৃঃ, ইবনু হাযম, আল-ফিছাল ফিল মিলাল ২/১১৩)। (২) তারা কুরআন-হাদীছের মনগড়া ব্যাখ্যা করে। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম সহ সালাফে ছালেহীনের ব্যাখ্যার প্রতি মোটেই ভ্রূক্ষেপ করে না। ইবনু আববাস (রাঃ), ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) প্রমুখ বিদ্বানগণ উক্ত মত ব্যক্ত করেছেন (ফিরাক্ব মু‘আছিরাহ ১/২৭৮-২৭৯)। (৩) তারা হবে কম বয়সী, নির্বোধ ও বিচার-বুদ্ধিহীন। তারা সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। কিন্তু তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না (মুসলিম হা/১০৬৬, মিশকাত হা/৩৫৩৫) (৪) অন্যদের ছালাত, ছিয়াম ও আমলসমূহকে তাদের ছালাত, ছিয়াম ও আমলের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে (বুখারী হা/৫০৫৮)। (৫) তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে ও মূর্তিপূজারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দিবে (অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না)  (বুখারী হা/৩৩৪৪, মুসলিম হা/১০৬৪, মিশকাত হা/৫৮৯৪)। (৬) তারা সাধারণতঃ সম্পূর্ণ মাথার চুল ন্যাড়া করে রাখবে (আবুদাউদ হা/৪৭৬৬; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫)
এদের লোকেরাই হযরত আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে ‘কাফের’ অভিহিত করে আলী (রাঃ)-কে হত্যা করেছিল এবং মু‘আবিয়া (রাঃ) ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন (৩৫/১৫৫) : গার্মেন্টসে চাকুরী করা যাবে কি? এর উপার্জন হালাল হবে কি?
-যাকীরুল ইসলাম
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : গার্মেন্টসে চাকুরী করা বৈধ এবং এর উপার্জনও বৈধ, যদি উৎপাদিত পণ্যটি বৈধ হয়। তবে গার্মেন্টসে নারী-পুরুষ একত্রিতভাবে থাকলে এবং ফেতনায় পড়ার আশঙ্কা থাকলে সেখানে কাজ করা ঠিক নয়। রাসূল (ছাঃ) পুরুষদের জন্য নারীদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিকর ফিৎনা হিসাবে উল্লে­খ করেছেন (বুখারী হা/৫০৯৬; মিশকাত হা/৩০৮৫)। সেক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। আর সেটা সম্ভব না হ’লে সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় করতে হবে ... (তাগাবুন ৬৪/১৬)
প্রশ্ন (৩৬/১৫৬) : ‘বেহেশতী জেওর’ বইয়ে উল্লেখ আছে যে, রাতের অন্ধকারে স্ত্রী মনে করে কন্যা বা শ্বাশুড়ীর শরীর স্পর্শ করলে, সে পুরুষ তার নিজ স্ত্রীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। ফৎওয়াটি সঠিক কি?
-মাহফূযা আখতার
ধামুইরহাট, জয়পুরহাট।
উত্তর : বেহেশতী জেওরে বর্ণিত মাসাআলাটি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সঠিক কথা এই যে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় এধরনের অনাকাংখিত আচরণ হয়ে গেলে স্ত্রী তার উপর হারাম হবে না। কেননা একটি হারাম কাজ অপর একটি হালালকে হারাম করতে পারে না। এরূপ কাজ হয়ে গেলে তাকে খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার শ্বাশুড়ী ও শ্যালিকার সাথে যেনা করে ফেললে তিনি বলেন যে, এ কাজের জন্য তার স্ত্রী তার উপর হারাম হবেনা’ (মুহাম্মাদ ইবনু আবী শায়বাহ, বায়হাক্বী; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৮৮১ , ৬/২৮৮)
প্রশ্ন (৩৭/১৫৭) : ইবলীস শয়তান কি একাই মানব ও জিন জাতিকে পথভ্রষ্ট করে, নাকি তার সন্তানরা রয়েছে যারা এ কাজে তাকে সহায়তা করে?
-মুহাম্মাদ ইমরান মোল্লা
রিয়াদ, সঊদী আরব।
উত্তর : ইবলীস শয়তান একাই নয় বরং তার গোত্র মিলে সম্মিলিতভাবে মানুষ ও জিন জাতিকে পথভ্রষ্ট করে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছ?’ (কাহফ ১৭/৫০)। এই আয়াত প্রমাণ করে যে, তার বংশধর রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি যদি পার, তাহ’লে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হবে না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থানকারী হবে না। কারণ বাজার শয়তানের আড্ডাখানা; সেখানে সে আপন ঝান্ডা গাড়ে, সেখানে সে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা জন্ম দেয় (মুসলিম হা/২৪৫১; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৬১১৮, ৬১৩১)। অন্যত্র এসেছে, ‘ইবলীস শয়তান সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিৎনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিৎনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলীস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করনি। তিনি  বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দেইনি, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে নিকটে বসায় আর বলে, তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী আ‘মাশ বলেন, আমার মনে হয় জাবের (রাঃ) এটাও বলেছেন যে, অতঃপর ইবলীস তার সাথে আলিঙ্গন করে (মুসলিম হা/২৮১৩; মিশকাত হা/৭১)
প্রশ্ন (৩৮/১৫৮) : সুখে-দুখে সর্বদা আল্লাহর প্রশংসাকারীরা জান্নাতে সবার আগে প্রবেশ করবে- কথাটির সত্যতা আছে কি?
-মহীদুল ইসলাম
গাংনী, মেহেরপুর।
উত্তর : উক্ত মর্মে ত্বাবারাণী আওসাত্বে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যার সনদ যঈফ (তাবারাণী আওসাত্ব হা/৩০৩৩; মিশকাত হা/২৩০৮; যঈফাহ হা/৬৩২)। তবে সুখে-দুখে আল্লাহর প্রশংসাকারী ব্যক্তিদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হবে আল্লাহর প্রশংসাকারীগণ (আহমাদ হা/১৯৯০৯; ছহীহাহ হা/১৫৮৪)। তাদের জন্য জান্নাতে ‘বায়তুল হাম্দ’ নির্মিত হবে (তিরমিযী হা/১০২১; ছহীহাহ হা/১৪০৮)
প্রশ্ন (৩৯/১৫৯) : চামড়ার মোযা ব্যতীত সাধারণ অন্যান্য মোযার উপর মাসাহ করা শরী‘আত সম্মত কি? এছাড়া জুতার উপর মাসাহ করা যাবে কি?
-মুহাম্মাদ অনিক*
ডিমলা, নীলফামারী।
*আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন অথবা শুধু মুহাম্মাদ নাম রাখুন (স.স.)
উত্তর : যেকোন মোযার উপর মাসাহ করা বৈধ। হাদীছে বিশেষ কোন মোযাকে শর্ত করা হয়নি। আরবী ভাষায় চামড়ার তৈরী মোযাকে ‘খুফ’ এবং সূতা বা কাপড়ের তৈরী মোযাকে ‘জাওরাব’ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেমন চামড়ার তৈরী মোযার উপরে মাসাহ করেছেন (বুখারী হা/২০২; মুসলিম হা/২৭৪; মিশকাত হা/৩৯৯)। তেমনি তিনি কাপড়ের তৈরী মোযার উপরেও মাসাহ করেছেন (আবুদাউদ হা/১৫৯; তিরমিযী হা/৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৫৫৯; মিশকাত হা/৫২৩)। এছাড়া কেউ যদি জুতার উপর মাসাহ করে ছালাত আদায় করতে চায় তাকে সেই জুতা পরেই ছালাত আদায় করতে হবে। জুতা খুলে ফেললে ওযূ টুটে যাবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ২৯/৬৯)

প্রশ্ন (৪০/১৬০) : একটি বইয়ে লেখা আছে, ‘গীবত করা যিনা করার চেয়েও বড় পাপ’। এটা কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?

-মশিউর রহমান
পুরানা পল্টন, ঢাকা।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৪৬; যঈফুল জামে‘ হা/২২০৪; মিশকাত হা/৪৮৭৪)। তবে গীবত করা বড় পাপ। আল্লাহ তা‘আলা একে মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করার সাথে তুলনা করেছেন (হুজুরাত ১২; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৮)।   

প্রশ্ন (১/১৬১) : বিভিন্ন চাকুরীর আবেদনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সবসময় বিসিএস ক্যাডার পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে কাগজে কোন প্রকার অনৈতিকতার আশ্রয় না নিয়ে কারো সিল বানিয়ে নিয়ে নকল স্বাক্ষর করে সত্যায়িত করা জায়েয হবে কি?
-নকীব হোসাইন
বেরাইদ, ঢাকা।
উত্তর : কোন অবস্থাতেই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বরং সর্বদা ন্যায়পন্থা অবলম্বনের সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, যার আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথেই থাকেন (আনকাবূত ২৯/৬৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/৩৫২০)। মিথ্যা ছোট হোক বা বড় হোক মানুষের অন্তরে মুনাফিকী সৃষ্টি করে। তাছাড়া একটি মিথ্যা অপর মিথ্যাকে ডেকে আনে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়’ (বুখারী হা/৬০৯৪)

প্রশ্ন (২/১৬২) : পানি উঠার ভয়ে ঈদগাহের প্রাচীর উঁচু করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

-মাহবূব হাসান
আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : ঈদায়নের মুছাল্লা উন্মুক্ত ময়দানে হওয়া সুন্নাত। কারণ উত্তম স্থান হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদে নববীর পূর্বদিকে ৫০০ গজ দূরে খোলা ময়দানে ‘বুত্বহান’ সমতলভূমিতে ছালাত আদায় করেন (মুত্তাফাক ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৬; মির‘আত ৫/২২, ৩৭২ পৃ.)। তবে ঈদগাহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন (৩/১৬৩) : হালীমা, সালমা, রহীমা ইত্যাদি নাম রাখার বিধান কী? এগুলি আল্লাহর গুণবাচক নাম কি?

-বদীউয্যামান
কালিয়াকৈর, গাযীপুর।
উত্তর : আল্লাহর নামসমূহ সর্বদা পুংলিঙ্গ। স্ত্রীলিঙ্গে আল্লাহর কোন নাম নেই। সুতরাং এসব নাম রাখায় কোন বাধা নেই। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নাম সমূহ দু’ভাগে বিভক্ত। (১) যেগুলো কেবল আল্লাহর সাথে প্রযোজ্য যেমন কুদ্দূস (মহাপবিত্র),  আহাদ  (এক),  ছামাদ  (অমুখাপেক্ষী), জাববার (মহাশক্তিধর), রহমান (পরম দয়ালু), রায্যাক (রিযিকদাতা) ইত্যাদি। এগুলো আব্দ (বান্দা) শব্দ যোগে রাখতে হবে। কেননা এই শব্দগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
(২) মালেক (অধিকারী), হালীম (ধৈর্যশীল), আযীয (ক্ষমতাশালী), রহীম (দয়ালু), হাকীম (প্রজ্ঞাবান), কারীম (অনুগ্রহশীল) ইত্যাদি। এই গুণবাচক নামগুলি ব্যাপক অর্থবোধক। অতএব এই নামগুলি দ্বারা ব্যক্তি উদ্দেশ্য করা হ’লে তাতে কোন দোষ নেই। তবে ‘আব্দ’ শব্দ যোগে ডাকাই উত্তম (ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওদূদ পৃ. ১২৫)

প্রশ্ন (৪/১৬৪) : একই সাথে একাধিক ব্যক্তির জানাযা হ’লে যতজনের জানাযা হবে তত ক্বীরাত ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?

-মুজাহিদুল ইসলাম
ফুলকুঁড়ি, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : যতজন মাইয়েত থাকবে তত ক্বীরাত ছওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় কোন জানাযায় শরীক হ’ল এবং দাফন শেষে ফিরে এলো, সে ব্যক্তি দুই ‘ক্বীরাত’ সমপরিমাণ নেকী পেল। প্রতি ‘ক্বীরাত’ ওহোদ পাহাড়ের সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি কেবল জানাযা পড়ে ফিরে এলো, সে এক ‘ক্বীরাত’ পরিমাণ নেকী পেল’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫১)। উক্ত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জানাযায় যতজন মাইয়েত থাকবে অংশগ্রহণকারী তত জনের বিপরীতে ছওয়াব পাবেন (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৩৬; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৪৯)
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : পাগড়ীর ন্যায় টুপির উপরও মাসাহ করা যাবে কী?
-ইব্রাহীম হোসাইন
তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : ওযূর ক্ষেত্রে টুপির উপর মাসাহ করা জায়েয নয়। কেননা পাগড়ী পুরো মাথা আবৃত করে, যা খুলে মাসাহ করা মুছল্লীর জন্য কষ্টদায়ক। অপরদিকে টুপি মাথার একটি অংশ আবৃত করে এবং তা খুলে মাসাহ করা সহজ। সেকারণ টুপি খুলে মাথা মাসাহ করার ব্যাপারেই প্রাচীন ও পরবর্তীকালের অধিকাংশ বিদ্বান ঐক্যমত পোষণ করেছেন (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৫৪; আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, ক্লিপ নং ১৯০)

প্রশ্ন (৬/১৬৬) : রাসূল (ছাঃ)-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে যেসব মিছিল সমাবেশ হয় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা জায়েয হবে কি?

-মুহাম্মদ অলিউল্লাহ
গাবতলী, বগুড়া।
উত্তর : যদি জনগণের ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি না হয় এবং লোক চলাচলে ব্যাঘাত না ঘটে, তবে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসাবে এতে অংশগ্রহণ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অন্যায় কিছু দেখলে তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে, নইলে যবান দিয়ে, নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এটি হ’ল দুর্বলতম ঈমান’ (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)

প্রশ্ন (৭/১৬৭) : কোন মেয়ের নাম যুনায়রাহ রাখা যাবে কী?

-আকলীমা খাতূন
কাকনহাট, রাজশাহী।
উত্তর : যুনায়রাহ-এর মূল উচ্চারণ যুন্নায়রাহ। যা আরবী শব্দ। এর অর্থ দীর্ঘ ও বিশালদেহী নারী, ছোট মাছি, ছোট পাথর ইত্যাদি (তাহযীবুল লুগাত ১৩/১৩১ প্রভৃতি)। যিন্নীরাহ নামে একজন মহিলা ছাহাবী ছিলেন যাকে আবুবকর (রাঃ) দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন (ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ ৮/১৫০; যাহাবী, সিয়ার ১/১৭৬)। সুতরাং উক্ত নাম রাখায় আপত্তি নেই।

প্রশ্ন (৮/১৬৮) : আমার একজন বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট হিন্দু বন্ধু আছে। তার সাথে আমার আন্তরিক উঠাবসা রয়েছে। এটা কি শরী‘আতসম্মত হচ্ছে?

-ইউসুফ ইমাম
বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : অমুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক উঠাবসায় দোষ নেই। তবে ঘনিষ্ট কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের সাথে বসবাস করো না এবং তাদের সংসর্গে থেকো না। কেননা যে তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে, সে তাদের সমতুল্য গণ্য হবে’ (তিরমিযী হা/১৬০৫; ছহীহাহ হা/২৩৩০)। বাধ্যগত অবস্থায় তাদের সাথে উঠাবসা করতে হ’লে নিজ ধর্মের বিধি-বিধান মেনে চলবে এবং সুযোগমত তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে’ (নাহল ১৬/১২৫)। আর সর্বাবস্থায় তাদের সাথে সদাচরণ ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখবে (মুমতাহিনাহ ৬০/৮)

প্রশ্ন (৯/১৬৯) : টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ছালাত শুরু হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় কোনটিকে অগ্রাধিকার যরূরী হবে?

-আল-মামূন, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : এমতাবস্থায় টয়লেটের কাজ সম্পন্ন করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘ছালাত শুরুর প্রাক্কালে তোমাদের কারো যদি পেশাব-পায়খানার চাপ হয়, তবে সে যেন প্রথমে পায়খানার প্রয়োজন সম্পন্ন করে (আবুদাঊদ হা/৮৮; বায়হাক্বী হা/৪৮০৮, সনদ ছহীহ)। অন্যত্র এসেছে, আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) পেশাব-পায়খানার চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (আহমাদ হা/২২২০৬; ইবনু মাজাহ হা/৬১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৩২)। তবে ছালাতের খুশু-খুযূ বিনষ্ট হবে না, এমনটি হ’লে ছালাত বাতিল হবে না (ইবনু কুদামা, মুগনী ১/৪৫০)

প্রশ্ন (১০/১৭০) : সন্তান না নেওয়ার জন্য কয়েক বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে প্রচলিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কোন বাধা আছে কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় কয়েক বছর নয়, সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১৮৪)। কিন্তু সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে তথা দারিদ্রে্যর ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিষিদ্ধ। কেননা রূযীর মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্রে্যর ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি’ (ইসরা ১৭/৩১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান দায়িনী নারীকে বিবাহ কর। কারণ আমার উম্মতের সংখ্যা বেশী হওয়া আমার গৌরবের কারণ’ (আবূদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩০৯১)। তবে কোন অবস্থাতেই স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ অর্থাৎ লাইগেশন, ভ্যাসেকটমী ইত্যাদি পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) পুরুষকে খাসী হ’তে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৪৭৮৬-৮৭; মিশকাত হা/৩০৮১)

প্রশ্ন (১১/১৭১) : ইমামের সাথে ছালাতরত অবস্থায় ঘুমের কারণে আমার একটি সিজদা ছুটে যায়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

-মুহিউদ্দীন আহমাদ
শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : রুকূ-সিজদা ছালাতের রুকন। আর রুকন তরক করলে ছালাত বাতিল হয়। তাই এরূপ অবস্থায় এক রাক‘আত অতিরিক্ত আদায় করতে হবে এবং সহো সিজদা দিতে হবে (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৩/৩৭১-৭২; আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৭৭)

প্রশ্ন (১২/১৭২) : জনৈক ব্যক্তির দুই লক্ষ টাকার একটি গরু আছে। গরুটি অসুস্থ হ’লে তার পিতা মানত করে যে, এটি সুস্থ হ’লে কুরবানী করবে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর ছেলে এখন রাযী নয়। এক্ষণে পিতার করণীয় কী?

-ফারূক হাসান
চান্দিনা, কুমিল্লা।
উত্তর : গরুটির মালিক যদি পিতা হন, তবে তার জন্য উক্ত মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব। আর যদি তিনি মালিক না হন, তাহ’লে উক্ত মানত কার্যকর হবে না। কারণ যে সম্পদে ব্যক্তির মালিকানা নেই সেই সম্পদের উপর মানত করা যায় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষ যে বস্ত্তর মালিক নয়, এমন বস্ত্তর মানত আদায় করা তার উপর যরূরী নয়’ (বুখারী হা/৬০৪৭; মুসলিম হা/১৬৪১; মিশকাত হা/৩৪১০)। আর যেহেতু এই ধরনের মানত সংঘটিত হয় না। সেকারণ এতে কোন কাফফারাও দিতে হবে না (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ২/২৮০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৪৫২)

প্রশ্ন (১৩/১৭৩) : সম্প্রতি দেশে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ নামে যে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। এটা শরী‘আতসম্মত কি?

-আবু আমাতুল্লাহ
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।
উত্তর : এটি জায়েয হবে না। কারণ এতে হারাম সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কে কার দুধ পান করবে সেটি জানা যাবে না। তাই অজ্ঞাতসারে দুধ ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ হতে পারে। আর ইসলামে দুধসম্পর্কীয়দের সাথে বিবাহ হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেননা দুধ পানের সম্পর্ক দ্বারা ঐসব লোক হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্ক দ্বারা হারাম হয় (বুখারী হা/২৬৪৫; মুসলিম হা/১৪৪৫)। ১৯৮৫ সালে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, এ ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হারাম (ওয়ালীদ আস-সাঈদান, আল-ইফাদাতুশ শারঈয়াহ ফী বা‘যিল মাসাইলিত তিবিবইয়াহ ১/২৭০)। তবে নবজাতকের জীবন রক্ষার্থে যদি এরূপ ব্যাংকের একান্ত প্রয়োজন দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে দুধ পৃথক পৃথকভাবে সংরক্ষিত হলে এবং দাতা ও গ্রহীতার পরিচয় সুস্পষ্ট থাকলে তা জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ (বিস্তারিত দ্রঃ ড. জাবের ইসমাঈল, বুনূকুল হালীব ফী যূইল ফিক্বহিল ইসলামী, মাজাল্লাতুল উরদুনিইয়াহ, ৯ম সংখ্যা, ২০১৩)

প্রশ্ন (১৪/১৭৪) : আমার আশপাশের সমাজ শিরক-বিদ‘আতে পূর্ণ। কিভাবে কাজ করলে আমি এসব মুকাবিলা করতে সক্ষম হব?

-মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
উত্তর : প্রথমতঃ নিজে শিরক-বিদ‘আতসহ দ্বীনের মৌলিক বিধি-বিধান সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞানার্জন করতে হবে। অতঃপর শিরক-বিদ‘আতের পরিচয় ও ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে সাধ্যমত অবহিত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হ’তে হবে। তাই বেশী বেশী এলাহী মদদ কামনা করতে হবে এবং হিকমত, ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে দাওয়াতী কাজ করতে হবে। আর সহমর্মী কিছু ভাই একত্রিত হওয়া সম্ভব হ’লে জামা‘আতবদ্ধ তথা সংঘবদ্ধ হ’তে হবে, যাতে দাওয়াতী কর্ম সুশৃংখল ও শক্তিশালীভাবে পরিচালিত হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত থাকে’ (তিরমিযী হা/২১৬৬, সনদ ছহীহ)

প্রশ্ন (১৫/১৭৫) : আল্লাহ তা‘আলা কয়টি জিনিস নিজের হাতে রেখেছেন এবং সেগুলো কি কি?

-আল-আমীন
তিনমাথা, বগুড়া।
উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা পাঁচটি জিনিস নিজের হাতে রেখেছেন, যা অন্যকে অবহিত করেননি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটেই রয়েছে (১) ক্বিয়ামতের জ্ঞান। (২) আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং (৩) তিনিই জানেন মায়ের গর্ভাশয়ে কি আছে। (৪) কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং (৫) কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘গায়েবের চাবিকাঠি পাঁচটি। আল্লাহ ব্যতীত যা কেউ জানে না। অতঃপর তিনি অত্র আয়াতটি পাঠ করেন’ (বুখারী হা/৪৬২৭)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এই পাঁচটি বস্ত্ত আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। এগুলি না জানেন নিকটবর্তী কোন ফেরেশতা, আর না জানেন কোন নবী-রাসূল। অতএব যে ব্যক্তি এগুলির কিছু অংশ জানে বলে দাবী করবে, সে ব্যক্তি কুরআনকে অস্বীকার করবে। কেননা কুরআন তার বিপরীত বক্তব্য প্রদান করেছে (কুরতুবী, লোকমান ৩১/৩৪ আয়াতের তাফসীর)

প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : জনৈক বক্তা বলেন, মুসলিম উম্মাহর আমলগুলো প্রতিদিন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থাপন করা হয়- একথা কি ঠিক?

-ফরীদ হোসাইন
দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা ‘তোমাদের আমলসমূহ আমার নিকটে পেশ করা হয়’ মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (বাযযার, সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৭৫)। এ মর্মে কেবল এতটুকুই পাওয়া যায় যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার সামনে আমার উম্মতের ভাল-মন্দ সব আমল পেশ করা হ’ল। আমি তাদের নেক আমলের মধ্যে একটি দেখলাম রাস্তা হ’তে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে ফেলা। আর তাদের মন্দ কর্মসমূহের মধ্যে একটি দেখলাম মসজিদে ফেলা সর্দি, যা মাটিচাপা দেয়া হয়নি’ (মুসলিম হা/৫৫৩, মিশকাত হা/৭০৯)

প্রশ্ন (১৭/১৭৭) : আমার একটি মূল্যবান জমি রয়েছে যাতে বাড়ি করার মত সামর্থ্য আমার নেই। এক্ষণে কেউ যদি দশ বছর ভোগের শর্তে সেখানে বাড়ি নির্মাণ এবং তারপর মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তি করে, তাহ’লে তা জায়েয হবে কি?

-মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
গাবতলী, বগুড়া।
উত্তর : উভয়ের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে এরূপ চুক্তি জায়েয (বুখারী হা/২২৪০)। তবে সবকিছু সুনির্দিষ্ট হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেলেন, ‘যদি কেউ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করে তবে সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে, নির্ধারিত পরিমাণে এবং নির্ধারিত মেয়াদে তা করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৮৩ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। এক্ষেত্রে যেন কেউ যুলুমের শিকার না হয় সেদিকেও অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)

প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : জনৈক ব্যক্তি নিজ সন্তানের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় মেয়েটি অবৈধ সন্তান জন্ম দিয়েছে (নাঊযুবিল্লাহ)। এক্ষণে উক্ত সন্তানের হুকুম কী হবে?

-ফীরোয আলম
খড়খড়ি, রাজশাহী।
উত্তর : যেনায় লিপ্ত হওয়া মহাপাপ। কোন মাহরামের সাথে যেনায় লিপ্ত হওয়া ততোধিক বড় মহাপাপ। আদালতের মাধ্যমে এই ধরনের যেনাকারকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করা আবশ্যক। আর এক্ষেত্রে অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া সন্তানটি মায়ের দিকে সম্পৃক্ত হবে এবং মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবূদাঊদ হা/২২৬৫; মিশকাত হা/৩৩১২, ৩৩২০; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৩৭০)

প্রশ্ন (১৯/১৭৯) : ইমাম ইবনুল জাওযী ও তাঁর কিতাব ‘তালবীসু ইবলীস’ সম্পর্কে জানতে চাই।

-মুহাম্মাদ শু‘আইব
হরতকি তলা, নিলফামারী।
উত্তর : তাঁর পুরো নাম জামালুদ্দীন আবুল ফারাজ আব্দুর রহমান বিন আলী ইবনুল জাওযী। তিনি ৫১০ হিজরীতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৫৯৭ হিজরীতে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তিন বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন এবং ইয়াতীম অবস্থায় চাচার নিকট লালিত-পালিত হন। তিনি তাফসীর, হাদীছ ও ফিক্বহসহ বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক (যিরিকলী, আল-আ‘লাম ৩/৩১৬)
তাঁর রচিত অন্যতম প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘তালবীসু ইবলীস’ যার অর্থ শয়তানের প্রতারণা। গ্রন্থটিকে তিনি তেরটি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন। যেখানে শয়তানী প্রতারণার বিভিন্ন ধরন, প্রকারভেদ ও তা থেকে আত্মরক্ষার উপায়সমূহ বর্ণনা করেছেন। প্রথমতঃ তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মানহাজকে আঁকড়ে ধরার গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং বিদ‘আতীদের নানা ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন করেছেন। অতঃপর তিনি ইহূদী, খৃষ্টান, অগ্নিউপাসক প্রভৃতি অমুসলিম দল-উপদল এবং বিভিন্ন বাতিল ফের্কা তথা খারেজী, ছূফী ও রাফেযী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উপর শয়তানী প্রতারণা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সবশেষে তিনি হকপন্থীগণ দ্বীনের বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে কিভাবে শয়তানের ফাঁদে পড়ে এবং নেকী থেকে মাহরূম হয়, সে ব্যাপারে হৃদয়গ্রাহী ও সূক্ষ্ম আলোচনা পেশ করেছেন। সার্বিকভাবে গ্রন্থটি দ্বীন গ্রহণের পর দ্বীনের উপর ইস্তিক্বামাত বা দৃঢ় থাকার ক্ষেত্রে অনন্য একটি গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত।

প্রশ্ন (২০/১৮০) : রাসূল (ছাঃ)-এর কবরকে রওযা বা মাযার বলা যাবে কি?

-তাওহীদুল ইসলাম
রহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ‘রওযা’ ও ‘মাযার’ উভয়টি আরবী শব্দ। প্রথমটির অর্থ বাগান এবং দ্বিতীয়টির অর্থ যিয়ারত বা পরিদর্শনের স্থান। উক্ত শব্দদ্বয়কে মূলতঃ পথভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত আক্বীদাসম্পন্ন একদল মানুষ তাদের পীর-আউলিয়াদের কবরস্থানের বিশেষ গুরুত্ব বুঝানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। অথচ নববী যুগ থেকে শুরু করে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর বা অন্য কারু কবরকে এরূপ রওযা বা মাযার নামে অভিহিত করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর কবরকে এসব বিদ‘আতী নামে আখ্যায়িত করা যাবে না।
স্মর্তব্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর কবর নয় বরং হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-এর মিম্বার ও তাঁর বাড়ির মধ্যবর্তী স্থানকে রিয়াযুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান বলা হয়েছে (বুখারী হা/১১৯৫; মিশকাত হা/৬৯৪)

প্রশ্ন (২১/১৮১) : নিজের জমিতে যদি কেউ সোনা বা অন্য কোন মূল্যবান বস্ত্ত পায়, তবে শারঈ বিধান অনুযায়ী তার মালিক কে হবে? জমির মালিক, না সরকার?

-শামীম আখতার
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : এ বিষয়ে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মতে, জমির মালিকই এই সম্পদের মালিক হবে, কেননা সে জমির অন্তুর্ভুক্ত সবকিছুরই মালিক (ইবনু কুদামা, মুগনী ৩/৫৬; উছায়মীন, তা‘লীকাতু ‘আলাল কাফী ৩/২১)। এই সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে মালিককে যাকাত দিতে হবে। তবে যদি সোনা বা রূপা রিকায বা খনির সম্পদ হয়, তাহ’লে সরকার বা রাষ্ট্রকে পাঁচ ভাগের এক ভাগ দিতে হবে (বুখারী হা/১৪৯৯; মিশকাত হা/১৭৯৮)

প্রশ্ন (২২/১৮২) : ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি স্বপ্নে ৯৯ বার আল্লাহকে দেখেছেন। একথার কোন সত্যতা আছে কি?

-নাজমুল হুদা
টিকরামপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত ঘটনা নাজমুদ্দীন গীত্বী (মৃ. ৯৮১ হিঃ) নামক জনৈক ছূফী সনদবিহীনভাবে উল্লেখ করেছেন, যার কোন ভিত্তি নেই (ইবনু আবেদীন, রাদ্দুল মুহতার ১/৫১)। উল্লেখ্য যে, স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। স্বপ্নে যদি কেউ আল্লাহকে দেখেছে বলে কল্পনা করে, তা কখনই বাস্তব নয়। কেননা আল্লাহর অনুরূপ কিছুই নেই, যা দ্বারা আল্লাহকে কল্পনা করা সম্ভব (আন‘আম ১০৩; আ‘রাফ ৭/১৪৩; শূরা ১১; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৩৬৭-৬৮)। সুতরাং একজন মহামতি ইমামের নামে এরূপ দাবী অতীব অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ।

প্রশ্ন (২৩/১৮৩) : স্ত্রী যদি স্বামীকে রাগ করে বলে, আমি তোমার মা, আমার নিকট থাকবে না। এটা যিহার সাব্যস্ত হবে কি? হলে কাফফারা দিতে হবে কি?

-যিয়াউর রহমান, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : স্ত্রীর পক্ষ থেকে যিহার হয় না। জমহূর বিদ্বানগণ এব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৮/৪১; ইবনু রুশদ, বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৪/৪৩৭, ফাতাওয়া মারআতুল মুসলিমাহ ২/৮০৩)। কেউ করলে তা অবান্তর ও বাজে কথার অন্তর্ভুক্ত হবে, যা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন অনর্থক কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকবে (মুমিনূন ২৩/১-৩)। অতএব এ ধরনের কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা যরূরী (দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৮/৬০ ‘যিহার’ অধ্যায়)
তবে এতে কাফফারা ওয়াজিব হবে। আয়েশা বিনতে ত্বালহা মুছ‘আব বিন যুবায়েরকে বিবাহের পূর্বে এরূপ কথা বললে ছাহাবায়ে কেরাম তাকে কাফফারা দিতে বলেন (ইরওয়াউল গালীল হা/২০৮৯, ছালেহ আলুশ শায়েখ, আত-তাকমীল পৃ. ১৪৫, সনদ ছহীহ; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/৯)। আর কসমের কাফফারা হ’ল ১০ জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা অথবা একজন দাসকে মুক্ত করা কিংবা তিনদিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)

প্রশ্ন (২৪/১৮৪) : কুরআন-হাদীছের বর্ণনামতে ইয়াজূজ-মাজূজের মত বিশাল জনগোষ্ঠী কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাবে। অর্থাৎ তারা এ দুনিয়াতেই আছে। অথচ বিজ্ঞানীরা এখনো তার কোন সন্ধান জানে না। এর ব্যাখ্যা কি?

-মুকুল হোসাইন*
মান্দা, নওগাঁ।
*[ শুধু ‘হোসাইন’ নাম রাখুন (স.স.)]
উত্তর : ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় আদম (আঃ)-এর বংশধর (বুখারী হা/৪৭৪১, মুসলিম হা/২২২)। কুরআনের বর্ণনামতে, যুলক্বারনাইন নামক একজন প্রতাপশালী শাসক তাদেরকে পৃথিবীর অজ্ঞাত কোন স্থানে প্রাচীর দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন (কাহফ ১৮/৯৪-৯৮)। তবে তারা বর্তমানে ভূপৃষ্ঠে না ভূগর্ভে আছে সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। কেবল বলা হয়েছে যে, ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে তাদের পুনরাবির্ভাব ঘটবে। আর তারা উচ্চভূমি থেকে ছুটে আসবে (আম্বিয়া ২১/৯৬)। এছাড়া বহু ছহীহ হাদীছে তাদের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। অতএব এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়া বা না হওয়া এখানে ধর্তব্য বিষয় নয়।

প্রশ্ন (২৫/১৮৫) : ফজরের পর সফরে বের হয়ে মাগরিবের পর সফর শেষ হয়। এর মধ্যকার যোহর ও আছর ছালাত মাগরিবের ছালাতের সাথে পড়তে হবে? না ফজরের সময় এক সাথে সকল ছালাত পড়ে নিয়ে সফরে বের হ’তে হবে?

-মঈনুদ্দীন আহমাদ
নওহাটা, রাজশাহী।
উত্তর : যোহর ও আছরের ছালাত কোন বিরতিস্থলে বা যানবাহনে জমা ও ক্বছর করবে (আবুদাঊদ হা/১২০৮; মিশকাত হা/১৩৪৪; মুসলিম হা/৬৮৬; মিশকাত হা/১৩৩৫)। সুযোগ না মিললে পরবর্তী ওয়াক্তের সাথে ক্বাযা আদায় করে নিবে। কিন্তু পথিমধ্যে ছালাত ছুটে যাওয়ার আশংকায় নির্ধারিত ওয়াক্তের পূর্বে ফজরের সাথে বাকী সব ছালাত জমা করা যাবে না (উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/২১৬; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ১৪০, ১৮৮)

প্রশ্ন (২৬/১৮৬) : ফজরের পর ঘুমানোর ব্যাপারে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? এসময় মানুষের রিযিক বণ্টন করা হয় মর্মে কোন দলীল আছে কি?

-আল-আমীন
মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : ফজরের পর ঘুমানোর ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়নি। আর এসময় রিযিক বণ্টনের বিষয়ে যে ক’টি হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে, তার সবগুলো যঈফ (যঈফাহ হা/৫১৭০, ৬৯৯১; যঈফুত তারগীব হা/১০৪৫-১০৪৮; যঈফুল জামে‘ হা/৮১৮)। তবে বিভিন্ন দলীলের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, শরী‘আতে ফজরের পর ঘুমানোর বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন রাতকে বিশ্রাম এবং দিনকে জীবিকার্জনের জন্য সৃষ্টি করেছেন (নাবা ৭৮/১০-১১)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার উম্মতের জন্য ভোরের কর্মের মধ্যে বরকত দান করো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন কোথাও ক্ষুদ্র সেনাদল বা বৃহৎ সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন তখন তাদেরকে দিনের প্রথমাংশে পাঠাতেন। রাবী ছাখার আল-গামেদী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসাদলকে দিনের শুরুতেই পাঠিয়ে দিতেন। ফলে তিনি ধনী হন এবং তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় (আবুদাঊদ হা/২৬০৬; মিশকাত হা/৩৯০৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১৩০০)

প্রশ্ন (২৭/১৮৭) : সালাম ফিরানোর ক্ষেত্রে ইমাম উভয় সালাম না প্রথম সালাম শেষ করার পর মুক্তাদী সালাম ফিরাবে?

-কামরুল ইসলাম
কুলিয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ইমামের পিছে পিছে সালাম ফিরাবে। রাসূলুললাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণের জন্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। তিনি বলেন, হে লোকসকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং তোমরা রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম কোন কিছুই আমার পূর্বে করবে না’ (মুসলিম হা/৪২৬; মিশকাত হা/১১৩৭)। ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছালাত আদায় করেছি। তিনি যখন সালাম ফিরান তখন আমরাও সালাম ফিরাই (বুখারী হা/৮৩৮)। অতএব ছালাতের প্রত্যেকটি কাজ শুরু করতে হবে ইমাম শুরু করার পর।

প্রশ্ন (২৮/১৮৮) : আল্লাহ ও মুহাম্মাদ লিখা লাশ বহনকারী খাটলী বিক্রয় করা যাবে কি?

-মাহমূদুর রহমান
সোনাতলা, বগুড়া।
উত্তর : খাটলীতে আল্লাহ ও মুহাম্মাদ নাম বা কুরআনের কোন আয়াত লেখা যাবে না (ইবনুল হুমাম হানাফী, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/১৬৯; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৯৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৪/৫৮)। অতএব এরূপ খাটলী ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। এর পরিবর্তে এসব নামহীন খাটলীর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশ্ন (২৯/১৮৯) : ছহীহ মুসলিমের একটি হাদীছে কারো আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বলা হয়েছে। এক্ষণে রাষ্ট্রীয় আইন-আদালত ও প্রশাসন থাকা অবস্থায় এটা জায়েয হবে কি?

-শহীদুল ইসলাম
নতুনহাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি হ’ল- জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয় তবে আমি কি করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে লড়াই করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমিও তার সাথে লড়াই করবে। লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে তুমি শহীদ বলে গণ্য হবে। লোকটি বলল, আর যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে সে জাহান্নামী (মুসলিম হা/১৪০; মিশকাত হা/৩৫১৩)
উক্ত হাদীছে আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। যা প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার। সকল ধর্ম ও সকল আইনে এটা সিদ্ধ। অতএব কেউ যদি কারো সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চায়, অপমান করে অথবা হত্যা করতে উদ্যত হয়, সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষার্থে তৎক্ষণাৎ তার উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ ইনছাফ বজায় রাখা আবশ্যক (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৩২/৩১৮; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/৮২)। এর দ্বারা সবক্ষেত্রে আইন হাতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন (৩০/১৯০) : অবাধ্যতা ও মন্দ আচরণের কারণে স্ত্রীকে প্রহার করা যাবে কি?

-মামূন
শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : হালকা প্রহার করা যাবে। তবে তার পূর্বে উপদেশ দেওয়া, বিছানা পৃথক করা ইত্যাদি পদক্ষেপ নিতে হবে। আল্লাহ বলেন, সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাযত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাযত করে। আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মহিলাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর কালেমার সাহায্যে তাদের লজ্জাস্থানকে বৈধ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হ’ল, তারা এমন কাউকে তোমাদের বিছানা মাড়াতে দেবে না, যাকে তোমরা অপসন্দ কর। এমন করলে তাদেরকে হালকাভাবে প্রহার কর। আর প্রচলিত নিয়মে তাদের খাওয়া-পরার দায়িত্ব তোমাদের উপর (মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫)

প্রশ্ন (৩১/১৯১) : হাশরের মাঠে রাসূল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে কি?

-আব্দুস সালাম
হাতীবান্ধা, লালমণিরহাট।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত ছাড়া বিচার কার্যই শুরু হবে না (বুখারী হা/১৯৪; মুসলিম হা/১৯৩)। তাই তাঁর শাফা‘আত ব্যতীত জান্নাতেও যাওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি প্রথম ব্যক্তি যে লোকদের জান্নাতে প্রবেশ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট শাফা‘আত করব (মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪৪)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়বো (মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪২)

প্রশ্ন (৩২/১৯২) : কবরবাসীকে সালাম দিলে তারা কিভাবে উত্তর দিয়ে থাকে?

-ইহসান ইলাহী যহীর
কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা।
উত্তর : কবর দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় মাইয়েত যেমন তার স্বজনদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় (বুখারী হা/১৩৩৮; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬), তেমনি কবরবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দিলে ফেরেশতাগণ তাদের রূহে সালাম পৌঁছে দেন এবং তারাও সালামের জবাব দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন পরিচিত কোন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে সালাম দিলে সেও তাকে চিনে এবং তার সালামের জবাব দেয়। আর যখন কোন অপরিচিত কবরের পাশ দিয়ে সালাম দিয়ে অতিক্রম করে, তখন সেও তার সালামের জবাব দেয়’ [(বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯২৯৬; ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/১৮৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২৯৭; ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ, পৃ. ৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ক্রমিক ৩০৭, ২/২৪৪ পৃ.। ইরাক্বী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু আব্দিল বার্র, শাওকানী প্রমুখ বিদ্বানগণ হাদীছটি ছহীহ বলেছেন। তবে আলবানী একে যঈফ বলেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৪৯৩)]
রূহ ফিরিয়ে দেওয়া ও সালামের জওয়াব দেওয়া বিষয়গুলি বরযখী জীবনের বিষয়। তার আকৃতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করা কারু পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব জীবিতদের জন্য করণীয় হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ মোতাবেক কবরবাসীকে সালাম দেওয়া (মুসলিম হা/২৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৪৩০৬; মিশকাত হা/২৯৮)

প্রশ্ন (৩৩/১৯৩) : জনৈক বক্তা বলেন, দো‘আর পর মুখমন্ডল মাসাহ করা সুন্নাত। এর বিশুদ্ধতা জানতে চাই।

-আযহারুল ইসলাম
নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ‘আল্লাহর নিকট যখন কিছু চাইবে, তখন দু’হাত প্রসারিত কর এবং দো‘আর শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মাসাহ কর’ মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১১৮১; বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২২৫৫; ইরওয়া হা/৪৩৩-৩৪; উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৪/১৫৭; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৫১৯)
আলবানী বলেন, দো‘আর পরে দু’হাত মুখে মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই (মিশকাত হা/২২৫৫-এর হাশিয়া ২/৬৯৬ পৃ.)

প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : ওয়ায মাহফিল, ইসলামী ক্লাস ইত্যাদি চলা অবস্থায় আযানের জবাব দেওয়া বা আযানের দো‘আ পাঠ করার বিধান কি?

-আব্দুল কাদের
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : আযানের জওয়াব দেওয়া সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা যখন আযান শুনবে তখন মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও তাই বল’ (বুখারী হা/৬১১; মুসলিম হা/৩৮৩)। যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে আযানের উত্তর দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম হা/৩৮৫; মিশকাত হা/৬৫৮)। অতএব যিনি যে অবস্থায় থাকবেন, সে অবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়া কর্তব্য। উল্লেখ্য যে, একাধিক আযানের মধ্যে যেকোন একটির উত্তর দিলেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।

প্রশ্ন (৩৫/১৯৫) : সমকামিতা কোন পর্যায়ভুক্ত পাপ? এর শাস্তি কি যেনার শাস্তির অনুরূপ?

-আব্দুল হালীম
বীরগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : সমকামিতা অত্যন্ত ঘৃণ্য পাপ এবং কবীরা গুনাহ। এই পাপের কারণেই বর্তমান পৃথিবীতে এইড্স-এর মত মরণ ব্যধি ছড়িয়ে পড়েছে। এ অপরাধের কারণে বিগত যুগে আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন (আ‘রাফ ৭/৮০-৮৪; হিজর ১৫/৭২-৭৬)। এর শাস্তি হ’ল সমকামী উভয়কে হত্যা করা। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা যাকে লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মত পুরুষে পুরুষে অপকর্ম করতে দেখবে তাদের উভয়কে হত্যা কর (তিরমিযী হা/১৪৫৬; আবুদাঊদ হা/৪৪৬২; মিশকাত হা/৩৫৭৫)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতের ন্যায় অপকর্মকারীদের প্রতি লা‘নত করেছেন, তিনি একথাটি তিনবার বললেন (আহমাদ হা/২৯১৫; ছহীহাহ হা/৩৪৬২)। তবে এ শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের (কুরতুবী)। না করলে সরকার গোনাহগার হবে।

প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : পবিত্র কুরআন মুখস্থ ও দেখে তেলাওয়াত করার মধ্যে ছওয়াবের কোন তারতম্য আছে কি?

-আব্দুস সালাম
নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : কোন তারতম্য নেই। কুরআন দেখে পড়া হোক বা মুখস্থ পড়া হোক প্রতি হরফে দশটি করে নেকী হবে (তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭)। উল্লেখ্য, কুরআন মূল মুছহাফ দেখে পাঠ করার পৃথক ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছের কোনটি যঈফ, কোনটি জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৫৬, ১৫৮৬, ১৭১০)

প্রশ্ন (৩৭/১৯৭) : নিজ পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ যথাযথভাবে বহন করলে কোন নেকী অর্জিত হয় কি?

-যহীরুল ইসলাম
বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : ছওয়াবের আশা নিয়ে পরিবারের জন্য ব্যয় করলে তাতে ছাদাক্বার নেকী অর্জিত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন মুসলমান নিজ পরিবারের জন্য খরচ করে এবং তাতে ছওয়াবের আশা রাখে, তখন তার পক্ষে এটি ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৯৩০ ‘শ্রেষ্ঠ দান’ অনুচ্ছেদ)। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আবু সালামার সন্তানদের জন্য খরচ করায় আমার ছওয়াব হবে কি? তারা তো আমারই সন্তান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তাদের জন্য খরচ কর। এতে তোমার ছওয়াব হবে, যে পরিমাণ তুমি খরচ করবে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৮৩৭)। তিনি বলেন, সর্বোত্তম ব্যয় হচ্ছে ঐ অর্থ (দীনার) যা ব্যক্তি তার নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করে (মুসলিম হা/৯৯৪; মিশকাত হা/১৯৩২)

প্রশ্ন (৩৮/১৯৮) : আমি নিরাপত্তা বাহিনীতে চাকুরীরত। বড় অফিসারকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান করতে হয়। শাস্তির ভয়ে বাধ্য হয়ে আমাকেও দাঁড়াতে হয়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্ট, বগুড়া।
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যদি কেউ এতে আনন্দবোধ করে যে, লোকেরা তাকে দেখে স্থিরভাবে দন্ডায়মান থাকুক, তাহ’লে সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল (তিরমিযী, আবুদাঊদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৬৯৯)। অতএব এই মন্দ প্রথা বন্ধের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মুখে বা লিখিতভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা সাধ্যমত আল্লাহ্কে ভয় কর (তাগাবুন ৬৪/১৬)। সম্ভব না হলে অন্ততঃ অন্তরে ঘৃণা রাখতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৭)। তবে যিনি আপনাকে এ পাপ কর্মে বাধ্য করছেন, তিনিই হবেন এজন্য মূল দায়ী।

প্রশ্ন (৩৯/১৯৯): পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় যদি হাঁচি আসে, তাহ’লে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা যাবে কি?

-লোকমান
পাশুন্ডী, চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তরঃ পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা যাবে না। কারণ এ সময় যিকর করা হ’তে নবী করীম (ছাঃ) বিরত থাকতেন। সেকারণ হাজত সম্পন্ন করার পর তিনি ‘গুফরা-নাকা’ বলে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাইতেন (তিরমিযী হা/৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৫৯)

প্রশ্ন (৪০/২০০) : গীবতের কাফফারা কি এবং এর পাপ থেকে মুক্তির উপায় কি?

-রুবেল আমীন*
পাটগ্রাম, লালমণিরহাট।
*[আল-আমীন বলুন (স.স.)]
উত্তর : গীবতের কাফফারা হচ্ছে যার গীবত করা হয়েছে তার নিকটে ক্ষমা চাওয়া এবং যাদের নিকট গীবত করা হয়েছে, তাদের নিকট গীবতের বদলে প্রশংসা করা। যেমন আবুবকর ও ওমর (রাঃ) একবার নিজেদের মধ্যে তাদের এক খাদেমের অনুপস্থিতিতে তার অধিক ঘুমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেন। সামান্য এই গীবতের কারণে রাসূল (ছাঃ) পরে তাদেরকে বললেন যে, আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তাঁরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাঁদেরকে তাদের খাদেমের নিকটে ক্ষমা চাইতে বলেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮)। তবে সরাসরি ক্ষমা চাইতে গেলে যদি ফিৎনা সৃষ্টি হয়, তাহ’লে নিজের জন্য ও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং যে স্থানে তার কুৎসা রটনা করা হয়েছে সেখানে তার প্রশংসা করতে হবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ওয়াবিলুছ ছাইয়েব, পৃ. ১৪১)

প্রশ্ন (১/২০১) : ছালাত আদায়ের পর বুঝতে পারি যে ক্বিবলা ভুল হয়ে গেছে। উক্ত ছালাত কি পুনরায় আদায় করতে হবে?
-বেলাল হোসাইন, মণিহার, যশোর।
উত্তর : অবহেলাবশতঃ এরূপ ভুল হয়ে থাকলে উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ ছালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হ’ল ক্বিবলা সঠিক হওয়া (বাক্বারাহ ২/১৫০; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ২/২৫৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৯৫, ফৎওয়া নং ১৭২৭৯)। তবে চেষ্টার পরেও যদি ক্বিবলা ভুল হয়ে যায়, তবে পুনরায় তা আদায় করতে হবে না। একদা কতিপয় ছাহাবী অন্ধকার রাতে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে ছালাত আদায় করার সময় ভুলে ক্বিবলার বিপরীত দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তারা রাসূল (ছাঃ)-কে ঘটনাটি বর্ণনা করলে তিনি তা পুনরায় আদায়ের নির্দেশ না দিয়ে বললেন, তোমাদের ছালাত আদায় হয়ে গেছে। অতঃপর আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আয়াত নাযিল করেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই পূর্ব ও পশ্চিম। অতএব যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও সেদিকেই রয়েছে আল্লাহর চেহারা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/১১৫; তিরমিযী হা/২৯৫৭, ইরওয়া হা/২৯১, সনদ হাসান)

প্রশ্ন (২/২০২) : আমার নবজাতক সন্তানের দুগ্ধপানের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় শিশুটি কি আমার মা তথা তার নানীর দুধ পান করতে পারবে?

-হালীমা খাতুন, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : এমতাবস্থায় শিশু নানীর দুধ পান করতে পারে। তবে এ কারণে তার মামা-খালারা তার দুধ ভাই বা দুধ বোন সাব্যস্ত হবে। ফলে সে তার মামাতো ও খালাতো ভাই বা বোনকে বিয়ে করতে পারবে না। যেমন রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর চাচা হামযাহ (রাঃ) পরস্পর দুধ ভাই ছিলেন। এজন্য হামযাহ (রাঃ)-এর মেয়ের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হ’লে তিনি বলেন, আমি দুধ ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করতে পারি না (বুখারী হা/২৬৪৫; মুসলিম হা/১৪৪৬; মিশকাত হা/৩১৬১)

প্রশ্ন (৩/২০৩) : সূদখোরের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া এবং তাদের জন্য দো‘আ করা যাবে কি?

-আকরাম, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : দাওয়াত গ্রহণে দোষ নেই। রাসূল (ছাঃ) ইহূদীর বাড়ীতে দাওয়াত খেয়েছেন ও তাদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৫-১৮, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৫৯৩১)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, তার নিকটে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, আমার একজন প্রতিবেশী আছে যে সূদ খায় এবং সর্বদা আমাকে তার বাড়িতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়।
এক্ষণে আমি তার দাওয়াত কবুল করব কি? জওয়াবে তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটি বিনা কষ্টের অর্জন এবং এর গোনাহ তার উপরে পতিত হবে’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১৪৬৭৫, ইমাম আহমাদ আছারটি ‘ছহীহ’ বলেছেন; ইবনু রজব হাম্বলী, জামেঊল উলূম ওয়াল হিকাম (বৈরূত : ১৪২২/২ ০০১) ২০১ পৃ.)
তবে উক্ত ব্যক্তির সংশোধন বা তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ সাময়িকভাবে দাওয়াত গ্রহণ না করে, তবে সেটাই উত্তম হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৮/২০৬)। যেমন লাল কাপড় পরিহিত জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম প্রদান করলে তিনি সালামের জওয়াব দেননি। কারণ তিনি লাল কাপড় পরিধান করা পুরুষদের জন্য পসন্দ করতেন না (হাকেম হা/৭৩৯৯; ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৩৫০, সনদ ছহীহ)

প্রশ্ন (৪/২০৪) : আলী (রাঃ) রাতে দায়িত্ব পালন করায় তিনি ফজরের ছালাত দেরীতে পড়তেন। এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করা হ’লে তিনি তাকে দেরীতে ছালাত আদায়ের অনুমতি দেন। ঘটনাটির সত্যতা জানতে চাই।

-নাজমুল হুদা, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত ঘটনা আলী (রাঃ)-এর সম্পর্কে নয়, বরং ছাফওয়ান বিন মু‘আত্ত্বাল (রাঃ)-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) তাকে বিশেষ কারণে ফজরের ছালাত সূর্যোদয়ের পর আদায়ের অনুমতি দেন। ছাফওয়ানের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ করেছিল। যার মধ্যে একটি ছিল যে, আমার স্বামী সূর্যোদয়ের পূর্বে কখনো ফজরের ছালাত পড়েন না। রাসূল (ছাঃ) এ ব্যাপারে ছাফওয়ানের বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পরিবারের লোকেরা সর্বদা (পানি সরবরাহে) ব্যস্ত থাকে। এজন্য আমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে জাগতে পারি না। তিনি বলেন, তুমি যখনই জাগ্রত হবে, তখনই ছালাত পড়ে নিবে (আবুদাউদ হা/২৪৫৯; আহমাদ হা/১১৭৫৯; ছহীহাহ হা/২১৭২; ইরওয়া হা/২০০৪)। কোন ব্যক্তি বিশেষ ওযরের কারণে এমন বাধ্যগত পরিস্থিতিতে পড়লে তা জায়েয হবে। কিন্তু এলার্ম বা যে কোন মাধ্যমে জাগ্রত হওয়ার সুযোগ থাকতেও ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাতে দেরী করলে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। কেননা এটা ছালাত বিনষ্টের শামিল (সূরা মারয়াম ৫৯; আল-মাঊন ৪-৫)। রাসূল (ছাঃ) তাঁর স্বপ্ন বর্ণনার এক পর্যায়ে এমন এক ব্যক্তির কথা বলেন, যে নিজ মাথা পাথর দিয়ে বিচূর্ণ করছিল, সে হ’ল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শিখে তা পরিত্যাগ করে এবং ফরয ছালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে’ (বুখারী হা/১১৪৩, ৭০৪৭; মিশকাত হা/৪৬২৫ ‘স্বপ্ন’ অধ্যায়)

প্রশ্ন (৫/২০৫) : শিশুরা বিভিন্ন বিপদাপদে পতিত হ’লে যেমন উঁচু স্থান থেকে পড়ে গেলে ফেরেশতারা তাদের রক্ষা করে- এ কথার কোন সত্যতা আছে কি?

-আমীনুল ইসলাম, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।
উত্তর : কেবল শিশু নয় বরং প্রত্যেক মানুষের হেফাযতের জন্য আল্লাহ ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতারা রয়েছে, যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’ (রা‘দ ১৩/১১)। আবু মিজলায বলেন, মুরাদ এলাকা থেকে জনৈক ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর কাছে এল। তখন তিনি ছালাতরত ছিলেন। তিনি বললেন, হে আলী! আপনি আপনার জন্য পাহারা নিযুক্ত করুন। কেননা মুরাদ এলাকার কিছু লোক আপনাকে হত্যা করতে চায়। জবাবে আলী (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে দু’জন করে ফেরেশতা থাকে, যারা তাকে হেফাযত করে। কিন্তু যখন তাক্বদীর এসে যায়, তখন তারা দূরে সরে যায়’ (ইবনু কাছীর, উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য, সনদ মুরসাল)। সুতরাং এটা প্রমাণিত হয় যে, একজন ব্যক্তিকে দিনে ও রাতে কমপক্ষে চারজন করে ফেরেশতা পাহারা দেয়। যাদের দু’জন ডানে ও বামে মানুষের আমলনামা লিখে, অপর দু’জন মানুষের পিছনে ও সামনে থেকে পাহারা দিয়ে থাকে (বুখারী, হা/৫৫৫; ইবনু কাছীর, তাফসীর ঐ আয়াত, ৪/৪৩৭)

প্রশ্ন (৬/২০৬) : অনেকে ছোট শিশুদের মসজিদে আনতে নিষেধ করেন। এ ব্যাপারে শরী‘আতের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

-রাসেল মাহমূদ
রাজশাহী সেনানিবাস, রাজশাহী।
উত্তর : ছালাতে শিশুদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া উত্তম। এতে শিশুকাল থেকেই মসজিদে ছালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। সেকারণ নববী যুগে শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়ার প্রচলন ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিশুর ক্রন্দন শ্রবণের কারণে ছালাত সংক্ষিপ্ত করেছেন (বুখারী হা/৭০৯; মুসলিম হা/৪৭০)। তিনি তাঁর দুই নাতি হাসান ও হোসাইন-কে কোলে নিয়ে জুম‘আর খুৎবাও দিয়েছেন (আবুদাঊদ হা/১১০৯; ইবনু মাজাহ হা/২৯২৬)। উপরন্তু তিনি নাতনীকে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করেছেন। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইমামতি করতে দেখেছি, এমতাবস্থায় নাতনী উমামা বিনতে যয়নব তার কাঁধে ছিল। যখন তিনি রুকূতে যেতেন, তখন তাকে রেখে দিতেন এবং যখন সিজদা হ’তে উঠতেন, তখন তাকে (পুনরায় কাঁধে) ফিরিয়ে নিতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৯৮৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়)। একদিন রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাতে আসতে দেরী করলে মসজিদে আগত নারী ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছিল (বুখারী হা/৫৬৬; মুসলিম হা/৬৩৮)। অতএব এটা প্রমাণিত যে, সেসময় শিশুরা নিয়মিত মসজিদে যেত। তবে কোন শিশুর অনিয়ন্ত্রিত আচরণ যদি মুছল্লীদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়, তবে ঐসব শিশুদের মসজিদে আনা থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কেননা এতে মুছল্লীদের খুশু-খুযূ বিনষ্ট হয়। যেমনভাবে কাঁচা-পিয়াজ ও রসুন মুছল্লীদের জন্য কষ্টদায়ক হওয়ায় তা খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৩৭)। উল্লেখ্য যে, ‘তোমরা শিশুদের মসজিদ থেকে দূরে রাখো’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৭৫০; যঈফুল জামে‘ হা/২৬৩৬)

প্রশ্ন (৭/২০৭) : ‘মসজিদে খায়েফে’র নীচে সত্তরজন নবীর কবর রয়েছে। বর্ণনাটির সত্যতা জানতে চাই।

-আব্দুর রহীম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত মর্মে মুসনাদে বাযযার ও ত্বাবারাণী কাবীরসহ কিছু গ্রন্থে একটি বর্ণনা এসেছে যার সনদ অত্যন্ত যঈফ এবং মতন মুযতারিব (আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ মিন ইত্তিখাযিল কুবূরি মাসাজিদ ৬৮ পৃ.)। কারণ মসজিদে খায়েফে সত্তর জন নবীর কবর নেই। বরং সত্তর জন নবী মসজিদে খায়েফে ছালাত আদায় করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মসজিদে খায়েফে সত্তর জন নবী ছালাত আদায় করেছেন যাদের মধ্যে মূসা (আঃ) ছিলেন অন্যতম (হাকেম হা/৪১৬৯; ছহীহাহ হা/২০২৩; ছহীহুত তারগীব হা/১১২৭; বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছবি ও মূর্তি’ বই ৪৮ পৃ.)। অতএব এ ধরণের জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা কবরের উপর মসজিদ নির্মাণের দলীল গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই।

প্রশ্ন (৮/২০৮) : আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব রজব মাসের বিশেষ ছালাত-ছিয়ামসহ বিভিন্ন ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা পেশ করেছেন। এসব ইবাদত পালন করা যাবে কি?

-ফরীদ হাসান, মুর্শিদাবাদ, ভারত।
উত্তর : রজব মাসের বিশেষ মর্যাদা বা বিশেষ কোন ইবাদত যেমন ছালাত-ছিয়াম ও যিকির-আযকারের ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সবই যঈফ ও জাল। যেমন ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে তিনটি ছিয়াম পালন করবে, তার জন্য আল্লাহ এক মাসের ছিয়াম লিখে দিবেন’। হাদীছটি জাল (আল-লা‘আলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাউযূ‘আহ ২/১১৪-১১৫ পৃ.)। এছাড়া ‘পাঁচ রাতে দো‘আ ফেরত দেওয়া হয় না। রজব মাসের প্রথম রাত, মধ্য শা‘বানে, জুম‘আর রাত, ঈদুল ফিতর এবং কুরবানীর রাতের দো‘আ’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (ইবনু ‘আসাকির, আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৫২)
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘ছালাতুর রাগায়েব’ নামে ১২ রাক‘আত ছালাত যা রজব মাসের প্রথম জুম‘আর দিন মাগরিব থেকে এশার মধ্যে পড়া হয় এবং মধ্য শা‘বানের রাতে যে ১০০ রাক‘আত ছালাত পড়া হয়, তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত’ (আল-মাজমূ‘ ৪/৫৬)। তিনি আরো বলেন, এই ছালাতের আবিষ্কারককে আল্লাহ ধ্বংস করুন। এটি অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতায় পূর্ণ একটি ঘৃণিত বিদ‘আত (নববী, শরহ মুসলিম ৮/২০)
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘রজব মাসে ছিয়াম রাখা সংক্রান্ত সবগুলো বর্ণনা যঈফ; বরং মওযূ‘ বা জাল। বিদ্বানগণ এব্যাপারে একটি বর্ণনাকেও নির্ভরযোগ্য বলেননি’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৯০)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রজব মাসে ছিয়াম পালন ও নফল ছালাত আদায়ের ব্যাপারে যে কয়টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সবই জাল (আল-মানারুল মুনীফ ৯৬ পৃ.)। অতএব রজব মাসের জন্য বিশেষ কোন ইবাদত নেই।  
প্রশ্ন (৯/২০৯) : আমি বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে ৭ বছর যাবৎ কর্মরত আছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি ও আমার সহকর্মীরা গান-বাজনা, নাটক, ধর্মীয়, সামাজিক সবধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করি। কালীপূজা সহ হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা উপলক্ষে অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতে হয়। এক্ষণে আমার এ চাকুরী করা জায়েয হবে কি?
-মুহাম্মাদ নূরুল করীম
বাংলাদেশ বেতার, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উপরে বর্ণিত অধিকাংশ কার্যক্রমই শরী‘আত বিরোধী। এসব কাজে সহায়তার অর্থ শরী‘আত বিরোধী কাজে সহায়তা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর। গোনাহ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হ’ল, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন চলমান গুনাহে জড়িত হ’তে হয়, অন্যদিকে এসব শুনে যারা গুনাহের শিকার হচ্ছে তাদের পাপের বোঝাও বহন করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার জন্যও ঠিক সেই পরিমাণ গোনাহ রয়েছে, যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে’ (মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮)। অতএব সম্ভব হ’লে কেবল নির্দোষ অনুষ্ঠানসমূহে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা চাকুরী ছেড়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বৈধ রূযীর পথ অনুসন্ধান করতে হবে।

প্রশ্ন (১০/২১০) : পরীক্ষার্থীদের জন্য যে বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়, এটা কি বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত হবে?

-নি‘আমুল ইসলাম, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ছাত্র-ছাত্রীদের উপদেশ ও পথনির্দেশনা দেওয়া এবং মন্দ কর্ম হ’তে সতর্ক করার জন্য বিদায় অনুষ্ঠান করায় কোন বাধা নেই। তবে অনুষ্ঠানটি কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক হ’তে হবে এবং শরী‘আত বহির্ভূত সকল কাজ হ’তে মুক্ত রাখতে হবে। রাসূল (ছাঃ) কোন সৈন্যদল অথবা কোন মেহমানকে বিদায় দানকালে তাক্বওয়ার উপদেশ দিতেন এবং তাদের জন্য দো‘আ করতেন (তিরমিযী, আবুদাঊদ; মিশকাত হা/২৪৩৫-৩৭)। আনাস (রাঃ) কুরআন খতম শেষে পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের একত্রিত করতেন এবং তাদের জন্য দো‘আ করতেন (দারেমী হা/৩৪৭৪; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/১৪২)। বিদ্বানগণ উক্তরূপ অনুষ্ঠান বিষয়ে কোন আপত্তি তুলেছেন বলে জানা যায় না। অতএব এমন অনুষ্ঠানে বাধা নেই।

প্রশ্ন (১১/২১১) : পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে বিবাহ করলে বৈধ হবে কি?

-আযীযুল হক, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
উত্তর : পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া কাবীরা গোনাহ সমূহের অন্তর্ভুক্ত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫০)। কোন মেয়ে পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে যদি ঐরূপ বিবাহ করে তাহ’লে তা বাতিল হবে না। কিন্তু পিতার অবাধ্যতা করে এরূপ করলে তাকে গোনাহগার হ’তে হবে (লোকমান ৩১/১৪-১৫)

প্রশ্ন (১২/২১২) : আমার একটি ডিপিএস আছে। এখন মেয়াদ শেষে যদি সূদের অতিরিক্ত টাকা গরীবদের মধ্যে দান করে দেই, তবে মূল টাকা আমার জন্য হালাল হবে কি?

-আমীর হামযা, মাওনা, শ্রীপুর, গাযীপুর।
উত্তর : উক্ত মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প বা ডিপিএস অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ নেকীর আশা ব্যতীত জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করল, অতঃপর তা থেকে ছাদাক্বা করল, সে তার ছওয়াব পাবে না এবং হারাম উপার্জনের দায় তার উপরেই বর্তাবে (ছহীহ ইবনু হিববান, ছহীহুত তারগীব হা/১৭১৯)। তবে ডিপিএস খোলার কারণে মূল টাকা মালিকের জন্য হারাম হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা তওবা কর, তাহ’লে তোমরা তোমাদের মূলধনটুকু পাবে’ (বাক্বারাহ ২/২৭৮)

প্রশ্ন (১৩/২১৩) : বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলের চেয়ে মেয়ের বয়স বেশী হ’লে শারঈ কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

-জসীম ক্বাযী, দোহা, কাতার।
উত্তর : এটি দোষণীয় নয়। রাসূল (ছাঃ) ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী বিধবা খাদীজা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। অন্যদিকে ৬ বছরের আয়েশার সাথে ৫৪ বছরের রাসূল (ছাঃ)-এর বিয়ে হয়েছিল (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৭৬৩-৬৪ পৃ.)। অতএব ছেলে বা মেয়ে পরস্পরের বয়সে কম-বেশী হওয়া বিবাহের ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় নয়। 

প্রশ্ন (১৪/২১৪) : চীনে অবস্থানের কারণে আমাকে শামুক, অক্টোপাস, স্কুইড ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণী বাধ্য হয়ে খেতে হয়। এগুলি খাওয়া যাবে কি?

-শামাউন কবীর, জিয়াংসু, চীন।
উত্তর : আল্লাহ বলেন, তোমাদের মুক্বীম ও মুসাফিরদের জন্য ভোগ্যবস্ত্ত হিসাবে সমুদ্রের শিকার ও সামুদ্রিক খাদ্য হালাল করা হ’ল’ (মায়েদাহ ৫/৯৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সমুদ্রে্র পানি পবিত্র আর এর মৃত জীব হালাল (আবুদাউদ হা/৮৩; মিশকাত হা/৪৭৯; ছহীহাহ হা/৪৮০)। সুতরাং শামুক, অক্টোপাস, স্কুইড ইত্যাদি প্রাণী রুচিকর হ’লে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হ’লে খেতে বাধা নেই। তবে যে সকল সামুদ্রিক প্রাণী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)
প্রশ্ন (১৫/২১৫) : সুদীর্ঘকাল যাবৎ মসজিদের পাশে পৈত্রিক ভিটায় আমাদের বাড়ি-ঘর। সম্প্রতি মসজিদ কর্তৃপক্ষ আমীন ডেকে জমি মাপার পর দেখা যায় আমাদের বাড়ি মসজিদের জমির পৌনে ১ শতাংশ জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে, যা মসজিদ কর্তৃপক্ষ বা আমাদের কারো জানা ছিল না। এক্ষণে তারা বাড়ি ভেঙ্গে হ’লেও উক্ত জমি ফেরত দেয়ার দাবী করছে। আমার পিতা এই জমিটুকুর মূল্য বা মসজিদের অন্য পাশে সমপরিমাণ জমি ক্রয় করে দিতে চান। এটা জায়েয হবে কি?
-সিরাজুম মুনীরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর : এমতাবস্থায় মসজিদ কমিটির সাথে সমঝোতা করে উক্ত জমির মূল্য প্রদান বা অন্য পার্শ্বে পরিমাণমত জমি দেওয়ায় কোন বাধা নেই। কারণ প্রয়োজন সাপেক্ষে মসজিদের জমি ক্রয়-বিক্রয় করা বা মসজিদ স্থানান্তর করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৩৮, ৬০)। ইমাম আহমাদ বলেন, প্রয়োজনে মসজিদের স্থান বিক্রি করে সেই অর্থ অন্য মসজিদে ব্যয় করাতে কোন দোষ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/২১৬-১৭)। যেমন ওমর (রাঃ)-এর যুগে কূফার এক মসজিদ হ’তে বায়তুল মাল চুরি হয়। বিষয়টি ওমর (রাঃ) জানতে পেরে মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তর করা হয় এবং পূর্বের স্থানটি খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয় (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৫৩০)


প্রশ্ন (১৬/২১৬) : আমি আমার স্ত্রীকে কিছু জমি লিখে দিতে চাই। এতে কোন বাধা আছে কি?

-মুহাম্মাদ রানু* মিয়া, কুয়েত।
*[কেবল ‘মুহাম্মাদ’ নামই যথেষ্ট (স.স.)]
উত্তর : সাধারণ দান বা উপহার হিসাবে দেওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হাদিয়া দাও ও মহববত বৃদ্ধি কর’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪)। তবে কাউকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে বা একাধিক স্ত্রী কিংবা একাধিক সন্তান থাকলে কাউকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দান করা যাবে না। একদা নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) তার এক ছেলেকে একটি গোলাম দান করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-কে জানালে তিনি তাকে তার অন্য ছেলেদের একই সমান প্রদানের নির্দেশ দেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০১৯)। আর উত্তরাধিকার সম্পদ মৃত্যুর পরে বণ্টিত হওয়াই ইসলামী শরী‘আতের বিধান। কেননা আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের জন্য তার হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন’ (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩০৭৩)। ইমাম আহমাদ বলেন, কুরআনে বর্ণিত বিধি মোতাবেক মৃত্যুর পরেই মীরাছ বণ্টন করাকে আমি পসন্দ করি (ইবনু কুদামা, মুগনী ৬/৬১)

প্রশ্ন (১৭/২১৭) : জুতা পায়ে দিয়ে জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে কি?

-রাজীবুল ইসলাম, বদরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা।
উত্তর : পবিত্র জুতা পায়ে দিয়ে জানাযার ছালাত আদায় করা এবং কবরে মাটি দেওয়া ও কবরস্থানে যাওয়া যাবে (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১২৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুতা পায়ে দিয়ে ছালাত আদায় করেছেন (আবুদাঊদ, দারেমী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৭৬৬)। উল্লেখ্য, যে হাদীছে জুতা খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে সে হাদীছের ব্যাখ্যা হ’ল, ঐ জুতাতে নাপাকী লেগে ছিল বলেই জুতা খুলতে বলা হয়েছিল (আবূদাঊদ, ইরওয়া হা/৭৬০, ৩/২১১)। সুতরাং জুতা পরিষ্কার থাকলে জুতা খোলার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন (১৮/২১৮) : নারীরা সৌন্দর্য প্রকাশার্থে মাথার চুল উঁচু করে বাঁধে। এটা জায়েয হবে কি?

-আবুবকর ছিদ্দীক, কালাই, জয়পুরহাট।
উত্তর : নারীরা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য মাথার চুল উটের কুঁজের মত (كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ) উঁচু করে বাঁধতে পারবে না। প্রাচীন যুগে মিসরীয় নারীরা এভাবে বাঁধত। পরপুরুষকে আকৃষ্টকারী এইসব মহিলারা জাহান্নামী এবং তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪)

প্রশ্ন (১৯/২১৯) : ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য মাসনূন দো‘আ সমূহ সুন্নাত ছালাতের পর একই নিয়মে পাঠ করা যাবে কি?

-আজীবর রহমান, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আ সমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত। কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে (মুসলিম হা/৫৯১-৫৯৬; মিশকাত হা/৯৬১-৯৬৬; আলবানী, ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে দো‘আ হিসাবে এগুলি পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’ (নিসা ৪/১০৩)
প্রশ্ন (২০/২২০) : বর্তমানে ‘বিকাশ’ সহ বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের উপর ১০, ২০, ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেয়। এটা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?
-আফযাল হোসাইন, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : ক্যাশ ব্যাক অর্থ মূল্য ফেরত। এটি সূদের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ এখানে কোথাও টাকার বিনিময়ে টাকার লেনদেন করা হচ্ছে না। বরং এটি কোম্পানীর পক্ষ থেকে উৎসাহমূলক হাদিয়া হিসাবে গণ্য হবে। এমন হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয। কেননা মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) হাদিয়া গ্রহণ করতেন (বুখারী হা/২৫৮৫; মিশকাত হা/১৮২৫)

প্রশ্ন (২১/২২১) : মুছল্লীরা কি ছালাতের জন্য ইক্বামতের আগেই কাতার দিতে পারে?

-আব্দুল জাববার, কাহারোল, দিনাজপুর।
উত্তর : কাতারবন্দী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় বর্ণিত হয়নি। সুতরাং ইক্বামতের শুরুতে, মাঝে বা শেষে যে কোন সময় দাঁড়ানো যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যখন ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হবে, তখন আমাকে বের হয়ে আসতে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, বেলাল (রাঃ) আযান দেয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেন এবং যখন তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে ছালাতের জন্য বের হয়ে আসতে দেখতেন তখন ইক্বামত দিতেন’ (মুসলিম হা/৬০৬; তিরমিযী হা/২০২)। হাদীছ দু’টির সমন্বয় করে বিদ্বানগণ বলেন, বেলাল (রাঃ) লক্ষ্য রাখতেন কখন রাসূল (ছাঃ) বের হন। রাসূল (ছাঃ)-কে বের হ’তে দেখার পর তিনি ইক্বামত শুরু করতেন। আর ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-কে দেখে ছালাতের জন্য দাঁড়াতেন (ফাৎহুল বারী ২/১২০; মির‘আতুল মাফাতীহ ২/৩৮৮; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/১৬৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার ছালাতের জন্য ইক্বামত দেয়া হ’ল এবং রাসূল (ছাঃ) এসে পৌঁছার আগেই আমরা দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করে নিলাম। এরপর রাসূল (ছাঃ) এসে ইমামতির স্থানে দাঁড়ালেন (বুখারী হা/৬৪০; মুসলিম হা/৬০৫)। অতএব ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ বলা পর্যন্ত বসে থাকার কোন দলীল নেই।

প্রশ্ন (২২/২২২) : আমরা দু’বন্ধু রিকশায় আরোহন করে যাচ্ছিলাম। আমার বন্ধুর নিকট লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিল। কৌতুহলবশতঃ হাতে নিয়ে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করে একটি গুলি বের হয়ে যায় এবং রিক্সাচালকের গায়ে লেগে সে মারা যায়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কোণাবাড়ী, গাযীপুর।
উত্তর : এই ধরণের অনিচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে ইসলামের শাস্তিবিধান হ’ল দিয়াত বা রক্তমূল্য প্রদান করা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি কোন মুমিন কোন মুমিনকে ভুলক্রমে হত্যা করে, তবে সে একজন মুমিন ক্রীতদাসকে মুক্ত করবে এবং তার পরিবারকে রক্তমূল্য প্রদান করবে। তবে যদি তারা ক্ষমা করে দেয় (সেকথা স্বতন্ত্র)।...কিন্তু যদি সে তা (ক্রীতদাস) না পায়, তাহ’লে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখবে (নিসা ৪/৯২)। আর রক্তমূল্য হ’ল বিভিন্ন বয়সী মোট ১০০টি উট  (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩১৩৯; আবুদাউদ হা/৪৫৪১; নাসাঈ হা/৪৮০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৪৩)। যা বর্তমান বাজারমূল্যে এক হাযার দীনার তথা প্রায় সোয়া চার কেজি স্বর্ণ বা সমপরিমাণ অর্থমূল্য (প্রায় ২ কোটি টাকা) (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৫০/২১)। কোন ব্যক্তি এককভাবে সক্ষম না হ’লে তার সমস্ত নিকটাত্মীয় মিলে এই রক্তমূল্য পরিশোধ করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হয় তাহ’লে সরকারী বায়তুল মালের সহযোগিতা নিয়ে দিয়ত পরিশোধ করবে। এটাও সম্ভব না হ’লে উভয় পক্ষ সমঝোতা করবে। তবে যদি মৃতের আত্মীয়স্বজন ক্ষমা করে দেয়, সেক্ষেত্রে দিয়াত দিতে হবে না। কিন্তু সর্বাবস্থায় হত্যাকারী কাফফারা হিসাবে (বিনা ওযরে) ধারাবাহিক দু’মাস ছিয়াম পালন করবে ও আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৪/১৭৯)

প্রশ্ন (২৩/২২৩) : পিতার অমতে এবং অনুমতি ছাড়া বড় ভাই কি বোনকে বিবাহ দিতে পারে?

-সিরাজুল ইসলাম, রাজশাহী।
উত্তর : মেয়ের মূল অভিভাবক বা ওলী হ’লেন তার পিতা। পিতার অমতে বা অনুমতি ছাড়া বড় ভাই তার বোনকে বিয়ে দিতে পারবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৫২)। উল্লেখ্য যে, পিতার অবর্তমানে দাদা, পুত্র, পৌত্র, আপন ভাই, সৎভাই, অতঃপর উত্তরাধিকারী হিসাবে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্বশীলগণ। সর্বশেষ দায়িত্বশীল সরকার (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ফাৎওয়া ক্রমিক  ১৩৯০; ১৮/১৪৩ পৃ.; আহমাদ, তিরমিযী প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩১)

প্রশ্ন (২৪/২২৪) : ‘সুপারী’ খাওয়ার ব্যাপারে শারঈ বিধান কি?

-আব্দুল হাকীম, কলারোয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : সুপারী হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোন দলীল নেই। তবে সুপারীকে জাগ দিয়ে পচানোর পর যদি তাতে মাদকতা আসে, তাহ’লে মাদকতার কারণে তা খাওয়া হারাম হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক নেশাদার বস্ত্তই মাদক এবং প্রত্যেক মাদকই হারাম’ (মুসলিম হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)

প্রশ্ন (২৫/২২৫) : যোহরের আগে ও পরে চার রাক‘আত করে মোট আট রাক‘আত ছালাত আদায়ের বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

-মাহফূযুর রহমান, লালপুর, নাটোর।
উত্তর : হ্যাঁ, রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যোহরের আগে চার রাক‘আত এবং পরে চার রাক‘আত আদায় করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন (নাসাঈ হা/১৮১৭; তিরমিযী হা/৪২৮; মিশকাত হা/১১৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৯৫)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। সেগুলো হ’ল- যোহরের পূর্বে চার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই এবং ফজরের পূর্বে দুই। অন্য বর্ণনায় ১০ রাক‘আতের কথা এসেছে। সেখানে যোহরের পূর্বে দুই রাক‘আত বলা হয়েছে (বুখারী হা/১১৬৫; মিশকাত হা/১১৫৯, ১১৬০)
প্রশ্ন (২৬/২২৬) : আমার পিতা হোটেল ব্যবসা করতে গিয়ে গ্রাস কার্প মাছকে রুই মাছ বলে চালানো, ঘুষ দিয়ে বিদ্যুৎ বিল কম দেওয়া ইত্যাদি নানা গুনাহের কাজ করেছেন, যা আমরা এখন বুঝতে পারছি। এক্ষণে তার ক্ষমা পাওয়ার কোন উপায় আছে কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ।
উত্তর : হাক্কুল ইবাদ নষ্ট করায় তিনি যে অপরাধ করেছেন তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা ক্ষমা না করলে ক্ষমা হওয়ার নয় (বুখারী হা/২৪৪৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,...যে যুলুমের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড় দেন না, তা হ’ল বান্দার উপর কৃত যুলুম, যার বদলা তিনি বান্দাদের একে অপর থেকে গ্রহণ করবেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯২৭, সনদ হাসান)। এক্ষণে সন্তান ও আত্মীয়- স্বজনরা তার মাগফিরাতের জন্য সদা-সর্বদা দো‘আ করবে এবং দান-ছাদাক্বা করবে। সম্ভব হ’লে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে গিয়ে তাদের হক ফিরিয়ে দিয়ে পিতার পক্ষে ক্ষমা চাইবে।

প্রশ্ন (২৭/২২৭) : হামযাহ (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহশী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলেও রাসূল (ছাঃ) তাকে তাঁর সামনে আসতে নিষেধ করেন। এ ঘটনার কোন সত্যতা আছে কি?

-আব্দুল কাদের, নকলা, শেরপুর।
উত্তর : উক্ত ঘটনা সত্য। ছহীহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, ওয়াহশী তায়েফবাসী একদল প্রতিনিধির সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাকে দেখে তিনি বলেন, তুমি কি ওয়াহ্শী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমিই কি হামযাকে হত্যা করেছিলে? ওয়াহশী বললেন, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? তখন তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ভন্ডনবী মুসায়লামা কাযযাব-এর সাথে যুদ্ধে ওয়াহশী তাকে হত্যা করে হামযাহ (রাঃ)-কে হত্যার প্রায়শ্চিত্ত করার শপথ নেন এবং যুদ্ধের ময়দানে তাকে হত্যা করেন (বুখারী হা/৪০৭২; আহমাদ হা/১৬১২১)
প্রশ্ন (২৮/২২৮) : জেহরী ছালাত মসজিদে একাকী পড়ার ক্ষেত্রে পার্শ্বে যদি অন্যান্য মুছল্লী থাকে সেক্ষেত্রে সশব্দে ক্বিরাআত করা জায়েয হবে কি?
-শাহনেওয়ায, রাজেন্দ্রপুর, গাযীপুর।
উত্তর : এক্ষেত্রে অনুচ্চস্বরে তেলাওয়াত করাই উত্তম। কারণ এক মুছল্লীর সশব্দে তেলাওয়াতের কারণে অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন মুছল্লী ছালাতরত অবস্থায় থাকলে অন্যদেরকে কুরআন পর্যন্ত নিম্নস্বরে তেলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন (আহমাদ; মিশকাত হা/৮৫৬, সনদ ছহীহ)। একদা রাসূল (ছাঃ) মসজিদে ই‘তিকাফ কালে ছাহাবীদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত করতে শুনে পর্দা উঠিয়ে বলেন, জেনে রাখ! তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রবের সাথে গোপনে আলাপরত আছ। অতএব তোমরা (উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত দ্বারা) একে অন্যকে কষ্ট দিয়ো না। তোমরা একে অন্যের চাইতে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত করো না (আবুদাউদ হা/১৩৩২; ছহীহাহ হা/১৫৯৭)। তবে কারো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটলে সশব্দে তেলাওয়াত করবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ঘরে ছালাত আদায়কালে নবী করীম (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত এতো স্পষ্ট হ’ত যে, আঙিনার লোকেরাও তা শুনতে পেত (আবুদাউদ হা/১৩২৭; মিশকাত হা/১২০৩)

প্রশ্ন (২৯/২২৯) : ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করার কোন ফযীলত আছে কি?

-ওয়াহীদুয্যামান, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : ওযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করার ফযীলতের ব্যাপারে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। কোন কোন বিদ্বান মুস্তাহাব বললেও এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪৩/৩৭৮)। তবে এটা জাযেয। যেমন একদা আলী (রাঃ)-এর নিকটে ওযূর পানি আনা হ’লে তিনি কিছু পানি পান করলেন এবং কিছু পানি দ্বারা ওযূ করলেন। অতঃপর উঠে দাঁড়ালেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় পাত্রের অবশিষ্ট পানি পান করলেন। তারপর বললেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে মাকরূহ মনে করে, অথচ আমি যেরূপ করেছি, নবীও সেরূপ করেছেন (বুখারী হা/৫৬১৬; মিশকাত হা/৪২৬৯)

প্রশ্ন (৩০/২৩০) : সাক্ষাতের সময় সালাম-মুছাফাহার সাথে সাথে কোলাকুলি করা, চুমু খাওয়া ইত্যাদি শরী‘আতসম্মত কি?

-এমদাদ, ছয়ঘরিয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : পারস্পরিক সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সালাম করাই সুন্নাত (আবুদাঊদ হা/৫২০০, মিশকাত হা/৪৬৫০)। আর সালামের পর মুছাফাহা করতে হবে। একদা আনাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যখন তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সে কি তার জন্য মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন, না। আনাস (রাঃ) বললেন, তবে কি তাকে জড়িয়ে ধরবে বা কোলাকুলি করবে বা চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। বরং তার সাথে মুছাফাহা করবে (তিরমিযী হা/২৭২৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২; মিশকাত হা/৪৬৮০; ছহীহাহ হা/১৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন মুসলিম তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে অতঃপর তার হাত ধরে করমর্দন করে, তখন উভয়ের (ছগীরা) গুনাহ সমূহ আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে এমনভাবে ঝরে যায়, যেমন শীতকালে গাছের পাতা সমূহ ঝরে যায়। আনাস (রাঃ) বলেন, ছাহাবীগণ সাক্ষাৎ হ’লে পরস্পরে মুছাফাহা করতেন এবং সফর থেকে ফিরে আসলে কোলাকুলি করতেন (ত্বাবারানী আওসাত্ব হা/৯৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৪৭)
স্মর্তব্য যে, দুইজনের চার হাত মিলানো ও বুকে হাত লাগানোর প্রচলিত প্রথা সুন্নাত বিরোধী আমল (ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২; তিরমিযী হা/২৭২৮; মিশকাত হা/৪৬৮০)। এছাড়া হাতে বা কপালে চুমু খাওয়া, পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ ‘যঈফ’ (তিরমিযী হা/২৭৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৪-০৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৫-৭৬, আলবানী সনদ যঈফ)

প্রশ্ন (৩১/২৩১) : মহিলারা জানাযার ছালাতে অংশ গ্রহণ করতে পারে কি?

-রফীকুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : মহিলারা পর্দার মধ্যে জানাযার ছালাত পড়তে পারে এবং পুরুষদের পিছনেও অংশ গ্রহণ করতে পারে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৩৪-৩৬)। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩, মিশকাত হা/১৬৫৬)। মহিলারা একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৮২)। তবে মহিলাদের লাশের পিছনে অনুসরণ করে কবরস্থান পর্যন্ত যেতে নিষেধ করা হয়েছে (বুখারী হা/১২৭৮; মুসলিম হা/৯৩৮)। উম্মে আত্বিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে জানাযার সাথে সাথে চলতে নিষেধ করতেন। তবে এই নিষেধের ব্যাপারে কোন তাকীদ করতেন না’ (বুখারী হা/১২৭৮; মুসলিম হা/৯৩৮; ফাৎহুল বারী ৩/১৪৫)। উল্লেখ্য যে, নারীদের জানাযার ছালাতে অংশ গ্রহণ নিষেধ মর্মে কিছু হাদীছ ও আছার বর্ণিত হয়েছে যার কিছু যঈফ এবং কিছু কতিপয় তাবেঈর ব্যক্তিগত আমল মাত্র (ইবনু মাজাহ হা/১৫৭৮; ইবনু আবী শায়বাহ হা/১১৪০০-১১৪১০; মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৬২৯৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৭৪২)

প্রশ্ন (৩২/২৩২) : একজন ব্যক্তি কোন পর্যায়ভুক্ত বিদ‘আতী হ’লে তাকে সালাম দেয়া জায়েয হবে না?

-আছিফ কাযী, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : বিদ‘আত যদি এমন বিদ‘আত হয় যা মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়, তাহ’লে তাকে সালাম দেওয়া যাবে না। হাফেয ইবনু হাজার বলেন, জমহূর বিদ্বানগণের মতে, বিদ‘আতী ও ফাসেক তথা পাপাচারীদের সালাম দেওয়া যাবে না। ইমাম নববী বলেন, বিদ‘আতী যারা বড় পাপের সাথে জড়িত তাদের সালাম দেওয়া ও উত্তর প্রদান করা যাবে না। তবে এতে ফিৎনা তথা দুনিয়াবী বিপদাপদের আশংকা থাকলে সালাম দিবে (ফাৎহুল বারী ১১/৪১)। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এই সকল লোককে সালাম দেওয়ার সময় নিয়ত করবে যে, ‘সালাম’ আল্লাহর অন্যতম ছিফাত। এ সময় তার অর্থ হবে আল্লাহ রাক্বীব তথা আল্লাহ রক্ষাকারী। মুহাল্লাব বলেন, বিদ‘আতীদের সালাম প্রদান না করা সালাফদের সুন্নাত (ফাৎহুল বারী ১১/৪০)। ছাহাবী কা‘ব বিন মালেক অলসতা বশতঃ যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম তার সাথে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন (বুখারী হা/৪৪১৮; মুসলিম হা/২৭৬৯)। তবে সাধারণভাবে তাদের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করা যায়। যেমন আবু উমামা (রাঃ) মুসলিম, ইহূদী-নাছারা সবাইকে সালাম প্রদান করতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৬২৬৫-৬৮; ফাৎহুল বারী ১১/৪১)

প্রশ্ন (৩৩/২৩৩) : বিতর ছালাত নিয়মিতভাবে কত রাক‘আত পড়া উত্তম?

-মাহমূদুল হাসান, বাগহাটা, নরসিংদী।
উত্তর : তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের শেষে এক রাক‘আত বিতর যোগ করলে সমস্ত ছালাতই বিতর হয়ে যায়। তবে সাধারণতঃ শেষের এক, তিন বা পাঁচ রাক‘আতকে বিতর বলা হয়। এগুলির মধ্যে চার খলীফাসহ অধিকাংশ ছাহাবী, তাবেঈ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এক রাক‘আত বিতরে অভ্যস্ত ছিলেন (নায়লুল আওত্বার ৩/২৯৬; মির‘আত ৪/২৫৯)। সুতরাং রাতের ছালাত আদায় শেষে এক রাক‘আত বিতর আদায় করাই উত্তম।

প্রশ্ন (৩৪/২৩৪) : বালেগ হওয়ার পূর্বে কোন মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সম্মতি নেওয়া পিতার জন্য আবশ্যক কি?

-আখতারুযযামান, ডেমরা, ঢাকা।
উত্তর : নাবালেগ শিশুর বিবাহের ক্ষেত্রে পিতার সম্মতিই যথেষ্ট। কারণ আবুবকর (রাঃ) তার নাবালেগ মেয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর বিবাহ দিয়েছিলেন রাসূলের সাথে অথচ তিনি আয়েশার অনুমতি নেননি। কারণ পিতাই ভালো জানেন সন্তানের কল্যাণ কোথায় হবে। তবে পিতা ছাড়া অন্য কেউ নাবালেগ কন্যার বিয়ে দিতে পারবে না। কেউ দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৩৯; ফাৎহুল বারী ৯/১৯০)। 
প্রশ্ন (৩৫/২৩৫) : কবরে দো‘আ করার ক্ষেত্রে ক্বিবলামুখী হ’তে হবে কি?
-আবু আমাতুল্লাহ, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।
উত্তর : কবরের দিকে মুখ করে দো‘আ করা যায়। এজন্য ক্বিবলামুখী হওয়া শর্ত নয় (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৩৮)। রাসূল (ছাঃ) মৃতের দাফন শেষ করে কবরে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দো‘আ কর। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (আবূদাউদ হা/৩২২১, সনদ ছহীহ)। তবে কবর থেকে বরকত হাছিল করা বা কবরবাসীর নিকট থেকে কিছু প্রার্থনা করার জন্য কোন কবরের দিকে মুখ করে দো‘আ করা নিষিদ্ধ (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৭/১৬৫)

প্রশ্ন (৩৬/২৩৬) : আমার মায়ের বারবার সন্তান মারা যাওয়ায় জনৈক কবিরাজ তার ঘরে মাটির ঢাকনা ঝুলিয়ে দেয়। বর্তমানে তিনি এসব বিশ্বাস করা শিরক বলে জানেন। কিন্তু ঢাকনাটি ক্ষতি হওয়ার ভয়ে ফেলে দিতে দেন না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

-শফীকুল ইসলাম, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।
উত্তর : এমতাবস্থায় মাকে সাধ্যমত বুঝিয়ে উক্ত ঢাকনা খুলে ফেলতে হবে। কারণ এ ধরনের বিশ্বাস স্পষ্ট শিরক। আর শিরকের গুনাহ কখনও ক্ষমা হয় না (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হয় না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫)। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসল এবং সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, ঐ ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল (তিরমিযী হা/১৩৫; মিশকাত হা/৫৫১; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৪৭)। সুতরাং এক্ষেত্রে তাকে সর্বদা তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। কেননা বিপদাপদ থেকে উদ্ধারের মালিক একমাত্র আল্লাহ, অন্য কেউ নয় (ইউনুস ১০/১০৭)

প্রশ্ন (৩৭/২৩৭) : বর্তমানে সরকারকে ট্যাক্স না দিয়ে চোরাই পথে ভারত থেকে মোবাইল এনে কোম্পানী রেটের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যবসা করা বা এরূপ মোবাইল ক্রয় করা জায়েয হবে কি?

-আব্দুল মালেক, শিবগঞ্জ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : জেনে-শুনে চোরাই পথে আনীত এসব পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘পাপ ও অন্যায়ের কাজে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)

প্রশ্ন (৩৮/২৩৮) : জামা-কাপড়ে নাপাক কিছু লেগে গেলে তিনবার ধোয়া ফরয কি? এর চেয়ে কম হ’লে অপবিত্র থেকে যাবে কি?

-জসীমুদ্দীন, মধুপুর, টাঙ্গাইল।
উত্তর : জামা-কাপড় পরিষ্কার করার জন্য তিনবার হওয়া শর্ত নয় বরং অপবিত্রতা বা দুর্গন্ধ দূর হওয়া শর্ত (বুখারী হা/২২৭; মুসলিম হা/২৯১)। আর সেটা একবারও হ’তে পারে আবার অধিক বারও হ’তে পারে (বুখারী হা/১২৫৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৪২১-২৩)। আর যদি ভালভাবে ধোয়ার পরও কোন দাগ লেগে থাকে, তাতে কোন দোষ নেই। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার জন্য পানিই যথেষ্ট। তার দাগ কোন ক্ষতি করবে না (আহমাদ হা/৮৭৬৭; ছহীহাহ হা/২৯৮)

প্রশ্ন (৩৯/২৩৯) : অধিকাংশ বিবাহের অনুষ্ঠানে বর্তমানে গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি প্রকাশ্য শরী‘আত বিরোধী কর্মকান্ড হয়। এসব কারণে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা যাবে কি?

-শাহজালাল হোসাইন, বদরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর : দাওয়াতের ব্যাপারটি মুসলমানদের পারস্পরিক হক-এর অন্তর্ভুক্ত (নাসাঈ হা/১৯৩৮; মিশকাত হা/৪৬৩০)। কিন্তু প্রকাশ্যে শরী‘আত বিরোধী কর্মকান্ড হয় এমন ক্ষেত্রে দাওয়াতদাতাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। নতুবা এমন অনুষ্ঠানকে সাধ্যমত এড়িয়ে চলবে (আবূদাঊদ হা/৪৯২৪)। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘ঐসব লোকদের পরিত্যাগ কর যারা তাদের ধর্মকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে (আন‘আম ৬/৭০)
প্রশ্ন (৪০/২৪০) : জনৈক বক্তা ৭টি আসমানে পৃথক জীব, পৃথক নবী-রাসূল ইত্যাদি আছে বলে দাবী করছেন। এর কোন সত্যতা আছে কি?
-আবুল কালাম, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত মর্মে ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে একটি বর্ণনা এসেছে, যার সনদকে হাকেম ও বায়হাক্বী ছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ যঈফ ও জাল বলেছেন। বায়হাক্বী এর সনদ ছহীহ বললেও একেবারেই ‘শায’ বলে উল্লেখ করেছেন (হাকেম হা/৩৮২২; বায়হাক্বী, আল-আসমাউস ছিফাত হা/৮৩১-৮৩২; মোল্লা আলী ক্বারী, আল-আসরারুল মারফূ‘আ‘হ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ ১/৯৬; আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১১৩; সুয়ূতী, আল-হাভী লিল ফাতাওয়া ১/৪৬২; আব্দুর রহমান আল-মু‘আল্লিমী, আল-আনওয়ারুল কাশিফাহ ১১৭-১১৮ পৃ.)। ইমাম আহমাদ হাদীছটিকে মুনকার বলেছেন (ইবনু কুদামাহ, আল-মুনতাখাব মিন ইলালিল খাল্লাল ১২৫ পৃ.)। সুয়ূতী বলেন, এই হাদীছকে ইমাম হাকেমের ছহীহ বলাতে আমি অতীব আশ্চর্যান্বিত (তাদরীবুর রাবী ১/২৬৮)। ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, যখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বর্ণনাটি যঈফ তখন এর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই (আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/১১৩)। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, বর্ণনাটির সনদ যদি ছহীহও ধরে নেয়া হয়, তবুও এর মতন ছহীহ নয়। কারণ ইবনু আববাস হয়তো এটি ইসরাঈলী রেওয়ায়াত হিসাবে বর্ণনা করেছেন (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ১/২১)
উল্লেখ্য যে, সাত যমীনের অর্থ সাতটি স্তর। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীকেও সেই পরিমাণ। এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়। যাতে তোমরা জানো যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী। আর আল্লাহ সবকিছুকে তাঁর ইলম দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন’ (তালাক্ব ১২)। এই আয়াতের তাফসীরে এসেছে, সাঈদ ইবনু জুবায়ের বলেন, এক ব্যক্তি ইবন আববাস (রাঃ)-কাছে এসে তিনবার উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাইল। তিনি কোন জবাব দিলেন না। মানুষজন তাঁর কাছ থেকে চলে গেলে লোকটি আবার বলল, কেন আপনি আমার জবাব দিচ্ছেন না? ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, আমি যদি তোমাকে সে-ব্যাখ্যা বলি তাহ’লে তুমি কুফরী করবে না, এমন আশঙ্কা থেকে তুমি কি মুক্ত? লোকটি বলল, আমাকে সে-ব্যাখ্যা বলুন। ইবনু আববাস বললেন, আসমান যমীনের নিচে আর যমীন আসমানের উপরে। এভাবে একটা আরেকটার সাথে গুটানো আছে। আসমান-যমীন সমূহের মাঝে এভাবে ঘুরে, যেমন নাটাই তার সূতা নিয়ে ঘুরে। (কিতাবুল আযামাহ, ২/৬৪৩; তাফসীরুর রাগেব ১/৫২৫; এর সনদ গ্রহণযোগ্য)। যাহ্হাক, যুহায়লীসহ অনেকে মনে করেন, সাতটি যমীন রয়েছে, তবে একটির সাথে আরেকটি মিলে আছে, এমনটি নয় (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১৭৫; তাসীরুল মুনীর ২৮/২৯৯)। শায়খ আত্বিয়া সালেম বলেন, যমীন সাতটি একটির সাথে আরেকটি মিলে আছে। এদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই (শরহ বুলূগুল মারাম ৬/২১৩)
সর্বোপরি এটি অদৃশ্যের জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অতএব যে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় না, সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কোন মন্তব্য না করাই কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা ১৬/৩৬)

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)

১৩তম পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন----

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

====================================================


PLEASE SHARE ON

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...