Search This Blog

Monday, November 21, 2022

নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? (দ্বিতীয় অংশ)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো?

(জান্নাত এতো সহজ নয়)

দ্বিতীয় অংশ

প্রথম অংশ দেখতে এখানে ক্লিক করুন (PMMRC)

দ্বিতীয় অংশ

কিছু কথাঃ নবি সাঃ এর উম্মত জাহান্নামে যাবে কেনো? এর প্রথম অংশ বিগত ১৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বইটির প্রথম অংশ হাজার হাজার পাঠকের নিকট সমাদৃত হয়েছে। আমার লিখিত প্রতিটি বইয়ে সর্বাধিক কুরআন ও সহিহ হাদিস তথা সর্বোচ্চ দলিল সংযোজন করেছি। যেসব আলেম ওয়াজ নসিহত করেন বা দাঈ হিসেবে কাজ করেন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন তাদের জন্যে বইগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো বিষয়ে অনর্গল রেফারেন্স দিয়ে বক্তব্য দিতে পারবেন। আশা করি, বইটি ধৈর্য্যসহকারে পড়বেন আর পড়তে গিয়ে যদি আপনার কোনো কর্মকান্ডের সাথে মিলে যায়, যা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে তাহলে তওবা করে সেই কর্মকান্ড ছেড়ে দিবেন, কারণ মৃত্যু যেকোনো মুহুর্তে হতে পারে। আসুন পড়তে থাকি।

সকল বই একসাথে পেতে চাইলে এই বইটির শেষে PMMRC-তে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় অংশ

(৯৪) মদ পান, মদের ব্যবসা, মদ উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকলেঃ

মদ এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। উল্লেখ্য যে, মদ কোন নির্ধারিত বস্তুর নাম নয়। যেসব বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয় তার অল্প বস্তুও মদ।

মদ পান বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে ইসলামি শরিয়াহ আইনে তাকে দুনিয়ায় নির্ধারিত শাস্তি প্রদান করতে হবে এবং পরকালেও তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিকির ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে কি তোমরা বিরত থাকবে”? (মায়িদাহ ৯০-৯১)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

“লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্য, তবে এদের পাপ উপকারের চেয়ে অধিক”। (সূরা বাকারা-২১৯)।

তিনি আরো বলেন,

“হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল”। (সুরা নিসা-৪৩)।

রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) সুওয়ায়দ ইবন নাসর (রহঃ)...ইবন সীরীন (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললোঃ সন্ধ্যায় লোক আমাদের জন্য পানীয় তৈরি করে, পরে আমরা তা ভোরে পান করি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললোঃ আমি তোমাকে মাদক দ্রব্য থেকে নিষেধ করছি, তা অল্প হোক বা অধিক। আর আমি তোমাকে আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিয়ে নিষেধ করছি -মাদকদ্রব্য থেকে; তা কম হোক বা বেশি। খায়বারবাসীরা অমুক অমুক বস্তু হতে মদ তৈরি করতো এবং তার এটা ওটা নাম রাখতো, অথচ প্রকৃতপক্ষে তা মদ, আর ফাদাকবাসীরা অমুক অমুক বস্তুর শরাব তৈরি করে তার এই নাম রাখে, অথচ তাও মদ। এভাবে তিনি চার প্রকার শরাবের কথা বললেন, এর মধ্যে একটা ছিল মধুর শরাব। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭১, সহীহ আল-জামি' ৭৩৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তোমরা মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ কর, কেননা তা নানা প্রকার অপকর্মের প্রসূতি। তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক আবেদ ব্যক্তি ছিল। এক কুলটা রমণী তাকে নিজের ধোঁকাবাজির জালে আবদ্ধ করতে মনস্থ করে। এজন্য সে তার এক দাসীকে তার নিকট প্রেরণ করে তাকে সাক্ষ্যদানের জন্য ডেকে পাঠায়। তখন ঐ আবেদ ব্যক্তি ঐ দাসীর সাথে গমন করলো। সে যখনই কোন দরজা অতিক্রম করত, দাসী পেছন থেকে সেটি বন্ধ করে দিত। এভাবে সেই আবেদ ব্যক্তি এক অতি সুন্দরী নারীর সামনে উপস্থিত হলো আর তার সামনে ছিল একটি ছেলে এবং এক পেয়ালা মদ। সেই নারী আবেদকে বললোঃ আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠাই নি, বরং এজন্য ডেকে পাঠিয়েছি যে, আপনি আমার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবেন, অথবা এই মদ পান করবেন, অথবা এই ছেলেকে হত্যা করবেন। সেই আবেদ বললোঃ আমাকে এই মদের একটি মাত্র পেয়ালা দাও। ঐ নারী তাকে এক পেয়ালা মদ পান করালো। তখন সে বললোঃ আরও দাও। মোটকথা ঐ আবেদ আর থামল না, যাবৎ না সে তার সাথে ব্যভিচার করলো এবং ঐ ছেলেকেও হত্যা করলো। অতএব তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা আল্লাহর শপথ! মদ ও ঈমান কখন সহাবস্থান করে না। এর একটি অন্যটিকে বের করে দেয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...উসমান (রাঃ) বলতেন, তোমরা মদ পরিত্যাগ কর। কেননা এটাই সকল অনিষ্টের মূল। তোমাদের পূর্ব যুগে এক ব্যক্তি ছিল। সে সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকত এবং লোক সংশ্রব হতে দূরে থাকত। এরপর পূর্বোক্ত ঘটনা বর্ণনা করে বললেনঃ তোমরা মদ পরিত্যাগ কর; কেননা, আল্লাহর শপথ! মদ এবং ঈমান কখনো সহাবস্থান করে না; বরং একটি অপরটিকে বের করে দেয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) সুওয়ায়দ ইবন নসর (রহঃ)...ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম এবং প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই খামর (মদ)। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৮২-৫৫৯৫, ৫৫৯৭, ৫৫৯৮, ৫৬০২, ৫৬৮৭, ৫৬৯৬, ৫৬৯৭, ৫৬৯৯, ৫৭০০, ৫৭০১, সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৯০, সহীহুল জামে ৪৫৫৩, সুনান আত তিরমিযি ১৮৬১, আহমাদ ৪৬৩০, ৪৮১৫, ৪৮৪৮, ৫৬১৬, ৫৬৯৭, ৫৭৮৬, ৬১৪৪, ৬১৮৩, ইরওয়া ৮/৪১, রাওদুন নাদীর ৫৪২-৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(চ) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৯৩, ৩৩৯৪, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮১, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬০৭, ৫৬০৮, ৫৬০৯, ৫৬৮৩, ৫৬৮৪, ৫৬৮৫, ৫৬৮৬, ৫৬৯৮, আহমাদ ১৪২৯৩, ইরওয়া ৮/৪৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ছ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নেশাদার দ্রব্য এবং তার মূল্য হারাম করেছেন। মৃতপ্রাণী ও তার মূল্য হারাম করেছেন। শূকর ও তার মূল্য হারাম করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(জ) আহমাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আলী (রহঃ)...আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামনে পাঠান। মুআয (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন এক দেশে পাঠাচ্ছেন, যেখানকার অধিবাসীগণ নানারকমের পানীয় ব্যবহার করে থাকে। আমরা কী পান করবো? তিনি বললেনঃ তোমরা পানীয় পান করবে কিন্তু ঐ পানীয় যাতে মাদকতা থাকে, তা পান করবে না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫৯৬, ৫৬০৩, ৫৬০৪, ৫৬০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) হিশাম ইব্‌ন আম্মার (রহঃ)...আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এবার আমি জানলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেছেন। আমি তাঁর ইফতারের সময় নবীয নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম, যা আমি তাঁর জন্য কদুর খােলে তৈরি করেছিলাম। তিনি বললেন, নিকটে আনো। আমি যখন তা নিকটে নিলাম, তখন তা গাজাচ্ছিল। এরপর তিনি বললেনঃ দেওয়ালে ছুঁড়ে মার। কেননা এটা ঐ ব্যক্তির পানীয় যে আল্লাহ এবং কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে না।

আবু আবদুর রহমান বলেনঃ এতে মাদকদ্রব্য হারাম হওয়ার প্রমাণ রয়েছে; অল্প হোক বা বেশি। এর বিপরীত সেই আত্মপ্রবঞ্চকদের এ কথা ঠিক নয় যে, পানপাত্রের সর্বশেষ চুমুকটি হারাম, আগে যা পান করেছে, তা হারাম নয়। জ্ঞানীজনের মধ্যে এই বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই যে, নেশা প্রথম বা দ্বিতীয় চুমুক বা কেবল শেষ চুমুকে আসে তা না; বরং সবগুলো চুমুকের সমষ্টি দ্বারাই নেশা সৃষ্টি হয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬১০, ইবন মাজাহ ৩৪০৯, নাসায়ী ৫৬১০, ৫৭০৪, সহীহাহ ৩০১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মদপান কী গুরুতর পাপ?

ঈসা ইবন হাম্মাদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না। মদখোর যখন মদ পান করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় মদ পান করে না। চোর যখন চুরি করে, তখন সে মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না। আর যখন কোন ডাকাত ডাকাতিতে লিপ্ত হয়, আর লোক চোখ তুলে দেখতে থাকে, তখন সেও মু’মিন অবস্থায় ডাকাতি করে না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৫৯, ৫৬৬০, সহীহুল জামে ৭৭০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মদপানকারীর পরকালীন শাস্তি

(ক)  আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না। (তারগীব হা/২৩৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৬, আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ)  ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নেশা উদ্রেককারী প্রত্যেক জিনিসই ’মদ’ আর প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসই হারাম। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এবং অবিরত পান করতে থাকে এবং তা থেকে তওবা্ না করেই মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে সে পরকালে তা (জান্নাতী সুপেয় মদ) পান করতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আননাসায়ী ৫৬৭৩, সুনান আততিরমিযী ১৮৬১, আহমাদ ৫৭৩০, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কুতায়বা (রহঃ)...জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ামানের জায়শান গোত্রের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মিযর নামক এক প্রকার পানীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, যা তারা তাদের দেশে পান করে থাকে এবং যা ভুট্টা হতে প্রস্তুত হয়। তিনি বললেনঃ তা কি মাদকতা সৃষ্টি করে? সে ব্যক্তি বললোঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা নির্ধারিত করে রেখেছেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে, তাকে ’তীনাতুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেনঃ তা হলো দোযখীদের ঘাম অথবা পুঁজ। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৭০৯, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৫–১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

(ঙ) আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন অল্লাহ তা’আলা অবশ্যি তাকে ’’রাদগাতুল খাবাল’’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ’রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। (সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৭, সুনান তিরমিযী ১৮৬২, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭০, নাসায়ী ৫৬৬৪, ৫৬৭০, আহমাদ ৬৬০৬, ৬৭৩৪, দারেমী ২০৯১, সহীহাহ ৭০৯, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ৯৩৯, তাখরীজুল ঈমান লি ইবনুস সালাম ৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান কারী মূর্তিপূজকের ন্যায় অপরাধী। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (ছ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা মদপানকারী জান্নাতে যাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৩, নাসায়ী ৫৬৭২, দারিমী ২১৩৮, সহীহাহ্ ৬৭৩, সহীহ আল জামি ৭৬৭৬, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(জ) আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঝ) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি‘ ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ঞ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। (১) সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পানকারী। (২) আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী। (৩) যাদুকে বিশ্বাসকারী’ (আহমাদ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/৩৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ট) আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...উরওয়া ইবন রুওয়ায়ম (রহঃ) বলেন, একদা ইবন দায়লামী (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ)-এর খোঁজে সওয়ার হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবদুল্লাহ্ ইবন আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদ সম্বন্ধে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তা’আলা তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল করবেন না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৪, সহীহাহ ৭০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) কুতায়বা ও আলী ইবন হুজুর (রহঃ)...মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন বিচারক যখন কোন উপঢৌকন গ্রহণ করে, তখন সে যেন হারাম খায়, আর যখন সে ঘুষ গ্রহণ করে, তখন সে কুফরী পর্যন্ত পৌছায়। মাসরুক (রহঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে, সে কাফির হয়ে যায়। তার কুফরী এই যে, তার নামায কবুল হয় না। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড)  আবু বকর ইবন আলী (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করলো, অথচ নেশাগ্রস্থ হলো না, তার নামায কবূল হবে না, যতক্ষণ ঐ মদ তার পেটে অথবা শিরায় অবস্থান করবে। যদি ঐ ব্যক্তি সে অবস্থায় মারা যায়, তবে তার চল্লিশ দিনের নামায কবূল হবে না। যদি সে এ অবস্থায় মারা যায়, তবে সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬৮, আত-তা'লীকুর রাগীব ৩/১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির ওপর লা’নাত করেছেন- ১। যে মদ তৈরি করে, ২। যে মদ তৈরির নির্দেশ দেয়, ৩। যে মদ পান করে, ৪। যে মদ বহন করে, ৫। যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, ৬। যে মদ পান করায়, ৭। যে মদ বিক্রি করে, ৮। যে মদের আয় উপভোগ করে, ৯। যে মদ ক্রয় করে, ১০। যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৬, তিরমিযী ১২৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ত)  কুতায়বা ও হারিস ইবন মিসকীন (রহঃ).. ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে মদ পান করে এবং পরে তাওবা না করে, আখিরাতে সে পবিত্র পানীয় হতে বঞ্চিত থাকবে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান ইবন মাজাহ ৩৩৭৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০০৩, সুনান আত তিরমিযী ১৮৬১, নাসায়ী ৫৬৭১, ৫৬৭৩, ৫৬৭৪, সুনান আবু দাউদ ৩৬৭৯, আহমাদ ৪৬৭৬, ৪৭১৫, ৪৮০৮, ৪৮৯৭, মুয়াত্তা মালেক ১৫৯৭, দারেমী ২০৯০, রাওদুন নাদীর ৫৬১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(থ) সুওয়ায়দ (রহঃ)...যাহহাক (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সব সময় মদ পান করা অবস্থায় মারা যায়, দুনিয়া ত্যাগকালে তার চেহারায় গরম পানির ছিটা দেয়া হয়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(দ)  আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিতঃ

‘যে ব্যক্তি মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না। (আহমাদ হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যত বাণী

(ক) আবু মালিক আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

আবূ মালেক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা’আলা এদেরকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২৯২, আহমাদ ২২৩৯৩, রাওদুন নাদীর ৪৫২, সহীহাহ ১/১৩৮-১৩৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯০৯১, নাসায়ী ৫৬৫৮, সহীহুল জামি‘ ৮০৯১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৩৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১৮০৯৮, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৯০, দারিমী ২১০০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১০৬৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৮৪৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদিস দ্বারা বুঝা গেলো যে, মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শূকর ও বানরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।

(খ) মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলামের সূচনা বা রাজত্ব শুরু হয়েছে নবী ও দয়া দ্বারা। তারপর রাজত্ব আসবে খেলাফত ও রহমত দ্বারা, তারপর আসবে অত্যাচারী শাসকদের যুগ। তারপর আসবে কঠোরতা, উচ্ছৃংখলতা, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর যুগ। এসব অত্যাচারী শাসকেরা রেশমী কাপড় পরিধান করা, অবৈধভাবে নারীদের লজ্জাস্থান উপভোগ করা এবং মদ পান করাকে হালাল মনে করবে। এরপরও তাদের প্রচুর রুযী দেয়া হবে। দুনিয়াবী যে কোন কাজে তাদের সাহায্য করা হবে। অবশেষে এ পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে। (বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৫১৪৩, হাদীছ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে- বিদ্যা উঠে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার (যিনা) বেড়ে যাবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীর সংখ্যা বেশি হবে এমনকি একজন পুরুষ পঞ্চাশজন নারীর তত্ত্বাবধায়ক হবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৪৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮০, ৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৪৫, সুনান আততিরমিযী ২২০৫, সহীহুল জামি ২২০৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ২৭৬৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৭২৮০, মুসনাদে আহমাদ ১৩১১২, ১২১১৮, ১২৩৯৫, ১২৬৮২, ১২৮১৮, ১৩৪৭০, ১৩৬৬৪, আবু ইয়া'লা ২৯৩১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৫৯০৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/২৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া  ও (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া। (উপদেশ ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

ইসলামি আইনে মদ পানকারী বা নেশাদার দ্রব্য গ্রহণকারীর দুনিয়ায় শাস্তি

কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই মদ পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে।

(ক)  আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

মদ পানকারী এ ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে দু’খানা ছড়ি (এক যোগে ধরে তার) দ্বারা চল্লিশের মত কোড়া মারলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ ১ম খলিফা আবু বাকর (রাঃ) এরূপ কোড়া মেরেছেন, উমার (রাঃ) তার খিলাফতকালে এ ব্যাপারে লোকদের সাথে পরামর্শ করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ বলেনঃ সর্বাপেক্ষা হালকা শাস্তি হচ্ছে আশি (কোড়া)। ‘উমার (রাঃ) ঐ (৮০-র) আদেশই জারি করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৭৩, ৬৭৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৪৪৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭০, আহমাদ ১১৭২৯, ১২৩৯৪, ১২৪৪৪, দারেমী ২৩১১। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) হুসাইন ইবনুল মুনযির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওয়ালিদ ইবনে উকবাকে উসমান (রাঃ) এর আদালতে আনা হলে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে তার (মদ্যপানের) অপরাধ প্রমাণিত হলে তিনি আলী (রাঃ)-কে বলেন, এই নিন আপনার চাচাতো ভাইকে এবং তার উপর হদ্দ কার্যকর করুন। আলী (রাঃ) তাকে বেত্রাঘাত করেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদ্যপকে) চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন, আবূ বকর (রাঃ)ও চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছেন এবং উমার (রাঃ) আশি বেত্রাঘাত করেছেন। এ সবই সুন্নাত। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮০, ৪৪৮১, আহমাদ ৬২৫, ১১৮৮, ১২৩৪, দারেমী ২৩১২, ইরওয়া ৩০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মু’আবিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদ পানকারী প্রসঙ্গে বলেনঃ যখন তা পান করবে তখন তাকে কোড়া মারো, তারপর পান করলে কোড়া মারো, তারপর ৩য় বার পান করলেও তাকে কোড়া মারো, তারপর ৪র্থ বার মদ পান করলে তার গর্দান কেটে দাও। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৮২, ৪৪৮৪,  সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৭২, ২৫৭৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৬৬২,  সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), আহমাদ ১৬৪০৫, ১৬৪১৭, ১৬৪২৭, ৭৭০৪, ৭৮৫১, ১০১৬৯, ১০৩৫১, দারেমী ২১০৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৮৭, সহীহাহ ১৩৬০। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) আবূ বকর ইবনু আবূ শইবাহ, যুহায়র ইবনু হারব, আলী ইবনু হুজুর ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) হাদীসের শব্দগুলো তারই (বর্ণনা করা), হুসায়ন ইবনু মুনযির আবূ সাসান (রহঃ)....হতে তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদকে তার কাছে আনা হল। সে ফজরের দু’রাকাআত সালাত আদায় করে বলেছিল, আমি তোমাদের উদ্দেশে আরো অধিক রাকাআত পড়ব। তখন দু’ব্যক্তি ওয়ালীদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল হুমরান। সে বলল, সে মদ খেয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে (মদ্যপানের কারণে)। তখন উসমান (রাযিঃ) বললেন, সে মদ খাওয়ার পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বললেন, হে ’আলী (রাযিঃ) আপনি উঠুন এবং তাকে বেত্ৰাঘাত করুন।

তখন আলী (রাযিঃ) হাসান (রাযিঃ) কে বললেন, হে হাসান! তুমি উঠ এবং তাকে বেত্ৰাঘাত কর। হাসান (রাযিঃ) বললেন, যে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে সে তার তিক্ততা ভোগ করুক। এতে যেন আলী (রাযিঃ) তার প্রতি মৰ্মাহত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু জাফর! তুমি উঠ এবং তাকে দুররা (বেত্ৰাঘাত) মার। তিনি তাকে দুররা মারলেন। আর আলী (রাযিঃ) তা গণনা করলেন। যখন চল্লিশটি দুররা মেরেছেন তখন আলী (রাযিঃ) বলেন, তুমি বিরত হও। এরপর তিনি বললেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্ৰাঘাত করেছেন এবং আবূ বকর (রাযিঃ)-ও তার খিলাফতকালে চল্লিশটি দুররা মেরেছেন। আর উমার (রাযিঃ) (তার খিলাফাত কালে) আশিটি দুররা মেরেছেন। আর এতদুভয় সংখ্যার প্রতিটিই সুন্নাত। তবে এটি (শেষোক্তটি) আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।

আলী ইবনু হুজুর (রহঃ) তার বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। ইসমাঈল (রহঃ) বলেন যে, আমি তা দানাজ থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু এখন তা আমার মনে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩০৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৩০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মদ দিয়ে চিকিৎসা করা হারাম

(ক)  উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা আল্লাহ তার হারামকৃত বস্তুর মধ্যে করেননি। (আত্-তালখীসুল হাবীর ৪/১৩৯৭, আল মুহাযযিব (৮/৩৯৬৬), মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৫/৮৯) শাকীক বিন সালাম থেকে, বুলগুলমারাম ১২৫১। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ) ওয়াইল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি কোন একসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাকে সুয়াইদ ইবনু তারিক অথবা তারিক ইবনু সুয়াইদ (রাঃ) মাদক দ্রব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। তিনি এটা ব্যবহার করতে তাকে নিষেধ করেন। তিনি (সুয়াইদ) বললেন, আমরা ঔষধ হিসাবে এটা ব্যবহার করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা কোন ঔষধ নয়, বরং এটা স্বয়ং একটা রোগ। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৮৭৩, আহমাদ ১৮৩১০, ১৮৩৮০, ২৬৫৯৬, বুলগুলমারাম ১২৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

মানব রচিত আইনে মদ পানের বৈধতা বা লাইসেন্স প্রদান

২৪ মে ২০১৫ তারিখে “যুগান্তর পত্রিকায়” প্রকাশিত এক তথ্য মতে, সারা দেশে মদের বার রয়েছে ১১৮টি। এর মধ্যে ক্লাব-বার ২৮টি। এসব ক্লাব-বারের বেশিরভাগই আবার ঢাকায়। রাজধানীতে ক্লাব বারের সংখ্যা ১৭টি। বাকিগুলো চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশালে।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে (০৮.৫১ PM Bdst) bdnews24.com  এ প্রকাশিত  এক তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকায় ৬০টি ক্যাসিনো আছে। এছাড়া অনেক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত যে, ক্যাসিনোর সংখ্যা কেউ বলছে ৬০টি, কেউ ১৫০টি, কেউ ৬০০টি।

১৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে “দৈনিক সংগ্রাম” পত্রিকায় প্রকাশিত-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) হিসেবে রাজধানীতে বৈধ মদের বার ৫০ থেকে ৬০টি এবং সিসা বার বা সিসা লাউঞ্জ রয়েছে ১০৫টি। অনেক বারের আইনি ভিত্তি থাকলেও সেখানে যে মদ বা সিসা বিক্রি হয় তার বেশির ভাগেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। নতুন বছরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের টার্গেট হচ্ছে এসব বার। এরই মধ্যে শতাধিক বারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকা ধরে শিগগিরই অভিযানে নামছে সংস্থাটি।

১৯ জুন ২০১৮ তারিখে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকায় প্রকাশিত, বর্তমানে সারা দেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা মাত্র ৯৬টি।

২৬ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে “শেয়ার বিজনেস” নামক পত্রিকায় প্রকাশিত- দেশে বর্তমানে মদপানের অনুমতি রয়েছে ১৪২২৩ জনের। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে ৮১০০ জনের। আর অনুমতিপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ৭২৩ জন। জেলা শহরের চেয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে কোমল পানীয় মদ পানকারী বেশি। কোনো কোনো জেলায় দেখা গেছে, ৫০ জনেরও নিচে মদ পানকারীর পারমিট রয়েছে।

যেভাবে মদপানের পারমিট বা লাইসেন্স করতে হয়

বংলাদেশে মদপানের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়োগ প্রাপ্ত সেটি হল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর/Narcotics Control Department. ঠিকানা: ৪৪১, তেজগাও শিল্পাঞ্চল। ঢাকা- ১২০৮।

লাইসেন্সর জন্য  নির্দিষ্ট ফরম পুরন করে এবং আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি সহকারে জমাদান সাপেক্ষে পারমিটের জন্য আবেদন করতে হয়।

নির্ধারিত পারমিট ফিঃ

(ক)  বিদেশী মদ/ ফরেন লিকিওর এর জন্য---- ২,০০০ টাকা

(খ) দেশী মদের জন্য-----------------------------৮০ টাকা

আনুষাঙ্গিক কাগজপত্রঃ

আবদনটির যৌক্তিকতা প্রমানে ডাক্তারি সার্টিফিকেট।

প্রিয় পাঠকঃ আমাদের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে মদ পান আইনীগতভাবে সম্পূর্ণ জায়েজ। মদের বারের সংখ্যা  ও মদ পানকারীর লাইসেন্স সংখ্যা সরকারি হিসেবে যাই থাকুক, আপনি খকন কোথায় মদ খেতে চান সেখানেই হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। শুধু মদই না যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য হাতের নাগালেই পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে মদ্যপান: নতুন অ্যালকোহল বিধিমালায় যা বলা হয়েছে

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা, প্রকাশঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২,

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে।

বাংলাদেশের নতুন অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী ২১ বছরের নীচে কেউ মদ্যপানের পারমিট পাবে না।

এ বিধিমালায় মূলত অ্যালকোহল জাতীয় মাদকদ্রব্য কোথায় বেচাকেনা হবে, মদ্যপায়ীরা কোথায় বসে মদ পান করবেন, পরিবহন করতে পারবেন কি না - এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে বলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

ফলে এখন থেকে অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয় বিক্রয় এবং সংরক্ষণের জন্য অ্যালকোহল পারমিট, লাইসেন্স বা পাস গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ করে মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় পানের জন্য পারমিট আর পরিবহনের জন্য পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ বিধিমালায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডঃ দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলছেন বিধিমালা না থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পারফিউম স্যানিটাইজার তৈরিতে কিংবা শিল্পে ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা অন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে।

"এবারই প্রথম বিধিমালা করা হলো। এর আগে এ সংক্রান্ত কোন বিধিমালা ছিলো না। শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি অ্যালকোহলের নামে খারাপ কিছু যেন বিক্রি না হয় আর সরকার যাতে রাজস্ব পায়- এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই বিধিমালা করা হয়েছে," বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই ইয়াবা, আইস বা মেথ, এক্সটেসি এবং এলএসডির মতো মাদকের ব্যাপক ব্যবহার ঠেকাতে মদ বা বিয়ারের ওপর শুল্ক কমানোসহ অ্যালকোহলে ছাড় দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

গত ডিসেম্বরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিলো।

ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে দেশে অ্যালকোহলের ওপর ৬০০ শতাংশ শুল্ক থাকায় যেসব ক্লাবের অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে তারা কেউ আমদানি করে না, কারণ ট্যাক্স দিতে হয় বেশি।

মিস্টার সাহা বলছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও এ বিষয়ে এনবিআরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

"আমরা মনে করি এনবিআর এটি বিবেচনা করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে," বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশে 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮' থাকলেও সেই আইনের আওতায় কোন বিধিমালা ছিলো না। মূলত ১৮৫৭ সালের ম্যানুয়ালই বিধিমালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো।

মিস্টার সাহা বলছেন এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে নানা কারণে প্রচুর বিদেশি বাংলাদেশে আসছে। ফলে অ্যালকোহলের চাহিদা অনেক বেড়েছে।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বিধিমালাটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ খাত থেকে সরকারের অনেক রাজস্ব আদায়ের সুযোগ আছে এবং তা নিয়েই এখন কাজ চলছে।

যা আছে নতুন বিধিমালায়

(ক) ২১ বছরের নীচে কোন ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোন ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।

(খ) হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

(গ) কোন এলাকায় একশ জন দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেয়া যাবে। অর্থাৎ কোন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশ জন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে।

(ঘ) অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদপ্তর থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যে কোনো পথেই অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে।

(ঙ) অ্যালকোহলে কোন ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে না।

(চ) পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন।

(ছ) কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুশো জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

(জ) ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

(ঝ) বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচ তারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

(ঞ) বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

(ট) বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতিমদ উৎপাদন করা যাবে।

(ঠ) সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।

(ড) সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোন বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।

(ঢ) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান করতে পারবেন।

(ণ) বিদেশী মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে।

(ত) বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে।

(থ) যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হবে সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে।

(দ) তবে পর্যটন কর্পোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আমদানি করতে পারবে না

(ধ) যে সব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদা ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিধিমালা সঠিকভাবে মানা হলে এটি যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়াবে, তেমনি ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিরসনে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বার স্থাপন করতে পারবে, যে সুযোগ এতদিন অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো।

এখন সরকারের অনুমোদিত কিছু ওয়্যার হাউজ, লাইসেন্সকৃত পানশালা ছাড়াও অল্প কিছু তারকা হোটেলগুলো থেকে মদ ক্রয়ের সুযোগ আছে পারমিটধারী ব্যক্তিদের জন্য।

তবে বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি কিংবা ভদকার মতো বিদেশি মদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় প্রায়শ ভেজাল মেশানো মদ্যপানের মতো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা, আল্লাহ ও রাসুল সাঃ যেখানে মদকে হারাম করেছেন আর আমরা মুসলিম রাজনৈতিক নেতাগণ ক্ষমতায় গিয়ে সেই মদের পারমিশন দিচ্ছি ও মদের প্রচলন ঘটাচ্ছি। বর্তমানে মদের ব্যাপকতা যেভাবে চালু হয়েছে সেখানে শুধু ওয়াজ করে এই পথ বন্ধ করা যাবে না। এই পথ বন্ধ করতে চাইলে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু সেকাজ করবে কে? যারা ক্ষমতায় আসেন তারাই তো মদের পাগল। এজন্যে প্রয়োজন এমন একটি ইসলামি দল যারা ক্ষমতায় গিয়ে অইন করে এই পথ বন্ধ করবে। এখন আপনি একজন ভোটার হিসেবে কোন পক্ষে থাকবেন, মদের পক্ষে নাকি মদের বিপক্ষে?

(৯৫) চুরি করলেঃ

চুরি এমন একটি মারাত্মক অপরাধ যা মানুষের ধন-সম্পদের নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘটায়।

অভিধানের পরিভাষায় চুরি বলতে কারোর কোন জিনিস সুকৌশলে লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় চুরি বলতে যথাযথভাবে সংরক্ষিত কারোর কোন মূল্যবান সম্পদ লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয় যা নিজের বলে তার কোন সন্দেহ নেই।

চুরি তো চুরিই। তবে তুচ্ছ কোন জিনিস চুরি করা যা অন্যের কাছে চাইলে এমনিতেই পাওয়া যায় তা হচ্ছে নিকৃষ্টতম চুরি। এ জাতীয় চোরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে লা’নত করেন।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, চোরের উপর আল্লাহর লা’নত হোক, যখন সে একটি হেলমেট চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়।

আ’মাশ (রহ.) বলেন, তারা মনে করত যে, হেলমেট লোহার হতে হবে আর রশির ব্যাপারে তারা ধারণা করত তা কয়েক দিরহামের সমমূল্যের হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৮৩, ৬৭৯৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৮৩, আহমাদ ৭৪৪০, ৭৩৮৮,  নাসায়ী ৪৮৭৩, ইরওয়া ২৪১০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এর চাইতেও আরো নিকৃষ্ট চুরি হচ্ছে হজ্জ কিংবা ’উমরাহ্ পালনকারীদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বা পথখরচা চুরি করা। তাতে পবিত্র ভূমির সম্মানও ক্ষুণ্ণ হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলার মেহ্মানদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণ কালীন নামায পড়ার সময় তাঁর সম্মুখে জাহান্নাম উপস্থাপিত করা হলে তিনি তাতে এ জাতীয় একজন চোর দেখতে পান। তিনি বলেন:

‘‘এমনকি আমি জাহান্নামে সে মাথা বাঁকানো লাঠি ওয়ালাকে দেখতে পেলাম যে নিজ নাড়িভুঁড়ি টেনে বেড়াচ্ছে। সে নিজ লাঠিটি দিয়ে হাজীদের আসবাবপত্র চুরি করতো। ধরা পড়ে গেলে সে বলতো: এটা তো আমার আংটায় এমনিতেই লেগে গেলো। আর কেউ টের না পেলে সে জিনিসটি নিয়ে চলে যেতো’’। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯০৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকে না

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসলামি আইনে চোরের শাস্তি

চুরি প্রমাণিত হলে এবং দেশের আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন প্রথমে তার ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে দিবে। এরপর আবার করলে বাম পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত কেটে দিবে। এরপরে আবারো চুরি করলে তার বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটতে হবে। এরপরে আবারো চুরি করলে তার ডান পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত কাটতে হবে। (দারাকুৎনী হা/৩৩৯২, ৩৪৯১; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৬০৬; ইরওয়া হা/২৪৩৩, ২৪৩৪)।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (মায়িদাহ্  ৩৮)।

(ক) ‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ)...আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক চতুর্থাংশ দীনার অথবা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ মূল্যের মাল চুরির দায়ে চোরের হাত কাটতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৮৯, ৬৭৯০, ৬৭৯১;  সুনান আততিরমিযী ১৪৪৫; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৮৪; ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৫১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭৯৫, ৬৭৯৬, ৬৭৯৭, ৬৭৯৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৪; সুনান আততিরমিযী ১৪৪৬; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৮৫, ৪৩৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৮৪, নাসায়ী ৪৯০৬, ৪৯০৭, ৪৯০৮, ৪৯০৯, ৪৯১০, আহমাদ ৪৪৮৯, ৫১৩৫, ৫২৮৮, ৫৪৯৩, ৫৫১৮, ৬২৮১, মুয়াত্তা মালেক ১৫৭২, দারেমী ২৩০১, ইরওয়া ৮/৬২, ২৪১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারোর চুরির ব্যাপারটি যদি বিচারকের নিকট না পৌঁছায় এবং সে এতে অভ্যস্তও নয় এমনকি সে উক্ত কাজ থেকে অতিসত্বর তাওবা করে নেক আমলে মনোনিবেশ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এমতাবস্থায় তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট না পৌঁছানোই উত্তম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘অনন্তর যে ব্যক্তি যুলুম তথা চুরি করার পর (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) তাওবা করে এবং নিজ আমলকে সংশোধন করে নেয় তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা পরম ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু’’। (মায়িদাহ্ ৩৮)।

আর যদি কোন ব্যক্তি চুরিতে অভ্যস্ত হয় এবং সে চুরিতে কারোর হাতে ধরাও পড়েছে তখন তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট অবশ্যই জানাবে। যাতে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে অপকর্মটি ছেড়ে দেয়।

কারোর নিকট কোনো কিছু আমানত রাখার পর সে তা আত্মসাৎ করলে এবং কেউ কারোর কোনো সম্পদ লুট অথবা ছিনতাই করে ধরা পড়লে চোর হিসেবে তার হাত খানা কাটা হবে না। পকেটমারের বিধানও তাই। তবে তারা কখনোই শাস্তি পাওয়া থেকে একেবারেই ছাড় পাবে না। এদের বিধান হত্যাকারীর বিধানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আমানত আত্মসাৎকারী, লুটেরা এবং ছিনতাইকারীর হাতও কাটা হবে না’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৯১, ৪৩৯২, ৪৩৯৩; সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৯১, ২৫৯২, সুনান আততিরমিযী ১৪৪৮; ইব্নু হিববান ১৫০২, আহমাদ ৩/৩৮০, নাসায়ী ৪৯৭১, ৪৯৭২, ৪৯৭৩, ৪৯৭৪, ৪৯৭৫, ৪৯৭৬, আহমাদ ১৪৬৫২, দারেমী ২৩১০, ইরওয়া ২৪০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ কারোর কোনো ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেয়ে ধরা পড়লে তার হাতও কাটা হবে না। এমনকি তাকে কোনো কিছুই দিতে হবে না। আর যদি সে কিছু সাথে নিয়ে যায় তখন তাকে জরিমানাও দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি গাছ থেকে ফল পেড়ে নির্দিষ্ট কোথাও শুকাতে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই কেউ চুরি করলো তখন তা হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।

মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা একটি গোলাম এক ব্যক্তির বাগান থেকে খেজুরের চারা চুরি করে এনে তার মনিবের বাগানে রোপণ করে। চারাগাছের মালিক তা খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় এবং এ গোলামের ব্যাপারে তৎকালীন মদীনার গভর্নর মাওয়ান ইবনুল হাকামের কাছে বিচার প্রার্থী হয়। মারওয়ান গোলামটিকে বন্দী করে রাখেন এবং তার হাত কাটতে মনস্থ করেন। অতঃপর গোলামটির মনিব রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তার নিকট বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না।

লোকটি বললো, মারওয়ান তো আমার গোলামকে ধরে রেখেছেন আর তার হাত কাটতে চাচ্ছেন। আমি চাই, আপনি আমার সাথে তার নিকট গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে যা শুনেছেন, তা তাকে জানাবেন। অতঃপর রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তার সঙ্গে মারওয়ান ইবনু হাকামের নিকট গিয়ে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ’ফল আর খেজুরের চারা চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে না।’ অতঃপর মারওয়ানের আদেশে গোলামটিকে ছেড়ে দেয়া হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৮৮; সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৯৩, ২৫৯৪, সুনান আততিরমিযী ১৪৪৯; ইব্নু হিববান ১৫০৫, আহমাদ ৩/৪৬৩, নাসায়ী ৪৯৬০, ৪৯৬১, ৪৯৬২, ৪৯৬৩, ৪৯৬৪, ৪৯৬৫, ৪৯৬৬, ৪৯৬৭, ৪৯৬৮, ৪৯৬৯, ৪৯৭০, আহমাদ ১৫৩৭৭, ১৫৩৮৭, ১৬৮০৯, ১৬৮৩০, ১৫৮৩, দারেমী ২৩০৪, ২৩০৫, ২৩০৬, ২৩০৭, ২৩০৮, ২৩০৯, ইরওয়া ২৪১৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমর ইবনে শু’আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। মুযায়না গোত্রের এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফল (চুরির অপরাধ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলেনঃ (গাছের মাথার) গুচ্ছ থেকে নিলে তার মূল্য এবং তার সাথে তার সমপরিমাণ দিতে হবে। আর খলিয়ান থেকে নিলে এবং তার মূল্য একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমাণ হলে হাত কাটা যাবে।

আর যদি শুধু খায়, নিয়ে না যায় তবে তার উপর কিছুই (জরিমানা) ধার্য হবে না। লোকটি বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! চারণভূমি থেকে বকরী নিয়ে গেলে? তিনি বলেনঃ তার মূল্য ও সাথে তার সমপরিমাণ দিতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হবে। আর বাথান থেকে চুরি করলে তার মূল্য যদি একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমাণ হয় তবে হাত কাটা যাবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৯৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৯০; হা’কিম ৪/৩৮০, সুনান আততিরমিযী ১২৮৯, সুনান আননাসায়ী ৪৯৫৮, ৪৯৫৯, ইরওয়া ২৪১৩, সহীহ আবু দাউদ ১৫০৪-১৫০৭। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কেউ কারোর কাছ থেকে কোন কিছু ধার নিয়ে তা অস্বীকার করলে এবং তা তার অভ্যাসে পরিণত হলে এমনকি বস্তুটি হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘জনৈকা মাখ্জূমী মহিলা মানুষ থেকে আসবাবপত্র ধার নিয়ে তা অস্বীকার করতো তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খানা কাটতে আদেশ করলেন’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৭৪, ৪৩৯৫, ৪৩৯৬, ৪৩৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৬৩, ইসলামিক সেন্টার ৪২৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে কোন কোন বর্ণনায় তার চুরির কথাও উল্লেখ করা হয়।

কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির কোনো কিছু চুরি করলে এবং তা হাত কাটা সমপরিমাণ হলে তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে।

বিচারকের কাছে আনার পূর্বেই চোরকে ক্ষমা করা জায়েয

সাফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের চাদরকে বালিশবৎ বানিয়ে তা মাথার নিচে রেখে মসজিদে ঘুমিয়েছিলেন। চোর তার মাথার নিচ থেকে তা চুরি করলো। তিনি তাকে প্রেপ্তার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি তো এটা চাইনি! আমার চাদর আমি তাকে দান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তাকে আমার কাছে আনার আগে কেন তা করলে না? (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৯৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৯৪;  নাসায়ী ৮/৬৯; আহমাদ ৬/৪৬৬; হা’কিম ৪/৩৮০ ইব্নুল জারূদ্, হাদীস ৮২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।

আবার কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন সকল কাফিরের সম্পদই হালাল যাদের সঙ্গে এখনো মুসলিমদের যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। মুসলিম এলাকায় বসবাসরত কাফির ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফির এদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কেউ কেউ তো আবার অন্যের ঘরে মেহমান হয়ে তার আসবাবপত্র চুরি করে। কেউ কেউ আবার ঠিক এরই উল্টো। সে তার মেহমানের টাকাকড়ি বা আসবাবপত্র চুরি করে। এ সবই নিকৃষ্ট চুরি।

আবার কোনো কোনো পুরুষ বা মহিলা তো এমন যে, সে কোনো না কোনো দোকানে ঢুকলো পণ্য খরিদের জন্য গ্রাহক বেশে অথচ বের হলো চোর হয়ে।

কেউ শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্তুটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে। সরাসরি দিক অথবা কোনো মাধ্যম ধরে। যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উহার মালিক বা তার ওয়ারিশকে পাওয়া না যায় তা হলে সে যেনো বস্তুটি অথবা বস্তুটির সমপরিমাণ টাকা মালিকের নামে সাদাকা করে দেয়। যার সাওয়াব মালিকই পাবে। সে নয়।

মানব রচিত আইনে চুরির শাস্তিঃ

শাস্তিঃ খোলা স্থান  থেকে চুরি হলে দঃবিঃ ৩৭৯ ধারা মোতাবেক শাস্তি হবে। আবদ্ধ স্থান থেকে চুরি হলে দঃবিঃ আইনের ৩৮০ ধারা মোতাবেক শাস্তি হবে। চাকর কর্তৃক চুরি হলে দঃবিঃ আইনের ৩৮১ ধারা মোতাবেক শাস্তি হবে।

বর্ণনাঃ

ধারা ৩৭০ বাসগৃহ ইত্যাদিতে চুরিঃ

যে ব্যক্তি, মনুষ্য বসবাস বা সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় এইরূপ অট্টালিকা, তাঁবু বা জাহাজে চুরি অনুষ্ঠান করে, সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে-যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে- দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।

ধারা ৩৭৯ চুরির শাস্তিঃ

৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো, যদি কোন ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোন জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেয়া হয়, আর যদি উক্ত মালামালসহ ঐ আসামী কে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তবে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয় ।

ধারা ৩৭৯ মোতাবেক যে ব্যক্তি চুরি করে, সেই ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদন্ডে-যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবে।

এছাড়াও দন্ডবিধি ৩৮২, ৩৫৬, ৩৬৯, ৪৬১, ৪৬২ ধারায় চুরির বিভিন্ন কারনে শাস্তির বিধান রয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, মানবরচিত আইনে চোরের শাস্তি তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সাজা দেয়া হয় কিন্তু তাতে চুরি নির্মূল হয় না। গ্রাম্য সিধকাটা চুরি থেকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ভবন পর্যন্ত চুরির ঘটনা বেড়েই চলছে। তবে অশিক্ষিত চোরের চেয়ে বর্তমানে শিক্ষিত চোরের সংখ্যা বেশী। রাঘববোয়াল চোরদের শাস্তি হতে দেখা যায় না। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ও রাজনৈতিক চোর নেতাদের শাস্তি চোখে পড়ে না।

ইসলাম চায় চিরতরে চুরি নির্মূল করতে, এজন্যে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ হাত পা কাটার বিধান তৈরী করে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ১/২ টি রাষ্ট্র ব্যতীত কোনো রাষ্ট্রে এই বিধান চালু নেই। এজন্যে মুসলিম রাজনৈতিক নেতাদের কিয়ামতে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং জবাবদিগিতা করতে হবে। ইসলামি আইনের এই বিধান তথা আল্লাহর হুকুম চালু করতে চাইলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সেই রকম নেতাদেরকেই বসাতে হবে যারা ক্ষমতায় গিয়ে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর বিধান মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এখন আপনি একজন ভোটার হয়ে অনৈসলামিক দলকে যদি ভোট দেন তাহলে তারা ক্ষমতায় গিয়ে আল্লাহ ও রাসুল সাঃ এর বিধানের বিপরীতে মানবরচিত বিধান চালু করবে, তাহলে আপনি নিজেই আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করলেন।

(৯৬) আত্মহত্যা করলেঃ

আত্মহত্যা একটি মহাপাপ। যেভাবেই সে আত্মহত্যা করুক না কেন। আত্মহত্যাকারী জাহান্নামী।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু’’। (নিসা ২৯)।

হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহ.) বলেন, জারীর ইবনু হাযিম (রহ.) আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন হাসান (রহ.) হতে, তিনি বলেন, জুনদাব (রাঃ) এই মসজিদে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন, আর তা আমরা ভুলে যাইনি এবং আমরা এ আশঙ্কাও করিনি যে, জুনদাব (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামে মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তির (দেহে) যখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬৪, ৩৪৬৩) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৮০ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাবিত ইবনু যাহহাক সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের (অনুসারী হবার) ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা হলফ করে সে যেমন বলল, তেমনই হবে আর যে ব্যক্তি কোন ধারালো লোহা দিয়ে আত্মহত্যা করে, তাকে তা দিয়েই জাহান্নামে ‘আযাব দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬৩, ৪১৭১, ৪৮৪৩, ৬০৪৭, ৬১০৫, ৬৬৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরকাল সে জাহান্নামের ভিতর ঐভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৭৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৯, আহমাদ ১০৩৪১০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাব) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬৫, ৫৭৭৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আত্মহত্যা জাহান্নামে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আগাম সংবাদ দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ’হুনাইন্ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। পথিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুসলিম সম্পর্কে বললেন: এ ব্যক্তি জাহান্নামী। যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো তখন লোকটি এক ভয়ানক যুদ্ধে লিপ্ত হলো এবং সে তাতে প্রচুর ক্ষত-বিক্ষত হলো। জনৈক ব্যক্তি বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! যার সম্পর্কে আপনি ইতিপূর্বে বললেন: সে জাহান্নামী সে তো আজ এক ভয়ানক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে মৃত্যু বরণ করলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন: সে জাহান্নামী। তখন মুসলিমদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে সন্দিহান হলো। এমতাবস্থায় সংবাদ এলো: সে মরেনি; সে এখনো জীবিত। তবে তার দেহে অনেকগুলো মারাত্মক ক্ষত রয়েছে। যখন রাত হলো তখন লোকটি আর ধৈর্য ধরতে না পেরে আত্মহত্যা করলো। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ দেয়া হলে তিনি বলেন: আল্লাহ্ সুমহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্ তা‘আলার বান্দাহ্ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল। অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) কে এ মর্মে ঘোষণা দিতে বললেন যে,

‘‘একমাত্র মু’মিন ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে আল্লাহ্ তা‘আলা কখনো কখনো কোন কোন গুনাহ্গার ব্যক্তির মাধ্যমেও ইসলামকে শক্তিশালী করে থাকেন’’। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯৭) সতী নারী কিংবা অন্যকে মিথ্যে অপবাদ দিলেঃ

মিথ্যে অপবাদ হলো কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮২৮, মুসলিম ৭০-(২৫৮৯), সহীহুল জামি ৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৪৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৫৮, শু‘আবুল ঈমান ৬৭১৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১৫১৮, আস্ সুনানুল কুবরা ২১৬৯৫, সুনানুদ্ দারিমী ২৭১৪, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪৯৩, আহমাদ ৮৯৮৫, তিরমিযী ১৯৩৪, আবূ দাঊদ ৪৮৯৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

‘‘নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা মু’মিন মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) রয়েছে মহা শাস্তি’’। (নূর  ২৩)।

(খ) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন,

‘‘যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তা হলে তোমরা ওদেরকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করো, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কারণ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (নূর  ৪-৫)।

(গ) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সমর্থনে যখন আয়াত অবতীর্ণ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে এসে দু’ জন পুরুষ ও একজন নারী সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাদের উপর হাদ্দ কার্যকর করা হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৭৪, সুনান আততিরমিযী ৩১৮১; সুনান ইবনে মাজাহ্ ২৬১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ)  আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘যারা নিজ স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো অথচ তাদের সপক্ষে তারা ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী নেই তা হলে তাদের প্রত্যেককে চার চার বার এ বলে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, সে নিশ্চয়ই সত্যবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার লা’নত পতিত হোক সে যদি এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হবে সে এ ব্যাপারে চার চার বার সাক্ষ্য দিলে যে, তার স্বামী নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। পঞ্চমবার সে এ কথা বলবে যে, তার উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব পতিত হোক যদি তার স্বামী এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাকে’’। (নূর ৬-৯)।

(ঙ) বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবাদের অভিযোগের দণ্ড স্বরূপ এক ব্যক্তিকে বন্দী করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৮৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৩০, সুনান আননাসায়ী ৪৮৭৬, সুনান আততিরমিযী ১৪১৭, ইরওয়া ২৩৯৭)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে, সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। (ফৎহুল বারী ১২/১৮১০)।

(৯৮) কোনো মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হলেঃ

কোন মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য হওয়াও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এ জাতীয় মহিলাদের জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েকটি শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

‘‘আর যে নারীদের তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও তথা আল্লাহ্ তা‘আলার আযাবের ভয়-ভীতি দেখাও, তাদেরকে শয্যায় পরিত্যাগ করো এবং প্রয়োজনে তাদেরকে প্রহার করো। এতে করে তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের ব্যাপারে আর অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সমুন্নত মহীয়ান’’। (নিসা ৩৪)।

কোন মহিলা তার স্বামীর প্রয়োজনের ডাকে সাড়া না দিলে যদি সে তার উপর রাগান্বিত হয়ে রাত্রি যাপন করে তা হলে ফিরিশ্তারা তার উপর লা’নত করতে থাকেন যতক্ষণ না সে সকালে উপনীত হয়।

 আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে। শুবা, আবূ হামযাহ, ইবনু দাউদ ও আবূ মু‘আবিয়াহ (রহ.) আ‘মাশ (রহ.) হতে হাদীস বর্ণনায় আবূ আওয়ানাহ (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৩৭, ৫১৯৩, ৫১৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৩৪৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৬, আহমাদ ৯৬৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন মহিলা নিজ স্বামীর সমূহ অধিকার আদায় না করলে সে আল্লাহ্ তা‘আলার সমূহ অধিকার আদায় করেছে বলে ধর্তব্য হবে না।

’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু’আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৮০, ইরওয়াহ ৭/৫৫-৫৬, আদাবুয যিফাফ ১৭৮, সহিহাহ ১২০৩, আহমাদ ৪/৩৮১,  ইব্নু হিববান/ইহ্সান  ৪১৫৯, বায়হাক্বী ৭/২৯২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

স্বামীর সন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জান্নাত এবং তার অসন্তুষ্টিতেই স্ত্রীর জাহান্নাম।

একদা জনৈকা সাহাবী মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার স্বামীর কথা উল্লেখ করলে তিনি তাকে বলেন:

‘‘ভেবে দেখো তার সাথে তুমি কি ধরনের আচরণ করছো! কারণ, সেই তো তোমার জান্নাত এবং সেই তো তোমার জাহান্নাম’’। (আহমাদ ৪/৩৪১, নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ইব্নু আবী শাইবাহ্ ৪/৩০৪, হাকিম ২/১৮৯, বায়হাক্বী ৭/২৯১)।

কোন মহিলা তার স্বামীর অবদানসমূহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি কখনো সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন মহিলার দিকে (সন্তুষ্টির দৃষ্টিতে) তাকান না যে নিজ স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না; অথচ সে তার স্বামীর প্রতি সর্বদাই মুখাপেক্ষিণী’’। (নাসায়ী/’ইশ্রাতুন্ নিসা’, হাদীস ২৪৯, ২৫০; হা’কিম ২/১৯০ বায়হাক্বী ৭/২৯৪ খতীব ৯/৪৪৮)।

কোন মহিলা তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিলে তার জান্নাতী অপরূপা সুন্দরী স্ত্রী তথা ’হূররা সে মহিলাকে তিরস্কার করতে থাকে।

মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার আয়তালোচনা হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকেঃ ওহে! আল্লাহ্ তোমার সর্বনাশ করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার নিকট অল্প দিনের মেহমান। অচিরেই সে তোমাকে ত্যাগ করে আমাদের নিকট চলে আসবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০১৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৪, সহীহা ১৭৩, আদাবুল যিফাফ ১৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ্ তা‘আলা, তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং স্বামীর আনুগত্যহীনতার কারণেই অধিকাংশ মহিলারা জাহান্নামে যাবে।

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি জান্নাতের অধিবাসী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে দরিদ্র লোক। জাহান্নামীদের সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছি, আমি জানতে পারলাম, এর বেশির ভাগ অধিবাসী নারী।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৪১, ৫১৯৮, ৬৪৪৯, ৬৫৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহ্‌র রাসূল? তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৪, ১৪৬২, ১৯৫১, ২৬৫৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯, আহমাদ ৫৪৪৩, আ.প্র. ২৯৩, ই.ফা. ২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯৯) কোন পুরুষের স্বর্ণ বা সিল্কের কাপড় পরিধান করাঃ

কোন পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা সিল্কের কাপড় পরিধান করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হারীর ও দীবাজ এতটুকু পরিমাণের অধিক ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। অতঃপর তিনি তার হাতের প্রথম আংগুল, এরপর দ্বিতীয়টি, এরপর তৃতীয়টি এবং এরপর চতুর্থটি দিয়ে ইশারা করলেন। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে রেশমী বস্ত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন  ৫৮২৮,  ৫৮২৯, ৫৮৩০, ৫৮৩৪, ৫৮৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩০৩-৫৩১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৯, নাসাঈ ৫৩১২, ৫৩১৩, আহমাদ ৯৩, ৩০৩, ৩২৩, ৩৫৮, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাম হাতে কিছু রেশমী বস্ত্র এবং ডান হাতে কিছু সোনা নিলেন এবং সেগুলোসহ তাঁর দু’ হাত উপরে তুলে বলেনঃ আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য এ দু’টির ব্যবহার হারাম এবং তাদের মহিলাদের জন্য হালাল। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৯৫, ৩৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৫৭, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭২০, ইরওয়া ২৭৭, আদাবুয যিফাফ ১৫০, গায়াতুল মারাম ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক লোকের হাতে একটি সোনার আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থান ত্যাগ করলে ব্যক্তিটিকে বলা হলো, তোমার আংটিটি উঠিয়ে নাও। এটি দিয়ে উপকার হাসিল করো। সে বলল, না। আল্লাহর কসম! আমি কক্ষনো ওটা নেব না। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো ওটা ফেলে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৯৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সোনা, রুপার প্লেট-বাটি এবং হাল্কা বা ঘন সিল্ক দুনিয়াতে কাফির পুরুষরাই ব্যবহার করবে। মুসলিমরা নয়। কারণ, তাদের জন্য তা প্রস্তুত রয়েছে আখিরাতে।

সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাহল ইবনু ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আশ’আস ইবনু কায়স (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উকায়ম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুযাইফাহ (রাযিঃ) এর সাথে মাদায়িনে ছিলাম। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) পানি পান করতে ইচ্ছা করলে গ্রাম্য এক পণ্ডিত তার কাছে রূপার বাসনে পানি নিয়ে আসলো। তিনি তা ফেলে দিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে (এটি ফেলে দেয়ার কারণ) অবগত করছি। তাকে আমি বারণ করেছিলাম, সে যেন এর মধ্যে আমাকে পানি পান না করায়। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সোনা ও রূপার বাসনে পান করবে না এবং মোটা রেশমী কাপড় ও মিহি রেশমী কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ ইহকালে এগুলো হলো কাফিরদের জন্য। আর তোমাদের জন্য এগুলো হবে পরকালে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫২৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪২৬, ৫৬৩২, ৫৬৩৩, ৫৮৩১, ৫৮৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৯০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৭৮, নাসায়ী ৫৩০১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৭২৩, আহমাদ ২২৮০৩, ২২৮৫৫, ২২৯২৭, ২২৯৫৪, দারেমী ২১৩০, ইরওয়া ৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২২০, ইসলামিক সেন্টার ৫২৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খালীফাহ ইবনু কা’ব হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইরকে খুতবায় বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরবে, আখিরাতে সে তা পরতে পারবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) লাল বর্ণের একটি হুল্লা (রেশম মিশ্রিত চাদর) দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাত দানকালে এবং জুমুআর দিন ব্যবহারের জন্য যদি আপনি এটা কিনতেন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এটা এমন লোকে পরতে পারে, আখেরাতে যার কোন অংশ নেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৬, ৯৪৮, ২১০৪, ২৬১২, ২৬১৯, ৩০৫৪, ৫৮৪১, ৫৯৮১, ৬০৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৮, নাসায়ী ১৩৮২, ১৫৬০, ৫২৯৫, ৫২৯৯, ৫৩০৬, ৫৩০৭, ৫৩০৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৬, ৪০৪০, আহমাদ ৪৬৯৯, ৪৭৫৩, ৪৯৫৮, ৫০৭৬, ৫১০৪, ৫৩৪১, ৫৭৬৩, মুয়াত্তা মালেক ১৭০৫, গায়াতুল মারাম ৭৯, সহীহ আবু দাউদ ৯৮৭, ইরওয়া ২৭৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমরান ইবনু হিত্তান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ -এর নিকট রেশম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস কর। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম; তিনি বললেন, ইবনু ’উমারের নিকট জিজ্ঞেস কর। ইবনু ’উমারকে জিজ্ঞেস করলাম; তিনি বললেন, আবূ হাফস অর্থাৎ ’উমার ইবনু খাত্তাব বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ায় যে ব্যক্তিই রেশমী কাপড় পরবে, তার আখিরাতে কোন অংশ নেই। আমি বললামঃ তিনি সত্য বলেছেন। আবূ হাফস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করেননি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৩৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১০০) কাউকে ওজনে কম দিলেঃ

ওজনে কম দেয়া কবিরা গুনাহ। আল্লাহ বলেন,

“তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না”। (সূরা আর-রহমান ৭-৯)।

 অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিই না।’ (সূরা আনআম ১৫২)।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যশস্য দু’বার ওজন না দেয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। একটি হলো বিক্রেতার ওজন, অপরটি হলো ক্রেতার ওজন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এব ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এধরণের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

“যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে”। (সূরা মুতাফফিফিন ১-৬)।

ওজনে কম দিলে রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪০১৯, সহীহাহ ১০৬, সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

রাসুল সাঃ বলেন,

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসেন তখন লোকেরা মাপে কারচুপি করতো। অতএব মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) ’’মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়’’ (৮৩:১)। এরপর থেকে তারা ঠিকভাবে ওযন করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১০১) কারোর জমিনের সীমানা পরিবর্তন করলেঃ

কারোর জমিনের সীমানা ঠেলে তার কিয়দংশ নিজের অধিকারভুক্ত করে নেয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

যুহায়র ইবনু হারব ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ).....আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ’আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৬২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৮, আহমাদ ২৯১৩, ’হা’কিম ৪/১৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালিম (রহ.)-এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও নিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নীচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেয়া হবে। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহ.) কর্তৃক খুরাসানে রচিত হাদীসগ্রন্থে এ হাদীসটি নেই। এ হাদীসটি বসরায় লোকজনকে শুনানো হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫৪, ৩১৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০২) মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করাঃ

মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

 আল্লাহ বলেন,

 “অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে”। (আহযাব ৩৩/৫৮)।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’ প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘এ উম্মতের মধ্যে শেষ যুগে এমন কিছু লোক পরিলক্ষিত হবে যাদের সাথে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। তারা সকালে বের হবে আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেলে ফিরবে আল্লাহ্ তা‘আলার ক্রোধ নিয়ে’’। (আহমাদ ৫/২৫০; ’হা’কিম ৪/৪৩৬ ত্বাবারানী, হাদীস ৮০০০)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

 আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০, ৬৪৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০, আহমাদ ৬৭৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০৩) কোনো বেগানা পুরুষের সামনে কোনো মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করলেঃ

পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের দেহ সজ্জিত করা এবং সতর আবৃত করার মাধ্যম। ইসলামে পেশাকের গুরুত্ব অপরিসীম। এর দ্বারা লজ্জা নিবারণের পাশাপাশি এটা ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রকৃতি অনুভব করা যায়।

আল্লাহ বলেন,

 “হে আদাম সন্তান! আমরা তোমাদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাক্বওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম। ওটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে”। (আ‘রাফ ৭/২৬)।

রাসুল সাঃ বলেন,

মুয়াবিয়াহ আল কুশাইরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের লজ্জাস্থানের কতখানি ঢেকে রাখবো, আর কতখানি খুলে রাখবো? তিনি বলেনঃ তোমার লজ্জাস্থান আপন স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হেফাজত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার অভিমত কী যে, লোকেরা যদি একত্রে বসবাস করে? তিনি বলেনঃ যদি তুমি তা কাউকে না দেখিয়ে পারো, তবে অবশ্যই তা দেখাবে না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নির্জন থাকে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ অধিক অগ্রগণ্য যে, মানুষের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি লজ্জাশীল হতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২০, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৬৯, ২৭৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০১৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৭, আহমাদ ২০০৩৪, ইরওয়া ১৮১০, সহীহ আল জামি ২০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কোনো বেগানা পুরুষের সামনে কোন মহিলার খাটো, স্বচ্ছ কিংবা সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরিধান করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’ প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্তমান যুগে এমন সংকীর্ণ কাপড়-চোপড় পরা হচ্ছে যে, বলাই মুশকিল, তা সেলাই করে পরা হয়েছে না কি পরে সেলানো হয়েছে। আবার এমন খাটো কাপড়ও পরা হয় যে, বলতে ইচ্ছে হয়: যখন লজ্জার মাথা খেয়ে এতটুকুই খুলে দিলে তখন আর বাকিটাই বা খুলতে অসুবিধে কোথায়? আবার এমন খোলা কাপড়ও পরিধান করা হয় যে, বাতাস তাদের মনের গতি বুঝে তা উড়িয়ে দিয়ে তাদের সবটুকুই মানুষকে দেখিয়ে দেয়। তখনই তাদের লুক্কায়িত প্রদর্শনেচ্ছা সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়। আবার কখনো এমন স্বচ্ছ কাপড় পরিধান করা হয় যে, তা পরেও না পরার মতো। বরং তা পরার পর মানুষ তাদের দিকে যতটুকু তাকায় পুরো কাপড় খুলে চললে ততটুকু তাকাতো না।

(১০৪) বেগানা কোন মহিলার সাথে কোন পুরুষের মুসাফাহা করলেঃ

বেগানা কোনো মহিলার সাথে কোনো পুরুষের মুসাফাহা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘তোমাদের কারোর মাথায় লোহার সুঁই দিয়ে আঘাত করা তার জন্য অনেক শ্রেয় বেগানা কোন মহিলাকে স্পর্শ করার চাইতে যা তার জন্য হালাল নয়’’। (সহীহুল্ জা’মি ৪৯২১)।

কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিষ্কার। তাঁকে আমি মা, খালা অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তা হলে মুসাফাহা করতে অসুবিধে কোথায়। আমরা তাদেরকে বলবো: আপনার চাইতেও বেশি পরিষ্কার ছিলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্তর। এরপরও তিনি যে কোন বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহা করতে অস্বীকৃতি জানান।

রাসুল সাঃ কখনো নারীর হাত স্পর্শ করেননি।

’উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহ.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার নারী যখন হিজরত করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসত, তখন তিনি আল্লাহরএ নির্দেশঃ- “হে মু’মিনগণ! ঈমানদার নারীরা যখন তোমাদের কাছে হিজরত করে আসে তখন তাদেরকে পরখ করে দেখ’’ অনুসারে তাদেরকে পরখ করতেন। (তারা সত্যিই ঈমান এনেছে কি না).....আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।’’ (সূরাহ আল-মুমতাহিনাহ ১০)।

“আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ ঈমানদার নারীদের মধ্যে যারা আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত। তাই যখনই তারা এ সম্পর্কে মুখে স্বীকারোক্তি করত তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলতেন যাও, আমি তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করেছি। আল্লাহর কসম! কথার দ্বারা বাই’আত গ্রহণ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত কখনো কোন নারীর হাত স্পর্শ করেনি। আল্লাহর কসম! তিনি কেবল সেসব বিষয়েই বাই’আত গ্রহণ করতেন, যে সব বিষয়ে বাই’আত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাই’আত গ্রহণ শেষে তিনি বলতেনঃ আমি কথা দ্বারা তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করলাম”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ৫২৮৮, ২৭১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৯৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬, আহমাদ ২৬৩৮৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৫) ।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘নিশ্চয়ই আমি কোন বেগানা মহিলার সাথে মুসাফাহা করতে রাজি নই’’। (সহীহুল্ জা’মি’ ৩৫০৯, ৭০৫৪)।

বর্তমান সমাজে এমনো কিছু আত্মমর্যাদাহীন লোক রয়েছে যাদের নেককার স্ত্রী, মেয়ে ও বোনেরা বেগানা পুরুষের সাথে মুসাফাহা করতে রাজি নয়; চাই তা লজ্জাবশত হোক অথবা ঈমানী চেতার দরুন; তবুও এ ধর্মহীন লোকেরা তাদেরকে উক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। তাদের এ কথা মনে রাখা উচিৎ যে, একবার যদি তাদের লজ্জা উঠে যায় দ্বিতীয়বার তা ফিরিয়ে আনা অবশ্যই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারেও এ কথা চিন্তা করা দরকার যে, যার লজ্জা নেই তার ঈমানও নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘লজ্জা ও ঈমান একই সূত্রে গাঁথা। তার মধ্যে একটি ফসকে গেলে অন্যটিও ফসকে যাবে অবশ্যই’’। (সহীহুল্ জামি ৩২০০)।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জা-সন্ত্রম হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হচ্ছে দুর্ব্যবহারের অঙ্গ, আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারীর) জায়গা জাহান্নামে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০০৯, সহীহাহ ৪৯৫, রাওযুন নায়ীর ৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০৫) কোনো মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দিলেঃ

কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার হতে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ জাতীয় ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সত্যিকার অর্থেই দরিদ্র।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ’আলী ইবনু হুজর (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ’আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৮১, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন মজুরকে কাজে খাটিয়ে তার মজুরি না দেয়ার কয়েকটি ধরন রয়েছে যা নিম্নরূপঃ

(ক) সরাসরি তার মজুরি দিতে অস্বীকার করা। তাকে এমন বলা যে, তুমি আমার কাছে কোন মজুরিই পাবে না।

(খ) পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী তার মজুরি না দেয়া। বরং নিজ ইচ্ছা মতো তার মজুরি কিছু কম দেয়া।

(গ) কাগজপত্রে নির্দিষ্ট মজুরি বা বেতন উল্লেখ করে অন্য দেশ থেকে কাজের লোক নিয়ে এসে তাকে এর কম মজুরিতে চাকুরি করতে বাধ্য করা। অন্যথায় তাকে নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানোর হুমকি দেয়া; অথচ সে অনেকগুলো টাকা খরচ করে এখানে এসেছে।

(ঘ) কোন মজুরকে নির্দিষ্ট কাজ বা নির্দিষ্ট সময় চাকুরি করার জন্য নিয়ে এসে তার সাথে নতুন কোন চুক্তি ছাড়া তাকে অন্য কাজ বা বাড়তি সময় চাকুরি করার জন্য বাধ্য করা।

(ঙ) মজুরের মজুরি দিতে দেরি করা; অথচ সে তার মজুরি সময় মতো পেলে তা অন্য কাজে খাটিয়ে আরো লাভবান হতে পারতো।

(১০৬) চুল বা দাঁড়িতে কালো রং করলেঃ

চুল বা দাঁড়িতে কালো রং লাগানো আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শেষ যুগে এমন সম্প্রদায়ের আর্বিভাব হবে, যারা কবুতরের গলায় থলের ন্যায় কালো রঙের খেযাব লাগাবে। তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২১২, নাসায়ী ৫০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারোর মাথার চুল বা দাঁড়ি সাদা হয়ে গেলে তাতে কালো ছাড়া যে কোন কালার লাগানো সুন্নাত।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই ইয়াহুদী ও নাসারাগণ চুল-দাঁড়িতে খেযাব লাগায় না। কাজেই তোমার তাদের বিপরীত করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আবূ কুহাফাকে আনা হলো। এ সময় তার মাথার চুল ও দাঁড়ি সাগামাহ (গাছের) মত একেবারে সাদা ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খেযাব লাগিয়ে এগুলো পরিবর্তন করো কিন্তু কালো রঙ বর্জন করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২০৪, নাসায়ী ৫০৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত মেহেদি, জাফরান ও অর্স (লাল গোলাপের রস) দিয়ে কালার করতেন।

আবূ রিম্সাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ও আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমার পিতাকে বলেন: এ ছেলেটি কে? তখন আমার পিতা বললেন: সে আমারই ছেলে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি তার সাথে অপরাধমূলক আচরণ করো না। আবূ রিম্সাহ্ বলেন: তখন তাঁর দাঁড়ি মেহেদি লাগানো ছিলো।

 ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাকা চামড়ার তৈরী জুতা পরতেন এবং তাঁর দাঁড়িতে ওয়ারস ঘাসের রস ও জাফরান লাগাতেন। ইবনু উমার (রাঃ)-ও এরূপ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ বার্ধক্য পরিবর্তনের সবচেয়ে উত্তম রঙ হলো মেহেদি ও কাতাম (কালো রঙ নিঃসারক উদ্ভিদ)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২০৫; সুনান আননাসায়ী ৫০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০৭) কাউকে খারাপ কোনো নামে ডাকলেঃ

কাউকে খারাপ কোন নামে ডাকা আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

কজন মানুষের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বমহলে চিরচেনা শব্দ হলো তার ‘নাম’। এমনকি মানুষ মারা গেলেও দুনিয়াতে অন্যদের মুখে মুখে রয়ে যায় তার নাম। একজন মানুষের কাছে তার সুন্দর নামটি হীরার চেয়েও দামি। কিন্তু এ নাম নিয়ে বর্তমান সমাজে প্রায়ই ব্যঙ্গ (ট্রল) করতে দেখা যায়।

বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বন্ধু মহলে একে অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকতে দেখা যায়। নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

ইসলামি শরিয়ত এভাবে মানুষের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মারাত্মক গুনাহ ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘তোমরা অন্য কোন মুসলিম ভাইকে কোন কিছুর অপবাদ দিও না এবং কোন খারাপ নামেও ডেকো না। কারণ, কারোর জন্য ঈমান আনার পর ফাসিকী উপাধিটি খুবই নিকৃষ্ট। যারা উক্ত অপকর্ম থেকে তাওবা করবে না তারাই তো সত্যিকারার্থে যালিম’’। (’হুজুরাত  ১১)।

কোন মানুষকে এমন কোন উপাধিতে ভূষিত করা যা শুনলে তার মনে কষ্ট আসে তা সকল আলিমের মতেই হারাম। চাই তা সরাসরি তারই ভূষণ হোক অথবা তার পিতা-মাতার। যেমন: কানা, অন্ধ ইত্যাদি অথবা কানার ছেলে, লম্পটের ছেলে ইত্যাদি।

মহানবি (সা.) বলেছেন, এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (মুসনাদে আহমাদ : ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)।

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪২, ৬৯৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০৮) কারোর অনুমতি ছাড়া তার ঘরে উঁকি মারলেঃ

কারোর অনুমতি ছাড়া তার ঘরে উঁকি মারা কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক কোন গোত্রের ঘরে তাদের নির্দেশ ছাড়া উকি মারে, তাহলে তার চোখে আঘাত করা তাদের জন্য জায়িয হয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু আবূ উমার (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যদি বিনা অনুমতিতে তোমার প্রতি উঁকি দেয় আর তুমি তাকে পাথর মেরে তার চোখ ফুঁড়ে দাও, তাতে তোমার কোন গুনাহ হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... সাহল ইবনু সা’দ আস-সাইদী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরজার একটি ছিদ্র দিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটি (মাথার চুল আঁচড়ানো) চিরুনি ছিল, যা দ্বারা তিনি তার মাথা আচড়াচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি যদি জানতাম যে, তুমি আমাকে দেখছ তাহলে নিশ্চয়ই তা দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা দিতাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেনঃ চোখের জন্যেই তো অনুমতির বিধান করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৩, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বর্তমান যুগে মানুষের ঘর-বাড়িগুলো একটার সাথে অন্যটা লাগোয়া এবং ঘরের দরোজা-জানালাগুলো পরস্পর মুখোমুখী হওয়ার দরুন একের পক্ষে অন্যের ঘরে উঁকি দেয়া খুবই সহজ। অতএব এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তা‘আলার ভয় প্রত্যেকের অন্তরে জাগিয়ে তুলতে হবে। তা হলেই এ গুনাহ্ থেকে সকলের বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। অন্যথায় নয়। উপরন্তু এতে করে অন্য মুসলিম ভাইয়ের সম্মানহানি এবং প্রতিবেশীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়।

(১০৯) পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে বিবাহ্ করলেঃ

পিতার মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীকে তথা সতাই মাকে বিবাহ্ করা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা’’। (নিসা ২২)।

 ইয়াযীদ ইবনু বারাআ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন তার সঙ্গে একটি ঝান্ডা ছিলো। আমি তাকে বলি, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে তার পিতার স্ত্রীকে (সৎ মাকে) বিয়ে করেছে। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন তাকে হত্যা করতে এবং তার সম্পদ নিয়ে আসতে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১০) কোনো পুরুষের জন্য অন্য কোনো পুরুষের সতর এবং কোনো মহিলার জন্য অন্য কোনো মহিলার সতর দেখলেঃ

কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর দেখা এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা হারাম। আর কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন মহিলার সতর দেখা তো অবশ্যই হারাম তা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সতর বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মানব শরীরের যে অঙ্গ দেখা অন্যের জন্য হারাম উহাকেই বুঝানো হয়।

বিশুদ্ধ মতে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর হাত, পা, ঘাড় ও মাথা ছাড়া তার বাকি অংশটুকু তথা গলা বা ঘাড় থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অনুরূপভাবে কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন বেগানা মহিলার পুরো শরীরটিই সতর। তবে কোন পুরুষের জন্য তার কোন মাহ্রাম (যাকে চিরতরে বিবাহ্ করা তার জন্য হারাম) মহিলার সতর ততটুকুই যতটুকু কোন মহিলার জন্য অন্য কোন মহিলার সতর।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১১) কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হলেঃ

কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাহরাম আত্মীয়ের সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকে হত্যা করো এবং যে ব্যক্তি পশুর সাথে সঙ্গম করে তোমরা তাকেও হত্যা করো এবং পশুটিও হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৪, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৫, ৮/৩৩০, দারাকুতনী ৩/১২৭, ইরওয়া ৮/১৪-১৫, ২৩৪৮, ২৩৫২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৯, যইফ আল-জামি ৫৮৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১১২) কোনো অন্ধকে পথভ্রষ্ট করলেঃ

কোনো অন্ধকে পথভ্রষ্ট করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্’র লা’নত সেই ব্যক্তির উপর যে কোন অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে’’। (আহমাদ ১/২১৭; আবূ ইয়া’লা ২৫২১; ইব্নু হিববান ৪৪১৭ ’হাকিম ৪/৩৫৬; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬ বায়হাক্বী ৮/২৩১)

(১১৩) কাফিরদের সাথে যেকোনোভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখলেঃ

কাফিরদের সাথে যেকোনোভাবে মিল ও সাদৃশ্য বজায় রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘মু’মিনদের কি এখনো আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও অবতীর্ণ অহীর সত্য বাণী শুনে অন্তর বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি ?! উপরন্তু তারা যেন পূর্বেকার আহলে কিতাবদের মতো না হয় বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর যাদের অন্ত:করণ কঠিন হয়ে পড়েছিলো। মূলতঃ তাদের অধিকাংশই তো ফাসিক’’। (’হাদীদ  ১৬)।

উক্ত আয়াতে যদিও তাদের ন্যায় অন্তরকে কঠিন বানাতে নিষেধ করা হয়েছে যা একমাত্র গুনাহ্’রই কুফল তবুও যে কোনভাবে তাদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখাও শরীয়তে নিষিদ্ধ। যা বিপুল সংখ্যক হাদীস ভান্ডার কর্তৃক প্রমাণিত। যার কিয়দংশ বিষয় ভিত্তিক নিম্নে প্রদত্ত হলো:

সালাত সংক্রান্ত:

 ই’য়ালা ইবনু শাদ্দাদ ইবনু আওস থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত কর। তারা জুতা এবং মোজা পরে সালাত আদায় করে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৫২, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), হাকিম (১/২৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু ’উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অথবা ’উমার (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের কারো নিকট দু’টি কাপড় থাকলে সে যেন ঐগুলি পরেই সালাত আদায় করে। আর একটি মাত্র কাপড় থাকলে সে যেন তা কোমরে বেঁধে নেয় এবং ইয়াহূদীদের ন্যায় দু’ কাঁধে ঝুলিয়ে না রাখে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৩৫, আহমাদ (২/১৪৮, হাঃ ৬৩৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাওম সংক্রান্ত:

বশীর খাস্বাস্বিয়াহ্ (রাঃ) এর স্ত্রী লাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি দু’ দিন লাগাতার রোযা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী বশীর তা আমাকে করতে দেয়নি। বরং তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:

‘‘এমন কাজ তো খ্রিস্টানরাই করে। তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবিক রোযা রাখবে এবং তাঁর নির্দেশ মোতাবিকই তা সম্পূর্ণ করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: তোমরা রাত পর্যন্ত রোযা সম্পূর্ণ করো। সুতরাং রাত আসলেই তোমরা ইফতার করে ফেলবে’’। (আহমাদ ৫/২২৫)।

হজ্জ সংক্রান্ত:

‘আমর ইবনু মায়মূন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি মুযদালিফাতে ফজরের সালাত আদায় করে (মাশ‘আরে হারামে) উকূফ করলেন এবং তিনি বললেন, মুশরিকরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত রওয়ানা হত না। তারা বলত, হে সাবীর! আলোকিত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিপরীত করলেন এবং তিনি সূর্য উঠার আগেই রওয়ানা হলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৬৮৪, ৩৮৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবর সংক্রান্ত:

ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাহদ (কবর) আমাদের জন্য, শাক্ক (কবর) ’আমরা ব্যতীত অন্যদের জন্য। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২০৮, আহকাম ১৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) [শব্দাবলী আবূ বকর এর] ... জুনদুব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মাসজিদ (সাজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা কবরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পোশাক ও সাজ-সজ্জা সংক্রান্ত:

সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাহল ইবনু ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আশ’আস ইবনু কায়স (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উকায়ম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুযাইফাহ (রাযিঃ) এর সাথে মাদায়িনে ছিলাম। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) পানি পান করতে ইচ্ছা করলে গ্রাম্য এক পণ্ডিত তার কাছে রূপার বাসনে পানি নিয়ে আসলো। তিনি তা ফেলে দিয়ে বললেন, আমি তোমাদেরকে (এটি ফেলে দেয়ার কারণ) অবগত করছি। তাকে আমি বারণ করেছিলাম, সে যেন এর মধ্যে আমাকে পানি পান না করায়। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সোনা ও রূপার বাসনে পান করবে না এবং মোটা রেশমী কাপড় ও মিহি রেশমী কাপড় ব্যবহার করবে না। কারণ ইহকালে এগুলো হলো কাফিরদের জন্য। আর তোমাদের জন্য এগুলো হবে পরকালে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২২০, ইসলামিক সেন্টার ৫২৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ)...আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে হলুদ রংয়ের দুটি বস্ত্র প্রত্যক্ষ করে বললেন, তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, এ দু’টি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং দুটিকেই পুড়ে ফেল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩২৯, ৫৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৬২, ইসলামিক সেন্টার ৫২৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই ইয়াহুদী ও নাসারাগণ চুল-দাঁড়িতে খেযাব লাগায় না। কাজেই তোমার তাদের বিপরীত করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২০৩, ত্ববারাণী আওসাত্ব হা/১৪২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৭৮৯; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ পৃ. ৮৬; জিলবাব পৃ. ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ছাড়াও যেকোনভাবে কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখা শরীয়তে নিষিদ্ধ।

আমর ইবনু শু’আইব (রাহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের অনুকরণ করো না। কেননা ইয়াহুদীগণ আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৯৫, সহীহাহ ২১৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (১১৪) স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দিলেঃ

স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলার নফল রোযা রাখা অথবা তার ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হারাম।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত মহিলার জন্য সওম পালন বৈধ নয় এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ব্যতীত তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫১৯৫, ২০৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০২৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১৫) কোনো মহিলাকে বিবাহ্ করার পর সে স্ত্রী থাকাবস্থায় তার আপন খালা অথবা ফুফীকে বিবাহ করলেঃ

কোন মহিলাকে বিবাহ্ করার পর সে স্ত্রী থাকাবস্থায় তার আপন খালা অথবা ফুফীকে বিবাহ্ করা হারাম।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ আল কা’নবী (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোক ও তার ফুফুকে এবং কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে একত্র (একত্রে বিবাহ) করা যাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩০২, ইসলামীক সেন্টার ৩৩০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১১৬) স্বামী ছাড়া অন্য কোনো আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোনো মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করলেঃ

স্বামী ছাড়া অন্য কোন আত্মীয়া-বান্ধবীর জন্য কোন মহিলার তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম।

 যায়নাব বিনত আবূ সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সিরিয়া হতে আবূ সুফ্ইয়্যান (রাঃ)-এর মৃত্যুর খবর পৌঁছল, তার তৃতীয় দিবসে উম্মু হাবীবাহ (রাযি.) হলুদ বর্ণের সুগন্ধি আনয়ন করলেন এবং তাঁর উভয় গন্ড ও বাহুতে মথিত করলেন। অতঃপর বললেন, অবশ্য আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল না, যদি আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, স্ত্রীলোক আল্লাহ্ এবং কিয়ামতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে স্বামী ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। অবশ্য স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮০, ১২৮১, ৫৩৩৪, ৫৩৩৯, ৫৩৪৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 (১১৭) উচ্চ স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে অথবা যেকোনো কথা বলে মসজিদের কোনো মুসল্লিকে কষ্ট দিলেঃ

উচ্চ স্বরে কুর‘আন তিলাওয়াত করে অথবা যে কোন কথা বলে মসজিদের কোন মুসল্লিকে কষ্ট দেয়া হারাম কাজ।

আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ই’তিকাফ কালে সাহাবীদেরকে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেনঃ জেনে রাখো! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রব্বের সাথে চুপিসারে আলাপে রত আছো। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে বা সালাতে আওয়ায উঁচু করো না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৩২, আহমাদ (৩/৯৪), ইবনু খুযাইমাহ (২/১৯০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উচ্চ স্বরে কিরাত পড়ার চাইতে নিচু স্বরে কিরাত পড়ায় সাওয়াব বেশি।

উক্ববাহ ইবনু ’আমির আল-জুহানী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উচ্চস্বরে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মতো এবং নিঃশব্দে কুরআন পাঠকারী গোপনে দানকারীর মতো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৩৩, তিরমিযী ২৯১৯, নাসায়ী ১৬৬২, আহমাদ (৪/১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে উচ্চ স্বরে কুর‘আন পড়ায় কারোর কোনো ক্ষতি না হয়ে যদি লাভ হয় তা হলে তাতে কোনো অসুবিধে নেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা রাত্রি বেলায় ঘর থেকে বের হয়ে দেখলেন আবূ বকর (রাঃ) নিচু স্বরে নামায পড়ছেন আর ’উমর (রাঃ) উচ্চ স্বরে। যখন তাঁরা উভয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একত্রিত হলেন তখন তিনি বললেন: হে আবূ বকর! আমি একদা তোমাকে নিচু স্বরে নামায পড়তে দেখলাম। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি যাঁর সাথে একান্তে আলাপ করছিলাম তিনি তো আমার আওয়ায শুনেছেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’উমর (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে ’উমর! আমি একদা তোমাকে উচ্চ স্বরে নামায পড়তে দেখলাম। তখন ’উমর (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আমি শয়তানকে তাড়াচ্ছিলাম আর ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগাচ্ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো দেখলেন বিলাল (রাঃ) এক সূরাহ থেকে কিছু আয়াত আবার অন্য সূরাহ থেকে আরো কিছু আয়াত তিলাওয়াত করছেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ) কে একদা এ ব্যাপারে জানালে তিনি বলেন: কথাগুলো খুবই সুন্দর! আল্লাহ্ তা‘আলা সবগুলো একত্রিত করে নিবেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে বললেন: তোমরা সবাই ঠিক করেছো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক সাহাবী রাত্রি বেলার নামাযে উচ্চ স্বরে কিরাত পড়েছেন। ভোর হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলা অমুককে দয়া করুন! সে গতরাত আমাকে অনেকগুলো আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমার পড়া থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১১৮) স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানালেঃ

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত সহবাসের ব্যাপারটি অন্য কাউকে জানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘হয়তোবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। হয়তোবা কোন মহিলা তার স্বামীর সাথে যা করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় ?! সাহাবায়ে কিরাম চুপ থাকলেন। কেউ কোন কিছুই বললেন না। তখন আমি (বর্ণনাকারী) বললাম: হ্যাঁ, আল্লাহ্’র কসম! হে আল্লাহ্’র রাসূল! মহিলারা এমন করে থাকে এবং পুরুষরাও। তিনি বললেন: না, তোমরা এমন করো না। কারণ, এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন যে কোন এক শয়তান অন্য শয়তানের সাথে রাস্তায় সহবাস করলো। আর মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো’’। (আল্বানী/আ’দাবুয্ যিফাফ  ১৪৪)।

(১১৯) কোনো মুসলমানকে নিয়ে ঠাট্টা-মশ্কারা করলেঃ

কোন মোসলমানকে নিয়ে ঠাট্টা-মশ্কারা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষ যেন অন্য কোন পুরুষকে নিয়ে ঠাট্টা না করে। কারণ, যাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হচ্ছে হয় তো বা সে (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) ঠাট্টাকারীর চাইতেও উত্তম। তেমনিভাবে তোমাদের মধ্যকার কোন মহিলা যেন অন্য কোন মহিলাকে নিয়ে ঠাট্টা না করে। কারণ, যাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হচ্ছে হয় তো বা সে (আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট) ঠাট্টাকারিণীর চাইতেও উত্তম। তোমরা কেউ একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। কারণ, ঈমানের পর কুফরি খুবই নিকৃষ্টতম ভূষণ। যারা এ রকম আচরণ থেকে তাওবা করবে না তারা অবশ্যই যালিম’’। (হুজুরাত  ১১)।

ঠাট্টা বলতেই তা একটি হারাম কাজ। চাই তা কথার মাধ্যমেই হোক অথবা অভিনয়ের মাধ্যমে। চাই তা ইঙ্গিতে হোক অথবা প্রকাশ্যে। চাই তা কোন ব্যক্তির গঠন নিয়েই হোক অথবা তার কথা নিয়ে কিংবা তার কোন বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

(১২০) ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দিলেঃ

ইহুদি ও খ্রিস্টানকে সর্ব প্রথম নিজ থেকেই সালাম দেয়া আরেকটি হারাম কাজ।

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না এবং তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৭৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ছাড়াও সালাম তো ভালোবাসারই একান্ত প্রতীক। তাই ওদেরকে সালাম দেয়া যাবে না। কারণ, তাদের সাথে ভালোবাসা ঈমান বিধ্বংসীই বটে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা তো একে অপরের বন্ধু। তোমাদের কেউ তাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদেরকে সুপথ দেখান না’’। (মা’য়িদাহ্  ৫১)।

ওদের আল্লাহ্ তা‘আলাকে নিশ্চয়ই ভয় করা উচিৎ যারা খেলার পাগল হয়ে কাফির খেলোয়াড়কেও ভালোবাসে এবং গানের পাগল হয়ে কাফির গায়ক-গায়িকাকেও ভালোবাসে; অথচ তাদের করণীয় হচ্ছে শুধু ঈমানদারদেরকেই ভালোবাসা যদিও তারা তার উপর যুলুম ও অত্যাচার করুক না কেন এবং কাফিরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা যদিও তারা তার উপর দয়া বা অনুগ্রহ করুক না কেন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা এ দুনিয়াতে কিতাব ও রাসূল পাঠিয়েছেন এ জন্যই যে, যেন সকল আনুগত্য হয় একমাত্র তাঁরই জন্য। সুতরাং ভালোবাসা হবে একমাত্র তাঁরই আনুগত্যকারীদের জন্য এবং শত্রুতা হবে একমাত্র তাঁরই বিরুদ্ধাচারীদের জন্য। সম্মান পাবে একমাত্র তাঁরই বন্ধুরা এবং লাঞ্ছনা পোহাবে একমাত্র তাঁরই শত্রুরা। ভালো প্রতিদান পাবে একমাত্র তাঁরই বন্ধুরা এবং শাস্তি পাবে একমাত্র তাঁরই শত্রুরা।

 (১২১) শরয়ী কোনো দোষের কারণে মুসল্লীরা কারোর ইমামতি অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার সেই ইমামতি পদ বহাল রাখলেঃ

শরয়ী কোন দোষের কারণে মুসল্লীরা কারোর ইমামতি অপছন্দ করা সত্ত্বেও তার সেই ইমামতি পদে বহাল থাকা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম কাজ।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন লোকের সালাত কান হতে উপরের দিকে উঠে না (অর্থাৎ কবূল হয় না)। প্রথম হলো কোন মালিক-এর নিকট থেকে পলায়ন করা গোলাম যতক্ষণ তার মালিক-এর নিকট ফিরে না আসে। দ্বিতীয় ঐ মহিলা, যে তার স্বামীকে অসন্তুষ্ট রেখে রাত কাটাল। তৃতীয় হলো ঐ ইমাম, যাকে তার জাতি অপছন্দ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১২২, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬০, সহীহ আত্ তারগীব ৪৮৭, স’হীহুল্ জামি’ ৩০৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘আমর বিন্ ’হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে নিম্নোক্ত হাদীসটি বলা হতো:

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তি পাবে দু’জন ব্যক্তি: তার মধ্যে এক জন হচ্ছে, যে মহিলা নিজ স্বামীর অবাধ্য এবং অপর জন হচ্ছে, যে ইমাম কোন সম্প্রদায়ের ইমামতি করছে; অথচ তারা তার ইমামতি করাটা পছন্দ করছে না’’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২২) কোনো গুনাহ্ একাকীভাবে করে পরে তা অন্যের কাছে বলে বেড়ালেঃ

কোন গুনাহ্ একাকীভাবে করে পরে তা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো আরকটি কবীরা গুনাহ্ বা হারাম।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ছাড়াও কোন গুনাহ্’র কাজ জনসমাজে বার বার বলা হলে অথবা প্রকাশ্যে আলোচনা করা হলে মানুষ তা সহজেই গ্রহণ করে নেয় এবং তা ধীরে ধীরে ব্যাপকতা লাভ করে। এ ভয়ঙ্করতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘নিশ্চয়ই যারা অশ্লীল কাজ মুসলিম সমাজে চালু হয়ে যাক তা পছন্দ করে তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও। আল্লাহ্ তা‘আলাই এর ভয়ঙ্করতা সম্পর্কে ভালোই জানেন; অথচ তোমরা তা জানো না’’। (সুরা আন নূর  ১৯)।

(১২৩) কোনো পুরুষ উপুড় হয়ে শয়ন করলেঃ

কোনো পুরুষের উপুড় হয়ে শোয়া আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্।

কায়েস ইবনে তিখফা (তাহ্ফা) আল-গিফারী (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মসজিদে উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় পেলেন। তিনি তাঁর পা দ্বারা আমাকে খোঁচা মেরে বলেনঃ তোমার এ ধরনের শোয়া কিরূপ। এ ধরনের শোয়া তো আল্লাহ অপছন্দ করেন বা ঘৃণা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৬৮, সুনান আবূ দাউদ ৫০৪০, আহমাদ ১৫১১৫, ১৫১১৭, ২৩১০৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৪৭১৮, ৪৭১৯, ৪৭৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তাঁর পা দ্বারা খোঁচা মেরে বলেনঃ হে জুনাইদিব! এটা তো জাহান্নামীর শয়ন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল (সা.)-এর বাণী—‘এটা তো জাহান্নামের শয়ন’—এর পক্ষে পবিত্র কোরআনের আয়াতও পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামিদের প্রতি ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; সেদিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো। ’ (সুরা: কমার, আয়াত: ৪৮)।

অতএব আমাদের উচিত, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল যেভাবে শোয়া পছন্দ করেন না, সেভাবে শোয়া থেকে বিরত থাকা। ইনশাআল্লাহ, এতে আমাদের দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে কল্যাণ হবে। যদি কারো অসুস্থতার কারণে কিংবা অন্য কোনো সমস্যায় উপুড় হয়ে শোয়ার একান্ত প্রয়োজন হয়, তাহলে তা ভিন্ন কথা।

(১২৪) শরীয়তের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছাড়া কুরআনের কোনো আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া অথবা কুর‘আনের কোনো বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করলেঃ

শরীয়তের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ছাড়া কুর‘আনের কোন আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া অথবা কুর‘আনের কোন বিষয় নিয়ে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা কবীরা গুনাহ্ ও হারাম। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও: নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা’’। (আ’রাফ্ ৩৩)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘তোমরা কুর‘আন পড়ো সাতভাবে তথা সাতটি আঞ্চলিক রূপে। এ রূপগুলোর মধ্য থেকে তোমরা যেভাবেই পড়বে তাই শুদ্ধ। তবে কুর‘আনকে নিয়ে তোমরা অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করো না। কারণ, তা করা কুফরি’’। (স’হীহুল্ জা’মি’ ১১৬৩)।

(১২৫) শরীয়ত সম্মত ভালো কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া যালিমদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে সম্মান করা ও ভালোবাসা এমনকি যুলুমের কাজে তাদের সহযোগিতা করলেঃ

শরীয়ত সম্মত ভালো কোন উদ্দেশ্য ছাড়া যালিমদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে সম্মান করা ও ভালোবাসা এমনকি যুলুমের কাজে তাদের সহযোগিতা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

কাব ইবনু উজরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘হে কা’ব বিন্ ’উজ্রাহ্! আমি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমার জন্য আশ্রয় চাচ্ছি এমন আমিরদের থেকে যারা আমার পরে আসবে। যে তাদের দরোজা মাড়াবে এবং তাদের মিথ্যা সাপোর্ট করবে এমনকি তাদের যুলুমে সহযোগিতা করবে সে আমার নয় এবং আমিও তার নই; আমার সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না এমনকি আমার হাউযে কাউসারের পানিও তার ভাগ্যে জুটবে না। তবে যে ব্যক্তি তাদের দরোজা মাড়িয়েছে কিন্তু তাদের মিথ্যার কোন সাপোর্ট দেয়নি এবং তাদের যুলুমেও সে কোন সহযোগিতা করেনি অথবা একেবারেই তাদের দরোজা মাড়ায়নি সে আমার এবং আমিও তার; তার সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে এমনকি সে আমার হাউযে কাউসারের পানিও পান করবে’’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬১৪, তালীকুর রাগীব (৩/১৫, ১৫০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২৬) সালাতের কোনো রুকন ইমামের আগে আদায় করলেঃ

নামাযের কোন রুকন ইমামের আগে আদায় করা আরেকটি হারাম কাজ ও কবীরা গুনাহ্। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৮৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬২৩, আহমাদ ১০৫৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫৮) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন:

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সালাত আদায় করালেন। তিনি সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে বলেনঃ হে লোকেরা! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব, তোমরা আমার আগে রুকু’-সাজদায়, উঠা-বসা করবে না অতঃপর তিনি বললেনঃ সে সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! আমি যা দেখতে পাই, তোমরাও যদি তা দেখতে পেতে তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখতে পান? তিনি বললেনঃ আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখতে পাই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৮৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে কোন কাজ ইমাম সাহেবের একটু পরেই করতে হবে। অর্থাৎ ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে পুরোপুরি রুকুতে চলে যাবেন তখন মুক্তাদিগণ রুকু করতে অগ্রসর হবেন। তেমনিভাবে ইমাম সাহেব যখন তাকবীর দিয়ে সিজদার জন্য জমিনে কপাল ঠেকাবেন তখনই মুক্তাদিগণ তাকবীর দিয়ে সিজদায় যাবেন। ইমাম সাহেবের আগে, বহু পরে ও সমানতালে কোন রুকন আদায় করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আবূ কামিল আল জাহদারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আল উমাবী (রহঃ)...হিত্‌তান ইবনু আবদুল্লাহ আর রাকাশী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আশ’আরী (রাযিঃ) এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন তাশাহ্‌হুদে বসলেন, জামা’আতের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বলে উঠল, সালাত পুণ্য ও যাকাতের সাথে ফরয করা হয়েছে। রাবী বলেন, আবূ মূসা (রাযিঃ) সালাত শেষ করে সালাম ফিরানোর পর বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এরূপ বলেছে? লোকেরা নীরব থাকল। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে এরূপ এরূপ বলেছে? এবারও লোকেরা নীরব থাকল। অতঃপর তিনি বললেন, হে হিততান সম্ভবত তুমিই এটা বলেছ। তিনি (হিত্তান) বললেন, আমি তা বলিনি। অবশ্য আমার ভয় হচ্ছিল যে আপনি আমার উপর এজন্য রেগে যান কি-না! এমন সময় লোকেদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তি বলল, আমি এরূপ বলেছি। আমি এর মাধ্যমে কল্যাণই আশা করেছিলাম।

আবূ মূসা (রাযিঃ) বললেন, নিজেদের সালাতের মধ্যে কী বলতে হবে তা কি তোমরা জান না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন, তিনি আমাদেরকে নিয়মকানুন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে সালাত আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছেঃ তোমরা যখন সালাত আদায় করবে, তোমাদের লাইনগুলো ঠিক করে নিবে। অতঃপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমামতি করবে। সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে। সে যখন “গাইরিল মাগযুবি ’আলাইহিম ওয়ালায যোল্লীন" বলবে তোমরা তখন আমীন বলবে। আল্লাহ তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। সে যখন তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে, তোমরাও তাকবীর বলে রুকু’তে যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে রুকু’তে যাবে এবং তোমাদের আগে রুকু থেকে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এটা ওটার বিনিময়ে, তথা ইমাম যেমন রুকু সাজদার আগে যাবে, তেমনি আগে উঠবে। সে যখন "সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলবে, তোমরা তখন "আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ" বলবে, আল্লাহ তোমাদের এ কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তা’আলা তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভাষায় বলছেনঃ "সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ" (আল্লাহ তার প্রশংসাকারীর প্রশংসা শুনেন)। সে যখন তাকবীর বলবে এবং সাজদায় যাবে, তোমরাও তার পরপর তাকবীর বলে সাজদায় যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের আগে সাজদায় যাবে এবং তোমাদের আগে সিজদা থেকে উঠবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের তাকবীর ও সিজদা ইমামের পরে হবে। যখন তোমরা বৈঠকে বসবে, তোমাদের পাঠ হবেঃ আত্তাহিয়াতুত তাইয়্যিবা-তুস্ সালাওয়া-তু লিল্লা-হি আসসালা-মু ’আলাইকা আইয়ুহান নবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ আসসালামু ’আলাইনা- ওয়া’আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ সলিহীন, আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ।" অর্থাৎ- সকল প্রকার পবিত্র ও একান্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদাতসমূহ আল্লাহরই জন্য। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে শান্তি, রহমত ও বারাকাত নাযিল হোক এবং আমাদের উপর ও আল্লাহর নেককার বান্দাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয় এবং আমি এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর দাস ও তাঁর দূত।" (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯৯, ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৫৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ঘোড়া হতে পড়ে গেলেন, এতে তিনি পায়ের ‘গোছায়’ অথবা (রাবী বলেছেন) ‘কাঁধে’ আঘাত পান। তিনি তাঁর স্ত্রীদের হতে এক মাসের জন্যে পৃথক হয়ে থাকেন। তখন তিনি ঘরের উপরের কক্ষে অবস্থান করেন যার সিঁড়ি ছিল খেজুর গাছের কান্ডের তৈরি। সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে এলেন, তিনি তাঁদের নিয়ে বসে সালাত আদায় করলেন, আর তাঁরা ছিলেন দাঁড়ানো। সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্যে যে, মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি রুকূ করলে তোমরাও রুকূ করবে। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। অতঃপর ঊনত্রিশ দিন পূর্ণ হলে তিনি নেমে আসলেন। তখন লোকেরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ এ মাস ঊনত্রিশ দিনের। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৭৮, ৬৮৯, ৭৩২, ৭৩৩, ৮০৫, ১১১৪, ১৯১১, ২৪৬৯, ৫২০১, ৫২৮৯, ৬৬৮৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬০৩, আহমাদ ১২০৭৫ দ্রষ্টব্য, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৭১) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন:

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকূ‘ করেন তখন তোমরাও রুকু‘ করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলবে। তিনি যখন সিজদা্ করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২২, ৭৩৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৬) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি মিথ্যাবাদী নন তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদা্য় না যেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদা্য় যাওয়ার পর আমরা সিজদা্য় যেতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯০, ৭৪৭, ৮১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬২১, আহমাদ ১৮৭৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১২৭) ইমামের আগে রুকু-সেজদা করা নিষেধঃ

ইমামের পূর্বে রুকু-সেজদায় চলে যাওয়া এবং ইমামের আগেই রুকু-সেজদা থেকে ওঠে যাওয়া মারাত্মক ভুল। ভুলে এমনটি করলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে ইচ্ছাকৃত করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তির জন্য হাদিসে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। রাসুল সা. বলেন,

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৯১, মুসলিম ৪/২৫, হাঃ ৪২৭ আহমাদ ১০৫৫১, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৮, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২৮২, ২২৮৩, বাইহাকী মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার নং ৩৪৫৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৩/৪১৭ নং ৮৪৯; আবু নুয়াইম, যিকরু আখবারু আসবাহান ১/২৬৯, ২/৫৫, ২১৮, ২৯৯; উকাইলী, আদ দুয়া’ফা ২/৭৩; ইবনু আদী, আল কামিল ৩/১০৬১, ৪/১৫৬৬, ৬/২২৩৭; ইবনু হিব্বান, আল মাজরুহীন ২/৩৫-৩৬; তাবারাণী, আল আওসাত ৩৩৩০, ৩৬০৯, ৩৯৩০, ৫৯৫৯, ৭১৯৩; ও সগীর ১/১১০; তালখীসুল হাবীর ২/২৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মু’য়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি এখন আমি কিছুটা মোটা হয়ে গেছি। ফলে আমার পূর্বে তোমরা রুকূ’-সিজদা করবে না। (কখনো কখনো এরূপ হয় যে,) আমি তোমাদের যত আগেই রুকূ’তে যায় না কেন, তোমরা আমার মাথা উঠানোর পূর্বেই আমাকে পেয়ে যাও (ধরে ফেলো)। আবার আমি তোমাদের যত আগেই সিজদা করি না কেন, তোমরা আমাকে সিজদা হতে মাথা উঠানোর আগেই পেয়ে যাও।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫১, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২২২৯, ২২৩০; মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৮২, ৩৮৩ ও মুসনাদুল হুমাইদী নং ৬১৩ তে। (আহমাদ ৪/৯২; বাইহাকী ২/৯২; সহীহ ইবনু খুযাইমা ১৫৯৪; আবু দাউদ ৬১৯; ইবনু মাজাহ ৯৬৩; তাবারাণী, আল কাবীর ১৯/২৭৩-২৭৪ নং ৮৬২, মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সালাতের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করতেন এবং তিনি যখন তাদের ইমামতি করতেন তখন তাঁর পূর্বে রুকূ’ সিজদায় গমণ করতে তাদেরকে নিষেধ করতেন। এছাড়া তাঁর সালাত শেষ করার পূর্বেই তাদেরকে সালাত শেষ করতে যেতে নিষেধ করতেন। এবং তিনি বলেন: “আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক থেকেও দেখতে পাই, আর সামনের দিক থেকে তো দেখিই।” (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৩, ইবনু আবী শাইবা ২/৩২৮; মুসলিম ৪২৬; আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ৩৯৫২, ৩৯৫৭, ৩৯৬০, ৩৯৬৩; আবু আওয়ানাহ ২/১৩৬; বাইহাকী ২/৯১-৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(১২৮) জুমুআহ্ ও জামাতে সালাত আদায় না করলেঃ

জুমু‘আহ্ ও জামাতে নামায না পড়া আরেকটি কবীরা গুনাহ্।

কেউ লাগাতার কয়েকটি জুমু‘আহ্ ছেড়ে দিলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার

অন্তরে মোহর মেরে দেন। তখন সে গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু উমার ও আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার মিম্বারের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেনঃ যারা জুমুআর সালাত ত্যাগ করে তাদেরকে এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মেরে দিবেন, অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৭২, ইসলামীক সেন্টার ১৮৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এমনকি যে ব্যক্তি অলসতা বশত তিন ওয়াক্ত জুমু‘আহ্’র নামায ছেড়ে দিয়েছে তার অন্তরেও আল্লাহ্ তা‘আলা মোহর মেরে দিবেন।

আবুল জা’দ আদ-দামরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (বিনা কারণে) অলসতা করে পরপর তিনটি জুমু’আহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তার অন্তরে সীলমোহর মেরে দেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যারা জামাতে উপস্থিত হয়ে ফরয নামাযগুলো আদায় করছে না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, অতঃপর সালাত কায়েমের আদেশ দেই, অতঃপর সালাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামত করার নির্দেশ দেই। অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং তাদের (যারা সালাতে শামিল হয়নি) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দু’টি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ‘ইশা সালাতের জামা‘আতেও হাযির হতো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৪৮,  আহমাদ ৭৩৩২, ৩৮১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৬) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে ব্যক্তি শরয়ী অজুহাত ছাড়াই ঘরে নামায পড়লো তার নামায আদায় হবে না।

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামা’আতে সালাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) সালাত কবুল হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫১,  বায়হাকী, হাদীস ৫৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আব্দুল্লাহ্ বিন আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয়নি অথচ তার কোন ওযর নেই। তা হলে তার নামায হবে না’’। (বায়হাকী, হাদীস ৪৭১৯, ৫৩৭৫)।

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘যে ব্যক্তি আযান শুনেও মসজিদে উপস্থিত হয়নি অথচ তার কোন ওযরই ছিলো না সে কল্যাণপ্রাপ্ত নয় অথবা তার সাথে কোন কল্যাণ করার ইচ্ছেই করা হয়নি’’। (ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস ৩৪৬৬)।

(১২৯) নামাযের মধ্যে ধীরস্থিরভাবে রুকূ’, সিজ্দাহ্ বা অন্যান্য রুকন আদায় না করলেঃ

নামাযের মধ্যে ধীরস্থিরভাবে রুকূ’, সিজ্দাহ্ বা অন্যান্য রুকন আদায় না করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

আবূ আব্দুল্লাহ্ আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে কিছু সংখ্যক সাহাবাদেরকে নিয়ে মসজিদেই বসেছিলেন এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি মসজিদে ঢুকে নামায পড়তে শুরু করলো। সে রুকূ ও সিজ্দাহ্ ঠিকভাবে করছিলো না। তখন তিনি সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

‘‘তোমরা একে দেখতে পাচ্ছো। কোন ব্যক্তি এভাবে নামায পড়তে পড়তে মৃত্যু বরণ করলে ইসলামের উপর তার মৃত্যু হবে না। সে নামায পড়ছে যেন কোন কাক রক্তের উপর ঠোকর মারছে’’। (ইব্নু খুযাইমাহ্ ১/৩৩২)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

‘‘ওই ব্যক্তির নামায হবে না যে রুকূ’ ও সিজ্দায় নিজ পিঠকে সোজা রাখে না’’। (ইব্নু খুযাইমাহ্ ১/৩৩২)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

‘‘সর্ব নিকৃষ্ট চোর সে ব্যক্তি যে নামায চুরি করে। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে আবার নামায চুরি করে কিভাবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে রুকূ’ ও সিজ্দাহ্ সঠিকভাবে আদায় করে না’’। (স’হীহুল জা’মি’, হাদীস ৯৯৭)।

(১৩০) কারোর থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা অথবা পরিশোধ করতে টালবাহানা করলেঃ

কারোর থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করা অথবা পরিশোধ করতে টালবাহানা করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ বা হারাম।

শরীয়তে ঋণের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা পরিশোধ না করে কিয়ামতের দিন এক কদমও সামনে এগুনো যাবে না। এমনকি যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও ধন-সম্পদ সবকিছুই আল্লাহ্’র রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছে সেও নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘শুধুমাত্র ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহ্ই ক্ষমা করে দেয়া হবে’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৮১১৯)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন:

‘‘কি আশ্চর্য! আল্লাহ্ তা‘আলা ঋণের ব্যাপারে কতই না কঠিন বিধান নাযিল করেছেন! সেই সত্তার কসম খেয়ে বলছি যাঁর হাতে আমার জীবন, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্’র রাস্তায় একবার শহীদ করা হলে অতঃপর আবারো জীবিত করা হলে অতঃপর আবারো শহীদ করা হলে অতঃপর আবারো জীবিত করা হলে অতঃপর আবারো শহীদ করা হলেও যদি তার উপর কোন ঋণ থেকে থাকে তা হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার উক্ত ঋণ তার পক্ষ থেকে আদায় করা হয়’’। (সা’হীহুল্ জা’মি’, হাদীস ৩৫৯৪)।

ব্যাপারটি আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন ব্যক্তি কারোর থেকে ঋণ নেয়ার সময়ই তা পরিশোধ না করার পরিকল্পনা করে অথবা তখনই তার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সে কখনো তা পরিশোধ করতে পারবে না।

কেউ কেউ তো এমনো মনে করে যে, আমি যার থেকে ঋণ নিয়েছি সে বড় ধনী ব্যক্তি। সুতরাং তাকে উক্ত ঋণ না দিলে তার কোন ক্ষতি হবে না। এ চিন্তা কখনোই সঠিক নয়। কারণ, ঋণ তো ঋণই। তা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। চাই ঋণদাতার এর প্রতি কোন প্রয়োজন থাকুক বা নাই থাকুক। চাই তা কম হোক অথবা বেশি।

 (১৩১) কোনো  ঝগড়া-ফাসাদে যুলুমের সহযোগিতা করলেঃ

কোন ঝগড়া-ফাসাদে যুলুমের সহযোগিতা করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা মায়িদা-২)।

কেউ অবৈধভাবে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে তা জেনেশুনেও অন্য কেউ এ ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘কেউ যদি জেনেশুনে অন্যায় মূলক বিবাদে অন্যকে সহযোগিতা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর খুবই রাগান্বিত হন যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে’’। (হাকিম ৪/৯৯)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘কেউ যদি কোন যালিমকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলো যে, সে তার বাতিল দিয়ে কোন হক্বকে প্রতিহত করবে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যিম্মাদারি তার উপর থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়’’। (সাহীহুল্ জামি ৬০৪৮)।

(১৩২) মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করলেঃ

মানুষকে অযথা শাস্তি দেয়া কিংবা প্রহার করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্ ও হারাম।

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’ প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘এ উম্মতের মধ্যে শেষ যুগে এমন কিছু লোক পরিলক্ষিত হবে যাদের সাথে থাকবে লাঠি যা দেখতে গাভীর লেজের ন্যায়। তারা সকালে বের হবে আল্লাহ্ তা‘আলার অসন্তুষ্টি নিয়ে এবং বিকেলে ফিরবে আল্লাহ্ তা‘আলার ক্রোধ নিয়ে’’। (আহমাদ ৫/২৫০; ’হা’কিম ৪/৪৩৬ ত্বাবারানী, হাদীস ৮০০০)।

 (১৩৩) কারোর সাথে কোনো ব্যাপারে চুক্তি বা ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করলেঃ

 কারোর সাথে কোন ব্যাপারে চুক্তি বা ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো এ জাতীয় ব্যক্তিকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে; ২. কথা বললে মিথ্যা বলে; ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। শু‘বা আ‘মাশ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪, ২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চুক্তি ভঙ্গকারী বা ওয়াদা খেলাফীর পাছার নিকট একটি করে ঝান্ডা প্রোথিত থাকবে এবং যা দিয়ে সে কিয়ামতের দিন বিশ্ব জন সমাবেশে পরিচিতি লাভ করবে।

মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবাইদুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে, যেটা দিয়ে তাকে চেনা যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৪২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৮৬, ইসলামিক সেন্টার, ৪৩৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও উবাইদুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)......আবূ সাঈদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর নিতম্বের (পাছা) পার্শ্বে একটি পতাকা থাকবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৪২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৮৭, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩৪) সমকাম বা পায়ু পথে সঙ্গম করলেঃ

সমকাম বা পায়ুগমন বলতে পুরুষে পুরুষে একে অপরের মলদ্বার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ যৌন উত্তেজনা নিবারণ করাকেই বুঝানো হয়।

সমকাম একটি মারাত্মক গুনাহ্’র কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি। তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে নবুওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (আ’রাফ ৮০-৮১)।

আল্লাহ্ তা‘আলা উক্ত কাজকে অত্যন্ত নোংরা কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

‘‘আর আমি লূত্ব (আঃ) কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছি এবং তাঁকে উদ্ধার করেছি এমন জনপদ থেকে যারা নোংরা কাজ করতো। মূলতঃ তারা ছিলো নিকৃষ্ট প্রকৃতির ফাসিক সম্প্রদায়’’। (আম্বিয়া  ৭৪)।

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন:

’’ফেরেশ্তারা ইব্রাহীম (আঃ) কে বললেন: আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয়ই জালিম’’। (আন্কাবূত ৩১)।

লূত্ব (আঃ) এদেরকে বিশৃঙ্খল জাতি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘লূত্ব (আঃ) বললেন: হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’’। (আন্কাবূত  ৩০)।

ইব্রাহীম (আঃ) তাদের ক্ষমার জন্য জোর সুপারিশ করলেও তা শুনা হয়নি। বরং তাঁকে বলা হয়েছে:

‘‘হে ইব্রাহীম! এ ব্যাপারে আর একটি কথাও বলো না। (তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে) তোমার প্রভুর ফরমান এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার মতো নয়’’। (হূদ্  ৭৬)।

যখন তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গেলো এবং তা ভোরে ভোরেই আসবে বলে লূত্ব (আঃ) কে জানিয়ে দেয়া হলো তখন তিনি তা দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে আপত্তি জানালে তাঁকে বলা হলো:

‘‘সকাল কি অতি নিকটেই নয়?! কিংবা সকাল হতে কি এতই দেরী?!’’ (হূদ্ ৮১)।

আল্লাহ্ তা‘আলা লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায়ের শাস্তির ব্যাপারে বলেন:

‘‘অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হলো তখন ভূ-খন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম এবং ওর উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম, যা ছিলো একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিলো তোমার প্রভুর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ যালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়’’। (হূদ্  ৮২-৮৩)।

আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন:

‘‘অতঃপর তাদেরকে সূর্যোদয়ের সময়ই এক বিকট আওয়াজ পাকড়াও করলো। এরপরই আমি জনপদটিকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। আর উক্ত জনপদটি (উহার ধ্বংস স্তূপ) স্থায়ী (বহু প্রাচীন) লোক চলাচলের পথি পার্শ্বেই এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে রয়েছে মু’মিনদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন’’। (হিজর ৭৩-৭৭)।

আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমকামীদেরকে তিন তিন বার লা’নত দিয়েছেন যা অন্য কারোর ব্যাপারে দেননি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সমকামীকে লা’নত করেন’’। (আহমাদ ২৯১৫; ইব্নু হিববান ৪৪১৭; বায়হাক্বী ৭৩৩৭, ১৬৭৯৪; ত্বাবারানী/কাবীর ১১৫৪৬; আবূ ইয়া’লা ২৫৩৯; ‘আব্দুব্নু ’হুমাইদ্ ৫৮৯; হা’কিম ৪/৩৫৬)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত। সমকামীরাই অভিশপ্ত’’। (সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব, হাদীস ২৪২০)।

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণ এসে যায় যাতে তিনি বলেন:

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার সর্বাধিক আশঙ্কা করি। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, আহমাদ ২/৩৮২ সহীহুত্-তারগীবি ওয়াত্-তারহীব ২৪১৭, বায়হাকী ফিস সুনান ২/২১৫, ৬/১০৬, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ফুযাইল্ ইব্নু ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

‘‘কোন সমকামী ব্যক্তি আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে’’। (দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব : ১৪২)।

সমকামের শাস্তি

কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লুত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (ইবনু মাজাহ ২৫৬১, সুনান আততিরমিযী ১৪৫৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লূত জাতির অনুরূপ অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা উপরের এবং নিচের ব্যক্তিকে অর্থাৎ উভয়কে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬২, সুনান আততিরমিযী ১৪৫৬, বায়হাকী ফিস সুনান ৮/২৩২, ইরওয়া ৬/১৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রাঃ) এবং হিশাম বিন্ আব্দুল্ মালিক (রাহিমাহুল্লাহ্) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।

মুহাম্মাদ বিন্ মুন্কাদির (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘খালিদ্ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) একদা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাঃ) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘আলী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন: এ এমন একটি গুনাহ্ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন’’। (বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৫৩৮৯)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে’’। (ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্বী ৮/২৩২)।

সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে’’। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫, ইব্নু আবী শায়বাহ্, হাদীস ১৬৮০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৩৫) যিনা/ব্যভিচারের সাথে জড়িত থাকলেঃ

ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। হত্যার পরই যার অবস্থান। কারণ, তাতে বংশ পরিচয় সঠিক থাকে না। লজ্জাস্থানের হিফাযত হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় না। মানুষে মানুষে কঠিন শত্রুতার জন্ম নেয়। দুনিয়ার সুস্থ পারিবারিক ব্যবস্থা এতটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। একে অন্যের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয়। এ কারণেই তো আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার পরই এর উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর যারা আল্লাহ্ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোন উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরীয়ত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং তারা ওখানে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে। তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (ফুর্কান : ৬৮-৭০)।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! কোন পাপটি আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন:

‘‘তোমরা যেনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ’’। (ইস্রা’/বানী ইস্রা’ঈল্  ৩২)।

তবে এ ব্যভিচার মুহ্রিমা (যে মহিলাকে বিবাহ্ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম) এর সাথে হলে তা আরো জঘন্য। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করা সম্পর্কে বলেন:

‘‘তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ্ করো না। তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা’’। (নিসা ২২)।

বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিলো একখানা ঝান্ডা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন:

‘‘আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুহ্রিমাকে বিবাহ্ করা যদি এতো বড় অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তাদের সাথে ব্যভিচার করা যে কতো বড়ো অপরাধ হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘মু’মিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা নামাযে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী’’। (মু’মিনূন ১-৭)।

আল্লাহ্ তা‘আলা কুর‘আন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী’’। (মা‘আরিজ  ২৯-৩১)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যৌনাঙ্গ হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত’’। (সা’হীহুত্ তারগীবি ওয়াত্ তারহীবি, হাদীস ২৪১০)।

সাহ্ল্ বিন্ সা‘আদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহবা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ্ তা‘আলা শুধু যৌনকর্মকেই হারাম করেননি। বরং তিনি এরই পাশাপাশি সব ধরনের অশ্লীলতাকেও হারাম করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও: নিশ্চয়ই আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা’’। (আ’রাফ্ ৩৩)।

আল্লাহ্ তা‘আলা যখন ব্যভিচারকর্মকে নিষেধ করে দিয়েছেন তখন তিনি সে সকল পথকেও নীতিগতভাবে রোধ করে দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে স্বভাবত: ব্যভিচারকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা পুরুষ ও মহিলা উভয় জাতিকে লজ্জাস্থান হিফাযতের পূর্বে সর্বপ্রথম নিজ দৃষ্টিকে সংযত করতে আদেশ করেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘(হে মুহাম্মাদ) তুমি মু’মিনদেরকে বলে দাও: যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মু’মিন মহিলাদেরকেও বলে দাও: যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে’’। (নূর ৩০-৩১)।

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

‘‘তিনিই চক্ষুর অপব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বস্ত্ত সম্পর্কেও অবগত’’। (গাফির/মু’মিন  ১৯)।

আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে অন্য কারোর ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। যাতে চক্ষুর অপব্যবহার না হয় এবং তা সম্পূর্ণরূপে রক্ষা পায়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না। এটাই তো তোমাদের জন্য অনেক শ্রেয়। আশাতো তোমরা উক্ত উপদেশ গ্রহণ করবে। আর যদি তোমরা উক্ত গৃহে কাউকে না পাও তা হলে তোমরা তাতে একেবারেই প্রবেশ করো না যতক্ষণ না তোমাদেরকে তাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়: ফিরে যাও, তা হলে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তো তোমাদের জন্য পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত’’। (নূর  ২৭-২৮)।

আল্লাহ্ তা‘আলা বিশেষভাবে মহিলাদেরকে অপর পুরুষ থেকে পর্দা করতে আদেশ করেছেন। যাতে পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি তার অপূর্ব সৌন্দর্যের উগ্র আকর্ষণ থেকে রক্ষা পায় এবং ক্রমান্বয়ে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত না হয়।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘মহিলারা যেন তাদের সৌন্দর্য (শরীরের সাথে এঁটে থাকা অলংকার বা আকর্ষণীয় পোষাক) প্রকাশ না করে। তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ পেয়ে যায় (বোরকা, চাদর, মোজা ইত্যাদি) তা প্রকাশ পেলে কোন অসুবিধে নেই। তাদের ঘাড়, গলা ও বক্ষদেশ (চেহারা সহ) যেন মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইপো, বোনপো, স্বজাতীয় মহিলা, মালিকানাধীন দাস, যৌন কামনা রহিত অধীন পুরুষ, নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো নিকট নিজ সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তেমনিভাবে তারা যেন সজোরে ভূমিতে নিজ পদযুগল ক্ষেপণ না করে। কারণ, তাতে করে তাদের আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে। বরং হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্ তা‘আলার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তখনই তোমরা সফলকাম হতে পারবে’’। (নূর ৩১)।

যিনাকারীর পরকালীন শাস্তি

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)...আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বললেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মু’আবিয়াহ বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো)

(ক) ব্যভিচারী বুড়ো,

(খ) মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও

(গ) অহঙ্কার দরিদ্র ব্যক্তি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী  ১৯৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেন,

যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪৭, ৮৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(ক)  তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(খ)  তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(গ)  তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(ক) সে আল্লাহর অসন্তোষ,

(খ) কঠিন হিসাব ও

(গ) জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী যেন মনে হচ্ছে ভাগাড়। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরা ব্যাভিচারী-ব্যাভিচারিণী। (আত-তারগীব ৩৪২৪)।

(১৩৬)  ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করাঃ

ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণও একটি বড় অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ্।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে তারা সত্যিকারার্থে আগুন দিয়ে নিজের পেট ভরছে এবং অচিরেই তারা জাহান্নামের অগ্নিতে দগ্ধ হবে’’। (সুরা নিসা ১০)।

(১৩৭) পরকীয়া প্রেম করলেঃ

আমাদের সমাজে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে পরকীয়া। পত্রিকার পাতা খুলতেই চোখে পড়ে পরকীয়ার খবর। পরকীয়ার ফাঁদে আটকা পড়ে আত্মহনন করছেন অগণিত নারী-পুরুষ, বলি হচ্ছেন নিরপরাধ সন্তান, স্বামী অথবা স্ত্রী। পরকীয়ার পথে বাধা হওয়ায় নিজ সন্তানকেও নির্মমভাবে হত্যা করছে মমতাময়ী মা।

ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। কোনো মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি।

বিবাহিত কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো ধরণের সর্ম্পক কিংবা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?

এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না। এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়, তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।

এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে। ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

নারীদের কথার আওয়াজকেও সতরের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।

যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(ক) তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,

(খ) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং

(গ)  তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,

(ক) সে আল্লাহর অসন্তোষ,

(খ)  কঠিন হিসাব ও

(গ)  জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(১৩৮) টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করলেঃ

মানুষ যেসব কাজকে লঘু মনে করে অথচ আল্লাহর নিকটে সেগুলো খুবই গুরুতর, তন্মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা একটি। অনেকের কাপড় এত লম্বা যে, তা মাটি স্পর্শ করে। কেউবা আবার পরিধেয় বস্ত্র পিছন থেকে মাটিতে টেনে বেড়ায়। টাখনুর নিচে এভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে (গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে) পাক-পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে (নির্ধারিত) কঠিন ’আযাব। আবূ যার(রাঃ) এ কথা শুনার পর সাথে সাথে বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! যাদের জন্য অধঃপতন ও ধ্বংস, তারা কারা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) যে লোক পরনের কাপড় পায়ের গিরার নীচে পরে, (২) যে দান করে খোটা দেয়, (৩) যে লোক নিজের মাল বেশি চালু করার চেষ্টায় মিথ্যা কসম করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, সুনান আননাসায়ী ২৫৬৩, ২৫৬৪, ৪৪৫৮, ৪৪৫৯, ৫৩৩৩, সুনান আততিরমিযী ১২১১, আহমাদ ২১৪৩৬, ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারিমী ২৬৪৭, ২৬০৫,  ইরওয়া ৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৮৭, গায়াতুম নারাম ১৭০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে বলে, ‘আমার টাখনুর নিচে কাপড় পরা অহংকারের প্রেক্ষিতে নয়’ তার এ সাফাই গাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অহংকার বশেই হোক আর এমনিতেই হোক, শাস্তির ধমকি তাতে রয়েছেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“টাখনুর নিচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে”। (সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৫৩৩০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০১৮০)।

আল-আলা ইবনু আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে লুঙ্গি পরিধানের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি এ বিষয়ে সম্যক অবগত লোকের কাছেই এসেছো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের পরিধেয় লুঙ্গি-পায়জামা নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত থাকবে, তবে টাখনুদ্বয় পর্যন্ত রাখলেও কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নীচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশত নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এ হাদীসে অহংকার ও নিরহংকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। আর জাহান্নামে গেলে শরীরের কোনো অংশবিশেষ যাবে না; বরং সমগ্র দেহই যাবে। অবশ্য অহংকার বশে যে টাখনুর নিচে কাপড় পরবে তার শাস্তি তুলনামূলকভাবে কঠোর ও বেশি হবে। এ কথাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতে এসেছে,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ টাখনুর নিচে ইযার (লুঙ্গি) ঝুলায়, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩১১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, ৬০৬২, ৫৭৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫৩৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২০১৭, সহীহুল জামি‘আস্ সগীর ৯২১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৪৬, শু‘আবুল ঈমান ৫১২২, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯৭২৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২৪৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৯৭৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বেশি শাস্তি এ জন্য হবে যে, সে এক সঙ্গে দু’টি হারাম কাজ করছে। (এক. টাখনুর নিচে কাপড় পরা। দুই. অহংকার প্রদর্শন)।

বস্তুত পরিমিত পরিমাণ থেকে নিচে ঝুলিয়ে যেকোনো বস্ত্র পরিধান করাই ‘ইসবালের আওতাভুক্ত এবং তা হারাম। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইযার, জামা ও পাগড়ীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ তার কোন একটিকে হিঁচড়িয়ে চলবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৯৪, ৪০৮৫,  সুনান আননাসায়ী ৫৩৩৪, ৫৩২৭, ৫৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৭৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৪০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৩৫, আল জামি‘উস্ সগীর ৪৫৩৬, সহীহুল জামি‘ ২৭৭০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩০৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১, ৬০৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৫, সুনান আততিরমিযী ১৭৩০, ১৭৩১, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩২৮, ৫৩৫৪, ৫৪১৬, ৫৫১০, ৬১৬৮, ৬৩০৪, মুয়াত্তা মালেক ১৬৯৬, ১৬৯৮, মিশকাত ৪৩৩২, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৭৮, ইসলামিক সেন্টার ৫২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

স্ত্রীলোকদের জন্য পায়ের সতরের সুবিধার্থে এক বিঘত কিংবা এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দেবার অবকাশ আছে; কেননা বাতাস বা অন্য কোনো কারণে সতর খোলার ভয় থাকলে অতিরিক্ত কাপড়ে তা বহুলাংশে রোধ হবে। তবে সীমালংঘন করা তাদের জন্যও বৈধ হবে না। যেমন বিয়ে-শাদীতে পরিহিত বস্ত্রের ক্ষেত্রে মেয়েদের সীমালংঘন করতে দেখা যায়। সেগুলো পরিমিত পরিমাণ থেকে কয়েক বিঘত এমনকি কয়েক মিটার লম্বা হয়। অনেক সময় পেছন থেকে তা বয়ে নিয়ে যেতেও দেখা যায়।

 (১৩৯) পশুর মুখমণ্ডলে আঘাত করলে ও দাগ দিলেঃ

জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন পশুর) মুখমন্ডলে আঘাত করতে এবং চেহারায় দাগ দিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২২৯৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ০৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৭০, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুখমণ্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও শিক্ষকদের থেকে বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা ছাত্রদের শাসন করার জন্য হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমণ্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে থাকে। এতে আল্লাহ তা”আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা করার সাথে সাথে অনেক সময় মুখমণ্ডলের কোনো একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কিসাস দেওয়া লাগতে পারে।পশুর মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার জন্য পশুগুলোর মুখে দাগ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও তাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে এটুকু করার অবকাশ থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোনো চিহ্ন দিবে; মুখমণ্ডলে নয়।

 (১৪০) শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তিন দিনের ঊর্ধ্বে কোনো মুসলিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেঃ

মুসলিমে মুসলিমে সম্পর্কে বিনষ্ট করা শয়তানের অন্যতম চক্রান্ত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারী অনেকেই শর‘ঈ কোনো কারণ ছাড়াই মুসলিম ভাইদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে। নিহায়েত বস্তুগত কারণে কিংবা দুর্বল কোনো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ছিন্ন সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে, তার বাড়ীতে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাস্তায় দেখা হলে পাশ কেটে চলে যায়। মজলিসে হাযির হলে তার আগে-পিছের লোকদের সঙ্গে করমর্দন করে কিন্তু তাকে এড়িয়ে যায়। ইসলামী সমাজে দুর্বলতা অনুপ্রবেশের এটি অন্যতম কারণ। এর শর‘ঈ হুকুম চূড়ান্ত ও পরকালীন শাস্তি কঠোর। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তিনদিনের বেশি সময় অপর কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সাক্ষাৎ পরিত্যাগ করে। যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশি সময় অপর ভাইকে ত্যাগ করল, আর এ সময় তার মৃত্যু হলো, তবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৩৫, আহমাদ ৯০৯২, আবূ দাঊদ ৪৯১৪, সহীহুল জামি ৭৬৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৭৫৭, ইরওয়া ৭/৯৪, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯১৬১, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৮/১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র তিনি বলেন,

আবূ খিরাশ আস্ সুলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন : যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে এক বছর যাবৎ সম্পর্ক ছিন্ন রাখল, সে যেন তার রক্তপাত করল। (অর্থাৎ- তাকে হত্যার করল)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯১৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৫, সহীহুল জামি ৬৫৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৭৬২, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৩১৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯২৮, আহমাদ ১৭৯৩৫, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৮২২৯, আল মুসতাদরাক ৭২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম এত মারাত্মক যে, এর ফলে আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন,

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সপ্তাহে দু’বার (অর্থাৎ- সোমবার ও বৃহস্পতিবার) বান্দার কার্যাবলী আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং প্রত্যেক মু’মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়; কিন্তু ঐ বান্দাকে ক্ষমা করা হয় না, যে নিজে কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। তার সম্পর্কে বলে দেয়া হয় যে, তাদেরকে সময় দাও, যাতে তারা পরস্পর আপোষ হতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৩০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৫, সহীহুল জামি ২৯৫৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২১২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৬৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১২. ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (অর্থাৎ শত্রুতা পরিহার না করা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা নিষিদ্ধ।)

বিবাদকারীদ্বয়ের মধ্যে যে তওবা করবে, তাকে তার সঙ্গীর নিকটে গিয়ে সাক্ষাত করা ও সালাম প্রদান করা জরুরি। যদি সে তা করে কিন্তু তার সঙ্গী সাক্ষাত না দেয় কিংবা সালামের জবাব না দেয় তবে সে দোষমুক্ত হয়ে যাবে এবং দণ্ড যা কিছু তা অস্বীকারকারীর উপরে পতিত হবে।

আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই-এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম লোক। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৭৭, ৬২৩৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬০, আহমাদ ২৩৬৫৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাঁ, যদি সম্পর্কছেদ করার শর‘ঈ কোনো কারণ পাওয়া যায়। যেমন, সে সালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে করে চলে তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, তখন প্রশ্ন হবে, এমতাবস্থায় সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক না সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক? এর উত্তরে বলা হবে যে, যদি সম্পর্কচ্ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎ পথে ফিরে আসে তাহলে সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নসীহত করে যেতে হবে।

(১৪১) ইসলামকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলেঃ

এ কাজটি অর্থাৎ আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা কুরআন অথবা দীন নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা কুফুরী। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এ রকম বিদ্রুপের ঘটনা ঘটেছিল। একদা মুনাফিকরা তাঁকে এবং সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলল, আমরা এ সমস্ত লোকদের চেয়ে অধিক পেট পূজারী, অধিক মিথ্যুক এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে এদের চেয়ে অধিক ভীতু আর কাউকে দেখি নি। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,

“আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, উত্তরে তারা অবশ্যই বলবে যে, আমরা কেবল হাসি-তামাসা করছিলাম।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫)।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন অভিযোগ আসল, তখন তারা বলল, পথের ক্লান্তি দূর করার জন্য যে সমস্ত কথা-বার্তা বলা হয়, আমরা শুধু তেমন কিছু কথাই বলছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়ে দিলেন।

“বলুন! তোমরা কি আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে হাসি-তামাসা করছিলে? তোমরা এখন ওযর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান প্রকাশের পর কুফুরী করেছো।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬)।

কাজেই আল্লাহ তা‘আলা, রিসালাত, অহী এবং দীনের বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত পবিত্র। এগুলোর কোনো একটি নিয়ে ঠাট্টা করা বৈধ নয়। যে এরূপ করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, তার কাজটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল, কিতাব এবং শরী‘আতকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রমাণ বহন করে। যারা এ ধরণের কাজ করবে, তাদের উচিৎ আ,ল্লাহর দরবারে তাওবা করে এবং ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সংশোধন করা। তাদের উচিৎ আল্লাহর প্রতি ভয় ও সম্মান দিয়ে অন্তরকে পরিপূর্ণ করা।

 (১৪২) চাঁদাবাজি করলেঃ

চাঁদাবাজি আরেকটি মারাত্মক অপরাধ। কোন প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক জোর পূর্বক কাউকে কোথাও নিজ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অথবা নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা ইত্যাদির জন্য নির্দিষ্ট অথবা অনির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দিতে বাধ্য করাকে সাধারণত চাঁদাবাজি বলা হয়। দস্যুতার সাথে এর খুবই মিল। চাঁদা উত্তোলনকারী, চাঁদা লেখক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই উক্ত গুনাহ্’র সমান অংশীদার। এরা যালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি যালিম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই (শাস্তির) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ আচরণ করে বেড়ায়। বস্ত্তত: এদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি’’। (শূরা: ৪২)।

তিনি আরো বলেন:

’’তোমরা যালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না তথা তাদেরকে যুলুমের সহযোগিতা করো না। অন্যথায় তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে। আর তখন আল্লাহ্ ছাড়া কেউ তোমাদের সহায় হবে না। অতএব তখন তোমাদেরকে কোন সাহায্যই করা হবে না’’। (হূদ্: ১১৩)।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অত্যাচার করা থেকে বিরত থাক। কেননা কিয়ামত দিবসে অত্যাচার অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কাওমকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদের খুন-খারাবী ও রক্তপাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪০, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪৩) তাক্বদীরে অবিশ্বাস করলেঃ

তাক্বদীরে অবিশ্বাস করাও একটি কবীরা গুনাহ্ তথা কুফরিও বটে। তাই তো তাক্বদীরে অবিশ্বাসকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।

আবুদ্দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ্যপানে অভ্যস্ত এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’’। (আহমাদ : ৬/৪৪১ সা’হীহাহ্, হাদীস ৬৭৫)।

ইবনুুদ দাইলামী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বাঁধে। তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় কিনা। তাই আমি উবাই ইবনু কাব (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আবূল মুনযির! আমার মনে এই তাকদীর সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ দানা বেঁধেছে, তাই আমি এই ভেবে শংকিত হই যে, তা আমার দ্বীন ও অন্যান্য কার্যক্রমকে নষ্ট করে দেয় কিনা। অতএব এ সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। আশা করি আল্লাহ তার দ্বারা আমার উপকার করবেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ঊর্ধলোকের ও ইহলকের সকলকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি অবশ্যই তাদের শাস্তি দিতে পারেন। তথাপি তিনি তাদের প্রতি জুলুমকারী নন। আর তিনি তাদেরকে দয়া করতে চাইলে তাঁর দয়া তাদের জন্য তাদের কাজকর্মের চেয়ে কল্যাণময়।

যদি তোমাদের নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ বা উহূদ পাহাড়ের মত সোনা থাকতো এবং তুমি তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে থাকো, তবে তোমার সেই দান কবূল করা হবে না, যাবৎ না তুমি তাকদীরের উপর ঈমান আনো। অতএব তুমি জেনে রেখো! যা কিছু তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা তোমার উপর আপতিত হতে কখনো ভুল হতো না এবং যা তোমার উপর আপতিত হওয়ার ছিল না তা ভুলেও কখনো তোমার উপর আপতিত হবে না। তুমি যদি এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে মারা যাও, তাহলে তুমি জাহান্নামে যাবে। (সুনান ইব্নু মাজাহ ৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫, আহমাদ ২১০৭৯, ২১১০২, ২১১৪৪, ফিললুল জান্নাহ ১৪৫, তাখরীজুত তাহরীয়াহু ৪৪৭, আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ২৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যারা তাক্বদীরে অবিশ্বাসী তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় এ উম্মতের অগ্নিপূজক বলে আখ্যায়িত। তারা অসুস্থ হলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের কুশলাদি জানা যাবে না। মরে গেলে তাদের নামাযে জানাযায় উপস্থিত হওয়া যাবে না এবং কোথাও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তাদেরকে সালাম করা যাবে না।

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ উম্মাতের তারাই মাজুসী (অগ্নিপূজক) যারা আল্লাহ্র নির্ধারিত তাকদীরকে অস্বীকার করে। এরা রোগাক্রান্ত হলে তোমরা তাদের দেখতে যেও না। তারা মারা গেলে তোমরা তাদের জানাযায় হাজির হয়ো না। এদের সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হলে তোমরা এদের সালাম দিও না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৭, আহমাদ ৫৩২৭, সহীহুল জামি ৪৪৪২, ফিলাল ৩২৮, ত্বাবারানী/সগীর, হাদীস ১২৭ আবূ ‘আস্বিম/আস্-সুন্নাহ্ : ৩২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৪৪) কারোর দোষ অনুসন্ধান অথবা তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করলেঃ

কারোর দোষ অনুসন্ধান অথবা তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদেরকে এমন করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ, কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারোর গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান করো না’’। (’হুজুরাত  ১২)।

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেনঃ হে ঐ জামাআত, যারা মুখে ইসলাম কুবুল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মাজবুত হয়নি। তোমরা মুসলিমদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা, যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে আল্লাহ তা’আলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ তা’আলা প্রকাশ করে দিবেন তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভিতরে অবস্থান করে থাকলেও। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০৩২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৩৯, গয়াতুল মারাম ৪২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৬৩, আহমাদ ১৯৭৭৬, শু‘আবুল ঈমান ৬৭০৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১১২৮১, তা’লীকুর রাগীব (৩/২৭৭)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা গুপ্তভাবে শুনলো; অথচ সে তাদের কথাগুলো শুনুক তারা তা পছন্দ করছে না অথবা তারা তার অবস্থান টের পেয়ে তার থেকে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে কিয়ামতের দিন এ জন্য তার কানে সিসা ঢেলে দেয়া হবে’’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭০৪২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মু’আবিয়া (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তুমি যদি মানুষের গোপন দোষ তালাশ করো তাহলে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বা ক্ষতির সীমানায় পৌঁছে দিবে। অতঃপর আবূ দারদা (রাঃ) বললেন, এ কথা মু’আবিয়া (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, মহান আল্লাহ তাকে এর মাধ্যমে লাভবান করুন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যায়িদ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তিকে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট এনে বলা হলো, এই সেই লোক যার দাড়ি থেকে মদ টপকে পড়ছে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমাদের জন্য গোয়েন্দাগিরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যদি প্রকাশ্যে কোনো অন্যায় আমাদের সামনে ধরা পড়ে তাহলে এর জন্য আমরা তাকে ধরবো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ কারোর ঘরে তার অনুমতি ছাড়াই উঁকি মারলে ঘরের মালিক কোন বস্ত্ত দিয়ে তার চোখ ফুটো করে দিলে এর জন্য তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূল কাসিম (রাঃ) বলেছেনঃ যদি কোন লোক অনুমতি ছাড়া তোমার দিকে উঁকি মারে আর তখন তুমি তার প্রতি কংকর ছুঁড়ে তার চক্ষু উপড়ে ফেল, এতে তোমার কোন অপরাধ হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯০২, ৬৮৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৪৫) কাউকে লা’নত বা অভিসম্পাত করলেঃ

কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে লা’নত বা অভিসম্পাত করা আরেকটি কবীরা গুনাহ্। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে লা’নত করা তাকে হত্যা করার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সাবিত ইবনু যাহ্হাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি গাছের নীচে বাই’আত গ্রহণকারীদের অন্যতম সাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দলের উপর কসম খাবে, সে ঐ দলেরই শামিল হয়ে যাবে। আর মানুষ যে জিনিসের মালিক নয়, এমন জিনিসের নযর আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয়। আর কোন লোক দুনিয়াতে যে জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে জিনিস দিয়েই তাকে ’আযাব দেয়া হবে। কোন লোক কোন মু’মিনের উপর অভিশাপ দিলে, তা তাকে হত্যা করারই শামিল হবে। আর কোন্ মু’মিনকে কাফির বললে, তাও তাকে হত্যা করার মতই হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৪৭, ১৩৬৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লা’নত করা তো কোনভাবেই মু’মিনের চরিত্র হতে পারে না।

কাউকে লা’নত করা কোন সিদ্দীক তথা বিনা দ্বিধায় নবী আদর্শের সত্যিকার অনুসারী এমনকি সাধারণ কোন মু’মিনেরও বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

হারূন ইবনু সাঈদ আল আইলী (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন সিদ্দীকের পক্ষে অভিসম্পাতকারী হওয়া সমীচীন নয়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৭২, ইসলামিক সেন্টার ৬৪২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তি কখনো অভিশাপকারী হতে পারে না। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২০১৯, মিশকাত তাহকীক সানী ৪৮৪৮, জিলালুল জান্নাত ১০১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাউকে লা’নত করলে সে ব্যক্তি লা’নতের উপযুক্ত না হলে উক্ত লা’নত লা’নতকারীর উপরই প্রত্যাবর্তন করবে।

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো বান্দা কোনো বস্তুকে অভিশাপ দেয় তখন ঐ অভিশাপ আকাশের দিকে অগ্রসর হয়। অতঃপর সেই অভিশাপ আকাশে উঠার পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা পুনরায় দুনিয়ায় প্রত্যার্বতনের জন্য রওয়ানা হয়, কিন্তু দুনিয়াতে আসার পথও বন্ধ করে দেয়ায় সে ডানে বামে যাওযার চেষ্টা করে। অবশেষে অন্য কোনো পথ না পেয়ে যাকে অভিশাপ করা হয়েছে তার নিকট ফিরে আসে। তখন সেই বস্তু যদি ঐ অভিশাপের যোগ্য হয়, তাহলে তার উপর ঐ অভিশাপ পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর উপরই তা পতিত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

লা’নতকারী শহীদ ও সুপারিশকারী হতে পারবে না।

সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান উম্মু দারদাহ (রাযিঃ) এর নিকট তার নিজের পক্ষ থেকে সৌন্দর্য বর্ধক কিছু গৃহ সামগ্ৰী পাঠালেন। এক রাতে আবদুল মালিক নিদ্রা থেকে জেগে তার খাদিমকে ডাকলেন। সে তার নিকট আসতে দেরী করলে তিনি তাকে অভিসম্পাত করলেন। রাত্রি শেষে উম্মু দারদাহ (রাযিঃ) তাকে বললেন, আমি শুনলাম যখন আপনি রাতে আপনার খাদিমকে ডেকেছিলেন তখন তাকে লা’নাত করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আবু দারদাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অভিসম্পাতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী কিংবা সাক্ষ্যদাতা হতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৯৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৭৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।

কেউ কোন বস্ত্ত বা ব্যক্তিকে লা’নত করলে তিনি অন্যের কাছে তাঁর নিজ সম্মান হারিয়ে ফেলেন।

আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে ছিলেন। সে সময় এক আনসার মহিলা একটি উষ্ট্রির পিঠে আরোহী ছিলেন। তিনি (তার আচরণে) বিরক্ত হয়ে তার উপর অভিসম্পাত করলেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেন, এর উপরে যা আছে তা নিয়ে নাও এবং একে ছেড়ে দাও। কেননা সে তো অভিশপ্ত হয়ে পড়েছে।

’ইমরান (রাযিঃ) বলেন, আমি যেন সে উষ্ট্রীটি এখনও দেখতে পাচ্ছি, যে মানুষের মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছে: অথচ কেউ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৬৮, ইসলামিক সেন্টার ৬৪১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১৪৬) মুত্‘আ বিবাহ্ তথা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে বিবাহ্ করলেঃ

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

‘‘আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী’’। (মা‘আরিজ ২৯-৩১)।

উক্ত আয়াতের মর্মানুযায়ী যে মহিলার সাথে মুত্‘আ করা হচ্ছে সে প্রথমত: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়মিত স্ত্রী নয়। কারণ, এ জাতীয় মহিলা বিধিসম্মতভাবে তার পক্ষ থেকে কোনো মিরাস পায় না, চুক্তি শেষে তাকে তালাকও দিতে হয় না এবং তাকে ইদ্দতও পালন করতে হয় না। এমনকি সে তার অধিকারভুক্ত দাসীও নয়। সুতরাং তার সাথে যৌনক্রিয়া সম্পাদন করা সীমালংঘনই বটে।

কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতা সাবরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুত্’আর অনুমতি দিলেন। অতঃপর আমি ও অপর এক ব্যক্তি বানু আমির গোত্রের একটি মহিলার নিকট গেলাম। সে ছিল দেখতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট তরুণ উষ্ট্রীর ন্যায়। আমরা নিজেদেরকে তার নিকট (মুত্’আহ বিবাহের জন্য) পেশ করলাম। সে বলল, আমাকে কী দিবে? আমি বললাম, আমার চাঁদর। আমার সাথীও বলল, আমার চাঁদর। আমার চাঁদরের তুলনায় আমার সঙ্গীর চাঁদরটি ছিল উৎকৃষ্টতর, কিন্তু আমি ছিলাম তুলনায় কম বয়সের যুবক। সে যখন আমার সঙ্গীর চাঁদরের প্রতি তাকায় তখন তা তার পছন্দ হয় এবং বলল, তুমি এবং তোমার চাঁদরই আমার জন্য যথেষ্ট।

অতএব আমি তার সাথে তিনদিন অতিবাহিত করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারো কাছে মুত্’আহ বিবাহের সূত্রে কোন স্ত্রী লোক থাকলে সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (ত্যাগ করে)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২৮৫, ইসলামীক সেন্টার ৩২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত বিবাহ্ ইসলামের শুরু যুগে কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধকালীন সময়ে সাহাবায়ে কিরাম যখন নিজ স্ত্রীদের থেকে বহু দূরে অবস্থান করতেন তখন তাঁদেরই নিতান্ত প্রয়োজনে চালু করা হয়। যা মক্কা বিজয়ের সময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয় এবং যা কিয়ামত পর্যন্ত এ দীর্ঘ কালের যে কোন সময় তার যতোই প্রয়োজন হোক না কেন তা আর চালু করা যাবে না।

মুহাম্মাদ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আল হামদানী (রহঃ)....কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করতাম এবং আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। আমরা বললাম, আমরা কি খাসী হব না? তিনি আমাদের তা থেকে নিষেধ করলেন। অতঃপর তিনি পরিধেয় বস্ত্র দানের বিনিময়ে আমাদের নির্দিষ্ট কালের জন্য নারীদের বিবাহ করার রুখসত দিলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ (রাযিঃ) পাঠ করলেনঃ “হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সে সমুদয়কে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”— (সূরা আল মায়িদাহ ৫:৮৭)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২৭৬, ইসলামীক সেন্টার ৩২৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খাইবারের যুদ্ধ পর্যন্ত সাধারণভাবে এ নিয়ম চালু ছিলো। অতঃপর তা উক্ত যুদ্ধেই সর্ব প্রথম নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)....আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন মুত্’আহ ও গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩২৯৭, ইসলামীক সেন্টার ৩২৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মক্কা বিজয়ের সময় তা আবার কিছু দিনের জন্য চালু করা হয়। অতঃপর তা আবার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

সাব্রাহ্ আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় প্রবেশ করে আমাদেরকে মুত্‘আ করতে আদেশ করেন। অতঃপর মক্কা থেকে বের হতে না হতেই তা আবার নিষেধ করে দেন’’। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩১৩-৩৩২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪০৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সকল সাহাবায়ে কিরাম মুত্‘আ হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত ছিলেন। তবে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে তা হালাল হওয়ার মতও পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি মৃত্যুর পূর্বে উক্ত মত পরিহার করেছেন। অতএব তা সাহাবাদের সর্ব সম্মতিক্রমে হারামই প্রমাণিত হলো। নিম্নে সাহাবাগণের কয়েকটি উক্তি উল্লিখিত হলো:

‘আলী (রাঃ) বলেন: রমযানের রোযা অন্যান্য বাধ্যতামূলক রোযাকে রহিত করে দিয়েছে যেমনিভাবে তালাক, ইদ্দত ও মিরাস মুত্‘আ বিবাহ্কে রহিত করে দিয়েছে। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্’ঊদ্ (রাঃ) বলেন: তালাক, ইদ্দত ও মিরাস মুত্‘আ বিবাহ্কে রহিত করে দিয়েছে। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) কে উক্ত মুত্‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তা ব্যভিচার। (মুস্বান্নাফি আব্দির রায্যাক্ব ৭/৫০৫)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রা.) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও বলেন: তা ব্যভিচার। (মুস্বান্নাফি ইব্নি আবী শাইবাহ্ ৩/৫৪৬)।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) বলেন: মুত্‘আ বিবাহ্ হারাম। এর প্রমাণ সূরাহ মা‘আরিজের উনত্রিশ থেকে একত্রিশ নম্বর আয়াত। (বায়হাক্বী ৭/২০৬)।

জা’ফর বিন্ মুহাম্মাদ (রাহিমাহুল্লাহ্) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: তা হুবহু ব্যভিচার। এতে কোন সন্দেহ নেই। (বায়হাক্বী ৭/২০৭)।

ইমাম নাওয়াওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: ‘আল্লামাহ্ মাযিরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: মুত্‘আ বিবাহ্ ইসলামের শুরু যুগে জায়িয ছিলো। যা পরবর্তী যুগে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা রহিত করা হয় এবং এর হারামের উপর সকল গ্রহণযোগ্য আলিম একমত।

‘আল্লামাহ্ ক্বাযী ’ইয়ায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন: শুধু রাফিযী ছাড়া সকল আলিম তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত এবং সবাই এ ব্যাপারেও একমত যে, এখনো কোন ব্যক্তি তা সম্পাদন করলে সাথে সাথেই তা বাতিল হয়ে যাবে। চাই সে উক্ত মহিলার সাথে সঙ্গম করুক বা নাই করুক। (মুসলিম/ইমাম নাওয়াওয়ীর ব্যাখ্যা ৯-১০/১৮৯)।

শিয়া সম্প্রদায় এখনো উক্ত মুত্‘আ বিবাহ্কে হালাল মনে করে। যা কুর‘আন-সুন্নাহ্’র সম্পূর্ণ বিরোধী। কোনো কোনো বর্ণনা মতে ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) ও তাঁর কিছু ভক্তরা উক্ত বিবাহ্ জায়িয বললে বা করলে তা জায়িয হয়ে যাবে না। কারণ, কুর‘আন-সুন্নাহ্’র সামনে কোনো সাহাবার কথা গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু অন্যান্য সকল সাহাবা তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত এবং তিনিও পরিশেষে উক্ত মত থেকে ফিরে এসেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। মূলতঃ আজও যারা উক্ত অগ্রহণযোগ্য মতকে আঁকড়ে ধরে আছে তারা নিশ্চয়ই নিজ কুপ্রবৃত্তির অদম্য পূজারী। নতুবা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত হওয়ার পরও একটি বিচ্ছিন্ন মতকে আঁকড়ে ধরার আর অন্য কোন মানে হয় না।

(১৪৭) কাউকে কিছু দান করে তা আবার ফেরত নিলেঃ

কাউকে কিছু দান করে তা আবার ফেরত নেয়া হারাম।

ইবনু ’উমার ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো ব্যক্তির জন্যই (কাউকে কিছু) দেয়ার বা দান করার পর তা ফেরত নেয়া হালাল নয়। তবে পিতা পুত্রকে কিছু দান করার পর তা ফেরত নিতে পারবে। যে ব্যক্তি দান করার পর তা ফেরত নেয়, সে এমন কুকুরের মতো, যে পেট ভরে খাওয়ার পর বমি করে পুনরায় তা খায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩৭৭, নাসায়ী ৩৬৯২, ৩৬৯০, আহমাদ ২১২০, ৪৭৯৫, ৫৪৬৯, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/১৮০, রাওদুন নাদীর ২১৯, ইরওয়া ৬/৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের জন্য নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করা শোভনীয় নয়। দান (হেবা) করার পর যে লোক তা আবার ফিরিয়ে নেয় সে এমন এক কুকুরের সমতুল্য যে বমি করার পর তা আবার ভক্ষণ করে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৮, ১২৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৮৯, ২৬২১, ২৬২২, ৬৯৭৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪০৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২২, সুনান আননাসায়ী ৩৬৯০, ৩৬৯১, ৩৬৯৩, ৩৬৯৪, ৩৬৯৫, ৩৬৯৬, ৩৬৯৭, ৩৬৯৮, ৩৬৯৯, ৩৭০০, ৩৭০১, ৩৭০২, ৩৭০৩, ৩৭১০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৩৮, ৩৫৩৯, আহমাদ ১৮৭৫, ২১২০, ২২৫০, ২৫২৫, ২৬১৭, ২৬৪১, ৩০০৬, ৩১৩৬, ৩১৬৭, ৩২১১, ইরওয়া ১৬২২, রাওদুন নাদীর ২১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ কারোর কাছ থেকে নিজ দান ফেরত নিতে চাইলে সে হুবহু তাই ফেরত নিবে যা সে দান করেছে। এর চাইতে এতটুকুও সে আর বেশি নিতে পারবে না। যদিও তা তার দানেরই ফলাফল হোক না কেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তির নিজের দান করা বস্তু ফেরত নেয় সে এমন কুকুরের মতো, যে বমি করে পুনরায় তা ভক্ষণ করে। দাতা দানকৃত বস্তু ফেরত চাইলে গ্রহীতা খতিয়ে দেখবে এবং জেনে নিবে, সে কি জন্য তার দানকৃত বস্তু ফেরত চাইছে। কারণ জানা গেলে তা ফেরত দিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৫৪০, সুনান ইবনু মাজাহ ২৩৭৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০২০, সুনান আননাসায়ী ৩৬৮৯, আহমাদ ৬৫৯২, ৬৬৬৬, ৬৯০৪, দারাকুতনী ৩/৪৩, সহীহ আল জামি ৭৬৮৬।)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৪৮) কোনো গুনাহ্’র কাজে মানত করে তা পুরা করলেঃ

কোন গুনাহ্’র কাজে মানত করে তা পুরা করা হারাম। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে কসমের কাফ্ফারা দিতে হবে।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীর মানত করে সে যেন তা না করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৮৯, সুনান আততিরমিযী ১৫২৬, ১৫২৪,  সুনান ইবনু মাজাহ ২১২৬, ২১২৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৯৬, ৬৭০০, সুনান আননাসায়ী ৩৮০৬, ৩৮০৭, ৩৮০৮,৩৮৩৩, ৩৮৩৪, ৩৮৩৫, ৩৮৩৬, ৩৮৩৭, ৩৮৩৮, ৩৮৩৯, আবূ দাউদ ৩২৮৯, আহমাদ ২৩৫৫৫, ২৩৬২১, ২৫২১০, ২৫৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১০৩১, দারেমী ২৩৩৮, ইরওয়াহ ৯৬৭, সহীহ আল জামি ৭৫৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) আরো বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘কোন গুনাহ্’র ব্যাপারে মানত করা চলবে না। তবে কেউ অজ্ঞতাবশত: এ জাতীয় মানত করে ফেললে উহার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হবে’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৯০, ৩২৯২, সুনান আততিরমিযী ১৫২৪, ১৫২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ২১২৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৯৬, ৬৭০০, সুনান আননাসায়ী ৩৮০৬, ৩৮০৭, ৩৮০৮,৩৮৩৩, ৩৮৩৪, ৩৮৩৫, ৩৮৩৬, ৩৮৩৭, ৩৮৩৮, ৩৮৩৯, আবূ দাউদ ৩২৮৯, আহমাদ ২৩৫৫৫, ২৩৬২১, ২৫২১০, ২৫৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১০৩১, দারেমী ২৩৩৮, ইরওয়াহ ৯৬৭, সহীহ আল জামি ৭৫৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘মানত দু’ প্রকার। তার মধ্যে যা হবে একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলারই জন্য তার কাফ্ফারা হবে শুধু তা পুরা করা। আর যা হবে শয়তানের জন্য তথা শরীয়ত বিরোধী তা কখনোই পুরা করতে হবে না। তবে সে জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কসমের কাফ্ফারা দিতে হবে’’। (ইব্নুল জারূদ্/মুন্তাক্বা, হাদীস ৯৩৫ বায়হাক্বী ১০/৭২)।

সুতরাং কেউ যদি তার কোন আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে বলে মানত করে কিংবা কোন ওয়াজিব কাজ ছেড়ে দিবে বলে মানত করে অথবা কোন হারাম কাজ করবে বলে মানত করে তা হলে সে এ জাতীয় মানত পুরা করবে না। বরং সে কসমের কাফ্ফারা তথা দশ জন মিসকিনকে খানা খাওয়াবে অথবা তাদেরকে কাপড় কিনে দিবে। আর তা অসম্ভব হলে তিনটি রোযা রাখবে।

(১৪৯) দাইয়ূছী হলেঃ

যে নারী বা পুরুষ পর্দা মানে না তাকে দাইয়ূছী বলা হয়। ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৫৫, নাসায়ী ২৫৬৩, আহমাদ ৫৩৭২, সহীহ আল জামি ৩০৫২, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আমাদের যুগে পর্দাহীনতার নিত্যনতুন সংস্করণ বের হচ্ছে। বাড়ীতে কন্যা কিংবা স্ত্রীকে একজন বেগানা পুরুষের পাশে বসে আলাপ করতে দেখেও বাড়ীর কর্তা পুরুষটি কিছুই বলেন না। বরং তিনি যেন এরূপ একাকী আলাপে খুশীই হন। মহিলাদের কোনো বেগানা পুরুষের সাথে একাকী বাইরে যাওয়াও দাইয়ূছী। ড্রাইভারের সাথে অনেক স্ত্রীলোককে এভাবে একাকী বাইরে যেতে দেখা যায়। বিনা পর্দায় তাদেরকে বাইরে যেতে দেওয়াটাই দাইয়ূছী। এভাবে বাইরে বের হলে পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের প্রতি পড়ে।আবার ফিল্ম কিংবা যে সকল পত্রিকা পরিবেশকে কলুষিত করে ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায় সেগুলো আমদানী করা এবং বাড়ীতে স্থান দেওয়াও দাইয়ূছী। সুতরাং এসব হারাম থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।

(১৫০) শিরকমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকলেঃ

ইবাদতের প্রকারসমূহ থেকে কোনো কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য সম্পাদন করাকে শিরক বলে। আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দু‘আ করা, গাইরুল্লাহর জন্য কুরবানী করা, মানত করা এবং এমন বিষয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নিকট উদ্ধার কামনা করা, যা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ রাখে না।

শিরক সম্পর্কে রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এই উপদেশ দিয়েছেনঃ তুমি আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করো না, যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে ছিন্নভিন্ন করা হয় অথবা আগুনে ভস্মীভূত করা হয়। তুমি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে তার থেকে (আল্লাহর ) যিম্মদারি উঠে যায়। তুমি মদ্যপান করো না। কেননাতা সর্বপ্রকার অনিষ্টের চাবিকাঠি। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ১/১৯৫, ইরওয়া ২০৮৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের সব থেকে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললামঃ অবশ্যই সতর্ক করবেন, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার গণ্য করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। এ কথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেনঃ মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, দু’বার করে বললেন এবং ক্রমাগত বলেই চললেন। এমনকি আমি বললাম, তিনি মনে হয় থামবেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭৬, ২৬৫৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কি কি কাজ করলে একজন মুসলমান মুশরিকে পরিনত হয় হয়?

শিরক এক মারাত্মক কবিরাহ গুণাহ যা করলে তার জীবনের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। একজন মুশরেক তওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে তার চির স্থায়ী স্থান হবে জাহান্নামে। আমাদের সমাজের অনেক মুসলমান একই সাথে ইসলামেরও কাজ করে তার সাথে শিরকমূলক কর্মকান্ডও করে। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে শিরকও করে”। (সুরা ইউসুফ ১০৬)।

ইবনে কাসীর বলেনঃ যেসব মুসলিম ঈমান সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রকার শির্কে লিপ্ত রয়েছে, তারাও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদের জন্য যেসব বিষয়ের আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে সবচাইতে বিপজ্জনক হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেনঃ রিয়া (লোক দেখানো ইবাদাত) হচ্ছে ছোট শির্ক। (মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২৯)।

এমনিভাবে অন্য এক হাদীসে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কসম করাকেও শির্ক বলা হয়েছে। (সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ১০/১৯৯, হাদীস নং ৪৩৫৮)।

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করা এবং যবেহ্ করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আরও এসেছে, মুশরিকরা তাদের হজের তালবিয়া পাঠের সময় বলত: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাকা তামলিকুহু ওমা মালাক। (অর্থাৎ আমি হাযির আল্লাহ আমি হাযির, আমি হাযির, আপনার কোন শরীক নেই, তবে এমন এক শরীক আছে যার আপনি মালিক, সে আপনার মালিক নয়) এটা বলত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এ শির্কী তালবিয়া পড়ার সময় যখন তারা (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা লাকা) পর্যন্ত বলত, তখন তিনি বলতেন যথেষ্ট এতটুকুই বল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৭০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারণ এর পরের অংশটুকু শির্ক। তারা ঈমানের সাথে শির্ক মিশ্রিত করে ফেলেছে। (ইবন কাসীর)।

মুসলমানগণ যেসব শিরকমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তার কিছু এখানে উল্লেখ করা হলোঃ

(১) আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করা শিরকঃ

(ক) ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। অতএব যদি কারো কসম করতেই হয়, সে যেন আল্লাহ তা’আলার নামেই কসম করে অথবা নিশ্চুপ থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩৪০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৪৬, ২৬৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৪৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৩৪, আহমাদ ৬২৮৮, দারিমী ২৩৮৬, ইরওয়া ২৫৬০, সহীহ আত্ তারগীব ২৬, (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করল, সে শির্ক (অংশী স্থাপন) করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪১৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৩৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৫১, ইরওয়া ২৫৬১, সহীহাহ্ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৬২০৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’আমানত’ শব্দের দ্বারা কসম করল, সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৫৩, আহমাদ ২২৯৮০, সহীহাহ্ ৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৬২০৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কসমের মধ্যে ’লাত’ ও ’উযযা’ (প্রতীমা)-এর নাম বলে ফেলে, সে যেন তাৎক্ষণিকভাবে ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো ইলাহ নেই) বলে। আর কেউ যদি তার সঙ্গী-সাথীকে এ বলে আহবান করে যে, ’আসো, আমরা জুয়া খেলি’, সে যেন অবশ্যই সাদাকা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৫০, ৪৮৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২০৯৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২৪৭, নাসায়ী ৩৭৭৫, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৪৫, আহমাদ ৮০৮৭, ৮০২৬, ইরওয়াহ ২৫৬৩, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) কোন কিছুকে শুভ-অশুভ লক্ষন বা কুলক্ষণ মনে শিরকঃ

আরবরা কোথাও যাত্রার প্রাক্কালে বা কোন কাজের পূর্বে পাখি উড়িয়ে তার শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করত। পাখি ডান দিকে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হ’তে বিরত থাকত। একেই ‘শুভলক্ষণ’ বা ‘কুলক্ষণ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘যখন ফেরাঊন ও তার প্রজাদের কোন কল্যাণ দেখা দিত, তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হ’ত, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের ‘কুলক্ষণে’ বলে গণ্য করত’। (আ‘রাফ ১৩১)।

বর্তমানে মাস, দিন, সংখ্যা, নাম ইত্যাদিকে দুর্ভাগ্য বা অশুভ প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন অনেক দেশে হিজরী সনের ছফর মাসে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকা হয়। প্রতি মাসের শেষ বুধবারকে কুলক্ষণে মনে করা হয়। বিশ্বজুড়ে আজকাল ১৩ সংখ্যাকে ‘অলক্ষুণে তের’ বা Unluckey thirteen বলা হয়। অনেক বিক্রেতা প্রথম ক্রেতার ক্রয় না করাকে অশুভ গণ্য করে। অনেকে কানা, খোঁড়া, পাগল ইত্যাকার প্রতিবন্ধীদের কাজের শুরুতে দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে। অথচ এ জাতীয় আক্বীদা পোষণ করা হারাম ও শিরক।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৩৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৬৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৩০, গয়াতুল মারাম ৩০৩, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৪০৭, সহীহুল জামি‘ ৩৯৬০, আবূ ইয়া‘লা ৫২১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২২, শু‘আবুল ঈমান ১১৬৭, আল মুসতাদরাক ৪৩, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“যে ব্যক্তি নিজে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে ও যার কারণে অন্যের মাঝে কুলক্ষণের প্রতি বিশ্বাসের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করে ও যার জন্য ভাগ্য গণনা করা হয় (বর্ণনাকারী মনে করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সম্পর্কেও বলেছিলেন) এবং যে জাদু করে ও যার কারণে জাদু করা হয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়”। (ত্বাবরাণী; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ২১৯৫)।

কেউ কোনো বিষয়ে কুলক্ষণে নিপতিত হলে তাকে এজন্য কাফ্ফারা দিতে হবে। কাফ্ফারা এখানে কোনো অর্থ কিংবা ইবাদত নয়; বরং পাপ বিমোচক একটি দোআ, যা আব্দুল্লাহ ইবন আমর বর্ণিত হাদীসে এসেছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন, কুলক্ষণ যে ব্যক্তিকে কোনো কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয় সে শির্ক করে। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুলাল্লাহ! তার কাফফারা কী হবে? তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি বলবে:

উচ্ছারণ: আল্লা-হুম্মা লা খায়রা ইল্লা খায়রুকা, ওয়ালা ত্বায়রা ইল্লা ত্বায়রুকা, ওয়ালা ইলা-হা গায়রুকা।

“হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। আপনার সৃষ্ট কুলক্ষণ ছাড়া কোনো কুলক্ষণ নেই। আর আপনি ছাড়া কোনো (হক) মা‘বুদও নেই”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৭০৪৫; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ১০৬৫)।

তবে সুলক্ষণ-কুলক্ষণের ধারণা মনে জন্ম নেয়া স্বভাবগত ব্যাপার, যা সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। এর একমাত্র চিকিৎসা হ’ল আল্লাহর উপর পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৩৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৬৭৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৩০, গয়াতুল মারাম ৩০৩, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৪০৭, সহীহুল জামি‘ ৩৯৬০, আবূ ইয়া‘লা ৫২১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২২, শু‘আবুল ঈমান ১১৬৭, আল মুসতাদরাক ৪৩, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) মাজারে ও কোন পীর-ফকির কিংবা কারো নিকট সিজদা দেয়া শিরকঃ

সিজদার একমাত্র মালিক বা হকদার মহান আল্লাহ তাআলা। তিনি ছাড়া আর কাউকে সিজদা করা জায়েয নেই। বিভিন্ন পির-আউলিয়া, গাউস, কুতুব এর দরবারে গেলে দেখা যায়, তাদের ভক্ত বা মুরিদগণ তাদের বাবাজানের পায়ে সিজদা করছে। আবার মৃত পির-অলিদের মাজার বা দরগাহে গিয়েও সিজদায় লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। এই সিজদাকে তারা জায়েজ মনে করে।

সিজদা প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে,

“নিশ্চয়ই সেজদার স্থানসমূহের মালিক আল্লাহ তাআলা। অতএব তোমরা তার সাথে কারো ইবাদত করো না”। (সুরা জিন : আয়াত ১৮)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবায়ের, আতা, তলক ইবনে হাবীব প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, উক্ত আয়াতের সিজদার স্থানসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য সিজদার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অর্থাৎ এগুলোর মালিক আল্লাহ।

অতএব এগুলো দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদা করো না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬৭৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৯/১৪; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২৯/৯১)।

কবরকে সিজদার স্থান বানানো নিষেধ

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) [শব্দাবলী আবূ বকর এর] ... জুনদুব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাকে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইবরাহীমকে যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্য থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে আবূ বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মাসজিদ (সাজদার স্থান) হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা কবরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ বলেছেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১০৬৮, ১০৬৯, ১০৭০, ১০৭১ )।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

 আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ)...আয়োশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগ থেকে আরোগ্যলাভ করেননি সে রোগশয্যায় থেকে বলেছেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তারা তাদের নবীদের (নবীদের) কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি এরুপ আশংকা না হতো, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর উঁচু করা হতো। কিন্তু তিনি তাকে মসজিদ বানানোর আশংকা করেছিলেন। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১০৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বা যে কোন পীর-আওলিয়া কিংবা মাজারের নামে মানত করা শিরকঃ

আল্লাহ ব্যতীত কোনো পির-আউলিয়ার দরবারে বা মাজারে মান্নত করা হারাম।  কেননা, মান্নত পূরণ করা একটি ইবাদত। তাই মান্নত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে। মান্নত পূরণ করতে হবে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। সুতরাং কোনো মাযার বা পীরের নামে মান্নত করলে তা শিরক হবে। কেউ এমন মান্নত  করলেও তা পালন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উপরন্তু উক্ত মান্নতের কারণে তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি। (আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৬; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯)।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘‘তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূর প্রসারী’’। (সূরা দাহারঃ ৭)।

ব্যাখ্যাঃ ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে যেসব বিষয় তাদের উপর ওয়াজিব করেছেন, তারা ঐসব বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত করে এবং মানতের মাধ্যমে নিজেদের উপর যা আবশ্যক করে নিয়েছে, তা পূর্ণ করার মাধ্যমেও তারা আল্লাহর এবাদত করে।

আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেনঃ ‘‘তোমরা যা কিছু খরচ করেছ আর যে মানত মেনেছ, তা আল্লাহ জানেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৭০)।

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে মানত করে, সে আল্লাহর নাফরমানী করবে, সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৯৬, ৬৭০০, আধুনিক প্রকাশনী- ৬২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যারা অলীদের জন্য যবেহ ও মানত করাকে জায়েয মনে করে, তাদের জবাবে শাইখ সুনউল্লাহ আল-হালাবী আলহানাফী (রঃ) বলেনঃ যবেহ ও মানত যে কারো নামেই হোক, তা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের জন্যে হওয়ার কারণে বাতিল। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

‘‘যেসব জন্তুর উপর আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করোনা; এ ভক্ষণ করা গুনাহ্’’। (সূরা আনআমঃ ১২১)।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

‘‘তুমি বলোঃ আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্‌রই জন্য। তার কোনো শরীক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল”। (সূরা আনআম ১৬২-১৬৩)।

সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য মানত করা তিনি ছাড়া অন্যের জন্য যবেহ করার মতই শির্ক।

(৫) কেউ পেছন দিক থেকে ডাক দিলে কিংবা নিজে যাত্রার সময় পিছন ফিরে তাকালে যাত্রা অশুভ হয় এই ধারনা বিশ্বাস করা শিরকঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোনো বস্তুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কোনো বন্তুকে কুলক্ষণ ভাবা শিরক। একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) কোনো বিপদে পড়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে "ও মা, ও বাবা" ইত্যাদি বলে এই রকম গায়েবি ডাকা শিরকঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী”। (সুরা আল-বাকারা ১৫৬)।

আল্লাহ্ তা'আলা যদি আমাদের কোন কষ্ট দেন তবে তাতে কোন না কোন মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তার উদ্দেশ্যকে সম্মান করতে পারা একটি মহৎ কাজ। আর এটাই হচ্ছে, সবর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের কর্মকাণ্ড আশ্চর্যজনক। তার সমস্ত কাজই ভাল।

মুমিন ছাড়া আর কারও জন্য এমনটি হয় না। যদি তার কোন খুশীর বিষয় সংঘটিত হয় তবে সে শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি তার কোন ক্ষতিকর কিছু ঘটে যায় তবে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্য কলাণকর হয়।” (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অপর হাদীসে এসেছে,

ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ....উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিমের ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলেঃ আল্লাহ যা হুকুম করেছেন-

"ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জিউন”

 (অর্থাৎ- আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং তারই কাছে ফিরে যাব) বলে এবং এ দু’আ পাঠ করে-

“আল্ল-হুম্মা’ জুৱনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা- ইল্লা- আখলাফাল্ল-হু লাহ খয়রাম মিনহা-”

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে আমার মুসীবাতে সাওয়াব দান কর এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর, তবে মহান আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করে থাকেন।)।

উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ ইনতিকাল করেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কোন মুসলিম আবূ সালামাহ থেকে উত্তম? তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি হিজরত করে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছে গেছেন। এতদসত্ত্বেও আমি এ দু’আগুলো পাঠ করলাম। এরপর মহান আল্লাহ আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো স্বামী দান করেছেন। উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) বলেন, আমার নিকট রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের পয়গাম পৌছাবার উদ্দেশে হাতিব ইবনু আবূ বালতা’আহ-কে পাঠালেন। আমি বললাম, আমার একটা কন্যা আছে আর আমার জিদ বেশী। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার কন্যা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করব যাতে তিনি তাকে তার কন্যার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেন। আর (তার সম্পর্কে) দু’আ করব যেন আল্লাহ তার জিদ দূর করে দেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৫, ইসলামীক সেন্টার ২০০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং বিপদ আপদে পড়লে অন্য কাউকে না ডেকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং উল্লেখিত দোয়া পাঠ করতে হবে।

(৭)  পেঁচা ডাকলে সামনে বিপদ আছে এই ধারনা করা শিরকঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই সফর মাসকেও অশুভ মনে করা যাবে না এবং পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত রয়েছে তাও অবান্তর। তখন এক বেদুঈন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উটের পাল অনেক সময় মরুভূমির চারণ ভূমিতে থাকে, মনে হয় যেন নাদুস-নুদুস জংলী হরিণ। অতঃপর সেখানে কোনো একটি চর্মরোগে আক্রান্ত উট এসে আমার সুস্থ উটগুলোর সাথে থেকে এদেরকেও চর্মরোগী বানিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করলো কে?

মা’মার (রহঃ) বলেন, যুহরী (রহঃ) বলেছেন, অতঃপর এক ব্যক্তি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ রোগাক্রান্ত উটকে যেন সুস্থ উটের সাথে একত্রে পানি পানের জায়গায় না আনা হয়।’’ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-এর এ হাদীস শুনে এক ব্যক্তি বললো, আপনি কি এ হাদীস বর্ণনা করেননি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছু নেই, সফর মাসকে অশুভ মনে করবে না এবং পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত আছে তা অবান্তর?’’

তখন আবূ হুরাইরাহ বলেন, না, আমি তোমাদের নিকট এরূপ হাদীস বলিনি। যুহরী বলেন, আবূ সালামাহ (রাঃ) বলেছেন, তিনি অবশ্যই এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে আমি আবূ হুরাইরাহকে এ হাদীস ছাড়া কখনো কোনো হাদীস ভুলে যেতে শুনিনি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) রোগ ব্যাধি বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেতে শরীরে পিতলের বালা, শামুক, ঝিনুকের মালা, সুতা, কিংবা যে কোন প্রকারের বস্তু  বা তাবিজ ঝুলানো শিরকঃ

উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তা‘বীয ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না। আর যে কড়ি ব্যবহার করবে আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না’ (আহমাদ হা/১৬৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

তাবিজ থাকায় বায়াত না নেয়া

উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (বাইআত করার উদ্দেশ্যে) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনি ন’জনের বাইআত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই। অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইআত নিলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে। (হাদীস সম্ভার ৩৭৯৩, আহমাদ ১৭৪২২, হাকেম, সিলসিলাহ সহীহাহ ৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুওয়াইফি’ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে রুওয়াইফি’! হয়তো তুমি আমার পরে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, তুমি তখন মানুষকে এ সংবাদ দিবে যে, যে ব্যক্তি নিজের দাড়ি জট পাকাবে অথবা ধনুকের রশি গলায় কবচ হিসেবে বাঁধবে অথবা পশুর গোবর বা হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬, সহীহুল জামি‘ ৭৩১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৯) সফলতা কিংবা মঙ্গল লাভের জন্য এবং অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে যে কোন প্রকার আংটি ব্যবহার করা শিরকঃ

রাজধানী সহ বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে এবং বড় বড় পাইকারী বাজারে এমন কিছু ব্যবসায়ের দোকান পাওয়া যায়, যারা ধাতব নির্মিত আংটি ও বালা বিক্রি করে থাকে। অনেক লোকদেরকে তা বাত রোগ নিরাময়, যে কোন উদ্দেশ্য সফল হওয়া, শনি ও মঙ্গল গ্রহের কুদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষা ইত্যাদির জন্য করে আংগুলে ও হাতে ব্যবহার করতে দেখা যায়। আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোন বস্ত্তই নিজস্ব গুণে কোন রোগের ক্ষেত্রে উপকারী বা অপকারী হ’তে পারে না। এতে রোগীর অন্তরে ধাতব বস্ত্তর প্রতি উপকারী হওয়ার ধারণার সৃষ্টি হয় এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর পরিবর্তে বস্ত্তর উপর ভরসা করা হয়। তাই কোন বস্ত্তকে কোন ক্ষেত্রে উপকারী বা অপকারী ধারণা করে ব্যবহার করা।

অথচ আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন ক্ষতির স্পর্শ করান, তবে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর যদি আল্লাহ আপনার মঙ্গল চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করার কেউ নেই। তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার কাছে সেটা পৌঁছান। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু”। (সুরা ইউনুস ১০৭)।

অথচ আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে ক্লেশদান করেন, তাহলে তিনি ব্যতীত আর কেউ তার মোচনকারী নেই। আর যদি তিনি তোমার কল্যাণ করেন, তাহলে তিনিই তো সর্ব বিষয়ে শক্তিমান”। (সুরা আনআস ১৭)।

সুতরাং মঙ্গল অমঙ্গল সবই আল্লাহর হাতে। আংটি বা পাথর কারো ভাগ্য বদলায় না।

(১০) আল্লাহর ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিংবা লোক দেখানো ইবাদাত করা শিরকঃ

আল্লাহ তা‘আলার নিকটে আমল কবুল হওয়ার জন্য রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত এবং কুরআন-সু্ন্নাহ নির্দেশিত নিয়মে হওয়া অপরিহার্য। যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করবে, সে ছোট শির্ক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে এবং তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন লোক দেখানো সালাত। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন,

“নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করে। আর তিনি তাদের সাথে (সেটার জবাবে) কৌশল অবলম্বনকারী। আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা সালাত আদায় করছে; কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২)।

স্বীয় কাজের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এবং লোকেরা শুনে বাহবা দিক এ নিয়তে যে কাজ করবে সে শির্কে নিপতিত হবে। এরূপ বাসনাকারী সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুবকে বলতে শুনেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। তিনি ছাড়া আমি অন্য কাউকে ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন’ এমন বলতে শুনিনি। আমি তাঁর নিকট গেলাম এবং তাঁকে বলতে শুনলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোক শোনানো ’ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ’লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ’ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ’লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ৬৪৯৯, ৭১৫২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৭), সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৮১, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২০৬, সহীহুল জামি' ১১৫৫৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৫২৯৮, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৭৭৮, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৭৫, আবূ ইয়া'লা ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৬, শুআবূল ঈমান ৬৮১৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৬৭৫, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অর্থাৎ তিনি এসব লোককে কিয়ামতের দিন মানুষের সামনে অপমানিত করবেন এবং কঠোর শাস্তি দিবেন।

যে আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের সন্তুষ্টিকল্পে ইবাদত করবে তার আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন,

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি অংশীস্থাপনকারীদের হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে লোক কোন ’আমলে (ইবাদতে) আমার সাথে অন্যকে শরীক করে, আমি তাকেও তার সেই শিরকসহ বর্জন করি। অপর এক বর্ণনায় আছে, তার সাথে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২০৫, ইসলামিক সেন্টার ৭২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কোনো আমল শুরু করার পর যদি তার মধ্যে লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয় এবং সে তা ঘৃণা করে ও তা থেকে সরে আসতে চেষ্টা করে, তাহলে তার ঐ আমল শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি সে তা না করে; বরং লোক দেখানো ভাব মনে উদয় হওয়ার জন্য প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করে, তাহলে অধিকাংশ আলেমের মতে তার ঐ আমল বাতিল হয়ে যাবে।

(১১) আল্লাহ ব্যতীত কোনো গণক বা জ্যোতিষী বা কোনো পির অলি গায়েব জানে এই কথা বিশ্বাস করা ও যাদুকরের নিকট যাওয়া শিরকঃ

জাদু ও ভাগ্যগণনা কুফর ও শির্কের পর্যায়ভুক্ত হারাম। জাদু তো পরিষ্কার কুফর এবং সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের অন্যতম। জাদু শুধু ক্ষতিই করে, কোনো উপকার করে না। জাদু শিক্ষা করা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

“তারা এমন জিনিস (জাদু) শিক্ষা করে, যা তাদের অপকারই করে, কোনো উপকার করে না”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২)।

তিনি আরো বলেন, “জাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন সে সফল হবে না”। (সূরা ত্বোয়াহা, আয়াত: ৬৯)।

জাদু চর্চাকারী কাফের

মহান আল্লাহ বলেন,

“সুলায়মান কুফুরী করেন নি। কিন্তু কুফুরী করেছে শয়তানেরা। তারা মানুষকে শিক্ষা দেয় জাদু এবং বাবেলে হারূত-মারূত নামের দু’জন মালাকের ওপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল তা। ঐ ফিরিশতাদ্বয় কাউকে একথা না বলে কিছু শিক্ষা দেয় না যে, আমরা এক মহাপরীক্ষার জন্য। সুতরাং তুমি (জাদু শিখে) কুফুরী করো না”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (হে লোক সকল!) সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে তোমরা দূরে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এ সাতটি বিষয় কী? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। (২) যাদু করা। (৩) শারী’আতের অনুমতি ব্যতীত কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া। (৫) (অন্যায়ভাবে) ইয়াতীমের মাল খাওয়া। (৬) জিহাদের মাঠ থেকে পালিয়ে আসা। (৭) নির্দোষ ও সতী-সাধ্বী মুসলিম মহিলার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫২, বুখারী ২৭৬৭, মুসলিম ৮৯, নাসায়ী ৩৬৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৪০০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬১, ইরওয়া ১২০২, সহীহ আল জামি‘ ১৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইসলামী বিধানে জাদুকরকে হত্যা করা

বাজালাহ ইবনু আবাদাহ থেকে বর্ণিতঃ

ওমর (রাঃ) মুসলিম গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় বলেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা করো। (বুখারী, বায়হাক্বী, আল-কাবায়ির ২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

জাদুকরের উপর্জন অপবিত্র ও হারাম। জ্ঞানপাপী, অত্যাচারী ও দুর্বল ঈমানের লোকেরা অন্যের সঙ্গে শত্রুতা ও জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য জাদুকরদের নিকটে যায়। অনেকে আবার জাদুর ক্রিয়া দূর করার জন্য জাদুকরের শরণাপন্ন হয়। এজন্যে যাওয়াও হারাম। বরং তাদের উচিত ছিল আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং আল্লাহর কালাম যেমন সূরা নাস, ফালাক ইত্যাদি দিয়ে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।

গণক ও ভবিষ্যদ্বক্তা উভয়েই আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকারকারী কাফিরদের দলভুক্ত। কারণ, তারা উভয়েই গায়েবের কথা জানার দাবী করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“বল, ‘আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য (গায়েব)  বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং ওরা কখন পুনরুত্থিত হবে (তাও) ওরা জানে না”। (সুরা আন নামাল ৬৫)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

“তিনিই গায়েবী বিষয়ের জ্ঞানী, তিনি তাঁর গায়েবের জ্ঞান কারও কাছে প্রকাশ করেন না”। (সুরা আল জিন ২৬)।

গণক বা জ্যোতিষীগণ ভবিষ্যতবাণী কোথা থেকে পায়?

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জ্যোতিষীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তারা কিছুই নয়। তারা বলল : হে আল্লাহর রসূল! তারা কোন কোন সময় এমন কথা বলে, যা সত্য ও সঠিক হয়ে থাকে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঐ কথাটি সত্য যা জীন শয়তান (ঊর্ধ্বজগৎ হতে) ত্বরিত শুনে নেয়। অতঃপর মোরগের করকরানোর মতো শব্দ করে তার বন্ধুর কানে তা পৌঁছিয়ে দেয়। এরপর সে গণক ঐ একটি সত্য কথার সাথে শত শত মিথ্যা মিলিয়ে প্রকাশ করতে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৪৫৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫৬১, ৩২১৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২২৮, আহমাদ ২৪৫৭০, বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৩, আল আদাবুল মুফরাদ ৮৮২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৬৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৩৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০৩৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৭০৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৫১))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি- মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) একদল মেঘের দেশে (অর্থাৎ- পৃথিবী হতে নিকটতম আকাশমণ্ডলীতে) নেমে আসেন এবং আসমানে যার ফায়সালা হয়েছে পরস্পর তার আলোচনা করেন, সে সময় জীন-শয়তান কান লাগিয়ে রাখে। আর যখনই সে কোন কথা শুনতে পায়, তখনই তা গণকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় এবং তারা নিজেদের পক্ষ হতে শত শত মিথ্যা তার সাথে মিলিয়ে প্রকাশ করতে থাকে (যার দরুন সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ঘটে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৯৪, ৪৬০০, ৪৬০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২১০, ৩২৮৮, ৫৭৬২, ৬২১৩, ৭৫৬১, আল জামি‘উস্ সগীর ৩৭১৮, সহীহুল জামি‘ ১৯৫৫, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৬৮১, তিরমিযী ৩২২৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৭০, ই. ফা ২৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যাওয়ার পরিনতি

 (ক) “যে ব্যক্তি গণক কিংবা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে যায় এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করে, সে নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদের ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৫৩২; সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস নং ৩৩৮৭)।

যে ব্যক্তি তারা গায়েব জানে না বলে বিশ্বাস করে কিন্তু অভিজ্ঞতা কিংবা অনুরূপ কিছু অর্জনের জন্য তাদের নিকটে যায় সে কাফির হবে না বটে, তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

(খ) হাফসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং (তার কথা সত্য ভেবে) তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হয় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৯৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৩০, আল জামি‘উস্ সগীর ১০৮৮৪, সহীহুল জামি‘ ৫৯৪০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৪৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯১৮, আহমাদ ১৬৬৩৮, আবূ ইয়া‘লা ৫৪০৮, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৯১৭২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৯৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬২৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রের বৃষ্টির পর ভোরে আমাদের ফজরের সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকেদের (মুক্তাদীদের) দিকে ফিরে বললেনঃ তোমরা কি জানো, তোমাদের রব কি বলেছেন? তারা বলল : আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, রব্ বলেছেনঃ আমার বান্দাগণ আজ এমন অবস্থায় ভোর করেছে যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার প্রতি ঈমান পোষণকারী এবং কেউ কেউ আমাকে অস্বীকারকারী। যে বলেছে, আল্লাহর রহমত ও করুণায় আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার প্রতি ঈমান পোষণকারী এবং তারকা বা নক্ষত্রে অস্বীকারকারী। আর যে বলেছে, অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমরা বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার সাথে কুফরী করেছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৯৬, ৪৫৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৪৬, ১০৩৮, ৪১৪৭, ৭৫০৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১, নাসায়ী ১৫২৫, ইরওয়া ৬৮১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৬, আল জামি‘উস্ সগীর ১২৯৮৪, সহীহুল জামি‘ ৭০২৮, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭০১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫৬৩, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ২০৮১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২১০০৩, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৩৫৮, আহমাদ ১৭০৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৮, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১৮৩৩, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫০৬৫, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৬১৮৬, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ৬৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষের কাছে যায় এবং সে যা কিছু বলে তা বিশ্বাস করে অথবা যে ব্যক্তি ঋতুমতী অবস্থায় নিজের স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে কিংবা যে ব্যক্তি স্ত্রীর পিছন দ্বার দিয়ে সহবাস করে, সে ঐ জিনিস হতে সম্পর্কহীন হয়ে গেল, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৯৯, আহমাদ ৯৫৩৬, আবূ দাঊদ ৩৯০৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৩৯, আল জামি‘উস্ সগীর ১০৮৮৬, সহীহুল জামি‘ ৫৯৪২, বায়হাক্বী’র কুবরা ১৪৫০৪, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৬৬৭০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৬৫০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষা করা বা সেই সাবজেক্ট নিয়ে অধ্যয়ন করা হারাম

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যার কিছু শিখল, সে যেন জাদুর কিছু অংশ হাসিল করল। সুতরাং সে যত বেশি জ্যোতির্বিদ্যা শিখল ততবেশি জাদুবিদ্যাই অর্জন করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৫৯৮, আহমাদ ২৮৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৭৯৩, আল জামি‘উস্ সগীর ১১০১৯, সহীহুল জামি‘ ৬০৭৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৫১, ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৬৪৬, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নক্ষত্র বিদ্যা বিষয়ে আল্লাহর বাতলানো উদ্দেশ্য ব্যতীত কিছু শিক্ষাও গ্রহণ করেছে, সে বস্তুতঃ জাদুবিদ্যার এক অংশ হাসিল করেছে। আর জ্যোতিষী প্রকৃতপক্ষ গণক, আর গণক জাদুকর। আর জাদুকর কাফির। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৬০৪, আল ইসতিযকার (৩৭৯৪২)-(৯৫৬), আত্ব ত্বিববু লি আবী দাঊদ (৪/১৫), ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৫৫, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১১১১, শু‘আবুল ঈমান ৫১৯৭, আহমাদ ২০০০, ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৬৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৮০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭২৬, সহীহুল জামি‘ ৬০৭৪, আল জামি‘উস্ সগীর ১০১৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৫১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৭৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গণক বা জ্যোতিষী বা যাদুকর কিংবা কোনো পির অলি গায়েব জানে এই কথার দাবীদার নিঃসন্দেহে মুশরিক ও কাফির। এবং এদের কাছে যারা যায় আর তাদের কথা বিশ্বাস করে তারা মুশরিক ও কাফির। তওবা না করে এমতাবস্থায় মারা গেলে এদের স্থান হবে জাহান্নামে।

 (১২) মৃত ওলী-আউলিয়া মানুষের অভাব পূরণ করেন, বিপদাপদ দূর করেন, তাঁদের অসীলায় সাহায্য প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা যাবে ইত্যাকার কথা বিশ্বাস করা শির্কঃ

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

“তোমার রব চুড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না”। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩)।

অনুরূপভাবে শাফা‘আতের নিমিত্তে কিংবা বালা-মুসীবত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মৃত-নবী-ওলী প্রমুখের নিকট দো‘আ করাও শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“বল তো কে নিঃসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে আহ্বান জানায় এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর পৃথিবীতে তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? (সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬২)।

অনেকেই উঠতে, বসতে বিপদাপদে পীর মুরশিদ, ওলী-আউলিয়া, নবী-রাসূল ইত্যাকার মহাজনদের নাম নেওয়া অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। যখনই তারা কোনো বিপদে বা কষ্টে বা সংকটে পড়ে তখনই বলে ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন, ইয়া বাদাভী, ইয়া জীলানী, ইয়া শাযেলী, ইয়া রিফা‘ঈ। কেউ যদি ডাকে ‘আইদারূসকে তো অন্যজন ডাকে মা যায়নাবকে, আরেকজন ডাকে ইবন উলওয়ানকে। অথচ আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ ব্যতীত আর যাদেরকে তোমরা ডাক তারা তোমাদেরই মত দাস”। (সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৪)।

কিছু কবরপূজারী আছে যারা কবরকে তাওয়াফ করে, কবরগাত্র চুম্বন করে, কবরে হাত বুলায়, লাল শালুতে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে থাকে, কবরের মাটি তাদের গা-গতরে মাখে, কবরকে সাজদাহ করে, তার সামনে মিনতিভরে দাঁড়ায়, নিজের উদ্দেশ্য ও অভাবের কথা তুলে ধরে। সুস্থতা কামনা করে, সন্তান চায় অথবা প্রয়োজনাদি পূরণ কামনা করে। অনেক সময় কবরে শায়িত ব্যক্তিকে ডেকে বলে, ‘বাবা হুযুর, আমি আপনার হুযূরে অনেক দূর থেকে হাযির হয়েছি। কাজেই আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না’। অথচ আল্লাহ বলেন,

“তাদের থেকে অধিকতর দিক ভ্রান্ত আর কে আছে, যারা আল্লাহ ব্যতীত এমন সব উপাস্যকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্তও তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। অধিকন্তু তারা ওদের ডাকাডাকি সম্বন্ধে কোনো খবর রাখে না।” (সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত: ৫)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন, আর আমি একটি বললাম। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে আহবান করা অবস্থায় মারা যায়, সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে সমকক্ষ হিসেবে আহবান না করা অবস্থায় মারা যায়? (তিনি বললেন) সে জান্নাতে যাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৯৭, ১২৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবর পূজারীরা অনেকেই কবরের পাশে মাথা মূণ্ডন করে। তারা অনেকে ‘মাযার যিয়ারতের নিয়মাবলী’ নামের বই সাথে রাখে। এসব মাযার বলতে তারা ওলী আউলিয়া বা সাধু-সন্তানদের কবরকে বুঝে থাকে। অনেকের আবার বিশ্বাস, ওলী আউলিয়াগণ সৃষ্টিজগতের ওপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তাঁরা ক্ষতিও করেন; উপকারও করেন। অথচ আল্লাহ বলেন,

‘‘আর যদি আপনার রব্ব আপনাকে কোনো অমঙ্গলের স্পর্শে আনেন, তবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সেটার বিমোচনকারী নেই। আর যদি তিনি আপনার কোনো মঙ্গল করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহকে তিনি ব্যতীত রূখবারও কেউ নেই”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭]একইভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মান্নত করাও শির্ক। মাযার ও দরগার নামে মোমবাতি, আগরবাতি মান্নত করে অনেকেই এরূপ শির্কে জড়িয়ে পড়েন।

(১৩) মাযার স্পর্শ করা, শরীর মাসেহ করা বা চুমু খাওয়া, কবরের মাটি বরকতের নিয়তে নিয়ে তা‘বীযে করে গলায় বাঁধা, গায়ে মালিশ করা, রওযা শরীফ, মাযার বা কবর ইত্যাদির ছবি বরকতের জন্যে রাখা, চুমু খাওয়া, সম্মান করা শিরকঃ

 বিপদাপদ, বালা-মুছীবাত থেকে বাঁচার জন্য ঘর-বাড়িতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের জন্য দোকান, অফিস, হোটেলে ছবি রেখে আদবের সাথে দাঁড়িয়ে এগুলো করা শিরক।

(১৪) কবর ধোয়া পানি পান করা শিরকঃ

 মাযারকে মাঝে মাঝে মহা ধুমধামের সাথে গোসল করানো হয়। আর এ কবর ধোয়া পানি বোতলে করে নিয়ে যাওয়া এবং নেক মাকসূদ পূরণের নিয়তে পান করা।

(১৫) মাযারে গিলাফের তা‘যীম করা শিরকঃ

বিভিন্ন পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গানে দ্বীনের মাযারে বা কবরের ওপরে আজকাল গিলাফ পরানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর এ গিলাফ পরিবর্তন করে আবার নতুন গিলাফ পরানো হয়। পুরানো গিলাফ অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়। অজ্ঞ, অশিক্ষিত মানুষ অনেক ক্ষেত্রে এসব গিলাফে চুমু খায়, গিলাফ ধরে ফরিয়াদ জানায়, আদবের সাথে মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, এ গিলাফের সুতা তা‘বীযে ভরে গলায় বাঁধে। এমনকি অনেকেই আরো একধাপ এগিয়ে গিলাফের কাছেই দো‘আ চেয়ে বসে।

(১৬) ওরশ করা শিরকঃ

অনেক মাযারে ও পীরের দরবারে অমাবস্যা, পূর্ণিমা, পীরের জন্ম বা মৃত্যু তারিখ নির্দিষ্ট করে ওরশ হয়ে থাকে। বিজলী বাতি, গেট, চকমকি কাগজ ইত্যাদি দিয়ে প্যান্ডেল, স্টেজ সাজানো হয়। বেপর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষ একত্রে বসে যিকির করে, কাওয়ালী-সামা শোনে। ভন্ড পীর, ফকীররা এ সব ওরশে ওয়ায নসীহ’তের নামে শরী‘আত বিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাস প্রচার করে। শাহী তবারক রান্না করা হয়। ওরশের পরে যে টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়, তা পীর ও তার খাদেমদের পকেটে চলে যায়। ওরশ মূলতঃ আনন্দোৎসব ও টাকা উপার্জনের পন্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

(১৭) খাজা বাবার ডেগ বিশ্বাস করা শিরকঃ

একদল লোক বিশেষত যুবকেরা রজব মাস এলেই পথে-ঘাটে, বাজারে যেখানেই সুযোগ পায় সেখানেই একটা ডেগ বা বড় হাড়ি বসায়। লালসালু কাপড় বিছিয়ে, বাঁশ দিয়ে ছাউনি দিয়ে, বিজলী বাতি জ্বালিয়ে, চকমকি কাগজ এবং বিভিন্ন ধরনের রং লাগিয়ে ঘর সাজিয়ে তার মধ্যে স্থাপন করে ডেগ। তারা একে বলে ‘খাজা বাবার ডেগ’।

(১৮) প্রাণীর ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরী করা শিরকঃ

কোনো নেতা, লিডার বা স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিবর্গের ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা, মাঠে-ঘাটে, অফিস-আদালতে ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এগুলো স্থাপন করা, এগুলোকে সম্মান করা, এগুলোর উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি করা।

(১৯) সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার তৈরী করা শিরকঃ 

সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের স্মরণে সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনার নির্মাণ, এগুলোকে সম্মান জানানো, সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা ইত্যাদি।

(২০) অগ্নিপূজা এবং শিখা চিরন্তন, শিখা অনির্বাণ তৈরী করা শিরকঃ

‘অগ্নি শিখা’ অগ্নিপূজকের উপাস্য দেবতা। তারা ভক্তি, প্রণাম ও নানা কর্মকান্ডের দ্বারা আগুনের পূজা করে থাকে। এ অগ্নিপূজা সম্পূর্ণ শিরক ও আল্লাহদ্রোহী কাজ। ‘শিখা চিরন্তন’ বা ‘শিখা অনিবার্ণের’ নামে অগ্নি মশালকে সারা দেশে ঘুরিয়ে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানো এবং এগুলোর প্রজ্জ্বলনকে অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষ ধরনের বেদীর ওপর এগুলো স্থাপন করা, অলিম্পিক মশাল সহ বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানের মশাল প্রজ্জ্বলনও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

(২১) মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো শিরকঃ হিন্দুদের অনুকরণে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে বা কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা।

(২২) তাছাওউফের শায়েখ বা পীরের কল্পনা করা শিরকঃ

তাছাওউফের শায়খ বা পীরের চেহারা, আকৃতি ইত্যাদি কল্পনা করে মোরাকাবা, ধ্যান, যিকির বা অন্য যে কোন ইবাদত করা শিরক।

(২৩) পীরকে দূর হতে ডাকা শিরকঃ

অনেকে স্বীয় পীর বা কোন বুযুর্গ ব্যক্তিকে বহুদূর হ’তে ডাকে এবং মনে করে যে, তিনি এটা জানতে ও শুনতে পারছেন। অনেক সময় ‘ইয়া গাওছুল আযম’, ‘ইয়া খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী’ ইত্যাদি বলে ডাকতে থাকে এবং নিজেদের ফরিয়াদ পেশ করতে থাকে।

(২৪) পীরের জন্য ঘর সাজিয়ে রাখা শিরকঃ

কিছু সংখ্যক পীরের অনুসারীরা তাদের বাড়ির মধ্যে একটি ঘর পীরের জন্য সারা বছর সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। একটা বড় খাটের ওপর চাদর বিছিয়ে বড় বড় কয়েকটা কোল বালিশ সেট করে ‘বিশেষ আসন’ তৈরি করা হয়। পীরের ছবিকে মালা পরিয়ে সযত্নে ঐ ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়। ফুল ও জরি দিয়ে ঘরটি সুন্দর করে সাজানো হয়। সারা বছর ঐ ঘরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। মাঝে মাঝে মুরীদরা ঐ ঘরে ঢুকে ছবি ও আসনের সামনে আদবের সাথে চুপ করে বসে থাকে।

(২৫) পীরের বাড়ির বা আস্তানার খাদেম, গরু, কুকুর, বিড়াল, মাছ ও কচ্ছপ ইত্যাদির প্রতি অন্ধ সম্মান করা শিরকঃ

অনেককে দেখা যায়, পীরের বা মাযারের খাদেম, গরু, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদিকে দেখামাত্র দাঁড়িয়ে যায়। এগুলোর সামনে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকে আবার এসব গরু, কুকুর, বিড়ালের পা ধরে বসে থাকে নেক মাকছূদ পূরণের জন্য।

(২৬) পীর, ওলী-আওলিয়াদের কবরের মাটি ও সেখানে জ্বালানো মোম বিভিন্ন রোগের জন্য উপকারী মনে করা শিরকঃ

এ ধরনের কর্ম আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অহরহ পরিলক্ষিত হয়। তারা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে আউলিয়াদের কবরের মাটি ও সেখানে জ্বালানো মোমবাতি অনেক উপকারী মহৌষধ মনে করে অত্যন্ত যত্নের সাথে তা ব্যবহার করে থাকে এবং এর দ্বারা কোন রোগ মুক্তি হ’লে তা কবরস্থ ব্যক্তির দান বা তাঁর ফয়েয বলে মনে করে।

(২৭) গায়রুল্লাহর নামে যিকির করা বা অযীফা পাঠ করাঃ 

আল্লাহর যিকিরের ন্যায় কোন নবী বা রাসূল, পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গ, আলিমের নাম জপ করা, বিপদের পড়লে তাদের নামের অযীফা পড়া। যেমন- ‘ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন’, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘নূরে রাসূল, নূরে খোদা’, ‘হক বাবা, হক বাবা’ ইত্যাদি।

(২৮) কামেল পীরের গোনাহ নেই মনে করা শিরকঃ

খোদা পাক, কামেল পীরও পাক। তাদের কোন গোনাহ নেই। তারা নিষ্পাপ। এ ধরনের কথা বলা ও বিশ্বাস করা শিরক।

(২৯) আল্লাহর সত্তার সাথে মিশে যাওয়া বিশ্বাস করা শিরকঃ

অনেকের ধারণা মুরীদ যখন ‘ফানাফিল্লাহ’ পর্যায়ে পৌঁছে, তখন সে আল্লাহর সত্তার সাথে মিশে বিলীন হয়ে যায় এবং তাঁর পৃথক কোন অস্তিত্ব থাকে না। খাওয়া, ঘুম, স্ত্রী সহবাস সহ যাবতীয় কাজকর্ম তখন আর নিজস্ব থাকে না। এগুলো সব আল্লাহর হয়ে যায় অর্থাৎ এ সব কাজ আল্লাহ নিজেই করেন। (নাঊযুবিল্লাহ)।

(৩০) বিপদে পড়লে জিন, ফেরেশতা, পীর ও ওলী-আওলিয়াদের ডাকা শিরকঃ

দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ মূর্খ, পীর ও মাযার পূজারী অনেক লোককে দেখা যায় বিপদে-আপদে, রোগে-শোকে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে পীর, ওলী, জিন ও ফেরেশতাদের আহবান করতে থাকে। যেমন- ‘ইয়া গাওছুল আযম বড় পীর আব্দুল কাদের জীলানী’, ‘ইয়া খাজা বাবা’, ‘ইয়া সুলতানুল আওলিয়া’, ‘হে পীর কেবলাজান’, ‘হে জিন’,... আমাকে রক্ষা করুন, আমাকে বিপদ হ’তে বাঁচান, আমার মাকছূদ পূরা করুন, সন্তান দিন ইত্যাদি। কোন কোন মূর্খলোক বালা মুছীবতের সময় বুযুর্গ লোকদের উদ্দেশ্যে দো‘আ করে, ফরিয়াদ জানায়। এভাবে গাইরুল্লাহকে ডাকা এবং তাদের কাছে নিজের ফরিয়াদ পেশ করা, তা কাছ থেকে হোক আর দূর থেকেই হোক।

(৩১) মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন বিশ্বাস করা শিরকঃ

সিলভা, কোয়ান্টাম বা অন্য কোন মেথডের (পদ্ধতি) দ্বারা মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো এবং সকল সমস্যার সমাধান লাভ করার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করার কথা বলা।

(৩২) কপালে টাকা স্পর্শ করে তা সম্মান করা শিরকঃ 

টাকা-পয়সা মানুষের সম্পদ। তা মানুষের জীবনের প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে টাকা-পয়সা মানুষের খাদিম। অথচ মানুষ টাকার খাদিম বা গোলাম নয়। সম্পদের সম্মান হচ্ছে তাকে সংরক্ষণ করা, তাকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ জ্ঞান না করা। পায়ের নিচে ফেলে এটাকে দলিত-মথিত না করা। মাথা ও কপাল ঠেকিয়ে আল্লাহর ইবাদত করা হয় এবং তাঁকে সম্মান জানানো হয়। তাই কপালে টাকা স্পর্শ করে টাকাকে সম্মান করা বা ‘Money is the Second God’ বলা টাকাকে পূজা করারই শামিল। এ কাজটি অনেক মুসলিম ব্যবসায়ীদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। দোকান খোলার পর প্রথম বিক্রি হ’লেই তারা এ কাজটি করে থাকে।

(৩৩) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের প্রভাব  বিশ্বাস করা শিরকঃ

অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ মানুষের ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু, বিপদ-আপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

(৩৪) কোন মাস বা সময়কে ভাল বা খারাপ জানা শিরকঃ

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ সময় ও দিনক্ষণের ভালমন্দে বিশ্বাসী। মুহাররম, কার্তিক প্রভৃতি মাসে বিয়েশাদী করা উচিত নয়, রবি ও বৃহস্পতিবারে বাঁশ কাটা যায় না[3], সোম ও বুধবারে গোলা হ’তে ধান বের করা যায় না, শুক্র ও রবিবারে পশ্চিম দিকে যাত্রা করলে ক্ষতি হবে, শনি ও মঙ্গলবারে বিয়ে করা ও ঝাড়ু বাঁধা উচিত নয়, রাতের বেলা ঝাড়ু দিলে আয় উন্নতি হয় না, রাতে আয়না দেখলে কঠিন পীড়া হয়, রাতে নখ কাটা ঠিক নয়, নতুন বউকে ভাদ্র মাসে শ্বশুর বাড়ীতে রাখা হয় না (কারণ নতুন বছরের পা ভাদ্র মাসে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর জন্য দেখা অকল্যাণকর), ভাদ্র ও পৌষ মাসে মেয়ে লোকের সওয়ারী পাঠানো যায় না, আশ্বিন মাস যাবার দিন মুটে বানিয়ে গরুকে গা ধৌত করা ও ‘গো ফাল্গুন’ বলে মান্য করা ইত্যাদি।

এইরকম শত শত  শিরক সমাজে প্রচলিত আছে যা মুসলমানগণ সওয়াব বা দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি পাওয়ার আশায় আমল করে যাচ্ছে।

অথচ শিরক এমন একটি গুণাহ যা করলে ঈমান এবং পূর্বের সমস্ত আমল সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ যেকোন গুণাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুণাহ ক্ষমা করবেন না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে কৃত শির্ককে ক্ষমা করবেন না। তাছাড়া যত গুনাহ আছে তা তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন”। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

যারা বলে, নিশ্চয় আল্লাহু তিনি তো মারইয়াম-তনয় মসীহ, অবশ্যই তারা কুফরী করেছে। অথচ মসীহ বলেছিলেন, হে ইসরাঈল-সন্তানগণ! তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। নিশ্চয় কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দিয়েছেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সুরা মায়িদাহ ৭২)।

রাসুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন,,

আবূ যার্ (গিফারী) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন আগন্তুক [জিবরীল (আঃ)] আমার প্রতিপালকের নিকট হতে এসে আমাকে খবর দিলেন অথবা তিনি বলেছেন, আমাকে সুসংবাদ দিলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে? তিনি বললেন : যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৩৭, ১৪০৮, ২৩৮৮, ৩২২২, ৫৮২৭, ৬২৬৮, ৬৪৪৩ ৬৪৪৪, ৭৪৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪, আহমাদ ২১৪৭১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এমন বড় শির্ক রয়েছে যা দীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এরূপ শির্ককারী ব্যক্তি যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক মুসলিম দেশেই আজ শির্কের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে।

শিরক থেকে বাঁচার দোয়া

মাকিল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, আমি আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) এর সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। তিনি বলেনঃ হে আবু বাকর! নিশ্চয় শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবু বাকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিবো না, তুমি যা বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? তিনি বলেনঃ তুমি বলো,

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু”

“হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই”। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৭২১)।

(দ্বিতীয় অংশ এখানেই সমাপ্ত)

তৃতীয় অংশ দেখতে এখানে ক্লিক করুন (PMMRC)

তৃতীয় অংশে যা থাকছে,

(১) জাহান্নামীদের শাস্তি কেমন হবে।

(২) জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।

(৩) জাহান্নাম থেকে মুক্তির আমলসমূহ।

(৪) “যেসব কারণে অধিকাংশ নারী জাহান্নামী” দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...