Search This Blog

Sunday, May 10, 2020

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)


সম্পাদকীয়ঃ

আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল ১৬/১২৫)।

আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।


প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন (১) : হায়েয অবস্থায় সহবাস করলে তার কাফফারা কি? যদি কাফফারা আদায় করতে না পারে, তাহ’লে কি করতে হবে?
উত্তর : হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস হারাম (বাক্বারা ২/২২২)। ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ করে, তবে তাকে খালেছ নিয়তে তওবা করতে হবে এবং কাফফারা স্বরূপ এক দীনার বা অর্ধ দীনার গরীব-মিসকীনকে দান করতে হবে (তিরমিযী, আবুদাঊদ হা/২৬৪; ইরওয়া হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৫৩)। আর এক দীনার হ’ল ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণের সমপরিমাণ। যার বর্তমান বাযারমূল্য প্রায় ১৪/১৫ হাযার টাকা। তবে শারঈ বিধান না জেনে অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে করে ফেললে তওবা করাই যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/১২৬; ইবনুল উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ১/৫৭১)। 
প্রশ্ন (২) : কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মহিলা হ’লে সেখানে চাকুরী করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারী নেতৃত্ব সিদ্ধ নয়। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ জাতি নারী জাতির উপরে কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) যখন অবগত হ’লেন যে, ইরানের জনগণ কিসরার কন্যাকে তাদের নেত্রী নির্বাচন করেছে। তখন তিনি বললেন, ‘ঐ জাতি কখনও সফলকাম হ’তে পারে না, যারা নারীকে তাদের নেত্রী নির্বাচিত করে’ (বুখারী হা/৪৪২৫; মিশকাত হা/৩৬৯৩)। অতএব রাষ্ট্রীয় ও সমাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীর আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব ইসলাম নাকচ করেছে। এতদসত্ত্বেও কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক যদি মহিলা হয়ে থাকেন, তাহ’লে পারতপক্ষে চাকুরী পরিবর্তন করা উচিত। তবে বাধ্যগত বিষয়টির কথা ভিন্ন।
প্রশ্ন (৩) : মহিলাদের ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে পায়ের পাতা ঢেকে দাঁড়াতে হবে কি? রুকূ ও সিজদার সময় পা বের হয়ে গেলে ছালাত নষ্ট হয়ে যাবে কি?
উত্তর : মহিলাদের দুই হাতের তালু ও চেহারা ব্যতীত মাথা হ’তে পায়ের পাতা পর্যন্ত সর্বাঙ্গ সতর (আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)। সে হিসাবে ছালাতে নারীদের জন্য পায়ের পাতা ঢেকে রাখা উত্তম। উম্মে সালামাহ (রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ সময় বড় চাদর দিয়ে পায়ের পাতাসহ সর্বাঙ্গ আবৃত করবে (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৬২২৮)। তবে রুকূ-সিজদার সময় পায়ের পাতা প্রকাশ পেলে ছালাত বিনষ্ট হবেনা। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত’ (নূর ২৪/৩১; (দ্র. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/১১৪-১২০)
প্রশ্ন (৪) : সাত ব্যক্তিকে আরশের নীচে ছায়া দেওয়া হবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি নারী/পুরুষ কার জন্য খাছ?
উত্তর : উক্ত হাদীছ নারী-পুরুষ সবাইকে শামিল করে। কারণ হিসাব নারী-পুরুষ উভয়েরই হবে এবং উভয়ের আমলের উপর তাদের কর্মফল নির্ভর করবে। তবে সাত শ্রেণীর মধ্যে দুটি বিষয়ে নারীরা শামিল হবে না। আর তা হ’ল ন্যায়পরায়ণ শাসক। কারণ শাসক নারী হতে পারে না। আর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত হৃদয়ের নারী। কারণ তাদের জন্য বাড়িতে ছালাত আদায় উত্তম (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৩৪৭; ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/১৪৩)।
প্রশ্ন (৫) : কুরআন ছুঁয়ে কসম করা শিরক বলে গণ্য হবে কি?
উত্তর : আল্লাহর নাম বা গুণাবলী ছাড়া অন্য কারু নামে কসম করা শিরক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে কসম করল, সে কুফরী করল অথবা শিরক করল’ (তিরমিযী হা/১৫৩৫;  মিশকাত হা/৩৪১৯; ছহীহাহ হা/২০৪২)। তিনি আরও বলেন, ‘যে কসম খেতে চায়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম খায় অথবা চুপ থাকে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৩৪০৭ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)। কুরআন যেহেতু আল্লাহর কালাম, সেহেতু কুরআনের নামে শপথ করা জায়েয। তবে এর জন্য কুরআন ছুঁয়ে শপথ করার প্রয়োজন নেই। কেননা রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবীদের যুগে এমন কোন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। বরং এটি পরবর্তী যুগের আবিষ্কার (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। এক্ষণে শপথকারীকে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে অধিকতর ভয় প্রদর্শনের জন্য আদালত যদি কুরআন ছুঁয়ে শপথ করতে বলেন, তবে তাতে বাধা নেই (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৪৬৩)।
প্রশ্ন (৬) : মহিলারা কি মহিলাদের মধ্যে জানাযার ইমামতি করতে পারবে?
উত্তর : পারবে। এতে কোন বাধা নেই। আর পুরুষের ইমামতিতেও তাদের জন্য জানাযার জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা জায়েয। তবে পর্দার ব্যবস্থা না থাকলে পৃথকভাবে তারা নিজেরাই জানাযা পড়তে পারেন। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ মসজিদে নববীতে আনিয়ে নিজেরাই তাঁর জানাযা পড়েছিলেন (মুসলিম হা/৯৭৩; আলবানী, আহকামুল জানায়েয হা/৭১; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২২৮ পৃ.)। সে হিসাবে মহিলারা মহিলাদের জানাযার ছালাতে ইমামতি করতে পারেন।
প্রশ্ন (৭) : আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহকে নবী করীম (ছাঃ) দেখেছেন বলে দাবীকারী মিথ্যুক। আবার আরেক ছাহাবী (রাঃ) বলেছেন, নবী করীম (ছাঃ) আল্লাহকে দেখেছেন। এমতাবস্থায় কার কথা মানতে হবে?
উত্তর : মি‘রাজে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেননি। আবু যার গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলা হ’ল, আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তো নূর। আমি কি করে তাঁকে দেখব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৫৯-৫৬৬০ ‘আল্লাহকে প্রত্যক্ষ করা’ অনুচ্ছেদ)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘...যে ব্যক্তি বলে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বীয় পালনকর্তাকে দেখেছেন সে মিথ্যা বলে। অতঃপর তিনি দেখতে না পারার প্রমাণে দলীল পেশ করে বলেন, ‘কোন চোখ তাঁকে দেখতে পারে না। বরং তিনি সকল চোখকে দেখতে পান’ (আন‘আম ৬/১০৩)। তারপর পাঠ করলেন, ‘অহীর মাধ্যমে বা পর্দার আড়াল থেকে ব্যতীত আল্লাহর সাথে কথা বলা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় (শূরা ৫১; মুসলিম হা/১৭৭; তিরমিযী হা/৩০৬৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী, ‘যা সে দেখেছে তার হৃদয় তা অস্বীকার করেনি.. নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল (নাজম ৫৩/১১ ও ১৩)। তিনি তাকে অন্তরে দু’বার দেখেছেন (মুসলিম হা/১৭৬; মিশকাত হা/৫৬৬০)। এখন দু’বার কাকে দেখেছেন এর ব্যাখ্যায় ছাহাবীগণ বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জিব্রীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন তাঁর ছয়শত ডানা বিশিষ্ট অবস্থায়। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের (আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে বেষ্টন করে রেখেছিল। এ দর্শনকে নবী করীম (ছাঃ)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি’ (মুসলিম হা/১৭৪; তিরমিযী হা/৩২৮৩; মিশকাত হা/৫৬৬২)। উল্লেখ্য যে, যে সকল হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর রবকে দেখেছেন তা জাল বা যঈফ (হাকেম হা/৩২৩৪; তিরমিযী হা/৩২৭৯; যিলালুল জান্নাহ হা/৪৩৭)। এক্ষণে ইবনু আববাসের বক্তব্য সত্য হিসাবে ধরলেও তা তার নিজস্ব উক্তি হওয়ায় এবং আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতিবাদ থাকায় তা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৫০৯; ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমাউ জয়ূশিল ইসলামিয়াহ ১/১২)।
প্রশ্ন (৮) : ওহোদ যুদ্ধের শহীদদের জানাযা কি আট বছর পর পড়া হয়েছিল? শহীদদের জানাযা পড়ানো কি নাজায়েয?
উত্তর : আট বছর পর ওহোদ শহীদদের নিকট গিয়ে রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করেছিলেন। যেমন ওক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) বলেন, আট বছর পর নবী করীম (ছাঃ) ওহোদের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে) এমনভাবে দো’আ করলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দো‘আ করেন (বুখারী হা/৪০৪২; মুসলিম হা/২২৯৬; মিশকাত হা/৫৯৫৮)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম (ছাঃ) একদা বের হ’লেন এবং ওহোদে পৌঁছে মাইয়েতের জন্য যেরূপ (জানাযায়) দো‘আ করা হয় ওহোদের শহীদানের জন্য অনুরূপ দো‘আ করলেন’ (বুখারী হা/১৩৪৪; মুসলিম হা/২২৯৬)। উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী ও আবু হাতেম বলেন, মাইয়েতের জন্য ছালাতে দো‘আ পাঠের ন্যায় তিনি দো‘আ করলেন (মুসলিম হা/২২৯৬-এর ব্যাখ্যা; মির‘আত ৫/৪০০; ইবনু হিববান হা/৩১৯৯)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, সম্ভবত রাসূল (ছাঃ) তাঁর মৃত্যু নিকবর্তী হওয়ার বিষয়টি জেনে নেওয়ার ফলে ওহোদের শহীদগণের জন্য দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন (ফাৎহুল বারী ৩/২১০)। উল্লেখ্য যে, শহীদগণের জন্য সাধারণভাবে জানাযার ছালাত নেই। কারণ ছালাত হ’ল মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা। আর শহীদদের আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন’ (কুরতুবী, আল-বায়ান ওয়াত তাহছীল ২/২৯৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ওহোদের শহীদগণকে রক্তমাখা দেহে দাফন করেন। তিনি তাদের জানাযার ছালাত আদায় করেননি (বুখারী হা/১৩৪৩; মিশকাত হা/১৬৬৫)। অবশ্য কেউ চাইলে শহীদগণের জন্যও জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন। তবে এটি ওয়াজিব নয় (নাসাঈ হা/১৯৫৩; শারহু মা‘আনিল আছার হা/২৬৫৭, সনদ হাসান; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৮২)।
প্রশ্ন (৯) : ক্বিয়ামতের দিন লূত (আঃ) কি তাঁর স্ত্রী থেকে পলায়ন করবেন?
উত্তর : কেবল লূত (আঃ) নন, প্রত্যেক মানুষ নিজ সম্পর্কে এতই বিভোর থাকবে যে সে নিজ স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ও পিতা-মাতা থেকে পলায়ন করবে (আবাসা ৮০/৩৪-৩৭)। তবে কোন কোন তাফসীরকার উপরোক্ত আয়াতগুলির তাফসীরে বলেন,  কাবীল তার ভাই হাবীল থেকে, ইবরাহীম (আঃ) তার পিতা আযর থেকে, নূহ (আঃ) পলায়ন করবেন তার ছেলে থেকে। হাসান বছরী বলেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রথম তার পিতা থেকে পলায়ন করবেন ইবরাহীম (আঃ), সন্তান থেকে প্রথম পলায়ন করবেন নূহ (আঃ), স্ত্রী থেকে প্রথম পলায়ন করবেন লূত (আঃ) (তাফসীরে কুরতুবী, ‘আবাসা ৩৪ আয়াতের তাফসীর)।
প্রশ্ন (১০) : সুমাইয়া (রাঃ) ঈমান আনার কারণে আবু জাহল প্রকাশ্যে তাকে উলঙ্গ করে হত্যা করেছিল। এ কথা কি প্রমাণিত? এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরেও কেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাত দিয়ে বাঁধা না দিয়ে ইয়াসির পরিবারকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দিলেন?
উত্তর : আবু জাহল তার গুপ্তাঙ্গে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছিল, এটা প্রমাণিত (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/৩৪৫৭০; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২৮২; আল-বিদায়াহ ৩/৫৯)। তবে তাকে উলঙ্গ করে হত্য করেছিল, এমনটি পাওয়া যায় না। অন্যায় কাজে বাধা দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে বাধা দান করতে হবে। অন্যথায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে এটাই শরী'আতের শিক্ষা (আবুদাঊদ হা/৪৩৩৮; মিশকাত হা/৫১৪২ 'আমর বিল মা'রূফ' অনুচ্ছেদ)। রাসূল (ছাঃ)-এর তখন অত্যাচার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ছিল না। তাই ধৈর্যধারণের উপদেশ দিয়েছিলেন। এতে বুঝা যায়, জিহাদের জন্য সক্ষমতা প্রয়োজন।
প্রশ্ন (১১ : যে সকল ইমাম বিশ্বাস করেন যে, ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’- তাদের পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : এই আক্বীদাহ যারা পোষণ করে তাদের পিছনে ছালাত আদায় করলে ছালাত হয়ে যাবে। তবে বিকল্প মসজিদ বা ইমামের পিছনে ছালাত আদায়ের সুযোগ থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করাই উত্তম (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/২৮০-৮১, ৭/৫০৭, ২৩/২৫৬; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৪/৩৩; আলবানী, তাখরীজুত তাহাবিয়াহ ১/৬৭; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৭)। উল্লেখ্য যে, ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’ এধরনের আক্বীদা বাতিল। আল্লাহর সত্তা সর্বত্র বিরাজমান নয়। বরং তাঁর ইল্ম ও কুদরত অর্থাৎ জ্ঞান ও ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান (ত্বোয়া-হা ২০/৪৬)। তিনি সপ্তম আসমানের উপরে আরশে সমুন্নীত (আল-আ‘রাফ ৭/৫৪; ইউনুস ১০/৩; রা‘দ ১৩/২; ত্বোয়াহা ২০/৫; আল-ফুরক্বান ২৫/৫৯; সাজদাহ ৪; হাদীদ ৪; মুসলিম হা/৮৩৬, ‘মসজিদ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/৩৩০৩)। মু‘আত্ত্বিলাগণ ‘আরশে অবস্থান’ সম্পর্কিত সর্বমোট সাতটি আয়াতের অর্থ করেছেন ‘মালিক হওয়া’, কেউ করেছেন ‘আরশ সৃষ্টির ইচ্ছা করা’ ইত্যাদি। এইভাবে এঁরা ২৫ প্রকারের সম্ভাব্য অর্থ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এসবের প্রতিবাদে ৪২টি যুক্তি পেশ করেছেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ ২/১২৬-১৫২)। ইমাম যাহাবী উক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় ৯৬টি হাদীছ, ২০টি আছার ও আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের ১৬৮টি বক্তব্য সংকলন করেছেন (যাহাবী, ‘মুখ্তাছারুল ‘উলু’)।
মূলতঃ তাদের কল্পিত উক্ত অর্থগুলো রূপক। আর আল্লাহর ছিফাতের বিষয়ে বর্ণিত আয়াতের এরূপ রূপক ও কাল্পনিক অর্থ করা অন্যায়। তাই এ সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জওয়াবে ইমাম মালিক বিন আনাস (রহঃ) বলেছিলেন, ‘সমুন্নীত’ শব্দের অর্থ সুবিদিত, কিভাবে সেটা অবিদিত, এর উপরে ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা বিদ‘আত’ (ইমাম লালকাঈ, ‘উছূলু ই‘তিক্বাদ’ ৩/৩৮৭ টীকা-২; শাহরাস্তানী, ‘আল-মিলাল’ ১/৯৩; দ্রঃ থিসিস পৃঃ ১১৫-১১৭।
প্রশ্ন (১২) : ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর সময় কি বলে সালাম ফিরাতে হবে?
উত্তর : দো‘আয়ে মাছূরাহ ও অন্যান্য দো‘আ শেষে ডাইনে ও বামে কেবল ‘আস্সালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ বলবে’ (নাসাঈ হা/১৩২৫; মিশকাত হা/৯৫০)। এটিই সর্বোত্তম। আর কেবল ডাইনে বা বামে সালামের শেষদিকে ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। অতএব তা পরিহার করাই উত্তম। কারণ সালাম ছালাতের একটি রুকন যা ইখতিলাফ মুক্ত হওয়া উচিৎ (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৬৪)। তবে কেউ শুধু ডানে অথবা ডানে ও বামে উভয় দিকে ‘ওয়া বারাকাতুহু’ যোগ করলে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না (ইবনু হিববান হা/১৯৯৩; আবূদাউদ হা/৯৯৭, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, কেবল ডানে সালাম ফিরানোর সময় ‘ওয়া বারাকাতুহু’ বলার বিষয়টি আবূদাউদের সব কপিতে পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন (১৩) : ছালাতে ইমামের সাথে ছালাত শুরুর পর ইমাম রুকুতে চলে যাওয়ার পরও সুরা ফাতিহা পাঠ শেষ না হলে আমার করণীয় কি? সুরা ফাতিহা শেষ করা না রুকুতে যাওয়া? কোনটি জরুরী?
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় মুক্তাদী ইমামের সাথে রুকূতে চলে যাবে এবং এই রাক‘আতটি ইমাম সালাম ফিরানোর পর পড়ে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা জামা‘আতে ছালাতের যতটুকু পাও, ততটুকু আদায় কর এবং যেটুকু ছুটে যায় সেটুকু পূর্ণ কর’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮৬, দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৯৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৪) : জানাযার ছালাতে ইমাম মুক্তাদী উভয়েই কি সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করবে, নাকি শুধু ইমাম পড়বেন?
উত্তর : জানাযার ছালাতে ইমাম সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়বেন (নাসাঈ হা/১৯৮৭; ইবনু হিববান হা/৩০৭১; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৪১২; তোহফাহ ৪/৯৬)। ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীর জন্য কেবল সূরা ফাতিহা পড়াই যথেষ্ট। আর ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদী সূরা ফাতিহার সাথে অপর একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে (দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২১৬ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৫) : ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন? জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি হাম্বলী মাযহাবকেই ফৎওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতেন। একথা কি সঠিক?
উত্তর : ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) একজন মুজতাহিদে মুত্বলাক ছিলেন। তিনি নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। বরং কুরআন ও হাদীছের ভিত্তিতে যে বিষয়টি সঠিক মনে হ’ত তিনি সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতেন। আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে মুজতাহিদ বলে বিশেষিত করেছেন (ত্বাবাকতুল হুফফায ৫১৬-১৭ পৃ:)। আল্লামা ইবনু রজব তাকে মুজতাহিদ বলে উল্লেখ করেছেন (যায়লু ত্বাবাক্বাতিল হানাবিলা ২/৩০৭)। শাওকানী তাকে মুজতাহিদে মুত্বলাক্ব বলে অভিহিত করেছেন (আল-বাদরুত ত্বালে‘ ১/৫৭)।  এক্ষণে তাঁর অধিকাংশ মাসআলা হাম্বলী মাযহাবের সাথে মিলে যাওয়ার কারণ হ’ল তিনি হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়া দিতেন। আর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলও হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়া দিতেন। তাছাড়া ইমাম আহমাদ অন্য তিন ইমামের তুলনায় হাদীছ বেশী জানতেন; যার জ্বলন্ত প্রমাণ তাঁর সংকলিত ত্রিশ হাযার হাদীছ সম্বলিত মুসনাদ গ্রন্থটি। সুতরাং এই কারণে ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.)-কে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী মনে করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন (১৬) : মসজিদের দেয়ালে মুছল্লীদের স্মরণ করার সুবিধার্থে কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ লেখা জায়েয হবে কি?
উত্তর : মুছল্লীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় এমন কিছু মসজিদের দেয়ালে বা মেহরাবে লেখা বা লাগানো উচিৎ নয়। কেননা ছালাতের সময় এগুলি চোখে পড়লে ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি নকশাদার চাদরে ছালাত আদায় করেন। ছালাত শেষে তিনি বললেন, আমার এ চাদরটি হাদিয়া প্রদানকারী আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমার জন্য তার ‘আম্বেজানিয়া’ চাদর নিয়ে আস। কেননা এখনই এই চাদরটি আমার ছালাতের একাগ্রতা নষ্ট করল’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭)। আনাস (রাঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ)-এর একটি পর্দা ছিল, যা দ্বারা তিনি ঘরের একদিক ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার এ পর্দা সরিয়ে ফেল। কারণ তার ছবিসমূহ আমার ছালাতের মাঝে আমার চোখে পড়ে (বুখারী, মিশকাত হা/৭৫৮)। ইমাম মালেক (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হ’লে তিনি বলেন, মসজিদের ক্বিবলায় কুরআনের কিছু লিখা বা এর দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করাকে আমি অপসন্দ করি। কারণ এগুলি মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয় (ইবনুল হাজ্জ, আল-মাদখাল ২/২১৫)। এছাড়া কালেমা মসজিদ সাজানোর জন্য নয়, বরং পাঠের জন্য। ইমাম নববী বলেন, কুরআনের কিছু অংশ দেওয়ালে লেখা আমাদের নিকট মাকরূহ (আত-তিবইয়ান ফী হাম্মাল্লাতিল কুরআন ১১০ পৃ.)। হানাফী বিদ্বান কামাল ইবনুল হুমাম বলেন, কুরআন বা আল্লাহর নাম দেওয়ালে লেখা মাকরূহ (ফাৎহুল ক্বাদীর ১/৩১০)। এছাড়াও আধুনিক যুগের প্রখ্যাত আলেমগণ মসজিদের দেওয়ালে বিশেষত ক্বিবলার দিকে কিছু লেখা বা নকশা করাকে বিদ‘আত ও অপসন্দনীয় বলেছেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২/৫/১৯০-১৯১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১১/২৭৫)।
প্রশ্ন (১৭) : অনেক হাদীছের শেষে সনদ যঈফ লেখা সত্ত্বেও বলা হয় যে, তবে হাদীছটির একাধিক শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আত থাকার কারণে এটি ছহীহ। এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আত হ’ল উছূলে হাদীছের দু’টি পরিভাষা। একই হাদীছ ভিন্ন ভিন্ন ছাহাবী থেকে বর্ণিত হ’লে  হাদীছগুলি পরস্পরের জন্য ‘শাহেদ’। হ’তে পারে প্রথম সনদে কোন দুর্বল রাবী রয়েছে, কিন্তু অন্য ছাহাবী থেকে বর্ণিত দ্বিতীয় বা তৃতীয় সনদে হাদীছটি শক্তিশালী রাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। ফলে একই মর্মে বর্ণিত হাদীছের শক্তিশালী সনদগুলি দুর্বল সনদটির জন্য শাহেদ হিসাবে গণ্য হবে এবং মূল হাদীছটি ছহীহ হিসাবে গণ্য হবে। আর মুতাবা‘আত হ’ল একই ছাহাবী হ’তে দুই বা ততোধিক সূত্রে বর্ণিত হাদীছ। এক্ষেত্রে একটি সূত্র দূর্বল হ’লেও অপর সূত্রটি ছহীহ হ’লে সেটি প্রথম সূত্রটির জন্য ‘মুতাবা‘আহ’ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে হাদীছটির একটি সূত্র দূর্বল হ’লেও অপর শক্তিশালী মুতাবা‘আত থাকার কারণে সেটি ছহীহ বলে গণ্য হবে।
প্রশ্ন (১৮) : ডান হাতে ভাতের এটো থাকাবস্থায় বাম হাত দিয়ে পানি পান করা যাবে কি?
উত্তর : এমতবস্থায় বাম হাত দিয়ে নয়, বরং ডান হাতের সহযোগিতা নিয়ে দুই হাতে পানি পান করবে। রাসূল (ছাঃ) কোন কোন সময় দুই হাতের সহায়তায় পানি পান করেছেন (বুখারী হা/৫২৯০; হাকেম হা/৪২৯১; তিরমিযী হা/২৪৭৭; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৩১৬)।
প্রশ্ন (১৯) : ইসমে আ‘যম বলতে কি বুঝায়? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর : ইসমে আ‘যম হ’ল আল্লাহর মহান নাম। ইসমে আ‘যমকে কেন্দ্র করে ১৪টি মত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ কথা হ’ল ইসমে আযম হ’ল ‘আল্লাহ’ ও তাঁর সকল গুণবাচক নাম। আর এগুলোর মধ্যে যে নামগুলোতে তাওহীদের ঘোষণা রয়েছে সেগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম, যুল জালালে ওয়াল ইকরাম, আল-আহাদ, আছ-ছামাদ ইত্যাদি। যেমন হাদীছে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি ছালাত শেষে নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করে; ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হুল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করছি। কেননা তুমি আল্লাহ। তুমি এক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি ও যিনি কারু থেকে জন্মিত নন এবং যাঁর সমতুল্য কেউ নেই)।  ঐ ব্যক্তিকে এটা পড়তে শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে তাঁর ‘ইসমে আযম’ (মহান নাম) সহ দো‘আ করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম সহকারে প্রার্থনা করবে, তাকে তা দেওয়া হবে। আর যখন এর মাধ্যমে দো‘আ করা হবে, তা কবুল করা হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৭, আবুদাঊদ হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/২২৮৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৪০)। অন্য হাদীছে এসেছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, কুরআনে তিনটি সূরায় ইসমে আ‘যম রয়েছে, সূরা বাক্বারাহ ২৫৫, আলে ইমরান ২ ও ত্বোয়াহা ১১১ আয়াতে’ (হাকেম হা/১৮৬৭; ছহীহাহ হা/৭৪৬)। অর্থাৎ সূরাগুলোর আল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম অংশ। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন আমি নবী (ছাঃ)-এর সাথে মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি ছালাত আদায় করছিল এবং ছালাতের পর বলছিল, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল হান্নানুল মান্নানু বাদী‘উস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি, ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু  ইয়া ক্বাইয়ূমু  ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ তোমারই জন্য সকল প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন মাবূদ নেই। তুমিই বড় দয়ালু ও বড় দাতা। তুমিই আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। হে মর্যাদা ও সম্মান দানের মালিক! হে চিরঞ্জীব, হে সবকিছুর ধারক! তখন নবী (ছাঃ) বললেন, যে আল্লাহ্কে ইসমে আ‘যম-এর সাথে ডাকে, তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয়, তখন তিনি তা দান করেন’ (আবুদাঊদ হা/১৪৯৫; মিশকাত হা/২২৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৪১)।
প্রশ্ন (২০) : ছালাতের বাইরে সিজদার আয়াত পড়ার সাথে সাথে কি সিজদা করতে হবে, না কি পরে কোন এক সময় দিলে হবে।
উত্তর : সিজদার আয়াত যখনই পাঠ করবে বা শ্রবণ করবে তখনই সিজদা দেওয়া সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভিড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না (বুখারী হা/১০৭৬; মিশকাত হা/১০২৫)। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৩-৫৪ পৃ.; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (২১) : সোলায়মান (আঃ)-এর কতজন স্ত্রী ছিলেন?
উত্তর : সোলায়মান (আঃ)-এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে ছহীহ হাদীছ সমূহে ৬০, ৭০, ৯০, ১০০ জন বলে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে (বুখারী হা/২৮১৯, ৩৪২৪, ৫২৪২, ৬৬৩৯, ৭৪৬৯; মুসলিম হা/১৬৫৪; মিশকাত হা/৫৭২০)। ইমাম বুখারী (রহঃ) উপরোক্ত সকল সংখ্যাই উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি ৯০ জনের হাদীছটিকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। অন্যদিকে সোলায়মান (আঃ)-এর স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাঈলীরা একহাযার জন বলে উল্লেখ করেছে (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ২/১৫,২৯; ফাৎহুল বারী হা/৩৪৪২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
এক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ ইসলামের আক্বীদা ও মৌলনীতির বিরোধী না হ’লে তার ব্যাপারে সত্য বা মিথ্যা কোন মন্তব্য না করা (আবুদাউদ হা/৩৬৪৪; আহমাদ হা/১৭২৬৪; ছহীহাহ হা/২৮০০)।
প্রশ্ন (২২) : ভূমিকম্পের সময় ছালাত ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে কি?
উত্তর : যে কোন ভয়ংকর ও আতঙ্কজনক মুহূর্তে ছালাত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে সাপ ও বিচ্ছু দেখলে তা হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন (আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/১০০৪, সনদ ছহীহ)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। যেহেতু ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, সেহেতু এক্ষেত্রে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে এবং পরে পূর্ণ ছালাত আদায় করে নিতে হবে (তাফসীরে সা‘দী, বাক্বারাহ ২৩৯ আয়াতের তাফসীর; আল-মুগনী ৩/৯৭)।
প্রশ্ন (২৩) : ওহী লেখক ছাহাবীগণের মাঝে কেউ কি মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন?
উত্তর :  অহী লেখক ছাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবী সারাহ নামে একজন ছাহাবী মুরতাদ হয়েছিলেন। তিনি ওছমান (রাঃ)-এর দুধ ভাই ছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ) তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে ওছমান (রাঃ) তাঁর জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করলে রাসূল (ছাঃ) তাঁকে নিরাপত্তা দেন। অতঃপর তিনি ইসলামে ফিরে আসেন এবং ইসলামের উপরেই তার মৃত্যু হয়। ওছমান (রাঃ) তাঁকে মিসরের গভর্নর নিয়োগ করেন। তিনি অনেক রাজ্যও জয় করেন। মু‘আবিয়া ও আলী (রাঃ)-এর ফিৎনার আমলে তিনি কোন পক্ষে যোগদান না করে মিসরের আসক্বালান কিংবা ফিলিস্তীনের রামাল্লায় আত্মগোপন করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন (আবূদাউদ হা/২৬৮৫, ৪৩৫৮; ছহীহাহ হা/১৭২৩; আল-ইছাবাহ ৪/১১০, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/৩৪)।
প্রশ্ন (২৪) : পিতা-মাতার কবরের পার্শ্বে গিয়ে দুই হাত তুলে দো‘আ করা যাবে কি? এ সময় কিবলামুখী হ’তে হবে কি?
উত্তর : কবরের পার্শ্বে গিয়ে হাত তুলে মুনাজাত করা যাবে। তবে জামা‘আতবদ্ধভাবে নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) একাকী কবরস্থানে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন (মুসলিম হা/৯৭৪; নাসাঈ হা/২০৩৭; আহমাদ হা/২৫৮৯৭)। এজন্য কিবলামুখী হওয়ার শর্ত নেই। অতএব সুবিধামত যেকোন দিকে মুখ করে দো‘আ করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৭/১৬৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৩৭; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ক্রম ৮২)।
প্রশ্ন (২৫) : শেষ যামানায় আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যতীত জীবিকা অর্জন সম্ভব হবে না- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে পাঁচটি সনদে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যার সবগুলো যঈফ ও মুনকার। সাখাভী বলেন, উক্ত মর্মে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলো ভিত্তিহীন (আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৩২৯)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, এধরনের হাদীছ রাসূল (ছাঃ) থেকে পরিচিত নয় (মাজমূঊল ফাতাওয়া ১৮/৩৮৩)। যাহাবী ও  ইরাকী একে যঈফ ও জাল এবং শায়খ আলবানী মুনকার বলেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২৭০; যঈফুত তারগীব হা/১৬৩৭)। অতএব এই হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (২৬) : ছালাত আদায়কালে আমার বাম পাশের কোন মুছল্লী ছালাত ছেড়ে চলে গেলে আমি কিভাবে কাতার পূরণ করব?
উত্তর : এরূপ ক্ষেত্রে ডানে বা বামের মুছল্লীরা ধীর-স্থিরভাবে ফাঁকা স্থান পূর্ণ করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) কাতারের ফাঁকা স্থান পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরষ্পরে কাতারের ফাঁক বন্ধ কর। কেননা শয়তান কালো বকরীর বাচ্চার ন্যায় ফাঁকের মধ্যে প্রবেশ করে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৯৩)। অথবা ফাঁকা স্থানের পিছনের কাতারের মুছল্লীরা ধারাবাহিকভাবে সামনের ফাঁকা স্থান পূরণ করবে (তিরমিযী হা/৬০১; আহমাদ হা/২৪০৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৬/২৭)।
প্রশ্ন (২৭) : সিজদা থেকে দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য ওঠার পদ্ধতি কি? কেউ বলছেন, হাঁটুতে হাত রেখে উঠতে হবে। কেউ বলছেন, আটা পেষার মত মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর দিয়ে উঠতে হবে। কোনটি সঠিক?
উত্তর : হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে উঠতে হবে। সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতের জন্য ওঠার সময়ও হাতের তালুর উপর ভর করে দাঁড়াবে। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘হাঁটুর পূর্বে হাত রাখার হাদীছটি ছহীহ (আবূদাঊদ হা/৮৪০; মিশকাত হা/৮৯৯)। কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত ‘আগে হাঁটু রাখার’ হাদীছটি যঈফ (আবূদাঊদ হা/৮৩৮; মিশকাত হা/৮৯৮; মির‘আত ৩/২১৭-১৮; ইরওয়া হা/৩৫৭)। আর মুষ্টিবদ্ধ হাতের উপর ভর করে সিজদা থেকে ওঠা ঠিক নয়। কেননা এর দ্বারা মাটিতে পুরোপুরি ভর দেয়া যায় না। ইবনে ওমর (রাঃ)-এর হাদীছে كان يَعْجِنُ শব্দ এসেছে, যার অর্থ আটার খামীর যেমন হাতের পুরা চাপ দিয়ে করতে হয়, অনুরূপভাবে মাটিতে হাতের উপর পুরা ভর দিয়ে উঠতে হয় (দ্র. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪০০৭; ছহীহাহ হা/২৬৭৪; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৮পৃ.)।
উল্লেখ্য যে, যারা মনে করেন রাসূল (ছাঃ) বার্ধক্যের কারণে হাতে ভর করে দাঁড়াতেন তাঁদের ধারণা ভুল। কারণ ইবনু ওমর (রাঃ) সুন্নাতের অনুসরণ করার জন্যই এমন আমল করতেন। সেজন্য ইবনু ওমরের ছেলে ও তার সাথীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, ইবনু ওমর কি বার্ধক্যের কারণে এমন আমল করতেন? তারা জওয়াবে বলেছিলেন, না। বরং এমনভাবে তিনি নিয়মিত করতেন (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/২৬৩২; তামামুল মিন্নাহ ১/২০০; যঈফাহ হা/৯৬৮-এর আলোচনা দ্র., আছারটির সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (২৮) : রাসূল (ছাঃ) সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে বলেছেন। এক্ষণে কেউ যদি ছয়টি অঙ্গের উপর সিজদা করে তাহ’লে তার ছালাতে কোন ক্ষতি হবে কি?
উত্তর : সাতটি অঙ্গের উপর ভর করে সিজদা করাই নিয়ম। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) নিজে আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ছাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করেছেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি হাড় (অঙ্গ) দ্বারা সিজদা করি। কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অগ্রভাগ। আর আমরা যেন কাপড় ও চুল না গোটাই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৭)। আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ) বলেন ‘তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, যখন বান্দা সিজদা করে, তখন তার সাথে সাতটি অঙ্গ সিজদা করে। তার চেহারা, দুই হস্ত তালু, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা’ (আবুদাঊদ হা/৮৯১; ইবনু মাজাহ হা/৮৮৫)।
অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, উক্ত সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করা ওয়াজিব। অতএব ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলির কোন একটি বাদ দিলে ছালাত বাতিল হবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞতাবশে কোন একটি অঙ্গ সিজদায় না গেলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৭/৬৭-৬৮)।
ইবনু ত্বাঊস স্বীয় নাকের দিকে ইশারা করে বলেন, এটি সপ্ত অঙ্গের একটি। সিন্ধী ও কুরতুবী বলেন, নাক চেহারারই অংশ। অতএব কপাল ও নাক দু’টিই মাটিতে রাখতে হবে। ‘হাত’ বলতে পাঁচ আঙ্গুল সহ ‘হস্ত তালু’ বুঝায়। যা সিজদার সময় স্বাভাবিকভাবে ক্বিবলামুখী থাকবে। ‘দুই পায়ের অগ্রভাগ’ বলতে আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগকে ক্বিবলামুখী করা বুঝায়। যেগুলিকে সাধ্যমত ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে (মির‘আত)।
প্রশ্ন (২৯) : পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের উপর ছালাত ফরয ছিল কি? থাকলে তাদের ছালাতের পদ্ধতি কি ছিল?
উত্তর : পুর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাঁদের উম্মতের উপর ছালাত ফরয ছিল। এটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারীদের জন্য, এখানে অবস্থানকারীদের জন্য এবং রুকূকারী ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো (বাক্বারাহ ২/১২৫)। তিনি মূসা (আঃ)-কে বলেন, ‘আমরা মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম যে, তোমরা  তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরের মাটিতে বাসস্থান নির্মাণ কর এবং তোমাদের ঘরের মধ্যেই ক্বিবলা নির্ধারণ কর ও সেখানে ছালাত আদায় কর। আর তুমি মুমিনদের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও’ (ইউনুস ১০/৮৭)। তিনি ঈসা (আঃ)-এর মা মারিয়ামকে বলেন, ‘হে মারিয়াম! তোমার প্রতিপালকের ইবাদতে রত হও এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ ও সিজদা কর’ (আলে ইমরান ৩/৪৩)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি যেন আমরা দ্রুত ইফতার করি, দেরীতে সাহারী করি এবং ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখি’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১১৪৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৮৬)। তিনি বলেন, কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও নয় যে ঘর তৈরী করেছে, কিন্তু ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আছরের ছালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী। হে আল্লাহ! তুমি সূর্যকে থামিয়ে দাও! তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হয়, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন’ (বুখারী হা/৩১২৪; মুসলিম হা/১৪৪৭)।
উক্ত নবী ছিলেন ইউশা‘ বিন নূন (আঃ)। যখন তিনি বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়ের উদ্দেশ্যে গমন করেন ও তা জয় করেন’ (হাকেম হা/২৬১৮; আহমাদ হা/৮২৯৮; ছহীহাহ হা/২০২)। যিনি মূসা (আঃ)-এর পরে বনু ইস্রাঈলের নবী ও নেতা ছিলেন।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছসমূহ প্রমাণ করে যে পূর্ববর্তীদের উপরও ছালাত ফরয ছিল। তবে সে ছালাত কত ওয়াক্ত ছিল বা তার পদ্ধতি কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৩৭)।
প্রশ্ন (৩০) : যোহরের ফরয ছালাতের আগের ৪ বা ২ রাক‘আত সুন্নাত পড়তে না পারলে তা কি যোহরের ফরয ছালাতের পর আদায় করা যাবে? এই অবস্থায় কোন সুন্নাতটি আগে পড়ব?
উত্তর : ছুটে যাওয়া সুন্নাত যোহরের ফরয ছালাতের পর আদায় করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যদি যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত না আদায় করতেন তবে  যোহরের (ফরযের) পর তা আদায় করতেন’ (তিরমিযী হা/৪২৬; ইবনু মাজাহ হা/১১৫৮, সনদ হাসান)। পূর্বের সুন্নাত ও পরের সুন্নাত আগ-পিছ করার ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। তবে উত্তম হ’ল পরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়ে নেয়ার পর পূর্বের চার বা দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়া (ওছায়মীন, ফাৎহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম ২/২২৫)।
প্রশ্ন (৩১) : পাপের কারণে কেউ কি তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হবে?
উত্তর : ‘পাপের কারণে বান্দা তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফুত তারগীব হা/১৭৭৩; যঈফুল জামে‘ হা/৩০০৬)। তবে পাপের কারণে রিযিকে বরকত কমে যেতে পারে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮; মিরক্বাত)। উল্লেখ্য যে, পাপ মানুষকে রিযিক থেকে বঞ্চিত করে না। কারণ মানুষের চার মাস বয়সে তার নির্দিষ্ট রিযিক লিখে দেওয়া হয় (বুখারী হা/৬৫৯৪; মুসলিম হা/২৬৪৫; মিশকাত হা/৮২)। তাছাড়া নির্দিষ্ট রিযিক পূর্ণ না হ’লে মানুষের মৃত্যু হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি মানুষ তার রিযিক থেকে পালায়, যেভাবে মৃত্যু থেকে পালাতে চায়, তাহ’লে রিযিক অবশ্যই তাকে পাবে যেমনভাবে মৃত্যু তাকে পেয়ে যায় (ছহীহাহ হা/৯৫২)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোন প্রাণী মরবে না যতক্ষণ না সে তার রূযী পূর্ণ করবে। অতএব সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সম্পদ উপার্জনে উত্তম (অর্থাৎ বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। প্রাপ্য রিযিক পৌঁছতে দেরী হওয়া যেন তোমাদেরকে তা অন্বেষণে অন্যায় পথ অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ব্যতীত লাভ করা যায় না’ (বায়হাক্বী শো‘আবুল ঈমান হা/১০৩৭৬; মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহাহ হা/২৮৬৬)।
প্রশ্ন (৩২) : আমি একজন বিধবা অসহায় নারী। আমি ব্যাংকে টাকা রেখে সেখান থেকে লাভ গ্রহণ করতে পারব কি?
উত্তর : কোন অবস্থায় ব্যাংকের সূদ গ্রহণ করা যাবে না। কারণ সূদ সর্বাস্থায় হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। সুতরাং যত অসহায়ত্বই থাকুক না কেন, হারাম কাজে যুক্ত হওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এক্ষণে আপনার জন্য করণীয় হ’ল- আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ব্যবসা করা। নিজে না পারলে টাকা বিনিয়োগ করে অন্যের মাধ্যমে ব্যবসা করা। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে খাদীজা (রাঃ)-ও বিধবা ছিলেন। তিনি অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতেন (ইবনু হিশাম ১/১৮৮; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখলে তিনি নিশ্চয়ই কোন একটি ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক প্রদান করবেন, যা সে কল্পনাও করেনি। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হন (তালাক ৬৫/৩)।
প্রশ্ন (৩৩) : প্রিয় ব্যক্তিকে হেদায়াতের জন্য কোন নির্দিষ্ট দো‘আ আছে কি? দো‘আ থাকলে সেটি কি?
উত্তর : প্রিয় ও অপ্রিয় যেকোন ব্যক্তির হেদায়াতের জন্য দো‘আ করার বিধান রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছাহাবীর হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেছেন। তিনি একবার আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মায়ের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (মুসলিম হা/২৪৯১; মিশকাত হা/৫৮৯৫)। তিনি একবার দাউস সম্প্রদায়ের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (বুখারী হা/২৯৩৭; মুসলিম হা/২৫২৪; মিশকাত হা/৫৯৯৭)। তিনি আরেকবার মু‘আবিয়ার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (তিরমিযী হা/৩৮৪২; মিশকাত হা/৬২৩৫; ছহীহাহ হা/১৯৬৯)। তিনি জারীরের জন্য দো‘আ করেছিলেন (বুখারী হা/৩০২০; মুসলিম হা/২৪৭৫; মিশকাত হা/৫৮৯৭)। তবে এজন্য কোন নির্দিষ্ট দো‘আ নেই। বরং তার জন্য পরিস্থিতির সাথে উপযুক্ত যে কোন মাসনূন দো‘আ পাঠ করা যায়।
প্রশ্ন (৩৪) : ক্বিয়ামত কোন দিন ও তারিখে হবে। অনেকে বলে যে মুহাররম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার ক্বিয়ামত হবে? এ কথা কতটুকু সত্য?
উত্তর : জুম‘আর দিন ক্বিয়ামত হবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট হাদীছ রয়েছে (মুসলিম হা/৮৫৪; আবুদাউদ হা/১০৪৬; মিশকাত হা/১৩৬৩)। কিন্তু সেদিন ১০ই মুহাররম হবে এ বিষয়ে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। অতএব ক্বিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, এ জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর আমি তো প্রকাশ্য সতর্ককারী বৈ কিছু নই’ (মুল্ক ৬৭/২৬)।
প্রশ্ন (৩৫) : যদি ছালাতের মধ্যে হঠাৎ যৌন উত্তেজনা বোধ হয় এবং মযী নির্গত হওয়ার ধারণা হয়, তবে কি ছালাত ছেড়ে দিয়ে পুনরায় ওযূ করতে হবে?
উত্তর : মযী নির্গত হওয়ার ধারণা নিশ্চিত হ’লে ছালাত ছেড়ে দিয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। তবে কেবল ধারণা হলে বা ভেজা অবস্থা বুঝতে না পারলে ছালাত অব্যাহত রাখবে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ছালাত ত্যাগ করবে না। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু (বায়ু) শব্দ পায় এবং এরপর তার সন্দেহ হয় যে, তার পেট হ’তে কিছু (বায়ু) বের হ’ল কি-না, তাহ’লে সে যেন ওযূ নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে মসজিদ হ’তে বের না হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়’ (বুখারী হা/১৩৭, মুসলিম হা/৩৬২, মিশকাত হা/৩০৬)।
প্রশ্ন (৩৬) : সিগারেট, কাঁচা তামাক ক্রয়-বিক্রয়, রফতানী এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো, মেশিনারী প্রভৃতি বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর যাকাত আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : উপরোক্ত পণ্য এবং সংশ্লিষ্ট জিনিসগুলি হারাম হওয়ায় সেগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে না। কারণ তা আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। কেননা ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্ত্ত ব্যতীত কবুল করেন না’ (মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল করেন না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা গ্রহণ করেন না’ (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১; মিরক্বাত)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘কোন বান্দা হারাম পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ ছাদাক্বা করলে তা কবুল করা হবে না এবং নিজের কাজে ব্যবহার করলেও তাতে বরকত হবে না। আর ঐ সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মন্দের দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না। তবে সৎকর্ম দ্বারা মন্দকর্ম মিটিয়ে দেন’ (আহমাদ হা/৩৬৭২; মিশকাত হা/২৭৭১; শু‘আবুল ঈমান হা/৫৫২৪; হাকেম হা/৭৩০১, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, হারাম মালে যাকাত ফরয না হওয়ার বিষয়ে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যেও ঐক্যমত রয়েছে। তাছাড়া যাকাত দেওয়া হয় মাল পবিত্র করার জন্য। অথচ পুরো মালই অপবিত্র হ’লে তা কাকে পবিত্র করবে? (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৩/২৪৮)।
এতদ্ব্যতীত যে বস্ত্ত মৌলিকভাবে হারাম তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হওয়াও হারাম। যেমন তামাক মাদক দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মাদকতা আনয়নকারী বস্ত্ত হারাম’ (মুসলিম হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতির উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করলে তার বিক্রয়লব্ধ অর্থও হারাম করে দেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮; আহমাদ হা/২৯৬৪)। যেমন মদ হারাম সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নির্দেশ (মায়েদাহ ৯০) নাযিলের পর রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যার নিকট এই আয়াত পৌঁছে গেছে এবং তার নিকট এর কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে, সে যেন তা পান না করে এবং বিক্রয় না করে’। রাবী বলেন, অতঃপর যাদের নিকট মদ অবশিষ্ট ছিল তারা তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল এবং তা মদীনার রাস্তায় ঢেলে দিল (মুসলিম হা/১৫৭৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যিনি তা পান করা হারাম করেছেন, তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন’ (মুসলিম হা/১৫৭৯; ‘মদ বিক্রি হারাম’ অনুচ্ছেদ)। সুতরাং হারাম পণ্য বিক্রি করা ও এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ গ্রহণ করা সুস্পষ্টভাবে হারাম।
এক্ষণে এই হারাম সম্পদ যথাশীঘ্র নিজ মালিকানা থেকে বের করে দিতে হবে এবং ছওয়াবের আশা ছাড়াই জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে দান করে দিতে হবে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ব্যক্তির নিজ ও নিজ পরিবার চালানোর জন্য যদি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ ব্যতীত কোন সম্পত্তি না থাকে, তাহ’লে যতটকু প্রয়োজন ততটকু সেখান থেকে গ্রহণ করে বাকীগুলো ছাদাক্বা করে দিবে। যদিও এই ছাদাক্বায় তার কোন উপকার হবে না। তবে এতে কিছু গরীব উপকৃত হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৩৮৯; যাদুল মা‘আদ ৫/৭৭৮)। অতএব এই সম্পদের কোন যাকাত নেই। বরং এই সমুদয় হারাম সম্পদ ছওয়াবের আশা ব্যতীত জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে।
প্রশ্ন (৩৭) : রাসূল (ছাঃ) বহু বিবাহ করায় জনৈক ব্যক্তি তাঁকে যেনাকার বলে গালি দিয়েছে। ঐ ব্যক্তি কি মুসলিম থাকবে? তার কী শাস্তি হবে?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা ধর্মত্যাগী কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তাওবাহ ৬৫-৬৬)। ছাহাবীগণসহ সর্বযুগের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে ঐ ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব (ইবনু তায়মিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ২/১৩-১৬)। তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কুরতুবী)। সরকার এ দায়িত্ব পালন না করলে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে গালিদাতা এক ইহূদীকে জনৈক মুসলিম হত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তার দিয়াত বা রক্তমূল্য বাতিল করে দেন (আবূদাঊদ হা/৪৩৬১, ৪৩৬৩, নাসাঈ হা/৪০৭৬)।
তবে এধরনের কুফরী কর্ম জনসম্মুখে প্রকাশের পূর্বে তাকে বার বার বুঝাতে হবে এবং তার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে। এতে সে ভ্রান্ত ধারণা থেকে তওবা করতে পারে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৫০-১৫২)।
প্রশ্ন (৩৮) : কোন ব্যক্তির আমলনামা সমান সমান হয়ে গেলে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না জাহান্নামে প্রবেশ করবে?
উত্তর : যাদের আমলনামা সমান হবে তাদেরকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে ‘আরাফ বাসী’। ‘আরাফ’ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থানের নাম। যা প্রাচীর স্বরূপ। যাদের নেকী সেই পরিমাণ হবে না যার ফলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং গোনাহও সেই পরিমাণ হবে না যার ফলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের স্থান হবে এই ‘আ‘রাফে’। অর্থাৎ গোনাহ ও নেকী সমান সমান হওয়ার কারণে না জাহান্নামে যাবে, না তারা জান্নাতে যাবে (আ‘রাফ ৭/৪৬-৪৭)।
[সংশোধনী : জুলাই প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ১৪/৩৭৪-এ ‘২য় হিজরীতে ছিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ছাঃ) সকল রামাযানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন’। এটি ভুল। বরং সঠিক উত্তর হবে এই যে, হাদীছে বর্ণিতوَكَانَ يَعْتَكِفُ كُلَّ عَامٍ عَشْرًا ‘তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতেকাফ করতেন’ অর্থ হবে ‘অধিকাংশ বছরে’ (أَيْ غَالِبًا)। কেননা ২য় হিজরীর ১৭ই রামাযান বদর যুদ্ধ এবং ৮ম হিজরীর ১৭ই রামাযান মক্কা বিজয় হয়। এই দুই বছর তিনি ইতেকাফ করতে পারেননি (স.স.)।]
প্রশ্ন (৩৯) : ওছমান (রাঃ) জুম‘আর দ্বিতীয় আযান চালু করে কি সুন্নাত বিরোধী আমল করেছিলেন?
উত্তর : ওছমান (রাঃ) মুছল্লীদের সময়মত জুম‘আর ছালাতে উপস্থিতির জন্য সাময়িক পদক্ষেপ হিসাবে অতিরিক্ত আযান চালু করেছিলেন। ওমর (রাঃ)-এর তিন তালাকের ফৎওয়ার ন্যায় এটিও ওছমান (রাঃ)-এর একটি ইজতিহাদী ফৎওয়া ছিল। এটি তাঁর সামগ্রিক কোন নির্দেশনা ছিল না। সেকারণ তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী যাওরা বাযার ব্যতীত অন্য কোন স্থানে এই প্রথা চালুর ‘আম নির্দেশ দেননি। সুতরাং তিনি সুন্নাত লঙ্ঘন করেননি।
স্মর্তব্য যে, জুম‘আর দিন একটি আযানই সুন্নাত। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ)-এর গৃহীত সাময়িক ইজতিহাদী পদক্ষেপকে অনুসরণ করা আবশ্যক নয়। কেননা যে পরিস্থিতিতে ওছমান (রাঃ) যাওরা বাযারে প্রথম আযান চালু করেছিলেন, সেই কারণ অবশিষ্ট নেই। তখন মানুষের হাতে ঘড়ি-মোবাইল ও মাইকে আযানের ব্যবস্থা ছিল না। এছাড়া বর্তমানে একই মসজিদে দু’টি আযান প্রদান করা হয়, যা ওছমান (রাঃ)-এর নির্দেশনার বিপরীত (আলবানী, আল-আজওয়াবাতুন নাফে‘আহ পৃ. ২০; আহমাদ শাকের, শরহ সুনান তিরমিযী ২/৩৯২-৯৩; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৯৪-১৯৬ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪০) : ক্বিয়ামতের দিন মানব জাতির বিচার কি একদিনেই সম্পন্ন হবে না একাধিক দিনে?
উত্তর : হিসাবের দিন এক দিনই হবে। তবে সেই দিনটি পৃথিবীর হিসাবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান হবে (মা‘আরেজ ৭০/৩-৪; মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩)। উল্লেখ্য যে, আরবীতে ৭০, ৭০০, ১০০০, ৫০০০০ সংখ্যাগুলি সাধারণতঃ আধিক্য বুঝানোর অর্থে বলা হয়। সুতরাং উক্ত আয়াত ও হাদীছসমূহের বর্ণিত সময়টি আযাব বা শাস্তির সাথে সম্পৃক্ত। কাফেরদের উপর এই দিনটি ৫০ হাযার বছরের সমান ভারী হবে। অর্থাৎ দিনটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে। কষ্ট ও শাস্তির আধিক্যের কমবেশীর কারণে ক্বিয়ামতের দিনের স্থায়িত্ব তাদের কাছে হাযার হাযার বছরের সমান মনে হবে। আরবরা খুশীর দিনকে ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং কষ্টের দিনকে ‘দীর্ঘ’ বলে বুঝাতো (কুরতুবী)। অন্যদিকে মুমিনদের জন্য এই দিনটি হবে খুব সংক্ষিপ্ত। যেমন আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিনদের জন্য কিয়ামতের দিনটি যোহর থেকে আছরের মধ্যবর্তী সময়ের মত হবে (হাকেম হা/২৮৪; ছহীহাহ হা/২৪৫৬; ছহীহুল জামে হা/৮১৯৩)। অপর হাদীছে এসেছে, এই দিনটি মুমিনের জন্য এক ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করার থেকেও সংক্ষিপ্ত মনে হবে (আহমাদ হা/১১৭৩৫, ইবনু হিববান হা/৭৩৩৪, সনদ দুর্বল; তবে হায়ছামী এবং ইবনু হাজার একে ‘হাসান’ বলেছেন)। সুতরাং এই দিনের দীর্ঘতা কিংবা সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্য তার আমলের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন রূপ অনুভূত হবে।
প্রশ্ন (৪১) : যারা ছালাত পড়ে না, তাদের সালাম না দিলে গুনাহগার হ’তে হবে কি?
উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি ফাসেক (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩২-৩৫ পৃ.)। ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়াই ছিল সালাফে ছালেহীনের রীতি। যেমন ছাহাবী জাবের (রাঃ) ফাসেক গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সালাম দেননি (বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৫)। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি পরিচিত বা অপরিচিত সকলকে সালাম দাও’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৬২৯)। সে হিসাবে হেদায়াতের উদ্দেশ্যে ফাসেককে সালাম দেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন (৪২) : বীর্য যদি অপবিত্র না হয়, তাহ’লে আমরা ফরয গোসল করি কেন? কেবল ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হ’ত। সঠিক উত্তর জানতে চাই।
উত্তর : শরী‘আতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এক্ষণে ফরয গোসলের তাৎপর্য এটাই হ’তে পারে যে, বীর্য পুরো দেহ শোষণ করে বের হয় এবং তাতে শরীর ও মন উভয়টিই দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতিটি লোমকুপ দিয়ে ঘাম বের হওয়ার কারণে দেহে নিস্তেজভাব সৃষ্টি হয়। আর এগুলোর উত্তম সমাধান হ’ল গোসল। কারণ গোসল দেহ-মন ও আত্মাকে সতেজ করে। প্রতিটি শিরা-উপশিরাকে শক্তিশালী করে। চিকিৎসকগণ বলেন, মিলনোত্তর গোসল শরীরে শক্তি ফিরিয়ে দেয়। যা বের হয় তার পুনরাগমন ঘটে এবং এটি দেহ ও মন দু’টির জন্যই উপকারী। অপরদিকে গোসল পরিহার করা ক্ষতিকর। ফরয গোসল কল্যাণকর হওয়ার ব্যাপারে জ্ঞান ও ফিৎরাতের সাক্ষ্যই যথেষ্ট’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ২/৪৫)।
উল্লেখ্য যে, বীর্য অপবিত্র নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড়ে তা লেগে শুঁকিয়ে গেলে আয়েশা (রাঃ) নখ দিয়ে খুঁটে ফেলতেন। অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/২৮৮; মিশকাত হা/৪৯৫)। এছাড়া অধিকাংশ ছাহাবী ও সালাফে ছালেহীন বীর্যকে পবিত্র বলেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/৬০৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৩৮০)।
প্রশ্ন (৪৩) : ছালাত আদায়ের পর পোষাকে নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি বুঝতে পারলে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) ছালাতের মধ্যে তাঁর জুতায় নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি জানতে পারলে জুতা ছুঁড়ে ফেলেন। কিন্তু ছালাত পুনরায় আদায় করেননি (আবুদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।
প্রশ্ন (৪৪) : রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী (মুসলিম হা/১৮২১) অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর ১২ জন খলীফার সময়কাল পর্যন্ত ইসলাম দৃঢ়ভাবে টিকে থাকবে। এক্ষণে উক্ত ১২ জন খলীফা কে কে? ৪ খলীফার ইসলামী খেলাফত টিকে ছিল কি?
উত্তর : উক্ত হাদীছে বর্ণিত ১২ জন খলীফা সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম মতভেদ করেছেন। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা ন্যায়পরায়ণ শাসকদের বুঝানো হয়েছে, যাদের অনেকে পূর্বে গত হয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের পূর্বে অবশিষ্টদের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করবে (শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম ১২/২০২)। মুহাদ্দিছ কুরতুবী (৫৭৮-৬৫৬ হি.) বলেন, এ বিষয়ে তিনটি মত রয়েছে। তবে আমার নিকট সর্বোত্তম হ’ল এই যে, তারা হ’লেন ন্যায়পরায়ণ খলীফাগণ। যাদের মধ্যে চার খলীফা এবং ওমর বিন আব্দুল আযীয রয়েছেন। তাছাড়া ইনছাফ ও সত্য প্রকাশে ব্রতী খলীফাগণ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। যতদিন না এই সংখ্যা পূর্ণ হয়’ (আল-মুফহিম শরহ মুসলিম ৮/৪)। ইবনু কাছীর বলেন, অত্র হাদীছে ১২জন ন্যায়পরায়ণ খলীফার সুসংবাদ রয়েছে। যারা তাদের মাঝে ইনছাফ ও সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন। এদের ধারাবাহিক হওয়া আবশ্যক নয়। অবশ্য চারজন ধারাবাহিক ছিলেন চার খলীফা। নিঃসন্দেহে ওমর বিন আব্দুল আযীয ছিলেন তাদের অন্যতম। এছাড়া কয়েকজন আববাসীয় খলীফা। বাকীদের খেলাফত না আসা পর্যন্ত ক্বিয়ামত হবে না। ভবিষ্যতের জন্য সুসংবাদপ্রাপ্ত ইমাম মাহদীও তাদের অন্যতম। কারণ তিনিও হবেন ফাতেমা (রাঃ)-এর বংশধর। এর দ্বারা রাফেযী শী‘আদের কথিত ১২ ইমাম অর্থ নেওয়াটা চরম অজ্ঞতা ও বোকামীর পরিচয়। যার কোনই শারঈ ভিত্তি নেই (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা মায়েদাহ ১৪ আয়াত; ইবনু  তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৮/১৭৩-১৭৪)। আর চার খলীফার খেলাফত পূর্ণ ত্রিশ বছর টিকে ছিল যার ভবিষ্যদ্বাণী রাসূল (ছাঃ) করেছিলেন (তিরমিযী হা/২২২৬; আহমাদ হা/২১৯৬৯; মিশকাত হা/৫৩৯৫; ছহীহাহ হা/৪৫৯)।
উক্ত ৩০ বছর হ’ল যথাক্রমে : (১) হযরত আবুবকর (১১-১৩ হি.) = ২বছর (২) হযরত ওমর (১৩-২৩ হি.) = ১০ বছর (৩) হযরত ওছমান (২৩-৩৫ হি.) = ১২ বছর (৪) হযরত আলী (৪ বছর ৯ মাস ও হযরত হাসান বিন আলী ৩ মাস- রামাযান হ’তে রবীউল আউয়াল ৪১ হি.; ৩৫-৪১ হি.)= ৬ বছর। সর্বমোট ৩০ বছর (আহলেহাদীছ আন্দোলন, ডক্টরেট থিসিস (প্রকাশকাল : রাজশাহী ১৯৯৬ খৃ.) ১২৬ পৃ. টীকা-১২৫)।
প্রশ্ন (৪৫) : পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে বিবাহ করলে বৈধ হবে কি?
উত্তর : পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া কাবীরা গোনাহ সমূহের অন্তর্ভুক্ত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫০)। কোন মেয়ে পিতা বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩১৩০)। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে যদি ঐরূপ বিবাহ করে তাহ’লে তা বাতিল হবে না। কিন্তু পিতার অবাধ্যতা করে এরূপ করলে তাকে গোনাহগার হ’তে হবে (লোকমান ৩১/১৪-১৫)।
প্রশ্ন (৪৬) : পিতার অমতে এবং অনুমতি ছাড়া বড় ভাই কি বোনকে বিবাহ দিতে পারে?
উত্তর : মেয়ের মূল অভিভাবক বা ওলী হ’লেন তার পিতা। পিতার অমতে বা অনুমতি ছাড়া বড় ভাই তার বোনকে বিয়ে দিতে পারবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৫২)। উল্লেখ্য যে, পিতার অবর্তমানে দাদা, পুত্র, পৌত্র, আপন ভাই, সৎভাই, অতঃপর উত্তরাধিকারী হিসাবে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্বশীলগণ। সর্বশেষ দায়িত্বশীল সরকার (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ফাৎওয়া ক্রমিক  ১৩৯০; ১৮/১৪৩ পৃ.; আহমাদ, তিরমিযী প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩১)।
প্রশ্ন (৪৭) : বালেগ হওয়ার পূর্বে কোন মেয়েকে বিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সম্মতি নেওয়া পিতার জন্য আবশ্যক কি?
উত্তর : নাবালেগ শিশুর বিবাহের ক্ষেত্রে পিতার সম্মতিই যথেষ্ট। কারণ আবুবকর (রাঃ) তার নাবালেগ মেয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর বিবাহ দিয়েছিলেন রাসূলের সাথে অথচ তিনি আয়েশার অনুমতি নেননি। কারণ পিতাই ভালো জানেন সন্তানের কল্যাণ কোথায় হবে। তবে পিতা ছাড়া অন্য কেউ নাবালেগ কন্যার বিয়ে দিতে পারবে না। কেউ দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৩৯; ফাৎহুল বারী ৯/১৯০)।
প্রশ্ন (৪৮) : অধিকাংশ বিবাহের অনুষ্ঠানে বর্তমানে গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি প্রকাশ্য শরী‘আত বিরোধী কর্মকান্ড হয়। এসব কারণে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা যাবে কি?
উত্তর : দাওয়াতের ব্যাপারটি মুসলমানদের পারস্পরিক হক-এর অন্তর্ভুক্ত (নাসাঈ হা/১৯৩৮; মিশকাত হা/৪৬৩০)। কিন্তু প্রকাশ্যে শরী‘আত বিরোধী কর্মকান্ড হয় এমন ক্ষেত্রে দাওয়াতদাতাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। নতুবা এমন অনুষ্ঠানকে সাধ্যমত এড়িয়ে চলবে (আবূদাঊদ হা/৪৯২৪)। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, ‘ঐসব লোকদের পরিত্যাগ কর যারা তাদের ধর্মকে খেল-তামাশারূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে (আন‘আম ৬/৭০)।
প্রশ্ন (৪৯) : রাক্বীব ও আতীদ কি দু’জন ফেরেশতার নাম? আধুনিক যুগের একজন আরব লেখক এর দ্বারা মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশ বুঝিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের কোন শারঈ ভিত্তি রয়েছে?
উত্তর : কুরআনে বর্ণিত ‘রাক্বীবুন ‘আতীদ’ ‘সদা প্রস্ত্তত প্রহরী’ (ক্বাফ ১৭-১৮) কোন ফেরেশতার নাম নয়, বরং এর দ্বারা দু’জন বা একদল সম্মানিত লেখক ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যাঁরা প্রত্যেক মানুষের সাথে থাকেন। যাঁরা মানুষের ভাল-মন্দ আমল লিখেন। তাদের হেফাযতের দায়িত্বে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল লিপিবদ্ধ করে’; ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী (ফেরেশতা) রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৭-১৮)। তিনি আরো বলেন, ‘অথচ তোমাদের উপরে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে’; ‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ’; ‘তারা জানেন তোমরা যা কর’ (ইনফিতার ৮২/১০-১২)।
আবু মিজলায বলেন, মুরাদ এলাকা থেকে জনৈক ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর কাছে এল। তিনি বললেন, হে আলী! আপনি আপনার জন্য পাহারা নিযুক্ত করুন। কেননা মুরাদ এলাকার কিছু লোক আপনাকে হত্যা করতে চায়। জবাবে আলী (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে দু’জন করে ফেরেশতা থাকে। যারা তাকে হেফাযত করে সেসব বিষয় থেকে যা তাক্বদীরে নেই। কিন্তু যখন তাক্বদীর উপস্থিত হয়, তখন তারা উভয়ে তার থেকে সরে যায়’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রা‘দ ১১ আয়াত ৪/৪৩৯ পৃ.)। কা‘ব আল-আহবার বলেন, যদি আল্লাহ তোমাদের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ না করতেন, যারা তোমাদের খাদ্য, পানীয় ও লজ্জাস্থান সবকিছু হেফাযত করে, তাহ’লে শয়তান জিনেরা তোমাদের উঠিয়ে নিয়ে যেত’ (ঐ)। সুতরাং প্রতিটি মানুষের কাঁধে লেখক ফেরেশতাগণ থাকেন- এটা কুরআন ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সর্বসম্মত আক্বীদা। সুতরাং যে যুক্তিবাদী লেখক ‘রাকীবুন আতীদ’ দ্বারা মানব মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ বুঝাতে চেয়েছেন, তার কথার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। এগুলি স্রেফ কষ্ট কল্পনা মাত্র। অতএব এসব বক্তব্য থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৫০) : শহীদগণ কি কবরে তিনটি প্রশ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন?
উত্তর : শহীদগণ কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না এবং কবরের যাবতীয় ফিৎনা থেকে রক্ষা পাবেন।  জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! শহীদ ব্যতীত সকল মুমিনই কবরের ফিৎনায় পতিত হবে। এর কারণ কি? তিনি বললেন, তার মাথার উপর তরবারীর ঝলকই তাকে কবরের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখবে (নাসাঈ হা/২০৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৯৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৮০)।
তিনি আরও বলেন, শহীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ৬টি পুরস্কার বা সুযোগ রয়েছে। (ক) শহীদের রক্তের প্রথম ফোঁটা যমীনে পড়তেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই তাকে জান্নাতের ঠিকানা দেখানো হয় (খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয় (গ) ক্বিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদ রাখা হয় (ঘ) সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট পরানো হবে। যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সবকিছু হতে উত্তম (ঙ) তাকে ৭২ জন সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট হূরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে এবং (চ) ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে’ (তিরমিযী হা/১৬৬৩; মিশকাত হা/৩৮৩৪; ছহীহাহ হা/৩২১৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারারত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সৈনিকগণ কবরের ফিৎনা হ’তে নিরাপদ থাকবেন (মুসলিম হা/১৯১৩; মিশকাত হা/৩৭৯৩)।
এপ্রিল/২০২০
প্রশ্ন (৫১) : করোনা ভাইরাসের আতংকে সঊদী আরবের মসজিদসমূহে আযানের সময় ‘হাইয়া আলাছ-ছালাহ’-এর বদলে ‘ছাল্লূ ফী বুয়ূতিকুম’ বলা হচ্ছে। এটা কি শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : এটি শরী‘আতসম্মত। ঝড়-তুফান বা মহামারীর সময় আযানে ‘হাইয়া ‘আলাছ-ছালাহ’-এর পরিবর্তে ‘ছাল্লূ ফী বুয়ূতিকুম’ বা ‘ফী রেহালিকুম’ (তোমরা বাড়িতে বা স্ব স্ব আবাসস্থলে ছালাত আদায় কর) বলা যাবে (বুখারী হা/৯০১, ৬৩২; মুসলিম হা/৬৯৯, ৬৯৭; মিশকাত হা/১০৫৫)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুওয়াযযিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ আবাসস্থলে ছালাত আদায় কর (বুখারী হা/৬৩২; মুসলিম হা/৬৯৭; মিশকাত হা/১০৫৫)। এছাড়া ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর মুওয়াযযিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া ‘আলাছ-ছালাহ’ বলবে না; বরং বলবে, ‘ছাল্লু ফী বুয়ূতিকুম’। এটা শুনে লোকেরা যেন অপসন্দ করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করেছেন। জুম‘আ ওয়াজিব বিষয়। কিন্তু আমি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াতের অসুবিধায় ফেলতে অপসন্দ করি (বুখারী হা/৯০১; মুসলিম হা/৬৯৯)।
উল্লেখ্য যে, ‘ছাল্লূ ফী রেহালিকুম’ বাক্যটি আযানের মধ্যে বা আযান শেষে দু’ভাবেই বলা জায়েয। তবে আযানকে স্বস্থানে রেখে আযানের শেষে ‘ছাল্লু ফী রেহালিকুম’ বলাই উত্তম। কারণ যাদের ওযর নেই তারা জামা‘আতে হাযির হওয়ার জন্য আদিষ্ট (নববী হা/৬৯৯-এর ব্যাখ্যা; ফাৎহুল বারী হা/৬৩২-এর ব্যাখ্যা)। আর আযানের মধ্যে উক্ত বাক্য বললেও ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ বলবে। কারণ এমতাবস্থায় ছালাত বাড়িতে আদায় করলেও কল্যাণের মধ্যে থাকবে (ইবনু কুদামা, আল-কাফী ২/৩৬, তা‘লীক্ব উছায়মীন)। মোটকথা ‘হাইয়া ‘আলাছ-ছালাহ’ ব্যতীত বাকী সব শব্দ ঠিক থাকবে। অথবা আযানের পরে মুছল্লীদের ভাষায় ‘তোমরা তোমাদের বাড়ীতে বা আবাসস্থলে ছালাত আদায় কর’ বলা যাবে। এতদসত্ত্বেও কেউ মসজিদে এসে জামা‘আতে যোগদান করলে তিনি অবশ্যই পূর্ণ নেকী পাবেন।
প্রশ্ন (৫২) : ‘আল্লাহ আকবার’ তাকবীর ধ্বনি কি আগুন নেভাতে পারে?
উত্তর : তাকবীর ধ্বনি আগুন নেভাতে সহায়তা করে মর্মে কিছু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তবে সেগুলো সবই যঈফ (যঈফাহ হা/২৬০৩, ৬৪২০; যঈফুল জামে‘ হা/৫০৪)। অবশ্য ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘ছালাত, আযান ও ঈদের নিদর্শন হ’ল তাকবীর ধ্বনি। উঁচু স্থানে উঠার সময় তাকবীর ধ্বনি দেওয়া মুস্তাহাব। সে হিসাবে ঊর্ধ্বমুখী আগুন যত বড়ই হৌক না কেন, তাকবীর ধ্বনির মাধ্যমে নিভানো যায়। তাছাড়া আযান শুনে শয়তান পালায় (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/১৮৮)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, শয়তান যেহেতু  আগুন থেকে তৈরী এবং সে আযানের সময় তাকবীর ধ্বনি শুনলে পালিয়ে যায়, সেহেতু অগ্নিকান্ডের সময় আল্লাহু আকবর ধ্বনি দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে আগুন নিভে যাওয়ার প্রমাণ আমরা পেয়েছি (যাদুল মা‘আদ ৪/১৯৪)।
প্রশ্ন (৫৩) : পায়জামার চেয়ে লুঙ্গি পরা কি উত্তম? রাসূল (ছাঃ) কি পায়জামা পরা অপছন্দ করতেন?
উত্তর : লুঙ্গি ও পায়জামা দু’টোই পরা জায়েয। তবে শর্ত হ’ল তা ঢিলাঢালা ও সতর আবৃতকারী হ’তে হবে (ফাৎহুল বারী ১০/২৭২)। আর রাসূল (ছাঃ) নিজের জন্য পায়জামা ক্রয় করেছেন এবং ছাহাবীদের ক্রয়-বিক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন (নাসাঈ হা/৪৫৯২; ইবনু মাজাহ হা/২২২০)। একবার ছাহাবীগণ আহলে কিতাবদের পায়জামা পরিধান করার কথা উল্লেখ করলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা পায়জামা পর এবং লুঙ্গি পর। আর আহলে কিতাবদের বিরোধিতা কর (আহমাদ হা/২২৩৩৭, সনদ ছহীহ)। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, আমার নিকট পায়জামা অধিকতর পসন্দনীয়। কারণ এটি পর্দার জন্য অধিক সহায়ক। যদিও লুঙ্গি অধিকাংশ লোকের পোষাক (ইবনু রজব, ফাৎহুল বারী ২/৩৮৯)। উল্লেখ্য, ‘আমি সফরে, বাড়িতে, দিনে-রাতে পায়জামা পরিধান করি। আল্লাহ আমাকে পর্দা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর পায়জামায় অধিক পর্দা রয়েছে’- মর্মে রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছটি জাল ও মুনকার (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬৫৯৪; আলবানী, যঈফাহ হা/৮৯)।
রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ইহূদী-নাছারাদের ও মুশরিকদের বিপরীত পোষাক পরা আবশ্যক। দ্বিতীয়তঃ যে অঞ্চলে যে পোষাকটি সুন্দর হিসাবে বিবেচিত, সেটাই পরিধান করা উত্তম। তিনি বলেন, আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন (মুসলিম হা/৯১)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ছালাতের সময় সর্বোত্তম পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। বাংলাদেশে পায়জামা উত্তম পোষাক হিসাবে বিবেচিত এবং লুঙ্গি সাধারণ পোষাক হিসাবে গণ্য। অতএব এদেশে পায়জামা পরাই উত্তম।
প্রশ্ন (৫৪) : লাশ দাফন শেষে কবরের পাড়ে আযান দেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : লাশ দাফনের পূর্বে বা পরে আযান দেওয়া বিদ‘আত। একদল শাফেঈ বিদ্বান শিশু জন্মের পর আযান দেওয়ার উপর ক্বিয়াস করে দাফন শেষে আযান দেওয়া জায়েয বলেছেন, যা বাতিল ক্বিয়াস। অতএব এধরনের বিধান ইসলামী শরী‘আতে নেই (ইবনু হাজার হায়তামী, আল ফাতাওয়াল কুবরা আল-ফিক্বহিইয়াহ ২/২৪)।
প্রশ্ন (৫৫) : কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীকে বিবাহ করার পর তাকে গর্ভবতী পায়, সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
উত্তর : এরূপ ক্ষেত্রে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। তার সাথে সহবাস নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে তার সন্তান প্রসবের আগে এবং কোন নারীর সাথে তার হায়েয হ’তে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সহবাস করবে না (আবূদাউদ হা/২১৫৭; মিশকাত হা/৩৩৩৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, সে যেন অন্যের ক্ষেতে পানি সেচ না করে অর্থাৎ অন্যের দ্বারা গর্ভবতী কোন নারীর সাথে সহবাস না করে (আবূদাউদ হা/২১৫৮; মিশকাত হা/৩৩৪০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৫৪)। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে এরূপ একটি ঘটনা ঘটলে তিনি তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৩৬৭২; যাদুল মা‘আদ ৫/১০৪)। খলীফা আব্দুল মালেক ইবনু মারওয়ানের আমলে এরূপ ঘটলে তিনিও তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১৩৪৫৩)। উক্ত সন্তান তার মায়ের দিকে সম্পৃক্ত হবে। (বুখারী হা/৬৭৪৮, উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৩৭০)।
প্রশ্ন (৫৬) : মনে মনে কুরআন তেলাওয়াত করলে নেকী পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : মনে মনে কুরআন তেলাওয়াত করলে তাতে ছওয়াব পাবে না। কেননা উচ্চ বা অনুচ্চ স্বরে মৌখিক উচ্চারণ ব্যতীত তা তেলাওয়াত হিসাবে গণ্য হবে না। তবে গবেষণা ও মুখস্থের উদ্দেশ্যে মনে মনে কুরআন পাঠ করায় কোন দোষ নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৮/৩৬৩; মাওয়াহিবুল জালীল ১/৩১৭; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৫)।
প্রশ্ন (৫৭) : জান্নাতী নারীদের পোষাক সবুজ রঙের হবে একথার কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : জান্নাতী নারী হৌক বা পুরুষ হৌক সকলের পোষাক সবুজ হবে। আল্লাহ বলেন, ‘জান্নাতীদের পোষাক হবে মিহি সবুজ ও মোটা রেশমী কাপড়’ (দাহার ৭৬/২১)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তারা ঠেস দিয়ে বসবে সবুজ বালিশে ও নকশাদার গালিচার উপরে’ (আর-রহমান ৫৫/৭৬)। অন্যত্র তিনি বলেন, তাদের জন্য রয়েছে বসবাসের জান্নাত। যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা মিহি ও মোটা রেশমী সূতার সবুজ পোষাক পরিধান করবে। তারা সেখানে সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসবে। কতই না সুন্দর প্রতিদান ও কতই না সুন্দর আশ্রয়স্থল’ (কাহফ ১৮/৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষকে উঠানো হবে। আমিও আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর থাকব। আমার প্রতিপালক আমাকে সবুজ জোড়া কাপড় পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হ’ল ‘মাক্বামে মাহমূদ’ (আহমাদ হা/১৫৮২১; ছহীহাহ হা/২৩৭০)।
উল্লেখ্য যে, জান্নাতে সবুজ পোষাকের কারণে দুনিয়াতে এর বিশেষ মর্যাদা বুঝানো হয়নি। বরং দুনিয়াতে সর্বোত্তম পোষাক হ’ল সাদা রঙের পোষাক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা এটি পূত-পবিত্র। আর এর দ্বারা তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও’ (তিরমিযী হা/২৮১০; মিশকাত হা/৪৩৩৭)।
প্রশ্ন (৫৮) : আমি যে এলাকায় কাজ করি, সেখানে প্রতিটি বাড়িতে কুকুর পালন করা হয়। এসব কুকুর মাঝে-মধ্যে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, কখনওবা পা বা শরীরের কাপড় চেটে দেয়। উক্ত অবস্থায় কি ছালাত আদায় করা যাবে, নাকি শরীর বা কাপড় ধৌত করতে হবে? উল্লেখ্য যে, এসব কুকুর খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং বাইরের কোন খাবার খায় না।
উত্তর : কুকুরের লালা নাপাক। কিন্তু শরীর নাপাক নয়। সুতরাং কুকুর যদি কারো শরীর অথবা কাপড় ছুঁয়ে দেয় বা শুঁকে দেয় তাহ’লে তা নাপাক হবে না, যদিও কুকুরের শরীর পানি দ্বারা ভেজা থাকে। তবে পা বা শরীর চেটে দিলে কুকুরের লালা কাপড়ের যে অংশে লেগেছে তা অবশ্যই সাতবার ধৌত করবে যার প্রথমবার মাটি বা সাবান জাতীয় কিছু দ্বারা হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৫/২৫৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৪৬)।
প্রশ্ন (৫৯) : মসজিদের ক্বিবলা বরাবর টয়লেট থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায়ে কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : যদি পৃথক প্রাচীর থাকে, তবে ছালাত আদায়ে দোষ নেই। কিন্তু মসজিদের প্রাচীর ও টয়লেটের প্রাচীর যদি একই হয়। তাহ’লে উক্ত মসজিদে ছালাত থেকে বিরত থাকাই উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ), ইবনু আববাস (রাঃ), ইমাম নাখঈ, ইমাম আহমাদসহ বহু বিদ্বান বলতেন, তিনটি ঘরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করা উচিৎ নয়। টয়লেট, গোসলখানা ও কবরস্থান (মুছান্নাফ ইবনু আব্দির রাযযাক হা/১৫৮৪, ৭৬৫৯, ৭৬৬০,৭৬৬৪; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪৭৩)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, যতক্ষণ না মসজিদের প্রাচীর ও টয়লেটের প্রাচীর আলাদা হবে ততক্ষণ সে মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে না (শারহুল ঊমদাহ ৪/৪৮৩)। ইবনু রজবও বলেন, মসজিদের আলাদা প্রাচীর থাকতে হবে এবং টয়লেটেরও আলাদা প্রাচীর থাকতে হবে (ফাৎহুল বারী ২/২৩০)। অতএব মসজিদে ক্বিবলার দিকে টয়লেট নির্মাণ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৫৪; ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ২/১৩৯)।
প্রশ্ন (৬০) : ক্বিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মাদীকে চিনা যাবে তাদের ওযূর চিহ্ন দেখে। কিন্তু পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতকে কিভাবে চেনা যাবে বা নবীগণ কীভাবে তাদের উম্মতকে চিনবেন?
উত্তর : এটি উম্মতে মুহাম্মাদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা অন্য কোন নবীর উম্মতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি। পূর্ববর্তী নবীগণ কিভাবে তাদের উম্মতকে চিনবেন সে ব্যাপারে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও ওযূর বিধান ছিল। কারণ যখন ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা (আঃ) যালেম বাদশার হাতে গ্রেফতার হন, তখন তিনি ওযূ করে ছালাত আদায় করেন (বুখারী হা/২২১৭)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) তিনবার করে ওযূর অঙ্গ সমূহ ধুয়ে বলেন, এটিই হ’ল আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের ওযূ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৬৬১; ছহীহাহ হা/২৬১)। অতএব পূর্ববর্তী উম্মতগণের মাঝে ওযূ ছিল। কিন্তু তারা এই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবে বলে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই।
প্রশ্ন (৬১) : পুরুষেরা কি নারীদের মত অস্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন করে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে, যদি স্ত্রীর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন হয়?
উত্তর : স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন অস্থায়ী বা সাময়িক ব্যবস্থা পুরুষেরা গ্রহণ করতে পারে। কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছাহাবায়ে কেরাম আযলের মত সাময়িক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন (বুখারী হা/৫২০৮; মুসলিম হা/১৪৪০; মিশকাত হা/৩১৮৪)। এর দ্বারা উদ্দেশ্যে ছিল সাময়িক সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা (বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৩৯৪/২১; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ২২/২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/৩১৩-১৪)।
প্রশ্ন (৬২) : ডলার কেনা-বেচার ব্যবসা কি হালাল?
উত্তর : একই জাতীয় মুদ্রা যেমন আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে আমেরিকান ডলারের ব্যবসা করা যাবেনা। তবে ডলারের বিনিময়ে রিয়াল বা অন্য দেশের মুদ্রা কেনা-বেচার ব্যবসা করা যাবে। সেক্ষেত্রে নগদে কমবেশী করা যাবে; কিন্তু বাকীতে কমবেশী করে করা যাবে না (বুখারী হা/২১৭৫; মুসলিম হা/১৫৮৪; মিশকাত হা/২৮০৮; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব ২৩৫/২২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২১৬)।
প্রশ্ন (৬৩) : আমি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম। তারা ওভার টাইমে কাজ করার জন্য অনেক টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে দেয়নি। এক্ষণে আমার করণীয় কি বা তাদের কী শাস্তি হবে?
উত্তর : বৈধ পন্থায় মালিকের নিকট প্রাপ্যের ব্যাপারে আবেদন করবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের আশ্রয় নিয়ে স্বীয় অধিকার আদায়ের চেষ্টা করবে। যদি কোনভাবেই তা আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে পরকালে তা প্রাপ্তির জন্য কামনা করতে হবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত যালেমের আমলনামা থেকে প্রাপকদের প্রাপ্য প্রদান করা হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে ছালাত-ছিয়াম-যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারু উপরে অপবাদ দিয়েছে, কারু মাল গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব পাওনাদারকে ঐ ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।
প্রশ্ন (৬৪) : বিবাহের পূর্বে কনে দেখতে গিয়ে বিবাহের কথা হওয়ায় কিছু উপহার দিলে যদি বিবাহ না হয়, তাহ’লে উপহার ফেরত চাওয়া যাবে কি?
উত্তর : বিবাহের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিশেষ উপহার ফেরত চাওয়া যেতে পারে। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, যদি বিবাহের পূর্বে বিবাহের ওয়াদার প্রেক্ষিতে হাদিয়া প্রদান করা হয় আর বিবাহ দেওয়া না হয়, তাহ’লে হাদিয়া ফেরত দিবে (আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৭২)। একইরূপ বলেছেন মারদাভী, যারকাশী ও ছান‘আনী (আল-ইনছাফ ৮/২৯৬; আল-মানছূর ফিল ক্বাওয়াইদিল ফিক্বহিয়াহ ৩/২৬৯; সুবুলুস সালাম ২/২২০)। সর্বোপরি কেউ যাতে প্রতারিত না হয় বা যুলুমের শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন (৬৫) : গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে মিলনে বাধা আছে কি?
উত্তর : হায়েয ও নিফাস ব্যতীত সর্বাবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করা জায়েয। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত স্বরূপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা আগমন কর’ (বাক্বারাহ ২/২২৩)। তবে যে সকল নারীর জরায়ু দুর্বল বলে চিকিৎসকগণ সাক্ষ্য দিবেন তাদের সাথে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস ও শেষ মাসে মিলনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে। কারণ এতে গর্ভপাত ঘটা বা সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
প্রশ্ন (৬৬) : যেনাকার নারী তথা পতিতার জানাযায় অংশগ্রহণ করা যাবে কি?
উত্তর : পতিতা মুসলিম হ’লে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা যাবে। তবে সে কবীরা গুনাহগার বলে মুত্তাক্বীগণ অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন, যাতে জীবিত পাপীরা শিক্ষা গ্রহণ করে যে, তাদের জানাযায় কোন মুত্তাক্বী মুসলিম অংশগ্রহণ করবেন না (ইবনু কুদামা, মুগনী ২/৪১৭; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৩/২০-২১)। রাসূল (ছাঃ) আত্মহত্যাকারী ও ঋণগ্রস্তদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতেন না। বরং ছাহাবীগণকে পড়ার আদেশ দিতেন (বুখারী হা/২২৮৯; মুসলিম হা/১৬১৯ মিশকাত হা/৪০১১)।
প্রশ্ন (৬৭) : করোনা ভাইরাসের মত মহামারীতে মারা গেলে শাহাদতের মর্যাদা পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : যে কোন মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি ঈমানের সাথে মারা গেলে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। যেমন হাফছা বিনতু সীরীন (রাঃ) বলেন, আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াহইয়া কি রোগে মারা গেছে? আমি বললাম, প্লেগ বা মহামারী রোগে। তিনি বললেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্লেগ বা মহামারী রোগের কারণে মৃত্যুবরণ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদত হিসাবে গণ্য হবে’ (মুসলিম হা/১৯১৬; আহমাদ হা/১২৫৪১)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, শহীদ পাঁচ প্রকার- ১. প্লেগ আক্রান্ত ২. উদরাময়গ্রস্ত ৩. ডুবন্ত (ডুবে মৃত) ৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং ৫. আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি (বুখারী হা/২৮২৯; মুসলিম হা/১৯১৪; মিশকাত হা/১৫৪৬)। অতএব মুমিন এধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শাহাদতের মর্যাদা পাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৬৮) : দু’বছরের পুরাতন কবর ভেঙ্গে পড়লে করণীয় কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে কবরটি নিজ অবস্থায় রেখে দিতে পারে। অথবা মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে অন্যান্য কবরের মত সমতল করে দিবে। তবে সেখানে কোনরকম নির্মাণ কাজ করা যাবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৪৪৫)।
প্রশ্ন (৬৯) : জনৈক আলেম বলেছেন, বৈঠক শেষে পঠিতব্য দো‘আটি ওযূর শেষেও পাঠ করা যায়। এটা কি হাদীছ সম্মত?
উত্তর : হ্যাঁ, ওযূর শেষে বৈঠক ভঙ্গের দো‘আটি পাঠ করা মুস্তাহাব। দো‘আটি হ’ল- ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’ (মহা পবিত্র হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’ (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৪৩৩, ২৪৫০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ওযূর পর উপরোক্ত দো‘আটি পাঠ করবে, তার নাম দাসমুক্তকারীদের নামের সাথে লিখে দেওয়া হবে এবং এমন সীল মেরে দেওয়া হবে যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গবে না (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/১৪৫৫; হাকেম হা/২০৭২; ছহীহাহ হা/২৩৩৩)। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, উক্ত দো‘আটি গোসলের পরেও পাঠ করা মুস্তাহাব (সুবূলুস সালাম ১/৮০)।
প্রশ্ন (৭০) : নবী করীম (ছাঃ) তাহাজ্জুদ ছালাত প্রথম দুই রাক‘আত হালকাভাবে পড়তেন। তিনি এই দুই রাক‘আতে কি কি সূরা পাঠ করতেন?
উত্তর : উক্ত দু’রাক‘আতে তিনি কোন সূরা পাঠ করতেন তা বর্ণিত হয়নি (মুসলিম হা/৭৬৭)। নববী বলেন, প্রস্ত্ততিমূলকভাবে তিনি প্রথম দু’রাক‘আতকে সংক্ষিপ্ত করতেন যাতে পরবর্তী রাক‘আতগুলিতে ক্লান্তি না আসে (শরহ মুসলিম ৬/৫৪)।
প্রশ্ন (৭১) : যবেহ না করে (মেরে না ফেলে) জীবিত অবস্থায় মাছের আঁইশ, পাখনা, পেট অথবা কাটার আগে মাথায় আঘাত বা মাটিতে আছাড় দিয়ে মারা এসব ব্যাপারে ইসলামের হুকুম কি?
উত্তর : কোন প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ইহসান (যথাসাধ্য সুন্দর রূপে সম্পাদন করা) অত্যাবশ্যক করেছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কোন প্রাণীকে) হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে; আর যখন যবেহ করবে তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং তার যবেহকৃত জন্তুকে শাস্তি প্রদান না করে (অহেতুক কষ্ট না দেয়) (মুসলিম হা/১৯৫৫; মিশকাত হা/৪০৭৩)। তবে মাছকে যবেহ করা শর্ত নয়। বরং যে পন্থায় মাছ কাটলে সেটি কষ্ট কম পাবে সে পন্থায় মাছ কাটতে হবে। আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীর প্রতি দয়া করতে বলেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৫৪৯ প্রভৃতি)।
প্রশ্ন (৭২) : সূরা ফাতিহায় প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফুল জামে‘ হা/৩৯৫১)। তবে সূরা ফাতিহায় যে বিবিধ রোগের চিকিৎসা রয়েছে, তা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/২২৭৬; মিশকাত হা/২৯৩৫)।
প্রশ্ন (৭৩) : আমাদের সমাজে একটা রেওয়াজ আছে স্ত্রী যখন সন্তান-সম্ভবা হয় তখন তার পিতার বাসার পক্ষ থেকে বেশ কিছু আত্মীয় আসে এবং সঙ্গে নিয়ে আসে মাছ, গোশত, লাড্ডু ও মিষ্টিসহ আরও অনেক কিছু। এভাবে তারা ঘটা করে মেয়েকে নিয়ে যায়, যাকে বিদায় বলে। অনুরূপভাবে সন্তান হওয়ার পর স্বামীর পক্ষ থেকেও নিয়ে আসা হয়। এই সমস্ত রেওয়াজ কতটা শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : এগুলি হিন্দুয়ানী বা বিজাতীয় প্রথার অনুকরণ হ’লে তা অবশ্যই বর্জনীয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত হা/৪৪২১)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে’ (আবুদাউদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৮৩১)। তাছাড়া স্বাভাবিক সামাজিকতার বাইরে এই জাতীয় বাধ্যতামূলক রেওয়াজ স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের উপরে নিঃসন্দেহে বাড়তি বোঝা সৃষ্টি হয়, যা যুলুম। শরী‘আতে এগুলির কোন ভিত্তি নেই। অতএব এধরনের নিপীড়নমূলক সামাজিক রেওয়াজ পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (৭৪) : হাদীছে আছে, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই’। অথচ বহু মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। এর ব্যাখ্যা কী?
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং ছফর মাসেও কোন অশুভ নেই। একথা শুনে জনৈক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে পালের মধ্যে একটা চর্মরোগী উট আসলে বাকীগুলি চর্মরোগী হয় কেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তাহ’লে প্রথম উটটিকে চর্মরোগী বানালো কে?’ (বুখারী হা/৫৭৭০; মুসলিম হা/২২২০; মিশকাত হা/৪৫৭৭-৭৮)। উক্ত হাদীছে ছোঁয়াচে রোগ নেই তা বলা হয়নি। বরং জাহেলী যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে ছোঁয়াচে রোগ নিজে নিজেই অন্যের দেহে সংক্রমিত হয়। এই ভ্রান্ত বিশ্বাস অপনোদনের জন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন যে, ছোঁয়াচে রোগ থাকলেও তা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত অন্যের দেহে সংক্রমিত হয় না (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৯৫; উছায়মীন, শারহু কিতাবুত তাওহীদ ২/৮০)। 
যেমন একই হাদীছে তিনি বলেছেন, তবে কুষ্ঠরোগী হ’তে এমনভাবে পলায়ন কর, যেভাবে তোমরা বাঘ থেকে পলায়ন করে থাক’ (বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭)। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না’ (বুখারী হা/৫৭৭৪; মুসলিম হা/২২২১)। ছাক্বীফ গোত্রের জনৈক কুষ্ঠ রোগীর হাতে হাত রেখে বায়‘আত গ্রহণ করতে রাসূল (ছাঃ) অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বরং তার নিকটে লোক পাঠিয়ে তিনি বলেন, আমরা তোমার বায়‘আত নিয়েছি’ (মুসলিম হা/২২৩১; মিশকাত হা/৪৫৮১)। সুতরাং যদি রোগের সংক্রমণকে রাসূল (ছাঃ) অস্বীকারই করতেন, তবে কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলতেন না বা সুস্থ উটকে অসুস্থ উট থেকে দূরে রাখার কথা বলতেন না।
অতএব ছোঁয়াচে রোগ আছে। তবে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। কেবল আল্লাহর হুকুম ব্যতীত এ রোগ কারু দেহে ছড়াতে পারে না। তাছাড়া রোগের জীবাণু সংক্রমিত হ’লেই তাতে রোগের সংক্রমণ হয় না। এজন্য দেখা যায় যে, ভাইরাস আক্রান্ত স্থানেও অনেক ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয় না। আবার আক্রান্ত হ’লেও সুস্থ হয়ে যায়। অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। মূল বিষয় হ’ল আক্বীদার পরিশুদ্ধি। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শিরক। কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে অশুভ লক্ষণের ধারণার উদ্রেক হয় না। অথচ আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ তা দূরীভূত করে দেন’ (আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৫৮৪)।
প্রশ্ন (৭৫) : আমি দীর্ঘদিন ধরে গুল ও জর্দা সেবনে অভ্যস্ত। বারবার চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছি না। এক্ষণে আমার ছালাত, ছিয়াম বা অন্যান্য ইবাদত কি কবুল হচ্ছে? পরকালে কী ধরনের শাস্তি হবে?
উত্তর : গুল ও জর্দা এবং এ জাতীয় দ্রব্য মাদকতা আনয়ন করে বিধায় এগুলি হারাম। আর মাদক সেবনের শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মদপান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার ছালাত কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় মদ্যপানে লিপ্ত হ’লে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করাবেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে রাসূল! সেটা কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৭; মিশকাত হা/৩৬৪৩, ছহীহাহ হা/৭০৯)। সুতরাং এই কবীরা গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন’ (তালাক্ব ৬৫/২)।
তবে মাদকতার কারণে তার ইবাদত বিনষ্ট হবে না। কেননা উপরোক্ত হাদীছে মাদকসেবীদের চল্লিশ দিনের ছালাত কবূল না হওয়ার অর্থ সে ঐ ছালাতের ছওয়াব প্রাপ্ত হবে না। তবে ছালাত আদায়ের কারণে তার দায়িত্ব পালন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ সে ছালাত পরিত্যাগের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭৭; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৬/৪০০)।
প্রশ্ন (৭৬) : খুৎবায় বসার পূর্বে ইমাম যে সালাম দেন সেই সালাম থেকেই কি খুৎবার সূচনা বলে বিবেচিত হয়?
উত্তর : ইমাম মিম্বরে উঠে মুক্তাদীদের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করবেন (ইবনু মাজাহ হা/১১০৯; ছহীহাহ হা/২০৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৪৫)। তবে এই সালাম খুৎবার সূচনা নয়। বরং ইমাম দাঁড়িয়ে খুৎবা শুরু করলে সূচনা হয়। কারণ এ সময়কে খুৎবার সূচনা ধরা হ’লে আযানের জওয়াব দেওয়া যেত না। অথচ রাসূল (ছাঃ) মিম্বরে বসে নিজেই আযানের জওয়াব দিতেন (বুখারী হা/৯১৪; ইরওয়া ৩/৭৬; নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫২৭)। 
প্রশ্ন (৭৭) : জুম‘আর আযান চলাকালে কেউ উপস্থিত হ’লে সে কি আযানের জওয়াব দিবে? নাকি তাহিইয়াতুল মাসজিদ আদায় করবে?
উত্তর : এক্ষেত্রে দু’টি সুন্নাতের উপর সমন্বয় করে আমল করা উত্তম। অর্থাৎ প্রথমে আযানের জওয়াব দিবে। অতঃপর তাহিইয়াতুল মসজিদ দু’রাক‘আত আদায় করে ইমামের খুৎবা শ্রবণের জন্য বসে যাবে। এতে সে দু’টি সুন্নাতই আদায়ের নেকী পেয়ে যাবে (মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/৬৫৭; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ১/৩১১; বিন বায, নুরুন আলাদ-দারব ১৩/৩০৫)। অবশ্য কতিপয় বিদ্বান মনে করেন, তাহিইয়াতুল মাসজিদ ওয়াজিব ও আযানের জওয়াব দেওয়া সুন্নাত। অতএব সুন্নাতের উপর ওয়াজিব প্রাধান্য পাবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২০২)।
প্রশ্ন (৭৮) : রাসূল (ছাঃ) ছালাতে কুরআন তেলাওয়াত কালে কি তাসবীহ পাঠ করতেন? এসময় তিনি কী বলতেন?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) কখনও ছালাতে কুরআন তেলাওয়াতের সময় তাসবীহ রয়েছে এমন আয়াতে তাসবীহ পাঠ করতেন, আবার প্রার্থনার আয়াতে প্রার্থনা করতেন এবং শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন (মুসলিম হা/৭৭২)। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কি পড়তেন তা বর্ণিত হয়নি। সুতরাং কেউ চাইলে ফরয বা নফল ছালাতে তেলাওয়াতকালে অনুচ্চস্বরে আয়াতের মর্মানুসারে তাসবীহ, তাহলীল বা যে কোন দো‘আ পাঠ করতে পারে (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ১/৩৯৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩১০; ঊছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২৮৯-৯০)।
প্রশ্ন (৭৯) : ইমাম মাহদী (আঃ)-এর আগমনের পূর্বে জুলফি নক্ষত্রের উদয় সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেটা ছহীহ কি না?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) থেকে এ বিষয়ে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে অলীদ বলেন, আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কা‘ব বলেছেন, মাহদী আবির্ভাবের পূর্বে পূর্বাকাশে একটি নক্ষত্র উদিত হবে। যার লেজ সমূহ থাকবে (নাঈম বিন হাম্মাদ, আল-ফিতান হা/৬৪২-৪৩)। বর্ণনাটির সনদ যঈফ ও বিচ্ছিন্ন।
প্রশ্ন (৮০) : ওযন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া যাবে কী?
উত্তর : যাবে। কেননা ভিনেগার বা সিরকায় ব্যবহৃত উপাদান মদের পর্যায়ভুক্ত নয়। রাসূল (ছাঃ) সিরকাকে উত্তম তরকারী হিসাবে অভিহিত করেছেন (মুসলিম হা/২০৫১-৫২; মিশকাত হা/৪১৮৩)। সুতরাং আপেল বা যে কোন ফলমূল থেকে প্রস্ত্ততকৃত ভিনেগার খাওয়া বা খাদ্যে ব্যবহারে কোন বাধা নেই। তবে মদ থেকে যে সিরকা তৈরী হয়, তা নিষিদ্ধ (তিরমিযী হা/১২৯৪; মিশকাত হা/৩৬৪৯)।
প্রশ্ন (৮১) : জনৈক আলেম বলেন, ফজরের ছালাতের আযানে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ বলা বিদ‘আত। এ কথা কি সত্য?
উত্তর : ফজরের আযানের সাথে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ কথাটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (আহমাদ হা/১৫৪১৬; ছহীহাহ হা/২৬০৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। আবু মাহযূরাহ (রাঃ) বর্ণিত আযান শিক্ষা দান বিষয়ক হাদীছে এসেছে ‘অতঃপর যদি এটা ফজরের ছালাত হয়, তাহ’লে তুমি বলবে আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’...(আবূদাঊদ হা/৫০০; মিশকাত হা/৬৪৫)।
অনুরূপভাবে বেলাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বলেছেন যে, ‘তুমি ফজরের ছালাত ব্যতীত অন্য কোন ছালাতে আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম বলবে না’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৪৬)। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘সুন্নাত হ’ল এই যে, মুওয়াযযিন ফজরের আযানে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার পরে বলবে ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাউম’ (ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৮৬; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৪৭১)। সুতরাং উক্ত বাক্যটি বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন (৮২) : মৃত ব্যক্তি মা, স্ত্রী ও দুই ভাই রেখে মারা যায়। এক্ষণে সম্পত্তির অংশ কে কত ভাগ পাবে?
উত্তর : মা পাবে ১৬.৭%, স্ত্রী পাবে ২৫%, ভাই-১ পাবে ২৯.১৫%, ভাই-২ পাবে ২৯.১৫%। এক্ষেত্রে স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে যখন সন্তান না থাকে। মাতা ১/৬ অংশ পাবে যখন পুত্র ও পুত্রের পুত্র এবং দুই বা ততোধিক ভাই-বোন এবং পিতা থাকে। সহোদর ভাই একমাত্র অবশিষ্ট ভোগী হিসাবে অবশিষ্ট সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অংশীদারদের নির্ধারিত প্রাপ্য অংশ দিয়ে দাও। অতঃপর যা অবশিষ্ট থাকে তা (আছাবা হিসাবে) নিকটতম পুরুষ লোকের প্রাপ্য’ (বুখারী হা/৬৭৩২; মুসলিম হা/১৬১৫; মিশকাত হা/৩০৪২)।
প্রশ্ন (৮৩) : জুম‘আর খত্বীবের জন্য তাহ্ইয়াতুল মসজিদ আদায় করা লাগবে কি?
উত্তর : জুমআ‘র দিন রাসূল (ছাঃ) মসজিদে গিয়েই খুৎবার জন্য মিম্বারে বসতেন। এসময় তিনি ‘তাহিইয়াতুল মসজিদ’ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৪০১; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৮/২; বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব)। সুতরাং খুৎবার সময় হওয়ার পর খত্বীব মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং সরাসরি মিম্বরে বসবেন, এটাই সুন্নাতসম্মত। যেমনভাবে একজন তাওয়াফকারী মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করে তাহিইয়াতুল মাসজিদ ছাড়াই তাওয়াফ শুরু করেন। তবে কেউ যদি তা আদায় করেন, সেটা নাজায়েয হবে না (সাঊদ আশ-শুরাইম, আশ-শামেল ফী ফিক্বহিল খত্বীব ওয়াল খুৎবাহ ৭৭ পৃ.)। এ সুযোগ কেবল খতীবের জন্য, মুছল্লীদের জন্য নয়। খুৎবা অবস্থায় প্রবেশ করলেও তাদেরকে সংক্ষেপে তাহিইয়াতুল মাসজিদ দু’রাক‘আত পড়েই বসতে হবে (মুসলিম হা/৮৭৫ (৫৯); মিশকাত হা/১৪১১)। 
প্রশ্ন (৮৪) : মাযহাবী পরিবারে বিবাহ করায় শারঈ কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : কোন বাধা নেই। তবে ছহীহ দ্বীন পালনে প্রতিবন্ধকতার আশংকা থাকলে বিরত থাকাই সমীচীন। কারণ বিবাহে সার্বিক ক্ষেত্রে কুফূ থাকা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর এবং সমতা (কুফূ) বিবেচনায় বিবাহ কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬৭; ইবনু ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৫/১৪৫)।
প্রশ্ন (৮৫) : ফজর ছালাতের পর সূরা হাশরের শেষ আয়াত পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : ফজর ছালাতের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/২৯২২; মিশকাত হা/২১৫৭; যঈফুল জামে‘ হা/৫৭৩২)। অতএব একাকী হৌক বা সম্মিলিতভাবে হৌক এটি পড়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৮৬) : করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মুছাফাহা ও কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকলে গোনাহ হবে কি?
উত্তর : গোনাহ হবে না। বরং এরূপ পরিস্থিতিতে মুছাফাহা ও কোলাকুলি থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অন্যের ক্ষতি করো না এবং নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০-৪১; ছহীহাহ হা/২৫০)। সুতরাং মহামারীর সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
প্রশ্ন (৮৭) : ঝড়-তুফান বা বৃষ্টির সময় তাকবীর দেওয়ার বিধান কী?
উত্তর : ঝড়-তুফান বা বৃষ্টির সময় আযান দেওয়ার বিধান ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে বৃষ্টির সময় দো‘আ কবূল হয় (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৫৭৫৬; ছহীহাহ হা/১৪৬৯; মিশকাত হা/৬৭২)। এজন্য এ সময় যেকোন কল্যাণকর দো‘আ করা যেতে পারে। রাসূল (ছাঃ) এমন সময় বলতেন, আল্লাহুম্মা ছাইয়েবান নাফে‘আন/হানিয়ান’ (বুখারী হা/১০৩২; আবূদাউদ হা/ মিশকাত হা/১৫০০)। এছাড়াও তিনি অবিরাম বৃষ্টির সময় বলতেন, আল্লা-হুম্মা হাওয়া-লাইনা ওয়া লা ‘আলাইনা, আল্লা-হুম্মা ‘আলাল আকা-মি ওয়াল্ জিবা-লি ওয়াল্ উজা-মি ওয়ায্ যিরা-বি ওয়াল্ আওদিইয়াতি ওয়া মানা-বিতিশ্ শাজারি অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বৃষ্টি বর্ষণ কর, আমাদের উপরে করো না। হে আল্লাহ! টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বর্ষণ কর’ (বুখারী হা/১০১৪; মিশকাত হা/৫৯০২)। আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতেন, তখন কথা-বার্তা ছেড়ে দিয়ে নিম্নের দো‘আটি পাঠ করতেন- ‘সুবহা-নাল্লাযী ইয়ুসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহী ওয়াল মালা-ইকাতু মিন খী-ফাতিহি’ ‘মহা পবিত্র সেই সত্তা যাঁর গুণগান করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী তার ভয়ে’ (রা‘দ ১৩/১৩)। অতঃপর বলতেন এটা পৃথিবীবাসীর জন্য কঠিন ধমকি স্বরূপ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭২; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৬৮৯; মিশকাত হা/১৫২২, ‘ছালাত’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৮৮) : আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মারা যাওয়ার পর তার বিপুল সম্পদ আমরা অনেকদিন যাবৎ ভোগ করে আসছি। পরবর্তীতে আত্মীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি যে তিনি সরকারী প্রতিষ্ঠানের জিএম থাকায় অবৈধভাবে অনেক সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সম্পদের উৎস সম্পর্কে আমরা অজ্ঞাত। এক্ষণে এসব ভোগ করা আমার মা বা আমাদের জন্য জায়েয হবে কি?
উত্তর : উপার্জিত সম্পদ উপার্জনকারীর জন্য হারাম। তবে উপার্জনকারীর ওয়ারিছ হিসাবে বৈধ পন্থায় গ্রহণকারী উত্তরাধীকারীরা এ জন্য দায়ী হবে না (উছায়মীন, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৫৭ আয়াত ১/১৯৮)। সুতরাং সাধারণভাবে পিতার মৃত্যুর পর ওয়ারিছরা তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। তবে কোন উত্তরাধিকারী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অধিক সম্পদ লাভের আশায় অসৎ উপার্জনকারীকে তার জীবদ্দশায় এথেকে বাধা না দেয়, তবে সে গুনাহগার হবে। 
এছাড়া সম্পদের মৌলিকত্ব যদি হারাম হয় এবং তা জানা যায়, তাহ’লে তা গ্রহণ করা ও ভোগ করা বৈধ হবে না। যেমন চুরি ও লুণ্ঠনকৃত সম্পদ (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৮৮; মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ১৯/১৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৬/৩৩২)।
প্রশ্ন (৮৯) : জান্নাতে কি রাত্রি-দিন আছে?
উত্তর : জান্নাতে রাত্রি-দিন নেই। ইমাম কুরতুবীসহ কতিপয় মুফাস্সির বর্ণনা করেছেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে কি রাত বা দিন হবে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার মধ্যে কে এ ধরনের প্রশ্ন উঠাল? সে বলল, আল্লাহ তা‘আলা যে বলেছেন, ‘আর সেখানে তাদের জন্য সকাল-সন্ধ্যায় রিযিক থাকবে (মরিয়ম ১৯/৬২)। আর রাত তো আসে সকাল ও সন্ধ্যার মাঝে। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন, সেখানে কোন রাত থাকবে না। থাকবে কেবল আলো আর আলো (তাফসীরে কুরতুবী ১১/১২৭; শাওকানী, ফাৎহুল কাদীর ৩/৪০৩; শানক্বীতী, আযওয়াউল বায়ান ৩/৪৭০; বর্ণনাটির শুদ্ধাশুদ্ধি সম্পর্কে বিদ্বানদের মত পাওয়া যায়নি)। কতিপয় বিদ্বানের মতে, সেখানে পর্দা ফেলা বা দরজা বন্ধ করাই হবে রাতের মত। আর পর্দা উঠিয়ে নেওয়া ও দরজা খোলাই হবে দিনের মত (মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৯/৩৫৮০, হা/৫৬১৮-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন (৯০) : ছিয়াম অবস্থায় গান শোনা, মিথ্যা কথা বলা, মেয়েদের দিকে কুদৃষ্টি দেওয়া প্রভৃতি পাপ কাজ করলে ছিয়াম বাতিল হয়ে যাবে কি?
উত্তর : কেবল সারাদিন পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম ছিয়াম নয়। বরং ছিয়াম সাধনা হচ্ছে পানাহার থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে সকল প্রকার মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে না, সে ব্যক্তির পানাহার থেকে বিরত থাকাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই (বুখারী হা/১৯০৩; মিশকাত হা/১৯৯৯)। তাই এক্ষেত্রে ছিয়াম সরাসরি বাতিল না হলেও, নিঃসন্দেহে তা ক্রটিপূর্ণ হবে।
প্রশ্ন (৯১) : রামাযান মাসে সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্র গ্রহণ একই সাথে হওয়া ইমাম মাহদীর আগমনের সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি?
উত্তর : এটি শী‘আদের আক্বীদা। তারা মনে করে, যে রামাযান মাসের প্রথম রাতে চন্দ্র গ্রহণ এবং ১৫তম দিন সকালে সূর্য গ্রহণ হবে সেই মাসেই ইমাম মাহদী আগমন করবেন। উক্ত মর্মে দারাকুৎনীতে মুহাম্মাদ বিন আলী থেকে বর্ণিত হাদীছটি জাল (দারাকুৎনী হা/১৮১৬; আল-মাওসূ‘আতু ফী আহাদীছিল মাহদী আয-যাঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ ১৬৯ পৃ.)। বরং রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমুহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো জীবন ও মৃত্যুর কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের সতর্ক করেন’ (বুখারী হা/১০৪৮; মুসলিম হা/৯১১)।
প্রশ্ন (৯২) : ঈদায়েনের ১২ তাকবীর তাকবীরে তাহরীমা সহ না ব্যতীত? এ বিষয়ে বিধান কি?
উত্তর : ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘অন্যান্য ছালাতের ন্যায় তাকবীরে তাহরীমার পরে দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ (‘ছানা’) পাঠের পর তাকবীরে তাহরীমা ও তাকবীরে রুকূ ব্যতিরেকে সাত তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বওমার তাকবীর বাদে পাঁচ তাকবীর দিবে’ (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ‘ছালাতুল ঈদের বিবরণ’ অধ্যায় ২/৭১ পৃ.)। ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘এটাই সর্বাধিক স্পষ্ট বরং নির্দিষ্ট যে, ওটা তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’ (মির‘আত ৫/৪৬ পৃ.)। কেননা তাকবীরে তাহরীমা হ’ল ফরয। যা সকল ছালাতেই দিতে হয়। আর এগুলি হ’ল অতিরিক্ত বা নফল তাকবীর। যা কেবল ঈদের ছালাতে দিতে হয়।
প্রশ্ন (৯৩) : রাসূল (ছাঃ) জীবনে কতবার ইতেকাফ করেছিলেন? শেষ বছরে কেন তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন?
উত্তর : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, কুরআন প্রতি বছর (রামাযানে) একবার  রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে পেশ করা হ’ত। অতঃপর মৃত্যুর বছরে দু’বার পেশ করা হয়। আর তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। অতঃপর মৃত্যুর বছরে ২০ দিন ইতিকাফ করেন। ২য় হিজরীতে ছিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ছাঃ) সকল রামাযানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। মৃত্যুর বছর জীবনের শেষ রামাযানে তিনি ২০দিন ইতেকাফ করেন (বুখারী হা/২০৪৪, ৪৯৯৮; মিশকাত হা/২০৯৯)। কিন্তু এক বছর স্ত্রীদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি ইতেকাফ করেননি। ফলে রামাযানের পরেই শাওয়াল মাসে তার ক্বাযা ই‘তেকাফ করেন (বুখারী হা/২০৪৫)।
আর জীবনের শেষ বছর বিশ দিন ইতেকাফ করার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে- যেমন (১) প্রতি রামাযানে জিব্রীল (আঃ) একবার কুরআন শুনাতেন। কিন্তু যে বছর মারা যান সে বছর দু’বার কুরআন শুনানোর কারণে বিশদিন ইতেকাফ করেন। (২) তিনি বেশী আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলেন। (৩) কারো মতে, তিনি ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সফরকালে ইতেকাফ করতে সক্ষম হননি। ফলে তার ক্বাযা স্বরূপ পরবর্তী রামাযানে তিনি বিশদিন ইতেকাফ করেছিলেন (হাকেম হা/১৬০২; ছহীহ ইবনু খুয়ায়মাহ হা/২২২৬, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৯৪) : এক রাত বা তিন রাত ই‘তেকাফ করা যাবে কি? সর্বনিম্ন কতদিন ই‘তেকাফ করা যায়?
উত্তর : ই‘তেকাফের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। বরং একটি দিনের জন্যও কেউ যদি আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ রাখে তাহ’লে সেটি ই‘তেকাফ হিসাবে গণ্য হবে। আর কেউ নির্দিষ্ট দিনের জন্য নিজেকে আটকে রাখার নিয়ত করলে সে দিনগুলো পালন করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮০০৬; আদ-দুর্রুল মুখতার ১/৪৪৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৪৮৯, ৬/৫৮১৪; আল-ইনছাফ ৭/৫৫৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৪৪১)।
প্রশ্ন (৯৫) : সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের আযানের সময় কি আলাদা?
উত্তর: সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের আযানের সময় আলাদা নয়। বরং সাহারীর শেষ সময়ই ফজরের আযানের সময়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় বেলাল (রাঃ) সাহারীর আযান দিতেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ফজরের আযান দিতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বেলালের আযান শুনে খাও, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতূমের আযান শুনতে পাও’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০)।
প্রশ্ন (৯৬) : ক্বিয়ামুল লায়েলের শুরু সময় কখন? এটা কি মাগরিবের পর থেকে শুরু করা যায়?
উত্তর : ক্বিয়ামুল লায়েলের সময় শুরু হয় এশার ছালাতের পর থেকে এবং অব্যাহত থাকে ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত (মুসলিম হা/৭৪৫; মিশকাত হা/১২৬১; ছহীহাহ হা/১০৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি মসজিদে জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন। প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ও মুছল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছালাত আদায় করেন (আবুদাঊদ হা/১৩৭৫; তিরমিযী হা/৮০৬, মিশকাত হা/১২৯৮)।
প্রচলিত অর্থে ‘ক্বিয়ামুল লায়েল’ বলতে রামাযানের শেষ দশকে রাত্রি জাগরণকে বুঝায়। এই সময় লায়লাতুল ক্বদর সন্ধানে অধিকহারে ইবাদত করতে হয়। যার উত্তম নমুনা হ’লেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম। যা উপরের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এই বাইরে যা কিছু বলা হয় বা করা হয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের আমলে তার কোন ভিত্তি নেই। যদিও হারামায়েনে আগ রাতে দশ দশ বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়া হয়। অতঃপর রাত ১-টা থেকে বিতর সহ তের রাক‘আত ‘তাহাজ্জুদ’ বা ‘ক্বিয়ামুল লায়েল’ করা হয়। ছহীহ বা যঈফ কোন হাদীছে রাসূল (ছাঃ) একই রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দু’টি আদায় করেছেন বলে প্রমাণ নেই। তিনি কখনো ১১ বা ১৩ রাক‘আতের ঊর্ধ্বে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন বলেও কোন প্রমাণ নেই। তিনি বলেছেন, তোমরা ছালাত আদায় কর, যেভাবে তোমরা আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (বুখারী হা/৬৩১)।
অতএব ঐ সময় অধিকহারে কুরআন তেলাওয়াত বা দো‘আ-দরূদ ও তাসবীহ পাঠে মনোনিবেশ করা উচিৎ। যারা মাসজিদুল হারামে থাকেন, তারা ১১ বা ১৩ রাক‘আত তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ-এর বাইরে অধিকহারে ত্বাওয়াফ করতে পারেন।
প্রশ্ন (৯৭) : নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ছিয়ামের সমতুল্য কোন ইবাদত নেই। এক্ষণে এটা কি ছালাতের থেকেও উত্তম।
উত্তর : প্রত্যেক আমল তার নিজ অবস্থানে উত্তম। রাসূল (ছাঃ) ব্যক্তি বা সময় আবার কখনো অবস্থার প্রেক্ষিতে একেকটি আমলকে উত্তম আমল বলেছেন। কখনো ছালাত, কখনো হজ্জ, কখনো জিহাদ আবার কখনো ছিয়াম। তবে ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত ছালাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাত। সুতরাং যার সাধ্য রয়েছে তা অধিকহারে আদায় করার সে যেন তাই করে’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৯০)। আর প্রশ্নোল্লেখিত নাসাঈ বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম সিন্ধী বলেন, প্রবৃত্তি দমনে এবং শয়তানী প্ররোচনা প্রতিহতকরণের ক্ষেত্রে বা অধিক ছওয়াবের ক্ষেত্রে এর সমতুল্য কিছুই নেই। এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, আত্মাকে মন্দকর্ম থেকে বিরত রাখা আর তা হ’ল তাক্বওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু’ (হুজুরাত ৪৯/১৩; ‘হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলান নাসাঈ’ অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (৯৮) : ছিয়াম অবস্থায় চোখে, কানে বা নাকে ড্রপ দেওয়া যাবে কি?
উত্তর :  চোখে ও কানে ড্রপ ব্যবহার করায় কোন বাধা নেই। কারণ তা কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না এবং দেহে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৫; মাজাল্ল¬াতু মাজমা‘ইল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/৯১৩)। তবে নাকে ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা আবশ্যক। যাতে তা কণ্ঠনালী অতিক্রম না করে (আবুদাঊদ হা/২৩৬৬, মিশকাত হা/৪০৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৫০)। স্মর্তব্য যে, ছিয়াম অবস্থায় খাদ্য নয় এরূপ বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। নবী করীম (ছাঃ) ছিয়াম অবস্থায় (আরোগ্যের জন্য) শিঙ্গা লাগাতেন (বুখারী হা/১৯৩৮, ১৯৩৯)। আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, আপনারা কি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিয়াম অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতে অপসন্দ করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, না। তবে দুর্বলতার বিষয়টি ভিন্ন (বুখারী হা/১৯৪০; মিশকাত হা/২০১৬)।
প্রশ্ন (৯৯) : ছিয়াম অবস্থায় ব্যথা বা জ্বর উপশমের জন্য সাপোজিটরী ও শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। কারণ এগুলো কোন খাদ্য নয় যা পাকস্থলীতে যায়। আর এগুলি রক্ত তৈরিতেও সহায়তা করে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৫; মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/৯১৩)।
প্রশ্ন (১০০) : ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় না খেয়ে ছিয়াম রাখায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে সাহারী না করে ঘুমিয়ে থাকা সুন্নাতের বরখেলাফ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা সাহারী খাও। কেননা তাতে বরকত রয়েছে’ (বুখারী হা/১৯২৩, মুসলিম হা/১০৯৫)। তিনি বলেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবদের ছিয়ামের পার্থক্য হ’ল সাহারী করা’ (মুসলিম হা/১০৯৬)। অর্থাৎ ইহূদী-নাছারারা সাহারী করে না, আমরা করি। তিনি আরও বলেন, সাহারী বরকতপূর্ণ খাদ্য। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। বরং একঢোক পানি হ’লেও তোমরা তা পান করো। কেননা আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ সাহারী গ্রহণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন (আহমাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৮৩)। তবে বাধ্যগত কারণে সাহারী খেতে না পারলেও ছিয়ামের নিয়ত করলে ছিয়াম আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (বুখারী, ফাৎহুল বারী ৪/১৭৫ হা/১৯২২-এর আলোচনা; নায়লুল আওত্বার ২/২২২)।
প্রশ্ন (১০১) : ছিয়াম অবস্থায় হস্তমৈথুন বা অনুরূপ কর্মের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে ছিয়াম নষ্ট হবে কি?
উত্তর : হস্তমৈথুন বা অন্য কোন উপায়ে বীর্য স্খলন করা নিষিদ্ধ। এটি কবীরা গোনাহ। আল্লাহ বলেন, যারা নিজ স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত অন্যকে কামনা করে, তারা সীমালংঘনকারী (মুমিনূন ২৩/৬-৭; মা‘আরিজ ৭০/৩০-৩১)। সুতরাং শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কেউ এই গর্হিত কর্মে লিপ্ত হ’লে তাকে তদস্থলে অন্য মাসে একটি ক্বাযা ছিয়াম আদায় করতে হবে। তবে তাকে কাফফারা দিতে হবে না। কেননা এটি সরাসরি সহবাসের মত নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩৪৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৫/২৫১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/২৫৬)।
প্রশ্ন (১০২) : ছিয়াম অবস্থায় বিমানে পশ্চিম দিকে গেলে দিন বড় হয়ে যায়, তাহ’লে আমি কি বিমানে বাংলাদেশের সময়ে ইফতার করব নাকি সেদেশের সময়ে ইফতার করব?
উত্তর : ইফতারের বিষয়টি সূর্যাস্তের সাথে সম্পর্কিত। অতএব যেদেশে অবস্থান করবে সে দেশে যখন সূর্য অস্তমিত হবে তখন ইফতার করবে। এক্ষণে বিমানে অবস্থানকালে যখন সূর্যাস্ত হ’তে দেখবে, তখন ইফতার করবে। যদিও দিন বড় হয়ে যায়। তবে দিন বড় হওয়ার কারণে ছিয়াম পালন করা কারো জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে গেলে ছিয়াম ভঙ্গ করবে এবং পরে সেটি ক্বাযা করে নিবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৩৬-১৩৭)।
প্রশ্ন (১০৩) : রামাযান মাসে পিল খেয়ে ঋতু বন্ধ রেখে ছিয়াম পালন করা যাবে কি?
উত্তর : বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে ডাক্তারের পরামর্শে শারীরিক কোন ক্ষতি না হ’লে এবং সন্তান ধারণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে ঔষধ ব্যবহার করে সাময়িকভাবে ঋতু বন্ধ রাখা যায় (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ছিয়াম অধ্যায় ফৎওয়া নং ৫৩; ১৫/২০০-২০১ পৃঃ)। তবে এথেকে বিরত থাকাই উত্তম। কারণ ফরয ছিয়াম পালনরত অবস্থায় নারীরা ঋতুবতী হ’লে রাসূল (ছাঃ) ছিয়াম ছেড়ে দিতে এবং তা পরবর্তীতে ক্বাযা করার নির্দেশ দিতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ঋতু অবস্থায় আমাদেরকে ছিয়াম ক্বাযা করার এবং ছালাত ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেওয়া হ’ত (মুসলিম হা/৩৩৫; মিশকাত হা/২০৩২, ক্বাযা ছিয়াম অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (১০৪) : রামাযানের দিনের বেলায় এন্ডোস্কপি পরীক্ষা করালে কি ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : এতে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়। এটির মাথায় একটি ক্যামেরা থাকে। যা দিয়ে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের ভিতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। যেহেতু এন্ডোস্কপি মেশিনে কোন মেডিসিন ব্যবহার করা বা পাকস্থলীতে কোন খাবার প্রেরণ করা হয় না, তাই এতে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। তবে যদি এটি প্রবেশ করানোর সময় কোন তরল পদার্থ পাইপের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয় এবং তা পাকস্থলীতে যায় তাহ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৩৭০-৭১)। এটি একটি কষ্টদায়ক পরীক্ষা হওয়ায় ছিয়াম ভঙ্গ করা উচিৎ এবং তা অন্য সময় ক্বাযা করা উত্তম।
প্রশ্ন (১০৫) : ছিয়াম অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ বা স্যালাইন দেওয়া হ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর : যেসব ইনজেকশন শুধুমাত্র প্রতিষেধক হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, সেসব ইনজেকশন ছিয়াম অবস্থায় নেয়া যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০২)। আর যেসব ইনজেকশন খাদ্য হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, তা জায়েয নয়। কারণ ছিয়াম মূলতঃ খাদ্য ভক্ষণ থেকে বিরত থাকার নাম। অতএব গ্লুকোস বা অনুরূপ স্যালাইন গ্রহণ করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/২৫২; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৪৬-১৫০)। প্রয়োজনে ছিয়াম ছেড়ে দিতে হবে এবং অন্য মাসে ক্বাযা আদায় করতে হবে (বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
প্রশ্ন (১০৬) : ছিয়াম অবস্থায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে পেটের খাবার বেরিয়ে এলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর: এমতাবস্থায় ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সাধারণভাবে বমি হ’লে ছিয়াম ক্বাযা করতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে এবং তদস্থলে একটি ছিয়াম ক্বাযা করতে হবে (তিরমিযী হা/৭২০, মিশকাত হা/২০০৭)।
প্রশ্ন (১০৭) : রামাযানে সফরের সময় তারাবীহর ছালাত আদায় করার বিধান কি?
উত্তর : সফরের সময় তারাবীহর ছালাত আদায় করা যায়। তবে এটি ওয়াজিব বা সুন্নাতে রাতেবার মত নয়। তাই কেউ পরিত্যাগ করলে দোষ নেই। আব্দুল্লাহ ইবন ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সফরে তার সওয়ারীর উপর ক্বিয়ামুল লায়লের ছালাত আদায় করতেন সওয়ারী যে দিকেই মুখ করুক না কেন (বুখারী হা/১০০০; মিশকাত হা/১৩৪০)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সফরে বা বাড়িতে কোন সময় ক্বিয়ামুল লায়েল পরিত্যাগ করতেন না। কোন কারণে ঘুম বিজয়ী হ’লে সকালে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিতেন (যাদুল মা‘আদ ১/৩১১)। অতএব সফরে ক্বিয়ামুল লায়েল সহ অন্যান্য নফল ছালাতগুলো ব্যক্তির ইচ্ছাধীন ব্যাপার। পড়লে ছওয়াব পাবে। আর না পড়লে গুনাহ হবে না (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৪০০-৪০১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/২০৬; ঊছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/১৫৯)।
প্রশ্ন (১০৮) : রামাযান মাসে একই ব্যক্তি সাহারী ও ফজরের আযান দিতে পারবে কি?
উত্তর : একই ব্যক্তির জন্য সাহারী ও ফজরের আযান দেওয়াতে কোন বাধা নেই। তবে সাহারীর আযানের সময় ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ বলবে না। কারণ সাহারী গ্রহণকারী ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীগণ যাতে উভয় আযানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন। তাছাড়া একই মসজিদে একাধিক মুওয়াযযিন থাকাতে কোন দোষ নেই। ওছমান (রাঃ)-এর আমলে মসজিদে নববীতে চারজন মুওয়াযযিন ছিলেন। অতএব পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের জন্য পাঁচজন মুওয়াযযিন নিয়োগ দিলেও কোন আপত্তি নেই (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ২/৬০-৬১)।
প্রশ্ন (১০৯) : মসজিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মসজিদ স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন পুরাতন মসজিদের জায়গা বিক্রি করা যাবে কি?
উত্তর : শারঈ কারণবশতঃ মসজিদ স্থানান্তর করলে পূর্বের জায়গা বিক্রি করা যাবে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ নতুন মসজিদে ব্যয় করা যাবে। ওমর (রাঃ)-এর যুগে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)। একদা মসজিদ হ'তে বায়তুল মাল চুরি হ'লে সে ঘটনা হযরত ওমর (রাঃ)-কে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয় (ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৩১/২১৭)। একদা ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ'লে তিনি বলেন, যদি মসজিদে স্থান সংকুলান না হয় এবং স্থানটি সংকীর্ণ হওয়ার কারণে তার চাইতে প্রশস্ত স্থানে মসজিদ স্থানান্তর করা হয়, অথবা মসজিদটি জীর্ণ ও বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহ'লে ঐ মসজিদ ও তার মাটি বিক্রি করে অন্যত্র নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠায় তা ব্যয় করতে হবে। যা আগের চাইতে অধিক কল্যাণকর হয়। এক্ষেত্রে 'মাছলাহাত'-কে অগ্রাধিকার দিতে হবে, 'প্রয়োজন'-কে নয়। যা অনেকসময় নিষিদ্ধ বস্ত্তকে সিদ্ধ করে। অতএব বাধ্য না হ'লেও অধিকতর কল্যাণ বিবেচনায় মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে। যেমন সংকীর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা থেকে মসজিদ সরিয়ে খোলা ও প্রশস্ত এবং রাস্তা সংলগ্ন স্থানে পুনঃস্থাপন করা। সেক্ষেত্রে পুরানো মসজিদ ও তার মাটি বিক্রি করে নতুন মসজিদে লাগাবে। কারণ এর মধ্যেই ওয়াকফকারীর জন্য অধিক নেকী রয়েছে। এমতাবস্থায় বিক্রীত জমিতে যেকোন বৈধ স্থাপনা করা যাবে (ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৩১ খন্ড ২১৬, ২২৪, ২২৭, ২৩৩ পৃঃ)।
প্রশ্ন (১১০) : মাসবূকের ছালাত কেমন হবে? বাকী ছালাত উচ্চৈঃস্বরে আদায় করবে না নিম্নস্বরে? মাসবূক কখন বাকী ছালাতের জন্য দাঁড়াবে?
উত্তর : কেউ ইমামের সাথে ছালাতের কিছু অংশ পেলে তাকে 'মাসবূক্ব' বলে। মুছল্লী ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সে অবস্থায় ছালাতে যোগদান করবে (তিরমিযী হা/৫৯১; মিশকাত হা/১১৪২)। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরানোর পরে মাসবূক্ব ছালাতের যে অংশটুকু বাদ পড়বে, সেটুকু পূর্ণ করবে' (মুত্তাফাক্ব 'আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮৬)। মাসবূক ব্যক্তি নিম্নস্বরে ক্বিরাআত করবে যাতে অন্য মুছল্লীর সমস্যা না হয় (আহমাদ; মিশকাত হা/৮৫৬, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (১১১) : সরকারী আইন অনুযায়ী ছেলেদের ও মেয়েদের বিবাহের বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর। এর পূর্বে বিবাহ করলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এক্ষণে এই আইন কি শরী'আত সম্মত? শরী'আতে বিবাহের শর্ত কি কি?
উত্তর : ইসলামী শরী'আতে বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন বয়স কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং আয়েশা (রাঃ)-এর ছয় বছর বয়সে রাসূল (ছাঃ) তাঁকে বিবাহ করেছিলেন এবং নয় বছর বয়সে বাসর করেছিলেন। (বুখারী, 'বিবাহ' অধ্যায়, হা/৫১৫৮)। সূরা তালাক ৪ নং আয়াতেও এর দলীল পাওয়া যায়। ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এ রীতি চালু ছিল। অতএব সরকারী আইন অনুযায়ী ছেলেদের ও মেয়েদের যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর নির্দিষ্ট করা শরী'আত সম্মত নয়। ইসলামী শরী'আতে বিবাহ বৈধ হওয়ার শর্ত হল, (১) পরস্পরে বিবাহ বৈধ এমন দু'জন ছেলে ও মেয়ে থাকা। (২) ঈজাব এবং কবূল। (৩) ছেলে ও মেয়ে উভয়ের সম্মতি (বুখারী, 'বিবাহ' অধ্যায়, হা/৫১৩৬)। (৪) মেয়ের অলী থাকা। (আবুদাউদ হা/২০৮৫)।
প্রশ্ন (১১২) : একজন দ্বীনদার ব্যক্তির পক্ষে ব্যাংকে চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ হবে কি?
উত্তর : স্পষ্ট সূদী বা সন্দেহযুক্ত সূদী ব্যাংকে চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ হবে না। সূদী কারবারে যে চার শ্রেণীর লোক সমানভাবে জড়িত, তারা হ'ল (ক) সূদ দাতা (খ) সূদ গ্রহীতা (গ) সাক্ষী (ঘ) লেখক (বুখারী হা/৫৯৬২, মুসলিম হা/১৫৯৮, বুলুগুল মারাম হা/৮১৬)। এমন ব্যাংকে চাকুরীরতগণ হারাম কাজে সহযোগিতা করছেন, যা আল্লাহ তা'আলা নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (১১৩) : কুনূতে রাতেবা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে বিশেষ করে ফজরের ছালাতে নিয়মিত পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : কুনূতে রাতেবা হ'ল যা বিতরের ছালাতে পড়া হয়। ফরয ছালাতে কুনূতে রাতেবা পড়া ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। ফজরের ছালাতে রাসূল (ছাঃ) কুনূতে রাতেবা পড়েছেন মর্মে যে হাদীছটি এসেছে তা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/১২৩৮)। আর কুনূতে নাযেলা যা যুদ্ধ, শত্রুর আক্রমণ প্রভৃতি বিপদের সময় অথবা কারুর জন্য বিশেষ কল্যাণ কামনায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বিশেষভাবে দো'আ পাঠ করতে হয়। এটি যেকোন ফরয ছালাতে পড়া যায় (মুসলিম হা/৬৭৮, নাসাঈ হা/১০৭৬)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)


আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)

--------------------------------------------------------------
(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন।


(2) মজার মজার ইসলামিক গজল ও অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।



-------------------------------------------------------------------
Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...