বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইসলামে নিষিদ্ধ কাজের সাথে অধিকাংশ মুসলমান জড়িত
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সার্বিক
জীবন ব্যবস্থায় একজন লোক তার ব্যক্তি জীবনে কীভাবে চলবে, একটি পরিবার কীভাবে চলবে,
একটি সমাজ বা রাষ্ট্র কীভাবে চলবে তার গাইড লাইন ইসলাম দিয়েছে। সার্বিক এই গাইড লাইনের
কথা আমরা বিভিন্ন আলেমের নিকট থেকে শুনি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে শিখি বা বিভিন্ন
বই-পুস্তক পড়ে জানি। এরপরও আমরা মুসলমান জেনে শুনে ইসলাম বিরোধী বা অবৈধ কাজ কিংবা
ইসলামে যা নিষেধ সেইসব কাজের সাথে জড়িত হয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ
মুসলমান যেসব নিষেধমূলক বা অবৈধ বা হারাম কাজের সাথে জড়িত তার কিছু এখানে আলোচনা করা
হলোঃ
(১) স্ত্রীর মাসিক চলাকালীন ও স্ত্রীর
পায়ু পথে সহবাস করা যাবে নাঃ
এ বিষয়টি এখানে আলোচনা করার উদ্দেশ্য হলো,
অধিকাংশ নবদম্পত্তি মাসিক চলাকালীন সহবাসে লিপ্ত হয় এবং অনেকে উত্তেজনাবশতঃ স্ত্রীর
পায়ু পথ ব্যবহার করে থাকে। এভাবে সহবাস করা যে গুণাহ তা অনেকেই জানে না। আসুন এ বিষয়ে
বিস্তারিত জেনে নেই।
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয়- ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’-
(সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)। তাই সামনের দিক হতে বা পিছন দিক হতে সহবাস কর; কিন্তু গুহ্যদ্বার
(মলদ্বার) ও ঋতুবতী (মাসিক থাকাকালীন) হতে বিরত থাক। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫২৮, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৩৪২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৫, সুনান আবূ দাউদ ২১৬৩, আহমাদ ২৭০৩, সহীহ আল জামি ১১৪১, দারেমী ১১৩২, ২২১৪,
ইরওয়াহ ৭/৬২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে রাজঃস্রাব
সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা অশূচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রব কালে স্ত্রী সঙ্গ
বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য)তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর
যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে
আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ
করেন।” (সুরা আল বাকারাহঃ ২২২)।
(খ) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.)-কে ক্ষমা করুন, তিনি ভুল করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, আনসারদের
এই জনপদের লোকেরা মূর্তিপূজারী ছিলো। তারা আহলে কিতাব ইয়াহুদীদের সাথে বসবাস করতো এবং
ইয়াহুদীরা জ্ঞানের দিক দিয়ে মূর্তিপূজারীদের উপর নিজেদের মর্যাদা দিতো। সুতরাং তারা
নিজেদের কাজকর্মে ইয়াহুদীদের অনুসারী ছিলো। আহলে কিতাবদের নিয়ম ছিলো, তারা স্ত্রীদেরকে
কেবল চিৎ করে শুইয়ে সঙ্গম করতো এবং বলতো, মহিলাদের সতর এ নিয়মে অধিক সংরক্ষিত। আনসার
সম্প্রদায়ও তাদের এ কাজে আহলে কিতাবদের নিয়ম অনুসরণ করতো। কিন্তু কুরাইশরা নারীদেরকে
সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে সঙ্গম করতো এবং তাদেরকে সামনাসামনি, পেছনের দিকে এবং চিৎ করে শুইয়ে
বিভিন্নভাবে সঙ্গম করতো।
অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মদীনাহয় আসলেন তখন তাদের
এক ব্যক্তি জনৈক আনাসারী নারীকে বিয়ে করে তার সাথে ঐভাবে সঙ্গম করতে চাইলো যেভাবে তারা
মক্কার নারীদের সাথে করতো। কিন্তু মহিলাটি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা শুধু এক
অবস্থায়ই সঙ্গম করি। সুতরাং তোমাকেও সেভাবেই সঙ্গম করতে হবে অন্যথায় আমার থেকে দূরে
থাকো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তোমাদের
স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা করো তোমাদের ক্ষেতে গমন করো।’’অর্থাৎ
সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে বা চিৎ করে শুইয়ে তার লজ্জাস্থানেই সঙ্গম করো (পায়ু
পথে নয়)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সত্য প্রকাশে
লজ্জাবোধ করেন না, তোমরা তোমাদের স্ত্রীগণের গুহ্যদ্বারে সহবাস করো না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ১৯২৪, দারিমী ১১৪৪, ১১৮১, আহমাদ ২১৮৬৫,
২১৩৪৩, ২১৩৬৭, সহীহ আল জামি ১৮৮৫, সহীহ আত্
তারগীব ২৪২৭, ইরওয়া ২০০৫, আদাবুয যিফাফ ২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ লোক অভিশপ্ত, যে তার স্ত্রীর
গুহ্যদ্বারে সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৩,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬২, আহমাদ ৯৭৩৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক তার স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে
সহবাস করে আল্লাহ তার প্রতি (রহমত, করুণা নিয়ে) দৃষ্টিপাত করেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৪, আহমাদ ৭৬৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্
২২৯৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯২৩, সুনান আবূ দাউদ ২১৬২, সহীহ আল জামি ১৬৯১, শু‘আবুল ঈমান
৪৯৯১, আহমাদ ৭৬২৭, ৮৩২৭, ৯৪৪০, ৯৮৫০, দারেমী ১১৪০, বায়হাকী ৭/৭৩৪, আদাবুয যিফাফ ৩০,
সহীহ আবী দাউদ ১৮৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(চ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি
(রহমত ও করুণার) দৃষ্টিপাত করেন না, যে কোনো পুরুষের সাথে সহবাস করে অথবা নারীর গুহ্যদ্বারে
সহবাস করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১৯৫, সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৬৫, সহীহ আল জামি ৭৮০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ছ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওতাস যুদ্ধের বন্দী দাসীদের
সম্বন্ধে বলেছেনঃ সন্তান প্রসবের আগে গর্ভবতীর সাথে সঙ্গম করা যাবে না। আর গর্ভবতী
নয় এমন নারীর মাসিক ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেও সঙ্গম করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসের কাফ্ফারাহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কিত বর্ণিত, যে হায়িয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সঙ্গম
করেছে। তিনি বলেনঃ সে এক অথবা অর্ধ দীনার সাদাকাহ করবে। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৬৮, ২১৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সমকামিতা বা পায়ুপথ ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে মানুষকে লূত সম্প্রদায়ের কুকর্মে (সমকামিতায়) নিয়োজিত
পাবে সেই কুকর্মকারীকে এবং যার সাথে কুকর্ম করা হয়েছে তাকে মেরে ফেলবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬১, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৬,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৫, বায়হাকী ফিস সুনান
৮/২৩২, ইরওয়া ২৩৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
(ক) পুংমৈথুনের অর্থ হলো: সমকামিতা ও পুরুষের সাথে
পুরুষের রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া। এই কুকর্ম ঘটে থাকে তাদের মধ্যে যাদের মধ্যে জ্ঞান
বুদ্ধির অভাব রয়েছে এবং যাদের মধ্যে ধর্মের প্রভাব কম রয়েছে। পুরুষের সাথে পুরুষের
রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার মধ্যে কুফলও খুব বেশি রয়েছে। তাই এই ঘৃণিত কুকর্মের কারণে সৃষ্টি
হয় রোগ, ব্যাধি এবং মহামারী। এবং এর মাধ্যমে চারিত্রিক, সামাজিক এবং দৈহিক ক্ষতির প্রভাবও
খুব কম নয়। তাই সর্বদিক দিয়ে এই অপকর্মটিকে নিকৃষ্ট, ঘৃণিত এবং স্বাভাবিক মানবতা বিরোধী
অশ্লীল আচরণ বলেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে গণ্য করা হয়। তাই লূতের সম্প্রদায়ের মধ্যে এই
অশ্লীল যৌনসঙ্গম ছড়িয়ে পড়ার কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই মহান
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:
“অতঃপর যখন পুংমৈথুনকারীদেরকে শাস্তি দেওয়ার
জন্য আমার আদেশ এসেছিলো, তখন আমি তাদের জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিয়েছিলাম এবং ক্রমাগত
তাদের উপরে পাথুরে মাটি বর্ষণ করেছিলাম”। (সূরা হূদ, আয়াত
নং ৮২)।
(খ) পুংমৈথুনকারী ও মৈথুনকৃত ব্যক্তি উভয়কেই প্রকৃত
ইসলাম ধর্ম একই প্রকারের পাপী বলে গণ্য করে। তাই উভয়েরই একই শাস্তি, আর তা হলো উভয়কে
হত্যা করা। এই বিষয়ে সমস্ত সাহাবী এক মত, তাই এই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।
তবে কি পদ্ধতিতে তাদেরকে হত্যা করতে হবে, এই বিষয়ে মুসলিম শাসক বা তাঁর প্রতিনিধি যে
পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেই পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তিনি উভয়কেই তরবারীর আঘাতে তাদের
শিরচ্ছেদ করতে পারেন। অথবা তাদের উভয়ের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করে তাদেরকে হত্যা করতে
পারেন। কিংবা তাদেরকে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদের
উপরে দেয়াল ইত্যাদি ফেলে দিয়েও তাদেরকে হত্যা করতে পারেন।
তবে যে ব্যক্তিকে বলপূর্বক পুরুষের সাথে পুরুষের
রতিক্রিয়ায় লিপ্ত করা হবে, সে ব্যক্তিকে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না। অনুরূপভাবে
পাগল ও নাবালকদেরকেও পুংমৈথুন করার কারণে কোনো প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে না।
কিন্তু পাগল ও নাবালকদেরকে পুংমৈথুন করার কারণে কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে এবং তাদেরকে
প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দিতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আকীল (রহঃ)
থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের
মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লূত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৫৬৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৫৭৭, বায়হাকী ফিস সুনান
২/২১৫, ৬/১০৬, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১৯৭, ১৯৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এই কাজের সাথে অনেক মুসলিম নর-নারী জড়িত। তাই
আমাদের সকলকে এ বিষয় থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
(২) বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করা বা তার সাথে হ্যান্ড শেক করা যাবে নাঃ
আজকের সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অবারিতভাবে
চলছে। ফলে অনেক নারী-পুরুষই নিজেকে আধুনিক হিসাবে জাহির করার জন্য শরী‘আতের সীমালংঘন
করে পরস্পরে মুসাফাহা করছে। তাদের ভাষায় এটা হ্যান্ডশেক বা করমর্দন। আল্লাহর নিষেধকে
থোড়াই কেয়ার করে বিকৃত রূচি ও নগ্ন সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে তারা এ কাজ করছে এবং নিজেদেরকে
প্রগতিবাদী বলে যাহির করছে। আপনি তাদেরকে যতই বুঝান না কেন বা দলীল-প্রমাণ যতই দেখান
না কেন তারা তা কখনই মানবে না। উল্টো আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল, সন্দেহবাদী, মোহাচ্ছন্ন,
আত্মীয়তাছিন্নকারী ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করবে।
চাচাত বোন, ফুফাত বোন, মামাত বোন, খালাত বোন,
ভাবী, চাচী, মামী প্রমুখ আত্মীয়ের সঙ্গে মুসাফাহা করা তো এসব লোকদের নিকট পানি পানের
চেয়েও সহজ কাজ। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কাজটি কত ভয়াবহ তা যদি তারা দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখত
তাহলে কখনই তারা এ কাজ করত না।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে
দেওয়া ঐ মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক শ্রেয়, যে তার জন্য হালাল নয়”। (ত্বাবরাণী; সিলসিলা
সহীহাহ, হাদীস নং ২২৬)।
নিঃসন্দেহে এটা হাতের যিনা। করতল চেপে ধরা
এবং সুড়সুড়ি দেওয়াও হলো তার ইঙ্গিত! কোনো গম্য নারীর দেহ স্পর্শ, বাসে-ট্রেনে, হাটে-বাজারে,
স্কুলে-কলেজে প্রভৃতি ক্ষেত্রে গায়ে গা লাগিয়ে চলা বা বসা, নারী-পুরুষের ম্যাচ খেলা
ও দেখা প্রভৃতি ইসলামে হারাম। কারণ, এ সবগুলিও অবৈধ যৌনাচারের সহায়ক। এগুলো মানুষের
হাত, পা ও চোখের ব্যভিচার।
ইসহাক
ইবনু ইব্রাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) যা বলেছেন ‘লামাম (আকর্ষণীয় বড় গুনাহ) বিষয়ে তার
চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোন বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন,
নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দু’চোখের ব্যভিচার দেখা, যবানের ব্যভিচার, পরস্পর কথোপকথনের
ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা
সাব্যস্ত করে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৬৪৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
“কোন ব্যক্তির মাথায় লৌহ সুচ দ্বারা খোঁচা
যাওয়া ভালো, তবুও যে নারী তার জন্য অবৈধ তাকে স্পর্শ করা ভালো নয়”। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী: ২২৬)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে অধিক পবিত্র মনের মানুষ আর কে আছে? অথচ তিনি বলেছেন,
“আমি নারীদের সাথে মুসাফাহা করি না”। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৩; সহীহুল হাদীস, হাদীস নং ২৫০৯)।
তিনি আরও বলেছেন,
“আমি নারীদের হাত স্পর্শ করি না”। (ত্বাবরাণী; কাবীর, ২৪/৩৪২; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৭০৫৪)।
আবূ তাহির আহমাদ ইবনু 'আমর ইবনু সারহ (রহঃ)....নবী
সহধর্মিণী আয়িশাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন মহিলাগণ যখন হিজরাত করে রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (মদীনায়) আসতেন তখন আল্লাহ তা'আলার বাণী অনুযায়ী
পরীক্ষা করা হতো। (সে বাণী হচ্ছে) "হে নবী। যখন মুমিন মহিলাগণ আপনার কাছে এ মর্মে
বাই’আত হতে আসে যে তারা আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার
করবে না.." (সূরাহ মুমতাহিনাহ্ ৬০: ১২) আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
আয়িশাহ্ (রাযিঃ) বলেন, মু'মিন মহিলাদের যে
কেউ এসব অঙ্গীকারাবদ্ধ হতো এতেই তারা বাই’আতের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হতো।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যখন তারা মৌখিকভাবে এসব অঙ্গীকার
করতো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলতেন, তোমরা চলে যাও, তোমাদের
বাই’আত গ্রহণ করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত) মহিলার হাতকে স্পর্শ করেনি। তবে তিনি মৌখিকভাবে বাই’আত
গ্রহণ করতেন।
আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম আল্লাহর
নির্দেশিত পথ ছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিন মহিলাদের ওয়াদা
গ্রহণ করেননি এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত কোন দিন কোন (অপরিচিত)
মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তাদের ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার পরই তিনি মৌখিকভাবে বলে দিতেন, তোমাদের
বাই’আত গ্রহণ করলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২৮-৪৭২৯,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৬৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬৮১, ইসলামিক সেন্টার ৪৬৮৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
বেগানা নারীদের সাথে হ্যান্ড শেক করা ইসলামে
নিষেধ। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যুগে নারী-পুরুষ উভয়ে কোলাকুলি করা, হ্যান্ড শেক করা
একটা স্টাইলে পরিনত হযেছে। এসব কাজের সাথে এখন মুসলিম নারী পুরুষ জড়িয়ে পড়ছে।
(৩) যে নারীর স্বামী বিদেশ থাকে
তার নিকট বেগানা পুরুষের আসা যাওয়া করা যাবে নাঃ
ব্যভিচারের কাছে যাওয়ার আর এক পদক্ষেপ কোনো
এমন মহিলার নিকট কোনো গম্য আত্মীয় বা অন্য পুরুষের গমন যার স্বামী বর্তমানে বাড়িতে
নেই, বিদেশে আছে। কারণ এমন স্ত্রীর মনে সাধারণত: যৌন ক্ষুধা একটু তুঙ্গে থাকে, তাই
বিপদ ঘটাই স্বাভাবিক। স্ত্রী বা ঐ পুরুষ যতই পরহেজগার হোক, তবুও না। এ বিষয়ে নীতি-বিজ্ঞানী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা
যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে। আমরা
বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তা'আলা
সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মাহরামের উপস্থিতি ছাড়া কোন পুরুষ যেনো কোনো
মহিলার সাথে নির্জন-বাস না করে।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৮৬২, ৩০০৬, ৩০৬১, ৫২৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৬৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৩৪১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ অপর (মাহরাম নয় তথা বিবাহ বৈধ এমন) নারীর সাথে
নিঃসঙ্গে দেখা হলেই শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭১, ২১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কিন্তু দেখা যায়, যখনই কোনো পুরুষ বিয়ে করার
কয়েকদিন পর বিদেশ চলে যায় তখন থেকেই তার স্ত্রীর সাথে নষ্টিফষ্টি করার জন্য একদল যুবক
সুযোগ খুঁজতে থাকে। আর যারা এসব করে তারাও মুসলমান।
(৪) কোনো নারী পরপুরুষের সাথে একান্তে
থাকবে নাঃ
নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস,
কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে
হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায়
সহায়িকা হয়।
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো পুরুষ অপর (মাহরাম নয় তথা বিবাহ বৈধ এমন) নারীর সাথে
নিঃসঙ্গে দেখা হলেই শয়তান সেখানে তৃতীয় জন হিসেবে উপস্থিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
১১৭১, ২১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয়
দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে
পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের
পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।”
উক্বা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘‘তোমরা (বেগানা) নারীদের নিকট (একাকী) যাওয়া থেকে বিরত থাক।’’ (এ কথা শুনে)
জনৈক আনসারী নিবেদন করল, ‘স্বামীর আত্মীয় সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?’ তিনি বললেন,
‘‘স্বামীর আত্মীয় তো মুত্যুসম (বিপজ্জনক)।’’ (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২১৭২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭১, আহমাদ ১৬৮৯৬, ১৬৯৪৫, দারেমী ২৬৪২, রিয়াদুস
সলেহীহ-১৬৩৬, আধুনিক প্রকাশনী ৪৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৮৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
অতএব দেবরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা,
অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক
বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।
তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা
অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে
নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস,
লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে
অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা
আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের
সাথে নির্জনে গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা মুরিদের একান্তে বয়াত ও তা‘লীম প্রভৃতি
একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ
সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।
বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই
পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও
বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান
তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো বেগানা মহিলার সাথে
নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।
তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান
দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই।
আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে
ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের
নির্জন বাস, কোনো হিজরে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর,
একাধিক মহিলার সাথে কোনো একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোনো সুশ্রী
কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না পাওয়া গেলে
কোনো মহিলার জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে। প্রকাশ যে,
মহিলার সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।
ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে
নারী-পুরুষে অবাধ মেলা-মেশা, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে, বিয়ে
ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে অবাধ মেলা-মেশা
করা অবৈধ।
মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে
বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ
গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট;
যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম
নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে
শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে
জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা
করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু
শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে।
পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত
করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত
মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী
তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?
(৫) পরপুরুষদের সামনে কোমল কন্ঠে কথা বলাঃ
আল্লাহ বলেন, হে নবী পত্নীগন ! (উদ্দেশ্য উম্মতের
সকল মহিলা) তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পরপুরুষের
সাথে এমন কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গীতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যধি রয়েছে
সে কু-বাসনা করবে । আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলন। (সূরা
আহযাব, আয়াত ৩২)।
উক্ত আয়াতটিও নারীদের পর্দা সম্পর্কিত, তাঁদের
কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত । আয়াতে فَلَا تَخْضَعْنَ
بِالْقَوْلِ
এর ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি পরপরুষের সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলা প্রয়োজনীয়তা দেখা
দেয়, তাহলে বাক্যালাপের সময় নারী কন্ঠের স্বভাবসুলভ কোমলতা ও লাজুকতা কৃত্রিমভাবে
পরিহার করবে । অর্থাৎ, এমন কোমলতা বা শ্রোতার মনে অবাঞ্ছিত কামনা সঞ্চার করে, তার কোন
সুযোগ দিবে না ।
যেমন এর পরে এরশাদ হয়েছে ,অর্থাৎ এরুপ কোমল
কন্ঠে বাক্যালাপ করো না, যা ব্যধিগ্রস্থ অন্তর বিশিষ্ট লোকের মনে কু-লালসা ও আকর্ষন
সৃষ্টি করে ।
মোদ্দাকথা, নারীদেরকে পরপুরুষের থেকে নিরাপদ
দূরত্বে অবস্থান করে পর্দার এমন উন্নত স্তর অর্জন করা উচিত, যাতে কোন অপরিচিত দূর্বল
ঈমান বিশিষ্ট লোকের অন্তরে কোন কামনা ও লালসা সৃষ্টি করা তো দূরের কথা, তার নিকটেও
ঘেষবা না । বরং তার বিরুদ্ধে অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । (মা’আরিফুল কোরআন-৭/১৩২)।
স্বর্ণযুগের সোনার মানুষ পুন্যাত্মা নবী-পত্নীগনকে
যদি স্বর্ণযুগের স্বর্ণমানব সাহাবায়ে কেরামের সাথে পর্দার আড়াল করা সত্ত্বেও কথা
বলার ক্ষেত্রে এমন কড়া নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে যে, তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপও নিয়ন্ত্রণে
রাখতে হবে । তাহলে আধুনিক যুগের নারী-পুরুষদের কি পর্দার প্রয়োজন নেই ? অথবা পর্দার
প্রয়োজন থাকলেও তাঁদের কন্ঠ ও বাক্যালাপ নিয়ন্ত্রন রাখার প্রয়োজন নেই ? অবশ্যই প্রয়োজন
রয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না; বরং বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষনের পর সে প্রয়োজন
আরো তীব্রভাবে অনুভূত হয় ।
(৬) বেগানা নারীদের মুখের দিকে তাকানো যাবে নাঃ
একদম কট্টরপন্থী ইসলামি আদর্শে গড়া মুসলমান
ব্যতীত এমন কোনো নারী পুরুষ দেখা যায় না যে, একে অপরের দিকে না তাকায়। দুষ্ট প্রকৃতির
পুরুষ বা ছেলেরা, মেয়েদের সাধারনত তিনটি অঙ্গের দিকে তাকায়। প্রথমত মুখের দিকে তাকায়,
দ্বিতীয়ত বুকের দিকে এবং সামনে থেকে পিছনে যাওয়ার পর হিপ এর দিকে তাকায়। এই তিনটি অঙ্গের
দিকে তাকিয়ে পুরুষ মেয়েটির পুরো দেহটা মনের মধ্যে অংকন করে স্বপ্নে ভাসতে থাকে। খোলা
মেলা ড্রেসের নারী বা শর্ট, টাইট কিংবা পাতলা কাপড় পরিহিত নারী হলে তার প্রতিচ্ছবি
দ্রুত মনের মধ্যে অংকিত হয়। আর পর্দানশীলা নারী হলে এইসব অঙ্গ দেখতেও পায় না আর মনের
মধ্যে প্রতিচ্ছবিও আনতে পারে না। দুষ্ট প্রকৃতির একজন নারী ইচ্ছে করলে একই রাতে হাজার
হাজার যুবকের স্বপ্ন দোষ ঘটাতে পারে। আর পুরুষের মনে একজন নারীর প্রতিচ্ছতি একবার গেঁথে
গেলে তার স্মৃতি ভ্রম হতে কয়েক যুগ লেগে যায়। এজন্যেই ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কেই পর্দা
করতে হুকুম দিয়েছে।
(ক) আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওখানে আমাদের
বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আমরা (ওখানে) বসে বাক্যালাপ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমরা রাস্তায় বসা ছাড়া থাকতে না পার, তাহলে রাস্তার
হক আদায় কর।’’ তারা নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কী?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি
অবনত রাখা, (অপরকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ
দেওয়া ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২৪৬৫, ৬২২৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২,
রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩১, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....ইসহাক
ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার আব্বা আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
(গৃহের সম্মুখের উন্মুক্ত) উঠানে বসে গল্প-গুজব করতেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং আমাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন, রাস্তা-ঘাটে বসে বৈঠকে
করা তোমাদের কি আচরণ? রাস্তাঘাটে মাজলিস করা তোমরা ছেড়ে দাও। আমরা বললাম, আমরা তো
কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশে বসিনি। আমরা বসে শলা-পরামর্শ ও আলোচনা করছি। তিনি বললেন,
যদি তা না করলেই নয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে- আর তা হলো চোখ নিচু রাখা, সালামের
উত্তর দেয়া এবং ভাল কথা বলা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৫৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬২, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৪, আহমাদ
১৫৯৩২) রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩২। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ
ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)......জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আচমকা নজর পড়া ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম।
তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেনো আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৫৯,
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৫৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮১, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭৭৬, সুনান আবূ দাউদ ২১৪৮, আহমাদ ১৮৬৭৯, ১৮৭১৫, ১৯১৬০, দারেমী
২৬৪৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭১, রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৩। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, হে ‘আলী! (কোনো নারীর
প্রতি) আকস্মিক একবার দৃষ্টিপাতের পর আবার দৃষ্টিপাত করো না। তোমার জন্য প্রথম দৃষ্টি
(অনিচ্ছার কারণে) জায়িয, পরবর্তী দৃষ্টি জায়িয নয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৩১১০, সুনান আততিরমিযী ২৭৭৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২১৪৯, আহমাদ
২২৯৯১, সহীহ আল জামি ৭৯৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
নারী-পুরুষের ৮০% নোংরামী সৃষ্টি হয় একে অপরের
দিকে তাকানোর মাধ্যমে। তাই ইসলাম নারীদের দিকে তাকানো নিষেধ করেছে। তবে আচমকা চোখের
সামনে পড়লে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে হবে এবং নারীদের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া পাঠ করতে হবে।
(৭) পরচুলা ব্যবহার করা যাবে নাঃ
বর্তমান সময়ে নারীরা নিজেকে আরো অধিক সৌন্দর্যমন্ডিত
করে পরপুরুষকে আকৃষ্ট করতে পরচুলা লাগোনো, ভ্রু প্লাক করা, নিজেকে অধিক সাজসজ্জা করা
ইত্যাদি যেনো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। আর এসবের সাথে অধিকাংশ মুসলিম নারী জড়িত।
(ক) আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ এক মহিলা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার
মেয়ে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আর আমি তার বিয়েও
দিয়েছি। এখন কি আমি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘যে পরচুলা লাগিয়ে
দেয় এবং যার লাগানো হয় উভয় মহিলাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৫, ৫৯৩৬, ৫৯৪১, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৫৪৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২২, সুনান আননাসায়ী ৫০৯৪, ৫২৫০, সুনান
ইবনু মাজাহ ১৯৮৮, আহমাদ ২৪২৮২, ২৬৩৭৮, ৩৬৩৯১, ২৬৪২০, ২৬৪৩৯,১৬৫০-রিয়াদুস সলেহীন)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ
উক্ত-রূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৩, সুনান আননাসায়ী
৫০৯৭, আহমাদ ২৪২৮২, ২৪৩২৯, ২৫৩৮১, ২৫৪৩৮, ২৫৫৯৭, ২৫৬৭৪, ১৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) হুমাইদ ইবনে আব্দুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি হজ্জ করার বছরে মুআবিয়া (রাঃ)-কে মিম্বরে
দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন---ঐ সময়ে তিনি জনৈক দেহরক্ষীর হাত থেকে এক গোছা চুল নিজ হাতে
নিয়ে বললেন, ‘হে মদীনাবাসীগণ!তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ জিনিস (ব্যবহার) নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলতেন, ‘‘বানী ইস্রাঈল
তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তাদের মহিলারা এই জিনিস ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছিল।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৬৮, ৩৪৮৮, ৫৯৩৩, ৫৯৩৮, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৭, সুনান আত তিরমিযী ২৭৮১, সুনান আননাসায়ী ৫২৪৫, ৫২৪৬, সুনান আবূ দাউদ
৪১৬৭, আহমাদ ১৬৩৮৮, ১৬৪০১, ১৬৪২৩, ১৬৪৮২, ২৭৫৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৬৫,১৬৫২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঘ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পরচুলা যে মহিলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে
উলকি উৎকীর্ণ করে ও যে উলকি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৩৭, ৫৯৪০, ৫৯৪২, ৫৯৪৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১২৪, সুনান আত তিরমিযী ১৭৫৯, ২৭৮৩,
সুনান আননাসায়ী ৩৪১৬, ১৫৯৫, ৫২৫১, সুনান আবূ দাউদ ৪১৬৮, সুনান ইবনু মাজাহ ১৯৮৭, আহমাদ
৪৭১০,১৬৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঙ) হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি ও আবূ যুবায়র (রহঃ).....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। যে মহিলা তার
মাথায় কোন কিছু সংমিশ্রণ করে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধমক দিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২১২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯২, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরচুলা সাধারণত যারা ব্যবহার করে তারা নায়িকা
বা গায়িকা কিংবা শিল্পি জগতের সাথে যারা জড়িত তারাই মূলত এসব ব্যবহার করে বেশি। আরেক
শ্রেণির নারী আছে যারা বিভিন্ন সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়ে বাহিরে ঘুরে বেড়ায়। আবার বিবাহের
সময় পাত্রীকে আরো আকর্ষনীয় হতে পরচুলা ব্যবহার করে থাকে। তবে যে উদ্দেশ্যেই ব্যবহার
করা হোক না কেনো এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরপুরুষকে চুলের সৌন্দর্য দিয়ে আকৃষ্ট করা। যেসব নারী অবাধ বিচরণে অভ্যস্ত
তারা এসব ব্যবহার করতে পছন্দ করে। কোনো পর্দানশীলা নারী এসব ব্যবহার করে না।
(৮) একজনের বিবাহিত স্ত্রী হয়ে থাকা অবস্থায় অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে গিয়ে
বিয়ে করা যাবে নাঃ
আমাদের বর্তমান সমাজে বউ পালিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে
নিয়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখে মনে হচ্ছে বিবাহিত
নারী পুরুষগণ তাদের নিজ নিজ স্বামী স্ত্রীতে সন্তুষ্ট নয়। পত্রিকা বা ইন্টারনেট খুললেই
প্রতিনিয়ত দেখা যায়, অমুকের নব বিবাহিত স্ত্রী বা দুই সন্তানের জননী বা প্রবাসীর স্ত্রী
কিংবা এক বন্ধু আরেক বন্ধুর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়েছে। এই ধরণের সম্পর্ককে বলে পরকিয়া
প্রেম। এই পরকিয়া প্রেমে আসক্ত নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যভিচারে লিপ্ত। একদিকে অন্যের স্ত্রীকে
পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করা যেমন হারাম তেমনি ব্যভিচারের দায়ে তাদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন
চরম শাস্তি ভোগ করতে হবে।
মহান আল্লাহ যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম
বলেছেন, তার মধ্যে একজন হলো বিবাহিত মহিলা, যে কোন স্বামীর বিবাহ বন্ধনে বর্তমানে সংসার
করছে এবং তালাক হয়নি। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত
সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এ হল আল্লাহ্র বিধান। উল্লেখিত নারীগণ
ব্যাতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল; এই শর্তে যে, তোমরা তাঁদেরকে
নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নয়।”
(সুরা আন নিসাঃ ২৪)।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘‘যে কারো স্ত্রী অথবা কারো
ভৃত্যকে প্ররোচনা বা প্রলোভন দ্বারা নষ্ট করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫১৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
তেমনি কোনো বিবাহিত স্বামীওয়ালী সধবা মহিলাকে
বিবাহ করা বৈধ নয়, যতক্ষণ না তার তালাক হয়েছে অথবা তার স্বামী মারা গেছে এবং তার নির্ধারিত
ইদ্দত কাল অতিবাহিত হয়েছে। কিস্তু বর্তমান যুগে এসব ইসলামি বিধিবিধান কেউ মেনে চলছে
না। দেখা যাচ্ছে, পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পূর্ব থেকেই তারা যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত।
এরপর সুযোগ বুঝে স্বামীকে রেখে পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়ে করছে। এই ধরণের বিয়ে ইসলামে জায়েজ
নেই। এরা যতোদিন মেলামেশা করবে ততোদিন যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত থাকবে। এদের দ্বারা উৎপাদিত
সকল সন্তান জারজের মধ্যে গণ্য হবে। আর এইসব কাজে আমাদের সমাজের অধিাকংশ মুসলমান জড়িত।
(৯) হারাম ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়া যাবে নাঃ
কুকুর বিক্রয় মূল্য, বিড়াল বিক্রয় মূল্য, বেশ্যাবৃত্তির বিনিময় মূল্য, শিঙ্গা লাগানোর মূল্য,
গণকের গণনার মূল্য ও গান গায়িকাদের উপার্জন গ্রহণ করা যাবে না
(ক) রাফি বিন খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুর বিক্রয়লব্ধ মূল্য ঘৃণিত
বস্তু, যিনা-ব্যভিচারের বিনিময়ও ঘৃণিত, শিঙ্গা লাগানোর (রক্তমোক্ষণের) ব্যবসা ঘৃণিত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৩৯০৩, ৩৯০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪২১, সুনান আততিরমিযী
১২৭৫, আহমাদ ১৫৮২৭, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০৭৭, সহীহাহ্ ৩৬২২, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রয় মূল্য, যিনা-ব্যভিচারের
বিনিময় হতে ও গণকের গণনার মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৭, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪২৮, সুনান
আননাসায়ী ৪৬৬৬, সুনান আততিরমিযী ১১৩৩, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৫৯, আহমাদ ১৭০৭০, দারিমী
২৬৬১০, ইরওয়া ১২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫১৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তমোক্ষণ কাজের বিনিময়, কুকুর বিক্রয় মূল্য ও
যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) লা’নাত (অভিসম্পাত) করেছেন সুদগ্রহীতা ও সুদদাতার প্রতি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো লা’নাত করেছেন ওই ব্যক্তির প্রতি যে দেহের কোনো অংশে নাম বা
চিত্রাঙ্কন করে ও করায়। তাছাড়াও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছবি অঙ্কনকারীর
প্রতিও লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৬২, আহমাদ ১৮৭৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যিনা-ব্যভিচারের বিনিময় মূল্য তথা বেশ্যাবৃত্তির্
মূল্য গ্রহণ করা হারাম। বাংলাদেশে এক সময় বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু বেশ্যাখানা ছিল।এখনো
কয়েকটি আছে। নির্দিষ্ট জায়গায় এসব অপকর্ম হয় বলে অনেকে ঐজায়গাকে ঘৃণা করে। যারা এসবের
সাথে জড়িত তারাও সমাজে ঘৃণিত। কিন্তু ঐসব বেশ্যাখানার চেয়ে বর্তমানে ভদ্রবেশী শত শত
হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পাঁচ তারকা, সাত তারকা ইত্যাদি নামে বেশ্যাখানা খুলে দেদারসে
যৌন ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এগুলো আবার সরকারি অনুমোদিত।
বর্তমানে যারা এসব হোটেল মোটেল রিসোর্ট, পার্ক
খুলে ব্যবসা করছেন বা যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের ৯৫%ই মুসলমান।
(ঘ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রির মূল্য ও বিড়াল বিক্রয়ের
মূল্য (গ্রহণ করতে) নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৭৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৬৯, সুনান
আননাসায়ী ৪৬৬৮, আহমাদ ১৫১৪৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২১৬১, সহীহাহ্ ২৯৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর বিক্রির মূল্য ও গান গায়িকাদের উপার্জন
গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৯৩৮, সহীহাহ্ ৩২৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা বেচা-কেনা করো না
তাদেরকে (মেয়েদেরকে) গান শিক্ষাও দিয়ো না, এর মূল্য হারাম। এ জাতীয় কাজ যারা করে তাদের
ব্যাপারেই কুরআন মাজীদের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ- “কতক মানুষ আল্লাহ্র পথ থেকে
বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে আর আল্লাহ্র পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ
করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।’’- (সূরা লুকমান ৩১ : ৬)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮০, সুনান আততিরমিযী ১২৮২, সুনান
ইবনু মাজাহ ২১৬৮, সহীহ আল জামি ৫০৯১)।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে
নাচ-গান শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অনেক মুসলিম তাদের মেয়েদেরকে শিশুকাল থেকেই
নাচ-গান শিক্ষা দিয়ে থাকে। যুবতী বয়সে সেইসব মেয়েরা যৌন আকর্ষণ পোশাক পরিধান করে নাচ
গানে অংশ নেয় এবং যুবক থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধকেও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে উত্তেজিত
করে তোলে।বর্তমানে বাংলাদেশে নাচ গানের সাথে যারা জড়িত তাদের ৮৫%ই মুসলমান।
(চ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি
তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি
তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে
গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে
ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে
বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর (রাঃ)
গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৮৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৬১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদী জাতিকে ধ্বংস
করুন; (হালাল জীবেরও) চর্বি তাদের জন্য হারাম করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ঐরূপ জাতীয় চর্বি
গলিয়ে তা বিক্রি করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬৭,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৮২, সুনান আননাসায়ী
৪২৫৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৩, দারিমী ২১৫০, আহমাদ ১৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯০৫, ইসলামিক
সেন্টার ৩৯০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মদের কারখানা, মদের বার তথা মদ সংশ্লিষ্ট স্থানে চাকরি করা যাবে না
মদ বা মাদক বা নেশাদার জাতীয় দ্রব্য সেবন ইসলামে নিষেধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং
ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে
তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্র“তা ও বিদ্বেষ
সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিক্র ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে চায়। তাহলে
কি তোমরা বিরত থাকবে’? (সুরা মায়িদাহ ৯০-৯১)।
লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে।
তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্য, তবে এদের পাপ উপকারের
চেয়ে অধিক। (সূরা বাকারা-২১৯)।
(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সুদ
সম্পর্কিত সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হয়ে আসেন এবং শরাবের ব্যবসাও নিষিদ্ধ (হারাম) ঘোষণা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৯,
২০৮৪, ২২২৬, ৪৫৪০, ৪৫৪১, ৪৫৪২, ৪৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৩৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮০, নাসায়ী ৪৬৬৫, আ৩৪৯০, আহমাদ ২৩৬৭৩, দারেমী ২৫৬৯, ২৫৭০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন
‘উমার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মিম্বারের উপর (দাঁড়িয়ে) খুৎবা
প্রদানকালে বললেনঃ নিশ্চয় মদ হারাম সাব্যস্ত (নাযিল) হয়েছে। আর তা সাধারণত পাঁচ প্রকারের
জিনিস দ্বারা প্রস্তুত হয়; যথা- আঙ্গুর, খেজুর, গম, যব ও মধু। আর মদ তা-ই যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে
বিলুপ্ত করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৬৩৫, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৪৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৩০৩২, আবূ দাঊদ ৩৬৬৯, নাসায়ী ৫৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
সামুরা (রাঃ) শরাব বিক্রয় করেন এ কথা উমার (রাঃ) জানতে পেরে বললেন, আল্লাহ সামুরাকে
ধ্বংস করুনঃ সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
‘‘আল্লাহ তা‘আলা ইহূদীদের অভিসম্পাত করুন, তাদের প্রতি চর্বি হারাম করা হয়েছিল; কিন্তু
তারা তা গলিয়ে বিক্রয় করতো’’। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২২৩, ৩৪৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮২, নাসায়ী ৪২৫৭, আহমাদ ১৭১, দারেমী ২১০৪, ইরওয়া ১২৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ
২০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর থেকে বর্ণিত ‘যে ব্যক্তি
মদ পান করবে আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না’। (আহমাদ
হা/২৭৬৪৪; তারগীব হা/৩৪১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঙ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ ব্যক্তির ওপর লা’নাত করেছেন-
১। যে মদ তৈরি করে, ২। যে মদ তৈরির নির্দেশ দেয়, ৩। যে মদ পান করে, ৪। যে মদ বহন করে,
৫। যার জন্য মদ বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, ৬। যে মদ পান করায়, ৭। যে মদ বিক্রি করে, ৮।
যে মদের আয় উপভোগ করে, ৯। যে মদ ক্রয় করে, ১০। যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৬, সুনান আততিরমিযী ১২৯৫, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(চ) ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদের ওপর, মদ পানকারীর ওপর, যে মদ পান করায়
তার ওপর, মদ বিক্রেতার ওপর, মদ ক্রেতার ওপর, মদ তৈরিকারীর ওপর, মদের ফরমায়েশকারীর ওপর,
মদ বহনকারীর ওপর এবং যার জন্য মদ বহন করা হয় তাদের ওপর আল্লাহ লা’নাত করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৬৭৪, সুনান
ইবনু মাজাহ ৩৩৮০, আহমাদ ৪৭৮৭, ইরওয়া ২৩৮৫, সহীহ আল জামি ৫০৯১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৫৬)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
মদ খোর (পাপের ক্ষেত্রে) মূর্তিপূজকের সমতুল্য
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদখোর (পাপের ক্ষেত্রে) মূর্তিপূজকের
সমতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৭৫, সহীহাহ ৬৭৭)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাত আদায় করা নিষেধ
হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের
নিকটবর্তী হয়ে না, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার এবং যদি তোমরা মুসাফির
না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর। আর যদি তোমরা পীড়িত
হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং
পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের
চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল। (সুরা
নিসা-৪৩)।
মদ দিয়ে চিকিৎসা করা হারাম
(ক) উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা আল্লাহ তার হারামকৃত বস্তুর
মধ্যে করেননি। (আত্-তালখীসুল হাবীর ৪/১৩৯৭, আল মুহাযযিব
(৮/৩৯৬৬), মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৫/৮৯) শাকীক বিন সালাম থেকে, বুলগুলমারাম, ১২৫১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ)....ওয়ায়িল আল-হাযরামী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়াইদ
জুকী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন।
তিনি তাকে বারণ করলেন, কিংবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব জঘন্য মনে করলেন। তিনি [তারিক
(রাযিঃ)] বললেন, আমি তো শুধু ঔষধ তৈরি করার জন্য মদ প্রস্তুত করি। তিনি বললেনঃ এটি
তো (ব্যাধি নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই ব্যাধি। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২০৪৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৮৭৩, আহমাদ ১৮৩১০, ১৮৩৮০, ২৬৫৯৬, বুলগুলমারাম ১২৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
মদ সংক্রান্ত কুরআন হাদিস থেকে আমরা জানতে
পারলাম যে, মদ বা মাদক বা নেশাদার জাতীয় দ্রব্য খাওয়া হারাম, এসবের ব্যবসা করাও হারাম।
১৯ জুন ২০১৮ তারিখে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকায়
প্রকাশিত, বর্তমানে সারা দেশে অনুমোদিত বারের সংখ্যা মাত্র ৯৬টি।
থ্রি স্টার, ফাইভ স্টার ও সেভেন স্টারসহ বাংলাদেশের
বিভিন্ন শহরে এইসব মদের বারগুলো অবস্থিত।
বেশীরভাগ মদের বারগুলোতে চার ধরণের পাপ কাজ
সংঘটিত হয়। যেমন,
(ক) মদ পান ।
(খ) জুয়ার আসর।
(গ)
নাচ গানের আসর ও
(ঘ)
যিনা/ব্যভিচার।
মদের কারখানা, মদের দোকান বা মদের বার কিংবা
মদ ব্যবসা মুসলমানদের জীবিকার উৎস
দর্শনা কেরু এন্ড কোং মদের কারখানাসহ মদ বিক্রির
দোকানে, মদের বারে শত শত মুসলিম কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
প্রতিটি স্থানেই সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে অসংখ্য মুসলিম ব্যক্তি চাকরি করছে। এরা একদিকে
মদের দোকানে বা কারখানায় চাকরি করে অর্থ উপার্জন করছে অন্য দিকে অনেকে সালাত আদায়সহ
ধর্মীয় কর্মও পালন করছে। কিন্তু তাদের উপার্জিত অর্থ কি হালাল ! আসুন সহিহ হাদিস ভিত্তিক
বিষয়গুলো জেনে নেই।
(ক) ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদের উপর দশভাবে অভিসম্পাত করা হয়েছেঃ স্বয়ং মদ (অভিশপ্ত),
মদ উৎপাদক, যে তা উৎপাদন করায়, তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তার বহনকারী, তা যার জন্য
বহন করা হয়, এর মূল্য ভোগকারী, তা পানকারী ও তা পরিবেশনকারী (এদের সকলেই অভিশপ্ত)।
(সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৬৭৪,
৫৬৮৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৭, আহমাদ ইরওয়া ১৫২৯, রাওদুন নাদীর ৫৪৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশভাবে মদের উপর অভিসম্পাত করেছেনঃ মদ প্রস্তুতকারী, তা উৎপাদনকারী,
যে তা উৎপাদন করায়, তা যার জন্য উৎপাদন করা হয়, তা বহনকারী, যার জন্য তা বহন করা হয়,
তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তা পরিবেশনকারী এবং যার জন্য পরিবেশন করা হয়। এভাবে তিনি
দশজনের উল্লেখ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩৩৮১, সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২৯৫, গায়াতুল মারাম ৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
‘‘হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ‘মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩
: ৫১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ ‘‘হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান
করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল
বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক) হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র,
তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(সুরা বাক্বারাহ ২:১৬৮)।
(খ) হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ
দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর
যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো । (সুরা বাক্বারাহ ২:১৭২)।
(গ) হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার
করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত। (সুরা মুমিনূন ৫১)।
মনে রাখবেন,
(ক) জাবের (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে
দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের
জন্য জাহান্নামই সমীচীন। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত
হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত
পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১, শু‘আবুল ঈমান
৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সবশেষে এটাই বলতে চাই, মদ বা মদ জাতীয় সকল
নেশাদার দ্রব্যই হারাম। মদের ব্যবসা হারাম। মদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের
উপার্জিত অর্থও হারাম। বর্তমানে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেই মদের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে
এবং তা সহজলভ্য করতে সরকারিভাবে আইনও পাশ করা হয়েছে। এর থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে,
প্রকৃত ইমানদার, মুত্তাকি মুসলিম শাসক নিযুক্ত করা এবং মাদকের ভয়াবহতা সমাজে তুলে ধরা
এবং নিজের আমল সংশোধনসহ ইসলামি পরিবার গঠন করা। নেক্বার মেয়েকে বিয়ে করে নেক্বার সন্তান
জন্ম দেয়া ও তাদেরকে ইসলামি বিধান মোতাবেক গড়ে তোলা।
সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়া যাবে না
বর্তমানে আমাদের এই সমাজটা সুদী কারবারী অর্থনৈতিক
সমাজ ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। তথা কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে শুরু করে সকল ব্যাংক, সকল
এনজিও, সকল সমিতি, সকল লাইফ ইন্সুরেন্সসহ সকল অনুরুপ প্রতিষ্ঠানে সুদভিত্তিক অর্থ লেনদেন
করা হয়। এছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে দাদন ব্যবসা প্রথা চালূ আছে। যারা চড়া সুদে এই কারবারী
করে থাকে। সম্প্রতি কিছু ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে
বের হয়ে ইসলামি প্রথা মোতাবেক লেনদেন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এছাড়া অন্যান্য সুদী
ব্যাংকে আপনার যদি একটি একাউন্ট থাকে আর একাউন্টে টাকা জমা থাকলে বছর শেষে পাঁচ পয়সা
হলেও সুদের অংশ আপনার একাউন্টে জমা হচ্ছে। যতো চাকরিজীবি আছে তাদের বেতন হয় ব্যাংকের
মাধ্যমে, তারাও সুদের অংশ উত্তোলন করছে। এছাড়া পেনশনে আসার পর ৯৮% চাকরিজীবিই যে প্রতিষ্ঠান
বেশী সুদ দেয় সেখানে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখে মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিক সুদের
অংশ তুলে সংসার চালায়। আবার এদিকে লম্বা তসবিহ হাতে, মাথায় টুপি পড়ে আল্লাহু আল্লাহ
জিকির করে, অনেকে হজ্জে যায় তথা উপরি উপরি পাক্কা ঈমানদার সেজে সমাজে ঘুরে বেড়ায়। ইচ্ছে
না থাকলেও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ সুদীকারবারীর সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ইচ্ছে অনিচ্ছে
যাই থাকুক না কেনো সুদ প্রথা যেহেতু চালু আছে তাই সরকার যেমন দায়ী তেমনি আপনি ভোটার
হিসেবে আরো বেশী দায়ী। কারণ আপনার সমর্থন নিয়েই সরকার এই সুদী সমাজ ব্যবস্থা চালু করেছে। আসুন আল্লাহ তায়ালা
ও রাসুল সাঃ সুদ সম্পর্কে কী বলেন তা জেনে নেই।
আল্লাহ তা‘আলা সূদখোর ব্যতীত আর কারো বিরুদ্ধে
স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তিনি বলেন,
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর তাকাওয়া অবলম্বন
কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও। আর যদি তোমরা তা
না কর, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোন” । (সূরা আল-বাকারা,
আয়াত: ২৭৮-২৭৯)।
আল্লাহর নিকট সূদ খাওয়া যে কত মারাত্মক অপরাধ
তা অনুধাবনের জন্য উক্ত আয়াতদ্বয়ই যথেষ্ট। সূদবৃত্তি দারিদ্র্য, মন্দা ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা,
অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বহু কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির
ন্যায় কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে তা
পর্যবেক্ষক মাত্রই অনুধাবন করতে সক্ষম। প্রতিদিনের ঘাম ঝরানো শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জিত
হয়, সূদের অতলগহ্বর পূরণেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়। সূদের ফলে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণির
উদ্ভব হয়। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে ব্যাপক সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। সম্ভবতঃ এসব
কারণেই আল্লাহ তা‘আলা সূদীকারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সূদী কারবারে মূল
দু’পক্ষ, মধ্যস্থতাকারী, সহযোগিতাকারী ইত্যাকার যারাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে অভিশপ্ত।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
জাবির (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন,
যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয়
তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে
সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮০৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৩৩৩, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৬,
সহীহ আত্ তারগীব ১৮৪৭, আহমাদ ৩৭২৯, ৩৭৯৯, ৩৮৭১, ৪০৭৯, ৪২৭১, ৪৩১৫, ৪৩৮৯, ৪৪১৪, দারেমী
২৫৩৫, ইরওয়া ৫/১৮৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৭, ইসলামিক সেন্টার
৩৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ কারণেই সূদ লিপিবদ্ধ করা, এর আদান-প্রদানে
সহায়তা করা, সূদী দ্রব্য গচ্ছিত রাখা ও এর পাহারাদারীর কাজে নিযুক্ত হওয়া জায়েয নেই।
মোটকথা, সূদের সূদের কাজে অংশগ্রহণ ও যে কোনোভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মহাঅপরাধের কদর্যতা ফুটিয়ে তুলতে বড়ই আগ্রহী ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৫০, ৫১, মুস্তাদরাকে
হাকেম, হাদীস নং ২২৫৯; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সুদের পাপের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৫, ইবনুস সালাম এর তাখরিজুল ঈমান ৯৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আব্দুল্লাহ ইবন হানযালা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“জেনেশুনে কোনো লোকের সূদের এক টাকা ভক্ষণ
করা ৩৬ বার ব্যভিচার করা থেকেও কঠিন”। (মুসনাদে আহমদ ৫/২২৫;
সহীহ আল-জামে‘ ৩৩৭৫)।
সূদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সর্বদা
হারাম। সবাইকে তা পরিহার করতে হবে। কত ধনিক-বণিক যে এ সূদের কারণে দেউলিয়া হয়ে গেছে
তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সূদের সর্বনিম্ন ক্ষতি হলো, মালের বরকত উঠে যাবে, পরিমাণে তা
যতই স্ফীত হউক না কেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“সূদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন
তার শেষ পরিণতি হলো নিঃস্বতা”। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস
নং ২২৬২)।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ
হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৭৯, আত-তালীক
৩/৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সূদের হার কমই হোক আর চড়াই হোক সবই হারাম।
যেমন করে শয়তান দুনিয়াতে তার স্পর্শে কাউকে পাগল করে দেয়, তেমনি সূদখোর পাগল হয়ে হাশরের
ময়দানে উত্থিত হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা সুদ খায় তারা তার ন্যায় দাঁড়াবে যাকে
শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে(৩)। এটা এ জন্য যে তারা বলে(৪), ‘ক্রয়-বিক্রয় তো সুদেরই
মত। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। অতএব যার নিকট তার রব-এর
পক্ষ হতে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, তাহলে অতীতে যা হয়েছে তা তারই; এবং তার ব্যাপার
আল্লাহর ইখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় আরম্ভ করবে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা
স্থায়ী হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)।
যদিও সূদের লেনদেন গুরুতর অন্যায় তবুও মহান
রাব্বুল আলামীন দয়াপরবশ হয়ে বান্দাকে তা থেকে তওবার উপায় বলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন,
“যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন
ফিরে পাবে। তোমরা না অত্যাচার করবে, আর না অত্যাচারিত হবে”। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৯)।
মুমিনের অন্তরে সূদের প্রতি ঘৃণা এবং তার খারাপ
দিকগুলো সম্পর্কে তীব্র অনুভূতি থাকা একান্ত আবশ্যক। এমনকি যারা টাকা-পয়সা ও মূল্যবান
সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সূদী ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের মধ্যেও
নিতান্ত দায়েপড়া ব্যক্তির ন্যায় অনুভূতি থাকতে হবে, যেন তারা মৃত জীব ভক্ষণ কিংবা তার
থেকেও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই তারা সব সময় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা
করবে এবং সূদী ব্যাংকের বিকল্প সূদহীন ভালো কোনো উপায় অবলম্বনের চেষ্টা করবে। তাদের
আমানতের বিপরীতে সূদী ব্যাংকের নিকট সূদ দাবী করা জায়েয নেই। বরং যে কোনো উপায়ে তার
থেকে নিষ্কৃতি লাভের চেষ্টা করবে, তা (ছওয়াবের নিয়তে) দান করবে না। কেননা আল্লাহ পবিত্র।
পবিত্র বস্তু ছাড়া তিনি দানের স্বীকৃতি দেন না। নিজের কোনো কাজে সূদের অর্থ ব্যয় করা
যাবে না। না পানাহারে, না পরিধেয়ে, না সওয়ারীতে, না বাড়ী-ঘর তৈরীতে, না পুত্র-পরিজন,
স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতার ভরণ-পোষণে, না যাকাত আদায়ে, না ট্যাক্স পরিশোধে, না নিজের
ওপর অন্যায়ভাবে আরোপিত অর্থ পরিশোধে। সূদের অর্থ কেবল আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দায় মুক্তির
জন্য এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিতে হবে।
কোনো শাসক বা বিচারকের নিকট সুপারিশের পর কোনো
হাদিয়া (উপহার) গ্রহণ করলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো শাসক বা বিচারকের
নিকট সুপারিশ করে, আর সে সুপারিশ স্বরূপ তার নিকট কোনো হাদিয়া (উপহার) পাঠায় এবং তিনি
তা গ্রহণ করেন। তাহলে সে সুদের দরজাসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি বিরাট দরজায় প্রবেশ
করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৭৫৭, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৩৫৪১, সহীহাহ্ ৩৪৬৫, সহীহ আল জামি‘ ৬৩১৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৬২৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
সুদী ব্যাংকে বা সুদী কারবারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যাবে না
সূদী ব্যাংকের বিষয়টি স্পষ্ট। সুদী কারবার
করে এমন ব্যাংকে চাকুরী করা হারাম। কারণ, এতে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করা হয়। কেননা,
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “পাপ ও সীমালঙ্ঘনের
ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ:
২)।
আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন এবং সূদখোরের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। (সুরা বাক্বারাহ ২/২৭৮-৭৯)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
হাম্মাদ ইবনু সাববাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও
উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ).....জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার
সাক্ষী দু’জনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৩৯৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৪৮, ইসলামিক
সেন্টার ৩৯৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।
অতএব সূদী ব্যাংকে চাকুরীজীবি সূদ ভক্ষণকারীর
ন্যায় পাপী হবে এবং তার যাবতীয় উপার্জন হারাম হবে। কিয়ামতের দিন পাপীদের কৃতকর্ম সম্পর্কে
আল্লাহ বলেন, “আর আমরা তাদের কৃতকর্মসমূহের দিকে অগ্রসর হব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত
ধূলিকণায় পরিণত করব”। (সুরা ফুরক্বান ২৫/২৩)।
উল্লেখিত হারাম ব্যবসার সাথে যারা জড়িত থাকবে
বা ঐসব ব্যবসাকে যারা সহযোগিতা করবে তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম হিসেবে গণ্য হবে। ঐ
উপার্জিত অর্থ দিয়ে অন্য যাই কিছু ক্রয় করুক না কেনো সেগুলোও হারামের মধ্যে গণ্য হবে।
আর হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ কখনো জান্নাতে যাবে না। হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্থ বা সম্পদ
উপার্জনের মাধ্যমগুলো যেমন সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতী, ছিনতাই, ওজনে কম দেয়া,
মিথ্যে কথা বলে পণ্য বিক্রি করা, নারী পাচার করা, যিনার মূল্য, কুকুরের মূল্য ইত্যাদি
ইত্যাদি এর সাথে যারা জড়িত তারা জান্নাতে যাবে না।
হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত।
রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে।
প্রথমতঃ ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু
বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম
হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ঐ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে
না।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৮৭, সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই
উপযোগী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭২, আহমাদ ১৪৪১,
শু‘আবুল ঈমান ৮৯৭২, দারিমী ২৭৭৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা’আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
’’হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ’মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩
: ৫১)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ ’’হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান
করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ কর’’। (সূরা আল বাকারা ২: ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দুই হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২২৩৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০১৫, সুনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২১৫, ইসলামীক সেন্টার ২২১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে,
যখন কেউ কি উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো
প্রকার পরোয়া করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬১,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৫৯, ২০৮৩,
নাসায়ী ৪৪৫৪, সহীহ আল জামি‘ ৮০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৯১৬
, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৯৩১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঙ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও
সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক
মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়
হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত
থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে
নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার
সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে
নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে
গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে
যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ’কলব’ (অন্তঃকরণ)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৯৯, সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২০৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১, আধুনিক প্রকাশনীঃ
৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
(ক) “হে
মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো
না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৬৮)।
(খ) “হে
ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্তুসমূহ ভক্ষণ
কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো”। (সুরা আলবাক্বারাহ ১৭২)।
(গ) “হে
রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্তু হতে আহার করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে
আমি অবগত”। (সুরা মুমিনূন ৫১)।
হারাম টাকায় ক্রয় করা জামা গায়ে দিয়ে সালাত আদায় করলে তা কবুল হবে না
ইবনু
উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দশটি মুদ্রার বিনিময়ে একটি কাপড় কিনেছে,
যার মধ্যে একটি মুদ্রা হারাম ছিল। যতদিন ওই ব্যক্তির পরনে কাপড়টি থাকবে তার সালাত গৃহীত
হবে না। ইবনু উমার (রাঃ) এ কথা শুনার পর তাঁর দু’ কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, আমার
কান দু’টি বধির হয়ে যাবে যদি আমি এ বর্ণনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
না শুনে থাকি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৮৯, আহমাদ
৫৭৩২, শু‘আবুল ঈমান ৬১১৪, আল জামি ৫৪২০)।
(১০) কসম খেয়ে মাল বিক্রি করা যাবে নাঃ
(ক) আবূ
কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিক কসম খাওয়া হতে বেঁচে থাকবে। এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি
বিক্রি হলেও (পরিশেষে) বরকত কমে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৭৯৩, মুসলিম ১৬০৭, নাসায়ী ৪৪৬০, ইবনু মাজাহ ২২০৯, আহমাদ ২২৫৪৪, সহীহ আল জামি‘
২৬৮৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বেশি বেশি কসম খাওয়ায় মালের কাটতি হয়, কিন্তু বরকত দূর
করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯৪, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৮৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৬০৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩৩৩৫, সুনান নাসায়ী ৪৪৬১, আহমাদ ৭২০৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৯৪,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৮০, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের
দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (দয়ার) দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে (গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে)
পাক-পবিত্র করবেন না, আর তাদের জন্য রয়েছে (নির্ধারিত) কঠিন ’আযাব। আবূ যার(রাঃ) এ
কথা শুনার পর সাথে সাথে বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসূল! যাদের জন্য অধঃপতন ও ধ্বংস, তারা
কারা? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) যে লোক পরনের কাপড় পায়ের গিরার
নীচে পরে, (২) যে দান করে খোটা দেয়, (৩) যে লোক নিজের মাল বেশি চালু করার চেষ্টায় মিথ্যা
কসম করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯৫, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৮৭, সুনান আননাসায়ী
২৫৬৩, সুনান আততিরমিযী ১২১১, সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, আহমাদ ২১৪৩৬, দারিমী ২৬৪৭, ইরওয়া
৯০০, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
ঐসব ব্যবসায়ীদের শেষ পরিনতি
উবায়দ ইবনু রিফাআহ্ তাঁর পিতার মাধ্যমে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে ব্যবসায়ীগণ বদকাররূপে উপস্থিত হবেন। অবশ্য যারা
মুত্তাক্বী, পরহেযগার, নেককার ও সত্যবাদী হবেন তারা এরূপ হবেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৯৯, সুনান আততিরমিযী ১২১০, সুনান
ইবনু মাজাহ ২১৪৬, সহীহাহ্ ১৪৫৮, দারিমী ২৫৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১১) মুখাবারাহ্, মুহাকালাহ্ ও মুযাবানাহ্ করা যাবে নাঃ
(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখাবারাহ্, মুহাকালাহ্ ও মুযাবানাহ্ করতে নিষেধ করেছেন।
‘মুহাকালাহ্’ হলো ক্ষেতের শস্য একশ’ ফুরক্ব (প্রায় বিশ মণ প্রস্তুতকৃত) গমের বিনিময়ে
বিক্রি করা। ‘মুযাবানাহ্’ হলো খেজুর গাছের মাথায় যে খেজুর রয়েছে, তা কর্তিত বিশ মণ
খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা। ‘মুখাবারাহ্’ অর্থ হলো এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ শস্যের
বিনিময়ে ক্ষেত ইজারা (বর্গা) দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮৩৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৩৬, মুসনাদ
আশ্ শাফিঈ ৫২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৬৪, ইসলামিক সেন্টার ৩৭৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih।
(খ) ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুযাবানাহ্’ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় হতে নিষেধ করেছেন।
আর তা হলো বাগানের মধ্যে রেখে ফল বিক্রি করা। গাছ হতে পেড়ে তা শুকালে কি পরিমাণ খুরমা
হবে ওই পরিমাণ খুরমা দিয়ে এর বিনিময়ে গাছের খেজুর গাছে রেখেই অনুমান করে ক্রয়-বিক্রয়
করা। আর যদি আঙ্গুর হয়, কিসমিসের বিনিময়ে অনুমান করে ক্রয়-বিক্রয় করা। মুসলিম-এর বর্ণনায়
ক্ষেতের শস্যদানার বেলায়ও এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা নিষেধ।
মুত্তাফাকুন ’আলায়হি-এর অন্য এক বর্ণনায় আছে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানাহ্ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ
করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (খেজুর) গাছের মাথায় যে
খেজুর রয়েছে তা নির্দিষ্ট পরিমাপ করে খেজুরের বিনিময়ে বিক্রয় করা হলো ’মুযাবানাহ্’।
যদি বেশি হয় তবে তা আমার (বিক্রেতার লাভে) হবে। যদি কম হয় তবে তা আমারই ক্ষতি হিসেবে
পরিগণিত হবে (অর্থাৎ- এর লাভ-ক্ষতি আমারই হবে)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন মুহা-কলাহ্, মুযা-বানাহ্, মুখা-বারাহ্
ও মু’আ-ওয়ামাহ্ হতে এবং নিষেধ করেছেন (অনির্দিষ্টভাবে) কিছু অংশ বাদ দিতেও। আর ‘আরা-ইয়া’-কে
জায়িয করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৩৬, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৩৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪০৪, সুনান
আননাসায়ী ৪৬৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৬৬, আহমাদ ১৪৯২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) সাহল
ইবনু আবূ হাসমাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রস্তুতকৃত খুরমার বিনিময়ে (গাছে বিদ্যমান রেখে) খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্য ’আরা-ইয়া বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। ’আরা-ইয়া’র
ফলকেই অনুমান করে বিক্রি করে সেই অনুমান অনুযায়ী খুরমা দিবে। ’আরা-ইয়া’র ফল ক্রেতা
তা পাকা ও তাজা অবস্থায় খাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৮৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৭৮৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭৪৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৭৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঙ) আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিক্রয়কারী ও ক্রেতাকে ক্রয়-বিক্রয়
করতে নিষেধ করেছেন যতদিন পর্যন্ত গাছের ফল (খাবার বা কাজে লাগানোর) উপযুক্ত না হবে।
মুসলিম-এর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, খেজুরে যতদিন
পর্যন্ত লাল বা হলুদ বর্ণ না আসে এবং শীষ জাতীয় শস্য (গম ও যব প্রভৃতি) বিক্রি করতে
নিষেধ করেছেন (যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে পেকে শুকিয়ে সাদা না হয়ে যায়)। আর কোনো
প্রকার মোড়কে নষ্ট হওয়া থেকে আশঙ্কামুক্ত না হয়ে যায়, অর্থাৎ- ব্যাধি হতে মুক্ত থাকতে
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৩৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২১৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৭৫৪-৩৭৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৩৪,
সুনান আবূ দাঊদ ৩৩৬৭, দারিমী ২৫৯৭, ইরওয়া ১৩৫৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
২০৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর ফল পরিপক্ক হবার পূর্বে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্ন করা হলো, পরিপক্কতা কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ফল লাল
হওয়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, আল্লাহর দেয়া কোনো বালা-মুসীবাতে
যদি এ ফল নষ্ট হয়ে যায়, তবে মুসলিম ভাই (ক্রেতা) হতে কিসের বিনিময়ে মূল্যমান গ্রহণ
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪০, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৮৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৫৫৫, আহমাদ ১২১৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৮৩৫, ইসলামিক সেন্টার
৩৮৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোনো প্রকার গাছ বা বাগানের ফল) কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম
বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন এবং (বিক্রিত ফল ক্রেতা কর্তৃক) সংগ্রহের আগে যা নষ্ট হয়,
তার মূল্য কর্তন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৮৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫৩৬, সুনান
আবূ দাঊদ ৩৩৭৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬২৭, আহমাদ ১৪৩২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অনেক
মানুষ বাজারে আগত খাদ্যদ্রব্য বাজারের সম্মুখে গিয়েই ক্রয় করে ফেলতো। অতঃপর এখানে বসেই
আবার এ মাল বিক্রি করতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শ্রেণীর ক্রেতাদেরকে
সেখান থেকে ঐ খাদ্যদ্রব্য (বিক্রয়ের সাধারণ জায়গায় সরিয়ে না) নিয়ে সেখানে বসেই বিক্রি
করতে নিষেধ করেছেন, (অর্থাৎ- যে স্থানে ক্রয় করেছে ঐ স্থানে বিক্রয় না করে অন্য স্থানে
বিক্রয় করা)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪৩, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৭৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১৫২৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪৯৪, সুনান আননাসায়ী ৪৬০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৯৯, ইসলামিক
সেন্টার ৩৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ [১] যারা বাজারে বিক্রি করার জন্য বাহির হতে খাদ্য-দ্রব্য নিয়ে আসে, তাদের
খাদ্য-দ্রব্য ক্রয়ের জন্য বাজারে পৌছার আগেই এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হবে না।
[২] আর ক্রয়-বিক্রয়ের কথা চলার সময় একজনের সাথে অন্য কেউ এ বিষয়ে কথা বলবে না। [৩]
ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে দালালী করবে না। [৪] গ্রামের লোকের পণ্য-সামগ্রী শহরের লোকজন বিক্রি
করে দেবার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে না। [৫] উট, ছাগলের (বিক্রয় করার আগে তার) স্তনে দু’
তিন দিনের দুধ জমা রেখে স্তনকে ফুলিয়ে রাখবে না। যদি কেউ এরূপ করে তখন ক্রয়কারীর জন্য
দুধ দোহনের পর সুযোগ থাকবে, ইচ্ছা করলে সে ক্রয়-বিক্রয় ঠিক রাখবে, আর ইচ্ছা করলে ক্রয়-বিক্রয়
ভঙ্গ করে তা ফেরত দিবে। তবে যদি ভঙ্গ করে (দুধ পানের জন্য) তাকে এক সা’ খুরমা সাথে
দিয়ে দিবে।
মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, যে লোক স্তন ফুলানো
বকরী ক্রয় করবে, তার জন্য তিনদিনের সুযোগ থাকবে। সে বকরী ফেরত দেয়, তবে এর সাথে এক
সা’ খাদ্যদ্রব্য ফেরত দিবে, অর্থাৎ- উত্তম গম দিতে সে বাধ্য নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৮৪৭, ২৮৪৮, ২৮৪৯, ২৮৫০, ২৮৫১, ২৮৫২,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২১৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৭২২, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫২৪, সুনান আননাসায়ী ৪৪৯৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪৪৩, আহমাদ ১০০০৪, সহীহ আল জামি
৭৪৪৯, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৮৮, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) মুর্তি কেনা বেঁচা করা যাবে নাঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন মক্কা বিজয়ের বৎসর, সেখানে অবস্থানকালে
আল্লাহ ও তাঁর রসূল মদ বিক্রি, মৃতজীব বিক্রি, শূকর বিক্রি, কোনো প্রকার মূর্তি বিক্রি
হারাম করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো,
হে আল্লাহর রসূল! মৃত জীবের চর্বি নৌকায় (বিভিন্ন চামড়াজাত দ্রব্যে) লাগানো হয় এবং
লোকেরা তা দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে থাকে, তা বিক্রি করা সম্পর্কে আপনার সিদ্ধান্ত কি? উত্তরে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা-ও বিক্রি করা যাবে না, এটাও হারাম।
অতঃপর এর সাথে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথাও বললেন, আল্লাহ তা’আলা
ইয়াহূদী জাতিকে ধ্বংস করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য যখন (হালাল যাবাহকৃত জীবেরও)
চর্বি হারাম করলেন, তখন তারা (অবাধ্য হয়ে কৌশল অবলম্বন করে) তা গলিয়ে বিক্রি করতে লাগলো
ও এর মূল্য ভোগ করতে থাকলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
২৭৬৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৯৪০, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৫৮১, সুনান আবূ দাঊদ ৩৪৮৬, সুনান আননাসায়ী ৪২৫৬, সুনান আততিরমিযী ১২৯৭, সুনান
ইবনু মাজাহ ২১৬৭, আহমাদ ১৪৪৯৫, ইরওয়া ১২৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯০৩, ইসলামিক সেন্টার
৩৯০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) পুরুষদের পায়ের গিটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে ও রেশমের কাপড় পরিধান করা যাবে
নাঃ
(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে নিজের পোশাক মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে,
আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ আবূ বকর (রাঃ) বললেন,
‘হে আল্লাহর রসূল! খেয়াল না করলে আমার লুঙ্গি ঢিলে হয়ে নেমে যায়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তাদের শ্রেণীভুক্ত নও, যারা তা অহংকারবশতঃ করে থাকে।’’
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬৬৫, ৫৭৮৩, ৫৭৮৪, ৫৭৯১,
৬০৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৪৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২০৮৫, তিরমিযী ১৭৩০, ১৭৩১, নাসায়ী ৫৩২৭, ৫৩২৮, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, সুনান আবূ দাউদ
৪০৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৬৯, আহমাদ ৪৪৭৫, ৪৫৫৩, ৪৬৬৯, ৪৭৫৯, ৪৮৬৯, ৪৯৯৪, ৫০১৮, ৫০৩০,
৫০৩৫, ৫১৫১, ৫১৬৬, ৫২২৬, ৫৩০৫, ৫৩১৮, ৫৩২৮, ৫৩৫৪, ৫৪১৬, ৫৪৩৭, ৫৫১০, মুওয়াত্তা মালেক
১৬৯৬, ১৬৯৮,রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি
(রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৭৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৮৭, আহমাদ
৮৭৭৮, ৮৯১০, ৯০৫০, ৯২৭০, ৯৫৪৫, ৯৮৫১, ১০১৬৩, ২৭২৫৩, মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৮, রিয়াদুস
সলেহীন-৭৯৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইযারের বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের
গোড়ালির নীচে থাকবে, সে অংশ জাহান্নামে যাবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮৭, নাসায়ী ৫৩৩০, ৫৩৩১ , আহমাদ ৭৪১৭, ৭৭৯৭, ৯০৬৪, ৯৬১৮, ১০১৭৭,
রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
(ঘ) আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না,
তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে
যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন।’ আবূ যার্র বললেন, ‘তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা
কারা? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে
পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি
করে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১২১১, নাসায়ী ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯,
৫৩৩৩, সুনান আবূ দাউদ ৪০৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২২০৮, আহমাদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০,
২১০৩৪, দারেমী ২৬০৫, রিয়াদুস সলেহীন-৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঙ) আবূ জুরাই জাবের ইবনে সুলাইম থেকে বর্ণিতঃ
আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যাঁর মতানুযায়ী লোকে কাজ করছে, তাঁর কথা তারা মেনে নিচ্ছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ লোকটি কে?’ লোকেরা বলল, ‘ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম।’ আমি তাঁকে ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ’ দু’বার বললাম। তিনি বললেন,
‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। ‘আলাইকাস সালাম’ তো মৃতদের জন্য অভিবাদন বাণী। তুমি বলো
‘আসসালামু আলাইকা।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আল্লাহর রসূল?’
তিনি বললেন, ‘‘আমি সেই আল্লাহর রসূল, যাঁকে কোনো বিপদের সময় যদি ডাকো, তাহলে তিনি তোমার
বিপদ দূর করে দেবেন। যদি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, তাহলে তিনি
তোমার জন্য যমীন থেকে ফসল উৎপাদন করবেন। কোন গাছপালা বিহীন জনশূন্য মরুভূমিতে তোমার
বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যদি তাঁর নিকট দো‘আ কর, তাহলে তিনি তোমার বাহন তোমার কাছে ফিরিয়ে
দেবেন।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে বিশেষ
উপদেশ দান করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কাউকে কখনো গালি-গালাজ করো না।’’ সুতরাং তারপর
থেকে আমি না কোন স্বাধীন-পরাধীন ব্যক্তিকে, না কোন উট আর না কোন ছাগলকে গালি দিয়েছি।
(দ্বিতীয় উপদেশ হচ্ছে এই যে,) ‘‘কোন পুণ্যকর্মকে
তুচ্ছ জ্ঞান করো না। নিঃসন্দেহে সহাস্য বদনে কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বাক্যালাপ
করা নেকীর কাজ। নিজ লুঙ্গি পায়ের অর্ধ রলা পর্যন্ত উঁচু রেখো। তা যদি মানতে না চাও,
তাহলে গাঁট পর্যন্ত ঝুলাতে পার। লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে দূরে থেকো। কেননা, এতে অহংকার
জন্মায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারকে পছন্দ করেন না। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় অথবা এমন
দোষ ধরে তোমাকে লজ্জা দেয়, যা তোমার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানে, তাহলে তুমি তার এমন
দোষ ধরে তাকে লজ্জা দিয়ো না, যা তার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানো। যেহেতু তার কুফল
তার উপরই বর্তাবে (তোমার উপর নয়)।’’ (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ৪০৮৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৭২১, আহমাদ ১৫৫২৫, রিয়াদুস সলেহীন-৮০০)।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস।
(চ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘মুসলিমের লুঙ্গি অর্ধ গোছা পর্যন্ত ঝুলানো উচিত। গাঁটের উপর পর্যন্ত ঝুললে
ক্ষতি নেই। যে অংশ লুঙ্গি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলবে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর
অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলিয়ে লুঙ্গি পরবে, তার দিকে আল্লাহ (করুণার
দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪০৯৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৫৭০, ৩৫৭৩, আহমাদ ১০৬২৭, ১০৬৪৫, ১০৮৬৩, ১১০০৪, ১১০৯৫, ১১৫১৫,
মুওয়াত্তা মালেক ১৬৯৯, রিয়াদুস সলেহীন-৮০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ছ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি স্বীয় লুঙ্গি (পায়ের গিরার নিচে) ঝুলিয়ে সালাত আদায় করছিল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ যাও, অযু করে আস। সে অযু করে এলে তিনি
আবার বললেনঃ যাও, অযু করে আস। সে পুনরায় অযু করে আসল। একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি
তাকে (অযু থাকাবস্থায় পুনরায়) অযু করতে কেন বললেন? তিনি বললেন, সে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে
সালাত আদায় করছিল। মহান আল্লাহ (পায়ের গিরার নিচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সালাত আদায়কারীর সালাত
কবুল করেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৬৩৮, আহমাদ
(৪/৬৭))। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
(জ) মু‘আয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিনয়বশতঃ তা পরিহার
করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা দেবেন, সে যেন
ঈমানের (অর্থাৎ ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য থেকে যে কোন জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান
করে।’’ (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৪৮১, আহমাদ ১৫২০৪,
রিয়াদুস সলেহীন-৮০৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
বর্তমানে আমরা দেখছি, নারীগণ পায়ের গিটের উপর
জামা পরিধান করছে আর পুরুষগণ পায়ের গিটের নীচে প্যান্ট পরিধান করছে। অথচ ইসলাম বলছে
এর উল্টোটা করতে হবে। যারা এসব করছে তারাও কিন্তু মুসলমান।
(১৪) বাম হাতে খাওয়া যাবে নাঃ
(ক) উমার ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি একজন বালক হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে
ছিলাম। আমার হাত খাওয়ার পাত্রের চতুর্দিকে পৌঁছত, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ ’বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে খাও এবং নিজের সম্মুখ হতে খাও।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৫৩৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২২, সুনান
আততিরমিযী ১৮৫৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৭৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৬৭, ইরওয়া ১৯৬৮, মালিক ৩৪৪৫,
মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৪৪, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৬৫৫৬, মুসনাদে আহমাদ
১৬৩৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫২১৫, ‘নাসায়ী’র আল কুবরা ১০১১, দারিমী ২০৪৫, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৮২২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কিছু খায়,
তখন সে যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে তখন যেন ডান হাতে পান করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫১৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২০, সুনান আততিরমিযী ১৮০০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৭৭৬, সুনানুন্
নাসায়ী আল কুবরা ৬৮৯০, মুসনাদে আহমাদ ৪৮৮৬, সহীহুল জামি‘৩৮৪, ৩৮৫; সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্
১২৩৬, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫৪১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৪৩৯, আস্ সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাম হাতে খাওয়া, সহজে হাত বের করা যায় না অথবা
অসতর্কতাবস্থায় লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এমনভাবে কাপড় পরিধান করা
হারাম।
(গ)কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....জাবির (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন লোকের বাম হাতে খাবার
খাওয়া, এক পায়ে জুতা পরিধান করে চলাফেরা করা, এক কাপড়ে সারা শরীরে জড়িয়ে রাখা
ও লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে- এক কাপড়ে গুটি মেরে উপবিষ্ট হতে বারণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৯২, ৫৩৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০৯৯,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩২১, ইসলামিক সেন্টার ৫৩৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমাদের কেউই যেন
বাম হাতে না খায় এবং সে (বাম) হাতে পানও না করে। কেননা শয়তান তার বাম হাতে খায় এবং
সে হাতে পানও করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৬৩, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২০,, আহমাদ ৬১৮৪, সহীহ আত্ তারগীব
ওয়াত্ তারহীব ২১১৩, আল আদাবুল মুফরাদ ১১৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৬৬, সহীহ তিরমিযী ১৮৭৬,
সহীহুল জামি‘ ৭৫৭৯, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৪১২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫৫৭৫, আল মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
সুন্নাহ না মানার পরিনতি
সালামাহ্ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক
লোক রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সম্মুখে বাম হাতে খাচ্ছিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি তোমার
ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি ডান হাতে খেতে পারি না। তিনি (সা.) বললেন, ডান হাতে খাওয়ার
সাধ্য তোমার না থাকে। আসলে সে অহংকারবশত ডান হাতে খাওয়া হতে বিরত রয়েছে। বর্ণনাকারী
বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সেই অভিশাপ বাক্যে সে আর কোনদিনই তার ডান হাত আপন মুখের
কাছে নিতে পারেনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯০৪, সহীহ:
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০২১, মুসান্নাফ ইবনু আবী
শায়বাহ ২৪৪৫, দারাকুত্বনী ৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৯৬, ইসলামিক সেন্টার ৫১০৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৫) মসজিদে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে যাওয়া যাবে নাঃ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জুমুআহর
দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে
প্রবেশ করলো। সে লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি বসো, তুমি (অন্যকে) কষ্ট দিয়েছ এবং অনর্থক কাজ করেছ।
(সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৫, তালীকুর রগীব ১/২৫৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার
শাস্তি
সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনের জামা‘আতে যে ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা
করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে জাহান্নামের ‘পুল’ বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮৬, সিলসিলাহ্
আস্ সহীহাহ্ ৩১২৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৪৩৭, য‘ঈফ আল জামি ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(১৬) কোনো মুসল্লীকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় বসা যাবে নাঃ
(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিনে মসজিদে গমন করে কোন
মুসলিম ভাইকে যেন তার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে নিজে না বসে। বরং সে বলতে পারে ভাই!
একটু জায়গা করে দিন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৬,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৫৮৯৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫০০, ইসলামিক সেন্টার ৫৫২৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সালাতের
সময়) কাউকে অপরজনকে তার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে বসতে নিষেধ করেছেন। নাফি‘কে
জিজ্ঞেস করা হলো, এটা কি শুধু জুমু‘আর সালাতের জন্য। উত্তরে তিনি বললেন, জুমু‘আর সালাত ও অন্যান্য সালাতেও। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৯১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৫৭৬-৫৫৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৬৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
খুতবা চলাকালে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির জন্য
নামায নিষিদ্ধ। কিন্তু এই সময়ে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তার জন্য হাল্কা করে ২ রাকআত
নামায পড়া বিধেয়। যেমন কাউকে নামায না পড়ে বসতে দেখলে খতীবের উচিৎ তাকে ঐ নামায পড়তে
আদেশ করা। খুতবা শোনা ওয়াজেব হলেও এ নামাযের গুরুত্ব দিয়েছেন খোদ মহানবী (সাঃ)।
(ক) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুতবাহ দানকালে সুলাইক আল-গাতাফানী মসজিদে
প্রবেশ করেন। তিনি বলেনঃ তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তুমি দু রাকআত
পড়ে নাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৯৩০-৩১, ১১৭০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩-১৯০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫, তিরমিযী ৫১০,
নাসায়ী ১৩৯৫, ১৪০৯; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৫-১৬, আহমাদ ১৩৭৫৯, ১৩৮৯৭, ১৩৯৯৬,
১৪৫৪২, ১৪৬৪৯; দারিমী ১৫৫১, ১৫৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবাহ দানকালে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলো। তিনি
বলেনঃ তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তুমি দু রাকআত পড়ে নাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১১,
নাসায়ী ১৪০৮, দারিমী ১৫৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অতঃপর তিনি সকলের জন্য চিরস্থায়ী একটি বিধান
দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেন,
(গ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ দেয়ার সময় বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন
ইমামের খুতবাহ্ চলাকালে মসজিদে উপস্থিত হলে সে যেন সংক্ষেপে দু’ রাক্‘আত (নফল) সালাত আদায় করে নেয়। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭৫,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১১৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৩৫, ইবনু
হিব্বান ২৫০০, আহমাদ ১৪৪০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু আবু সারহ (রাঃ) হতে বর্ণিত
আছে, আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জুমুআর দিন (মসজিদে) ঢুকলেন। মারওয়ান তখন খুতবা দিচ্ছিল।
তিনি নামায আদায় করতে দাড়ালেন। মারওয়ানের চৌকিদার তাকে বসিয়ে দেওয়ার (নামায হতে
বিরত রাখার) জন্য আসল। কিন্তু তিনি তা মানলেন না এবং নামায আদায় করলেন। তিনি অবসর
হলে আমরা তার নিকট আসলাম। আমরা বললাম, আল্লাহ তা'আলা আপনার উপর দয়া করুন, তারা আপনাকে
পরাজিত করার জন্য এসেছিল। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
এটা করতে দেখেছি। এরপর আমি এ দুই রাকাআত কখনও ছাড়তে পারি না। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন,
জুমু'আর দিন এক ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে উস্ক খুস্ক অবস্থায় মসজিদে আসল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন জুমু'আর খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলে সে দুই রাকাআত
নামায আদায় করল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে থাকলেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১১)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
বলা বাহুল্য, খুতবা শুরু হলে লাল বাতি জ্বেলে
দেওয়া, অথবা কাউকে ঐ ২ রাকআত নামায পড়তে দেখে চোখ লাল করা, অথবা তার জামা ধরে টান দেওয়া,
অথবা খোদ খতীব সাহেবের মানা করা সুন্নাহ্-বিরোধী তথা বিদআত কাজ।
জুমআর আযানের সময় মসজিদে এলে দাঁড়িয়ে থেকে
আযানের উত্তর না দিয়ে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ে খুতবা শোনার জন্য বসে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।
(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৩৫, ৩৪৯)।
প্রকাশ থাকে যে, আযানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব।
(তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ৩৪০পৃ:)।
আর খুতবা শোনা ওয়াজেব। সুতরাং আযানের সময় পার
করে খুতবা শুরু হলে নামায পড়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ওয়াজেব না হলেও
ঐ সময় মহানবী (সাঃ)-এর মহা আদেশ পালন করা জরুরী।
ইমামের দিকে চেহারা করে বসা মুস্তাহাব। হযরত
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূল (সাঃ) যখন মিম্বরে চড়তেন, তখন আমরা
আমাদের চেহারা তাঁর দিকে ফিরিয়ে বসতাম।’ (সূনান আত তিরমিজী
(তাহকীককৃত) ৫০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পরিধানে লুঙ্গি বা লুঙ্গি জাতীয় এক কাপড় পরে খুতবা চলাকালে বসার সময় উভয়
হাঁটুকে খাড়া করে রানের সাথে লাগিয়ে উভয় পা-কে দুইহাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে অথবা কাপড় দ্বারা
বেঁধে বসা বৈধ নয়
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ)বর্ণিত। তিনি
বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে
দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯৩, আবূ দাঊদ ১১১০, আত্ তিরমিযী ৫১৪, আহমাদ ১৫৬৩০, ইবনু খুযায়মাহ্
১৮১৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৯১২, শারহুস্ সুন্নাহ্
১০৮২, সহীহ আল জামি ৬৮৭৬, আহমাদ (৩/৪৩৯), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৮১৫)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
কারণ, এতে শরমগাহ্ প্রকাশ পাওয়ার, চট করে
ঘুম চলে আসার এবং তাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই।
খুতবা শোনা ওয়াজেব। আর এ সময় সকল প্রকার কথাবার্তা,
সালাম ও সালামের উত্তর, হাঁচির হামদের জবাব, এমনকি আপত্তিকর কাজে বাধা দেওয়াও নিষিদ্ধ।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমামের খুত্ববাহ চলাকালে যদি তুমি কাউকে বলো চুপ করো, তবে
তুমি অনর্থক কাজ করলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৮৫,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৪, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১১১২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১২, নাসায়ী
১৪০২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৫৪১৬, ইবনু হিব্বান ২৭৯৩,
শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮০, ইরওয়া ৬১৯, সহীহ আত্ তারগীব ৭১৬, আহমাদ ৭২৮৮, ৭৬২৯, ৭৭০৬, ৮৮৫৭,
৮৯০২, ৯৯২৭, ১০৩৪২, ১০৫০৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩২, দারিমী ১৫৪৮-৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(১৭) স্বামীকে কষ্ট দেয়া যাবে নাঃ
মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট
দেয়, তখন জান্নাতে তার আয়তালোচনা হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকেঃ ওহে! আল্লাহ্ তোমার সর্বনাশ
করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার নিকট অল্প দিনের মেহমান। অচিরেই সে তোমাকে
ত্যাগ করে আমাদের নিকট চলে আসবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২০১৪,
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৪, সহীহা ১৭৩, আদাবুল যিফাফ ১৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৮) মহিলাদের বেপর্দায় চলাফেরা করা যাবে নাঃ
মহিলাদের বেপর্দা চলন ও নগ্নতা ব্যভিচার ও
ধর্ষণের এটি একটি বড় কারণ। ছিলা কলাতে মাছি বসা স্বাভাবিক। ছিলা লেবু বা খোলা তেঁতুল
দেখলে জিভে পানি আসা মানুষের প্রকৃতিগত ব্যাপার। অনুরূপ পর্দা-হীনা, অর্ধ নগ্না ও প্রায়
পূর্ণ নগ্না যুবতী দেখলে যুবকের মনে কাম উত্তেজিত হওয়াও স্বাভাবিক। আর এ জন্যই ইসলামে
পর্দার বিধান অনুসরণ করা মহিলার উপর ফরয করা হয়েছে। নারীকে তার সৌন্দর্য বেগানা পুরুষকে
প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে। (সূরা নূর, আয়াত: ৩১)।
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে
বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (সূনান
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১১৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৩১০৯, সহীহ আল জামি ৬৬৯০, ইরওয়া (২৭৩), তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা ১৬৮৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উম্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম এবং তাঁর নিকট মাইমূনাহ
(রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) (অন্ধ সাহাবী) এলেন। ঘটনাটি আমাদের উপর
পর্দার হুকুম নাযিলের পরের। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তার
থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে
ও চিনতে পারছে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদিও সে অন্ধ কিন্তু
তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছো না?
ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ বিধান নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট। তুমি কি ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়িতে
ফাতিমাহ বিনতু কায়িস (রাঃ)-এর ইদ্দত পালনের বিষয়টি লক্ষ করো না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ফাতিমাহ বিনতু কায়িস (রাঃ)-কে বলেছেনঃ ‘‘তুমি ইবনু উম্মু মাকতূমের বাড়িতে
ইদ্দত পালন করো। কারণ সে অন্ধ লোক। তুমি সেখানে খোলামেলা পোশাকে থাকতে পারবে।’’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১১২)।
উক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, পর্দা
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। কোন পুরুষ যেমন কোন পর নারীর প্রতি তাকাতে পারবে না, কোন
নারীও তেমনি কোন পর পুরুষের দিকে তাকাতে পারবে না। এখানে সু-দৃষ্টি আর কু-দৃষ্টিরও
কোন পার্থক্য নেই। কারন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম যেমন একজন
পূত পবিত্র স্বভাবের অধিকারী, পূন্যবান মহান বুযুর্গ সাহাবী; অপরদিকে হযরত উম্মে সালামা
(রাঃ) (রাঃ) ও মাইমূনা (রাঃ) উভয়ই হলেন উম্মত-জননী এবং প্রিয়তম নবী (সঃ) এর জীবন
সঙ্গিনী । সুতরাং, এ ক্ষেত্রে কু-দৃষ্টির কথা চিন্তাই করা যায় না । তারপরও পর্দা করতে
আদেশ করা হয়েছে । কাজেই সহজেই অনুমেয় যে, পর্দা কত গুরুত্বপূর্ন বিষয় এবং তা পালন
করা কত জরুরী ।
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আসমা বিনতু
আবূ বাকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে
বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন সাবালিকা হয় তখন এই দু’টো অঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রকাশ
করা তার জন্য সংগত নয়, এ বলে তিনি তাঁর চেহারা ও দু’ হাতের কব্জির দিকে ইশারা করেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
এখানে বেগানা পরপুরুষের কথা উল্লেখ নাই । সুতরাং
গৃহে অবস্থানকালে যদি পরপুরুষ না থাকে তাহলে সেখানে মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখায়
সমস্যা নেই ।
কিন্তু অন্য বর্ননায় বেগানা পরপুরুষের সামনে
মেয়েদের মুখমন্ডল ও হাতের কব্জি খোলা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া - ৪/১০৬, কিফায়াতুল মুফতী - ৫/৩৮৮)।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
হযরত কায়স ইবনে শামমাস (রাঃ) বর্ননা করেন,
এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর দরবারে এলো। তাকে উম্মে খাল্লাদ বলে ডাকা হত । তার মুখ
ছিল নেকাবে ঢাকা । সে আল্লাহর পথে তার শহীদ পুত্র সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট
জানতে এসেছিল । তখন তাকে এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার পুত্র সম্পর্কে জানতে
এসেছ, আর মুখে নেকাব । হযরত উম্মে খাল্লাদ (রাঃ) তাকে উত্তরে বললেন, আমি আমার ছেলেকে
হারিয়ে এক বিপদে পড়েছি, এখন লজ্জা হারিয়ে তথা মুখমন্ডলসহ গোটা শরীর পর্দা না করে
কি আরেক বিপদে পড়ব ? (আবু দাউদ - ১/৩৩৭)।
উপরোক্ত হাদীস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
মেয়েদের পর্দা তথা মোটা ও ঢিলাঢালা কাপড় দ্বারা চেহারাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা জরুরী।
পরপুরুষকে শরীরের কোন অংশ তারা দেখাতে পারবে না ।
হযরত বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ
(সঃ) বলেন, হে আলী ! তুমি হঠাত্ কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পড়ার পর দ্বিতীয়বার ইচ্ছা
করে তাকাবে না। কারন প্রথমবার অনিচ্ছাকৃত তাকানো তোমার জন্য মাফ হলেও দ্বিতীয়বার ইচ্ছাকৃত
তাকানো মাফ নয়। (আবু দাউদ শরীফ-১/২৯২)
বর্তমান যুগের মেয়েরা ওড়নাবিহীন অবস্থায় চলাফেরা
করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকে ওড়না গলায় ঝুলিয়ে বেড়ায়।আবার অনেকে এমন টাইট জামা পরিধান
করে যা বাহিরে থেকে সেই মেয়ের পুরো বডি মাপা যায়। এমন পোশাক পরেও মেয়েরা উলঙ্গ। রাসুল
সাঃ বলেন,
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি
(এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে: (১) এমন এক সম্প্রদায়
যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক
শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে)
নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও
পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪৭৫-৫৪৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২১২৮, আহমাদ ৮৪৫১, ৯৩৩৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার ৫৪১৯ )। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
বাসা থেকে বের হলেই বেপর্দায় চলাফেরা করা হাজার
হাজার নারী দেখা যায়। আমাদের দেশে যারা চলাফেরা করে তারা কি অন্য ধর্মের লোক? যাদেরকে
আমরা দেখছি তাদের ৯৮%ই মুসলিম নারী।
(১৯) মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহার করে বাহিরে যাওয়া যাবে নাঃ
আজকাল আতর, সেন্ট ইত্যাদি নানা প্রকার সুগন্ধি
মেখে নারীরা ঘরে-বাইরে পুরুষদের মাঝে চলাফেরা করছে। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী।
আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৬৫, আত্ তিরমিযী ২৭৮৬, আবূ দাঊদ
৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু হিব্বান
৪৪২৪)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
অনেক মহিলা তো এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন কিংবা
তারা বিষয়টিকে লঘুভাবে গ্রহণ করছে। তারা সেজেগুজে সুগন্ধি মেখে ড্রাইভারের সাথে গাড়ীতে
উঠছে, দোকানে যাচ্ছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে; কিন্তু শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞার দিকে বিন্দুমাত্র
ভ্রুক্ষেপ করছে না। নারীদের বাইরে গমনকালে শরী‘আত এমন কঠোরতা আরোপ করেছে যে, তারা সুগন্ধি
মেখে থাকলে নাপাকী হেতু ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করতে হবে। এমনকি যদি মসজিদে যায় তবুও।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে মহিলা গায়ে সুগন্ধি মেখে মসজিদের দিকে
বের হয় এজন্য যে, তার সুবাস পাওয়া যাবে, তাহলে তার সালাত তদবধি গৃহীত হবে না যে পর্যন্ত
না সে নাপাকীর নিমিত্ত ফরয গোসলের ন্যায় গোসল করে”। (মুসনাদে
আহমদ ২/৪৪৪; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ২৭০৩)।
বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, যানবাহনাদিতে,
নানা ধরনের মানুষের সমাবেশে, এমনকি রমযানের রাতে মসজিদে আসার সময় তথা সর্বত্র মহিলারা
যে সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী আতর, সেন্ট, আগর, ধূনা, চন্দনকাঠ ইত্যাদি নিয়ে যাতায়াত করছে
তার বিরুদ্ধে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সকল অভিযোগ। অথচ শরী‘আত তো শুধু মহিলাদের জন্য
সে আতরের অনুমোদন দিয়েছে যার রঙ হবে প্রকাশিত পক্ষান্তরে গন্ধ হবে অপ্রকাশিত। আল্লাহর
নিকট আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ না হন। অপগণ্ড নর-নারীর কাজের
জন্য সৎ লোকদের পাকড়াও না করেন এবং সবাইকে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করেন।
(২০) অন্যের লজ্জা স্থানের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে নাঃ
আবূ
বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ)....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে
না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে
এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের
নীচে ঘুমাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৬৫৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬৭৪, আহমাদ ১১২০৭) , রিয়াদুস সলেহীহ-১৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
"কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের
নিচে ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না।" এর
দ্বারা উদ্দেশ্য উভয়ের উলঙ্গ অবস্থায় যখন শরীরে কোন প্রকার কাপড় থাকবে না। (নবাবী)।
(২১) দাঁড়িয়ে জুতা পরা, এক পায়ে জুতা ও মোজা পরিধান করে হাঁটা যাবে নাঃ
(ক) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন। (হাদীস সম্ভার ৩৩৪৯)।
(খ) জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তা
ঠিক না করা পর্যন্ত সে অপর জুতাটি পায়ে দিয়ে হাটবে না, আর এক মোজা পরিধান করেও চলবে
না এবং বাম হাতে খাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৪১৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে।
হয় দু’পা-ইখোলা রাখবে অথবা দু’ পায়ে পরবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৩৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
২০৯৭, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২২) কোনো নারী স্বামী ব্যতীত অন্য
কারোর জন্য সাজসজ্জা করা যাবে নাঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে (১) এবং প্রাচীন
জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। আর তোমরা সালাত কায়েম
কর, যাকাত প্ৰদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত থাক। (২) হে নবী-পরিবার!(৩) আল্লাহ
তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে”।
(সুরা আহজাব ৩৩)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “আর মুমিন নারীদেরকে
বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; আর তারা
তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্ৰকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা
ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর,
পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন
দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক
ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের
উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে
তোমরা সফলকাম হতে পার”। (সুরা আননূর ২৪/৩১)।
(২৩) কোনো প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে নাঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং
বলেন, ‘তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে।
‘অতঃপর আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে
পাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০১৬, ২৯৫৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২৪) কারো মুখমণ্ডলে আঘাত করা যাবে নাঃ
জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কোন পশুর) মুখমণ্ডলে আঘাত করতে এবং
চেহারায় দাগ দিতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
৪০৭৭, সহীহ মুসলিম ৫৪৭২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২২৯৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্
০৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৭০, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী
৫৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মুখমণ্ডলে আঘাতের বিষয়টি কিছু মাতা-পিতা ও
শিক্ষকদের থেকে বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা সন্তানদের বা ছাত্রদের শাসন করার জন্য
হাত কিংবা অন্য কিছু দ্বারা মুখমণ্ডলে মেরে থাকে। অনেকে বাড়ীর চাকরদের সাথে এরূপ করে
থাকে। এতে আল্লাহ তা”আলা যে চেহারার বদৌলতে মানুষকে সম্মানিত করেছেন তাকে অমর্যাদা
করার সাথে সাথে অনেক সময় মুখমণ্ডলের কোনো একটি ইন্দ্রিয় অকেজো হয়ে পড়তে পারে। ফলে অনুশোচনা
ছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে কিসাস দেওয়া লাগতে পারে।পশুর মুখমণ্ডলে দাগ দেওয়া কাজটি পশু মালিকদের
সাথে জড়িত। তারা স্ব স্ব পশু চেনা ও হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার জন্য পশুগুলোর মুখে দাগ
দিয়ে থাকে। এটা হারাম। এতে পশুর চেহারা ক্ষত করা ছাড়াও তাকে কষ্ট দেওয়া হয়। কেউ যদি
দাবী করে যে, এরূপ দাগ দেওয়া তাদের গোত্রের একটি রীতি এবং গোত্রের বিশেষ চিহ্ন, তাহলে
এটুকু করার অবকাশ থাকতে পারে যে শরীরের অন্য কোথাও দাগ বা কোনো চিহ্ন দিবে; মুখমণ্ডলে
নয়।
(২৫) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে
কসম করা যাবে নাঃ
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যার
নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা
জায়েয নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত
হয়। কসম মূলতঃ এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ইবনু উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের বাপ-দাদার নামে
কসম করতে নিষেধ করেছেন। অতএব যদি কারো কসম করতেই হয়, সে যেন আল্লাহ তা’আলার নামেই কসম
করে অথবা নিশ্চুপ থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪০৭,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৪৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১৪৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১৬৪৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩২৪৯, সুনান আততিরমিযী ১৫৩৪, আহমাদ ৬২৮৮, দারিমী ২৩৮৬,
ইরওয়া ২৫৬০, সহীহ আত্ তারগীব ২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১১১, ইসলামিক সেন্টার ৪১০৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত আরেকটি
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করল, সে শির্ক
(অংশী স্থাপন) করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪১৯,
সুনান আততিরমিযী ১৫৩৫, সুনান আবূ দাঊদ ৩২৫১, ইরওয়া ২৫৬১, সহীহাহ্ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘
৬২০৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ’আমানত’ শব্দের দ্বারা কসম করল, সে আমাদের দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪২০, সুনানআবূ দাঊদ ৩২৫৩, আহমাদ ২২৯৮০, সহীহাহ্ ৯৪, সহীহ আল জামি ৬২০৩, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং কা‘বা, আমানত, মর্যাদা, সাহায্য, অমুকের
বরকত, অমুকের জীবন, নবীর মর্যাদা, অলীর মর্যাদা, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাথা ইত্যাদি
দিয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ।
কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করে
তবে তার কাফ্ফারা হলো ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পাঠ করা। যেমন, সহীহ হাদীসে এসেছে:
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কসমের মধ্যে ’লাত’ ও ’উযযা’
(প্রতীমা)-এর নাম বলে ফেলে, সে যেন তাৎক্ষণিকভাবে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থাৎ-
আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো ইলাহ নেই) বলে। আর কেউ যদি তার সঙ্গী-সাথীকে এ বলে আহবান
করে যে, ’আসো, আমরা জুয়া খেলি’, সে যেন অবশ্যই সাদাকা করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৪০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬৫০, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৪১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪৭, সুনান ইবনু মাজাহ ২০৯৬, সুনান আবূ
দাঊদ ৩২৪৭, সুনান আননাসায়ী ৩৭৭৫, সুনান আততিরমিযী
১৫৪৫, আহমাদ ৮০৮৭, ইরওয়া ২৫৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪১১৪, ইসলামিক সেন্টার ৪১১২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih।
উল্লিখিত অবৈধ শপথের ধাঁচে কিছু শির্কী ও হারাম
কথা কতিপয় মুসলিমের মুখে উচ্চারিত হতে শোনা যায়। যেমন, বলা হয় ‘আমি আল্লাহ ও আপনার
আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। ‘আল্লাহ আর আপনার ওপরই ভরসা’। ‘এটা আল্লাহ ও তোমার পক্ষ থেকে
হয়েছে’। ‘আল্লাহ ও আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই’। ‘আমার জন্য উপরে আল্লাহ আর নিচে আপনি
আছেন’। ‘আল্লাহ ও অমুক যদি না থাকত’। ‘‘আমি ইসলাম থেকে মুক্ত বা ইসলামের ধার ধারি না’।
‘হায় কালের চক্র, আমার সব শেষ করে দিল’। ‘এখন আমার দুঃসময় চলছে’। ‘এ সময়টা অলক্ষণে’।
‘সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সময়কে গালি দিলে সময়ের স্রষ্টা আল্লাহকেই
গালি দেওয়া হয় বলে হাদীসে কুদসীতে এসেছে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, মানুষ কালকে গালি
দেয়, অথচ আমিই কাল, (এর নিয়ন্ত্রণের মালিক)। একমাত্র আমারই হাতে রাত ও দিনের পরিবর্তন
ঘটে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬১৮১, ৪৮২৬; সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৭৫৫-৫৭৫৯, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ২২৪৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সুতরাং সময়কে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে প্রকৃতি যা চেয়েছে বলাও একই পর্যায়ভুক্ত। অনুরূপভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে দাসত্ব বা দাস
অর্থবোধক শব্দ ব্যবহারও এ পর্যায়ে পড়ে। যেমন আব্দুল মসীহ, আবদুর রাসূল, আবদুন নবী,
আবদুল হুসাইন ইত্যাদি।
আধুনিক কিছু শব্দ ও পরিভাষাও রয়েছে যা তাওহীদের
পরিপন্থী। যেমন, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী গণতন্ত্র, জনগণের ইচ্ছাই আল্লাহর ইচ্ছা,
দীন আল্লাহর আর দেশ সকল মানুষের, আরব্য জাতীয়তাবাদের নামে শপথ, বিপ্লবের নামে শপথ করে
বলছি ইত্যাদি।
কোনো রাজা-বাদশাহকে ‘শাহানশাহ’ বা ‘রাজাধিরাজ’
বলাও হারাম। একইভাবে কোনো মানুষকে ‘কাযীউল কুযাত’ বা ‘বিচারকদের উপরস্থ বিচারক’ বলা
যাবে না।
অনুরূপভাবে কোনো কাফির বা মুনাফিকের ক্ষেত্রে
সম্মানসূচক ‘সাইয়িদ’ তথা ‘জনাব’ বা অন্য ভাষার অনুরূপ কোনো শব্দ ব্যবহার করাও সিদ্ধ
নয়।
আফসোস, অনুশোচনা ও বিরাগ প্রকাশের জন্য ‘যদি’
ব্যবহার করে বলা (যেমন এটা বলা যে, ‘যদি এটা করতাম তাহলে ওটা হত না’), কারণ, এমন কথা
বললে শয়তানের খপ্পরে পড়ে যেতে হয়। অনুরূপ ‘হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করো’
এ জাতীয় কথা বলাও বৈধ নয়।
সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা দুনিয়ার
মোহে পড়ে প্রতি মুহূর্তে অনেক পাপ কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে নিষেধ করলেও শুনছি না। কিছু
পাপ কাজ আছে যার পরিনতি হয়তো দুনিয়ায় ভোগ করতে হয় না কিন্তু মৃত্যুর পর ঠিকই তো পাকড়াও
করা হবে। তাই শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে আমাদেরকে ইসলামি পন্থায় চলতে হবে, ইসলামের আদেশ
নিষেধ মানতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সবাইকে ইসলাম বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
...........................................................................................
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন।
(PMMRC)
Please Share On
No comments:
Post a Comment