Search This Blog

Thursday, March 11, 2021

সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম-প্রথম খন্ড

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহিহ হাদিস ভিত্তিক

সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম

প্রথম খন্ড

সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহ


(প্রথম অংশ)

ছালাতের সংজ্ঞাঃ

“ছালাত”-এর আভিধানিক অর্থ দোআ, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। (আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, পৃঃ ১৬৮১)।

পারিভাষিক অর্থ: ‘শরীআত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে “ছালাত” বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩১২,৭৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাত আদায়ের সময় যেসব ক্রিয়া-পদ্ধতি পালন করতে হয় তা অন্য কারো দেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করা যাবে না। যিনি (রাসুল সা.) প্রথম ছালাত নিয়ে এসেছেন তাঁর দেখানো পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে।

মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সলাত আদায় করবে।

(সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১, ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হলাম। বিশদিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও, এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাযি) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামত করে। (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১,  ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

দুঃখের বিষয় রাসুল সাঃ যেভাবে সালাত আদায় করতেন আমাদের সমাজের প্রায় ৯৫% মুছল্লীদের সেভাবে সালাত আদায় করতে দেখা যায় না।

মূলত সকল ইবাদত বা আমলের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে সালাত। যার সালাত নেই তার অন্যান্য আমল মূল্যহীন। কাফির ও মুসলমানদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সালাত।

(ক) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত বর্জন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৭৮, মুসলিম ৮২, তিরমিযী ২৬১৮, ২৬২০; আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, আহমাদ ১৪৫৬১, ১৪৭৬২; দারিমী ১২৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) বুরাইদাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে অংগীকার রয়েছে তা হলো সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে কুফরী করলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৭৯, তিরমিযী ২৬২১, মিশকাত ৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুমিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০৮০, সহীহ তারগীব ৫৬৫, ১৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে নিজেকে বলবে মুসলমান তাকে সালাত আদায় করতেই হবে, যদিও সে রুগীঃ

(ক) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে; যদি তাও না পার তাহলে শুয়ে। (বুলুগুল মারাম ৩২৮, বুখারী ১১১৫, ১১১৬, ১১১৭, তিরমিযী ৩৭১, নাসায়ী ১৬৬০, আবূ দাউদ ৯৫১, ১৯৫২, ইবনু মাজাহ ১২৩১, আহমাদ ১৯৩৮৬, ১৯৩৯৮, ১৯৪৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক রোগীকে বালিশের উপর (সিজদা দিয়ে) সালাত আদায় করতে দেখে ওটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, যদি পার যমীনে বা সমতল স্থানে সালাত আদায় করবে। তা না হলে এমনভাবে ইশারা ইঙ্গিতে সালাত আদায় করবে যাতে তোমার সিজদার ইশারা রুকূ’র ইশারা অপেক্ষা নীচু হয়। (বুলুগুল মারাম ৩২৯, বাইহাকী আল-মারিফাহ ৪৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয় মুছল্লীবৃন্দঃ মসজিদে গেলে দেখা যায়, প্রায় মুছল্লীই তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায় করে থাকেন। তথা রুকু-সিজদা সংক্ষিপ্ত করে থাকেন, কাঠ ঠোকরা পাখির মতো করে সিজদা দেন। এভাবে সালাত আদায় করলে সে চোর বলে সাব্যস্ত হবেন।

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চোরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম চোর হল সেই ব্যক্তি, যে নামায চুরি করে। সকলে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সে নামায কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, সে তার নামাযের রুকূ-সিজদা পূর্ণরূপে করে না। অথবা তিনি বললেন, সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা করে না। (অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে চটপট রুকু-সিজদা করে)। (আহমাদ ২২৬৪২, ত্বাবারানী ৩২০৭, ইবনে খুযাইমা ৬৬৩, হাকেম ৮৩৫, সহীহ তারগীব ৫২৪,  হাদীস সম্ভার, হাদিস নং-৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

 আসলে সালাতের প্রতিটি রুকনে প্রায় সমান সময় নিয়ে সালাত আদায় করতে হবে। সালাতের এইসব স্থানে যেসব দোয়া রাসুল সাঃ পাঠ করতেন মূলত সেসব দোয়া না জানার কারনে মুছল্লীগণ সালাতকে সংক্ষিপ্ত করে থাকেন।

রুকু সিজদাহ পুরোপুরি আদায় না করলে, সে মুছল্লী রাসুল সাঃ এর তরীকার বাহিরেঃ

(ক) হুযাইফাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত শেষ করলো তখন তাকে হুযাইফাহ (রাযি.) বললেনঃ তোমার সালাত ঠিক হয়নি। রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি (হুযাইফাহ) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তরীকার বাইরে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ–৩৮৯, ৭৯১, ৮০৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবু আব্দুল্লাহ আশআরী (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার নামাযে পূর্ণভাবে রুকূ করছে না এবং ঠক্ঠক্ করে (তাড়াতাড়ি) সিজদা করছে। এ দেখে তিনি বললেন, এ ব্যক্তি যদি এই অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তার মরণ মুহাম্মাদী মিল্লতের উপর হবে না।

অতঃপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার রুকূ সম্পূর্ণরূপে করে না এবং ঠকাঠক্ (তাড়াহুড়া করে) সিজদা করে তার উদাহরণ সেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত যে, একটি অথবা দু’টি খেজুর তো খায়, অথচ তা তাকে মোটেই পরিতৃপ্ত করে না। (ত্বাবারানী ৩৭৪৮, আবূ য়্যা’লা ৭১৮৪, ইবনে খুযাইমা ৬৬৫, সহীহ তারগীব ৫২৮, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জাল-যঈফ হাদীছ মিশ্রিত প্রচলিত ছালাত উঠিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠা করা নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে নিম্নের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিলে ইনশাআল্লাহ মাযহাবী গোঁড়ামী ও প্রাচীন ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করা সহজ হবে।

(১) ছালাতের যাবতীয় আহকাম ছহীহ দলীল ভিত্তিক হতে হবেঃ

ছালাত ইবাদতে তাওক্বীফী যাতে দলীল বিহীন ও মনগড়া কোন কিছু করার সুযোগ নেই। প্রমাণহীন কোন বিষয় পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যাগ করতে হবে। কত বড় ইমাম, বিদ্বান, পন্ডিত, ফক্বীহ বলেছেন বা করেছেন তা দেখার প্রয়োজন নেই। কারণ প্রমাণহীন কথার কোন মূল্য নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তোমরা যদি না জান তবে স্পষ্ট দলীলসহ আহলে যিকিরদের জিজ্ঞেস কর’ (সূরা নাহল ৪৩-৪৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা দলীলের ভিত্তিতেই মানুষকে আহবান জানাতেন। (সূরা ইউসুফ ১০৮; নাজম ৩-৪; হা-ক্কাহ ৪৪-৪৬; ছহীহ বুখারী হা/৫৭৬৫, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৫৮, ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮; আহমাদ ইবনু শু‘আইব আবু আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা (বৈরুত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১১/১৯৯১), হা/১১১৭৪, ৬/৩৪৩ পৃঃ; আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দির রহমান আবু মুহাম্মাদ আদ-দারেমী, সুনানুদ দারেমী (বৈরুত : দারুল কিতাব আল-আরাবী, ১৪০৭ হিঃ), হা/২০২; সনদ হাসান, মিশকাত হা/১৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৯, ১/১২৩ পৃঃ; ছহীহ বুখারী হা/১৪৬৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯৮, ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৬; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১৬২)।

ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামও দলীলের ভিত্তিতে মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না আমরা উহা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি’। (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুআক্কেঈন আন রাবিবল আলামীন (বৈরুত : দারুল কুতুব আল ইলমিয়াহ, ১৯৯৯৩/১৪১৪), ২য় খন্ড, পৃঃ ৩০৯; ইবনু আবেদীন, হাশিয়া বাহরুর রায়েক্ব ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ২৯৩; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ) মিনাত তাকবীর ইলাত তাসলীম কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৯৯১/১৪১১), পৃঃ ৪৬)।

ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪হিঃ) বলেন, ‘যখন তুমি আমার কোন কথা হাদীছের বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর আমল করবে এবং আমার কথাকে দেওয়ালে ছুড়ে মারবে’। (আল-খুলাছা ফী আসবাবিল ইখতিলাফ, পৃঃ ১০৮; শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী, ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ (কায়রো : আল-মাতবাআতুস সালাফিয়াহ, ১৩৪৫হিঃ), পৃঃ ২৭)।

ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯হিঃ), ইমাম আহমাদ (১৬৪-২৪১হিঃ) সহ অন্যান্য ইমামও একই কথা বলেছেন। (শারহু মুখতাছার খলীল লিল কারখী ২১/২১৩ পৃঃ; ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ, পৃঃ ২৮)।

(২) জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সকল প্রকার আমল নিঃসঙ্কোচে ও নিঃশর্তভাবে বর্জন করতে হবেঃ

জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা কোন শারঈ বিধান প্রমাণিত হয় না। জাল হাদীছের উপর আমল করা পরিষ্কার হারাম। (সূরা আন‘আম ১৪৪; আ‘রাফ ৩৩; হুজুরাত ৬; ছহীহ বুখারী হা/৫১৪৩ ও ৬০৬৪, ২/৮৯৬ পৃঃ; ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, ছহীহ মুসলিম (দেওবন্দ : আছাহহুল মাতাবে‘ ১৯৮৬), হা/৬৫৩৬, ২/৩১৬; মিশকাত হা/৫০২৮, পৃঃ ৪২৭)।

সে কারণ ছাহাবায়ে কেরাম যঈফ ও জাল হাদীছের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। আস্থাহীন, ত্রুটিপূর্ণ, অভিযুক্ত, পাপাচারী, ফাসিক্ব শ্রেণীর লোকের বর্ণনা তারা গ্রহণ করতেন না। প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও এর বিরুদ্ধে ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর চূড়ান্ত মূলনীতি ছিল যঈফ হাদীছ ছেড়ে কেবল ছহীহ হাদীছকে আঁকড়ে ধরা। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যখন হাদীছ ছহীহ হবে সেটাই আমার মাযহাব’। (আব্দুল ওয়াহহাব শা‘রাণী, মীযানুল কুবরা (দিল্লী : ১২৮৬ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩০)।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে আলেম হাদীছের ছহীহ-যঈফ ও নাসিখণ্ডমানসূখ বুঝেন না তাকে আলেম বলা যাবে না’। ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাওয়াহাও একই কথা বলেছেন। (আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (রিয়ায: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ২০০০/১৪২১), ১/৩৯, ভূমিকা দ্রঃ; আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম, মা‘রেফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৬০)।

ইমাম মালেক, শাফেঈ (রহঃ)-এর বক্তব্যও অনুরূপ। (ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ দ্রঃ, ১/১২ পৃঃ, ‘যা শুনবে তাই প্রচার করা নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৩; প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আল-খত্বীব, আস-সুন্নাহ ক্বাবলাত তাদবীন (রৈরুত : দারুল ফিকর, ১৯৮০/১৪০০), পৃঃ ২৩৭)।

মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন, ‘হাদীছ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে শয়তানের খাদেম’। (মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত (বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫/১৪১৫), পৃঃ ৭; ড. ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ (দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৩)।

অতএব ইমাম হোন আর ফক্বীহ হোন বা অন্য যেই হোন শরী‘আত সম্পর্কে কোন বক্তব্য পেশ করলে তা অবশ্যই ছহীহ দলীলভিত্তিক হতে হবে। উল্লেখ্য যে, কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে মুহাদ্দিছ বলে ঘোষণা করছে এবং না জেনেই যেকোন হাদীছকে যখন তখন ছহীহ কিংবা যঈফ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এরা আলেম নামের কলঙ্ক। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

(৩) প্রচলিত কোন আমল শারঈ দৃষ্টিকোন থেকে ভুল প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তা বর্জন করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র গোঁড়ামী করা যাবে না। পূর্বপুরুষদের মাঝে চালু ছিল, বড় বড় আলেম করে গেছেন, এখনো অধিকাংশ আলেম করছেন, এখনো সমাজে চালু আছে, এ সমস্ত জাহেলী কথা বলা যাবে নাঃ

ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত। মানুষ মাত্রই ভুল করবে, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে ভুল করার পর যে সংশোধন করে নেয় সেই সর্বোত্তম। আর যে সংশোধন করে না সে শয়তানের বন্ধু। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর উত্তম ভুলকারী সে-ই যে তওবাকারী’। (ছহীহ তিরমিযী হা/২৪৯৯, ২/৭৬ পৃঃ,; মিশকাত হা/২৩৪১, পৃঃ ২০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২২৩২, ৫/১০৪ পৃঃ)।

যারা ভুল করার পর তওবা করে এবং সংশোধন করে নেয় আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং ইহকাল ও পরকালে চিন্তামুক্ত রাখবেন (আন‘আম ৪৮, ৫৪)। সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও ভুল করেছেন এবং সংশোধন করে নিয়েছেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/১২২৯, ১/১৬৪ পৃঃ এবং ১/৬৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১৫৭, ২/৩৪৬); মিশকাত হা/১০১৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৫১, ৩/২৫ পৃঃ)।

সাহো সিজদার বিধানও এখান থেকেই চালু হয়েছে। অনুরূপ চার খলীফাসহ অন্যান্য ছাহাবীদেরও ভুল হয়েছে।(ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুআক্কেঈন ২/২৭০-২৭২)।

বিশেষ করে ওমর (রাঃ) ছাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও অনেক বিষয় অজানা ও স্মরণ না থাকার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত পেশ করেছিলেন। কিন্তু সঠিক বিষয় জানার পর বিন্দুমাত্র দেরী না করে তার প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন। (বুখারী হা/৪৪৫৪, ২/৬৪০-৬৪১ পৃঃ, (ইফাব হা/৪১০২, ৭/২৪৪ পৃঃ), ‘মাগাযী’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৩; ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৫৩, ২/২১০ পৃঃ, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭)।

 তাই একথা অনুস্বীকার্য যে, আগের আলেমগণ অনেক কিছু জানতেন। তবে তারা সবকিছু জানতেন, তারা কোন ভুল করেননি এই দাবী সঠিক নয়। কারণ তিনি আদম সন্তান হলে ভুল করবেনই। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা যাকে নির্বাচন করে মুজাদ্দিদ হিসাবে পাঠান, তিনিও ভুল করতে পারেন বলে রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। (ছহীহ বুখারী হা/৭৩৫২, ২/১০৯২ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৮৫০, ১০/৫১৮ পৃঃ), ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২১; মিশকাত হা/৩৭৩২, পৃঃ ৩২৪)।

সুতরাং সাধারণ আলেমের ভুল হবে এটা অতি স্বাভাবিক। তাই যিদ না করে ভুল সংশোধন করে নেয়াই উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূল (ছাঃ) কোন বিধানকে রহিত করেছেন এবং তার স্থলে অন্যটি চালু করেছেন (বাক্বারাহ ১০৬)। 

তখন সেটাই সকল ছাহাবী গ্রহণ করেছেন। গোঁড়ামী করেননি, কোন প্রশ্ন করেননি। তাদের থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। কারণ ভুল সংশোধন না করে বাপ-দাদা বা বড় বড় আলেমদের দোহাই দেওয়া অমুসলিমদের স্বভাব (বাক্বারাহ ১৭০; লোকমান ২১)। 

তাছাড়া এটাও বিশ্বাস করতে হবে যে, অসংখ্য পথভ্রষ্ট আলেম থাকবে যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে। (বুখারী হা/৭০৮৪, ২/১০৪৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৬৬০৫, ১০/৩৮০ পৃঃ), ‘ফিতনা সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মুসলিম হা/৩৪৩৫; মিশকাত হা/৫৩৮২, পৃঃ ৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৪৯, ১০/৩ পৃঃ)।

ইসলামের নামে অসংখ্য ভ্রান্ত দল থাকবে। তারা নতুন নতুন শরী‘আত আবিষ্কার করবে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করবে। (আবুদাঊদ হা/৪৫৯৭, ২/৬৩১ পৃঃ, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৭২, পৃঃ ৩০, সনদ ছহীহ, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ)।

এগুলো রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী। সুতরাং উক্ত আলেম ও দলের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। তাদের দোহাই দেয়া যাবে না।

(৪) খুঁটিনাটি বলে কোন সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যাবে নাঃ

ইসলামের কোন বিধানই খুঁটিনাটি নয়। অনুরূপ কোন সুন্নাতই ছোট নয়। রাসূল (ছাঃ) তাঁর উম্মতের জন্য ছোট বড় যা কিছু বলেছেন সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। (আবুদাঊদ হা/১৪৫, পৃঃ ১৯; মিশকাত হা/৪০৮, পৃঃ ৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭৪, ২/৮৩ পৃঃ, ‘ওযূর সুন্নাত’ অনুচ্ছেদ)।

সুতরাং উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে বেরিয়ে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর যেকোন সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। কেননা সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা ও খুঁটিনাটি বলে তাচ্ছিল্য করা অমার্জনীয় অপরাধ। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ এই অবহেলাকে মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা বারা ইবনু আযেব (রাঃ)-কে ঘুমানোর দু‘আ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তার এক অংশে তিনি বলেন, ‘(হে আল্লাহ!) আপনার নবীর প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। আর বারা (রাঃ) বলেন, ‘এবং আপনার রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম, যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। উক্ত কথা শুনে রাসূল (ছাঃ) তার হাত দ্বারা বারার বুকে আঘাত করে বলেন, বরং ‘আপনার নবীর প্রতি ঈমান আনলাম যাকে আপনি প্রেরণ করেছেন’। (তিরমিযী হা/৩৩৯৪, ২/১৭৬-১৭৭, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘ঘুমানোর জন্য বিছানায় গিয়ে দু‘আ পড়া’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ বুখারী হা/৬৩১১, ২/৯৩৪ পৃঃ, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৮৩, অনুচ্ছেদ-৬; ছহীহ মুসলিম হা/৭০৫৭, ২/৩৪৮ পৃঃ, ‘দু‘আ ও যিকির’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭)।

এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘নবীর’ স্থানে ‘রাসূল’ শব্দটিকে বরদাশত করলেন না। জনৈক ছাহাবী ছালাতের মধ্যে সামান্য ত্রুটি করলে তিনি তাকে ডেকে বলেন, হে অমুক! তুমি কি আল্লাহকে ভয় কর না। তুমি কি দেখ না কিভাবে ছালাত আদায় করছ? (আহমাদ হা/৯৭৯০, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৮১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৫৫, ২/২৬২ পৃঃ)।

রাসূল (ছাঃ) একদিন ছালাতের জন্য তাকবীরে তাহরীমা বলতে শুরু করেছেন। এমতাবস্থায় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তির বুক কাতার থেকে সম্মুখে একটু বেড়ে গেছে তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দারা! হয় তোমরা কাতার সোজা করবে, না হয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা সমূহকে বিকৃতি করে দিবেন’। (হীহ মুসলিম হা/১০০৭, ১/৮২ পৃঃ, ‘ছালাতে কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১০৮৫, পৃঃ ৯৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০১৭)।

নবী (ছাঃ) একদা এক ব্যক্তিকে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে ছালাত আদায় করতে দেখে তিনি ডান হাতটাকে বাম হাতের উপর করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৫১৩১; ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৫৫, পৃঃ ১১০, সনদ হাসান)।

অতএব ছালাতের যেকোন আহকামকে খুঁটিনাটি বলে অবজ্ঞা করা যাবে না। বরং সেগুলো পালনে বাহ্যিকভাবে যেমন নানাবিধ উপকার রয়েছে, তেমনি অঢেল নেকীও রয়েছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্যের যুগ। সে সময় যে ব্যক্তি সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে সে তোমাদের সময়ের ৫০ জন শহীদের নেকী পাবে’। (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/১০২৪০; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ-ছহীহাহ ওয়া শাইয়ুন মিন ফিক্বহিহা ওয়া ফাওয়াইদিহা (বৈরুত : আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), হা/৪৯৪; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/২২৩৪)।

বর্তমান যুগের প্রত্যেক সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তির জন্যই এই সুসংবাদ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (কাতারের মধ্যে দু’জনের) ফাঁক বন্ধ করবে, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন’। (ত্বাবারাণী, আওসাত্ব হা/৫৭৯৭; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২)।

যে ব্যক্তি ছালাতে স্বশব্দে আমীন বলবে এবং তা ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের পাপ সমূহ ক্ষমা করা হবে। (খারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬)।

উক্ত সুন্নাতগুলো সাধারণ কিন্তু নেকীর ক্ষেত্রে কত অসাধারণ তা কি আমরা লক্ষ্য করি?

সবচেযে বড় বিষয় হল, এই সুন্নাতগুলো সমাজে চালু করতে শত শত হক্বপন্থী আলেমের রক্ত প্রবাহিত হয়েছে। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছে, অন্ধ কারাগারে জীবন দিতে হয়েছে, দীপান্তরে কালাপানির ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। যেমন বুকের উপর হাত বাঁধা, জোরে আমীন বলা, রাফঊল ইয়াদায়েন করা ইত্যাদি। আর সেই সুন্নাত সমূহকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কত বড় অন্যায় হতে পারে?

(৫) সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করতে গিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই যে, কতজন লোক তা করছে, কোন্ মাযহাবে চালু আছে, কোন্ ইমাম কী বলেছেন বা আমল করেছেন কিংবা কোন্ দেশের লোক করছে আর কোন্ দেশের লোক করছে নাঃ

আল্লাহ প্রেরিত সংবিধান চিরন্তন, যা নিজস্ব গতিতে চলমান। এই মহা সত্যকেই সর্বদা অাঁকড়ে ধরে থাকতে হবে একাকী হলেও। ইবরাহীম (আঃ) নানা যুলুম-অত্যাচার সহ্য করে একাই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাই তিনি বিশ্ব ইতিহাসে মহা সম্মানিত হয়েছেন (নাহল ১২০; বাক্বারাহ ১২৪)। 

সমগ্র জগতের বিদ্রোহী মানুষরা তার সম্মান ছিনিয়ে নিতে পারেনি। সংখ্যা কোন কাজে আসেনি। মূলকথা হল- অহীর বিধান সংখ্যা, দেশ, অঞ্চল, বয়স, সময়, মেধা কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করে না। অনেকে বলতে চায়, চার ইমামের পরে মুহাদ্দিছগণের জন্ম। সুতরাং ইমামদের কথাই গ্রহণযোগ্য। অথচ ছাহাবীরা সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দিতে বয়স্ক ব্যক্তি উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৬/৭ বছরের বাচ্চাকে দিয়ে ছালাত পড়িয়ে নিয়েছেন। (ছহীহ বুখারী হা/৪৩০২, ২/৬১৫-৬১৬ পৃঃ, ‘মাগাযী’ অধ্যায়-৬৭, অনুচ্ছেদ-৫০; মিশকাত হা/১১২৬, পৃঃ ১০০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৫৮, ৩/৭১ পৃঃ)।

ওমর (রাঃ) কনিষ্ঠ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরীর নিকট থেকে কারো বাড়ীতে গিয়ে তিনবার সালাম দেওয়া সংক্রান্ত হাদীছের পক্ষে সাক্ষী গ্রহণ করেন। কারণ তিনি এই হাদীছ জানতেন না। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৬২৬, ২/২১০ পৃঃ, ‘আদব’ অধ্যায়, ‘অনুমতি’ অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৪৬৬৭, পৃঃ ৪০০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৪৬২ ৯/১৯ পৃঃ)।

অতএব মহা সত্যের উপর কোন কিছুর প্রাধান্য নেই। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘হক্ব-এর অনুসারী দলই হল জামা‘আত যদিও তুমি একাকী হও’। (ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাষ্ক ১৩/৩২২ পৃঃ; সনদ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/১৭৩-এর টীকা দ্রঃ, ১/৬১ পৃঃ; ইমাম লালকাঈ, শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ ১/১০৮ পৃঃ)।

অতএব হক্বপন্থী ব্যক্তি একাকী হলেও সেটাই জান্নাতী দল।

(৬) কোন দলীয় বা মাযহাবী স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য কৌশল করে কিংবা অপব্যাখ্যা করে শরী‘আতকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে নাঃ

উক্ত জঘন্য নীতির জয়জয়কার চলছে সহস্র বছর ধরে। একশ্রেণীর মানুষ অতি সামান্য জ্ঞান নিয়ে আল্লাহর জ্ঞানের উপর প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করছে। এই অপকৌশলের যে কী শাস্তি তা তারা ভুলে গেছে। মূল শরী‘আতকে উপেক্ষা করে দলীয় সিদ্ধান্ত ও মাযহাবী নীতি প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য থাকলে বানী ইসরাঈলের মত তাদের উপর আল্লাহর গযব নেমে আসা অস্বাভাবিক নয়। দাঊদ (আঃ)-এর সময় তারা মহা সত্যকে না মেনে মিথ্যা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। ফলে তারা বানর ও শূকরে পরিণত হয়েছিল এবং একই দিনে সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল (বাক্বারাহ ৬৫; মায়েদা ৬০)। 

পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে যারা বিভ্রান্ত করবে তাদের পরিণাম এমনই হওয়া উচিৎ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কুরআন তোমার পক্ষে দলীল হতে পারে, আবার বিপক্ষেও দলীল হতে পারে’।

(ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪২৫), ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/২৮১, পৃঃ ৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৮ পৃঃ)।

সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জানা উচিৎ যে, শারঈ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমি যাই করি এবং যে উদ্দেশ্যেই করি অন্তরের খবর আল্লাহ সবই জানেন। (মুলক ১৩; আলে ইমরান ১১৯)।

উক্ত মিথ্যা কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে অসংখ্য হাদীছ জাল করা হয়েছে, হাদীছের শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে, বিভিন্ন অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া হয়েছে, অনুবাদে কারচুপি করা হয়েছে, ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাদীছের উপর ছুরি চালানো হয়েছে। 

প্রচলিত ফেক্বহী গ্রন্থ ও বাজারের নামায শিক্ষা বই সম্পর্কে হুঁশিয়ারীঃ

রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সমাজ থেকে উঠে যাওয়ার কারণ হল, বিভিন্ন মাযহাব ও তরীক্বার নামে প্রণীত ফেক্বহী গ্রন্থ ও বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ বই। এগুলোই বিদ‘আতী ছালাতের ভিত্তি। লেখকগণ জাল ও যঈফ হাদীছ এবং মিথ্যা কাহিনীর মর্মান্তিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেননি। নিজেদের মাযহাবের কর্মকান্ডকে প্রমাণ করার জন্য জাল ও যঈফ হাদীছের আশ্রয় নিয়েছেন এবং নিজ নিজ মাযহাবের জন্য পৃথক পৃথক ফিক্বহী গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনুরূপভাবে অন্য মাযহাবের দলীল খন্ডন করার জন্য রচনা করেছেন পৃথক পৃথক ফিক্বহী উছূল। ফক্বীহগণের এই করুণ বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে আল্লামা মারজানী হানাফী বলেন,

‘ফক্বীহদের বক্তব্যে ভুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, সেগুলো সনদ বিহীন। .. নিঃসন্দেহে তা জাল হওয়ারই প্রমাণ বহন করে, যা অন্যের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে’। (নাযেরাতুল হক্ব-এর বরাতে আল-ইরশাদ, পৃঃ ১৪৬; হাক্বীক্বাতুল ফিক্বহ, পৃঃ ১৪৬)।

সুধী পাঠক! আমাদের আলোচনা পড়লেই উক্ত মন্তব্যগুলোর বাস্তবতা প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ। উক্ত ফেক্বহী গ্রন্থ ছাড়াও অনেক বড় বড় বিদ্বান ছালাত সম্পর্কে বই লিখেছেন কিন্তু সেগুলোও জাল, যঈফ ও বানোয়াট কথাবার্তায় পরিপূর্ণ। বিভিন্ন ত্বরীকা ও যিকিরপন্থীদের বইগুলো তো মিথ্যা কাহিনীর ‘উপন্যাস সিরিজ’। বর্তমানে মুখরোচক শিরোনামে কিছু বই বাজারে ছাড়া হচ্ছে, যেগুলো প্রতারণা ও শঠতায় ভরপুর। তাই মুছল্লী হিসাবে ছালাত সংক্রান্ত মাসআলাগুলো যাচাই করা আবশ্যক।

সালাত এক প্রকার দোয়া বা মুনাজাতঃ

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই নামাযী তার প্রতিপালকের সাথে নিরালায় আলাপ করে। সুতরাং কি নিয়ে আলাপ করছে, তা যেন সে লক্ষ্য করে। আর তোমাদের কেউ যেন অপরের পাশে কুরআন সশব্দে না পড়ে। (আহমাদ ৫৩৪৯, ত্বাবারানী ১৩৩৯৬, সহীহুল জামে’ ১৯৫১ম হাদিস সম্ভার, হাঃ ৮৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুআ দুই প্রকারঃ

(এক) দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক দু'আ। সকল প্রকার ইবাদতকে এ অর্থে দু'আ বলা হয়।

(দুই) দুআউল মাছআলা অর্থাৎ প্রার্থনাকারী নিজের জন্য যা কল্যাণকর তা চাবে এবং যা ক্ষতিকর তা থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে। (বাদায়ে আল-ফাওয়ায়েদ : ইবনুল কায়্যিম)

যেমন কেউ সালাত আদায় করল। এ সালাতের মধ্যে অনেক প্রার্থনামূলক বাক্য ছিল। এগুলোই দুআউল ইবাদাহ বা উপাসণামূলক প্রার্থনা। আবার সে পরীক্ষা দেবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল হে আল্লাহ! তুমি আমার পরীক্ষা সহজ করে দাও এবং কৃতকার্য করে দাও! এটা হল দুআ আল-মাছআলা বা চাওয়া।

আল্লাহর নিকট চাওয়ার মাধ্যম দুইটি। যথাঃ

(১) ছালাতের মাধ্যমে চাওয়া।

(২) ছালাত শেষে বা যেকোনো সময় একাকী দুই হাত তুলে চাওয়া।

ছালাতের মাধ্যমে চাওয়াঃ

 (ক) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (আল-মুমিন: ৬০)।

(খ) আল্লাহ আরো বলেন,

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়াটা ও সবকিছু তাঁর থেকে প্রত্যাশা করাটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে চায় না তিনি তার ওপর রাগ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। (সূরা গাফির: ৬০)।

(গ) নুমান ইবনু বাশীর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'আই হল ইবাদাত। (সুনানে তিরমিযি ৩৩৭২, সুনানে আবু দাউদ ১৪৭৯, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮২৮, আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ ২৫৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা'আলা তার উপর নাখোশ হন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত),৩৩৭৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দুনিয়ার কল্যাণলাভ ও আখিরাতের মুক্তির জন্যে বা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার পাওয়ার কিংবা মনের আশা পূরণমূলক কুরআন ও হাদিস হতে অনেক দোয়া আছে যেগুলো আমরা ছালাতের বিভিন্ন স্থানে পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাইতে পারি।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিপূর্ণ বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন (যে দু‘আয় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কথা থাকে), এছাড়া অন্যান্য দু‘আ ত্যাগ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৪৮২, আহমাদ ১৪৮, মিশকাত ৬৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাত শেষে বা যেকোনো সময় একাকী দুই হাত তুলে চাওয়াঃ

ফাযালাহ্ ইবনু উবাইদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় জনৈক লোক মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে নামায়ী! তুমি তো তড়িঘড়ি করলে। যখন তুমি নামায শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ তা'আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ তা'আলার নিকটে দু'আ করবে।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর অপর লোক এসে নামায আদায় করে প্রথমে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করল, তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হে নামাযী! এবার দুআ কর কবুল করা হবে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪৭৬, ৩৪৭৭, সহীহ আবূ দাউদ ১৩৩১, সহিহুত তিরমিযি ২৭৬৫, ২৭৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই হাত তুলে আল্লাহর নিকট চাওয়াঃ

(ক) সালমান ফারসী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রবব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জবোধ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৪৮৮, ১৩২০, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু করে দু‘আ করবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং দু‘আতে কাকুতি মিনতির সময় দু’ হাত প্রসারিত করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৪৮৯, ১৪৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা‘বাদ ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) হতে এ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কাকুতি মিনতির প্রার্থনা এরূপঃ দু’ হাতের পৃষ্ঠকে চেহারার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৪৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাত তোলার সময় হাতের তালু থাকবে আকাশের দিকেঃ

মালিক ইবনু ইয়াসার আস-সাকূনী আল-‘আওফী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট দু‘আর সময় হাতের তালুকে সম্মুখে রেখে দু‘আ করবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়।

ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুলায়মান ইবনু ‘আবদুল হামীদ (রহঃ) বলেন, আমাদের মতে মালিক ইবনু ইয়াসার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য পেয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৪৮৬,  বাগাভী, ইবনু আবূ ‘আসিম, ইবনুস সাকান, ইবনুস সুন্নী ‘আল-ইয়াওমু ওয়াল লায়লাহ, ইবনু ‘আসাকির (১২/২৩০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি; না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।

দুআ কখনো বৃথা যায় নাঃ

(ক) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি (আল্লাহ তা'আলার কাছে) কোন কিছু দুআ করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার পরিপ্রেক্ষিতে তার হতে কোন অকল্যাণ প্রতিহত করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য প্রার্থনা না করে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৩৮১, মিশকাত ২২৩৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ লাভ করতে চায় সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় বেশি পরিমাণে দুআ করে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৩৮২, সহীহাহ ৫৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এ হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুআ কখনো বৃথা যায় না।

যেসব কাজ করলে বড় শির্ক হয় এর কিছু দৃষ্টান্ত নিচে দেওয়া হলোঃ

কবরে মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া, কোন পীর মুর্শিদ বা কবরস্থ ব্যক্তির কাছে বিপদ। মুক্তি কামনা বা সন্তান চাওয়া, মাজারে বা কোন মানুষকে সিজদা করা, আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে মানুষের নির্দেশ মান্য করা, পীরের উপর ভরসা করা, গণকের কথায় বিশ্বাস করা, আলিমুল গায়েব হলেন একমাত্র আল্লাহ অথচ কোন পীরকে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা, জাদু করা, তাবিজ ব্যবহার করা ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া আরো অনেক বড় শির্ক আছে । আর ছোট শির্ক তো আছেই। এগুলো সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে । আগে কোন শির্ক করে থাকলে তাওবাহ করে পাকসাফ হতে হবে । উপরে বর্ণিত ৪টি শর্তের একটি শর্তও যদি বাদ পড়ে যায় তাহলে বান্দার ইবাদাত বাতিল হয়ে যাবে। কোন ইবাদতই কবুল হবে না, কোন ভালো কাজেরই সাওয়াব পাওয়া যাবে না। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানিয়ে দেয়া, মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।

আল্লাহ ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে সিজদা করা নিষেধঃ

কাইস ইবনু সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন (পারস্যের) হীরা নামক শহরে গমণ করলাম, সেখানে দেখলাম, তারা তাদের নেতা/রাজাকে সিজদা করছে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনাকে সাজদা করবো না?তিনি বললেন: “আমি যদি কোনো ব্যক্তিকে (অন্য কারো উদ্দেশ্যে) সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে অবশ্যই আমি নারীদেরকে তাদের স্বামীদের উদ্দেশ্যে সাজদা করার নির্দেশ দিতাম। কারণ, আল্লাহ তাদের (স্ত্রীলোকদের) উপর তাদের (স্বামীদের) (অনেক বেশি) হাক্ব (অধিকার) নির্ধারণ করেছেন। (আবু দাউদ (নিকাহ) ২১৪০, হাকিম ১/১৮৭, কসম ও নুশুয ৭/২৯১,  সুনান আদ-দারেমী, ১৫০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪১৭১, ৪১৬২, মাওয়ারিদুয যামআন ১২৯০, মাওয়ারিদুয যামআন ১২৯১, কাশফুল আসতার ২১১৪, ২১১৫। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

  সম্মানিত মুছল্লী!

বর্তমান সমাজে যে ছালাত প্রচলিত আছে, তা জাল ও যঈফ হাদীছ ভিত্তিক  ছালাত। রাসূল (ছাঃ) যে পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করতেন, সেই পদ্ধতি মসজিদগুলোতে চালু নেই বললেই চলে। ২৪১ হিজরীর পূর্বে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলে গেছেন, ‘তুমি যদি এই যুগের একশ’ মসজিদেও ছালাত আদায় করো, তবুও তুমি কোন একটি মসজিদেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) ছালাত দেখতে পাবে না। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের নিজেদের ছালাত এবং তোমাদের সাথে যারা ছালাত আদায় করে, তাদের ছালাতের প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখ’।(আবুল হুসাইন ইবনে আবী ইয়ালা, ত্বাবাক্বাতুল হানাবিলাহ ১/৩৫০ পৃঃ)।

বারোশ’ বছর পর আমরা যদি আজ তাঁর কথাটি বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমরা আমাদের ছালাতের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাব।

তাই ভেজালমুক্ত ছালাত মুছল্লীর সামনে তুলে ধরার জন্যই “সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম” (চার খন্ড)  শীর্ষক এই লেখনী।

রাসুল সাঃ ও সাহাবীগণ যেভাবে সালাত আদায় করতেন ঠিক সেভাবেই সহিহ হাদিস ভিত্তিক বইটি লেখা হয়েছে।

এছাড়া প্রথম খন্ডে রাসুল সাঃ সালাতের শুরুতে, রুকুতে, রুকু হতে দাঁড়ানোর সময়, রুকু হতে দাঁড়িয়ে, সিজদায় এবং তাশাহুদ বৈঠকে অতিরিক্তি যেসব দোয়া পাঠ করতেন সেসব সহিহ হাদিস হতে আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে মোট চারটি খন্ড আছে। প্রথম খন্ডে “সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও অতিরিক্ত দোয়াসমূহ” দ্বিতীয় খন্ডে “সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি”  তৃতীয় খন্ডে  () জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত সহিহ নিয়মাবলী, () ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী, () কাযা, উমরি কাযা কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান, (ঘ) জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল, চতুর্থ খন্ডেমসজিদ ও জুমার সালাত শীর্ষক আলোচনা করা হয়েছে। তাই সালাত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে হলে চারটি খন্ডই অধ্যয়ন করা বিশেষ প্রয়োজন। তবেই রাসুল সাঃ এর সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি জানা যাবে।

ছালাতকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক মুছল্লীর কাছে এই বইটি থাকা অপরিহার্য বলে মনে করি। সেই সাথে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিৎ অন্য মুছল্লীর নিকট বইটি পৌঁছে দিয়ে সহযোগিতা করা। ফলে ঐ মুছল্লী বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায় করে যত ছওয়াব পাবেন, তার সমপরিমাণ ছওয়াব ঐ ব্যক্তিও পাবেন, যিনি সহযোগিতা করলেন। (সহিহ মুসলিম, ১৮৯৩, মিশকাত, ২০৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যারা নও-মুসলিম তাদেরকে শুরুতেই সালাত শিক্ষার জন্যে এই বইটি অধ্যয়ণ করা অপরিহার্য। দেখা যায়, কোনো অমুসলিম যার নিকট মুসলমান হয় সাধারণত সেই নও-মুসলিম তার আকিদাহপন্থী হয়। কোনো অমুসলিম মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে তার অতীতের সব গুণাহ আল্লাহ মাফ করে দেন কিন্তু ভেজাল আকিদাহপন্থীর কারণে আবার তার আমলনামায় পাপ লেখা শুরু হয়।

হাদিসগুলো দেখুনঃ

(ক) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন ইসলাম কবূল করে, তার ইসলাম খাঁটি হয়। (ইসলাম গ্রহণের কারণে) তার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেন। অতঃপর তার এক একটি নেক কাজের তার দশ গুণ হতে সাতশ গুণ, বরং অনেক গুণ পর্যন্ত লেখা হয়। আর পাপ কাজের জন্য একগুণ মাত্র। তবে আল্লাহ যাকে (ইচ্ছা) এ পাপ কাজকে ছেড়ে যান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৩৭৩, সহীহ বুখারী ৪১, সহীহ আল জামি ৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোনো ব্যক্তি জাহিলী যুগে যে সকল (মন্দ) আমল করেছে, (ইসলাম গ্রহণের পর) তাকে কি সেসব আমলের জন্য পাকড়াও (জবাবদিহিতার মুখোমুখি) করা হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘যে ব্যক্তি ইসলামে থাকা অবস্থায় (অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণের পর) উত্তম আমল করবে, তাকে তার জাহিলী যুগে কৃত (মন্দ) আমলসমূহের জন্য পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও মন্দ কাজ করবে, তাকে জাহিলী ও ইসলাম- উভয় যুগে কৃত আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে।” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৯২১, সুনান আদ-দারেমী, ১, মুসলিম (১২০, ১৯০); আহমাদ (১/৩৭৯-৩৮০, ৪০৯, ৪২৯ ও ৪৩১, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই কোনো অমুসলিম যেখানেই তিনি কালিমা পড়ে মুসলমান হোন না কেনো তাকে সহিহ আকিদাহপন্থী হয়ে সহিহ আমল করতে হবে। সেই সহিহ আকিদাহপন্থী বানাতে এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া আপনি এই বইটি পড়ে যেমন সহিহ সালাত শিখবেন তেমনি আপনার পরিবারকেও এই বইটি অধ্যয়ণ করতে উৎসাহিত করবেন। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে অশেষ সওয়াব হাসিল করুন।

সন্তানের বয়স ৭ বছর  হলেই অভিভাবক সন্তানকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়ার হুকুমঃ

আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে সালাতের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশ বছর হয়ে যাবে তখন (সালাত আদায় না করলে) এজন্য তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯৫,৪৯৪, আহমাদ (২/১৮০, হাঃ ৬৬৮৯ এবং ২/১৮৭), হাঃ ৬৭৫৬), হাকিম (১/১৯৭) বায়হাক্বী (৩/৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কবর স্থান, গোসলখানা  ও উটের আস্তাবল ব্যতীত পৃথিবীর সমগ্র জমিনই মসজিদঃ

(ক) আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র গোসলখানা ও কবরস্থান ছাড়া সমগ্র জমিনই মাসজিদ (তথা সালাতের স্থান হিসেবে গণ্য)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯২, তিরমিযী ৩১৭, ইবনু মাজাহ ৭৪৫, দারিমী ১৩৯৯, আহমাদ (৩/৮৩, ৯৬), ইবনু খুযাইমাহ ৭৯১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করবে না। কারণ তা শয়তানের আড্ডাখানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সেখানে সালাত আদায় করতে পার। কারণ তা বরকতময় প্রাণী (বা স্থান)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহর গযবে বিধ্বস্ত ও আযাবের স্থান এবং গীর্জায় (যদি মূর্তি থাকে) সালাত আদায় করা নিষেধ।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৪৩৩, ৪৩৪, ৪২৭, ৩৩৮০, ৩৩৮১, ৪৪১৯, ৪৪২০, ৪৭০২; মুসলিম ৫৩/১ হাঃ ২৯৮, আহমাদ ৫২৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপিষ্ঠ মুসলমান অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে সালাত আদায় করলে তার পূর্বের গুণাহ মাফ হয়ে যায়ঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জনৈক মহিলাকে চুম্বন করে বসে। পরে সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁর গোচরীভূত করে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেনঃ ‘‘দিনের দু’প্রান্তে-সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম অংশে সালাত কায়েম কর। নিশ্চয়ই ভালো কাজ পাপাচারকে মিটিয়ে দেয়’’- (হূদ ১১/১১৪)। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এ কি শুধু আমার বেলায়? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সকল উম্মাতের জন্যই। (আল-লুলু ওয়াল মারজান, ১৭৫৮, ১৭৫৯, সহীহুল বুখারী, পর্ব ৯: সালাতের সময়সমূহ, অধ্যায় ৪, হাঃ ৫২৬; মুসলিম, পর্ব ৪৯: তাওবাহ, অধ্যায় ৬, হাঃ ২৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব যারা বিভিন্ন পাপ কাজ যেমন, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মদ, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, যিনা/ব্যভিচার, কবর পূজা, মূর্তি পূজা, পির পূজা, বেপর্দা, পরকিয়া প্রেম বা অবৈধ সম্পর্ক এবং সালাত ও সাওম পালন না করাসহ বিভিন্ন অশ্লীলতার সাথে জড়িত আছেন তারা আজকেই নিম্নোক্ত “সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি” মোতাবেক সালাত আদায় শুরু করে দিন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি (সহিহ হাদিস ভিত্তিক)

সালাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে তা আদায় করেও অনেকে পাপের ভাগী হবে। আর তা হবে ভয়াবহ জাহান্নাম। তাহলে কীভাবে সে সালাত আদায় করলে আল্লাহর পুরস্কার পাওয়া যাবে, কীভাবে আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) তা আদায় করতেন, একমাত্র সেটাই আমাদের অনুকরণ করতে হবে। তিনি আমাদের নির্দেশ করে বলেছেন, “তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ।” (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, হা/৬৩১,  ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

তাহলে তার সালাত আদায় কেমন ছিল এ নিয়েই আমাদের এ ধারাবাহিক বিস্তারিত আলোচনা।

তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনঃ

সালাত আদায়ের জন্যে পবিত্র তিনভাবে হতে হয়। যথাঃ

(ক)  ফরজ গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন।

(খ) ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন।

(গ) তায়াম্মুম এর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন।

ফরজ গোসলঃ

(সহিহ হাদিস ভিত্তিক সহিহ পদ্ধতি)

সংজ্ঞাঃ ‘গোসল’ অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযূ করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা।

গোসলের নিয়তঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত গোসলের নিয়ত, “নাওয়াইতুয়ান গোসলা লিরাফইল জানাবাতি” কোনো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। গোসলের নিয়তের এই বাক্যটি শুধুই জনশ্রুতি। তাই মুখে উচ্চারণ করে এই নিয়ত করা যাবে না। আপনি পবিত্র হওয়ার জন্যে গোসল করছেন তা মনে মনে থাকলেই হবে। এখানে ওযুর নিয়মে গোসল করার কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই পবিত্রতা অর্জন হবে। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করতে হবে না।

রাসুল সাঃ এরুপ করেননি তাই আমরাও করবো না।

প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময় নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত।

গোসলের নিয়ত যেমন মুখে উচ্চারণ করে বলার কোনো হাদিস নেই তেমনি গোসলের পূর্বে “বিছমিল্লাহ” বলারও কোনো হাদিস নেই। তবে গোসলের বিষয়টি যেহেতু ওযুর সাথে সম্পৃক্ত আর ওযুর পূর্বে “বিছমিল্লাহ” না বললে যেহেতু ওযু হয় না তাই গোসলের শুরুতে “বিছমিল্লাহ” বলতে হবে।

অনেকে শুরুতেই “বিছমিল্লাহ” পাঠ করেন আবার অনেকে দুই হাতের কবজি ধৌত করার পর বাম হাত দিয়ে নাপাকি দূর করে বাম হাত ধুইয়ে “বিছমিল্লাহ” বলে সালাতের ওযুর মতো ওযু শুরু করেন।

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি উযূর সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করেনি তার উযূ (ওজু/অজু/অযু) হয়নি।

(সুনানে ইবনে মাজাহ. ৩৯৭, ৩৯৮, ৩৯৯ দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, মিশকাত ৪০৪, সহীহ আবূ দাউদ ৯০, ১০১, তিরমিযী ২৫ । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

গোসল দু’প্রকার : ফরয ও মুস্তাহাব।

(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)।

(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১)।

ফরজ  গোসলের সহিহ পদ্ধতিঃ

(ক)  প্রথমে ৩ বার দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুতে হবে।

(খ) অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দিয়ে দেহের যেসব স্থানে নাপাকী লেগেছে সেইসব স্থান ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

(গ) তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নিতে হবে।

(ঘ) এরপর সালাতের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করতে হবে।

অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে ওযু করার সময় দুই পা না ধুয়ে গোসল শেষে সেই স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধুয়ে নিতে হবে।

(ঙ) ওযুর পর প্রথমে ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধুয়ে নিতে হবে, যাতে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে ধুতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতার জন্য ফরয গোসল করার সময় প্রথমে (কব্জি পর্যন্ত) দুই হাত ধুতেন। এরপর সালাতের উযূর মতো উযূ করতেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে তা দিয়ে মাথার চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর মাথার উপর তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন, তারপর শরীরের সর্বাঙ্গ পানি দিয়ে ভিজাতেন।

কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাত্রে হাত ডুবিয়ে দেয়ার আগে কব্জি পর্যন্ত হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের তালুতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন, অতঃপর উযূ করতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৫-৪৩৬, সহীহ বুখারী ২৪৮, মুসলিম ৩১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে সুস্পষ্ট করে মনে রাখতে হবে যে, উল্লেখিত পদ্ধতি মোতাবেক যারা ফরজ গোসল করেন না তারা ২৪ ঘন্টাই নাপাক অবস্থায় থাকেন। এমতাবস্থায় তারা সর্বত্র বিচরন করেন, এমনকি এই নাপাক দেহ নিয়ে মসজিদে বা একাকী সালাতসহ অন্যান্য ইবাদতগুলো পালন করেন। অথচ তিনি জানেনই না যে, তার ফরজ গোসল হয়নি।

মনে রাখবেন, গোসল শুদ্ধ না হলে দেহ পবিত্র হবে না, দেহ পবিত্র  না হলে সালাত আদায় হবে না।

গোসল সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

(১) মহিলাদের গোসলও পুরুষদের অনুরুপ। অবশ্য মহিলার মাথার চুলে বেণী বাঁধা (চুটি গাঁথা) থাকলে তা খোলা জরুরী নয়। তবে ৩ বার পানি নিয়ে চুলের গোড়া অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, মিশকাত ৪৩৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি আমার চুলের খোপা খুব শক্ত করে বেঁধে থাকি। আমি নাপাকির গোসল করতে কি তা খুলে নিব? তিনি বলেনঃ তোমার হাতে করে তিনবার মাথায় পানি ঢাললেই তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। অতঃপর তুমি তোমার সমস্ত দেহে পানি ঢেলে দিবে এবং তাতেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে অথবা তিনি বলেছেনঃ এরূপ করলেই তুমি পবিত্র হয়ে গেলে।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৭৬, ৬০৩, ৬০৪, তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ১৩৬, সহীহ আবূ দাউদ ২৪৫, সহীহহাহ ১৮৯, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ২৫০, ২৬১, ২৬৩, ২৭৩, ৩০১; মুসলিম ৩৩০, ৩২১-৫, ৩৩১; তিরমিযী ১০৫,  ১৭৫৫, নাসায়ী ২২৮, ২৩১-২৩৫, ৪১০-৪১৪, ৪১৬, ২৪১ আবূ দাঊদ ৭৭, ২৩৮, ২৫১, আহমাদ ২৩৪৯৪, ২৩৫৬৯, ২৩৬৪০, ২৩৮২৮, ২৪০৭৮, ২৪১৯৮, ২৪৩৪৫, ২৪৩৯৪, ২৪৪৩২, ২৪৪৫৭, ২৪৪৭০, ২৪৭০৭, ২৪৭৪৯, ২৪৮২৫, ২৪৮৪১, ২৪৮৫২, ২৪৮৬১, ২৪৮৭৭, ২৫০৩৫, ২৫০৫৫, ২৫০৮০, ২৫১০৬, ২৫২৩৬, ২৫৩৯৪, ২৫৪১০, ২৫৪৪৯, ২৫৬৪৫, ২৫৭৫৬, ২৭৬৫৯, ২৫৯৩৭, ২৬১৩৭, দারিমী ৭৪৯-৫০, ১১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) নখে নখপালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট্‌ থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় গোসল হয়ে যাবে। কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ গোসল হবে না।

(৩) বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও মাসিকের গোসল, অথবা মাসিক ও ঈদ, অথবা বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও জুমআ বা ঈদের গোসল নিয়ত হলে একবারই যথেষ্ট। পৃথক পৃথক গোসলের দরকার নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ৬০ পৃ: দ্র:)।

(৪) গোসলের পর সালাতের জন্য আর পৃথক ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের পর ওযু ভাঙ্গার কোন কাজ না করলে গোসলের ওযুতেই সালাত হয়ে যাবে। (মিশকাত ৪৪৫,আবূ দাঊদ ২৫০, তিরমিযী ১০৭, নাসায়ী ২৫২, ইবনু মাজাহ্ ৫৭৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) রোগ-জনিত কারণে যদি কারো লাগাতার বীর্য, মযী, স্রাব বা ইস্তিহাযার খুন ঝরে তবে তার জন্য গোসল ফরয নয়; প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযুই যথেষ্ট। এই সকল অবস্থায় সালাত মাফ নয়। (মিশকাত ৫৬০-৫৬১, আবূ দাঊদ ২৯৭, তিরমিযী ১২৬, সহীহুল জামি‘ ৬৬৯৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। আবূ দাঊদ ২৮৭, তিরমিযী ১২৮, ইরওয়া ২০৫, আহমাদ ২৭৪৭৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬) সতর্কতার বিষয় যে, নাপাকী দূর করার জন্য কেবল গা-ধোয়া বা গা ডুবিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। পূর্বে ওযু করে যথানিয়মে গোসল করলে তবেই পূর্ণ গোসল হয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/৩০৪)।

(৭) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন।

(আবুদাঊদ ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৬, নাসায়ী ৩৪৫, ইবনু মাজাহ ২৬৮, ৩৮৬৪, আহমাদ ৮৬, ৮৭, ১২১, ২১৮, ২২৪, ২৩৮, ৩০৩, ৩৭০,আবদ ইবনু হুমাইদ ১১১৪, ইবনু খুযাইমাহ ১১৭,  নাসায়ী ৭৪, ইবনু হিব্বান ১৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।

(৮) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৪৭, সহীহ আবূ দাঊদ ৪০১২, নাসায়ী ১/৭০, আহমাদ ৪/২২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোক চক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই। (মুসলিম ৩৩৯; বুখারী ২৭৮; ঐ, মিশকাত ৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই। (মিশকাত ৪৪৫,সহীহ আবূ দাঊদ ২৫০, তিরমিযী ১০৭, নাসায়ী ২৫২, ইবনু মাজাহ্ ৫৭৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২)।

নাপাক অবস্থায় কুরআন পাঠ করা যাবে না মর্মে যেসব হাদিস আছে সেগুলো জইফ ও মুনকার।

দেখুন,

(ক) সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯৪, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ১৪৬, নাসায়ী ২৬৫-৬৬, আবূ দাঊদ ২২৯, আহমাদ ৬২৮, ৬৪০, ৬৮৮, ৮৪২, ১০১৪, ১১২৬, ইবনু মাজাহ ৫৯৫।

তাহক্বীক্ব আলবানী: যঈফ। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ৪৬০, যঈফ আবূ দাউদ ৩১, ইরওয়াহ ১৯২, ৪৮৫। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুল্লাহ বিন সালামাহ সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেন, তার হাদিসের অনুসরণ করা যাবে না। ইবনু আদী বলেন, আমি আশা রাখি তার মাঝে কোন সমস্যা নেই। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

দেখুন,

(খ) সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯৫, মুনকার, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ১৪৬, নাসায়ী ২৬৫-৬৬, আবূ দাঊদ ২২৯, আহমাদ ৬২৮, ৬৪০, ৬৮৮, ৮৪২, ১০১৪, ১১২৬, ইবনু মাজাহ ৫৯৪।

তাহক্বীক্ব আলবানী: মুনকার। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়া ১৯২ যঈফ, জামি সগীর ৬৩৬৪ যঈফ, মিশকাত ৪৬১। উক্ত হাদিসের রাবী ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনুল মাদীনী, ইবনু আবু শায়বাহ, আমর ইবনুল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।

দেখুন,

(গ) সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯৬, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ১৩১।

তাহক্বীক্ব আলবানী: মুনকার। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ৪৬১, ইরওয়াহ ১৯২। উক্ত হাদিসের রাবী ইসমাঈল বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, আহলে শাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। আলী ইবনুল মাদীনী, ইবনু আবু শায়বাহ, আমর ইবনুল ফাল্লাস ও দুহায়ম বলেন, শাম শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় তিনি সিকাহ কিন্তু অন্য শহর থেকে হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।

উল্লেখ্য যে, সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩)।

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাযম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমর ইবনু হাযম-এর কাছে যে চিঠি লিখেছেন তাতে এ কথাও লেখা ছিল যে, পবিত্র লোক ছাড়া যেন কোন ব্যক্তি কুরআন স্পর্শ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৫, সহীহ : মালিক ৪৬৮, দারাকুত্বনী, সহীহুল জামি‘ ৭৭৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১২) পানি - পুরুষ এবং নারীর একে অপরের গোসলের অবশিষ্ট পানি দ্বারা গোসল করা নিষেধ

(১৩) আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (রহমতের) ফিরিশতাবর্গ তিন ব্যক্তির নিকটবর্তী হন না; কাফেরের দেহ, খালূক মাখা ব্যক্তি এবং নাপাক ব্যক্তি; যদি উযূ না করে। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৪, হাদিস সম্ভার-৫৩০, ৫৩১, আবূ দাঊদ ৪১৮২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ স্ত্রীলোকের চার শাখার (দুই হাত দুই পা) মাঝখানে বসে সঙ্গমে রত হয় তখন তার ওপর গোসল করা ফরয হয়ে যায়, যদিও বীর্যপাত না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৪৩০, সহীহ মুসলিম ৩৪৮, বুখারী ৩৪৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫)  গনগোসলখানায় মহিলাদের প্রবেশ নিষেধঃ

(ক) উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, হে লোক সকল! অবশ্যই আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন অবশ্যই এমন (ভোজনের) দস্তরখানে না বসে, যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন সাধারণ গোসলখানায় বিবস্ত্র হয়ে প্রবেশ না করে। আর যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন সাধারণ গোসলখানায় প্রবেশ না করে।

(হাদিস সম্ভার-৫৫১, আহমাদ ১২৫, সহীহ তারগীব ১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উম্মে দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি সাধারণ গোসলখানা হতে বের হলাম। ইত্যবসরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি আমাকে বললেন, কোত্থেকে, হে উম্মে দারদা?! আমি বললাম, গোসলখানা থেকে। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ; যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যে কোনও মহিলা তার কোন মায়ের ঘর ছাড়া অন্য স্থানে নিজের কাপড় খোলে, সে তার ও দয়াময় (আল্লাহর) মাঝে প্রত্যেক পর্দা বিদীর্ণ করে ফেলে।

(হাদিস সম্ভার-৫৫২, আহমাদ ২৭০৩৮, ত্বাবারানীর কাবীর, সহীহ তারগীব ১৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৬) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (আনাস (রাঃ)-এর মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা‘আলা হক কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষের কারণে তার ওপর কি গোসল ফরয হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ হাঁ, যদি (ঘুম থেকে জেগে উঠে) বীর্য দেখে। এ উত্তর শুনে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) (লজ্জায়) স্বীয় মুখ ঢেকে ফেললেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীলোকেরও আবার স্বপ্নদোষ হয় (পুরুষের ন্যায় বীর্যপাত হয়)। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। কি আশ্চর্য! (তা না হলে) তার সন্তান তার সদৃশ হয় কীভাবে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৪৩৩, ৪৪১, সহীহ : বুখারী ১৩০, মুসলিম ৩১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৭) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষের খতনার জায়গা মহিলার খতনার জায়গা অতিক্রম করলেই গোসল করা ফরয হয়ে যাবে। তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, আমি ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেছি, তারপর দু’জনেই গোসল করেছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৪২, সহীহ তিরমিযী ১০৮, ইবনু মাজাহ্ ৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৮)  নাপাক অবস্থায় ঘুমানোর নিয়মঃ

(ক) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস বললেন, (কোন সময়) রাতে তার নাপাকী হয়ে গেলে (তৎক্ষণাৎ তার কী করা উচিত)? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তুমি উযূ  করবে, তোমার গুপ্তাঙ্গ ধুয়ে নিবে, অতঃপর ঘুমাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৪৫২, সহীহ বুখারী ২৯০, মুসলিম ৩০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবিত্র হওয়ার পর ঘুমানোর ইচ্ছা করলে তার পূর্বে সালাতের উযূর ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিতেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯১, ৫৯৩, ৫৮৪, ৫৮৫, ৫৮৬, বুখারী ২৮৬, ২৮৭, ২৮৮, ২৮৯-৯০, মুসলিম ৩০১-২, ৩০৬, তিরমিযী ১১৮, নাসায়ী ২৫৫-৫৮, ২৫৯-৬০,  আবূ দাঊদ ২২১, ২২২, ২২৪, ৩৯০, আহমাদ ৩৬১, ৫০৩৬, ৫১৬৮, ৫২৯২, ৫৪১৯, ৫৪৭৩, ৫৯৩১, ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩, ২৪৩৬১, ২৪৪২৮, ২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০, ২৫৮৫১; দারিমী ৭৫৬, ৭৫৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১০৯ , সহীহাহ ৩৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  নাপাক অবস্থায় খেতে চাইলে তার নিয়মঃ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিতেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৪, ৫৯১, ৫৯২, ৫৯৩, বুখারী ২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, তিরমিযী ১১৮, নাসায়ী ২৫৫-৫৮, আবূ দাঊদ ২২০, ২২২, ২২৪; আহমাদ ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩, ২৪৩৬১, ২৪৪২৮, ২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০, ২৫৮৫১; দারিমী ৭৫৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  নাপাক অবস্থায় কেই খেতে চাইলে দু হাত ধুয়ে নিতে হবেঃ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক অবস্থায় খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা করলে তাঁর দু হাত ধুয়ে নিতেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ ৫৮৪, ৫৯১, ৫৯৩, বুখারী ২৮৬, ২৮৮; মুসলিম ৩০১-২, তিরমিযী ১১৮, নাসায়ী ২৫৫-৫৮, আবূ দাঊদ ২১৯, ২২২, ২২৪; আহমাদ ২৩৫৬৩, ২৪০৭৮, ২৪১৯৩, ২৪১৯৬, ২৪৩৪৫, ২৪৩৫৩, ২৪৩৬১, ২৪৪২৮, ২৪৪৪৮, ২৪৫৮০, ২৪৬৩৪, ২৪৮০৩, ২৫০৫৫, ২৫০৬৫, ২৫১৩৯, ২৫২৮৬, ২৫৪৭২, ২৫৮১০, ২৫৮৫১; দারিমী ৭৫৭, । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৯) নাপাক অবস্থায় আবার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে চাইলে তার নিয়মঃ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করার পর আবারও যদি সঙ্গম করতে চায়, তাহলে সে যেন মধ্যখানে (সালাতের উযূর মতো) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৪৫৪, ৪৫৫, সহীহ মুসলিম ৩০৮, তিরমিযী ১৪১, নাসায়ী ২৬২, আবূ দাঊদ ২১৬, ২২০, আহমাদ ১০৭৭৭, ১০৮৪৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর একবার গোসল করাঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস শেষে একবার গোসল করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৮৮, ৫৮৯, বুখারী ২৬৮, ২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫; মুসলিম ৩০৯, তিরমিযী ১৪০, নাসায়ী ২৬৩-৬৪, ৩১৯৮, আহমাদ ১১৫৩৫, ১২২২১, ১২২৯০, ১২৫১৪, ১২৫৫৫, ১২৯৪২, ১৩০৯৩, ১৩২৩৬; দারিমী ৭৫৩-৫৪, সহীহ আবূ দাউদ ২১৮,  ২১১-২১৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে অধিকতর বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হলো প্রত্যেকের সাথে সহবাসের পর পর গোসল করাঃ

আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে তাঁর স্ত্রীগণের সাথে সহবাস করলেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের সাথে সহবাসের পর পর গোসল করেন। তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কেন একবার গোসল করলেন না? তিনি বলেনঃ সেটি অধিকতর বিশুদ্ধ, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫৯০, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আবূ দাঊদ ২১৯। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মুস্তাহাব গোসলসমূহ :

(১) জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫৩৭-৫৩৯, সহীহ বুখারী ৮৭৭, ৮৫৮, মুসলিম ৮৪৪, ৮৪৬, ৮৪৯, ৮৯৮, নাসায়ী ১৩৭৬, ১৩৭৭, মালিক ১০৩/৩৩৮, আহমাদ ৫৩১২, ১১৫৭৮, দারেমী ১৫৭৭, সহীহ আল জামি ৪৫৮, ৩১৫৪, আবূ দাঊদ ৩৪১, ইবনু মাজাহ্ ১০৮৯, দারেমী ১৫৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১২২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৪২০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫৪১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৩১৬১, তিরমিযী ৯৯৩, ইবনু মাজাহ্ ১৪৬৩, ইরওয়া ১৪৪, আহমাদ ৯৮৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫৪৩, সহীহ  আবূ দাঊদ ৩৩৫, তিরমিযী ৬০৫, নাসায়ী ১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা। (বুলুগুল মারাম, ৭৩০, দারাকুৎনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ,  তিরমিযী ৮৩০, দারেমী ১৭৯৪)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৫) আরাফার দিন গোসল করা। (বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭)।

(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা। (বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭)।

হায়েজ-নিফাজ

আর আল্লাহর বাণীঃ ‘‘তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে রক্তস্রাব সম্বন্ধে। আপনি বলুনঃ তা অশুচি। কাজেই রক্তস্রাব অবস্থায় তোমরা স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাকবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না। সুতরাং যখন তারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হবে তখন তোমরা তাদের কাছে ঠিক সেভাবে গমন করবে যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদের আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালবাসেন।’’ (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ্ ২/২২২)।

হায়েজ নিফাজ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

(ক) হায়েজ অবস্থায় বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ ছাড়া হাজ্জের বাকী সব কাজ করা যাবেঃ

‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা হাজ্জের উদ্দেশেই (মদিনা হতে) বের হলাম। ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার হায়য আসলো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং বললেনঃ কী হলো তোমার? তোমার হায়য এসেছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ এ তো আল্লাহ্ তা‘আলাই আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ ছাড়া হাজ্জের বাকী সব কাজ করে যাও। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গাভী কুরবানী করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ২৯৪, ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ৩২৮, ১৫১৬, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১২৩৮, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭১, ১৭৭২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০১, ৪৪০৮, ৫৩২৯, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৬১৫৭,৭২২৯; মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১১) (আধুনিক প্রকাশনী- ২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) স্ত্রীর হায়য অবস্থায় তার কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করাঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হায়েযের অবস্থায় ছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ),২৯৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) হায়েজ অবস্থায় একই চাঁদরে ঘুমানোঃ

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই চাদরের নীচে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার হায়েয দেখা দিলে আমি চুপি চুপি বেরিয়ে গিয়ে হায়েযের কাপড় পরে নিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কি নিফাস দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর সঙ্গে চাদরের ভেতর শুয়ে পড়লাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ২৯৮, ৩২২, ৩২৩, ১৯২৯; মুসলিম ৩/২, হাঃ ২৯৬, আহমাদ ২৬৫৮৭) (আ.প্র. ২৮৯, ই.ফা. ২৯৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হায়েজ অবস্থায় সালাত আদায়ঃ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) এর ইস্তিহাযা হতো। তিনি এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ হচ্ছে রগের রক্ত, হায়েযের রক্ত নয়। সুতরাং হায়েয শুরু হলে সালাত ছেড়ে দেবে। আর হায়েয শেষ হলে গোসল করে সালাত আদায় করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ২২৮, ৩২০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) হায়েজ অবস্থায় কাজা সালাত আদায়ঃ

মু’আযাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ জনৈকা মহিলা ‘আয়িশা (রাঃ) কে বললেনঃ হায়েযকালীন কাযা সালাত পবিত্র হওয়ার পর আদায় করলে আমাদের জন্য চলবে কি-না? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তুমি কি হারূরিয়্যাহ? (খারিজীদের একদল) [১] আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ঋতুবতী হতাম কিন্তু তিনি আমাদের সালাত কাযার নির্দেশ দিতেন না। অথবা তিনি [‘আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমরা তা কাযা করতাম না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৩২১, মুসলিম ৩/১৫, হাঃ ৩৩৫, আহমাদ ২৪৭১৪) (আ.প্র. ৩১০, ই.ফা. ৩১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হায়েজ নিফাস থেকে নারী কখন পবিত্র হবে?

এক:

নীচের দুটো আলামতের কোন একটির মাধ্যমে হায়েয থেকে পবিত্র হওয়া জানা যায়:

(১) সাদা স্রাব নির্গত হওয়া। সেটা হচ্ছে স্বচ্ছ পানি; নারীরা যে পানিটা চিনে থাকে।

(২) লজ্জা স্থানটি সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ স্থানটির ভিতরে যদি কটন বা এ জাতীয় অন্য কিছু রাখা হয় তাহলে পরিষ্কার বেরিয়ে আসে। কটনের মধ্যে রক্তের দাগ, হলেদেটে বা লালচে দাগ থাকে না।

নারীর উচিত গোসল করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা; যাতে করে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন:

হায়েযের আগমন ও প্রস্থান শীর্ষক পরিচ্ছেদ। নারীরা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে ন্যাকড়ার থলেটি পাঠাত; যে ন্যাকড়াতে হলদেটে পানি থাকত। তখন তিনি বলতেন: তোমরা তাড়াহুড়া করো না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সাদা স্রাব দেখতে পাও। তিনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন: হায়েয থেকে পবিত্রতা। যায়েদ বিন ছাবেতের মেয়ের কাছে খবর পৌঁছেছে যে, নারীরা রাতের বেলায় পবিত্রতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য চেরাগ চেয়ে পাঠাত। তখন তিনি বললেন: আগের নারীরা তো এভাবে করতেন না। তিনি তাদের এ কর্মের সমালোচনা করলেন।"[সমাপ্ত]

দুই:

যদি কোন নারী ফজরের আগে তার পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তাহলে তার উপর রোযা রাখা আবশ্যক হবে।

আর যদি পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হন তাহলে তার রোযা সহিহ হবে না; এমনকি যদি ধরে নেয়া হয় যে, সারাদিনে তার থেকে কোন কিছু নির্গত হয়নি তবুও। কেননা হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া রোযার নিয়ত করা শুদ্ধ নয়।

তিন:

(ক) যদি কোন নারী পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে প্রথম রাত্রিতে গোসল করে ফেলেন; এরপর ফজরের আগে পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন এবং পুনরায় গোসল না করে রোযা রাখেন ও নামায পড়েন তাহলে তার রোযা সহিহ হবে; কিন্তু নামায সহিহ হবে না। কারণ রোযার জন্য কেবল হায়েযের রক্ত বন্ধ হওয়া শর্ত; যদি গোসল নাও করে। কিন্তু নামাযের জন্য অবশ্যই গোসল করতে হবে। আর হায়েযের রক্ত বন্ধ হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাওয়ার কারণে তার প্রথম গোসল শুদ্ধ নয়।

(খ) "মুনতাহাল ইরাদাত" গ্রন্থে (১/৫২) বলেন: "'হায়েয ও নিফাসের গোসল করার জন্য শর্ত হল এ দুটো থেকে অবসর হওয়া।' অর্থাৎ হায়েয ও নিফাস বন্ধ হওয়া। যেহেতু এ দুটো চলমান থাকাটা গোসলের সাথে সাংঘর্ষিক"।[সমাপ্ত]।

(গ) "কাশ্‌শাফুল ক্বিনা" গ্রন্থে (১/১৪৬) গোসল ফরয হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে বলেন: "পঞ্চম কারণ হল: হায়েয নির্গত হওয়া"। দলিল হচ্ছে ফাতিমা বিনতে আবি হুবাইশ (রাঃ)কে লক্ষ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: "(হায়েয) যখন চলে যাবে তখন গোসল করে নামায পড়বে"।[মুত্তাফাকুন আলাইহি]।

(ঘ) এবং তিনি উম্মে হাবিবা (রাঃ), সাহলা বিনতে সুহাইল (রাঃ) ও হামনা (রাঃ) প্রমুখ নারীদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এর পক্ষে সমর্থন রয়েছে আল্লাহ্‌তাআলার এই বাণীতে: "তারপর তারা যখন প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন তাদের কাছে যাও।" [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২২২] অর্থাৎ তারা যখন গোসল করবে। এখানে স্ত্রী গোসল করার আগে স্বামীকে সহবাস করতে বারণ করা হয়েছে। এর থেকে প্রমাণ হয় যে, গোসল করা ওয়াজিব। কারণের সাথে বিধানকে সম্পৃক্ত করার হেতুবশতঃ রক্তপাত শুরু হওয়ার মাধ্যমেই গোসল ফরয হয়েছে। আর রক্তপাত বন্ধ হওয়া গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।[সমাপ্ত]।

মিসওয়াক এর গুরুত্ব ও ফজিলত

মেসওয়াক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতি আমল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক বেশি মেসওয়াক করতেন।

দাঁত থেকে হলুদ বর্ণ বা এ জাতীয় ময়লা দূর করার জন্য কাঠ বা গাছের ডাল ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে। (নাইলুল আওতার ১/১০২)।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখন্ড মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করছি। এমন সময় দু’জন লোক আমার কাছে এলো, যাদের মধ্যে একজন অপরজন হতে (বয়সে) বড়। আমি আমার মিসওয়াকটি ছোটজনকে দিতে উদ্যত হলে আমাকে বলা হলো, বড়জনকেই দিন। অতঃপর আমি তা বড়জনকেই দিলাম।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৫, ৩৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৮২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মিসওয়াক উম্মতের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। ফরয হওয়া থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে কিন্তু সুন্নাত হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে। যেমন আয়িশা বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:

(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসওয়াক হলো মুখগহ্বর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮১, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ৫, সহীহুত্ তারগীব ২০৯, আহমাদ ৬/৪৭, ৬২, ২৪২০৩, দারিমী ৭১১, ইবনু হিব্বান-এর “মাওয়ারিদ" ১৪৩, মুসনাদে হুমায়দী ১৬২, বায়হাকী-এর “সুনানুল কুবরা” ১৩৪, ইরওয়াউল গালীল ৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ).....আবূ মূসা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম তখন মিসওয়াকের এক অংশ তার জিহবার উপর ছিল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মহানবি (সাঃ) বলেন, “জিবরীল (আহমাদ, মুসনাদ) আমাকে (এত বেশী) দাঁতন করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।” (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৫৫৬ নং)।

(ঘ) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন,“--এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।” (সহীহ জামে ১৩৭৬ )।

অন্যের মিস্ওয়াক দিয়ে মিস্ওয়াক করা

 (ক) ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর (রাযি.) একটি মিস্ওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে প্রবেশ করলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তার দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে ‘আবদুর রহমান! মিস্ওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিস্ওয়াক করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৯০, ১৩৮৯, ৩১০০, ৩৭৭৪, ৪৪৩৮, ৪৪৪৬, ৪৪৪৯, ৪৪৫০, ৪৪৫১, ৫২১৭, ৬৫১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করতেন। অতঃপর ধুয়ে রাখার জন্য তা আমাকে দিতেন। আমি (ধোয়ার আগে) ঐ মিসওয়াক দিয়ে নিজে মিসওয়াক করতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে ((রাঃ)-কে) দিতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৮৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫২, ইবনু খুযাইমাহ ১৩৪, আহমাদ ৬/৪১, ১০৯, ১১০, ১৮২, ১৮৮)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রাসুল সাঃ এর তিরোধানের পূর্ব মুহূর্তেও  মেসওয়াক করা

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে হেলান দেয়া অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। আর তাঁর ইন্তিকালের আগ মুহূর্তে আল্লাহ তা'আলা আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের লালাও মিশিয়ে দিয়েছেন। আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকর মিসওয়াক হাতে আমার কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন আমার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ মিসওয়াকটির দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। অতএব আমি বললাম, আমি কি মিসওয়াকটি আপনার জন্য নেব? তিনি (সা.) মাথা নেড়ে হা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব আমি মিসওয়াকটি তার কাছ হতে নিয়ে তাঁকে দিলাম। তা তার জন্য কষ্টকর হলো। তখন বললাম, আমি কি তাকে আপনার জন্য নরম করে দেব? তিনি (সা.) মাথা হেলিয়ে হ্যা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব তখন আমি তাকে নরম করে দিলাম। অতঃপর তিনি (সা.) তা ব্যবহার করলেন। আর তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি রাখা ছিল। তাতে তিনি (সা.) উভয় হাত ঢুকিয়ে হাত দুটি দ্বারা আপন চেহারা মাসেহ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি (সা.) বলছিলেন- লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, অবশ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা ভীষণ। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেন- ‘ফি রফীকিল আলা-' অর্থাৎ- উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত কর), এ কথা বলতে বলতে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং তাঁর হাত নিচে নেমে আসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৪৪৪৯, মুসনাদে আহমাদ ২৪২৬২, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৮, আবূ ইয়া'লা ৪৫৮৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৬১৭, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৮৬০৫, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৬৮৮৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিম্নোক্ত সময়গুলোতে মিসওয়াক করা উত্তম বলে তাকিদ দেয়া হয়েছে:

(১) ওযূর সময়ঃ

(ক) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন: যদি অমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি ওযূর সময় তাদের মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম। (সহীহ আল-জামে ৫৩১৬)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অযুর পানি ও মিসওয়াক রেখে দেয়া হতো। তিনি রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ইস্তিনজা করতেন, এরপর মিসওয়াক করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬, ৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫, ৮৮৯, ১১৩৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১-৪৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫, আহমাদ ২৩৪৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৪) )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) সালাতের সময়ঃ

(ক) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রতি ওয়াক্ত সালাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৮৭, ৭২৪০; সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২, নাসায়ী ৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৬, আহমাদ ৭২৯৪, ৭৩৬৪, ৭৪৫৭, ৭৭৯৪, ৮৯২৮, ৮৯৪১, ৯২৬৪, ৯৩০৮, ৯৬১২, ১০২৪০, ১০৩১৮, ১০৪৮৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৪৭, ১৪৮; দারিমী ৬৮৩, ১৪৮৪, ইরওয়াহ ৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮০, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যাইদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টদায়ক হবে মনে না করলে তাদেরকে সকল নামাযের সময় দাত মাজার নির্দেশ দিতাম এবং এশার নামাযের জামা'আত এক-তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত দেরি করতাম। অধঃস্তন রাবী আবু সালামা বলেন, যাইদ ইবনু খালিদ (রাঃ) নামাযে আসতেন আর তার কানের গোড়ার ঠিক সেখানে মিসওয়াক থাকত যেখানে লেখকের কলম থাকে। যখনই তিনি নামাযে দাড়াতেন, মিসওয়াক করতেন, অতঃপর তা আবার সেখানে রাখতেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) কুরআন পাঠের সময়ঃ

(ক) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যখন কোন বান্দা সালাতে দাঁড়ায় তখন তার কাছে ফেরেশতা এসে তার পিছনে দাঁড়ায় ও কুরআন পড়া শুনতে থাকে এবং তার নিকটবর্তী হতে থাকে, এমন কি ফেরেশতা তার মুখকে তেলাওয়াতকারীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রত্যেক আয়াত ফেরেশতার পেটের ভিতর প্রবেশ করে। (বাইহাক্বী ১/৩৮, ১৬১), সহীহা ১২১৩, বায্যার ৬০৩, সহীহ তারগীব ২১৫)।

(খ) সামুরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর। কারণ, মুখ হল কুরআনের পথ। (বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ২১১৯, সহীহুল জামে’ ৩৯৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মুখ হল কুরআনের রাস্তা। অতএব তোমরা দাঁতন করে তা পবিত্র ও সুগন্ধযুক্ত করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯১,)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৪) গৃহে প্রবেশের সময়ঃ

আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল 'আলা (রহঃ).....মিকদাম এর পিতা শুরায়হ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন কাজটি করতেন? তিনি বললেন, সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭৮, ৪৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বার ২৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৭, নাসায়ী ৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১, আহমাদ ২৭৬০১, ২৪২৭৪, ২৪৯৫৮, ২৫২০, ২৫৬৪, ২৫৪৬৬, ইরওয়াহ ৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) রাতের সালাত আদায়ের সময়ঃ

(ক) হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে উঠতেন, তখন তিনি মিসওয়াক দিয়ে তাঁর মুখ পরিষ্কার করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৮১, ৪৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৬, ৮৮৯, ১১৩৬; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৫০০, নাসায়ী ২, ১৬২১, ১৬২২, ১৬২৩; আহমাদ ৬১০৭, ২২৭৩১, ২২৮০২, ২২৮৫৭, ২২৯০৬, ২২৯৪৮; দারিমী ৬৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অযুর পানি ও মিসওয়াক রেখে দেয়া হতো। তিনি রাতে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ইস্তিনজা করতেন, এরপর মিসওয়াক করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬, ৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৫, ৮৮৯, ১১৩৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮১-৪৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৫, আহমাদ ২৩৪৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৪) )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)....ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। একদা তিনি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে রাত কাটালেন। (তিনি দেখলেন) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠলেন এবং বাইরে গিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন এর পরে সূরাহ্ আ-লি ইমরানের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন "আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে বহু নিদর্শন রয়েছে .....অতএব আপনি অনুগ্রহ করে আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন" পর্যন্ত পড়লেন–(সূরাহ্ আ-লি “ইমরান ৩: ১৯০-১৯১)।

অতঃপর ঘরে ফিরে এসে মিসওয়াক ও ওযু করলেন। এরপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে শুয়ে পড়লেন। পুনরায় কিছুক্ষণ পরে উঠে বাইরে গেলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে উক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন। অতঃপর ফিরে এসে (আবার) মিসওয়াক করে ওযু করলেন; অতঃপর ফজরের সালাত আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/১০৪)।

যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার হয়ে যায় এমন কোন বস্ত্ত ব্যবহার করা যথেষ্ট হবে। যেমন নির্দিষ্ট কোন পেষ্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা।

আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মাজা যায়। তবে এটা সুন্নত কি না বা এতেও ঐ সওয়াব অর্জন হবে কি না, সে ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস মিলে না। হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) তালখীসে (১/৭০)।

এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এগুলির চেয়ে মুসনাদে আহ্মাদে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ।’ কিন্তু সে হাদীসটিরও সনদ যয়ীফ। (মুসনাদে আহমাদ, তাহক্বীক্ব আহমাদ শাকের ১৩৫৫)। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।

ছালাত আদায়কারী মুছল্লীর লেবাস

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“হে মানব জাতি! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে লেবাস দিয়েছি। পরন্তু ‘তাকওয়া’র লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট । কুরআন মাজীদ ৭/২৬)।

“হে আদম সন্তানগণ! প্রত্যেক নামাযের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না।” (কুরআন মাজীদ ৭/৩১)।

শরীয়তের সভ্য-দৃষ্টিতে সাধারণভাবে লেবাসের কতকগুলি শর্ত ও আদব রয়েছে; যা পালন করতে মুসলিম বাধ্য।

মহিলাদের লেবাসের শর্তাবলী নিম্নরুপ:-

(১) লেবাস যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। দেহের কোন অঙ্গ বা সৌন্দর্য যেন কোন বেগানা (যার সাথে কোনও সময়ে বিবাহ্‌ বৈধ এমন) পুরুষের সামনে প্রকাশ না পায়। কেন না মহানবী (সাঃ) বলেন, “মেয়ে মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে পরিশোভিতা করে তোলে।”  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩১০৯, সহীহ তিরমিযী ১১৭৩, ইরওয়া ২৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৯০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহান আল্লাহ বলেন, “হে নবী! তুমি তোমার পত্নীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলে দাও, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (চেহারার) উপর টেনে নেয়---।” (কুরআন মাজীদ ৩৩/৫৯)।

হযরত উম্মে সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, ‘উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে (মদ্বীনার) আনসারদের মহিলারা যখন বের হল, তখন তাদের মাথায় (কালো) চাদর (বা মোটা উড়না) দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওদের মাথায় কালো কাকের ঝাঁক বসে আছে)।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ তাআলার আদেশ, মুমিন মেয়েরা যেন তাদের ঘাড় ও বুককে মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে নেয়-।

(কুরআন মাজীদ ২৪/৩১)।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘পূর্বের মুহাজির মহিলাদের প্রতি আল্লাহ রহ্‌ম করেন। উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে তারা তাদের পরিধেয় কাপড়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মোটা কাপড়টিকে ফেড়ে মাথার উড়না বানিয়ে মাথা (ঘাড়-গলা-বুক) ঢেকেছিল।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাহাবাদের মহিলাগণ যখন পথে চলতেন, তখন তাঁদের নিম্নাঙ্গের কাপড়ের শেষ প্রান্ত মাটির উপর ছেঁচড়ে যেত। নাপাক জায়গাতে চলার সময়েও তাদের কেউই পায়ের পাতা বের করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫০৪, ৫১২, ৪৩৩৫, সহীহ আহমাদ ২৬১৪৬, আবূ দাঊদ ৩৮৩, ৩৮৪, তিরমিযী ১৪৩, ইবনু মাজাহ্ ৫৩১, মুয়াত্ত্বা মালিক ১/২৪/১৬, দারিমী ৭৬৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং মাথা ও পায়ের মধ্যবর্তী কোন অঙ্গ যে প্রকাশ করাই যাবে না, তা অনুমেয়।

(২) যে লেবাস মহিলা পরিধান করবে সেটাই যেন (বেগানা পুরুষের সামনে) সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, “সাধারণত: যা প্রকাশ হয়ে থাকে তা ছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (কুরআন মাজীদ ২৪/৩১)।

(৩) লেবাস যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। নচেৎ ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত।

(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ হে আসমা! মহিলা যখন বালেগা হয়, তখন তার শরীরের কোন অঙ্গ দৃষ্ট হওয়া উচিত নয়, তবে কেবলমাত্র এটা এবং এটা এ বলে তিনি তাঁর মুখ এবং তাঁর দু’ হাতের তালুর দিকে ইঙ্গিত করলেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৭২, সহীহ আবূ দাঊদ ৪১০৪, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ১০৫১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৪৫, আল জামি‘উস্ সগীর ১৩৮০৫, সহীহুল জামি‘ ৭৮৪৭, ইরওয়া ১৭৯৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৭৯৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৮৭৮, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২৪৬২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আলকামাহ্ ইবনু আবূ ‘আলকামাহ্ (রহঃ) তাঁর মাতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন হাফসাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রাঃ) একটি খুব পাতলা ওড়না পরিহিত অবস্থায় ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উক্ত পাতলা ওড়নাখানা ছিঁড়ে ফেললেন এবং তাকে একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৭৫, সহীহ মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৮৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৩৯১। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু' প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং এক দল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্ৰাণ পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫৪৭৫-(১২৫/২১২৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯, সহীহ জামে ৩৭৯৯ নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) পোশাক যেন এমন আঁট- সাঁ ট (টাইট ফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়। কারণ এমন ঢাকাও খোলার পর্যায়ভুক্ত এবং দৃষ্টি-আকর্ষী ।

(৫) যেন সুগন্ধিত না হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সেন্ট বিলাবার উদ্দেশ্যে কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে পুরুষদের সামনে যায়, তবে সে বেশ্যা মেয়ে।”

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৬৫, হাসান আত্ তিরমিযী ২৭৮৬, আবূ দাঊদ ৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু হিব্বান ৪৪২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সেন্ট ব্যবহার করে মহিলা মসজিদেও যেতে পারে না। একদা চাশতের সময় আবূ হুরাইরা (রাঃ) মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদ প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ্‌ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবূ হুরাইরা মহিলাটির উদ্দেশে বললেন, ‘আলাইকিস সালাম।’ মহিলাটি সালামের উত্তর দিল। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘কোথায় যাবে তুমি?’ সে বলল, ‘মসজিদে।’ বললেন, ‘কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছ তুমি?’ বলল, ‘মসজিদের জন্য।’ বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ বলল, ‘আল্লাহর কসম।’ পুনরায় বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ বলল, ‘আল্লাহর কসম।’ তখন তিনি বললেন, ‘তবে শোন, আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল কাসেম (সাঃ) বলেছেন যে, “সেই মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করে নেয়।” অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে নামায পড়ো।’ (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, বায়হাকী, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১০৩১ নং)

(৬) লেবাস যেন কোন কাফের মহিলার অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (লেবাসে- পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে সে তাদেরই দলভুক্ত।” (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৩৪৭,  হাসান : আবূ দাঊদ ৪০৩১, মুসনাদে আহমাদে এরূপ শব্দে হাদীসটি নেই; আল জামি‘উস্ সগীর ১১০৯৪, সহীহুল জামি‘ ৬১৪৯, ইরওয়া ২৬৯১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৭) তা যেন পুরুষদের লেবাসের অনুরুপ না হয়। মহানবী (সাঃ) সেই নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১৯০৪ নং)।

তিনি সেই পুরুষকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে মহিলার মত লেবাস পরে এবং সেই মহিলাকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যে পুরুষের মত লেবাস পরে। (আবূদাঊদ, সুনান ৪০৯৮, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১৯০৩ নং)।

(৮) লেবাস যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, বিরল ধরনের লেবাস পরলে সাধারণত: পরিধানকারীর মনে গর্ব সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতে লাঞ্ছনার লেবাস পরাবেন।” (মিশকাত ৪৩৪৬, হাসান তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ৫৬৬৪, ইবনু মাজাহ ৩৬০৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০৮৯, শু‘আবুল ঈমান ৬২২৮, আবূ দাঊদ ৪০২৯, সহীহুল জামি‘ ৬৫২৬, আল জামি‘উস্ সগীর ১১৪৭২। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

“যে ব্যক্তি জাঁকজমকপূর্ণ লেবাস পরবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতে অনুরুপ লেবাস পরিয়ে তা অগ্নিদগ্ধ করবেন।” (আবূদাঊদ, সুনান, বায়হাকী, সহীহ জামে ৬৫২৬ নং)।

আর পুরুষদের লেবাসের শর্তাবলী নিম্নরুপ:-

(১) লেবাস যেন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ অবশ্যই আবৃত রাখে। যেহেতু ঐটুকু অঙ্গ পুরুষের লজ্জাস্থান। (সহীহ জামে ৫৫৮৩ নং)।

(২) এমন পাতলা না হয়, যাতে ভিতরের চামড়া নজরে আসে।

(৩) এমন আঁট-সাট না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়।

(৪) কাফেরদের লেবাসের অনুকৃত না হয়।

(৫) মহিলাদের লেবাসের অনুরুপ না হয়।

(৬) জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়।

(৭) গাঢ় হ্‌লুদ বা জাফরানী রঙের যেন না হয়। আম্‌র বিন আস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা আমার গায়ে দু’টি জাফরানী রঙের কাপড় দেখে বললেন, “এগুলো কাফেরদের কাপড়। সুতরাং তুমি তা পরো না।” (মিশকাত ৪৩২৭, সহীহ মুসলিম (২০৭৭)-২৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৩৯৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৮৪, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৪/২১, নাসায়ী ৫৩১৬, মুসনাদে আহমাদ ৬৯৩১, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৮৫৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৭০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) লেবাস যেন রেশমী কাপড়ের না হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সোনা ও রেশম আমার উম্মতের মহিলাদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ৪৩৪১ নং) “দুনিয়ায় রেশম-বস্তু তারাই পরবে, যাদের পরকালে কোন অংশ নেই।” (মিশকাত ৪৩২০, সহীহ বুখারী ৫৮৩৫, মুসলিম (২০৬৮)-৭, সহীহুল জামি‘ ২৩৮৭, আল জামি‘উস্ সগীর ৪১৫২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৫৮১৪, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৩২৭, আল আদাবুল মুফরাদ ৩৪৯, নাসায়ী ৫২৯৫, ইবনু মাজাহ ৩৫৯১, আবূ দাঊদ ৪০৪০, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ২৬৭, শু‘আবুল ঈমান ৬১০৮, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হযরত উমার (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) রেশমের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। তবে দুই, তিন অথবা চার আঙ্গুল পরিমাণ (অন্য কাপড়ের সঙ্গে জুড়ে) ব্যবহার করতে অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম, মিশকাত ৪৩২৪ নং) তদনুরুপ কোন চর্মরোগ প্রভৃতিতে উপকারী হলে তা ব্যবহারে অনুমতি আছে। (মিশকাত ৪৩২৬, সহীহ বুখারী ৫৮৩৯, মুসলিম (২০৭৬)-২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৩২, তিরমিযী ১৭২২, ইবনু মাজাহ ৩৫৯২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ২৮৮০, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) পরিহিত লেবাস (পায়জামা, প্যান্ট, লুঙ্গি, কামীস প্রভৃতি) যেন পায়ের গাঁটের নিচে না যায়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “গাঁটের নিচের অংশ লুঙ্গি জাহান্নামে।” (বুখারী, মিশকাত ৪৩১৪ নং) “মু’মিনের লুঙ্গি পায়ের অর্ধেক রলা পর্যন্ত। এই (অর্ধেক রলা) থেকে গাঁট পর্যন্ত অংশের যে কোনও জায়গায় হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু এর নিচের অংশ দোযখে যাবে।” এরুপ ৩ বার বলে তিনি পুনরায় বললেন, “আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি তাকিয়েও দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি (গাঁটের নিচে) ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়।” (মিশকাত ৪৩৩১, সহীহ আবূ দাঊদ ৪০৯৩, ইবনু মাজাহ ৩৫৭৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২০১৭, সহীহ আল জামি‘উস্ সগীর ৯২১, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৯০, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৪৭, শু‘আবুল ঈমান ৬১৩৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২৪৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয় লেবাস ছিল কামীস (ফুল-হাতা প্রায় গাঁটের উপর পর্যন্ত লম্বা জামা বিশেষ)। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৪৩২৮ নং) যেমন তিনি চেক-কাটা চাদর পরতে ভালোবাসতেন। (মিশকাত ৪৩০৪, সহীহ বুখারী ৫৮১৩, মুসলিম (২০৭৯)-৩৩, মুসনাদে আহমাদ ১৪১০৮, নাসায়ী ৫৩১৫, তিরমিযী ১৭৮৭, আবূ দাঊদ ৪০৬০, সহীহুল জামি‘ ৪৬২৪, আল জামি‘উস্ সগীর ৮৭৫৩, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৮৬০, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩০৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি মাথায় ব্যবহার করতেন পাগড়ী। (তিরমিযী, সুনান, সহীহ জামে ৪৬৭৬ নং)।

তিনি কালো রঙের পাগড়ীও বাঁধতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ৪০৭৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৫৮৪ নং)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও সাহাবা তথা সলফদের যুগে টুপীও প্রচলিত ছিল। (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৫৮৭, ৩/৮৬, মুসলিম, সহীহ ৯২৫, আবূদাঊদ, সুনান ৬৯১ নং)।

যেমন সে যুগে শেলোয়ার বা পায়জামাও পরিচিত ছিল। মহানবী (সাঃ) ও পায়জামা খরিদ করেছিলেন। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ২২২০, ২২২১ নং)।

তিনি ইহ্‌রাম বাঁধা অবস্থায় হাজীদেরকে পায়জামা পরতে নিষেধ করেছেন।  (মিশকাত ২৬৭৮, সহীহ বুখারী ৫৮০৩, মুসলিম ১১৭৭, নাসায়ী ২৬৬৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১১৬০, আহমাদ ৫১৬৬, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য লুঙ্গি না পাওয়া গেলে পায়জামা পরতে অনুমতি দিয়েছেন। (মিশকাত ২৬৭৯, সহীহ বুখারী ১৮৪১, মুসলিম ১১৭৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৫৭৭৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৮০৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯০৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) যখন লুঙ্গি পরতেন, তখন লুঙ্গির সামনের দিকের নিচের অংশ পায়ের পাতার উপর ঝুলিয়ে দিতেন এবং পেছন দিকটা (গাঁটের) উপরে তুলে নিতেন। এরুপ পরার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে এরুপ পরতে দেখেছি।’ (মিশকাত ৪৩৭০, সহীহ আবূ দাঊদ ৪০৯৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৩১, শু‘আবুল ঈমান ৬১৪৭, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১২৩৮, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৯৬৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাঁর নিকট পোশাকের সবচেয়ে পছন্দনীয় রঙ ছিল সাদা। তিনি বলেন, “তোমরা সাদা কাপড় পরিধান কর। কারণ সাদা রঙের কাপড় বেশী পবিত্র থাকে। আর ঐ রঙের কাপড়েই তোমাদের মাইয়্যেতকে কাফনাও।” (মিশকাত ৪৩৩৭, সহীহ  মুসনাদে আহমাদ ২০২০০, তিরমিযী ৯৯৪, ২৮১০; নাসায়ী ১৮৯৬, ৫৩২২, ৫৩২৩; ইবনু মাজাহ ৩৫৬৬, ১৪৭২; আবূ দাঊদ ৪০৬১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০২৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৬১৯৯, শু‘আবুল ঈমান ৬৩১৯, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৬৬১৯, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ছাড়া সবুজ রঙের কাপড়ও তিনি ব্যবহার করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৪০৬৫ নং) এবং লাল রঙেরও লেবাস পরিধান করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৪০৭২, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৫৯৯, ৩৬০০ নং)।

মুহাদ্দেস আলবানী হাফেযাহুল্লাহ্‌ বলেন, ‘লাল রঙের কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নয়।’ (মিশকাতের টীকা ২/১২৪৭)।

লেবাসে-পোশাকে সাদা-সিধে থাকা ঈমানের পরিচায়ক। (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৪৩৪৫ নং) মহানবী (সাঃ) বলেন, “সামথ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বিনয় সহকারে সৌন্দর্যময় কাপড় পরা ত্যাগ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতে সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দেবেন; ঈমানের লেবাসের মধ্যে তার যেটা ইচ্ছা সেটাই পরতে পারবে। (তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহীহ জামে ৬১৪৫ নং)।

তবে সুন্দর লেবাস পরা যে নিষিদ্ধ তা নয়। কারণ, “আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। বান্দাকে তিনি যে নেয়ামত দান করেছেন তার চিহ্ন (তার দেহে) দেখতে পছন্দ করেন। আর তিনি দারিদ্র ও (লোকচক্ষে) দরিদ্র সাজাকে ঘৃণা করেন।” (বায়হাকী, সহীহ জামে ১৭৪২ নং)।

প্রিয় রসূল (সাঃ) বলেন, “যার অন্তরে অণূ পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাত প্রবেশ করবে না।” বলা হল, ‘লোকে তো চায় যে, তার পোশাকটা সুন্দর হোক, তার জুতোটা সুন্দর হোক। (তাহলে সেটাও কি ঐ পর্যায়ে পড়বে?)’ তিনি বললেন, “আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার তো ‘হ্‌ক’ (ন্যায় ও সত্য) প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে ঘৃণা করার নাম।” (মুসলিম, সহীহ জামে ৭৬৭৪ নং)।

তিনি আরো বলেন, “উত্তম আদর্শ, উত্তম বেশভূষা এবং মিতাচারিতা নবুওতের ২৫ অংশের অন্যতম অংশ।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, সহীহ জামে ১৯৯৩ নং)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) এক ব্যক্তির মাথায় আলুথালু চুল দেখে বললেন, “এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা মাথার এলোমেলো চুলগুলোকে সোজা করে (আঁচড়ে) নেয়?!” আর এক ব্যক্তির পরনে ময়লা কাপড় দেখে বললেন, “এর কি এমন কিছুও নেই, যার দ্বারা ময়লা কাপড়কে পরিষ্কার করে নেয়?!” (মিশকাত ৪৩৫১, সহীহ তাহ্ক্বীক মুসনাদে আহমাদ ১৪৮৯৩, নাসায়ী ৫২৩৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৪৮৩, শু‘আবুল ঈমান ৬২২৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৪৯৩, আবূ দাঊদ ৪০৬২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩১১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবুল আহওয়াস বলেন, একদা আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট এলাম। আমার পরনে ছিল নেহাতই নিম্নমানের কাপড়। তিনি তা দেখে আমাকে বললেন, “তোমার কি মাল-ধন আছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ বললেন, “কোন্‌ শ্রেণীর মাল আছে?” আমি বললাম, ‘সকল শ্রেণীরই মাল আমার নিকট মজুদ। আল্লাহ আমাকে উট, গরু, ছাগল, ভেঁড়া, ঘোড়া ও ক্রীতদাস দান করেছেন।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ যখন তোমাকে এত মাল দান করেছেন, তখন আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ও অনুগ্রহ তোমার বেশ-ভূষায় প্রকাশ পাওয়া উচিৎ।” (মিশকাত ৪৩৫২, সহীহ তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ১৫৯২৮, নাসায়ী ৫২২৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩১২০, আবূ দাঊদ ৪০৬৩, শু‘আবুল ঈমান ৬১৯৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৫৯৬৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ২০৫১৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০২০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা খাও, পান কর, দান কর, পরিধান কর, তবে তাতে যেন অপচয় ও অহংকার না থাকে।” (বুখারী, আহমাদ ৬৬৯৫, নাসাঈ ২৫৫৯নং)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, “যা ইচ্ছা তাই খাও এবং যেমন ইচ্ছা তেমনিই পর, তবে তাতে যেন দু’টি জিনিস না থাকে; অপচয় ও অহংকার।” (মিশকাত ৪৩৮০, হাসান সহীহুল বুখারী তরজমাতুল বাব, কিতাবুল লিবাস এর শুরু ৫৭৮৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৭৮, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭১৮৮, নাসায়ী ২৫৫৯, সুনানুন্ নাসায়ী আর কুবরা ২৩৪০, শু‘আবুল ঈমান ৪৫৭১, মুসনাদে আহমাদ ৬৬৯৫, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৮৭৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ২০৫১৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২১৪৫, সহীহুল জামি‘ ৪৫০৫, ইবনু মাজাহ ৩৬০৫, নাসায়ী ২৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের ভিতরে বিশেষ লেবাসঃ

একটাই কাপড়ে পুরুষের নামায শুদ্ধ, তবে তাতে কাঁধ ঢাকতে হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৪-৭৫৬ নং)।

আর খেয়াল রাখতে হবে, যেন শরমগাহ্‌ প্রকাশ না পেয়ে যায়। (মিশকাত ৪৩১৫, সহীহ মুসলিম (২০৯৯)-৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২২৫, আবূ দাঊদ ৩৩৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৭০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৭৪, মুসনাদে আহমাদ ১৪৭০৫, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৪৫৯৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৩৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ১৭৭২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 তওয়াফে কুদূম (হজ্জ ও উমরায় সর্বপ্রথম তওয়াফ) ছাড়া অন্য সময় ইহ্‌রাম অবস্থায় ডান কাঁধ বের করে রাখা বিধেয় নয়। বলা বাহুল্য নামাযের সময় উভয় কাঁধ ঢাকা জরুরী।

এক ব্যক্তি হযরত উমার (রাঃ) কে এক কাপড়ে নামায পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আধিক্য দান করলে তোমরাও অধিক ব্যবহার কর।’ অর্থাৎ বেশী কাপড় থাকলে বেশী ব্যবহার করাই উত্তম। (বুখারী ৩৬৫, ৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দরবার আল্লাহর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। তাই নামাযীর উচিৎ, যথাসাধ্য সৌন্দর্য অবলম্বন করে তাঁর দরবারে হাজির হওয়া। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন নামায পড়ে, তখন তাকে দু’টি কাপড় পরা উচিৎ। কারণ, আল্লাহ অধিকতম হ্‌কদার যে, তাঁর জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ করা হবে।” (সহীহ জামে ৬৫২ নং)।

পক্ষান্তরে নামাযের জন্য এমন নকশাদার কাপড় হওয়া উচিৎ নয়, যাতে নামাযীর মন বা একাগ্রতা চুরি করে নেয়। একদা মহানবী (সাঃ) নকশাদার কোন কাপড়ে নামায পড়ার পর বললেন, “এটি ফেরৎ দিয়ে ‘আম্বাজানী’ (নকশাবিহীন) কাপড় নিয়ে এস। কারণ, এটি আমাকে আমার নামায থেকে উদাস করে ফেলেছিল।” (মিশকাত ৭৫৭, সহীহ বুখারী ৩৭৩, মুসলিম ৫৫৬, আবূ দাঊদ ৪০৫২, ইরওয়া ৩৭৬, আহমাদ ২৪০৮৭, সহীহ আল জামি ৮৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাত আদায়কারীর এমন লেবাস হওয়া উচিৎ নয়, যাতে কোন (বিচরণশীল) প্রাণীর ছবি থাকে। কারণ, এতেও নামাযীর মনোযোগ ছিনিয়ে নেয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) এর কক্ষের এক প্রান্তে একটি ছবিযুক্ত রঙিন পর্দা টাঙ্গানো ছিল। একদা মহানবী (সাঃ) বললেন, “তোমার এই পর্দা আমাদের নিকট থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।” (বুখারী ৩৭৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি বলেন, “যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি (বা মূর্তি) থাকে, সে ঘরে ফিরিশ্‌তা প্রবেশ করেন না।” (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহীহ জামে ১৯৬১, ১৯৬৩)।

অতএব ছালাতের বাইরেও এ ধরনের ছবিযুক্ত লেবাস মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, ইসলাম ছবি ও মূর্তির ঘোর বিরোধী।

যে কাপড়ে অমুসলিমদের কোন ধর্মীয় প্রতীক (যেমন ক্রুশ, শঙ্খ প্রভৃতি) থাকে, সে কাপড় (ও অলঙ্কার) ব্যবহার বৈধ নয়। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) বাড়িতে কোন জিনিসে ক্রুশ দেখলেই তা কেটে ফেলতেন।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৪১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুতো পবিত্র হলে, তা পায়ে রেখেই নামায পড়া বৈধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা ইয়াহুদীদের বিপরীত কর। (এবং জুতো ও মোজা পায়ে নামায পড়।) কারণ, ওরা ওদের জুতো ও মোজা পায়ে রেখে নামায পড়ে না।” (আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ৭৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ বাম হাতে না খায়, কেউ যেন এক পায়ে জুতো রেখে না চলে, কেউ যেন এমনভাবে একটি মাত্র কাপড় দ্বারা নিজেকে জড়িয়ে না নেয়, যাতে তার হাত বের করার পথ থাকে না এবং কেউ যেন একটাই কাপড় পরে, পাছার উপর ভর করে, পায়ের রলা ও হাঁটু দু’টিকে খাড়া করে পেটে লাগিয়ে, হাত দু’টিকে পায়ে জড়িয়ে, লজ্জাস্থান খুলে না বসে। (মিশকাত ৪৩১৫, সহীহ মুসলিম (২০৯৯)-৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২২৫, আবূ দাঊদ ৩৩৭৭, ইবনু মাজাহ ২১৭০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৯৭৪, মুসনাদে আহমাদ ১৪৭০৫, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৪৫৯৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৩৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ১৭৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

লুঙ্গির ভিতরে কিছু না পরে থাকলে এবং অনুরুপ বসলেও লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার ভয় থাকে। যেমন মহিলাদের শাড়ি-সায়াতেও ঐ একই অবস্থা হতে পারে। অতএব ঐ সব কাপড়ে ঐরুপ বসা বৈধ নয়।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ছালাতে তার লুঙ্গিকে অহংকারের সাথে গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে রাখে, তার এ কাজ হালাল নয় এবং আল্লাহর নিকট তার কোন সম্মান নেই।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহীহ জামে ৬০১২)।

প্রকাশ যে, গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়লে নামায কবুল হয় না -এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ নয়। (যয়ীফ আবূদাঊদ, সুনান ১২৪, ৮৮৪)

নাপাকীর সন্দেহ্‌ না থাকলে প্রয়োজনে মহিলাদের শাল, চাদর, বা শাড়ি গায়ে দিয়ে পুরুষরা নামায পড়তে পারে।

প্রয়োজনে একই কাপড়ের অর্ধেকটা (ঋতুমতী হলেও) স্ত্রীর গায়ে এবং পুরুষ তার অর্ধেকটা গায়ে দিয়ে নামায পড়তে পারে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) রাত্রে নামায পড়তেন। আমি মাসিক অবস্থায় তাঁর পাশে থাকতাম। আর আমার একটি কাপড় আমার গায়ে এবং কিছু তাঁর গায়ে থাকত।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৩৭০, মুসলিম ৭৬৭, ইবনু মাজাহ ৬৫২, আহমাদ (৬/৬৭, ৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে কাপড় পরে থাকা অবস্থায় মেয়েদের মাসিক হয়, সেই কাপড়ে মাসিক লেগে থাকার সন্দেহ্‌ না থাকলে পবিত্রতার গোসলের পর না ধুয়েও ঐ কাপড়েই তাদের নামায পড়া বৈধ। মাসিক লাগলেও যে স্থানে লেগেছে কেবল সেই স্থান ধুয়ে খুনের দাগ না গেলেও তাতেই নামায পড়া বৈধ ও শুদ্ধ হবে। (আবূদাঊদ, সুনান ৩৬৫, আহমাদ (হাঃ ৮৭৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেবল দুধ পান করে এমন শিশুপুত্র যদি কাপড়ে পেশাব করে দেয়, তাহলে তার উপর পানির ছিটা মেরে এবং না ধুয়ে তাতেই নামায হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি শিশুকন্যার পেশাব হয় অথবা দুধ ছাড়া অন্য খাবারও খায় এমন শিশু হয়, তাহলে তার পেশাব কাপড় থেকে ধুয়ে ফেলতে হবে। নচেৎ নামায হবে না। (মিশকাত ৪৯৭, ৫০২, আবূদাঊদ, সুনান ৩৭৪, ৩৭৭-৩৭৯, সহীহ বুখারী ২২৩, মুসলিম ২৮৭, আবূ দাঊদ ৩৭৪, নাসায়ী ৩০২, ইবনু মাজাহ্ ৫২৪, ইরওয়া ১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাপড়ের পেশাব রোদে শুকিয়ে গেলেও তাতে নামায হয় না। কাপড় থেকে পেশাব পানি দিয়ে ধোয়া জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৯৮)।

যে কাপড় পরে স্বামী-স্ত্রীর মিলন হয় সেই কাপড়েও নামায শুদ্ধ। অবশ্য নাপাকী লাগলে বা লাগার সন্দেহ্‌ হলে নয়। (আবূদাঊদ, সুনান ৩৬৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান সূত্রে বর্ণিত। তিনি তার বোন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী সহবাসকালে পরিহিত কাপড়ে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাতে কোনরূপ নাপাকি পরিদৃষ্ট না হলে পড়তেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৩৬৬, নাসায়ী ২৯৩, ইবনু মাজাহ ৫৪০, দারিমী ১৩৭৬, আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

টাইট-ফিট প্যান্ট ও শার্ট এবং চুস্ত পায়জামা ও খাটো পাঞ্জাবী পরে নামায মাকরুহ। টাইট হওয়ার কারণে নামাযে একাগ্রতা ভঙ্গ হয়। তাছাড়া কাপড়ের উপর থেকে (বিশেষ করে পিছন থেকে) শরমগাহের উঁচু-নীচু অংশ ও আকার বোঝা যায়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৫)।

মহিলাদের লেবাসে চুল, পেট, পিঠ,হাতের কব্জির উপরি ভাগের অঙ্গ (কনুই, বাহু প্রভৃতি) বের হয়ে থাকলে নামায হয় না। কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্তহাত বের হয়ে থাকবে। পায়ের পাতাও ঢেকে নেওয়া কর্তব্য। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৬/১৩৮, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৮, কিদারেমী, সুনান ৯৪পৃ:)।

অবশ্য সামনে কোন বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢেকে নিতে হবে।

ঘর অন্ধকার হলেও বা একা থাকলেও নামায পড়তে পড়তে ঢাকা ফরয এমন কোন অঙ্গ প্রকাশ পেয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। সেই নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৫)

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “কোন সাবালিকা মেয়ের মাথায় চাদর ছাড়া তার নামায কবুল হয় না।” (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৬২, সহীহ আবূ দাঊেদ ৬৪১, তিরমিযী ৩৭৭, ইরওয়া ১৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পুরুষের দেহের ঊর্ধ্বাংশের কাপড় (চাদর বা গামছা) সংকীর্ণ হলে মাথা ঢাকতে গিয়ে যেন পেট-পিঠ বাহির না হয়ে যায়। প্রকাশ যে, নামাযে পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা জরুরী নয়। সৌন্দর্যের জন্য টুপী, পাগড়ী বা মাথার রুমাল মাথায় ব্যবহার করা উত্তম। আর এ কথা বিদিত যে, আল্লাহর নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ কখনো কখনো এক কাপড়েও নামায পড়েছেন। তাছাড়া কতক সলফ সুতরার জন্য কিছু না পেলে মাথার টুপী খুলে সামনে রেখে সুতরা বানাতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ যে, পরিশ্রম ও মেহনতের কাজের ঘর্ম সিক্ত, কাদা বা ধুলোমাখা দুর্গন্ধময় লেবাসে মহান বাদশা আল্লাহর দরবার মসজিদে আসা উচিৎ নয়। কারণ, তাতে আল্লাহর উপস্থিত ফিরিশ্‌তা তথা মুসল্লীগণ কষ্ট পাবেন। আর এই জন্যই তো কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।

ওযু

(সহিহ হাদিস ভিত্তিক সহিহ পদ্ধতি)

ছালাতের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা অর্জন করা। যা দু’প্রকারের : আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, অর্থাৎ দৈহিক। ‘আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় হৃদয়কে যাবতীয় শিরকী আক্বীদা ও ‘রিয়া’ মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে অন্যের ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। ‘দৈহিক পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় শারঈ তরীকায় ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,পবিত্রতাবিহীন সালাত কবুল হয় না (সহিহ মুসলিম: ৪২৩-(২২৪)।

সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ), মুসআব ইবনু সা'দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) অসুস্থ ইবনু আমিরকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন ইবনু আমির তাকে বললেন, হে ইবনু উমার! আপনি কি আমার জন্যে আল্লাহর কাছে দু’আ করেন না? ইবনু উমার বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাহারাত ব্যতিরেকে সালাত কবুল হয় না। খিয়ানাতের সম্পদ থেকে সদাকাহও কবুল হয় না। আর তুমি তো ছিলে বাসরার শাসনকর্তা। (সহিহ মুসলিম-হাদিস একাডেমী-৪২৩,৪২৪, ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪২, মিশকাত, ৩০০, ৩০১, সহীহ বুখারী ১৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।

ওযূর আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা । পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।

ওযুর শুরুতে মুখে নিয়ত বলাঃ

মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান। অতএব তা পরিত্যাগ করে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। ( ছহীহ বুখারী হা/১; ছহীহ মুসলিম হা/৫০৩৬; মিশকাত হা/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর নামে প্রকাশিত ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও যরূরী মাসআলা মাসায়েল’ নামক বইয়ে বলা হয়েছে যে, ক্বিবলার দিকে মুখ করে উঁচু স্থানে বসে ওযূ করতে হবে। (হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ), ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়- মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা : মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯), পৃঃ ৪২; উল্লেখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের ছালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে চালু আছে। কোন্টি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহই ভাল জানেন)।

অথচ উক্ত কথার প্রমাণে কোন দলীল পেশ করা হয়নি। উক্ত দাবী ভিত্তিহীন।

ওযূর ফরযঃ ওযূর মধ্যে ফরয হলো চারটি।

(১) কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা।

(২) দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা,

(৩) (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও

(৪) দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা।

যেমন আল্লাহ বলেন,

 ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর. (মায়েদাহ ৬)। (সূরায়ে মায়েদাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। সেকারণে অনেকের ধারণা ওযূ প্রথম মদীনাতেই ফরয হয়। এটা ঠিক নয়। ইবনু আবদিল বার্র বলেন, মাক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ওযূতে কখনোই ছালাত আদায় করেননি। তবে মাদানী জীবনে অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে ওটার ফরযিয়াত ঘোষণা করা হয় মাত্র (দ্র : ফাৎহুল বারী ‘ওযূ’ অধ্যায় ১/১৩৪ পৃঃ)। যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল প্রথম দিকে যখন তাঁর নিকটে ‘অহি’ নিয়ে আসেন, তখন তাঁকে ওযূ ও ছালাত শিক্ষা দেন। (মিশকাত হা/৩৬৬, সহীহ আহমাদ ১৭৪৮০, দারাকুত্বনী ৩৯০, সহীহাহ্ ৭৪১, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অত্র আয়াতে বর্ণিত চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।

ওযুর ফজিলতঃ

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে কপাল চিতা ঘোড়া যেভাবে চেনা যায়.. ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের ওযূর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব’। (মুসলিম ২৪৯, মিশকাত ২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘অতএব যে চায় সে যেন তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে’। (সহিহ বুখারী ১৩৬, মুসলিম ২৪৬, মিশকাত ২৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব কোন্ বস্ত্ত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গোনাহ সমূহ অধিকহারে দূর করেন ও সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করেন?.....সেটি হ’ল কষ্টের সময় ভালভাবে ওযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে যাওয়া ও এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা’। (সহীহ মুসলিম ২৫১, মিশকাত ২৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) তিনি আরও বলেন, ‘ছালাতের চাবি হ’ল ওযূ’। (আবূ দাঊদ ৬১৮, তিরমিযী ৩, আহমাদ ১/১২৯, দারিমী ৭১৪, মিশকাত ৩১২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) তিনি বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবীরাহ ব্যতীত’। (মুসলিম ২২৮, মিশকাত হা/২৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়, যেমনভাবে তার মা তাকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করেছিল। (মুসলিম ৮৩২, মিশকাত ১০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) ওযূ করার পর সর্বদা দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল ওযূ’ এবং মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে। এই আকাংখিত সদভ্যাসের কারণেই জান্নাতে বেলাল (রাঃ)-এর অগ্রগামী পদশব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বপ্নের মধ্যে শুনেছিলেন। (মিশকাত হা/১৩২২, ১৩২৬, সহীহ বুখারী ১১৪৯, মুসলিম ২৪৫৮, ইরওয়া ৪৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২২৬, আহমাদ ৮৪০৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২০৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 তবে মসজিদে গিয়ে জামা‘আত চলা অবস্থায় পেলে কিংবা এক্বামত হয়ে গেলে সরাসরি জামা‘আতে যোগ দিবে। (মিশকাত ১০৫৮ , সহীহ মুসলিম ৭১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ধারাবাহিকভাবে ওযুর সহিহ নিয়মঃ

(১) নামাযী প্রথমে মনে মনে ওযুর নিয়ত করবেন। কারণ নিয়ত ছাড়া কোন কর্মই শুদ্ধ হয় না। (সহীহ বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২, মিশকাত ১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ‘বিসমিল্লাহ্’ বলে ওযু শুরু করবেন। কারণ শুরুতে তা না বললে ওযু হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ. ৩৯৭, ৩৯৮, ৩৯৯ দারিমী ৬৯১, ইরওয়াহ ৮১, মিশকাত ৪০৪, সহীহ আবূ দাউদ ৯০, ১০১, তিরমিযী ২৫। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) তিনবার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিবেন। হাতে ঘড়ি, চুড়ি, আংটি প্রভৃতি থাকলে তা হিলিয়ে তার তলে পানি পৌঁছাবেন। আঙ্গুল দিয়ে আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করবেন। (সহীহ আবূ দাঊদ ২৪৭, তিরমিযী ৪০, ইবনু মাজাহ্ ৪৪৬, সহীহুল জামি‘ ৪৭০০, মিশকাত ৪০৭) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এরপর পানির পাত্রে হাত ডুবিয়ে পানি নিতে পারেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১৫৯,১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২/৩, হাঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ যে, নখে নখ পালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত ওযু হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় ওযু-গোসল হয়ে যাবে।

(৪) তারপর ডানহাতে পানি নিয়ে ৩ বার কুল্লি করবেন।

(৫) অতঃপর পানি নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে টেনে নিয়ে বামহাত দ্বারা নাক ঝাড়বেন। এরুপ ৩ বার করবেন। তবে রোযা অবস্থায় থাকলে সাবধানে নাকে পানি টানবেন, যাতে গলার নিচে পানি না চলে যায়। (সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২, তিরমিযী ৭৮৮, নাসায়ী ১১৪, ইবনু মাজাহ্, মিশকাত ৪০৫, ৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য এক লোট পানিতেই একই সাথে অর্ধেক দিয়ে কুল্লি করে বাকি অর্ধেক দিয়ে নাক ঝাড়লেও চলে।  (সহীহ বুখারী ১৯২, মুসলিম ২৩৫, সহী বুখারী ১৮৫, সহীহ  মুসলিম ২৩৫, সহীহ বুখারী ১৮৬, সহীহ : বুখারী ১৯৯, মিশকাত ৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) অতঃপর মুখমন্ডল (এক কান থেকে অপর কানের মধ্যবর্তী এবং কপালের চুলের গোড়া থেকে দাড়ির নিচের অংশ পর্যন্ত অঙ্গ) ৩ বার পানি লাগিয়ে দুইহাত দ্বারা ধৌত করবেন। (বুখারী ১৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 এক লোট পানি দাড়ির মাঝে দিয়ে দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে আঙ্গুল চালিয়ে তা খেলাল করবেন। (মিশকাত ৪০৮,সহীহ আবূ দাঊদ ১৪৫, সহীহুল জামি‘ ৪৬৯৬ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 মহিলাদের কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ ওযু হবে না।

(৭) অতঃপর প্রথমে ডানহাত আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত এবং তদনুরুপ বামহাত ৩ বার (প্রত্যেক বারে পুরোহাতে পানি ফিরিয়ে রগড়ে) ধৌত করবেন।

(৮) অতঃপর একবার মাথা মাসাহ্‌ করবেন; (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৩৫, ৪৩৬, আবূ দাঊদ ৯৬, ১০৪, ১০৮, ১১৫ , নাসায়ী ৯৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাথা দুইবার মাসাহ করার দলিলঃ

আর-রুবাই বিনত মুআব্বিয ইবনু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করেন এবং তিনি তাঁর মাথা দুবার মাসহ (মাসেহ) করেন।

 (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৩৮, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ৩৩, ৩৪; আবূ দাঊদ ১২৬, ১২৯, ১৩১; আহমাদ ২৬৪৭৫, ইবনু মাজাহ ৩৯০, ৪১৮, ৪৪০, ৪৪১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এখানে উল্লেখ্য যে, একবার মাথা মাসাহ করার হাদিসগুলি বেশী শক্তিশালী বিধায় একাবার মাসাহ করা উত্তম।

নতুন পানি দ্বারা দুই হাতকে ভিজিয়ে আঙ্গুলগুলিকে মুখোমুখি করে মাথার সামনের দিক (যেখান থেকে চুল গজানো শুরু হয়েছে সেখান) থেকে পিছন দিক (গর্দানের যেখানে চুল শেষ হয়েছে সেখান) পর্যন্ত স্পর্শ করে পুনরায় সামনের দিকে নিয়ে এসে শুরুর জায়গা পর্যন্ত পূর্ণ মাথা মাসাহ্‌ করবেন। (মিশকাত ৩৯৪, সহীহ : বুখারী ১৯২, মুসলিম ২৩৫, সহীহ বুখারী ১৮৫, সহীহ : মুসলিম ২৩৫, সহীহ : বুখারী ১৮৬, সহীহ বুখারী ১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাথায় পাগড়ি থাকলে তার উপরেও মাসাহ্‌ করবেন। (মিশকাত ৩৯৯, সহীহ  মুসলিম ২৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাথা মাসাহ করার সহিহ হাদিসঃ

ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) কে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে উযূ করতেন তা আপনি আমাকে দেখাতে পারেন কি? আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ বলেন, হ্যাঁ। তিনি উযূর পানি নিয়ে ডাকলেন এবং তিনি তার হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত দুবার ধৌত করলেন, অতঃপর তিনবার কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন, অতঃপর মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করলেন, অতঃপর দু হাত কনুইসহ দুবার করে ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি উভয় হাত দিয়ে সামনের দিক থেকে পেছনের দিক পর্যন্ত তার মাথা মাসহ(মাসেহ) করলেন। তিনি তাঁর মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করলেন এবং দু হাত ঘাড় পর্যন্ত নিলেন, অতঃপর পেছন দিক থেকে দু হাত যেখান থেকে মাসহ(মাসেহ) শুরু করেন সেখানে নিয়ে আসেন, অতঃপর তার দু পা ধৌত করেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৩৪, বুখারী ১৫৮, ১৮৫, ১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৭, ১৯৯; মুসলিম ২৩৫-৩৬, তিরমিযী ২৮, ৩২, ৩৫; নাসায়ী ৯৭, ৯৮; আবূ দাঊদ ১১৮, ১২০; আহমাদ ১৫৯৯৬, ১৬০০৩, ১৬০১৭, ১৬০২৪, ১৬০৩৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩২, দারিমী ৬৯৪, ৭০৯; ইবনু মাজাহ ৪০৫, সহীহ আবূ দাউদ ১০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আমাদের সমাজে প্রচলিত যে, দুই হাতের তালু উল্টা করে নিয়ে আলাদাভাবে ঘাড় মাসাহ করা উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়। তাই ইহা করা ওযুর মধ্যে অতিরিক্ত কাজ বিধায় তা নিষেধ।

প্রকাশ যে, গর্দান মাসাহ্‌ করা বিধেয় নয়। বরং এটা বিদআত।

(৯) অতঃপর আর নতুন পানি না নিয়ে ঐ হাতেই দুই কান মাসাহ্‌ করবেন; শাহাদতের (তর্জনী) দুই আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর দিক এবং দুই বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের পিঠ ও বাহির দিক মাসাহ্‌ করবেন।

দুই কান মাসাহ করার হাদিসঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় কান মাসহ(মাসেহ) করেন। তিনি তাঁর তর্জনীদ্বয় তাঁর দু কানের ছিদ্রপথে প্রবেশ করান এবং তাঁর বুড়ো আঙ্গুলদ্বয় দু কানের বাইরের অংশে রাখেন। এভাবে তিনি দু কানের ভেতরের ও বাইরের অংশ মাসহ (মাসেহ) করেন।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৪০, ৪৪১, ১৪২, তিরমিযী ৩৬, নাসায়ী ১০২, আবূ দাঊদ ১১২, ১১৪, ১২১, ১২২, ১৩৭, ইরওয়াহ ৯০, তিরমিযী ৩৩, ৩৪; আবূ দাঊদ ১২৬, ১২৯, ১৩১; আহমাদ ২৬৪৭৫, ইবনু মাজাহ ৩৯০, ৪১৮, ৪৩৮, ৪৪০, মিশকাত ৪১৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (১০) অতঃপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা গাঁট পর্যন্ত ৩ বার করে রগড়ে ধুইবেন। আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল করে রগড়ে ধৌত করবেন। (মিশকাত ৪০৭, সহীহ আবূ দাঊদ ২৪৭, তিরমিযী ৪০, ইবনু মাজাহ্ ৪৪৬, সহীহুল জামি‘ ৪৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রিয় নবি (সাঃ) বলেন, “পূর্ণাঙ্গরুপে ওযু কর, আঙ্গুলের ফাঁকগুলো খেলাল কর আর রোযা না থাকলে নাকে খুব ভালরুপে পানি চড়াও। (তারপর তা ঝেড়ে ফেলে উত্তমরুপে নাক সাফ কর। (মিশকাত ৪০৫-৪০৬, সহীহ আবূ দাঊদ ১৪২, তিরমিযী ৭৮৮, নাসায়ী ১১৪, ইবনু মাজাহ্ ৪৪৮, সহীহ  তিরমিযী ৩৯, সহীহুল জামি ৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১১) এরপর হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর থেকে শরমগাহে ছিটিয়ে দেবেন। বিশেষ করে পেশাব করার পর ওযু করলে এই আমল অধিকরুপে ব্যবহার্য। যেহেতু পেশাব করে তাহারতের পর দু-এক কাতরা পেশাব বের হওয়ার অসঅসা থাকে। সুতরাং পানি ছিটিয়ে দিলে ঐ অসঅসা দূর হয়ে যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৬১, ৪৬৪, আবূ দাঊদ ১৬৬, মিশকাত ৩৬১, সহীহ আবূ দাউদ ১৫০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই আমল খোদ জিবরাঈল (আঃ) মহানবী (সাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৮৪১)।

ওযু সংক্রান্ত সহিহ হাদিসঃ

আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ), উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবান ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু' রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪২৬, ৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওযু শেষে সহিহ হাদিস ভিত্তিক দুয়াঃ

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউই পরিপূর্ণরুপে ওযু করার পর (নিম্নের যিক্‌র) পড়ে তার জন্যই জান্নাতের আটটি দ্বার উন্মুক্ত করা হয়; যে দ্বার দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারে।

“আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু অরাসূলুহ্”।

অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক তাঁর কোন অংশী নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রসূল। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, ৪৭০, তিরমিযী ৫৫, নাসায়ী ১৪৮, আহমাদ ১৬৯৪২, মুসলিম ২৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিরমিযীর বর্ণনায় এই দুআর শেষে নিম্নের অংশটিও যুক্ত আছে:-

“আল্লাহুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়াবীনা, অজ্‌আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্‌হিরীন”।

অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের দলভুক্ত কর। (মিশকাত ২৮৯,  সহীহ  মুসলিম ২৩৪, তিরমিযী ৫৫, সহীহুল জামি‘ ৬১৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওযুর শেষে নিম্নের দুআ পাঠ করলে তা শুভ্র নিবন্ধে লিখে সীল করা হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা নষ্ট করা হয় না।

“সুবহানাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত , আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক।”

অর্থাৎ, তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি হে আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমিই একমাত্র সত্য উপাস্য। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন (তওবা) করছি। (ত্বাহাবী, সহিহ তারগিব ২১৮নং, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ১/১৩৫, ৩/৯৪)

এ ছাড়া প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় নির্দিষ্ট দুআ অথবা শেষে ‘ইন্না আনযালনা’ পাঠ বিদআত।

ওযু সম্পর্কে জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

 (১) ওযূর অঙ্গগুলি একবার (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-১৫৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৯), দুইবার (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-১৫৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬০)  বা তিনবার (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১,মিশকাত ২৮৭,৩৯৫-৩৯৭) করে ধৌত করা যাবে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল (ছাঃ) তিনবার করেই বেশী ধুতেন।

তিনের অধিকবার বাড়াবাড়ি। রাসুল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি এর চেয়ে বাড়িয়ে করলো সে মন্দ করলো, সীমালঙ্ঘন করলো ও যুলম করলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪১৭, সহীহ নাসায়ী ১৪০, ইবনু মাজাহ্ ৪২২, সহীহাহ্ ২৯৭০,ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৭২-৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ওযূর মধ্যে ‘তারতীব’ বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী। (সূরা মায়েদাহ ৬; নায়লুল আওত্বার ১/২১৪, ২১৮)।

(৩) ওযূর অঙ্গগুলির নখ পরিমাণ স্থান শুষ্ক থাকলেও পুনরায় ওযূ করতে হবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-৪৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৩, সুবুলুস সালাম হা/৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পানি দিয়ে নিজের দাড়ি খিলাল করতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৪০৮, ৪০৯, সহীহ  তিরমিযী ৩১, দারিমী ৭০৪, সহীহ আবূ দাঊদ, ৯৮, ১৪৫, সহীহুল জামি‘ ৪৬৯৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪২৯, ৪৩০, ৪৩১, ৪৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাত ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকসমূহ দুইবার খিলাল করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৩১, ৪৪৬, ৪৪৭,৪৪৮, আবূ দাঊদ ১৪৫, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ৩৯, ৪০, ৭৭৮, আহমাদ ১৭৫৪৯, নাসায়ী ৮৭, ১১৪; আবূ দাঊদ ১৪২, ১৪৮, ২৩৬৬; আহমাদ ১৫৯৪৫-৪৬, দারিমী ৭০৫, সহীহ আবূ দাউদ ১৩৫, মিশকাত, ৪০৬, ৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(৪) শীতে হৌক বা গ্রীষ্মে হৌক পূর্ণভাবে ওযূ করতে হবে। (মুসলিম ২৪১, বুখারী ৯৬, মিশকাত হা/৩৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিন্তু পানির অপচয় করা যাবে না। আল্লাহর নবী (ছাঃ) সাধারণতঃ এক ‘মুদ্দ’ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে ওযূ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৪৩৯,সহীহ  বুখারী ২০১, মুসলিম ৩২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) ওযূর জন্য ব্যবহৃত পানি বা ওযূ শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি নাপাক হয় না। বরং তা দিয়ে পুনরায় ওযূ বা পবিত্রতা হাছিল করা চলে। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম একই ওযূর পাত্রে বারবার হাত ডুবিয়ে ওযূ করেছেন। (দারিমী ৭০১, মিশকাত ৩৯৪, ৪১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) ওযূর অঙ্গগুলি ডান দিক থেকে ধৌত করা সুন্নাত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪০১, ৪০২, মিশকাত ৪০০, ৪০১, বুখারী ১৬৮, ৪২৬, ৫৩৮০, ৫৮৫৪, ৫৯২৬; মুসলিম ২৬৮/১-৩, নাসায়ী ১১২, ৪২১, ৫২৪০; আবূ দাঊদ ৪১৪০, আহমাদ ২৪১০৬, ২৪৪৬৯, ২৪৬২০, ২৪৭৯৩, ২৪৮৪৫, ২৫০১৮, ২৫১৩৬, ২৫২৩৫, ২৫৭৫১, ইরওয়াহ ৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(৭) ওযূ শেষে পবিত্র তোয়ালে, গামছা বা অনুরূপ কিছু দ্বারা ভিজা অঙ্গ মোছা জায়েয আছে। (ইবনু মাজাহ ৪৬৫, ৪৬৮, বুখারী ২৮০, ৩৫৭, ১১০৪, ১১৭৬, ৩১৭১, ৪২৯২, ৬১৫৮; মুসলিম ৩৩১-৫, তিরমিযী ৪৭৪, ২৭৩৪; নাসায়ী ২২৫, ৪১৫; আবূ দাঊদ ১২৯০-৯১, আহমাদ ২৬৩৪৮, ২৬৩৫৬, ২৬৩৬৪, ২৬৮৩৩, ২৬৮৪০, ২৬৮৪২; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৫৮-৫৯, দারিমী ১৪৫২-৫৩, মাজা ৬১৪,১৩২৩, ১৩৭৯। ‘আওনুল মা‘বূদ ১/৪১৭-১৮; নায়ল ১/২৬৬, রওয ৩৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) প্রতি ওয়াক্তের সালাতের জন্য ওযু করা এবং একই ওযুতে কয়েক ওয়াক্তের সালাত আদায় করা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ওয়াক্তের সালাতের জন্য উযূ করতেন এবং আমরা একই উযূতে কয়েক ওয়াক্তের সালাত পড়তাম।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫০৯, ৫১০, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ২১৪, তিরমিযী, ৬১, ৫৮৬০, নাসায়ী ১৩১, ১৩৩, আবূ দাঊদ ১৬৩, ১৬৪, ১৭১, ১৭২, আহমাদ ১১৯৩৭, ১২১৫৫, ১৩৩২৩, ২২৪৫৭, ২২৫২০, দারিমী, ৬৫৯, ৭২০, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: মুসলিম ২৭৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে মক্কা বিজয়ের দিন তিনি এক ওযূতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন এবং এ সময় মোযার উপর ‘মাসাহ’ করেন। (মুসলিম ৬৪২, আবুদাঊদ ১৭২, নায়লুল আওত্বার ১/৩১৮)।

(৯) মুখে ওযূর নিয়ত পড়ার কোন দলীল নেই। ওযূ করাকালীন সময়ে পৃথক কোন দো‘আ আছে বলে জানা যায় না। অনুরূপভাবে ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পৃথক পৃথক দো‘আর হাদীছ ‘জাল’। (মুহাম্মাদ তাহের পট্টনী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; শাওকানী, আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহা-দীছিল মাওযূ‘আহ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩, পৃঃ ১৩)।

ওযূ শেষে সূরায়ে ‘ক্বদর’ পাঠ করার হাদীছ মওযূ বা জাল। (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৪৪৯)।

(১০) গর্দান মাসাহ করার কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ নেই। ইমাম নবভী (রহঃ) একে ‘বিদ‘আত’ বলেছেন। (আহমাদ ১৫৯৯৩, আবুদাঊদ ১৩২, নায়লুল আওত্বার ১/২৪৫-৪৭)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

‘যে ব্যক্তি ওযূতে ঘাড় মাসাহ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ী পরানো হবেনা’ বলে যে হাদীছ বলা হয়ে থাকে, সেটি মওযূ বা জাল। (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪)।

(১১) ‘মাসাহ’ অর্থ স্পর্শ করা। পারিভাষিক অর্থ, ‘ওযূর অঙ্গে ভিজা হাত নরমভাবে বুলানো, যা মাথা বা মোযার উপরে করা হয়’। জুতা ব্যতীত যে বস্ত্ত দ্বারা পুরা পায়ের পাতা টাখনুর উপর পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয়, তাকে ‘মোযা’ বলা হয়। চাই সেটা চামড়ার হৌক বা সুতী হৌক বা পশমী হৌক, পাতলা হৌক বা মোটা হউক’। আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ ৮০ জন ছাহাবী মোযার উপর মাসাহর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছ মুতাওয়াতির পর্যায়ভুক্ত’। নববী বলেন, সফরে বা বাড়ীতে প্রয়োজনে বা অন্য কারণে মোযার উপর মাসাহ করা বিষয়ে বিদ্বানগণের ঐক্যমত রয়েছে। (মির‘আতুল মাফাতীহ ২/২১২)।

(১২) ওযূ সহ পায়ে মোযা পরা থাকলে তার উপর মাসাহ করা জায়েজ। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত ৫১৮ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মোযার উপরে মাসাহ’ অনুচ্ছেদ-৯; আবুদাঊদ ১৫১; নায়লুল আওত্বার ১/২৭৩,বুখারী ২০৬ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নতুন ওযূর সময়ে মোযার উপরিভাগে। (মিশকাত ৫২২, ৫২৫, সহীহ : আবূ দাঊদ ১৬৪, তিরমিযী ৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুক্বীম অবস্থায় একদিন একরাত ও মুসাফির অবস্থায় তিনদিন তিনরাত একটানা মোযার উপরে মাসাহ করা চলবে, যতক্ষণ না গোসল ফরয হয় (অথবা খুলে ফেলা হয়)। (মিশকাত ৫১৭, ৫১৯, ৫২০, সহীহ  মুসলিম ২৭৬, নাসায়ী ১২৭, ১২৯, ইবনু মাজাহ্ ৫৫২, আহমাদ ৭৮০, হাসান  ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯২, দারাকুত্বনী ১/২০৪, বায়হাক্বী ১/২৮১, তালখীস ৫৮ পৃঃ, হাসান তিরমিযী ৯৬, ইরওয়া ১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) ওযূর অঙ্গে যখমপট্টি বাঁধা থাকলে এবং তাতে পানি লাগলে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলে তার উপর দিয়ে ভিজা হাতে মাসাহ করবে। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭৩; ইবনু মাজাহ, নায়লুল আওত্বার ১/৩৮৬, ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়)।

(১৪) পবিত্র জুতা বা যে কোন ধরনের পাক মোযার উপরে মাসাহ করা চলবে। (মিশকাত ৫২৩, সহীহ আবূ দাঊদ ১৫৯, তিরমিযী ৯৯, ইবনু মাজাহ্ ৫৫৯, ইরওয়া ১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুতার নীচে নাপাকী লাগলে তা মাটিতে ভালভাবে ঘষে নিলে পাক হয়ে যাবে এবং ঐ জুতার উপরে মাসাহ করা চলবে। (মিশকাত ৫০৩, ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৭৮৬; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৯১ পৃঃ, সহীহ : আবূ দাঊদ ৩৮৫, ইবনু মাজাহ্ ৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৫) হালাল পশুর মল-মূত্র পাক। (মিশকাত ৩৫৩৯ ‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়-১৬, অনুচ্ছেদ-৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১, সহীহ বুখারী ৩০১৮, ৬৮০২, মুসলিম ১৬৭১, আবূ দাঊদ ৪৩৬৪, নাসায়ী ৪০২৫, ইবনু মাজাহ ২৫৭৮, আহমাদ ১২৬৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব এসব পোষাকে লাগলে তা নাপাক হবে না।

(১৬) দুগ্ধপোষ্য কন্যাশিশুর পেশাব কাপড়ে লাগলে ঐ স্থানটুকু ধুয়ে ফেলবে। ছেলে শিশু হ’লে সেখানে পানির ছিটা দিবে। (মিশকাত ৫০১-০২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০, সহীহ আবূ দাঊদ ৩৭৫, ৩৭৬, ইবনু মাজাহ্ ৫২২, আহমাদ ৬/৩৩৯, হাকিম ১/১৬৬, নাসায়ী ৩০৪, সহীহুল জামি ৮১১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih))

(১৭) বীর্য ও তার আগে-পিছে নির্গত সর্দির ন্যায় আঠালো বস্ত্তকে যথাক্রমে মনী, মযী ও অদী বলা হয়। উত্তেজনাবশে বীর্যপাতে গোসল ফরয হয়। বাকী দু’টিতে কেবল অঙ্গ ধুতে হয় ও ওযূ করতে হয়। কাপড়ে লাগলে কেবল ঐ স্থানটুকু ধুবে বা সেখানে পানি ছিটিয়ে দিবে। আর শুকনা হ’লে নখ দিয়ে খুটে ফেলবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০-২১)। ঐ কাপড়ে ছালাত সিদ্ধ হবে।

 ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘মাযী’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘মাযীর’ কারণে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) আর ‘মানীর’ কারণে গোসল করতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৩১১, সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫০৪, ৫০৫, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ১২৩, ১৭৮, ২৬৯; মুসলিম ৩০১-৩, তিরমিযী ১১৪, ১১৫, নাসায়ী ১৫২-৫৪, ১৫৭, ১৯৩-৯৪, ৪৩৫-৩৯, আবূ দাঊদ ২০৬-৭, ২১০, আহমাদ ৬০৭, ৬১৯, ৬৬৪, ৮৪৯, ৮৫৮, ৮৭০, ৮৭২, ৮৯২, ৯৮০, ১০১২, ১০২৯, ১০৭৪, ১২৪২, ১৫৫৪৩, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: নাসায়ী ১৫৬, আহমাদ ১৬২৮৪, ২৩৩০৭, ২৩৩১৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৮৬, দারিমী ৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওযু নষ্ট হওয়ার কারণসমূহঃ

(১) পেশাব ও পায়খানা দ্বার হতে কিছু (পেশাব, পায়খানা, বীর্য,  রক্ত, কৃমি, পাথর প্রভৃতি) বের হলে ওযু ভেঙ্গে যায়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/২২০)

অপারেশন করে পাইপের মাধ্যমে প্রস্রাব-পায়খানা বের করলে বা শরীরের কোন ক্ষতস্থান থেকে বেশি পরিমাণ রক্ত, বমি বা পুঁজ বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায় । (ফাতাওয়া বিন বায ৩/২৯৪)।

(২) বায়ু নির্গত হওয়ার শব্দ বা গন্ধ পেলে ওযু করা। শব্দ বা গন্ধ না পেলে ওযুর প্রয়োজন নেই।

সাঈদ ও আব্বাদ ইবনু তামীমের চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অভিযোগ করা হল যে, কোন ব্যাক্তি তার সালাতের মধ্যে কিছু পাওয়ার (বায়ু নির্গত হওয়ার) আশঙ্কা করছে। তিনি বলেনঃ (উযূ (ওজু/অজু/অযু) ভঙ্গ হয় না) যতক্ষণ না সে বায়ু নির্গত হওয়ার গন্ধ পায় অথবা শব্দ শোনে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫১৩, ৫১৪, ৫১৫, ৫১৬, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ১৩৭, ১৭৭, ২০৫৬; মুসলিম ৩৬১, নাসায়ী ১৬০, মিশকাত ৩১০, ইরওয়াহ ১০৭, ১৪৫, সহীহ, আবূ দাউদ ১৭৬ ১৬৮, ১৬৯, তিরমিযী ৭৪, আহমাদ ৯০৫৭, ৯৩৩১, ৯৭৪৩, ১৫০৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) মযী নির্গত হলে ওযু করা।

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মযী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তা নির্গত হলে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে হবে এবং বীর্য নির্গত হলে গোসল করতে হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৫০৪, ৫০৫, তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ১২৩, ১৭৮, ২৬৯; মুসলিম ৩০১-৩, তিরমিযী ১১৪, ১১৫, নাসায়ী ১৫২-৫৪, ১৫৭, ১৯৩-৯৪, ৪৩৫-৩৯, আবূ দাঊদ ২০৬-৭, ২১০, আহমাদ ৬০৭, ৬১৯, ৬৬৪, ৮৪৯, ৮৫৮, ৮৭০, ৮৭২, ৮৯২, ৯৮০, ১০১২, ১০২৯, ১০৭৪, ১২৪২, ১৫৫৪৩, খরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: নাসায়ী ১৫৬, আহমাদ ১৬২৮৪, ২৩৩০৭, ২৩৩১৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৮৬, দারিমী ৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) কোন প্রকারে বেহুশ বা জ্ঞানশূন্য হলে ওযু নষ্ট হয়।

(৫) গাঢ়ভাবে ঘুমিয়ে পড়লে ওযু ভাঙ্গে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “চোখ হল মলদ্বারের বাঁধন। সুতরাং যে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন ওযু করে।” (মিশকাত ৩১৬, জামে ৪১৪৯, সহীহ : আবূ দাঊদ ২০৩, সহীহুল জামি ৭১১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য হাল্কা ঘুম বা ঢুল (তন্দ্রা) এলে ওযু ভাঙ্গে না। সাহাবায়ে কেরাম নবী (সাঃ) এর যুগে এশার সালাতের জন্য তাঁর অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঢুলতেন। অতঃপর তিনি এলে তাঁরা সালাত পড়তেন, কিন্তু নতুন করে আর ওযু করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩১৭, সহীহ আবূ দাঊদ ২০০, তিরমিযী ৭৮, মুসলিম ৩৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) লজ্জাস্থান স্পর্শ করাঃ

বিনা আবরণে হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হলে ওযু ভাঙবে না।

(ক) বুছরা বিনতে সাফওয়ান (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করল (তার ওযূ ছুটে গেল, অতএব) সে যেন আবার ওযূ করে নেয়।”

হাদিসটি নিম্নরুপ:

‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর সূত্রে বর্ণিত। তিনি ‘উরওয়াহ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি মারওয়ান ইবনু হাকামের নিকট গিয়ে অযু নষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করলাম। মারওয়ান বললেনঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলেও (অযু করতে হবে)। ‘উরওয়াহ বললেনঃ আমি এ বিষয়টি অবহিত নই। মারওয়ান বললেন, ‘বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা আমাকে জানালে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ কেউ নিজ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে যেন অযু করে।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৮১, সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৭৯, ৪৮০, ৪৮১, ৪৮২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩১৯, দারিমী ৭২৪-২৫, মালিক ১/৪২/১৫, ৯১), আহমাদ (৬/৪০৬/৪০৭), হুমাইদী ৩৫২, তিরমিযী, ৮২, আহমাদ (৬/৪০৬), নাসায়ী ১৬৩-৬৪,  ইরওয়াহ  ১১৬, ১১৭, সহীহুল জামি ৬৫৫৪,। হাদিসের মানঃ সহিহ।

হাতের কব্জির উপরের অংশ দ্বারা স্পর্শ হলে ওযু ভাঙ্গবে না। (আলমুমতে, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ১/২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উম্মে হাবীবা (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে (পুরুষ বা মেয়ে) লোক তার লিঙ্গ স্পর্শ করল (তার ওযু ভঙ্গ হয়ে গেল, অতএব) সে যেন আবার ওযূ করে নেয়।” (ইবনে মাজাহ: ৪৮১,  ইরওয়াহ ১১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(গ) আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কোন নারী বা পুরুষ তার হাত দিয়ে কাপড়ের আবরণ ছাড়া সরাসরি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে আবার ওযূ করতে হবে।” (ইবনে হিব্বান: ২১০)।

এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, লিঙ্গে হাতের ছোঁয়া লাগা ওযু ভঙ্গের কারণ । কিন্তু হাতের কজির উপরের অংশের ছোঁয়া লাগলে ওযু নষ্ট হবে না। (শারহুল মুমতি) পক্ষান্তরে হানাফী ফকীহগণের মতে লিঙ্গ স্পর্শ ওযু ভঙের কারণ নয়। তাদের দলীল হলো, তলক ইবনে আলী (রা)-এর একটি হাদীস । একবার এক ব্যক্তি (সম্ভবত সে একজন বেদুঈন) এসে রাসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করল,

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি নামাযরত অবস্থায় তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তার সম্পর্কে আপনার মত কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটা তোমার শরীরের এক টুকরা গোশত বা একটি অংশ মাত্র।”

হাদিসটি নিম্নরুপ:

ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, উযূ করার পর কেউ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে এর হুকুম কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সেটা তো মানুষের শরীরেরই একটা অংশবিশেষ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩২০, আবূ দাঊদ ১৮২, তিরমিযী ৮৫, নাসায়ী ১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ ।

উল্লেখ্য যে, লিঙ্গ স্পর্শে ওযু ভেঙ্গে যায় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যাও বেশি এবং এগুলো সহীহ হাদীস । তাই অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন, লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভেঙে যায়- এ মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অতএব, সাবধান! ওযূ করে গোসল করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কাপড়ের আবরণ ছাড়াই যদি লজ্জাস্থান হাত দ্বারা মাজাঘষা করে তাহলে কিন্তু ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে । আর এ অবস্থায় যদি কেউ নামায পড়ে বা ইমামতী করে তাহলে তো সর্বনাশ! তাই, হয় কাপড়ের উপর দিয়ে লিঙ্গ মাজাঘষা করবে, নতুবা পুনরায় ওযূ করে নেবে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের কারো হাত নিজের পুরুষাঙ্গের উপর লাগলে এবং হাত ও পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন আবরণ না থাকলে তাকে উযূ করতে হবে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৩২১, মুসনাদে শাফি‘ঈ ১২ পৃঃ, দারাকুত্বনী ১/১৪৭, সহীহুল জামি ৩৬২।হাদিসের মানঃ সহিহ।

সহিহ মাসআলাহঃ

লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব কি না?

*লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে না- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহঃ

(১) ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব ইবনু আলী বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেন, আমি আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছি অথবা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি সালাতরত অবস্থায় স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে তার উপর উযু ওয়াজিব হবে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, এটা তো তোমার শরীরের একটি টুকরা মাত্র।’’ হাদীসটির চারটি সূত্রে রয়েছেঃ

প্রথম সূত্রঃ ইবনু মাজাহ বাদে অন্যান্য সুনান সংকলগণ বর্ণনা করেছেন, মুলাযিম ইবনু আমর ও আবদুল্লাহ ইবনু বাদর থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব আলী থেকে তার পিতা সূত্রে মারফূভাবে...। ইমাম তিরমিযী বলেন, এ অনুচ্ছেদে আবূ উমামাহ থেকে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। হাদীসটির এক সূত্রে আইয়ূব ইবনু উতবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু জাবির রয়েছে। আইয়ূব ও মুহাম্মাদ সম্পর্কে কতিপয় মুহাদ্দিসীনে কিরাম সমালোচনা করেছেন। অতএব মুলাযিম ইবনু আমরের হাদীসটিই অধিকতর সহীহ এবং উত্তম। ইমাম বায়হাক্বী সুনানুল কুবরাতে বলেনঃ সনদের এই মুলাযিম ইবনু আমরের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।

 

দ্বিতীয় সূত্রঃ যা বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদ ইবনু জাবির থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব থেকে। সনদে মুহাম্মাদ ইবনু জাবির দুর্বল। ফাল্লাস বলেনঃ তিনি মাতরূক। ইবনু মাঈন বলেন, তিনি কিছুই না।

তৃতীয় সূত্রঃ আব্দুল হামীদ ইবনু জা‘ফার থেকে আইয়ূব ইবনু মুহাম্মাদ আল-আজালী থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব সূত্রে। এটি ইবনু আদীতে রয়েছে। সনদের আব্দুল হামীদকে সাওরী, আজলী ও ইবনু মাঈন দুর্বল বলেছেন।

চতুর্থ সূত্রঃ আইয়ূব ইবনু উতবাহ আল ইয়ামানী থেকে ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব থেকে তার পিতা সূত্রে। এটি বর্ণনা করেছেন আহমাদ। ইবনু মাঈন বলেনঃ আইয়ূব ইবনু উতবাহ কিছুই না। ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তিনি মুযতারিবুল হাদীস।

আলোচ্য হাদীসের প্রথম সূত্রটি সম্পর্কে ত্বাহাভী ‘শারহু মাআনিল আসার’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসের সানাদ মুস্তাকিম, এর সানাদ ও মাতান মুযতারিব নয়। তিনি আলী ইবনুল মাদীনী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এ হাদীসখানা আমার নিকট বুসরাহর হাদীসের তুলনায় উত্তম।’ ইমাম বায়হাক্বী বলেন, হাদীসটি ইকরিমা ইবনু ‘আম্মার ও ত্বালক্ব থেকে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। ইকরিমাহ ইবনু ‘আম্মারের তা‘দীল নিয়ে সমালোচনা আছে। ইয়াহইয়া ইবনু কাত্তান ও আহমাদ ইবনু হাম্বাল তাকে কটাক্ষ করেছেন। আর ইমাম বুখারী বলেছেন, তিনি খুবই দুর্বল।

উল্লেখ্য ত্বালক্ব ইবনু আলীর হাদীসকে ইমাম ত্বাবারানী, ইবনু হিব্বান, ফাল্লাস ও ইবনু হাযম সহীহ বলেছেন। কিন্তু ইমাম ত্বাবারানী, ইবনু হিব্বান, ইবনুল ‘আরাবী, হাযিমী ও অন্যরা বলেছেন যে, ত্বালক্ব ইবনু আলীর হাদীসটি মানসূখ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ত্বালক্ব ইবনু আলীর হাদীসকে যারা দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা হলেন ইমাম শাফিঈ, আবূ হাতিম, আবূ যুর‘আহ, ইমাম বায়হাক্বী, ইবনুল জাওযী এবং আরো অনেকে। ইয়াহইয়াহ ইবনু মাঈন বলেনঃ আমি আমার পিতা এবং আবূ যুরআহকে ক্বায়স বর্ণিত এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেনঃ ক্বায়স ইবনু ত্বালক্ব ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন যাদের দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা উভয়ে তাকে সন্দেহ করেন এবং প্রমাণযোগ্য মনে করেন না।

(২) জা‘ফার ইবনু যুবায়র থেকে কাসিম থেকে আবূ উমামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি সালাতরত অবস্থায় আমার জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোনো অসুবিধা নেই। সেটা তো তোমার শরীরের একটি টুকরা মাত্র। (ইবনু মাজাহ, হাঃ ৪৮৪। হাদীসটি দুর্বল। ইমাম বুখারী, ইমাম নাসায়ী ও ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ সনদের জা‘ফার মাতরূক এবং কাসিম দুর্বল।

(৩) ফাযল ইবনু মুখতার থেকে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু মুয়াহ্হাব থেকে উসমাহ ইবনু মালিক আর-খিতমী (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাতে চুলকাচ্ছিলাম, এক পর্যায়ে আমার হাত আমার লজ্জাস্থানে লেগে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও এরূপ করে থাকি। (দারাকুতনী, হাদীসটি দুর্বল। ইবনু আদী বলেনঃ সনদের ফাযল ইবনু মুখতার বর্ণিত হাদীসাবলী মুনকার। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি মাজহুল, তার বর্ণিত হাদীস মুনকার। তিনি বাতিল হাদীসাবলী বর্ণনা করেন)

এছাড়াও এ মতের পক্ষে কতিপয় সাহাব থেকে কিছু আসার বর্ণিত আছে। তারা হলেন, আলী, ইবনু মাসঊদ, আম্মার ইবনু ইয়াসার, ইমরান ইবনুল হুসাইন, হুযাইফাহ, সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত, ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত এবং আবূ দারদা (রাঃ) বর্ণিত আসার। এ মতের পক্ষে রয়েছে সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের এক রিওয়ায়াত, সাঈদ ইবনু যুবায়র, ইবরাহীম নাখঈ, রবী‘আহ, সুফিয়ান সাওরী, আবূ হানীফাহ ও তার সাথীবর্গ এবং কূফাবাসী। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈন ও ইমামগণ-এর বিপরীত মত পোষণ করেছেন। অর্থাৎ জমহুর উলামায়ি কিরাম এ মতের বিপক্ষে। সামনে তাদের বর্ণনা আসবে।

* লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব- এ মর্মে বর্ণিত হাদীসসমূহঃ

(১) বুসরাহ বিনতু সফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি স্বীয় জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয়। (হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মালিক, শাফিঈ, আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, তিরমিযী, দারাকুতনী ও হাকিম। এবং তারা সকলেই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, দারিমী, তায়ালিসি, ত্বাবারানী সাগীর গ্রন্থে বুসরাহ থেকে একাধিক সনদে মারফূভাবে। হাদীসটিকে আরো যারা সহীহ বলেছেন তারা হলেন, ইমাম ইবনু মাঈন, হাযিমী, বায়হাক্বী ও ইবনু হিববান প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম। শায়খ আলবানী একে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া (হা/ ১১)। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, এটিই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বাধিক বিশুদ্ধতম)।

(২) উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন উযু করে নেয়।

(হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী। হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম আবূ যুর‘আহ, ইমাম হাকিম। ইবনুস সাকান বলেন, এর কোনো দোষ আছে বলে আমার জানা নেই। শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন ইরওয়া হা/ ১১৭)।

হাফিয ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে এ হাদীসটি একদল সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা হলেনঃ বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, জাবির, আবূ হুরাইরাহ, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর, যায়দ ইবনু খালিদ, সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, উম্মু হাবীবাহ, আয়িশাহ, উম্মু সালামাহ, ইবনু আব্বাস, ইবনু উমার, আলী ইবনু ত্বালক্ব, নু‘মান ইবনু বাশীর, আনাস, উবাই ইবনু কা‘ব, মু‘আবিয়্যাহ ইবনু হায়দাহ, ক্বাবীসাহ, উরওয়া বিনতু উনাইস (রাঃ)।

(৩) ‘আমর ইবনু শু‘আইব থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ যদি স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয় এবং কোনো মহিলা যদি স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সেও যেন উযু করে নেয়। (আহমাদ, দারাকুতনী, বায়হাক্বী, আলবানী বলেন, সর্বোপরি হাদীসটির সানাদ হাসান এবং পূর্বের হাদীসের কারণে মাতান সহীহ, ইরওয়া ১/১৫১-১৫২)। বিশুদ্ধ সনদে দারাকুতনী ও অন্যত্র ‘আমর ইবনু শু‘আইবের স্বীয় পিতা থেকে শ্রবণ এবং শু‘আইবের শ্রবণ তার দাদা থেকে প্রমাণিত আছে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযীও বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ‘কিতাবুল ইলালে’ বর্ণনা করেন যে, ইমাম বুখারী বলেছেনঃ এটি আমার নিকটে সহীহ)।

(৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তার হাত জননেন্দ্রীয় পর্যন্ত পৌঁছায় এবং জননেন্দ্রীয়ের উপর কোনো আবরণ না থাকে তাহলে তার উপর উযু ওয়াজিব হবে। (ইবনু হিব্বান, হাদীসটিকে ইবনু হিব্বান, ইমাম হাকিম ও ইবনু আব্দুল বার (রহঃ) সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। ইবনুস সাকান বলেন, এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে এ হাদীসটি অতি উত্তম)।

(৫) যায়দ ইবনু খালিদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে সে যেন উযু করে নেয়। (আহমাদ, বাযযার, ত্বাবারানী, হাদীসের সকল বর্ণনাকারী সহীহ এর মানদন্ডে উত্তীর্ণ। এতে ইবনু ইসহাক মুদাল্লিস হলেও তিনি এটি হাদ্দাসানী শব্দে বর্ণনা করেছেন। আত-তালখীসুল হাবীর গ্রন্থে রয়েছেঃ ইসহাক ইবনু রাওয়াহ স্বীয় মুসনাদ গ্রন্তে মুহাম্মাদ ইবনু বাকর আল-বুরসানী (রহঃ) সূত্রে ইবনু জুরাইজ থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেন, এই হাদীসের সানাদ সহীহ)।

(৬) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার জননেন্দ্রীয় স্পর্শ করলে তার উপর উযু করা আবশ্যক। (ইবনু মাজাহ, হা/ ৪৮৫, কেউ কেউ এটি মুরসালভাবেও বর্ণনা করেছেন। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

(৭) আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন উযু করে নেয়। (ইবনু মাজাহ, হা/ ৪৮৭, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।

(৮) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে নেয়। (দারাকুতনী, নাসবুর রায়াহ, হাদীসের সনদে ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ফারুবী নির্ভরযোগ্য। ইমাম বুখারী একে স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

(৯) ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও ঐ প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিলেন যাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে সে যেন উযু করে নেয়। (হাদীসটি ইমাম ত্বাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি সহীহ। তিনি বলেন, সম্ভবতঃ ত্বালক্ব ইবনু আলী প্রথমে উযু না করা সম্পর্কিত প্রথমোক্ত হাদীসখানা শ্রবণ করেছেন, অতঃপর পরবর্তী হাদীসখানা শ্রবণ করেছেন। তাহলেই এ হাদীস বুসরাহ, উম্মু হাবীবাহ, আবূ হুরাইরাহ এবং যায়দ ইবনু খালিদ সহ অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম যাদের থেকে লজ্জাস্থান স্পর্শ করার পর উযু করার বিধান বর্ণিত আছে তাদের হাদীসের সাথে মিলে যায়। এতে বুঝা যায়, তিনি নাসিখ-মানসূখ উভয় ধরণের হাদীসই শ্রবণ করেছেন)।

এছাড়াও এ মতের পক্ষে অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরামগণের আসার বর্ণিত আছে। যাদের মতে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু ওয়াজিব হবে। তারা হলেনঃ উমার ইবনুল খাত্তাব, তার পুত্র ইবনু উমার, আবূ আইয়ূব আনসারী, যায়দ ইবনু খালিদ, আবূ হুরাইরাহ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস, জাবির, আয়িশাহ, উম্মু হাবীবাহ, বুসরাহ বিনতু সাফওয়ান, সা‘দ আবূ ওয়াক্কাসের এক রিওয়ায়াত এবং ইবনু আব্বাসের এক রিওয়ায়াত (রাঃ)। এছাড়া তাবেঈনদের থেকে রয়েছেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার, আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ, আবান ইবনু উসমান, মুজাহিদ, জাবির ইবনু যায়দ, যুহরী মুসআব ইবনু সা‘দ, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর, সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের বিশুদ্ধ মত, হিশাম ইবনু উরওয়াহ, আওযাঈ, শামের অধিকাংশ আলিম। এছাড়া ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম মালিকের প্রসিদ্ধ মত। অর্থাৎ জমহুর উলামায়ি কিরাম এ মতের পক্ষে রয়েছেন।

জাবির ইবনু যায়দ সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তাহলে উযু ভঙ্গ হবে কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল বশতঃ লজ্জাস্থাহোত লেগে গেল উযু ভঙ্গ হবে না। (নায়লুল আওত্বার)।

পর্যালোচনা ও অগ্রাধিকারঃ যারা ত্বালক বর্ণিত প্রথম হাদীসটি অর্থাৎ ‘উযু না করা’ সম্পর্কিত হাদীসকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন তারা স্বযং ত্বালক্ব থেকে উযু করার সমর্থনে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, হয় তো প্রথম হাদীস মুস্তাহাব বুঝানো হয়েছে এবং পরের হাদীস জায়িয বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লামা জা‘ফার আহমাদ উসমানী ‘ই‘লাউস সুনান গ্রন্থে এ মত ব্যক্ত করেছেন। পক্ষান্তরে যারা ‘লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে’ এ মর্মে বর্ণিত বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরাম সূত্রে বর্ণিত মারফূ হাদীসসমূহকে গ্রহণ করেছেন, তারা বলেনঃ কয়েকটি কারণে বুসরাহ বর্ণিত হাদীস ত্বালক্ব বর্ণিত হাদীসের উপর অগ্রাধিকারযোগ্য। তা হলোঃ

(ক) ত্বালক্ব ইবনু আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি দুর্বল।

(খ) এ সম্পর্কিত হাদীসটি মানসুখ হয়ে গেছে। কেননা ত্বালক্ব হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হিজরীর প্রথম বছরে, যখন মসজিদে নাববী নির্মাণ হচ্ছিল। পক্ষান্তরে আবূ হুরাইরাহ ইসলাম কবূল করেছেন সপ্তম হিজরীতে। তিনি উযু করা ওয়াজিব সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন ত্বালক্বের হাদীসের সাত বছর পরে। এতে প্রমাণিত হয়, ত্বালক্ব বর্ণিত হাদীসটি মানসূখ। তাছাড়া স্বয়ং ত্বালক্ব লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা আবূ হুরাইরাহর হাদীসের সাথে মিলে যায়।

(গ) বুসরাহ বর্ণিত হাদীসটি সহীহ এবং এর সানাদসূত্র বেশি।

(ঘ) বুসরাহ বর্ণিত হাদীসের শাহিদ (সমর্থক) বর্ণনা বেশি। কেননা বুসরাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন মদীনাহর আনসার ও মুহাজিরদের অবস্থানস্থল থেকে। তখন সেখানে প্রচুর আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ি কিরাম ছিলেন। তারা তার প্রতিবাদ করেননি। এতে তাদের পক্ষ থেকে তার সর্মথনও প্রমাণিত হয়।

(ঙ) স্বয়ং ত্বালক্ব বিন আলী লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতে হবে- এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরামের মারফূ’ হাদীসের সাথে মিলে যায়।

উল্লেখ্য ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ) বলেনঃ যারা হাদীসের বর্ণিত উযু দ্বারা হাত ও মুখ ধোয়ার অর্থ গ্রহণ করেন, সেটা ভুল। হাদীসে উযু বলতে সালাতে উযুকেই বুঝানো হয়েছে। যা ভিন্ন সূত্রে স্বয়ং বুসরাহ ও অন্যান্য সাহাবায়ি কিরামের হাদীসের স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।

সারকথাঃ কোনো আবরণের উপর লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে বেখেয়ালে সরাসরি লজ্জাস্থানে হাত লেগে গেলেও উযু নষ্ট হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে, কামোদ্দীপনার সাথে সরাসরি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করা ওয়াজিব। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

(৭) উটের গোশত (কলিজা, ভূঁড়ি) খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়। এক ব্যক্তি মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, ‘উটের গোশত খেলে ওযু করব কি?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, উটের গোশত খেলে ওযু করো“। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪৯৪, ৪৯৫, ৪৯৬, তিরমিযী ৮১, আবূ দাঊদ ১৮৪, আহমাদ ১৮০৬৭, ইরওয়াহ ১১৮, ১৫২, সহীহ্ আবূ দাউদ, ১৭৭, মুসলিম ৩৬০, আহমাদ ২০২৮৭, ২০৩০৪, ২০৩৫৬, ২০৩৬৪, ২০৪০৩, ২০৪৪৭, ২০৪৬৬, ২০৫০৪, ২০৫৩৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমের নির্দেশ খোদ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। তিনি বলেন,

অর্থাৎ, যদি তোমরা অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক, কিংবা তোমাদের মধ্যে কেউপায়খানা করে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সঙ্গম কর, অতঃপর পানি না পাও, তাহলে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও; তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতকে মাটি দ্বারা মাসাহ্‌ কর---। (কুরআন মাজীদ ৫/৬)।

সরল ও সহ্‌জ দ্বীনের নবী (সাঃ) বলেন, “সকল মানুষ (উম্মতের) উপর আমাদেরকে ৩টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে; আমাদের কাতারকে করা হয়েছে ফিরিশ্‌তাবর্গের কাতারের মত, সারা পৃথিবীকে আমাদের জন্য মসজিদ করে দেওয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া গেলে মাটিকে আমাদের জন্য পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করা হয়েছে। (মিশকাত ৫২৬, সহীহ মুসলিম ৫২২, সহীহ আল জামি ৪২২৩, ইরওয়া ২৮৫, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৬৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন্ কোন্ অবস্থায় তায়াম্মুম বৈধ?

(১) একেবারেই পানি না পাওয়া গেলে অথবা পান করার মত থাকলে এবং ওযু-গোসলের জন্য যথেষ্ট পানি না পাওয়া গেলে।

হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (সাঃ) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। এক সময় তিনি লোকেদের নিয়ে নামায পড়লেন। যখন তিনি নামায শেষ করলেন, তখন দেখলেন একটি লোক একটু সরে পৃথক দাঁড়িয়ে আছে। সে জামাআতে নামাযও পড়েনি। তিনি তাকে বললেন, “কি কারণে তুমি জামাআতে নামায পড়লে না?” লোকটি বলল, ‘আমি নাপাকে আছি, আর পানিও নেই।’ তিনি বললেন, “পাক মাটি ব্যবহার কর। তোমার জন্য তাই যথেষ্ট।” (সহীহ মিশকাত ৫২৭, সহীহ বুখারী ৩৪৪, মুসলিম ৬৮২, নাসায়ী ৩২১, আহমাদ ১৯৮৯৮, দারেমী ৭৭০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩০১, ইরওয়া ১৫৬, সহীহ আল জামি ৪০৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন, “দশ বছর যাবৎ পানি না পাওয়া গেলে মুসলিমের ওযুর উপকরণ হল পাক মাটি। পানি পাওয়া গেলে গোসল করে নেওয়া উচিৎ। আর এটা অবশ্যই উত্তম।” (মিশকাত ৫৩০, সহীহ আবূ দাঊদ ৩৩২, তিরমিযী ১২৪, ইরওয়া ১৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য আশে-পাশে বা সঙ্গীদের কারো নিকট পানি আছে কি না, তা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। যখন একান্ত পানি পাওয়ার কোন আশাই থাকবে না, তখন তায়া ম্মু ম করে নামায পড়তে হবে।

(২) অসুস্থ থাকলে অথবা দেহে কোন প্রকার ক্ষত বা ঘা থাকলে এবং পানি ব্যবহারে তা বেড়ে যাওয়া বা সুস্থ হতে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা হলে।

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, একদা আমরা কোন সফরে বের হ্‌লাম। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মাথায় পাথরের আঘাত লেগে ক্ষত হয়েছিল। এরপর তার স্বপ্ন দোষও হল। সে সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার জন্য কি তায়াম্মুম বৈধ মনে কর?’ সকলে বলল, ‘তুমি পানি ব্যবহার করতে অক্ষম নও। অতএব তোমার জন্য আমরা তায়াম্মুম বৈধ মনে করি না।’ তা শুনে লোকটি গোসল করল এবং এর প্রতি ক্রি য়ায় সে মারা গেল। অতঃপর আমরা যখন নবী (সাঃ)-এর নিকট ফিরে এলাম তখন তাঁকে সেই লোকটার ঘটনা খুলে বললাম। তা শুনে তিনি বললেন, “ওরা ওকে মেরে ফেলল, আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুক! যদি ওরা জানত না, তবে জেনে কেন নেয়নি? অজ্ঞতার ওষুধ তো প্রশ্নই।” (মিশকাত ৫৩১, আবূ দাঊদ ৩৩৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৩) পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে এবং তাতে ওযু-গোসল করাতে অসুখ হবে বলে দৃঢ় আশঙ্কা হলে, পরন্তু পানি গরম করার সুযোগ বা ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম বৈধ। (সুনানে আবু দাউদ, ৩২১, ৩২২, বুখারী (অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, হাঃ ৩৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৪) পানি ব্যবহারে ক্ষতি না হলে এবং পানি নিকটবর্তী কোন জায়গায় থাকলেও তা আনতে জান, মাল বা ইজ্জতহানির আশঙ্কা হলে, পানি ব্যবহার করতে গিয়ে সফরের সঙ্গীদের সঙ্গ-ছাড়া হওয়ার ভয় হলে, বন্দী অবস্থায় থাকলে অথবা ( কুঁয়ো ইত্যাদি থেকে) পানি তোলার কোন ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করা বৈধ। কারণ উক্ত অবস্থাগুলো পানি না পাওয়ার মতই অবস্থা।

(৫) পানি কাছে থাকলেও তা ওযুর জন্য ব্যবহার করলে পান করা, রান্না করা ইত্যাদি হবে না আশঙ্কা হলেও তায়াম্মুম বৈধ। (মুগনী, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১/৬১-৬২)।

কিসে তায়াম্মুম হবে?

পবিত্র মাটি এবং তার শ্রেণিভুক্ত সকল বস্তু (যেমন, পাথর, বালি, কাঁকর, সিমেন্ট প্রভৃতি) দ্বারা তায়াম্মুম শুদ্ধ। ধুলাযুক্ত মাটি না পাওয়া গেলে ধুলাহীন পাথর বা বালিতে তায়াম্মুম বৈধ হবে। (সুনানে আবু দাউদ, ৩১৮, ৩১৯ , ৩২০, ৩২১, ৩২২, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬, ৩২৭, সুনানুল কুবরা’ ২৯২, নাসায়ী ৩১৩, ৩১৪, ইবনু মাজাহ ৫৬৬, আহমাদ (৩২০, ৩২১, ২৬৩, ২৬৪, বুখারী ৩৩৮, ৩৪৭,তিরমিযী ১৪৪, দারিমী  ৭৪৫, ইবনু খুযাইমাহ ২৬৭, (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তায়াম্মুম কিসে নষ্ট হয়?

যে যে কারণে ওযু নষ্ট হয়, ঠিক সেই সেই কারণে তায়াম্মুমও নষ্ট হয়ে যায়। কারণ তায়াম্মুম হল ওযুর বিকল্প। এ ছাড়া যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সেই অসুবিধা দূর হয়ে গেলেই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায়। যেমন পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্মুম করলে পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম শেষ হয়ে যায়। অসুখের কারণে করলে, অসুখ দূর হয়ে যাওয়ার পর পরই আর তায়াম্মুম থাকে না। (ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১/৬৩)।

শুদ্ধতম হাদীস অনুসারে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি নিম্নরুপঃ

(মনে মনে নিয়ত করার পর ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে) দুই হাতের তালু মাটির উপর মারতে হবে। তারপর তুলে নিয়ে তার উপর ফুঁক দিয়ে অতিরিক্ত ধুলোবালি উড়িয়ে দিয়ে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল মাসাহ্‌ করতে হবে। এরপর বামহাত দ্বারা ডানহাত কব্জি পর্যন্ত এবং শেষে ডানহাত দ্বারা বাম হাত কব্জি পর্যন্ত মাসাহ্‌ করতে হবে। (মিশকাত ৫২৮, সহীহ বুখারী ৩৩৮, মুসলিম ৩৬৮, আবূ দাঊদ ৩২২, নাসায়ী ৩১২, ইবনু মাজাহ্ ৫৬৯, আহমাদ ১৮৩৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩০৬, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৬৮।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার হুকুমঃ

প্রত্যেক সালাত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরজ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের ওপর ফরয।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০৩)।

তবে আউয়াল ওয়াক্তে অর্থাৎ শুরুর সময়ে আদায় করা আল্লাহ তাআলার কাছে অধিকতর পছন্দনীয়। তাকওয়ার দাবি হলো আগে সালাত, পরে কাজ। আগে কাজ, পরে সালাত নয়। যারা কাজকর্মকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সালাত দেরিতে পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করে তারা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

“ঐসব নামাযীদের জন্য ওয়াইল বা ধ্বংস, যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে গাফেল।” (সূরা ১০৭; মাউন ৪-৫)।

আর গাফেল হলো ঐসব লোক, যারা পেছাতে পেছাতে সালাত শেষ ওয়াক্তে পড়ে এবং হুকুম আহকাম গুলো ঠিকমতো আদায় করে না।

আবূ ‘আমর শায়বানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.)-এর বাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ বাড়ির মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ‘আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথা সময়ে সালাত আদায় করা। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪; মুসলিম ১/৩৬, হাঃ ৮৫, আহমাদ ৪২২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার ফজিলতঃ

(ক) ‘আব্দুল্লাহ ইবনুস সুনাবিহী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু' ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন অন্যথায় শাস্তি দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪২৫, আহমাদ (৫/৩১৭), নাসায়ী, ৪৬০, সুনানুল কুবরা’ ৩১৪  ইবনু মাজাহ ১৪০১, দারিমী ১৫৭৭, আহমাদ (৫/২১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু ও রুকু' সিজদা্ সহকারে নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সার্মথ্য থাকলে হজ করবে, (৪) সন্তুষ্ট চিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবূ দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কি? তিনি বলেন, জুনুবী হলে গোসল করা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪২৯, ‘মাজমাউয যাওয়ায়িদ’ (১/৪৭), ‘আত-তারগীব’ (১/২৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সালাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৩০,  ইবনু মাজাহ ১৪০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

শাসকগণ বিলম্বে সালাত আদায় করলে আপনি কি করবেন?

রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী বর্তমান যুগের ইমাম, মুয়াজ্জিন বা শাসকগণ নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় না করে দেরীতে বা বিলম্বে সালঅত আদায় করছে। এমন পরিস্থিতি এখন সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। তাহলে আমাদের এখন কর্তব্য হবে, সালাতের ওয়াক্ত শুরু হলেই নিজে সালাত আদায় করে নেয়া। এটা হবে নিজের জন্যে ফরজ আদায়। এরপর শাসকগণ তাদের সময়ে সালাত শুরু করলে সেই জামাতেও সামিল হবেন। ঐ একই সালাত তখন হবে নফল।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! যখন তোমার শাসকগণ সালাতকে মেরে ফেলবে বা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করবে, অতঃপর তাদেরকে ঐ ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে দেখলে তাদের সাথেও আদায় করে নিবে। সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৩১, মুসলিম (অধ্যায়ঃ মাসাজিদ, অনুঃ নির্দিষ্ট সময়ের পরে সালাত আদায় করা অপছন্দনীয়), ইবনু মাজাহ (অধ্যায়ঃ সালাত ক্বায়িম, অনুঃ নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় না করে বিলম্ব করা প্রসঙ্গে, হাঃ ১২৫৬), দারিমী (১২২৮), আবূ ‘আওয়ানাহ ‘মুসনাদ’ (১/৩৪৪) হাম্মাদ সূত্রে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর ইবনু মায়মূন আল-আওদী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যখন তোমাদের উপর এমন শাসকদের আর্বিভাব ঘটবে যারা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন তোমরা কি করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ কি? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করবে। আর পুনরায় তাদের সাথে আদায়কৃত সালাতকে নফল হিসেবে ধরে নিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৩২, ইবনু হিব্বান ৩৭৬, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১২৪), আহমাদ (৫/২৩১-২৩২), নাসায়ী ৭৭৮, ইবনু মাজাহ ১২৫৫), বায়হাক্বী (৩/১২৭-১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীসদ্বয় থেকে শিক্ষাঃ

১। সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তেই অবিলম্বে আদায় করা অতি উত্তম।

২। জামা‘আতের কারণে বিলম্ব করে এরকেবারে ওয়াক্তের শেষে সালাত আদায় জায়িয নয়।

৩। কারণ বশতঃ একই দিনে এক ওয়াক্তের সালাত পুনরায় আদায় করা জায়িয। আর একই দিনে এক ওয়াক্তের দু’ বার আদায়ের যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা কোনো কারণ ব্যতীত আদায়ের বেলায় প্রযোজ্য।

৪। প্রথমে আদায়কৃত সালাত ফারয হিসেবে এবং পুনরায় আদায়কৃত সালাত নাফল হিসেবে গণ্য।

৫। অত্যাচারী শাসকের সাথেও সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা এ আশংকায় যে, দলে দলে বিভক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাতের ঐক্যে যেন ফাটল সৃষ্টি না হয়।

সুতরাহঃ

সুতরাহ কিঃ সুতরাহ শব্দের অর্থ আড়াল। কোনো ব্যক্তি যখন সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াবে তখন কোনো কিছুর সামনে দাঁড়াবে অথবা কোনো কিছুকে তার সামনে দাঁড় করাবে, তা সম্ভব না হলে অন্তত একটি দাগ টেনে দিবে, এটাই সুতরাহ। সুতরার উদ্দেশ্য হচ্ছে সালাতের সামনে আড়াল সৃষ্টি করা, এতে করে সুতরার বাহির দিয়ে মানুষ বা অন্য কিছু চলাচল করতে পারবে। কিন্তু সুতরার ভিতর দিয়ে চলাচল করা নিষিদ্ধ।

কমপক্ষে তিন হাত বা এর কম দুরত্বে সুতরাহ রেখে নামাজ পড়া হয়। এর উচ্চতা হয় কমপক্ষে আধা হাত। প্রস্থে যেকোনো পরিমাণ হতে পারে।[

সিজদার জায়গার একটু সামনে (কমপক্ষে আধা হাত উঁচু একটি লাঠি বা অন্য কিছু দিয়ে) সুতরাহ দেবেন। (হাকেম-১/২৫২)। সুতরা ও মুসল্লীর দাঁড়ানোর মাঝখান দিয়ে সালাত চলাকালীন হাঁটা-চলা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে নামাযীর সামনে দিয়ে কোন (সাবালিকা) নারী, গাধা বা কালো কুকুর যাতায়াত করলে সালাত ভঙ্গ হয়ে যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারী, গাধা ও কুকুর সালাত (সামনে দিয়ে অতিক্রম করে) নষ্ট করে। আর এর থেকে রক্ষা করে হাওদার (পেছনে দন্ডায়মান) ডাণ্ডার ন্যায় কিছু বস্ত্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৭৮, মুসলিম ৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ)।

সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। অতঃপর বিনম্র হয়ে খুশূ ও খুযূ-এর সাথে সালাতের জন্য দাঁড়াবেন।

সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নিষেধ সংক্রান্ত সহিহ হাদিসঃ

(ক) বুসর ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য সাহাবীগণ আমাকে যায়দ ইবনু খালিদ এর নিকট পাঠালেন। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, চল্লিশ দ্বারা তিনি চল্লিশ বছর না মাস না দিন, না ঘণ্টা বুঝিয়েছেন তা আমি অবগত নই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৯৪৪, ৯৪৫, বুখারী ৫১০, মুসলিম ৫০৭, তিরমিযী ৩৩৬, নাসায়ী ৭৫৬, আবূ দাঊদ ৬৯৮, ৭০১, আহমাদ ১৬৬০৩, ১৭০৮৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৬৫, দারিমী ১৪১৬-১৭, মাজাহ ৯৪৪, ৯৪৫, সহীহ তারগীর ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) আল-হাসান আল-উরানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিসে সালাত নষ্ট করে তা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর উপস্থিতিতে আলোচিত হল। লোকেরা কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোকের কথা উল্লেখ করলো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ছয়-সাত মাসের বকরীর বাচ্চা সম্পর্কে আপনারা কি বলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত পড়ছিলেন। তাঁর সামনে দিয়ে ছয়-সাত মাসের একটি বকরীর বাচ্চা অতিক্রম করে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটিকে কিবলার দিক থেকে হটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১/৯৫৩, আবূ দাঊদ ৭০২, ৭০৯, আহমাদ ২২২৩, ২৮০১, ৩১৫৭, ৩১৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুর রহমান ইবনু আবূ সাঈদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ সালাত আদায় করতে চাইলে যেন সুতরা সামনে রেখে সালাত পড়ে এবং তার নিকটবর্তী হয়। সে যেন তা সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। অতএব যদি কেউ সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ সে একটা শয়তান। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৯৫৪, বুখারী ৫০৯, ৩২৭৫, মুসলিম ৫০৫, নাসায়ী ৭৫৭, ৪৮৬২, আবূ দাঊদ ৬৯৪, ৬৯৫, ৬৯৭, ৬৯৯, ৭০০; আহমাদ ১০৯০৬, ১১০০১, ১১০৬৭, ১১১৪৬, ১১২১৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৪, দারিমী ১৪১১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (ঘ) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কেউ কিছুর আড়াল দিয়ে সালাত  শুরু করে, আর কেউ আড়ালের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে চায় তাকে বাধা দিবে। সে বাধা অমান্য করলে তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কারণ চলাচলকারী (মানুষের আকৃতিতে) শায়ত্বন (শয়তান)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৭৭, সহীহ বুখারী ৫০৯, মুসলিম ৫০৫, আবূ দাঊদ ৭০০, আহমাদ ১১০৭, দারেমী ১৪৫১, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুৎরাহ কি কেবল খোলা মাঠের জন্য নাকি মসজিদের ভিতরেও দিতে হবে?

(ক)  সুৎরাহ মসজিদে ও বাইরে সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য।

ত্বলহাহ্ (রাঃ) ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত আদায় করার সময় হাওদার পিছনের দিকে লাঠির মতো কোন কিছু সুতরাহ্ বানিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সালাত আদায় করবে। এরপর তার সামনে দিয়ে কে এলো আর গেল তার কোন পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৭৪, ৭৭৫, সহীহ মুসলিম ৪৪৯, তিরমিযী ৩৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৭৯, সহীহ আল জামি ৮২৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সেজন্য নবী করীম (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সুন্নাত ছালাত আদায়ের সময় মসজিদের পিলার ও খুঁটিকে সামনে রেখে ছালাত আদায়ের চেষ্টা করতেন। (বুখারী ৫০২, মুসলিম ৫০৯, ৮৩৭, মিশকাত ১১৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু ওমর (রাঃ) যখন মসজিদে সুৎরার জন্য কোন খুঁটি না পেতেন তখন নাফে‘কে বলতেন তুমি পিঠ ঘুরিয়ে বসো। অতঃপর তিনি ছালাত আদায় করতেন। (ইবনু আবী শায়বাহ হ২৮৭৮, ২৮৮১, ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৮)।

(ঘ) ইবনু ওমর (রাঃ) সুৎরা ছাড়া ছালাত আদায় করতেন না।(মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২৩৬৮; বিস্তারিত, শায়খ মুহাম্মাদ বিন রিযক রচিত আহকামুস সুৎরা বই)।

উল্লেখ্য যে, মুছল্লীর সম্মুখ দিয়ে বলতে তার সিজদার স্থান পর্যন্ত বুঝায়। এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৭৬,  সহীহ বুখারী ৫০৯, মুসলিম ৫০৫, আবূ দাঊদ ৭০০, আহমাদ ১১০৭, দারেমী ১৪৫১, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের ইকামত দেয়া হলে  মুছল্লী কখন উঠে দাঁড়াবে?

আবু কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত দাঁড়াবে না”। (সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৩, ১২৯৪, সহীহ বুখারী ৬৩৭, সহীহ মুসলিম ৬০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৫৫, ২২২২, ২২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিবলামুখী হওয়াঃ

পূর্ণ দেহসহ কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো। (সূরা বাকারা: ১৪৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

রিফা‘আহ্ ইবনু রাফি‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে এসে সালাত আদায় করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সালাম জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তুমি আবার সালাত আদায় কর। তোমার সালাত  হয়নি। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে সালাত আদায় করবো তা আমাকে শিখিয়ে দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হয়ে প্রথমে তাকবীর বলবে। তারপর সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করবে। এর সাথে আর যা পারো (কুরআন থেকে) পড়ে নিবে। তারপর রুকূ‘ করবে। (রুকূ‘তে) তোমার দু’ হাতের তালু তোমার দু’ হাঁটুর উপর রাখবে। রুকূ‘তে প্রশান্তিতে থাকবে এবং পিঠ সটান সোজা রাখবে। রুকূ‘ হতে উঠে পিঠ সোজা করে মাথা তুলে দাঁড়াবে যাতে হাড়গুলো নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়। তারপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। সাজদায় প্রশান্তির সাথে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮০৪-[১৫], হাসান : আবূ দাঊদ ৮৫৯, ৮৬০, আহমাদ ১৮৫১৬, সহীহ আল জামি‘ ৩২৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দু'পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখার পরিমাণঃ

পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়।(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৪, হাকিম (১/২৫৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), ইবনু খুযাইমাহ (১০১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

পাশের মুসল্লির পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানো

জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করার সময় কাতারের মাঝে পরস্পরের মধ্যে ফাঁক রাখা সুন্নাতের বরখেলাফ। উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। পরস্পরের পায়ের মাঝে ‘চার আঙ্গুল’ পরিমাণ ফাঁক রাখতে হবে এবং পায়ে পা মিলালে অন্যকে অপমান করা হয় মর্মে সমাজে যে কথা প্রচলিত আছে, তা এক প্রকার জাহেলিয়াত। এটি সুন্নাতকে অবজ্ঞা করার অপকৌশল এবং চূড়ান্ত মিথ্যাচার। কারণ যারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, তারা যদি পরস্পরে দাঁড়িয়ে পায়ে পা মিলিয়ে ছালাত পড়তে পারেন, তাহলে আমাদের সম্মানের হানি হবে কেন? আমাদেরকেও তাঁদের পদাংক অনুসরণ করতে হবে। কারণ পায়ে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বহু হাদীছে নির্দেশ করেছেন।

(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবে, এর বিনিময়ে আললাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। (ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৫৭৯৫; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৩৮২৪; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৯২)।

সুধী পাঠক! মুরববীরা বলে থাকেন, পায়ের সাথে পা মিলালে সম্মান নষ্ট হয়। আর রাসূল (ছাঃ) বলছেন, আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আমি তাহলে কার কথা গ্রহণ করব? অতএব সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরুন। রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভে ধন্য হৌন!

(খ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যাক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯৯৫, আহমাদ ২৪০৬৬, ২৪৬৩১; সিলসিলা ছহীহাহ ২৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সালাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে আল্লাহ তা’আলা (তাঁর রহমতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে আল্লাহ তা’আলা তাকে তার রহমত থেকে কেটে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১০২, সুনান আবূ দাঊদ ৬৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৫, আহমাদ ৫৭২৪, সহীহাহ্ ৭৪৩, সহীহ আল জামি ১১৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৬২, আহমাদ ৪/২৭৬, ইবনু খুযাইমাহ ১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আল-বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন, আর বলতেনঃ তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেনঃ নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি মহান আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) দু’আ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৬৪, সুনান আননাসায়ী ৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। আনাস (রাযি.) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৫, ৭১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করার পূর্বে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,

‘ছালাতে কাতারের মধ্যে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বলেন, আমি মুছল্লীকে দেখতাম, সে তার টাখনুকে তার পার্শ্বের ভাইয়ের টাখনুর সাথে মিলিয়ে দিত। (ছহীহ বুখারী ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৭, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০, (ইফাবা অনুচ্ছেদ-৪৬৮, ২/৯৫ পৃঃ)।

(জ) আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৬,  সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৭১৮, ৭১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (সালাতে) তোমাদের কাতারগুলো মিলেমিশে দাঁড়াবে এবং কাতারগুলোও কাছাকাছি (প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে) বাঁধবে। নিজেদের কাঁধ মিলিয়ে রাখবে। কসম ওই জাতে পাকের যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি শায়ত্বনকে তোমাদের (সালাতের) সারির ফাঁকে ঢুকতে দেখি যেন তা হিজাযী ছোট কালো বকরী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৯৩, সুনান আবূ দাঊদ ৬৬৭, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৫৪৫, ইবনু হিব্বান ৬৩৩৯, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৪, সহীহ আল জামি ৩৫০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুধী পাঠক! কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। উক্ত হাদীছ সমূহ জানার পরও কেউ যদি এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে সে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ লংঘন করবে। হাদীছে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত দাঁড়াতে বলা হয়েছে, যেমন একটি ইট আরেকটি ইটের উপর রেখে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। সুতরাং পরস্পরের পায়ের মাঝে কোন ফাঁক থাকবে না। উল্লেখ্য, অনেক মসজিদে শুধু কনিষ্ঠা আঙ্গুলের সাথে মিলানো হয়। উক্ত মর্মেও কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

কাতারে দাঁড়িয়ে যে দোয়া পাঠ করতে হয়ঃ

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক ব্যক্তি হাঁপাতে হাঁপাতে কাতারে শামিল হয়ে বলল, 

“আলহামদু লিল্লা-হি হাম্‌দান কাসীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহ।”

অর্থঃ আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা; যে প্রশংসা অজস্র, পবিত্র ও প্রাচুর্যময়।

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করার পর বললেন, তোমাদের মধ্যে কে ঐ দু‘আ পাঠ করেছে? লোকেরা সকলে চুপ থাকল। পুনরায় তিনি বললেন, কে বলেছে ঐ দু‘আ? যে বলেছে, সে মন্দ বলে নি। উক্ত ব্যক্তি বলল, আমিই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে ফেলেছি। তিনি বললেন, আমি ১২ জন ফিরিশতাকে দেখলাম, তাঁরা ঐ দু‘আ (আল্লাহর দরবারে) উপস্থিত করার জন্য প্রতিযোগিতা করছে! (মুসলিম ১৩৮৫, আবূ দাঊদ ৭৬৩, নাসাঈ ৯০১ আবূ আওয়ানাহ,  হাদীস সম্ভার, হাঃ ৬৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাতার সোজা করাঃ

জামাআতে সালাতের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামগণ কাতার সোজা করে দাঁড়াতেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, (হাদিসগুলো নিম্নরুপ)-

কাতার সোজা করার হুকুমঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকূ‘ করেন তখন তোমরাও রুকু‘ করবে। তিনি যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলেন, তখন তোমরা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ  বলবে। তিনি যখন সিজদা্ করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭২২, ৭৩৪; মুসলিম ৪/১৯, ৪১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ ।ahih)।

(খ)  আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলি সোজা ক’রে নাও। পরস্পর বাহুমূলে বাহুমূল মিলিয়ে নাও। (কাতারের) ফাঁক বন্ধ ক’রে নাও। তোমাদের ভাইদের জন্য হাতের বাজু নরম ক’রে দাও। আর শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ো না। (মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তার সাথে মিল রাখবেন, আর যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করবে (মানে কাতারে ফাঁক রাখবে), আল্লাহও তার সাথে (সম্পর্ক) ছিন্ন করবেন।” (হাদিস সম্ভার-৭১১, আবূ দাঊদ ৬৬৬নং)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ)  আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ঘন ক’রে কাতার বাঁধ এবং কাতারগুলিকে পরস্পরের কাছাকাছি রাখ। ঘাড়সমূহ একে অপরের বরাবর কর। সেই মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, কাতারের মধ্যেকার ফাঁকে শয়তানকে আমি প্রবেশ করতে দেখতে পাই, যেন তা কালো ছাগলের ছানা।” (আবূ দাঊদ ৬৬৭, মুসলিমের, ইবনে হিব্বান ৬৩৩৯, ইবনে খুযাইমা ১৫৪৫, হাদিস সম্ভার-৭১২)।

حذف এর অর্থ কালো ছোট জাতের ছাগল, যা ইয়ামানে পাওয়া যায়। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ)  আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭২২, ৭৩৪; মুসলিম ৪/১৯, ৪১৪, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা, কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭২৩, মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৩, আহমাদ ১২৮১৩, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৭,হাদিস সম্ভার-৭০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(ঙ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-১০৮৬-[২],মুসলিম ৪৩৪, ১০০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭১৮, ৭১৯, ৭২৫; মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৪ ১২৩৫৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৩, হাদিস সম্ভার-৭০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তার পার্শ্বস্থ সঙ্গীর বাহুমূলে বাহুমূল ও পায়ে পা মিলিয়ে দিত। (বুখারী ৭২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(চ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা ইমামকে কাতারের ঠিক মাঝখানে কর। আর কাতারের ফাঁক বন্ধ করো।” (হাদিস সম্ভার-৭১৮, আবূ দাঊদ ৬৮১, হাদীসের প্রথমাংশ সহীহ নয়)।হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

কাতার সোজা করার ফজিলতঃ

(ক)  আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যাক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (ইবনে মাজাহ ৯৯৫, আহমাদ ২৪০৬৬, ২৪৩৮১, ইবনে খুযাইমাহ ১৫৫০, ইবনে হিব্বান ২১৬৩, হাকেম, হাদিস সম্ভার-৭১৩, সহীহ তারগীব ৫০১, সহীহাহ ১৮৯২, ২৫৩২, যঈফাহ ১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ)  উক্ত আয়েশা (রায্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (কাতারের মাঝে) কোন ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করেন এবং তার জন্য জান্নাতে এক গৃহ নির্মাণ করেন।” (হাদিস সম্ভার-৭১৪, ত্বাবারানীর আওসাত্ব ৫৭৯৭, সহীহ তারগীব ৫০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(গ)  বারা’ বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন,--আর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “অবশ্যই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাবর্গ দু‘আ করতে থাকেন তাদের জন্য যারা প্রথম কাতার মিলিয়ে (ব্যবধান না রেখে) দাঁড়ায়। আর যে পদক্ষেপ দ্বারা বান্দা কোন কাতারের ফাঁক বন্ধ করতে যায় তা অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অন্য কোন পদক্ষেপ অধিক পছন্দনীয় নয়।” (হাদিস সম্ভার-৭১৫, আবূ দাঊদ ৫৪৩, ইবনে খুযাইমাহ ১৫৫৬, সহীহ তারগীব ৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

কাতার সোজা না করার শাস্তিঃ

(ক)  ইবনু ‘উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, ‘‘তোমাদের ভাইয়ের হাতে’’ শব্দগুলো নেই। ( তিনি আরো বলেন,) শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমত হতে কর্তন করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৬, নাসায়ী ৮১৮, আহমাদ ৫৭২৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ)  আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত।

তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (আবূ দাউদ ৬৬২, আহমাদ ২৭৬, হাদিস সম্ভার-৭০৯, ইবনে হিব্বান ২১৭৬, ইবনে খুযাইমা ১৬০, সহীহ তারগীব ৫১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (গ)  বারা’ ইবনে আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে কাতারের ভিতরে ঢুকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চলা ফেরা করতেন এবং আমাদের বুকে ও কাঁধে হাত দিতেন (অর্থাৎ, হাত দিয়ে কাতার ঠিক করতেন) আর বলতেন, “তোমরা বিভেদ করো না (অর্থাৎ, কাতার থেকে আগে পিছে হয়ো না।) নচেৎ তোমাদের অন্তর রাজ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হবে।” তিনি আরো বলতেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রথম কাতারগুলির উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফিরিশুাবর্গ তাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করেন”। (হাদিস সম্ভার-৭১০, আবূ দাঊদ ৬৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ)   আয়েশা (রায্বিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কোন সম্প্রদায় প্রথম কাতার থেকে পিছনে সরে আসতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে পশ্চাদ্ববর্তী করে দেবেন।” (অর্থাৎ, জাহান্নামে আটকে রেখে সবার শেষে জান্নাত যেতে দেবেন, আর সে প্রথম দিকে জান্নাত যেতে পারবে না। (হাদিস সম্ভার-৭০৫, আউনুল মা’বুদ ২/২৬৪, আবূ দাউদ ৬৭৯, ইবনে খুযাইমাহ ১৫৫৯, ইবনে হিব্বান ২১৫৬, সহীহ তারগীব ৫১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

প্রথম  কাতার আগে পূর্ণ করাঃ

যারা আগে আসবেন তারা সামনের কাতারে এগিয়ে। বসবেন অন্যকে সামনের কাতারে যাওয়ার অনুরোধ না করে অধিক সওয়াব লাভের আশায় নিজেই সেই সুযোগ গ্রহণ করুন। আর মসজিদের গেটে বা দরজায় বা সিঁড়িতে বসে মুসল্লিদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। আর যারা পরে আসবেন, তারাও অন্যদের ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন না।

প্রথম কাতার পূর্ণ করার হুকুম ও ফজিলতঃ

(ক)  আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (নামায প্রাক্কালে) বলেন, “তোমরা আগের কাতারটি পূর্ণ করে নাও। তারপর ওর সংলগ্ন (কাতার পূর্ণ কর)। তারপর যে অসম্পূর্ণতা থাকে, তা শেষ কাতারে থাকুক।” (হাদিস সম্ভার-৭১৬, আবূ দাঊদ ৬৭১, হাসান সূত্রে)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(খ)  জাবের ইবনে সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন, “ফিরিশুামণ্ডলী যেরূপ তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হন, তোমরা কি সেরূপ সারিবদ্ধ হবে না।” আমরা নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ফিরিশুামণ্ডলী তাদের প্রভুর নিকট কিরূপ সারিবদ্ধ হন?' তিনি বললেন, “প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করেন এবং সারিতে ঘন হয়ে দাঁড়ান।” (হাদিস সম্ভার-৭০০, মুসলিম ৯৯৬, আবূ দাউদ ৬৬১, মিশকাত ১০৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “লোকেরা যদি জানত যে, আযান দেওয়া ও নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়াবার কী মাহাত্ম্য আছে, অতঃপর (তাতে অংশগ্রহণের জন্য) যদি লটারি ছাড়া অন্য কোন উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত।” (হাদিস সম্ভার-৭০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৬১৫, ৭২১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭৭ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৫ শেষাংশ,  মুসলিম ১০০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঘ)   উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার, আর নিকৃষ্টতম কাতার হল শেষ কাতার। আর মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হল পিছনের (শেষ) কাতার এবং নিকৃষ্টতম কাতার হল প্রথম কাতার।” (হাদিস সম্ভার-৭০২, আহামদ ৭৩৬২, মুসলিম ১০১৩, সুনান আরবাআহ, মিশকাত ১০৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

 (ঙ)  নুমান বিন বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ প্রথম কাতার ও সামনের কাতারসমূহের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশুাগণ তাদের জন্য দুআ করে থাকেন।” (হাদিস সম্ভার-৭০৩, আহমাদ ১৮৩৬৪, সহীহ তারগীব ৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(চ)  বারা’আ ইবনু আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করো, তাহলে তোমাদের অন্তরসমূহ বিক্ষিপ্ত হবে না।”তিনি বলেন, তিনি আরও বলতেন: “আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ প্রথম কাতার অথবা, প্রথম কাতারসমূহের উপর রহমত বর্ষণ করেন”। (সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৬, সহীহ ইবনু হিব্বান  ২১৫৭, ২১৬১; মাওয়ারিদুয যাম’আন ৩৮৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ইরবায ইবনু সারিয়্যাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম কাতারের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। (সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৭, ১২৯৮, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২১৫৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছালাতের কাতারসমূহের মাঝে কতটুকু ফাঁক রাখা শরী‘আতসম্মত?

দুই কাতারের মাঝে এমন ফাঁক রাখতে হবে, যাতে সহজে সিজদা করা যায়। তবে এমন ফাঁক রাখা যাবে না, যার মাঝে আরেকটি কাতার করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ছালাতের কাতারে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং কাতার পরস্পর কাছাকাছি রাখবে। আর তোমাদের কাঁধসমূহ সোজা রাখবে। সেই আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার জীবন, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি কাল ছাগলের বাচ্চার ন্যায় কাতারসমূহের ফাঁকে প্রবেশ করে’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৭; মিশকাত ১০৯৩,  নাসায়ী ৮১৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৫, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১০০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘ক্বারিবূ বায়নাহা’ অর্থ কাতারসমূহ পরস্পরে এমন নিকটবর্তী রাখতে হবে, যাতে দুই কাতারের মাঝে আরেকটি কাতার করার সুযোগ না থাকে (মির‘আত হা/১০৯৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।

জায়নামাযের দু‘আ পাঠ করা ও মুখে নিয়ত বলাঃ (প্রথম রাকাত)

জায়নামাযের দু‘আঃ ‘জায়নামাযের দু‘আ’ বলে শরী‘আতে কোন দু‘আ নেই। যদিও উক্ত দু‘আ সমাজে খুব প্রচলিত। মাওলানা মুহিউদ্দ্বীন খানও ‘জায়নামাযে দাঁড়িয়ে পড়বার দো’আ’ শিরোনামে “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। (সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯)” দু‘আ লিখেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ পেশ করেননি।  (তালীমুস-সালাত, পৃঃ ৩১।)

যেহেতু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই, সেহেতু তা পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।

নিয়তঃ

যেকোন ছালাতের জন্য মনে মনে নিয়ত করবে। (বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত। আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরাত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরাত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরাত করেছে।]  (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-১, ৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮, আধুনিক প্রকাশনী- ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-১, মিশকাত হা/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিয়ত শব্দের অর্থ মনে মনে সংকল্প করা। (ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ৮৫)।

মুখে নিয়ত বলা একটি বিদ‘আতী প্রথা। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করেছেন মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অথচ বাজারে প্রচলিত ‘নামায শিক্ষা’ বইগুলোতে ফরয এবং সুন্নাত মিলে যত ছালাত রয়েছে সমস্ত ছালাতের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত উল্লেখ করে মুছল্লীদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তার ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা’ বইয়ে ১০১-১০৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সকল ছালাতের নিয়ত আরবীতে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য উক্ত বইয়ের টীকা লিখতে গিয়ে মাওলানা আজিজুল হক লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে নিয়ত মুখে উচ্চারণের বাধ্যবাধকতা স্বরূপ যে কিছু গৎবাঁধা শব্দের প্রচলন আছে, তা নিষ্প্রয়োজন। নিয়ত পড়ার বিষয় নয়; বরং তা করার বিষয় এবং এর সম্পর্ক অন্তরের সাথে। মুখে গৎবাঁধা কিছু শব্দোচ্চারণের সঙ্গে নিয়তের কোন সম্পর্ক নেই’। (পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ১৪৩)।

অতএব মুখে উল্লেখিত দোয়া পাঠের মাধ্যমে নিয়ত পাঠের অভ্যাস ছাড়তে হবে।

সালাতে খুশু-খুজু বা ভয়, ধ্যান, স্থিরতা, গাম্ভীর্যতা ও নম্রতাঃ

মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন,

এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে। (আল-বাকারা : ২৩৮)।

আরও ইরশাদ হচ্ছে,

আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন। যারা বিশ্বাস করে যে, তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তারা তাঁর দিকে ফিরে যাবে। (আল-বাকরা : ৪৫-৪৬)।

সালাত ইসলামের একটি শরীরিক ইবাদত, বড় রুকন। একাগ্রতা ও বিনয়াবনতা এর প্রাণ, শরিয়তের অমোঘ নির্দেশও। এদিকে অভিশপ্ত ইবলিশ মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট ও বিপদগ্রস্ত করার শপথ নিয়ে অঙ্গীকার করেছে,

‘তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’। (আল-আরাফ : ১৭)।

কাজেই তার মূল উদ্দেশ্য মানবজাতিকে সালাত হতে বিভিন্ন ছলে-বলে অন্য মনস্ক করা। ইবাদতের স্বাদ, সওয়াবের বিরাট অংশ থেকে বঞ্চিত করার নিমিত্তে সালাতে বিভিন্ন ধরনের ওয়াসওয়াসা ও সন্দেহের অনুপ্রবেশ ঘটানো। তবে বাস্তবতা হল, শয়তানের আহবানে মানুষের বিপুল সাড়া, দ্বিতীয়ত, সর্বপ্রথম সালাতের একাগ্রতা পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নেয়া, তৃতীয়ত, শেষ জমানা। এ হিসেবে আমাদের উপর হুজায়ফা রা. এর বাণী প্রকটভাবে সত্যতার রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন,

‘সর্বপ্রথম তোমরা সালাতের একাগ্রতা হারা হবে, সর্ব শেষ হারাবে সালাত। অনেক নামাজির ভিতরই কোনো কল্যাণ বিদ্যমান থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন মাত্র নামাজিকেও সালাতে বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন দেখবে না।’ (মাদারিজুস সালিকিন, ইবনুল কায়্যিম ১/৫২১)।

তা সত্বেও কতক মানুষের আত্মপ্রশ্ন, অনেকের সালাতে ওয়াসওয়াসা ও একাগ্রতাহীনতার অভিযোগ।

বিষয়টির আলোচনার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক অপরিসীম। সে জন্যেই নিম্নে বিষয়টির উপর সামান্য আলোকপাতের চেষ্টা করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“মুমিনগণ সফলকাম, যারা সালাতে মনোযোগী”। অর্থাৎ আল্লাহ ভীরু এবং সালাতে স্থির। (সূরা আল-মুমিনূন: ১-২)।

খুশু হল-আল্লাহর ভয় এবং ধ্যান হতে সৃষ্ট স্থিরতা, গাম্ভীর্যতা ও নম্রতা। (‘দার-আশশুআব প্রকাশিত ইবনে কাসির : ৬/৪১৪)।

‘বিনয়াবনত এবং আপাত-মস্তক দীনতাসহ আল্লাহর সমীপে দন্ডায়মান হওয়া’। (আল-মাদারেজ : ১/৫২০)।

মুজাহিদ বলেন, ‘কুনুতের অর্থ : আল্লাহর ভয় হতে উদ্‌গত স্থিরতা, একাগ্রতা, অবনত দৃষ্টি, সর্বাঙ্গীন আনুগত্য। (তাজিমু কাদরিস সালাত ১/১৮৮)।

খুশু তথা একাগ্রতার স্থান অন্তর তবে এর প্রভাব বিকশিত হয় অঙ্গ-প্রতঙ্গে। ওয়াসওয়াসা কিংবা অন্যমনস্কের দরুন খুশুতে বিঘ্নতার ফলে অঙ্গ-প্রতঙ্গের ইবাদতেও বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়। কারণ, অন্তকরণ বাদশাহ আর অঙ্গ-প্রতঙ্গ আজ্ঞাবহ-অনুগত সৈনিকের ন্যায়। বাদশার পদস্খলনে সৈনিকদের পদস্খলন অনস্বীকার্য। তবে কপট ও বাহ্যিকভাবে খুশু তথা একাগ্রতার ভঙ্গিমা নিন্দনীয়। বরং ইখলাসের নিদর্শন হল একাগ্রতা প্রকাশ না করা।

হুজায়ফা রা. বলতেন, ‘নিফাক সর্বস্ব খুশু হতে বিরত থাক। জিজ্ঞাসা করা হল, নিফাক সর্বস্ব খুশু আবার কি? উত্তরে বললেন, শরীর দেখতে একাগ্রতাসম্পন্ন অথচ অন্তর একাগ্রতা শূন্য।’

ফুজায়েল বলেন, ‘আগে অন্তরের চেয়ে বেশী খুশু প্রদর্শন করা ঘৃণার চোখে দেখা হত।’

সালাতের ভিতর খুশু একমাত্র তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে সালাতের জন্য ফারেগ করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে সালাতকে স্থান দিবে। তখনই সালাতের দ্বারা চোখ জুড়াবে, অন্তর ঠান্ডা হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

সালাতেই আমার চোখের শান্তি রাখা হয়েছে। (মুসনাদু আহমাদ: ৩/১২৮)।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় খুশুর সহিত সালাত আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য ধার্যকৃত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা প্রদান করেছেন। (সূরা আল-আহজাব : ৩৫)।

খুশু বান্দার উপর সালাতের দায়িত্বটি স্বাভাবিক ও হালকা করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা খুশুওয়ালা-বিনয়ী ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন”। (সূরা আল-বাকারা : ৪৫)।

অর্থাৎ সালাতের কষ্ট বড় কঠিন, তবে খুশুওলাদের জন্য কোন কষ্টই নয়।” (তাফসিরে ইবনে কাসির : (১/১২৫)।

খুশু যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন কঠিন ও দূর্লভ, বিষেশ করে আমাদের এ শেষ জামানায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘এই উম্মত হতে সর্ব প্রথম সালাতের খুশু উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তালাশ করেও তুমি কোনো খুশু ওয়ালা লোক খুঁজে পাবে না।’ (তাবরানি)।

খুশু তথা একাগ্রতার হুকুমঃ

 নির্ভরযোগ্য মত অনুসারে খুশু ওয়াজিব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলার বাণী,

”তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, তবে সালাতে একাগ্রতা বঞ্চিতদের জন্য তা খুব কঠিন।” (সূরা আল-বাকারা : ৪৫)- এর মাধ্যমে খুশুহীনদের দুর্নাম ও নিন্দা করা হয়েছে। অর্থাৎ খুশু ওয়াজিব। কারণ, ওয়াজিব তরক করা ছাড়া কারো দুর্নাম করা হয় না।

 অন্যত্র বলেন,

”মুমিনগণ সফল, যারা সালাতে একাগ্রতা সম্পন্ন…তারাই জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে।” (সূরা আল-মোমেনুন: ১-১১)। এ ছাড়া অন্যরা তার অধিকারী হবে না। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয়, খুশু ওয়াজিব। খুশু হল বিনয় ও একাগ্রতার ভাব ও ভঙ্গি। সুতরাং যে ব্যক্তি কাকের মত মাথা ঠোকরায়, রুকু হতে ঠিক মত মাথা উঁচু করে না, সোজা না হয়ে সেজদাতে চলে যায়, তার খুশু গ্রহণ যোগ্য নয়। সে গুনাহগার-অপরাধি। (মাজমুউল ফতওয়া : ২২/৫৫৩-৫৫৮)।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 ‘আব্দুল্লাহ ইবনুস সুনাবিহী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মুহাম্মাদের মতে, বিতর সালাত ওয়াজিব। একথা শুনে ‘উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা (ভুল) বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণরূপে রুকু' ও পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন অন্যথায় শাস্তি দিবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪২৫, সহিহ আল-জামে : ৩২৪২, মুহাম্মাদ নাসায়ী ৪৬০, নাসায়ীর ‘সুনানুল কুবরা ৩১৪, ইবনু মাজাহ ১৪০১, দারিমী ১৫৭৭), আহমাদ (৫/২১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২/৩, হাঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-২৮৬-[৬], মুসলিম ২২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতে মনোযোগ বা একাগ্রতা আনার উপায়ঃ

(ক) সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাবতে হবে আল্লাহ সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছেন ও দেখছেনঃ

রাসুল সা. বলেন,

‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৫০, ৪৭৭৭; মুসলিম ১/১ হাঃ ৯), আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালাকগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করবেন না, সালাত প্রতিষ্ঠা করবেন, ফরজ যাকাত আদায় করবেন এবং রমাযান-এর সিয়ামব্রত পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নন। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের জ্ঞান) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানে না।’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট......।’ (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১/৩৪)।

এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল (আ)। লোকদেরকে তাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।’

আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৫০, ৪৭৭৭; মুসলিম ১/১ হাঃ ৯) , আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কল্পনা ধরে রাখার অনুশীলন করতে হবে যে, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’। এভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে সালাত শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

(খ)  বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও অর্থ বুঝে কুরআনের আয়াত পাঠ করাঃ

সালাতে একাগ্রতা আনার জন্যে সালাতে যা কিছু পাঠ করা হয়, তা বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এটি অন্তরের উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করে। সালাতে একাগ্রতা ও আল্লাহভীতি মনের মধ্যে আনার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে যা পাঠ করা হয় তার অর্থ বুঝে পাঠ করা। অন্তত সুরা ফাতিহা ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিটি সুরা তারতিলসহকারে তিলাওয়াত করতেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৭৩, সিফাতুস সালাত ৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তিকালের এক বছর পূর্ব পর্যন্ত আমি তাকে বসে বসে নফল নামায আদায় করতে দেখিনি। তারপর তিনি বসে বসে নফল নামায আদায় করতেন এবং সূরাসমূহ শান্ত-স্থিরভাবে থেমে থেমে পাঠ করতেন। এতে তা দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হতো। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৭৩, সিফাতুস সালাত ৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ অনুচ্ছেদে উম্মু সালামা এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ হাফসার হাদীসটি হাসান সহীহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে এরূপও বর্ণিত হয়েছেঃ “তিনি রাতের বেলা বসে নামায আদায় করতেন। কিরা'আতের তিরিশ অথবা চল্লিশ আয়াত বাকি থাকতে তিনি উঠে দাঁড়াতেন এবং তা পড়ে রুকূ-সিজদা করতেন। দ্বিতীয় রাকআতেও তিনি এরূপ করতেন। আরো বর্ণিত আছে, তিনি বসে নামায আদায় করতেন যখন তিনি দাড়িয়ে কিরা'আত পাঠ করতেন, রুকূ-সিজদাও দাঁড়িয়ে করতেন। তিনি বসে কিরা'আত পাঠ করলে রুকূ-সজদাহও বসে করতেন।” ইমাম আহমাদ ও ইসহাক বলেন, উভয় হাদীস অনুযায়ী আমল করা যায়। অর্থাৎ দু'টো হাদীসই সহীহ এবং তদনুযায়ী আমল করার যোগ্য। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)-৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আল্লাহর প্রতি ‘তাজিম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ-সিজদা করাঃ

সালাতে আল্লাহর প্রতি ‘তাজিম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ২৩৮)। কাজেই ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে।

হাদিসগুলো দেখুনঃ

(১) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চোরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম চোর হল সেই ব্যক্তি, যে নামায চুরি করে। সকলে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সে নামায কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, সে তার নামাযের রুকূ-সিজদা পূর্ণরূপে করে না। অথবা তিনি বললেন, সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা করে না। (অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে চটপট রুকু-সিজদা করে)। (আহমাদ ২২৬৪২, ত্বাবারানী ৩২০৭, ইবনে খুযাইমা ৬৬৩, হাকেম ৮৩৫, সহীহ তারগীব ৫২৪,  হাদীস সম্ভার, হাদিস নং-৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.), আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু 'আলা আল হামদানী (রহঃ), আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষ করে পিছনে ফিরে বললেনঃ হে অমুক ব্যক্তি! তুমি কি সুষ্ঠুভাবে তোমার সালাত আদায় করবে না? সালাত আদায়কারী কিভাবে তার সালাত আদায় করে তা কি সে দেখে না? কেননা, সে নিজের উপকারের জন্যই সালাত আদায় করে। আল্লাহর শপথ আমি সামনের দিকে যেভাবে দেখতে পাই পিছনেও সে মতই দেখতে পাই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭৪১, ৭৪২, ৪১৮, ৪১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী, ৮৪৩-(১০৮/৪২৩), ৮৪৫-(১১০/৪২৫), ৮৪৬-(১১১), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৫, ৭০৬, ৮৩৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৫২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৭,৬৯৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ করার ফজিলতঃ

(ক) হুমরান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘উসমান ইবনু আফফান (রাযি.)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত সালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-১৫৯, ১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-২৮৬, মুসলিম ২২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। ভাবতে হবে, এই সালাতই হয়তো বা আপনার জীবনের শেষ সালাত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি সালাতে দণ্ডায়মান হবে তখন এমনভাবে সালাত আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ সালাত।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস : ৫২২৬)।

(গ) সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করতে হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)

এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে।’ (মুসতাদরাক হাকেম, সহিহুল জামে হাদিস : ১৫৩৮)।

(ঘ) সালাতে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে ‘হায়া’ বা লজ্জাশরম নিয়ে আসতে হবে। দণ্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মতো মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (তাফসিরে তবারি : ৯/১৯৭)।

উপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে সালাতে মনোযোগ তৈরি হবে, ইনশাআল্লাহ।

সালাতে একাগ্রতার জন্যে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা মাকরুহঃ

 উক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না। কেননা ছালাতে একাগ্রতা আনার নামে চোখ বন্ধ রাখা মাকরূহ (ছালেহ আল-ফাওযান, আল-মুনতাক্বা ৪৯/৩২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৭/১০৪ -০৫)। বরং ছালাতের মধ্যে সিজদার স্থানের দিকে এবং তাশাহহুদের সময় আঙ্গুলের ইশারার দিকে দৃষ্টি রাখাই হাদীছ সম্মত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০, হাকেম ১৭৬১, মিশকাত ৯১২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তার পিতার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি (শাহাদাত আঙুলের) ইশারাকে অতিক্রম করতো না। আর হাজ্জাজ বর্ণিত হাদীসটি অধিক পরিপূর্ণ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০, নাসায়ী ১২৭৪), আহমাদ (৩/৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ব্যাখ্যাঃ

 সালাতে কেবল তাশাহুদের বৈঠক ছাড়া অন্য সকল অবস্থায় সেজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা সুন্নত। কেবল তাশাহুদের বৈঠকে দৃষ্টি থাকবে ডান হাতের শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলীর দিকে।

নিম্নে এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো পেশ করা হল:

(ক) আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে”।

[মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস নং ১/৪৭৯। তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটির বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। পৃ: ৮৯।]

(খ) অপর এক হাদিসে বর্ণিত, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেন, বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সেজদার স্থান হতে অন্য দিকে ফেরাননি”।

[এ ইমাম হাকেম মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। দেখুন: ১/৪৭৯- আল্লামা যাহাবী রহ. হাদিসটি বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। আল্লামা আলবানী রহ. তাদের উভয়ের সাথে একমত পোষণ করেন; দেখুন, এরওয়াল গালিল: ২/৭৩।]

 তাশাহুদে বসে তাশাহুদ আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং সে দিকে নিদৃষ্টি নিবন্ধ রাখা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,

“যখন তিনি তাশাহ্‌হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে যে আঙ্গুলটি আছে (অর্থাৎ শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল) দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকে দিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র রা. থেকে বর্ণিত যে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তার বাম হাত তাঁর বাম উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে একটি মাসআলা বলা হয় যে, রুকু অবস্থায় দৃষ্টি রাখতে হবে বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের দিকে! এ কথাটি যে সহীহ সুন্নাহ পরিপন্থী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিছু মানুষকে দেখা যায়, সালাতে অধিক মনোযোগ সৃষ্টি হবে-এই নিয়তে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করে। কিন্তু হাদিসের আলোকে তা সঠিক নয়। কেননা উপরোক্ত হাদিস সমূহে আমরা দেখলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণভাবে সেজদার স্থানে আর তাশাহুদ অবস্থায় ডান হাতের তর্জনী আগুলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। এখান থেকে প্রতিয়মান হয় যে, চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা সুন্নত পরিপন্থী কাজ।

তাকবীরে তাহরীমা:

হাত উঠানোর নিয়মঃ দুই হাতের আংগুলসমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবেন ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)।

সালাতের শুরুতে রাসূলুল্লাহ (স.) তার দু’হাত কখনো কাঁধ আবার কখনো কান বরাবর উঠাতেন।

কাঁধ বরাবর হাত উঠানোর দলিলঃ

(ক) আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন, তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯২, ৮০১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৭৩১-৭৩৫, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ  বুখারী ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরু করার সময় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৩, সহীহ  বুখারী ৭৩৫, নাসায়ী ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৬১, দারেমী ১২৮৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।।

কান বরাবর হাত উঠনোর দলিলঃ

(ক) মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কান পর্যন্ত উপরে উঠাতেন।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৫, সহীহ বুখারী ৭৩৭, মুসলিম ৩৯১, ইবনু মাজাহ্ ৮৫৯, আহমাদ ২০৫৩৫, দারেমী ১২৮৬, ইরওয়া ৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আরম্ভকালে স্বীয় দু’ হাত নিজের কান পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭২৬, ৭২৮,তিরমিযী ২৯২,  নাসায়ী ৮৮৮, ইবনু মাজাহ ৮৬৭, আহমাদ ৩১৬, ৩১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতের ভিতর চার সময়ে দুই হাত উঠাতে হয়ঃ

(ক) তাকবীরে তাহরীমার সময় দুই হাত উঠাতে হয়ঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এমন করতেন না। ((সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭,৭৩৯ মুসলিম ৪/৯, হাঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যখন রুকুতে যাওয়া হয়ঃ  (১নং দ্রষ্টব্য)।

(গ) যখন রুকু থেকে উঠা হয়ঃ (১নং দ্রষ্টব্য)।

(ঘ) যখন তৃতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়ানো হয়। অর্থাৎ যে সালাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়ানো হয়ঃ

নাফি‘ (রহ.) বর্ণিত যে, ইবনু ‘উমার (রাযি.) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’ হাত উঠাতেন আর যখন রুকূ‘ করতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন। অতঃপর যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলতেন তখনও দু’ হাত উঠাতেন এবং দু’রাক‘আত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(এছড়াও দেখুন-বুখারী ১ম খণ্ড ১০২ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১০৪,১০৫ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা। ইবনু খুযায়মাহ ৯৫,৯৬। মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। ইবনে মাজাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা। যাদুল মা‘আদ ১ম খণ্ড ১৩৭,১৩৮,১৫০ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম ১৯০ পৃষ্ঠা। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম হাদীস নং ৬৯২, ৬৯৩, ৬৯৫। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩২-৪৩৪। বুখারী ইসলামীক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৭-৭০১ অনুচ্ছেদসহ। মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪৫-৭৫০। আবূ দাঊদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম হাদীস নং ৮৪২-৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ২৫৫। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৮-৭৩৯, ৭৪১,৭৪৫। বুলূগুল মারাম ৮১ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৬-১২৯ পৃষ্ঠা)।

 রাসূলুল্লাহ (স) হাত উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার' বলে তাকবীর দিয়েছেনঃ

হাদিসটি নিম্ন রুপঃ

(ক) আবূ কিলাবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। (সহিহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৭, মুসলিম ৩৯১, আহমাদ ২০৫৫৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সিজদা্  হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী ৭৮৯, মুসলিম ৩৯২, নাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১, ইরওয়া ৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, হাত বাঁধার সময় দুই কানের লতি বরাবর দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী উঠানো বা কানের লতি স্পর্শ করা সংক্রান্ত হাদীছ যঈফ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৩৭, আহমাদ ৩১৬, নাসায়ী ৮৮১)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

অতঃপর বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে (হাকেম, বায়হাক্বী, আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী (বৈরূত : ১৪০৩/১৯৮৩) পৃঃ ৬৯; ইরওয়া হা/৩৫৪-এর শেষে দ্রষ্টব্য।) দন্ডায়মান হবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর জন্য নিবিষ্টচিত্তে দাঁড়িয়ে যাও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)।

বুকের উপর হাত বাঁধার দলিল ও নিয়মঃ

রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর সালাতে বুকের উপর হাত রাখতেন। তিনি বুকের উপর কিভাবে হাত রাখতেন তার দলীল নিম্নরুপঃ

(১) সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, ‘লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হতো যেন তারা ছালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে, ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৪০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৭, ৭৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 আধুনিক প্রকাশনীর ৬৯৬ নম্বরে অত্র হাদীসের অনুবাদে একটি বিরাট জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজি করা হয়েছে। পাঠকগণের সুবিধার্থে মূল হাদীসের ইবারতসহ সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো-

সালাতে নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা সহীহ হাদীসে নাই। নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা প্রমাণহীন। বরং হাত বুকের উপর বাঁধার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

ওয়ায়িল বিন হুজর (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি তার বুকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন।

বুখারীর হাদীসের আরবী ইবারতে ذراعه শব্দের অর্থ করেছেন হাতের কব্জি। কিন্তু এমন কোন অভিধান নেই যেখানে ذراع অর্থ কব্জি করা হয়েছে। আরবী অভিধানগুলোতে ذراع শব্দের অর্থ পূর্ণ একগজ বিশিষ্ট হাত। অনুবাদক শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে মাযহাবী মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার উদ্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদে পূর্ণ হাতের পরিবর্তে কব্জি উল্লেখ করেছেন। তথাপিও সংশয় নিরসনের লক্ষে এ সম্পর্কে খানিকটা বিশদ আলোচনা উদ্ধৃত করা হলো-

ওয়াইল বিন হুজ্র (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন।

(বুখারী ১০২ পৃষ্ঠ। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ২০ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৭৩ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১১০, ১২১, ১২৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা, মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৭৪ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৬০ পৃষ্ঠা। যাদুল মায়াদ ১২৯ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১০১ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সাআদাত ১ম খণ্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩৫। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৬। বুখারী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭০২; মুসলিম ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৮৫১। আবূদাঊদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৫৯, তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৫২, মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪১, ৭৪২। বুলুগুল মারাম বাংলা ৮২ পৃষ্ঠা)।

বুকের উপর হাত বাঁধা সম্বন্ধে একটি হাদীস বর্ণিত হল- সীনা বা বুকের উপর এরূপভাবে হাত বাঁধতে হবে যেন ডান হাত উপরে এবং বাম হাত নীচে থাকে।

হাত বাঁধার দু’টি নিয়মঃ

প্রথম নিয়মঃ ডান হাতের কব্জি বাম হাতের কব্জির জোড়ের উপর থাকবে। (ইবনু খুযাইমাহ)

দ্বিতীয় নিয়মঃ ডান হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাতের কনুই-এর উপর থাকবে, অর্থাৎ সমস্ত ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে। (বুখারী)

এটাই যিরা‘আহর উপর যিরা‘আহ রাখার পদ্ধতি।

 একথা স্পষ্ট যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখলে তা বুকের উপরেই চলে আসে। নিম্নোক্ত রেওয়ায়াত সমূহে পরিষ্কারভাবে যার ব্যাখ্যা এসেছে। যেমন-

(ক)  ছাহাবী হুলব আত-ত্বাঈ (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বাম হাতের জোড়ের (কব্জির) উপরে ডান হাতের জোড় বুকের উপরে রাখতে দেখেছি’। (আহমাদ হা/২২৬১০, সনদ হাসান, আলবানী, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং-৭৬, ১১৮ পৃঃ; তিরমিযী (তুহফা সহ, কায়রো : ১৪০৭/১৯৮৭) হা/২৫২, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৮৭, ২/৮১, ৯০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯)।

(খ) ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপরে রাখলেন’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাঊদ হা/৭৫৫, ইবনু মাস‘ঊদ হ’তে; ঐ, হা/৭৫৯, ত্বাঊস বিন কায়সান হ’তে; ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা’ অনুচ্ছেদ-১২০)।

উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ সমূহে ‘বুকের উপরে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘হাত বাঁধা বিষয়ে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের চাইতে বিশুদ্ধতম কোন হাদীছ আর নেই’। (নায়লুল আওত্বার ৩/২৫)।

উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত হয়নি এবং এটাই জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি। (নায়লুল আওত্বার ৩/২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : ১৪১২/১৯৯২) ১/১০৯)।

এক্ষণে ‘নাভির নীচে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে আহমাদ, আবুদাঊদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ প্রভৃতি হাদীছ গ্রন্থে চারজন ছাহাবী ও দু’জন তাবেঈ থেকে যে চারটি হাদীছ ও দু’টি ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে মুহাদ্দেছীনের বক্তব্য হ’ল- ‘(যঈফ হওয়ার কারণে) এগুলির একটিও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়’। (মির‘আতুল মাফাতীহ (দিল্লী: ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৫/১৯৯৫) ৩/৬৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৮৯)।

প্রকাশ থাকে যে, ছালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে হাত ও পুরুষের জন্য নাভীর নীচে হাত বাঁধার যে রেওয়াজ চালু আছে, হাদীছে বা আছারে এর কোন প্রমাণ নেই। (মির‘আত (লাহোর ১ম সংস্করণ, ১৩৮০/১৯৬১) ১/৫৫৮; ঐ, ৩/৬৩; তুহফা ২/৮৩)।

বরং এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, ছালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাতসমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে। (মির‘আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯)।

বুকে হাত বাঁধার তাৎপর্যঃ

ত্বীবী বলেন, ‘হৃৎপিন্ডের উপরে বুকে হাত বাঁধার মধ্যে হুঁশিয়ারী রয়েছে এ বিষয়ে যে, বান্দা তার মহা পরাক্রান্ত মালিকের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে হাতের উপর হাত রেখে মাথা নিচু করে পূর্ণ আদব ও আনুগত্য সহকারে, যা কোনভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যাবে না’। (মির‘আত ৩/৫৯ পৃঃ, হা/৮০৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

কেউ কেউ বলেছেন, নাভির নিচে হাত বাঁধা সুন্নাত। তবে নাভির নিচে হাত বাঁধার হাদীসগুলো দুর্বল। (আলবানীর যঈফ আবু দাউদ- ৭৫৬, ৭৫৮) অতএব, সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে এর বিপরীতে দুর্বল হাদীস আমল করা জায়েয নেই। আবার কেউ কেউ বলেন, নারীরা বুকে বাঁধবে আর পুরুষেরা বাঁধবে নাভির নিচে। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (স) যেখানে কোন পার্থক্য করেননি সেখানে আলেমগণ কিভাবে পার্থক্য করেন? স্বতঃসিদ্ধ বিষয় হলো, এ হাদীসের নির্দেশ পুরুষ ও নারী সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। অর্থাৎ সহীহ হাদীসের আলোকে প্রমাণিত যে, বুকের উপর হাত রাখা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই সুন্নাত।

সালাতরত অবস্থায় দৃষ্টি রাখার নিয়মঃ

দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স.)-এর দৃষ্টি থাকত সিজদার স্থানে, আর বসার সময় তিনি ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে নজর রাখতেন। (সুনানে নাসাঈ: ১২৭৫, ১১৬০, তিরমিযী ৩৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই সেজদার মাঝখানে যে বৈঠক করবেন, সে বৈঠকে আপনার দৃষ্টি মূলত আপনার হাঁটু অতিক্রম করবে না। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি বসে তাঁর হাঁটুর ওপর ডান হাত যেখানে রাখবেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি যেখানে থাকবে, সেই আঙুলের দিকে তিনি ইশারা করবেন। সামনে ইমামের দিকে তাকানো বা চোখ বন্ধ করে রাখা বৈধ নয়।

সালাতে এদিক ওদিক তাকানো ও আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো নিষেধঃ

(ক)  সালাতে এদিক ওদিক তাকানো নিষেধঃ

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৫১, ৩২৯১, আধুনিক প্রকাশনী ৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ।

 (খ)  সালাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো নিষেধঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৭৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭১৪, মুসলিম: ৪২৮, ৪২৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ।

তাকবীরে তাহরীমার পর দো'আঃ

ছানা:

‘ছানা’ অর্থ ‘প্রশংসা’। এটা মূলতঃ ‘দো‘আয়ে ইস্তেফতা-হ’ বা ছালাত শুরুর দো‘আ। বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।

(১) আবূ সাঈদ ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) সালাতের শুরুতে এই দুআ পাঠ করতেন।

“সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা অতাবা-রাকাসমুকা অতাআ’-লা জাদ্দুকা অ লা ইলা-হা গায়রুক”।

অর্থ:- তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার নাম অতি বর্কতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮০৬, তিরমিযী ২৪৩, আবূ দাঊদ ৭৭৬, ত্বাহাবী ১/১১৭, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১১৩, বায়হাকী ২/৩৪,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা হল বান্দার ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা---’ বলা।” (তাওহীদ, ইবনে মাজাহ্‌, নাসাঈ, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৯৩৯ নং)।

উক্ত ছানার স্থলে পড়ার অতিরিক্ত দোয়া বা ছানাসমূহ (যেকোনো ১টি পড়তে হবে):

(২) ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। (সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯)।

 অর্থ: আমি সব দিক থেকে মূখ পিরেয়ে বিশেষ ভাবে কেবল মাত্র সেই মহান সত্তাকেই ইবাদত জন্য নির্দিষ্ট করলাম,যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই ।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮১৩, সহীহ মুসলিম ৭৭১, মুসনাদে শাফি‘ঈ ২০১, আবূ দাঊদ ৭৬০, তিরমিযী ৩৪২১, ইবনু মাজাহ্ ১০৫৪, আহমাদ ৭২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৭৮।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সালাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ

‘‘ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস্ সামাওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন - লা- শারীকা লাহূ, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা রব্বী, ওয়াআনা- ‘আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু, বিযাম্বী, ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ-, ইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আন্তা, ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইল্লা- আন্তা, ওয়াসরিফ ‘আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্তা লাব্বায়কা ওয়া সা‘দায়কা, ওয়াল খয়রা কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাকতা ওয়াতা‘আ-লায়তা, আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা’’ -

(অর্থাৎ- ‘‘আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয়ই আমার সালাত  আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এজন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা‘বূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের ওপর যুলম (অত্যাচার) করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয়ই আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখো আমার নিকট হতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে উপস্থিত। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার প্রতি আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রত্যাবর্তন করছি”)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮১৩ (২), হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে, অনেকে সুরা: আনয়াম, আয়াত নং-৭৯ এর  “ইন্নী ওয়াজজাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন” এই অংশটুকু জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া হিসেবে পড়ে থাকে যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়।

উক্ত হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, রাসুল সাঃ উক্ত দোয়া তাকবীরে তাহরীমার পর পড়তেন। ইহা জায়নামাজের দোয়া নয়।

সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছানার দোয়াঃ

(৩)  আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি’।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত করে দাও।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন! আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি বলি, ‘‘হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমূহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছো মাশরিক ও মাগরিবের (অর্থাৎ- পূর্ব ও পশ্চিমের) মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হতে। হে আল্লাহ! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারার বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।’’  (মিশকাতুল মিসাবীহ ৮১২: সহীহ : বুখারী ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, আবূ দাঊদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনু মাজাহ্ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারেমী ১২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৭৫।) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আউযুবিল্লাহ পাঠঃ

ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ পাঠ শেষে “আ’উযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” নীরবে পড়বেন।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, তিরমিযী ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসটি নিম্নরুপ:

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাতের জন্য দন্ডায়মান হলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর এই দুআ পড়তেনঃ ”সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা।” অতঃপর তিনবার ”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও তিনবার ”আল্লা­হু আকবার কাবীরান” বলার পর”আউযু বিল্লাহিস সামিইল-‘আলীমি মিনাশ-শয়তানির রজীম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি” বলতেন। তারপর কিরাত পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৭৫, তিরমিযী ২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, ‘আঊযুবিল্লাহ’ কেবল ১ম রাক‘আতে পড়বেন, বাকী রাক‘আতগুলিতে নয়। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১১২ পৃঃ ; নায়ল ৩/৩৬-৩৯ পৃঃ)।

বিসমিল্লাহ পাঠঃ

‘আঊযুবিল্লাহ’ পাঠ শেষে  ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়বেন। অতঃপর সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবেন। সুরা ফাতিহা পাঠ শেষে আমিন বলবেন। এরপর বিসমিল্লাহসহ অন্য সুরা বা সুরার অংশ বিশেষ যা পূর্ণাঙ্গ অর্থ বহন করে এমন আয়াত পাঠ করবেন।

সুরা ফাতিহাসহ অন্যান্য সুরা পাঠ করার পূর্বে “বিসমিল্লাহ “ বলার দলিলঃ

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোন সূরার শুরুর দিক চি‎‎হ্নিত করতে পারতেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮, হাকিম (১/২৩২), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪২)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এইমাত্র আমার উপর একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ ‘‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম, ইন্না আ’ত্বায়না কাল-কাওসার .....’’ সূরাটির শেষ পর্যন্ত। তিনি বললেন, তোমরা কি জান! কাওসার কি? তাঁরা বললেন, এ বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, তা হচ্ছে একটি নহর, আমার রব্ব আমাকে জান্নাতে তা দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৪। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

‘বিসমিল্লাহ’ সূরায়ে ফাতিহার অংশ হওয়ার পক্ষে যেমন কোন ছহীহ দলীল নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৫২ পৃঃ। বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : নায়ল ৩/৩৯-৫২)।

তেমনি ‘জেহরী’ ছালাতে ‘বিসমিল্লাহ’ সরবে পড়ার পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।

বরং এটি দুই সূরার মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে পঠিত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ইমাম কুরতুবী বলেন যে, সকল কথার মধ্যে সঠিক কথা হ’ল ইমাম মালেকের কথা যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। যেমন ‘কুরআন’ খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজন ব্যক্তির বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় না। বরং তা প্রতিষ্ঠিত হয় অবিরত ধারায় অকাট্ট বর্ণনা সমূহের মাধ্যমে, যাতে কোন মতভেদ থাকে না। ইবনুল ‘আরাবী বলেন, এটি সূরা ফাতিহার অংশ না হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে মতভেদ রয়েছে। আর কুরআনে কোন মতভেদ থাকে না। বরং ছহীহ-শুদ্ধ বর্ণনা সমূহ যাতে কোন আপত্তি নেই, একথা প্রমাণ করে যে, ‘বিসমিল্লাহ’ সূরা ফাতিহার অংশ নয়’। এটি সূরা নমলের ৩০তম আয়াত মাত্র। এ বিষয়ে ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮২৩ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; তাফসীরে কুরতুবী মুক্বাদ্দামা, ‘বিসমিল্লাহ’ অংশ দ্রষ্টব্য)।

(১) আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন,

“আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেছি। কিন্তু তাঁদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে পড়তে শুনিনি’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা (বৈরূত : ১৩৯১/১৯৭১), হা/৪৯৪-৯৬; আহমাদ, মুসলিম, নায়ল ৩/৩৯; দারাকুৎনী হা/১১৮৬-৯৫; হাদীছ ছহীহ)।

(২) দারাকুৎনী বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলার বিষয়ে কোন হাদীছ ‘ছহীহ’ প্রমাণিত হয়নি। (নায়লুল আওত্বার ৩/৪৬ পৃঃ)।

(৩) তবে ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে সবল-দুর্বল মিলে প্রায় ১৪টি হাদীছের প্রতি লক্ষ্য রেখে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হয়তোবা কখনো কখনো ‘বিসমিল্লাহ’ জোরে বলে থাকবেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি চুপে চুপেই পড়তেন। এটা নিশ্চিত যে, তিনি সর্বদা জোরে পড়তেন না। যদি তাই পড়তেন, তাহ’লে ছাহাবায়ে কেরাম, খুলাফায়ে রাশেদ্বীন, শহরবাসী ও সাধারণ মুছল্লীদের নিকটে বিষয়টি গোপন থাকত না’।.... অতঃপর বর্ণিত হাদীছগুলি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলির মধ্যে যেগুলি ছহীহ, সেগুলির বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং স্পষ্টগুলি ছহীহ নয়’। (যা-দুল মা‘আ-দ ১/১৯৯-২০০ পৃঃ ; নায়ল ৩/৪৭ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০২ পৃঃ)।

সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ ও  পাঠ করার নিয়মঃ

ছালাতের মধ্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করেনি তার সালাত হলো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২২, সহীহ বুখারী ৭৫৬, মুসলিম ৩৯১,৩৯২, ৩৯৩, ৩৯৪, আবূ দাঊদ ৮২২-৮২৪, নাসায়ী ৯১০, ৯১১, ৯২০, তিরমিযী ২৪৭, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৭, ৮৩৮,৮৪০, ৮৪১, ৮৪৩, আহমাদ ২২১৬৯, ২২১৮৬, ২২২৩৭, ২২২৪০, ২২৬৭৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৮৬, ইরওয়া ৩০২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫১৩, দারিমী ১২৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা রাসূলুল্লাহ (স.) প্রতি আয়াতের পর থেমে থেমে পড়তেন। যেমন, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আলহামদুলিল্লাহ হি রাব্বিল আলামিন আবার পড়তেন, আর রাহমানির রাহিম অতঃপর থামতেন, আবার পড়তেন, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন তারপর থেমে আবার পড়তেন। এভাবে প্রতি আয়াত শেষে থেমে থেমে পূর্ণ সূরা পাঠ করতেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন’, এরপর থামতেন। তারপর বলতেন, ‘আর্ রহমা-নির রহীম’, তারপর বিরতি দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২০৫,সহীহ তিরমিযী ২৯২৭, দারাকুত্বনী ১১৭৮, ১১৯১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৯১০, শামায়িল ২৭০, ইরওয়া ৩৪৩, সহীহ আল জামি ৫০০০, নায়ল ৩/৪৯-৫০ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়াঃ

ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যকীয় বিষয়, যা না পড়লে ছালাত হয় না। কিন্তু ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পড়া নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। তবে ছালাত সরবে হোক বা নীরবে হোক প্রত্যেক ছালাতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। সূরা ফাতিহা না পড়ার পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা পেশ করা হয়, মুহাদ্দিছগণের নিকট সেগুলো সবই জাল ও যঈফ।

ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে কি হবে না তার বিস্তারিত PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)

আমীন বলাঃ

সূরা ফাতিহার পর ইমাম ও মুক্তাদি সবাই আমীন বলবেন। আমীন শব্দের অর্থ হলো ‘হে আল্লাহ, কবুল কর। হাদীসে আছে, মুসল্লীগণ যখন আমীন বলে তখন ফেরেশতারা তাদের সাথে সাথে আমীন বলে। যখন উভয় গ্রুপের আমীন বলার আওয়াজ এক হয়ে যায় তখন এ মুসল্লীদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৭৮১, ৭৮২, ৪৪৭৫, ৬৪০২, মুসলিম ৪১০, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখিত হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণিত যে, সকল সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর আমিন বলতে হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, আমিন জোড়ে বলতে হবে নাকি নিম্ন স্বরে নাকি মনে মনে?

জবাবঃ

নামাজি ব্যক্তি একাই কিংবা ইমামের পিছনে হলে জোহর ও আসরসহ সকল সুন্নত এবং নফল সালাতে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন মনে মনে বলবেন। ইমামের পিছনে সালাত আদায় করলে যেহেতু প্রতি রাকাতে মুক্তাদিকে সুরা ফাতিহা পাঠ করতে হয় তাই সুরা ফাতিহা শেষে ইমাম মুক্তাদি সকলে মনে মনে আমিন বলবেন। এছাড়া ফজর, মাগরিব, এশা ও জুমার সালাতে ইমাম মুক্তাতি উভয়ই আমিন জোড়ে বলবেন এবং ইমাম মুক্তাতির আমিন বলা একই সাথে হতে হবে। ফজর, মাগরিব ও এশা সালাতে একাকি হলেও জোড়ে বা উচ্চ স্বরে আমিন বলবেন।

ইমামের পিছনে আমিন জোড়ে বলার সহিহ হাদিসসমূহঃ

(ক)  ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সালাত আদায়কালে সূরাহ ফাতিহার শেষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘‘ওয়ালাদ্দোয়াল্লীন’’ পড়তেন তখন তিনি সশব্দে আমীন বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩২, তিরমিযী ২৪৮, ইবনু মাজাহ ৮৫৫, আহমাদ (৪/৩১৬), দারাকুতনী (১/৫/৩৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন। তাতে তিনি সশব্দে ‘‘আমীন’’ বলেছেন। তিনি ডানে ও বামে এভাবে সালাম ফিরিয়েছেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৩৩, তিরমিযী (অধ্যায় : আবওয়াবুস সালাত, অনুঃ আমীন বলা প্রসঙ্গে, হাঃ ২৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলেন, তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার ‘আমীন’ (বলা) ও মালাইকাহর ‘আমীন’ (বলা) এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮০, ৬৪০২; মুসলিম  ৪১০, ৯৪২, আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৪৪, ৭৪৬, আবুদাঊদ ৯৩২, ৯৩৩, তিরমিযী ২৪৮, ইবনু মাজাহ ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবু হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ পড়লে তোমরা ‘আমীন’ বলো। কেননা, যার এ (আমীন) বলা মালাকগণের (আমীন) বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ সালামাহ (রহ.) সূত্রে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.)-এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এবং নু‘আইম- মুজমির (রহ.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে হাদীস বর্ণনায় সুমাই (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৮২, ৪৪৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৭২, নাসায়ী, ১০৬৩, ইবনু মাজাহ ৯০১, আহমাদ ৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৬৪০২, ২/৯৪৭ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এত বেশি ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮৫৬, সহীহাহ ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব।

নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে, তার সবই যঈফ ও জাল।

কিরাআত পাঠঃ

সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়া সুন্নাতে মু্ওয়াক্কাদাহ।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে প্রথম দু’ রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ এবং আরও দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। পরের দু’ রাক্‘আতে শুধু সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করতেন। তিনি প্রথম রাক্‘আতকে দ্বিতীয় রাক্‘আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি ‘আসরের সালাত ও আদায় করতেন। এভাবে তিনি ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাত  আদায় করতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮২৮-(৭), বুখারী ৭৫৯, মুসলিম ৪৫১, আবূ দাঊদ ৭৯৮, নাসায়ী ৯৭৮, আহমাদ ২২৫২০, দারেমী ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূরা ফাতিহার সাথে সর্বনিম্ন যেকোন একটি আয়াত পাঠ করলেও যথেষ্ট হবে। যেমন আয়াতুল কুরসী। তবে স্মর্তব্য যে, আয়াতটি অসম্পূর্ণ অর্থজ্ঞাপক হলে তা পড়া উচিৎ নয়। (বাহূতী, কাশ্শাফুল ক্বিনা‘ ১/৩৪২)। যেমন- مدهامتان ‘(জান্নাতের) ঘন সবুজ দু’টি বাগান’ (আর-রহমান ৫৫/৬৪)।

এখানে উল্লেখ্য যে, সালাতে সুরা ফাতিহার পর ক্ষমা বা প্রার্থনামূলক কিংবা বিপদ আপদ থেকে মুক্তি বা ইহকালীন-পরকালীন মুক্তি সংক্রান্ত আয়াতগুলো পড়া উচিৎ। যেহেতু সালাত এক প্রকার দোয়া বা মুনাজাত তাই আপনার যা চাহিদা তা সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট চাইবেন। তাই এই সংক্রান্ত আয়াতগুলো মুখস্থ করবেন। যেমন রব্বানা বা রব্বিগ ফিরলি দিয়ে যে আয়াতগুলো আছে। এগুলোকে আমরা দোয়া বলে থাকি।

সালাতে ক্বিরাত পাঠ করার আদবঃ

(১) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করার নিয়মঃ

(ক) সূরায়ে ফাতিহার প্রতিটি আয়াতের শেষে ওয়াকফ করা সুন্নাত।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্যের মধ্যে পূর্ণ থেমে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন’, এরপর থামতেন। তারপর বলতেন, ‘আর্ রহমা-নির রহীম’, তারপর বিরতি দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২০৫,সহীহ তিরমিযী ২৯২৭, দারাকুত্বনী ১১৭৮, ১১৯১, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২৯১০, শামায়িল ২৭০, ইরওয়া ৩৪৩, সহীহ আল জামি ৫০০০, নায়ল ৩/৪৯-৫০ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  ক্বিরাআত সুন্দর ও মিষ্টি স্বরে পাঠ করতে হবে। কিন্তু গানের সুরে পড়া যাবে না।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(১) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের মিষ্টি স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করো।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৯৯, সহীহ আবূ দাঊদ ১৪৬৮, নাসায়ী ১০১৫, ইবনু মাজাহ ১৩৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৭৩৭, আহমাদ ১৮৪৯৪, দারিমী ৩৫৪৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৯)। (হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে। কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২২০৮, সহীহ : দারিমী ৩৫৪৪, শু‘আবূল ঈমান ১৯৫৫, সহীহাহ্ ৭৭১, সহীহ আল জামি ৩১৪৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন নবীর সুর করে কুরআন পড়াকে আল্লাহ তা‘আলা যতটা কান পেতে শোনেন আর কোন কথাকে এতো কান পেতে শোনেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২১৯২, সহীহ  বুখারী ৫০২৩, মুসলিম ৭৯২, আবূ দাঊদ ১৪৭৩, নাসায়ী ১০১৭, আহমাদ ৭৬৭০, দারিমী ১৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৪২৮, শু‘আবূল ঈমান ১৯৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪৪৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জেহরী ছালাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ইমামের সাকতা করা সুন্নাত। কারণ এই সময় ‘বাইদ বায়নী..’ (ছানা) পড়তে হয়। (বুখারী ৭৪৪; মিশকাত ৮১২, ৮১৮, নাসাঈ ৮৯৪, মুসলিম ৫৯৮, আবূ দাঊদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনু মাজাহ্ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারেমী ১২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৭৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিন্তু সূরা ফাতিহার পর কিংবা ক্বিরাআত শেষে সাকতা করার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো যঈফ।

(ঘ) ১ম রাক‘আতের ক্বিরাআত কিছুটা দীর্ঘ হওয়া বাঞ্ছনীয়। (মিশকাত ৮২৮, নায়ল ৩/৭৬)।

২ নং উল্লেখিত হাদিসটি দেখুন।

(ঙ) অমনিভাবে কুরআনের শুরুর দিক থেকে শেষের দিকে ক্বিরাআত করা ভাল। তবে আগপিছ হলে দোষ নেই। এমনকি একই সূরা পরপর দুই রাক‘আতে পড়া যাবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মু‘আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল জুহানী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুহায়নাহ্ বংশের এক ব্যক্তি তাকে বলেছেন, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফজরের সালাতের দু’ রাক্‘আতেই সূরাহ্ ‘ইযা- যুলযিলাত’ তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। আমি বলতে পারি না, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলে গিয়েছিলেন না ইচ্ছা করেই পড়েছিলেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৬২. আবূ দাঊদ ৮১৬,নায়লুল আওত্বার ৩/৮০-৮২ পৃঃ। আলবানী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট স্পষ্ট যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে সূরাহ্ যিলযাল ইচ্ছাকৃতভাবেই তিলাওয়াত করেছেন ভুলবশত নয় বরং এটি শারী‘আতে বৈধকরণ এবং শিক্ষা দানের জন্য করেছেন)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২) জেহরী ছালাতে প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা পাঠের পর ইমাম হলে যেকোন সূরা পাঠ করবেন। আর মুক্তাদী হলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর আর কিছুই না পড়ে কেবল ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

তবে যোহর ও আছরের ছালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সূরায়ে ফাতিহাসহ অন্য সূরা পড়বে এবং ৩য় ও ৪র্থ রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে। যেমন আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরা পড়তেন এবং শেষের দু’রাক‘আতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়তেন। অনুরূপ করতেন আছরে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে প্রথম দু’ রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ এবং আরও দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। পরের দু’ রাক্‘আতে শুধু সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করতেন। তিনি প্রথম রাক্‘আতকে দ্বিতীয় রাক্‘আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি ‘আসরের সালাতও আদায় করতেন। এভাবে তিনি ফজরের সালাত  আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৮, সহীহ বুখারী ৭৫৯, মুসলিম ৪৫১, আবূ দাঊদ ৭৯৮, নাসায়ী ৯৭৮, আহমাদ ২২৫২০, দারেমী ১৩২৮, ইবনু মাজাহ ৮৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল ছালাতে সময় ও সুযোগ মত ক্বিরাআত দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি

(ক)  ফজরের ১ম রাক‘আতে অধিকাংশ সময় ক্বিরাআত দীর্ঘ করতেন এবং ‘ক্বাফ’ হ’তে ‘মুরসালাত’ পর্যন্ত ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে পাঠ করতেন। কখনো ‘নাবা’ হতে ‘লাইল’ পর্যন্ত ‘মধ্যম বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে এবং কখনো ‘যোহা’ হ’তে ‘নাস’ পর্যন্ত ‘স্বল্প বিস্তৃত’ সূরাসমূহ হতে পাঠ করতেন।

(১) কুরআনের প্রথম দিকের ৭টি বড় সূরাকে ‘দীর্ঘ সপ্তক’ বলা হয়। সেগুলি হলো যথাক্রমে সূরা বাক্বারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদাহ, আন‘আম, আ‘রাফ ও তওবাহ। কোন কোন বিদ্বান আনফাল ও তওবাহকে একত্রে একটি সূরা হিসাবে গণ্য করেছেন (২) ক্বাফ হতে মুরসালাত পর্যন্ত ২৮টি সূরাকে ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ (৩) ‘নাবা’ হতে ‘লাইল’ পর্যন্ত ১৫টি সূরাকে ‘মধ্যম বিস্তৃত’ এবং (৪) ‘যোহা’ হতে ‘নাস’ পর্যন্ত ২২টি সূরাকে ‘স্বল্প বিস্তৃত’ সূরা বলা হয়। বাকী গুলিকে সাধারণ সূরা হিসাবে গণ্য করা হয়।

(খ) তিনি যোহর ও আছরের প্রথম দু’রাক‘আত দীর্ঘ করতেন এবং শেষের দু’রাক‘আত সংক্ষেপ করতেন। তিনি মাগরিবের ছালাতে ‘স্বল্প বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে, এশার ছালাতে ‘মধ্যম বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে এবং ফজরের ছালাতে ‘দীর্ঘ বিস্তৃত’ সূরা সমূহ হ’তে পাঠ করতেন। কখনো এর বিপরীত করতেন।

(গ)  কখনো তিনি একই রাক‘আতে পরপর দু’টি বা ততোধিক সূরা পড়েছেন।

(ঘ)  কখনো একই সূরা পরপর দু’রাক‘আতে পড়েছেন।

(ঙ) তিনি ফজরের দু’রাক‘আতে কখনো সূরা কাফেরূণ ও ইখলাছ এবং কখনো ফালাক্ব ও নাস পাঠ করেছেন।

(চ)  ১ম রাক‘আতে তিনি ক্বিরাআত দীর্ঘ এবং ২য় রাক‘আতে সংক্ষেপ করতেন। তবে কখনো কখনো ব্যতিক্রম হ’ত।

(ছ)  তিনি ছালাতের প্রতি ক্বিরাআতের শুরুতে সূরা ইখলাছ পাঠকারীর প্রশংসা করেছেন।

(জ) তিনি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন যে, এর কমে হ’লে সে কুরআনের কিছুই বুঝবে না।

(ঝ)  তাঁর রাক‘আত, ক্বিরাআত ও সিজদা সর্বদা প্রথম থেকে শেষের দিকে ক্রমে সংক্ষিপ্ত হতো।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও ‘আসরের সালাতে কত সময় দাঁড়ান তা আমরা অনুমান করতাম। আমরা অনুমান করলাম যে, তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্‘আতে ‘সূরাহ্ আলিফ লাম মীম তানযিলুস্ সিজদা পাঠ করতে যত সময় লাগে তত সময় দাঁড়াতেন। অন্য এক বর্ণনায়, প্রত্যেক রাক্‘আতে ত্রিশ আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। আর পরবর্তী দু’ রাক্‘আতের অর্ধেক সময় দাঁড়াতেন বলে অনুমান করেছিলাম। ‘আসরের সালাতের প্রথম দু’ রাক্‘আতে, যুহরের সালাতের শেষ দু’ রাক্‘আতের সমপরিমাণ এবং ‘আসর সালাতের শেষ দু’ রাক্‘আতে যুহরের শেষ দু’ রাক্‘আতের অর্ধেক সময় বলে অনুমান করেছিলাম।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৯, ৮৪২, ৮৪৮, সহীহ  মুসলিম ৪৫২, আবূ দাঊদ ৮০৪, ১৪৬২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৫৮, নাসায়ী ৪৭৫, ৪৫৩৬, আহমাদ ১০৯৮৭, ১৪৯, ১৫০, ১৫৩, হাকিম ৫৬৭, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী পৃঃ ৮৯-১০২, ১৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি অমুক লোক ছাড়া আর কোন লোকের পিছনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিনি। সুলায়মান বলেন, আমিও ওই লোকের পিছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্‘আত অনেক লম্বা করে পড়তেন। আর শেষ দু’ রাক্‘আতকে ছোট করে পড়তেন। ‘আসরের সালাত ছোট করতেন। মাগরিবের সালাতে ক্বিসারি মুফাসসাল (সংক্ষিপ্ত) সূরাহ্ পাঠ করতেন। ‘ইশার সালাতে আওসাতে মুফাসসাল (মধ্যম) সূরাহ্ পাঠ করতেন। আর ফজরের (ফজরের) সালাতে তিওয়ালি মুফাসসাল (দীর্ঘ) সূরাহ্ পাঠ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৫৩, সহীহ  নাসায়ী ৯৮৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেবল ফাতিহা পড়লেও সালাত আদায় হবেঃ

১,২,৩ বা ৪ রাকআত বিশিষ্ট যে কোনও নামাযের প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা মিলানো চলে, প্রথম দু রাকআতে ১টি মিলিয়ে শেষ দু রাকআতে না মিলালেও চলে। আবার কোন রাকআতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য কোন সূরা পাঠ না করলেও যথেষ্ট হয়। পূর্বোক্ত মুআয (রাঃ) এর ব্যাপারে অভিযোগকারী যুবককে আল্লাহর রসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি যখন নামায পড় তখন কিরুপ কর, হে ভাইপো?” বলল, ‘আমি সূরা ফাতিহা পড়ি এবং (তাশাহহুদের পর) আল্লাহর নিকট বেহেশ্‌ত চাই ও দোযখ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার ও মুআযের গুঞ্জন বুঝি না। নবী (সাঃ) বললেন, “আমি ও মুআয এরই ধারে-পাশে গুন্‌গুন্‌ করি।(আবূদাঊদ, সুনান ৭৯৩, আহমাদ (৩/৪৭৪, ৫/৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পূর্বে উল্লেখিত এক হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, সূরা ফাতিহা-বিহীন নামায অপরিণত ও অসম্পূর্ণ।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)৮২৩, সহীহ মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে, সূরা ফাতিহাবিশিষ্ট নামায পরিণত ও সম্পূর্ণ। আর অন্য সূরা পাঠ জরুরী নয়। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ১/২৫৮)।

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক নামাযেই ক্বিরাআত আছে। সুতরাং আল্লাহর রসূল (সাঃ) যা আমাদেরকে শুনিয়েছেন, তা আমি তোমাদেরকে শুনালাম এবং যা চুপেচুপে পড়েছেন, তা চুপেচুপে পড়লাম। এক ব্যক্তি বলল, ‘যদি আমি সূরা ফাতিহার পর অন্য কিছু না পড়ি?’ তিনি বললেন, ‘যদি অন্য কিছু পড় তাহলে উত্তম। না পড়লে সূরা ফাতিহাই যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৭২, মুসলিম ৪/১১, হাঃ ৩৯৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআনকে সুন্দর সূরে তিলাওয়াত করাঃ

(ক) আবী হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোনো নবীর উচ্চস্বরে সূর দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহ যেভাবে কান পেতে শ্রবণ করেন, আর কোন কিছুই তিনি এমনভাবে কান পেতে শ্রবন করেন না।”

(বুখারী (ফাযাইলূল কুরআন) ৫০২৪, সুনান আদ-দারেমী ১৫২৬, মুসলিম (সালাতুল মুসাফিরীন) ৭৯২, মুসনাদুল মাউসিলী ৫৯৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৫১, ৭৫২, মুসনাদুল হুমাইদী  ৯৭৯, ১৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু মুসা কে কুরআন পাঠ করতে শুনলেন। তখন তিনি বললেন: তাকে দাঊদ (আঃ) পরিবারের বাশরী সমুহের মধ্য থেকে এটি (অর্থাৎ সুমধুর সূর) দান করা হয়েছে”। (নাসাঈ ২/১৮০, আবূ মূসা হতে বুখারী, ফাযাইলুল কুরআন ৫০৪৮,  সুনান আদ-দারেমী, ১৫২৭, মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরীন ৭৯৩, তিরমিযী ৩৮৫৫, আহমাদ ৫/৩৪৯ ও ২/৩৬৯-৪৫০, সুনানে দারেমী’র ফাওয়ায আহমেদের তাহক্বীক্বকৃত ১৪৮৯, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৭১৯৫, মাওয়ারিদুয যাম’আন ২২৬৩, মুসনাদুল হুমাইদী ২৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সুন্দর সূরে কুরআন পাঠ করে না, সে আমাদের দলভূক্ত নয়।”

(আবু দাউদ, ১৪৭০; আহমাদ ১/১৭২-১৭৫-১৭৯; বাযযার ও তাবারাণী, যেমন মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/১৭০, সুনানে দারেমী’র ফাওয়ায আহমেদের তাহক্বীক্বকৃত, ১৪৯০। অনুবাদক, সুনান আদ-দারেমী, ১৫২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১২০, মুসনাদুল মাউসিলী নং ৬৮৯, ৭৪৮, মুসনাদুল হুমাইদী  ৭৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবী হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একজন নবীর সূর দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহ যেভাবে কান পেতে শ্রবণ করেন, আর কোন কিছুই তিনি এমনভাবে কান পেতে শ্রবন করেন না।”আবূ মুহাম্মদ বলেন, (‘কান পেতে শোনা’) এর দ্বারা তিনি ‘সন্তুষ্ট হওয়া’ বুঝিয়েছেন। (সুনান আদ-দারেমী, ১৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাতে কুরআন পাঠের ফজিলতঃ

আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ), আবূ হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কি চাও যে, যখন বাড়ী ফিরবে তখন বাড়ীতে গিয়ে তিনটি বড় বড় মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী দেখতে পাবে? আমরা বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমরা কেউ সালাতে তিনটি আয়াত পড়লে তা তার জন্য তিনটি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনীর চেয়ে উত্তম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৭৫৭, (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৪২, ইসলামীক সেন্টার ১৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকুঃ

 ‘রুকূ’ অর্থ ‘মাথা ঝুঁকানো’। পারিভাষিক অর্থ, শারঈ তরীকায় আল্লাহর সম্মুখে মাথা ঝুঁকানো’। ক্বিরাআত শেষে মহাপ্রভু আল্লাহর সম্মুখে সশ্রদ্ধচিত্তে মাথা ও পিঠ ঝুঁকিয়ে রুকূতে যেতে হয়।

রুকুতে যাওয়ার পদ্ধতিঃ

রুকূতে যাওয়ার সময় ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে তাকবীরের সাথে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত সোজাভাবে উঠাবেন। রুকুতে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (স.) পুনরায় দু’হাত কাঁধ বা কান বরাবর উঠাতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও এভাবে দু'হাত উঠাতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮, ৭৩৯ মুসলিম ৪/৯, হাঃ ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর দুই হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে দুই হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে রুকূ করবেন। রুকূর সময় পিঠ ও মাথা সোজা ও সমান্তরাল রাখবেন। হাঁটু ও কনুই সোজা থাকবে। অতঃপর সিজদার স্থান বরাবর নযর স্থির রেখে। (বায়হাক্বী, হাকেম, ছিফাত ৬৯ পৃঃ)।

দুই হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে দুই হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে রুকূ করার হাদিস নিম্নরুপঃ

(ক)  মুসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার পাশে রুকূতে গেলাম এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো একত্র করে তা দু হাঁটুর মাঝখানে রাখলাম। তিনি আমার হাতে আঘাত করে বলেন, আমরা (প্রথমে) এরূপ করতাম, অতঃপর আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/৮৭৩, বুখারী ৭৯০, মুসলিম ৫৩১-৩, তিরমিযী ২৫৯, নাসায়ী ১০৩২-৩৩, আবূ দাঊদ ৮১৩, ৮৬৭, আহমাদ ১৫৭৪, ১৫৮০; দারিমী ১৩০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ)  আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ করার সময় তাঁর দু হাত তাঁর দু হাঁটুতে রাখতেন এবং তাঁর বাহুদ্বয় তাঁর বগল থেকে আলাদা রাখতেন।  (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/৮৭৪,তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৭২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকূ ও সিজদাতে পিঠ সোজা না রাখলে তার সালাত সিদ্ধ হবে নাঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

‘ঐ ব্যক্তির ছালাত যথার্থ হবে না, যতক্ষণ না সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা রাখে’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদা করে তার পিঠ সোজা করে না, তার সালাত পূর্ণাঙ্গ হয় না।

(সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ) ৮৭০,  তিরমিযী ২৬৫, নাসায়ী ১০২৭, ১১০১১; আবূ দাঊদ ৮৫৫, আহমাদ ১৬৬২৫, ১৬৬৫৪; দারিমী ১৩২৭, মিশকাত ৮৭৮, সহীহ আবী দাউদ ৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য। তিনি বলেন, আমরা রওনা হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত পড়লাম। তিনি এক ব্যাক্তির দিকে হালকা দৃষ্টিতে তাকান যে রুকূ ও সাজদা্হয় তার পিঠ সোজা রাখেনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে বলেনঃ হে মুসলিম সমাজ! যে ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না তার সালাত হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৭১, আহমাদ ১৫৮৬২, সহীহাহ ২৫৩৬। । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ওয়াবিসা ইবনু মাবাদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকূ করতেন তখন তাঁর পিঠ এমনভাবে সোজা করতেন যে, তার উপর পানি ঢাললে অবশ্যি তার স্থির থাকতো। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকুর তাসবীহসমূহঃ

রুকুর সময় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা ও নিজের ক্ষমা প্রার্থনায় মনোনিবেশ করে দো‘আ পড়তে থাকবেন। রুকূ ও সিজদার জন্যে হাদীছে অনেকগুলি দো‘আ এসেছে।

তন্মধ্যে রুকূর জন্যঃ-

(ক)  “সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম”।

 অর্থঃ মহা পবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮১, সহীহ আবূ দাঊদ ৮৭১, তিরমিযী ২৬২, নাসায়ী ১/১৭০, ইবনু মাজাহ্ ৮৮৮, দারিমী ১৩৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই দো‘আটি তিনবার পড়বেন।

বেশির কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫; ইবনু মাজাহ ৮৮৮; আলবানী, ছিফাত, ১১৩ পৃঃ, নাসায়ী ১১৩৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

ঊর্ধ্বে দশবার পড়ার হাদীছ ‘যঈফ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮০, ৮৮৩, দাঊদ ৮৮৬, তিরমিযী ২৬১, ইবনু মাজাহ্ ৮৯০, য‘ঈফ আল জামি‘ ৫২৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

 (খ) ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী”। (তিনবার)

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকুর অন্যান্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহঃ

তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জীবনের শেষ দিকে এসে রুকূ ও সিজদাতে এমনকি ছালাতের বাইরে অধিকাংশ সময় নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তেন।–

(ক) যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু’-সাজদায় এ দু'আ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ

“সুবহ-নাকা আল্লহুম্মা রব্বানা- ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” তিনি কুরআনের উপর 'আমল করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, মিশকাত ৮৭১, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, আবূ দাঊদ ৮৭৭, নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, বুখারী-৪২৯৩)। হাদিসের মান-সহিহ।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) হাসান ইবনু ‘আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), ইবনু জুরায়য (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রুকু’তে কি পড়েন? তিনি বলেন,

"সুবহা-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা"।

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমরা তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই।" কেননা ইবনু আবূ মুলাইকাহ আমাকে আয়িশার সূত্রে অবহিত করছেন যে, তিনি ['আয়িশাহ (রাযিঃ)] বলেছেন, একরাতে আমি ঘুম থেকে জেগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার কাছে পেলাম না। আমি ধারণা করলাম, তিনি হয়ত তার অপর কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। আমি তার খোঁজে বের হলাম, কিন্তু না পেয়ে ফিরে আসলাম। দেখি, তিনি রুকু' অথবা (রাবীর সন্দেহ) সাজদায় আছেন এবং বলছেনঃ "সুবহ-নাকা ওয়াবি হামদিকা লা-ইলা-হা ইল্লা- আনতা"। আমি বললাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি কি ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছি, আর আপনি কি কাজে মগ্ন আছেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৬-(২২১/৪৮৫), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকূ’ ও সাজদায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুব্বুহুন কুদদূসুন্ন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়ার রূহু"।

অর্থাৎ "সমস্ত ফেরেশতা ও জিবরীল (আঃ)-এর প্রতিপালক অত্যন্ত পাক-পবিত্র"। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৮-(২২৩/৪৮৭), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪, মিশকাতুল মিসাবীহ ৮৭২ সহীহ  আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) “সুবহানা জীল জাবারূতি ওয়াল মালাকূত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজমাহ্”।

অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশালী,বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। 

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালাম। তিনি রুকূ‘তে গিয়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ তিলাওয়াত করতে যত সময় লাগতো তত সময় রুকূ‘তে থাকলেন। রুকূ‘তে বলতে থাকলেন, ‘‘সুবহা-না যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাতি’’ (অর্থাৎ- ক্ষমতা, রাজ্য, বড়ত্ব, মহত্ব ও বিরাটত্বের মালিকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)।  (মিশকাতুল মিসাবীহ ৮৮২, সহীহ আবূ দাঊদ ৮৭০, নাসায়ী ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকু থেকে উঠার নিয়মঃ

অতঃপর রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময়ও রাসূলুল্লাহ (স.) তাকবীরে তাহরীমার মতোই তাঁর দু'হাত কাঁধ (বা কান) বরাবর উঠাতেন। এ কাজকে আরবীতে ‘রাফউল ইয়াদাইন' বলা হয়। তবে সিজদা করার সময় রাফউল ইয়াদাইন’ করতেন না।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘তে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একইভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ  বলতেন। কিন্তু সিজদার সময় এমন করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৮, ৭৩৯, মুসলিম ৩৯০, আহমাদ ৪৫৪০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরো দেখুন,

(বুখারী ১ম খণ্ড ১০২ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা। আবূ দাঊদ ১ম খণ্ড ১০৪,১০৫ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা। ইবনু খুযায়মাহ ৯৫,৯৬। মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। ইবনে মাজাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা। যাদুল মা‘আদ ১ম খণ্ড ১৩৭,১৩৮,১৫০ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম ১৯০ পৃষ্ঠা। বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম হাদীস নং ৬৯২, ৬৯৩, ৬৯৫। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩২-৪৩৪। বুখারী ইসলামীক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৭-৭০১ অনুচ্ছেদসহ। মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪৫-৭৫০। আবূ দাঊদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম হাদীস নং ৮৪২-৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ২৫৫। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৮-৭৩৯, ৭৪১,৭৪৫। বুলূগুল মারাম ৮১ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৬-১২৯ পৃষ্ঠা)।

(খ) আবূ কিলাবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘ করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৩৭, মুসলিম ৪/৯ হাঃ ৩৯১, আহমাদ ২০৫৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁর নামাযে ‘রাফউল ইয়াদাইন’ করতেন- এ মর্মে ৩৩টির মতো সহীহ হাদীস রয়েছে। তাছাড়াও ইমাম বুখারী (র.) তাঁর সংকলিত ‘জুযউ রাফয়িল ইয়াদাইন' গ্রন্থে এর পক্ষে সহীহ ও যঈফ মিলিয়ে মোট ১৯৮টি হাদীস জমা করেছেন।

উল্লেখ্য যে, যারা রাফউল ইয়াদাইন করে না তাদের পক্ষেও দলীল আছে। সেটি সাহাবী ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তবে এর সংখ্যা মাত্র একটি। আর দুর্বল হাদীস ও সহীহ আছার মিলিয়ে এর পক্ষে আরো ৪/৫টি বর্ণনা পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ‘রাফউল ইয়াদাইনের পক্ষের হাদীসের সংখ্যা দুইশতেরও বেশি। এগুলোর শুদ্ধতাও বেশি। অতএব এই আমল করলে সাওয়াবও অনেক বেশি হবে, ইনশাআল্লাহ। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেছেন, হাদীস সহীহ হলে এটাই আমার মাযহাব। অতএব, হানাফী হলেও এমন একটা সুন্নাত আমলের মধ্যে মাযহাবের কোন সমস্যা নেই। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (র) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (স.) আজীবন রাফউল ইয়াদাইন করেছেন (যাদুল মাআদ)। অতএব, বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে কটাক্ষ না করি, খড়গহস্ত না হই। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ‘রাফউল ইয়াদাইনে অভ্যস্ত নয় তারাও মনে দ্বিধা-সংকোচ না রেখে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর মহব্বতে এ সুন্নাতটি আমল করা উচিত।

ক্বওমা:

রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’ বলে। ‘ক্বওমা’র সময় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবেন ও ইমাম-মুক্তাদী সকলে বলবেন,

“সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” অর্থাৎ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে’।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার সময় তাকবীর বলতেন। রুকূ‘ হতে তাঁর পিঠ উঠাবার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ এবং দাঁড়ানো অবস্থায় ‘‘রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলতেন। তারপর সাজদায় যাবার সময় আবার তাকবীর বলতেন। সিজদা্  হতে মাথা উঠাবার সময় তাকবীর বলতেন। পুনরায় দ্বিতীয় সাজদায় যেতে তাকবীর বলতেন, আবার সিজদা্ থেকে মাথা তোলার সময় তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত গোটা সালাতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন। যখন দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর বসা হতে উঠতেন তাকবীর বলতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৯, সহীহ বুখারী ৭৮৯, মুসলিম ৩৯২, নাসায়ী ১১৫০, আহমাদ ৯৮৫১, ইরওয়া ৩৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলবে, তখন তোমরা ‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলবে। কেননা যার কথা মালায়িকার কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৪-৭৭, সহীহ বুখারী ৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ৭৯৬, মুসলিম ৮৬৮, ৯০৪, ৯১৩. ৪০৯, আবূ দাঊদ ৮৪৮, তিরমিযী ২৬৭, আহমাদ ৯৯২৩, সহীহ আল জামি‘ ৭০৫, সহীহ আত্ তারগীব ৫২০, মালিক ১৯৭, নাসাঈ ১০৬৩, হাদীস সম্ভার ৬৬৩, । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 উক্ত বর্ণনা থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, ইমাম ‘সামিআল্লাহু---’বললে মুক্তাদী ‘রাব্বানা অলাকালহাম্দ’ বলবে। তবে এখানে এ কথা নিশ্চিত নয় যে, মুক্তাদী ‘সামিআল্লাহু---’ বলবে না। বরং মুক্তাদীও উভয় বাক্যই বলতে পারে। যেহেতু আল্লাহর নবি (সাঃ) উভয়ই বলেছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শুরু করার সময় দু’ হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আবার রুকূ‘তে যাবার তাকবীরে ও রুকূ‘ হতে উঠার সময় ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হামদু’’ বলেও দু’ হাত একইভাবে উঠাতেন। কিন্তু সাজদার সময় এরূপ করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৩, সহীহ  বুখারী ৭৩৫, নাসায়ী ১০৫৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৬১, দারেমী ১২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত ভুলকারী সাহাবীকে তিনি এ কথা বলতে আদেশ করে বলেছিলেন, “কোন লোকেরই সালাত ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাকবীর দিয়েছে---অতঃপর রুকূ করেছে---অতঃপর ‘সামিআল্লাহু লিমানহামিদাহ্’ বলে সোজা খাড়া হয়েছে।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৫৭, আহমাদ (৪/৩৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা বলবেন,

রিফাআহ বিন রাফে’ যুরাক্বী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পশ্চাতে নামায পড়ছিলাম। যখন রুকু থেকে মাথা উঠালেন, তখন তিনি বললেন, সামিআল্লা-হু লিমান হামিদাহ। এই সময় তাঁর পশ্চাতে এক ব্যক্তি বলে উঠল,

“রাব্বানা অলাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বাইয়িবাম মুবারাকান ফীহ”।

(অর্থাৎ, হে আমাদের পালনকর্তা! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা, অজস্র, পবিত্র, বরকতপূর্ণ প্রশংসা।) নামায শেষ করে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঐ যিকর কে বলল? লোকটি বলল, আমি। তিনি বললেন, ঐ যিকর প্রথমে কে লিখবে এই নিয়ে ত্রিশাধিক ফিরিশতাকে আমি প্রতিযোগিতা করতে দেখলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৭, সহীহ  বুখারী ৭৯৯, ১০৬২, নাসায়ী ১০৬২, আবূ দাঊদ ৭৭০, তিরমিযী ৪০৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯১০, মালিক ৪৯৩, হাদীস সম্ভার, হাঃ ৬৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, ‘ইয়া রববী লাকাল হামদু কামা ইয়াম্বাগী লিজালা-লি ওয়াজহিকা ওয়া লি ‘আযীমি সুলত্বা-নিকা’  বলে এই সময়ে যে দো‘আ প্রচলিত আছে, তার সনদ যঈফ(ইবনু মাজাহ ৩৮০১, যঈফুল জামে ১৮৭৭)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়। তাই উক্ত দোয়া না পড়াই উত্তম।

ক্বওমাতে রুকূর ন্যায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দো‘আ পড়তে হয়। কেননা ‘ক্বওমার সময় সুস্থির হয়ে না দাঁড়ালে এবং সিজদা থেকে উঠে সুস্থির ভাবে না বসলে ছালাত সিদ্ধ হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯০, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২১, সহীহ বুখারী ৬২৫১, ৬৬৬৭, মুসলিম ৩৯৭, আবূ দাঊদ ৮৫৬, নাসায়ী ৮৮৪, তিরমিযী ৩০৩, আহমাদ ৯৬৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ  ক্বওমার সময় অনেকে হাত কিছুক্ষণ খাড়াভাবে ধরে রাখেন। কেউ পুনরায় বুকে হাত বাঁধেন। যা ঠিক নয়।

আরো জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ

(১) বিখ্যাত ছাহাবী আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) যিনি ১০ জন ছাহাবীর সম্মুখে রাসূলের (ছাঃ) ছালাতের নমুনা প্রদর্শন করে সত্যায়ন প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেখানে বলা হয়েছে-

‘তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন এমনভাবে যে, মেরুদন্ডের জোড় সমূহ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯২, সহীহ  বুখারী ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ছালাতে ভুলকারী জনৈক ব্যক্তিকে রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক হাতে-কলমে ছালাত শিখানোর প্রসিদ্ধ হাদীছে এসেছে حَتَّى تَرْجِعَ الْعِظَامُ إِلَى مَفَاصِلِهَا ‘যতক্ষণ না অস্থি সমূহ স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০৪, আবূ দাঊদ ৮৫৯, ৮৬০, আহমাদ ১৮৫১৬, সহীহ আল জামি ৩২৪, তিরমিযী ৩০২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ওয়ায়েল বিন হুজ্র ও সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বর্ণিত ‘ছালাতে বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখার ‘আম’ হাদীছের। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৯৭,৭৯৮, সহীহ  মুসলিম ৪০১, আহমাদ ১৮৮৬৬, ইরওয়া ৩৫২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৯০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরে ভিত্তি করে রুকূর আগে ও পরে ক্বওমা-র সময় বুকে হাত বাঁধার কথা বলা হয়। (দারুল ইফতা, মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: ১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ১৩৪-৩৯; বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী সিন্ধী, যিয়াদাতুল খুশূ‘ (কুয়েত, ১৪০৬/১৯৮৬), পৃঃ ১-৩৮)।

কিন্তু উপরোক্ত হাদীছগুলি রুকূ পরবর্তী ‘ক্বওমা’র অবস্থা সম্পর্কে ‘খাছ’ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া বুকে হাত বাঁধার বিষয়টি হাতের স্বাভাবিক অবস্থার পরিপন্থী। এক্ষণে শির দাঁড়াসহ দেহের অন্যান্য অস্থিসমূহকে স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসতে গেলে ক্বওমার সময় হাতকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই ছহীহ হাদীছ সমূহের যথাযথ অনুসরণ বলে অনুমিত হয়। (বিস্তারিত দেখুন : আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১২০ টীকা, ‘ক্বওমা দীর্ঘ করা’ অনুচ্ছেদ; আলবানী, মিশকাত হা/৮০৪ টীকা, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী সিন্ধী, নায়লুল আমানী (করাচী তাবি) পৃঃ ১-৪২; মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ডিসেম্বর’ ৯৮, ২য় বর্ষ ৩য় সংখ্যা, পৃঃ ৫০-৫১)।

রুকূ-সিজদার আদবঃ

(ক) হামিদ ইবনু উমার আল বাকরাবী ও আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ), বারা ইবনু আবিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তার সালাত আদায় করার নিয়ম-কানুন ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তার দাঁড়ানো (কিয়াম), তার রুকূ’ এবং রুকূ’ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, তার সিজদা্ এবং দু'সাজদার মাঝে তার বসা, অতঃপর তার দ্বিতীয় সিজদা, তার সালাম ফিরানো এবং সালাম ও সালাত শেষ করে চলে যাওয়ার মাঝখানে বসা- এর সবই প্রায় সমান (ব্যবধান) পেয়েছি। (সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী-৯৪৪-(১৯৩/৪৭১), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৩৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল 'আম্বারী (রহঃ), হাকাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আশ'আস এর সময়ে এক ব্যক্তি কুফাবাসীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। হাকাম তার নাম উল্লেখ করেছেন (মাতার ইবনু নাজিয়াহ)। সে আবূ উবাইদাহ ইবনু আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) কে লোকেদের সালাতে ইমামতি করার হুকুম দিলেন। তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে একটি দু’আ পড়ার পরিমাণ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন। দু’আটি হচ্ছেঃ

“আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিলআ মা-শিতা মিন শাইয়িন বাদু আহলাস্ সান-য়ি ওয়াল মাজদি লা- মা-নি’আ লিমা- আতাইতা ওয়ালা- মুতিয়া লিমা- মানাতা ওয়ালা- ইয়ান্‌ফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ”।

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমান ও জমিন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতা ছাড়াও যতটুকু আপনি ইচ্ছা পোষণ করেন। হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আপনি যা দান করবেন তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি যা রোধ করবেন তা দান করারও কেউ নেই এবং কোনও সম্পদশালীকেই তার সম্পদ আপনার শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না।"

হাকাম বলেন, অতঃপর আমি এটা আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলার কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আমি বারা ইবনু আযিবকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত ছিলঃ তিনি রুকু’তে যেতেন, রুকু থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতেন, সিজদা করতেন এবং দু'সাজদার মাঝখানে বিরতি দিতেন- এসবগুলোর সময়ের পরিমাণ প্রায় একই ছিল।

শু'বাহ বলেন, আমি এটা আমর ইবনু মুররাকে বললাম। তিনি বললেন, আমি ইবনু আবূ লাইলাকে দেখেছি। কিন্তু তার সালাত তো এরূপ ছিল না। (সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী-৯৪৫-(১৯৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ), আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন- আমি তোমাদের নিয়ে অনুরূপভাবে সালাত আদায় করতে মোটেই ত্রুটি করব না। অধস্তন রাবী বলেন, আনাস (রাযিঃ) একটি কাজ করতেন যা আমি তোমাদেরকে করতে দেখি না। তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি কেউ (মনে মনে) বলত, তিনি (সাজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। তিনি সিজদা্ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে যেতেন, এমনকি কেউ (মনে মনে) বলত, তিনি (দ্বিতীয় সিজদা করতে) ভুলে গেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী-৯৪৭-(১৯৫/৪৭২), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ)  সালাতের রুকনগুলো সঠিকভাবে আদায় করা এবং সংক্ষেপে পূর্ণাঙ্গরূপে সালাত আদায় করাঃ

আবূ বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ), আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে যেরূপ সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ সালাত আদায় করেছি অনুরূপ আর কারো পিছনে আদায় করিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাতের (রুকনগুলোর সময়ের) পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি ছিল। আবূ বাকর (রাযিঃ) এর সালাতের (রুকনগুলোও) পরস্পর কাছাকাছি ছিল। উমার ইবনুল খাত্তাব তার সময়ে ফজরের সালাত দীর্ঘ করে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলে দাঁড়িয়ে যেতেন- এমনকি আমরা (মনে মনে) বলতাম, তিনি (সাজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। অতঃপর তিনি সাজদায় যেতেন। দু'সাজদার মাঝখানে তিনি এতক্ষণ বসতেন যে, আমরা (মনে মনে) বলতাম, তিনি (পরবর্তী সাজদায় যেতে) ভুলে গেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী-৯৪৮-(১৯৬/৪৭৩), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকু থেকে মাথা তুলে পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহঃ

(ক)  রুকু থেকে মাথা তুলে যা বলতে হবেঃ

আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ), ইবনু আবূ আওফা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে পিঠ উঠানোর সময় বলতেনঃ

"সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ, আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিলআ মা- শিতা মিন্‌ শাইয়িন বাদু।"

অর্থাৎ “প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শুনেন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক সকল প্রশংসা আপনারই জন্য- যা আসমান ও জমিন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণতা ছাড়াও যতটুকু আপনি ইচ্ছা পোষণ করেন।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী- ৯৫৪-(২০২/৪৭৬, ৯৫৫-(২০৩/৪৭৭), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  রুকু থেকে মাথা তুলে যা বলতে হবেঃ-

মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ), আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেনঃ

"আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু মিলআস সামা-য়ি ওয়ামিল আল আরযি ওয়ামিলুআ মা- শিতা মিন শাইয়িন বাদু, আল্লাহুম্মা তাহহিরনী বিস্‌সালজি ওয়াল বারাদ ওয়াল মা-য়িল বা-রিদি, আল্লাহুম্মা তাহহিরনী মিনায্‌ যুনুবি ওয়াল খাতা-য়া- কামা- ইউনাক্কাস সাওবুল আব্‌ইয়াযু মিনাল ওয়াসাখ।"

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! তোমার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা- যা আসমান ও জমিনকে পরিপূর্ণ করে দেয়। অতঃপর তুমি যা চাও তা দিয়ে পরিপূর্ণ করো। হে আল্লাহ! আমাকে বরফ, কুয়াশা এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পাকপবিত্র করে দাও। হে আল্লাহ! সাদা কাপড় যেভাবে ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়ে ধবধবে সাদা হয়ে যায়, আমাকেও তদ্রুপ যাবতীয় গুনাহ থেকে পবিত্র করে দাও।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৫৬-(২০৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৫১, ইসলামিক সেন্টার ৯৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)   রুকু থেকে মাথা তুলে যা বলতে হবেঃ-

'আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদ দারিমী (রহঃ), আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেনঃ

“রব্বানা- লাকাল হামদু মিলআস সামা-ওয়া-তি ওয়ামিলআ মা- শিতা মিন্‌ শাইয়িন বাদু আহলাস সান-য়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা-কা-লাল আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ‘আবদুন, আল্লাহুম্মা লা- মা-নি’আ লিমা- আতাইতা ওয়ালা- মুতিয়া লিমামানা'তা ওয়ালা- ইয়ানফাউ যাল জাদি মিন্‌কাল জাদ।"

অর্থাৎ "আমাদের প্রতিপালক তুমি আসমান-জমিন সম পরিপূর্ণ প্রশংসার অধিকারী, অতঃপর তুমি যা চাও তাও পূর্ণ করে প্রশংসা। তুমি প্রশংসা ও সম্মানের অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা কিছু বলে তুমি তার চাইতে বেশি হকদার। আমরা সবাই তোমার বান্দা; হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারো নেই এবং তুমি যা দেয়া বন্ধ করো, তা দান করার শক্তি কারো নেই। ধনবানের ধন তোমার সামনে কোন কাজে আসে না।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৫৮-(২০৫/৪৭৭, ৯৫৯-(২০৬/৪৭৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু মিল্আস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মিল্আ মা- শি’তা মিন শাইয়্যিম বা‘দু আহলুস্ সানা-য়ি ওয়াল মাজদি আহাক্কু মা ক্ব-লাল ‘আবদু ওয়া কুল্লুনা- লাকা ‘আবদুন, আল্লা-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বাইতা ওয়ালা- মু‘তিয়া লিমা- মানা‘তা। ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ’’-

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! তোমারই সব প্রশংসা। আকাশ পরিপূর্ণ ও পৃথিবী পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। হে প্রশংসা ও মর্যাদার মালিক! মানুষ তোমার প্রশংসায় যা বলে তুমি তার চেয়েও অধিক প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি যা দিবে তাতে বাধা দেবার কেউ নেই। আর তুমি যাতে বাধা দিবে তা দিতেও কেউ সমর্থ নয়। কোন সম্পদশালীর সম্পদই তোমার শাস্তি হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না)। (মিশকাতুল মিসাবীহ: ৮৭৬, সহীহ  মুসলিম ৪৭৭, আবূ দাঊদ ৮৪৭, নাসায়ী ১০৬৮, আহমাদ ১১৮২৮,  সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯০৫, ইরওয়া ৩৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকূ হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বিলম্ব করাঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যেভাবে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি, কমবেশি না করে আমি তোমাদের সেভাবেই সালাত আদায় করে দেখাবো।

সাবিত (রহ.) বলেন, আনাস ইব্নু মালিক (রাযি.) এমন কিছু করতেন যা তোমাদের করতে দেখিনা। তিনি রুকূ‘ হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এত বিলম্ব করতেন যে, কেউ বলত, তিনি (সিজদার কথা) ভুলে গেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৮০০, ৮২১, মুসলিম ৪৭২, আহমাদ ১৩১০২, আধুনিক প্রকাশনী ৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৮৩, আল-লুলু ওয়াল মারজান, হাঃ ২৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে উল্লেখ্য যে, রুকূ হতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এমনি এমনি বিলম্ব করলে হবে না। উপরোক্ত যে দোয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে সেই দোয়াগুলো পাঠ করতে হবে। মূলত রাসুল সাঃ এইসব দোয়াগুলো পাঠ করতেন বলেই এতো বিলম্ব হতো।

সিজদাঃ

(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,‘ সিজদা করো এবং নিকটবর্তী হও।’ (আলাক : ১৯) ।

(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ  মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ  মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ ৮৭৫, নাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), মা'দান ইবনু তালহাহ আল ইয়ামারী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম আমি বললাম, আমাকে একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। রাসুল সাঃ বলেছেনঃ তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দিবেন। মাদান বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদাহ (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম সাওবান (রাযিঃ) আমাকে যা বলেছেন, তিনিও তাই বললেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানরা যখন সাজদার আয়াত পড়ে ও সিজদা্ করে, শায়ত্বন (শয়তান) তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল মন্দ। আদম সন্তান সাজদার আদেশ পেয়ে সিজদা করলো, তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদার আদেশ দেয়া হয়েছিল আমি তা অমান্য করলাম। আমার জন্য তাই জাহান্নাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৫, সহীহ  মুসলিম ৮১, ইবনু মাজাহ্ ১০৫২, আহমাদ ৯৭১৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৭৫৯, সহীহ আল জামি ৭২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৯৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘সিজদা’ অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা। পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা। রুকূ হতে উঠে ক্বওমার দো‘আ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে আল্লাহর নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন এবং সিজদার দো‘আসমূহ পাঠ করবেন। নাকসহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আংগুল সমূহের অগ্রভাগসহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবেন।

সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা ও সিজদায় চুল-কাপড় না গুটানোর হুকুমঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা্ করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে নির্দেশিত হয়েছিলেন। (অঙ্গ সাতটি হল) কপাল দু’ হাত, দু’ হাঁটু ও দু’ পা। (সুনান আদ-দারেমী, ১৩৫৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮০৯,৮১০, ৮১২, ৮১৫, ৮১৬, মুসলিম ৪৯০, মুসনাদুল মাউসিলী  ২৩৮৯, ২৪৩১, ২৪৬৪, ২৬৬৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২১, ১৯২৩, ১৯২৪, ১৯২৫, মুসনাদুল হুমাইদী ৫০০, ৫০১, ৫০২, আহমাদ ২৫৮৪, আধুনিক প্রকাশনী ৭৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যাওয়ার নিয়মঃ (প্রথম সিজদাহ)

(ক) সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবেন। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাদীছটি ‘ছহীহ’। (আবুদাঊদ ৮৪০, মিশকাত ৮৯৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সিজদা্ করার সময় যেন উটের বসার মতো না বসে, বরং দু’ হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৯, নাসায়ী ১০৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৫, দারিমী ১৩২১, ১৩৫৭, ১৩৬০, মুসনাদুল মাওসিলী, ৬৫৪০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৪০, ১০৯০, আহমাদ ৩৮১, বাগাবী, শারহুস ‍সুন্নাহ ৩/১৩৪, বাইহাকী ২/৯৯, তাহাবী ১/২৫৪; হাযিমী, আল ই’তিবার পৃ: ১৫৮-১৫৯, মুসনাদুল মাউসিলী ৬৫৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’ বা দুর্বল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী-৮৯৮, আবূ দাঊদ ৮০৮, ৮৩৮, তিরমিযী ২৬৮, নাসায়ী ১০৮৯, ইবনু মাজাহ্ ৮৮২, ইরওয়া ৩৫৭, দারিমী ১৩৫৯, মির‘আত ৩/২১৭-১৮)।  হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

(গ) সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে। (‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি সালাতের সাজদায় নিজের কপাল জমিনে রাখে সে যেন তার হাত দু’টিকেও জমিনে ওখানে রাখে যেখানে কপাল রাখে। তারপর যখন সিজদা হতে উঠবে তখন নিজের হাত দু’টিও উঠায়। কারণ যেভাবে মুখমণ্ডল সিজদা করে ঠিক সেভাবে দু’ হাতও সিজদা  করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৯০৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সিজদার সময় হাত দু’খানা মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর থাকবে। (ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১)।

(ঘ)  মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবীর মধ্যে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আপনাদের চেয়ে বেশি আমি মনে রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু্’ হাত দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। রুকূ‘ করার সময় পিঠ নুইয়ে রেখে দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু শক্ত করে ধরতেন। আর মাথা উঠিয়ে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রতিটি গ্রন্থি স্ব-স্ব স্থানে চলে যেত। তারপর তিনি সিজদা করতেন। এ সময় হাত দু’টি মাটির সাথে বিছিয়েও রাখতেন না, আবার পাঁজরের সাথে মিশাতেনও না এবং দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা ক্বিবলা মুখী করে রাখতেন। এরপর দু’ রাক্‘আতের পরে যখন বসতেন বাম পায়ের উপরে বসতেন ডান পা খাড়া রাখতেন। সর্বশেষ রাক্‘আতে বাম পা বাড়িয়ে দিয়ে আর অপর পা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর (ভর করে) বসতেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৭৯২, বুখারী ৮২৮, ইরওয়া ৩৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনুরুপ আর একটি হাদিস,

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা করার সময় তোমরা দু’ হাতের তালু জমিনে রাখবে। উভয় হাতের কনুই উপরে উঁচিয়ে রাখবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৯, সহীহ  মুসলিম ৪৯৪, আহমাদ ১৮৪৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ)  কনুই ও বগল ফাঁকা রাখবেন। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা দিতেন, তার হাত দু’টিকে এমন প্রশস্ত রাখতেন যে, তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস একাডেমী- ৮৯১, মুসলিম ৪৯৫, বুখারী ৩৯০, নাসায়ী ১১০৬, আহমাদ ২২৯২৫, ইরওয়া ৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ)   হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮০১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩,  ৭৩১-৭৩৫, দারিমী ১৩৯৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবেন এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবেন না। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সুষ্ঠুভাবে সিজদা করো। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় তার বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা না করে।

 (সুনানে ইবনে মাজাহ-তাওহীদ ৮৯২, বুখারী ৫৩২, ৮২২; মুসলিম ৪৯৩, তিরমিযী ২৭৬, নাসায়ী ১০২৮, ১১০৩, ১১১০; আবূ দাঊদ ৮৯৭, আহমাদ ১১৬৫৫, ১১৭৩৮, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৫৭৯, ১২৮২০, ১৩০০৭, ১৩৪৮৩, ১৩৫৬১, ১৩৬৮৩; দারিমী ১৩২২,ইরওয়াহ ৩৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (জ)  সিজদা এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে। হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮৯০-[৪], হাদিস একাডেমী- আবূ দাঊদ ৮৯৮, মুসলিম ৪৬৯, নাসায়ী ১১০৯, ইবনু মাজাহ্। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) সহজ হিসেবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হতে পারে। সিজদা হতে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮০১, ৭৯২, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩, দারিমী ১৩৯৬, সহীহ  আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় যা করা যাবে নাঃ

(ঞ) ‘আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০২, আবূ দাঊদ ৮৬২, নাসায়ী ১১১২, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৩, দারিমী ১৩৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক করার নিয়মঃ

(ট) দুই সিজদার মধ্যবতীর্ণ অবস্থায় স্থিরতা অবলম্বন ওয়াজিব।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই সিজদার মধ্যবর্তী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্বন করতেন যার ফলে প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত।তিনি এ বিষয়ে ছালাতে ক্ৰটিকারীকে নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ এমনটি না করা পর্যন্ত তোমাদের কারো ছালাত পূর্ণ হবে না।

বৈঠককে এতই দীর্ঘায়িত করতেন যে প্রায় সিজদার পরিমাণ হয়ে যেত।আবার কখনও এত দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করতেন যে, কেউ কেউ মনে মনে বলত, নিশ্চয় তিনি ভুলে গেছেন।

 সিজদায় যে পরিমান সময় ব্যয় হবে এখানেও প্রায় সে পরিমান সময় ব্যয় করতে হবে। বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সলাতে দাঁড়ানো বসা অবস্থা ব্যতীত রাসুল (সাঃ) এর রুকু, সিজদাহ এবং দুই-সিজদার মধ্যবর্তী সময় ও রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমান ছিল।বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুকূ‘, সিজদা্ এবং দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকূ‘ হতে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমাণ ছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৭৯২, ৮০১, ৮২০, মুসলিম ৪৭১, আহমাদ ১৮৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৭৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ

(ঠ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’-

(অর্থাৎ-হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দান কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ ৯০০, আবূ দাঊদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এরপর কমপক্ষে ২ বার বলবেন,

হুযাইফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ সিজদার মাঝে বলতেন:  “রব্বিগফির লী।”  (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। (মিশকাতুল মিসাবীহ-৯০১, আহমাদ ৩৯৭, ৪০০, ইবনু মাজাহ ৮৯৭, আল ‍কুবরা ৬৫৬, ৭৩১, ১৩৭৮, ১৩৭৯, আবু দাউদ ৮৭৪; তিরমিযী, শামাইল ২৭০, বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ ৯১০, বাইহাকী ২/১২১-১২২, আবু দাউদ তায়ালিসী ৪১৬, সুনান আদ-দারেমী ১৩৬০, নাসাঈ,  ১০৬৯, ইরওয়া ৩৩৫, দারিমী ১৩৬৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতঃপর ২য় সিজদা করবেন ও দো‘আ পড়বেন।

সালাতে সিজদারত অবস্থায় দু’পা রাখার নিয়মঃ

(ড) হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘এক রাত্রিতে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বিছানায় না পেয়ে আমার হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলাম। অতঃপর আমার হাত তাঁর দু’পায়ের উপর পতিত হয়। তখন তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তাঁর পা দু’টি খাঁড়া ছিল’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সহীহ মুসলিম ৪৮৬, ইবনু মাজাহ্ ৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, নাসায়ী ১১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঢ) অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এ সময় তাঁর গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল এবং পায়ের অঙ্গুলিসমূহ কিবলার দিকে ছিল’। (মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৪০ পৃঃ, হা/৮৩২; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৬৫৪, ইবনু হিববান ১৯৩৩)।

(ণ) ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। নাকসহ চেহারা, দু’হাত, দু’হাটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ত) এখানে ‘দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ’-এর ব্যাখ্যায় ছাহেবে মির‘আত বলেন, দু’পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী থাকবে এবং দু’গোড়ালি খাড়া থাকবে’ (মির‘আত ৩/২০৪)। (থ) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, দু’গোড়ালীর মাঝে এক বিঘত ফাঁক থাকবে (নায়ল ৩/১২১)। মূলতঃ দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু’পা ফাঁক থাকে, সিজদা অবস্থায়ও সেভাবে থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। এক্ষণে ইবনু হিববান, ইবনু খুযায়মা ও হাকেম বর্ণিত আয়েশা (রাঃ)-এর দু’গোড়ালি মিলানো সম্পর্কে যে বর্ণনাটি এসেছে, সে সম্পর্কে ইমাম হাকেম বলেন, ‘এই হাদীছ ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ গোড়ালী মিলানোর কথা বর্ণনা করেছেন বলে আমি জানি না (হাকেম ১/৩৫২)। তাই ছহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীছে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত দু’গোড়ালি খাড়া রাখার হাদীছই অগ্রাধিকারযোগ্য। সর্বোপরি বিষয়টি মুস্তাহাব। অতএব খাড়া বা মিলানো যেভাবে সহজ হবে সেভাবেই রাখবেন। এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

দ্বিতীয় সিজদাহঃ

(দ) অতঃপর বৈঠকের দো‘আ পাঠ শেষে তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবেন এবং প্রথম সিজদার ন্যায় তাসবীহ ও দুআ পড়বেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ৮২৫, ইফা ৭৮৭, আধুনিক: ৭৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অনেক মহিলা সিজদায় গিয়ে মাটিতে নিতম্ব রাখেন। এই মর্মে ‘মারাসীলে আবুদাঊদে’ বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই ‘যঈফ’। (সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ২৮২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ‘সিজদার অঙ্গসমূহ’ অধ্যায়, ১/৩৭৩ পৃঃ ; যঈফুল জামে‘ ৬৪৩; সিলসিলা যঈফাহ ২৬৫২)।

(ধ) এর ফলে সিজদার সুন্নাতী তরীকা বিনষ্ট হয়। সিজদা হলো ছালাতের অন্যতম প্রধান ‘রুকন’। সিজদা নষ্ট হলে ছালাত বিনষ্ট হবে। অতএব এই বদভ্যাস এখনই পরিত্যাজ্য।

সিজদা হলো দো‘আ কবুলের সর্বোত্তম সময়। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

‘বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়, যখন সে সিজদায় রত হয়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশী বেশী প্রার্থনা কর’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা প্রার্থনায় সাধ্যমত চেষ্টা কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ  মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ ৮৭৫, নাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ন) রুকূ ও সিজদাতে কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রুকূতে সুবহানা রব্বিয়াল আযীম তিনবার বলতে এবং সাজদা্হয় সুবাহানা রব্বিয়াল আলা তিনবার বলতে শুনেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/৮৮৮,মুসলিম ৭৭২, তিরমিযী ২৬২, নাসায়ী ১০০৮, ১০৪৬, ১০৬৯, ১১৩৩, ১১৪৫, ১৬৬৪-৬৫; আবূ দাঊদ ৮২৮, ৮৭১, ৮৭৪; আহমাদ ২২৭৫০, ২২৮৫৮, ২২৮৬৬, ২২৮৯০; দারিমী ১৩০৬, ইরওয়াহ ৩৩৩, । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দশবার দো‘আ পাঠের যে হাদীছ এসেছে, তা যঈফ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৩, আবূ দাঊদ ৮৮৮, নাসায়ী ১১৩৫।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু জুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর এই যুবক অর্থাৎ- ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয ছাড়া আর কারো পেছনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের মতো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিনি। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমরা তার রুকূ‘র সময় অনুমান করেছি দশ তাসবীহের পরিমাণ এবং সাজদার সময়ও অনুমান করেছি দশ তাসবীহ পরিমাণ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৮৩, আবূ দাঊদ ৮৮৮, নাসায়ী ১১৩৫। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

যঈফ (Dai'f) বা দুর্বল হাদিস আমলযোগ্য নয়।

(প) দুই সিজদার মধ্যেকার সংক্ষিপ্ত বৈঠকে হাতের আঙ্গুলগুলি দুই হাঁটুর মাথার দিকে স্বাভাবিকভাবে ক্বিবলামুখী ছড়ানো থাকবে। (নাসাঈ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৬।

সিজদার ফজিলতঃ

(ফ) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), মা'দান ইবনু তালহাহ আল ইয়ামারী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম আমি বললাম, আমাকে একটি কাজের কথা বলে দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রিয়তম ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনর্বার জিজ্ঞেস করলাম। এবারও তিনি নীরব থাকলেন। আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দিবেন। মাদান বলেন, অতঃপর আমি আবূ দারদাহ (রাযিঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম সাওবান (রাযিঃ) আমাকে যা বলেছেন, তিনিও তাই বললেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী-৯৮০-(২২৫/৪৮৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭৫, ইসলামিক সেন্টার ৯৮৬, ইবনু মাজাহ ১৪২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ব) ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈমানদারগণকে চিনবেন তাদের সিজদার স্থান ও ওযূর অঙ্গসমূহের ঔজ্জ্বল্য দেখে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৯০, সহীহ বুখারী ১৩৬, মুসলিম ২৪৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ভ) হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ), রাবী'আহ ইবনু কাব আল আসলামী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে রাত যাপন করছিলাম। আমি তার ওযুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বললেনঃ কিছু চাও! আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বললেন, এছাড়া আরো কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি অধিক পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো। ((সহিহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী-৯৮১-(২২৬/৪৮৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদার তাসবীহ বা দোয়াঃ

ক্বাওমার দোয়া পাঠ শেষে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে সিজদায় গিয়ে প্রথমে পাঠ করুনঃ

(ক)  হুযাইফাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। তিনি রুকূ‘তে ‘সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম’ এবং সিজদাতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ পাঠ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) , ৮৭১, তিরমিযী ২৬২, ইবনু মাজাহ ৮৯৭, দারিমী ১৩০৬), নাসায়ী ১০০৭, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৫৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  সা‘দী (রাঃ) হতে তাঁর পিতা অথবা তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতরত অবস্থায় দেখেছি। তিনি রুকূ‘ ও সিজদাতে ‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’’ তিনবার পড়ার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদার অতিরিক্ত তাসবীহ বা দোয়াসমূহঃ

(গ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ

 ‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, নাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ 

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৩-(২১৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঙ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৪-(২১৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনকা লা- উহসী সানা-আন ‘আলায়কা, আনতা কামা- আসনায়তা ‘আলা- নাফসিকা’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার ‘আযাব হতে মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৬, ৯৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, নাসায়ী ১১০০, নাসায়ী ১৬৯, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ ও সাজদায় বলতেন, ‘‘সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়াররূহ’’।

অর্থ: মালাক ও রূহ জিবরীলের রব অত্যন্ত পবিত্র, খুবই পবিত্র। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭২, সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৮-(২২৩/৪৮৭), আবূ দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৪০৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৩, ৯৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঞ) ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়ে দাঁড়ালাম। তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূ‘তে অবস্থান করেন এবং তাতে

‘‘সুবহানা যিল্ জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযমাতি’’ পাঠ করেন। অতঃপর তিনি ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় সিজদাতে অবস্থান করেন এবং তাতেও উক্ত দু‘আ পাঠ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৩, তিরমিযী ‘শামায়িলি মাহমুদিয়্যাহ, ২৯৮, নাসায়ী  ১০৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ট) “আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন”

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। (মুসলিম ১/৫৩৪)।

 (ঠ) আয়েশা রা: বলেন, রাসুল সা:কে সিজদায় এ দুয়াটি পড়তে শুনেন।

“রব্বি আ‘তি নাফসী তাক্বওয়া-হা, যাক্কিহা-আনতা খয়রু মান যাক্কা–হা, আনতা ওয়া লিয়্যুহা-ওয়া মাওয়ালাহা”।

অর্থ: আমার রব! আমার নফসকে তাকওয়া দান করো এবং আমার নফসকে পরিশুদ্ধ করো, তুমিই নফসের সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। তুমিই তো তার অভিভাবক ও মুরুব্বী। (মুসনাদ আহমদ-২৫৭৫৭)।

এখানে উল্লেখিত রুকু ও সিজদাহর অতিরিক্ত দোয়া ছাড়াও কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিস হতে জানা যেমন, অভাব-অনটন, হতাশা, বিপদ-আপদ বা বালা-মসিবত হতে মুক্তি কিংবা মনের আশা পূরণের যতো দোয়া আছে সবই পড়া যাবে। সালাত যেহেতু এক প্রকার দোয়া বা মুনাজাত তাই  একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাতে যা বলবেন বা আল্লাহর নিকট যা চাইবেন সেই সংক্রান্ত হাদিস হতে দোয়াগুলো রুকু, সিজদা ও তাশাহুদ বৈঠকে বলবেন। আশা করা যায়, আপনার দোয়া কবুল হবে।

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭৩, সহীহ মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ ৮৭৫, নাসায়ী ১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকু ও সিজদায়  কুরআনের আয়াত পাঠ করা নিষেধঃ

সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ), হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন সময়ে) হুজরার পর্দা তুলে দিলেন। লোকেরা এ সময় আবূ বাকরের পিছনে সালাতের কাতারে দাঁড়ানো ছিল। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আর নুবুওয়াতের ধারা অবশিষ্ট থাকবে না। তবে মুসলিমরা সত্যস্বপ্ন দেখবে অথবা তাদের দেখানো হবে। সাবধান! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে আমি যেন রুকু বা সাজদারত অবস্থায় কুরআন পাঠ না করি। তোমরা রুকু অবস্থায় মহান প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত বর্ণনা করবে এবং সাজদারত অবস্থায় অধিক দু’আ পড়ার চেষ্টা করবে, কেননা তোমাদের দু'আ কবুল হওয়ার উপযোগী। হাদীসটি আবূ বকর (রহঃ) حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ سُلَيْمَانَ বলে রিওয়ায়াত করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী-৯৬১-(২০৭/৪৭৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরো দেখুন,

(সহিহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী-৯৬২, ৯৬৩, ৯৬৪, ৯৬৫, ৯৬৬, ৯৬৭, ৯৬৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৫৭, ৯৫৮, ৯৫৯, ৯৬০, ৯৬১, ৯৬২, ৯৬৪,  ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৬৮, ৯৬৯, ৯৭০, ৯৭১, ৯৭২, ৯৭৩, ৯৭৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরআনের আয়াত ব্যতীত হাদিস হতে যেকোনো দোয়া-সিজদায়  পড়ার দলিলঃ

হারূন ইবনু মা’রূফ ও আমর ইবনু সাওওয়াদ (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ বান্দার সিজদারত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম অবস্থা (বা মুহুর্ত)। অতএব তোমরা অধিক পরিমাণে (বেশী বেশী) দু'আ পড়ো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী-৯৭০-(২১৫/৪৮২), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৬, হাদিস সম্ভার, হাঃ ৬৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লক্ষণীয় বিষয়:

প্রকাশ থাকে যে, সালাতের মধ্যে অতিরিক্ত দোয়া পড়া যাবে। তবে সালাতের মধ্যে আপন আপন ভাষায় দোয়া করা যাবে না। এমনকি আরবিতেও নিজের বা কারো বানানো দোয়া পাঠ করা যাবে না এবং কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত দোয়াগুলো অনুবাদ করে পড়াও চলবে না। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের ভাষাকে সালাতের মধ্যে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সালাত মানুষের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্র নয়। এটাতো কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্যই সুনির্দিষ্ট।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৮, সহীহ মুসলিম-১২২৭, আবু দাউদ-৭৯৫, নাসাঈ-১২১৮, মুসনাদে আহমদ-২৩৮১৬, দারিমী-১৫০২, বুলগুল মারাম-২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জলসায়ে ইসতিরাহাঃ

দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে রাসূলুল্লাহ (স.) একটু সময় স্থির হয়ে বসতেন (বুখারী: ৮২৩, আধুনিক ৭৭৭)। এ বৈঠককে ‘জলসায়ে ইসতিরাহা' বা আরামে বসা বলা হয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মালিক ইবনু হুয়াইরিস লাইসী (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি তাঁর সালাতের বেজোড় রাক‘আতে (সাজ্দাহ হতে) উঠে না বসে দাঁড়াতেন না।* (সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৮২৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

*আমাদের দেশে বেশীর ভাগ মসজিদে এ হাদীসের বিপরীত ‘আমল পরিলক্ষিত হয়। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেজোড় রাক’আতগুলতে সিজদা শেষে উঠার পূর্বে জলসায়ে ইস্তিতিরাহাত করতেন । (বুখারী ১ম ১১৩ পৃষ্ঠা। আবূ দাউদ ১১১, ১১২ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৭৩ পৃষ্ঠা। ইব্‌নু মাজাহ ৬৪ পৃষ্ঠা। মেশতাক ৭৫ পৃষ্ঠা, মেশতাক নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদ্‌রাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৪, ৭৪০। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৭৩, বুখারী আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৫৮, ৭৭৭, ৭৭৮। বুখারী ইঃফাঃ হাদীস ৭৮৩; মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৬৯। আবূ দাউদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৮৪২, ৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৮। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৫ পৃষ্ঠা)

সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর নিয়ম:

আল্লাহু আকবার বলে প্রথমে মুখমন্ডল এরপর দুই হাত পরে হাঁটু উঠাবেন অথবা, মুখমন্ডল উঠিয়ে মাটিতে হাতের উপর ভর দিয়ে সরাসরি উঠে দাঁড়াবেন। উভয়ই জায়েয।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে মারফূ‘ভাবে বর্ণিত। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুখমন্ডলের ন্যায় দু’ হাতও সিজদা্ করে। তোমাদের কেউ মুখমন্ডল (কপাল) যমীনে রাখার সময় যেন অবশ্যই তার দু’ হাতের তালু যমীনে রাখে এবং যমীন থেকে মুখমন্ডল উঠানোর সময় যেন দু’ হাতও উঠায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৮৯৩, ইবনু খুযাইমাহ  ১৬২২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দ্বিতীয় রাকআত এবং পরবর্তী রাকআতের পদ্ধতিঃ

প্রথম রাকআত ছাড়া পরবর্তী কোন রাকআতে আর ছানা পড়তে হয় না এবং আউযুবিল্লাহ পড়ারও দরকার নেই। তবে প্রতি রাকআতেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। আর বাকি সব নিয়ম-কানুন প্রথম রাকআতের মতোই। তবে প্রথম রাকআতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকআতের কিরাআত পড়া ছোট করা ভালো।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতের প্রথম রাক্‘আতকে দ্বিতীয় রাক্‘আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি ‘আসরের সালাতও আদায় করতেন। এভাবে তিনি ফজরের সালাত  আদায় করতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮২৮-(৭), বুখারী ৭৫৯, মুসলিম ৪৫১, আবূ দাঊদ ৭৯৮, নাসায়ী ৯৭৮, আহমাদ ২২৫২০, দারেমী ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফরয  ছালাতের স্থানে সুন্নাত/নফল  ছালাত আদায় না করাঃ

সুন্নাত ছালাত আদায় করার সময় স্থান পরিবর্তন করা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ। কিন্তু অধিকাংশ মসজিদে মুছল্লীরা ফরয ছালাতের স্থানেই সুন্নাত ছালাত আদায় করে থাকে। স্থান পরিবর্তন করার প্রয়োজন মনে করেন না।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ (ফরয) সালাত পড়ার পর একটু সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা তার ডানে বা বাঁমে সরে (সুন্নত/নফল) সালাত আদায় করতে কি অপরাগ হবে? (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৪২৭, আবূ দাঊদ ১০০৬, আহমাদ ৯২১২, সহীহ আবী দাউদ ৬২৯, ৯২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইমাম যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয সালাত পড়ে, সেই স্থান থেকে না সরে সে যেন (নফল) সালাত না পড়ে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৪২৮, আবুদাঊদ ৬১৬, ১/৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(প্রথম অংশ-সমাপ্ত)

...........................................................................................

The Saheeh Rules of Accepting Salat (সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম)-First Volume (প্রথম খন্ড-প্রথম অংশ) এর ইংরেজি ভারসন দেখতে চাইলে ENGLISH VERSION এর উপর ক্লিক করুন। (ENGLISH VERSION)

দ্বিতীয় অংশঃ

শেষ বৈঠক (তাশাহুদ বৈঠক)

দ্বিতীয় অংশ দেখতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)

...........................................................................................

দ্বিতীয় খন্ড “সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি” দেখতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)

...........................................................................................

তৃতীয় খন্ড (প্রথম অংশ) “জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-1)

...........................................................................................

তৃতীয় খন্ড (দ্বিতীয় অংশ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-2)

...........................................................................................

তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ) কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-3)

...........................................................................................

তৃতীয় খন্ড (চতুর্থ অংশ) জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-4)

...........................................................................................

চতুর্থ খন্ড “মসজিদ ও জুমার সালাত” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)

...........................................................................................

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

...........................................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। 

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...