Friday, July 19, 2019

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০২)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর

(পর্ব-০২)

সম্পাদকীয়ঃ

আল্লাহ বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করো সুন্দর পন্থায়। (নহল ১৬/১২৫)।

আল্লাহ বলেন, “হে ইমানদারগন, আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ তেমনই ভাবে ভয় করতে থাকো, এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না। সুরা আলে ইমরানঃ ১০২।

আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম। সুরা আলে ইমরানঃ ১০৪।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, “অন্যায় কিছু দেখলে (ক্ষমতা থাকলে) তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। নইলে যবান দিয়ে। নইলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।

প্রশ্নোত্তর 

(২ নং পর্বে মোট ১৬১টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে)

প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রচলিত বড় বড় বিদ’আতগুলো কি কি? এই বিদআতগুলো সবচেয়ে বেশী কোথায় পালন করতে দেখা যায়?
উত্তর: ১। ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা বিদআত।

২। সকল প্রকার মিলাদ-কিয়াম করা বিদআত।

৩। শব-ই বরাত পালন করা বিদআত।

৪। শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম বা এ উপলক্ষে কোন ইবাদাত করা বিদআত।

৫। কুর’আন খানি করা বিদআত।

৬। মৃত ব্যক্তির জন্য- কুর’আন পড়া, কুলখানি করা, চল্লিশা করা, দু’আর আয়োজন করা, সওয়াব বখশে দেয়া কিংবা মৃত ব্যক্তির সামনে সুরা ইয়াছিন পাঠ করা বিদআত।
৭। জোরে জোরে চিল্লিয়ে জিকির করা বিদআত এবং চিল্লিয়ে জিকির করা কোরআন বিরোধী কর্মকান্ড।
৮। হাল্কায়ে জিকির, ইসকের জিকির, লাফালাফি জিকির, নাচানাচি জিকির, শুধু ইল্লাল্লাহ জিকির করা বিদআত।

৯। পির-মুরীদি মানা বিদআত।

১০। মুখে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পড়া বিদআত।

১১। ঢিলা কুলুখ নিতে গিয়ে ৪০ কদম হাঁটা, কাঁশি দেয়া উঠা বসা করা,লজ্জাস্থানে হাত দিয়ে হাটাহাটি ইত্যাদি করা বিদআত।

১২।কুরআন ও সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে ফাজায়েলে জিকির, ফাজায়েলে আমল, ফাজায়েলে সাদাকাত, ফাজায়েলে হজ্জ, নিয়ামুল কোরআন, বেহেস্তি জেওর, মোকসেদুল মোমেনীন, মোকসেদুল মোহসেনীন, ইত্যাদি শির্ক- বিদআত ও কুফুরী মিশ্রিত কিতাব পাঠ করা ও আমল করা।

১৩। জায়নামাজের দুআ পড়া বিদআত।

১৪। প্রত্যেক ফরজ সালাতে জামায়াতের পর ইমামের নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদআত।

১৫। কবরে হাত তুলে সবাই একত্রে দূ’আ করা বিদআত।

১৬। খতমে ইউনুস, তাহলীল, খতমে কালিমা, বানানো দরুদ পড়া, এবং যত প্রকার তাজবীহ খতম আছে  সবই বিদআত, তাজবীহ দানা গননা করাও বিদআত।

১৭।  ১৩০ ফরজ মানা বিদআত।

১৮। ইলমে তাসাউফ বা সুফীবাদ মানা বিদআত।

১৯। জন্মদিন, মৃত্যু দিবস,মা, বাবা দিবস বিবাহ বার্ষিকী, ভ্যালেন্টাইনস ডে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস পালন করা বিদআত।

২০। অপরের কাছে তাওবা পড়া বিদআত।

২১। অজুতে ঘাড় মাসেহ করা বিদআত।

২২।আল্লাহকে “খোদা” বলা বিদআত (কেননা খোদা বলা শিরক) ।

২৩। বাতেনী এলেম বা তাওয়াজ্জুহ মানা বিদআত।

২৪। বার্ষিক মাহফিলের আয়োজন করে রাতভর ওয়াজ করা ও সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদআত।
২৫।
অন্ধভাবে মাজহাব মানা বিদআত।

২৬। ওরস পালন করা,কবর পাকা, কবর সাজানো, লাইটিং করা বিদআত।

২৭। এমন দু’য়া বা দুরুদ পড়া যা হাদিসে নাই যেমনঃ দুরুদে হাজারী, দুরুদে লক্ষী, দুরুদে তাজ, ওজীফা, দুরুদে জালালী ইত্যাদি পাঠ করা বিদআত।

২৮। মালাকুল মাউতকে আজরাঈল বলে ডাকা বিদআত।

২৯। মিথ্যা বানোয়াট হাসির গল্প বলে মানুষকে হাসানো বিদআত।

৩০। “আস্তাগ ফিরুল্লাহ [রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি ওয়া ] আতুবু ইলাইক লাহাওলা ওয়ালা কুয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহি ‘আলিইল ‘আজিম” (এখানে রব্বি মিন কুল্লি জাম্বি অংশটুকু বিদআ’ত )।

৩১। ৭০ হাজার বার কালিমা খতম করা বিতআদ।

৩২। ইসলামের নামে দলাদলি করা বিদআত।

৩৩। দলের আমীরের হাতে বায়াত করা বিদআত।

৩৪। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত রাজনীতি করা বিদআত।

৩৫।দ্বীনের হেফাজতের নামে হরতাল, অবরোধ, মারামারি করা বিদআত। অনেক ক্ষেত্রে হারামও ।
৩৬। আল্লাহ হাফিজ বা ফি আমানিল্লাহ বলা বিদআত।

৩৭। জানাজা দেয়ার সময় কালিমা শাহাদাত পাঠ করা বিদআত।

৩৮। মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের কাফফারা দেয়া বা আদায় করা বিদআত।

৩৯। কুর’আনকে সবসময় চুমু খাওয়া ৪০. কুর’আন নীচে পড়ে গেলে লবণ কাফফারা দেয়া, সালাম করা, কপালে লাগানো ইত্যাদি বিদআত।

৪১। দুই হাতে মোসাফা করা, মোসাফা শেষে বুকে লাগানো বিদআত।

৪২। কারোর গায়ে পা লাগলে গাঁ ছুঁয়ে সালাম করা বিদআত।

৪৩। ইছালেহ সোয়াব নামে ওয়াজ ও দোয়া করা বিদআত ।

৪৪। টুপি ছাড়া নামাজ পড়লে সোয়াব কম হয়, পাগড়ি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়লে বেশী সোয়াব/ নেকি হয় এইসব বিদআত।

৪৫। কোরআন, সহীহ্ হাদীসের বাহিরে যত দোয়া, দুরুদ, জিকির, কালেমা আছে সবই বিদআত।

৪৬। বিশেষ সওয়াবের আশায় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় সম্মিলিত মোনাজাতে অংশ নেয়া বিদআত।

উল্লেখিত বিদআতগুলো আমাদের দেশের কথিত পির, আউলিয়াদের দরবারে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, কথিত পির-আউলিয়াগণ তাদের সংসার পরিচালনার জন্য ইনকামের উৎস হিসেবে উক্ত বিদআতগুলো পালন করে থাকে। তাদের দলিল হচ্ছে, মিথ্যে, জাল বা জইফ হাদিস, কাশফ, স্বপ্ন, এলহাম ও পূর্ববর্তী মুরুব্বীদের মুখের কথা। আর এসব দলিল দিয়েই তারা মুরিদদের মগজ ধোলাই করে থাকে।

এপ্রিল/২০১৯

প্রশ্ন (১/২৪১) : এক ব্যক্তির লাশ দাফনের জন্য খাটিয়ায় করে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়ার পথে তুলনামূলক অধিক ভারী মনে হচ্ছিল। এর পিছনে বিশেষ কোন কারণ আছে কি? এমনকি হ’তে পারে যে তার আমলনামা সমৃদ্ধ হওয়ায় এমন ভারত্ব অনুভূত হয়েছে?

উত্তর : এ ব্যাপারে কুরআন বা হাদীছে কোন নির্দেশনা নেই। কারো লাশ ভারী মনে হওয়া মাইয়েতের দেহের ওযনের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া প্রাণহীন বস্ত্তর ওযন বেশী মনে হয়। অথবা এটি হ’তে পারে বহনকারীদের ধারণামাত্র।

প্রশ্ন (২/২৪২) : আমি একটি মেয়ের দ্বীনদারী দেখে দু’বছর পরে তাকে বিবাহের ব্যাপারে তার পিতার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হই। তার সাথে ফোনে নিয়মিত কথা হ’ত। এখন মেয়েটির মধ্যে পূর্বের ন্যায় দ্বীনদারী দেখতে পাচ্ছি না এবং আমার পরিবারও তাকে পসন্দ করছে না। তাছাড়া তাকে বিবাহ করলে আমার সকল আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেজন্য আমি এখন উক্ত মেয়েকে বিবাহে রাযী নই। এক্ষণে আমার জন্য করণীয় কি?

উত্তর : অঙ্গীকার রক্ষা করা মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা ১৭/৩৪)। এক্ষণে প্রশ্নমতে যদি মেয়েটির মধ্যে যথার্থই দ্বীনদারী না থাকে, তাহ’লে উক্ত অঙ্গীকার রক্ষা করা যরূরী নয় এবং এতে পাপ হবে না ইনশাআল্লাহ (তওবা ৭; আনফাল ৫৮)। তবে যদি আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করে থাকে, তাহ’লে কসমের কাফফারা দিবে। আর কসমের কাফফারা হ’ল ১০ জন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাদ্য বা পোষাক প্রদান করা অথবা একটি গোলাম আযাদ করা। অথবা তিনটি ছিয়াম পালন করা’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)

প্রশ্ন (৩/২৪৩) : আমার দাদা এক বিহারীর নিকট জমি বিক্রয় করে। কিন্তু যুদ্ধের সময় বিহারী সপরিবারে মারা যায়। ১৯৭১ সালে রেকর্ডমূলে তা আমার দাদার নামে রেকর্ড হয়। এক্ষণে উক্ত জমির মালিক বিহারী হ’লে আমাদের করণীয় কী? আর দান করতে হ’লে বিহারীর নামে আমার দরিদ্র ছেলেকে দান করা যাবে কি?

উত্তর : উক্ত বিহারীর উত্তরাধিকারী খুঁজে পাওয়া গেলে তাদের নিকট জমি হস্তান্তর করতে হবে। আর কোনভাবে খোঁজ পাওয়া না গেলে বিহারীর নামে নিজের অভাবগ্রস্ত সন্তানকে দান করতে পারে। এতে বিহারী ছওয়াব পাবেন এবং দানকারীও ছওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ (মুসলিম হা/১০০৪; নববী, শরহ মুসলিম ১১/৮৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৪/৩১৩)

প্রশ্ন (৪/২৪৪) : চলমান জামে মসজিদের নামে গ্রামের অপর প্রান্তে ওয়াকফকৃত জমিতে মুছল্লীদের ছালাতের সুবিধার্থে ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি? উল্লেখ্য যে, জামে মসজিদটি অনেক দূরে হওয়ার কারণে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা অনেক মুছল্লীর জন্য কষ্টদায়ক হয়।

উত্তর : মুছল্লীদের সম্মতিক্রমে এরূপ সঙ্গত কারণে ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণে কোন বাধা নেই এবং এক মসজিদের অতিরিক্ত অর্থ অন্য মসজিদের জন্য ব্যবহারেও কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৬/৩১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ল ফাতাওয়া ৩১/১৮,২০৬-২০৭)। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহল্লায় মহল্লায় (ওয়াক্তিয়া) মসজিদ নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় করতে আদেশ করেছেন’ (আবুদাঊদ হা/৪৫৫; মিশকাত হা/৭১৭; ছহীহাহ হা/২৭২৪)

প্রশ্ন (৫/২৪৫) : কোন বিষয়ের সমাধানকল্পে গুরুত্ব বুঝানোর জন্য মসজিদের ভিতর কসম করা যাবে কি? 

উত্তর : মসজিদে বসে কসম করা যাবে। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, মসজিদে আল্লাহর নামে কসম করতে পারে (আল-মুদউওয়ানাহ ৪/৫)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনিও গুরুত্বের জন্য মসজিদে কসম করার পক্ষে মত দেন’ (কিতাবুল উম্ম ৭/৩৬)

প্রশ্ন (৬/২৪৬) : শিশুকে কোলে নেওয়ার সময় প্রতিবার সালাম প্রদান করতে হবে মর্মে কোন বিধান আছে কি? কেউ কেউ মনে করেন সালাম দিয়ে শিশুকে কোলে না নিলে বদ নযর লাগে। এরূপ ধারণা কি সঠিক? 

উত্তর : কারো সন্তানকে কোলে নেওয়ার জন্য প্রতিবার সালাম  দিতে হবে মর্মে শরী‘আতে কোন বিধান নেই। তাছাড়া সালাম দিয়ে কোলে না নিলে বদনযর লাগার বিষয়টিও ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার মাত্র।

প্রশ্ন (৭/২৪৭) : জমির বর্গাচাষীর ফসল নষ্ট হ’লে কি উভয়ে ক্ষতির অংশীদার হবে?

উত্তর : এমতাবস্থায় দেখতে হবে যে, বর্গা কি শর্তে দেয়া হয়েছে। যদি মুযারাবা (একজনের অর্থ, অপরজনের শ্রম) পদ্ধতিতে হয়, তবে কেবল বিনিয়োগকারী বা জমির মালিক ক্ষতির অংশীদার হবে। আর মুশারাকা (উভয়ের অর্থ ও পরিশ্রম) পদ্ধতিতে হ’লে বিনিয়োগকারী ও চাষী উভয়ই লোকসান বহন করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৮/৬৪)

প্রশ্ন (৮/২৪৮) : জনৈক বক্তা বলেন, কোন ব্যক্তি যদি গোনাহ করে, তাহ’লে গোনাহ লেখক ফেরেশতা ছয় ঘন্টা অপেক্ষা করে। এর মধ্যে যদি সে তওবা করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহ’লে উক্ত গোনাহ লেখা হয় না। আর তওবা না করলে একটি গোনাহ লেখা হয়। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই। 

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘হাসান’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৭৬৫; ছহীহাহ হা/১২০৯)। তবে অন্য একটি হাদীছে সাত ঘন্টার কথা রয়েছে যা ‘মউযূ’ বা জাল (যঈফাহ হা/২২৩৭)। এতদ্ব্যতীত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, ‘আমার বান্দা কোন পাপ কর্মের কথা ভাবলেই তা লিখবে না, যতক্ষণ না সেটি করে। যদি করে তবে একটি পাপ লিখবে। আর যদি আমার কারণে পরিত্যাগ করে, তার জন্য একটি নেকী লেখ। আর যখন সে কোন সৎকর্মের সংকল্প করে, কিন্তু সেটি না করে, তাহ’লে তার জন্য একটি নেকী লিখবে। আর তা করলে দশ থেকে সাতশ’ বা বহুগুণ বেশী নেকী লিখবে’ (বুখারী হা/৭৫০১, ৬৪৯১; মুসলিম হা/১২৯; মিশকাত হা/২৩৭৪)

প্রশ্ন (৯/২৪৯) : হজ্জের সফরে আরাফার দিনে গোসল করা কি সুন্নাত?

উত্তর : আরাফার দিনে গোসল করা ‘মুস্তাহাব’। গোসল করলে ছওয়াব পাবে। আর না করলে ছওয়াব পাবে না। আলী (রাঃ)-কে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, চাইলে প্রতিদিন গোসল কর। তাকে বলা হ’ল, এই গোসল নয়। তখন তিনি বললেন, তাহ’লে জুম‘আর দিন, আরাফার দিন ও দুই ঈদের দিন গোসল করবে’ (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৫৯১৯; সিলসিলাতুল আছা-রিছ ছহীহাহ হা/৩৫৩)। অবশ্য ছাহাবীগণের আমল থাকায় অধিকাংশ ফক্বীহ আরাফার দিন গোসল করাকে ‘সুন্নাত’ বলেছেন (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৪৫/৩২৩)

প্রশ্ন (১০/২৫০) : ফুক্বাহায়ে সাব‘আ বলতে কাদেরকে বুঝায়? তাঁদের পরিচয় জানতে চাই। 

উত্তর : ফুক্বাহায়ে সাব‘আ বলতে মদীনার প্রসিদ্ধ সাতজন ফক্বীহকে বুঝায়। তারা হ’লেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব, উরওয়া ইবনুয যুবায়ের, ক্বাসেম বিন মুহাম্মাদ বিন আবুবকর, ওবায়দুল্লাহ বিন ওতবা বিন মাসঊদ, খারেজাহ বিন যায়েদ বিন ছাবেত, সুলায়মান বিন ইয়াসার ও আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ অথবা সালেম বিন আব্দুল্লাহ বিন ওমর অথবা আবুবকর বিন আব্দুর রহমান বিন হারেছ মাখযূমী। এঁদের ব্যাপারে ইবনুছ ছালাহ, ইবনুল মুবারক, আবুয যিনাদ সহ অধিকাংশ মুহাদ্দিছ ও ঐতিহাসিক ঐক্যমত পোষণ করেছেন (মুক্বাদ্দামা ইবনুছ ছালাহ ৩০৪-৩০৫ পৃঃ; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১/৩৬৪; সুয়ূতী, তাদরীবুর রাভী ২/৬৯৯)

প্রশ্ন (১১/২৫১) : বাক প্রতিবন্ধীর উপর কি হজ্জ ফরয? যদি ফরয হয় তাহ’লে কিভাবে সে তালবিয়াহ পাঠ করবে? 

উত্তর :  সামর্থ্যবান হ’লে বাক প্রতিবন্ধীর উপরও হজ্জ ফরয (ইমরান ৩/৯৭)। সে সাধ্য অনুযায়ী হজ্জের কার্যসমূহ পালন করবে। যেগুলি পালন করতে পারবে না সেগুলি অন্যের সহায়তা নিয়ে পালন করবে। সম্ভব না হ’লে ছেড়ে দিবে। ‘তালবিয়া’ সে ইশারায় পাঠ করবে অথবা তার পক্ষে অন্য কেউ পাঠ করবে। ছাহাবীগণ শিশুদের পক্ষ থেকে তালবিয়া পাঠ করতেন (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ঊমদাহ ৪/৪৩১)

প্রশ্ন (১২/২৫২) : আমি মানত করেছিলাম এক মাসের মধ্যে সুস্থ হ’লে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম পালন করব, এক মাসের মধ্যে কুরআন খতম করব, ইয়াতীমখানায় একটি ছাগল দান করব ও সেখানে যা দান করতাম তার দ্বিগুণ দান করব। এক্ষণে ছিয়াম পালন ও ছাগল দান করতে পারলেও কুরআন খতম করতে পারিনি এবং দ্বিগুণ দান করার মত সামর্থ্যও নেই। এক্ষণে আমার জন্য করণীয় কি?

উত্তর : কুরআনের বাকী অংশটুকু তেলাওয়াত করে কুরআন খতম করবে। কারণ আল্লাহর আনুগত্যের কাজে ওযরবশত দেরী হ’লে দোষ নেই’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৩/৩৪১; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩)। আর দানের ক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতি গ্রহণীয়। (১) যখন সক্ষম হবে তখন এক সাথে বকেয়াসহ দান করবে। (২) মানত ভঙ্গ করে কাফফারা দিবে। আর মানতের কাফফারা কসমের কাফফারার ন্যায়। কসমের কাফফারা হ’ল ১০ জন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাদ্য বা পোষাক প্রদান করা অথবা একটি গোলাম আযাদ করা। অথবা তিনটি ছিয়াম পালন করা’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)

প্রশ্ন (১৩/২৫৩) : মসজিদের ইমাম চলে গেলে বা ছুটিতে থাকলে স্থানীয় শারঈ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি (যিনি ইতিপূর্বে উক্ত মসজিদে ৩০ বছর ইমাম ছিলেন) সঠিক সময়ে আযান দেন ও ইমামতি করেন। কিন্তু দ্বন্দ্ব ও হিংসার কারণে কিছু লোক আউয়াল ওয়াক্তে তার ইমামতিতে মূল জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। তারা দ্বিতীয় জামা‘আত করে বা একা একা ছালাত আদায় করে। এক্ষণে তাদের ছালাতের অবস্থা কী হবে?

উত্তর : হিংসা-বিদ্বেষের কারণে ছালাতের জামা‘আত ত্যাগ করা নিষিদ্ধ। প্রত্যেক মুছল্লীর জন্য কর্তব্য হ’ল জামা‘আতে অংশগ্রহণ করা। এমনকি পূর্বে ছালাত আদায় করে থাকলেও জামা‘আত হ’তে দেখলে পুনরায় তাতে অংশগ্রহণ করবে। তার শেষের ছালাত নফল হয়ে যাবে (মুসলিম হা/৬৪৮; মিশকাত হা/৬০০)। তাছাড়া হিংসা-বিদ্বেষের ফলে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে, যা জামা‘আতবদ্ধ জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আর এটি করা হারাম (মুসলিম হা/১৮৪৮-৫২; মিশকাত হা/৩৬৭৭)। প্রশ্নমতে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম জামা‘আত ত্যাগ করে ছালাত আদায় করবে, তাদের ছালাত হয়ে যাবে। কিন্তু জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে গোনাহগার হবে।

প্রশ্ন (১৪/২৫৪) : পাপের কারণে কেউ কি তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হবে?

উত্তর : ‘পাপের কারণে বান্দা তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফুত তারগীব হা/১৭৭৩; যঈফুল জামে‘ হা/৩০০৬)। তবে পাপের কারণে রিযিকে বরকত কমে যেতে পারে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮; মিরক্বাত)। উল্লেখ্য যে, পাপ মানুষকে রিযিক থেকে বঞ্চিত করে না। কারণ মানুষের চার মাস বয়সে তার নির্দিষ্ট রিযিক লিখে দেওয়া হয় (বুখারী হা/৬৫৯৪; মুসলিম হা/২৬৪৫; মিশকাত হা/৮২)। তাছাড়া নির্দিষ্ট রিযিক পূর্ণ না হ’লে মানুষের মৃত্যু হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি মানুষ তার রিযিক থেকে পালায়, যেভাবে মৃত্যু থেকে পালাতে চায়, তাহ’লে রিযিক অবশ্যই তাকে পাবে যেমনভাবে মৃত্যু তাকে পেয়ে যায় (ছহীহাহ হা/৯৫২)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোন প্রাণী মরবে না যতক্ষণ না সে তার রূযী পূর্ণ করবে। অতএব সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সম্পদ উপার্জনে উত্তম (অর্থাৎ বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। প্রাপ্য রিযিক পৌঁছতে দেরী হওয়া যেন তোমাদেরকে তা অন্বেষণে অন্যায় পথ অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ব্যতীত লাভ করা যায় না’ (বায়হাক্বী শো‘আবুল ঈমান হা/১০৩৭৬; মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহাহ হা/২৮৬৬)

প্রশ্ন (১৫/২৫৫) : আমাদের এলাকায় বিবাহে মোহরানা বাবদ দুই লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি মেয়ের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত এক লাখ টাকা দিতে হয়। এই অতিরিক্ত এক লাখের ব্যাপারে করণীয় কি? 

উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে কনের নিরাপত্তা বাবদ টাকা দেওয়ার কোন বিধান নেই। এটি কনে পক্ষ থেকে বর পক্ষের উপর চাপিয়ে দেয়া যুলুম, যা অবশ্যই বাতিল যোগ্য। ইসলামে নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্যই মোহরানা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পরিশোধ করা ছেলের জন্য অপরিহার্য। সেই মোহরানার অর্থও স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীকে দিয়ে দিতে পারে (নিসা ৪/৪)। অতএব কনের নিরাপত্তার নামে অতিরিক্ত অর্থ নির্ধারণ করা শরী‘আত বিরোধী কাজ। অনুরূপভাবে এ সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর অভিভাবকের নিকট থেকে যৌতুক বা কোন অর্থ দাবী করা এবং কামনা করাও নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন (১৬/২৫৬) : হাসপাতালের কর্মচারী ও আগন্তুকদের জন্য নির্ধারিত ছালাতের জায়গায় জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে কি? উল্লেখ্য যে, জায়গাটি হাসপাতালের ভাড়া করা জায়গা। স্থানীয় এক আলেম হাসপাতালের রোগীদের সেবায় সমস্যা হবে এই অজুহাতে গত কয়েকমাস যাবৎ জুম‘আর ছালাত আদায় করে যাচ্ছেন। 

উত্তর : উক্ত স্থানে জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে। ওমর (রাঃ) বাহরাইনবাসীদের উদ্দেশ্যে লিখিত পত্রে বলেন, তোমরা যেখানে অবস্থান করবে সেখানেই জুম‘আ আদায় করবে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫১০৮; ইরওয়া ৩/৬৬, সনদ ছহীহ)। জমহূর বিদ্বানগণের মতে জুম‘আর ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট মসজিদ হওয়া শর্ত নয় (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/৩৭৮; ইবনু নুজাইম, আল-বাহরুর রায়েক্ব ২/১৬২)। তবে নিকটে কোন প্রতিষ্ঠিত মসজিদ থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করাই উত্তম’ (আল-ইনছাফ ২/৩৭৮; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন ‘আলাদ দারব)। অতএব উক্ত স্থানে ছালাত আদায়ে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন (১৭/২৫৭) : রোগ আরোগ্য এবং পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার উদ্দেশ্যে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি? 

উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত আমলে ছালেহ-এর অন্তর্ভুক্ত। আর নেক আমলকে অসীলা করে আল্লাহর নিকট দো‘আ করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে, সে যেন এর বিনিময়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে। কেননা শীঘ্র এমন লোকদের আগমন ঘটবে যারা কুরআন পাঠ করবে। অতঃপর তার বিনিময়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে’ (তিরমিযী হা/২৯১৭; মিশকাত হা/২২১৬; ছহীহাহ হা/২৫৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আমরা কুরআন নাযিল করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত’ (ইসরা ১৭/৮২)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি বলে দাও যে, এটি বিশ্বাসীদের জন্য পথনির্দেশ ও ব্যাধির আরোগ্য’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৪৪; বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন ‘আলাদ দারব-৩/৩০৮)। তবে এর ছওয়াব অন্যকে বখশে দেওয়া যাবে না।

প্রশ্ন (১৮/২৫৮) : আমি যে এলাকায় ব্যবসা করি, সেখানকার মানুষ কুকুর ও শূকর কেটে খায়। এমনকি আমি যে বাসায় থাকি তারাও খায়। তারা যে টিউবওয়েল-বাথরুম ব্যবহার করে আমিও সেগুলি ব্যবহার করি। এমনকি যখন ব্যবসা করি তখন তারা রক্ত মাখা হাতেই টাকা বের করে দেয়। এখন আমার প্রশ্ন, এরূপ পরিবেশে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি? 

উত্তর : রুচি না হ’লে এরূপ পরিবেশে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়াই উত্তম। তবে অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা জায়েয। যদিও তারা হারাম বস্ত্ত খায়। রাসূল (ছাঃ) তাদের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন’ (বুখারী হা/২০৯৬,২১৬৫, ২৬১৭; মুসলিম হা/১৫৫১, ২১৯০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/৪৩১-৩২)। অনুরূপভাবে তাদের বসতবাড়ীতে বসবাস করায় কোন দোষ নেই। তবে তাদের ধর্মীয় কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২১)

প্রশ্ন (১৯/২৫৯) : ছালাতের পর তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করার নিয়ম কি? রাতে ও দিনে পাঠের মধ্যে কোন তারতম্য আছে কি?

উত্তর : এক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে যেগুলো ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। উক্ত হাদীছগুলোতে দিন-রাতের কোন পার্থক্য করা হয়নি।
১. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার ও লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর ১ বার মিলে ১০০ বার (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭)। তবে তিনটিই ৩৩ বার করে মোট ৯৯ বারও পাঠ করা যায়’ (বুখারী হা/৮৪৩; মুসলিম হা/৫৯৫)
২. উপরোক্ত নিয়মের সাথে আল্লাহু আকবার ৩৪ বার বলে ১০০ পূর্ণ করবে (মুসলিম হা/৫৯৬; মিশকাত হা/৯৬৬; ছহীহাহ হা/১০২; ছহীহুত তারগীব হা/১৫৯৩)।
৩. সুবহানাল্লাহ ২৫ বার, আলহামদুলিল্লাহ ২৫ বার, আল্লাহু আকবার ২৫ বার ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ২৫ বার মিলে ১০০ বার (আহমাদ হা/২১৬৪০; নাসাঈ হা/১৩৫০; মিশকাত হা/৯৭৩; ছহীহাহ হা/১০১)।
৪. সুবহানাল্লাহ ১০ বার, আলহামদুলিল্লাহ ১০ বার, আল্লাহু আকবার ১০ বার মিলে ৩০ বার হ’লেও মীযানে তা অনেক ভারী’ (বুখারী হা/৬৩২৯; মিশকাত হা/৯৬৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি দু’টি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই দু’টি অভ্যাস আয়ত্ত করাও সহজ, কিন্তু এ দু’টি অনুশীলনকারীর সংখ্যা কম। প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবার এবং দশবার আলহামদুলিল্লাহ বলা। তা মুখে পড়লে হয় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) একশত পঞ্চাশ এবং মীযানে হয় এক হাযার পাঁচশত’ (আবুদাউদ হা/৫০৬৫; তিরমিযী হা/৩৪১০; মিশকাত হা/২৩০৬; ছহীহুত তারগীব হা/৬০৬, ১৫৯৪)। অতএব উপরোক্ত চারটি পদ্ধতির যেকোন একটির উপর আমল করা যাবে।

প্রশ্ন (২০/২৬০) : আমি মোরগ বিক্রি করি। বিক্রি করতে গিয়ে যদি আমি জানতে পারি আমার কাছ থেকে ক্রয়কৃত মোরগ মাযারে যবেহ করা হবে। ঐ ব্যক্তির কাছে কি আমার মোরগ বিক্রি করা বৈধ হবে?

উত্তর : জেনে-শুনে শিরকী কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। অতএব যদি জানা যায় যে, উক্ত মোরগটি মাযারে যবেহ করা হবে তাহ’লে তার নিকট বিক্রয় করা যাবে না’ (ফাতাওয়া ছালেহ ফাওযান ২/৭২০-২১)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাপ ও অন্যায়ের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। তবে সাধারণভাবে কোন অমুসলিম বা মাযারপন্থীর নিকট পণ্য বিক্রয় করায় বাধা নেই।

প্রশ্ন (২১/২৬১) : কিশোর বয়সে স্বপ্নদোষ ও উত্তেজনায় বীর্যপাত হ’লে যে গোসল ফরয হয় তা আমি জানতাম না। একারণে আমি অনেক সময় ফরয ছালাত ফরয গোসল না করেই শুধু নাপাকি ধুয়ে বা কাপড় পাল্টিয়েই আদায় করেছি। ঊক্ত ছালাতগুলো কি কবুল হবে, নাকি তা আবার আদায় করতে হবে?

উত্তর : উক্ত ছালাতগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে না। তবে অজ্ঞতাজনিত ভুলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এবং ভবিষ্যতে পবিত্রতার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৯৩; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১০১-০২, ২৩/৩৭-৩৮)
প্রশ্ন (২২/২৬২) : আমি জানি একজন ব্যক্তি সকল ধরনের শিরক-বিদ‘আতের সাথে জড়িত এবং ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু। তাকে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো যাবে কি? আর যদি রক্ত দেয়ার পরে আবার শিরক করে এতে কি আমার পাপ হবে?
উত্তর : এই ধরনের লোকদের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানো যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’ (মুমতাহিনাহ ৬০/৮)। অতএব আদম সন্তান হিসাবে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করাতে কোন বাধা নেই। শিরক-বিদ‘আতে জড়িত হ’লে সে নিজেই তার পাপ ভার বহন করবে, রক্তদাতা নয়। কেননা ‘একের পাপের বোঝা অন্যে বহন করবে না’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৫)। তবে সরাসরি শিরক-বিদ‘আতের কাজে তাকে সহায়তা করা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)

প্রশ্ন (২৩/২৬৩) : একটি খাস জমি নিয়ে একই সমাজভুক্ত মসজিদের মুছল্লীদের সবার সিদ্ধান্ত ছিল তা মসজিদের নামে হোক। কিন্তু সমাজের দু’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি গোপনে জমিটি নিজেদের নামে করে নেয়। পরবর্তীতে সবাই বিষয়টি জেনে যায়। একে কেন্দ্র করে মুছল্লীদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয় এবং সমাজের একদল মুছল্লী নতুন একটা মসজিদ নির্মাণ করে আলাদা হয়ে যায়। আর এগুলো প্রায় ৩৬ বছর আগে ঘটেছে। এখন প্রশ্ন হ’ল, আলাদা এই নতুন মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে কি?

উত্তর : পারস্পরিক বিবাদকে কেন্দ্র করে পৃথক মসজিদ নির্মাণ এবং সমাজে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য সৃষ্টি করা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ (তওবা ৯/১০৭)। অতএব বিবাদ মীমাংসা করে পূর্বাবস্থায় ফিরে এসে বড় জামা‘আত করার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে ধারণ কর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)। তাছাড়া জামা‘আতে লোকসংখ্যা যত বেশী হবে তার ছওয়াব ও ফযীলত তত বেশী হবে (আবুদাঊদ হা/৫৫৪; নাসাঈ হা/৮৪৩; মিশকাত হা/১০৬৬)। জানা আবশ্যক যে, বনু ‘আমর বিন ‘আওফ গোত্রে মসজিদে ক্বোবা নির্মিত হ’লে তার প্রতি হিংসাবশে তার ভাই বনু গুনুম বিন ‘আওফ গোত্রের লোকেরা যে মসজিদ নির্মাণ করে, তা ইতিহাসে মসজিদে যেরার নামে খ্যাত। যা আল্লাহর হুকুমে রাসূল (ছাঃ) পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেন (কুরতুবী হা/৩৪৮৫; দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ৩য় মুদ্রণ ৫৮৩-৮৪ পৃ.)। যার ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়েছে।  
তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করলে কারাহিয়াতের সাথে জায়েয হবে (মুছত্বফা দিমাশক্বী, মাতালিবু উলিন নুহা ১/৩৭২)

প্রশ্ন (২৪/২৬৪) : বিবাহের সময় বরকে কবুল না বলে আলহামদুলিল্লাহ বলতে বলা হয়। বরও মুখে কবুল না বলে কবুলের নিয়তে মুখে শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলে। অভিভাবক ও সাক্ষীরা বরের সম্মতি ধরতে পেরেছে। এক্ষণে বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে কি? নাকি পুনরায় বিবাহের প্রয়োজন আছে?

উত্তর : উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে। কারণ কবুলের ইঙ্গিতবহ যেকোন শব্দ দ্বারা সম্মতি জানালেই বিবাহ সংঘটিত হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/৮২-৮৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৩৮)

প্রশ্ন (২৫/২৬৫) : যে সকল মসজিদের সামনে, ডানে, বামে, পিছনে বিশাল আকারের সবুজ গম্বুজ বিশিষ্ট বিল্ডিং-এর ছবি সম্বলিত টাইলস লাগানো আছে এমনকি মসজিদের ভিতরে সামনের দেওয়ালে পুরো দেওয়াল জুড়ে সবুজ গম্বুজ ওয়ালা বিল্ডিং-এর ছবি রয়েছে, এসকল মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? উল্লেখ্য যে, আশে-পাশে কোন আহলেহাদীছ মসজিদ নেই।

উত্তর : উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৬৯১)। তবে সর্বাবস্থায় মসজিদকে ছবি ও মনোযোগ বিঘ্নকারী সকল প্রকার বস্ত্ত মুক্ত রাখা আবশ্যক। কারণ এতে মুছল্লীর মনোযোগ বিনষ্ট হ’তে পারে, যা ছালাতের শিষ্টাচার বিরোধী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই ছালাতের মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে’ (বুখারী হা/১১৯৯; মুসলিম হা/৫৩৮; মিশকাত হা/৯৭৯)

প্রশ্ন (২৬/২৬৬) : আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। যার অধিকাংশ শিক্ষার্থী মুশরিক। আমাকে যেখানে থাকতে হয় তারা সবাই অমুসলিম। আমি তাদের সাথে হারাম কিছু ভক্ষণ না করলেও আমার অধিকাংশ সময় তাদের সাথে কাটাতে হয়। এক্ষণে আমার জন্য করণীয় কী?

উত্তর : প্রথমত অবস্থানের ক্ষেত্রে তাদের থেকে সাধ্যমত দূরে থাকার চেষ্টা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে যে সকল মুসলমান বসবাস করে আমি তাদের দায়িত্ব হ’তে মুক্ত...’(আবুদাউদ হা/২৬৪৫; মিশকাত হা/৩৫৪৭; ছহীহাহ হা/৬৩৬)। তিনি বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস কর না, তাদের সংসর্গেও যেয়ো না। যে মানুষ তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে সে তাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হবে’ (তিরমিযী হা/১৬০৫; ছহীহাহ হা/২৩৩০)। তবে তাদের সাথে যদি বসবাস করতে বাধ্য হ’তে হয় তাহ’লে অবশ্যই নিজ ধর্মের বিধি-বিধান মেনে চলবে এবং সুযোগমত তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে’ (নাহল ১৬/১২৫)। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’(মুমতাহিনাহ ৬০/৮)

প্রশ্ন (২৭/২৬৭) : হাদীছে ছালাতুয যুহার দুই রাক‘আত ছালাতকে ছাদাক্বা বলা হয়েছে। তাহ’লে উক্ত দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে কারো নামে ছাদাক্বা করা যাবে কি? 

উত্তর : আর্থিক ছাদাক্বা ব্যতীত কোন ইবাদত কারো নামে ছাদাক্বা করা যায় না। বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা হ’ল- এই ইবাদতটি পালনকারী ব্যক্তির ৩৬০টি হাড়ের পক্ষ থেকে ছাদাক্বা হবে। অন্যের পক্ষ থেকে নয় (উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন ২/১৫৫)। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি ছাদাক্বা রয়েছে। প্রতি ‘সুবহানাল্লাহ্’ ছাদাক্বা, প্রতি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ছাদাক্বা, প্রতি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ছাদাক্বা, প্রতি ‘আল্লাহু আকবার’ ছাদাক্বা, ‘আমর বিল মা‘রূফ’ (সৎকাজের আদেশ) ছাদাক্বা, ‘নাহি ‘আনিল মুনকার’ (অসৎকাজ থেকে নিষেধ) ছাদাক্বা। অবশ্য চাশতের সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট’ (মুসলিম হা/৭২০; মিশকাত হা/১৩১১)। এমনকি বাহনের পিছনে কাউকে আরোহণ করানোটাও ছাদাকবা। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও ছাদাক্বা। কাউকে সাহায্য করে সওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেওয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেওয়াও ছাদাক্বা। ভাল কথাও ছাদাক্বা। ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও ছাদাক্বা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করাও ছাদাক্বা’ (বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬)

প্রশ্ন (২৮/২৬৮) : কেউ যদি কোন নির্দিষ্ট স্থানে কোন পশু যবেহ করার মানত করে তাহ’লে কি তাকে সেখানেই যবেহ করতে হবে? না অন্যত্র করলে হবে?

উত্তর : যে স্থানে পশু যবেহ করার জন্য মানত করা হয়েছে সেখানেই যবেহ করতে হবে, যদি সেখানে কোন মূর্তি বা অন্য ধর্মের কোন স্মৃতি বিজড়িত না থাকে। এরূপ করলে কাফফারা দিতে হবে। ছাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর যামানায় জনৈক ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে ‘বাওয়ানা’ নামক স্থানে একটি উট কুরবানী করবে। রাসূল (ছাঃ)-কে এটি জানানো হ’লে তিনি জিজ্ঞেস করেন, সেখানে কি কোন দেব-দেবীর মূর্তি আছে, জাহেলী যুগে যাদের পূজা করা হ’ত? তারা বললেন, না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি তাদের উৎসবের স্থান? তারা বললেন, না। তখন তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর। কিন্তু জেনে রেখ! ঐ মানত পূরণ করবে না, যাতে আল্লাহর নাফরমানী আছে এবং আদম সন্তান যার মালিক নয়’ (আবুদাউদ হা/৩৩১৩; মিশকাত হা/৩৪৩৭; ছহীহাহ হা/২৮৭২)। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানত দুই প্রকার : একটি আল্লাহর জন্য, একটি শয়তানের জন্য। যেটি আল্লাহর জন্য, সেটি পূর্ণ করবে। আর যেটি শয়তানের জন্য, সেটি পূর্ণ করবে না। বরং তার উপরে কসমের কাফফারা ওয়াজিব হবে’ (বায়হাক্বী ১০/৭২ পৃ. হা/২০৫৭১; ছহীহাহ হা/৪৭৯)
অতএব নিয়ত অনুযায়ী যথাস্থানেই মানত পূরণ করতে হবে, যদি সেখানে আল্লাহর অবাধ্যতা না থাকে এবং সেখানে কোনরূপ শিরক ও বিদ‘আত না হয়। নইলে অন্যত্র দান করবে ও মানতের কাফফারা দিবে। আর মানতের কাফফারা হ’ল কসমের কাফফারার ন্যায়। আর তা হ’ল, ১০ জন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাদ্য বা পোষাক প্রদান করা অথবা একটি গোলাম আযাদ করা। অথবা তিনটি ছিয়াম পালন করা’ (মায়েদাহ ৫/৮৯)। অতএব মানতকারী ও দানকারীরা সাবধান!
প্রশ্ন (২৯/২৬৯) : যে ব্যক্তি দিনে বা রাতে বারো রাক‘আত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ) আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন’ (নাসাঈ হা/১৭৯৯)। এক্ষণে উক্ত বারো রাক‘আত ছালাত দিনে বা রাতে একইবারে আদায় করা যাবে কি? যেমনটি প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা করতেন। 
উত্তর : উক্ত বারো রাক‘আত ছালাত একই সাথে পড়া যাবে না। কারণ উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় এই বারো রাক‘আত পড়ার সময় বর্ণিত হয়েছে। যেমন উম্মে হাবীবাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দিন-রাতে বারো রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। চার রাক‘আত যোহরের পূর্বে, দু’রাক‘আত যোহরের পরে, দু’রাক‘আত মাগরিবের পরে, দু’রাক‘আত এশার পরে এবং দু’রাক‘আত ফজরের পূর্বে (তিরমিযী হা/৪১৫; মুসলিম হা/৭২৮; মিশকাত হা/১১৫৯)। উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা অন্য একাধিক হাদীছে স্পষ্টভাবে এসেছে।  যেমন ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে যোহরের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত সহ মোট ১০ রাক‘আতের নিয়মিত আমলের কথা এসেছে (বুখারী হা/১১৮০; মুসলিম হা/৭২৯; মিশকাত হা/১১৬০)। অতএব এক্ষেত্রে তাবেঈ আত্বার উক্ত আমল গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তাঁর বক্তব্যেই বুঝা যায় যে, তাঁর নিকটে ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীছটি পৌঁছেনি। যেমন তিনি বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি যে, উম্মে হাবীবাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ফরয ব্যতীত দিনে ও রাতে ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করবেন’ (নাসাঈ হা/১৭৯৬; ছহীহাহ হা/২৩৪৭)

প্রশ্ন (৩০/২৭০) : রাত ১১ ঘটিকায় আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। এক্ষণে আমি নিফাসের গণনা কখন থেকে শুরু করব। আগের দিন না পরের দিন থেকে?

উত্তর : ইসলামী বিধানে সূর্যাস্তের পর থেকে দিবস গণনা শুরু হয়। অতএব যে সময় সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে সেখান থেকে চল্লিশতম দিনের উক্ত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এর পরেও নিফাস চলতে থাকলে ইস্তেহাযা মনে করে পবিত্র হয়ে ছালাত আদায় করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৪১/৮)। উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময় নিফাসগ্রস্ত হওয়ার (অর্থাৎ সন্তান ভূমিষ্টের) পর মহিলারা চল্লিশ দিন বা চল্লিশ রাত অপেক্ষা করতেন’ (আবুদাউদ হা/৩১১; ইরওয়া হা/২১১, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বে মায়ের কোন রক্ত প্রবাহিত হ’লে তা নিফাস হিসাবে গণ্য হবে না। বরং তা ইস্তিহাযা বা প্রদর রোগ হিসাবে গণ্য হবে এবং সেজন্য পবিত্র অবস্থায় পালনীয় যাবতীয় ইবাদত পালন করতে হবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪১/৮)

প্রশ্ন (৩১/২৭১) : সন্তানের নাম ইয়াস, আয়াস বা আইয়াশ হাসান রাখা যাবে কি?

উত্তর : কেবল ইয়াস (إياس) বা আয়াস নাম রাখায় কোন দোষ নেই। ‘হাসান’ যোগ করা ঠিক নয়। একাধিক ছাহাবীর নাম ‘ইয়াস’ ছিল। যদিও এর অর্থ ‘হতাশা বা নৈরাশ্য’ (বুখারী হা/৩৯৯১; আবুদাউদ হা/২১৪৬; হাকেম হা/৫৯০১)। অনুরূপভাবে আইয়াশ নাম রাখাতেও কোন বাধা নেই। কারণ আইয়াশ নামেও ছাহাবী ও তাবেঈগণের নাম ছিল। যেমন আইয়াশ বিন আবী রাবী‘আ ও আইয়াশ বিন ওক্ববাহ প্রভৃতি (বুখারী হা/১০০৬; মুসলিম হা/৬৭৫,১৫৩৬)। আইয়াশ ((عَيَّاشَ অর্থ- অধিক আরাম প্রিয়, অতি সুখী জীবন যাপনকারী, রুটি প্রস্ত্ততকারী, রুটি বিক্রেতা ইত্যাদি।

প্রশ্ন (৩২/২৭২) : ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ কি কেবল ফজর ছালাতে বলতে হবে নাকি তাহাজ্জুদের ছালাতেও বলতে হবে?

উত্তর :  তাহাজ্জুদ বা সাহারীর আযান সাধারণ আযানের ন্যায় দিতে হবে। অতঃপর ফজরের আযানের সাথেই কেবল ‘আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাউম’ যোগ হবে। আর ‘এটি কেবল ফজরের আযানের সাথেই যুক্ত’ (মির‘আত ২/৩৫১)আবু মাহযূরাহ (রাঃ) বর্ণিত আযান শিক্ষাদান বিষয়ক হাদীছে এসেছে যে, তিনি বলেন, فَإِنْ كَانَ هَذَا صَلاَةَ الصُّبْحِ ‘অতঃপর যদি এটা ফজরের ছালাত হয়, তাহ’লে তুমি বলবে, আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম...’ (আবুদাঊদ হা/৫০০; আহমাদ হা/১৫৪১৬; মিশকাত হা/৬৪৫)। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফজরের ছালাতের আযানের সাথেই এটি যুক্ত। আনাস (রাঃ) বলেন,مِنَ السُّنَّةِ إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ فِى الْفَجْرِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ : الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ ‘সুন্নাত হ’ল যে, মুওয়াযযিন ফজরের আযানে ‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ’ বলার পরে বলবে ‘আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাউম’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৩৮৬; আল-আ-ছা-রুছ ছহীহাহ হা/৪৭১)। এতে বুঝা যায় যে, এটাই ছিল ছাহাবী যুগের রীতি।

প্রশ্ন (৩৩/২৭৩) : ঘরের চালা ও বেড়ার টিনের গায়ে মুরগী ও গরুর ছবি থাকলে উক্ত ঘরে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : বাধ্যগত অবস্থা ছাড়া এধরনের কক্ষে ছালাত আদায় করা উচিৎ নয়। কারণ যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না (বুখারী হা/৩২২৫; মুসলিম হা/২১০৪; মিশকাত হা/৪৪৯০)। তবে কেউ আদায় করে থাকলে তার ছালাত হয়ে যাবে। কারণ এটি ছালাত ভঙ্গের কারণ নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৭০৫, ৬/১৭৯, ৬/২৫০-৫১; ঊছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৯৪)। এক্ষণে ঘরের মালিকের জন্য করণীয় হ’ল ছবিগুলোকে ঢেকে রাখা অথবা মুছে দেওয়া।

প্রশ্ন (৩৪/২৭৪) : আমি একজন বিধবা অসহায় নারী। আমি ব্যাংকে টাকা রেখে সেখান থেকে লাভ গ্রহণ করতে পারব কি?

উত্তর : কোন অবস্থায় ব্যাংকের সূদ গ্রহণ করা যাবে না। কারণ সূদ সর্বাস্থায় হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। সুতরাং যত অসহায়ত্বই থাকুক না কেন, হারাম কাজে যুক্ত হওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। এক্ষণে আপনার জন্য করণীয় হ’ল- আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ব্যবসা করা। নিজে না পারলে টাকা বিনিয়োগ করে অন্যের মাধ্যমে ব্যবসা করা। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিবাহের পূর্বে খাদীজা (রাঃ)-ও বিধবা ছিলেন। তিনি অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যবসা করতেন (ইবনু হিশাম ১/১৮৮; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)। আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখলে তিনি নিশ্চয়ই কোন একটি ব্যবস্থা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক প্রদান করবেন, যা সে কল্পনাও করেনি। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হন (তালাক ৬৫/৩)

প্রশ্ন (৩৫/২৭৫) : রামাযান মাসে একই ব্যক্তি সাহারী ও ফজরের আযান দিতে পারবে কি? 

উত্তর : একই ব্যক্তির জন্য সাহারী ও ফজরের আযান দেওয়াতে কোন বাধা নেই। তবে সাহারীর আযানের সময় ‘আছ-ছালাতু খায়রুম মিনান নাওম’ বলবে না। কারণ সাহারী গ্রহণকারী ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীগণ যাতে উভয় আযানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন। তাছাড়া একই মসজিদে একাধিক মুওয়াযযিন থাকাতে কোন দোষ নেই। ওছমান (রাঃ)-এর আমলে মসজিদে নববীতে চারজন মুওয়াযযিন ছিলেন। অতএব পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের জন্য পাঁচজন মুওয়াযযিন নিয়োগ দিলেও কোন আপত্তি নেই (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ২/৬০-৬১)

প্রশ্ন (৩৬/২৭৬) : শাশুড়ীকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : শাশুড়ীকে যাকাতের মাল দেওয়া যাবে যদি তিনি হকদার হন। কারণ শাশুড়ীর প্রতি খরচ করা জামাই বা বউ কারো জন্য আবশ্যক নয়। কিন্তু যাদের প্রতি খরচ করা অপরিহার্য, যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, স্ত্রী ও সন্তান, তাদেরকে যাকাত থেকে দেওয়া যাবে না। বরং তাদের প্রতি হক হিসাবে স্বাভাবিকভাবে খরচ করবে (শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ২/৮৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৫০৯; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার হা/১৬১৯, ৪/২১১)

প্রশ্ন (৩৭/২৭৭) : এশার ছালাতে মুছল্লী কম হওয়ায় মুছাল্লী বৃদ্ধির জন্য নাশতার ব্যবস্থা করা যাবে কি? 

উত্তর : এধরনের উৎসাহ মূলক কাজ করা যায়। হয়তবা এতে এক পর্যায়ে মুছল্লীরা জামা‘আতে ছালাত আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমরা জুম‘আর দিনে আনন্দিত হ’তাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, কেন? তিনি বললেন, আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন একজনকে ‘বুযাআ’ নামক খেজুর বাগানে পাঠাত। সে বীট চিনির শিকড় আনত এবং তা একটি ডেগচিতে ফেলে তাতে কিছুটা যবের দানা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুটত। ফলে তাতে এক প্রকার খাবার তৈরী হ’ত। এরপর আমরা যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করত। আমরা এজন্য খুশী হ’তাম। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, আমরা জুম‘আর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম’ (বুখারী হা/৬২৪৮)। তবে খাওয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে আসলে ছওয়াব পাবে না। বরং ছালাতের বিশুদ্ধ নিয়তেই কেবল মসজিদে আসতে হবে।

প্রশ্ন (৩৮/২৭৮) : সোলায়মান (আঃ)-এর কতজন স্ত্রী ছিলেন?

উত্তর : সোলায়মান (আঃ)-এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে ছহীহ হাদীছ সমূহে ৬০, ৭০, ৯০, ১০০ জন বলে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে (বুখারী হা/২৮১৯, ৩৪২৪, ৫২৪২, ৬৬৩৯, ৭৪৬৯; মুসলিম হা/১৬৫৪; মিশকাত হা/৫৭২০)। ইমাম বুখারী (রহঃ) উপরোক্ত সকল সংখ্যাই উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি ৯০ জনের হাদীছটিকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। অন্যদিকে সোলায়মান (আঃ)-এর স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাঈলীরা একহাযার জন বলে উল্লেখ করেছে (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ২/১৫,২৯; ফাৎহুল বারী হা/৩৪৪২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)
এক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ ইসলামের আক্বীদা ও মৌলনীতির বিরোধী না হ’লে তার ব্যাপারে সত্য বা মিথ্যা কোন মন্তব্য না করা (আবুদাউদ হা/৩৬৪৪; আহমাদ হা/১৭২৬৪; ছহীহাহ হা/২৮০০)

প্রশ্ন (৩৯/২৭৯) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, মীরাছের ক্ষেত্রে পিতার সম্পত্তিতে ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুণ পেলেও মায়ের সম্পত্তিতে মেয়েরা ছেলেদের দ্বিগুণ বা সমান পাবে। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই। 

উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। পিতা হৌক বা মাতা হৌক তাদের সম্পত্তিতে ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুণ হারে পাবে। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান (নিসা ৪/১১)। অত্র আয়াতে পিতা-মাতা উভয়ের ক্ষেত্রে একই বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন (৪০/২৮০) : আমরা সীমিত অর্থের মালিকদের সুবিধার্থে তাদের জমিতে ভবন নির্মাণ করে দেই। প্রথমেই আমরা মোট খরচ হিসাব করি। এরপর ভবন তৈরীর সূচনায় জমির মালিকের নিকট থেকে ২০% অর্থ নিয়ে কাজ শুরু করি। তারপর তারা কিস্তিতে বাকী অর্থ পরিশোধ করবে। এক্ষণে এধরনের ব্যবসায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? 

উত্তর : উক্ত ব্যবসায়ে ৫ নং শর্ত অনুযায়ী মোট নির্মাণ ব্যয়ের ২০% টাকা চুক্তিকালীন সময় মালিককে জমা দিতে হবে। অতঃপর ৬ নং শর্ত অনুযায়ী কোম্পানীর বিনিয়োগকৃত ৮০% টাকার উপরে ৩% সার্ভিস চার্জ এবং ৭ নং শর্ত অনুযায়ী কাজ শুরুর মাস থেকে মাসিক কিস্তি প্রদান মালিককে নিশ্চিত করতে হবে। অথচ তখন কোম্পানী কোন টাকাই ব্যয় করেনি এবং প্রতিশ্রুত ৮০% টাকা বিনিয়োগ করেনি। কিন্তু মোট টাকার উপরে ২০% টাকা শুরুতেই নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যা রূপার উপরে বর্ধিতহারে রূপা নেওয়ার শামিল। এটি সূদ।
সেই সাথে এটি ধোঁকা। কেননা কোনরূপ কাজ না করেই সার্ভিস চার্জ ও প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। এরপরেও কাজ কতদিনে শেষ হবে, তার কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা নেই। প্রতি বর্গফুটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু নির্মাণাধীন অবস্থায় সরঞ্জামাদির মূল্য বৃদ্ধি পেলে সেক্ষেত্রে কি হবে এবং কাজের মান আশানুরূপ না হলে মালিকের সেখানে কিছু করার থাকবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই। বিষয়গুলি অস্বচ্ছ। যা বায়‘এ গারার-এর অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণ স্বরূপ, একটি বিল্ডিং-এর প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ৫ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী মালিককে ২০% অর্থাৎ ১ কোটি টাকা নগদ দিতে হবে। সেই সাথে কোম্পানীর ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ৮০%-এর উপর ৩% সার্ভিস চার্জ ১২ লাখ টাকা। সেই সাথে ১ম মাসিক কিস্তি ৩ লাখ ৩৩ হাযার ৩৩৩ টাকা। সর্বমোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাযার ৩৩৩ টাকা মালিকের পক্ষ থেকে কোম্পানীকে শুরুতেই নগদ দিতে হবে। অথচ কোম্পানীর তখন কোন বিনিয়োগ নেই।
এটি আদৌ কোন ব্যবসা নয়, বরং ধোঁকা। কারণ এতে কোম্পানীর কোন ব্যবসায়িক ঝুঁকি নেই। কেবলই লাভ। যা সূদের শামিল।
মে/২০১৯

প্রশ্ন (১/২৮১) : জনৈক আলেমের মতে, কেবল পীর ছাহেবেরা আল্লাহ ও নবীগণের নূর লাভ করে থাকে। আদম (আঃ)-এর নূর ছিল সাদা ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নূর সবুজ। সেজন্য দেখা যায়, তারা মসজিদ বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করে তাতে সবুজ রঙ করে ও মাথায় সবুজ পাগড়ী পরিধান করে। এমনকি মসজিদে নববীতে রাসূলের কবরের উপরও অনুরূপ সবুজ গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত আক্বীদার শেষ পরিণতি জানতে চাই।
উত্তর : উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। নবী করীম (ছাঃ) বা ছাহাবীগণ থেকে এ বিষয়ে কোন বর্ণনা আসেনি। অতএব এই ধরনের আক্বীদা পোষণ করা বিদ‘আত। আর কবরের উপর কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হারাম (মুসলিম হা/৯৭০; হাকেম হা/১৩৩০; মিশকাত হা/১৬৭০)। এই বিদ‘আতের সূচনা হয়েছে হিজরী ৭ম শতাব্দীতে ছূফীবাদী তুর্কী শাসকদের মাধ্যমে।
তুর্কীরাই রাসূল (ছাঃ)-এর কবরের উপর সবুজ গম্বুজ স্থাপন করেছিল। ইতিপূর্বে এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। হিজরী ৬৭৮ মোতাবেক ১২৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম গম্বুজটি নির্মাণ করেন মামলূক সুলতান কালাউন। অতঃপর হিজরী ৮৮৬ মোতাবেক ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর সুলতান আশরাফ কায়েতবায়ী ৮৮৭ হিজরীতে পুনরায় পিলার দিয়ে একটি কালো পাথরের গম্বুজ নির্মাণ করেন। পরবর্তী শাসকদের আমলে তাতে সাদা এবং নীল রঙের প্রলেপ দেয়া হয়েছিল। ৯৪৬ হিজরীতে গম্বুজের উপর তুর্কী খেলাফতের প্রতীকবাহী চন্দ্রাকৃতি স্থাপন করেন মক্কার শাসক ওয়াছেল। অতঃপর হিজরী ১২৩৩ সালে ওছমানীয় সুলতান আব্দুল হামীদ-২ নতুনভাবে গম্বুজটি নির্মাণ করেন। তিনি ইবনু ‘আরাবী (৫৫৮-৬৩৮ হিঃ)-এর ভ্রান্ত ছূফীবাদী আক্বীদাকে বাস্তবায়ন করার জন্য ১২৫৩ হিজরীতে গম্বুজের উপর সবুজ রঙের প্রলেপ দেন। তখন থেকে এটি ‘কুববাতুল  খাযরা’ (সবুজ গম্বুজ) নামে পরিচিতি লাভ করে এবং তা আজও রয়েছে।
১৮০৫ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের অনুসারী সংস্কারবাদীগণ মদীনার বাক্বী‘ কবরস্থানের সকল কবরের উপর থেকে গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলে দেন। কিন্তু বৃহত্তর ফিৎনার আশংকায় এবং গম্বুজটির বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কারণে এটি ভাঙ্গেননি (রশীদ রেযা, আল-ওয়াহহাবিইয়ূন ওয়াল হিজায ৬৯-৭১ পৃঃ; আলী হাফেয, ফুছূল মিন তারীখিল মাদীনাতিল মুনাওয়ারাহ ১২৭-২৮ পৃঃ)। এর বিরুদ্ধে সঊদী ওলামায়ে কেরাম সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও কেবল ফিৎনার আশংকায় সরকার এটা রেখে দিয়েছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া বিন বায ১/২৭০)
রাসূল (ছাঃ) সবুজ নয় বরং কালো পাগড়ী পরিধান করতেন। আমর বিন হুরায়েছ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর খুৎবা দিলেন, তখন তাঁর উপর কালো পাগড়ী ছিল। যার দু’মাথা কাঁধের মাঝে ঝুলছিল (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১০)। জাবের (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ইহরামে যখন কা‘বা গৃহে ঢুকলেন, তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ী ছিল (ইবনু মাজাহ হা/২৮২২)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) সাদা পোষাক পরিধান করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা এটি পূত-পবিত্র। আর এর দ্বারা তোমাদের মৃতদের কাফন পরাও’ (তিরমিযী হা/২৮১০; মিশকাত হা/৪৩৩৭)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের জন্য সর্বোত্তম পোষাক হ’ল সাদা পোষাক। এই পোষাকে তোমাদের মৃতদের কাফন পরাবে এবং নিজেরাও তা পরবে (ইবনু মাজাহ হা/১৪৭২; মিশকাত হা/১৬৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩০৫)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-কে তিনটি সাদা কাপড়ে কাফন পরানো হয়েছিল’ (বুখারী হা/১২৬৪; মুসলিম হা/৯৪১)। সুতরাং সবুজ রঙের কোন বিশেষত্ব ইসলামে নেই।
সবুজ রং সম্পর্কে কেবল এতটুকুই এসেছে যে, হাশরের মাঠে রাসূল (ছাঃ)-কে সবুজ পোষাক দেওয়া হবে এবং শহীদদের রূহ জান্নাতে সবুজ পাখির ভিতর থাকবে। যেমন- কা‘ব ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে মানুষকে উঠানো হবে। আমি এবং আমার উম্মত একটি উপত্যকার উপর থাকব। আমার প্রতিপালক আমাকে সবুজ জোড়া পরাবেন। তারপর আমাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন আমি আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বলব। এটাই হচ্ছে মাক্বামে মাহমূদ’ (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২৩৭০, ইবনে হিববান হা/৬৪৪৫)। আর শহীদদের রূহ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাদের রূহ সবুজ পাখির পেটে থেকে জান্নাতের বিভিন্ন নদী ও বাগান থেকে আহার করে (মুসলিম হা/৪৯৯৩)
সুতরাং যারা সবুজ রংকে বিশেষ পবিত্র মনে করে এবং প্রশ্নে বর্ণিত ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ পোষণ করে, তারা এরূপ দলীলবিহীন ও রাসূলের আদর্শ বিরোধী আক্বীদা পোষণের কারণে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত থেকে বঞ্চিত হবে। কেননা সেদিন রাসূল (ছাঃ) তাদের বলবেন, দূর হও দূর হও, যারা আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ’ (বুখারী হা/৭০৫০; মুসলিম হা/২২৯০; মিশকাত হা/৫৫৭১ ‘ফিতান’ অধ্যায় ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ)

প্রশ্ন (২/২৮২) : প্রিয় ব্যক্তিকে হেদায়াতের জন্য কোন নির্দিষ্ট দো‘আ আছে কি? দো‘আ থাকলে সেটি কি? 

উত্তর : প্রিয় ও অপ্রিয় যেকোন ব্যক্তির হেদায়াতের জন্য দো‘আ করার বিধান রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছাহাবীর হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেছেন। তিনি একবার আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর মায়ের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (মুসলিম হা/২৪৯১; মিশকাত হা/৫৮৯৫)। তিনি একবার দাউস সম্প্রদায়ের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (বুখারী হা/২৯৩৭; মুসলিম হা/২৫২৪; মিশকাত হা/৫৯৯৭)। তিনি আরেকবার মু‘আবিয়ার হেদায়াতের জন্য দো‘আ করেন (তিরমিযী হা/৩৮৪২; মিশকাত হা/৬২৩৫; ছহীহাহ হা/১৯৬৯)। তিনি জারীরের জন্য দো‘আ করেছিলেন (বুখারী হা/৩০২০; মুসলিম হা/২৪৭৫; মিশকাত হা/৫৮৯৭)। তবে এজন্য কোন নির্দিষ্ট দো‘আ নেই। বরং তার জন্য পরিস্থিতির সাথে উপযুক্ত যে কোন মাসনূন দো‘আ পাঠ করা যায়।

প্রশ্ন (৩/২৮৩) : যদি ছালাতের মধ্যে হঠাৎ যৌন উত্তেজনা বোধ হয় এবং মযী নির্গত হওয়ার ধারণা হয়, তবে কি ছালাত ছেড়ে দিয়ে পুনরায় ওযূ করতে হবে?

উত্তর : মযী নির্গত হওয়ার ধারণা নিশ্চিত হ’লে ছালাত ছেড়ে দিয়ে লজ্জাস্থান ধুয়ে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। তবে কেবল ধারণা হলে বা ভেজা অবস্থা বুঝতে না পারলে ছালাত অব্যাহত রাখবে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ছালাত ত্যাগ করবে না। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু (বায়ু) শব্দ পায় এবং এরপর তার সন্দেহ হয় যে, তার পেট হ’তে কিছু (বায়ু) বের হ’ল কি-না, তাহ’লে সে যেন ওযূ নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে মসজিদ হ’তে বের না হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়’ (বুখারী হা/১৩৭, মুসলিম হা/৩৬২, মিশকাত হা/৩০৬)

প্রশ্ন (৪/২৮৪) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) ইফতারের সময় তার সন্তানদের সাথে নিয়ে মুনাজাত করতেন। এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইফতারের সময় পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের ডেকে দো‘আ করতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩৯০৭; মুসনাদে ত্বায়ালেসী হা/৬২৬২; ইরওয়া ৪/৪৪)। এছাড়া ‘ইফতারের সময় দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৩; যঈফাহ হা/৪৩২)। তাছাড়া উক্ত হাদীছে হাত তুলে জামা‘আতবদ্ধ দো‘আর কথা বলা হয়নি। বরং ছায়েমের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। ছিয়ামের অবস্থায় তার দো‘আ যে কোন সময় কবুল হয় (নববী, আল- মাজমূ‘ ৬/৩৭৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিন ধরনের লোকের দো‘আ কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ছায়েম যতক্ষণ ইফতার না করে... (ইবনু মাজাহ হা/১৭৫২; ছহীহাহ হা/১৭৯৭)
সুতরাং কেবলমাত্র ইফতারের সময়ই নয়, বরং ছিয়াম অবস্থায় সর্বদাই দো‘আ কবুল হওয়ার যোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটাই হাদীছ সম্মত।

 প্রশ্ন (৫/২৮৫) : হাড়ের তৈরি পাত্রে খাওয়া ও পান করার বিধান কি?

উত্তর : হালাল প্রাণীর প্রক্রিয়াজাত হাড়ের তৈরি পাত্রে খাওয়া ও পান করায় কোন দোষ নেই। কেননা এগুলো মৌলিকভাবে পবিত্র। যারা এগুলোকে অপবিত্র বলেছেন তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমুঊল ফাতাওয়া ২১/৯৬-১০৫)

প্রশ্ন (৬/২৮৬) : একটি জমি কবরস্থানের নামে ওয়াক্বফ করা হয়েছে। এক্ষণে উক্ত জমির কিছু অংশে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি? বা ওয়াক্বফের জমি পরিবর্তন করে অন্য কোন কল্যাণমূলক কাজে লাগানো যাবে কি? 

উত্তর : ওয়াক্বফের নিয়ম হ’ল, যে উদ্দেশ্যে ওয়াক্বফ করা হয়েছে, কেবল সেজন্যই তা ব্যবহৃত হ’তে হবে। তবে ইবনু তায়মিয়া সহ কতিপয় বিদ্বানের মতে, অধিকতর কল্যাণের উদ্দেশ্যে হ’লে ওয়াক্বফকারীর প্রদত্ত শর্ত পরিবর্তন করা যায়। অতএব উক্ত জমির কিছু অংশে মসজিদ নির্মাণ জনগণের জন্য অধিক কল্যাণকর হ’লে তাতে কোন দোষ নেই। অনুরূপভাবে ওয়াক্বফকৃত জমির কিছু অংশ অন্য কোন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারে দোষ নেই ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ১/৫০৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৯/৫৬০-৬১; ইবনু যুরাইক মারদাভী, আল-মুনাক্বালাতু ওয়াল ইস্তিবদাল বিল আওক্বাফ বই দ্রষ্টব্য)

প্রশ্ন (৭/২৮৭) : ক্বিয়ামুল লায়েলের শুরু সময় কখন? এটা কি মাগরিবের পর থেকে শুরু করা যায়? 

উত্তর : ক্বিয়ামুল লায়েলের সময় শুরু হয় এশার ছালাতের পর থেকে এবং অব্যাহত থাকে ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত (মুসলিম হা/৭৪৫; মিশকাত হা/১২৬১; ছহীহাহ হা/১০৮)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি মসজিদে জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন। প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ও মুছল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছালাত আদায় করেন (আবুদাঊদ হা/১৩৭৫; তিরমিযী হা/৮০৬, মিশকাত হা/১২৯৮)
প্রচলিত অর্থে ‘ক্বিয়ামুল লায়েল’ বলতে রামাযানের শেষ দশকে রাত্রি জাগরণকে বুঝায়। এই সময় লায়লাতুল ক্বদর সন্ধানে অধিকহারে ইবাদত করতে হয়। যার উত্তম নমুনা হ’লেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম। যা উপরের হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এই বাইরে যা কিছু বলা হয় বা করা হয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের আমলে তার কোন ভিত্তি নেই। যদিও হারামায়েনে আগ রাতে দশ দশ বিশ রাক‘আত তারাবীহ পড়া হয়। অতঃপর রাত ১-টা থেকে বিতর সহ তের রাক‘আত ‘তাহাজ্জুদ’ বা ‘ক্বিয়ামুল লায়েল’ করা হয়। ছহীহ বা যঈফ কোন হাদীছে রাসূল (ছাঃ) একই রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ দু’টি আদায় করেছেন বলে প্রমাণ নেই। তিনি কখনো ১১ বা ১৩ রাক‘আতের ঊর্ধ্বে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ আদায় করেছেন বলেও কোন প্রমাণ নেই। তিনি বলেছেন, তোমরা ছালাত আদায় কর, যেভাবে তোমরা আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’ (বুখারী হা/৬৩১)
অতএব ঐ সময় অধিকহারে কুরআন তেলাওয়াত বা দো‘আ-দরূদ ও তাসবীহ পাঠে মনোনিবেশ করা উচিৎ। যারা মাসজিদুল হারামে থাকেন, তারা ১১ বা ১৩ রাক‘আত তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ-এর বাইরে অধিকহারে ত্বাওয়াফ করতে পারেন। 

প্রশ্ন (৮/২৮৮) : নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ছিয়ামের সমতুল্য কোন ইবাদত নেই। এক্ষণে এটা কি ছালাতের থেকেও উত্তম।

উত্তর : প্রত্যেক আমল তার নিজ অবস্থানে উত্তম। রাসূল (ছাঃ) ব্যক্তি বা সময় আবার কখনো অবস্থার প্রেক্ষিতে একেকটি আমলকে উত্তম আমল বলেছেন। কখনো ছালাত, কখনো হজ্জ, কখনো জিহাদ আবার কখনো ছিয়াম। তবে ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত ছালাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাত। সুতরাং যার সাধ্য রয়েছে তা অধিকহারে আদায় করার সে যেন তাই করে’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৯০)। আর প্রশ্নোল্লেখিত নাসাঈ বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম সিন্ধী বলেন, প্রবৃত্তি দমনে এবং শয়তানী প্ররোচনা প্রতিহতকরণের ক্ষেত্রে বা অধিক ছওয়াবের ক্ষেত্রে এর সমতুল্য কিছুই নেই। এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, আত্মাকে মন্দকর্ম থেকে বিরত রাখা আর তা হ’ল তাক্বওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু’ (হুজুরাত ৪৯/১৩; ‘হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলান নাসাঈ’ অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

প্রশ্ন (৯/২৮৯) : তালাকের সময় দু’জন সাক্ষী থাকা যরূরী কি?

উত্তর : তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য কোন সাক্ষী উপস্থিত থাকা শর্ত নয়। এমনকি স্ত্রী উপস্থিত থাকা বা তাকে তালাকের কথা শোনানোও শর্ত নয়। স্বামী তালাকের বিষয়টি যে কোন মাধ্যমে স্ত্রীকে জানালে তালাক কার্যকর হবে। এভাবে তিন তুহরে তিন তালাক দিলে স্ত্রী স্থায়ী (বায়েন) তালাক হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রেও দু’জন সাক্ষী রাখা মুস্তাহাব (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৬/৩০০; আবুদাঊদ হা/২১৮৬; ইরওয়া হা/২০৭৮)। 

প্রশ্ন (১০/২৯০) : একটি মসজিদে প্রতি বছর নির্দিষ্ট দিনে ওরস হয়। উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় ও দান করা যাবে কি? 

উত্তর : ‘ওরস’ একটি বিদ‘আতী প্রথা। ‘ওরস’ শব্দের মূল অর্থ নবদম্পতির বাসর। এখান থেকে রূপকার্থে উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে পীরের আত্মার সাথে আল্লাহর পরমাত্মার মিলনের আনন্দঘন মুহূর্ত। আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘ওরসে’র মত কোন অনুষ্ঠানের অস্তিত্ব সালাফে ছালেহীনদের যুগে ছিল না (ফাতাওয়া আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী, পৃঃ ৯১)। সুতরাং যেসব মসজিদে এরূপ বিদ‘আতী কাজ হয়, সেখানে ছালাত আদায় করা বা দান করা মোটেই সিদ্ধ নয়। তাদের কোন কাজে সহযোগিতা করা বা তাবার্রুকের নামে তাদের দেওয়া খাবার খাওয়া যাবে না (মায়েদাহ ৫/২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/১৭৬, ২/২৫৭-২৬৪)

প্রশ্ন (১১/২৯১) : ইসমে আযম কোনটি সে ব্যাপারে কি ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে? ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত ইসমে আযম কোনটি?

উত্তর : ইসমে আ‘যম নির্ধারণে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) এরূপ মোট ১৪টি মতামত উল্লেখ করেছেন। যেমন- ১. (هو) হুওয়া, ২. আল্লাহ, ৩. আল্লাহুর রহমানুর রাহীম, ৪. আর-রহমানুর রাহীমুল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম, ৫. আল-হাইয়ুল ক্বাইয়ূম, ৬. আল হান্নানুল মান্নানু বাদী‘উস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি যুল জালালি ওয়াল ইকরাম, আল-হাইয়ুল ক্বাইয়ূম, ৭. বাদী‘উস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি যুল জালা-লি ওয়াল ইকরাম, ৮. যুল জালা-লি ওয়াল ইকরাম, ৯. আল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ, ১০. রাববী রাববী, ১১. লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুন্তু মিনায যোয়ালেমীন, ১২. হুওয়াল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়া রাবিবল আরশিল ‘আযীম, ১৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ১৪. ইসমে আযম আসমাউল হুসনার মধ্যে কোন একটি যা লুক্কায়িত রয়েছে।
এগুলোর মধ্যে কোনটি ছহীহ, কোনটি যঈফ, কোনটি মওকূফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। ইবনু হাজার, শাওকানী ও আলবানী (রহঃ)-এর মতে সনদ ও মতনের দিক থেকে উল্লেখিত ৯ম তথা বুরায়দাহ বর্ণিত হাদীছটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ (ফাৎহুল বারী ১১/২২৪-২২৫; তোহফাতুয যাকেরীন পৃঃ ৫২; যঈফাহ হা/২১২৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, শব্দ ও অর্থগতভাবে ‘আল্লাহ’ শব্দটিই ইসমে আযম। এটি পবিত্র কুরআনে সর্বোচ্চ ২৬৯৭ বার এসেছে। এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নাম হ’ল ‘আল-হাইয়ুল কাইয়ূম’ (মাদারিজুস সালিকীন ১/৩২; মুগনিউল মুহতাজ ১/৮৮, ৮৯; উছায়মীন, মাজমু ফাতাওয়া ১/১৬০)

প্রশ্ন (১২/২৯২) : শেষ যামানায় আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যতীত জীবিকা অর্জন সম্ভব হবে না- মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে পাঁচটি সনদে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যার সবগুলো যঈফ ও মুনকার। সাখাভী বলেন, উক্ত মর্মে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার সবগুলো ভিত্তিহীন (আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৩২৯)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, এধরনের হাদীছ রাসূল (ছাঃ) থেকে পরিচিত নয় (মাজমূঊল ফাতাওয়া ১৮/৩৮৩)। যাহাবী ও  ইরাকী একে যঈফ ও জাল এবং শায়খ আলবানী মুনকার বলেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২৭০; যঈফুত তারগীব হা/১৬৩৭)। অতএব এই হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশ্ন (১৩/২৯৩) : ওয়াইস ক্বারনী ও হাসান বছরী (রহঃ) কি ছূফী ছিলেন যেমনটি দাবী করা হয়? 

উত্তর : বিশিষ্ট তাবেঈ ওয়াইস ক্বারনী (মৃ. ৩৭ হিঃ) এবং হাসান বছরী (২১-১১০ হিঃ) কথিত ছূফী ছিলেন না; বরং তারা আল্লাহভীরু, ইবাদতগুযার ও দুনিয়াত্যাগী যাহেদ ছিলেন। তাঁদের সাথে প্রচলিত ছূফী আক্বীদার দূরতম সম্পর্ক নেই। অথচ বিদ‘আতীরা তাঁদেরকে ছূফীবাদের প্রাণপুরুষ মনে করে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ছূফী মতবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে যা জানা যায়, তাতে আবু হাশেম কূফীর (মৃ. ১৫০ হিঃ) নাম প্রথমে আসে। এই ব্যক্তি শামে অবস্থানকালে প্রথম এই মতবাদের উদ্ভব ঘটায়। সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) তার সম্পর্কে বলেন, আবু হাশেম না থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো আমলের বাস্তব রূপ বুঝতে পারতাম না। কেউ কেউ শী‘আদের ইমাম জা‘ফর ছাদেকের ছাত্র ও দার্শনিক জাবের বিন হাইয়ানকে (মৃ. ২০৮ হি.), আবার কেউ কূফার এক যিন্দীক্ব নেতা আব্দুল করীমকে (মৃ. ২১০ হি.) ছূফী মতবাদের উদ্ভাবক বলে অভিহিত করেছেন (দ্র. আল-মাওসূ‘আতুল মুয়াস্সারাহ ফিল আদইয়ানে ওয়াল মাযাহিবিল মু‘আছারাহ ১/২৫১)। অতএব ওয়াইস ক্বারনী ও হাসান বাছরীকে ছূফী মতবাদে টেনে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাঁদের মৃত্যুর বহু পরে এই ভ্রান্ত মতবাদের জন্ম হয়েছিল।

প্রশ্ন (১৪/২৯৪) : নাছেবী কারা? বর্তমান যুগে কি এদের অস্তিত্ব আছে?

উত্তর : নাছেবী তারা যারা আলী (রাঃ) ও আহলে বায়তের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে এবং তাদেরকে নিন্দা করে ও গালাগালি করে। এরা আক্বীদার ক্ষেত্রে রাফেযীদের বিপরীত। তারা আহলে বায়তের প্রতি শত্রুতা করে বিশেষ করে আলী (রাঃ)-এর প্রতি। তাদের কেউ তাকে গালি দেয়, কেউ পাপাচারী বলে এবং কেউ কাফির বলে ফৎওয়া প্রদান করে। এরা চরমপন্থী খারেজীদেরই একটি অংশ। কাফির না হ’লেও তারা ইসলামের জন্য বড়ই ক্ষতিকর। তাদের থেকে দূরে থাকা আবশ্যক (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমুঊল ফাতাওয়া ৩/১৫৪, ২৮/৫০০-১৮; মিনহাজুস সুন্নাহ ৭/৩৩৯; উছায়মীন, শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসেত্বিয়াহ ২/২৮৩)। বর্তমান যুগে এই দলের কোন অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও শী‘আরা প্রথম যুগ থেকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত’কেই এই নামে অভিহিত করে। কেননা তারা মনে করে যারা শী‘আদের বিরোধী, তারা প্রত্যেকেই আলী (রাঃ) এবং আহলে বায়েতের প্রতি বিদ্বেষী। অর্থাৎ শী‘আবিরোধী সকলকেই তারা নাছেবী অভিহিত করে। সেই সূত্রে প্রথম তিন খলীফাসহ প্রায় সকল ছাহাবী, উমাইয়া ও আববাসীয় খলীফাগণ, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম বুখারী, ইবনু হাযম, ইবনু তায়মিয়া, ইবনু কাছীর, যাহাবীসহ মুসলিম বিদ্বানগণকে তারা নাছেবী আখ্যায়িত করে (দ্র. বদর আল-আউয়াদ, আন-নাছবু ওয়ান নাওয়াছেব, পৃ. ২৬২-৫২২)।  

প্রশ্ন (১৫/২৯৫) : শী‘আদের রাফেযী বলার কারণ কি? সকল শী‘আই কি রাফেযী?

উত্তর : শী‘আদের মধ্যে ২২টি দল রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট আক্বীদাসম্পন্ন হ’ল রাফেযী সম্প্রদায়। এদের আবির্ভাব হয়েছিল ইহূদী নেতা আব্দুল্লাহ বিন সাবার মাধ্যমে। রাফেযী শব্দের অর্থ প্রত্যাখ্যানকারী। একদা একদল শী‘আ যায়েদ বিন আলী যায়নুল আবেদীন (রহঃ)-এর নিকট এসে আবুবকর ও ওমর (রাঃ) থেকে মুক্তি চাইল। তখন তিনি বললেন, তারা তো আমার দাদার (আলী রাঃ-এর) সহযোগী ছিলেন। তখন তারা বলল, তাহ’লে আমরা আপনাকে পরিত্যাগ করলাম। জওয়াবে তিনি বললেন, তাহ’লে তোমরা প্রত্যাখ্যানকারী। সেই থেকে এই চরমপন্থী শী‘আদেরকে রাফেযী বা প্রত্যাখ্যানকারী বলা হয় (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৫/৩৯০)। এছাড়া আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকে প্রত্যাখ্যান করার কারণেও তাদেরকে রাফেযী বলা হয়ে থাকে (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ১/৩৫, ২/৯৬, ৩/৪৭০)
এর বিপরীতে যে সকল শী‘আ যায়েদ বিন আলী (রহঃ)-এর অনুসারী হিসাবে তুলনামূলক উদারপন্থী ছিল তাদেরকে যায়েদী বলা হয়। রাফেযীরা আলী, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) ব্যতীত প্রথম তিন খলীফা আবুবকর, ওমর, ওছমান ও উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-সহ প্রায় সকল ছাহাবীকে ‘মুরতাদ’ বা ধর্মত্যাগী বলে এবং নিকৃষ্টভাবে গালি-গালাজ করে (ইবনুল জাওযী, মানাক্বিবে ইমাম আহমাদ ১৬৫ পৃঃ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ৪/৪৩৫, ইহসান ইলাহী যহীর, আশ-শী‘আহ ওয়াস সুন্নাহ, ৩২-৫০ পৃঃ)। সেজন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) রাফেযী ও জাহমীদেরকে ইহূদী ও খৃষ্টানদের সাথে তুলনা করে তাদের পিছনে ছালাত আদায়ের ব্যাপারে চরম আপত্তি করেছেন (খালকু আফ‘আলিল ইবাদ, পৃঃ ৩৩)
বর্তমান যুগে জা‘ফরিয়াহ, ইমামিয়া, ইছনা ‘আশারিয়া বা খুমায়নীয়াহ নামে পরিচিত শী‘আ দলগুলি সাধারণভাবে রাফেযী হিসাবে প্রসিদ্ধ। এছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছে নুছায়রিয়া ও ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়, যাদের আক্বীদা মূর্তি পূজারীদের ন্যায় ভ্রান্ত (বিন বায, ফাতাওয়া আল-জামিউল কাবীর)। এতে বুঝা যায় যে, পুরা শী‘আ সম্প্রদায়টিই রাফেযীদের ন্যায় ভ্রান্ত।

প্রশ্ন (১৬/২৯৬) : ছালাত আদায়কালে আমার বাম পাশের কোন মুছল্লী ছালাত ছেড়ে চলে গেলে আমি কিভাবে কাতার পূরণ করব? 

উত্তর : এরূপ ক্ষেত্রে ডানে বা বামের মুছল্লীরা ধীর-স্থিরভাবে ফাঁকা স্থান পূর্ণ করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) কাতারের ফাঁকা স্থান পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরষ্পরে কাতারের ফাঁক বন্ধ কর। কেননা শয়তান কালো বকরীর বাচ্চার ন্যায় ফাঁকের মধ্যে প্রবেশ করে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৯৩)। অথবা ফাঁকা স্থানের পিছনের কাতারের মুছল্লীরা ধারাবাহিকভাবে সামনের ফাঁকা স্থান পূরণ করবে (তিরমিযী হা/৬০১; আহমাদ হা/২৪০৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৬/২৭)

প্রশ্ন (১৭/২৯৭) : মাতৃগর্ভে মৃত সন্তানের সুফারিশ পিতা-মাতা লাভ করবে কি? তারা পিতা-মাতার জন্য কোন উপকারে আসবে কি? 

উত্তর : যে সন্তান মাতৃগর্ভে চার মাস বা ১২০ দিন অবস্থান করার পর গর্ভচ্যুত হবে বা মারা যাবে সে সন্তান পিতা-মাতার উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ (নববী, আল মাজমূ‘ ৫/২৮৭; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ২/২২৮)। কারণ এ সময় তাকে জীবন, রিযিক ও বয়স দান করা হয় ও ভাগ্য লিখে দেওয়া হয়। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায় এবং সেই মা ধৈর্য ধরে ছওয়াবের আশা করে, তাহ’লে সে সন্তান তার নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে (ইবনু মাজাহ হা/১৬০৯; মিশকাত হা/১৭৫৪; ছহীহুত তারগীব হা/২০০৮)

প্রশ্ন (১৮/২৯৮) : আমার এক বছরের একটি কন্যা সন্তান মারা গেছে। ইতিপূর্বে তার আক্বীক্বা দেওয়া হয়নি। এখন তার আক্বীক্বা দিলে পিতা-মাতার উপকারে আসবে কি?

উত্তর : মৃত শিশুর জন্য আক্বীক্বা দেওয়া যেতে পারে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে... (আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইরওয়া হা/১১৬৫; মিশকাত হা/৪১৫৩)। আর বন্ধক থাকার বিষয়টি মৃত্যু হ’লেও অবশিষ্ট থাকে। বন্ধক থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই আক্বীক্বা দেওয়া উচিৎ। শাফেঈ বিদ্বানগণের মতে সাত দিনে আক্বীক্বার বিষয়টি সীমা নির্দেশ মূলক নয় বরং এখতিয়ার মূলক। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, সাত দিনে আক্বীক্বার অর্থ হ’ল, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সাত দিনের পরে আক্বীক্বা করবে না (নায়লুল আওত্বার ৬/২৬১ পৃঃ)
সুতরাং আক্বীক্বা দেওয়ার জন্য বাচ্চা বেঁচে থাকা শর্ত নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৪৪৫)। বন্ধক থাকা হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। তবে এসবের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম ব্যাখ্যা হ’ল যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন। তিনি বলেন, এটি সন্তানের শাফা‘আতের বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি মনে করেন, যদি সন্তানের আক্বীক্বা না করা হয়। অতঃপর সে শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহ’লে সে তার পিতা-মাতার জন্য শাফা‘আত করবে না (ফাৎহুল বারী ৯/৫৯৪)। অতএব উক্ত বাচ্চার শাফা‘আতের আশায় তার পক্ষ থেকে আক্বীক্বা করা যেতে পারে (দ্র. মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা, পৃ.৫৪)

প্রশ্ন (১৯/২৯৯) : রাসূল (ছাঃ) সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে বলেছেন। এক্ষণে কেউ যদি ছয়টি অঙ্গের উপর সিজদা করে তাহ’লে তার ছালাতে কোন ক্ষতি হবে কি? 

উত্তর : সাতটি অঙ্গের উপর ভর করে সিজদা করাই নিয়ম। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) নিজে আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে ছাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করেছেন। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি হাড় (অঙ্গ) দ্বারা সিজদা করি। কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অগ্রভাগ। আর আমরা যেন কাপড় ও চুল না গোটাই’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৭)। আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ) বলেন ‘তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, যখন বান্দা সিজদা করে, তখন তার সাথে সাতটি অঙ্গ সিজদা করে। তার চেহারা, দুই হস্ত তালু, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা’ (আবুদাঊদ হা/৮৯১; ইবনু মাজাহ হা/৮৮৫)
অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, উক্ত সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করা ওয়াজিব। অতএব ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলির কোন একটি বাদ দিলে ছালাত বাতিল হবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞতাবশে কোন একটি অঙ্গ সিজদায় না গেলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৭/৬৭-৬৮)
ইবনু ত্বাঊস স্বীয় নাকের দিকে ইশারা করে বলেন, এটি সপ্ত অঙ্গের একটি। সিন্ধী ও কুরতুবী বলেন, নাক চেহারারই অংশ। অতএব কপাল ও নাক দু’টিই মাটিতে রাখতে হবে। ‘হাত’ বলতে পাঁচ আঙ্গুল সহ ‘হস্ত তালু’ বুঝায়। যা সিজদার সময় স্বাভাবিকভাবে ক্বিবলামুখী থাকবে। ‘দুই পায়ের অগ্রভাগ’ বলতে আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগকে ক্বিবলামুখী করা বুঝায়। যেগুলিকে সাধ্যমত ক্বিবলামুখী করে রাখতে হবে (মির‘আত)

প্রশ্ন (২০/৩০০) : ছিয়াম অবস্থায় চোখে, কানে বা নাকে ড্রপ দেওয়া যাবে কি?

উত্তর :  চোখে ও কানে ড্রপ ব্যবহার করায় কোন বাধা নেই। কারণ তা কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না এবং দেহে রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৫; মাজাল্ল­াতু মাজমা‘ইল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/৯১৩)। তবে নাকে ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা আবশ্যক। যাতে তা কণ্ঠনালী অতিক্রম না করে (আবুদাঊদ হা/২৩৬৬, মিশকাত হা/৪০৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৫০)। স্মর্তব্য যে, ছিয়াম অবস্থায় খাদ্য নয় এরূপ বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। নবী করীম (ছাঃ) ছিয়াম অবস্থায় (আরোগ্যের জন্য) শিঙ্গা লাগাতেন (বুখারী হা/১৯৩৮, ১৯৩৯)। আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, আপনারা কি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ছিয়াম অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতে অপসন্দ করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, না। তবে দুর্বলতার বিষয়টি ভিন্ন (বুখারী হা/১৯৪০; মিশকাত হা/২০১৬)

প্রশ্ন (২১/৩০১) : ছিয়াম অবস্থায় ব্যথা বা জ্বর উপশমের জন্য সাপোজিটরী ও শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে। কারণ এগুলো কোন খাদ্য নয় যা পাকস্থলীতে যায়। আর এগুলি রক্ত তৈরিতেও সহায়তা করে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৫; মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/৯১৩)

প্রশ্ন (২২/৩০২) : রাসূল (ছাঃ) ছালাতে কাপড় ও চুল গোটাতে নিষেধ করেছেন। এক্ষণে কেউ যদি কাপড় গুটানো অবস্থায় ছালাত শুরু করে তাহ’লে তার ছালাত হবে কি? 

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ছালাতে জামার কাপড় ও চুল গুটিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৮৮৭)। অনিচ্ছাকৃতভাবে কেউ কাপড় ও চুল গুটানো অবস্থায় ছালাত আদায় করলে ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (মিরক্বাত হা/৮৮৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। তবে সুন্নাতের খেলাফ হওয়ায় ছওয়াবের ঘাটতি হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ব্যক্তি ছালাত থেকে ফিরে আসে। এমতাবস্থায় তার জন্য ছওয়াব লেখা হয় দশ ভাগের এক ভাগ বা নয় ভাগের, আট ভাগের, সাত ভাগের, ছয় ভাগের, পাঁচ ভাগের, চার ভাগের, তিন ভাগের বা অর্ধেক (আবুদাঊদ হা/৭৯৬; আহমাদ হা/১৮৯১৪)। 

প্রশ্ন (২৩/৩০৩) : ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় না খেয়ে ছিয়াম রাখায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি? 

উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে সাহারী না করে ঘুমিয়ে থাকা সুন্নাতের বরখেলাফ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা সাহারী খাও। কেননা তাতে বরকত রয়েছে’ (বুখারী হা/১৯২৩, মুসলিম হা/১০৯৫)। তিনি বলেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবদের ছিয়ামের পার্থক্য হ’ল সাহারী করা’ (মুসলিম হা/১০৯৬)। অর্থাৎ ইহূদী-নাছারারা সাহারী করে না, আমরা করি। তিনি আরও বলেন, সাহারী বরকতপূর্ণ খাদ্য। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। বরং একঢোক পানি হ’লেও তোমরা তা পান করো। কেননা আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ সাহারী গ্রহণকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন (আহমাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৮৩)। তবে বাধ্যগত কারণে সাহারী খেতে না পারলেও ছিয়ামের নিয়ত করলে ছিয়াম আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (বুখারী, ফাৎহুল বারী ৪/১৭৫ হা/১৯২২-এর আলোচনা; নায়লুল আওত্বার ২/২২২)

প্রশ্ন (২৪/৩০৪) : মসজিদের অনুদানের টাকা দিয়ে ইমাম ও মুওয়ায্যিনের বেতন-ভাতা দেওয়া যাবে কি? 

উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। মসজিদ পরিচালিত হয় মুসলমানদের কল্যাণার্থে। আর ইমাম ও মুওয়ায্যিন এই কল্যাণের কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। সুতরাং তাদেরকে মসজিদের জন্য প্রাপ্ত অনুদানের অর্থ থেকে বেতন ও ভাতা দেওয়া যাবে (ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ১/৩০১; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিইয়াহ ১/৪৯২; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৬/২)

প্রশ্ন (২৫/৩০৫) : ছিয়াম অবস্থায় হস্তমৈথুন বা অনুরূপ কর্মের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে ছিয়াম নষ্ট হবে কি?

উত্তর : হস্তমৈথুন বা অন্য কোন উপায়ে বীর্য স্খলন করা নিষিদ্ধ। এটি কবীরা গোনাহ। আল্লাহ বলেন, যারা নিজ স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত অন্যকে কামনা করে, তারা সীমালংঘনকারী (মুমিনূন ২৩/৬-৭; মা‘আরিজ ৭০/৩০-৩১)। সুতরাং শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কেউ এই গর্হিত কর্মে লিপ্ত হ’লে তাকে তদস্থলে অন্য মাসে একটি ক্বাযা ছিয়াম আদায় করতে হবে। তবে তাকে কাফফারা দিতে হবে না। কেননা এটি সরাসরি সহবাসের মত নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৩৪৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৫/২৫১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/২৫৬)

প্রশ্ন (২৬/৩০৬) : অসৎ সঙ্গী ও অসৎ প্রতিবেশী থেকে আশ্রয়ের দো‘আ জানতে চাই। 

উত্তর : এজন্য রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করতেন,اللَّهمَّ إنّي أعُوذُبِكَ مِنْ يَّوْمِ السَّوْءِ وَمِنْ لَيْلَةِ السَّوْءِ وَمِنْ سَاعَةِ السَّوْءِ وَمِنْ صَاحِبِ السَّوْءِ وَمِنْ جَارِ السَّوْءِ فِي دَارِ الْمُقَامَةِ- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিইঁ ইয়াওমিস সাওএ, ওয়া মিন লায়লাতিস সাওএ, ওয়া মিন সা‘আতিস সাওএ, ওয়া মিন ছাহেবিস সাওএ, ওয়া মিন জা-রিস সাওএ ফী দা-রিল মুক্বামাহ’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে মন্দ দিন, মন্দ রাত, মন্দ সময়, মন্দ সাথী এবং বাসস্থানে মন্দ প্রতিবেশী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৮১০; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৯৯)

প্রশ্ন (২৭/৩০৭) : আমি মাথায় পৃথক স্কার্ফ বেঁধে তার উপর বোরকা পরিধান করি। এক্ষণে ওযূর সময় কিভাবে মাথা মাসাহ করব? আমাকে উক্ত স্কার্ফটি খুলতে হবে নাকি স্কার্ফের ওপরই মাথা মাসাহ জায়েয হবে? 

উত্তর : যদি স্কার্ফ খোলা কষ্টকর হয় তবে তার উপরেই মাসাহ করবে। রাসূল (ছাঃ) মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন (বুখারী হা/২০৫; মুসলিম হা/২৭৫)। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা মোযা ও পাগড়ীর উপর মাসাহ কর’ (আহমাদ হা/২৩৯৩৯, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তার মাথার সম্মুখের অংশ ও পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন’ (মুসলিম হা/২৪৭; মিশকাত হা/৩৯৯)। অতএব স্কার্ফ বা মস্তকাবরণ কিছু সরিয়ে অথবা প্রয়োজনে তার উপরেই মাসাহ করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ‘উমদাহ ১/২৬৫-৬৬; ইবনু হাযম, মুহাল্লা ১/৩০৩ উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/২৩৯)। 

প্রশ্ন (২৮/৩০৮) : মহিলাদের সাদা স্রাবের কারণে কি ওযূ ভঙ্গ হয়? 

উত্তর : সাদা স্রাব নির্গমনের কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন কোন পুরুষের মযী বের হ’লে ওযূ ভঙ্গ হয়। ছালাতরত অবস্থায় এমন দেখা দিলে সে ছালাত ছেড়ে দিবে। অতঃপর লজ্জাস্থান ধুয়ে এসে ওযূ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে। তবে এটি যদি কারো নিয়মিত ব্যাধি হয় এবং তা চলমান হয়, তাহ’লে ওযূ ভঙ্গ হবে না। ঐ অবস্থাতেই সে ছালাত আদায় করবে’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমুঊল ফাতাওয়া ২১/২২১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২১৪)

প্রশ্ন (২৯/৩০৯) : পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের উপর ছালাত ফরয ছিল কি? থাকলে তাদের ছালাতের পদ্ধতি কি ছিল? 

উত্তর : পুর্ববর্তী নবী-রাসূল ও তাঁদের উম্মতের উপর ছালাত ফরয ছিল। এটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারীদের জন্য, এখানে অবস্থানকারীদের জন্য এবং রুকূকারী ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো (বাক্বারাহ ২/১২৫)। তিনি মূসা (আঃ)-কে বলেন, ‘আমরা মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম যে, তোমরা  তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরের মাটিতে বাসস্থান নির্মাণ কর এবং তোমাদের ঘরের মধ্যেই ক্বিবলা নির্ধারণ কর ও সেখানে ছালাত আদায় কর। আর তুমি মুমিনদের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও’ (ইউনুস ১০/৮৭)। তিনি ঈসা (আঃ)-এর মা মারিয়ামকে বলেন, ‘হে মারিয়াম! তোমার প্রতিপালকের ইবাদতে রত হও এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ ও সিজদা কর’ (আলে ইমরান ৩/৪৩)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি যেন আমরা দ্রুত ইফতার করি, দেরীতে সাহারী করি এবং ছালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখি’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১১৪৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২২৮৬)। তিনি বলেন, কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও নয় যে ঘর তৈরী করেছে, কিন্তু ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আছরের ছালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী। হে আল্লাহ! তুমি সূর্যকে থামিয়ে দাও! তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হয়, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন’ (বুখারী হা/৩১২৪; মুসলিম হা/১৪৪৭)
উক্ত নবী ছিলেন ইউশা‘ বিন নূন (আঃ)। যখন তিনি বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়ের উদ্দেশ্যে গমন করেন ও তা জয় করেন’ (হাকেম হা/২৬১৮; আহমাদ হা/৮২৯৮; ছহীহাহ হা/২০২)। যিনি মূসা (আঃ)-এর পরে বনু ইস্রাঈলের নবী ও নেতা ছিলেন। 
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছসমূহ প্রমাণ করে যে পূর্ববর্তীদের উপরও ছালাত ফরয ছিল। তবে সে ছালাত কত ওয়াক্ত ছিল বা তার পদ্ধতি কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২৩৭)

প্রশ্ন (৩০/৩১০) : ছিয়াম অবস্থায় বিমানে পশ্চিম দিকে গেলে দিন বড় হয়ে যায়, তাহ’লে আমি কি বিমানে বাংলাদেশের সময়ে ইফতার করব নাকি সেদেশের সময়ে ইফতার করব? 

উত্তর : ইফতারের বিষয়টি সূর্যাস্তের সাথে সম্পর্কিত। অতএব যেদেশে অবস্থান করবে সে দেশে যখন সূর্য অস্তমিত হবে তখন ইফতার করবে। এক্ষণে বিমানে অবস্থানকালে যখন সূর্যাস্ত হ’তে দেখবে, তখন ইফতার করবে। যদিও দিন বড় হয়ে যায়। তবে দিন বড় হওয়ার কারণে ছিয়াম পালন করা কারো জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে গেলে ছিয়াম ভঙ্গ করবে এবং পরে সেটি ক্বাযা করে নিবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৩৬-১৩৭)

প্রশ্ন (৩১/৩১১) : একটি বইয়ে দেখলাম যে, তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর বেশী বেশী পাঠ করলে নিফাক্ব হ’তে মুক্তি পাওয়া যায়, এটা নাসাঈতেও বর্ণিত আছে। এখন আমার প্রশ্ন হ’ল হাদীছটি কি ছহীহ? আর আমলগত মুনাফিকও কি স্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে? 

উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে নিঃসন্দেহে অধিকহারে যিকির করলে হৃদয় কলুষমুক্ত থাকে (তিরমিযী হা/৩৩৭৭, সনদ ছহীহ)। আর আমলগত নিফাক্বের কারণে কেউ স্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে না। কেবলমাত্র যারা আক্বীদাগত মুনাফিক্ব তারাই স্থায়ী এবং জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করবে। তাদের ব্যাপারে আল্ল­াহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না’ (নিসা ৪/১৪৫)। তবে এরা যদি তওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে তাহ’লে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন (নিসা ৪/১৪৬)। বিদ্বানগণ নিফাক্বকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। ছোট নিফাক্ব ও বড় নিফাক্ব। ছোট নিফাক্ব হ’ল আমলগত নিফাক্বী, যা কবীরা গুনাহ হ’তে পারে। আর বড় নিফাক্ব হ’ল আক্বীদাগত বিষয়ে নিফাক্ব, যা কুফরীর চেয়েও মারাত্মক। যেমন সূরা বাক্বারাহর প্রথম দিকে ৮-২০ তেরটি আয়াতে তাদের বৈশিষ্ট্য সমূহ বর্ণনা করা হয়েছে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৮/৪৩৪-৪৩৫; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৭৬)

প্রশ্ন (৩২/৩১২) : রামাযান মাসে পিল খেয়ে ঋতু বন্ধ রেখে ছিয়াম পালন করা যাবে কি? 

উত্তর : বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে ডাক্তারের পরামর্শে শারীরিক কোন ক্ষতি না হ’লে এবং সন্তান ধারণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত না হ’লে ঔষধ ব্যবহার করে সাময়িকভাবে ঋতু বন্ধ রাখা যায় (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ছিয়াম অধ্যায় ফৎওয়া নং ৫৩; ১৫/২০০-২০১ পৃঃ)। তবে এথেকে বিরত থাকাই উত্তম। কারণ ফরয ছিয়াম পালনরত অবস্থায় নারীরা ঋতুবতী হ’লে রাসূল (ছাঃ) ছিয়াম ছেড়ে দিতে এবং তা পরবর্তীতে ক্বাযা করার নির্দেশ দিতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ঋতু অবস্থায় আমাদেরকে ছিয়াম ক্বাযা করার এবং ছালাত ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেওয়া হ’ত (মুসলিম হা/৩৩৫; মিশকাত হা/২০৩২, ক্বাযা ছিয়াম অনুচ্ছেদ)

প্রশ্ন (৩৩/৩১৩) : আমি একটি ই-কমার্স কোম্পানীতে ওয়েব ডিজাইনার এবং ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত। কোম্পানীর দ্রব্যাদি অধিকাংশই হালাল পণ্য হ’লেও কিছু হারাম পণ্য যেমন মাদকদ্রব্য রয়েছে। এক্ষণে উক্ত কোম্পানীতে চাকুরী করা কি আমার জন্য বৈধ হবে? এতে আমার ইনকাম কি হালাল হবে?

উত্তর : অন্যান্য হারাম দ্রব্য সহ সত্তাগতভাবে হারাম যেমন মাদকদ্রব্য থাকলে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা যাবে না। কারণ আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মে সহযোগিতা করা হারাম। আল্ল­াহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)। তবে যদি অধিকাংশই হালাল পণ্য হয় এবং মাদকদ্রব্য ছাড়া অন্য কিছু সংখ্যক হারাম দ্রব্য থাকে, তবে সেখানে চাকুরী বৈধ হবে এবং ইনকাম হালাল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ প্রতিষ্ঠানটি হারাম দ্রব্য বাজারজাত করণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত নয়। বর্তমান যুগে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোসহ বড় বড় বিপনীকেন্দ্রে বিষয়টি অতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এখান থেকে আত্মরক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। তবুও নিজেকে যে কোন স্পষ্ট ও অস্পষ্ট হারামের সংশ্রব থেকে বাঁচিয়ে রাখার মধ্যেই পরকালীন মুক্তি নিহিত’ (বুখারী হা/২০৫১; মুসলিম হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/২৭৬২ ‘ব্যবসা’ অধ্যায়)

প্রশ্ন (৩৪/৩১৪) : রামাযানের দিনের বেলায় এন্ডোস্কপি পরীক্ষা করালে কি ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে? 

উত্তর : এতে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়। এটির মাথায় একটি ক্যামেরা থাকে। যা দিয়ে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের ভিতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। যেহেতু এন্ডোস্কপি মেশিনে কোন মেডিসিন ব্যবহার করা বা পাকস্থলীতে কোন খাবার প্রেরণ করা হয় না, তাই এতে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। তবে যদি এটি প্রবেশ করানোর সময় কোন তরল পদার্থ পাইপের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয় এবং তা পাকস্থলীতে যায় তাহ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৩৭০-৭১)। এটি একটি কষ্টদায়ক পরীক্ষা হওয়ায় ছিয়াম ভঙ্গ করা উচিৎ এবং তা অন্য সময় ক্বাযা করা উত্তম।

প্রশ্ন (৩৫/৩১৫) : ছিয়াম অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ বা স্যালাইন দেওয়া হলে ছিয়াম ভঙ্গ হবে কি?

উত্তর : যেসব ইনজেকশন শুধুমাত্র প্রতিষেধক হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, সেসব ইনজেকশন ছিয়াম অবস্থায় নেয়া যাবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) ছিয়ামরত অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২০০২)। আর যেসব ইনজেকশন খাদ্য হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, তা জায়েয নয়। কারণ ছিয়াম মূলতঃ খাদ্য ভক্ষণ থেকে বিরত থাকার নাম। অতএব গ্লুকোস বা অনুরূপ স্যালাইন গ্রহণ করা যাবে না (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১০/২৫২; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৪৬-১৫০)। প্রয়োজনে ছিয়াম ছেড়ে দিতে হবে এবং অন্য মাসে ক্বাযা আদায় করতে হবে (বাক্বারাহ ২/১৮৪)

প্রশ্ন (৩৬/৩১৬) : কোন মহিলা দেশ থেকে ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধার পর মক্কায় পৌঁছার পূর্বে ঋতুবতী হ’লে সে কি ইহরাম ভঙ্গ করবে? এমতাবস্থায় সে কি তানঈম বা আয়েশা মসজিদ থেকে ওমরার জন্য পুনরায় ইহরাম বাঁধবে?

উত্তর : এমতাবস্থায় ইহরাম ভঙ্গ করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং ইহরাম অবস্থায় থাকবে এবং ছালাত ও তাওয়াফ ব্যতীত অবশিষ্ট কাজগুলি সম্পন্ন করবে। এ সময় পোষাক পরিবর্তনেও কোন দোষ নেই। ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফ করবে ও মাতাফে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া ২৬/১৮০-১৮১; উছায়মীন, সিত্তূনা সুওয়ালান ফী আহকামিল হায়েয ওয়ান নিফাস, প্রশ্ন নং ৪৭)। কেননা হাদীছে এসেছে, ঋতুবতী ও নিফাসওয়ালী নারীরা মীকাতে পৌঁছে গোসল করবে, ইহরাম বাঁধবে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত কাজ সম্পন্ন করবে। আবু মা‘মার তার বর্ণনায় ‘পবিত্র হওয়া পর্যন্ত’ বাক্যটি বলেছেন। ইবনু ঈসা বলেন, বায়তুল্ল­াহ তাওয়াফ করা ব্যতীত হজ্জ ও ওমরার অন্যান্য সকল কাজ করবে (আবুদাঊদ হা/১৭৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৬৬; ছহীহাহ হা/১৮১৮)। উল্লেখ্য যে, হায়েয বা নিফাস অবস্থায় ইহরাম বাঁধায় কোন ক্ষতি নেই (মুসলিম হা/১২১০)

প্রশ্ন (৩৭/৩১৭) : অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার কারণে বহু মহিলা সাদা স্রাব ভাঙ্গার অসুখে আক্রান্ত। তাদের বিবাহ হওয়াও কঠিন। এক্ষণে তারা কোন মৈথুনের মাধ্যমে নিজেদের যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি?

উত্তর :  হস্তমৈথুন বা অন্য কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যৌনসুখ ভোগ করা হারাম’ (মুমিনূন ২৩/৬-৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/২৫৬)। সেজন্য বিবাহের চেষ্টা চালাতে হবে। এতদ্ব্যতীত যৌন চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরেকটি উত্তম পথ হ’ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩০৮০)। সর্বোপরি যে কোন হারাম থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন (তালাক ৬৫/২-৩)। অতএব সর্বাবস্থায় তাক্বওয়া অবলম্বনই মুমিনের জন্য শ্রেয়।

প্রশ্ন (৩৮/৩১৮) : ক্বিয়ামত কোন দিন ও তারিখে হবে। অনেকে বলে যে মুহাররম মাসের ১০ তারিখ শুক্রবার ক্বিয়ামত হবে? এ কথা কতটুকু সত্য?

উত্তর : জুম‘আর দিন ক্বিয়ামত হবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট হাদীছ রয়েছে (মুসলিম হা/৮৫৪; আবুদাউদ হা/১০৪৬; মিশকাত হা/১৩৬৩)। কিন্তু সেদিন ১০ই মুহাররম হবে এ বিষয়ে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। অতএব ক্বিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, এ জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর আমি তো প্রকাশ্য সতর্ককারী বৈ কিছু নই’ (মুল্ক ৬৭/২৬)

জুন/২০১৯

প্রশ্ন (১/৩২১) : বিখ্যাত ছূফী দার্শনিক ইবনুল আরাবী ও তাঁর আক্বীদা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী (৫৫৮-৬৩৮ হিঃ) একজন প্রসিদ্ধ ছূফী সাধক ও দার্শনিক ছিলেন। যিনি স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং দামেশকে মৃত্যুবরণ করেন। ছূফীদের নিকট তিনি ‘আশ-শায়খুল আকবার’ নামে খ্যাত। ইয়ামনের বিখ্যাত দানবীর হাতেম তাঈ তাঁর পূর্বপুরুষ হওয়ায় ‘আত-তাঈ’ উপনামেও তার প্রসিদ্ধি রয়েছে। তাঁর আক্বীদা ছিল কুফরীতে পূর্ণ। সেজন্য তৎকালীন বহু ওলামায়ে কেরাম তাকে ‘কাফের’ বলে ফৎওয়া দিয়েছেন। তিনি হুলূল ও ইত্তেহাদে বিশ্বাসী ছিলেন। অর্থাৎ বান্দার আত্মা আল্লাহর পরমাত্মার মধ্যে প্রবেশ করে। অতঃপর সেটি আল্লাহর অংশ হয়ে যায়। আর সেখান থেকেই চালু হয়েছে ‘যত কল্লা তত আল্লাহ’। এটাকে ‘ওয়াহদাতুল উজূদ’ বা অদ্বৈতবাদী দর্শন বলে। ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হ’ল ‘ইত্তেহাদ’। যার অর্থ হ’ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অতঃপর স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক হয়ে যাওয়া। এই দর্শনমতে অস্তিত্ব জগতে যা কিছু দৃশ্যমান, সবই একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না।
তাদের মতে সৃষ্টজীব সবই স্রষ্টার অংশ। নবুঅত অপেক্ষা বেলায়াত শ্রেষ্ঠ, যা তারা লাভ করে বলে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে, মারেফতাপন্থীরা আল্লাহকে দেখতে পায়। অথচ স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)ও আল্লাহকে দেখেননি। তারা মনে করে, আল্লাহর দর্শন নারীরা বেশী পায়। আর বিবাহের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে (নাঊযুবিল্লাহ)। এদের মতে, মূসা (আঃ)-এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল। তাদের মতে, ফেরাঊন পূর্ণ ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান। অতএব মানুষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মূর্তিপূজা করে বা গাছ, পাথর, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পূজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পূজা করে’ (দ্রঃ ইবনুল আরাবী রচিত আল-ফুতূহাতুল মাক্কিয়াহ ২/৬০৪; আল-ফুছূছুল হিকাম ১/৭৬-৭৭,৮৩, ১৯১-১৯৫, ২১৭; যাখায়েরুল আ‘লাক্ব শরহ তারমুজানুল আশওয়াক্ব ১/৩৮-৩৯)
বস্ত্ততঃ এই আক্বীদার সাথে হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’ আক্বীদার তেমন কোন পার্থক্য নেই। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু হওয়া এই সকল কুফরী আক্বীদার অন্যতম প্রচারক হ’লেন মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ’ল, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে।
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয যাহাবী, আবু যুর‘আ ইরাক্বী,  ইবনু খালদূন, আলাউদ্দীন বুখারী, ইয্যুদ্দীন আব্দুস সালাম, তাক্বীউদ্দীন সুবক্বী, তাক্বীউদ্দীন ফাসী, আবু হাইয়ান আন্দালুসী, হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, সিরাজুদ্দীন বালক্বীনী, সাখাভী, তাফতাযানী, জুরজানী, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী সহ বহু বিদ্বান তার ‘ফুছূছুল হিকাম’ ও ‘ফুতূহাতে মাক্কীয়াহ’ বইয়ে লিখিত কুফরী আক্বীদা সমূহের কারণে তাকে কাফির, পথভ্রষ্ট, মূর্খ, মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিষ্কৃত, চিরস্থায়ী জাহান্নামী ইত্যাদি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন’ (দ্র. তাক্বীউদ্দীন আল-ফাসী, আক্বীদাতু ইবনে ‘আরাবী ওয়া হায়াতুহ; সাখাভী, আল-ক্বাউলুল মুনাববী আন তারজুমাতে ইবনুল আরাবী প্রভৃতি)
বস্ত্ততঃ ইসলামী আক্বীদার সাথে মা‘রেফাতের নামে প্রচলিত ছূফীবাদী আক্বীদার কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম ও প্রচলিত ছূফীদর্শন সরাসরি সাংঘর্ষিক। ছূফীবাদের ভিত্তি হ’ল কথিত আউলিয়াদের স্বপ্ন, কাশ্ফ, মুরশিদের ধ্যান ও ফয়েয ইত্যাদির উপর। পক্ষান্তরে ইসলামের ভিত্তি হ’ল আল্লাহ প্রেরিত ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপর। ছূফীদের আবিষ্কৃত তরীকা সমূহ তাদের কপোলকল্পিত। এর সাথে কুরআন, হাদীছ, ইজমায়ে ছাহাবা, ক্বিয়াসে ছহীহ কোন কিছুরই দূরতম সম্পর্ক নেই। ছূফীদের ইমারত খৃষ্টানদের বৈরাগ্যবাদের উপরে দন্ডায়মান। ইসলাম যাকে প্রথমেই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে (হাদীদ ২৭; দ্র. দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯)
সুতরাং ছূফীদের মধ্যে যারা হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে- সেসব ইমামের পিছনে জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।

প্রশ্ন (২/৩২২) : জনৈক বক্তা বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, আল্লাহ তার জন্য সত্তুর হাযার ফেরেশতা নিয়োগ করবেন যারা বলবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষাৎকারী ও সাক্ষাৎকৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা কর’। উক্ত হাদীছের বিশুদ্ধতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত শব্দে বর্ণিত হাদীছের কোন ভিত্তি নেই। তবে কাছাকাছি মর্মে একাধিক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি তার কোন অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে গেলে সে না বসা পর্যন্ত জান্নাতের খেজুর পাড়ার স্থান দিয়ে চলতে থাকে। অতঃপর সে বসলে আল্লাহর রহমত তাকে বেষ্টন করে ফেলে। সে সকালে তাকে দেখতে গেলে সত্তর হাযার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দো‘আ করে। আর সন্ধ্যাবেলা দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাযার ফেরেশতা তার জন্য দো‘আ করে’ (ইবনু মাজাহ হা/১৪৪২; আহমাদ হা/৬১২; ছহীহাহ হা/১৩৬৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’ল, যে অন্য গ্রামে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা রাস্তায় তার অপেক্ষায় একজন ফেরেশতাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর যখন সে সেখানে পৌঁছল, ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যেতে চাও? সে বলল, ঐ গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে। ফেরেশতা বলল, তার কাছে তোমার কি কোন পাওনা আছে, যা তুমি আনবে? সে বলল, না। আমি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাকে ভালোবাসি। তখন ফেরেশতা বলল, আমি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে প্রেরিত হয়েছি। তিনি তোমাকে এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তোমাকে অনুরূপ ভালোবাসেন, যেরূপ তুমি তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবেসেছ’ (মুসলিম হা/২৫৬৭; মিশকাত হা/৫০০৭)

প্রশ্ন (৩/৩২৩) : জনৈক মৃত ব্যক্তি ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে অনেক অবৈধ সম্পদের মালিক ছিলেন। তার মেয়েরাও ধার্মিক। এক্ষণে তার কোন মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : এরূপ মেয়েদের বিবাহ করায় কোন দোষ নেই। বরং ধার্মিক মনে করলে তাদেরকেই বিবাহ করতে হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০৯০)। অবৈধ সম্পদ উপার্জনের জন্য পিতা দায়ী হবেন, সন্তানরা নয় (আন‘আম ৬/১৬৪)

প্রশ্ন (৪/৩২৪) : বাচ্চাদের খাৎনা করার সময় আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা যাবে কি? 

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে খাৎনার জন্য কোন অনুষ্ঠান করার প্রমাণ ছহীহ হাদীছে পাওয়া যায় না। ওছমান বিন আবুল ‘আছ ছাক্বাফী (রাঃ)-কে একটি খাৎনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হ’লে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় খাৎনার অনুষ্ঠানে যেতাম না এবং এজন্য আমাদের দাওয়াতও দেওয়া হ’ত না (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৭/২৮৬)
তবে এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের জন্য ছয়টি কর্তব্য রয়েছে। যার অন্যতম হ’ল যখন সে দাওয়াত দেয়, তা কবুল করা’ (তিরমিযী হা/২৭৩৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪৬৩০)। উক্ত হাদীছের আলোকে পরবর্তী বিদ্বানগণ খাৎনা বা অনুরূপ শরী‘আতসম্মত উপলক্ষে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এতে আড়ম্বর প্রকাশ করা, আলোকসজ্জা করা বা অপব্যয় করা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘খাৎনা উপলক্ষে দাওয়াত করা জায়েয। যার ইচ্ছা হয় করবে, আর যার ইচ্ছা বর্জন করবে’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২০৬)। ইবনু কুদামাহ বলেন, ‘বিবাহের ওয়ালীমা ছাড়া খাৎনা ও অন্যান্য সকল দাওয়াতের বিধান হ’ল তা মুস্তাহাব। কেননা এতে খাদ্য খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই ধরনের দাওয়াত গ্রহণ করাও মুস্তাহাব। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে খাৎনা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হ’লে তিনি কবুল করে খাবার গ্রহণ করেন’ (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৭/২৮৬; মারদাভী, আল-ইনছাফ ৮/৩২০-২১)। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম নববী (রহঃ) প্রমুখ খাৎনার দাওয়াতকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৬/১৯৫; রাওযাতুত ত্বালেবীন ৭/৩৩৩)। শায়খ বিন বায সহ সমকালীন বিদ্বানগণ বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে দোষ নেই। কেননা খাৎনা শরী‘আতসম্মত বিষয়সমূহের অন্যতম। আর আল্লাহর শুকরিয়ার্থে এতে খাবার প্রস্ত্তত করায় কোন বাধা নেই’ (ফাতাওয়া আল-কাবীর; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৪২)। তবে এজন্য বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যেমন সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠানের জন্য তোরণ নির্মাণ, কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত প্রদান, উপহার সামগ্রী প্রদান, কেউ দাওয়াতে বাদ পড়লে সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি কুসংস্কার সমূহ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

প্রশ্ন (৫/৩২৫) : পুরুষদের জন্য চুল লম্বা রাখা ও বেনী করাতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : পুরুষদের মাথার চুল খাটো এবং নারীদের মাথার চুল লম্বা, এটাই হ’ল মানুষের স্বভাবগত বিধান। এর বিপরীতে বর্তমান যুগে যুবকদের মধ্যে হিপ্পীদের ন্যায় নানা কাটিংয়ের চুল দেখা যায়। একইভাবে নারীদের মধ্যেও বব কাটিং তথা চুল খাটো করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা ইসলামে স্বীকৃত নয়।
চুলের সুন্নাতী নিয়ম হ’ল চুল খাটো করা অথবা বাবরী রাখা। সে হিসাবে চুল লম্বা করা যায় এবং বেনী করাও যায়। তবে এতে কোন ছওয়াব পাওয়া যাবে মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়নি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তির চুল আছে, সে যেন তার যত্ন করে রাখে’ (আবুদাউদ হা/৪১৬৩; মিশকাত হা/৪৪৫০; ছহীহাহ হা/৫০০)
বড় চুল তিন পদ্ধতিতে রাখা যায়। যথা (১) ওয়াফরা, যা কানের লতি পর্যন্ত (আবুদাঊদ হা/৪২০৬) (২) লিম্মা, যা ঘাড়ের মধ্যস্থল পর্যন্ত (মুসলিম হা/২৩৩৭) (৩) জুম্মা, যা ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত (নাসাঈ হা/৫০৬৬)
ছাহাবী ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) একদিন লম্বা চুল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) মাছি বসবে, মাছি বসবে বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। ফলে তিনি ফিরে গিয়ে পরে চুল কেটে খাট করে এলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটি সুন্দর (هَذَا أَحْسَنُ) (আবুদাঊদ হা/৪১৯০; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৩৬; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ‘চুল ছাঁটা ও মুন্ডনের হুকুম’ অনুচ্ছেদ ১/৭৩-৭৪ পৃ.)
অতএব চুল সুন্দরভাবে রাখতে হবে এবং নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করতে হবে। কোন অবস্থাতেই বেহায়াপনা করা যাবে না এবং অন্যদের অনুসরণ করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যারা অন্যদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, তারা তাদের মধ্যেই গণ্য হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)

প্রশ্ন (৬/৩২৬) : শী‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করা যাবে কি? 

উত্তর : শী‘আদের ইমামতিতে ছালাত আদায় করা যাবে না। কারণ তারা প্রথম তিন খলীফাসহ অধিকাংশ ছাহাবীকে কাফির মনে করে। তারা আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে নিকৃষ্ট আক্বীদা পোষণ করে। এর বিপরীতে তারা আলী (রাঃ) সম্পর্কে চরম বাড়াবাড়ি করে থাকে।
পবিত্রতা ও ছালাতের নিয়ম-কানূনের ক্ষেত্রেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে তাদের পদ্ধতি ভিন্ন। তারা আমাদের কুরআনকে অস্বীকার করে এবং মুছহাফে ফাতেমা-কে মূল কুরআন হিসাবে দাবী করে। যার মধ্যে বর্তমান কুরআনের কিছু নেই। তারা বুখারী শরীফ সহ মুসলিম উম্মাহর গৃহীত হাদীছ গ্রন্থ সমূহকে অস্বীকার করে। এছাড়াও তাদের রয়েছে বহু বাজে আক্বীদা ও আমল।
অনুরূপভাবে তাদের মসজিদে ছালাত আদায় করাও সমীচীন নয়। কারণ তারা অধিকাংশ সময় বরকত হাছিলের উদ্দেশ্যে তাদের ইমামদের কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে থাকে। তবে তাদের কোন ব্যক্তি শিরকী আক্বীদা পোষণ না করলে বা তাদের কোন মসজিদ কবরের উপর প্রতিষ্ঠিত না হ’লে সেখানে ছালাত আদায় করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৯১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ১২/১০৭ )

প্রশ্ন (৭/৩২৭) : আমাদের গ্রামে কারো কোন জিনিস হারিয়ে গেলে বা চুরি হ’লে হারানো বস্ত্ত খুঁজে পাওয়ার জন্যে অথবা চোর ধরার জন্য কয়েকজন ওযূ করে একটি পিতলের বদনা নিয়ে বসে তাতে পানি দিয়ে কাঁঠালের পাতায় বিভিন্ন জনের নাম লিখে বদনাতে দিয়ে দেয়। আর পাশে বসে একজন সূরা ইয়াসীন পড়তে থাকে। আর বদনা দু’জনের দুই আঙ্গুলের উপর ধরে রাখে। এভাবে সূরা ইয়াসীন পড়তে পড়তে যখন বদনাতে চোরের নাম আসে তখন বদনা এমনিতেই ঘুরতে শুরু করে দেয়। তাদের ভাষ্যমতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাকি আসল চোরের নাম উঠে আসে। প্রশ্ন হ’ল এভাবে সূরা ইয়াসীন পড়ে পিতলের বদনা নিয়ে চোর ধরার পদ্ধতি অথবা এগুলোর উপর বিশ্বাস করা কিসের মধ্যে পড়ে?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতি গণক ও জাদুকরদের মধ্যে প্রচলিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা শিরকী কালেমা বা মন্ত্র পাঠ করে। অতএব এসব পদ্ধতি অবলম্বনকারীদের উপর বিশ্বাস করা বা তাদের নিকট গমন করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে যায় এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবূল হয় না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫ ‘গণক’ অনুচ্ছেদ)। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসল এবং সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, ঐ ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল (তিরমিযী হা/১৩৫; মিশকাত হা/৫৫১; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৪৭)। অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি পাখি উড়িয়ে ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করল, অথবা যার ভাগ্যের ভাল-মন্দ যাচাই করার জন্য পাখি উড়ানো হ’ল, অথবা যে ব্যক্তি ভাগ্য গণনা করল, অথবা যার ভাগ্য গণনা করা হ’ল, অথবা যে ব্যক্তি যাদু করল অথবা যার জন্য যাদু করা হ’ল অথবা যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে আসল অতঃপর গণক যা বলল তা বিশ্বাস করল সে ব্যক্তি মূলতঃ মুহাম্মদ (ছাঃ)-এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তা (কুরআন) অস্বীকার করল’ (ছহীহাহ হা/২১৯৫, ২৬৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৪১)

প্রশ্ন (৮/৩২৮) : আমি যে কোম্পানীতে কাজ করি সেই কোম্পানীতে মাঝে-মধ্যে বাহিরের কিছু শ্রমিক এনে কাজ করাই, তাদের সাথে আমার চুক্তি হয় প্রতি ঘন্টা আট ডলার, আর আমি কোম্পানীর সাথে চুক্তি করি দশ ডলার। অতিরিক্ত ডলার কি আমি গ্রহণ করতে পারব? 

উত্তর : এভাবে ঠিকাদারীর মাধ্যমে লাভ করাতে কোম্পানীর কোন আপত্তি না থাকলে উক্ত অর্থ গ্রহণ করা যাবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)

প্রশ্ন (৯/৩২৯) : মসজিদের কাতার থেকে আবাসিক ঘরের দূরত্ব ত্রিশ হাতের মত। ছালাত আরম্ভ হ’লে আমার স্ত্রী ইমামের আওয়ায শুনতে পায়। এ অবস্থায় সেই ঘর থেকে সে মূল জামা‘আতের অনুসরণ করতে পারবে কি? 

উত্তর : পারবে না। কারণ মসজিদ এবং বাড়ী পৃথক। মসজিদের গুরুত্ব ও মর্যাদা অধিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়তম স্থান হ’ল মসজিদ’ (মুসলিম হা/৬৭১; মিশকাত হা/৬৯৬)। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর স্ত্রীদের কক্ষ সমূহ মসজিদে নববীর অতীব নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা স্ব স্ব কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন, যখন মসজিদে ইক্বামত হবে, তখন তোমরা দাঁড়াবে না, যতক্ষণ না আমাকে ঘর থেকে বের হ’তে দেখবে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬৮৫)
অবশ্য পুরুষের জামা‘আত থেকে কিছু দূরে পুরুষ বা মহিলাদের পৃথক জামা‘আত হ’লে একই ইমামের পিছনে মাইকের সাহায্যে ইক্বতিদা করা সম্ভব হ’লে সেটি জায়েয হবে। কারণ এখানে দু’টিই মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে। যদিও সেটা মসজিদের বাইরে হয় কিংবা উভয়ের মধ্যে কোন দেওয়াল, রাস্তা বা অনুরূপ কোন প্রতিবন্ধক থাকে (বুখারী হা/৭২৯; আবুদাঊদ হা/১১২৬; মিশকাত হা/১১১৪)

প্রশ্ন (১০/৩৩০) : পিতা-মাতা যদি ব্যাপক প্রহার করে ও গালি-গালাজ করে তাহ’লে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফৌজদারী আদালতে নালিশ করা যাবে কি? যাতে এধরনের নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

উত্তর : প্রথমত: পিতার জন্য সন্তানকে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত শাসন বা মারপিট করা সমীচীন নয়। সন্তানকে শাসনের ক্ষেত্রেও ইসলামের বিধান রয়েছে। প্রথমে তাদের বুঝাতে হবে, এরপর শাস্তির ভয় দেখাতে হবে, তারপর ভৎর্সনা করতে হবে। এতেও সংশোধন না হ’লে মৃদুভাবে ৩-১০ বেত্রাঘাত করা যেতে পারে। সর্বাবস্থায় উদ্দেশ্য থাকবে সন্তানকে সংশোধন করা (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪৫/১৭০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন যে, আল্লাহর নির্দিষ্ট হদসমূহের কোন হদ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে দশবার বেত্রাঘাতের অধিক কোন শাস্তি নেই’ (বুখারী হা/৬৪৫৬; মুসলিম হা/১৭০৮)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা চাবুক (লাঠি বা বেত) ঐ জায়গায় লটকিয়ে রাখবে, যেখানে গৃহবাসীর দৃষ্টি পড়ে। কারণ এটা তাদের জন্য আদব তথা শিষ্টাচার শিক্ষাদানের মাধ্যম (ছহীহাহ হা/১৪৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০২১)। কতিপয় বিদ্বানের মতে, দশ বছরের নীচের শিশুদের লাঠি বা চাবুক দ্বারা শাসন করা যাবে না, কেননা হাদীছে দশ বছর হ’লেই কেবল ছালাতের জন্য প্রহারের কথা বলা হয়েছে, তৎপূর্বে নয় (মাওয়াহিবুল জালীল ১/৪১৩)। দ্বিতীয়ত: যদি পিতা-মাতার নির্যাতন সহ্যসীমা অতিক্রম করে, তবে আত্মরক্ষার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা যাবে এবং এর প্রতিকার চাওয়া যাবে (বাক্বারা ২/২৭৯)।   

প্রশ্ন (১১/৩৩১) : বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরুর আগে যে এসেম্বলী বা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে পবিত্র কুরআন হ’তে তেলাওয়াত করার সময় হাত বেঁধে রাখা যাবে কি?

উত্তর : কুরআন তেলাওয়াতের সময় হাত বাঁধার কোন পদ্ধতি ইসলামী শরী‘আতে নেই। বরং কুরআনকে সর্বাধিক সম্মান প্রদর্শন করে স্বাভাবিকভাবে তেলাওয়াত করবে।

প্রশ্ন (১২/৩৩২) : ফরয ছালাতের পর যিকিরের সময় দরূদে ইবরাহীম পড়া যাবে কি?

উত্তর : ফরয ছালাতের পর নিয়মিত দরূদ পাঠের পক্ষে দলীল নেই। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, হাফেয আবু মূসা ও অন্যান্যরা ফরয ছালাতের পর দরূদ পাঠের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তারা একটি কাল্পনিক ঘটনা ব্যতীত কোন দলীল উল্লেখ করেননি (জালাউল আফহাম ১/৪৩৪)। তবে রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত যার ব্যাপারে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অতএব কেউ যদি এই ফযীলতের প্রতি লক্ষ্য রেখে দরূদ পড়তে চায়, তবে ব্যক্তিগতভাবে পড়তে পারে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে সরবে ছালাতের পর দরূদ পড়া বিদ‘আত।

প্রশ্ন (১৩/৩৩৩) : ঈসা (আঃ) ক্বিয়ামতের পূর্বে যখন আসবেন, তখনো কি মৃত্যুকে জীবিত করতে পারবেন?

উত্তর : আল্লাহর হুকুমে মৃতকে জীবিত করা ঈসা (আঃ)-এর মু‘জেযা ছিল (মায়েদাহ ৫/১১০)। কিন্তু ক্বিয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) যখন পুনরায় পৃথিবীতে আসবেন তখনও মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা নিয়ে আসবেন কি-না এ ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে তিনি যেহেতু নবী করীম (ছাঃ)-এর উম্মত হিসাবে আসবেন, নবী হিসাবে নন; সুতরাং তখন তিনি এ ধরনের ক্ষমতার অধিকারী না হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সে সময় দাজ্জালকে এ ক্ষমতা দেয়া হবে। আর তা মানবজাতিকে পরীক্ষা করার জন্য (বুখারী হা/৭১৩২; মুসলিম হা/২৯৩৮)।  

প্রশ্ন (১৪/৩৩৪) : আলী (রা:)-এর সাথে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহের পর মুহাম্মাদ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে একাধিক বিবাহ করতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে ফাতেমা (রাঃ)-এর অসুবিধা না হয়। এটা কি সত্য? 

উত্তর : ফাতেমা (রাঃ)-এর অসুবিধার জন্য নয় বরং প্রস্তাবিত নারীরা আবু জাহলের বংশধর ছিল বলে রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে বিবাহের অনুমতি দেননি। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, বনু হিশাম ইবনু মুগীরা আলীর কাছে তাদের মেয়েকে বিবাহ দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিব না, আমি অনুমতি দিব না, আমি অনুমতি দিব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী আমার কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে বিবাহ করতে পারে। কেননা ফাতেমা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়’ (বুখারী হা/৫২৩০; মুসলিম হা/২৪৪৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আলী (রাঃ) আবু জাহলের মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের কন্যা এবং আল্লাহর শত্রুর কন্যা একত্রিত হ’তে পারে না’ (বুখারী হা/৩১১০; মুসলিম হা/২৪৪৯)। উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর একই সময়ে চারজন রেখে ক্রমান্বয়ে মোট আটজন নারীকে বিবাহ করেছিলেন।

প্রশ্ন (১৫/৩৩৫) : নবী করীম (ছাঃ) বা কোন ছাহাবী হ’তে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর আগমন সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী আছে কি? 

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বা কোন ছাহাবী থেকে ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী নেই। বরং উক্ত বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রখ্যাত ছাহাবী সালমান ফারেসী ও তাঁর জাতিকে বুঝানো হয়েছে। হাদীছটির অনুবাদ হ’ল- আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে বসেছিলাম। এসময় তাঁর উপর সূরা জুম‘আ অবতীর্ণ হ’ল, যার একটি আয়াত হ’ল- ‘এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি’ (৬২/৩)। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারেসী উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) সালমানের উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকট থাকলেও কিছু লোক বা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে’ (বুখারী হা/৪৮৯৭)। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, যদি দ্বীন ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটেও থাকত, তবুও পারস্যের একজন ব্যক্তি তা নিয়ে আসত বা পারস্যের সন্তানদের কেউ তা পেয়ে যেত’ (মুসলিম হা/২৫৪৬)। ছহীহ ইবনে হিববানের বর্ণনায় আরো স্পষ্টভাবে এসেছে যে, রাসূল (ছাঃ) এসময় সালমানের উরুতে হাত মেরে বললেন, এই ব্যক্তি ও তার জাতি (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭১২৩)
তবে রাদ্দুল মুহতারে ইমাম সুয়ূতী (রহঃ)-এর একটি উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে এ মর্মে যে, তিনি বলেন, এ হাদীছ দ্বারা ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে (রাদ্দুল মুহতার ১/৫৩; বঙ্গানুবাদ তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন ১২৬৩ পৃঃ, মুহাম্মাদ ৩৮ আয়াতের ব্যাখ্যা), যার কোন ভিত্তি নেই।

প্রশ্ন (১৬/৩৩৬) : যোহরের ফরয ছালাতের আগের ৪ বা ২ রাক‘আত সুন্নাত পড়তে না পারলে তা কি যোহরের ফরয ছালাতের পর আদায় করা যাবে? এই অবস্থায় কোন সুন্নাতটি আগে পড়ব? 

উত্তর : ছুটে যাওয়া সুন্নাত যোহরের ফরয ছালাতের পর আদায় করা যাবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যদি যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত না আদায় করতেন তবে  যোহরের (ফরযের) পর তা আদায় করতেন’ (তিরমিযী হা/৪২৬; ইবনু মাজাহ হা/১১৫৮, সনদ হাসান)। পূর্বের সুন্নাত ও পরের সুন্নাত আগ-পিছ করার ব্যাপারে শিথিলতা রয়েছে। তবে উত্তম হ’ল পরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়ে নেয়ার পর পূর্বের চার বা দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়া (ওছায়মীন, ফাৎহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম ২/২২৫)

প্রশ্ন (১৭/৩৩৭) : আমার দুই ভাগিনী হানাফী মাদরাসায় লেখাপড়া করে। আমি তাদের মাদরাসার মাসিক বেতন দেই। কিন্তু তাদের পিতামাতা আহলেহাদীছ লোকদের ছালাত পসন্দ করে না এবং যে দুই ভাগিনী মাদরাসায় লেখাপড়া করে তারাও পসন্দ করে না। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? আমি যে টাকা দিচ্ছি তাতে তারা যে ভুল জিনিস শিক্ষা নিয়ে ভুল আমল করবে তাতে আমি গোনাহগার হব কি?

উত্তর : এমতবস্থায় সাধ্যমত তাদেরকে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মানহাজসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তারা ভুল আক্বীদা ও আমল সম্পর্কে সচেতন না হয়; বরং ভুলের উপর অটল থাকে, তবে সহযোগিতা করা যাবে না। কেননা দ্বীনশিক্ষার নামে জেনেশুনে শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও আমল শিক্ষাগ্রহণে সহযোগিতা করা অন্যায়ের সহযোগিতারই শামিল (মায়েদাহ ৫/২)

প্রশ্ন (১৮/৩৩৮) : রাতে গাছের ফল নামানোয় শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি? 

উত্তর : সাধারণভাবে রাতে গাছের ফল নামানো সমীচীন নয়। হুসাইন (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাতে গাছ থেকে খেজুর আহরণ করতে এবং রাতে ক্ষেত থেকে ফসল কাটতে নিষেধ করেছেন’। জা‘ফর ইবনু মুহাম্মাদ বলেন, আমার মনে হয় ফক্বীর-মিসকীনদের দেওয়ার ভয়ে (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৭৩০২; ছহীহাহ হা/২৩৯৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮৭২)। অর্থাৎ দিনের বেলায় ফসল কাটলে ফক্বীর-মিসকীনরা আসবে এবং তাদের দিতে হবে সেই ভয়ে রাতে ফসল ও খেজুর সংগ্রহ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রশ্ন (১৯/৩৩৯) : জনৈক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় পাশের লোকজন কালেমা পাঠ করছিল। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি রূহ বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে একটা হাসি দেয়, কিন্তু তার শরীর অচেতন অবস্থায় ছিল। এখন মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে এমন হাসি কি কোন ভাল বা মন্দ দিক ইঙ্গিত করে? 

উত্তর : মৃত্যুর পূর্বে হাসি দেওয়া ব্যক্তির সৎআমলের উপর মৃত্যুবরণ করার প্রমাণ বহন করে। কারণ মুমিনের মৃত্যুর সময় জান্নাতের ফেরেশতা তাকে সুসংবাদ দিয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তার উপর অবিচল থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তান্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল’ (হামীম আস-সাজদাহ ৪১/৩০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যদি তার কোন বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহ’লে তাকে কাজ করার তাওফীক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফীক দেন? তিনি বললেন, তিনি সেই বান্দাহকে মৃত্যুর পূর্বে সৎকাজের সুযোগ দান করেন’ (আহমাদ হা/১২০৫৫; তিরমিযী হা/২১৪২; মিশকাত হা/৫২৮৮, সনদ ছহীহ)

প্রশ্ন (২০/৩৪০) : আমার বাড়িতে দীর্ঘ তিন মাস যাবত একটি মোরগ আসছে। যার মালিক খুঁজে পাচ্ছি না। আঁটকিয়ে রাখছি না তবে খাবার খাওয়াচ্ছি। রাতে হেফাযত করার জন্য ঘরের ভিতর রাখি। বেওয়ারিশ এই মোরগ কি আমি বিক্রি করতে বা খেতে পারব? 

উত্তর : হারানো বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিয়ম হ’ল, হাটে-বাজারে ও মসজিদের বাইরে এর মালিককে সন্ধান করা। যদি এক বছরেও মালিকের সন্ধান না মিলে তাহ’লে ব্যক্তি উক্ত সম্পদ ভোগ করতে পারবে (বুখারী হা/২৪২৭; মুসলিম হা/১৭২২; মিশকাত হা/৩০৩৩)। তবে মোরগ ও এই জাতীয় হারানো দুর্বল প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিধান হ’ল- ১. যবেহ করে খেয়ে নিবে এবং পরবর্তীতে মালিকের সন্ধান পাওয়া গেলে মূল্য দিয়ে দিবে। ২. বিক্রয় করে দিবে এবং মালিকের সন্ধান মিললে মূল্য পরিশোধ করবে। ৩. অথবা নিজে লালন পালন করবে এবং মালিকের সন্ধান পেলে মালিকের নিকট ফেরত দিবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৫)। এই ধরনের প্রাণী সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তা তুমি নিয়ে নাও। কেননা সেটা তোমার কিংবা তোমার ভাইয়ের আর তা না হ’লে নেকড়ে বাঘের (বুখারী হা/২৪৩৬; মুসলিম হা/১৭২২; মিশকাত হা/৩০৩৩)

প্রশ্ন (২১/৩৪১) : আযানের হাদীছগুলো থেকে কি এটা প্রমাণিত হয় না যে ওলী-আউলিয়াদের কাছে স্বপ্নের মাধ্যমে অহী আসতে পারে? 

উত্তর : না, আযানের হাদীছগুলো এর কোন প্রমাণ বহন করে না। কারণ কেবল দু’জন ছাহাবীর স্বপ্নের মাধ্যমে আযানের বিধান সাব্যস্ত হয়নি। বরং রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমোদনের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। আর স্বপ্ন তখনই অহী হিসাবে গণ্য হবে যখন তা রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক স্বীকৃত হবে। সুতরাং ওলী-আওলিয়াদের কাছে স্বপ্নযোগে অহী আসার কোন দলীল নেই। তবে নেককার ব্যক্তিদের ভাল স্বপ্ন কখনও সত্য হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ’ (বুখারী হা/৬৯৮৩; মুসলিম হা/২২৬৩; মিশকাত হা/৪৬২২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের মধ্যে কিছু লোক ছিলেন মুহাদ্দাছ (আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত), আমার উম্মতের মধ্যে যদি কেউ এমন থেকে থাকে তবে সে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাবই হবে’ (বুখারী, মুসলিম হা/২৩৯৮; তিরমিযী হা/৩৬৯৩)

প্রশ্ন (২২/৩৪২) : জনৈক ব্যক্তির পিতা জাদুটোনা করে থাকে। আর সে ঐ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় গমন করে। এই ব্যক্তি বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ছেলের কাছ থেকে টাকা নেয় এবং সে টাকা জাদু করার কাজে খরচ করে। এক্ষণে প্রশ্ন হ’ল- এগুলো জানা সত্ত্বেও পিতাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করা বৈধ হবে কি? 

উত্তর : এমতবস্থায় পিতার অবৈধ কাজে কোনরূপ সহযোগিতা করা যাবে না (মায়েদা ৫/২; তিরমিযী হা/১৭০৭; মিশকাত হা/৩৬৯৬)। খাওয়া, পরা ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যেতে যতটুকু খরচ লাগে কেবল ততটুকু খরচ দিতে হবে। সেই সাথে পিতাকে শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। স্মর্তব্য যে, পিতা-মাতা সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহার পাওয়ার হকদার (ইসরা ১৪/২৩-২৪)। তারা শিরক করার জন্য চাপ দিলে তাদের আনুগত্য করা যাবে না, কিন্তু তাদের সাথে সদাচরণ করে যেতে হবে (লোক্বমান ৩১/১৪-১৫)

প্রশ্ন (২৩/৩৪৩) : কোন কোন আমল করলে আমার আববা বারযাখী জীবনে শান্তিতে থাকতে পারবেন এবং তার গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দিয়ে তাকে জান্নাতে দাখিল করাবেন? 

উত্তর :  পিতার জন্য সন্তানের কর্তব্য হ’ল তাঁর জন্য সাধ্যমত ছাদাক্বা করা এবং নিয়মিত তাঁর মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কেবল তিনটি আমল ব্যতীত- (১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ (যেমন মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ, অনাবাদী জমিকে আবাদকরণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ, দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপন, বই ক্রয় করে বা ছাপিয়ে বিতরণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি)। (২) ইলম, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় (যা মানুষকে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর পথ দেখায় এবং যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত হ’তে বিরত রাখে)। (৩) সুসন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’ (মৃতের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হ’ল সুসন্তান, যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, ছাদাক্বা করে, তার পক্ষ হ’তে হজ্জ করে ইত্যাদি) (মুসলিম হা/১৬৩১, মিশকাত হা/২০৩)
অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমল জারী থাকে। (১) দ্বীনী ইলম শিক্ষা দান করা (২) নদী-নালা প্রবাহিত করা (৩) কূপ খনন করা (৪) খেজুর তথা ফলবান বৃক্ষ রোপণ করা (৫) মসজিদ নির্মাণ করা (৬) কুরআন বিতরণ করা (৭) এমন সন্তান রেখে যাওয়া, যে পিতার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (মুসনাদ বাযযার হা/৭২৮৯; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০২)। এটি পূর্বোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা স্বরূপ।

প্রশ্ন (২৪/৩৪৪) : পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও কি রামাযানের ছিয়াম ফরয ছিল?

উত্তর : কুরআনের ভাষ্য থেকে বোঝা যায় যে, পূর্ববতী নবী-রাসূল ও তাদের উম্মতদের উপরও ছিয়াম ফরয ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। তবে তাদের উপর নির্দিষ্টভাবে রামাযানের ছিয়াম ফরয ছিল কি-না কিংবা তাদের উপর ফরযকৃত ছিয়ামের সংখ্যা ও ধরন সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছে সরাসরি কোন বর্ণনা নেই। যদিও ছাহাবী ও তাবেঈদের পক্ষ থেকে কিছু আছার এসেছে। যেমন মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তাদের উপর প্রতি মাসে তিনটি করে ও আশূরার ছিয়াম ফরয ছিল। আর ছিয়ামগুলো মুসলমানেরা মদীনা আসার পূর্ব পর্যন্ত বরং মদীনাতে গিয়েও ১৭ বা ১৯ মাস পালন করেছেন। রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করলে ঐগুলো নফল হিসাবে থেকে যায় এবং রামাযানের ছিয়াম ফরয করা হয় (হাকেম হা/৩০৮৫; আহমাদ হা/২২১৭৭; ইরওয়া)। মুজাহিদ বলেন, প্রত্যেক জাতির উপর রামাযানের ছিয়াম ফরয ছিল। শা‘বী ও অন্যান্যরা বলেন, ইহুদী ও নাছারাদের উপর রামাযানের ছিয়াম ফরয করা হয়। পরে তারা সময়ের পরিবর্তন করে। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তারা সুস্থ হওয়ার জন্য আরো দশটি করে ছিয়াম পালনের মানত করলে পরে তা ৫০টিতে রূপান্তরিত হয়। হাসান বছরীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের পূর্ববর্তী সকল উম্মতের উপর এক মাস ছিয়াম ফরয ছিল (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/৪৯৭)। হাফেয ইবনু জারীর আত-তাবারী এসকল বর্ণনার সমন্বয় করে বলেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর পরবর্তী সকল নবী ও তাদের অনুসারীদের প্রতি একমাস ছিয়াম পালন ফরয ছিল। আর এরও পূর্ববর্তী যারা ছিল তাদের উপর আইয়ামে বীযের তিনটি ছিয়াম ফরয ছিল (তাফসীরে তাবারী ৩/৪১২)

প্রশ্ন (২৫/৩৪৫) : জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন কোন কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে কী? 

উত্তর : খুৎবা চলাকালীন মসজিদের বাইরে অবস্থান করলে খাওয়া ও পান করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু মসজিদে অবস্থানকালে পানাহারসহ দুনিয়াবী কাজ করা নিষিদ্ধ। তবে অসুস্থ হ’লে বা বাধ্যগত অবস্থায় পড়লে খাদ্য বা পানি গ্রহণে দোষ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫২৯; বাহুতী, কাশ্শাফুল কেনা‘ ৩/৩৮৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/১৮৫; উছায়মীন, তা‘লিকাতুল আলা কাফী লি ইবনু কুদামাহ ২/২৩৭)

প্রশ্ন (২৬/৩৪৬) : আলী (রাঃ) কি যয়নাব বিনতে জাহাশ ও উম্মে সালামা (রাঃ)-কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন? তাদের জন্য তার থেকে উত্তম স্বামী পাওয়ার ব্যাপারে দো‘আ করেছিলেন এবং নিজের জন্যও তাদের চেয়ে উত্তম স্ত্রীর দো‘আ করেছিলেন। ফলে ফাতেমা (রাঃ)-এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়? 

উত্তর : উক্ত ঘটনার কোন ভিত্তি নেই। বরং যয়নব বিনতে জাহাশ যায়েদ বিন হারেছার নিকট থেকে তালাকপ্রাপ্তা হ’লে রাসূল (ছাঃ) তাকে বিয়ে করেন (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৩৫৬০)। আবু সালামা (রাঃ) মৃত্যুকালে দো‘আ করেছিলেন যেন উম্মে সালামা তার মৃত্যুর পর তার অপেক্ষা অধিক উত্তম স্বামী পান। তার দো‘আ কবুল হয়েছিল। উম্মে সালামাকে রাসূল (ছাঃ) বিয়ে করেন। ফলে উম্মে সালামা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষকে স্বামী হিসাবে পান (মুসলিম হা/৯১১; হাকেম হা/৬৭৫৯; আহমাদ হা/২৬৭১১)

প্রশ্ন (২৭/৩৪৭) : হালাল ও জায়েয এবং হারাম ও নাজায়েযের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর : ফক্বীহদের নিকট জায়েয ও হালাল এবং নাজায়েয ও হারামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ই সমার্থক হিসাবে ব্যবহৃত হয় (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১/১০; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১১২/০২)

প্রশ্ন (২৮/৩৪৮) : বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে দেখা যায়, আবুবকর (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে মারার জন্য কুনফুয নামক এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন। তার ছড়ির আঘাতে ফাতেমার গর্ভপাত হয়ে যায় এবং এর প্রভাবেই তিনি মারা যান। এই ঘটনার কোন সত্যতা আছে কি? 

উত্তরঃ  উক্ত ঘটনা শী‘আ ঐতিহাসিকরা তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, যা কিছু সুন্নী ঐতিহাসিকও তাদের গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন। অথচ ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। এর দ্বারা শী‘আরা হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর মর্যাদায় আঘাত করতে চেয়েছে এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চেয়েছে (ইবনু জারীর তাবারী, শীঈ, দালায়েলুল ইমামাহ ৪৫পৃ; তিব্রীসী, আল- ইহতিজাজ ১/৫১, ২০১-২০৩; বাহরুল আনওয়ার ৪৩/১৭৯)। শী‘আদের রচিত এরূপ মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনাসমূহের প্রতিবাদে বিদ্বানগণ বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ; ইবনু আবিল হাদীদ, শারহু নাহজিল বালাগাহ ১/৩৮৬, ২/৬০; ইহসান ইলাহী যহীর, শী‘আ ওয়া আহলিল বায়ত ১/১৭৫-১৮০)

প্রশ্ন (২৯/৩৪৯) : অনেকে বলেন, খুৎবার সময় তাশাহহুদের হালতে বসতে হবে। এর প্রমাণে কোন দলীল আছে কি?

উত্তর : জুম‘আর খুৎবা শ্রবণের জন্য বসার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। মুছল্লী আদব বজায় রেখে সুবিধামত বসবে। তবে সাধারণ অবস্থায় যেভাবে বসা সমীচীন নয় মসজিদেও সেভাবে বসা উচিৎ নয় (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২৩৫)। যেমন হাদীছে এসেছে, ছাহাবীগণ বলেন, রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিন ইমামের খুৎবা চলাকালে কাউকে হাঁটু উপরে উঠিয়ে কাপড় জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/১১১০; মিশকাত হা/১৩৯৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৮৭৬)। সর্বোপরি ইমামের খুৎবা চলাকালে মুছল্লী এমনভাবে বসবে যেন ইমামের চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করতে পারে (তিরমিযী হা/৫০১; মিশকাত হা/১৪১৪; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৫৫০৩; ছহীহাহ হা/২০৮২)

প্রশ্ন (৩০/৩৫০) : আমাদের মসজিদের ইমাম জুম‘আর খুৎবার শেষে মিম্বারে থাকা অবস্থায় ছালাতের আগে মুছল্লীদের নিয়ে দু’হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ করেন। এভাবে দো‘আ করা কি জায়েয? 

উত্তর :  খুৎবা চলাকালীন ইমাম ও মুক্তাদীদের হাত তুলে মুনাজাত করা বিদ‘আত। রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম এভাবে হাত উত্তোলন করে দো‘আ করেননি। কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য হাত তুলে দো‘আ করেছিলেন। বর্তমানেও এরূপ পরিস্থিতি আসলে দো‘আ করতে পারে। কিন্তু এটিকে দলীল হিসাবে নিয়ে নিয়মিত খুৎবায় হাত তুলে দো‘আ করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর পরে কোন ছাহাবী এভাবে দো‘আ করেননি। অথচ রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নে ছাহাবীগণই অধিক অগ্রগামী ছিলেন (নববী, শারহু মুসলিম হা/৮৭৪-এর আলোচনা ৬/১৬২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৩৯)। বরং কেউ খুৎবায় হাত উত্তোলন করে মুনাজাত করলে ছাহাবায়ে কেরাম বাধা দিয়েছেন বলে দলীল পাওয়া যায়। যেমন একদিন বিশর ইবনু মারওয়ান জুম‘আর খুৎবা প্রদানকালে দো’আ করার সময় উভয় হাত উপরে তুললেন। এতে ছাহাবী উমারা বললেন, আল্লাহ এই বেঁটে হাত দু’টিকে কুৎসিত করুন। আমি নিশ্চিতরূপে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি, তিনি নিজের হাত দিয়ে (ইশারা)-এর বেশী কিছু করতেন না (মুসলিম হা/৫৩; তিরমিযী হা/৫১৫; আবুদাউদ হা/১১০৪; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৯৩, সনদ ছহীহ)। তবে ইমাম যদি দো‘আ পাঠ করেন আর মুছল্লীরা নিম্নস্বরে আমীন বলে তবে তাতে কোন দোষ নেই। কারণ এটা দো‘আ কবুলের সময় বলে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (ঊছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ১/৬৯৫)

প্রশ্ন (৩১/৩৫১) : স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আমি তাকে কুড়াল দিয়ে মারতে যাই। সে হাত দ্বারা প্রতিহত করে এবং ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কুড়ালটি এসে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমি রাগান্বিত হয়ে তাকে তিন তালাক দেই। রাগ প্রশমিত না হওয়ায় তাকে আরো এক তালাক দেই। পরে লোকজন এসে আমাদের দু’জনকে দু’দিকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাগ কমলে আমি অত্যন্ত অনুতপ্ত হই এবং আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাই। এক্ষণে আমি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে করণীয় কি?

উত্তর : এক বৈঠকে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয় (মুসলিম হা/১৪৭২)। কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তুহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিবে। আর ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)। ছাহাবী আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে ফেরত নাও। তিনি বললেন, আমি তাকে এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই এ খবর জানি। তুমি তাকে ফেরত নাও (আবূদাঊদ হা/২১৯৬, সনদ হাসান)। অতএব প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, ‘তাহলীল’ বা হিল্লা একটি জাহেলী প্রথা। এর সাথে ইসলামী শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লা‘নত করেছেন (নাসাঈ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩২৯৬-৯৭)। এক সাথে তিন তালাককে তালাকে বায়েন গণ্য করার মন্দ প্রতিক্রিয়ায় মাযহাবের নামে ‘হিল্লা’ প্রথা চালু হয়েছে। অথচ এক সঙ্গে তিন তালাক বায়েন বিষয়টি পবিত্র কুরআন (বাক্বারাহ ২/২২৮-২৯; তালাক ৬৫/১) ও ছহীহ হাদীছ সমূহের প্রকাশ্য বিরোধী (মুসলিম হা/১৪৭২; আবুদাঊদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮৭)। সবচেয়ে বড় কথা হ’ল, এতে স্বামী-স্ত্রী তাদের আকস্মিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেওয়া সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অতএব ধর্মের নামে প্রচলিত এই নোংরা প্রথা থেকে প্রত্যেক মুমিন নর-নারীকে বেঁচে থাকা আবশ্যক (বিস্তারিত দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদু্ল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)

প্রশ্ন (৩২/৩৫২) : স্বামী ও স্ত্রী জামা‘আতে ছালাত পড়তে পারবে কি? 

উত্তর : স্বামীর ইমামতিতে স্ত্রী জামা‘আতে ছালাত আদায় করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পিছনের কাতারে দাঁড়াবে (ফাতাওয়া ইসলামিয়া ১/৫৫৯)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা একদিন রাসূলের সাথে ছালাতে দাঁড়ালাম। তখন আমি ও ইয়াতীম বালক তার পেছনে দাঁড়ালাম এবং বৃদ্ধা মহিলা আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলেন (বুখারী হা/৩৮০; মুসলিম হা/৬৫৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, একবার নবী (ছাঃ)  তাকে, তার মা ও খালাসহ ছালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। আর মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে  (মুসলিম হা/৬৬০; মিশকাত হা/১১০৯)

প্রশ্ন (৩৩/৩৫৩) : একটি জাতীয় দৈনিকে লেখা হয়েছে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) শতাধিক কিতাব লিখে ইসলামের মৌলিক সমস্যা সমাধানে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলেই ইসলাম মাযহাবী খুঁটির উপর দন্ডায়মান। বক্তব্যটির সত্যতা জানতে চাই। 

উত্তর: এ বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর উপর চরম মিথ্যা অপবাদ। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নিজস্ব রচিত কোন কিতাব নেই। যে কিতাবগুলো তাঁর নামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় তার কোন ভিত্তি নেই। মূলতঃ দু’টি কিতাব তাঁর রচিত বলে উল্লেখ করা হয়। একটি হ’ল- মুসনাদে ইমাম আবু হানীফা। দ্বিতীয়টি হ’ল- আল-ফিক্বহুল আকবার। কিন্তু এতে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা এটি ধারাবাহিক সূত্রে প্রমাণিত নয়। আবার এই কিতাবে এমন কিছু আলোচনা রয়েছে যা ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর বহু বছর পরে ঘটেছে। যেমন কুরআন আল্লাহর মাখলূক না তাঁর কালাম? যা প্রমাণ করে যে, এটি তার রচিত কিতাব নয় (ড. আব্দুল আযীয হুমায়দী, বারাতু আইম্মাতিল আরবা‘আ ৫৫-৭৬ পৃ: দ্রষ্টব্য)। তাছাড়া ইসলাম মাযহাবী খুঁটির উপর দন্ডায়মান কথাটি অত্যন্ত আপত্তিকর। কেননা মাযহাবসমূহ শরী‘আত গবেষণার ধারাবাহিকতা মাত্র। এর উপর ইসলামী শরী‘আত নির্ভরশীল নয়। বরং ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তি বা খুঁটি হ’ল কুরআন এবং ছহীহ হাদীছ। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সহ সকল ইমামই সর্বাবস্থায় কুরআন এবং সুন্নাহকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এটাই সালাফে ছালেহীনের সর্ববাদীসম্মত নীতি।

প্রশ্ন (৩৩/৩৫৩) : একটি জাতীয় দৈনিকে লেখা হয়েছে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) শতাধিক কিতাব লিখে ইসলামের মৌলিক সমস্যা সমাধানে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলেই ইসলাম মাযহাবী খুঁটির উপর দন্ডায়মান। বক্তব্যটির সত্যতা জানতে চাই। 

উত্তর: এ বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর উপর চরম মিথ্যা অপবাদ। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নিজস্ব রচিত কোন কিতাব নেই। যে কিতাবগুলো তাঁর নামের সাথে সম্পৃক্ত করা হয় তার কোন ভিত্তি নেই। মূলতঃ দু’টি কিতাব তাঁর রচিত বলে উল্লেখ করা হয়। একটি হ’ল- মুসনাদে ইমাম আবু হানীফা। দ্বিতীয়টি হ’ল- আল-ফিক্বহুল আকবার। কিন্তু এতে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। কেননা এটি ধারাবাহিক সূত্রে প্রমাণিত নয়। আবার এই কিতাবে এমন কিছু আলোচনা রয়েছে যা ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর বহু বছর পরে ঘটেছে। যেমন কুরআন আল্লাহর মাখলূক না তাঁর কালাম? যা প্রমাণ করে যে, এটি তার রচিত কিতাব নয় (ড. আব্দুল আযীয হুমায়দী, বারাতু আইম্মাতিল আরবা‘আ ৫৫-৭৬ পৃ: দ্রষ্টব্য)। তাছাড়া ইসলাম মাযহাবী খুঁটির উপর দন্ডায়মান কথাটি অত্যন্ত আপত্তিকর। কেননা মাযহাবসমূহ শরী‘আত গবেষণার ধারাবাহিকতা মাত্র। এর উপর ইসলামী শরী‘আত নির্ভরশীল নয়। বরং ইসলামী শরী‘আতের ভিত্তি বা খুঁটি হ’ল কুরআন এবং ছহীহ হাদীছ। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সহ সকল ইমামই সর্বাবস্থায় কুরআন এবং সুন্নাহকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এটাই সালাফে ছালেহীনের সর্ববাদীসম্মত নীতি।

প্রশ্ন (৩৪/৩৫৪) : ছালাতরত অবস্থায় মোবাইলে রিং বেজে উঠলে তা সাথে সাথে বন্ধ করা যাবে কি? 

উত্তর : মোবাইল বন্ধ করেই ছালাতে আসবে। ভুলবশতঃ মোবাইল বন্ধ না করে ছালাত শুরু করলে এবং ছালাতরত অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে তা বন্ধ করা যাবে। কেননা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায় এমন কাজ ছালাত অবস্থায় প্রতিহত করা যায় (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০০৫)

প্রশ্ন (৩৫/৩৫৫) : মানুষ কি কখনো জিন বা শয়তানকে দেখতে পারে? 

উত্তর : সাধারণভাবে মানুষ জিন বা শয়তানকে দেখতে পায় না। আল্লাহ বলেন, ‘সে ও তার দল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমরা শয়তানকে অবিশ্বাসী লোকদের বন্ধু বানিয়ে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/২৭)। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ জিনকে দেখতে পারে। জিন জাতিকে সোলায়মান (আঃ)-এর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি জিনদের দ্বারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস নির্মাণ করেছিলেন। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘গত রাতে একটা অবাধ্য জিন হঠাৎ করে আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যেন সে আমার ছালাতে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোরবেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)-এর উক্তি আমার স্মরণ হ’ল, ‘হে রব! আমাকে দান কর এমন রাজত্ব, যার অধিকারী আমার পরে কেউ না হয়’ (নামল ৩৫/৩৮; বুখারী হা/৪৬১; আহমাদ হা/১১৭৯৮৭; ছহীহাহ হা/৩২৫১)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, কোন অবস্থায় মানুষ জিনকে দেখতে পাবে না এমনটি নয়। বরং ভাল বা মন্দ ব্যক্তিরাও বিশেষ সময়ে জিনদের দেখতে পারে (মাজমূঊল ফাতাওয়া ১৫/৭)

প্রশ্ন (৩৬/৩৫৬) : কাদিয়ানীদের বই-পুস্তক পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : সাধারণ মানুষের জন্য কাদিয়ানীদের বই-পুস্ত্তক ও তাফসীর পাঠ করা জায়েয নয়। কারণ এতে আক্বীদা নষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। একবার ওমর (রাঃ)-এর হাতে তাওরাতের একটি অংশ দেখে রাসূল (ছাঃ) রেগে গিয়ে তাঁকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘হে খাত্ত্বাবের ছেলে! তোমার কি সন্দেহ রয়েছে? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর কোন গত্যন্তর ছিল না’ (আহমাদ হা/১৫১৫৬; মিশকাত হা/১৭৭; ইরওয়া হা/১৫৮৯)। তবে যারা শারঈ বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ, তারা কেবল পথভ্রষ্টদের মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচনের জন্য তাদের বই-পুস্ত্তক পড়তে পারে (মাতালিবু উলিন নুহা ১/৬০৭)

প্রশ্ন (৩৭/৩৫৭) : আমার মামা মারা গেছেন। তার কোন ছেলে-মেয়ে নেই। তার একজন স্ত্রী ও তিনজন বোন আছে। কে কতটুকু অংশ পাবে? 

উত্তর : এক্ষেত্রে স্ত্রী এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর বাকী সম্পত্তি বোনেরা আছহাবুল ফুরুয ও পরে আছাবা হিসাবে পুরো সম্পত্তি পেয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্ত্রীরা সিকি পাবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে’ (নিসা ৪/১১)। তিনি আরো বলেন, আর যদি পিতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ বা স্ত্রী মারা যায় এবং তার একজন ভাই অথবা বোন থাকে, তবে তারা প্রত্যেকে এক-ষষ্ঠাংশ করে পাবে। আর যদি তারা একাধিক হয়, তাহ’লে তারা সকলে এক-তৃতীয়াংশে শরীক হবে, অছিয়ত পূরণ অথবা ঋণ পরিশোধের পর, কাউকে কোনরূপ ক্ষতি না করে। এটি আল্লাহ প্রদত্ত বিধান’ (নিসা ৪/১২)। আর যদি বোনেরা ছাড়াও অন্য কোন নিকটাত্মীয় (আছাবা) থাকে, তবে তারাও এই সম্পত্তির অংশীদার হবে। 

প্রশ্ন (৩৮/৩৫৮) : একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম হাদীছের বরাতে বলা হয়েছে. শা‘বান মাসে বেশী বেশী ছিয়াম রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হ’লে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এ বছর যারা মারা যাবে, তাদের নাম এই মাসেই লিখে নেয়া হয়। এজন্য আমি পসন্দ করি যে, আমার নামটা যখন তালিকাভুক্ত করা হবে, তখন যেন আমি ছিয়ামরত থাকি’। হাদীছটি কি ছহীহ? 

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ এবং মুনকার (আবু ইয়া‘লা হা/৪৯১১; যঈফাহ হা/৫০৮৬; যঈফুত তারগীব হা/৬১৯)। বরং শা‘বান মাসে অধিকহারে ছিয়াম পালনের ব্যাপারে উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘শা‘বান মাস রজব এবং রামাযানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস যে মাসের (গুরুত্ব সম্পর্কে) মানুষ খবর রাখে না। অথচ এ মাসে আমলনামাসমূহ আল্লাহ রাববুল আলামীনের নিকটে পেশ করা হয়। তাই আমি পসন্দ করি যে, আমার আমলনামা আল্লাহ তা‘আলার নিকটে পেশ করা হবে আমার ছিয়াম পালনরত অবস্থায়’ (নাসাঈ হা/২৩৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/১০২২)

প্রশ্ন (৩৯/৩৫৯) : হাদীছে আছে যদি কেউ ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করার পর একই স্থানে বসে থেকে যিকির করতে থাকে এবং সূর্য উঠার পর ইশরাকের ছালাত আদায় করে তাহ’লে এক ওমরা এবং এক হজ্জের ছওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু ঘুমের কারণে জামা‘আত না পেলে বাসায় একাকী একই আমল করলে কি এই নেকী পাওয়া যাবে? 

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। অতএব নিয়মিত এই আমলকারী ব্যক্তি যদি কোনদিন শারঈ ওযর তথা ভীতি বা অসুস্থতার মত বাধ্যগত কারণে বাড়িতে জামা‘আতে ছালাত আদায় করে এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত যিকর-আযকার পাঠ শেষে ইশরাকের ছালাত আদায় করে, তাহ’লে পূর্ণ এক হজ্জ ও ওমরার ছওয়াব হাছিল করবে ইনশাআল্লাহ (ফাৎহুল বারী ৬/১৩৭; হাশিয়াতুল আদাভী ১/২৮৫; হাশিয়াতুত ত্বাহত্বাভী ১/১৮১; উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ১/৩৬)

প্রশ্ন (৪০/৩৬০) : পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মধ্যে কোন ওয়াক্তের ছালাত রাসূল (ছাঃ) সর্বপ্রথম আদায় করেছিলেন? 

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) তাঁর উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পর সর্বপ্রথম যোহরের ছালাত আদায় করেছিলেন। যেমন হাদীছে এসেছে, আবু বারাযাহ আসলামী (রাঃ)-কে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত যাকে তোমরা প্রথম ছালাত বলে থাক, সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন’ (বুখারী হা/৫৪৭; মিশকাত হা/৫৮৭)। হাসান বলেন, রাসূল (ছাঃ) প্রথম যে ছালাত আদায় করেছিলেন তা ছিল যোহরের ছালাত। এসময় জিব্রীল (আঃ) আসেন। তিনি সামনে দাঁড়ান, তাঁর পিছনে রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর পিছনে ছাহাবীগণ দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করেছিলেন (মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/১৭৭১; ফাৎহুল বারী ২/২৭; ফাৎহুল বারী ৩/৮১; ইহ্কামুল আহকাম ১/১৬৭; সুবুলুল হুদা ৩/১১৩)

জুলাই/২০১৯

প্রশ্ন (১/৩৬১) : মহিলাদের ব্যবহৃত সোনার যাকাত নিয়ে বিদ্বানদের মতভেদ রয়েছে জেনেছি। এক্ষেত্রে সঠিক ফয়ছালা কোনটি হবে?
উত্তর : মহিলাদের ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে সঠিক কথা হ’ল, নারীদের ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত ফরয। যেমন (১) হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যয়নব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে খুৎবায় বলেন, হে নারী জাতি! তোমরা ছাদাক্বা কর, যদিও তোমাদের অলংকার দ্বারা হয়। কেননা ক্বিয়ামতের দিন তোমরাই জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশ হবে’ (তিরমিযী হা/৩৫৬; মিশকাত হা/১৮০৮)। (২) একবার ইয়ামনবাসী জনৈকা মহিলা তার কন্যাসহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি পসন্দ কর যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিয়ে দেন? রাবী বলেন, একথা শুনে উক্ত মহিলা তার হাত থেকে বালা দু’টি খুলে রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য (নাসাঈ হা/২৪৭৯; আবুদাউদ হা/১৫৬৩; তিরমিযী হা/৬৩৭; মিশকাত হা/১৮০৯; ছহীহুত তারগীব হা/৭৬৮)। (৩) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি স্বর্ণের গহনা পরতাম। একদিন আমি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি সেই কান্যের অন্তর্ভুক্ত, যার শাস্তির কথা কুরআনে এসেছে (তওবা ৯/৩৪-৩৫)? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং তাতে যাকাত দেওয়া হয়, তখন তা কান্য হয় না’ (আবুদাঊদ হা/১৫৬৪; মিশকাত হা/১৮১০)
(৪) আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদিন রাসূল (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বালা দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহ যা চেয়েছিলেন তাই বলেছি। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট’ (আবুদাঊদ হা/১৫৬৫; ছহীহুত তারগীব হা/৭৬৯)। (৫) আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, আমি ও আমার খালা হাতে স্বর্ণের বালা পরিহিতা অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা কি এর যাকাত দাও? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি ভয় পাও না যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে  তোমাদেরকে  আগুনের  বালা  পরাবেন?  তোমরা যাকাত আদায় কর’ (মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৬৫৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৭৭০)
উপরোল্লিখিত হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত দিতে হবে। আর যেকোন মতপার্থক্যপূর্ণ বিষয়ে সন্দেহমুক্ত আমল করাই উত্তম (তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান ২/১৩৪; মু‘আলিমুস সুনান ২/১৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/২৬৫; বিন বায, ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/৮৪)

প্রশ্ন (২/৩৬২) : ‘খতমে বুখারী’ অনুষ্ঠান করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : মাদরাসা সমূহে যে খতমে বুখারীর অনুষ্ঠান করা হয়, তা যদি সুন্নাত বা আবশ্যকীয় মনে না করা হয় এবং তাতে রিয়া বা কোন দুনিয়াবী স্বার্থ যুক্ত না থাকে, তাহ’লে স্রেফ আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ এ ধরনের অনুষ্ঠান করা যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, পিতা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) ১২ বছরে সূরা বাক্বারাহ শেষ করেন। অতঃপর যেদিন শেষ হয়, সেদিন তিনি কয়েকটি উট নহর করে সবাইকে খাওয়ান’ (মুক্বাদ্দামা তাফসীর কুরতুবী ৭৬ পৃ.; যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ৩/২৬৭; দ্র. ‘কুরআন অনুধাবন’ বই ১৮ পৃ.)

প্রশ্ন (৪/৩৬৪) : ছালাতে সালাম ফেরানোর সময় ডানে এবং বামে পূর্ণ মুখ ঘুরিয়ে তারপর সালাম বলতে হবে নাকি সালামের শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে হবে?

-মিনহাজ পারভেয, হড়গ্রাম, রাজশাহী।
উত্তর : সালামের শব্দগুলো উচ্চারণ করতে করতে মুখ ডানে এবং বামে ঘুরাতে হবে। কেননা সালামই মুখ ঘুরানোর কারণ। অতএব সালাম সহকারেই ডানে-বামে মুখ ঘুরাতে হবে, মুখ পূর্ণভাবে ঘুরিয়ে তারপর সালাম বলা সঠিক পদ্ধতি নয় (মুগনী ১/৩৯৮; আল-ইনছাফ ২/৮২-৮৩; ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ৮/০২)

প্রশ্ন (৫/৩৬৫) : দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদে জামা‘আতে ছালাতের রুকূ ধরার জন্য সামনের কাতার খালি রেখেই পেছনের কাতারে দাঁড়ানো এবং নীচ তলায় কাতার ফাঁকা রেখেই উপরের তলায় গিয়ে ছালাত আদায় করার হুকুম কি?

উত্তর : সামনের কাতার পূরণ না করে পিছনে কাতার বানানো বা নীচের তলায় ফাঁকা রেখে উপর তলায় দাঁড়ানো সিদ্ধ নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) সামনের কাতার পূরণ করে পিছনের কাতার পূর্ণ করার আদেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের নিকটে যেরূপ সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হয়ে থাকে তোমরা ঐরূপ করো না কেন?... তিনি বললেন, তারা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূরণ করে, অতঃপর পর্যায়ক্রমে কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং তারা কাতারে দন্ডায়মান হওয়ার সময় পরস্পর মিলে দাঁড়ায়’ (মুসলিম হা/৪৩০; মিশকাত হা/১০৯১)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কাঁধ সমূহ সমানভাবে মিলাও, ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন স্থান ফাঁকা রেখো না। কেননা যে ব্যক্তি কাতারে মিলে দাঁড়াল, আল্লাহ তার সঙ্গে থাকেন। আর যে ব্যক্তি তা কর্তন করল, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন’ (আবুদাঊদ হা/৬৬; মিশকাত হা/১১০২; ছহীহাহ হা/৭৪৩)। কেউ যদি সামনের কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও একাকী পিছনের কাতারে দাঁড়ায়, তাহ’লে তার ছালাত বাতিল হবে এবং পুনরায় পড়তে হবে (তিরমিযী হা/২৩০; মিশকাত হা/১১০৫)। এক্ষণে যদি কেউ নীচ তলায় জায়গা থাকা সত্ত্বেও উপরে উঠে যায় এবং উভয় তলাতেই মুছল্লী যোগদান করে, তাহ’লে তার ছালাত হয়ে যাবে। যদিও সেটি ত্রুটিপূর্ণ হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪১০)

প্রশ্ন (৬/৩৬৬) : সূদের টাকা ছওয়াবের আশা ছাড়া কোথায় দান করা সবচেয়ে উত্তম? আমি চাচ্ছি না মাদ্রাসায় এই টাকা ‘তালিবে ইলম’ দের কোন কাজে ব্যবহৃত হোক। 

উত্তর : এধরনের সম্পদ ছওয়াবের আশা ব্যতীত ফকীর-মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। এছাড়া মুসলমানদের কল্যাণার্থে অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যেমন অভাবী আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ইত্যাদি (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৩৫২, ১৬/৫৩২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হারাম মাল সঞ্চয় করে, অতঃপর তা থেকে ছাদাক্বা করে, তাতে সে ছওয়াব পাবে না এবং এর পাপ তার উপরই বর্তাবে’ (শু‘আবুল ঈমান হা/৩৪৭৭; হাকেম হা/১৪৪০; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩৫৬, ছহীহুত তারগীব হা/৮৮০)

প্রশ্ন (৭/৩৬৭) : গ্রামের দু’পাশে দু’টি মসজিদ রয়েছে। গ্রামের মধ্যস্থলে বাজারের নিকটে জুম‘আ মসজিদের সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে আরেকটি ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি? তাছাড়া একটি মসজিদের অর্থ দিয়ে অন্য মসজিদ নির্মাণে অর্থ ব্যয় করা যাবে কি? 

উত্তর : এরূপ কারণে মসজিদ নির্মাণে কোন বাধা নেই এবং কমিটির সম্মতিক্রমে এক মসজিদের অতিরিক্ত অর্থ অন্য মসজিদে ব্যবহারেও কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৬/৩১; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, এক মসজিদের অতিরিক্ত অর্থ অন্য মসজিদে ব্যবহার করতে পারে’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/১৮, ২০৬-২০৭)। তবে জামা‘আত বড় রাখার স্বার্থে একই মসজিদে ছালাত আদায় করা উত্তম। কেননা জামা‘আত যত বড় হয়, আল্লাহর নিকট সেটি ততবেশী প্রিয়তর হয় (আবুদাউদ হা/৫৫৪; নাসাঈ হা/৮৪৩, সনদ ছহীহ; মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/২২১)

প্রশ্ন (৮/৩৬৮) : জনৈক ইমাম ছাহেব খুৎবায় বলেন, ১০ই যিলহজ্জ মিনাতে কংকর নিক্ষেপ করে মাথা মুন্ডন অতঃপর কুরবানী করতে হবে। আগপিছ করলে হজ্জ হবে না। এ কথা কি সঠিক? 

উত্তর : উপরোক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কংকর নিক্ষেপ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করা ও কুরবানী করা প্রসংগে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, لاَ حَرَجَ ‘এতে কোন অসুবিধা নেই’। অন্য বর্ণনায় এসেছে افْعَلُوْا وَلاَ حَرَجَ ‘এটি কর, এতে কোন অসুবিধা নেই’ (মুসলিম হা/১৩০৬, ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
 প্রশ্ন (৯/৩৬৯) : মসজিদের মাইকে শিশুদের পোলিও খাওয়ানো, টিকাদান, আবহাওয়া সম্পর্কে সতর্কীকরণ বা মক্তবের ক্লাসের কথা ঘোষণা করা যাবে কি?
উত্তর : মসজিদের মাইক কেবলমাত্র আযানের জন্যই নির্ধারিত। যা অন্য কাজে ব্যবহার বাঞ্ছনীয় নয়। এতে মৃত্যু খবর প্রচার করা আদৌ জায়েয নয়। কেননা তা না‘ঈ বা শোক সংবাদ প্রচারের শামিল। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ (তিরমিযী হা/৯৮৬; তালখীছ, পৃ. ১৯, ৯৮)। মসজিদের মাইকে আযান ব্যতীত অন্য কোন কাজে ব্যবহারের বিষয়ে সালাফে ছালেহীনের কোন নযীর পাওয়া যায় না। অতএব এগুলি পরিত্যাজ্য। 

প্রশ্ন (১০/৩৭০) : সিগারেট, কাঁচা তামাক ক্রয়-বিক্রয়, রফতানী এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো, মেশিনারী প্রভৃতি বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর যাকাত আদায় করতে হবে কি? 

উত্তর : উপরোক্ত পণ্য এবং সংশ্লিষ্ট জিনিসগুলি হারাম হওয়ায় সেগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে না। কারণ তা আল্লাহর নিকট কবুল হবে না। কেননা ‘আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্ত্ত ব্যতীত কবুল করেন না’ (মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল করেন না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা গ্রহণ করেন না’ (মুসলিম হা/২২৪; মিশকাত হা/৩০১; মিরক্বাত)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘কোন বান্দা হারাম পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ ছাদাক্বা করলে তা কবুল করা হবে না এবং নিজের কাজে ব্যবহার করলেও তাতে বরকত হবে না। আর ঐ সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মন্দের দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না। তবে সৎকর্ম দ্বারা মন্দকর্ম মিটিয়ে দেন’ (আহমাদ হা/৩৬৭২; মিশকাত হা/২৭৭১; শু‘আবুল ঈমান হা/৫৫২৪; হাকেম হা/৭৩০১, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, হারাম মালে যাকাত ফরয না হওয়ার বিষয়ে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের মধ্যেও ঐক্যমত রয়েছে। তাছাড়া যাকাত দেওয়া হয় মাল পবিত্র করার জন্য। অথচ পুরো মালই অপবিত্র হ’লে তা কাকে পবিত্র করবে? (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৩/২৪৮)
এতদ্ব্যতীত যে বস্ত্ত মৌলিকভাবে হারাম তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হওয়াও হারাম। যেমন তামাক মাদক দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মাদকতা আনয়নকারী বস্ত্ত হারাম’ (মুসলিম হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতির উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করলে তার বিক্রয়লব্ধ অর্থও হারাম করে দেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮; আহমাদ হা/২৯৬৪)। যেমন মদ হারাম সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নির্দেশ (মায়েদাহ ৯০) নাযিলের পর রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যার নিকট এই আয়াত পৌঁছে গেছে এবং তার নিকট এর কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে, সে যেন তা পান না করে এবং বিক্রয় না করে’। রাবী বলেন, অতঃপর যাদের নিকট মদ অবশিষ্ট ছিল তারা তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল এবং তা মদীনার রাস্তায় ঢেলে দিল (মুসলিম হা/১৫৭৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যিনি তা পান করা হারাম করেছেন, তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন’ (মুসলিম হা/১৫৭৯; ‘মদ বিক্রি হারাম’ অনুচ্ছেদ)। সুতরাং হারাম পণ্য বিক্রি করা ও এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ গ্রহণ করা সুস্পষ্টভাবে হারাম।
এক্ষণে এই হারাম সম্পদ যথাশীঘ্র নিজ মালিকানা থেকে বের করে দিতে হবে এবং ছওয়াবের আশা ছাড়াই জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে দান করে দিতে হবে। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ব্যক্তির নিজ ও নিজ পরিবার চালানোর জন্য যদি হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ ব্যতীত কোন সম্পত্তি না থাকে, তাহ’লে যতটকু প্রয়োজন ততটকু সেখান থেকে গ্রহণ করে বাকীগুলো ছাদাক্বা করে দিবে। যদিও এই ছাদাক্বায় তার কোন উপকার হবে না। তবে এতে কিছু গরীব উপকৃত হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৮; ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৩৮৯; যাদুল মা‘আদ ৫/৭৭৮)। অতএব এই সম্পদের কোন যাকাত নেই। বরং এই সমুদয় হারাম সম্পদ ছওয়াবের আশা ব্যতীত জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে।

প্রশ্ন (১১/৩৭১) : ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকার যাকাত কি পিতা বা অভিভাবককে আদায় করতে হবে? 

উত্তর : এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকেরাই শিশুর সম্পদ থেকে যাকাত আদায় করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪৬৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০২; বিন বায, ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৪১০)। ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা ইয়াতীমের সম্পদ দ্বারা ব্যবসা কর, যেন তা যাকাতের মাধ্যমে নিঃশেষ না হয়ে যায় (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৮৬৩)। এতে প্রমাণিত হয় যে, ইয়াতীম বা শিশুর সম্পদেও যাকাত প্রযোজ্য

প্রশ্ন (১২/৩৭২) : স্বামী-স্ত্রীর নামে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে এবং সন্তানদের নামেও কিছু টাকা জমা রয়েছে। এক্ষণে যাকাত প্রদানকালে উক্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিজনের সম্পদ কি আলাদাভাবে ভাগ করে যাকাত হিসাব করতে হবে, নাকি তাদের সম্মিলিত সম্পদের যাকাত একত্রিতভাবে আদায় করতে হবে?

উত্তর : মালিকানা আলাদা হওয়ায় সম্পদগুলো আলাদাভাবে নিছাব পরিমাণ হ’তে হবে এবং পৃথকভাবে যাকাত দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালিক যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের বহু পাত তৈরী করা হবে’ (মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়।)।
এখানে মালিক বলতে ব্যক্তি মালিকানাকে বুঝানো হয়েছে। অতএব ব্যক্তি মালিকানায় নিছাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকলেই কেবল যাকাত ফরয। অন্যথায় নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩)। উল্লেখ্য যে, পরিবারের একাধিক ব্যক্তি স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যবহার করলেও যদি তাতে পৃথক পৃথক মালিকানা না থাকে; বরং পরিবারের কোন এক ব্যক্তির মালিকানায় থাকে, তাহ’লে তা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত আদায় করতে হবে’(উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৬৩)

প্রশ্ন (১৩/৩৭৩) : দু’জন ব্যক্তি যৌথ ব্যবসা করে। এ দু’জনের একজনের সাথে কোম্পানীর সম্পর্ক ভাল থাকায় কোন একটি পণ্য বাজার মূল্যের চেয়ে কমে পায়। কিন্তু অপরজন একই দ্রব্য কিনতে গেলে সে বেশী মূল্যে কেনে। এক্ষণে প্রথমজন ভাউচার করার সময় কি পণ্যটির মূল্য ক্রয়কৃত মূল্য না লিখে দ্বিতীয়জন যে মূল্যে কিনত সেই মূল্য লিখে বাকী অর্থ লাভ হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে?

উত্তর : অংশীদারকে না জানিয়ে এককভাবে বাড়তি মূল্য গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কেননা এটি প্রতারণার শামিল। এক্ষেত্রে পরিচয় সূত্রে কেউ বিশেষ সুবিধা পেলে বা বিনামূল্যে পেলে তার ভাগীদার তারা উভয়ই হবে, বিশেষ কোন একজন নয়। অংশীদার তাকে অনুমতি দিলেই কেবল সে এই মূল্য গ্রহণ করতে পারবে। কোন মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বা লুকোচুরির আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)

প্রশ্ন (১৪/৩৭৪) : রাসূল (ছাঃ) জীবনে কতবার ইতেকাফ করেছিলেন? শেষ বছরে কেন তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেন? 

উত্তর : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, কুরআন প্রতি বছর (রামাযানে) একবার  রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে পেশ করা হ’ত। অতঃপর মৃত্যুর বছরে দু’বার পেশ করা হয়। আর তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। অতঃপর মৃত্যুর বছরে ২০ দিন ইতিকাফ করেন। ২য় হিজরীতে ছিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ছাঃ) সকল রামাযানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। মৃত্যুর বছর জীবনের শেষ রামাযানে তিনি ২০দিন ইতেকাফ করেন (বুখারী হা/২০৪৪, ৪৯৯৮; মিশকাত হা/২০৯৯)। কিন্তু এক বছর স্ত্রীদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি ইতেকাফ করেননি। ফলে রামাযানের পরেই শাওয়াল মাসে তার ক্বাযা ই‘তেকাফ করেন (বুখারী হা/২০৪৫)
আর জীবনের শেষ বছর বিশ দিন ইতেকাফ করার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে- যেমন (১) প্রতি রামাযানে জিব্রীল (আঃ) একবার কুরআন শুনাতেন। কিন্তু যে বছর মারা যান সে বছর দু’বার কুরআন শুনানোর কারণে বিশদিন ইতেকাফ করেন। (২) তিনি বেশী আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলেন। (৩) কারো মতে, তিনি ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সফরকালে ইতেকাফ করতে সক্ষম হননি। ফলে তার ক্বাযা স্বরূপ পরবর্তী রামাযানে তিনি বিশদিন ইতেকাফ করেছিলেন (হাকেম হা/১৬০২; ছহীহ ইবনু খুয়ায়মাহ হা/২২২৬, সনদ ছহীহ)

প্রশ্ন (১৫/৩৭৫) : এক রাত বা তিন রাত ই‘তেকাফ করা যাবে কি? সর্বনিম্ন কতদিন ই‘তেকাফ করা যায়? 

উত্তর : ই‘তেকাফের নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। বরং একটি দিনের জন্যও কেউ যদি আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ রাখে তাহ’লে সেটি ই‘তেকাফ হিসাবে গণ্য হবে। আর কেউ নির্দিষ্ট দিনের জন্য নিজেকে আটকে রাখার নিয়ত করলে সে দিনগুলো পালন করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮০০৬; আদ-দুর্রুল মুখতার ১/৪৪৫; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/৪৮৯, ৬/৫৮১৪; আল-ইনছাফ ৭/৫৫৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৪৪১)

প্রশ্ন (১৬/৩৭৬) : সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের আযানের সময় কি আলাদা?

-আবুল কালাম আযাদ, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।
উত্তর: সাহারীর শেষ সময় এবং ফজরের আযানের সময় আলাদা নয়। বরং সাহারীর শেষ সময়ই ফজরের আযানের সময়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় বেলাল (রাঃ) সাহারীর আযান দিতেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) ফজরের আযান দিতেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বেলালের আযান শুনে খাও, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতূমের আযান শুনতে পাও’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮০)

প্রশ্ন (১৭/৩৭৭) : কুরআন তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলা ঠিক হবে কি?

উত্তর : কুরআন তেলাওয়াত শেষে ‘ছাদাক্বাল্লাহুল আযীম’ বলার কোন দলীল পাওয়া যায় না। রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম এমনকি তাবেঈগণের আমল থেকেও এর বর্ণনা পাওয়া যায় না। সেজন্য অনেক বিদ্বান একে বিদ‘আত বলেছেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৩৩০-৩১; উছায়মীন, ইযালাতুস সাত্তার আনিল জাওয়াবিল মুখতার ৭৯-৮০ পৃ.)। বরং এর পরিবর্তে কুরআন তেলাওয়াত শেষে এ দোআটি পড়া যেতে পারে-سُبْحَانَكَ اَللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أشْهَدُ أنْ لاَ اِلَهَ إلاَّ اَنْتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ : ‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা’।
অনুবাদ : ‘মহা পবিত্র তুমি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি  ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)। (আবুদাউদ হা/৪৮৫৭; মিশকাত হা/২৪৫০; ছহীহাহ হা/৩১৬৪; ইমাম নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লি হা/৩০৮)

প্রশ্ন (১৮/৩৭৮) : সন্তানের ক্ষতি হওয়ার আশংকায় গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী মহিলা ছিয়াম পালন না করলে সেক্ষেত্রে ক্বাযা ছিয়াম আদায় করতে হবে, না ফিদইয়া প্রদান করতে হবে? 

উত্তর : যে সকল গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিণী নারী ছিয়াম পালনে শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা করবে তাদের জন্য দু’টি পদ্ধতি জায়েয। একটি হ’ল- প্রতিদিনের বিনিময়ে অর্ধ ছা‘ ফিদিয়া প্রদান করবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী- (অর্থ) যারা সামর্থ্যবান তারা মিসকীনদের ফিদিয়া প্রদান  করবে। তিনি বলেন, এ আয়াতটি অতি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা লোকের  জন্য ঐচ্ছিক ব্যবস্থা স্বরূপ। যদি তারা ছিয়াম পালন করতে সমর্থ হয়, তবে ছিয়াম রাখবে। অন্যথায় প্রত্যহ একজন মিসকীনকে  খাদ্য খাওয়াবে। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী স্ত্রীলোকগণ যদি সন্তানের ক্ষতির আশংকা করে, তবে তাদের জন্যও এ নির্দেশ বহাল রয়েছে। ইমাম  আবূ  দাঊদ  (রহঃ) বলেন,  যদি  তারা  তাদের  সন্তানের  ব্যাপারে শংকিত হয়, তবে তারা ছিয়াম না রেখে (মিসকীনকে) খাদ্য খাওয়াতে পারে (আবুদাউদ হা/২৩১৮; ইরওয়া ৪/১৮, শায)। দ্বিতীয়তঃ রামাযানে ছিয়াম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের উপর থেকে রহিত করে দিয়েছে অর্ধেক ছালাত এবং মুলতবী রেখেছেন ছওমকে। আর গর্ভবতী মহিলা এবং দুগ্ধদানকারী মহিলা থেকেও মুলতবী করে দিয়েছেন ছওম’ (নাসাঈ হা/২২৭৪, ২৩১৫; আহমাদ হা/২০৩৪১, সনদ হাসান)

প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) : পরীক্ষার কারণে আমি কয়েকটি ছিয়াম রাখতে পারিনি। এক্ষেত্রে আমাকে কি ক্বাযা ও কাফফারা দু’টোই দিতে হবে? 

উত্তর : এজন্য কাফফারা নয় বরং যে কয়দিন ছুটে গেছে সে কয়দিন ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর নিকট খালেছ নিয়তে তওবা করতে হবে। কারণ পরীক্ষার জন্য ছিয়াম ছেড়ে দেওয়া কোন শারঈ ওযর নয় (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/৭৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৪৩)। উল্লেখ্য যে, ক্বাযা ও কাফফারা উভয়টি কেবলমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্য, যে দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় স্ত্রী সঙ্গম করবে (বুখারীহা/৫৩৬৮; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪)

প্রশ্ন (২০/৩৮০) : যে সকল গাড়ী ভাড়ায় খাটানো হয় বা কোম্পানীর মালিকানাধীন গাড়িগুলোর উপর কি যাকাত দিতে হবে?

উত্তর : নিজের ব্যবহারের জন্য কেনা গাড়ী বা ভাড়ায় খাটানো গাড়ীর উপর কোন যাকাত লাগবে না। তবে ভাড়া থেকে প্রাপ্ত সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং তাতে এক বছর অতিক্রান্ত হ’লে যাকাত দিতে হবে। তবে ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে শোরুমে রক্ষিত গাড়ীর মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ সেগুলো বিক্রয়ের জন্য আমদানী করা বা বানানো হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলমানের খেদমতের গোলাম এবং আরোহণের ঘোড়ার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হবে না (মুসলিম হা/৯৮২; ছহীহাহ হা/২১৮৯)। তবে বিক্রি করে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত গাড়ীতে যাকাত দিতে হবে (নববী, শারহু মুসলিম অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)

প্রশ্ন (২১/৩৮১) : বহু মানুষকে দেখা যায় মাথাসহ দাড়িতে লাল মেহেদী ব্যবহার করে। এর ভিত্তি আছে কি? 

উত্তর : মাথাসমেত দাড়িতে লাল মেহেদী ব্যবহারে কোন বাধা নেই। যেকোন রঙে দাড়ি ও মাথা রাঙানো যেতে পারে (আবুদাঊদ হা/৪২১১; মিশকাত হা/৪৪৫৪, সনদ জাইয়েদ তবে এর মর্ম ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণীত, আহমাদ হা/২২৩৩৭; ছহীহাহ হা/১২৪৫)। তবে কালো রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, শেষ যামানায় একদল লোক কালো রং দ্বারা খেযাব করবে। তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবুদাউদ হা/৪২১২)। মনে রাখা আবশ্যক যে, চুল রঙিন করার ক্ষেত্রে কাফেরদের অনুসরণ করা বা নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা নিষিদ্ধ (বুখারী হা/৫৪৩৫; আবুদাউদ হা/৪০৩১, সনদ ছহীহ)
উল্লেখ্য যে, কালো চুলকে কালো রাখতে হবে। একইভাবে ছেলেদের চুলকে খাটো এবং মেয়েদের চুলকে লম্বা রাখতে হবে। এটাই আল্লাহর সৃষ্টিগত রীতি। এর পরিবর্তন করা শয়তানের রীতি (নিসা ১১৯; বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪৩১)। যারা কালো চুলকে লাল করে বা বিভিন্ন ফ্যাশন করে, হাতে-মুখে উল্কি দেয়, সাদা চুল উঠিয়ে ফেলে, ভ্রু কেটে সরু করে, দাড়ি ছেটে স্টাইল করে, দাড়ি মুন্ডন করে, তারা আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
বস্ত্ততঃ বরকতময় আল্লাহ কতই না সুন্দর সৃষ্টিকর্তা! (মুমিনূন ১৪)। রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার আকৃতিকে সুন্দর করেছ। অতএব তুমি আমার চরিত্রকে সুন্দর কর’ (আহমাদ হা/৩৮২৩; মিশকাত হা/৫০৯৯)

প্রশ্ন (২২/৩৮২) : আমার পিতা মারা গেছেন। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে আধা কাঠা জমির উপর তিন তলা বাড়ী এবং ভিন্ন ভিন্ন দামের আরো প্রায় ৩৯ শতাংশ জমি। আমরা ৪ ভাই ৩ বোন, আমার মা এবং দাদী জীবিত আছেন। আমরা ভাই-বোনেরা চাই তিন তলা বাড়ীটি মায়ের নামে দিতে এবং ভাই-বোনেরা কম দাম এবং বেশী দামের জমি মিলিয়ে বণ্টন করে নিতে এবং কম মূল্যের জমি দাদীকে দিতে। আমার এক ভাই ও এক বোন এখনো নাবালক। এইভাবে বণ্টন করলে কি দাদীর সাথে বেইনছাফী করা হবে? অথবা কিভাবে বণ্টন করলে ইনছাফপূর্ণ বন্টন হবে জানালে উপকৃত হব। 

উত্তর : কুরআন যেভাবে মীরাছ বণ্টন করে দিয়েছে সেভাবে বণ্টন করা আবশ্যক। কেননা সেটিই সর্বাধিক ইনছাফপূর্ণ। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। যদি তারা দুইয়ের অধিক কন্যা হয়, তাহ’লে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি কেবল একজনই কন্যা হয়, তবে তার জন্য অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ, মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর’ (নিসা ১১)। এক্ষণে শরী‘আত বর্ণিত উপরোক্ত বণ্টননীতি অক্ষুণ্ণ রেখে সম্পদ বণ্টিত হ’লে এবং উক্ত বণ্টনে দাদী ও অন্যান্য ভাই-বোনেরা সম্মত থাকলে তাতে কোন দোষ হবে না।

প্রশ্ন (২৩/৩৮৩) : ছালাতের বাইরে সিজদার আয়াত পড়ার সাথে সাথে কি সিজদা করতে হবে, না কি পরে কোন এক সময় দিলে হবে। 

উত্তর : সিজদার আয়াত যখনই পাঠ করবে বা শ্রবণ করবে তখনই সিজদা দেওয়া সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমরা তাঁর নিকট থাকতাম, তখন তিনি সিজদা করতেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এতে এত ভিড় হতো যে, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সিজদা করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না (বুখারী হা/১০৭৬; মিশকাত হা/১০২৫)। এক স্থানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে এ সিজদা সঙ্গে সঙ্গে না করে কিছু পরেও করা যায়। স্থান পরিবর্তন হ’লে আর সিজদা করতে হয় না, ক্বাযাও আদায় করতে হয় না। এই সিজদা করলে নেকী আছে, না করলে গোনাহ নেই (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৫৩-৫৪ পৃ.; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২২৪ পৃ.)

প্রশ্ন (২৪/৩৮৪) : বিবাহের সময় দেনমোহর দেওয়া হয়নি। তিন মাস পর মেয়ের পক্ষ থেকে তালাকের নোটিশ দেওয়া হয়। বর্তমানে জামাই মারা গেছে। এখন কি দেনমোহর দিতে হবে? 

উত্তর : স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা বা বিবাহ বিচ্ছেদ করা হ’লে স্ত্রী দেনমোহর ফেরত দিয়ে স্বামীর নিকট তালাক নিবে (ইবনু কুদামাহ ৭/৩২৩, ৩২৫)। এখানে স্ত্রী যেহেতু তালাকের নোটিশ দিয়েছে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছে, সেহেতু সে আর দেনমোহর পাওয়ার হকদার নয়। অতএব মৃত স্বামীর পক্ষ থেকে দেনমোহর প্রদানের প্রশ্নই ওঠে না।  
ছাবিত ইবনু ক্বায়েস (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! চরিত্রগত বা দ্বীনী বিষয়ে ছাবিত ইবনু ক্বায়েসের উপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভিতরে থেকে কুফরী করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পসন্দ করছি না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কি তার পক্ষ থেকে মোহরানা স্বরূপ প্রাপ্ত বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? সে বলল, দিব। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বামী ছাবেতকে বললেন, তুমি বাগানটি গ্রহণ কর এবং মহিলাকে এক তালাক দিয়ে দাও (বুখারী হা/৫২৭৩; মিশকাত হা/৩২৭৪)। অর্থাৎ ঐ মোহরানা ফেরৎ দানের বিনিময়ে তুমি তাকে তালাক দাও। এটি মূলতঃ শারঈ নিয়মের তালাক নয়, বরং খোলা বা বিচ্ছেদ (ফাৎহুল বারী)

প্রশ্ন (২৫/৩৮৫) : দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদে উপরের তলায় মেয়েরা পুরুষদের থেকে এক কাতার সামনে কাতার হয়ে দাঁড়াতে পারবে কি? 

উত্তর : নিয়ম হ’ল ইমাম সামনে দাঁড়াবে ও মুছল্লীরা পিছনে দাঁড়াবে। তবে বাধ্যতামূলক কোন ওযরবশত বা মসজিদে জায়গা সংকুলান না হ’লে পুরুষ বা নারী মুছল্লীরা সাময়িকভাবে ইমাম থেকে সামনে দাঁড়ালে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪০৬; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৮,৪৫)

প্রশ্ন (২৬/৩৮৬) : ধানকাটার মৌসুম হওয়ায় আমাদের এলাকার অধিকাংশ কৃষক ছিয়াম রাখতে পারে না। তাদের জন্য বিধান কি হবে? 

উত্তর : ছিয়াম একটি ফরয ইবাদত। এটি পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ধান কাটার মৌসুমেও তা পালন করবে। সর্বাবস্থায় ছিয়াম পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এবং সুদৃঢ় ইচ্ছা রাখবে। যতক্ষণ সাধ্য থাকবে ছিয়াম পালন করে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন’।... ‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান’ (তালাক ৬৫/২-৩)। তবে যদি একান্তই জীবনাশঙ্কা দেখা দেয়, এরূপ বাধ্যগত অবস্থায় ছিয়াম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করে নিবে (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/৭৭; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১০/১৪৩, ২৩৪-২৩৮)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর কথা শোন ও মান্য কর এবং (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর।এটিই তোমাদের কল্যাণকর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)

প্রশ্ন (২৭/৩৮৭) : জনৈক আলেম বলেন পুরুষরা হলুদ কাপড় পরিধান করতে পারবে না। কিন্তু লাল কাপড় পরিধান করতে পারবে। এর সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল ও হলুদ উভয় রংয়ের কাপড় পরা পুরুষদের জন্য অবৈধ। তবে লাল ও হলুদের সাথে অন্য রং মিশ্রিত থাকলে উক্ত পোষাক পরিধানে কোন বাধা নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৩৩৭; আল-মাওসূআতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/১৩২-৩৬; ওছায়মীন, আশ-শরহুল মুমতে‘)। আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমার পরিহিত হলুদ রঙের দু’টি পোষাক দেখে বললেন, ‘এগুলো কাফেরদের পোষাক। তুমি এসব পরবে না’ (মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭)। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পুরুষের জন্য যাফরান রং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন (বুখারী হা/৫৮৪৬; মুসলিম হা/২১০১; মিশকাত হা/৪৪৩৪)। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে সোনার আংটি, রেশমী কাপড় ও কুসুম রঙের কাপড় ব্যবহার করতে এবং রুকূ অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন (নাসাঈ হা/৫১৭২; ছহীহাহ হা/২৩৯৫)

প্রশ্ন (২৮/৩৮৮) : আমি একটি ব্যবসায় ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এক্ষণে বছরান্তে উক্ত বিনিয়োগকৃত টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে নাকি তা থেকে প্রাপ্ত লাভের উপর? উল্লেখ্য যে, বিনিয়োগকৃত টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হ’লে আমার প্রাপ্ত লাভের সিংহভাগই যাকাত প্রদানে ব্যয় হয়ে যাবে।

উত্তর : বিনিয়োগকৃত মূলধন এবং লভ্যাংশ যোগ করে বছর শেষে যে পমিমাণ সম্পদ হবে তা থেকে যাকাত দিতে হবে। মোট সম্পত্তির ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বিশ দীনারের কম স্বর্ণে যাকাত ফরয নয়। যদি কোন ব্যক্তির নিকট বিশ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দীনার যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে’ (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)

প্রশ্ন (২৯/৩৮৯) : ব্যবসায়ের সম্পদের যাকাত দোকানে রক্ষিত দ্রব্যের ক্রয়মূল্য না কি বিক্রয়মূল্যের উপর নির্ধারিত হবে? 

উত্তর : পণ্যটির বর্তমান বাজারমূল্যের উপর যাকাত হিসাব করতে হবে। যদি তা নিছাব পরিমাণ হয় (ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ৪/২৪৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩২৪; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৩/১৭১; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/১৪৬)

প্রশ্ন (৩০/৩৯০) : আমি স্বর্ণের ব্যবসা করি। এক্ষণে আমার দোকানে রক্ষিত সমস্ত স্বর্ণের উপর কি যাকাত প্রদান করতে হবে? 

উত্তর : মালিকানাধীন সমস্ত স্বর্ণের উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বিশ দীনারের কম স্বর্ণে যাকাত ফরয নয়। যদি কোন ব্যক্তির নিকট ২০ দীনার পরিমাণ স্বর্ণ এক বছর যাবৎ থাকে তবে এর জন্য অর্ধ দীনার যাকাত দিতে হবে। এরপরে যা বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব ঐভাবেই হবে’ (আবুদাঊদ হা/১৫৭৩, ‘যাকাত’ অধ্যায়)। অতএব বছর শেষে সকল স্বর্ণের হিসাব করে বাজারমূল্য অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে (ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ৪/২৪৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩২৪; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৩/১৭১)। স্বর্ণ ও রৌপ্য আলাদা থাকলে উভয়ের মূল্য হিসাব করে নিছাব পরিমাণ হ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে। কারণ দোকানে যা কিছু আছে তার সবগুলো ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩১৮; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/১০৪)

প্রশ্ন (৩১/৩৯১) : বিবাহের সময় ১০ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারিত হ’লেও আমার স্বামী এখনও আমাকে মোহর প্রদান করেননি। আগামী ২/১ বছর পর তিনি পরিশোধের ওয়াদা করেছেন। এক্ষণে আমাকে উক্ত মোহরের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে কি? 

উত্তর : না। বরং যখন উক্ত মোহরের টাকা হাতে আসবে এবং তা এক বছর সঞ্চিত থাকবে, তখন শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত দিতে হবে। কারণ যা মালিকানায় নেই তার উপর যাকাত ফরয হয় না (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১১, ২৫)

প্রশ্ন (৩২/৩৯২) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, ‘একজন হাজী তার নিকটতম ৪০০ জনকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন’। বিষয়টির সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : কোন হাজী ৪০০ জন ব্যক্তিকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। এটি মিথ্যা ও বানাওয়াট কথা মাত্র।

প্রশ্ন (৩৩/৩৯৩) : বর্তমান বিশ্বে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের মুল্যে ব্যাপক ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। এক্ষণে কিসের উপর ভিত্তি করে নগদ অর্থের যাকাত দিতে হবে?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ এবং সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্যের মূল্য সমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে উভয়ের মাঝে ব্যবধান কয়েকগুণ। অর্থাৎ রৌপ্যের মূল্যে ব্যাপক অবনমন ঘটেছে। ফলে আধুনিক যুগে বিদ্বানগণ স্বর্ণের মূল্যমান রৌপ্য অপেক্ষা স্থিতিশীল এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হওয়ায় স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী নগদ অর্থের যাকাত দেওয়ার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন (ইউসুফ ক্বারযাভী,  ইসলামের যাকাত বিধান, ১/২৫২-৫৩ পৃ.)। তবে কেউ চাইলে গরীবের অধিকতর কল্যাণার্থে রৌপ্যের হিসাবে যাকাত প্রদান করতে পারে (মাজমু‘ ফাতাওয়া ইবনুল বায, ১৪/১২৫ পৃ.

প্রশ্ন (৩৪/৩৯৪) : বদলী হজ্জ মূলতঃ কাদের জন্য প্রযোজ্য?

উত্তর : হজ্জের নিয়ত করে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি, অতিবৃদ্ধ, চিররোগী, মুহরিম বিহীন মহিলা প্রমুখের জন্য মূলতঃ বদলী হজ্জের বিধান (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১১-১২, ১৩ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। তবে বদলী হজ্জ আদায়কারীকে অবশ্যই ইতিপূর্বে হাজী হ’তে হবে (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হাদীছ ছহীহ হা/২৫২৯)। সুস্থ সবল ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ জায়েয নয়।

প্রশ্ন (৩৫/৩৯৫) : সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সরকারী জমিতে জুম‘আ বা ঈদের ছালাত আদায়ে কোন দোষ নেই। আনাস (রাঃ) বলেন, মদীনায় হিজরত করার পর মসজিদ নির্মাণের স্বার্থে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু নাজ্জারকে বললেন, তোমরা তোমাদের বাগানটি আমার নিকটে বিক্রয় করে দাও। জবাবে তারা বলল, আমরা আপনার নিকট থেকে এর বিনিময়ে কোন মূল্য নেব না। কেবল আল্লাহর নিকট থেকে বিনিময় চাই। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের সম্মতিক্রমে সেটি গ্রহণ করলেন ও সেখানে মসজিদ নির্মাণ করলেন’ (বুখারী হা/১৮৬৮; মুসলিম হা/১২০১; আবুদাঊদ হা/৪৫৩; নাসাঈ হা/৭১০, ইবনু মাজাহ হা/৭৯১)। তাছাড়া সাধারণভাবে যেকোন স্থানে ছালাত আদায় করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সমগ্র যমীনকে আমাদের জন্য ছালাতের স্থান এবং মাটিকে পবিত্র করে দেয়া হয়েছে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৬)।

প্রশ্ন (৩৬/৩৯৬) : টার্কী মুরগীর গোশত খাওয়ায় কোন দোষ আছে কি? 

উত্তর : টার্কী বা যে কোন জাতের মুরগীর গোশত হালাল। কেননা এটি দন্ত ও নখর বিশিষ্ট কোন হিংস্র প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে মুরগীর গোশত পেশ করা হ’লে তিনি তা ভক্ষণ করেছেন (বুখারী হা/৫৫১৮; মুসলিম হা/১৬৪৯)

প্রশ্ন (৩৭/৩৯৭) : ইমাম সালাম ফিরানোর পর মুক্তাদীদের দিকে ঘুরার সময় কোন দিকে দিয়ে ঘুরবে?

উত্তর :  ইমাম সালাম ফিরানোর পর ডাইনে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসতে পারবে এবং এটিই ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মিত সুন্নাত (বুখারী হা/৮৫২; মুসলিম হা/৭০৭; মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬; ফাৎহুল বারী ২/৩৩৪)। ডান দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো পড়েছেন, ‘রবিব ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ইবা-দাকা’ (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে) (মুসলিম হা/৭০৯; মিশকাত হা/৯৪৭; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ১২৩)

প্রশ্ন (৩৮/৩৯৮) : একটি গ্রাম্য মসজিদের ইমাম ভুল করে ইফতারের দশ মিনিট পূর্বে আযান দিয়ে দেয়। আযান শুনে বহু ছায়েম ইফতার করে ফেলে। এক্ষণে যে সকল ছায়েম ভুল করে সময়ের আগে ইফতার করল তাদেরকে কি পুনরায় ছিয়াম আদায় করতে হবে? 

উত্তর : ভুলক্রমে হ’লে ক্বাযা করার প্রয়োজন নেই। কারণ অনিচ্ছাকৃত ভুল মার্জনীয় (আহযাব ৩৩/৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত অপরাধ ও ভুল সমূহকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৮৪)
ছহীহ বুখারীতে (হা/১৯৫৯) বর্ণিত অনুরূপ একটি ঘটনা উল্লেখ করে একদল বিদ্বান এমন ভুলের জন্য ক্বাযা করতে বললেও সেখানে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন নির্দেশনা নেই বরং হাদীছে প্রদত্ত বক্তব্যটি রাবী হিশাম বিন উরওয়ার নিজস্ব রায় মাত্র। কিন্তু সেখানেও তিনি বলেছেন, আমি জানি না তাঁরা ক্বাযা করেছিলেন কি-না। অতএব এ হাদীছ থেকে ক্বাযা করার ব্যাপারে কোন নিশ্চিত নির্দেশনা পাওয়া যায় না (ফাৎহুল বারী হা/১৯৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। সুতরাং এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসাবেই গণ্য হবে। উক্ত বিষয়ে মুজাহিদ, হাসান বছরী, ইসহাক, ইমাম আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ, শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ ঊছায়মীনসহ অন্যান্য  বিদ্বানগণ বলেন, ক্বাযা আদায় করতে হবে না (ফাৎহুল বারী ৪/২০০; মাজমূউল ফাতাওয়া ২৫/২৩১; আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/৪০২-৪০৮)। 

প্রশ্ন (৩৯/৩৯৯) : জুম‘আ মসজিদে খুৎবার পরে মসজিদের সভাপতি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বক্তব্য দেন। এরপরে ছালাত শুরু হয়। উক্ত সময়ে সভাপতি ছাহেবের বক্তব্য দেওয়ার বৈধতা আছে কি? 

উত্তর : জুমআ‘র দিন খুৎবার আগে বা পরে ইমাম ব্যতীত অন্য কারো আলোচনা করা সমীচীন নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এই ধরনের কোন আমল ছিল না। তাছাড়া খুৎবার পরিসমাপ্তি ও ছালাতের শুরুর মধ্যে বেশী ব্যবধান হ’লে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে (শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/২২০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫১৩; ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী ২/২৩০; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/১৮০; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৫৯; আদ-দুরুল মুখতার ২/১৯)। তবে বিশেষ কারণবশতঃ সাময়িক কোন প্রয়োজনে কথা বললে দোষ হবে না ইনশাআল্লাহ (আব্দুল মুহসিন ‘আববাদ, শারহু সুনানু আবী দাউদ ২৮/১৩৯)

প্রশ্ন (৪০/৪০০) : আমার দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য দু’টি বাড়ি নির্মাণ করে দিতে পারব কি? 

উত্তর : পিতা-মাতা উক্ত দুই কন্যা সন্তানকে সম্পদ প্রদান করতে পারে। বাড়ি-ঘর নির্মাণও করে দিতে পারে। তবে সমতা রক্ষা করা যরূরী। কারণ রাসূল (ছাঃ) কোন এক সন্তানকে বিশেষভাবে দান করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ তার সকল সন্তানকে দান করতে চায় তাহ’লে তাতে কোন দোষ হবে না (বুখারী হা/২৫৮৬; মুসলিম হা/১৬২৩; মিশকাত হা/৩০১৯)। তবে ভাই বা ভাতিজাদের বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমুদয় সম্পত্তি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়া যাবে না। কারণ সেটি করলে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হবে (নিসা ৪/১১)

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)

১৩তম পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন----

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

====================================================

Please Share On


No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...