Search This Blog

Friday, July 29, 2022

ঘুমানোর দোয়া বনাম রাতের ইবাদত

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক

ঘুমানোর দোয়া বনাম রাতের ইবাদত

 


ভূমিকাঃ মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। ঘুমও এর ব্যতিক্রম নয়। যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ঘুমায়, তার ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়।

রাতে নিয়মমাফিক ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক। পর্যাপ্ত ও পরিমাণ মতো ঘুম দেহাবয়বে নিয়ে আসে একরাশ প্রশান্তি।

আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি তোমাদের রাত্রিকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী”। (সুরা নাবা, আয়াত: ০৯)।

আল্লাহ তাআলাও রাতে ঘুমাতে আদেশ দিয়েছেন এবং দিনে আয়-উপার্জনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

আল্লাহ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “রাতকে করেছি আবরণ, দিনকে করেছি জীবিকা উপার্জনের সময়”। (সুরা নাবা, আয়াত: ১০-১১)।

রাতে ঘুমানোর আগে কিছু করণীয়-বর্জনীয় কাজ রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলোঃ-

রাতে দেরি করে না ঘুমানোঃ

রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)।

তাই রাতের বেলা কোনো অহেতুক কাজ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, কোনো বিনোদন উপভোগে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত।

একাকী ঘরে না ঘুমানোঃ

কোনো ঘরে একা ঘুমানোর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)।

খোলা আকাশের নিচে না ঘুমানোঃ

আব্দুর রাহমান ইবনু ইয়ালা ইবনু শাইবান (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি দেয়ালবিহীন ছাদে রাত কাটালে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪১, বুখারীর আদাবুল মুফরাদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

রাতে নিরাপদে ঘুমানোর জন্য রাসুল (সা.) কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলোর ওপর আমল করলে একদিকে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, অন্যদিকে প্রিয় নবীর সুন্নত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে।

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রেখো, পান করার পাত্রগুলো বন্ধ করে রেখো, ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে রেখো আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদেরকে ঘরে আটকে রেখো। কারণ এ সময় জ্বিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। আর নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।’ ইবনু জুরাইজ এবং হাবীব (রহ.) ‘আত্বা (রহ.) হতে ‘‘কেননা এ সময় জ্বিনেরা ছড়িয়ে পড়ে’’ এর স্থলে ‘‘শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে’’ বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩১৬, ৩২৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(ক) খাবারের পাত্র ঢেকে রাখাঃ

রাতের বেলা ঘুমানোর আগে খাবারের পাত্র না ঢাকলে তাতে ইঁদুর, তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকা এসে হানা দিতে পারে। ফলে তা থেকে ছড়াতে পারে মারাত্মক রোগ।

ইতিহাসে ব্ল্যাক ডেথ বলে একটি অধ্যায় আছে, যাতে খাবারের মধ্যে ইঁদুরের ছড়ানো ভাইরাসে প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। রাতের বেলা আমরা ঘুমিয়ে পড়লে ইঁদুরের বিচরণ বেড়ে যায়। খাবারদাবার ভালোভাবে না ঢাকলে তারা আমাদের খাবারে এসে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

(খ) ঘরের দরজা বন্ধ রাখাঃ

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের দরজা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখা আবশ্যক। কারণ রাতে দরজা খোলা রেখে ঘুমালে চোর-ডাকাতের কবলে পড়তে হতে পারে।

(গ) নিদ্রাকালে বাতি নিভিয়ে দেওয়াঃ

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের চেরাগ, মোমবাতি, কয়েল ইত্যাদি নিভিয়ে দিতে হবে। কারণ এগুলো থেকে অনেক সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ঘরকে অন্ধকার করে নেওয়া জরুরি। কারণ অন্ধকার শরীর থেকে ঘুমের সময় মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে, যা শান্তির ঘুমের সহায়ক। মেলাটোনিন মাথায় পিনেয়াল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হওয়া এক বিশেষ ধরনের হরমোন, যা বুদ্ধি বাড়ায়। মাথার কাজ করার ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া এই হরমোনটি ক্যান্সার ও আলঝেইমারস কমাতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের সময়টা ঘর অন্ধকার রাখা খুবই দরকার।

(ঘ) বিছানা ঝেড়ে নেওয়াঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কোন ব্যক্তি শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোন কিছু আছে কিনা। তারপর পড়বেঃ

“বিসমিকা রাব্বি অযা’তু জানবী অবিকা আরফা’উহু ফাইন আমসাকতা নাফসী ফারহামহা অইন আরসালতাহা ফাহফাযহা বিমা তাহফাযু বিহী ইবা-দাকাস স্বা-লিহীন”।

(হে আমার রবব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কবয করে নেন তা হলে, তার উপর রহম করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযত করবেন, যেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযাত করে থাকেন)।  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২০, ৭৩৯৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪০১, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭৪, আহমাদ ৭৩১৩, ৭৭৫২, ৭৮৭৮, ৯১৭৩, ৯৩০৬, ৯৫৯৫, ইবনু হিব্বান ৫৫৩৪, দারেমী ২৬৮৪, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

চোখে সুরমা লাগানো

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতি রাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখে তিনবার এবং বাঁ চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস: ৪১)।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুরমা চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণু ধ্বংস করে। চোখে প্রবেশকৃত ধুলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণু ধ্বংস করে। চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া

রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত।

(ক) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় মহান আল্লাহকে স্মরণ করে রাত কাটায় (ঘুমায়) এবং রাতে জেগে আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দু’আ করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে জেগে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে উভয় হাত ও মুখ ধুয়ে পুনরায় ঘুমালেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শোয়ার পূর্বে সালাতের ন্যায় অযু করা

(ক) বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ যখন তুমি শোয়ার বিছানায় যেতে চাও, তখন তুমি সালাতের অযূর মত অযূ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১১, ২৪৭, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মাইমূনাহ (রাঃ) এর ঘরে রাত্রি অতিবাহিত করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে তাঁর প্রয়োজনাদি সেরে মুখ-হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জাগ্রত হয়ে পানির মশকের নিকট গিয়ে এর মুখ খুললেন। এরপর মাঝারি রকমের এমন অযূ করলেন যে, তাতে অধিক পানি লাগালেন না। অথচ পুরা ’উযূই করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন। তখন আমিও জেগে উঠলাম। তবে আমি কিছু বিলম্বে উঠলাম। এজন্য যে, আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তিনি আমার অনুসরণকে দেখে ফেলেন। যা হোক, আমি অযূ করলাম। তখনও তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।

সুতরাং আমি গিয়ে তাঁর বাম পার্শ্বে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমার কান ধরে তাঁর ডান দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিলেন। এরপর তাঁর তেরো রাক’আত সালাত পূর্ণ হলো। তারপর তিনি আবার কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডাকাতেও লাগলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমালে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন অযূ না করেই সালাত আদায় করলেন। তাঁর দু’আর মধ্যে এ দু’আও ছিলঃ

“আল্ল-হুম্মাজ আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাও, ওয়া ফী সামঈ নূরাও ওয়া আই ইয়ামীনী নুরাওঁ, ওয়া আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ, ওয়া ফাওকী নূরাওঁ, ওয়া তাহতী নূরাওঁ, ওয়া আমামী নূরাওঁ, ওয়া খালফী নূরাওঁ,ওয়া আয্যিমলী নূরাওঁ"

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার হৃদয়ে আলো দান কর, আমার চোখে আলো দান কর, আমার কানে বা শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর। আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছনে আলো দান কর এবং আমার আলোকে বিশাল করে দাও)।

কুরায়ব (রহ.) বলেন, এ সাতটি আমার তাবূতের মত। এরপর আমি ’আব্বাসের জনৈক পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করলেন এবং রগ, গোশত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করলেন এবং আরো দু’টির কথা উল্লেখ করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৬, ১১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৬৩, আহমাদ ২০৮৩, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শোয়ার সময় আল্লাহর নাম না নিলে তার উপর লাঞ্চনা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করলো না, সে কিয়ামতের দিন বঞ্চিত হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো আসনে বসলো অথচ সেখানে সে মহামহিমান্বিত আল্লাহকে স্মরণ করলো না, কিয়ামতের দিন সে বঞ্চিত হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৯,  ৪৮৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ডান কাত হয়ে শোয়া ও দোয়া পড়া

(ক) আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি পবিত্র হয়ে বিছানায় বিশ্রাম নিবে তখন তোমার ডান হাত মাথার নীচে রাখবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেনঃ

“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া অমূতু’’

(অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)।

অথবা,

"বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া"

(হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৪, ৬৩১২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬২))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা

“আল্ল-হুম্মা বিস্মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’’

(হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ করি ও তোমার নামেই জীবিত হই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮২, আহমাদ ২৩২৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবার তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ

“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’’

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরতেক মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করবেন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৯,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২৪, ৬৩১২, ৬৩১৪, ৭৩৯৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৭২, তিরমিযী ৩৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দো’আ পড়তেন,

“আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্বআমানা অ সাক্বা-না অকাফা-না অ আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মাল লা কা-ফিয়া লাহু অলা মু’বী”।

অর্থাৎ সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ কত এমন লোক আছে যাদের যথেষ্ট-কারী ও আশ্রয়দাতা নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৬, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯৬, আহমাদ ১২১৪২, ১২৩০১, ১৩২৪১, ১২৫৫২, ইবনু হিব্বান ৫৫৪০, শামায়িলে তিরমিযী ২১৯, সহীহ আল জামি ৪৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে নির্দেশ দিলেন। অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অসিয়ত করলেন যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি এ দু’আ পড়বেঃ

“আল্লা-হুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা, ওয়া ফাউওয়াদ্বতু আমরী ইলাইকা, ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া ইলাইকা, ওয়াআলজা’তু যাহ্রী ইলাইকা, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা। লা মালজা’আ ওয়ালা মান্জা মিনকা ইল্লা ইলাইকা। আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা ওয়াবিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা”

(হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণকে আপনার কাছে সমর্পণ করলাম, আর আমার বিষয় ন্যস্ত করলাম আপনার দিকে এবং আমার চেহারা আপনার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আপনার রহমতের আশায় এবং আপনার গযবের ভয়ে। আপনার নিকট ব্যতীত আপনার গযব থেকে পালিয়ে যাবার এবং আপনার আযাব থেকে বাঁচার আর কোন স্থান নেই। আপনি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস করছি এবং আপনি যে নবী পাঠিয়েছেন, আমি তাঁর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছি)।

যদি তুমি এ অবস্থায়ই মরে যাও, তবে তুমি স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৩, ৬৩১৫, ২৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬১, তিরমিযী ৩৫৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৫২৬, আহমাদ ১৮৫১৫, শু‘আবূল ঈমান ৪৩৮১, ইবনু হিব্বান ৫৫৩৬, সহীহাহ্ ২৮৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৩, সহীহ আল জামি ২৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন হাত মাথার নীচে রাখতেন, অতঃপর বলতেন,

“আল্ল-হুম্মা কিনী ’আযা-বাকা ইয়াওমা তাজমা’উ ’ইবা-দাকা, আও তাব্’আসু ’ইবা-দাকা’’

(হে আল্লাহ! আমাকে তোমার শাস্তি হতে বাঁচিয়ে রেখ, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনঃএকত্র করবে; অথবা (বলেছেন) যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে কবর হতে উঠাবে)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪০০, ২৪০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯৮, সহীহ আল জামি ৪৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিছানায় ঘুমানোর সময় বলতেন,

“আল্ল-হুম্মা রব্বাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়া রববাল আরযি ওয়া রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ফালিকল হাব্বি ওয়ান্ নাওয়া- মুনযিলাত্ তাওরা-তি, ওয়াল ইঞ্জীলি ওয়াল কুরআ-নি। আ’ঊযুবিকা মিন শাররি কুল্লি যী শাররি। আন্তা আ-খিযুন বিনা-সিয়াতিহী, আন্তাল আও্ওয়ালু, ফালায়সা কবলাকা শায়উন, ওয়া আন্তাল আ-খিরু, ফালায়সা বা’দাকা শায়উন, ওয়া আন্তায্ যা-হিরু, ফালায়সা ফাওককা শাইউন। ওয়া আন্তাল বা-ত্বিনু, ফালায়সা দূনাকা শায়উন, ইকযি ’আন্নিদ্দায়না, ওয়া আগ্নিনী মিনাল ফাকরি’’

(হে আল্লাহ! যিনি আসমানের রব, জমিনের রব, তথা প্রতিটি জিনিসের রব, শস্যবীজ ও খেজুর দানা ফেড়ে গাছ-পালা উৎপাদনকারী; তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী, আমি তোমার কাছে এমন প্রতিটি অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই যা তোমার অধিকারে রয়েছে। তুমিই প্রথম- তোমার আগে কেউ ছিল না। তুমিই শেষ- তোমার পরে আর কেউ থাকবে না। তুমি প্রকাশ্য- তোমার চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু নেই। তুমি অন্তর্যামী- তোমার চেয়ে গোপনীয়তা আর কিছু নেই। তুমি আমাকে ঋণমুক্ত করে দাও এবং দারিদ্র্যতা হতে বাঁচিয়ে রেখ [স্বচ্ছলতা দাও])। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪০০, সুনানে ইবনু মাজাহ ৩৮৭৩, আহমাদ ৮৯৬০, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২১২/৯২৩, সহীহ আল জামি ৪৪২৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূল আযহার আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে বিছানায় ঘুমানোর সময় বলতেন,

“বিস্মিল্লা-হি ওয়াযা’তু যাম্বী লিল্লা-হি, আল্ল-হুম্মাগফিরলী যাম্বী ওয়াখসা’ শায়ত্ব-নী ওয়া ফুক্কা রিহা-নী, ওয়াজ্’আল্নী ফিন্ নাদিয়্যিল আ’লা-’’

(আল্লাহর নামে, আল্লাহর উদ্দেশে আমি পার্শ্ব রাখলাম। হে আল্লাহ! তুমি আমার অপরাধ ক্ষমা করো। আমার কাছ থেকে শয়তানকে তাড়িয়ে দাও। আমার ঘাড়কে মুক্ত করো এবং আমাকে উচ্চাসনে সমাসীন করো)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৪, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৫৮, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুমানোর সময় বলতেন,

“আলহাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী কাফা-নী, ওয়াআ-ওয়া-নী, ওয়া আত্ব’আমানী, ওয়া সাকা-নী, ওয়াল্লাযী মান্না ’আলাইয়্যা ফাআফযালা ওয়াল্লাযী আ’ত্বা-নী ফাআজ্যালা, আলহাম্দুলিল্লা-হি ’আলা- কুল্লি হা-ল, আল্ল-হুম্মা রব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালীকাহূ, ওয়া ইলা-হা কুল্লি শাইয়িন আ’ঊযুবিকা মিনান্না-র’’

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার প্রয়োজন পূরণ করলেন, আমাকে রাতে আশ্রয় দিলেন, আমাকে খাওয়ালেন, আমাকে পান করালেন, যিনি আমার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলেন, অনেক অনুগ্রহ করলেন, যিনি আমাকে দান করলেন এবং যথেষ্ট দান করলেন। তাই সকল অবস্থায় আল্লাহর শুকর। হে আল্লাহ! যিনি প্রতিটি বস্তুর প্রতিপালক ও এর অধিকারী এবং প্রত্যেক বস্ত্তর উপাস্য। আমি তোমার কাছে জাহান্নামের আগুন হতে আশ্রয় চাই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৮, আহমাদ ৫৯৮৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৯৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঝ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছু কালেমা শিখিয়ে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলবো। তিনি বলেনঃ তুমি বলো,

“আল্ল-হুম্মা ‘আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি, ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ‘ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া শিরকিহী’’।

“হে আল্লাহ! আপনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা, প্রত্যেক বস্তুর রব ও মালিক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমার মনের কু-প্রবৃত্তি, শয়তানের খারাবী ও তার শিরকী থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’’

তিনি বলেনঃ হে আবূ বকর! তুমি এ কথাগুলো ভোরে, সন্ধ্যায় ও শোয়ার সময় বলবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭, আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ  ২৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শোয়ার সময় তাসবিহ পাঠ করা

(ক) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে ফাতিমাহ (রাঃ)-এর হাত ফোসকা পড়ে যাওয়ায় তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করেন। কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী থেকে ফাতিমাহ (রাঃ) একটি খাদেম চাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলেন, কিন্তু তাঁর দেখা না পেয়ে তিনি এ বিষয়ে আয়িশাহ (রাঃ)-কে জানিয়ে চলে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলে তিনি তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন সময় আমাদের নিকট উপস্থিত হলেন যখন আমরা ঘুমাতে যাচ্ছিলাম।

তাঁর আগমনে আমরা বিছানা থেকে উঠতে উদ্যত হলে তিনি বললেনঃ তোমরা স্বস্থানে থাকো। তিনি এসে আমাদের দু’জনের মাঝখানে বসলেন। এমন কি আমি তাঁর পায়ের শীতল পরশ আমার বুকে অনুভব করছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের দু’জনকে এমন একটি উত্তম পথ দেখাবো না যা তোমাদের পার্থিত জিনিসের চেয়ে উত্তম হবে? তা হলো, তোমরা শোয়ার সময় তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহমাদু লিল্লাহ ও চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার বলবে। আর এটা তোমাদের উভয়ের জন্য একটি খাদেমের চেয়ে অধিক উত্তম হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩১৮, ৩১১৩, ৫৩৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬২,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৭, আধুনিক প্রকাশনী-৫৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৫৭৬৬,  আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’টি বিষয় বা দু’টি অভ্যাসের প্রতি যে মুসলিম খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দু’টি সহজ কিন্তু তা আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হলোঃ

(১) প্রত্যেক সালাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদু লিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে। মুখে (পাঁচ ওয়াক্ত) এর সংখ্যা একশো পঞ্চাশ কিন্তু মীযানে তা এক হাজার পাঁচশো ।

(২) যখন শয্যায় যাবে চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ ও তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে। তা মুখে একশো কিন্তু মীযানে এক হাজার।

আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা হাতের আঙ্গুলে গণনা করতে দেখেছি। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! অভ্যাস দু’টো সহজ হওয়া সত্ত্বেও এর আমলকারীর সংখ্যা কম কেন? তিনি বললেনঃ তোমরা বিছানায় ঘুমাতে গেলে শয়তান তোমাদের কোনো লোককে তা বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর সালাতের মধ্যে শয়তান এসে তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং সে ঐগুলো বলার আগেই প্রয়োজনের দিকে চলে যায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে  শরীরে ফুঁ দেওয়া

(ক) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৭, ৫৭৪৮, ৬৩১৯, ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫০১৮, ৫৭৩৫, ৫৭৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮, আহমাদ ২৪২০৭, ২৪৩১০, ২৪৪০৬, ২৪৮০৭, ২৪৯৫৫, ২৫৬৫৭, ২৫৭৩১, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, যখনই নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ’সূরায়ে মু’আব্বিযাত’ পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন তাঁর রোগ কঠিন হয়ে গেল, তখন বারাকাত অর্জনের জন্য আমি এই সূরাহ পাঠ করে তাঁর হাত দিয়ে শরীর মাসহ (মাসেহ) করিয়ে দিতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১৬, ৪৪৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়াতুল কুরসি পড়া

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমাযানের যাকাত হিফাযত করার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে আঞ্জলা ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি খুব অভাবগ্রস্ত, আমার যিম্মায় পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। তিনি বললেন, আমি ছেড়ে দিলাম। যখন সকাল হলো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরা, তোমার রাতের বন্দী কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার, পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাই তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। ‘সে আবার আসবে’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির কারণে আমি বুঝতে পারলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কাজেই আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। সে এল এবং অঞ্জলি ভরে খাদ্র সামগ্রী নিতে লাগল। আমি ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা, আমি খুবই দরিদ্র এবং আমার উপর পরিবার-পরিজনের দায়িত্ব ন্যস্ত, আমি আর আসব না। তার প্রতি আমার দয়া হল এবং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ হুরাইরাহ! তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার তীব্র প্রয়োজন এবং পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, খবরদার সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। তাই আমি তৃতীয়বার তার অপেক্ষায় রইলাম। সে আবার আসল এবং অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্য সামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অবশ্যই নিয়ে যাব। এ হলো তিনবারের শেষবার। তুমি প্রত্যেকবার বল যে, আর আসবে না, কিন্তু আবার আস। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব। যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। আমি বললাম, সেটা কী? সে বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী (اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ)  আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে। তখন আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্যে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম। ভোর হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, গত রাতের তোমার বন্দী কী করল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আমাকে বলল যে, সে আমাকে কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবে যা দিয়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি আমাকে বললেন, এই বাক্যগুলো কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি তোমার বিছানায় শুতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী( اللهُ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ )  প্রথম হতে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সে আমাকে বলল, এতে আল্লাহর তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবেন এবং ভোর পর্যন্ত তোমার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। সাহাবায়ে কিরাম কল্যাণের জন্য বিশেষ লালায়িত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, এ কথাটি তো সে তোমাকে সত্য বলেছে। কিন্তু হুশিয়ার, সে মিথ্যুক। হে আবূ হুরাইরাহ! তুমি কি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথাবার্তা বলেছিলে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৩১১, ৩২৭৫, ৫০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ কিতাবুল ওয়াকালাহ অনুচ্ছেদ-১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ১৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়াতুল কুরসী

“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম”।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত নং ২৫৫)।

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া

(ক) আবূ মাসউদ আল-আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল-বাক্কারার শেষ দুই আয়াত রাতের বেলা তিলাওয়াত করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৪০, ৪০০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার দু’ হাজার বছর আগে আল্লাহ তা’আলা একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাব হতে পরবর্তীতে দু’টি আয়াত নাযিল করেছেন যা দ্বারা সূরা আল বাকারাহ্ শেষ করেছেন। কোন ঘরে তা তিন রাত পড়া হবে, অথচ এরপরও এ ঘরের কাছে শয়তান যাবে, এমনটা হতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৮২, আহমাদ ১৮৪১৪, দারিমী ৩৪৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩০৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৬৭, রাওযুন নায়ীর ৮৮৬, তা’লীকুর রাগীব ২/২১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুরা মুলক পড়া

কুরআনে সুরা আল–মুলক নামের একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। এটি ৬৭ নম্বর সুরা। এ সুরা পাঠের সীমাহীন ফজিলত রয়েছে।

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৫৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৮৭, শু‘আবূল ঈমান ২৫০৬, রাওদুন নাদীর ৬৪, তা’লীকুর রাগীব ২/২২৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রতি রাতে (রাতের যেকোনো সময়) সুরা মুলক তিলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাত। 

(খ) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা ‘আলিফ লাম মিম তানজিলুল কিতাব’ (সুরা আস-সাজদা) ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৮৯২, সহীহাহ ৫৮৫, আর-রওয ২২৭, মিশকাত তাহকীক সানী ২১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুরা কাফিরুন পড়া

ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাওফাল (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি ’’কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৫৫, তিরমিযী, আহমাদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঘুম থেকে উঠার দোয়া

হুযাইফাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর সময় বলতেনঃ

“আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আহইয়া ওয়া অমূতু’’

(অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি)। আবার তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ

’’আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর’’

(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরতেক মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করবেন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২৪, ৬৩১২, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৭২, তিরমিযী)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঘুম থেকে উঠার পর অন্যান্য দোয়াসমূহ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দু’আ বলে দিন যা আমি সকাল-সন্ধ্যায় পড়তে পারি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি পড়বে, ’

“আল্ল-হুম্মা ’আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্শাহা-দাতি, ফা-ত্বিরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, রব্বা কুল্লি শাইয়িন, ওয়া মালীকাহূ আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা, আ’ঊযুবিকা মিন্ শাররি নাফ্সী, ওয়ামিন শার্রিশ্ শায়ত্ব-নি, ওয়া শিরকিহী’’

(হে আল্লাহ! যিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রত্যেক জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে আমার মনের মন্দ হতে, শয়তানের মন্দ ও তাঁর শির্ক হতে আশ্রয় চাই।)

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এ দু’আ সকালে-সন্ধ্যায় ও ঘুমানোর সময় পড়বে।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৯২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬৭, আহমাদ ৬৩, দারিমী ২৭৩১, ২৬৮৯, ইবনু হিব্বান ৯৬২, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২০২/৯১৭, আল-কালিমুত তাইয়্যিব ২২, সহীহাহ  ২৭৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) আবূ হুরাইরা) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এই দো’আ পড়তেন,

“আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা অবিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর”।

(হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন)।

আর সন্ধ্যায় এই দো’আ পড়তেন,

“আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর”।

(হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হল, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৬৮,  সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, আহমাদ ৮৪৩৫, ১০৩৮৪, তিরমিযী ৩৩৯১, সহীহাহ ২৬৩, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২০, তাখরীজুল মিশকাত ২৩৮৯।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মিশকাতের বর্ণনা অনুযায়ী:-

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঘুম থেকে উঠে বলতেন,

“আল্ল-হুম্মা বিকা আসবাহনা-, ওয়াবিকা আমসায়না-, ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু, ওয়া ইলায়কাল মাসীর’’

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে সকালে [ঘুম থেকে] উঠি, তোমারই সাহায্যে আমরা সন্ধ্যায় পৌঁছি। তোমারই নামে আমরা জীবিত হই [ঘুম থেকে উঠি] ও তোমারই নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি [ঘুমাতে যাই]। আর তোমার কাছেই আমরা ফিরে যাব।)।

সন্ধ্যার সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

“আল্ল-হুম্মা বিকা আমসায়না-, ওয়াবিকা আসবাহনা-, ওয়াবিকা নাহ্ইয়া-, ওয়াবিকা নামূতু ওয়া ইলায়কান্ নুশূর’’

(হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্যে সন্ধ্যা বেলায় এসে পৌঁছি, তোমারই সাহায্যে সকালে উঠি। তোমারই নামে আমরা জীবিত হই, তোমারই নামে আমরা মৃত্যুবরণ করি। আর তোমারই দিকে আমরা পুনঃএকত্রিত হব)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৮৯, আবূ দাঊদ ৫০২৭, তিরমিযী ৩৩৯১, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১১৯৯/৯১৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২০, সহীহাহ্ ২৬৩, সহীহ আল জামি ৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুর রহমন ইবনু আবযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠে বলতেন,

’’আস্বাহনা-’আলা-ফিত্বরাতিল ইস্লা-মি ওয়া কালিমাতিল ইখলা-সি ওয়া ’আলা-দীনি নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদিন ওয়া ’আলা-মিল্লাতি আবীনা-ইব্রা-হীমা হানীফাওঁ ওয়ামা-কা-না মিনাল মুশরিকীন’’

(আমরা ইসলামের ফিত্বরাতের উপর ও কালিমায়ে তাওহীদের সাথে ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীনের উপর ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর মিল্লাতের উপর, আর তিনি মুশরিক ছিলেন না)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪১৫, আহমাদ ১৫৩৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৬৫৪০, দারিমী ২৭৩০, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৬, সহীহাহ্ ২৯৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) “আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”

হাদিসঃ-

শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া-

“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।

‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’

যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬, ৬৩২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আমসাইতু (সকালে বলতে হবে-আসবাহ্তু) উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা ‘আরশিকা ওয়া মালা-ইকাতিকা ওয়া জামী‘আ খালক্বিকা, আন্নাকা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহ্দাকা লা শারীকা লাকা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আব্দুকা ওয়া রাসূলুকা”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি সকালে উপনীত হয়েছি। আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল।”

যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন।

হাদিস:

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে বলতেনঃ অর্থ ’’আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং রাজ্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় প্রবেশ করেছে, সকল প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।’’

জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ ’’আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁরই জন্য সাম্রাজ্য, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। হে আমার রব! আমি আপনার নিকট এ রাতের কল্যাণ চাইছি এবং রাতের পরবর্তী কল্যাণও কামনা করছি। আর এ রাতের সকল প্রকার অমঙ্গল থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তারপরে যা আছে তার অমঙ্গল থেকেও মুক্তি চাচ্ছি।

হে আমার রব! আমি আপনার নিকট অলসতা, গর্ব-অহংকারের অনিষ্ট ও কুফরীর অনিষ্টট থেকে আশ্রয চাচ্ছি। হে রব! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের শাস্তি ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাইছি।’’ আর তিনি ভোরে উপনীত হয়েও এরূপ বলতেনঃ আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং ভোরে উপনীত হলো রাজ্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে...। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭১, বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১; নাসাঈ, ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নং ৯; ইবনুস সুন্নী ৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যা হলে বলতেন, ’

“আম্সায়না-ওয়া আম্সাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়ালহাম্দু লিল্লা-হি লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া ’আলা-কুল্লি শাইয়িন কদীর, রব্বী আস্আলুকা খয়রা মা-ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়া খয়রা মা-বা’দাহা-ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শার্রি মা- ফী হা-যিহিল লায়লাতি ওয়াশার্রি মা-বা’দাহা- রব্বী আ’ঊযুবিকা মিনাল কাসালি ওয়ামিন্ সূয়িল কিবারি আউইল কুফরি’’

(অর্থাৎ- আমরা সন্ধ্যায় এসে পৌঁছলাম এবং সমগ্র সাম্রাজ্য সন্ধ্যায় এসে পৌঁছল আল্লাহর উদ্দেশে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব ও শাসন, তাঁরই জন্য সব প্রশংসা। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমি তোমার কাছে চাই এ রাতে যা কল্যাণ আছে তা হতে, এরপরে যা আছে তার কল্যাণ হতে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এ রাতে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতে। এরপরে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতেও। হে রব! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অলসতা হতে ও বার্ধক্যের অকল্যাণ হতে; অথবা বলেছেন, কুফরীর অনিষ্টতা হতে।)।

আর অপর এক বর্ণনায় আছে, বার্ধক্যের অকল্যাণ ও দাম্ভিকতা হতে। হে পরওয়ারদিগার! আমি তোমার কাছে জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সকালে উঠতেন তখনও এ দু’আ পড়তেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পড়তেন,

“আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুলকু লিল্লা-হি’’

(আমরা সকালে এসে উপনীত হলাম। আর সমগ্র সাম্রাজ্যও আল্লাহর উদ্দেশে এসে উপনীত হলো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯২, আবূ দাঊদ ৫০৭১, তিরমিযী ৩৩৯০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।

হাদিসঃ-

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তেনঃ ‘‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দীন, আমার দুনিয়া, আমার পরিবার ও আমার সম্পদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমার লজ্জাস্থানকে গোপন রাখো, আমার ভয়কে শান্তিতে পরিণত করো এবং আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি্। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭৪, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) জুবায়র ইবনু আবূ সুলাইমান ইবনু জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু’আগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন নাঃ

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়াইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্তী”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৭১, নাসায়ী ৫৫২৯, ৫৫৩০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ২৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯২৭৮, আহমাদ ৪৭৮৫, ইবনু হিব্বান ৯৬১, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ১২০০/৯১৬, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ আয়্যাশ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে বলেঃ

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু , লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর”

 

(আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান)

এটা তার জন্য ইসমাঈল (আঃ) বংশীয় একটি গোলাম আযাদ করার সমান হবে, তার জন্য দশটি পুণ্য হবে ও দশটি পাপ মোচন করা হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বুলন্দ করা হবে এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তা বলে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফাযীলাত পাবে। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আবূ আয়্যাশ (রাঃ) আপনার নামে এই এই বলেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবূ আয়্যাশ সত্যিই বলেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৭৭, ইবনু মাজাহ, আহমাদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

"লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি শাইয়্যিন কদীর।"

(আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই; তিনি অদ্বিতীয়, তার কোন অংশীদার নেই, তারই রাজত্ব, তারই যাবতীয় প্রশংসা; তিনিই সব বিষয়ের উপর শক্তিধর)

যে লোক এ দু’আ প্রতিদিনে একশ’ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম মুক্ত করার পুণ্য অর্জন হয়, তার (আমলনামায়) একশ’ নেকী লেখা হয় এবং তার হতে একশ’ পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর তা ঐ দিন বিকাল পর্যন্ত শাইতান (শয়তান) (তার কুমন্ত্রণা) হতে তার জন্যে রক্ষাকারী হয়ে যায়। সেদিন সে যা পুণ্য অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশি পুণ্যবান কেউ হবে না। তবে কেউ তার চাইতে বেশি ’আমল করলে তার কথা আলাদা। আর যে লোক দিনে একশ’ বার

"সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবিহামদিহী"।

অর্থাৎ- ’আমি আল্লাহর সপ্রশংসা সহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি পাঠ করবে, তার সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) মু’আয ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সালাত পড়ার জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরা কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরা নাস ও ফালাক পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮২, তিরমিযী, নাসায়ী)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ট) শারীক আল-হাওযানী (রহঃ) বলেন, একদা আমি আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জেগে সর্বপ্রথম কোনো দু’আ পড়ার মাধ্যমে শুরু করতেন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছো, তোমার পূর্বে কেউই এ ব্যাপারে আমার নিকট জানতে চায়নি। তিনি যখন রাতে জাগতেন তখন দশবার আল্লাহু আকবার ও দশবার আলহামদুলিল্লাহ বলতেন। আর সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি দশবার ও সুবহানাল মালিকুল কুদ্দুস দশবার এবং আসতাগফিরুল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দশবার বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় অভাব, সংকীর্ণতা ও বিপদগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় চাইছি। এরপর তিনি সালাত শুরু করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৫, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঠ) “বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা-ইয়াদুররু মা”আ ইসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াস সামীউল আলীম”।

অর্থঃ আমি ঐ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে আরম্ভ করলে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই কোনোরুপ ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

হাদিসঃ-

আবান ইবনু ‘উসমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বান্দা প্রত্যেক সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বে,

‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’

(আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন)- কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, আবান পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এজন্য যারা হাদীস শুনছিলেন তারা তাঁর দিকে তাকাচ্ছিল। আবান তখন বললেন, আমার দিকে কী দেখছ? নিশ্চয়ই হাদীস যা আমি বর্ণনা করছি তাই, তবে যেদিন আমি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছি সেদিন এ দু‘আ পড়িনি। এ কারণে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছিলেন তা কার্যকরী হয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ। কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, সে রাতে তাঁর ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ ঘটবে না যে পর্যন্ত না ভোর হয়, আর যে তা ভোরে বলবে তার ওপর কোন আকস্মিক বিপদাপদ সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না সন্ধ্যা উপনীত হয়)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৯১, তিরমিযী ৩৩৮৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮৯৫, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৬৫৫, সহীহ আল জামি ৫৭৪৫, আহমাদ ৪৪৮, ৫২৯, তাখরীজুল মুখতার ২৯১, ২৯২, আত-তালীকুর রাগীব ১/২২৬, ২২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ বকর বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আব্বাজান! আমি আপনাকে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় তিনবার বলতে শুনিঃ

“আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফেনি বি বাসারি; লা ইলাহা ইল্লা আন্তা”।

(হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।

তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বাক্যগুলো দ্বারা দু’আ করতে শুনেছি। সেজন্য আমিও তার নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে তিনি বললেনঃ

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন ‘আযাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা”

(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই)।

তিনি এ দু’আ সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিনবার করে বলতেন। তাই আমিও তাঁর নিয়ম অনুসরণ করতে ভালোবাসি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দু’আ হলোঃ

“আল্ল-হুম্মা রহমাতাকা আরজূ ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বরফাতা ‘আইনিন ওয়া আছলিছ লী শা’নী কুল্লাহু”

(হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের নিকট সোপর্দ করবেন না এবং আমার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯০,  মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বা, ৯১৫৪; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ত) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে জেগে উঠে একশো বার বলবেঃ

“সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’’

এবং সন্ধ্যায় উপনীত হয়েও অনুরূপ বলে, তাহলে সৃষ্টিকুলের কেউই তার মত মর্যাদা ও সওয়াব অর্জনে সক্ষম হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৯১, মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ীর আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(থ) ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, কা’কা ইবনু হাকীম (রহঃ)...আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গত রাতে একটি বিছু আমাকে দংশন করার কারণে আমি বড় কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, যদি তুমি সন্ধ্যায় এ দু’আটি পড়তে

"আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা- খলাক"

(আমি পূর্ণাঙ্গ কালিমাহ দ্বারা আল্লাহর নিকট তার সৃষ্টির খারাবী থেকে পানাহ চাই’। তাহলে সে তোমাকে ক্ষতি করতে পারত না)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৩২, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৮৬, আহমাদ ৮৬৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, পিআইএস, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

..............................................................................................

এক সাথে সকল পর্ব দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

MSHRC

---------------------------------------------

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...