বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন
বিষয়ের প্রশ্নোত্তর
(পর্ব-০৩)
সম্পাদকীয়ঃ
আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান
করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল
১৬/১২৫)।
আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ
তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ
১০২।
আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ
যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত
রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত
দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত
হা/৫১৩৭)।
প্রশ্নোত্তর পর্ব -০৩
(৩ নং পর্বে মোট ২৪০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে- জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত)
জানুয়ারি/ ২০১৮
প্রশ্ন (১/১২১) : আহলে
কুরআন কারা? এদের উৎপত্তি কখন থেকে? এরা কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত কি?
উত্তর : যারা কুরআন মুখস্থ করে ও অর্থ অনুধাবন করে এবং তদনুযায়ী আমল করে
তারাই মূলতঃ আহলে কুরআন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কতক লোক আহলে কুরআন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস
করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বলেন, কুরআন তেলাওয়াতকারীগণ আহলে কুরআন
এবং তাঁর বিশেষ বান্দা’ (ইবনু মাজাহ হা/২১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২১৬৫; ছহীহ
আত-তারগীব হা/১৪৩২)। অত্র হাদীছের ব্যাখ্যায় মানাভী বলেন, ‘অর্থাৎ কুরআনের হাফেযগণ
এবং তদনুযায়ী আমলকারী আল্লাহর ওলীগণ’ (ফায়যুল কাদীর হা/২৭৬৮, ৩/৬৭)।
কিন্তু বর্তমান যুগে
হাদীছ অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে। অথচ
কুরআনের অসংখ্য আয়াতে হাদীছ তথা রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ
রয়েছে। যা তারা মানেনা। বস্ত্ততঃ রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর একটি বাস্তব চিত্র
হ’ল ভ্রান্ত ফেরকা আহলে কুরআন।
রাসূল (ছাঃ) উক্ত দল
সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘জেনে রাখো আমাকে কিতাব (কুরআন) এবং তার সাথে
অনুরূপ একটি বস্ত্ত দেয়া হয়েছে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন কোন পেটপুরে খাদ্য
গ্রহণকারী (প্রাচুর্যবান) ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ
কর, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল আর তাতে যা হারাম পাবে তা হারাম মনে কর’ (আবুদাঊদ
হা/৪৬০৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬২)। অন্য হাদীছে এসেছে, ‘আমি যেন তোমাদের মধ্যে
কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং তার
নিকট যখন আমার আদিষ্ট কোন বিষয় অথবা আমার নিষেধ সম্বলিত কোন কিছু (হাদীছ) উত্থাপিত
হবে তখন সে বলবে, আমি তা জানি না, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে আমরা যা পেয়েছি, তারই
অনুসরণ করব’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬৩)।
রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত
ভবিষ্যদ্বাণী হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় এমন কিছু
লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীছ
অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম
৭/২৮৭-২৯২)। সেখানে তিনি তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত
বছর হাদীছ অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ মিলেনি। বিগত শতাব্দী তথা ত্রয়োদশ
হিজরীতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে মিসর, ইরাক এবং ভারতে (বিস্তারিত দ্রঃ
‘হাদীছের প্রামাণিকতা’ বই)। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ভ্রষ্ট আক্বীদার কিছু ব্যক্তির
আবির্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ইমাম সুয়ূত্বী
(রহঃ) বলেন, ‘তারা কাফের এবং ইসলাম হ’তে খারিজ। তাদের হাশর হবে ইহূদী ও নাছারা বা
অন্যান্য ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের সাথে’ (মিফতাহুল জান্নাহ পৃঃ ৫)।
প্রশ্ন (২/১২২) : রাক্বীব ও আতীদ কি দু’জন
ফেরেশতার নাম? আধুনিক যুগের একজন আরব লেখক এর দ্বারা মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশ
বুঝিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের কোন শারঈ ভিত্তি রয়েছে?
উত্তর : কুরআনে বর্ণিত ‘রাক্বীবুন ‘আতীদ’ ‘সদা প্রস্ত্তত
প্রহরী’ (ক্বাফ ১৭-১৮) কোন ফেরেশতার নাম নয়, বরং এর দ্বারা দু’জন বা
একদল সম্মানিত লেখক ফেরেশতাকে বুঝানো হয়েছে, যাঁরা প্রত্যেক মানুষের সাথে থাকেন।
যাঁরা মানুষের ভাল-মন্দ আমল লিখেন। তাদের হেফাযতের দায়িত্বে থাকেন। আল্লাহ বলেন,
‘যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল লিপিবদ্ধ করে’; ‘সে যে কথাই উচ্চারণ
করে, তাই লিপিবদ্ধ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী (ফেরেশতা)
রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৭-১৮)। তিনি আরো বলেন, ‘অথচ তোমাদের উপরে অবশ্যই
তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে’; ‘সম্মানিত লেখকবৃন্দ’; ‘তারা জানেন তোমরা যা
কর’ (ইনফিতার ৮২/১০-১২)।
আবু মিজলায বলেন, মুরাদ
এলাকা থেকে জনৈক ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর কাছে এল। তিনি বললেন, হে আলী! আপনি আপনার
জন্য পাহারা নিযুক্ত করুন। কেননা মুরাদ এলাকার কিছু লোক আপনাকে হত্যা করতে চায়।
জবাবে আলী (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে দু’জন করে ফেরেশতা থাকে।
যারা তাকে হেফাযত করে সেসব বিষয় থেকে যা তাক্বদীরে নেই। কিন্তু যখন তাক্বদীর
উপস্থিত হয়, তখন তারা উভয়ে তার থেকে সরে যায়’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রা‘দ
১১ আয়াত ৪/৪৩৯ পৃ.)। কা‘ব আল-আহবার বলেন, যদি আল্লাহ তোমাদের জন্য ফেরেশতা নিয়োগ
না করতেন, যারা তোমাদের খাদ্য, পানীয় ও লজ্জাস্থান সবকিছু হেফাযত করে, তাহ’লে
শয়তান জিনেরা তোমাদের উঠিয়ে নিয়ে যেত’ (ঐ)। সুতরাং প্রতিটি মানুষের কাঁধে লেখক
ফেরেশতাগণ থাকেন- এটা কুরআন ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামা‘আতের সর্বসম্মত আক্বীদা। সুতরাং যে যুক্তিবাদী লেখক ‘রাকীবুন আতীদ’ দ্বারা
মানব মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ বুঝাতে চেয়েছেন, তার কথার কোন শারঈ ভিত্তি নেই।
এগুলি স্রেফ কষ্ট কল্পনা মাত্র। অতএব এসব বক্তব্য থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৩/১২৩) : ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব
ও এর সুফল সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ থেকে জানতে চাই ?
উত্তর : ক্রোধ মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য ষড়রিপুর অন্যতম। যা নিয়ন্ত্রণে রাখা
অতীব যরূরী। মুত্তাক্বীদের পরিচয় বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, ‘যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা
সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা
করে’ (আলে ইমরান ৩/১৩৪)। অন্যত্র তিনি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় বলেন, ‘যখন
তারা ক্রুদ্ধ হয় তখন ক্ষমা করে’ (শূরা ৪২/৩৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি
তার রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংযত থাকে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে
সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে ডেকে নিবেন এবং তাকে হূরদের মধ্য হ’তে তার পসন্দমত যে কোন
একজনকে বেছে নিতে বলবেন’ (আবুদাঊদ হা/৪৭৭৭; ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৬; মিশকাত
হা/৫০৮৮)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট একজন লোক এসে কিছু
শিক্ষাদানের আহবান জানালে তিনি বললেন, তুমি ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না।
লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না,
উত্তেজিত হয়ো না’ (বুখারী হা/৬১১৬; মিশকাত হা/৫১০৪)। আরেক বর্ণনায় এসেছে,
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এমন একটি আমলের কথা
বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ প্রকাশ করবে না,
তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে’ (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/২৩৫৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৭৪৯)।
তিনি আরেক হাদীছে বলেন, ‘কোন বান্দা আল্লাহর সন্তোষ লাভের আকাঙ্ক্ষায় ক্রোধের ঢোক
গলধঃকরণ (সংবরণ) করলে, আল্লাহর নিকট ছওয়াবের দিক থেকে তার চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ
কোন ঢোক আর নেই’ (ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৯; আহমাদ হা/৬১১৪; মিশকাত হা/৫১১৬)। ইবনু
ওমর (রাঃ) রাসূলকে বলেন, কিসে আমাকে আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা করবে? তিনি বললেন,
তুমি ক্রোধ প্রকাশ করবে না (ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯৬; ছহীহ আত-তারগীব
হা/২৭৪৭)। এছাড়াও ক্রোধকে সকল অনিষ্টের মূল বলা হয়েছে (আহমাদ হা/২৩২১৯; ছহীহ
আত-তারগীব হা/২৭৪৬)। অত্র হাদীছগুলোর উপর আমল করলে সমাজে পরস্পরে ক্রোধ, হিংসা,
মতভেদ ও ভাঙ্গন কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন (৪/১২৪) : শহীদগণ কি কবরে তিনটি
প্রশ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন?
উত্তর : শহীদগণ কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না এবং কবরের যাবতীয় ফিৎনা
থেকে রক্ষা পাবেন। জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর
রাসূল! শহীদ ব্যতীত সকল মুমিনই কবরের ফিৎনায় পতিত হবে। এর কারণ কি? তিনি বললেন,
তার মাথার উপর তরবারীর ঝলকই তাকে কবরের ফিৎনা থেকে নিরাপদ রাখবে (নাসাঈ
হা/২০৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৯৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৮০)।
তিনি আরও বলেন, শহীদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ৬টি পুরস্কার বা সুযোগ রয়েছে। (ক) শহীদের রক্তের প্রথম
ফোঁটা যমীনে পড়তেই তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং জান বের হওয়ার প্রাক্কালেই তাকে
জান্নাতের ঠিকানা দেখানো হয় (খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয় (গ) ক্বিয়ামত
দিবসের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদ রাখা হয় (ঘ) সেদিন তার মাথায় সম্মানের মুকুট
পরানো হবে। যার একটি মুক্তা দুনিয়া ও তার মধ্যেকার সবকিছু হতে উত্তম (ঙ) তাকে ৭২
জন সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট হূরের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে এবং (চ) ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের
জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে’ (তিরমিযী হা/১৬৬৩; মিশকাত হা/৩৮৩৪; ছহীহাহ
হা/৩২১৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারারত অবস্থায়
মৃত্যুবরণকারী সৈনিকগণ কবরের ফিৎনা হ’তে নিরাপদ থাকবেন (মুসলিম হা/১৯১৩;
মিশকাত হা/৩৭৯৩)।
প্রশ্ন (৫/১২৫) : প্রবাসে আমরা অনেক
বাংলাদেশী ভাই একত্রে থাকি। এখানে বিদেশীদের সালাফী সংগঠন আছে। এক্ষণে আমরা বাংলা
ভাষাভাষীরা পৃথক জামা‘আত গঠন করতে পারি কি?
উত্তর : বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে সে দেশেরই কোন হকপন্থী সালাফী সংগঠনের
সাথে জড়িত হওয়া যায়। সেটি সম্ভব না হ’লে স্বদেশে অবস্থিত অনুরূপ কোন সংগঠনের শাখা
গঠন করে কাজ করা যেতে পারে। সেটিও সম্ভব না হ’লে বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে পৃথক
সালাফী জামা‘আত গঠন করবে। মোটকথা সর্বাবস্থায় জামা‘আতবদ্ধ জীবন পরিচালনাই ইসলামী
সমাজব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। তা যত বৃহত্তর হয় ততই মঙ্গল।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, ‘তোমাদের উপর জামা‘আতবদ্ধ জীবন অপরিহার্য করা হ’ল এবং বিচ্ছিন্ন জীবন
নিষিদ্ধ করা হ’ল। কেননা শয়তান একক ব্যক্তির সাথে থাকে এবং সে দু’জন থেকে দূরে
থাকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন
জামা‘আতবদ্ধ থাকাকে অপরিহার্য করে নেয়’ (তিরমিযী হা/২১৬৫)। তিনি বলেন,
‘জামা‘আতের উপর আল্লাহর হাত থাকে’ (তিরমিযী হা/২১৬৬; মিশকাত হা/১৭৩)।
প্রশ্ন (৬/১২৬) : চুরি, মদ্যপান, জুয়া খেলা ও
মিথ্যা কথা বলায় অভ্যস্ত জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে তওবা করতে চাইলে
তিনি তাকে কেবল মিথ্যা বলা থেকে নিষেধ করেন। লোকটি তা মেনে নিয়ে বাকী তিনটি কাজ
করতে চায়। কিন্তু সত্য কথা বলতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে সে বাকী কাজগুলি থেকে তওবা করতে
বাধ্য হয়। এ কাহিনীটির কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : এটি হাদীছ হিসাবে বহুল প্রচলিত, কিন্তু হাদীছ নয়। বরং একটি
উপদেশমূলক কাহিনী। উক্ত কাহিনী বিভিন্ন গল্প ও সাহিত্যের বইপত্রে পাওয়া
যায় (জাহিয, আল-মাহাসিন ওয়াল আযদাদ ১/৬০; যামাখশারী, রবী‘ঊল আবরার ৪/৩৪০;
আত-তাযকিরাতুল হামদুনিয়া ৩/৪৯; মুবাররাদ, আল-কামিল ফিল আদাব ২/১৫৬)। অতএব একে
হাদীছ হিসাবে প্রচার করা যাবে না।
প্রশ্ন (৭/১২৭) : হিন্দু পরিবারে
জন্মগ্রহণকারী জনৈক হিন্দু ভাই ইসলাম গ্রহণ করতে চান। কিন্তু তা করতে হ’লে একদিকে
তার পিতা-মাতার নির্দেশ অমান্য করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারকে চিরদিনের মত পরিত্যাগ
করতে হবে। এক্ষণে তার জন্য করণীয় কি?
উত্তর : ইসলাম গ্রহণই সর্বপ্রথম করণীয়। পিতা-মাতা যদি শিরকের আদেশ দেন তবে
তা মানার সুযোগ নেই, যদিও তাদের সাথে স্বাভাবিক সদাচরণ করতে হবে। আললাহ বলেন, ‘আর
যদি পিতা-মাতা তোমাকে চাপ দেয় আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোন
জ্ঞান নেই, তাহ’লে তুমি তাদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদ্ভাব
রেখে বসবাস করবে’ (লোকমান ৩১/১৫)। আবুবকর (রাঃ)-এর মেয়ে আসমা (রাঃ) বলেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার মুশরিক মা আমার নিকট আসেন, তিনি ইসলামে অনাগ্রহী। আমি
কি তার সাথে সদাচরণ করব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ কর’ (বুখারী, মুসলিম,
মিশকাত হা/৪৯১৩)। আর ইসলাম গ্রহণের কারণে যদি পরিবারকে চিরদিনের জন্য ত্যাগও করতে
হয়, তবে প্রয়োজনে তা-ই করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির
প্রতি কোন আনুগত্য নেই’ (বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০; মিশকাত হা/৩৬৯৬)।
আর ইসলাম কবুল করা ব্যতীত পরকালে মুক্তির কোন উপায় নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যার
হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, ইহূদী হৌক বা নাছারা হৌক এই উম্মতের যে
কেউ আমার আগমনের খবর শুনেছে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ আমি যা নিয়ে প্রেরিত
হয়েছি, তার উপরে ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে’ (মুসলিম হা/১৫৩;
মিশকাত হা/১০)।
প্রশ্ন (৮/১২৮) : রাতে একাকী ঘুমানোর সময়
হাফপ্যাণ্ট তথা হাঁটুর উপর পর্যন্ত কাপড় পরিধান করায় কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : একাকী বা নির্জনে এমন পোষাক তাক্বওয়া এবং শালীনতার পরিপন্থী বিধায়
পরিধান করা উচিৎ নয়। বাহয ইবনু হাকীম থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত তিনি
বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের ঢেকে রাখার
অঙ্গসমূহ কার সামনে আবৃত রাখবো এবং কার সামনে অনাবৃত করব? তিনি বলেন, তোমার স্ত্রী
ও দাসী ব্যতীত সকলের সামনে তা আবৃত রাখ। ..বর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে
আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যখন নির্জনে থাকে? তিনি বলেন, লজ্জার ব্যাপারে আল্লাহ
মানুষের চেয়ে অধিক হকদার’ (আবুদাউদ হা/৪০১৭; ইবনু মাজাহ হা/১৯২০; তিরমিযী
হা/২৭৬৯)।
প্রশ্ন (৯/১২৯) : আমি একটি হজ্জ এজেন্সীতে
চাকুরী করি। এরা ব্যাংকে ঋণ নিয়ে হজ্জ ব্যবসা করে। অন্যদিকে হাজীদের সাথে চুক্তি
ঠিক রাখে না। এরূপ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : শরী‘আতসম্মত কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত যেকোন কোম্পানীতে
চাকুরী করা যাবে। যদিও তার মজুরী সূদযুক্ত অর্থ দিয়ে প্রদান করা হয়। আর এজন্য দায়ী
হবে উক্ত সূদ গ্রহীতা কোম্পানীর মালিক (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ
১৫/৫৯)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়েছে, সেজন্য জেনেশুেনে
তাদের অন্যায় কাজে সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাপ ও অন্যায়ের কাজে
পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। অতএব যদি তাদেরকে সংশোধন করা সম্ভব
না হয়, তবে চাকুরী ছেড়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন (১০/১৩০) : জনৈক ব্যক্তি বলেন ছহীহ
বুখারীতে হাদীছ আছে যে, মাথায় উকুন হ’লে ৩ দিন ছিয়াম বা ৬ জন মিসকীনকে অর্ধ ছা‘
করে খাওয়ালে মাথার উকুন থাকবে না। একথা কি সত্য?
উত্তর : এরূপ কোন নির্দেশনা ছহীহ বুখারী বা অন্য কোন হাদীছ গ্রন্থে নেই।
তথ্যদাতা সম্ভবতঃ হজ্জের বিধান সংশ্লিষ্ট ছহীহ বুখারীর একটি হাদীছ দেখে ভ্রমে পতিত
হয়েছেন। হাদীছটি হ’ল- আব্দুল্লাহ ইবনু মা‘ক্বিল (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি
কা‘ব ইবনু উজরা (রাঃ)-এর পাশে বসে তাঁকে ফিদইয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন,
এ আয়াত (বাক্বারাহ ২/১৯৬) বিশেষভাবে আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তবে এ
হুকুম সাধারণভাবে তোমাদের সকলের জন্যই। (হুদায়বিয়ার দিন মুহরিম অবস্থায়) রাসূল
(ছাঃ) আমার নিকটে এলেন এবং আমাকে বললেন, তোমার মাথার উকুন কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে?
আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তুমি মাথা মুন্ডন কর এবং (ফিদইয়া স্বরূপ) ৩ দিন
ছিয়াম রাখ অথবা ৬ জন মিসকীনকে অর্ধ ছা‘ করে খাদ্য দান কর’ (বুখারী হা/৪১৯০
‘মাগাযী’ অধ্যায় ‘ হোদায়বিয়ার সন্ধি’ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/১২০১)।
প্রশ্ন (১১/১৩১) : জনৈক ব্যক্তি গরুর সাথে
কুকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এক্ষণে তার শাস্তিবিধান কি হবে?
উত্তর : এরূপ নিকৃষ্ট কর্মে লিপ্ত ব্যক্তির উপর বিচারক পরিস্থিতি অনুপাতে
শাস্তি প্রদান করবেন। তবে তার উপর ‘হদ’ নেই। আর পশুটিকে হত্যা করতে
হবে (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ১৪/২৪৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৯/৬২)। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পশুর সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয়, সে অভিশপ্ত (আহমাদ
হা/১৮৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯১)। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যে মানুষকে পশুর সাথে কুকর্মে লিপ্ত দেখ, তাকে এবং পশুটিকে
হত্যা কর। ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলা হ’ল, পশুটির অপরাধ কি? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে
আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে কিছু শুনিনি। তবে আমার ধারণামতে যে পশুটির সাথে এরূপ করা
হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) তার গোশত খাওয়া বা এটাকে কোন কাজে ব্যবহার করাকে লোকদের জন্য
পসন্দ করেননি (আবুদাউদ হা/৪৪৬৪; তিরমিযী হা/১৪৫৫; আহমাদ হা/২৪২০; ছহীহাহ
হা/৩৪৬২)। হাদীছটিকে ইমাম আবুদাঊদ সহ অনেক বিদ্বান যঈফ বলেছেন। সেকারণ এর ভিত্তিতে
ঐ ব্যক্তির উপর ‘হদ’ আরোপ করা যায় না (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ১৪/২৪৬;
আরনাঊত্ব, আহমাদ হা/২৪২০-এর আলোচনা; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৯/৬২)। ইবনু আববাস
(রাঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেন, যে ব্যক্তি পশুর সাথে কুকর্ম করল, তার উপর কোন ‘হদ’
নেই (তিরমিযী হা/১৪৫৫; মিশকাত হা/৩৫৮৬)। ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি প্রথম
হাদীছের তুলনায় অধিকতর ছহীহ এবং এর উপরেই বিদ্বানগণের আমল রয়েছে (তিরমিযী
হা/১৪৫৫)।
প্রশ্ন (১২/১৩২) : কোন মাদরাসা বা ইসলামী
প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে চাঁদা আদায় করে দেওয়ার কাজে নিযুক্ত হওয়া
জায়েয হবে কি?
উত্তর : কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নিযুক্ত হওয়া যাবে। কারণ কমিশনটি হ’ল
পারিশ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত। তবে এক্ষেত্রে তাক্বওয়া অবলম্বন করবে এবং কোন ধরনের
ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিবে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘আমরা যাকে মজুরীর বিনিময়ে কোন
কাজে নিযুক্ত করি, তার অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করলে সেটি হবে আত্মসাৎ’ (আবুদাঊদ
হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)।
প্রশ্ন (১৩/১৩৩) : বিদেশে গিয়ে তালাক
প্রদানের নিয়তে সাময়িক বিবাহ বৈধ হবে কি? শী‘আ সম্প্রদায় এরূপ বিবাহ করে বলে জানি।
এটা সঠিক কি?
উত্তর : বিবাহ করা হয় স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়তে। তালাকের নিয়তে বিবাহ
করা হারাম। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাময়িক বিবাহ জায়েয ছিল। কিন্তু মক্কা বিজয়ের
দ্বিতীয় দিন তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত চিরতরে হারাম করা হয় (মুসলিম হা/১৪০৬ (২১)।
কিন্তু শী‘আ রাফেযীরা এখনও এই বিবাহকে জায়েয মনে করেন, অথচ তাদেরই অন্যতম ইমাম
জা‘ফর ছাদেক (৮০-১৪৮ হি.) এটিকে ‘যেনা’ বলে অভিহিত করেছেন (বায়হাক্বী
হা/১৩৯৬০, ৭/২০৭ পৃ.)।
প্রশ্ন (১৪/১৩৪) : বীর্য যদি অপবিত্র না হয়,
তাহ’লে আমরা ফরয গোসল করি কেন? কেবল ধুয়ে ফেললেই যথেষ্ট হ’ত। সঠিক উত্তর জানতে
চাই।
উত্তর : শরী‘আতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে
নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এক্ষণে ফরয গোসলের তাৎপর্য এটাই হ’তে
পারে যে, বীর্য পুরো দেহ শোষণ করে বের হয় এবং তাতে শরীর ও মন উভয়টিই দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিটি লোমকুপ দিয়ে ঘাম বের হওয়ার কারণে দেহে নিস্তেজভাব সৃষ্টি হয়। আর এগুলোর
উত্তম সমাধান হ’ল গোসল। কারণ গোসল দেহ-মন ও আত্মাকে সতেজ করে। প্রতিটি
শিরা-উপশিরাকে শক্তিশালী করে। চিকিৎসকগণ বলেন, মিলনোত্তর গোসল শরীরে শক্তি ফিরিয়ে
দেয়। যা বের হয় তার পুনরাগমন ঘটে এবং এটি দেহ ও মন দু’টির জন্যই উপকারী। অপরদিকে
গোসল পরিহার করা ক্ষতিকর। ফরয গোসল কল্যাণকর হওয়ার ব্যাপারে জ্ঞান ও ফিৎরাতের
সাক্ষ্যই যথেষ্ট’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ২/৪৫)।
উল্লেখ্য যে, বীর্য
অপবিত্র নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড়ে তা লেগে শুঁকিয়ে গেলে আয়েশা (রাঃ) নখ দিয়ে খুঁটে
ফেলতেন। অতঃপর তিনি ঐ কাপড়েই ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/২৮৮; মিশকাত
হা/৪৯৫)। এছাড়া অধিকাংশ ছাহাবী ও সালাফে ছালেহীন বীর্যকে পবিত্র বলেছেন (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/৬০৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৩৮০)।
প্রশ্ন (১৫/১৩৫) : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫০
বছর বা ১০০ বছর পূর্তি ঘটা করে পালন করা হয়। এরূপ করা কি শরী‘আতসম্মত?
উত্তর : ইসলামে কোন দিবস পালন নেই। প্রচলিত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান
বিজাতীয় অনুকরণ মাত্র। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এমন কোন দিবস পালনের
নযীর নেই। সুতরাং মুসলমানদের এসব থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য
হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৪৩৪৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
২/২৬১)।
প্রশ্ন (১৬/১৩৬) : রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী
(মুসলিম হা/১৮২১) অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর ১২ জন খলীফার সময়কাল পর্যন্ত ইসলাম
দৃঢ়ভাবে টিকে থাকবে। এক্ষণে উক্ত ১২ জন খলীফা কে কে? ৪ খলীফার ইসলামী খেলাফত টিকে
ছিল কি?
উত্তর : উক্ত হাদীছে বর্ণিত ১২ জন খলীফা সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম মতভেদ
করেছেন। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা ন্যায়পরায়ণ শাসকদের বুঝানো হয়েছে, যাদের
অনেকে পূর্বে গত হয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের পূর্বে অবশিষ্টদের দ্বারা পূর্ণতা লাভ
করবে (শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম ১২/২০২)। মুহাদ্দিছ কুরতুবী (৫৭৮-৬৫৬ হি.) বলেন,
এ বিষয়ে তিনটি মত রয়েছে। তবে আমার নিকট সর্বোত্তম হ’ল এই যে, তারা হ’লেন
ন্যায়পরায়ণ খলীফাগণ। যাদের মধ্যে চার খলীফা এবং ওমর বিন আব্দুল আযীয রয়েছেন।
তাছাড়া ইনছাফ ও সত্য প্রকাশে ব্রতী খলীফাগণ এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। যতদিন না এই
সংখ্যা পূর্ণ হয়’ (আল-মুফহিম শরহ মুসলিম ৮/৪)। ইবনু কাছীর বলেন, অত্র হাদীছে
১২জন ন্যায়পরায়ণ খলীফার সুসংবাদ রয়েছে। যারা তাদের মাঝে ইনছাফ ও সত্য প্রতিষ্ঠা
করবেন। এদের ধারাবাহিক হওয়া আবশ্যক নয়। অবশ্য চারজন ধারাবাহিক ছিলেন চার খলীফা।
নিঃসন্দেহে ওমর বিন আব্দুল আযীয ছিলেন তাদের অন্যতম। এছাড়া কয়েকজন আববাসীয় খলীফা।
বাকীদের খেলাফত না আসা পর্যন্ত ক্বিয়ামত হবে না। ভবিষ্যতের জন্য সুসংবাদপ্রাপ্ত
ইমাম মাহদীও তাদের অন্যতম। কারণ তিনিও হবেন ফাতেমা (রাঃ)-এর বংশধর। এর দ্বারা
রাফেযী শী‘আদের কথিত ১২ ইমাম অর্থ নেওয়াটা চরম অজ্ঞতা ও বোকামীর পরিচয়। যার কোনই
শারঈ ভিত্তি নেই (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা মায়েদাহ ১৪ আয়াত; ইবনু
তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৮/১৭৩-১৭৪)। আর চার খলীফার খেলাফত পূর্ণ ত্রিশ বছর
টিকে ছিল যার ভবিষ্যদ্বাণী রাসূল (ছাঃ) করেছিলেন (তিরমিযী হা/২২২৬; আহমাদ
হা/২১৯৬৯; মিশকাত হা/৫৩৯৫; ছহীহাহ হা/৪৫৯)।
উক্ত ৩০ বছর হ’ল
যথাক্রমে : (১) হযরত আবুবকর (১১-১৩ হি.) = ২বছর (২) হযরত ওমর (১৩-২৩ হি.) = ১০ বছর
(৩) হযরত ওছমান (২৩-৩৫ হি.) = ১২ বছর (৪) হযরত আলী (৪ বছর ৯ মাস ও হযরত হাসান বিন
আলী ৩ মাস- রামাযান হ’তে রবীউল আউয়াল ৪১ হি.; ৩৫-৪১ হি.)= ৬ বছর। সর্বমোট ৩০
বছর (আহলেহাদীছ আন্দোলন, ডক্টরেট থিসিস (প্রকাশকাল : রাজশাহী ১৯৯৬ খৃ.) ১২৬
পৃ. টীকা-১২৫)।
প্রশ্ন (১৭/১৩৭) : ছালাত আদায়ের পর পোষাকে
নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি বুঝতে পারলে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) ছালাতের
মধ্যে তাঁর জুতায় নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি জানতে পারলে জুতা ছুঁড়ে ফেলেন। কিন্তু
ছালাত পুনরায় আদায় করেননি (আবুদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।
প্রশ্ন (১৭/১৩৭) : ছালাত আদায়ের পর পোষাকে
নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি বুঝতে পারলে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
উত্তর : ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) ছালাতের
মধ্যে তাঁর জুতায় নাপাকী লেগে থাকার বিষয়টি জানতে পারলে জুতা ছুঁড়ে ফেলেন। কিন্তু
ছালাত পুনরায় আদায় করেননি (আবুদাউদ হা/৬৫০; মিশকাত হা/৭৬৬)।
প্রশ্ন (১৮/১৩৮) : আমার বড় ভাই পিতার সম্পদ
ক্রয়ে এবং আমাদের গৃহ নির্মাণে অনেক আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। যদিও সবকিছু পিতার
নামেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। এক্ষণে পিতার মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে কমবেশী
করা যাবে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে ভাই-বোন সর্বসম্মতিক্রমে তাকে কিছু বেশী দিলে তাতে
শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে সম্মতি না দিলে কোন কম-বেশী করার সুযোগ নেই। কেননা
প্রত্যেকের প্রাপ্য হক পবিত্র কুরআনে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (১৯/১৩৯) : জনৈক ব্যক্তি দু’জন স্ত্রী
রেখে মারা গেছেন। একজন নিঃসন্তান, অপরজনের ৩ ছেলে। এক্ষণে সম্পদ কিভাবে বণ্টিত
হবে?
উত্তর : যদি মৃতের পিতা-মাতা বা ঊর্ধ্বতন কোন ওয়ারেছ না থাকে, তাহ’লে দুই
স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ এবং বাকী সমুদয় সম্পত্তি ছেলেরা পাবে। আল্লাহ বলেন, আর
তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্ত্রীরা সিকি পাবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না
থাকে। যদি থাকে, তবে তারা এক-অষ্টমাংশ পাবে, তোমাদের অছিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের
পর’ (নিসা ৪/১২)। আর যদি মৃতের পিতা-মাতা থাকে তাহ’লে তারা প্রত্যেকে ছয়ভাগের
একভাগ করে পাবে (নিসা ৪/১১)।
প্রশ্ন (২০/১৪০) : অমুসলিম বন্ধুদের দাওয়াত
দিয়ে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শূকরের গোশত খাওয়ানো যাবে কি?
উত্তর : শূকরের গোশত নিজেও খাওয়া যাবে না, অপরকেও খাওয়ানো যাবে না।
কারণ এটিকে আল্লাহ হারাম করেছেন (বাক্বারাহ ২/১৭৩) এবং রাসূল
(ছাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন এর ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন (বুখারী হা/২২৩৬; মুসলিম
হা/১৫৮১; মিশকাত হা/২৭৬৬)।
প্রশ্ন (২১/১৪১) : কারু পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ
বা ওমরাহ করায় কোন বাধা আছে কি? এছাড়া তাওয়াফকালীন সময়ে তালবিয়া পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : কোন বাধা নেই। যাদের পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ ও ওমরাহ করা শরী‘আত সম্মত
তারা হ’লেন, মৃত ব্যক্তি, অতি বৃদ্ধ, চির রোগী, এমন মহিলা যার সাথে মাহরাম নেই
প্রমুখ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৫১১-১৩ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। আবু রাযীন
আল-উকায়লী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার
পিতা খুবই বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ, ওমরাহ, এমনকি সফর করতেও সক্ষম নন। তিনি বললেন, ‘তোমার
পিতার পক্ষে তুমি হজ্জ ও ওমরা আদায় কর’ (আবুদাউদ হা/১৮১০; তিরমিযী হা/৯৩০;
মিশকাত হা/২৫২৯, সনদ ছহীহ)। তবে যাকে পাঠানো হবে তাকে অবশ্যই ইতিপূর্বে নিজের হজ্জ
সম্পাদন করতে হবে (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫২৮, হাদীছ ছহীহ)। সুস্থ
ও সবল ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ জায়েয নয়। বরং তাকে নিজেই হজ্জ করতে
হবে (আল-মুগনী ৩/২২৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/১৪০)। আর তাওয়াফ ও সাঈ
চলাকালীন সময়ে তালবিয়া পাঠ করা উচিৎ নয়। কেননা এসময়ে পাঠ করার জন্য বিভিন্ন দো‘আ
রয়েছে (নববী, শরহ মুসলিম ৮/৯১)। ইবনু আববাস (রাঃ) ওমরার সময়
হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করতেন (তিরমিযী হা/৯১৯; ইরওয়া
হা/১০৯৯)। ‘স্পর্শ করা’ অর্থ হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে তাওয়াফ শুরুকালীন
সময়ে।
প্রশ্ন (২২/১৪২) : একটি ইসলামী পত্রিকার
প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে, মুহাররম মাসের ৯-১১ মোট তিনদিন ছিয়াম পালন করা উত্তম ও
পরিপূর্ণ পদ্ধতি। একথা সত্য কি?
উত্তর : একথা ঠিক নয়। বরং মুহাররম মাসের নবম ও দশম এ দু’দিন ছিয়াম
পালন করাই সর্বোত্তম। কারণ রাসূল (ছাঃ) ইহূদীদের খেলাফ করার জন্য দশম দিনের সাথে
নবম দিন যোগ করে মোট দু’দিন ছিয়াম পালনের আকাংখা প্রকাশ করেছিলেন (মুসলিম
হা/১১৩৪; মিশকাত হা/২০৪১)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তোমরা ইহূদীদের বিরোধিতা কর এবং
নবম ও দশম দিনে ছিয়াম পালন কর (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৭৮৩৯, সনদ ছহীহ)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা আশূরার দিন ছিয়াম রাখ এবং ইহূদীদের খেলাফ কর। তার
পূর্বে একদিন বা পরে একদিন ছিয়াম পালন কর’ (আলবানী, ছহীহ ইবনু খুযায়মা
হা/২০৯৫, ২/২৯০ পৃঃ, মওকূফ ছহীহ)।
প্রশ্নে উল্লেখিত ৩ দিন
ছিয়ামের বিষয়টি সম্ভবতঃ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর অন্য একটি যঈফ বর্ণনা থেকে নেওয়া
হয়েছে। যেখানে আশূরার দিন এবং তার একদিন আগে ও পরে মোট তিনদিন ছিয়াম রাখার
নির্দেশনা এসেছে (যঈফুল জামে‘ হা/৩৫০৬)। অতএব মুহাররম মাসের নবম ও দশম দিনে
ছিয়াম পালন করাই সর্বোত্তম।
প্রশ্ন (২২/১৪২) : একটি ইসলামী পত্রিকার
প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে, মুহাররম মাসের ৯-১১ মোট তিনদিন ছিয়াম পালন করা উত্তম ও
পরিপূর্ণ পদ্ধতি। একথা সত্য কি?
উত্তর : একথা ঠিক নয়। বরং মুহাররম মাসের নবম ও দশম এ দু’দিন ছিয়াম
পালন করাই সর্বোত্তম। কারণ রাসূল (ছাঃ) ইহূদীদের খেলাফ করার জন্য দশম দিনের সাথে
নবম দিন যোগ করে মোট দু’দিন ছিয়াম পালনের আকাংখা প্রকাশ করেছিলেন (মুসলিম
হা/১১৩৪; মিশকাত হা/২০৪১)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তোমরা ইহূদীদের বিরোধিতা কর এবং
নবম ও দশম দিনে ছিয়াম পালন কর (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৭৮৩৯, সনদ ছহীহ)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা আশূরার দিন ছিয়াম রাখ এবং ইহূদীদের খেলাফ কর। তার
পূর্বে একদিন বা পরে একদিন ছিয়াম পালন কর’ (আলবানী, ছহীহ ইবনু খুযায়মা
হা/২০৯৫, ২/২৯০ পৃঃ, মওকূফ ছহীহ)।
প্রশ্নে উল্লেখিত ৩ দিন
ছিয়ামের বিষয়টি সম্ভবতঃ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর অন্য একটি যঈফ বর্ণনা থেকে নেওয়া
হয়েছে। যেখানে আশূরার দিন এবং তার একদিন আগে ও পরে মোট তিনদিন ছিয়াম রাখার
নির্দেশনা এসেছে (যঈফুল জামে‘ হা/৩৫০৬)। অতএব মুহাররম মাসের নবম ও দশম দিনে
ছিয়াম পালন করাই সর্বোত্তম।
প্রশ্ন (২৩/১৪৩) : নারীদের ভ্রূ অধিক ঘন হয়ে
গেলে কিছুটা ছেটে ফেলায় কোন বাধা আছে কি?
উত্তর : ভ্রূ অধিক ঘন হয়ে দৃষ্টির উপর পতিত হ’লে যে পরিমাণে সমস্যা সৃষ্টি
করে ঐ পরিমাণটুকু কেটে ফেলা যায় (ফাতাওয়া উছায়মীন ১১/১৩৩, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা
৬২)। কিন্তু কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলা বা কেটে ফেলা যাবে না।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ নারীদের উপর লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ হা/৪১৭০; মিশকাত
হা/৪৪৬৮)।
প্রশ্ন (২৪/১৪৪) : জনৈক ব্যক্তি মোটা অংকের
সূদের ঋণ রেখে মারা গেছেন। কিন্তু তার রেখে যাওয়া তেমন কোন সম্পদ নেই। এক্ষণে তার
পরিবারের জন্য উক্ত ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে মৃতের সকল সম্পদ বিক্রি করে হলেও পরিবারকে ঋণ পরিশোধ
করতে হবে। কারণ ঋণ পরিশোধ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করলে হাশরের মাঠে নিজ নেকী থেকে ঋণের
দাবী পূরণ করতে হবে (বুখারী, মিশকাত হা/৫১২৬ ‘আদব’ অধ্যায় ‘যুলুম’ অনুচ্ছেদ)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয় তার ঋণের কারণে, যতক্ষণ
না তার পক্ষ হ’তে ঋণ পরিশোধ করা হয়’ (তিরমিযী হা/১০৭৮; মিশকাত হা/২৯১৫)।
যদি তার কিছুই না থাকে এবং তার স্ত্রী-সন্তানরাও যদি সক্ষম না হয়, তবে সমাজ, সংগঠন
বা সরকার সে দায়িত্ব বহন করবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯১৩,
‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, ‘দেউলিয়া হওয়া এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দান’
অনুচ্ছেদ-৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/৩৩)। তবে সূদ না দিয়ে কেবল মূল অংশ দেওয়ার
চেষ্টা করতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৭৮-২৭৯)। অতএব প্রত্যেকের উচিৎ যথাসম্ভব ঋণ
গ্রহণ থেকে বেঁচে থাকা। যা পরিশোধ করতে না পারলে ইহকালে পরিবারের জন্য এবং পরকালে
নিজের জন্য কঠিন বোঝা হয়ে দেখা দিবে।
প্রশ্ন (২৫/১৪৫) : কারেন্ট শক খেয়ে কোন
প্রাণী মারা গেলে তার গোশত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : কোন প্রাণীকে যদি কারেন্টে শক করে আর জীবিত অবস্থায় তাকে
‘বিসমিল্লাহ’ বলে যবেহ করা সম্ভব না হয়, তাহ’লে তার গোশত খাওয়া যাবে না। আল্লাহ
বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোশত, যেসব বস্ত্ত
আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা
যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পড়ে মারা যায়, যা শিং-এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র
প্রাণী ভক্ষণ করে। কিন্তু তোমরা যাকে যবেহ করেছ তা খেতে পার’ (মায়েদা ৫/৪)।
অতএব মারা যাওয়ার পূর্বে যবেহ করা সম্ভব হ’লে তার গোশত খাওয়া যাবে, অন্যথায় নয়।
প্রশ্ন (২৬/১৪৬) : মসজিদের ইমাম ছাহেব
স্পষ্ট শিরকী কর্মে লিপ্ত থাকায় আমরা ৭-৮ জন ভাই একটি দোকানের ভিতর জুম‘আ আদায়
করি। এভাবে জুম‘আ আদায় করা যাবে কি? জুম‘আর জন্য মসজিদ শর্ত কি?
উত্তর : ইমাম স্পষ্ট শিরকে জড়িত থাকলে কিংবা মসজিদ শিরক-বিদ‘আত যুক্ত
হ’লে অন্য মসজিদে গিয়ে জুম‘আর ছালাত আদায় করবে। অধিক জ্ঞান অর্জন বা বড় জামা‘আতে
অংশগ্রহণ করার জন্য অন্য মসজিদে যেতে কোন বাধা নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া
১৪/২৪১-২৪২)। কিন্তু আশেপাশে জামে মসজিদ থাকা অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে অল্প সংখ্যক
ব্যক্তি দোকানে বা কোন স্থানে জুম‘আর ছালাত আদায় করা জায়েয নয় (ইবনু বায,
ফৎওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৩/১৮৭)। কেননা তা জুম‘আর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করে। জমহূর
ওলামায়ে কেরামের মতে জুম‘আর ছালাতের জন্য মসজিদ শর্ত নয়। যেমনটি ইবনু ওমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত আছারে এসেছে, তিনি বাহরাইনবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা জুম‘আর
ছালাত আদায় কর, যেখানেই থাক না কেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/৫০৬৮; সনদ
ছহীহ, ইরওয়া হা/৫৯৯-এর আলোচনা, আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ ১/৩৫১)। তবে তার
জন্য যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। তাছাড়া এভাবে পৃথক জুম‘আর ছালাত আদায়ে সমাজে নতুন
ফিৎনা সৃষ্টি হবে, যা মোটেও কাম্য নয়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে
ব্যক্তি আযান শুনতে পেয়েও বিনা ওযরে মসজিদে যায় না তার ছালাত সিদ্ধ হবে না’। রাবী
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘ওযর’ হচ্ছে ভয় ও অসুস্থতা (ইবনু মাজাহ
হা/৬৫২; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহ আত-তারগীব হা/৪২৬)।
প্রশ্ন (২৭/১৪৭) : জুম‘আর খুৎবায় সূরা
আহযাবের ৫৬ আয়াত পাঠের ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : উক্ত আয়াতে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে দরূদ পাঠের নির্দেশ রয়েছে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা জুম‘আর দিন আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর’ (আবুদাঊদ
হা/১০৪৭; মিশকাত হা/১৩৬১)। উক্ত আয়াত ও হাদীছের আলোকে জুম‘আর খুৎবায় এটি পাঠ করা
হয়ে থাকে। ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, যখন ইমাম খুৎবায় সূরা আহযাব ৫৬
আয়াত পাঠ করেন, তখন মুছল্লীদের উচিৎ তার সাথে সাথে এটি পাঠ করা। ইমাম মালেক,
ছাওরী, লায়েছ বিন সা‘দ, শাফেঈ প্রমুখ বিদ্বানগণ অনুরূপ বলেছেন’ (ত্বাহাভী,
মুখতাছার ইখতিলাফুল ওলামা ১/৩৩৩)। ইমাম নববী বলেন, যখন খত্বীব সূরা আহযাবের ৫৬
আয়াত পাঠ করবেন, তখন শ্রোতাদের জন্য সরবে দরূদ পাঠ করা জায়েয (আল-মাজমূ‘
৪/৫৯২)। এতে বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ) থেকে এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কোন হাদীছ না
পাওয়া গেলেও তাবেঈদের যুগ থেকেই এটি চালু আছে।
প্রশ্ন (২৮/১৪৮) : গোঁফ রাখার ব্যাপারে
শরী‘আতের বিধান কি? তা সম্পূর্ণরূপে চেঁছে ফেলা যাবে কি?
উত্তর : এ বিষয়ে শরী‘আতের বিধান হ’ল গোফ ছাঁটা। আয়েশা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দশটি বিষয় হ’ল স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। তার মধ্যে গোঁফ
ছাঁটা অন্যতম’ (মুসলিম হা/২৬১; মিশকাত হা/৩৭৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়)। আর চল্লিশ
দিনের অধিক গোঁফ না ছেঁটে রাখা যাবে না (মুসলিম হা/২৫৮; মিশকাত হা/৪৪২২)। এসব
কাজ নবী-রাসূলগণ করতেন বলে এগুলিকে নবীদের সুন্নাতের (سُنَّةُ الْأَنْبِيَاءِ)
অন্তর্ভুক্ত বলা হয় (মিরক্বাত)। গোঁফ এমনভাবে ছাঁটতে হবে যেন ঠোঁট
পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আর গোঁফ সম্পূর্ণ চেছে ফেলার ব্যাপারে অধিকতর গ্রহণযোগ্য
মত হ’ল, এটি ঠিক নয়। কেননা হাদীছে যে সকল শব্দ (أَحْفُوْا، أَنْهِكُوْا، جُزُّوْا)
ব্যবহৃত হয়েছে তা গোঁফ মুন্ডানো নয়, বরং ছাঁটার অর্থ বহন
করে (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/২৮৭; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ২০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১১/৮৪, ১২৮)। এমনকি গোঁফ চেঁছে ফেলাকে ইমাম মালেক বিদ‘আত বলেছেন, যেটি
লোকদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আছে। এরূপ আমলকারী ব্যক্তিকে প্রহার করা উচিত বলে তিনি
মন্তব্য করেছেন (বায়হাক্বী ১/১৫১ পৃ., হা/৬৮২)।
প্রশ্ন (২৯/১৪৯) : বিবাহের কিছুদিন পর
স্বামী কোন কারণ ছাড়াই স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়। এরূপ করা জায়েয কি? তালাক দিলে
স্ত্রীর প্রাপ্য কি কি? এরূপ হ’লে স্ত্রীর পরবর্তী বিবাহ অনিশ্চিত হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে কি?
উত্তর : কারণ ছাড়াই স্ত্রীকে তালাক দেওয়া এবং তাকে বিপদের মুখে
নিক্ষেপ করা নিঃসন্দেহে অন্যায়। তবে তা নাজায়েয নয় (ছহীহাহ হা/২০০৭-এর আলোচনা
দ্রষ্টব্য)। এক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকে বায়েন দিলে মোহরানার টাকা
পূর্বে না দিয়ে থাকলে স্ত্রী কেবল সেটিই পাবে (তিরমিযী হা/১১০২; ইরওয়া ১৮৪০)।
কিন্তু খোরপোষ পাবে না (মুসলিম হা/১৪৮০)। শরী‘আতের দৃষ্টিতে যেহেতু তালাক দেওয়া
নাজায়েয নয়, সেহেতু স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন (৩০/১৫০) : মাযারে জমাকৃত অর্থ
দিয়ে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করা হয়েছে। এক্ষণে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা
জায়েয হবে কি?
উত্তর : উক্ত মসজিদের সাথে মাযার না থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা
জায়েয। কারণ কা‘বাগৃহ মুশরিকদের অর্থায়নে পুনর্নিমিত হ’লেও রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর
ছাহাবীগণ ছালাত আদায় করেছেন (ইবনু হিশাম ১/১৯৭; আহমাদ হা/১৫৫৪৩; হাকেম
হা/১৬৮৩; সনদ ছহীহ)। তবে মসজিদটি যদি মাযার কেন্দ্রিক হয়, তবে সেখানে ছালাত আদায়
করা যাবে না। কারণ এসব মসজিদ শিরকের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয় এবং এর উদ্দেশ্যই থাকে
শিরকের প্রতি মুছল্লীদের প্রলুব্ধ করা ও তাদেরকে মাযারমুখী করা।
প্রশ্ন (৩১/১৫১) : আমাদের এখানে মাযহাবী
মসজিদে জুম‘আর খুৎবায় নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাহাবীর জন্য দো‘আ করা হয়। এটি কি সঠিক? এছাড়া
এ নিয়ম কবে থেকে শুরু হয়েছে?
উত্তর : এতে দোষের কিছু নেই। আবু মূসা আশ‘আরী সর্বপ্রথম বছরার জামে‘ মসজিদে
ওমর (রাঃ)-এর প্রশংসা করে খুৎবা প্রদান করলে যাববাহ বিন মিহছান প্রতিবাদ করে বলেন,
আপনি কেবল ওমরের জন্য দো‘আ করলেন অথচ তাঁর সাথীর জন্য করলেন না। এক সময় ওমর (রাঃ)
বিষয়টি জানতে পেরে আবু মূসাকে ভৎর্সনা করে বলেন, আবুবকর (রাঃ)-এর একটি রাত (ছওর
গুহায় রাসূল ছাঃ-এর সাথে কাটানো রাত) ও একটি দিন (রাসূল ছাঃ-এর মৃত্যুর পর যে দিন
তিনি মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন) ওমর এবং তার পরিবার অপেক্ষা
উত্তম... (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/১৫৬, মুসনাদুল ফারূক হা/৯৭০, ইবনে কাছীর বলেন,
এই সনদে দুর্বলতা থাকলেও এর সপক্ষে শাওয়াহেদ রয়েছে)।
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)
বলেন, কথিত আছে যে, উমাইয়াদের কেউ কেউ যখন আলী (রাঃ)-কে গালি দিতে শুরু করে, তখন
ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) এই মন্দ প্রচলনের বিপরীতে সর্বপ্রথম খুৎবায় চার খলীফার
প্রশংসা এবং তাদের ফযীলত বর্ণনা করা শুরু করেন। এছাড়া খারেজীরা ওছমান ও আলী
(রাঃ)-কে কাফের আখ্যা দেয় এবং রাফেযী শী‘আরা প্রথম তিন খলীফাকেই কাফের মনে করে।
তাই খুৎবার মধ্যে চার খলীফার প্রশংসা এবং তাদের ফযীলত বর্ণনা করার মাধ্যমে তাদেরও
প্রতিবাদ হয়ে যায় (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/১৫৬-১৬৪)।
এটি ছাহাবীদের যুগের
আমল। খুৎবার মধ্যে তাদেরকে উল্লেখ করার মাধ্যমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পক্ষ
থেকে ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারীদের প্রতিবাদ করা হয়েছিল। তাঁদের প্রতি ভালবাসা
প্রকাশ করা হয়েছিল প্রতিবাদের উদ্দেশ্যেই। তারই ধারাবাহিকতায় বহু মসজিদে তাঁদের
নাম উল্লেখ করা হয়ে থাকে। তৎকালীন সময়ে এর মাধ্যমে এ বার্তা দেয়া হ’ত যে, তাদের
সম্পর্কে মন্দ ধারণা বা আক্বীদা পোষণ করার কোন সুযোগ নেই। তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর
সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। অতএব খুৎবার মধ্যে তাদের নাম উল্লেখ করাটা বিদ‘আতও নয়,
ওয়াজিবও নয় (ছালেহ ফাওযান আল-ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ৬৫/২৫)।
প্রশ্ন (৩২/১৫২) : বুখারী ৪০২৪ নং হাদীছে
উল্লেখ রয়েছে ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকান্ডের পর আর কোন বদরী ছাহাবী জীবিত ছিলেন না।
কিন্তু ইতিহাসে প্রমাণিত যে আলী (রাঃ) চতূর্থ খলীফা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এর
সমাধান কি?
উত্তর : এখানে প্রশ্নকারীর বুঝতে ভুল হয়েছে। হাদীছটি বর্ণনা করেছেন
প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (১৫-৯৪ হি.)। এখানে তিনি বলেন যে, প্রথম ফিৎনা
অর্থাৎ ৩৫ হিজরীতে ওছমান হত্যাকান্ডের পর বদরী ছাহাবীদের আর কেউ বেঁচে ছিলেন না।
দ্বিতীয় ফিৎনা অর্থাৎ ৬৩ হিজরীতে হার্রার ঘটনার পর হোদায়বিয়ার সন্ধিকালীন কোন
ছাহাবী আর জীবিত ছিলেন না। এরপর ৬৪ হি. থেকে খারেজীদের তৃতীয় ফিৎনা শুরু হওয়ার পর
তা আর কখনোই শেষ হয়নি। যতদিন না তা মানুষের সমস্ত শক্তি ও বিবেক-বুদ্ধি নিঃশেষ করে
দেয়’ (বুখারী হা/৪০২৪; মিশকাত হা/৫৪০৯)।
এর ব্যাখ্যা এই যে,
ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকান্ডের ফিৎনা থেকে হার্রার ফিৎনা (৬৩ হিজরীতে মদীনার
নিকটবর্তী হার্রা নামক স্থানে ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়ার সৈন্যদের সাথে মদীনাবাসীদের
যুদ্ধ, যাতে বহু ছাহাবী এবং তাবেঈ নিহত হন) পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সকল বদরী
ছাহাবী মারা যান, যাদের মধ্যে আলী (রাঃ)ও ছিলেন। সর্বশেষ বদরী ছাহাবী সা‘দ বিন আবু
ওয়াক্কাছ (রাঃ) মারা যান এ যুদ্ধের কয়েক বছর পূর্বে। আর হার্রার ফিৎনা শুরু হওয়ার
পর থেকে তৃতীয় ফিৎনা (৬৪ থেকে ৭৮ হিজরী সময়কালে বছরায় বিস্তৃত আযারিকাহ নামক
খারেজী সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ) পর্যন্ত সময়ে হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণকারী সকল ছাহাবী
মারা যান। এই তৃতীয় ফিৎনার সময় সকল ছাহাবী মারা যান। মোটকথা ওছমান হত্যার সূত্র
ধরে অবশিষ্ট বদরী ছাহাবীগণ একে একে সকলে শাহাদাত বরণ করেন (ফাৎহুলবারী ৭/৩২৫;
মিরক্বাত ৮/৩৪০৪; ঊমদাতুল ক্বারী ১৭/১১৯)।
প্রশ্ন (৩৩/১৫৩) : একাধিক তলা বিশিষ্ট
মসজিদে মাইকের ন্যায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে জুম‘আর খুৎবা দেখানোর ব্যবস্থা করা যাবে
কি? এছাড়া নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রজেক্টর রাখা যাবে কি?
উত্তর : এরূপ করা উচিত হবে না। কারণ এতে মুছল্লীদের খুশূ-খুযূ বিনষ্ট
হয় এবং খুৎবা ও ছালাতের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সফলকাম হবে
মুমিনগণ, যারা তাদের ছালাতে তন্ময়-তদ্গত (মুমিনুন ২৩/১-২)। অতএব জুম‘আর
খুৎবায় প্রজেক্টর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
প্রশ্ন (৩৪/১৫৪) : রাসূল (ছাঃ) অল্প
খাদ্যগ্রহণকারীকে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। অথচ অনেক মানুষকে দেখা
যায় তারা দৈনিক মাছ, গোশত, দই, মিষ্টি, ফলমূল ইত্যাদি খায়। এগুলি কি অপব্যয়ের
অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে না?
উত্তর : ‘অল্প খাদ্যগ্রহণকারী সর্বোত্তম’ মর্মের বর্ণনাটি
ভিত্তিহীন (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৩)। অতঃপর প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী হালাল
খাদ্য খাবে। আল্লাহর শুকরিয়ার সাথে খেলে এতে আল্লাহ বেশী খুশী হন। তবে যদি সে
কৃপণতা করে কিংবা নষ্ট করে, তাহ’লে তা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহর বলেন,
তোমরা খাও ও পান কর, অপচয় কর না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে অপসন্দ
করেন’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যা খুশী খাও এবং যা খুশী পরিধান
কর। তবে এ বিষয়ে তোমাকে দুটি ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাহ’ল অপচয় ও অহংকার (বুখারী,
আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৩৮০-৮১ ‘পোষাক’ অধ্যায়)। তবে খাদ্যগ্রহণের
ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা হ’ল- পেটের একভাগ খাদ্য দিয়ে ও একভাগ পানি দিয়ে
ভরবে এবং একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে (তিরমিযী হা/২৩৮০)।
প্রশ্ন (৩৫/১৫৫) : নবী ও রাসূলের মধ্যে
পার্থক্য কি? কুরআন ও হাদীছে এ পৃথকীকরণের পক্ষে কোন দলীল আছে কি?
উত্তর : নবী ও রাসূল দু’টি শব্দের অর্থই বার্তাবাহক। তারা সকলে আল্লাহর
পক্ষ থেকে তাঁর বাণী প্রচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এক্ষণে উভয়ের মধ্যে যে
পার্থক্য রয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সূরা হজ্জের ৫২ আয়াতে। তবে সে পার্থক্যের
স্বরূপ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফার্রা বলেন, ‘রাসূল’ তিনি, যার নিকটে প্রকাশ্যভাবে
জিব্রীলকে পাঠিয়ে আল্লাহ রিসালাত প্রদান করেছেন। পক্ষান্তরে ‘নবী’ তিনি, যার নিকটে
আল্লাহ কোন খবর পাঠিয়েছেন ইলহাম অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে (যেমন ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট
পাঠিয়েছিলেন)। অতএব প্রত্যেক রাসূলই নবী, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল নন। মাহদাভী (المهدوى)
বলেন, এটাই সঠিক। কাযী ইয়ায বলেন, বিদ্বানগণের বিরাট অংশ এ মতকেই সঠিক বলেন যে,
প্রত্যেক রাসূলই নবী। কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল নন। তিনি আবু যর গেফারী (রাঃ)
বর্ণিত হাদীছ থেকে দলীল নিয়েছেন যে, ১ লাখ ২৪ হাযার পয়গাম্বরের মধ্যে ৩১৫ জনের
বিরাট সংখ্যা ছিলেন ‘রাসূল’ (তাফসীর কুরতুবী; আহমাদ হা/২২৩৪২; মিশকাত
হা/৫৭৩৮; ছহীহাহ হা/২৬৬৮)। সম্ভবতঃ এ কারণেই মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে কুরআনে ‘শেষনবী’
বলা হয়েছে (আহযাব ৩৩/৪০), শেষ রাসূল নয়। হাদীছেও তিনি বলেছেন, আমি শেষনবী,
আমার পরে কোন নবী নেই’ (আবুদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬)। কেননা নবী ব্যতীত
কেউ রাসূল হ’তে পারেন না।
সূরা মারিয়াম ৫৪ আয়াতে
ইসমাঈলকে ‘রাসূল’ ও ‘নবী’ একত্রে বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, তিনি হাদীছে বর্ণিত
৩১৫ জন রাসূলের (ছহীহাহ হা/২৬৬৮) অন্যতম ছিলেন। যদিও আমরা কেবল মূসা,
দাঊদ, ঈসা ও মুহাম্মাদ চারজন কিতাবধারী রাসূলের নাম জানি।
প্রশ্ন (৩৬/১৫৬) : কোন প্রতিষ্ঠানের
পরিচালক মহিলা হ’লে সেখানে চাকুরী করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারী নেতৃত্ব সিদ্ধ নয়। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ
জাতি নারী জাতির উপরে কর্তৃত্বশীল’ (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) যখন অবগত হ’লেন
যে, ইরানের জনগণ কিসরার কন্যাকে তাদের নেত্রী নির্বাচন করেছে। তখন তিনি বললেন, ‘ঐ
জাতি কখনও সফলকাম হ’তে পারে না, যারা নারীকে তাদের নেত্রী নির্বাচিত
করে’ (বুখারী হা/৪৪২৫; মিশকাত হা/৩৬৯৩)। অতএব রাষ্ট্রীয় ও সমাজের কোন
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীর আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব ইসলাম নাকচ করেছে। এতদসত্ত্বেও
কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক যদি মহিলা হয়ে থাকেন, তাহ’লে পারতপক্ষে চাকুরী পরিবর্তন
করা উচিত। তবে বাধ্যগত বিষয়টির কথা ভিন্ন।
প্রশ্ন (৩৭/১৫৭) : নফল ছালাত দু’রাক‘আত
আদায়ের নিয়তে ছালাত শুরু করে পরবর্তীতে ছালাতের মধ্যেই মত পরিবর্তন করে চার রাক‘আত
পড়া যাবে কি? এছাড়া চার রাক‘আতের নিয়ত করে সময় কম থাকায় দু’রাক‘আত পড়ে সালাম ফিরানো
যাবে কি?
উত্তর : নফল ছালাতের ক্ষেত্রে ছালাতরত অবস্থায় রাক‘আত কম বা বেশী করার নিয়ত
পরিবর্তন করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘রাতের নফল ছালাত দুই দুই
রাক‘আত। অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত
পড়ে নেয়। যা তার পূর্বেকার সকল নফল ছালাতকে বিতরে পরিণত করবে’ (বুখারী
হা/৯৯০; মুসলিম হা/৭৪৯; মিশকাত হা/১২৫৪)। তিনি বলেন, নফল ছিয়াম পালনকারী তার নিজের
উপর আমীর’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৫৪)। তবে কেউ নিয়ত পরিবর্তন ব্যতিরেকে
খামখেয়ালীভাবে রাক‘আত কম বা বেশী করলে সর্বসম্মতিক্রমে তার ছালাত বাতিল হয়ে
যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৪/৫০)।
প্রশ্ন (৩৮/১৫৮) : আমি পাওয়ার স্টেশনে
কাজ করি। এখানে শিফটিং ডিউটি থাকায় জুম‘আর ছালাত আদায় করা সম্ভব হয় না। এক্ষণে
আমার করণীয় কি?
উত্তর : এরূপ অবস্থায় যোহর ছালাত আদায় করবে। প্রয়োজনে যোহর-আছর জমা
করবে (বুখারী হা/১১৭৪; দ্রঃ ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ ১৮৮ পৃ.)। আল্লাহ
বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ১৬, বাক্বারাহ ২/২৮৬, আবুদাঊদ
হা/৬৫০)।
প্রশ্ন (৩৯/১৫৯) : মানুষ যখন ঘুমায় তখন
তার রূহ দেহে অবস্থান করে কি?
উত্তর : আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের
মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর
ফায়ছালা করেন, তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নিদর্শন
রয়েছে’ (যুমার ৩৯/৪২)।
উক্ত আয়াতে প্রাণীর
দু’টি মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। একটি নিদ্রাকালীন মৃত্যু। অন্যটি মৃত্যুকালীন
মৃত্যু। নিদ্রায় তার দেহে অনুভূতি থাকে। কিন্তু মৃত্যুতে সেটা থাকেনা। উভয় অবস্থায়
তার প্রাণ আল্লাহর কাছে চলে যায়। অতঃপর তিনি যাকে চান তার দেহে রূহ ফিরিয়ে দেন,
যাকে চান সেটা রেখে দেন। যা ক্বিয়ামতের আগ পর্যন্ত তার দেহে ফেরৎ দেওয়া হয় না।
কুরআনে ও হাদীছে উভয় অবস্থাকে ‘মউত’ বলা হয়েছে। সেজন্য ঘুমাতে যাবার সময় দো’আ পড়তে
হয়, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি’ (বুখারী হা/৬৩২৪; মিশকাত
হা/২৩৮২)। ঘুম থেকে ওঠার সময় বলতে হয়, ‘সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি
আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করলেন এবং ক্বিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই হবে আমাদের
পুনরুত্থান’ (বুখারী হা/৬৩২৪; মিশকাত হা/২৩৮২)। অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ বিছানায় যাবে, তখন... সে যেন ডানকাতে শুয়ে বলে, হে
আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমি বিছানায় দেহ রাখছি ও তোমার নামেই সেটা আমি উঠাবো।
যদি তুমি আমার আত্মাকে আটকে রাখ, তাহ’লে তুমি তাকে অনুগ্রহ কর (অন্য বর্ণনায় এসেছে
‘তুমি তাকে ক্ষমা কর’)। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তুমি তাকে (গুনাহ থেকে) হেফাযত
কর। যেভাবে তুমি তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের হেফাযত করে থাক’ (বুখারী হা/৬৩২০,
৭৩৯৩; মুসলিম হা/২৭১৪; মিশকাত হা/২৩৮৪)।
প্রশ্ন (৪০/১৬০) : কুরআনী নির্দেশনা
অনুযায়ী কোন নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হ’লে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে ৪ জন পুরুষ
সাক্ষী হাযির করা আবশ্যক। কিন্তু সেটি কিভাবে সম্ভব? আর চারজন সাক্ষী পেশ করার
পিছনে হিকমত কি?
উত্তর : আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে, তাদের
বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হ’তে চারজন সাক্ষী উপস্থিত কর’ (নিসা ৪/১৫)। তিনি আরো
বলেন, ‘আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়। অথচ চারজন
(প্রত্যক্ষদর্শী) সাক্ষী হাযির করতে পারে না। তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর। আর
তোমরা কখনোই তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। বস্ত্ততঃ এরাই হ’ল পাপাচারী’ (নূর
২৪/৪)। একদা (খাযরাজ গোত্রের নেতা) সা‘দ বিন উবাদা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!
যদি আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোন পরপুরুষকে (সহবাসরত) দেখতে পাই, তবে কি আমি তাকে
পাকড়াও করব না, যতক্ষণ না চারজন সাক্ষী হাযির করি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন
সা‘দ বলেন, কখনোই তা সম্ভব নয়। যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, তার কসম করে
বলছি, আমি এর আগেই তাকে তরবারি দিয়ে খতম করে দিব। তখন রাসূল (ছাঃ) আনছারদের ডেকে
বললেন, তোমাদের নেতা কি বলছেন শোন। তিনি অবশ্যই আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি। আর
আমি তার চেয়েও বেশী। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশী’ (মুসলিম হা/১৪৯৮; মিশকাত
হা/৩৩০৮)।
সা‘দ বিন উবাদাহ
উপরোক্ত কথা বলার পরপরই হেলাল বিন উমাইয়াহ স্বীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের
অভিযোগ নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হন। এমন সময় সূরা নূরের ১০ আয়াত নাযিল
হয়। যার ভিত্তিতে তিনি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। তখন রাসূল (ছাঃ)
উভয়কে লে‘আন করান এবং বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং বলেন যে, আখেরাতের শাস্তি দুনিয়ার
শাস্তির চেয়ে অনেক ভয়াবহ’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নূর ৪ আয়াত)। অর্থাৎ
ব্যভিচারের শাস্তি দুনিয়াতে গ্রহণ করলে এটি তার জন্য কাফফারা হ’ত (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/১৮) এবং সে সম্ভবতঃ আখেরাতের কঠিন শাস্তি থেকে বেঁচে যেত।
ইমাম কুরতুবী বলেন, এটি
আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহের কারণে এবং তাদের পাপ গোপন রাখার
কারণে (কুরতুবী, তাফসীর সূরা নূর ৪ আয়াত)। ‘অনুগ্রহ’ বলতে বান্দাকে তওবা করার
সুযোগ দান এবং ‘গোপন রাখা’ অর্থ এই অন্যায় কর্মটি জানাজানি না হওয়া। যাতে সমাজে
নির্লজ্জতার প্রসার না ঘটে। ছাহেবে হেদায়াহ বলেন, চারজন সাক্ষীর শর্ত রাখার অর্থ
হ’ল এটিকে গোপন রাখা এবং প্রচার না করা (হেদায়াহ ২/৯৫)।
ইসলামী আইনে যেনার
অপরাধ সাব্যস্ত হয় ৪ জন সাক্ষী অথবা স্বীকৃতি অথবা গর্ভবতী হওয়ার মাধ্যমে। ডিএনএ
পরীক্ষার মাধ্যমেও যেনার অপরাধ সাব্যস্ত হ’তে পারে। কিন্তু শতভাগ সন্দেহমুক্ত নয়
বলে এর মাধ্যমে ‘হদ’ আরোপিত হবে না; কেননা সন্দেহের অবস্থায় ‘হদ’ প্রযোজ্য নয়।
যেনার শাস্তি বাহ্যতঃ খুবই কঠিন মনে হ’লেও এর সামাজিক কুপ্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। সে
তুলনায় উক্ত শাস্তি সহজতর (ফিক্বহুস সুন্নাহ ‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়; রাবেতার
অধীনস্ত ইসলামী ফিক্বহ কাউন্সিলের ষোড়শ অধিবেশন সিন্ধান্ত, জানুয়ারী ২০০২, মক্কা,
৩য় প্রকাশ, পৃঃ ৩৯০)।
ফেব্রুয়ারি/২০১৮
প্রশ্ন (১/১৬১) : ছহীহ হাদীছ কুরআনের
বিরোধী হ’লে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি?
উত্তর : ছহীহ হাদীছ কখনো কুরআন বিরোধী হবে না। যদি কখনো পরস্পর
বিরোধী মনে হয়ে থাকে, তবে সেটি আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার ফল। কেননা শরী‘আত
প্রণেতার কোন বিধানে স্ববিরোধিতা নেই। আর রাসূল (ছাঃ) যা বলতেন তা অহী (নাজম
৫৩/৩-৪)। এক্ষণে কোন হাদীছ বাহ্যত যদি কুরআন বিরোধী মনে হয়, তার সমাধানে
মুহাদ্দিছগণের নীতি হ’ল- প্রথমতঃ হাদীছটির সনদ যাচাই করতে হবে। অতঃপর হাদীছটি
বিশুদ্ধ হ’লে তার সঠিক ব্যাখ্যা তালাশ করতে হবে এবং আয়াত ও হাদীছের মধ্যে সমন্বয়
সাধন করতে হবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে উভয়টির মাঝে যাচাই সাপেক্ষে কোন একটি
হুকুমকে মানসূখ গণ্য করতে হবে। আর শেষাবধি কোন হুকুমটি মানসূখ তা নির্দিষ্ট করা না
গেলে ‘অগ্রগণ্য কারণসমূহে’র (قرائن الترجيح) ভিত্তিতে কোন একটি হুকুমকে
অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তার উপর আমল করতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ফিকহী
নীতিমালা রয়েছে (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : নববী, শরহ মুসলিম, পৃঃ ১/৩৫; শাওকানী,
ইরশাদুল ফুহূল ২/২৬০-২৭৩)।
প্রশ্ন (২/১৬২) : ওযূর কার্যাবলীর মাঝে
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব কি? কোন একটি ভুলে গেলে পুনরায় শুরু থেকে করতে হবে
কি?
উত্তর : ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব এবং কেউ ভুলে গেলে তাকে পুনরায়
ওযূ করতে হবে। আল্লাহর বাণী ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হবে, তখন
(তার পূর্বে বে-ওযূ থাকলে ওযূ করার জন্য) তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত
ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর’ (মায়েদাহ ৫/৬)। উক্ত
আয়াত এবং অন্যান্য হাদীছের ভাষ্য মোতাবেক ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ প্রমুখ বিদ্বানগণ
ধারাবাহিকতা অবলম্বন করাকে আবশ্যিক বলেছেন এবং এটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য
মত (মুসলিম হা/৮৩২; ওছায়মীন, ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, পৃঃ ২১৯; ফাতাওয়া শায়খ
বিন বায ১০/১০২-১০৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৮-৩৯)। তবে কেউ যদি ওযূর কোন অঙ্গ ধৌত
করতে ভুলে যায় আর অন্যান্য অঙ্গগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই স্মরণ করতে পারে,
তাহ’লে সেই অঙ্গকে ধৌত করবে এবং ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে পরের অঙ্গগুলো পুনরায়
ধৌত করবে। কিন্তু যদি অন্যান্য অঙ্গগুলো শুকিয়ে যায় তাহ’লে তাকে পুনরায় ওযূ করতে
হবে (মাসায়েলুল ইমাম আহমাদ, পৃঃ ২৬, প্রশ্ন নং-৯২)। এ অবস্থায় এমনকি যদি
ছালাত আদায় করেও ফেলে তাহ’লে ওযূ করে তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে। কারণ এক
ব্যক্তি ওযূ করে এমন অবস্থায় ছালাত আদায় করছিল যে, তার পায়ের নখ পরিমাণ (তথা অতি
সামান্য) অংশে পানি পৌঁছেনি। রাসূল (ছাঃ) তাকে পুনরায় সুন্দরভাবে ওযূ করার নির্দেশ
দেন (ইবনু মাজাহ হা/৬৬৫; আবুদাউদ হা/১৭৩, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায়
এসেছে, তিনি তাকে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন (ইবনু
মাজাহ হা/৬৬৬)। উল্লেখ্য যে, কোন কোন বিদ্বানের নিকট ওযূতে ধারাবাহিকতা ওয়াজিব নয়
বরং সুন্নাত (আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ১১/১০০-১০২)। শায়খ আলবানীও মিক্বদাম
ইবনে মা‘দী কারিব (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছ (আহমাদ হা/১৭২২৭)-এর ভিত্তিতে
ওযূর ধারাবাহিকতা আবশ্যক নয় মন্তব্য করেছেন (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১-এর আলোচনা
দ্রষ্টব্য)। তবে হাদীছটি এ ক্ষেত্রে দলীলযোগ্য নয়। শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব বলেন,
হাদীছটি যঈফ। কারণ এর বর্ণনায় বৈপরিত্য এসেছে। অর্থাৎ কুলি করা ও নাক ঝাড়ার কথাটি
হবে প্রথমে দু’হাত ধোয়ার পরে। যা বিশুদ্ধ হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত (তাহকীক
মুসনাদ আহমাদ ২৮/৪২৫)। এজন্য ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর
পদ্ধতি ছিল ধারাবাহিক ও ক্রমান্বয়িক। একবারের জন্যও তিনি এর ব্যত্যয়
ঘটাননি (যাদুল মা‘আদ ১/১৮৭)।
প্রশ্ন (৩/১৬৩) : জেহরী ছালাতে সূরা
ফাতিহার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ সশব্দে তেলাওয়াত করা যাবে কি?
উত্তর : সশব্দে পড়ার কোন ছহীহ দলীল নেই (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার
৩/৪৬)। অতএব ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বে। অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, ‘আঊযুবিল্লাহ’ কেবল ১ম রাক‘আতে পড়বে, বাকী রাক‘আতগুলিতে
নয় (ফিক্বহুস সুন্নাহ পৃঃ ১/১১২; নায়ল পৃঃ ৩/৩৬-৩৯; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ
৮৬-৮৭)। অমনিভাবে ‘বিসমিল্লাহ’সূরা ফাতিহার অংশ হওয়ার পক্ষে কোন ছহীহ দলীল
নেই (বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : নায়লুল আওত্বার পৃঃ ৩/৩৯-৫২)। বরং এটি দুই
সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে পঠিত হয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৮৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২,
অনুচ্ছেদ-১২৫)। ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক কথা হ’ল ইমাম মালেকের
কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন
ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় অবিরত ধারায়
অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এটি
সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর কুরআনে
কোন মতভেদ থাকে না। বরং বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ একথা প্রমাণ করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা
ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র। এ বিষয়ে ছহীহ মুসলিমে আবু
হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য’ (মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩
‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; তাফসীরে কুরতুবী মুক্বাদ্দামা, ‘বিসমিল্লাহ’ অংশ
দ্রষ্টব্য, তাফসীরুল কুরআন ১৯ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৪/১৬৪) : বিবাহের কিছুদিন পর
স্বামী জানতে পারে যে স্ত্রী আগে থেকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে অন্য পুরুষের সাথে
বিবাহিতা। এক্ষণে একটি বিবাহ থাকা অবস্থায় অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিত জীবন
অতিবাহিত করার কারণে উক্ত স্বামী ও স্ত্রী গুনাহগার হবে কি? এছাড়া উক্ত স্বামী বা
স্ত্রীর জন্য এখন করণীয় কি?
উত্তর : বৈধ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত প্রচলিত কোর্ট ম্যারেজ শরী‘আতসম্মত
নয়। এরূপ সম্পর্ক যেনার শামিল (তিরমিযী হা/১১০২; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল
জামে‘ হা/২৭০৯)। এক্ষণে পূর্বের বিবাহটি যেহেতু সঠিক ছিল না; সেহেতু পরবর্তী বিবাহ
ও সংসারের কারণে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু স্ত্রীর পূর্বের কর্মকান্ডের জন্য তাকে
অনুতপ্ত হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত
হা/২৩৬৩)। আর যদি বৈধ অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রথম বিবাহ হয়ে থাকে, তবে
পরবর্তী বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পূর্বের স্বামীর কাছ থেকে বিধি
মোতাবেক তালাক নিয়ে নতুনভাবে বর্তমান স্বামীর সাথে বিবাহ পড়াতে হবে।
প্রশ্ন (৫/১৬৫) : জনৈক ব্যক্তি তার
সন্তানকে নিজের সন্তান হিসাবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় সন্তানও পিতাকে
পিতা হিসাবে স্বীকার করে না। এতে সন্তান কি গুনাহগার হবে?
উত্তর : এজন্য উভয়েই গোনাহগার হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘রক্ত সম্পর্ক
ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম
হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিয়ো না (অর্থাৎ তাকে অস্বীকার করো না)। কারণ যে লোক নিজের পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেয়, সে কুফরী করে’ (বুখারী হা/৬৭৬৮; মুসলিম হা/৬২; মিশকাত হা/৩৩১৫)।
প্রশ্ন (৬/১৬৬) : অনেক সময় মানুষ মৃত
ব্যক্তিকে স্বপ্ন দেখে। যারা সেখানে তাদের অবস্থা, জীবিতদের প্রতি নানা উপদেশ,
সতর্কবাণী ইত্যাদি দিয়ে থাকে। স্বপ্নের মাধ্যমে এসব খবরাখবরের কোন ভিত্তি আছে কি?
এছাড়া মৃত্যুর পর মানুষ স্বপ্নে দেখা দিতে পারে কি?
উত্তর : পরহেযগার ও সত্যবাদী মানুষের স্বপ্ন সত্য হ’তে পারে। কারণ রাসূল
(ছাঃ) বলেন, যখন ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হবে, তখন (খাঁটি) মুসলিমের অধিকাংশ স্বপ্ন
মিথ্যা ও ভ্রান্ত হবে না। তোমাদের মধ্যকার অধিক সত্যবাদী লোক সর্বাধিক সত্য
স্বপ্নদ্রষ্টা হবে। তিনি বলেন, মানুষের স্বপ্ন তিন ধরনের হয়ে থাকে (ক) ভাল স্বপ্ন,
যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ বহন করে (খ) কষ্টদায়ক স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে
হয় (গ) মনের মধ্যে উদ্ভূত কল্পনা, যা স্বপ্নে দেখা যায় (মুসলিম হা/২২৬৩)।
আর স্বপ্নে মৃত
ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষণে যদি কেউ স্বপ্নে এরূপ মৃত ব্যক্তিকে
ভাল অবস্থায় দেখে বা মৃত ব্যক্তিকে ভাল কোন সংবাদ বা উপদেশ দিতে শুনে, তবে আল্লাহর
শুকরিয়া করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমরা কেউ ভালো স্বপ্ন দেখবে,
তখন আলহামদুলিল্লাহ পড়বে এবং সে নিজের প্রিয় লোকদের কাছে তা বলতে
পারে (বুখারী হা/৬৯৮৫)।
আর যদি মৃত ব্যক্তিকে
খারাপ অবস্থায় দেখা যায় বা সে খারাপ সংবাদ প্রদান করে তাহ’লে বুঝতে হবে যে, এই
স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। এক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা হ’ল, বাম দিকে
তিনবার থুক মেরে ‘আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম’ বলবে এবং পার্শ্ব
পরিবর্তন করবে (মুসলিম হা/২২৬২, মিশকাত হা/৪৬১৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে দাঁড়িয়ে
(দু’রাক‘আত) ছালাত আদায় করবে এবং কাউকে বলবে না। কারণ এই স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করে
না (মুসলিম হা/২২৬১-৬৩; বুখারী হা/৭০৪৪; মিশকাত হা/৪৬১২)।
জাবির (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর খুৎবাদানরত অবস্থায় জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার ঘাড়ে আঘাত করার ফলে আমার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়ে গেল। তারপর আমি তা ধরে এনে পুনরায় আমার ঘাড়ে স্থাপন করলাম। রাসূল (ছাঃ) হেসে
উঠে বললেন, ঘুমের মধ্যে তোমাদের কারো সাথে শয়তান খেলা করলে সে যেন তা লোকের কাছে
না বলে (মুসলিম হা/২২৬৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৯১২; মিশকাত হা/৪৬১৬)।
উল্লেখ্য যে, খারাপ
স্বপ্ন দেখলে বা মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে ছাদাক্বা করার যে প্রথা সমাজে চালু
আছে তা বিদ‘আত। এগুলো থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। বরং মৃত ব্যক্তির মাগফেরাতের জন্য
যেকোন সময় দো‘আ ও ছাদাক্বা করা যায় (মুসলিম হা/৯২০, ১৬৩১; বুখারী হা/১৩৮৮;
মিশকাত হা/১৬১৯, ১৯৫০)।
প্রশ্ন (৭/১৬৭) : আমাদের এলাকায় খুৎবার
পূর্বে একজন বাংলায় বয়ান করেন। অতঃপর খত্বীব ছাহেব কেবল আরবী খুৎবা পাঠ করেন। এটি
শরী‘আতসম্মত হবে কি?
উত্তর : জুম‘আর খুৎবা মুছল্লীদের মাতৃভাষা বা তাদের
বোধগম্য ভাষায় হ’তে হবে। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, ‘আমরা তোমার নিকটে
‘যিকর’ (কুরআন-হাদীছ) নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদের নিকটে ঐ সকল বিষয় ব্যাখ্যা
করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা
করে’ (নাহল ১৬/৪৪)। অতএব নবীর ওয়ারিছ হিসাবে প্রত্যেক আলেম ও খত্বীবের
দায়িত্ব হ’ল মুছল্লীদের নিজস্ব ভাষায় কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানসমূহ খুৎবায়
ব্যাখ্যা করে শুনানো।
রাসূল (ছাঃ) আরবীভাষী
ছিলেন বলেই তিনি আরবীতে খুৎবা দিতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন বিশ্বনবী ও তাঁর দ্বীন ছিল
বিশ্বজনীন। অতএব বিশ্বের সর্বত্র সবধরনের মুছল্লীর ভাষায় তাঁর দ্বীনের ব্যাখ্যা
করা খত্বীবদের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু এদেশে খত্বীবগণ আরবীতে খুৎবা দেন, যা
একেবারেই খুৎবার উদ্দেশ্য বিরোধী। তাই মুছল্লীদের চাহিদা বুঝতে পেরে তারা খুৎবার
পূর্বে বাংলায় বয়ানের নামে তৃতীয় আরেকটি খুৎবা চালু করেছেন, যা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত।
আর প্রশ্নমতে খুৎবার পূর্বে খত্বীব ভিন্ন অপর কোন ব্যক্তি যে বয়ান করেন, তা অবশ্যই
পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন (৮/১৬৮) : ৭৮৬-এর শারঈ ভিত্তি কী?
উত্তর : এর কোন শারঈ কোন ভিত্তি নেই। আরবী হরফসমূহের আবজাদী তথা
সংখ্যাতাত্ত্বিক গণনা পদ্ধতিতে ‘বিসমিল্লাহ্’-এর ১৯টি হরফের মান যোগ করে ৭৮৬
বানানো হয়েছে। যেমন- আলিফে ১, বা-তে ২, জীমে ৩, দালে ৪, মীমে ৪০, নূনে ৫০, গাইনে
১০০০ ইত্যাদি। এভাবে ৭৮৬ সংখ্যা দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা জায়েয নয়। কেননা
‘বিসমিল্লাহ’ কুরআনের আয়াতাংশ (নমল ৩০) এবং আল্লাহ প্রদত্ত একটি ইবাদতের
শব্দ। আল্লাহর সাহায্য কামনা করে সকল শুভ কাজে ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যবহার করা অন্যতম
ইবাদত। সুতরাং ‘বিসমিল্লাহ্’-র পরিবর্তে ৭৮৬ ব্যবহার করলে তা ইবাদত হিসাবে গণ্য
হবে না এবং তাতে কোন নেকী হবে না।
যদি বলা হয়, এর দ্বারা
‘বিসমিল্লাহ’-কে যত্রতত্র অমর্যাদাকর ব্যবহার থেকে রক্ষা করা যায়, সেটি ভুল হবে।
বরং ‘বিসমিল্লাহ’ বলেই এর মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। অস্পষ্ট সংকেতে উচ্চারণে বরং এর
প্রতি অসম্মান করা হবে।
প্রশ্ন (৯/১৬৯) : শরী‘আতে তালাকপ্রাপ্তা
বা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কার? বিশেষত পিতা-মাতার অবর্তমানে সে কারু
নিকটে ভরণ-পোষণের খরচ পাওয়ার অধিকার রাখে কি?-
উত্তর : তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণ ও তত্ত্বাবধানের প্রধান
দায়িত্ব তার সন্তানদের। অতঃপর তার ভাইদের। অতঃপর সর্বাধিক নিকটবর্তী আত্মীয়গণ।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের
অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’ (আবুদাঊদ
হা/৩৫৩০, মিশকাত হা/৩৩৫৪)। এছাড়া নিকটতম রক্তসম্পর্কীয়দের মধ্যে ভাইয়ের গুরুত্ব
সর্বাধিক। জাবের (রাঃ) তার ছোট বোনদের দেখাশুনার জন্য একজন তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে
বিবাহ করলে রাসূল (ছাঃ) তার প্রশংসা করেন (বুখারী হা/৬৩৮৭; মুসলিম হা/৭০১৫;
মিশকাত হা/৩০৮৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার তিনটি মেয়ে বা তিনটি বোন থাকে অথবা দু’টি
মেয়ে বা দু’টি বোন থাকে। আর সে যদি তাদের সাথে সব সময় সদাচরণ করে এবং তাদের বিষয়ে
আল্লাহকে ভয় করে, তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত (আহমাদ হা/১২৬১৫; ছহীহাহ
হা/২৯৫)। রাসূল (ছাঃ) বোনের মানত ভাই পূরণ করবে মর্মে নির্দেশনা দিয়েছেন (নাসাঈ
হা/২৬৩২; আহমাদ হা/২১৪০)। তবে ভাই বা রক্তসম্পর্কিত নিকটাত্মীয় না থাকলে
সমাজ বা সরকার তাদের দায়িত্ব বহন করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তারা ঝগড়া করে,
তাহ’লে সরকার ঐ ব্যক্তির অভিভাবক হবে, যার কোন অভিভাবক নেই’ (আবুদাঊদ
হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১)।
প্রশ্ন (১০/১৭০) : শাড়ি, সালোয়ার-ক্বামীছ
ইত্যাদি পোষাক পরা যাবে কি?
উত্তর : শালীনভাবে পূর্ণ পর্দার মধ্যে এসব পোষাক পরিধানে কোন বাধা নেই।
আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের উপর পোষাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের
লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি বেশভূষার উপকরণ সমূহ। তবে আল্লাহভীতির
পোষাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ
করে’(আ‘রাফ ৭/২৬)। মূলতঃ অশালীন ও যৌন উদ্দীপক যেকোন পোষাক পরিধান করা
হারাম (মুসলিম হা/২১২৮, মিশকাত হা/৩৫২৪)। নারী-পুরুষের পোষাক এমন হবে যাতে
নিম্নোক্ত চারটি মূলনীতি থাকবে। (১) দেহের গোপনীয় স্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট না
হওয়া (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪)। (২) ঢিলাঢালা, ভদ্র ও মার্জিত
হওয়া (আ‘রাফ ৭/২৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮)। (৩) অমুসলিমদের সদৃশ না
হওয়া (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। (৪) অহংকার প্রকাশ না
পাওয়া (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩১১-১৪, ৪৩২১; নাসাঈ, ইবনু মাজাহ
হা/৪৩৮১; দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৪৭)।
প্রশ্ন (১১/১৭১) : জনৈক আলেম বলেন, রাসূল
(ছাঃ) প্রথম জীবনে ১ম রাক‘আত থেকে উঠার সময় জালসায়ে ইস্তিরাহাত না করে সরাসরি
দাঁড়িয়ে যেতেন। কিন্তু জীবনের শেষভাগে বয়স বৃদ্ধির কারণে তা করতেন। একথার সত্যতা
আছে কি?
উত্তর : কতিপয় প্রাচীন ও সমকালীন বিদ্বান এমন মন্তব্য
করেছেন (মুগনী ১/৩৮১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৮৩)। তবে সরাসরি এ মর্মে
কোন বর্ণনা নেই। বরং ছাহাবীগণ বলেন, ‘ছালাতের মধ্যে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেজোড়
রাক‘আতে পৌঁছতেন, তখন দাঁড়াতেন না যতক্ষণ না সুস্থির হয়ে বসতেন’ (বুখারী
হা/৮২৩; মিশকাত হা/৭৯৬, অনুচ্ছেদ-১০; নায়ল ৩/১৩৮)। ইসহাক্ব বিন রাহ্ওয়াইহ বলেন,
যুবক হৌক বা বৃদ্ধ হেŠক রাসূল (ছাঃ) থেকে এ সুন্নাত জারী আছে যে, তিনি প্রথমে
মাটিতে দু’হাতে ভর দিতেন। অতঃপর দাঁড়াতেন। দশজন ছাহাবী কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে
সত্যায়ন প্রাপ্ত আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) প্রদর্শিত ছালাতের প্রসিদ্ধ হাদীছেও এর
স্পষ্ট দলীল রয়েছে (বুখারী, ছিফাতু ছালাতিন্নবী, পৃঃ ১৩৬-৩৭ টীকা; তিরমিযী,
আবুদাঊদ হা/৭৩০; নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০১; ইরওয়া হা/৩০৫, ৩৬২; ২/১৩, ৮২-৮৩ পৃঃ)।
এছাড়া ‘হাতের উপরে ভর
না দিয়ে তীরের মত সোজা দাঁড়িয়ে যেতেন’ বলে ‘ত্বাবারাণী কাবীরে’ বর্ণিত হাদীছটি
‘মওযূ’ বা জাল এবং উক্ত মর্মে বর্ণিত সকল হাদীছই ‘যঈফ’ (ছিফাত, ১৩৭ পৃঃ;
সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬২, ৯২৯, ৯৬৭)।
প্রশ্ন (১২/১৭২) : ‘আহলেহাদীছদের স্বভাব
হবে এই যে, তারা কোন কাজের ক্ষেত্রে বলবে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন তাই এই কাজটি করো,
রাসূল (ছাঃ) এভাবে করতেন তাই এভাবে করো’। উপরোক্ত কথাটি কি হাদীছ না কোন মনীষীর
উক্তি?
উত্তর : উপরোক্ত বর্ণনাটি রাসূলের নয় বরং ইমাম বুখারী ও মুসলিমের উস্তাদ
ইবরাহীম বিন মূসা (রহঃ)-এর। রাসূল (ছাঃ) একটি হাদীছে বলেন, শেষ যামানায় আমার
উম্মতের মধ্যকার একটি দলকে পূর্ববর্তীদের ন্যায় ছওয়াব প্রদান করা হবে। তারা
অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং ফিৎনাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে (আহমাদ, মিশকাত
হা/৬২৮০; ছহীহাহ হা/১৭০০)। তখন ইবরাহীম বিন মূসাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল তারা কারা?
তিনি বললেন, ‘তারা আহলেহাদীছ। তারা বলে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এটি কর। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন, এটি করো না (অর্থাৎ তারা মানুষকে রাসূল (ছাঃ)-এর আদিষ্ট পথে চলার জন্য
আহবান জানাবে)’ (সুয়ূতী, মিফতাহুল জান্নাহ, পৃ. ৬৮)।
প্রশ্ন (১৩/১৭৩) : ফাসেক-ফাজের হওয়া
সত্ত্বেও বিত্তবান হওয়ায় কাউকে মসজিদ কমিটির সভাপতি বা সদস্য বানানোয় শরী‘আতে কোন
বাধা আছে কি?
উত্তর : ফাসেক-ফাজের লোকদের ইমাম, নেতা বা মসজিদের সভাপতি বানানো ঊচিৎ নয়।
আল্লাহ বলেন, আল্লাহর মসজিদ সমূহ কেবল তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ ও বিচার দিবসের
উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। যারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না। নিশ্চয়ই তারা সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত
হবে’ (তওবাহ ৯/১৮)। জনৈক ইমাম মসজিদে কিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলে
পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ) তাকে ইমামতি করতে দেননি (আবুদাউদ হা/৪৮১;
মিশকাত হা/৭৪৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৮)। যা প্রমাণ করে যে, ফাসেক লোকদের নেতা
বানানো সমীচীন নয় (ইবনু তায়মিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৩/৩৫৬)। তবে ফাসেক-ফাজের
লোক যদি ক্ষমতা বলে নেতা হয়ে যায়, তাহ’লে শরী‘আতসম্মত কাজে তাদের আনুগত্য করা
যাবে। যেমনভাবে ইবনু ওমর (রাঃ) হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন এবং
তার পিছনে ছালাত আদায় করেছিলেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/২৫৩)।
প্রশ্ন (১৪/১৭৪) : হাদীছে বর্ণিত
‘নারদাশীর’ খেলা দ্বারা নববী যুগে এবং বর্তমান যুগে কোন খেলাকে বুঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘নারদাশীর’ অনারব শব্দ। যা প্রাচীন পারস্য ও শামের লোকেরা আবিষ্কার
করে। নারদাশীর বলতে সে সকল খেলাকে বুঝায় যাতে কাঠ, হাড় বা প্লাস্টিকের তৈরী বাক্স
কিংবা চৌকো (dice) রয়েছে। যেমন পাশা, লুডু, দাবা, শতরঞ্জ প্রভৃতি, যা মূলতঃ ভাগ্য
ও অনুমাননির্ভর (লিসানুল ‘আরাব ৩/৪২১; আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব ২/৯১২)। এসব
খেলার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা সবই হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি
নারদাশীর খেলায় অংশগ্রহণ করল, সে নিজের হস্ত শূকরের রক্তে রঞ্জিত
করল’ (মুসলিম হা/২২৬০; মিশকাত হা/৪৫০০)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি
নারদাশীর খেলল, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল’ (আবুদাউদ হা/৪৯৩৮;
মিশকাত হা/৪৫০৫)। একদা আলী (রাঃ) একদল ব্যক্তিকে শতরঞ্জ খেলতে দেখে বললেন, এসব
মূর্তি নিয়ে তোমরা মত্ত হয়ে উঠেছ কেন? (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/২৬৬৮২;
বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৬০৯৭, সনদ হাসান; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ৬/৬৩)।
আবুল ওয়ালীদ আল-বাজী এই
নিষেধাজ্ঞার কারণ সম্পর্কে বলেন, এসব খেলা মানুষকে প্রায়শই আল্লাহর স্মরণ থেকে
গাফেল রাখে। এতে দ্বীন ও দুনিয়ার কোন উপকারিতা নেই; বরং এর পরিণামে মানুষ জুয়া
খেলা, মিথ্যা শপথ এবং ছালাত পরিত্যাগে অভ্যস্ত হয় (আল-মুনতাক্বা শারহুল
মুওয়াত্ত্বা ৭/২৭৮)। বর্তমান যুগে তাস, ক্যাসিনো, ব্রীজ প্রভৃতি খেলাও একই
পর্যায়ভুক্ত। টাকার হারজিত না থাকলেও এসব খেলা পরিত্যাজ্য। কেননা এগুলোর প্রকৃতি ও
কুফল একই। সুতরাং ঈমানদারের জন্য এ জাতীয় সময় অপচয়কারী এবং আল্লাহ থেকে বিমুখকারী
খেলা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ‘জুয়া ও নারদাশীর খেলা
হারাম’ অনুচ্ছেদ ৮/১০৮)।
প্রশ্ন (১৫/১৭৫) : তিন ছেলে-মেয়ে থাকা
অবস্থায় জনৈক ব্যক্তি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই ২য় বিবাহ করেছে। এটা শরী‘আতসম্মত হয়েছে
কি? এক্ষণে প্রথমা স্ত্রী ও তার সন্তানরা দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে পিতাকে
বাধ্য করতে পারবে কি?
উত্তর : শারঈ দৃষ্টিতে স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের জন্য পূর্ব স্ত্রীর অনুমতি
গ্রহণ আবশ্যক নয়। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম পুরুষকে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অনুমতি
দিয়েছেন (নিসা ৪/৩)। তবে বিবাহ করার চেয়ে স্ত্রীদের মাঝে ইনছাফ করার বিষয়টি
বেশী যরূরী ও কঠিন। এজন্য একাধিক বিবাহের অনুমতি থাকলেও সে ব্যাপারে ইসলাম যথেষ্ট
শর্তারোপ করেছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘কারো নিকট যদি দু’জন স্ত্রী থাকে আর সে
তাদের মাঝে ইনছাফ না করে, তাহ’লে সে ক্বিয়ামতের দিন এক অঙ্গ পতিত অবস্থায়
উঠবে’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৩২৩৬)। অতএব পারিবারিক শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার
স্বার্থে পূর্ব স্ত্রীর সম্মতি গ্রহণ করা উত্তম। আর স্বামীকে দ্বিতীয় স্ত্রী তালাক
দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্য করা বৈধ হবে না।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : আমরা জানি মূর্তি
বানানো হারাম। এক্ষণে বর্তমানে যে রোবট বানানো হচ্ছে, এটা মূর্তি তৈরীর নামান্তর
হবে কি?
উত্তর : যদি রোবট হুবহু প্রাণীর আকৃতি বিশিষ্ট হয়, তাহ’লে তা মূর্তি হিসাবে
গণ্য হবে, যা তৈরী করা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, যারা ছবি/মূর্তি তৈরী
করে, তারা ক্বিয়ামতের দিন কঠিন আযাবপ্রাপ্ত হবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি
করেছিলে তা জীবিত কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৯২ ‘পোষাক’ অধ্যায়, ‘ছবি
সমূহ’ অনুচ্ছেদ)। তবে সরাসরি প্রাণীর আকৃতি বিশিষ্ট না হ’লে কোন দোষ নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ২/২৭৮-২৭৯; আল-মাওসূআ‘তুল ফিক্বহিইয়াহ ৭/৮)।
প্রশ্ন (১৭/১৭৭) :
নিম্নাঙ্গে হাত লাগলে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যায় কি? গোসলের সময় ওযুর পর লজ্জাস্থানে হাত
পড়লে কি পুনরায় ওযূ করতে হবে?
-রেযাউল করীম, দুর্গাপুর, রাজশাহী।
উত্তর : সাধারণভাবে লজ্জাস্থানে স্পর্শে ওযূ ও ছালাত নষ্ট হয়
না (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩২০)। যে সকল হাদীছে লজ্জাস্থান স্পর্শে ওযূ
নষ্ট হবে বা ওযূ করতে হবে বলা হয়েছে (আহমাদ, ইরওয়া হা/১১৬, ১১৭; ছহীহ ইবনু
হিববান হা/১১১৮, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৩, মিশকাত হা/৩৯০), তার ব্যাখ্যা হ’ল,
উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করা (টীকা দ্রঃ মিশকাত হা/৩২০; উছায়মীন, শারহুল
মুমতে‘ ১/২৮৪ পৃঃ, আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১০৩ পৃ.)। সুতরাং সাধারণ স্পর্শে ওযূ
ভঙ্গ হবে না এবং পুনরায় ওযূ করতে হবে না।
প্রশ্ন (১৮/১৭৮) : ছহীহ ইবনু হিববান এবং
ছহীহ ইবনু খুযায়মার সকল হাদীছ কি ছহীহ?
উত্তর : ছহীহায়েনের পর বিশেষভাবে ছহীহ হাদীছ সংকলনের জন্য স্বতন্ত্র
দু’টি গ্রন্থ হ’ল ছহীহ ইবনু খুযায়মা (পূর্ণ নাম-
مختصر المختصر من المسند الصحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم)
এবং ছহীহ ইবনে হিববান (পূর্ণ নাম : المسند الصحيح على التقاسيم والأنواع)।
তবে এই গ্রন্থদ্বয়ের সকল হাদীছ ছহীহ নয়। বরং কিছু হাদীছ যঈফ ও জাল রয়েছে। ভাষ্যকার
ড. মুহাম্মাদ মুছতফা আ‘যমী বলেন, ছহীহ ইবনু খুযায়মা ছহীহায়েনের মত নয় যে এর
ব্যাপারে বলা যাবে এর সকল হাদীছই ছহীহ। বরং সেখানে ছহীহ পর্যায়ভুক্ত নয় এরূপ
হাদীছও রয়েছে। কেবল ছহীহ বা হাসানই নয়। বরং যঈফ হাদীছও রয়েছে। তবে তা এ গ্রন্থে
উল্লেখিত ছহীহ ও হাসান হাদীছের তুলনায় খুব কম। আর জাল এবং অতি দুর্বল হাদীছের
সংখ্যাও প্রায় বিরল (তাহকীক ইবনু খুযায়মা ১/২২)। ইমাম সুয়ূতী বলেন,
ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ বিশুদ্ধতার দিক থেকে ইবনু হিববানের চেয়ে অগ্রগণ্য। কেননা তিনি
অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং সনদের ব্যাপারে সামান্য আপত্তি পেলেই তাকে ছহীহ
বলা থেকে বিরত থেকেছেন (তাদরীবুর রাবী ১/১১৫)। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ
গ্রন্থের বৃহত্তর অংশই হারিয়ে গেছে। আহমাদ শাকের, আলবানী, শু‘আইব আরনাঊত, ড.
মুছত্বফা আ‘যমী প্রমুখ মুহাদ্দিছ উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের তাহকীক সম্পন্ন করেছেন এবং
ছহীহ ও যঈফ হাদীছসমূহ বাছাই করেছেন।
প্রশ্ন (১৯/১৭৯) : আমরা ৫ বোন ১ ভাই।
পিতা ভাইয়ের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডিপিএস, ব্যাংক ব্যালান্সের নমিনী এবং সমুদয়
জমিজমা ভাইয়ের নামে লিখে দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভাই এখন সেগুলির ভাগ অন্য কাউকে
দিতে অস্বীকার করছে। এক্ষণে এরূপ অন্যায় কর্মের জন্য পিতা না ভাই দায়ী হবেন?
উত্তর : ওয়ারিছগণ কে কতটুকু পাবে তা স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারণ করে
দিয়েছেন (নিসা ৪/৭, ১১)। সুতরাং বণ্টনের ক্ষেত্রে উক্ত নীতির ভিত্তিতেই ভাগ
করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন কমবেশী করা নিঃসন্দেহে কাবীরা গুনাহ এবং তা হক বিনষ্টের
শামিল। প্রশ্ন অনুযায়ী পিতা ও ভাই উভয়ে দায়ী হবে। বান্দার হক বিনষ্টের পরিণাম
সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ যমীন যুলুম
করে নেয়, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক যমীন বেড়ী পরানো হবে’ (মুত্তাফাক্ব
আলাইহ, মিশকাত হা/২৯৩৮)। অন্য হাদীছে এসেছে, ক্বিয়ামতের দিন ঐ মাটির বোঝা তার
গর্দানে চাপিয়ে দেওয়া হবে’ (আহমাদ, ছহীহাহ হা/২৪২)।
এক্ষণে নিজেকে ও পিতাকে
বাঁচানোর জন্য উক্ত সম্পদ এককভাবে ভোগকারী ভাইয়ের কর্তব্য হবে শরী‘আত সম্মতভাবে
পুরো সম্পদ হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া এবং পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
এর ফলে পিতার উক্ত গোনাহ ক্ষমা হবে ইনশাআল্লাহ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৯৮;
মিশকাত হা/২৩৫৪; মির‘আত ৮/৬১)।
প্রশ্ন (২০/১৮০) : অসুস্থতার কারণে
তায়াম্মুম করলে পুরোপুরি পবিত্রতা অর্জন হয় কি? এর মাধ্যমে ছালাত-ছিয়াম আদায় ও
কুরআন স্পর্শ করে পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : করা যাবে। ওযূর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে যে সকল কাজ করা যাবে,
তায়াম্মুম করেও সে সকল কাজ করা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি পানি না পাও, তাহ’লে
পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর’ (নিসা ৪/৪৩)। অত্র আয়াতে আল্লাহ্ পানির
বিকল্প হিসাবে পবিত্র মাটির কথা উল্লেখ করেছেন।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত
পানি না পায়’ (আবুদাঊদ হা/৩৩২; মিশকাত হা/৫৩০)। রাসূল (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে
লোকদের সঙ্গে ছালাত আদায় না করে আলাদা থাকতে দেখে বললেন, হে অমুক! লোকদের সঙ্গে
ছালাত আদায় করতে কিসে তোমায় বাধা দিল? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি
অপবিত্র (সহবাস বা স্বপদোষের কারণে) অবস্থায় আছি, অথচ পানি পাইনি। তিনি বললেন,
তুমি মাটি ব্যবহার কর, তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট (বুখারী হা/৩৪৮; মিশকাত
হা/৫২৭; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৬৭)।
প্রশ্ন (২১/১৮১) : আয়াতুল কুরসী পাঠ করে
বুকে হাত বুলানো যাবে কি?
উত্তর : এ মর্মে কোন দলীল নেই। বদরুদ্দীন আয়নী হানাফী ইমাম বুখারী বর্ণিত
একটি হাদীছ (বুখারী, হা/৫৭৪৭)-এর উপর কিয়াস করে যেকোন দো‘আ পাঠ করে শরীরে হাত
বুলানোকে জায়েয বলেছেন (উমদাতুল ক্বারী শরহ বুখারী ২১/২৭০), যা গ্রহণযোগ্য
নয়। বরং এক্ষেত্রে শরী‘আত নির্দেশিত আমল করাই যথেষ্ট হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া
জান্নাতে প্রবেশ করতে তার কোনই বাধা থাকে না’ (নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮; মিশকাত
হা/৯৭৪; ছহীহাহ হা/৯৭২)। এছাড়া শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য
একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না
পারে’ (বুখারী হা/৩২৭৫; মিশকাত হা/২১২৩)।
প্রশ্ন (২২/১৮২) : বর্তমানে বেশী লাভের
উদ্দেশ্যে আখের গুড়ে ব্যাপকভাবে চিনি মিশানো হচ্ছে। অন্যদিকে পিওর গুড় বানাতে গেলে
বাজারে টেকা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষণে বাধ্যগত অবস্থায় কিছুটা চিনি মিশানো যাবে কি?
উত্তর : এমতাবস্থায় ক্রেতাকে পরিষ্কারভাবে চিনি মিশ্রণের বিষয়টি জানাতে
হবে। নচেৎ তা প্রতারণা হিসাবে গণ্য হবে, যা হারাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন একটি
খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি তার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলে তাঁর
হাত ভিজে গেল। তিনি বিক্রেতাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।
রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তাহ’লে তুমি কেন ভেজা অংশটি উপরে রাখলে না? মনে রেখ, যে
প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/৩৫২০)।
প্রশ্ন (২৩/১৮৩) : আগাম জান্নাত পাওয়ার
সুসংবাদ পাওয়ার পর আলী (রাঃ) ছালাত পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। কেননা জান্নাতে
ছালাতের কোন প্রয়োজন থাকবে না। কিন্তু ছালাতের সময় তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না।
অতঃপর পথিমধ্যে লোহার আঘাতে তার পিঠে রক্তপাত হ’ল। এরূপ কাহিনীর কোন সত্যতা আছে
কি?
উত্তর : এ মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাছাড়া ছালাত পরিত্যাগের
সিদ্ধান্ত নেন- এমন গর্হিত বক্তব্যই কাহিনীটি বানোয়াট হওয়ার জন্য
যথেষ্ট।
প্রশ্ন (২৪/১৮৪) : রুকূ অবস্থায় মুছল্লীর
দৃষ্টি কোন দিকে থাকবে?
উত্তর : তাশাহহুদ ব্যতীত ছালাতের অন্য সময়ে দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখবে।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন কা‘বা ঘরে ঢুকে ছালাত আদায় করলেন, তখন তাঁর
দৃষ্টি ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সিজদার স্থান থেকে
সরেনি (হাকেম হা/১৭৬১; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩০১২;
ছিফাতু ছালাতিন নবী (ছাঃ) ১/৬৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন রুকূ করতেন,
মাথা উপরেও করতেন না এবং নীচুও করতেন না। বরং তার মাঝামাঝি রাখতেন (মুসলিম
হা/৪৯৮, মিশকাত হা/৭৯১)।
প্রশ্ন (২৫/১৮৫) : শিশুদেরকে নিয়ন্ত্রণে
আনতে অনেক সময় মিথ্যা কথা বলা হয়। যেমন ‘ঘুমাও, নইলে বাঘে খাবে’ অথবা খাও তাহ’লে
বেড়াতে নিয়ে যাব প্রভৃতি। এরূপ মিথ্যা বলা যাবে কি?
উত্তর : বাচ্চাকে থামানোর নিয়তে এসব বলায় কোন দোষ নেই। যেমন অনর্থক বা
সংকল্পহীন কসমের কোন কাফফারা নেই (বাক্বারাহ ২/২২৫; আবুদাঊদ হা/৩২৫৪, মিশকাত
হা/৩৪১৭, ঐ মিরক্বাত)। তবে যদি মনের সংকল্প অনুযায়ী হয় এবং সত্যিকারের ধোঁকা
দেওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা মিথ্যা ও পাপ হিসাবে গণ্য হবে। আব্দুল্লাহ বিন আমের
(রাঃ) বলেন, ‘একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন। নবী করীম (ছাঃ) সে সময়ে আমাদের
বাড়ীতে ছিলেন। তিনি ডাকার সময় বললেন, ‘বাবা! এদিকে এসো, তোমাকে একটি জিনিস দিব’।
তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে (ইবনে আমেরের মা) বললেন, ‘তুমি কিছু দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে
ডাকনি’? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি ওকে খেজুর দিব’। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন,
‘সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহ’লে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার
পাপ লিপিবদ্ধ হ’ত’ (আবুদাঊদ হা/৪৯৯১; মিশকাত হা/৪৮৮২; ছহীহাহ হা/৭৪৮)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ যদি কোন শিশুকে বলে, ‘এসো এটা নাও’।
অতঃপর তা না দেয়, তাহ’লে তা মিথ্যাচার হিসাবে গণ্য হবে’ (আহমাদ হা/৯৮৩৫;
ছহীহুত তারগীব হা/২৯৪২)।
প্রশ্ন (২৬/১৮৬) : ক্বিয়ামতের দিন রাসূল
(ছাঃ)-এর শাফা‘আত কি কেবল কবীরা গুনাহগারদের জন্য হবে? যদি তাই হয় তবে ক্বিয়ামতের
দিন রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না’ বলার কারণ কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত মূলতঃ মুসলিম উম্মাহর কাবীরা গোনাহগারদের
জন্য (আবুদাঊদ হা/৪৭৩৯; তিরমিযী হা/২৪৩৫; ইবনু মাজাহ হা/৪৩১০)। তবে এটিই
একমাত্র শাফা‘আত নয়। বরং শাফা‘আতকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। (১) শাফা‘আতে উযমা
বা প্রধান শাফা‘আত, যা রাসূল (ছাঃ) কিয়ামতের দিন সকল মানুষের বিচারের জন্য আল্লাহর
নিকটে করবেন (ইসরা ১৬/৭৯; বুখারী হা/৪৭১৮)। (২) সাধারণ শাফা‘আত, যা
নবী-রাসূল, শহীদ, ফেরেশতা, সৎকর্মশীল ব্যক্তি, আলেম, কুরআন, ছিয়াম ইত্যাদি আল্লাহর
নিকটে করবে (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : নাছের আল-জুদাই‘, আশ-শাফাআতু ইনদা আহলিস
সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ)।
রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত
আরও কয়েকটি কারণে হবে। যেমন- (১) জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশ ও তাদের মর্যাদা
বৃদ্ধি করার জন্য (মুসলিম হা/১৯৭, ৩৩৩, ৯২০; মিশকাত হা/১৬১৯)। (২)
জাহান্নামীদের ক্ষমা করার জন্য (মুসলিম হা/৯৪৮; মিশকাত হা/১৬৬০)। (৩)
জাহান্নামীদের শাস্তি লঘু করার জন্য (বুখারী হা/৩৮৮৫; মুসলিম হা/২১০)। (৪)
তাঁর চাচা আবু তালেবের শাস্তি কমানোর জন্য (বুখারী হা/১৪০৮; মুসলিম হা/২০৯)।
(৫) উম্মতের একদল মানুষকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য (বুখারী
হা/৪৩৪৩, মুসলিম হা/২৮৭)।
যেহেতু রাসূল (ছাঃ)-এর
শাফা‘আতের পরই জান্নাতীদের জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে (মুসলিম হা/১৯৬,
১৯৭), সেকারণ বলা হয়ে থাকে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়া কেউ জান্নাতে
যেতে পারবে না।
প্রশ্ন (২৭/১৮৭) : জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন
সময়ে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বা দরূদ পড়া ইত্যাদি জায়েয হবে কি?
উত্তর : খুৎবা চলাকালে খত্বীবের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপরোক্ত দো‘আসমূহ
পাঠ করায় কোন বাধা নেই। যেমন খুৎবার সময় ইমাম দো‘আ করলে, রাসূল (ছাঃ)-এর নাম নিলে,
আল্লাহ প্রদত্ত বড় কোন নে‘মত অথবা কোন আমলে প্রভূত ফযীলত ইত্যাদি বর্ণনা করলে
প্রত্যুত্তরে নিম্নস্বরে আমীন বলা বা তাসবীহ পাঠ করা যাবে (শায়খ বিন বায,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৪৩)। এমনকি ছালাতরত অবস্থাতে রাসূল (ছাঃ) যখন আল্লাহর বড়ত্ব
বিষয়ক আয়াত অতিক্রম করতেন, তখন সুবহানাল্লাহ বলতেন। যখন প্রার্থনামূলক আয়াত আসত,
তখন প্রার্থনা করতেন। যখন জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত আসলে আল্লাহর
আশ্রয় প্রার্থনা করতেন (মুসলিম হা/৭৭২)। যা মুছল্লীদের জন্যও অনুরূপ পাঠ করা
মুস্তাহাব (শরহ নববী)। অতএব খুৎবার সময় মুছল্লীদের জন্য এরূপ বলায় কোন বাধা
নেই। তবে এ সময় মুছল্লীদের মধ্যে পারস্পরিক ব্যাক্যালাপ নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘জুম‘আর দিন ইমাম খুৎবা দেওয়ার সময় তুমি যদি তোমার সাথীকে বল ‘চুপ থাক’,
তাহ’লে তুমি অনর্থক কথা বললে (বুখারী হা/৯৩৪; মুসলিম হা/৮৫১; মিশকাত হা/১৩৮৫)।
প্রশ্ন (২৮/১৮৮) : বিনিয়োগকারী ও
ব্যবসায়ী উভয়ে সমাঝোতার মাধ্যমে যদি এরূপ চুক্তিতে উপনীত হয় যে, লোকসানের দায় কেবল
ব্যবসায়ীই নিবে বিনিয়োগকারী নয়, তাহ’লে এরূপ চুক্তি করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এরূপ চুক্তি জায়েয হবে না। ইবনু কুদামা বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী
লোকসানের ভাগিদার হবে না। কেবল বিনিয়োগকারী হবে। তবে লাভের ক্ষেত্রে উভয়ে সমঝোতা
মোতাবেক শরীক হবে। এক্ষেত্রে বিদ্বানগণের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমরা জানি
না (ইবনু কুদামা ৫/২৭-২৮, ৫/৪৯, ৫১)।
কেননা লোকসানের ভাগিদার
হ’লে ব্যবসায়ীকে দুই দিক থেকে দায়িত্ব নিতে হয়। প্রথমতঃ সে ব্যবসা পরিচালনা করে,
আবার লোকসানেরও ভাগ বহন করে; যা সুস্পষ্ট যুলুম। সুতরাং উভয়ের সম্মতি থাকলেও এরূপ
চুক্তি জায়েয হবে না, যদি না ব্যবসায়ী অন্যায়ভাবে সম্পদ নষ্ট
করে (আল-মওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৮/৬৪)। আল্লাহ্ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা
একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা
ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঐ সকল শর্ত যা আল্লাহর কিতাবে নেই তা
বাতিল (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৮৭৭)।
প্রশ্ন (২৯/১৮৯) : আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে
১৯-২০ লক্ষ টাকা ঋণ করে নষ্ট করে ফেলেছি। বর্তমানে আমি একটা চাকুরী করে মাসে ২০
হাযার টাকা বেতন পাই। আমাকে এখন পাওনাদার প্রতিদিনই টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। আমি
মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি?
উত্তর : সবকিছু দিয়ে হ’লেও ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বেতন
থেকে প্রতিমাসে কিছু টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করবে। সেটাও সম্ভব না হ’লে ঋণদাতার
নিকট ঋণ মওকূফের জন্য আবেদন করতে হবে। এতে সে সম্মত না হ’লে সমাজের বায়তুল মাল
তহবিল থেকে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কেননা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাতের মালের
অন্যতম হকদার (তওবাহ ৯/৬০)।
অন্যদিকে সক্ষম ঋণদাতা
অক্ষম ঋণগ্রহীতাকে ক্ষমা করে দিলে তার জন্য বিরাট প্রতিদান রয়েছে। আবু ক্বাতাদাহ
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এই কামনা করে যে, আল্লাহ তা‘আলা
তাকে ক্বিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দিবেন, সে যেন অক্ষম ঋণগ্রস্ত
ব্যক্তির জন্য সহজ ব্যবস্থা করে দেয় অথবা ঋণ মওকূফ করে দেয়’ (মুসলিম হা/১৫৬৩;
মিশকাত হা/২৯০২)।
এতদ্ব্যতীত ঋণ পরিশোধের
তাওফীক দানের জন্য আল্লাহর নিকট নিম্নোক্ত দো‘আটি নিয়মিতভাবে পাঠ
করবে।- আল্লা-হুম্মাক্ফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী বেফায্লেকা
‘আম্মান সেওয়া-কা’ (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট কর এবং
তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন কর! রাসূল (ছাঃ) বলেন, এই
দো‘আর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে
দেন’ (তিরমিযী হা/৩৫৬৩; মিশকাত হা/২৪৪৯; ছহীহাহ হা/২৬৬)।
প্রশ্ন (৩০/১৯০) : একটি বইয়ে ক্বিয়ামতের
আলামতের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্বিয়ামতের আগে রোমক তথা খৃষ্টানদের সংখ্যা
বৃদ্ধি পাবে এবং আরবদের সংখ্যা কমে যাবে। এর কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্যটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, এমন
সময় ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে যখন রোমকদের সংখ্যা অধিক হবে (মুসলিম হা/২৮৯৮; আহমাদ
হা/১৮০৫৮)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে
পালিয়ে যাবে। এ কথা শুনে উম্মু শারীক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেদিন আরবের
লোকেরা কোথায় থাকবে? উত্তরে তিনি বললেন, তখন তারা সংখ্যায় কম হবে’ (মুসলিম
হা/২৯৪৫; মিশকাত হা/৫৪৭৭)। কাযী ইয়ায (১০৮৩-১১৪৯ খৃঃ) বলেন, বর্তমান বাস্তবতা
হাদীছটির যথার্থতা প্রমাণ করে। কেননা খৃষ্টানরা শাম থেকে স্পেনের শেষ সীমানা
পর্যন্ত এতটা ছড়িয়ে পড়েছে, যা ইতিপূর্বে কোন জাতির ক্ষেত্রে
ঘটেনি (আল-কাওকাবুল ওয়াহহাজ শরহ মুসলিম ২৬/১২৫)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না সৃষ্টির নিকৃষ্টতম লোকদের উপরে
ব্যতীত (মুসলিম হা/১৯২৪, মিশকাত হা/৫৫১৭, ‘ফিৎনাসমূহ’
অধ্যায়)।
প্রশ্ন (৩১/১৯১) : ছহীফা কয়টি এবং কাদের
উপর তা নাযিল হয়েছিল?
উত্তর : এ ব্যাপারে কুরআন বা ছহীহ হাদীছে কোন স্পষ্ট বর্ণনা নেই। তবে
একটি যঈফ বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, একশ’ ছহীফা ও চারটি কিতাব আল্লাহ
নাযিল করেন। এর মধ্যে ৫০টি শীছ (আঃ)-এর উপর, ৩০টি ইদরীস (আঃ)-এর উপর, ১০টি ইবরাহীম
(আঃ)-এর উপর ও অপর ১০টি নাযিল হয় আদম (আঃ)-এর উপর (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৬১;
বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/২১৫৫; তাফসীর কুরতুবী ১/১৮০; তাফসীর ইবনু কাছীর ২/৪১৯,
সূরা নিসা ১৬৩-১৬৫ আয়াতের আলোচনা দ্রষ্টব্য)। আলবানী, শু‘আইব আরনাউত্ব প্রমুখ
মুহাক্কিক এর সনদকে নিতান্তই যঈফ বলেছেন (যঈফাহ হা/৬০৯০; তাহকীক ছহীহ ইবনু
হিববান হা/৩৬১)। কুরআনে কেবল ইবরাহীম (আঃ) এবং মূসা (আঃ)-এর উপর ছহীফাসমূহ নাযিলের
কথা এসেছে (আ‘লা ৮৭/১৮-১৯)। তবে তার সংখ্যা বলা হয়নি। সুতরাং আমাদেরকে
সাধারণভাবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অগণিত নবী-রাসূলের উপর কিতাব
ও ছহীফা নাযিল করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তোমার (মুহাম্মাদ) প্রতি এই কিতাব নাযিল
করেছেন সত্য সহকারে। যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী। আর তিনি নাযিল
করেছিলেন তাওরাত ও ইনজীল’ (আলে ইমরান ৩/৩)।
প্রশ্ন (৩২/১৯২) : আমাকে নিজ যেলার বাইরে
১৫ দিনের একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমি কি সেখানে
ছালাত ক্বছর করতে পারব, যেহেতু আমাকে চার দিনের অধিক অবস্থান করতে হবে?
উত্তর : উক্ত অবস্থায় ছালাত ক্বছর করা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘সফর অবস্থায়
ছালাতে ‘ক্বছর’ করলে তোমাদের জন্য কোন গোনাহ নেই’ (নিসা ৪/১০১)। আর কুরআন ও
ছহীহ হাদীছে কোথাও সফরের দূরত্ব বা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/১২-১৩; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৪/৩৭৮)। এছাড়া এ
ব্যাপারে বিদ্বানগণ এক মাইল হ’তে ৪৮ মাইল পর্যন্ত বিশ প্রকার বক্তব্য পেশ
করেছেন (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৪/১২২ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৬৩;
বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সফরের ছালাত’ অধ্যায়)।
আর সফরে ক্বছর আদায় করা
উত্তম; তবে বাধ্যতামূলক নয়। ওছমান ও আয়েশা (রাঃ) প্রথম দিকে ক্বছর করতেন ও পরে
পুরা পড়তেন। ইবনু ওমর (রাঃ) জামা‘আতে পুরা পড়তেন ও একাকী ক্বছর
করতেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৪৭-৪৮)।
প্রশ্ন (৩৩/১৯৩) : জনৈক ব্যক্তি বলেন,
কুরআনে যাকাতের যে ৮টি খাতের কথা এসেছে, তদনুযায়ী যাকাতের মাল প্রথমে ৮ ভাগ করতে
হবে। তারপর সম্ভবপর প্রত্যেক খাতে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। কেবল এক বা দুই খাতে
বণ্টন করলে চলবে না। এর সত্যতা আছে কি?
উত্তর : বক্তব্যটি সঠিক নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবালকে ইয়ামনে
পাঠানোর সময় বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে ছাদাক্বা
(যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের
দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে’ (বুখারী হা/১৩৯৫; আবুদাউদ হা/১৫৮৪)। এখানে
একটি মাত্র খাত উল্লেখ করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে, প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কমবেশী
বা খাতের ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন, কুরআনে বর্ণিত খাতগুলির
দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে ৮টি খাতকে সমানভাবে বন্টন করতে হবে; বরং ৮টি খাতের মধ্যে
সীমাবদ্ধ রেখে বন্টন করতে হবে (ইবনু কাছীর, তাফসীর তওবা ৬০ আয়াত)। তবে
ফকীর-মিসকীনকে প্রাধান্য দিবে। যেহেতু আল্লাহ তাদের নাম প্রথমে উল্লেখ
করেছেন (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/২২১)।
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : হিজামাহ করিয়ে
পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে কি?
উত্তর : যেকোন বৈধ কর্মের বিনিময়ে মজুরী গ্রহণ করায় বাধা নেই। ইবনু আববাস
(রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং তাকে মজুরী দিয়েছেন। যদি এটি
হারাম (حَرَامًا) হ’ত বা তিনি নিকৃষ্টخَبِيثًا) ) মনে করতেন, তবে তিনি মজুরী দিতেন
না’ (বুখারী হা/২১০৩; আবুদাঊদ হা/৩৪২৩)। আনাস (রাঃ)-কে শিঙ্গাকারীর উপার্জন
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আবূ ত্বয়বাহ রাসূল (ছাঃ)-কে শিঙ্গা লাগিয়ে দিলে
তিনি তাকে দুই ছা‘ খাদ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুসলিম হা/১৫৭৭)।
অন্যদিকে কিছু কিছু
হাদীছে রাসূল (ছাঃ) শিঙ্গা লাগিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণকে নিকৃষ্ট (كَسْبُ الْحَجَّامِخَبِيثٌ)
বলেছেন (মুসলিম হা/১৫৬৮; মিশকাত হা/২৭৬৩)। অন্য বর্ণনায় তা গ্রহণে
নিষেধ(نَهَىرَسُولُ اللَّهِ صـ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ)
করেছেন (ইবনু মাজাহ হা/২১৬৫)। উক্ত হাদীছ সমূহের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী
বলেন, এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীছসমূহ দ্বারা কাজটির বিনিময় গ্রহণ অপসন্দনীয়
(النهي على التنزيه) বুঝানো হয়েছে (শরহ নববী, উক্ত হাদীছের
ব্যাখ্যা)। অতএব হালাল কর্ম হিসাবে এর বিনিময় গ্রহণ হারাম হবে না (উছায়মীন,
শরহ বুলুগুল মারাম হা/৯১০)।
প্রশ্ন (৩৫/১৯৫) : আমি সাব রেজিষ্ট্রি
অফিসে নকল বিভাগে চাকুরী করি। সরকার আমাদের ভলিউম লেখা তথা প্রতি পৃষ্ঠা লেখার
জন্যে পারিশ্রমিক হিসাবে ৪০ টাকা করে প্রদান করে থাকে। কিন্তু সেটা ৬ মাস বা ১ বছর
পর পর পরিশোধ করে। আর ৪০ টাকা থেকে উপরের মহল ১৫ টাকা করে কেটে রেখে আমাদের ২৫
টাকা হিসাব ভাতা দেয়। সেকারণ আমরা দলীলের অবিকল নকল কপি করার ক্ষেত্রে নকলের
সরকারী ফিসের সাথে অতিরিক্ত কিছু টাকা পারিশ্রমিক হিসাবে নিয়ে থাকি, যা স্থানীয়
অফিস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত। এক্ষণে এই অতিরিক্ত টাকা নেওয়া কি জায়েয হবে কি?
উত্তর : একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের প্রেক্ষাপটে এটি বড় কঠিন বাস্তবতা।
তথাপি ঈমানের দাবী হ’ল অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হ’তে বিরত থাকা। কারণ তা ঘুষ হিসাবে
গণ্য হবে, যা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যাকে আমরা কোন দায়িত্বে নিয়োগ করি, আমরা
তার রূযীর ব্যবস্থা করে থাকি। এর বাইরে যদি সে নেয়, তবে তা খেয়ানত
হবে’ (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮; ছহীহুত তারগীব হা/৭৭৯)। অতএব উক্ত
অর্থ গ্রহণ করা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে করণীয় হ’ল, নিয়মতান্ত্রিকভাবে
উপর মহলের কাছে ন্যায্য অধিকারের দাবী করতে হবে এবং জনগণের উপর যুলুম বন্ধ করতে
হবে। আর স্থানীয় অফিস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পারিশ্রমিক যদি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত
হয়, তাহ’লে তা নেওয়া বৈধ হবে।
প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : জনৈক ব্যক্তি স্ত্রীকে
তালাক দেওয়ার ৩ দিনের মাথায় ফিরিয়ে নেয়। অতঃপর এর প্রায় ২ মাস পর আবার ঝগড়া করে
তালাক দিয়ে পরদিন ফিরিয়ে নেয়। অতঃপর পাঁচ মাস পরে পুনরায় ভীষণভাবে রাগান্বিত হয়ে
স্ত্রীকে বলে ‘তোমাকে ডিভোর্স দিলাম’। এসময় স্ত্রী ঋতুবতী ছিল, যা স্বামীর জানা
ছিল না। এক্ষণে তৃতীয় তালাকটি পতিত হয়েছে কি?-প্রফেসর
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় দুই তালাক পতিত হয়েছে। আর তৃতীয় তালাকটি
ঋতুবতী অবস্থায় দেওয়ার কারণে সেটি পতিত হবে না। কারণ তোহর অবস্থায় তালাক দেওয়াটাই
নিয়ম, হায়েয অবস্থায় নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদেরকে তালাক দাও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য
রেখে এবং ইদ্দত গণনা কর’ (তালাক ৬৫/১)। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) স্বীয় স্ত্রীকে
ঋতুকালীন সময়ে তালাক দেন। তখন ওমর (রাঃ) উক্ত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করেন। তিনি ওমর (রাঃ)-কে বলেন, তুমি আব্দুল্লাহকে বল যেন সে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে
নেয় ও ঘরে রাখে পরবর্তী তুহর পর্যন্ত। অতঃপর সে পুনরায় ঋতুবতী হবে ও পবিত্র হবে।
তখন ইচ্ছা করলে সে তাকে রেখে দিবে অথবা সহবাসের পূর্বেই তালাক দিবে। এটাই হ’ল
তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য ইদ্দত, যা আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন’ (বুখারী
হা/৫২৫১-৫২; মুসলিম হা/১৪৭১; মিশকাত হা/৩২৭৫)। আবুদাঊদ-এর বর্ণনায় এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) স্ত্রীকে আমার নিকটে ফিরিয়ে
দিলেন এবং ‘তিনি এটাকে কিছুই গণ্য করলেন না’ (আবুদাঊদ হা/২১৮৫)। অতএব নিয়ম
বিরুদ্ধভাবে ঋতুবতী অবস্থায় তালাক দেওয়ায় উক্ত তালাক গণ্য হবে না (ইবনু
তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৩/৭৫-৭৬; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/৩৫৯-৬০; ফাতাওয়া
লাজনা দায়েমাহ ২০/৫৮, ফৎওয়া নং ৬৫৪২; বিস্তারিত দ্রঃ ‘তালাক ও তাহলীল’ বই ৩য়
সংস্করণ জানুয়ারী’১৭, পৃঃ ১৮, ৪০-৪১)।
প্রশ্ন (৩৭/১৯৭) : ইদ্দতকালে নারীরা
ছালাত আদায়ের জন্য বেরিয়ে মসজিদে যেতে পারবে কি?
উত্তর : বাধ্যগত কারণ ব্যতীত এসময় বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না (তালাক্ব
৬৫/১; আবুদাউদ হা/২৩০০; মিশকাত হা/৩৩৩২; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৮/১৬৩)। আর
নারীদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা ফরয নয় (আহমাদ
হা/২৭১৩৫, বুখারী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৫৯, ১০৬২)।
প্রশ্ন (৩৮/১৯৮) : পুত্র সন্তান লাভের
জন্য কোন ঝাড়-ফুঁক বা তেল পড়া, পানি পড়া খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : সন্তান দানের মালিক আল্লাহ। অতএব পুত্র সন্তান লাভের জন্য কোনরূপ
ঝাড়-ফুঁক বা তদবীর করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা যাকে ইচ্ছা পুত্র ও
কন্যা যমজ সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ ও
সর্বশক্তিমান (শূরা ৪২/৪৯-৫০)।
অতএব এর জন্য একমাত্র
করণীয় হ’ল একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি
কিছু চাইলে আল্লাহর নিকটেই চাইবে। কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁর নিকটেই চাইবে।
জেনে রেখ! যদি সমস্ত মাখলূক একত্র হয়ে তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করতে চায়, তবুও
আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যতটুকু লিখে রেখেছেন সেটা ছাড়া তারা তোমার কোন উপকার করতে
পারবে না’ (তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২)।
প্রশ্ন (৩৯/১৯৯) : অনেকে বলেন, সূরা বনু
ইসরাঈলের ৮০ আয়াত দ্বারা রাষ্ট্রক্ষমতা প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে। এর সঠিক
ব্যাখ্যা জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। বরং এর অর্থ হ’ল- ‘আর তুমি বল, হে আমার
প্রতিপালক! তুমি আমাকে (ইবাদতে) প্রবেশ করাও যথার্থভাবে এবং সেখান থেকে বের কর
যথার্থভাবে। আর আমাকে তোমার পক্ষ হ’তে সাহায্যকারী শক্তি দাও’ (ইসরা ১৭/৮০)।
এটি সর্বাবস্থায় দো‘আ হিসাবে পাঠ করা যায়। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)
মক্কায় ছিলেন। অতঃপর তাকে মদীনায় হিজরতের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং উক্ত আয়াতটি নাযিল
হয় (ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর)। তবে এর সনদ যঈফ (যঈফ তিরমিযী হা/৬১১,
তিরমিযী হা/৩১৩৯)।
উক্ত আয়াত দ্বারা
ক্ষমতা লাভের জন্য রাসূল (ছাঃ)-কে হিজরত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলাটা ভুল। কারণ
হিজরতের চারমাস পূর্ব থেকেই রাসূল (ছাঃ) সকলকে জানিয়েছিলেন যে, আমাকে তোমাদের
হিজরতের স্থান স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, যা কালো পাথুরে মাটির মাঝে খেজুর বাগিচা
সমৃদ্ধ এলাকা। তখন থেকেই মুসলমানগণ ইয়াছরিবে হিজরত করতে থাকেন। ...এক পর্যায়ে
আবুবকরও ইয়াছরিবে চলে যেতে চান। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, ‘থেমে যাও! আশা
করছি যে, আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে’ (বুখারী হা/২২৯৭; ৩৯০৫)।
অতঃপর হিজরতের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় তিনি হাজূনে দাঁড়িয়ে মক্কাবাসী ও বায়তুল্লাহকে লক্ষ্য করে
বলেন, ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জনপদ ও আল্লাহর নিকট আল্লাহর
মাটিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় মাটি। যদি আমাকে তোমার থেকে বের করে না দেওয়া হ’ত,
তাহ’লে আমি বেরিয়ে যেতাম না’ (তিরমিযী হা/৩৯২৫; ইবনু মাজাহ হা/৩১০৮; মিশকাত
হা/২৭২৫)। এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, মক্কাবাসীদের যুলুমের কারণে এবং আল্লাহর হুকুমে
তিনি হিজরত করেছিলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে নয়। যদিও তিনি আল্লাহর ইচ্ছায়
পরবর্তীতে মদীনায় রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। কারণ তিনি ছিলেন শেষনবী এবং
ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন তার মাধ্যমে করাটা ছিল আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা। আর
রাষ্ট্রক্ষমতা ইসলামী বিধান সমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য নিঃসন্দেহে সহায়ক
শক্তি। কিন্তু সেটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত নয়।
প্রশ্ন (৪০/২০০) : ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক
আমল শুরু করার আগে আমি পীরের মাযারে কয়েক পশু দেওয়ার মানত করেছিলাম। এক্ষণে তা
পুরণ করতে হবে কি?
উত্তর : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে মানত, নযর-নেয়ায করা বা যবেহ করা শিরক।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল ... আর যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের
নামে উৎসর্গ করা হয় এবং তীর্থকেন্দ্রে যে সব পশু যবেহ করা হয়’... (মায়েদা ৩)।
অতএব এক্ষেত্রে মানত পুরণ করতে হবে না (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪২৭-২৮ ‘নযর’
অধ্যায়)।
মার্চ/২০১৮
প্রশ্ন (১/২০১) : মুক্বীম অবস্থায়
ভুলবশতঃ একটানা দু’দিন দু’রাত মোযার উপর মাসাহ করে ওযূ ও ছালাত আদায় করা হয়েছে।
এক্ষণে উক্ত ছালাতগুলি পুনরায় আদায় করতে হবে কি? আর মাসাহের সময়কাল কখন থেকে শুরু
হবে?
উত্তর : এক দিন ও একরাতের ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ মুকীমের জন্য
মোযার উপর মাসাহ করার বিধান একদিন ও একরাত (মুসলিম হা/২৭৬; ইবনু মাজাহ
হা/৫৫৫; মিশকাত হা/৫১৭; ছহীহাহ হা/৩৪৫৫)। আর মাসাহের মেয়াদকাল শুরু হবে মোযার উপর
প্রথম মাসাহ করা থেকে; ওযূ করার সময় থেকে বা ওযূ করার পর প্রথম ওযূ ভঙ্গ হওয়া থেকে
নয়। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, يمسح عليهما مثل ساعته من يومه وليلته ‘যে
সময়ে সে মাসাহ করবে, তখন থেকে একদিন একরাত সে মোযার উপর মাসাহ
করবে’ (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮০৮; আলবানী, সনদ ছহীহ; আলবানী, আল-মাসহু
‘আলাল জাওরাবাইন পৃ. ৯১-৯২; নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৪৮৭; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘
১/২২৬)।
প্রশ্ন (২/২০২) : জনৈক ব্যক্তি বলেন,
আমরা বর্তমান উম্মাহর কেউ আল্লাহর হেদায়াত পাব না। কারণ আল্লাহ শুধুমাত্র
ছাহাবীগণকে হেদায়াত দান করেছিলেন। এর পর থেকে যারা এসেছেন তাদের আল্লাহ কেবল দয়া
দিয়েছেন, হেদায়াত নয়। এক্ষণে দয়া আর হেদায়াত কি ভিন্ন বস্ত্ত?
উত্তর : বক্তব্যটি ভিত্তিহীন। কারণ হেদায়াত কোন সময় বা নির্দিষ্ট একদল
মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। সূরা ফাতিহায় হেদায়াত প্রার্থনা করা হয়েছে, যা কিয়ামতের
আগ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য (ফাতিহা ১/৫)। সূরা বাক্বারার শুরুতে
কুরআনকে আল্লাহভীরুদের জন্য হেদায়াত বলা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২)। কুরআনে
ত্রিশেরও অধিক স্থানে হেদায়াতের কথা বলা হয়েছে, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের
জন্য প্রযোজ্য। দ্বিতীয়তঃ শাব্দিকভাবে দু’টি শব্দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হেদায়াত
অর্থ- পথ প্রদর্শন, দিকনির্দেশনা ইত্যাদি। আর দয়া অর্থ রহমত, অনুগ্রহ, করুণা
ইত্যাদি। উভয়টিই আল্লাহ ছাহাবীগণসহ অন্যান্য সকলকে দান করেছেন।
প্রশ্ন (৩/২০৩) : জিমে গিয়ে শরীর চর্চা
করা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর : জিমে (Gym) গিয়ে শরীর চর্চায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। বরং শরী‘আত
শরীর চর্চার প্রতি উৎসাহিত করেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর
নিকট উত্তম ও অধিকতর প্রিয় দুর্বল মুমিনের চাইতে’ (মুসলিম হা/২৬৬৪; মিশকাত
হা/৫২৯৮)। তবে এমন শরীর চর্চা করা যাবে না যাতে শরী‘আতের কোন বিধানকে অবজ্ঞা করা
হয়। যেমন ছালাতের সময়ের ব্যাপারে খেয়াল না রাখা ও পর্দার ব্যাপারে গুরুত্ব না
দেওয়া, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে শরীর চর্চা করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন (৪/২০৪) : জুম‘আর দিন দো‘আ কবুলের
সময় কখন?
উত্তর : বিদ্বানগণ জুম‘আর দিনে দো‘আ কবুলের সঠিক সময় নিয়ে মতভেদ
করেছেন। এবিষয়ে ৪৩টি মতভেদ উল্লেখিত হয়েছে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার
৪/১৭২-৭৬)। তন্মধ্যে দু’টি মত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও প্রমাণিত (১) ইমাম ছাহেবের
মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত (মুসলিম হা/৮৫৩; মিশকাত
হা/১৩৫৭-৫৮)। (২) আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত (আবুদাউদ হা/১০৪৬;, মিশকাত
হা/১৩৬০; ছহীহাহ হা/২৫৮৩)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জুম‘আর দিনের বার
ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা
করে, তাহ’লে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ
সময়ে অনুসন্ধান করো (আবুদাউদ হা/১০৪৮; ছহীহুত তারগীব হা/৭০৩; বিস্তারিত দ্রঃ
ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৯৯-২০০)। উল্লেখ্য যে, বরকত ও ফযীলতের আশায় কেবল জুম‘আর
রাত্রিকে নির্দিষ্ট করে জাগরণ করা নিষিদ্ধ (মুসলিম হা/১১৪৪; মিশকাত হা/২০৫২;
‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (৫/২০৫) : খত্বীবের জন্য দুই
খুৎবার মাঝে বসার সময় পঠিতব্য কোন দো‘আ আছে কি?
উত্তর : এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ থেকে নির্দিষ্ট কোন দো‘আ বা যিকির
বর্ণিত হয়নি। তবে যেহেতু জুম‘আর দিনের এই সময়টি দো‘আ কবুলের বিশেষ সময়ের
অন্তর্ভুক্ত (মুসলিম হা/৮৫২; আহমাদ হা/৭৭৫৬), তাই মুছল্লী বা ইমাম চাইলে
যেকোন দো‘আ পাঠ করতে পারেন (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৮৮/৪২)।
প্রশ্ন (৬/২০৬) : জনৈক নারীর প্রথম
পক্ষের ১টি ছেলে এবং দ্বিতীয় পক্ষে ১টি ছেলে ও ১টি মেয়ে রয়েছে। এক্ষণে তার উভয়
স্বামী মারা গেলে প্রথম পক্ষের ছেলেটি উভয় পিতারই সম্পদের ওয়ারিছ হবে কি?
উত্তর : প্রথম পক্ষের ছেলেটি কেবল তার নিজ পিতার সম্পদের ওয়ারিছ হবে। সৎ
পিতার সম্পদের হবে না। তবে সে তার মায়ের সম্পদের ওয়ারিছ হবে। অবশ্য সৎপিতার সাথে
অন্য দিক থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক (যেমন চাচা) থাকলে আছাবা সূত্রে পেতে পারে।
প্রশ্ন (৭/২০৭) : ছালাতের শেষ বৈঠকে
সর্বনিম্ন কি কি দো‘আ পাঠ করা আবশ্যক? তাশাহহুদ ব্যতীত কোন দো‘আ পাঠ করার পূর্বেই
ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিলে ছালাত হবে কি?
উত্তর : শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে কেবল তাশাহ্হুদ
(আত্তাহিইয়াতু) পাঠ করা আবশ্যক (নাসাঈ হা/১২৭৭; দারাকুৎনী হা/১৩৪৩; ইরওয়া
হা/৩১৯)। অন্যান্য দো‘আগুলি পাঠ করা সুন্নাত ও মুস্তাহাব। অতএব কেবল তাশাহহুদ পাঠ
করে সালাম ফিরিয়ে নিলে ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। এজন্য কোন সহো সিজদা দিতে
হবে না (উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ৩/৩১০-৩১২)। তবে দরূদ ও অন্যান্য দো‘আগুলি
পাঠ করার অনেক গুরুত্ব রয়েছে (মুসলিম হা/৪০২; মিশকাত হা/৯০৯)। আর তাশাহ্হুদ
পড়তে ভুলে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে।
প্রশ্ন (৮/২০৮) : আমার পিতা আমার দাদাকে
হজ্জ করাতে চেয়েছিলেন। তবে তা করানোর পূর্বেই দাদা মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে পিতা
নিজেই দাদার বদলী হজ্জ করতে চান। কিন্তু তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়ায় যেতে পারছেন না।
এক্ষণে তিনি দাদার হজ্জের খরচ সমপরিমাণ অর্থ মাদ্রাসায় জমি ক্রয়ের জন্য দান করে
দিতে চান। এ সিদ্ধান্ত সঠিক হবে কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে দান নয় বরং অন্য কারু মাধ্যমে বদলী হজ্জ করাতে হবে। কারণ
রাসূল (ছাঃ) এরূপ ক্ষেত্রে হজ্জের অর্থ দান করতে বলেননি। বরং তার পক্ষ থেকে হজ্জ
করতে বলেছেন (তিরমিযী হা/৯৩০; আহমাদ হা/১৬২২৯; মিশকাত হা/২৫২৮)। আর নিজের
হজ্জ না করে অন্যের জন্য বদলী হজ্জ করা যাবে না (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৫২৯)।
প্রশ্ন (৯/২০৯) : ছালাতরত অবস্থায় মসজিদে
কাঁচের দরজায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখা গেলে ছালাত কবুল হবে কি?
উত্তর : এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা এটা ছবি-মূর্তির হুকুমে পড়ে
না। তবে মুছল্লী প্রতিচ্ছবির দিকে তাকাবে না। বরং এ সময় মুছল্লীর দৃষ্টি থাকবে
সিজদার স্থানে (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৩০১২)। আর এই প্রতিচ্ছবির কারণে যদি
ছালাতে মনোযোগ বিঘ্নিত হয়, তবে তা পর্দা বা অন্য কিছু দ্বারা ঢেকে দিবে।
প্রশ্ন (১০/২১০) : গাভীকে মানুষ ঝাড়-ফুঁক
করে দুধ বন্ধ করে দেয়। তখন দুধ হয় না। এথেকে বাঁচার জন্য পাল্টা ঝাড়-ফুঁক করা দড়ি
পরালে ভালো হয়ে যায়। এক্ষণে এটা পরানো যাবে কি?
উত্তর : দড়ি, তাবীয-কবয ইত্যাদি পরানো যাবে না (তিরমিযী হা/২০৭২;
মিশকাত হা/৪৫৫৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩৪৫৬)। রাসূল (ছাঃ) পশুর গলায় রশির মালা বা
এজাতীয় কিছু থাকলে তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী হা/৩০০৫; মুসলিম
হা/২১১৫)। বরং এক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত দো‘আগুলো পাঠ করার মাধ্যমে
শরী‘আতসম্মত ঝাড়-ফুঁক করবে।
আর তাবীয-কবয বা এজাতীয়
কোন মাধ্যমে উপশম হলেও বুঝতে হবে এগুলি শয়তানের কাজ। আল্লাহর আনুগত্য থেকে
বান্দাকে শয়তানের আনুগত্যে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য এসব শয়তানী কারসাজি মাত্র। আল্লাহ
বলেন, ‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কেবল নারীকে আহবান করে। বস্ত্ততঃ তারা কেবল অবাধ্য
শয়তানের পূজা করে’ (নিসা ৪/১১৭)। একদা যয়নব (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার চোখে ব্যথা হ’লে আমি একজন ইহূদীর কাছে যেতাম, যে
মন্ত্র পাঠের পর আমার চোখে ফুঁক দিলে ব্যথার উপশম হ’ত। তখন ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে
বললেন, এতো শয়তানের অপকর্ম ছিল। তুমি শয়তানের আনুগত্য করলে সে তোমাকে রেহাই দিত
এবং তার আনুগত্য না করলে সে তোমার চোখে আংগুলের খোঁচা মারতো (আবুদাঊদ
হা/৩৮৮৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৩০)।
প্রশ্ন (১১/২১১) : কা‘বাগৃহ, মসজিদে
নববীসহ বিভিন্ন স্থানে ফরয ছালাত চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের
মুছল্লীদের মাঝে দাঁড়িয়ে পাহারারত দেখা যায়। জামা‘আত চলাকালীন সময়ে এরূপ করা জায়েয
হবে কি?
উত্তর : ইমাম ও মুছল্লীদের নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী জামা‘আতে অংশ
গ্রহণ না করে তাদের পাহারায় নিয়োজিত থাকতে পারে। যেমন কুরআনে যুদ্ধের ময়দানে
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে একটি দলকে জামা‘আতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা
হয়েছে (নিসা ৪/১০২)। তারা পরে পৃথক জামা‘আতে ছালাত আদায় করবে (উছায়মীন,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/১৮৮-১৯২)
প্রশ্ন (১২/২১২) : আমাদের পারিবারিক একটি
কবরস্থান আছে, যেখানে ২-৩টি কবর রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে কবরগুলোর নীচু ও বাড়ির পাশে
হওয়ায় সেখানে নানারকম ময়লা-আবর্জনা এমনকি গরুর মলমূত্র পড়ছে। এক্ষণে তার উপর মাটি
ভরাট করে ইট দিয়ে বেঁধে দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : মুসলমানের কবরস্থানকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তা সংরক্ষণ
করা জীবিত মানুষের দায়িত্ব (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১/২৭২;
শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম, ফাতাওয়া ও রাসায়েল ৩/২০০)। রাসূল (ছাঃ) বাক্বীউল
গারক্বাদকে মদীনাবাসীর কবরস্থান হিসাবে নির্ধারণ করেছিলেন (ছহীহাহ হা/৩০৬০)।
যা চারদিক থেকে পাকা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা।
প্রশ্ন (১৩/২১৩) : কিয়ামতের পূর্বে কুরআন
উঠিয়ে নেওয়া হবে মর্মে কোন বর্ণনা আছে কি? যদি তাই হয় তবে হাফেযে কুরআনের সংখ্যা
দিন দিন কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণনা রয়েছে যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ইসলাম পুরাতন হয়ে যাবে, যেমন কাপড়ের কারুকার্য পুরাতন হয়ে যায়। এমনকি
অবস্থা এমন হবে যে, জানবে না, ছিয়াম কি? ছালাত কি? কুরবানী কি, যাকাত কি?। এক রাতে
পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহর কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে
না (ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; ছহীহাহ হা/৮৭)। তবে এটি ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে ঘটবে।
যখন হাফেযের স্মৃতি থেকেও কুরআন তুলে নেওয়া হবে। হাফেযদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার
সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, কুরআনের উপর এমন একটি রাত অতিবাহিত
হবে যে, হাফেযদের স্মৃতিতে ও মুছহাফের মধ্যে যা ছিল, তা হারিয়ে যাবে..(হাকেম
হা/৮৫৩৮, যাহাবী, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মুছহাফে কোন আয়াত থাকবে না এবং
হাফেযের স্মৃতিতে মুখস্থ কিছু অবশিষ্ট থাকবে না’ (দারেমী হা/৩৩৪৩, ৩৩৪১;
ফৎহুলবারী ১৩/১৬, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (১৪/২১৪) : কোন নারীর জন্য সমবয়সী
অপর নারীর সামনে শরীরের কতটুকু পরিমাণ স্থান ঢেকে রাখা আবশ্যক?
উত্তর : নারী অন্য নারীর সামনে শরীরের অতটুকু প্রকাশ করতে পারবে, যতটুকু
নিকটতম মাহরাম পুরুষের নিকট প্রকাশ করতে পারে। যেমন- হাত, পা, মুখমন্ডল ইত্যাদি। (নূর
২৪/৩১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৭/২৯১, ২৯৭; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৭১)।
প্রশ্ন
(১৫/২১৫) : আমি স্কুলের সরকারী উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ
করিনি। কিন্তু বৃত্তি পেয়েছি। এটা গ্রহণ করা জায়েয হয়েছে কি?
উত্তর : এরূপ বৃত্তি গ্রহণ করা জায়েয নয়। কারণ এটি প্রতারণার শামিল। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০১;
মিশকাত হা/৩৫২০)।
প্রশ্ন (১৬/২১৬) : আমার বয়স ২৫ বছর।
নিজের আর্থিক সক্ষমতা ও পূর্ণ সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও বিবাহ করার ব্যাপারে
পিতা-মাতার অনুমতি পাচ্ছি না। যদিও তা আমার জন্য খুবই যরূরী। এক্ষণে আমার করণীয়
কি?
উত্তর : পিতা-মাতার কর্তব্য প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের বিবাহের ব্যবস্থা
করা। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পিতা ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের বিবাহের ব্যবস্থা না করলে
গোনাহগার হবেন। এক্ষণে শরী‘আতসম্মত কারণে পিতা-মাতা কোন বিবাহের অনুমতি না দিলে,
তাদের নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। অন্যথা নয়। তবে সম্ভবপর তাদেরকে বুঝিয়ে দ্বীনদার
পাত্রী দেখে বিবাহ করতে হবে।
প্রশ্ন (১৭/২১৭) : যে
ব্যক্তি আমার ৪০টি হাদীছ মুখস্থ করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফক্বীহ
হিসাবে উঠাবেন। এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/৪৫৮৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৫৬৮)। ইবনু মুলাক্কিন বলেন, হাদীছটি বিশটি তুরুকে বর্ণিত
হয়েছে, সবগুলো যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী বলেন, এর সকল তুরুক দুর্বল, কোনটিই গ্রহণযোগ্য
নয়। বায়হাক্বী বলেন, সকল সনদ যঈফ (আল-বাদরুল মুনীর ৭/২৭৮)।
তবে হাদীছ মুখস্থ করার
অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার
কোন কথা শুনেছে, অতঃপর এ কথাকে স্মরণ রেখেছে ও রক্ষা করেছে এবং যা শুনেছে হুবহু তা
মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছে (তিরমিযী হা/২৬৫৮; মিশকাত হা/২২৮; ছহীহুল জামে‘
হা/৬৭৬৫)। বিদায় হজ্জের ভাষণ শেষে তিনি বলেন, উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের
নিকট (আমার এ বাণীসমূহ) পৌঁছে দেয় (বুখারী হা/৬৭)।
প্রশ্ন (১৮/২১৮) : মুযারাবা পদ্ধতিতে
আমার বন্ধুর সাথে আমি ব্যবসা করি। অর্থাৎ আমার অর্থায়ন এবং তার ব্যবসা। উক্ত অর্থ
কেনা-বেচার মধ্যে চলমান থাকায় দোকানে সারা বছর যে ব্যবসায়িক পণ্যে স্থিত থাকে, তার
গড় মূল্য হিসাব করে সে যাকাত পরিশোধ করে। এটা সঠিক হচ্ছে কি?
উত্তর : এটি সঠিক হচ্ছে না। বরং সঠিক নিয়ম হ’ল বিনিয়োগকারী প্রতিবছর তার
মূল সম্পদ এবং প্রাপ্ত লভ্যাংশের উপর যাকাত আদায় করবে। আর ব্যবসায়ী কেবল তার
প্রাপ্ত লভ্যাংশের উপর যাকাত দিবে যদি তা নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর অতিক্রান্ত
হয় (ছালেহ ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ৮৭/২; ফাতাওয়া ইবনু জিবরীন ৮/৫০)। তবে
ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে মালের হিসাব করে যাকাত আদায় করলে তা
আদায় হয়ে যাবে।
প্রশ্ন (১৯/২১৯) : জনৈক ব্যক্তি বলেন,
জায়নামায বা কার্পেটের উপর সিজদা দেওয়ার চেয়ে মাটিতে সিজদা করা উত্তম ও
ফযীলতপূর্ণ। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : সরাসরি মাটিতে সিজদা দেওয়ার বিশেষ কোন ফযীলত নেই। রাসূল
(ছাঃ) কখনো চাটাইয়ের উপর সিজদা দিয়েছেন (বুখারী হা/৩৮০, ৩৭৯; মুসলিম হা/৬৫৮)।
কখনো খেজুর পাতার তৈরী বিছানায় ছালাত আদায় করেছেন’ (মুসলিম হা/৬৫৯)। আবার
কখনো সরাসরি মাটিতে সিজদা দিয়েছেন (বুখারী হা/৬৬৯; মুসলিম হা/১১৬৭)। অতএব
মাটিতে বা যেকোন পবিত্র বস্ত্ত ও কাপড়ের উপরে সিজদা দেওয়ায় ছওয়াবের কোন তারতম্য
নেই। শরী‘আতের দৃষ্টিতে সবগুলো জায়েয (নববী, শরহ মুসলিম হা/১০৫৩-এর
ব্যাখ্যা)।
প্রশ্ন (২০/২২০) : রাক‘আত বা জামা‘আত শেষ
হয়ে যাওয়ার আশংকায় দৌড়ে গিয়ে জামা‘আতে শরীক হওয়া যাবে কি?
উত্তর : তাড়াহুড়া করে দৌড়িয়ে ছালাতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ‘যখন ছালাতের এক্বামত দেওয়া হয়, তখন তোমরা দৌড়ে যেয়ো না; বরং
স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাও। স্থিরতা অবলম্বন কর। অতঃপর তোমরা জামা‘আতে যতটুকু পাও
ততটুকু আদায় কর এবং ছুটে যাওয়া ছালাত পূর্ণ কর’ (বুখারী হা/৯০৮; মুসলিম
হা/৬০২; মিশকাত হা/৬৮৬)।
প্রশ্ন (২১/২২১) : রাসূল (ছাঃ) চেয়ারে বসে
খেয়েছেন কি? তিনি না খেয়ে থাকলে আমাদের খাওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) অধিক বিনয় প্রকাশের জন্য মাটিতে বসে খেতেন। যেমন
তিনি বলেন, আমি খাই যেভাবে গোলাম খায়। আমি বসি যেভাবে গোলামে বসে (শারহুস
সুন্নাহ, মিশকাত হা/৫৮৩৬; ছহীহাহ হা/৫৪৪)। তবে এটা অভ্যাসগত সুন্নাত, যা সুনানুয
যাওয়ায়েদ-এর অন্তর্ভুক্ত। এটি ব্যবহার করা ভাল এবং ছেড়ে দেওয়া অপসন্দনীয়
নয় (আল-জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাত, পৃঃ ১২২)। অতএব চেয়ারে বসে খাওয়ায় কোন
বাধা নেই (ফাৎহুলবারী ১১/২৮০, আওনুল মা‘বুদ ১০/২৩৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রয়োজনে
চেয়ারে বসতেন। আবু রিফা‘আহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) একটি চেয়ারের উপর বসলেন এবং
আল্লাহ তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তিনি আমাকেও শিখালেন’ (মুসলিম
হা/৮৭৬)। এছাড়া ছাহাবীগণও চেয়ারে বসতেন (বুখারী হা/১৫৯৪; আবুদাঊদ হা/১১৩)। যা
প্রমাণ করে যে, চেয়ারে বসে যেকোন কাজ-কর্ম করা যায়।
প্রশ্ন (২২/২২২) : ফজর ও মাগরিবের
সুন্নাত ছালাতে সূরা কাফেরূন ও ইখলাছ পড়ার বিধান ও হিকমত কি?
উত্তর : ফজর ও মাগরিবের সুন্নাত ছালাতে সূরা কাফেরূন ও ইখলাছ পাঠ করা
মুস্তাহাব। ইবনে ওমর ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-কে মাগরিবের
দু’রাক‘আত ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাতে অসংখ্যবার এ দু’টি সূরা তিলাওয়াত করতে
শুনেছি’ (নাসাঈ হা/৯৯২; মুসলিম হা/৭২৬; মিশকাত হা/৮৪২, ৮৫১)। আর এ দু’টি সূরা
তিলাওয়াতের হিকমত হ’ল- সূরা ইখলাছে তাওহীদে রুবূবিয়াত ও আসমা ওয়া ছিফাত সম্পর্কে
এবং সূরা কাফেরূনে তাওহীদ ফিল ইবাদাহ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ দু’টি সূরার
মাধ্যমে যেন মুমিনের সকাল ও সন্ধ্যা অতিবাহিত হয় এবং সারা দিন ও রাত যেন তাওহীদের
উপরে থাকে। এই গুরত্বকে সামনে রেখেই ফজর ও মাগরিবের সুন্নাতে রাসূল (ছাঃ) এ দু’টি
সূরা পাঠ করতেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়েঊল ফাওয়ায়েদ ১/১৩৮)। তবে রাসূল (ছাঃ)
মাগরিব ও ফজরের সুন্নাতে এদু’টি সূরা ব্যতীত অন্য সূরাও পাঠ করেছেন (মুসলিম
হা/৭২৭; মিশকাত হা/৮৪৩)।
প্রশ্ন (২৩/২২৩) : ইয়াতীম ক্রন্দন করলে
আরশ কেঁপে ওঠে এবং ইয়াতীমকে যে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।
একথা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলো জাল ও নিতান্তই
যঈফ (যঈফাহ হা/৫৮৫১-৫৮৫২)। তবে ইয়াতীমদের সাথে সদ্ব্যবহার করা
আবশ্যক (যোহা ৯৩/৯; বাক্বারাহ ২/২২০; তিরমিযী হা/১৯১৮; ছহীহাহ হা/৮০০)।
প্রশ্ন (২৪/২২৪) : ময়ূর, তোতা, টিয়া
ইত্যাদি পাখির গোশত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : ময়ূর, তোতা, টিয়া ইত্যাদি পাখির গোশত খাওয়া জায়েয। কারণ এগুলি
ধারালো নখ বিশিষ্ট পাখি নয়, যা খেতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৪১০৫; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ১৫/৩৩; আল-ইনছাফ ১০/৩৬৪)।
প্রশ্ন (২৪/২২৪) : ময়ূর, তোতা, টিয়া
ইত্যাদি পাখির গোশত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : ময়ূর, তোতা, টিয়া ইত্যাদি পাখির গোশত খাওয়া জায়েয। কারণ এগুলি
ধারালো নখ বিশিষ্ট পাখি নয়, যা খেতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৪১০৫; উছায়মীন, শারহুল মুমতে‘ ১৫/৩৩; আল-ইনছাফ ১০/৩৬৪)।
প্রশ্ন (২৫/২২৫) : আমাদের এলাকায় দাফন
শেষে পাত্রে পানি নিয়ে কবরের উপর মাথা থেকে পায়ের দিকে ছিটিয়ে দেয়া হয়। এটা সঠিক
কি?
উত্তর : কবরের মাটি দৃঢ় করার জন্য কবরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া মুস্তাহাব। রাসূল
(ছাঃ) তাঁর ছেলে ইবরাহীমকে দাফন করার পর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে
ছিলেন (ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬১৪১; মিশকাত হা/১৭০৮; ছহীহাহ হা/৩০৪৫; ইবনু
কুদামা, মুগনী ২/৩৭৬)। তবে পানি ছিটানোর মাধ্যমে মাইয়েত প্রশান্তি পাবে, তার
কল্যাণ হবে এরূপ ধারণার কোন ভিত্তি নেই (উছায়মীন, তা‘লীক ‘আলাল কাফী ২/৩৮৯)।
প্রশ্ন (২৬/২২৬) : মৃত ব্যক্তিকে দাফনের
পর তার মাথার নিকটে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাক্বারার প্রথম ও শেষ আয়াত পাঠ করার
ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ ও আছারগুলি খুবই যঈফ (আলবানী,
আহকামুল জানায়েয ১/১৩, ১৯১-১৯২; যঈফাহ হা/৪১৪০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। অতএব এগুলি
আমলযোগ্য নয়।
প্রশ্ন (২৭/২২৭) : এমন কোন নিয়মিত আমল বা
দো‘আ আছে কি, যা নিয়মিত পাঠ করলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নানা রোগ-ব্যাধি থেকে
পরিত্রাণ পাওয়া যাবে?
উত্তর : এমর্মে বিভিন্ন দো‘আ রয়েছে। বিশেষ করে কোন মারাত্মক রোগীকে দেখে তা
পাঠ করলে, সেই রোগ তার হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে লোক কোন বিপদগ্রস্ত লোককে
প্রত্যক্ষ করে বলে, ‘আল-হাম্দু লিল্লা-হিল্লাযী ‘আ-ফা-নী
মিম্মাব্তালা-কা বিহী ওয়া ফায্যালানী ‘আলা কাছীরিম্ মিম্মান খালাক্বা
তাফ্যীলা’ (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি যে বিপদে তোমাকে জড়িত
করেছেন তা হ’তে আমাকে হেফাযতে রেখেছেন এবং তার সৃষ্টিরাজির উপর আমাকে সম্মান দান
করেছেন’, সে তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উক্ত অনিষ্ট হ’তে হেফাযতে থাকবে।
তা যে কোন বিপদই হোক না কেন’ (তিরমিযী হা/৩৪৩১; মিশকাত হা/২৪২৯; ছহীহাহ
হা/৬০২)। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার সূরা নাস ও ফালাক পাঠ করবে (আবুদাউদ
হা/৫০৮২; মিশকাত হা/২১৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৬৪৯)।
প্রশ্ন (২৮/২২৮) : সম্প্রতি নেকাব পরিহিত
অবস্থায় নারীদের ইন্টারনেটে বিশেষত ইউটিউবে ওয়ায-নছীহত করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া
গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের পূর্ণ পর্দার মধ্যে নারী-পুরুষের মিশ্রিত মজলিসে স্টেজে
বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : নারীরা এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না। আর এর জন্য নারী দায়িত্বশীলও
নয়। আল্লাহ তা‘আলা এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী-রাসূল প্রেরণ করলেও কোন নারীকে নবী করে
পাঠাননি (আহমাদ হা/২২৩৪২; মিশকাত হা/৫৭৩৭; ছহীহাহ হা/২৬৬৮-এর আলোচনা
দ্রষ্টব্য)। এক্ষণে দ্বীন প্রচারের জন্য তারা পর্দার মধ্যে থেকে পৃথক মহিলা মজলিসে
বক্তব্য দিবে (ছহীহাহ হা/২৬৮০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
প্রশ্ন (২৯/২২৯) : ছালাতের মধ্যে শয়তানী
ওয়াসওয়াসায় মযী বের হওয়া অনুভব হ’লে ছালাত পরিত্যাগ করতে হবে কি? এ কারণে ওযূ বা
কাপড় পরিবর্তন করতে হবে কি?
উত্তর : যদি কেবল সন্দেহ হয়, তবে ছালাত পরিত্যাগ করবে না। কারণ
সন্দেহের দ্বারা পবিত্রতা নষ্ট হয় না (বুখারী হা/১৩৭, মুসলিম হা/৩৬২,
মিশকাত হা/৩০৬)। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় তবে ছালাত পরিত্যাগ করবে এবং ওযূ করে
পুনরায় ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) মযী নির্গত হ’লে ওযূ করাই যথেষ্ট বলেছেন এবং
কাপড়ে বা শরীরের যে যে স্থানে মযীর নিদর্শন পাওয়া যাবে, সে স্থান এক আজলা পানি
ছিটিয়ে দিতে বলেছেন (আবুদাঊদ হা/২১০, তিরমিযী হা/১১৫)।
প্রশ্ন (৩০/২৩০) : আমাদের এলাকার জামে
মসজিদের বারান্দার পিলারে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এটি করা জায়েয নয়। কারণ মসজিদ ব্যবসার স্থান নয়। রাসূল (ছাঃ)
মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন’ (তিরমিযী হা/৩২২; মিশকাত হা/৭৩২, সনদ
হাসান)। তবে ইসলামী বই-পুস্তক জুম‘আর দিন মসজিদের বারান্দার বাইরে বিক্রয় করতে
বাধা নেই। কেননা এটি দ্বীনের দাওয়াতের একটি অংশ।
প্রশ্ন (৩১/২৩১) : ফাযায়েলে আমল কি
বিশুদ্ধ কিতাব? এ গ্রন্থ পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : ‘ফাযায়েলে আমল’, ‘ফাযায়েলে ছাদাক্বা’ সহ তাবলীগ জামা‘আতের এ
কিতাবসমূহে বহু যঈফ ও জাল হাদীছ এবং ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা রয়েছে। উক্ত বইগুলোতে
যা রয়েছে, তা বিশুদ্ধ আক্বীদা-আমল থেকে মানুষকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়। অতএব এ সমস্ত
ফাযায়েল ছেড়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে বিশুদ্ধ ফাযায়েল ও মাসায়েল অধ্যয়ন
করতে হবে এবং তার উপর আমল করতে হবে (বিস্তারিত দ্রঃ ‘হাদীছের প্রামাণিকতা’ বই
পৃ. ৫৭-৬৭)।
প্রশ্ন (৩২/২৩২) : আমি আহলেহাদীছ হওয়া
সত্ত্বেও আমার স্ত্রী মাযহাবী নিয়মে ছালাত আদায় করে। জনৈক আলেমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস
করলে তিনি তালাক দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এটা সঠিক কি?
উত্তর : এটা সঠিক নয়। তালাক দেওয়া কোন উত্তম সমাধান নয়। বরং স্ত্রীকে ছহীহ
হাদীছের উপর আমল করার ব্যাপারে নছীহত করে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। স্নেহ-ভালবাসা
দিয়ে তাকে সত্যের উপর ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা
নারীদেরকে উত্তম নছীহত প্রদান করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি
করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা
করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে সব সময় তা বাঁকাই
থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নছীহত করতে থাক’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মিশকাত হা/৩২৩৮)।
স্মর্তব্য যে, আমলগত ত্রুটির পূর্বে স্ত্রীর মধ্যে কোন বাতিল আক্বীদা থাকলে,
সেগুলি পরিবর্তন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন (৩৩/২৩৩) : সুন্নাত ছালাত
আদায়কালে ফরয ছালাত শুরু হয়ে গেলে কিভাবে ছালাত পরিত্যাগ করতে হবে। এসময় বসে সালাম
ফিরাতে হবে কি?
উত্তর : এটি মুছাল্লীর অবস্থার উপর নির্ভর করবে। জামা‘আত শুরু হওয়ার পর
সুন্নাত ছালাত আদায়কারী যদি বুঝতে পারে যে, ইমাম রুকূতে যাওয়ার পূর্বে সে জামা‘আতে
শরীক হ’তে পারবে এবং সূরা ফাতিহা পাঠ করতে পারবে, তাহ’লে সে সংক্ষেপে সুন্নাত শেষ
করে জামা‘আতে শরীক হবে (বুখারী হা/৫৮০; মুসলিম হা/৬০৭; মিশকাত হা/৬৮৬, ১৪১২)।
অন্যথায় সুন্নাত ছালাত ছেড়ে জামা‘আতে শরীক হবে (মুসলিম হা/৭১০; মিশকাত
হা/১০৫৮)। এজন্য তাকে সালাম ফিরাতে হবে না। আর ফরয ছালাত শুরু হয়ে গেলে নতুনভাবে
সুন্নাত ছালাত শুরু করা যাবে না (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৩৮৯;
উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১০১)।
প্রশ্ন (৩৪/২৩৪) : বিদেশে পণ্যবাহী
জাহাযে কর্মরত জনৈক ব্যক্তি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। সে শহীদের
মর্যাদা পাবে কি?
উত্তর : আল্লাহ চাইলে তিনি দু’জন শহীদের মর্যাদা পাবেন। কেননা রাসূল
(ছাঃ) বলেন, নৌযানের ঝাঁকুনিতে বমি হ’লে সমুদ্রে সফরকারী ব্যক্তির জন্য একজন
শহীদের ছওয়াব রয়েছে। আর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির জন্য রয়েছে দু’জন শহীদের
ছওয়াব (আবুদাউদ হা/২৪৯৩; মিশকাত হা/৩৮৩৯; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৪৩)। অন্য
বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যায়িত
করেছেন (বুখারী হা/৬৫৩; মুসলিম হা/১৯১৫; মিশকাত হা/১৫৪৬)।
তবে এজন্য তাঁকে
শিরক-বিদ‘আত মুক্ত ইসলামী জীবন-যাপন করতে হবে এবং সফরটি আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কাজে
হ’তে হবে (মিরক্বাত হা/৩৮৩৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্ন (৩৫/২৩৫) : ছালাতে ক্বিরাআত পাঠের
সময় মাখরাজ ও টানসমূহের দিকে খেয়াল করতে গিয়ে অর্থ বুঝা বা ভাবাবেগ ধরে রাখতে পারি
না। এক্ষণে উভয়ের মাঝে কোনটির প্রতি অধিক লক্ষ্য রাখা যরূরী?
উত্তর : যথা সম্ভব উভয়টির দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে ছালাতে ক্বিরাআতের
বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। নইলে ক্বিরাআত ও ছালাতে ভুল হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, দুর্ভোগ
ঐসকল মুছল্লীর জন্য, যারা ছালাতে উদাসীন (মাঊন ৪)। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস
করা হ’ল, সর্বোত্তম ক্বারী কে? তিনি বললেন, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার কাছে মনে হবে
যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করছে’ (দারেমী হা/৩৪৮৯; মিশকাত হা/২২০৯)।
প্রশ্ন (৩৬/২৩৬) : আমাদের ডেকোরেশনের
ব্যবসা আছে। ব্যবসার প্রয়োজনে বিবাহ, কুলখানি, গান-বাজনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের জন্য
মালামাল ভাড়া দিতে হয়। পুরোপুরি ইসলামী শরী‘আ অনুমোদিত অনুষ্ঠান খুঁজে ভাড়া দিতে
চাইলে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : বৈধ কর্মে ভাড়া দিতে হবে এবং যথাসম্ভব শরী‘আত বিরোধী কাজে সহযোগিতা
থেকে বিরত থাকবে মায়েদাহ ৫/২)। আল্লাহকে ভয় করলে ও তাঁর উপর ভরসা করলে তিনি
ব্যবস্থা করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন (তালাক ৬৫/২; বুখারী হা/৫১৬৪; মুসলিম
হা/৩৬৭)। বৈধ কর্মে ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে উক্ত ব্যবসা পরিচালনা করায় বাধা নেই।
যেমন বিবাহ, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন সভা-সম্মেলন ইত্যাদি বৈধ কর্ম। এক্ষণে এসব
অনুষ্ঠানে যদি কেউ শরী‘আতবিরোধী কাজ করে, তার জন্য ভাড়া গ্রহণকারী ব্যক্তি দায়ী
হবে।
প্রশ্ন (৩৭/২৩৭) : ছহীহ বুখারীর ৮২২ নং
হাদীছে ছালাত অবস্থায় চুল ও কাপড় গুটিয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : ছালাত অবস্থায় মাথার চুল ও কাপড় গুটিয়ে নিতে নিষেধ করা হয়েছে। যাতে
মাথার চুল ও ঝুলে থাকা কাপড়ও মুছল্লীর সাথে সিজদায় যায়। পাশাপাশি মুছল্লীর ভিতরে
যেন কোন অহংকার প্রকাশ না পায়। কেননা সিজদায় গিয়ে ধূলা লাগার ভয়ে কাপড় ভাঁজ
হয়ে যাওয়ার আশংকায় ও চুল গুটিয়ে নেওয়ায় অহংকার প্রকাশ পায়। আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে
সিজদা করার সময় এটা একেবারে অনভিপ্রেত (ফাৎহুল বারী ২/২৯৪; মির‘আত
২/২০৬-০৭; মিরক্বাত ২/৩১৯)। জমহূর বিদ্বান বলেন, ‘পুরুষের জন্য মাথার চুল বাঁধা
কেবল ছালাতের সময় নয় বরং সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। ইমাম নববী বলেন, এভাবেই ছাহাবায়ে
কেরাম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই সঠিক’ (মির‘আত ৩/২০৭,
হা/৮৯৪-এর ব্যাখ্যা)।
তবে নারীদের চুলের
বিষয়টি ভিন্ন। হাফেয ইরাকী বলেন, এটি পুরুষের জন্য খাছ, মেয়েদের জন্য নয়। কেননা
তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা ছালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। যদি সে বেণী বা
খোঁপা খুলে দেয় এবং চুল ছড়িয়ে পড়ে ও তা বেরিয়ে যায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল হয়ে
যাবে। (নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৬-২৩৭ ‘পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় ছালাত
আদায়’ অনুচ্ছেদ)। আলবানী বলেন, ‘এটা প্রকাশ্য যে, সিজদাকালে চুল খুলে দেওয়ার
নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়’ (ছিফাতু ছালাতিন্নবী
পৃ: ১২৫)।
প্রশ্ন (৩৮/২৩৮) : বিভিন্ন সাংকেতিক
চিহ্ন অনুযায়ী কুরআন শেখা এবং সে চিহ্ন অনুযায়ী কুরআন পড়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : কুরআনকে শুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের জন্য যেকোন বৈধ পন্থা অবলম্বন করা
যেতে পারে। যেমন কুরআনকে সহজে তেলাওয়াতের জন্য ছাহাবী ও তাবেঈদের যুগে নোকতা ও
হরকত সংযোজন করা হয় (যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৬/৫০৩; যুরক্বানী, মানাহিলুল
ইরফান ১/৪০৬-৪০৭)। কিন্তু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কুরআন শিখানোর নামে যা করা
হচ্ছে, তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। এগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) একদিন আরব ও অনারব উভয় ব্যক্তিদের মজলিসে তেলাওয়াত শুনছিলেন। অতঃপর তিনি
তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা পাঠ কর। সবটাই সুন্দর। মনে রেখ সত্বর একদল লোক আসবে,
যারা কুরআনের পাঠ ঠিক করবে যেভাবে তীর ঠিক করা হয়। তারা দুনিয়াতেই দ্রুত ফল চাইবে,
আখেরাতের অপেক্ষা করবে না’ (আবুদাঊদ হা/৮৩০; মিশকাত হা/২২০৬)। অর্থাৎ লোক
দেখানো ও শুনানোই সেখানে মুখ্য হবে।
প্রশ্ন (৩৯/২৩৯) : যদি কেউ ভুলবশতঃ আমার
নম্বরে ফ্লেক্সিলোড করে এবং পরে টাকা ফেরত না চায়। সেক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর : প্রকৃত মালিকের নিকট সেটি পৌঁছানোর জন্য এক বছর যাবৎ সাধ্যমত
চেষ্টা করবে। তারপরেও খোঁজ না পাওয়া গেলে তা নিজে ব্যবহার করবে এবং হিসাব করে
রাখবে। পরবর্তীতে কেউ দাবী করলে তাকে তা ফেরত দিবে (বুখারী হা/৯১; মুসলিম
হা/১৭২২; মিশকাত হা/৩০৩৩)।
প্রশ্ন (৪০/২৪০) : ওযূর ক্ষেত্রে নাকে ও
মুখে পৃথক পৃথকভাবে পানি দেওয়ায় সুবিধা হয়। এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : সুন্নাত হ’ল একই অঞ্জলী দিয়ে মুখে ও নাকে পানি দিয়ে ওযূ
করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) এক অঞ্জলী পানি নিয়ে অর্ধেক দিয়ে কুলি করতেন এবং অর্ধেক পানি
নাকে দিতেন (বুখারী হা/১৯১, ১৯৯; মুসলিম হা/২৩৫; মিশকাত হা/৩৯৪)। এর বিপরীত
যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (আবুদাউদ হা/১৩৯, আহমাদ হা/১৩৫৫, সনদ যঈফ; ইবনুল
ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫; নববী, শরহ মুসলিম ৩/১০৫-১০৬)। তবে যারা সহজে একাজটি
করতে পারে না, তারা আলাদাভাবে পানি নিয়ে নাকে ও মুখে দিয়ে ওযূ করতে
পারে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৫৭; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৬১)। কারণ এর
উদ্দেশ্য হ’ল ভালোভাবে কুলি করা ও নাক ঝাড়া। ছাহেবে মিরক্বাত
বলেন ,وَالْأَظْهَرُ أَنَّ مِنْ كَفَّةٍ تَنَازَعَ فِيهِ الْفِعْلَانِ، وَالْمَعْنَى مَضْمَضَ مِنْ كَفَّةٍ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفَّةٍ
এটি স্পষ্ট যে, ‘এক অঞ্জলী’ শব্দের মধ্যে দু’টি ক্রিয়া রয়েছে। অর্থাৎ
এক অঞ্জলী দ্বারা কুলি করবে এবং অপর অঞ্জলী দ্বারা নাক ঝাড়বে (মিরক্বাত
হা/৩৯৪-এর ব্যাখ্যা)।
এপ্রিল/২০১৮
প্রশ্ন (১/২৪১) : রিজাল
শাস্ত্র কি? প্রত্যেক আলেমের জন্য রিজাল শাস্ত্র সম্পর্কে জানা আবশ্যক কি?
উত্তর : রিজাল শাস্ত্র হ’ল হাদীছের সনদ সম্পর্কে জ্ঞান। অর্থাৎ সনদে
যে সকল বর্ণনাকারী রয়েছেন তারা নির্ভরযোগ্য কি-না, সে সম্পর্কিত বিশেষায়িত জ্ঞান।
ইসলামী শরী‘আতের বিধি-বিধান সম্পর্কে অভিজ্ঞ আলেমদের জন্য রিজালশাস্ত্র জানা
আবশ্যক। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার তারতম্য থাকতে পারে, তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান
অবশ্যই থাকতে হবে। ওলামায়ে সালাফ কেবল হাদীছের জ্ঞান থাকলেই তাকে আলেম হিসাবে গণ্য
করতেন না, যতক্ষণ না তিনি হাদীছের সনদসমূহ এবং বর্ণনাকারীদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত
হতেন (তাদরীবুর রাবী ১/৩০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন
ফাসিক্ব ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে
দেখ’ (হুজুরাত ৪৯/৬)। সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি কোন হাদীছের সনদ সম্পর্কে না
জেনে বর্ণনা করে, তবে সে মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ
করল, সে যেন তার স্থানকে জাহান্নামে বানিয়ে নিল’ (ছহীহ মুসলিম মিশকাত হা/১৯৮
‘ইলম’ অধ্যায়)। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন, সনদ হচ্ছে দ্বীন। যদি সনদ না থাকত
তাহ’লে যার যা ইচ্ছা তাই বর্ণনা করত (ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামা হা/৩২)।
প্রশ্ন (২/২৪২) : দুই তলাবিশিষ্ট মসজিদের ২য়
তলায় ছালাতের স্থান এবং নীচতলা ছাত্রাবাসে পরিণত করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : মসজিদের নীচতলায় ছাত্রাবাস করায় কোন বাধা নেই। ইমাম ইবনে
তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘মসজিদের নীচে দোকান-পাট ও পানির হাউয তৈরী করা যায়। তাতে
কোন বাধা নেই’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/২১৮-২১৯)। যেখানে দোকানপাট করা যাবে সেখানে
ছাত্রাবাসও করা যাবে। তবে ছাত্রাবাসের ছাত্ররা যাতে শরী‘আতের বিধান মেনে চলে সে
ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৩/২৪৩) : আমার মায়ের সব সম্পদ পিতার
নিয়ন্ত্রণে। তিনি এর যাকাত দেন না আবার সম্পদও দেন না। এক্ষণে এজন্য আমার মা
গোনাহগার হবেন কি?
উত্তর : মা সম্পদের মালিকানা গ্রহণে নিরুপায় হ’লে তিনি গুনাহগার হবেন না
ইনশাআল্লাহ। কারণ যাকাত দেওয়ার জন্য শর্ত হ’ল সম্পদ ব্যক্তির মালিকানায় থাকা। অতএব
যেদিন তিনি পূর্ণ মালিকানা লাভ করবেন, সেদিন থেকে নিয়ম অনুযায়ী যাকাত আদায়
করবেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ৪৫২ পৃষ্ঠা; উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৮/১১, ১৮/১৩৪)।
প্রশ্ন (৪/২৪৪) : পোষাকে বমি লেগে গেলে উক্ত
পোষাকে ছালাত হবে কি?
উত্তর : উক্ত পোষাকে ছালাত হবে। অতএব মুছাল্লীর রুচি হ’লে তাতে ছালাত
আদায় করবে নতুবা তা পরিবর্তন করবে। কারণ বমি নাপাক হওয়ার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ
নেই। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ, আলবানী, শাওকানী, শায়খ বিন বায, উছায়মীন প্রমুখ
বিদ্বান বমিকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে গণ্য না করে একে সাধারণভাবে পবিত্র
বলেছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/২২২ ; ইরওয়া ১/১৪৮; তামামুল মিন্নাহ ১/৫৪;
আস-সায়লুল জার্রার ১/৩০; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/৩৫২)। অধিক পরিমাণে বমি হ’লে ছালাত
ছেড়ে দিবে এবং পরিচ্ছন্ন হয়ে ছালাতে যোগদান করবে। আর ছালাতের বাইরে বমি হ’লে
বমিযুক্ত কাপড় কেবল ধুয়ে নিবে। তবে শিশুদের বমি কাপড়ে লাগলে বার বার ধোয়া লাগবে
না। কারণ শিশুদের বমির বিষয়টি ভিন্ন (ইবনুল ক্বাইয়িম, তোহফাতুল মাওদূদ ২১৮
পৃঃ)।
প্রশ্ন (৫/২৪৫) : বিতর ছালাত নিয়মিতভাবে
এক রাক‘আত পড়া যাবে কি? এক রাক‘আত উত্তম হলে রামাযানে নিয়মিত ৩ রাক‘আত পড়ার কারণ
কি?
উত্তর : নিয়মিত এক ও তিন রাক‘আত বিতর পড়া যাবে। আর রামাযানে তিন রাক‘আত
বিতর পড়ার কারণ হ’ল হাদীছে বর্ণিত এগার রাক‘আত পূর্ণ করা। কারণ তারাবীহ ও
তাহাজ্জুদের ব্যাপারে হাদীছে ১১ রাক‘আতের কথাই বলা হয়েছে। তন্মধ্যে চার চার আট
রাক‘আত তারাবীহ ও তিন রাক‘আত বিতর (বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৩৮)। রাসূল
(ছাঃ) রাতের ছালাত দু’দু’রাক‘আত পড়তেন। অতঃপর এক রাক‘আত বিতর পড়তেন’ (বুখারী
হা/৯৯৫; মুসলিম হা/৭৫২; মিশকাত হা/১২৫৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে পাঁচ রাক‘আত বিতর
পড়তে পসন্দ করে সে তা করতে পারে। আর যে তিন রাক‘আত বিতর পড়তে পসন্দ করে সে তা করতে
পারে। যে এক রাক‘আত বিতর পড়তে পছন্দ করে সে তা করতে পারে’ (আবুদাউদ হা/১৪২২;
মিশকাত হা/১২৬৫, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৬/২৪৬) : জনৈক
আলেম বলেন, পানি থাকা অবস্থায় ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা যাবে না। এটা সঠিক কি? আর
পানি থাকা অবস্থায় টিস্যু ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তর : পানি থাকলে পানি ব্যবহার করবে। কারণ আল্লাহ পানি দ্বারা পবিত্রতা
অর্জনকারীদের ভালোবাসেন (আবুদাউদ হা/৪৪; মিশকাত হা/৩৬৯; ছহীহুল জামে‘
হা/৬৭৬০)। ইমাম তিরিমিযী বলেন, বিদ্বানগণ (পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে) পানিকেই
যথেষ্ট মনে করেন। পানি না পেলে কুলুখ নিবে (তিরমিযী হা/১৯ আলোচনা দ্রঃ)। তবে
কেউ যদি পানি থাকা সত্ত্বেও মাটি বা অনুরূপ কিছু দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে তাহ’লে
পবিত্রতা অর্জন হয়ে যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৬৭; বিন বায,
মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/১৫; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১১৫/১২; ফাতাওয়া লাজনা
দায়েমা ৪/৩৪)। স্মর্তব্য যে, কুলুখ ব্যবহার করার ফযীলত সম্পর্কে যেসব হাদীছ বর্ণিত
হয়েছে, তার সবই যঈফ ও জাল।
প্রশ্ন (৭/২৪৭) : ছোট শিশুদের বাঁশিযুক্ত
জুতা পরানো যাবে কি?
উত্তর : বাদ্য-বাজনা ইসলামে হারাম। তাই বাঁশি ও বাজনাযুক্ত জুতা পরানো যাবে
না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দু’টি বস্ত্ত দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত। আনন্দের সময় বাঁশি
বাজানো এবং মুছীবতের সময় বিলাপ করা (বাযযার, ছহীহুত তারগীব হা/৩৫২৭; মাজমা‘উয
যাওয়ায়েদ হা/৪০১৭)। তিনি আরো বলেন, আমি দু’টি নির্বোধসূলভ ও পাপাচারমূলক চিৎকার
নিষেধ করেছি। আনন্দের সময় খেল-তামাশা, শয়তানের বাঁশি বাজানো ও বিপদের সময় চিৎকার
করা, মুখমন্ডলে আঘাত করা এবং জামার সম্মুখভাগ ছিঁড়ে ফেলা আর শয়তানের মত (চিৎকার
করে) কান্নাকাটি করা (হাকেম হা/৬৮২৫; তিরমিযী হা/১০০৫; ছহীহুল জামে‘
হা/৫১৯৪)। অতএব কোমলমতি শিশুদের এসব শব্দ শুনানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
প্রশ্ন (৮/২৪৮) : আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত
আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের এখানে যোহরের ছালাত ১২.৫০ মিনিটে আদায় করা হয়। এক্ষণে আউয়াল
ওয়াক্তের মধ্যে জুম‘আর খুৎবা ও ছালাত কখন শুরু বা শেষ করা সমীচীন হবে?
উত্তর : যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর খুৎবা শুরু করে
শীত-গ্রীষ্মকালভেদে ১-টা থেকে ১.৩০ মিনিটের মধ্যে জুম‘আর ছালাত সমাপ্ত করা সমীচীন
হবে। কারণ এরপরে আদায় করলে আউয়াল ওয়াক্ত থাকে না। আউয়াল ওয়াক্ত বলতে ওয়াক্তের
প্রথমভাগকে বুঝানো হয়, ওয়াক্তের শুরুকে নয়। জিবরীল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে আউয়াল ও
আখের ওয়াক্তে দু’দিন ছালাত আদায় করিয়ে বলেন, উক্ত দুই ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়কালই
হ’ল আপনার উম্মতের জন্য ছালাতের ওয়াক্ত (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩
‘ছালাতের সময়কাল’ অনুচ্ছেদ)। যেমন শীত ও গ্রীষ্মকাল ভেদে সারাবছর ঢাকায় যোহরের সময়
শুরু হয় ১১:৪২ থেকে ১২:১৩ মিনিটে এবং শেষ হয় ০২:৫০ মিঃ থেকে ০৩:৩২ মিনিটে। এ দুই
প্রান্তসীমার মধ্যবর্তী সময়ের প্রথমভাগকে আউয়াল ওয়াক্ত ধরা হবে। প্রথমভাগেই রাসূল
(ছাঃ) জুম‘আর ছালাত আদায় করতেন’ (বুখারী হা/৯০৪-৯০৫; মিশকাত হা/১৪০১)। সালামা
ইবনু আকওয়া (রাঃ) বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে জুম‘আর
ছালাত আদায় করতাম। এরপর ছায়ায় হেঁটে প্রত্যাবর্তন করতাম (মুসলিম হা/৮৬০; ইবনু
হিববান হা/১৫১২; বিস্তারিত ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)।
প্রশ্ন (৯/২৪৯) : মসজিদের বারান্দার নীচে
টয়লেটের হাউজ থাকলে উক্ত বারান্দায় ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : উপরিভাগ পবিত্র থাকলে তার উপর ছালাত আদায় করা যাবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন, সমস্ত যমীন আমার জন্য পবিন্ত এবং তা ছালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে।
কাজেই আমার উম্মতের যে কোন ব্যক্তি ওয়াক্ত হ’লেই ছালাত আদায় করতে
পারবে’ (বুখারী হা/ ৩৩৫; মুসলিম হা/৫৭৪৭)।
প্রশ্ন (১০/২৫০) : কাউকে স্বামী বা স্ত্রী
হিসাবে কামনা করে আল্লাহর নিকটে দো‘আ করা যাবে কি?
উত্তর : যেকোন কল্যাণকর কাজে দো‘আ করা যাবে। কারো দ্বীনদারী ও উত্তম আচরণ
দেখে তার সাথে বিবাহের জন্যও দো‘আ করা যেতে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৭১;
উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২০৫-৬)। তবে এক্ষেত্রে হাদীছে বর্ণিত সারগর্ভ দো‘আ
করাই উত্তম। যেমন রাববানা আ-তিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল
আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা ‘আযা-বান্না-র। অর্থ: ‘হে আমাদের
প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও ও আখেরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে
জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও’ (বাক্বারাহ ২/২০১)।
আর দুনিয়া ও আখেরাতের
জন্য কে কল্যাণকর হবে, সে ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন। সেজন্য সর্বোত্তম পন্থা
হ’ল- ইস্তিখারার দো‘আ পাঠ করা, যা শরী‘আত নির্দেশিত। যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,
হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এ কাজটি আমার জন্য উত্তম হবে আমার দ্বীনের জন্য,
আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে ওটা আমার জন্য নির্ধারিত করে
দাও এবং সহজ করে দাও। অতঃপর ওতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি জানো যে, এ
কাজটি আমার জন্য মন্দ হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম
ফলের জন্য, তাহ’লে এটা আমার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকেও ওটা থেকে ফিরিয়ে রাখ।
অতঃপর আমার জন্য মঙ্গল নির্ধারণ কর, যেখানে তা আছে এবং আমাকে তা দ্বারা সন্তুষ্ট
কর’ (বুখারী হা/১১৬২; মিশকাত হা/১৩২৩)।
প্রশ্ন (১১/২৫১) : রাসূল (ছাঃ) নিজে কখনো
দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করেছেন কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) প্রতি ছালাতে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করতেন। কারণ শরী‘আতের
বিধান রাসূল (ছাঃ) নিজে আগে পালন করতেন। তারপর ছাহাবীগণকে শিক্ষা
দিতেন (মিরক্বাত ২/৭৩৩-৭৩৪)। আলবানী বলেন, রাসূল (ছাঃ) তাশাহহুদে এবং
অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজের প্রতি নিজে দরূদ পাঠ করতেন। আর তা উম্মতের জন্য সুন্নাত
সাব্যস্ত করেছেন (আছলু ছিফাতি ছালাতিন নবী (ছাঃ) পৃ. ৯০৪)।
প্রশ্ন (১২/২৫২) : ক্বিয়ামতের দিন আলেম-ওলামা
ও হাফেযদের বিচার কুরআনের সম্মানে পৃথকভাবে করা হবে কি? এছাড়া তাদের ছোট-খাট ভুল
ক্ষমা করে দেওয়া হবে কি?
উত্তর : কুরআনের সম্মানে তাদের পৃথক বিচার করা হবে না। তবে শহীদ, আলেম ও
ক্বারী এবং দাতাদের প্রথমে বিচার করা হবে মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে লোক
দেখানো আমলকারীরা পাকড়াও হবে (মুসলিম হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২০৫)। আর ক্বিয়ামতের
দিন মানুষকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হবে। ১. আরশের ডানে অবস্থানকারী। এরা সকলে
জান্নাতবাসী। ২. আরশের বামে অবস্থানকারী যারা সকলে জাহান্নামী। ৩. অগ্রগামী দল
যারা আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভকারী। যাদের মধ্যে রয়েছে নবী-রাসূল, শহীদ ও
ছিদ্দীকগণ (ওয়াকি‘আ ৫৬/৭-৮; তাফসীরে ইবনু কাছীর অত্র আয়াতের তাফসীর
দ্রষ্টব্য)। উল্লেখ্য যে, হাফেযে কুরআনের বিশেষ ফযীলত হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তারা
সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবেন (বুখারী হা/৪৯৩৭; মুসলিম
হা/৭৯৮;মিশকাত হা/২১১২)। তাদের মুখস্থ অনুযায়ী জান্নাতের উঁচুস্তরে স্থান লাভ
করবে (আবুদাউদ হা/১৪৬৪; মিশখাত হা/২১৩৪; ছহীহাহ হা/২২৪০)। তাদেরকে সম্মানের
মুকুট ও পোশাক পরানো হবে এবং আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন (তিরমিযী
হা/২৯১৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪২৫)। কুরআন তাদের জন্য সুফারিশ করবে (মুসলিম
হা/৮০৪; মিশকাত হা/২১২০)। নেক আমলকারী হাফেযকে মর্যাদার মুকুট ও তার পিতা-মাতাকে
দু’জোড়া সর্বোত্তম পোষাক পরানো হবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৬০১৪, ছহীহাহ
হা/২৮২৯)।
প্রশ্ন (১৩/২৫৩) : তোমরা ঠান্ডা পানি দ্বারা
ইস্তিনজা কর, কারণ এটা হারিশ রোগ আরোগ্যকারী- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪৮৫৮;
মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৮৩৮২; সিলসিলা যঈফাহ হা/৭০১০;)।
প্রশ্ন (১৪/২৫৪) :
ছালাতের মধ্যে তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে ভুল করে ফেললে বা এক সূরার আয়াতের মাঝে অন্য
সূরার আয়াত পাঠ করে ফেললে উক্ত ছালাত কবুলযোগ্য হবে কি? এজন্য সহো সিজদা দিতে হবে
কি?
উত্তর : এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না এবং এজন্য সহো সিজদাও দিতে হবে না।
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, একবার আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাতে ছিলাম। তিনি
একটি আয়াত ছেড়ে চলে গেলেন। ছালাত শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল!
আয়াতটি মানসূখ হয়ে গেছে না পড়তে ভুলে গিয়েছিলেন? তিনি বললেন, না বরং ভুলে
গিয়েছিলাম (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৬৪৭; আহমাদ হা/১৫৪০২, সনদ ছহীহ;
বুখারী, জুযউল ক্বিরাআত খালফাল ইমাম হা/১২৩)।
প্রশ্ন (১৫/২৫৫) : আমি কুরআন তেলাওয়াত করতে
পারি না। এক্ষণে অনুবাদ পাঠ করলে তেলাওয়াতের নেকী পাওয়া যাবে কি?
উত্তর : অনুবাদ পড়ে তেলাওয়াতের নেকী পাওয়ার পক্ষে কোন দলীল নেই। কুরআন
আরবীতেই পড়তে হবে, যাতে প্রতি হরফের বিনিময়ে ১০টি নেকী পাওয়া যাবে (হাকেম
হা/২০৮০; ছহীহাহ হা/৬৬০)। তবে কেউ কুরআন বুঝার জন্য অনুবাদ পাঠ করলে ছওয়াব
পাবে (নিসা ৪/৮২; মুহাম্মাদ ৪৭/২৪)। কারণ এটি একটি উত্তম সৎকর্ম। আর প্রত্যেক
সৎকর্মের জন্য আল্লাহ পুরস্কার দিবেন (হূদ ১১/১১৪-১১৫)।
প্রশ্ন (১৬/২৫৬) : মাঝে মাঝে ছালাত
আদায়কারী কসাইয়ের যবেহ করা পশুর গোশত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : কোন মুসলিম কর্তৃক বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করা পশুর গোশত খাওয়া জায়েয।
কারণ সে ছালাতকে অস্বীকার করে না। বরং অলসতাবশত মাঝে-মধ্যে ছেড়ে দেয় (শায়খ
বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/২৭৫)। তবে তাকে ছালাত আদায়ের উপদেশ দিতে হবে। কারণ
ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত পরিত্যাগ করা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত মহাপাপ (মুসলিম হা/৮২;
মিশকাত হা/৫৬৯)।
প্রশ্ন (১৭/২৫৭) : আমি আমার স্ত্রীকে তিন
মাসে তিন তালাক দেই। পরে গ্রাম্য সালিসে আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া হয়।
এক্ষণে উক্ত স্ত্রীর সাথে আমার সংসার করা জায়েয হচ্ছে কি?
উত্তর : উক্ত স্ত্রীর সাথে সংসার করা হারাম। কেননা তিন মাসে তিন তালাক
প্রদানের মাধ্যমে তালাকটি ‘বায়েন’ তথা বিচ্ছিন্নকারী তালাকে পরিণত হয়েছে। এরপর তার
পক্ষে আর পূর্ব স্বামীর কাছে ফিরে আসার সুযোগ নেই, যতক্ষণ না সে অন্যত্র স্বেচ্ছায়
বিবাহ করে ও স্বেচ্ছায় তালাকপ্রাপ্তা হয় (বাক্বারাহ ২/২২৯-৩০)। এক্ষণে তার
জন্য অনতিবিলম্বে পৃথক হওয়া ও তওবা করা আবশ্যক
প্রশ্ন (১৮/২৫৮) : ছালাত ব্যতীত জীবনের কোন
মূল্য নেই, যেমন মস্তিষ্ক ব্যতীত দেহের কোন মূল্য নেই। কথাটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা
প্রমাণিত কি?
উত্তর : এটা প্রচলিত একটি কথা মাত্র। উক্ত মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না।
এর দ্বারা মূলত ছালাতের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন (১৯/২৫৯) : বিবাহের পর স্বামী কর্মহীন
থাকায় পরিবারের চাপে বাধ্য হয়ে স্ত্রী ডিভোর্স লেটারে স্বাক্ষর করে। তবে স্বামী তা
গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে স্ত্রী স্বামী থেকে আলাদা বসাবস করলেও তাদের মাঝে সম্পর্ক
ছিন্ন হয়নি। এক্ষণে স্বামীর নিকটে ফিরে যেতে বিবাহের প্রয়োজন হবে কি?
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় ‘খোলা’ হয়েছে। এক্ষণে উক্ত নারীর সাথে
সংসার করতে চাইলে নতুন বিবাহের মাধ্যমে সংসার করবে (বাক্বারাহ ২/২৩২; তালাক
৬৫/১; বুখারী হা/৫১৩০)।
প্রশ্ন (২০/২৬০) : দোকান থেকে খাট ক্রয়ের
ক্ষেত্রে নগদে এক মূল্যে এবং বাকীতে তথা কিস্তিতে অধিক মূল্যে ক্রয় করতে হয়। এরূপ
ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে কি?
উত্তর : এরূপ ক্রয়-বিক্রয় জায়েয নয়। কারণ বেশী নেওয়াটা সূদ। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘যে ব্যক্তি একটি ব্যবসায়ে দু’টি বিক্রয় করে সে কম মূল্যেরটা নিবে অথবা সূদ
নিবে’ (আবুদাঊদ হা/৩৪৬১; ছহীহাহ হা/২৩২৬)। এখানে ক্রেতাকে এখতিয়ার দেওয়া
হয়েছে দু’টির যেকোন একটি গ্রহণ করার। হয় সে নগদে কম মূল্যে খরীদ করবে, যা সিদ্ধ।
নয় বাকীতে বেশী মূল্যে খরীদ করবে, যা সূদ এবং যা নিতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ
করেছেন। এর মধ্যে অজ্ঞতার কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, ‘সূদ হয় বাকীতে’ (বুখারী
হা/২১৭৯; মুসলিম হা/১৫৯৬; মিশকাত হা/২৮২৪)। অতএব বাকীতে অতিরিক্ত মূল্যের
বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না (বিস্তারিত দ্রঃ বায়‘এ মুআজ্জাল’ বই)।
প্রশ্ন (২১/২৬১) : ওয়াক্ত শুরুর পূর্বে
আযান দেওয়া বৈধ হবে কি?
উত্তর : কোন ছালাতের জন্য সময়ের পূর্বে আযান দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। কেউ
এরূপ করে ছালাত আদায় করলে তাকে পুনরায় আযান দিয়ে ছালাত আদায় করতে
হবে (আবুদাউদ হা/৫৩২-৫৩৩; ইবনু কুদামা, মুগনী ১/২৯৭)। তবে ফজরের পূর্বে
সাহারী বা তাহাজ্জুদের জন্য আযান দেওয়া যাবে (বুখারী হা/৬১৭; মুসলিম হা/১০৯২;
মিশকাত হা/৬৮০)। অতঃপর ফজরের ছালাতের জন্য পুনরায় আযান দিতে হবে (মুবারকপুরী,
তোহফা ১/৫১৫-১৬)।
প্রশ্ন (২২/২৬২) : জনৈক ব্যক্তি যৌতুকের
অর্থ দিয়ে বৌভাতের আয়োজন করে দাওয়াত দিয়েছে। সেখানে যাওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : যৌতুক লেনদেন ইসলামে হারাম। তাই যৌতুক গ্রহণকারী পাপী হবে। কিন্তু
এজন্য তার দাওয়াত গ্রহণে কোন বাধা নেই। কারণ একজনের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে
না (আন‘আম ১৬৪)। বরং স্পষ্ট পাপাচারী না হ’লে ওয়ালীমার দাওয়াত গ্রহণ করা
ওয়াজিব (বুখারী হা/৫১৭৭; মুসলিম হা/১৪৩২; মিশকাত হা/৩২১৮)। তাছাড়া ওয়ালীমার
আয়োজনে মেয়ে পক্ষ ছেলেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে (শারহুস সুন্নাহ
৮/১৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ১/৫)।
প্রশ্ন (২৩/২৬৩) : তাহাজ্জুদের ছালাত
অনিয়মিতভাবে আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। তবে নিয়মিত পড়াই উত্তম। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা রাতের
ছালাত ছেড়ে দিয়ো না। কারণ রাসূল (ছাঃ) এ ছালাত ছাড়তেন না। যখন তিনি অসুস্থ বা
দুর্বল বোধ করতেন তখন তা বসে আদায় করতেন (আহমাদ হা/২৬১৫৭; আবুদাঊদ হা/১৩০৭,
সনদ ছহীহ)। এছাড়া আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল তাই, যা অল্প হ’লেও নিয়মিত
করা হয় (বুখারী হা/৬৪৬৫; মুসলিম হা/৭৮৩; মিশকাত হা/১২৪২)। উল্লেখ্য যে,
‘তাহাজ্জুদ শুরু করলে আর ছাড়া যাবে না এবং ছাড়লে গুনাহ হবে’ মর্মে প্রচলিত কথাটি
ভিত্তিহীন। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন (২৪/২৬৪) : স্বর্ণকার হিসাবে
আমাকে মাঝে মাঝে হিন্দুদের দেব- দেবী, ময়ূর ইত্যাদির ডিজাইন করতে হয়। হিন্দু দেশ
হিসাবে এটা না করলে আমার ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষণে এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর : জায়েয হবে না। কারণ এর মাধ্যমে একদিকে মূর্তি নির্মাণের গোনাহ
অন্যদিকে অমুসলিম ধর্মীয় উৎসবে সহযোগিতা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার
কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো
না’ (মায়েদা ৫/২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য
অবলম্বন করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭; ছহীহুল
জামে‘ হা/৬১৪৯)। ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়,
মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের
সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৪৬)। বরং হালাল
পেশা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করলে ও তার উপর ভরসা করলে তিনি একটা বৈধ উপায়
বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন (তালাক ৬৫/২; বুখারী হা/৫১৬৪; মুসলিম
হা/৩৬৭)।
প্রশ্ন (২৫/২৬৫) : যে ব্যক্তি চল্লিশ
দিনকে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করবে তার কথায় জ্ঞানের ধারা প্রবাহিত হবে’
মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
উত্তর : বর্ণনাটি জাল ও মুনকার। এই বর্ণনা থেকেই তাবলীগ জামা‘আত
চল্লিশ দিনের চিল্লার প্রবর্তন করেছে, যা ভিত্তিহীন ও বাতিল। আবু নু‘আইম তার
হিলইয়াহ গ্রন্থে (৫/১৮৯), কাযাঈ মুসনাদে শিহাবে (হা/৪৬৬), ইহইয়াউ
ঊলূমিদ্দীনসহ কিছু কিতাবে এটি বর্ণিত হয়েছে (কিতাবুল মাওযূ‘আত ৩/১৪৪; সিলসিলা
যঈফাহ হা/৩৮)।
প্রশ্ন (২৬/২৬৬) : সমাজে প্রচলিত আছে,
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে সবাই সমান। একথা কি সত্য?
উত্তর : একথা সত্য। যে ব্যক্তি অন্যায় করে ও যে ব্যক্তি শক্তি থাকা
সত্ত্বেও উক্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, পাপের দিক দিয়ে উভয়ে সমান। এ মর্মে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেন। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহর নির্ধারিত বিধানে অবহেলাকারী এবং অন্যায়ে পতিত
ব্যক্তির দৃষ্টান্ত এমন সম্প্রদায়ের ন্যায়, যারা একটি জাহাযে লটারীর মাধ্যমে
নিজেদের স্থান নির্ধারণ করল। তদনুযায়ী কারো স্থান নীচের তলায় এবং কারো স্থান
উপরের তলায় হ’ল। আর নীচের লোকেরা পানির জন্য উপরের লোকদের নিকট যাতায়াত করলে তাদের
অসুবিধা ঘটে। তাই নীচের এক ব্যক্তি একখানা কুঠার নিল এবং জাহাযের তলা ছিদ্র করতে
লাগল। এ সময় উপরের লোকেরা এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগল তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমাদের
কারণে তোমাদের কষ্ট হয়। অথচ আমাদেরও পানির একান্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায় তারা যদি তার
দু’হাত ধরে নেয়, তবে তাকেও রক্ষা করবে এবং নিজেরাও রক্ষা পাবে। আর যদি তাকে তার
কাজে ছেড়ে দেয় তবে তাকেও ধ্বংস করবে এবং নিজেরাও ধ্বংস হবে’ (বুখারী, মিশকাত
হা/৫১৩৮ ‘ন্যায়ের আদেশ’ অনুচ্ছেদ)।
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
‘যখন লোকেরা তাদের মধ্যে কোনরূপ অন্যায় হ’তে দেখে অথচ তার প্রতিরোধ করে না, আল্লাহ
তার শাস্তিস্বরূপ তাদের সকলের উপর গযব পাঠিয়ে দেন’ (আহমাদ, তিরমিযী হা/৪০০৫,
মিশকাত হা/৫১৪২, সনদ ছহীহ)। অতএব অন্যায় রুখতে হবে। নইলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশ্ন (২৭/২৬৭) : নামের শেষে অনেকে
জিহাদী, ইউসুফী, ফারুকী, ছিদ্দীক্বী, আনছারী, কুরায়শী যুক্ত করেন, যা তার মূল
নামের অংশ নয়। বিষয়টি কতটুকু শরী‘আতসম্মত?
উত্তর : পরবর্তীতে এরূপ পদবী না রাখা উচিৎ। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা
আত্মপ্রশংসা করো না। তোমাদের মধ্যে কে সর্বাধিক নেক আমলকারী সে সম্পর্কে আল্লাহই
সম্যক অবগত (মুসলিম হা/২১৪২; মিশকাত হা/৪৭৫৬)। তবে জন্মের পর পিতা-মাতা যদি
এরূপ নাম রাখেন, তাহ’লে তাতে কোন দোষ নেই। আক্বীক্বার সময় শিশু সন্তানের নাম ঐরূপ
রাখা তার জন্য আত্মপ্রশংসা নয়। বরং পিতা ও অভিভাবকদের পক্ষ হ’তে তার জন্য শুভ
কামনা বা দো‘আ স্বরূপ। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর নাম তাঁর দাদা রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’ ও
মা রেখেছিলেন ‘আহমাদ’ (প্রশংসিত)। অনুরূপ মুসলিম নেতারা কাউকে তার কাজের কারণে
এরূপ পদবী দিলে তাতে কোন বাধা নেই। যেমন রাসূল (ছাঃ) আবুবকর (রাঃ)-কে ‘ছিদ্দীক’ ও
ওমর (রাঃ)-কে ‘ফারূক’ উপাধি প্রদান করেছিলেন (হাকেম হা/৪৪০৭; ছহীহাহ হা/৩০৬;
তাফসীরে কুরতুবী ৫/২৬৪)। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) মুতার যুদ্ধবিজয়ী সেনাপতি খালেদকে
দো‘আ করে অশ্রুসজল নেত্রে বলেছিলেন, এবারে ঝান্ডা হাতে নিয়েছে ‘আল্লাহর তরবারি
সমূহের অন্যতম ‘তরবারী’ (বুখারী হা/৪২৬২)। অর্থাৎ খালেদ নিজে ‘সায়ফুল্লাহ’
নাম গ্রহণ করেননি, বরং রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ লকব দিয়েছিলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের
ছেলে আব্দুল্লাহর লকব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহির (পবিত্র)। অতএব পিতা-মাতা তার
সন্তানের জন্য দো‘আ হিসাবে উক্ত গুণবাচক নাম সমূহ রাখতে পারেন। তবে তা যেন অহংকার
প্রকাশক না হয়।
প্রশ্ন (২৮/২৬৮) : জন্মের ১ দিন পর
সন্তান মারা গেলে সপ্তম দিনে তার আক্বীক্বা দিতে হবে কি?
উত্তর : সপ্তম দিনের পূর্বে সন্তান মারা গেলেও তার আক্বীক্বা দিবে।
কারণ আক্বীক্বা দেওয়ার জন্য বাচ্চা সপ্তম দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা শর্ত
নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৪৪৫)। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার
আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে’ (আবুদাউদ হা/২৮৩৯; মিশকাত হা/৪১৫৩)। উক্ত হাদীছের
ব্যাখ্যায় খাত্ত্বাবী বলেন, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। তবে এসবের মধ্যে
সর্বাধিক উত্তম ব্যাখ্যা হ’ল যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন। তিনি বলেন, এটি
সন্তানের শাফা‘আতের বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি সন্তানের আক্বীক্বা না করা
হয়। অতঃপর সে শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফা‘আত করবে
না (ফাৎহুল বারী ৯/৫৯৪)।
প্রশ্ন (২৯/২৬৯) : একটি দুঃখজনক ঘটনার
প্রেক্ষিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আর কখনো বিবাহ করব না। এরূপ সিদ্ধান্ত
শরী‘আতসম্মত হয়েছে কি?
উত্তর : দৈহিকভাবে সক্ষম ব্যক্তির এরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। এ
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে
করার সামর্থ্য আছে, সে যেন অবশ্যই বিয়ে করে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/৩০৮০)। তিনি বলেন, বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতের উপর আমল
করে না, সে আমার দলভুক্ত নয় (ইবনু মাজাহ হা/১৮৪৬, ছহীহাহ হা/২৩৮৩)। রাসূল
(ছাঃ) বৈরাগ্য জীবন যাপন করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮১)। অন্যত্র
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিবাহ করল সে যেন দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল, বাকী অর্ধেকের
বিষয়ে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে’ (হাকেম হা/২৬৮১; ছহীহাহ হা/৬২৫; মিশকাত
হা/৩০৯৬)। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ইবনু ওমর (রাঃ) বিবাহ না করার
সিদ্ধান্ত নেন। অতঃপর হাফছা (রাঃ) তাকে ডেকে বলেন, তুমি বিয়ে কর। কারণ তোমার
সন্তান হয়ে মারা গেলে সে তোমার জন্য অগ্রগামী হবে। আর বেঁচে থাকলে তোমার জন্য দো‘আ
করবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১০৩৮৮, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৩০/২৭০) : জনৈক বিধবা মহিলা
সন্তানদের মত না থাকায় গোপনে একজনকে অলী বানিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে একজনের সাথে
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। বর্তমান স্বামীর সাথে তার
সাক্ষাৎ ও মোবাইলে কথা হয়, তবে দৈহিক সম্পর্ক হয়নি। সন্তানদের অমতে এরূপ বিবাহ
সঠিক হয়েছে কি?
উত্তর : বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। কারণ নারী নিজের বিবাহ নিজে
বা অন্য নারীকে বিবাহ দিতে পারে না (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২; ইবনু মাজাহ হা/৩১৩৭;
ইরওয়া হা/১৮৪১)। নারীর বিবাহের জন্য নিকটতম অভিভাবকের অনুমতি আবশ্যক। এমনকি পিতা,
দাদা, ভাই প্রমুখদের অবর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানও মায়ের অলী হ’তে
পারে (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ক্রমিক ১৫৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
১৮/১৪৩)। এছাড়া দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে বিবাহ হ’তে হবে (ছহীহ
ইবনু হিববান হা/৪০৭৫; ইরওয়া হা/১৮৬০, সনদ ছহীহ)। এক্ষণে সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের
উচিৎ বিবাহে ইচ্ছুক মায়ের বিবাহের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় তিনি আদালতের মাধ্যমে
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারেন। কারণ যার কোন অলী নেই, সরকার তার অলী
হবে’ (আবুদাউদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১)।
প্রশ্ন (৩১/২৭১) : কবর যিয়ারতের সুন্নাতী
পদ্ধতি কি? কবর যিয়ারতের সময় কি কি দো‘আ পড়তে হয়? কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্য করে কোথাও
যাওয়া যাবে কি? কবর যিয়ারত করলে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় কি?
উত্তর : কবরস্থানে গিয়ে প্রথমে দো‘আ পাঠ করবে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘হে
আল্লাহর রাসূল! কবর যিয়ারতের সময় আমি কী বলব? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি
বল, ‘আস্সালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইয়ারহামুল্লা-হুল
মুস্তাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুস্তা’খিরীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা
লা-হেকূনা’। অর্থ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক।
আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই
আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি’ (মুসলিম হা/২২৫৬;মিশকাত হা/১৭৬৭ ‘কবর
যিয়ারত’ অনুচ্ছেদ)। আর কেবল কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না (বুখারী
হা/১১৮৯; মুসলিম হা/১৩৯৭; মিশকাত হা/৬৯৩)। তবে অন্য উদ্দেশ্যে গিয়ে কবর যিয়ারত
করাতে কোন বাধা নেই। যেমন মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে গিয়ে রাসূল (ছাঃ)
ও তাঁর সাথীদ্বয়ের কবর যিয়ারত করা যায়। আর যেকোন স্থান থেকে যে কেউ মৃত মুমিন
ব্যক্তির জন্য দো‘আ করলে তার উপকার হবে (হাশর ১০; মুসলিমহা/৯৬৩; আবুদাউদ
হা/৩১৯৯; মিশকাত হা/১৬৫৫, ১৬৭৪)। কবর যিয়ারত করাতে যিয়ারতকারীর পরকালের কথা স্মরণ
হয় বলে সে ব্যক্তি উপকৃত হয় (মুসলিম হা/৯৭৬; মিশকাত হা/১৭৬৩)।
প্রশ্ন (৩২/২৭২) : মুসলমানদের যাকাত বা
ওশর থেকে কিছু অংশ অমুসলিম ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করা যাবে কি?
উত্তর : কোন অমুসলিমকে যাকাতের মাল থেকে দেওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) মু‘আয
বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনে প্রেরণের সময় বলেছিলেন, তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে এই
মর্মে যে, আল্লাহ তাদের উপরে ছাদাক্বা ফরয করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে
নেওয়া হবে ও তাদের গরীবদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে (মুসলিম হা/১৯; মিশকাত
হা/১৭৭২)। এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে,
কাফেরকে যাকাতের মাল দেওয়া যাবে না (নববী, শরহ মুসলিম হা/১৯-এর ব্যাখ্যা
দ্রষ্টব্য)। ইবনু কুদামা বলেন, যাকাতের মাল থেকে কাফেরদের দেওয়া যাবে না। এ
ব্যাপারে বিদ্বানগণের মতপার্থক্য আমার জানা নেই (মুগনী ২/১৮৭)। ইবনুল মুনযির
বলেন, এ ব্যাপারে আলেমগণের ঐক্যমত রয়েছে যে, যাকাতের মাল থেকে কোন কিছু কাফেরদের
দেওয়া যাবে না (আল-ইজমা‘ ৪৮ পৃ:)।
প্রশ্ন (৩৩/২৭৩) : হাউযে কাওছার কেবল কি
আমাদের নবী (ছাঃ) প্রাপ্ত হবেন। না প্রত্যেক নবী-রাসূলই প্রাপ্ত হবেন এবং তা থেকে
নিজ উম্মতদের পানি পান করাবেন?
উত্তর : হাউয সকল নবী ও রাসূলকে প্রদান করা হবে। যাতে তারা হাশরের ময়দানে
নিজ নিজ উম্মতকে পানি পান করাতে পারেন। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর হাউয সবচেয়ে বড় হবে এবং
তার নাম হবে হাউযে কাওছার। আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাকে হাউযে কাওছার দান
করেছি (কাওছার ১)। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘প্রত্যেক নবীর জন্য একটি করে হাউয হবে। আর এ নিয়ে তারা পরস্পরে গর্ববোধ করবেন যে,
কার হাউযে কত বেশি লোক অবতরণ করবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে, আমার হাউযেই সবচেয়ে
বেশী সংখ্যক লোক আসবে’ (তিরমিযী হা/২৪৪৩; মিশকাত হা/৫৫৯৪; ছহীহাহ
হা/১৫৮৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৬৮)।
প্রশ্ন (৩৪/২৭৪) : মুসলিম হা/২৬০৪ থেকে
বুঝা যায়, রাসূল (ছাঃ) মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর প্রতি বিরক্ত হয়ে বদদো‘আ করেছেন। এছাড়া
ত্বাবারী সংকলিত ইবনু ওমর থেকে আরেকটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
মু‘আবিয়ার মৃত্যু ইসলামের উপর হবে না। উপরোক্ত হাদীছদ্বয়ের সত্যতা ও সঠিক ব্যাখ্যা
জানতে চাই।
উত্তর : হাদীছটিতে বলা হয়েছে যে, একদা রাসূল (ছাঃ) ইবনু আববাসকে
বললেন, যাও, মু‘আবিয়াকে আমার কাছে ডেকে আনো। তিনি ডাকতে গেলেন এবং ঘুরে এসে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল তিনি খাচ্ছেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকে পুনরায় পাঠালে তিনি এসে
একই কথা বললেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ যেন তার পেট ভর্তি না
করেন (মুসলিম হা/২৬০৪)। হাদীছটি ছহীহ। তবে উক্ত বাক্যটি মু‘আবিয়ার বিরুদ্ধে
বদদো‘আ ছিল না, বরং দো‘আ ছিল। আলবানী বলেন, এটি সংকল্পহীন দো‘আ। যা আরবরা
তাদের বাকরীতি অনুযায়ী উদ্দেশ্য ছাড়াই বাক্যের সাথে ব্যবহার করে
থাকে’ (ছহীহাহ হা/৮২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
অপর এক হাদীছে এসেছে,
একবার রাসূল (ছাঃ) উম্মু সুলাইম (রাঃ)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন এক ইয়াতীম বালিকাকে দেখে
বলেন, তোমার বয়স আর বৃদ্ধি না হৌক। তখন সে উম্মু সুলাইমের নিকট অভিযোগ করলে তিনি
রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন এবং তিনি মেয়েটির উপর বদদো‘আ করার কারণ জিজ্ঞেস করেন।
তখন রাসূল (ছাঃ) মুচকি হেসে বলেন, তুমি কি জান না যে, আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এই
মর্মে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি এবং আমি বলেছি যে, আমি তো একজন মানুষ। মানুষ যেমন
সন্তুষ্ট হয়, আমিও তেমন হই। মানুষ যেমন রাগান্বিত হয়, আমিও তেমনি হই। আমিও
অসন্তুষ্ট হই, যেভাবে মানুষ হয়ে থাকে। সুতরাং আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তির
বিরুদ্ধে দো‘আ করলে, সে যদি তার যোগ্য না হয় তাহ’লে তা তার জন্য পবিত্রতা,
আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানিয়ে দিবেন (মুসলিম হা/২৬০৩; ছহীহাহ
হা/৮৩-৮৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি মানুষ নবী ছিলেন,
নূরের নবী নন।
আর দ্বিতীয় বর্ণনাটি
বাতিল। এটি রাফেযী শী‘আদের বানানো মিথ্যা কাহিনী মাত্র (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ
হা/৯২৪৩; ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/৪৪৩-৪৪৪)।
প্রশ্ন (৩৫/২৭৫) : একটি জাতীয় দৈনিকের
ইসলামী প্রবন্ধে লেখা হয়েছে যে, শারঈ বিধান অনুযায়ী স্বামী তার স্ত্রীকে খাদ্য
প্রস্ত্তত করতে বাধ্য করতে পারবে না। বক্তব্যটির শারঈ ভিত্তি আছে কি?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কেবল খাদ্য প্রস্ত্তত নয়, বরং স্ত্রীর উপর
কর্তব্য হ’ল স্বামীর শরী‘আতসম্মত যেকোন নির্দেশ নির্দ্বিধায় পালন করা। আল্লাহ
বলেন, পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল (নিসা ৫/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নারী
তার স্বামীগৃহের কর্ত্রী, তাকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা
হবে (বুখারী হা/৮৯৩; মুসলিম হা/১৮২৯)। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক
শাস্তি প্রাপ্ত হবে দু’ধরনের মানুষ। তাদের একজন হ’ল, অবাধ্য স্ত্রী (তিরমিযী
হা/৩৫৯, সনদ ছহীহ)। আসমা বলেন, আমি যুবায়েরের স্ত্রী ছিলাম। আমি বাড়ির কাজে
যুবায়ের (রাঃ)-এর খিদমত করতাম। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং
পানি উত্তোলনের মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম... (মুসলিম হা/২১৮২;
যাদুল মা‘আদ ৫/১৬৯-১৭১)।
তবে উভয়ে উভয়ের
অধিকারের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই
ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর নিকটে উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের নিকটে
উত্তম’ (তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩২৫২)। আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী করীম (ছাঃ) ঘরে থাকা অবস্থায় কি
করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। আর ছালাতের সময় হ’লে ছালাতে চলে
যেতেন (বুখারী হা/৬৭৬; মিশকাত হা/৫৮১৬)।
প্রশ্ন (৩৬/২৭৬) : জনৈক আলেম সূরা কাহফের
২৮ আয়াতের ভিত্তিতে বলেন, সম্মিলিত মুনাজাত বর্জনকারীরা আল্লাহর নাফরমান।
বক্তব্যটি কতটুকু সত্য?
উত্তর : বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং মনগড়া। পৃথিবীর কোন মুফাসসির উক্ত আয়াতের
তাফসীরে এরূপ কথা বলেননি। আয়াতটির অর্থ হ’ল- ‘আর তুমি নিজেকে ধরে রাখো তাদের সাথে
যারা সকালে ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁর সন্তুষ্টি কামনায় এবং
তুমি তাদের থেকে তোমার দু’চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায়। আর
তুমি ঐ ব্যক্তির আনুগত্য করো না যার অন্তরকে আমরা আমাদের স্মরণ থেকে গাফেল করে
দিয়েছি এবং সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও তার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে
গেছে’ (কাহফ ১৮/২৮)। সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকার তাফসীরে ইবনু ওমর ও আমর
ইবনু শু‘আইব বলেন, তারা ফজর ও আছরের ফরয ছালাত আদায় করে। এছাড়া কেউ কেউ
সকাল-সন্ধ্যায় কুরআন শিক্ষা ও কুরআন তিলাওয়াতের কথা বলেছেন (তাফসীরে ইবনু আবী
হাতেম হা/১২৭৭২-৭৪; ইবনু কাছীর)। ইবনু কাছীর সকাল-সন্ধ্যায় যিকির-আযকার, তাসবীহ্,
তাহলীল পাঠ ও আল্লাহ নিকট চাওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন (ইবনু কাছীর ঐ আয়াতের
ব্যাখ্যা)। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি এমন একটি দলের সাথে বসব যারা ফজরের ছালাত
থেকে শুরু করে সূর্য উঠা পর্যন্ত মহান আল্লাহর যিকরে মশগূল থাকে। এ কাজ আমার নিকট
ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশের দাসী আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি এমন একটি দলের সাথে বসব
যারা আছরের ছালাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে মশগূল থাকে। আমার নিকট এ
কাজ চারটি দাসী আযাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়’ (আবুদাউদ হা/৩৬৬৭; মিশকাত
হা/৯৭০; ছহীহাহ হা/২৯১৬)। অতএব এ আয়াত দ্বারা সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল গ্রহণ করার
কোন সুযোগ নেই।
প্রশ্ন (৩৭/২৭৭) : অসুস্থ ব্যক্তির দো‘আ
ফেরেশতাদের দো‘আর ন্যায়- কথাটির কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : না। কেননা এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ
হা/১০০৪; ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৫৮৮)।
প্রশ্ন (৩৯/২৭৯) : মানুষ মারা গেলে তার
রূহকে ইল্লীন অথবা সিজ্জীনে রাখা হয়। আবার শুনেছি মৃত মানুষ তার আত্মীয়-স্বজনের
কান্না, কথাবার্তা, তাকে গোসল করানো, জানাযা পড়ানো ইত্যাদি সব শুনতে পায়। সে সব
বুঝতে পারে শুধু কথা বলতে পারে না। আত্মা যদি ইল্লীন অথবা সিজ্জীনে থাকে তাহ’লে
এসব শুনতে পায় কিভাবে?
উত্তর : মৃত্যুর পর সৎ বান্দাদের রূহ ইল্লিয়ীনে এবং পাপীদের রূহ সিজ্জীনে
অবস্থান করে। অতঃপর তাদের আমল অনুযায়ী তাদের রূহের উপর শান্তি অথবা শাস্তি প্রদান
করা হয় (গাফের ৪০/৪৫-৪৬; আবুদাঊদ হা/৪৭৫৫; মিশকাত হা/১৩১)। এছাড়া কবরে
ব্যক্তির দেহে পুনরায় রূহ ফিরিয়ে দেওয়া হয় মর্মে ছহীহ হাদীছ এসেছে (আহমাদ
হা/১৮৫৫৭; ইবনু মাজাহ হা/৪২৬২; মিশকাত হা/১৬৩০)। আর জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের ফিরে
যাওয়ার সময় তাদের জুতার আওয়াজ তিনি শুনতে পান মর্মে হাদীছ এসেছে (বুখারী
হা/১৩৩৮; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬)।
উক্ত বিষয়গুলি অদৃশ্য
বিষয়ক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না। অতএব কুরআনে ও হাদীছে
যেভাবে এসেছে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।
প্রশ্ন (৪০/২৮০) : পায়ুপথ দিয়ে কৃমি বের
হলে ওযূ ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর : উক্ত কারণ ওযূ ভেঙ্গে যাবে মর্মে স্পষ্ট কোন দলীল পাওয়া যায়
না। সেকারণ ইমাম মালেক (রহঃ) এর দ্বারা ওযূ ভঙ্গ হবে না বলেছেন। আর ‘দুই রাস্তা
দিয়ে কিছু বের হ’লে ওযূ নষ্ট হবে’ মর্মে বর্ণিত মূলনীতি দ্বারা কেবল পায়খানা ও
পেশাবকে বুঝানো হয়েছে। বায়ু নিঃসরণ এবং মনী, মযী ও অদী বের হওয়ার কারণে ওযূ বিনষ্ট
হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট হাদীছ রয়েছে (উছায়মীন, আল লিক্বাউশ শাহরী ৪৫/১৩; আলবানী,
সিলসিলাতুল হুদা টেপ নং ২৪০)।
মে/২০১৮
প্রশ্ন (১/২৮১) :
সিজোফ্রেনিয়া রোগের কারণে স্বামী মাঝে মাঝে চরম রাগান্বিত হয়ে আমাকে তালাক তালাক
বলে। এগুলি তালাক হিসাবে গণ্য হবে কি?
উত্তর : এগুলি তালাক হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা সিজোফ্রেনিয়া একটি মানসিক
ব্যাধি, যার ফলে ব্যক্তির চিন্তাধারা, আচার-ব্যবহার, অনুভূতি
প্রকাশ ইত্যাদির মধ্যে নানা অসঙ্গতি দেখা যায়। ফলে তার থেকে অবাস্তব চিন্তাধারা,
অদ্ভুত কার্যকলাপ, অসংলগ্ন কথাবার্তা ইত্যাদি প্রকাশ পায়। অতএব এরূপ ব্যক্তির
রাগান্বিত অবস্থায় প্রদত্ত তালাক ধর্তব্য হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘রাগের
অবস্থায় কোন তালাক হয় না’ (আবুদাউদ হা/২১৯৩; মিশকাত
হা/৩২৮৫)। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘ইগলাক্ব’ গালাক্ব ধাতু হ’তে ব্যুৎপণ্ণ। যার
অর্থ বন্ধ হওয়া। ক্রোধান্ধ, পাগল ও যবরদস্তির অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান ও
ইচ্ছাশক্তি লোপ পায়। তাই এ অবস্থাকে ‘ইগলাক্ব’ বলা হয় (ঐ, হাশিয়া ২/৪১৩ পৃঃ)।
তিনি আরো বলেন, ‘তিন ব্যক্তি হ’তে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (১) পাগল যতক্ষণ না সে
সুস্থ হয় ... (আবুদাউদ হা/৪৪০১; মিশকাত হা/৩২৮৭)। আলী (রাঃ) বলেন, পাগল
ব্যক্তির তালাক ব্যতীত সকল তালাকই জায়েয (বুখারী তা‘লীক, ‘তালাক’ অধ্যায়,
‘ইগলাক্ব অবস্থায় তালাক’ অনুচ্ছেদ)।
প্রশ্ন (২/২৮২) : নফল ছিয়াম কারণবশতঃ
ভেঙ্গে ফেললে পরে ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব কি?
উত্তর : নফল ছিয়াম কারণবশতঃ ছেড়ে দিলে তার ক্বাযা আদায় করা
মুস্তাহাব। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য খানা প্রস্ত্তত
করলাম। অতঃপর তিনি এবং তাঁর ছাহাবীগণ আসলেন। যখন খানা পেশ করলাম তখন তাদের মধ্য
হ’তে একজন ছাহাবী বললেন, আমি ছায়েম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমাদের ভাই পরিশ্রম করে
খাবার প্রস্ত্তত করেছে এবং দাওয়াত দিয়েছে। অতএব তুমি ছিয়াম ছেড়ে দাও এবং চাইলে তার
স্থানে অন্যদিনে ক্বাযা আদায় করে নিয়ো’ (বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৯৫২,
সনদ হাসান)। একদিন রাসূল (ছাঃ) একটি পাত্র থেকে কিছু পান করে বাকী অংশ উম্মে
হানীকে দিলেন। অতঃপর তিনি তা থেকে পান করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো পান
করলাম, কিন্তু আমি যে ছায়েম ছিলাম! রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার কোন ক্ষতি নেই, যদি
তা নফল ছিয়াম হয় (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২০৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৫৪)।
অন্য বর্ণনায়
এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বললেন, নফল ছায়েম নিজের উপর ‘আমীর’ অর্থাৎ কর্তৃত্বশীল। চাইলে
রাখতে পারে, চাইলে ভাঙতে পারে’ (হাকেম, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৫৪)। উল্লেখ্য, নফল
ছিয়াম ভেঙ্গে ফেললে ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি
যঈফ (আবুদাঊদ হা/২৪৫৭; যঈফাহ হা/৫২০২)।
প্রশ্ন (৩/২৮৩) : জনৈক আলেম বলেন,
বুখারীতে জোরে আমীন বলার কোন হাদীছ নেই। বক্তব্যটি কতটুকু সঠিক?
উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘ইমাম ও মুক্তাদীর জোরে
আমীন বলা’ শিরোনামে অধ্যায় রচনা করেছেন (বুখারী ৩/৩১৯)। ‘ইমামের সশব্দে আমীন
বলা’ অনুচ্ছেদে ইমাম বুখারী বলেন, আতা‘ (রহঃ) বলেন, আমীন হ’ল দো‘আ। তিনি আরো বলেন,
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) ও তাঁর পিছনের মুছল্লীগণ এমনভাবে আমীন বলতেন যে,
মসজিদে গুঞ্জরিত হ’ত। ...নাফে‘ (রহঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) কখনই আমীন বলা ছাড়তেন
না এবং তিনি তাদের (আমীন বলার জন্য) উৎসাহিত করতেন।... (বুখারী ৩/৩১৫)। অতঃপর
ইমাম বুখারী উক্ত অনুচ্ছেদে একটি হাদীছ এনেছেন, যেখানে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ইমাম
যখন আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা যার আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক হয়ে যায়,
তার পূর্বের গুনাহ্সমূহ মাফ করে দেওয়া হয় (বুখারী হা/৭৮০; মিশকাত হা/৮২৫)।
ইমাম আমীন বললে মুক্তাদী আমীন বলবে’ বাক্যটি প্রমাণ করে ইমামের জোরে আমীন বলা শুনে
মুক্তাদীগণ আমীন বলবে (হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ছহীহিল বুখারী ১/১৩৫)।
প্রশ্ন (৪/২৮৪) : রাসূল (ছাঃ) তিনটি
খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। তিনি আগুনে পোড়ানো কোন খাবার দ্বারা ইফতার করতেন না।
কথাটির সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফাহ হা/৯৯৬; যঈফুল জামে‘
হা/৪৫৪০)। তবে রাসূল (ছাঃ) মূলতঃ খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। খেজুর না পেলে পানি
দ্বারা ইফতার করতেন (আবুদাউদ হা/২৩৫৬; মিশকাত হা/১৯৯১; ছহীহাহ
হা/২৮৪০)।
প্রশ্ন (৫/২৮৫) : ইমাম বা মসজিদ কমিটির
সাথে দ্বন্দ্ব থাকায় নিজ মহল্লার মসজিদ ছেড়ে অপর মহল্লার মসজিদে ছালাত আদায় করা
জায়েয হবে কি?
উত্তর : উক্ত কারণে মসজিদ ত্যাগ করা যাবে না। মাঝে-মধ্যে হ’লেও উক্ত মসজিদে
ছালাত আদায় করতে হবে যাতে ধীরে ধীরে মনোমালিন্য কমে আসে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন
ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্ক
ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে সাক্ষাৎ হ’লেও একজন এদিকে আর অপর জন সেদিকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে। তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম সালামের সূচনা করবে, সেই উত্তম
ব্যক্তি’ (বুখারী হা/৬০৭৭; মিশকাত হা/৫০২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি
তিন দিনের ঊর্ধ্বে কথাবার্তা বন্ধ রাখবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে’ (আবুদাউদ হা/৪৯১৪; মিশকাত হা/৫০৩৫)।
প্রশ্ন (৬/২৮৬) : ছালাতরত অবস্থায় পোষা
মুরগী বা বিড়াল জায়নামাযের উপর চলাফেরা করলে ছালাত ছেড়ে দিতে হবে কি?
উত্তর : মুরগী-বিড়াল বা এজাতীয় প্রাণী মুছল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে
ছালাত বিনষ্ট হবে না। তবে সর্বদা চেষ্টায় থাকতে হবে যাতে মুছল্লীর সুৎরার ভিতর
দিয়ে কিছু অতিক্রম না করে। আমর ইবনু শু‘আয়েব তার দাদার সূত্রে বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর
সাথে (মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী) আযাখীর উপত্যকায় অবতরণ করি। ছালাতের সময় উপনীত
হ’লে তিনি একটি দেওয়ালের নিকটবর্তী হয়ে তা সুৎরা হিসাবে ধরে ছালাত আদায় করেন। এ
সময় একটি শূকর শাবক বা ছাগলের বাচ্চা তাঁর সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাকে
এমনভাবে বাধা দেন যে, তাঁর পেট দেওয়ালের সাথে লেগে যায়। অতঃপর শাবকটি তাঁর পিছন
দিক দিয়ে চলে যায় (আবুদাঊদ হা/৭০৮; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩২৬৩,
সনদ ছহীহ)।
প্রশ্ন (৭/২৮৭) : জনৈক বক্তা বলেন, ভাতের
পাত্রের মাঝখান থেকে চামচ ঢুকিয়ে ভাত বাড়া যাবে না। বরং যেকোন পাশ থেকে চামচ ঢুকাতে
হবে। নইলে বরকত কমে যাবে। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
উত্তর : কথাটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ
খাওয়ার সময় যেন পাত্রের মাঝখান থেকে না খায়, বরং তার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে।
কেননা পাত্রের মাঝখানে বরকত নাযিল হয় (আবুদাউদ হা/৩৭৭২; তিরমিযী হা/১৮০৫)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) একদা ছারীদের উপরাংশ স্পর্শ করে বলেন, বিসমিল্লাহ
বলে তার চারপাশ থেকে খাও এবং তার উপরাংশ রেখে দাও। কারণ এই উপরের দিক থেকেই বরকত
আসে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩২৭৬; ছহীহাহ হা/২০৩০)।
প্রশ্ন (৮/২৮৮) : শিরক থেকে ক্ষমা চাইতে
হ’লে সেই শিরকের নাম ধরে ক্ষমা চাইতে হবে কি? যদি তাই হয় তবে পূর্বেকৃত বিবিধ
শিরকী কার্যকলাপ থেকে তওবা করার উপায় কি?
উত্তর : শিরক থেকে ক্ষমা চাওয়ার সময় শিরকের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
বরং সামগ্রিকভাবে শিরকের গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য তওবা করতে হবে। মা‘ক্বিল বিন
ইয়াসার (রাঃ) বলেন, আমি আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট
গেলাম। তিনি বললেন, হে আবুবকর! নিশ্চয়ই শিরক পিপীলিকার পদচারণা থেকেও সন্তর্পণে
তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আবুবকর (রাঃ) বলেন, কারো আল্লাহর সাথে অপর কিছুকে
ইলাহরূপে গণ্য করা ছাড়াও কি শিরক আছে? রাসূল (ছাঃ) বলেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে
আমার প্রাণ! শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু
শিখিয়ে দিব না, যা তুমি বললে শিরকের অল্প ও বেশী সবই দূর হয়ে যাবে? অতঃপর তিনি
বলেন, তুমি
বলো,(اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُبِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لمِاَ لاَ أَعْلَمُ)
‘হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা
আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬;
ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩১)। ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) বলেন, জানা ও অজানা সকল গুনাহ থেকে
নাজাত পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হ’ল আমভাবে তওবা করা। হ’তে পারে জানা অপেক্ষা তার
অজানা গুনাহের পরিমাণ অধিক (মাদারিজুস সালেকীন ১/২৮৩)।
প্রশ্ন (৯/২৮৯) : অনেকে পিঁপড়ার চলাফেরা
ও আচরণ দেখে বৃষ্টি বা বন্যার আশংকা করে। এরূপ ভাবনা কি শিরক হবে?
উত্তর : এগুলি কুসংস্কার মাত্র। তবে এজন্য শিরকের গুনাহ হবে না।
প্রশ্ন (১০/২৯০) : আপন ভাগ্নী জামাই তথা
বোনের মেয়ের স্বামীর সাথে হজ্জে যাওয়া যাবে কি? উল্লেখ্য যে, সাথে বোনের মেয়েও
থাকবে।
উত্তর : মাহরাম ছাড়া কোন মহিলার উপর হজ্জ ফরয নয়। যদি কোন মহিলার সঙ্গে
মাহরাম না যায় তাহ’লে তার উপর হজ্জ বা সফর বৈধ নয় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত
হা/২৫১৩, ১৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। ভাগ্নী জামাই তার মামী শ্বাশুড়ীর জন্য মাহরাম নয়।
অতএব তার সঙ্গে হজ্জে যাওয়া যাবে না।
প্রশ্ন (১১/২৯১) : আমাদের মেডিকেল কলেজে
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ক্লাস থাকায় প্রতিদিন যোহরের ছালাত দেরী করে পড়তে হয়। এক্ষণে
আমার করণীয় কি?
উত্তর : নিয়মিতভাবে দেরী করে ছালাত আদায় করা যাবে না। বরং সাধ্যমত যথাসময়ে
ছালাত আদায়ের চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে বিশেষ অনুমতি নিয়ে সময়মত ছালাত আদায়ের চেষ্টা
করতে হবে। সুযোগ না পেলে যখন সময় পাবে তখনই ছালাত আদায় করে নিবে (মুসলিম
হা/৬৮৪; মিশকাত হা/৬০৪)।
প্রশ্ন (১২/২৯২) : কোন
ব্যক্তি যেনায় লিপ্ত হ’লে তার ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না মর্মে বর্ণিত হাদীছের কোন
সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কোন দলীল নেই। বরং যেনাকারী বিবাহিত হ’লে রজম করতে হবে
এবং অবিবাহিত হ’লে একশ’টি বেত্রাঘাত করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী নারী ও
পুরুষের প্রত্যেককে তোমরা একশ’ বেত্রাঘাত কর’ (নূর ২৪/০২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
অবিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে একশ’ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন
দাও। আর বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে একশ’ বেত্রাঘাত ও রজম কর’ (মুসলিম
হা/১৬৯০; মিশকাত হা/৩৫৫৮)। তবে একাজ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের।
প্রশ্ন (১৩/২৯৩) : সম্প্রতি আমার মা মারা
গেছেন। মৃত্যুর ৪র্থ দিনে আমাদের পরিবারের লোকজন মহিলা তা‘লীম, শিরণী খাওয়া এবং
পরবর্তীতে কালেমা খতম, চল্লিশা খানা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এসব
জায়েয হবে কি? মৃত ব্যক্তির জন্য শরী‘আতসম্মত করণীয় কি কি?
উত্তর : মৃত্যু পরবর্তী মাইয়েতের কল্যাণার্থে সমাজে প্রচলিত এসব
আচার-অনুষ্ঠানের কোন ভিত্তি শরী‘আতে নেই। বরং এগুলো নিকৃষ্টতম বিদ‘আত মাত্র (বিস্তারিত
দেখুন : ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ২৩৮-৪৩, ‘কুরআন ও কলেমাখানী’ বই)। এক্ষণে
মাইয়েতের জন্য করণীয় হ’ল বেশী বেশী দান-ছাদাকা করবে, দো‘আ করবে, ঋণ থাকলে পরিশোধ
করবে, মানত বা অছিয়ত থাকলে পূরণ করবে, ফরয হজ্জ আদায় না করে থাকলে বদলী হজ্জ পালন
করবে ইত্যাদি। এসব কাজের মাধ্যমে মাইয়েত উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ (বুখারী
হা/১৩৮৮, ১৮৫২; মুসলিম হা/১০০৪, ১১৪৯, ১৬৩১, ১৮৮৫)।
প্রশ্ন (১৪/২৯৪) : ই‘তিকাফরত অবস্থায় অপর
ই‘তিকাফকারীর সাথে বা বাইরের মানুষের সাথে গল্পগুজব করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : ই‘তিকাফের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দুনিয়াবী কাজকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে নিবিষ্ট মনে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকা। তাই এসময় সাধারণ গল্প-গুজব
জায়েয নয়। তবে দ্বীনী বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কথা বলায় বাধা নেই। নবী-সহধর্মিনী ছাফিয়া
(রাঃ) বর্ণনা করেন যে, একবার তিনি রামাযানের শেষ দশকে মসজিদে রাসূল (ছাঃ)-এর
খিদমতে হাযির হন। তখন রাসূল (ছাঃ) ই‘তিকাফরত ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর সঙ্গে
কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ফিরে যান (বুখারী হা/২০৩৫; মুসলিম হা/২১৭৫)।
প্রশ্ন (১৫/২৯৫) : গুল-জর্দা কি সরাসরি
তামাক পাতা থেকে তৈরীকৃত? না স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এগুলি হারাম সাব্যস্ত
করা হয়?
উত্তর : গুল-জর্দা সরাসরি তামাক থেকে তৈরী। আর তামাক বা তামাকজাত যে কোন
নেশাদার দ্রব্য খাওয়া সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মাদকতা
আনয়নকারী প্রত্যেক বস্ত্তই মদ এবং প্রতিটি মাদকদ্রব্য হারাম’ (মুসলিম, মিশকাত
হা/৩৬৩৮)। এছাড়া তামাক শুধু মানুষ নয়, সকল প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য
সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৬০ লক্ষ লোক তামাকজনিত রোগে মারা যায়।
তন্মধ্যে ৬ লাখের অধিক হ’ল পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিজে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০;
ছহীহাহ হা/২৫০)। সেজন্য স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও তামাক থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (১৬/২৯৬) : আযানের দো‘আয় এক
স্থানে অসীলা শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এক্ষণে ওয়াসীলা শব্দের অর্থ কি? -আব্দুল
লতীফ. ভাঙ্গুড়া, পাবনা।
উত্তর : আযানের দো‘আয় বর্ণিত অসীলা দ্বারা জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদাপূর্ণ
স্থানকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলের জন্য সে সুউচ্চ মর্যাদাকে চাইতে বলা হয়েছে।
যেমন অন্য হাদীছে আছে, রাসূল (ছাঃ) ছাহাবীগণকে বললেন, ‘তোমরা আমার জন্যে আল্লাহর
কাছে অসীলা প্রার্থনা করবে। কেননা অসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হ’ব সে বান্দা। যে
ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্যে অসীলা প্রার্থনা করবে তার জন্য (আমার) শাফা‘আত
ওয়াজিব হয়ে যাবে (মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/৬৫৭)।
প্রশ্ন (১৭/২৯৭) : মসজিদের মিহরাব বরাবর
পূর্ব দিকে প্রবেশ দরজা থাকা কি আবশ্যক?
উত্তর : মসজিদের মিহরাব বরাবর পূর্ব দিকে প্রবেশ দরজা থাকতে হবে, এমনটি
আবশ্যক নয়। তবে পূর্ব দিকে দরজা থাকলে মুছল্লীদের ইমামকে দেখতে, আযান দিতে ও
ছালাতের অবস্থা বুঝতে সুবিধা হয়। সেজন্য এরূপ দরজা রাখা ভালো।
প্রশ্ন (১৮/২৯৮) : আমাদের মসজিদে ছালাত
শেষে দলবদ্ধ মুনাজাত করিয়ে নেওয়ার জন্য মূর্খ ইমাম দ্বারা ছালাত আদায় করানো হয়।
এক্ষণে আমরা তাদের পরে আলাদা জামা‘আত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি কি সঠিক হবে?
উত্তর : প্রচলিত দলবদ্ধ মুনাজাত বিদ‘আত। তবে সেজন্য জামা‘আত আলাদা
করা যাবে না। বরং জামা‘আতে ছালাত আদায় করবে। কিন্তু মুনাজাত থেকে বিরত থাকবে। এসময়
হাদীছে বর্ণিত ছালাত পরবর্তী দো‘আসমূহ পাঠ করবে।
প্রশ্ন (১৯/২৯৯) : সাহারীর আযান কি শুধু
রামাযান মাসে না সারা বছর দেওয়া যাবে?
উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় বিলাল (রাঃ) সাহারীর আযান
দিতেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ফজরের আযান দিতেন। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বিলালের আযান শুনে খাও, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতূমের আযান
শুনতে না পাও’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০)।
এক্ষণে কোন মহল্লায় যদি
সারা বছর তাহাজ্জুদ ও নফল ছিয়ামের অভ্যাস জারী থাকে, তবে সারা বছরই তাহাজ্জুদ ও
সাহারীর আযান দেওয়া যাবে। যেমন মক্কা-মদীনার দুই হারামে চালু আছে (ফাৎহুল
বারী ২/১০৪ পৃঃ, হা/৬২১-এর ব্যাখ্যা; মির‘আত ২/৩৮২)।
প্রশ্ন (২০/৩০০) : আমার দুই মেয়ে ও
স্ত্রী রয়েছে। তারা চাচ্ছে এখনই তাদের নামে জমি-জমা রেজিস্ট্রি করে দেই। এরূপ কাজ
করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এরূপ করা জায়েয হবে না। কারণ পুত্র সন্তান না থাকায় মৃতের নিকটতম
পুরুষেরা আছাবা হিসাবে নির্দিষ্ট অংশ পাবে (নিসা ৪/১১; বুখারী হা/৬৭৩২;
মিশকাত হা/৩০৪২)। আর মৃত্যুর পূর্বে স্ত্রী-কন্যাদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করলে
তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে, যা হারাম।
উল্লেখ্য, উত্তরাধিকার
সম্পদ মৃত্যুর পরে বণ্টন হওয়াই শরী‘আত নির্দেশিত বিধান, যা সকলের জন্য কল্যাণকর।
আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের জন্য তার হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন’ (আবুদাঊদ, ইবনু
মাজাহ, মিশকাত হা/৩০৭৩)। তবে পিতা অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্য
না রেখে স্বীয় জীবদ্দশায় প্রয়োজনবোধে সন্তানদের কিছু সম্পদ হেবা করতে পারেন।
কিন্তু সেক্ষেত্রে সকলকে সমানভাবে প্রদান করবেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত
হা/৩০১৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং ৬৭৪৫)।
প্রশ্ন (২১/৩০১) : মনে রাখার সমস্যার
কারণে তাসবীহ দানা বা অন্য কোন যান্ত্রিক মাধ্যমে হিসাব রেখে তাসবীহ পাঠ করা জায়েয
হবে কি?
উত্তর : এরূপ কোন যন্ত্র বা বস্তু দ্বারা তাসবীহ গণনা করা যাবে না। বরং
আঙ্গুল দ্বারা গণনা করবে। গণনায় ভুল হ’লে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। রাসূল (ছাঃ) আঙ্গুলে
তাসবীহ গণনার জন্য আদেশ করেছেন। কেননা ক্বিয়ামতের দিন আঙ্গুলগুলো জিজ্ঞাসিত হবে
এবং তারা কথা বলবে (আবুদাঊদ হা/১৫০১; তিরমিযী হা/৩৪৮৬; মিশকাত হা/২৩১৬;
ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৮৭)। একদা ইবনু মাসঊদ (রাঃ) জনৈক মহিলাকে তাসবীহ দানা দ্বারা
গণনা করতে দেখে তা নিয়ে ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করেন। অতঃপর নুড়ি-পাথর দিয়ে তাসবীহ
গণনাকারী জনৈক ব্যক্তিকে পা দিয়ে মৃদু আঘাত করে ধমক দিয়ে বললেন, অগ্রগামী হয়ে
পড়েছ, এক অন্ধকারচ্ছন্ন বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে পড়েছ, না-কি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর
ছাহাবীগণের চেয়ে বেশী জ্ঞানী হয়ে গেছ’? (ইবনু ওয়াযযাহ, আল-বিদ‘ঊ হা/২১;
সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ)। উল্লেখ্য, দানা বা কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা
করার বর্ণনা যঈফ (আবুদাঊদ হা/১৫০০; তিরমিযী হা/৩৫৬৮; মিশকাত হা/২৩১১; যঈফাহ
হা/৮৩)।
প্রশ্ন (২২/৩০২) : বস্ত্রহীন অবস্থায় ওযূ
করা জায়েয হবে কি?
-এখতারুল ইসলাম, গাংনী, মেহেরপুর।
উত্তর : কাপড় পরিধান করে ওযূ করাই উত্তম। তবে ওযূর জন্য কাপড় পরিধান করা
শর্ত নয়। অতএব এমতাবস্থায় ওযূ করায় কোন বাধা নেই। (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল
মাফতূহ ১৮/২২২)।
প্রশ্ন (২৩/৩০৩) : আমি ঔষধের ব্যবসা করি।
আমার দোকানে জন্মনিরোধ বড়ি সহ অন্যান্য জন্মনিরোধক পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে কি?
উত্তর : সাময়িক গর্ভনিরোধ জায়েয। অতএব সাময়িক গর্ভনিরোধক ঔষধ ক্রয়-বিক্রয়
করাও জায়েয। তবে স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধকারী কোন ঔষধ দোকানে রাখবে না। কারণ এর
মাধ্যমে অন্যায় কাজে সহযোগিতা করা হবে। আর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাপ ও সীমালংঘনের
কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদা ৫/২)।
প্রশ্ন (২৪/৩০৪) : আমার নাবালিকা মেয়েকে
কোন পুরুষ শিক্ষকের নিকটে পড়ানোয় বাধা আছে কি?
উত্তর : নাবালিকা হলেও একাকী পড়াতে দেওয়া ঠিক নয়। সাথে কাউকে থাকতে হবে।
তবে একাধিক নাবালিকা মেয়ে এক সাথে পড়তে পারে। এতে ফিৎনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা
যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন পরপুরুষ যদি কোন মহিলার সঙ্গে নির্জনে মিলিত হয়,
তাহ’লে সেখানে তৃতীয়জন হিসাবে উপস্থিত হয় শয়তান’ (তিরমিযী হা/২১৬৫; মিশকাত
হা/৩১১৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৯০৮)।
প্রশ্ন (২৫/৩০৫) : ফরয-সুন্নাত ছালাতের
সিজদা বা তাশাহহুদের সময় তওবা-ইস্তেগফারের দো‘আসমূহ পাঠ করা যাবে কি?
উত্তর : যাবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) এসকল স্থানে বিভিন্ন দো‘আ পাঠ করতেন, যা
তওবা ও ইস্তেগফারকে শামিল করে। তাছাড়া এসকল স্থানে দো‘আ কবুল হয়। সিজদার ক্ষেত্রে
রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা হ’ল, ‘বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়,
যখন সে সিজদায় রত হয়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশী বেশী প্রার্থনা কর’ (মুসলিম,
মিশকাত হা/৮৯৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা সিজদায় দো‘আ করার ক্ষেত্রে সাধ্যমত
চেষ্টা কর। কারণ এটি দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়’ (মুসলিম হা/৪৭৯; মিশকাত
হা/৮৭৩)। তবে রুকূ-সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়া জায়েয নয় (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭৩)।
আর শেষ বৈঠকের ক্ষেত্রে
তিনি বলেন, (আত্তাহিইয়াতু-এর পরে) দো‘আ সমূহের মধ্যে যে দো‘আ সে পসন্দ করে, তা
দিয়ে সে দো‘আ করবে’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯)। এ সময় সকল
প্রকার দো‘আ করা যাবে (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৭৩-৭৪)।
প্রশ্ন (২৬/৩০৬) : ছিয়াম অবস্থায় মিসওয়াক
করা যাবে কি?
উত্তর : ছিয়াম অবস্থায় মিসওয়াক করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
আমি যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রত্যেক ছালাতের সময় মিসওয়াক
করার আদেশ দিতাম’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৬ ‘মিসওয়াক’ অনুচ্ছেদ)।
উক্ত হুকুম দ্বারা ছিয়াম পালনকারী বা ছিয়ামহীন কাউকে খাছ করা হয়নি (বুখারী
‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়াম পালনকারীর জন্য কাঁচা ও শুকনা বস্ত্ত দ্বারা মিসওয়াক করা’
অনুচ্ছেদ-২৭; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃঃ ৪৬৮)। ইবনু ওমর (রাঃ) ছিয়াম অবস্থায়
মিসওয়াক করাকে অন্যায় মনে করতেন না (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৯২৪১, সনদ
ছহীহ)।
প্রশ্ন (২৭/৩০৭) : জনৈক ব্যক্তির ছেলে
কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে চাকুরী করে। নিরুপায় পিতা-মাতার জন্য উক্ত সন্তানের উপার্জিত
অর্থে সংসার পরিচালনা করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : বাধ্যগত অবস্থায় জায়েয হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ সন্তান হারাম উপার্জন
করলে, বরং সে নিজে দায়ী হবে পিতা-মাতা নয় (বাক্বারাহ ৫৭ আয়াতের ব্যাখ্যা
দ্রঃ)। তবে পিতামাতা হিসাবে তারা সন্তানকে হারাম থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা
করবেন। সাধ্য থাকলে সন্তানের উপার্জন পরিহার করবেন।
প্রশ্ন (২৮/৩০৮) : মোবাইলে কুরআন থাকা
অবস্থায় টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে কি?
-ওবায়দুল্লাহ, ইটাপোতা,
লালমণিরহাট।
উত্তর : যাবে। কারণ তা স্পর্শযোগ্য নয়। এটি হাফেযদের হৃদয়ে কুরআন
থাকার ন্যায়। কিন্তু তাদের জন্য টয়লেটে যাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তাছাড়া কুরআনের কোন আয়াত
যদি মোবাইলের উপরে লেখা থাকে তাহ’লে পকেটের ভিতরে রাখতে হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১১/১০৯)। পায়খানারত অবস্থায় যেমন কুরআন পাঠ করা যায় না। তেমনি টয়লেটে বসে
মোবাইলে কুরআন খোলা যাবে না।
প্রশ্ন (২৯/৩০৯) : ইসলামে যুদ্ধবন্দী
মহিলাদেরকে দাসী বানানো হ’ত কেন? তাদেরকে কেবল বন্দী না রেখে পুরুষের ভোগের
সামগ্রী বানানোর কারণ কি ছিল?
উত্তর : কেবল ভোগের সামগ্রী নয়। বরং তাদের সামাজিক নিরাপত্তাই এখানে
প্রধান। আর যুদ্ধবন্দীদের এই বিধান ইসলামপূর্ব যামানা থেকেই চালু ছিল। ইসলাম সেটা
বাতিল করেনি। আল্লাহ বলেন, তবে তাদের স্ত্রীগণ ও মালিকানাধীন দাসীরা ব্যতীত। কেননা
এতে তারা নিন্দিত হবে না’ (মুমিনুন ২৩/৬)। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
যেমন- (১) এর মাধ্যমে বিজিত অঞ্চলের অসহায়, অভিভাবকহীন নারীদের জন্য আশ্রয় ও
ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা এবং প্রায় স্ত্রীর সমান মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে
রক্ষণাবেক্ষণ ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কেননা এসব নারী তার পুরুষ
অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে যে কোন মুহূর্তে ধর্ষণের শিকার হ’তে পারে। (২) বন্দীত্ব
বরণ সত্ত্বেও তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা। (৩) নারী হিসাবে তার শারিরীক ও
মানসিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা রাখা। কেননা এরূপ সুযোগ না পেলে হয়ত একাধিক
ব্যক্তির সাথে যেনায় লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। (৪) তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
কেননা যদি তার গর্ভে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তবে সে উম্মে ওয়ালাদ হবে। যে মনিবের
মৃত্যুর সাথে সাথে স্বাধীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ সে স্বাধীনা নারীর মত মর্যাদা লাভ
করবে। (৫) মুসলমানদের সংস্পর্শে রেখে তাদের ইসলাম গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
উল্লেখ্য যে,
যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে ইসলামে যে বিধান রয়েছে, তাতে শাসক বা সেনাপতির অনুমতি ছাড়া
ঢালাওভাবে কোন যুদ্ধবন্দীনীকে দাসী হিসাবে গ্রহণ করার অধিকার নেই। আবার কোন নারীর
পূর্ব স্বামী থাকলে ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে তার সাথে সহবাস করা বৈধ নয়। তেমনি
একমাত্র মনিব ভিন্ন অন্য কেউ সেই দাসীর সাথে মিলন করতে পারবে না (আবুদাউদ হা/২১৫৮;
মিশকাত হা/৩৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫০৭)। এছাড়া কোন গর্ভবতী বন্দীনীর সাথে
তার সন্তান প্রসবের আগে সহবাস নিষিদ্ধ (তিরমিযী হা/১৫৬৪; ছহীহুল জামে‘
হা/৭৪৭৯)। সুতরাং এই আইনে যুদ্ধাবস্থাতেও নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদান করা
হয়েছে।
এতদ্ব্যতীত
যুদ্ধবন্দীনী মাত্রই যে দাসী হবে তা নয়। কেননা ইসলামী শাসক বা তার পক্ষ থেকে
দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইসলামের স্বার্থে কল্যাণকর মনে করলে চারটি সিদ্ধান্তের যে
কোনটি গ্রহণ করতে পারে- (১) বন্দীকে ক্ষমা করে মুক্ত করে দেওয়া (২) নির্দিষ্ট
সম্পদের বিনিময়ে মুক্ত করে দেওয়া অথবা বন্দী বিনিময় করে নেওয়া (৩) দাস/দাসী হিসাবে
গণ্য করা (৪) অথবা বন্দীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা (ইবনুল ক্বাইয়িম,
যাদুল মা‘আদ, পৃ. ৩/৯৯; ৫/৬০)। তবে নারী ও শিশু বন্দীদের ক্ষেত্রে হত্যার বিধান
প্রযোজ্য নয়।
স্মর্তব্য যে, এই
দাসত্ববরণ চিরস্থায়ী নয়। বরং মনিব চাইলে তাকে যে কোন সময় মুক্ত করে দিতে পারে।
ইসলামী শরী‘আত বিভিন্ন ছোট-খাট অন্যায় বা ইবাদতের ত্রুটি মোচন কিংবা বিশেষ ফযীলত
কিংবা ছওয়াব লাভের মাধ্যম হিসাবে দাস/দাসী মুক্ত করাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে।
আবার চাইলে মনিব তাকে বিবাহ করে স্ত্রীর মর্যাদাও দিতে পারে। ইসলামে এ ব্যাপারেও
উৎসাহিত করা হয়েছে (বাক্বারাহ ২/২২১)।
সুতরাং এটাই স্বতঃসিদ্ধ
যে, অমুসলিম সমাজে যেভাবে যুদ্ধবন্দীনীদেরকে স্রেফ ভোগের সামগ্রী ও যৌনদাসী হিসাবে
গণ্য করা হ’ত, তার সাথে ইসলামের বিধান কোনভাবেই তুলনীয় নয়। কেননা ইসলাম
সর্বাবস্থায় মৌলিক মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যুদ্ধবন্দী করার উদ্দেশ্য ছিল-
শত্রুদের শক্তি ও মনোবল ভেঙ্গে দেয়া, তাদের অন্যায়কে প্রতিহত করা এবং তাদেরকে
যুদ্ধের ময়দান থেকে বিতাড়িত করা। যদি সে উদ্দেশ্য অন্যভাবে পূরণ হয়ে যেত, তাহ’লে
রাসূল (ছাঃ) শত্রুকে যুদ্ধবন্দী না করে মুক্ত করে দিতেন। যেমন তিনি মক্কা বিজয়ের
যুদ্ধবন্দীদের ও বনী মুছত্বালিক্ব এবং হুনাইনের যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করে
দিয়েছিলেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/৬৮৮)। অতএব যুদ্ধকালীন বাস্তবতা, সামাজিক
পরিস্থিতি, মানবাধিকার সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয় মাথায় রেখে ইসলাম এক্ষেত্রে যে
ভারসাম্যপূর্ণ বিধান দিয়েছে, তার কোন বিকল্প নেই। যে কোন বিবেকবান মানুষ তা
স্বীকার করতে বাধ্য হবেন (বিস্ত্তারিত দ্রঃ: মুহাম্মাদ কুতুব, ভ্রান্তির
বেড়াজালে ইসলাম)।
প্রশ্ন (৩০/৩১০) : ছিয়াম অবস্থায় মযী
নির্গত হ’লে ছিয়ামে কোন ক্ষতি হবে কি? এছাড়া নাকে পানি প্রবেশ করলে ছিয়াম ভেঙ্গে
যাবে কি?
উত্তর : মযী নির্গত হলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না (উছায়মীন, আশ-শারহুল
মুমতে‘ ৬/৩৭৫-৭৬)। আর অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে পানি প্রবেশ করলে ছিয়ামের ক্ষতি হবে
না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০৩)। তবে রাসূল (রাঃ) ছিয়াম অবস্থায় নাকে
এমনভাবে পানি নিতে নিষেধ করেছেন, যাতে ভিতরে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা
থাকে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০৫)।
প্রশ্ন (৩১/৩১১) : জুম‘আর মসজিদে না
নিয়মিত জামা‘আত কায়েম হয় এরূপ মসজিদে ই‘তিকাফ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে? আর
নারীরা কি বাড়িতে ই‘তিকাফ করতে পারবে?-
উত্তর : ই‘তিকাফের জন্য জুম‘আ মসজিদ হওয়াই উত্তম। তবে জামা‘আত হয় এরূপ
ওয়াক্তিয়া মসজিদে ই‘তিকাফ করাও জায়েয। ‘জামে মসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ হবে
না’ (আবুদাঊদ হা/২৪৭৩) মর্মে আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছটি অন্য
বর্ণনায় এসেছে, ‘জামা‘আত হয় এরূপ মসজিদে ই‘তিকাফ হবে’ (দারাকুৎনী হা/২৩৮৮,
ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬৬)। বিস্তারিত দ্রঃ মির‘আত হা/২১২৬-এর আলোচনা ৬/১৬৪-১৬৬)।
নারীরা বাড়িতে নয় বরং
মসজিদে ই‘তিকাফ করবে। ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, ‘নারীদের জন্য প্রত্যেক মসজিদে
ই‘তিকাফ করা জায়েয। সেখানে জামা‘আত হওয়া শর্ত নয়। কারণ তাদের উপর জামা‘আত ওয়াজিব
নয় (মুগনী ৩/১৯০)। ওছায়মীন বলেন, নারী যদি এমন মসজিদে ই‘তিকাফ করে যেখানে
জামা‘আত হয় না তাতে কোন দোষ নেই। কারণ তাদের উপর জামা‘আত ওয়াজিব
নয় (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৫১০)।
প্রশ্ন (৩২/৩১২) : জন্মদাতা পিতা-মাতা
সম্পর্কে অজ্ঞাত এবং পালক পিতা-মাতার নিকট বড় হওয়া নারী বিভিন্ন বৈষয়িক ক্ষেত্রে
পালক পিতা-মাতার নাম ব্যবহার করতে পারবে কি?
উত্তর : পারবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ
পরিচয়ে ডাকো। সেটাই আল্লাহর নিকট অধিক ন্যায় সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না
জানো, তাহ’লে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধু (আহযাব ৩৩/৫)। রাসূল (ছাঃ)
বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে অন্যকে পিতা-মাতা বলে, তার জন্য জান্নাত
হারাম’ (বুখারী হা/৪৩২৬; মুসলিম হা/৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৪)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ)
বলেন, পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যের সাথে যে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে তার উপর আল্লাহ,
ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিশাপ (তিরমিযী হা/২১২১; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৮৬)। তবে
পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্য না রেখে বাধ্যগত অবস্থায় ‘আব্দুল্লাহ’ নামে (যেমন ‘...
বিনতে আব্দুল্লাহ’) পরিচয় দেওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন (৩৩/৩১৩) : ছিয়ামরত অবস্থায়
ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ বা স্যালাইন দেওয়া হলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে কি?
উত্তর : যে সব ইনজেকশন শুধুমাত্র ঔষধ হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, সেসব
ইনজেকশন ছিয়াম অবস্থায় নেয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় শিঙ্গা
লাগিয়েছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০২)। আর যে সব ইনজেকশন খাদ্য
হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, তা জায়েয নয়। কারণ ছিয়াম মূলতঃ আহার থেকে বিরত থাকার নাম।
স্যালাইন শরীরে খাদ্যের চাহিদা পুরণ করে। তাই স্যালাইন গ্রহণ করা যাবে
না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/২৫২; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৪৬-১৫০)। প্রয়োজনে
ছিয়াম ছেড়ে দিতে হবে এবং অন্য মাসে ক্বাযা আদায় করতে হবে (বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
প্রশ্ন (৩৪/৩১৪) : যাকাতের অর্থ থেকে
এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসায় হাদীছের বই (বুখারী, মুসলিম) কিনে দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : দেওয়া যাবে। এসব কিতাব থেকে শিক্ষক-ছাত্র সকলে উপকৃত হ’তে
পারবে (আল-মওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৮/৩৩৬-৩৭)। তবে এরূপ মাদ্রাসায় নির্মাণ বা
অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
প্রশ্ন (৩৫/৩১৫) : রামাযান মাসে কোন
ব্যক্তি যদি স্ত্রী মিলনরত অবস্থায় ফজরের আযান শুনতে পায় তাহলে কি করবে?
উত্তর : এমতাবস্থায় যদি সে সঙ্গে সঙ্গে এথেকে বিরত হয়, তাহ’লে তার ছওম
অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু যদি সে ঐ অবস্থাতেই থাকে, তাহ’লে তার ছওম বাতিল হবে এবং
তার উপর ক্বাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩০৯; ইবনু কুদামা,
মুগনী ৩/১৩৯)। তা হ’ল, (১) একজন দাস মুক্ত করবে অথবা (২) দু’মাস একটানা ছিয়াম পালন
করবে অথবা (৩) ষাটজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য প্রদান করবে (বুখারী
হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪ ‘ছওম’ অধ্যায়)। নববী বলেন, ৬০ জন
মিসকীনকে ৬০ মুদ খাদ্যশস্য প্রদান করবে। যার পরিমাণ ১৫ ছা‘ (নববী, শরহ মুসলিম
হা/১১১২)। অর্থাৎ মাদানী ছা‘ অনুযায়ী সাড়ে ৩৭ কেজি চাউল।
প্রশ্ন (৩৬/৩১৬) : আমি ৬ মাস পরে ইট
গ্রহণের শর্তে ৫৩০০ টাকা হাযার দরে ইট ক্রয় করেছিলাম, যার বর্তমান মূল্য ৭৩০০
টাকা। এভাবে কম মূল্যে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে কি?
উত্তর : এরূপ ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। একে শরী‘আতের পরিভাষা ‘বায়‘এ সালাম’ বলা
হয়। আর তা হ’ল নগদ মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট মাপে ও
নির্দিষ্ট ওযনে মাল সরবরাহ করা (বুখারী হা/২২৪০, মিশকাত হা/২৮৮৩
‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)। এর বিপরীত বায়‘এ মুআজ্জালে মাল আগে নেওয়া হয়। মূল্য পরে
দেওয়া হয়।
প্রশ্ন (৩৭/৩১৭) : ক্বিয়ামতের আলামত
ব্যতীত সাধারণভাবে মানুষের জন্য প্রধান ফিৎনাগুলি কি কি?
উত্তর : ফিৎনা অর্থ পরীক্ষা। যার মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনকে পরীক্ষা
করেন। ফিৎনা প্রধানতঃ ৩টি। যথা সম্পদ, সন্তান ও নারী জাতি (আনফাল ৮/২৮;
তাগাবুন ৬৪/১৪; আলে ইমরান ৩/১৪; বুখারী হা/৫০৯৬; তিরমিযী হা/২৩৩৬)। যার প্রত্যেকটি
মানুষের জন্য অপরিহার্য। প্রতিটিরই ভাল ও মন্দ দু’টি দিক আছে। মন্দ দিকটি বাদ দিয়ে
ভাল দিকটি ব্যবহারের মধ্যেই রয়েছে পরীক্ষা। আর একেই বলা হয়েছে ফিৎনা। এ ফিৎনায়
অধিকাংশ মানুষ পরাজিত হয়। যা তাদের ধ্বংসের কারণ হয়। মুমিন যাতে পরাজিত না হয়,
সেজন্য তাদের সাবধান করা হয়েছে।
প্রশ্ন (৩৮/৩১৮) : শরী‘আতে মানুষহত্যার
ক্ষেত্রে যেমন নিহত ব্যক্তির অভিভাবকের ক্ষমার মাধ্যমে শাস্তি মওকূফ হয়, তেমনি
চুরির শাস্তি মওকূফ করা যায় কি?
উত্তর : চুরির ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। মালের মালিক চোরকে ক্ষমা
করে দিলে চোরের হাত কাটা আবশ্যক হবে না। বরং সে ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। তবে ক্ষমার
বিষয়টি বিচারকের নিকটে উত্থাপনের পূর্বে হ’তে হবে। ছাফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে তা মাথার নিচে রেখে মসজিদে ঘুমিয়েছিলেন। চোর তার
মাথার নিচ থেকে তা চুরি করল। অতঃপর তিনি তাকে ধরে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে এলেন।
রাসূল (ছঃ) তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। ছাফওয়ান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল!
আমি তো এটা চাইনি! আমার চাদর আমি তাকে দান করলাম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে তাকে
আমার কাছে আনার আগে কেন তা করলে না? (ইবনু মাজাহ হা/২৫৯৫; মিশকাত হা/৩৫৯৮;
সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোন অপরাধ তোমাদের মাঝে সীমাবন্ধ
থাকে, ততক্ষণ তোমরা পরস্পর তা ক্ষমা করে দাও। আর যদি তা আমার নিকট পেশ করা হয়, তবে
তার জন্য শরী‘আত সম্মত শাস্তি প্রদান ওয়াজিব হয়ে যায়’ (আবুদাউদ হা/৪৩৭৬;
মিশকাত হা/৩৫৬৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৫৪)।
প্রশ্ন (৩৯/৩১৯) : ঔষধ খেয়ে মাসিক বন্ধ করে
ছিয়াম পালন করা জায়েয কি?
উত্তর : নাপাকীর দিনগুলিতে ছিয়াম ছেড়ে দিয়ে অন্য দিনে তা পালন করাই
সুন্নাত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ঋতু অবস্থায় আমাদেরকে ছিয়াম ক্বাযা করার এবং ছালাত
ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেওয়া হ’ত (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩২, ‘ক্বাযা ছিয়াম’
অনুচ্ছেদ)। তবে বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে ডাক্তারের পরামর্শে শারীরিক কোন ক্ষতি না
হ’লে ঔষধের মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করে ছিয়াম পালন করা যায় (শায়খ বিন
বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ফৎওয়া নং ৫৭; ১৫/২০০ পৃঃ)।
প্রশ্ন (৪০/৩২০) : রাসূল (ছাঃ)-এর
স্ত্রী-কন্যাগণকে দেশীয় অনেক আলেম মা যুক্ত করে যেমন মা আয়েশা, মা ফাতেমা ইত্যাদি
নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। এভাবে বলা যাবে কি?
উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা উত্তম। কারণ
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ‘মুমিনদের মা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন (আহযাব ৩৩/০৬)। আর
তাদের কন্যাদের ‘মা’ বলে সম্বোধন করার বিষয়টিও অনুরূপ। কারণ তাঁদের সঙ্গে
মুসলমানদের স্রেফ দ্বীনী সম্পর্ক, বংশীয় সম্পর্ক নয়।
জুন/২০১৮
প্রশ্ন (১/৩২১) : ছালাত
অবস্থায় হাঁচি আসলে হাঁচির দো‘আ পড়া যাবে কি?
উত্তর : ছালাতের মধ্যে হাঁচি আসলে ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ বলা
যাবে। কিন্তু মুক্তাদী তার জওয়াবে মুখে ‘ইয়ারহামুকাল্লা-হ’ বলা যাবে না। কারণ
তখন সম্বোধনের ব্যক্তি হবে মানুষ, যা ছালাতের মধ্যে জায়েয নয় (বুখারী,
মুসলিম, মিশকাত হা/৯৭৮)। এছাড়া নিম্নের দো‘আটিও পাঠ করা যায়। রেফা‘আ ইবনে রাফে
(রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ আমার হাঁচি
আসল। তখন আমি এই দো‘আ পড়লাম : ‘আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম
মুবা-রাকান ফীহি মুবা-রাকান ‘আলায়হে কামা ইয়ুহিববু রাববুনা ওয়া ইয়ারযা’ (আল্লাহ
তা‘আলার প্রশংসা বহু প্রশংসা পবিত্র প্রশংসা রবকতময় প্রশংসা, বরকতজনক প্রশংসা,
যেমন প্রশংসাকে আমাদের প্রতিপালক ভালবাসেন ও পছন্দ করেন.... (তিরমিযী,
আবুদাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৯২; নায়ল ২/৩২৬; মিরকাত, ৩/৩৬৪, হা/৯৯৯)।
প্রশ্ন (২/৩২২) : দুই ঈদের রাতে
নির্দিষ্ট কোন ইবাদত আছে কি? এছাড়া ঈদের রাতে ইবাদত করলে হৃদয় জীবিত থাকে কি?
উত্তর : এ ব্যাপারে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না। ঈদের রাত্রি
জাগরণকারীর অন্তর কখনো মারা যাবে না মর্মের বর্ণনাটি মওযূ‘ বা
জাল (ইবনু মাজাহ হা/১৭৮২; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২০)। এ মর্মে আরো একটি জাল
বর্ণনা এসেছে, যে ব্যক্তি তারবিয়াহ, আরাফাহ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত্রি সহ
চারটি রাত্রি জাগরণ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে (সিলসিলা যঈফাহ
হা/৫২২)।
প্রশ্ন (৩/৩২৩) : মসজিদের মাইকে মক্তবে
পাঠ গ্রহণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আহবান করা যাবে কি?
উত্তর : মসজিদের মাইক আযান ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে নিষেধ করে বলেন, মসজিদ এ
কাজের জন্য বানানো হয়নি’ (মুসলিম হা/৫৬৮, মিশকাত হা/৭০৬)।
প্রশ্ন (৪/৩২৪) : একটি বইয়ে লেখা হয়েছে,
ঈদায়নের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছগুলি যঈফ। শায়খ আলবানী ব্যতীত অন্য কোন মুহাদ্দিছ
এসব হাদীছকে ছহীহ বলেননি। এর সত্যতা আছে কি?
উত্তর : বক্তব্যটি সত্য নয়। ঈদের ছালাতে ১২ তাকবীরের হাদীছকে ইমাম বুখারী,
তিরমিযী, আবুদাউদ, নববী, হাফেয ইরাকী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু হাজার আসক্বালানী,
আহমাদ শাকের ও হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্বসহ অসংখ্য মুহাদ্দিছ ছহীহ বলেছেন।
ইমাম তিরমিযী ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও
দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি
উল্লেখ করে ‘হাসান’ বলার পর বলেন, নবী করীম (ছাঃ) থেকে এ ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে
তার মধ্যে এটিই সর্বাধিক সুন্দর (তিরমিযী হা/৫৩৬-এর আলোচনা)। তিনি আরো বলেন,
আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঈদায়নের
ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিক আর কোন ছহীহ রেওয়ায়াত
নেই’ (ইলালুত তিরমিযী ১/২৮৭)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ
ছাহাবী ও ইমাম প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর
দিতেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/২২) । ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আমর ইবনু শু‘আইব
বর্ণিত হাদীছটি ‘ছহীহ’। এটি আবুদাউদসহ অন্যান্যরা ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা
করেছেন (আল-মাজমূ‘ ৫/১৬)। ইরাক্বী বলেন, এর সনদ বিশুদ্ধ (নায়লুল আওতার
৩/৩৫৪)। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, ইমাম আহমাদ ও আলী ইবনুল মাদীনী ও বুখারী একে
ছহীহ বলেছেন (আত-তালখীছ ২/২০০)। আহমাদ শাকের বলেন, এর সনদ ‘ছহীহ’ (আহমাদ
হা/৬৬৮৮)। হানাফী মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাউত্ব মুসনাদে আহমাদ, আবুদাউদ ও ইবনু মাজাহর
তাহকীকে এর সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন (আহমাদ হা/৬৬৮৮, ২৪৪৫৪)। ছাহেবে মির‘আত
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, সবচেয়ে উত্তম হ’ল প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে
সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বার তাকবীর দেওয়া। কারণ এর
উপরে এসেছে অনেকগুলি মরফূ হাদীছ, যার কতকগুলি ‘ছহীহ’ ও কতকগুলি ‘হাসান’। ...আর
বারো তাকবীরের উপরে আমল করেছেন মহান চার খলীফা হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী
(রাঃ)’ (মির‘আত ৫/৫৩ পৃঃ)। অতএব ঈদের ছালাতে অতিরিক্ত ১২ তাকবীর প্রতিষ্ঠিত
সুন্নাত (বিস্তারিত দ্রঃ ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ ৩৩-৩৭)।
প্রশ্ন (৫/৩২৫) : জনৈক আলেম বলেন, জুম‘আর
দিন ছিয়াম পালন করলে, রোগী দেখতে গেলে, মিসকীন খাওয়ালে এবং জানাযার ছালাত আদায়
করলে চল্লিশ বছর কোন পাপ তার অনুগামী হবে না। কথাটির সত্যতা আছে কি?
উত্তর : এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/৬২০)। তবে কাছাকাছি মর্মে একটি হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা রাসূল (ছাঃ)
ছাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ তোমাদের মধ্যে কে ছিয়াম পালনকারী হিসাবে সকাল
করেছে? উত্তরে আবুবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি। অতঃপর রাসূল বললেন, আজ
তোমাদের মধ্যে কে জানাযায় শরীক হয়েছে? তিনি বললেন, আমি। রাসূল (ছাঃ) আবার বললেন,
কে কোন মিসকীনকে খাইয়েছে? আবুবকর বললেন, আমি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) কেউ রোগী দেখতে
গেছে কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনিই বললেন, আমি হে আল্লাহর রাসূল! এবার রাসূল বললেন,
একদিনে এতগুলি সদগুণ যার মধ্যে একত্র হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে’ (মুসলিম
হা/১০২৮; ছহীহাহ হা/৮৮)।
প্রশ্ন (৬/৩২৬) : ইক্বামতের সময় ‘ক্বাদ
ক্বা-মাতিছ ছালাহ’ বলার পর ‘আল্লাহু আকবার’ একবার বলার ব্যাপারে কোন দলীল আছে কি?
উত্তর : এর পক্ষে কোন দলীল নেই। বরং রাসূল (ছাঃ) ইক্বামতের যে বাক্যগুলি
শিক্ষা দিয়েছেন, সেখানে স্পষ্টভাবে ‘আল্লাহু আকবার’-কে দু’বার উল্লেখ করা হয়েছে (আবুদাঊদ
হা/৪৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৭০৯; ইরওয়া হা/২৪৬)। কেউ কেউ হাদীছে বর্ণিত ‘ইক্বামত একবার
একবার’ (নাসাঈ হা/৬২৮) দ্বারা উক্ত বাক্যটি একবার বলার ব্যাপারে মতামত
দিয়েছেন, যা আমলযোগ্য নয়। কেননা এখানে দু’বার আল্লা-হু আকবার-কে একটি জোড়া হিসাবে
‘একবার’ (মার্রাতান) গণ্য করা হয়েছে। যা আবুদাঊদের হাদীছ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা
যায় (নায়লুল আওত্বার, ‘আযানের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ, ২/১০৬)।
প্রশ্ন (৭/৩২৭) : হজ্জব্রত পালনকারীদের
জন্য ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করা যরূরী কি?
উত্তর : হাজীদের জন্য ঈদের ছালাত সুন্নাত নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও
খুলাফায়ে রাশেদীন মিনাতে কখনো ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করেননি। আর ১০ই যিলহাজ্জ
তাকবীর সহ কংকর নিক্ষেপ করা ঈদুল আযহার তাকবীর ও ছালাতের
স্থলাভিষিক্ত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৬৯-৭০; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ২৬/১৭০; বিস্তারিত দ্রঃ হজ্জ ও ওমরাহ পৃ. ১০৪)।
প্রশ্ন (৮/৩২৮) : আমি শেয়ার ব্যবসায়
বিনিয়োগ করি। বৈধ কার্য পরিচালনাকারী কোম্পানী দেখে শেয়ার ক্রয় করি। লাভ-লোকসান
সবটাই মেনে নেই। প্রতি বছর নিয়মিতভাবে যাকাত আদায় করি। এক্ষণে উক্ত ব্যবসা জায়েয
হবে কি?
উত্তর : বিভিন্ন কারণে শেয়ার বেচাকেনা জায়েয নয়। যেমন- (১) ক্রেতার অনেক
সময় সম্যক জ্ঞান থাকে না কী বস্ত্তর শেয়ার তিনি ক্রয় করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
হারাম বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন (মুসনাদে ইবনুল জা‘দ হা/৩৩১৯;
গায়াতুল মারাম হা/৩১৮)। (২) যে বস্ত্তর শেয়ার কেনা-বেচা হয়, তা দেখা ও জানা-বুঝার
সুযোগ এখানে থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমন ক্রয়-বিক্রয়কে ধোঁকা
বলেছেন (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)। (৩) শেয়ার ব্যবসার পণ্য আয়ত্ত্বে
নিয়ে আসার সুযোগ থাকে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বস্ত্ত ক্রয়ের পর তা নিজ মালিকানায়
নিয়ে আসার পূর্বে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/২১৩৫; মিশকাত
হা/২৮৪৬)। (৪) শেয়ার ব্যবসা একটি জুয়া মাত্র। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ মাল দেখে
না। অথচ ঘণ্টায় ঘণ্টায় দর উঠা-নামা হয়। (৫) শেয়ার ব্যবসায় ফটকাবাজারীর প্রচুর
সুযোগ রয়েছে। অনেক সময় কোম্পানী তার প্রকৃত তথ্য গোপন রাখে। কখনো লোকেরা
কোম্পানীতে শেয়ার কিনে অধিক লাভ করে। কখনো কারখানা তৈরি না করেই তার শেয়ার বাজারে
ছাড়া হয় এবং নতুন শেয়ারে অধিক লাভ মনে করে সেটিকে লোকেরা অধিক মূল্যে খরিদ করে।
কোনরূপ ব্যবসা বা মালামাল ছাড়াই তারা এ লাভ করে থাকে। এছাড়াও নিত্যনতুন ছলচাতুরী
শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। (৬) এতে সূদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে
অধিকাংশ শেয়ার ব্যবসা ব্যাংক থেকে সূদের ভিত্তিতে ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। অতএব শেয়ার
ব্যবসা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন (৯/৩২৯) : আমি বাংলাদেশ থেকে
মক্কায় গিয়ে তাদের সাথে ঈদ করেছি। এতে আমার ২৮টি ছিয়াম হয়েছে। এক্ষণে আমার একটি
ছিয়ামের জন্য করণীয় কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে সেদেশের হিসাব অনুযায়ী আরেকটি ছিয়ামের ক্বাযা আদায়
করবে। কারণ আরবী মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হয় (বুখারী হা/১৯১০, ১৯১৩; নাসাঈ হা/২১৩৮;
বাক্বারাহ ২/১৮৪; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১৫৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৪৮,
৪৯,৭২, ৭৩)।
প্রশ্ন (১০/৩৩০) : সরকারী পরিবহনে টিকিট
চেকারের সাথে সমঝোতা করে অল্প মূল্যে ভাড়া পরিশোধ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : জায়েয হবে না। কারণ এর মাধ্যমে সরকারকে ফাঁকি দেওয়া হবে। যা
প্রতারণার শামিল। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার অনুসারী
নয়’ (বুখারী হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)। স্মর্তব্য যে, কারণবশতঃ কখনো টিকেট না
কেটে পরিবহনে উঠে পড়লে সরকারী রশিদ গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক ভাড়া প্রদান করবে। তবে
এক্ষেত্রে সরকারী নিয়মেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কেননা সঙ্গত কারণে টিকিট কাটতে না
পারলেও চেকাররা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেন, যেটা যুলুম।
প্রশ্ন (১১/৩৩১) : আমি ফরয ও নফল আমলের
ক্ষেত্রে নিয়ত করতে ভুলে যাই। এতে আমার আমল কবুল হবে কি?
উত্তর : নিয়ত করা ফরয (মুত্তাফাকুন আলাইহ্, মিশকাত হা/০১; মুগনী
১/২৮৭)। কিন্তু নিয়ত পড়া বিদ‘আত। নিয়ত না করলে আমল কবুলযোগ্য হবে না। এরূপ অবস্থা
হ’লে সঠিকভাবে নিয়ত করে নতুনভাবে তাকবীরে তাহরীমা বলে ছালাত শুরু করবে। স্মর্তব্য
যে, ছালাতের জন্য মনে মনে সংকল্প করাই যথেষ্ট। বিভিন্ন পুস্তিকায় ছালাতের জন্য যে
গৎবাঁধা নিয়ত সমূহ লিপিবদ্ধ আছে, তা কুরআন বা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বিশিষ্ট
হানাফী আলেম মোল্লা আলী কবারী, ইবনুল হুমাম, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেŠবী (রহঃ) মুখে
নিয়ত পাঠ করাকে বিদ‘আত বলে আখ্যায়িত করেছেন (মিরক্বাত শরহ মিশকাত (দিল্লী
ছাপাঃ) ১/৪০-৪১ পৃঃ, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ২৪ টীকা-৫৪)।
প্রশ্ন (১২/৩৩২) : আমি সিজারের মাধ্যমে
তিনটি সন্তান লাভ করেছি। এর পর সন্তান নেওয়া আমার জন্য বিপদজনক। এক্ষণে আমি জন্ম
নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নিতে পারি কি?
উত্তর : সাধারণভাবে স্থায়ী জন্মনিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ হারাম। তবে অভিজ্ঞ
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহ’লে স্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন
করা যায়। কারণ আল্লাহ হারাম জিনিসকে কখনো কখনো হালাল করেছেন। যেমন নিরুপায় অবস্থায়
মৃত প্রাণীর গোশত হালাল (বাক্বারাহ ২/১৭৩, নাহল ১৬/১১৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা
১৯/৩১৮)। তবে দারিদ্রে্যর ভয়ে সন্তান না নেওয়ার লক্ষ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা
হারাম (বনী ইসরাঈল ১৭/৩১)।
প্রশ্ন (১৩/৩৩৩) : সূরা ইয়াসীন পাঠের
বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?
উত্তর : সূরা ইয়াসীনের ফযীলত সম্পর্কে যত বর্ণনা রয়েছে, তার সবগুলো যঈফ
অথবা জাল। একটি হাদীছও ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়নি (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ
হা/১৬৯, ৬৮৪৪, ১২৪৬; যঈফুল জামে‘ হা/৫৭৮৫-৮৯; যঈফ আত-তারগীব হা/৮৮৬)।
প্রশ্ন (১৪/৩৩৪) : একটি বইয়ে লেখা রয়েছে,
কবর যিয়ারত মহিলাদের জন্য জায়েয নয়। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : নারীদের জন্য কবর যিয়ারত করা জায়েয। আয়েশা (রাঃ) তার ভাই আব্দুর
রহমান বিন আবুবকর (রাঃ)-এর কবর যিয়ারত করার সময় তাকে বলা হ’ল রাসূল (ছাঃ) কি কবর
যিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ নিষেধ করেছিলেন। তবে পরে তিনি কবর
যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন (হাকেম হা/১৩৯২; আবু ইয়া‘লা হা/৪৮৭১; ইরওয়া
হা/৭৭৫; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭০, সনদ ছহীহ)। যেমন হাদীছে এসেছে, ‘আমি কবর যিয়ারত করা
হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম, এখন তোমরা যিয়ারত কর’ (তিরমিযী হা/১০৫৪; ছহীহাহ
হা/৮৮৬)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে কবর যিয়ারতের দো‘আ শিখিয়ে
দিয়েছেন (মুসলিম হা/৯৭৪; মিশকাত হা/১৭৬৭)। কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ হ’লে দো‘আ
শিখিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসত না। তবে সেখানে সরবে কান্নাকাটি করা যাবে
না (বুখারী হা/১২৯৭; মিশকাত হা/১৭২৫)।
প্রশ্ন (১৫/৩৩৫) : সুৎরা কি যেকোন বস্ত্ত
দ্বারা দেওয়া যায়? যেমন কলম, মোবাইল, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি।
উত্তর : সুৎরা হিসাবে বোধগম্য হয়, এরূপ প্রত্যেক বস্ত্তকে সুৎরা হিসাবে
ব্যবহার করা যাবে। রাসূল (ছাঃ)-কে সুৎরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, উটের
হাওদার পিছনের কাঠের পরিমাণ (মুসলিম হা/৪৯৯)। নববী বলেন, হাওদার পিছনের কাঠ,
যা হাতের (কনুই থেকে আঙগুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত) তিনভাগের একভাগ পরিমাণ। এরূপ যেকোন
বস্ত্ত সামনে রাখলেই তা যথেষ্ট হবে (নববী, শরহ মুসলিম হা/৪৯৯)। স্মর্তব্য যে,
দাগ টেনে সুৎরা দেওয়ার হাদীছ যঈফ (যঈফ আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৮১; যঈফুল জামে‘
হা/৫৬৯)।
প্রশ্ন (১৬/৩৩৬) : রামাযান মাসে মিথ্যা
কথা বললে বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে কি ছওম ভঙ্গ হয়ে যাবে?
উত্তর : ছওম ভঙ্গ হবে না। তবে এতে তার ছওম ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং নেকী কমে
যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কর্ম ছাড়ল না তার খানাপিনা
ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৯৯)। অত্র হাদীছের
ব্যাখ্যায় আযীমাবাদী বলেন, এই হাদীছ দ্বারা এ দলীল নেওয়া হয় যে, এই কাজগুলো ছওমের
নেকী কমিয়ে দেয় (আওনুল মা‘বূদ ৬/৩৫০)।
প্রশ্ন (১৭/৩৩৭) : সাহারী ইফতারের সময়
নির্ধারণী দু’টি ক্যালেন্ডারের সময়সূচীর মধ্যে কমবেশী রয়েছে। এমতাবস্থায় কোন সময়টি
অনুসরণ করব?
উত্তর : সাহারী-ইফতারের ক্ষেত্রে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা হ’ল ইফতার দ্রুত
করা ও সাহারী দেরীতে করা। রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ) বলেন, দ্বীন চিরদিন বিজয়ী থাকবে,
যতদিন লোকেরা ইফতার দ্রুত করবে। কেননা ইহূদী-নাছারাগণ ইফতার দেরীতে
করে’ (আবুদাউদ হা/২৩৫৩; মিশকাত হা/১৯৯৫)। তিনি বলেন, তোমরা ইফতার দ্রুত কর
এবং সাহারী দেরীতে কর (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৮৯)। অতএব যে সূচীটি
উক্ত নির্দেশনার সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল, সেটিই অনুসরণযোগ্য।
প্রশ্ন (১৮/৩৩৮) : আমেরিকায় দিনের বেলা
শিশু জন্মগ্রহণ করলে বাংলাদেশে তখন রাত থাকে। এক্ষণে দেশে তার আক্বীক্বা প্রদান
করা হ’লে বাংলাদেশ সময়কে জন্ম তারিখ হিসাবে ধরতে হবে কি?
উত্তর : যে দেশে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সেখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী
সন্তানের আক্বীক্বা প্রদানের দিন নির্ধারণ করবে। কারণ আক্বীক্বা সপ্তম দিনে করতে
বলা হয়েছে যা জন্ম ও জন্ম স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট।
প্রশ্ন (১৯/৩৩৯) : ইউটিউব ভিডিওতে
বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে যে উপার্জন করা হয় তা জায়েয কি?
উত্তর : বিজ্ঞাপনে শরী‘আত বিরোধী কিছু না থাকলে এবং তা শরী‘আত বিরোধী কোন
কাজের নির্দেশনা না থাকলে, উক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করা বা প্রচারে সহযোগিতা করার
মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে যদি বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভাল-মন্দ
বাছাই করার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা না থাকে এবং বিজ্ঞাপন যদি ভালমন্দ মিশ্রিত হয়,
তবে এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরে
সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)।
প্রশ্ন (২০/৩৪০) : আমাদের এলাকার মসজিদটি
৩৫ বছর পূর্বে নির্মিত। এখন জানা যাচ্ছে যে তার নীচে একটি কবর ছিল। কিন্তু কেউ
জানে না সেটা কোন দিকে। উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
উত্তর : কবর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত মসজিদে ছালাত আদায়
করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমতঃ দু’জন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে
নিশ্চিতভাবে জানতে হবে যে কবরটি কতদিন পূর্বের এবং কোন স্থানে অবস্থিত। যদি বহু
পুরাতন হয় ও হাড়-হাড্ডি না থাকার সম্ভাবনা থাকে, উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা
যাবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৭২ পৃঃ; তালখীছু আহকামিল জানায়েয, পৃঃ ৯১) আর
যদি কবরে হাড়হাড্ডির অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় তাহ’লে করণীয় হ’ল-
কবর পূর্বের হ’লে মসজিদ সরাতে হবে। আর মসজিদ পূর্বের হ’লে কবর সরাতে
হবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫ পৃঃ; তাহযীরুস সাজিদ ৪৫ পৃঃ)। এক্ষেত্রে
সহজ সমাধান হ’ল, কবর থেকে হাড়-হাড্ডি তুলে অন্য গোরস্থানে দাফন করা (বুখারী
হা/১৩৫২, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০০-০২)।
প্রশ্ন (২১/৩৪১) : হজ্জ ফরয হওয়া ব্যক্তি
কেবল ওমরাহ পালন করলে তার হজ্জের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে কি?
উত্তর : হজ্জ ও ওমরা দু’টি পৃথক ইবাদত। একটি আরেকটির স্থলাভিষিক্ত হবে না।
আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ওমরাহ পূর্ণ কর’ (বাকারাহ
২/১৯৬)। লাক্বীত ইবনে আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট
উপস্থিত হয়ে বললেন, আমার পিতা এত বেশী বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি হজ্জ ও ওমরাহ
করতে অক্ষম। এমনকি সফর করতেই অক্ষম। তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ হ’তে হজ্জ
ও ওমরাহ সম্পাদন কর (ইবনু মাজাহ হা/২৯০৬; আবুদাউদ হা/১৮১০; মিশকাত হা/২৫২৮)।
অতএব কেবল ওমরাহ পালন করলে, হজ্জের ফরযিয়াত আদায় হবে না।
প্রশ্ন (২২/৩৪২) : জনৈক আলেম বলেন, হযরত
ইবরাহীম (আঃ) জীবনে ৩টি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। কথা তিনটি কি কি এবং এভাবে মিথ্যার
আশ্রয় নেওয়ার ব্যাখ্যা কি?
উত্তর : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, ‘ইবরাহীম (আঃ) তিনটি ব্যতীত কোন
মিথ্যা বলেননি’। উক্ত তিনটি মিথ্যা ছিল- (১) মেলায় না যাবার অজুহাত হিসাবে তিনি
বলেছিলেন إِنِّيْ سَقِيْمٌ‘আমি অসুস্থ’ (ছাফফাত ৩৭/৮৯)। (২) মূর্তি
ভেঙ্গেছে কে? এরূপ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, بَلْفَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَذَا ‘বরং
এই বড় মূর্তিটাই এ কাজ করেছে’ (আম্বিয়া ২১/৬৩)। (৩) মিসরের লম্পট রাজার হাত
থেকে বাঁচার জন্য স্ত্রী সারা-কে তিনি বোন হিসাবে পরিচয় দেন (বুখারী হা/৩৩৫৮;
মুসলিম হা/২৩৭১; মিশকাত হা/৫৭০৪)। হাদীছে উক্ত তিনটি বিষয়কে ‘মিথ্যা’ শব্দে উল্লেখ
করা হ’লেও মূলতঃ এগুলির একটাও প্রকৃত অর্থে মিথ্যা ছিল না। বরং এগুলি ছিল আরবী
অলংকার শাস্ত্রের পরিভাষায় ‘তাওরিয়া’ (الةورية) বা দ্ব্যর্থ বোধক পরিভাষা। যেখানে
শ্রোতা বুঝে এক অর্থ এবং বক্তার নিয়তে থাকে অন্য অর্থ। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
একদিন হযরত আয়েশার কাছে তার এক বৃদ্ধা খালাকে দেখে বললেন, কোন বৃদ্ধা জান্নাতে
যাবে না। একথা শুনে খালা কান্না শুরু করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তারা তখন সবাই
যুবতী হয়ে যাবে’ (শামায়েলে তিরমিযী; ছহীহাহ হা/২৯৮৭)। হিজরতের সময় পথিমধ্যে
রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের জওয়াবে আবুবকর (রাঃ) বলেন, ‘ইনি
আমাকে পথ দেখিয়ে থাকেন’ (বুখারী হা/৩৯১১)। এতে লোকটি ভাবল, উনি একজন সাধারণ
পথপ্রদর্শক ব্যক্তি মাত্র। অথচ আবুবকরের উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাদের নবী অর্থাৎ
ধর্মীয় পথপ্রদর্শক। অনুরূপভাবে যুদ্ধকালে রাসূল (ছাঃ) একদিকে বেরিয়ে অন্য দিকে চলে
যেতেন। যাতে তাঁর গন্তব্য পথ গোপন থাকে। এগুলি হ’ল উক্তিগত ও কর্মগত তাওরিয়ার
উদাহরণ (নবীদের কাহিনী-১, ১/১২৮-১২৯ পৃঃ)।
প্রশ্ন (২৩/৩৪৩) : আমি যে মসজিদে ই‘তিকাফ
করি, সেখানে ২০ রাক‘আত তারাবীহর ছালাত আদায় করা হয়। এক্ষণে এক্ষেত্রে আমার করণীয়
কি?
উত্তর : এক্ষেত্রে জামা‘আতে ৮ রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিয়ে ই‘তিকাফ স্থলে
ফিরে আসবে এবং অন্যান্য নফল ইবাদত করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) রামাযান বা রামাযানের
বাইরে ১১ বা ১৩ রাক‘আতের অধিক রাত্রিকালীন নফল ছালাত আদায় করেননি’ (বুখারী
হা/১১৪৭; মুসলিম হা/১৭২৩; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১২৬৪)।
তবে সম্ভবপর ছহীহ
সুন্নাহ মোতাবেক তারাবীহর ছালাত আদায় করা হয় এরূপ মসজিদে তারাবীহ ছালাত আদায় করবে।
যাতে ইমামের সাথে জামা‘আতে পূর্ণ ছালাত আদায় করতে পারে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে পূর্ণ ছালাত আদায় করে ফিরে আসে, সে সারা রাত ছালাত আদায়ের
সমান নেকী পায় (ইবনু মাজাহ হা/১৩২৭; তিরমিযী হা/৮০৬; মিশকাত হা/১২৯৮)।
অত্র হাদীছে জামা‘আতে ইমামের অনুসরণ করে ছালাত আদায়ের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
প্রশ্ন (২৪/৩৪৪) : আমার যৌনাঙ্গ দিয়ে
সর্বদা এক প্রকার হলদে রস বের হয়। আমি তা ধুয়ে ওযূ করে ছালাত আদায় করি। কিন্তু
মাঝে মধ্যে ভুলে না ধুয়ে ওযূ করেই ছালাত আদায় করে ফেলি। এক্ষণে আমার ছালাত কি
বাতিল হয়ে যাবে?
উত্তর : উক্ত অবস্থায় সেখানে এমন কিছু দিয়ে রাখবে যাতে তা প্রবাহিত না হয়।
আর এক্ষেত্রে মুস্তাহাযার বিধান প্রযোজ্য হবে। মুস্তাহাযা মহিলা কিংবা ফোঁটা
ফোঁটা পেশাব অথবা সর্বদা বায়ু আসে এসব মহিলা ও পুরুষ প্রত্যেক ছালাতের জন্য
পৃথকভাবে ওযূ করলেই ছালাত হয়ে যাবে (আবুদাঊদ, নাসাঈ, সনদ হাসান, মিশকাত
হা/৫৫৮ ‘মুস্তাহাযা’ অনুচ্ছেদ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৮-৯০, ‘ইস্তিহাযা’ অধ্যায়;
আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৩০)।
প্রশ্ন (২৫/৩৪৫) : স্বামী-স্ত্রী ঘুমানোর
সময় স্ত্রীকে স্বামীর বাম পাশে ঘুমাবে হবে কি?
উত্তর : এরূপ কোন নির্দেশনা শরী‘আতে নেই। বরং সুবিধাজনকভাবে ঘুমাবে।
স্মর্তব্য যে, প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ডান কাতে ঘুমানো সুন্নাত (বুখারী
হা/২৪৭, ৬৩১৪; মুসলিম হা/২৭১০; মিশকাত হা/২৩৮৫)।
প্রশ্ন (২৬/৩৪৬) : ২৫ ও ১৮ বছর বয়সী
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পড়াশুনায় ব্যস্ত। সন্তান দেখার মত কেউ না থাকায় তারা বর্তমানে
আযলের মাধ্যমে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকছে। এরূপ করায় তাদের গুনাহ হবে কি?
উত্তর : এটি বিবাহের উদ্দেশ্য বিরোধী কাজ। অতএব এ থেকে বিরত থাকা
উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) সর্বদা অধিক সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ করার জন্য উৎসাহিত
করেছেন (আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩০৯১)। তবে বাধ্যগত অবস্থায় সাময়িকভাবে
আযল করলে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ (বুখারী হা/৫২০৯; মুসলিম হা/৩৬২৯; মিশকাত
হা/৩১৮৪-৮৫)।
প্রশ্ন (২৭/৩৪৭) : খাওয়ার সময় সালাম
আদান-প্রদান বা প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যাবে কি ?
উত্তর : খাওয়ার সময় সালাম বিনিময় বা প্রয়োজনীয় আলাপ করা যায়। যেসব কথা
সাধারণ অবস্থায় জায়েয, তা খাদ্য গ্রহণের সময়ও জায়েয। ‘খাদ্যগ্রহণের সময় কোন কথা বা
কোন সালাম দেওয়া যাবে না’ মর্মে যেকথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে, তার কোন ভিত্তি নেই।
রাসূল (ছাঃ) খাবারের সময় প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
একবার রাসূল (ছাঃ) খাদ্যগ্রহণকালে বলেন, ‘আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার
হব। তোমরা কি জানো আল্লাহ কিভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী
সকল মানুষকে একত্রিত করবেন? (বুখারী হা/৩৩৪০; মুসলিম হা/১৯৪)। জাবের (রাঃ)
বলেন, একদিন রাসূল (ছাঃ) সিরকা খেতে খেতে বললেন, সিরকা কতই না ভাল
তরকারী, সিরকা কতই উত্তম তরকারী! (মুসলিম হা/২০৫২; মিশকাত হা/৪১৮৩)। অত্র
হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, খাওয়ার সময় খাবার গ্রহণকারীদের আকৃষ্ট করার
জন্য কথা বলা মুস্তাহাব (শরহ মুসলিম ১৪/০৭)। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, নবী (ছাঃ)
খাবারের সময় খাদ্যের বিষয়ে কথা বলতেন... (যাদুল মা‘আদ ২/৩৬৭)। তবে এর অর্থ এটা নয়
যে, খাওয়ার সময় অহেতুক গল্প করতে হবে। যেমন আজকাল ভোজসভাগুলিতে হয়ে থাকে। বরং এসময়
আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মধ্যে থাকতে হবে।
প্রশ্ন (২৮/৩৪৮) : আছরের পূর্বে ৪ রাক‘আত
সুন্নাত পড়া কি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ-এর অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর : এটি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ নয়; বরং সুন্নাতে যায়েদাহ। যেমন ইবনে
ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আছরের পূর্বে ৪
রাক‘আত ছালাত আদায় করবে তার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করবেন’ (আহমাদ,
তিরমিযী, মিশকাত হা/১১৭০)। অন্য হাদীছে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আছরের পূর্বে
দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন (আবুদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/১১৭২)। অতএব
আছরের পূর্বে চার বা দু’রাক‘আত ছালাত সাধারণ সুন্নাত হিসাবে আদায় করা যায়;
সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ হিসাবে নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/১২৮)।
প্রশ্ন (২৯/৩৪৯) : মামী শ্বাশুড়ি বা খালা
শ্বাশুড়ি কি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত? তাদের সাথে কি বিবাহ নিষিদ্ধ?
উত্তর : মামী শ্বাশুড়ি বা খালা শ্বাশুড়ি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত নয়। এদের
সাথে নির্জনবাস বা সফর জায়েয নয়। তবে স্ত্রী থাকা অবস্থায় তার মামী, খালা বা তার
বোনকে বিবাহ করা যাবে না। এক্ষেত্রে তারা সাময়িক মাহরাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা
কোন স্ত্রীলোককে তার ফুফু বা তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে একত্রে বিবাহ করবে না। আর কোন
স্ত্রীলোককে তার খালার সাথে অথবা খালাকে তার বোনের সাথে একত্রে বিবাহ করবে না। আর
তোমরা বড় (বোন)-কে, ছোট (বোনের) উপর এবং ছোট (বোন)-কে বড় (বোনের) উপর বিবাহ
করবে না (অর্থাৎ দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করবে না) (বুখারী হা/৫১১০;
আবুদাউদ হা/২০৬৫)।
প্রশ্ন (৩০/৩৫০) : জেনেশুনে কখনো সন্তান
নিতে পারবে না এরূপ নারীকে বিবাহ করা জায়েয হবে কি?
উত্তর : এরূপ নারীকে বিবাহ করা জায়েয। তবে রাসূল (ছাঃ) অধিক সন্তানদায়িনী
নারীকে বিবাহ করার প্রতিই উৎসাহিত করেছেন। মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বলে, আমি একজন সুন্দরী
এবং সদ্বংশীয়া রমণীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে কোন সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)।
আমি কি তাকে বিবাহ করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞেস
করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন
মেয়েদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক মহববত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব
করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে
(পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গৌরব প্রকাশ করব’ (নাসাঈ
হা/৩২২৭; আবুদাউদ হা/২০৫০; মিশকাত হা/৩০৯১; ছহীহাহ হা/২৩৮৩)। উক্ত নিষেধাজ্ঞা
দ্বারা বন্ধ্যা বিবাহ হারাম করা হয়নি। বরং একে অপসন্দনীয় বলা হয়েছে (ইবনু
কুদামা, আল-মুগনী ৭/১০৮; ফাৎহুল বারী ৯/১১১)।
প্রশ্ন (৩১/৩৫১) : ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ
(রহঃ) এত বড় মুহাদ্দিছ হওয়া সত্ত্বেও তার গ্রন্থে যঈফ হাদীছ কেন?
উত্তর : এর কারণ
কয়েকটি হ’তে পারে- ১. ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) যঈফ ও জাল বর্ণনাগুলো উল্লেখ করার
সময় ويُذْكَرُ (বলা হয়) শব্দ দ্বারা বর্ণনাটির দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত
করেছেন। যা প্রমাণ করে যে তিনি কেবল জানানোর জন্য বর্ণনাটি উপস্থাপন করেছেন। ২.
কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি কোন সিদ্ধান্তে না গিয়ে সনদসহ পেশ করছেন, যাতে পরবর্তী
ওলামায়ে কেরাম তাহকীক করে ছহীহ-যঈফ পৃথক করতে পারেন। ৩. কোন মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে
নয়। তিনিও নন। তার গবেষণায় যঈফ বা জাল প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি তা উল্লেখ করেছেন।
৪. ইবনে তায়মিয়াহর মত শারঈ ইলমের সকল শাখা-প্রশাখায় বিচরণকারী আলেমের পক্ষে
এককভাবে তাহকীকের ময়দানে পূর্ণ সময় ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। সেকারণ অনেক ক্ষেত্রে
তিনি ইমাম তিরমিযী, ইবনু হিববান প্রমুখ মুহাদ্দিছের তাহকীকের উপর নির্ভর করেছেন।
ফলে তাঁদের অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলি তাঁর রচনাতেও সংকলিত হয়েছে (বিস্তারিত দ্রঃ
আল-কালিমুত তাইয়েব, তাহকীক আলবানী পৃঃ ৫০-৫২)।
প্রশ্ন (৩২/৩৫২) : আমার ছোট বোন
বুদ্ধি-জ্ঞান হওয়া থেকেই নিজেকে ছেলে হিসাবে মনে করে। বর্তমানে সে মানসিকভাবে
অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা তার অপারেশন করাতে বলছে। এক্ষণে এভাবে লিঙ্গান্তর করা
জায়েয হবে কি?
উত্তর : তাকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা করাতে হবে। বিষয়টি মানসিক হয়ে
থাকলে মনোচিকিৎসার মাধ্যমে তা নিরাময় হবে ইনশাআল্লাহ। আর শারীরিক হয়ে থাকলে
চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক শারীরিকভাবে তাকে যে লিঙ্গের নিকটবর্তী পাওয়া যাবে,
সেদিকে পূর্ণতা দেওয়া সম্ভব হ’লে অপারেশন করায় বাধা নেই। কিন্তু সাধারণভাবে
লিঙ্গান্তর করানো হারাম। কারণ এটা আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন ঘটানোর
শামিল (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২৫/৪৬-৪৮)।
প্রশ্ন (৩৩/৩৫৩) : আমার এলাকাটি হানাফী
অধ্যুষিত হওয়ায় ঈদের ছালাত অনেক দেরীতে আদায় করা হয়। এক্ষণে আমি আউয়াল ওয়াক্তে
একাকী তা আদায় করে নিব কি?
উত্তর : না। কারণ ঈদের ছালাত একাকী আদায় করার বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
ছওম সেদিন যেদিন তোমরা সকলে ছিয়াম রাখবে। ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা সেদিন যেদিন
তোমরা সকলে ঈদ করবে (তিরমিযী হা/৭৯৭, ইবনু মাজাহ হা/১৬৬০; ছহীহাহ হা/২২৪)।
বরং ঈদের ছালাতের শেষ সময় তথা সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত (আল-মাওসু‘আতুল
ফিক্বহিইয়াহ ২৭/২৪৩) দেরীতে হ’লেও জামা‘আতের সাথে আদায় করবে। ঈদুল ফিৎরে
সূর্য দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক
‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ
সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর
(রাঃ) একদা লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আযহার ছালাতে গেলেন এবং ইমামের দেরী
করে ছালাত আদায় করাকে অপসন্দ করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই আমরা এ সময়ে ছালাত আদায়
শেষ করতাম। আর ছালাত আদায়ের সময় হচ্ছে সূর্য উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ
পর (ইবনু মাজাহ হা/১৩১৭; আবুদাঊদ হা/১১৩৫, সনদ ছহীহ; দ্রঃ
‘মাসায়েলে কুরবানী ও আকীকা’ পৃঃ ২৭)।
প্রশ্ন (৩৪/৩৫৪) : জনৈক ব্যক্তি বলেন,
ছিয়ামরত অবস্থায় দিনের বেলা সিগারেট খাওয়া যাবে। কারণ এটি শরীরে কোন পুষ্টি যোগায়
না। বরং ক্ষতি করে। সুতরাং এটি ছিয়ামভঙ্গকারী খাবার নয়। একথার সত্যতা আছে কি?
উত্তর : বক্তব্যটি ভিত্তিহীন। কারণ সিগারেট খাওয়া হয় ইচ্ছাকৃতভাবে। হানাফী
বিদ্বান ইবনু আবেদীন বলেন, যেকোন প্রকারের ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করলে ছওম ভঙ্গ
হয়ে যাবে (রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার ২/৩৯৫)। বিশেষজ্ঞদের মতে,
সিগারেটের ধোঁয়া চলে যায় ফুসফুসে, আর কিছু উপাদান চলে যায় পাকস্থলীতে। সেকারণ এটি
গ্রহণে ছিয়াম বাতিল হয়ে যাবে। অপরদিকে ঘরের ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ
গ্রহণ করে না। বাহূতী বলেন, যদি অনিচ্ছায় কারো কণ্ঠনালীতে মাছি, রাস্তার ধূলা,
আটার গুড়া বা ধোঁয়া প্রবেশ করে তাহ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ এ অবস্থায় সে
ঘুমন্ত ব্যক্তির ন্যায়। এথেকে বুঝা যায়, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ধূমপান করবে তার
ছওম ভঙ্গ হয়ে যাবে’ (কাশ্শাফুল কেনা‘ ২/৩২১)।
প্রশ্ন (৩৫/৩৫৫) : কতিপয় আলেম বলেন,
জান্নাতে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার বিবাহ হবে। একথার কোন
সত্যতা আছে কি?
উত্তর : উক্ত মর্মে কিছু বর্ণনা রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) আয়েশা
(রাঃ)-কে বলেন, হে আয়েশা তুমি কি জান! জান্নাতে আল্লাহ মুসার বোন কুলছুম, ফেরাউনের
স্ত্রী আসিয়া ও ঈসার মা মারিয়ামের সাথে আমার বিবাহ দিবেন (ইবনু আসাকের, ইবনু
কাছীর ৮/১৬৬, সূরা তাহরীম ৫ আয়াতের তাফসীর ; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫২৪৬-৪৮)।
বর্ণনাটি জাল ও মুনকার (আলবানী, যঈফাহ হা/৭০৫৩, ৫১২)। ইবনু কাছীর স্বীয়
তাফসীর ও ইতিহাস গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বর্ণনাগুলি উল্লেখ করে তা যঈফ হওয়ার বিষয়টি
উল্লেখ করেছেন (আল-বিদায়াহ ২/৬২)।
প্রশ্ন (৩৬/৩৫৬) : দাড়ি ওঠার প্রারম্ভিক
সময়ে উভয় কানের পাশ দিয়ে যে দাড়ি উঠতে শুরু করে, তা কেটে ফেলা যাবে কি?
উত্তর : না। কারণ তা দাড়িরই অংশ (লিসানুল আরব ১৫/২৪৩)। ইবনু হাজার ও
ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) উভয় কানের পাশে গজানো লোমকে দাড়ির মধ্যে গণ্য
করেছেন (ফৎহুল বারী ১০/৩৫০; শারহুল ঊমাদাহ ১৮৪ পৃ:)। শায়খ উছায়মীন বলেন,
দাড়ির সীমারেখা হল কানের লতি থেকে মুখমন্ডল পর্যন্ত। এমনটি গালের লোমগুলোও দাড়ির
মধ্যে শামিল (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮০)।
প্রশ্ন (৩৭/৩৫৭) : মাসবূক ব্যক্তি ইমামকে
সিজদারত অবস্থায় পেলে পরবর্তী রাক‘আত শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে কি?
উত্তর : অপেক্ষা করবে না। বরং ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, তাকবীরে
তাহরীমা বলে সে অবস্থায় ছালাতে যোগ দিবে (আবুদাউদ হা/৬১৮; মিশকাত হা/৩১২)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা জামা‘আতে শরীক হওয়ার জন্যে ছালাতে এসে আমাদেরকে সিজদা
অবস্থায় পেলে তোমরাও সিজদায় যাও। আর এ সিজদাকে (কোন রাক‘আত) হিসেবে গণ্য করবে
না (আবুদাউদ হা/৮৯৩; মিশকাত হা/১১৪৩; ইরওয়া হা/৪৯৬, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায়
রয়েছে, ‘তোমাদের কেউ ছালাত আদায় করতে এসে ইমামকে যে অবস্থায় পাক না কেন, তখন ইমাম
যেরূপ করে সেও যেন অনুরূপ করে’ (তিরমিযী হা/৫৯১; মিশকাত হা/১১৪২; ছহীহুল
জামে‘ হা/২৬১)।
প্রশ্ন (৩৮/৩৫৮) : নববী যুগে ইসলামের হদ,
তা‘যীর প্রভৃতি বিধান অনুযায়ী অমুসলিমদের বিচার করা হ’ত কি?
উত্তর : হ্যাঁ। অমুসলিমদের উপর হদ ও তা‘যীর বিধান চালু ছিল। যেমন জনৈক
ইহুদী এক আনছারী কিশোরীর মাথা পাথর দ্বারা পিষে দিলে রাসূল (ছাঃ) নির্দেশনায় উক্ত
ইহুদীর মাথাও পিষে দেওয়া হয় (বুখারী হা/২৪১৩; মিশকাত হা/৩৪৫৯)। জনৈক ইহুদী
বিবাহিত নারী-পুরুষ যেনা করলে তারা রাসূলের নিকট বিচার পেশ করে। রাসূল (ছাঃ) তাদের
রজম করার নির্দেশ দেন (বুখারী হা/৪৫৫৬; দারেমী হা/২৩৭৬)। হাফেয ইবনু হাজার
(রহঃ) বলেন, এই হাদীছের উপকারিতা হ’ল- যিম্মী কাফির যেনা করলে তার উপর হদ্দ কায়েম
করা ওয়াজিব (ফাৎহুল বারী ১২/১৭০)।
প্রশ্ন (৩৯/৩৫৯) : জনৈক নারী তার স্বামীর
নিকট থেকে খোলা করে পৃথক হয়েছে। উক্ত নারীর দু’টি মেয়ে তার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
তিনি তার বড় মেয়েকে কিছুটা দরিদ্র হ’লেও দ্বীনদার এক পাত্রের সাথে বিবাহ দিতে চান।
মেয়েও তাতে রাযী। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় পিতা রাযী নন। এক্ষণে উক্ত মহিলা কি নিজে
অভিভাবক হিসাবে বিবাহ দিতে পারবে? না সাবেক স্বামীর অনুমোদন লাগবে?
উত্তর : প্রশ্ন অনুযায়ী উক্ত সন্তান বালেগা। এমতাবস্থায় সে যদি স্বেচ্ছায়
মায়ের নিকটে অবস্থান করে এবং মা তার যাবতীয় খরচ বহন করে, সেক্ষেত্রে তার উপর পিতার
অভিভাবকত্বের অধিকার থাকে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট
জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলল, আমার স্বামী আমার ছেলে নিয়ে যেতে চায়। অথচ ছেলে আমার
উপকার করে। সে আমাকে কূয়া থেকে পানি এনে দেয়। এসময় তার পিতা এলে নবী করীম (ছাঃ)
ছেলেকে বললেন, ইনি তোমার পিতা আর ইনি তোমার মাতা- যাকে ইচ্ছা তুমি তার হাত ধর।
ছেলে তার মায়ের হাত ধরল। অতঃপর মা তাকে নিয়ে চলে গেল’ (আবুদাঊদ, নাসাঈ;
মিশকাত হা/৩৩৮০, সনদ ছহীহ)। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,
ছেলে হৌক বা মেয়ে হৌক, সন্তানের ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান হওয়ার পর যদি পিতা-মাতা
সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে মতভেদ করেন, তাহ’লে সন্তানকে এখতিয়ার দেওয়াই শরী‘আত
সম্মত’ (নায়লুল আওত্বার ৮/১৬০ পৃঃ, ‘সন্তান পালনের অধিক হকদার কে?’
অনুচ্ছেদ)।
অতএব উক্ত নারীর
বিবাহের ক্ষেত্রে মাতা নয় বরং মাতা সম্পর্কীয় পুরুষ আত্মীয়-স্বজন যেমন ভাই, মামা,
নানা প্রমুখগণ অভিভাবক হিসাবে বিবাহ প্রদান করবেন। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কান
নারী অপর নারীকে বিবাহ দিতে পারে না এবং কোন নারী নিজে নিজে বিবাহও করতে পারে
না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২, মিশকাত হা/৩১৩৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২৯৮)।
প্রশ্ন (৪০/৩৬০) : আমার বয়স ২০ পেরিয়েছে।
পিতা-মাতা দ্বীন থেকে দূরে থাকার কারণে আমার খাৎনা করাননি। এক্ষণে আমার করণীয় কি?
উত্তর : এমতাবস্থায় খাৎনা করাই যরূরী। কারণ এটি মানুষের ফিৎরাত বা
স্বভাবজাত পাঁচটি বিষয়ের অন্যতম (বুখারী হা/৫৮৯১, মিশকাত হা/৪৪২০ ‘পোষাক’
অধ্যায় ‘চুল অাঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ)। এর মধ্যে যে স্বাস্থ্যগত কল্যাণ নিহিত রয়েছে, সে
বিষয়ে সকল স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী একমত। ইবরাহীম (আঃ) ৮০ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে খাৎনা
করেছিলেন (বুখারী হা/৩৩৫৬)।
No comments:
Post a Comment