Search This Blog

Thursday, February 21, 2019

বিপদ আপদ ও টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া বা আমলসমূহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বিপদ আপদ ও টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া বা আমলসমূহ

 


 ভূমিকাঃ বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের উপর নেমে আসে। কখনো আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্যে ইচ্ছেকৃতভাবে বিপদে ফেলেন আবার মানুষের কৃত কর্মের জন্যে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি-

মানুষের উপর বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে দুইভাবে।

(১) আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য।

(২) মানুষের কৃত কর্মের জন্য।

আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে।

মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত যা কিছুই ঘটুক না কেন, তা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরের নয়। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই এখানে ঘটছে না?

তবে কি আমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আসে, তাও কি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন? আল্লাহ কি ইচ্ছা করেই আমাদের বিভিন্ন বিপদ-আপদে ফেলেন? অনেকভাবেই এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।

তবে সহজে বলতে গেলে, জীবন একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার প্রেক্ষিতেই আমাদের এই জীবনে যেমন সুখ ও সাফল্যের আগমন ঘটে, ঠিক তেমনি দুঃখ ও বিপদ-আপদ আসে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বলেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।” (সূরা মুলক, আয়াত: ২)।

দুঃখ ও বিপদ-আপদের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি আমাদের নিজেদের। কেন এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন, তা সম্পর্কেও আমরা সচেতন হতে পারি।

ফলে আমরা জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে সক্ষম হতে পারি।

মানুষ ঈমানদার হোক আর কাফের হোক, নেককার হোক আর পাপী হোক, সবার জীবনে বিপদ-আপদ আসে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদিও আমরা অপছন্দ করি, তারপরেও কেনো আমাদের জীবনে এইরকম বিপদ-আপদ আসে বা আল্লাহ কেনো আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন?

আল্লাহ বলেন,

মানুষ কি মনে করে যে “আমরা ঈমান এনেছি”-এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা? আমি অবশ্যই তাদের পূর্বে যারা ছিলো তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।” (সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩)।

এছাড়া অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন,

“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যানপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে তাহলে সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরিতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সুরা হাজ্জ, আয়াত ১১)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“কঠিন শাস্তির পূর্বে আমি তাদেরকে হালকা শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।” (সুরা সাজদাহ, আয়াত ২১)।

আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিভিন্নভাবে বিপদ আপদে ফেলেন

মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি অতি দয়াবান। তিনি সর্বদা বান্দার জন্য সহজ চান, কঠিন চান না। তিনি কারও উপর যুলুমকারী নন। সর্বদা বান্দার কল্যাণ চান। তিনি চান বান্দার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে তাকে দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত করতে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য (হালাল-হারাম) ব্যাখ্যা করে দিতে চান ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের (সুন্দর) রীতি সমূহের প্রতি তোমাদের পথ প্রদর্শন করতে চান এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’। (নিসা ৪/২৬)।

(ক) আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদাপদের সম্মুখীন করেনঃ

বিপদাপদ মহান প্রভুর পক্ষ থেকে এক বড় নে‘মত। তিনি এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে’। (বাক্বারাহ ২/১৫৫)।

সুতরাং আমরা যদি বিপদাপদকে সর্বোত্তমভাবে আলিঙ্গন করতে পারি তবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণের স্বাদ আস্বাদন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিপদাপদ জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যমঃ বিপদাপদে পড়লে গোনাহ মাফ হয়। তাই এটা জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি ধারণা করেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনও তাদের মত অবস্থা আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। নানাবিধ বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেছিল ও তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’। (বাক্বারাহ ২/২১৪)।

(খ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, নেককার ব্যক্তিদের বিপদে ফেলেনঃ

আল্লাহ তা‘আলা কোন নেককার ব্যক্তির কল্যাণ চাইলে তাকে বিপদে ফেলেন। হাদীছে এসেছে,

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর উপর আমার হাত রাখলে তার গায়ের চাদরের উপর থেকেই তাঁর দেহের প্রচন্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি বলেনঃ আমাদের (নবী-রাসূলগণের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কার উপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেনঃ নবীগণের উপর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারপর কার উপর? তিনি বলেনঃ তারপর নেককার বান্দাদের উপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র পীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বলটি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৪, সহীহাহ ১৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অপর এক হাদীছে এসেছে,

মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি সাদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ মানুষের সর্বাপেক্ষা কঠিন পরীক্ষা হয়? তিনি বলেনঃ নবীগণের। অতঃপর মর্যাদার দিক থেকে তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণের। বান্দাকে তার দীনদারির মাত্রা অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যদি সে তার দীনদারিতে অবিচল হয় তবে তার পরীক্ষাও হয় ততটা কঠিন। আর যদি সে তার দীনদারিতে নমনীয় হয় তবে তার পরীক্ষাও তদনুপাতে হয়। অতঃপর বান্দা অহরহ বিপদ-আপদ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। শেষে সে পৃথিবীর বুকে গুনাহমুক্ত হয়ে পাকসাফ অবস্থায় বিচরণ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০, দারেমী ২৭৮৩, সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, দুনিয়ায় তাকে শাস্তি ভোগ করানঃ

যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদেরকে তিনি দুনিয়াতেই কিছু শাস্তি ভোগ করান। যাতে পরকালে তাঁর সেই বান্দাকে শাস্তি ভোগ করতে না হয়।

 আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বান্দার মঙ্গল কামনা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করা হয়। আর যখন তিনি কোন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তিনি তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে ক্বিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ আযাবে নিপতিত করেন’। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাত ১৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, বান্দার দেহ, সম্পদ ও সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেনঃ

আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তার নিজের এবং সম্পদ ও সন্তানের উপরে বিপদ দেন। মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩০৯০, সহীহাহ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যতো বড় পরীক্ষা ততো বড় পুরস্কার

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ ৪০৩১, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বিভিন্নমুখী বিপদাপদ মুকাবিলা করতে করতে মুমিন এক সময় যখন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তার আর কোন গোনাহ থাকবে না।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৯, হাকেম ৭৮৭৯, ছহীহ ইবনু হিববান ২৯২৪, ছহীহাহ ২২৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

পক্ষান্তরে দুষ্ট লোকদেরকে তাদের সীমাসংঘনে ছেড়ে দেওয়া হবে ‘বরং আল্লাহ তাদের উপহাসের বদলা নেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ছেড়ে দেন বিভ্রান্ত অবস্থায়’ (বাক্বারাহ ২/১৫)।

অতঃপর ক্বিয়ামতের ময়দানে কঠিনভাবে পাকড়াও করা হবে।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, সহীহাহ ১২২০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ দুনিয়াতে সর্বাধিক বিপদ গ্রস্থ কারা এমন একটি প্রশ্নের জওয়াবে রাসূলে করীম (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘এ দুনিয়ায় সবচেয়ে কঠিন বিপদগ্রস্থ হ’লেন নবীগণ। তারপর ক্রমানুযায়ী সর্বোচ্চ নেককারগণ। মুমিন পরীক্ষিত হবে তার দ্বীন অনুযায়ী। যদি সে দ্বীনের বিষয়ে কঠিন হয়, তবে তার পরীক্ষা সেই অনুযায়ী কঠিন হবে। আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে ঢিলা হয়, তার পরীক্ষা অনুরূপ হালকা হবে। মুমিনের উপরে এইভাবে পরীক্ষা চলতে থাকবে। এমন এক সময় আসবে যে, সে যমীনের উপরে চলাফেরা করবে এমন অবস্থায় যে, তার কোন গোনাহ থাকবে না’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪০২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, আহমাদ ১৪৮৪, ১৪৯৭, ১৫৫৮, ১৬১০, দারেমী ২৭৮৩, সহীহাহ ১৪৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কেননা তার বালা-মুছীবত তার গোনাহের কাফফারা হয়ে থাকে, যদি সে ঐ মুছীবতে সন্তুষ্ট থাকে। যেমন-

আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৩, আহমাদ ৮০২৭, ইবনু হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫১২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মানুষের কৃত কর্মের জন্য বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত আসে

মূলত পৃথিবীতে যতো বড় বড় বিপদ আপদ বালা মুসিবত এসেছে তার মূল কারণ হলো মানুষের পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। পূর্বে যেসব পাপের কারনে আল্লাহ তায়ালা গজব নাজিল করেছিল, বর্তমানে সেইসব পাপের চেয়েওে মারাত্মক পাপকার্য আরো বেশী সংঘটিত হচ্ছে। যেমন: সমকামিতার প্রচলন ও আল্লাহর গজব ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।

মানুষের যেসব কৃত কর্মের জন্যে বিপদ আপদ বা বালা মুসিবত নেমে আসে তা হলোঃ

(১) পাপের সীমা ছাড়িয়ে গেলে।

(২) বিধর্মী কার্যকলাপের ফলে।

(৩) ব্যভিচার, মাপে কম দেওয়া ইত্যাদি অপকর্মের ফলে।

(৪) অন্যায় কাজে বাধা না দেওয়ার ফলে।

(৫) অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে।

(৬) দুনিয়া প্রীতি বৃদ্ধি পেলে।

(৭) ধনীরা কৃপণ হলে।

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেনো তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি (যেমন: করোনা)। যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না (তথা ইসলামি আইন মোতাবেক বিচারিক কার্যক্রম ও রাষ্ট্র শাসন করে না) এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না (তথা কুরআনকে সংবিধান হিসেবে মেনে নেয় না), তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন।  (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪০১৯, সহীহাহ ১০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।

বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবতে পড়লে করণীয়

(১) আল্লাহর উপর  ভরসা করাঃ

বিপদাপদ, কষ্ট-ক্লেশ যাই আসুক না কেন সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। কেননা এসব কিছু মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।

আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’। (তওবা ৯/৫১)।

আল্লাহ আরো বলেন,

‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য বেরোনোর পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে জীবিকা দেন যা সে ভাবতেও পারে না। আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট হন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কাজ চূড়ান্তকারী। অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক কাজের জন্য একটা পরিমাপ ঠিক করে রেখেছেন’ (তালাক্ব ৬৫/২-৩)।

আল্লাহ আরো বলেন,

‘আল্লাহ ব্যতীত কারু হুকুম চলে না। তাঁর উপরেই আমি ভরসা করি এবং তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত সকল ভরসাকারীর’ (ইউসুফ ১২/৬৭)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“গোপন সলাপরামর্শ তো কেবল শয়তানের পক্ষ থেকে হয়, যাতে মুমিনরা কষ্ট পায়। কিন্তু আল্লাহর হুকুম না হ’লে সে তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর মুমিনদের কর্তব্য তো আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা” (মুজাদালাহ ৫৮/১০)।

উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর উপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে পাখির মত রিযিক দান করতেন। ভোরবেলা পাখিরা খালিপেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৪৪,  সুনান ইবনু মাজাহ ৪১৬৪, তাখরীজুল মুখতার ২১৭, ২১৮, সহীহাহ ৩১০, আহমাদ ৩৭৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘর হতে কেউ বাইরে রাওয়ানা হওয়াকালে যদি বলে,

‘বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু আলাল্লা-হি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হ’ 

“আল্লাহ তা'আলার নামে, আল্লাহ তা'আলার উপরই আমি নির্ভর করলাম, আল্লাহ তা'আলার সাহায্য ব্যতীত বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই”, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তা'আলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (অনিষ্ট হতে) তুমি হিফাযাত অবলম্বন করেছ। আর তার হতে শাইতান দূরে সরে যায়। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪২৬, মিশকাত তাহকীক সানী (হাঃ ২৪৪৩), তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৬৪), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ৫৮/৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আল্লাহর উপর  সন্তুষ্ট থাকাঃ 

আল্লাহ বলেন,

‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক’! ‘অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ সহ ফিরে এল। কোনরূপ অনিষ্ট তাদের স্পর্শ করেনি। তারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (আলে ইমরান ৩/১৭৩-৭৪)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন তার কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তার কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, সহীহাহ ১২২০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৩) ধৈর্যধারণ করাঃ

আল্লাহ বলেন,

“এবং ধৈর্য ধরুন, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আপনার ধৈর্য ধরা সম্ভব নয়।” (১৬-সূরা আন নাহল: আয়াত-১২৭)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“অতএব, ধৈর্য ধরাই ভাল। আর তারা যা বলছে এর বিরুদ্ধে আল্লাহই সহায়ক।” (১২-সূরা ইউসুফ: আয়াত-১৮)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর উত্তম ধৈর্য।” (৭০-সূরা আল মাআরিজ: আয়াত-৫)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“তোমাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ।” (১৩-সূরা রাআদ: আয়াত-২৪)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“তোমার উপর যে বালা মুসিবত এসেছে বা আসবে তাতে ধৈর্য ধারণ কর এবং করিও।" (৩১-সূরা লোকমান: আয়াত-২৭)।

আল্লাহ আরো বলেন,

“তোমরা ধৈর্য ধর এবং (তোমাদের শক্ৰদের সাথে) ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর (অর্থাৎ তাদের চেয়েও বেশি ধৈর্য ধর) এবং যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুত থাক বা যেখান থেকে শত্রু বাহিনী আক্রমণ করতে পারে সেখানে সৈন্য-বাহিনী স্থাপন করে তোমাদের অঞ্চলকে রক্ষা কর।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-২০০)।

হাদ্দাব ইবনু খালিদ আল আযদী ও শাইবান ইবনু ফাররূখ (রহঃ).....সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২২৯, ইসলামিক সেন্টার ৭২৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের প্রতিদান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরষ্কার পাবে অপরিমিতভাবে’। (যুমার ৩৯/১০)।

বিপদ আপদ ও টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার দোয়া বা আমলসমূহ

দোয়া নং-১। “হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।”

হাদিসঃ-

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সাতবার বলেঃ ‘‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপর ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের রব’’ আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হবেন যা তাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তার বিরুদ্ধে চাই সে সত্যিকারভাবে অথবা কৃত্রিমভাবে বলুক না কেন।

যে ব্যক্তি দো‘আটি সকালবেলা সাতবার এবং বিকালবেলা সাতবার বলবে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। (ইবনুস সুন্নী, নং ৭১, মারফূ‘ সনদে; আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১, কানজুল উম্মাল: ৫০১১)। আর শাইখ শু‘আইব ও আব্দুল কাদের আরনাঊত এর সনদকে সহীহ বলেছেন। দেখুন, যাদুল মা‘আদ ২/৩৭৬)।

দোয়া নং-২। “বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআ’সমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়া হুয়াস সামিয়ুল আলিম”।  (সকাল বিকেল ৩ বার করে)।

অর্থঃ আল্লাহর নামে (আমি এই দিন বা রাত শুরু করছি)- যার নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কেউ কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। তিনি সব শুনেন ও জানেন।

হাদিসঃ

আবান ইবনু উসমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবেঃ

“বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআ’সমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামাই ওয়া হুয়াস সামিয়ুল আলিম”।

‘‘আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’’ সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।

আবান (রহঃ) পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলে যে লোকটি তার থেকে হাদীস শুনেছিল, তার দিকে তাকাচ্ছিল। তখন আবান তাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন? বিশ্বাস করো, আল্লাহর কসম! আমি উসমান (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিনি আর উসমান (রাঃ)-ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেননি। তবে যেদিন আমি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে সেদিন আমি রাগের বশে তা বলতে ভুলে গিয়েছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫০৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-৩।  “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন”।

অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী।  (সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭)।

ফজিলতঃ

(ক) এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি নবী ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দু:খ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিবো। (সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮)।

(খ) সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু'আ করেছিলেন তা হলঃ “তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু'আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১২২/৭৯, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী ২২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, আমার ভাই ইউনুসের দোয়াটি খুব সুন্দর। এর প্রথম অংশে আছে কালিমায়ে তায়্যিবা। মাঝের অংশে আছে তাসবিহ। আর শেষের অংশে আছে অপরাধের স্বীকারোক্তি। যে কোনো চিন্তিত, দু:খিত, বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি প্রতি দিন এ দোয়া তিন বার পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন।  (কানজুল উম্মাল: ৩৪২৮)।

দোয়া নং-৪। ইমাম আহমদ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তায় দোয়াটি পড়বে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তার বিষাদকে আনন্দে পরিণত করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ৩৫২৮ সহিহ তারগীব: ১৮২২)।

দোয়াটি হলো-

“আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী”। (সকাল বিকেল ৩ বার করে)।

অর্থঃ হে আল্লাহ, নিঃসন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসা আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার প্রত্যেক সেই নামের অসিলায় প্রার্থনা করছি- যে নাম তুমি নিজে নিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ, অথবা তুমি তোমার গায়বি ইলমে নিজের নিকট গোপন রেখেছ, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত কর, আমার বক্ষের জ্যোতি কর, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার এবং আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।

দোয়া নং-৫। “লা -ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল আযীমুল হালীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল আরশিল আযীম, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস সামা ওয়া-তি ওয়া রব্বুল আরদি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।”  (সকাল বিকেল ১০ বার করে)।

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, যিনি মহান, যিনি সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রতিপালক।

হাদিসঃ-

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, বিপদের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,

‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ‘আযীমুল হালীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল ‘আর্শিল ‘আযীম; লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস্ সামা-ওয়া-তি, ওয়া রব্বুল আরযি রব্বুল ‘আর্শিল কারীম’’।

(অর্থাৎ- মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। মহান ‘আরশের মালিক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, যিনি সমগ্র আকাশম-লীর রব, মহান ‘আরশের রব।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৬, ৬৩৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩০, আহমাদ ২০১২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৭৭২, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৪০, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-৬। এই দোয়াটি একবার পাঠ করলে ৭০টি বিপদ দূর হয়!

হযরত আবু নাঈম ও ইবনে আবি শায়বা রহ. একটি আমলের কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁরা বলেন, যে ব্যক্তি নিম্নের দুয়া একবার পাঠ করবে- একশ’বার নয়, মাত্র একবার- আল্লাহ তায়ালা তার সত্তরটি বিপদ দূর করে দিবেন। আর সর্বনিম্ন বিপদ হল দারিদ্রতা। আর অন্যান্য বিপদগুলো এর চেয়ে অনেক বড় বড়।

দোয়াটি হলো:-

“লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি ওয়ালা মালজাআ ওয়ালা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লাহ ইলাইহি”।

দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করুন। সব রকম সমস্যা থেকে নাজাত পাবেন, ইনশাআল্লাহ।

দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তদের জন্য সান্ত্বনা: কানযুল উম্মালে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই আয়াতটি পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হৃদয়কে প্রশান্তি দান করবেন। لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ এখানে ইয়াকিন ও দৃঢ় বিশ্বাসের শর্তারোপ করা হয়েছে। কারো অন্তরে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে সে সুফল পাবে না।

আমলঃ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়াটি পড়তে হয়। এছাড়া দোয়াটি সকাল সন্ধ্যায় ১০ বার করে বা প্রতি সালাতে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ ও মাসুরার পর পড়তে পারেন।

দোয়া নং-৭। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে লোক একশ’বার এ দু‘আটি পড়বেঃ

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহুদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর”।

অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।

তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব তার হবে। তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হতে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু‘আটির ‘আমল বেশি পরিমাণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৯৩, ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯১, আহমাদ ৮০১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

দোয়া নং-৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ)....নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন বান্দার ওপর মুসীবাত আসলে যদি সে বলে,

"ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জাউন, আল্ল-হুম্মা' জুরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খয়রাম মিনহা ইল্লা- আজারাহুল্ল-হু ফী মুসীবাতিহী ওয়া আখলাফা লাহ্ খয়রাম মিনহা”। (সকাল বিকেল ৩/৭ বার করে)।

(অর্থাৎ-আমরা আল্লাহর জন্যে এবং আমরা তারই কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে এ মুসীবাতের বিনিময় দান কর এবং এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান কর। তবে আল্লাহ তাকে তার মুসীবাতের বিনিময় দান করবেন এবং তাকে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।)

উম্মু সালানাহ (রাযিঃ) বলেন, এরপর যখন আবূ সালামাহ ইনতিকাল করলেন, আমি ঐরূপ দুআ করলাম যেরূপ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও উত্তম নি'আমাত অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বামীরূপে দান করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১২, ২০১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৬, ইসলামীক সেন্টার ২০০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-৯।  দুশ্চিন্তা ও ঋণ মুক্তির দোয়াঃ 

 ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজাল’’।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহীহ বুখারি, হা/২৮৯৩/৬৩৬৯, মিশকাত, হা/ ২৪৫৮, তিরমিযি, হা/৩৪৮৪, আবু দাউদ, হা/১৫৪১, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৭২)।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া যলা‘ইদ্ দায়নি ওয়া গলাবাতির্ রিজা-ল’’ ।

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুশ্চিন্তা, শোক-তাপ, অক্ষমতা-অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের জোর-জবরদস্তি হতে আশ্রয় চাই)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৬৯, ৬৭৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৬, নাসায়ী ৫৪৪৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৪১, আহমাদ ১০৫২, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ১২৯, সহীহ আল জামি ১২৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং- ১০। ঋণ মুক্তির দোয়াঃ

“আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আ’ন হারামিক; ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।” (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালালের সাহায্যে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষি হতে বাঁচান।’

হাদিসঃ-

আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর”। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৬৩, তা’লীকুর রাগীব (২/৪০), আল-কালিমুত তাইয়্যিব ১৪৩/৯৯, মুসতাদরাকে হাকিম, হা/১৯৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দোয়া নং-১১।  “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-ই, ওয়া দারাকিশ শাক্বা-ই, ওয়া সূইল ক্বাযা-ই, ওয়া শামা-তাতিল আ'দা-ই।“  (সকাল বিকেল ৭/১০ বার করে)।

অর্থঃ আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট হ'তে , দুভার্গ্যের  আক্রমন হতে , মন্দ ফায়সালা হ'তে এবং শত্রুর হাসি হ'তে।

হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং দুশমনের আনন্দিত হওয়া থেকে আশ্রয় চাইলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪৭, ৬৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৭, নাসাঈ- ৫৪৯১, ৫৪৯২, ৭৩০৮, আদাবুল মুফরাদ ৬৬৯, সহীহ আল জামি ২৯৬৮, সহীহাহ্ ১৫৪১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-১২।  ‘‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্তাগীস’’। (সকাল বিকেল ৭/১০ বার করে)।

হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লে বলতেন,

‘‘ইয়া- হাইয়্যু, ইয়া কইয়ূমু বিরহমতিকা আস্তাগীস’’

(অর্থাৎ-হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! তোমার রহমতের সাথে আমি প্রার্থনা করছি)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৫৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫২৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১১৯, সহীহাহ্ ৩১৮২, সহীহ আল জামি ৪৭৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দোয়া নং-১৩।  “আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।

হাদিসঃ

আসমা বিনতে ওমাইর রা. থেকে বর্ণিত, “নবীজি সা. বলেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা তুমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মধ্যে পড়বে। সাহাবী বললেন, অবশ্যই শেখাবেন। নবীজি (সাঃ) বললেন, দোয়াটি হচ্ছে : ‘

“আল্লাহু আল্লাহ রব্বী লা উশরিকু বিহি শাইয়ান”।

অর্থ : আল্লাহই আল্লাহ আমার প্রতিপালক। আমি তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করি না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৮২, নাসায়ী ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’ ৬৪৭, সহীহাহ ২৭৫৫, আহমাদ (৬/৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-১৪। “আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।

হাদিসঃ

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন :---

“আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জায়ালতাহু সাহলান, ওআনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইযা শিইতা”।

অর্থ: ইয়া আল্লাহ, কোনো বিষয় সহজ নয়। হ্যাঁ, যাকে তুমি সহজ করে দাও। যখন তুমি চাও তখন তুমি মুশকিলকে সহজ করে দাও। (ইবনে হিব্বান : ৯৭৪)।

দোয়া নং-১৫। আবু বাকরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, বিপদ ও মুসিবতের সময়কার দোয়া হলোঃ

“আল্লাহুম্মা রহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বরফাতা আঈন, ওয়া আছলিহলি শানি কুল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লা আনতা”। (সকাল ‍বিকেল ৭ বার করে)।

(আবু দাউদ, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৭২১; মকবুল দোয়া: ১৪৩)।

দোয়া নং-১৬। যেকোন দুঃখ, কষ্ট, বিপদ, দুশ্চিন্তায় আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল প্রকাশের জন্য এই দো‘আটি পাঠ করা যায়।

“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল”। (সকাল বিকেল ৭ বার করে)।

হাদিসঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল’ কথাটি ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, যখন তিনি আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যখন লোকেরা বলল, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে কাফিররা বিরাট সাজ-সরঞ্জামের সমাবেশ করেছে, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর। এ কথা তাদের ঈমানের তেজ বাড়িয়ে দিল এবং তারা বললঃ ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল’ অর্থাৎঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কার্যনির্বাহক’’- (সূরাহ আলে ইমরান ৩/১৭৩)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৬৩, ৪৫৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া নং-১৭। “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"। (প্রতি দিন ১০০ বার করে)।

দোয়াটির ফজিলতঃ

(ক) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’ বলতে শুনে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস! আমি কি তোমাকে এমন এক বাক্যের সন্ধান দিবো না, যা জান্নাতের ভান্ডারসমূহের অন্তর্ভুক্ত? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ তুমি বলো, ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৭৪, ২৪৬১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫২৬, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯১০২, ১৯১৫১, ১৯২৪৬, ১৯২৫৬, রাওদুন নাদীর ১০৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৭০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের একটির সন্ধান দিবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’। (আহমাদ ২০৮২৯, ২০৮৪২, ২০৮৭৯, রাওদুন নাদীর ১০৪১, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(গ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম তখন উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া করো। কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে আহবান করছ না বরং তোমরা আহবান জানাচ্ছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার কাছে এলেন, তখন আমি মনে মনে পড়ছিলামঃ ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। তখন তিনি বলেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি পড়বে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। কারণ এ দু‘আ হলো জান্নাতের রত্ন ভান্ডারগুলোর একটি। অথবা তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে এমন একটি কথার সন্ধান দেব না যে কথাটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? তাত্থেকে একটি রত্নভান্ডার হলো ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৪, ২৯৯২, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কাইস ইবনু সা'দ ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তার বাবা তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবার জন্য তার কাছে অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আমি নামাযরত থাকা অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেনঃ আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" (আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই)। (সূনান আত তিরমিজী ৩৫৮১,  সহীহাহ ১৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ঙ) সাফওয়ান ইবনু সুলাইম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই “লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" পাঠ না করে উর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না। (সূনান আত তিরমিজী ৩৫৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(চ) ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ)....উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার" বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। যখন মুওয়াযযিন বলে "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সেও বলেঃ "আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা আলাস সলা-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ "হাইয়্যা 'আলাল লাফা-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন বলেঃ "আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার" এর জবাবে সে বলেঃ "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার"। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ" এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ"। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ৭৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৩৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

ছালাতুল হাজত

বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা (যেমন, বালা মুসিবত বা বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন, হতাশা, টেনশন, মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি থেকে মুক্তি লাভ) পূরণের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দুই রাকআত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত বলা হয়। এই সালাতের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যেকোনো সময় আদায় করা যায়।

হাদিসঃ-

 উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লাহ্‌র কাছে আমার জন্য দুআ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেনঃ তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে অযু করার পর দু রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ করতে বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ! আমার চাহিদা পূরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লাহ্! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবুল করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮৫, তিরমিযী ৩৫৭৮, তালীক ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবেন। (বাক্বারাহ ২/১৫৩)।

এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দোআটি পাঠ করবেন।

“আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র”।

‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দোআটিই পড়তেন” ।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ পড়তেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা আ-তিনা-ফিদ্দুন্ইয়া-হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’।

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর। (সূরা আল-বাকারাহ ২/২০১)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯, ৪৫২২; মুসলিম ৪৮/৯, হাঃ ২৬৯০, আহমাদ ১৩৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোআটি সিজদায় পড়লে বলবেন,  আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’।

 (অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৮৭, বুখারী ৬৩৮৯, মুসলিম ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দোআ পড়া চলে না।

হাদিসঃ-

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ‘তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩১৯, ছহীহুল জামে ৪৭০৩,  আহমাদ (৫/৩৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারার ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা”। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদিসহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়।

হাদিসঃ-

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ (রাযি.) ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা‘আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৭, ২৬৩৫, ২৩৫৭, ২৩৫৮, ৫০৮৪, ৬৯৫০, আধুনিক প্রকাশনী ২০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন  ২০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

দোয়া পাঠ বা জিকির করার হুকুম এবং ফজিলত

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(১) ‘‘তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব। আরও তাঁর বাণীঃ যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না, নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল-মু’মিন ৪০/৬০)।

(২) ‘আমি বলেছি- ‘তোমরা তোমাদের রবেবর কাছে ক্ষমা চাও, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল। (তোমরা তা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদ্বীনালা প্রবাহিত করবেন।।’’ (সূরা নূহ ৭১/১০-১২)।

(৩) ‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে…..।’’ (সূরা আলে ‘ইমরান ৩/১৩৫)।

(৪) ‘‘তোমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করো।’’ (সূরাহ আত্-তাহরীম ৬৬/৮)।

(৫) মহান আল্লাহ বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত)।

(৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)।

(৭) তিনি অন্য জায়গায় বলেন, “আল্লাহকে অধিক-রূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)।

(৮) তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)।

(৯) তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত)।

রাসুল সাঃ বলেন,

(১) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তওবা করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সওয়ারটি তার হতে হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে, তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৬৮৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ'আরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ'লা (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এরূপ দুটি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৯৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৬৬৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২২,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৮৮, ৩৬০৩, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩, সহীহাহ ২২৮৭, রিয়াযুস সালেহীন ২৮/১৪৪৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৪) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ).....আগার আবূ মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আবু হুরাইরাহ ও আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) তারা উভয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জাতি আল্লাহ সুবহানাহ ওয়াতা’আলার যিকর করতে বসলে একদল ফেরেশতা তাদেরকে ঘিরে ফেলে এবং রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়। আর তাদের উপর শান্তি নাযিল হয় এবং আল্লাহ তা’আলা তার নিকটস্থ ফেরেশতাগণের মধ্যে তাদের আলোচনা করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০০, ২৬৯৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবূ দাঊদ ১৪৫৫, ৩৬৪৩, ৪৯৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ৮১১৭, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৩, রিয়াযুস সালেহীন-২/১৪৫৬, সহীহ্ তারগীব ১/৩১/৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এক দল ফিরিস্তা, যাঁরা দোয়া পাঠ বা জিকিরকারীদের খুঁজে বেড়ান

আল্লাহ বলেন,

“তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায়ো না।” (সূরা কাহাফ ২৮ আয়াত)।

রাসুল (সাঃ) বলেন,

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’

ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত  চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।’

আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।”

মুসলিমের আবূ হুরাইরা কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আল্লাহর অতিরিক্তি কিছু ভ্রাম্যমান ফেরেশতা আছেন, যারা জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন এমন মজলিস পেয়ে যান, যাতে আল্লাহর যিকির হয়, তখন তাঁরা সেখানে বসে যান। তাঁরা পরস্পরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেন। পরিশেষে তাঁদের ও নিচের আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেন। অতঃপর লোকেরা মজলিস ত্যাগ করলে তাঁরা আসমানে উঠেন। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল অধিক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এলে?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবী থেকে আপনার এমন কতকগুলি বান্দার নিকট থেকে এলাম, যারা আপনার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়ে এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আপনার জান্নাত প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে?’

তাঁরা বলেন, ‘না, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার জাহান্নাম থেকে, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘আর তারা আপনার নিকট ক্ষমা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা প্রার্থনা করে তা দান করলাম এবং যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তা থেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁরা বলেন, ‘হে প্রতিপালক! ওদের মধ্যে অমুক পাপী বান্দা এমনি পার হতে গিয়ে তাদের সাথে বসে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম! কারণ তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত হয় না।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪০৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯, রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া বা আমল সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়

(১) দোয়া কবুলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, করলে সেই দোয়া কবুল হবে নাঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দু‘আ কবূল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, আহমাদ ১৩০০৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৮৮, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬৫৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবু তাহির (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দু’আ সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দুআ করে এবং (দুআয়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! (দু’আয়) তাড়াহুড়া করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে, তিনি আমার দু’আ কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দু’আ করা পরিত্যাগ করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৪২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৮১, আল আদাবুল মুফরাদ ৬৫৪, সহীহ আল জামি ৭৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) দোয়া বা আমল কবুল না হলেও তা বন্ধ না করা তথা আমল অব্যাহত রাখতে হবেঃ

 (ক) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।

‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭১৯, ১৭১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী- ১/১৪৬)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(খ)  আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)।

(গ) আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ)....'আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ! (বেশী বেশী রাত জেগে) তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে সালাত আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।

উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, কোনো আমল শুরু করলে তা ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমল অব্যাহত রাখতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৫২, ১১৩১, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ৬২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৯, তিরমিযী ৭৭০, নাসায়ী ১৬৩০, ২৩৪৪, ২৩৮৯, ২৩৯০, ২৩৯১, ২৩৯২, ২৩৯৩, ২৩৯৪, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০, ২৪০১, ২৪০২, ২৪০৩, আবূ দাউদ ১৩৮৮, ১৩৮৯, ১৩৯০, ১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৭২৫, ৬৭৫০, ৬৭৯৩, ৬৮০২, ৬৮২৩, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬, রিয়াযুস সালেহীন-তাওহীদ প্রকাশনী-২/১৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৬০০, ইসলামীক সেন্টার ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে মুসলিম লোকই আল্লাহ তা'আলার নিকটে কোন কিছুর জন্য দু'আ করে, অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার হতে একই রকম পরিমাণ ক্ষতি সরিয়ে দেন, যতক্ষণ না সে পাপে জড়িত হওয়ার জন্য অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দু'আ করে। সমবেত ব্যক্তিদের একজন বলল, তাহলে আমরা অত্যধিক দুআ করতে পারি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা তার চাইতেও বেশী কবুলকারী। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৭৩, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৫০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০১, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭১-২৭২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) ইচ্ছে হলে দোয়া কবুল করো এমন কথা বললে তার দোয়া কবুল হবে নাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর কাছে দু‘আ করার সময় এ কথা না বলে যে, হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমার প্রতি দয়া করো। তুমি যদি ইচ্ছা কর আমাকে রিযক দান করো। বরং সে দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করবে (চাইবে)। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই প্রদান করেন। তাঁকে দিয়ে জোরপূর্বক কোন কিছু করাতে সক্ষম নয় বা তাকে বাধা দেয়ার কেউ নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২২৫, ২২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৪৭৭, ৬৩৩৯,  আবূ দাঊদ ১৪৮৩, তিরমিযী ৩৪৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭২২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৩, আহমাদ ৮২৩৭, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৭৭, সহীহ আল জামি ৭৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আল্লাহর নিকট দোয়া করলে বা কিছু চাইলে তা কবুল করা হয়ঃ

(ক) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু‘আই (মূল) ‘ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘‘এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবূল করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩০, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৭৯, তিরমিযী ২৯৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮২৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯১৬৭, আহমাদ ১৮৩৫২, মু‘জামুস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০২, শু‘আবূল ঈমান ১০৭০, সহীহ ইবনু হিববান ৮৯০, আদাবুল মুফরাদ ৭১৪/৫৫৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৭, সহীহ আল জামি ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট দু‘আর চেয়ে কোন জিনিসের অধিক মর্যাদা (উত্তম) নেই।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩২, তিরমিযী ৩৩৭০, ইবনু মাজাহ ৩৭২৯, আহমাদ ৮৭৪৮, মু‘জামুল আওসাত ৩৭০৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৮০১, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩, শু‘আবূল ঈমান ১০৭১, ইবনু হিববান ৮৭০, আল আদাবুল মুফরাদ ৭২২/৫৫২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (৫) আল্লাহর নিকট দোয়া না করলে আল্লাহ রাগান্বিত হোনঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কামনা (দু‘আ) করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৩৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৩৭৩, সহীহ আল জামি ২৪১৮, আহমাদ ৯৭০১, মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ২৪৩১, সহীহাহ্ ২৬৫৪, সহীহ আল জামি ২৪১৮, শু‘আবূল ঈমান ১০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) সুখী জীবনে আল্লাহকে ভুলে না যাওয়াঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় বিপদাপদে আল্লাহ তার দু‘আ কবূল করুন। সে যেন তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়েও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দু‘আ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৮২, সহীহাহ্ ৫৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৬২৮, সহীহ আল জামি ৬২৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করাঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু‘আ কবূল হওয়ার দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা মনে রেখেই আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ কর। জেনে রেখ, আল্লাহ তা‘আলা অবহেলাকারী আস্থাহীন মনের দু‘আ কবূল করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৪৭৯, আল মু‘জামুল আওসাত লিত্ব ত্ববারানী ৫১০৯, মুসতারাক লিল হাকিম ১৮১৭, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৩৮২, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৩, সহীহ আল জামি ২৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৮) দুই হাত তুলে দোয়া করলে সেই হাত ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ লজ্জাবোধ করেনঃ

সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত লজ্জাশীল ও দয়ালু। বান্দা যখন তাঁর কাছে কিছু চেয়ে হাত উঠায় তখন তার হাত (দু‘আ কবূল না করে) খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২২৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ১৪৮৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫৫৬, মু‘কামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬১৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩১৪৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৮৭৬, সহীহ আল জামি‘ ১৭৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) মুসলিমদের অনুপস্থিতিতে তাদের জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়ঃ

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে আবু দারদা (রাযিঃ) এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আমাদের কল্যাণের জন্যে দু’আ করবেন। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ একজন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকটে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে তখন নিয়োজিত ফেরেশতা বলে থাকে "আমীন এবং তোমার জন্যও অবিকল তাই"। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৮০, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৩৪, সহীহাহ ১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) রাসুল সাঃ পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেনঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন (যে দু‘আয় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা থাকে), এছাড়া অন্যান্য দু‘আ ত্যাগ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৪৮২, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) ১৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৬৬, আহমাদ ২৭৬৫০, ২৭৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া পাঠ বা আমলগুলো  কখন ও কিভাবে করবো?

দোয়াগুলো সালাতের মধ্যে রুকু ও সিজদায় কিংবা তাশাহুদ বৈঠকে বা সালাতের বাহিরে ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর, বিশেষ করে ফজর, আসর ও ঈশার সালাতের পর দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দোয়া কবুল হওয়ার মনোভাব নিয়ে এবং প্রত্যেক দোয়ার অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে পাঠ করতে হবে।

সালাতের বাহিরেঃ

সালাতের বাহিরে দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ওযূহীন ও অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় দোয়া পাঠ বা আল্লাহর যিকির করা যায়। অবশ্য (বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় কুরআন পাঠ বৈধ নয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

(১) “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১ আয়াত)।

(২) আল্লাহ বলেছেন, “তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর (জিকির করো) এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হইয়ো না।” (সূরা আ’রাফ ২০৫ আয়াত)।

(৩) তিনি আরও বলেছেন, “সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।” (সূরা ত্বাহা ১৩০ আয়াত)।

(৪) তিনি অন্যত্র বলেছেন, “সকাল-বিকালে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা মুমিন ৫৫ আয়াত)।

(৫) “সে সব গৃহে---যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন---সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সে সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখে না।” (সূরা নূর ৩৬-৩৭ আয়াত)।

(৬) “আমি পর্বতমালাকে তার (দাঊদের) বশীভূত করেছিলাম; ঐগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত।” (সূরা স্বা-দ ১৮ আয়াত)।

রাসুল সাঃ বলেন,

(১) আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর যিকির করতেন।’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৭৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩০২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৩৩৮৪, আবূ দাউদ ১৮, আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪, রিয়াযুস সালেহীন-১/১৪৫২, সহীহাহ ৪০৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদীস থেকে শিক্ষাঃ

হাদীসটি প্রমাণ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র, উযুবিহীন, জুনুবী, বসে, দাঁড়িয়ে, হেলান দিয়ে, হাঁটা ও আরোহী সকল অবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন। এখানে যিকর কথাটি ব্যাপক অর্থবোধক (‘আম), যা তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ইস্তিগফার, দরুদ সকল প্রকার যিকর শামিল করে। মুসলিমগণের ঐক্যমত এরূপ করা শারী‘আত সম্মত। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের অবস্থায় বাদে। কেননা এ দুই অবস্থায় যিকর করা অপছন্দনীয়। তবে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের শুরুতে দোয়া পাঠ করা যাবে।

(২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার নিকট দু‘আ করবে কে? আমি তার দু‘আ কবূল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার গুনাহ ক্ষমা চাবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩২১, ১১৪৫, ৭৪৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের মধ্যেঃ

(১)  রুকুর সময়ঃ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেন, শোন! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যে, আমি যেনো রুকু বা সিজদাহ অবস্থায় কুরআন না পড়ি। সুতরাং রুকুতে তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো। আর সিজদায় অধিকাধিক দুয়া করার চেষ্টা করো। কারণ তা (আল্লাহর নিকট) গ্রহণযোগ্য।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আলী ইবনু হুজর মারওয়াযী (রহঃ)...আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুখে ইন্তেকাল করেন, সে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পর্দা খুললেন। তার মাথায় পট্টি বাধা ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌছিয়েছি, একথা তিনবার বললেন। বস্তুত যথার্থ স্বপ্ন ব্যতীত নবুওতের সুসংবাদ ছাড়া আর কিছুই বাকি রইল না। বান্দা তা দেখে অথবা তাকে তা দেখানো হয়। তোমরা শুনে রেখ, আমাকে রুকু এবং সিজদায় কিরাআত থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, যখন তোমরা রুকু করবে তখন তোমাদের রবের তাযীম করবে। আর যখন তোমরা সিজদা করবে তখন তোমরা বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা করবে। কেননা, এটা তোমাদের দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২)  সিজদার সময়ঃ

(ক) ইবনু আব্বাস (রা;) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো, কেননা সিজদাহ হচ্ছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের ”রবের” মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দুআ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দুআ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষ সিজদাহ অবস্থায় তার প্রতিপালকের সবচেয়ে বেশী নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ ৮৭৫, নাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩)  সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পরঃ 

রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সালাম। বরং তোমরা বল-

"আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত তাইয়িবা-তু আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকুহু আসসালা-মু 'আলাইনা- ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন"

”সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।” তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘‘আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে দুআ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রুকু ও সিজদায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিসে বর্নিত যেকোনো দোয়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের দোয়া পাঠ করা যায়। চাই তা কুরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।

আযান ও ইক্বামতের মাঝের দোআ, আযান চলাকালীন ও আযানের পরে দোআ করলে তা ফেরত দেয়া হয় না

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আযান এবং ইক্বামতের মাঝের দোআ ফেরত দেওয়া হয় না’ (আহমাদ, হা/১৩৩৮১; আবুদাঊদ, হা/৫২১; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৬৭১)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবেদন করলো, হে আল্লাহর রসূল! আযানদাতাতো আমাদের চেয়ে মর্যাদায় বেড়ে যায়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা যেভাবে বলে তোমরাও তাদের সাথে সাথে সেভাবে বলে যাও। আর আযানের উত্তর শেষে যা খুশী তাই আল্লাহর কাছে চাও, তোমাদেরকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৬, আহমাদ ২/১৭২, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ ১/৪১০, নাসায়ী ‘আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ’  ৪, ইবনু হিব্বান ২৯৫, মুনযিরীর ‘আত তারগীব’ (১/১৮৭) )। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(বিঃদ্রঃ মুয়াজ্জিন আজানের যে বাক্যগুলো বলবে শ্রোতা তাই বলে জবাব দিবে । এরপর আজান শেষে প্রথমে দরুদ পাঠ করতে হবে, তারপর আজানের দোয়াটি পাঠ করার পর কালিমা শাহাদত পাঠ করতে হবে। এরপর উপরোক্ত যেকোনো দোয়া পাঠ করে (এসময় একাধিক দোয়া পাঠ করা যাবে) সর্বশেষ  আবার দরুদ পাঠ করতে হবে। এসময় দুই হাত তোলার কোনো বিধান নেই)।

জুম‘আর দিনে দোয়া কবুলের সময়

(ক) আবু লুবাবা ইবনু আব্দুল মুনযের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জুম‘আর দিন এমন একটি সময় আছে, যে সময়ে বান্দা কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন’।

হাদিসঃ

লুবাবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মুনযির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জুমু‘আর দিন’’ সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চেয়ে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এ দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্রের চেয়ে অধিক উত্তম। এ দিনটির পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আল্লাহ তা‘আলা এ দিনে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। (২) এ দিনে তিনি আদমকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। (৩) এ দিনেই আদম মৃত্যুবরণ করেছেন। (৪) এ দিনে এমন একটা ক্ষণ আছে সে ক্ষণে বান্দারা আল্লাহর কাছে হারাম জিনিস ছাড়া আর যা কিছু চায় তা তিনি তাদেরকে দান করেন। (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) হবে। আল্লাহর নিকটবর্তী মালাক (ফেরেশতা), আসমান, জমিন, বাতাস, পাহাড়, সাগর সবই এ জুমু‘আর দিনকে ভয় করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৮৪, আত্ তিরমিযী ১০৮৪, ইবনু শায়বাহ্ ৫৫১৬, সহীহ আল জামি ২২৭৯, আহমাদ ১৫১২০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর কিতাবে জুম‘আর দিনে এমন একটি সময় পাই, যে সময়ে বান্দা ছালাত আদায় করে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তার প্রার্থনা কবূল করেন।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহ্র কিতাবে জুমুআহর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন। আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেনঃ সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সালাতের সময় নয়? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। মুমিন বান্দা এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সালাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সালাতের মধ্যেই থাকে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১১৩৯, আহমাদ ২৩২৬৯, তালীকু রগীব ২৫১, মিশকাত ১৩৫৯০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত যে, দো‘আ কবুলের চূড়ান্ত সময় হচ্ছে ইমাম ছাহেবের মিম্বরে বসা হতে ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত।

হাদিসঃ

আবুত তহির, আলী ইবনু খশরাম, হারূন ইবনু সাঈদ আল আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ... আবূ মূসা আল আশ'আর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুমুআর দিনের বিশেষ মুহুর্তটি সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইমামের বসা থেকে সালাত শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে মুহুর্তটি নিহিত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৯, বুলূগুল মারাম ৪৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮৪৫, ইসলামীক সেন্টার ১৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় আছে, আছর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

হাদিসঃ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যদি কোন মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তা দান করেন। এ মুহুর্তটি তোমরা ‘আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৮, বুলূগুল মারাম ৪৬৬, নাসায়ী  ১৩৮৮, হাকিম ১/২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন সময়ে দোয়া বেশী কবুল হয়

আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন দো‘আ সর্বাধিক শোনা (কবূল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামাযসমূহের শেষাংশে।” (রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)  ১৫০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৯৯, তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৬), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১১৩/৭০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সুতরাং এই সময়ে যার যতো দোয়া মুখস্থ আছে তা অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে খাছ দিলে পাঠ করতে থাকবেন।

আল্লাহ আমাদেরকে উপরোক্ত নিয়মে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

আরো অধিক বিষয় জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) সকাল ও বিকেলে পঠিতব্য অধিকফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।

(খ) অভাব-অনটন ও দুঃখ কষ্ট থেকেপরিত্রাণ পাওয়ার দোয়া বা আমলসমূহ।

(গ) কুরআন ও সহিহ হাদিস হতেঅধিক ফজিলতপূর্ণ  যিকির ও দোয়াসমূহ।

আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।

(ক) “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।

(খ) “তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)।

 (গ) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবু হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬০, ইসলামিক সেন্টার ৬৬১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................................................................

এক সাথে সকল পর্ব দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

MSHRC

-----------------------------------------------------

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...