Search This Blog

Saturday, January 6, 2024

সালাতুত তওবা ও সালাতুল হাজত পড়ার সহিহ নিয়ম

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সালাতুত তওবা ও সালাতুল হাজত পড়ার সহিহ নিয়ম

সালাতুত তওবা

মানুষ মাত্রই ভুল করে পাপ বা গুণাহ করে। আমরা প্রায়শই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে বিভিন্ন পাপ কাজ করে যাচ্ছি। ঘর থেকে বের হলেই চোখের যেনা, মনের যেনা, হাতের যেনা, পায়ের যেনা করেই যাচ্ছি, আবার আমরা কেউ সুদ নিচ্ছি দিচ্ছি, মদ পান করছি, নর্তকীর নাচ দেখছি, গান শুনছি, ঘুষ নিচ্ছি, ওজনে কম দিচ্ছি, মিথ্যে কথা বলছি, অন্যের সাথে প্রতারনা করছি, দুর্নীতি করছি, চুরি ডাকাতিসহ কতো রকমের পাপ কাজ করে যাচ্ছি। এইসব পাপ করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, পাপকে পাপ মনে হয়না্। এদিকে পাপ কাজও করছি আবার পাঁচ ওয়াক্ত সালাতও আদায় করছি, হজ্জ আদায় করছি, দান খয়রাতও করছি। অথচ আমরা মুসলমান। মানুষ মাত্রই ভুল কাজ করবে পাপ কাজ করবে এ প্রসঙ্গে রাসুল সাঃ বলেন,

আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’

(বিঃদ্রঃ এ হাদিস দ্বারা পাপ করার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ব্যক্ত করা হয়েছে। পাপ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়নি। কেননা, মানুষ মাত্রই ভুলে জড়িত। তাই ভুলে জড়িত হয়ে পড়লে আবশ্যিক-রূপে ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৪৯, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭১, তিরমিযী ২৫২৬, আহমাদ ৭৯৮৩, ৮০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যাই হোক পাপ কাজ করেছি এখন সৎ পথে ফিরে আসতে চাই, উপায় কি? উপায় হচ্ছে প্রথমত আপনাকে সেই গুণাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে এরপর খাঁটিভাবে তওবা করতে হবে ও গুণাহ মাফের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে এতোই পাপ কাজ করি যে, কিয়ামতে যদি এর হিসেব নেয়া হয় তাহলে আমরা কেউ রক্ষা পাবো না। এ প্রসঙ্গে রাসুল সাঃ বলেন,

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন যার হিসাব নেয়া হবে, সে অবশ্যই ধ্বংস হবে। [’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন,] আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা কি এ কথা বলেননি, “শীঘ্রই তার নিকট থেকে সহজ হিসাব নেয়া হবে”। উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, সেটা হলো শুধু পেশ করা মাত্র। কিন্তু যার হিসাব খুটিনাটি যাচাই করা হবে, সে ধ্বংস হবেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯৩৯, ১০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৬৯, সহীহুল জামি ৬২২০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৫৯৪, আবূ ইয়া'লা ৪৪৫৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৬৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন কোন সালাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ-কে বলতে শুনেছি, [রাসূল (সা.) বলতেন]। (اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرً) (হে আল্লাহ! আমার নিকট থেকে সহজ হিসাব নিও) আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! সহজ হিসাব কি? তিনি (সা.) বললেন, আল্লাহ তার বান্দার ’আমলনামার প্রতি দৃষ্টিদান মাত্র, অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। হে ’আয়িশাহ্! জেনে রাখ, সেদিন যার হিসাবে যাচাই-বাছাই করা হবে, সে নিঃসন্দেহে ধ্বংস হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৬২, মুসনাদে আহমাদ ২৪২৬১, য'ঈফ আবূ দাউদ-এর আলোচনায় ৫৫৭নং, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ৮৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৭২, শু’আবূল ঈমান ২৭০, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৩৬৪৯, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮৭২৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

গুণাহ থেকে বাঁচার একটি উপায় হচ্ছে, গুণাহ হয়ে গেলে সালাতুত তওবা আদায় করা। সালাতুত তওবা কিভাবে আদায় করতে হয় তা “তাওবাহ্ খাঁটি হওয়ার জন্য কিছু শর্ত” বর্ণনা করার পর বর্ণনা করবো।

তাওবাহ খাঁটি হওয়ার জন্য কিছু শর্ত

তাওবাহ খাঁটি হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। সে শর্তসমূহ পূরণ না করে তাওবাহ্ করলে সে তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না আর তা আল্লাহর নিকট কবূলও হবে না। শর্তাবলীর সংখ্যা সর্বনিমণ ৩টি আর সর্বোচ্চ ৬টি। যদি গুনাহের সম্পর্ক শুধু আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তাওবাহ্ ক্ববূলের জন্য ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) (জন্ম : ৬৩১ হি./১২৩৩ ঈ. - মৃত্যু : ৬৭৬ হি./১২৭৭ ঈ.) ও সাউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শাইখ ‘আবদুল ‘আযীয বিন ‘আবদুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) (জন্ম : ১৩৩০ হি./১৯১০ ঈ. - মৃত্যু : ১৪২০ হি./১৯৯৯ ঈ.) সহ অনেক আলিমের মতে শর্ত ৩টি। তবে কোন গুনাহ যদি মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আরও একটি শর্ত বেড়ে তা হয়ে যাবে ৪টি।

তবে সাউদী আরবের আরেক বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তাওবার শর্ত মোট ৫টি। তবে মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার জন্য অতিরিক্ত ১টি শর্ত যোগ হবে। তা হলো পাওনাদারকে তার হক বা অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। সুতরাং যদি এগুলোর মধ্যে একটি শর্তও বাদ পড়ে, তাহলে সেই তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না। নিম্নে ঐ সকল শর্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :

(ক) তাওবাহ্ একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে করতে হবে;

(খ) গুনাহর কাজ করার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে;

(গ) যে গুনাহ হতে তাওবাহ্ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে;

(ঘ) ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে;

(ঙ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবে;

(চ) মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

এসব শর্তাবলী নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

(১) তাওবাহ্ একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে করতে হবেঃ

মহান আল্লাহর ভয় বা সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টির ভয় বা সন্তুষ্টির উদ্দেশে তাওবাহ্ করলে সেই তাওবাহ্ কখনো কবূল হবে না। কোন মানুষকে দেখানো বা তার নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশে কিংবা কারো চাপে পড়ে তাওবাহ্ করলে বা সুনাম নেওয়ার জন্য তাওবাহ্ করলে অথবা কারো মন রক্ষার জন্য তাওবাহ্ করলে বা কোন স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে তাওবাহ্ করলে, সে তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না।

তাওবাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকাল এবং গুনাহ থেকে মুক্তি। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশে তাওবাহ্ করা যাবে না। বরং অন্য কোন উদ্দেশে তাওবাহ্ করলে গুনাহ মাফ তো হবেই না উল্টো নতুন গুনাহ ‘আমলনামায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, খ্রিস্টানদের পাদ্রী কিংবা মুসলিমদের পীর-দরবেশ, বুজুর্গ-মাশায়েখ, হিন্দুদের ব্রাহ্মণ-ঠাকুর-পুরোহিতের কাছে তাওবাহ্ করার কোন সুযোগ নেই। তাওবাহ্ মানে তাদের পড়ানো কোন গদ নয়। তারা কেউই ব্যক্তির পাপ মোচন করতে পারে না। আল্লাহ দুনিয়ার কাউকে এমন ক্ষমতা দেননি।

তাওবাহ্ করতে হবে সরাসরি আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে তাওবাহ্ করলে সে তাওবাহ্ কখনই আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছবে না। কবূল হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বরং তা শির্ক। খ্রিষ্টান পাদ্রীরা পাপ মোচনের দায়-দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে নিয়েছে আর হিন্দু মুশরিক পুরোহিতরাও নিজেরা তাদের পদ্ধতি অনুকরণ করেছে। কিন্তু ইসলামে এগুলোর অবকাশ নেই। তবে হ্যাঁ, ‘আলিমগণ অবশ্যই তাওবার নিয়ম-কানুন শিখাতে-পড়াতে ও কালেমার তালকীন দিতে শরীয়ত অনুযায়ী সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে পারেন। মূলত তাওবাহ্ করার বিষয় শুধু মুখে পড়ার বিষয় নয়।

(২) গুনাহের কাজ করার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবেঃ

গুনাহ করার পর তা থেকে তাওবাহ্ করতে চাইলে তাওবাকারীকে অবশ্যই তার কৃতকর্মের জন্য অন্তর থেকে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। অপরাধকর্মের কারণে লজ্জিত হওয়া খাঁটি তাওবার শর্ত। তাইতো নাবী (সা.) বলেছেন :

ইবনে মা’কিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে আব্দুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’। আমার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি নিজে কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, “অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’’? তিনি বলেন, হাঁ। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫২, আহমাদ ৩৫৫৮, ৪০০৪, ৪১১৩, রাওদুন নাদীর ৬৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত না হয়ে, অনুতপ্ত না হয়ে যত তাওবাই করা হোক তা আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। ইসলামের নীতিমালায় প্রসিদ্ধ নীতি হলো, ‘পাপকাজ করে লজ্জিত হলে পাপ কমে যায়। আর পুণ্য কাজ করে গর্ববোধ করলে পুণ্য বাতিল হয়ে যায়।’ যে পাপ কাজ করে, সে সাধারণ মানুষ। যে পাপ করে অনুতপ্ত হয়, সে নেককার মানুষ। আর যে পাপ করার পর তার বড়াই করে, সে শয়তান। এমন অনেক পাপ আছে, যা অনেক নির্বোধ মানুষের কাছে গর্বের বিষয়। ফলে পাপী সেই পাপ করে বন্ধু-বান্ধব ও জনগণের সামনে প্রকাশ করে গর্ব অনুভব করে। এর ফলে গুনাহ মাফ হওয়ার সহজ সম্ভাবনাটুকু নষ্ট হয়ে যায়। তখন তার পাপ কাজের অনেক সাক্ষী তৈরি হয়ে যায়। ফলে পাপ থেকে মাফ পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ সম্পর্কে নাবী (সা.) বলেছেন :

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই গুনাহ হয়ে গেলে তা গোপন রাখতে হবে এবং গোপনে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। তাহলেই আশা করা যায় পাপীর তাওবাহ্ কবূল হবে।

(৩) যে গুনাহ হতে তাওবাহ্ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবেঃ

গুনাহগার ব্যক্তি যে গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চাচ্ছেন তাওবার শুরুতেই তাকে ঐ গুনাহ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ ঐ গুনাহ বর্জন করতে হবে। তাওবার শর্তসমূহের মধ্যে এই শর্তটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কোন ফরয কাজ না করার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চাইলে আগে ঐ কাজটি করে তাওবাহ্ করতে হবে। যেমন কেউ যাকাত দিত না। এখন যদি যে যাকাত না দেয়ার পাপ থেকে তাওবাহ্ করতে চায় তাহলে তাকে সবার আগে পূর্বের যত বছরের যাকাত দেয়নি তা হিসাব করে আদায় করতে হবে। কারণ যাকাত আল্লাহর হক এবং গরীবের হক। তাওবার দ্বারা আল্লাহর হক থেকে মুক্তি পেলেও গরীবের হক থেকে তো সে মুক্তি পাচ্ছে না।

একইভাবে কেউ যদি পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়ার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চায় তাহলে তাকে সবার আগে পিতা-মাতার সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। কেউ যদি আত্মীয়তার সম্পর্ক না রাখার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চায় তাহলে তাকে সবার আগে যে সকল আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল তাদের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করে তাওবাহ্ করতে হবে। যারা মদ্যপান বা ধূমপান করে তাদেরকে মদ্যপান বা ধূমপান ছেড়ে দিয়ে তাওবাহ্ করতে হবে।

আবার একইভাবে হারাম কোন কাজ করে ফেলার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে চাইলে সবার আগে খুব দ্রুত সেই হারাম কাজটি করা বর্জন করতে হবে। তারপর তাওবাহ্ করতে হবে। যেমন কেউ যদি সুদের পাপ থেকে তাওবাহ্ করতে চায় তাহলে তাকে সবার আগে সুদ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে এবং তা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। আর সুদের যে অর্থ-সম্পদ তার কাছে আছে তা হিসাব করে হালাল অর্থ থেকে পৃথক করে সাওয়াবের উদ্দেশ্য ছাড়া সমাজকল্যাণমূলক কাছে ব্যয় করতে হবে। কেউ তাওবাহ্ করতে চায় অথচ ফরয ‘ইবাদাত বর্জন করেই যাচ্ছে বা হারাম কাজ করেই যাচ্ছে তাহলে তার তাওবাহ্ কখনোই কবূল হবে না। বরং তার তাওবাহ্ হয়ে যাবে আল্লাহর সাথে ঠাট্টা করার শামিল। ময়লা থেকে পা ধুয়ে সেই পা কোন ময়লাহীন শুকনো স্থানে রাখতে হবে। নয়তো ময়লায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পা ধুলে অথবা ধোয়া পা ময়লাতেই রাখলে পা ধোয়া নিরর্থক হবে।

কুয়ার মধ্যে পড়ে যাওয়া বিড়ালের ঘটনা থেকে গুনাহ থেকে কিভাবে তাওবাহ্ করতে হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যায়। নীচের গল্পটি পড়ে দেখুন:

এক ব্যক্তি এক মুফতী সাহেবকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলো যে, যে পানি থেকে গন্ধ আসে, সে পানিতে উযূ-গোসল করলে পবিত্রতা অর্জিত হবে কিনা? মুফতী সাহেব বললেন, ‘৪০ বালতি পানি তুলে ফেললে পানি পবিত্র হয়ে যাবে।’ মুফতী সাহেবের ফতোয়া শুনে বাড়ির মালিক অতি কষ্টে কুয়া থেকে ৪০ বালতি পানি তুলে ফেললেন, কিন্তু তাতেও পানির দুর্গন্ধ গেল না।

ঐ ব্যক্তি মুফতী সাহেবকে আবার জিজ্ঞেস করলো, আমি তো কুয়া থেকে ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলে দিয়েছি, এখন কি কুয়ার পানি পবিত্র হয়েছে? মুফতী সাহেব তাকে আবারও ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলা হলো। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন নেই। আরো ৪০ বালতি পানি তুলে ফেলতে আদেশ করার পরও যখন পানির দুর্গন্ধ গেল না, তখন বাড়িওয়ালা মুফতী সাহেবের প্রতি রাগান্বিত হলেন। এবার মুফতী সাহেব সরেজমিনে তদন্তে নামলেন।

সরেজমিনে গিয়ে কুয়ার নিচে তাকিয়ে দেখলেন, সাদা সাদা কী যেন একটা জিনিস ভাসছে। তিনি বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতেই বাড়িওয়ালা বললেন, ‘ওই সেই বিড়ালটা, যেটা পড়ে মারা গেছে।’ মুফতী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওটা তুলে ফেলেননি কেন?’ বাড়িওয়ালা বলল, ‘হুযুর! আপনি তো ওটা তুলে ফেলতে বলেন নি।’ মুফতী সাহেব বললেন, ‘সেটাও কি বলতে হয়? এ কথা কি আপনার বুদ্ধিতে ধরে না যে, পানি থেকে বিড়ালের পচা-গলা দেহ না তুলে বালতির পর বালতি পানি তুলে ফেললেও কুয়ার পানি পবিত্র ও দুর্গন্ধহীন হবে না।’

এই গল্প কাল্পনিক হলেও এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই বোঝা গেল যে, কুয়ার মধ্যে বিড়ালের পচা-গলা দেহ রেখে কুয়ার পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত ও পবিত্র করার চেষ্টা করা আর পাপরত অবস্থায় তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করা প্রায় একই কথা। পাপে রত অবস্থায় তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার করার কী মূল্য হতে পারে? মদ খেতে খেতে ‘তাওবা-তাওবা’ বললে, ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ‘আস্তাগফিরুল্লাহ-আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়লে কী লাভ হতে পারে? তাই আগে পাপ বর্জন করতে হবে, তারপর তাওবাহ্ করতে হবে। তবেই সেই তাওবাহ্ কবূল হবে। নয়তো তা হবে পন্ডশ্রম। তবে ইস্তিগফার সবসময়ই করতে থাকতে হবে।

(৪) ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবেঃ

খাঁটি তাওবাহ্ করার জন্য কৃত গুনাহর জন্য লজ্জিত হয়ে গুনাহ বর্জন করলেই হবে না। ভবিষ্যতে আর এই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। যদি তাওবাহ্ করার সময় মনে মনে নিয়ত থাকে যে সুযোগ পেলে আবার ঐ গুনাহর কাজ করবো তাহলে সেই তাওবার কোন গুরুত্ব আল্লাহর কাছে নেই। সেই তাওবাহ্ কোন তাওবাই নয়। যেমন কোন ব্যক্তি অঢেল অর্থ-সম্পত্তির মালিক। এমতাবস্থায় সে মদন্ডনারী নিয়ে যেনা-ব্যভিচার করার জন্য প্রস্ত্ততি নিয়ে বিদেশ গেলো। হঠাৎ কোন এক কারণে তার অর্থ-সম্পদ শেষ হয়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়লো। তখন সে তাওবাহ্ করতে লাগলো। অথচ তার মনে আকাঙক্ষা আছে যে, সে যদি আবার অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারে তাহলে সে আবার যেনা করবে। মদ পান করবে। তাহলে তার এই তাওবাহ্ আল্লাহর নিকট কবূল হবে না। তার তাওবাহ্ হচ্ছে অপারগের তাওবাহ্। কোন পাপ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে তা থেকে তাওবাহ্ করলে তা তাওবাহ্ হয় না। তবে যৌবন বয়সে করা পাপের তাওবাহ্ বৃদ্ধকালে করলে আশা করা যায় আল্লাহ কবূল করবেন। কারণ সে হয়তো যৌবনকালে বুঝতে পারেনি। বৃদ্ধকালে নিজের অপরাধের কথা বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ্ করলে সেই তাওবাও আল্লাহ কবূল করবেন, ইনশা-আল্লা-হ।

তবে কখনো কখনো পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যদি আবার তা করে ফেলে, তাহলে বলা যাবে না যে, পাপীর আগের তাওবাহ্ কবূল হয়নি, তা বাতিল হয়ে গেছে। কারও আগের তাওবাহ্ কবূল হওয়ার পরও সে আবার পাপে লিপ্ত হতে পারে। তখন সে আবার তাওবাহ্ করবে। ভবিষ্যতে পাপ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও যদি অনিচ্ছা সত্ত্বে বারবার সে পাপে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সে বারবারই তাওবাহ্ করবে।

তবে মনে রাখতে হবে পাপী ব্যক্তি কোন অবস্থায় সেই পাপে লিপ্ত হয়েছে তা কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা জানেন। তাই আল্লাহকে ফাঁকি দিয়ে তাওবাহ্ করা যায় না। সাধারণভাবে কেউ যদি অনিচ্ছকৃত বা না জেনে গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আবার গুনাহ করে মাফ চায় আল্লাহ ক্ষমা করবেন। সে কথাই নাবী (সা.) হাদীসে কুদসীতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেন :

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা গুনাহ করে বলে, ’হে আমার রব! আমি গুনাহ করে ফেলেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দাও।’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)!) আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন? যে ’রব’ গুনাহ মাফ করেন অথবা (এর জন্য) তাকে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থেক) আমি তাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন, সে গুনাহ না করে থাকল। তারপর আবার সে গুনাহ করল ও বলল, ’হে রব’! আমি আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ মাফ করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা এর জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন, সে কোন গুনাহ না করে থাকল। তারপর সে আবারও গুনাহ করল এবং বলল, হে রব! আমি আবার গুনাহ করেছি। তুমি আমার এ গুনাহ ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা কি জানে, তার একজন ’রব’ আছেন, যে রব গুনাহ মাফ করেন অথবা অপরাধের জন্য শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সে যা চায় করুক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৮, আহমাদ ৭৯৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৪, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪০, ইবনু হিব্বান ৬২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

‘সে যা ইচ্ছা করুক’ কথার অর্থ হল, সে যখন এরূপ করে; অর্থাৎ পাপ করে সাথে সাথে তাওবাহ্ করে এবং আমি তাকে মাফ করে দেই, তখন সে যা ইচ্ছা করুক, তার কোন চিন্তা নেই। যেহেতু তাওবাহ্ পূর্বকৃত পাপ মোচন করে দেয়। অবশ্য একই পাপ জেনেশুনে বারবার করলে অথবা তাওবার সময় পাপ বর্জনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা না করলে সে ক্ষমার যোগ্য নাও হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

‘‘আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি যুল্ম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তারা তার পুনরাবৃত্তি করে না।’’ (সূরা আ-লি ‘ইমরা-ন ০৩ : ১৩৫)।

নাবী (সা.) বলেছেন,

‘‘তোমরা দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। তোমরা ক্ষমা কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা কথা শুনেও শুনে না। দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা জেনে শুনে তাদের কৃত অপরাধের উপর অটল থাকে।’’ (মুসনাদ আহমাদ : ৭০৪১; আল আদাব আল মুফরাদ : ৩৮০; শু‘আবুল ঈমান : ৭২৩৬; আস্ সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ : ৪৮২)।

তাই তাওবাহ্ করার সময় অবশ্যই ভবিষ্যতে আর সেই গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তাওবাহ্ করার পর আবার কোন কারণে পাপ হয়ে গেলে পুনরায় তাওবাহ্ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই গুনাহর উপর অটল থাকা যাবে না। কারণ কেউ জানে না সে কখন মৃত্যুবরণ করবে, আদৌ সে তাওবার সুযোগ পাবে কিনা।

(৫) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবেঃ

তাওবাহ্ করার নির্ধারিত সময় আছে। আর তাওবার নির্ধারিত সময় দুই ধরনের :

এক. প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাওবার সর্বশেষ সময় হচ্ছে তার মৃত্যু। তাই মৃত্যু আসার আগেই তাওবাহ্ করতে হবে।

দুই. সকল মানুষের জন্য তাওবাহ্ করার সর্বশেষ সময় হচ্ছে ক্বিয়ামাতের আলামত হিসেবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। তাই সাধারণভাবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই তাওবাহ্ করতে হবে।

মূলত পাপ করার পরক্ষণেই তাওবাহ্ করা উচিত। অনেকে শেষ জীবনে দাড়ি-চুল পাকলে পরে তাওবাহ্ করবেন বলে অপেক্ষায় থাকে, অবহেলা করে। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যু এসে যাওয়ায় সে আর তাওবার সুযোগ পায় না।

মহান আল্লাহ বলেছেন :

‘‘নিশ্চয় তাদের তাওবাহ্ কবূল করা আল্লাহর দায়িত্ব যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে। তারপর অনতিবিলম্বে তারা তাওবাহ্ করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবাহ্ কবূল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতিপ্রজ্ঞাময়। আর তাওবাহ্ নেই তাদের, যারা অন্যায় কাজসমূহ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবাহ্ করলাম; আর তাওবাহ্ তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমরা এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব।’’ (সূরা আন্ নিসা ০৪ : ১৭-১৮)।

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবাহ্ সে পর্যন্ত কবূল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয় (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ঘ্যার ঘ্যার করা শুরু করে)।’’

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দার প্রাণ (রূহ) ওষ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ তার তওবা্ কবূল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৩, সুনান আততিরমিযী ৩৫৩৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৫৩, আহমাদ ৬১৬০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭৬৫৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৬৬১, ইবনু হিব্বান ৬২৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৩, সহীহ আল জামি‘ ১৯০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মহান আল্লাহর ‘আযাব দেখার পরে করা তাওবাও কোন উপকারে আসবে না। মৃত্যুর সময় ফির‘আওনের ঈমান তার কোন উপকার করেনি। সুতরাং কেউ আল্লাহর ‘আযাব গ্রাস করার মুহূর্তে তাওবাহ্ করলে তা তার কোন উপকারে আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

‘‘তারপর তারা যখন আমার ‘আযাব দেখল তখন বলল, ‘আমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, আর যাদেরকে আমরা তার সাথে শরীক করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম’। সুতরাং তারা যখন আমার ‘আযাব দেখল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকার করল না। এটা আল্লাহর বিধান, তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে। আর তখনই ঐ ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৮৪-৮৫)।

একইভাবে ক্বিয়ামাতের পূর্বে তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। যখন কেউ তাওবাহ্ করতে চাইলেও তখন তার তাওবাহ্ প্রতিপালকের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

‘‘তারা কি এরই অপেক্ষা করছে যে, তাদের নিকট ফেরেশতাগণ হাযির হবেন, কিংবা তোমার রব উপস্থিত হবেন অথবা তোমার রব-এর আয়াতসমূহের কিছু সংখ্যক আয়াত প্রকাশ পাবে? যেদিন তোমার রবের আয়াতসমূহের কিছু সংখ্যক আয়াত প্রকাশ পাবে, সেদিন কোন ব্যক্তিরই তার ঈমান উপকারে আসবে না যে পূর্বে ঈমান আনেনি, কিংবা সে তার ঈমানের মাধ্যমে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি। বল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, নিশ্চয় আমরাও অপেক্ষা করছি’।’’ (সূরা আল আন্‘আম ০৬ : ১৫৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

‘‘তাওবার সুযোগ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত হিজরত বন্ধ হবে না। আর পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত তাওবার সুযোগ কেটে যায় না।’

হাদিসঃ

মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হিজরতের ধারাবাহিকতা বন্ধ হবে না ততকক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তাওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, সূর্য পশ্চিমাকাশে উদয় না হওয়া পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৭৯, আহমাদ ১৬৯০৬, দারিমী ২৫৫৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৭৭৮, ইরওয়া ১২০৮, সহীহ আল জামি‘ ৭৪৬৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র নাবী (সা.) বলেছেন :

‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিকে থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তাওবাহ্ করবে, আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করবেন।’’

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদয়ের (কিয়ামতের) আগে তওবা্ করবে আল্লাহ তা’আলা তার তওবা্ কবূল করবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০৩, ইবনু হিব্বান ৬২৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৬১৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার বা পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করতে হবে। আগামীকাল নয়, আজই এখনই তাওবাহ্ করতে হবে।

(৬) মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবেঃ

যদি কোন গুনাহর সম্পর্ক কোন মানুষের অধিকারের সাথে হয়, তাহলে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা ক্ষমা চেয়ে তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু গ্রহণ-হরণ করে থাকে, তাহলে তা মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যার প্রতি যুল্ম করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে গিয়ে বলতে হবে, ভাই/বোন! আমি আপনার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি বা আপনার গীবত করে আপনার সম্মান নষ্ট করেছি বা যুলুম করেছি। এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে তাওবাহ্ করছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। এভাবে যত মানুষের সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ করেছে তত মানুষের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি সেই ব্যক্তি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, অর্থ-সম্পদ হরণ করে থাকলে তা ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকারের নিকট পৌঁছে দিবে, তার পক্ষ থেকে দান-সদাক্বাহ্ করবে এবং নিজে বেশি বেশি করে সৎ কাজ/সাওয়াবের কাজ করে সাওয়াব বাড়িয়ে নেবে। কেননা ঐ যার অধিকার নষ্ট করেছে সে ব্যক্তি যদি জাহান্নামী হয় তাহলে সে ক্বিয়ামাতের মাঠে এই ব্যক্তির কাছে তার অধিকার ফেরত চাইতে পারে। তখন তাকে সাওয়াব দিয়ে প্রতিদান দিতে হবে।

নাবী (সা.) বলেছেন :

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪৯, ৬৫৩৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭, জামি‘ আত্ তিরমিযী  ২৪১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর কেউ যদি কোন বান্দার হক নষ্ট করে কিন্তু যার হক নষ্ট করেছে শত চেষ্টা করেও তাওবাহ্ করার সময় তাকে খুঁজে না পায় বা তার কাছে পৌঁছতে না পারে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা গুনাহকারীকে মাফ করবেন। ইন-শা-আল্লাহ।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হক নষ্ট করার গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার জন্য প্রথম ৫টি শর্ত যথেষ্ট। তবে আল্লাহর হকের মধ্যে কিছু হক আছে যা তাওবার মাধ্যমে মাফ হয় না সেগুলো কাযা আদায় করে হক পূরণ করতে হয়। যেমন, সলাত, সিয়াম ইত্যাদি।

উপরে উল্লিখিত সকল সকল শর্ত পালন করে যে পাপী তাওবাহ্ করবে, তার তাওবাহ্ হবে খাঁটি তাওবাহ্। এই তাওবাই আল্লাহ চান এবং তিনি এই তাওবাই গ্রহণ করেন।

বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হলো ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী মা‘ইয বিন মালিক-এর মত তাওবা। যার ব্যাপারে নাবী (সা.) বলেছিলেন :

‘‘সে এমন তাওবাহ্ করেছে যে, যদি তা একটি জাতির মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হত, তাহলে সকলের জন্য তা যথেষ্ট হত।’’

হাদিসঃ

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, ‘আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়েই পুনরায় ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন, ‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যই যিনা করেছ’? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে রজম করা হল। এই ঘটনার দুই/তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৮২, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

বিশুদ্ধ তাওবার উদাহরণ স্বরূপ ব্যভিচারের অপরাধে অপরাধী জুহায়নাহ্ গোত্রের নারীটির তাওবার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :

‘‘এই মহিলাটি এমন বিশুদ্ধ তাওবাহ্ করেছে যদি তা মদীনার ৭০ জন লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তাহলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত।’’

হাদিসঃ

আবূ গাসসান মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ মিসমাঈ (রহঃ) ..... ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) এর মাধ্যমে হাদীস শুনিয়েছেন যে, জুহাইনাহ গোত্রের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি হদ (শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকালেন এবং বললেন, তাকে ভালভাবে দেখাশোনা করো। তারপর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করলো। এরপর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি (শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাধা হলো। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো।

অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন অথচ সে তো ব্যভিচার করেছিল? তিনি বললেন, নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তওবা করেছে, যদি তা মদীনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে অধিক উত্তম তওবাকারী কখনও দেখেছো? সে-তো নিজের জীবন আল্লাহর জন্য দিয়ে দিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার ৪২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হল, যার পরে গুপ্ত ও প্রকাশ্যভাবে ‘আমলে কোন প্রকার পাপের আচরণ থাকবে না। যে তাওবাহ্ তাওবাকারীকে বিলম্বে ও অবিলম্বে সাফল্য দান করে। বিশুদ্ধ তাওবাহ্ হল তাই, যার পরে তাওবাকারী বিগত অপরাধ-জীবনের জন্য কান্না করে, পুনরায় সেই অপরাধ যেন ঘটে না যায় তার জন্য ভীত-আতঙ্কিত ও সতর্ক থাকে, অসৎসঙ্গীদের সংসর্গ বর্জন করে এবং সৎসঙ্গীদের সাহচর্য অবলম্বন করে।

গুণাহ মাফের উত্তম মাধ্যম অযু ও সালাত

ওযূ গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম।

হাদিসে এসেছে,

(ক) উসমান (রাঃ) হতে বণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হতেও তা বের হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র এসেছে,

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মু’মিন বান্দা উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দু’ হাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্যে তার দু’ পা হাঁটছে। ফলে সে উযূর জায়গা হতে উঠার সময়) সকল গুনাহ হতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২৮৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু‘আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু‘আহ্ হতে ওই জুমু‘আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৫০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৫০২৭, আহমাদ ৯৪৮৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৭৫৬, ১৮১৮, ইবনু হিব্বান ২৭৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৯, শু‘আবুল ঈমান ২৭২৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৬১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে সালাত।

(ক) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তুমি কি মনে করো, কারো বাড়ির আঙ্গিনায় যদি প্রবহমান নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোন ময়লা থাকে? তিনি বলেন, কিছুই থাকে না। তিনি বলেনঃ পানি যেভাবে ময়লা দূর করে দেয়, তদ্রূপ সালাত ও গুনাহ দূর করে দেয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৭, আহমাদ ৫২০, ইরওয়াহ ৪৭-৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক শীতের সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগলো। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সালাত আদায় করে, তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৬, আহমাদ ২১০৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৪)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত সালাত আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা করে দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৭৭, আহমাদ ২১১৮৩, সুনান আবূ দাঊদ ৯০৫, সহীহ আত্ তারগীব ২২৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া আত-তুজীবী (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ওযুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি ওযু করতে আরম্ভ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি উসমান (রাযিঃ) তিনবার তার হাতের কজি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসাহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর তদ্রুপভাবে বাম পা ধুলেন তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এ ওয়ূর করার ন্যায় ওযু করতে দেখেছি এবং ওযু শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’ রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ’আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্য কারোর এ নিয়মের ওযুই হল পরিপূর্ণ ওযু । (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৩৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আসিম ইবনু সুফ্ইয়ান আস-সাকাফী (রহ) থেকে বর্ণিত। তারা সালাসিল যুদ্ধ অভিযানে অংশগ্রহণ করতে রওয়ানা হন। এরপর তারা সীমান্ত এলাকায় সারিবদ্ধভাবে ঘোড়া বিন্যস্ত করেন। পরে তারা মুআবিয়াহ (রাঃ) এর নিকট ফিরে আসেন। তখন তার নিকট উপস্থিত ছিলেন আবূ আইউব ও উকবাহ ইবনু আমির (রাঃ)। আসিম (রহঃ) বলেন, হে আবূ আইউব! এ বছরের যুদ্ধাভিযানে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারিনি। আমরা অবহিত হয়েছি যে, যে ব্যক্তি চারটি মসজিদে সালাত  পড়বে, তার গুনাহ মাফ করা হবে। আবূ আইউব (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি চারটি মসজিদে সালাত পড়বে, তার গুনাহ মাফ করা হবে। আবূ আইউব (রাঃ) বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমাকে এর চেয়েও সহজ পথ বলে দিচ্ছি। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি যথাবিধি উযূ করে যথাবিধি সালাত পড়লে, তার পূর্বেকার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। হে উক্বা! হাদীসটি কি এরূপ? তিনি বলেন, হ্যাঁ। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৬, নাসায়ী ১৪৪, তালাক রগীব ৯৮,৯৯, সহীহ তারগীব ১৯১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(চ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি এক নারীর সাথে অপকর্ম করে, তবে যেনা নয়। আমি জানি না, আসলে কী ঘটেছিল। সম্ভবত যিনা ব্যতীত অন্য কিছু। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ব্যাপারটি তাঁর কাছে বর্ণনা করে। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) সালাত (নামায/নামাজ) কায়িম করো দিনের দু প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে, সৎকর্ম অবশ্যই অসৎ কর্ম মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এতো তাদের জন্য উপদেশ (সূরাহ হূদঃ ১১৪)। সেই ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ আয়াত কি আমার জন্যই? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি এর উপর আমল করবে (তার জন্যও)। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৮, বুখারী ৫২৬, ৪৬৮৭; মুসলিম ২৭৬১-২, তিরমিযী ৩১১২, আবূ দাঊদ ৪৪৬৮, আহমাদ ৩৬৪৫, ৪০৮৩; ইবনু মাজাহ ৪২৫৪, ইরওয়াহ ২৩-২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমীরুল মু’মিনীন আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)আমাকে বলেছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন লোক অন্যায় করার পর (লজ্জিত হয়ে) উঠে গিয়ে উযূ করে ও সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত পড়লেন (মূল আয়াত হাদীসে আছে) ’’এবং যেসব লোক এমন কোন কাজ করে বসে যা বাড়াবাড়ি ও নিজেদের ওপর যুলম, এরপর আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তখন নিজেদের গুনাহের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ১৩৫)। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৯৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩২৪, সুনান আততিরমিযী ৪০৬, ৩০০৬; সুনান আবূ দাঊদ ১৫২১, আহমাদ ২, ৪৮, ৫৭, সহীহ আবী দাউদ ১৩৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৬৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কোনো লোক গুণাহ করার পর (লজ্জিত হয়ে) উঠে গিয়ে সুন্দরভাবে উযূ করে ও দুই বা চার রাকাত সালাত আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। এই সালাতের নামই হচ্ছে সালাতুত তওবা।

সালাতুত তওবা আদায়ের সহিহ নিয়ম

সালাতুত তওবা আদায়ের সুনির্দিষ্ট কোনো ওয়াক্ত বা সময় নেই। কেউ গুণাহ বা পাপ কাজ করে ফেললে লজ্জিত ও অনুতপ্ত অবস্থায় সুন্দরভাবে অযু করে যেকোনো সময় এই সালাত আদায় করা যায়। একটি হাদিসে এসেছে গুণাহ করার পর ছয় ঘন্টা পর্যন্ত কলম উঠিয়ে রাখা হয়। এই ছয় ঘন্টার মধ্যে তার পাপ লেখা হয় না। এই সময়ের মধ্যে যদি সেই পাপী বান্দা তওবা না করে তাহলে ছয় ঘন্টা পার হলে তার পাপ লেখা হয়। হাদিসে এসেছে,

উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বামের ফিরিশতা পাপী বা অপরাধী মুসলিমের উপর থেকে ছয় ঘন্টা কলম তুলে রাখেন। অতঃপর সে যদি পাপে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করেন। নচেৎ একটি পাপ লেখা হয়। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৯, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৬৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭০৫১, সহীহুল জামে’ হা/ ২০৯৭, সিঃ সহীহাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেহেতু গুণাহ মাফের জন্যে এই সালাত তাই এই সালাতে রুকু, সিজদাহ ও তাশাহুদ বৈঠকে গুণাহ মাফের যেসব দোয়া আছে সেগুলো বেশী বেশী পাঠ করতে হবে। এই দোয়াগুলো রাসুল সাঃ সালাতে নিয়মিত পাঠ করতেন। এই সালাতে সুরা ফাতিহার পর ক্ষমা প্রার্থনামূলক যেসব কুরআনের আয়াত আছে সেগুলোও দিয়ে সালাত সমাপ্ত করতে হবে। এছাড়া সকাল বিকেল গুণাহ মাফের দোয়াগুলোর আমল করতে হবে।

প্রচলিত ছানার স্থলে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এই ছানার দোয়াটি পাঠ করতে হবে

“আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা-‘আদতা বায়নাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাকক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাকক্বাছ ছাওবুল আব্ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা-হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি”।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত করে দাও।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন! আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি বলি, ‘‘হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমূহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছো মাশরিক ও মাগরিবের (অর্থাৎ- পূর্ব ও পশ্চিমের) মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হতে। হে আল্লাহ! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারার বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।’’  (মিশকাতুল মিসাবীহ ৮১২: সহীহ : বুখারী ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, আবূ দাঊদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনু মাজাহ্ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারেমী ১২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৭৫।) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রুকুতে পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জীবনের শেষ দিকে এসে রুকূ ও সিজদাতে এমনকি ছালাতের বাইরে অধিকাংশ সময় নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তেন।–

(ক) যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু’-সাজদায় এ দু'আ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ

“সুবহ-নাকা আল্লহুম্মা রব্বানা- ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ "হে আল্লাহ! হে আমার প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” তিনি কুরআনের উপর 'আমল করতেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, মিশকাত ৮৭১, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬, আবূ দাঊদ ৮৭৭, নাসায়ী ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, বুখারী-৪২৯৩)। হাদিসের মান-সহিহ।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ), ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যে এসব নতুন বাক্য পড়তে দেখছি- এগুলো কী? তিনি বললেনঃ আমার উন্মাতের মধ্যে আমার জন্য একটি চিহ্ন বা নিদর্শন রাখা হয়েছে। যখন আমি তা দেখি তখন এগুলো বলতে থাকি। আমি দেখেছিঃ “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" সূরার শেষ পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯, মুসনাদে আহমদ ১৯৭০, সিলসিলা সহীহা ৩০৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ), আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন”। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী ৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখছিঃ “সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উন্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামাত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পাঠ করতে থাকিঃ "সুবহানাল্ল-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা- জা-আ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ ..”। অর্থাৎ “যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ- মক্কা বিজয়), তুমি দেখত পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তার তাসবীহ করে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তওবা গ্রহণকারী"- (সূরাহ আন নাসর)। (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহ

(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের উপর ‘আমল করে নিজের রুকূ‘ ও সাজদায় এই দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করতেনঃ

 ‘‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা- ওয়াবিহামদিকা, আল্লা-হুমাগ ফিরলী’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি পূত-পবিত্র। তুমি আমাদের রব। আমি তোমার গুণগান করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৭১, সহীহ বুখারী ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৭, নাসায়ী, ১০৪৬, ১১২২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭২-(২১৭/৪৮৪), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার ৯৭৮, নায়লুল আওত্বার ৩/১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...‘আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তিকালের পূর্বে এ দু'আটি খুব বেশি মাত্রায় পাঠ করতেনঃ

"সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা আস্তাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলায়ক"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা প্রাপ্য একমাত্র তিনি, আমি তোমার নিকট সকল পাপের ক্ষমা চাচ্ছি ও তওবা করছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৩-(২১৮), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "ইযা- জাআ নসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ" (সূরাহু আন নাসর) নাযিল হওয়ার পর থেকে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ দু'আ পাঠ করা ব্যতিরেকে কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। অথবা তিনি সেখানে (সালাতে) বলতেনঃ

"সুবহা-নাকা রব্বী ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী”।

অর্থাৎ, হে আমার প্রতিপালক আপনার জন্যই সকল পবিত্রতা ও প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।" (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৪-(২১৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ), আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক সংখ্যায় এ দু'আ পড়তেনঃ

“সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহী আস্তাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি"।

অর্থাৎ "মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তওবা করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” (সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমী-৯৭৫-(২২০), ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৭০, ইসলামিক সেন্টার ৯৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ

‘‘আল্লা-হুম্মা আ‘ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বিমু‘আ-ফা-তিকা মিন ‘উকূবাতিকা, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনকা লা- উহসী সানা-আন ‘আলায়কা, আনতা কামা- আসনায়তা ‘আলা- নাফসিকা’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার ‘আযাব হতে মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৬, ৯৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৩৮৪১, আহমাদ ২৫৬৫৬, নাসায়ী ১১০০, নাসায়ী ১৬৯, আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (চ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন,

‘‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৮৩, ৯৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮৭৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৩১, ইবনু খুযাইমাহ, ৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৬৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্ষমা প্রার্থনামূলক কুরআনের আয়াতসমূহ

(১) একদা ক্বাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসুল (সাঃ) কোন দোয়াটি বেশী বেশী পড়তেন। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুল (সাঃ) বেশী বেশী বলতেনঃ-

“আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা- ‘আযা-বান না-র”।

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বোত্তম কল্যাণ দান করো এবং আগুনের আযাব হতে আমাদের রক্ষা করো। (সুরা আল বাক্বারাহঃ ২০১, সহীহ মুসলিম ২৬৯০, আবু দাউদ ১৫১৯)।

হাদিসঃ

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ).....আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাতাদাহ্ আনাস (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দুআ সর্বাধিক পড়তেন? তিনি বললেন, তিনি যে দু’আ দ্বারা সর্বাধিক দু’আ করতেন তাতে বলতেনঃ

“আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরতি হাসানাতাও ওয়াকিনা- ‘আযা-বান না-র”।

অর্থাৎ- "হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতে কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে বঁচিয়ে রাখো।"

রাবী বলেন, আনাস (রাযিঃ) যখনই কোন দু’আ করার সংকল্প করতেন তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন্যায়) দুআ করতেন। তারপর যখন তিনি কোন ব্যাপারে দু’আ করার সংকল্প করতেন তখন তাতে এ দু’আ পড়তেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৯, বুখার৬৩৮৯), আহমাদ ১৩৯৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৯৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৪৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ইবরাহিম আঃ কা‘বা ঘর নির্মানের পর বলেছিলেন,

"রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস ছামিউল আলিম- রব্বানা ওয়াজ আলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়া মিন জুররি ইয়াতিনা উম্মাতাম মুসলিমাতাল লাকা ওয়া আরিনা মানাসিকানা ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম।”

 অর্থ: "হে আমাদের প্রভু! আমাদের এ কাজ গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। হে আমাদের প্রভু! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত উম্মত করবেন। আমাদেরকে ইবাদতে নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" (সূরা-আল বাকারা : ১২৭ ও ১২৮)।

(৩) ইবরাহিম আঃ পিতা মাতা, ছেলে-মেয়ে ও মুমিনদের প্রার্থনায় বলেছিলেন,

“রব্বিজ আলনী মুক্বীমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিইয়াতি রব্বানা- ওয়া তাক্বব্বাল  দো’আ-রব্বানাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়া লি-দাইয়া ওয়া লিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।”

অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সলাত কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দোয়া কবুল করুন। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে,, আমার পিতা মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যে দিন হিসাব কায়েম হবে। (সুরা ইব্রাহিম-৪০,৪১)।

(৪) ”রব্বানা-লা-তুঝিগ কুলুবানা-বা’দা ইয হাদাইতানা-ওয়া হাবলানা- মিল্লাদুনকা রাহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহাব, রব্বানা- ইন্নাকা জা-মি‘উন না-স, লিইয়াওমিল লা -রইবা ফিহ, ইন্নাল্ল-হা লা-ইউখলিফুল মি-আ-দ।”

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনৃগ্রহ দান করুন। আপনিই সব কিছুর দাতা। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি মানুষকে একদিন একত্রিত করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদার বরখেলাপ করেন না। (সুরা আলে ইমরান-৮-৯)।

(৫) “রব্বানা-লা-তুআ-খিযনা-ইন নাসিনা-আও আখত্ব‘না, রব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাযিনা মিন ক্ববলিনা, রব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা-ত্ব ক্বাতালানা বিহ, ওয়া‘ফু আন্না ওয়াগফিরলানা  ওয়ারহামনা আন্তা মাওলানা ফানসুরনা আলাল ক্বওমিল কা-ফিরিন।”

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পন করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর করেছ, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করাইও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ সমূহ মোচন করো। তুমি আমাদের ওলী। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সুরা আল বাকারাহ-২৮৬)।

(৬) “রব্বানা-হাবলানা- মিন আঝওয়া জিনা ওয়া যুররিইয়া-তিনা –কুররতা আ‘য়ুনিউ ওয়াজ’ আলনা-লিল মুত্তাক্বীনা ইমা-মা”।

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং সন্তানদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাক্বীদের জন্য আদর্শ স্বরুপ করো। (সুরা ফুরক্বান-৭৪)।

(বিঃদ্রঃ কুরআন হতে উল্লেখিত দোয়াগুলো দুই হাত তুলে মুনাজাতে, সালাতের মধ্যে তাশাহুত বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও প্রচলিত মাছুরা নামক দোয়াটি পাঠ করার পর পাঠ করা যাবে। এছাড়া সালাতে সুরা ফাতিহার পর উক্ত কুরআনি দোয়া দিয়ে সালাত আদায় করা যাবে। বরঞ্চ উক্ত কুরআনি দোয়া দিয়ে সালাত আদায় করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। কারন সালাতে বান্দা সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলেন। আর পুরো সালাতই এক প্রকার দোয়া।)

পাপ বা গুণাহ সংক্রান্ত কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়

দিনে ও রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্যে দুই হাত প্রসারিত করেন

(ক) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ)....আবূ মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতে আল্লাহ তা’আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তওবা করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তওবা করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৮৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তাআলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৫, ৬৩২১, ৭৪৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৬৫৭-১৬৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২২৩, আহমাদ ৭৫৯৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ করার পর পূণ্য করার ফজিলত

উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন পাপ করার পরপরই পুণ্যকর্ম করে, সেই ব্যক্তির উপমা এমন একজনের মত যার দেহে ছিল সংকীর্ণ বর্ম; যা তার শ্বাস রোধ করে ফেলেছিল। অতঃপর সে যখন একটি পুণ্যকর্ম করে, তখন বর্মের একটি আংটা খুলে যায়। তারপর আর একটি পুণ্য করলে আরো একটি আংটা খুলে যায়। ফলে সে সংকীর্ণতার কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৮, আহমাদ ১৭৩০৭, ত্বাবারানী ১৪২০২-১৪২০৩, সহীহুল জামে’ ২১৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলমানদের ছয় ঘন্টা পর্যন্ত পাপ লেখা হয় না

উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় বামের ফিরিশতা পাপী বা অপরাধী মুসলিমের উপর থেকে ছয় ঘন্টা কলম তুলে রাখেন। অতঃপর সে যদি পাপে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তাহলে তা উপেক্ষা করেন। নচেৎ একটি পাপ লেখা হয়। (হাদিস সম্ভার ৩৭৯৯, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৬৬৭, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৭০৫১, সহীহুল জামে’ হা/ ২০৯৭, সিঃ সহীহাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ করার সংকল্প করেও যদি তা বাস্তবায়িত  না করে তবু  একটি পূর্ণ নেকি লেখা হয়

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোন নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা তার জন্য (কেবল নিয়্যাত করার বিনিময়ে) একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন। (হাদীস সম্ভার ৩৮০০, ৩৮০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৫০১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৩২, ২৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মনের খারাপ চিন্তা ভাবনাগুলো বাস্তবায়িত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন

(ক) সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ আল গুবারী (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের জন্য তাদের মনে কল্পনাগুলোকে মাফ করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১, ইসলামিক সেন্টারঃ ২৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের জন্য কথা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত তাদের মনের কল্পনাগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ)...কাতাদাহ্ (রহঃ) এর সূত্রেও হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণিত আছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২৩১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩২, ২৩৩; ইসলামিক সেন্টারঃ ২৪০-২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পাপ কাজ করলে কলবে কালো দাগ পড়ে

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে”— (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)। (সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩৩৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৩৪২, সুনান ইবনে মাজাহ ৪২৪৪, আহমাদ ৭৯৫২, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৩৯০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৬৩, শু‘আবূল ঈমান ৬৮০৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪১, হাদীস সম্ভার ৩৮০৩, আত-তা’লীকুর রাগীব  ২/২৬৮)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তিন ব্যক্তির কোনো পাপ নেই

আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির নিকট হতে (কিরামান কাতেবীনের পাপ-পুণ্য লিখার) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি হতে যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়েছে, পাগল ব্যক্তি হতে যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়েছে এবং শিশু হতে, যতদিন না সে সাবালক হয়েছে। (হাদীস সম্ভার ৩৮০৪,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪০০, আহমাদ ১/১৪০, আবূ দাঊদ ৪৪০০, হাকেম ৪/৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, তাকে পূর্বাপর সকল কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলী যুগে যা করেছি, সে সম্পর্কে কি আমাদের জাবাবদিহি করতে হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যারা ইসলাম গ্রহণের পর ভালো কাজ করেছে তাদেরকে জাহিলী যুগের কৃতকর্ম সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, তাকে পূর্বাপর সকল কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪২,সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯২১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২০, আহমাদ ৩৫৮৫, ৩৮৭৬, ৪০৭৫, ৪০৯২, ৪৩৯৪, দারেমী ১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্ষুদ্র গুনাহগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আয়েশা! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৩, আহমাদ ২৩৮৯৪, ২৪৬৫১, দারেমী ২৭২৬, সহীহাহ ৫১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হলে কিয়ামতে তার পর্বতমালা সমপরিমান  নেকি নিক্ষিপ্ত করা হবে

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি আমার উম্মাতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেনঃ তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২৪৫, রাওদুন নাদীর ১৮১, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৭৮, সহীহাহ ৫০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নিজের গোপন পাপ প্রকাশ করে বেড়ালে সেই পাপ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন না

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, আমার সকল উম্মাতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬০৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বান্দা তার গোপন পাপ প্রকাশ না করলে আল্লাহও তা গোপন রেখে কিয়ামতে মাফ করে নেকির আমলনামা দিবেন

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদেরকে নিজের কাছাকাছি করবেন এবং আল্লাহ তা’আলা নিজ বাজু তার উপরে রেখে তাকে ঢেকে নেবেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা সে বন্দাকে বলবেন, আচ্ছা বল দেখি! তুমি এ গুনাহটি করেছ কি? তুমি এ গুনাহটি সম্পর্কে অবহিত আছ কি? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার রব! আমি অবহিত আছি।

শেষ পর্যন্ত এক একটি করে তার কৃত সকল গুনাহের স্বীকৃতি আদায় করবেন। এদিকে সে বান্দা মনে মনে ধারণা করবে যে, সে এই সমস্ত অপরাধের কারণে নিঃসন্দেহে ধ্বংস হবে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, দুনিয়াতে আমি তোমার এ সকল অন্যায় ঢেকে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে তোমাকে মুক্তি দিব। অতঃপর তাকে নেকির ’আমলনামা দেয়া হবে। আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে আনা হবে এবং উচ্চৈঃস্বরে এ ঘোষণা দেয়া হবে- এরা তারা, যারা আপন প্রভুর বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করত। জেনে রাখ, এ সমস্ত যালিমদের ওপর আজ আল্লাহর লানত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৫১,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৪৪১, ৪৬৮৫, ৬০৭০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৮৩, মুসনাদে আহমাদ ৫৪৩৬, ৫৪১৩, ৫৭৯১, সহীহুল জামি ১৮৯৪, আবূ ইয়া'লা ৫৭৫১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৫৫, হিলইয়াতুল আওলিয়া ২/২১৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিয়ামতে আল্লাহ তাঁর বান্দার নিরানব্বই ভলিউমের আমলনামা খুলে প্রতিটি পাপের স্বীকারোক্তি নিয়ে অত:পর জান্নাতে দিবেন

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন এমন এক লোককে (মুক্তি দেয়া হবে এভাবে যে, তাকে) জনসম্মুখে উপস্থিত করা হবে যার ’আমলনামা খোলা হবে নিরানব্বই ভলিউমে এবং প্রতিটি ভলিউম বিস্তীর্ণ হবে দৃষ্টির সীমা অবধি। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আচ্ছা বল দেখি, তুমি এর কোন একটিকে অস্বীকার করতে পারবে? অথবা আমার লেখক মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কি তোমার প্রতি অবিচার করেছে? সে বলবে না; হে আমার প্রভু!

আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করবেন, তবে কি তোমার পক্ষ হতে কোন ওযর পেশ করার আছে? সে বলবে, না; হে আমার রব! তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হ্যাঁ, তোমার একটি পুণ্য আমার নিকট আছে। তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ, আজ তোমার প্রতি কোন যুলম বা অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরা কাগজ বের করা হবে, যাতে রয়েছে-(আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল"।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমার ’আমালের ওযন দেখার জন্য উপস্থিত হও। তখন সে বলবে, হে প্রভু! ঐ সমস্ত বিরাট বিরাট রেজিস্ট্রারের মোকাবিলায় এই এক টুকরা কাগজের মূল্যই বা কি আছে?

তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার ওপর কোন অবিচার করা হবে না। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর ঐ সকল রেজিস্ট্রারগুলো পাল্লার এক পালিতে এবং এ কাগজের টুকরাখানি আরেক পালিতে রাখা হবে। তখন দফতরগুলোর পালি হালকা হয়ে উপরে উঠে যাবে এবং কাগজের টুকরার পালি ভারী হয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকবে। মোটকথা, আল্লাহর নামের সাথে অন্য কোন জিনিস ওযন হতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৫৫৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৬৩৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩০০, সহীহুল জামি ১৭৭৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৩৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৫, শুআবূল ঈমান ২৮৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১৪৯০, আল মু'জামুল আওসাত্ব ৪৭২৫, আত-তালীকুর রাগীব ২/২৪০, ২৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তওবা ও ইস্তেগফারসমূহ

দোয়া-১:

সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার

‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’ বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’

(অর্থাৎঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১২১০, ইসলামীক সেন্টার ১২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-২:

“আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি”। (দৈনিক ১০০ বার)।

(ক) আবু বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)....আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহাবা আগার (রাযিঃ) হতে শুনেছি, তিনি ইবনু উমর (রাযিঃ) এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা্ করো। কেননা আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন একশ’ বার তওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৫২, ৬৭৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭০২, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৩:

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম,

‘রাব্বিগফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৫১৬, তিরমিযী ৩৪৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮১৪, সহীহাহ ৫৫৬, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)-তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।]

দোয়া-৪:

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ পড়বে,

“আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।”

অর্থাৎ আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি।

সে ব্যক্তির পাপরাশি মার্জনা করা হবে; যদিও সে রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে (যাওয়ার পাপ করে) থাকে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) আবূ দাউদ ১৫১৭, তিরমিযী ৩৫৭৭, রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)- তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৫: (সায়্যিদুল ইসতিগফার)

“আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা”।

অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”

হাদিসঃ-

শাদ্দাদ ইবনু আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু‘আ পড়া- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নি‘য়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর।’’

যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইসতিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩০৬, ৬৩২৩, আল-আদাবুল মুফরাদ ৬২১, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দোয়া-৬:

সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার নবী যুন-নূন ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালে যে দু'আ করেছিলেন তা হলঃ

“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন”

“তুমি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয় যালিমদের দলভুক্ত"- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু'আ করলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার দু'আ কবুল করেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৫০৫, আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১২২/৭৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩), মিশকাত তাহকীক সানী (২২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সকাল বিকেল পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। (PMMRC)

ছালাতুল হাজত

(মনের আশা বা ইচ্ছে পূরণের সালাত)

বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা (যেমন, বালা মুসিবত বা বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন, হতাশা, টেনশন, মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি থেকে মুক্তি লাভ) পূরণের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দুই রাকআত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত বলা হয়। এই সালাতের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যেকোনো সময় আদায় করা যায়।

হাদিসঃ-

উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দুআ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেনঃ তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে অযু করার পর দু রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ করতে বলেনঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ! আমার চাহিদা পূরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লাহ্! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবুল করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৮৫, সুনান আততিরমিযী ৩৫৭৮, তালীক ইবনু খুযাইসাহ ১২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন”। (সুরা আল বাক্বারাহ ২/১৫৩)।

এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দোআটি পাঠ করবেন।

“আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র”।

‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দোআটিই পড়তেন” ।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ পড়তেনঃ

‘‘আল্ল-হুম্মা রব্বানা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’।

অর্থঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর। (সূরা আল-বাকারাহ ২/২০১)।

দোআটি সিজদায় পড়লে বলবেন,  আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...।

হাদিসঃ-

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন,

‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্নার’’।

 (অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৪৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৮৯, ৪৫২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দোআ পড়া চলে না।

হাদিসঃ-

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই তোমরা রুকূ‘তে তোমাদের ‘রবের’ মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে দু‘আ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দু‘আ ক্ববূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯, সুনান আননাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩১৯, ছহীহুল জামে ৪৭০৩,  আহমাদ (৫/৩৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারার ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা”। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদিসহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়।

হাদিসঃ-

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করল, হে ইবরাহীম, তোমার সঙ্গে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা মনে করো না। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। আল্লাহর শপথ! দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ব্যতীত আর কেউ মু’মিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই বোন। এরপর ইবরাহীম (আঃ) (বাদশাহর নির্দেশে) সারাকে বাদশাহর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযূ করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ব্যতীত সকল হতে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিও না। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগলো। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দু’বার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদিয়া স্বরূপ দান কর। সারাহ (রাযি.) ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা‘আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদী হাদিয়া হিসেবে দিয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২১৭, ২৬৩৫, ২৩৫৭, ২৩৫৮, ৫০৮৪, ৬৯৫০, আধুনিক প্রকাশনী ২০৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন  ২০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সিজদায় আল্লাহর এই বিশেষ নামের মাধ্যমে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়

আলী রাঃ বলেন, বদরের যুদ্ধের দিনে আমি কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে রাসুল সাঃ কি করছেন তা দেখার জন্যে তাড়াহুড়ো করে ফিরে আসলাম। এসে দেখি তিনি সিজদারত অবস্থায় রয়েছেন এবং শুধু বলছেন, “ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুম” (হে চিরঞ্জিব, হে সর্বসত্তার ধারক) এর বেশী কিছু বলছেন না। অত:পর আমি আবার যুদ্ধের মধ্যে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ পরে আবার আসলাম। দেখি তিনি সিজদারত অবস্থায় ঐ কথাই বলছেন। এরপর আমি যুদ্ধে ফিরে গেলাম। কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে আসলাম। এসে দেখি তিনি ঐ কথাই বলছেন। এরপর আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করেন। (মুস্তাদরাক হাকিম ১/৩৪৪, মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ১০/১৪৭)।

আরো বিস্তারিতভাবে পড়তে চাইলে সম্পূর্ণ এই দোয়াটি পড়বেন,

“ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্ লী শানী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন

অর্থঃ “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না। (হাকেম ১/৫৪৫, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন। আরও দেখুন, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩)।

নির্জন বা গোপনীয় স্থানে সালাত আদায়ের গুরুত্ব

(ক) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার প্রতিপালক বিস্মিত হন পর্বত চূড়ায় সেই ছাগলের রাখালকে দেখে যে নামাযের জন্য আযান দিয়ে (সেখানেই) নামায আদায় করে; আল্লাহ আযযা অজাল্ল বলেন, তোমরা আমার এই বান্দাকে লক্ষ্য কর, (এমন জায়গাতেও) আযান দিয়ে নামায কায়েম করছে! সে আমাকে ভয় করে। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম। (সুনান আবু দাঊদ ১২০৫, সুনান আননাসাঈ ৬৬৬, সহীহ তারগীব ২৪৭, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাআতে পড়া নামায পঁচিশটি নামাযের সমতুল্য। যদি কেউ সেই নামায কোন জনশূন্য প্রান্তরে পড়ে এবং তার রুকু ও সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করে, তবে ঐ নামায পঞ্চাশটি নামাযের সমমানে পৌঁছায়। (সুনান আবু দাঊদ ৫৬০, সহীহ তারগীব ৪১৩ , হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালমান ফারেসী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন কোন বৃক্ষ-পানিহীন প্রান্তরে থাকে, অতঃপর সেখানে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন সে যেন ওযু করে। পানি না পেলে যেন তায়াম্মুম করে। অতঃপর সে যদি শুধু ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার সাথে তার সঙ্গী দুই ফিরিশতা নামায পড়েন। কিন্তু সে যদি আযান দিয়ে ও ইকামত দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে তার পশ্চাতে আল্লাহর এত ফিরিশতা নামায পড়েন, যাদের দুই প্রান্ত নজরে আসে না! (ত্বাবারানী ৫৯৯৭, আঃ রায্যাক ১৯৫৫, সহীহুত তারগীব ২৪৯, ৪১৪, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং-৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

 

লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

(MSHRC)

------------------------------

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...