Saturday, May 21, 2022

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (১৩তম পর্ব)

 কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর

(১৩তম পর্ব)

(জুলাই-২০২১ থেকে ডিসেম্বর-২০২২)

(মোট ২৪০টি প্রশ্নোত্তর)

 প্রশ্ন (১) : দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব কি? কারণ হাদীছে বর্ণিত আছে, উবাই বিন কা‘ব আল্লাহকে দেখেছিলেন।

উত্তর : মানব চক্ষু দ্বারা দুনিয়ায় আল্লাহকে দর্শন করা অসম্ভব। তবে মুমিনগণ পরকালে জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পাবেন। দুনিয়াতেই আল্লাহ্কে দর্শন করা বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থীদের ভ্রান্ত দাবী। যার পক্ষে কোন দলীল নেই। এটি আল্লাহর শানের খেলাফ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৩৮১-৮২)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মৃত্যুর পূর্বে কখনো তোমাদের রবকে দেখতে পাবে না (হাকেম হা/৮৬২০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩১২)। এক্ষণে উবাই বিন কা‘বের আল্লাহকে দেখা সংক্রান্ত হাদীছটির অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। হাদীছাংশটুকুর অর্থ হ’ল-উবাই বিন কা‘ব বলেন, দু’জন ছাহাবী দুই ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করলে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করা হ’ল। তিনি উভয়ের ক্বিরাআতকে সঠিক বললেন। এ কথা শুনে আমার মনে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি এমন এক সন্দেহের জন্ম দিল, যা জাহেলিয়াতের সময়েও আমার মধ্যে ছিল না। সন্দেহের ছায়া আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে লক্ষ্য করে তিনি আমার সিনার উপর হাত রাখলেন। এতে আমি ঘামে ভিজে গেলাম। আর আমি এতই ভীত হ’লাম, যেন আমি আল্লাহকে দেখছি (মুসলিম হা/৮২০; মিশকাত হা/২২১৩)। এর ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, ভয়ে আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যেন আমি আমার কৃত অপরাধের বিচারের জন্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়েছি (মিরক্বাত ৪/১৫১১)। ত্বীবী বলেন, উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) ছিলেন উঁচু দরের ছাহাবী ও দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত। আসলে তাদের দু’জনের ভিন্ন ক্বিরাআতকে শুদ্ধ বলায় উবাই-এর অন্তরে শয়তানের খটকা সৃষ্টি হয়েছিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর হাত মারার বরকতে তার ভয়-ভীতি ঘামের সাথে বের হয়ে গেল। তিনি দৃঢ় বিশ্বাসী হ’লেন। এ সময় তিনি যেন শয়তানী কুমন্ত্রণার কারণে লজ্জিত হয়ে ভয়ে আল্লাহর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন (মিরক্বাত ৪/১৫১১)। হাদীছে উল্লিখিত كَأَنَّ শব্দটি দু’টি অর্থ প্রদান করে। প্রথমতঃ এটি সন্দেহ ও ধারণার ফায়েদা দেয়। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) থেকে সন্দেহ দূর হয় এবং তাঁর ঈমান মযবূত হয়। তাতে তিনি বলে ফেলেন যে, আমি যেন আল্লাহকে দেখছি। দ্বিতীয়তঃ এটি নৈকট্যের ফায়েদা দেয়। অর্থাৎ তাঁর সন্দেহ এমনভাবে দূর হয়েছিল যে, তিনি যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছেন। সুতরাং অত্র হাদীছ থেকে ভ্রান্ত ছূফীদের দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখার পক্ষে কোন দলীল নেই। বরং তারা শয়তানকে দেখে। আর তাকেই আল্লাহ মনে করে বিভ্রান্ত হয়।

প্রশ্ন (২) : ইভ্যালী, আলিশা মার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স সাইটের ব্যবসার ধরণ কি ইসলামী শরী‘আত মোতাবেক বৈধ?

উত্তর : ইভ্যালী, আলিশা মার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স সাইট অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের আধুনিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে ৪৫ দিন বা নির্দিষ্ট মেয়াদে পণ্য সরবরাহের চুক্তিতে অগ্রিম টাকা জমা দিতে হয় এবং বিনিময়ে বাযারমূল্য থেকে বিশাল অংকের লোভনীয় ছাড় দেওয়া হয়। আর নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে পণ্যের বাযার মূল্যের সমপরিমাণ চেক রিটার্ণ দেওয়া হয় (যদিও সেই অর্থ ইভ্যালী বা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যত্র ব্যবহারযোগ্য নয়)। ফলে ক্রেতা খুব সহজেই প্রলুব্ধ হয় এই ধারণায় যে, পণ্য পেলেও লাভ, না পেলেও লাভ।

তাদের ব্যবসা পর্যালোচনা করলে কয়েকটি বড় ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। (১) বায়‘এ গারার বা অস্পষ্ট ক্রয়-বিক্রয় : কেননা এর পরিণতি অনিশ্চিত। ক্রেতা জানেনা যে, শেষ পর্যন্ত সে পণ্যটি পাবে কি-না। এধরনের অস্পষ্ট শর্ত বা চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) কংকর নিক্ষেপ করে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং গারার বা ধোঁকাযুক্ত লেনদেন থেকে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৩৬৯১)। (২) হস্তগত হওয়ার পূর্বেই অগ্রিম পণ্য বিক্রয় : তারা এমন পণ্যের অর্ডার গ্রহণ করে, যা তাদের হস্তগত হয়নি বা আয়ত্বে নেই। হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ রাসূল! আমার নিকট এসে কোন লোক এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার নিকট নেই। আমি এভাবে বিক্রয় করতে পারি কি যে, তা বাযার থেকে ক্রয় করে এনে তাকে দিব? তিনি বলেন, যা তোমার অধিকারে নেই তা তুমি বিক্রয় করো না (আবুদাউদ হা/৩৫০৩; মিশকাত হা/২৮৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২০৬)।

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাদ্য-দ্রব্য (খরীদ করে) পুরোপুরি আয়ত্বে না এনে তা বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। রাবী ত্বাঊস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, যেমন দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম আদান-প্রদান করা হয়। অথচ পণ্যদ্রব্য অনুপস্থিত থাকে (বুখারী হা/২১৩২; মুসলিম হা/১৫২৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এটিকে দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয় বলার কারণ হ’ল, বিক্রেতা পণ্যটি নিজ আয়ত্বে নেওয়ার পূর্বেই তা বিক্রয় করে। বরং পণ্য দিতে বিলম্ব করে। ফলে এটি দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বিক্রয়ের সমতুল্য। অর্থাৎ বিক্রেতা যেন পণ্য হাতে না পেয়েই ১০০ টাকার পণ্য কিনে পরে ১২০ টাকায় বিক্রয় করল (ফাৎহুল বারী ৪/৩৪৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, বর্ণনাকারী ত্বাঊস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাসের  নিকট  জিজ্ঞেস  করলাম,  এর  কারণ কি? তিনি বললেন, তুমি কি লক্ষ্য করোনি যে, লোকজন স্বর্ণ ও খাদ্যদ্রব্য বাকীতে ক্রয় করে? (মুসলিম হা/১৫২৫)।

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি বাযারে গিয়ে যায়তূন কিনলাম। তা আমার হস্তগত হ’লে এক ব্যক্তি এসে আমাকে এর একটা ভালো মুনাফা দিতে চাইল। আমি তাকে যায়তূন প্রদানের ইচ্ছা করলে পিছন থেকে একজন এসে আমার বাহু ধরলেন। তাকিয়ে দেখি, যায়েদ ইবনু ছাবেত (রাঃ)। তিনি বললেন, যেখান থেকে কিনেছেন সেখানে বিক্রি করবেন না। আপনার স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করুন। কারণ রাসূল (ছাঃ) ব্যবসায়ীদেরকে পণ্যদ্রব্য ক্রয়ের পর নিজের স্থানে নিয়ে যাওয়ার আগে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/৩৪৯৯; হাকেম হা/২২৭১, সনদ ছহীহ)।

(৩) ক্বিমার বা লটারী : অস্বাভাবিক প্রলোভন দেখানোর পর এতে অল্প কিছু সংখ্যক ক্রেতার নিকট পণ্য পাঠানো হয় এবং এতে সে ব্যাপক লাভবান হয়। কিন্তু অপরদিকে অসংখ্য ক্রেতা পণ্য প্রাপ্তির মিথ্যা আশায় বসে থাকে এবং পরে বঞ্চিত হয়। যা ক্বিমার বা জুয়ার মত সুস্পষ্ট প্রতারণা (৪) সূদ : এতে বঞ্চিত ক্রেতাদেরকে মূল টাকার উপর অতিরিক্ত এমনকি শতভাগেরও বেশী ক্যাশব্যাক দেওয়া হয়। এটি একদিকে কেনাবেচার কোন শর্তের মধ্যেই পড়ে না। উপরন্তু অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের কারণে তা সম্পূর্ণ সূদে পরিণত হয়। (৫) যুলুম : এই অতিরিক্ত টাকা গ্রাহকের হাতে সরাসরি না দিয়ে তাদেরকে কোম্পানীর অন্যান্য পণ্য ক্রয় করার জন্য বাধ্য করা হয়, যা যুলুম। (৬) ফটকাবাজারী : এই ব্যবসা বাযারে অপ্রকৃত মূল্যের মাধ্যমে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা তৈরী করে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে ঠেলে দেয়। সুতরাং এ ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসা ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না। অতএব এরূপ ব্যবসা নিজে করা যাবে না এবং এতে অংশগ্রহণও করা যাবে না।

প্রশ্ন (৩) : গণিকাবৃত্তির মাধ্যমে জনৈক মহিলা পরিবার পরিচালনা করতেন। এখন তিনি তওবা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। এক্ষণে তার অবৈধ কর্মে উপার্জিত অর্থে ক্রয়কৃত আসবাবপত্র, জমি-জমা ভোগ করা বৈধ হবে কি?

উত্তর : অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ যা ব্যয় করে ফেলেছে, তার জন্য কোন কাফ্ফারা নেই। আর অবশিষ্ট সম্পদ থেকে তার জীবন ধারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু রেখে বাকী সম্পদ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিবে। সাথে সাথে খালেছ নিয়তে তওবা করবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৮; ইবনুল কবাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৩৯৩)।

প্রশ্ন (৪) : স্ত্রীর উপস্থিতিতে তার আপন ভাগ্নীকে বিয়ে করা যাবে কি?

উত্তর : স্ত্রীর উপস্থিতিতে তার ভাগ্নী বা বোনের মেয়েকে বিবাহ করা যাবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন নারীকে তার ফুফু বা খালার সাথে বিবাহে একত্রিত করা যাবে না’ (বুখারী হা/৫১৯০; মুসলিম হা/১৪০৮; মিশকাত হা/৩১৬০)। অন্যত্র তিনি বলেন, ভাতিজীর সাথে তার ফুফুকে বিবাহ করা যাবে না। অনুরূপভাবে খালার সাথে ভাগ্নিকে বিবাহ করা যাবে না (মুসলিম হা/১৪০৮ (৩৫)। অতএব দুই মাহরামকে একত্রে স্ত্রী হিসাবে রাখা যাবে না।

প্রশ্ন (৫) : রাস্তার পাশে অবস্থিত গাছে সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবারের ফেস্টুন টাঙানো যাবে কী?

উত্তর : তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর ও এ জাতীয় দো‘আগুলি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। এগুলি পাঠে প্রভূত নেকী অর্জিত হয়। তাই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এগুলি টাঙানো যায়। তবে নিরাপদ জায়গায় টাঙাতে হবে, যেখানে আল্লাহর নামের অবমাননা না হয় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ক্রমিক-৮৩১)।

প্রশ্ন (৬) : আমার বিজিবিতে চাকুরী হয়েছে। আমি সীমান্ত পাহারা দিলে হাদীছে বর্ণিত ফযীলত লাভ করতে পারব কী?

উত্তর : অমুসলিম রাষ্ট্র বেষ্টিত মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের সীমান্তের নিরাপত্তা বিধানে যারা জড়িত, তারা যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একাজে নিযুক্ত থাকেন, তবে তারা হাদীছে বর্ণিত সীমান্ত পাহারা দেওয়ার নেকী লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে তাদের জন্য মৌলিক শারঈ বিধি-বিধান সমূহ মেনে চলা আবশ্যক। সেই সাথে কোনরূপ পাপের কাজে সহযোগিতা করা চলবেনা। রাসূল (ছাঃ) সীমান্ত প্রহরীদের ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম (বুখারী হা/২৮৯২; মিশকাত হা/৩৭৯১)। তিনি আরও বলেন, ‘একটি দিন ও রাত্রি আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা, এক মাস দিনে ছিয়াম ও রাত্রিতে ছালাতে দন্ডায়মান থাকার চাইতে উত্তম (মুসলিম হা/১৯১৩; মিশকাত হা/৩৭৯৩)। এছাড়াও সীমান্ত পাহারা দেওয়া এমন একটি আমল যা ছাদাক্বা জারিয়ার সমতুল্য। এর ছওয়াব সে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পেতে থাকবে (আহমাদ হা/১৭৩৯৬; ছহীহুত তারগীব হা/১২১৮)।

প্রশ্ন (৭) : মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ইমাম বা মুওয়াযযিন সপরিবারে বসবাস করতে পারবে কি?

উত্তর : মসজিদ বসবাসের স্থান নয়। বরং ইবাদতের স্থান। তবে যদি মসজিদ কমিটি মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করে ইমামের জন্য মসজিদ সংলগ্ন স্থানে কোন বাসগৃহ নির্ধারণ করে, সেখানে তিনি সপরিবারে বসবাস করতে পারেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ২য় ভাগ, ৫/২২১-২২; ওছায়মীন, ফাতাওয়াল হারামিল মাক্কী ১৭/১৪১৮)। আর সাধারণভাবে ইমাম বা মুওয়াযযিন একাকী মসজিদের যেকোন স্থানে রাত্রিযাপন করতে পারেন (বুখারী হা/৪৪০, ৩৭৩৮; আহমাদ হা/৫৩৮৯)।

প্রশ্ন (৮) : কারু সুস্থতা কামনা বা বিপদমুক্তির জন্য ছিয়াম রাখা যাবে কি?

উত্তর : এ ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে আমল পাওয়া যায় না। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য। বরং কারু সুস্থতার জন্য হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করবে এবং ছাদাক্বা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা ছাদাক্বা করার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮; দ্র. ‘ছহীহ কিতাবুদ দো‘আ’ বই)।

প্রশ্ন (৯) : বন্ধ্যা নারীদের বিবাহ করা যাবে কি? যদি না যায়, তবে তারা কি বিবাহ থেকে বিরত থাকবে? আর রাসূল (ছাঃ) অধিক সন্তানদায়িনী ও প্রেমময়ী নারী বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বিবাহের পূর্বে এটা কিভাবে বুঝা যাবে?

উত্তর : বন্ধ্যা নারীকে বিবাহ করা জায়েয। তবে রাসূল (ছাঃ) অধিক সন্তানদায়িনী নারীকে বিবাহ করার প্রতিই উৎসাহিত করেছেন। মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললে, আমি একজন সুন্দরী এবং সদ্বংশীয়া রমণীর সন্ধান পেয়েছি। কিন্তু সে কোন সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)। আমি কি তাকে বিবাহ করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন মেয়েদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক মহববত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (ক্বিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতের উপর) গৌরব প্রকাশ করব’ (নাসাঈ হা/৩২২৭; আবুদাউদ হা/২০৫০; মিশকাত হা/৩০৯১; ছহীহাহ হা/২৩৮৩)। উক্ত নিষেধাজ্ঞা দ্বারা বন্ধ্যা বিবাহ হারাম করা হয়নি। বরং একে অপসন্দনীয় বলা হয়েছে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৭/১০৮; ফাৎহুল বারী ৯/১১১)।

সুতরাং বন্ধ্যা মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয। আল্লাহর ইচ্ছা হ’লে তারাও সন্তান সম্ভবা হ’তে পারে। ইব্রাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা বন্ধ্যা ছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাকে ইসহাক জন্মের সুসংবাদ দেন (হূদ ১১/৭১)। একইভাবে যাকারিয়া (আঃ) নিঃসন্তান ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দান করেন এবং নবী ইয়াহইয়ার জন্ম হয় (আলে ইমরান ৩/৩৮-৪০)। এক্ষণে অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারী চেনার উপায় হ’ল তার পূর্ববর্তী নারী তথা মা, খালা বা ফুফুদের সন্তানের ইতিহাস পর্যালোচনা করা। তাদের অধিক সন্তান থাকলে সেও অধিক সন্তানদানে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা যায় (আযীমাবাদী, ‘আওনুল মা‘বূদ ৬/৩৪; সুবুলুস সালাম ২/১৬২)।

প্রশ্ন (১০) : কোন অমুসলিমকে দান করলে ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : ইসলাম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহের শিক্ষা প্রদান করে। তাই অসহায় অমুসলিমদের দান করলেও ছওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহ বলেন, তারা আল্লাহর মহববতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদের আহার্য প্রদান করে (দাহর ৭৬/০৯)। ইবনু কুদামা বলেন, তখন কেবল কাফেররাই মুসলমানদের হাতে বন্দী ছিল (ইবনু কুদামা, মুগনী ২/৪৯২)। যা প্রমাণ করে যে, তাদের প্রতি দান করার মাধ্যমেও ছওয়াব অর্জিত হয়। তাছাড়া হাদীছে এসেছে, একদিন ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রাণীর জীবন রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে কি? তিনি বললেন, প্রত্যেক তাযা প্রাণ রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে (বুখারী হা/২৩৬৩; মিশকাত হা/১৯০২)। নববী বলেন, ফাসেক ও ইহূদী-নাছারা-মূর্তিপূজক কাফেরকে ছাদাক্বা করাও জায়েয আছে এবং এতে নেকীও রয়েছে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৪০)। অতএব অমুসলিমকে খাওয়ালে বা দান করলেও ছওয়াব পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য যে, অমুসলিমরা যাকাতের হকদার নয়। তবে যদি সর্বোচ্চ ধারণা হয় যে, আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে, সেক্ষেত্রে ‘মুআল্লাফাতুল কুলূব’ খাত থেকে তাদেরকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যেতে পারে (ইবুন কুদামা, মুগনী মাসআলা ক্রমিক ৫১০৬, ৬/৪৭৫)। 

প্রশ্ন (১১) : কবর দেওয়ার সময় তিন অঞ্জলী না তিন মুষ্ঠি মাটি দিতে হবে?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ওহোদের শহীদদের কবরে মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে তিনবার মাটি ছড়িয়ে দিয়েছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৫৬৫; ইরওয়া হা/৭৫১, সনদ ছহীহ)। অতঃপর তিন অঞ্জলী বা তিন মুষ্ঠি দু’ধরনের বর্ণনাই এসেছে, যার দু’টিই যঈফ (আলোচনা দ্রষ্টব্য : ইরওয়া হা/৭৫১)। অতএব যার যেভাবে সুবিধা হবে, তিনি সেভাবে তিন বার কবরের উপর মাটি ছিটিয়ে দিবেন (নববী, আল মাজমূ‘ ৫/২৯৩; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৭২-৭৩)।

প্রশ্ন (১২) : পিতার মৃত্যুর পর পেনশনের টাকা মা পান। উক্ত টাকা কি আমাদের ভাই-বোনদের মাঝে ভাগ করে দিতে হবে, না এর হকদার কেবল মা-ই হবেন?

উত্তর : পিতার পেনশনের টাকা পরিত্যক্ত সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে এবং উক্ত সম্পদ শারঈ বিধান অনুযায়ী ওয়ারিছদের মধ্যে বণ্টিত হবে। সন্তান থাকলে মা মৃতের স্ত্রী হিসাবে এক-অষ্টমাংশ পাবেন। আর সন্তান না থাকলে সিকি পাবেন। বাকী সম্পদ ছেলে-মেয়েরা এক পুত্র সমান দুই কন্যা হিসাবে অংশ পাবে (নিসা ৪/১১)। তবে সন্তানরা যদি পিতার পেনশনের টাকা কেবল মায়ের জন্য নির্ধারণ করে, তাহ’লে সেটি সদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে। সর্বোপরি মায়ের সম্পদ থাক বা না থাক সন্তানদের উপর কর্তব্য হ’ল পিতা-মাতার যাবতীয় ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা (ইসরা ১৭/২৩)। তবে মা যদি উক্ত টাকা এককভাবে নিজের মনে করেন এবং শিরক, বিদ‘আতসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাচারিতা মূলক কাজে ব্যয় করেন, তাহ’লে অবশ্যই তার হক অষ্টমাংশ বাদে বাকি টাকা সন্তানরা ভাগ করে নিবে।

প্রশ্ন (১৩) : ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী যানবী, ওয়া ওয়াসসি‘ লী ফী দা-রী, ওয়া বা-রিক্লী ফী রিযক্বী’ দো‘আটি কি ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদের বিশুদ্ধতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ইবনু হাজার আসক্বালানী এবং আলবানী হাদীছটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন। তবে আলবানী ‘মওকূফ হিসাবে ছহীহ’ বলেছেন (ইবনু হাজার, নাতাইজুল আফকার ১/২৬৩; আলবানী, তিরমিযী হা/৩৫০০; তামামুল মিন্নাহ ৯৫-৯৬ পৃ.)। অন্যদিকে নববী, ইবনুল কবাইয়িম, ইবনুল মুলাক্কিন, হুসাইন সালীম আসাদ ও শু‘আইব আরনাঊত্ব প্রমুখ মুহাক্কিকগণ এর সনদকে ছহীহ অথবা হাসান বলেছেন (নববী, আল-আযকার ২৯ পৃ; ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ ২/৩৫৪;  দারেমী হা/৭২৭২; আহমাদ হা/১৯৫৮৯)। এছাড়া দো‘আটি কোথায় পাঠ করতে হবে, সেটা নিয়েও বিদ্বানদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে বেশীরভাগ হাদীছে দো‘আটি ছালাত পরবর্তী যিকির হিসাবেই বর্ণিত হয়েছে (শাওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন ১৮২ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৪) : মেয়ে পিতার অবাধ্য হয়ে বাড়ী ত্যাগ করে আসার পর মেয়ের মা অলী হয়ে আমার সাথে বিবাহ দেয় এবং আমরা একসাথে বসবাস করতে থাকি। পরবর্তীতে আমি মেয়ের পিতার অনুমতির জন্য বারবার ফোন দেই। কিন্তু তিনি রিসিভ করেন না। এক্ষণে বিবাহ বৈধ করার জন্য আমার করণীয় কি?

উত্তর : বিবাহ বৈধ করার জন্য মেয়ের পিতার উপস্থিতিতে বা সম্মতিতে দ্বিতীয়বার বিবাহের ঈজাব-কবুলের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ কোন নারী বিবাহের অলী হ’তে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অলী ব্যতীত বিবাহ সিদ্ধ নয়’ (তিরমিযী হা/১১০১; মিশকাত হা/৩১৩০)। নবী করীম (ছাঃ) আরও বলেন, ‘কোন মহিলা অপর কোন মহিলার বিয়ে দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও (অলী ব্যতীত) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবে না’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩১৩৬; ইরওয়া হা/৮৪১)। পিতা কোনভাবেই সম্মতি না দিলে পিতার পরবর্তী অলীদের সম্মতি নিয়ে বিবাহের ঈজাব-কবুল সম্পন্ন করবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৫৩৯ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৫) : পর্দাসহ মেয়েরা বাইসাইকেল বা মটর সাইকেল চালাতে পারবে কি?

উত্তর : পর্দা সহকারেও নারীদের যে কোন ধরনের যানবাহন চালনা করা সমীচীন নয়। কেননা প্রথমতঃ এধরণের কাজ তাদের জন্য স্বভাবসিদ্ধ নয়, বরং পুরুষালী কর্ম এবং এতে প্রকারান্তরে তাদের বেহায়াপনা প্রকাশ পায়। আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন যাবতীয় বেহায়াপনাকে নিষিদ্ধ করেছেন (আ‘রাফ ৭/৩৩)। এমনকি এরূপ কাজের নিকটবর্তী হ’তেও নিষেধ করেছেন (আন‘আম ৬/১৫৩)। দ্বিতীয়তঃ তাদের দিকে পুরুষের কুদৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। এতদ্ব্যতীত তাদের স্বাস্থ্যগত এবং অন্যান্য ক্ষতির সমূহ আশংকা থাকে। যদিও প্রয়োজনে পর্দার সাথে তাদের বাইরে যাওয়া জায়েয রয়েছে (আবুদাঊদ হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/৩২৫১; ছহীহাহ হা/১৩১)। তবে বাইরে যাওয়া এবং সাইকেল বা হোন্ডা ড্রাইভ করা এক নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগের নারীদের মধ্যে এমন কোন দৃষ্টান্তও পাওয়া যায় না। সুতরাং সকল প্রকার ড্রাইভিং থেকে নারীদের বিরত থাকাই কর্তব্য।

প্রশ্ন (১৬) : পশুর শরীরে টিউমার থাকলে কিংবা অর্ধেক শিং ভাঙ্গা থাকলে তা দ্বারা কুরবানী দেওয়া যাবে কী?

উত্তর : কুরবানীর জন্য কেমন পশু হ’তে বিরত থাকতে হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘চার প্রকার পশু থেকে : স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ (আহমাদ হা/১৮৬৯৭, ১০৪৮, ১০৬১; তিরমিযী হা/১৪৯৭; ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৬৫)। সুতরাং সাধারণ ত্রুটি যেমন অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা, অর্ধেক শিং ভাঙ্গা বা কিছু দাঁত পড়ে যাওয়া পশু দিয়ে কুরবানী করা যায় (আহমাদ হা/১৮৫৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৩-৪৪; নাসাঈ হা/৪৩৬৯)। এছাড়া জন্মগতভাবে বা পরবর্তীতে লেজ কাটা অথবা জন্মগতভাবে শিং বা কান না থাকা পশু কুরবানী করা জায়েয (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৭/৪৩৫, ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১৩/৩৭২)। তবে নিখুঁত হওয়াই উত্তম (দ্র. ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই, ৭ম সংস্করণ, ১৭-১৮ পৃ.)। আর টিউমারকে হাদীছে ত্রুটিযুক্ত পশুর তালিকায় বর্ণনা করা হয়নি। তবে পশুর যে সমস্ত রোগ মানব দেহে সংক্রমিত হয়, ঐসব রোগে আক্রান্ত পশু কুরবানী করা হ’তে বিরত থাকা কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ক্ষতি করোনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়োনা’ (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪১; ছহীহাহ হা/২৫০)।

প্রশ্ন (১৭) : নারীদের জন্য হাতে ও পায়ে মোযা পরিধান করা কি ওয়াজিব?

উত্তর : নারীদের জন্য হাতে ও পায়ে মোযা পরিধান করা মুস্তাহাব। নববী যুগে নারীদের হাত মোযা পরার প্রচলন ছিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, হজ্জের সময় মুহরিম মহিলাগণ মুখে নেক্বাব এবং হাতে মোযা পরবে না (বুখারী হা/১৮৩৮; মিশকাত হা/২৬৭৮)। এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, তৎকালীন মহিলাদের মধ্যে হাত মোযার প্রচলন ছিল। তবে এটি ওয়াজিব বা ফরয নয়; বরং মুস্তাহাব (আবূদাউদ হা/৪১০৪)। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে নারীরা হজ্জের সময়ও পুরুষ হাজীদের মুখোমুখি হ’লে চেহারা আড়াল করে নিতেন (বুখারী হা/১৫১৩; মুসলিম হা/১৩৩৪)।

প্রশ্ন (১৮) : বর্তমানে সেলিব্রিটি বা অমুসলিমদের অনুকরণে বিভিন্ন স্টাইলে মাথার চুল কাটা হয়। এরূপ করা জায়েয কি?

উত্তর : মাথার চুল স্বাভাবিকভাবে কাটতে হবে। এমনভাবে চুল কাটা যাবে না যাতে অশালীনতা ও উগ্রতা প্রকাশ পায়। একদা নবী করীম (ছাঃ) দেখলেন যে, একটি শিশুর মাথার কিছু অংশ কামানো আর কিছুটা অবশিষ্ট আছে। তিনি তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে বললেন, হয় সবটুকু কামিয়ে ফেলো নতুবা সবটুকু রেখে দাও (আবুদাঊদ হা/৪১৯৫; নাসাঈ হা/৫০৪৮; ছহীহাহ হা/১১২৩)। এছাড়া তাতে অমুসলিমদেরও অনুকরণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)।

প্রশ্ন (১৯) : কাপড়ে ও দেহের কোন অংশে মযী লেগে গেলে করণীয় কি? ধুয়ে ফেলতে হবে না পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, মযী বের হ’লে তোমার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে (আবুদাঊদ হা/২১১; নাসাঈ হা/৪৩৫)। তিনি আরও বলেন, ‘কাপড়ের যে স্থানে মযীর নিদর্শন দেখবে, হাতে পানি নিয়ে ঐ স্থানে ছিটিয়ে দিবে, যেন সেখানে পানি পৌঁছে যায় (আবুদাঊদ হা/২১০; আহমাদ হা/১৬০১৬, সনদ হাসান; তোহফা  ১/৩৭৩)।

প্রশ্ন (২০) : আইয়ামে বীযের নফল ছিয়াম কি মাসের যেকোন তিনদিন রাখলে হবে, না কি ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখেই রাখতে হবে? তারিখ যদি নির্দিষ্ট হয় সেক্ষেত্রে যিলহজ্জ মাসের ১৩ তারিখে তথা নিষিদ্ধ দিনটিতে করণীয় কি?

উত্তর : প্রতি আরবী মাসের মধ্যবর্তী ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ, আইয়ামে বীয-এর ৩ দিন ছিয়াম পালন করা মুস্তাহাব (তিরমিযী হা/৭৬১; নাসাঈ হা/২৪২৪; মিশকাত হা/২০৫৭)। তবে কোন সমস্যা থাকলে মাসের অন্য দিনেও রাখা যেতে পারে। এক্ষণে যিলহজ্জ মাসের ১৩ তারিখ আইয়ামে তাশরীক্বের কারণে ছিয়াম পালন নিষিদ্ধ হওয়ায় এর পরে মাসের অন্য দিন আইয়ামে বীযের নিয়ত করে ছিয়াম পালন করলেও তা যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১২-১৩)। মনে রাখতে হবে যে, নফল ছিয়ামকে নফল ভাবতে হবে, ফরয নয়। অতএব এটি অপরিহার্যভাবে করতেই হবে, এমন নয়।

প্রশ্ন (২১) : ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠার সময় পঠিতব্য দো‘আ দু’টি যেকোন সময় ঘুমানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি?

উত্তর : ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠার সময় পঠিতব্য দো‘আ যেকোন সময় ঘুমানোর ক্ষেত্রে পড়া যাবে। কারণ হাদীছে ঘুমের কথা বলা হয়েছে। রাত বা দিনের কথা উল্লেখ নেই। রাসূল (ছাঃ) যখন বিছানায় যেতেন, তখন তিনি এ দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহইয়া’। আর যখন জেগে উঠতেন তখন পড়তেন, ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়ানা-বা‘দা মা-আমা-তানা-ওয়া ইলায়হিন নুশূর’ (বুখারী হা/৬৩১২; তিরমিযী হা/৩৪১৭)। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম হ’ল রাত্রি ও দিবাভাগে তোমাদের নিদ্রা ও তার মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করা। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন সমূহ রয়েছে শ্রবণকারী সম্প্রদায়ের জন্য’ (রূম ৩০/২৩)। অবশ্য কোন বর্ণনায় রাত্রির ঘুমের কথাও উল্লেখ আছে (বুখারী হা/৬৩১৪; মিশকাত হা/২৩৮২)। সেজন্য বিশেষতঃ রাতে পাঠ করাই সুন্নাত।

প্রশ্ন (২২) : ঢাকা শহরে প্রচুর যানজটের কারণে মীরপুর থেকে ইসলামপুরে যেতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। যদিও সেটাকে সফর কিংবা ক্বছরের দূরত্ব বিবেচনা করা যায় না। কিন্তু যেতে আসতে অনেক সময় ব্যয় হয় ও কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে ছালাত কি ক্বছর করা যাবে? এছাড়া কোন কারণবশতঃ আছর ও মাগরিবের ছালাত জমা করা যাবে কি?

উত্তর : এটি সফর হিসাবে গণ্য হবে না এবং ক্বছর ছালাতের বিধানও প্রযোজ্য হবে না। তবে বিশেষ শারঈ ওযর বশতঃ দু’ওয়াক্তের ছালাত ক্বছর ও সুন্নাত ছাড়াই একত্রে জমা করে পড়া যায়। যেমন যোহর ও আছর পৃথক এক্বামতের মাধ্যমে ৪+৪=৮ এবং মাগরিব ও এশা ৩+৪=৭ রাক‘আত। ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, এটা কেন? তিনি বললেন, যাতে উম্মতের কষ্ট না হয়’ (বুখারী হা/১১৭৪; মুসলিম হা/১৬৩৩-৩৪)। এসময় শেষের ওয়াক্তের ছালাত আগের ওয়াক্তের সাথে ‘তাক্বদীম’ করে অথবা আগের ওয়াক্তের ছালাত শেষের ওয়াক্তের সাথে ‘তাখীর’ করে একত্রে পড়বে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৫; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘সফরের ছালাত’ অধ্যায় ‘ছালাত জমা ও ক্বছর করা’ অনুচ্ছেদ)। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আছর ও মাগরিবের ছালাত জমা করা যাবে না।

প্রশ্ন (২৩) : আমার প্রতিবেশীর মেয়ের বিবাহ ঠিক হয়েছে এমন এক ছেলের সাথে যার মন্দ চরিত্র সম্পর্কে আমি জানি। এক্ষণে তার চরিত্রের ব্যাপারে প্রতিবেশীকে জানালে তা গীবত হবে কি?

উত্তর : বিবাহের ব্যাপারে বর বা কনেকে বিপরীত পক্ষ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা যাবে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট ফাতেমা বিনতে ক্বায়েস তার বিবাহের জন্য আগত প্রস্তাবের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে বলেন, মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ান এবং আবু জাহাম আমার বিবাহের পয়গাম দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আবু জাহাম তো কখনও কাঁধ থেকে লাঠি নামিয়ে রাখে না (অর্থাৎ সে স্ত্রীকে মারে)। আর মু‘আবিয়া তো নিঃস্ব। তার কোন মাল-সম্পদ নেই। তিনি আমাকে ওসামা বিন যায়েদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিলেন। আমি তা অপসন্দ করলাম। তিনি পুনরায় বললেন, ওসামা বিন যায়েদকে বিবাহ কর। এরপর আমি তাকে বিবাহ করলাম। অতঃপর আল্লাহ সেখানে (তার গৃহে) আমাকে এমন কল্যাণ দান করলেন যে, আমি মানুষের নিকটে ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হ’লাম (মুসলিম হা/১৪৮০; মিশকাত হা/৩৩২৪)। অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, বিবাহের ব্যাপারে মেয়ে বা ছেলের দোষ থাকলে তা প্রকাশ করা যাবে (নববী, শরহ মুসলিম ১০/৯৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৯/২০২, ২৬/২৮৪)। তবে কপট উদ্দেশ্যে কোন দোষ বর্ণনা করা যাবে না। তাহ’লে সেটি গীবত হবে, যা নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন (২৪) : জুম‘আর ছালাতের পর মুছল্লীদের নিয়ে কবর যিয়ারত করতে যাওয়া এবং সবাই একত্রে দো‘আ করার বিধান কি?

উত্তর : কবর যিয়ারতের জন্য জুম‘আর দিনকে নির্দিষ্ট করে নেওয়া এবং কবরে গিয়ে দলবদ্ধভাবে দু’হাত তুলে মুনাজাত করা শরী‘আত সম্মত নয়। তবে সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে নিজে নিজে দো‘আ পড়বে। এক্ষণে কারো যদি জুম‘আর দিন ব্যতীত অন্য দিন কবর যিয়ারতের সময় না হয়, তবে সেক্ষেত্রে তিনি করতে পারেন। জানা আবশ্যক যে, জুম‘আর দিন কবর যিয়ারতের বিশেষ কোন ফযীলত নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৩৬; উছায়মীন, আল-লিক্বাউশ শাহরী ৮/২)।

প্রশ্ন (২৫) : নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর এ বাণীটির ব্যাখ্যা কি?

উত্তর : নারীদেরকে পুরুষের পাঁজরের উপরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে (নিসা ৪/১; বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কারণ তাদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাঁকা হ’ল উপরের হাড়। অতএব তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও, তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে সবসময় বাকাই থাকবে। সুতরাং তোমরা নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩২৩৮)।

অতএব তাদেরকে তাদের অবস্থানে ছেড়ে দিতে হবে এবং তাদের সাথে কোমল ও সুন্দর আচরণ করতে হবে। তাদের থেকে গুনাহের সম্ভাবনা না থাকলে তাদের বক্র আচরণে সাধ্যমত ধৈর্যধারণ করতে হবে। তাহ’লে তাদের মাধ্যমে অধিক উপকৃত হওয়া যাবে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৬/২৪৪)। ইমাম নববী (রহঃ) সহ অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, এ হাদীছে নারীদের প্রতি সহানুভূতি এবং ইহসানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, আর সৃষ্টিগত বক্র স্বভাবের ও অপূর্ণ জ্ঞানের কারণে ধৈর্য- ধারণের উপদেশ দান করা হয়েছে (ফাৎহুল বারী ৬/৩৮৮; মিরক্বাত)।

প্রশ্ন (২৬) : দেশে শারঈ আইন চালু না থাকায় যেনা-ব্যভিচারের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে যে অর্থ জরিমানা করা হয় তার হকদার কে?

উত্তর : এসকল ক্ষেত্রে নির্যাতিত ব্যক্তি উক্ত অর্থের হকদার হবে। যেমন দিয়াতের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হকদার হয়ে থাকে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে সামাজিক তহবিলে এই অর্থ জমা করা যেতে পারে। যেমন উভয়ের সম্মতিতে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সমাজনেতারা উভয়কে জরিমানা করতে পারেন। এক্ষেত্রে জরিমানাকৃত সম্পদের মালিক হবে সমাজের তহবিল, যা সামাজক কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতে হবে (বিস্তারিত; সালীম মুহাম্মাদ ইব্রাহীম, ‘সালাত্বাতুল ক্বাযী ফী তাক্বদীরিল ঊকুবাতিত তা‘যীরিয়াহ’ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)। সমাজনেতাদেরকে অবশ্যই আল্লাহভীরুতার সাথে ন্যায়বিচার করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সত্য সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার কর, যা আল্লাহভীতির অধিকতর নিকটবর্তী। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (মায়েদাহ ৫/৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বিচারক তিন জন। একজন জান্নাতী ও দু’জন জাহান্নামী। জান্নাতী ঐ বিচারক, যে সত্য উদঘাটন করে ও সেমতে বিচার করে। অন্যজন সত্য জানতে পেরেও অন্যায় বিচার করে, সে জাহান্নামী। আরেকজন না জেনে বিচার করে, সেও জাহান্নামী’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৭৩; ইবনু মাজাহ হা/২৩১৫; মিশকাত হা/৩৭৩৫)।

প্রশ্ন (২৭) : আমি পিতা-মাতার একমাত্র কন্যা। আমার মায়ের এক ভাই ও দুই বোন আছে। মা আমাকে তার সম্পদের কিছু অংশ দিতে চান। এক্ষেত্রে শারঈ কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে হেবা বা হাদিয়া হিসাবে এরূপ প্রদান করায় কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ৬৭৪৫)। তাছাড়া ভবিষ্যৎ ওয়ারিছ তথা মামা ও খালাদের সম্মতিতে মা তার যে কোন সম্পদ মেয়ের নামে লিখে দিতে পারে। এতে বাধা নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/৫০-৫২)।

উল্লেখ্য, উত্তরাধিকার সম্পদ মৃত্যুর পরে বণ্টন করাই শরী‘আত সম্মত। আল্লাহ তা‘আলা মৃতের মীরাছ বণ্টনের বিধান বর্ণনার পর বলেন, ‘এগুলি হ’ল আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। ...যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৩-১৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের জন্য তার হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন’ (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩০৭৩)। সুতরাং অন্য ওয়ারিছদের বঞ্চিত করার অসৎ উদ্দেশ্য থেকে সাবধান থাকা আবশ্যক।

প্রশ্ন (২৮) : কোন ব্যাংকে প্রোগ্রামার বা ইলেকট্রিশিয়ান পদে চাকুরী করা যাবে কি? কারণ এ পদগুলি তো সরাসরি সূদের লেনদেনের সাথে জড়িত নয়?

উত্তর : ব্যাংকে প্রোগ্রামার বা ইলেকট্রিশিয়ান পদেও চাকুরী করা যাবে না। কারণ এটিও পরোক্ষভাবে সূদী কারবারে সহযোগিতারই শামিল (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/৪১)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাকবওয়ার কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)।

প্রশ্ন (২৯) : অশালীন গান-বাজনা শ্রবণের পরিণতি কি? ‘এদের কানে উত্তপ্ত সীসা ঢেলে দেওয়া হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছ কি ছহীহ? মিউজিক যুক্ত ইসলামী গান শ্রবণ করা যাবে কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (যঈফাহ হা/৪৫৪৯)। মিউজিক যুক্ত সঙ্গীত ইসলামী হৌক বা অনৈসলামিক হৌক তা শ্রবণ করা হারাম। অনুরূপভাবে অশালীন গান-বাজনা শ্রবণ করা এবং গাওয়াও হারাম। আল্ল¬াহ বলেন, ‘লোকদের মধ্যে কিছু লোক অজ্ঞতা বশে বাজে কথা খরিদ করে ...তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (লোক্বমান ৩১/৬)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এখানে ‘বাজে কথা’ অর্থ গান-বাজনা (ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০; মিশকাত হা/৫৩৪৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাদ্যযন্ত্রকে مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ ‘শয়তানের বাদ্য’ বলেছেন (আবুদাঊদ হা/২৫৫৬)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমানী গযব ও দৈহিক রূপান্তরগত শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে (তিরমিযী হা/২২১২; ছহীহাহ হা/২২০৩)।

প্রশ্ন (৩০) : নারীদের জন্য হাই হিল জুতা পরার বিধান কি?

উত্তর : নারীদের জন্য হাই হিল জুতা পরা জায়েয নয়। কেননা তাতে তার গোপন সৌন্দর্য প্রকট হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন, ‘নারীরা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে, যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে’ (নূর ২৪/৩১)। এছাড়া এতে পড়ে গিয়ে যেকোন সময় সে আহত হ’তে পারে। তবে সাধারণভাবে দৃষ্টি আকর্ষক নয় এমন উঁচু জুতা পরিধানে বাধা নেই (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/০২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং ১৬৭৮)।

প্রশ্ন (৩১) : আমার সৎ দাদীকে কি যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে? আমার দাদা ও আপন দাদী অনেক আগেই মারা গেছেন।

উত্তর : সৎ দাদী যদি যাকাতের হকদার হয় এবং তার নিজ সন্তানরা তার প্রয়োজনীয় খোরপোষ দানে অক্ষম হয়, তবে তাকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে। কেননা সৎ পিতা-মাতা ও সৎ দাদা-দাদী আপন পিতা-মাতা ও আপন দাদা-দাদীর মত অপরিহার্য হক রাখেন না (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৪১/৩৪)।

প্রশ্ন (৩২) : আমার নানার কবরের উপর দিয়ে রাস্তা হয়ে গেছে এবং বছরের পর বছর মানুষ এর উপর দিয়ে হাঁটা-চলা করছে। এ ব্যাপারে কিছু করণীয় আছে কি?

উত্তর : কবরে যতদিন মুমিনের লাশের কোন অংশ বাকী থাকবে, ততদিন তাকে সম্মান করতে হবে। কোন সাধারণ অজুহাতে কবরের সম্মান হানিকর কোন কিছু করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১; আলবানী, তালখীছ ৯১ পৃ.; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘কবর ও লাশ বিষয়ে’ জ্ঞাতব্য ২৪৩ পৃ.)। সুতরাং রাস্তা নির্মাণের পূর্বেই বিষয়টি লক্ষ্য করা উচিৎ ছিল যে, কবরে লাশের অস্তিত্ব আছে কি না। এক্ষণে বহুদিনের পুরোনো কবর হ’লে নিজ অবস্থাতেই ছেড়ে দেবে। আর বেশী দিনের পুরোনো না হ’লে বা লাশের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন ধারণা হ’লে সম্ভবপর রাস্তা খুঁড়ে দেহাবশেষ স্থানান্তর করবে। খলীফা মু‘আবিয়া (রাঃ) মদীনায় পানির নালা করার জন্য পুরাতন কবর সমূহ স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন (ইবনুল মুবারক, আল-জিহাদ হা/৯৮)।

প্রশ্ন (৩৩) : অবহেলা বা মাযহাবী কারণে ছালাত বা ছিয়ামের কোন সুন্নাত পরিত্যাগকারী গোনাহগার হবে কি?

উত্তর : প্রতিটি সুন্নাত পালনে নেকী রয়েছে। ছোট হোক বা বড় হোক সুন্নাত পালনের মধ্যে রয়েছে দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন লোকদের আমল সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসা করা হবে তাদের ছালাত সম্পর্কে। যদি তাতে কোন ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়, তবে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল ছালাত আছে কি? যদি থাকে তবে তিনি বলবেন, তোমরা তার নফল ছালাত দ্বারা তার ফরয ছালাতের ত্রুটি দূর কর। অতঃপর এইরূপে সমস্ত ফরয আমলের ত্রুটি নফল দ্বারা দূরীভূত করা হবে (আবুদাউদ হা/৮৬৪; মিশকাত হা/১৩৩০; ছহীহুত তারগীব হা/৫৪০)। তবে সুন্নাতকে অবজ্ঞা না করে কেউ অলসতা বশত তা পালন না করলে সে গুনাহগার হবে না। যেমন বিভিন্ন কাজের সময় পালনীয় সুন্নাতসমূহ, সুন্নাতে রাওয়াতেবাহ, ক্বিয়ামুল লায়েল বা অন্যান্য নফল ছালাতসমূহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/১১২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।

তবে কেউ যদি স্পষ্ট ছহীহ হাদীছ জানা সত্ত্বেও কেবল মাযহাবী গোঁড়ামির কারণে কোন সুন্নাত ছেড়ে দেয় বা অবজ্ঞা করে, সে ব্যক্তি অবশ্যই গোনাহগার হবে। আল্লাহ বলেন, অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালাদানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে (নিসা ৪/৬৫)। ইসহাক বিন রাহওয়াইহ বলেন, যার নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ পৌঁছল অথচ অবজ্ঞা করে তা প্রত্যাখ্যান করল, সে কাফের (ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ১/৯৯)। ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তির নিকট উছূলের মানদন্ডে রাসূলের কওলী বা ফে‘লী ছহীহ হাদীছ পৌঁছল অথচ সে অস্বীকার করল, এটিই তার কুফরীর দলীল (মিফতাহুল জান্নাত ১৪ পৃ.)। সুতরাং ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সুন্নাতকে মাযহাবী কারণে কোনভাবেই পরিত্যাগ করা যাবে না।

প্রশ্ন (৩৪) : জনৈক আলেম বলেন, কোন নারী যদি কাউকে বালেগ হওয়ার পরেও স্বীয় দুগ্ধ পান করায়, সে উক্ত নারীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। শিশুর বয়স দু’বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বা প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ কোন নারীর দুধ পান করলে তিনি দুধ মা সাব্যস্ত হবেন না। দুধ মাতা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শর্ত দু’টি। (১) দু’বছরের কম বয়সে দুধ পান করতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৩৩; দারাকুৎনী হা/৪৪১৩, ৪৩৬৫)। (২) পাঁচ বারে দুধ পান করতে হবে (মুসলিম হা/১৪৫২; মিশকাত হা/৩১৬৭; আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৯৭)।

প্রশ্ন (৩৫) : জনৈক ব্যক্তি ছোট বেলায় পরিচিত একজনের দোকান থেকে খেলার ছলে একটি পণ্য চুরি করে পরে আর ফেরত দেয়নি। এখন ফেরত দিতে গেলে তার সাথে সম্পর্ক খারাপ হ’তে পারে। এক্ষণে তার মাফ পাওয়ার উপায় কি?

উত্তর : সরাসরি ফেরত দিতে সমস্যা থাকলে পরিচয় গোপন রেখে কারু মাধ্যমে পণ্যটি কিংবা পণ্যের মূল্য ফেরত দিবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিইয়াহ ৪/১৬২-৬৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩৬) : পিতা সন্তানকে অছিয়ত করে গেলেন জানাযার ছালাত পড়ানোর জন্য, তবে পিতা যখন মারা গেলেন তখন সন্তানের জানাযার দো‘আ মুখস্থ নেই। মৃতের মেয়ে জামাই একজন আলেম। এমতাবস্থায় সন্তানের করনীয় কি?

উত্তর : পিতা-মাতার অছিয়ত দু’ধরনের হ’তে পারে। সম্পদ সম্পর্কিত এবং সম্পদ বহির্ভূত। সম্পদ সম্পর্কিত অছিয়ত যদি এক-তৃতীয়াংশের কম হয় তাহ’লে তা পালন করা আবশ্যক (নিসা ৪/১১)। আর সম্পদ বহির্ভুত অছিয়ত যা পালন করা মুস্তাহাব। এক্ষণে ছেলে জানাযার ছালাত পড়াতে অক্ষম হ’লে যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ ইমামতি করতে পারেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২২০, ৩৬৫)।

প্রশ্ন (৩৭) : গরীব-মিসকীনদের নিকট কুরবানীর গোশত পৌঁছানোর জন্য কোন সংস্থায় সহায়তা করা যাবে কি?

উত্তর : গরীব-মিসকীনদের মধ্যে গোশত বিতরণের জন্য বিশ্বস্ত কোন সংগঠন বা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া যায়। এতে কোন বাধা নেই। তবে তা সঠিকভাবে বিতরণ করা হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব; ফাতাওয়া আশ-শাবাকাতুল ইসলামিয়া; ড. ওয়াহবাতুল যুহায়লী, আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৪/২৭৩; দারুল ইফতা মিছরিয়াহ, ফৎওয়া নং ৬০৫)।

প্রশ্ন (৩৮) : বিবাহের পূর্বে পাত্রীর রোগ গোপন করে বিয়ে দিলে এতে পাত্রীর অভিভাবকরা দায়ী হবে কি? বিবাহের পর এই রোগের চিকিৎসার দায়ভার কার উপর বর্তাবে?

উত্তর : সাধারণ রোগ-ব্যাধি গোপন রাখায় দোষ নেই। কিন্তু যদি তা বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো কঠিন রোগ হয়। যেমন যৌন অক্ষমতা, বন্ধ্যাত্ব ও সন্তান পালনগত অক্ষমতা বা জন্মগতভাবে বড় ধরনের কোন রোগ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তা গোপন করার জন্য অভিভাবকগণ দায়ী হবেন। যা প্রতারণার শামিল। আর সামাজিকভাবেও এটা দারুণ ক্ষতিকর। অতএব এরূপ দোষ গোপন রেখে বিবাহ দিলে পাত্রীর অভিভাবকদেরকেই এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬০)।

প্রশ্ন (৩৯) : SPC বা এই জাতীয় যত অনলাইনের অর্থ উপার্জনের যেসব ব্যবসা আছে, এগুলিতে অংশগ্রহণ করা কি বৈধ হবে?

উত্তর : SPC (Super power community) ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস মূলতঃ এম.এল.এম পদ্ধতিতে ব্যবসা করা একটি অনলাইন কোম্পানী। আর এম.এল.এম পদ্ধতির সকল প্রকার ব্যবসা নিষিদ্ধ। কারণ এর মধ্যে চরম প্রতারণা, ধোঁকা, জুয়া ও জনগণের সম্পদের সাথে খেল-তামাশা রয়েছে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/২১২-১৮ পৃ.)। এ ধরনের অনলাইন ব্যবসার উদ্দেশ্য হ’ল, নির্দিষ্ট ফী-এর বিনিময়ে কোম্পানীর নতুন নতুন সদস্য সৃষ্টি ও কোম্পানীর এ্যাড দেখার মাধ্যমে কমিশন লাভ করা। এ কারবার থেকে রেফার কমিশন, জেনারেল কমিশন, রয়্যাল কমিশনের নামে পিরামিড সিস্টেমে বহুগুণ কমিশন লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। আর দ্রুত লাভের আশায় প্রলুব্ধ মেম্বারদের মাধ্যমে কোম্পানীগুলো এক বিরাট লাভের অংক হাতিয়ে নেয়। এক্ষণে সংক্ষেপে যেসব কারণে এ ধরনের ব্যবসা হারাম তা হ’ল- (১) সূদ (২) প্রতারণা (৩) অস্পষ্টতা (৪) বাতিল পন্থায় মানুষের সম্পদ ভক্ষণ (৫) এক চুক্তির মধ্যে অন্য চুক্তির শর্ত করা (৬) চুক্তিকে শর্তের সাথে ঝুলন্ত রাখা এবং (৭) শ্রম ও ঝুঁকিহীন বিনিময় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং-২২৯৩৫)। অতএব এসব প্রতারণামূলক ব্যবসা থেকে দূরে থাকা জান্নাত পিয়াসী মুমিনের জন্য আবশ্যক (বিস্তারিত দ্র. আত-তাহরীক, মার্চ ২০১২ সংখ্যা, প্রশ্নোত্তর নং ১/২০১)।

প্রশ্ন (৪০) : ফ্রান্সে ব্যবসার নিয়ম অনুযায়ী সব খরচ বাদে কেবল লাভের ৫০ শতাংশেরও বেশী টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। সরকারের এই মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স থেকে বাঁচার জন্য অনেক মুসলিম ব্যবসায়ী সরকারী হিসাবে লাভ কম দেখায়। এটা হালাল হবে কি?

উত্তর : সরকারী শর্ত মেনে কোন দেশে বসবাসের অনুমতি নেওয়ার পর শর্ত ভেঙ্গে এরূপ প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করা জায়েয হবে না। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা ব্যতীত মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে (আবুদাউদ হা/৩৫৯৪; মিশকাত হা/২৯২৩; ছহীহাহ হা/২৯১৫)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘যে বিধান দারুল ইসলামে হারাম, সেই বিধান দারুল কুফরেও হারাম (কিতাবুল উম্ম, আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৩৩/১২-১৩)। শাওকানী বলেন, মুসলমানগণ যেখানেই অবস্থান করুক না কেন শরী‘আতের আহকাম পালন করা তাদের উপর আবশ্যক। এমনকি তারা দারুল হারবে অবস্থান করলেও শরী‘আতের কোন বিধান রহিত হবে না (আস-সায়লুল জার্রার, ৯৬৩ পৃ.)। আর মাত্রাতিরিক্ত যুলুমের ক্ষেত্রে তা সমাধান করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। নইলে ব্যবসা পরিত্যাগ করতে হবে।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকল্পে সরকার জনগণের উপর ট্যাক্স নির্ধারণ করতে পারে (গাযালী, আল মুসতাছফা ১/৩০৩; শাত্বেবী, ২/১২১)। তবে এটা যেন যুলুমের পর্যায়ে না চলে যায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা আবশ্যক। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে জনগণের উপর অযৌক্তিকভাবে লাগামহীন ট্যাক্স আরোপ করা হচ্ছে, যা রীতিমত যুলুম। রাসূল (ছাঃ) হাক্কুল ইবাদ বা জনগণের অধিকার বিনষ্টকারীদের ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন (মুসলিম হা/১৬৯৫; আহমাদ হা/১৭৩৩৩, ১৭৩৯১; মিশকাত হা/৩৭০৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সাবধান! কোন ব্যক্তির মাল অন্য কারো জন্য হালাল নয়, যতক্ষণ না সে তা স্বেচ্ছায় প্রদান করে’ (আহমাদ হা/২০৭১৪; মিশকাত হা/২৯৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৬২)।

প্রশ্ন (৪১) : কুরবানীর নিয়তে পশু কিনে রাখার পর মাঝে মাঝে অসুস্থ হওয়ায় সেটা দিয়ে আক্বীক্বা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর নিয়তে নির্দিষ্টভাবে পশু ক্রয়ের পর তা ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। কেননা এটি ওয়াকফের ন্যায়। অতএব তা দিয়ে আক্বীক্বা করা যাবে না। আর ক্রয়ের পর অসুস্থ হয়ে পড়া পশু দ্বারা কুরবানী করায় বাধা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৬/৩০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১১/৪০২; ‘মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা’ বই)।

প্রশ্ন (৪২) : ফরয ছালাতে মাসবূক হিসাবে বাকী ছালাত আদায় করার সময় আমার দু’পাশে দু’জন মুছল্লী এসে আমার সাথে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করলে আমার জন্য করণীয় কি?

উত্তর : এ সময় মাসবূক নিজেকে ইমাম মনে করে বাকী ছালাত সমাপ্ত করবে। সামনে জায়গা থাকলে মাসবূক ইমাম সামনে চলে যাবে এবং দু’জন মুছল্লী পিছনে থাকবে। আর সামনে জায়গা না থাকলে দু’জনকে পিছনে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করবে। আর জায়গা না থাকলে দু’জনকে পাশে নিয়েই ছালাত সমাপ্ত করবে। ইনশাআল্লাহ প্রত্যেকেই জামা‘আতে ছালাত আদায় করার ছওয়াব পেয়ে যাবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৪৮)। তবে এই নিয়মে ছালাত আদায় করা জায়েয হ’লেও উত্তমের বিপরীত। কেননা এ ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন আমল বা সুনির্দিষ্ট দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং জামা‘আত শেষ হওয়া বুঝতে পারলে আলাদাভাবে একাকী বা জামা‘আতে ছালাত আদায় করাই উত্তম হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/৩১৬-১৭)।

প্রশ্ন (৪৩) : আমার শিক্ষিকা আমাকে দেখে মাঝে মধ্যেই বলতেন, তোমাকে দেখতে ‘জাহান্নামী’ মনে হচ্ছে। অথচ আমি এমন কোন কাজ করতাম না যা জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয়। কাউকে ইঙ্গিত করে এমন ভাষা ব্যবহার করা জায়েয কি?

উত্তর : কাউকে ‘জাহান্নামী’ বলা বা এই ধরনের ভাষায় গালি দেওয়া জায়েয নয়। কারণ এটা তার উপর কুফরীর অপবাদ দেওয়ার নামান্তর, যা হারাম (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৭৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩৬৫, ১৩/৪২২)। এই অপবাদের দু’টি ক্ষতিকর দিক রয়েছে- (১) অপবাদটি অপবাদদাতার দিকে ফিরে আসবে (২) অপবাদটি অপবাদ দানকারীর জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে। বনু ইস্রাঈলের জনৈক ব্যক্তি আরেক গুনাহগার ব্যক্তিকে ‘তুমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ বা ‘তুমি জাহান্নামী’ বলে গালি দেয়। ফলে আল্লাহ তা‘আলা গালিদাতা সৎব্যক্তিকে জাহান্নামে দেন এবং ঐ গুনাহগার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন (মুসলিম হা/২৬২১; আবুদাউদ হা/৪৯০১; মিশকাত হা/২৩৩৪, ২৩৪৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যদি কেউ কাউকে কাফের বলে, আর সে যদি কাফের না হয়, তাহ’লে কথাটি তার উপরেই ফিরে আসবে’ (বুখারী হা/৬০৪৫; মিশকাত হা/৪৮১৬)।

এক্ষণে যে ব্যক্তি কাউকে জাহান্নামী বলে গালি দিয়েছে তাকে তওবা করতে হবে এবং উক্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ও তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) তার দো‘আয় বলতেন, ‘আল্ল-হুম্মা ইন্নামা আনা বাশারুন ফাআইয়ুমা রাজুলিম মিনাল মুসলিমীনা সাবাবতুহূ আও লা‘আনতুহূ আও জালাত্তুহূ ফাজ‘আলহা লাহূ যাকা-তাঁও ওয়া রহমাহ। অর্থ : ‘আমি তো মানুষ মাত্র। তাই আমি কোন মুমিনকে কষ্ট দিয়েছি, গালি দিয়েছি, অভিশাপ দিয়েছি বা  বেত মেরেছি- আমার এ কাজকে তুমি তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন রহমত, পাপমুক্তি ও তোমার নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দাও’ (মুসলিম হা/২৬০১; মিশকাত হা/২২২৪)।

প্রশ্ন (৪৪) : সাহারী খাওয়ার পর যদি কেউ বুঝতে পারে যে সাহারীর সময় ১৫ মিনিট আগেই শেষ হয়েছে, সেক্ষেত্রে ছিয়াম রাখা যাবে কি?

উত্তর : অজ্ঞতাবশত কেউ সময়ের পরে সাহারী গ্রহণ করে থাকলে সে ছিয়াম পূর্ণ করবে। কারণ অজ্ঞতার কারণে কেউ কোন ভুল করলে তার জন্য আল্লাহ পাকড়াও করেন না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। কতিপয় ছাহাবী সাদা রেখা ও কালো রেখার ব্যাখ্যা বুঝতে না পারায় নির্দিষ্ট সময়ের পরে সাহারী গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে বলেননি। যা প্রমাণ করে যে, কেউ ভুল করে কয়েক মিনিট পরে সাহারী খেলে তার উক্ত ছিয়ামই যথেষ্ট হবে। ক্বাযা আদায় করতে হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২০/৫৭২-৭৩; মুগনী ৩/১৪৭)।

প্রশ্ন (৪৫) : যাকাতের টাকা দিয়ে কুরআনের তাফসীর ও অন্যান্য ইসলামী বই ক্রয় করে মসজিদে রাখা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদের কোন কাজে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা যাবে না। কেননা যাকাতের নির্দিষ্ট আটটি খাত রয়েছে। যাকাত উক্ত খাতগুলোতেই প্রদান করতে হবে (তওবা ৯/৬০)। সুতরাং মসজিদ বা মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ ও লাইব্রেরী অথবা ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতনের তহবিল ইত্যাদি খাতে যাকাত প্রদান করা যাবে না। বরং যাকাত ব্যতীত সাধারণ দান-ছাদাক্বা থেকে সেসব ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২৪১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৩৭/২৩২)।

প্রশ্ন (৪৬) : আমার বাচ্চার বয়স ৮ মাস। জন্মের পর স্ত্রীর এখনো মাসিক হয়নি। এমতাবস্থায় তাকে তালাক দেওয়ার বিধান কি?

উত্তর : যদি নিফাস বন্ধের পর স্বামী স্ত্রীর সাথে মিলন করে এবং স্ত্রীর হায়েয না হয় তাহ’লে এ অবস্থায় তালাক দেওয়া যাবে না, মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক। কেননা মিলন হয়েছে এমন তুহরে তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ (তালাক্ব ১)। অতএব তাকে তালাক দিতে হ’লে পুনরায় হায়েয হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং তার পর পবিত্র অবস্থায় তালাক দিতে হবে। আর যদি নিফাসের পর মিলন না করে থাকে তাহ’লে তালাক দিতে পারে (মুগনী ৭/৩৬৪-৬৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১৩/৩৭)।

প্রশ্ন (৪৭) : যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে বলে তুমি দেখতে আমার পিতার মত। এটা কি যিহারের অন্তর্ভুক্ত হবে?

উত্তর : স্ত্রী স্বামীকে যিহার করতে পারে না, বরং স্বামী স্ত্রীকে যিহার করে থাকে। ফলে এটি যিহারের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং একটি সাধারণ কথা মাত্র। এতে কোন কাফফারা দিতে হবে না। মূলতঃ ‘যিহার’ হ’ল, স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অথবা তার কোন অঙ্গকে নিজের ‘মা’ অথবা ‘স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম’ এমন কোন মহিলার পৃষ্ঠদেশ বা কোন অঙ্গতুল্য বলে অভিহিত করে। একথা বলার উদ্দেশ্য, পরোক্ষভাবে মাহরাম নারীর মত স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করা। জাহেলী আরবে যিহারকে তালাক গণ্য করা হ’ত। ফলে যিহারের পর স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে নেওয়ার অবকাশ ছিল না। ইসলাম এটিকে বাতিল করে এবং বলে দেয় যে, গর্ভধারিণী মা ব্যতীত অন্য কেউ সত্যিকারের ‘মা’ হ’তে পারে না। অতএব যিহার করলে তালাক হবে না, বরং এরূপ মিথ্যা ও চূড়ান্ত বেআদবীর জন্য তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রী সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। কাফফারা আদায়ের পর যথারীতি ঘর-সংসার করা যাবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ২৯/১৯০-৯১)।

যিহারের কাফফারা হ’ল, একটি ক্রীতদাসকে মুক্ত করা অথবা একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখা অথবা ষাটজন মিসকীন খাওয়ানো (মুজাদালাহ ৫৮/৩-৪)। যার পরিমাণ হ’ল, দৈনিক একজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য বা পোষাক প্রদান করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)। বেশী দিলে বেশী নেকী পাবে (বাক্বারাহ ২/১৮৪)। কাফফারার ছিয়াম শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী স্পর্শ করবে না। কিন্তু যদি অধৈর্য হয়ে করেই ফেলে, তাহ’লে কাফফারা শেষ হওয়ার পূর্বে পুনরায় স্ত্রী স্পর্শ করবে না (ইবনু মাজাহ হা/২০৬৫; ইরওয়া ৭/১৭৯-৮০)। এটিই হ’ল অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত (মুগনী ৮/৪১)।

এক্ষণে যারা বলেন স্ত্রী স্বামীকে যিহার করতে পারে, তারা নিম্নোক্ত হাদীছ থেকে দলীল নেন। যেমন আয়েশা বিনতে ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ-কে মুছ‘আব বিন যুবায়ের বিবাহের পয়গাম দিলে তিনি বলেন, যদি আমি মুছ‘আব বিন যুবায়েরকে বিবাহ করি, তাহ’লে সে আমার উপর আমার পিতার পিঠের ন্যায় হবে। পরবর্তীতে তিনি তাকে বিবাহ করতে চান। তখন এ বিষয়ে তিনি মদীনাবাসী ছাহাবীদের নিকট জিজ্ঞেস করেন। জওয়াবে তিনি আদিষ্ট হন এই মর্মে যে, فَأُمِرَتْ أَنْ تُعْتِقَ رَقَبَةً وَتَتَزَوَّجَهُ ‘তিনি একটি দাস মুক্ত করবেন, অতঃপর তাকে বিবাহ করবেন’ (দারাকুৎনী হা/৩৮৬৬; ইরওয়া হা/২০৮৯, সনদ ছহীহ)। উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, এখানে আয়েশা বিনতে ত্বালহা তার কসমের কাফফারা আদায় করেছেন। অতঃপর বিবাহ করেছেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৮/৪২)। অতএব এটি যিহারের কাফফারা নয়, বরং কসমের কাফফারা।

তবে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপরকে যিহার করতে পারে। এজন্য কাফফারা হিসাবে তারা একটি দাস মুক্ত করবে অথবা একটানা দু’মাস ছিয়াম রাখবে অথবা ষাট জন মিসকীন খাওয়াবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/৯)।

প্রশ্ন (৪৮) : জানাযার ছালাতের সময় ক্বিরাআত নীরবে না সরবে পাঠ করতে হবে? দলীল সহ বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : জানাযার ছালাতে ক্বিরাআত ও দো‘আ নীরবে বা সরবে অনুচ্চ স্বরে দু’ভাবেই পড়া জায়েয। উভয়টিই রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত (দ্র.‘আওনুল মা‘বূদ হা/৩২০২-এর আলোচনা; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২১৬ পৃ.)। যেমন আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, জানাযার ছালাতে সুন্নাত হ’ল প্রথম তাকবীরের পর চুপেচুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। অতঃপর আরো তিনটি তাকবীর বলা এবং শেষ তাকবীরে সালাম ফিরানো (নাসাঈ হা/১৯৮৯)। অন্যদিকে সরবে পাঠের দলীল হ’ল- ‘আওফ বিন মালেক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে জানাযার ছালাতে তাঁর দো‘আ শুনে তা মুখস্ত করেছি। আর সেটি হ’ল, اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ...। এসময় আমি আকাংখা করছিলাম, যদি এখানে আমি মাইয়েত হ’তাম! (মুসলিম হা/৯৬৩, মিশকাত হা/১৬৫৪-৫৫)। অনুরূপভাবে ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার ছালাত আদায় করি। সেখানে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর বলেন,لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ- ‘যাতে লোকেরা জানতে পারে যে, এটি সুন্নাত’ (বুখারী হা/১৩৩৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি সরবে সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা পাঠ করেন। অতঃপর ছালাত শেষে আমি তাঁকে হাত ধরে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, سُنَّةٌ وَحَقٌّ ‘এটাই সুন্নাত ও সঠিক’ (নাসাঈ হা/১৯৮৭)। তবে অধিকাংশ বিদ্বান নীরবে পাঠ করাই সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৩৪; ইবনু কুদামা, মুগনী ২/৩৬৩; ইবনে তায়মিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/৪২১; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১২১, হা/৭৮)।

প্রশ্ন (৪৯) : ঈদের ছালাতের খুৎবা শেষে মানুষের দানকৃত অর্থগুলো ইমামকে দেওয়া হয়। এটা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ইমামের বেতন ঈদের মাঠে দানকৃত বায়তুল মাল তহবিল থেকে দেওয়া যাবে। এতে কোন বাধা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিইয়াহ ১/৪৯২)।

প্রশ্ন (৫০) : চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কালে চেয়ার কোথায় রাখতে হবে?

উত্তর : চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কারীর তিনটি অবস্থা রয়েছে। প্রথমতঃ মসজিদের প্রথম কাতার মুছল্লী দ্বারা পূর্ণ হ’লে চেয়ারে ছালাত আদায়কারীরা কাতারের যেকোন এক পার্শ্বে ছালাত আদায় করবে। কারণ চেয়ারে বসে কাতারের মাঝে ছালাত আদায় করলে কাতারের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। দ্বিতীয়তঃ চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কারী যদি পুরো ছালাত বসে আদায় করে, তাহ’লে মুছল্লীর পা বরাবর কাতারে চেয়ার রেখে বসে ছালাত আদায় করবে। কারণ মুছল্লীর দাঁড়ানো অবস্থা কাতারের মৌলিক অবস্থা। তৃতীয়তঃ মুছল্লী যদি ক্বিয়াম দাঁড়িয়ে করে ও রুকূ-সিজদা চেয়ারে বসে করে, তাহ’লে এমন চেয়ার ব্যবহার করবে যা পিছনের মুছল্লীর কোন ক্ষতি করবে না, আবার কাতারের সমতাও বিনষ্ট হবে না। যদি এমন চেয়ার না থাকে তাহ’লে মুছল্লী কাতারে দাঁড়িয়ে চেয়ার হালকা পিছনে রাখবে এবং সে কাতার বরাবর দাঁড়াবে। পিছনের মুছল্লীর সিজদার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে রুকূ এবং সিজদা করার সময় চেয়ার কাতারে টেনে বসে রুকূ ও সিজদা করবে। এভাবেই পুরো ছালাত সম্পাদন করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/২১; উছায়মীন ও আব্দুর রহমান বাররাক, মাওক্বা‘উল ইসলাম, সওয়াল ওয়া জওয়াব ৫/৭৬২, ১৭৯৫; ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ১১/৯৫৯১)।

প্রশ্ন (৫১) : পাত্রে রাখা পানিতে হাত বা পা ডুবালে সেই পানিতে ওযূ করা যাবে কি?

উত্তর : পাত্রে রাখা পানিতে পরিষ্কার হাত বা পা ডুবালে পানি অপবিত্র হয় না। অতএব তাতে ওযূ করা যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ১৪/১০৩; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৫)। রাসূল (ছাঃ) সামান্য আটা মিশ্রিত পানি দ্বারাও গোসল করেছেন (নাসাঈ হা/২৪০; মিশকাত হা/৪৮৫; ইরওয়া হা/২৭, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (৫২) : রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মদিনে ছিয়াম পালন করা যাবে কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-এর জন্মদিন মনে করে সোমবারে ছিয়াম রাখা যাবে না। কারণ জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলামে বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছিয়াম পালন করতেন প্রথমতঃ এই কারণে যে, তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও প্রথম অহি প্রাপ্ত হয়েছিলেন (মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৫)। দ্বিতীয়তঃ প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে বান্দার আমলনামা আল্লাহর নিকট পেশ করা হয়। তিনি বলতেন, আমি পসন্দ করি যে, আমার আমলনামা আল্লাহর নিকট ছিয়াম অবস্থায় পেশ করা হৌক (তিরমিযী হা/৭৪৭; মিশকাত হা/২০৫৬)। ইসলামে কেবল সাতটি দিবস ঈদ হিসাবে পালনীয়। জুম‘আ, দুই ঈদ, আরাফার দিন ও ঈদুল আযহার পরের তিন দিন (দ্র. ‘ছিয়াম ও ক্বিয়াম’ ১০৭ পৃ.)। এর বাইরে কোন দিবস পালন করা শরী‘আত বহির্ভূত।

প্রশ্ন (৫৩) : কুরবানীর দিন কুরবানীর নিয়ত ছাড়া কয়েকজন মিলে গরু যবেহ করে খেতে পারবে কি?

উত্তর : কুরবানী ইসলামের অন্যতম প্রধান নিদর্শন। কুরবানীর দিনগুলিতে কুরবানীর পশুও ইসলামের নিদর্শন (হজ্জ ২২/৩৬)। সুতরাং এই দিনগুলিতে কুরবানী ব্যতীত গোশত খাওয়ার নিয়তে অন্য কোন কুরবানীযোগ্য পশু যবেহ করা সমীচীন নয়। কুরবানীর দিনসহ আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলির গোশত খাওয়ার জন্য শরী‘আত নির্ধারণ করেছে (মুসলিম হা/১১৪১)। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি তার হৃদয় নিঃসৃত আল্লাহভীতির প্রকাশ (হজ্জ ২২/৩২)। এক্ষণে ইসলামের নিদর্শনের দিনগুলিতে কুরবানীর নিয়ত ব্যতীত অন্য কোন কুরবানীযোগ্য পশু যবেহ করে ভাগাভাগি করে নেয়া শরী‘আতের একটি বিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল, যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। তবে কারো বিবাহ বা অলীমা অনুষ্ঠানে এই জাতীয় শারঈ গুরুত্বপূর্ণ কাজে গরু বা যেকোন হালাল প্রাণী যবেহ করতে পারে।

প্রশ্ন (৫৪) : কোন বই বা পত্রিকায় অন্যান্য লেখার সাথে কুরআনের আয়াত লেখা থাকলে সেগুলো কি পুড়িয়ে ফেলতে হবে? না কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে?

উত্তর : কোন বই বা পত্রিকার পাতায় কুরআনের আয়াত থাকলে তা সম্মানের সাথে রাখতে হবে এবং অন্য কাজে ব্যবহার করা থেকে সাধ্যমত বিরত থাকতে হবে। যদিও তা কুরআনের মুছহাফের সমতুল্য নয়। আর অধিক পুরানো হ’লে বা ব্যবহার অনুপযোগী হ’লে তা পবিত্র স্থানে পুঁতে ফেলতে হবে কিংবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/৫৯৯; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ৪৮০ পৃ.; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ২৪/০২)।

প্রশ্ন (৫৫) : ৩৩ বছর পূর্বে অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত ছেলে মেয়ে পালিয়ে বিবাহ করে এবং তাদের দু’জন সাবালক ছেলে আছে। পরে কনের পরিবার বিবাহ মেনে নিলেও নতুনভাবে বিবাহ পড়ানো হয়নি। বর্তমানে কনের পিতা মৃত। তবে মা জীবিত আছেন। উক্ত বিবাহ ও সন্তান কি বৈধ?

উত্তর : উক্ত বিবাহ সঠিক হয়নি। কারণ পিতার অসম্মতিতে মেয়ের বিবাহ বৈধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, অলী ব্যতীত বিবাহ নেই’ (তিরমিযী হা/১১০১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩০)। তিনি বলেন ‘কোন মহিলা যদি অলীর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করে তাহ’লে তার ঐ বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (তিরমিযী হা/১১০২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩১৩১)। নবী করীম (ছাঃ) আরো বলেন, ‘কোন মহিলা কোন মহিলাকে বিবাহ দিতে পারবে না এবং কোন মহিলা নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২; মিশকাত হা/৩১৩৭)। তবে তার সন্তান জারজ হবে না এবং সেই সন্তান পিতার সম্পত্তির ওয়ারিছ হবে। কেননা এই বিবাহ সঠিক পদ্ধতিতে না হ’লেও ‘শিবহে নিকাহ’ বা বিবাহের অনুরূপ হিসাবে গণ্য হবে (নববী, আল মাজমূ‘ ১৬/১৪৬; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/১০৩; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ১১/১৯৬)। এক্ষণে তওবা করে নতুনভাবে শারঈ পদ্ধতিতে বর্তমান অভিভাবকের সম্মতিতে বিবাহ পড়িয়ে নেওয়া কর্তব্য।

প্রশ্ন (৫৬) : ইউরোপে বাঙালীদের অনেকেই আইন পেশায় আছেন, যাদের অধিকাংশই মূলতঃ বাংলাদেশীদের ইউরোপে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করে দেন। তারা অভিবাসন নিশ্চিত করতে অনেক সময় অসত্য তথ্য প্রদান করেন। এসব দেশে আইনী পেশায় যুক্ত থাকা কি জায়েয হবে? অন্যদিকে একজন মুসলিমের জন্য যেহেতু অমুসলিম দেশে সাধারণভাবে বসবাস করা জায়েয নয়; সেহেতু কোন মুসলিমকে এসব দেশে অভিবাসনের ব্যবস্থা করা কি জায়েয হবে?

উত্তর : যেকোন পেশায় অসত্য তথ্য প্রদান করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না (বাক্বারাহ ২/৪২)। তবে এজন্য আইনী পেশায় যুক্ত থাকা নিষিদ্ধ নয়; বরং কোনরূপ মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

অন্যদিকে অমুসলিম এলাকায় তাদের সাথে বসবাস করতে রাসূল (ছাঃ) নিরুৎসাহিত করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে যে সকল মুসলমান বসবাস করে আমি তাদের দায়িত্ব হ’তে মুক্ত...’(আবুদাউদ হা/২৬৪৫; মিশকাত হা/৩৫৪৭)। তিনি বলেন, ‘মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস করো না, তাদের সংসর্গেও যেয়ো না। যে মানুষ তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে সে তাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হবে’ (তিরমিযী হা/১৬০৫; ছহীহাহ হা/২৩৩০)। মূলতঃ তাদের ভ্রষ্ট আক্বীদা-বিশ্বাস ও সংস্কৃতি থেকে আত্মরক্ষার জন্যই রাসূল (ছাঃ) এরূপ নির্দেশনা দিয়েছেন। অতএব সাধারণভাবে অমুসলিম দেশে মুসলমানদের অভিবাসন সমীচীন নয়।

তবে দ্বীন পালনের নিশ্চয়তা থাকলে এবং ফিৎনা থেকে মুক্ত থেকে নিজের ঈমান-আক্বীদা রক্ষার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হ’লে অমুসলিম দেশে গমন করা যায় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/২১৪)। সেক্ষেত্রে শর্ত হ’ল- (১) সে যথেষ্ট দ্বীনী জ্ঞানের অধিকারী হবে, যার মাধ্যমে সে হারাম থেকে বাঁচতে পারে (২) নিজে দ্বীন পালনে পূর্ণ সচেষ্ট থাকবে (৩) সেখানে বসবাসের বিশেষ প্রয়োজন থাকবে। উক্ত শর্তগুলি পূরণ না করতে পারলে অমুসলিম দেশে বা এলাকায় বসবাস না করাই কর্তব্য। কেননা তাতে নিজে কিংবা পরিবারের সদস্যদের যে কোন সময় ফেৎনায় পতিত হওয়ার আশংকা থাকে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/১৩১-৩২)। সুতরাং আইনী পেশায় থেকে অভিবাসনের কাজে সহযোগিতা করা যাবে, যদি প্রার্থী উক্ত শর্তগুলো মানার প্রতিশ্রুতি দেয়; নইলে নয়।

প্রশ্ন (৫৭) : জামা‘আতে ছালাত আদায়ের সময় সিজদারত অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলে জামা‘আত শেষে তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে, নাকি ছালাতের বাকী অংশ পড়লেই চলবে?

উত্তর : ছালাতের সিজদায় কারো তন্দ্রাজনিত কারণে মস্তিস্কের পরিবর্তন দেখা দিলে এবং ইমামের তাকবীরের কারণে তন্দ্রা দূরীভূত হয়ে গেলে ওযূ বা ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। বরং এই অবস্থায় ছালাত সম্পন্ন করবে। আর যদি সিজদায় গভীর ঘুম চলে আসে এবং ইমামের তাকবীর জানতে না পারে, তাহ’লে তার ওযূ এবং ছালাত বিনষ্ট হবে। ফলে তাকে নতুনভাবে ওযূ করে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, চোখ হ’ল পশ্চাদ্দারের বন্ধনস্বরূপ। অতএব যে ব্যক্তি ঘুমায় সে যেন ওযূ করে (ইবনু মাজাহ হা/৪৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১৪৯; নববী, শরহ মুসলিম ৪/৭৩-৭৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ০২/১০৮৯)।

প্রশ্ন (৫৮) : পার্টনারশীপ পোলট্রি ব্যবসায় প্রত্যেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। সর্বসম্মতিতে শর্ত রয়েছে যে, বিনিয়োগকারী অর্জিত মুনাফার ৪০ শতাংশ পাবে, কিন্তু কোন লোকসান বহন করবে না। আর ব্যবসা পরিচালনাকারী ৬০% মুনাফা পাবে ও লোকসান বহন করবে। এরূপ ব্যবসা জায়েয হবে কি?

উত্তর : এরূপ শর্তে ব্যবসা জায়েয হবে না। কারণ উক্ত চুক্তিতে যুলুম রয়েছে। ইবনু কুদামা বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী লোকসানের ভাগিদার হয়। অথচ বিনিয়োগকারী হয় না। অথচ লাভের ক্ষেত্রে উভয়ে সমঝোতা মোতাবেক শরীক হবে। এ বিষয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে কোন মতভেদ আছে বলে আমরা জানি না (মুগনী ৫/২৭-২৮, ৫/৪৯, ৫১)। এখানে ব্যবসায়ীকে দু’দিক থেকে দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। একদিকে সে ব্যবসা পরিচালনা করে, অন্যদিকে লোকসানেরও ভাগ বহন করে; যা যুলুম। সুতরাং উভয়ের সম্মতি থাকলেও এরূপ চুক্তি জায়েয নয় (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৮/৬৩-৬৪, ৪৪/৬)। আল্লাহ্ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঐ সকল শর্ত যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; মিশকাত হা/২৮৭৭)।

প্রশ্ন (৫৯) : আমাদের এলাকায় মৃত ব্যক্তির নখ, চুল কাটা হয় এবং পেট চেপে মল-মুত্র বের করা হয়। এটা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : এ বিষয়ে কোন দলীল পাওয়া যায় না। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, মৃত ব্যক্তিকে নিজ অবস্থায় (গোঁফ ও নখসহ) রেখে দেওয়াই আমার নিকট পসন্দনীয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/১৬৯-৭০)। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, ‘এগুলি কাটা আমার নিকট অপসন্দনীয়। বরং আমি মনে করি, যারা এটা করে তারা বিদ‘আত করে’ (আল-মুদাবেবনাহ ১/২৫৬)। হানাফী বিদ্বান ইবনুল হুমাম বলেন, মৃতের চুল ও নখ কাটবে না (ফাৎহুল ক্বাদীর ২/১১০)। যদিও শায়খ বিন বাযসহ একদল বিদ্বান কেবল লম্বা নখ ও গোঁফ কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১১৪)। তবে মৃতের পেট হালকা চাপ দিয়ে মল ও নোংরা বের করে দেওয়া যায়। যাতে পরবর্তীতে তা বের হয়ে দুর্গন্ধ না ছড়ায় (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ২/৩৪০)।

প্রশ্ন (৬০) : জনৈক নারী হঠাৎ মারা গেছেন। তাদের কোন সন্তান নেই। স্বামী, পিতা-মাতা ও এক সহোদর বোন আছেন। স্বামী জীবদ্দশায় মোহর আদায় করেননি। এখন তিনি তা আদায় করতে চান। উক্ত মোহরের হকদার কে হবে? স্বামী তা দান করতে পারবে কি? স্ত্রীর চাকুরী থেকে প্রাপ্ত কিছু টাকা স্বামীর একাউন্টে জমা আছে। ঐ টাকার হকদার কে হবেন?

উত্তর : স্বামী তার স্ত্রীর মোহরানার সমুদয় অর্থ বর্তমান জীবিত ওয়ারিছদের মধ্যে মীরাছের বিধান অনুযায়ী বণ্টন করে দিবেন। তিনি তার স্ত্রীর মোহরানার অর্থ দান করতে পারবেন না। কারণ বর্তমানে তিনি উক্ত অর্থের একক মালিক নন। বরং উক্ত অর্থের মালিক জীবিত ওয়ারিছরা। এছাড়া স্ত্রীর চাকুরী থেকে প্রাপ্ত অর্থও স্বামীসহ অন্যান্য ওয়ারিছগণ মীরাছের বিধান অনুপাতে প্রাপ্ত হবেন (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/১৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৯/৮৬)।

প্রশ্ন (৬১) : ক্বিয়ামত না হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ) মি‘রাজে গিয়ে জান্নাত-জাহান্নামে মানুষ দেখতে পেলেন কিভাবে?

উত্তর : কোন বান্দা কি পাপ করবে এবং তার জন্য কি শাস্তি ভোগ করবে এবং কতদিন শাস্তি ভোগ করবে সবই আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। সেকারণ তিনি তাদের ভবিষ্যৎ শাস্তি অগ্রিম প্রদর্শন করাতেও সক্ষম, যা রাসূল (ছাঃ)-কে মি‘রাজ রজনীতে বা বিভিন্ন সময়ে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে জান্নাতের সুখ এবং জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি তথা অদৃশ্যের বিষয় সমূহ প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। অতএব এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে, যা ঈমানের অংশ (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৫৩)।

প্রশ্ন (৬২) : ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব সবই ইহূদী-খৃষ্টানদের তৈরী। দ্বীনী কাজে এসব মাধ্যম ব্যবহার করা শরী‘আতসম্মত হচ্ছে কি?

উত্তর : ইহূদী-খৃষ্টানদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা নাজায়েয নয়। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানগুলি মৌলিকভাবে হারাম নয়। বরং তা হারাম কাজে ব্যবহার করাটা হারাম। সেজন্য দ্বীনী কাজে এসব গণমাধ্যম ব্যবহার করাতে কোন দোষ নেই। তবে অবশ্যই এই মাধ্যমগুলির খারাপ দিকগুলো থেকে নিজেদের হেফাযত করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১/৪৩১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৭/১১২)।

প্রশ্ন (৬৩) : কবরে লাশ রাখার সঠিক পদ্ধতি জানতে চাই?

উত্তর : লাশকে ডান কাতে শোয়ানো এবং ক্বিবলামুখী করে রাখা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমাদের মৃত ও জীবিত সবার ক্বিবলা কা‘বা (আবুদাউদ হা/২৮৭৫; ইরওয়া হা/৬৯০)। ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, এই আমল রাসূল (ছাঃ)-এর যুগ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে (মুহাল্লা ৫/১৭১, ৩/৪০৪)। আলবানী ইবনু হাযমের মতকে গ্রহণ করেছেন (আহকামুল জানায়েয ১/১৫১, তালখীছ ৬৪ পৃ)। এক্ষেত্রে লাশ যদি ডান কাতে স্থির না থাকে, তবে লাশের পিছনে শক্ত মাটি ব্যবহার করা যায় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৯৩; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/১৫১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮৯)।

প্রশ্ন (৬৪) : হজ্জ বা ওমরাহর সময় অনেকে সারা দিনে বার বার কা‘বাঘর তাওয়াফ করতে থাকেন। এভাবে ইচ্ছামত তাওয়াফ করা যাবে কি? তাওয়াফ করার ফযীলত কি?

উত্তর : তাওয়াফ বারবার করা যায়। কারণ নফল তাওয়াফের সময় ও সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাওয়াফকারীর প্রতি পদক্ষেপে একটি দাস মুক্তির ছওয়াব পাওয়া যায়, দশটি করে গুনাহ ঝরে পড়ে ও দশটি করে নেকী লেখা হয় এবং দশগুণ মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় (আহমাদ হা/৪৪৬২; তিরমিযী হা/৯৫৯, মিশকাত হা/২৫৮০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে নবজাতকের মত কলুষ মুক্ত হয়ে যায় (ছহীহুত তারগীব হা/১১১৩)। এছাড়া এর মাধ্যমে তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হয় (ছহীহুত তারগীব হা/১১১২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৯/১৩৩)।

উল্লেখ্য, তাওয়াফ করার সময় প্রতি দফায় মোট সাতবার চক্কর দিবে। ইচ্ছাকৃতভাবে এর কম বা বেশী করা যাবে না (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/২৯৫)।

প্রশ্ন (৬৫) : কারো ভাইয়ের স্ত্রী অনেকদিন যাবৎ অন্যের সাথে পরকীয়ায় জড়িত। বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানা সত্ত্বেও স্বাক্ষী না থাকায় সে শারঈ কারণে তা কাউকে জানাতে পারছেন না। এক্ষণে তার করণীয় কি? গোপন রাখা কি ঠিক হবে?

উত্তর : পরকীয়া একটি জঘন্য কর্ম। এতে কেবল ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; বরং পুরো সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য সংশোধনের স্বার্থে বিষয়টি তাকে জিজ্ঞেস করা বা তার স্বামীর কানে আভাস দেওয়ায় কোন দোষ হবে না। সাক্ষী না থাকলে বিচার করা যাবে না বা হদ কায়েম করা যাবে না। কিন্তু সংশোধনের জন্য বলা যাবে (নববী, শরহ মুসলিম ১৬/১৩৫; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১২/১২৪)। আল্লাহ বলেন, তোমরা প্রকাশ্য বা গোপন কোন অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না (আনআম ৬/৫১)। অর্থাৎ ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ (ইসরা ১৭/৩২)। উল্লেখ্য যে, সুনিশ্চিতভাবে জানার পরই বিষয়টি প্রকাশ করা যাবে এবং কোনভাবেই যেন মিথ্যা সন্দেহে কারো মান-সম্মানের ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রশ্ন (৬৬) : জামাইয়ের কোন দাবী নেই। কিন্তু শ্বশুর তাকে মোবাইল উপহার দিতে চান। এক্ষণে জামাইয়ের জন্য তা গ্রহণ করা শরী‘আত সম্মত হবে কি?

উত্তর : শ্বশুরের দেওয়া হাদিয়া জামাইয়ের জন্য গ্রহণ করা জায়েয। বরং হাদিয়া আদান-প্রদান করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হাদিয়া প্রদান কর ও মহববত বৃদ্ধি কর (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪)। তিনি আরো বলেন, ...যদি আমাকে হালাল পশুর পা অথবা বাহু খাওয়ার জন্যও দাওয়াত দেওয়া হয়, তাহ’লে অবশ্যই আমি তা গ্রহণ করব। আর এরূপ পা বা বাহু যদি আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়, তবুও আমি তা সাদরে গ্রহণ করব (বুখারী হা/২৫৬৮; মিশকাত হা/১৮২৭)। তবে হাদিয়া পাওয়ার জন্য মনে আকাঙ্ক্ষা রাখা যাবে না এবং এ ব্যাপারে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে ইঙ্গিতবহ কোন কথা বলা যাবে না। উল্লেখ্য, যৌতুক গ্রহণ করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা যেখানে মোহরানা প্রদানের বিনিময়ে বিবাহ করতে বলেছেন (নিসা ৪/২৩), সেখানে উল্টো স্ত্রী বা তার পরিবারের নিকট থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা কৌশলে কিছু গ্রহণ করা আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতার শামিল।

প্রশ্ন (৬৭) : অমুসলিমের রক্ত মুসলমানের দেহে প্রবেশ করানো যাবে কি? এছাড়া অমুসলিমকে রক্তদানে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : অমুসলিমের রক্ত কোন মুসলমানের দেহে প্রবেশ করানোতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। মুশরিকগণ আক্বীদাগত তথা বিশ্বাসগত দিক দিয়ে অপবিত্র (তওবা ৯/২৮), তবে শারীরিক দিক দিয়ে নয়। এছাড়া অমুসলিমদেরকে রক্ত দান করতেও কোন বাধা নেই। বরং মানুষ হিসাবে মুসলিম-অমুসলিম তথা সকল মানুষের প্রতি উদার সহযোগিতাই ইসলামের শিক্ষা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক তাযা প্রাণ রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে (বুখারী হা/২৩৬৩, মিশকাত হা/১৯০২)। তিনি বলেন, (নেকীর উদ্দেশ্যে কৃত) প্রত্যেক সৎকর্মই ছাদাক্বা (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১৮৯৩)। অতএব এটিও ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত হবে।

প্রশ্ন (৬৮) : অনেক সময় ছালাতরত অবস্থায় কিছু বোঝা যায় না, কিন্তু ছালাত শেষে দেখা যায় সামান্য মযী নির্গত হয়েছে। এমতাবস্থায় উক্ত ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি? এছাড়া অনেক সময় মযী বের হওয়ার পর তা ধুয়ে ওযূ করা সত্ত্বেও ছালাতরত অবস্থায় কিছু বের হয়ে যায়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় কারো মযী বের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে তাকে ওযূ করে পুনরায় পুরো ছালাত আদায় করতে হবে। আর ছালাতের পর বের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। আর ধৌত করার পরে মযী বের হ’লেও তাতে ওযূ নষ্ট হবে। সেজন্য তাকে পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে। তবে কারো নিয়মিত এরূপ হ’লে প্রত্যেক ছালাতের পূর্বে লজ্জাস্থান ধৌত করবে এবং নতুন ওযূ করে ঐ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে এবং সুস্থতার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করবে (আবুদাঊদ,  নাসাঈ,  মিশকাত হা/৫৫৮;  ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৬৮ পৃঃ;  নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/১৫৬)।

প্রশ্ন (৬৯) : ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) কি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন? তিনি কি ইমাম আহমাদের তাক্বলীদ করতেন?

উত্তর : ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ খৃ.) সালাফে ছালেহীনের মাসলাক অনুসরণকারী একজন যুগশ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ ছিলেন। মাসআলা ইসতিম্বাতের সময় তিনি ব্যক্তি নির্বিশেষে সকল ইমামের মাসআলা যাচাই করতেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) তার অন্যতম অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কারণ তাঁর ফৎওয়া সমূহ সর্বাধিক হাদীছ ভিত্তিক ছিল। তিনি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়াকে অগ্রাধিকার দিতেন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে জমহূরের মতামত দলীল ভিত্তিক না হ’লে তিনি তা বাদ দিয়ে হাদীছ ভিত্তিক ফৎওয়া প্রদান করেছেন। যেমন তিনি বলেন,وَلَيْسَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ النَّاسِ أَنْ يُقَلِّدَ رَجُلاً بِعَيْنِهِ فِي كُلِّ مَا يَأْمُرُ بِهِ وَيَنْهَى عَنْهُ وَيَسْتَحِبُّهُ إلاَّ رَسُولَ اللهِ صـ... ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত নির্দিষ্টভাবে কোন এক ব্যক্তির আদেশ বা নিষেধের তাক্বলীদ করা বা তাদের কথাকে মুস্তাহাব বলা কারো জন্য সমীচীন নয়। বরং মুসলমানরা সোনালী যুগ থেকেই মুসলিম বিদ্বানগণের নিকট ফৎওয়া তলব করতেন এবং কখনো এর অনুসরণ করতেন আবার কখনো আরেকজনের অনুসরণ করতেন এবং বিষয়টি দ্বীনের জন্য নিরাপদ ও প্রণিধানযোগ্য হওয়ার কারণে এই ধরনের আমল বিদ্বানগণের সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৩৮৩)। হাফেয যাহাবী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ইমাদুদ্দীন ওয়াসেত্বী (রহঃ) তাঁকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন (ইবনু রজব, যায়লু তাবাক্বাতিল হানাবিলা ৪/৩৯০; আল-‘উকূদুদ দুর্রিইয়াহ ৩১১ পৃ.; তাবাক্বাতুল হুফফায ৫১৬ পৃ.)। ৮৫ জন জীবনীকার তাঁকে ‘শায়খুল ইসলাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন (নাছিরুদ্দীন দিমাশক্বী, আর রাদ্দুল ওয়াফির ‘আলা মান যা‘আমা.... বই দ্রষ্টব্য)। এছাড়াও হানাফী বিদ্বান মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী ইমাম ইবনু তায়মিয়াহর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলি খন্ডন করেছেন (মিরক্বাত ৭/২৭৬৮-৭২)। অতএব ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) একজন যুগশ্রেষ্ঠ সালাফী ও মুজতাহিদ ইমাম ছিলেন। তিনি মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।

প্রশ্ন (৭০) : ছালাতুল হাজত-এর বিধান ও পদ্ধতি কি? এটা যে কোন সময়ে, এমনকি নিষিদ্ধ সময়েও পড়া যায় কি?

উত্তর : ছালাতুল হাজত আদায় করা মুস্তাহাব। যেকোন বিপদে বা প্রয়োজনে আল্লাহর সাহায্য কামনার উদ্দেশ্যে ওযূ করে নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতি কিংবা বিশেষ কোন দো‘আ ব্যতীত সাধারণ পদ্ধতিতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। আল্লাহ ছবর ও ছালাতের মাধ্যমেই তার সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন (বাক্বারাহ ২/৪৫)। রাসূল ও পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ ভীতি অনুভব করলেই দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন (ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৯৭৫; আহমাদ হা/২৩৯৭২; ছহীহাহ হা/৩৪৬৬)। রাসূল (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হ’তেন (ছহীহুল জামে‘ ৪৭০৩; মিশকাত হা/১৩১৫)। তবে এটি নফল ছালাত হওয়ায় এর জন্য কোন নিষিদ্ধ সময় নেই (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ২৭/২১১-১৫; ছালাতুর রাসূল ২৬১-৬২ পৃ.)। উল্লেখ্য, ছালাতুল হাজত ও তাতে পঠিতব্য দো‘আ সম্পর্কে যে চারটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যার দু’টি জাল ও দু’টি অত্যন্ত যঈফ (যঈফুত তারগীব হা/৪১৬, ৪১৮; যঈফুল জামে‘ হা/৫৮০৯; মিশকাত হা/১৩২৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/১৬২)।

প্রশ্ন (৭১) : বাসার গ্যাস সংযোগ অবৈধ। এতে রান্না করা খাবার হালাল হবে কি?

উত্তর : এরূপ কর্ম সরকারী সম্পদ তথা জনগণের সম্পদ অবৈধভাবে ব্যবহার করা আত্মসাৎ করা বা আমানতের খেয়ানত করার শামিল। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের মাল ভক্ষণ করো না’ (নিসা ৪/২৯)। তবে খাবার হালাল হ’লে তা খাওয়াতে দোষ নেই। কিন্তু অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের কারণে সে গুনাহগার হবে।

প্রশ্ন (৭২) : আমরা দুই ভাই-বোন। আমাদের পিতা তার ক্রয়কৃত অধিকাংশ জমি আমাদের মায়ের নামে লিখে দিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর পর তার জমি কিভাবে ভাগ হবে?

উত্তর : পিতার সম্পত্তির মত মায়ের সম্পত্তিও ‘ছেলেরা মেয়ের দ্বিগুণ’ ভিত্তিতে বণ্টিত হবে (নিসা ৪/১১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৯/৪৬৭)। এছাড়া মায়ের জীবিত অন্য কোন ওয়ারিছ থাকলে তারাও উক্ত সম্পত্তিতে অংশ পাবেন।

প্রশ্ন (৭৩) : রাসূল (ছাঃ) প্রতিদিন সকালে মধু পান করতেন- এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) মধু পান করতে পসন্দ করতেন (বুখারী হা/৫২৬৮)। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) প্রায়ই মধু পান করতেন (মুসলিম হা/২০০৮; মিশকাত হা/৪২৮৬)। তিনি তার স্ত্রীগণের নিকটে গেলে মধু পান করতেন (বুখারী হা/৫২৬৮)। তিনি ছাহাবীগণকে মধু পানের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন (বুখারী হা/৫৬৮০; মিশকাত হা/৪৫১৬)। তবে নির্দিষ্টভাবে প্রতিদিন সকালে মধু পান করতেন মর্মে ফাৎহুল বারী ও যাদুল মা‘আদে সনদ বিহীন একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয় (ফাৎহুল বারী ৯/৫৫৭; উমদাতুল কারী ২১/২৩২; যাদুল মা‘আদ ৪/২০৫)।

প্রশ্ন (৭৪) : ফরয গোসল দেরিতে করা যাবে কি? তথা উক্ত অবস্থায় পুরো রাত্রি অতিবাহিত করে ফজরের ছালাতের পূর্বে গোসল করলে গুনাহ হবে কি?

উত্তর : সাধারণ অবস্থায় ফজরের ছালাত পর্যন্ত ফরয গোসল বিলম্ব করা যাবে। তবে এসময় ওযূ করে নেওয়া মুস্তাহাব।  আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন নাপাক থাকতেন তখন কিছু খাওয়া অথবা ঘুমানোর ইচ্ছা করলে ওযূ করে নিতেন (মুসলিম হা/৩০৫; মিশকাত হা/৪৫৩)। ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ নাপাকী অবস্থায় ঘুমাতে পারে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে চাইলে ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করে নিতে পারে (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২১১; ছহীহ ইবনু হিববান হা/১২১৬; আদাবুয যিফাফ ১১৪ পৃ.)।

প্রশ্ন (৭৫) : পরহেযগারিতা সহ কাংখিত সদগুণাবলী সম্পন্ন স্বামী বা স্ত্রী পাওয়ার জন্য বিশেষ কোন দো‘আ বা আমল আছে কি?

উত্তর : সদগুণাবলী সম্পন্ন স্বামী বা স্ত্রী পাওয়ার জন্য বিশেষ কোন দো‘আ কুরআন বা হাদীছে বর্ণিত হয়নি। তবে সারগর্ভ দো‘আ হিসাবে বেশী বেশী ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র’ দো‘আটি পাঠ করা যায়। এই দো‘আটি রাসূল (ছাঃ) অধিকহারে পাঠ করতেন (বুখারী হা/৬৮৩৯; মিশকাত হা/২৪৮৭), যা ছালাতের শেষ বৈঠকে ও ছালাতের বাইরে সর্বাবস্থায় পড়া যাবে। এছাড়া কোন ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহর ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য ছালাতুল ইস্তিখারা আদায় করা যায় (দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (৭৬) : জনৈক বক্তা বলেন, মৌখিক আযান যতদূর পর্যন্ত শোনা যাবে, ততদূর পর্যন্ত অন্য মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। এর সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত শর্তটি মসজিদ নির্মাণের জন্য নয় বরং জামা‘আতে উপস্থিতি ওয়াজিব হওয়ার জন্য। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনল এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামা‘আতে উপস্থিত হ’ল না, তার ছালাত নেই (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; মিশকাত হা/১০৭৭; ফাৎহুল বারী ২/৩৮৫;  উছায়মীন,  শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন ৫/৭৩)। এক্ষণে নতুন মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে শর্ত হ’ল, ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা বা পারস্পরিক স্বার্থদ্বন্দ্ব ও যিদবশতঃ না হওয়া, মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়া এবং একই মহল্লায় না হওয়া (আবুদাঊদ হা/৪৫৫; মিশকাত হা/৭১৭; কুরতুবী, তাফসীর সূরা তওবা ১০৭ আয়াত; আলবানী, আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব, পৃঃ ৩৯৮)। স্মর্তব্য যে, মসজিদ বড় হওয়া এবং জামা‘আতে মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হওয়া অধিক ছওয়াব প্রাপ্তির কারণ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একাকী পড়ার চেয়ে দু’জনে, দু’জনের চেয়ে তিন জনে ছালাত আদায় করা উত্তম। এভাবে যত মুছল্লী বেশী হবে, ততই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রিয়তর হবে (আবুদাঊদ হা/৫৫৪,  মিশকাত হা/১০৬৬;  ফাৎহুল বারী ২/১৩৬)।

প্রশ্ন (৭৭) : নিফাস ভালো হওয়ার ৪-৫ দিন পর পুনরায় রক্ত আসলে তা হায়েয না ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : এটি উক্ত নারীর হায়েযের নিয়মিত সময়সীমার উপর নির্ভর করবে। সাধারণভাবে যে সময় হায়েয হওয়ার কথা, সেসময় রক্তস্রাব শুরু হ’লে সেটি হায়েয হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি রক্তস্রাব অনিয়মিত হয় তাহ’লে তা ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে। সাধারণত নিফাস বন্ধ হওয়ার পর ইস্তিহাযা হয় না। এক্ষণে চল্লিশ দিনের পূর্বে নিফাস বন্ধ হওয়ার পর আবার রক্তস্রাব হ’লে তা নিফাসের হুকুমে পড়বে। কারণ নিফাসের সর্বোচ্চ সময় চল্লিশ দিন (আবুদাঊদ হা/৩১১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/২২৫, ১৫/১৯৮; ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২/১৪৬; ফাতাওয়া ইবনু জাবরীন ১৬/১৬)।

প্রশ্ন (৭৮) : আমার স্ত্রী পালিত সন্তান। তাকে ও আমাকে এখনো পর্যন্ত আসল পিতা-মাতা সম্পর্কে জানানো হয়নি। এনিয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার মত অবস্থা হয়েছে। আমার মধ্যে কখনোই কিছু চাওয়া-পাওয়ার ছিল না। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কি?

উত্তর : এমন একটি বিষয় নিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করার যাবে না। বরং এমতাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং সম্পর্ক বজায় রেখে আসল পিতা-মাতার পরিচয় জানার চেষ্টা করবে। কারণ শ্বশুর পরিবার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিচয় গোপন রাখেন, তাহ’লে তারা গুনাহগার হবেন। কেননা একারণে পালক সন্তান অন্যকে পিতা-মাতা সাব্যস্ত করার অপরাধে অপরাধী হতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে অন্যকে পিতা-মাতা বলে, তার জন্য জান্নাত হারাম’ (বুখারী হা/৪৩২৬; মুসলিম হা/৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৪)।  

স্মর্তব্য যে, এক্ষেত্রে পরিচয় প্রকাশে অনীহার কারণ এমনটাও হতে পারে যে, উক্ত সন্তান অজ্ঞাত স্থান থেকে পাওয়া। ফলে পরিচয় পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। অতএব সর্বাবস্থায় ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং লালন-পালনকারীদের সাথে যথাসম্ভব সুন্দর আচরণ করতে হবে।

প্রশ্ন (৭৯) : হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) নিজের পিতার নামে কসম খেয়েছেন। এক্ষণে পিতা-মাতার নামে বা তাদের মাথায় হাত রেখে কসম খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : পিতা-মাতার নামে এভাবে কসম খাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে ব্যক্তি শিরক করল’ (তিরমিযী হা/১২৪১; মিশকাত হা/৩৪১৯)। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ যদি কসম করতে চায় তাহ’লে সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে অথবা চুপ থাকে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪০৭)। অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মূর্তির নামে এবং তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৪০৮)। উল্লেখ্য, রাসূল (ছাঃ) নিজ পিতার নামে কসম খেয়েছেন মর্মে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফ আবুদাঊদ হা/৩৮১৭; মিশকাত হা/৪২৬১ ‘খাদ্যসমূহ’ অধ্যায় ২ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (৮০) : স্কুলে শিক্ষকতার কারণে বাধ্যগতভাবে বিভিন্ন দিবস পালন অনুষ্ঠানে যেতে হয়। জেনে-শুনে চাকুরী বাঁচানোর স্বার্থে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিলে পাপ হবে কি?

উত্তর : ইসলামে দিবস পালনের কোন বিধান নেই। এগুলো বিজাতীয় রীতি হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হয়েছে। আর যেগুলো ইসলাম সমর্থন করে না, সেগুলোতে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা যাবে না (মায়েদাহ ৫/২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)। অতএব সাধ্যমত এধরনের বিজাতীয় অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। যদি বাধ্যগত অবস্থায় অংশগ্রহণ করতেই হয়, তবে অন্তরে ঘৃণা রাখবে। সরকার বাধ্য করলে এর দায়ভার ও পাপ বহন করবে সরকারই। আল্লাহ বলেন, ‘ঈমান আনার পরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্রোধ এবং কঠিন শাস্তি। কিন্তু যাকে বাধ্য করা হয়, অথচ তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে (তার কোন চিন্তা নেই)’ (নাহল ১৬/১০৬)। ইবনু কাছীর বলেন, সাধ্যমত ঈমানের উপর টিকে থাকাই মৌলিক কর্তব্য। তবে বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, কুফরীতে বাধ্য করা হ’লে বাধ্যকারীর কথামত কাজ করা জায়েয (ইবনু কাছীর)। সর্বোপরি সুযোগ থাকলে ভিন্ন কোন পেশা অবলম্বন করাই নিরাপদ ও উত্তম।

প্রশ্ন (৮১) : মেয়ের পিতা বিবাহে রাযী ছিলেন। কিন্তু ছেলের বাড়ি-ঘর দেখার পর তিনি অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর মেয়ের সিদ্ধান্তের উপর বিবাহের বিষয়টি ছেড়ে দেন। তারপর আমরা কাযী অফিসে দুই বন্ধুর সাক্ষীর মাধ্যমে বিবাহ করে একত্রে বসবাস করছি। আমাদের বিবাহ কি শুদ্ধ হয়েছে?

উত্তর : বিবাহের উক্ত পদ্ধতি শরী‘আত সম্মত হয়নি। কারণ পিতা মেয়ের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দিলেও তিনি বিবাহে অলীর ভূমিকা পালন করেননি বা কাউকে অলীর দায়িত্ব প্রদান করেননি। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মহিলা যদি অলীর বিনা অনুমতিতে বিবাহ করে, তাহ’লে তার ঐ বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৩১৩১ ও ৩১৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯; ইরওয়া হা/১৮৪০)। এক্ষণে সঠিক নিয়মে পিতার অনুমতিতে ও দু’জন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতিতে নতুনভাবে বিবাহ করা কর্তব্য (মুগনী ৭/৮ পৃ.)।

প্রশ্ন (৮২) : মসজিদে জমি দান করার ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে না রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে? দান করার পর উৎপাদিত ফসল মসজিদ কমিটিকে দিব না সবকিছু মসজিদ কমিটির দায়িত্বে ছেড়ে দিতে হবে? এক মসজিদে দানকৃত জমির আয় অন্য মসজিদে দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : মৌখিকভাবে মসজিদে দান করলেই দান কার্যকর হয়ে যাবে। তবে লিখিত বা প্রচলিত রেজিস্ট্রি পদ্ধতি গ্রহণ করা যরূরী, যাতে কোন অস্পষ্টতার সুযোগ না থাকে। আর দান করার পর উক্ত জমিদাতা নিজে আবাদ করে উৎপাদিত ফসল দেয়ার পরিবর্তে পুরো মালিকানা মসজিদ কমিটির হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি যার মাধ্যমে ইচ্ছা তাকে দিয়ে চাষাবাদ করিয়ে নিবে। অন্যথায় পরবর্তী ওয়ারিছদের কেউ অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। আর এক মসজিদের অতিরিক্ত সম্পদ অন্য মসজিদে দান করায় কোন বাধা নেই (নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন ৫/৩২২; মুগনী ৬/৩১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/১৮, ২০৬-২০৭)।

প্রশ্ন (৮৩) : ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘এক্বামত হ’লে আমরা ওযূ করতাম এবং ওযূ শেষে ছালাতের জন্য বের হ’তাম’ হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।

উত্তর : হাদীছটি সুনান আবুদাঊদে বর্ণিত হয়েছে হাসান সূত্রে (হা/৫১০)। হাদীছের ভাষ্য থেকে বুঝা যায় যে, কতিপয় ছাহাবী এক্বামতের পর ওযূ করতেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সকল ছাহাবী এক্বামতের পর ওযূ করতেন। বরং ইবনু ওমর (রাঃ) এটা এজন্য উল্লেখ করেছেন যেন মানুষ বুঝতে পারে এটা জায়েয (ইবনু রাসলান, শরহ আবুদাঊদ ৩/৪৪২)। তবে এটা তাদের নিয়মিত আমল নয়। কেননা অন্যান্য হাদীছে ছালাতে অগ্রগামীদের জন্য বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/৬১৫; মুসলিম হা/৪৩৭)। সিন্ধী বলেন, হাদীছের মর্মার্থ হ’ল, ছাহাবীদের কেউ কেউ কখনো এক্বামতের পর ওযূ করার জন্য বের হ’তেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) ক্বিরাআত লম্বা হওয়ার কারণে তারা জামা‘আত পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন (হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা সুনানিন নাসাঈ ২/২১)। মুখতার শানক্বীতী বলেন, ব্যস্ততার কারণে তারা মাঝে-মধ্যে এমনটা করতেন। যারা এরূপ করতেন তাদের বাড়ি ছিল মসজিদের খুব কাছে। কারণ অধিকাংশ ছাহাবী ইক্বামতের পূর্বেই মসজিদে প্রবেশ করতেন (শরহ সুনান নাসাঈ ৪/১৩৭১)।

প্রশ্ন (৮৪) : স্বামী বা স্ত্রীর কোন একজন পাগল হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালাক হয়ে যাবে কি?

উত্তর : পাগল হওয়া তালাক কার্যকর হওয়ার কোন কারণ নয়। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ পাগল হয়ে গেলে সুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে তালাক দিতে বা নিতে পারে। যদিও মানবিকতার দিকটিই অগ্রাধিকার প্রদান করা কর্তব্য হবে এবং স্ত্রী যদি অসুস্থ হয়, স্বামীর দায়িত্ব হবে তার জন্য সাধ্যমত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা (বাজী, আল-মুন্তাক্বা ৪/১২১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/২২৫)।

প্রশ্ন (৮৫) : আমার হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু আমার প্রতিবেশী অসুস্থ। এক্ষণে আমি হজ্জে না গিয়ে প্রতিবেশীকে সাহায্য করলে হজ্জের ছওয়াব পাব কি?

উত্তর : ফরয হজ্জ হ’লে সেটাই প্রথমে আদায় করতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা দ্রুত (ফরয) হজ্জ সম্পাদন কর। কেননা কেউ জানে না তার ভাগ্যে কি ঘটবে’ (আহমাদ হা/২৮৬৯)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ্জের ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন তা দ্রুত সম্পাদন করে’ (আবুদাঊদ হা/১৭৩২; মিশকাত হা/২৫২৩)। আর হজ্জের টাকা প্রতিবেশীর সাহায্যে ব্যয় করায় হজ্জের ছওয়াব পাওয়া যাবে না। কেননা হজ্জ হ’ল ফরযে ‘আয়েন এবং প্রতিবেশীকে সাহায্য করা হ’ল ফরযে কেফায়াহ। যা অন্য কেউ আদায় করলেও চলবে। তবে গরীব, অসহায় প্রতিবেশী বা অসুস্থ নিকটাত্মীয়ের জীবন রক্ষার অপরিহার্য প্রয়োজনে ছাদাক্বা করা উত্তম এবং সেজন্য হজ্জ বিলম্ব করাও যেতে পারে (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮৮২৩; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়াহ ৪৬৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৮৬) : বিবাহ ঠিক হওয়ার সময় শারঈ জ্ঞান না থাকায় মোহরানা অধিক পরিমাণে নির্ধারণ করা হয়। ছাত্রজীবনে থাকায় ব্যক্তিগত কোন উপার্জন নেই। ফলে পরিশোধেরও সামর্থ্য নেই। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : মোহরানা নির্ধারণ হবে ছেলের সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে। মোহরানার মালিক হ’ল স্ত্রী। এক্ষণে স্ত্রী চাইলে মোহরানার কিছু অংশ অথবা পুরোপুরি মাফ করে দিতে পারে। অতএব বিষয়টি স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নিবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২০/৪৪৯)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে, স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৪)।

প্রশ্ন (৮৭) : আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে তার বাড়িতে উন্নত খাবারের আয়োজন করা হয় এবং মৃতের জানাযায় উপস্থিত সকলকে খাওয়ানো হয়। এরূপ পদ্ধতি জায়েয কি?

উত্তর : মৃতের বাড়িতে এরূপ আনুষ্ঠানিকতার সাথে খাবারের আয়োজন করা শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ এটি বিলাপের অন্তর্ভুক্ত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২/৩৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৩৬৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৪০৪)। জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী (রাঃ) বলেন, মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্ত্তত করাকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম (ইবনু মাজাহ হা/১৬১২;  আহমাদ হা/৬৯০৫,  সনদ ছহীহ)। বরং শোকার্ত পরিবারকে প্রতিবেশীরা অন্ততঃ তিন দিন পর্যন্ত খাবার পাঠানোর চেষ্টা করবে এবং তাদেরকে মানসিক শক্তি যোগাবে। জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব মুতার যুদ্ধে শাহাদত বরণ করলে রাসূল (ছাঃ) তার প্রতিবেশীদের বলেন, ‘তোমরা জা‘ফরের পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্ত্তত কর। কেননা তাদের নিকট এমন সংবাদ এসেছে, যা তাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে’ (ইবনু মাজাহ হা/১৬১০; মিশকাত হা/১৭৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১০১৫)। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন যারা আসেন তাদের খাবার ব্যবস্থাপনার জন্য মাইয়েতের বাড়িতে বা প্রতিবেশীদের দায়িত্বে মেহমানদারী করা যাবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৩২;  মিশকাত হা/৫৯৪২;  ইরওয়া হা/৭৪৪;  ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪১০;  বিস্তারিত দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘কোরআন ও কলেমাখানী সমস্যা সমাধান’ বই)।

প্রশ্ন (৮৮) : মসজিদে অনেক সময় মুছল্লীরা দুনিয়াবী গল্প-গুজব, হৈ-চৈ ইত্যাদি করে। এটা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মসজিদ তো আল্লাহর যিকর, ছালাত ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য (মুসলিম হা/২৮৫; মিশকাত হা/৪৯২ ‘ত্বাহারৎ’ অধ্যায়)। সুতরাং মসজিদকে দুনিয়াবী গল্প-গুজবের স্থান বানানো যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল করবে না’ (মুসলিম হা/৪৩২; মিশকাত হা/১০৮৯)। তিনি আরও বলেন, শেষ যামানায় লোকেরা মসজিদে গোল হয়ে বসবে। দুনিয়া হাছিলই তাদের উদ্দেশ্য হবে। তাদেরকে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। অতএব তোমরা তাদের সাথে বসবে না (হাকেম হা/৭৯১৬, সনদ ছহীহ)। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) মসজিদে নববীর পার্শ্বে একটি বড় চত্বর বানিয়েছিলেন, এর নাম রাখা হয়েছিল বুত্বায়হা বা বাত্বহা। তিনি লোকেদের বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি বাজে কথা বলবে অথবা কবিতা আবৃত্তি করবে অথবা উঁচু স্বরে (দুনিয়াবী) কথা বলবে, সে যেন ঐ চত্বরে চলে যায়’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৪২২; মিশকাত হা/৭৪৫; বায়হাক্বী ১০/১০৩,  হা/২০৭৬৩,  সনদ ছহীহ;  ইবনু আব্দিল বার্র,  আল-ইস্তিযকার হা/৩৯৪)।

প্রশ্ন (৮৯) : বিবাহিত নারী স্বামীর সাথে মিলিত হওয়া থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরত থাকলে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় কি? কতদিন এভাবে থাকা জায়েয?

উত্তর : স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক সম্মতিতে যতদিন প্রয়োজন ততদিন বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে। এতে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটবে না। তবে স্বামীর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রী যদি তাতে কোন কারণ ছাড়াই সাড়া না দেয়, তাহ’লে সে চরম অপরাধী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে শয্যায় আহবান করে আর সে আসতে অস্বীকার করে, তাহ’লে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ মহিলার উপর লা‘নত করতে থাকে (বুখারী হা/৫১৯৩)। অপরদিকে স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামী সর্বোচ্চ ছয় মাস বাইরে থাকতে পারে। এরপর স্বামী ফিরে না আসলে স্ত্রী আদালতে অভিযোগ করতে পারে। এতেও স্বামী সম্মত না হ’লে স্ত্রী খোলা‘র মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এবং অন্যত্র বিবাহ করতে পারে (বায়হাক্বী ৯/৫১, হা/১৭৮৫০; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১২৫৯৪)। আর স্বামী যদি একেবারে নিখোঁজ হয়ে যায়, তাহ’লে স্ত্রী স্বামীর জন্য চার বছর অপেক্ষা করবে। এরপর নির্ধারিত চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন শেষে অন্যত্র বিবাহ করতে পারে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৬৭২০; ইরওয়া হা/১৭০৮-১৭০৯, সনদ হাসান)।

প্রশ্ন (৯০) : নিজ মায়ের প্রতি সন্তানের যে হক আদায় করা কর্তব্য সৎমায়ের জন্যও কি একই রকম হক আদায় করা আবশ্যক?

উত্তর : সৎমায়ের মর্যাদা জন্মদাত্রী মায়ের সমান নয়। তবে পিতার স্ত্রী হিসাবে তিনি মাহরাম এবং সদাচরণ পাওয়ার হকদার। বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে। (১) তাদের জন্য দো‘আ করা (২) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা (৩) তাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ পূর্ণ করা এবং (৪) তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয় ও (৫) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা’ (আবুদাঊদ হা/৫১৪২; হাকেম হা/৭২৬০; মিশকাত হা/৪৯৩৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪১৮, ইবনু হিববান, হাকেম, যাহাবী, হুসাইন সালীম আসাদ এর সনদকে ছহীহ ও জাইয়িদ বলেছেন। তবে আলবানী  ও আরনাউত্ব যঈফ বলেছেন)।

প্রশ্ন (৯১) : মৃত ব্যক্তির সম্পদ কখন বণ্টন করতে হবে? এ ব্যাপারে শারঈ কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর : মৃত্যুর পর সম্পদ বণ্টিত হওয়াই ইসলামী শরী‘আতের বিধান। কেননা আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের জন্য তার হক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন’ (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩০৭৩)। ইমাম আহমাদ বলেন, কুরআনে বর্ণিত বিধি মোতাবেক মৃত্যুর পরেই মীরাছ বণ্টন করাকে আমি পসন্দ করি (মুগনী ৬/৬১)।

তবে ওয়ারিছদের সম্পদ গ্রহণ করার পূর্বে মাইয়েতের কোন অছিয়ত (সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ) এবং ঋণ থাকলে তা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে, যদিও সমুদয় সম্পদ শেষ হয়ে যায় (নিসা ৪/১১)। উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর পরপরই ওয়ারিছরা তার সম্পত্তির হকদার হয়ে যায়। অতএব যত দ্রুত সম্ভব সম্পদ বণ্টন করে নিতে হবে। তা না হ’লে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাবে এবং সম্পর্ক নষ্ট হবে (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়াহ, ফৎওয়া নং ৪০৫৪৯০)। অপরপক্ষে কেউ যদি মৃতের সম্পদ অন্যায়ভাবে নিজের আয়ত্তে রাখে এবং বণ্টনের সুযোগ না দেয়, তবে সে গোনাহগার হবে। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করোনা পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)।

প্রশ্ন (৯২) : সরকারী চাকুরীর কারণে নির্বাচনের সময় সহযোগিতা করতে হয়। অথচ রাষ্ট্র আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে বিশ্বাস করে না। এক্ষণে বাধ্যগত কারণে এ দায়িত্ব পালন করলে কি কুফরী কাজে সহযোগিতার নামান্তর হবে? এজন্য ঢালাওভাবে কাউকে কাফের বলা যাবে কি?

উত্তর : সরকারের যে কোন বৈধ কর্মে সহযোগিতা করায় কোন বাধা নেই। ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস পোষণ করলে সেজন্য সরকারই দায়ী থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেকেই স্বীয় অপকর্মের জন্য দায়ী হবে এবং কেউ অন্য কারো (পাপের) ভার বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)। আর নির্বাচন কোন কুফরী কাজ নয়। অতএব এই দায়িত্ব পালন করলে তা কুফরী কাজে সহযোগিতা করা হবে না। এমনকি ‘জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস’ বলা বা ধারণা করা কুফরী মন্তব্য হ’লেও উক্ত বাক্যের কারণে কোন মুসলমানকে ঢালাওভাবে কাফের বলা যাবে না। তারা ফাসেক হ’তে পারে কিন্তু ইসলামের গন্ডি থেকে বহির্ভূত নয়। সূরা মায়েদাহ ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ আয়াতে বর্ণিত কাফের, যালেম ও ফাসেক-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম অস্বীকারকারী, সে কাফের। আর যে আল্লাহর হুকুমকে স্বীকার করে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করে না বা কার্যক্ষেত্রে বিপরীত করে সে যালেম এবং ফাসেক (ফাৎহুল ক্বাদীর ২/৪৫; তাফসীর ইবনু কাছীর)।

প্রশ্ন (৯৩) : প্রত্যেক ছালাতের সালাম ফিরানোর পর মাসনূন দো‘আ ব্যতীত অতিরিক্ত কিছু দো‘আ নিজের প্রয়োজনে নিয়মিতভাবে পাঠ করি। এভাবে নিয়মিত পাঠ করা বিদ‘আত হবে কি?

উত্তর : বিদ‘আত হবে না। তবে প্রথমে হাদীছে বর্ণিত মাসনূন দো‘আসমূহ পাঠ করবে অতঃপর আম দো‘আসমূহ পাঠ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ দো‘আ করবে, তখন সে যেন প্রথমে তার প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো‘আ শুরু করে। তারপর যা চায় প্রার্থনা করে। কেননা ঐ ব্যক্তি সফল হওয়ার অধিক হকদার’ (ছহীহাহ হা/৩২০৪)। তবে প্রচলিত শিরকী ও বিদ‘আতী দো‘আ সমূহ হ’তে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্ন (৯৪) : হিন্দুদের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক? বিশেষতঃ যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর : হিন্দুদের বাসায় দাওয়াত খাওয়া জায়েয। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে, যেমন- (১) তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। মূলতঃ মূর্তিপূজক, নাস্তিক প্রমুখ যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে যবেহ করে, তাদের যবেহকৃত পশু খাওয়া নিষিদ্ধ (বাক্বারাহ ২/১৭৩; মায়েদাহ ৫/৩)। (২) খাবারের পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কারণ অনেক সময় তারা একই পাত্রে শূকরের গোশত বা মদ পান করে। (৩) সেখানে যেন কোন মূর্তি বা বাদ্য-বাজনা না থাকে। ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণ এরূপ গৃহে প্রবেশ করতেন না (বায়হাক্বী ৭/২৬৮ পৃ. হা/১৪৯৫৯ সনদ ছহীহ; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫-৬৬ পৃ., মাসআলা ক্রমিক ৩৩)।

প্রশ্ন (৯৫) : ইমাম ছাহেব এশার ছালাতের ক্বিরাআত সরবে না পড়ে নীরবে পড়েছেন। এরূপ ভুলের ক্ষেত্রে পিছন থেকে লোকমা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : এশার ছালাতে ক্বিরাআত সরবে পাঠ করতে হয় (বুখারী হা/৭৬৯,  মিশকাত হা/৮৩৪)। এক্ষণে কেউ যদি ক্বিরাআত নীরবে পাঠ করে তাহ’লে মুক্তাদীরা লোকমা দিবে এবং ইমাম পুনরায় সূরা ফাতিহা থেকে পাঠ করবে। আর যদি এভাবেই এক রাক‘আত শেষ হয়, তাহ’লে তার জন্য সহো সিজদা দেওয়া সুন্নাত। কারণ সে সুন্নাত পরিত্যাগ করেছিল (হাত্তাব, মাওয়াহিবুল জলীল ২/২৬)। উল্লেখ্য যে, ছালাতের মধ্যে কোন সুন্নাত আমল ছুটে গেলে সহো সিজদা সুন্নাত, আর ওয়াজিব ছুটে গেলে সহো সিজদা ওয়াজিব হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৮১; দ্র. ছালাতুর রাসূল  (ছাঃ) ১৫২ পৃ.)।

প্রশ্ন (৯৬) : মসজিদে সূদ বা অবৈধ ইনকামের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের প্রদত্ত টাকা গ্রহণ করা যাবে কি? আর এর মাধ্যমে দাতা কোন নেকী পাবে কি?

উত্তর : পবিত্র সম্পদ থেকেই দান করা কর্তব্য (বাক্বারাহ ২/২৬৭)। তবে কেউ যদি হারাম উপার্জন থেকে দান করে, তবে তা গ্রহণ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) অমুসলিমদের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন (বুখারী হা/২৬১৭)। হারাম উপার্জনের জন্য দাতা দায়ী হবেন, গ্রহীতা নন। আল্লাহ বলেন, একের পাপ ভার অন্যে বহন করবে না (আন‘আম ৬/১৬৪)। তাছাড়া প্রশ্নোল্লেখিত ব্যক্তির মত যদি কারু সম্পদে হালাল ও হারাম মিশ্রিত থাকে, তবে সেই সম্পদ গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে জায়েয (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১)। কিন্তু হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে দান আল্লাহর নিকটে কবুল হয় না এবং এর মাধ্যমে দাতা কোন নেকীও পাবে না (মুসলিম হা/২২৪, মিশকাত হা/৩০১; উছায়মীন,  মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৮৫)।

প্রশ্ন (৯৭) : মা মারা যাওয়ার পর তার নেকীর জন্য তার পক্ষ থেকে ওমরাহ পালন করা যাবে কি?

উত্তর: মৃত মায়ের পক্ষ থেকে ওমরাহ করা যাবে। কারণ মৃতের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হ’ল তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, ছাদাক্বা করা ও তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা (আবুদাঊদ হা/২৮৮৩; মিশকাত হা/৩০৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৯১)। আর ওমরাহ হ’ল হজ্জের মত। পার্থক্য হ’ল এটি বছরের যেকোন সময় করা যায়। আর আগে নিজে হজ্জ না করলে মায়ের বা অন্যের জন্য হজ্জ করা যায় না। কিন্তু ওমরাহর জন্য এটি শর্ত নয়।

সংশোধনী : গত অক্টোবর ২০২১ সংখ্যার ১৮/১৮ নং প্রশ্নে বলা হয়েছে যে, কারো পক্ষ থেকে ওমরা করার ক্ষেত্রে নিজে ওমরা করা শর্ত নয়। কিন্তু এ বিষয়ে সঠিক বক্তব্য হ’ল, অন্য কারো পক্ষ থেকে ওমরা করতে হ’লে তাকে হজ্জের ন্যায় পূর্বেই নিজের ওমরা করতে হবে। বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত (নববী, আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহায্যাব ৭/১১৮; উছায়মীন, মাজমূউ‘ল ফাতাওয়া ২২/৪১)। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত -সম্পাদক।

প্রশ্ন (৯৮) : মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট কত সময়?

উত্তর : সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং পশ্চিমাকাশে লাল আভা থাকা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি সাধারণতঃ এক ঘন্টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হ’তে পারে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২৭-২৮)।

প্রশ্ন (৯৯) : আমার বয়স ৬৫ বছর। আমি আমার সৎ বোনের আপন নাতনীকে বিবাহ করেছিলাম। এখন আমার ৭ সন্তান। আমি বোনের নাতনী মাহরাম হওয়ার বিধান জানতাম না। এক্ষণে আমার করণীয় কী?

উত্তর : বিধান জানার পর স্বামী-স্ত্রী হিসাবে আর একসাথে থাকার সুযোগ নেই; বরং এখুনি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। এজন্য কোন তালাকও দেওয়া লাগবে না। কারণ উক্ত বিবাহ বৈধ হয়নি। সৎবোনের নাতনী নিজের বোনের নাতনী সমতুল্য, যে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী (নিসা ৪/২৩)। উক্ত আয়াতে বোনের নাতনী ভাগিনেয়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৬৫;  সারাখ্সী,  আল-মাবসূত্ব ৩০/২৯১;  আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৯/১২০;  ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/৩৮৪, ৩৮৭)। এক্ষণে উক্ত সন্তানেরা ওয়ারিছ সাব্যস্ত হ’লেও মাহরাম হওয়ার কারণে স্ত্রী ওয়ারিছ হবে না। তবে সাধারণভাবে তাকে প্রয়োজনীয় সম্পদ প্রদান করা যাবে। আর উক্ত ব্যক্তি এই অজ্ঞতাজনিত ভুলের জন্য খালেছ তওবা করবে এবং সন্তানদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।

প্রশ্ন (১০০) : জানাযার ছালাত জামা‘আতের সাথে হওয়া সত্ত্বেও সেখানে পায়ে পা মিলাতে হয় না কেন?

উত্তর : জানাযার ছালাতেও যথারীতি পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলাতে হয়। এক্ষেত্রে জানাযার ছালাত ও সাধারণ ছালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই (মুগনী  ২/১৮৫,  ২/৩৬৮;  উছায়মীন,  মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২২-২৩,  ১৭/১০)।

প্রশ্ন (১০১) : ছালাত অবস্থায় চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে কি?

উত্তর : অশ্রুপাত যদি আল্লাহভীতির কারণে হয়, তবে তা সর্বোত্তম এবং এটি আল্লাহভীরু বান্দাদের অন্যতম নিদর্শন (আবুদাঊদ হা/৯০৪; নাসাঈ হা/১২১৪)। তবে দুনিয়াবী কারণে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা যাবে না। এতে বরং ছালাত বাতিল হয়ে যাবে (মুগনী ২/৪০-৪১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৮/১৭০-৭১)। আর যদি কোন রোগের কারণে এমনটি হয়, তবে তাতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা এটি ছালাত বিনষ্ট হওয়ার কোন কারণ নয়।

প্রশ্ন (১০২) : আমার স্বামী পরহেযগার ও ইনছাফকারী। সার্বিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার বাধাতেই তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। এভাবে কেবল ঈর্ষা ও ভালোবাসার কারণে তাকে বিবাহে বাধা দেওয়ার কারণে আমি গোনাহগার হব কি?

উত্তর : সক্ষম স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহে বাধা দেওয়া জায়েয নয়। কারণ এটি শরী‘আতে বৈধ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভাল মনে কর দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পার (নিসা ৪/০৩)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উছায়মীন বলেন, কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে, সে তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহে বাধা দিবে। কারণ একাধিক বিয়ে করা স্বামীর অধিকার (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/০২)। শায়খ বিন বায বলেন, একাধিক বিবাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উম্মতের সংখ্যাধিক্যের মাধ্যম এবং সার্বিক বিশৃংখলা ও ব্যভিচার থেকে বাঁচার উপায়। কারণ নারীরা কখনো অসুস্থ হয়; হায়েয, নিফাস বা গর্ভকালীন অবস্থায় বিপদগ্রস্ত থাকে। এসময় একাধিক স্ত্রী থাকলে একজন পুরুষ তার চাহিদা মিটাতে পারে এবং অনাকাংখিত পাপ থেকে সহজে বাঁচতে পারে (বিন বায, ফাতাওয়াল জামি‘ইল কাবীর)।

তাছাড়া সমাজে এমন অসংখ্য তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা, অসহায় মহিলা রয়েছে, যারা নিরাপত্তাহীন কিংবা আশ্রয়হীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। তাদের দায়িত্ব নেয়ার মত কেউ নেই। এমতাবস্থায় সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে পুরুষদের একাধিক বিবাহে উৎসাহিত করা উচিৎ। যাতে সমাজের পরিবেশ সুন্দর হয় এবং বিবাহ বহির্ভূত অপকর্ম না ঘটে। সুতরাং স্ত্রীর জন্য কর্তব্য হবে স্বামীকে একাধিক বিবাহে বাধা না দেওয়া এবং নেকীর কাজে তাকে সহযোগিতা করা।

প্রশ্ন (১০৩) : কোন ব্যক্তির সাথে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আবার সাক্ষাৎ হ’লে পুনরায় সালাম দিতে হবে কি?

উত্তর : এ বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সালাম দেওয়াই উত্তম। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন কোন মুসলিম তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। যদি তাদের উভয়ের মাঝে গাছ, দেওয়াল ও পাথর আড়াল হয়, অতঃপর আবার উভয়ের সাক্ষাৎ হয়, তাহ’লে তারা যেন পুনরায় সালাম দেয় (আবুদাঊদ হা/৫২০০;  মিশকাত হা/৪৬৫০;  ছহীহুল জামে‘  হা/৭৮৯; নববী,  আল-মাজমূ‘ ৪/৫৯৮)।

প্রশ্ন (১০৪) : বর্তমান সমাজে মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অধিকাংশ অভিভাবক মেয়েদের সর্বোচ্চ শিক্ষা ও চাকুরী করার আগ পর্যন্ত বিবাহ দিতে রাযী হন না। এরূপ মেয়েরা চরিত্র রক্ষার্থে পিতা-মাতার অমতে বিবাহ করতে চাইলে করণীয় কি?

উত্তর : দ্বীনদার ও উপযুক্ত পাত্রের পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব আসার পরও অভিভাবক বিবাহ না দিলে এবং সাবালিকা মেয়ের পূর্ণ সম্মতি থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক অন্যায় যিদ করলে পরবর্তী অভিভাবক হিসাবে চাচা বা সাবালক ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এতেও ব্যর্থ হ’লে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে বিবাহের ব্যবস্থা করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩০/১৪৫; উছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/১৪৮)। তবে স্মর্তব্য যে, কোনভাবেই গোপনে বা পরিবারের অজ্ঞাতসারে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। কেননা বিবাহ হ’ল প্রকাশ্য বিষয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা বিবাহের ঘোষণা দাও’ (আহমাদ হা/১৬১৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৭২)।

প্রশ্ন (১০৫) : মসজিদের দেওয়ালের কোন অংশে মুছল্লীদের স্মরণ করানোর উদ্দেশ্যে কালেমায়ে ত্বাইয়েবা, শাহাদত বা অন্য কিছু আরবীতে লেখা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদের প্রাচীরে কোন কিছু লেখা সমীচীন নয়। বিশেষ করে সামনে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কোন কিছু লেখা বা টাঙানো মোটেও ঠিক নয়। কারণ এতে মুছল্লীর মনোযোগ বিনষ্ট হ’তে পারে, যা ছালাতের আদবের খেলাফ। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই মুছল্লী ছালাতের মধ্যে আল্লাহর সাথে গোপনে আলাপ করে’ (বুখারী হা/৫৩১; মিশকাত হা/৭৪৬)। তবে মুছল্লীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না এমন স্থানে মুছল্লীদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দো‘আ সমূহ লিখে টাঙানো যায় (বিন বায,  লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৮/১৯৭;  ছালেহ ফাওযান,  আল-মুনতাক্বা ২/৭৭)।

প্রশ্ন (১০৬) : সূদী ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাবৃত্তির টাকা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : দরিদ্র বা অসহায় ব্যক্তিরা উক্ত শিক্ষাবৃত্তি নিতে পারে। কারণ সূদ মিশ্রিত টাকা উপার্জনকারীর জন্য হারাম হ’লেও গ্রহীতার জন্য হারাম নয়। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, যখন হারাম সম্পদ দরিদ্র বা অসহায়দের প্রদান করা হয়, তখন তা গ্রহণ করা তাদের জন্য হারাম নয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১)। তবে এরূপ বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো মূলতঃ তাদের সূদী কার্যক্রমের প্রচারণা চালায়। অতএব সাধ্যমত এগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই সমীচীন।

প্রশ্ন (১০৭) : আমি ৯০ হাযার টাকার বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য একটা জমি লিজ নেই। অতঃপর তা অন্য কারো কাছে বছরে ১০ হাযার টাকা করে লিজ দেই এবং প্রতি বছর ৭ হাযার টাকা অতিরিক্ত লাভ করি সেটা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ভাড়ায় নেওয়া বাড়ি অন্যত্র অধিক ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করা জায়েয। তবে যদি মালিকের সাথে এর বিপরীত কোন চুক্তি থাকে তাহ’লে করা যাবে না। ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু কুদামাহ, যারকাশী, ইবনু রজব হাম্বলী প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন, ভাড়াটিয়া ভাড়াকৃত বস্ত্ত সমমূল্যে বা অধিক মূল্যে অন্যত্র ভাড়া দিলে তা জায়েয হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪০৮;  ইবনু রজব, আল-কাওয়ায়েদ ১৯৭ পৃ.; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৫/২৭৭;  শারহুয যারকাশী ৪/২৩৪)।

প্রশ্ন (১০৮) : রাসূল (ছাঃ)-এর কবর খনন, লাশ চুরির অপচেষ্টা ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক ঘটনা শোনা যায়। এর কোন সত্যতা আছে কি?

উত্তর : এগুলির সত্যতা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) এবং তাঁর দুই সাথী আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর লাশ চুরি করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৩৫)। কিন্তু প্রতিবারেই আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে তা ব্যর্থ হয়ে গেছে। অন্ততঃ পাঁচ বার এরূপ অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয়বার চেষ্টা চালিয়েছিল মিসরের শী‘আ রাফেযী শাসক মানছূর বিন নিযার বিন মুঈদ। যে ৪০৮ হিজরীতে নিজেকে মা‘বূদ বলে দাবী করেছিল। তৃতীয়বারে ৫৫৭ হিজরীতে সুলতান নূরুদ্দীন যঙ্গীর শাসনামলে মরক্কোর মুসলিমবেশী দু’জন খ্রিষ্টান সুড়ঙ্গ খননের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছিল। ধরা পড়লে দু’জনকেই হত্যা করা হয় (আবুল হাসান সামহূদী, অফাউল অফা ২/১৮৮)। চতুর্থবার শামের একদল খ্রিষ্টান এই অপচেষ্টা করে। কিন্তু মসজিদে নববীর রক্ষীরা তাদের আটক করে ফেলে (রিহলাতু ইবনুয যুবায়ের ‘৫৭৮ হিজরীর ঘটনাবলী’ ৩৪-৩৫ পৃ.)। পঞ্চমবার শামের চল্লিশ জনের একদল রাফেযী শী‘আ রাত্রিবেলা মসজিদে নববীর বাবুস সালাম দরজা দিয়ে গর্ত খননের যন্ত্রপাতি সহ প্রবেশ করলে ওছমানী মিহরাবের নিকট মাটি ফেটে যায় এবং তারা সবাই সেখানে সমাহিত হয় (অফাউল অফা ২/১৮৯)।

প্রশ্ন  (১০৯) : প্রতিবেশী গরীবদের কিছু দান করার জন্য নিজ পরিবারে কিছু ব্যয় সংকোচন করায় পরিবার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না। তাদের মতে, সর্বোত্তম ব্যয় হ’ল নিজ পরিবারে ব্যয় করা। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর : পরিবারের জন্য ব্যয় করাই হ’ল মূল কর্তব্য। এব্যাপারে শরী‘আতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীকে খরচ করার পদ্ধতি বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এ অর্থ তুমি প্রথমে তোমার নিজের জন্য ব্যয় কর। তারপর যদি কিছু বাকী থাকে তাহ’লে তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় কর। অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয়দের জন্য। এরপর কিছু বাকী থাকলে অন্যান্য কাজে ব্যয় কর’। এ কথা বলে তিনি সামনে, ডাইনে ও বামে ইঙ্গিত করলেন (মুসলিম হা/৯৯৭; মিশকাত হা/৩৩৯২ ‘দাসমুক্তি’ অধ্যায়)। অন্য হাদীছে এসেছে, এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, এক দীনার দাসমুক্তির জন্য ব্যয় কর, এক দীনার কোন মিসকীনকে ছাদাক্বা কর এবং এক দীনার তুমি পরিবারের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ দীনারে বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (মুসলিম হা/৯৯৫;  মিশকাত হা/১৯৩১  ‘যাকাত’ অধ্যায়)। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, সে মুমিন নয়, যে ভরপেট খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে’ (আল আদাবুল মুফরাদ হা/১১২; মিশকাত হা/৪৯৯১;  ছহীহাহ হা/১৪৯)। অতএব পরিবারিক ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি গরীব প্রতিবেশীর প্রতি অবশ্যই সুদৃষ্টি রাখতে হবে।

প্রশ্ন (১১০) : পিতা-মাতা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে বিয়ে দিতে চায়। তাদের এই নির্দেশ অমান্য করলে আমি গোনাহগার হব কি?

উত্তর : ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে বিবাহ দেওয়া শরী‘আতসম্মত নয়। এজন্য সাবালক ছেলে-মেয়ের সম্মতি আবশ্যক। জনৈকা সাবালিকা মেয়েকে তার পিতা তার অসম্মতিতে বিবাহ দিলে রাসূল (ছাঃ) মেয়ের আপত্তির কারণে উক্ত বিবাহ বাতিল করে দেন (বুখারী হা/৬৯৪৫; মিশকাত হা/৩১২৮, ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৩)। অতএব পিতা ও মেয়ে উভয়ের পারস্পরিক সম্মতি ও পিতার অনুমতির মাধ্যমে বিয়ে হ’তে হবে। তবে সাবালক ছেলে স্বাধীনভাবে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তাকে পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট রেখে বিয়ে করা কর্তব্য। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯, মিশকাত হা/৪৯২৭)। জোরপূর্বক বিবাহ দিলে ছেলে বা মেয়ে তা ভেঙ্গে দিতে পারে এবং এতে সে গোনাহগার হবে না। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, পিতা-মাতার জন্য সমীচীন নয় যে, ছেলের বিবাহ এমন মেয়ের সাথে দিবে যাকে সে চায় না। এমন বিবাহ যদি সে অমান্য করে তাহ’লে সে অবাধ্য হিসাবে গণ্য হবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৩০)। তবে যদি এমন হয় যে, পিতা-মাতা একজন দ্বীনদার মেয়েকে বিবাহের জন্য ঠিক করেছেন, কিন্তু বৈষয়িক কারণে ছেলের সেটি পসন্দ নয়। এমতাবস্থায় পিতা-মাতার আনুগত্য করা আবশ্যক। বিবাহ না করলে সে অবাধ্য সন্তান হিসাবে গণ্য হবে।

প্রশ্ন (১১১) : ঋণদাতা ও গ্রহীতা উভয়েই মৃত। তাদের ওয়ারিছ পাওয়া যায় না। এক্ষণে ঋণগ্রহীতার ওয়ারিছগণ ঋণদাতার উক্ত ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবে?

উত্তর : প্রথমে ওয়ারিছ খুঁজে বের করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে। যদি কোনভাবেই না পাওয়া যায় তাহ’লে উক্ত সম্পদ তার নামে বায়তুল মাল বা অন্য কোন জনকল্যাণমূলক কাজে দান করে দিবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩২১;  উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১০/৩৮৮;  আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১১/২২৬)।

প্রশ্ন (১১২) : জনৈক আলেম বলেন, বিবাহের অলীমা কবে করতে হবে সে বিষয়ে শরী‘আতে কোন নির্দেশনা নেই। একথার সত্যতা আছে কি?

উত্তর : অলীমা বিষয়ে শরী‘আতের নির্দেশনা হ’ল বাসর রাতের পরের দিন অলীমা করা। রাসূল (ছাঃ) যয়নব বিনতে জাহশ (রাঃ)-এর সাথে বাসর রাত অতিবাহিত করার পর দিন অলীমা করেছিলেন (বুখারী হা/৫১৭০)। রাসূল (ছাঃ) ছাফিয়াহ (রাঃ)-কে বিবাহের পর তিনদিন যাবৎ অলীমা করেছিলেন (মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৩৮৩৪, সনদ হাসান)। তবে কারণবশতঃ অলীমার দিন বিলম্বিতও করা যায়। রাসূল (ছাঃ) অলীমার সময়কে এক বা দুই দিনের জন্য খাছ করেননি (বুখারী ১৭/২৬৫)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অলীমার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেননি যেদিন অলীমা করাকে ওয়াজিব বা মুস্তাহাব বলা হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কাউকে অলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন তা কবুল করে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩২১৬)। তাছাড়া ছাহাবী উবাই বিন কা‘ব (রাঃ)-কে সপ্তম দিনে অলীমার দাওয়াত দেওয়া হ’লেও তিনি কবুল করেন (ফাৎহুল বারী ৯/২৪৩)। অতএব তিন দিন পর্যন্ত অলীমা করা সুন্নাত। আর তা সম্ভব না হ’লে যত দ্রুত সম্ভব সুবিধামত দিনে অলীমা করবে।

প্রশ্ন (১১৩) : কারো মনের অজান্তে মুখ দিয়ে কুফরী বা শিরকী কথা বেরিয়ে গেলে সে কি কাফের বা মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : মনের অজান্তে কারো মুখ থেকে কুফরী বা শিরকী কথা বেরিয়ে গেলেই সে কাফির বা মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে না। কারণ আল্লাহ নিজেই স্বীয় বান্দাকে দো‘আ শিখিয়ে দিয়েছেন এই মর্মে যে, হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করো না (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আমার উম্মতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৮৪; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৩১)।  তবে সর্বদা কুফরী বা শিরকী কথার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে মুখ দিয়ে এমন বাক্য বের না হয়। রাসূল (ছাঃ) প্রকাশ্য-গোপন সর্বপ্রকার শিরক থেকে বাঁচার জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করতেন- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ، (‘হে আল্লাহ! জেনেশুনে তোমার সাথে শিরক করা থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং অজ্ঞতাবশে শিরক করা থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩১)।

প্রশ্ন (১১৪) : জনৈকা গর্ভবতী নারী মাটি বা মাটির তৈরী পাত্র চিবিয়ে খায়। এরূপ মাটি খাওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : মাটি কোন খাদ্য নয়। এতে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হ’তে পারে। সেজন্য বিদ্বানগণ মাটি, পাথর ও কয়লা ভক্ষণ করাকে হারাম বলেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৭; রওযাতুত ত্বালেবীন ৩/২৯১; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৯/৪২৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৫/১২৫)।

প্রশ্ন (১১৫) : ‘জিব্রীল (আঃ) বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে সৃষ্টির পর আমি দশ বছর অপেক্ষায় ছিলাম। এরপরেও আমার নাম জানতাম না। এরপর একদিন আল্লাহ আমাকে জিব্রীল বলে ডাক দিলেন। তখন বুঝতে পারলাম যে, আমার নাম জিব্রীল’-উক্ত হাদীছের বিশুদ্ধতা জানতে চাই।

উত্তর : আব্দুর রহমান ছাফূরী তাঁর ‘নুযহাতুল মাজালেস’ (২/৮৪-৮৫) গ্রন্থে উক্ত মর্মে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যার কোন ভিত্তি নেই; বরং জাল ও বানোয়াট।

প্রশ্ন (১১৬) : আমার পিতার মৃত্যুর পরে সবার মাঝে সম্পত্তি বণ্টন হয়ে যায়। কিছুদিন পর জানা যায় তার আরো কিছু সম্পদ রয়েছে। এক্ষণে আমাদের করণীয় কি?

উত্তর : উক্ত সম্পদ মীরাছ অনুপাতে সকলে পুনরায় ভাগ করে নিবে। অথবা সকল ওয়ারিছের সম্মতিক্রমে তা মৃতের নামে দানও করা যেতে পারে। তবে কারো আপত্তি থাকলে দান করা যাবে না। কারণ ওয়ারিছগণ সকলেই উক্ত সম্পদের মালিক (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৫৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১১/১৪)।

প্রশ্ন (১১৭) : পায়খানার দ্বার দিয়ে কৃমি বের হ’লে ওযূ নষ্ট হবে কি?

উত্তর : এ বিষয়ে স্পষ্ট দলীল না থাকলেও বিদ্বানগণ একমত যে, পায়ুপথ দিয়ে যা কিছু বের হবে তাতে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৩০)। অতএব কৃমি, নুড়ি, চুল, গোশতের টুকরা বা অনুরূপ কিছু সবই অপবিত্র হিসাবে গণ্য হবে। এর উপরেই ফৎওয়া দিয়েছেন সুফিয়ান ছওরী, ইসহাক, আত্বা, হাসান বছরী প্রমুখ, যদিও ইমাম মালেকসহ কতিপয় বিদ্বান ভিন্নমত পোষণ করেছেন (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১৭/১১২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সে (বায়ু বের হবার) কোন শব্দ না শুনে বা গন্ধ না পায়’ (বুখারী হা/১৩৭, মুসলিম হা/৩৬২, মিশকাত হা/৩০৬)। অর্থাৎ বায়ু বের হওয়ার কারণে যখন ওযূ নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে কৃমি বের হ’লে ওযূ ভঙ্গ হওয়া অধিক যৌক্তিক (উছায়মীন, তা‘লীক্বাত ‘আলাল কাফী লি ইবনে কুদামাহ ১/১২৮)।

প্রশ্ন (১১৮) : শরী‘আতে সমালোচনার আদব সম্পর্কে জানতে চাই। বিশেষত জ্ঞানী ব্যক্তির সমালোচনার ক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর : সমালোচনার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পালন করা কর্তব্য। যেমন- (১) নিয়ত বিশুদ্ধ থাকা : অর্থাৎ সমালোচনা হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ রক্ষার জন্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘একজন মুমিন তাঁর ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তার কোন ধরনের ভুল দেখলে সংশোধন করে দেয়’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/৯২৬)। (২) কল্যাণকামী হওয়া : সমালোচনা হ’তে হবে মানুষের প্রতি নছীহত হিসাবে। বিরাগ বা বিদ্বেষবশত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দ্বীন হ’ল নছীহত (মুসলিম হা/৫৫; মিশকাত হা/৪৯৬৬)। (৩) নম্র ভাষা ব্যবহার করা : সমালোচিত ব্যক্তির ব্যাপারে শালীন ও ভদ্র ভাষা ব্যবহার করতে হবে। ফেরাঊনের ব্যাপারে আল্লাহ মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে বলেন, ‘অতঃপর তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বল। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বোয়াহা, ২০/৪৪)। (৪) উত্তমভাবে বলা : আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সাথে উত্তম কথা বলবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। (৫) অর্থহীন তর্ক এড়িয়ে যাওয়া : অর্থহীন তর্ক ও সমালোচনায় লিপ্ত হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘আর যদি তারা তোমার সাথে ঝগড়া করে, তবে বলে দাও যে, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ সম্যক অবহিত। যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছ, সে বিষয়ে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দিবেন’ (হজ্জ ২২/৬৮-৬৯)। (৬) সম্ভব হ’লে পরিচয় গোপন করা : সমালোচিত ব্যক্তির নাম ও পরিচয় গোপন রেখে তাঁর ভুলগুলো আলোচনা করা ভাল। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে যখন তাঁর কোন ছাহাবীর ব্যাপারে কোন অভিযোগ আসত, তখন তিনি বলতেন না যে, অমুকের কি হ’ল? বরং তিনি বলতেন, মানুষের কি হ’ল যে তারা এমন কাজ করে! (নাসাঈ হা/৩২১৭;  আবুদাউদ হা/৪৭৮৮; ছহীহাহ হা/২০৬৪)। (৭) গোপনে সংশোধনের চেষ্টা করা : একান্তে ও গোপনে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করা ইসলামের শিষ্টাচার। তবে যখন মুসলমান ও সমাজের বৃহত্তর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখন প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে। ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‘মুমিন (মুমিনের দোষ) গোপন করে এবং তাকে উপদেশ দেয়। পাপিষ্ঠ তা প্রকাশ করে এবং লজ্জিত করে (ইবনু রজব, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ১/৮২)। (৮) মূর্খদের প্রতিপক্ষ না বানানো : বিপরীত পক্ষের লোক অজ্ঞ বা মূর্খ হ’লে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সমালোচনা পরিহার করা উচিৎ (ফুরক্বান ২৫/৬৩; বিস্তারিত দ্র. রায়েদ আমীর আব্দুল্লাহ রাশেদ, আন-নাকদু বাইনাল বিনা ওয়াল হাদম পৃ. ৪৯)।

প্রশ্ন (১১৯) : পাকা চুল উঠিয়ে ফেলায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

উত্তর : পাকা চুল উঠানো যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হ’ল মুসলমানের জ্যোতি। কোন মুসলমানের একটি চুল পেকে গেলে আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লিখেন, একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি পাপ মোচন করেন’ (নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫৮ ‘সনদ হাসান’)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘পাকা চুল মুসলমানদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর হবে’ (তিরমিযী হা/১৬৩৫,  মিশকাত হা/৪৪৫৯  ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘চুল আঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ)। সুতরাং এগুলি উপড়ানোর কোন সুযোগ নেই।

প্রশ্ন (১২০) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তাহাজ্জুদ ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : তাহাজ্জুদ ছালাত সর্বনিম্ন ২ রাক‘আত পড়ার কথা রাসূল (ছাঃ) উল্লেখ করেছেন (মুসলিম হা/৭৬৮; আবুদাঊদ হা/১৪২২; মিশকাত হা/১২৬৫)। আর সর্বোচ্চ হ’ল ৮ রাক‘আত (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১২৫৬; আবুদাঊদ হা/১৩৬২; মিশকাত হা/১২৬৪)। তিনি কখনো এই ছালাত এত দীর্ঘ করতেন যে, কেবল সিজদায় ৫০ আয়াত পাঠের সময়কাল অবস্থান করতেন (বুখারী হা/৯৪৪; মিশকাত হা/১১৮৮)। এমনকি কখনও এত লম্বা করতেন যে তার পায়ের গোড়ালী ফুলে যেত (বুখারী হা/১১৩০; মিশকাত হা/১২২০)। কখনো তিনি একই রাক‘আতে সূরা বাক্বারাহ, নিসা ও আলে ইমরান তেলাওয়াত করেছেন (মুসলিম হা/৭৭২)। সুতরাং তাহাজ্জুদ ছালাত সম্ভবপর দীর্ঘ করে পড়াই উত্তম।

প্রশ্ন (১২১) : টিউশনী করার ক্ষেত্রে মাসে ২/১ দিন কারণবশতঃ যাওয়া হয় না। কিন্তু বেতন দেওয়ার সময় পুরো বেতনই পাওয়া যায়। এক্ষণে আমার জন্য পুরো বেতন নেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : এটি মাসিক বেতন হিসাবে নির্ধারিত। সেজন্য কোন ওযরবশতঃ এক বা একাধিক দিন না পড়িয়েও পুরো মাসের বেতন নেওয়া যাবে। তবে এসব ক্ষেত্রে দাতার পক্ষ থেকে সম্মতি থাকতে হবে। নতুবা কেউ কেউ ওযর ছাড়াই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে (যায়লাঈ, তাবঈনুল হাকায়েক ৫/১৩৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১/২৬৭)। উল্লেখ্য যে, চুক্তিবদ্ধ যে কোন কাজের ক্ষেত্রে কাজটি আন্তরিকতার সাথে যথাসাধ্য পালন করতে হবে। অন্যথায় ক্বিয়ামতের দিন তাকে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথার্থ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও’ (নিসা ৪/৫৮)।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমরা প্রত্যেকেই ক্বিয়ামতের দিন স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫, ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়)। সেকারণ যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্বে অবহেলা করার কারণে বেতনের নির্ধারিত অংশ গ্রহণ না করে, সেটা হবে তাক্বওয়ার পরিচায়ক (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৫/১৫৩, ১৫৫-৫৬)।

প্রশ্ন (১২২) : পিতা আমাকে আমার চাচাতো বোনকে বিবাহ করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমার মা রাযী নয়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : বিবাহ পিতা-মাতা, বর বা কনের সম্মতি বা পরামর্শ ক্রমে হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় পরিবারে অশান্তি বিরাজ করতে পারে। এক্ষণে চাচাতো বোন সচ্চরিত্র ও ধার্মিকা হ’লে মাকে বুঝিয়ে বিবাহ করা সমীচীন। রাসূল (ছাঃ) কুফূ বা সমতার ক্ষেত্রে ‘দ্বীন’কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; ছহীহাহ হা/১০৬৭)। এক্ষণে মা কোনভাবেই রাযী না হ’লেও মেয়ে ধার্মিক হ’লে তাকে বিবাহ করা যাবে। কারণ দু’টি মতামতের ক্ষেত্রে পিতার মতই অগ্রগণ্য। তবে সাধ্যমত মাকে খুশী করে বিবাহ করার চেষ্টা করবে (বাহুতী, কাশশাফুল ক্বেনা‘ ৫/৮)।

প্রশ্ন (১২৩) : মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে গোডাউন, নীচ তলায় ঔষধের দোকান এবং দ্বিতীয় তলা থেকে উপরের অংশে মসজিদ, মাদ্রাসা ও গবেষণা সেন্টার নির্মাণ করা যাবে কী? উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে দাতার কোন শর্ত ছিল না।

উত্তর : মসজিদের কল্যাণার্থে নীচে বা উপরে মার্কেট, বাসস্থান বা গবেষণা সেন্টার নির্মাণে কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া নাযীরিইয়াহ ৩/৩৬৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২২০)। ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘মসজিদের নীচে দোকানপাট ও পানির হাউয তৈরী করা যায়। তাতে কোন ক্ষতি নেই’ (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/২১৭-১৮, ২৬১)। ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) মসজিদের নীচে ও উপরে ভবন নির্মাণ জায়েযের পক্ষে মত দিয়েছেন, যা মসজিদের আওতাভুক্ত হবে না (আল-হিদায়াহ ৩/২০; আল-ইনাইয়া ৬/২৩৪; আল-বেনাইয়া ৭/৪৫৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১২/২৯৬)।

প্রশ্ন (১২৪) : জনৈক ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, কেউ যদি হাদীছ ব্যতীত কেবল কুরআনের অনুসরণ করে, সে কখনো কাফের হবে না। তাহ’লে শরী‘আত অনুযায়ী তিনি কী হিসাবে গণ্য হবেন?

উত্তর : হাদীছ ব্যতীত কুরআন অনুসরণের দাবী অবাস্তব। আল্লাহ ছালাত আদায় ফরয করেছেন। কিন্তু কিভাবে করবেন, তা কুরআনে নেই। তিনি যাকাত ও হজ্জ ফরয করেছেন। কিন্তু কিভাবে করবেন, তা কুরআনে নেই। তিনি বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে করবেন, তা কুরআনে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা (নির্দেশ) দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক...’ (হাশর ৫৯/০৭)। তিনি বলেন, ‘তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)। রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত। সাবধান! এমন একটি সময় আসছে যখন বিলাসী মানুষ তার গদিতে বসে বলবে, তোমাদের জন্য এ কুরআনই যথেষ্ট। সেখানে যা হালাল পাবে, তাকেই হালাল জানবে এবং সেখানে যা হারাম পাবে, তাকেই হারাম জানবে। অথচ আল্লাহর রাসূল যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার অনুরূপ’(আবুদাঊদ হা/৪৬০৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৬২)। এখানে ‘কুরআন’ হ’ল ‘প্রকাশ্য অহি’ এবং তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত হ’ল ‘হাদীছ’ যা ‘অপ্রকাশ্য অহি’।

রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে বাস্তবে দেখা দেয়। এ সময় কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটে, যারা সুন্নাতকে অস্বীকার করে। ইমাম শাফেঈ এমন একজন হাদীছ অস্বীকারকারী ব্যক্তির সাথে তার মুনাযারার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার দাবীর অসারতা প্রমাণ করেছেন (কিতাবুল উম্ম ৭/২৮৭-২৯২)। অতঃপর দীর্ঘ এগারো শত বছর যাবৎ হাদীছ অস্বীকারকারীদের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেনি। বিগত ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মিসর, ইরাক এবং ভারতে এই ফিৎনার পুনরাবির্ভাব ঘটে (বিস্তারিত দ্র. হাফাবা প্রকাশিত ‘হাদীছের প্রামাণিকতা’ বই)।

বর্তমানে বাংলাদেশে এই ভ্রান্ত আক্বীদার কিছু লোকের কথা শোনা যায়। যাদের থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, যারা হাদীছকে অস্বীকার করে তারা মূলতঃ রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়। কেননা হাদীছ ব্যতীত দ্বীনের উপর আমল করা অসম্ভব। অতএব তারা কাফের (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৩৮, ৩/১৯৪)। ইসহাক বিন রাওয়াইহ বলেন, যার নিকট ছহীহ হাদীছ পৌঁছার পর তা প্রত্যাখ্যান করল সে কাফের (আল-ইহকাম ১/৯৯)। ইবনু হাযম বলেন ‘যদি কোন ব্যক্তি বলে যে কুরআনে যা পাব তা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করব না, তবে সে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাফের (আল ইহকাম ২/৮০)। ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, ‘তারা কাফের এবং ইসলাম হ’তে খারিজ। তাদের হাশর হবে ইহূদী ও নাছারা বা অন্যান্য ভ্রান্ত মতাবলম্বীদের সাথে’ (মিফতাহুল জান্নাহ ৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (১২৫) : কেউ তওবা করলে সঙ্গে সঙ্গে কি তার আমলনামা থেকে গুনাহসমূহ মুছে ফেলা হবে?

উত্তর : তওবাকারীর তওবা যদি খাঁটি হয় এবং তা আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হয়ে যায়, তবে তার আমলনামা থেকে গুনাহসমূহ মুছে ফেলা হবে (তাহরীম ৬৬/৮)। ফলে ব্যক্তির গুনাহের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে (হূদ ১১/১১৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘পাপ থেকে তওবাকারী ব্যক্তি পাপমুক্ত ব্যক্তির ন্যায়’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৮)। রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত যার মাধ্যমে আল্লাহ সমস্ত পাপ ও ত্রুটি বিদূরিত করে দেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৫)। তিনি আরো বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ্কে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে’ (তিরমিযী হা/১৯৮৭; মিশকাত হা/৫০৮৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৭)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, তওবা মানুষের গুনাহসমূহকে বিদূরিত করে (মিনহাজুস সুন্নাহ ৬/২১১)।

প্রশ্ন (১২৬) : জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে একই মসজিদে একাধিকবার জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : একই মসজিদে একাধিক জুম‘আ কায়েম করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাসে এমন পদ্ধতি কোথাও চালু ছিল না। বরং মসজিদ সম্প্রসারণ করবে এবং একটি বড় জামা‘আতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। জুম‘আর জামা‘আত না পেলে পরে যোহরের ছালাত জামা‘আতে বা একাকী আদায় করবে। অতএব একই মসজিদে একাধিকবার জুম‘আ আদায় করা জায়েয নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২৬২)।

প্রশ্ন (১২৭) : জনৈক ব্যক্তি ওযূর ধারাবাহিকতা এবং ফরয গোসলের ক্ষেত্রে বহুদিন যাবৎ বড় ধরণের ভুলের মধ্যে ছিল। এখন তা বুঝতে পারার পর তার পূর্বের আমলের অবস্থা কি হবে? এক্ষেত্রে তার করণীয় কি?

উত্তর : পূর্বের ভুল পদ্ধতিতে করা ওযূ ও গোসলের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে এবং সঠিক নিয়মে ওযূ-গোসল করে ইবাদত করবে। এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা ছালাতে ভুলকারী ব্যক্তিকে রাসূল (ছাঃ) চলমান ছালাতকে সঠিকভাবে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্বের ভুল পদ্ধতিতে আদায়কৃত ছালাত পুনরায় আদায় করতে বলেননি (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৩৭)। আর নিয়তের বিশুদ্ধতার কারণে আল্লাহ তার আমলসমূহ কবুল করবেন এবং ক্ষমা প্রার্থনার কারণে কৃত ভুল ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন (১২৮) : জয়ফলের মধ্যে অল্প মাত্রায় নেশাজাতীয় উপাদান থাকায় সঊদী আরব সহ কিছু দেশে তা আমদানী নিষিদ্ধ। অনেক আলেম এটিকে হারাম বলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে এটা বিরিয়ানী, হালীম ইত্যাদির মশলা হিসাবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এক্ষণে এটি খাওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : জয়ফল বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত মশলা জাতীয় খাদ্য। তবে খাদ্য হিসাবে এটি ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে দু’টি মত লক্ষ্য করা যায়। একদল এটি হারাম বলেছেন। আরেকদল খাদ্য-দ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রিতভাবে স্বল্প পরিমাণ জায়েয বলেছেন। ইবনু দাক্বীকুল ঈদ, ইবনু হাজার হায়তামী প্রমুখ হাশীশের মত নেশাদার দ্রব্য সাব্যস্ত করে এই ফল খাওয়াকে হারাম বলেছেন (ইবনু হাজার হায়তামী, আয-যাওয়াজের ১/৩৫৫)। তবে আধুনিক বিদ্বানগণ ঔষধে বা খাদ্যের সাথে মিশ্রিতভাবে এর স্বল্প পরিমাণ ব্যবহারে বাধা নেই বলেছেন, যাতে মাদকতা আসে না। তবে কোন অবস্থাতেই একে পৃথকভাবে নেশাদার বস্ত্ত হিসাবে গ্রহণ ও ব্যবহার করা যাবে না (নাদওয়া ফিক্বহিয়া ত্বিবিবয়াহ ছামেনাহ (কুয়েত, মে ১৯৯৫)।

প্রশ্ন (১২৯) : আমার এক আত্মীয় তার অধিকাংশ জমি ছেলেদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে, অথচ মেয়েদের কিছুই দেননি। এক্ষণে পরকালে বাঁচার জন্য পিতার করণীয় কি?

উত্তর : মেয়েদেরকে তাদের প্রাপ্য হক থেকে মাহরূম করা নিঃসন্দেহে কাবীরা গুনাহ এবং তা অন্যের হক আত্মসাতের শামিল। তারা ক্ষমা না করলে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত পাপ ক্ষমা করবেন না (বুখারী হা/২৪৪৯ ‘অত্যাচার ও আত্মসাত’ অধ্যায় ৪৬, ১০ অনুচ্ছেদ)। এক্ষণে পরকালীন মুক্তির জন্য পিতার করণীয় হ’ল- ছেলেদের যে পরিমাণ সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন, তার অর্ধেক পরিমাণ সম্পত্তি মেয়েদের রেজিষ্ট্রি করে দিবেন (নিসা ৪/১১,১৪)। পিতা জীবিত অবস্থায় সন্তানদের কোন সম্পত্তি দান করতে চাইলে তাকে বণ্টন নীতি অনুযায়ী ‘ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অর্ধেক’ ভিত্তিতে অংশ দিতে হবে (ইবনু হাজার হায়তামী, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৪/০৩; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৯/৪৮৩)।

প্রশ্ন (১৩০) : সদ্যজাত শিশুর নাভী মসজিদের পাশে মাটি চাপা দিলে এবং তার নখ, বুকের ও মাথার একটি পশম আগুনে পোড়ালে বাচ্চাকে কেউ পাগল বানাতে পারবে না। একথার কোন সত্যতা আছে কি? এছাড়া চুল ও নখের কর্তিত অংশ মাটি চাপা দেওয়ার কোন বিধান আছে কি?

উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে উপরোক্ত ধারণার কোন ভিত্তি নেই। অতএব এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে প্রত্যেক মুসলিমের বিরত থাকা আবশ্যক। আর চুল ও নখের কর্তিত অংশ মাটি চাপা দেওয়ার পক্ষে কোন কোন বিদ্বান মত পেশ করেছেন (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৩২)। তবে এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ সবগুলিই যঈফ’ (বায়হাক্বী শু‘আব হা/৬০৬৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৩৫৭)।

প্রশ্ন (১৩১) : রাসূল (ছাঃ) কি একদিন তাহাজ্জুদের পুরো ছালাতে সূরা মায়েদার ১১৮ নং আয়াতটি বার বার তেলাওয়াত করেছিলেন?

উত্তর : উক্ত মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) এক রাতে ছালাতে সূরা মায়েদার ১১৮ আয়াতটি বারবার তেলাওয়াত করছিলেন (ইবনু মাজাহ হা/১৩৫০; তিরমিযী হা/৪৪৮; আহমাদ হা/১১৬১১; মিশকাত হা/১২০৫)। আয়াতটির অনুবাদ হ’ল- ‘যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন, তাহ’লে তারা আপনার বান্দা। আর যদি আপনি তাদের ক্ষমা করেন, তাহ’লে আপনি মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’। আয়াতের গুরুত্ব ও মর্ম বিবেচনায় তিনি উক্ত আমলটি করেছেন। উক্ত হাদীছ দ্বারা একই আয়াত দ্বারা পুরো ছালাত আদায় করা জায়েয হওয়ার দলীল পাওয়া যায়। তবে এটি নিয়মিত করা যাবেনা। কেননা রাসূল (ছাঃ) থেকে নিয়মিত এরূপ আমল করার দলীল পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (১৩২) : মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুকে স্মরণ করার জন্য কবর খনন করে রাখা যাবে কি?

উত্তর : নিজের মালিকানাধীন জায়গায় নিজের জন্য কবরের জায়গা নির্ধারণ করায় কোন দোষ নেই। যেমন আয়েশা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে তার কবরের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন, যা তিনি পরবর্তীতে ওমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৭/৭৮)। তবে মৃত্যুকে স্মরণ করার জন্য কবর খনন করে রাখা নিতান্তই বাড়াবাড়ি। কেননা কে কোথায় কিভাবে মরবে ও কোন স্থানে তার দাফন হবে, সেটি আল্লাহর ইলমে আছে (লোকমান ৩১/৩৪)। তাছাড়া ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এরূপ কোন আমলের নিদর্শন পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (১৩৩) : এ্যালকোহলযুক্ত লোশন মাখা অবস্থায় ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : লোশনে বা সেন্টে ব্যবহৃত এ্যালকোহল খাদ্য বা পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। এতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় তা সংরক্ষণের জন্য। অতএব এসব লোশন ব্যবহার করা অপছন্দনীয়, তবে হারাম নয়। এতে ছালাত আদায়ও শুদ্ধ হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/৫৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৭০, ফৎওয়া নং ২৮৭)।

প্রশ্ন (১৩৪) : স্বপ্নদোষ হ’লে অলসতা বা ঠান্ডার কারণে ফজরের পূর্বে গোসল না করে যোহরের ওয়াক্তে ক্বাযা আদায় করলে গুনাহগার হ’তে হবে কি?

উত্তর : গুনাহগার হ’তে হবে। বরং কষ্টসাধ্য হ’লে গরম পানি করে গোসল করবে এবং সময়ের মধ্যে ফজরের ছালাত আদায় করবে। আর অসুস্থতার ভয় থাকলে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (আবুদাঊদ হা/৩৩৪, ৩৩৬; মিশকাত হা/৫৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৬২; ইবনু কুদামা, মুগনী ১/১৮৯-৯০)।

প্রশ্ন (১৩৫) : ঘরের মধ্যে মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে ছবিযুক্ত পণ্য থেকে যায়। এমন ঘরে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : এমন ঘরে ছালাত আদায় করলে তার ছালাত হয়ে যাবে। কারণ এটি ছালাত ভঙ্গের কারণ নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৫৪; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৯৪)। তবে এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না (বুখারী হা/৩২২৫; মুসলিম হা/২১০৪; মিশকাত হা/৪৪৯০)। এছাড়া ক্বিবলার দিকে সম্মানের উদ্দেশ্যে কোন ছবি টাঙানো থাকলে সেখানে ছালাত আদায় করা নিষিদ্ধ (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/১৮৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/১৬২; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ১/৩৭০)।

প্রশ্ন (১৩৬) : আমি বহুদিন যাবৎ পিতা-মাতার সাথে কথা বলি না। তাদের কোন একটি আচরণ আমাকে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছে। তবে তাদের মাসিক খরচ নিয়মিতভাবে বহন করি। এতে আমি গুনাহগার হবো কি?

উত্তর : এতে গুনাহগার হ’তে হবে। কারণ পিতা-মাতার সাথে কথা না বলা তাদের অসন্তুষ্টির কারণ। আর আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর অসন্তুষ্ট থাকেন যে ব্যক্তির উপর তার পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট থাকেন (তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬)। এছাড়া কেবল পিতা-মাতা নয় বরং কোন মুসলিমের সাথেই তিনদিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন রাখা জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন মুসলিমের জন্য তার অপর ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনদিনের বেশী থাকা হালাল নয়। অতঃপর যে ব্যক্তি তিনদিনের বেশী সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখা অবস্থায় মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল (আবূদাঊদ হা/৪৯১৪, মিশকাত হা/৫০৩৫)। শায়খ বিন বায বলেন, পিতা-মাতা ভুল করলেও তাদের পরিহার করা যাবে না। বরং তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে, কথা বলতে হবে এবং নম্র ভাষায় নছীহত করতে হবে। কারণ সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অবদান এতো বেশী যে, আল্লাহ তাঁর শুকরিয়া আদায় করার পরপর পিতা-মাতার শুকরিয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন (লোক্বমান ৩১/১৪; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১৮/৩৬৭)। অতএব কোন অবস্থাতেই পিতা-মাতার সাথে কথা বন্ধ করা যাবে না।

প্রশ্ন (১৩৭) : পিতার মৃত্যুর পর স্ত্রী এবং মেয়েরা পিতার মূল বসতভিটার অংশ পাবে কি?

উত্তর : হ্যাঁ পাবে। পিতার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিক হবে তার জীবিত ওয়ারিছগণ। তারা কে কতটুকু পাবে তা স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাই এখানে কমবেশী করার কোন সুযোগ নেই (নিসা ৪/৭, ১১-১২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৯৫)। উল্লেখ্য যে, কোন কোন এলাকায় এমন ধারণা বিদ্যমান যে, মেয়েরা পিতার বসতবাড়ির অংশীদার হবে না, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে প্রতিটি স্থানে সবাই সমানভাবে ভাগ না নিয়ে আপোষে একে অপরের প্রতি ইহসান করে এবং সমঝোতার ভিত্তিতে বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন জন নিতে পারে। অর্থাৎ কেউ বসতভিটা, কেউ মাঠের জমি, কেউ অন্যান্য স্থান থেকে ভাগ করে নিতে পারে, যা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষায় অধিক ভূমিকা রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৬/৪৮৬)।

প্রশ্ন  (১৩৮) : ছালাতের মধ্যে ক্বিরাআতে ভুল হ’লে সহো সিজদা দিতে হবে কি?

উত্তর : সূরা ফাতিহায় বিস্মৃতিজনিত ভুল হ’লে তা শুদ্ধ করে পাঠ করতে হবে এবং সহো সিজদা দিতে হবে। কারণ এটা ছালাতের অন্যতম রুকন। আর সূরা ফাতিহার পরে অন্য ক্বিরাআতে ভুল করলে সহো সিজদা দিতে হবে না। বরং ইমাম বা মুক্তাদী ছালাত আদায়কালে সূরা ফাতিহা শেষে তার নিকট সর্বাধিক সহজ সূরা বা আয়াত পাঠ করবে। আর জামা‘আতে ছালাত আদায়কারী মুক্তাদীর সূরা ফাতিহায় ভুল হ’লে সহো সিজদা দিতে হবে না (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৩৯৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২/৭৮৩; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/০২)।

প্রশ্ন (১৩৯) : আমরা ৫ ভাই-বোন। পিতা তার সমস্ত সম্পদ সহ পৃথকভাবে ১০ বিঘা জমি ক্রয় করে আমার নামে লিখে দিয়ে মারা গেছেন। এক্ষণে এর দায় আমার না পিতার উপর বর্তাবে। এ দায় থেকে মুক্তির উপায় কি?

উত্তর : সন্তানের সহায়তায় ও সম্মতিতে পিতা এরূপ অন্যায় কাজ করেছেন। সেজন্য পিতা ও সন্তান উভয়ে দায়ী হবে। আর সন্তান দায়ী হৌক বা না হৌক তার জন্য আবশ্যক হ’ল যাবতীয় সম্পদ শরী‘আত নির্ধারিত অংশ হিসাবে ৫ ভাই-বোনের মাঝে বণ্টন করে নেওয়া এবং আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা (নিসা ৪/১১-১২; মুসলিম হা/১৬২৩; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/২৩৪)। তাহ’লে উক্ত গুনাহ থেকে পিতা-সন্তান উভয়েই মুক্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন (১৪০) : একাকী ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারীরা সরবে ক্বিরাআত করতে পারবে কি?

উত্তর : পুরুষের ন্যায় নারীরাও একাকী জেহরী ছালাতে তথা মাগরিব, এশা ও ফজরে সরবে ক্বিরাআত করবে। কারণ ছালাতের বিধানে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে পাশে গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে নীরবে পাঠ করবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/১০০; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৩৫; আহকাম ওয়া ফাতাওয়া মারআতিল মুসলিমাহ ১৮০ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৪১) : আমি শিশু অবস্থায় একটি অসহায় ছেলেকে দত্তক হিসাবে গ্রহণ করি। তার পিতা জন্মের আগেই মাকে ছেড়ে যায়। বর্তমানে নথিপত্রে শিশুটির পিতা-মাতার নাম লেখার প্রয়োজন পড়ছে। সাধ্যমত চেষ্টা করার পরও তার পিতার কোন খোঁজ না পাওয়ায় পালক পিতা বা অভিভাবক হিসাবে আমার এবং আমার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করতে পারব কি? উল্লেখ্য যে, আমার নিজের কোন সন্তান না থাকায় এবং আমার স্ত্রী মানসিক রোগগ্রস্ত হওয়ায় উক্ত ছেলের মায়ের স্থলে তার নাম না লিখলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। অনেক বুঝিয়েও কাজ হয়নি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর: পরিত্যক্ত সন্তান লালন-পালন করা ইয়াতীম পালন অপেক্ষা অধিক ছওয়াবের কাজ। কিন্তু পালিত সন্তান পালক পিতা-মাতার পরিচয়ে পরিচিত হ’তে পারবে না যদিও তাদের পিতৃপরিচয় জানা না যায় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/২৫৫)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকো। সেটাই আল্লাহর নিকট অধিক ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃপরিচয় না জানো, তাহ’লে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধু (আহযাব ৩৩/৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে অন্যকে পিতা-মাতা বলে, তার জন্য জান্নাত হারাম’ (বুখারী হা/৪৩২৬; মুসলিম হা/৬৩; মিশকাত হা/৩৩১৪)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যের সাথে যে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিশাপ (তিরমিযী হা/২১২১; ছহীহুত তারগীব হা/১৯৮৬)। তবে অভিভাবক হিসাবে পালক পিতা-মাতার নাম দিতে পারে এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।

প্রশ্ন (১৪২) : আমাদের বাড়ির সাথে অন্য মানুষের মালিকানাধীন ডোবা আছে। যেখানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কৈ, টাকি, শোল ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ তাদের না জানিয়ে ধরা যাবে কি?

উত্তর : মাছ যেভাবেই জন্মলাভ করুক না কেন, পুকুরের  মালিক বা লীজ গ্রহীতার অনুমতি ব্যতীত এসব মাছ শিকার করা যাবে না। শিকার করলে তা চুরি হিসাবে গণ্য হবে। তবে সরকারী বিল অথবা কারো পুকুর বা ডোবায় যদি কোন বিধি-নিষেধ না থাকে, তবে সেখান থেকে মাছ শিকার করা যাবে (ইবনু মাজাহ হা/২৩৪১)।

প্রশ্ন (১৪৩) : স্মরণ করানো বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য দেয়াল ঘড়ি সহ বিভিন্ন শোপিসে কুরআনের আয়াত ক্যালিগ্রাফি করে বা সাধারণভাবে লিখে টাঙিয়ে রাখা যাবে কি? এসব পণ্যের ব্যবসা করা যাবে কি?

উত্তর : এভাবে টাঙিয়ে রাখা সমীচীন নয়। কারণ (১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর উদ্দেশ্য থাকে সৌনদর্য বর্ধন। অথচ কুরআন নাযিল হয়েছে মানুষকে হেদায়াতের জন্য, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নয়। (২) এতে অনেক সময় কুরআনের অমর্যাদা ঘটে, যা তার অপব্যবহারের শামিল। (৩) কেউ তা ঝুলিয়ে রাখে বরকত হাছিলের নিয়তে, যা স্পষ্ট বিদ‘আত। এজন্য বিগত যুগের নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম পিলারে বা দেওয়ালে এগুলো লেখাকে অপসন্দ করতেন (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ১/১৭৯; নববী, আত-তিবইয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন ৮৯, ৯৭ পৃ.; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/৬৬)। হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) তাঁর এক সন্তানকে দেওয়ালে কুরআনের আয়াত লিখতে দেখে প্রহার করেন (তাফসীর কুরতুবী, মুক্বাদ্দামা ১/৩০)। শায়খ উছায়মীন এ ধরনের কর্মকে বিদ‘আত বলে সতর্ক করেছেন (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৩/১৯৭)। শায়খ বিন বায এধরনের কাজকে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আদর্শ বিরোধী বলেছেন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৪/৫৬-৫৮)। সুতরাং কুরআনের সম্মানার্থে এ ধরনের কার্যক্রম হ’তে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।

প্রশ্ন (১৪৪) : তাহিইয়াতুল মসজিদ ছালাত সংক্ষিপ্ত হবে নাকি দীর্ঘ হবে?

উত্তর : ছাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে বুঝা যায় যে, তারা তাহিইয়াতুল মসজিদ সাধারণতঃ সংক্ষিপ্ত করতেন (মুসলিম হা/২৪৮৪)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর খুৎবা চলাকালীন জনৈক ছাহাবী মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ না পড়ে বসে পড়লে রাসূল (ছাঃ) তাকে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার নির্দেশ দেন (বুখারী হা/১১৬৬; মুসলিম হা/৮৭৫; মিশকাত হা/১৪১১)। তবে সময় থাকলে তাহিয়াতুল মসজিদ দীর্ঘ করেও আদায় করা যায়।

প্রশ্ন (১৪৫) : বাম হাত দ্বারা জিনিসপত্র আদান প্রদান করায় দোষ আছে কি?

উত্তর : বাম হাত দ্বারা কোন কিছু আদান-প্রদান করা ইসলামী শিষ্টাচারের বিপরীত এবং তা শয়তানের কাজ। সুতরাং শয়তানের কর্ম অনুসরণ করা থেকে প্রত্যেক মুসলিমের বিরত থাকা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন ডান হাতে আহার করে, ডান হাতে পান করে, ডান হাতে গ্রহণ করে এবং ডান হাতে দান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়, বাম হাতে পান করে, বাম হাতে দেয় এবং বাম হাতে গ্রহণ করে (ইবনু মাজাহ হা/৩২৬৬; ছহীহাহ হা/১২৩৬)। তাছাড়া বাম হাতে কিছু গ্রহণ করা বা প্রদান করা অহংকারের বহিঃপ্রকাশ, যা থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা আবশ্যক (মুসলিম হা/২০২১; মিশকাত হা/৫৯০৪)। অতএব শারঈ ওযর ব্যতীত কোন কিছু বাম হাতে গ্রহণ করা বা প্রদান করা জায়েয নয়।

প্রশ্ন (১৪৬) : দাহিয়াতুল কালবী নামক বিখ্যাত ছাহাবীর নামের অর্থ কি? ছাহাবীদের নামে নাম রাখার কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : দাহিয়াতুন অর্থ সেনাপ্রধান (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)। ‘কালব’ একটি গোত্রের নাম (আল-ইস্তী‘আব, ক্রমিক ৭০১)। ছাহাবায়ে কেরাম ও সৎকর্মশীল মুমিনদের নামে নাম রাখা যাবে। আশারায়ে মুবাশশারাহর অন্যতম বিখ্যাত ছাহাবী হযরত যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ) বলেন, ত্বালহা (রাঃ) তার সন্তানদের নাম নবীদের নামে রেখেছেন। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরে আর কোন নবী নেই। অতএব আমি আমার পুত্রদের নাম শহীদদের নামে রাখব। ফলে তিনি তাঁর নয়জন পুত্রের নাম নয়জন শহীদের নামে রেখেছিলেন। যেন তারা তাদের মত আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় (ইবনু সা‘দ, আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ৩/১০১ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৪৭) : সূরা ফাতিহা পড়া হয়েছি কি-হয়নি সন্দেহ হ’লে সহো সিজদা বা ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : একাকী বা ইমাম অবস্থায় এমন সন্দেহ হ’লে এক রাক‘আত ছালাত আদায়ের শেষ বৈঠকে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। কারণ সূরা ফাতিহা ছালাতের অন্যতম রুকন। তবে মুক্তাদী অবস্থায় এমন সন্দেহ হ’লে তার কিছুই করতে হবেনা, স্রেফ ইমামের অনুসরণ করবে (বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২; বুখারী হা/৭৮৩; মিশকাত হা/১১১০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/২৭৬)।

প্রশ্ন (১৪৮) : আমরা হানাফী মসজিদে ছালাত আদায় করতাম। সেখানে ছালাত আদায়ে সুন্নাতী আমল করতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হ’তে হয়। এক্ষণে সাময়িকভাবে জনৈক ব্যক্তির অনুমতিক্রমে তার জমিতে জুম‘আ ও অন্যান্য ছালাত আদায় করা যাবে কী?

উত্তর : কারু ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা কারু জন্য বৈধ নয়। একত্রে বাজার-ঘাটে কেউ কাউকে বাধা দেন না, অথচ মসজিদে একত্রে ছালাত আদায় করতে গেলে হানাফী ভাইয়েরা আহলেহাদীছ ভাইদের বাধা দিবেন, এটি কখনই সঙ্গত নয়। তবুও যদি তারা আহলেহাদীছদের মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরী করেন, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় সাময়িকভাবে কারু অনুমতিক্রমে তার জমিতে জুম‘আ ও অন্যান্য ছালাত আদায় করা যাবে। মনে রাখতে হবে যে, মদীনায় বসবাসকারী মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও সকলে মসজিদে নববীতেই ছালাত আদায় করতেন, আলাদা জুম‘আ মসজিদ কায়েম করতেন না। আজও দুই হারামে হানাফী-আহলেহাদীছ সবাই একত্রে ছালাত আদায় করেন। দুই হারামের ইমাম আহলেহাদীছের নিয়ম মতে ছালাত আদায় করেন। হানাফী ভাইয়েরা বিনা দ্বিধায় তাদের ইকতেদা করেন। অথচ দেশে এসে তারা আহলেহাদীছদের হিংসা করেন। এগুলি বন্ধ করা উচিৎ। হানাফী আলেমদেরও কর্তব্য তাদের অনুসারীদের এসব থেকে বিরত রাখা।

ইবনু কুদামা (রহঃ) বলেন, বিনা প্রয়োজনে একাধিক জুম‘আ কায়েম করা জায়েয নয়। মুছল্লীদের জন্য একটি জুম‘আর মসজিদ যথেষ্ট হ’লে দ্বিতীয়টি কায়েম করা জায়েয হবে না, দু’টি যথেষ্ট হ’লে তৃতীয়টি কায়েম করা জায়েয হবে না (মুগনী  ২/২৪৮)। তবে বিরোধীদের যুলুম চূড়ান্ত হ’লে বাধ্যগত অবস্থায় জুম‘আর ফযীলত হাছিল করার উদ্দেশ্যে কোথাও সাময়িকভাবে জুম‘আ কায়েম করা যেতে পারে (বিন বায, মাজমু‘ ফাতাওয়া ১২/৩৭৭)।

প্রশ্ন (১৪৯) : আমি ও চালক দু’জনে শেয়ারে একটি গাড়ী ক্রয় করি। চালকের সাথে আমার চুক্তি হয়েছে যে, সে মাসে যত টাকা আয় করুক, সে প্রতি মাসে আমাকে ৪ হাযার টাকা ভাড়া দিবে। এরূপ চুক্তি জায়েয হবে কি?

উত্তর : উক্ত চুক্তি শরী‘আত সম্মত হয়নি। কেননা এমন চুক্তিতে ব্যবসায় লোকসান হ’লে চালককে দু’দিক থেকে দায়িত্ব নিতে হয়। প্রথমতঃ সে ব্যবসা পরিচালনা করে, আবার লোকসানেরও ভাগ বহন করে, যা সুস্পষ্ট যুলুম। সুতরাং উভয়ের সম্মতি থাকলেও এরূপ চুক্তি জায়েয হবে না (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিইয়াহ ৩৮/৬৩-৬৪, ৪৪/৬ পৃ.)। অতএব মুশারাকা ব্যবসা হিসাবে প্রথমতঃ লাভ-লোকসান উভয়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভাগ হবে। অতঃপর পৃথক চুক্তিতে ইজারা বা ভাড়া হিসাবে মাসিক নির্দিষ্ট চার হাযার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমার দুই চাচা নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে জমি বর্গা দিতেন এভাবে যে, নালার পার্শ্বস্থ ফসলের শর্তে কিংবা এমন কিছু শর্তে ভাগে জমি ইজারা দিত, যা ক্ষেতের মালিক নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। নবী করীম (ছাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করলেন। হানযালা (রহঃ) বলেন, আমি রাফে‘ বিন খাদীজ (রাঃ)-কে বললাম, স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে জমি ভাড়া দেয়া যাবে কি? তিনি বললেন, এতে কোন বাধা নেই (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৯৭৪)।

প্রশ্ন (১৫০) : স্বামীর উপর অভিযোগ এনে স্ত্রী তার স্বামীকে বিছানা থেকে পৃথক করে দিয়েছে। শরী‘আত অনুযায়ী স্ত্রী কি এরূপ করতে পারে? এক্ষেত্রে স্বামীর করণীয় কী?

উত্তর : স্ত্রী স্বামীকে আলাদা করার কোন অধিকার রাখে না। বরং স্বামী যালেম হ’লে স্ত্রী ‘খোলা’ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় স্বামী সর্বদা স্ত্রীর সাথে সুন্দর আচরণ করবে এবং স্ত্রীও স্বামীর আনুগত্য করে চলবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর’ (নিসা ৪/১৯)। আল্লাহ আরো বলেন, ‘স্ত্রীদের জন্য স্বামীদের উপর ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের উপর স্বামীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে। তবে স্বামীদের জন্য স্ত্রীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২/২২৮)। এক্ষণে স্বামীর উপর স্ত্রীর অভিযোগ যদি সঙ্গত হয়, তাহ’লে স্বামীকে অবশ্যই সংযত হ’তে হবে এবং স্ত্রীর অভিযোগটি দূর করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা সঙ্গত কারণ ব্যতীত স্বামী-স্ত্রী কেউ কারু থেকে পৃথক থাকতে পারে না।

প্রশ্ন (১৫১) : পাশ্চাত্যের দেশ সমূহে যেসব হালাল পশুর গোশত পাওয়া যায়, তা হয়তো আল্লাহ বা কারু নামে যবেহ করা হয় না। বরং ইলেক্ট্রিক শক বা গুলি করে হত্যা করা হয়। যেহেতু এখানকার অধিকাংশ আহলে কিতাব। তাই এই গোশত খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : আল্লাহর নামে যবেহ করা ব্যতীত কোন হালাল পশুর গোশত খাওয়া হালাল নয় (বাক্বারাহ ২/১৭৩)। অতএব এ ব্যাপারে স্পষ্ট জানা না থাকলে ঐ গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ যুগে আহলে কিতাব বলে কেউ নেই। যারা ইহূদী-খৃষ্টান বলে দাবী করে, তারা দ্বিত্ববাদী বা ত্রিত্ববাদী মুশরিক। তারা আল্লাহর নামে যবেহ করে কি-না সন্দেহ থাকলে তা খাওয়া যাবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২; তিরমিযী হা/২৫১৮; নাসাঈ হা/৫৭১১; মিশকাত হা/২৭৭৩)। উল্লেখ্য যে, শেষনবী আগমনের পর পৃথিবীর সকল মানুষ শেষনবীর উম্মত। এখন আর কোন নবী নেই। অতএব ইহূদী হৌক বা নাছারা হৌক যদি সে ইসলাম কবুল না করে, তাহ’লে সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে (মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০)। দ্বিতীয়তঃ কোন প্রাণীকে যদি কারেন্টে শক দেয়া হয় বা গুলি করে হত্যা করা হয়, আর জীবিত অবস্থায় তাকে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে যবেহ করা সম্ভব না হয়, তাহ’লে তার গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব... কিন্তু তোমরা যাকে জীবিত অবস্থায় যবেহ করেছ তা ব্যতীত’ (মায়েদা ৫/৩)।

প্রশ্ন (১৫২) : গ্রামের মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে বাইরে কবর ছিল। মসজিদ সম্প্রসারণ করার সময় কবরটি মসজিদের মধ্যে এসে যায়। পরে কিছু মানুষের বিরোধিতার মুখে কমিটি কবরস্থান বরাবর ছাদ পর্যন্ত পৃথক প্রাচীর দেয় এবং মসজিদের বাইরের দেওয়াল কবর বরাবর ভেঙ্গে দেয়। এক্ষণে সেখানে ছালাত শুদ্ধ হবে কি?

উত্তর : মসজিদের দেওয়াল ও কবরস্থানের মধ্যে আলাদা প্রাচীর থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত শুদ্ধ হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/৩১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/২৫৪; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৫৭)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কবরের দিকে ফিরে এবং কবরের উপরে ছালাত আদায় করো না’ (ছহীহাহ হা/১০১৬)। অতএব কোন মসজিদ ও কবরস্থানের মাঝে যদি আলাদা প্রাচীর থাকে বা রাস্তা থাকে, যা কবরকে মসজিদ থেকে আলাদা করে, তাহ’লে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায় করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, আর-রাদ্দু আলাল আখনাঈ ৩১১ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৫৩) : মহিলারা ফরয ছালাত একাকী বা ক্বাযা আদায়ের সময় আযান বা ইক্বামত দিতে পারে কি?

উত্তর : নারী হৌক বা পুরুষ হৌক ক্বাযা ছালাত বা একাকী ছালাত আদায়কালে কেবল ইক্বামত দিবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ ‘আযান’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৬৮০; মিশকাত হা/৬৮৪)। তবে জামা‘আতের ক্ষেত্রে আযান দিতে পারে। আয়েশা (রাঃ) আযান ও ইক্বামত দিয়ে মহিলাদের জামা‘আতে ইমামতি করেছেন (বায়হাক্বী ১/৪০৮ পৃ. হা/১৯৯৮; তামামুল মিন্নাহ পৃঃ ১৫৩, সনদ ছহীহ)। এমতাবস্থায় মহিলারা আযান ও ইক্বামত উভয়টিই নিম্নস্বরে দিবে (ভূপালী, আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩২২ পৃঃ)।

প্রশ্ন (১৫৪) : প্রথম স্বামীর কন্যা যদি দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে লালিত-পালিত না হয়, বিদেশে অথবা অন্য কোথাও লালিত পালিত হয়। তাহ’লে কি সে দ্বিতীয় স্বামীর জন্য মাহরাম হবে অথবা তাকে কি বিবাহ করা যাবে?

উত্তর : স্ত্রীর সন্তান যেখানেই লালিত-পালিত হৌক সে দ্বিতীয় স্বামীর জন্য মাহরাম এবং তাকে বিবাহ করা হারাম। আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল-... সহবাসকৃত স্ত্রীদের (অন্য স্বামীর) কন্যা, যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি ঐ স্ত্রীদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে (ঐ মেয়েদের সাথে বিবাহে) কোন দোষ নেই (নিসা ৪/২৩)। এক্ষণে ‘যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে’ বলার কারণ হ’ল সমাজে  প্রচলিত প্রথার বর্ণনা দেওয়া। অর্থাৎ সাধারণতঃ স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর সন্তানেরা দ্বিতীয় স্বামীর নিকট লালিত পালিত হয়। এর প্রমাণ হ’ল আয়াতের পরবর্তী অংশ যাতে বলা হয়েছে, ‘যদি ঐ স্ত্রীদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে (ঐ মেয়েদের সাথে বিবাহে) কোন দোষ নেই’। অতএব স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর দ্বারা জন্ম নেওয়া কন্যা বর্তমান স্বামীর মাহরাম এবং তার সাথে বিবাহ চিরকালের জন্য হারাম (ইবনু কাছীর, অত্র আয়াতের তাফসীর; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ৫/৭১; উছায়মীন,আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/১২২)।

প্রশ্ন (১৫৫) : হাদীছে বলা হয়েছে, এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্ব ৫০০ বছর। এক্ষণে ৫০০ বছর দ্বারা কী উদ্দেশ্য?

উত্তর : উক্ত মর্মে যতগুলি বর্ণনা এসেছে সবগুলিই যঈফ (তিরমিযী হা/৩২৯৪, ৩২৯৮; আহমাদ হা/১৭৭০, ৮৮২৮; বাযযার হা/৪০৭৫, সনদ যঈফ)। সেজন্য এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্বের বিষয়টি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এটি অদৃশ্যের বিষয়। যার উপর ঈমান আনা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ৩/১১৪৯)।

প্রশ্ন (১৫৬) : কেউ যদি অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার কারণে আড়াই চাঁদের ছিয়াম তথা ঈদের দিন ব্যতীত রামাযান ও আরো দেড় মাস মানতের ছিয়াম পালন করে, তাহ’লে উক্ত ছিয়াম পালন করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : আড়াই চাঁদের ছিয়াম বলে শরী‘আতে কিছু নেই। বরং এটি স্পষ্ট বিদ‘আত। সুতরাং এই মানত পূরণ করা নিষিদ্ধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করে, তাহ’লে সে যেন তা পূরণ করে। আর কোন ব্যক্তি যদি নাফরমানীর মানত করে, সে যেন তা পূরণ না করে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৩৪২৭)। তবে সাধারণভাবে যে কোন মানতের ছিয়াম পালন করা ওয়াজিব। আর এটি ধারাবাহিকভাবে পালন করার নিয়ত করে থাকলে ধারাবাহিক ভাবেই পালন করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪০/১৬৭)।

প্রশ্ন (১৫৭) : রাসূল (ছাঃ)-এর আমলে কোন ওয়াক্তিয়া মসজিদ ছিল কি? জনৈক ব্যক্তি বলেন, ওয়াক্তিয়া মসজিদে দান করলে কোন ছওয়াব পাওয়া যাবে না। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমলে জুম‘আ মসজিদ ব্যতীত ওয়াক্তিয়া মসজিদ ছিল। যেমন মসজিদে বনূ যুরায়েক্ব (বুখারী, মিশকাত হা/৩৮৭০)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় ওয়াক্তিয়া মসজিদ নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন (আবুদাঊদ হা/৪৫৫; তিরমিযী হা/৫৯৪-৯৬; মিশকাত হা/৭১৭; ছহীহাহ হা/২৭২৪)। ওমর (রাঃ) প্রত্যেক গভর্নরের নিকট পত্র লিখে বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত জামা‘আতে আদায় করার জন্য প্রত্যেক গোত্রের জন্য স্বতন্ত্র মসজিদ নির্মাণ করবে এবং শহরের প্রাণকেন্দ্রে জুম‘আ মসজিদ নির্মাণ করবে। জুম‘আর দিনে সকলেই উক্ত মসজিদে সমবেত হবে (আত্বিইয়া মুহাম্মাদ সালেম, শরহ বুলূগুল মারাম ৩/৫২)। রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববী ও কা‘বায় ছালাত আদায়ের যে ফযীলত বর্ণনা করেছেন সেটাও প্রমাণ করে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আমলে অন্যান্য ওয়াক্তিয়া মসজিদ ছিল (বুখারী হা/১১৯০; মিশকাত হা/৬৯২)। আর ওয়াক্তিয়া মসজিদে দান করলে ছওয়াব হবে না এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে গৃহ নির্মাণ করবেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৭)। অত্র হাদীছে ওয়াক্তিয়া বা জুম‘আ মসজিদের কথা উল্লেখ নেই। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাখির ডিম পাড়ার বাসার ন্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’ (আহমাদ হা/২১৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৭২)। সুতরাং যে ব্যক্তি ছওয়াবের আশায় একটি ছোট মসজিদও নির্মাণ করবে, এমনকি নির্মাণকাজে স্বল্প অর্থ বা শ্রম দিয়েও সহযোগিতা করবে, সেও উক্ত মর্যাদা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৩৭)।

প্রশ্ন (১৫৮) : স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তালাক ব্যতীত অন্য শব্দ যেমন তুমি আমার জন্য হারাম, আমি তোমার জন্য হারাম ইত্যাদি বললে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে কি?

উত্তর : তালাকের নিয়তে প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য সমূহ বললে  এক তালাক হবে। তালাকের নিয়তে ইঙ্গিতবহ কোন কথা বললে তাকে ‘কেনায়া তালাক’ বলা হয় (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/৩০২)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, জাওনের কন্যাকে (ابْنَةُ الْجَوْنِ) যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট একটি ঘরে পাঠানো হ’ল আর তিনি তার নিকটবর্তী হ’লেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও’ (বুখারী হা/৫২৫৪; ইবনু মাজাহ হা/২০৫০)। বস্ত্ততঃ এটাই ছিল তার জন্য তালাক। অতএব তালাকের নিয়তসহ কেউ স্ত্রীর হারাম হওয়ার কথা বললে তা তালাক হিসাবে গণ্য হবে।

প্রশ্ন (১৫৯) : ঈসা (আঃ)-কে ‘কালিমাতুল্লাহ’ বলা হয়েছে কেন? অথচ আমরা জানি আল্লাহর কালাম মাখলূক না যেমন কুরআন। তাহলে কি ঈসা (আঃ) মাখলূক না বরং স্রষ্টার অংশ?

উত্তর : উক্ত বুঝ পুরোপুরি ভুল। কারণ ‘কালিমাতুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ বাচক শব্দ ‘কুন’ যার অর্থ ‘হও’ আর তাতেই হয়ে যায়। অর্থাৎ ঈসা (আঃ) যেহেতু পিতা বিহীন এই পৃথিবীতে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এই ‘কুন’ শব্দ ব্যবহার করেন, আর তাতেই তিনি মাতৃগর্ভে চলে আসেন। ফলে তাকে ‘কালিমাতুল্লাহ’ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘মারিয়াম বলল, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে আমার সন্তান হবে, অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বললেন, এভাবেই আল্লাহ সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। যখন তিনি কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন সে বিষয়ে শুধু বলেন ‘হও’। অমনি তা হয়ে যায় (আলে ইমরান ৩/৪৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। তাকে তিনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন। অতঃপর বলেন, হও। তখন হয়ে গেল (আলে ইমরান ৩/৫৯)। এখানে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ আদমকে বিনা পিতা-মাতায় সৃষ্টি করেছেন। হাওয়াকে কোন নারী ছাড়াই কেবল আদমের দেহ থেকে সৃষ্টি করেছেন। ঈসাকে কোন পুরুষ ছাড়াই কেবল নারীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। বাকী প্রাণীজগতকে তিনি নারী ও পুরুষের মাধ্যমে সৃষ্টি করেন। তিনি যেভাবে খুশী সৃষ্টি করতে পারেন। এসব আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন। সুতরাং এই শব্দ দ্বারা কখনই উদ্দেশ্যে নয় যে, তিনি আল্লাহর অংশ, যেমনটি খৃষ্টান সম্প্রদায় ধারণা করে।

প্রশ্ন (১৬০) : জনৈক ব্যক্তির বাড়ির আঙ্গিনায় ছাদ নেই। পাশের ভবন থেকে বাড়ির ভিতর দেখা যায়। এক্ষণে অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়াই জানালা দিয়ে তাকানোতে তাদের নারীদের দিকে চোখ পড়লে গুনাহ হবে কি?

উত্তর : নিজ বাসার জানালা দিয়ে বা ছাদ থেকে কিছু দেখার সময় কারো প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি পড়লে গুনাহ হবে না। তবে সাধ্যমত দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে (সূরা নূর ৩০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কেউ যদি অনুমতি প্রদানের পূর্বেই পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এবং পরিবারের অদর্শনীয় বস্ত্ত দেখে ফেলে, তবে সে শাস্তি যোগ্য অপরাধ করল। ...কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন খোলা দরজার সামনে দিয়ে যায় আর তাতে কোন পর্দা ঝুলানো নেই, এমতাবস্থায় ঘরের ভেতর সেই ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ে গেলে তাতে তার কোন দোষ নেই। এই ক্ষেত্রে দোষ হবে ঘরের অধিবাসীদের (তিরমিযী হা/২৭০৭; মিশকাত হা/৩৫২৬; ছহীহাহ হা/৩৪৬৩)। অপরদিকে ছাদহীন বাড়ির মহিলাদেরও কর্তব্য হ’ল পর্দার সাথে আঙ্গিনায় বের হওয়া নতুবা আঙ্গিনাকেও পর্দার আওতায় আনা। নতুবা তারা অপরাধী হবে।

প্রশ্ন (১৬১) : জনৈক ব্যক্তি বলেন, জান্নাতের জাতীয় সংগীত হবে সূরা ‘আর-রহমান’। যে সূরা স্বয়ং আল্লাহ জান্নাতে নিজে শুনাবেন! এটা কি ঠিক?

উত্তর : এ মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। তবে যঈফ সনদে কিছু কিছু বর্ণনা এসেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীকে কুরআন শুনাবেন যাতে লোকেরা মনে করবে তারা কখনো এরূপ শুনেনি (আবুল ফযল রাযী, ফাযায়েলুল কুরআন হা/১৩৩; আলবানী, যঈফাহ হা/১২৪৮)। যেহেতু এটি গায়েবী বিষয়, সুতরাং সুস্পষ্ট দলীল ব্যতীত এটি বিশ্বাসযোগ্য নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৩১৮)।

প্রশ্ন (১৬২) : যোহর ও আছর ছালাতে ইমামের পিছনে কি সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা পাঠ করতে হবে?

উত্তর : প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে।  জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আর যোহর ও আছর তথা সের্রী ছালাতে ইমামের পিছনে ১ম ও ২য় রাক‘আতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা এবং শেষ ২ রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা যোহর ও আছর ছালাতের প্রথম দু’রাক‘আতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা এবং শেষ দু’রাক‘আতে কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করতাম (ইবনু মাজাহ হা/৮৪৩, সনদ ছহীহ)।  কেবল  সূরা  ফাতিহা  পাঠ করলেও যথেষ্ট হবে (মুসলিম হা/৪৫১)।

তবে শেষ দু’রাক‘আতেও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো যায়। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যোহরের প্রথম দু’রাক‘আতে ৩০ আয়াত পরিমাণ এবং শেষের দু’রাক‘আতের প্রতি রাক‘আতে ১৫ পনের আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন (মুসলিম হা/৪৫২)। আলবানী (রহঃ) বলেন, শেষ দু‘রাক‘আতে সূরার ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে অত্র হাদীছে দলীল রয়েছে (ছিফাতু ছালাতিন নবী (ছাঃ) ১১৩ পৃ.)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, শেষ দু’রাক‘আতেও মুক্তাদী ইমাম রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পাঠ করতে পারে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/১০৮)।

প্রশ্ন (১৬৩) : জনৈক বক্তা বলেন, ওছমান (রাঃ)-কে ‘যুন নূরাইন’ বলা হয়। যা থেকে প্রমাণ হয় যে রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যারা একেকজন একেকটি নূর ছিলেন। অতএব রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরী ছিলেন। কথাটা কি ঠিক?

উত্তর : উক্ত দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর পরপর দুই কন্যাকে বিবাহ করায় ওছমান (রাঃ)-কে উক্ত লকবে ডাকা হয় (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২/৪৫১)। উল্লেখ্য যে, اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِى ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেন’ বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তা মওযূ‘ বা জাল (ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্র.)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা তার সন্তানেরা কেউ নূরের তৈরী ছিলেন না। বরং তারা মাটির মানুষ ছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, নিশ্চয় আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ ব্যতীত নই’... (কাহ্ফ ১৮/১১০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি একজন মানুষ ব্যতীত নই’... (মুসলিম হা/২৩৬২; মিশকাত হা/১৪৭; বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৭৬১ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়)।

তিনি বলেন, ‘খৃষ্টানরা যেমন তাদের নবী ঈসা ইবনু মরিয়মের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত প্রশংসায় লিপ্ত হয়, আমার ব্যাপারে তেমন প্রশংসা থেকে তোমরা বেঁচে থাক। বরং বল, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; মিশকাত হা/৪৮৯৭)।

প্রশ্ন (১৬৪) : নার্সিং কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে মোমবাতি হাতে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। এটা কি শরী‘আত সম্মত?

উত্তর : এটি অমুসলিমদের রেওয়াজ, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। সেবামূলক কর্মের ক্ষেত্রে মোমবাতির মত নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অন্যকে আলোকিত করার শপথ নেওয়ার জন্য অমুসলিমদের অনুকরণে এই রেওয়াজ পালন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়, সনদ হাসান)। তিনি বলেন, ‘ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সঙ্গে মিশে যাবে এবং কিছু গোত্র মূর্তিপূজারী হবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪০৬ ‘ফিৎনা সমূহ’ অধ্যায়)। অতএব কোন ভ্রান্ত আক্বীদা নিয়ে এভাবে মোমবাতি জ্বালানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

প্রশ্ন (১৬৫) : চুরির শাস্তি হিসাবে আল্লাহ হাত কাটতে বলেছেন। এক্ষণে হাতের কতটুকু কাটতে হবে?

উত্তর : চুরি প্রমাণিত হ’লে এবং দেশের আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হ’লে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন প্রথমে তার ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে দিবে। এরপর আবার করলে বাম পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত কেটে দিবে। এরপরে আবারো চুরি করলে তার বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটতে হবে। এরপরে আবারো চুরি করলে তার ডান পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত কাটতে হবে (দারাকুৎনী হা/৩৩৯২, ৩৪৯১; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৬০৬; ইরওয়া হা/২৪৩৩, ২৪৩৪)।

প্রশ্ন (১৬৬) : হারাম পশুর প্রক্রিয়াজাতকৃত অংশ বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা হ’লে তা খাওয়া জায়েয হবে কি? যেমন ফালুদায় ব্যবহৃত জিলেটিন শূকরের চর্বি থেকে তৈরী করা হয় বলে জানা যায়।

উত্তর : যে প্রাণীর গোশত খাওয়া হারাম, সে প্রাণীর শরীরের অন্যান্য অংশও হারাম। শূকরের চর্বি হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। সুতরাং হারাম পশুর প্রক্রিয়াজাতকৃত বস্ত্ত যে খাদ্যে মিশ্রিত করা হবে সেটিও হারাম হয়ে যাবে। অতএব জিলেটিন যদি শূকরের চর্বি থেকে তৈরী প্রমাণিত হয়, তবে তা খাওয়া হারাম (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৩/২৩-২৬; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/৩৯৫)। আর যদি উক্ত জিলেটিন হালাল প্রাণী থেকে তৈরি করা হয়, তাহ’লে সেটি খাওয়া জায়েয। তবে এ বিষয়ে আগে নিশ্চিত হ’তে হবে।

প্রশ্ন (১৬৮) : আমি একটি হারাম কর্মে জড়িয়ে ছিলাম। সেখান থেকে সরে এসেছি। নিয়মিত ছালাত আদায় করি ও দো‘আ-দরূদ পড়ি। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় মাঝে-মধ্যে পুনরায় আগের মত জড়িয়ে পড়ি। এ থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তর : যে ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এরূপ কাজে পুনরায় জড়িয়ে পড়েছে তাকে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে একনিষ্ঠভাবে তওবা করতে হবে (আবুদাঊদ হা/১৫২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৩৮)। বারবার জড়িয়ে পড়লে বারবার তওবা করবে। তবে স্মর্তব্য যে, তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত পূরণীয়- (১) একমাত্র আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই তওবা করতে হবে। (২) কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হ’তে হবে। (৩) পুনরায় সে গোনাহে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তওবার জন্য বেশী বেশী পাঠ করতে হবে ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহে’ (তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/২৩৫৩; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৯৪ পৃ.)।

একই পাপ বার বার করলে এক সময় ব্যক্তি পাপের অনুভূতিশূন্য হয়ে যায় এবং তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকবে এবং প্রতি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করবে ও তওবা-ইস্তিগফার করবে। বারবার পাপ করার পরও যদি খালেছ নিয়তে কেউ তওবা করে, তবে তা কবুলযোগ্য হবে ইনশাআল্লাহ (বুখারী হা/৭৫০৭; মুসলিম হা/২৭৫৭; মিশকাত হা/২৩৩৩)। নববী বলেন, বান্দা যদি একশ’বার বা হাযার বার বা তার চেয়ে বেশীবারও পাপ করে আর প্রত্যেকবার তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ (নববী, শরহ মুসলিম হা/২৭৫৭, ১৭/৭৫; ফাৎহুল বারী ১৩/৪৭২)। অতএব নিরাশ না হয়ে পুনরায় পাপ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার সাথে তওবা করতে হবে। এতে একসময় পাপের বিরুদ্ধে হৃদয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ (মুসলিম হা/১৪৪)।

প্রশ্ন (১৬৯) : মসজিদের ক্বিবলা বরাবর টয়লেট বা পেশাবখানা থাকলে উক্ত মসজিদে ছালাত আদায়ে কোন বাধা আছে কি? উল্লেখ্য যে, উভয়ের মাঝে দেয়াল একটাই।

উত্তর : মসজিদের ক্বিবলার দিকের প্রাচীর ও টয়লেটের প্রাচীর যদি একই হয়, তবে সেখানে ছালাত আদায় করা সমীচীন নয়। কেননা তা সরাসরি টয়লেট অভিমুখে ছালাত আদায়ের নামান্তর। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তোমরা অবশ্যই তিনটি ঘরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করোনা। টয়লেট, গোসলখানা ও কবরস্থান (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/১৫৮৪)। হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) (ঐ, হা/১৫৮১) এবং আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৫৭৭) একই মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম আহমাদ বলেন, ঐ তিনটি ঘরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করা উচিৎ নয়’ (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৫৩)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, যতক্ষণ না মসজিদের প্রাচীর ও টয়লেটের প্রাচীর আলাদা হবে, ততক্ষণ সে মসজিদে ছালাত আদায় জায়েয হবে না। তবে ইবনু উক্বাইল বলেন, যখন মুছাল্লা ও টয়লেটের মাঝখানে (দূরত্ব রেখে) পর্দা বা দেওয়াল থাকবে, সেখানে ছালাত আদায়ে কোন সমস্যা নেই। যেমন পথিক ও মুছল্লীর মাঝখানে পর্দা থাকলে কোন সমস্যা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল উমদাহ ৪৮২ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৭০) : দো‘আ-দরূদ মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে পাঠ করলে ছওয়াব বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : মুক্তাদী হৌক বা একাকী হৌক ছালাতে ক্বিরাআত ও দো‘আ-দরূদ চুপে চুপে পড়াই সুন্নাত। আর চুপে চুপে পড়ার নিম্নতম সীমা হ’ল নিজে শোনা (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/২৯৫)। তবে ছালাতের বাইরে সাধারণ যিকর-আযকার হৃদয়ে এবং মুখে উচ্চারণ উভয় নিয়মে হ’তে পারে। তবে মুখে উচ্চারণ ও হৃদয়ে অনুধাবন একসাথে হওয়াই উত্তম (নববী, আল-আযকার ৯ পৃ.)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫)। উল্লেখ্য যে, কলবের যিকরের অর্থ হ’ল আল্লাহর আয়াতের মর্ম নিয়ে চিন্তা করা, আনুগত্য, সম্মান ও আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে ভাবা, তাঁকে ভয় করা, তাঁর উপর ভরসা করা, জান্নাত বা জাহান্নাম নিয়ে চিন্তা করা (উছায়মীন, তাফসীরুল কুরআনিল কারীম ২/১৬৭-৬৮)।

প্রশ্ন (১৭১) : মাথাবিহীন এবং পরিচয়হীন লাশ পাওয়া গেলে তাকে মুসলিম হিসাবে শনাক্ত করে গোসল ও দাফন-কাফন করা যাবে কি?

উত্তর : প্রথমে লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করতে হবে। সেটি বিভিন্নভাবে হ’তে পারে। যেমন খাৎনা, পোষাকের ধরন, দাড়িতে খেযাব, ধর্মীয় পরিচয় বহন করে এরূপ কোন চিহ্ন ইত্যাদি। এক্ষণে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হ’লে এলাকার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ মুসলিম এলাকায় পাওয়া গেলে মুসলিম হিসাবে গণ্য করে তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিধর্মীদের এলাকায় পাওয়া গেলে তার উপর তাদের বিধান কার্যকর হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৪০০)।

প্রশ্ন (১৭২) : অপারেশনের কারণে ১২ দিন গোসল করা যাবে না। কিন্তু আমি হায়েয অবস্থায় থাকায় গোসল ফরয হয়েছে। এক্ষণে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

উত্তর : ঋতুর মেয়াদ শেষে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে ছালাত আদায় করবে (মুসলিম হা/৩৩৪; বুলূগুল মারাম হা/১৩৯)। কারণ গোসল ও ওযূ করে যে সকল ইবাদত করা যায়, অসুস্থতার কারণে তায়াম্মুম করেও সে সকল ইবাদত করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর’... (মায়েদাহ ৫/৬; বুখারী হা/৩১৮; মিশকাত হা/৫২৮)।

প্রশ্ন (১৭৩) : আমি এমন কাজের সাথে জড়িত যে, আমি অধিকাংশ ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করতে পারি না। একাকী পড়তে হয়। আমার ছালাত গ্রহণযোগ্য হবে কি?

উত্তর : সাধ্যমত জামা‘আতে ছালাত আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ জামা‘আতে ছালাত আদায় করা পুরুষের জন্য ওয়াজিব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল, অথচ জামা‘আতে এলো না, তার ছালাত হ’ল না। তবে বিশেষ ওযর ব্যতীত’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৯৩; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২০৬৪; মিশকাত হা/১০৭৭)। এক্ষণে গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। অন্যথায় বিনা ওযরে কেউ বাড়িতে, দোকানে বা অন্য কোথাও ফরয ছালাত আদায় করলে তার ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হ’লেও ওয়াজিব ত্যাগ করার কারণে সে গুনাহগার হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মুওয়াযযিনের আযান শুনেছে এবং কোন ওযর বা অসুবিধা তাকে তার অনুসরণ করতে বাধা দেয়নি, তার আদায়কৃত ছালাত আল্লাহ কবুল করবেন না (আবুদাউদ হা/৫৫১; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)।

প্রশ্ন (১৭৪) : বাড়ীর কাছে ওয়াক্তিয়া মসজিদ এবং সামান্য দূরে জামে মসজিদ। যেখানে মুছল্লী সংখ্যাও বেশী হয়। এক্ষেত্রে কোন মসজিদে ছালাত আদায় করা উচিৎ হবে?

উত্তর : উভয় মসজিদেই ছালাত আদায় করা যাবে। তবে ছালাতের যে জামা‘আতে লোক সংখ্যা বেশী হয়, তাতে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ছালাতের নেকী অর্জনের ব্যাপারে ঐ ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা নেকীর ভাগিদার, যে বেশী দূর থেকে আগমনকারী’ (বুখারী হা/৬৫১; মিশকাত হা/৬৯৯)। তিনি আরো বলেন, একাকী পড়ার চেয়ে দু’জনে, দু’জনের চেয়ে তিন জনে ছালাত আদায় করা উত্তম। এভাবে মুছল্লী যত বেশী হবে, ততই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রিয়তর হবে (আবুদাঊদ হা/৫৫৪; মিশকাত হা/১০৬৬)। তবে মাঝে-মধ্যে ওয়াক্তিয়া মসজিদেও ছালাত আদায় করতে হবে, যাতে মসজিদটি পরিত্যক্ত না হয় এবং দাতারা ছওয়াব থেকে বঞ্চিত না হন (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৩২৯-৩০)।

উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ‘ব্যক্তি তার নিকটবর্তী মসজিদ ছালাত আদায় করবে, অন্য মসজিদের অনুগামী হবে না’ হাদীছটি মারফূ হিসাবে যঈফ এবং মাকতূ হিসাবে ছহীহ হওয়ার বিষয়টিও মতভেদপূর্ণ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১৩৩৭৩; ছহীহাহ হা/২২০০)। তাই এ হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ না করাই উত্তম।

প্রশ্ন (১৭৫) : রাতে আক্বীক্বার পশু যবেহ করা যাবে কি?

উত্তর : সূর্যাস্তের পর থেকে দিন শুরু হয়। আর ৭ম দিনে আক্বীক্বা করার ব্যাপারে হাদীছে নির্দেশনা এসেছে (আবুদাঊদ হা/২৮৩৮)। কিন্তু সেটা দিনে বা রাতে বলে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অতএব সুবিধামত দিনে বা রাতে যেকোন সময় আক্বীক্বা করবে।

প্রশ্ন (১৭৬) : সম্প্রতি মানবদেহে শূকরের কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এক্ষণে মানবদেহে শূকর বা অন্য কোন পশুর অঙ্গ সংযোজন করার ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কি?

উত্তর : সাধারণ অবস্থায় হারাম প্রাণীর কোন অঙ্গ মানব দেহে প্রতিস্থাপন করা যাবে না; বরং হালাল প্রাণীর কিডনী প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে যদি ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্য শূকর ব্যতীত অন্য কোন প্রাণীর কিডনী পাওয়া না যায়, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় তা জায়েয। আল্লাহ বলেন, তবে যে ব্যক্তি বাধ্য হয় এবং বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘনকারী না হয়, তার জন্য তা ভক্ষণে কোন পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/১৭৩)।

প্রশ্ন (১৭৭) : সুস্থ অবস্থায় নফল ছালাত বসে আদায় করলে ছালাত কবুল হবে কি?

উত্তর : সক্ষম ব্যক্তির জন্য নফল ছালাত দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম। তবে কেউ বসেও আদায় করতে পারে। সেক্ষেত্রে সে দাঁড়িয়ে আদায়কারীর অর্ধেক ছওয়াব পাবে (বুখারী, মিশকাত হা/১২৪৯, ১২৫২)। উল্লেখ্য, সক্ষম ব্যক্তি ফরয ছালাত দাঁড়িয়েই আদায় করবে। কেননা ক্বিয়াম ছালাতের অন্যতম রুকন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় কর’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। সুতরাং সক্ষম ব্যক্তি কোন সঙ্গত কারণ ছাড়াই বসে ফরয ছালাত আদায় করলে উক্ত ছালাত বাতিল হবে।

প্রশ্ন (১৭৮) : ক্বিবলার দিকে মুখ করে ওযূ করা বা থুথু ফেলা জায়েয হবে কি?

উত্তর : যেদিকে মুখ করে ওযূ করতে সুবিধা হবে সেদিকেই মুখ করে ওযূ করবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৭/০২)। কোন কোন বিদ্বান ওযূর সময় কেবলামুখী হওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে এর পক্ষে কোন দলীল নেই। তবে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলা সমীচীন নয়। বরং ছালাতের মধ্যে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলে ক্বিয়ামতের দিন তার ঐ থুথু দু’চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে’ (আবুদাউদ হা/৩৮২৪; ছহীহাহ হা/২২২)। তিনি আরো বলেন, ক্বিবলার দিকে যে কফ ফেলে তার চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন উঠানো হবে (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩১৩; ছহীহাহ হা/২২৩)। তিনি আরো বলেন, মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গুনাহ ও তা দাফন করা ছওয়াবের কাজ (ছহীহুত তারগীব হা/২৮৭)। জনৈক ইমাম মসজিদে ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলে পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ) তাকে ইমামতি করতে দেননি (আবুদাউদ হা/৪৮১; মিশকাত হা/৭৪৭)।

প্রশ্ন (১৭৯) : কাপড়ে বীর্য লাগার পর তা শুকিয়ে গেলে তা পরে ছালাত আদায় করা যাবে কি? এছাড়া কোন স্থানে তা লেগে থাকলে তার উপর ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : বীর্য অপবিত্র নয়। তাই গাঢ় বীর্য কোন কাপড়ে লেগে শুকিয়ে গেলে তা ঘষে তুলে ফেললে উক্ত কাপড়ে ছালাত আদায় করা জায়েয। জ্যেষ্ঠ তাবেঈ হুমাম বিন হারেছ একদিন আয়েশা (রাঃ)-এর মেহমান হন। এমতাবস্থায় সকালে তিনি কাপড় ধুতে থাকলে আয়েশা (রাঃ)-এর দাসী সেটা দেখেন এবং তাঁকে সেটা অবহিত করেন। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল যে, সে বীর্য দেখলে কেবলমাত্র সে স্থানটি ধুয়ে ফেলবে। আর না দেখা গেলে স্থানটিতে কেবল পানি ছিটিয়ে দিবে। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কাপড় থেকে শুকনো বীর্য ঘষে তুলে ফেলেছি এবং তিনি সেই কাপড়েই ছালাত আদায় করেছেন’ (আবুদাঊদ হা/৩৭১; মুসলিম হা/২৮৮)। অনুরূপভাবে কোন পোষাকে বীর্য লেগে থাকলে তা ঘষে ফেলে তাতে ছালাত আদায় করলে কোন দোষ নেই (ইরওয়া হা/৯৪৮-এর আলোচনা; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/১০৫)।

প্রশ্ন (১৮০) : মসজিদে সাধারণভাবে কোন দ্বীনী অনুষ্ঠান, ওয়ায মাহফিল বা বিবাহের অনুষ্ঠান হ’লে সবশেষে খাবার দেওয়া হয়। এটা খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। কেননা মানুষকে খাদ্য দান বা মেহমানদারীর ফযীলতের ব্যাপারে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই, যে অন্যকে খাদ্য খাওয়ায়’ (আহমাদ হা/২৩৯৭১; ছহীহাহ হা/৪৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৪৯০)।

প্রশ্ন (১৮১) : কেউ দো‘আ চাইলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দো‘আ করা যাবে কি?

উত্তর : কারোর জন্য দো‘আ করার সময় তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার কোন বিধান নেই। এমন আমল রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের সময়ে প্রচলিত ছিল না। অতএব বিশেষতঃ নেকী বা বরকত মনে করে এরূপ করা কিংবা কারো থেকে হাত বুলিয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকা যরূরী। তবে কারো হৃদয় শক্ত হয়ে গেলে প্রতিকার হিসাবে সে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারে। যেমন জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে নিজের কঠিন হৃদয় সম্পর্কে অভিযোগ করলে তিনি এর প্রতিকার হিসাবে ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো এবং নিঃস্ব মানুষকে খাদ্য খাওয়ানোর পরামর্শ দেন (আহমাদ হা/৭৫৬৬; ছহীহাহ হা/৮৫৪; মিশকাত হা/৫০০১)।

প্রশ্ন (১৮২) : উট, গরু, মহিষ বা ভেড়া দিয়ে আক্বীক্বা করা যাবে কি?

উত্তর : দুম্বা, ছাগল, ভেড়া দ্বারা আক্বীক্বা করা সুন্নাত (আবূদাঊদ হা/২৮৩৪; মিশকাত হা/৪১৫২; ছহীহাহ হা/১৬৫৫)। গরু ও উট দিয়ে আক্বীক্বা করার হাদীছটি জাল (ইরওয়া হা/১১৬৮)। আর মহিষের কথা কোন হাদীছে নেই। আয়েশা (রাঃ)-এর ভাতিজা জন্মগ্রহণ করলে তাকে উট দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলা হ’লে তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। রাসূল (ছাঃ) দু’টি সমপর্যায়ের ছাগল দ্বারা আক্বীক্বা করতে বলেছেন (বায়হাক্বী হা/১৯০৬৩; ইরওয়া হা/১১৬৬-এর আলোচনা ৪/৩৯০ পৃ.)। জনৈকা মহিলা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, অমুকের স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে তার পক্ষ থেকে একটি উট আক্বীক্বা করব। তখন আয়েশা (রাঃ) প্রতিবাদ করে বলেন, না। বরং সুন্নাত হ’ল ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আক্বীক্বা করা (মুসনাদে ইবনু রাহওয়াইহ হা/১০৩৩; ছহীহাহ হা/২৭২০)। অতএব সুন্নাতের অনুসরণ করাই কর্তব্য।

প্রশ্ন (১৮৩) : বনু ইস্রাঈলের এক আবেদ ব্যক্তিকে বলা হ’ল তুমি আল্লাহর রহমতে জান্নাতে যাবে। তখন সে বলল, আমি আমার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে চাই। তাকে পুনরায় একই কথা বলা হ’লে সে আবারও বলল, আমার আমলের বিনিময়েই জান্নাতে যেতে চাই। তখন আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বললেন, তোমরা আমার দেওয়া নে‘মত এক পাল্লায় এবং তার আমলসমূহ এক পাল্লায় রেখে পরিমাপ কর। তখন কেবল চক্ষুর নে‘মত এত ভারী হয়ে গেল যে, তা তার ৫০০ বছরের ইবাদতকে ছেয়ে ফেলল। তখন সে বুঝতে পারল এবং আল্লাহর রহমতেই জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইল। হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটির সনদ যঈফ (হাকেম হা/৭৬৩৭; যঈফাহ হা/১১৮৩)। তবে ‘আল্লাহর রহমত ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৪৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫৯৮)।

প্রশ্ন (১৮৪) : জামা‘আত চলাকালীন সময়ে কোন মুছল্লী অসুস্থ হ’লে বা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অন্য মুছল্লীদের করণীয় কি? এসময় জামা’আত ভেঙ্গে ফেললে বা অন্য মুছল্লীদের জামা‘আত ভাঙ্গিয়ে দিলে গুনাহগার হ’তে হবে কি?

উত্তর : ছালাত চলাকালীন কোন মুছল্লী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের মুছল্লীরা ছালাত ছেড়ে দিয়ে তাকে সাহায্য করবে। তবে ইমাম অন্যান্য মুছল্লীদের নিয়ে ছালাত চলমান রাখবেন। রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থায় সাপ ও বিচ্ছু মারতে বলেছেন (আবূদাঊদ হা/৯২১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১০০৪)। ওমর (রাঃ) ছালাতরত অবস্থায় আহত হ’লে উপস্থিত ছাহাবীগণ তাঁকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। বাকীদের নিয়ে আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ) সংক্ষিপ্ততম সূরা দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৯০৫ সনদ ছহীহ; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/১৩৭)।

প্রশ্ন (১৮৫) : সদ্যজাত শিশুর তাহনীক করানোর সঠিক সময় কখন? এটা শাল দুধ খাওয়ানোর পূর্বেই করতে হবে কি?

উত্তর : শিশুকে শাল দুধ পান করানোর পূর্বে তাহনীক করা সুন্নাত (নববী, আল-মাজমূ ৮/৪৪৩)। কারণ হাদীছে তাহনীক সংক্রান্ত যে সকল বর্ণনা এসেছে তার সবগুলোতে শাল দুধ পান করার পূর্বের কথা বলা হয়েছে। আবু তালহার সন্তান উম্মে সুলাইমের গর্ভে জন্মগ্রহণ করার পরেই আনাস (রাঃ) শিশুটিকে খেজুরসহ রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে যান। রাসূল (ছাঃ) খেজুর চিবিয়ে তাহনীক করে দেন (বুখারী হা/৫৪৭০; মুসলিম হা/২১৪৪)। হিজরতের পরে আসমা (রাঃ)-এর সন্তান জন্ম নিলে প্রথমেই তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে নিয়ে যান। রাসূল (ছাঃ) তাহনীক করে দেন। রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের লালাই ছিল তার প্রথম খাবার (বুখারী হা/৩৯০৯; মুসলিম হা/২১৪৬; মিশকাত হা/৪১৫১)। তবে প্রয়োজনে শাল দুধ পান করার পরেও তাহনীক করানোয় বাধা নেই।

প্রশ্ন (১৮৬) : সাত বছর যাবৎ সংসার করার পরও স্বামীর সাথে জনৈক স্ত্রীর বনিবনা হয় না। মাঝে মাঝে ঝগড়া হ’লে স্বামী তালাক দেয়, আবার ক্ষমা চেয়ে নেয়। স্ত্রী ডিভোর্স চায় কিন্তু স্বামী রাযী হয় না। এক্ষণে উক্ত স্ত্রীর করণীয় কি?

উত্তর : স্বামী যদি তালাক একাধিকবার দিয়ে থাকে এবং যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিন তালাক সম্পন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ তিন মাসে বা পৃথক পৃথক তিন তোহরে তিন বার তালাক দিয়ে থাকলে তালাক বায়েন হয়ে যাবে। তারপর কোনভাবেই এক সাথে সংসার করা যাবে না, যতক্ষণ না উক্ত স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হবে এবং স্বাভাবিকভাবে তালাকপ্রাপ্তা হয়ে পূর্বের স্বামীকে নতুনভাবে বিবাহ করে (বাক্বারাহ ২/২৩০; বুখারী হা/৫২৬৪)। আর যদি এমনটি না হয় তাহ’লে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের মাধ্যমে মীমাংসা করতে হবে (নিসা ৪/৩৫; আহমাদ হা/৬৫৬)। এতেও সমাধান না হ’লে খোলা‘র মাধ্যমে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, খোলা‘ তথা বিবাহ বিচ্ছেদ হয় স্ত্রীর পক্ষ থেকে, যা স্বামীকে মোহর বা মোহরের অংশবিশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যকর হয়। এটি তালাক নয় (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৮/১৮১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৪৬৭-৭০; দ্র. ‘তালাক ও তাহলীল’ বই)।

প্রশ্ন (১৮৭) : হিন্দুদের দাওয়াত দানের উদ্দেশ্যে পূজামন্ডপের বাইরে কুরআনের অনুবাদ ও ইসলামী বইপত্র বিতরণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : হিন্দুদের দাওয়াত দানের উক্ত তরীকা প্রজ্ঞা সম্পন্ন নয়। কেননা এতে তারা মনঃক্ষুণ্ণ ও ক্ষুব্ধ হবে। তবে অন্যভাবে তাদের দাওয়াত দেওয়ায় বাধা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহ্ল ১৬/১২৫)। উল্লেখ্য যে, কুরআনের আরবী মূল মুছহাফ তাদেরকে দেওয়া যাবে না। কেননা তা স্পর্শ করা মুশরিকদের জন্য জায়েয নয় (ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭৯; ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৮০)।

প্রশ্ন (১৮৮) : ছালাতরত অবস্থায় কারো মৃত্যু হওয়া সৌভাগ্যের মৃত্যু- একথার কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : কেবল ছালাতই নয় যেকোন ইবাদতরত অবস্থায় কারো মৃত্যু তার জন্য পরকালীন কল্যাণের বার্তা বহন করে। যেমন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ কোন ব্যক্তির ভালো চান, তাকে মানুষের প্রিয়পাত্র করেন। কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! প্রিয়পাত্র করার অর্থ কী? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজে লিপ্ত করেন এবং সে অবস্থায় তাকে মৃত্যু দান করেন’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৪২; আহমাদ হা/১৭৮১৯; ছহীহাহ হা/১১১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৫-৭)। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন আল্লাহ কোন মানুষের কল্যাণ চান তাকে পবিত্র করেন। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে বান্দাকে পবিত্র করা হয়, রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তার মনে ভালো কাজের উদ্রেক ঘটিয়ে তাকে ভালো কাজে লিপ্ত করা হয় এবং সে অবস্থায় তার জান কবয করা হয় (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৯০০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩০৬)। এছাড়াও ইবাদতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে অবস্থায় ক্বিয়ামতের দিন উত্থিত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক বান্দা ক্বিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্থিত হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে’ (মুসলিম হা/২৮৭৮)। অতএব ছালাতরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা সৌভাগ্যের আলামত।

প্রশ্ন (১৮৯) : এসির ঠান্ডায় অসুবিধা দেখিয়ে কিছু মুছল্লী মূল জামা‘আতের সাথে ৬-৭ কাতার দূরত্ব রেখে মসজিদের বারান্দায় ছালাত আদায় করে। এভাবে কাতার ফাঁকা রেখে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : সামনে কাতারের জায়গা ফাঁকা রেখে পিছনে কাতার করা যাবে না। এটি রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত বিরোধী। কাতারের সাথে কাতার মিলিয়ে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা (ছালাতের) কাতারসমূহে মিলে-মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকটে রাখবে’ (আবুদাঊদ হা/৬৬৭; মিশকাত হা/১০৯৩; ছহীহুত তারগীব হা/৪৯৪)। বিদ্বানগণ ছালাত ও জামা‘আত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কাতারের সাথে কাতারের ধারাবাহিকতাকে শর্ত হিসাবে গণ্য করেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/৪০৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/২৯৭-৩০০)। অপরদিকে মসজিদ কর্তৃপক্ষেরও উচিৎ হবে, এসির তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে রাখা, যাতে সবধরনের মুছল্লীর জন্য তা সহনীয় হয়।

প্রশ্ন (১৯০) : জনৈক ব্যক্তি ৫০ হাযার টাকায় গরু ক্রয় করে বিক্রির সময় ৮০ হাযার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছে বলে ৯০ হাযার টাকায় বিক্রি করেছে। এক্ষণে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বেশী দামে বিক্রি করার কারণে প্রাপ্ত পুরো টাকা হারাম হয়ে যাবে কি? না কেবল মিথ্যা বলার জন্য গুনাহগার হবে?

উত্তর : মিথ্যা বলা মহাপাপ। ব্যবসা-বাণিজ্যে মিথ্যা বললে ও কোনরূপ প্রতারণার আশ্রয় নিলে আল্লাহ তা থেকে বরকত উঠিয়ে নেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীনতা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পৃথক হয়। যদি তারা সত্য বলে ও সবকিছু খুলে বলে, তাহ’লে তাদের ব্যবসায়ে বরকত দেওয়া হবে। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহ’লে তাদের দু’জনের ব্যবসায়ে বরকত রহিত করা হবে (বুখারী হা/২০৭৯; মিশকাত হা/২৮০২)। মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়কারীর সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না, তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে (মুসলিম হা/১০৬; মিশকাত হা/২৭৯৫)। এক্ষণে মিথ্যার মাধ্যমে যা সে উপার্জন করেছে তা প্রতারণা হিসাবে গণ্য হবে। তার জন্য করণীয় হ’ল ক্রেতাকে মূল ক্রয়মূল্য জানিয়ে দেওয়া। এমতাবস্থায় ক্রেতার ব্যবসায়ের চুক্তি বাতিল করার অধিকার থাকবে। যদি এটা সম্ভব না হয় তাহ’লে প্রকৃত বাজারমূল্য যাচাই করে অতিরিক্ত লভ্যাংশ ক্রেতাকে ফেরত দিবে। আর ক্রেতার পরিচয় না মিললে অতিরিক্ত লভ্যাংশ তার নামে দান করে দিবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩৬; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/৩০৫; উছায়মীন, ৮/৩০২)। অতএব মিথ্যা বলে অতিরিক্ত গৃহীত লভ্যাংশ গ্রহণ করা জায়েয হবে না।

প্রশ্ন (১৯১) : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হলে কারেন্ট চালিত হিটার বা চুলা দিয়ে রান্না করা নিষিদ্ধ। উক্ত নিষেধ অমান্য করে রান্না করে খাওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : যেকোন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম যতক্ষণ শরী‘আতবিরোধী বা যুলুম না হবে ততক্ষণ মেনে চলতে হবে। যেহেতু হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে চলার শর্তে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়, অতএব তাদের দেয়া বৈধ শর্তাবলী মেনে চলা যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না’ (আবূদাঊদ হা/৩৫৯৪; তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত হা/২৯২৩)। অতএব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা যাবে না।

প্রশ্ন (১৯২) : পিতা-মাতা এবং স্বামীর আদেশ সাংঘর্ষিক হ’লে স্ত্রীর জন্য কার আদেশ মানা যরূরী?

উত্তর : স্বামী এবং পিতা-মাতা উভয়ের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ওয়াজিব। তাই সাধ্যমত উভয়কে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবে। এরপরেও যদি উভয়ের আদেশ-নিষেধের মাঝে চূড়ান্ত বৈপরিত্য দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে সংসার জীবনে বৈষয়িক বিষয় সমূহে স্বামীর আদেশকে অগ্রগণ্য করতে হবে। কেননা বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত নারীরা পিতা-মাতার নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে। কিন্তু বিবাহের পর তারা স্বামীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সুতরাং সেসময় স্বামীর আদেশ-নিষেধ মান্য করাই তার জন্য অগ্রগণ্য হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি যদি কাউকে কোন মানুষের সামনে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহ’লে স্ত্রীকে তার স্বামীর সামনে সিজদা করতে বলতাম (আবূদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৫৫)। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত হবে দু’ধরনের মানুষ। তাদের একজন হ’ল, অবাধ্য স্ত্রী (তিরমিযী হা/৩৫৯, সনদ ছহীহ)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘বিবাহিত নারীর স্বামীই আনুগত্যের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উপর অগ্রগণ্য। তার জন্য স্বামীর আনুগত্য করা আবশ্যক (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)। অন্যত্র তিনি বলেন, পিতা-মাতা বা অন্য কেউ আদেশ দিলেও স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে বের হ’তে পারবে না। এই ব্যাপারে চার ইমামের ঐক্যমত রয়েছে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬৩)। অতএব পিতা-মাতা এবং স্বামীর আদেশ সাংঘর্ষিক হ’লে স্ত্রী স্বামীর আদেশ মান্য করবে। যদি সেটি গোনাহের আদেশ না হয়।

প্রশ্ন (১৯৩) : স্বামী কি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করতে পারে? সরকার কর্তৃক কাবিন নামায় স্ত্রীকে এই ক্ষমতা দিতে বাধ্য করা হ’লে করণীয় কী?

উত্তর : তালাক প্রদানের মূল অধিকার স্বামীর। আল্লাহ বলেন,  হে নবী! যখন তোমরা স্ত্রীদের তালাক দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত অনুযায়ী তালাক দাও (তালাক ৬৫/১)। কিন্তু স্বামী তার স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিলে এবং সে তালাককে বেছে নিলে তা কার্যকর হয়ে যাবে (মুগনী ৭/৪০৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২০/১০-১২)। যেমন রাসূল (ছাঃ) তার স্ত্রীদের পৃথক হয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, কিন্তু কেউ তা গ্রহণ করেননি (সূরা আহযাব ২৮-৩০ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য; বুখারী হা/১৪৭৮; মিশকাত হা/৩২৪৯)। সুতরাং কাবিন নামায় স্ত্রীকে এই ক্ষমতা দেয়াতে কোন দোষ নেই। স্ত্রী চাইলে এই ক্ষমতা ব্যবহার করতেও পারে, নাও পারে।

প্রশ্ন (১৯৪) : ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করার কোন স্পষ্ট দলীল আছে কি?

উত্তর : তেলাওয়াতের শুরুতে তথা সূরা ফাতিহা পাঠের পূর্বে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নাত। সে হিসাবে প্রথম রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পূর্বে আঊযুবিল্লাহ পড়তে হয়। আল্লাহ তা‘আলা তেলাওয়াতের শুরুতে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করার নির্দেশনা দিয়েছেন (নাহ্ল ১৬/৯৮)। সূরা ফাতিহার পরে অন্য সূরার শুরুতে বা অন্য রাক‘আতেও সূরা ফাতিহার শুরুতে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করার প্রয়োজন নেই। কারণ পুরো ছালাত একটি ইবাদত (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/২২৩-২৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১১০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৪)।

প্রশ্ন (১৯৫) : মুওয়াযযিন ফজরের ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পূর্বে আযান দেন। এভাবে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : কোন ছালাতের জন্য সময়ের পূর্বে আযান দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের জন্য ওয়াক্ত নির্ধারণ করেছেন (নিসা ৪/১০৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন ছালাতের সময় উপস্থিত হবে তখন একজন আযান দিবে আর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে’ (বুখারী,  মুসলিম,  মিশকাত হা/৬৮৩)। অতএব সময়ের আগে ফজরের আযান দেওয়া যাবে না। তবে ফজরের পূর্বে সাহারী বা তাহাজ্জুদের জন্য আযান দেওয়া যাবে (বুখারী হা/৬১৭; মুসলিম হা/১০৯২; মিশকাত হা/৬৮০)। সেক্ষেত্রে ফজরের ছালাতের জন্য যথাসময়ে পুনরায় আযান দিতে হবে (তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৫১৫-১৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৪১)।

প্রশ্ন (১৯৬) : প্রাণীর ছবি খোদাই করা পাত্রে পানি খেলে উক্ত খাবার হারাম হয়ে যাবে কি?

উত্তর : প্রাণীর ছবিযুক্ত কোন পানপাত্র বা খাবারের পাত্র ব্যবহার করা অপসন্দনীয়। তবে হারাম নয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/২৮০; আবু ইসহাক আশ-শীরাযী, আল-মুহায্যাব ২/৪৭৮)। কারণ আয়েশা (রাঃ)-এর পর্দায় ছবি থাকায় তা কেটে বিছানার কভার বানিয়ে তিনি তা ব্যবহার করেছিলেন (বুখারী হা/৫৯৫৪)। সালাফগণ মূলতঃ সেই সকল ছবি বা মূর্তি পরিত্যাজ্য মনে করতেন, যেগুলো সম্মান বা বিশেষ মর্যাদা দেয়ার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়। আর যেগুলো পদদলিত ও অসম্মানিত করা হয় সেগুলোকে দোষের মনে করতেন না (বায়হাক্বী কুবরা, হা/১৪৫৮১; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/৩৯২ পৃ.)। তবে সন্দেহমুক্ত থাকার জন্য এসব পাত্র ব্যবহার না করাই সমীচীন।

প্রশ্ন (১৯৭) : নানীর মৃত্যুর দু’মাস পূর্বে আমার মা মারা যান। নানীর পূর্বে মা মারা যাওয়ায় আমরা কি নানীর সম্পত্তি পাব? বর্তমানে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আমরা পেয়েছি। এই সম্পত্তি নেওয়ায় আমরা গুনাহগার হব কি?

উত্তর : নানীর পূর্বে মা মারা গেলে এবং নানীর অন্যান্য ছেলে ও মেয়ে থাকলে মৃত মেয়ের সন্তানেরা ওয়ারিছ হবে না। সুতরাং উক্ত সম্পত্তি গ্রহণ করা ভুল হয়েছে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফৎওয়া নং ১৯১৪৯, ১৬/৪৮৯ পৃ.)। এমতাবস্থায় করণীয় হবে যে, ওয়ারিছদের থেকে সম্মতি নেওয়া। যদি তারা সম্মতি দেয়, তবে তা গ্রহণ করা যাবে। আর যদি সম্মতি না দেয়, তবে ওয়ারিছদেরকে তাদের সম্পদ ফেরত দিতে হবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৯/৪৩৭)। উল্লেখ্য যে, দাদা-দাদী ও নানা-নানী বা অন্যান্য ওয়ারিছদের জন্য মুস্তাহাব হ’ল অসহায় নাতি-নাতনীর বা ভাতিজা-ভাতিজীর কল্যাণে মীরাছের সম্পদ থেকে তাদের জন্য অছিয়ত করা (বাক্বারাহ ২/১৮০; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/১৩৭; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফাৎওয়া নং ১৫০৩১, ১৬/৩২২ পৃঃ)।

প্রশ্ন (১৯৮) : আল্লাহ তা‘আলা জিব্রীল (আঃ)-কে জান্নাত দেখতে অনুমতি দিয়েছিলেন, তিনি তার ৬০০ পাখা দিয়েও ১০ ভাগের ১ ভাগও দেখতে পারেননি। এ ঘটনার সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে কিছু গল্প শী‘আ রাফেযীদের কিতাবে পাওয়া যায়। যাতে বলা হয়েছে, ৯০০ বছর সফর করেও জিব্রীল (আঃ) জান্নাতের সামান্যতম অংশ ঘুরে শেষ করতে পারেননি। এগুলো কোন হাদীছ নয় বা আছারও নয়। আমাদের জানা মতে কোন মুফাসসির বা ঐতিহাসিকও তাদের কিতাবে এমন কাহিনী বর্ণনা করেননি। তবে জান্নাতের প্রশস্ততা হ’ল আকাশ ও যমীন সমপরিমাণ। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যাপ্ত (আলে ইমরান ৩/১৩৩)। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা প্রতিযোগিতা কর তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে। যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততার ন্যায় (হাদীদ ৫৭/২১)। অত্র আয়াতদ্বয় থেকে জান্নাতের প্রশস্ততার বিষয়টি স্পষ্ট বুঝা যায়।

প্রশ্ন (১৯৯) : জনৈক বক্তা বলেন, নিয়মিত মেসওয়াককারী মুসলমান ৭০টি পুরস্কার পাবেন, তার মধ্যে ৭০ নং পুরস্কার হ’ল কালেমা সহ হাসিমুখে মৃত্যুবরণ। একথা কি সত্য?

উত্তর : উক্ত বর্ণনাটি কোন হাদীছ নয়। বরং জনৈক বিদ্বানের উক্তি (মানাভী,  আত-তাইসীর ১/৫৩০;  মিরক্বাত ১/৩৯৫)। এছাড়া কিছু হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, মেসওয়াক করে ছালাত আদায় করা মেসওয়াকবিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাতের সমতুল্য (বাযযার হা/১০৯;  বায়হাক্বী, সুনানুছ ছাগীর হা/৮০)। এগুলো সবই যঈফ এবং জাল (যঈফুল জামে‘ হা/৩৫১৯, ৩১২৭, ৩১২৮; যঈফাহ হা/১৫০৩; যঈফুত তারগীব হা/১৪৮)। অতএব যথাসম্ভব নিয়মিত মেসওয়াকে অভ্যস্ত হওয়া যরূরী।

প্রশ্ন (২০০) : হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে সেখানে দায়িত্ব পালন করা যাবে কি? এটা শিরকী কার্যক্রমে সহযোগিতার নামান্তর হবে কি?

উত্তর : মুসলিম দেশে বসবাসকারী অমুসলিমের জীবন, ধন-সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব মুসলিম সরকারের (মুমতাহিনা ৬০/৮)। সেক্ষেত্রে মুসলিম নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব পালন করলে কোন দোষ নেই। এর উদ্দেশ্য তাদের শিরকী কাজে সহযোগিতা নয়, বরং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে তাদের ধর্মপালনের অধিকার রক্ষা করা। তবে সাধ্যমত বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে এবং সরকারেরও উচিৎ হবে এসব দায়িতেব হিন্দু নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা।

প্রশ্ন (২০১) : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কি কোন কারণে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কর্তৃক আত্মহত্যার ইচ্ছা পোষণের বিষয়টি সঠিক নয়। যিনি বিশ্বমানবতার জন্য আদর্শ, তার পক্ষ থেকে এমন ইচ্ছা পোষণ করা অসম্ভব। তাছাড়া নবী-রাসূলগণ জন্মগতভাবে মা‘ছূম বা গুনাহ মুক্ত (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৪/৩২০)। অহী বন্ধ থাকার কারণে মানুষ হিসাবে অস্থিরতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেজন্য আত্মহত্যার বিষয়ে বর্ণিত সকল বর্ণনা যঈফ ও জাল (আলবানী, যঈফাহ হা/৪৮৫৮; দিফা‘ ‘আনিল হাদীছিন নববী ৪০-৪১)। ছহীহ বুখারীতে (হা/৬৯৮২) রাসূল (ছাঃ)-এর আত্মহত্যার ইচ্ছার বিষয়ে বর্ণিত হাদীছটিও কোন মারফূ‘ বা মাওছূল সনদে বর্ণিত হয়নি। বরং ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেছেন যে, فِيمَا بَلَغَنَا ‘আমাদের নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে...। যা প্রমাণ করে যে, উক্তিটি ইমাম যুহরীর নিজস্ব। এটি আয়েশা (রাঃ) বা অন্য কোন ছাহাবীর বক্তব্য নয়। আর ইমাম যুহরী সেটি কারো দিকে সম্বন্ধও করেননি। যা স্পষ্ট করে দেয় যে বর্ণনাটি রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি এবং তাঁর শানের খেলাফ (ফাৎহুল বারী ১২/৩৫৯-৬০;  ক্বাস্তালানী,  ইরশাদুস সারী ৭/৪২৭;  আলবানী,  যঈফাহ হা/১০৫২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। 

প্রশ্ন (২০২) : কেউ যদি পাথরের খনিজ সম্পদ লাভ করে তাহ’লে তখনই কি এর যাকাতের অংশ বের করে আদায় করতে হবে?

উত্তর : কেউ যদি তার অধিকৃত জায়গায় মূল্যবান পাথর বা অন্য কিছু লাভ করে এবং তা উত্তোলন করে নিজের জন্য ব্যবহার করে, তাহ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে না। আর যদি উত্তোলন করে বিক্রি করে এবং এর মূল্য নিছাব পরিমাণ হয় ও এক বছর অতিক্রান্ত হয়, তাহ’লে তাতে যাকাত দিতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/৫৩)।

প্রশ্ন (২০৩) : মসজিদের জায়গায় সরকার কর্তৃক বসানো মটর থেকে গ্রামবাসী পানি পান করতে পারবে কি?

উত্তর : জনস্বার্থে মসজিদের জায়গায় বসানো মটর থেকে সাধারণ মানুষের পানি গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। তবে মসজিদের পবিত্রতা ও আদব যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে পূর্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে (যাকারিয়া আনছারী, আসনাল মাতালিব ১/১৮৬; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১৬/০২)।

প্রশ্ন (২০৪) : ছেলের স্ত্রীকে যাকাতের সম্পদ দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : ছেলের অসুস্থতা কিংবা দরিদ্রতাহেতু প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে অক্ষম হয়ে পড়লে বা ঋণগ্রস্ত হ’লে সামর্থ্যবান পিতা তার ছেলে বা ছেলের স্ত্রীকে যাকাতের অর্থ প্রদান করতে পারে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব ১০/০২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৩/৩২৬)।

প্রশ্ন (২০৫) : ওকালতি পেশা গ্রহণ করা শরী‘আতসম্মত কি? এ পেশায় থাকতে হ’লে কোন কোন বিষয় থেকে সতর্ক থাকা যরূরী?

উত্তর : সাধারণভাবে আইনী সহায়তা কোন নাজায়েয পেশা নয়। তবে সেখানে সর্বদা সত্যকে বিজয়ী করা, যুলুমের প্রতিরোধ করা এবং মানুষকে তার হক ফেরত দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হয় এবং অপরাধী ছাড়া না পায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নেকী ও আল্লাহভীরুতার কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও শত্রুতার কাজে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/০২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালেম হোক অথবা মাযলূম। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মাযলূমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু যালেমকে কি করে সাহায্য করব? তিনি বললেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে বিরত রাখবে (বুখারী হা/২৪৪৪; মিশকাত হা/৪৯৫৭; বিন বায,  ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৯/২৩১;  উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১১/৬০৯-৬১০)।

স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মূলতঃ বৃটিশদের রচিত। এই আইন অনুসরণের দায়ভার বর্তাবে সরকারের উপর। যতদিন উক্ত আইনের শরী‘আত বিরোধী ধারাসমূহ চালু থাকবে, ততদিন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ পাপী হ’তে থাকবে। কেননা আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্যের বিধান কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় (ইউসুফ ১২/৪০, মায়েদাহ ৫/৫০ প্রভৃতি)। সুতরাং যিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ করবেন তার আবশ্যিক দায়িত্ব হবে সত্যের সাক্ষ্য দেয়ার পাশাপাশি নিজ অবস্থানে থেকে ইসলামী আইন প্রবর্তন এবং তার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা। এটা তার ঈমানী দায়িত্ব (মুসলিম হা/৪৯; মিশকাত হা/৫১৩৭)।

প্রশ্ন (২০৬) : জনৈক ব্যক্তি কুরআনের অনুসরণে প্রতিদিন ৩ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে। সে কি কাফের হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই ছালাত ফরয হয়। তবে তখন ছালাত ছিল কেবল ফজরে ও আছরে দু’ দু’ রাক‘আত করে (কুরতুবী)। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ- ‘তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন কর আছরে ও ফজরে’ (মুমিন ৪০/৫৫; মির‘আত ২/২৬৯)। মি‘রাজের রাত্রিতে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করা হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫)। উক্ত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত হ’ল- ফজর, যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা (আবুদাঊদ হা/৩৯১, ৩৯৩)।  তাছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত প্রমাণিত (বাক্বারাহ ২/২৩৮; ইসরা ১৭/৭৮; নূর ২৪/৫৮; ক্বাফ ৫০/৩৯-৪০)।

দ্বিতীয়তঃ একাধিক ছহীহ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের নির্ধারিত সময় প্রমাণিত (মুসলিম হা/৬১২; আবুদাউদ হা/৪২৫; মিশকাত হা/৫৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৭০)। এক্ষণে কেউ যদি কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত ফরয বিধান অস্বীকার করে তিন ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে এবং দুই ওয়াক্ত ছেড়ে দেয় তাহ’লে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে (তিরমিযী হা/২৬২২; মিশকাত হা/৫৭৯; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২৪/৫২ পৃ.)।

প্রশ্ন (২০৭) : আমার দাদীর বয়স ৯০ বছর। নানা রোগে দারুণভাবে ভুগছেন। তার বেঁচে থাকাই কষ্টকর। এক্ষণে তার জন্য মৃত্যু কামনা করে দো‘আ করা যাবে কি?

উত্তর : কারো জন্য মৃত্যু কামনা করে দো‘আ করা যাবে না। তবে তার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর মনে হ’লে তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করা যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার নিকটে বিপদ পৌঁছার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। তবে সে যদি মৃত্যু কামনা করতেই চায় তবে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখো যতদিন আমার জীবন কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয়’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬০০)। তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে যেন মৃত্যুর জন্য দো‘আ না করে। কেননা তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিনের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে (মুসলিম হা/২৬৮২; মিশকাত হা/১৫৯৯)।

বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেককার হ’লে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর বদকার হ’লে, (সে তওবা করে) আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাছিল করার সুযোগ পাবে (বুখারী হা/৫৬৭৩; মিশকাত হা/১৫৯৮)। অতএব কারো জন্য মৃত্যু কামনা নয়, বরং কল্যাণ কামনা করে দো‘আ করতে হবে।

প্রশ্ন (২০৮) : মুসলিম মাইয়েতের লাশ নিয়ে একাধিক স্থানে জানাযা করা যাবে কি-না?

উত্তর : প্রয়োজনে একাধিক স্থানে জানাযায় বাধা নেই (মুত্তাফাক আলাইহ,  মিশকাত হা/১৬৫৮;  ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ৫/২৬৬-৬৭; আর-রাহীকুল মাখতুম, পৃ. ৪৭১)। তবে বর্তমানে জনপ্রিয় মানুষদের লাশ জানাযার উদ্দেশ্যে বহু স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়, যা ঠিক নয়। কেননা তা রাসূল (ছাঃ)-এর দ্রুত দাফন-কাফনের নির্দেশনা বিরোধী। আব্দুর রহমান বিন আবুবকর (রাঃ) হাবশায় মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ মক্কায় আনা হয়। সেটা দেখে তার বোন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি সেখানে থাকতাম, তাহ’লে আমি তোমাকে সেখানেই দাফন করতাম’ (আল-বিদায়াহ ৮/৮৯)। তবে প্রয়োজনে লাশ স্থানান্তর করায় বাধা নেই। যেমন সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ ও সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ)-এর লাশ (মক্কা প্রদেশের সীমান্তবর্তী) আক্বীক্ব থেকে মদীনায় আনা হয়। ইবনু উয়ায়না বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) আক্বীক্বে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অছিয়ত করেন, যেন তাকে (মক্কা থেকে ৬ কি.মি. উত্তরে তান‘ঈম-এর নিকটবর্তী) ‘সারিফে’ দাফন করা হয় (ইবনু কুদামাহ ২/৩৮০ পৃ., মাসআলা ক্রমিক : ১৫৯৮)।

প্রশ্ন (২০৯) : মূসা (আঃ) সপরিবারে মিসরের পথে যাত্রাকালে যে আগুন দেখেছিলেন তা কি আসল আগুন ছিল?

উত্তর : মূসা (আঃ) মাদায়েন থেকে মিসরের পথে যাত্রাকালে যে আগুন দেখেছিলেন তা মূলতঃ আল্লাহর নূর ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘(স্মরণ কর) যখন মূসা তার পরিবারকে বলল, আমি একটা আগুন দেখেছি। সত্বর আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্য (পথের) সন্ধান নিয়ে আসতে পারব। অথবা জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসতে পারব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার’। ‘অতঃপর যখন মূসা তার নিকটে উপস্থিত হ’ল, তখন গায়েবী আওয়ায হ’ল, বরকত মন্ডিত হ’ল সে, যে আগুনের নিকট এসেছে এবং যারা তার আশ-পাশে আছে। বস্ত্ততঃ বিশ্বপালক আল্লাহ মহা পবিত্র’ (নামল ২৭/৭-৮)। আয়াতে ‘আগুন’ বলা হয়েছে মূসার বক্তব্য হিসাবে যা তিনি দূর থেকে প্রথমে ধারণা করেছিলেন। এখানে ‘আগুন’ অর্থ আলোক বা জ্যোতি। যাকে দূর থেকে মূসা (আঃ) আগুন ভেবেছিলেন। মূলতঃ এটি ছিল আল্লাহর নূর (কুরতুবী; ইবনু কাছীর ঐ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৬/৩৮৭ পৃ.)।

প্রশ্ন (২১০) : কেউ কারো মাধ্যমে উপকৃত হ’লে তার প্রশংসায় বলে, ‘আকাশে আল্লাহ আছেন আর তুমি যমীনে’- এমন ভাষায় কারো উপকারের প্রশংসায় বলা যাবে কি?

উত্তর : কারো প্রশংসায় এমন বাক্য বলা যাবে না। কারণ আকাশ ও যমীন উভয়ের মালিক আল্লাহ (যুখরুফ ৪৩/৮৪)। আল্লাহ বলেন, ‘বল যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক নই’ (আ‘রাফ ৭/১৮৮)। এক ব্যক্তি কোন ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, ‘আল্লাহ ও আপনি যা চেয়েছেন (তাই হয়েছে)। একথা শুনে তিনি বললেন, তুমি তো আল্লাহর সঙ্গে আমাকে শরীক করে ফেললে! না; বরং (বলো) আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৮৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ...বরং তোমরা বল আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর মুহাম্মাদ যা চেয়েছেন (আহমাদ, দারেমী হা/২৬৯৯)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, কাউকে অনুগ্রহ করা হ’লে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন) তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ প্রশংসা করল (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৬৮)। ওমর (রাঃ) বলেন, ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ বলাতে কি কল্যাণ রয়েছে লোকেরা যদি তা জানত, তাহ’লে পরস্পরকে বেশী বেশী বলত (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৭০৫০)।

প্রশ্ন (২১১) : কুরআনের অনুবাদ, তাফসীর, শব্দ ইত্যাদি পাঠের শুরুতে আ‘ঊযুবিল্লাহ পাঠ করতে হবে কি?

উত্তর : শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা পেতে যেকোন কাজ শুরুর পূর্বে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করা মুস্তাহাব। আল্লাহ বলেন, ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহ’লে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (আ‘রাফ ৭/২০০)। আর কুরআন তেলাওয়াতের শুরুতে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৬/৪;  ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩৮৩;  উছায়মীন,  মাজমূ‘  ফাতাওয়া ১৩/১১০ পৃ.)।

প্রশ্ন (২১২) : বিদেশে কেউ মারা গেলে দেশে নিজ গ্রামের বাড়িতে লাশ এনে দাফন করা যাবে কি?

উত্তর : সুন্নাত হ’ল যেখানে মারা যাবে সেখানেই লাশ দাফন করা। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে এমন সুন্নাতই চালু রয়েছে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/৩৮০; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ২/৩১)। এক্ষণে যদি কেউ কোন অমুসলিম দেশে মারা যায় এবং সেখানে মুসলমানদের পৃথক গোরস্থান না থাকে বা লাশ অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহ’লে নিরাপদ স্থানে লাশ স্থানান্তরে কোন দোষ নেই (ফাতাওয়া দারুল ইফতা মিছরিয়া ৮/২৯৬)। অতএব বিশেষ প্রয়োজনে লাশ স্থানান্তর করা সম্ভব হ’লে তা স্থানান্তরে বাধা নেই।

প্রশ্ন (২১৩) : জামা‘আত চলাকালীন সময়ে ইমাম ছাহেব তেলাওয়াতে কোন ভুল করলে বা কোন আয়াতাংশ ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি? এছাড়া মুছল্লীদেরকেও কি এই সিজদা দিতে হবে?

উত্তর : তেলাওয়াতে কোন ভুল হ’লে সহো সিজদা যেমন ইমামকে দিতে হবে না, তেমনি মুছল্লীকেও দিতে হবে না। বরং ছালাতের রাক‘আতে কম-বেশী হ’লে বা কোন ফরয-ওয়াজিব-সুন্নাত ছুটে গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। তবে সূরা ফাতিহার বিষয়টি স্বতন্ত্র। কেননা এটি ফরয। কেউ যদি ভুল করে পাঠ না করে বা কোন আয়াত ছেড়ে দেয়, তবে সূরাটি পুনরায় পাঠ করবে। আর পরে মনে হ’লে এক রাক‘আত মিলিয়ে নিয়ে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে (নববী,  আল-মাজমূ‘ ৩/৩৯৪;  বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২৫৩ পৃ.)।

প্রশ্ন (২১৪) : ফরয গোসল আবশ্যক হওয়া অবস্থায় দো‘আ-দরূদ পাঠ করা যাবে কি?

উত্তর : পাঠ করা যাবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন (বুখারী ২/৩১; মুসলিম হা/৩৭৩; মিশকাত হা/৪৫৬)।

প্রশ্ন (২১৫) : আমার পিতা ৬ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছেন। এখন তিনি সন্তানদের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে ফ্লাট ভাগ করে দিতে চান। এভাবে লটারী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : লটারীর মাধ্যমে বণ্টন করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) সফরে বের হ’লে লটারীর মাধ্যমে সফরসঙ্গী হিসাবে একজন স্ত্রীকে নির্বাচন করতেন (বুখারী হা/২৫৯৩; মুসলিম হা/২৪৪৫; মিশকাত হা/৩২৩২)। তবে মৃত্যুর পরই মীরাছ বণ্টন করা শারঈ বিধান (নিসা ৪/১১)। এক্ষণে কেউ যদি জীবিত অবস্থায় মীরাছ বণ্টন করতে চায়, তবে কুরআনে বর্ণিত ফারায়েয অনুযায়ী বণ্টন করবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৬/২১৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১১/৮১-৮২)।

প্রশ্ন (২১৬) : ছালাতে বা ছালাতের বাইরে কুরআন তেলাওয়াতের সময় সাধারণত আলিফ-এর টানগুলো সেভাবে অনুসরণ করা হয় না। জনৈক ক্বারী বলেন, এতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে। একথা সঠিক কি?

উত্তর : সঠিক নয়। আলিফ না টেনে পড়লে ছালাতের কোন ক্ষতি বা গুনাহ হবে না (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৫/২;  আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১০/১৭৯)। তবে তাজবীদ, মাখরাজ ও ছিফাতসহ সুন্দরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা উচিৎ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সর্বোত্তম ক্বারী সেই, যার তেলাওয়াত শুনে তোমার মনে হবে যে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করছে’ (দারেমী হা/৩৪৮৯; মিশকাত হা/২২০৯)।

প্রশ্ন (২১৭) : আমাদের মসজিদে কয়েকজন মুরববী চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করেন। তারা ইচ্ছামত বিভিন্ন কাতারে বিভিন্ন স্থানে বসার কারণে কয়েকটি কাতারে মুছল্লীদের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট হয়। পিছনের মুছল্লীরও সিজদা দিতে সমস্যা হয়। এভাবে কাতার বিনষ্ট করে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ছালাতের কাতার ঠিক রেখেই অসুস্থ ব্যক্তিকে চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করতে হবে। চেয়ারে ছালাত আদায়কারীর তিনটি অবস্থা রয়েছে। প্রথমতঃ মসজিদের প্রথম কাতার মুছল্লী দ্বারা পূর্ণ হ’লে চেয়ারে ছালাত আদায়কারীরা কাতারের যেকোন এক পার্শ্বে ছালাত আদায় করবে। কারণ চেয়ারে বসে কাতারের মাঝে ছালাত আদায় করলে কাতারের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। দ্বিতীয়তঃ চেয়ারে বসে ছালাত আদায়কারী যদি পুরো ছালাত বসে আদায় করে, তাহ’লে মুছল্লীর পা বরাবর কাতারে চেয়ার রেখে বসে ছালাত আদায় করবে। কারণ মুছল্লীর দাঁড়ানো অবস্থা কাতারের মৌলিক অবস্থা।

তৃতীয়তঃ মুছল্লী যদি ক্বিয়াম দাঁড়িয়ে করে ও রুকূ-সিজদা চেয়ারে বসে করে, তাহ’লে এমন চেয়ার ব্যবহার করবে যা পিছনের মুছল্লীর কোন ক্ষতি করবে না, আবার কাতারের সমতাও বিনষ্ট হবে না। যদি এমন চেয়ার না থাকে তাহ’লে মুছল্লী কাতারে দাঁড়িয়ে চেয়ার হালকা পিছনে রাখবে এবং নিজে কাতার বরাবর দাঁড়াবে। পিছনের মুছল্লীর সিজদার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে রুকূ এবং সিজদা করার সময় চেয়ার কাতারে টেনে বসে রুকূ ও সিজদা করবে। এভাবেই পুরো ছালাত সম্পাদন করবে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ৬/২১; উছায়মীন ও আব্দুর রহমান বাররাক, মাওক্বা‘উল ইসলাম, সওয়াল ওয়া জওয়াব ৫/৭৬২, ১৭৯৫)।

প্রশ্ন (২১৮) : কোন নিঃসন্তান দম্পতি কোন শিশুকে দত্তক নেওয়ার পর তাকে কৃত্রিম উপায়ে দুধ পান করালে উক্ত সন্তান কি তাদের দুধ সন্তান হিসাবে গণ্য হবে?

উত্তর : যেকোন উপায়েই হৌক কোন নারীর নিজের বুকের দুধ কোন শিশুকে খাওয়ানো হ’লে এবং দু’টি শর্ত পূরণ হ’লে শিশুটি তার দুধ সন্তান হিসাবে গণ্য হবে। (১) দু’বছরের মধ্যে দুধ পান করতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৩৩; দারাকুৎনী হা/৪৪১৩, ৪৩৬৫)। (২) বিশুদ্ধ মতে, অন্ততঃ পাঁচবারে দুধ পান করতে হবে (মুসলিম হা/১৪৫২; মিশকাত হা/৩১৬৭;  আল-আছারুছ ছহীহাহ হা/৯৭;  উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে’ ১২/১১৪-১৫)।

প্রশ্ন (২১৯) : গরু-ছাগল ফসলের ক্ষতি করলে উক্ত পশুকে খোয়াড়ে দেওয়া বা তার মালিককে জরিমানা করা হয়। এটি শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতি রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হ’লে তা করা যাবে। দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ) বকরী কর্তৃক ফসলের ক্ষতি সাধিত হ’লে জরিমানা করে সমাধান করেন (আম্বিয়া ২১/৭৮; বুখারী ২৩/৩৯৩)।

প্রশ্ন (২২০) : হাফ মোজার উপর মাসাহ করা যাবে কি?

উত্তর : গোঁড়ালী ঢাকে এমন যে কোন মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয। হাফ মোজার মাধ্যমে গোঁড়ালী ঢেকে গেলে তার উপর মাসাহ করা যাবে। আর গোঁড়ালী খোলা থাকলে মাসাহ করা যাবে না (তিরমিযী হা/৯৯; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১১১,২৯/৬৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৬৩)।

প্রশ্ন (২২১) : এক কন্যা সন্তানের জননীর ডিভোর্স হওয়ার পর যার সাথে বিবাহ হয়েছে তার প্রথম পক্ষের একজন ছেলে সন্তান ছিল। পরবর্তীতে উক্ত ছেলের সাথে উক্ত মেয়ের বিবাহ হয়েছে। অর্থাৎ মেয়েটির নিজের মা-ই শাশুড়ী এবং ছেলেটির নিজের পিতাই শশুর হয়েছেন। বিবাহটি জায়েয হয়েছে কি?

উত্তর : দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম স্বামীর মেয়ের সাথে প্রথমা স্ত্রীর গর্ভজাত ছেলের বিবাহে কোন সমস্যা নেই। কারণ তারা পরস্পর মাহরাম নয়। এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/১২৮; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২০/২৭৩, ২৯০;  ছালেহ ফাওযান,  মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৫৫৯)।

প্রশ্ন (২২২) : কুরআন পাঠরত অবস্থায় কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়ার পর পুনরায় কোন আয়াত থেকে পাঠ শুরু করলে ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ না ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে শুরু করতে হবে? এছাড়া বক্তব্যের মাঝে বা কোন কুরআনী দো‘আ পাঠের শুরুতে কিছু পাঠ করতে হবে কি?

উত্তর: কুরআন তেলাওয়াতের শুরুতে এক বার ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ এবং ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে। অতঃপর তেলাওয়াতরত অবস্থায় কিছুক্ষণ বিরতি নিলে কেবল ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করা মুস্তাহাব। আর সূরার প্রথম থেকে শুরু করলে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে (নাহল ১৫/৯৮; নববী, আত-তিবইয়ান ১০০ পৃ.; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৪/৬; উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১/১৭৭)। বক্তব্যের মাঝে বা কুরআনী দো‘আ পাঠের শুরুতে কোন কিছু পাঠ করার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন (২২৩) : অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানের দিন তাদের শুভেচ্ছা জানানো যাবে কি?

উত্তর : অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাতে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। এর মাধ্যমে তাদের বাতিল ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন করা হয়, যা হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং এমন ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (ক্বিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। তিনি বলেন, যে আমাদের ব্যতীত অন্যদের রীতি- নীতির অনুসরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত হা/৪৬৪৯)। তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু দল মূর্তিপূজা করবে এবং মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে (ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫২, আবূদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, কুফরযুক্ত শে‘আর বা নিদর্শন যা তাদের জন্য খাছ তা দ্বারা শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন তাদের ঈদ ও ছওমের দিনে শুভেচ্ছা জানানো (আহকামু আহলিয যিম্মাহ ১/১৪১)।    ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৪৬)।

প্রশ্ন (২২৪) : গরু হিন্দুদের নিকটে মা হওয়ায় গোশতকে মাংস বলা হ’লে তা হিন্দুদের অনুসরণ সাব্যস্ত হয়। এক্ষেত্রে মাংস বললে গুনাহগার হ’তে হবে কি?

উত্তর : মাংস শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত (মন+স) থেকে। এর অর্থ, ‘জীবদেহের অভ্যন্তরস্থ হাড় এবং চামড়ার মধ্যবর্তী নরম ও কোমল অংশ, গোশত’ (আধুনিক বাংলা অভিধান পৃ. ১০৯৫ পৃ., ব্যবহারিক বাংলা অভিধান পৃ. ৯৬৮)। সুতরাং মাংসকে মাংশ তথা হিন্দুদের মায়ের (গরুর) অংশ মনে করা সঠিক নয়। অতএব গরু ও অন্য হালাল পশুর গোশতকে মাংস বলায় দোষ নেই। এক্ষণে কেউ গরুকে মা বলে বিশ্বাস করতঃ মায়ের অংশ মনে করেই গরুর গোশতকে মাংস বললে শব্দটি অবশ্যই বর্জনীয় হবে।

প্রশ্ন (২২৫) : ইতিপূর্বে জনৈক নারীর সাথে আমার হারাম সম্পর্ক ছিল। দ্বীনের পথে ফেরার পর কোন সম্পর্ক নেই। তবে মাঝে মাঝে তার কথা খুব মনে হয়। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর : যখনই উক্ত নারীর কথা স্মরণ করিয়ে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিবে তখনই বাম দিকে তিনবার থুক মারবে ও ‘আ‘ঊযুবিল্লাহ’ পাঠ করে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)। আল্লাহ বলেন, শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহ’লে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (আ‘রাফ ৭/২০০)।

প্রশ্ন (২২৬) : ফরয গোসল করে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর গোসলের বিষয়ে সন্দেহ হ’লে অর্থাৎ শরীরের কিছু জায়গায় পানি পৌঁছেছে কি-না এই বিষয়ে সন্দেহ হ’লে কি শুধু ঐ অংশটি ধুতে হবে নাকি পুনরায় গোসল করতে হবে?

উত্তর : শরীর ভেজা অবস্থায় স্মরণ হ’লে শুকনো স্থান ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে। আর পরে মনে হ’লে কিছুই করতে হবে না। কারণ এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসা হ’তে পারে (ইবনু রজব, আল-কাওয়ায়েদ ৩৪০ পৃ.; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/৫০)।

প্রশ্ন (২২৭) : আমরা চার ভাই। মা মারা যাওয়ার পর পিতা ২য় বিবাহ করেছেন। ২য় মায়ের আগের পক্ষের ১ ছেলে ১ মেয়ে আছে। এক্ষণে পিতার সম্পদ ভাগ হবে কিভাবে?

উত্তর : দ্বিতীয় মা মৃতের স্ত্রী হিসাবে এবং সন্তান না থাকায় এক-চতুর্থাংশ পাওয়ার পর বাকী সম্পত্তি চার ভাই সমানভাবে পেয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় মায়ের পূর্বের পক্ষের সন্তানরা এই পিতার ওয়ারিছ না হওয়ায় তারা কোন সম্পত্তি পাবে না (নিসা ৪/১১)।

প্রশ্ন (২২৮) : পিতা আমাকে নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মিশনারী স্কুল হওয়ায় সেখানে ক্রুশ চিহ্ন সম্বলিত ইউনিফর্ম পরিধান করা অপরিহার্য। এরূপ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ক্রুশ প্রতীক খৃষ্টানদের ধর্মীয় নিদর্শন। এটি ব্যবহার করা মুসলিমদের জন্য জায়েয নয়। আল্লাহ বলেন, যখন তোমরা লোকদের থেকে কুরআনের আয়াত সমূহে অবিশ্বাস ও বিদ্রূপ শুনবে, তখন তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। নইলে তোমরাও তাদের সদৃশ গণ্য হবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফেরদের জাহান্নামে একত্রিত করবেন (নিসা ৪/১৪০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত (আবুদাউদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৪৯)। অতএব একজন মুসলিম হিসাবে এমন প্রতিষ্ঠান পরিহার করা কর্তব্য।

প্রশ্ন (২২৯) : খৃষ্টান মিশনারীরা সূরা আলে ইমরানের ৩-৪ আয়াত দ্বারা তাদের ধর্মগ্রন্থের সার্বজনীনতা প্রমাণ করতে চায়। এক্ষণে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ কি সমগ্র মানবজাতির জন্য এসেছিল? এগুলো কি এখনো মূল রূপে বর্তমান আছে?

উত্তর : মিশনারীদের উক্ত দাবী ভিত্তিহীন। কেননা সূরা আলে ইমরানের উক্ত আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছে, কুরআন তার পূর্ববর্তী ইলাহী কিতাব সমূহের সত্যায়নকারী। যা স্ব স্ব যুগের জন্য হেদায়াত গ্রন্থ ছিল। কুরআন আসার পরে পূর্বের গ্রন্থ সমূহের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। আর কুরআন এসেছে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য (সাবা ৩৪/২৮)। এ যুগে ইসলামই একমাত্র বিশ্ব ধর্ম। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম হ’ল ইসলাম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)। তিনি বলেন, যারা এর বাইরে অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে, তা কবুল করা হবে না। আর সে ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে (আলে ইমরান ৩/৮৫)। সুতরাং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ সমগ্র মানবজাতির জন্য ছিল না। তাছাড়া বর্তমানে যে তাওরাত ও ইঞ্জীল রয়েছে, তার মূল রূপও অক্ষুণ্ণ নেই; বরং সেগুলি বিকৃত। অতএব তাদের উক্ত দাবী সর্বৈব অচল।

প্রশ্ন (২৩০) : মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে সমাজের মানুষকে খাওয়াতে পারবে কি? এছাড়া মৃত্যুর পর মানুষকে খাওয়ানোর জন্য অছিয়ত করতে পারবে কি? এছাড়া অছিয়ত করে গেলে উত্তরাধিকারীদের জন্য করণীয় কি?

উত্তর : ধর্মীয় রেওয়াজ বানিয়ে যদি কেউ এরূপ খাওয়ায়, তবে সেটি নিষিদ্ধ। যেমন বর্তমানে এটিকে বলা হয় অগ্রিম ‘ফয়তা’। আর মৃত্যুর পর যে কোন অছিয়ত শরী‘আতসম্মত হ’লে পালন করা ওয়াজিব। এক্ষণে যদি কেউ বিশেষ কোন দিন নির্দিষ্ট না করে সাধারণভাবে লোকজন বা অসহায়দেরকে খাদ্য দানের অছিয়ত করেন তাহ’লে উত্তরাধিকারীরা সক্ষম হ’লে উক্ত অছিয়ত পালন করবে। কিন্তু যদি মৃত্যুর দিনকে কেন্দ্র করে বা তিন দিনে, দশ দিনে কুলখানী বা চল্লিশ দিনে চেহলাম বা চল্লিশা ইত্যাদির অছিয়ত করে গেলে তা পালন করা যাবে না। এরূপ অছিয়ত বাতিল হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর অবাধ্যতায় এবং ব্যক্তির অক্ষমতায় কোন অছিয়ত পূরণীয় নয়’ (মুসলিম হা/১৬৪১; মিশকাত হা/৩৪২৮; হায়তামী, আল-ফাতাওয়াল ফিক্বহিয়াল কুবরা ২/৩২)।

প্রশ্ন (২৩১) : কয়েক দফা শালিশী বৈঠকের পর উকিলের মাধ্যমে মেয়ের নামে ও এলাকা চেয়ারম্যানের নামে তালাকনামা পাঠাই। মেয়ে তা গ্রহণ করেনি। কিন্তু চেয়ারম্যান গ্রহণ করেন। ১ মাস পর আমি চেয়ারম্যানের নিকট তালাক প্রত্যাহারের নোটিশ পাঠাই। এক্ষণে আমি পুনরায় সংসার করতে পারব কি?

উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ মোতাবেক এক তালাক হয়েছে এবং রাজ‘আতও হয়েছে। এজন্য বর্তমানে তার সাথে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সংসার করা যাবে (বাক্বারাহ ২/২২৮; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৫২৪)। তবে রাজ‘আতের সময় দু’জন সাক্ষী রাখা ভালো (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২২/৩১০)। উল্লেখ্য যে, কেউ এক তালাক দিলে পরবর্তীতে সে দুই তালাকের অধিকারী থাকবে।

প্রশ্ন (২৩২) : জুম‘আর ছালাতের পূর্বের সুন্নাত কোন কারণে বাদ গেলে ছালাতের পর তার ক্বাযা আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : জুম‘আর ছালাতের পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাতে রাতেবা নেই। বরং সময় সাপেক্ষে দুই দুই রাক‘আত করে নফল ছালাত আদায় করতে থাকবে। যেহেতু পূর্বে কোন সুন্নাত নেই, সেজন্য কোন ক্বাযা আদায় করতে হবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৩৮৬)।

প্রশ্ন (২৩৩) : হারাম উপার্জনকারী ব্যক্তির সাথে শেয়ারে ব্যবসা করা যাবে কি?

উত্তর : নাজায়েয নয়। কেননা হারাম উপার্জনের জন্য উক্ত ব্যক্তি নিজে দায়ী হবে। এতে ব্যবসা হারাম হবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৪/২০১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৫/৭৮)। শর্ত হ’ল, ব্যবসাটি যেন হারাম না হয়।

প্রশ্ন (২৩৪) : সূরা যিলযাল দু’বার পড়লে কুরআন মাজীদ খতমের নেকী পাওয়া যায় কি?

উত্তর : সূরা যিলযালের ফযীলত সংক্রান্ত তিরমিযীর উক্ত হাদীছাংশটি মুনকার ও যঈফ। যেখানে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা যিলযাল পাঠ করবে, সে অর্ধেক কুরআন পাঠের সমপরিমাণ নেকী পাবে’ (তিরমিযী হা/২৮৯৪; মিশকাত হা/২১৫৬ ; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৩৪২)।

প্রশ্ন (২৩৫) : আমাদের এখানকার মসজিদে প্রত্যেক দিন ফজরের ছালাতের দ্বিতীয় রাক‘আতে রুকূ থেকে ওঠার পর হাত তুলে দো‘আ করা হয়। এটা কি শরী‘আতসম্মত?

উত্তর :  ‘কুনূতে নাযেলাহ’ ফজর ছালাতে অথবা সব ওয়াক্তে ফরয ছালাতের শেষ রাক‘আতে রুকূর পরে দাঁড়িয়ে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ বলার পরে দু’হাত উঠিয়ে সরবে পড়তে হয়। অবস্থা বিবেচনা করে ইমাম আরবীতে দো‘আ পড়বেন ও মুক্তাদীগণ ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন (বুখারী হা/৪৫৬০; মুসলিম হা/৬৭৫; আবুদাঊদ হা/১৪৪৩; মিশকাত হা/১২৮৮-৯০; আলবানী, ছিফাতুছ ছালাত ১৫৯ পৃ.; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮-৪৯)। রাসূল (ছাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বা শক্তির বিরুদ্ধে এমনকি এক মাস যাবৎ একটানা বিভিন্নভাবে দো‘আ করেছেন (আবুদাঊদ হা/১৪৪৫; নাসাঈ হা/১০৭৯; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৬৯ পৃ.)। তবে রাসূল (ছাঃ) জীবনের শেষাবধি ফজরের ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠের বিষয়ে যে হাদীছটি এসেছে সেটি যঈফ (যঈফাহ হা/৫৫৭৪)। অতএব সারা বছর ধরে ফজর ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা যাবে না। বরং বিশেষ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে যেকোন ছালাতে কুনূতে নাযেলা পাঠ করা সুন্নাত।

প্রশ্ন (২৩৬) : অভাব-অনটনের কারণে আমি মানসিক ভাবে খুব বিপর্যস্ত থাকি। এত্থেকে মুক্তির উপায় কি?

উত্তর : অভাব-অনটন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একদিকে যেমন পরীক্ষা অন্যদিকে অভাবীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে, এর অধিকাংশ অধিবাসী হ’ল গরীব-মিসকীন’ (বুখারী হা/৩২৪১; মিশকাত হা/৫২৩৪)। তিনি বলেন, ‘দরিদ্ররা ধনীদের চাইতে পাঁচশ’ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিযী হা/২৩৫৩; মিশকাত হা/৫২৪৩)। অতএব অভাবকে কেন্দ্র করে কোন দুশ্চিন্তা করা যাবে না। বরং অভাব দূর করার জন্য বৈধ উপায়ে উপার্জন করতে হবে এবং অভাব মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকট নিম্নোক্ত দো‘আসমূহ পাঠ করতে হবে। (১) আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা আন হারামিক, অআগনিনী বিফাযলিকা আম্মান সিওয়াক। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার হালাল রুযী দিয়ে হারাম রুযী থেকে আমার জন্য যথেষ্ট কর এবং তুমি ছাড়া অন্য সকল থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী কর (তিরমিযী হা/৩৫৬৩; মিশকাত হা/২৪৪৯; ছহীহাহ হা/২৬৬)। (২) আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল ফাকরি, ওয়াল কিল্লাতি ওয়ায যিল্লাতি ওয়া মিন আন আযলিমা আও উযলামা। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অস্বচ্ছলতা, স্বল্পতা, অপমান-অপদস্ত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং আমি অত্যাচারী অথবা অত্যাচারিত হওয়া থেকেও তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি (আবুদাউদ হা/১৫৪৪; মিশকাত হা/২৪৬৭, সনদ ছহীহ)। এছাড়া অধিকহারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে (নূহ ৭১/১০-১২)।

প্রশ্ন (২৩৭) : বিবাহের পর মেয়ের পিতা জামাই বাড়ির জন্য বেশ কিছু আসবাবপত্র কিনে দেয় এবং জামাইকে কিছু টাকা দেয়। জামাইয়ের জন্য এটা গ্রহণ করা জায়েয হবে কি? নিয়ে ফেললে করণীয় কি?

উত্তর : যৌতুক মনে না করে যদি শ্বশুর স্বেচ্ছায় তার জামাইকে হাদিয়া স্বরূপ কিছু প্রদান করেন, সেটি গ্রহণ করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-এর বিয়ের সময় তাঁর সংসারের জন্য দিয়েছিলেন- একটি চাদর, খেজুর গাছের ছালে ভরা একটি বালিশ, একটি চামড়ার গদি, একটি দড়ির খাট, একটি চামড়ার তৈরী পানির মশক এবং একটি আটা পেষার চাক্কি (ত্বাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ ৮/২৩; মানাবী, ইত্তিহাফুল সায়েল ১/৬)। তবে হাদিয়া পাওয়ার জন্য মনে মনে আকাংখা করা যাবে না এবং এ ব্যাপারে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে ইঙ্গিতবহ কোন কথা বলা যাবে না। উল্লেখ্য, যৌতুক গ্রহণ করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বিবাহের জন্য স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান ফরয করেছেন (নিসা ৪/২৩)। অথচ উল্টা স্ত্রী বা তার পরিবারের নিকট থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বা কৌশলে কিছু গ্রহণ করা আল্লাহর হুকুমের প্রকাশ্য বিরোধিতার শামিল।

প্রশ্ন (২৩৮) : ওয়ায মাহফিলের আয়োজন করা হ’লে সেখানে যে উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তার পুরো খরচ মাহফিলে আম জনতার অনুদান থেকে ব্যয় করা হয়। যেখানে মসজিদ বা মাদ্রাসা কমিটির সদস্য, এলাকার গণ্যমান্য সামর্থ্যবান ব্যক্তিরাই মূলতঃ অংশগ্রহণ করেন। এক্ষণে দানের অর্থে এসব সামর্থ্যবান মানুষদের খাওয়ানো যাবে কি?

উত্তর : ওয়ায মাহফিলের জন্য দান ধনী-গরীব সবাই গ্রহণ করতে বা খেতে পারে। সেখানে মসজিদ কমিটির সদস্যসহ আম জনতা উক্ত খাবার গ্রহণ করলে তাতে বাধা নেই। কেননা সেটি হাদিয়ার অন্তর্ভুক্ত (নববী, আল-মাজমূ’ ৬/২৩৬; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৭৬; আযীমাবাদী, আওনুল মা’বূদ ৫/৩১)। তবে নির্দিষ্টভাবে যাকাত বা ওশর থেকে কোন ধনী ব্যক্তি খেতে পারবে না। কারণ যাকাতের জন্য নির্দিষ্ট আটটি খাত রয়েছে (তওবা ৯/৬০)।

প্রশ্ন (২৩৯) : সন্তান প্রসবের সময় মাহরাম মহিলা ব্যতীত অন্য কোন মহিলা সেখানে যেতে পারে কি?

উত্তর : সন্তান প্রসবের সময় ডাক্তার বা ধাত্রী এবং উক্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ সহযোগী মহিলা ব্যতীত অন্য কোন মহিলার সেখানে থাকা আদৌ ঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন পুরুষ কোন পুরুষের এবং কোন মহিলা কোন মহিলার সতরের দিকে যেন দৃষ্টিপাত না করে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০০)। তবে বাধ্যগত প্রয়োজনে বাধা নেই (বুখারী হা/৩৯৮৩)।

প্রশ্ন (২৪০) : ছালাতরত অবস্থায় পেশাব বা বায়ুর চাপ আসলে তা চেপে রাখায় কোন দোষ আছে কি?

উত্তর : পেশাব বা পায়খানার চাপ নিয়ে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খাদ্য উপস্থিত হ’লে ছালাত নেই এবং পেশাব-পায়খানার চাপ থাকলে কোন ছালাত নেই’ (মুসলিম হা/৫৬০; মিশকাত হা/১০৫৭)। এছাড়া এর ফলে ছালাতে খুশূ-খুযূ থাকে না। অতএব এমতাবস্থায় ছালাত ছেড়ে প্রয়োজন পূর্ণ করে পুনরায় ছালাত আদায় করবে (শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১২/৪৩৫)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম (যুক্তিবাদী)-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক ও সংকলক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-০৭

(৮) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-০৮

(৯) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্নবিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-০৯

(১০) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্নবিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-১০

(১১) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্নবিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-১১

(১২) কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্নবিষয়ের প্রশ্নোত্তর -পর্ব-১২

১৪তম পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন----

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

PMMRC

====================================================

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...