Search This Blog

Wednesday, May 24, 2023

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

মুমিন জীবনের প্রধান লক্ষ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জন ব্যতীত কেহ জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই মুমিনের সারাদিনের সকল কাজ-কর্ম, ইবাদত-বন্দেগি হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। বান্দার সব আমলের ব্যাপারে আল্লাহ খোঁজ নেবেন এবং সে আলোকেই ফয়সালা গ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে তিনি পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি (আল্লাহ) ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তারা যেসব আমল (ইবাদত) করেছে, আমি সেসবের খোঁজ নেব, এরপর সে আমলকে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’ (সুরা ফুরকান: ২৩)।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

(১) ‘আর কোন কোন লোক এরূপ আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আত্মবিক্রয় করে। আর আল্লাহ হচ্ছেন তার বান্দাদের উপর স্নেহপরায়ণ’। (সুরা বাক্বারাহ ২০৭)।

(২) ‘তাদের অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না। তবে যে ব্যক্তি দান করে অথবা কোন সৎকাজ করে কিংবা লোকের মধ্যে পরস্পর সন্ধি স্থাপনে উৎসাহ প্রদান করে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এরূপ করবে, আমি তাকে মহান বিনিময় প্রদান করব’। (সুরা নিসা ১১৪)।

(৩) ‘তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর শপথ করে থাকে, যেন তারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে। তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হচ্ছেন সন্তুষ্টি পাওয়ার অধিক হক্বদার যদি তারা সত্যিকারের মুমিন হয়’। (সুরা তওবা ৬২)।

(৪) ‘এ (সম্পদ) অভাবগ্রস্থ মুহাজিরদের জন্যে যারা নিজেদের ঘরবাড়ী  ও সম্পত্তি হ’তে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ছাঃ)-কে সাহায্য করে। তারাই তো সত্যবাদী’। (সুরা হাশর ৮)।

(৫) ‘হে মুমিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না। তোমরা কি তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছো, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখান করেছে। তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নের কারণে তারা রাসূল (ছাঃ) ও তোমাদেরকে বহিষ্কার করেছে। আর যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যে আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাক, তবে তোমরা তাদেরকে কেন বন্ধুরূপে গ্রহণ করছো?

তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর সে বিষয়ে আমি সম্যক অবগত। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এটা করবে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে’। (সুরা মুমতাহিনাহ )।

(৬) ‘আল্লাহ  মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়। এটাই মহা সফলতা’ (সুরা আলে-ইমরান ১৫)।

(৭) ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে, সেকি তার মত হতে পারে যে আল্লাহর আক্রোশে পতিত হয়েছে? বরং তার আবাসস্থল হ’ল জাহান্নাম। যা কতই না নিকৃষ্টতর আবাসস্থল’। (সুরা আলে-ইমরান ১৬২)।

(৮) ‘আল্লাহ বলবেন, এটা সেদিন যেদিন সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা কাজে আসবে। আর তাদের জন্য থাকবে জান্নাত, যার নিম্নদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে মহা সফলতা’। (সুরা মায়েদা ১১৯)।

(৯) ‘মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়‘আত গ্রহন করল তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্টি হলেন। আর তাদের অন্তরে যা কিছু ছিল সে বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। সুতরাং তাদের প্রতি তিনি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়’। (সুরা ফাতাহ ১৮)।

(১০) ‘আকাশসমূহে কত ফেরেশতা রয়েছে! তাদের কোন সুফারিশ কাজে আসবে না যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে অনুমতি না দেন’। (সুরা নাজম ২৬)।

আল্লাহর করুণা বা সন্তুষ্টি ব্যতীত কেহ জান্নাতে যেতে পারবে না

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নেক ’আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন। কাজেই মধ্যমপন্থা গ্রহণ কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বয়স দ্বারা) তার নেক ’আমল বৃদ্ধি হতে পারে। আর খারাপ লোক হলে সে তওবা করার সুযোগ পাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৭৩, ৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫২৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬৭৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের ’আমল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি ’আমল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৬৪৬৩, ৩৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৬, আধুনিক প্রকাশনী ৬০১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(হাদীসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু আমলের দ্বারা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না-ফাতহুল বারী)।

(গ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কোন লোকের আমলই তাকে পরিত্রাণ দিতে পারবে না। এ কথা শুনে এক লোক বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমাকেও না। তবে যদি আল্লাহ তা’আলা তার করুণা দ্বারা আমাকে ঢেকে নেন। তোমরা অবশ্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০০৪, ৭০০৬, ৭০০৭, ৭০০৮, ৭০০৯, ৭০১০, ৭০১৪, ৭০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৫১, ইসলামিক সেন্টার ৬৯০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)...আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার আমল তাকে জান্নাতে দাখিল করতে পারে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমিও নই। তবে আমার পালনকর্তা যদি তার অনুগ্রহের দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৮৫২, ৬৮৫৫, ৬৮৬০, ৬৮৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে পদক্ষেপ নেন, আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হন, ভালোবাসেন। ফেরেশতারাও তাকে ভালোবাসেন। জমিনেও তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিশেষে ওই ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভে ধন্য হন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে মুমিন প্রধানত যেসব আমলের প্রতি মনোযোগী হবেন এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলোঃ-

নফল ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া

ইসলামে নফল ইবাদত আবশ্যকীয় বিধান নয়। তবু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে সেসবের বিকল্প নেই।

 আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, ‘আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। একপর্যায়ে আমি তাকে এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫০২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

সুন্নাত ও নফলের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

(১) যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। যোহরের পূর্বে চার, পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই ও ফজরের পূর্বে দুই’। (মিশকাত হা/১১৫৯)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক দিন রাতে বারো রাক্’আত সালাত আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (সে বারো রাক্’আত সালাত হলো) চার রাক্’আত যুহরের ফারযের পূর্বে আর দু’ রাক্’আত যুহরের (ফারযের) পরে, দু’ রাক্’আত মাগরিবের (ফরয সালাতের) পরে। দু’ রাক্’আত ’ইশার ফরয সালাতের পরে। আর দু’ রাক্’আত ফাজ্রের (ফজরের) (ফরয সালাতের) পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১৫, সহীহ আল জামি ৬৩৬২, সুনান আননাসায়ী ১৭৯৬-৯৯, ১৮০১-২, ১৮০৪, ১৮০৬, ১৮০৮-১০; আহমাদ ২৬২২৮, ২৬৮৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৫৭১, সহীহাহ ২৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে ওমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে যোহরের পূর্বে দু‘রাক‘আত সহ সর্বমোট দশ রাক‘আতের নিয়মিত আমলের কথা এসেছে। (মিশকাত হা/১১৬০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪০-৪১ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 (গ) যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)..আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুহরের পূর্বে দু’ রাকাআত, পরে দু’ রাকাআত, মাগরিবের সালাতের পর দু’ রাকাআত, ইশার সালাতের পর দু’ রাকাআত এবং জুমুআর সালাতের পর দু’ রাকাআত সালাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব, ইশা ও জুমু’আর সালাতের পরের দু’ রাকাআত সালাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার বাড়ীতে আদায় করেছি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৬০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৮, ১১৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

.‘ক্বিয়ামতের দিন (মীযানের পাল্লায়) ফরয ইবাদতের কমতি হলে প্রতিপালক আল্লাহ বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল ইবাদত আছে কি-না। তখন নফল দিয়ে তার ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর তার অন্যান্য সকল আমল সম্পর্কেও অনুরূপ করা হবে (যেমন ছালাত, ছিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদিতে)। (আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; মিশকাত হা/১৩৩০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ’আমলের হিসাব হবে, তা হলো সালাত। যদি তার সালাত সঠিক হয় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব ’আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩০, সুনান আত্ তিরমিযী ৪১৩, নাসায়ী ৪৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫৪০, সহীহ আল জামি ২০২০; সুনান আবূ দাঊদ ৮৬৪, ৮৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি বলেন, তোমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রির ন্যায় ঘনঘোর ফিৎনাসমূহে পতিত হবার আগেই নেক আমল সমূহের প্রতি দ্রুত ধাবিত হও। যখন লোকেরা মুমিন অবস্থায় সকালে উঠবে ও কাফের অবস্থায় সন্ধ্যা করবে এবং মুমিন অবস্থায় সন্ধ্যা করবে ও কাফির অবস্থায় সকালে উঠবে। সে দুনিয়াবী স্বার্থের বিনিময়ে তার দ্বীনকে বিক্রি করবে। (মিশকাত হা/৫৩৮৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমরা ভালো ’আমলের দিকে দ্রুত অগবর্তী হও ঘুটঘুটে তিমির রাত্রির অংশ সদৃশ ফিতনার পতিত হওয়ার পূর্বেই যখন কোন লোক ভোরে উঠবে ঈমানদার হয়ে আর সন্ধ্যা করবে কুফরী অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে মু’মিন অবস্থায় আর প্রভাতে উঠবে কাফির হয়ে। সে ইহকালীন সামান্য সম্পদের বিনিময়ে নিজের দীন ও ঈমানকে বিক্রয় করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৮, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২১৯৫, সহীহুল জামি ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব) সিলসিলাতুস সহীহাহ ৭৫৮, মুসনাদে আহমাদ ৮০১৭, আবূ ইয়া'লা ৬৫১৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৭০৪, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৫৮, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৭৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ চারিদিকে অন্যায় ছেয়ে যাবে। সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর হবে। নেক কাজের পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেমন আজকাল শিরক ও বিদআতযুক্ত আমলকে নেক আমল বলা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ছহীহ সুন্নাহভিত্তিক আমলকে বাতিল বলা হচ্ছে।

(৩) খাদেম রবীআহ বিন কাব একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট দাবী করেন যে, আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি বেশী বেশী সিজদার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য কর’। অনুরূপ একটি প্রশ্নে আরেক খাদেম ছাওবানকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তুমি অধিকহারে সিজদা কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রতিটি সিজদার মাধ্যমে আল্লাহ তোমার সম্মানের স্তর একটি করে বৃদ্ধি করবেন ও তোমার থেকে একটি করে গোনাহ দূর করে দিবেন। (মিশকাত হা/৮৯৬-৯৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মা’দান ইবনু ত্বলহাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যে কাজ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি খামোশ থাকলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি খামোশ (নীরব) রইলেন। তৃতীয়বার তাকে আবার একই প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজেও এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা্ করতে থাকবে। কেননা আল্লাহকে তুমি যত বেশি সিজদা্ করতে থাকবে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা বাড়াতে থাকবেন। তোমার অতটা গুনাহ উক্ত সিজদা্ দিয়ে কমাতে থাকবেন। মা’দান বলেন, এরপর আবুদ্ দারদার সাথে দেখা করে তাকেও আমি একই প্রশ্ন করি। তিনিও আমাকে সাওবান (রাঃ)যা বলেছিলেন তাই বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৯৭,  ৮৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৮৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৩২০, সুনান আননাসায়ী ১১৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪২৩, আহমাদ ২২৩৭৭, সুনান আততিরমিযী ৩৮৮, ১১৩৯; আহমাদ ২১৮৬৫, ১১৯০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমার বান্দা যে সমস্ত ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে থাকে, তার মধ্যে ঐ ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে অধিক প্রিয় আর কোন ইবাদত নেই যা আমি তার উপর ফরয করেছি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫০২, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সর্বদা অন্তরে আল্লাহকে স্মরণ করা

চলতে-ফিরতে, মুখে-অন্তরে সর্বদা আল্লাহর স্মরণ করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম।

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২২,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৮৮, ৩৬০৩, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, সহীহাহ ২২৮৭, রিয়াযুস সালেহীন ২৮/১৪৪৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি কি তোমাদের আমলসমূহের সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবো না, যা তোমাদের প্রভুর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদাকে অধিক উন্নীতকারী, তোমাদের সোনা-রূপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শত্রুুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেটি কী? তিনি বলেনঃ আল্লাহর যিকির। মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, কোন মানুষের জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে উত্তম কোন আমল নাই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৬৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৭, আহমাদ ২১১৯৫, ২৬৯৭৭, ২১৭০২, মুয়াত্তা মালেক ৪৯০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ১,  আত-তালীকুর রাগীব ২/২২৮), মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৯৩, সহীহ আল জামি ২৬২৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ).....আগার আবূ মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আবু হুরাইরাহ ও আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) তারা উভয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতি আল্লাহ সুবহানাহ ওয়াতা’আলার যিকর করতে বসলে একদল ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়। আর তাদের উপর শান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তার নিকটস্থ ফেরেশতাগণের মধ্যে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০০, ২৬৯৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাঊদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৩, রিয়াযুস সালেহীন-২/১৪৫৬, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাইবার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাইবারের দিকে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। [আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন] আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাওয়ারীর পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলতে শুনে বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ভান্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভান্ডার? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হল ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২০২, ২৯৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫-৬৭৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর যিকির করতেন।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৩৮৪, আবূ দাউদ ১৮, আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪, রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫২, সহীহাহ ৪০৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এক দল ফিরিস্তা, যাঁরা দোয়া পাঠ বা জিকিরকারীদের খুঁজে বেড়ান

আল্লাহ বলেন,

“তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায়ো না।” (সূরা কাহাফ ২৮ আয়াত)।

রাসুল (সাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’

ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত  চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।’

আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।”

মুসলিমের আবূ হুরাইরা কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আল্লাহর অতিরিক্তি কিছু ভ্রাম্যমান ফেরেশতা আছেন, যারা জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন এমন মজলিস পেয়ে যান, যাতে আল্লাহর যিকির হয়, তখন তাঁরা সেখানে বসে যান। তাঁরা পরস্পরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেন। পরিশেষে তাঁদের ও নিচের আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেন। অতঃপর লোকেরা মজলিস ত্যাগ করলে তাঁরা আসমানে উঠেন। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল অধিক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এলে?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবী থেকে আপনার এমন কতকগুলি বান্দার নিকট থেকে এলাম, যারা আপনার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়ে এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আপনার জান্নাত প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে?’

তাঁরা বলেন, ‘না, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার জাহান্নাম থেকে, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘আর তারা আপনার নিকট ক্ষমা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা প্রার্থনা করে তা দান করলাম এবং যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তা থেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁরা বলেন, ‘হে প্রতিপালক! ওদের মধ্যে অমুক পাপী বান্দা এমনি পার হতে গিয়ে তাদের সাথে বসে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম! কারণ তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত হয় না।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯, রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ থেকে বেঁচে থাকা

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম একটি উপায় হলো, পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং পাপ যতই ক্ষুদ্র হোক পরকালীন শাস্তির কথা ভেবে তা থেকে বিরত থাকা উচিত।

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে ’আয়িশাহ! তুমি ঐ সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ছোট বলে ধারণা করা হবে। কেননা এ সমস্ত ছোট ছোট গুনাহগুলোর খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহ তরফ থেকে (ফেরেশতা) নিয়োজিত রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫১৩, ২৭৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২৪৭২, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫১৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬৮, শুআবূল ঈমান ৭২৬১, দারিমী ২৭২৬, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৩৭৭, আহমাদ ২৩৮৯৪, ২৪৬৫১, দারেমী ২৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ থেকে বাঁচার উপায়

পাপকে ছোট বা তুচ্ছ জ্ঞান না করাঃ

পাপ যেমনই হোক, তা পাপই। তাকে ছোট মনে করে তা করে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি পাপই আমলনামায় লেখা হয়। সুতরাং পরকালীন শাস্তির কথা ভেবে ক্ষুদ্র পাপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে আয়েশা! তুমি ছোট ছোট গুনাহ থেকেও নিজেকে রক্ষা করো। কেননা সেটা লেখার জন্যও আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৩৫৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৩, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫১৩, ২৭৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ২৪৭২, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৫১৩, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৬৮, শুআবূল ঈমান ৭২৬১, দারিমী ২৭২৬, আল মু'জামুল আওসাত্ব ২৩৭৭, আহমাদ ২৩৮৯৪, ২৪৬৫১, দারেমী ২৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনঃ

মানুষের পাপ কাজে অসৎ সঙ্গীদের সহায়তা ও প্রভাব থাকে। তাই পাপ থেকে বেঁচে থাকতে সৎ ও ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত।

আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

পাপ প্রকাশ না করাঃ

যেকোনো পাপ আল্লাহর অবাধ্যতার শামিল। পরম ক্ষমাশীল আল্লাহ তাআলা বান্দার পাপ গোপন রেখে তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দা নিজে তা প্রকাশ করলে ওই বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপের পর নেকির কাজ করাঃ

শয়তানের প্ররোচনায় পাপ হয়ে গেলে অনুশোচনার পরপরই কোনো নেকির কাজ করা উচিত। কারণ নেকি পাপ মিটিয়ে দেয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সৎ কর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে।’ (সুরা: হুদ, আয়াত: ১১৪)।

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা: আয়াত ১১০)।

তিনি আরো বলেন,

‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে; অতপর তাদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গোনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যে (অপরাধ) করেছে, জেনেশুনে তার ওপর অটল থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৩৫)।

তাওবা-ইস্তিগফারের অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

শয়তানের প্ররোচনায় যতবার পাপ হবে, ততবারই তাওবা করা উচিত। কারণ শয়তান চায় না কোনো বান্দা ক্ষমা পেয়ে যাক। তাই পাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য বারবার তাওবা করার অভ্যাস করে নিতে হবে।

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ বারাকাতময় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৪০, সহীহাহ১২৭, ১২৮, রাওযুন নাযীর ৪৩২, মিশকাত তাহকীক সানী  ২৩৩৬, তা’লীকুর রাগীব  ২/২৬৮,  রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ থেকে মুক্তির দোয়াসমূহ

দোয়া-১:

আস্তাগফিরুল্লা-হ।

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

প্রতি ওয়াক্তের ফরয সলাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া ৩ বার পড়তেন।

হাদিসঃ

 সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার “আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু’আ পড়তেনঃ

“আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-২:

আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।

অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ১০০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন।

হাদিসঃ

 “আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”। (দৈনিক ১০০ বার)।

(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৩:

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,

‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান।

অথবা

“রব্বিগফিরলী ওয়াতুব্ ’আলাইয়্যা ইন্নাকা আন্তাত্ তাও্ওয়া-বুল গফূর’’

(অর্থাৎ- হে রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার তওবা্ কবূল করো। কেননা তুমি তওবা্ কবূলকারী ও ক্ষমাকারী)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, সুনান আততিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৫২, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২, আহমাদ ৪৭২৬, ইবনু হিব্বান ৯২৭, সহীহাহ্ ৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৮৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৪:

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ পড়বে,

‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’

অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।

সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৫:

শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া-

“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।

‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’

যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬, ৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৬:

 “রব্বানা য-লামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কূনান্না মিনাল খ-সিরীন। ”

অর্থঃ “হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলুম করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি করুণা না কর তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” (সূরা আ‘রাফ- ২৩)।

দোয়া-৭:

আবূ বাকর সিদ্দীক (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সালাতে পাঠ করার জন্য একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু‘আটি বলবে-

“আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছিরাও ওয়া লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন্ ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহিম।”

‘‘হে আল্লাহ্! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৩৪, ৬৩২৬, ৭৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৮:

(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিছু বাক্য যা কোনো ব্যক্তি মাজলিস থেকে উঠার সময় তিনবার উচ্চারণ করলে তা তার ঐ মাজলিসের কাফফারা হবে। আর যদি উক্ত বাক্যগুলো কোনো উত্তম মাজলিসে ও যিকিরের মাজলিসে পাঠ করে তাহলে পুস্তিকায় সীল মোহর করার মতই তা তার জন্য স্থায়িত্ব লাভ করে। বাক্যগুলো হলোঃ

 “সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাফিরুকা ওয়া আতূবূ ইলাইকা।’’

“হে আল্লাহ! মহিমা আপনার, আমি আপনার প্রশংসা সহকারে শুরু করছি। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাই এবং অনুতপ্ত হয়ে আপনার নিকট ফিরে আসছি।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৫৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেনঃ

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।’’

 এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পড়লেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেননি? তিনি বললেন, মাজলিসে যা কিছু (ভুলত্রুটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারাহ গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৫৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। 

আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা

কোনো মুসলমানকে ভালোবাসার কারণেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

’আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পথিমধ্যে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌছল, তখন ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছো? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অবদান আছে, যা তুমি আরো প্রবৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তার দূত হয়ে) তোমার কাছে অবহিত করার জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তারই সম্ভষ্টি অর্জনের জন্য ভালবেসেছ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসার ফযীলত

মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। (হুজুরাত ৪৯/১০)। তারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসবে এটা ঈমানের অন্যতম দাবী। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মুসলমানদের পারস্পরিক ভালবাসার অনেক ফযীলত রয়েছে। এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা পেশ করা হ’ল।-

(১) ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়: মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ)..আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়। ক। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর থেকে প্রিয় হওয়া; খ। কাউকে খালিস আল্লাহ্র জন্যই মুহব্বত করা; গ। কুফ্রীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা। (সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেতে পসন্দ করে, সে ব্যক্তি কেবল সুমহান আল্লাহর উদ্দেশ্যেই অপরকে ভালবাসুক’। (মাজমূঊল ফাতওয়া, (মদীনা, সঊদী আরব: বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স; ১৪১৬ হিঃ/১৯৯৫), ২৮/২০৯)।

(২) শিরক থেকে রক্ষা: মুশরিকরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে আল্লাহর মত ভালবাসে। ফলে তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসার নে‘মত থেকে দূরে থাকে। অপরদিকে মুমিনগণ আল্লাহর জন্য একে অপরকে বেশী ভালবাসে। আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তারা তাদেরকে ভালোবাসে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায়। কিন্তু যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর জন্য সর্বাধিক ভালোবাসা পোষণ করে থাকে। আর যালেমরা (মুশরিকরা) যদি জানত যখন তারা আযাবকে প্রত্যক্ষ করবে যে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা (তাহ’লে তারা শিরকের অনিষ্টকারিতা ব্যাখ্যা করে দিত)’। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৬৫)।

(৩) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: কোন মুসলমানকে ভালবাসার কারণে তার সাথে দেখা-সাক্ষাতের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

’আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ)....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পথিমধ্যে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌছল, তখন ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছো? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অবদান আছে, যা তুমি আরো প্রবৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তার দূত হয়ে) তোমার কাছে অবহিত করার জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তারই সম্ভষ্টি অর্জনের জন্য ভালবেসেছ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৪৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আল্লাহর সাহায্য লাভ: আল্লাহর জন্য কোন মুমিনকে ভালোবেসে তার কোন সাহায্যে এগিয়ে আসলে আল্লাহ তার জন্য অনুরূপ সাহায্য নিয়ে হাযির হন।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করবেন। যে ব্যক্তি কোন মু’মিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে (প্রকাশ করবে না), আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা’আলা মালায়িকাহ্’র নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার ’আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৭৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) আল্লাহর ভালবাসা লাভ: কোনো মুমিনকে ঈমানের কারণে ভালোবাসলে আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।

বারা’ (ইবনু ’আযিব) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে উপহারস্বরূপ রেশমি পোশাক পেশ করা হলো। তখন সাহাবীগণ তা স্পর্শ করে তার কোমলতায় আশ্চর্যবোধ করতে লাগলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, তোমরা তার কোমলতা দেখে আশ্চর্য হচ্ছ? অথচ সা’দ ইবনু মু’আয-এর রুমাল যা জান্নাতে তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন, এর চেয়ে অধিক উত্তম এবং আরো অনেক কোমল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬২০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৬৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/১৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ যারা আমার সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার উদ্দেশে সভা-সমাবেশে উপস্থিত হয়ে আমার গুণগান করে, আমার উদ্দেশে পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমারই ভালোবাসা অর্জনের জন্য নিজেদের সম্পদ পরস্পরের মধ্যে ব্যয় করে, তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়।

আর তিরমিযীর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’আমার মহত্ব ও সম্মানের খাতিরে যারা পরস্পর মহববত করে, তাদের জন্য পরকালে বিরাট নূরের মিনার হবে, যা দেখে নবী ও শাহীদগণ ঈর্ষা করবেন’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৫০৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩০১৯, আহমাদ ২২০৮০, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৯৩, হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/১৩১, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৩৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, ‘দুই ব্যক্তি পরস্পরকে ভালোবাসলে, তাদের মধ্যে যে অপরজনকে অধিক ভালোবাসবে সে আল্লাহর নিকটে অপরজন থেকে অধিক ভালোবাসার পাত্র হবে’। (মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৭৩২৩; ছহীহাহ হা/৪৫০)।

(৬) একে অপররে ভালবাসা আল্লাহর বড় নে‘মত: এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নে‘মত। আল্লাহ বলেন,

‘আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নে‘মতের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তর সমূহে মহববত পয়দা করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে’। (আলে ইমরান ৩/১০৩)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তিনি তাদের অন্তর সমূহে পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। যদি তুমি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ব্যয় করতে, তবুও তাদের অন্তর সমূহে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে পরস্পরে মহববত পয়দা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’। (সুরা আনফাল ৮/৬৩)।

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল রূহ্ শরীরে প্রবেশ করার পূর্বে একদল পতাকাধারী সৈন্যের মতো ছিল। যে সব রূহ্ শরীরে প্রবেশ করানোর পূর্বে পরস্পর পরিচিত ছিল, এখনো তারা পরস্পর পরিচিত এবং একে অপরের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আর যে সব রূহ্ ঐ সময় পরস্পর অপরিচিত ছিল, তাদের এখনো পরস্পর মতানৈক্য রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৮৩৪, সহীহুল জামি‘ ২৭৬৮, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৬৯৫, আহমাদ ৭৯৩৫, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৮১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৬৮, শু‘আবুল ঈমান ৯০৩৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৫/৬৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬০৪৬, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ১৫৭৭, আল মুসতাদরাক ৮২৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০০১ পরিচ্ছেদ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) ঈমানের পূর্ণতা লাভ: আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত করে, আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৮১, সহীহুল জামি ৫৯৬৫, ছহীহাহ ৩৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসা ছাহাবীদের বৈশিষ্ট্য: ছাহাবীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মাদ আল্লাহরত্মাসূল এবং যরা তার সাথী তারা কাফেরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। কিন্তু নিজেদের মধ্যে পরস্পরে রহমদিল’। (সুরা ফাতাহ ৪৮/২৯)।

আনছার ছাহাবীদের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং তাদেরকে (ফাই থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। বস্ত্ততঃ যারা নিজেদেরকে হৃদয়ের কার্পণ্য হ’তে বাঁচাতে পেরেছে, তারাই হ’ল সফলকাম’। (সুরা হাশর ৫৯/৯)।

(৯) আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মান লাভ: আল্লাহর জন্য অন্য ভাইকে ভালোবাসলে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন।

আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বান্দা কোন বান্দাকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই ভালোবাসল, সে যেন প্রতিপালক মহীয়ান-গরীয়ানকেই সম্মান করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০২২, আহমাদ ২২২২৯, শু‘আবুল ইমান ১০১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১২৫৬, সহীহুল জামি ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১০) ক্বিয়ামতের দিন আরশের নীচে স্থান লাভ: আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ পালাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও বাপ থেকে এবং তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে। প্রত্যেক মানুষের সেদিন এমন অবস্থা হবে যে, সে নিজেকে নিয়েই বিভোর থাকবে’। (সুরা আবাসা /৩৪-৩৭)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, সে লোকেরা কোথায়? যারা আমার ইয্যতের খাতিরে একে অপরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় জায়গা দেব। আজ আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৬, আহমাদ ৮৪৫৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৫০৪, সহীহুল জামি ১৯১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩০১১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭৪, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৯০, দারিমী ২৭৫৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩৪৪, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।

১. ন্যায়পরায়ণ শাসক,

২. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে,

৩. সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে,

৪. সে দু’ ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য,

৫. সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহবান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’,

৬. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না,

৭. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকর করে, ফলে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সুনান আননাসায়ী ৫৩৮০, সুনান আততিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ: রাসূল (ছাঃ) বলেন,  মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে তাদের জন্য জন্য রয়েছে আলোর মিম্বার (মঞ্চ)। নবী ও শাহীদগণ পর্যন্ত তাদের সাথে (মর্যাদা দর্শনে) ঈর্ষা করবে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯০, মিশকাত তাহকীক ছানী (৫০১১), তা’লীকুর রাগীব ৪/৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,

’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে যে, তাঁরা নবীও নন, শাহীদও নন; কিন্তু কিয়ামতের দিন নবীগণ ও শাহীদগণ আল্লাহ তা’আলার কাছে তাঁদের মর্যাদা দেখে ঈর্ষা করবেন। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! তাঁরা কারা? আমাদেরকে বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাঁরা সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহ তা’আলার ক্বুরআনের খাতিরে একে অপরকে ভালোবাসে, তাদের মধ্যে কোন নিকট আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ধন-সম্পদের লেনদেনের সম্পর্কও নেই। আল্লাহর কসম! তাদের মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল হবে অথবা তাঁরা স্বয়ং আলোকবর্তিকা হবে। তারা সে সময় ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না, যখন সকল মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হবে; তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না, যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেনঃ অর্থাৎ- ’’সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোন ভয় নেই। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না’’- (সূরাহ্ ইউনুস ১০ : ৬২)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩০২৬, আহমাদ ২২৮৯৭, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৮৪২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৫, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১২৩৬, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (১২) ক্বিয়ামতের দিন ব্যক্তি ভালবাসার মানুষের সাথে থাকবে: ক্বিয়ামতের কঠিন দিন আল্লাহর জন্য যারা একে অপরকে ভালোবেসেছে তারা পরস্পর এক সাথে শান্তিতে অবস্থান করবে। আল্লাহ বলেন, ‘বস্ত্ততঃ যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সাথী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আর এরাই হ’লেন সর্বোত্তম সাথী’। (নিসা ৪/৬৯)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩০২৬, আহমাদ ২২৮৯৭, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৮৪২, হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/৫, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ১১২৩৬, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলল, কোন কিছুই জোগাড় করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। তখন তিনি বললেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসি এবং আবূ বকর ও ‘উমার (রাঃ)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার ভালবাসার কারণে তাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের ‘আমলের মত ‘আমল আমি করতে পারিনি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৮৮, ৬১৬৭, ৬১৭১, ৬১৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৪১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! এমন ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে ব্যক্তি কোন দলকে ভালবাসে, কিন্তু (’আমলের ক্ষেত্রে) তাদের সমান হতে পারেনি? তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে সে তারই সাথী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৪০, ৬১৬৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪০, আহমাদ ১৮১১৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) ভাল লোকদের সাথে থাকা বা থাকার আকাঙ্ক্ষা করা এবং আল্লাহর কাছে এজন্য দো‘আ করা পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষা। যেমন-

(ক) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে এই বলে দো‘আ করেছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে প্রজ্ঞা দাও এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (সুরা শু‘আরা ২৬/৮৩)।

(খ) ইউসুফ (আঃ) এই বলে দো‘আ করেছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন এবং আমাকে স্বপ্নসমূহের ব্যাখ্যাদানের শিক্ষা প্রদান করেছেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের হে সৃষ্টিকর্তা! আপনিই আমার কার্যনির্বাহী দুনিয়া ও আখেরাতে। আপনি আমাকে ‘মুসলিম’ হিসাবে মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিত করুন’। (সুরা ইউসুফ ১২/১০১)।

(গ) সুলায়মান (আঃ) দো‘আ করতেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ। আর যাতে আমি এমন সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পসন্দ কর এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীলবান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। (সুরা নমল ২৭/১৯)।

(১৪) একে অপরের সাথে ভালোবাসা স্থাপনকারী ব্যক্তিদের চেহারা নূরানী হবে: ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী ব্যক্তিদেরকে মর্যাদা স্বরূপ নূরানী চেহারা দান করা হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন এমন একদল লোকদেরকে পুনরুত্থান করাবেন যাদের চেহারা হবে মণি-মুক্তার উপরে নূরানী, যাদেরকে দেখে লোকেরা ঈর্ষা করবে অথচ তারা নবীও নন শহীদও নন। ... অতঃপর সে (ছাহাবী) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের বৈশিষ্ট্য বলুন, যাতে আমরা তাদেরকে চিনতে পারি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তারা বিভিন্ন গোত্রের যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসতেন এবং তারা বিভিন্ন দেশের যারা আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য একত্রিত হ’তেন’। (ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫০৯, ৩০২৫, সনদ ছহীহ)।

(১৫) জান্নাত লাভের মাধ্যম : আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য কারো সাথে সাক্ষাৎ করা জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَআমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে খবর দিব না? শহীদ জান্নাতী, ছিদ্দীক্ব জান্নাতী, নবজাতক জান্নাতী, আর ঐ ব্যক্তিও জান্নাতী যে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে’। (ছহীহাহ হা/২৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬০৪)।

অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তার কোন ভাইয়ের রোগ দেখতে যায় অথবা সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমার জীবন সুখের হলো, তোমার চলন উত্তম হলো এবং তুমি জান্নাতে একটি ইমারত বানিয়ে নিলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০১৫, সুনান আততিরমিযী ২০০৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৭৮, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ২৬২, রিয়াযুস্ সলিহীন ৩৬৬, আহমাদ ৮৫৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৯৬১, শু‘আবুল ঈমান ৯০২৬, সহীহুল জামি‘ ৬৩৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, এক মুসলমান অপর মুসলমানকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও ক্বিয়ামতের দিন শান্তি পাওয়ার জন্য সর্বোপরি জান্নাত লাভের আশায় ভালোবাসবে। এই ভালোবাসা যেন দুনিয়াবী স্বার্থে ব্যাহত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মুমিনের ভুল-ত্রুটির প্রতি লক্ষ্য না করে তার ভাল কাজগুলোর প্রতি খেয়াল করতে হবে, আর ভুলগুলো সংশোধনের জন্য সাধ্যানুযায়ী, মার্জিত ভাষায় শরী‘আতের নির্দিষ্ট পন্থা অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর কাছে তার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করতে হবে।

নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা

সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। অত্যন্ত উঁচু ও মহৎ এই গুণের মাধ্যমেও বান্দা ও প্রভুর সম্পর্ক মজবুত ও দৃঢ় হয়।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের (আমার নিয়ামত) আরো বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে (জেনে রেখো) আমার শাস্তি কঠোরতম।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)।

তিনি অন্য জায়গায় বলেন,

 “বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই।” (সূরা ইসরা ১১১ আয়াত)।

তিনি আরও বলেছেন,

“তাদের শেষ বাক্য হবে, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।” (সূরা ইউনুস ১০ আয়াত)।

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যে রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মি’রাজ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে তাঁর নিকট মদ ও দুধের দু’খানা পাত্র আনা হল। তখন তিনি উভয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে দুধের বাটি খানা তুলে নিলেন। এ দেখে জিবরাঈল (আঃ) বললেন: ’সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আপনাকে প্রকৃতির দিকেই পথ দেখালেন। যদি আপনি মদের পাত্রটি ধারণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৯৪, ৩৪৩৭, ৫৫৭৬, ৫৬০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৮, সুনান আততিরমিযী ৩১৩০, সুনান আননাসায়ী ৫৬৫৭, আহমাদ ২৭৩০৬, ১০২৬৯, দারেমী ২০৮৮, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৪০১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৫৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদেরকে বলেন, ’তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জীবন হনন করেছ কি?’ তাঁরা বলেন, ’হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ’তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ?’ তাঁরা বলেন, ’হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ’সে সময় আমার বান্দা কি বলেছে?’ তারা বলে, ’সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন (অর্থাৎ আমরা তোমার এবং তোমার কাছেই অবশ্যই ফিরে যাব) পাঠ করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ’আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ কর, আর তার নাম রাখ, ’বায়তুল হামদ’ (প্রশংসা-ভবন)।” (সুনান আততিরমিযী ১০২১, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৪০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আহারের পর ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলা

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বান্দা যখন কোন কিছু আহারের পর এবং কোন কিছু পান করার পর আল্লাহর প্রশংসামূলক ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে, তখন আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪২০০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৮১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৫১, সহীহুল জামি‘ ১৮১৬, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৩৩২, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ (২৬)-১, মুসনাদে আহমাদ ১১৯৭৩, শু‘আবুল ঈমান ৬০৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও ইবনু নুমায়র (রহঃ).....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা সে বান্দার উপর সম্ভষ্ট, যে খাদ্য গ্রহণের পরে তার জন্য আল হামদু লিল্লা-হ’ পড়ে এবং পানীয় পান করার পরে তার কৃতজ্ঞতা (স্বীকার) করে আল হামদু লিল্লা-হ’ বলে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৮২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৪, সুনান আততিরমিযী ১৮১৬, আহমাদ ১১৫৬২, ১১৫৭৮, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৪০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআন চর্চা করা

পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর কালাম। এটি মানুষকে আলোকিত করে। মানুষকে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানরা যেন তা অনুধাবন করে।’ (সুরা সদ: ২৯)।

আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পাঠকারী মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো তুরঞ্জ ফল বা কমলা লেবুর ন্যায়। যার গন্ধ ভাল, স্বাদও উত্তম। যে মু’মিন কুরআন পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত হলো খেজুরের ন্যায়। এর কোন গন্ধ নেই বটে, কিন্তু উত্তম স্বাদ আছে। কুরআন পাঠ করে না যে মুনাফিক, সে হানাযালাহ্ (তিতা) ফলের মতো, যার কোন গন্ধ নেই অথচ স্বাদ তিতা। আর ওই মুনাফিক যে কুরআন পড়ে তার দৃষ্টান্ত ঐ ফুলের মতো, যার গন্ধ আছে কিন্তু স্বাদ তিতা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪২৭, ৫০২০, ৫০৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৭, সুনান আততিরমিযী ২৮৬৫, সুনান  আননাসায়ী ৫০৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৪, আহমাদ ১৯৫৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭০, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৫০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সূরা ’আল কাহাফ’ পড়ছিল। দু’টি রশি দিয়ে তার ঘোড়া পাশেই বাঁধা ছিল। এমন সময় এক খণ্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিলো। মেঘখণ্ডটি ধীরে ধীরে তার নিকটতর হতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি লাফাতে লাগল। সে ভোরে উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ঘটনা তাঁকে জানাল। (তিনি ঘটনা শুনে) বললেন, এটা ছিল রহমত, যা কুরআনের কারণে নেমে এসেছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০১১, ৩৬১৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৯৫, শু‘আবূল ঈমান ২২১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। কারণ কুরআন পাঠ কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে। তোমরা দু’ উজ্জ্বল সূরা আল বাকারাহ্ ও আ-লি ’ইমরান পড়বে। কেননা কিয়ামতের দিন এ সূরা দু’টি মেঘখণ্ড অথবা দু’টি সামিয়ানা অথবা দু’টি পক্ষ প্রসারিত পাখির ঝাঁকরূপে আসবে। এ দু’ সূরার পাঠকদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে। বিশেষ করে তোমরা সূরা আল বাকারাহ্ পড়বে। কারণ সূরা আল বাকারাহ্ পড়া বারাকাত আর তা না পড়া আক্ষেপ। এ সূরা দু’টি পড়তে পারবে না অলস বেকুবরা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১২০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮০৪, শু‘আবূল ঈমান ১৮২৭, সহীহ ইবনু হিববান ১১৬, সহীহাহ্ ৩৯৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৪৪, ইসলামীক সেন্টার ১৭৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের জিকির করা

অন্তরে সর্বদা আল্লাহর পবিত্র নাম ও তঁর অতুলনীয় গুণাবলীর জিকির আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাকো। আর তাদের বর্জন করো, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে।’ (সুরা আরাফ: ১৮০)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি এই নামগুলো কণ্ঠস্থ করলো বা গুণে গুণে পড়লো সে জান্নাতে প্রবেশ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৬০, ৩৮৬১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৬, ৭৩৯২, ৬৪১০, মুসলিম ২৬৭৭, তিরমিযী ৩৫০৬, ৩৫০৭, ৩৫০৮, আহমাদ ৭৪৫০, ৭৫৬৮, ২৭৩৬৩, ৯২২৯, ১০১০৩, ১০১৫৪, ১০৩০৭, মিশকাত ২২৮৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮১৬, ইবনু হিব্বান ৮১৭, সহীহ আল জামি ২১৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সর্বদা আল্লাহর মুখাপেক্ষিতা হওয়া

আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী—এই অনুভূতি সর্বদা অন্তরে জাগ্রত রাখা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বড় সহায়ক।

সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিব্রীল এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবে। যার সাথে খুশী বন্ধুত্ব কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবে। যা খুশী তুমি আমল কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবে। জেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হ’ল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হ’ল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে’। (হাকেম হা/৭৯২১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩১)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও এবং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর।’’ (সূরা যুমার: ৫৪)।

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমাদেরকে সর্বদা আল্লাহমুখী হয়ে থাকতে হবে, জীবনের যে কোনো অভাব ও অভিযোগের কথা সরাসরি কেবল তাঁরই নিকট পেশ করতে হবে। সর্ব অবস্থাতেই কোনো পীর বা অলির শরণাপন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; কেননা, আমরা সর্বদাই তাঁর মুখাপেক্ষী, অপর কারো মুখাপেক্ষী নই। তিনি বলেছেন,

‘‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ হলেন অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।’’ (সূরা ফাত্বির: ১৫)।

আমাদের অন্তরকে আল্লাহর প্রতি ধাবিত না করে আমরা যদি নিজের জীবনের কোনো অভাব অভিযোগ বা বিপদের কথা কোনো মৃত অলি ও দরবেশের কাছে বা তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পেশ করি, তা হলে আমরা অন্তরের ‘এনাবতের’ উপাসনায় তাঁদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে নেবো; কারণ আমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে :

‘‘তোমরা আমাকে আহ্বান করো, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দেব।’’ (সূরা গাফির: ৬০)।

সৎ এবং অসৎ নির্বিশেষে সকলের প্রতি এ আহ্বান থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি তার অভাব ও বিপদের সময় গায়রুল্লাহর শরণাপন্ন হয়, তা হলে সে যেন গায়রুল্লাহকেই তার ইলাহ ও প্রতিপালক বানিয়ে নিল। এখানে স্মর্তব্য যে, কোনো সৎ জীবিত মানুষকে অভাব মোচন ও বিপদ দূরীকরণের মালিক মনে না করে এবং তাঁকে মানুষের সমস্যাদি আল্লাহর নিকট উপস্থাপনের মাধ্যম মনে না করে তাঁর কাছে গিয়ে বিপদ দূরীকরণের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করার জন্য বলা যেতে পারে। কোনো মানুষ মরে যাওয়ার পর তার কাছে কোনো দু‘আ কামনা করা যায় না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

‘‘মানুষ যখন মরে যায় তখন তার যাবতীয় কর্ম বন্ধ হয়ে যায়’’। (কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, বাব নং ৩, ৩/১২৫৫; তিরমিযী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আহকাম, বাব নং ৩৬, হাদীস নং : ১৩৭৬; ৩/৬৬০; ইমাম আহমদ, প্রাগুক্ত; ২/৩৭২)।

সার কথা:

একজন মুসলিম যখন এ কথার স্বীকৃতি দিবে যে, একমাত্র আল্লাহই আমার উপাস্য ও প্রতিপালক, তখন তাকে তার শরীরের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং অন্তরের সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় উপাসনা একমাত্র আল্লাহর জন্যেই করে তার এ স্বীকৃতির যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে যে, এ পৃথিবীতে আমার বাঁচা ও মরা, আমার যাবতীয় কাজ ও কর্ম কেবল আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত হবে। প্রতিটি মুসলিমের মনের অভিব্যক্তি যে সর্বদা এটাই হতে হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

‘‘বলুন : আমার সালাত, কুরবানী, জীবন ও মৃত্যু (সব কিছুই) সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরীক নেই, এ ঘোষণা দেওয়ার জন্যেই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আর আমিই হলাম প্রথম আত্মসমর্পণকারী।’’ (সূরা আন‘আম : ১৬২)।

প্রত্যেকের মনের এ অভিব্যক্তিকে সত্যে পরিণত করতে হলে নিজেকে একজন যথার্থ মু’মিন বলে প্রমাণ করার জন্য নিজের উপাসনায় কোনো প্রকার শির্ক আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং থাকলে তা পরিহার করে তাওবাহ ও ইস্তেগফার করে নিজের ঈমান ও ‘আমলকে সংস্কার করে নিতে হবে।

নিয়মিত আমল করা

যেকোনো আমল নিয়মিত করা আল্লাহ তাআলার প্রিয়।

(ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।

‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(খ)  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।

(গ) আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)...'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।

উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২, ২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

অতএব আপনি যে বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে আমল করছেন কিন্তু কবুল হচ্ছে না তবুও আমল ছেড়ে দেয়া যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সেই বিষয়ে কবুল না করলেও হয়তো এর বিনিময়ে অন্য কোনো বিপদ দূর করে দিয়েছেন বা দিবেন। সেটাও যদি না হয় তাহলে পরকালের জন্যে আল্লাহ তায়ালা তা মজুদ করে রেখেছেন। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।

বিলম্ব হলেও দোয়া কবুল হয়

আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান জু’ফী (রহঃ)....ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহিল হারামের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ জাহল ও তার সাথীরা অদূরে উপবিষ্ট ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিল। আবূ জাহল বলল, কে অমুক গোত্রের উটের (নাড়ি-ভূড়িসহ) জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদারত হবে, তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দু’কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহসি করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো, আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাহকে খবর দিল। ফাতিমাহ সাথে সাথে আসলেন। আর তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তার উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে মন্দাচারের বিষয়ে বলছিলেন। তারপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চস্বরে তাদেরকে বদদুআ দিলেন আর তিনি যখন দু’আ করতেন (সাধারণতঃ) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করতেন তখন তিনি তিনবার করতেন।

তারপর তিনি তিন তিনবার বললেন "ইয়া আল্লাহ! তোমার উপরেই কুরায়শদের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। যখন তারা তার আওয়াজ শুনতে পেল তখন তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দু’আয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উতবাহ ইবনু রাবী’আহ, শাইবাহ ইবনু রাবী আহ, ওয়ালীদ ইবনু উকবাহ, উমাইয়াহ ইবনু খালাফ ও উকবাহ ইবনু আবূ মুআয়তের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পরিনি। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন, তার কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি। তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। আবূ ইসহাক বলেন, ওয়ালীদ ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৫৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪০, ৫২০, ২৯৩৪, ৩১৮৫, ৩৮৫৪, ৩৯৬০; আহমাদ ৩৭২২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার ৪৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পুণ্যবানদের সাহচর্য ও জিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণ করা

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (সুরা কাহাফ: ২৮)।

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন জান্নাতের বাগানগুলোর পার্শ্ব দিয়ে যাবে সে সময় সেখান হতে পাকা ফল তুলে নিবে। লোকজন প্রশ্ন করল, জান্নাতের বাগানগুলো কি? তিনি বললেন, যিকরের মাজলিস। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫১০, সহীহাহ ২৫৬২, তা’লীকুর রাগীব  ২/৩৩৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মেসওয়াক করা

মেসওয়াক করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসওয়াক হলো মুখগহ্বর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১, বুখারী ২/৬৮২ (তা‘লীক সূত্রে), সুনান আননাসায়ী ৫, সহীহুত্ তারগীব ২০৯, দারিমী ৭১১)। মুসনাদে আহমাদ ৬৪৯৬৯, ২৪২০৩, ইবনু হিব্বান-এর “মাওয়ারিদ" ১৪৩, মুসনাদে হুমায়দী ১৬২, বায়হাকী-এর “সুনানুল কুবরা” ১৩৪, ইরওয়াউল গালীল ৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা তার কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি  ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয়, তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ’। (আবুবকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ)।

পিতার সন্তুষ্টি অর্জন

আল্লাহ বলেন,

‘আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তুমি তাদের প্রতি উহ শব্দটিও করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে নরমভাবে কথা বল। আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়াবশে প্রতিপালন করেছিলেন’। (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭/ ২৩- ২৪)।

অন্যত্র তিনি বলেন,

‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হ’লাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম’। (সুরা আহক্বাফ ৪৬/১৫)।

অত্র আয়াতে চল্লিশ বছর বয়স উল্লেখ করার কারণ হ’ল- যে সন্তান এ বয়স পর্যন্ত মাতা-পিতার সাথে সুন্দর আচরণ করে তারা এর পরের বয়সে সাধারণত মাতা-পিতার অবাধ্য হয় না। তাদের চিন্তা থাকে তারা মাতা-পিতার সাথে খারাপ আচরণ করলে তাদের সন্তানেরাও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবে।

এ বিষয়ে আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে’। (সুরা লোক্বমান ৩১/ ১৪)।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে, পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী সংঙ্গী-সাথী, মুসাফির এবং দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পসন্দ করেন না দাম্ভিক-অহংকারীকে’। (সুরা নিসা ৪/৩৬)।

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা’আলার সস্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা’আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৮৯৯, সহীহা ৫১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘প্রভুর সন্তুষ্টি মাতা-পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং তাঁর অসন্তুষ্টি তাঁদের অসন্তুষ্টির মধ্যে’’। (সাহীহুল্ জা’মি’: ৩/১৭৮)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘আমার নিকট জিব্রীল এসে বললো: হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি মাতা-পিতার কোন একজনকে জীবিত পেয়েও তাদের খিদমত করেনি। বরং তার অবাধ্য হয়েছে এবং যদ্দরুন সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে নিজ রহমত থেকে বঞ্চিত করুক। আপনি বলুন: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন। আমি বললাম: হে আল্লাহ্! আপনি দো‘আটি কবুল করুন’’। (সাহীহুল্ জা’মি’: ১/৭৮)।

জীবিত থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের ফযীলত

মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার জিহাদ অপেক্ষা উত্তম:

দ্বীন রক্ষার জন্য অনেক সময় জিহাদে যেতে হয়। আর আল্লাহর পথে জিহাদের ফযীলত কত বেশী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ এই ফযীলতপূর্ণ আমলের উপর মাতা-পিতার সেবা করাকে অগ্রধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে-

আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (ছাঃ) বললেন, তবে তাঁদের খিদমতের চেষ্টা কর’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০০৪, ৫৯৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৫২৯, সুনান আননাসায়ী ৩১০৩, সুনান আততিরমিযী ১৬৭১, মুসনাদ আহমাদ ৬৭৬৫, ইরওয়া ১১৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৯৩))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হ’ল- ‘তোমার পিতা মাতা জীবিত থাকলে তাদের সেবা ও খিদমতে সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যয় কর। কারণ এটি জিহাদের স্থলাভিষিক্ত হবে’। (ফাৎহুল বারী ১০/৪০৩)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছে? উত্তরে সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তাদের (খিদমাতের) মধ্যে জিহাদ কর।

অন্য বর্ণনায় আছে, তুমি তোমার মাতা-পিতার নিকট ফিরে যাও এবং সর্বদা তাদের সাথে সদাচরণ কর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০০৪, ৫৯৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৩৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৫২৯, সুনান আননাসায়ী ৩১০৩, সুনান আততিরমিযী ১৬৭১, মুসনাদ আহমাদ ৬৭৬৫, ইরওয়া ১১৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪৮০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৯৩))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, আমি আপনার কাছে হিজরতের বাই’আত নিতে এসেছি এবং আমার মাতা-পিতাকে কান্নারত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও। তাদেরকে যেভাবে কাঁদিয়েছ ঐভাবে তাদেরকে হাসাও। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫২৮, ছহীহ আত-তারগীব ২৪৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যহাদীছে এসেছে,

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। এক ব্যক্তি ইয়ামেন থেকে হিজরত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়ামেনে তোমার কেউ আছেন কি? জবাবে সে বললো, আমার পিতা-মাতা আছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তারা তোমাকে জিহাদের অনুমতি দিয়েছেন কিনা? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তবে তুমি ফিরে গিয়ে তাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করো। তারা তোমাকে অনুমতি দিলে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে, অন্যথায় তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৫৩০; আহমাদ ১১৭৩৯; ছহীহুল জামে‘ ৮৯২; ছহীহ আত-তরগীব ২৪৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এর দ্বারা বুঝা যায় যে, পিতা-মাতার সেবা কখনো কখনো জিহাদের চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে। জমহূর বিদ্বানগণের নিকটে সন্তানের উপর জিহাদে যাওয়া হারাম হবে, যদি তাদের মুসলিম পিতা-মাতা উভয়ে কিংবা কোন একজন জিহাদে যেতে নিষেধ করেন। কেননা তাদের সেবা করা সন্তানের জন্য ‘ফরযে ‘আইন’। পক্ষান্তরে জিহাদ করা তার জন্য ‘ফরযে কিফায়াহ’। যা সে না করলেও অন্য কেউ করবে ইসলামী রাষ্ট্রের আমীরের হুকুমে’। (ত্বাহাবী, শারহু মুশকিলুল আছার ৫/৫৬৩; খাত্বাবী, মু‘আলিমুস সুনান ৩/৩৭৮)।

সর্বোত্তম আমল:

বিভিন্ন হাদীছে বিভিন্ন আমলকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। কতগুলো ইবাদত রয়েছে আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। আবার কতগুলো ইবাদত রয়েছে যা বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট। বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদতগুলোর মধ্যে পিতামাতার সাথে সুন্দর আচরণ করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যেমন হাদীছে এসেছে-

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ কাজ সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘সময় মত সালাত আদায় করা।’ আমি বললাম, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বলেন, ‘অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা।’ আমি বললাম, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ।’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি আরো বলতাম, তবে তিনি আরও অধিক বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৮২, ৫২৭,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫;  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৮, সুনান আননাসায়ী ৬১০, আহমাদ ৩৮৯০, ইরওয়া ১১৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (’আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪২৬, সুনান আততিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এর দ্বারা বুঝা যায় যে, পিতা-মাতার সেবা করার স্থান ছালাতের পরে এবং জিহাদে গমন করার উপরে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়:

মায়ের যেমন সন্তানের নিকট বিশেষ মর্যাদা রয়েছে তেমনি পিতারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পিতা যদি কোন বৈধ কারণে সন্তানের উপর অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহ’লে আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যান। কারণ একজন সন্তানকে আদর্শবান হিসাবে গড়ে তুলতে পিতার আর্থিক ও মানসিক অবদান রয়েছে। যেমন হাদীছে এসেছে,

’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯২৭, সুনান আততিরমিযী ১৮৯৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৫১৫, মুসনাদুল বাযযার ২৩৯৪, আল মুসতাদরাক ৭২৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতার আনুগত্যে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে এবং পিতার অবাধ্যতায় আল্লাহর অবাধ্যতা রয়েছে’। (তাবারাণী. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/২২৫৫; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩৩৯১; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০২)।

এই হাদীছের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী বলেন, মাতাও এর মধ্যে শামিল। বরং মায়ের বিষয়টি আরো গুরুত্ববহ। যেমন অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘পিতামাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতামাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টি রয়েছে’। (শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫০৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫০৩)।

আল্লামা মানাবী বলেন, কেননা আল্লাহ সন্তানকে পিতার আনুগত্য ও তাকে সম্মান করতে আদেশ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন করল, সে বস্ত্ততঃ আল্লাহর সাথে সুন্দর আচরণ করল এবং তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দান করল। এতে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার আদেশকে অমান্য করবে তিনি তার প্রতি রাগান্বিত হবেন’ । (ফায়যুল বারী হা/৪৪৫৬-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।

জান্নাত লাভের উপায়:

পিতামাতার আদেশ-নিষেধ পালন করলে এবং তাদের আদেশকে যথাযথভাবে হিফাযত করলে জান্নাত লাভ করা যায়। কারণ তারা সন্তানের জন্য জান্নাতে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। যেমন হাদীছে এসেছে-

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল : আমার স্ত্রী আছে। আমার মা চান যে, আমি আমার স্ত্রীকে ত্বলাক (তালাক) দেই। তখন আবুদ্ দারদা(রাঃ) বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পিতা হলেন জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যবর্তী দরজা। যদি তুমি ভালো মনে করো, তবে এ দরজাকে রক্ষণাবেক্ষণ করো; আর যদি ইচ্ছে করো, তবে বিনষ্ট করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯২৮, সুনান আততিরমিযী ১৯০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৬৬৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯১০, সহীহুল জামি‘ ৭১৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৪৮৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৪০০, আহমাদ ২৭৫১১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪২৫, শু‘আবুল ঈমান ৭৮৪৭, আল মুসতাদরাক ৭২৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অত্র হাদীছে পিতা দ্বারা জিনস তথা মাতা-পিতা উভয়কে বুঝানো হয়েছে’। (মিরকাত ৭/৩০৮৯, ৪৯২৮)।

বয়স ও রিযিক বৃদ্ধি:

পিতামাতার সাথে সদাচরণ করলে আল্লাহ বেশী বেশী সৎ আমল করার সুয়োগ দেন এবং আয়-রোজগারে বরকত দান করেন। যেমন হাদীছে এসেছে-

আনাস ইবনু মারেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার আয়ু বৃদ্ধি কামনা করে ও নিজের জীবিকায় প্রশস্ততা চায় সে যেন তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে ও আত্মীয়দের সাথে উত্তম আচরণ করে’। (আহমাদ হা/১৩৪২৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৪৮৮)।

সালমান আল ফারিসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আ ছাড়া অন্য কিছুই তাকদীদের লিখনকে পরিবর্তন করতে পারে না এবং নেক ’আমল ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৩, সুনান আততিরমিযী ২১৩৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১২৮, সহীহাহ্ ১৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অর্থাৎ যে সব বিষয় আল্লাহ দো‘আ ব্যতীত পরিবর্তন করেন না, সেগুলি দো‘আর ফলে পরিবর্তিত হয়। আর ‘সৎকর্মে বয়স বৃদ্ধি পায়’ অর্থ ঐ ব্যক্তির আয়ুতে বরকত বৃদ্ধি পায়। যাতে নির্ধারিত আয়ু সীমার মধ্যে সে বেশী বেশী সৎকাজ করার তাওফীক লাভ করে এবং তা তার আখেরাতে সুফল বয়ে আনে। (মিরক্বাত, মির‘আত)।

কেননা মানুষের রূযী ও আয়ু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। যাতে কোন কমবেশী হয় না’। (সুরা ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩; সুরা আ‘রাফ ৭/৩৪; সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৯৪, ৩২০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬১৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৪৭০৮, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬, সুনান আততিরমিযী ২১৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৪, আহমাদ ৩৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পিতামাতার খিদমত করা আল্লাহর পথে জিহাদরত থাকার সমতুল্য:

মানুষ জীবনে সফল হওয়ার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে থাকে। কেউ দুনিয়াতে সফল হয়। আবার কেউ ব্যর্থ হয়। কিন্তু পিতামাতার খিদমতে সময় ব্যয় করলে দুনিয়া এবং পরকালে নিশ্চিত সফলতা। তা ছাড়া এটি আল্লাহর পথে জিহাদের সমতুল্য। হাদীছে এসেছে,

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বসা ছিলাম। হঠাৎ করে একজন যুবক ছানিয়া নিম্ন ভূমি থেকে আগমন করল। তাকে গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করে বললাম, যদি এই যুবকটি তার যৌবন, উদ্যম ও শক্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করত! বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের বক্তব্য শুনে বললেন, কেবল নিহত হলেই কি আল্লাহর পথ? যে ব্যক্তি মাতা-পিতার খিদমতে চেষ্টা করবে সে আল্লাহর পথে। যে পরিবার-পরিজনের জন্য চেষ্টায়রত সে আল্লাহর পথে। যে ব্যক্তি নিজেকে গুনাহ থেকে রক্ষার চেষ্টায়রত সে আল্লাহর পথে। আর যে ব্যক্তি সম্পদের প্রাচুর্যতার চেষ্টায়রত সে শয়তানের পথে’। (মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪২১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৮৯২; ছহীহাহ হা/৩২৪৮)।

পিতামাতার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলায় জান্নাত লাভ:

পিতামাতার সাথে এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে তারা কোনভাবেই কষ্ট  না পান। আল্লাহর সৎ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হল তারা বিনয়ের সাথে চলে এবং নম্র্ ও ভদ্র ভাষায় কথা বলে। বিশেষতঃ পিতামাতার সাথে বিনয়ের সাথে কথা বললে জান্নাত লাভ করা যায়। হাদীছে এসছে-

তায়সালা ইবনু মাইয়াস (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত ছিলাম। আমি কিছু পাপকাজ করে বসি যা আমার মতে কবীরা গুনাহর শামিল। আমি তা ইবনু ওমর (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তা কি? আমি বললাম, এই এই ব্যাপার। তিনি বলেন, এগুলো কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত নয়। কবীরা গুনাহ নয়টি। (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) নরহত্যা, (৩) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন, (৪) সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে যেনার মিথ্যা অপবাদ রটানো, (৫) সূদ খাওয়া, (৬) ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, (৭) মসজিদে ধর্মদ্রোহী কাজ করা, (৮) ধর্ম নিয়ে উপহাস করা এবং (৯) সন্তানের অসদাচরণ যা পিতা-মাতার কান্নার কারণ হয়। ইবনে ওমর (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি কি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি তাই চাই। তিনি বলেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? আমি বললাম, আমার মা জীবিত আছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! তুমি তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বললে এবং তার ভরণপোষণ করলে তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকো’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/০৮, সনদ ছহীহ)।

পিতামাতার সেবায় দুনিয়ায় বিপদমুক্তি ও পরকালে জান্নাত লাভ:

পিতামাতার সেবা করলে বিপদের সময় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। দো‘আ করলে কবুল করেন এবং বিপদে রক্ষা করেন। যেমন বনী ইস্রাঈলের জনৈক ব্যক্তি পিতামাতার সেবা করার কারণে বিপদে সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে-

’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি পথ চলছিলেন। হঠাৎ তাঁদেরকে বৃষ্টিতে পেলে তাঁরা এক পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিলেন। এ সময় হঠাৎ পর্বত থেকে একটি প্রকাণ্ড পাথর এসে গুহার মুখে পতিত হলো এবং তাঁদের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল। তাঁদের মধ্য থেকে একজন অপরজনকে বললেন, তোমরা তোমাদের কোন নেক কাজ দেখো, যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশেই করেছ। আর সে কাজকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তা’আলার কাছে এ বিপদ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করো। এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা’আলা হয়তো এ পাথর দূর করে দেবেন।

তখন তাঁদের একজন বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার অতি বৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিলেন এবং কয়েকটি ছোট বাচ্চা ছিল। আমি ছাগল চরাতাম। যখন সন্ধ্যায় তাদের নিকট ফিরে আসতাম, তখন দুধ দোহন করতাম। আমার সন্তানদের পান করানোর আগেই আমার পিতা-মাতাকে দুধ পান করাতাম। ঘটনাক্রমে একদিন চারণ-ক্ষেত্র আমাকে দূরে নিয়ে গেল। অর্থাৎ- ছাগল চরাতে চরাতে এতটা দূরে চলে গেলাম যে, বাড়িতে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দেখলাম, আমার মা-বাবা উভয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি প্রতিদিনের মতো আজও দুধ দোহন করলাম এবং দুধের পাত্র নিয়ে মা-বাবার কাছে এসে তাঁদের শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগানো ভালো মনে করলাম না এবং অপছন্দ করলাম বাচ্চাগুলোকে দুধ পান করাতে তাঁদের পূর্বে, অথচ বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধায় কাঁদছিল। সকাল হওয়া পর্যন্ত আমার ও তাদের এ অবস্থা ছিল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জেনে থাকো যে, আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তবে আমাদের জন্য এতটুকু পথ খুলে দাও, যেন আকাশ দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথরকে এতটুকু সরিয়ে দিলেন যে, আকাশ দেখা যেতে লাগল।

দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। আমি তাকে অত্যধিক ভালোবাসতাম, যতটা কোন পুরুষ কোন মহিলাকে ভালোবাসতে পারে। আমি তাকে উপভোগ করতে চাইলাম। সে এটা অস্বীকার করল, যতক্ষণ না আমি তাকে একশ’ দীনার দেই। তখন আমি জোর প্রচেষ্টা চালালাম এবং একশ’ দীনার যোগাড় করে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। যখন তার দু’পায়ের মধ্যখানে হাঁটু গেড়ে বসলাম, সে বলল : হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় করো, মোহর অর্থাৎ- কুমারিত্ব নষ্ট করো না। তৎক্ষণাৎ আমি দাঁড়ালাম। হে আল্লাহ! যদি তুমি জেনে থাকো যে, আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করেছি, তবে আমাদের জন্য পথ খুলে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথর আরো কিঞ্চিৎ সরিয়ে দিলেন।

তৃতীয় ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি এক ব্যক্তিকে এক ’’ফারক’’ পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে মজুর নিয়োগ করলাম। যখন সে ব্যক্তি নিজ কাজ সমাধা করে বলল : আমার পাওনা আমাকে দিয়ে দাও। আমি তাকে প্রাপ্য দিলাম। সে তা ফেলে চলে গেল, তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। আমি তার পাওনা দ্বারা চাষাবাদ আরম্ভ করলাম। সেটার আয় দ্বারা অনেকগুলো গরু ও রাখাল যোগাড় করলাম। তখন একদিন লোকটি আমার কাছে এসে বলল: আল্লাহকে ভয় করো, আমার প্রতি অবিচার করো না। আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললামঃ এ গরুগুলো এবং তার রাখালসমূহ নিয়ে যাও। সে বলল : আল্লাহকে ভয় করো, আমার সাথে ঠাট্টা করো না। তখন আমি বললামঃ তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। ঐ গরু ও রাখালগুলো নিয়ে যাও। সুতরাং সে ওগুলো নিয়ে চলে গেল। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এ কাজ আমি শুধু তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশেই করেছি, তবে এখনো যতটুকু বাকি, সে রাস্তা খুলে দাও। তখন আল্লাহ তা’আলা পাথর সরিয়ে রাস্তা খুলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৯৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬৫, ২২১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৩, সহীহ আল জামি‘ ২৮৭০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৪৯৭, শু‘আবুল ঈমান ৭৮৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী হওয়া

জনৈক মদীনাবাসী হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কোন এক সময় উম্মুল মু’মিনীন আইশা (রাঃ)-কে মু’আবিয়া (রাঃ) লিখে পাঠানঃ আমাকে লিখিতভাবে কিছু উপদেশ দিন, তবে তা যেন দীর্ঘ না হয়। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, আইশা (রাঃ) মু’আবিয়া (রাঃ)-কে লিখলেনঃ আপনাকে সালাম। তারপর এই যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি আকাঙ্খা করে তা মানুষের অসন্তুষ্টি হলেও, মানুষের দুঃখ-কষ্ট হতে বাচানোর জন্য আল্লাহ্ তা’আলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি আশা করে আল্লাহ্ তা’আলাকে অসন্তুষ্ট করে হলেও, আল্লাহ তা’আলা তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন। আপনাকে আবারো সালাম। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪১৪, সহীহাহ ২৩১১, তাখরীজ তাহাভীয়া ২৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

বিপদাপদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে’। (সুর বাক্বারাহ ২/১৫৫)।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৬, ১৫৬৫, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪০৩১, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আল্লাহ যার কল্যাণ চান, নেককার ব্যক্তিদের বিপদে ফেলেন

আল্লাহ তা‘আলা কোন নেককার ব্যক্তির কল্যাণ চাইলে তাকে বিপদে ফেলেন। হাদীছে এসেছে,

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর উপর আমার হাত রাখলে তার গায়ের চাদরের উপর থেকেই তাঁর দেহের প্রচন্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি বলেনঃ আমাদের (নবী-রাসূলগণের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কার উপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেনঃ নবীগণের উপর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারপর কার উপর? তিনি বলেনঃ তারপর নেককার বান্দাদের উপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র পীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বলটি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৪, সহীহাহ ১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অপর এক হাদীছে এসেছে,

মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় ততটা কঠিন। আর যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০, দারেমী ২৭৮৩, সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কেননা তার বালা-মুছীবত তার গোনাহের কাফফারা হয়ে থাকে, যদি সে ঐ মুছীবতে সন্তুষ্ট থাকে। যেমন-

আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৩, আহমাদ ৮০২৭, ইবনু হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ যার কল্যাণ চান, বান্দার দেহ, সম্পদ ও সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেন

আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তার নিজের এবং সম্পদ ও সন্তানের উপরে বিপদ দেন। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০৯০, সহীহাহ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিপদাপদ জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যমঃ বিপদাপদে পড়লে গোনাহ মাফ হয়। তাই এটা জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি ধারণা করেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনও তাদের মত অবস্থা আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। নানাবিধ বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেছিল ও তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’। (সুরা বাক্বারাহ ২/২১৪)।

সকাল-সন্ধ্যায় বিশেষ দোয়া পাঠ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, ‘রাদীতু বিল্লাহি রাব্বাওঁ ওয়াবিল ইসলামি দীনাওঁ ওয়া বি-মুহাম্মাদিন নাবিয়্যাওঁ ওয়ারাসূলা’

অর্থঃ “আমি আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রসূল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি”, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৯, নাসায়ী ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ ৫, হাকিম ১/৫১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন বান্দা সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়া পাঠ করবে’ আল্লাহ তাআলা তাকে বিচার দিবসে অবশ্যই সন্তুষ্ট করে দেবেন। (আল আহাদ ওয়াল মাসানিলি আহমদ: ৪৭১)।

আল্লাহ তায়ালা যেসব বিষয় পছন্দ করেন সেসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করা

 যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা তিনটি কাজ পছন্দ করেন এবং তিনটি কাজ অপছন্দ করেন। তোমাদের জন্য তিনি যা পছন্দ করেন, তা হলঃ ১. তোমরা তারই ইবাদাত করবে, ২. তার সঙ্গে কিছুই শারীক করবে না এবং ৩. তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে ধারণ করবে ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। আর যে সকল বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেনঃ ১. নিরর্থক কথাবার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৩২, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ)....মুগীরাহ ইবনু শুবাহ হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়েদের অবাধ্য হওয়া, জীবন্ত কন্যা সন্তানকে মাটিতে পুঁতে ফেলা এবং অন্যের হক আদায় না করা এবং না-হক কোন বস্তু প্রার্থনা করা। আর তিনটি বিষয় তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেন। তা হলঃ ১. নিরর্থক কথা-বার্তা বলা, ২. অধিক প্রশ্ন করা এবং ৩. সম্পদ বিনষ্ট করা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৭৫, ৪৩৭৭, ৪৩৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে এমন কোনো কথা নিজের অজান্তে বলে ফেলা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা কোন কোন সময় এমন কথা মুখ দিয়ে বলে, যাতে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং এজন্যই তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন, অথচ বান্দা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল থাকে না। পক্ষান্তরে বান্দা কোন কোন সময় এমন কথা বলে, যাতে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন। এ কথা তাকে জাহান্নামের দিকে নিক্ষেপ করে, অথচ বান্দা এ বিষয়ে ওয়াকিফহাল থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭৭, ৬৪৭৮; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৮৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৭৬, আহমাদ ৮৪১১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭১০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৭০৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের অসন্তুষ্টির বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা

মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তিনি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট পত্র লেখলেন। ঐ পত্রে লেখা ছিল, আপনি আমাকে উপদেশ দান করে নাতিদীর্ঘ পত্র লেখবেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) সেটার জবাবে লেখলেন, সালা-মুন ’আলায়কা। পর সমাচার, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও, তার সাহায্যের জন্য আল্লাহ তা’আলাই যথেষ্ট। তিনি তাকে মানুষের অত্যাচার থেকে বাঁচান। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি চায় আল্লাহর অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও, আল্লাহ তা’আলা তাকে মানুষের হাতে ছেড়ে দেন, আসসালা-মু ’আলায়কা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৩০, সুনান আততিরমিযী ২৪১৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৩১১, সহীহ আত্ তারগীব ২২৫০, সহীহুল জামি‘ ৬০৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৮/১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা জান্নাবাসীর উপর সন্তুষ্ট হবেন

আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা জান্নাতবাসীদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! উত্তরে তারা বলবেন, ’আমরা উপস্থিত, সৌভাগ্য তোমার কাছ থেকে অর্জিত এবং যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তরে বলবে, কেন সন্তুষ্ট হব না, হে আমাদের প্রভু! অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছেন যা আপনার সৃষ্ট জগতের কাউকেও দান করেননি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি কি তা অপেক্ষাও উত্তম জিনিস তোমাদেরকে দান করব না? তারা বলবে, হে প্রভু! তা অপেক্ষা উত্তম কিছু আর কি হতে পারে?

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি দান করছি, অতএব এরপর তোমাদের ওপর আর কখনো আমি অসন্তুষ্ট হব না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৪৯, ৭৫১৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৭০৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮২৯, সুনান আততিরমিযী ২৫৫৫, সহীহুল জামি ১৯১১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৭৬২, মুসনাদে আহমাদ ১১৮৫৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৪০, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ৭৭৪৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উল্লেখিত আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...