Search This Blog

Wednesday, August 25, 2021

মাসজিদ ও ক্বিবলার সহিহ বিধান

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মাসজিদ ও জুমার সালাত (চতুর্থ খন্ড-প্রথম অংশ)

মাসজিদ ও ক্বিবলার সহিহ বিধান



মাসজিদ এর অর্থ কি?

মাসজিদ এর শাব্দিক অর্থ সাজদার স্থান, আর পরিভাষিক অর্থ সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থান।

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ

আবূ কামিল আল জাহদারী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...আবূ যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! পৃথিবীতে কোন মসজিদটি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি (মাসজিদটি)। তিনি বললেন, আল মাসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, এ দু'টি মসজিদের নির্মাণকালের মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। (তিনি আরো বললেন) যে স্থানেই সালাতের সময় উপস্থিত হবে, তুমি সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কারণ সে জায়গাটাও মাসজিদ।

আবূ কামিল বর্ণিত হাদীসে আছে, তাই যেখানেই সালাতের সময় হবে তুমি সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কারণ সেটিও মাসজিদ। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৪৮-১০৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৬৬, ৩৪২৫; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৫৩, নাসায়ী ৬৯০, আহমাদ ২০৮২৬, ২০৮৭৫, ২০৯১২, ২০৯৫৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৪২, ইসলামিক সেন্টার ১০৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবর স্থান, গোসলখানা ও উটের আস্তাবল ব্যতীত পৃথিবীর সকল স্থানই সালাতের স্থান

(ক) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। প্রত্যেক নবীকে শুধু তার কওমের জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য গনীমাত বা যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো (কোন নবীর) জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক-পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সালাতের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্থানে সালাত আদায় করে নিতে পারে। আমাকে একমাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শাওকাত সহকারে (শত্রুও অন্তর ভীতি দ্বারা) সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফা'আতের সুযোগ দান করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৫০-১০৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২১, সুনান আদ-দারেমী, ১৪২৬, বুখারী ৩৩৫; মুসলিম ৫২১; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৬৩৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৪৪ ইসলামীক সেন্টার ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ).....হুযায়ফাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্য সব লোকের চেয়ে তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে (উম্মাতে মুহাম্মাদীকে) মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাদের (সালাতের) কাতার বা সারি মালাকগণের (ফেরেশতাগণের) কাতার বা সারির মতো করা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। আর পানি না পেলে পৃথিবীর মাটিকে আমাদের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আরেকটি বিষয়ও উল্লেখ করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৫২-১০৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১০৫৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার জন্য (অর্থাৎ আমার উম্মাতের জন্য) সমগ্র জমিনকে পবিত্র এবং মাসজিদ (সিজদার স্থান) বানানো হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৯, আহমাদ (৫/১৪৫, ১৪৭), দারিমী ২৪৫৭, ৩৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে সব স্থানে নামায পড়া মাকরুহ ও অবৈধ

(১)  কবর স্থান ও গোসলখানায় সালাত আদায় করা নিষেধঃ

(ক) আবী সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “জমিনের সকল স্থানই মাসজিদ (সালাতের স্থান), কেবল কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত।” আবী মুহাম্মদ কে বলা হলো, কবরস্থানে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব পাওয়া যাবে কি? তিনি বললেন: যখন তা সরাসরি কবরের উপরে না হবে, তখন হ্যাঁ, পাবে। (সুনান আদ-দারেমী, ১৪২৭, ১৩৯০, ১৩৯৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯২; সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৭; মুসনাদুল মাউসিলী  ১৩৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯৯, মাওয়ারিদুয যাম’আন ৩৩৮, শুয়াবুল ঈমান ১৪৭৯, ১৪৮০; ইবনু আব্দুল বারর, আত তামহীদ ৫/২২১-২২২; আবু নুয়াইম, হিলইয়া ৮/৩১৬, আহমাদ (৩/৮৩, ৯৬), ইবনু খুযাইমাহ ৭৯১, আহকামুল জানায়িয ৮৭ পৃঃ, দারিমী ১৪৩০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গোরস্থানে নামায পড়া বৈধ নয়

(খ) জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৩, মুসলিম ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি ২৪৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে কবরে পরিণত করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২, ১১৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৫-১৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৩, নাসায়ী ১৫৯৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৫১, সহীহ আল জামি ১৫৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আলী ইবনু হুজুর আস সা’দী (রহঃ).....আবূ মারসাদ আল গানবী (রযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কখনো কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সালাতও আদায় করবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১৪০-৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৯. ইসলামীক সেন্টার ২১২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। উম্মু হাবীবাহ ও উম্মু সালামাহ (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু স্ত্রী) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন একটি গীর্জার বর্ণনা দিলো যার মধ্যে মূর্তি বা ছবি যা তারা হাবশায় দেখেছিলেন। তাদের কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা এরূপই করে থাকে। তাদের মধ্যেকার কোন নেক লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করে এবং তার মধ্যে ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে। কিয়ামতের দিন এরা হবে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬৮-১০৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৭, ৪৩৪, ১৩৪১, ৩৭৩; আহমাদ ২৪৩০৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ).....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রোগ-শয্যায় বলেছিলেন, আল্লাহ ইয়াহুদ ও নাসারাদের (খৃষ্টানদের) প্রতি লা'নাত বর্ষণ করুন। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছেন। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেছেনঃ যদি এরূপ করার আশঙ্কা না থাকতো তাহলে তাকে উন্মুক্ত স্থানে কবর দেয়া হত। কিন্তু যেহেতু তিনি আশংকা করতেন যে, তার কবরকে মাসজিদ বা সাজদার স্থান করা হতে পারে তাই উন্মুক্ত স্থানে কবর করতে দেননি। বরং আয়িশাহ (রাযিঃ) এর কক্ষে তার কবর করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৫, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) হারূন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ)...আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মাসজিদ বা সাজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১০৭২-৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৬, ইসলামীক সেন্টার. ১০৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উতবাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। ‘আয়িশাহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমন্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নবীদের (নবীদের) কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ‘আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক করেছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৫, ৪৩৬, ৪৩৭, ১৩৩০, ১৩৯০, ৩৪৫৩, ৩৪৫৪, ৪৪৪১, ৪৪৪৩, ৪৪৪৪, ৫৮১৫, ৫৮১৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৮, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করা নিষেধ তবে বকরীর খোয়াড়ে সালাত করা যাবেঃ

(ক) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ তোমরা উটের আস্তাবলে সালাত আদায় করবে না। কারণ তা শয়তানের আড্ডাখানা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সেখানে সালাত আদায় করতে পার। কারণ তা বরকতময় প্রাণী (বা স্থান)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬৯, নাসায়ী ৭৩৫, আহমাদ ২৭৮৫২, ১৬৩৫৭, ২০০১৮, ২০০৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভেড়ার বা উটের খোঁয়াড় ব্যতীত সালাত পড়ার জায়গা না পেলে, ভেড়ার খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করতে পারো কিন্তু উটের খোঁয়াড়ে পড়বে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬৮, ৭৭০, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৯,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪৮, দারিমী ১৩৯১, সহীহুল জামি ৩৭৮৭, ইরওয়া ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করেছেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আনাস (রাযি.)-কে বলতে শুনেছি যে, মাসজিদ নির্মাণের পূর্বে তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাগলের খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৯, ৪৩০, ২৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) কসাইখানা পবিত্র হলে তাতে নামায শুদ্ধ হবে।

(৪) রাস্তার মাঝে গাড়ি বা লোকজনের আসা-যাওয়া না থাকলে নামায নিষিদ্ধ নয়। অনুরুপ মসজিদ ভরে গেলে লাগালাগি রাস্তাতেও নামায শুদ্ধ। তবে কেউ যেন ইমামের সামনের দিকে রাস্তায় না দাঁড়ায়। কারণ, ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামায শুদ্ধ হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৪)।

(৫) ময়লা ফেলার জায়গাতে যেহেতু নাপাকীই থাকার কথা, তাই সেখানে নামায শুদ্ধ নয়।

(৬) কা’বা শরীফের ভিতরে এবং হাতীম বা হিজরে ইসমাঈল (কা’বা শরীফের পার্শ্বে যে জায়গাটা গোলাকার ঘেরা আছে সেই জায়গা) এর সীমার ভিতরেও নামায শুদ্ধ। আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা কা’বা-ঘরের ভিতরে ২ রাকআত নামায পড়েছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও উসামাহ্ ইবনু যায়দ, ‘উসমান ইবনু ত্বলহাহ্ (রাঃ) আল হাজাবী ও বিলাল ইবনু রাবাহ্ (রাঃ) কা‘বায় প্রবেশ করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)অথবা ‘উসমান (রাঃ) ভিতর থেকে (ভীড় হবার ভয়ে) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার ভিতরে কি করলেন? উত্তরে বিলাল (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দু’টি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। সে সময় খানায়ে কা‘বার ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (এখন তিনটি স্তম্ভের উপর)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫, ৩৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১২১-৩১২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২০২৩, নাসায়ী ৭৪৯, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ যে, সাত জায়গায় নামায পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়, তা খুবই দুর্বল।

তবে হাদিসে উল্লেখ আছে কবরস্থান, গোসলখানা ও উটেরআস্তাবলে নামাজ পড়া নিষেধ।

(৭) অমুসলিমদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি বা ছবি না থাকলে তাতে নামায পড়া বৈধ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) মূর্তি না থাকলে গির্জায় নামায পড়েছেন। (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৩২)।

হযরত আবূ মূসা আশআরী, উমার বিন আব্দুল আযীয কর্তৃকও গির্জায় নামায পড়ার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। (ইআশা: ১/৪২৩, নাইলুল আউতার, শাওকানী, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু১৩৫ পৃ:)।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য সমগ্র জায়গাকেই নামাজের উপযোগী বানিয়ে দিয়েছেন। তাই জলে-স্থলে, পাহাড়ে ও মহাশূন্যের যেকোনো পবিত্র জায়গায়ই নামাজ পড়লে তা আদায় হবে। অতএব, কোনো কারণে মন্দির বা বিধর্মীদের উপাসনালয়েও নামাজ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে। যদিও প্রয়োজন ছাড়া সেখানে নামাজের জন্য যাওয়া অনুচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে সমগ্র জমিনকেই আমাদের জন্য উপাসনালয় ও পবিত্রতার বস্তু (তায়াম্মুমের জন্য) হিসেবে বানানো হয়েছে।’ অর্থাৎ যেকোনো পবিত্র জায়গায়ই নামাজ শুদ্ধ হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩৩৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার পুর্বে কাউকেও দান করা হয়নি।

(১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, একমাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়;

(২) সমস্ত যমীন আমার জন্য পবিত্র ও সালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই সালাত আদায় করতে পারবে;

(৩) আমার জন্য গানীমাতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি;

(৪) আমাকে (ব্যাপক) শাফা’আতের অধিকার দেওয়া হয়েছে;

(৫) সমস্ত নবী প্রেরিত হতেন কেবল তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৩৫, ৪৩৮, ৩১২২;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৫০-১০৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২১,  আহমাদ ১৪২৬৮) (আ.প্র. ৩২৩, ই.ফা. ৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তবে মূর্তি, ছবি বা উপাস্য বাতি ইত্যাদি সামনে নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমি। কেননা এতে সেগুলো উপাসনাসদৃশ হয়ে যায়। তবে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। (তাবঈনুল হাকায়েক ১/১৬৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১০৭)।

প্রকাশ যে, নিরুপায় অবস্থা বা দাওয়াতী উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের কোন ভজনালয়ে যাওয়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/১০৪)।

অমুসলিমদের সমাজে এবং তাদের মালিকানাভুক্ত জায়গা-জমিতেও নামায শুদ্ধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৬৮) বরং তাদের বাড়ির ভিতরেও (মূর্তি না থাকলে) নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ঐ ৩২/১০৪) তবে পবিত্রতা ইত্যাদি অন্যান্য শর্তাবলী সর্বক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়।

(৮) এমন জিনিস (যেমন নক্সাদার মুসাল্লা, সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় দেওয়াল বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যপূর্ণ কাপড় ইত্যাদি) সামনে রেখে সালাত পড়া, যাতে নামাযীর মনোযোগ ও একাগ্রতা নষ্ট হয়ঃ

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি কারুকার্য খচিত চাদর গায়ে দিয়ে সালাত আদায় করলেন। আর সালাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ এ চাদরখানা আবূ জাহমের নিকট নিয়ে যাও, আর তার কাছ হতে আমবিজানিয়্যাহ (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত হতে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহ.) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ৩৭৩, ৭৫২, ৫৮১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১২৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৬, আহমাদ ২৪১৪২, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ)  আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর নিকট একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের এক দিকে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সামনে থেকে তোমার এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত আদায়ের সময় এর ছবিগুলো আমার সামনে ভেসে ওঠে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৭৪, ৫৯৫৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) রাসুল সা. ডোরা কাটা বা নকশাখচিত পর্দা ঝুলানো থাকলে সে ঘরে প্রবেশ করতেন নাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে দরজায় পর্দা ঝুলানো দেখতে পেয়ে তিনি ভিতরে ঢুকলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অধিকাংশ সময় তিনি ভিতরে ঢুকেই সর্বপ্রথম ফাতিমাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এ সময় আলী (রাঃ) এসে ফাতিমাহকে চিন্তিত দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসতে চেয়েও আসেননি। অতঃপর আলী (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ফাতিমাহর নিকট গিয়েও প্রবেশ না করায় এটা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেনঃ দুনিয়াদারী ও চাকচিক্যতার সাথে আমার কি সম্পর্ক। একথা শুনে আলী ফাতিমাহর নিকট গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বক্তব্য বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলুন, তিনি আমাকে এটাকে কি করতে আদেশ দেন? (আলীর বর্ণনা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তাকে (ফাতিমাহকে) বলো, তা (পর্দাটি) যেন অমুক গোত্রে পাঠিয়ে দেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু ফুদাইল (রহঃ) তার পিতার সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, পর্দাটি ছিলো ডোরাযুক্ত ও নকশা খচিত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ক্রুশ চিহ্নযুক্ত কাপড় সম্পর্কেঃ

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে ক্রুশ চিহ্নযুক্ত কোনো জিনিসই রাখতে দিতেন না। তিনি সেগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি, মূর্তি বা আগুন সামনে রেখে বা ঘরে রেখে সালাত আদায় করা এবং কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি চিত্রিত কাপড় পরে সালাত আদায় করা নিষেধঃ

ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

(ক) মুহাম্মদ ইবন আবদুল মালিক ইবন আবুশ শাওয়ারিব (রহঃ), আবু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ভাস্কর্য থাকে। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৪৭০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল (আঃ) আমার সাথে রাতে সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করেছিলেন; কিন্তু সাক্ষাৎ করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের বিছানার নীচে একটি কুকুর শাবক আছে।

তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেললেন। জিবরীল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন, যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না। সকাল বেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন, এমন কি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৭, ৪১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আবূ তালহা আল-আনসারী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করেন না। অতঃপর তিনি (যায়িদ) বলেন, চলো, তোমার উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করি।

আমরা তার নিকট পৌঁছে বললাম, হে উম্মুল মু‘মিনীন! আবূ তালহা (রাঃ) আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ এরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আপনি কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, না, তবে আমি তাঁকে যা করতে দেখেছি, সে সম্পর্কে একটি হাদীস আপনাদের বলছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুদ্ধাভিযানে গেলেন। আমি তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি আমাদের একটি পশমী কাপড় দরজার চৌকাঠে পর্দা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখলাম। তিনি যখন ফিরে এলেন, আমি স্বাগতম জানিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পূর্ণ করেছেন। তিনি ঘরের দরজার দিকে তাকাতে পশমী পর্দা দেখেন। কিন্তু আমার কথার কোনো জবাব দিলেন না।

আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ দেখতে পেলাম। তিনি পশমী (ছবিযুক্ত) কাপড়টির নিকট গিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে বলেনঃ আল্লাহ আমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন, তা পাথর ও ইটকে পরানোর আদেশ দেননি। তিনি (আয়িশাহ) বলেন, আমি কাপড়টা কেটে দু’টি বালিশ তৈরী করলাম এবং ভেতরে খেজুরের ছাল বাকল ভরে দিলাম; তিনি আমার এ কাজ অপছন্দ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৩, ৪১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না। বুসর (রহঃ) বলেন, অতঃপর যায়িদ (রাঃ) অসুস্থ হলে আমরা তাকে দেখতে তার বাড়িতে গেলাম। তার ঘরের দরজায় ছবিযুক্ত একটি পর্দা দেখলাম। আমি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃ)-এর পালিত পুত্র উবায়দুল্লাহ আল-খাওলানীকে বললাম, যায়িদ (রাঃ) আমাদের ছবি না রাখার হাদীস শুনিয়েছেন। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আপনি কি শুনেননি, সে হাদীসে তিনি এ কথাও উল্লেখ করেছেন, কাপড়ের মধ্যে যদি গাছপালা, লতাপাতা ইত্যাদি ছবি থাকে, তা নিষেধ নয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আল-বাতহা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন যেন তিনি কা‘বার ভিতরে গিয়ে এর মধ্যে বিদ্যমান সব ছবি মিটিয়ে দেন। অতঃপর সব ছবি মিটিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৪১৫৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(চ) আলী ইবন শুআয়ব (রহঃ), উবায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবূ তালহা আনসারী (রাঃ)-কে তাঁর রুগ্নাবস্থায় দেখতে গেলে তাঁর নিকট সাহল ইবন হুনায়ফকে দেখতে পান। আবু তালহা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তাঁর নিচ থেকে বিছানা বের করে ফেলতে আদেশ করলেন। তখন সাহল (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ কেন বের করবেন? তিনি বললেনঃ কেননা তাতে ছবি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা তো তুমি জান। সাহল বললেন, তিনি কি বলেন নি যে, কাপড়ে নকশারূপে থাকলে কোন ক্ষতি নেই? আবু তালহা (রাঃ) উত্তর করলেনঃ হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনের জন্য এটাই বেশি স্বস্তিকর। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৪৮, ৫৩৪৯, ৫৩৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৫৯,  নাসায়ী ৫৩৫১, তাখরীজুর মুখতার ৪৪৯, আদাবুয যিফাফ ৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ)..আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে গেলেন। তারপর আবার প্রবেশ করলেন। আমি একটি পর্দা লটকিয়ে রেখেছিলাম, যাতে ডানাবিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি ছিল। তিনি তা দেখে বললেনঃ তুমি এটা খুলে ফেল। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন বাযী (রহঃ), উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একখানা পর্দার কাপড় ছিল, যাতে ছিল পাখির ছবি। কেউ ঘরে ঢোকার সময় তা তার সামনে পড়তো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি এটা উল্টিয়ে দাও। কেননা যখন আমি ঘরে প্রবেশ করি, তখন তা (মার্কা) দেখলে, দুনিয়া আমার স্মরণে এসে পড়ে। তিনি আরো বলেনঃ আমাদের আর একখানা চাদর ছিল, যাতে পণ্যচিহ্ন অঙ্কিত ছিল, আমরা তা পরতাম। তাই তা কাটিনি। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫২, ৫৩৫৩, গায়াতুল মারাম ১১৯, ১৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) কুতায়বা (রহঃ)..আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফর শেষে তশরীফ আনলেন। আমি চেরাগদানে একটি পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। যাতে ছবি অঙ্কিত ছিল। তিনি সেটি খুলে ফেলে বললেনঃ কিয়ামতের দিন সর্বাধিক আযাব হবে তাদের, যারা আল্লাহর সৃষ্টবস্তুর ছবি অঙ্কন করে। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৫৩৫৫- ৫৩৬৩, আদাবুয যিফাফ ৯৮–৯৯. গায়াতুল মারাম ১১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, মুহাদ্দিসগণ বলেন: মুহাদ্দিসগণ বলেন: উল্লেখিত হাদিসগুলোতে যে সকল ফেরেশতা প্রবেশ করবে না বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রহমত ও বরকতের ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ কোনো ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি ও কুকুর থাকলে ঐ সকল প্রবেশরতাগণ তাতে প্রবেশ করে না যারা রহমত ও বরকত নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আগমন করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাদের দায়িত্ব পালনার্থে অবশ্যই প্রবেশ করে- ঘরে যতই ছবি, মূর্তি ও কুকুর থাকুক না কেন। যেমন: প্রাণ সংহারের দায়িত্বে নিয়োজিত মালাকুল মওত বা মৃত্যু দূত, তাঁর সঙ্গে আগত ফেরেশত মণ্ডলী, মানুষের কার্যবিবরণী লেখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কিরামান কাতিবীন বা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ ইত্যাদি।

মোটকথা, এ সকল ছবিকে ঘর থেকে সরানো জরুরি অথবা আসবাব-পত্রে যে সকল প্রাণীর ছবি বা প্রাণীর কার্টুনের ছবি আছে কমপক্ষে সেগুলোর মুখমণ্ডল কালি দিয়ে বা যে কোনভাবে মুছে দেয়া জরুরি। মুখ মণ্ডল তথা চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি মুখাবয়বের চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকলে তার উপর ছবির বিধান প্রযোজ্য হবে না।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, নিজের বা আর কারো ছবি পকেটে রেখেও সালাত মাকরুহ। অবশ্য কোথাও রেখে সালাত পড়লে চুরি হয়ে বা হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিরুপায় অবস্থায় ছবিযুক্ত টাকা-পয়সা, পাশপোর্ট, পরিচয়-পত্র প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে নামায পড়ায় দোষ নেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১২/৯৮, ১৯/১৬১)।

(৯) বিছানায় সালাত আদায় করা বৈধঃ

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বসরায় অবস্থানকালে তার বিছানার উপর সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিছানার উপর সালাত আদায় করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০৩০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩১, আহমাদ ২৪২২, ২৮০৯, ২৯৩৪, ৩৩৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে ছিল। তিনি সিজদা্য় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা প্রসারিত করতাম। তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮২, ৩৮৩, ৩৮৪, ৫০৮, ৫১১, ৫১২, ৫১৩, ৫১৪, ৫১৫, ৫১৯, ৯৯৭, ১২০৯, ৬২৭৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০২৭-১০৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫১২, আহমাদ ২৫৭০৫, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) চাটাই বা মাদুর এর উপর সালাত আদায় করা বৈধঃ

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলাইকাহ্ (রাযি.) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খাওয়ার দা’ওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরি করেছিলেন। তিনি তা হতে খেলেন, অতঃপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত আদায় করি। আনাস (রাযি.) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যবহারে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আর আমি এবং একজন ইয়াতীম বালক (যুমাইরাহ) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমাদের পেছনে ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি চলে গেলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮০, ৭২৭, ৮৬০, ৮৭১, ৮৭৪, ১১৬৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৮, আহমাদ ১২৩৪২, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৩,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৭, ৬৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মাইমূনাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৮১, ৩৩৩, ৩৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৮, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৬,নাসায়ী ৭৩৮, আহমাদ ২৬২৬৫, ২৬২৬৮, ২৬৩০৯, ২৬৩১১, দারিমী ১৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫১৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৩২, আহমাদ ১১০৯৭, ১১১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) পেশাব-পায়খানা ঘরের ছাদে বা পিছনে (পেশাব-পায়খানা ঘরকে সামনে করে নামায শুদ্ধঃ ছাত বা সামনের দেওয়াল পবিত্র হলে নামায মাকরুহ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭০, দারেমী, সুনান ৯৫পৃ:) আড়াল থাকলে প্রস্রাব-পায়খানার নালা বা পাইপ সামনে করে, অথবা তার উপর ব্রিজে, অথবা মলমূত্রের পাইপের নিচে নামায শুদ্ধ। (বুখারী ৮২পৃ দ্র:)।

(১২) যে রুমে মাদকদ্রব্য থাকে সে রুমে নামায পড়তে হলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৪২৬)।

(১৩) ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক ভাড়া গ্রহণকারীকে ঐ ঘরে থাকতে না দিতে চাইলে এবং সে সেখান হতে বের হতে না চাইলে তথা জোরপূর্বক বাস করলেও সে ঘরে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে এ কাজে সে নিরুপায় না হলে গুনাহগার হতে পারে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৫)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাসজিদ নির্মাণ

(ক) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ).....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরাত করে মদীনায় আগমন করলেন, মাদিনার উচ্চভূমিতে বানী 'আমর ইবনু আওফ গোত্রের এলাকায় অবতরণ করলেন, এবং সেখানে চৌদ্দ রাত অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি বানী নাজ্জার গোত্রের লোকজনকে ডেকে পাঠালেন তারা সবাই (খোলা) তরবারিসহ আগমন করলো। হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস বলেন, আমি যেন রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার সওয়ারী বা বাহনের উপর দেখতে পাচ্ছি। আবূ বাকর তার পিছনে বসে আছেন এবং বানী নাজারের লোকজন তাকে ঘিরে আছে। অবশেষে তিনি আবূ আইয়ুবের (আনসারী) বাড়ীর আঙ্গিনায় অবতরণ করলেন।

বর্ণনাকারী আনাস বলেছেন, সালাতের সময় হলেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করে নিতেন। এমনকি তিনি বকরীর খোয়াড়েও সালাত আদায় করতেন। পরে তিনি মসজিদ নির্মাণ করতে আদিষ্ট হলে বানী নাজ্জার গোত্রের নেতৃস্থানীয় লোকদের ডেকে পাঠালেন। তারা উপস্থিত হলে তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী নাজ্জার! তোমরা তোমাদের এ বাগানটি অর্থের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি করো। তারা বললো না, আল্লাহর শপথ, আমরা আল্লাহর নিকট ছাড়া আপনার কাছে এর মূল্য দাবী করব না। আনাস বলেন, ঐ বাগানটিতে যা ছিল তা আমি বর্ণনা করছি, ঐ বাগানে ছিল খেজুর গাছ, মুশরিকদের কিছু কবর এবং কিছু ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তুপ।

অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো, মুশরিকদের কবরগুলো খুঁড়ে ফেলা হলো এবং ধ্বংসাবশেষগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো। তারা (কর্তিত) খেজুর গাছের গুড়িসমূহ কিবলার দিকে সারি করে রাখল এবং দরজার দু'পাশে পাথর স্থাপন করল। আনাস ইবনু মালিক বর্ণনা করেছেন। এসব কাজ করার সময় তারা একসুরে কবিতা আবৃত্তি করছিল। আর তাদের সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একস্থানে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। তারা বলছিল, "হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া প্রকৃত কোন কল্যাণ নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করো।" (সহীহ (মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬০-১০৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৪,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৩, ৪৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৮, আহমাদ (৪/১৩৬, হাঃ ২৪১৯), ইবনু খুযাইমাহ (৯১৭৭৫), ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৫৪, ইসলামীক সেন্টার ১০৬৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মসজিদে নাববী নির্মাণ করা হয়েছিল ইট ও খেজুর পাতা দ্বারা। মুজাহিদ বলেন, তার খুঁটি ছিল খেজুর কাঠের। আবূ বাকর (রাঃ) (স্বীয় শাসনামলে) মাসজিদকে সম্প্রসারণ করেননি। তবে ‘উমার (রাঃ) সম্প্রসারণ করেছেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগের ভিত্তির উপরই তিনি ইট ও খেজুর পাতা দিয়ে তা নির্মাণ করান এবং নতুন কিছু স্তম্ভ স্থাপন করেন। মুজাহিদ বলেন, তার স্তম্ভ ছিল খেজুর কাঠের। পরে ‘উসমান (রাঃ) তা পরিবর্তন করে মাসজিদকে অনেক সম্প্রসারিত করেন। তিনি নকশাযুক্ত পাথর ও চুনা দিয়ে তার দেয়াল তৈরি করেন, নকশাযুক্ত পাথর খচিত খুঁটি নির্মাণ করেন এবং ছাদ নির্মাণ করেন সেগুন কাঠ দ্বারা। মুজাহিদ বলেন, তার ছাদ ছিল সেগুন কাঠের। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, (الْقَصَّةُ) হলো চুন বা প্লাস্টার। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৬, আহমাদ (২/১৩০), ইবনু খুযাইমাহ (১৩২৪), আধুনিক প্রকাশনী ৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাঠের মিম্বার তৈরি ও মাসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ

সাহাল (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয় যাতে আমি বসতে পারি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৮, ৪৪৯ ৩৭৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৯ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বাড়ি বা পাড়া-মহল্লায় মসজিদ নির্মান

ইতবান ইবনু মালিক আস-সালিমী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন তাঁর গোত্র বনু সালিমের মসজিদের ইমাম এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং সয়লাবের কারণে আমার ঘর ও আমার গোত্রের মসজিদের মধ্যকার নালাটি পানিপূর্ণ হয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তা পার হয়ে আসা-যাওয়া আমার জন্য বেশি কষ্টকর। আপনি যদি মনে করেন, আমার বাড়িতে এসে আপনি একটা স্থানে সালাত পড়বেন, যাকে আমি সালাতের স্থান বানাতে পারি, তাহলে তাই করুন। তিনি বলেনঃ আচ্ছা! তাই করবো।

পরের দিন দুপুরের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) আমার বাড়িতে আসেন এবং ভিতরে আসার অনুমতি চান। আমি তাঁকে ভিতর বাড়িতে আসার অনুমতি দিলাম। কিন্তু তিনি না বসে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গায় তোমার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমার সালাত পড়া তুমি পছন্দ করো? আমি ঘরের যে স্থানে আমার সালাত পড়া পছন্দ করি সেই জায়গাটি তাঁকে ইশারায় দেখিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়ালেন এবং আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাদের নিয়ে দু রাকআত সালাত পড়েন। এরপর আমি তাঁকে খাযীরা (এক প্রকার খাদ্য) খাওয়ারনো জন্য অপেক্ষা করালাম, যা তাঁদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৫৪-৭৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৪-২৫, ৬৬৭, ৬৮৬, ৮৩৮, ৮৪০, ৪০১০, ৫৪০১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩, নাসায়ী ৭৮৮, ৮৪৪, ১৩২৭; আহমাদ ২৩১২৬, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গীর্জা ভেঙ্গে মসজিদ বানানো জায়েজ

ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম। তাঁর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করলাম। তাঁর সাথে সালাত  আদায় করলাম। এরপর আমরা তাঁর কাছে আবেদন করলাম, আমাদের এলাকায় আমাদের একটি গির্জা আছে। এটাকে আমরা এখন কী করবো? আমরা তাঁর নিকট তাঁর উযূ করা কিছু পানি তাবাররুক হিসেবে চাইলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি আনালেন, উযূ  করলেন, কুলি করলেন এবং তা আমাদের জন্য একটি পাত্রে ঢাললেন। আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা রওনা হয়ে যাও। তোমরা যখন তোমাদের এলাকায় পৌঁছবে, তোমাদের গির্জাটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। গির্জার জায়গায় পানি ছিটিয়ে দিবে। তারপর একে মাসজিদ বানিয়ে নিবে। আমরা আবেদন করলাম, আমাদের এলাকা অনেক দূরে। ভীষণ খরা। পানি তো শুকিয়ে যাবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরও পানি মিশিয়ে এ পানি বাড়িয়ে নিবে। এ পানি তার পবিত্রতা ও বারাকাত বৃদ্ধি হওয়া ছাড়া কমাবে না।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৬, নাসায়ী ৭০১, আয্ যামারুল মুযতাত্বব ১/৪৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মসজিদের মাহাত্ম

মহান আল্লাহ বলেন, وأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّه  অর্থাৎ, আর মসজিদসমূহ আল্লাহর। (কুরআন মাজীদ ৭২/১৮)।

আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একজন ‘আলিম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ জায়গা সবচেয়ে উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব রইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যতক্ষণ জিবরীল (আঃ) আমীন না আসবেন আমি নীরব থাকবো। তিনি নীরব থাকলেন। এর মধ্যে জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিবরীল (আঃ) কে ঐ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আঃ) উত্তর দিলেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। তবে আমি আমার রবকে জিজ্ঞেস করবো। এরপর জিবরীল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আল্লাহর এত নিকটে গিয়েছিলাম যা কোন দিন আর যাইনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে হে জিবরীল? তিনি বললেন, তখন আমার ও তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হলো বাজার, আর সবচেয়ে উত্তম স্থান হলো মাসজিদ।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭৪১, ৬৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬০০, সহীহ আল জামি ১৬৭, তারগীব ১/১৩১, হাকিম ১/৭, ৮, আহমাদ ৪/৮১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাহাত্মপূর্ণ মসজিদসমূহ

 (ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যায় নাঃ

(১) মসজিদে হারাম,

(২) মসজিদে আক্বসা (আকসা) ও

(৩) আমার এই মাসজিদ (মসজিদে নাবাবী)।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৯-১৪১০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬১৭, ইরওয়াহ ২৩১-২৩৫, ১৪৩।, সহীহ আল জামি ৭৩৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদে হারাম ছাড়া, আমার এই মসজিদে সালাত আদায় করা অন্য জায়গায় এক হাজার রাক্‘আত সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৬৫-৩২৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯৪, নাসায়ী ৬৯৪, ২৮৯৯;  ২৮৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৪-১৪০৫,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২৫, দারেমী ১৪৫৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬২৫, আহমাদ ৭২১২, ৭৩৬৭, ৭৪৩২, ৭৬৭৬, ৭৬৮১, ৭৮৮৫, ৯৬৮০, ৯৭০১, ৯৭৬২, ৯৯০৫, ৯৯২৬, ১০০৯৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪৬১, ইরওয়াহ ৯৭১, আধুনিক প্রকাশনী ১১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১১১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যখানে আছে জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্যকার একটি বাগান। আর আমার মিম্বার হচ্ছে আমার হাওযে কাওসারের উপর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৯৬,১৮৮৮, ৬৫৮৮, ৭৩৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯১, মালিক ২১৪/৬৭১, তিরমিযী ৩৯১৬, আহমাদ ৭২২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫০, সহীহ আল জামি ৫৫৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উসাইদ ইবনু যুহাইর আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কুবা মসজিদে এক ওয়াক্ত সালাত পড়া একটি উমরার সমতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪১১, তিরমিযী ৩২৪, তালীকুর রগীব ১৩৮, ১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করলো, অতঃপর কুবা মসজিদে এসে এক ওয়াক্ত সালাত পড়লো, তার জন্য একটি উমরাহর সমান সাওয়াব রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪১২, নাসায়ী ৬৯৯, আহমাদ ১৫৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুলাইমান ইবনু দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহ্‌র কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেনঃ আল্লাহ্‌র হুকুমমত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিসে কেবলমাত্র সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রথম দুটি তাঁকে দান করা হযেছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৮, নাসায়ী ৬৯৩, আহমাদ ২৭৭৬২, তালীকুর রগীব ১৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মসজিদের সালাত অপেক্ষা আমার মসজিদের সালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ (ফাযীলাতপূর্ণ)। অন্যান্য মসজিদের সালাতের তুলনায় মাসজিদুল হারামের সালাত এক লক্ষ গুণ উত্তম (ফাযীলাতপূর্ণ)। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৬, আহমাদ ১৪২৮৪, ১৪৮৪৭, ইরওয়া ১৪৬, ১১২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ যে, এই ফযীলত মহিলাদের জন্য নয়। কারণ, তাদের জন্য স্বগৃহে নামায পড়াই উত্তম। যেমন নফল বা সুন্নত নামাযেও উক্ত সওয়াব নেই, কেননা, সুন্নত বা নফল নামায ঘরে পড়াই আফযল। অথবা মক্কা ও মদ্বীনার মহিলাদের জন্য তাদের স্বগৃহে এবং ঐ স্থানদ্বয়ে সুন্নত ও নফল নামায ঘরে পড়ার ফযীলত আরো অধিক। অল্লাহু আ’লাম।

প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসায় নামায পড়লে ৫০০ বা ১০০০ নামাযের সওয়াবের কথা কোন সহীহ হাদীসে আসে নি। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৯৩-২৯৪পৃ:)।

অবশ্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুলাইমান ইবনু দাঊদ (আলাইহিস সালাম) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহ্র কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেনঃ আল্লাহ্র হুকুমমত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিসে কেবলমাত্র সালাত পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: প্রথম দুটি তাঁকে দান করা হযেছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৮, নাসায়ী ৬৯৩, আহমাদ ২৭৭৬২, তালীকুর রগীব ১৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর এক বর্ণনা মতে তাতে ২৫০ নামাযের সওয়াব আছে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “বায়তুল মাকদিস অপেক্ষা আমার এই মসজিদে নামায চারগুণ উত্তম। আর তা হল শ্রেষ্ঠ নামাযের স্থান।” (হাকেম, মুস্তাদরাক ৪/৫০৯, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, ত্বা, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৬/২/৯৫৪)।

মসজিদ নির্মাণের ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, আল্লাহ যে সব গৃহ্‌কে (মর্যাদায়) উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা; যাদেরকে ব্যবসা-বানিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম এবং যাকাত প্রদান করা হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ ভীতি-বিহ্বল হয়ে পড়বে। (সুরা আন-নূর-২৪, আয়াত ৩৬-৩৭)।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌র নামের যিকিরের জন্য একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসা’দ তৈরি করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৩৫-৭৩৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৬-৭৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫০, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৩৬, আহমাদ ১২৭, ৩৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৮, দারেমী ১৪৩২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১২৯১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ্র জন্য টিড্ডির ঢিবির ন্যায় বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদে যাওয়ার মাহাত্ম

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল মসজিদে যাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রত্যেকবারে যাতায়াতের জন্য জান্নাতে একটি মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখবেন। চাই সে সকালে যাক কী সন্ধ্যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৯, আহমাদ ১০৬০৮, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২০৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৬৩৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৯৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা অন্ধকারে মসজিদে যায়।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭২১,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘরে অথবা (ব্যাস্ততার কারণে) কারো বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করার সাওয়াব পঁচিশ গুণ বেশী। কারণ কোন ব্যক্তি ভালো করে (সকল আদাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে) উযূ করে নিঃস্বার্থভাবে সালাত  আদায় করার জন্যই মসজিদে আসে। তার প্রতি ক্বদমের বিনিময়ে একটি সাওয়াবে তার মর্যাদা বেড়ে যায়, আর একটি গুনাহ কমে যায়। এভাবে মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত (চলতে থাকে)। সালাত আদায় শেষ করে যখন সে মুসল্লায় বসে থাকে, মালায়িকাহ্ অনবরত এ দু‘আ করতে থাকেঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তার ওপর রহমত বর্ষণ কর।’’ আর যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে সময়টা তার সালাতের সময়ের মধ্যেই পরিগণিত হবে।

আর এক বর্ণনার শব্দ হলো, ‘যখন কেউ মসজিদে গেল, আর সালাতের জন্য অবস্থান করলো সেখানে, তাহলে সে যেন সালাতেই রইল। আর মালায়িকার দু‘আর শব্দাবলী আরো বেশিঃ ‘‘হে আল্লাহ! এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। তার তওবা্ ক্ববূল কর’’। এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট না দেয় বা তার উযূ ছুটে না যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৭৮, ইসলামীক সেন্টার ১৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) সাহল ইবনু সা’দ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতের অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দেয়া হোক। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮০-৭৮১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭২১, ৭২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) তিনি আরো বলেন “যে ব্যক্তি কোন ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহে থেকে ওযু করে (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তির সওয়াব হয় ইহ্‌রাম বাঁধাহাজীর ন্যায়। আর যে ব্যক্তি কেবলমা¬ত্র চাশতের নামায পড়ার উদ্দেশ্যেই বের হয়, তার সওয়াব হয় উমরাকারীর সমান। এক নামাযের পর অপর নামায; যে দুয়ের মাঝে কোন অসার (পার্থিব) ক্রিয়াকলাপ না থাকে তা এমন আমল যা ইল্লিয়্যীনে (সৎলোকের সৎকর্মাদি লিপিবদ্ধ করার নিবন্ধ গ্রন্থে) লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান, সহিহ তারগিব ৩১৫নং)।

(চ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাসজিদ থেকে দূরে আরো দূরে বসবাসকারীর জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার রয়েছে।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৭৮২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫৬, আহমাদ (২/৩৫১, ৪২৮) ‘আবদ ইবনু হুমাইদ (১৪৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে সবচেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে ঐ ব্যক্তি দূরত্বের দিক দিয়ে যার বাড়ী সবচেয়ে বেশী দূরে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামা‘আতে সালাত  আদায় করার জন্য মসজিদে গিয়ে অপেক্ষা করে, তার সাওয়াবও ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী হবে যে মসজিদের নিকটে থাকে এবং তাড়াতাড়ি সালাত আদায় করেই ঘুমিয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬২, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৫০১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) জাবির (রাঃ) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হলো। এতে বানূ সালিমাহ্ গোত্র মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হয়ে আসতে চাইলো। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলো। তিনি বানূ সালিমাহকে বললেন, খবর পেলাম, তোমরা নাকি জায়গা পরিবর্তন করে মসজিদের কাছে আসতে চাইছো? তারা বললো, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে বানূ সালিমাহ্! তোমাদের জায়গাতেই তোমরা অবস্থান কর। তোমাদের ‘আমলনামায় তোমাদের পায়ের চিহ্নগুলো লেখা হয়- এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’বার বললেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০০, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৬, ৬৫৫, আহমাদ ১১৬২২, ১২৪৬৫, ১৩৩৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪০৫-১৪০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬৫, আহমাদ ১৪৫৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৪২, সহীহ আল জামি ৭৮৯৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬১৬ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারদের বসতি মসজিদে নববী থেকে দূরে ছিল। তারা মসজিদের কাছাকাছি বসতি স্থানান্তরিত করতে চাইলে এ আয়াত নাযিল হয় (অনুবাদ) আমি লিখে রাখি যা তারা অগ্রে পাঠায় এবং যা তারা পিছনে রেখে যায় (সূরাহ ইয়াসীনঃ ১২)। রাবী বলেন, তখন তারা তাদের অবস্থানে বহাল থাকেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ট) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি আগামীতে কিয়ামতে মুসলিম হিসাবে আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হয়, যেখানে তার জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা এটাই হল হেদায়াতের উত্তম পন্থা। আর আল্লাহ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য হেদায়াতের পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমার জীবনের শপথ! তোমাদের সকলে যদি নিজ নিজ বাড়িতে সালাত পড়ো, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে।

আর তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে। অবশ্যই আমরা প্রকাশ্য মুনাফিক ব্যতীত অপর কাউকে সালাতের জামাআত ত্যাগ করতে দেখতাম না। আমি এমন ব্যাক্তিকেও দেখেছি, যিনি দু ব্যাক্তির কাঁধে ভর করে জামাআতের কাতারে শারীক হতেন। যে ব্যাক্তি উত্তমরূপে উযূ করে মসজিদে উপস্থিত হয়ে সালাত পড়ে, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার এক ধাপ মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি গুনাহ মুছে দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৭৩-১৩৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫০, আহমাদ ৩৫৫৪, দারিমী ১২৭৭, ইরওয়াহ ৩৮৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদের প্রতি আসক্তি ও মসজিদে অবস্থানের ফযীলত

(ক) মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, নি:সন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা সৎপথপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হবে। (কুরআন মাজীদ ৯/১৮)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ

(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক,

(২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ‘ইবাদাতে কাটিয়েছে,

(৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে,

(৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়,

(৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে,

(৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি,

(৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৩৯১, নাসায়ী ৫৩৮০, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযূ করার পর কেবল সালাত পড়ার উদ্দেশেই মসজিদে আসে, আল্লাহ তার প্রতি কদমের বিনিময়ে তার একটি ধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ মুছে দেন যাবত না সে মসজিদে প্রবেশ করে। মসজিদে প্রবেশ করার পর সে যতক্ষণ সালাতের জন্য সেখানে অবস্থান করে, ততক্ষণ সালাতরত হিসাবেই গণ্য হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৪,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯৯৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৭; সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৬০৩, নাসায়ী ৭০৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১২৯৪, আধুনিক প্রকাশনী ৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের কথা বলে দিবো না, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের গুনাহরাশি ক্ষমা করবেন এবং সওয়াবের পরিধিও বাড়িয়ে দিবেন? তারা বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি বলেনঃ কষ্টের সময় পূর্ণরূপে উযূ করা, মাসজিদসমূহের দিকে বেশি বেশি কদম রাখা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের অপেক্ষায় থাকা। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৬, আহমাদ ১০৬১১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত তার সালাত আদায়ের স্থানে (জায়নামাযে) বসে থাকে ততক্ষণ মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) তার জন্য দু‘আ করতে থাকেন। তার অযু নষ্ট হওয়া অথবা উঠে চলে যাওয়া পর্যন্ত মালায়িকাহ্ এই বলে দু‘আ করতে থাকেনঃ ‘হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৯-৪৭১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৫, ১৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত আদায়েরত ব্যক্তি হিসেবেই গণ্য হবে, যতক্ষণ সালাত (অর্থাৎ সালাতের অপেক্ষা) তাকে আটকে রাখবে। তাকে তো তার পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে যেতে কেবল সালাতই বারণ করছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কোন উদ্দেশে মসজিদে এলে, সে ঐ উদ্দেশ্য অনুপাতেই (প্রতিদান) পাবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩০, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(জ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে আমার এই মসজিদে আসে এবং শুধু ভালো কাজের উদ্দেশেই আসে, হয় সে ‘ইলম শিক্ষা দেয় অথবা নিজে শিখে, সে আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশে আসে সে হলো ঐ ব্যক্তির মতো যে অন্যের জিনিসকে হিংসার চোখে দেখে (কিন্তু ভোগ করতে পারে না)।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪২,  সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭, সহীহ আত্ তারগীব ৮৭, বায়হাক্বীর শু‘আবুল ঈমান ১৫৭৫, আহমাদ ৯১৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আয়িশ, ইবন ‘আব্বাস ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। আর এতে আরো আছেঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন (অর্থাৎ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আসমান ও জমিনের জ্ঞান দেয়ার পর জিজ্ঞেস করলেন), হে মুহাম্মাদ! আপনি কি জানেন ‘‘মালা-উল আ‘লা-’’ কী বিষয়ে তর্ক করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ! জানি, ‘কাফফারাহ্’ নিয়ে তর্কবিতর্ক করছে। আর এই কাফফারাহ্ হলো, সালাতের পর মসজিদে আর এক সালাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা বা যিকর-আযকার করার জন্য বসে থাকা। জামা‘আতে সালাত আদায় করার জন্য পায়ে হেঁটে চলে যাওয়া। কঠিন সময়ে (যেমন অসুস্থ বা শীতের মৌসুমে) উযূর স্থানে ভালো করে পানি পৌঁছানো। যারা এভাবে উল্লিখিত ‘আমলগুলো করলো কল্যাণের উপর বেঁচে থাকবে, কল্যাণের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর তার গুনাহসমূহ হতে এমনভাবে পাক-পবিত্র হয়ে যাবে যেমন আজই তার মা তাকে প্রসব করেছে।

আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! সালাত আদায় শেষ করার পর এ দু‘আটি পড়ে নিবেঃ

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ফি‘লাল খয়র-তি ওয়াতারকাল মুনকার-তি ওয়া হুববাল মাসা-কীনি ফায়িযা- আরাত্তা বি‘ইবা-দিকা ফিতনাতান্ ফাক্ববিযনী ইলায়কা গয়রা মাফতূন’’-

(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ‘নেক কাজ’ করার, ‘বদ কাজ’ ছাড়ার, গরীব-মিসকীনদের বন্ধুত্বের আবেদন করছি। যখন তুমি বান্দাদের মধ্যে পথভ্রষ্টতা ফিত্‌নাহ্-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করবে তখন আমাকে ফিতনামুক্ত রেখে তোমার কাছে উঠিয়ে নিবে।)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, ‘দারাজাত’ হলো সালামের প্রসার করা, গরীবকে খাবার দেয়া, রাতে মানুষ যখন ঘুমে থাকে তখন সালাত আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭২৬, ৭৪৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২৩৩, আয যিলা-ল (৩৮৮), তা’লীকুর রাগীব (১/৯৮, ১২৬/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। (১) যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হয়েছে সে আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে, যে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে উঠিয়ে না নেন এবং জান্নাতে প্রবেশ না করান। অথবা তাকে ফিরিয়ে আনেন, যে সাওয়াব বা যে গনীমাতের মাল সে যুদ্ধে লাভ করেছে তার সাথে। (২) যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করেছে সে আল্লাহর দায়িত্বে রয়েছে এবং (৩) যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে, সে আল্লাহর জিম্মাদারীতে রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭২৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৪৯৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩২১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদে যাওয়ার আদব

ওযু করে মসজিদে যাওয়ার সময় আঙ্গুলসমূহের মাঝে খাঁজাখাঁজি করা নিষিদ্ধ।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইকামত শুরু হলে তোমরা তার জন্য দ্রুত বেগে আসবে না, বরং ধীরে সুস্থে হেঁটে আসবে। এরপর সালাতের যতটুকু পাও তা পড়ো এবং যতটুকু ছুটে যায় তা পূর্ণ করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬০১-৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৩৬, ৯০৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৭২-৭৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২৭, দারেমী ১৩১৯, নাসায়ী ৮৬১, আহমাদ ৭১৮৯, ৭২০৯, ৭২১১, ৭৬০৬, ২৭৪৪৫, ৮৭৪০, ৮৭৮৪, ৮৭৯৪, ৯২৩০, ৯৫২৫, ৯৬১৪, ৯৭৫৩, ৯৯৬৭, ১০৪৬৬, ১০৫১২; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদ যাওয়ার সময় পথে নিম্নের দুআ পড়তে হয়

``আল্লাহুম্মাজ্‌আল ফী ক্বালবী নূরা, অফী লিসানী নূরা, অজ্‌আল ফী সাময়ী নূরা,অজ্‌আল ফী বাস্বারী নূরা, অজ্‌আল মিন খালফী নূরা, অমিন আমা-মী নূরা, অজ্‌আল মিন ফাউক্বী নূরা, অমিন তাহ্‌তী নূরা, আল্লাহুম্মা আ’তিনী নূরা।“

অর্থ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়, রসনা, কর্ণ, চক্ষু, পশ্চাত, সম্মুখ, ঊর্ধ্ব ও নিম্নে জ্যোতি প্রদান কর। হে আল্লাহ! আমাকে নূর (জ্যোতি) দান কর। (বুখারী ৬৩১৬, মুসলিম, সহীহ ৭৬৩ নং)

মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় দুআ

ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমতিকা।”

“হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।

যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের (নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ

“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা ফাদলিকা।” 

(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭১, আহমাদ ২৫৮৭৭-৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে:

"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"

যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে:

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা”

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৫৩৭-১৫৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৩, দারিমী ২৬৯, ১৩৯৪, ২৬৯১, আহমাদ (৩/১৯৭), ইবনুস-সুন্নী ৮৮, নাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৫৬২৭, ২৩০৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫২২, ইসলামীক সেন্টার ১৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 তিনি মসজিদে প্রবেশের সময় নিম্নের দুআও পড়তেন,

 “আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্‌হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম”।

অর্থ-আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

উক্ত দুআ পড়ে মসজিদ প্রবেশ করলে শয়তান বলে, ‘সারা দিন ও আমার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করল।’

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মহান আল্লাহর মর্যাদাপূর্ণ চেহারার ও তাঁর অফুরন্ত ক্ষমতায় বিতাড়িত শায়ত্বন (শয়তান) হতে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শায়ত্বন (শয়তান) বলে, আমার নিকট হতে সে সারা দিনের জন্য রক্ষা পেয়ে গেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬০৬, নাসায়ী ২৯৩, দারিমী (১৩৭৬), আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বের হওয়ার সময় বলতেন,

‘বিসমিল্লাহ্‌’ ও দরুদের পর এ দুআও পড়া যায়,

উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান।

অর্থ:- হে আল্লাহ! আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা কর।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ

"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"

হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ

”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”

হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা করুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘এক সুন্নাহ্‌ (নবী (সাঃ) এর তরীকা) এই যে, যখন তুমি মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন ডান পা আগে বাড়াবে এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখন বাম পা আগে বাড়াবে।’ (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২১৮)।

মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন স্বরে তাদেরকে সালাম করবেন।

(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো-)

(১) কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে,

(২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে,

(৩) সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভাল উপদেশ দিবে,

(৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে, তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলে) রহমতের দু’আ করবে,

(৫) সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং

(৬) সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে যাবে।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মাজলিসে পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়, তবে বসে পড়বে। অতঃপর যখন প্রস্থানের উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের চেয়ে উত্তম নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৬০, তিরমিযী ২৭০৬, আবূ দাঊদ ৫২০৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭০৭, আহমাদ ৯৬৬৪, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০১৭৪, আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২০২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুস্ সগীর ১০৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ধারাবাহিকভাবে সংক্ষেপে আলোচনাঃ

(ক) ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ, প্রবেশের দোয়া পাঠ ও নিম্নস্বরে সালাম প্রদান করবেন।

দরুদঃ

(ক) ‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম ৩/১৭ হাঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনী ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অথবা-

(খ) আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ!

(আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।

আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম৩/১৭, আহমাদ ২৩৬৬১, আধুনিক প্রকাশনী ৩১১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) এরপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করবেন।

প্রবেশের দোয়া-

“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমতিকা”

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।

অথবা-

"আল্ল-হুম্মাফ তাহলী আবওয়া-বা রহমতিক"

হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।

এরপর নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন-

“আঊযু বিল্লা-হিল আযীম, অবিঅজ্‌হিহিল কারীম, অ সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীম, মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম”।

অর্থ- আমি মহিমময় আল্লাহর নিকট এবং তার সম্মানিত চেহারা ও তাঁর প্রাচীন পরাক্রমের অসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

(গ) তারপর নিম্নস্বরে সালাম দিবেন।

(ঘ) মসজিদ থেকে প্রস্থানের সময় আবারও রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া পাঠ, সালাম প্রদান করে বাম পা দিয়ে বের হবেন।

দরুদ-ঐ

বাহির হওয়ার দোয়া-

“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা ফাদলিকা।”

(হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)।

অথবা-

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা”

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”।

এরপর বলবেন-

”আল্লাহুম্মা’সিমনী মিনাশ শাইত্বান”

হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা করুন।

তারপর নিম্নস্বরে সালাদ প্রদান ও বাম পা দিয়ে মসজিদ থেকে বের হবেন।

তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায

তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা মসজিদ সেলামীর নামায (২ রাক্‌আত) মসজিদ প্রবেশ করার পর বসার পূর্বেই পড়তে হয়। এর জন্য কোন সময়-অসময় নেই।

(ক) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্‘আত সালাত  আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৪, ১১৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪, নাসায়ী ৭৩০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩১৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১০১৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬৭, ইরওয়া ৪৬৭, আহমাদ ২২০১৭, ২২০২৩, ২২০৭২, ২২০৮৮, ২২১৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৮৮, দারিমী ১৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্‘আত (নফল) সালাত আদায় করে নেয়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৩৫, ইবনু হিব্বান ২৫০০, আহমাদ ১৪৪০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে দিনের সকালের দিক ছাড়া আগমন করতেন না। আগমন করেই তিনি প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করতেন। দু’ রাক্‘আত সালাত  আদায় করতেন, তারপর সেখানে বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৪৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৭৭৩, আহমাদ ১৫৭৭৫, নাসায়ী ৭৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলাম। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। রাবী মিস‘আর (রাযি.) বলেনঃ আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহ.) চাশতের সময়ের কথা বলেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’ রাক‘আত সালাত আদায় কর। জাবির (রাযি.) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা আদায় করে দিলেন বরং কিছু বেশী দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৩, ১৮০১, ২০৯৭, ২৩০৯, ২৩৮৫, ২৩৯৪, ২৪০৬, ২৪৭০, ২৬০৩, ২৬০৪, ২৭১৮, ২৮৬১, ২৯৬৭, ৩০৮৭, ৩০৮৯, ৩০৯০, ৪০৫২, ৫০৭৯, ৫০৮০, ৫২৪৩, ৫২৪৪, ৫২৪৫, ৫২৪৬, ৫২৪৭, ৫৩৬৭, ৬৩৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আযান চলাকালে মসজিদ প্রবেশ করলে না বসে আযানের জওয়াব দিয়ে শেষ করে তারপর ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ পড়তে হবে। তবে জুমআর দিন খুতবার আযান হলে জওয়াব না দিয়ে ঐ ২ রাকআত নামায আযান চলা অবস্থায় পড়ে নিতে হবে। যেহেতু খুতবা শোনা আরো জরুরী। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫)।

মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়তে হলে ঐ নামায আর পড়তে হয় না। কারণ, তখন এই সুন্নতই ওর স্থলাভিষিক্ত ও যথেষ্ট হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৫/৬৭, লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উসাইমীন ৫৩/৬৯)।

যেমন হারামের মসজিদে প্রবেশ করে (বিশেষ করে মুহ্‌রিমের জন্য) ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ হল তওয়াফ; ২ রাকআত সুন্নত নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬৪-২৬৫)।

উযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে সালাতের জায়গায় যতোক্ষণ বসে থাকবে ততোক্ষণ ফিরিস্তাগণ তার উপর দোয়া করতে থাকে

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে সালাতের পরে হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত আদায় করেছে সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার জন্যে দু‘আ করতে থাকেন। তাঁরা বলেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তার উপর রহম কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৫, ১৭৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৯২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদ হবে পবিত্র ও সুগন্ধময়

মসজিদ আল্লাহর ঘর। ইবাদতের জায়গা। তা হবে পবিত্র ও সুগন্ধময়।

(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাড়ায় পাড়ায় মাসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৫৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৫৮-৭৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৭, তিরমিযী ৫৯৪, ৫৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ২৭৯, আহমাদ (৫/১৭, ৬/২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে এ মর্মে পত্র লিখেন যে, অতঃপর জেনে রাখ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন এলাকায় এলাকায় মাসজিদ নির্মাণ করি এবং তা ঠিকঠাক ও পরিচ্ছন্ন রাখি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫৬, আহমাদ (৫/১৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই এই মসজিদসমূহে কোন প্রকার নোংরা, পেশাব-পায়খানা (ইত্যাদি ময়লা দ্বারা অপবিত্র করা) সঙ্গত নয়। মসজিদ তো কুরআন পাঠ, আল্লাহর যিক্‌র এবং নামাযের জন্য (বানানো হয়)। (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, জামে ২২৬৮নং) তিনি মসজিদের দরজায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (জামে ৬৮১৩ নং)।

ঋতুমতী মহিলা প্রভৃতি অপবিত্রের জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ নয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪৩১নং)

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৩৯-১৯৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাঁচা পিঁয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে আসা নিষেধ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধময় গাছের (পেঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) কষ্ট পান যেসব জিনিসে মানুষ কষ্ট পায়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৫৪, ৮৫৫, ৫৪৫২, ৭৩৫৯;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৩৯-১১৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৬৫, ইবনু হিব্বান ২০৮৬, আহমাদ ১৫০১৪, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৬৬৮, মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি ৫৬৪, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, ইত্যাদি দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু খাবে, সে ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা কঠোরতার সহিত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে সে তার দুর্গন্ধের দ্বারা অন্য মুসল্লিদেরকে কষ্ট না দেয়। কেননা যে ব্যক্তি নিজের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদেরকে কষ্ট দেয়, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ফেরেশতাগণকেই কষ্ট দিয়ে থাকে।

(২) যে ব্যক্তির শরীরের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদের কষ্ট হবে, সে ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়। সুতরাং দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তির শরীরের মধ্যে ধুমপান অথবা বিড়ি, সিগারেট, তামাক ইত্যাদির দুর্গন্ধ থাকবে অথবা তার শরীরের পোশাক, জামাকাপড়, কিংবা পায়ের মোজা দুর্গন্ধযুক্ত  হবে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। তাই মুসল্লি ব্যক্তি যেন মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে নিজের শরীর, শরীরের পোশাক, জামাকাপড় ইত্যাদি ভালোভাবে দেখে নেয় বা পরিদর্শন নেয়। যাতে সে মাসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদেরকে এবং ফেরেশতাগণকে কষ্ট না দেয়। আর পুণ্যের বদলে পাপকারী না হয়ে যায়।

(৩) এই হাদীসটি মুসলিম ব্যক্তিকে এই বিষয়টির প্রতি উৎসাহ প্রদান করে যে, সে যেন মাসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ব অনুভব করে এবং মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার সময় এবং নামাজ পড়ার সময় সুসজ্জিত হয়ে মাসজিদে প্রবেশ করে। সুতরাং সে মাসজিদে যাওয়ার পূর্বে পবিত্রতার্জন করবে, বিশুদ্ধতা বজায় রাখবে, দরকারে যত্নসহকারে ওজু ও গোসল বা স্নান করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, প্রসাধন করবে এবং সুসজ্জিত হয়ে পরিষ্কার ও সুন্দর কাপড় পরিধান করবে। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করবে।

বলাই বাহুল্য যে, কাঁচা পিঁয়াজ-রসুন অপেক্ষা বিড়ি-সিগারেট, গুল-জর্দা, গালি-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্যের দুর্গন্ধ আরো বেশী। সুতরাং তা খেয়েও মসজিদে এসে মুসল্লী তথা আল্লাহর ফিরিশ্‌তাদেরকে কষ্ট দেওয়া বৈধ নয়। বরং এসব বস্তু খাওয়াইহারাম এবং তা বর্জন করা ওয়াজেব।

রসুন পিয়াজ পাকিয়ে খাওয়া জায়েজ

মু‘আবিয়াহ্ ইবনু কুররাহ্ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি গাছ অর্থাৎ- পিঁয়াজ ও রসূন খেতে নিষেধ করেছেন। যে তা খাবে সে যেন আমাদের মসজিদের কাছে না আসে। তিনি আরো বলেছেন, যদি তোমাদের একান্তই খেতে হয় তবে তা পাকিয়ে দুর্গন্ধ দূর করে খাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৮২৭, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩১০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদে থুথু ফেলা নিষেধ

(ক) আবূ হুরাইরাহ ও আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেয়ালে থুথু বা কফ দেখতে পেলেন তিনি একটি কাঁকর তুলে নিয়ে তা দিয়ে থুথু (কফ) মুছে ফেলেন, অতঃপর বলেনঃ তোমাদের কেউ থুথু ফেলতে চাইলে সে যেন তা তার সামনের দিকে এবং তার ডান দিকে না ফেলে, বরং তার বাম দিকে বা তার বাম পায়ের নিচে ফেলে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৬১, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)  ৪০৮, ৪০৯, ৪১০, ৪১১, ৪১৪, ৪১৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৮-৫০, নাসায়ী ৩০৯, ৭২৫; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৭, ৪৮০; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১০, আহমাদ ৭৩৫৭, ৭৪৭৮, ৭৫৫৪, ২৭৪৫৩, ৮০৯৮, ৯১০২, ৯৭৪৬, ১০৫০৮, ১০৬৪২, ১০৬৮০, ১০৮০১, ১১১৫৬, ১১২৩০, ১১৪২৭, ১১৪৬৯; দারিমী ১৩৯৮, মাজাহ ১০২২, সহীহাহ ২৭৪, ইরওয়াহ ১৮৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুথু নিক্ষেপ না করে; বরং তার বামে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১২, ২৪১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ত্বারিক্ব ইবনু ‘আব্দুল্লাহ আল-মুহারিবী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সালাতে দাঁড়ালে বা সালাত আদায়কালে যেন তার সামনে অথবা ডান দিকে থু থু না ফেলে। অবশ্য বাম দিকে (ফাঁকা) জায়গা থাকলে সেদিকে থু থু ফেলবে অথবা বাম পায়ের নিচে থু থু ফেলে তা ঘষে মুছে ফেলবে।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৭১, নাসায়ী ৭২৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১০২১, আহমাদ (৬/৩৯৬) ইবনু খুযাইমাহ (৮৭৬, ৮৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ। (যদি কেউ ফেলে) তার ক্ষতিপূরণ হলো ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে ফেলা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭০৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৪-৪৭৬, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৮-১১২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫৭২, আহমাদ ১৩৯০৬, দারেমী ১৪৩৫, সহীহ আল জামি ২৮৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।  

(ঙ) মুত্বাররিফ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে দেখতে পেলাম, তিনি সালাত আদায়কালে স্বীয় বাম পায়ের নিচে থু থু ফেললেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৮২, আহমাদ (৪/২৫), ইবনু খুযাইমাহ (৮৭৯) ।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের ভালোমন্দ সকল ‘আমল আমার কাছে উপস্থিত করা হলো। তখন আমি তাদের ভালো কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম-রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস ফেলে দেয়া। আর মন্দ কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম, কফ পুঁতে না ফেলে মসজিদে ফেলে রাখা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৩, আহমাদ ২১৫৪৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৪১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদের ভিতর কেবলার দিকে থুথু ফেলা নিষেধ

(ক) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিবলাহর দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর নিকট কষ্টদায়ক মনে হলো। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলাহর মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যেন ক্বিবলাহর দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে। অতঃপর চাদরের আঁচল নিয়ে তাতে তিনি থুথু ফেললেন এবং তার এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এমন করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০৫, ৪১৩, ৪১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬২,৭৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৬, সহীহ আল জামি ১৫৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৬৭, আহমাদ ১২৮০৯, নাসায়ী ৭২৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬, সহীহাহ ৩০৫০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরের ডাল পছন্দ করতেন এবং তাঁর হাতে সর্বদা (প্রায়ই) এর একটি লাঠি থাকত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করে মসজিদের ক্বিবলার দিকে শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে তা ঘষে তুলে ফেললেন। অতঃপর রাগান্বিত হয়ে লোকদের দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমাদের কারো মুখে থু থু ফেললে সে কি তাতে খুশি হবে? জেনে রাখ, তোমাদের কেউ যখন ক্বিবলা মুখী হয়ে (সালাতে) দাঁড়ায়, তখন সে মূলত সম্মানিত মহান আল্লাহর দিকেই মুখ করে দাঁড়ায়। আর মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) তখন তার ডান দিকে থাকেন। কাজেই কেউ যেন ডানদিকে ও ক্বিবলার দিকে থু থু না ফেলে, বরং বাম দিকে অথবা পায়ে নীচে ফেলে। যদি হঠাৎ শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে (তাড়াতাড়ির প্রয়োজন হয়), তাহলে কাপড়ে এরূপ করবে। ইবনু ‘আজলান ফেলার পদ্ধতি বর্ণনা সম্পর্কে বলেন, নিজের কাপড়ে থু থু ফেলে কাপড়ের একাংশকে অপর অংশের উপর কচ্লাবে (উলট-পালট করে নেবে)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৪১৪, ৪১৬, আহমাদ (২/২৩৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) ‘উবাদাহ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে দেখা করতে আসি। সে সময় তিনি তার মসজিদে ছিলেন। তিনি বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু তাব নামক এক প্রকার খেজুরের ডাল হাতে নিয়ে আমাদের এই মসজিদে আসলেন। তিনি তাকিয়ে মসজিদের ক্বিবলার দিকে শ্লেষ্মা দেখতে পেয়ে সেখানে এগিয়ে গেলেন এবং ডালটি দ্বারা তা তুলে ফেলেন। অতঃপর বলেনঃ তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন।

তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন আল্লাহ তার সামনেই থাকেন। তাই কেউ যেন নিজের সম্মুখে ও ডান দিকে থু থু না ফেলে, বরং যেন বামদিকে (কিংবা) বাম পায়ের নিচে ফেলে। আর যদি হঠাৎ শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে (তাড়াতাড়ির প্রয়োজন হয়) তাহলে এরূপ করবে। এই বলে তিনি মুখের উপর কাপড় রেখে তা রগড়িয়ে বললেনঃ ‘আবির (এক ধরনের সুগন্ধি) নিয়ে এসো। জনৈক যুবক দাঁড়াল, এবং দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে হাতে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে ডালের মাথায় লাগিয়ে শে¬ষ্মা লেগে থাকার স্থানে ঘষে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, এ কারণেই তোমরা মসজিদে সুগন্ধি ব্যবহার করে থাক। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কিবলার দিকে থুথু দেখতে পান। তখন তিনি লোকেদের নিয়ে সালাত পড়ছিলেন তিনি তা মুছে ফেলেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাতে রত থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। অতএব তোমাদের কেউ যেন সালাতরত অবস্থায় তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০৬, ৪০৭, ৭৫৩, ১২১৩, ৬১১১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১১০-১১১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৪৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৯, নাসায়ী ৭২৪, আহমাদ ৪৪৯৫, ৪৬৭০, ৪৮২৬, ৪৮৬২, ৪৮৯০, ৫১৩০, ৫৩১৩, ৫৩৮৫, ৫৭১১, ৬২২৯, ৬২৭০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪৫৬, দারিমী ১৩৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম মসজিদের ভিতর কিবলার দিকে থুথু ফেললে তাকে ইমামতি করতে না দেয়া

আবূ সাহলা আস-সাইব ইবনু খালেদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, তিনি ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতিকালে ক্বিবলার দিকে থু থু ফেললে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা লক্ষ্য করলেন। লোকটি সালাত শেষ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে) বললেনঃ এই ব্যক্তিকে দিয়ে তোমাদের সালাত আদায় করাবে না (আর ইমামতি করবে না)। পরবর্তীতে লোকটি তাদের ইমামতি করতে চাইলে তারা তাকে নিষেধ করে এবং তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিও অবহিত করে। অতঃপর লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয় অবহিত করলে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাও বলেছেনঃ তুমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দিয়েছ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৭, সহীহ আত্ তারগীব ২৮৮, আহমাদ (৪/৫৬) । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কিবলার দিকে কফ্ ফেললে তার পরকালীন শাস্তি

ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিবলার দিকে যে কফ্ ফেলে তার চেহারায় ঐ কফ্ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে।

[বলা বাহুল্য সালাত ছাড়া অন্যান্য অবস্থাতেও কেবলার দিকে থুথু বা কফ্ ফেলা বৈধ নয়।] (হাদীস সম্ভার, ৫৮৯, বাযযার ৫৯০৪, ইবনে খুযাইমাহ ১৩১৩, ইবনে হিব্বান ১৬৩৮, সহীহ তারগীব ২৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদে প্রস্রাব এবং অন্যান্য নাপাকী পড়লে তা ধুয়ে ফেলা জরুরী। আর পানি দ্বারাই মাটি পবিত্র হয়, কুঁড়ে ফেলার প্রয়োজন পড়ে না।

যুহারর বিন হারব (রহঃ).....ইসহাকের চাচা আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল, তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ থামো থামো’ বলে তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিলেন। আনাস বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাকে বাধা দিও না, বরং তাকে ছেড়ে দাও লোকেরা তাকে ছেড়ে দিল, সে প্রস্রাব সেরে নিল।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কাছে ডেকে বললেনঃ এটা হলো মাসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হল আল্লাহর যিকর করা, সালাত আদায় করা এবং কুরআন পাঠ করার স্থান। অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটা যেভাবে বলেছেন তাই আনাস বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে এক বালতি পানি আনে আদেশ করলেন। সে এক বালতি পানি আনলে তিনি তা প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৫২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নারীদের মসজিদে যাতায়াতে বারণ না করা

(ক) ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাযি.)-এর স্ত্রী (আতিকাহ্ বিনত যায়দ) ফজর ও ‘ইশার সালাতের জামা‘আতে মসজিদে হাযির হতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, ‘উমার (রাযি.) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে কিসে বাধা দিচ্ছে যে, ‘উমার (রাযি.) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০০, ৮৬৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৭৪-৮৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪২,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬৬-৬৭, আহমাদ ৪৬৫৫, আধুনিক প্রকাশনী ৮৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৫৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মহিলাদেরকে রাতের বেলা মসজিদে যেতে অনুমতি দাও। তখন তার এক ছেলে (বিলাল) বলল, আল্লাহর শপথ! আমি তাদেরকে (রাতের বেলা মসজিদে যেতে) অনুমতি দিব না। এটাকে তারা বাহানা হিসেবে গ্রহণ করবে। আল্লাহর শপথ! আমি কখনো তাদেরকে অনুমতি দিব না। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে গালমন্দ করেন এবং ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন, আমি তোমাকে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মহিলাদের অনুমতি দাও, আর তুমি কিনা বলছ, আমি তাদেরকে অনুমতি দিব না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬৮, বুখারী ৮৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা যদি এ দরজাটি কেবল মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই, তবে ভালই হয়। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, অতঃপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত ঐ দরজা দিয়ে আর কখনো মসজিদে প্রবেশ করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬২-৬৩, ৫৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহিলাদের জন্য মাসজিদে গিয়ে জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার বিষয়টি ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি বিষয়। যদিও তাদের বাড়ির ভিতরে নামাজ পড়া বেশি উত্তম। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করবে না, তবে তাদের জন্য তাদের বাড়িতেই নামাজ পড়া বেশি উত্তম”।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সালাত আদায়ের চাইতে তার গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সালাত আদায়ের চাইতে তার গোপন কামরায় সালাত আদায় করা অধিক উত্তম। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৭০, আহমাদ (৫৪৬৮), বায়হাক্বী (৯৩/১৩১), ইবনু খুযাইমাহ (১৬৮৮, ১৬৮৪, ১৬৯০), হাকিম (১/২০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২) উক্ত হাদীস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে, কোনো মহিলা যখন মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার জন্য তার স্বামীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে, তখন বিপদমুক্ত পরিবেশ থাকলে তার স্বামী যেন তাকে অনুমতি প্রদান করে।

(৩) কোনো মহিলার জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে সুসজ্জিতা হয়ে আতর বা সুগন্ধি মেখে মাসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। কেননা, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো মহিলা কোনো মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যেন সে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার না করে”।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর ঘরে (মসজিদে) যেতে নিষেধ করো না। তবে তারা বের হওয়ার সময় যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৬৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৮২-৮৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪৩, আহমাদ (২/৪৩৮, ৪৭৫, ৫২৮) দারিমী ১২৭৯, ইবনু খুযাইমাহ (১৬৭৭৯) হুমাইদী ‘মুসনাদ’ (৯৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আজকের মহিলাদের এরূপ অবস্থা দেখতেন (যেমন সুগন্ধি লাগানো, বেপর্দা চলা), তাহলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন। যেরূপ নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল বনী ইসরাঈলের মহিলাদের। বর্ণনাকারী ইয়াহ্ইয়াহ্ বলেন, আমি ‘আমরাহকে বললাম, বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৬৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪৫, আহমাদ ২৬০৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৭)) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সাঃ এর সময় মহিলাগণ মসজিদে নববী ও ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতেন।

নারীদের ও ঋতুমতীদের ‘ঈদগাহে যাওয়া

উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন (‘ঈদের সালাতের উদ্দেশে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাবার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হতো। আইয়ূব (রহ.) হতে হাফসাহ (রাযি.) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে, ‘ঈদগাহে ঋতুমতী নারীরা আলাদা থাকতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৭৪, ৩২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ‘ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত আদায় করলেন। অতঃপর খুৎবাহ দিলেন। অতঃপর নারীদের নিকট গিয়ে তাঁদের নাসীহাত করলেন এবং তাঁদেরকে সদাক্বাহ করার নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৭৫, ৯৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শাইখ বকর আবু যাইদ তার ‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’ (পৃ-৮৬) নামক গ্রন্থে নারীদের মসজিদে বের হওয়ার সকল শর্ত একত্রিত করেছেন। সেখানে তিনি বলেন:

“নিম্নোক্তবিধিবিধানের আলোকে মুসলিম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে:

(১) সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে আশংকামুক্ত হওয়া।

(২) তার সেখানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বিষয় সংঘটিত না হওয়া।

(৩) রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের সাথে ভিড় না করা।

(৪) সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়া।

(৫) পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করাযাতে কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।

(৬) নারীদের জন্য মসজিদের আলাদা প্রবেশপথ থাকা। যাতে নারীরাসে পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও বের হতে পারে।এই প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।

(৭) নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হওয়া।

(৮) নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো সর্বশেষ কাতার। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।

(৯) যদি ইমাম নামাযে কোন ব্যতিক্রম করে তবে পুরুষরা তাসবীহ পাঠ করবে এবং নারীরা ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর তালি দিয়ে শব্দ করবে।

(১০) নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্তপুরুষরা অপেক্ষা করবে।এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহরাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ বুখারীতে ও অন্যান্য কিতাবে হাদিস প্রমাণিত হয়েছে।”সমাপ্ত

মহিলাগণ মসজিদে সালাত আদায় করতে গেলে কোন কাতারে দাঁড়াবে

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে (সওয়াবের দিক থেকে) উত্তম হল শেষ কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ কাতার (কম সওয়াবের) হল তাদের প্রথম কাতার। পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল প্রথম কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ হল তাদের শেষ কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৭১-৮৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৪০, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২২৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৭৮,  নাসায়ী ৮২০,  আহমাদ ৭৩১৫, ৮২২৩, ৮২৮১, ৮৪৩০, ৮৫৮০, ৯৯১৭; দারিমী ১২৬৮, সহীহ তারগীব ৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল তাদের সামনের (প্রথম) কাতার এবং মন্দ হল তাদের পেছনের (শেষ) কাতার। মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল তাদের পেছনের (সর্বশেষ) কাতার এবং মন্দ হল তাদের সামনের কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০১, আহমাদ ১৩৭০৯, ১৪১৪১, ১৪৭৪১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

 (বর্তমানে নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে সালাত আদায় করে না। অনেক মসজিদে নারীদের আলাদা কক্ষ আছে। তবে যে মসজিদে আলাদা কক্ষ নেই সেই মসজিদে নারীগণ একদম শেষ কাতারে দাঁড়াবে আর এইটাই তাদের জন্যে উত্তম কাতার)।

মসজিদে যা অবৈধ

(১) মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজাঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শুনে অথবা দেখে মসজিদে এসে কেউ তার হারানো জিনিস খুঁজছে, সে যেন তার উত্তরে বলে, ‘আল্লাহ করুন তোমার হারানো জিনিস তুমি না পাও। কারণ হারানো জিনিস খুঁজবার জন্য এ ঘর তৈরি করা হয়নি।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১১৪৭-১১৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৬৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৭৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৬৭, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ১৬৫১, সহীহ আল জামি‘ ৬৩০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়লেন। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললো, কে লাল উটের খোঁজ দিতে পারে (আমার লাল উটটি হারিয়ে গেছে)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি যেন তা না পাও। মাসজিদ যে উদ্দেশে নির্মাণ করা হয়েছে তা সেই উদ্দেশেই ব্যবহৃত হবে।

(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৬৫-৭৬৭, আহমাদ ৫৬৯, ২২৫৩৫, সহীহ তারগীব ১৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৪১, ইসলামীক সেন্টার ১১৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

(ক) আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট ও পছন্দনীয় স্থান হলো মাসজিদ। সুতরাং প্রকৃত ইসলাম ধর্মে মাসজিদের মহামর্যাদা এবং মহাসম্মান রয়েছে। আর এই মহামর্যাদা এবং মহাসম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য।

(খ) মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে কোনো হারানো বস্তুর ঘোষণা দেওয়াও বৈধ নয়। যেহেতু এই কাজের জন্য মাসজিদ নির্মিত হয়নি। কেননা, পৃথিবীর মধ্যে মাসজিদ নির্মিত হয়েছে আল্লাহর জিকির, ইবাদত উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান প্রচার করার জন্য। তবে মাসজিদের বাইরের দেওয়াল বা প্রাচীরের বাইরের দিকে কিংবা দরজার বাইরের দিকে কোনো হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া জায়েজ আছে। এবং তাতে কোনো জটিলতা নেই। 

(গ) মাসজিদ নির্মিত হয়েছে আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তাই কোনো মাসজিদের মধ্যে মহান আল্লাহর ইবাদত উপাসনা ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুর ইবাদত উপাসনা করা জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে কোনো মাসজিদের মধ্যে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে প্রার্থনা করার জন্য ডাকা জায়েজ নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি নিষ্ঠাবান হয়ে মহান আল্লাহর উপাসনা করবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:

ভাবার্থের অনুবাদ: “মাসজিদসমূহ মহান আল্লাহর একত্ববাদ, উপাসনা এবং স্মরণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। অতএব, তোমরা মহান আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করে তাঁর সাথে কাউকে ডাকবে না”। (সূরা আল জিন, আয়াত নং ১৮)।

সুতরাং মাসজিদের মধ্যে হারানো বস্তু বা সম্পদের বিজ্ঞপ্তি অথবা ঘোষণা দেওয়া জায়েজ নয়। তাই যে ব্যক্তি কোনো লোককে মাসজিদে হারানো বস্তুর বিজ্ঞপ্তি অথবা ঘোষণা দিতে শুনবে, সে তার জন্য বদদোয়া করবে এবং বলবে, আল্লাহ তোমাকে তোমার হারানো বস্তু বা সম্পদ ফিরিয়ে না দেন। যাতে সে তার হারানো বস্তু বা সম্পদ না পায়। যেহেতু সে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক মাসজিদের সম্মান রক্ষা করার আদবকায়দার বিপরীত কাজ সম্পাদন করেছে। তারই শাস্তিস্বরূপ এসেছে এই বদ দোয়াটি।

(২) বেচা-কেনাঃ  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমার এ ব্যবসায়ে তোমাকে লাভবান না করুন। এভাবে কাউকে মসজিদে হারানো জিনিস অনুসন্ধান করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তা তোমাকে ফেরত না দিন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৩২১, ইরওয়া ১২৯৫, দারিমী ১৪৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) অসার, বাজে ও অশ্লীল কবিতা, গজল বা ছড়া পাঠঃ  ‘আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ) তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে, ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাতের পূর্বে গোল হয়ে বৃত্তাকারে বসতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৭৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অবশ্য বৈধ শ্রেণীর ইসলামী গজল পাঠ নিষিদ্ধ নয়। একদা হাসসান (রাঃ) মসজিদে কবিতা পাঠ করছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) প্রতিবাদের দৃষ্টিতে তাঁর প্রতি তাকালে তিনি বললেন, ‘আমি কবিতা পাঠ করতাম, আর তখন মসজিদে আপনার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি [নবী (সাঃ)] উপস্থিত থাকতেন।’ অতঃপর তিনি আবূ হুরাইরার দিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আপনি কি আল্লাহর রসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “(হে হাসসান! মুশরিকদেরকে) আমার তরফ থেকে (ওদের কবিতার) জবাব দাও। হে আল্লাহ! জিবরীল দ্বারা ওকে সাহায্য কর?” আবূ হুরাইরা বললেন, ‘জী হ্যাঁ, (আমি এ কথা শুনেছি)। (বুখারী ৪৫৩, মুসলিম, সহীহ ২৪৮৫ নং)।

(৪) হৈ-হাল্লা করা ও উচ্চস্বরে কথা বলাঃ সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে শুয়ে আছি, এমন সময় আমাকে একজন লোক কংকর মারলো। আমি জেগে উঠে দেখি তিনি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)। তিনি আমাকে বললেন, যাও- ঐ দু ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আসো। আমি তাদেরকে নিয়ে আসলাম। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন গোত্রের বা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা ত্বায়িফের লোক। ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি তোমরা মদীনার লোক হতে তাহলে আমি তোমাদেরকে নিশ্চয় কঠিন শাস্তি দিতাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মসজিদে তোমরা উচ্চস্বরে কথা বলছো।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭০, ৪৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০২৬৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম মালিক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) মসজিদে নাবাবীর পাশে একটি বড় চত্বর বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল ‘বুত্বায়হা’। তিনি লোকেদেরকে বলে রেখেছিলেন, যে ব্যক্তি বাজে কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করবে অথবা উঁচু কণ্ঠে কথা বলতে চায় সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৫, মালিক ৪২২)।

এমন কি কেউ নামায বা কুরআন পড়লে সেখানে সশব্দে কুরআন পাঠও করা যাবে না।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) এবং ‘আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) আহমাদ ৬০৯২, সহীহাহ্ ১০৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বলাই বাহুল্য যে, মসজিদের যে প্রতিবেশী অথবা অন্য লোক যে (মাইক, টেপ, রেডিও প্রভৃতির) শব্দ বা গান-বাজনা দ্বারা অথবা কোন রঙ-তামাশা দ্বারা মসজিদের পবিত্রতা-হানি করে এবং মসজিদে অবস্থিত নামাযীদের নামাযে, তেলাঅতে ও আল্লাহর যিক্‌রে ব্যাঘাত ও বাধা সৃষ্টি করে তার ভয় হওয়া উচিৎ। কারণ, মহান আল্লাহর সাধারণ উক্তি এই যে,

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্‌র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)।

(৫) হদ্দ্ (ইসলামী দন্ডবিধি; যেমন মদখোরকে চাবুক মারা, চোরের হাত কাটা, ব্যভিচারীকে কোড়া মারা প্রভৃতি) কায়েম করা। মহানবী (সাঃ) মসজিদে হদ্দ্ কায়েম করতে নিষেধ করেছেন।

হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ও তথায় কবিতা পাঠ ও হাদ্দ-এর শাস্তি কার্যকর করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯০, হাকেম, মুস্তাদরাক ৪/৩৬৯, আহমাদ, মুসনাদ ৩/৪৩৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৬) মসজিদে বসে দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলাঃ হাসান বসরী (রহঃ) হতে এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকদের গল্প-গুজবে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৩, বায়হাক্বী-এর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ ২৯৬২, হাকিম ৭৯১৬, সহীহাহ্ ১১৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, আধুনিক যুগের মোবাইল টেলিফোন বা ব্লিফার সঙ্গে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে তা বন্ধ করে দেওয়া জরুরী। কারণ, এ সবে যে রিং বা মিউজিকের শব্দ আছে তাতে মসজিদবাসীর ডিষ্টার্ব হয়ে থাকে।

মসজিদে যা করা বৈধ

এমন কতক কাজ আছে, যে সম্বন্ধে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, তা মসজিদে করা হয়তো বৈধ নয়। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ। যেমন;

(১) দ্বীনী কথাবার্তা, বৈধ আলোচনা, প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাঃ জাবের বিন সামুরাহ্‌ (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) ফজরের নামায পড়ে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত মুসাল্লা থেকে উঠতেন না। সূর্য উঠে গেলে তিনি উঠে যেতেন। ঐ অবসরে লোকেরা আপোসে কথা বলত। বলতে বলতে তারা ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াতের কথা শুরু করে দিত। এতে তারা হাসত এবং তিনিও মুচকি হাসতেন।’ (মুসলিম, সহীহ ৬৭০নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) [শব্দাবলী তার] ...... সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি (ফজরের সালাতের পর) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসতেন? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, অনেক দিন বসেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের যে জায়গায় ফজরের সালাত (অথবা বলেছেন ভোরের সালাত) আদায় করতেন সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে থেকে উঠতেন না। সূর্য উদিত হওয়ার পর তিনি সেখান থেকে উঠতেন। লোকজন তখন জাহিলী যুগের ঘটনাবলী সম্পর্কে আলোচনা করত। এসব ঘটনা আলোচনা করতে গিয়ে লোকজন হাসত আর তা দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪১১-১৪১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭০ ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৯৭, ইসলামীক সেন্টার ১৪০৯)। সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)।

অবশ্য নিছক দুনিয়াদারীর কথা বলা বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আখেরী যামানায় এমন এক শ্রেণীর লোক হবে, যারা মসজিদে গোল-বৈঠক করে পার্থিব ও সাংসারিক গল্প-গুজব করবে। সুতরাং তোমরা তাদের সাথে বসো না। কারণ, এমন লোকেদের নিয়ে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।” (ত্বাব, বায়হাকী, মিশকাত ৭৪৩, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১১৬৩ নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

হাসান বসরী (রহঃ) হতে এ হাদীসটি মুরসাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ মসজিদে বসে নিজেদের দুনিয়াদারীর কথাবার্তা বলবে। অতএব তোমরা এসব লোকদের গল্প-গুজবে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলার এমন লোকের প্রয়োজন নেই।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪৩, বায়হাক্বী-এর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ ২৯৬২, হাকিম ৭৯১৬, সহীহাহ্ ১১৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) খাওয়া-পান করাঃ আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে জাযই আয-যুবাইদী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদে বসে রুটি ও গোশত আহার করতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩০০, সহীহ আবু দাউদ ১৮৭, মুখতাসারুশ শামাইল ১৩৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে জিনিস খাওয়া হারাম, তা মসজিদে খাওয়া তথা সকল স্থানেই খাওয়া হারাম। মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে সে সব হারাম জিনিস সঙ্গে নিয়ে বা পকেটে রেখে মসজিদে যাওয়া বা নামায পড়াও বৈধ নয়। যেমন গুল, জর্দা, বিড়ি, সিগারেট, তামাক প্রভৃতি খাওয়া বৈধ নয়, বিধায় তা মসজিদে খাওয়া বা নিয়ে যাওয়া অবৈধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৫৮)।

মসজিদে কোন কিছু ভাগ করা ও দাওয়াত গ্রহণ

(ক) আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বাহরাইন হতে কিছু সম্পদ এলো। তিনি বললেনঃ এগুলো মসজিদে রেখে দাও। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ যাবত যত সম্পদ আনা হয়েছে তার মধ্যে এ সম্পদই ছিল পরিমাণে সবচে’ বেশী। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে চলে গেলেন এবং এর দিকে দৃষ্টি দিলেন না। সালাত শেষ করে তিনি এসে সম্পদের নিকট গিয়ে বসলেন। তিনি যাকেই দেখলেন, কিছু সম্পদ দিয়ে দিলেন। ইতোমধ্যে ‘আব্বাস (রাযি.) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকেও কিছু দিন। কারণ আমি নিজের ও ‘আকীলের (এ দু’জন বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের কয়েদী ছিলেন) পক্ষ হতে মুক্তিপণ দিয়েছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ নিয়ে যান। তিনি তা কাপড়ে ভরে নিলেন। অতঃপর তা উঠাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কাউকে বলুন, যেন আমাকে এটি উঠিয়ে দেয়। তিনি বললেন না। ‘আব্বাস (রাযি.) বললেনঃ তাহলে আপনি নিজেই তা তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। অতঃপর ‘আব্বাস (রাযি.) তা হতে কিছু সম্পদ রেখে দিলেন। অতঃপর পুনরায় তা তুলতে চেষ্টা করলেন। (এবারও তুলতে না পেরে) তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কাউকে আদেশ করুন যেন আমাকে তুলে দেয়। তিনি বললেনঃ না। ‘আব্বাস (রাযি.) বললেনঃ তাহলে আপনিই আমাকে তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। অতঃপর ‘আব্বাস (রাযি.) আরো কিছু সম্পদ নামিয়ে রাখলেন। এবার তিনি উঠাতে পারলেন এবং তা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই লোভ দেখে এতই বিস্মিত হয়েছিলেন যে, তিনি ‘আব্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি চোখের আড়াল হলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে একটি দিরহাম অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত উঠলেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২১, ৩০৪৯, ৩১৬৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ পৃঃ ২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ অনুচ্ছেদ ২৮৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে পেলাম আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সাহাবী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছেন? আমি বললামঃ জী হাঁ। তিনি বললেনঃ খাবার জন্য? আমি বললামঃ জী, হাঁ। তখন তাঁর আশেপাশে যাঁরা ছিলেন, তিনি তাঁদেরকে বললেনঃ উঠ। অতঃপর তিনি চলতে শুরু করলেন। (রাবী বলেন) আর আমি তাঁদের সামনে সামনে অগ্রসর হলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২২, ৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৫৪৫০, ৬৬৮৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) শয়ন করাঃ

(ক) ‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহ.) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন, তিনি (তাঁর চাচা) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। ইবনু শিহাব (রহ.) সা‘ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘উমার ও ‘উসমান (রাযি... ‘আনহুমা) এমন করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৫, ৫৯৬৯, ৬২৮৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১০০, আধুনিক প্রকাশনী ৪৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন ছিল না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪০, ১১২১, ১১৫৬, ৩৭৩৮, ৩৭৪০, ৩৭৪১, ৭০১৫, ৭০১৬, ৭০২৮, ৭০২৯, ৭০৩০, ৭০৩১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬২৬৪-৬২৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৭৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২১, নাসায়ী ৭২২, আহমাদ ৪৫৯৩, ৬২৯৪; দারিমী ১৪০০, ২১৫২, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯১৯, (আধুনিক প্রকাশনীঃ৪২১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায়  হাফেজ আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন,

এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়। (উমদাতুল কারী)।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ.৮৫২ হি.) বলেন,

অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। (ফাতহুল বারী)।

(গ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ (রাযি.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু ‘আলী (রাযি.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমাহ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন ‘আলী (রাযি.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!* (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৪৪১, ৩৭০৩, ৬২০৪, ৬২৮০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬১২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। *আবূ তুরাবঃ আলী (রা.) এর উপাধি।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন,

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভীনদেশী মুসাফির ছাড়া স্থানীয়দের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েয। কারণ (জায়েয বলেই) হযরত আলী (রা.) ফাতেমা রা. এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমালেন। ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী রহ. ‘কিতাবুল মাসাজিদে’  হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, মেহমান বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। (উমদাতুল কারী)।

(ঘ) হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর?  আহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)।

(ঙ) বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ. এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেন, ঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৩)।

(চ) ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন, আমি হযরত আতা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপছন্দ করেন? বললেন, না, বরং মসজিদে ঘুমানোকে আমি পছন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৭)।

(ছ) হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস করা হল, মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কী? তিনি উত্তরে বললেন, আহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন তাহলে? অর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট) (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২২)।

(জ) হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন , আমি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম, কি করব? বলেন, গোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২৩)।

(ঝ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল লুঙ্গি কিংবা ছোট চাদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিস্ফে সাক বা হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জাস্থান দেখা যাবার ভয়ে কাপড় হাত দিয়ে ধরে রাখতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সার কথাঃ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লাম, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আবুযর গিফারী রা. ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ, আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ রহ. বলেছেন, নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (দ্র. ফাতহুল বারী, ইবনে রজব, ই‘লামুস্-সাজিদ বিআহ্কামিল মাসাজিদ, মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃ.৭৯৪ হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭)।

মসজিদে মহিলাদের ঘুমানো

 ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। কোন আরব গোত্রের একটা কালো দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল। অতঃপর সে তাদের সাথেই থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার উপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছেঃ সে হারটা হয়তো নিজে কোথাও রেখে দিয়েছিল, অথবা কোথাও পড়ে গিয়েছিল। তখন একটা চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশ্তের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছেঃ অতঃপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল। সে বলেছেঃ তারা আমার উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমন কি আমার লজ্জাস্থানেও। দাসীটি বলেছেঃ আল্লাহর কসম! আমি তাদের সাথে সেই অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল। সে বলেছেঃ তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললামঃ তোমরা তো এর জন্যেই আমার উপর দোষ চাপিয়েছিলে। তোমরা আমার সম্পর্কে সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই হার! সে বলেছেঃ অতঃপর সে রাসসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ তার জন্যে মসজিদে (নাবাবীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ সে (দাসীটি) আমার নিকট আসতো আর আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। সে আমার নিকট যখনই বসতো তখনই বলতোঃ

‘‘সেই হারের দিনটি আমার প্রতিপালকের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ।

জেনে রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর হতে মুক্তি দিয়েছে।’’

‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, আমি তাকে বললামঃ কি ব্যাপার, তুমি আমার নিকট বসলেই যে এ কথাটা বলে থাক? ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ সে তখন আমার নিকট উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩৯, ৩৮৩৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইবনে বত্তাল রহ. বলেছেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জায়েয। (উমদাতুল কারী, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)।

 (৪) মসজিদে বিচার করা ও নারী-পুরুষের মধ্যে ‘লি‘আন’ করাঃ

সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যক্তিকে দেখতে পেলে কি তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে অন্যকে ‘লি‘আন’ করল। তখন আমি তা প্রত্যক্ষ করলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৩, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, ৫২৫৯, ৫৩০৮, ৫৩০৯, ৬৮৫৪, ৭১৬৫, ৭১৬৬, ৭৩০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

লি'আনঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট বিবেদ কোন মীমাংসা না হলে, সর্বশেষ ফয়সালা হিসেবে তারা প্রত্যেকে নিজের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করবে এই বলে যে, যদি আমি মিথ্যাবাদী হই তাহলে আল্লাহর অভিসম্পাত আমার উপর পতিত হোক। (সুরাহ নূর ২৪/৬-৯)।

(৫) মসজিদে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দেয়া ও চাপ সৃষ্টিঃ

কা‘ব (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি মসজিদের ভিতরে ইবনু আবূ হাদরাদ (রাঃ)-এর নিকট তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চস্বরে কথাবার্তা হলো। এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর হতেই তাদের কথার আওয়ায শুনলেন এবং তিনি পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা‘ব! কা‘ব (রাযি.) উত্তর দিলেন, লাববায়ক রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার পাওনা ঋণ হতে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা‘ব (রাযি.) বললেনঃ আমি তাই করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি ইবনু আবূ হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৭, ৪৭১, ২৪১৮, ২৪২৪, ২৭০৬, ২৭১০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৭৬-৩৮৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬)  মাসজিদ ঝাড়ু দেয়া এবং ন্যাকড়া, আবর্জনা ও কাঠ খড়ি কুড়ানোঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কালো বর্ণের মহিলা মাসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীগণ বললেন, সে মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৮, ৪৬০, ১৩৩৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৫৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) মসজিদে মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করাঃ

 ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুদ সম্পর্কীয় সূরাহ্ বাকারাহর আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে সে সব আয়াত সাহাবীগণকে পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৯, ২০৮৪, ২২২৬, ৪৫৪০, ৪৫৪১, ৪৫৪২, ৪৫৪৩; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮০, আহমাদ ২৬৪৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৮) মসজিদে কয়েদীকে বাঁধাঃ কাযী শুরাইহ* (রহ.) দেনাদার ব্যক্তিকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখার নির্দেশ দিতেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামাহ ইবনু উসাল নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ সুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নাবাবীর নিকট এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করলেন, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেনঃ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৪৬২, ৪৬৯, ২৪২২, ২৪২৩, ৪৩৭২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। * শুরাইহ উমর (রাঃ) এর খিলাফতের সময়কার বিশিষ্ট কাযী।

(৯) রোগী ও অন্যদের জন্য মসজিদে তাঁবু স্থাপনঃ

 ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধে সা‘দ (রাযি.)-এর হাতের শিরা যখম হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করলেন, যাতে নিকট হতে তাঁর দেখাশুনা করতে পারেন। মসজিদে বানূ গিফারেরও একটা তাঁবু ছিল। সা‘দ (রাযি.)-এর প্রচুর রক্ত তাঁদের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে তাঁবুর লোকেরা! তোমাদের তাঁবু হতে আমাদের দিকে কী প্রবাহিত হচ্ছে? তখন দেখা গেল যে, সা‘দের যখম হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে এতেই তিনি মারা গেলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬৩, ২৮১৩, ৩৯০১, ৪১১৭, ৪১২২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১০) লোকের অসুবিধা না হলে রাস্তায় মাসজিদ বানানো বৈধঃ

‘উরওয়াহ বিন যুবাইর সংবাদ দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার জ্ঞানমতে আমি আমার মাতা-পিতাকে সব সময় দ্বীনের অনুসরণ করতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের নিকট আসেননি। অতঃপর আবূ বাকর (রাযি.)-এর মাসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাঁর ঘরের আঙ্গিণায় একটি মাসজিদ তৈরি করলেন। তিনি এতে সালাত আদায় করতেন ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াতো এবং এতে তারা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবূ বাকর (রাযি.) ছিলেন একজন অধিক ক্রন্দনকারী ব্যক্তি। তিনি কুরআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তুলল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৬, ২১৩৮, ২২৬৩, ২২৬৪, ২২৯৭, ৩৯০৫, ৪০৯৩, ৫৮০৭, ৬০৭৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(১১)  বাজারের মসজিদে সালাত আদায়ঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সালাতের উদ্দেশেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক-একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার জন্যে এ বলে দু’আ করেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন- যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার কোন কাজ সেখানে না করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭৭, ১৭৬; মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৭৬৪৯, আহমাদ ৫৩৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মসজিদ নির্মাণ বিষয়ক কিছু ফতোয়া

মুসলিম থাকতে কোন কাফের মিস্ত্রী-শ্রমিক দ্বারা মসজিদ নির্মাণ বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২১/২০-৩৮)।

মুসলিমদের (সামাজিক, রাজনৈতিক) কোন ক্ষতির আশঙ্কা না হলে মসজিদ ও মাদ্রাসার জন্য অমুসলিমদের নিকট থেকে -তারা খুশী হয়ে হালাল অর্থ সাহায্য দিতে চাইলে- গ্রহণ করা বৈধ। (ইবনে বায প্রমুখ, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/৯০)।

মসজিদ নির্মাণ হবে মুসলিমদের নিজস্ব পবিত্র মাল দ্বারা। এতে যাকাত ব্যবহার বৈধ নয়। কারণ, যাকাত হল গরীব-মিসকীন প্রভৃতি ৮ প্রকার খাতে ব্যয়িতব্য অর্থ। আর মসজিদ এ সব পর্যায়ে পড়ে না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৮/১৫২)।

ওয়াকফের যে কোনও বস্তু বিক্রয় করা যায় না, হেবা (দান) করা যায় না এবং কেউ তার ওয়ারিস হতেও পারে না।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূলসত্ত্ব ওয়াক্ফে রাখতে এবং উৎপন্ন বস্তু সদাকাহ করতে পার।’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) এ শর্তে তা সদাকাহ (ওয়াক্ফ) করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হবে না।’ তিনি সদাকাহ করে দেন এর উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহর রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য। (রাবী আরও বললেন) যে এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য সম্পদ সঞ্চয় না করে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়া ও খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। অতঃপর আমি ইবনু সীরীন (রহ.)-এর নিকট হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, অর্থাৎ মাল জমা না করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৩৭, ২৩১৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য যদি কোন ওয়াক্‌ফের জিনিস এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন প্রকার উপকারই অবশিষ্ট না থাকে এবং তার তরমীম ও সংস্কার সম্ভব না হয়, অনুরুপ কোন মসজিদ সংকীর্ণ হলে এবং প্রশস্ত করার জায়গা না থাকলে সেই ওয়াক্‌ফ বা মসজিদের জায়গা বিক্রয় করে সেই অর্থে অন্য কোন উপযুক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ। কারণ, কোনও মসজিদ বা স্থান খামাখা ফেলে রাখা নিষ্ফল।

ইবনে রজব বলেন, ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখ যে কথা স্পষ্টাকারে বর্ণিত হয়েছে তা এই যে, পোড়ো মসজিদ বিক্রয় করে তার মূল্য দ্বারা অন্য মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। ঐ গ্রাম বা শহরে প্রয়োজন না থাকলে অন্য গ্রাম বা শহরে মসজিদ নির্মাণের খাতে ঐ অর্থ ব্যয় করতে হবে।

মসজিদ স্থানান্তরিত করা সাহাবা কর্তৃকও প্রমাণিত। (এ ব্যাপারে ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু ৩১৫-৩১৭পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১০/৬৩, ২৩/৯৯, ২৪/৬০, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ২/৯ দ্রষ্টব্য)।

পক্ষান্তরে মসজিদ পোড়ো না হলে, নামায পড়া হলে বা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রয়োজন না পড়লে মসজিদ ভেঙ্গে অন্য কিছু (মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা ইত্যাদি) করা বৈধ নয়, এমনকি ইমাম রাখার জন্য বাসাও নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৮১, ২৩/১০৩)।

এক মসজিদের আসবাব-পত্র অন্য মসজিদে লাগানো বৈধ। মসজিদের প্রয়োজন না থাকলে অথবা মসজিদের সম্পদ উদ্বৃত্ত হলে তা হতে সাধারণ কল্যাণ-খাতে; যেমন ঈদগাহ্‌ বা দ্বীনী মাদ্রাসা নির্মাণ, কবরস্থান ঘেরা, এতীম-মিসকীনদের দেখাশুনা প্রভৃতি কাজে দান করা যায়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু ৩১৬পৃ:, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ৩/৩৬১, কিতাবুদ্দা’ওয়াহ্‌, ইবনে বায ২০৩পৃ:)।

মসজিদের বর্ধিত স্থান মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। উভয়ের মান সমান। তাই তো মহানবী (সাঃ) এর নির্মিত মসজিদে নামায পড়ে যে সওয়াব লাভ হয়, বর্তমানে ঐ মসজিদের বর্ধিত স্থানসমূহে নামায পড়লেও ঐ একই পরিমাণ সওয়াব লাভ হবে। অবশ্য প্রথম কাতারসমূহের ফযীলত তো পৃথক আছেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭২, ১৭/৬৯)।

ইসলামের স্বর্ণযুগে যদিও মসজিদে নারী-পুরুষের মুসাল্লা পৃথক ছিল না তবুও বর্তমানে ফিতনা ও ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্য মহিলাদের মুসাল্লা পৃথক করে মাঝে পর্দা দেওয়া দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৪৭) অবশ্য এই উদ্দেশ্যে মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ও পৃথক দরজা হওয়া বাঞ্ছনীয়। (আবূদাঊদ, সুনান ৪৬২ নং)।

মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সমবেত হয়ে অনুষ্ঠান করে ফিতে কেটে বা অন্য কিছু করে উদ্বোধন করা বিদআত। এ ধরনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাহায্য ও যোগদান করাও বৈধ নয়। যেমন বিশেষভাবে কোন নূতন (বা পুরাতন) মসজিদে নামায পড়ার জন্য দূর থেকে সফর করাও বৈধ নয়। যেহেতু কা’বার মসজিদ, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা (অনুরুপ কুবার মসজিদ) ছাড়া অন্য মসজিদের জন্য সফর বৈধ নয়। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৯৩, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৮-১৯)।

উপরতলায় মসজিদ ও নিচের তলায় বসত-বাড়ি অথবা নিচের তলায় মসজিদ ও উপর তলায় বসত-বাড়ি হলে কোন দোষের কিছু নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু, ৩১৩পৃ:)।

তদনুরুপ উপর তলায় মসজিদ এবং নিচের তলায় দোকান ইত্যাদি করে তা ভাড়া দেওয়া এবং সেই অর্থ মসজিদের খাতে ব্যয় করা বৈধ। (ঐ ৩১৭পৃ:) অবশ্য ঐ সমস্ত দোকানে যেন হারাম ও অবৈধ কোন কিছু ক্রয়-বিক্রয় না হয়। নচেৎ হারাম ব্যবসায় দোকান ভাড়া দিয়ে নেওয়া অর্থ হারাম তথা মসজিদে তা লাগানো অবৈধ হবে। বলাই বাহুল্য যে, সূদী বাংক, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, দাড়ি চাঁছার সেলুন, বাদ্যযন্ত্র বিক্রয়, কোন অশ্লীল কর্ম প্রভৃতি করার জন্য দোকান বা বাড়ি ভাড়া দেওয়া হারাম। (আসইলাতুম মুহিম্মাহ্‌, ইবনে উসাইমীন ১৪পৃ:)।

মসজিদ দ্বিতল বা প্রয়োজনে আরো অধিকতল করা দূষণীয় নয়। তবে কাতার শুরু হবে ইমামের নিকট থেকে। যে তলায় ইমাম থাকবেন, সে তলা পূর্ণ হলে তবেই তার পরের তলায় দাঁড়ানো চলবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৬/২৬০)।

মাসজিদসমূহ সৌন্দর্যমন্ডিত করা

মসজিদ হবে সাদা-সিধে প্রকৃতির। এতে অধিক নক্সা ও চাকচিক্য পছন্দনীয় নয়। অধিক কারুকার্য-খচিত ও রঙচঙে করা বিধেয় নয়।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে উঁচু করে মাসজিদ বানানোর নির্দেশ দেয়া হয়নি। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, তোমরা (অচিরেই) মাসজিদ সমূহকে এমনভাবে সুসজ্জিত ও কারুকার্যময় করবে যেরূপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা (তাদের উপাসনালয়) সুসজ্জিত করে থাকে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ৪৪৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৮, ‘আবদুর রাজ্জাক ‘মুসান্নাফ’ (৩/১৫২, হাঃ ৫১২৭) বাগাভী ‘সুন্নাহ’ (২/১১১), ইবনু হিববান (৩০৫), বুখারী একে তা‘লীক্বভাবে বর্ণনা করেছেন সালাত অধ্যায়ে (১/৬৪২) ।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আনাস (রাঃ) বলেন, ‘(কিছু মুসলমান হবে) তারা মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে গর্ব করবে। কিন্তু তা আবাদ করবে (নামায পড়বে) খুব কমই।’ (ইআশা: ৩১৪৭ নং)।

উমার (রাঃ) বলেন, ‘খবরদার! মসজিদকে লাল বা হ্‌লুদ রঙের বানিয়ে লোকদেরকে (নামাযের সময়) ফিতনায় (ঔদাস্যে) ফেলো না।’ (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৪২)।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “যখন তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে সৌন্দর্য-খচিত করবে এবং কুরআন শরীফকে অলঙ্কৃত করবে, তখন তোমাদের উপর ধ্বংস নেমে আসবে।” (ইআশা: ৩১৪৮ নং)।

আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকেরা মাসজিদ নিয়ে পরস্পর গৌরব ও অহঙ্কারে মেতে না উঠা পর্যন্ত ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সংঘটিত হবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৩৯, নাসায়ী ৬৮৮, দারিমী ১৪০৮, আহমাদ (৩/১৩৪), ১১৯৭১, ১২০৬৪, ১২১২৮, ১২৯৯১, ১৩৬০৬; দারিমী ১৪০৮, সহীহ আল জামি‘ ৫৮৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রাঃ) মসজিদে নববীর দেওয়াল নক্সা-খচিত পাথর ও চুনসুরকি দ্বারা নির্মাণ করেন। থামগুলোকেও নক্সাদার পাথর দিয়ে তৈরী করেন। আর ছাত করেন সেগুন কাঠের। (বুখারী ৪৪৬, আবূদাঊদ, সুনান ৪৫১নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে মাসজিদ তৈরি হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বাকর (রাযি.) এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য ‘উমার (রাযি.) বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। অতঃপর ‘উসমান (রাযি.) তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরি করেন নক্শী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নক্শা করা পাথরের, আর ছাদ বানিয়েছিলেন সেগুন কাঠের। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৬,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৫১, ইবনু খুযাইমাহ (১৩২৪), আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনে বাত্ত্বাল প্রমুখ বলেন, মসজিদ নির্মাণে সুন্নত হল মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করা এবং তার সৌন্দর্যে অতিরঞ্জিত না করা। হযরত উমার (রাঃ) নিজের আমলে বহু বিজয় ও ধন লাভ সত্ত্বেও তিনি মসজিদে নববীতে কিছু অতিরিক্ত বা বর্ধিত করেননি। খেজুর ডালের ছাত নষ্ট হয়ে গেলে তিনি তা নতুন করে তৈরী করেছিলেন মাত্র। অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর নিজের আমলে অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দিলে তিনি মসজিদের কিছু সৌন্দর্য বর্ধিত করেছিলেন। কিন্তু তাকে চাকচিক্য বা রঙচঙে বলা চলে না। এতদসত্ত্বে ও অন্যান্য সাহাবীগণ তাঁর এ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

ইসলামে প্রথম মসজিদসমূহকে অধিক সৌন্দর্য-খচিত ও নক্সাদার করেন বাদশা অলীদ বিন আব্দুল মালেক। এ সময়টি ছিল সাহাবাদের যুগের শেষ সন্ধিক্ষণ। তখন ফিতনার ভয়ে বহু উলামা বাদশার কোন প্রতিবাদ না করতে পেরে চুপ থেকেছেন।

পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) প্রমুখ আহলে ইলমদের নিকটে মসজিদের তা’যীম প্রদর্শনার্থে চাকচিক্য করণে অনুমতি রয়েছে। (ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৪৪)।

মসজিদে শির্ক ও বিদআত

মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, আর অবশ্যই মসজিদসমূহ আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে আহবান করো না। (সুরা জ্বীন-৭২, আয়াত-১৮)।

তিনি আরো বলেন, “নিজেদের উপর কুফরের সাক্ষ্য দিয়ে মুশরিকদের জন্য আল্লাহর মসজিদ আবাদ করা শুদ্ধ ও শোভনীয় নয়। ওরা তো এমন, যাদের সকল আমল ব্যর্থ এবং ওরা দোযখে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।” (সুরা আত-তাওবা-৯, আয়াত-১৭)।

মসজিদে কবর থাকা শির্কের এক অসীলা। তাই তো মসজিদে কোন মাইয়্যেত দাফন করা বৈধ নয়। বৈধ নয় কবর-ওয়ালা মসজিদে নামায পড়া। এ জন্য মসজিদে কবর থাকলে তা তুলে কবরস্থানে পুনর্দাফন করা ওয়াজেব। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৭৭)।

কা’বার মসজিদে বিবি হা-জার (হাজেরা) বা অন্য কারো কবর নেই। এ ব্যাপারে কোন কোন ঐতিহাসিকদের কথা মান্য নয়। কারণ, তাঁদের নিকট কোন দলীল ও প্রমাণ নেই। অনুরুপ মহানবী (সাঃ) এর কবর হযরত আয়েশার হুজরায় হয়েছে, মসজিদে নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৮০, ২৬/৮৬)।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুশয্যায় বলেছেনঃ আল্লাহর অভিশাপ ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।

 (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৭১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৯০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৯, আহমাদ ২৪৫১৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি ২৪৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু কিছু সালাত  আদায় করবে এবং ঘরকে কবরে পরিণত করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৩২, ১১৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৭০৫-১৭০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৪৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪৫১, নাসায়ী ১৫৯৮,  সহীহ আল জামি ১৫৪, আহমাদ ৪৬৫৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ কবরস্থানে যেমন নামায পড়া হয় না, ঠিক তেমনি নামায না পড়ে ঘরকে কবরের মত করে রেখো না।

আলী ইবনু হুজুর আস সা’দী (রহঃ).....আবূ মারসাদ আল গানবী (রযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কখনো কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সালাতও আদায় করবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১৪০-৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৯. ইসলামীক সেন্টার ২১২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঈদগাহ্‌ বা মসজিদের সীমানার বাইরে কবর হলে এবং মাঝে দেওয়াল বা প্রাচীর থাকলে ঐ ঈদগাহ্‌ বা মসজিদে নামায দূষণীয় নয়। তবে যদি ঐ কবরবাসীর তা’যীমের উদ্দেশ্যে তার পাশে মসজিদ বানানো হয়ে থাকে, তাহলে তাতে নামায বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৮-৭৯)।

রমযান, ঈদ, শবে কদর, শবেবরাত (?) প্রভৃতির দিবারাত্রে মসজিদকে ফুল বা অতিরিক্ত আলোকমালা দিয়ে সুসজ্বিত করা বিদআত। পরন্তু এমন কাজ কাফেরদের অনুরুপ। আর কাফেরদের অনুকরণ মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। (ঐ ২৫/৬৮-৬৯)।

কোন মসজিদে বিদআত কর্ম হতে থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব না হলে সে মসজিদ ত্যাগ করে বিদআতশূন্য মসজিদে নামায পড়া কর্তব্য। (ঐ ১৮/৮৯)।

মুজাহিদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি যুহর কিংবা ‘আসরের সালাতের জন্য তাসবীব (পুনরায় আহবান) করায় ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, চল আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাই। কারণ এটা বিদ‘আত।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৩৮, ‘আবদুর রাজ্জাক ‘মুসান্নাফ’ (১৮৩২), কানযুল ‘উম্মাল (৮/৩৫৭) । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বিদআতের বিরুদ্ধে লড়ে সফল না হয়ে বিদআতশূন্য সালাফী জামাআত পৃথক মসজিদ করলে, সে মসজিদকে ‘মাসজিদে যিরার’ বলা যাবে না। বরং বিদআত কর্মে সহমত প্রকাশ না করে ফিতনা দূর করার মানসে পৃথক মসজিদ করাই যুক্তিযুক্ত। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩৫/৮২)।

যে মসজিদ সৎপথের পথিক হকপন্থী মুসলিমদের কোন ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, জামাআতের প্রতি বিদ্রোহ করে, মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির ইচ্ছায় এবং আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করে তাদের গোপন ঘাঁটি স্বরুপ নির্মাণ করা হয়, তাই হল কুরআন মাজীদে উল্লেখিত ‘মাসজিদে যিরার।’ (কুরআন মাজীদ ৯/১০৭ দ্র:)।

মসজিদ বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল

কোন প্রকার জুলুম ও অন্যায়ভাবে দখলকৃত জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণ এবং জেনে-শুনে তাতে নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৫৩)।

মসজিদের কোন সম্পত্তি বা অন্য কোন জিনিস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার কারো জন্য বৈধ নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু৩১১পৃ:)।

কোনও বিষয় নিয়ে কারো সাথে বিরোধ ঘটলে তাকে মসজিদে আসতে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্‌র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” (কুরআন মাজীদ ২/১১৪)।

কোন অমুসলিম যদি বাহ্যিক পবিত্র অবস্থায় আদবের সাথে মসজিদ প্রবেশ করতে চায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য মক্কা (ও মদ্বীনার) হারাম ও মসজিদে তারা প্রবেশ করতে পারে না। (কুরআন মাজীদ ৯/২৮, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২১/২০, ৩২/৯৪, ১০৫)।

মসজিদের উপর দিয়ে রাস্তা করায় মসজিদের সম্মানহানি হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যিক্‌র ও নামায ছাড়া অন্য কিছুর জন্য মসজিদসমূহকে রাস্তা করে নিও না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ৭২১৫ নং) মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করে তার সম্মান নষ্ট করা কিয়ামতের অন্যতম পূর্বলক্ষণ। (ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব, জামে ৫৮৯৯ নং)।

প্রকাশ যে, মসজিদের প্রতি তা’যীম প্রদর্শনের অর্থ এই নয় যে, মসজিদকে সালাম (প্রণাম) করতে হবে বা তার ধুলো খেতে হবে অথবা তার মেঝে ধুয়ে পানি খেতে হবে। কারণ এসব কাজ শির্কের পর্যায়ভুক্ত।

মসজিদে কোন প্রকার খেলাও বৈধ নয়। অবশ্য যে খেলা জিহাদ বিষয়ক অথবা জিহাদের সহায়ক (অস্ত্রচালনার খেলা) তা বৈধ।

‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমার ঘরের দরজায় দেখলাম। তখন হাবশার লোকেরা মসজিদে (বর্শা দ্বারা) খেলা করছিল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন। আমি ওদের খেলা অবলোকন করছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৪, ৪৫৫, ৯৫০, ৯৮৮, ২৯০৬, ৩৫২৯, ৩৯৩১, ৫১৯০, ৫২৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রয়োজনে কোন রোগীর জন্য মসজিদে তাঁবু লাগিয়ে বা অন্য স্থানে স্থান দেওয়া দূষণীয় নয়। এতে রক্ত পড়লেও ক্ষতি নেই, যা পরে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধে সা‘দ (রাযি.)-এর হাতের শিরা যখম হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করলেন, যাতে নিকট হতে তাঁর দেখাশুনা করতে পারেন। মসজিদে বানূ গিফারেরও একটা তাঁবু ছিল। সা‘দ (রাযি.)-এর প্রচুর রক্ত তাঁদের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে তাঁবুর লোকেরা! তোমাদের তাঁবু হতে আমাদের দিকে কী প্রবাহিত হচ্ছে? তখন দেখা গেল যে, সা‘দের যখম হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে এতেই তিনি মারা গেলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৬৩, ২৮১৩, ৩৯০১, ৪১১৭, ৪১২২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে পত্র-পত্রিকায় মানুষ বা পশু-পক্ষীর ছবি থাকে, তা মসজিদে পড়া বা রাখা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কালি দ্বারা প্রাণীর মাথা নষ্ট করে রাখা যায়। অশ্লীল ছবি ও পত্রিকা তো কোন স্থানেই দেখা ও পড়া বৈধ নয়। মসজিদে আরো বেশী নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২২/১০১)।

বাড়ির কোন একটা কামরা বা নির্দিষ্ট জায়গাকে মসজিদ বানানো চলে। যাতে নফল নামায এবং মসজিদে যেতে না পারলে ফরয নামাযও পড়া যাবে। ইতবান বিন মালেক (রাঃ) এই রকমই একটি আবেদন আল্লাহর রসূল (সাঃ)কে জানালেন। তিনি তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পছন্দমত এক স্থানে ২ রাকআত নামায পড়লেন। অনুরুপ বারা’ বিন আযেব (রাঃ) নিজ বাড়িতে (বাড়ির লোকদের নিয়ে) জামাআত করে নামায পড়তেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪২৫, ৪২৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নূতন মসজিদ অপেক্ষা পুরাতন মসজিদের অধিক কোন ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য বা অধিক সওয়াব আছে -এর কোন দলীল নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ্ ১/৩৫৯)।

তবে অপ্রয়োজনে যেহেতু একই মহ্‌ল্লায় একাধিক মসজিদ বিদআত, সেহেতু এর ফলে যেখানে ‘যিরার’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে নূতন ছেড়ে পুরাতন মসজিদে নামায পড়া উত্তম। কিছু সাহাবা ও সলফ এই আশঙ্কাতেই কোন কোন স্থানে পুরাতন মসজিদে নামায পড়েছেন। অবশ্য সেই মসজিদে নামায পড়া উত্তম, যে মসজিদ বিদআতশূন্য, যার জামাআত সংখ্যা অধিক (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৩) এবং যার ইমাম ফাসেক বা বিদআতী বলে আশঙ্কা নেই।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের যুগে কোন মসজিদকে তালাবদ্ধ করা হ্‌তো না। তবে সে যুগে মসজিদের ভিতর এমন কোন মূল্যবান আসবাব-পত্র থাকত না, যা চুরি বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা যেত। পরন্তু সে যুগের লোকেরাও এমন হৃদয়বিশিষ্ট ছিলেন যে, তাঁদের দ্বারা মসজিদের কোন প্রকার ক্ষতি হবে, সে আশঙ্কাই ছিল না। কিন্তু বর্তমান যুগের অবস্থা তার বিপরীত। সুতরাং আসবাব-পত্র ও সম্মান রক্ষার্থে মসজিদকে তালাবদ্ধ করা দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৩/৭৯, ১৭/৭০)।

ক্বিবলার বিধান

সমগ্র মুসলিম-জাতির জন্য রয়েছে একই ক্বিবলার বিধান।

(ক) বারাআ ‘ইবনু ‘আযিব (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত আদায় করেছেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বার দিকে ক্বিবলাহ করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ ‘‘আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি’’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৪৪)।

অতঃপর তিনি কা‘বার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা- তারা ইয়াহুদী- বলতো, ‘‘তারা এ যাবত যে ক্বিবলাহ অনুসরণ করে আসছিলো, তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বলুনঃ (হে নবী) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন’’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৪২)।

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এক ব্যক্তি সালাত আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাতের সময় আনসারগণের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তিনি সালাত আদায় করেছেন, আর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৫৭, ইসলামীক সেন্টারঃ ১০৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও আবূ বাকর ইবনু খল্লাদ (রহঃ).....বারা ইবনু আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। আমরা বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে ষোল কিংবা সতের মাস পর্যন্ত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করেছি। এরপর আমাদেরকে কা'বার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ- ষোল কিংবা সতের মাস পরে আমরা কা'বার দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের নির্দেশ লাভ করি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৫৮, ইসলামীক সেন্টার ১০৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) শায়বান ইবনু ফাররূখ, কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) [শব্দাবলী তার] ..... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কুবা নামক মসজিদে লোকজন ফজরের সালাত আদায় করছিল। ঠিক তখনই একজন আগন্তুক এসে তাদেরকে বলল, আজ রাতে কা'বার দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তখন তাদের (মসজিদে কুবায় সালাত আদায়কারী মুসল্লীদের) মুখ ছিল শামের (বায়তুল মাকদিস বা মসজিদে আকসার, যা বর্তমানে ফিলিস্তনে অবস্থিত) দিকে। অতঃপর (সালাতরত অবস্থায়) তারা কা'বার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬৫-১০৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৫৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন। তারপর এক সময় এ আয়াত অবতীর্ণ হলো "আমি বার বার তোমাকে আসমানের দিকে তাকানো দেখছিলাম। এখন আমি তোমাকে তোমার পছন্দনীয় কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলাম। সুতরাং তুমি তোমার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও"- (সূরাহ আল বাকারাহ ২: ১৩৩)। এরপর জনৈক ব্যক্তি ভোরবেলা বানী সালামাহ গোত্রের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করছিল। সে দেখতে পেলো তারা ফাজর সালাতের এক রাকাআত আদায় করেছে এবং দ্বিতীয় রাকাআতে রুকু’রত আছে। তখন সে ডেকে বলল, কিবলাহ কিন্তু পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। (এ কথা শুনার পর) তারা সালাতরত অবস্থায়ই (নতুন) কিবলার দিকে ঘুরে গেল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬১, ইসলামীক সেন্টার ১০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ক্বিবলাহ্‌-মুখ করা হল অন্যতম শর্ত। নামাযের সময় বান্দার থাকে দু’টি অভিমুখ; একটি হল হৃদয়ের এবং অপরটি হল দেহের। তার হৃদয়ের অভিমুখ থাকে আল্লাহর প্রতি। আর দেহ্‌ ও চেহারার অভিমুখ হয় আল্লাহরই এক বিশেষ নিদর্শন কা’বা গৃহের প্রতি। যে গৃহের তা’যীম করতে এবং যার প্রতি অভিমুখ করতে বান্দা আদিষ্ট হয়েছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয় যেমন আল্লাহর অভিমুখী, তেমনিই নামাযে তাদের সকলের দেহ্‌-মুখও একই গৃহের প্রতি অভিমুখী হয়। এতে রয়েছে সারা মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহ্‌তির বহিঃপ্রকাশ এবং তাদের সকল বিষয়ে একাত্মতা অবলম্বন করার প্রতি ইঙ্গিত।

মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করা

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেক কোণে দু‘আ করলেন, কিন্তু সালাত  আদায় করলেন না। পরে বের হয়ে এলেন। কা‘বার সামনে দুই রাক্‘আত সালাত  আদায় করলেন এবং বললেন, এটিই ক্বিবলা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৮, ১৬০১, ৩৩৫১, ৩৩৫২, ৪২২৮;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২০৮, আহমাদ ২১৮১৩, আধুনিক প্রকাশনী ৩৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও উসামাহ্ ইবনু যায়দ, ‘উসমান ইবনু ত্বলহাহ্ (রাঃ) আল হাজাবী ও বিলাল ইবনু রাবাহ্ (রাঃ) কা‘বায় প্রবেশ করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ) অথবা ‘উসমান (রাঃ) ভিতর থেকে (ভীড় হবার ভয়ে) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছুক্ষণ ভিতরে রইলেন। ভিতর থেকে বের হয়ে এলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার ভিতরে কি করলেন? উত্তরে বিলাল (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে প্রবেশ করে একটি স্তম্ভ বামে, দু’টি ডানে, আর তিনটি পিছনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। সে সময় খানায়ে কা‘বার ছয়টি স্তম্ভ বা খিলানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল (এখন তিনটি স্তম্ভের উপর)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫০৫, ৪৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১২১-১৩২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩২৯, আবূ দাঊদ ২০২৩, নাসায়ী ৭৪৯, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ৩২০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাযি.)-এর নিকট এলেন, এবং বললেনঃ ইনি হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেছেন। ইবনু ‘উমার বলেনঃ আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম এবং দেখলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা হতে বেরিয়ে পড়েছেন। আমি বিলাল (রাযি.)-কে দুই কপাটের মাঝখানে দাঁড়ানো দেখে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা‘বা ঘরের অভ্যন্তরে সালাত আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ, কা‘বায় প্রবেশ করার সময় তোমার বাঁ দিকের দুই স্তম্ভের মাঝখানে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি বের হলেন এবং কা‘বার সামনে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৭, ৪৬৮, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬, ১১৬৭, ১৫৯৮, ১৫৯৯, ২৯৮৮, ৪২৮৯, ৪৪০০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ,৩৮২ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আমর ইবনু দ্বীনার (রহ.) বলেনঃ আমরা ইবনু ‘উমার (রাযি.)-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম- যে ব্যক্তি ‘উমরাহর ন্যায় বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করে নি, সে কি তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইবরাহীমের নিকট দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়ায় সা‘ঈ করেছেন। তোমাদের জন্যে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৫, ৩৯৬, ১৬২৩, ১৬২৭, ১৬৪৫, ১৬৪৭, ১৭৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৩৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ক্বিবলার অভিমুখ

যারা কা’বার আশেপাশে নামায পড়ে এবং কা’বা তাদের দৃষ্টির সামনে থাকে, তাদের জন্য হুবহু কা’বার প্রতি মুখ ফেরানো জরুরী। পক্ষান্তরে যারা কা’বা দেখতে পায় না তাদের জন্য হুবহু কা’বার প্রতি মুখ ফেরানো জরুরী নয়।

যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন,

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানেই ‘ক্বিবলাহ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৫,  সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩৪২,  সুনান ইবনু মাজাহ ১০১১, ইরওয়া ২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আমাদের ক্বিবলাহমুখী হয় আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে বিশ্বাসঘাতকতা করো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯১, ৩৯২, ৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনী ৩৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সওয়ারীর উপর (নফল) সালাত আদায় করতেন- সওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে দিকেই মুখ করত না কেন। কিন্তু যখন ফরজ সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন নেমে পড়তেন এবং ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)মুখী হতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০০, ১০৯৪, ১০৯৯, ৪১৪০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ‘আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন। রাবী ইব্রাহীম (রহ.) বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হমুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা দেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০১, ৪০৪, ১২২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯; মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২, ৪১৭৪ আহমাদ) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাযি.) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর ওয়াহীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যদি মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ ‘‘তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান বানাও’’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১২৫)। (দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আপনার সহধর্মিণীগণকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাঁদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়। আর একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে একত্রে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাঁদেরকে বললামঃ ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের ত্বলাক (তালাক) দেন, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চেয়ে উত্তম অনুগত স্ত্রী দান করবেন’’- (সূরাহ্ তাহরীম ৬৬/৫)। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০২, ৪৪৮৩, ৪৭৯০, ৪৯১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন যে, এ রাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাঁকে কা‘বামুখী হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তোমারা কা‘বার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল শামের (বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে। একথা শুনে তাঁরা কা‘বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪০৩, ৪৪৮৮, ৪৪৯০, ৪৪৯১, ৪৪৯৩, ৪৪৯৪, ৭২৫১; মুসলিম ৫/২, হাঃ ৫২৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উক্ত হাদীসগুলো হতে এ কথা বুঝা যায় যে, মদ্বীনাবাসীদের জন্য ক্বিবলাহ্‌ হল পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে (দক্ষিণ) দিকে। যেহেতু মদ্বীনা শরীফ থেকে কা’বার অবস্থান হল দক্ষিণে। সুতরাং যদি মদ্বীনায় কেউ দক্ষিণ মুখে নামায পড়ে তবে তার ক্বিবলাহ্‌-মুখে নামায পড়া হবে। যদিও হুবহু কা’বা থেকে তার অভিমুখ একটু ডানে-বামে সরেও হয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/২৬৭)।

অতএব পৃথিবীর মানচিত্রে যারা কা’বার যে দিকে অবস্থান করে তার ঠিক বিপরীত দিকে হবে তাদের ক্বিবলাহ্‌। ভারত-বাংলাদেশ পড়ছে কা’বার পূর্বে, তাই এ দেশের লোকেদেরকে পশ্চিম দিকে মুখ করে নামায পড়তে হয়। বলা বাহুল্য, মাহাত্ম হল ক্বিবলার; পশ্চিম দিকের কোন মাহাত্ম নয়।

ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে পেশাব পায়খানা করা নিষেধ

(ক) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন ক্বিবলাহর  দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্ব দিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে।

আবূ আইয়ূব আনসারী (রাযি.) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো ক্বিবলা মুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট তওবা ইসতিগফার করতাম। যুহরী (রহ.) ‘আত্বা (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি আবূ আইয়ূব (রাযি.)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হতে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৯৪, ১৪৪,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৯৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৮, নাসায়ী ২০, ২১, ২২; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৯; আহমাদ ২৩০০৩, ২৩০০৮, ২৩০১৩, ২৩০২৫, ২৩০৪৭, ২৩০৬৫; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪৫৩, দারিমী ৬৬৫ আধুনিক প্রকাশনী ৩৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) পেশাব-পায়খানার সময় কিবলামুখী হয়ে বা কিবলার দিকে পিছন দিয়ে থাকা নিষেধ। অধিকাংশ আলেম এ নিষেধাজ্ঞাকে হারাম হিসেবে ধরেছেন। এ মতের পক্ষে ছিলেন, সাহাবী আবু আইয়াব আল আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু, মুজাহিদ, নাখায়ী, সাওরী, ইবন হাযম, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যেম প্রমুখ।

(২) এ নিষেধাজ্ঞা ঘর কিংবা খালিস্থান উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।

(৩) কা'বার সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ।

(৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম শিক্ষাদান পদ্ধতি। তিনি নিষিদ্ধ জিনিস জানানোর পরে যা করা বৈধ তা জানিয়ে দিলেন।

(৫) পেশাব ও পায়খানা অবস্থায় সূর্য কিংবা চন্দ্রের মুখোমুখী হয়ে বসা কিংবা পিছন দিয়ে বসা বৈধ।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্ঈ আয-যুবাইদী (রাঃ) বলেন, আমিই প্রথম ব্যাক্তি, যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেঃ তোমাদের কেউ যেন ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব না করে এবং আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে লোকেদের নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৭, আহমাদ ১৭২৪৭, ১৭২৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আমাদেরকে ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে পায়খানা ও পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩২০, ৩২১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সালমান (রাঃ) ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে, ডান হাতে ইসতিনজা করতে, তিনটির কম ঢিলা দিয়ে ইসতিনজা  করতে এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে ইসতিনজা করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৯৪-৪৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭, ৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আহমাদ ইবনু আল হাসান ইবনু খিরাশ (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ প্রস্ৰাব-পায়খানা করতে বসলে কখনো যেন সে কিবলার দিকে মুখ করে সেদিকে পিছন দিয়েও না বসে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০১, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫১৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঘরের মধ্যে ক্বিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করা

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা বলে, তুমি পায়খানায় ক্বিবলাহমুখী হয়ে বসো না। কিন্তু একদিন আমি আমাদের ঘরের ছাদের উপর উঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দুটি ইটের উপর উপবিষ্ট দেখতে পাই। তাঁর মুখমন্ডল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ছিল। এটা হচ্ছে ইয়াযীদ ইবনু হারূনের বর্ণিত হাদীস। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৪৫, ১৪৮, ১৪৯, ৩১০২;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৯৯-৫০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ২৬৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৫, নাসায়ী ২৩, আহমাদ ৪৫৯২, ৪৬০৩, ৪৯৭১, ৪৭০৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪৫৫, দারিমী ৬৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ক্বিবলাহমুখী হয়ে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমি তাঁকে তাঁর ইন্তেকালের এক বছর আগে ক্বিবলাহমুখী (পায়খানা-পেশাবে) হতে দেখেছি। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৩, আহমাদ ১৪৪৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  মারওয়ান আল-আসফার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার উটকে কিবলার দিকে বসালেন। অতঃপর ঐ উটের দিকে মুখ করে বসে পেশাব করলেন। আমি বললাম, হে আবু ‘আবদুর রহমান! এ থেকে (অর্থাৎ কিবলামুখী হয়ে পেশাব করতে) নিষেধ করা হয়নি কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে এ নিষেধ উন্মুক্ত ময়দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তোমার এবং কিবলার মাঝখানে কোন কিছুর আড়াল থাকলে তা দোষনীয় নয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ১১, দারাকুতনী (১/৫৮), হাকিম (১/৫৪), বায়হাক্বী (১/৯২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ

হাদীসের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, বাধা দিবে না এমন হলে, কারো ঘরের ছাদে উঠা জায়েজ। প্রয়োজন বলতে হাদীসে পায়খানা সারার কথা বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, যা বলা অসুন্দর তা ভিন্নভাবে তুলে ধরাই শ্রেয়।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে উক্ত হাদীস দু'টিকে পরস্পর বিরোধী মনে হলেও আসলে তা পরস্পর বিরোধী নয়। এ ব্যাপারে আলেমগণের কয়েকটি মত পাওয়া যায়-

(১) আলেমগণের কেউ কেউ উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধনে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের মধ্যে প্রাকৃতিক কাজ করছিলেন, আর পূর্বোক্ত হাদীসের নির্দেশনা হচ্ছে ঘরের বাইরের স্থানের জন্য।

(২) অপর দল বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এটা বিশেষ ব্যতিক্রম ছিল।

(৩) কেউ বলেছেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার উপরোক্ত ঘটনাটি সম্ভবত নিষেধ করার পূর্বে ছিল।

পূর্ব-পশ্চিম পর্যালোচনাঃ

‘‘তোমরা পায়খানায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করবে না, বরং পূর্ব অথবা পশ্চিমমূখী হয়ে বসবে।’’ এই নির্দেশ আমাদের দেশের জন্যে প্রযোজ্য নয় এটা  মাদ্বীনার বাসিন্দাদের জন্যে। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে ক্বিবলা পশ্চিম দিকে তাই পূর্ব ও পশ্চিমমুখী হয়ে পায়খানা-পেশাব করা যাবে না।আমরা উত্তর ও দক্ষিণমুখী হয়ে বসতে পারবো।কখনোই পূর্ব ও পশ্চিমমুখী হয়ে তথা ক্বিবলামুখী পায়খানা-পেশাব করা যাবে না। যদিও ঘরের মধ্যে বা সামনে দেয়াল থাকে।

ক্বিবলাহ জানতে না পারলে

কোন অচেনা-অজানা স্থানে অন্ধকার বা মেঘের কারণে চাঁদ, সূর্য, তারা দেখতে না পাওয়ার ফলে ক্বিবলার দিক কোন্‌টা নির্ণয় করতে না পারলে এবং জানার মত সে রকম কোন যন্ত্র বা উপায় না থাকলে, মনে মনে সঠিক ধারণার উপর ভিত্তি করেই নামায পড়তে হবে। অবশ্য নামাযের পর ক্বিবলার সঠিক দিক অন্য বুঝতে পারলেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। পুনরায় ঐ নামায সঠিক ক্বিবলাহ্‌-মুখে আর পড়তে হবে না।

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর সঙ্গে কোন এক সফর বা অভিযানে ছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে (নামাযের সময়) আমরা ক্বিবলার দিক নির্ণয়ে মতভেদ করলাম। এতে প্রত্যেকে নিজ নিজ মতে পৃথক পৃথক নামায পড়ে নিল। (তখন নবী (সাঃ) সেখানে ছিলেন না।) সঠিক ক্বিবলার দিকে নামায হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করার জন্য প্রত্যেকে নিজের নিজের সামনে দাগ দিয়ে রাখল। সকাল হলে সে দাগগুলো আমরা দেখলাম; দেখলাম, আমরা ক্বিবলার ভিন্ন দিকে মুখ করে নামায পড়ে ফেলেছি। অতঃপর ব্যাপারটি নবী (সাঃ) এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি আমাদেরকে ঐ নামায পুনরায় পড়তে আদেশ করলেন না। বরং তিনি বললেন, “তোমাদের নামায শুদ্ধ হয়ে গেছে।” (দারাক্বুত্বনী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, বায়হাকী, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২৯৬নং)।

নামায পড়া অবস্থায় যদি কারো বা কিছুর মাধ্যমে ক্বিবলার সঠিক দিক জানা যায়, তাহলে সাথে সাথে সেদিকে ফিরে যাওয়া জরুরী। মহানবী (সাঃ) শুরুতে বাইতুল মাক্বদেসের দিকে মুখ করে নামায পড়তেন। তিনি মনে মনে চাইতেন যে, কা’বাই তাঁর ক্বিবলাহ্‌ হোক। সে সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হল,

অর্থাৎ, আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি প্রায় লক্ষ্য করি। সুতরাং আমি তোমাকে এমন ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি (এখন) মাসজিদুলহারামের দিকে মুখ ফেরাও। (কুরআন মাজীদ ২/১৪৪)।

এরপর থেকে তিনি কা’বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়তে লাগলেন। কুবার মসজিদে লোকেরা ফজরের নামায পড়ছিল। ইত্যবসরে এক আগন্তুক তাদেরকে এসে বলল, ‘আজ রাত্রে আল্লাহর রসূলের উপর কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে তাঁকে কা’বার দিকে মুখ করে নামায পড়তে আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং শোন! তোমরা কা’বার দিকে মুখ ফেরাও।’ তখন তাদের মুখ ছিল শাম (বর্তমানে প্যালেস্টাইন) এর দিকে। সংবাদ শোনামাত্র তারা কা’বার দিকে ঘুরে গেল। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২৯০নং)।

কোন্‌ কোন্‌ অবস্থায় ক্বিবলাহ্‌-মুখ না হলেও নামায শুদ্ধ

 (১) অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে মুখ না করতে পারলে এবং তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার মত কেউনা থাকলে, সে যে মুখে নামায পড়বে সেই মুখেই নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। যেহেতু “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতীত বোঝা বহ্‌নের ভার দেন না।” (সুরা আল বাকারা-১, আয়াত-২৮৬)।

(২) যুদ্ধ চলাকালীন হানাহানির সময় নামাযে ক্বিবলাহ্‌-মুখ হওয়া জরুরী নয়। শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তাদের দিকে মুখ করেই নামায পড়তে হবে। (বুখারী, মুসলিম, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৫৮৮নং)।

মহান আল্লাহ বলেন, অতঃপর যদি তোমরা বিপদাশংকা কর, তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করবে। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করবে, যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না। (সুরা আল বাকারা-১, আয়াত-২৩৯)।

ইবনে উমার (রাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ভয় খুব বেশী হলে তোমরা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অথবা সওয়ার হওয়া অবস্থায় ক্বিবলার দিকে মুখ করে অথবা না করেই নামায পড়ে নাও।’ (বুখারী ৪৫৩৫ নং) আর মহানবী (সাঃ) বলেন, “শত্রুর সাথে যুদ্ধরত হলে (নামাযে) তকবীর ও মাথার ইশারাই যথেষ্ট।” (বায়হাকী ৩/২৫৫)।

(৩) সফরে উট, ঘোড়া বা গাড়ির উপর নফল বা সুন্নত নামায পড়ার সময়ও ক্বিবলাহ্‌-মুখ হওয়া জরুরী নয়। যেহেতু নবী (সাঃ) সফরে নিজের সওয়ারীর উপর যে মুখে উট চলত, সেই মুখেই নফল ও বিত্‌র নামায পড়তেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০০০, ৯৯৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭০০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ ব্যাপারে কুরআন মাজীদের এই আয়াত অবতীর্ণ হয়, আর পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; সুতরাং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকই আল্লাহর দিক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। (সুরা আল বাকারা-১, আয়াত-১৫)।

আর কখনো কখনো তিনি উটনীর উপর নফল পড়ার ইচ্ছা করলে উটনী সহ্‌ ক্বিবলাহ্‌-মুখ হয়ে তকবীর দিতেন। তারপর বাকী নামায নিজের সওয়ারীর পথ অভিমুখেই সম্পন্ন করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, প্রমুখ সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৭৫পৃ:) ।

অবশ্য ফরয নামাযের সময় সওয়ারী থেকে নেমে ক্বিবলাহ্‌-মুখ হয়ে নামায পড়তেন। (বুখারী, আহমাদ, মুসনাদ, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ৭৫পৃ:)।

নতুন মসজিদ নির্মাণের মাসায়েল

আল্লাহ বলেন, আর যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতিসাধন (১), কুফর ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং এর আগে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছে তার গোপন ঘাঁটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে (২), আর তারা অবশ্যই শপথ করবে, আমরা কেবল ভালো চেয়েছি; আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই তারা মিথ্যাবাদী। (সুরা তাওবা-৯, আয়াত-১০৭)।

তাফসীরঃ

(১) মদীনায় আবু আমের নামের এক ব্যক্তি জাহেলী যুগে নাসারা ধর্ম গ্রহণ করে আবু ’আমের পাদ্রী নামে খ্যাত হলো। তার পুত্র ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হানযালা রাদিয়াল্লাহু আনহু যার লাশকে ফেরেশতাগণ গোসল দিয়েছিলেন। কিন্তু পিতা নিজের গোমরাহী ও নাসারাদের দ্বীনের উপরই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনায় উপস্থিত হলে আবু আমের তার কাছে উপস্থিত হয় এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিযোগের জবাব দান করেন। কিন্তু তাতে সেই হতভাগার সান্তনা আসলো না।

তদুপরি সে বলল, আমরা দু'জনের মধ্যে যে মিথুক সে যেন অভিশপ্ত ও আত্মীয় স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করে। সে একথাও বলল যে, আপনার যে কোন প্রতিপক্ষের সাহায্য আমি করে যাবো। সে মতে হুনাইন যুদ্ধ পর্যন্ত সকল রণাঙ্গনে সে মুসলিমদের বিপরীতে অংশ নেয়। হাওয়াযেনের মত সুবৃহৎ শক্তিশালী গোত্রও যখন মুসলিমদের কাছে পরাজিত হলো, তখন সে নিরাশ হয়ে সিরিয়ায় চলে গেল। [বাগভী] কারণ, তখন এটি ছিল নাসারাদের কেন্দ্রস্থল।

এ ষড়যন্ত্রের শুরুতে সে মদীনার পরিচিত মুনাফিকদের কাছে চিঠি লিখে যে, “রোম সম্রাট কর্তৃক মদীনা অভিযানের চেষ্টায় আমি আছি। কিন্তু যথা সময় সম্রাটের সাহায্য হয় এমন কোন সম্মিলিত শক্তি তোমাদের থাকা চাই। এর পন্থা হলো এই যে, তোমরা মদীনায় মসজিদের নাম দিয়ে একটি গৃহ নিৰ্মাণ কর, যেন মুসলিমদের অন্তরে কোন সন্দেহ না আসে। তারপর সে গৃহে নিজেদের সংগঠিত কর এবং যতটুকু সম্ভব যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ করে সেখানে রাখ এবং পারস্পরিক আলোচনা ও পরামর্শের পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে কর্মপন্থা গ্রহণ কর। তারপর আমি রোম সম্রাটকে নিয়ে এসে মুহাম্মাদ ও তার সাথীদের উৎখাত করব।” [তাবারী]

তার এ পত্রের ভিত্তিতে বার জন মুনাফিক মদীনার কুবা মহল্লায়, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন- সেখানে সে মুনাফিকরা আরেকটি মসজিদের ভিত্তি রাখল। [ইবন হিশাম, কুরতুবী; ইবন কাসীর প্রমুখ ঐতিহাসিক ও মুফাসসিরগণ এ বার জনের নাম উল্লেখ করেছেন] তারপর তারা মুসলিমদের প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত নিল যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা এক ওয়াক্ত সালাত সেখানে পড়াবে।

এতে মুসলিমগণ নিশ্চিত হবে যে, পুর্বনির্মিত মসজিদের মত এটিও একটি মসজিদ। এ সিদ্ধান্ত মতে তাদের এক প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে আরয করে যে, কুবার বর্তমান মসজিদটি অনেক ব্যবধানে রয়েছে। দূর্বল ও অসুস্থ লোকদের সে পর্যন্ত যাওয়া দুষ্কর। এছাড়া মসজিদটি এমন প্রশস্তও নয় যে, এলাকার সকল লোকের সংকুলান হতে পারে। তাই আমরা দুর্বল লোকদের সুবিধার্থে অপর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি যদি তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন, তবে আমরা ধন্য হব। [বাগভী; ইবন কাসীর]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, এখন সফরের প্রস্তুতিতে আছি। ফিরে এসে সালাত আদায় করব। কিন্তু তাবুক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে যখন তিনি মদীনার নিকটবর্তী এক স্থানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন মসজিদে দ্বিরার সম্পর্কিত এই আয়াতগুলো নাযিল হয়। এতে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেয়া হল। আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবীকে এ হুকুম দিয়ে পাঠালেন যে, এক্ষুণি গিয়ে কথিত মসজিদটি ধ্বংস কর এবং আগুন লাগিয়ে এসো। আদেশমতে তারা গিয়ে মসজিদটি সমুলে ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে আসলেন। [বাগভী; সীরাতে ইবন হিশাম; ইবন কাসীর]

(২) এখানে এ মাসজিদ নির্মাণের মোট চারটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে,

প্রথমতঃ মুসলিমদের ক্ষতিসাধন।

দ্বিতীয়তঃ কুফরী করার জন্য।

তৃতীয়তঃ মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করা।

চতুর্থতঃ সেখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শক্ৰদের আশ্রয় মিলবে যেন আবু আমের আর রাহেব এবং তারা বসে বসে ষড়যন্ত্র পাকাতে পারবে। [মুয়াস্সার]

আল্লাহ বলেন, আপনি তাতে কখনো সালাতের জন্য দাঁড়াবেন না (১); যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (২), তাই আপনার সালাতের জন্য দাঁড়ানোর বেশী হকদার। সেখানে এমন লোক আছে যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে, আর পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন। (সুরা তাওবা-৯, আয়াত-১০৮)।

(ক) এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে মসজিদে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে দাঁড়ানো থেকে নিষেধ করার অর্থ, আপনি সে মসজিদে কখনো সালাত আদায় করবেন না। [ইবন কাসীর]

(খ) প্রশংসিত সে মসজিদ কোনটি, তা নির্ণয়ে দুটি মত রয়েছে, কোন কোন মুফাসসির আয়াতের বর্ণনাধারা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তা হলো মসজিদে কুবা। [ইবন কাসীর; সা’দী]

যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সালাত আদায় করতে আসতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৮০-৩২৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাহ্ (মক্কা) থেকে হিজরত করে মদীনায় প্রবেশে পূর্বে নুবুওয়াতের চতুর্দশ বছরের ৮ রবিউল আউওয়াল অর্থাৎ ১লা হিজরী মোতাবেক ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ইং সালের সোমবার কুবা পল্লীতে অবতরণ করে। এটা মদীনার উপকণ্ঠে অবস্থিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশনায় এখানে একটি মাসজিদ নির্মিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে তা মসজিদে কুবা নামে পরিচিত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো বাহনে চড়ে প্রায়ই এখানে এসে বিশ্রাম নিতেন এবং দু' রাকাআত সালাত আদায় করতেন। এতে বুঝা যায় মসজিদের যিয়ারাত হল তথায় দু' রাকাআত সালাত আদায় করা। মসজিদের কারুকার্য দেখা বা দরজা-জানালা ইত্যাদি গণনা করার নাম মাসজিদ যিয়ারাত করা নয়। বরং এটা তামাশা যা নাবীদের অনুসারীগণের কাজ নয়)।

যেখানে সালাত আদায় করলে উমরার সওয়াব হবে বলে ঘোষণা করেছেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৩২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪১১-১৪১২, তালীকুর রগীব ১৩৮, ১৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদীসের কতিপয় বর্ণনা থেকেও এটিই যে তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত মসজিদ সে কথার সমর্থন পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এ মসজিদ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ উল্লেখ করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩২৭৮-৩২৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৩১]। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বস্তুত: এ দুয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ উভয় মাসজিদই তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [কুরতুবী; সাদী]

(৩) এখানে সেই মসজিদকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযে অধিকতর হকদার বলে অভিহিত করা হয়, যার ভিত্তি শুরু থেকেই তাকওয়ার উপর রাখা হয়েছে। সে হিসেবে মসজিদে কুবা ও মসজিদে নববী উভয়টিই এ মর্যাদায় অভিষিক্ত। সে মসজিদেরই ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তথাকার মুসল্লীগণ পাক-পবিত্রতা অর্জনে সবিশেষ যত্নবান। পাক-পবিত্রতা বলতে এখানে সাধারণ না-পাকী ও ময়লা থেকে পাক-পরিচ্ছন্ন হওয়া বুঝায়। আর মসজিদে নববীর মুসল্লীগণ সাধারণতঃ এসব গুণেই গুণান্বিত ছিলেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবাবাসীদের বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্র হও? তারা বলল, আমরা সালাতের জন্য অযু করি, জানাবাত থেকে গোসল করি এবং পানি দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এক মসজিদের কাছে অন্য মসজিদ নির্মাণঃ মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, বর্তমান যুগে কোনো মসজিদের কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে এবং এর পেছনে যদি মুসলমানদের বিভক্ত করা ও আগের মসজিদে মুসল্লি হ্রাস করার অসৎ ইচ্ছা থাকে, তাহলে এতে মসজিদ নির্মাতার সওয়াব তো হবেই না, বরং বিভেদ সৃষ্টির কারণে সে গুনাহগার হবে। তা সত্ত্বেও শরিয়ত মতে, সে জায়গাকে মসজিদ বলা হবে এবং মসজিদের বিধিবিধান এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। একে ধ্বংস করা কিংবা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া জায়েজ হবে না। (মা’আরেফুল কোরআন)।

একটি স্থান কখন মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত হয়ঃ যখন কোনো স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়, মৌখিক বা লিখিতভাবে ওয়াক্ফ করা হয়, নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়, আজান ও ইকামতের ব্যবস্থা করা হয় এবং ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে ওই মসজিদকে রাস্তা ইত্যাদি থেকে পৃথক করা হয়, তখন সর্বসম্মতিক্রমে এটি মসজিদ বলে বিবেচিত হয়; যদি ওয়াক্ফনামা লিপিবদ্ধ করা না-ও হয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৩৯১)।

এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদের দূরত্বঃ যদি কোনো মসজিদে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হয়, তাহলে আরেকটি মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা হলো, এতটুকু দূরত্বে মসজিদ নির্মাণ করবে, যাতে এক ইমামের কিরাতের সঙ্গে অন্য মসজিদের ইমামের কিরাত সাংঘর্ষিক না হয়। তবে উভয় মসজিদের মাঝখানে যদি কেবল একটি দেয়াল থাকে, তবু উভয় স্থানে পৃথক জামাত আদায় করা বৈধ। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪১০)।

মসজিদে জেরার বা জেদবশত মসজিদ নির্মাণঃ মসজিদে জেরারের সংজ্ঞা হলো, যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে লোক দেখানোর জন্য, লৌকিকতা প্রদর্শনের জন্য বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কিংবা অপবিত্র ও অবৈধ অর্থে যেটি নির্মাণ করা হয়েছে, শরিয়ত মতে তা মসজিদে জেরারের অন্তর্ভুক্ত (মাদারেকুত তানজিল : ২/১১১)।

তবে হ্যাঁ, স্বাভাবিক নিয়ম মেনে, ওয়াক্ফ করে এক মসজিদের পাশে অন্য মসজিদ নির্মাণ করা হলে সেখানে নামাজ আদায় বৈধ। (তানবিরুল আবসার : ৪/৩৫১-৩৫২) স্মরণ রাখতে হবে, শরিয়তের শর্ত মেনে যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, কঠিন সমস্যা (মুসল্লির সংকুলান না হওয়া, মসজিদ অনেক পুরনো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) ছাড়া তা ভেঙে ফেলা জায়েজ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো মসজিদের সংস্কার করলে কোনো অসুবিধা নেই। (রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৫৮)

মতানৈক্য, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্য এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মুক্ত থাকার জন্য পৃথক মসজিদ নির্মাণ দোষের কিছু নয়। এমন মসজিদকে মসজিদে জেরার আখ্যা দেওয়া অনুচিত। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৪/৪৩২)।

(সমাপ্ত)

সালাতুল জুমআর সহিহ বিধান দেখতে এর উপর ক্লিক করুন।


অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম-প্রথম খন্ড।

(খ) সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি-দ্বিতীয় খন্ড।

(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।

(ঘ) জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব,ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী (তৃতীয় খন্ড-প্রথম অংশ)।

(ঙ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী (তৃতীয় খন্ড-দ্বিতীয় অংশ)।

(চ) কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান-তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ)।

======================================

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ঈমান বিষয়ক ৬৯টি সহিহ হাদিস মূল গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) (১) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্...