Search This Blog

Thursday, July 16, 2020

মক্কা-মদীনার বাইরে আলেম নেই-এ কথা কুরআন-হাদীছ বিরোধী।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মক্কা-মদীনার বাইরে আলেম নেই-এ কথা কুরআন-হাদীছ বিরোধী।
 
ভূমিকা : সমাজে প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে যে, মক্কা-মদীনার আলেমরাই হ’লেন প্রকৃত আলেম। তাঁদের ন্যায় বিজ্ঞ আলেম মক্কা-মদীনা তথা সঊদী আরবের বাইরে নেই। এই ধারণা যথার্থ নয় এবং এটা কুরআন-হাদীছ বিরোধী। এই ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার পিছনে রয়েছে একটি যঈফ হাদীছ। যেটি ইদানীং অনলাইনের জগতে খুব বেশী প্রচার করা হচ্ছে। নিম্নে এ বিষয়ে উপস্থাপিত দলীল পেশ করা হ’ল এবং তা পর্যালোচনা করা হ’ল।-
দলীল-১ :
حَدَّثَنَا الحَسَنُ بْنُ الصَّبَّاحِ البَزَّارُ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مُوْسَى الأَنْصَارِيُّ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، رِوَايَةً: يُوْشِكُ أَنْ يَضْرِبَ النَّاسُ أَكْبَادَ الإِبِلِ يَطْلُبُوْنَ العِلْمَ فَلَا يَجِدُوْنَ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنْ عَالِمِ المَدِيْنَةِ : هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَهُوَ حَدِيثُ ابْنِ عُيَيْنَةَ ، وَقَدْ رُوِيَ عَنْ ابْنِ عُيَيْنَةَ، أَنَّهُ قَالَ فِيْ هَذَا : سُئِلَ مَنْ عَالِمُ المَدِينَةِ؟ فَقَالَ : إِنَّهُ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ وقَالَ إِسْحَاقُ بْنُ مُوْسَى : سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ، يَقُوْلُ : هُوَ العُمَرِيُّ الزَّاهِدُ وَسَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مُوْسَى، يَقُوْلُ : قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ : هُوَ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ وَالعُمَرِيُّ هُوَ عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ مِنْ وَلَدِ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ-
‘...আবূ হুরায়রাহ হ’তে বর্ণিত যে, অচিরেই মানুষ উটে চড়ে ভ্রমণ করবে। তারা ইলম অন্বেষণ করবে। সে সময় তারা মদীনার আলেমের চাইতে (অধিক) বিজ্ঞ আলেম (কোথাও) পাবে না। আবূ ঈসা (ইমাম তিরমিযীর উপনাম) বলেছেন, ‘এই হাদীছটি হাসান। আর এটি ইবনে উয়ায়নাহর (বর্ণিত) হাদীছ। আর ইবনে উয়ায়নাহ হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে মদীনার আলেম? তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি মালেক বিন আনাস’। আর ইসহাক্ব বিন মূসা বলেছেন, আমি ইবনে উয়ায়নাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, তিনি হ’লেন আল-উমারী আয-যাহেদ। আর আমি ইয়াহইয়া বিন মূসাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আব্দুর রাযযাক্ব বলেছেন, ‘তিনি হ’লেন মালেক বিন আনাস’। আর উমারী হ’লেন আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ। যিনি ওমর (রাঃ)-এর বংশোদ্ভূত।[1]
পর্যালোচনা : এটি মাওকূফ বর্ণনা। এর সনদে তিনটি ত্রুটি রয়েছে- (১) সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ’র তাদলীস। (২) ইবনে জুরায়েজ এর তাদলীস (৩) আবুয যুবায়ের এর তাদলীস।
এখন আমরা দেখব অন্য কোন একটি বা একাধিক সনদের মধ্যে এই তিনজন রাবীর ‘সামা’ বা হাদীছ শ্রবণের বিষয়টি পাওয়া যায় কি না? এর পূর্বে উক্ত তিনজন রাবী সম্পর্কে ইমামদের মতামত সমূহ কি?
সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত :
ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ)[2], বুরহানুদ্দীন হালাবী (রহঃ)[3], ইবনুল ইরাক্বী (রহঃ)[4], ইমাম নাসাঈ (রহঃ)[5],  জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ)[6] তাকে মুদাল্লিস রাবী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইবনে জুরায়েজ সম্পর্কে ইমামগণের মতামত :
‘ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন’[7], আত-তাবঈন[8], আল-মুদাল্লিসীন[9] এবং ইমাম নাসাঈর যিকরুল মুদাল্লিসীন গ্রন্থে[10] তাকে অত্যধিক তাদলীসকারী রাবী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আবুয যুবায়ের (রহঃ) সম্পর্কে ইমামগণের মতামত :
(১) ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী বলেছেন।[11]
(২) আল-মুদাল্লিসীন গ্রন্থে[12], আত-তাব্ঈন গ্রন্থে[13] তাকে মুদাল্লিস রাবী বলা হয়েছে।
(৩) ইমাম নাসাঈ (রহঃ) তাকে মুদাল্লিস বলেছেন।[14]
(৪) আসমাউল মুদাল্লিসীন গ্রন্থে তাকে প্রসিদ্ধ মুদাল্লিস রাবী বলা হয়েছে।[15]
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এই তিনজন মুদাল্লিস রাবী সনদের দোষ গোপন করতেন।
এই হাদীছটির আরো কতিপয় সনদ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হ’ল-
(১) ইবনুল মুবারক (রহঃ) রচিত ‘আয-যুহদ ওয়ার রাক্বায়েক্ব’ (২/১২৫) গ্রন্থে এটি মারফূ রূপে বর্ণিত হয়েছে। যার সনদে উপরোল্লিখিত তিনজন মুদাল্লিস রাবীর তাদলীস বিদ্যমান। তাই এটা দুর্বল।
(২) মুসনাদ (হা/৭৯৮০)-এর সনদে সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ ‘আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন’ বাক্যটি বলেছেন। অর্থাৎ তিনি এখানে হাদীছ শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
(৩) ইমাম নাসাঈর ‘আস-সুনানুল কুবরা’ (হা/৪২৭৭) গ্রন্থেও (সুফিয়ান বিন উয়ায়নাহ ব্যতীত বাকী দু’জনের) উভয়ের হাদীছ শ্রবণের বিষয়টি নেই।
(৪) ‘শারহু মুশকিলিল আছার’ (হা/৪০১৬; ৪০১৮) গ্রন্থে ইবনে জুরায়েজ বলেছেন, ‘তিনি বলেছেন, আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন...’। অর্থাৎ অত্র সনদে ইবনে জুরায়েজের হাদীছ শ্রবণের বিষয়টি পাওয়া গেল।
ছহীহ ইবনে হিববান (হা/৩৭৩৬), জাওহারীর মুসনাদুল মুওয়াত্ত্বা (হা/৩৩), আল-মুসতাদরাক আলাছ ছহীহায়ন (হা/৩০৭-৮), বায়হাক্বীর আস-সুনানুল কুবরা (হা/১৮১০) এবং মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার (হা/২১৫) প্রভৃতি গ্রন্থসমূহে আবুয যুবায়েরের তাদলীসের বিষয়টি উদ্ধৃত হয়েছে। কোথাও আমরা আবুয যুবায়েরের ‘সামা’ তথা হাদীছ শ্রবণ পাইনি। অতএব এই হাদীছটি আবুয যুবায়েরের তাদলীসের কারণে যঈফ।
দলীল-২ :
حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ قَاسِمُ ابْنُ مُحَمَّدٍ قَالَ نَا خَالِدُ بْنُ سَعْدٍ قَالَ نَا أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ مَنْصُورٍ قَالَ نَا مُحَمَّد ابْن عبد الله بن سحر قَالَ نَا أَبُو مُسْلِمٍ الْمُسْتَمْلِي قَالَ نَا مَعْنُ بْنُ عِيسَى قَالَ نَا زُهَيْرُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدٍ عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَخْرُجُ النَّاسُ مِنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ فَلا يَجِدُونَ عَالِمًا أَعْلَمَ مِنْ عَالِمِ أَهْلِ الْمَدِينَة-
‘...আবূ মূসা আশ‘আরী (রা.) বলেছেন, রাসূল (ছা.) বলেন, ‘মানুষেরা পূর্ব-পশ্চিম হ’তে বের হবে (ইলম অর্জনের জন্য)। কিন্তু তারা মদীনার আলেমের চাইতে অধিক জ্ঞানী আর পাবে না’।[16]
তাহক্বীক্ব : এখানে মুহাম্মাদ বিন যুহাইর নামক দুর্বল রাবী আছেন।
(১) শায়েখ আলবানী (রহঃ) বলেছেন,زهير بن محمد وهو أبو المنذر الخراسانى فيه ضعف ‘যুহায়ের বিন মুহাম্মাদ হ’লেন আবুল মুনযির খুরাসানী। তার মধ্যে দুর্বলতা আছে’।[17]
মতনের পর্যালোচনা : এই মর্মে বর্ণিত যতগুলি বর্ণনা রয়েছে সবই ত্রুটিযুক্ত। এছাড়াও এর মতনের ব্যাখ্যাও সর্বদা মক্কা-মদীনার আলেমদের অধিক বিজ্ঞ আলেম হওয়ার প্রমাণ বহন করে না।
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) নিজেই হাদীছটির ব্যাখ্যায় বলেছেন,
وَقَدْ رُوِيَ عَنْ ابْنِ عُيَيْنَةَ، أَنَّهُ قَالَ فِيْ هَذَا: سُئِلَ مَنْ عَالِمُ المَدِينَةِ؟ فَقَالَ: إِنَّهُ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ وقَالَ إِسْحَاقُ بْنُ مُوْسَى: سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ، يَقُوْلُ: هُوَ العُمَرِيُّ الزَّاهِدُ وَسَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مُوْسَى، يَقُوْلُ: قَالَ عَبْدُ الرَّزَّاقِ: هُوَ مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ-
‘ইবনু উয়ায়না হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে এ মর্মে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, মদীনার আলেম কে? তিনি বললেন, তিনি হ’লেন মালেক বিন আনাস। ইসহাক বিন মূসা বলেন, আমি ইবনু উয়ায়নাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, মদীনার আলেম হ’লেন আল-উমারী আয-যাহেদ। আর আমি ইয়াহইয়া বিন মূসাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন যে, আব্দুর রাযযাক বলেছেন, ‘তিনি হ’লেন মালেক বিন আনাস’।[18]
হাদীছটির সনদ যদি ছহীহও হয় তবুও এর দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই বুঝানো হচ্ছে। সর্বকালে সর্বদা মদীনার আলেম বেশী জ্ঞানী হয়ে থাকবেন তা কিন্তু নয়।
বাস্তবতা বিরোধী : এই হাদীছটি বাস্তবতারও বিরোধী। কেননা আমরা দেখেছি যে, কুতুবে সিত্তার লেখক কেউ মদীনার আলেম নন। তাফসীরে কুরতুবীর লেখক স্পেনের কর্ডোভার অধিবাসী, ইবনু কাছীরের লেখক সিরিয়ার বাসিন্দা। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) মিসরের ছিলেন। অধিকাংশ মুহাদ্দিছ, মুফাসসির ও হাদীছের ভাষ্যকার মক্কা-মদীনার বাইরের ছিলেন। তিরমিযীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যাতা তুহফাতুল আহওয়াযীর স্বনামধন্য লেখক আব্দুর রহমান মুবারকপূরী ও আবূ দাঊদের বিশ্ববিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ আউনুল মা‘বূদের লেখক শামসুল হক আযীমাবাদী ভারতের ছিলেন। এভাবে মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারপকপূরী, মিরকাতুল মাফাতীহ-এর লেখক মোল্লা আলী কারী হানাফী, বুখারীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারীর লেখক বদরুদ্দীন আইনী হানাফী, তাফসীরে জালালাইনের লেখকদ্বয় জালালুদ্দীন মহল্লী ও জালালুদ্দীন সুয়ূতী, তাফসীরে তাবারীর লেখক ইবনু জারীর আত-তাবারী সহ যুগশ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক, মুজতাহিদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ইয়াহইয়া আল-মুআল্লিমী সহ আধুনিক বিশ্বের বড় বড় আলেমরা অনারব ছিলেন। বিশেষ করে হাদীছের তাহক্বীক্ব ও হাদীছের ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রণয়নে এবং তাফসীরের ক্ষেত্রে অনারবরাই এগিয়ে আছেন।
আরবী ভাষার ক্ষেত্রেও তারা অনেক অগ্রসর। কাফিয়া গ্রন্থের রচয়িতা ইবনু হাজিব ও শরহে ইবনু আকীলের লেখক মিসরের। কতরুন নাদা, শরহে জামী, হেদায়াতুন নাহু, ইলমুছ ছীগা, আওযাহুল মাসালিক, আল-ফিইয়া ইবনু মালেক প্রভৃতি আরবী ব্যাকরণের মৌলিক গ্রন্থগুলি মক্কা-মদীনার বাইরের আলেমরাই প্রণয়ন করেছেন।
এছাড়াও ইলমুল জারহ-তাদীলের তথা হাদীছের বর্ণনাকারীদের জীবনী গ্রন্থও মূলতঃ অনারবরাই রচনা করেছেন। যেমন বুখারীর আত-তারীখুল কাবীর, হাফেয যাহাবীর সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা ও মীযানুল ই‘তিদাল, ইবনু আবী হাতিমের আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, দারা-কুৎনীর আল-ইলাল, তারীখে ইবনু মাঈন, ইবনু হিববানের আছ-ছিক্বাত ও আল-মাজরূহীন,  তারীখে ইবনু আবী খায়ছামাহ সহ আরো
বহু অনারব লেখক বৃহৎ কলেবরে গ্রন্থ রচনা করেছেন।
নবী করীম (ছাঃ)-এর সীরাত ও তারীখের (ইতিহাস) ক্ষেত্রেও অনারবরাই এগিয়ে আছেন। তবে ইবনু ইসহাক প্রথম সীরাতের উপর গ্রন্থ রচনা করেন। আর তিনি ছিলেন মদীনার বাসিন্দা। কিন্তু তিনি জ্ঞানার্জনের জন্য কূফা, বাগদাদ, রাঈ, মিসর সহ বিভিন্ন স্থানে সফর করে ইলম হাছিল করেছিলেন। যাহোক, সীরাতে ইবনু হিশাম, আর-রওযুল উনুফ, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়া, আর-রাহীকুল মাখতূম, তারীখে তাবারী, মু‘জামুল বুলদান, তারীখুল ইসলাম, কিতাবুর-রেহলা ইত্যাদি আরো অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে যেগুলি মক্কা-মদীনার আলেম কর্তৃক প্রণীত হয়নি।
একটি সংশয় নিরসন : অনেকে বলেন যে, বুখারী (হা/১৮৭৬) ও মুসলিমে (হা/১৪৭) এই হাদীছটি রয়েছে। অথচ এ সম্পর্কে  বুখারী ও মুসলিমে কোন হাদীছ নেই। বরং বুখারী (হা/১৮৭৬) ও মুসলিমে (হা/১৪৭)-এর হাদীছে বলা হয়েছে যে, ‘ঈমান মদীনায় সেভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ নিজ গর্তে ফিরে আসে’। এখানে মদীনার আলেম সম্পর্কে কোন আলোচনা নেই। অতএব এ হাদীছ দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না।
উপসংহার : উপরের আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, আল্লাহ যেখানে চান সেখানেই বড় আলেম পাঠাতে পারেন। কোন সময় ও স্থানের সাথে ইলম বা আলেমের বিষয়টি জড়িত নয়। তবে বর্তমানে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সঊদী আরব যে দ্বীনী খেদমত করছে সেটার কোন তুলনা নেই। কিন্তু এর মর্ম এই নয় যে, সেখানকার আলেমরাই প্রকৃত আলেম এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের বিদ্বানগণ যোগ্য আলেম নন বা তাদের চাইতে ছোট আলেম। এমন ধারণা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দলিলের উৎসঃ
[1]. তিরমিযী হা/২৬৮০; মিশকাত হা/২৪৬, আলবানী যঈফ বলেছেন, যঈফাহ হা/৪৮৩৩। যুবায়ের আলী যাঈ এর সনদটিকে যঈফ বলেছেন, আনওয়ারুছ ছহীফাহ, অত্র হাদীছ দ্রঃ।
[2]. ত্ববাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৫২।       
[3]. আত-তাবঈন লি আসমাইল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ২৬। 
[4]. আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ২২।  
[5]. যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৮।   
[6]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৯।    
[7]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৩৬।      
[8]. আত-তাবঈন, জীবনী নং ৪৬।       
[9]. আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৪০।       
[10]. যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৭।        
[11]. ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১০১।         
[12]. আল-মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৫৯।          
[13]. আত-তাব্ঈন, জীবনী নং ৭২।         
[14]. যিকরুল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ১৫।         
[15]. আসমাউল মুদাল্লিসীন, জীবনী নং ৫৪।          
[16]. হাফেয ইবনে আব্দুল বার্র, আল-ইনতিক্বা, পৃঃ ২০।           
[17]. ইরওয়া হা/৭৬৩।          
[18]. তিরমিযী হা/২৬৮০।  

(সমাপ্ত)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:     
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)

ইসলামের অন্যান্য সকল  বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...