বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন
বিষয়ের প্রশ্নোত্তর
(পর্ব-০৫)
সম্পাদকীয়ঃ
আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান
করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল
১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ
তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ
১০২।
আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ
যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত
রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত
হা/৫১৩৭)।
(৫ নং পর্বে মোট ২৪০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে---জুলাই—ডিসেম্বর/২০১৯ পর্যন্ত)
জুলাই/২০১৯
প্রশ্ন (১/৩৬১) : মহিলাদের ব্যবহৃত সোনার যাকাত নিয়ে বিদ্বানদের মতভেদ রয়েছে
জেনেছি। এক্ষেত্রে সঠিক ফয়ছালা কোনটি হবে?
-জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, যশোর।
উত্তর : মহিলাদের ব্যবহৃত
অলংকারে যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে
সঠিক কথা হ’ল, নারীদের ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত ফরয। যেমন (১) হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ
(রাঃ)-এর স্ত্রী যয়নব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে খুৎবায় বলেন, হে নারী জাতি!
তোমরা ছাদাক্বা কর, যদিও তোমাদের অলংকার দ্বারা হয়। কেননা ক্বিয়ামতের দিন তোমরাই জাহান্নামবাসীদের
অধিকাংশ হবে’ (তিরমিযী হা/৩৫৬; মিশকাত
হা/১৮০৮)। (২) একবার ইয়ামনবাসী জনৈকা মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নিকটে আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি
কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পসন্দ কর
যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিয়ে দেন?
রাবী বলেন, একথা শুনে উক্ত মহিলা তার হাত থেকে বালা দু’টি খুলে রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে
রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য (নাসাঈ হা/২৪৭৯; আবুদাউদ হা/১৫৬৩; তিরমিযী হা/৬৩৭; মিশকাত হা/১৮০৯; ছহীহুত
তারগীব হা/৭৬৮)। (৩) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি স্বর্ণের গহনা পরতাম। একদিন
আমি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি সেই কান্যের অন্তর্ভুক্ত,
যার শাস্তির কথা কুরআনে এসেছে (তওবা
৯/৩৪-৩৫)? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং তাতে যাকাত দেওয়া হয়,
তখন তা কান্য হয় না’ (আবুদাঊদ হা/১৫৬৪;
মিশকাত হা/১৮১০)।
(৪)
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদিন রাসূল (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বালা
দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উদ্দেশ্যে
সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি
বললাম, না অথবা আল্লাহ যা চেয়েছিলেন তাই বলেছি। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে
যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট’ (আবুদাঊদ হা/১৫৬৫;
ছহীহুত তারগীব হা/৭৬৯)। (৫) আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, আমি ও আমার খালা
হাতে স্বর্ণের বালা পরিহিতা অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি
আমাদেরকে বললেন, তোমরা কি এর যাকাত দাও? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি ভয়
পাও না যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমাদেরকে আগুনের বালা পরাবেন?
তোমরা যাকাত আদায় কর’ (মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৬৫৫;
ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৭৭০)।
উপরোল্লিখিত
হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত দিতে হবে। আর যেকোন মতপার্থক্যপূর্ণ
বিষয়ে সন্দেহমুক্ত আমল করাই উত্তম (তাফসীরে
আযওয়াউল বায়ান ২/১৩৪; মু‘আলিমুস সুনান ২/১৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/২৬৫; বিন বায,
ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/৮৪)।
প্রশ্ন
(২/৩৬২) : ‘খতমে বুখারী’ অনুষ্ঠান করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?
-আব্দুর রশীদ, নতুনহাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : মাদরাসা সমূহে যে
খতমে বুখারীর অনুষ্ঠান করা হয়, তা যদি সুন্নাত বা আবশ্যকীয় মনে না করা হয় এবং তাতে
রিয়া বা কোন দুনিয়াবী স্বার্থ যুক্ত না থাকে, তাহ’লে স্রেফ আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ
এ ধরনের অনুষ্ঠান করা যায়।
আব্দুল্লাহ
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, পিতা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ১২ বছরে সূরা বাক্বারাহ শেষ করেন।
অতঃপর যেদিন শেষ হয়, সেদিন তিনি কয়েকটি উট নহর করে সবাইকে খাওয়ান’ (মুক্বাদ্দামা তাফসীর কুরতুবী ৭৬ পৃ.; যাহাবী,
তারীখুল ইসলাম ৩/২৬৭; দ্র. ‘কুরআন অনুধাবন’ বই ১৮ পৃ.)।
প্রশ্ন (৪/৩৬৪) : ছালাতে সালাম ফেরানোর সময় ডানে এবং বামে পূর্ণ মুখ ঘুরিয়ে
তারপর সালাম বলতে হবে নাকি সালামের শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে
হবে?
-মিনহাজ পারভেয, হড়গ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : সালামের শব্দগুলো উচ্চারণ
করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে হবে। কেননা সালামই মুখ ঘুরানোর কারণ। অতএব সালাম
সহকারেই ডানে-বামে মুখ ঘুরাতে হবে, মুখ পূর্ণভাবে ঘুরিয়ে তারপর সালাম বলা সঠিক পদ্ধতি
নয় (মুগনী ১/৩৯৮; আল-ইনছাফ ২/৮২-৮৩;
ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৮/০২)।
প্রশ্ন (৫/৩৬৫) : দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদে জামা‘আতে ছালাতের রুকূ ধরার জন্য
সামনের কাতার খালি রেখেই পেছনের কাতারে দাঁড়ানো এবং নীচ তলায় কাতার ফাঁকা রেখেই উপরের
তলায় গিয়ে ছালাত আদায় করার হুকুম কি?
-তাওয়াবুল হক, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর : সামনের কাতার পূরণ
না করে পিছনে কাতার বানানো বা নীচের তলায় ফাঁকা রেখে উপর তলায় দাঁড়ানো সিদ্ধ নয়। কারণ
রাসূল (ছাঃ) সামনের কাতার পূরণ করে পিছনের কাতার পূর্ণ করার আদেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের নিকটে যেরূপ সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হয়ে থাকে তোমরা
ঐরূপ করো না কেন?... তিনি বললেন, তারা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূরণ করে, অতঃপর পর্যায়ক্রমে
কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং তারা কাতারে দন্ডায়মান হওয়ার সময় পরস্পর মিলে দাঁড়ায়’ (মুসলিম হা/৪৩০; মিশকাত হা/১০৯১)। তিনি
আরো বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কাঁধ সমূহ সমানভাবে মিলাও, ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের
জন্য কোন স্থান ফাঁকা রেখো না। কেননা যে ব্যক্তি কাতারে মিলে দাঁড়াল, আল্লাহ তার সঙ্গে
থাকেন। আর যে ব্যক্তি তা কর্তন করল, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন’ (আবুদাঊদ হা/৬৬; মিশকাত হা/১১০২; ছহীহাহ হা/৭৪৩)।
কেউ যদি সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়ায়, তাহ’লে তার
ছালাত বাতিল হবে এবং পুনরায় পড়তে হবে (তিরমিযী
হা/২৩০; মিশকাত হা/১১০৫)। এক্ষণে যদি কেউ নীচ তলায় জায়গা থাকা সত্ত্বেও উপরে
উঠে যায় এবং উভয় তলাতেই মুছল্লী যোগদান করে, তাহ’লে তার ছালাত হয়ে যাবে। যদিও সেটি
ত্রুটিপূর্ণ হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ২৩/৪১০)।
প্রশ্ন
(৬/৩৬৬) : সূদের টাকা ছওয়াবের আশা ছাড়া কোথায় দান করা সবচেয়ে উত্তম? আমি চাচ্ছি না
মাদ্রাসায় এই টাকা ‘তালিবে ইলম’ দের কোন কাজে ব্যবহৃত হোক।
-ওয়াহীদুর রহমান, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : এধরনের সম্পদ ছওয়াবের আশা
ব্যতীত ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। এছাড়া মুসলমানদের কল্যাণার্থে অন্যান্য
খাতে ব্যয় করা যাবে। যেমন অভাবী আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ইত্যাদি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৩৫২, ১৬/৫৩২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হারাম মাল সঞ্চয় করে, অতঃপর তা থেকে ছাদাক্বা করে, তাতে
সে ছওয়াব পাবে না এবং এর পাপ তার উপরই বর্তাবে’ (শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪৭৭; হাকেম হা/১৪৪০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩৫৬, ছহীহুত তারগীব
হা/৮৮০)।
প্রশ্ন (৭/৩৬৭) : গ্রামের দু’পাশে দু’টি মসজিদ রয়েছে। গ্রামের মধ্যস্থলে
বাজারের নিকটে জুম‘আ মসজিদের সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে আরেকটি ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ
করা যাবে কি? তাছাড়া একটি মসজিদের অর্থ দিয়ে অন্য মসজিদ নির্মাণে অর্থ ব্যয় করা যাবে
কি?
-মুহাম্মাদ নাজমুল হুদা, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : এরূপ কারণে মসজিদ নির্মাণে
কোন বাধা নেই এবং কমিটির সম্মতিক্রমে এক মসজিদের অতিরিক্ত অর্থ অন্য মসজিদে ব্যবহারেও
কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী
৬/৩১; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,
এক মসজিদের অতিরিক্ত অর্থ অন্য মসজিদে ব্যবহার করতে পারে’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/১৮, ২০৬-২০৭)। তবে
জামা‘আত বড় রাখার স্বার্থে একই মসজিদে ছালাত আদায় করা উত্তম। কেননা জামা‘আত যত বড় হয়,
আল্লাহর নিকট সেটি ততবেশী প্রিয়তর হয় (আবুদাউদ
হা/৫৫৪; নাসাঈ হা/৮৪৩, সনদ ছহীহ; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/২২১)।
প্রশ্ন (৮/৩৬৮) : জনৈক ইমাম ছাহেব খুৎবায় বলেন, ১০ই যিলহজ্জ মিনাতে কংকর
নিক্ষেপ করে মাথা মুন্ডন অতঃপর কুরবানী করতে হবে। আগপিছ করলে হজ্জ হবে না। এ কথা কি
সঠিক?
-আজমাল, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : উপরোক্ত বক্তব্য সঠিক
নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কংকর নিক্ষেপ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করা ও কুরবানী করা
প্রসংগে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, لاَ حَرَجَ ‘এতে কোন অসুবিধা নেই’। অন্য বর্ণনায় এসেছে افْعَلُوْا وَلاَ حَرَجَ ‘এটি কর, এতে কোন অসুবিধা
নেই’ (মুসলিম হা/১৩০৬, ‘হজ্জ’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৯/৩৬৯) : মসজিদের মাইকে শিশুদের পোলিও খাওয়ানো, টিকাদান, আবহাওয়া
সম্পর্কে সতর্কীকরণ বা মক্তবের ক্লাসের কথা ঘোষণা করা যাবে কি?
-আনীসুর রহমান, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট।
উত্তর : মসজিদের মাইক কেবলমাত্র
আযানের জন্যই নির্ধারিত। যা অন্য কাজে ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয়। এতে মৃত্যু খবর প্রচার
করা আদৌ জায়েয নয়। কেননা তা না‘ঈ বা শোক সংবাদ প্রচারের শামিল। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ (তিরমিযী হা/৯৮৬; তালখীছ, পৃ. ১৯, ৯৮)।
মসজিদের মাইকে আযান ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহারের বিষয়ে সালাফে ছালেহীনের কোন নযীর
পাওয়া যায় না। অতএব এগুলি পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন
(১০/৩৭০) : সিগারেট, কাঁচা তামাক ক্রয়-বিক্রয়, রফতানী এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো, মেশিনারী
প্রভৃতি বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর যাকাত আদায় করতে হবে কি?
-শেখ সাদী, আকিজ গ্রুপ, ঢাকা।
উত্তর : উপরোক্ত পণ্য এবং
সংশ্লিষ্ট জিনিসগুলি হারাম হওয়ায় সেগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে না। কারণ তা আল্লাহর নিকট
কবুল হবে না। কেননা ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্ত্ত ব্যতীত কবুল করেন না’ (মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০)। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল করেন না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা
গ্রহণ করেন না’ (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত
হা/৩০১; মিরক্বাত)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘কোন বান্দা হারাম পথে
উপার্জিত অর্থ-সম্পদ ছাদাক্বা করলে তা কবুল করা হবে না এবং নিজের কাজে ব্যবহার করলেও
তাতে বরকত হবে না। আর ঐ সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের
পুঁজি হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মন্দের দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না। তবে সৎকর্ম
দ্বারা মন্দকর্ম মিটিয়ে দেন’ (আহমাদ
হা/৩৬৭২; মিশকাত হা/২৭৭১; শু‘আবুল ঈমান হা/৫৫২৪; হাকেম হা/৭৩০১, সনদ ছহীহ)।
উল্লেখ্য যে, হারাম মালে যাকাত ফরয না হওয়ার বিষয়ে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যেও ঐক্যমত
রয়েছে। তাছাড়া যাকাত দেওয়া হয় মাল পবিত্র করার জন্য। অথচ পুরো মালই অপবিত্র হ’লে তা
কাকে পবিত্র করবে? (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ
২৩/২৪৮)।
এতদ্ব্যতীত
যে বস্ত্ত মৌলিকভাবে হারাম তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হওয়াও হারাম। যেমন তামাক মাদক দ্রব্যের
অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মাদকতা আনয়নকারী বস্ত্ত হারাম’ (মুসলিম হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)। তিনি
বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতির উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করলে তার বিক্রয়লব্ধ অর্থও
হারাম করে দেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮; আহমাদ
হা/২৯৬৪)। যেমন মদ হারাম সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নির্দেশ (মায়েদাহ ৯০) নাযিলের পর
রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যার নিকট এই
আয়াত পৌঁছে গেছে এবং তার নিকট এর কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে, সে যেন তা পান না করে এবং বিক্রয়
না করে’। রাবী বলেন, অতঃপর যাদের নিকট মদ অবশিষ্ট ছিল তারা তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল এবং
তা মদীনার রাস্তায় ঢেলে দিল (মুসলিম হা/১৫৭৮)।
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যিনি তা পান করা হারাম করেছেন, তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন’ (মুসলিম হা/১৫৭৯; ‘মদ বিক্রি হারাম’ অনুচ্ছেদ)।
সুতরাং হারাম পণ্য বিক্রি করা ও এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ গ্রহণ করা সুস্পষ্টভাবে হারাম।
এক্ষণে
এই হারাম সম্পদ যথাশীঘ্র নিজ মালিকানা থেকে বের করে দিতে হবে এবং ছওয়াবের আশা ছাড়াই
জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে দান করে দিতে হবে। ইমাম ইবনু
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ব্যক্তির নিজ ও নিজ পরিবার চালানোর জন্য যদি হারাম পন্থায় উপার্জিত
সম্পদ ব্যতীত কোন সম্পত্তি না থাকে, তাহ’লে যতটকু প্রয়োজন ততটকু সেখান থেকে গ্রহণ করে
বাকীগুলো ছাদাক্বা করে দিবে। যদিও এই ছাদাক্বায় তার কোন উপকার হবে না। তবে এতে কিছু
গরীব উপকৃত হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ২৯/৩০৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৩৮৯; যাদুল মা‘আদ ৫/৭৭৮)।
অতএব এই সম্পদের কোন যাকাত নেই। বরং এই সমুদয় হারাম সম্পদ ছওয়াবের আশা ব্যতীত জনকল্যাণমূলক
কাজে ব্যয় করতে হবে।
প্রশ্ন
(১১/৩৭১) : ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকার যাকাত কি পিতা
বা অভিভাবককে আদায় করতে হবে?
-মুশফিকুর রহমান, অলকার মোড়, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকেরাই
শিশুর সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করবে (ইবনু
কুদামাহ, মুগনী ২/৪৬৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০২; বিন বায, ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৪১০)।
ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা ইয়াতীমের সম্পদ দ্বারা ব্যবসা কর, যেন তা যাকাতের মাধ্যমে নিঃশেষ
না হয়ে যায় (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৮৬৩)।
এতে প্রমাণিত হয় যে, ইয়াতীম বা শিশুর সম্পদেও যাকাত প্রযোজ্য।
প্রশ্ন (১২/৩৭২) : স্বামী-স্ত্রীর নামে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে এবং
সন্তানদের নামেও কিছু টাকা জমা রয়েছে। এক্ষণে যাকাত প্রদানকালে উক্ত পরিবারের সদস্যদের
প্রতিজনের সম্পদ কি আলাদাভাবে ভাগ করে যাকাত হিসাব করতে হবে, নাকি তাদের সম্মিলিত সম্পদের
যাকাত একত্রিতভাবে আদায় করতে হবে?
-শরীফুল ইসলাম, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : মালিকানা আলাদা হওয়ায় সম্পদগুলো
আলাদাভাবে নিছাব পরিমাণ হ’তে হবে এবং পৃথকভাবে যাকাত দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের
দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরী করা হবে’ (মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়।)।
এখানে
মালিক বলতে ব্যক্তি মালিকানাকে বুঝানো হয়েছে। অতএব ব্যক্তি মালিকানায় নিছাব পরিমাণ
স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলেই কেবল যাকাত ফরয। অন্যথায় নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩)। উল্লেখ্য যে, পরিবারের একাধিক ব্যক্তি
স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করলেও যদি তাতে পৃথক পৃথক মালিকানা না থাকে; বরং পরিবারের কোন
এক ব্যক্তির মালিকানায় থাকে, তাহ’লে তা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত আদায় করতে হবে’(উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩)।
প্রশ্ন (১৩/৩৭৩) : দু’জন ব্যক্তি যৌথ ব্যবসা করে। এ দু’জনের একজনের সাথে
কোম্পানীর সম্পর্ক ভাল থাকায় কোন একটি পণ্য বাজার মূল্যের চেয়ে কমে পায়। কিন্তু অপরজন
একই দ্রব্য কিনতে গেলে সে বেশী মূল্যে কেনে। এক্ষণে প্রথমজন ভাউচার করার সময় কি পণ্যটির
মূল্য ক্রয়কৃত মূল্য না লিখে দ্বিতীয়জন যে মূল্যে কিনত সেই মূল্য লিখে বাকী অর্থ লাভ
হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে?
-শু‘আইব, নীলফামারী।
উত্তর : অংশীদারকে না জানিয়ে
এককভাবে বাড়তি মূল্য গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কেননা এটি প্রতারণার শামিল। এক্ষেত্রে
পরিচয় সূত্রে কেউ বিশেষ সুবিধা পেলে বা বিনামূল্যে পেলে তার ভাগীদার তারা উভয়ই হবে,
বিশেষ কোন একজন নয়। অংশীদার তাকে অনুমতি দিলেই কেবল সে এই মূল্য গ্রহণ করতে পারবে।
কোন মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে
প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)।
প্রশ্ন (১৪/৩৭৪) : রাসূল (ছাঃ) জীবনে কতবার ইতেকাফ করেছিলেন? শেষ বছরে কেন
তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন?
-আল-আমীন, মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
কুরআন প্রতি বছর (রামাযানে) একবার রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে পেশ করা হ’ত। অতঃপর মৃত্যুর
বছরে দু’বার পেশ করা হয়। আর তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। অতঃপর মৃত্যুর বছরে
২০ দিন ইতিকাফ করেন। ২য় হিজরীতে ছিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের আগ
পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ছাঃ) সকল রামাযানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। মৃত্যুর বছর
জীবনের শেষ রামাযানে তিনি ২০দিন ইতেকাফ করেন (বুখারী হা/২০৪৪, ৪৯৯৮; মিশকাত হা/২০৯৯)। কিন্তু এক বছর স্ত্রীদের উপর
ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি ইতেকাফ করেননি। ফলে রামাযানের পরেই শাওয়াল মাসে তার ক্বাযা ই‘তেকাফ
করেন (বুখারী হা/২০৪৫)।
আর
জীবনের শেষ বছর বিশ দিন ইতেকাফ করার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে- যেমন (১) প্রতি
রামাযানে জিব্রীল (আঃ) একবার কুরআন শুনাতেন। কিন্তু যে বছর মারা যান সে বছর দু’বার
কুরআন শুনানোর কারণে বিশদিন ইতেকাফ করেন। (২) তিনি বেশী আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর অধিক
নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলেন। (৩) কারো মতে, তিনি ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সফরকালে ইতেকাফ
করতে সক্ষম হননি। ফলে তার ক্বাযা স্বরূপ পরবর্তী রামাযানে তিনি বিশদিন ইতেকাফ করেছিলেন (হাকেম হা/১৬০২; ছহীহ ইবনু খুয়ায়মাহ হা/২২২৬, সনদ
ছহীহ)।
প্রশ্ন (১৫/৩৭৫) : এক রাত বা তিন রাত ই‘তেকাফ করা যাবে কি? সর্বনিম্ন কতদিন
ই‘তেকাফ করা যায়?
-রিয়াযুল ইসলাম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ই‘তেকাফের নির্দিষ্ট সময়সীমা
নেই। বরং একটি দিনের জন্যও কেউ যদি আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে
নিজেকে আবদ্ধ রাখে তাহ’লে সেটি ই‘তেকাফ হিসাবে গণ্য হবে। আর কেউ নির্দিষ্ট দিনের জন্য
নিজেকে আটকে রাখার নিয়ত করলে সে দিনগুলো পালন করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮০০৬; আদ-দুর্রুল
মুখতার ১/৪৪৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৪৮৯, ৬/৫৮১৪; আল-ইনছাফ ৭/৫৫৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১৫/৪৪১)।
প্রশ্ন (১৬/৩৭৬) : সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের আযানের সময় কি আলাদা?
-আবুল কালাম আযাদ, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর: সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের
আযানের সময় আলাদা নয়। বরং সাহারীর শেষ সময়ই ফজরের আযানের সময়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
যামানায় বেলাল (রাঃ) সাহারীর আযান দিতেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ফজরের
আযান দিতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বেলালের আযান শুনে খাও, যতক্ষণ না ইবনু
উম্মে মাকতূমের আযান শুনতে পাও’ (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০)।
প্রশ্ন (১৭/৩৭৭) : কুরআন তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলা ঠিক
হবে কি?
-আব্দুল ওয়াহীদ, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল
আযীম’ বলার কোন দলীল পাওয়া যায় না। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম এমনকি তাবেঈগণের আমল
থেকেও এর বর্ণনা পাওয়া যায় না। সেজন্য অনেক বিদ্বান একে বিদ‘আত বলেছেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৩৩০-৩১; উছায়মীন, ইযালাতুস
সাত্তার আনিল জাওয়াবিল মুখতার ৭৯-৮০ পৃ.)। বরং এর পরিবর্তে কুরআন তেলাওয়াত শেষে
এ দোআটি পড়া যেতে পারে-سُبْحَانَكَ اَللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أشْهَدُ أنْ لاَ اِلَهَ إلاَّ اَنْتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা
ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।
অনুবাদ
: ‘মহা পবিত্র তুমি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি
ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকেই
ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)। (আবুদাউদ
হা/৪৮৫৭; মিশকাত হা/২৪৫০; ছহীহাহ হা/৩১৬৪; ইমাম নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লি হা/৩০৮)।
প্রশ্ন (১৮/৩৭৮) : সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশংকায় গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী
মহিলা ছিয়াম পালন না করলে সেক্ষেত্রে ক্বাযা ছিয়াম আদায় করতে হবে, না ফিদইয়া প্রদান
করতে হবে?
-আব্দুল্লাহ লাবীব, বর্ষাপাড়া, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : যে সকল গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিণী
নারী ছিয়াম পালনে শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা করবে তাদের জন্য দু’টি পদ্ধতি জায়েয। একটি হ’ল-
প্রতিদিনের বিনিময়ে অর্ধ ছা‘ ফিদিয়া প্রদান করবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী-
(অর্থ) যারা সামর্থ্যবান তারা মিসকীনদের ফিদিয়া প্রদান করবে। তিনি বলেন, এ আয়াতটি
অতি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা লোকের জন্য ঐচ্ছিক ব্যবস্থা স্বরূপ। যদি তারা ছিয়াম পালন
করতে সমর্থ হয়, তবে ছিয়াম রাখবে। অন্যথায় প্রত্যহ একজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে।
আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী স্ত্রীলোকগণ যদি সন্তানের ক্ষতির আশংকা করে, তবে তাদের
জন্যও এ নির্দেশ বহাল রয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, যদি
তারা তাদের সন্তানের ব্যাপারে শংকিত হয়, তবে তারা ছিয়াম না রেখে
(মিসকীনকে) খাদ্য খাওয়াতে পারে (আবুদাউদ
হা/২৩১৮; ইরওয়া ৪/১৮, শায)। দ্বিতীয়তঃ রামাযানে ছিয়াম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে
ক্বাযা আদায় করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের উপর
থেকে রহিত করে দিয়েছে অর্ধেক ছালাত এবং মুলতবী রেখেছেন ছওমকে। আর গর্ভবতী মহিলা এবং
দুগ্ধদানকারী মহিলা থেকেও মুলতবী করে দিয়েছেন ছওম’ (নাসাঈ হা/২২৭৪, ২৩১৫; আহমাদ হা/২০৩৪১, সনদ হাসান)।
প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) : পরীক্ষার কারণে আমি কয়েকটি ছিয়াম রাখতে পারিনি। এক্ষেত্রে
আমাকে কি ক্বাযা ও কাফফারা দু’টোই দিতে হবে?
-আনীসুল হক, বৃ-কুষ্টিয়া, বগুড়া।
উত্তর : এজন্য কাফফারা নয় বরং যে
কয়দিন ছুটে গেছে সে কয়দিন ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর নিকট খালেছ
নিয়তে তওবা করতে হবে। কারণ পরীক্ষার জন্য ছিয়াম ছেড়ে দেওয়া কোন শারঈ ওযর নয় (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/৭৭; ইবনু কুদামাহ,
মুগনী ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৪৩)। উল্লেখ্য যে, ক্বাযা ও কাফফারা
উভয়টি কেবলমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্য, যে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় স্ত্রী সঙ্গম করবে (বুখারী হা/৫৩৬৮; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪)।
প্রশ্ন (২০/৩৮০) : যে সকল গাড়ী ভাড়ায় খাটানো হয় বা কোম্পানীর মালিকানাধীন
গাড়িগুলোর উপর কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : নিজের ব্যবহারের জন্য
কেনা গাড়ী বা ভাড়ায় খাটানো গাড়ীর উপর কোন যাকাত লাগবে না। তবে ভাড়া থেকে প্রাপ্ত সম্পদ
নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং তাতে এক বছর অতিক্রান্ত হ’লে যাকাত দিতে হবে। তবে ব্যবসায়িক
পণ্য হিসাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে শোরুমে রক্ষিত গাড়ীর মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ
সেগুলো বিক্রয়ের জন্য আমদানী করা বা বানানো হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলমানের খেদমতের
গোলাম এবং আরোহণের ঘোড়ার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হবে না (মুসলিম হা/৯৮২; ছহীহাহ হা/২১৮৯)। তবে বিক্রি
করে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত গাড়ীতে যাকাত দিতে হবে (নববী, শারহু মুসলিম অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২১/৩৮১) : বহু মানুষকে দেখা যায় মাথাসহ দাড়িতে লাল মেহেদী ব্যবহার
করে। এর ভিত্তি আছে কি?
-রফীকুল ইসলাম, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : মাথাসমেত দাড়িতে লাল মেহেদী
ব্যবহারে কোন বাধা নেই। যেকোন রঙে দাড়ি ও মাথা রাঙানো যেতে পারে (আবুদাঊদ হা/৪২১১; মিশকাত হা/৪৪৫৪, সনদ জাইয়েদ
তবে এর মর্ম ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণীত, আহমাদ হা/২২৩৩৭; ছহীহাহ হা/১২৪৫)।
তবে কালো রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (মুসলিম
হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, শেষ যামানায় একদল লোক কালো
রং দ্বারা খেযাব করবে। তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবুদাউদ হা/৪২১২)। মনে রাখা আবশ্যক যে,
চুল রঙিন করার ক্ষেত্রে কাফেরদের অনুসরণ করা বা নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা নিষিদ্ধ (বুখারী হা/৫৪৩৫; আবুদাউদ হা/৪০৩১, সনদ ছহীহ)।
উল্লেখ্য
যে, কালো চুলকে কালো রাখতে হবে। একইভাবে ছেলেদের চুলকে খাটো এবং মেয়েদের চুলকে লম্বা
রাখতে হবে। এটাই আল্লাহর সৃষ্টিগত রীতি। এর পরিবর্তন করা শয়তানের রীতি (নিসা ১১৯; বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪৩১)। যারা
কালো চুলকে লাল করে বা বিভিন্ন ফ্যাশন করে, হাতে-মুখে উল্কি দেয়, সাদা চুল উঠিয়ে ফেলে,
ভ্রু কেটে সরু করে, দাড়ি ছেটে স্টাইল করে, দাড়ি মুন্ডন করে, তারা আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্যের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
বস্ত্ততঃ
বরকতময় আল্লাহ কতই না সুন্দর সৃষ্টিকর্তা! (মুমিনূন ১৪)। রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার আকৃতিকে
সুন্দর করেছ। অতএব তুমি আমার চরিত্রকে সুন্দর কর’ (আহমাদ হা/৩৮২৩; মিশকাত হা/৫০৯৯)।
প্রশ্ন (২২/৩৮২) : আমার পিতা মারা গেছেন। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে
রয়েছে আধা কাঠা জমির উপর তিন তলা বাড়ী এবং ভিন্ন ভিন্ন দামের আরো প্রায় ৩৯ শতাংশ জমি।
আমরা ৪ ভাই ৩ বোন, আমার মা এবং দাদী জীবিত আছেন। আমরা ভাই-বোনেরা চাই তিন তলা বাড়ীটি
মায়ের নামে দিতে এবং ভাই-বোনেরা কম দাম এবং বেশী দামের জমি মিলিয়ে বণ্টন করে নিতে এবং
কম মূল্যের জমি দাদীকে দিতে। আমার এক ভাই ও এক বোন এখনো নাবালক। এইভাবে বণ্টন করলে
কি দাদীর সাথে বেইনছাফী করা হবে? অথবা কিভাবে বণ্টন করলে ইনছাফপূর্ণ বন্টন হবে জানালে
উপকৃত হব।
-মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ।
উত্তর : কুরআন যেভাবে মীরাছ বণ্টন
করে দিয়েছে সেভাবে বণ্টন করা আবশ্যক। কেননা সেটিই সর্বাধিক ইনছাফপূর্ণ। আল্লাহ বলেন,
আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন
যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। যদি তারা দুইয়ের অধিক কন্যা হয়, তাহ’লে
তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি কেবল একজনই কন্যা হয়, তবে তার
জন্য অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে
পাবে, যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ
হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে
ছয় ভাগের এক ভাগ, মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর’ (নিসা ১১)। এক্ষণে শরী‘আত বর্ণিত উপরোক্ত
বণ্টননীতি অক্ষুণ্ণ রেখে সম্পদ বণ্টিত হ’লে এবং উক্ত বণ্টনে দাদী ও অন্যান্য ভাই-বোনেরা
সম্মত থাকলে তাতে কোন দোষ হবে না।
প্রশ্ন (২৩/৩৮৩) : ছালাতের বাইরে সিজদার আয়াত পড়ার সাথে সাথে কি সিজদা করতে
হবে, না কি পরে কোন এক সময় দিলে হবে।
-সাইফুল ইসলাম, কাজলা, রাজশাহী।
উত্তর : সিজদার আয়াত যখনই পাঠ করবে
বা শ্রবণ করবে তখনই সিজদা দেওয়া সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন
সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও
তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভিড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য
কপাল রাখার জায়গা পেত না (বুখারী হা/১০৭৬;
মিশকাত হা/১০২৫)। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু
পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না।
এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৩-৫৪ পৃ.; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৪/৩৮৪) : বিবাহের সময় দেনমোহর দেওয়া হয়নি। তিন মাস পর মেয়ের পক্ষ
থেকে তালাকের নোটিশ দেওয়া হয়। বর্তমানে জামাই মারা গেছে। এখন কি দেনমোহর দিতে হবে?
-যহীরুল ইসলাম, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : স্ত্রীর পক্ষ থেকে
খোলা বা বিবাহ বিচ্ছেদ করা হ’লে স্ত্রী দেনমোহর ফেরত দিয়ে স্বামীর নিকট তালাক নিবে (ইবনু কুদামাহ ৭/৩২৩, ৩২৫)। এখানে স্ত্রী
যেহেতু তালাকের নোটিশ দিয়েছে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছে, সেহেতু সে আর দেনমোহর পাওয়ার
হকদার নয়। অতএব মৃত স্বামীর পক্ষ থেকে দেনমোহর প্রদানের প্রশ্নই ওঠে না।
ছাবিত
ইবনু ক্বায়েস (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! চরিত্রগত
বা দ্বীনী বিষয়ে ছাবিত ইবনু ক্বায়েসের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে
থেকে কুফরী করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পসন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,
তুমি কি তার পক্ষ থেকে মোহরানা স্বরূপ প্রাপ্ত বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বলল, দিব। তখন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বামী ছাবেতকে বললেন, তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক
দিয়ে দাও (বুখারী হা/৫২৭৩; মিশকাত হা/৩২৭৪)।
অর্থাৎ ঐ মোহরানা ফেরৎ দানের বিনিময়ে তুমি তাকে তালাক দাও। এটি মূলতঃ শারঈ নিয়মের তালাক
নয়, বরং খোলা বা বিচ্ছেদ (ফাৎহুল বারী)।
প্রশ্ন (২৫/৩৮৫) : দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদে উপরের তলায় মেয়েরা পুরুষদের থেকে
এক কাতার সামনে কাতার হয়ে দাঁড়াতে পারবে কি?
-হাজী আব্দুস সাত্তার, দারুশা, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : নিয়ম হ’ল ইমাম সামনে দাঁড়াবে ও মুছল্লীরা পিছনে দাঁড়াবে। তবে বাধ্যতামূলক
কোন ওযরবশত বা মসজিদে জায়গা সংকুলান না হ’লে পুরুষ বা নারী মুছল্লীরা সাময়িকভাবে ইমাম
থেকে সামনে দাঁড়ালে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪০৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৮,৪৫)।
প্রশ্ন (২৬/৩৮৬) : ধানকাটার মৌসুম হওয়ায় আমাদের এলাকার অধিকাংশ কৃষক ছিয়াম
রাখতে পারে না। তাদের জন্য বিধান কি হবে?
-আতাউর রহমান, রসূলপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ছিয়াম একটি ফরয ইবাদত। এটি
পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ধান কাটার মৌসুমেও তা পালন করবে। সর্বাবস্থায়
ছিয়াম পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং সুদৃঢ় ইচ্ছা রাখবে। যতক্ষণ সাধ্য থাকবে
ছিয়াম পালন করে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায়
বের করে দেন’।... ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট
হয়ে যান’ (তালাক ৬৫/২-৩)। তবে
যদি একান্তই জীবনাশঙ্কা দেখা দেয়, এরূপ বাধ্যগত অবস্থায় ছিয়াম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে
ক্বাযা আদায় করে নিবে (ইবনু আব্দিল
বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/৭৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৪৩,
২৩৪-২৩৮)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর কথা শোন ও মান্য
কর এবং (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর।এটিই তোমাদের কল্যাণকর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
প্রশ্ন (২৭/৩৮৭) : জনৈক আলেম বলেন পুরুষরা হলুদ কাপড় পরিধান করতে পারবে
না। কিন্তু লাল কাপড় পরিধান করতে পারবে। এর সত্যতা জানতে চাই।
-আব্দুর রহমান উসামা, দক্ষিণপাড়া, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল ও
হলুদ উভয় রংয়ের কাপড় পরা পুরুষদের জন্য অবৈধ। তবে লাল ও হলুদের সাথে অন্য রং মিশ্রিত
থাকলে উক্ত পোষাক পরিধানে কোন বাধা নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৩৩৭; আল-মাওসূআতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/১৩২-৩৬; ওছায়মীন, আশ-শরহুল
মুমতে‘)। আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমার পরিহিত
হলুদ রঙের দু’টি পোষাক দেখে বললেন, ‘এগুলো কাফেরদের পোষাক। তুমি এসব পরবে না’ (মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭)। আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পুরুষের জন্য যাফরান রং ব্যবহার নিষিদ্ধ
করেছেন (বুখারী হা/৫৮৪৬; মুসলিম হা/২১০১;
মিশকাত হা/৪৪৩৪)। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে
সোনার আংটি, রেশমী কাপড় ও কুসুম রঙের কাপড় ব্যবহার করতে এবং রুকূ অবস্থায় কুরআন পড়তে
নিষেধ করেছেন (নাসাঈ হা/৫১৭২; ছহীহাহ
হা/২৩৯৫)।
প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) : আমি একটি ব্যবসায় ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এক্ষণে
বছরান্তে উক্ত বিনিয়োগকৃত টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে নাকি তা থেকে প্রাপ্ত লাভের
উপর? উল্লেখ্য যে, বিনিয়োগকৃত টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হ’লে আমার প্রাপ্ত লাভের
সিংহভাগই যাকাত প্রদানে ব্যয় হয়ে যাবে।
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : বিনিয়োগকৃত মূলধন এবং লভ্যাংশ
যোগ করে বছর শেষে যে পমিমাণ সম্পদ হবে তা থেকে যাকাত দিতে হবে। মোট সম্পত্তির ৪০ ভাগের
১ ভাগ যাকাত দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বিশ দীনারের কম স্বর্ণে যাকাত ফরয নয়। যদি
কোন ব্যক্তির নিকট বিশ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দীনার
যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে’ (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (২৯/৩৮৯) : ব্যবসায়ের সম্পদের যাকাত দোকানে রক্ষিত দ্রব্যের ক্রয়মূল্য
না কি বিক্রয়মূল্যের উপর নির্ধারিত হবে?
-আব্দুল হাসীব, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
উত্তর : পণ্যটির বর্তমান বাজারমূল্যের
উপর যাকাত হিসাব করতে হবে। যদি তা নিছাব পরিমাণ হয় (ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ৪/২৪৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩২৪; আল মাওসূ‘আতুল
ফিক্বহিয়াহ ১৩/১৭১; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/১৪৬)।
প্রশ্ন (৩০/৩৯০) : আমি স্বর্ণের ব্যবসা করি। এক্ষণে আমার দোকানে রক্ষিত
সমস্ত স্বর্ণের উপর কি যাকাত প্রদান করতে হবে?
-আব্দুল কাহ্হার, সাতমাথা, বগুড়া।
উত্তর : মালিকানাধীন সমস্ত স্বর্ণের
উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বিশ দীনারের কম স্বর্ণে যাকাত ফরয নয়।
যদি কোন ব্যক্তির নিকট ২০ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দীনার
যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে’ (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)। অতএব
বছর শেষে সকল স্বর্ণের হিসাব করে বাজারমূল্য অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে (ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ৪/২৪৯; ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমাহ ৯/৩২৪; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৩/১৭১)। স্বর্ণ ও রৌপ্য আলাদা থাকলে
উভয়ের মূল্য হিসাব করে নিছাব পরিমাণ হ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে। কারণ দোকানে যা কিছু
আছে তার সবগুলো ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩১৮; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/১০৪)।
প্রশ্ন (৩১/৩৯১) : বিবাহের সময় ১০ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারিত হ’লেও আমার
স্বামী এখনও আমাকে মোহর প্রদান করেননি। আগামী ২/১ বছর পর তিনি পরিশোধের ওয়াদা করেছেন।
এক্ষণে আমাকে উক্ত মোহরের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে কি?
-সাবীহা ইয়াসমীন, মাটিডালী, বগুড়া।
উত্তর : না। বরং যখন উক্ত মোহরের
টাকা হাতে আসবে এবং তা এক বছর সঞ্চিত থাকবে, তখন শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত দিতে
হবে। কারণ যা মালিকানায় নেই তার উপর যাকাত ফরয হয় না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১১, ২৫)।
প্রশ্ন (৩২/৩৯২) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, ‘একজন হাজী তার নিকটতম ৪০০ জনকে
সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন’। বিষয়টির সত্যতা জানতে চাই।
-আব্দুল্লাহ, সিংড়া, নাটোর।
উত্তর : কোন হাজী ৪০০ জন ব্যক্তিকে
সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। এটি মিথ্যা ও বানাওয়াট
কথা মাত্র।
প্রশ্ন (৩৩/৩৯৩) : বর্তমান বিশ্বে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের মুল্যে ব্যাপক ব্যবধান
পরিলক্ষিত হয়। এক্ষণে কিসের উপর ভিত্তি করে নগদ অর্থের যাকাত দিতে হবে?
-আলতাফ হোসেন, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর
যুগে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ এবং সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের মূল্য সমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে
উভয়ের মাঝে ব্যবধান কয়েকগুণ। অর্থাৎ রৌপ্যের মূল্যে ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। ফলে আধুনিক
যুগে বিদ্বানগণ স্বর্ণের মূল্যমান রৌপ্য অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য
হওয়ায় স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী নগদ অর্থের যাকাত দেওয়ার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন (ইউসুফ ক্বারযাভী, ইসলামের যাকাত বিধান, ১/২৫২-৫৩
পৃ.)। তবে কেউ চাইলে গরীবের অধিকতর কল্যাণার্থে রৌপ্যের হিসাবে যাকাত প্রদান
করতে পারে (মাজমু‘ ফাতাওয়া ইবনুল বায,
১৪/১২৫ পৃ.।
প্রশ্ন (৩৪/৩৯৪) : বদলী হজ্জ মূলতঃ কাদের জন্য প্রযোজ্য?
-আবুল হাসান, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : হজ্জের নিয়ত করে মৃত্যুবরণকারী
ব্যক্তি, অতিবৃদ্ধ, চিররোগী, মুহরিম বিহীন মহিলা প্রমুখের জন্য মূলতঃ বদলী হজ্জের বিধান (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১১-১২, ১৩ ‘হজ্জ’
অধ্যায়)। তবে বদলী হজ্জ আদায়কারীকে অবশ্যই ইতিপূর্বে হাজী হ’তে হবে (আবুদাউদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/২৫২৯)।
সুস্থ, সবল ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ জায়েয নয়।
প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) : সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে
কি?
-নযরুল ইসলাম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : নিষেধাজ্ঞা না থাকলে
সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। আনাস (রাঃ) বলেন, মদীনায় হিজরত
করার পর মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাজ্জারকে বললেন, তোমরা তোমাদের
বাগানটি আমার নিকটে বিক্রয় করে দাও। জবাবে তারা বলল, আমরা আপনার নিকট থেকে এর বিনিময়ে
কোন মূল্য নেব না। কেবল আল্লাহর নিকট থেকে বিনিময় চাই। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের
সম্মতিক্রমে সেটি গ্রহণ করলেন ও সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন’ (বুখারী হা/১৮৬৮; মুসলিম হা/১২০১; আবুদাঊদ হা/৪৫৩;
নাসাঈ হা/৭১০, ইবনু মাজাহ হা/৭৯১)। তাছাড়া সাধারণভাবে যেকোন স্থানে ছালাত আদায়
করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য ছালাতের স্থান এবং মাটিকে
পবিত্র করে দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম, মিশকাত
হা/৫২৬)।
প্রশ্ন (৩৬/৩৯৬) : টার্কী মুরগীর গোশত খাওয়ায় কোন দোষ আছে কি?
-আব্দুল কুদ্দুস, মাদলপাড়া, পুঠিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : টার্কী বা যে কোন
জাতের মুরগীর গোশত হালাল। কেননা এটি দন্ত ও নখর বিশিষ্ট কোন হিংস্র প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত
নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে মুরগীর গোশত পেশ করা হ’লে তিনি তা ভক্ষণ করেছেন (বুখারী হা/৫৫১৮; মুসলিম হা/১৬৪৯)।
প্রশ্ন (৩৭/৩৯৭) : ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ঘুরার সময়
কোন দিকে দিয়ে ঘুরবে?
-কাওছার মল্লিক, পলাশপোল, সাতক্ষীরা।
উত্তর : ইমাম সালাম ফিরানোর পর ডাইনে
অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসতে পারবে এবং এটিই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর
নিয়মিত সুন্নাত (বুখারী হা/৮৫২; মুসলিম হা/৭০৭;
মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬; ফাৎহুল বারী ২/৩৩৪)। ডান দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) কখনো পড়েছেন, ‘রবিব ক্বিনী আযা-বাকা
ইয়াওমা তাব‘আছু ইবা-দাকা’ (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও!
যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে) (মুসলিম হা/৭০৯; মিশকাত হা/৯৪৭; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ১২৩)।
প্রশ্ন (৩৮/৩৯৮) : একটি গ্রাম্য মসজিদের ইমাম ভুল করে ইফতারের দশ মিনিট
পূর্বে আযান দিয়ে দেয়। আযান শুনে বহু ছায়েম ইফতার করে ফেলে। এক্ষণে যে সকল ছায়েম ভুল
করে সময়ের আগে ইফতার করল তাদেরকে কি পুনরায় ছিয়াম আদায় করতে হবে?
-হুসাইন আহমাদ, ধুরইল, রাজশাহী।
উত্তর : ভুলক্রমে হ’লে ক্বাযা করার
প্রয়োজন নেই। কারণ অনিচ্ছাকৃত ভুল মার্জনীয় (আহযাব ৩৩/৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত
অপরাধ ও ভুল সমূহকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৮৪)।
ছহীহ
বুখারীতে (হা/১৯৫৯) বর্ণিত
অনুরূপ একটি ঘটনা উল্লেখ করে একদল বিদ্বান এমন ভুলের জন্য ক্বাযা করতে বললেও সেখানে
রাসূল (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশনা নেই বরং হাদীছে প্রদত্ত বক্তব্যটি রাবী হিশাম বিন উরওয়ার
নিজস্ব রায় মাত্র। কিন্তু সেখানেও তিনি বলেছেন, আমি জানি না তাঁরা ক্বাযা করেছিলেন
কি-না। অতএব এ হাদীছ থেকে ক্বাযা করার ব্যাপারে কোন নিশ্চিত নির্দেশনা পাওয়া যায় না (ফাৎহুল বারী হা/১৯৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
সুতরাং এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসাবেই গণ্য হবে। উক্ত বিষয়ে মুজাহিদ, হাসান বছরী, ইসহাক,
ইমাম আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ, শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ ঊছায়মীনসহ অন্যান্য
বিদ্বানগণ বলেন, ক্বাযা আদায় করতে হবে না (ফাৎহুল বারী ৪/২০০; মাজমূউল ফাতাওয়া ২৫/২৩১; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৪০২-৪০৮)।
প্রশ্ন (৩৯/৩৯৯) : জুম‘আ মসজিদে খুৎবার পরে মসজিদের সভাপতি দাঁড়িয়ে
কিছুক্ষণ বক্তব্য দেন। এরপরে ছালাত শুরু হয়। উক্ত সময়ে সভাপতি ছাহেবের বক্তব্য দেওয়ার
বৈধতা আছে কি?
-মুহাম্মাদ কেরামত আলী, বুধহাটা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : জুমআ‘র দিন খুৎবার আগে
বা পরে ইমাম ব্যতীত অন্য কারো আলোচনা করা সমীচীন নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে
কেরামের যুগে এই ধরনের কোন আমল ছিল না। তাছাড়া খুৎবার পরিসমাপ্তি ও ছালাতের শুরুর মধ্যে
বেশী ব্যবধান হ’লে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে (শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২২০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫১৩; ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী
২/২৩০; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/১৮০; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৫৯; আদ-দুরুল মুখতার ২/১৯)।
তবে বিশেষ কারণবশতঃ সাময়িক কোন প্রয়োজনে কথা বললে দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ (আব্দুল মুহসিন ‘আববাদ, শারহু সুনানু আবী দাউদ
২৮/১৩৯)।
প্রশ্ন (৪০/৪০০) : আমার দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার
জন্য দু’টি বাড়ি নির্মাণ করে দিতে পারব কি?
-আজমল ফুয়াদ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : পিতা-মাতা উক্ত দুই কন্যা
সন্তানকে সম্পদ প্রদান করতে পারে। বাড়ি-ঘর নির্মাণও করে দিতে পারে। তবে সমতা রক্ষা
করা যরূরী। কারণ রাসূল (ছাঃ) কোন এক সন্তানকে বিশেষভাবে দান করতে নিষেধ করেছেন। তবে
যদি কেউ তার সকল সন্তানকে দান করতে চায় তাহ’লে তাতে কোন দোষ হবে না (বুখারী হা/২৫৮৬; মুসলিম হা/১৬২৩; মিশকাত হা/৩০১৯)।
তবে ভাই বা ভাতিজাদের বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমুদয় সম্পত্তি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়া
যাবে না। কারণ সেটি করলে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হবে (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (১/৪০১) : ছূফী মতবাদের জন্ম হয় কবে? ছূফীদের পিছনে ছালাত
আদায় করা যাবে কি?
-মুহাইমিনুল হক, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : ছূফী মতবাদ একটি
ভ্রান্ত মতবাদ। এটি রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের যুগে পরিচিত ছিল না।
এমনকি হিজরী তৃতীয় শতক পর্যন্ত ছূফীবাদ বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেনি (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ১১/০৫)।
হিন্দু, পারসিক ও গ্রীক দর্শনের কু-প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হিজরী তৃতীয়
শতাব্দীতে মা‘রেফাতের নামে ছূফীবাদের সূচনা হয়। সর্বপ্রথম ইরাকের বছরা নগরীতে
যুহ্দ বা দুনিয়া ত্যাগের প্রেরণা থেকে এটা শুরু হয়। প্রবল আল্লাহভীতি ও
দুনিয়াত্যাগের বাড়াবাড়ি, সার্বক্ষণিক যিকর, আযাবের আয়াত পাঠে বা শুনে অজ্ঞান হওয়া
বা মৃত্যু বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয় ছূফীবাদের যাত্রা। ছূফীবাদের পরিভাষায়
এই অবস্থাকে ‘হাল’ বলে। তাদের আক্বীদাকে তিনটি মাযহাবে ভাগ করা যায়।
১- প্রাচ্য দর্শনভিত্তিক
মাযহাব, যা দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের নিকট থেকে এসেছে। এই মাযহাবের অনুসারী
ছূফীরা মা‘রেফাত হাছিল করার জন্য দেহকে চরমভাবে কষ্ট দিয়ে স্বীয় ক্বলবকে তাদের
ধারণা মতে জ্যোতির্ময় করার চেষ্টা করে থাকে। প্রায় সকল ছূফীই এরূপ প্রচেষ্টা
চালিয়ে থাকেন।
২- খ্রিষ্টানদের
নিকট থেকে আগত মাযহাব, যা ‘হুলূল’ ও ‘ইত্তেহাদ’ দ’ুভাগে বিভক্ত। হুলূল অর্থ
‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’। হিন্দু মতে ‘নররূপী নারায়ণ’। ইরানের আবু ইয়াযীদ
বিস্তামী (মৃঃ ২৬১ হিঃ) ওরফে
বায়েযীদ বুস্তামী ছিলেন এই মতের হোতা। এই মাযহাবের অন্যতম নেতা হুসাইন বিন মনছূর
হাল্লাজ (মৃঃ ৩০৯ হিঃ) নিজেকে
সরাসরি আল্লাহ (আনাল হক্ব) বলে দাবী করায় মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে শূলে বিদ্ধ করে
হত্যা করা হয়।
৩- ইত্তেহাদ বা
ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে অদ্বৈতবাদী দর্শন বুঝায়, যা ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে
রূপ লাভ করে। এর অর্থ হ‘ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব
জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এই আক্বীদার
অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ) -এর
সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের
দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব,
মানষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মুর্তিপুজা করে বা
পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পুজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পুজা করে। সবকিছুর
মধ্যে মুমিন আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা
কাফের এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই প্রভূ বলেছে। যদি তারা সকল
সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহ’লে তারা কাফের হ’ত না। বলা বাহুল্য এটাই হ‘ল হিন্দুদের
‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট
হ’লেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃঃ ৬৩৮হিঃ)। বর্তমানে এই আক্বীদাই
মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ‘ল এই যে, প্রেমিক ও
প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক
না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা।
এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে।
মাসীবী
বলেন, আমরা একদিন ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, জনৈক নাছীবী বলল, হে আবু
আব্দিল্লাহ! আমাদের এলাকায় ছূফী নামে কিছু লোক রয়েছে, যারা অনেক খায়। এরপর
ক্বাছীদাহ (দীর্ঘ কবিতা) আবৃত্তি করে এবং একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে নেচে নেচে যিকির শুরু
করে। ইমাম মালেক বললেন, তারা কি শিশু? সে বলল, না। তিনি বললেন, তারা কি পাগলের দল?
সে বলল, না বরং আলেম-ওলামা। তিনি বললেন, কোন মুসলমান এমনটি করে বলে জানি না (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক
২/৫৩-৫৪; ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ
দামেশকী বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের নিকট দ্বীন নিরাপদ নয়- ছূফী, গল্পকার ও বিদ‘আতী’ (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ৩/২২৬)।
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি দিনের প্রথম প্রহরে ছূফী মতবাদ গ্রহণ করে
তাহ’লে তুমি তাকে যোহরের সময় হ’তে না হ’তেই একেবারে আহম্মক অবস্থায় পাবে (বায়হাক্বী, মানাক্বিবুশ শাফেঈ ২/২০৭)।
তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ছূফী মতবাদে ঢুকে থাকবে সে আর কখনো সুস্থ
আক্বীদায় ফিরতে পারবে না’ (ইবনুল
জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। তিনি আরো বলেন, আমি ছূফীদের সংস্পর্শে গিয়ে
কেবল দু’টি বিষয়ে উপকৃত হয়েছি। তারা বলে, ‘সময় তরবারী তুল্য। তুমি যদি তাকে না
কাটো তাহ’লে সে তোমাকে কাটবে। আর তুমি যদি আল্লাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হও, তাহ’লে
বাতিল তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে’ (ইবনুল
ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/১২৪)। আবু যুর‘আকে ছূফী হারেছ মুহাসেবী ও
তার কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই এই কিতাবগুলো থেকে
দূরে থাকবে। কারণ সেগুলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতায় ভরপুর। তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল
হাদীছের অনুসরণ করা। তাতে তোমরা এমন কিছু পাবে, যা তোমাদের জন্য যথেষ্ট (যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ১/৪৩১)।
আবুবকর তুরতুশী বলেন, ‘ছূফী মাযহাব বাতিল এবং মূর্খতা ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ। কেবল
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীছের মধ্যে ইসলাম রয়েছে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা ত্বোয়াহা ৯০ আয়াত, ১১/২৩৮)। ইমাম কুরতুবী
বলেন, ছূফী তরীকা সত্য থেকে অনেক দূরে, মানুষের জন্য অনুপযোগী ও সুন্নাতের সাথে
সাংঘর্ষিক (তাফসীরে কুরতুবী
১১/২৩৮)।
এছাড়া
ইবনু তায়মিয়াহহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু কুদামাহ, যাহাবী, ইবনুল জাওযী (রহঃ) সহ বহু
বিদ্বান উক্ত মতবাদের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র গ্রন্থ সমূহ রচনা করেছেন (বিস্তারিত দ্র. দ্রঃ দরসে কুরআন,
মা‘রেফতে দ্বীন, আত-তাহরীক, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯; আব্দুর
রহমান আল-ওয়াকীল, হাযিহী হিয়াছ ছূফিয়াহ, ১-১৮৮ পৃ.; ড. সাঈদ আব্দুল আযীম জামীল
গাযী, আছ-ছূফিয়াহ)।
সুতরাং
ছূফীদের মধ্যে যারা বিশেষত হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী
আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে, যা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত সেসব ইমামের পিছনে
জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।
প্রশ্ন
(২/৪০২) : শিশুদের প্রতি কি পিতা-মাতারও বদ নযর লাগে? কেউ কেউ পিতা-মাতাকেও
অভিযুক্ত করে থাকে। এভাবে কারু নযর লাগলে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি?
-নাজমুল হুদা, সিএ্যান্ডবি ঘাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সাধারণতঃ
পিতা-মাতার বদ নযর লাগে না। কেননা বদ নযর মানুষের খারাপ ইচ্ছা থেকে হয়ে থাকে। আর
পিতা-মাতা কখনো সন্তানের অকল্যাণ বা খারাপ কিছু চান না। সুতরাং পিতা-মাতাকে
অভিযুক্ত করা অন্যায় হবে। তবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সৎ মানুষের ক্ষেত্রে অনেক সময়
কাউকে অধিক ভালোলাগার দরুন তার সম্পর্কে কোন ভাল মন্তব্যের কারণেও বদ নযর লাগতে
পারে। যেমন সাহল ইবনু হুনায়েফ (রাঃ)-এর পুত্র আবু উমামাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি
বলেন, একদিন ‘আমের ইবনু রবী‘আহ (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়েফ (রাঃ)-কে গোসল করতে দেখলেন
এবং (তার মসৃণ দেহ দেখে) বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! আজকের মতো আমি কোনদিন দেখিনি এবং
পর্দার আড়ালে রক্ষিত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও (সাহল-এর চামড়ার মতো) এরূপ সুন্দর
দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর (তার মুখ হ’তে এ শব্দগুলো বের হওয়ার সাথে সাথে)
সাহল বেহুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। (এ অবস্থায়) তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নিকট আনা হ’ল। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি সাহল ইবনু হুনায়েফ-এর জন্য কোন
ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি কাউকে তার সম্পর্কে অভিযুক্ত করো? লোকেরা বলল, আমরা ‘আমের
ইবনু রাবী‘আহ-এর ওপর সন্দেহ করি। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
‘আমেরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় তাকে তিরষ্কার করে বললেন, তোমাদের কেউ তার
আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করলে না কেন? তুমি (তোমার
শরীরের কিছু অঙ্গ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ‘আমের নিজের মুখমন্ডল, উভয় হাত কনুই
পর্যন্ত, উভয় পা হাঁটু হ’তে পাতা এবং ইযারের ভিতরের অঙ্গ ধুয়ে পানিগুলো একটি
পাত্রে নিলেন। অতঃপর সে পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হ’ল। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে
লোকজনের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্টই ছিল না (ইবনু মাজাহ হা/)৩৫০৯; মিশকাত হা/৪৫৬২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০২০)।
কখনো জিনেরও বদ নযর লাগতে
পারে। যেমন উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) তাঁর ঘরে একটি মেয়েকে দেখলেন
যে, তার চেহারা মলিন (জিনের নযর লেগেছে)। তখন তিনি বললেন, তাকে ঝাড়-ফুঁক করাও,
কেননা তার উপর নযর লেগেছে (বুখারী হা/৫৭৩৯; মিশকাত হা/৪৫২৮)।
এক্ষণে কোন মানুষকে বা শিশুকে ভালো লাগলে বলবে ‘বারাকাল্লাহু লাকা’ অথবা ‘আলায়কা’
তাহ’লে বদ নযর লাগবে না। আর যদি কাউকে বদ নযর লেগে যায়, তাহ’লে বলবে, (বিসমিল্লাহি আরক্বীকা, মিন কুল্লে শাইয়িন ইউযীকা) ‘আল্লাহর
নামে আমি তোমাকে ফুঁক দিচ্ছি ঐ সকল বস্ত্ত থেকে, যা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে’ (মুসলিম হা/২১৮৬; মিশকাত হা/১৫৩৪)। অথবা সূরা ফালাক্ব ও নাস
পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে রোগী নিজে অথবা তার হাত ধরে অন্য কেউ যতদূর সম্ভব সারা দেহে
বুলাবে (বুখারী হা/৪৪৩৯; মুসলিম হা/২১৯২; মিশকাত
হা/১৫৩২)।
প্রশ্ন
(৩/৪০৩) : কুরআন খতমের বিশেষ কোন দো‘আ পাঠ বা দলবদ্ধ মুনাজাতের নিয়ম আছে কি?
কুরআনের মুছহাফে যে সকল দো‘আ লেখা থাকে, সেগুলোর কোন ভিত্তি আছে কি?
-বদীউয্যামান, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : রাসূল
(ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কুরআন খতম শেষে বিশেষ কোন দো‘আ পাঠ করা বা
দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করার বিশুদ্ধ দলীল পাওয়া যায় না। কেবল আনাস (রাঃ) থেকে একটি
আছার পাওয়া যায় যে, তিনি যখন কুরআন খতম করতেন, তখন তাঁর সন্তানাদি এবং পরিবারের
লোকজনকে একত্রিত করতেন এবং তাদের জন্য দো‘আ করতেন (দারেমী হা/৩৪৭৪, ৩৪৮২; সিলসিলাতুল আছারিছ ছহীহাহ হা/১৪২)।
অতএব এসময় একাকী যে কোন দো‘আ পাঠ করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশে
কুরআনের মুছহাফে যে সকল দো‘আ লিপিবদ্ধ থাকে, সেগুলো মাসনূন দো‘আ নয়; বরং
পূর্বযুগের কোন আলেমের তৈরীকৃত।
প্রশ্ন
(৪/৪০৪) : আমাদের এলাকায় অনেকে ভাগা কুরবানী দেয়। অনেকে একটা ছাগল ও একটা ভাগা
দেয়। এ বিষয়ে শরী‘আতের বিধান কি?
-আরিফুল ইসলাম, লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ।
উত্তর : কুরবানী
হ’ল ইব্রাহীমী সুন্নাত। যেখানে একটি পশুই নির্ধারিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে
কেরাম মুক্বীম অবস্থায় সর্বদা পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশু কুরবানী করেছেন। তবে
কেবল সফর অবস্থায় কুরবানীতে শরীক হওয়া যাবে। যেমন (ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)
বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় ঈদুল আযহা
উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাত জনে একটি গরু ও দশ জনে একটি উটে শরীক হ’লাম’ (তিরমিযী হা/৯০৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৬৯)। সম্ভবতঃ তাঁরা ঐ
সময় কোন শহরে অবস্থান করছিলেন (মিরক্বাত)। (খ) হযরত জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে (৬ষ্ঠ হিজরীতে) হোদায়বিয়ার সফরে উট ও গরুতে সাত
জন করে শরীক হয়েছিলাম (মুসলিম হা/১৩১৮ (৩৫০)।
(গ) তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে (১০ম হিজরীতে) হজ্জের সফরে
ছিলাম। তখন তিনি আমাদেরকে একটি গরু ও উটে সাতজন করে শরীক হওয়ার নির্দেশ দেন’ (মুসলিম হা/১৩১৮ (৩৫১)।
সফরে সাত বা দশজন মিলে একটি
পরিবারের ন্যায়। যাতে গরু বা উটের ন্যায় বড় পশু যবহ ও কুটাবাছা এবং গোশত বণ্টন সহজ
হয়। কুরবানী হ’ল একটি ইবাদত। যা রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী সম্পন্ন করা
অপরিহার্য। যেটা তিনি করেননি সেটা করার মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাছিল
হবে?
প্রশ্ন
(৫/৪০৫) : আমার মা তার পিতার সম্পত্তি হ’তে বেশ কিছু জমি পেয়েছিলেন। কিন্তু আমার
পিতা তা বিক্রয় করে ভোগ করে ফেলেছেন। কথা দিয়েছিলেন মাকে তার সম্পত্তি হ’তে কিছু
লিখে দিবেন। কিন্তু পরে দেননি। বরং আমার মায়ের সম্মতিতে তার প্রাপ্য পুরো সম্পত্তি
তিন মেয়ের নামে লিখে দেন। আমার চাচাতো ভাইয়েরা জীবিত আছেন। এক্ষণে আমার পিতার
কর্মের বৈধতা জানতে চাই।
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মেহেরপুর।
উত্তর : সম্পত্তি
বণ্টন ইসলামী বিধান মোতাবেক হতে হবে। যেহেতু ইসলামে মীরাছ বণ্টনের বিধান মৃত্যুর
পর, অতএব প্রশ্নোল্লেখিত ক্ষেত্রে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রাপ্য স্থাবর সম্পত্তি
তার মেয়েদের নামে লিখে দেয়া বৈধ হয়নি; যদিও তা স্ত্রীর সম্মতিতে হয়েছে। এক্ষণে
স্বামীর কর্তব্য হ’ল, প্রথমে তার স্ত্রীর ঋণ পরিশোধ করা। অতঃপর স্ত্রীর মৃত্যুর পর
নিয়ম মাফিক তার কন্যাগণ ও অন্য অংশীদারগণ তাদের স্ব স্ব প্রাপ্য বুঝে নিবেন (ফাতাওয়া ইবনু হাজার হায়তামী ৫/৪৪)। উল্লেখ্য যে, পিতা তার
কন্যাদের সমানহারে প্রয়োজন মাফিক কিছু দান করতে পারেন। যেমন তিন বোনকে তিনটি বাড়ি
করে দেওয়া ইত্যাদি। তবে অন্য শরীকদের ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে তা করা যাবে না (বুখারী হা/২৫৮৬; মুসলিম হা/১৬২৩; মিশকাত হা/৩০১৯)।
প্রশ্ন
(৬/৪০৬) : অনেকে তার কৃতকর্মের ভুল বুঝতে পেরে তাবলীগে গিয়ে বা হজ্জ করে ভালো হয়ে
গেছে। এক্ষণে তার পূর্বের পাপের হিসাব কি দিতে হবে, নাকি আল্লাহ মাফ করে দিবেন?
ঘুষের টাকা দান করলে কোন ছওয়াব পাবে কি?
-সেলিম হাসান চৌধুরী, খলিশাকুন্ডি, দৌলতপুর,
কুষ্টিয়া।
উত্তর : পূর্বের
পাপ যদি আল্লাহর হক বিষয়ে হয়, যেমন ছালাত-ছিয়াম ইত্যাদি আদায় না করা, তাহলে
আল্লাহর নিকট খালেছ তওবা করলে আল্লাহ মাফ করবেন। শর্ত হল অনুতপ্ত হওয়া, ঐকাজ
পরিত্যাগ করা এবং পুনরায় ঐ কাজ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকা। আর যদি সেটি
বান্দার হক সম্পর্কিত হয়, তাহলে উপরে তিনটির সাথে চতুর্থ শর্তটি হ’ল বান্দার হক
বুঝে দেওয়া। তবেই তওবা কবুল হবে; নইলে নয় (নববী, রিয়াযুছ ছালিহীন, ১/১৪ পৃ.;
উছায়মীন, মাজমু‘উল ফাতাওয়া ২/১৫৩-১৫৪ পৃ.)। আর বান্দার হক
ফিরিয়ে দেওয়ার পর অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ নেকীর আশা ছাড়াই ছাদাক্বা করে দিতে
হবে। যদিও এই ছাদাক্বায় পরকালে তার কোন উপকার হবে না (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৮)।
প্রশ্ন
(৭/৪০৭) : আমার কাছে কয়েক মন ধান ও চাউল রয়েছে। এক্ষণে আমি উক্ত ধান বা চাউল
দ্বারা সম্পদের যাকাত দিতে চাই। এটি কি জায়েয হবে, নাকি টাকা দিয়েই আদায় করতে হবে?
-সাইফুল ইসলাম, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : মালের
যাকাত অর্থমূল্য দিয়েই প্রদান করতে হবে। খাদ্যবস্ত্ত বা অনুরূপ কিছু দিয়ে জায়েয
নয় (উছায়মীন, মাজমু‘ ফাতাওয়া ১৮/৩০৩ পৃ.)। অতএব
উক্ত ধান বা চাউল দিয়ে যাকাত প্রদান করা যাবে না। বরং তা থেকে বিক্রয়লব্ধ অর্থ
দিয়ে যাকাত দিতে হবে। তবে বিশেষ কারণ দেখা দিলে যেমন কোন ব্যক্তি পাগল বা
কমবুদ্ধিসম্পন্ন হ’লে তাকে প্রয়োজনবোধে অর্থের পরিবর্তে পোষাক বা অনুরূপ বস্ত্ত
যাকাত হিসাবে দেয়া যেতে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমু‘উল ফাতাওয়া
২৫/৮২ পৃ.)।
প্রশ্ন
(৮/৪০৮) : কয়েক বছরের জন্য জমি লীজ নিয়ে ফলদ বৃক্ষ রোপন করে লাভবান হওয়া যাবে কি?
-নাজীদুল্লাহ, কলাবাগান, নজিপুর, নওগাঁ।
উত্তর : জমি
ভাড়া নিয়ে যেকোন ফল বা ফসল আবাদ করা যায়। কারণ জমি ভাড়া নেওয়া হয় চাষ করার জন্য।
সুতরাং লীজগ্রহীতা যেকোন ফসল বা ফলদ বৃক্ষ রোপন করে উপকৃত হ’তে পারে। ইবনু
তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু আক্বীল, উছায়মীনসহ একদল বিদ্বান কয়েক বছরের জন্য
ফলের বাগান ক্রয়-বিক্রয়কে শরী‘আত সম্মত বলেছেন (মাজমূ‘ঊল
ফাতাওয়া ৩০/১৫১-৫২; ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ৫/১৯৯-২০১, ৩/২১১-২১৫; যাদুল মা‘আদ
৬/২০৩-২০৮; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৮৪-৮৫ পৃ.)।
প্রশ্ন
(৯/৪০৯) : কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করে কুরবানী করা যাবে কি?
-আহমাদুল্লাহ, চারঘাট, রাজশাহী।
উত্তর : কুরবানী
ও আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত। কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত
নয়। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমল ছিল না। তাছাড়া দু’টি ইবাদত
পৃথক উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হয়েছে (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার
৬/২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫; হায়তামী, তুহ্ফাতুল মুহ্তাজ
৯/৩৭১)।
প্রশ্ন
(১০/৪১০) : ঈদুল আযহার দিন ফকীর-মিসকীনরা যে গোশত পায়, সেগুলো তারা বিক্রি করে।
উক্ত গোশত ক্রয় করা যাবে কি?
-নূরুল ইসলাম, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : কুরবানীর
গোশত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে তাঁর
কুরবানীর উটগুলোর নিকট দাঁড়াতে এবং এগুলোর গোশত, চামড়া, ভূঁড়ি ইত্যাদি ছাদাক্বা
করে দিতে আদেশ করলেন। তিনি গোশত দ্বারা কসাইয়ের মজুরী দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেন,
আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরী পরিশোধ করে দেব’ (বুখারী হা/১৭১৭; মুসলিম হা/১৩১৭; মিশকাত হা/২৬৩৮)। অত্র
হাদীছের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিছগণ বলেন, কুরবানীর চামড়া, গোশত এবং কুরবানীর প্রাণীর
কোন অংশ বিক্রয় করা যাবে না (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৭২-৭৩)।
এর অর্থ এটা নয় যে, কুরবানীর কিছুই নিজে খাওয়া যাবে না। বরং নিজেরা খাবে, দান করবে
ও সংরক্ষণ করবে। তবে এ দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। যদিও তা ফকীর-মিসকীনের মালিকানায়
চলে যায়।
প্রশ্ন
(১১/৪১১) : ওযনে কুরবানী কেনা যাবে কি?
-তাওয়াবুল হক, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর : ওযনে
কুরবানীর পশু ক্রয়ে বাধা নেই। তবে ওযন বৃদ্ধির জন্য কোন প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে
না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৩৯;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/২৯০)।
প্রশ্ন (১২/৪১২) : সমাজে একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, মহিলাদের মধ্যে
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে একজন কাঠুরিয়ার স্ত্রী। এর কোন সত্যতা আছে কি? যদি
সত্য হয়, তবে কোন কারণে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে?
-আব্দুর রহীম, ষষ্ঠীতলা, যশোর।
উত্তর : এই কাহিনীর কোন ভিত্তি
নেই। কুরআন, হাদীছ এমনকি কোন ইতিহাস গ্রন্থেও এমন ঘটনা পাওয়া যায় না। হাদীছে এসেছে
যে, পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ
(ছাঃ) (মুসলিম হা/১৯৭; আহমাদ
হা/১২৪৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/১৪৫০, ১৪৫৯, ৭১১৮)। আর চারজন নারীকে জান্নাতী
নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। তারা হ’লেন, খাদীজা, ফাতিমা, মারিয়াম এবং
আসিয়া (আহমাদ হা/২৬৬৮; ছহীহ ইবনু
হিববান হা/৭০১০)। এছাড়া আনাস (রাঃ)-এর মাতা উম্মু সুলাইম বিনতে মিলহান
(রাঃ)-এর জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) সুসংবাদ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করতেই দেখলাম আবু তালহার স্ত্রী রুমাইছা তথা উম্মু
সুলাইমকে (বুখারী হা/৩৬৭৯; মুসলিম
হা/২৪৫৭)। তিনি এমন একজন মহিলা ছিলেন, যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়া হ’লে
তিনি হবু স্বামী আবূ তালহাকে শর্ত দেন যে, তাকে ইসলাম কবুল করতে হবে এবং সেটাই হবে
তাঁর জন্য মোহরানা। এভাবে আবূ তালহার ইসলাম গ্রহণই ছিল তাঁর জন্য
মোহরানাস্বরূপ (নাসাঈ, সুনানুল
কুবরা হা/৫৪৭৮)। তিনি ওহোদ ও হুনায়েনের যুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ
করেন। অসম সাহসী ও ধৈর্যশীলা নারী হিসাবে তিনি ইতিহাসে সুপ্রসিদ্ধ (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২/৩০৪)।
তবে এ সকল নারীদের মধ্যে প্রথম কে জান্নাতে যাবে সে ব্যাপারে ছহীহ কোন হাদীছ
বর্ণিত হয়নি।
প্রশ্ন (১৩/৪১৩) : ছেলের পরিবারের উপস্থিতিতে একটি বিয়ে সম্পন্ন
হয়। তবে মেয়ের পিতা, ভাইসহ পরিবারের কেউ এতে রাযী ছিল না। কিন্তু মেয়ের চাচা অলী
হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে বিবাহ দেয়। এক্ষণে এ বিয়ে কি বৈধ হয়েছে? পিতার বর্তমানে অন্য
কেউ অলী হ’তে পারে কি?
-আফযাল হোসাইন, বাগডোব, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত বিবাহ শুদ্ধ
হয়নি। কারণ পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ অলী হ’তে পারে না। আর অলী ছাড়া বিবাহ বাতিল
হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মহিলা যদি অলীর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করে তাহ’লে তার ঐ
বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আহমাদ,
তিরমিযী, আবুদাউদ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১৩১ ও ৩১৩০)। তিনি আরো বলেন, ‘অলী’
ও দু’জন ন্যায়পরাপয়ণ সাক্ষী ব্যতীত বিবাহ হয় না। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
ন্যায়নিষ্ঠ দু’জন সাক্ষী এবং বিবেকবান একজন ‘অলী’ ব্যতীত বিবাহ হয় না (ইরওয়াউল গালীল হা/১৮৪৪ হাদীছ ‘মওকূফ’ ছহীহ)।
অলী হচ্ছেন পিতা, দাদা, পুত্র, ভ্রাতা, চাচা এবং এভাবে পুরুষ নিকটাত্মীয়গণ। অতঃপর
দেশের প্রশাসন (আবূদাঊদ প্রভৃতি,
মিশকাত হা/৩১৩১, হাদীছ ছহীহ; ফাতাওয়া হাইয়াতুল কিবারিল ওলামা ২/৬২৭ পৃ.)।
এক্ষণে পিতা রাযী থাকলে তার উপস্থিতিতে উক্ত বিবাহ নবায়ন করতে হবে।
প্রশ্ন (১৪/৪১৪) : এক মেয়ে পরিবারের অমতে বিবাহ করার প্রস্ত্ততি
নেয়। বিবাহের পূর্বমুহূর্তে পিতা উপায়ান্তর না দেখে তাকে মোবাইলে বিবাহ করার
অনুমতি প্রদান করে। এক্ষণে উক্ত বিবাহ কি অলীর অনুমতি সাপেক্ষে হয়েছে বলে ধরে নেয়া
যাবে, না কি নতুনভাবে বিয়ে পড়াতে হবে?
-আব্দুল খালেক, সোনাবাড়িয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : উক্ত বিবাহ অলীর অনুমতি
সাপেক্ষেই হয়েছে। কারণ পিতা অসন্তুষ্ট থাকলেও অনুমতি দিয়েছেন। যেকোন মাধ্যমে
অনুমতি দিলে তা রাযী থাকারই লক্ষণ।
প্রশ্ন (১৫/৪১৫) : ঈদায়েনের ১২ তাকবীর তাকবীরে তাহরীমা সহ না
ব্যতীত? এ বিষয়ে বিধান কি?
-আবুল হাশেম, বড়পেটা, আসাম।
উত্তর : ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
‘অন্যান্য ছালাতের ন্যায় তাকবীরে তাহরীমার পরে দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ (‘ছানা’) পাঠের পর
তাকবীরে তাহরীমা ও তাকবীরে রুকূ ব্যতিরেকে সাত তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে
ক্বওমার তাকবীর বাদে পাঁচ তাকবীর দিবে’ (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ‘ছালাতুল ঈদের বিবরণ’ অধ্যায় ২/৭১ পৃ.)।
ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘এটাই সর্বাধিক স্পষ্ট বরং নির্দিষ্ট যে, ওটা তাকবীরে তাহরীমা
ব্যতীত’ (মির‘আত ৫/৪৬ পৃ.)।
কেননা তাকবীরে তাহরীমা হ’ল ফরয। যা সকল ছালাতেই দিতে হয়। আর এগুলি হ’ল অতিরিক্ত বা
নফল তাকবীর। যা কেবল ঈদের ছালাতে দিতে হয়।
প্রশ্ন (১৬/৪১৬) : চুলে কালো রং করা কি হারাম? একটি গ্রন্থে লেখা
হয়েছে হাসান-হোসাইন (রাঃ) সহ বেশ কয়েকজন ছাহাবী কালো খেযাব লাগাতেন। এক্ষণে
বর্তমানে আমার বয়স মাত্র ২৫ বছর। কিন্তু হরমন বা শারীরিক কোন কারণে চুল প্রায় সবই
সাদা হয়ে গেছে। এমতবস্থায় আমার জন্য চুলে কালো রং করা বা কলপ লাগানো জায়েয হবে কি?
-আব্দুল্লাহ আল-নোমান, কুড়িগ্রাম।
উত্তর : বর্তমানে উষ্ণ আবহাওয়ার
কারণে অপ্রাপ্ত বয়সেও চুল পেকে যাচ্ছে। এর জন্য চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু
কালো রং দ্বারা কলপ করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘শেষ
যামানায় একদল লোকের আবির্ভাব হবে যারা কবুতরের বক্ষের ন্যায় কাল খেযাব ব্যবহার
করবে। তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৪৫২, ‘চুল আঁচড়ানো অনুচ্ছেদ)।
ইবনু মাজাহ্তে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা এবং শত্রুর হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করার জন্য কালো
খেযাব ব্যবহার করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘মুনকার’ ও ‘যঈফ’ (যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৭২৯; সিলসিলা যঈফা
হা/২৯৭২)। এছাড়া ওমর, আলী, হাসান, হুসাইন, সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ, ওছমান,
মুগীরা বিন শু‘বা প্রমুখ কালো কলপ ব্যবহার করতেন মর্মে যেসকল বর্ণনা এসেছে তার
সবগুলো যঈফ ও মুনকার (হাফেয ইবনুল
ক্বাইয়িম, তাহযীবুস সুনান ২/২৮৪)। প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা বলেন, ‘আমি
রাসূল (ছাঃ)-এর কোন ছাহাবীকে কালো কলপ লাগাতে দেখিনি। বরং তারা হলুদ মেহদী দ্বারা
খেযাব লাগাতেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী
শায়বাহ হা/২৫৫২৪)।
প্রশ্ন (১৭/৪১৭) : আশূরার দিনের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাই।
-আব্দুল আহাদ, মধ্য নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : আশূরা তথা মুহাররম
মাসের দশম দিন আল্লাহর উদ্দেশ্যে যেকোন সৎকর্ম করা যায়। ছিয়াম পালন করা, তাকবীর,
তাহলীল, তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করা ইত্যাদি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘রামাযানের ছিয়ামের
পর মুহাররমের ছিয়ামই হ’ল শ্রেষ্ঠ ছিয়াম’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯)। অন্য হাদীছে আছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘আল্লাহর নিকটে আমার আশা যে, আশূরার ছিয়াম পালন করলে পূর্ববর্তী এক বছরের গোনাহ
মাফ করে দিবেন’ (মুসলিম, মিশকাত
হা/২০৪৪)।
প্রশ্ন (১৮/৪১৮) : খোলা তালাক গ্রহণকারীর জন্য কোন রাজ‘আতের
ব্যবস্থা আছে কি?
-মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, ভুগরইল, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : খোলা‘ তথা বিবাহ
বিচ্ছেদ যা নারীর পক্ষ থেকে হয় স্বামী থেকে মোহর বা মোহরের অংশবিশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার
মাধ্যমে, এটি তালাক নয়। সেজন্য এখানে রাজ‘আতের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে এক তুহুর
ইদ্দত পালন শেষে উভয়ে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/১৫৩;
আল-ইস্তিযকার ৬/৮২; বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৮২; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
১২/৪৫০-৪৭০)।
প্রশ্ন (১৯/৪১৯) : আমার পিতা কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন। আমার দাদা
আমার পিতার আক্বীক্বা দেননি। তিনি নিজেও নিজের আক্বীক্বা করেননি। এক্ষণে আমরা তার
আক্বীক্বা দিতে পারব কি?
-আশরাফুল ইসলাম, লালমাটিয়া, ঢাকা।
উত্তর : আক্বীক্বা
সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। সন্তানদের জন্য মৃত পিতা-মাতার পক্ষে আক্বীক্বা করার কোন
দলীল নেই। সুতরাং এভাবে আক্বীকা করার আবশ্যকতা নেই।
প্রশ্ন (২০/৪২০) : মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?
-আতীকুল ইসলাম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : মৃত ব্যক্তির
নামে পৃথকভাবে কুরবানী দেওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
অছিয়ত হিসাবে তাঁর জন্য পৃথক একটি দুম্বা কুরবানী দিয়েছেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে তা অত্যন্ত যঈফ (আহমাদ
হা/১২৭৮; আবূদাঊদ হা/২৭৯; মিশকাত হা/১৪৬২)। মূলত কুরবানীর বিধান কেবল
জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ যদি কুরবানীর পূর্ব মুহূর্তে মারা যায় তাহ’লে তার উপর
থেকে বিধান রহিত হয়ে যাবে। অতএব মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা সুন্নাত নয় (উছায়মীন, আহকামুল উযহিয়াহ ১/৩-৪)।
প্রশ্ন (২১/৪২১) : আমি আমার প্রথম স্বামীর সাথে ২০ বছর সংসার করার
পর আমাদের সংসার ভেঙ্গে যায়। সেখানে আমার একটি সন্তানও আছে। পরবর্তীতে যার সাথে
আমার বিবাহ হয়, সে ১ বছরের মাথায় আমাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর প্রায় ৮-১০
বছর পার হয়েছে। এক্ষণে আমি প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে আমার করণীয় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, পাহাড়পুর, নওগাঁ।
উত্তর : নিখোঁজ স্বামীর জন্য
স্ত্রী চার বৎসর অপেক্ষা করার পর অন্যত্র বিবাহ করতে পারে। ওমর (রাঃ) এরূপ ফায়ছালা
দিয়েছিলেন (বায়হাক্বী হা/১৫৩৪৫;
মুহাল্লা ৯/৩১৬ পৃ.)। প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী হারিয়ে যাওয়ার পর ৮-১০ বছর
অতিক্রান্ত হয়েছে। অতএব উক্ত স্ত্রী আদালতের অনুমতিক্রমে নতুন মোহরের বিনিময়ে
বিবাহ সম্পন্ন করে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যেতে পারে। এছাড়া যদি দ্বিতীয় স্বামীর
মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়, তাহ’লে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন শেষে প্রথম স্বামীর
নিকট বিবাহের মাধ্যমে ফিরে যাবে (আল-মাওসূ‘আতুল
ফিক্বহিইয়াহ ২/১০৫)।
অথবা
আদালতের মাধ্যমে মোহরানা ফেরৎ দানের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বামীকে ‘খোলা’ প্রদান করে
এক হায়েয ইদ্দত পালন শেষে নতুন মোহরের বিনিময়ে বিবাহ সম্পন্ন করে প্রথম স্বামীর
নিকট ফিরে যেতে পারে।
প্রশ্ন (২২/৪২২) : সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়ম হ’ল চাকুরীরত
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো যাবে না। এক্ষণে প্রতিষ্ঠান
কর্তৃপক্ষের অগোচরে প্রাইভেট পড়িয়ে আয় করলে উক্ত আয় কি হালাল হবে?
-মোবারক হোসাইন
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : সরকারের কোন সিদ্ধান্ত
যদি শরী‘আত বিরোধী না হয় এবং নাগরিকদের প্রতি যুলুম না হয়, তবে তা মেনে চলা
প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য (নিসা
৪/৫৯)। অতএব সরকারের উক্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও
চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না’ (আবূদাউদ হা/৩৫৯৪; তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত
হা/২৯২৩)।
তবে
সরকারী সিদ্ধান্ত যদি জনকল্যাণকর না হয় তাহ’লে প্রকাশ্যে আনুগত্য পোষণ করে গোপনে
তার বিপরীত করতে পারে। হাফেয ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, রাষ্ট্র যে নির্দেশ দেয়
তাতে যদি ব্যাপক কল্যাণ না থাকে তাহ’লে তা পালন করা ওয়াজিব নয়। তবে সরকারী ফিৎনা
থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রকাশ্যে পালন করবে মাত্র (তোহ্ফাতুল মুহতাজ ৩/৭১)।
প্রশ্ন (২৩/৪২৩) : বিতর ছালাতের পরে আর কোন ছালাত আছে কি?
-ইকরামুল হোসাইন, জলঢাকা, নীলফামারী।
উত্তর : বিতর ছালাতকে রাতের শেষ
ছালাত হিসাবে আদায় করা উত্তম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা রাতের শেষ ছালাত হিসাবে
বিতর আদায় কর’ (বুখারী হা/৯৯৮;
মুসলিম হা/৭৫১; মিশকাত হা/১২৫৮)। তবে বিতর ছালাত আদায়ের পরেও নফল ছালাত
আদায় করা যায়। সেক্ষেত্রে তার প্রথম বিতরটিই যথেষ্ট হবে। কারণ এক রাতে দু’বার বিতর
আদায়ের বিধান নেই (তিরমিযী হা/৪৭০;
ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৬৭)। ক্বায়েস ইবনু ত্বালক্ব (রহঃ) বলেন, একদা রামাযান
মাসে ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) আমাদের সাথে দেখা করতে এসে সন্ধ্যা অতিবাহিত করেন
এবং ইফতার করেন। অতঃপর রাতে আমাদেরকে নিয়ে তারাবীহ ও বিতর ছালাত আদায় করেন। অতঃপর
তিনি নিজেদের মসজিদে গিয়ে তার সাথীদেরকে নিয়ে পুনরায় ছালাত আদায় করেন। অতঃপর বিতর
ছালাতের জন্য এক ব্যক্তিকে সম্মুখে এগিয়ে দিয়ে বলেন, তোমার সাথীদেরকে বিতর পড়াও।
কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, এক রাতে দু’বার বিতর হয় না’ (আবূদাউদ হা/১৪৩৯; ইবনু হিববান হা/২৪৪৯)।
অতএব বিতরের পর কেউ ছালাত আদায় করতে চাইলে করতে পারে (ছহীহাহ হা/১৯৯৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
এছাড়া
কোন কারণে ঘুম না ভাঙ্গার আশংকা থাকলে রাতের প্রথম ভাগে বিতর ছালাতের পর দু’রাক‘আত
নফল ছালাত আদায় করলে সেটাই তার রাত্রির নফল ছালাতের স্থলাভিষিক্ত হবে (দারেমী, মিশকাত হা/১২৮৬; ছহীহাহ হা/১৯৯৩)।
প্রশ্ন (২৪/৪২৪) : যারা বান্দার হক নষ্ট করে তাদের পরিণতি কি হবে?
তাদের ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত কবুল হবে কি?
-আব্দুল মালেক, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : বান্দার হক
বিনষ্টকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক অসহায় ও নিঃস্ব হিসাবে গণ্য হবে। তাদের
ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হবে। তবে তার ইবাদতগুলোর ছওয়াব
যেসব মানুষের অধিকার নষ্ট করেছে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর যুলুম করেছে সে যেন তা থেকে আজই মাফ চেয়ে নেয়, তার
ভাইয়ের জন্য তার কাছ থেকে নেকী কর্তন করে নেওয়ার পূর্বে। কেননা সেখানে (হাশরের
ময়দানে) কোন দীনার বা দেরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি নেকী না থাকে তবে তার
(মযলূম) ভাইয়ের গোনাহ এনে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে (বুখারী হা/৬৫৩৪)। তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই
ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে ছালাত-ছিয়াম, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সাথে ঐসব
লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারু উপরে অপবাদ দিয়েছে, কারু মাল
গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব পাওনাদারকে ঐ
ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে
যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১;
মিশকাত হা/৫১২৭)।
জাবের
(রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কোন জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জাহান্নামবাসীর দাবী অবশিষ্ট থাকবে। আর কোন
জাহান্নামবাসীও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জান্নাতবাসীর দাবী
অবশিষ্ট থাকবে। আমি বললাম, সে দাবী কিভাবে মিটমাট করবে, যেখানে আমরা সকলে উত্থিত
হব আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? তিনি বলেন, নেকী ও গোনাহ দ্বারা’ (আহমাদ হা/১৬০৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭০;
ছহীহুত তারগীব হা/৩৬০৮)।
প্রশ্ন (২৫/৪২৫) : আমি বিদেশে গবেষণারত। এখানে পশু কুরবানীর সুযোগ
নেই। এক্ষেত্রে আমি কি নিজ দেশে কিংবা কোন গরীব মুসলিম দেশে কুরবানীর টাকা পাঠিয়ে
নিজের কুরবানীর হক আদায় করতে পারি?
-আব্দুল হাসীব, ওয়াটারলু, বেলজিয়াম।
উত্তর : সুন্নাত হ’ল যেখানে
অবস্থান করবে সেখানে কুরবানী করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তখন তোমরা তা থেকে আহার কর
এবং আহার করাও যারা চায় না তাদেরকে ও যারা চায় তাদেরকে’ (হজ্জ ২২/৩৬)। অত্র আয়াতে নিজে ভক্ষণ
করা ও অপরকে দান করার নির্দেশনা এসেছে। তবে অবস্থানরত দেশে কুরবানী করার কোন উপায়
না থাকলে নিজ দেশে আত্মীয়-স্বজনের নিকট টাকা পাঠিয়েও কুরবানীর হক আদায় করা
যাবে (উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ২২/২২৪, ২৫/৭৬-৭৭)।
প্রশ্ন (২৬/৪২৬) : আমি একটি গরু কুরবানীর জন্য রেখেছি। সেটি ২ বছর
অতিক্রম করেছে এবং যথেষ্ট হৃষ্টপুষ্টও হয়েছে। কিন্তু এখনো দাঁত ওঠেনি। গরুটি কি
কুরবানী করা যাবে?
-আলহাজ্জ আব্দুর রহমান, রাজপুর, সাতক্ষীরা।
উত্তর : কুরবানীর জন্য গরুর বয়স
হ’ল দু’বছর পূর্ণ হওয়া। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে
নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবেহ কর না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর
পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৫)। জমহূর বিদ্বানগণ অন্যান্য হাদীছের আলোকে
এই হাদীছের নির্দেশিত ‘মুসিন্নাহ’ পশুকে কুরবানীর জন্য উত্তম হিসাবে গণ্য
করেছেন (মির‘আত ২/৩৫৩ পৃঃ)।
‘মুসিন্নাহ’
পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা
ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয় (মির‘আত,
২/৩৫২ পৃঃ, আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৫৪/৫১ পৃঃ)। কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ
এই সব পশুর দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও
হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা কোন
দোষের হবে না ইনশাআল্লাহ (মাসায়েলে
কুরবানী ১৪-১৫ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২৭/৪২৭) : খাসীকৃত প্রাণী কি ত্রুটিপূর্ণ নয়? এ ধরনের
প্রাণী দ্বারা কুরবানী কিভাবে জায়েয হবে? আমরা দেখেছি পাকিস্তান বা ভারতের অনেক
এলাকায় খাসী কুরবানী না করার প্রচলন রয়েছে।
-আব্দুল হাফীয, আটরশি, ফরিদপুর।
উত্তর : খাসীকৃত প্রাণী
ত্রুটিপূর্ণ নয়। কারণ এটি ছাগলের কোন রোগ নয়। বরং খাসীর গোশত তুলনামূলক
পবিত্র, দুর্গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে সর্বদা দু’টি করে
‘খাসী’ (خَصِيَّيْنِ- مَوْجُوْئَيْنِ) কুরবানী দিতেন (হাকেম
হা/৭৫৪৭; আহমাদ হা/২৩৯১১; ইরওয়া হা/১১৪৭, সনদ ছহীহ)। ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার
ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু
বলে অপসন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও
সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু
হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী ১০/১২)। ইবনু কুদামা
বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি খাসী দিয়েই
কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)।
প্রশ্ন (২৮/৪২৮) : গরু কুরবানীর সাথে বিবাহের ওয়ালীমা বা
আক্বীক্বার নিয়ত করা যাবে কি?
-ইকবাল হোসাইন, সুরীটোলা, ঢাকা।
উত্তর : কুরবানীতে
আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ দু’টি পৃথক ইবাদত। রাসূল (ছাঃ) বা
ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না (আলোচনা দ্রঃ নায়লুল আওত্বার ৬/২৬৮,
‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আত ২/৩৫১ ও ৫/৭৫)।
তবে
কুরবানীর গোশত দ্বারা বিবাহের ওয়ালীমা খাওয়ানো যাবে। কুরবানীর গোশত ঈদের পরে জমা
রেখে খাওয়া জায়েয (ইবনু মাজাহ
হা/৩১৫৯, মিশকাত হা/১৭৬২)। তুরতুসী বলেন, কেউ যদি বিবাহের ওয়ালীমায়
কুরবানীর গোশত খাওয়ায় সেটিই তার জন্য যথেষ্ট হবে’ (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল লি মুখতাছারে খলীল ৪/৩৭৬)।
প্রশ্ন (২৯/৪২৯) : অমুসলিমদের কুরবানীর গোশত প্রদান করা যাবে কি?
-আব্দুল করীম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : কুরবানীর গোশত
মুসলিমদের মধ্যে বিতরণ করা উত্তম। তবে অমুসলিম প্রতিবেশী দুস্থ-অভাবীদের কিছু
দেওয়ায় দোষ নেই (ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমাহ ১১/৪২৪)। কেননা এটি যাকাত বহির্ভূত নফল ছাদাক্বার
অন্তর্ভুক্ত (আল-মুগনী ৩/৫৮৩,
৯/৪৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাঁর ইহূদী প্রতিবেশীকে দিয়েই
গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারী,
তিরমিযী হা/১৯৪৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮, সনদ ছহীহ, ‘ইহূদী প্রতিবেশী’ অনুচ্ছেদ)।
‘তোমরা মুসলমানদের কুরবানী থেকে মুশরিকদের আহার করাবে না’ মর্মে যে হাদীছ এসেছে তা
‘যঈফ’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান
হা/৯১১৩)।
প্রশ্ন (৩০/৪৩০) : সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন
যাবৎ কুরবানী করেনি। এখন সে ভুল বুঝতে পেরেছে। এক্ষেত্রে করণীয় কি? কুরবানীর
ক্বাযা আদায়ের কোন বিধান আছে কি?
-নাজমুল হুদা, চরমোহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : কুরবানী করা সুন্নাতে
মুওয়াক্কাদাহ। এটি ওয়াজিব নয় যে, যেকোন মূল্যে প্রত্যেককে কুরবানী করতেই হবে।
লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হযরত আবুবকর
ছিদ্দীক্ব, ওমর ফারূক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) প্রমুখ
ছাহাবীগণ কখনো কখনো কুরবানী করতেন না (বায়হাক্বী,
ইরওয়াউল গালীল হা/১১৩৯; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১০)।
কোন কারণে সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা ছুটে গেলে ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। এজন্য ক্বাযা
আদায় করতে হবে না। এক্ষণে করণীয় হ’ল সুন্নাতের প্রতি অবহেলার জন্য তওবা করে এখন
থেকে নিয়মিতভাবে কুরবানী করা।
প্রশ্ন (৩১/৪৩১) : রাসূল (ছাঃ) কতবার কুরবানী করেছিলেন?
-উম্মে হালীমা, ফুলকুঁড়ি, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) মদীনায়
দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর কুরবানী করেছেন (তিরমিযী হা/১৫০৭; মিশকাত হা/১৪৭৫, সনদ যঈফ হলেও মর্ম ছহীহ)। সে
হিসাবে রাসূল (ছাঃ) দশবার কুরবানী করেছেন। কারণ তিনি সফরে থাকা অবস্থাতেও কুরবানী
পরিত্যাগ করেননি (মুসলিম হা/১৯৭৫;
ইরওয়া হা/১১৫৮)। রাসূল (ছাঃ) প্রতি বছর দু’টি করে কুরবানী দিতেন। একটি তাঁর
ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে, আরেকটি তাঁর উম্মতের মধ্যে যারা কুরবানী করেনি, তাদের
পক্ষ থেকে (বুঃ মুঃ মিশকাত
হা/১৪৫৩; আবুদাঊদ হা/২৮১০)।
প্রশ্ন (৩২/৪৩২) : কুরবানীর সময় পশুর দেহের প্রবাহিত রক্ত কাপড়ে
লাগলে সেই কাপড়ে কি ছালাত আদায় করা যাবে?
-আল-আমীন, ভুগরইল পশ্চিমপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : পশুর প্রবাহিত রক্ত
অপবিত্র (আন‘আম ৬/১৪৫)।
সুতরাং কারো কাপড়ে কুরবানী করার সময় পশুর প্রবাহিত রক্ত লাগলে তা পরিষ্কার করে
ছালাত আদায় করতে হবে। কেউ জেনেশুনে উক্ত রক্ত মাখা কাপড়ে ছালাত আদায় করলে তাকে
পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে (নববী,
আল-মাজমূ‘ ২/৫৭৬; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহু উমদাতুল ফিক্বহ ১/১০৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল
বারী ১/৩৫২)। তবে যবহের পর গোশতের মধ্যে থাকা সাধারণ রক্ত পোশাকে লেগে
থাকলে উক্ত পোষাকে ছালাত হয়ে যাবে। কেননা তা প্রবাহিত রক্তের অন্তর্ভুক্ত নয় (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৭২; শায়খ বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২১৯)।
প্রশ্ন (৩৩/৪৩৩) : ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার হিকমত কি? এই
বিশ্বাস মানবজীবনে তো বিশেষ কোন প্রভাব রাখে না। আর কেউ যদি ফেরেশতার অস্তিত্ব
স্বীকার না করে, সে কি কাফের হয়ে যাবে?
-মুমিনুল হক্ব, মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : ফেরেশতা নূরের
তৈরী অত্যন্ত শক্তিশালী আল্লাহর এক মহা সৃষ্টির নাম। যা মানুষ স্থূল দৃষ্টিতে
দেখতে পায় না। তবে মানুষ তার অস্তিত্বের সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি অনুভব
করে। আল্লাহর হুকুমে তারা সর্বক্ষণ সৃষ্টজীবের সেবায় নিয়োজিত। কা‘ব আল-আহবার (রাঃ)
বলেন, যদি আল্লাহ ফেরেশতার মাধ্যমে মানুষকে হেফাযত না করতেন, তাহ’লে এ পৃথিবীতে
মানুষ বসবাস করতে পারত না। ইতিপূর্বে এখানে বসবাসকারী জিনেরা তাদের ছোঁ মেরে উঠিয়ে
নিয়ে যেত (ইবনু কাছীর)।
ফেরেশতাদের
মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে মায়ের গর্ভে তিনটি গাঢ় অন্ধকার পর্দার মধ্যে আকৃতি গঠন
করেন (যুমার ৬)। অতঃপর তাতে
রূহ প্রদান করেন ও তার ললাটে চারটি বস্ত্ত লিখে দেন। যা থেকে সে কখনোই বিচ্যুত
হ’তে পারে না (বুঃ মুঃ মিশকাত
হা/৮২)। অতঃপর মৃত্যু অবধি ফেরেশতাগণ প্রতি মুহূর্তে বান্দার সহযোগিতায়
থাকেন (রা‘দ ১১; ইনফিত্বার ১০-১১;
ক্বাফ ১৭-১৮)। ফেরেশতাদের সরদার জিব্রীল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে অহি নিয়ে
নবীদের অন্তরে নিক্ষেপ করেন (নাহল
২)। অতঃপর তিনিই শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অহি নাযিল করেছেন (বাক্বারাহ ৯৭; নাহল ১০২)। তাই
জিব্রীলকে অস্বীকার করলে শেষনবী (ছাঃ) ও কুরআন-হাদীছকে অস্বীকার করতে হবে। যা
মানুষের আত্মিক জাগরণ ও বৈষয়িক উন্নয়নের মূল উৎস। ফেরেশতা মীকাঈলকে অস্বীকার করলে
আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণকে অস্বীকার করতে হবে। যা পৃথিবীতে মৃত ভূমির পুনর্জাগরণ ও
খাদ্য উৎপাদনের মূল উৎস। ফেরেশতা মালাকুল মাউতকে অস্বীকার করলে মৃত্যুকে অস্বীকার
করতে হবে। অথচ মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী (হা-মীম
সাজদাহ ১১; আন‘আম ৬১-৬২)। ফেরেশতা ইস্রাফীলকে অস্বীকার করলে পুনরুত্থানকে
অস্বীকার করতে হবে। যা অবশ্যই ঘটবে (মা‘আরেজ
৪৩; ক্বামার ৭)। যা প্রতিদিন আমাদের নিদ্রা ও জাগরণে সংঘটিত হচ্ছে আল্লাহর
ইচ্ছায়। তাঁর ইচ্ছাতেই আমরা ঘুমিয়ে যাই এবং তাঁর ইচ্ছাতেই ঘুম থেকে জেগে উঠি। আর
এটাই হ’ল পুনরুত্থান। মৃত্যুর পর যেটা ক্বিয়ামতের দিন সংঘটিত হবে চিরস্থায়ীভাবে।
এজন্য রাসূল (ছাঃ) তাহাজ্জুদের সময় ঘুম থেকে উঠে দো‘আ পড়তেন, ‘হে আল্লাহ!
জিব্রাঈল, মীকাঈল ও ইস্রাফীলের রব, তুমি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা... (মুসলিম হা/৭৭০; মিশকাত হা/১২১২)।
এছাড়া নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কোটি কোটি ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে সর্বদা সৃষ্টি জগতের
সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন ও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। যারা কখনোই আল্লাহর অবাধ্যতা
করে না (তাহরীম ৬)।
সর্বোপরি প্রত্যেক মানুষের প্রতি মুহূর্তের নিরাপত্তার জন্য একজন ফেরেশতাকে
সার্বক্ষণিক প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত রাখা হয়েছে (ত্বারেক ৪)। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাগণের,
তাঁর রাসূলগণের এবং জিব্রীল ও মীকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চয় আল্লাহ সেসব কাফেরদের
শত্রু’ (বাক্বারাহ ৯৮)।
অতএব যারা ফেরেশতাদের শত্রু, আল্লাহ তাদের শত্রু। ইহূদীরা জিব্রীলকে শত্রু ভাবত
এবং মীকাঈলকে বন্ধু ভাবত। কেননা মীকাঈল বৃষ্টি বর্ষণ করে ও তার মাধ্যমে দেশে
প্রাচুর্য আসে। তারা মুসলমানদের বলেছিল, যদি জিব্রীলের পরিবর্তে মীকাঈল ‘অহি’ নিয়ে
আসে, তাহ’লে আমরা তোমাদের অনুসারী হব। এর প্রতিবাদে অত্র আয়াত নাযিল হয়। যেখানে
বলা হয়েছে যে, জিব্রীল হৌক মীকাঈল হৌক যেকোন একজন ফেরেশতার বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ
করার অর্থ সকল ফেরেশতার বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করা। কেননা ফেরেশতা হিসাবে সবাই
সমান। এখানে ‘ফেরেশতাগণ’ বলার পরে জিব্রীল ও মীকাঈলকে খাছ করা হয়েছে তাঁদের বিশেষ
মর্যাদার কারণে।
ফেরেশতাদের
প্রতি ঈমান আনা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের অন্যতম (নিসা ১৩৬; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২)। এটি বাদ দিলে মুমিন ঈমানের
গন্ডি থেকে বেরিয়ে যাবে। বস্ত্ততঃ ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস আমাদের আত্মিক জগতকে
নিয়ন্ত্রিত রাখে এবং এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির বিশালতা ও তাঁর মহান কুদরত
সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। যা তার মধ্যে পরকালীন জবাবদিহিতা সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন (৩৪/৪৩৪) : ইউরোপ-আমেরিকার অনেক এলাকায় নাগালের মধ্যে গরীব
মানুষ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আর পেলেও চাউল দিয়ে ফিৎরা আদায় করে তা বণ্টন করা অতীব
কষ্টকর। সেক্ষেত্রে টাকা দিয়ে ফেৎরা আদায় করলে কি জায়েয হবে?
-আজমাল হোসাইন, সাকাস্ত্তয়ান, কানাডা।
উত্তর : খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিৎরা
দেওয়াই সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম এক ছা‘ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিৎরা আদায়
করেছেন (বুখারী হা/১৫০৬; মিশকাত
হা/১৮১৬)। যদি কোন স্থানে ফিৎরা বণ্টন সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে কোন
ব্যক্তি, সংস্থা বা সংগঠনের মাধ্যমে অন্যত্র ফিৎরা বিতরণ করবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/২০৭)।
প্রশ্ন (৩৫/৪৩৫) : জুম‘আর দিনে খুৎবা দীর্ঘ হ’লে মুছল্লীরা বিভিন্ন
কথা বলে। আবার কেউ কেউ ঘড়ি দেখায়। এক্ষেত্রে খতীবের করণীয় কী?
-নাজীবুল ইসলাম, বৃ-কুষ্টিয়া, বগুড়া।
উত্তর: খুৎবা আখেরাতমুখী,
সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ হওয়া বাঞ্ছনীয় (মুসলিম,
মিশকাত হা/১৪০৫-০৬)। তবে প্রয়োজনমাফিক খুৎবা দীর্ঘ হওয়াতে বাধা নেই। যেমন
জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে যে, খুৎবার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
দু’চোখ উত্তেজনায় লাল হয়ে যেত। গলার স্বর উঁচু হ’ত ও ক্রোধ ভীষণ হ’ত। যেন তিনি কোন
সৈন্যদলকে হুঁশিয়ার করছেন’ (মুসলিম
হা/৮৬৭; মিশকাত হা/১৪০৭; মির‘আত ৪/৪৯৬-৯৭)। ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘অবস্থা
অনুযায়ী এবং মুছল্লীদের বোধগম্য ভাষায় খুৎবা দেওয়ার ব্যাপারে জাবের বিন সামুরাহ
(রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটিই হ’ল প্রথম দলীল’ (মির‘আত হা/১৪১৮-এর আলোচনা দ্রঃ, ৪/৪৯৪-৯৫)।
উম্মে
হিশাম বলেন, আমি সূরা ক্বাফ মুখস্থ করেছি রাসূল (ছাঃ)-এর মুখ থেকে শুনে, যা তিনি
প্রতি জুম‘আয় খুৎবা দানকালে পাঠ করতেন’ (মুসলিম হা/৮৭৩; মিশকাত হা/১৪০৯)।
অতএব
খুৎবা মধ্যম মানের হবে। খত্বীব ছাহেব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খুৎবা শেষ করার চেষ্টা
করবেন। আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে মুছল্লীদের যেকোন ধরনের প্রতিক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ রাসূল (ছাঃ) খুৎবা চলাকালীন সময়ে পাশের মুছল্লীকে চুপ থাকার কথা বলতেও নিষেধ
করেছেন (বুখারী হা/৯৩৪; মিশকাত
হা/১৩৮৫)।
প্রশ্ন (৩৬/৪৩৬) : ওমরার সময় তালবিয়া পাঠ কখন শুরু করবে এবং কখন
শেষ করবে?
-আবুবকর, হড়গ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : ওমরাহ পালনকারী
নির্দিষ্ট মীকাতে পৌঁছে পবিত্রাবস্থায় ইহরাম বাঁধবে। অতঃপর তালবিয়া পাঠ শুরু করবে
এবং হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ বা ইশারা করা তথা ত্বাওয়াফ শুরু করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ
অব্যাহত রাখবে (তিরমিযী হা/৯১৯;
ইবনু খুযায়মাহ হা/২৬৯৬; ইরওয়া ইরওয়া হা/১০৯৯, ৪/২৯৭; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল
ওমরাহ পৃঃ ১৯)।
প্রশ্ন (৩৭/৪৩৭) : আমাদের মসজিদের সামনে একটি কবর রয়েছে। মসজিদের
প্রাচীর রয়েছে। তবে কবরের জন্য আলাদা কোন প্রাচীর নেই। এক্ষণে উক্ত মসজিদে ছালাত
আদায় করা যাবে কি? উল্লেখ্য, এ বিষয় নিয়ে সমাজের লোকেরা দুই ভাগ হয়ে গেছে।
-ফেরদৌস আলম
মহিমাগঞ্জ স্টেশন বাজার, গাইবান্ধা।
উত্তর : উক্ত কবরস্থানের জন্য
আলাদা প্রাচীর থাকা আবশ্যক। এছাড়া যদি মসজিদের দেয়াল ও কবরস্থানের মাঝে রাস্তা
থাকে, তাহ’লে সে মসজিদে ছালাত আদায় করতে কোন বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কবরের
দিকে ফিরে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭২; নাসাঈ হা/৭৬০; ছহীহাহ হা/১০১৬)। মসজিদের বাইরে যদি
কবরস্থান থেকে পৃথককারী প্রাচীর থাকে, তবে সেখানে ছালাত জায়েয হবে। যদি তা না থাকে
তবে অতিসত্বর মসজিদ ও কবরস্থানকে পৃথককারী আলাদা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে (আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ১২৭, শায়খ বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৭)।
প্রশ্ন (৩৮/৪৩৮) : জনৈক ব্যক্তি সারা জীবন ছালাত, ছিয়াম এবং
অন্যান্য ইবাদত পালন করেননি। মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে ছালাত ধরলেও ছিয়াম পালন করার
সুযোগ পাননি। এক্ষণে তার পক্ষ থেকে ছিয়াম পালন করার সুযোগ রয়েছে কি?
-আকবর হোসাইন, নতুনহাট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : উক্ত ব্যক্তি যেহেতু
তওবা করে ছালাত আদায় করা শুরু করেছিল, কিন্তু ছিয়াম পালন করার সুযোগ পায়নি। সেহেতু
তার উত্তরাধিকারীরা তার ছুটে যাওয়া ছিয়ামের সংখ্যা অনুমান করে ভাগাভাগি করে ক্বাযা
আদায় করে দিতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ তার ছিয়াম
অনাদায়ী ছিল, তার ওয়ারিছগণ সেটির ক্বাযা আদায় করে দেবে’ (বুখারী হা/১৯৫২; মুসলিম হা/১১৪৭; মিশকাত
হা/২০৩৩)। যদি ক্বাযা আদায়ের মত কেউ না থাকে, তবে প্রতি দিনের জন্য ফিদইয়া
হিসাবে একজন করে মিসকীন খাওয়াতে হবে (উছায়মীন,
আশ-শারহুল মুমতি‘ ৬/৪৫০)। যদি তার ছেড়ে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশে তা
সংকুলান না হয়, তাহ’লে সেটি আদায় করা ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন (৩৯/৪৩৯) : রাসূল (ছাঃ) বহু বিবাহ করায় জনৈক ব্যক্তি তাঁকে
যেনাকার বলে গালি দিয়েছে। ঐ ব্যক্তি কি মুসলিম থাকবে? তার কী শাস্তি হবে?
-রায়হান কবীর, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে
গালিদাতা ধর্মত্যাগী কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তাওবাহ ৬৫-৬৬)। ছাহাবীগণসহ সর্বযুগের ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে
একমত যে ঐ ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব (ইবনু তায়মিয়াহ, আছ-ছারেমুল মাসলূল ২/১৩-১৬)।
তবে তা প্রমাণ সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কুরতুবী)। সরকার এ দায়িত্ব পালন না
করলে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে
গালিদাতা এক ইহূদীকে জনৈক মুসলিম হত্যা করলে রাসূল (ছাঃ) তার দিয়াত বা রক্তমূল্য
বাতিল করে দেন (আবূদাঊদ হা/৪৩৬১,
৪৩৬৩, নাসাঈ হা/৪০৭৬)।
তবে
এধরনের কুফরী কর্ম জনসম্মুখে প্রকাশের পূর্বে তাকে বার বার বুঝাতে হবে এবং তার
হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে। এতে সে ভ্রান্ত ধারণা থেকে তওবা করতে পারে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৫০-১৫২)।
প্রশ্ন (৪০/৪৪০) : কোন ব্যক্তির আমলনামা সমান সমান হয়ে গেলে ঐ
ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না জাহান্নামে প্রবেশ করবে?
উত্তর : যাদের আমলনামা
সমান হবে তাদেরকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়েছে ‘আরাফ বাসী’। ‘আরাফ’ জান্নাত ও
জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থানের নাম। যা প্রাচীর স্বরূপ। যাদের নেকী সেই
পরিমাণ হবে না যার ফলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং গোনাহও সেই পরিমাণ হবে না
যার ফলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের স্থান হবে এই ‘আ‘রাফে’। অর্থাৎ গোনাহ ও
নেকী সমান সমান হওয়ার কারণে না জাহান্নামে যাবে, না তারা জান্নাতে যাবে (আ‘রাফ ৭/৪৬-৪৭)।
[সংশোধনী : জুলাই প্রশ্নোত্তর
সংখ্যা ১৪/৩৭৪-এ ‘২য় হিজরীতে ছিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের আগ
পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ছাঃ) সকল রামাযানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন’। এটি ভুল।
বরং সঠিক উত্তর হবে এই যে, হাদীছে বর্ণিত ‘তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতেকাফ করতেন’
অর্থ হবে ‘অধিকাংশ বছরে’ কেননা ২য় হিজরীর ১৭ই রামাযান বদর যুদ্ধ এবং ৮ম
হিজরীর ১৭ই রামাযান মক্কা বিজয় হয়। এই দুই বছর তিনি ইতেকাফ করতে
পারেননি (স.স.)।]
প্রশ্ন (১/৪৪১) : হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণোভী একত্রে তিন
তালাক সম্পর্কে যে ফৎওয়াটি দিয়েছেন তা বিস্তারিত জানতে চাই।
-আব্দুর রঊফ, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : উপমহাদেশের অন্যতম
শ্রেষ্ঠ হানাফী আলেম আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (১২৬৪-১৩০৪ হি./১৮৪৮-১৮৮৭ খৃ.) একত্রিত
তিন তালাক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই অবস্থায় হানাফী মাযহাব অনুযায়ী
তিন তালাক পতিত হবে এবং ‘তাহলীল’ ব্যতীত তার সাথে পূর্ব স্বামীর পুনর্বিবাহ সিদ্ধ
হবে না। কিন্তু এমন যরূরী অবস্থায় যেমন স্বামীর নিকট থেকে উক্ত মহিলার পৃথক হওয়া
কঠিন কিংবা তাতে ক্ষতির আশংকা বেশী, সেই অবস্থায় অন্য কোন ইমামের তাক্বলীদ করায়
ক্ষতি নেই। যেমন এর দৃষ্টান্ত রয়েছে নিরুদ্দিষ্ট স্বামীর ক্ষেত্রে। এখানে হানাফীগণ
ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব (চার বছর)-এর উপরে আমল করা জায়েয মনে করেন। অতএব তিন
তালাকের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম হবে যে, ঐ ব্যক্তি যেন কোন শাফেঈ আলেমের নিকট থেকে
ফৎওয়া জেনে নিয়ে তার উপরে আমল করে’ (ফাতাওয়া
রশীদিয়াহ, করাচী : মুহাম্মাদ আলী কারখানায়ে কুতুব, তাবি ৪৬২ পৃ.)।
প্রশ্ন
(২/৪৪২) : স্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ যেনার অপবাদ দিলে সেটা কি লে‘আন হিসাবে গণ্য হবে
এবং স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?
-ইমরান হোসাইন, বড়বনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : স্ত্রীর
বিরুদ্ধে যেনার অপবাদ দিলেই তা লে‘আন হিসাবে গণ্য হবে না এবং এতে বিবাহ বিচ্ছেদও
হবে না। বরং এরূপ ক্ষেত্রে করণীয় হ’ল স্বামী প্রথমতঃ স্ত্রীর যেনার পক্ষে চারজন
সাক্ষী উপস্থাপন করবে। তা সম্ভব না হ’লে আদালতে বিচারকের উপস্থিতিতে লে‘আন করবে।
আর লে‘আন হ’ল- কোন স্বামী যদি স্ত্রীর উপর যেনার অভিযোগ দেয় এবং তার কাছে সাক্ষী
না থাকে, তখন আদালতে দাঁড়িয়ে সে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, স্ত্রী সম্পর্কে সে যা
বলেছে তা সত্য। আর পঞ্চমবারে বলবে, যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে
যেন তার উপর লা‘নত বর্ষিত হয়। অতঃপর স্ত্রীও আদালতে দাঁড়িয়ে চার বার বলবে যে,
স্বামী তার অভিযোগে মিথ্যাবাদী। আর পঞ্চমবারে বলবে, যদি স্বামী সত্যবাদী হয় তবে
তার (নিজের) উপর যেন আল্লাহর লা‘নত বর্ষিত হয়। অতঃপর আদালত তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ
ঘটাবে (নূর ২৪/৬-৯; ইবনু তায়মিয়া, আল-ফাতাওয়াল কুবরা
৫/৫০৭)।
আর স্বামী বা স্ত্রী যেনার
অভিযোগ প্রদানের পর যদি সাক্ষী হাযির করতে না পারে এবং লে‘আন করতেও অক্ষমতা প্রকাশ
করে, তবে বিচারক অভিযোগকারী স্বামী/স্ত্রীর উপর হদ জারী করবে। অর্থাৎ মিথ্যা
অপবাদের শাস্তি হিসাবে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে (নূর ২৪/৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৪/২৮৪)।
প্রশ্ন
(৩/৪৪৩) : রাসূল (ছাঃ)-এর মুওয়াযযিন কতজন ছিলেন? কারা কোথায় আযান দিতেন?
-আব্দুল্লাহ আল-মামূন, শেখপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : চারজন।
তন্মধ্যে মদীনায় ছিলেন দু’জন- (১) বেলাল বিন রাবাহ ও (২) আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে
মাকতূম (রাঃ), তাঁকে আমরও বলা হয়। ক্বোবায় ছিলেন- (৩) ‘আম্মার বিন ইয়াসিরের
মুক্তদাস সা‘দ আল-ক্বারয এবং মক্কায় ছিলেন (৪) আবু মাহযূরাহ আউস বিন মুগীরাহ
আল-জুমাহী (যাদুল মা‘আদ ১/১২০; সীরাতুর রাসূল
(ছাঃ), ৩য় মুদ্রণ, ৮২৭ পৃ.)।
প্রশ্ন
(৪/৪৪৪) : পিতা-মাতাকে যাকাত দেয়া দেওয়া যাবে কি? যাকাতের টাকা দিয়ে কি তাদের ঋণ
পরিশোধ করা যাবে?
-জেসমীন খাতুন, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সন্তানের
দায়িত্ব হ’ল পিতা-মাতার ভরণপোষণ করা। এজন্য বিদ্বানগণ এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন
যে, পিতা-মাতা বা সন্তান-সন্ততিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না। কেননা তা
প্রকারান্তরে নিজেকেই যাকাত প্রদানের শামিল (ইবনু
কুদামাহ, আল-মুগনী ২/২৬৯)। তবে দু’টি ক্ষেত্রে ইবনু তায়মিয়াসহ কতিপয়
বিদ্বান যাকাত প্রদানের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। যেমন (১) পিতা বা সন্তান যদি
ঋণগ্রস্ত হন এবং তাদের উপার্জন ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট না হয়। কেননা পিতা বা সন্তান
পরস্পরের ঋণ পরিশোধে বাধ্য নন। (২) পিতা বা সন্তান যদি পরস্পরের খরচ বহনে সক্ষম না
হন, তাহ’লে তারা যাকাতের হকদার হবেন’ (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা
৫/৩৭৩; আল-ইখতিয়ারাত ১০৪ পৃ. উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২৫৯-২৬০)।
প্রশ্ন
(৫/৪৪৫) : নির্দিষ্ট স্থানে কবর দেওয়ার ব্যাপারে পিতা-মাতার অছিয়ত পূর্ণ করা কি
আবশ্যিক?
-আল-আমীন, দয়ালের মোড়, নওগাঁ।
উত্তর : আবশ্যিক
নয়, তবে উত্তম। কারণ পিতা-মাতার অছিয়ত পূর্ণ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা
সন্তানের একান্ত দায়িত্ব। তবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে লাশ নিয়ে যাওয়ার কোন বিধান
নেই। বরং কাছাকাছি এলাকার কোন মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করতে হবে (আবূদাউদ হা/৫১৪২; মিশকাত হা/৪৯৩৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪১৮; বিন বায,
ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৪২৩)।
প্রশ্ন
(৬/৪৪৬) : আমাদের এলাকায় অনেক মহিলা মাথা থেকে ঝরে পড়া অতিরিক্ত চুল বিক্রয় করে।
এটি কি জায়েয হবে?
-মা‘ছূমা বেগম, পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : চুল
বিক্রয়যোগ্য বস্ত্ত নয়। কারণ চুল দেহেরই একটি অংশ। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আদম
সন্তানকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি’ (ইসরা ১৭/৭০)। তাই এটি
জায়েয হবে না যে, এভাবে মানব দেহের কোন অংশ অপদস্থ ও অপমানিত হৌক’ (আল-ইনাইয়া শারহুল হেদায়া ৬/৪২৫; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/১০২)।
ইমাম নববী বলেন, যা মানব দেহের যে অংশ লেগে থাকা অবস্থায় বিক্রয় নিষিদ্ধ তা
বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেও নিষিদ্ধ যেমন মানুষের চুল’ (আল-মাজমূ‘
৯/২৫৪)। ইমাম মালেক (রহঃ)-কে মানুষের মুন্ডন করা চুল বিক্রয়ের
ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বিষয়টিকে চরম অপসন্দ করেন (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-কাফী ফী ফিক্বহি আহলিল মদীনাহ ২/৬৭৬)।
প্রশ্ন
(৭/৪৪৭) : যারা চৌদ্দশ’ বছর আগে কিংবা এর আগে মারা গিয়েছে এবং যারা কিয়ামতের দিন
মারা যাবে, তাদের শাস্তি আর চৌদ্দশ’ বছর আগের মৃতের শাস্তি তো সমান হচ্ছে না।
বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে বাধিত করবেন।
-আব্দুল হাদী তাহমীদ, মেলান্দহ, জামালপুর।
উত্তর : রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) নিয়মিত
মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে তার পরিবারে ফাহেশা কাজ
স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২;
মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহাহ হা/৬৭৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী
ক্বারী বলেন, যার চুপ থাকার কারণে তার স্ত্রী-কন্যা, দাসী প্রভৃতি নিকটতম মহিলাদের
মধ্যে ব্যভিচার, মদ্যপান ও ব্যভিচারমূলক কাজ-কর্ম স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতা লাভ
করে (মিরক্বাত, হা/৩৬৫৫)।
যাহাবী বলেন, ‘দাইয়ূছ’ সেই
ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার
কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা
মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার
আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’ (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের ১/৫০
পৃঃ)।
প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী
যেহেতু স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধ করেছেন এবং চুপ থাকেননি, সেহেতু তিনি ‘দাইয়ূছ’
হবেন না। বরং স্ত্রী গোনাহগার হবে। কেননা প্রথমতঃ সে স্বামীর অবাধ্যতা করেছে।
দ্বিতীয়তঃ উপার্জনের জন্য একাকী বিদেশে গমন করেছে। তবে তার উপার্জন স্বামী ও
সন্তানদের জন্য অবৈধ নয়। কারণ একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪)। এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ
গ্রহণ না করাই উত্তম হবে এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
কোনভাবেই স্ত্রীকে ফিরানো না গেলে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে তালাক প্রদান করবে।
প্রশ্ন
(৮/৪৪৮) : নারীরা কি জামা‘আতে বা একাকী চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায়
করতে পারে?
-মুফাখখারুল ইসলাম, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : মহিলাগণ
পুরুষদের পিছনে দাঁড়িয়ে জামা‘আতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের ছালাত আদায় করতে
পারেন। হযরত আয়েশা, আসমা ও আনছার মহিলাগণ পুরুষের জামা‘আতের পিছনে এই ছালাত আদায়
করেছিলেন (বুখারী হা/৯২২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সূর্য গ্রহণের দীর্ঘ ছালাত শেষে খুৎবায় বলেন, সূর্য বা চন্দ্র
গ্রহণ কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং এর দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভয়
দেখান। অতএব যখন তোমরা এগুলি দেখবে, তখন আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তোমরা
দ্রুত তাঁর স্মরণ, দো‘আ ও ক্ষমাপ্রার্থনার দিকে ধাবিত হবে’ (বুখারী হা/১০৫৯; মুসলিম হা/৯১২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ
না গ্রহণ দূর হয়’ (মুসলিম হা/৯১৫)।
উপরোক্ত হাদীছের আদেশ মুমিন
নর-নারী সকলের জন্য প্রযোজ্য। অতএব উক্ত ‘আম হাদীছের নির্দেশ অনুযায়ী মহিলাগণ
বাড়িতে জামা‘আতের সাথে বা একাকী উক্ত ছালাত পড়বেন। জামা‘আতের সাথে পড়লে তারা খুৎবা
দিবেন না। তবে উক্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে থেকে একজন আলোচনা করবেন (নববী, আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/৫৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩১০)।
প্রশ্ন (৯/৪৪৯) : সূর্য ওঠার সামান্য পূর্বে ঘুম ভেঙ্গেছে।
এমতাবস্থায় ফরয ছালাত আদায় করে তারপর কি সুন্নাত পড়তে হবে? আর সেটি হ’লে সেটা কি
সূর্যোদয়ের পর পড়তে হবে?
-আয়েশা আখতার, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : এমতাবস্থায়
সুন্নাত সহই ফজরের দু’রাক‘আত ফরয ছালাত আদায় করবে। সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
হবে না। কেননা ঘুম ভাঙ্গার উপর বান্দার কোন এখতিয়ার নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ
ছালাত ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা হ’ল, ঘুম ভাঙ্গলে অথবা স্মরণে আর
সাথে সাথে সেটি আদায় করা। এটি ব্যতীত তার কোন কাফফারা নেই (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬০৩-৪)। কোন কারণে
ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ক্বাযা হ’লে তা ফজরের ছালাতের পরে আদায় করে নিবে (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১০৪৩; আবূদাঊদ, তিরমিযী,
মিশকাত হা/১০৪৪; দ্র. ছালাতুর রাসূল ১৩৫ পৃ.)।
প্রশ্ন
(১০/৪৫০) : ভারতে সম্প্রতি জনৈক মুসলিম ব্যক্তিকে জোরপূর্বক জয় শ্রীরাম বলিয়ে নেয়া
হয়েছে। উক্ত ব্যক্তি যদি তওবার সুযোগ না পায় তবে কি সে মুশরিক হিসাবে মৃত্যুবরণ
করেছে?
-মুহায়মিনুল হক, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : আল্লাহর
প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকলে সে তওবা করার সুযোগ না পেলেও মুশরিক হবে না। বরং সে
ঈমানের অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করবে (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১২/৩১২;
ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তামহীদ ১/১২০)। আল্লাহ বলেন, ‘যার উপরে (কুফরীর
জন্য) যবরদস্তি করা হয়, অথচ তার হৃদয় ঈমানের উপর অটল থাকে, সে ব্যতীত’... (নাহল ১৬/১০৬)। আয়াতটি আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) সম্পর্কে
নাযিল হয়। ইসলামের প্রথম মহিলা শহীদ তার মা সুমাইয়া ও তার পিতা ইয়াসিরকে হত্যা
করার পর পুত্র আম্মারকেও তার ঈমানের জন্য চরমভাবে নির্যাতন করা হয়। অবশেষে তাকে
তাদের মূর্তি-প্রতিমাগুলির প্রশংসা এবং রাসূল (ছাঃ)-কে গালি দিতে বাধ্য করা হয়।
এরপর তিনি ছাড়া পেয়ে সোজা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এসে ঘটনা বর্ণনা করেন। রাসূল (ছাঃ)
তাকে জিজ্ঞেস করেন ‘ঐ সময় তোমার অন্তর কিরূপ ছিল’? তিনি বললেন, ‘ঈমানের উপর অবিচল
ছিল’। রাসূল (ছাঃ) বললেন ‘যদি ওরা আবার বলতে বলে, তাহ’লে তুমি আবার বল’ (অর্থাৎ
উক্ত অবস্থায় ঈমানের উপর অটল থাকলে শিরকী বাক্যের কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না)।
তখন অত্র আয়াত নাযিল হয়’ (হাকেম হা/৩৩৬২, ২/৩৫৭ পৃ., সনদ
ছহীহ; বায়হাক্বী ৮/২০৮-০৯; তাফসীর ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।
প্রশ্ন (১১/৪৫১) : ইহরাম অবস্থায় বা তাওয়াফের সময় মহিলারা নেক্বাব
বা হাতমোজা পরিধান করলে হজ্জ বা ওমরার কোন ক্ষতি হবে কি?
-আফীফা খাতূন, শ্যামপুর, ঢাকা।
উত্তর : ইহরাম অবস্থায় মহিলারা
নেক্বাব ও হাতমোজা পরবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুহরিম মহিলাগণ নেক্বাব এবং
হাতমোজা লাগাবে না’ (বুখারী
হা/১৮৩৮; মিশকাত হা/২৬৭৮)। তবে ফেৎনার আশংকা থাকলে তারা ভিন্ন কাপড় দ্বারা
মুখ ও হাত ঢাকতে পারবে (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমাহ ১১/১৯২-১৯৩)। শায়খ বিন বায বলেন, এজন্য আলাদা সেলাইযুক্ত
স্কার্ফ বা মোজা পরবে না। বরং বড় কাপড় দিয়ে মুখমন্ডল ও হাত ঢেকে রাখবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/২২৩; আশ-শারহুল মুমতে‘
৭/১৬৫)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, (হজ্জ মওসুমে) আমরা ইহরাম অবস্থায় রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এসময় কোন কাফেলা আমাদের অতিক্রম করলে আমাদের মহিলারা মাথার
কাপড় টেনে মুখ ঢাকতেন। আর তারা আমাদের সম্মুখ হ’তে দূরে সরে গেলে আমরা আমাদের
চেহারা খুলতাম’ (আবূদাউদ হা/১৮৩৩;
মিশকাত হা/২৬৯০; ইরওয়া হা/১০২৩, সনদ ছহীহ)। তবে কেউ ভুলক্রমে বা অজ্ঞতাবশে
নেক্বাব বা হাতমোজা পরিধান করে থাকলে তাকে কোন কাফফারা দিতে হবে না (বাক্বারাহ ২/২৮৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২৪/৪৩৩-৪৩৪)।
প্রশ্ন
(১২/৪৫২) : ইসলামে গণপিটুনীর কোন শাস্তি আছে কি? যদি কোন ব্যক্তিকে হত্যায় অসংখ্য
লোক অংশগ্রহণ করে, তবে প্রত্যেকের শাস্তি কি একইরূপ হবে?
-শামীম শাহেদ, সাভার, ঢাকা।
উত্তর : আদালত
কর্তৃক বিচার শেষে ক্বিছাছ ব্যতীত সর্বাবস্থায় মানুষ হত্যা করা হারাম। এমনকি কোন
স্পষ্ট অপরাধীকেও বিচারহীনভাবে মারা যাবে না। এক্ষণে কাউকে গণপিটুনী দিয়ে হত্যা
করা হ’লে সংশ্লিষ্ট সকলেই অপরাধী সাব্যস্ত হবে এবং নিহতের উত্তরাধিকারীরা ক্ষমা না
করলে সকলকেই ক্বিছাছ হিসাবে হত্যা করা হবে। ওমর (রাঃ) একজন লোককে হত্যার অপরাধে
ছান‘আর সাতজন ব্যক্তিকে হত্যা করে বলেছিলেন, যদি পুরো ছান‘আবাসী এতে জড়িত থাকত,
তাহ’লে সকলকেই আমরা হত্যা করতাম (বুখারী হা/৬৮৯৬; মিশকাত হা/৩৪৮১)।
আলী (রাঃ) একজনকে হত্যার অপরাধে তিনজনকে হত্যা করেছিলেন (বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান হা/৫০৬৩; ইরওয়া হা/২২০২, সনদ যঈফ)।
ইবনু আববাস (রাঃ) একজনকে হত্যার অপরাধে একদল লোককে হত্যার শাস্তি দিয়েছিলেন (আব্দুর রাযযাক হা/১৮০৮২; ইরওয়া ৭/২৬১)। সর্বোপরি বিচারক
অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী বিচার করবেন। যদি গণপিটুনী হত্যার উদ্দেশ্যে না হয়ে থাকে,
তবে আদালত ক্বিছাছের পরিবর্তে আসামীদের নিকট থেকে দিয়াত বা রক্তমূল্য আদায় করবে (নিসা ৪/৯২)। আর যদি আদালতের বিচারে নিহত ব্যক্তি প্রকৃতই
অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তবে আদালত আসামীদের শাস্তি মওকূফ করতে পারেন।
প্রশ্ন
(১৩/৪৫৩) : সম্প্রতি কল্লাকাটা নিয়ে সমাজে ব্যাপক আতংক তৈরী হয়েছে। গুজবের কারণে
অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে। এক্ষণে এমন মিথ্যা গুজবে কান দেওয়ার
পরিণতি কি এবং গুজব প্রতিরোধে করণীয় কি?
-শায়লা শবনম, ঝিকরগাছা, যশোর।
উত্তর :
যে কোন অবস্থায় গুজবে কান দিয়ে বা স্রেফ ধারণার ভিত্তিতে কোন অপপ্রচার বা
অনাকাঙ্ক্ষিত কর্ম করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার
জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে (মুসলিম হা/৫; মিশকাত হা/১৫৬)। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ!
তোমরা অধিক অনুমান বা ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ কোন কোন অনুমান পাপ (হুজুরাত ৪৯/১২)। তিনি আরও বলেন, আর তাদের অধিকাংশ কেবল
অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান তো কোন কাজে আসে না, তারা যা করে
নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত (ইউনুস ১০/৩৬)। এক্ষণে
গুজবের পিছনে ছোটার পরিণাম এবং গুজব প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সূরা হুজুরাতের ৬
আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের
নিকট কোন খবর নিয়ে আসে, তাহ’লে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে; যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা
কোন সম্প্রদায়কে আঘাত না কর এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা হ’ল সবচেয়ে বড় মিথ্যা
সংবাদ (বুখারী হা/৬০৬৪; মুসলিম হা/২৫৬৩; মিশকাত
হা/৫০২৮)। অতএব গুজব প্রচার থেকে যেমন বিরত থাকা কর্তব্য, তেমনি
গুজবের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ। অতএব যারা গুজব রটায় ও গুজব
শুনে কাজ করে তারা উভয়ে পাপী। তওবা না করা পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাবে
না।
প্রশ্ন
(১৪/৪৫৪) : হজ্জ পালনকালে প্রায় ৪৫ দিন সেখানে অবস্থানকালে কোন কোন নফল ছালাত আদায়
করা যাবে এবং কোনগুলি বর্জন করতে হবে?
-বদীউয্যামান, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।
উত্তর : এসময়
হাজীগণ কেবল যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাতগুলি বাদ দিবেন। তাছাড়া অন্য সকল
প্রকার নফল ছালাত আদায় করবেন। যেমন তাহাজ্জুদ, ছালাতুয যোহা, ছালাতুল ইস্তেখারাহ,
ছালাতুল হাজত, ছালাতুত তওবা ও অন্যান্য নফল ছালাত (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩৫৬)। তবে রাসূল (ছাঃ)
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা এক আযান ও দুই ইক্বামতসহ আদায় করেন। কিন্তু এ দু’য়ের মাঝে
কোন সুন্নাত বা নফল পড়লেন না (বুখারী হা/১৬৭৩; মিশকাত হা/২৬০৭)।
হযরত জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত বিদায় হজ্জের দীর্ঘ হাদীছে দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা জমা ও ক্বছর শেষে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর
তিনি ফজর পড়েন’ (মুসলিম হা/১২১৮
(১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫)। এতে বুঝা যায় যে, তিনি এই রাতে বিতর বা
তাহাজ্জুদ পড়েননি (‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ৮৯ পৃ.)।
ফজরের পূর্বের দু’রাক‘আত
সুন্নাত, বিতর ও তাহাজ্জুদের ছালাত সবসময় আদায় করা যায়। কেননা রাসূল (ছাঃ) এই
ছালাতগুলি সাধারণতঃ পরিত্যাগ করতেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ফজরের
দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার প্রতি যত কঠোরভাবে খেয়াল রাখতেন অন্য কোন নফল ছালাতের
প্রতি ততখানি রাখতেন না (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৬৩)।
প্রশ্ন (১৫/৪৫৫) : একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে কি?
-পারভিন বেগম, হেতম খাঁ, কলাবাগান, রাজশাহী।
উত্তর : স্বাভাবিকভাবে একটি
কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন অনুচিৎ। তবে স্থান সংকুলান না হ’লে বা মহামারির কারণে
একাধিক কবর খনন করার মত লোক পাওয়া না গেলে কেবল তখনই এক কবরে একাধিক ব্যক্তিকে
দাফন করা যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘
৫/২৪৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৬৯)। ওহোদ যুদ্ধের দিন একাধিক শহীদকে
একই কবরে দাফন করা হয়েছিল (দ্র.
সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৮৫ পৃ.)। হিশাম ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমরা ওহোদের
দিন রাসুলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পক্ষে প্রত্যেক শহীদের
জন্য পৃথক পৃথক কবর খনন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কবর
খনন কর এবং কবরকে গভীর কর এবং দু’জন বা তিন জনকে এক এক কবরে দাফন কর। ছাহাবীগণ
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কাকে প্রথমে রাখব? তিনি বললেন, যে কুরআন বেশী জানে তাকে
প্রথমে রাখ। রাবী বলেন, এভাবে আমার পিতা একই কবরের তিনজনের অন্যতম ছিলেন’ (নাসাঈ হা/২০১০; ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০;
মিশকাত হা/১৭০৩)।
প্রশ্ন (১৬/৪৫৬) : নারীদের নাম হিসাবে কানীয ফাতেমা রাখা
যাবে কি? এর অর্থ কি?
-আব্দুল ওয়াজেদ, টাঙ্গাইল।
উত্তর : কানীয
শব্দটি ফার্সী (كنيز)। যার অর্থ বাঁদী, দাসী প্রভৃতি। সুতরাং আল্লাহর বান্দী অর্থে
কানীয নাম রাখা যায়। তবে সম্বন্ধবাচক অর্থে কানীয ফাতেমা নাম থেকে যদি ফাতেমা
(রাঃ)-এর বাঁদী উদ্দেশ্য নেওয়া হয়, তাহ’লে এই নাম রাখা বৈধ নয়। উল্লেখ্য যে, শী‘আ
আলেমদের মধ্যে আব্দুল হাসান, আব্দুল হুসাইন প্রভৃতি নামের প্রচলন রয়েছে। এদ্বারা
তারা হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর দাস বা বান্দা হিসাবে নিজেদের প্রকাশ করে থাকেন।
যা সিদ্ধ নয়।
প্রশ্ন
(১৭/৪৫৭) : গল্পচ্ছলে অনেক সময় অকারণ এমন কিছু মিথ্যা কথা বলে ফেলি বা অতিরঞ্জন
করি, যাতে অন্যের কোন ক্ষতি হয় না বা তাতে কোন অসৎ উদ্দেশ্যও থাকে না। এরূপ মিথ্যা
কথা বলায় কি গুনাহ হবে?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর: মিথ্যা
বলা সর্বাবস্থায় হারাম। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবাহ ৯/১১৯)। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘দুর্ভোগ সেই ব্যক্তির, যে মিথ্যা বলে লোকদেরকে হাসায়। দুর্ভোগ তার
জন্য, দুর্ভোগ তার জন্য’ (আবুদাউদ হা/৪৯৯০; আহমাদ হা/২০০৩৫;
ছহীহুত তারগীব হা/২৯৪৪)। তিনি আরো বলেন, মিথ্যা গুরুত্বের সাথে এবং
ঠাট্টাচ্ছলেও সংগত নয়। আর তোমাদের কেউ তার সন্তানকে কিছু দেয়ার ওয়াদা করলে তাকে তা
না দেওয়াটাও সংগত নয় (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩৮৭;
তাবারাণী কাবীর হা/৮৫২৩, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) মিথ্যা পরিহারের
ফযীলত সম্পর্কে বলেন, আমি জান্নাতের সমতলে এক গৃহের যিম্মাদার হব সেই ব্যক্তির
জন্য, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও তর্ক বর্জন করে। আর আমি জান্নাতের মধ্যখানে এক
গৃহের যিম্মাদার হব তার জন্য, যে উপহাসচ্ছলেও মিথ্যা পরিত্যাগ করে এবং আমি
জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের এক গৃহের যিম্মাদার হব তার জন্য, যার চরিত্র সুন্দর
হয়’ (আবূদাউদ হা/৪৮০০; ছহীহাহ হা/২৭৩)।
অতএব মিথ্যা সর্বাবস্থায় বর্জনীয় এবং গল্পচ্ছলেও মিথ্যা বলা যাবে না। বলে ফেললে
অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে।
প্রশ্ন
(১৮/৪৫৮) : আমি দশ বছর পূর্বে স্বামী থেকে একটি কন্যাসহ তালাকপ্রাপ্তা হয়েছি। পরে
আমি অন্যত্র বিবাহিতা হই। আমার দ্বিতীয় স্বামী আমার মেয়েকে প্রতিপালন করে। এক্ষণে
আমার মেয়ের বিয়েতে আমি বা তার পালক পিতা কি অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
পূর্বের স্বামী দাবী করলে করণীয় কী?
-কামরুন নাহার, রসূলপুর, নওগাঁ।
উত্তর : বিবাহের
ক্ষেত্রে মেয়ের অভিভাবক পিতাই হবেন। যদিও স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হন। পালক পিতা নিজ
পিতার স্থলাভিষিক্ত হ’তে পারবেন না, যদিও তিনি লালন-পালন করে থাকেন। এক্ষণে মূল
পিতা যদি মেয়ের অলী হ’তে ইচ্ছুক হন, তবে তিনিই অভিভাবক হবেন। আর যদি ইচ্ছুক না হন,
তাহ’লে সরকারের পক্ষে আদালত বা কাযী অভিভাবক হয়ে বিয়ে দিবেন। কেননা রাসূল (ছাঃ)
বলেন, যার অলী নেই, শাসক তার অলী’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৯; মিশকাত
হা/৩১৩১)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
মহিলা তার অলীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, বাতিল এবং বাতিল। যদি এরপর
স্বামী তার সাথে সহবাস করে তবে স্ত্রী মহরানার হকদার হবে; যেহেতু তার স্বামী তার
লজ্জাস্থানকে হালাল মনে করে ভোগ করেছে। আর অলী তথা অভিভাবকরা যদি বিবাদে লিপ্ত হয়,
তবে যার অভিভাবক নেই তার অলী বা অভিভাবক হবে দেশের শাসক (মিশকাত হা/৩১৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন নারী কোন নারীকে
বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজেকে নিজে বিবাহ দিতে পারে না। এরূপ করলে সে
ব্যভিচারিণী হিসাবে গণ্য হবে’ (দারাকুৎনী হা/৩৫৮৪; ইরওয়া
হা/১৮৪১)।
প্রশ্নের আলোকে মূল পিতা
অভিভাবক হিসাবে তার দায়িত্ব পালন না করলে আল্লাহর নিকটে গোনাহগার হবে। আর পালক
পিতা নেকীর হকদার হবেন। পালক মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে তিনি শরী‘আত মেনে কাজ করবেন।
প্রশ্ন
(১৯/৪৫৯) : যেসব নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অথবা তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একাকী
বিদেশে চাকুরী করছে, তাদের স্বামীরা কি দাইয়ূছ হিসাবে গণ্য হবে? এছাড়া স্বামী
উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বে্ও এরূপ স্ত্রীর উপার্জন তার জন্য হালাল হবে কি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ওমরপুর, রাজশাহী।
উত্তর : রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘তিন জন ব্যক্তির উপর আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) নিয়মিত
মদ্যপায়ী (২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (৩) দাইয়ূছ। যে তার পরিবারে ফাহেশা কাজ
স্থায়ী রাখে’ (নাসাঈ হা/২৫৬২; আহমাদ হা/৫৩৭২;
মিশকাত হা/৩৬৫৫; ছহীহাহ হা/৬৭৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী
ক্বারী বলেন, যার চুপ থাকার কারণে তার স্ত্রী-কন্যা, দাসী প্রভৃতি নিকটতম মহিলাদের
মধ্যে ব্যভিচার, মদ্যপান ও ব্যভিচারমূলক কাজ-কর্ম স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতা লাভ
করে (মিরক্বাত, হা/৩৬৫৫)।
যাহাবী বলেন, ‘দাইয়ূছ’ সেই
ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার
কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা
মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার
আত্মসম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’ (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের ১/৫০
পৃঃ)।
প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী
যেহেতু স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধ করেছেন এবং চুপ থাকেননি, সেহেতু তিনি ‘দাইয়ূছ’
হবেন না। বরং স্ত্রী গোনাহগার হবে। কেননা প্রথমতঃ সে স্বামীর অবাধ্যতা করেছে।
দ্বিতীয়তঃ উপার্জনের জন্য একাকী বিদেশে গমন করেছে। তবে তার উপার্জন স্বামী ও
সন্তানদের জন্য অবৈধ নয়। কারণ একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪)। এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ
গ্রহণ না করাই উত্তম হবে এবং তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
কোনভাবেই স্ত্রীকে ফিরানো না গেলে চূড়ান্ত অবস্থায় তাকে তালাক প্রদান করবে।
প্রশ্ন
(২০/৪৬০) : মা তার সন্তানকে জানাযার অছিয়ত করে যায়। কিন্তু সন্তানের বদলে স্বামী
তার জানাযা পড়ান। এ কারণে প্রায় বিশজন লোক ছালাত আদায় থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে
অছিয়ত পালনের স্বার্থে বাকীদের নিয়ে সন্তান পুনরায় জানাযার ছালাত আদায় করে। এমনটি
করা সঠিক হয়েছে কি?
-আব্দুস সাত্তার, জামদই, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : পারতপক্ষে
অছিয়ত পূরণ করাটাই কর্তব্য। যেমন আবুবকর (রাঃ) তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইসকে,
ফাতেমা (রাঃ) তার স্বামী আলী (রাঃ)-কে এবং আনাস (রাঃ) তার ছাত্র ইবনু সীরীনকে তাঁর
গোসল দেওয়ানোর অছিয়ত করে যান এবং তারা তা পালন করেন (দারাকুৎনী, বুলুগুল মারাম হা/৫৫৩; নায়লুল আওতার ১/২৯৯)। তবে
কোন কারণে তা পূরণ করা সম্ভব না হ’লে তা নিয়ে মতভেদ করা এবং ছালাতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত
থাকা সমীচীন নয়। কারণ এরূপ অছিয়ত পূরণ করা ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব (উছায়মীন, আশ-শারহুম মুমতে‘ ৫/২৬৫-৬৬)। সুতরাং অছিয়ত
পালন করতে গিয়ে পুনরায় জানাযার ছালাত আদায় করা ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন
(২১/৪৬১) : চুল-নখ কর্তন থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা কি হজ্জ পালনকারীদের জন্যও
প্রযোজ্য?
-সাইফুল ইসলাম, কাজলা, রাজশাহী।
উত্তর : হজ্জ
পালনকারীর জন্য উক্ত বিধান প্রযোজ্য নয়। তবে হাদঈ ব্যতীত আলাদাভাবে কুরবানী করার
নিয়ত থাকলে বিধানটি তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে (বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৯০; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ২৫/২২৫)।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেওয়ার এরাদা রাখে, তারা যেন
যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হ’তে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ
কর্তন করা হ’তে বিরত থাকে’ (মুসলিম হা/১৯৭৭; মিশকাত হা/১৪৫৯)।
প্রশ্ন
(২২/৪৬২):‘আলেমের এক ঘন্টা ইলম চর্চা একজন আবেদের সত্তর বছর ইবাদতের সমান’ মর্মে
বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
-শরীফুল ইসলাম, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত বর্ণনাটি
জাল (দায়লামী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/৩৯৭৮)। অনুরূপ ‘এক ঘণ্টা ইলম অন্বেষণ করা এক ঘণ্টা ইবাদত করার চেয়ে
উত্তম’ এই বর্ণনাটিও যঈফ (দারেমী,
মিশকাত হা/২৫৬)। তবে এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ হ’ল এই যে, ‘আবেদের উপরে আলেমের
মর্যাদা নক্ষত্র সমূহের উপরে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়’ অথবা ‘যেমন আমার মর্যাদা
তোমাদের উপরে’ (তিরমিযী, আবূদাঊদ
প্রভৃতি, মিশকাত হা/২১২-১৩)।
প্রশ্ন
(২৩/৪৬৩) : প্রতিবছর সরকারী খরচে তথা জনগণের করের অর্থে কয়েকশ’ সরকারী
কর্মকর্তা-কর্মচারী হজ্জ পালন করে থাকে। উক্ত অর্থ দ্বারা হজ্জ পালন করা জায়েয হবে
কি? এছাড়া তা কবুলযোগ্য হবে কি?
-আবুল কালাম আযাদ, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : সরকারী
খরচে হজ্জ করা জায়েয। কেননা অন্যের খরচে হজ্জ করা যায় এবং এতে হজ্জের ফরযিয়াত আদায়
হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং
৬৫৯৩)।
প্রশ্ন
(২৪/৪৬৪) : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে শিশুর খাৎনা করা, পশু যবেহ করা যাবে কী?
-ইহসানুল করীম, রাজপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : যিলহজ্জ মাসের
প্রথম দশদিনে খাৎনা করা ও পশু যবেহ করায় কোন বাধা নেই। কেবলমাত্র যারা কুরবানী
করার নিয়ত করেছে তাদের জন্য বিধান হ’ল তারা এই দশদিনে নখ ও যাবতীয় চুল কাটা থেকে
বিরত থাকবে (মুসলিম হা/১৯৭৭)।
তবে যাদের কুরবানী নেই অথচ উক্ত আমল করবে এবং ঈদের ছালাত আদায় করে নখ, নাভির নীচের
পশম, মাথার চুল ও গোঁফ কাটবে তারাও একটি পূর্ণাঙ্গ কুরবানীর ছওয়াব পেয়ে যাবে (আবূদাউদ হা/২৭৮৯; আহমাদ হা/৬৫৭৫; মিশকাত
হা/১৪৭৯; ইবনু হিববান হা/৫৯১৪, সনদ ছহীহ)। অতএব নখ-চুল কাটা যাবে না বলে
খাৎনা বা পশু যবেহ করা যাবে না এরূপ কথা ঠিক নয়।
প্রশ্ন
(২৫/৪৬৫) : আমার মা আমাদের ভাই-বোনদের আর্থিক সহযোগিতা না করে নিজের ভাই-বোনদেরকে
গোপনে আর্থিক সহযোগিতা করেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করেন। এক্ষেত্রে করণীয়
কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজশাহী।
উত্তর : মায়ের
জন্য এরূপ করা ঠিক নয়। কারণ তিনি স্বামীর সংসার ও সন্তানদের ব্যাপারে
দায়িত্বশীল (বুখারী হা/৫২০০, মিশকাত হা/৩৬৮৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সর্বোত্তম দীনার সেইগুলো যা পরিবারের জন্য খরচ করা হয় (তিরমিযী হা/১৯৬৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১১০৩)। অতএব নিজ সন্তানদের
জন্য খরচ করার পর অতিরিক্ত থাকলে সেখান থেকে তিনি ছাদাক্বা করতে পারেন এবং নিজের
ভাই-বোনদের দান করতে পারেন। এক্ষণে সন্তানদের জন্য করণীয় হ’ল, মাকে এ বিষয়ে নছীহত
করা ও বিরত রাখা।
প্রশ্ন
(২৬/৪৬৬) : কুরবানীদাতা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে চুল-নখ কর্তন করে তবে তাকে কাফফারা কি
দিতে হবে?
-আবুল কালাম, শ্যামপুর, ঢাকা।
উত্তর : ভুলক্রমে
বা অজ্ঞতাবশতঃ কেটে ফেললে কোন পাপ নেই। আর ইচ্ছাকৃতভাবে কাটলে তাকে তওবা করতে হবে,
তবে তাতে কাফ্ফারা নেই।
প্রশ্ন
(২৭/৪৬৭) : চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদে ভুলক্রমে দরূদ পড়লে কি সহো
সিজদা দিতে হবে?
-মোবারক হোসাইন, বনানী, ঢাকা।
উত্তর : না,
এজন্য সহো সিজদা দিতে হবে না।
প্রশ্ন
(২৮/৪৬৮) : ক্বিয়ামতের দিন কি মানুষকে তার বুঝ মোতাবেক বিচার করা হবে? পথে-ঘাটে,
রেলস্টেশনে বাস্ত্তহারা বহু মানুষ দেখা যায় যারা ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং
কোন আমলও করে না। মূলতঃ এদের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে কোন বোধশক্তিই নেই। এদের বিচার
কিভাবে হবে?
-যিল্লুর রহমান, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে। (১) বধির (الأصم)
(২) নির্বোধ (الأحمق) (৩) অতিবৃদ্ধ (الهرم) এবং (৪) যে ইসলামের
দাওয়াত পায়নি (من ماة في الفةرة)। বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই
শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা
নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি।
আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার
নিকট আসেনি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের
নিকট একজন দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন
তার উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮৪১;
সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।
উক্ত হাদীছের আলোকে ইবনু
তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, হাফেয ইবনু কাছীর, ইবনু হাজার, শায়খ উছায়মীন সহ বহু
বিদ্বান ফৎওয়া প্রদান করেছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ৪/৩০৩-৪; আহকামু
আহলিল যিম্মাহ ২/১১৪৮-৫২; ফাৎহুল বারী ৩/২৪৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর ৫/৫৮; মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১২/০৭)। সর্বোপরি এদের বিচার সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
তবে إنَّمَا أُجَازِي الْعِبَادَ عَلَى قَدْرِ عُقُولِهِمْ
‘আমি মানুষকে তার জ্ঞান অনুযায়ী প্রতিদান দেব’ বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেটি
মুনকার বা যঈফ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান,
হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেন, হাদীছটি জাবের (রাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য হওয়ার
সম্ভাবনাই বেশী। সম্ভবতঃ তিনি আহলে কিতাবদের নিকট থেকে বর্ণনাটি শুনেছিলেন। অতএব এ
ঘটনা বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের প্রয়োজন নেই (সিলসিলা যঈফাহ, ১৪/৮৭৯ পৃ.)।
প্রশ্ন (২৯/৪৬৯) : একটি হাদীছে
অসুখের জন্য সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা নাস, ফালাক্ব, বাক্বারা, আলে-ইমরান,
হাশর, মুমিনূন, জীন প্রভৃতি সূরার কিছু কিছু আয়াত পড়ার কথা এসেছে। উক্ত আয়াতসমূহ
দ্বারা কোন অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক করা যাবে কি?
-হাফীযুর রহমান, কুষ্টিয়া।
উত্তর : প্রথমতঃ
উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৯, আহমাদ
হা/২১২১২)। তবে পবিত্র কুরআনের যেকোন অংশ পড়ে ফুঁক দেওয়া যাবে।
কেননা কুরআনকে আল্লাহ ‘শিফা’ বা ‘আরোগ্য’ বলেছেন (বনু
ইসরাঈল ১৭/৮২)। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কালাম দ্বারা অমুসলিমকে ঝাড়-ফুঁক
করায় কোন বাধা নেই (বুখারী হা/৫৭৩৬)।
প্রশ্ন
(৩০/৪৭০) : পিতামাতার ঋণ থাকলে সন্তান কিভাবে তা শোধ করবে? নিজের উপার্জিত সম্পদ
থেকে সন্তান পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য কি?
-ছফীউল্লাহ, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর :
সন্তান পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। মীরাছের আলোচনা
শেষে আল্লাহ বলেন, মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর.. (নিসা ৪/১১)। তবে নিজ সম্পত্তি থেকে পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা
সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ
৫/২৩২)। যদিও ঋণ পরিশোধ করা পিতা-মাতার খেদমতের অংশ ও অফুরন্ত ছওয়াবের
কাজ হওয়ায় সন্তান নিজ দায়িত্বে তা পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কেননা ঋণ
অবশ্য পূরণীয় বিষয়। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয়, তবুও সে
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয় (নাসাঈ হা/৪৬৮৪; মিশকাত হা/২৯২৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, জনৈক
ব্যক্তি মারা গেলে মাত্র দুই দীনার ঋণ থাকায় রাসূল (ছাঃ) তাঁর জানাযা পড়াননি। তখন
আবু ক্বাতাদাহ উক্ত ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঋণগ্রস্ত
নির্ধারিত হ’ল এবং মাইয়েত দায়মুক্ত হ’ল? আবু ক্বাতাদাহ বলল, হ্যাঁ। তখন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়ালেন। একদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ দুই
দীনারের অবস্থা কি? আবু ক্বাতাদাহ বলল, মাত্র গতকালই লোকটি মারা গেছে। পরের দিন
রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে পুনরায় এলেন। আবু ক্বাতাদাহ বলল, আমি তার দুই দীনার পরিশোধ
করেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘এখন ঐ মাইয়েতের চামড়া ঠান্ডা হ’ল’ (আহমাদ হা/১৪৫৭৬, সনদ হাসান)। এতে বুঝা যায় যে, কেবল দায়িত্ব
নিলেই মাইয়েতের আযাব দূর হবেনা, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হবে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৫/২৮৫ ‘ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত
ব্যক্তি দায়মুক্ত হবেনা’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৩১/৪৭১) : প্রতিদিন সূরা
ইখলাছ ২০০ বার পড়লে ৫০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়। শুধু ঋণ মাফ হয় না হাদীছটি কি
ছহীহ?
- আব্দুল করীম, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/২৮৯৮; সিলসিলা যঈফাহ
হা/৩০০; মিশকাত হা/২১৫৮)। তবে সূরা ইখলাছ পাঠের অনন্য ফযীলত রয়েছে।
যেমন- রাসূল (ছাঃ) বলেন, সূরা ইখলাছ একবার পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠের সমান নেকী
পাওয়া যায় (মুসলিম, মিশকাত হা/২১২৭ ‘কুরআনের
ফাযায়েল’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৩২/৪৭২) : সন্তানের সকল
সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা পাবেন কি?
-তৈয়েবুর রহমান, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সন্তানের
সকল সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা সমানভাবে পাবেন মর্মে সুস্পষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায়
না। বরং যে সকল সৎকর্ম পিতা-মাতার মাধ্যমে বা প্রচেষ্টায় সন্তান শিখেছে তার ছওয়াব
পিতা-মাতা পাবেন (ইবনু তায়মিয়াহ, জামেঊল মাসাইল,
৪/২৬৬-২৭৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ যদি কাউকে সুপথ প্রদর্শন করে, তবে
সে ব্যক্তি তার অনুসারী সকলের ছওয়াবের সমান ছওয়াব পাবে। এতে তাদের নিজস্ব ছওয়াবে
কোনরূপ কম করা হবে না’ (মুসলিম হা/২৬৭৪; মিশকাত হা/১৫৮)।
এছাড়া সন্তানের বিশেষ কোন সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতাও পাবেন। কারণ সন্তান
পিতা-মাতারই উপার্জন (আবুদাউদ, তিরমিযী, মিশকাত
হা/২৭৭০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, কুরআনের ইলম
অর্জন করবে ও সে অনুযায়ী কাজ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাঁর পিতা-মাতাকে নূরের মুকুট
পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর মতো এবং তাঁর পিতা-মাতাকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে
মূল্যবান পোশাক পরানো হবে। তারা বলবেন, কিসের জন্য আমাদের এসব পরানো হয়েছে?
তাঁদেরকে বলা হবে, তোমাদের সন্তান কুরআন শিক্ষা করেছে, এজন্য তোমাদেরকে এভাবে
সম্মানিত করা হচ্ছে’ (হাকেম হা/২০৮৬; ছহীহুত তারগীব
হা/১৪৩৪; ছহীহাহ হা/২৮২৯)। অত্র হাদীছ থেকে বুঝা যায়, সন্তানের
তেলাওয়াতসহ অন্যান্য সৎকর্মে পিতা-মাতা উপকৃত হবেন। তবে শায়খ আলবানী (রহঃ) বিভিন্ন
হাদীছের সমন্বয়ে মন্তব্য করেন, নেক সন্তানের প্রতিটি সৎকর্মের ছওয়াব পিতা-মাতা
সমানহারে পাবেন (আহকামুল জানায়েয ১৭১ পৃ.)।
প্রশ্ন (৩৪/৪৭৪) : স্ত্রী যদি
বিবাহ পূর্ব জীবনে এক বা একাধিক জনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে থাকে এবং সেটা সে তার
পরিবার গোপন রাখে। একই সাথে বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীর হক্ব আদায় ও সম্মান
প্রদান করতে না চাইলে করণীয় কি?
-পাপেল*, গাইবান্ধা।
[* আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন!- (স. স.)]
উত্তর : এক্ষেত্রে
প্রথমে তাকে উপদেশ দিতে হবে (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮;
মিশকাত হা/৩২৩৮)। এতে সমাধান না হলে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের মাধ্যমে
মীমাংসা করতে হবে (নিসা ৪/৩৫; আহমাদ হা/৬৫৬)।
তাতে সমাধান না হ’লে বিছানা পৃথক করতে হবে (নিসা
৪/৩৪)। এতেও সমাধান না হ’লে তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করে দিতে হবে।
প্রশ্ন (৩৫/৪৭৫) : অনেক পাওনাদার
টাকা দিতে না পারলে যাকাত থেকে টাকা কেটে রাখতে অনুরোধ জানায়। তাছাড়া যে টাকা দেয়
তার নিয়ত থাকে, যদি কোন পাওনাদার টাকা দিতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে উক্ত
টাকা যাকাত থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে। এটা জায়েয হবে কি?
-ফরীদুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া, নাটোর।
উত্তর : উক্ত
টাকা যাকাত হিসাবে বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ যাকাতের বিধান হ’ল ধনীদের নিকট থেকে
নিয়ে তা গরীবদের মাঝে বিতরণ করা (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৭৭২)।
এখানে সেটি নেই। তাছাড়া ঋণগ্রহীতা এক্ষেত্রে যাকাতের হকদার নাও হ’তে পারে। আর যদি
হকদার হয়ও তবুও এ কাজটি মূলতঃ নিকৃষ্ট সম্পদই যাকাত হিসাবে দেওয়ার সমতুল্য হবে।
আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সেখান থেকে নিকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় করার সংকল্প করো না’ (বাক্বারাহ ২/২৬৭)। অতএব প্রয়োজনে ঋণগ্রহীতাকে আরো সময় দিতে
পারে অথবা হকদার হিসাবে তাকে যাকাতের সম্পদ থেকে দিতে পারে। পরে ঋণগ্রহীতা সেই
অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তা গ্রহণে কোন দোষ নেই (নববী,
আল-মাজমূ‘ ৬/২১০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৮০-৮১)।
প্রশ্ন (৩৬/৪৭৬) : লেখাপড়া ও
পরীক্ষা আরম্ভ করার সময় নির্দিষ্ট কোন দো‘আ আছে কি?
-হাসীবুর রশীদ, কাযীপুর, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : এর
জন্য নির্দিষ্টভাবে কোন দো‘আ হাদীছে বর্ণিত হয়নি। তবে যে কোন কাজ শুরুর পূর্বে
বিসমিল্লাহ পাঠ করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৮/৯২)।
আর পরীক্ষা যেহেতু একটি মনের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী বিষয় সেজন্য নিম্নোক্ত
দো‘আগুলো পাঠ করতে পারে-
‘রবিব যিদ্নী ইল্মা’। ‘রবিবশ্রহ্লী ছদ্রী, ওয়া
ইয়াসসিরলী আম্রী, ওয়াহ্লুল উক্বদাতাম মিল লিসা-নী ইয়াফক্বাহূ ক্বওলী’। আল্ল-হুম্মা
আইয়িদ্নী বেরূহিল কুদুস। রবিব ইয়াসসির অলা তু‘আসসির ওয়া তাম্মিম বিল খায়ের’।
অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক!
আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর!’ (ত্বোয়াহা ১১৪)। ‘হে
আমার পালনকর্তা! তুমি আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও’ ও ‘আমার কাজ সহজ করে দাও’ এবং
‘আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও’। ‘যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বোয়াহা ২৫-২৮)। ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পবিত্র আত্মা
দ্বারা শক্তি বৃদ্ধি কর’ (বুখারী হা/৪৫৩; মুসলিম
হা/২৪৮৫; মিশকাত হা/৪৭৮৯)। ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি সহজ করে দাও,
কঠিন করো না এবং কল্যাণের সাথে সমাপ্ত করে দাও’ (বায়হাক্বী
কুবরা হা/৭০০৩, ১১২৯৯)।
প্রশ্ন (৩৭/৪৭৭) : মা আমার কাছে ঢাকায় থাকেন। ছোটবেলা থেকেই আমি
মায়ের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। আমার বিয়ের পর দ্বন্দ্ব আরো বেড়ে গেছে। তার কারণে
আমার দাম্পত্য জীবনেও কিছু সমস্যা হয়। কিন্তু মা আমার বাসা ছাড়া কোথাও যেতে চান
না। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?
-কামরুন নাহার, মীরপুর, ঢাকা।
উত্তর : মা সন্তানের জন্য
অমূল্য নে‘মত। তাই তার পক্ষ থেকে কষ্ট পেলেও তা ছোট করে দেখতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ
করতে হবে। সাধ্যমত মাকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। কোন অবস্থায় তাকে পরিত্যাগ করা
যাবে না। কারণ পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০;
ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫০৭)। পিতা হ’লেন জান্নাতের মধ্যম দরজা। এক্ষণে তুমি
তোমার পিতা-মাতাকে হেফাযত কর অথবা পরিত্যাগ কর’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত হা/৪৯২৮; ছহীহাহ হা/৯১৪)। জান্নাত
পেতে গেলে সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলতে হবে ও তাদের ভরণপোষণ
করতে হবে (ইসরা ৩০; লোকমান ১৫)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতার উভয়কে কিংবা কোন একজনকে বৃদ্ধাবস্থায়
পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না; তার নাক নাক ধূলায় ধূসরিত হৌক! একথা
তিনি তিনবার বলেন’ (মুসলিম
হা/২৫৫১; মিশকাত হা/৪৯১২)। ইবনু ওমর (রাঃ) জনৈক কবীরা গুনাহকারীকে বলেন,
আল্লাহর কসম! তুমি মায়ের সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি
অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাক’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/০৮, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩৮/৪৭৮) : মেহরাবের দু’পাশের পিলারে মিনার বিশিষ্ট টাইল্স ব্যবহার করা
যাবে কি? উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় দোষের হবে কি?
-মুহাম্মাদ, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : ছালাতের মধ্যে মুছল্লীর
দৃষ্টি আকর্ষণকারী যেকোন ছবি মসজিদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ছালাতের মধ্যে (আল্লাহর প্রতি) নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১২১৬; মুসলিম হা/৫৩৮)। এক্ষণে যে সব মসজিদ মিনারের
ছবিসহ নির্মিত হয়েছে, সেগুলি থেকে এসব ছবি সরিয়ে দিতে হবে, যাতে ছালাতের মধ্যে তা
মুছল্লীর দৃষ্টি ছিনিয়ে না নেয় ও খুশূ-খুযূ বিনষ্ট না হয় (বুঃ মুঃ, মিশকাত হা/৭৫৭)। যদিও এরূপ
অবস্থায় ছালাত হয়ে যাবে এবং অবশ্যই ছবির দিকে না তাকিয়ে সিজদার স্থানে দৃষ্টি
নিবদ্ধ রাখতে হবে। আর মসজিদ অবশ্যই জাঁকজমক মুক্ত ও সাদামাটা হ’তে হবে (আবুদাঊদ হা/৪৪৮; নাসাঈ, মিশকাত হা/৭১৮-১৯)।
প্রশ্ন
(৩৯/৪৭৯) : আমাদের গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে গেছে।
এখানে সকলেই নাভির নীচে হাত বাঁধে। আমি যখন মসজিদে যাই তখন তারা আমাকে জোর করে
ওদের মতো ছালাত পড়তে বাধ্য করে। এখন আমার করণীয় কি?
-জাবের আহমাদ, মেলান্দহ, জামালপুর।
উত্তর : জামা‘আতের সাথে ছালাত
পড়বেন এবং সাধ্যমত ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক ছালাত আদায় করবেন। কারণ জামা‘আতে ছালাত
আদায়ে সাতাশ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১০৫২)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে
ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
যদি তারা বাধা দেয়, সেজন্য তারাই পাপী হবে। আর ধৈর্য ধারণ করলে আপনার নেকী বৃদ্ধি
পাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর
তা অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দাগণ ব্যতীত’ (বাক্বারাহ ২/৪৫)।
প্রশ্ন
(৪০/৪৮০) : তিরমিযী হা/২৫৭-এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
-রূহুল আমীন, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
উত্তর : হাদীছটি
হ’ল- আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদিন উপস্থিত লোকদের বললেন,
‘আমি কি তোমাদের নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ন্যায় ছালাত পড়ব? অতঃপর তিনি ছালাত
পড়লেন এবং তাতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন না’ অর্থাৎ
দু’হাত তুললেন না (তিরমিযী হা/২৫৭; আহমাদ হা/৪২১১;
আবুদাউদ হা/৭৪৮; মিশকাত হা/৮০৯)।
হাদীছটির সনদ ছহীহ হ’লেও তা
‘শায’ (অর্থাৎ অন্য ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীত)। সুতরাং তা আমলযোগ্য নয়। তাছাড়া
হাদীছটি জানাযার ছালাতের তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে বলে মুহাদ্দিছগণ মত প্রকাশ
করেছেন (আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১১৬)।
উল্লেখ্য যে, রুকূতে যাওয়া
ও রুকূ হ’তে ওঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন
ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে। একটি হিসাব মতে, ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর
হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’ ১০জন সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী (ফাৎহুল বারী ২/২৫৮) এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের
সংখ্যা অন্যূন চারশত (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, সিফরুস
সা‘আদাত ১৫ পৃ.)। ইমাম বুখারী বলেন, কোন ছাহাবী রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক
করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তিনি আরও বলেন ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছ সমূহের সনদের
চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই’ (ফাৎহুল বারী ২/২৫৭)।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে, রুকূতে যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে
ওঠাকালীন সময়ে... এবং ২য় রাক‘আত থেকে উঠে দাঁড়াবার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’
করতেন’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত
হা/৭৯৩-৯৪)। হাদীছটি বায়হাক্বীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এভাবেই
তাঁর ছালাত জারী ছিল, যতদিন না তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হন’। অর্থাৎ আমৃত্যু তিনি
রাফ‘উল ইয়াদায়েন সহ ছালাত আদায় করেছেন। হাসান বছরী ও হামীদ বিন হেলাল বলেন, সকল
ছাহাবী উক্ত তিন স্থানে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’ (বায়হাক্বী,
মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৮১৩, ‘মুরসাল হাসান’ ২/৪৭২, দ্র. ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ) ১০৮-১১১)।
[সংশোধনী : গত
আগস্ট’১৯ সংখ্যায় (১০/৪১০) প্রশ্নোত্তরে ‘কুরবানীর চামড়া, গোশত এবং কুরবানীর
প্রাণীর কোন অংশ বিক্রয় করা যাবে না’ বলা হয়েছে, যা ভুল। বরং সঠিক উত্তর হল, চামড়া
বিক্রি করে তার মূল্য ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে (মির‘আত ৫/১২১)।]
প্রশ্ন (১/১) : হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
-হাফীযুর রহমান, মাদারটেক, ঢাকা।
উত্তর : ‘হেযবুত তওহীদ’
বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ধর্মীয় সংগঠন। ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো
তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার (উইকিপিডিয়া)।
১৯৯৫ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার গ্রামের পন্নী পরিবারের সন্তান মোহাম্মাদ বায়াজিদ
খান পন্নী (১৯২৫-২০১২ খ্রি.) দলটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনীতিক, শিকারী ও
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। প্রথম যৌবনে তিনি এনায়াতুল্লাহ মাশরেক্বী (১৮৮৮-১৯৬৩
খ্রি.)-এর বৃটিশবিরোধী ‘খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক
সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরিবিলি জীবন-যাপন শুরু করেন। এক সময় তার ধারণা হয় যে,
বর্তমান ইসলাম বিকৃত ইসলাম। এজন্য তিনি মানুষকে ‘প্রকৃত ইসলাম’-এর পথ দেখাতে দলটির
সূচনা করেন। বর্তমান যুগে একশ’ বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে কেবল তার অনুসারী ‘পাঁচ
লক্ষ’ মানুষকে তিনি ‘প্রকৃত মুসলমান’ মনে করেন (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১১)। তিনি নিজেকে এই যুগের ইমাম বা
এমামুয্যামান হিসাবে দাবী করেন। এই দলের অনুসারীদের বিশ্বাস হ’ল, বায়াজিদ খান
পন্নীকে আল্লাহ বর্তমান যুগে সমগ্র মানবজাতির ত্রাতা হিসাবে পাঠিয়েছেন (হিজবুত তওহীদের গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৩)।
তাদের
মতে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর একশত বছরের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ
তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে (হেযবুত তওহীদের) এই পবিত্র কর্মসূচি থেকে মাহরুম, বঞ্চিত
রাখার পর আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয় মাননীয়
এমামুয্যামানকে বোঝার তাওফীক দিয়েছেন (ঐ,
পৃ. ৬৯, ৭১)।
তারা
অন্য মুসলমানদের সাথে ছালাত আদায় করে না এবং তাদের সাথে কোন ইবাদতেও অংশগ্রহণ করে
না। এই দলে যারা যুক্ত হবে তাদের শপথবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই দলভুক্ত যারা
নয় অর্থাৎ বাকি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট ও বিকৃত ইসলামের অনুসারী। অতএব
তাদের সাথে কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেবল এই আন্দোলনের সাথে যুক্তদের
সাথেই এবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে (ঐ,
পৃ. ৭৩)। এই দলটি আলেম-ওলামার প্রতি চূড়ান্ত বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তারা মনে
করে যে, হাদীছ, তাফসীর, ফিকহসহ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কেবল
অপ্রয়োজনীয়ই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির কারণ (ঐ, পৃ. ১৩; আকিদা, পৃ. ২৩)।
তারা
মনে করে যে, আল্লাহ ‘হেযবুত তওহীদ’কেই মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসাবে মনোনীত
করেছেন। কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন-মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক দিক-নির্দেশনা,
সত্যপথ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি নেই। ‘হেযবুত
তওহীদে’র মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম প্রচার হবে। এটা আল্লাহরই নির্দেশ (http://www.hezbuttawheed.org)।
পন্নী
আল্লাহর পক্ষ থেকে মু‘জেযা প্রাপ্তির দাবী করে প্রকারান্তরে নিজেকে নবী দাবী
করেছেন। যেমন তিনি নিজের একটি ১০ মিনিটের ভাষণকে আল্লাহর মু‘জেযা হিসাবে দাবী করেন
এবং প্রচার করেন যে, এই মু‘জেযার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে এবং হেযবুত তওহীদকে হক
হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হতে পারে? যে মো‘জেযা
তিনি নবীদের সময় ঘটাতেন একটা একটা করে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো‘জেযা ১০
মিনিটের মধ্যে ঘটিয়ে দিলেন’ (আল্লাহ
মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৯)।
তাদের
গঠনতন্ত্রে লেখা হয়েছে, ‘হেযবুত তওহীদে’র সবচেয়ে বড় মাইলফলক হচ্ছে, ২রা ফেব্রুয়ারী
২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান অলৌকিক ঘটনা (মো‘জেযা) সংঘটন করেন যার দ্বারা
তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা : হেযবুত তওহীদ হক (সত্য), এর ইমাম আল্লাহর
মনোনীত হক ইমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্য দীন
প্রতিষ্ঠিত হবে’। শুধু তাই নয় তারা এই ভাষণটিকে কুরআনের মর্যাদা দিয়ে বলে, ‘কোরআন
ও ইমামের এই ভাষণটি একই পর্যায়ভুক্ত। যারা বায়াজিদ খান পন্নীর উপর আল্লাহ প্রদত্ত
এই মো‘জেযায় বিশ্বাস করবে না এবং এতে সন্দেহ রাখবে, তারা কুরআনকে অবিশ্বাস করার মত
অপরাধী এবং তাদের জন্য উভয় জাহানে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’ (গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৬; আল্লাহ মো’জেজা
হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ১১-১৭, ৩৩, ৯৩; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ২৬-২৭)।
তাদের
মতে, হাদীছে বর্ণিত দাজ্জাল কোন প্রাণী নয়, বরং দাজ্জাল হ’ল ‘ইহুদী-খৃষ্টান
সভ্যতা’। আধুনিক যুগে এমামুয্যামান তথা পন্নী প্রথম এই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন
এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্ত্তবাদী ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই
হচ্ছে সেই দাজ্জাল, যেই দানব ৪৮১ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব-কৈশোর পার হয়ে
বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দন্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে।
আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভূ বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে
সিজদায় পড়ে আছে (দাজ্জাল?
ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৫; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ১৩)। তারা
নিজ দলের সদস্যদেরকে শেষ যামানায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যোদ্ধা ভাবে এবং তাদের পুরুষ
ও নারী সদস্যদের যথাক্রমে মোজাহিদ ও মোজাহিদা সম্বোধন করে। শুধু তাই নয়, মুজাহিদ
হিসাবে শাহাদত লাভের প্রমাণ হিসাবে তাদের কর্মীদের মৃত লাশ অন্যদের মত শক্ত বা
শীতল হয় না বলে তারা দাবী করে।
পন্নীর
ভাষ্যমতে, কোন ব্যক্তি ‘হেযবুত তওহীদে’ যোগ দিলেই দুই শহীদের মর্যাদা পাবে, যদি সে
শেষ পর্যন্ত থাকে। শুধু তাই নয়, ‘হেযবুত তওহীদে’ যারা সত্যিকারভাবে এসেছে তাদের
জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এখন কে কোন
জান্নাতে যাবে তা আমলের উপর নির্ভর করবে (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫)।
এই
দলের নিকট প্রকৃত ইসলাম হ’ল তাওহীদ ও জিহাদ। আর ইবাদত হ’ল খেলাফত। অর্থাৎ প্রকৃত
ইবাদত হ’ল আল্লাহর দেয়া দীন (জীবন-ব্যবস্থা) মোতাবেক তাঁর পক্ষ হয়ে শাসন করা।
ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত এগুলো প্রকৃত ইবাদতের কাজ নয় বরং এগুলো জীবন পরিচালনার
জন্য কিছু বিধান মাত্র (দাজ্জাল?
ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৮৭)। এই ইবাদত তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে তাদের আক্বীদা ও ঈমানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হ’ল জিহাদ। এমনকি ঈমানের মূল
শর্তই হ’ল জিহাদ (ইসলামের প্রকৃত
সালাহ, পৃ. ৪২)। তাই সশস্ত্র জিহাদ ত্যাগ করলে সে আর মুমিন থাকে না, বরং
দ্বীন থেকেই সে বহিষ্কৃত হয়ে যায়। ছালাতকে তারা মনে করেন জিহাদের প্রশিক্ষণ। এজন্য
তারা সামরিক কুচকাওয়াজের মত সটান ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নব্য এক ছালাত রীতি চালু
করেছে। তারা মনে করে, উম্মতে মুহাম্মাদী সম্পূর্ণ জাতিটাই সামরিক বাহিনী (ঐ, পৃ. ১৩, ১৯, ৩০-৩১, ৩৫)।
হজ্জ
সম্পর্কে তাদের ধারণা, এটি কোন ইবাদত নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য
মুসলমানদের বার্ষিক সম্মেলন। তাদের ভাষায়- ‘হজ্জ কোন তীর্থ যাত্রা নয়, আন্তর্জাতিক
কনফারেন্স। এসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত
হয়ে গেছে। এই বিকৃত আক্বীদায় হজ্জ আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার,
আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন,
সৃষ্টির প্রতি অণু-পরমাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট
করে দূরে যেতে হবে কেন?’
তারা
বলে, দাড়ি-টুপি-বোরকা ইত্যাদি ইসলামের কোন লেবাস নয়। তাদের আক্বীদা হ’ল, আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ) কোন ধর্মকেই বাতিল করেননি, বরং সবগুলোকে সংরক্ষণ ও সত্যায়ন করেছেন।
তাই সব ধর্মই সত্য। সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা (http://www.hezbuttawheed.org)।
তারা
ইতিমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পত্রিকা দৈনিক দেশের পত্র ও দৈনিক বজ্রকণ্ঠ প্রভৃতির
মাধ্যমে তাদের বিকৃত আক্বীদা ও আমল ব্যাপকভাবে প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের বহু
মানুষকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। অতএব এদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকা একান্ত যরূরী।
প্রশ্ন
(২/২) : কবরস্থানে নিজের কবরের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ক্রয় করা যাবে কি? যেন সে
স্থানে অন্য কারো কবর না হয়?
-রফীকুল ইসলাম, নোয়াপাড়া, যশোর।
উত্তর : নিজের
জন্য কবরের স্থান ক্রয় করে রাখা যায় এবং সেখানে দাফন করার অছিয়তও করা যায়। ওছমান,
আয়েশা ও ওমর বিন আব্দুল আযীয এ বিষয়ে অছিয়ত করেছিলেন (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৩/৪৪৩; ড. আব্দুল্লাহ সাহীবানী, আহকামুল
মাক্বাবেরাহ ফিশ শারী‘আহ ২৭-২৮ পৃ:)।
প্রশ্ন
(৩/৩) : বর্তমানে নারীদের বোরক্বা ও হিজাবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রং বেরঙের কাপড়
ব্যবহার করে আকর্ষণীয় করা হয়। এরূপ আকর্ষণীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত বোরক্বা ও হিজাব পরা
জায়েয হবে কি?
-মাহফূযা বেগম, গোবরচাকা, খুলনা।
উত্তর : বোরক্বার
জন্য নির্ধারিত কোন রঙ নেই। সেটা কালো বা সাদা বা যে কোন রঙের হ’তে পারে। তবে শর্ত
হ’ল তা যেন সাদাসিধে ও ঢিলেঢালা হয় এবং পরপুরুষের জন্য আকর্ষণ সৃষ্টিকারী না
হয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৭/১০৮-১০৯)।
সুতরাং বোরক্বা বা হিজাব এমন নকশাদার হবে না বা এতে এমন সাজ-সজ্জা জায়েয হবে না,
যা তাক্বওয়া পরিপন্থী এবং পর্দার উদ্দেশ্য বিরোধী। আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান!
আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং
অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহভীতির পোষাকই সর্বোত্তম (আ‘রাফ ৭/২৬)।
প্রশ্ন
(৪/৪) : সহো সিজদা দেওয়ার বিধান কি? কেউ যদি তা দিতে ভুলে যায় এবং অনেকদিন পর তা
স্মরণ হয় তার জন্য করণীয় কি? সহো সিজদা সালাম ফিরানোর পূর্বে না পরে দেওয়া উত্তম?
-জাহাঙ্গীর আলম, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর : রাক‘আত
সংখ্যা কম হ’লে বা বেশী হ’লে অথবা কত রাক‘আত হয়েছে তা নির্ণয় করতে না পারলে কিংবা
তাশাহহুদ ছুটে গেলে সহো সিজদা দেয়া ওয়াজিব (মুসলিম
হা/৫৭১; ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৮/২৩)। শাওকানী বলেন, ওয়াজিব
ছাড়া পড়লে সহো সিজদা ওয়াজিব হবে, সুন্নাত ছাড়া পড়লে সহো সিজদা সুন্নাত হবে (আস-সায়লুল জার্রার ১/২৭৪)। যদি সহো সিজদা দিতে ভুলে যায় তবে
পরে স্মরণ হ’লেই সহো সিজদা দিবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৫;
উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৫৩৭)। আর সহো সিজদা সালামের পূর্বে ও পরে
উভয়ই জায়েয আছে। তবে পূর্বে দেওয়াই উত্তম (ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তাহমীদ ১০/২০১-২০৪;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/১৪৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫২-১৫৩ পৃ.)।
প্রশ্ন
(৫/৫) : আমার আশুরার ছিয়াম পালনের খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হায়েযের কারণে তা পালন
করতে পারিনি। এক্ষণে এর কাযা আদায় করতে পারব কী?
-জেসমীন খাতূন, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : আশূরার
ছিয়াম নফল। আর সাধারণভাবে কোন নফল ইবাদতের কাযা আদায় করার বিধান নেই। অতএব হায়েযা
মহিলা যদি পূর্ব থেকে অভ্যস্ত থাকে এবং নেক নিয়ত রাখে, তবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে
নেক নিয়তের কারণে পূর্ণ ছওয়াব প্রদান করবেন (নিসা
৪/১০০; হাফেয ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/১৩৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৪৩)।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানুষ রোগে অসুস্থ হ’লে অথবা সফরে থাকলে তার আমালনামায় তাই
লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হ’ত’ (বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪)।
প্রশ্ন
(৬/৬) : সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমাবেশ ক্লাসের সময় মেয়েদের দ্বারা কুরআন তেলাওয়াত
করানো যাবে কি?
উত্তর : প্রথমতঃ
সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা থেকে বিরত থাকা যরূরী। কারণ এইসব প্রতিষ্ঠানে
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের পর্দা রক্ষা করতে পারে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/১৫৬)। দ্বিতীয়তঃ কুরআন তেলাওয়াত
যেহেতু কোমল কণ্ঠে করতে হয়, ফলে এতে দুর্বল ঈমানের লোকেরা আসক্ত হ’তে পারে (আহযাব ৩৩/৩২)। সুতরাং নারী-পুরুষ মিশ্রিত অনুষ্ঠানে বালেগা
নারীর তেলাওয়াত জায়েয নয় (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪/৯১;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৮৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৯)।
প্রশ্ন
(৭/৭) : ইসলামে রূপচর্চা করার বিধান কি? কালো চেহারাকে ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার
করা যাবে কি? এটা কি সৃষ্টির পরিবর্তনের পর্যায়ভুক্ত গুনাহ?
উত্তর : দেহের
কোন অঙ্গের পরিবর্তন না ঘটিয়ে রূপচর্চায় কোন দোষ নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন (মুসলিম হা/৯১; মিশকাত হা/৫১০৮)।
রং ফর্সাকারী ক্রীম প্রভৃতি সৃষ্টির স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায় না। অতএব এতে বাধা নেই।
তবে প্লাস্টিক সার্জারী বা অন্য কোন ঔষধের মাধ্যমে শরীরের রঙে স্থায়ী পরিবর্তন
ঘটানো যাবে না (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব
২২/২)। অনুরূপভাবে ভ্রূ উত্তোলন বা চিকন করা, পরচুলা ব্যবহার করা ও
অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করা যাবে না (নববী,
শরহ মুসলিম ১৩/১০৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে পরচুলা লাগিয়ে নিল এবং যে
লাগিয়ে দিল উভয়ের উপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৩০)। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেন এমন সব নারীর উপর যারা অপরের অঙ্গে উল্কি
করে এবং নিজের অঙ্গেও করায়, যারা কপাল বা ভ্রূর চুল উপড়িয়ে ফেলে, যারা সৌন্দর্যের
জন্য দাঁত সরু ও এর ফাঁক বড় করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে পাল্টিয়ে দেয়’। এসময়
জনৈকা মহিলা ইবনে মাসঊদের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি শুনতে পেলাম আপনি নাকি এরূপ
এরূপ নারীদের লা‘নত করেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কেন তাদের উপর লা‘নত করব না,
যাদের উপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লা‘নত করেছেন? (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত ‘পোষাক’ অধ্যায় হা/৪৪৩১)।
প্রশ্ন
(৮/৮) : ছাদাক্বাতুল ফিতর বণ্টনের খাত কোনগুলো? এটি কি কেবল ফকীর-মিসকীনদের জন্য
খাছ?
উত্তর : একদল
বিদ্বানের মতে, ছাদাক্বাতুল ফিতরের হকদার কেবল ফকীর ও মিসকীনরা। কারণ ইবনু আববাস
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন ছায়েমকে অনর্থক কথা ও অশ্লীলতা
থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্যস্বরূপ (আবূদাঊদ হা/১৬০৯; মিশকাত হা/১৮১৮; ছহীহুত তারগীব হা/১০৮৫)।
ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, শাওকানী, শায়খ উছায়মীন, শায়খ বিন বায প্রমুখ এই মত
পোষণ করেছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৫/৭১; যাদুল
মা‘আদ ২/২২; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২০২)। তবে জুমহূর বিদ্বান সূরা তাওবার
৬০ নং আয়াতে বর্ণিত ছাদাকার ৮টি খাতেই ফিৎরা বণ্টন করাকে জায়েয বলেছেন। কেননা
ফিৎরাও যাকাত ও ছাদাকার অন্তর্ভুক্ত। তবে ফকীর-মিসকীনকে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে
হবে (নববী, আল-মাজমু‘ ৬/১৮৬; ইবনু কুদামা,
আল-মুগনী ৩/৯৮)।
প্রশ্ন
(৯/৯) : মসজিদে জমি দানকারীর নাম লেখা যাবে কি?
-রেযাউল করীম, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : জমিদাতার
নাম মসজিদে না লেখাই উত্তম। কারণ এতে রিয়া বা লোক দেখানো আমল হয়ে থাকে। ফলে দাতা
ছওয়াব থেকে বঞ্চিত হ’তে পারেন। তবে রিয়া অথবা আত্মপ্রচার ব্যতীত কেবল মানুষের
অবগতি বা পরিচিতির উদ্দেশ্যে নাম লেখা যেতে পারে। যেমনভাবে মসজিদের পরিচয়সূচক কারো
নামে মসজিদের নামকরণ করা যায়। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোত্রের
নামে মসজিদের নামকরণ করা হ’ত যেমন মসজিদে মু‘আবিয়া মসজিদে বনু যুরায়েক্ব
ইত্যাদি (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১/৫১৫; নববী,
আল-মাজমূ‘ ২/২০৮)।
প্রশ্ন
(১০/১০) : নতুন বাড়ী উদ্বোধনকালে বিশেষ কোন দো‘আ আছে কি? এসময় আলেম-ওলামা বা আত্মীয়-স্বজনদের
ডেকে দো‘আর অনুষ্ঠান বা ভোজসভা করা যাবে কি?
-মুখলেছুর রহমান, সাপাহার, নওগাঁ।
উত্তর : বিসমিল্লাহ
বলেই নতুন বাড়িতে প্রবেশ করবে। তাছাড়া বাড়ি উদ্বোধনকালে বিশেষ কোন দো‘আ বর্ণিত
হয়নি। তবে আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়াস্বরূপ নিম্নের দো‘আসমূহ পাঠ করা যায়। যেমন مَا شَاءَ اللهُ لَا قُوَّةَ إِلا بِاللهِ ‘মা-শা’আল্লাহ লা-কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (আল্লাহর
ইচ্ছাতেই হয়েছে। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কোন শক্তি নেই) (কাহফ ৩৯, আহমাদ হা/৮৪২৬)। এছাড়াও পড়া যেতে পারে الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ ‘আলহাম্দু লিল্লাহিল্লাযী বিনি‘মাতিহি তাতিম্মুছ ছ-লিহা-তু’ (সে
আল্লাহর প্রশংসা, যাঁর অনুগ্রহে সৎ কার্য সুসম্পন্ন হয়) (ইবনু মাজাহ হা/৩৮০৩, সনদ হাসান)। এছাড়া যাবতীয় অনিষ্ট থেকে
আশ্রয় চেয়ে পড়া যায় أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ، ‘আঊ-যু বিকালিমাতিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া
মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন’ (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার
দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হ’তে পানাহ
চাচ্ছি) (বুখারী হা/৩৩৭১)। অনুরূপভাবে
শয়তান বিতাড়নের জন্য সূরা বাক্বারাও পাঠ করা যায় (মুসলিম
হা/৭৮০)। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ নতুন বাড়ি উদ্বোধনকালে
আলেম-ওলামা, নেককার ব্যক্তি বা পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত করে খাওয়ানো যায়। রাসূল
(ছাঃ) সফর থেকে মদীনায় ফিরলে একটি উট বা গাভী যবেহ করতেন এবং অভ্যাগতরা তাতে
অংশগ্রহণ করতেন (বুখারী হা/৩০৮৯; ইবনু কুদামাহ,
আল-কাফী ৩/১২০, মুগনী ৭/২৮৬; মির‘আত ৭/৪১৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৮/২০৬;
ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/২১৪)। তবে নতুন বাড়ি উদ্বোধনের নামে বিশেষ
দো‘আর অনুষ্ঠান, মীলাদ প্রভৃতি আয়োজন করা বিদ‘আত।
প্রশ্ন
(১১/১১) : আমার একটি পালক পুত্র রয়েছে। সে ও তার পরিবার ঈদুল আযহায় একই কুরবানীতে
আমাদের সাথে শরীক হ’তে চায়। এটা কি জায়েয হবে? একই পরিবারভুক্ত পরিবারের সদস্যরা
কি তাদের কুরবানীর টাকা একত্র করে একসাথে কুরবানী করতে পারে?
-মামূনুর রশীদ, সাবগ্রাম, বগুড়া।
উত্তর : পালক
পুত্র পরিবারের সদস্য নয় এবং সে মাহরামও নয়। সেজন্য সে সামর্থ্যবান হ’লে আলাদাভাবে
কুরবানী করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৩৬০)।
আর একান্নবর্তী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সদস্যরা যদি আলাদাভাবে আয় করে এবং
সামর্থ্যবান হয়, তবে প্রত্যেকে আলাদাভাবে কুরবানী করতে পারে অথবা পরিবার প্রধানের
নিকট সকলের অর্থ জমা করেও একসাথে কুরবানী করতে পারে। এটিই তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে
যাবে। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী
রয়েছে’ (আবূদাঊদ হা/২৭৮৮; আহমাদ হা/১৭৯২০; মিশকাত
হা/১৪৭৮)।
প্রশ্ন
(১২/১২) : ‘যে গোত্রের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী রয়েছে সেই গোত্রে রহমত
নাযিল হয় না’-মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-মুহাম্মাদ আজমল, ভূগরইল, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আলবানী, যঈফাহ হা/১৪৫৬)।
তবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবন ও জীবিকায় বরকত হয় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮)। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম (বুখারী হা/৪৯; মুসলিম হা/১৩)। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায়
দ্রুত ছওয়াব লাভ হয় (ইবনু হিববান হা/৪৪০; ছহীহাহ
হা/৯৭৮)। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯২২)। আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্নকারী দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি প্রাপ্ত হবে (আবূদাঊদ
হা/৪৯০২; ছহীহাহ হা/৯১৮) ইত্যাদি।
প্রশ্ন
(১৩/১৩) : বছরের সর্বোত্তম দিন কোনটি, কুরবানীর দিন না-কি আরাফার দিন?
-আরীফুল ইসলাম, বদরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর : বছরের
সর্বশ্রেষ্ঠ দিন কুরবানীর দিন। কারণ কুরবানীর দিনই হজ্জে আকবরের দিন। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন (আহমাদ হা/১৯০৯৮; হাকেম হা/৭৫২২; মিশকাত হা/২৬৪৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৬৪)।
তিনি আরো বলেন, ‘কুরবানীর দিন হচ্ছে এই মহান হজ্জের দিন’ (বুখারী হা/১৭৪২; মুসলিম হা/১৩৪৭; আবূদাঊদ হা/১৯৪৫)। আরাফার
দিন শ্রেষ্ঠ দিন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি বাতিল (যঈফাহ
হা/২০৭)। উল্লেখ্য যে, সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুম‘আর দিন। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘জুম‘আর দিন সকল দিনের নেতা, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান।
এ দিনটি আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি
বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি
আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ
দিনে এমন একটা মুহূর্ত আছে যে সময় বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা
কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’ (ইবনু মাজাহ হা/১০৮৪; ছহীহাহ হা/১৫০২)। এক্ষণে সমন্বয়ের
প্রশ্নে ইমাম ইবনু তায়মিয়াকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিদ্বানদের ঐক্যমতে
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল জুম‘আর দিন। আর বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হ’ল কুরবানী দিন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৮৮)।
প্রশ্ন
(১৪/১৪) : ঘুম, পড়াশুনা, রান্না-বান্না ইত্যাদি কাজের সময় অডিও কুরআন চালু করে
রাখা জায়েয হবে কি? কেননা এসময় কখনো মনোযোগ থাকে আবার কখনো থাকে না।
-মুস্তাফীযুর রহমান, ঢাকা।
উত্তর : এসকল
অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতের অডিও চালু রাখা জায়েয। যেকোন অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত
শ্রবণ করলে ছওয়াবপ্রাপ্ত হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে তাতে অমনোযোগিতা না আসে
এবং কুরআনের প্রতি অবমাননা না হয় (আ‘রাফ ৭/২০৪; ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাক্বা
৩/৪৩৭; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৪/১৪৬)।
প্রশ্ন (১৫/১৫) : বৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ঈদের জামা‘আত মসজিদে
হয়েছে। ফলে পূর্বে পুরুষদের জামা‘আত ও পরে মহিলাদের জামা‘আত হয়। এক্ষণে মহিলাদের
জামা‘আতের পূর্বে কুরবানী করা যাবে কি?
-রবীউল ইসলাম, মাকলাহাট, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : পুরুষদের ঈদের জামা‘আত
সম্পন্ন হ’লেই কুরবানী করা যাবে। উক্ত স্থানে মহিলাদের ঈদের জামা‘আত অতিরিক্ত।
অতএব সেজন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন
(১৬/১৬) : কুরবানীর পশুর চামড়া ছাদাক্বা করা কি আবশ্যিক? উক্ত চামড়া খাওয়া যাবে
কি?
-এ.কে.এম শামসুর রহমান, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : কুরবানী
চামড়া দ্বারা কুরবানী দাতা উপকৃত হ’তে পারবেন অথবা ফকীর-মিসকীনকে ছাদাক্বা করে
দিতে পারবেন। কিন্তু এর মূল্য ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি
কুরবানীর চামড়া বিক্রয় করল (অর্থাৎ বিক্রয়লব্ধ মূল্য ভোগ করল) তার কুরবানী হ’ল
না (হাকেম, বায়হাক্বী; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১১৮)।
যদি ছাদাক্বার সুযোগ না থাকে, তবে নিজে যে কোন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হ’তে
পারবে (আল-মাজমূ‘ ৮/৪২১)। আলক্বামা ও
মাসরূক (রহঃ) কুরবানীর চামড়াকে পাকিয়ে মুছল্লা বানিয়ে তাতে ছালাত আদায় করতেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৪১০৪-০৫)।
আর যবহকৃত হালাল পশুর
প্রবাহিত রক্ত ব্যতীত সবই হালাল (আন‘আম ৬/১৪৫)। হানাফী
কিতাব সমূহে আরো ছয়টি বস্ত্ত হারাম বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু সেগুলি সব ক্বিয়াসী বা
অনুমান নির্ভর। সুতরাং হালাল পশুর চামড়া যদি কেউ খেতে চায়, খেতে পারে। তবে
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সবকিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো না (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ
হা/২৫০)। কেননা এতে খাদ্য গ্রহণের লক্ষ্য ব্যাহত হয় (ফৎহুল ক্বাদীর বাক্বারাহ ২/১৬৮; মায়েদাহ ৫/৮৮; আনফাল ৮/৬৯)।
প্রশ্ন
(১৭/১৭) : এ বছর কুরবানীর চামড়ার মূল্য অল্প হওয়ায় অনেকে তা ফেলে দিয়েছে বা মাটিতে
পুঁতে ফেলেছে। এ কাজ কি সঠিক হয়েছে?
-এম, এ, মান্নান, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : কোন
হালাল জিনিস অপচয় করা সিদ্ধ নয় (বনু ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)।
অতএব কুরবানীর চামড়া এভাবে নষ্ট করা মোটেও ঠিক হবে না। বরং অল্প দামে হ’লেও বিক্রয়
করা বা সরাসরি ফকীর ও মিসকীনকে দান করতে হবে। নতুবা কমপক্ষে নিজে ব্যবহার করে
উপকৃত হ’তে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৮/৪১৫;
যাকারিয়া আনছারী, আসনায়াল মাতালিব ১/৫১৫)।
প্রশ্ন
(১৮/১৮) : আমার জমির সামনে সরকারী জমি রয়েছে। আমি উক্ত জমিতে চাষাবাদ করি এবং এর
ফসল ভোগ করি। এতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। সরকারের কাছ থেকে জমি ইজারা
নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তাতে ঘুষ দিতে হয় এবং লম্বা আইন-কানূনের ফাঁদে পড়তে হয়।
এক্ষণে আমি উক্ত জমির ফসল ভোগ করতে পারব কি?
-আব্দুল্লাহ, মাইজদি, নোয়াখালী।
উত্তর : সরকারের
বাধা না থাকলে উক্ত ভূমি চাষাবাদ করে তার ফসল ভোগ করা জায়েয। কারণ এধরনের জমি
হাদীছে ঘোষিত মৃত জমির মত। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ
করবে সেটি তার (আবূদাঊদ হা/৩০৭৪; ছহীহুল জামে‘
হা/৫৯৭৫)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে লোক মালিকবিহীন এমন কোন যমীন আবাদ
করে, সে-ই তার হকদার (আহমাদ হা/২৪৯২৭; মিশকাত হা/২৯৯১)।
উল্লেখ্য যে, সরকারী খাস জমি অনাবাদী থাকলেও তা মালিকানা বিহীন জমির মত নয়। অতএব
সরকার যে কোন সময় মালিকানা দাবী করলে তা ছেড়ে দিতে হবে অথবা সরকারের নিকট থেকে
নিয়মমাফিক ইজারা নিতে হবে (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৫/৪১৭)।
প্রশ্ন
(১৯/১৯) : সরকারী বিধি অনুযায়ী চাকুরীর বয়সসীমা ৫৯ বছর। কিন্তু সার্টিফিকেটে মূল
বয়সের চেয়ে আমার বয়স ৫ বছর কম লিখিত রয়েছে, যা আমি সম্প্রতি জানতে পেরেছি। এক্ষণে
অতিরিক্ত পাঁচ বছর চাকুরী করা কি আমার জন্য বৈধ হবে এবং এ সময়ে প্রাপ্ত বেতন কি
আমার জন্য হালাল হবে?
উত্তর : সরকারী
নিয়ম-কানূনের কারণে কিংবা ব্যক্তির মূল বয়স সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইতিপূর্বে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হ’ত। অতএব সরকার নির্ধারিত নিয়মেই
উক্ত অতিরিক্ত পাঁচ বছর চাকুরী করা বৈধ হবে এবং এর বেতন নেওয়াও বৈধ হবে
ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া উক্ত বেতন ব্যক্তির পরিশ্রমলব্ধ আয়ও বটে। তবে বর্তমানে
জন্মনিবন্ধন সনদের নীতিমালা তৈরী হওয়ার পর জেনে-শুনে কেউ যদি চাকুরীর বয়স বৃদ্ধির
উদ্দেশ্যে সার্টিফিকেটে বয়স কম-বেশী করে, তবে সেটা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার শামিল
হবে, যা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত
নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০)।
প্রশ্ন (২০/২০) : কোন প্রাণীর ছবি পিছন থেকে আঁকা কি জায়েয? অর্থাৎ
প্রাণীর মাথা যদি বিপরীতমুখী হয় এবং সুস্পষ্ট বোঝা না যায়, তা কি নাজায়েয হবে?
-আব্দুল গাফফার
পুরাতন বাজার, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : পিছন থেকে মানুষের
প্রতিকৃতি অঙ্কনে যদি চোখ, মুখ ও নাকের আকৃতি বোঝা না যায় তবে তা জায়েয হবে। কেননা
মাথা না থাকলে তা ছবি হিসাবে গণ্য হয় না (ইবনু কুদামাহ. মুগনী ৮/১১১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/২৭৮-৭৯)।
জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘সুতরাং ঐ প্রতিকৃতিগুলোর মাথা
কেটে ফেলুন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে, তা কাটা হ’লে তখন তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে
যাবে’ (আবূদাঊদ হা/৪১৫৮; মিশকাত
হা/৪৫০১; ছহীহাহ হা/৩৫৬)। তিনি আরো বলেন, ‘ছবি হ’ল মাথা। মাথা যখন কেটে
ফেলা হবে তখন সেটি ছবি থাকে না’ (ছহীহুল
জামে‘ হা/৩৮৬৪; ছহীহাহ হা/১৯২১)। তবে স্মর্তব্য যে, অপ্রয়োজনে কোন প্রাণীর
ছবি অাঁকা জায়েয নয়।
প্রশ্ন
(২১/২১) : হারানো বস্ত্তর সন্ধান লাভ, রোগের কারণ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত দিক
নির্দেশনা ইত্যাদি কাজে জিনের সহযোগিতা নেওয়া যাবে কি?
-ইমরান হোসাইন, বিরল, দিনাজপুর।
উত্তর : জিন
অদৃশ্য জাতি, যাদের দেখা যায় না। তারা যেকোন সময় একটি সত্যের সাথে বহু মিথ্যা
মিলিয়ে মানুষকে শিরকে লিপ্ত করতে পারে। এছাড়া তাদের মিথ্যার ফলে মানব সমাজে
অশান্তি সৃষ্টি হ’তে পারে। অতএব উক্ত বিষয়সমূহে জিনের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয হবে
না। ইমাম আহমাদ, শায়খ বিন বায, ছালেহ ফাওযানসহ আধুনিক যুগের ওলামায়ে কেরাম অনুরূপ
মত প্রকাশ করেছেন (ইবনুল মুফলেহ, আল-আদাবুশ-শারঈয়া
১/২১৮-১৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৬০৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪/১৮;
আল-মুনতাক্বা ১/৩৮৮; আল-ফাতাওয়ায যাহাবিয়াহ ১৯৮ পৃ.)। কারণ আল্লাহ
বলেছেন, ‘আর কিছু মানুষ কোন জিনের কাছে আশ্রয় চাইত। তাতে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা
আরও বাড়িয়ে দিত’ (জিন ৭২/০৬)। তবে
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, সৎ জিনদের থেকে সহায়তা নেওয়া যায় যেমন সৎ
মানুষের নিকট থেকে সহায়তা নেওয়া যায় (মাজমূউল ফাতাওয়া ১৩/৮৭)।
প্রশ্ন
(২২/২২) : চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক সময় রোগীকে পেথিড্রিন ও মরফিনের মত মাদকদ্রব্য
দিতে হয়। বাধ্যগত অবস্থায় এসব দ্রব্য ব্যবহারে কোন বাধা আছে কি?
-ডা. আশরাফ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর।
উত্তর : বাধ্যগত
অবস্থায় ঔষধ হিসাবে এধরনের মাদকদ্রব্য রোগীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৫/৭৭-৭৮)। তবে ওলামায়ে কেরাম এ
ব্যাপারে কিছু শর্ত আরোপ করেছেন। যেমন (১) যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকু ব্যবহার
করবে (২) দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক রোগীর উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন থাকতে
হবে (৩) এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা যাবে, যখন তা ব্যতীত নিরাময়ের বৈধ কোন ব্যবস্থা
থাকবে না (৪) এগুলো ব্যবহার করাতে উপকারের চেয়ে বেশী বা সমান ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা
থাকলে তা ব্যবহার করা যাবে না (ড. হাসান ফাকী, আহকামুল আদভিয়া ফী
শরী‘আতিল ইসলামিয়াহ ২৭৬ পৃ.)।
প্রশ্ন
(২৩/২৩) : ঋতুবতী মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিতে পারবে কি? বিশেষতঃ মাইয়েত যদি তার
ব্যাপারে অছিয়ত করে যায়।
-হাবীবুর রহমান, খড়িবাড়ি, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : ঋতুবতী
মহিলা কোন মহিলা মাইয়েতকে গোসল দেওয়াতে পারবে। এ ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নিষেধাজ্ঞা
নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/৩৬৯)।
প্রশ্ন
(২৪/২৪) : যাকাত বণ্টনের আটটি খাতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক কি?
-ওয়ালিউল্লাহ, কাটাখালী, রাজশাহী।
উত্তর : কুরআনে
বর্ণিত আটটি খাত আল্লাহ ধারাবাহিকতার জন্য উল্লেখ করেননি। অতএব কেউ যদি প্রথমে
ঋণগ্রস্তকে দিয়ে সূচনা করে তাতে কোন দোষ হবে না। বণ্টনকারী যেখানে অগ্রাধিকারের
ভিত্তিতে প্রদান করতে চাইবে, সেখানেই প্রদান করবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৫৬)।
প্রশ্ন
(২৫/২৫) : জিন জাতির কি বংশ বিস্তার হয়? তাদের স্ত্রী ও সন্তান আছে কি?
-হাফেয লুৎফর রহমান, আমচত্বর, রাজশাহী।
উত্তর : জিন
জাতি বিবাহ করে এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তবে তারা কিভাবে বিবাহ করে ও
সন্তান-সন্ততি হয় তা অজ্ঞাত। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে
(শয়তান) ও তার বংশধরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু (কাহফ ১৬/৫০)। অত্র আয়াতে স্পষ্টভাবে জিনদের সন্তানের কথা বলা
হয়েছে। আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ
বা জিন স্পর্শ করেনি’ (আর-রহমান ৫৫/৫৬)।
ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, জিনদের স্ত্রী ও
সন্তান-সন্ততি রয়েছে (আল-ফাতাওয়াল হাদীছিইয়াহ ৬৬ পৃ:)।
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, অত্র আয়াতে দলীল রয়েছে যে, ঈমানদার জিনেরা জান্নাতে প্রবেশ
করবে। যামরাহ বিন হাবীবকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, জিন কি জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি
বললেন, হ্যাঁ। সেখানে তারা নারী জিনকে বিবাহ করবে। যেমন ঈমানদার পুরুষেরা তাদের
নারীদের বিবাহ করবে’ (ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, জিন জাতি তিন প্রকার। একপ্রকার জিনের ডানা আছে, তারা শূন্যে উড়ে
বেড়ায়। দ্বিতীয় প্রকারের জিন সাপ ও কুকুরের আকৃতি ধারণ করে। আর তৃতীয় প্রকারের জিন
কোন এক নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে অন্যত্র চলেও যায় (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬১৫৬; মিশকাত হা/৪১৪৮; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৩৮৬)।
প্রশ্ন
(২৬/২৬) : মৃত প্রাণীর চামড়া দ্বারা উপকৃত হওয়া যাবে কি?
-আতীকুল ইসলাম, বি,এম কলেজ রোড, বরিশাল।
উত্তর : মৃত
প্রাণীর চামড়াকে যদি প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাহ’লে তা দ্বারা উপকার গ্রহণ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/৯৪; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
১/৭৪-৭৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৯/৬৫৯)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘চামড়া
যখন পাকা (দাবাগাত) করা হয়, তখন তা পবিত্র হয়ে যায়’ (মুসলিম
হা/৩৬৬; মিশকাত হা/৪৯৮)।
মৃত প্রাণীর চামড়া দ্বারা
উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (আবূদাউদ হা/৪১২৭; আহমাদ হা/১৮৮০৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা/১২৭৮, সনদ ছহীহ) জুমহূর
বিদ্বানগণের মতে তা অপ্রক্রিয়াজাত চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
প্রশ্ন
(২৭/২৭) : অনেকে বলে থাকেন, মুহাররম মাসে বিবাহ -শাদী করা অশুভ ও বড় ক্ষতির কারণ।
একথার সত্য কি?
-আজীবর রহমান, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : মুহাররম
মাসে বিবাহ-শাদীতে কোন ক্ষতি বা অশুভ লক্ষণ নেই। বরং শী‘আ রাফেযীরা এই মাসে হুসাইন
(রাঃ)-এর শাহাদত উপলক্ষে শোক প্রকাশার্থে বিবাহ-শাদী হারাম বা অপসন্দনীয় ঘোষণা
করেছে। এটা সুস্পষ্ট অপসংস্কৃতি এবং সুন্নাহ বিরোধী ধারণা। যেমন জাহেলী যুগে
শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদী করাকে অশুভ মনে করা হ’ত। হযরত আয়েশা (রাঃ) এই ধারণাকে
খন্ডন করেছেন এই মর্মে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং
এ মাসেই আমার সাথে বাসর করেছেন। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী
স্ত্রী আর কে আছে? (মুসলিম হা/১৪২৩; মিশকাত হা/৩১৪২;
আল-বিদায়াহ ৩/২৫৩)।
প্রশ্ন
(২৮/২৮) : মাক্বামে মাহমূদ কি? এটা কি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খাছ? কোন ব্যক্তি এই
অবস্থান লাভের জন্য দো‘আ করতে পারবে কি?
-জাহাঙ্গীর আলম, আজীজুল হক কলেজ, বগুড়া।
উত্তর : ‘মাক্বামে মাহমূদ’
বা প্রশংসিত স্থান হ’ল এমন একটি স্থান যেখানে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মতের
জন্য সুফারিশ করবেন (বুখারী হা/৭৪৪০; মুশকিলুল আছার
হা/৮৫০; ছহীহাহ হা/২৩৬৯)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর রাত্রির কিছু অংশে
তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক
তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (ইসরা ১৭/৭৯)। এই
স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং এই স্থানকেই
সুফারিশ বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাক্বামে মাহমূদ
হচ্ছে সুফারিশ’ (আহমাদ হা/১০২০৩; সিলসিলা ছাহীহাহ
হা/২৩৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭২১)। তিনি আরো বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে
মানুষকে উঠানো হবে। আমি ও আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর থাকব। আমার প্রতিপালক
আমাকে সবুজ আলখেল্লা পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন আমি
আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হচ্ছে মাক্বামে মাহমূদ’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৭০, ২৪৬০, ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৪৪৫)।
উক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সুফারিশের জন্য আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে পাঠাবেন। আর সে
স্থানটিই মাক্বামে মাহমূদ। উক্ত স্থানটি কেবল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্য খাছ, অন্য
কারু জন্য নয়। অতএব উক্ত স্থান নিজে লাভ করার জন্য দো‘আ করার সুযোগ নেই। বরং
আযানের দো‘আয় ‘ওয়াব‘আছহু মাক্বামাম মাহমূদা নিল্লাযী ওয়াআদতাহ’ বাক্য দ্বারা আমরা
আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত এই প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ যেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে তাঁর
প্রতিশ্রুত এই স্থানটি প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযানের এই
দো‘আটি পাঠ করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’ (বুখারী হা/৬১৪)।
প্রশ্ন
(৩০/৩০) : ছালাতের সকল দো‘আ আরবী ভাষায় পড়তে হবে, মাতৃভাষায় পড়লে ছালাত কবুলযোগ্য
হবে না- একথা সঠিক কি? এর পিছনে দলীল কি?
-জাহিদ আলী, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর।
উত্তর : ছালাতের
ভাষা আরবী। তাই দো‘আও আরবীতেই পাঠ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমাদের এ ছালাতে
মানুষের কথাবার্তা সিদ্ধ নয়। এটা হ’ল তাসবীহ, তাকবীর এবং তেলাওয়াতে কুরআন’ (মুসলিম হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৯৭৮)। ছালাতের মধ্যে অন্য ভাষায়
দো‘আ করার ব্যাপারে কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। এর মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের ইবাদতের
ক্ষেত্রে ঐক্যের সূক্ষ্ম তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। যেমন আযান, সালাম ও দো‘আ সমূহ পাঠ
ইত্যাদি। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মানুষের উচিত কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত
মাসনূন দো‘আসমূহ পাঠ করা (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৩৪৬)।
যদি নিজের বিশেষ কোন প্রার্থনা থাকে, তবে সেটা মাসনূন দো‘আর মাধ্যমেই চাইতে হবে।
এজন্য বাংলা ভাষাতে উচ্চারণ করে প্রার্থনার কোন প্রয়োজন নেই। বরং মনের নিয়তই
যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার মনের খবর রাখেন।
প্রশ্ন
(৩১/৩১) : পিতামাতার ঋণ থাকলে সন্তান কিভাবে তা শোধ করবে? নিজের উপার্জিত সম্পদ
থেকে সন্তান পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য কি?
-ছফীউল্লাহ, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর :
সন্তান পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা
মীরাছের আলোচনা শেষে বলেন, মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর (নিসা ৪/১১)। তবে নিজ সম্পত্তি থেকে পিতা-মাতার ঋণ পরিশোধ করা
সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক নয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ
৫/২৩২)। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করা পিতা-মাতার খেদমতের অংশ ও অফুরন্ত
ছওয়াবের কাজ হওয়ায় সন্তান নিজ দায়িত্বে তা পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। কেননা
ঋণ অবশ্য পূরণীয় বিষয়। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয়, তবুও সে
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা হয় (নাসাঈ হা/৪৬৮৪; মিশকাত হা/২৯২৯)। জাবের (রাঃ) বলেন, জনৈক
ব্যক্তি মারা গেল। আমরা তার গোসল দিলাম, সুগন্ধি মাখালাম ও কাফন পরালাম। অতঃপর
আমরা জানাযার জন্য তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তার
কোন ঋণ আছে কি? আমরা বললাম, দুই দীনার ঋণ আছে। তখন তিনি ফিরে গেলেন। তখন আবু
ক্বাতাদাহ উক্ত ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিল। অতঃপর আমরা তাঁর নিকটে পুনরায় এলাম এবং
আবু ক্বাতাদাহ বলল, উক্ত দুই দীনার পরিশোধের দায়িত্ব আমার উপর রইল। তখন রাসূল
(ছাঃ) বললেন, ঋণগ্রস্ত নির্ধারিত হ’ল এবং মাইয়েত দায়মুক্ত হ’ল? আবু ক্বাতাদাহ বলল,
হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়ালেন। একদিন পরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ
দুই দীনারের অবস্থা কি? আবু ক্বাতাদাহ বললেন, মাত্র গতকালই লোকটি মারা গেছে। পরের
দিন রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে পুনরায় এলেন। আবু ক্বাতাদাহ বললেন, আমি তার দুই দীনার
পরিশোধ করেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘এখন ঐ মাইয়েতের চামড়া ঠান্ডা হ’ল’ (আহমাদ হা/১৪৫৭৬, ছহীহুল জামে‘ হা/২৭৫৩)। এতে বুঝা যায় যে,
কেবল দায়িত্ব নিলেই মাইয়েতের আযাব দূর হবে না, যতক্ষণ না তার ঋণ পরিশোধ করা
হবে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৫/২৮৫ ‘ঋণ পরিশোধ না
করা পর্যন্ত ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দায়মুক্ত হবে না’ অনুচ্ছেদ)। অতএব পিতার
ঋণ শোধ করতে সন্তান বাধ্য না হ’লেও তার বড় কর্তব্য হবে সেটা পরিশোধ করা।
প্রশ্ন
(৩২/৩২) : নামের শেষে আলী, মুরতাযা, হাসান, হোসাইন, ইত্যাদি যুক্ত করে নাম রাখলে
গুনাহ হবে কি?
উত্তর : উপরোক্ত
সবগুলি নামই সুন্দর অর্থ বহন করে। সুতরাং তা রাখায় কোন দোষ নেই। তবে শী‘আদের
আক্বীদা অনুযায়ী রোগমুক্তি ও বিশেষ ফযীলতের আশায় এগুলি রাখা হ’লে তা শিরক হবে।
শী‘আরা বলে থাকে, আমার জন্য পাঁচজন রয়েছেন যাদের মাধ্যমে আমি সকল দুরারোগ্য ব্যাধি
দূর করি। তারা হলেন, মুছতফা, মুরতাযা, তাঁর দুই পুত্র (হাসান-হোসায়েন) ও ফাতেমা’।
প্রশ্ন
(৩৩/৩৩) : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, কানযুল উম্মাল ও মুসনাদে বায্যার গ্রন্থ তিনটির লেখক
ও কিতাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
-শু‘আইব, হরতকিতলা, নীলফামারী।
উত্তর : (১) ‘মুসনাদে
বায্যার’ ১৮ খন্ডে সমাপ্ত একটি হাদীছ গ্রন্থ। গ্রন্থটির প্রকৃত নাম البحر الزخَّار
বা ‘কানায় কানায় পূর্ণ সাগর’। পরবর্তীতে মুসনাদ বায্যার নামে খ্যাতি লাভ করে।
গ্রন্থটির সংকলক হ’লেন ইরাকের বছরায় জন্মগ্রহণকারী খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ আবুবকর
আহমাদ ইবনু আমর বিন আব্দুল খালেক আল-বায্যার (মৃ. ২৯২ হিঃ) (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৫৩২)। এটি মুসনাদ গ্রন্থ
হওয়ায় ছাহাবীগণের ধারাক্রম অনুযায়ী গ্রন্থটিকে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে
১০ হাজার হাদীছ রয়েছে। (২) ‘মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাউ‘ল
ফাওয়ায়েদ’ (مجمع الزوائد ومنبع الفوائد)
গ্রন্থটিও একটি হাদীছ সংকলন গ্রন্থ। এর সংকলক হ’লেন আবুল হাসান নূরুদ্দীন আলী ইবনু
আবি বকর আল-হায়ছামী (মৃ.৭৩৫-৮০৭হিঃ)। তিনি একজন প্রখ্যাত মিসরীয় মুহাদ্দিছ ও
মুহাক্কিক ছিলেন। এই গ্রন্থে তিনি কুতুবে সিত্তাহ বহির্ভুত যে সকল হাদীছ মুসনাদে
আহমাদ, মুসনাদে বায্যার, মুসনাদে আবু ইয়া‘লা মুছেলী এবং ইমাম ত্বাবারাণী-এর মু‘জাম
গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা একত্রিত করেছেন। ১২ খন্ডে বিভক্ত এই গ্রন্থে প্রায় ১৯
হাযার হাদীছ রয়েছে (ইবনুল ইমাদ, শাযারাতুয যাহাব
৯/১০৫)। (৩) ‘কানযুল উম্মাল’ একটি সুবিস্তৃত হাদীছ সংকলন গ্রন্থ। এর
পুরো নাম كنز العمال في سنن الأقوال والأفعال। এর সংকলক হ’লেন হিন্দুস্তানী মুহাদ্দিছ আলাউদ্দীন আলী ইবনু
হিশামুদ্দীন (মৃ. ৯৭৫হিঃ)। তিনি ‘আলী মুত্তাকী হিন্দী’ নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি
ভারতের বুরহানপুরে (জৈনপুর) জন্মগ্রহণ করেন এবং হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ও
মুহাদ্দিছ ছিলেন। তিনি মূলতঃ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃ. ৯১১হিঃ) রচিত الجامع الصغير ও
الجامع الكبير হাদীছ গ্রন্থ দু’টি সংক্ষেপ ও পুনর্বিন্যাস করে এই গ্রন্থটি রচনা
করেন। তিনি হাদীছের সনদ এমনকি বর্ণনাকারী ছাহাবীর নাম বাদ দিয়ে কেবল বিষয় ভিত্তিক
হাদীছগুলিকে একত্রিত করেন। ১৮ খন্ডে বিভক্ত এই গ্রন্থে ৪৬,৬২৪টি হাদীছ রয়েছে। যার
মধ্যে ছহীহ হাদীছের সাথে অসংখ্য যঈফ ও জাল হাদীছও রয়েছে।
প্রশ্ন
(৩৪/৩৪) : জেহরী ছালাতের ইমামের সূরা ফাতিহা পড়ার পর কেউ জামা‘আতে শামিল হ’লে তার
করণীয় কী? সে ইমামের ক্বিরাআত শুনবে না সূরা ফাতিহা পাঠ করবে?
-আহসান তালুকদার, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : সূরা
ফাতিহা পাঠ করে ইমামের ক্বিরাআত শুনবে। কারণ সূরা ফাতিহা পাঠ ছাড়া ছালাত হবে
না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)।
প্রশ্ন
(৩৫/৩৫) : প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে কুকুর, বিড়াল, পাখি বা অন্যান্য প্রাণীর ব্যবসা
করা বৈধ কি?
-আসাদুল্লাহ, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
উত্তর: পশু
চরানো, শিকার করা এবং ক্ষেত-খামার ও বাড়ি-ঘর পাহারা দেওয়া এই তিন উদ্দেশ্যে কেবল
কুকুর পালন করা যাবে। এতদ্ব্যতীত শুধু প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে বা শখের বশে কুকুর
পোষা যাবে না। কেননা
অন্য উদ্দেশ্যে কোন কুকুর বাড়িতে রাখলে এক ক্বীরাত তথা ওহোদ পাহাড় সমপরিমাণ নেকী
কমে যাবে (মুসলিম হা/১৫৭৫, মিশকাত
হা/৪০৯৯, ইবনু হাজার ৩/১৯৪-১৯৫)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ)
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যতীত অন্য সকল কুকুরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম হা/১৫৭১, মিশকাত হা/৪১০১)। দ্বিতীয়তঃ চোখের উপর সাদা
চিহ্ন ওয়ালা কুচকুচে কালো কুকুর কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না। কারণ এগুলো
শয়তান, যাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (মুসলিম
হা/১৫৭২, মিশকাত হা/৪১০০)।
আর পাখি, বিড়াল বা অন্যান্য
প্রাণী প্রতিপালন করা যেতে পারে। তবে তাদের সময়মত খেতে ও পান করতে দিতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৩৮-৪০; বিন বায, ফাতাওয়া ওলামায়িল বালাদিল
হারাম ১৭৯৩ পৃ:)। আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) আমাদের
প্রতি উৎফুল্ল মেযাজ ও সম্প্রীতি প্রদর্শন করতেন। এমনকি আমার ছোট ভাইকেও জিজ্ঞেস
করতেন, হে আবু উমায়ের! তোমার ‘নুগায়ের’ অর্থাৎ ছোট্ট বুলবুলিটি কোথায়? উমায়ের-এর
একটি ছোট্ট বুলবুলী পাখি ছিল। সেটা নিয়ে সে খেলা করত। পাখিটি মারা গিয়েছিল (তাকে
সান্ত্বনা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) উক্ত কথা বলেন) (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮৮৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার
বলেন, পাখি প্রতিপালন করা জায়েয হওয়ার দলীল এই হাদীছ থেকেই গ্রহণ করা হয়। কারণ
রাসূল (ছাঃ) আবু উমায়েরের উক্ত কাজকে অস্বীকৃতি দেননি (ফাৎহুল বারী ১০/৫৪৮)। অনুরূপভাবে ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)
বিড়াল প্রতিপালনের জন্য রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক ‘বিড়ালের পিতা’ উপাধি পেয়েছিলেন (বুখারী হা/২৫৩০-৩১)। ‘হুরায়রা’ অর্থ ছোট বিড়াল। সুতরাং কুকুর
ব্যতীত অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালন করা ও ব্যবসা করা বৈধ।
প্রশ্ন (৩৬/৩৬) : যে ব্যক্তি
কুরবানীর নিয়ত করেছে, সে যদি যিলহজ্জের চাঁদ ওঠার পর চুল-নখ ইত্যাদি কর্তন করে,
তবে তার বিধান কি? তাছাড়া এরূপ চুল-নখ কর্তনের পিছনে হেকমত কি?
-মারজান মারযূক, লাবসা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : কুরবানীর
নিয়তকারী নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ভুলে নখ ও চুল কেটে থাকে তাহ’লে
সেটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে না। আর কুরবানীর নিয়তকারী যদি ইচ্ছা করে এই সময়ের
মধ্যে নখ ও চুল কর্তন করে তাহ’লে তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে। তবে সেজন্য কোন
ফিদইয়া বা কাফফারা দিতে হবে না (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া
ইসলামিয়া ২/৩১৬)। চুল ও নখ কর্তন না করার হেকমত সম্পর্কে আল্লাহ
সর্বাধিক অবগত। তবে বিদ্বানগণের মতে, এতে মক্কায় অবস্থানরত হাজীদের সাথে সাদৃশ্য
স্থাপিত হয়। সেই সাথে কুরবানী হ’ল ক্ষমার মাধ্যম এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়।
চুল ও নখ কর্তনের মাধ্যমে শরীরের এসকল অতিরিক্ত অংশকেও আল্লাহর ক্ষমা ও মুক্তির
ঘোষণার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন
(৩৭/৩৭) : হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো যাবে কি?
-আব্দুল হালীম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : যাবে
না। কারণ প্রথমতঃ অমুসলিমদের অনুকরণে এসব দিবস পালিত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন)
তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭
‘পোষাক’ অধ্যায়)।
দ্বিতীয়তঃ এ ব্যাপারে
ছাহাবায়ে কেরাম বা তাবেঈন থেকে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। সেজন্য নিজ থেকে কাউকে হিজরী
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৪৫৪)। তবে কেউ যদি দো‘আ হিসাবে বলে
যে, আগামী হিজরী বছর আপনার জন্য কল্যাণকর হৌক! তবে তার জওয়াবে তার মত বা তার থেকে
উত্তম কিছু বলা যাবে। কিন্তু এজন্য খাবার তৈরি করা বা কোন অনুষ্ঠান করা যাবে
না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৪/২৫৩; ফাতাওয়া
ইসলাম, প্রশ্ন নং ২১২৯০; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১০/৯৩)।
প্রশ্ন (৩৮/৩৮) : নারীরা পিতা, ভাই, সন্তান তথা মাহরাম পুরুষদের সামনে
কতটুকু পরিমাণ সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে? জনৈক আলিম বলেন, মুখ ও হস্তদ্বয় ব্যতীত
অন্য কিছু তাদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না। একথা সঠিক কি?
-বিলকীস আরা, নরেন্দ্রপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : নারীরা
তাদের মাহরামদের সামনে তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে (নূর ২৪/৩১)। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, মাহরাম পুরুষদের জন্য
নারীর ঐ সকল অঙ্গ দেখা জায়েয, যা সাধারণত প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন মাথা, হাঁটু, পা,
হাত এবং অনুরূপ অঙ্গগুলো। আর সেগুলো দেখা যাবে না, যা তারা ঢেকে রাখে। যেমন বুক,
পিঠ এবং অনুরূপ অঙ্গগুলো (মুগনী, ৯/৪৯১-৯২; উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১২/২৭১, ২৭৬; আলবানী, তালখীছ আহকামিল জানায়েয ৩০ পৃ:)। তবে
অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তা শালীনতা বিরোধী না হয়।
প্রশ্ন
(৩৯/৩৯) : স্ত্রী পরপুরুষের সাথে অবাঞ্ছিত কথা বলত। স্বামী হুঁশিয়ারী স্বরূপ
বলেছিল, যদি এরপর ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বল, তাহ’লে তুমি তালাক। কিন্তু স্ত্রী তার
সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখে। এর ৫/৬ মাস পর স্বামী আবারও অনুরূপ কথা বলে। কিন্তু
স্ত্রী তার অভ্যাস পরিবর্তন করেনি। পরে স্বামী তাকে তালাক দেয়। কিন্তু সহবাস বন্ধ
করেনি। এক্ষেত্রে স্বামী উক্ত কথা বলার কারণে স্ত্রী কি তালাক হয়েছে? যদি তালাক
হয়ে থাকে তবে ক’টি তালাক হয়েছে? এ মুহূর্তে স্ত্রীকে কি পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে
ফিরিয়ে নিতে হবে?
-হাফীযুর রহমান, টঙ্গী, গাযীপুর।
উত্তর : শর্তসাপেক্ষে
তালাক প্রদানকালে যদি স্বামী তালাকের নিয়ত করে থাকে তবে দুই বারে দু’টি তালাক
হয়েছে এবং একটি তালাক অবশিষ্ট আছে। এক্ষণে যেহেতু শারঈ পন্থায় ইদ্দতের মধ্যে
রাজ‘আত করা হয়নি সেহেতু নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নিতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২০/৮৬)। আর যদি তালাকের নিয়ত ছাড়া
শাসনের উদ্দেশ্যেও ‘তালাক’ বলে থাকে, তবুও জুমহূর বিদ্বানের মতে তালাক হয়ে যাবে।
কেননা তালাক কোন তুচ্ছ বা তামাশার বিষয় নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিনটি বিষয় রয়েছে
যেগুলি বাস্তবে বা ঠাট্টাচ্ছলে করলেও তা ধর্তব্য। আর তা হ’ল বিবাহ, তালাক এবং
স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া (আবূদাউদ হা/২১৯৪; মিশকাত হা/৩২৮৪,
সনদ হাসান)। অবশ্য ইবনু তায়মিয়াহ ও উছায়মীন (রহঃ) সহ কতিপয় বিদ্বান
মতপ্রকাশ করেছেন যে, স্রেফ স্ত্রীকে শাসনের নিয়ত থাকলে এবং প্রকৃতপক্ষে তালাকের
নিয়ত না থাকলে তালাক হবে না। সেক্ষেত্রে তাকে কসম ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে (ইবনু ‘তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৮৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া আল-মারআতুল
মুসলিমাহ ২/৭৫৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/৮৬)।
প্রশ্ন (৪০/৪০) : জুম‘আর ছানী
খুৎবায় দরূদ পাঠ করা কি যরূরী?
-আবুল বাশার, হুজুরীপাড়া, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : জুম‘আর
খুৎবায় দরূদ পাঠ করা সুন্নাত। সেটি প্রথম বা দ্বিতীয় খুৎবায় হ’তে পারে। তবে এটি
পাঠ করা আবশ্যিক নয়। উছায়মীন বলেন, এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না, যার মাধ্যমে খুৎবায়
দরূদ পাঠ করাকে ওয়াজিব বলা যায় (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৫৩)।
তবে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াসহ একদল বিদ্বান দরূদ পাঠকে ওয়াজিব এবং খুৎবার রুকন
বলে উল্লেখ করেছেন (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৩৯১;
আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৯/১৭৭)। উল্লেখ্য যে, খুৎবায় তাশাহহুদ পাঠ
করা ওয়াজিব। তথা খুৎবাতুল হাজত পাঠ করা ওয়াজিব (আলবানী,
ছহীহাহ হা/১৬৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘যেসব খুৎবায়
(বক্তৃতায়) তাশাহহুদ পাঠ করা হয় না তা পঙ্গু হাতের সমতুল্য’ (আবূদাঊদ হা/৪৮৪১; মিশকাত হা/৩১৫০; ছহীহাহ হা/১৬৯; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া
২২/৩৯১)।
প্রশ্ন (১/৪১) : যাকাতের অর্থ
বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা যাবে কি?
-মুখতারুল ইসলাম, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : যাকাতের টাকা
বন্যার্ত অসহায়দের মাঝে ত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা যাবে। কারণ যাকাতের সম্পদ যে সকল
খাতে বণ্টন করতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে মিসকীন বা সহায়সম্বলহীনগণ অন্যতম (তওবা ৯/৬০)। এমনকি বন্যার্ত অসহায়
ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ধনী হ’লেও তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে। রাসূলুল্লাহ্
(ছাঃ) বলেছেন, পাঁচ শ্রেণীর লোক ব্যতীত ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। (১)
আললাহর রাস্তায় জিহাদে যোগদানকারী (২) যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী (৩)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (৪) গরীবের প্রাপ্ত যাকাতের মাল ধনীর জন্য ক্রয় করা (৫) মিসকীন
প্রতিবেশী নিজের প্রাপ্ত যাকাত হাদিয়া হিসাবে প্রদান করলে ধনীর জন্য তা গ্রহণ করা
বৈধ’ (আবুদাঊদ হা/১৬৩৫; ছহীহুল
জামে‘ হা/৭২৫০)। বন্যার্ত ব্যক্তিরা মিসকীনদের মধ্যে গণ্য।
প্রশ্ন
(২/৪২) : খালা কি মায়ের স্থলাভিষিক্ত? খালার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার মর্যাদা ও
গুরুত্ব জানতে চাই।
-রাফীয়া তাসনীম, মোহনপুর, রাজশাহী।
উত্তর : খালাগণ
(সদাচরণের ক্ষেত্রে) মায়ের স্থলাভিষিক্ত (বুখারী হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/৩৩৭৭)।
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল,
হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো মহাপাপ করে ফেলেছি। আমার জন্য কি ক্ষমার দরজা খোলা আছে?
তিনি বললেন, তোমার কি পিতা-মাতা জীবিত আছেন? সে বলল, না। তিনি বললেন, তোমার কি
খালা জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তার সাথে সদাচরণ কর’
(ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৩৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০৪,
২৫২৬)। অন্যত্র এসেছে, উম্মুল মুমিনীন মায়মূনা (রাঃ) বলেন, নবী করীম
(ছাঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি তার দাসীকে মুক্ত করে দেন। অতঃপর তার ঘরে নবী করীম
(ছাঃ)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন আমি আমার
দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনা বললেন, হ্যাঁ। তখন
তিনি বললেন, তুমি যদি তোমার মামা-খালাদের বা বোনদের এটা দান করতে তাহ’লে তোমার
জন্য বেশী নেকীর কাজ হ’ত’ (বুখারী হা/২৫৯২; ছহীহ আত-তারগীব
হা/২৫২৬)। আয়েশা (রাঃ)-এর কোন সন্তান ছিল না। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে
তার বোনের ছেলের নামে উপনাম রাখতে বলেন। সেজন্য আয়েশাকে উম্মে আব্দুল্লাহ বলা হ’ত,
যা খালার মর্যাদার প্রমাণ বহন করে (আবুদাঊদ হা/৪৯৭০; আহমাদ হা/২৬২৮৫)।
অর্থাৎ বড় বোন আসমার ছেলে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের-এর মা।
প্রশ্ন
(৩/৪৩) : মসজিদে উঁচু মিনার তৈরি করা যাবে কি? আর তাতে চাঁদের ছবি অাঁকানো বা
আল্লাহু আকবার লেখা যাবে কি?
-আব্দুল হালীম, সন্তোষপুর, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : আযান
দেওয়ার জন্য মসজিদে উঁচু মিনার তৈরি করা যাবে। কারণ এতে দূরবর্তী লোকদের আযান
শোনানো সহজ হয়। আর আযানের স্বর যত উচ্চ হয়, ততই উত্তম (আবুদাঊদ হা/৪৯৯, সনদ ছহীহ; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩০৮)।
আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব বলেন, সুন্নাত হ’ল আযান মিনারে হবে এবং ইক্বামত মসজিদে
হবে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এভাবেই আমল করতেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩৪৫; তামামুল মিন্নাহ ১/১৪৬, সনদ ছহীহ)।
আর মিনারে চাঁদের প্রতীক
স্থাপন নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের নিয়তের উপরে। যদি সেটিকে মসজিদ বুঝানোর জন্য
স্থাপন করা হয় তাহ’লে জায়েয। আর অন্যকোন উদ্দেশ্য হ’লে জায়েয হবে না। সাধারণভাবে
চাঁদ-তারা কোন ইসলামী নিশানা হওয়ার ব্যাপারে শারঈ কোন দলীল নেই। রাসূল (ছাঃ),
ছাহাবায়ে কেরাম এমনকি পরবর্তী যুগেও এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। তবে মধ্যযুগে তুর্কী
শাসকগণ খৃষ্টানদের ক্রুসের বিপরীতে ইসলামী নিদর্শন হিসাবে চাঁদ-তারা নির্বাচন
করেছিলেন এবং এটি তুর্কী সাম্রাজ্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায়
আধুনিক যুগে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র ও ইসলামী সংস্থাসমূহ তাদের পতাকায় ক্রুসের
বিপরীতে ইসলামী নিদর্শন হিসাবে চিহ্নটি ব্যবহার করে থাকে (উইকিপিডিয়া)। এতে ওলামায়ে কেরাম বিশেষ কোন আপত্তি তোলেননি।
কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ইহূদী ও নাছারাদের বিপরীত কর’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/২১৮৬)। তবে কতিপয় বিদ্বান কাফেরদের
সাদৃশ্য অবলম্বনের সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকতে এমন চিহ্ন ব্যবহার না করাই উত্তম বলে
মত প্রকাশ করেছেন (উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া
১৬/১৭৮)।
একইভাবে মিনারের উপরে
‘আল্লাহু আকবার’ লেখার বিষয়টি নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের নিয়তের উপর। এর দ্বারা যদি
অমুসলিমদের উপাসনালয় সমূহের বিপরীতে মুসলিমদের মসজিদ বুঝানো হয়, সেক্ষেত্রে এটি
জায়েয হ’তে পারে। তবে সাধারণভাবে কোন মসজিদের মিনারে এরূপ লেখার কোন শারঈ ভিত্তি
নেই। বিশেষতঃ মিনারের উপরে শুধুমাত্র ‘আল্লাহ’ লেখা আদৌ জায়েয নয়। একইভাবে তা
গাড়ীতে বা বাড়ীতে লেখা বা ঝুলানো জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ কোন সাইনবোর্ড নয়, বরং
তিনি হ’লেন মা‘বূদ। যাঁকে বান্দা হৃদয়ে স্মরণ করবে ও তাঁর ইবাদত করবে।
প্রশ্ন
(৪/৪৪) : কবরে যারা মুক্তি পেয়ে সুখে-শান্তিতে অবস্থান করবে, বিচারের পর তাদের
জাহান্নামে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?
-জসীমুদ্দীন, দক্ষিণপাড়া, মহাখালী, ঢাকা।
উত্তর : যারা
কবরে শান্তিতে থাকবেন, তারা ক্বিয়ামতের দিন হিসাবের পরেও জান্নাতে প্রবেশ করবেন
ইনশাআল্লাহ। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আখেরাতের মনযিলসমূহের মধ্যে প্রথম মনযিল হ’ল
কবর। যদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিল সমূহে মুক্তি পাওয়া
সহজতর হবে। আর যদি এখানে মুক্তি না পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলি আরও কঠিন
হয়ে যাবে’... (ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৭; মিশকাত হা/১৩২,
সনদ হাসান)।
তবে যারা বান্দার হক নষ্ট
করার অপরাধে অভিযুক্ত তাদের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপর যুলুম করেছে সে যেন আজই তার থেকে মাফ নিয়ে
নেয়, তার ভাই তার কাছ থেকে এর জন্য নেকী কেটে নেওয়ার পূর্বে। কেননা সেখানে (হাশরের
ময়দানে) কোন দীনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি নেকী না থাকে তবে তার
(মযলূম) ভাইয়ের গোনাহ তার উপর ছুঁড়ে মারা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা
হবে (বুখারী হা/৬৫৩৪; মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত
হা/৫১২৭)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে? ছাহাবায়ে কেরাম
বললেন, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত নেই, সে-ই নিঃস্ব। তিনি বললেন,
ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি নিঃস্ব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে
ছালাত-ছিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে। কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকদেরকেও নিয়ে আসবে,
যাদেরকে সে গালি দিয়েছে, কারু বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,
কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। এসব ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলি দিয়ে
কাফফারা দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকী শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো
বাকী থাকবে, তখন পাওনাদারদের গোনাহ তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’ (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)।
প্রশ্ন
(৫/৪৫) : কিস্তিতে ফ্ল্যাট কিনলে তা কি সূদের অন্তর্ভুক্ত হবে? উল্লেখ্য, সেখানে
এককালীন মূল্য পরিশোধে বড় অংকের ছাড় দেয়া হয়।
-শামসুল আলম, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর :
নির্ধারিত মেয়াদ ভিত্তিক কিস্তিতে পণ্যমূল্য পরিশোধ করা জায়েয। যদি সেখানে নগদে এক
মূল্য এবং বাকীতে অধিক মূল্য না হয়। বাকীতে অধিক মূল্য নিলে সেটি সূদ হবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যবসায়ে নগদে এক বিক্রি ও বাকীতে আরেক বিক্রি নিষেধ করেছেন।
আর তা হ’ল, ‘বিক্রেতা বলবে, বস্ত্তটি বাকীতে অত টাকায় এবং নগদে এত টাকায়’ (আহমাদ হা/৩৭৮৩, ১/৩৯৮ ‘ছহীহ লেগায়রিহী’ আরনাঊত্ব; ইরওয়া হা/১৩০৭-এর
আলোচনা ৫/১৪৯; ছহীহাহ হা/২৩২৬-এর আলোচনা ৫/৪২০-২১ পৃ.; বিস্তারিত দ্রঃ ‘বায়‘এ
মুআজ্জাল’ বই)।
প্রশ্ন
(৬/৪৬) : মুক্বীম অবস্থায় কোন কারণ ছাড়াই ছালাত জমা করায় বাধা আছে কি?
-আব্দুল কাদের, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : জায়েয
আছে। তবে বিনা কারণে এটা করা সমীচীন নয়। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মদীনায় যোহর ও আছরের ছালাত এবং মাগরিব ও এশার ছালাত
একত্রে জমা করে পড়লেন, কোন ভয়-ভীতি কিংবা সফরের ওযর ছাড়াই। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কেন
তিনি এটা করলেন? উত্তরে ইবনু আববাস বললেন, যাতে উম্মতের কষ্ট না হয়’ (বুখারী হা/৫৪৩; মুসলিম হা/৭০৫)। এটি জায়েয রাখা হয়েছে এজন্য
যে, বিশেষ অবস্থায় যেন উম্মত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করতে অনীহা বোধ না করে। ইমাম
আহমাদ সহ জমহূর বিদ্বানগণের মতে, এই হাদীছ বিশেষ শারঈ ওযর যেমন বৃষ্টি, ভয়, অসুস্থতা
ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব ওযর ব্যতীত স্বাভাবিক অবস্থায় এভাবে নিয়মিত
ছালাত জমা করা ঠিক হবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) জীবনে মাত্র একবারই এরূপ করেছিলেন।
আর ছাহাবী ও তাবেঈদের মধ্যেও কোন শারঈ ওযর ব্যতীত এটির আমল পাওয়া যায় না (নববী, শরহ মুসলিম ৫/২১৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩০৪-৫)।
যেভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত আমল ছিল ফজরের ছালাত গালাসে (অন্ধকারে) পড়া। কিন্তু
মাত্র একবার তিনি ইসফারে অর্থাৎ ফর্সা হ’লে পড়েন (আবুদাঊদ
হা/৩৯৪; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৫৩-৫৪ পৃ.)। শুধুমাত্র
বিশেষ অবস্থায় জায়েয রাখার জন্য। কিন্তু হানাফী মাযহাবের ভাইয়েরা সেটাকেই স্থায়ী
রীতি করে নিয়েছেন।
প্রশ্ন (৭/৪৭) : আমার স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্যের পর সে কাযী ডেকে
তালাকনামা লিখে আমার নিকট পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমাদের ছয় বছরের
একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এখন সে আমার সাথে সংসার করতে চায়। এক্ষেত্রে আমার করণীয়
কী?
-ওয়ালিউর রহমান, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায়
কেবল ‘খোলা’ হয়েছে। আর ‘খোলা’-র ইদ্দত হ’ল এক ঋতু (নাসাঈ হা/৩৪৯৭)। এক্ষণে উক্ত নারীর সাথে সংসার করতে চাইলে একমাস
ইদ্দত পালন শেষে নতুন বিবাহের মাধ্যমে সংসার করবে। ‘খোলা’ অর্থ মালের বিনিময়ে
স্বামীর নিকট থেকে স্ত্রীর পৃথক হওয়া (বাক্বারাহ
২/২২৯-এর শেষাংশ)। এ সময় স্বামী কেবল তখনই মালের বিনিময় পাবে, যখন সে
স্ত্রীর মোহরানা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে রাখবে। নচেৎ স্ত্রীর নিকট থেকে বিনিময়ের দাবী
করা যাবে না (দ্র. ‘তালাক ও
তাহলীল’ বই ২৩ পৃ.)।
সুতরাং
এক্ষেত্রে করণীয় হ’ল, খোলাকারিনী পুনরায় বিবাহে রাযী হ’লে মোহর নির্ধারণপূর্বক
নতুনভাবে বিবাহ করতে হবে (বাক্বারাহ
২/২৩২)। যেখানে অলী ও দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকবেন (ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৫৭)।
প্রশ্ন
(৮/৪৮) : হাজীগণ কখন হালাল হয়ে যান?
-রফীকুল ইসলাম, বর্ষাপাড়া, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : হাজীগণ
তখনই পূর্ণ হালাল হবেন যখন তাওয়াফে ইফাযাহ সম্পন্ন করবেন ও যাদের সাঈ বাকী রয়েছে
তা সম্পন্ন করবেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/৩৪৯;
দ্র. ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ‘বিদায়ী ত্বাওয়াফ’ অনুচ্ছেদ)। উল্লেখ্য যে,
জামরায়ে আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ, মাথা মুন্ডন এবং তামাত্তু‘ ও কেরানকারী হাজীগণ
কুরবানীর পরই সাধারণভাবে হালাল হয়ে যান। তবে এই হালালে হাজীগণ স্ত্রী মিলন করতে
পারবেন না, যতক্ষণ না তারা তাওয়াফে ইফাযাহ ও সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদনের
মাধ্যমে পূর্ণ হালাল হবেন (দ্র. ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ‘মিনায় প্রত্যাবর্তন’
অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন
(৯/৪৯) : হাদীছের বর্ণনা মোতাবেক পুরাতন কুরআন পুড়িয়ে ফেললে সমাজে বিভ্রান্তি তৈরী
হয়। এমনকি ভুল বোঝাবুঝির কারণে হানাহানি পর্যন্ত হয়ে যায়। এ ব্যাপারে করণীয় কি?
-আব্দুল লতীফ, সোনাবাড়িয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর : যদি
পুড়িয়ে ফেলার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,
তবে তা মানুষের পথচলার স্থান থেকে দূরে কোন পবিত্র স্থানে পুঁতে ফেলতে হবে অথবা
পুড়িয়ে ফেলতে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ১২/৫৯৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৪/১৩৮)। হযরত ওছমান (রাঃ)
কুরায়শী মুছহাফ রেখে বাকীগুলি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন (বুখারী
হা/৪৯৮৭; মিশকাত হা/২২২১)
প্রশ্ন
(১০/৫০) : আমরা তিন বোন (একজন মৃত তবে তার সন্তান রয়েছে) ও তিন ভাই (একজন জীবিত,
দুই জন মৃত তবে সন্তান রয়েছে) ও আমাদের মা জীবিত আছেন। আমাদের মা অসুস্থ থাকাকালীন
আমাদের ছোট বোন ছোট ভাইয়ের সহযোগিতায় লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে।
এক্ষেত্রে কারা কারা দায়ী হবে এবং মাকে দায়মুক্ত করতে করণীয় কী?
-রশীদা হক, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে
মা, ছোট বোন ও সহযোগিতাকারী ভাই দায়ী হবে। অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করে যুলুম করার
কারণে ক্বিয়ামতের দিন তারা কঠিন জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি কারো এক বিঘত যমীন জোর করে দখল করে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীন
বেড়ী পরানো হবে (বুখারী হা/২৪৫৪; মিশকাত হা/২৯৫৮)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করে, তাকে আল্লাহ হাশরের
ময়দানে উক্ত মাটি মাথায় করে বহন করতে বাধ্য করবেন (আহমাদ, মিশকাত হা/২৯৫৯; ছহীহাহ হা/২৪২)। এক্ষণে দায়ী তিনজনকে
দায়মুক্ত করতে হ’লে অনতিবিলম্বে অন্যায়ভাবে গৃহীত সম্পত্তি শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী
সকল ওয়ারিছের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে বণ্টন করে দিতে হবে এবং কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত
হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।
প্রশ্ন
(১১/৫১) : মৃত্যুর চল্লিশ দিনের মধ্যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন করা যাবে না,
মর্মে কোন হাদীছ আছে কি?
উত্তর : এরূপ
কোন হাদীছ নেই। বরং যত দ্রুত সম্ভব মাইয়েতের সম্পত্তি বণ্টন করে নেওয়া ওয়াজিব।
কেননা দেরী করলেই নানা ফিৎনা সৃষ্টি হ’তে পারে। তবে মাইয়েতের ঋণ ও অছিয়ত পূরণের
জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে। তাছাড়া ওয়ারিছদের সম্মতি থাকলেও বণ্টনে অপেক্ষা করা
যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় বণ্টনে দেরী করা ঠিক নয় (নিসা ১১)।
প্রশ্ন
(১২/৫২) : জিন কি মারা যায়? তাদের দাফন-কাফন কিভাবে হয়?
-লিয়াকত আলী খান, তেরখাদা, খুলনা।
উত্তর : অন্যান্য
সৃষ্টির ন্যায় জিনদেরও মৃত্যু হয় (আহক্বাফ ১৮; ক্বাছাছ ৮৮) এবং
তাদেরকেও কবর থেকে পুনরুত্থান ঘটানো হবে (আন‘আম ১৩০; হূদ ১১৯)।
তবে তারা কত বছর বাঁচে বা কিভাবে তাদের কাফন-দাফন করা হয় অথবা ইবলীসের মত তারাও
ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবে কি-না এসব বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। এ ব্যাপারে
কুরআন বা হাদীছে সরাসরি কোন কিছু বর্ণিত হয়নি।
প্রশ্ন
(১৩/৫৩) : এক ব্যক্তি বলেছেন, শনিবারে মাছ ধরা যাবে না। এই দিন মাছ ধরলে চেহারা
বিকৃত হয়ে মৃত্যু ঘটবে। এটা কি ঠিক?
-আশরাফুল ইসলাম, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
উত্তর : শনিবারসহ
সপ্তাহের প্রতিদিন মাছ ধরা বা শিকার করা জায়েয। এ ব্যাপারে ইসলামী শরী‘আতে কোন
নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে দাঊদ (আঃ)-এর যুগে বনু ইস্রাঈলদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ শনিবারে
মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল (আ‘রাফ ১৬৩)। তারা তা
অমান্য করায় আল্লাহর হুকুমে তারা শুকর-বানরে পরিণত হয়ে ধ্বংস হয় (বাক্বারাহ ৬৫)। তাদের শরী‘আত উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য পালনীয়
নয় (মায়েদাহ ৪৮)।
প্রশ্ন
(১৪/৫৪) : আমরা পাঁচ বোন ও এক ভাই। আববা ও আম্মা জীবিত আছে। আমরা কিছু সম্পত্তি
নিয়ে বাকী সম্পত্তি আমার একমাত্র ভাইকে লিখে দিতে চাই। এরূপ করলে কি আমার
পিতা-মাতা গুনাহগার হবেন?
উত্তর :
যদি সকল সন্তানের সম্মতি থাকে, তবে কোন সন্তানকে পিতা অধিক সম্পদ লিখে দিতে পারেন।
এতে পিতা গুনাহগার হবেন না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২০/৫০-৫৩)। তবে স্মর্তব্য যে, সম্পদ বণ্টনের বিধান হ’ল পিতার মৃত্যুর
পর শরী‘আত মোতাবেক বণ্টন করা (নিসা ১১)। কেউ পূর্বে
অন্যায়ভাবে বণ্টন করলে তা গৃহীত হবে না। এভাবে করলে উত্তরাধিকারীদের কর্তব্য হবে
পুনরায় শরী‘আত মোতাবেক বণ্টন করে নেওয়া। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি কোন নারী বা পুরুষ
ষাট বছর পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করে, অতঃপর যখন তাদের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, তখন
তারা অছিয়তের দ্বারা উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি করে। এমতাবস্থায় তাদের উভয়ের জন্য
জাহান্নামের আগুন অবধারিত হয়ে যায় (আবুদাঊদ হা/২৮৬৭; মিশকাত হা/৩০৭৫;
যঈফুল জামে‘ হা/১৪৫৭, অত্র হাদীছটি আলবানী ও আরনাঊত্ব যঈফ বলেছেন। কিন্তু ইমাম
তিরমিযী হাসান ছহীহ বলেছেন। সনদের দিক দিয়ে হাদীছটি ছহীহ না হ’লেও সমর্থক হাদীছ
থাকায় এটি মর্মগতভাবে ছহীহ)।
প্রশ্ন (১৫/৫৫) : সুন্নাত
ছালাত আদায় করার সময় দেখা যায়, মুছল্লীরা সামনে দিয়ে যাতায়াত করে। এমন অবস্থায়
সুৎরা রেখে অতিক্রম করলে শরী‘আত সম্মত হবে কি?
-আমীরুল ইসলাম, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া।
উত্তর : এমতাবস্থায় তার সিজদার
স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে (বুখারী
হা/৪৯৬; মুসলিম হা/৫০৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সুৎরার বিবরণ’ অনুচ্ছেদ)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোন বস্ত্তকে সম্মুখে রেখে ছালাত আদায়
করবে যা তাকে লোকদের থেকে সুৎরা বা পর্দা স্বরূপ হবে, এমতাবস্থায় তার সম্মুখ দিয়ে
(সুৎরার মধ্য দিয়ে) যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়, তাহ’লে সে যেন তাকে বাধা দেয়। কেননা
সে শয়তান’ (বুঃমুঃ মিশকাত হা/৭৭৭
‘ছালাত’ অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ। আজকাল বিভিন্ন মসজিদে সুৎরা বানিয়ে রাখা
হয়। যা মুছল্লীর সামনে রেখে যাতায়াত করা হয়। এটি সামনে দিয়ে যাবার শামিল। শরী‘আতে
এর কোন প্রমাণ নেই।
প্রশ্ন (১৬/৫৬) : বয়স ও অসুস্থতার কারণে যদি কাতারের মধ্যখানে
চেয়ার নিয়ে দাঁড়ান তবে চেয়ারটি পিছনের কাতারে চলে যাওয়ায় পিছনের মুছল্লীদের সমস্যা
হয়। এক্ষেত্রে তাদের জন্য করণীয় কি হবে? তারা কি কাতার সোজা রাখতে বসেই ছালাত আদায়
করবেন, যাতে চেয়ার পিছনের কাতারে না ঠেলে দিতে হয়?
-আব্দুর রহমান, সোনাবাড়িয়া, সাতক্ষীরা।
উত্তর
: যারা দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে সক্ষম তারা দাঁড়িয়েই ছালাত আদায় করবে (ত্বোয়াহা ১৪)। বাধ্যগত অবস্থায় বসে বা
শুয়ে ইশারায় ছালাত আদায় করবে (আলে
ইমরান ১৯১; বুখারী হা/১১১৭; মিশকাত হা/১২৪৮; ছহীহাহ হা/৩২৩)। এক্ষেত্রে
প্রথমত তারা কাতারের কোন প্রান্তে বা শেষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। মুছল্লী সংকট
হ’লে কাতারের সাথে মিলে দাঁড়াবে এবং চেয়ার পিছনে রাখবে। আর এক্ষেত্রে এমন মোড়া বা
চেয়ার ব্যবহার করবে যা পেছনের মুছল্লীর জায়গা দখল না করে বা তাদেরকে কষ্ট না হয়।
আর যদি দাঁড়াতে সক্ষম না হয় তাহ’লে চেয়ার বা মোড়া কাতারে রেখেই ছালাত শুরু করবে। এ
সময় পায়ে পা নয় বরং কাঁধ বরাবর কাতার মিলানোই যথেষ্ট হবে অর্থাৎ চেয়ারের পেছনের
পায়া মুছল্লীদের পা বরাবর রাখতে হবে (বিস্তারিত
দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, জুলাই ২০১৫, ১৮/১০ সংখ্যা ‘দিশারী’ কলাম)।
প্রশ্ন (১৭/৫৭) : অসুস্থতার কারণে আমি টানা ৩/৪ মাস ছালাত আদায়
করতে পারিনি। এক্ষণে সুস্থতা লাভের পর আমাকে উক্ত ছালাত সমূহের ক্বাযা আদায় করতে
হবে কি?
-শাহ মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, কাজলা, রাজশাহী।
উত্তর : ক্বাযা আদায় করতে হবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের কথা ভুলে যায় অথবা ছালাত না পড়ে ঘুমিয়ে যায়,
তার কাফফারা হ’ল স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে সে যেন সেটি আদায় করে নেয়’। অন্য বর্ণনায়
এসেছে, এটি ব্যতীত তার কোন কাফফারা নেই’ (বুখারী হা/৫৯৭; মুসলিম হা/৬৮৪ (৩১৪); মিশকাত হা/৬০৩)। ছাহাবী
আম্মার (রাঃ) তিনদিন বেহুঁশ থাকার পর জাগ্রত হয়ে ক্বাযা ছালাতগুলো আদায় করে
নিয়েছিলেন (আল-মুগনী ১/২৪০)।
অজ্ঞান অবস্থা দীর্ঘায়িত হ’লে বা সে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তওবা করুন বা না করুন
আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। কারণ তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের সাধ্য
মত’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।
প্রশ্ন (১৮/৫৮) : যারা ছালাত পড়ে না, তাদের সালাম না দিলে গুনাহগার
হ’তে হবে কি?
-মুকাররম হোসাইন, বায়পুরা, নরসিংদী।
উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে
ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ
ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার
অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে
না, সে ব্যক্তি ফাসেক (বিস্তারিত
দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩২-৩৫ পৃ.)। ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়াই
ছিল সালাফে ছালেহীনের রীতি। যেমন ছাহাবী জাবের (রাঃ) ফাসেক গভর্ণর হাজ্জাজ বিন
ইউসুফকে সালাম দেননি (বুখারী,
আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৫)। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি পরিচিত বা অপরিচিত
সকলকে সালাম দাও’ (বুঃ মুঃ মিশকাত
হা/৪৬২৯)। সে হিসাবে হেদায়াতের উদ্দেশ্যে ফাসেককে সালাম দেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন (১৯/৫৯) : পালকপুত্র ওয়ারিছ হ’তে পারে কি? তাকে কতটুকু
অছিয়ত করা যাবে?
-নূরুল ইসলাম, ভাড়ালীপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : পালকপুত্র নিজের পুত্র
নয়। অতএব সে ওয়ারিছ হবে না (আনফাল
৭৫)। তবে পালক পিতা চাইলে সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত যে কাউকে অছিয়ত করতে
পারেন (বুখারী হা/১২৯৫; মুসলিম
হা/১৬২৮; মিশকাত হা/৩০৭১)।
প্রশ্ন (২০/৬০) : আমি ফেইসবুক-টুইটার ব্যবহার করে দাওয়াতী কাজ করি।
কিন্তু বিয়ের পর স্বামী এথেকে নিষেধ করেন। এক্ষণে তার এ নির্দেশনা মেনে চলা কি
আমার জন্য আবশ্যিক?
-নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর : স্বামীর যেকোন ইসলামী
আদেশ পালন করা অপরিহার্য। অন্যকে দাওয়াত দেওয়া ফরযে কেফায়া। আর স্বামীর আনুগত্য
করা ফরযে আইন। অতএব স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে পর্দার বিধান মেনে দাওয়াতী কাজ করা
উত্তম কাজ। মনে রাখতে হবে যে, ফেসবুক-টুইটারে কেবল মেয়েরাই দাওয়াত শুনে না, বরং পর
পুরুষেরাও দাওয়াত পায়। যা তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে পারে। সেকারণ বাসায় বসে পর্দার
মধ্যে প্রতিবেশী মা-বোনদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করাই সর্বোত্তম। যেভাবে উম্মাহাতুল
মুমিনীন করতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নারী হ’ল পর্দার বস্ত্ত। যখন সে বের হয়
শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়’ (তিরমিযী
হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯)।
প্রশ্ন (২১/৬১) : পিতা-মাতার মাঝে গন্ডগোল লাগলে সন্তানের করণীয়
কি?
-উম্মে হাসীবা
রেহাইয়ের চর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : সন্তানের নিকট
পিতা-মাতা উভয়ের মর্যাদা সমান। যদিও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অগ্রাধিকার রয়েছে।
আর পিতা-মাতার মধ্যে মনোমালিন্য হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ শয়তান
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে খুশী হয় (মুসলিম হা/২৮১৩; মিশকাত হা/৭১)। অতএব এক্ষেত্রে সন্তানের দায়িত্ব
হ’ল নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়গুলি বিবেচনা করে উভয়কে সচেতন করা এবং বুঝিয়ে তাদের
মাঝে মীমাংসা করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত
থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের
পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়’ (নিসা ৪/১৩৫)। পরস্পরে মীমাংসা করে দেওয়ার কাজটি অত্যন্ত নেকীর
কাজ। এটি না করলে পিতা-মাতার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে যা সন্তানের জন্য বড়ই
বেদনাদায়ক হবে। পরস্পরে মীমাংসা করার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি
কি তোমাদেরকে (নফল) ছিয়াম, ছালাত ও ছাদাক্বা অপেক্ষা উত্তম আমলের কথা বলব না?
ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, বিবদমান দু’ব্যক্তির মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপন
করা। কেননা পরস্পরে সম্পর্ক বিনষ্ট করা হ’ল দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয়’ (তিরমিযী হা/২৫০৯; মিশকাত হা/৫০৩৮)।
সর্বোপরি তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতির জন্য দো‘আ করবে।
প্রশ্ন (২২/৬২) : ব্যবসার ক্ষেত্রে আমি মানত করেছি যে মোট লাভের ১০
শতাংশ আমি দান করব। এক্ষণে উক্ত দানের অর্থ মসজিদ নির্মাণ কাজে ব্যয় করা যাবে কি?
-আরীফুল ইসলাম, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
উত্তর : মানতের টাকা মসজিদ
নির্মাণের কাজে দান করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে কেউ
মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর কেউ আল্লাহর অবাধ্যতার মানত করলে সে যেন তা
পূর্ণ না করে (বুখারী হা/৬৬৯৬;
মিশকাত হা/৩৪২৭)। উল্লেখ্য যে, মসজিদে যাকাতের টাকা ছাড়া সব টাকা প্রদান
করা যাবে।
প্রশ্ন (২৩/৬৩) : রামাযান মাসে সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্র গ্রহণ একই
সাথে হওয়া ইমাম মাহদীর আগমনের সাথে কোন সম্পর্ক আছে কি?
-তাকী, তাহমীদ, সা‘দ
ফুলতলা,পঞ্চগড়।
উত্তর : এটি শী‘আদের আক্বীদা।
তারা মনে করে, যে রামাযান মাসের প্রথম রাতে চন্দ্র গ্রহণ এবং ১৫তম দিন সকালে সূর্য
গ্রহণ হবে সেই মাসেই ইমাম মাহদী আগমন করবেন। উক্ত মর্মে দারাকুৎনীতে মুহাম্মাদ বিন
আলী থেকে বর্ণিত হাদীছটি জাল (দারাকুৎনী
হা/১৮১৬; আল-মাওসূ‘আতু ফী আহাদীছিল মাহদী আয-যাঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ ১৬৯ পৃ.)।
বরং রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমুহের মধ্যে দু’টি
নিদর্শন। কারো জীবন ও মৃত্যুর কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। এর মাধ্যমে আল্লাহ
স্বীয় বান্দাদের সতর্ক করেন’ (বুখারী
হা/১০৪৮; মুসলিম হা/৯১১)।
প্রশ্ন (২৪/৬৪) : ছালাতের শেষ বৈঠকে কুরআনী দো‘আ পাঠ করার ক্ষেত্রে
আঊযুবিল্লাহ বা বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে কি?
-মোরশেদুল ইসলাম
কালিয়াকৈর, গাযীপুর।
উত্তর : ছালাতের শেষ বৈঠকে
কুরআনী দো‘আ পাঠ করলে সে সময় আঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পাঠ করতে হবে না। কারণ এটি
দো‘আর উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়, তেলাওয়াতের জন্য নয়। আর ‘আঊযুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’
পাঠ করার বিধান কেবল তেলাওয়াতের সূচনাতে (নাহল ১৬/৯৮)।
প্রশ্ন (২৫/৬৫) : অধ্যয়নে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য কোন দো‘আ বা আমল আছে
কি?
রাতুল*, ঢাকা।
*[আরবীতে ইসলামী নাম রাখুন (স.স.)]
উত্তর : অধ্যয়নে মনোযোগ বৃদ্ধির
জন্য নিম্নের দো‘আসমূহ পাঠ করা যায়। (ক) رَبِّ زِدْنِىْ عِلْمًا- (রবিব ঝিদনী ‘ইল্মা)। ‘হে প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর’ (ত্বোয়াহা ২০/১১৪)। এছাড়াও পড়া যায় (খ)َاللَّهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي وَزِدْنِي عِلْمًا- (আল্লাহুম্মানফা‘নী
বেমা ‘আল্লামতানী ওয়া ‘আল্লিমনী মা ইয়ানফা‘উনী ওয়াযিদনী ‘ইলমা)।
‘হে
আল্লাহ! আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছ তা দ্বারা আমাকে উপকৃত কর। আর আমাকে শিক্ষা দাও যা
আমার উপকারে আসে এবং আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর’ (তিরমিযী
হা/৩৫৯৯; ইবনু মাজাহ হা/২৫১; মিশকাত হা/২৪৯৩; ছহীহাহ হা/৩১৫১)। (গ)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাতের পর বলতেন,
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَّافِعًا وَّعَمَلاً مُّتَقَبَّلاً وَّرِزْقًا طَيِّباً-
আল্লা-হুম্মা ইনণী আস’আলুকা ‘ইলমান নাফে‘আন, ওয়া
‘আমালাম মুতাক্বাববালান, ওয়া রিঝক্বান ত্বাইয়েবান’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র
রূযী প্রার্থনা করছি) (আহমাদ
হা/২৬৫৬৪, ইবনু মাজাহ হা/৯২৫, ছহীহ; ত্বাবারাণী ছগীর হা/৭৩৬; মিশকাত হা/২৪৯৮)।
প্রশ্ন (২৬/৬৬) : দেবীর উদ্দেশ্যে মশা বা মাছি দান করার কারণে জনৈক
ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
-মোতাহহারুল আলম
মোস্তফা গ্রুপ, চট্টগ্রাম।
উত্তর : উক্ত ম©র্ম বর্ণিত
হাদীছটি মারফূ‘ হিসাবে যঈফ, তবে মওকূফ হিসাবে ছহীহ (যঈফাহ হা/৫৮২৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
আমার মনে হয়েছে এটি ইস্রাঈলী বর্ণনা। তিনি বলেন, সালমান ফারেসী যখন অমুসলিম ছিলেন,
তখন তিনি তাদের কোন সরদার থেকে এটি শুনে থাকতে পারেন। তাছাড়া তার ভাষা ছিল
অনারবী (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮২৯)।
প্রশ্ন
(২৭/৬৭) : ‘যে ব্যক্তি নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়েছে’ হাদীছটি
কি ছহীহ?
-মাহবূব হাসান, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত কথাটি সমাজে
প্রচলিত থাকলেও এর কোন ভিত্তি নেই (সিলসিলা
যঈফাহ হা/৬৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২৮/৬৮) : তিনদিনের বেশী কথা বন্ধ না রাখার বিষয়টি কি সকল
ধর্মালম্বী মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, না কেবল মুসলমানদের জন্য? খ্রিষ্টানদের
সাথেও কি তিনদিনের বেশী কথা বন্ধ রাখা যাবে না?
-হিযবুল্লাহ, বালিয়াপুকুর, রাজশাহী।
উত্তর : বিষয়টি কেবল মুসলমানদের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা অধিকাংশ হাদীছে মুসলিম বা মুমিন শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যা
প্রমাণ করে যে, এটি মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কাফের বা অমুসলিমদের ক্ষেত্রে এ
বিধান প্রযোজ্য নয় (মিরক্বাত
৮/৩১৫৩; আওনুল মা‘বুদ ১৩/১৭৬)।
প্রশ্ন (২৯/৬৯) : জনৈক ব্যক্তি নিয়মিত সিগারেট খায় এবং পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাতও আদায় করে। তার ছালাত কবুল হয় কি? যদি না হয়, তবে সিগারেট ছাড়ার আগ পর্যন্ত
ছালাত থেকে বিরত থাকাই উত্তম হবে কি?
-রেযাউল করীম, গাবতলী, বগুড়া।
উত্তর : কোন মুসলমানের জন্য কোন
অবস্থাতেই ছালাত থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই (নিসা ১০৩)। প্রশ্নোল্লেখিত ব্যক্তির ছালাত আদায়ে তার ছালাতের
ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে হারাম খাদ্য খাওয়ার কারণে সে গুনাহগার হবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধযুক্ত গাছ থেকে খাবে (অর্থাৎ কাঁচা
পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি) সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। নিশ্চয়ই যার দ্বারা
মানুষ কষ্ট পায় তার দ্বারা ফেরেশতারাও কষ্ট পায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০৭, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।
সিগারেটে পেঁয়াজ ও রসুন অপেক্ষা মারাত্মক দুর্গন্ধ রয়েছে। এর ধোঁয়ায় রয়েছে নিকোটিন
বিষ। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চূড়ান্ত ক্ষতিকর। অধিকন্তু বিড়ি-সিগারেট,
তামাক-জর্দা-গুল ইত্যাদি মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত, যা খাওয়া বা ব্যবহার করা
সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মাদকতা আনয়নকারী প্রত্যেক বস্ত্তই
মদ এবং প্রতিটি মাদকদ্রব্য হারাম’ (মুসলিম
হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)। তিনি বলেন, যে বস্ত্তর বেশী পরিমাণে মাদকতা আসে,
তার কম পরিমাণও হারাম’ (তিরমিযী
হা/১৮৬৫; ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৬৪৫, সনদ ছহীহ )।
প্রশ্ন (৩০/৭০) : কোন হাদীছকে অধিক সংখ্যক বিদ্বান যদি ছহীহ বলেন
এবং কিছু বিদ্বান যদি যঈফ বলেন, তবে কোন মতটি অগ্রাধিকারযোগ্য হবে? বিশেষত সাধারণ
মানুষের জন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নিরাপদ হবে?
-তাওহীদুল ইসলাম
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
উত্তর : সাধারণ মানুষ এ
ব্যাপারে অভিজ্ঞ, আমলদার ও আল্লাহভীরু হাদীছপন্থী আলেমদের জিজ্ঞেস করে সঠিক বিষয়টি
জেনে নিবে। আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা না জানো, তাহ’লে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস
কর (নাহল ৪৩)। তিনি
বলেন, ‘সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে’। ‘যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে, অতঃপর
তার মধ্যে যেটা উত্তম সেটার অনুসরণ করে। তাদেরকে আল্লাহ সুপথে পরিচালিত করেন এবং
তারাই হ’ল জ্ঞানী’ (যুমার
১৮)। আর উত্তম হ’ল ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক ইলম। তা কখনোই রায় ভিত্তিক ইলম নয়।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল, যেখানে একজন আহলুল হাদীছ আছেন,
যিনি হাদীছের ছহীহ-যঈফ বুঝেন না। আরেকজন আহলুর রায় বা রায়পন্থী বিদ্বান আছেন।
এমতাবস্থায় আমরা কার নিকট ফৎওয়া জিজ্ঞেস করব? জবাবে তিনি বললেন, আহলুল হাদীছকে
জিজ্ঞেস কর। কেননা যঈফ হাদীছ রায়-এর চাইতে অধিক শক্তিশালী’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কে‘ঈন ১/৭৭)।
ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা রায়পন্থীদের থেকে দূরে থাক। ওরা সুন্নাতের শত্রু। হাদীছ
আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ওরা মনগড়া কথা বলে। ফলে নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যকে
পথভ্রষ্ট করে’ (দারাকুৎনী হা/৪২৩৬;
দ্র. সম্পাদকীয় ‘কল্যাণের অভিযাত্রী’ ১৬/১২ সংখ্যা সেপ্টেম্বর ২০১৩;
দিগদর্শন-২ পৃ.২৭)।
প্রশ্ন (৩১/৭১) : কুমিল্লার মুরাদনগরে আল্লাহর ৯৯টি নাম সম্বলিত
একটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে আল্লাহর নাম লেখা জায়েয হবে কি?
-শহীদুযযামান, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।
উত্তর : যে মুমিন আসমাউল হুসনার
৯৯টি নাম অর্থ অনুধাবন সহ পূর্ণ ঈমান ও আনুগত্যের সাথে এবং আল্লাহর উপর অটুট
নির্ভরতার সাথে মুখস্ত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারী হা/৭৩৯২; মুসলিম হা/২৬৭৭; ফাৎহুল বারী
১১/২২৬-২২৭)। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, পিলার নির্মাণ করে এগুলির
প্রদর্শনী করা হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি
ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি’ (মুসলিম হা/২১০৭; মিশকাত হা/৪৪৯৪; আবুদাঊদ হা/৪১৫৩)। অতএব এগুলি
প্রদর্শনীর বিষয় নয়। বরং ঈমান ও আমলের বিষয়।
আজকাল
বিভিন্ন মুসলিম দেশে শিল্পকর্ম হিসাবে কিংবা রাস্তার শোভাবর্ধনে এধরণের
ক্যালিগ্রাফীর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে বিগত যুগের নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম
পিলারে বা দেওয়ালে এগুলো লেখাকে সমর্থন করতেন না। হানাফী বিদ্বান ইবনুল হুমাম
বলেন, ‘আল্লাহর কিতাব এবং তার নামসমূহ দিরহাম, মেহরাব ও দেওয়ালে লেখা মাকরূহ (ফাৎহুল কাদীর ১/১৬৯)। অপর হানাফী
বিদ্বান ইমাম যায়লাঈ অনুরূপ মন্তব্য করে বলেন, এতে কিছু লেখা মিটে যায়, ফলে
কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর নামের বিকৃতি হ’তে পারে যা কুরআনকে অসম্মানের শামিল (তাবীনুল হাক্বায়েক্ব ১/৫৮)। শায়খ
উছায়মীন এ ধরনের কর্মকে বিদ‘আত বলে সতর্ক করেছেন (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৯৭)। এ ব্যাপারে সঊদী স্থায়ী ফৎওয়া বোর্ডকে
জিজ্ঞাসা করা হ’লে তারাও এধরনের কাজকে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ
বিরোধী বলে মতপ্রকাশ করেন (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ৪/৫৬-৫৮)। সুতরাং এগুলি থেকে বিরত থাকাই সমীচীন।
প্রশ্ন (৩২/৭২) : মসজিদ ও মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চিত থাকে।
সেগুলোর উপর কি যাকাত ফরয হবে?
-আব্দুল্লাহ, কেশরহাট, রাজশাহী
উত্তর : এসব প্রতিষ্ঠানের
সম্পদে যাকাত ফরয হবে না। কারণ এগুলি ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়। বরং এইসব তহবিলে
বিভিন্ন দান-ছাদাক্বার মাল জমা হয়’ (বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৯৫-৯৬, ফাৎওয়া নং ৫১৬১)।
প্রশ্ন (৩৩/৭৩) : জনৈকা মহিলার বিবাহের পরে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার
পথে স্বামী হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। এক্ষণে সে কি ইদ্দত পালন করবে এবং মোহরানা
পাবে?
-যুলফিকার আলী, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : এক্ষেত্রে স্ত্রীকে চার
মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে এবং স্ত্রী মোহরানাসহ স্বামীর সম্পত্তিতে
উত্তরাধিকারী হবে। কারণ সে শরী‘আত সম্মতভাবে স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছে (তিরমিযী হা/১১৪৫; আবুদাউদ হা/২১১৪
প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩২০৭)। ঐ স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ীতে বা পিতার
বাড়ীতে অথবা যেখানে সে নিরাপত্তা বোধ করে, সেখানে থেকে ইদ্দত পালন করবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৮/১৫৮-৫৯, ক্রমিক
৬৩৫২)।
প্রশ্ন (৩৪/৭৪) : আয়কর ফাঁকি দিলে গুনাহগার হ’তে হবে কি? ফ্রি
ল্যান্সিং করে বিদেশী বিভিন্ন কাজ করে দিয়ে যে উপার্জন করা হয় তার উপর আয়কর দেওয়া
আবশ্যক কি?
-মুজাহিদুল ইসলাম, ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া।
উত্তর : ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত
প্রদান করা আবশ্যক, কিন্তু আয়করের কোন বিধান নেই। তবে বর্তমানে দেশের
রাষ্ট্রব্যবস্থা যেহেতু ইসলামী নয় সেজন্য দেশীয় আইন মানার স্বার্থে আয়কর দিতে হবে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, শাসকের কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও তারা তোমার পিঠে আঘাত
করে এবং তোমার সম্পদ ছিনিয়ে নেয় (মুসলিম
হা/১৮৪৭; মিশকাত হা/৫৩৮২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তাদের হক তাদের দাও এবং
তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও’ (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ; মিশকাত হা/৩৬৭২)। ‘কেননা তাদের পাপ তাদের উপর এবং তোমাদের পাপ
তোমাদের উপর বর্তাবে’ (মুসলিম;
মিশকাত হা/৩৬৭৩)। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির
প্রতি কোন আনুগত্য নেই’ (শারহুস
সুন্নাহ, মিশকাত হা/৩৬৯৬)।
প্রশ্ন
(৩৫/৭৫) : জনৈক ইমাম বলেন, হাদীছে এসেছে প্রত্যেক বান্দা যে অবস্থায় মারা যাবে
তাকে সে অবস্থায় উঠানো হবে। অর্থাৎ যে কাপড়ে দাফন হবে সে কাপড়ে পুনরুত্থিত হবে।
একথা কি সঠিক?
-শামসুযযামান, হালিশহর, চট্টগ্রাম।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত
হাদীছটি ছহীহ (মুসলিম হা/২৮৭৮;
মিশকাত হা/৫৩৪৫)। তবে ব্যাখ্যা সঠিক হয়নি। সঠিক ব্যাখ্যা হ’ল, দুনিয়াতে
ভালো কর্ম করে মারা গেলে ভালো অবস্থায় আর মন্দ কর্ম করে মারা গেলে মন্দ অবস্থায়
উঠবে (মানাবী, ফায়যুল ক্বাদীর
২/৪৪০)। যেমন বলা হয়েছে, ইহরাম অবস্থায় মারা গেলে তাকে তালবিয়াহ পাঠ করা
অবস্থায় উঠানো হবে (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৩৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে
বস্ত্রহীন অবস্থায় উঠানো হবে (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৩৬)। আর সেদিন প্রথম পোষাক পরানো হবে হযরত ইব্রাহীম
(আঃ)-কে (বুঃমুঃ মিশকাত হা/৫৫৩৫)।
প্রশ্ন
(৩৬/৭৬) : সৌন্দর্যের জন্য পুরুষদের হাতে বা নখে মেহেদী মাখা জায়েয কি?
-হাবীবুর রহমান, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : সৌন্দর্যের জন্য
পুরুষদের হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নয় (ইবনু হাজার, ফৎহুল বারী হা/৫৮৯৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। কারণ মেহেদী
এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
পুরুষদের খোশবূ এমন, যাতে সুগন্ধি আছে রং নেই। পক্ষান্তরে নারীদের খোশবূ এমন, যাতে
রং আছে সুগন্ধি নেই (তিরমিযী
হা/২৭৮৭, মিশকাত হা/৪৪৪৩)। এছাড়া তিনি রঙ থাকার কারণে পুরুষদের জন্য
যাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৫৮৪৬, মুসলিম হা/২১০১, মিশকাত হা/৪৪৩৪)। তবে চিকিৎসার
প্রয়োজনে যে কোন স্থানে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয আছে (তিরমিযী হা/২০৫৪, ছহীহুল জামে‘ হা/৪৬৭১,
ছহীহাহ হা/২০৫৯)। এছাড়া মাথার চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা উত্তম (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৪৫১)।
প্রশ্ন (৩৭/৭৭) : মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি ব্যাংকে কয়েক
বছর মেয়াদী ফিক্সড ডিপোজিট করে মাসিক ভিত্তিতে কিছু টাকা জমাতে চাই। লভ্যাংশ দান
করে দেয়ার নিয়তে এটা করলে কি অন্যায় কাজে সহযোগিতার শামিল হবে?
-ফরীদুল ইসলাম, চৌড়হাস, কুষ্টিয়া।
উত্তর : বর্তমানে দেশের কোন
ব্যাংকই শতভাগ সূদমুক্ত নয়। তাই এরূপ না করে বরং সূদমুক্ত একাউন্ট খুলে তাতে টাকা
জমা করতে হবে। কারণ সূদী কর্মকান্ডে সাহায্য করার মাধ্যমে উদ্দিষ্ট নেকীর বদলে
গুনাহ অর্জিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর
এবং গোনাহ ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা
পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্ত্ত ব্যতীত কবুল করেন না (মুসলিম হা/ ১০১৫, মিশকাত হা/২৭৬০)।
প্রশ্ন (৩৮/৭৮) : পরিবারের অশান্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য কোন আমল
আছে কি?
-জারীন, রাজশাহী।
উত্তর : পরিবার থেকে অশান্তি
দূর করতে হলে পরিবারে ইসলামী বিধান কায়েম করতে হবে এবং অশান্তি সৃষ্টি করে এমন
কর্ম যেমন গীবত, চোগলখুরী, হিংসা, অহংকার, বেপর্দা, অশ্লীলতা, যুলুম প্রভৃতি বন্ধ
করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ
থেকেই রহমত ছিনিয়ে নেয়া হয় (আবুদাউদ
হা/৪৯৪২; মিশকাত হা/৪৯৬৮; ছহীহুত তারগীব হা/২২৬১)। সেই সাথে আল্লাহর
প্রতি আনুগত্যশীল ইসলামী পরিবার গড়ে তুলতে হবে। সর্বদা পরিবারের জন্য আল্লাহর নিকট
দো‘আ করতে হবে। সর্বোপরি পরিবারে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে
তুলতে পারলেই অশান্তি দূর হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৩৯/৭৯) : ঢাকা শহরে বাড়ি করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ না
দেখালে সরকারী ট্যাক্সের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এক্ষণে সরকারী যুলুম থেকে বাঁচার
জন্য ব্যাংক ঋণ নেওয়া জায়েয হবে কি?
-জাহিদুল ইসলাম, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
উত্তর : সাধ্যপক্ষে ঋণ নেওয়া
থেকে বিরত থাকাই সমীচীন। কারণ ঋণ নিলে এক অন্যায় থেকে বাঁচতে আরেকটি অন্যায় করা
হবে। অতএব সরকারী আইন বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক হলেও পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বাধ্যগত
অবস্থায় তা অনুসরণ করাই বাঞ্ছনীয় (বুখারী,
মুসলিম; মিশকাত হা/৫৩৮২, ৩৬৭২, ৩৬৭৩)। সর্বোপরি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল
করতে হবে। কেননা যে ব্যক্তি পাপমুক্ত থাকতে চায়, আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে
দেন (তালাক ২-৩)।
প্রশ্ন (৪০/৮০) : ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) লিখিত কিতাবুর রূহ -এ মৃত
ব্যক্তিদের সাথে জীবিতদের কথপোকথনের অদ্ভুত বিবরণ পেশ করা হয়েছে। এসব বিবরণের
সত্যতা আছে কি?
-আব্দুর রহমান
ফরাযীকান্দা, নারায়ণগঞ্জ।
উত্তর : মৃত ব্যক্তিদের রূহের
সাথে জীবিত ব্যক্তিদের কথোপকথনের কোন বর্ণনা কুরআন বা হাদীছে নেই। তবে স্বপ্নে
মৃতদের রূহের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয়টি হাদীছ ও সালাফদের বক্তব্যে পাওয়া যায়।
যেমন একটি হাদীছে এসেছে, দাউস গোত্রের তুফাইল বিন আমর (রাঃ) হিজরত করলে তাঁর
গোত্রের এক ব্যক্তি তাঁর সাথে হিজরত করে। মদীনার আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ার ফলে সে
ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে অধৈর্য হয়ে তীরের ফলা দিয়ে নিজের হাতের আঙ্গুলের জোড়
কেটে ফেলে। এর ফলে তার দু’টি হাত হ’তে তীব্রভাবে রক্তক্ষরণ হ’তে থাকে। পরিশেষে সে
মারা যায়। তুফাইল বিন আমর তাকে স্বপ্নে দেখেন, তার আকার-আকৃতি সুন্দর। কিন্তু
দেখলেন যে, সে তার হাত দু’টিকে ঢেকে আছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার
প্রতিপালক তোমার সাথে কী আচরণ করেছেন? সে বলল, নবী (ছাঃ) এর দিকে হিজরত করার কারণে
আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তোমার হাত দু’টি ঢাকা কেন? সে বলল,
আমাকে বলা হয়েছে, তুমি নিজে যা নষ্ট করেছ, তা কখনই ঠিক করব না। তুফাইল আল্লাহর
রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এ ঘটনা খুলে বললে রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! তার হাত
দু’টিকে ক্ষমা করে দাও’ (মুসলিম
হা/১১৬; মিশকাত হা/৩৪৫৬; আহমাদ হা/১৫০২৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৪)। অন্য
বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তার হাতকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তিনবার দো‘আ
করেন (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩০১৭)।
অন্য
একটি আছারে এসেছে, উমাইয়াহ বিন খালেদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, খালেদ আল-কাসরী
ইরাকের গভর্ণর হয়ে ছা‘-কে দ্বিগুণ করলেন। তাতে এক ছা‘ ষোল রতলের সমান হয়। আবুদাঊদ
বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মুহাম্মাদ খাল্লাদকে নিগ্রোরা বন্দী করে হত্যা করে। তিনি তার
হাতের ইশারায় বলেন, এভাবে। আবুদাঊদ তার হাত প্রসারিত করেন এবং দু’হাতের তালু মাটির
দিকে উপুড় করে বলেন, আমি তাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ আপনার সাথে কেমন
ব্যবহার করেছেন? তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। আমি বললাম,
তাহ’লে আপনার বন্দী অবস্থা আপনার অনিষ্ট করতে পারেনি (আবুদাউদ হা/৩২৮১, সনদ ছহীহ মাক্বতূ‘)।
অত্র
হাদীছসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, স্বপ্নে মানুষের রূহের সাথে মৃতদের রূহের সাক্ষাৎ
হ’তে পারে (ইবনু তায়মিয়াহ,
মিনহাজুস সুন্নাহ ৬/২০১; যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফায ২/১৫; ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ্
২১-৩০ পৃ.)। কুরআনের সূরা যুমারের ৪২ আয়াতটিকেও অনেকে এ বিষয়ে দলীল হিসাবে
পেশ করেন।
তবে
নবীদের স্বপ্ন ব্যতীত অন্য কারু স্বপ্ন শরী‘আতের কোন দলীল নয়। কেননা এতে সুনিশ্চিত
জ্ঞান অর্জিত হয় না। এসব গায়েবের খবর, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। তবে এগুলি
নেককার মুমিনকে সৎকর্মে অধিক উদ্বুদ্ধ করে। ইবনুল ক্বাইয়িমের কিতাবুর রূহ গ্রন্থে
বর্ণিত ঘটনাগুলির মধ্যে কিছু রয়েছে অপ্রমাণিত হাদীছ ভিত্তিক এবং অনেকগুলি রয়েছে
স্বপ্ন ও ঘটনা ভিত্তিক। যা ভুলও হ’তে পারে, আবার সঠিকও হ’তে পারে। অতএব সেসব
বর্ণনাকে সত্যায়ন করা ও তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা যরূরী নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৬৪৬; শায়খ বিন বায,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৩১১-৩১২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৫/৪৫৪-৪৫৫)।
প্রশ্ন (১/৮১) : ফেসবুকে বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ইমোজি ব্যবহার
করা শরী‘আত সম্মত কি?
-মুকাররম হোসাইন, বাসাইল, নরসিংদী।
উত্তর : ইমোজি শব্দটির
উৎপত্তি জাপানী শব্দ ইমোডজি থেকে, যার অর্থ স্মাইলি অর্থাৎ হাসিমুখ। এটি এক ধরনের
আইকন, যা মানুষের বিভিন্ন আবেগ-অনুভূতি প্রকাশার্থে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসমূহে
ব্যবহৃত হয়। ইমোজি বা ইমোকটিন প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে ২০১২ সালে। যদিও ১৯৯৯ সাল
থেকে ইমোজির অস্তিত্ব ছিল। এই ইমোজি যদি পূর্ণ অবয়ব বিশিষ্ট প্রাণীর অনুরূপ হয়,
তবে তা ব্যবহার জায়েয নয়। কেননা তা হাদীছে নিষিদ্ধ ছবি অংকনের পর্যায়ভুক্ত হওয়ার
সম্ভাবনা রাখে (বুখারী হা/২২২৫,
৫৯৬৩; মুসলিম হা/২১১০)। আর যদি চোখ-মুখ বা শারীরিক অবয়ব স্পষ্ট বুঝা না
যায়, তবে তা ব্যবহারে দোষ নেই। কেননা তা প্রাণীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয় (আল-মুগনী ৭/২৮২; উছায়মীন, মাজমূ ফাতাওয়া
২/২৭৯)। তবে অকারণ এগুলোর ব্যবহার পরিত্যাগ করাই তাক্বওয়ার পরিচয়। আর
নিঃসন্দেহে তাক্বওয়াই হ’ল মানুষের সর্বোত্তম সম্বল (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।
প্রশ্ন
(২/৮২) : গরম ভাত ফুঁক দিয়ে ঠান্ডা করা বা না করার ব্যাপারে শারঈ কোন নির্দেশনা
আছে কি?
-আব্দুল্লাহ, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।
উত্তর : সাধারণভাবে
খাবারে ফুঁক দেওয়া নিষিদ্ধ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তাতে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন (তিরমিযী হা/১৮৮৮; মিশকাত হা/৪২৭৭, সনদ ছহীহ)। খাবারে ফুঁক
দিলে তাতে নিঃশ্বাস থেকে নিঃসৃত জীবাণু মিশ্রিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্যই সম্ভবতঃ
রাসূল (ছাঃ) এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন (উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন,
৪/২৪৪)। মুহাল্লাব বলেন, যেমন পানিতে ফুঁক দেওয়া নিষেধ তেমনি শক্ত
খাবার বা অন্যান্য তরল পদার্থেও ফুঁক দেওয়া নিষেধ (ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ১০/৯৪)। আল্লামা
শাওকানী, আযীমাবাদী, মুবারকপুরীসহ অধিকাংশ ব্যাখ্যাকার বলেন, হাদীছে বর্ণিত
নিষেধাজ্ঞা খাবার ও পানীয়র জন্য ব্যবহৃত সকল পাত্রকে শামিল করে (নায়লুল আওতার ৮/২২১; আওনুল মা‘বুদ ১০/১৩৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/১০)।
অতএব গরম ভাত বা যেকোন খাবার ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে হ’লেও তাতে ফুঁক দেয়া সমীচীন
নয়। উছায়মীন বলেন, পানীয় ঠান্ডা করার জন্য ফুঁক দেওয়া প্রয়োজন সাপেক্ষে জায়েয
হওয়ার ব্যাপারে কতিপয় বিদ্বান মত দিয়েছেন। তবে উত্তম হ’ল পরিহার করা। খাদ্য গরম
হ’লে অন্য পন্থায় ঠান্ডা করা যেতে পারে (শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ৪/২৪৪-৪৫)।
প্রশ্ন
(৩/৮৩) : বিয়ের পূর্ব থেকেই আমার স্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীতে চাকুরী করে। সেখানে
শার্ট-প্যান্ট পরিধান এবং পর্দাবিহীন থাকা আবশ্যক। সে চাকুরী ছেড়ে দিতেও নারায।
এমতাবস্থায় তার উপার্জন আমার জন্য হালাল হবে কি? তার ব্যাপারে আমার করণীয় কি?
-ইলিয়াস খলীল, তেজগাঁও, ঢাকা।
উত্তর : প্রথমতঃ
সশস্ত্র বাহিনীর চাকুরী নারীদের জন্য নয়। কারণ নারীদের উপর জিহাদ ফরয নয়। আয়েশা (রাঃ)
বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের জন্য কি জিহাদ বাধ্যতামূলক? তিনি
বলেন, হ্যাঁ, তাদের উপরও জিহাদ ফরয, তবে তাতে কোন যুদ্ধ নেই। বরং তা হচ্ছে হজ্জ ও
ওমরাহ (ইবনু মাজাহ হা/২৯০১; মিশকাত হা/২৫৩৪; ছহীহুত
তারগীব হা/১০৯৯)। দ্বিতীয়তঃ প্যান্ট ও শার্ট পরিধান হ’ল পুরুষদের সাথে
সাদৃশ্য অবলম্বন, যা হারাম। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অভিসম্পাত করেছেন
নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে’ (বুখারী হা/৫১৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৯)। যেহেতু উক্ত প্রতিষ্ঠানে
শারঈ বিধান মানার সুযোগ নেই। অতএব স্বামীর দায়িত্ব হ’ল যেকোন উপায়ে তাকে উক্ত
চাকুরী থেকে ফিরিয়ে আনা এবং তার আয় গ্রহণ না করা। নতুবা সে ‘দাইয়ূছ’ হিসাবে গণ্য
হবে। আর দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না (নাসাঈ হা/২৫৬২; ছহীহাহ হা/৬৭৪)।
উল্লেখ্য যে, বাধ্যগত প্রয়োজন, নিরাপত্তা ও পূর্ণ পর্দার পরিবেশ থাকার শর্তেই কেবল
নারীরা বাইরে চাকুরী করতে পারে।
প্রশ্ন (৪/৮৪) : একটি মসজিদ
নির্মাণকালে মিস্ত্রির ভুলে মসজিদের কিবলা মূল কিবলা থেকে কয়েক ডিগ্রী সরে যায়।
বর্তমানে কিবলা সঠিক করতে গেলে মসজিদ ভাঙ্গতে হবে। এমতবস্থায় করণীয় কি?
-আহমাদুল্লাহ, শাসনগাছা, কুমিল্লা।
উত্তর : উক্ত
মসজিদেই ছালাত আদায় করবে। খুব অল্প হ’লে উক্ত কাতারেই ছালাত আদায় করবে। আর একটু
বেশী হ’লে কাতার করার সময় যত ডিগ্রী বাঁকা হয়েছে বলে মনে হয় তত ডিগ্রী এঙ্গেলে
কাতার হয়ে জামা‘আত শুরু করবে। ইনশাআল্লাহ নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে এতে ছালাতের কোন
ক্ষতি হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া
২২/২১৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩১৩)।
প্রশ্ন (৫/৮৫) : আল্লাহ যা করেন
মঙ্গলের জন্য করেন। কিন্তু নিষ্পাপ বহু শিশু বিকলাঙ্গ বা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা
নিয়ে জন্মায় এবং নিদারুন কষ্টে নিপতিত হয়। এর পিছনে আল্লাহর হিকমত কী?
-জাহিদ আলী, বিরামপুর, দিনাজপুর।
উত্তর : আল্লাহ
যা করেন তা বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন (মুসলিম হা/৭৭১)। তিনি
কারও উপর বিন্দু পরিমাণ যুলুম করেন না (নিসা ৪/৪০)। এক্ষণে
বহু শিশু বিকলাঙ্গ বা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জন্মায়। এরা স্বাস্থ্যবান
লোকদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তারা নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া
আদায় করে কি-না এবং তারা দুর্বলদের প্রতি তাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করে কি-না। এই
পরীক্ষা তার পরিবার, সমাজ ও সরকার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এই পরীক্ষার বিনিময়ে হয়ত
আল্লাহ তার জন্য হেদায়াত ও জান্নাতের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যেমন রাসূল (ছাঃ)
বলেন, আল্লাহ বলেছেন, আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দু’টি বস্ত্ত
(অর্থাৎ সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়) সম্পর্কে পরীক্ষায় ফেলি, আর তাতে সে ধৈর্য ধরে,
তাহ’লে আমি তাকে সে দু’টির বিনিময়ে জান্নাত দান করব’ (বুখারী হা/৫৬৫৩)।
সর্বোপরি প্রকৃত ঈমানদারের
জন্য ভাল ও মন্দ উভয়টিই কল্যাণকর হয়ে থাকে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুমিনের
ব্যাপারটি কতই না বিস্ময়কর! তার সমস্ত কাজই তার জন্য কল্যাণকর। যদি তাকে কোন মঙ্গল
স্পর্শ করে, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তাকে
কোন মন্দ স্পর্শ করে, সে ছবর করে। আর এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়’ (মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭)।
প্রশ্ন (৬/৮৬) : একই পাপ বারবার করে বহুবার তওবা করেছি। এভাবে
বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করলে তওবা কবুলযোগ্য হবে কি?
-শহীদুয্যামান, কাথুলী রোড, মেহেরপুর।
উত্তর : কবুলযোগ্য হবে
ইনশাআল্লাহ্। একই পাপ একাধিক বার করা বড় অন্যায়। তবে তা তওবা কবুলের জন্য
প্রতিবন্ধক নয়। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সে বলল,
হে আমার প্রতিপালক! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ মাফ করে দাও। আল্লাহ
বললেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গুনাহ মাফ
করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন? (সে যদি জেনে-বুঝে ক্ষমা প্রার্থনা করে থকে) তাহলে
আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল বিরত
থাকার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হ’ল এবং একইভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তখন আল্লাহ একই
জবাব দিয়ে আবারো তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তার কিছুদিন পর তৃতীয়বারের মত গুনাহ করে
ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ রাববুল আলামীন সেবারও তার জন্য ক্ষমা ঘোষণা
করলেন’ (বুখারী হা/৭৫০৭; মুসলিম
হা/২৭৫৭; মিশকাত হা/২৩৩৩)।
উক্ত
হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’বার বা হাযারবার বা তার চেয়ে
বেশীবারও পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। এমনকি সকল
পাপের জন্য একবার তওবা করলেও তার তওবা শুদ্ধ হবে (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)। অতএব
নিরাশ না হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় ইচ্ছার সাথে তওবা করতে হবে। সাথে সাথে ভালো
মানুষদের সাথে উঠা-বসা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে
যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে ডাকে তাঁর দীদার লাভের কামনায় এবং তুমি
তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়’ (কাহফ ১৮/২৮)।
প্রশ্ন
(৭/৮৭) : হযরত ওমর (রাঃ) তিন তালাককে তিন তালাক হিসাবে গণ্য করেছেন। এটি রাসূল
(ছাঃ)-এর ফয়ছালার খেলাফ নয় কি? তার এরূপ ফয়ছালা যদি সেসময় গ্রহণযোগ্য হয়, তাহ’লে
বর্তমানে আমাদের জন্য বৈধ না হওয়ার কারণ কি?
উত্তর :
তালাকের ব্যাপারে ওমর (রাঃ)-এর ফয়ছালা প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে গৃহীত তাঁর সাময়িক
সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এতে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সেকারণ মৃত্যুর পূর্বে তিনি
অনুতপ্ত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, ইগাছাতুল লাহফান,
১/২৭৬)। কেবল তিনিই নন, বরং এ ধরনের ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত অন্য খলীফাগণও
নিয়েছিলেন। যেমন মদ্য পানকারীকে রাসূল (ছাঃ) চড়-থাপ্পড়, খেজুরের ডাল দিয়ে পিটানো,
জুতাপেটা ইত্যাদি করতেন। আবুবকর (রাঃ) খেলাফতকালে ৪০ বেত এবং ওমর (রাঃ)-এর
খেলাফতের শেষদিকে ফাসেক্বী বেড়ে গেলে তিনি ৮০ বেত্রাঘাত করেন (মুসলিম হা/১৭০৬; বুখারী হা/৬৭৭৯; মিশকাত হা/৩৬১৬)। আবুবকর
(রাঃ) জনৈক পায়ুকামীকে এবং আলী (রাঃ) তাঁকে ‘আল্লাহর অবতার’ দাবীকারী একদল
যিন্দীককে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন। অথচ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন প্রাণীকে আগুনে
পুড়িয়ে মারতে নিষেধ করেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম গর্ভাবস্থা দেখেই যেনার শাস্তি এবং
মদের গন্ধ পেয়েই মদ্যপানের শাস্তি দিয়েছিলেন সাক্ষীর অপেক্ষা করেননি। ওমর (রাঃ)
মদের দোকান ও মদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ৩য় খলীফা ওছমান (রাঃ) কুরায়শী
ক্বিরাআতের বিপরীতে কুরআনের অন্য সকল মুছহাফ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াকক্বেঈন (বৈরূত : দারুল জীল, ১৯৭৩)
৪/৩৭২-৭৪ পৃ.)। মদীনার বাযারে লোক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি জুম‘আর
খুৎবার মূল আযানের পূর্বে ‘যাওরা’ বাযারে আরেকটি আযানের প্রচলন করেন (বুখারী হা/৯১২; মিশকাত হা/১৪০৪)। এমনিভাবে খোলাফায়ে
রাশেদীনের যুগে সময় ও প্রেক্ষিত বিবেচনায় ইজতিহাদের ভিত্তিতে বেশ কিছু প্রশাসনিক
নির্দেশ সাময়িকভাবে জারী করা হয়েছিল, যা চিরস্থায়ীভাবে জারী রাখার দলীল নয়। কেননা
এলাহী বিধানই একমাত্র চিরন্তন ও চিরস্থায়ী (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩৩/৯৭-৯৮; দ্র. তালাক ও তাহলীল বই, পৃ. ৪৬-৪৭)।
প্রশ্ন
(৮/৮৮) : কারো উপর ছিয়ামের কাফফারা থাকলে কাফফারার ছিয়াম পালনকালে স্ত্রী মিলন
করতে পারবে কি?
-নূরে আলম, বাগমারা, রাজশাহী।
উত্তর : হ্যাঁ।
অন্যান্য ফরয ও নফল ছিয়ামের মত কাফফারার ছিয়াম পালনকারীও রাতের বেলা স্ত্রী মিলন
করতে পারবে। তবে যিহারের কাফফারা প্রদানের পূর্বে স্ত্রী মিলন করতে পারবে না (মুজাদালাহ ৫৮/২-৪; ইবনু মাজাহ হা/২০৬৫)।
প্রশ্ন
(৯/৮৯) : খতমে ইউনুস, খতমে খাজেগান, খতমে শিফা, খতমে আম্বিয়া ইত্যাদির প্রচলন কবে
থেকে হয়? এগুলো কি শরী‘আত সম্মত?
-আব্দুল হালীম, পবা, রাজশাহী।
উত্তর : এগুলো
সবই ভ্রষ্টতার যুগে সৃষ্ট। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যমানায় এসবের কোন
অস্তিত্ব ছিল না। আর এটাই বাস্তব কথা, যেমন ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ও
ছাহাবায়ে কেরামের যমানায় যা দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিল না, আজকের দিনেও তা দ্বীন
হিসাবে গণ্য হবে না (আল-ইনছাফ ৩২ পৃ.)।
অতএব দলীলবিহীনভাবে ‘এই দো‘আ এতবার পাঠ করলে এই ফযীলত হবে’ মনে করে কোন আমলের
সুযোগ নেই। বরং বিপদের সময় এক বা একাধিকবার দো‘আ ইউনুস পাঠ করতে হয়। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, যে কোন মুসলিম ব্যক্তি যে কোন সমস্যায় এই দো‘আটি পাঠ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন’ (তিরমিযী হা/৩৫০৫; মিশকাত হা/২২৯২)। অনুরূপ কেউ শারীরিক বা
মানসিক সুস্থতার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে। কারণ আল্লাহ বলেন, তুমি বলে দাও
যে, এটি বিশ্বাসীদের জন্য পথনির্দেশ ও আরোগ্য (হা-মীম
সাজদাহ ৪১/৪৪)।
ধারণা করা যায়, খতমে
খাজেগান, খতমে আম্বিয়া ইত্যাদি অযীফাসমূহ উপমহাদেশের কোন পীর-বুযুর্গের মাধ্যমে
চালু হয়েছে। তবে ঠিক কবে থেকে এর প্রচলন শুরু হয়েছে তা জানা যায় না।
প্রশ্ন (১০/৯০) : শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) সহ অনেক সালাফী
বিদ্বানের কবর পাকা দেখা যায়। এগুলো কারা করেছে?
-শিহাবুদ্দীন, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
উত্তর : তাঁদের যুগে এগুলি পাকা
করার প্রশ্নই ওঠে না। পরবর্তীকালে কোন বিদ‘আতী বা কবর ব্যবসায়ীরা এগুলি করে থাকতে
পারে। কেননা ইমাম ইবনু তায়মিয়াসহ কোন সালাফী বিদ্বানই নিজের কবর পাকা করার
ব্যাপারে কোনরূপ অছিয়ত করে যাননি। বরং এসবের বিরুদ্ধে তাঁরা সারা জীবন সংগ্রাম
করেছেন। কেননা কবর পাকা করতে, তার উপর সৌধ নির্মাণ করতে এবং তার উপর বসতে রাসূল
(ছাঃ) নিষেধ করেছেন (মুসলিম
হা/৯৭০)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে একদা আব্দুল কাদের জীলানীর কবরে
শিরকী কর্মকান্ড সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে
শায়খ আব্দুল কাদের এসব কর্মকান্ড করতে বলেননি এবং তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশও দেননি।
তার ব্যাপারে যারা এসব কথা বলবে তারা মিথ্যাবাদী। বরং চরমপন্থী ও শিরককারী একদল
লোক এসব বিদ‘আত চালু করেছে’ (মাজমূ‘উল
ফাতাওয়া ২৭/১২৭)।
প্রশ্ন (১১/৯১) :
জনৈক লেখক ইমাম সুয়ূতীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পিতা কবর থেকে
উঠে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এর সত্যতা কতটুকু?
-রবীউল ইসলাম, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।
উত্তর : কেবল
পিতা নন, বরং পিতা-মাতা উভয়কেই আল্লাহ কবর থেকে জীবিত উঠান এবং তারা রাসূল
(ছাঃ)-এর নিকট ইসলাম কবুল করেন, মর্মে সুয়ূতীর আল-হাভী গ্রন্থে বর্ণিত হাদীছটি
জাল। উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে
এটি জাল। এই জালকারীরা স্বল্প বিদ্যাধারী মূর্খ। কেননা তারা জানে না যে, কাফের
অবস্থায় মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন পেয়ে ঈমান আনলেও তা কোন কাজে আসে না’ (আল-মাওযূ‘আত ১/২৮৩)।
জনৈক ব্যক্তি রাসূল
(ছাঃ)-এর নিকটে মুশরিক অবস্থায় মৃত তার পিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
‘আমার ও তোমার পিতা জাহান্নামে’ (মুসলিম হা/২০৩)।
রাসূল (ছাঃ) মুশরিক অবস্থায় মৃত তার মায়ের জন্য ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার
অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে অনুমতি দেননি। কেবল কবর যেয়ারতের অনুমতি দেন’ (মুসলিম হা/৯৭৬)।
প্রশ্ন
(১২/৯২) : যে মসজিদের জমি ওয়াকফকৃত নয়, সে মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে কি?
উত্তর : জমির
মালিকের কোন আপত্তি না থাকলে ছালাত জায়েয হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে
আমাদের জন্য মসজিদ এবং মাটিকে পবিত্র করা হয়েছে, যখন পানি না পাওয়া যায়’ (মুসলিম হা/৫২২; মিশকাত হা/৫২৬)। তবে মসজিদের নামে স্থানটি
ওয়াকফ করা যরূরী (বুখারী হা/২৭৭৪; মুসলিম হা/৫২৪)।
প্রশ্ন
(১৩/৯৩) : আযান চলাকালীন সময়ে আযানের জওয়াব দিতে হবে, নাকি সুন্নাত ছালাত আদায়
করতে হবে?
-রেযাউল করীম, রসূলপুর, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর : আযান
চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হ’লে প্রথমে আযানের জওয়াব দিতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়ায্যিন যা বলে তদ্রূপ বল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭)। অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যে
ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে এবং ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ’ ও ‘ফালা-হ’ শেষে ‘লা-হাওলা অলা-ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ’ (নেই
কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত) বলে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮)। অতঃপর
আযানের দো‘আ পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ
পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৯)। অনুরূপ একটি প্রশ্নের উত্তরে শায়েখ
বিন বায বলেন, এমতাবস্থায় আযানের জওয়াব দেওয়া অতঃপর সুন্নাত ছালাত আদায় করা উত্তম
হবে। কেননা তাতে আযান ও সুন্নাত ছালাত দু’টিরই ফযীলত অর্জিত হবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/১৪৪-১৪৫)।
প্রশ্ন (১৪/৯৪) : এম.বি.বি.এস. পাস জনৈকা শিক্ষার্থী সম্প্রতি
দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে এবং সে একজন দ্বীনদার ছেলেকে বিবাহ করতে আগ্রহী। কিন্তু
তার পরিবার দ্বীনদার না হওয়ায় কোনক্রমেই তাতে রাযী নয়। এমতাবস্থায় মেয়েটির করণীয়
কি? সে কি পিতার পরিবর্তে অন্যকে অলী হিসাবে গ্রহণ করে বিবাহ সম্পন্ন করতে পারবে?
-শায়লা রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর : পিতার বর্তমানে
অন্য কাউকে অলী হিসাবে গ্রহণ করে বিবাহ জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) এরূপ বিবাহকে বাতিল
(৩ বার) বলেছেন (তিরমিযী, আবুদাঊদ,
মিশকাত হা/৩১৩০-৩১)। তিনি বলেন, ‘কোন মহিলা নিজে অপর কোন মহিলাকে বিয়ে দিতে
পারবে না এবং কোন মহিলা নিজেকে বিবাহ দিতে পারবে না’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩৬; ইরওয়া হা/৮৪১)।
তবে
সাবালিকা মেয়েকে তার অসম্মতিতে পিতা অন্যায়ভাবে বিবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে
পারবেন না। করলে তা বাতিল গণ্য হবে (বুখারী
হা/৬৯৪৫; ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৩; মিশকাত হা/৩১২৮)। এক্ষণে মেয়ে গুনাহ থেকে
মুক্ত থাকার সৎ নিয়তে পরবর্তী অভিভাবক তথা দাদা, ভাই বা চাচার অভিভাবকত্বে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারে। কিন্তু কোনভাবেই নিজের অসৎ মনস্কামনা পূরণার্থে পিতাকে
পাশ কাটিয়ে অন্যকে অলী বানিয়ে বিবাহ করা যাবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৭-৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/১৪৭)।
প্রশ্ন (১৫/৯৫) : আমরা পাঁচজন পার্টনার একটি ভবনের মালিক। আমি রাযী
না থাকলেও চারজনের সম্মতিক্রমে ভবনের কিছু অংশ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানীকে ভাড়া
দেওয়া হয়েছে। এক্ষণে ভাড়া থেকে আসা অর্থ আমি ভোগ করতে পারব কি?
-যহীরুল ইসলাম, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
উত্তর : ভোগ করা বৈধ নয়। কারণ
এতে সূদী কারবারে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আল্লাহ বলেন, ‘নেকী ও তাক্বওয়ার
কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর এবং গোনাহ ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)। শায়খ বিন বায বলেন,
আয়াত এবং হাদীছসমূহ প্রমাণ করে যে, কোন ধরনের পাপের কাজে সহযোগিতা করা যাবে না।
অনুরূপ সূদী ব্যাংকের জন্যও বাসা ভাড়া দেওয়া যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৪৩২৭, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/৮৬০)।
প্রশ্ন
(১৬/৯৬) : আমি একটি ইট ভাটায় কাজ করি। কাজের সূত্রে আমি দু’টি ভাটা থেকে টাকা নিয়ে
বর্ষা মৌসুমে শ্রমিকদের অগ্রিম ১০-২০ হাযার টাকা দিয়ে থাকি, যা পরবর্তীতে মজুরী
থেকে কর্তন করা হয়। আর আমাকে পরিচালনাকারী হিসাবে কিছু টাকা দিয়ে থাকে। কেউ যদি
ঠিকভাবে কাজ না করে তাহ’লে আমার প্রাপ্য টাকা থেকে দন্ড দিতে হয়। এক্ষণে উক্ত কাজ
আমার জন্য বৈধ হচ্ছে কি?
-এম আহাদ আলী, ঝিনা-ঝালপুকুর, রাজশাহী।
উত্তর : বৈধ
হবে। কেননা এটা কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক। তাছাড়া শ্রমিকদের অগ্রিম মজুরী
দিতেও কোন বাধা নেই (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৫/৩২৯;
বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৩৩৫)।
প্রশ্ন (১৭/৯৭) : রাসূল (ছাঃ)
মি‘রাজে যাওয়ার সময় জিব্রীলের আদেশে তূরে সীনা ও বায়তুল লাহমে ছালাত আদায় করেছেন।
এতে কি প্রমাণ হয় যে, সালাফে ছালেহীনদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে বরকত হাছিলের জন্য
বিশেষ ছালাত আদায় করা যায়? বিস্তারিত জানতে চাই।
-আলী আছগর, ডাকবাংলা, ঝিনাইদহ।
উত্তর : উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২৭/০৯, ২৭/১৬০-৬১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৬/২৭৮-৭৯)।
আলবানী বলেন, এটি মুনকার (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭১৪২; নাসাঈ
হা/৪৫০; আল-ইসরা ওয়াল মে‘রাজ ৬৯ পৃ.)। সুতরাং বরকত হাছিলের জন্য বা
মনস্কামনা পূরণের জন্য কোন কবরস্থানে যাওয়া সবচেয়ে বড় শিরক। কারণ কেবলমাত্র
আল্লাহর নিকটেই সবকিছু প্রার্থনা করতে হবে’ (ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমা ১/১৫২)।
প্রশ্ন (১৮/৯৮) : সাংগঠনিক নিয়মে আমাকে ইহতিসাব রাখতে হয় এবং উর্ধ্বতন
দায়িত্বশীলকে দেখাতে হয়। এটি কি রিয়া তথা লোক দেখানো আমলের অন্তর্ভুক্ত হবে?
-মুজাহিদুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি, বগুড়া।
উত্তর : ‘ইহতিসাব’
(اَلْإحْتِسَابُ) অর্থ আল্লাহর নিকটে ছওয়াব কামনা করা।
মুমিনগণ তাদের সকল সৎকর্মে স্রেফ আল্লাহর নিকটে ছওয়াব ও পুরস্কার আশা করে। আর
ছওয়াব কামনা ব্যতীত আল্লাহর নিকটে বান্দার কোন আমলই কবুল হয় না। সংগঠনে ‘ইহতিসাব’
রাখার উদ্দেশ্য হ’ল অধিক সৎকর্মের মাধ্যমে অধিক ছওয়াবের আকাঙ্ক্ষা করা এবং
দুনিয়াবী জবাবদিহিতার মাধ্যমে আখেরাতে জবাবদিহিতার অনুভূতি তীব্রতর করা।
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, ‘তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই
নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৪ আয়াত)।
ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা আল্লাহর নিকট হিসাব দেওয়ার আগে নিজেদের হিসাব গ্রহণ
কর’ (তিরমিযী হা/২৪৫৯, মওকূফ)। নিজের
আমলের হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজেই নিজের আমলগত উন্নতি-অবনতির হিসাব
গ্রহণ করা যায়, তেমনি ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলকে তা দেখানোর মাধ্যমে অন্য মুমিনের
আয়নায় নিজেকে সংশোধন ও সুপরামর্শ লাভের সুযোগ পাওয়া যায়।
অধিক নেক আমলের জন্য কেউ
যদি প্রশংসারও পাত্র হন তাতেও কোন দোষ নেই। কেননা একদা আবূ যর গিফারী (রাঃ) রাসূল
(ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে তার
বিষয়ে আপনার মতামত কি? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটি হ’ল মুমিনের জন্য আগাম
সুসংবাদ (মুসলিম হা/২৬৪২, মিশকাত হা/৫৩১৭)।
তবে যদি কেউ এর মাধ্যমে রিয়া ও শ্রুতি কামনা করেন, তবে তিনি নেকী থেকে মাহরূম হবেন
এবং গুনাহগার হবেন।
প্রশ্ন
(১৯/৯৯) : ফরয ছালাতের জন্য ওযূ করে মসজিদে গেলে হজ্জের ছওয়াব পাওয়া যায় মর্মে কোন
হাদীছ আছে কি?
-মুরাদ হোসাইন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর :
উক্ত মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে
উত্তমরূপে ওযূ করে ফরয ছালাতে আদায়ের উদ্দেশ্যে গমন করে, সে ইহরাম বেঁধে হজ্জে
গমনকারীর ন্যায় ছওয়াব লাভ করে’ (আবূদাঊদ হা/৫৫৮; মিশকাত হা/৭২৮;
ছহীহুত তারগীব হা/৩২০, ৬৭৫)।
প্রশ্ন
(২০/১০০) : মৃত ব্যাক্তির জন্য কবর খননের সঠিক নিয়ম কি?
উত্তর : হাদীছে
দু’প্রকারের কবরের বর্ণনা এসেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লাহাদ’ (পাশখুলি কবর) আমাদের
জন্য এবং ‘শাক্ব’ (বাক্স কবর) আমাদের ব্যতীত অন্যদের জন্য’ (আবূদাঊদ হা/৩২০৮; মিশকাত হা/১৭০১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪৮৯)।
তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কবর খনন কর এবং কবরকে প্রশস্ত, গভীর ও সুন্দর কর (নাসাঈ হা/২০১০; মিশকাত হা/১৭০৩, সনদ ছহীহ)। কবর
উত্তর-দক্ষিণে লম্বা, গভীর, প্রশস্ত, সুন্দর ও মধ্যস্থলে বিঘত খানেক উঁচু করে দু’দিকে
ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক উঁচু করা নাজায়েয। ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবর জায়েয
আছে। যাকে এদেশে যথাক্রমে ‘পাশখুলি’ ও ‘বাক্স কবর’ বলা হয়। তবে ‘লাহদ’ উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৮৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৮৮; দ্র. ছালাতুর
রাসূল (ছাঃ) ২৩১ পৃ.)। কারণ নবী (ছাঃ)-কে লাহদ কবরে দাফন করা হয় এবং
বহু ছাহাবী এই ধরনের কবরে দাফন করার জন্য অছিয়ত করে গেছেন (মুসলিম হা/৯৬৬; মিশকাত হা/১৬৯৩)। তবে মাটি নরম হ’লে শাক্ব বা
সিন্দুক কবর উত্তম ও নিরাপদ।
প্রশ্ন (২১/১০১) : ছাদাক্বা বয়স বৃদ্ধি করে এবং মন্দ মৃত্যু
প্রতিরোধ করে -মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাই।
-আল-আমীন, ভুগরইল পশ্চিমপাড়া, রাজশাহী।
উত্তর : হাদীছটি ‘খুবই
যঈফ’ (যঈফুল জামে‘ হা/৩৪৭১)।
তবে কাছাকাছি অর্থের বেশ কিছু ছহীহ হাদীছ রয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘গোপন
ছাদাক্বা রবের ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়’ (ছহীহাহ
হা/১৯০৮)। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় ছাদাক্বা কবরের উত্তাপ নিভিয়ে দেয় এবং
ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে’ (তাবারাণী কাবীর হা/৭৮৮; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)।
তিনি আরও বলেন, ‘ছাদাক্বা গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় (তিরমিযী হা/৬১৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩; মিশকাত
হা/২৯)। এছাড়া উক্ত হাদীছে বয়স বৃদ্ধি করার অর্থ হ’ল জীবন ও জীবিকায় বরকত
দান করা। অর্থাৎ নির্ধারিত বয়সে সুস্থ থাকা, অধিক সৎকর্ম করতে পারা ও প্রশান্তির
সাথে জীবন পরিচালনায় সক্ষম হওয়া (নববী,
শরহ মুসলিম ১৬/১১৪ হা/২৫৫৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। অতএব সামগ্রিকভাবে
প্রশ্নে উল্লেখিত যঈফ হাদীছটির মর্ম সঠিক।
প্রশ্ন
(২২/১০২) : ক্বিয়ামতের দিন মানবজাতির বিচার কি একদিনেই সম্পন্ন হবে না একাধিক
দিনে?
-মুনীরুল ইসলাম, দারুশা, রাজশাহী।
উত্তর :
হিসাবের দিন এক দিনই হবে। তবে সেই দিনটি পৃথিবীর হিসাবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান
হবে (মা‘আরেজ ৭০/৩-৪; মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত
হা/১৭৭৩)। উল্লেখ্য যে, আরবীতে ৭০, ৭০০, ১০০০, ৫০০০০ সংখ্যাগুলি
সাধারণতঃ আধিক্য বুঝানোর অর্থে বলা হয়। সুতরাং উক্ত আয়াত ও হাদীছসমূহের বর্ণিত
সময়টি আযাব বা শাস্তির সাথে সম্পৃক্ত। কাফেরদের উপর এই দিনটি ৫০ হাযার বছরের সমান
ভারী হবে। অর্থাৎ দিনটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর হবে। কষ্ট ও শাস্তির আধিক্যের
কমবেশীর কারণে ক্বিয়ামতের দিনের স্থায়িত্ব তাদের কাছে হাযার হাযার বছরের সমান মনে
হবে। আরবরা খুশীর দিনকে ‘সংক্ষিপ্ত’ এবং কষ্টের দিনকে ‘দীর্ঘ’ বলে বুঝাতো (কুরতুবী)। অন্যদিকে মুমিনদের জন্য এই দিনটি হবে খুব
সংক্ষিপ্ত। যেমন আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মুমিনদের জন্য
কিয়ামতের দিনটি যোহর থেকে আছরের মধ্যবর্তী সময়ের মত হবে (হাকেম হা/২৮৪; ছহীহাহ হা/২৪৫৬; ছহীহুল জামে হা/৮১৯৩)। অপর
হাদীছে এসেছে, এই দিনটি মুমিনের জন্য এক ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করার থেকেও
সংক্ষিপ্ত মনে হবে (আহমাদ হা/১১৭৩৫, ইবনু হিববান
হা/৭৩৩৪, সনদ দুর্বল; তবে হায়ছামী এবং ইবনু হাজার একে ‘হাসান’ বলেছেন)।
সুতরাং এই দিনের দীর্ঘতা কিংবা সংক্ষিপ্ততা বিভিন্ন লোকের জন্য তার আমলের অবস্থা
অনুযায়ী বিভিন্ন রূপ অনুভূত হবে।
উত্তর : এটা বিদ‘আত নয়।
উক্ত বাক্যটি ফজরের সাথে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি বেলাল (রাঃ)-এর মাধ্যমে হ’লেও
পরবর্তীতে তা রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত হিসাবে গৃহীত হয়। যেমন বেলাল (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত, একদা তিনি ফজরের আযান দেওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসলেন। তাকে
বলা হ’ল যে, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন বেলাল (রাঃ) বললেন, اَلصَّلاَةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ (ঘুম থেকে ছালাত
উত্তম)। অতঃপর এই শব্দাবলী ফজরের আযানের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হ’ল এবং বিষয়টি
এভাবেই সাব্যস্ত হয়ে গেল’ (ইবনু
মাজাহ হা/৭১৬, সনদ ছহীহ)। আবু মাহযূরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) তাকে
আযানের বাক্যসমূহ শিক্ষাদানের সময় বলেন, ‘অতঃপর যদি এটা ফজরের ছালাত হয়, তাহ’লে
তুমি বলবে, আছছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’...। (আবুদাঊদ হা/৫০০, মিশকাত হা/৬৪৫
‘আযান’ অধ্যায়; সনদ ছহীহ)। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের ছালাতের আযানের
সাথে এটি যুক্ত এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত হিসাবে গৃহীত।
প্রশ্ন
(২৪/১০৪) : স্ত্রী স্বামীর নিকটে বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই তালাক চাইতে পারে কি?
-ছালেহা ইয়াসমীন, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা।
উত্তর : যথাযোগ্য
শারঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক চাওয়া হারাম। কোন স্ত্রী এরূপ করলে তার
জন্য জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে (আবুদাউদ হা/২২২৬ প্রভৃতি; মিশকাত
হা/৩২৭৯)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন, যারা স্বামী থেকে পৃথক হ’তে
চায় এবং যারা খোলা করতে চায়, তারা মুনাফিক’ (নাসাঈ
হা/২৪৬১, মিশকাত হা/৩২৯০)। তবে চারিত্রিক ত্রুটি, শারীরিক সমস্যা,
সাংসারিক ব্যয়ভার বহনে অক্ষমতা ও শারঈ ব্যাপারে অবহেলা বা অবজ্ঞা ইত্যাদি যৌক্তিক
ওযরের ক্ষেত্রে স্ত্রী মোহরানা ফেরৎ দানের মাধ্যমে স্বামীর নিকট থেকে ‘খোলা’ তালাক
বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে (বাক্বারাহ ২/২২৯; মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, মিশকাত হা/৩২৭৪ ‘খোলা তালাক’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন
(২৫/১০৫) : আমি একজন ব্যবসায়ী। শারঈ বিধান অনুযায়ী আমি প্রতিটি পণ্যে কতভাগ লাভ
করতে পারি?
-আহসানুল্লাহ, ফুলতলা, বগুড়া।
উত্তর : ক্রেতা-বিক্রেতা
কাউকে ধোঁকায় ফেলার উদ্দেশ্য না রেখে উভয়ের সন্তুষ্টিতে বাযার দর অনুযায়ী যেকোন
মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। এটা শরী‘আত সম্মত। উরওয়া আল-বারেকী হ’তে বর্ণিত
হয়েছে যে, নবী করীম (ছাঃ) একটি কুরবানীর পশু বা ছাগল কেনার জন্য তাকে একটা দীনার
দিয়েছিলেন। উক্ত ছাহাবী তা দিয়ে দু’টি ছাগল খরিদ করেন। তারপর এক দীনারের বিনিময়ে
একটি ছাগল বিক্রয় করে দিয়ে একটি ছাগল ও একটি দীনার নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
নিকটে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তার ব্যবসায়ে বরকতের দো‘আ
করেন। এরপর থেকে সে মাটি কিনলেও তাতে লাভবান হ’ত (বুখারী হা/৩৬৪২; মিশকাত হা/২৯৩২)। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে যে
ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ’ (নিসা
৪/২৯)।
প্রশ্ন
(২৭/১০৭) : আমার এক নাস্তিক বন্ধু প্রশ্ন করেছে যে, কুরআনে যদি সব কিছুর বর্ণনা
থেকে থাকে, তবে আমাদের নিত্যদিনে ভক্ষণকৃত সবজি ও ফলসমূহের নাম নেই কেন?
-উম্মে হাসীবাহ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
উত্তর : কুরআনে আল্লাহ মানব
জীবন পরিচালনার মূলনীতিসমূহ বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এটা যরূরী নয় যে, প্রতিটি
জিনিসের নাম কুরআনে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হবে। যদিও এর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন
প্রসঙ্গে প্রচলিত অনেক ফলমূল ও সবজির কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে (ত্বীন ১-২)। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর
ভূমিকে ভালভাবে বিদীর্ণ করি, অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্য-শস্য, আঙ্গুর
ও শাক-সবজি, যয়তূন ও খর্জুর, ঘন পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং
ফল-মূল ও ঘাস-পাতা, তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগ্যবস্ত্ত হিসাবে’ (‘আবাসা ২৬-৩২)। তিনি আরও বলেন, ‘ঐ
পানি দ্বারা তিনি তোমাদের জন্য উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্ববিধ
ফল। এর মধ্যে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে’ (নাহল ১৬/১১)। তিনি আরও বলেন, ‘আর যখন
তোমরা বললে, হে মূসা! একই ধরনের খাদ্যে আমরা কখনোই ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। অতএব
তুমি তোমার প্রভুর নিকটে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর যেন তিনি আমাদের এমন সব খাদ্য
দান করেন যা মাটিতে উৎপন্ন হয়। যেমন সবজি, কাকুড়, গম, ডাল, পেঁয়াজ ইত্যাদি (বাক্বারাহ ২/৬১)।
-এরশাদুল বারী, গুরুদাসপুর, নাটোর।
উত্তর : নারীদের পর্দার
ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা আবশ্যক। যথা- (১) তাকওয়াপূর্ণ পোষাক পরিধান
করা (আ‘রাফ ৭/২৬)। (২) এমন
পোষাক পরা, যা পুরো দেহ আবৃত করে (নূর
২৪/৩১, আহযাব ৩৩/৫৯, আবুদাঊদ
হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)। (৩) পাতলা কাপড় না পরা, যাতে গোপন সৌন্দর্য্য
প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (মুওয়াত্ত্বা
হা/৩৩৮৩; মিশকাত হা/৪৩৭৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুই শ্রেণীর মানুষকে
জাহান্নামী বলেছেন, তাদের একজন হ’ল পোষাক পরিধানকারী উলঙ্গ নারী, যারা পুরুষদেরকে
নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকত হা/৩৫২৪)। (৪)
ঢিলা-ঢালা ও বড় পোশাক পরিধান করা, যাতে শরীরের আকৃতি অস্পষ্ট থাকে (আহমাদ হা/২১৮৩৪; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৩৭৬,
সনদ হাসান)। (৫) ঘরের বাইরে সুগন্ধি ব্যবহার না করা (তিরমিযী, নাসাঈ হা/৫১২৬; মিশকাত হা/১০৬৫)।
৬. পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া (বুখারী হা/৫৪৮৫; মিশকাত হা/৪৪২৯)। (৬) কাফেরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ
না হওয়া (আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত
হা/৪৩৪৭)। (৭) নযরকাড়া পোষাক পরিধান না করা (ইবনু মাজাহ হা/৩৬০৬; আবুদাউদ হা/৪০২৯; মিশকাত হা/৪৩৪৬)।
প্রশ্ন
(২৯/১০৯) : নিয়ামুল কুরআন ও মকছূদুল মুমিনীন বই দু’টিতে কি নির্ভরযোগ্য? এগুলি পড়ে
আমল করা যাবে কি?
-ইউসুফ, কামারপাড়া, মাগুরা।
উত্তর :
উক্ত বইদ্বয় মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। এ সমস্ত বই ক্রয় করা যাবে না, পড়াও যাবে না।
নিয়ামুল কুরআনে এমন কিছু কল্পিত দরূদ আছে যেগুলো পড়লে শিরক হবে। অনুরূপভাবে
মকছুদুল মুমিনীন বইটি জাল, যঈফ, মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনীতে ভরপুর।
প্রশ্ন
(৩০/১১০) : ছহীহ বুখারীর বর্ণনায় দেখা যায়, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি ঈসা, মূসা ও
ইউনুসকে দেখছি যে, তারা তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তাওয়াফ করছেন। এভাবে দাজ্জালকেও
দেখলাম’। এই হাদীছের ব্যাখ্যা কী?
-আবুল কাসেম মুরাদ, তেরখাদিয়া, রাজশাহী।
উত্তর : ক্বিয়ামতের
প্রাক্কালে ফিৎনা প্রকাশের পূর্বে দাজ্জাল মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে এবং
হজ্জও করবে যেমনটি রাসূল (ছাঃ) স্বপ্নে দেখেছেন (বুখারী
হা/৩৪৪০; মুসলিম হা/১৭১; ছহীহাহ হা/৩৯৮৩)। তবে ফিৎনার আবির্ভাবের পর
দাজ্জাল কোনভাবেই মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না (বুখারী হা/১৮৮১,১৮৭৯,; মুসলিম হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/২৭৪২)। অবশ্য
হাদীছটি সাধারণ স্বপ্নও হ’তে পারে। কেননা ঈসা, ইউনুস, মূসা (আঃ) কেউ জীবিত ছিলেন
না। অথচ হাদীছে তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে দাজ্জালের পরিচিতি
বর্ণনা করার জন্য হয়তবা আল্লাহ দাজ্জালকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন (ক্বাযী ইয়ায, শরহ মুসলিম ১/৫২২)।
তবে প্রথম মতটিই অধিকতর বিশুদ্ধ। কারণ নবী-রাসূলদের স্বপ্ন সত্য (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/৪৮৮-৮৯, ১২/৪১৬)।
-নাহিদুল ইসলাম, বগুড়া।
উত্তর : এটা সামাজিক
কুসংস্কার মাত্র। তবে গোফ লম্বা রাখা সুন্নাত বিরোধী কাজ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২১)।
যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন
(৩২/১১২) : মিরক্বাতে বর্ণিত হয়েছে যে, সমরকন্দে এক বছর ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল না। পরে
ইমাম বুখারীর কবরে গিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করলে সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি হয়। ঘটনাটির
সত্যতা জানতে চাই।
-আহমাদ ছফা, কিষাণগঞ্জ, ভারত।
উত্তর : ইমাম যাহাবী (রহঃ) উক্ত
ঘটনা তাঁর ‘সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (সিয়ার ১২/৪৭৯)। তবে বিষয়টি ইসলামী
শরী‘আতের সাথে সাংঘর্ষিক ও শিরকের শামিল। কারণ প্রথমতঃ কোন মৃত ব্যক্তির অসীলায়
কিছু প্রার্থনা করা শিরক (ইউনুস
১০/১৮; যুমার ৩৯/৪৩-৪৪)। দ্বিতীয়তঃ মৃত ব্যক্তিকে কিছু শোনানো সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন, ‘কবরস্থ কোন ব্যক্তিকে আপনি কিছুই শুনাতে পারেন না’ (ফাত্বির ২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আববাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন
এবং বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকটে তোমার নবীর অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা
করতাম। এখন আমরা আমাদের নবীর চাচার অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতএব তুমি
আমাদেরকে বৃষ্টি বর্ষণ কর’ (বুখারী
হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯)। অতএব ঘটনাটি কাকতালীয় হ’তে পারে। নইলে
ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ এটা করে থাকলে সেটি বড় শিরক হয়েছে। যা ক্ষমার অযোগ্য।
প্রশ্ন
(৩৩/১১৩) : হস্তমৈথুন কেমন পাপ? এই অপকর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি?
-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজশাহী।
উত্তর : হস্তমৈথুন বা
যেকোন উপায়ে বীর্য স্খলন করা নিষিদ্ধ। এটি কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ
বলেন, ‘যারা নিজ স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত অন্যকে কামনা করে, তারা সীমালংঘনকারী’ (মুমিনূন ২৩/৬-৭; মা‘আরিজ ৭০/৩০-৩১)।
এটি এমন এক আত্মঘাতি পাপ, যা মানুষের জীবন-যৌবন ধ্বংস করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং ক্ষতি করো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০; ছহীহাহ হা/২৫০)। ক্বিয়ামতের দিন মানুষের মুখ
বন্ধ হবে এবং হাত-পা সাক্ষ্য দিবে’ (ইয়াসীন
৩৬/৬৫)।
অতএব
এই পাপীদের এখুনি তওবা করতে হবে। আর এত্থেকে বাঁচার জন্য যখনই বাজে চিন্তা মাথায়
আসবে, তখনই বাম দিকে তিনবার থুক মেরে ‘আঊযুবিল্লাহ’ পড়বে (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)।
অতঃপর অন্য কাজে মন দিবে অথবা স্থান পরিবর্তন করবে। এছাড়া ‘আল্লা-হুম্মাগফির যানবী ওয়া তাহহির ক্বালবী
ওয়া হাছছিন ফারজী (হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ ক্ষমা কর, আমার হৃদয়কে
পবিত্র কর এবং আমার লজ্জাস্থানকে হেফাযত কর) দো‘আটি পাঠ করা যায়। রাসূল (ছাঃ))-এর
নিকটে এক যুবক যেনা করার অনুমতি চাইলে তিনি তাঁর জন্য এই দো‘আ করেন (আহমাদ, ছহীহাহ হা/৩৭০)।
এছাড়া
এত্থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচার পথ হ’ল, বিবাহ করা অথবা নিয়মিত নফল ছিয়াম রাখা (বুখারী হা/১৯০৫; মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৮০)।
এছাড়া নিয়মিত জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা, দ্বীনী পরিবেশে থাকা,
মোবাইল-কম্পিউটার-ইন্টারনেট-টিভির যাবতীয় অশ্লীলতা হ’তে দূরে থাকা, ধর্মীয়
বই-পুস্তক পড়াশুনায় অভ্যস্ত হওয়া, নির্জনতা বর্জন করে পারিবারিক ও সামাজিক
কার্যক্রমে অধিকহারে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি কার্যাবলীর মাধ্যমে এত্থেকে দূরে থাকা
সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন
(৩৪/১১৪) : ঘুমানোর আগে ২১ বার বিসমিল্লাহ পড়ে ঘুমালে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, ঐ
ব্যক্তির প্রতিটি নিঃশ্বাসে নেকী লেখা হৌক। সত্যতা জানতে চাই।
-আহমাদ আলী, মীরগড়, পঞ্চগড়।
উত্তর :
এধরনের বর্ণনা মনগড়া এবং ভিত্তিহীন। এগুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব, অডিও টেপ নং ৪৭৩)।
প্রশ্ন
(৩৫/১১৫) : তিন ব্যক্তির দো‘আ কবুল হয় না; যে তার চরিত্রহীনা স্ত্রীকে তালাক দেয়
না, যে ঋণ প্রদান করে সাক্ষী রাখে না এবং যে মূর্খ বা বুদ্ধিহীন ব্যক্তি (অপচয়কারী)-এর
হাতে অর্থ প্রদান করে। উক্ত হাদীছের বিশুদ্ধতা জানতে চাই।
-রফীকুল ইসলাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
উত্তর : উক্ত
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (বায়হাক্বী; ছহীহাহ হা/১৮০৫)।
প্রশ্ন
(৩৬/১১৬) : জনৈক মহিলা মানত করেন যে, তার অসুস্থ সন্তান সুস্থ হলে ঈদগাহে ৫টি মোরগ
ছেড়ে দিবে। মুছল্লীদের যে ধরতে পারবে সে খেয়ে নিবে।
-সাদমান যাকী, ভদ্রা, রাজশাহী।
উত্তর :
এভাবে ঈদগাহে মোরগ ছেড়ে খেল-তামাশা করা জাহেলী যুগে কা‘বায় মূর্তিদের নামে বিভিন্ন
প্রাণী ছেড়ে দেওয়ার ন্যায়। এ ধরনের মানত থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে
হবে, মানতও এক প্রকারের ইবাদত, যা শারঈ বিধান মতে করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘আল্লাহর নাফরমানীর কাজে মানত করলে তা পূরণ করা জায়েয নয় এবং আদম সন্তান যার মালিক
নয় তার মানত করা ও তা পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মহান আল্লাহর
নাফরমানীতে মানত নেই’ (মুসলিম হা/১৬৪১; মিশকাত হা/৩৪২৮)।
মানতের পরিবর্তে সন্তানের কল্যাণের জন্য দান করবে এবং তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর
নিকট দো‘আ করবে। রাসূল (ছাঃ) মানতকে নিষিদ্ধ না করলেও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে
বলেন, ‘মানত কোন কিছুকে বিন্দুমাত্র এগিয়ে নিতেও পারে না এবং পিছাতেও পারে না। বরং
মানতের মাধ্যমে কৃপণের নিকট হ’তে কিছু মাল বের করে নেয়া হয়’ (বুখারী হা/৬৬৯২)।
প্রশ্ন (৩৭/১১৭) : ওশরের ধান উঠিয়ে
তা দিয়ে জালসার ব্যয়ভার বহন করা যাবে কি?
-খোরশেদ আলম, কালিয়াকৈর, গাযীপুর।
উত্তর : ওশর
৮ শ্রেণীর মানুষের হক (তওবা ৬০)।
জালসা তার অন্তর্ভুক্ত নয়। জালসা বা অনুরূপ নেকীর কাজ সমূহ নিজেদের টাকা দিয়ে করা
উত্তম।
প্রশ্ন (৩৮/১১৮) : আইনজীবী হওয়ার কারণে আমাকে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন
বিষয়াদির আইনজীবী হিসাবে কাজ করতে হয়। আমাদের কাজের ধরনটা যেমন- (১) কোন ব্যক্তি
ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে যামানত স্বরূপ ঋণগ্রহীতার জায়গা-জমির কাগজ ব্যাংকে
মর্টগেজ রাখতে হয়। ওই কাগজপত্র আইনজীবী হিসাবে আমাদের যাচাই করতে হয়। ব্যাংক অনেক
সময় সূদ মওকূফও করে এবং আইনজীবী এক্ষেত্রে সহায়তা করেন। (২) মানুষ ব্যাংক থেকে ঋণ
নিয়ে ঐামানত হিসাবে চেক জমা দেয়। নির্ধারিত সময়ে চেকের টাকা ব্যাংকে জমা না দিলে
ব্যাংক তখন চেকে উল্লেখিত টাকা আদায়ের মামলা করে। এ ধরনের মামলায় আইনজীবীকে লড়তে
হয়। প্রশ্ন হল, উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে আইনজীবী হিসাবে আমি কাজ করতে পারি কি?
-এ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার।
উত্তর : সূদী
ব্যাংকের সাথে কোন কার্যক্রমে জড়ানো যাবে না এবং তাদেরকে সূদের কর্মে কোনরূপ
সহযোগিতাও করা যাবে না। কারণ তাদের কর্মকান্ডে সাহায্য করাও কবীরা গুনাহ। আল্লাহ
বলেন, ‘নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর এবং গোনাহ ও অন্যায় কাজে
সহযোগিতা কর না’ (মায়েদাহ ৫/২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্ত্ত ব্যতীত
কবুল করেন না (মুসলিম হা/১০১৫, মিশকাত হা/২৭৬০)।
তবে প্রশ্নোল্লেখিত দ্বিতীয় অবস্থায় যামানতের চেকে উল্লেখিত অর্থ উদ্ধারে
সহযোগিতায় বাধা নেই। কেননা তাতে মৌলিকভাবে ব্যাংকিং বা সূদী কার্যক্রমে সহযোগিতা
নয়, বরং অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য সহায়তার উদ্দেশ্য থাকে, যা জায়েয। আল্লাহ
সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন
(৩৯/১১৯) : জিনের সাথে মানুষের শারীরিক সম্পর্ক হওয়া সম্ভব কি? এথেকে নিস্কৃতি
পাওয়ার উপায় কি?
উত্তর : ইবনুল
জাওযী সূরা রহমানের ৫৬ আয়াত ‘সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে
কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি’-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এই আয়াতে দলীল রয়েছে যে, জিনের
সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে জিনের শারীরিক মিলন সম্ভব (যাদুল মাসীর ৪/২১৪)। আর মানুষের সাথে জিনের মিলন সম্ভব বলেই
রাসূল (ছাঃ) মিলনের পূর্বে পঠিতব্য দো‘আ শিখিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা (বুখারী হা/৫১৬৫; ফাৎহুল বারী, উক্ত হাদীছের আলোচনা ৯/২২৯ পৃ.)।
আর এটি দু’ভাবে হ’তে পারে। (১) ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে (২) জাগ্রত অবস্থায় অনুভবের
মাধ্যমে। এতে বীর্যস্খলন হ’লে ফরয গোসল করতে হবে। এক্ষণে জিনের আছর থেকে রক্ষা
পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যার আমল সমূহ ও ছালাতের পরে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ
নিয়মিত পাঠ করতে হবে। তাছাড়া ঘুমানোর পূর্বে সূরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাছ তিনবার করে
পাঠ করে গোটা শরীরে হাত বুলাবে এবং আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে।
প্রশ্ন (৪০/১২০) : স্ত্রীকে এক তালাক দেওয়ার পর সময়ের মধ্যে রাজ‘আত
না করে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করলে স্বামী কি আবারো তিন
তালাকের অধিকারী হবে?
-হাফেয রূহুল আমীন, বাঘা, রাজশাহী।
উত্তর : এক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি
রয়েছে। (১) যদি স্বামী তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত করে, তাহ’লে সে তত
তালাকের অধিকারী থাকবে যত তালাক সে দেয়নি। অর্থাৎ এক তালাক দিয়ে থাকলে দুই তালাকের
অধিকারী থাকবে। আর দুই তালাক দিয়ে থাকলে এক তালাকের অধিকারী থাকবে। (২) যদি স্বামী
স্ত্রীকে এক বা দুই তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত না করে এবং নতুন বিবাহের
মাধ্যমে ফিরিয়ে নিয়ে আসে তাহ’লে তত তালাকেরই মালিক হবে যত তালাক অবশিষ্ট রয়েছে।
(৩) যদি স্বামী স্ত্রীকে এক বা দু’তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে রাজ‘আত না করে
এবং স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হয় অতঃপর তালাকপ্রাপ্তা হয় এবং প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ
করে তাহ’লে স্বামী তত তালাকেরই মালিক হবে যত তালাক অবশিষ্ট রয়েছে। (৪) স্বামী যদি
স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অতঃপর স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হয়
এবং কোন কারণে তালাকপ্রাপ্তা হয় ও প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করে তাহ’লে সে তিন
তালাকের অধিকারী হবে (উছায়মীন,
আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/১৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/১৬২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
২০/২৮৮)। প্রশ্ন অনুযায়ী স্বামী দুই তালাক প্রদানের অধিকারী হবেন।
No comments:
Post a Comment