Search This Blog

Tuesday, July 20, 2021

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১২)

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর

(১২তম পর্ব)

(এই পর্বে সাম্প্রতিক উত্থাপিত ৩১৮টি প্রশ্নোত্তর সংযোজন করা হয়েছে)

(JANUARY--JULY-2021)

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন (০১) : কিরামান কাতেবীন ফেরেশতাগণ কি মানুষের কাঁধে অবস্থান করে আমলনামা লিখেন?

উত্তর : প্রত্যেক মানুষের হেফাযত ও আমলনামা সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন দু’জন ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমলনামা লিপিবদ্ধ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী রয়েছে (ক্বা-ফ ৫০/১৭-১৮; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ক্বা-ফ উক্ত আয়াত)। তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতারা রয়েছে, যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’ (রা‘দ ১৩/১১)। যে ফেরেশতা ডানে অবস্থান করেন তিনি মানুষের ছওয়াব লিখেন। আর যে বামে অবস্থান করেন তিনি পাপ লিখেন। এর অর্থ ফেরেশতা মানুষের সাথে সর্বদা অবস্থান করে (ছহীহাহ হা/১২০৯)। সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, একজন ব্যক্তিকে দিনে ও রাতে কমপক্ষে চারজন করে ফেরেশতা পাহারা দেয়। যাদের দু’জন ডানে ও বামে মানুষের আমলনামা লিখে, অপর দু’জন মানুষের পিছনে ও সামনে থেকে পাহারা দিয়ে থাকে (বুখারী, হা/৫৫৫; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রা‘দ ঐ আয়াত)। উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ মনে করে রাকীব ও আতীদ দুইজন ফেরেশতার নাম যা সঠিক নয় (ড. ওমর সুলায়মান, আলামুল মালায়েকাতিল আবরার, ১২ পৃ.)।

প্রশ্ন (০২) : বোনের নাতনীর সাথে জনৈক ব্যক্তির বিবাহ হয়েছে। উক্ত বিবাহ কি বৈধ হয়েছে?

উত্তর : বোনের নাতনী বোনের মতই মাহরাম। তথা বোনের নাতনী নিজের নাতনীর সমতুল্য। সুতরাং বোনের নাতনীকে বিবাহ করা হারাম। আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী’ (নিসা ৪/২৩)। উক্ত আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরগণ বলেন, ‘ভাগিনেয়ী’ বলতে বোনের মেয়েসহ তাদের অধঃস্তন সকল নারী। সুতরাং তাদের সকলেই মাহরাম। বোনের নাতনী হারাম হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর ইজমা‘ রয়েছে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব, কুরতুবী, ইবনু কাছীর উক্ত আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)।

প্রশ্ন (০৩) : নারীরা কি সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতে পারবে?

উত্তর : এসব কর্মক্ষেত্র মহিলাদের জন্য নয়। বরং গৃহই মহিলাদের প্রধান কর্মস্থল (আহযাব ৩৩/৩৩)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নারী হ’ল গোপন বস্ত্ত। যখন সে বের হয়, শয়তান তার পিছু নেয়’ (তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯)।  তবে প্রয়োজনে অভিভাবকের অনুমতি, পর্দা ও পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে তারা শর্তসাপেক্ষে চাকুরী করতে পারে। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলিতে চাকুরীর ক্ষেত্রে তা পূরণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কেননা সেখানে পর্দা ও নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং এসকল পেশা নারীদের জন্য পরিত্যাজ্য। 

প্রশ্ন (০৪) : স্বামী-স্ত্রী একে অপরের লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারে কি? রাসূল (ছাঃ) কখনো এরূপ দৃষ্টিপাত করেননি মর্মে হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : এতে বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি তোমার লজ্জাস্থান ঢেকে রাখ। তবে তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত (ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৪; মিশকাত হা/৩১১৭)। উল্লেখ্য আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর গোপন স্থান কখনো দেখিনি’ মর্মের হাদীছটি যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৬৬২; মিশকাত হা/৩১২৩; ইরওয়া হা/১৮১২)।

প্রশ্ন (০৫) : একজন সাবালক মেয়ে আরেক সাবালক মেয়ের নিকট কতটুকু শরীর প্রকাশ করতে পারে?

উত্তর : একজন সাবালক মেয়ে তার স্বামী ব্যতীত অন্য মাহরাম বা নারীর নিকট চেহারা, দুই হাতের কব্জি, দুই বাহু, দুই পা ইত্যাদি খোলা রাখতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ২৯৬; ফাতাওয়াউল ইসলাম সুওয়াল ওয়াল জাওয়াব, ফৎওয়া নং- ৩৪৭৪৫)। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তার মধ্যে যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের অলংকার বা সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত্ত করে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, (পিতামহ-মাতামহ) শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে (সূরা আন-নূর : ৩১)। তবে কখনো কাফের, পতিতা ও উলঙ্গ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না। (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; মিশকাত, হা/৪৩৪৭; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৬১৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৭৭ ও ২১২৮)। যেমনটি বর্তমানে হরহামেশা চলছে।

প্রশ্ন (০৬) : মাগরিবের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করার দলীল জানতে চাই।

উত্তর : আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর, তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। তৃতীয়বার বলেন, যার ইচ্ছা সে পড়বে। এজন্য যে লোকেরা যেন তাকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ না করে (ছহীহ বুখারী, হা/১১৮৩, ১/১৫৭ পৃ., (ইফাবা হা/১১১২ ও ১১১৩, ২/৩২৩ পৃ.); ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩৬, ১/২৭৮ পৃ., (ইফাবা হা/১৮০৮); মিশকাত, হা/১১৬৫, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১০৯৭, ৩/৯২ পৃ.)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা যখন মদীনায় থাকতাম তখন এমন হত যে, মুয়াযযিন মাগরিবের ছালাতের যখন আযান দিত, তখন লোকেরা কাতারে দাঁড়িয়ে যেত। অতঃপর তারা দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করত। এমনকি কোন অপরিচিত লোক মসজিদে প্রবেশ করলে ধারণা করত, অবশ্যই মাগরিবের ছালাত হয়ে গেছে। এতে মানুষ উক্ত দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করত (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩৭, ১/২৭৮ পৃ., (ইফাবা হা/১৮০৯); মিশকাত, হা/১১৮০, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১১১২, ৩/৯৭ পৃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সুন্নাত ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (০৭) : ইসলামে হালাল ও হারাম কী?

উত্তর : হালাল ও হারাম শরী‘আতের দু’টি বিধান, যার শিক্ষা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহতে বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তাকে হালাল হিসাবে ও যা হারাম করেছেন তাকে হারাম হিসাবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা একজন মুমিনের জন্য আবশ্যক। কেননা এই বিশ্বাস বা আক্বীদা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। যেমন জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল,

‘আমি যদি ফরয ছালাত আদায় করি এবং হালালকে হালাল হিসাবে ও হারামকে হারাম হিসাবে মেনে চলি তবে কি আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫)। সুতরাং একজন মুসলিমের উপর নিজের ইচ্ছামত কোন কিছুকে হালাল বা হারাম করার অধিকার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘তোমাদের জিহ্বার দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে তোমরা বল না, এটা হালাল এবং এটা হারাম, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না’ (সূরা আন-নাহল : ১১৬)।

কেউ যদি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত কোন হারামকে স্পষ্ট হারাম জেনেও হালাল মনে করে, তাহলে সে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি যেনা, সূদ ও মদকে হালাল মনে করে। কেননা এটা কুফরী ও ইসলাম হতে মুরতাদ হয়ে যাওয়া। অনুরূপভাবে কেউ যদি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত কোন হালালকে স্পষ্ট হালাল জেনেও হারাম মনে করে, তাহলে সে অবশ্যই ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি গোশত অথবা রুটি বা এজাতীয় জিনিসকে হারাম মনে করে। একারণে সে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করল ও দ্বীন ইসলাম হতে মুরতাদ হয়ে গেল (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৬)।

প্রশ্ন (০৮) : কিছু বক্তা বলছেন, অবুঝ বাচ্চাদের শরীরে তা‘বীয বেঁধে দেয়া যাবে। জনৈক ছাহাবী বাচ্চাদের তা‘বীয দিতেন। উক্ত দাবী কি সঠিক?

উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। আবূ দাঊদ ও মুসনাদে আহমাদের একটি হাদীছের শেষে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর সম্পর্কে যে কথা বর্ণিত হয়েছে সেই অংশটুকু মুহাদ্দিছগণের নিকট যঈফ ও ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে (তাহক্বীক্ব আবূ দাঊদ, হা/৩৮৯৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৬৯৬)। বরং সর্ব অবস্থায় তা‘বীয বাঁধা শিরক মর্মে বহু ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪৯২)।

প্রশ্ন (০৯) : ইসলাম প্রচারের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রচার করা হয়, যেখানে প্রচারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নিজস্ব পরিচিতি ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে থাকে। দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে এরূপ পরিচয় দেয়া যাবে কি?

উত্তর : পরিচয় দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। তবে ইখলাছের সাথে দাওয়াতী কাজ করতে হবে। রিয়া বা অহংকার যেন সৃষ্টি না হয়। কেননা মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য অনেকগুলো সৎ আমলের মধ্যে আল্লাহর পথে দাওয়াত অন্যতম। যারা এই কাজটি করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রশংসা করে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি বলেন,

‘ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম, যে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎ কর্ম করে এবং বলে, আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হামীম সাজদাহ : ৩৩)।

উপরিউক্ত অবস্থার প্রেক্ষিত মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে দু’টি পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন বিশেষ দাওয়াত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া এবং সাধারণ দাওয়াত, এক্ষেত্রে সেমিনার-সেম্পোজিয়াম, জুমু‘আর খুৎবাহ ইত্যাদি। এতদ্ব্যতীত দাওয়াতের আরো উপকারী পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, বই প্রকাশ, সুন্দর উপস্থাপনা ও বোধগম্য ভাষায় লিফলেট প্রকাশ ইত্যাদি। সুতরাং দাওয়াতী কাজের জন্য খুলূছিয়াতের সাথে প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি প্রচার করা যাবে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১১ তম খণ্ড, পৃ. ৩১-৩২)।

প্রশ্ন (১০) : জন্মদিন লিখে কেক তৈরি করা ও তা বিপণন করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে না। কারণ জন্মদিন পালন করা বা এ উপলক্ষে কোন ধরনের আয়োজন করা শরী‘আত সম্মত নয়। এটা ইসলামী শিষ্টাচার বহির্ভূত। তাই এ ধরনের কাজে কোন সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

‘তোমরা নেকী ও কল্যাণের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা কর না’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। তাই জন্মদিন উপলক্ষে কেক তৈরি করা যাবে না। মূলত ‘আশূরায়ে মুহাররম, মি‘রাজ বা জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানাদি পালন করা বিদ‘আত। কারণ ধর্মের নামে বাতিলকে সহযোগিতা করা হয়’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১৭৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবীদের মাঝে জন্মদিন পালনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (১১) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় মা মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে। এটা কি সঠিক?

উত্তর : উক্ত মা শহীদের মর্যাদা পাবে ইনশাআল্লাহ। ‘উবাদাহ ইবনু ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

‘তোমরা তোমাদের মধ্যে কাদেরকে শহীদ হিসাবে গণ্য করবে? ছাহাবীগণ বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে নিহত হয় সেই শহীদ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদের সংখ্যা কম হয়ে যাবে। (আরো শহীদ আছে, তারা হল) আল্লাহ ত্বাবারাকা ওয়া তা‘আলার রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, প্লেগ রোগে নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পিড়ায় নিহত ব্যক্তি শহীদ ও প্রসব বেদনায় নিহত মহিলা শহীদ’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৭৭২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮০৪, সনদ ছহীহ)। এই হাদীছে تَمُوْتُ بِجُمْعٍ -এর অর্থ, ‘যে সমস্ত নারী তাদের গর্ভস্থ সন্তানের কারণে মৃত্যুবরণ করে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে’ (শারহুন নববী, ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ৬৩; ফাৎহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪৩)। অন্য হাদীছে উক্ত মায়ের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬০৪১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯১৫)। উক্ত দলীল থেকে প্রমাণিত হয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যে সকল মহিলা নিফাস এবং গর্ভস্থ সন্তানের কারণে মৃত্যুবরণ করে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে। যদিও আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া ব্যক্তির মর্যাদা মহান আল্লাহর নিকট সবার উপরে (ফাতাওয়া আল-লাজদা আদ-দায়েমাহ, ১১ তম খণ্ড, পৃ. ৬-৭)।

প্রশ্ন (১২) : খাদ্য ও পানীয় হারাম হলে দু‘আ কবুল হবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় দু‘আ কবুল হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশ করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র খাদ্য খাবেন এবং সৎ আমল করতে থাকবেন’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৫২)। মুমিনগণকে লক্ষ্য করে অনুরূপই বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! আমার দেয়া পবিত্র রিযিক হতে খাও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭২)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখ করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি তার উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দু‘আ কবুল হবে (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; তিরমিযী, হা/২৯৮৯; মিশকাত, হা/২৭৬০)।

প্রশ্ন (১৩) : নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় কোথায় সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : কয়েকটি স্থানে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত তুলে সম্মিলিত দু‘আ করেছেন, যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, পানি চাওয়ার জন্য (ছহীহ বুখারী, হা/১০২৯, ১/১৪০ পৃ.; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৬, ১/২৯৩ পৃ.; মিশকাত, হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ), বৃষ্টি বন্ধের জন্য (ছহীহ বুখারী হা/১০১৩, ১/১৩৭ পৃ.), চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের সময় (ছহীহ মুসলিম হা/৯১৩, ১/২৯৯ পৃ.; ছহীহ বুখারী হা/১০৪০ ও ১০৪৩), কুনূতে নাযেলা (মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৪২৫; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুছ ছগীর, হা/৫৩৬, সনদ ছহীহ; আবু দাঊদ, হা/১৪৪৩, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/১২৯০), কুনূতে বিতর (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১০৯৭; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃ. ১৮০; ফাতাওয়া আরক্বানিল ইসলাম, পৃ. ৩৫০-৩৫১, ফৎওয়া নং-২৭৭)। উক্ত হাদীছগুলো থেকে বুঝা যায় যে, বিশ্বব্যাপী এবং জাতীয় কোন সংকটে পতিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবাইকে নিয়ে জামা‘আতবদ্ধভাবে হাত তুলে দু‘আ করেছেন। উল্লেখ্য যে, ফরয ছালাতের পর, মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর, বিবাহের পর, সমাবেশের পর, দুই ঈদের ছালাতের পর এবং টঙ্গীর মাঠে আখেরী মুনাজাতের যে প্রথা চালু আছে, তা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রশ্ন (১৪) : কিছু কিছু মসজিদে ক্বিবলার দিক নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কম্পাস অনুযায়ী ঠিক ক্বিবলার দিকে পড়ে না। এক্ষণে করণীয় কী?

উত্তর : উক্ত অবস্থায় ছালাত হয়ে যাবে। তবে মসজিদ তৈরি করার সময় যেকোন পদ্ধতিতে ক্বিবলার দিক নির্ধারণ করা আবশ্যক (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৪৪; ছহীহ বুখারী, হা/৩৯৯)। আর এমন কম বেশী থাকলে ছালাত হয়ে যাবে মর্মে হাদীছে ইঙ্গিত পাওয়া যায় (তিরমিযী, হা/৩৪২; নাসাঈ, হা/২২৪৩; ইবনু মাজাহ, হা/১০১১; মিশকাত, হা/৭১৫, সনদ ছহীহ)। আল্লামা ছান‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ হাদীছ ক্বিবলামুখী হওয়া প্রমাণ করে। তবে একেবারেই কা‘বার মাঝামাঝি হতে হবে তা নয়। বরং ক্বিবলামুখী হওয়াটা যরূরী’ (সুবুলুস সালাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬০)। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) একই মন্তব্য করেছেন (আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুসতাক্বনি‘, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৭৩)। অতএব মুছল্লী যথাসাধ্য সঠিকভাবে ক্বিবলার দিক নির্ধারণ করে ছালাত আদায়ের চেষ্টা করবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৫)।

প্রশ্ন (১৫) : মেয়ে শিশুর কানে আযান দিতে হবে কি?

উত্তর : মেয়ে বা ছেলে কারো কানে আযান দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ‘আসেম বিন উবাইদুল্লাহ নামক বর্ণনাকারী যঈফ (তিরমিযী, হা/১৫১৪; আবূ দাঊদ, হা/৫১০৫)। উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর এক কানে আযান অন্য কানে ইক্বামত দিয়েছিলেন মর্মে বর্ণিত হাদীছটি জাল (বায়হাক্বী, হা/৮২৫৪; ইরওয়াউল গালীল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪০১-৪০২, হা/১১৭৪-এর আলোচনা দ্র.)। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীছের হাসান ইবনু সাইফ নামক বর্ণনাকারী ‘কাযযাব’ তথা মহা মিথ্যাবাদী (তারীখুল কাবীর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৯)। ভূমিষ্ট সন্তানের কানে আযান বা ইক্বামত দেয়া সংক্রান্ত যে সমস্ত হাদীছ এসেছে তার সবগুলোই যঈফ অথবা জাল (সিলসিলা যঈফাহ, হা/৩২১)।

প্রশ্ন (১৬) : ইমাম জুম‘আর দিন মিম্বরে বসার সময় সালাম দিবেন মর্মে কোন দলীল আছে কি?

উত্তর : ছহীহ দলীল রয়েছে (ইবনু মাজাহ, হা/১১০৯, পৃ. ৭৮; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২০৭৬)।

প্রশ্ন (১৭) : সর্বশেষ জান্নাতী ব্যক্তি কে? হাদীছে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এই দুনিয়ার দশগুণ দিবেন। প্রশ্ন হল- সেটা কি আমাদের পৃথিবীর দশগুণ?

উত্তর : সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি, যে জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তি পাবে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৬, ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতী’ অনুচ্ছেদ-৮৬)। জাহান্নাম থেকে বের হওয়া ও জান্নাতে যাওয়া এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা। সুতরাং দুনিয়া থেকে দশগুণ বড় না ছোট সেটা বড় বিষয় নয়। অন্যত্র জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের সাথে তুলনা করা হয়েছে (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৩৩; সূরা আল-হাদীদ : ২১)। দুনিয়া থেকে দশগুণ এটা একটা উদাহরণ মাত্র, যা দ্বারা জান্নাতের প্রশস্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে (আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী, ‘উমদাতুল ক্বারী, ২৩ তম খণ্ড, পৃ. ১২৯)। সুতরাং হাদীছে ‘দুনিয়া’ বলতে পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন (১৮) : ইচ্ছাকৃতভাবে সার্টিফিকেট-এ বয়স কমানো যাবে কি?

উত্তর : ইচ্ছাকৃত জন্মতারিখ পরিবর্তন বা কম-বেশী করা বৈধ নয়। জন্মতারিখ পরিবর্তন করা ধোঁকার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০২)। জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। এ বিষয়ে কারো কোন ইখতেয়ার নেই। যার জন্ম বা মৃত্যু যখন যেখানে হওয়ার কথা নির্ধারণ করা আছে, ঠিক তখন এবং সেখানেই হবে (সূরা লুক্বমান : ৩৪)।

প্রশ্ন (১৯) : পিতা-মাতা যদি সন্তানকে ক্ষমা না করে, তাহলে কী করণীয়?

উত্তর : পিতা-মাতার চোখে সন্তান যদি অপরাধী হয়, তাহলে সন্তান যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে তাদের কাছ থেকে ক্ষমা নেয়ার। আশা রাখতে হবে অবশ্য তারা ক্ষমা করবেন। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মনে রাখা আবশ্যক যে, ক্ষমা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা যদি ক্ষমা কর, তবে তা হবে পরহেযগারীর নিকটবর্তী (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের উচিত ক্ষমা করে দেয়া এবং দোষত্রুটি উপেক্ষা করা। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন?’ (সূরা আন-নূর : ২২)। যে ক্ষমা করে ও আপোস করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে (সূরা আশ-শূরা : ৪০)। উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে ক্ষমাকারীর মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অপরাধীদের খেয়াল রাখতে হবে যে,

(ক) ইখলাছ বা একনিষ্ঠভাবে অপরাধ স্বীকার করতে হবে

(খ) সততা থাকতে হবে

(গ) উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা

(ঘ) উপযুক্ত শব্দ চয়ন করা এবং

(ঙ) তাদের জন্য উপঢৌকন দেয়া। এতেও যদি তাদের মন নরম না হয়, তাহলে তাদের সামনে বা পেছনে সত্য প্রশংসা করতে হবে এবং তাদের জন্য দু‘আ করতে হবে (তাফসীর ইবনু কাছীর, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪)।

প্রশ্ন (২০) : কসমের শব্দ কি ‘আল্লাহ’ হতে হবে?

উত্তর : কসমের শব্দ ‘আল্লাহ’ হওয়াই উচিত। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কেউ যদি বলে, ‘আমি কসম করছি’ অথবা ‘আমি শপথ করছি’, ‘আমি সাক্ষী রেখে বলছি’, ‘দৃঢ়ভাবে বলছি আমি অবশ্যই করব’, অথচ সে ‘আল্লাহ’ বলেনি, তাহলে এটা তার শপথ হিসাবে গণ্য হবে না (রওযাতুত ত্বালেবীন, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১৫)। ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) কসমের সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘আল্লাহর নাম বা তাঁর কোন গুণবাচক নাম উল্লেখ করে কাজ বাস্তবায়নের দৃঢ় পরিকল্পনার নাম শপথ (ফাৎহুল বারী, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৫২৫)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর নামে যে ওয়াদা করেছ তা পূরণ কর’ (সূরা আন-নাহল : ৯১)। এছাড়াও পবিত্র কুরআনে আল্লাহর গুণবাচক নাম হিসাবে ‘রব্ব’ উল্লেখ করা হয়েছে (সূরা ইউনুস : ৫৩, সাবা : ৩, তাগাবুন : ৭)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনে যত কসম করেছেন সব কসমেই আল্লাহর নাম বা গুণ সহ শপথ করেছেন। যেমন তিনি বলতেন, ‘ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৬২৮, ৬৬২৯, ৬৭২১)।

প্রশ্ন (২১) : দাঁত সাজানো কি জায়েয?

উত্তর : দাঁত সাজানো বলতে যদি দাঁতকে কেটে চেঁচে সরু করানো বুঝায়, তাহলে তা জায়েয নয়। তবে কোন দাঁত যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বাঁকা বা উঁচু হয়, তাহলে তা স্বাভাবিক করার জন্য ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর, যারা সৌন্দর্যের জন্য সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৩১)। শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাজ-সজ্জা দুই প্রকার। এক. দুর্ঘটনা বা জন্মগত কারণে কোন ত্রুটি প্রকাশ পেলে তা দূর করার জন্য অপারেশন করা- এটা জায়েয। দুই. স্বাভাবিক সুন্দরকে আরো বেশী সুন্দর করার জন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা- এটা হারাম (উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ২২)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাঁত সরু করা বলতে যদি সৌন্দর্যকেই বুঝায়, তাহলে তা হারাম। তবে কোন সমস্যা দূর করার জন্য হলে ক্ষতি নেই (শারহুন নববী, ১৩ তম খণ্ড, পৃ. ১০৭)।

প্রশ্ন (২২) : সূদী ব্যাংকে চাকুরী করে সেই টাকা দিয়ে ইফতারী খাওয়ানো এবং কাউকে গিফট দেয়া যাবে কি?

উত্তর : সূদী ব্যাংকে চাকুরী এটা একটি বিষয় আর সেই টাকা দিয়ে ইফতার করানো বা উপহার দেয়া আরেকটি বিষয়। প্রথমে সূদী চাকুরী করা যাবে কি না সে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। মহান আল্লাহ বলেন,

‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সূদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার বিষয় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সূদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৫)।

যে ব্যক্তি অজ্ঞতাহেতু সূদ নিবে তা তার জন্য হালাল। শর্ত হল- সে এই পাপের জন্য তওবা করবে (তাফসীরে উছায়মীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৭৭)। গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতার জন্য সূদী ব্যাংকে চাকুরী করা হারাম। হারাম চাকুরী অবস্থায় তার যে উপার্জন তাও হারামের মধ্যেই শামিল। কেননা মহান আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছুই গ্রহণ করেন না (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫)। ইফতারী একটি পবিত্র ইবাদত। তাই তা পবিত্র বস্তু দিয়েই দেয়া উচিত। সুতরাং সূদী ব্যাংক থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে কাউকে ইফতার করানো উচিত নয়। কাউকে ইফতার করানো, মসজিদে দান করা কিংবা কাউকে দান বা উপহার দেয়া সবই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন (২৩) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করেছেন কি-না? দলীলসহ জানতে চাই।

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে যা করেছেন, বলেছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন তা সবই সুন্নাহ। মেহেদীর বিষয়টিও অনুরূপ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল, দাড়ি উল্লেখযোগ্য সাদা ছিল না। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে মেহেদী ব্যবহার করেছেন মর্মে কোন হাদীছ পাওয়া যায় না। যেমন আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মেহেদী ব্যবহার করেননি (ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৪১)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে ব্যবহার না করলেও তিনি অনেক হাদীছে মেহেদী ব্যবহার করতে বলেছেন। যেমন- আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বার্ধক্যের শুভ্রতা পরিবর্তনের জন্য মেহেদী ও কাতাম (এক প্রকার কালো ঘাস) পাতাই উত্তম (তিরমিযী, হা/১৭৫৩, সনদ ছহীহ)। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের চুল দাড়ি মেহেদী দ্বারা রং পরিবর্তন করে না। তোমরা তাদের বিরোধিতা কর (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬২)। আবু উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনছারীদের নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় দেখলেন অনেকেই সাদা দাড়ি ও চুল নিয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের সাদা দাড়ি ও চুল মেহেদী দ্বারা রঞ্জিত কর (মুসনাদে আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১২৪৫, সনদ ছহীহ)। মক্কা বিজয়ের দিন আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতাকে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে আসলে তার পাকা চুল ও দাড়ির রং পরিবর্তন করতে বলেন। তবে কালো রং ব্যবহার করতে নিষেধ করেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২১০২)। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মেহেদী এবং কাতাম দ্বারা রঞ্জিত করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৪১)।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি একবার উম্মু সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকটি চুল বের করলেন, যাতে খিযাব লাগানো ছিল (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৯৭)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুলে বা দাড়িতে মেহেদী ছিল। আর আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঐ বার্ধক্য আসেইনি যে, তিনি দাড়ি রঞ্জিত করবেন। এ হাদীছের ভিত্তিতে আলেমগণ দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। একদলের মতে, তিনি নিজে মেহেদী ব্যবহার করেননি। অপর দলের মতে, তিনি মেহেদী ব্যবহার করেছেন। মূলত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে মেহেদী ব্যবহার করেননি। কিন্তু ঐ চুলগুলো খেযাব লাগানো মনে হওয়ার কারণ তাতে অধিক পরিমাণ সুগন্ধি ছিল অথবা সময়ের আবর্তে তার রং কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। যা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনু মাওহাব ভেবেছিলেন তা মেহেদী যুক্ত (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৮৪৩-৪৪)। উল্লেখ্য, পাকা চুল ও দাড়িতে কালো রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এ ধরনের লোক জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (আবূ দাঊদ, হা/৪২১২)।

প্রশ্ন (২৪) : ‘আল্লাহ ও আপনি যা ইচ্ছা করেন’-এরূপ কথা বলা যাবে কি?

উত্তর : বলা যাবে না। কেননা এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জনৈক ইহুদী আসলে তিনি তাকে বলেন, তোমরা ‘আল্লাহ এবং আপনি যা ইচ্ছা করেন’, এমন কথা বলে ও ‘কা‘বার কসম’ করে শিরক করছ। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা কসম করতে চাইলে বল, ‘কা‘বার মালিকের কসম’; আর একথা বল, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তারপর আপনি যা ইচ্ছা করেন’ (নাসাঈ, হা/৩৭৭৩, সনদ ছহীহ; রওযাতুল মুহাদ্দিছীন, ২/৪৭২পৃ., হা/২৭৪৭)।

প্রশ্ন (২৫) : মসজিদের বারান্দায় ই‘তিকাফ করা যাবে কি?

উত্তর : ই‘তিকাফ অর্থ ইবাদতের জন্য জুমু‘আহ মসজিদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আবদ্ধ থাকা। ইবনু কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মসজিদ ছাড়া ই‘তিকাফ জায়েয নেই- চাই সে পুরুষ হোক বা মহিলা। এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই (আল-মুগনী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৬৫)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যতক্ষণ তোমরা ই‘তিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা কর না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৭)। আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও মসজিদেই অবস্থান করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/২০২৯)। মসজিদ সংশ্লিষ্ট কোন ঘর থাকলে তাতে ই‘তিকাফ করা যাবে কি না সে বিষয়ে শায়খ উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি ঘরগুলো ছালাত আদায়ের জন্য তৈরি হয়, তাহলে তাতে ই‘তিকাফ করা যাবে। আর তা যদি ইমাম মুয়াযযিনদের থাকার জায়গা হয়, তাতে ই‘তিকাফ করা যাবে না। কারণ সেটাও বাড়ির হুকুমের অন্তর্ভুক্ত যদিও তা মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের জমিতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘর মসজিদের দেওয়ালের সাথে থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদে ই‘তিকাফ করতেন (ফাতাওয়াউল ইসলাম সুওয়াল ও জওয়াব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৩১৮; প্রশ্ন নং ১৩০৯৮৪; দ্র.

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মসজিদের বারান্দা, চত্বর, ছাদ সবই মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। এর যেকোন জায়গায় ই‘তিকাফ করতে পারবে (আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৮)।

প্রশ্ন (২৬) : রাসূলূল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সন্তান যদি তার পিতা-মাতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার ‘আমল নামায় একটি কবুলযোগ্য হজ্জের ছওয়াব লিপিবদ্ধ করেন (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৪৭৫; মিশকাত হা/৪৯৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৭২৭)। বর্ণনাটি কি সঠিক?

উত্তর : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে নাহশাল ইবনু সাঈদ নামে মিথ্যুক রাবী আছে এবং মানছূর ইবনু জা‘ফর নামে অপরিচত রাবী আছে (সিলসিলা যঈফাহ, হা/৬২৭৩)।

প্রশ্ন (২৭) : বর্তমানে অধিকাংশ মুদির দোকানে বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দা ইত্যাদি বিক্রয় করা হয়। প্রশ্ন হল- এ সকল হারাম জিনিস বিক্রয়ের কারণে কি দোকানের অন্য জিনিসগুলো বিক্রয় হারাম হয়ে যাবে?

উত্তর : হারাম পণ্য বিক্রি করার কারণে গুনাহগার হবে, তবে এর কারণে অন্য হালাল পণ্য বিক্রয় হারাম হবে না। মূলত হারাম পণ্য বিক্রয় করা, বহন করা, তার মূল্য ভোগ করা কিংবা ক্রয় করা সবই হারাম (তিরমিযী, হা/১২৯৫; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৮১; মিশকাত, হা/২৭৭৬, সনদ হাসান ছহীহ)। এছাড়া শরী‘আতে হালাল ব্যবসা ও উপার্জনের ব্যাপারে অসংখ্য তাকীদ এসেছে এবং হারাম পণ্যের ব্যবসা করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ আর আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫)। সুতরাং মিশ্রিতভাবে হালাল ও হারাম পণ্যের ব্যবসা করা যাবে না।

প্রশ্ন (২৮) : জুম‘আহ কিংবা ঈদের ছালাতে যদি কারো প্রথম রাক‘আত ছুটে যায়, তাহলে বাকী অংশ বিভাবে আদায় করবে?

উত্তর : ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকী অংশ একাকী পড়ে নিবে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

‘যখন তোমরা ইক্বামত শুনতে পাবে, তখন ছালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬০৪)। এক্ষেত্রে ফরয, জুমু‘আহ বা ঈদের ছালাত অথবা অন্য কোন ছালাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন (২৯) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের পূর্বে দু’রাক‘আত সুন্নাত ছালাত ও বিতর ছালাত কখনো ছাড়তেন না। প্রশ্ন হল- যদি কেউ ছেড়ে দেন, তাহলে কি তিনি গুনাহাগার হবেন?

উত্তর : না, কোন ব্যক্তি নফল ছালাত ছাড়ার কারণে গুনাহগার হবেন না। তবে অবশ্যই তিনি বড় ধরণের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবেন (ছহীহ মুসলিম হা/৭২৮, ১/২৫১ পৃ., (ইফাবা হা/১৫৬৪), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; তিরমিযী, হা/৪১৫; মিশকাত, হা/১১৫৯, পৃ. ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১০৯১, ৩/৯০ পৃ.)। কেননা প্রতিটি নফল ছালাতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশেষ বিশেষ ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে (ছহীহ মুসলিম, হা/৭২৫, ১/২৫১ পৃ.; মিশকাত, হা/১১৬৪, পৃ. ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১০৯৬, ৩/৯২ পৃ.)। তাই নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। যেমন ক্বিয়ামতের দিন ফরয ইবাদতের ঘাটতি হলে আল্লাহর হুকুমে নফল ইবাদতের নেকী দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে (আবূ দাঊদ, হা/৮৬৪; তিরমিযী, হা/৪১৩; নাসাঈ, হা/৪৬৫, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (৩০) : যোহরের ছালাত আদায় করতে গিয়ে দেখা যায় যে, জামা‘আত শুরু হতে কিছু সময় বাকী আছে, এমতাবস্থায় কোন ব্যক্তির যদি ফজর ক্বাযা থাকে, তাহলে সে আগে ক্বাযা আদায় করবে, না-কি যোহরের সুন্নাত পড়বে?

উত্তর : এমতাবস্থায় ক্বাযা ছালাত আদায় করবে। কারণ কারো যদি ফরয ছালাত ভুলবশতঃ ক্বাযা হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যখনই স্মরণ হবে তখনই আদায় করে নিবেন। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেউ কোন ছালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই যেন তা আদায় করে নেয়। এটুকুই তার জন্য কাফফারা’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৮৪ (ইফাবা হা/১৪৫২); আবূ দাঊদ, হা/৪৪২)। তবে যদি ক্বাযা ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে অন্য ছালাতের সময় উপস্থিত হওয়ার পর স্মরণ হয়, সেক্ষেত্রে উপস্থিত ছালাত আদায়ের পর ক্বাযা ছালাত আদায় করে নিতে পারবে।

প্রশ্ন (৩১) : এশার ছালাতের সঠিক সময় কখন?

উত্তর : মাগরিবের ছালাতের সময়ের পর থেকে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সমাস্যজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ছালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন। তাই মাগরিবের পরপরই এশার ছালাত পড়া উচিত নয়, যা এদেশে চালু আছে (ছহীহ মুসলিম, হা/৬১২, ১/২২২, (ইফাবা হা/১২৬২); মিশকাত, হা/৫৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৩৪, ২/১৬৭ পৃ.)। অন্যত্র আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা রাত্রির অর্ধেক পর্যন্ত ছালাত দেরী করলেন। এমনকি মসজিদের মুছল্লীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হল। অতঃপর তিনি বের হয়ে ছালাত আদায় করেন। তারপর বললেন, আমি যদি আমার উম্মতের উপর ভারী না মনে করতাম, তবে এই সময়টাই এশার ছালাতের সময় হত (ছহীহ মুসলিম, হা/৬৩৮, ১/২২৯ পৃ., (ইফাবা হা/১৩১৮))।

প্রশ্ন (৩২) : কুরআন তেলাওয়াতের পরে ‘ছাদাক্বাল্লা-হুল ‘আযীম’ বলা যাবে কি?

উত্তর : যাবে না। কেননা এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ছাহাবীগণের (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) নিকট থেকে ছহীহ সূত্রে কোন প্রমাণ নেই (ইবনু বায, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯-৩৩১)। বরং হাদীছে বর্ণিত দু‘আ পাঠ করতে হবে।

উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আংতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলায়কা। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মহা পবিত্র। আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’ (তিরমিযী হা/৩৪৩৩, ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৯; মিশকাত, পৃ. ২১৫, হা/২৪৩৩ ও ২৪৫০, সনদ ছহীহ; নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ, হা/৩০৮)।

প্রশ্ন (৩৩) : হাজারে আসওয়াদ পাথরটি প্রথমে সাদা ছিল। এটা এখন কালো হয়ে গেছে। এটা কালো কিভাবে হল?

উত্তর : হাজারে আসওয়াদ প্রকৃতপক্ষে সাদাই ছিল। এটি মূলত জান্নাতী একটি পাথর। বনী আদমের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, نَزَلَ الْحَجَرُ الْأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِى آدَمَ ‘হাজারে আসওয়াদ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর বনু আদমের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়’ (তিরমিযী, হা/৮৭৭; মিশকাত, হা/২৫৭৭; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬১৮)। তবে কতদিন সাদা ছিল বা কখন থেকে তা কালো হয়েছে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন (৩৪) : নাপাক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করে তেলাওয়াত যাবে কি? বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল, ভিডিও চিত্রের মাধ্যমেও কুরআন পড়ার হুকুম কী?

উত্তর : অপবিত্র ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলা কুরআন স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে মুখস্থ বা মোবাইল, কম্পিউটারে পড়তে পারে (ছহীহ বুখারী, হা/৩০৫ ও ৩০৬ ১/৪৪ পৃ.; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪০৬)। তবে সর্বদা পবিত্র ও ওযূ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করাই উত্তম (আবু দাঊদ, হা/১৭, ১/৪ পৃ. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮৩৪; ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ৯৯)।

উল্লেখ্য যে, নাপাক অবস্থা দু’প্রকার। যথা : (ক) পেশাব-পায়খানা করার কারণে নাপাক হওয়া (খ) স্ত্রী সহবাস বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হওয়ার কারণে নাপাক হওয়া। প্রথম অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ ছাড়াই পড়া যায় (ছহীহ বুখারী, হা/২৮৩; মিশকাত, হা/৪৫১)। তবে উত্তম হল ওযূ করে তেলাওয়াত করা (আবু দাঊদ, হা/১৭, ১/৪ পৃঃ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩৪; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ৯৯; সুবুলুস সালাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭১; ইবনু কাছীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৪৪)। দ্বিতীয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করে পড়া যাবে না (দারাকুৎনী, হা/৪৪৭; মিশকাত, হা/৪৬৫; ইরওয়াউল গালীল, হা/১২২, সনদ ছহীহ; তামামুল মিন্নাহ, পৃ. ১০৭)।

প্রশ্ন (৩৫) : কোন মুসলিম কি আহলে কিতাবকে কোন পুরস্কার কিংবা কুরবানীর গোশত হাদিয়া স্বরূপ দিতে পারে?

উত্তর : কাফেরকে কোন কিছু পুরস্কার দেয়া, কুরবানীর গোশত এবং নফল ছাদাক্বাহ দেয়া বৈধ, যদি তারা আমাদের তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ না করে (ফাতাওয়া আল-লাজদা আদ-দায়েমাহ, ১০ তম খণ্ড, পৃ. ৭৮)। উক্ত বক্তব্যের দলীল হল- মহান আল্লাহর নিম্নোক্ত ঘোষণা,

‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করে না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন’ (সূরা আল-মুমতাহিনা : ৮)।

প্রশ্ন (৩৬) : একশ্রেণীর আলেম জোরালোভাবে প্রচার করেন যে, রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলো মানসূখ বা হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাদের উক্ত দাবী কি সঠিক?

উত্তর : উক্ত দাবী সঠিক নয়। মূলত তারা উক্ত দাবীর পক্ষে নিম্নোক্ত বর্ণনা পেশ করে থাকেন।

‘একদা আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, ছালাতে রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হতে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করছে। তিনি তখন বললেন, তুমি এটা কর না। কারণ এগুলো সবই রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন, তবে পরবর্তীতে বাদ দিয়েছেন’ (ছহীহ বুখারী, ১/১০২ পৃ, টীকা দ্র.)।

অথচ উক্ত বর্ণনা মিথ্যা ও বাতিল। রাফ‘উল ইয়াদায়েনের প্রসিদ্ধ আমলকে প্রতিরোধ করার জন্য উক্ত মিথ্যা বর্ণনা রচনা করা হয়েছে। কারণ উক্ত বর্ণনা কোন হাদীছ গ্রন্থে পাওয়া যায় না। যেমন মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদের ভাষ্যকার বলেন,

‘কিন্তু এই আছারের সন্ধান কোন মুহাদ্দিছ কোন হাদীছ গ্রন্থে পাননি। বরং ইমাম বুখারী তার ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রুকূতে যাওয়া ও রুকূ থেকে উঠার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’ (মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ, তাহক্বীক্ব : ড. তাক্বিউদ্দীন নাদভী হা/১০৪-এর ব্যাখ্যা দ্র.)। অথচ ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, وَاَلَّذِىْ يُرْوَى مِنْ الرَّفْعِ مَحْمُوْلٌ عَلَى الِابْتِدَاءِ كَذَا نُقِلَ عَنِ ابْنِ الزُّبَيْرِ ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে, তা মূলত ইসলামের প্রথম যুগের বিষয়। যেমন ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে’ (হেদায়া ১/১১১ পৃ.)। সেই সাথে হেদায়ার টীকাকার হাশিয়ার মধ্যে ইবনু যুবাইরের বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (হেদায়াহ ১/১১১ পৃ., টীকা নং-৬; আল-ইনায়াহ শারহুল হেদায়াহ ২/৪ পৃ.)। তাছাড়া বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদকমণ্ডলী টীকায় উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (আল-হিদায়াহ ১ম খণ্ড, পৃ. ৮৬)। অথচ তার যে কোন ভিত্তি নেই সে বিষয়টি লক্ষ্য করেননি। এই মিথ্যাচার সম্পর্কে অনুবাদকমণ্ডলীকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করলে তারা কী জবাব দিবেন?

আরো আফসোসের বিষয় হল, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ বুখারীতে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের পাঁচটি হাদীছ পেশ করেছেন। সেই হাদীছগুলোকে রদ করার জন্য তার টীকায় ভাষ্যকার আহমাদ আলী সাহারাণপুরী উক্ত মিথ্যা বর্ণনা উল্লেখ করেছেন (বুখারী (ভারতীয় ছাপা) ১/১০২ পৃ., টীকা দ্র.)। অনুরূপভাবে আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ আল-বুখারীতে রাফঊল ইয়াদায়েনের হাদীছগুলোকে যবাই করার জন্য উক্ত বানোয়াট বর্ণনা পেশ করা হয়েছে এবং এই অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতকে বাতিল আখ্যা দেয়া হয়েছে (সহীহ আল-বুখারী ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২১-৩২২)। অনুবাদকমণ্ডলী এবং প্রকাশক বিচারের মাঠে আল্লাহর সামনে কী জবাব দিবেন?

সুধী পাঠক! এটাই হল ফেক্বহী গ্রন্থের আসল চেহারা। মাযহাবকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাদীছের উপর এভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উপর মিথ্যাচার করা হয়েছে। কারণ তিনি যে নিজেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন তার প্রমাণে ইমাম বুখারী ছহীহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী, ইবনু ওমর, ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)-কে দেখেছি, তারা সকলেই ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/২৪৪৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৫২৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪৪-এর আলোচনা দ্র.; বুখারী, রাফ‘উল ইয়াদায়েন হা/১৬ ও ৫৭)। অতএব সকলকে ছহীহ দলীলের দিকে ফিরে আসতে হবে। বানোয়াট বর্ণনা ও প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে হবে।

প্রশ্ন (৩৭) : এক রাক‘আত বিতরের ছালাত আদায় করার প্রমাণ জানতে চাই?

উত্তর : বিতর মূলত এক রাক‘আত। কারণ যত ছালাতই আদায় করা হোক এক রাক‘আত আদায় না করলে বিতর হবে না। এ মর্মে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। হাদীছে এসেছে, ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে দুই দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিতর পড়তেন (ছহীহ বুখারী, হা/৯৯৫, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৬, (ইফাবা হা/৯৪১, ২/২২৭ পৃ.), ‘বিতর’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৪৯, ১/২৫৪ পৃ., (ইফাবা হা/১৫৮৮) ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০; তিরমিযী, হা/৪৬১; ইবনু মাজাহ, হা/১১৭৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাক‘আত বিতর পড়ার নির্দেশও দিয়েছেন। যেমন-

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘বিতর এক রাক‘আত শেষ রাত্রে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৭৫২, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৫৭, (ইফাবা হা/১৬২৭-১৬৩৩), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়-৭, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত’ অনুচ্ছেদ-২০; মিশকাত, হা/১২৫৫, পৃঃ ১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১১৮৬, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩১)। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বিতর ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত করে। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন সকাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করবে, তখন সে যেন এক রাক‘আত পড়ে নেয়। তাহলে সে এতক্ষণ যা পড়েছে তার জন্য সেটা বিতর হয়ে যাবে’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ বুখারী, হা/৯৯০, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫, (ইফাবা হা/৯৩৭, ২/২২৫ পৃঃ), ‘বিতর ছালাত’ অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৪৯, ১/২৫৭ পৃ., (ইফাবা হা/১৬১৮-১৬২১); মিশকাত, হা/১২৫৪, পৃ. ১১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১১৮৫, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩০)।

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘রাত্রির ছালাত দুই দুই রাক‘আত। আর বিতর এক রাক‘আত’ (ছহীহ নাসাঈ, হা/১৬৯৩, ১/১৯০ পৃ., ‘রাতের ছালাত’ অধ্যায়, ‘এক রাক‘আত বিতর’ অনুচ্ছেদ)। আবু আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিতর পড়া প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর বিশেষ কর্তব্য। সুতরাং যে পাঁচ রাক‘আত পড়তে চায়, সে যেন তাই পড়ে। আর যে তিন রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে এবং যে এক রাক‘আত পড়তে চায় সে যেন তাই পড়ে (আবু দাঊদ, হা/১৪২২, ১/২০১ পৃ.; নাসাঈ, হা/১৭১২, ১/১৯২ পৃ.; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৪১১; মিশকাত, হা/১২৬৫, পৃ. ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১১৯৬, ৩/১৩৫ পৃঃ, ‘বিতর ছালাত’ অনুচ্ছেদ)। অন্যত্র আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিজোড়। তিনি বিজোড়কে পসন্দ করেন। সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীরা! তোমরা বিতর পড়’ (আবু দাঊদ হা/১৪১৬, ১/২০০ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১১৭০; তিরমিযী হা/৪৫৩; মিশকাত হা/১২৬৬, পৃঃ ১১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৯৭, ৩/১৩৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩৮) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহ সন্তুষ্টি আর শেষ ওয়াক্ত আল্লাহ ক্ষমা’ (তিরমিযী, হা/১৭২, ১/৪৩ পৃ.) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ, না-কি জাল?

উত্তর : বর্ণনাটি জাল (যঈফ তিরমিযী, হা/১৭২; ইরওয়াউল গালীল, হা/২৫৯; মিশকাত, হা/৬০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৫৮, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৭৯)। এর সনদে ইয়াকূব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে (তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/৬০৬-এর টীকা দ্র., ১/১৯২ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩৯) : জান্নাতের হূরগণ বলবে, نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيْدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوْبَى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ ‘আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না। আমরা হামেশা সুখে-সানন্দে থাকব, কখনও দুঃখ-দুশ্চিন্তায় পতিত হবে না। আমরা সর্বদা সন্তুষ্ট থাকব, কখনও নাখোশ হব না। সুতরাং তাকে ধন্যবাদ, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি’ (তিরমিযী, হা/২৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৬৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৪০৭, ১০/১৫০ পৃ.) মর্মে বর্ণনাটি কি সঠিক?

উত্তর : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব নামে দুর্বল রাবী আছে। সে সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ (যঈফ তিরমিযী, হা/২৫৬৪; তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪২; সিলসিলা যঈফাহ, হা/১৯৮২ ও ২৬৮৮; মিশকাত, হা/৫৬৪৯)।

প্রশ্ন (৪০) : ঘুমানোর পূর্বে করণীয় ও তার ফযীলত কী?

উত্তর : ঘুমানোর পূর্বে কিছু করণীয় রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমকে অনুসরণ করা উচিত। যেমন, (১) আয়াতুল কুরসী পাঠ করা (ছহীহ বুখারী, হা/২৩১১ ও হা/৩২৭৫; মিশকাত, হা/২১২৩)। (২) সূরা আল-বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা আল-বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ট হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪০০৮, ৫০০৯, ৫০৪০, ৫০৫১; মিশকাত, হা/২১২৫)। (৩) ঘুমানোর আগে সূরা আল-কাফিরূন পাঠ করা (তিরমিযী, হা/৩৪০৩; মিশকাত, হা/২১৬১, সনদ ছহীহ)। (৪) সূরা আল-ইখলাছ, সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস পাঠ করা (ছহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; মিশকাত, হা/২১৩২)। (৫) ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলা (তিরমিযী, হা/৩৪০৮ ‘দু‘আ’ অধ্যায়, সনদ ছহীহ)। (৬) ঘুমানোর দু‘আ পড়া। ডান কাতে শুয়ে নিম্নের দু‘আ পড়তে হয়। بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوْتُ وَأَحْيَا উচ্চারণ : ‘বিসমিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া’। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নাম নিয়েই আমি মৃত্যুবরণ করছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হব’। অতঃপর ঘুম থেকে উঠে এই দু‘আ পড়তে হয়। اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর’। অর্থ : ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করেছেন, আর আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাব’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭১১)। (৭) সূরা আল-মুলক পাঠ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলিফ লাম মীম তানযীলুল কিতাব’ তথা সূরা আস-সাজদাহ এবং ‘তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক’ তথা সূরা আল-মুলক তেলাওয়াত না করে কোনদিন ঘুমাতেন না’ (তিরমিযী, হা/২৮৯২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৭০০; মিশকাত, হা/২১৫৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৮৫)।

প্রশ্ন (৪১) : জুমু‘আর দিন মহিলারা মসজিদে ছালাত আদায় করতে যেতে পারবে কি?

উত্তর : মহিলারা পর্দাসহ মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করতে পারে। কিন্তু বহু স্থানে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেয়া হয় এবং মসজিদে ছালাত পড়াকে অপসন্দ করা হয়। অথচ এটা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের বিরোধিতা করার শামিল। সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, إِذَا اسْتَأْذَنَتْ أَحَدَكُمُ امْرَأَتُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلَا يَمْنَعْهَا ‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে আসার অনুমতি চাইবে, তখন সে যেন তাকে নিষেধ না করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮৭৩, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬৬ এবং হা/৫২৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৪২, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩০; মিশকাত, হা/১০৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৯৯২, ৩/৪৭ পৃ.)। মহিলারা মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করলে ইমামের নিকট থেকে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারে। ছালাতের পদ্ধতি, গুরুত্ব, পারিবারিক আদর্শ, হালাল-হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা শুনতে পারে। জুমু‘আর খুৎবায় উপস্থিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ নছীহত গ্রহণ করতে পারে। জনৈকা মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুৎবা শুনে সূরা ক্বাফ মুখস্থ করেছিলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৮৭২; মিশকাত, হা/১৪০৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩২৫, ৩/১৯৮ পৃ.)।

উল্লেখ্য, মহিলাদেরকে নিয়ে ঈদগাহে যাওয়ার ব্যাপারে জোরাল নির্দেশ এসেছে। এমনকি ঋতুবতী হলেও। তারা শুধু দু‘আ অর্থাৎ খুৎবা, তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীলে শরীক হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৯৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; মিশকাত, হা/১৪২৯; ছহীহ বুখারী, হা/৩৫১; মিশকাত, হা/১৪৩১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৪৭, ৩/২১১ পৃ.)।

প্রশ্ন (৪২) : সাত দিনের পূর্বে সন্তান মারা গেলে আক্বীক্বা দেয়া লাগবে কি?

উত্তর : সন্তান জন্মের সপ্তম দিনেই তার আক্বীক্বা দেয়া সুন্নাত (আবূ দাঊদ, হা/২৮৩৫; তিরমিযী, হা/১৫১৬; নাসাঈ, হা/৪২১৮; মিশকাত, হা/৪২৫৩)। মায়ের পেট থেকে জীবিত জন্মগ্রহণ করলে সপ্তম দিনেই তার আক্বীক্বা দিবে। যদিও সে জন্মের পরপরই মারা যায় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১১ তম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪)। শায়খ উছায়মীন বলেন, জন্মের সময় সন্তান যদি পূর্ণ আকৃতির নাও হয়, তবুও সপ্তম দিনে আক্বীক্বা দিতে হবে ও তার নাম রাখতে হবে (মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২৩৯)।

প্রশ্ন (৪৩) : ওয়ালীমায় ছেলেকে মেয়ে পক্ষ বা বিবাহের দিন বরযাত্রীদের জন্য খাবার ব্যবস্থাপনায় ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষকে সহযোগিতা করতে পারবে কি?

উত্তর : বিবাহের ক্ষেত্রে কন্যা পক্ষের কোন দায়িত্ব নেই মেহমানদারী ব্যতীত। আর ছেলে পক্ষের উপর অলীমা করা ওয়াজিব। এক্ষণে প্রশ্নমতে নেকীর কাজে যে কেউ যে কাউকে সাহায্য করতে পারে (মায়েদাহ ৫/২)। বরং এরূপ ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা উত্তম। ৫ম হিজরীতে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে যয়নবের বিয়ের পর তার ওয়ালীমার জন্য উম্মে সুলায়েম (রাঃ) তাঁর ছেলে আনাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে খেজুর, ঘি ও পনির দিয়ে তৈরী খাদ্য ‘হাইস’ প্রেরণ করেন (বুখারী হা/৫১৬৩; মুসলিম হা/১৪২৮; মিশকাত হা/৫৯১৩)। ৭ম হিজরীতে খায়বার যুদ্ধের পর ছাফিয়া (রাঃ)-এর সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহ হ’লে রাত্রিতে উম্মে সুলায়েম (রাঃ) তার জন্য বাসর সজ্জার ব্যবস্থা করেন এবং রান্না খাবার সহ উপঢৌকন প্রেরণ করেন। অতঃপর সকালে ওয়ালীমার জন্য রাসূল (ছাঃ) দস্তরখান বিছিয়ে দিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, যার কাছে যা আছে নিয়ে এস। তখন কেউ খেজুর, কেউ ঘি, কেউ ছাতু নিয়ে আসল। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘পনির’। অতঃপর তা দিয়ে উন্নতমানের ‘হাইস’ খাদ্য বানানো হ’ল ও তা দিয়ে ওয়ালীমা করা হ’ল (বুখারী হা/৩৭১, ৫০৮৫; মুসলিম হা/১৩৬৫)। ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধের পর আলী (রাঃ)-এর সাথে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিবাহের ওয়ালীমায় আনছার ছাহাবীগণ সহযোগিতা করেন (আহমাদ হা/২৩০৮৫; আলবানী, আদাবুয যিফাফ ১৭৩ পৃ.)। রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম খাদেম রাবী‘আ আসলামীর বিবাহের ওয়ালীমায় রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে আনছার ছাহাবীগণ সহযোগিতা করেন (আহমাদ হা/১৬৬২৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৭৩৩৪; ছহীহাহ হা/৩২৫৮)। সুতরাং বিবাহের দিন খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বা পরদিন অলীমায় উভয়পক্ষ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে কোন অবস্থাতেই কোন পক্ষকে বাধ্য করা যাবেনা।

প্রশ্ন (৪৪) : পিতা-মাতার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে পিতা-মাতার জীবদ্দশায় এক পুত্র সন্তান রেখে মারা যায়। এরপর সেই পুত্র সন্তানও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যায়। বর্তমানে জীবিত আছে ব্যক্তির দুই মেয়ে ও নাতির স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এক্ষণে পিতা-মাতার সম্পত্তিতে দুই মেয়ে ও নাতির ছেলে ও মেয়েরা কতটুকু সম্পদ পাবে?

উত্তর : যেহেতু ব্যক্তির অন্য কোন পুরুষ ওয়ারিছ নেই। সেজন্য নাতির মেয়ে ও ছেলেরা ওয়ারিছ হবে। তবে নাতির স্ত্রী এই সম্পত্তির কোন ওয়ারিছ হবে না। কারণ তার স্বামী উক্ত সম্পত্তির মালিক হওয়ার পূর্বে মারা গেছে। এক্ষণে নাতির দুই ছেলেকে ছেলে ও দুই মেয়ে ও নাতির এক মেয়েকে মেয়ে তথা দুই ছেলে ও তিন কন্যা ধরে সমুদয় সম্পত্তি ভাগ হবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, যায়েদ (রাঃ) বলেন, পুত্রের সন্তানাদি পুত্রের মতই, যখন তাকে ছাড়া আর কোন পুরুষ সন্তান না থাকে। নাতিগণ পুত্রদের মত আর নাতনীগণ কন্যাদের মত। পুত্রদের মত নাতনীগণও উত্তরাধিকারী হয়, আবার পুত্রগণ যেরূপ অন্যদেরকে বঞ্চিত করে নাতিগণও সেরূপ অন্যদেরকে বঞ্চিত করে। আর নাতিগণ পুত্রদের বর্তমানে উত্তরাধিকারী হয় না (বুখারী তা‘লীক্ব ‘ফারায়েয’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭, ২২/২১৭ পৃ.)। তবে যদি ব্যক্তির পিতা-মাতা থাকত তাহ’লে দুই মেয়ে সমুদয় সম্পত্তির ২/৩ অংশ ও পিতা-মাতা ১/৬ অংশ করে পেয়ে পিতা আছাবা হিসাবে অবশিষ্ট সম্পত্তি পেয়ে যেতেন। যেহেতু মেয়েরা ব্যতীত অন্য কোন ওয়ারিছ নেই, সেকারণ নাতির ছেলে-মেয়েরা অংশ পেয়ে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির নির্ধারিত অংশসমূহ হকদারগণকে পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বেঁচে যাবে, সেগুলি (আছাবা সূত্রে) নিকটতম পুরুষ উত্তরাধিকারীদের দাও’ (বুখারী হা/৬৭৩২; মুসলিম হা/১৬১৫; মিশকাত হা/৩০৪২, ‘ফারায়েয ও অছিয়তসমূহ’ অধ্যায়)।

প্রশ্ন (৪৫) : হাশরের ময়দানে প্রত্যেক জান্নাতী ব্যক্তি তার সাথে ৭০ জন লোককে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে একথার কোন সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত সংখ্যাটি বলা হয়েছে শহীদদের মর্যাদায়। যেমন রাসূল (ছাঃ) শহীদদের ৬টি মর্যাদার অন্যতম হিসাবে বলেন,  ... তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য সুফারিশ কবুল করা হবে (তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত হা/৩৮৩৪)। আর শহীদ সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় এবং আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু বরণ করে (মুসলিম হা/১৯১৫; মিশকাত হা/৩৮১১)। উল্লেখ্য যে, হাশরের ময়দানে প্রত্যেক জান্নাতী ব্যক্তি তার সাথে অসংখ্য জাহান্নামীকে সুফারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, ঐ দিন মুমিনগণ তাদের জাহান্নামী ভাইদের স্বার্থে আল্লাহর সাথে লিপ্ত হয়ে বলবে, হে আমাদের রব! এরা তো আমাদের সাথেই ছালাত-ছিয়াম ও হজ্জ আদায় করত। তখন তাদেরকে বলা হবে, যাও, তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আনো। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হ’লেও ওযূর কারণে মুখমন্ডল আযাব থেকে মুক্ত থাকবে (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না)। মুমিনগণ জাহান্নাম হ’তে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হবে যে, কারোর তো পায়ের নলা পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ আগুন ছাই করে দিবে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও, যার অন্তরে এক দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আনো। তখন তারা আরো একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে রব! অনুমতিপ্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আনো। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও, যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন তাদের কাউকেও রেখে আসিনি। অবশেষে আল্লাহ বলবেন, শাফা‘আত করেছে ফেরেশতাগণ, নবীগণ ও মুমিনগণ। এখন বাকী রয়েছেন দয়ালুদের সেরা দয়ালু।  অতঃপর  তিনি  জাহান্নামের  আগুন থেকে এক মুষ্ঠি গ্রহণ করবেন এবং অবশিষ্ট দলকে বের করে ‘নাহরুল হায়াত’ বা জীবন নদীতে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে তারা নতুন জীবন প্রাপ্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম হা/১৮৩)। সেখানে তারা ‘আল-জাহান্নামিইয়ূন’ বলে অভিহিত হবে (বুখারী হা/৭৪৫০; মিশকাত হা/৫৫৮৪)। উক্ত সৌভাগ্য লাভ করবে কেবল তারাই, যারা খালেছ অন্তরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করেছে (বুখারী হা/৯৯; মিশকাত হা/৫৫৭৪)।

প্রশ্ন (৪৬) : ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর সংগৃহীত হাদীছের সংখ্যা নাকি চল্লিশ হাযার? এর সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। কারণ কোন সূত্র দ্বারা প্রমাণিত নয় যে, তিনি কোন হাদীছের কিতাব সংকলন করেছেন। মূলতঃ তিনি মুহাদ্দিছ ছিলেন না বরং ফক্বীহ ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) ফিক্বহের ক্ষেত্রে আবু হানীফা (রহঃ)-এর দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করলেও হাদীছ শাস্ত্রে তিনি ‘মিসকীন’ ছিলেন বলে অভিহিত করেছেন (ইবনু আবী হাতেম, আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ৮/৪৫০; তাহযীবুত-তাহযীব ১০/৪৫০)। ইবনু হিববান বলেন,لم يكن الحديث صناعته حدث بمائة وثلاثين حديثا مسانيد، ماله حديث في الدنيا غيرها، ‘হাদীছ শাস্ত্র নিয়ে তার কাজ ছিল না। তিনি কেবল ১৩০টি মুসনাদ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এর বাইরে দুনিয়াতে তাঁর কোন হাদীছ নেই। তন্মধ্যে ১২০টি হাদীছের বর্ণনাতে তিনি হয় সনদে কিংবা মতনে ভুল করেছেন (আল-মাজরূহীন ৩/৬৩)। ইমাম নাসাঈ বলেন, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) হাদীছের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না। হাদীছের স্বল্প বর্ণনার মধ্যেও তিনি অনেক ভুল-ভ্রান্তি করেছেন (রাসায়েল ফী উলূমিল হাদীছ ৭১ পৃ.)। বিশেষত বাগদাদে হাদীছ জালকরণের ফিৎনা ব্যাপক আকার ধারণ করায় ইরাক পরিণত হয়েছিল হাদীছ জালকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে। এমনকি ইরাককে বলা হ’তدار ضرب الحديث  বা ‘হাদীছ রচনার কেন্দ্র’। ইবনু খালদূন বলেন,أن أبا حنيفة لتشدده في شروط الصحة لم يصح عنده إلاّ سبعة عشر حديثاًً- ‘হাদীছের বিশুদ্ধতার শর্তসমূহ নির্ধারণে কঠোরতার কারণে আবু হানীফার নিকট মাত্র ১৭টি হাদীছ বিশুদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে (মুক্বাদ্দামাহ ইবনু খালদূন ১/৪৪৪ পৃ.)। সম্ভবত এই সতর্কতা অবলম্বনের কারণেই তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা কম (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহ মুসনাদ আবী হানীফা ১/৯১; আবু যাহূ, আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, ২৪০ পৃ.; আস-সিবাঈ, আস-সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ৪০৪ পৃ.)।

প্রশ্ন (৪৭) : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পঙ্গপালের ঢিবির ন্যায় বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ইবনু হিববান হা/১৬১৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৭১)। কোন বর্ণনায় এসেছে যে, ‘যে ব্যক্তি পাখির ডিম দেওয়ার বাসার ন্যায় একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’ (আহমাদ হা/২১৫৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৭২)। সুতরাং যে ব্যক্তি ছওয়াবের আশায় একটি ছোট মসজিদও নির্মাণ করবে, এমনকি নির্মাণকাজে স্বল্প অর্থ বা ক্ষুদ্র শ্রম দিয়েও সহযোগিতা করবে, সেও উক্ত মর্যাদা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৩৭)।

প্রশ্ন (৪৮) : আমি ইটভাটায় কাঁচা ইট সাজানোর কাজ করি। এক এক ভাগে ইট ধরে ১৮৮০০। কিন্তু আমাদের যারা হেড তারা ম্যানেজার ও কোম্পানীকে ধোঁকা দিয়ে ২০ হাযার ইটের টাকা নেয়। এই টাকার ভাগ আমিও পাই। বিগত বছরেও এরকম টাকা আমি নিয়েছি। এখন আমি অনুতপ্ত। কিভাবে এই অপরাধ থেকে মুক্ত হ’তে পারি?

উত্তর : এটি সুস্পষ্ট প্রতারণা ও মিথ্যার শামিল, যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)। এক্ষণে করণীয় হ’ল, যে কয় বছরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে হিসাব করে মালিককে ফেরত দিতে হবে। সাথে সাথে আল্লাহর নিকট খালেছ নিয়তে তওবা করবে (নববী, রওযাতুত তালেবীন ১১/২৪৫-৪৬; ফাৎহুল বারী ১১/১০৪; মুগনী ১৪/১৯৩)। আর সেটাও সম্ভব না হ’লে ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকে তওবা করবে এবং গৃহীত অর্থের সমপরিমাণ ছাদাক্বা করবে।

প্রশ্ন (৪৯) : এক পিতা-মাতা তাদের মেয়েকে কোন এক ছেলের সাথে বিবাহ দিতে ওয়াদাবদ্ধ হয়। এর মধ্যে ডিভি লটারীর মাধ্যমে মেয়ের মা আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ লাভ করে এবং সাথে সাথে মত পরিবর্তন করে উক্ত ছেলের সাথে তার মেয়ের বিবাহ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু মেয়ে এটা না মেনে নিজে নিজেই উক্ত ছেলের সাথে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে ফেলে। কিছুদিন সংসারও করে। মেয়ের বাবা-মা এই বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে মেয়ের উপর চাপ প্রয়োগ করে প্রথম স্বামীকে জোরপূর্বক তালাক দিয়ে অন্য এক ছেলের সাথে বিবাহ দেয়। বর্তমানে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ঘর সংসার করছে। তাদের দুইটি সন্তানও আছে। এক্ষণে তাদের বিয়ে সঠিক হয়েছে কি?

উত্তর : তাদের প্রথম বিবাহটি শরী‘আতসম্মত হয়নি। কারণ তাতে পিতা বা অভিভাবকের সম্মতি ছিল না। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে নারী তার অলীর অনুমতি ছাড়া বিবাহ করবে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল’ (তিরমিযী হা/১১০২; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)। অতএব পূর্ববর্তী বিবাহ ও সংসারের কারণে পরবর্তী বিবাহ বাতিল হবে না। কিন্তু পূর্ববর্তী কর্মকান্ডের জন্য উক্ত নারী ও তার মাকে অনুতপ্ত হয়ে খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)।

প্রশ্ন (৫০) : বিবাহ করার পর স্ত্রীকে পসন্দ হচ্ছে না। তার কোন দোষ নেই। আচার-ব্যবহার ভালো। কিন্তু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এক্ষণে আমি তালাক দিলে গোনাহগার হব কি?

উত্তর : কেবল অপসন্দের দোহাই দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ঘৃণিত কাজ। বরং স্ত্রীর কোন কিছু অপসন্দ হ’লে মনে করতে হবে আল্লাহ হয়ত এর মধ্যে কল্যাণ রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তোমরা তাদের অপসন্দ কর, (তবে হ’তে পারে) তোমরা এমন বস্ত্তকে অপসন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন (নিসা ৪/১৯)। আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী বলেন, স্ত্রীর কোন ব্যবহার তোমাদের অপসন্দ হ’লেও তার সাথে সদাচরণ কর। কেননা তাকে বাদ দিলে অন্য স্ত্রী এর চাইতে অধিক মন্দ হ’তে পারে। অথবা এই স্ত্রীর গর্ভে সুসন্তান আসতে পারে। যার মধ্যে তোমাদের প্রভূত কল্যাণ রয়েছে (কুরতুবী)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুমিন যেন মুমিনাকে ঘৃণা না করে বা তার প্রতি শত্রুতা পোষণ না করে; যদি তার কোনো আচরণে সে অসন্তোষ প্রকাশ করে, তবে অন্য আর এক আচার-ব্যবহারে সন্তুষ্টি লাভ করবে’ (মুসলিম হা/১৪৬৯; মিশকাত হা/৩২৪০)। সেজন্য বিদ্বানগণ বিনা কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া মাকরূহ, এমনকি হারাম বলেছেন (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৮/২৩৫)। সুতরাং বিনা কারণে তালাক দেওয়া সমীচীন হবে না। তবে স্ত্রীর দ্বীনদারিতে কোন সমস্যা থাকলে স্ত্রী তালাক দেওয়া জায়েয (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৮/২৩৫)।

প্রশ্ন (৫১) : কুকুরে কামড়ানো প্রাণী বেঁচে থাকলে যবেহ করে খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : কুকুরে কামড়ানো প্রাণী বেঁচে থাকলে যবেহ করে খাওয়া যাবে (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৯/৩২২; তাফসীরে ইবনু কাছীর, মায়েদাহ ৩ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। আল্লাহ হালাল প্রাণীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, হিংস্র জন্তুতে খাওয়া পশু, তবে যা তোমরা যবেহ দ্বারা হালাল করেছ, তা ব্যতীত (মায়েদাহ ৫/৩)। কা‘ব ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, তার কতকগুলো ছাগল-ভেড়া ছিল, যা সালা‘ নামক স্থানে চরে বেড়াতো। একদিন আমাদের এক দাসী দেখল যে, আমাদের ছাগল ভেড়ার মধ্যে একটি ছাগল মারা যাচ্ছে। তখন সে একটা পাথর ভেঙ্গে তা দিয়ে ছাগলটাকে যবেহ্ করে দিল। কা‘ব তাদেরকে বলেন, তোমরা এটা খেয়ো না, যে পর্যন্ত না আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করে আসি অথবা কাউকে নবীর নিকট জিজ্ঞাসা করতে পাঠাই। নবী করীম (ছাঃ) তা খাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন (বুখারী হা/২৩০৪; মিশকাত হা/৪০৭২)।

প্রশ্ন (৫২) : মসজিদের আন্ডার গ্রাউন্ডে মহিলাদের জন্য কাতারের ব্যবস্থা করা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদের আন্ডারগ্রাউন্ড মসজিদেরই অংশ হওয়ায় মহিলারা সেখানে জামা‘আতে ছালাত আদায় করতে পারবে। তবে ইমামের অনুসরণের জন্য তাকবীর শুনতে হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২১৩; ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২/৮)।

প্রশ্ন (৫৩) : ইয়াতীম বিভাগের দায়িত্বশীলগণ ইয়াতীমদের জন্য আদায়কৃত অর্থ থেকে বেতন গ্রহণ এবং তাদের জন্য প্রস্ত্ততকৃত খাবার থেকে খেতে পারবে কি?

উত্তর : ইয়াতীমের জন্য আদায়কৃত সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলগণ প্রাপ্য বেতন গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ করতে পারবেন। যদিও সে সম্পদ যাকাতের হয়। কেননা যাকাতের একটি খাত রয়েছে, যা আমেল তথা  দায়িত্বশীলগণের জন্য নির্দিষ্ট (তওবা ৯/৬০)। তবে কর্তৃপক্ষ ন্যায়সঙ্গতভাবে যতটুকু অনুমোদন দিবেন, ততটুকু গ্রহণ করবে, তার বেশী নয় (বাক্বারাহ ১৮৮)। আর যদি আদায়কৃত সম্পদ সাধারণ দান হয়, তাহ’লে সেখান থেকে সবাই উপকার গ্রহণ করতে পারবে, কেননা তা হাদিয়ার স্থলাভিষিক্ত (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৩৬; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৭৬; বাজী, আল-মুনতাক্বা ৭/৩২০; যুরক্বানী, শারহুয যুরক্বানী ২/১৮৪; আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ ৫/৩১)। উল্লেখ্য যে, ফরয যাকাত থেকে প্রাপ্য অংশ কেবল দায়িত্বশীলদের জন্য, অন্যদের জন্য নয় (আবুদাঊদ হা/১৬৩৭; মিশকাত হা/১৮৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭২৫১)।

প্রশ্ন (৫৪) : পাঞ্জাবী ও পায়জামা পরা কি সুন্নাত? এগুলো পরা যাবে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় দীর্ঘ জামা তথা প্রচলিত জুববার মত পোষাক পরিধান করতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৩০৫)। তবে ক্বামীছ ও পায়জামাও রাসূল (ছাঃ) মাঝে-মধ্যে পরিধান করেছেন (সাফারেনী, গেযাউল আলবাব ২/২৪১)। বরং ক্বামীছ রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম প্রিয় পোষাক ছিল (তিরমিযী হা/১৭৬২; ছহীহুত তারগীব হা/২০২৮)। সুতরাং প্রচলিত জুববা বা পাঞ্জাবী সুন্নাতী পোষাকের অন্তর্ভুক্ত এবং এগুলো তাক্বওয়ার পোষাক হিসাবে গণ্য। কেননা এতে অধিকতর পর্দা রয়েছে। আর আল্লাহ তাক্বওয়ার পোষাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন (আ‘রাফ ৭/২৬)। তবে সর্বাবস্থায় সতর ও লেবাস সম্পর্কে নিম্নোক্ত মূলনীতিগুলি মনে রাখতে হবে- (১) পোষাক পরিধানের উদ্দেশ্য থাকবে দেহকে আবৃত করা। যেন পোষাক পরা সত্ত্বেও লজ্জাস্থান সমূহ অন্যের চোখে প্রকট হয়ে না ওঠে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫২৪ ‘ক্বিছাছ’ অধ্যায়)। (২) ভিতরে-বাইরে তাক্বওয়াশীল হ’তে হবে। এজন্য ঢিলাঢালা, ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করতে হবে। হাদীছে সাদা পোষাক পরিধানের নির্দেশ এসেছে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৮ ‘আদাব’ অনুচ্ছেদ; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৫০ লিবাস’ অধ্যায়; আহমাদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/৪৩৩৭)। (৩) পোষাক যেন অমুসলিমদের সাদৃশ্যপূর্ণ না হয় (আহমাদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। (৪) পোষাক যেন অহংকার প্রকাশ না পায়। এজন্য পুরুষ যেন সোনা ও রেশম পরিধান না করে এবং টাখনুর নিচে কাপড় না রাখে (আবুদাঊদ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪৩৪৬; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৪ পৃ.)।

প্রশ্ন (৫৫) : আমার নিছাব পরিমাণ সম্পদ আছে এবং ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করা আছে। কিন্তু সমুদয় সম্পদের চেয়ে ঋণ আরো বেশী আছে। এক্ষণে আমার উপর যাকাত ফরয হবে কি? হ’লে কি জমানো, বিনিয়োগকৃত, ঋণকৃত সব টাকার উপর যাকাত দিতে হবে?

উত্তর : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যাকাত আদায়ের পূর্বে তার ঋণ পরিশোধ করবে। যেমন ওছমান (রাঃ) বলেন, এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে তাহ’লে সে যেন প্রথমে ঋণ পরিশোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে সে তার যাকাত আদায় করবে (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৮৭৩; ইরওয়া ৩/৩৪১, সনদ ছহীহ)। যদি ঋণ পরিশোধ না করে, তাহ’লে নিছাব পরিমাণ সমস্ত সম্পদের উপরে যাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের সম্পদ হ’তে ছাদাক্বা (যাকাত) গ্রহণ কর। যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে ও পরিশুদ্ধ করবে’ (তওবা ৯/১০৩)। এখানে ঐ ধনী ব্যক্তিরা ঋণগ্রস্ত কি-না, সেটা শর্ত করা হয়নি। অতএব ঋণগ্রস্ত মুমিনদের সর্বাগ্রে ঋণ পরিশোধ করা কর্তব্য। কারণ ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করলে তার ক্ষমা নেই। অনেক ব্যবসায়ী ঋণকৃত টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করেন না। উল্টা নিজেকে ঋণগ্রস্ত দেখিয়ে যাকাত দেন না। এরূপ কপট আচরণ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।  

প্রশ্ন (৫৬) : আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নাম কি ৯৯টি নাকি আরও বেশী?

উত্তর : না, নির্ধারিত ৯৯টি নাম নয়; বরং বিদ্বানগণ পবিত্র কুরআন ও হাদীছ সমূহ থেকে আল্লাহর দুই শতাধিক গুণবাচক বা ‘ছিফাতী’ নাম সাব্যস্ত করেছেন (তাফসীর কুরতুবী)। এগুলিকে ‘আসমাউল হুসনা’ বলা হয়। তন্মধ্যে যেকোন ৯৯টি নাম যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও আনুগত্যের সাথে এবং আল্লাহর উপর অটুট নির্ভরতার সাথে অনুধাবন সহ মুখস্থ করবে ও গণনা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (বুখারী হা/৬৪১০, ৭৩৯২; মুসলিম হা/২৬৭৭; মিশকাত হা/২২৮৭; ফাৎহুল বারী)। রাসূল (ছাঃ) নিজ দো‘আয় বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার প্রতিটি নামের অসীলায় আপনার কাছে দো‘আ করছি। যে নামের মাধ্যমে আপনি নিজের নামকরণ করেছেন বা আপনার কোন সৃষ্টিকে (বান্দাকে) শিক্ষা দিয়েছেন অথবা আপনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন অথবা যে নামগুলোকে আপনি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছেন’ (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৯৭২; মিশকাত হা/২৪৫২; ছহীহাহ হা/১৯৯)।

প্রশ্ন (৫৭) : সমাজে ইউসুফ-যুলায়খার বিবাহ নিয়ে যেসব কাহিনী প্রচলিত আছে সেসবের সত্যতা আছে কি?

উত্তর : অন্যূন সাত বছর জেল খাটার পর বাদশাহর এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা দানের পুরস্কার স্বরূপ তাঁর মুক্তি হয়। পরে তিনি বাদশাহর অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং বাদশাহর আনুকূল্যে তিনিই হন সমগ্র মিসরের একচ্ছত্র শাসক। ইতিমধ্যে ‘আযীযে মিছর’ ক্বিৎফীরের মৃত্যু হ’লে তার বিধবা স্ত্রীর সাথে বাদশাহর উদ্যোগে তাঁর বিবাহ হয়’ (তাফসীরে ত্বাবারী হা/১৯৪৫৯)। জ্ঞান ও যুক্তি একথা মেনে নিলেও কুরআন বা ছহীহ হাদীছে এ বিষয়ে কিছু পাওয়া যায় না। এগুলি সবই ইস্রাঈলী বর্ণনার উপর নির্ভরশীল। এমনকি যুলায়খা নামটিও প্রমাণিত নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার তাদের বর্ণনাকে সত্য মনে করোনা, মিথ্যাও বলোনা (বুখারী হা/৪৪৮৫; মিশকাত হা/১৫৫; দ্র. নবীদের কাহিনী-১ ‘ইউসুফ (আঃ)’ অধ্যায়)।

প্রশ্ন (৫৮) : মসজিদে প্রবেশের সময় সালাম প্রদান ও প্রবেশের দো‘আ পাঠ নীরবে না সরবে করতে হবে?

উত্তর : মসজিদে প্রবেশের দো‘আ নিম্নস্বরে পড়বে। তবে মসজিদে প্রবেশকালে মুছল্লী থাকলে সালাম দেওয়া সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম মতভেদ করেছেন। জমহূর বিদ্বানগণ ছালাতরত মুছল্লীদের উপর সালাম দেওয়াকে মাকরূহ বলেছেন। তবে হাম্বলীরা জায়েয বলেছেন। কেননা ইবনু ওমর (রাঃ) এটা করতেন। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা কোন গৃহে প্রবেশ করবে, তখন পরস্পরে সালাম করবে’ (নূর ২৪/৬১)। ছুহায়েব রূমী (রাঃ) বলেন, আমি ছালাতরত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিয়েছি, তখন তিনি হাতের ইশারায় সালামের জবাব দিয়েছেন (আবুদাঊদ হা/৯২৫)। ইমাম শাওকানী বলেন, উপরোক্ত হাদীছের আলোকে মুছল্লীদের সালাম দেওয়ায় দোষ নেই (নায়লুল আওত্বার ২/৩৮৩)। তবে এমন উচ্চস্বরে সালাম দেওয়া যাবে না, যাতে মুছল্লীদের ছালাতে বিঘ্ন ঘটে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছালাতে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না এবং সালাম দেওয়া যাবে না’ (ছহীহাহ হা/৩১৮)। অর্থাৎ সশব্দে সালাম, যা ছালাতে বিঘ্ন ঘটায়।

আর মুছল্লী না থাকলে সরবে সালাম দেওয়া যাবে। তখন সেটি নিজের উপরে ও ফেরেশতাদের উপরে পতিত হবে। যেমন তাশাহহুদে বলা হয়, সালাম আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেককার বান্দাদের উপর (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৯০৯)। জিব্রীল (আঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে সালাম দিয়েছিলেন এবং আয়েশা তার জবাব দিয়েছিলেন। অথচ তিনি তাকে দেখেননি (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৬১৭৮)।

প্রশ্ন (৫৯) : মিশকাত হা/৫৭৩৭-এ বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা ৩১৫ জন রাসূলসহ এক লক্ষ ২৪ হাযার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। অথচ অত্র হাদীছটিকে অধিকাংশ বিদ্বান ও বহু সংখ্যক আলেম যঈফ বলছেন। উক্ত হাদীছের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত হাদীছটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় শায়খ আলবানী (রহঃ)-এর সনদকে ছহীহ লিগায়রিহী বা হাসান পর্যায়ের হাদীছ বলেছেন (ছহীহাহ হা/২৬৬৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। অনুরূপভাবে ইবনু কাছীর ও হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) হাদীছটিকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন (আল-বিদায়াহ ১/৯৭; ফাৎহুল বারী ৬/২৫৭)। যেহেতু বিষয়টি শরী‘আতের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু নয়, অতএব সনদের ব্যাপারে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য। তবে নবী ও রাসূলের সংখ্যা অসংখ্য ধরে নিলেও কোন দোষ নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৬৬-৬৭)।

প্রশ্ন (৬০) : বিবাহের পর বাসর রাতের পূর্বে স্বামী মারা গেলে উক্ত স্ত্রী স্বামীর সম্পদে অংশ পাবে কি?

উত্তর : এক্ষেত্রে স্ত্রী মোহরানাসহ স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবে। কারণ সে শরী‘আত সম্মতভাবে স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছে (তিরমিযী হা/১১৪৫; আবুদাউদ হা/২১১৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩২০৭)। একদিন জনৈক ব্যক্তি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, এক ব্যক্তি মোহর নির্ধারণ না করে বিয়ে করেছে এবং স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছে; শরী‘আতে এর বিধান কি? উত্তরে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, তার পরিবারের অপর নারীদের মোহরের সমপরিমাণ মোহর তাকে দিতে হবে। তা থেকে কমও নয়, বেশীও নয় এবং স্ত্রীকে ইদ্দত (৪ মাস ১০ দিন) পালন করতে হবে। আর স্ত্রী স্বামীর উত্তরাধিকারী হবে। এটা শুনে আশজাঈ গোত্রের এক ছাহাবী মা‘ক্বিল ইবনু সিনান দাঁড়িয়ে বললেন, আমাদের আশজাঈ গোত্রের এক স্ত্রীলোক বিরওয়া বিনতে ওয়াশেক্ব সম্পর্কেও রাসূল (ছাঃ) অনুরূপ বিধান দিয়েছিলেন। এতে ইবনু মাসঊদ অত্যন্ত খুশী হ’লেন (তিরমিযী হা/১১৪৫; আবুদাউদ হা/২১১৬; মিশকাত হা/৩২০৭)। উল্লেখ্য যে, যদি সহবাসের পূর্বে তালাক হয়, তাহ’লে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হবে না (আহযাব ৩৩/৪৯; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩৯৭)। অর্থাৎ সহবাসের পূর্বে মৃত্যু হ’লে ইদ্দত পালন করতে হবে এবং তালাক হ’লে ইদ্দত নেই।

প্রশ্ন (৬১) : মোবাইলে বিবাহের পর অলীমা করতে হবে কি? অলীমা কি বিবাহের আবশ্যিক অংশ?

উত্তর : মোবাইলে বিবাহের পর অলীমা করা যায়, যদিও বাসর না হয়। কেননা বিবাহ সংঘটিত হয়েছে (ফাৎহুল বারী হা/৫১৬৬-এর পূর্বের আলোচনা ‘অলীমা’ অনুচ্ছেদ, ৯/২৩১ পৃ.)। তবে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অলীমা বাসরের পরে ছিল (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩২১২; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪৭৮)। অলীমা করা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ এবং বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ (নববী, শরহ মুসলিম ৯/২১৭)। রাসূল (রাঃ) আব্দুর রহমান বিন আওফকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দিন। তুমি অলীমা কর, যদি একটি বকরী দিয়েও হয় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩২১০ ‘অলীমা’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (৬২) : কুরআনের বঙ্গানুবাদ পড়ার সময় সিজদার আয়াত আসলে সিজদা করতে হবে কি? ছালাতের নিষিদ্ধ সময়ে সিজদায়ে তেলাওয়াত দিতে হবে কি?

উত্তর : কুরআনের অনুবাদ বা তাফসীর পাঠকালেও সিজদা করা উত্তম। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আদম সন্তানরা যখন সিজদার আয়াত পড়ে ও সিজদা করে, শয়তান তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল মন্দ। আদম সন্তান সিজদার আদেশ পেয়ে সিজদা করল, তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার আদেশ দেয়া হয়েছিল, আমি তা অমান্য করলাম। তাই আমার জন্য জাহান্নাম (মুসলিম হা/৮১; মিশকাত হা/৮৯৫)। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন সিজদার আয়াত পড়তেন এবং আমরা তাঁর নিকটে থাকতাম তখন তিনিও সিজদা করতেন, আমরাও সিজদা করতাম’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১০২৫, ‘তেলাওয়াতে সাজদাহ’ অনুচ্ছেদ)। তবে এটি অপরিহার্য নয়। কেননা যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করেননি। রাসূল (ছাঃ)ও সিজদা দেননি (আবুদাউদ হা/১৪০৪; তিরমিযী হা/৫৭৬)।

প্রশ্ন (৬৩) : অপারেশনের মাধ্যমে স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ করা কি নারী-পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ? তার জানাযা পড়া যাবে কি?

উত্তর : নারী বা পুরুষের জন্য অপারেশনের মাধ্যমে স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ করা হারাম (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/৩১১; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ৩/২০০; ওয়াহবাতুয যুহায়লী, আল-ফিক্বহুল ইসলামী ৪/১৯৮)। কেবল যদি নারীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহ’লে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। কারণ আল্লাহ বিশেষ অবস্থায় হারাম জিনিসকে কখনো কখনো হালাল করেছেন। যেমন নিরুপায় অবস্থায় মৃত প্রাণীর গোশত হালাল (বাক্বারাহ ২/১৭৩, নাহল ১৬/১১৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৯/৩১৮)। আর বড় পাপী বা কাবীরা গুনাহগার মুসলমানের জানাযা পড়াতে কোন বাধা নেই (ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ৩/২৯; নববী, শারহু মুসলিম ৭/৪৭)। তবে কোন বড় আলেম তার জানাযা পড়বেন না। কেননা রাসূল (ছাঃ) এরূপ লোকদের জানাযা নিজে না পড়ে অন্যকে পড়তে বলেছিলেন (আহমাদ হা/১৭০৭২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪০১১; আলবানী, আহকামুল জানায়েয হা/৫৭)। 

প্রশ্ন (৬৪) : মসজিদ নির্মাণ কাজে হিন্দু মিস্ত্রির সহযোগিতা গ্রহণ করা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদ নির্মাণে অমুসলিম মিস্ত্রির সহযোগিতা নেওয়া যাবে। এমনকি তাদের আর্থিক সহায়তাও নেওয়া যাবে। এতে কোন বাধা নেই (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৭/৪৯৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৫৬)।

প্রশ্ন (৬৫) : আলী (রাঃ) খায়বারের যুদ্ধে দুর্গের দরজা নিজের হাতে তুলে নেন এবং সেটাকেই ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে করতে এগিয়ে যান। দরজাটি এত ভারী ছিল যে, পরবর্তীতে সাতজন ছাহাবী মিলেও তা তুলতে পারেননি। ঘটনাটির সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : কাহিনীটি প্রসিদ্ধ, কিন্তু বিশুদ্ধ নয় (দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৪৯১ পৃ. টীকা-৬৭৮)।

প্রশ্ন (৬৬) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, মৃত মানুষের কবর সংরক্ষণের জন্য দেওয়া প্রাচীর ভেঙ্গে যাওয়ার পর কেউ তা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করলে তার প্যারালাইসিস হবে। একথার সত্যতা আছে কি? এটা ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। তবে কবর সংরক্ষণের জন্য দেওয়া প্রাচীর যতদিন কবর হেফাযতের জন্য স্থায়ী থাকবে ততদিন সেগুলি ব্যবহার করা সমীচীন নয়। আর তা ভেঙ্গে গেলে পরিত্যক্ত বস্ত্ত ব্যবহারে কোন বাধা নেই (আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া ১/১৬৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১৩৭-৩৮ পৃ.)।

প্রশ্ন (৬৭) : উপার্জনক্ষম হওয়ার পূর্বে ছেলেদের বিবাহ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : অবশ্যই হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তোমরা তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদেরও। যদি তারা নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ’। ‘আর যাদের বিবাহের সঙ্গতি নেই, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন’ (নূর ২৪/৩২-৩৩)। অত্র আয়াতদ্বয়ে বিবাহহীন মুসলিম নারী-পুরুষকে দ্রুত বিবাহ দানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভাবের অজুহাতে কেউ যেন বিবাহ থেকে বিরত না হয়, সেজন্য তাদেরকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। যাতে আল্লাহ তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। অবশ্য ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে উপার্জনক্ষম হওয়ার আগে বিবাহ না করাই উত্তম। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা এটি চক্ষু অবনতকারী ও লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন ছিয়াম রাখে। কেননা ছিয়াম তার প্রবৃত্তিকে দলনকারী’ (বুখারী হা/১৯০৫; মুসলিম হা/১৪০০; মিশকাত হা/৩০৮০)। এখানে ‘সামর্থ্য’ বলতে ভরণ-পোষণের সামর্থ্য এবং যৌন সামর্থ্য দু’টিকেই বুঝায়। দ্বিতীয়টি না থাকলে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে, সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অবশ্যই বিবাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ্য যে, উপার্জনক্ষম হওয়ার অর্থ এই নয় যে, কোন সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী পেতেই হবে। বরং অল্প হ’লেও সৎভাবে জীবন যাপনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা অবশ্য কর্তব্য।

প্রশ্ন (৬৮) : বর্তমানে কোন জমির দলীল করতে গেলে সরকারী খরচ বাদে মুহুরীদের সমিতিতে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে জমির দলীল হয় না। প্রতি মাসে মুহুরীরা সেই চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। উক্ত আয় বৈধ কি?

উত্তর : উক্ত আয় বৈধ হবে, যদি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সেই সমিতি অনুমোদিত হয়। আর যদি তা গোপনীয় হয় এবং অন্যায়ভাবে চাঁদা আরোপ করা হয়, তবে তা হারাম হবে। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করোনা, পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত (নিসা ৪/২৯)।

প্রশ্ন (৬৯) : কোন মহিলা রোগী বেপর্দা বা একাকী চিকিৎসা নিতে আসলে পুরুষ ডাক্তার হিসাবে আমার করণীয় কি? পর্দা ছাড়া কেউ আসতে পারবেন না বা মহিলা রোগী আসবেন না, এমন বলা যাবে কি?

উত্তর : সাধ্যমত পর্দা বজায় রেখে মহিলা রোগীর চিকিৎসা করা জায়েয। তবে মহিলা একাকী আসলে আবদ্ধ কক্ষে কোন সহযোগী রাখতে হবে। আর সহযোগী না থাকলে ঘরের দরজা-জানালা খোলা রেখে চিকিৎসা দিতে হবে, যাতে মনের মধ্যে শয়তানী প্রবৃত্তি জাগ্রত না হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন পর-পুরুষ কোন পর-নারীর সাথে নির্জনে থাকলে সেখানে তৃতীয় জন থাকে শয়তান’ (তিরমিযী হা/১১৭১; মিশকাত হা/৩১১৮)। অতএব সর্বাবস্থায় আল্লাহভীতি বজায় রাখতে হবে এবং তিনি অদৃশ্য থেকে সবকিছু দেখছেন ও শুনছেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। সেই সাথে রোগীনীকে পর্দার ফরয বিধান মেনে চলার জন্য নছীহত করতে হবে। কেননা দ্বীন হ’ল নছীহত (বুখারী হা/৫৭; মুসলিম হা/৫৫)। আর নিজের তাক্বওয়া রক্ষার্থে মহিলা রোগীকে পর্দা ছাড়া কক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ জানিয়ে দেওয়াটা দোষণীয় নয়।

প্রশ্ন (৭০) : সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নফল ছালাত বসে পড়া যাবে কি?

উত্তর : আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দন্ডায়মান হও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। তিনি আরও বলেন, ‘আর তুমি আমার স্মরণে ছালাতে দাঁড়িয়ে যাও’ (ত্বোয়া-হা ২০/১৪)। অতএব ছালাতের মূল বিষয়টি হ’ল আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়ানো। এক্ষণে শক্তি থাকা সত্ত্বেও নফল ছালাত বসে আদায় করা জায়েয হবে কি-না, এমন একটি বিষয়ে হযরত ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যদি কেউ সেটি দাঁড়িয়ে আদায় করে তবে সেটাই উত্তম। আর যদি বসে আদায় করে, তবে তার জন্য অর্ধেক ছওয়াব। আর যদি শুয়ে আদায় করে, তবে তার জন্য অর্ধেক ছওয়াব’ (বুখারী হা/১১১৫; মিশকাত হা/১২৪৯)। উপরের হাদীছটি কেবল সুস্থ নফল ছালাত আদায়কারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু যদি দাঁড়াতে অক্ষম হওয়ার কারণে মুছল্লী বসে ছালাত আদায় করেন, তবে তিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায়কারীর সমপরিমাণ ছওয়াব পাবেন। উল্লেখ্য যে, ইবনু হাজার বলেন, শক্তি থাকা সত্ত্বেও বসে ফরয ছালাত আদায় করা বাতিল হওয়া সম্পর্কে উম্মতের ইজমা রয়েছে (মিরক্বাত, মির‘আত)।

প্রশ্ন (৭১) : অপরিচিত কোন মহিলাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলে সে কোন ধর্মের তা শনাক্ত করার উপায় কি? অজানা অবস্থায় তার কাফন-দাফন ও জানাযা করা যাবে কি?

উত্তর : কোন অপরিচিত নারী রাস্তায় মারা গেলে তার কপালে তিলক বা হাতে শঙ্খ কিংবা পোষাকে আলামত খুঁজতে হবে। যদি তাতে কিছু বুঝা না যায়, তাহ’লে এলাকার ভিত্তিতে তার পরিচয় নির্ণীত হবে। যদি মুসলিম এলাকায় মারা যায় তাহ’লে মুসলিম হিসাবে কাফন-দাফন হবে। আর কাফের এলাকায় মারা গেলে সেই হিসাবে করবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী মাসআলাহ ক্রমিক : ১৬৩৮, ৫/২৪; কাসানী, বাদায়েউছ-ছানায়ে‘ ৭/১০৪)।

প্রশ্ন (৭২) : পরিবারে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশংকায় স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের কাছে যদি মিথ্যা কসম করতে বাধ্য হয়, সেটার জন্য গুনাহগার হ’তে হবে কি? এরূপ করা হয়ে গেলে করণীয় কি?

উত্তর : মিথ্যা বলা বা মিথ্যা কসম করা হারাম। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা বা জীবন রক্ষার মত কঠিন পরিস্থিতি এলে মিথ্যা কসম করা জায়েয (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৫৪)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যায়। সেগুলি হ’ল : (১) দু’ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসার ক্ষেত্রে, (২) যুদ্ধক্ষেত্রে এবং (৩) স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের নিকট (আবুদাঊদ হা/৪৯২১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৫০৩১, ৫০৩৩)। তবে এটি যেন কোন কপট উদ্দেশ্যে না হয়। কেননা আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের কথা জানেন (আলে ইমরান ৩/১১৯)।

প্রশ্ন (৭৩) : প্রত্যেক রাতে সূরা তাকাছুর পড়ে ঘুমালে কুরআনের এক হাযার আয়াত পড়ার নেকী পাওয়া যায়। কথাটির সত্যতা আছে কি?

উত্তর : বর্ণনাটি যঈফ (আলবানী, যঈফুত তারগীব হা/৮৯১)।

প্রশ্ন (৭৪) : ভুল চিকিৎসার কারণে অল্প বয়সে কেউ মারা গেলে তাকে অপমৃত্যু বা অকাল মৃত্যু বলে অভিহিত করা যাবে কি?

উত্তর : অপমৃত্যু বা অকাল মৃত্যু বলে অভিহিত করা যাবে  না। কেননা প্রকৃত প্রস্তাবে অকাল মৃত্যু বলে কিছু নেই। বরং জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত এবং ভাগ্যের অবধারিত লিখন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৮/৫১৭)। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মানুষকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন সেই মেয়াদকাল এসে যায়, তখন তারা তা মুহূর্তকাল দেরী বা এগিয়ে নিতে পারে না’ (নাহল ১৬/৬১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন আত্মা তার রিযিক ও হায়াত পরিপূর্ণ করার পূর্বে মারা যাবেনা (ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৯৮)। অতএব এর উপরেই ঈমান রাখতে হবে। তবে ‘অকাল মৃত্যু’ বলে যদি কম বয়সে বা অপরিণত বয়সে মৃত্যু বুঝানো হয়, তবে সেটি বলা দোষের হবে না।

প্রশ্ন (৭৫) : অর্থ থাকলেই কি তা ইচ্ছামত খরচ করা যাবে? যেকোন বিলাসিতার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে কি? অপচয় বা বিলাসিতার স্বরূপ কি?

উত্তর : অর্থ ইচ্ছামত খরচ করা বা অপচয় করা যাবে না। বরং আয়-ব্যয় দু’টিই হালাল পথে ও ইসলামের নির্দেশিত পথে খরচ করতে হবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নে‘মত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে (তাকাছুর ৪; তিরমিযী হা/২৪১৭; মিশকাত হা/৫১৯৭)।

ইসলামে অপচয় ও বিলাসিতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কেননা ভোগ-বিলাস ব্যক্তিকে আরাম-আয়েশ ও কর্মহীনতায় উৎসাহিত করে। পূর্ববর্তী লোকেরা বিলাসিতার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে (আন‘আম ৬/১৪১; আ‘রাফ ৭/৩১; বনু ইস্রাঈল ১৭/১৬, ২৭)। তবে আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের যথাযথ শুকরিয়া আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনীয় খাতে অবশ্যই ব্যয় করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপরে তাঁর দেওয়া নে‘মতের নমুনা দেখতে ভালবাসেন’ (তিরমিযী হা/২৮১৯; আহমাদ হা/১৯৯৪১; মিশকাত হা/৪৩৫০, ৪৩৭৯)। এজন্য সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেমন প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ করা যাবে না, তেমনি কৃপণতাও করা যাবে না (ফুরক্বান ২৫/৬৭)।

প্রশ্ন (৭৬) : জনৈক ছাহাবীর মাত্র দু’টি দাড়ি ছিল, যা দেখে রাসূল (ছাঃ) মুচকি হাসতেন। পরে তিনি তা কেটে ফেললে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, লোকটির প্রতিটি দাড়িতে রক্ষী ফেরেশতা থাকত, যা দেখে তিনি হাসতেন। এ ঘটনাটির সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত ঘটনাটি প্রসিদ্ধ হ’লেও সূত্রবিহীন। অতএব তা অগ্রহণযোগ্য।

প্রশ্ন (৭৭) : একজন মুসলমান জনপ্রতিনিধি বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কি অমুসলিমদের মন্দির বা পূজা উদ্বোধন করতে পারে?

উত্তর : সাধারণভাবে অমুসলিমদের মন্দির বা পূজা পরিদর্শন করা বা উদ্বোধন করা কোন মুসলিমের জন্য হারাম। কেননা এতে তাদের শিরকী কর্মকান্ডের প্রতি স্বীকৃতি ও ভালোবাসার প্রকাশ পায়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা গোনাহ ও সীমালংঘনের কাজে সহযোগিতা করোনা’ (মায়েদাহ ৫/২)। এমনকি মূর্তিওয়ালা কোন ঘরে বা উপাসনালয়ে প্রবেশ করাকেও বিদ্বানগণ মাকরূহ বলেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা ৫/৩২৭)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন কা‘বা ঘরে ছবিগুলো দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হ’ল, সে পর্যন্ত তিনি সেখানে প্রবেশ করলেন না (বুখারী হা/৩৩৫২; আহমাদ হা/৩৪৫৫)।

তবে যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল হিসাবে বাধ্য-বাধকতা থাকে, সেক্ষেত্রে যিম্মীদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার্থে সেখানে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থায় যেন তাদের শিরকী আক্বীদা ও আমলের প্রতি সমর্থন সূচক কোন বক্তব্য না দেওয়া হয়। বরং তাদেরকে ঈমানের পথে দাওয়াত প্রদানের সদিচ্ছা থাকতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/১১৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (৭৮) : মূর্তি ও ভাষ্কর্যের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? বর্তমানে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে সৌন্দর্য বা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য আবক্ষ বা পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। এটা কি শিরকের পর্যায়ভুক্ত? কেউ কেউ বলেন ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি স্থাপন করা সেটাই কেবল অবৈধ হবে। এটা কি সঠিক?

উত্তর : মূর্তি ও ভাষ্কর্যের মধ্যে অর্থগত পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্য একই। মূর্তি হ’ল অবয়ব বা প্রতিকৃতি। আর প্রস্তরাদি খোদাই করে যে মূর্তি তৈরী হয় তা-ই ভাষ্কর্য। ইসলামী শরী‘আতে মূর্তি ও ভাষ্কর্য দু’টির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। কোনটি পূজনীয়, আর কোনটি পূজনীয় নয়- এমন কোন ভাগও করা হয়নি। রাসূল (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের পর আলী (রাঃ)-কে লোকালয়ে পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোন ভাষ্কর্য পেলেই তা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। আর কোন কবর উঁচু পেলেই তা ভেঙ্গে মাটি সমান করে দিবে (মুসলিম হা/৯৬৯; মিশকাত হা/১৬৯৬)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলতে বলেছেন এই কারণে যে, এর মাধ্যমে শিরক হয়ে থাকে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৭/৪৬২ পৃ.)। মূলতঃ অপূজনীয় ভাষ্কর্যের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়। ইবনু আববাস (রাঃ) সূরা নূহে বর্ণিত ওয়াদ, সুয়া‘ ইয়াগূছ, ইয়াঊক, নাসর প্রভৃতি মূর্তি সম্পর্কে বলেন, এগুলি হচ্ছে নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তির নাম। তারা যখন মৃত্যুবরণ করল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলির নামকরণ কর। তখন তারা তাই করল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি, কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করল এবং লোকেরা মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলির ইবাদত বা পূজা শুরু হ’ল (বুখারী হা/৪৯২০)।

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, সম্মান প্রদর্শনের জন্য মূর্তি বা ভাষ্কর্য বানানোকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে বড় শিরক বা ছোট শিরক হ’তে পারে (ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২/৩৩৪ পৃ.)। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ছাঃ) কা‘বাগৃহে প্রবেশের আগে ভিতর থেকে সমস্ত মূর্তি ও প্রতিকৃতি বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি তার মধ্যে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দু’টি প্রতিকৃতি দেখেন। তখন তিনি বলেন, ‘ইব্রাহীম কখনো ইহূদী বা নাছারা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)। এভাবে তিনি সকল মূর্তি-প্রতিকৃতি মিটিয়ে না ফেলা পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করেননি (বুখারী হা/৩৩৫২; আহমাদ হা/৩৪৫৫)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, মারিয়াম, ঈসা, জারজিস প্রমুখ সৎ ব্যক্তির ভাষ্কর্য নির্মাণের মাধ্যমে মানুষ মূর্তিপূজার ন্যায় বড় শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে (ইগাছাতুল লাহফান ২/২৯২ পৃ.)। ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে কোন প্রকার প্রাণীর মূর্তি বা মূর্তির অনুরূপ অবয়ব, চাই সেটা ভাষ্কর্য হৌক বা ছবি হৌক এবং তা পূজার জন্য হৌক বা না হৌক, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এগুলিকে কুরআনে অপবিত্র ও অরুচিকর বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মূর্তির অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক’ (হজ্জ ৩০)। রাসূল (ছাঃ) ছবি বা প্রতিকৃতি নির্মাণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক আযাবপ্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্ত্ততকারীগণ’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৯৭)। তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে, তা জীবিত কর’ (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৯২)। হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘আমার সৃষ্টির মত করে যে ব্যক্তি (প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে? পারলে তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা বা একটি যবের দানা সৃষ্টি করুক তো দেখি!’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪৯৬; ফাৎহুল বারী ১০/৩৯৮ পৃ.; দ্র. ‘ছবি ও মূর্তি’ বই)। 

প্রশ্ন (৭৯) : শ্রীলংকায় আদম্স পিক-এর চূড়ায় যে আদম (আঃ)-এর পায়ের ছাপ আছে এর কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর : আদম (আঃ) জান্নাতে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পরে তাদেরকে পৃথিবীতে কোথায় নামানো হয়েছিল তা প্রমাণিত নয়। তবে বিভিন্ন যঈফ ও জাল বর্ণনার ভিত্তিতে বিদ্বানগণ বিভিন্ন স্থানের কথা বলেছেন যেগুলি তাদের ইজতিহাদ মাত্র। শরী‘আতের কোন দলীল নয়। একদল বিদ্বান মনে করেন, তিনি ভারতে অবতরণ করেছিলেন (ইবনু আসাকির ৭/৪৩৭ পৃ.; যঈফাহ হা/৪০৩)। আরেকদল বিদ্বান মনে করেন তারা আরাফাহ, জেদ্দা, সাফা-মারওয়া কোন এক পাহাড়ে অবতরণ করেছিলেন (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/২৩৭ পৃ.)। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এ সকল বর্ণনার কোন প্রমাণ নেই। এক্ষণে শ্রীলংকায় আদম (আঃ)-এর পদচিহ্ন থাকার বিষয়টি প্রাচীনকাল থেকেই প্রসিদ্ধ। ভূগোলবিদ ইয়াকূত হামাভী (৬২৬ হি.), বিশ্ব পরিব্রাজক ইবনে বতুতা (৭৭৯ হি.) প্রমুখ বিদ্বানগণ পাহাড়টিকে ‘জাবালে আদম’ বা আদমের পাহাড় বলে অভিহিত করেছেন (মু‘জামুল বুলদান ৩/২১৬; রিহলাহ ইবনু বতূতা, ২/৪৬১)। যেহেতু বিষয়টি কুরআন বা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়, অতএব এ ব্যাপারে চুপ থাকাই শ্রেয় (দ্র. নবীদের কাহিনী ১/২৬)।

প্রশ্ন (৮০) : জনৈক বক্তা রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তার চেহারায় এত আলো ছিল যে তা দিয়ে সুঁচ খোজা যেত। একথা সত্যতা আছে কি?

উত্তর : উক্ত মর্মে একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন ইবনু আসাকির, তবে বর্ণনাটি জাল (তারীখু দিমাশক্ব ৩/৩১০; যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৯৮)। অনুরূপভাবে বায়হাক্বীতেও একটি বর্ণনা এসেছে, যাকে শায়খ আলবানী মিথ্যা ও জাল বলেছেন (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৪৪)।

প্রশ্ন (৮১) : ছালাতরত অবস্থায় সিজদার স্থানের ভিতর দিয়ে কুকুর, বিড়াল বা ছাগল জাতীয় কোন প্রাণী হেঁটে গেলে ছালাত বাতিল হয়ে যাবে কি?

 উত্তর : সুৎরাবিহীন অবস্থায় সিজদার স্থানের ভিতর দিয়ে বিড়াল, ছাগল বা কোন প্রাণী অতিক্রম করলে ছালাতের কোন ক্ষতি হয় না, কেবল কালো কুকুর ব্যতীত। কেননা হাদীছে এসেছে, কালো কুকুর সামনে দিয়ে গেলে ছালাত হবে না (মুসলিম হা/৫১১)। এর অর্থ হ’ল, ছালাতের নেকী কম হয়, তবে ছালাত বাতিল হয় না। কারণ এতে ছালাতের খুশূ-খুযূ ও একাগ্রতা বিনষ্ট হয় (ফাৎহুল বারী ১/৫৮৯ পৃ.; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/২৫৯; বুলূগুল মারাম হা/২২৮-এর ব্যাখ্যা দ্র.)।

প্রশ্ন (৮২) : পিতা খুবই কৃপণ হওয়ায় হাত খরচ একেবারেই দেয় না। সেকারণ মাকে জানিয়ে বা কোন কোন সময় কাউকে না জানিয়েই পিতার টাকা নিতে বাধ্য হই। এতে আমার গুনাহ হবে কি? গুনাহ হ’লে ক্ষমা পাওয়ার উপায় কি?

উত্তর : স্ত্রী-সন্তানের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা স্বামী বা পিতার অবশ্য কর্তব্য। সে হিসাবে কৃপণ পিতার সম্পদ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে কিছু গ্রহণ করা সন্তানের জন্য জায়েয (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/৩১২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ২১/১৬৬; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৬/৩৮৩ পৃ.)। হিন্দা বিনতে উৎবা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান একজন অতি কৃপণ ব্যক্তি। আমি তাকে না জানিয়ে তার সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে আমার ও আমার সন্তানদের জন্য খরচ করতে পারি কি? উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট হয়, এ পরিমাণ সম্পদ ন্যায় সঙ্গতভাবে নিতে পার (বুখারী হা/২২১১; মুসলিম হা/১৭১৪; মিশকাত হা/৩৩৪২)। তবে নিঃসন্দেহে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নিলে সেটি চুরি হিসাবে গণ্য হবে, যা থেকে সতর্ক থাকা সন্তানদের জন্য আবশ্যক। সেক্ষেত্রে পিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

প্রশ্ন (৮৩) : আমি গহনার দোকানের হেড ম্যানেজার। আমাদের ব্যবসার পলিসিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিতে হয়। যেমন পুরাতন গহনা ঘষে-মেজে নতুন বলে বিক্রি করা, পুরাতন স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নানা টাল-বাহানা, গোঁজামিল ও প্রকৃত মূল্য গোপন করা ইত্যাদি। মালিকের নির্দেশনায় এসব কাজ আমাকে করতে হয়। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা যাবে না। কারণ ব্যবসায় মিথ্যা বলা, টাল-বাহানা করা, প্রতারণা করা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসা করা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মিথ্যা কসম পণ্যের কাটতি বাড়ায়, কিন্তু বরকত শেষ করে দেয় (বুখারী হা/২০৮৭; মুসলিম হা/১৬০৬)। তিনি বলেন, কোন মুসলিমের পক্ষে তার ভাইয়ের কাছে পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে তা বিক্রি করা বৈধ নয় (ইবনু মাজাহ হা/২২৪৬, সনদ ছহীহ)। একবার রাসূল (ছাঃ) (বাজারে) একটি খাদ্যশস্যের স্তূপের মধ্যে হাত প্রবেশ করিয়ে ভিজা অনুভব করলে স্তূপের মালিক তা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়ার কৈফিয়ত পেশ করল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ভিজাগুলো উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পায়? অতঃপর বললেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করল, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০)। এক্ষণে ব্যক্তির জন্য করণীয় হ’ল মালিককে বিষয়গুলো অবহিত করে সংশোধনের সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালানো। নইলে উক্ত চাকুরী ছেড়ে কোন হালাল রূযীর পথ অনুসন্ধান করা।

প্রশ্ন (৮৪) : একজন মুওয়াযযিন অন্যের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পূর্বে বিবাহ করেন এবং ঐ বিবাহ ইমাম দ্বারা পড়ানো হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে উভয়ের বিচার বা শাস্তি কি হবে?

উত্তর :  কারো স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাকে বিবাহ করলে সেটি বিবাহ হিসাবে গণ্য হবে না। বরং সহবাস করলে তা ব্যভিচার হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ বলেন, ...সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ (নিসা ৪/২৪)। আর ব্যভিচার কবীরা গুনাহ (ইসরা ১৭/৩২)। এক্ষণে মুওয়াযযিন যেনার মতো কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে তার উপর ‘হদ’ প্রযোজ্য হবে। তবে ‘হদ’ কায়েমের দায়িত্ব সরকারের। বাস্তবায়ন না করলে সরকার দায়ী হবে। আর ইমাম জেনে-শুনে বিবাহ পড়িয়ে থাকলে অন্যায় কাজে সহযোগিতার অপরাধে তিনি দায়ী হবেন। অতএব তাকেও অনুতপ্ত হয়ে খালেছ তওবা করতে হবে।

প্রশ্ন (৮৫) : বাড়িতে প্রবেশ বা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর : সফরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এবং বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। কারণ তা তোমাকে বাইরের অনিষ্ট থেকে হেফাযত করবে। আর বাড়িতে প্রবেশ করার সময় তুমি দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে তা তোমাকে ভেতরের অনিষ্ট হ’তে রক্ষা করবে (ছহীহাহ হা/১৩২৩)। আলবানী বলেন, এটা সফরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, মুক্বীম অবস্থার জন্য নয় (ফাতাওয়া জেদ্দা, ক্লিপ নং ২৫)। যদিও কেউ কেউ উক্ত হাদীছের সনদ সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। তবে আলবানী, হায়ছামী, সুয়ূতী ও ইবনু হাজার আসক্বালানীসহ অধিকাংশ বিদ্বান এর সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন (ছহীহাহ হা/১৩২৩ ও যঈফাহ হা/৬২৩৫-এর আলোচনা; হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৩৬৮৬)।

প্রশ্ন (৮৬) : তারাবীহ পড়িয়ে হাদিয়া দাবী করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : ইমামতি বা কুরআন শিক্ষাদান সহ যেকোন বৈধ কাজের জন্য কাউকে নিয়োগ করা হ’লে, তার কাজের বিনিময়ে সম্মানজনক হাদিয়ার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যাকে আমরা কোন দায়িত্বে নিয়োগ করি আমরা তার রূযীর ব্যবস্থা করে থাকি’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৮৮; মিশকত হা/৩৭৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০২৩)। তবে এসব দ্বীনী খেদমতের উদ্দেশ্য যেন কেবল অর্থোপার্জন না হয়। উদ্দেশ্য হ’তে হবে দ্বীনের খেদমত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি। অতএব হাদিয়া নিয়ে বাক-বিতন্ডা করা, মনকষাকষি করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

এক হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তুমি এমন মুওয়াযযিন নিয়োগ দাও, যে পারিশ্রমিক নিবে না’ (নাসাঈ হা/৬৭২; তিরমিযী হা/২০৯)। এর দ্বারা বিনিময় গ্রহণকে অপসন্দনীয় বলা হয়েছে। কিন্তু হাদিয়া গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়নি। যা উপরের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (আবুদাঊদ হা/৩৫৮৮)। অতএব কর্তৃপক্ষ নিজেদের বিবেচনা মতে সম্মানজনক হাদিয়া প্রদান করবেন।

উল্লেখ্য, এরূপ দ্বীনী কাজে বিনিময় গ্রহণ করা কুরআনকে স্বল্প মূল্যে বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়। ইহূদী-নাছারা ধর্মনেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজেরা কিতাব লিখে বলত, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ (বাক্বারাহ ৭৯)। এর দ্বারা তারা মানুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করত এবং তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করত। যার বিরুদ্ধে আল্লাহ উক্ত আয়াতের শেষাংশে তাচ্ছিল্যভরে একে ‘স্বল্পমূল্যে বিক্রয়’ বলে অভিহিত করেছেন (কুরতুবী, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৭৯ আয়াত)।

প্রশ্ন (৮৭) : সরকারীভাবে শিশুদের যে টিকা দেওয়া হয় তা শরী‘আতসম্মত কি? রোগ হওয়ার পূর্বেই প্রতিষেধক দেওয়া কি আক্বীদা ও তাওয়াক্কুল বিরোধী নয়?

উত্তর : এ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আক্বীদা বা তাওয়াক্কুল বিরোধী নয়। কেননা রোগ হওয়ার পূর্বে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করাও এক ধরনের চিকিৎসা। আর চিকিৎসা গ্রহণ করা শরী‘আতেরই নির্দেশ। তবে ঔষধ বা ডাক্তারকে আরোগ্যদানকারী মনে করলে শিরক হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ এমন কোন রোগ নাযিল করেননি, যার জন্য তিনি ঔষধ নাযিল করেননি (বুখারী হা/৫৬৭৮; মিশকাত হা/৪৫১৪)। তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। যখন সেটা পৌঁছে যায়, তখন সে রোগমুক্ত হয় আল্লাহর হুকুমে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫১৫)। অতএব যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ সংঘটিত হয় আল্লাহর হুকুমে, এই আক্বীদা পোষণ করে যেকোন বৈধ প্রতিষেধক গ্রহণে শরী‘আতে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন (৮৮) : আমার ছোট ফুফু আমার পিতার কাছেই থাকেন। ফুফুর দেখাশোনা আমার পিতাই করেন। ফুফু চান তার জমির কিছু অংশ বিক্রি করে আমার পিতার সাথে হজ্জে যাবেন। বাকী জমি মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করবেন। তার সব জমি দান করে দিলে তিনি গুনাহগার হবেন কি?

উত্তর : তিনি প্রথমে হজ্জ করবেন। অতঃপর যা সম্পদ থাকে তা থেকে তিনি সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি দান করে দিতে পারেন (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৭১)। এর বেশী জায়েয নয়। তবে যদি ওয়ারিছগণ ধনবান হয় এবং তারা সম্মত থাকে, তবে সব জমি দান করতে বাধা নেই।

প্রশ্ন (৮৯) : জনৈক ব্যক্তির বয়স ৬৮ বছর। তিনি হজ্জে যেতে চান। কিন্তু সরকারী নিয়মানুযায়ী ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা হজ্জে যেতে পারবে না। এক্ষণে তিনি বদলী হজ্জ করাবেন? না সে পরিমাণ অর্থ ছাদাক্বা করে দিবে?

উত্তর : তিনি বদলী হজ্জ করাবেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, বিদায় হজ্জের বছর খাছ‘আম গোত্রের জনৈকা মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ...আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় হজ্জ ফরয হয়েছে, যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসতেও সক্ষম নন। আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করলে তার হজ্জ আদায় হবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ’ (বুখারী হা/১৮৫৪; মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার পিতার যদি কোন ঋণ থাকতো, তুমি কি তা আদায় করতে না? (নাসাঈ হা/৫৩৮৯)। উল্লেখ্য যে, বদলী হজ্জ কেবল তিনিই করতে পারেন, যিনি আগে নিজের হজ্জ করেছেন (আবুদাঊদ হা/১৮১১; ইবনু মাজাহ হা/২৯০৩; মিশকাত হা/২৫২৯; ইরওয়া হা/৯৯৪)।

প্রশ্ন (৯০) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) উম্মতের সুফারিশের জন্য আরশের চেয়ার ধরে কান্নাকাটি করবেন। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর আরশের চেয়ার ধরে কান্নাকাটি করবেন মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং ক্বিয়ামতের দিন যখন লোকেরা শাফা‘আতের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আবেদন করবে তখন তিনি আল্লাহর আরশের নীচে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাবেন (বুখারী হা/৪৭১২; মুসলিম হা/১৯৪ (৩২৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়াব এবং তাঁর প্রশংসা করব। অতঃপর আমি তাঁর প্রতি সিজদায় পড়ে যাব (মুসলিম হা/১৯৩ (৩২৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখব, তখন সিজদায় পড়ে যাব (বুখারী হা/৪৪৭৬)।

প্রশ্ন (৯১) : এক স্থানে দান করার নিয়ত করার পর অন্য স্থানে দান করার নিয়ত করা যাবে কি?

উত্তর : দানকৃত সম্পদ হস্তান্তর করার পূর্বে  নিয়ত পরিবর্তন করা যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/১৮৭; বাহুতী, কাশশাফুল কেনা‘ ২/২৯৮)। তবে হস্তান্তর হয়ে গেলে নিয়ত পরিবর্তন করা যাবে না (ফাৎহুল বারী ৫/২৩৫)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, দান করে ফেরত নেওয়া বমি করে বমি খাওয়ার ন্যায় (আবুদাঊদ হা/৩৫৩৯)। ওমর (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য বা সাধারণ ছাদাক্বা হিসাবে দান করল, সে যেন তা ফিরিয়ে না নেয়’ (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৪২; ইরওয়া হা/১৬১৩)।

প্রশ্ন (৯২) : অসুস্থতার কারণে জুম‘আর খুৎবা বসে দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : সাধারণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে খুৎবা দেওয়া সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাঃ) সারা জীবন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন (জুম‘আ ১১; মুসলিম হা/৮৬২; মিশকাত হা/১৪১৫; ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩১১)। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে সুস্থ ব্যক্তিও বসে খুৎবা দিতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের খুৎবা তার বাহনের উপরে বসে প্রদান করেছিলেন (যাদুল মা‘আদ ২/২১৫-২১৬; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৭০৬ ও ৭৭২ পৃ.)। আলী (রাঃ) বাহনের উপর বসে ঈদের খুৎবা দিয়েছেন। আর জুম‘আর খুৎবা ঈদের খুৎবার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ (মুগনী ২/২২৪, ২/২৮৭)। আব্দুর রহমান বিন উম্মুল হাকাম অসুস্থতার কারণে বসে খুৎবা দিতেন (মুসলিম হা/৮৬৪; মিশকাত হা/১৪১৬)। মু‘আবিয়া (রাঃ) ও আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান (রহঃ) বার্ধক্যের কারণে বসে খুৎবা দিতেন (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৫২৫৯)।  ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, কেউ যদি ওযর, অসুস্থতা বা অক্ষমতার কারণে বসে খুৎবা দেয় তাতে কোন দোষ নেই। কারণ এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ছালাত অসুস্থতার কারণে বসে আদায় করা যায় (মুগনী ২/২২৪)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, অক্ষমতার কারণে বসে খুৎবা দেওয়া জায়েয, যেমন বসে ছালাত আদায় করা জায়েয। এ বিষয়ে বিদ্বানগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫১৪)। অতএব দাঁড়িয়ে খুৎবা দেওয়ায় সুন্নাত। তবে অসুস্থতার কারণে বসে খুৎবা দেওয়া নিঃসন্দেহে জায়েয।

প্রশ্ন (৯৩) : ইয়া নবী বলা যদি বেয়াদবী হিসাবে গণ্য হয়, তবে ইয়া আল্লাহ, ইয়া মালিক বলার ক্ষেত্রেও কি একইভাবে বেয়াদবী হবে?

উত্তর : ইয়া রাসূল বা ইয়া নবী কেবল রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে বলা যাবে। চাওয়া, প্রার্থনা বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে এই আহবান করা যাবে না। কারণ তিনি এখন মৃত (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১/১২৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব)। আর আল্লাহ সর্বদা জীবিত বা চিরঞ্জীব, সর্বশ্রোতা বা সর্বদ্রষ্টা। সেজন্য দো‘আয় হে আল্লাহ বা ইয়া আল্লাহ বলা যাবে (বুখারী হা/৩৩৫০, ৪৭১২; মিশকাত হা/৫৫৩৮)। তবে দো‘আর ক্ষেত্রে ‘ইয়া’র পরিবর্তে ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ আল্লা-হুম্মা বা রববানা শব্দে দো‘আ করা উত্তম (ইবনুল ক্বাইয়িম, জালাউল আফহাম ১/১৫৩-৫৪; খাত্ত্বাবী, মা‘আলিমুস সুনান ২/৩৩০)।

প্রশ্ন (৯৪) : জনৈকা মহিলা প্রতিদিন সন্ধ্যায় জিনের আছরে আক্রান্ত হয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। সে জর্দা দ্বারা পান খাওয়া ব্যতীত কোন কিছুতেই সুস্থ হয় না। এক্ষণে এধরনের হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা নেওয়া যাবে কি?

উত্তর : জিন দ্বারা আক্রান্ত হ’লে শরী‘আতসম্মত দো‘আগুলো দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করবে। যেমন সূরা নাস, ফালাক্ব, ইখলাছ, আয়াতুল কুরসী, সূরা ফাতিহা ইত্যাদি পাঠ করে ফুঁক দিবে (বুখারী হা/৪৪৩৯; মুসলিম হা/২১৯২; মিশকাত হা/১৫৩২)। কোন অবস্থায় হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা চিকিৎসা করাও। তবে হারাম বস্ত্ত দিয়ে করো না’ (আহমাদ হা/১২৬১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৫৪; মিশকাত হা/৪৫৩৮)। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হারাম বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা করবে, আল্লাহ এর মাধ্যমে তাকে সুস্থতা দিবেন না (ছহীহাহ হা/২৮৮১)। তবে বাধ্যগত অবস্থার কথা স্বতন্ত্র, যেমন রোগীর জীবন রক্ষার্থে কখনও চিকিৎসকরা মাদকজাতীয় ঔষধ প্রদান করে থাকেন। কারণ সে অবস্থায় জীবন বাঁচানো অধিক যরূরী। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা বাধ্যগত অবস্থায় পড়লে সে কথা স্বতন্ত্র’ (আন‘আম ৬/১১৯)। মূলতঃ দুষ্টু জিন মানুষের শত্রু। তাই জর্দা খেলে সে খুশী হয়। অতএব উক্ত দো‘আগুলি পাঠ করে আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখে দৃঢ় মানসিকতা অর্জন করতে পারলে জিনের আছর থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। 

প্রশ্ন (৯৫) : তায়াম্মুমের পরও কি ওযূর দো‘আ পাঠ করতে হবে?

উত্তর : ওযূর পরে যে দো‘আগুলো পাঠ করা হয়, তায়াম্মুমের পরেও সে দো‘আগুলো পাঠ করতে হয়। কারণ তায়াম্মুম হ’ল ওযূর স্থলাভিষিক্ত (নববী, আল-মাজমূ‘ ২/২৩৪)।

প্রশ্ন (৯৬) : আমি প্রাপ্তবয়স্কা নারী। গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি, কিন্তু চাকুরী না পাওয়া পর্যন্ত আববা-আম্মা বিবাহ দিবেন না। আমি হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আশংকা করছি। এমতাবস্থায় আমি কী করতে পারি?

উত্তর : কোন নারী অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারবে না। রাসূল (ছাঃ) এরূপ বিবাহকে বাতিল (৩ বার) বলেছেন (তিরমিযী হা/১১০১; আবুদাঊদ হা/২০৮৫; মিশকাত হা/৩১৩০-৩১)। তিনি বলেন, ‘কোন মহিলা নিজেকে বা অপর মহিলাকে বিবাহ দিতে পারবে না’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৮২ মিশকাত হা/৩১৩৭; ইরওয়া হা/১৮৪১)। এক্ষণে পূর্ণ আন্তরিকতা ও ধৈর্যের সাথে অভিভাবককে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে হবে। এতেও কোন কাজ না হ’লে সাবালিকা মেয়ে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার সৎ নিয়তে পরবর্তী অভিভাবক তথা দাদা, ভাই বা চাচার অভিভাবকত্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারে। কিন্তু কোনভাবেই নিজের অসৎ মনস্কামনা পূরণার্থে পিতাকে পাশ কাটিয়ে অন্যকে অলী বানিয়ে বিবাহ করা যাবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৭-৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/১৪৭)।

প্রশ্ন (৯৭) : মহিলারা কালো চুলে দুলহান তেল ব্যবহার করতে পারবে কি? এছাড়া তারা চুলের মাথা কেটে ছোট করতে পারবে কি?

উত্তর : সাদা চুল কালো করার উদ্দেশ্য না থাকলে দুলহান তেল কালো চুলে ব্যবহার করা যাবে। তবে সাদা চুলকে কোন তেল বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে কালো করা নারী-পুরুষ সবার জন্যই নিষিদ্ধ (মুসলিম হা/২১০২; মিশকাত হা/৪৪২৩-২৪)। আর নারীরা সৌন্দয্যবর্ধন, স্বামীর সন্তুষ্টি বা বিশেষ কোন প্রয়োজনে মাথার চুল হালকা কাট-ছাঁট করতে পারে (মুসলিম হা/৩২০; আলবানী, জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমাহ ২৫৬ পৃ., নববী, শরহ মুসলিম ৪/৫; মির‘আত ৯/২৬৮; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৩৫)। তবে এমন কাট-ছাঁট করা যাবে না যা পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বা অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায় (বুখারী হা/৫৮৮৫; মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৯, ৪৩৪৭)।

প্রশ্ন (৯৮) : মসজিদে আযান দিয়ে কোন মুছল্লী না আসায় একাকী ছালাত আদায় করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ছওয়াব পেয়ে যাবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩২৩; লিকাউল বাবিল মাফতুহ ১০/৪৪)। কারণ সে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে এসেছিল। আর রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করল তৎপর মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে দেখল লোকেরা ছালাত শেয করেছে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ছালাতে উক্ত ব্যক্তিদের সমান ছওয়াব লিখে দিবেন এবং তাদের ছওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না (নাসাঈ হা/৮৫৫; মিশকাত হা/১১৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/৪১০)।

প্রশ্ন (৯৯) : জমির মালিকের সাথে চুক্তি করা হ’ল যে বিঘা প্রতি জমির দাম ২৭ লাখ করে মালিককে দেওয়া হবে। এর উপর ক্রেতার নিকট থেকে দালাল যত বেশী মূল্য আদায় করতে পারবে সেটা তার লাভ। উভয়ের সন্তুষ্টিতে এরূপ চুক্তি করা জায়েয হবে কি?

উত্তর : জমি ক্রয় বা বিক্রয় করে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা না থাকলে বা অন্যের হক বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য না থাকলে  এরূপ চুক্তি জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে যদি তা হালাল হয় (হাকেম হা/২৩১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭১৫)। ইমাম বুখারী ‘দালালের মজুরী’ শিরোনামে অধ্যায় রচনা করে বলেন,  ইবনু সীরীন, আতা, ইব্রাহীম ও হাসান বাছরী দালালীর মজুরীতে কোন দোষ মনে করেননি। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ বলে যে, তুমি এ কাপড়টি বিক্রি করে দাও। এর উপর যা বেশী হয় তা তোমার, এতে কোন দোষ নেই। ইবনু সীরীন বলেন, যদি কেউ বলে যে, এটা এত এত দামে বিক্রি করে দাও, লাভ যা হবে তা তোমার, অথবা তা তোমার ও আমার মধ্যে সমান হারে ভাগ হবে, তবে এতে কোন দোষ নেই (বুখারী ৮/৩০১)। ক্বায়েস ইবনু আবী গারাযাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় আমাদের (ব্যবসায়ীদের) ‘সামাসিরাহ’ (السَّمَاسِرَةَ) বা দালাল বলা হ’ত। এরপর একদিন রাসূল (ছাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে গমন করেন এবং তিনি আমাদের পূর্বের নামের চাইতে উত্তম নামে আখ্যায়িত করে বলেন, হে ব্যবসায়ী দল (يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ)! বেচা-কেনার মধ্যে (অনেক সময়) অনর্থক কথাবার্তা এবং কসম জড়িত হয়ে থাকে। তোমরা কিছু দান করে তাকে দোষমুক্ত করে নিবে (আবুদাঊদ হা/৩৩২৬; তিরমিযী হা/১২০৮; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৩৫৮; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১০/১৫১)।

উল্লেখ্য যে, দালালীর নামে কোন প্রকার প্রতারণা করা যাবে না (বুখারী হা/৬৯৬৩)। যেমনটি বর্তমান সমাজে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে। যেমন কোন পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্য ছাড়াই কেবল দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত দাম বলা, ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে মিথ্যা বলা, মিথ্যা কসম করা বা অতিরঞ্জিত কথা বলা ইত্যাদি।

প্রশ্ন (১০০) : কোন হালাল প্রাণী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার গোশত খাওয়া যাবে কি?

উত্তর : মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না। কারণ এটি হারাম (মায়েদাহ ৫/৩)। তবে দুর্ঘটনার পর জীবিত থাকলে তাকে যবেহ করে খাওয়া যাবে। হালাল প্রাণীর বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, হিংস্র জন্তুতে খাওয়া পশু, তবে যা তোমরা যবেহ দ্বারা হালাল করেছ, তা ব্যতীত (মায়েদাহ ৫/৩; ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী ৯/৩২২; ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত দ্রষ্টব্য)।

প্রশ্ন (১০১) : সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে পিতা না মাতার সিদ্ধান্ত অগ্রাধিকার পাবে?

উত্তর : সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে পিতা ও মাতা উভয়ে পরামর্শ করবে। যদি সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে পিতা ও মাতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, তাহ’লে পরিবার প্রধান হিসাবে পিতার মতই অগ্রাধিকার পাবে (বুখারী হা/২৫৫৪)। মনে রাখতে হবে যে, পিতা হৌক বা মাতা হৌক সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে সর্বদা ইসলামী নাম রাখতে হবে। কেননা ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার পিতার নামসহ ডাকা হবে। যেমন অঙ্গীকার ও বিশ্বাস ভঙ্গকারী (غَادِرٌ) ব্যক্তিদের ডেকে সেদিন বলা হবে, ‘এটি অমুকের সন্তান অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৭২৫)। অঙ্গীকার ভঙ্গকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের যখন তাদের পিতার নামসহ ডাকা হবে, তখন ঈমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদের অবশ্যই তাদের স্ব স্ব পিতার নামসহ ডাকা হবে, এটা পরিষ্কার বুঝা যায়। যেমন অন্য হাদীছে এসেছে, ‘তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামসহ ক্বিয়ামতের দিন ডাকা হবে। অতএব তোমরা তোমাদের নামগুলি সুন্দর রাখো’ (আহমাদ হা/২১৭৩৯, ‘ছিন্নসূত্র’ হওয়ার কারণে আরনাঊত্ব যঈফ বলেছেন; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৮, ইবনুল ক্বাইয়িম হাদীছটির সনদ ‘জাইয়িদ’ বলেছেন (তুহফাতুল মাওদূদ ১/১৪৮ পৃ.)। আলবানী হাদীছটির সনদ ‘যঈফ’ বলেছেন। কিন্তু বক্তব্য ছহীহ হাদীছের অনুকূলে।

প্রশ্ন (১০২) : কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুসলিম হওয়ার পরেও অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করে এবং তাদের ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার করে। এমন কাজ করা কেমন গুনাহ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা যাবে কি?

উত্তর : অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ ও তার আয়োজনে কোনরূপ সহযোগিতা করা জায়েয নয়। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ইহূদী-নাছারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না (মায়েদাহ ৫/৫১)। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, তোমরা আল্লাহর শত্রুদের উৎসব থেকে বিরত থাক (বায়হাক্বী হা/১৮৮৬২, ৯/৩৯২)। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর শত্রু ইহূদী-নাছারাদের উৎসব থেকে বিরত থাক। কারণ তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়। আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমাদের উপরও গযব নাযিল হয়ে যাবে (বায়হাক্বী শু‘আব হা/৮৯৪০, ১২/১৮)। ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৪৬)। এক্ষণে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এরূপ কাজ করলে তারা এর জন্য গুনাহগার হবে। আর তারা যদি কর্মচারীদের বাধ্য না করে, তাহ’লে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করায় বাধা নেই। কিন্তু বাধ্য করা হ’লে উক্ত চাকুরী পরিত্যাগ করতে হবে।

প্রশ্ন (১০৩) : মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সালাম দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সালাম দেওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থাতেও কেউ সালাম দিলে আঙ্গুলের ইশারায় তার জবাব দিতেন (তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৯১; মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১০১৩)। তবে জামা‘আত চলা অবস্থায় তথা মুছল্লীরা ছালাতরত অবস্থায় সালাম না দেওয়াই উত্তম। কেননা এতে মুছল্লীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হ’তে পারে (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৩১/২৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন মজলিসে উপস্থিত হয়, তখন যেন সালাম করে এবং যখন বের হয়, তখনও যেন সালাম করে (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০০৭-৮; মিশকাত হা/৪৬৬০)। উপরোক্ত হাদীছের উপর ভিত্তি করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও সালাম দেওয়া যাবে (উছায়মীন, শরহ রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৮৬৯-এর ব্যাখ্যা, ৪/৪২৮)।

প্রশ্ন (১০৪) : জেহরী ছালাতে নারীরা কি সরবে কুরআন তেলাওয়াত করবে?

উত্তর : নারীরা জেহরী ছালাতে সরবে কুরআন তেলাওয়াত করবে। তবে যদি আশপাশে গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে এবং ফেৎনার আশংকা থাকলে অনুচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে (ইমাম শাফেঈ, কিতাবুল উম্ম ১/১৯১; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১২৮)।

প্রশ্ন (১০৫) : ক্বাযা ছালাত আদায় করার ক্ষেত্রে ঐ ওয়াক্তের সকল ফরয ও সুন্নাত সবই আদায় করতে হবে কি?

উত্তর : ক্বাযা ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে সুন্নাতের ক্বাযা আদায় করাও সুন্নাত। রাসূল (ছাঃ) ক্বাযা সুন্নাত পরে আদায় করেছেন। একবার ব্যস্ততার কারণে রাসূল (ছাঃ) যোহরের পূর্বের সুন্নাত আছরের পরে আদায় করেছিলেন (বুখারী হা/১২৩৩; মিশকাত হা/১০৪৩)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে পরে তা আদায় করে নিতেন’ (তিরমিযী হা/৪২৬, সনদ হাসান)। তবে সফরের সময় সুন্নাত নেই (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৩৮)।

প্রশ্ন (১০৬) : মোহরানার টাকা পরিশোধের পদ্ধতি কি? যদি বাকীতে মোহরানা ধার্য করা হয় এবং স্ত্রী মারা যায় তাহলে স্বামী মোহরানার টাকা কার নিকট পরিশোধ করবে?

উত্তর : স্বামীর জন্য ফরয কর্তব্য হ’ল স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত মোহরানা পরিশোধ করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের ফরয মোহরানা পরিশোধ কর’ (নিসা ৪)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হ’ল মোহর’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৪৩)। নগদে পরিশোধ করা সুন্নাত। তবে বাধ্যগত অবস্থায় মোহর কিছু বাকী রেখে বিবাহ করা জায়েয (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২)। তবে কিছু মোহর পরিশোধ করে বাকীটা মৃত্যু পর্যন্ত দেরী করার রেওয়াজ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আর স্ত্রীকে মোহর পরিশোধ করার পূর্বেই যদি স্ত্রী মারা যায় তাহ’লে স্বামীকে স্ত্রীর ওয়ারিছদের নিকট মোহরানার সম্পদ পরিশোধ করতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১০/১১৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/৫৪)।

প্রশ্ন (১০৭) : নারী-পুরুষ অবৈধ প্রেমে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তাদের ইবাদত কবুল হবে কি?

উত্তর : অবৈধ প্রেমে লিপ্ত হওয়া নিঃসন্দেহে কবীরা গোনাহ, যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ’ (ইসরা ১৭/৩২)। এজন্য তাকে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সেইসাথে এই পাপ থেকে রক্ষার পাওয়ার জন্য বেশী বেশী ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, অমুক ব্যক্তি রাতে ছালাত আদায় করে, কিন্তু ভোরে উঠে সে চুরি করে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, শীঘ্রই ছালাত তাকে তা হ’তে নিবৃত্ত রাখবে (আহমাদ হা/৯৭৭৭; মিশকাত হা/১২৩৭; ছহীহাহ হা/৩৪৮২; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৫ পৃ.; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১০/৩২১-২২)।

প্রশ্ন (১০৮) : নামের সাথে ছিদ্দীক উপাধি লাগানো যাবে কি?

উত্তর : ছিদ্দীক অর্থ মহাসত্যবাদী। এতে তাযকিয়া তথা অধিক প্রশংসাসূচক অর্থ রয়েছে। এই ধরনের অতি প্রশংসাসূচক নাম রাখা অপসন্দনীয়। তবে যদি কেউ তাযকিয়া উদ্দেশ্য ছাড়াই এরূপ নাম রাখে, তাতে কোন দোষ নেই (নববী, শরহ মুসলিম ১৪/১১৯; তুহফা ৮/১০১; মিরক্বাত ৭/২৯৯৭)। কারণ আক্বীক্বার সময় শিশু সন্তানের যে প্রশংসাসূচক নাম রাখা হয় তার জন্য আত্মপ্রশংসা হিসাবে নয়। বরং পিতা ও অভিভাবকদের পক্ষ হ’তে তার জন্য শুভ কামনা বা দো‘আ স্বরূপ। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর নাম তার দাদা রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’ ও মা রেখেছিলেন ‘আহমাদ’ (প্রশংসিত)। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) মুতার যুদ্ধবিজয়ী সেনাপতি খালেদকে দো‘আ করে অশ্রুসজল নেত্রে বলেছিলেন, এবারে ঝান্ডা হাতে নিয়েছে ‘আল্লাহর তরবারি সমূহের অন্যতম ‘তরবারি’। অতঃপর আল্লাহ তাদের হাতে বিজয় দান করেন’ (বুখারী হা/৪২৬২)। অর্থাৎ খালেদ নিজে ঐ নাম অর্থাৎ ‘সায়ফুল্লাহ’ নাম গ্রহণ করেননি, বরং তাঁর অভিভাবক রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ লকব দিয়েছিলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের ছেলে আব্দুল্লাহর লকব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহির (পবিত্র)। অতএব পিতা-মাতা তার সন্তানের জন্য দো‘আ হিসাবে উক্ত গুণবাচক নাম সমূহ রাখতে পারেন।

জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ইয়া‘লা, বারাকাহ, আফলাহ, ইয়াসার ও নাফে‘ ইত্যাদি নাম রাখা বারণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। অতঃপর তাকে আমি লক্ষ্য করলাম যে, এ ব্যাপারে তিনি  নিশ্চুপ থাকলেন, কিছু বললেন না। তারপর রাসূল (ছাঃ) কে উঠিয়ে নেওয়া হ’ল এবং তিনি তা (শক্তভাবে) নিষেধ করেননি। পরে ওমর (রাঃ) তা বারণ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন, তারপর তিনিও তা পরিত্যাগ করেন (মুসলিম হা/২১৩৮; মিশকাত হা/৪৭৫৪)।

প্রশ্ন (১০৯) : মসজিদে মহিলারা যেন জুম‘আর খুৎবা দেখতে পায় সেজন্য মনিটর বা প্রজেক্টর ব্যবহার করা যাবে কি?

উত্তর : এরূপ করা উচিত হবে না। কারণ এতে মুছল্লীদের খুশূ-খুযূ বিনষ্ট হয় এবং খুৎবা ও ছালাতের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ, যারা তাদের ছালাতে তন্ময়-তদ্গত (মুমিনুন ২৩/১-২)। অতএব জুম‘আর খুৎবায় প্রজেক্টরের বদলে সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা উচিৎ।  

প্রশ্ন (১১০) : ভিন্ন জগতের প্রাণী বা এলিয়েন সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছের বক্তব্য কি?

উত্তর : পৃথিবী ছাড়াও অন্যত্র জীবনের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আসমান ও যমীনে যত প্রাণী আছে, সবই আল্লাহকে সিজদা করে এবং ফেরেশতাগণ। আর তারা অহংকার করে না’ (নাহল ১৪/৪৯)। তিনি বলেন, সাত আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তার প্রশংসাসহ মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা বর্ণনা তোমরা বুঝতে পারো না। নিশ্চয়ই তিনি অতীব সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ (ইসরা ১৭/৪৪)। তিনি আরো বলেন, তাঁর নিদর্শন সমূহের অন্যতম হ’ল নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে যে সকল জীবজন্তু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তিনি যখনই ইচ্ছা এগুলিকে (ক্বিয়ামতের দিন) জমা করতে সক্ষম’ (শূরা ৪২/২৯)। উক্ত আয়াতগুলো থেকে অনুমিত হয় যে, আসমানে ফেরেশতা ছাড়াও অন্য সৃষ্টি রয়েছে। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

প্রশ্ন (১১১) : কবরে নবী-রাসূলকে কয়টি প্রশ্ন করা হবে?

উত্তর : এ ব্যাপারে কুরআনে বা হাদীছে কোন বর্ণনা নেই। তবে একদল বিদ্বানের মতে, যেমন ভাবে শহীদগণ কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না (নাসাঈ হা/২০৫৩), তেমনি নবীগণও কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না (ইবনুল ক্বাইয়িম, কিতাবুর রূহ ১/৮১-৮২; আদ-দুর্রুল মুখতার ২/১৯২; ফাতাওয়া রামলী ৪/৩৮৬)।

প্রশ্ন (১১২) : তাহাজ্জুদ ছালাত ৮ রাক‘আতের কম আদায় করা হলে সেটা তাহাজ্জুদ হিসাবে গণ্য হবে কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘রাতের ছালাত দুই দুই। অতঃপর যখন তুমি ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন এক রাক‘আত পড়ে নাও, যা তোমার পিছনের সব ছালাতকে বিতরে পরিণত করবে’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১২৫৪)। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি চায় একটানা ৫ রাক‘আত বিতর পড়ুক, যে চায় তিন রাক‘আত, যে চায় এক রাক‘আত বিতর পড়ুক (আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১২৬৫) অতএব সর্বনিম্ন দু’রাক‘আতও তাহাজ্জুদ হিসাবে গণ্য হবে (বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ১০১)।

প্রশ্ন (১১৩) : সরকার প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা গ্রহণ করা কাদের জন্য বৈধ? সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও সন্তানেরা তাদের পিতা-মাতার জন্য এই টাকা গ্রহণ করতে পারবে কি?

উত্তর : বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতা ঐসব লোকদের জন্য প্রদান করে যারা অসহায় এবং যাদের কোন অবলম্বন নেই। এক্ষণে কোন সম্পদশালী ব্যক্তি যদি সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে এ ভাতা তার পিতা-মাতার জন্য গ্রহণ করে তা তার জন্য বৈধ হবে না। বরং সন্তান স্বয়ং পিতা-মাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। কারণ সন্তানের সম্পদ মূলত পিতা-মাতারই সম্পদ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার পিতা-মাতার। নিশ্চয় তোমাদের সম্পদ তোমাদের পবিত্র উপার্জন। কাজেই তোমরা তোমাদের সন্তানদের পবিত্র উপার্জন হতে ভক্ষণ কর’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৩৫৪)। তবে অনেক দেশে এরূপ ভাতা সবশ্রেণীর বয়স্ক মানুষের জন্য নির্ধারিত আছে। সেখানে এটা গ্রহণ করায় বাধা নেই।

প্রশ্ন (১১৪) : মসজিদ কমিটি ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ডিপোজিট রেখে তার লভ্যাংশ থেকে মসজিদের ইমাম ও মুওয়াযযিনের বেতন দেয়। এরূপ করা জায়েয হচ্ছে কি?

উত্তর : ব্যাংকের লভ্যাংশ সূদের অন্তর্ভুক্ত। সেকারণ তা দিয়ে মসজিদের ইমাম বা মুওয়াযযিনের বেতন দেওয়া জায়েয হবে না। বরং বাধ্যগত অবস্থায় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে হ’লে তার লভ্যাংশ ছওয়াবের আশা ছাড়া ছাদাক্বা করে দিতে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৩০৭;মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০)।

প্রশ্ন (১১৫) : দাড়ি শেভ করা ব্যক্তির ছালাত কবুল হবে কি?

উত্তর : দাড়ি মুন্ডনকারী ব্যক্তি ছালাত আদায় করলে তা কবুল হয়ে যাবে। কেননা ছালাত কবুলের শর্ত হ’ল, (১) আক্বীদা ছহীহ হওয়া। অর্থাৎ শিরক মুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদে বিশ্বাসী হওয়া (কাহফ ১৮/১১০) (২) তরীকা ছহীহ হওয়া। অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া (মুসলিম হা/১৭১৮)। (৩) ইখলাছপূর্ণ হওয়া (যুমার ৩৯/১১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/৩৭১, ২৪/৩৬০)। তবে তাকে উক্ত গোনাহ থেকে যতদ্রুত সম্ভব তওবা করতে হবে। আর তার ছালাতই তাকে এই পাপ থেকে বিরত থাকতে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই ছালাত যাবতীয় ফাহেশা ও মুনকার কাজ থেকে মুছল্লীকে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।

প্রশ্ন (১১৬) : চকলেট সহ বিভিন্ন খাবারের লোভ দেখিয়ে শিশুদের মসজিদে এনে ছালাত পড়ানো যাবে কি?

উত্তর : ছালাতসহ যেকোন ভালো কাজে উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার দেওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) যুদ্ধের ময়দানের শত্রু পক্ষের সৈন্যদের পরাস্ত করার লক্ষ্যে তিনি পুরস্কার ঘোষণা করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন শত্রুকে হত্যা করবে সে তার সাথে থাকা সম্পদ লাভ করবে’ (বুখারী হা/৩১৪২; মিশকাত হা/৩৯৮৬)। তাছাড়া কুরআন মুখস্থ, হাদীছ পাঠ বা এই ধরনের যেকোন ভালো কাজে পুরস্কার ঘোষণা করা যাবে। ছাহাবায়ে কেরাম তাদের ছিয়ামরত শিশুদের খেলনা দিয়ে খাবারের কথা ভুলিয়ে রাখতেন (বুখারী হা/১৯৬০; মুসলিম হা/১১৩৬)। তবে শিশুদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যেন তারা পুরস্কারের চেয়ে ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত হয়। মূল উদ্দেশ্য হবে ইবাদত আর পুরস্কার হবে তার অনুগামী (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৩/১০৮, ১৫/১৮৯)।

প্রশ্ন (১১৭) : ইমাম দ্বিতীয় সিজদা থেকে দাঁড়ানোর সময় কখন আল্লাহু আকবার বলবে, দাঁড়ানোর পরে নাকি উঠার সময়?

উত্তর : সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে তাকবীর শুরু করবে এবং দাঁড়ানোর পূর্বে শেষ করবে। অর্থাৎ রুকূ, সিজদা বা অন্য কোন অবস্থায় যাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাকবীর পাঠ করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ...রাসূল (ছাঃ) রুকূতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। রুকূ থেকে পিঠ সোজা করার সময় সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন। ... সিজদায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলতেন। সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলতেন... (বুখারী হা/৭৮৯, মিশকাত হা/৭৯৯; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৮৮)। তবে ইমামতির সময় ইমামের আগে যাতে মুক্তাদী চলে না যায়, সেজন্য সামান্য পরে তাকবীর দেওয়া আবশ্যক।

প্রশ্ন (১১৮) : বিবাহ অনুষ্ঠানে বর-কনের মালা বদল, শ্বাশুড়ীর জন্য কনের আঁচলে পান বাটা, হলুদ শাড়ীতে চাউল বেঁধে দেয়া ইত্যাদি কি শরী‘আত সম্মত?

উত্তর : এসবের অধিকাংশ অনৈসলামী সংস্কৃতির অনুকরণ। তাই এসব আচার ও প্রথা সাধ্যপক্ষে এড়িয়ে চলাই মুমিনের কর্তব্য। কেননা এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই শিরক, বিদ‘আত এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব থাকে। আর যে কোন  বিদ‘আতী প্রথা সর্বক্ষেত্রেই পরিত্যাজ্য (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।

প্রশ্ন (১১৯) : পৃথিবী ঘোরে না সূর্য ঘোরে? এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত কী?

উত্তর : পৃথিবী ও সূর্য উভয়ই ঘোরে। শুধু তা-ই নয়, আসমানে যত গ্রহ-উপগ্রহ ও নক্ষত্ররাজি আছে সবই নিজ নিজ কক্ষ পথে পরিভ্রমণ করে। আল্লাহ বলেন, বস্ত্ততঃ প্রত্যেকটিই স্ব স্ব নিরক্ষবৃত্তে সাঁতার কাটছে (ইয়াসীন ৩৬/৪০)। শায়খ আলবানী উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে পরপর তিনটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন যমীন, সূর্য ও চন্দ্র। অতঃপর বলা হয়েছে ‘প্রত্যেকটিই স্ব স্ব নিরক্ষবৃত্তে সাঁতার কাটছে’। যা প্রমাণ করে যে, পৃথিবীও সন্তরণ করছে (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর ৪৯৭/১০)। ড. ওয়াহবাতুয যুহায়লী  বলেন, সূর্য, চন্দ্র, যমীন প্রত্যেকে আকাশের নিজ কক্ষ পথে সন্তরণ করছে যেমন মাছ পানিতে সাতার কাটে (আত-তাফসীরুল মুনীর ২৩/১৭)।

প্রশ্ন (১২০) : নারী-পুরুষ মাথায় মেহেদী দেওয়া অবস্থায় ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

উত্তর : নারী-পুরুষ মাথায় মেহেদী দেওয়া অবস্থায় ছালাত আদায় করতে পারবে। কারণ মেহেদী অপবিত্র নয়। তবে ওযূ করার সময় মাথা মাসাহ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ চুল বা দাড়িতে মোটা অবস্থায় মেহেদী দেওয়া থাকলে মাসাহ সম্পন্ন হবে না। আর মাসাহ সম্পন্ন না হ’লে ছালাত হবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২২৪, ১/১৪৬; হাত্তাব, মাওয়াহিবুল জালীল ১/২৯৮, ৩০১, ২/১৫৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৬১)।

প্রশ্ন (১২১) : গ্রামে অনেকে গরু কিনে অন্যকে পালন করতে দেয়, কয়েক বছর পর তা বিক্রি করে উভয় পক্ষ লভ্যাংশ ভাগ করে নেয়। এরূপ চুক্তি জায়েয কি?

উত্তর : এই ধরনের ব্যবসায় কোন দোষ নেই। পশু কিনে পোষাণী দেওয়া এবং উভয়পক্ষের সন্তুষ্টিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এরূপ চুক্তি করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩০/২২৯; আল-ইখতিয়ারাত ১/৪৮৬)। পোষাণী দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি হ’ল চুক্তির সময় উভয়ের সম্মতিক্রমে পশুর একটা মূল্য নির্ধারণ করা এবং লালন-পালনের পর পশুটি বিক্রি হ’লে নির্ধারিত মূল্যের ওপর যে লভ্যাংশ আসবে তাতে কে কত অংশ পাবে তা শতকরা হারে নির্ধারণ করে নেওয়া। তবে পশু বাচ্চা দিলে প্রথম বাচ্চা মালিকের এবং পরবর্তী বাচ্চা বর্গাদারের, এমন শর্ত করা জায়েয হবে না (ইবনু কুদামা, মুগনী ৫/৪৪২, ইবনু তাইমিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/৪০৩, আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়াহ ১/২৬৪)।

প্রশ্ন (১২২) : মুশরিক বা হিন্দুদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে কি?

উত্তর : সাধারণভাবে অমুসলিম বা কাফির-মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয। আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে না এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে না, তাদের সাথে সদাচরণ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না’ (মুমতাহিনা ৬০/৮)। রাসূল (ছাঃ) কাফেরদের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারী এ ব্যাপারে অধ্যায় রচনা করেছেন, بَابُ قَبُولِ الهَدِيَّةِ مِنَ المُشْرِكِيْنَ ‘মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ করা অধ্যায়’ (৩/১৬৩ পৃ.; হা/২৬১৫-২৮)। তেমনিভাবে মুশরিকদেরকেও হাদিয়া প্রদান করা যাবে। ওমর (রাঃ) তাঁর একটি পোষাক মক্কায় তাঁর অমুসলিম ভাইকে হাদিয়া হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন (বুখারী হা/২৬১৯)।

তবে তাদের কোন ধর্মীয় উৎসব বা পূজা-পার্বণ উপলক্ষ্যে কোন উপহার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এতে তাদের ভ্রান্ত উৎসবের প্রতি সমর্থন করা হয় (মায়েদা ৫/২)। তবে যদি তা সমর্থনসূচক না হয় বরং প্রতিবেশীসুলভ হয়, তবে তা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন আলী (রাঃ), আয়েশা (রাঃ) প্রমুখ অনুরূপ হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৪৩৭১; বায়হাক্বী হা/১৮৮৬৫)। এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত থাকা আবশ্যক। (১) এই হাদিয়া যেন কোন হারাম দ্রব্য বা তাদের উৎসবে যবেহকৃত পশু থেকে না হয় (২) তাদের উৎসবের বিশেষ কোন প্রতীক যেমন মোমবাতি, ডিম ইত্যাদি না হয় (৩) মুশরিকদের আক্বীদা-বিশ্বাসগত ভ্রান্তি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, যাতে তাদের উৎসবের ব্যাপারে কোন ভালোবাসা বা অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি না হয় (৪) হাদিয়া গ্রহণ যেন তাদের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা থেকে না হয়; বরং তাদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হয় (ইবনু তায়মিয়াহ, ইকতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ১/২২৭, ২৫১)।    

প্রশ্ন (১২৩) : কবর পাকা করা বা কবরকে সৌন্দর্যমন্ডিত কি হারাম? যদি হারাম হয় তবে রাসূল (ছাঃ)-এর কবর পাকা ও সুসজ্জিত হওয়ার কারণ কি?

উত্তর : কবর পাকা করা ও সুসজ্জিত করা নিষেধ। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন, কবরে চুনকাম করতে, এর উপর লিখতে এবং একে পায়ে পদদলিত করতে (তিরমিযী হা/১০৫২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৭০৯)। আর এই নির্দেশের কারণে রাসূল (ছাঃ)-এর মূল কবর পাকা করা হয়নি। বরং পাকা করা হয়েছে তাঁর ঘরের দেয়াল। যেহেতু আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরকেই রাসূল (ছাঃ)-এর কবরস্থান বানানো হয়, সেহেতু এটি সরাসরি কবর নয়। আর সুসজ্জিত করার বিষয়টি পরবর্তী যুগের শাসকদের কাজ, যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩৮৮-৩৮৯; উছায়মীন, আল-কাওলুল মুফীদ ‘আলা কিতাবিত তাওহীদ ১/৩৯৮; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/১৮০-১৮১ ও ৯/৩২১)।

প্রশ্ন (১২৪) : পুরুষেরা দাড়ি ব্যতীত শরীরের অন্য স্থানে সৌন্দর্যের জন্য মেহেদী ব্যবহার করতে পারবে কি?

উত্তর : এটি জায়েয নয় (ইবনু হাজার, ফৎহুল বারী হা/৫৮৯৯-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন এক হিজড়াকে নবী (ছাঃ)-এর নিকট আনা হ’ল। তার হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙ্গানো ছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এর এ অবস্থা কেন? বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! সে নারীর বেশ ধরেছে। রাসূল (ছাঃ) তাকে নাকী‘ নামক স্থানে বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেন। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করব না? তিনি বললেন, ছালাত আদায়কারীকে হত্যা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে (আবুদাউদ হা/৪৯২৮; মিশকাত হা/৪৪৮১; হেদায়াতুর রুওয়াত হা/৪৪০৭, সনদ ছহীহ)। তাছাড়া মেহেদী এক ধরনের রঙ। আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, পুরুষদের খোশবু এমন, যাতে সুগন্ধি আছে রং নেই। আর নারীদের খোশবু এমন, যাতে রং আছে সুগন্ধি নেই (তিরমিযী হা/২৭৮৭; মিশকাত হা/৪৪৪৩)। তিনি রঙ থাকার কারণে পুরুষদের জন্য যাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৫৮৪৬; মুসলিম হা/২১০১; মিশকাত হা/৪৪৩৪)। শায়খ উছায়মীন বলেন, বিয়েতে হৌক বা অন্য সময়ে হৌক পুরুষদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা হারাম। এটি কবীরা গুনাহের শামিল। কেননা এতে নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয় (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১১/৪১৫-১৬)। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে যে কোন স্থানে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয (তিরমিযী হা/২০৫৪; ছহীহাহ হা/২০৫৯)। এছাড়া নারী-পুরুষ সবার জন্য মাথার চুল ও দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করা বিধেয় (আবুদাঊদ হা/৪২০৫; তিরমিযী হা/১৭৫৩; মিশকাত হা/৪৪৫১; ছহীহাহ হা/১৫০৯)।

প্রশ্ন (১২৫) : সালাম ফিরানোর পরে প্রথমে কোন যিকিরটি করতে হবে?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সালাম ফিরানোর পরে প্রথমে আস্তাগফিরুল্লাহ তিন বার বলতেন। ছাওবান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ছালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহু বলতেন, তারপর দো‘আ পড়তেন, আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস সালা-ম, তাবারাকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকরাম ‘হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আধার। তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত’ (মুসলিম হা/৫৯১; মিশকাত হা/৯৬১)। সেজন্য মুহাদ্দিছগণ সালাম বা‘দ ইসস্তিগফার পাঠের বিষয়ে অধ্যায় রচনা করেছেন (মুসলিম ১/৪১৪; নাসাঈ ৩/৬৮; ইবনু খুযায়মাহ ১/৩৬৩)। কখনো কখনো তিনি ‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস সালা-ম, তাবারাকতা ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকরাম’ বলে উঠে যেতেন (মুসলিম হা/৫৯২; মিশকাত হা/৯৬০)। এছাড়া ইবনু আববাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত শেষ হয়ে গেছে তা বুঝতে পারতাম তাঁর তাকবীর পাঠ শুনে (বুখারী হা/৮৪১; মুসলিম হা/৫৮৩; আহমাদ হা/৪৩৭৮)। উক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে একদল বিদ্বান মনে করেন সালাম ফিরানোর পর মুছল্লী প্রথমে তিন বার কিংবা একবার তাকবীর বা আল্লহু আকবার বলবে, অতঃপর অন্যান্য যিকির করবে (ইবনু রজব, ফাৎহুল বারী ৭/৩৯৬-৩৯৭; মির‘আত ৩/৩১৫)। যদিও ইবনু হাজার আসক্বালানী, শায়খ উছায়মীন প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন, এই তাকবীর দ্বারা উদ্দেশ্য যিকির। অর্থাৎ এই তাকবীর হবে তাহমীদ, তাসবীহ ও তাহলীলের সাথে (ফাৎহুল বারী ২/৩২৬; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৪২০)। সর্বোপরি উপরোক্ত সবগুলো যিকিরই হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। মুছল্লী যে কোন যিকির দিয়ে শুরু করতে পারে।

প্রশ্ন (১২৬) : সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে পুরুষ বা নারী তার কালো দাড়ি ও চুলে কালো ব্যতীত অন্য রং দ্বারা রঙ্গিন করতে পারবে কি?

উত্তর : কালো ব্যতীত অন্য যে কোন রঙ চুলে ব্যবহার করা জায়েয। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তা বিজাতীয়দের অনুকরণে না হয় এবং কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয় (আবুদাঊদ হা/৪০৩১; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/১৬৮)।

প্রশ্ন (১২৭) : আরব দেশে নামের সাথে পিতা এমনকি দাদার নাম যোগ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রচলন নেই। এর কারণ কি? কিভাবে নাম রাখা উত্তম?

উত্তর : ইসলামী শরী‘আতে নসবনামা বা বংশ তালিকা সংরক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে (তিরমিযী হা/১৯৭৯; মিশকাত হা/৪৯৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/২৫২০)। সেকারণ নামের শেষে পিতার নাম যুক্ত করা যায়। ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই আরব দেশগুলিতে এর প্রচলন ছিল। তবে ভারত উপমহাদেশসহ আমাদের দেশে এর প্রচলন তেমন নেই। কেউ চাইলে নিজ নামের সাথে পিতার নাম যুক্ত করতে পারে।

প্রশ্ন (১২৮) : দোকানে চাহিদা সম্পন্ন পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অল্প প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের শর্ত লাগানো হয়। যেমন ডেটল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সাথে ১০টি ডেটল সাবান ক্রয় করতে বাধ্য করা। এরূপ করা জায়েয কি?

উত্তর : শর্তসাপেক্ষে বিক্রয় জায়েয। সেক্ষেত্রে ক্রয় করা বা না করা ক্রেতার ইচ্ছাধীন। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, উছায়মীনসহ অনেক বিদ্বান এধরনের শর্তে পণ্য বিক্রয়কে জায়েয বলেছেন (আশ-শারহুল মুমতে‘ ৮/২৩৯; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৬/২)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মুসলিমগণ পরস্পরের মধ্যে যে শর্ত করবে, তা অবশ্যই পালন করতে হবে। কিন্তু যে শর্ত ও চুক্তি হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে তা জায়েয হবে না’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৯৪; তিরমিযী হা/১৩৫২; মিশকাত হা/২৯২৩)। যেহেতু এই এধরনের শর্ত হারাম নয়, অতএব এভাবে পণ্য বিক্রয় করা বৈধ। তবে সেটি যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্ত্ত হয় এবং এতে ক্রেতার উপর যুলুম চাপিয়ে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে এই ধরনের শর্তারোপ অবৈধ (বাক্বারাহ ২/২৭৯)।

প্রশ্ন (১২৯) : দ্বিতীয় বিবাহ করার সময় দ্বিতীয় স্ত্রীকে কি প্রথম স্ত্রীর সমপরিমাণ মোহরানা দিতে হবে? নাকি কম বেশী করা যাবে?

উত্তর : একাধিক স্ত্রীর মাঝে মোহরানায় প্রয়োজনে কম-বেশী হ’তে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/২১১)। তবে রাত্রিযাপন, বাসস্থান ও ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে সাধ্যমত ইনছাফ করতে হবে (নিসা ৪/৩; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩২/২৬৯; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৫১)।

প্রশ্ন (১৩০) : আমাদের সমাজে কোন মেয়েকে বিয়ে দিতে হ’লে সমাজের ৮৪টি পরিবারের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ২০ কেজি খাগসদস্যদেরকে একদিন দুপুরে আবশ্যিকভাবে খাওয়াড়াই দিতে হয়। আর কোন ছেলেকে বিবাহ করতে হ’লে ৮৪টি পরিবারের তে হয়। সামাজিক এ প্রথা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : এই ধরনের বাধ্যবাধকতা ইসলামী শরী‘আতে নেই। বরং যে বিবাহে খরচ কম হয়, সে বিবাহকে হাদীছে বরকতপূর্ণ বলা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে বিবাহ সহজে সম্পন্ন হয়, তা-ই উত্তম বিবাহ (আবুদাউদ হা/২১১৭; ছহীহাহ হা/১৮৪২)। যে নারীর বিবাহের মোহর কম, সে বিবাহ বরকতপূর্ণ (আহমাদ হা/২৪৫২২; ইরওয়া হা/১৯২৮, সনদ হাসান)। তবে শারঈ সীমারেখা বজায় রেখে সামর্থ্য থাকলে যে কেউ এমন সামাজিক অনুষ্ঠান করতে পারে। অতএব মুত্তাকী ও ঈমানদারদের জন্য বিবাহ ও মোহরানাসহ সকল ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় থেকে বিরত থাকা উচিৎ (আল-ফুরক্বান ২৫/৬৭)।

প্রশ্ন (১৩১) : কুরআনের ভাস্কর্য নির্মাণ জায়েয হবে কি? ছওয়াবের উদ্দেশ্য হোক বা সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে হোক উভয়টিই কি নাজায়েয?

উত্তর : প্রাণী ব্যতীত যেকোন জড়বস্ত্তর ভাস্কর্য নির্মাণ করা যায়। কারণ রাসূল (ছাঃ) কেবল প্রাণীর ছবি নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। তবে পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ায় তা সর্বাধিক সম্মানজনক। একে ভাস্কর্য হিসাবে নির্মাণ করলে এর অবমাননা হ’তে পারে। সেজন্য এরূপ ভাষ্কর্য নির্মাণ না করাই সমীচীন। তবে কুরআনের ডামি বা বাহ্যিক রূপের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হ’লে তাতে কোন দোষ নেই (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৬/৫০, ৭/৩০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৩৮৫)।

প্রশ্ন (১৩২) : সকালে সূরা ইয়াসীন এবং সন্ধ্যায় সূরা ওয়াক্বি‘আহ পাঠ করলে সচ্ছলতা আসে কথাটি সত্যতা আছে কি?

উত্তর : সূরা ইয়াসীন সম্পর্কে উক্ত মর্মে কোন হাদীছ বা আছার বর্ণিত হয়নি। বরং একজন তাবেঈ থেকে এমন একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, যার সনদ ছহীহ নয় (মুহাম্মাদ বিন আমর, আহাদীছুন ওয়া মারবিয়াতুন ফিল মীযান ৪/১১৩, ৭৫ পৃ.)। আর সূরা ওয়াক্বি‘আহ সম্পর্কেও অনুরূপ কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলো যঈফ (মিশকাত হা/২১৮১; যঈফাহ হা/২৮৯; যঈফুল জামে‘ হা/৫৭৭৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১৪২)। অতএব ছহীহ সনদে প্রমাণিত না হওয়ায় এইসব ফযীলতের বিবরণ গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশ্ন (১৩৩) : খাবার দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলমানদের বা অমুসলিমদের অগ্রাধিকার দিতে হবে এরূপ কোন শারঈ নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর : খানাপিনার দাওয়াতে মুমিন ও মুত্তাকীরা অগ্রাধিকার পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না এবং তোমার খাদ্য আল্লাহ্ভীরু লোক ছাড়া যেন অন্য কেউ না খায় (আবুদাঊদ হা/৪৮৩২; মিশকাত হা/৫০১৮; ছহীহুত তারগীব হা/৩০৩৬)। অত্র হাদীছে মুত্তাক্বী ব্যক্তিকে খাবার খাওয়ানোর কথা বললেও বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, যিনি খাবার খাওয়াবেন তাকেও মুত্তাক্বী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কারণ মুত্তাক্বী ব্যক্তির বন্ধুত্ব মুত্তাক্বী ছাড়া অন্য কারো সাথে হ’তে পারে না। তবে এই নীতি অভাবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা মুসলিম হোক, অমুসলিম হোক, অভাবীদেরকে সর্বদা অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে’ (দাহর ৭৬/৮)। এ আয়াতটি প্রমাণ করে যে, কাফের- মুশরিক বন্দীদের খাবার খাওয়ানোকেও আল্লাহ প্রশংসা করেছেন। সুতরাং অমুসলিমরা অভাবী হ’লে প্রয়োজনে তাদেরকে খাওয়ানো অগ্রাধিকার পেতে পারে (মিরক্বাত ৮/৩১৪১; তোহফাতুল আহওয়াযী ৭/৬৪; আওনুল মা‘বূদ ১৩/১২৩)।

প্রশ্ন (১৩৪) : আমাদের বিবাহের বয়স প্রায় এক দশক পার হয়েছে। আমাদের দু’টি মেয়েও আছে। আমার এক পা কাটা থাকায় আমি চলা-ফেরা করতে পারি না। এই সুবাদে আমার স্ত্রী আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে এমনকি শরীরে হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। সে ছালাত আদায় করে না, পর্দা করে না। উপরন্তু যখন যেখানে ইচ্ছা চলে যায়। আমার সেবা করবে বলে আমার দুই কাঠা জমি লিখে নিয়েছে। কিন্তু সেবা করে না। বরং আমার কাছে বারবার তালাক চায়। আড়াই বছর থেকে শারীরিক সম্পর্ক নেই। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী?

উত্তর : একজন আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য হ’ল স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করা এবং তার আনুগত্য করা। জনৈক মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে কথা বলা সম্পন্ন করলে তিনি তাকে বললেন, হে অমুক! তোমার স্বামী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? সে বলল, আমি তার আনুগত্য ও খেদমতে কমতি করি না। তবে যেটা করতে অসমর্থ হই তা ব্যতীত। রাসূল (ছাঃ) তখন বললেন, তুমি খেয়াল রেখ যে, তুমি তার হৃদয়ের কোথায় অবস্থান করছ? কেননা সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম (আহমাদ হা/১৯০২৫; ছহীহাহ হা/২৬১২)।

অন্যদিকে বিনা কারণে তালাক চাওয়া হারাম। কোন স্ত্রী এরূপ করলে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে (আবুদাঊদ হা/২২২৬ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩২৭৯)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন, যারা স্বামী থেকে পৃথক হ’তে চায় এবং যারা খোলা করতে চায়, তারা মুনাফিক’ (নাসাঈ হা/২৪৬১, মিশকাত হা/৩২৯০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর হক আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর হক আদায় করতে সক্ষম হবে না (ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৯৫)।

অতএব স্ত্রীকে সাধ্যমত নছীহত করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত কর। কেননা নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তা সব সময় বাঁকাই থাকবে। অতএব নারীদের নছীহত করতে থাক’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮)। আর নিরূপায় অবস্থায় উপনীত হ’লে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।

প্রশ্ন (১৩৫) : দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু চিকিৎসক দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। এক্ষণে আমার করণীয় কী?

উত্তর : দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা ছালাতের অন্যতম ফরয রুকন। কেউ তা পরিত্যাগ করলে ছালাত হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াও’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)। ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ছালাত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করো। যদি দাঁড়াতে না পার তাহ’লে বসে’ (বুখারী হা/১১১৭; মিশকাত হা/১২৪৮)। এক্ষণে কোন মুসলিম বিশ্বস্ত চিকিৎসক যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে বসে ছালাত আদায় করার পরামর্শ দেন, তাহ’লে বসে ছালাত আদায় করা জায়েয হবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৪৬১)। উল্লেখ্য যে, সক্ষম ব্যক্তি ফরয ব্যতীত যেকোন নফল বা সুন্নাত ছালাত বসে আদায় করতে পারবে। তবে সে অর্ধেক ছওয়াব পাবে (বুখারী হা/১১১৫; মুসলিম হা/৭৩৫; মিশকাত হা/১২৫২; মুগনী ২/১০৫)।

প্রশ্ন (১৩৬) : মাইয়েতকে গোসল করানো ব্যক্তি বা কবর খননকারীকে ওয়ারিছদের পক্ষ থেকে খাওয়ানো যাবে কী?

উত্তর : মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে এদেরকে বিশেষভাবে কিংবা পারিশ্রমিক হিসাবে খাওয়ানো সমীচীন নয়। কারণ যারা উপরোক্ত কাজগুলো করে তারা ছওয়াবের আশায় করে। তবে প্রতিবেশীরা খাওয়াতে পারে (তিরমিযী হা/৯৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/১০১৫; মিশকাত হা/১৭৩৯)। উল্লেখ্য যে, মাইয়েতকে গোসল করানো বা মাইয়েতের জন্য কবর খনন করা স্বেচ্ছাসেবামূলক ছওয়াবের কাজ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’ (বায়হাক্বী ৩/৩৯৫; ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো; অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখল, আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহকে গোপন রাখবেন (ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪০৩; ছহীহাহ হা/২৩৫৩)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তার চল্লিশটি কবীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৪০৬৮, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (১৩৭) : জনৈকা নারী তিন তালাক প্রাপ্তা হওয়ার পর দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে। কিন্তু কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্বামীকে ছেড়ে তৃতীয় স্বামী গ্রহণ করে। কিছুদিন পর তৃতীয় বিবাহও ভেঙ্গে যায়। উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় স্বামী আনুষ্ঠানিক কোন তালাক দেয়নি। তবে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হ’লে সে অস্বীকৃতি জানায় এবং অন্যত্র বিবাহ হ’লে তার কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে। এক্ষণে সে প্রথম স্বামীর সাথে নতুনভাবে সংসার করতে পারবে কী?

উত্তর : দ্বিতীয় স্বামীর পক্ষ থেকে উক্ত নারীর অন্যত্র বিবাহের ব্যাপারে কোন আপত্তি না থাকাটা তালাকের শামিল। তালাকের নিয়তসহ এরূপ ইঙ্গিতবহ বাক্য উল্লেখ করে তালাক প্রদান করাকে ‘কেনায়া তালাক’ বলে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া ৩২/৩০২)। আর যেহেতু প্রথম স্বামী তিন তালাকের মাধ্যমে স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল এবং একাধিকবার অন্যত্র বিবাহ হয়েছে, অতএব সে এখন নতুন বিবাহ ও মোহরের মাধ্যমে প্রথম স্বামীর সাথে সংসার শুরু করতে পারবে (বাক্বারাহ ২/২৩০)।

প্রশ্ন (১৩৮) : জুম‘আ মসজিদে কোন উপলক্ষ্য ছাড়া মুছল্লীদের মিষ্টিমুখ করার জন্য তোহফা প্রদান করা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদে ছালাত শেষে মুছল্লীদের জন্য মিষ্টি মুখ করা বা খাবারের ব্যবস্থা করা জায়েয। তবে নিয়মিত করা সমীচীন নয়। কারণ এতে মানুষ মসজিদকে খাবারের স্থান মনে করতে পারে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/২, টেপ নম্বর ৩৪৮)। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমরা জুম‘আর দিনে আনন্দিত হ’তাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হ’ল, কেন? তিনি বললেন, আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন একজনকে ‘বুযাআ’ নামক খেজুর বাগানে পাঠাত। সে বীট চিনির শিকড় আনত এবং তা একটি ডেগচিতে ফেলে তাতে কিছুটা যবের দানা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুটত। ফলে তাতে এক প্রকার খাবার তৈরী হ’ত। এরপর আমরা যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করত। আমরা এজন্য খুশী হ’তাম। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, আমরা জুম‘আর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম’ (বুখারী হা/৬২৪৮; বায়হাক্বী হা/৫৯৪৯; শু‘আবুল ঈমান হা/৮৫০৪)। মসজিদের ভিতরেও এই খাবার খাওয়া জায়েয। আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ ইবনে জাযই আয-যুবাইদী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মসজিদে বসে রুটি ও গোশত খেতাম (ইবনু মাজাহ হা/৩৩০০; ছহীহাহ হা/২১১৬-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; তামামুল মিন্নাহ ১/২৯৫)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ই‘তিকাফকারী সহ যে কারো জন্য মসজিদে খাদ্য গ্রহণে দোষ নেই। আহলে ছুফফার সদস্যরা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতেন। তবে মসজিদের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৪৩৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/২৯০)। এক্ষণে মসজিদে দেওয়া তোহফা ধনী-গরীব সবাই গ্রহণ করতে পারে যদি দানকারীর নিয়ত সবাইকে খাওয়ানো হয়। কারণ সাধারণ ছাদাক্বা ধনী-গরীব সবার জন্য জায়েয। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য নেই (বায়হাক্বী হা/১২০৩৯; মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১২৩৯০; নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৩৮)। আর যদি মানতের খাদ্য হয় এবং কেবল গরীবদের খাওয়ানোর নিয়ত হয়, তাহ’লে তাতে ধনীরা অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আর যদি সবাইকে খাওয়ানো উদ্দেশ্য হয়, তাহ’লে তা ধনীরাও গ্রহণ করতে পারবেন (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৬/১১৭)।

প্রশ্ন (১৩৯) : আযানের উত্তর দেওয়ার বিধান কি? এসময় গাড়ির হর্ণ দেওয়া বা মাইকে বক্তব্য দেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : আযানের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৯৬; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ৩৪০ পৃ.)। এ সময়ে মাইক বাজানো বা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থেকে আযানের জওয়াব দেওয়া উত্তম (সামারকান্দী, তোহফাতুল ফুকাহা ১/১১৭)। তবে একই ওয়াক্তে একাধিকবার আযান হ’লে একটি আযানের জওয়াব দিলেই ফযীলত অর্জিত হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে আযানের জওয়াব দিবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে (নাসাঈ হা/৬৭৪; মিশকাত হা/৬৭৬; ছহীহুত তারগীব হা/২৪৬)। অতএব অতীব ফযীলতপূর্ণ হওয়ায় আযানের জওয়াব দান করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কর্তব্য। আর গাড়িতে হর্ণ বাজানো ইত্যাদি বিষয় প্রয়োজনে করা যাবে।

প্রশ্ন (১৪০) : ছালাতরত অবস্থায় হাঁচি হ’লে আলহামদুলিল্লাহ বলা বা তার জবাব দেওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় কারো হাঁচি হ’লে সে নীরবে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে। তবে এর জওয়াব কারো দিতে হবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৯/৩৪৮)। জনৈক ছাহাবী ছালাতে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে কিছু না বলে যে জওয়াব দিয়েছিল তাকে জওয়াব দিতে নিষেধ করেন (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৮০২০)। অতএব ছালাতে কারো হাঁচি হ’লে আলহামদুলিল্লাহ বলবে। কিন্তু কোন জওয়াব দিবে না (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ৮/২ নম্বর ২৭২)।

প্রশ্ন (১৪১) : মোহর হিসাবে আমার স্বামী আমাকে একটি গহনা প্রদান করেন। কয়েক বছর পর আমার শাশুড়ী উক্ত গহনা দাবী করে বলেন, আমি আমার ছেলের স্ত্রীকে সাময়িকভাবে প্রদান করেছিলাম। এক্ষণে তাঁকে কি উক্ত গহনা ফিরিয়ে দিতে হবে?

উত্তর : মোহর হিসাবে প্রদানকৃত গহনা শাশুড়ী ফেরত পাবে না। কারণ এটি ছেলেকে দান করা হয়নি বরং ছেলের স্ত্রীকে মোহর হিসাবে দেওয়া হয়েছে, যা তার অধিকার। তাছাড়া পিতা-মাতার পক্ষ থেকে সন্তানকে দানকৃত বস্ত্ত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চারটি শর্ত প্রযোজ্য। (১) দানকৃত বস্ত্ত সন্তানের মালিকানায় থাকা, (২) বস্ত্তটি পরিবর্তন না হওয়া, ৩. অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা না থাকা, (৪) এমন বৃদ্ধি না পাওয়া যা তার মৌলিকত্বকে বিলুপ্ত করে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/৫৬-৫৮)। এক্ষণে যেহেতু উক্ত গহনা সন্তানের মালিকানায় নেই, সেজন্য শাশুড়ী ফেরত চাইতে পারবে না বা চাইলেও ছেলের স্ত্রী দিতে বাধ্য নয়। তবে সন্তানের কর্তব্য হ’ল সামর্থ্য থাকলে মায়ের সন্তুষ্টির জন্য নিজ সম্পদ থেকে অনুরূপ কিছু তাকে প্রদান করা।

প্রশ্ন (১৪২) : সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করে নাম রাখা হয়েছে। নামের বিকৃতি থেকে রক্ষা পেতে নাম পরিবর্তন করলে পুনরায় আক্বীক্বা দেওয়া লাগবে কী?

উত্তর :  নামের অর্থ খারাপ বা অর্থ বিকৃতির কারণে নাম পরিবর্তন করা জায়েয। এটি কোন কোন সময় মুস্তাহাব। আবার কোন কোন সময় ওয়াজিব হয়ে যায় (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৮/২৩৯)। যেমন জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল আব্দুল হাজার (পাথরের দাস)। রাসূল (ছাঃ) তার নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন আব্দুল্লাহ (বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮১১; ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৯০১)। আবার কোন কোন নাম আত্মপ্রশংসামূলক বা বাগাড়ম্বরপূর্ণ হওয়ায় রাসূল (ছাঃ) তার নাম পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করেন (বুখারী হা/৬১৯২; মুসলিম হা/২১৪১)। তবে নাম পরিবর্তনের জন্য দ্বিতীয়বার আক্বীক্বা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ রাসূল (ছাঃ) বহু মানুষের নাম পরিবর্তন করেছিলেন কিন্তু কাউকে আক্বীক্বা দিতে বলেননি (ইবনু জাবরীন, ফাতাওয়া ফী আহকামিল মাওলূদ প্রশ্ন ৬৭)।

প্রশ্ন (১৪৩) : পুকুরে মাছের চাষ করে প্রতি বছর দশ-বারো লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। এক্ষণে এর যাকাত কিভাবে আদায় করতে হবে। পুকুরে স্থিত মাছের মূল্য হিসাবে না আয়কৃত অর্থের মধ্যে যতটুকু সঞ্চয় করা হয় তার উপর?

উত্তর : পুকুরে চাষকৃত মাছের ওশর বা যাকাত দিতে হবে না। কারণ মাছের কোন ওশর বা যাকাত নেই (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৩/৫৬; ইবনু হাযম, মারাতিবুল ইজমা‘ ১/৩৯; কাসেম বিন সাল্লাম, আল-আমওয়াল ১/৪৩৪)। তবে মাছের চাষ যদি ব্যবসায় পরিণত হয়, তাহ’লে বছর শেষে মূলধন ও লভ্যাংশ হিসাব করে নিছাব পরিমাণ অর্থ হ’লে তা থেকে শতকরা ২.৫ টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ফৎওয়া ক্রমিক ১৫৪২৯)।

প্রশ্ন (১৪৪) : নারীরা নিজ গৃহের কাজ নিজ হাতে সম্পন্ন করলে তাতেই তারা জিহাদের সমতুল্য নেকী পাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছ কি ছহীহ?

উত্তর : নারীরা বাড়িতে স্বামীর খেদমতের সাথে গৃহস্থালীর কাজগুলো করলে সে জিহাদের সমপরিমাণ ছওয়াব পাবে বলে ‘হাসান’ পর্যায়ের একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ইবনু আবীদ-দুনিয়া, আন-নাফাকাতু আলাল ইয়াল হা/৫২৮; মেদারাতুন নাস হা/১৭৩; আমালী ইবনু বুশরান হা/১১, সনদ হাসান, ড. নাজম আব্দুর রহমান খালফ)। তবে একই মর্মে মুসনাদে বাযযারে বর্ণিত হাদীছটির সনদ যঈফ (যঈফাহ হা/৫৩৪০; যঈফুত তারগীব হা/১২১৩)।  এছাড়াও হজ্জ ও ওমরা পালন করাকেও নারীদের জন্য জিহাদের সমতুল্য ইবাদত হিসাবে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (ইবনু মাজাহ হা/২৯০১; মিশকাত হা/২৫৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/১০৯৯)।

প্রশ্ন (১৪৫) : স্বামীর চাচা বা মামা তথা চাচা শ্বশুর বা মামা শ্বশুর কি স্ত্রীর মাহরাম হিসাবে গণ্য হবেন। তাদের সামনে কি পর্দা করতে হবে?

উত্তর : স্বামীর চাচা বা মামা তথা চাচা শ্বশুর বা মামা শ্বশুর স্ত্রীর মাহরাম নয়। সেজন্য স্ত্রীকে তাদের থেকে যথাযথভাবে শারঈ পর্দা করতে হবে (বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১৫৫০/০৩)। কারণ কুরআনে যে মাহরামদের কথা বলা হয়েছে এরা তাদের মধ্যে নয় (নিসা ৪/২৪)।

প্রশ্ন (১৪৬) : জনৈক যুবক দাদীর কাছে মানুষ হওয়ায় শিশুকালে নিয়মিতভাবে দাদীর দুধ পান করেছে। এক্ষণে সে তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে কি?

উত্তর : দাদীর দুধ পান করায় চাচা দুধ ভাই হিসাবে গণ্য হবে। ফলে দুধ ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করা হারাম (নিসা ৪/২৩)। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর চাচা হামযাহ (রাঃ) একই মায়ের দুধপান করেছিলেন। সেকারণ হামযার মেয়ের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হ’লে তিনি বলেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা সে আমার দুধ ভাইয়ের মেয়ে। বংশীয় সূত্রে যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম, দুগ্ধ পান সূত্রেও সেসকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম (বুখারী হা/২৬৪৫; মুসলিম হা/১৪৪৭; মিশকাত হা/৩১৬১)।

প্রশ্ন (১৪৭) : তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদ ভুলবশত বাদ পড়ে গেলে করণীয় কি? সাহু সিজদা দিলে যথেষ্ট হবে, না পুনরায় এক রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে?

উত্তর : তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদ ছুটে গেলে সালামের পূর্বে সহো সিজদা দিলেই যথেষ্ট হবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৮/২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯/৩৭৪)। আব্দুল্লাহ বিন বুহায়না (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাতে দ্বিতীয় রাক‘আতে না বসেই দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর সালামের পূর্বে দু’টি সহো সিজদা দিলেন (বুখারী হা/৮২৯; মিশকাত হা/১০১৮)।

প্রশ্ন (১৪৮) : ইমাম মাহদী আগমনের পূর্বে তিন বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে মর্মে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়েছে কী?

উত্তর : বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, তখন মানুষ চরমভাবে অন্নকষ্ট ভোগ করবে। প্রথম বছর আল্লাহ তা‘আলা আসমানকে তিন ভাগের এক ভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নির্দেশ দিবেন এবং যমীনকে নির্দেশ দিলে তা এক-তৃতীয়াংশ ফসল কম উৎপাদন করবে। এরপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নির্দেশ দিলে তা দু’-তৃতীয়াংশ কম বৃষ্টি বর্ষণ করবে এবং যমীনকে হুকুম দিলে তাও দুই-তৃতীয়াংশ কম ফসল উৎপন্ন করবে। এরপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশকে তৃতীয় বছরে একই নির্দেশ দিলে তা সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে এক ফোঁটা বৃষ্টিও বর্ষিত হবে না। আর তিনি যমীনকে নির্দেশ দিলে তা শস্য উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, কোন সবজি অবশিষ্ট থাকবে না, বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যা চাইবেন। জিজ্ঞেস করা হ’ল, এ সময় লোকেরা কিরূপে বেঁচে থাকবে? তিনি বলেন, যারা তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলতে থাকবে এগুলো তাদের খাদ্যনালিতে প্রবাহিত করা হবে (ইবনু মাজাহ হা/৪০৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৭৫; কিছ্ছাতুল মাসীহিদ-দাজ্জাল ৪৫,৩৭,৩৮; ইছাম মূসা হাদী, ছহীহ আশরাতিস সা‘আত ১/১৩১)।

প্রশ্ন (১৪৯) : সকল নবীর নামের শেষে ‘আলাইহিস সালাম’ এবং আমাদের নবীর নামের শেষে ‘ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা হয়। এর কারণ কি? এ মর্মে কোন দলীল আছে কি? ছাহাবায়ে কেরাম এভাবে ব্যবহার করতেন কি?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলা ছালাত ও সালাম উভয়টি প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেজন্য নবী (ছাঃ)-এর নামের শেষে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলতে হয় (আহযাব ৩৩/৫৬)। অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রে কেবল সালাম শব্দের ব্যবহার করেছেন (ছাফফাত ৩৭/১০৯,১২০, ১৩০)। তাছাড়া সালাম শব্দটি মৃত ব্যক্তিদের সম্বোধনের জন্য নির্ধারিত। এজন্য নবী করীম (ছাঃ) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলসহ সকল মৃতদের জন্য ‘সালাম’ শব্দ ব্যবহার করতেন। তাই পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের নামের শেষে ‘আলাইহিস-সালাম’ ব্যবহার করতে হয় (আবুদাঊদ হা/৫২০৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪০২; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ২/৩৮৩-৮৪; তোহফা ৭/৪২০)। অর্থাৎ মৃতদের ক্ষেত্রে ‘আলায়কা’ প্রথমে ও জীবিতদের ক্ষেত্রে ‘সালাম’ প্রথমে। এক্ষণে পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের ক্ষেত্রেও ‘আলাইহিছ ছালাতু ওয়াস সালাম’ বলা জায়েয। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের জন্য ছালাত তথা দরূদ পাঠ করো। কেননা তারা আমার মতোই প্রেরিত হয়েছিলেন (শু‘আবুল ঈমান হা/১৩০; ছহীহাহ হা/২৯৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪৮২)। অর্থাৎ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ক্ষেত্রে ‘ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলতে হবে এবং অন্যান্য নবী-রাসূলের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিস সালাম’ কিংবা ‘আলাইহিছ ছালাতু ওয়া সাল্লাম’ বলতে হবে (ইবনুল ক্বাইয়িম, জালাউল আফহাম ১/৪৬৩)।

প্রশ্ন (১৫০) : জিন জাতির ইবাদতের ধরণ কি? তাদের উপরেও কি ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ ফরয করা হয়েছে? তাদের জন্য কি কুরআনের মতো কোন ধর্মগ্রন্থ আছে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : জিনদের ইবাদতের ধরণ মানুষের ইবাদতের মতোই। এ ব্যাপারে কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে। তারা খায়, কিন্তু কিভাবে, কোথায় বা কখন খায় তা আমাদের জানানো হয়নি। অনুরূপ ইবাদত পালনের ক্ষেত্রেও আমাদের মতোই তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও ইনসানকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষ ও জিন দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’ (সাজদাহ ৩২/১৩)। অতএব জিনদের অপরাধীদের কবরেও শাস্তি হবে। অপরদিকে জিনেরাও প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা প্রাণী জাতি সম্পর্কে বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে’ (আনকাবূত ২৯/৫৭)। আমাদের কুরআন ও হাদীছই তাদের ধর্ম গ্রন্থ। কারণ তারা ইসলাম শেখার জন্য মহানবী (ছাঃ)-এর নিকট এসেছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা যখনই হেদায়াতের বাণী শুনলাম, তখনই তাতে ঈমান আনলাম। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সে কোন ক্ষতি বা অন্যায়ের আশংকা করে না’। ‘আর (কুরআন শোনার পরেও) আমাদের মধ্যে কিছু রয়েছি মুসলমান ও কিছু রয়েছি কাফের। তবে যে ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেছে, সে ব্যক্তি মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে’। ‘পক্ষান্তরে যারা কাফের, তারা তো জাহান্নামেরই ইন্ধন’। ‘(আল্লাহ বলেন,) যদি তারা ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহ’লে আমরা তাদেরকে প্রচুর বারিবর্ষণে সিক্ত করতাম’। ‘যাতে আমরা তাদেরকে এর দ্বারা পরীক্ষা করতে পারি। কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের স্মরণ থেকে বিমুখ হবে, তিনি তাকে কঠিন শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করাবেন’।... ‘কেবল আল্লাহর পক্ষ হ’তে তাঁর বাণী ও রিসালাত পৌঁছে দেওয়ার  মাধ্যমেই  আমি বাঁচতে পারি। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (জিন ৭২/১৩-১৭ ও ২৩)। অতএব মানব জাতির জন্য নির্ধারিত শরী‘আতই জিন জাতির শরী‘আত।

প্রশ্ন (১৫১) : নারীরা বোরকার নীচে চুল উঁচু করে বাঁধতে পারবে কি?

উত্তর : কাপড়ের নীচেও নারীদের জন্য চুল এমন উঁচু করে বেণী করা সমীচীন নয়, যা বাইরে থেকে প্রকাশ পায়। কারণ এতে শারঈ পর্দা বিনষ্ট হয়। বেপর্দা নারীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, জাহান্নামবাসী দু’ধরনের লোক এমন আছে যাদের আমি (এখনো) দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকদের পিটাবে। আর এক দল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্র, যারা অন্যের প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারী। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কূঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার খুশবুও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে তার খুশবু পাওয়া যায় (মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪)। অতএব নারীরা এমনভাবে চুল উঁচু করে বেণী বাঁধবে না, যা পরপুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/২৮২)।

প্রশ্ন (১৫২) : হাঁস-মুরগীর গিলা ও গরু-ছাগলের ভুড়ি খাওয়া জায়েয হবে কি? ছাহাবায়ে কেরামের যুগে এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় কি?

উত্তর : যেকোন হালাল প্রাণীর প্রবহমান রক্ত ব্যতীত দেহের সকল অংশ খাওয়া হালাল (আত-তাজ ওয়াল ইকলীল ১/১২৪)। সেটি গোশত, চামড়া, হাড়, নাড়ি বা গিলা হ’তে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি  বলে দাও, আমার নিকট যেসব বিধান অহি করা হয়েছে, সেখানে ভক্ষণকারীর জন্য আমি কোন খাদ্য হারাম পাইনি যা সে ভক্ষণ করে, কেবল মৃত প্রাণী, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের মাংস ব্যতীত’ (আন‘আম ৬/১৪৫)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের জন্য দু’টি রক্ত হালাল করা হয়েছে। তা হ’ল কলিজা ও প্লীহা’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৩১৪; মিশকাত হা/৪২৩২; ছহীহাহ হা/১১১৮)। এক্ষণে ছাহাবীগণের এগুলো খাওয়া বা না খাওয়ার ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে বর্ণনা না পাওয়াটা সেগুলোকে হারাম করে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা যবেহকৃত প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত ব্যতীত সবগুলো হালাল ঘোষণা করেছেন (আন‘আম ৬/১৪৫)।

প্রশ্ন (১৫৩) : আমার প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ খামার আছে। সেখানে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের গরু আছে। কিন্তু এ থেকে আয়ের পরিমাণ অনেক কম। এক্ষণে আমি যাকাত বের করব কিভাবে?

উত্তর : শরী‘আতে নির্ধারিত যাকাত রয়েছে কেবল সাএমা বা চারণভূমিতে বিচরণশীল পশুর জন্য। গৃহপালিত পশুর কোন যাকাত নেই (বুখারী হা/১৪৫৪; তিরমিযী হা/৬২২; ইবনু মাজাহ হা/১৮০৪; নাসাঈ হা/২৪৪৪; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/৩২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২০৫)। তবে যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে পশু পালন করা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সম্পদ হিসাবে বছরান্তে পশুর মোট মূল্য ও লভ্যাংশের উপর নির্ধারিত হারে যাকাত বের করতে হবে, যদি তা নিছাব পরিমাণ হয়।

প্রশ্ন (১৫৪) : মুসলিম নারীর অলংকার পরার জন্য নাক, কান ফোড়ানো বা আফ্রিকানদের মত ঠোট ফোড়ানো শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মহিলাদের নাক-কান ফোড়ানো জায়েয। আরবে যে প্রথাগুলো পূর্ব থেকে চলে আসছিল, সেগুলো রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেননি। জাবের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ঈদের ছালাত আদায় করেছি, খুৎবার পূর্বে তিনি বিনা আযান ও ইক্বামতে ছালাত আদায় করেছেন। অতঃপর পুরুষদের উদ্দেশ্যে খুৎবা প্রদানের পর মহিলাদের নিকটে গিয়েও ওয়ায-নছীহত করেছেন। তাদেরকে ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিলে তারা তাদের কানের দুল ও গলার হার বেলাল (রাঃ)-এর কাপড়ে জমা দিয়েছেন (বুখারী হা/৫২৩৯; মুসলিম হা/৮৮৪; মিশকাত হা/১৪২৯)। তবে ঠোঁট, ভ্রূসহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চামড়া ফুড়ে যে অস্বাভাবিক ও বিকৃত সৌন্দর্যচর্চা করা হয়, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং তাক্বওয়া পরিপন্থী। এসব কর্ম থেকে বিরত থাকা কর্তব্য (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/৩৬, ২৫/৫৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১৩৭; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৯/২১৬; ছালেহ ফাওযান, আল মুনতাকা ৩/৩২৪)।

প্রশ্ন (১৫৫) : বাসা থেকে মসজিদ ৫-৬ মিনিটের পথ। আযান শোনা যায়। তারপরও কেউ যদি সব ওয়াক্তের ছালাত বাড়িতে আদায় করে, তার ছালাত কবুল হবে কি?

উত্তর : জামা‘আতে ছালাত আদায় করা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ওয়াজিব। কেউ যদি আযান শোনার পরেও ওযর ছাড়া বাড়িতে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে সে গুনাহগার হবে। রাসূল (ছাঃ) অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতূমকেও মসজিদে এসে জামা‘আতে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন (নাসাঈ হা/৮৫০; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৯)। এমনকি তিনি বিনা ওযরে বাড়িতে ছালাত আদায়কারীদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনেছে, অথচ জামা‘আতে হাযির হয়নি, তার ছালাত নেই; যদি তার কোন গ্রহণীয় ওযর না থাকে’ (দারাকুৎনী হা/১৫৫৫; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)। অতএব বাড়িতে ছালাত আদায় করলে ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। তবে সে ওয়াজিব পরিত্যাগ করার জন্য গুনাহগার হবে (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৫/৭০)।

প্রশ্ন (১৫৬) : ফরয ছাদাক্বা তথা যাকাত কি প্রকাশ্যে দান করা উত্তম না গোপনে?

উত্তর : ফরয ছাদাক্বা বা যাকাতের মাল প্রকাশ্যে দান করা উত্তম। কেননা এতে মানুষের মধ্যে যাকাতদাতার প্রতি সন্দেহ বা কুধারণা দূর হবে। যেমনটি ফরয ছালাত জামাআ‘তে বা প্রকাশ্যে পড়া হয় (নববী, আল-মাজমু‘ ৬/২২৮; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৬/১১৭)। তবে নফল ছাদাক্বা বা সাধারণ দান গোপনে করা উত্তম। যেমন আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে কর ও অভাবীদের প্রদান কর, তবে তোমাদের জন্য তা আরও উত্তম (বাক্বারাহ ২/২৭১)। এর ব্যাখ্যায় রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গোপনে ছাদাক্বা করল এমনভাবে যে তার ডান হাত যা ব্যয় করেছে বাম হাত তা জানতে পারেনি (বুখারী ৫/৩৮২)। একটি হাদীছে  বলা হয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন সাত শ্রেণির মানুষ আরশের ছায়াতলে অবস্থান করবে। তার মধ্যে একজন হ’ল এমন ব্যক্তি যে ডান হাতে দান করলে বাম হাত বুঝতে পারে না সে কি দান করেছে (বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১)। অন্য একটি হাদীছে এসেছে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধকে ঠান্ডা করে দেয় (ছহীহাহ হা/১৯০৮)।

প্রশ্ন (১৫৭) : বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা নেওয়া হয়। তারপর কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হয়। অন্যেরা বঞ্চিত হয়। এটা কি জুয়া হিসাবে গণ্য হবে না?

উত্তর : বৈধ কাজে একজন কিংবা প্রতিজন প্রতিযোগীর নিকট থেকে অর্থ নিয়ে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করায় কোন বাধা নেই। যেমন কোন ইসলামী জ্ঞানের প্রতিযোগিতা (ইবনু ক্বাইয়িম, আল-ফুরুসিয়া ৩১৮ পৃ.; মারদাভী, আল-ইনছাফ ৬/৯১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/১৭১, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ২৬/৫৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৫/১৭৯)। কেননা এতে উদ্দেশ্য মূলতঃ পুরস্কার বা অর্থোপার্জন থাকে না। বরং মূল উদ্দেশ্য হয় ইবাদত ও নেকীর কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা। আর পুরস্কার থাকে তার অনুগামী। সুতরাং এতে জুয়ার কোন প্রসঙ্গ নেই (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/১০৮, ১৫/১৮৯; ফাতাওয়া ইবনু জিবরীন ২২/৬৫; বিস্তারিত খালিদ বিন আলী রচিত ‘আহকামুল জাওয়ায়েয ওয়াল মুসাবিকাত’ দ্রষ্টব্য)।

প্রশ্ন (১৫৮) : মহিলারা নিজ বাড়ির বাইরে অন্যের বাড়িতে গিয়ে তা‘লীমী বৈঠক করতে পারবে কী?

উত্তর : শারঈ পর্দা, নিরাপত্তা ও অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে মহিলাদের জন্য নিজের বাড়িতে কিংবা অন্যত্র দ্বীনী শিক্ষা প্রদানে কোন বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যখন কোন কওম কোন গৃহে বসে, অতঃপর কুরআন তেলাওয়াত করে এবং তা পর্যালোচনা করে, সেখানে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রশান্তি নাযিল হয় ও ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে... (মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪)। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎকাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে’ (তওবা ৯/৭১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হ’লেও তোমরা তা অন্যকে পৌঁছে দাও (বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮)। এই আদেশ মুমিন নারী ও পুরুষ সবার জন্য সমান।

প্রশ্ন (১৫৯) : আমি গর্ভবতী। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় রামাযান মাসের শেষের দিকে। চিকিৎসকের পরামর্শ এবার ছিয়াম পালন করা যাবে না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?

উত্তর : যে সকল গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিণী মহিলা ছিয়াম পালনে শিশুর ক্ষতির আশংকা করে, তারা রামাযানে ছিয়াম ছেড়ে দিবে এবং পরবর্তীতে ক্বাযা আদায় করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরের উপর থেকে রহিত করে দিয়েছেন অর্ধেক ছালাত এবং মুলতবী রেখেছেন ছিয়ামকে। আর গর্ভবতী মহিলা এবং দুগ্ধদানকারীণী মহিলা থেকেও মুলতবী করে দিয়েছেন ছিয়াম’ (নাসাঈ হা/২২৭৪, ২৩১৫; আহমাদ হা/২০৩৪১, সনদ হাসান)। তবে ইবনু আববাস, ইবনু ওমর (রাঃ) সহ কতিপয় বিদ্বানের মতে, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী মহিলাগণ সন্তানের ক্ষতির আশংকা করলে ছিয়াম ছাড়বে এবং প্রতিদিনের বিনিময়ে ফিদইয়া হিসাবে একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/৩৭; মির‘আত ৭/১৫; দ্র. ছিয়াম ও ক্বিয়াম ৯৩-৯৪)।

প্রশ্ন (১৬০) : মহিলারা একজন পুরুষের ইমামতিতে মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করতে পারবে কী?

উত্তর : ঈদের ছালাত নারী-পুরুষ সবার জন্য ঈদের ময়দানে গিয়ে আদায় করাই সুন্নাত (বুখারী হা/৩৫১; মুসলিম হা/৮৯০; মিশকাত হা/১৪৩১)।   তবে  প্রয়োজনে  একজন  পুরুষের  ইমামতিতে নারীরা মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করতে পারে। যেমন যাকওয়ান (রাঃ)-এর ইমামতিতে আয়েশা (রাঃ) সহ অন্যান্য নারীরা ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী ৩/১৬৭)। তবে পুরুষের জামা‘আতে যোগদান করা সম্ভব না হ’লে মহিলারা নিজেদের ইমামতিতে ঈদের ছালাত আদায় করতে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১৯৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৭৭)।

প্রশ্ন (১৬১) : কোন কিছু উদ্বোধন করার ইসলামী বিধান কী? মাটিতে কোপ দেওয়া বা হাতুড়ি মেরে কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ উদ্বোধন করা জায়েয কি?

উত্তর : নেকীর কাজে মানুষকে উৎসাহিত ও আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে এরূপ করায় কোন বাধা নেই (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া ক্রমিক : ৫৭৬২৬)। ছাহাবীদের সাথে নিয়ে রাসূল (ছাঃ) মসজিদে ক্বোবা ও মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে কথিত মসজিদে যিরারে গিয়ে শুরুতে ছালাত আদায়ের জন্য রাসূল (ছাঃ) দাওয়াত কবুল করেছিলেন এই মর্মে যে, তাবূক অভিযান থেকে ফিরে এসে তিনি সেখানে যাবেন। কিন্তু  মদীনার কাছাকাছি এসে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী প্রাপ্ত হন এবং তাদের কপট উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হন। ফলে তিনি লোক পাঠিয়ে ঐ মসজিদ পুড়িয়ে দেন (দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) সংশ্লিষ্ট অধ্যায়)। তবে উক্ত নেকীর কাজে কোনভাবেই শরী‘আতের সীমালংঘন করা যাবেনা।

প্রশ্ন (১৬২) : আমি কিছুদিন পূর্বে সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করি। এক্ষণে আমরা কীভাবে তাদের আতিথেয়তা করব? তারা কি আমাদের বাসায় বা আমরা কি তাদের বাসায় অবস্থান করতে পারব?

উত্তর : অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, যদি তারা দ্বীন পালনে বাধা না দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন’ (মুমতাহিনা ৬০/৮)। তবে মুশরিকদের সাথে বসবাস করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এতে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) মুশরিকদের সাথে অবস্থান করতে নিষেধ করেছেন (মিশকাত হা/৩৫৪৭; ছহীহাহ হা/৬৩৬)। অতএব মুশরিক আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করতে হবে, তাদের আতিথেয়তা করতে হবে ও প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে নিজে বা তাদেরকে নিজেদের বাড়িতে সাময়িক অবস্থান করতে দেওয়া যাবে। কিন্তু সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে যেন তাদের আক্বীদা ও ধর্মীয় রীতি-নীতির প্রতি নিজের মধ্যে কোন প্রকার নমনীয়তা, শিথিলতা কিংবা সমর্থন তৈরী না হয়। বরং সর্বদা তাদেরকেই ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন (১৬৩) : জনৈক ব্যক্তি জুয়া খেলা থেকে প্রাপ্ত পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করে। এখন সে জুয়ার সাথে জড়িত নয়। প্রশ্ন হ’ল এই ব্যবসা হালাল হবে কী?

উত্তর : জুয়া খেলা নিকৃষ্ট হারাম এবং তা থেকে প্রাপ্ত সম্পদও হারাম। অতএব এই ধরনের সম্পদ দ্বারা ব্যবসা করাও হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ শয়তানের নাপাক কর্ম বৈ কিছুই নয়। অতএব এগুলি থেকে বিরত হও। তাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হবে’ (মায়েদাহ ৫/৯০)। এক্ষণে উক্ত ব্যক্তিকে খালেছ তওবা করতে হবে এবং জুয়া থেকে প্রাপ্ত পুঁজির মূল অংশ অবিলম্বে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিতে হবে। তবে উক্ত সম্পদ দ্বারা ব্যবসা করে যে লভ্যাংশ অর্জিত হয়েছে তা সে পরিশ্রমের বিনিময় বা পারিশ্রমিক হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে মর্মে মালেকী ও শাফেঈ বিদ্বানগণ মতপ্রকাশ করেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ৯/৩৫১)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘উপার্জন ভোগ করা ব্যক্তির দায় বহনের সাথে যুক্ত’ (তিরমিযী হা/১২৮৫; মিশকাত হা/২৮৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১৭৯)। তবে তা পরিত্যাগ করাই অধিকতর নিরাপদ ও তাক্বওয়াপূর্ণ (তিরমিযী হা/২৫২৮)।

প্রশ্ন (১৬৪) : চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করার বিধান কী?

উত্তর :  ছালাতের মধ্যে ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো অন্যতম ফরয রুকন। অতএব সক্ষম ব্যক্তির জন্য বসে ছালাত আদায় জায়েয নয়। এক্ষণে যে ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম, সে ব্যক্তি বসে, শুয়ে বা ইশারায় ছালাত আদায় করবে। বসাটা মাটিতেও হ’তে পারে বা যেকোন উঁচু জায়গায় হ’তে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আলে ইমরান ৩/১৯১)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর দেহ ভারী হয়ে গেলে তিনি অধিকাংশ (নফল) ছালাত বসে পড়তেন’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৯৮; বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ‘মাসিক আত-তাহরীক’ জুলাই ২০১৫ দিশারী কলাম)।

প্রশ্ন (১৬৫) : মহিলা মাইয়েতের জন্য কাফনের কাপড় কয়টি? কাফনের কাপড়ের ডান দিক উপরে থাকবে নাকি বাম দিক?

উত্তর : মহিলা ও পুরুষের কাফনের কাপড় তিনটিই যথেষ্ট (বুখারী হা/১২৬৪; মুসলিম হা/৯৪১; মিশকাত হা/১৬৩৫; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ৫/২২৪; দ্র. ছালাতুর রাসূল ২২৭ পৃ.)। মহিলাদের পাঁচ কাপড়ে কাফন দেওয়ার হাদীছ যঈফ (যঈফাহ হা/৫৮৪৪)।

প্রশ্ন (১৬৬) : কিছু মুছল্লীকে দেখা যায়, জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরে ছালাত আদায় করে। তারা সিজদায় গেলে তাদের কোমরসহ নিতম্বের কিছু অংশ দেখা যায়। তাদের ছালাত হবে কী?

উত্তর : সতর ঢেকে ছালাত আদায় করা ফরয। সাধারণভাবে পর্দা হয় না এমন আটসাঁট জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট ছালাতের উপযোগী পোষাক নয়। এতে ছালাত আদায় হয়ে গেলেও ছওয়াবে কমতি হবে এবং গুনাহ হবে। ছালাতের জন্য অবশ্যই তাকওয়াপূর্ণ ঢিলাঢালা ও শালীন পোষাক পরিধান করা আবশ্যক (আ‘রাফ ৭/৩১; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ঊমদাহ ১/৩৪৪)।

প্রশ্ন (১৬৭) : ইমাম সূরা ফাতিহা বলার শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় ছালাতে অংশগ্রহণ করলাম। এক্ষণে আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করে শেষ করব নাকি ইমামের জওয়াবে আমীন বলব?

উত্তর : সূরা ফাতিহার যে অংশটুকু পাঠ করা হয়েছে সে অংশে থেমে গিয়ে ইমামের অনুসরণে আমীন বলবে। অতঃপর সূরা ফাতিহার বাকী অংশটুকু পাঠ করবে। কারণ সূরা ফাতিহা ছাড়া ছালাত হবে না (বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪; মিশকাত হা/৮২২)। 

প্রশ্ন (১৬৮) : ছালাতের ভিতরে কিভাবে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে?

উত্তর : আ‘উযুবিল্লা-হ বলে বাম দিকে তিনবার থুক মারতে হবে। ওছমান ইবনু আবিল ‘আছ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! শয়তান আমার ছালাত এবং ক্বিরাআতের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে। রাসূল (ছাঃ) উত্তরে বললেন, ‘এটা একটা শয়তান যাকে ‘খিনযাব’ বলা হয়। সুতরাং তুমি যখন এর খটকা অনুভব করবে, তখন তা থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। অর্থাৎ আ‘উযুবিল্লা-হ বলবে এবং বাম দিকে তিনবার থুক মারবে। রাবী বলেন, আমি এ আমল করাতে আল্লাহ আমার হ’তে শয়তানের খটকা দূরীভূত করেন (মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭)। উল্লেখ্য যে, থুক মারা অর্থ থুথু ফেলা নয়। বরং অনুচ্চ স্বরে ‘থুক’ আওয়াজ করা।

প্রশ্ন (১৬৯) : ছালাতের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দিলে সেই আযানে ছালাত আদায় করা যাবে কী?

উত্তর : কোন ছালাতের জন্য সময়ের পূর্বে আযান দেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। কেউ সময়ের পূর্বে আযান দিয়ে সময়ের মধ্যে ছালাত আদায় করলে তার ছালাতের ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সময়ের পূর্বে আযানদাতা গুনাহগার হবে। এক্ষণে কেউ ভুল করে সময়ের পূর্বে আযান দিয়ে ছালাত আদায় করে থাকলে তাকে পুনরায় আযান দিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে (আবুদাঊদ হা/৫৩২-৫৩৩; নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৮৯; তুহফাতুল মুহতাজ ১/৪৭৫; ইবনু কুদামা, মুগনী ১/২৯৭)। তবে ফজরের পূর্বে সাহারী বা তাহাজ্জুদের জন্য আযান দেওয়া যাবে (বুখারী হা/৬১৭; মুসলিম হা/১০৯২; মিশকাত হা/৬৮০)। অতঃপর ফজরের ছালাতের জন্য যথাসময়ে পুনরায় আযান দিতে হবে (তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৫১৫-১৬; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৩৪১)।

প্রশ্ন (১৭০) : জুম‘আর খুৎবার সময়ে ইমাম কোন প্রশ্ন করলে মুছল্লীরা উত্তর দিতে পারবে কি?

উত্তর : খুৎবা চলাকালীন ইমামের প্রশ্নের উত্তর মুছল্লীরা দিতে পারবে। এমনকি মুছল্লীরা কোন প্রশ্ন করলে খতীব তার জওয়াব দিতে পারবেন (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৪১৩; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/১০৭)। জনৈক মুছল্লী মদীনায় অনাবৃষ্টির অভিযোগ করে বৃষ্টি পার্থনার আবেদন করলে রাসূল (ছাঃ) তার জওয়াবে সাড়া দিয়ে সকলকে সাথে নিয়ে খুৎবা চলাকালীন প্রার্থনা করেছিলেন (বুখারী হা/১০২৯)।

প্রশ্ন (১৭১) : জনৈকা মহিলা ধর্মীয় কারণে স্বামীর থেকে ‘খোলা’ গ্রহণ করেছে। এক্ষণে সে অন্যত্র ইসলামী মন-মানসিকতার ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে চায়। কিন্তু অভিভাবক পূর্বের ফাসেক স্বামীর কাছেই ফিরে যেতে বলে। উক্ত মহিলা কিভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে?

উত্তর : অভিভাবক ও মেয়ের সম্মতিক্রমে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াই শরী‘আত সম্মত। এক্ষণে পিতা যদি সম্পদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে কোন ফাসেক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে বাধ্য করে, তাহ’লে মেয়ের জন্য উক্ত বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার থাকবে (নাসাঈ হা/৩২৬৯; ছহীহাহ হা/৩৩৩৭)। এমতাবস্থায় পিতার বদলে মেয়ের নিকটতম আত্মীয় অভিভাবক হবে। যেমন দাদা, ভাই, চাচা ইত্যাদি। তারা সবাই একই মতের হ’লে আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। আদালত ইসলামী বিধান অনুযায়ী ফায়ছালা করবে এবং বিধি মোতাবেক বিবাহ সম্পন্ন করবে (আবুদাঊদ হা/২০৮৩; মিশকাত হা/৩১৩১; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৪৫৯-৬০, ২১/৭৬-৭৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/৮৯)।

প্রশ্ন (১৭২) : আমার মেয়ের সাথে প্রতারণা করে জনৈক ছেলে কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ করে। কোন টাকা প্রদান না করেই নির্ধারিত পাঁচ লক্ষ টাকা মোহরানার মধ্যে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা মোহর উল্লেখ করে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করে। ছেলে দ্বীন-ধর্ম পালন করে না। পরবর্তীতে আমি পিতা হিসাবে সামাজিক কারণে বিবাহ মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মেয়ে তার সাথে সংসার করতে চায় না। আমার মেয়ে ক্বাযী অফিসের মাধ্যমে ‘খোলা’ প্রেরণ করেছে এবং ছেলে সেই কপি হাতেও পেয়েছে। কিন্তু সে বারবার বলে পাঠাচ্ছে এই তালাক হবে না। প্রশ্ন হ’ল এই ‘খোলা’ কার্যকর হয়েছে কি?

উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় ‘খোলা’ কার্যকর হয়েছে। ‘খোলা’ তথা বিবাহ বিচ্ছেদ যা নারীর পক্ষ থেকে হয় স্বামীকে মোহর বা মোহরের অংশবিশেষ ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৮/১৮১; শাওকানী, নায়লুল আওতার ৬/২৯৫) কারণ ‘খোলা’ তালাক নয় বরং বিবাহ বিচ্ছেদ। স্ত্রী স্বামী বা তার পরিবারের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে ‘খোলা’ করে থাকে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৩/২১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘১২/৪৬৯)। এক্ষণে স্বামী কোন টালবাহানা করলে আদালতের মাধ্যমে ‘খোলা’ করতে পারবে এবং তা কার্যকর হবে (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২১/২৬০)। ‘খোলা’ কারিণী স্ত্রীর ইদ্দত হ’ল এক ঋতুকাল (আবুদাঊদ হা/২২২৯; হাকেম হা/২৮২৫, সনদ ছহীহ)। আর স্ত্রী গর্ভবতী হ’লে তার ইদ্দত হ’ল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত (তালাক ৬৫/৪)।

প্রশ্ন (১৭৩) : বিবাহ সম্পাদন করার সুন্নাতী পদ্ধতি কি?

উত্তর : বিবাহ পড়ানোর সুন্নাতী পদ্ধতি হ’ল, প্রথমে বিবাহের খুৎবা পড়তে হবে (মুগনী ৭/৬২)। কোন বিয়েতে খুৎবা পূর্বে পাঠ করা না হ’লে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) সে বিবাহ অনুষ্ঠান ত্যাগ করতেন (আবুন নাজা, আল-ইক্বনা‘ ৩/১৬২; বাহূতী, কাশশাফুল কেনা‘ ৫/২১)। কারণ হাদীছে খুৎবা শেষে প্রয়োজনীয় কথা বলতে বলা হয়েছে, যা হ’ল ঈজাব ও কবূল (দারেমী হা/২২০২; মিশকাত হা/৩১৪৯, সনদ ছহীহ)। অতঃপর সাবালিকা হ’লে পূর্বেই মেয়ের সম্মতি নিয়ে দু’জন পরহেযগার ও ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর সম্মুখে মেয়ের পিতা বা তার সম্মতিক্রমে একজন বলবেন, আমি আমার মেয়েকে আপনার সাথে নগদ মোহরের বিনিময়ে বিবাহ দেওয়ার প্রস্তাব করছি। উত্তরে ছেলে বলবে, ‘আমি কবুল করলাম’ বা সম্মতিসূচক আল-হামদুলিল্লাহ বলবে। এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সকলে পৃথক পৃথকভাবে সুন্নাতী দো‘আ পাঠ করবে-بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِى خَيْرٍ، ‘বা-রাকাল্লাহু লাক, ওয়া বা-রাকা আলাইক, ওয়া জামা‘আ বায়নাকুমা ফী খায়ের’। আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার উপরে বরকত দিন ও তোমাদের দু’জনকে কল্যাণের সাথে মিলিত করুন’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৪৫)।

প্রশ্ন (১৭৪) : সকল নবী-রাসূল কি হজ্জ পালন করেছেন?

উত্তর : সকল নবী-রাসূলের হজ্জের ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন বর্ণনা ও ঐতিহাসিক বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সকল নবী-রাসূল হজ্জ সম্পাদন করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, রাওহা উপত্যকা দিয়ে সত্তুর জন নবী পশমী কাপড় পরে হজ্জ করতে গিয়েছিলেন এবং মসজিদে খায়ফে সত্তরজন নবী ছালাত আদায় করেছিলেন (বায়হাক্বী হা/৯৮৩৭; হাকেম হা/৪১৬৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, মসজিদে খায়ফে সত্তুর জন নবী ছালাত আদায় করেছেন। মূসা (আঃ) তাদের অন্যতম। আমি যেন তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। তাঁর গায়ে দু’টি কুতওয়ানী চাদর জড়ানো। তিনি দুই গুচ্ছ লাগাম বিশিষ্ট উটের ওপর ইহরাম বেঁধে বসে আছেন (ত্বাবারাণী কাবীর হা/১২২৮৩; ছহীহাহ হা/২০২৩)। ইবনু ইসহাক, হায়তামী ও ইবনু কাছীরসহ অধিকাংশ বিদ্বান মনে করেন যে, হূদ ও ছালেহ (আঃ) ব্যতীত সকল নবী-রাসূলই হজ্জ করেছেন (সীরাতে ইবনে ইসহাক ৯৫ পৃঃ; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২৯৯)। এমনকি ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে আগমনের পরে হজ্জ করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মরিয়ম পুত্র ঈসা নিশ্চিতভাবে রাওহা উপত্যকায় হজ্জ অথবা ওমরা অথবা উভয়ের তালবিয়া পাঠ করবেন (মুসলিম হা/১২৫২)।

প্রশ্ন (১৭৫) : জনৈক ব্যক্তির লজ্জাস্থান দিয়ে পুঁজ বের হয়। এক্ষণে সে কিভাবে ছালাত ও ছিয়াম আদায় করবে?

উত্তর : লজ্জাস্থান দিয়ে পুঁজ বা কোন তরল পদার্থ বের হ’লে ছিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ এটি ছিয়াম ভঙ্গের কারণ নয়। তবে তার ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষণে যার অনবরত কিছু বের হয় সে প্রতি ছালাতের সময় ওযূ করে ছালাত আদায় করবে। এর মধ্যে কিছু বের হ’লে তার ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না’ (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২১/২১৯-২০; ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ ১/১৯২)।

প্রশ্ন (১৭৬) : যদি কোন ব্যক্তি মাগরিবের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ফজরের পরে জাগ্রত হয় তাহ’লে কি তার ছিয়াম হবে?

উত্তর : ছিয়ামের জন্য নিয়ত করা পূর্বশর্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ফজরের পূর্বে যে ব্যক্তি ছিয়ামের নিয়ত করে না, তার ছিয়াম নেই (আবুদাঊদ হা/২৪৫৪; মিশকাত হা/১৯৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৩৮)। অন্যত্র এসেছে, যে ব্যক্তি রাত্রে ছিয়ামের নিয়ত করে না তার ছিয়াম হবে না (নাসাঈ হা/২৩৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৩৪)। তবে কেউ যদি ছিয়ামের নিয়ত করে ঘুমায় এবং ফজরের আযান হয়ে যাওয়ার কারণে সাহারী খেতে না পারে তাহ’লে তার ছিয়াম পালনের জন্য উক্ত নিয়তই যথেষ্ট হবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩৮; উছায়মীন,  ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১১/০২)।

প্রশ্ন (১৭৭) : ছালাতের স্থানে বসে যিকর-আযকার পাঠের নানাবিধ ফযীলত রয়েছে। এক্ষণে স্থান ত্যাগ করে পিছনের কাতারে বসে উক্ত যিকর-আযকার পাঠ করলে ছওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : সুন্নাত হ’ল মুছাল্লা বা ছালাতের স্থানে বসে যিকর-আযকার করা (বুখারী হা/৪৭৭; মিশকাত হা/৭০২)। এক্ষণে হাদীছে বর্ণিত মুছাল্লা দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল পুরো মসজিদ (ইবনু রজব, ফাৎহুল বারী ৪/৫৬)। হাফেয ইবনু হাজার বলেন, মুছাল্লা অর্থ ব্যক্তি যে স্থানে ছালাত আদায় করেছে। তবে কেউ যদি যিকরের উদ্দেশ্যে মসজিদের অন্য স্থানে বসে তাহ’লে বর্ণিত ছওয়াব পেয়ে যাবে (ফাৎহুল বারী ২/১৩৬)। শায়খ উছায়মীন বলেন, দু’টি অর্থেরই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পুরো মসজিদই মুছাল্লার অর্ন্তভুক্ত। কারণ আল্লাহর রহমত প্রশস্ত (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ২২৫/১৪)।

প্রশ্ন (১৭৮) : রামাযান মাসে যাকাত আদায়ের বিশেষ কোন গুরুত্ব আছে কি?

উত্তর : রামাযান মাসে যাকাত আদায়ের বিশেষ কোন ফযীলত নেই। যাকাত যখন ফরয হবে তখনই আদায় করা ওয়াজিব। তবে রামাযানের নিকটবর্তী মাসে যাকাত ফরয হ’লে ফযীলতের দিকে লক্ষ্য রেখে রামাযান মাসে আদায় করা যেতে পারে (ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম, মাসআলা-৩৮৮, পৃঃ ৪৪৪; নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/৩০৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩৯৮)। আর রামাযানে কারো যাকাত ফরয হ’লে এটা তার জন্য কল্যাণকর। যেমন ওছমান (রাঃ) বলেন, এটি (রামাযান) যাকাতের মাস। অতএব যদি কারো উপর ঋণ থাকে, সে যেন প্রথমে ঋণ শোধ করে। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ নিছাব পরিমাণ হ’লে সে যেন তার যাকাত আদায় করে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৫৫৫; ইরওয়া হা/৮৫০, ৭৮৯, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (১৭৯) : বর্ণিত আছে যে, সাঈদ ইবনুল ‘আছ (রাঃ) তাবারিস্তানবাসীকে নিরাপত্তা প্রদানের পর বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের হত্যা করেন। উক্ত ঘটনার সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে ইতিহাসে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বর্ণনগুলোর সনদে দুর্বলতা রয়েছে (তারীখু ত্বাবারী ৪/২৬৯; খলীফা বিন খাইয়াত্ব, আত-তারীখ ১৬৫ পৃ.; যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ২/১৮২; তাক্বরীবুত তাহযীব ৪০৫ পৃ.)। দ্বিতীয়তঃ এর সনদকে গ্রহণযোগ্য ধরে নিলেও সেটি সাঈদ ইবনুল ‘আছের যুদ্ধকৌশল ছিল। কারণ তারা তাদের মধ্যে কেবল একজন লোকের নিরাপত্তা চেয়েছিল। আর তিনি সেই একজনকে নিরাপত্তা দিয়ে বাকীদের হত্যা করেন (খলীফা বিন খাইয়াত্ব, আত-তারীখ ১৬৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৮০) : একাধিক স্ত্রী থাকাকালীন সফরে একজনকে নিয়ে যাওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর : একাধিক স্ত্রী থাকাকালীন স্বামীকে লটারীর মাধ্যমে সফর সঙ্গিনী নির্বাচন করতে হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কোন সফরে বের হ’লে তাঁর সহধর্মিণীগণের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে (নির্বাচিত করে) যার নাম উঠত তাকে সাথে নিয়ে যেতেন (বুখারী হা/২৫৯৩; মিশকাত হা/৩২৩২)। অতএব স্বামী লটারী করবে বা অন্য স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে কোন একজনকে সফরসঙ্গী বানাবে (নববী শরহ মুসলিম ১৫/২১০; ইবনু কুদামা, মুগনী ১০/২৫৩)।

প্রশ্ন (১৮১) : আমি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। দু’বছর পূর্বে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছি। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পর্দা করতে ও ছিয়াম পালন করতে পারি না। বরং অন্য সময়ে আমি ছিয়ামের কাযা আদায় করে নিই। এক্ষণে আমার এই ধরনের কাজ কি সঠিক হচ্ছে?

উত্তর : ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামের যাবতীয় বিধানাবলী পালন করার চেষ্টা করতে হবে। তবে বাধ্যগত কারণে ইবাদত পালনে কৌশল অবলম্বন করা যাবে। যেমন বাদশাহ নাজাশী ইসলাম গ্রহণ করে তা গোপন রেখেছিলেন। ইউসুফ (আঃ)-কেও রাজপ্রসাদে ইসলাম গোপন রেখে ধর্মীয় কার্যাবলী সম্পাদন করতেন। ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ইসলাম গ্রহণ করে তা গোপন রেখেছিলেন। এরূপ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে বহু রয়েছে। অতএব সাধ্যমত দ্বীন পালন করে যাবে এবং সুযোগ হ’লে তাদেরও দাওয়াত দিবে। অন্যথায় সুযোগমত হিজরত করবে (গাফের ২৮; ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৫/১১১-১১২৫)। রাসূল (ছাঃ) আবু যার গেফারীকে বলেন, হে আবু যার! আপাততঃ তোমার ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয় সংবাদ জানতে পারবে তখন এসো (বুখারী হা/৩৩২৮; হাকেম হা/৫৪৫৬)। তবে এরূপ কৌশল সর্বদা চালানো ঠিক হবে না। তাতে ঈমান ভোঁতা হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন (১৮২) : হাদীছে দ্রুত ইফতার করতে বলা হয়েছে। আবার সময়ের আগে ইফতার করার কঠিন শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের করণীয় কী?

উত্তর : ইফতারের বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা হ’ল- সূর্যাস্তের সাথে সাথে ছায়েম ইফতার করবে (বু. মু. মিশকাত হা/১৯৮৫)। তিনি ইশারা দিয়ে বলেন, যখন এদিক হ’তে রাত্রি আগমন করবে এবং এদিক হ’তে দিন প্রস্থান করবে এবং সূর্য অস্ত যাবে, তখনই ছায়েম ইফতার করবে’ (বুখারী হা/১৯৫৪, মিশকাত হা/১৯৮৫ ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘বিবিধ মাসায়েল’ অনুচ্ছেদ)। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, ‘দ্বীন ততদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা ইহূদী-নাছারারা দেরীতে ইফতার করে’ (আবুদাউদ হা/২৩৫৩)। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সূর্যাস্ত হ’লেই ছায়েম ইফতার করবে। এক্ষণে কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে স্থানীয় সময়কে গুরুত্ব না দিয়ে তাড়াহুড়া করে ইফতার করে, তাহ’লে তার জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি জাহান্নাম পরিদর্শনে গিয়ে দেখলাম একদল লোক তাদের পায়ের গোড়ালির উপর মোটা শিরায় (বাঁধা অবস্থায়) লটকানো আছে, তাদের কেশগুলো কেটে ও ছিঁড়ে আছে এবং কেশ বেয়ে রক্তও ঝরছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আমি বললাম, ওরা কারা? তাঁরা বললেন, ওরা হ’ল তারা ঐসব লোক; যারা সময় হওয়ার পূর্বেই ইফতার করে নিত (হাকেম হা/১৫৬৮; ছহীহাহ হা/৩৯৫১; ছহীহুত তারগীব হা/১০০৫)। অতএব দেরীতে ইফতার করে যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশনা অমান্য করা ও ইহুদী-খৃষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হবে, তেমনি সময়ের পূর্বে ইফতার করাও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, সূর্য দেখে তা অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলে বা ন্যায়পরায়ণ দু’জন বা একজন সাক্ষী সূর্যাস্তের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলে ছায়েম ইফতার করবে (ফাৎহুল বারী হা/১৯৫৭-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২২৬৭)।

প্রশ্ন (১৮৩) : বদরী ছাহাবীগণ কি যুদ্ধের ময়দানে প্রথম ছিয়াম পালন করেছিলেন?

উত্তর : রামাযান মাসের ছিয়াম দ্বিতীয় হিজরীর শা‘বান মাসে ফরয হয়েছিল (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২৫০)। ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে রামাযান মাসে দু’টি যুদ্ধ করেছি- বদর যুদ্ধ ও মক্কা বিজয়। এ সময় আমরা ছিয়াম রাখিনি (তিরমিযী হা/৭১৪; আহমাদ হা/১৪০, ১৪২; মুসনাদে ফারূক ১/২৭৯, সনদ হাসান)।

প্রশ্ন (১৮৪) : কোন নারী কি রামাযান মাসে অধিক ইবাদত পালনের জন্য স্বামী থেকে আলাদা থাকতে পারবে?

উত্তর : রামাযান মাসে ইবাদত করা খুবই ফযীলতপূর্ণ। ফরয ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বাধীন। অর্থাৎ রামাযান মাসের ছিয়াম পালনের ক্ষেত্রে স্ত্রীর স্বাধীনতা রয়েছে। আর অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতিক্রমে অধিক ইবাদত পালনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে আলাদা থাকার অনুমতি প্রদান না করলে সে আলাদা থেকে অধিক ইবাদত পালন করতে পারবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহ’লে তাকে নিষেধ করো না (বুখারী হা/৮৭৩; মিশকাত হা/১০৫৯)। তিনি আরো বলেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ছাড়া নফল ছিয়াম রাখবে না (বুখারী হা/৫১৯২; ছহীহাহ হা/৩৯৫)। অতএব নফল ইবাদতের উপর স্বামীর মর্যাদা থাকায় স্ত্রী স্বামীকে অধিক প্রাধান্য দিবে। আর ফরযের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করবে (নববী, শারহু মুসলিম ৭/১১৫)।

প্রশ্ন (১৮৫) : ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বামী তার স্ত্রীকে এক সাথে তিন তালাক প্রদান করে। বর্তমানে স্ত্রী তার পিতার বাড়িতে থাকে। তাদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এখন তারা আবার সংসার করতে চায়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর : এক বৈঠকে তিন তালাক এক তালাক গণ্য হয় (মুসলিম হা/১৪৭২; আহমাদ হা/২৮৭৭; হাকেম হা/২৭৯৩)। কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তোহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবে। ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি বললেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি জানি ওটা এক তালাকই হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও। অতঃপর তিনি সূরা তালাকের ১ম আয়াতটি পাঠ করে শুনান (আবুদাঊদ হা/২১৯৬; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৪৯৮৬, সনদ হাসান)। এক্ষণে স্বামী ইদ্দতকাল তথা তিন মাসের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না নেওয়ায় বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে (বাক্বারাহ ২/২২৯)। এমতাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে সম্মত হ’লে নতুন বিবাহের মাধ্যমে পুনরায় ঘর-সংসার করতে পারে (বাক্বারাহ ২/২৩২; তালাক ১; বুখারী হা/৫১৩০; বিস্তারিত দ্রঃ ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশিত ‘তালাক ও তাহলীল’ বই পৃঃ ৩৪-৪০)। তবে তিন তোহরে তিন তালাক প্রদান করলে এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়, যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিবাহ করে ও সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে তালাকপ্রাপ্তা হয় (বাক্বারাহ ২/২৩০)।

উল্লেখ্য যে, ‘তাহলীল’ বা হিল্লা ইসলাম-পূর্ব যুগের একটি জাহেলী প্রথা। এর সাথে ইসলামী শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, উভয়কে লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ হা/২০৭৬; ইবনু মাজাহ হা/১৯৩৫ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩২৯৬-৯৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪০৬২)। উক্ববা বিন ‘আমের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে ভাড়াটে ষাঁড় সম্পর্কে খবর দিব না? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, সে হ’ল ঐ হালালকারী ব্যক্তি। আল্লাহ লা‘নত করেছেন হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয়কে’ (ইবনু মাজাহ হা/১৯৩৬; হাকেম হা/২৮০৪, ২/১৯৯ পৃ.; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ৬/৩০৯-১০)।

প্রশ্ন (১৮৬) : বিশেষ কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ মহিলায় কিংবা কোন মহিলা পুরুষে রূপান্তরিত হ’তে পারে কি? এ বিষয়ে শারঈ বিধান কি?

উত্তর : মহিলাকে পুরুষে বা পুরুষকে মহিলায় রূপান্তর করা সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল যা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর ধর্ম, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)। এটি শয়তানের কাজ। কারণ সে আল্লাহকে বলেছিল, আমি অবশ্যই মানুষকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদেরকে আদেশ দেব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়’ (নিসা ৪/১১৯)। অতএব কোনভাবেই আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা যাবে না। তবে যদি কারো সৃষ্টিগতভাবে নারী বা পুরুষের বিষয়টি অস্পষ্ট হয় তাহ’লে অপারেশনের মাধ্যমে যা তার মধ্যে সুপ্ত আছে তা স্পষ্ট করা জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৫/৪৫-৪৯)। কারণ আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। এর বাইরে তৃতীয় লিঙ্গের যা হয়ে থাকে তা ব্যাধি। আর ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসা নেওয়া জায়েয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। যখন রোগের সঠিক ঔষধ প্রয়োগ হয়, তখন সেটি আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য হয়’ (মুসলিম হা/২২০৪; মিশকাত হা/৪৫১৫)।

প্রশ্ন (১৮৭) : মসজিদে বিবাহ পড়ানো কি সুন্নাত? এতে কি বিশেষ কোন বরকত আছে?

উত্তর : মসজিদে বিবাহ পড়ানো সংক্রান্ত হাদীছটি যঈফ (তিরমিযী হা/১৮৫; ইরওয়া হা/১৯৯৩; মিশকাত হা/৩১৫২’ যঈফাহ হা/৯৭৮; যঈফুল জামে‘ ৯৬৬)। তবে এই হাদীছের উপর ভিত্তি করে জমহূর ফক্বীহগণ বরকত এবং বিবাহের প্রচারের স্বার্থে মসজিদে বিবাহ পড়ানোকে মুস্তাহাব বলেছেন। বিবাহ পড়ানো ব্যতীত কোনরূপ শোরগোল করা যাবে না (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩৭/২১৪; ইসলাম ওয়েব ফৎওয়া নং ৩৫৪৭৯)। তবে এটি সুন্নাত নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/১১৩, নং ৯৫৫৩)। শায়খ উছায়মীন বলেন, মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন দলীল নেই। তবে কেউ চাইলে করতে পারে। কারণ এটি ব্যবসা-বাণিজ্য নয় (লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১৬৭/১২)। বস্ত্ততঃ বিবাহের জন্য কোন নির্ধারিত স্থান নেই। বর-কনের অভিভাবকদের সুবিধামত যেকোন স্থানে বিবাহ পড়ানো জায়েয। এমনকি সফর অবস্থাতেও বিয়ে করা জায়েয। রাসূল (ছাঃ) খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে ছাফিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন (বুখারী হা/৪২১১)।

প্রশ্ন (১৮৮) : রামাযান মাসে বিবাহ করার কোন গুরুত্ব আছে কি?

উত্তর : রামাযান মাসে বিবাহ করার বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই। বরং বছরের যেকোন মাসে ও যেকোন দিনে বিবাহ হ’তে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/৪২)।

প্রশ্ন (১৮৯) : রামাযান মাসে কুরআন খতম করা কি মুস্তাহাব?

উত্তর : রামাযান মাসে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, প্রতি বছর (রামাযানে) জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে একবার কুরআন পাঠের পুনরাবৃত্তি করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে বছর তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে দু’বার কুরআন পাঠ করেন (বুখারী হা/৪৯৯৮; মিশকাত হা/২০৯৯)। তবে প্রচলিত ‘খতম তারাবীহ’ বলে কোন নিয়ম শরী‘আতে নেই এবং তারাবীহর ছালাতে কুরআন খতম করার বিশেষ কোন ফযীলত নেই। বরং ক্বিরাআত দীর্ঘ হৌক বা সংক্ষিপ্ত হৌক ছালাতে খুশূ-খুযূই হ’ল প্রধান বিষয়। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি জানিনা যে, আল্লাহর নবী (ছাঃ) কখনো এক রাত্রিতে সমস্ত কুরআন খতম করেছেন কিংবা ফজর অবধি সারা রাত্রি ব্যাপী (নফল) ছালাত আদায় করেছেন (মুসলিম হা/৭৪৬; মিশকাত হা/১২৫৭, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ)। রাসূল (ছাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনু আমরকে বলেন, সপ্তাহে একবার কুরআন খতম কর। তার বেশী নয়’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২০৫৪)। পরবর্তীতে তাঁকে তিন দিনে কুরআন খতমের অনুমতি দেওয়া হয় (আবুদাঊদ হা/১৩৯০ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২২০১)।

প্রশ্ন (১৯০) : আমার পিতা আমাদের সাথে সাহারী গ্রহণ করেন, ফজরের ছালাত আদায় করেন এবং ইফতারও করেন। কিন্তু মাঝে-মধ্যেই তার মুখ থেকে ধূমপানের গন্ধ পাই। তাকে কিছু বললে তিনি অস্বীকার করেন। এক্ষণে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর : ইচ্ছাকৃতভাবে ছিয়াম ভঙ্গ করলে তিনি কবীরা গোনাহগার হবেন। এজন্য তাকে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করতে হবে এবং উক্ত ছিয়ামের ক্বাযা আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ছিয়াম অবস্থায় যে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে, তার জন্য ক্বাযা নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে, সে যেন ক্বাযা আদায় করে’ (তিরমিযী হা/৭২০; মিশকাত হা/২০০৭, সনদ ছহীহ)।

প্রশ্ন (১৯১) : আমি সফরে বের হওয়ার নিয়তে দু’ওয়াক্তের ছালাত একত্রে আদায় করে ফেলি। কিছুক্ষণ পরে সফর বাতিল করা হয়। এক্ষণে আমাকে কি পুনরায় ছালাত আদায় করতে হবে? না আগেরটাই যথেষ্ট হবে?

উত্তর : সফরে বের হওয়ার পূর্বে যদি দু’ওয়াক্তের ছালাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা হয়ে যায় অতঃপর দ্বিতীয় ওয়াক্তের পূর্বেই সফর বাতিল ঘোষণা করা হয় তাহ’লে ঐ ছালাতই যথেষ্ট হবে। পরের ওয়াক্তের ছালাত আদায় করা যরূরী নয়। তবে যদি কেউ করে তবে তা নফল হয়ে যাবে। (ইবনু কুৃদামাহ, মুগনী ২/২০৭; শারহুল মুনতাহা ১/২৯৪)।

প্রশ্ন (১৯২) : পেশাব করার পরে কিছু অংশ কাপড়ে লেগে যায় বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় করণীয় কি?

উত্তর : প্রবল ধারণার ভিত্তিতে যদি পেশাব কাপড়ের কোন অংশে লেগেছে তা চিহ্নিত করা যায়, তাহ’লে উক্ত স্থান ধুয়ে নিতে হবে। আর স্থান চিহ্নিত করা সম্ভব না হ’লে অনুমান করে ধুয়ে নিবে বা পানি ছিটিয়ে দিবে। এতেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ (ইবনু মাজাহ হা/৪৬৪; আল-মুগনী ১/১১৫; আল-মাওসূআহ আল-ফিক্বহিয়াহ ৪/১২৫)। আর ছালাতে যাওয়ার পথে এমনটা মনে হ’লে পেশাব বের হওয়ার স্থানে লক্ষ্য করে দেখবে। ভেজা মনে হ’লে ধুয়ে ওযূ করে ছালাতে যাবে। আর ছালাতে থাকা অবস্থায় ধারণা হ’লে বা ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হ’লে সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে ছালাত আদায় অব্যাহত রাখবে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১/৪৩৫)।

প্রশ্ন (১৯৩) : কুরআন মুখস্থ করে ভুলে গেলে সে ক্বিয়ামতের দিন হাত-পা কাটা অবস্থায় উঠবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটির বিশুদ্ধতা জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ হা/১৪৭৪; তিরমিযী হা/২৯১৬; মিশকাত হা/৭২০, ২২০০; যঈফুল জামে‘ হা/৫১৩৬, ৫১৫৩)। তবে কুরআন মুখস্থ করা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ কুরআন মুখস্থ করা এবং তদনুযায়ী আমল করা। উল্লেখ্য যে, দু’টি কারণে মানুষ কুরআন ভুলে যায়। ১. মানবীয় স্বভাবজাত কারণ তথা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে। এভাবে ভুলে গেলে সে গুনাহগার হবে না। রাসূল (ছাঃ) নিজে মাঝে-মধ্যে কুরআন ভুলে যেতেন এবং ছাহাবীগণের তেলাওয়াত শুনে স্মরণ করে নিতেন (বুখারী হা/৫০৩২, ৫০৪২; মুসলিম হা/৭৮৮, ৭৯০; মিশকাত হা/২১৮৮)। ২. অলসতা বা অবহেলার কারণে। এমন কোন কারণে কুরআন ভুলে গেলে গোনাহগার হ’তে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৩/৪২৩; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৪/৯৯; উছায়মীন, কিতাবুল ইলম ৯৬-৯৭ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৯৪) : তিলক বা টিপ পরার বিধান কি?

উত্তর : তিলক বা টিপ হিন্দুদের একটি ধর্মীয় প্রতীক। তারা তাদের বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন টিপ বা তিলক ব্যবহার করে থাকে (বাংলাপিডিয়া)। আবার কোন হিন্দু ধর্ম মতে, তিলক হ’ল তৃতীয় চোখ যা শিশুদের বদনযর থেকে হেফাযত করে। অতএব একজন মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মের কোন প্রতীককে সৌন্দর্যের জন্য হ’লেও ব্যবহার করা জায়েয নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ করল, সে তাদেরই দলভুক্ত হ’ল’ (আবুদাঊদ হা/৪০৩১)।

প্রশ্ন (১৯৫) : রামাযান মাসে সারারাত জেগে ক্বিয়ামুল লায়ল পালন করা যাবে কি?

উত্তর : রামাযান বা রামাযানের বাইরে কোন সময়ে নিয়মিত সারা রাত জেগে কিয়ামুল লাইল পালন করা সমীচীন নয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে কখনো ভোর পর্যন্ত সারারাত জেগে ইবাদত করতে এবং রামাযান মাস ছাড়া এক নাগাড়ে পুরো মাস ছিয়াম পালন করতে দেখিনি (মুসলিম হা/৭৪৬; নাসাঈ হা/১৬৪১)। জনৈকা নারী সারারাত ক্বিয়ামুল লাইল করতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) তা অপসন্দ করেন (মুসলিম হা/৭৮৫; আহমাদ হা/২৬১৩৭)। এক্ষণে করণীয় হ’ল রাতের কিছু অংশে ঘুমানো ও কিছু অংশে ক্বিয়ামুল লাইল করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পসন্দনীয় ছালাত হ’ল দাউদ (আঃ)-এর পদ্ধতিতে (নফল) ছালাত আদায় করা। তিনি রাতের প্রথমার্ধে ঘুমাতেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে (নফল) ছালাত আদায় করতেন আর বাকী অংশ ঘুমাতেন (বুখারী হা/১১৩১; মিশকাত হা/১২২৫)। অতএব সর্বক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা কর্তব্য। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা সঠিক পথে থাক এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন কর (তিরমিযী হা/২১৪১; মিশকাত হা/৯৬)।

প্রশ্ন (১৯৬) : লভ্যাংশের কিছু অংশ প্রদানের শর্তে একজনের টাকা অন্যজনের পরিশ্রমের ভিত্তিতে ব্যবসা করলে উক্ত ব্যবসা জায়েয হবে কি?

উত্তর :  এই  ধরনের  ব্যবসা  জায়েয,  যাকে  ইসলামী শরী‘আতে মুযারাবা বলে। অর্থাৎ অন্যের সম্পদে নিজের শ্রম বিনিয়োগ করে ব্যবসা করা। ওছমান (রাঃ)-এর মাল নিয়ে আব্দুর রহমানের দাদা ব্যবসা করতেন। লাভ তাদের মধ্যে চুক্তি মতে ভাগ হ’ত (দারাকুৎনী হা/৩০৭৭; মুওয়াত্ত্বা হা/২৫৩৫; ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৭২, ৫/২৯২ পৃঃ; বুলূগুল মারাম হা/৮৯৫, মওকূফ ছহীহ)।

প্রশ্ন (১৯৭) : কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেফার করার জন্য ডাক্তারকে যদি কমিশন দেওয়া হয়, তবে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে কি?

উত্তর : কমিশন প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে কোন চিকিৎসক বিশেষ কোন ডায়গনস্টিক সেন্টারে রেফার করলে সেটি ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসূল (ছাঃ) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়কে লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ হা/৩৫৮০; মিশকাত হা/৩৭৫৩)। তবে সাধারণভাবে কোন ক্লিনিক যদি স্বেচ্ছায় লভ্যাংশ থেকে কিছু কমিশন দেয়, তবে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

প্রশ্ন (১৯৮) : ছিয়াম অবস্থায় করোনার টিকা গ্রহণ করা যাবে কী?

উত্তর : ছিয়ামরত অবস্থায় করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা যাবে। কেননা ছিয়াম অবস্থায় খাদ্য নয় এরূপ বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। অতএব যেসব টিকা, ইনস্যুলিন, ইনজেকশন বা ভ্যাকসিন খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় না বা শরীরে বাড়তি পুষ্টি যোগায় না, সেগুলো ছিয়াম অবস্থায় চিকিৎসা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে। অনুরূপ হাঁপানী রোগের জন্য ছিয়াম অবস্থায় ‘ইনহেলার’ নেওয়া যাবে। কারণ এগুলি স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইনজেকশনের ন্যায় খাদ্য বা পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয় (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৯৬-৯৯, ১৯/২২৫, ২০/২৮৪; ‘ছিয়াম ও ক্বিয়াম’ ৯০ পৃ.)।

প্রশ্ন (১৯৯) : আছহাবে কাহফের সদস্য কতজন ছিল? কুরআন ও হাদীছের আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : প্রকাশ্য আয়াত এবং ইবনু আববাস (রাঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ছিল সাত জন (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা কাহফ ২২ আয়াত)। তবে অত্র আয়াতে এসব নিয়ে বিতর্ক করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এগুলি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব সংখ্যা মুখ্য নয়, বরং উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আল্লাহর উপরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই হ’ল মুখ্য বিষয়।

প্রশ্ন (২০০) : পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে, আল্লাহ ‘হও’ বললে হয়ে যায়। তাহ’লে ছয় দিনের তাৎপর্য কি?

উত্তর : ‘ছয়দিনে’ কথাটি কুরআনে সাত স্থানে এসেছে। যার প্রথম হ’ল সূরা আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত। অত্র আয়াতে ‘দিন’ অর্থ সময়কাল। যার দৈর্ঘ্য হ’ল আখেরাতের হিসাবে হাযার বছর (সাজদাহ ৩২/৫) অথবা পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান (মা‘আরেজ ৭০/৪)। কেননা তখন সূর্য ছিল না। তাই দুনিয়াবী ২৪ ঘণ্টার হিসাব অচল। আর সবই হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। এতে বান্দার কোন হাত নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এ দু’য়ের মধ্যেকার সবকিছুকে সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে। অথচ এতে আমাদের কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি’ (ক্বা-ফ ৫০/৩৮)। আর এই ছয়দিন হ’ল রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার। শুক্রবারে আছরের পূর্বেই সবকিছু শেষ করেন। অতঃপর আছর থেকে দিনের শেষ মুহূর্তে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন (মুসলিম হা/২৭৮৯; মিশকাত হা/৫৭৩৪)। আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) বলেন, আল্লাহ রবিবার ও সোমবারে পৃথিবী সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার ও বুধবারে আকাশ সমূহ সৃষ্টি করেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবারে খাদ্য সমূহ এবং পৃথিবীর অন্যান্য বস্ত্ত সমূহ সৃষ্টি করেন। শুক্রবারে আছরের পূর্বেই সবকিছু শেষ করেন (বায়হাক্বী হা/১৮১৬১, ৯/৩ পৃ.; কুরতুবী, তাফসীর সূরা আন‘আম ১ আয়াত)।  এই ছয় দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে এতটুকুই বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা চাইলে এক নিমিষেই সবকিছু ‘হও’ বলে সৃষ্টি করতে পারতেন। তবে বিশেষ হিকমতের কারণে তিনি তা করেননি। বরং প্রকৃতির সবকিছুকে ধারাবাহিক ও নিয়মবদ্ধভাবে করেছেন, যাতে তা মানুষের জন্য শিক্ষণীয় হয়। তাছাড়া আল্লাহর নিকট প্রত্যেকটি বস্ত্তর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে (কুরতুবী, তাফসীর সূরা আ‘রাফ ৫৪ আয়াত)।

প্রশ্ন (২০১) : সুন্নাত ছোট হৌক বা বড় হৌক সুন্নাতের প্রতি অবহেলা করা যাবে না। এক্ষণে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশ সময়ে সাদা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতেন। এই সুন্নাতকে অবহেলা করা সমীচীন হবে কি?

উত্তর : দাড়িতে মেহেদী বা খেযাব ব্যবহার করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা বার্ধক্যের শুভ্রতাকে পরিবর্তন করো এবং ইহূদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না’ (তিরমিযী হা/১৭৫২; মিশকাত হা/৪৪৫৫, হাদীছ ছহীহ)। তবে কোন মুসলমান দাড়িতে খেযাব ব্যবহার না করলে তাকে সুন্নাতের অবহেলা বলা যাবে না। কেননা বিষয়টি অপরিহার্য নয়। হযরত আলী, উবাই বিন কা‘ব, আনাস, সালামা বিন আকওয়া‘ (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবী খেযাব ব্যবহার করতেন না (ফাৎহুল বারী হা/৫৮৯৯-এর আলোচনা ১০/৩৫৫ পৃ.)। ত্বাবারাণী বলেন, ছাহাবীদের একদল খেযাব লাগাতেন, একদল লাগাতেন না। ছাহাবীগণের মধ্যে এ নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না (মুসলিম শরহ নববী হা/২১০৩-এর আলোচনা)। তবে কাশফুলের মত সাদা চুল-দাড়ি হ’লে খেযাব লাগানো যরূরী (মুসলিম হা/২১০২)।

প্রশ্ন (২০২) : নিয়মিত মাগরিব ছালাতের পর মসজিদে নছীহত করার আয়োজন করা যাবে কি?

উত্তর : মুছল্লীদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে যেকোন সময় ছালাত শেষে নিয়মিত দ্বীনী আলোচনার আয়োজন করায় কোন বাধা নেই। তবে মুছল্লীদের মাসনূন যিকর-আযকার শেষ হওয়ার পর আলোচনা শুরু করা উত্তম (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৬/৭৪-৭৫)। শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ছালাতের পরে আলোচনা করা বিদ‘আত নয়; বরং এটিও যিকর ও জ্ঞান আদান-প্রদানের অংশ (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব ১২/৯০)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) প্রায় ছালাত শেষে আলোচনা করতেন (বুখারী হা/৪০১; মিশকাত হা/১২৯, ১৬৫, ৯০৯, ১১৩৭, ৪৬২১)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফরয ছালাত আদায় করার পর বসে যায় এবং লোকদের তা‘লীম দেয়, সে ব্যক্তি যে দিনে ছিয়াম পালন করে ও রাতে ইবাদত করে তার চেয়ে বেশী মর্যাদাবান। যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমি মর্যাদাবান’ (দারেমী হা/৩৪০; মিশকাত হা/২৫০)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রতি বৃহস্পতিবারে এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) প্রতি শুক্রবারে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে ওয়ায করতেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২০৭; বুখারী হা/৬৩৩৭; মিশকাত হা/২৫২)। তবে মুছল্লীদের মানসিকতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে তাদের অসুবিধা বা বিরক্তির কারণ না হয়।

প্রশ্ন (২০৩) : জামাতা শ্বশুর বাড়িতে কতদিন পর্যন্ত থাকতে পারবে? তিন দিনের বেশী অবস্থান করা কি হারাম?

উত্তর : জামাতা শ্বশুরের অন্যতম নিকটাত্মীয়। সুতরাং শ্বশুরের সামর্থ্য ও নিমন্ত্রণ সাপেক্ষে জামাতা শ্বশুর বাড়িতে যতদিন খুশি থাকতে বা খেতে পারবে। এতে কোন শারঈ বাধা নেই। উল্লেখ্য যে, একটি হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান দেখায় তার প্রাপ্যের বিষয়ে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল মেহমানের প্রাপ্য কী? তিনি বললেন, একদিন একরাত ভালভাবে মেহমানদারী করা, আর তিন দিন হ’ল (সাধারণ) মেহমানদারী। আর তার চেয়েও অধিক হ’লে তা হ’ল তার প্রতি দয়া (বুখারী হা/৬০১৯; মিশকাত হা/৪২৪৪)। এই হাদীছের ভিত্তিতে কেউ কেউ ধারণা করেন যে, জামাই বা অনুরূপ নিকটাত্মীয়রাও এই নির্দেশনার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একথা সঠিক নয়। বরং হাদীছটি মূলতঃ সাধারণ আগন্তুক বা মুসাফির মেহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (দ্র. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী ১০/৫৩২-৩৩; মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত ৭/২৭৩১; আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ ১০/১৫২)। ইসলামে মেহমানকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ ঈমানী দায়িত্ব। সেকারণে রাসূল (ছাঃ) মেহমানদারীকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এমনকি একে মেহমানের হক হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন (বুখারী হা/৬০১৯)। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মুসাফিরকে মেযবানের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মেহমানদারী তিন দিন এবং উত্তমরূপে মেহমানদারী একদিন ও একরাত্রি। কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের নিকট অবস্থান করে তাকে পাপে নিপতিত করবে। তখন তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে সে তাকে পাপে নিপতিত করবে? তিনি বললেন, সে (মেহমান) তার নিকট (এমন দীর্ঘ সময়) অবস্থান করবে, অথচ তার (মেযবানের) নিকট এমন কিছু নেই, যা দ্বারা সে তার মেহমানদারী করবে’ (মুসলিম হা/৪৮; আহমাদ হা/২৭২০৯)।

প্রশ্ন (২০৪) : মোহরানা আদায়ের গুরুত্ব জানতে চাই।

উত্তর : মোহরানা বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, বিবাহের সর্বাধিক প্রয়োজনীয় শর্ত হ’ল, তোমরা যা দ্বারা মহিলার লজ্জাস্থান হালাল করবে, তা আদায় করা (আবুদাউদ হা/২১৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫৪৭)। মোহরানা পরিশোধ না করার নিয়ত করা গর্হিত অপরাধ। রাসূল (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কম বা বেশী মোহরের বিনিময়ে কোন মহিলাকে বিবাহ করল, অথচ মোহর পরিশোধ করবে না বলে নিয়ত করল এবং এই প্রতারণা করা অবস্থায় মারা গেল তাহ’লে ক্বিয়ামতের দিন সে যেনাকারী হিসাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে’ (ছহীহুত তারগীব হা/১৮০৬ ও ১৮০৭)। অতএব মোহরানা আদায়ে কোনরূপ টালবাহানা করা যাবে না।

প্রশ্ন (২০৫) : ওহোদ পাহাড় কি রাসূল (ছাঃ)-কে বা রাসূল (ছাঃ) নিজেই ওহোদ পাহাড়কে ভালবাসতেন? এর কারণ কি?

উত্তর : নবী করীম (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়কে ভালোবাসতেন এবং ওহোদ পাহাড়ও রাসূল (ছাঃ)-কে ভালোবাসত। যেমন হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও একে ভালোবাসি (বুখারী হা/২৮৮৯; মিশকাত হা/২৭৪৫)। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এই ভালোবাসা রূপক নয়; বরং প্রকৃত অর্থেই ছিল। কারণ রাসূল (ছাঃ) সহ কয়েকজন ছাহাবী যখন ওহোদ পাহাড়ের উপর আরোহন করেছিলেন, তখন তা কেঁপে উঠেছিল। আর রাসূল (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়কে লক্ষ্য করে বলেন, শান্ত হও। পাহাড় রাসূলের নির্দেশে শান্ত হয়ে গিয়েছিল (বুখারী হা/৩৬৯৯; ফাৎহুল বারী ৭/৪৭৮)। পাহাড়ের ন্যায় একটি জড়বস্তু কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে পারে- এ ব্যাপারে ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং পসন্দনীয় কথা হ’ল, ওহোদ আমাদের ভালোবাসে-রাসূল (ছাঃ)-এর এ কথার অর্থ প্রকৃত ভালোবাসা, যা রূপক নয়। আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করার মতো একটি শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছেন, যার মাধ্যমে সে ভালোবাসে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার বাণী, অনেক পাথরই আল্লাহর ভয়ে (পাহাড় থেকে) পড়ে যায় (বাক্বারাহ ২/৭৪)। অনুরূপ শুকনো কাঠ (আল্লাহর নবীর সামনে) ক্রন্দন করেছিল, কংকর তাসবীহ পাঠ করেছিল। অনুরূপ পাথর মূসা (আঃ)-এর কাপড় নিয়ে দৌড়িয়ে পালাচ্ছিল ইত্যাদি। তবে কেউ কেউ বলেন, ওহোদ আমাদের ভালবাসে অর্থ ওহোদ পাহাড়ের বাসিন্দা তথা আনছাররা আমাদের ভালবাসে (নববী, শরহ মুসলিম হা/১৩৬৫-এর আলোচনা)।

প্রশ্ন (২০৬) : সরকারী জমিতে জোরপূর্বক মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি? এভাবে তৈরীকৃত মসজিদে ছালাত হবে কি? সেখানে দান করা যাবে কি?

উত্তর : সরকারী জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত জবর দখল করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। কারণ মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ওয়াক্ফ হওয়া আবশ্যক। তবে মালিকানাহীন পরিত্যক্ত খাস জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে, যদি তাতে কারো বৈধ আপত্তি না থাকে বা কারো কোন ক্ষতি না হয় (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৮/৪২৫; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ৫/১১১; তোহফাতুল মুহতাজ ৩/২৮৯)। এক্ষণে সরকারী হোক বা অন্যের মালিকানাধীন জমি হোক, তা জবর দখল করে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। তবে কেউ সেখানে ছালাত আদায় করলে তা আদায় হয়ে যাবে, কেননা মূল দায়ভার সেই ব্যক্তির উপর যে তা অন্যায়ভাবে দখল করেছে (নববী,  আল-মাজমূ‘ ৩/১৬৪; ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/৭৭)।

প্রশ্ন (২০৭) : কোন জারজ নারীকে বিবাহ করা যাবে কি?

উত্তর : জারজ নারীকে বিবাহ করা জায়েয। কারণ পিতা-মাতার পাপ সন্তানের উপর বর্তাবে না (আন‘আম ৬/১৬৪; ছহীহাহ হা/২১৮৬)। এক্ষণে মেয়ে যদি তাক্বওয়াশীল হয়, তাহ’লে তাকে বিবাহ করায় কোন বাধা নেই (ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৩/১৬৬)। উল্লেখ্য যে, অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া নারীর অভিভাবক হবে তাক্বওয়াশীল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা আদালত (তিরমিযী হা/১১০২; মিশকাত হা/৩১৩১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৭০৯)।

প্রশ্ন (২০৮) : মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব কি? ছাহাবায়ে কেরামের পর আর কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছেন কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। ছাহাবী ও তাবেঈদের কেউ কেউ রাসূল (ছাঃ)-কে স্বপ্নে দেখেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে আমাকে স্বপেণ দেখবে, সে অচিরেই জাগ্রত অবস্থাতেও আমাকে দেখবে। আর শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না (বুখারী হা/৬৯৯৩; মুসলিম হা/২২৬৬; মিশকাত হা/৪৬০৯-১১)। শয়তান অন্যের রূপ ধারণ করে এসে রাসূলের কথা বলে প্রতারণা করতে পারে। কিন্তু সরাসরি রাসূলের রূপ ধারণ করতে পারবে না। এজন্য দেখা যায়, কিছু বিদ‘আতী প্রচার করে বেড়ায় যে, সে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছে। কিন্তু আদৌ সে রাসূলকে দেখেনি। বরং শয়তানকে দেখেছে। সে রাসূলের মৌলিক গঠন সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় বিভ্রান্ত হয়েছে। এজন্য ইবনু সীরীনের কাছে এসে কেউ যখন বলত, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি। তখন তিনি রাসূলের চেহারার ছিফাত বর্ণনা করতে বলতেন। যদি রাসূলের বৈশিষ্ট্যের সাথে না মিলত তাহ’লে তিনি বলতেন, তুমি অন্য কাউকে দেখেছ (ছহীহাহ হা/২৭২৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফাৎহুল বারী ১২/৩৮৪)। কুলাইব বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি রাসূলকে স্বপ্নে দেখেছি। তখন তিনি বললেন, তাঁর ছিফাত বর্ণনা কর। আমি বললাম, হুবহু হাসান (রাঃ)-এর মতো। তখন তিনি বললেন, তাহ’লে তুমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছো (ছহীহাহ হা/২৭২৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফাৎহুল বারী ১২/৩৮৪)।

প্রশ্ন (২০৯) : ৩৩ বছর পূর্বে অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত ছেলে মেয়ে পালিয়ে কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ করে এবং তাদের দু’জন সাবালক ছেলে আছে। পরে মেয়ের পরিবার বিবাহ মেনে নিলেও নতুনভাবে বিবাহ পড়ানো হয়নি। বর্তমানে মেয়ের পিতা মৃত। তবে মা বেঁচে আছেন। উক্ত বিবাহ ও সন্তান কি বৈধ?

উত্তর : উক্ত বিবাহ শিবহে নিকাহ হিসাবে গণ্য হবে এবং সন্তানেরা প্রকৃত সন্তান হিসাবেই গণ্য হবে। তারা ওয়ারিছ হিসাবে গণ্য হবে। কারণ মেয়ের পরিবার বিবাহ মেনে নিয়েছে এবং উক্ত বিবাহ রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে হয়েছে (ইবনু কুদামা, মুগনী ৭/০৮, ১১/১৯৬; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/১০৩)। বর্তমান অবস্থায় তাদের নতুন করে বিবাহ পড়ানোর সুযোগ নেই। তবে ভুল পদ্ধতিতে বিবাহের কারণে আল্লাহর নিকট অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, মহিলাদের বিবাহের ক্ষেত্রে অলী বা পিতা গুরুত্বপূর্ণ। সেকারণ অভিভাবক ব্যতীত নারীর বিবাহকে রাসূল (ছাঃ) তিনবার বাতিল বলেছেন (আহমাদ, আবুদাঊদ ও অন্যান্য; মিশকাত হা/৩১৩০, ৩১৩১)।

প্রশ্ন (২১০) : স্ত্রী বেনামাযী, বেপর্দা এবং শারঈ বিধান পালনে অনাগ্রহী। এক্ষণে ধৈর্য ধরে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে, না তালাক দেওয়া উত্তম হবে?

উত্তর : সাধ্যানুযায়ী দাওয়াত দিয়ে যাওয়াই উত্তম হবে এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তোমরা তাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাহ’লে তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও এবং (প্রয়োজনে) প্রহার কর। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহ’লে তাদের জন্য অন্য কোন পথ তালাশ করোনা’ (নিসা ৪/৩৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত কর। কেননা নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তা সব সময় বাঁকাই থাকবে। অতএব নারীদের নছীহত করতে থাক’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮)।

তালাক থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর নিকট ঘৃণিত হালাল হ’ল তালাক প্রদান করা’ (আবুদাউদ হা/২১৭১; মিশকাত হা/৩২৮০; যঈফুল জামে‘ হা/৪৪)। হাদীছটির সনদ ‘মুরসাল’ হ’লেও মর্মগতভাবে সঠিক (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৩/৫৫)। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তার মধ্যে সংশোধনের কোন লক্ষণ না পেলে তাকে তালাক দেওয়া যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৩১৯, ৩৬৪)।

প্রশ্ন (২১১) : আমাদের এখানে অনেক ভাই বন্দুকের সাহায্যে বন্য পাখি, হাঁস ও হরিণ শিকার করে। কিন্তু গুলি করার পর উক্ত প্রাণীগুলোর কাছে পেঁŠছার পূর্বেই মারা যায়, তখন যবেহ করার কোন সুযোগ থাকে না। এমতাবস্থায় গুলি ছোড়ার সময় ‘বিসমিল্ল¬াহ’ বললে উক্ত প্রাণীগুলো যবেহ ছাড়া খাওয়া যাবে কি?

উত্তর: ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বন্দুকের গুলি ছোড়া হ’লে এবং রক্ত প্রবাহিত হ’লে সে প্রাণীগুলো খাওয়া বৈধ হবে। এছাড়া জীবিত অবস্থায় পেলে যবেহ করে নিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আর তুমি তীর ছোড়ার সময় আল্লাহর নাম নিয়েই ছুড়বে। অতঃপর শিকার একদিন পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকার পর তা পেলে, তাতে যদি তোমার তীরের আঘাত ব্যতীত অন্য কোন চিহ্ন না দেখ, তবে তুমি তা চাইলে খেতে পারো। তবে পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় পেলে তা খেয়ো না’ (মুসলিম হা/১৯২৯; নাসাঈ হা/৪২৯৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৩/৯১; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২০/০২)।

প্রশ্ন (২১২) : হিজাব পরিহিতা গায়ের মাহরাম নারীকে একাকী পড়ানো যাবে কি? এথেকে অর্জিত অর্থ হালাল হবে কি?

উত্তর : হিজাব পরিহিতা হ’লেও একাকী নির্জনে কোন গায়ের মাহরাম নারীকে পড়ানো যাবে না। কারণ দু’জন বেগানা নারী-পুরুষ একাকী হ’লে তৃতীয়জন থাকে শয়তান (তিরমিযী হা/২১৬৫; মিশকাত হা/৩১১৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৯০৮)। এক্ষণে যদি গায়ের মাহরামকে পড়াতে হয় তাহ’লে নির্জনে নয়, বরং অন্য কারো উপস্থিতিতে বা তার মাহরামের উপস্থিতিতে পড়াতে হবে। উল্লেখ্য যে, মেয়েদের জন্য মহিলা শিক্ষিকার ব্যবস্থা করাই নিরাপদ।

প্রশ্ন (২১৩) : শারঈ ওযর বশতঃ মসজিদে যেতে না পারায় ঘরে ছালাত আদায় করলে জামা‘আতের নেকী পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : শারঈ ওযরের কারণে বাড়িতে একাকী বা জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে নেক নিয়তের কারণে পূর্ণ ছওয়াব প্রদান করবেন (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৪/৩২৩)। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, মানুষ অসুস্থ হ’লে অথবা সফরে থাকলে তার আমালনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হ’ত’ (বুখারী হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/১৫৪৪)।

প্রশ্ন (২১৪) : ছালাতে মহিলাদের পায়ের পাতা ঢেকে রাখা আবশ্যক কি? আবুদাঊদের হা/৬৪০-এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।

উত্তর : মহিলাদের মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি ব্যতীত সর্বাঙ্গ সতর (আবুদাঊদ হা/৪১০৪; মিশকাত হা/৪৩৭২)। সে হিসাবে ছালাতে নারীদের জন্য পায়ের পাতা ঢেকে রাখা উত্তম (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৭/৮৬)। তবে পায়ের পাতা প্রকাশ পেলে ছালাতের ক্ষতি হবে না, কেননা এটি স্বভাবজাতভাবে প্রকাশিতব্য (তিরমিযী হা/৩৭৭-এর আলোচনা; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া ২২/১১৪-১২০; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ২/১৬১)। উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদ হা/৬৪০ বলা হয়েছে যে, এমন (দীর্ঘ) কাপড় পরে ছালাত আদায় করবে, যাতে পায়ের পাতার উপরাংশ ঢেকে যায় (মিশকাত হা/৭৬৩)। তবে উক্ত হাদীছটির সনদ যঈফ (ইরওয়া হা/২৭৪)।

প্রশ্ন (২১৫) : কোন ব্যক্তিকে সূদের ঋণ পরিশোধ করার জন্য যাকাতের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা যাবে কি?

উত্তর : সূদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খালেছ নিয়তে তওবা করার শর্তে যাকাতের মাল থেকে সূদী ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা করা যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৬/৪৮০; উছায়মীন, আশ-শারহুম মুমতে‘ ৬/২৩৫; লিকাউল বাবিল মাফতূহ, লিকা ১৫১;  ড. ওমর সুলায়মান আশকার, আবহাছুন নাদওয়াতিল খামেসা লি কাযায়া যাকাতিল মু‘আছিরা ২১০ পৃ.)।

প্রশ্ন (২১৬) : নাপাক কাপড় পরিহিত অবস্থায় ওযূ করে পবিত্র কাপড় পরিধান করে ছালাত আদায় করলে ছালাত শুদ্ধ হবে কি?

উত্তর : এমতাবস্থায় ছালাত সিদ্ধ হবে (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ১১/১৫৪৭)।

প্রশ্ন (২১৭) : স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কোন একজন ছালাত আদায় না করলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। আমাদের একজন কিছুদিন ছালাত আদায় করেনি। কিন্তু বর্তমানে আমরা উভয়েই ছালাত আদায় করি। এক্ষণে আমাদের নতুনভাবে বিবাহ করতে হবে কি?

উত্তর : অবহেলাবশে ছালাত ত্যাগকারীর বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হবে না। বরং কেউ যদি ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে, তাহ’লে সে কাফের হয়ে যাবে এবং স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হবে। যেহেতু আপনারা ছালাতকে অস্বীকার কারী ছিলেন না, সেহেতু আপনাদের মধ্যে তালাক হয়নি। এমতাবস্থায় নতুনভাবে বিবাহ পড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫১)।

প্রশ্ন (২১৮) : জনৈক ব্যক্তি তার আত্মীয়-স্বজনের কথায় প্রতিজ্ঞা করে যে, তার ছেলে ও মেয়েকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েই ছাড়বে। এমন প্রতিজ্ঞা করা কি সমীচীন হবে?

উত্তর : ভবিষ্যৎ কোন বিষয়ে এমন জোর প্রতিজ্ঞা করা সমীচীন নয়। কেননা বান্দার তাক্বদীর পূর্বনির্ধারিত। কারো প্রতিজ্ঞায় বা সংকল্পে তা পরিবর্তনশীল নয়; বরং একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার উপর তা নির্ভরশীল। তবে ইনশাআল্লাহ বলে নিজের বৈধ ইচ্ছা বা কামনা প্রকাশ করতে পারে (কাহফ ১৮/২৩-২৪)।

প্রশ্ন (২১৯) : আমি জনৈক হিন্দুর নিকট থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। কিন্তু ঐ ব্যক্তিকে বা তার কোন ওয়ারিছকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর :  এক্ষেত্রে শারঈ বিধান হ’ল, পূর্ণ এক বছর মালিক বা তার ওয়ারিছদের সন্ধানে থাকতে হবে। এরপরে মালিক বা তার ওয়ারিছদের পাওয়া না গেলে ব্যক্তি উক্ত সম্পদ ভোগ করতে পারে কিংবা ছাদাক্বা করতে পারে। তবে কোনদিন যদি পাওনাদারকে খুঁজে পাওয়া যায় বা তার ওয়ারিছেরা ফিরে আসে এবং অর্থ দাবী করে, তাহ’লে তাদের পাওনা অর্থ ফেরত দিতে হবে। তখন উক্ত ছাদাক্বাটি দানকারীর পক্ষ থেকে হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৪/৪১, ৬৯-৭১; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৬/০২, টেপ ১৩৪)।

প্রশ্ন (২২০) : জান্নাতের কি একশটি স্তর রয়েছে? যদি থাকে তবে নিম্ন স্তরের জান্নাতীরা কি উচ্চ স্তরের জান্নাতীদের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করবে না?

উত্তর : জান্নাতে কেবল একশটি নয় বরং অসংখ্য স্তর আছে (নিসা ৪/৯৫-৯৬; আনআম ৬/১৩২; আনফাল ৮/৪; বনী ইসরাঈল ১৭/২১; ত্ব-হা ২০/৭৫)। যার মধ্যে শুধু একশটি স্তর এমন রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পথে জিহাদকারীদের জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭)। অন্য হাদীছে এসেছে, জান্নাতে কুরআনের আয়াত সমপরিমাণ স্তর আছে (ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮০; ছহীহুত তারগীব হা/৬৩৮; ফাৎহুল বারী ১৩/৪১৩; ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিল আরওয়াহ ৬৬, ৭৯ পৃ; ইয বিন আব্দুস সালাম, আল-ফাওয়ায়েদু ফি ইখতিছারিল মাক্বাছেদ ১৫৩ পৃ.)। সুতরাং জান্নাতের অসংখ্য স্তর রয়েছে। এক্ষণে এই স্তরগুলোর বাস্তবতা কেমন ও বিভিন্ন স্তরের অধিবাসীদের মধ্যে মর্যাদার কি তফাৎ হবে- সে ব্যাপারে কোন স্পষ্ট হাদীছ নেই। অবশ্য হাদীছের বর্ণনামতে, জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের নাম হ’ল ‘ফেরদাউস’। আর জান্নাতের একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরের দূরত্ব দুই আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমপরিমাণ হবে (বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ঈমান, আমল ও তাক্বওয়ার তারতম্যের ভিত্তিতে জান্নাতীদের মধ্যে এই স্তরভেদ করা হবে (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১১/১৮৮)। আর নেক আমলের প্রতিযোগিতা করতে উৎসাহিত করার জন্যই এই স্তরগুলোর তারতম্যের কথা হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে। যাতে তারা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্য দুনিয়াতে নেক আমলের প্রতিযোগিতা করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ উপর দিকে দেখতে পাবে, যেমন দূরবর্তী উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ তোমরা আকাশের পূর্ব বা পশ্চিম কোণে স্পষ্ট দেখতে পাও। কেননা তাদের পরস্পরের সম্মানের ক্ষেত্রে পার্থক্য সূচিত থাকবে। এ কথা শ্রবণে ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ স্তরসমূহ তো নবীদের জন্য নির্ধারিত। তাদের ছাড়া অন্যেরা তো ঐ স্তরে কখনো পৌঁছতে পারবে না। জবাবে তিনি বললেন, কেন পারবে না, অবশ্যই পারবে। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি! যে সব ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছে ও তাঁর রাসূলদের সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, তারা উক্ত স্তরসমূহে প্রবেশ করতে পারবে (বুঃ মুঃ ছহীহুত তারগীব হা/৩৭০৬)। তবে এই মর্যাদার পার্থক্যের কারণে কারো অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ স্থান পাবে না। কেননা জান্নাতীদের হৃদয় থেকে এই ধরনের অনুভূতিকেই উঠিয়ে নেয়া হবে (হিজর ১৫/৪৭)।

প্রশ্ন (২২১) : সদ্যমৃত ব্যক্তি, যাকে এখনও কবরস্থ করা হয়নি, তাকে সালাম দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : কবরে মাইয়েতকে শোয়ানোর পূর্বে সালাম দেওয়ার বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) বা পূর্ববর্তী কোন সালাফ থেকে এ ব্যাপারে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। সুতরাং মাইয়েতকে কবরে শোয়ানোর পূর্বে তাকে সালাম নয়, বরং তার জন্য দো‘আ করা মুস্তাহাব। কারণ এসময় মানুষ দো‘আ করলে তার সমর্থনে ফেরেশতারা আমীন বলে থাকেন (মুসলিম হা/৯২০; মিশকাত হা/১৬১৭)। উল্লেখ্য যে, মাইয়েতকে সামনে রেখে প্রচলিত ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়ার রীতি শরী‘আত সম্মত নয়।

প্রশ্ন (২২২) : মা‘যূর ব্যক্তি যিনি চেয়ারে বসে ছালাত আদায় করেন, তিনি কি ইমামতি করতে পারবেন? এছাড়া জুতা পরিধান করে ছালাত আদায়ের হুকুম কি?

উত্তর : অসুস্থ বা মা‘যূর ব্যক্তি চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করে ইমামতি করতে পারবেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) ওযরের কারণে বসে ছালাতে ইমামতি করেছিলেন। আর আবুবকর (রাঃ) তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে এবং অন্যান্য ছাহাবীগণ তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে ইকতেদা করেছিলেন (বুখারী হা/৬৮৭; মুসলিম হা/৪১৮; মিশকাত হা/১১৪৭)। এক্ষণে ইমাম দাঁড়িয়ে ছালাত শুরু করার পর যদি অসুস্থতার কারণে বসে ছালাত আদায় করেন, তবে মুছল্লীরা বাকী ছালাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। অতএব অসুস্থ অবস্থায় ইমাম বসে ছালাতে ইমামতি করতে পারবেন।  জুতায় অপবিত্রতা না থাকলে জুতা পরিধান করে ছালাত আদায় করা জায়েয। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নবী করীম (ছাঃ) কি তাঁর জুতা পরে ছালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ (বুখারী হা/৩৮৬)।

প্রশ্ন (২২৩) : উচ্চশিক্ষার জন্য নারীরা বিদেশে মাহরাম ব্যতীত একাকী গমন করতে এবং অবস্থান করতে পারবে কি?

উত্তর : মাহরাম ব্যতীত কোন নারীর একাকী দূরে সফরে কিংবা বিদেশে গমন করা নিষিদ্ধ। নারীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান ও ফেৎনা থেকে প্রতিরক্ষার জন্যই ইসলামের এই নীতি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মেয়েরা মাহরাম ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না এবং মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার সাথেই যাও (বুখারী হা/১৮৬২; মুসলিম হা/১৩৪১)। এক্ষণে যদি পথের নিরাপত্তা থাকে কিংবা অন্যান্য নারীদের সাথে পূর্ণ নিরাপত্তা ও ইয্যত-আব্রু রক্ষা করে সেখানে গমন বা অবস্থানের নিশ্চয়তা থাকে, তাহ’লে তারা শর্তসাপেক্ষে বিদেশে বা দূর শহরে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারে। আর যদি কোন প্রকার ফিৎনার আশংকা থাকে বিশেষত অমুসলিম দেশে, তবে তা হারাম হবে। কেননা উচ্চশিক্ষার চেয়ে নিজের ঈমান-আমল এবং ইয্যত-আব্রু হেফাযত করা অধিক যরূরী এবং ফরযে আইন (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১২/১৭৮)।

প্রশ্ন (২২৪) : মৃত মুয্যাম্মিল হক নিঃসন্তান। তার একজন সহোদর ভাই ও বোন আছে। আর একজন বৈমাত্রেয় ভাই আছে। মৃতের সম্পদ কিভাবে বণ্টিত হবে?

উত্তর : মৃতের স্ত্রী থাকলে তাকে এক-চতুর্থাংশ প্রদানের পর অবশিষ্ট পুরো সম্পত্তি ভাই ও বোনেরা ছেলের অর্ধেক মেয়ে হিসাবে পেয়ে যাবে। সহোদর ভাই ও বোন থাকায় বৈমাত্রেয় ভাই মীরাছ পাবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২০/১৯৯; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩/৪৭)। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তারা অনেক ভাই ও বোন থাকে, তাহ’লে ‘এক ভাই সমান দুই বোন’ নীতিতে সম্পত্তি বণ্টিত হবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এগুলি বর্ণনা করছেন যাতে তোমরা বিভ্রান্ত না হও। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল বিষয়ে সুবিজ্ঞ’ (নিসা ৪/১৭৬)।

প্রশ্ন (২২৫) : গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী যবহের ক্ষেত্রে কি কি বিধান অনুসরণ করা যরূরী?

উত্তর : যবেহের নিয়ম হ’ল- যবেহকারী ক্বিবলামুখী হয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করবে। এসময় পশু-পাখির মাথা দক্ষিণ দিকে থাকবে। ছুরি বা যন্ত্র ধারালো হ’তে হবে। নারী-পুরুষ যে কেউ পশু-পাখি বা গরু-ছাগল সবই যবেহ করতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২২/৪৬২-৬৩)।

প্রশ্ন (২২৬) : ক্যান্সার, ডায়বেটিস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির ক্ষেত্রে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে কোন রোগী মারা গেলে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন কি?

উত্তর : ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি অতি কষ্টদায়ক হওয়ায় এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদেরকে শহীদ হিসাবে গণ্য করেছেন কোন কোন বিদ্বান। তারা পেটের রোগের উপর ভিত্তি করে এদেরকে শহীদ হিসাবে গণ্য করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায়, সেও শহীদ (আবুদাঊদ হা/৩১১১ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৫৬১)। তিনি আরো বলেন, সে ব্যক্তি কবরের ফিৎনা থেকে রক্ষা পাবে যার পেট তাকে হত্যা করেছে (তিরমিযী হা/১০৬৪; মিশকাত হা/১৫৭৩; ছহীহুত তারগীব হা/১৪১০)। উক্ত হাদীছগুলির ভিত্তিতে তারা ইজতিহাদ করে বলেছেন যে, উপরোক্ত কঠিন রোগ সমূহে মারা গেলেও শহীদের মর্যাদা পাবে (ফাৎহুল বারী ৬/৬৬; নববী, শারহু মুসলিম ১৩/৬৩; শানক্বীতী, যাদুল মুস্তাকনে‘ ১২/২৩৪)। তবে এই ব্যাপারে কোন বিশেষ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।

প্রশ্ন (২২৭) : ছেলেদের বুক বা পিঠের লোম শেভ করা যাবে কি?

উত্তর : ছেলেদের বুক বা পিঠের স্বাভাবিক লোম তার সৃষ্টিগত সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর ধর্ম, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর বলেন, তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করোনা। মানুষকে তাদের সৃষ্টির উপর ছেড়ে দাও (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রূম ৩০ আয়াত)।

অতএব মানুষের স্বাভাবিক দৈহিক সৌন্দর্য বিকৃত করা যাবেনা। যেমন নারীর লম্বা চুল, চোখের ভ্রু ও পাপড়ি, পুরুষের দাড়ি ইত্যাদি। তবে যেসব বিষয়ে শরী‘আতের অনুমোদন রয়েছে সেগুলি ব্যতীত। যেমন বাড়তি নখ কাটা, বগলের ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা, পুরুষের গোঁফ ছাঁটা, মাথার বাড়তি চুল কাটা ইত্যাদি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দশটি বিষয় ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছাটা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, বগলের ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা... (মুসলিম হা/২৬১; মিশকাত হা/৩৭৯)।

তবে অস্বাভাবিক কিছু হ’লে তা কাটায় কোন বাধা নেই। কারণ সেটি মুবাহ বিষয়। যা কাটতে চাইলে কাটতে পারে (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ১৮/১০০)।

প্রশ্ন (২২৮) : অনেকে পিতা-মাতার কবরে নিজেকে দাফন করার জন্য অছিয়ত করে যায়। এর কোন উপকারিতা আছে কি?

উত্তর : এই ধরনের অছিয়ত পালনযোগ্য নয়। কারণ প্রয়োজন ছাড়া একটি কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন জায়েয নয়। তাছাড়া এতে প্রথম লাশের সম্মানহানী হয় (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৮৪; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ১৩/৪২০-২১)। কেবল বাধ্যগত কারণে যেমন স্থান সংকুলান না হ’লে বা মহামারির কারণে একাধিক কবর খনন করার মত লোক পাওয়া না গেলে কেবল তখনই এক কবরে একাধিক ব্যক্তিকে দাফন করা যাবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/২৪৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৫/৩৬৯)। ওহোদ যুদ্ধে একাধিক শহীদকে একই কবরে দাফন করা হয়েছিল (নাসাঈ হা/২০১০; ইবনু মাজাহ হা/১৫৬০;  মিশকাত হা/১৭০৩; দ্র. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩৮৫ পৃ.)।

প্রশ্ন (২২৯) : বিবাহের আক্দ হওয়ার পর ছেলে-মেয়ে পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ বা পরস্পরে একান্তে সময় কাটাতে পারবে কি?

উত্তর : আক্দ হ’ল দু’জন স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে অভিভাবকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বরের কবুল বলা। অতএব আক্দ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মেলামেশা ও সাক্ষাত করা সবই জায়েয। এমনকি স্বামী মারা গেলে স্ত্রী মোহরানাসহ যাবতীয় মীরাছের অংশীদার হবে (আবুদাঊদ হা/২১২৪; মিশকাত হা/৩২০৭; ইরওয়া হা/১৯৩৯, সনদ ছহীহ)। তবে বর্তমানে এনগেজমেন্ট বা আংটি পরানোর যে রেওয়াজ চালু রয়েছে, তা আদৌ আক্দ হিসাবে গণ্য হবে না। অতএব এর ভিত্তিতে একত্রে থাকা বা চলাফেরা করা জায়েয নয়।

প্রশ্ন (২৩০) : ওয়েল্ডিং-এর কাজ করার ক্ষেত্রে প্যান্ট গিরার নীচে ঝুলিয়ে না পরলে জুতার ভিতরে আগুন ঢুকে গিয়ে মোজা পুড়ে যায়। এক্ষেত্রে টাখনুর নীচে প্যান্ট পরা যাবে কি?

উত্তর : সাধ্যমত বিকল্প পথ অন্বেষণ করতে হবে। যেমন গামবুট পরা। কারণ সাধারণ অবস্থায় অহংকার বশে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা নিষিদ্ধ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৩১২)। তবে বাধ্যগত অবস্থায় তা জায়েয। কারণ সেখানে অহংকারের বিষয়টি থাকে না।

প্রশ্ন (২৩১) : ইমাম ও মুক্তাদী একই কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ইমামকে কি এক বা অর্ধ হাত এগিয়ে দাঁড়াতে হবে, না একই কাতারে পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়াবে?

উত্তর : ইমাম ও মুছল্লী একই কাতারে দাঁড়ালে তারা কাতার সোজা করে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। ইমাম একটু সামনে আর মুক্তাদী একটু পিছনে দাঁড়াবে এমন বিধান নেই। ইবনু আববাস (রাঃ) সহ একাধিক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর পাশে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করেছেন কিন্তু আগ-পিছ হওয়ার কোন দলীল পাওয়া যায় না। অতএব ইমাম ও মুক্তাদী একই কাতারে দাঁড়ালে আগ-পিছ করা যাবে না (আলবানী, ছহীহাহ হা/২৫৯০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/১০-১২)।

প্রশ্ন (২৩২) : ছাহাবীগণের নামে সন্তানের নাম রাখা যাবে কি? যদি অর্থগতভাবে তা পসন্দনীয় না হয়?

উত্তর : ছাহাবীগণের নামে সন্তানের নাম রাখা যাবে। বরং নবী-রাসূল ও সৎ বান্দাদের নামে নাম রাখা মুস্তাহাব। রাসূল (ছাঃ) নিজ সন্তানের নাম ইবরাহীম (আঃ)-এর নামে রেখেছিলেন (মুসলিম হা.২৩১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১২১)। যেমন হাদীছে এসেছে, মুগীরা বিন শু‘বাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যে সময় নাজরান গমন করলাম। তখন সেখানকার ব্যক্তিরা আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনারা পড়েন, يَا أُخْتَ هَارُونَ (হে হারূণের বোন)। অথচ মূসা (আঃ) ছিলেন ঈসা (আঃ)-এর এত দিন আগের! মদীনায় ফিরে এসে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উক্ত বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, তারা (ইহূদী-খৃষ্টানরা) তাদের পূর্ববর্তী নবী ও সৎব্যক্তিগণের নামে (শিশুদের) নাম রাখতো (মুসলিম হা/২১৩৫; ছহীহাহ হা/৩৫৮৮)। জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রাঃ) তাঁর নয় সন্তানের নাম বদরী শহীদ ছাহাবীগণের নামে রেখেছিলেন (ত্বাবাকাতে ইবনু সা‘দ ৩/৭৪)।

প্রশ্ন (২৩৩) : পুত্র সন্তান নেই এরূপ সচ্ছল পিতা-মাতার ভরণ-পোষণসহ সার্বিক দেখাশোনা করা বিবাহিত মেয়েদের জন্য ফরয দায়িত্ব কি? সাধ্যমত দেখাশোনা করার পরেও তাদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় মেয়েরা গুনাহগার হবে কি?

উত্তর : কন্যা সন্তান উপার্জনক্ষম হ’লে বা স্বামীর সম্পদ থেকে খরচ করার স্বাধীনতা থাকলে পিতা-মাতার জন্য সাধ্যমত খরচ করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’ (আবুদাঊদ হা/৩৫৩০; নাসাঈ হা/৪৪৫০; মিশকাত হা/৩৩৫৪)। তবে যেহেতু পুত্র সন্তান উপার্জনের দায়িত্ব পালন করে এবং পিতা-মাতার সম্পদে দ্বিগুণ ওয়ারিছ হয়, সেকারণ তারাই এক্ষেত্রে মূল দায়িত্বশীল (ইবনুল মুনযির, মুগনিল মুহতাজ ১৫/৬১)। ইমাম শাফেঈ বলেন, পুত্র সন্তান আছাবা হওয়ায় তাদের উপর পিতা-মাতার জন্য খরচ করা আবশ্যক (ইবনু কুদামা, মুগনী ৮/২১৯)। তবে কন্যা সন্তান যদি সম্পদশালী হয় এবং সে সম্পদ ব্যয়ে তার স্বাধীনতা থাকে, সেক্ষেত্রে সে তার পিতা-মাতার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ বহন করবে (মুগনী ৮/২১৩; শায়খ বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২৩/২৯১)।

প্রশ্ন (২৩৪) : ইজতেমার সময় দেখা যায়, নারীরা নিজ নিজ বাড়ির ছাদে বা ঘরের ভিতর থেকে ইজতেমা ময়দানের ছালাতের ইকতেদা করে থাকে। উক্ত ইকতেদা শরী‘আত সম্মত হচ্ছে কি?

উত্তর : চোখে দেখা বা কানে শোনার মাধ্যমে যদি ইমামের ইক্বতিদা করা সম্ভব হয়, তবে কাছাকাছি হ’লে তাঁর ইক্বতিদা করা জায়েয। যদিও সেটা মসজিদের বাইরে হয় কিংবা উভয়ের মধ্যে কোন দেওয়াল, রাস্তা বা অনুরূপ কোন প্রতিবন্ধক থাকে (আবুদাঊদ হা/১১২৬; মিশকাত হা/১১১৪)। শায়েখ ওছায়মীন বলেন, যদি মসজিদ থেকে তাদের ঘরে ইমামের আওয়ায শোনা সম্ভব হয়, তাহ’লে ইমামের সাথে জামা‘আত করা জায়েয। কারণ স্থান একই এবং ইকতেদা করা সম্ভব (মাজমূ‘ ফাতাওয়া নং ১০৫৯)। তবে রেডিও- টেলিভিশনের অনুসরণে এরূপ জামা‘আত জায়েয নয়। কারণ সেখানে স্থানিক ঐক্য থাকে না (ঐ, নং ১০৬১)।

প্রশ্ন (২৩৫) : কেউ কেউ বলেন, দিন ও রাতে সতের রাক‘আত ফরয ছালাত ইজমা দ্বারা প্রমাণিত, হাদীছ দ্বারা নয়। এর সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর : দিন ও রাতে ফরয ছালাত সতের রাক‘আত অর্থাৎ যোহরের চার, আছরের চার, এশার চার, মাগরিবের তিন ও ফজরের দুই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্ল¬াহ তা‘আলা মুক্বীম অবস্থায় ও সফরে দু’রাক‘আত করে ছালাত ফরয করেছিলেন। পরে সফরের ছালাত আগের মত রাখা হয় আর মুক্বীম অবস্থার ছালাত বাড়িয়ে দেয়া হয় (বুখারী হা/৩৯৩৫; মুসলিম হা/৬৮৫; মিশকাত হা/১৩৪৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রথমে দু’দু’ রাক‘আত করে ছালাত ফরয করা হয়েছিল। যখন রাসূল (ছাঃ) মদীনায় গমন করলেন ও স্থির হ’লেন তখন মাগরিব ও ফজর ব্যতীত অন্য ওয়াক্তের ছালাতে দু’দু’ রাক‘আত করে বৃদ্ধি করে চার রাক‘আত করা হ’ল। মাগরিবে করা হয়নি তার কারণ সেটি বেজোড়। আর ফজরে করা হয়নি কারণ তাতে দীর্ঘ তেলাওয়াত রয়েছে (বায়হাক্বী ১/৫৩৩, হা/১৬৯৮ সনদ হাসান)। অতএব দিনে-রাতে ১৭ রাক‘আত ফরয ছালাত ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত (ছহীহ ইবনু খুযায়মা ‘ছালাত’ অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩; দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ৩০)।

প্রশ্ন (২৩৬) : হায়েয শেষ হওয়ার পর ফরয গোসলের পূর্বে কি সহবাস করা জায়েয?

উত্তর : গোসল করে পবিত্র হওয়ার পূর্বে হায়েযা স্ত্রীর সাথে সহবাস করা সিদ্ধ নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা ভালভাবে পবিত্র হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশ মতে তোমরা তাদের নিকট গমন কর’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। আর পবিত্রতার অর্থ গোসল করা (কুরতুবী)। সুতরাং যদি কেউ অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে গোসলের পূর্বেই সহবাস করে, তবে তাকে তওবা করতে হবে (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩)। আর কেউ জ্ঞাতসারে করলে তাকে তওবার সাথে সাথে কাফফারা প্রদান করতে হবে। আর এক্ষেত্রে কাফফারা হ’ল এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার (আবুদাঊদ হা/২৬৪)। যার বর্তমান বাযার মূল্যে প্রায় ৮০০০/৪০০০ টাকা। কাফফারার টাকা গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে।

প্রশ্ন (২৩৭) : সামনা সামনি কেউ প্রশংসা করলে করণীয় কি? এভাবে প্রশংসা করা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : সেক্ষেত্রে প্রশংসিত ব্যক্তি নিম্নের দো‘আটি পাঠ করতে পারেন।-اللَّهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنِيْ بِمَا يَقُولُوْنَ وَاغْفِرْ لِيْ مَا لاَ يَعْلَمُوْنَ (আল্লাহুম্মা লা তুআখিযনী বিমা ইয়াকূলূন, ওয়াগফিরলী মা লা ইয়া‘লামূন)। অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তারা যা বলছে সে ব্যপারে আমাকে পাকড়াও কর না এবং যে বিষয়ে তারা জানে না, সে বিষয়ে আমাকে ক্ষমা করে দাও’। জনৈক ছাহাবী এ দো‘আটি পাঠ করতেন’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৬১, সনদ ছহীহ)।

স্মর্তব্য যে, প্রশংসাকৃত ব্যক্তির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এবং এতে তার কল্যাণের সম্ভাবনা থাকলে প্রশংসা করা যেতে পারে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৬/১২৪)। তবে সামনে হৌক বা পিছনে হৌক কারো ব্যাপারে অতি প্রশংসা করা উচিৎ নয়। রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে জনৈক ছাহাবী অপর এক ছাহাবীর উচ্চ প্রশংসা করলে তিনি বলেন, আফসোস! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে (কথাটি তিনি তিনবার বললেন)। অতঃপর বললেন, যদি কারো প্রশংসা করতে হয়, তবে সে যেন বলে, আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি। কারণ তার প্রকৃত হিসাব আল্লাহ জানেন...(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৭)।

প্রশ্ন (২৩৮) : আযান ও এক্বামতের মধ্যে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এক্ষণে এই ছালাত নারীদের জন্যও কি মুস্তাহাব?

উত্তর : উক্ত ছালাত নারীদের জন্যও মুস্তাহাব। কারণ ইসলামের কোন বিধান যদি কোন হাদীছ দ্বারা বিশেষ কোন শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট না হয় তাহ’লে উক্ত বিধান সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয় (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২৭)।

প্রশ্ন (২৩৯) : চাচা এবং মামারা কি মাহরামদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ কুরআনে তাদের বিষয়টি উল্লেখ নেই।

উত্তর : চাচা ও মামারা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মাহরামদের বর্ণনায় বোনের মেয়েকে ও ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী (নিসা ৪/২৩)। তাছাড়া চাচা ফুফুর সমপর্যায়ভুক্ত এবং মামা খালার সমপর্যায়ভুক্ত। আয়েশা (রাঃ)-এর জনৈক দুধসম্পর্কীয় চাচা তাঁর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি ফিরিয়ে দেন। রাসূল (ছাঃ) বাড়িতে আসলে বিষয়টি তিনি তাকে অবহিত করেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তুমি তাকে অনুমতি দাও (বুখারী হা/৪৭৯৬; মুসলিম হা/১৪৪৫)। দুধসম্পর্কীয় চাচা যদি মাহরাম হন, সেখানে আপন চাচা ও মামা আরো ঘনিষ্ঠ মাহরাম (তাফসীরে কাসেমী ১৩/২৯৮)। কারণ হাদীছে চাচাকে পিতার সমমর্যাদা সম্পন্ন বলা হয়েছে (বুখারী হা/৯৮৩; মিশকাত হা/১৭৭৮) এবং খালাকে মায়ের মর্যাদা সম্পন্ন বলা হয়েছে (আবূদাউদ হা/২২৭৮)। যার অর্থ চাচা-মামা পিতারই পর্যায়ভুক্ত।

প্রশ্ন (২৪০) : মহিলারা কি রক্ত দান করতে পারবে?

উত্তর : ফিৎনার আশংকা না থাকলে শারঈ পর্দা রক্ষা করে প্রাপ্ত বয়স্কা সুস্থ নারী রক্তদান করতে পারে (আহযাব ৩৩/৩২-৩৩)।

প্রশ্ন (২৪১) : আসমাউল হুসনা বা আল্লাহুর গুণবাচক নামসমূহ মুখস্থ করা কি আবশ্যিক?

উত্তর : আসমাউল হুসনা মুখস্থ করা আবশ্যিক নয়, বরং এগুলির মর্ম অনুধাবন করা আবশ্যিক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি অর্থাৎ এক কম একশ’টি নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলি মুখস্থ করে রাখবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (বুখারী হা/৬৪১০; মুসলিম হা/২৬৭৭)। এর অর্থ হ’ল ঐ নামগুলি অর্থ সহ মুখস্থ করবে পূর্ণ ঈমান ও আনুগত্যের সাথে এবং আল্লাহর উপর অটুট নির্ভরতার সাথে (ফাৎহুল বারী)। উছায়মীন বলেন, এর অর্থ হ’ল এগুলি মুখস্থ করা, মর্ম অনুধাবন করা, নামের উদ্দেশ্য বুঝে আমল করা এবং সে অনুযায়ী আল্লাহর নিকট দো‘আ করা (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/১২৩)। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জন্য সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সেসব নামেই তোমরা তাঁকে ডাক..’ (আ‘রাফ ৭/১৮০)।

প্রশ্ন (২৪২) : হজ্জে তিনটি ত্বাওয়াফ করতে হয়। প্রশ্ন হ’ল সবগুলি করা কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর : ত্বাওয়াফ মূলতঃ ৩টি। (১) ত্বাওয়াফে কুদূম। যা হজ্জের উদ্দেশ্যে কা‘বায় পৌঁছে করতে হয়। (২) ত্বাওয়াফে ইফাযাহ। যা আরাফার ময়দানে অবস্থানের পর ঈদুল আযহার দিন বা পরের তিন দিনের মধ্যে করতে হয়। যা হজ্জের অন্যতম রুকন। (৩) ত্বাওয়াফে বিদা‘। যা হজ্জ শেষে বিদায়কালে করতে হয়।

তামাত্তু‘ হাজীগণ ত্বাওয়াফে কুদূমের পর সাঈ করে থাকলে তিনি ত্বাওয়াফে ইফাযাহর পর পূর্ণ হালাল হয়ে সাথে সাথে দেশে রওয়ানা হ’তে পারবেন। এসময় সফরের গোছগাছ ব্যতীত অন্য কারণে দেরী হ’লে তাকে পুনরায় বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় এসে ত্বাওয়াফে কুদূম-এর সময় সাঈ করে থাকলে তাকে আর সাঈ করতে হবে না। কেবল ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করেই পূর্ণ হালাল হয়ে দেশে রওয়ানা হবেন। ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী মহিলাগণ বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়াই দেশে ফিরবেন। অতএব সর্বদা ৩টি ত্বাওয়াফ অপরিহার্য নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষে দু’টি ত্বাওয়াফেও হজ্জ সম্পন্ন করা যায় (দ্র. হজ্জ ও ওমরাহ বই ৮০, ১১২-১৪ পৃ.)।

প্রশ্ন (২৪৩) : ইমাম মাগরিবের ছালাতে তৃতীয় রাক‘আতে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সালাম ফিরানোর পূর্বে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে তাকবীর বলায় মুক্তাদীগণ লোকমা প্রদান করেন। তখন ইমাম শেষ বৈঠকে বসে বাকী দো‘আ পড়ে সহো সিজদা না দিয়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। পরে মুছল্লীদের দাবীতে ইমাম দু’টি সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরান। উক্ত পদ্ধতি কি সঠিক হয়েছে?

উত্তর : ছালাতে ওয়াজিব তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাত তরক হ’লে ‘সিজদায়ে সহো’ সুন্নাত হবে (শাওকানী, আস-সায়লুল জাররা-র (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি) ১/২৭৪ পৃ.)। বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী সহো সিজদা না দিলেও চলত। তবে দেওয়াতেও কোন ক্ষতি নেই। এজন্য সবাই নেকী পাবেন। উল্লেখ্য যে, এই দুই (সহো) সিজদা শয়তানের জন্য লাঞ্ছনাকারী গণ্য হয় (মুসলিম হা/৫৭১; মিশকাত হা/১০১৫)।

প্রশ্ন (২৪৪) : যারা বিকলাঙ্গ ও নিজ হাতে খেতে পারে না তাদের উপর রামাযানের ছিয়াম কি ফরয?

উত্তর : এরূপ অক্ষম ব্যক্তি অন্যের সাহায্য নিয়ে ছিয়াম রাখতে পারলে রাখবে। নইলে চিররোগী হিসাবে প্রতিদিনের বিনিময়ে অর্ধ ছা‘ ফিদিয়া প্রদান করবে। তবে সামর্থ্য না থাকলে ফিদিয়া ওয়াজিব নয় (মির‘আত ৭/৩২)। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।

প্রশ্ন (২৪৫) : ছালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’পায়ের মাঝে কতটুকু ফাঁক রাখতে হবে?

উত্তর : দেহের স্বাভাবিক ভারসাম্য অনুযায়ী নিজের দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখবে (বুখারী হা/৭২৫; আবুদাঊদ হা/৬৬২; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/৩৫৭)। সমাজে প্রচলিত- ‘দু’পায়ের মাঝে হাতের তালু পরিমাণ স্থান ফাঁকা রাখবে’ কথাটির শরী‘আতে কোন ভিত্তি নেই (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১৮)। এমনকি চার আঙ্গুল বা তার কম ফাঁকা রাখবে’ কথাগুলি একেবারেই ভিত্তিহীন। বরং জামা‘আতে দাঁড়িয়ে মুছল্লীগণ পরস্পরে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে, সেটাই ছিল ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত আমল (মির‘আত হা/১০৯২-এর ব্যাখ্যা, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ ৪/৬ পৃ.)।

প্রশ্ন (২৪৬) : সফররত অবস্থায় বিতর ছালাত আদায়ের বাধ্যবাধকতা আছে কি?

উত্তর : ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সফরে বাহনের উপরে বিতর ছালাত আদায় করতেন (বুখারী হা/৯৯৯; মুসলিম হা/৭০০)। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সফরে বিতর ছালাত ও ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত পরিত্যাগ করতেন না (যা-দুল মা‘আদ ১/৪৭৩)। অতএব সফরেও বিতর ছালাত আদায় করা সুন্নাত।  

প্রশ্ন (২৪৭) : সুন্নাত বা নফল ছালাত আদায়কালে স্বামী ডাকলে স্ত্রী কি ছালাত ত্যাগ করে স্বামীর ডাকে সাড়া দিবে?

উত্তর : প্রয়োজনে নফল ছালাত সংক্ষিপ্ত করে কিংবা ত্যাগ করেই সাড়া দিবে। কেননা যাদের আহবানে নফল ইবাদত পরিত্যাগ করার অনুমতি আছে তারা হ’লেন পিতা-মাতা ও স্বামী (বুখারী হা/৩৪৩৬; মুসলিম হা/২৫৫০; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ৬/৪৮৭)। স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীকে নফল ছিয়াম পালন করতে ও ফরয ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা করতে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৫১৯৫; মিশকাত হা/২০৩১; আবুদাউদ হা/২৪৫৯; আহমাদ হা/১১৭৫৯; ছহীহাহ হা/২১৭২)। তবে একান্ত বাধ্যগত কারণ ব্যতীত ফরয ছালাত ছেড়ে দেওয়া জায়েয হবে না (উছায়মীন, শারহ রিয়াযুছ ছালেহীন, ৩০২ পৃ.)।

প্রশ্ন (২৪৮) : শ্বশুর ছূফীবাদে বিশ্বাসী। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ীর লোকজন ছেলে-মেয়েদের মাঝে চরম বৈষম্য করে এবং শাশুড়ী অশালীন ভাষায় গালি-গালাজ করে। এই ধরনের আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা কতটুকু আবশ্যক?

উত্তর : প্রচলিত ছূফী মতবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ, যার ব্যাপারে ইমামগণ সতর্ক করে গেছেন। নাছীবী বলেন, আমরা একদিন ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ! আমাদের এলাকায় ছূফী মতবাদের কিছু লোক রয়েছে, যারা অনেক খায়। এরপর ক্বাছীদা আবৃত্তি করে এবং এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে নেচে নেচে যিকির শুরু করে। ইমাম মালেক বললেন, তারা কি শিশু? সে বলল, না। তিনি বললেন, তারা কি পাগল? সে বলল, না বরং আলেম-ওলামা। তিনি বললেন, কোন মুসলমান এমনটি করে বলে জানি না (ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ দামেশকী বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের নিকট দ্বীন নিরাপদ নয়- ছূফী, গল্পকার ও বিদ‘আতী’ (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ৩/২২৬)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘কোন লোক যদি দিনের প্রথম প্রহরে ছূফী মতবাদ গ্রহণ করে, তাহ’লে তুমি তাকে যোহরের সময় হ’তে না হ’তেই একেবারে আহম্মক অবস্থায় পাবে’ (বায়হাক্বী, মানাক্বিবুশ শাফেঈ ২/২০৭)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ছূফী মতবাদে থাকবে, সে আর কখনো সঠিক আক্বীদায় ফিরতে পারবে না’ (ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। তিনি বলেন, ‘আমি ছূফীদের সংস্পর্শে গিয়ে কেবল দু’টি বিষয়ে উপকৃত হয়েছি। তারা বলে, ‘সময় তরবারী তুল্য। তুমি যদি তাকে না কাটো তাহ’লে সে তোমাকে কাটবে। আর তুমি যদি আল্লাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হও, তাহ’লে বাতিল তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/১২৪)।

অন্যদিকে রাসূল (ছাঃ) সন্তানদের প্রতি সমান ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩০১৯)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের পিতা ও পুত্রদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী, তা তোমরা জানো না’ (নিসা ৪/১১)। এক্ষণে শ্বশুরবাড়ীর লোকদের ভ্রান্ত আক্বীদা ও বদ আখলাকের কারণে তাদের সাথে চলাফেরা নিজের আক্বীদা ও আমলের জন্য নিরাপদ মনে না করলে তাদের থেকে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে মুসলিম হিসাবে এবং নিকটাত্মীয় হিসাবে তাদের সাথে সদাচরণ বজায় রাখবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হ’লেও তোমরা তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো (ছহীহাহ হা/১৭৭৭)।

প্রশ্ন (২৪৯) : জনৈকা মহিলার আক্বীক্বা দেওয়া হয়নি। সে অছিয়ত করে যেন তার ছাগলের বাচ্চাটি বড় হ’লে তার পক্ষ থেকে আক্বীক্বা দেওয়া হয়। এক্ষণে তার পক্ষ থেকে আক্বীক্বা দিতে হবে কি?

উত্তর : তার অছিয়ত অনুযায়ী ছাগলের বাচ্চাটি দ্বারা আক্বীক্বা দিতে হবে। কারণ প্রথমতঃ তার আক্বীক্বা হয়নি (ছহীহাহ হা/২৭২৬)। দ্বিতীয়তঃ তার অছিয়ত পূরণ করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা মীরাছ বণ্টনের পূর্বে অছিয়ত পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন (নিসা ৪/১২)।

প্রশ্ন (২৫০) : জনৈক ব্যক্তি বিয়ের ১৪ বছর পর জানতে পারে যে, তার স্ত্রী তার দুধ বোন। এক্ষণে তাদের করণীয় কী?

উত্তর : অনতিবিলম্বে বিবাহ বিচ্ছেদ করে আলাদা হয়ে যেতে হবে। কারণ দুধ বোন নিজ বোনের সমতুল্য। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে তার দুধ বোনের বিয়ে দিতে চাইলে তিনি বলেন ‘দুধ পানের সম্পর্ক দ্বারা ঐসব লোক হারাম হয়ে যায় যারা রক্ত সম্পর্ক দ্বারা হারাম হয়’ (বুখারী হা/২৬৪৫; মুসলিম হা/১৪৪৫)। তবে এটা নিশ্চিত হ’তে হবে যে, দুই বছর বয়সের মধ্যে অন্ততঃ পাঁচবার পৃথক পৃথক বৈঠকে তাকে পূর্ণভাবে দুধপান করানো হয়েছে (উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১২/১১৪)। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে সন্তান থাকলে তারা ওয়ারিছ হিসাবে তাদের পিতা-মাতার সম্পদ পাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩৪/১৩)।

প্রশ্ন (২৫১) : মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় মাদ্রাসা নির্মাণ করা বা মসজিদের জন্য দানকৃত টাকা মাদ্রাসায় দেওয়া যাবে কী?

উত্তর : নিয়ম হ’ল দাতার নিয়ত মোতাবেক নির্ধারিত স্থানে ব্যয় করা (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ফাৎওয়া ক্রমিক ১৩৮৭৪, ১৬/৩২ পৃ.)। তবে শারঈ কল্যাণ থাকলে প্রয়োজনে ওয়াকফকারীর শর্ত পরিবর্তন করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ৫০৯ পৃ.; ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কেঈন ৩/২২৭)। এছাড়া কোন মসজিদের অতিরিক্ত টাকা অন্য কোন মসজিদে দান করা যাবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩১/০৬)।

প্রশ্ন (২৫২) : হাত তুলে মুনাজাত করার পর মুখমন্ডল মাসাহ করা যাবে কি?

উত্তর : মুনাজাত বা হাত তুলে দো‘আ শেষে মুখমন্ডল মাসাহ করার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। ইমাম আবুদাঊদ (রহঃ) মুখে হাত মাসাহ করা সংক্রান্ত হাদীছ বর্ণনা করে তা যঈফ হিসাবে উল্লেখ করেছেন (আবুদাঊদ হা/১৪৮৫, পৃঃ ২০৯)। শায়খ আলবানী (রহঃ) এ সংক্রান্ত হাদীছগুলো পর্যালোচনা শেষে বলেন, ‘দো‘আর পর মুখে দু’হাত মাসাহ করা সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই’ (আলবানী, মিশকাত হা/২২৫৫-এর টীকা দ্রষ্টব্য)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে হাত তুলে দো‘আ করার ব্যাপারে বহু ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মুখমন্ডল মাসাহ করার ব্যাপারে এক বা দু’টি বর্ণনা এসেছে, যার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৫১৯)।

প্রশ্ন (২৫৩) : ‘তোমরা ফজরের সময় ফর্সা কর। কেননা এটাই নেকীর জন্য উত্তম সময়’ (তিরমিযী; আবুদাঊদ; মিশকাত হা/৬১৪)। হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।

 

উত্তর : উক্ত হাদীছের সারমর্ম হ’ল ফজরের ছালাত অন্ধকারে শুরু করতে হবে এবং দীর্ঘ কেরাআতের মাধ্যমে আকাশ ফর্সা হয়ে এলে ছালাত শেষ করতে হবে, যা অধিক ছওয়াব লাভের কারণ হবে। যেমন অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ফজরের ছালাতের মাধ্যমে ফর্সা করে দাও যাতে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের জায়গা দেখতে পায়’ (তাবারানী কাবীর হা/৪৪১৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৬৯)। সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এর অর্থ হ’ল গালাসে প্রবেশ কর ও ইসফারে বের হও। অর্থাৎ ক্বিরাআত দীর্ঘ কর এবং ফর্সা হ’লে ছালাত শেষ করে বের হও, যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন (আবুদাঊদ হা/৩৯৩)। তিনি ফজরের ছালাতে ৬০ হ’তে ১০০টি আয়াত পড়তেন। অথবা এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, ‘তোমরা ফজর হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হও। ধারণার ভিত্তিতে ছালাত আদায় করো না’ (তিরমিযী হা/১৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮০ পৃ.)। আলবানী বলেন, এর অর্থ এই যে, গালাসে ফজরের ছালাত শুরু করবে এবং ইসফারে শেষ করে বের হবে, যাতে লম্বা তেলাওয়াতের সুযোগ হয় এবং অধিক ছওয়াবের কারণ হয় (ইরওয়া ১/২৮৭ পৃ.; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)  ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।

প্রশ্ন (২৫৪) : পিতা-মাতা ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আমি পিতার কাছে থাকি। মায়ের অন্যত্র বিবাহ হয়েছে এবং সাবালক সন্তান আছে। এক্ষণে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি কাকে প্রাধান্য দিব?

উত্তর : সন্তানের জন্য মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করা অধিকতর প্রাধান্যযোগ্য (বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮)। কিন্তু মায়ের অন্যত্র বিবাহ হয়ে যাওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে পিতা অগ্রাধিকার পাবেন। কেননা মায়ের পরেই পিতার স্থান (ছহীহাহ হা/৩৬৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। তবে অন্যত্র বিয়ে হ’লেও জন্মদাত্রী মা হিসাবে তার প্রতি যথাসম্ভব সদাচরণ করবে ও খোঁজ-খবর রাখবে।

প্রশ্ন (২৫৫) : স্বামী-স্ত্রী বা মাহরাম নারী-পুরুষ জামা‘আতবিহীন অবস্থায় পাশাপাশি ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

উত্তর :  উভয়ে আলাদা ছালাত আদায় করলে পাশাপাশি বা সামনে বা পিছনে যে কোন স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/২৫২)। তবে জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে নারী একাকী হ’লেও পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করবে (বুখারী হা/৩৮০; মুসলিম হা/৬৫৮)।

প্রশ্ন (২৫৬) : পিঁপড়া মারার ব্যাপারে শারঈ বিধান কি?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ছুরাদ পাখি, ব্যাঙ, পিঁপড়া ও হুদহুদ পাখি মারতে নিষেধ করেছেন (আবুদাউদ হা/৫২৬৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৪১৪৫; ছহীহুত তারগীব হা/২৯৯০)। তবে মানুষকে কষ্টদানকারী পিঁপড়া মারা বৈধ (ফাৎহুল বারী ৬/৩৫৮১; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৬৪)। তাছাড়া যে কোন প্রাণীই বিনা কারণে মারা উচিৎ নয়। কেননা প্রতিটি প্রাণীই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কোন এক নবীকে একটি পিঁপড়া কামড় দিলে তিনি পিঁপড়ার বসতি জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন আল্লাহ তার প্রতি অহি করলেন যে, তোমাকে একটি পিঁপড়া কামড় দিয়েছে, তাতেই তুমি সব পিঁপড়াকে মেরে ফেলার হুকুম দিলে? পিঁপড়া কি তাসবীহ পাঠ করে না? (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪১২২ ‘শিকার ও যবহ’ অধ্যায়)।

প্রশ্ন (২৫৭) : জনৈক আলেম বলেন, পূর্বরাতে স্ত্রী সহবাসকারী পুরুষ কবরে নামতে পারবে না। এটা সঠিক কি? সঠিক হ’লে এর পিছনে কারণ কি? এছাড়া লুঙ্গী পরে কবর খনন করা যাবে না- এরূপ কোন বিধান আছে কি?

উত্তর : যে ব্যক্তি পূর্ব রাতে স্ত্রী সহবাস করেছে তার জন্য কোন নারীকে কবরে নামানো সমীচীন নয়; তবে নিষিদ্ধও নয়। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর কন্যার কবরের পার্শ্বে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে বসেন। আমি দেখতে পেলাম, তাঁর চোখ হ’তে অশ্রু ঝরছে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর নিকটবর্তী হওনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, আমি। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কবরে নামো। অতঃপর আবু তালহা (রাঃ) কবরে নামলেন’ (বুখারী হা/১২৮৫; মিশকাত হা/৭১৫)। এর মর্ম আল্লাহই ভালো জানেন। তবে উক্ত ব্যক্তির মনে শয়তান রাতের অবস্থাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। যাতে মানসিক পবিত্রতার ঘাটতি হ’তে পারে (ফাৎহুল বারী ৩/১৫৯; মির‘আত হা/১৭২৯-এর ব্যাখ্যা)। আর লুঙ্গী পরে কবর খনন করা যাবে না- এমন বক্তব্য বানোয়াট ও বেদলীল।

প্রশ্ন (২৫৮) : আমি কখনো দাড়ি শেভ করিনি। বর্তমানে সেনাবাহিনীতে চাকুরী নিতে চাচ্ছি। কিন্তু তাদের নিয়ম হ’ ল এক বছরের ট্রেনিং পিরিয়ডে প্রতিদিন দাড়ি শেভ করতে হবে। তারপর থেকে দাড়ি রাখা যাবে। এক্ষণে আমার এই চাকুরী নেওয়া জায়েয হবে কি? এর জন্য আমাকে গুনাহগার হ’তে হবে কি?

উত্তর : হাদীছ বিরোধী কোন আদেশ মানতে মুসলমান বাধ্য নয়। অতএব সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের ধর্মীয় অধিকার রক্ষার্থে জোরালো দাবী রাখতে হবে এবং সাধ্যমত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদি কর্তৃপক্ষ সম্মত না হয়, তবে ভিন্ন রিযিক অনুসন্ধান করতে হবে (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৮/৩৭৬; বিস্তারিত দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক ‘ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান’ নিবন্ধ)।

প্রশ্ন (২৫৯) : কোন ব্যক্তিকে অর্থ ঋণ দেওয়ার পর একসময় দেখা গেল তিনি ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি অক্ষম। এমতাবস্থায় নিজের যাকাত থেকে উক্ত অর্থ কেটে রাখা যাবে কি? এছাড়া কাউকে কোন অর্থ দান করার পর পরবর্তীতে তা বাধ্যগত অবস্থায় গৃহীত ব্যাংক সূদ থেকে প্রাপ্ত আয়ের সাথে সমন্বয় করা যাবে কি?

উত্তর : ঋণগ্রহীতাকে অবহিত না করে উক্ত টাকা যাকাত হিসাবে কেটে রাখা যাবে না। বরং প্রয়োজনে ঋণগ্রহীতাকে আরো সময় দিতে হবে অথবা হকদার হিসাবে তাকে যাকাতের সম্পদ থেকে দান করা যাবে। ঋণগ্রহীতা সেই অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবে। তাতে কোন দোষ নেই (নববী, আল-মাজমূ‘ ৬/২১০; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৮০-৮১)। আর ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সূদ দ্বারা দানের অর্থ সমন্বয় করা অন্যায়। কারণ এটি পবিত্র সম্পদের সাথে অপবিত্র সম্পদ মিশ্রিত করার শামিল, যা সিদ্ধ নয় (বাক্বারাহ ২/২৬৭)।

প্রশ্ন (২৬০) : ফরয বা নফল ছালাতের পর একাকী হাত তুলে নিয়মিত বা মাঝে মাঝে দো‘আ করা যাবে কি? এসময় বাংলায় দো‘আ করা যাবে কি?

উত্তর :  ফরয বা নফল ছালাতের পর একাকী নিয়মিত হাত তুলে দো‘আ করা সমীচীন নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) ও তার ছাহাবীগণ থেকে এমন নিয়মিত আমল প্রমাণিত নয়। তবে নফল ছালাতের পর বা যেকোন সময়ে ‘আম হাদীছের ভিত্তিতে মাঝে মধ্যে হাত তুলে দো‘আ করা জায়েয বা মুস্তাহাব। কারণ হাত তুলে দো‘আ করা দো‘আ কবুলের অন্যতম আদব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ অত্যাধিক লজ্জাশীল ও দাতা। যখন কোন ব্যক্তি তার দরবারে দুই হাত তুলে (প্রার্থনা করে), তখন তিনি তার হাত শূন্য বা বঞ্চিত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন (তিরমিযী হা/৩৫৫৬; মিশকাত হা/২২৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৩৫)।

প্রশ্ন (২৬১) : স্বামীর দুধপিতা কি মাহরামদের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর :  চার মাযহাবের বিদ্বানগণের মতে, স্বামীর দুধপিতাও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। কারণ বংশীয় কারণে যা হারাম হয়, দুধপানের সম্পর্কের কারণেও তা হারাম হয় (বুখারী হা/২৬৪৫)। তাদের মতে, দুধপানের কারণে বংশীয় সম্পর্কের মত বৈবাহিক সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে। কেননা দু’টি সম্পর্ক একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত (উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ, নং ২১৭)। তবে ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম ও উছায়মীনসহ কতিপয় বিদ্বান স্বামীর দুধপিতাকে মাহরাম হিসাবে গণ্য করেননি। কেননা হাদীছে এ ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ নেই (যা-দুল মা‘আদ ৫/১১৩; ফাতাওয়া মারআতুল মুসলিমাহ ২/৮৪১-৪২, ৩/৮২২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ৩৬/২১৬, ৩৭/৩৬৮-৬৯)।

প্রশ্ন (২৬২) : কোন কোন শ্রেণীর মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মতের সত্তুর হাযার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের কোন শাস্তি হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, তারা কারা? তিনি বললেন, যারা শরীরের ক্ষতস্থানে লোহা পুড়িয়ে দাগা দেয় না এবং (জাহেলী যুগের ন্যায়) ঝাড়-ফুঁক বা মন্ত্রের আশ্রয় নেয় না। বরং তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে (বুখারী হা/৬৫৪১; মুসলিম হা/২২০; মিশকাত হা/৫২৯৫)। ঝাড়-ফুঁক অর্থ কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহের বিপরীত মন্ত্র পাঠ (মিরক্বাত)। রাসূল (ছাঃ) এর দো‘আর বরকতে উপরোক্ত সত্তুর হাযারের প্রত্যেক হাযারের সাথে আরো সত্তুর হাযার করে মুসলমানকে আল্লাহ বিনা হিসাবে জান্নাত দিবেন (যার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ) (আহমাদ হা/৮৬৯২; ছহীহাহ হা/১৪৮৪)। উক্ত হাদীছে তাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে- (১) তারা লোহা দিয়ে দাগা লাগিয়ে চিকিৎসা নেয় না (২) তারা মন্ত্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করে না এবং (৩) সুলক্ষণ-কুলক্ষণে বিশ্বাস না করে সর্বদা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখে। আর উক্ত বৈশিষ্ট্যধারী ব্যক্তিদেরকেই আল্লাহ বিনা হিসাবে জান্নাত প্রদান করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন (২৬৩) : সরকার প্রদত্ত বৈশাখী ভাতা সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী, শিক্ষকদের গ্রহণ করা জায়েয হবে কী?

উত্তর : সরকার কর্তৃক প্রদত্ত উৎসাহমূলক ভাতা গ্রহণে বাধা নেই। রাসূল (ছাঃ) সূদখোর ইহূদী-নাছারা ও মুশরিকদের হাদিয়াও গ্রহণ করতেন (বুখারী ৯/৩৮৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/২৪৩)। তবে যে উপলক্ষ্যে হাদিয়া প্রদান করা হয়ে, সে উপলক্ষ্য যদি হারাম হয়, তাতে অংশগ্রহণ করা নাজায়েয। অতএব বৈশাখী উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য এই ভাতা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। বরং এটি কোন বৈধ কাজে ব্যবহার করবে।  

প্রশ্ন (২৬৪) : সরকার প্রদত্ত শরী‘আতসম্মত বৈষয়িক সিদ্ধান্ত সমূহ যেমন করোনা সম্পর্কিত নির্দেশনাসমূহ পুরোপুরি অনুসরণ করা আবশ্যক কি? না করলে গুনাহগার হতে হবে কি?

উত্তর : সরকারের সিদ্ধান্ত যদি কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী না হয় এবং নাগরিকদের প্রতি যুলুম না হয়, তবে তা মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য (নিসা ৪/৫৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পসন্দনীয় ও অপসন্দনীয় সব বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য নেতার প্রতি আনুগত্য করা কর্তব্য। যখন নফরমানীর নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন আর কোন আনুগত্য নেই (বুখারী হা/৭১৪৪; মুসলিম হা/১৮৩৯; মিশকাত হা/৩৬৬৪)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তাদের হক তাদের দাও এবং তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩৬৭২)। ‘কেননা তাদের পাপ তাদের উপর এবং তোমাদের পাপ তোমাদের উপর বর্তাবে’ (মুসলিম হা/১৮৪৬; মিশকাত হা/৩৬৭৩)।

ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেন, সুন্নাত হ’ল মুসলমানদের শাসকের আনুগত্য করা, সে নেককার হৌক বা বদকার হৌক যতক্ষণ না সে আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দিবে (লুম‘আতুল ই‘তিকাদ ৪০ পৃ.)। তবে কোন সরকারী সিদ্ধান্ত যদি স্বেচ্ছাচারিতামূলক হয় এবং জনকল্যাণকর না হয়, তাহ’লে তা পালন করা আবশ্যক নয়। হাফেয ইবনু হাজার হায়তামী বলেন, ‘রাষ্ট্র যে নির্দেশ দেয় তাতে যদি কল্যাণ না থাকে তাহ’লে তা পালন করা ওয়াজিব নয়। তবে সরকারী ফিৎনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রকাশ্যে পালন করবে’ (তোহ্ফাতুল মুহতাজ ৩/৭১)।

প্রশ্ন (২৬৫) : ডাক্তারের নিকটে কোন রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি শারঈ ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসা নেওয়া যাবে কি?

উত্তর : ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা নেওয়ার পাশপাশি শারঈ ঝাড়-ফুঁকের চিকিৎসা নেওয়া জায়েয। জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) এক সময় ঝাড়-ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিলেন। অতঃপর ‘আমর ইবনু হায্ম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নিকট একটি ঝাড়-ফুঁক ছিল, যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়-ফুঁক করতাম, এখন আপনি তো ঝাড়-ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হ’লে সে যেন তার উপকার করে (মুসলিম হা/২১৯৯; ছহীহাহ হা/৪৭২)। ‘আওফ বিন মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগে আমরা মন্ত্র পড়ে ঝাড়-ফুঁক করতাম। ইসলাম গ্রহণের পর আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ সমস্ত মন্ত্র সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তখন তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমাকে পড়ে শুনাও। (তবে কথা হ’ল) মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে শিরকী কিছু না থাকে (মুসলিম হা/২২০০; মিশকাত হা/৪৫৩০)। উল্লেখ্য যে, কোন আয়াত বা দো‘আ পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে সে পানি পান করা বা তা দ্বারা গোসল করা বা শরীরে পানি ছিটিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয (ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩৫০৯; নববী, শরহ মুসলিম ১৪/১৮২; শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/৫২)।

প্রশ্ন (২৬৬) : কুরআনে ইহূদীদের সম্পর্কে আয়াত থাকলেও হিন্দুদের সম্পর্কে কোন আয়াত না থাকার কারণ কি? আর হিন্দুদের মধ্যে যারা একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজায় বিশ্বাস করে না, তাদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

উত্তর : কুরআনে যেমন ইহুদী-খৃষ্টধর্মের মত একেশ্বরবাদী ইব্রাহীমী ধর্মগুলি বিকৃতি ও অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে, তেমনি হিন্দু-বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মের মত পৌত্তলিক ধর্মের অসারতাও প্রমাণ করা হয়েছে, যাদেরকে সাধারণভাবে মুশরিক কিংবা মূর্তিপুজক হিসাবে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে (নজম ৫৩/১৯-২৩)। সুতরাং কুরআনের হিন্দুদের সম্পর্কে বলা হয়নি এ ধারণা ভুল। আর মূর্তিপুজক না হ’লে বা একেশ্বরবাদী হ’লেও কোন হিন্দু বা অমুসলিম যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান না আনে, তবে সে নিঃসন্দেহে জাহান্নামী (ফাৎহ ৪৮/১৩; মুসলিম হা/২৪০)।

প্রশ্ন (২৬৭) : আমার বড় ভাই জার্মানীতে বড় একটি বাসায় উঠতে যাচ্ছে, যেখানে ইতিপূর্বে একজন আত্মহত্যা করেছে এবং অন্যরা একে অপরে খুনাখুনী করে মারা গেছে। সম্ভবতঃ বাড়ীর নীচে কবর ছিল এবং বাড়ীর পিছনে কালো জাদু করা হ’ত। এরূপ বাড়ীতে উঠা নিরাপদ কি?

উত্তর : এরূপ বাড়ীতে বসবাস করা উচিৎ নয়। কারণ জাদু দ্বারা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাসূল (ছাঃ)-কেও জাদু করে রোগাক্রান্ত করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সূরা নাস-ফালাক নাযিল হলে এর মাধ্যমে চিকিৎসা নিলে তিনি সুস্থ হন (সূরা নাস ও ফালাক্বের তাফসীর দ্রষ্টব্য)। তাছাড়া কোন বাড়ীর নিচে কবর থাকলে সে বাড়ীতে বসবাস করা নিষিদ্ধ। জাবের (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কবর চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর ভবন নির্মাণ করা হ’তে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/৯৭০; মিশকাত হা/১৬৭০)। অতএব ভবনের নীচে কবর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হ’লে সেখানে বসবাস করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, কোন বাড়ীতে কেউ আত্মহত্যা করলে বাড়ীটিকে অভিশপ্ত মনে করা বা সেখানে প্রেতাত্মা ভর করে থাকে এমন ধারণা করা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার।  

প্রশ্ন (২৬৮) : তারাবীহর ছালাত আমি একাকী পড়ি। এক্ষেত্রে সূরা মুখস্ত কম থাকায় কুরআন দেখে পড়া যাবে কী?

উত্তর : তারাবীহসহ যেকোন নফল ছালাতে কুরআন দেখে পড়া যায়। আয়েশা (রাঃ)-এর গোলাম যাকওয়ান রামাযান মাসে কুরআন দেখে আয়েশা (রাঃ)-এর ইমামতি করেছেন (বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়, ৫৪ অনুচ্ছেদ; বায়হাক্বী হা/৩১৮৩)। তবে ছালাতে কুরআন মুখস্থ পড়াই উত্তম। কেননা এতে ছালাতে খুশূ-খুযূ বিঘ্নিত হয় না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/১১৭)। 

প্রশ্ন (২৬৯) : এশা ও ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলে তার মাধ্যমে সারারাত্রি ছালাত আদায়ের নেকী অর্জিত হয় মর্মে কোন ছহীহ আছে কি?

উত্তর : উক্ত বক্তব্য ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ছালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন সারারাত্রি ব্যাপী ছালাত আদায় করল’ (মুসলিম হা/৬৫৬; মিশকাত হা/৬৩০)।

প্রশ্ন (২৭০) : কল্পনাশ্রিত গল্প, উপন্যাস, কবিতা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার ক্ষেত্রে ইসলাম কতটুকু অনুমোদন দেয়?

উত্তর : ইসলামী আক্বীদা-আমল ও সংস্কৃতির প্রচার-প্রসার এবং শারঈ বিধানকে সহজভাবে তুলে ধরার জন্য গল্প, উপন্যাস বা কল্পকাহিনী রচনা করা যায়, যা মূলতঃ মিথ্যার পর্যায়ভুক্ত নয় বরং বাস্তবতা অনুধাবনের জন্য উপমা, উদাহরণ বা সাদৃশ্য হিসাবে পরিগণিত হয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) শর্তহীনভাবে বনু ইস্রাঈলদের কাহিনী বর্ণনা করতে বলেছেন, যা সত্য-মিথ্যা উভয়েরই সম্ভাবনা রাখে। কুরআনেও অনেক অনির্দিষ্ট ব্যক্তির কথা সাদৃশ্য প্রদানের নিমিত্তে ব্যবহৃত হয়েছে (যুমার ৩৯/২৯)। অতএব সদুদ্দেশ্যে এবং কারু প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে বা মূল সত্যের বিকৃতি না ঘটিয়ে এ ধরণের উপদেশপূর্ণ কল্প-কাহিনী রচনা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে অধিকাংশ বিদ্বান একমত। তবে মাসআলা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে হবে। আর সেই সাথে কোনভাবে মিথ্যা ও বাতিল আক্বীদা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই ধরনের কিছু রচনা করা যাবে না (ছান‘আনী, আর-রওযুল বাসেম ১/১০১; উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ, ক্রমিক ৭৭, প্রশ্ন ক্রমিক ১০)। 

প্রশ্ন (২৭১) : আমার পিতাসহ অনেক মানুষকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে দেখায় সবসময় আমি মৃত্যুচিন্তায় মগ্ন থাকি। ফলে আমার সার্বিক জীবন দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কি কি আমল করলে এই অযাচিত ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে জানতে চাই।

উত্তর : সুখী হওয়ার একমাত্র উপায় হ’ল তাক্বদীর ও তাওয়াক্কুল। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফয়ছালা তথা তাক্বদীরকে মেনে নিতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর সিদ্ধান্তের মধ্যে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। অতঃপর সকল কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তওবা ৯/৫১)।

তাছাড়া অধিক যিকর-আযকার ও ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফল ছালাত আদায় করতে হবে। কেননা ‘রাসূল (ছাঃ) যখন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন’ (আবুদাঊদ হা/১৩১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩)। আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে। আর তা অবশ্যই কঠিন কাজ, তবে বিনীত বান্দাগণ ব্যতীত (বাক্বারাহ ২/৪৫)। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) বিপদের সময় নিম্নের দো‘আটি পাঠ করতেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুল ‘আযীমুল হালীম; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাববুল ‘আরশিল ‘আযীম; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাববুস সামাওয়াতে ওয়া রাববুল ‘আরযে রাববুল ‘আরশিল কারীম (সালাফগণ এটিকে ‘দো‘আউল কারব’ বা বিপদের দো‘আ বলতেন) (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৪১৭ ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ)। বিপদকালে রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো‘আটিও পড়তেন, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূম, বিরহমাতিকা আস্তাগীছ (হে চিরঞ্জীব! হে সবকিছুর ধারক! আমি তোমার রহমত কামনা করছি) (তিরমিযী হা/৩৫২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৭৭)।

প্রশ্ন (২৭২) : হযরত ঈসা (আঃ)-কে মাসীহ বলা হয় আবার দাজ্জালকেও মাসীহ বলার কারণ কি?

উত্তর : মাসীহ শব্দটি এসেছে ‘মাসাহ’ থেকে। যার অর্থ স্পর্শ করা বা মোছা। ঈসা (আঃ)-কে মাসীহ বলা হয় এজন্য যে, তাঁর হাতের স্পর্শে আল্লাহর হুকুমে অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগী আরোগ্য লাভ করত। এমনকি মৃত ব্যক্তি জীবন লাভ করত (আলে ইমরান ৩/৪৯)।

অন্য দিকে দাজ্জালকেও মাসীহ বলা হয়েছে। কারণ তার এক চোখ লেপন করা থাকবে। সেও আল্লাহর হকুমে মৃতকে জীবিত করতে পারবে (মুসলিম হা/২৯৩৩; মিশকাত হা/৫৪৭৩)।

প্রশ্ন (২৭৩) : সালাম ফিরানোর সময় চোখ কোন দিকে থাকবে? কাঁধের দিকে না যেকোন স্থানে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর : সালাম ফিরানোর সময় মুছল্লী স্বাভাবিকভাবে ডানে ও বামে দৃষ্টিপাত করে সালাম ফিরাবে (মুসলিম হা/৪৩১)। আর যদি একাকী ছালাত আদায় করে, তাহ’লে ডানে ও বামে থাকা ফেরেশতাদেরকে সালাম প্রদানের নিয়ত করবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৫৬, ৪৬২; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে’ ৩/২০৮)।

প্রশ্ন (২৭৪) : হায়েযের শেষ সময় বুঝার আলামত কী কী?

উত্তর : হায়েযের শেষ সময় দু’ভাবে বোঝা যায়। প্রথমতঃ হয়তবা শ্বেতস্রাব বা সাদা তরল পদার্থ নির্গত হবে, যা জরায়ু থেকে বের হয়। অথবা রক্ত এমনভাবে বন্ধ হবে যে, কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করলে তাতে লাল, হলুদ বা খয়েরী রঙ-এর কোন প্রকার তরল পদার্থ আসবে না। এরপর গোসল করে ছালাত আদায় করবে। মহিলা ছাহাবীগণ আয়েশা (রাঃ)-এর কাছে পাত্রে করে তুলা পাঠাতেন যাতে হলদে রঙ-এর পদার্থ থাকতো। তিনি বলতেন, ‘তোমরা শ্বেতস্রাব না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করবে না’ (বায়হাক্বী হা/১৫৮৯; ইরওয়া হা/১৯৮)। আর যদি একবার পরিচ্ছন্ন হওয়া তথা গোসল করে পবিত্রতা অর্জনের পরও এই হলদে বা খয়েরী রঙ-এর পদার্থ আসে, তাহলে তা ধর্তব্য হবে না বরং এ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে। কারণ তা হায়েয হিসাবে গণ্য হবে না (বুখারী হা/৩২৬; আবুদাউদ হা/৩০৭)।

প্রশ্ন (২৭৫) : মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলার ব্যবস্থা আছে। যা খেলে সব বয়সের মানুষ প্রচুর সময়ের অপচয় করে। এগুলো খেলা জায়েয হবে কি?

উত্তর : বৈধ অনেক খেলা সাধারণভাবে জায়েয হলেও যদি তা অনর্থক সময় নষ্টের কারণ হয় বা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। বর্তমানে মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসে রক্ষিত গেম সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত। যাতে বিনোদনের চাইতে ক্ষতি বেশী রয়েছে। তাছাড়া এতে ইবাদত পালনেও গাফলতি আসে। সাধারণভাবে নিমেণাক্ত শর্ত সাপেক্ষে খেলাধুলা জায়েয হ’তে পারে- (১) আল্লাহর যিকর ও ছালাত থেকে বিরত না রাখা, (২) মূল্যবান সময়ের অপচয় না হওয়া, (৩) খেলার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও দুশমনী সৃষ্টি না হওয়া, (৪) টাকা-পয়সার হার-জিত না থাকা তথা জুয়া না হওয়া, (৫) কোন প্রকার অশ্লীলতা বা শরী‘আতের সীমালংঘন না হওয়া (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৩৯১ ‘প্রতিযোগিতা’ অনুচ্ছেদ)।

বলা বাহুল্য, উক্ত শর্তসমূহ মেনে মোবাইল গেম খেলা প্রায় অসম্ভব। অতএব এসব খেলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। যারা উদাসীন হবে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুনাফিকূন ৬৩/৯)।

প্রশ্ন (২৭৬) : আমাদের মসজিদের ইমাম প্রায়ই ছালাতের মধ্যে ঘুমান, প্রচুর ভুল করেন, সিজদা কখনো একটি, কখনো তিনটি দেন। আবার ভুল সংশোধনের জন্য সহো সিজদাও ঠিক মতো দেন না। অনেক বলার পরও সংশোধন হচ্ছে না। এরূপ ইমামের পিছনে ছালাত হবে কি?

উত্তর : এরূপ ভুলের জন্য ইমাম দায়ী হবেন। তবে তার পিছনে ছালাত হয়ে যাবে। ইমাম সংশোধন না হ’লে মসজিদ কমিটির কর্তব্য হবে, তাকে বাদ দিয়ে অন্য ইমাম নিয়ে আসা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিন জন ব্যক্তির ছালাত তার মাথার উপরে এক বিঘতও উঠে না (অর্থাৎ তার ছালাত কবুল হয় না)। যে ব্যক্তি ইমামতি করে, অথচ মুছল্লীরা তাকে অপসন্দ করে... (ইবনু মাজাহ হা/৯৭১; মিশকাত হা/১১২৮ হাদীছ হাসান)।

প্রশ্ন (২৭৭) : আমার ছেলের বউ নিয়মিত ছালাত আদায় করে না এবং শ্বশুরবাড়ীর লোকদের সাথে মন্দ আচরণ করে। মেয়ের পিতা-মাতাকে বলার পরও কোন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষণে আমার করণীয় কি?

উত্তর : নিয়মিত ছালাত আদায় করার ব্যাপারে স্বামী ও পরিবারের সদস্যগণ তাকে বারবার নছীহত করবে। অধিক নছীহতের মাধ্যমে স্ত্রীর মনের বক্রতা দূর করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে উত্তম নছীহত কর। কেননা নারী জাতিকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহ’লে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও, তাহ’লে তা সব সময় বাঁকাই থাকবে। অতএব নারীদের নছীহত করতে থাক’ (বুখারী হা/৩৩৩১; মুসলিম হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/৩২৩৮)। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ইসলাম অতীব গুরুত্ব প্রদান করেছে। এ সম্পর্ক যেন সহজে বিচ্ছিন্ন না হয়, সে লক্ষ্যে উভয়পক্ষকে আন্তরিক ও সমঝোতাকামী হ’তে হবে। যদি সর্বাত্মক চেষ্টার পরও কোনভাবেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে উভয়পক্ষের শালিসের মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটাতে হবে (নিসা ৪/৩৪-৩৫)।

প্রশ্ন (২৭৮) : অন্যের জমিতে ফসলের ক্ষতি না করে বিনা অনুমতিতে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী চরানো বা ঘাস খাওয়ানো যাবে কি?

উত্তর : জমির মালিকের সাধারণ অনুমতি থাকলে কিংবা এলাকায় প্রচলন থাকলে ঘাস খাওয়ানো বা চরানোয় কোন বাধা নেই। আর জমির নির্দিষ্ট মালিক না থাকলে বা সরকারী খাস জমি যেমন রাস্তার দু’পাশ বা নদীর পাড়সমূহে পশু চরানোতে কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৪১৮)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তিন প্রকার জিনিসে সকল মুসলিম অংশীদার; আর তা হ’ল- পানি, ঘাস ও আগুন (ইবনু মাজাহ হা/২৪৭৩; মিশকাত হা/৩০০১; ইরওয়া হা/১৫৫২-এর আলোচনা)। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত ঘাসে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পানি রোধ করে রাখবে না (বুখারী হা/২৩৫৪; মিশকাত হা/২৯৯৪)।

প্রশ্ন (২৭৯) : অমুসলিম ব্যক্তি সারা জীবন আর্ত-মানবতায় সেবা সহ নানা জনহিতকর কাজ করে মৃত্যুবরণ করলে তার আখেরাতে মুক্তি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কি?

উত্তর : কাফের বা অমুসলিম দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করলে এর প্রতিদান দুনিয়াতেই পাবে, পরকালে নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাসী হয়েছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কারু কাছ থেকে যমীন ভর্তি স্বর্ণও গ্রহণ করা হবে না, যদি তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়ে তা দিতে চায়। ওদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং ওদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (আলে ইমরান ৩/৯১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কাফের যদি দুনিয়াতে কোন সৎকর্ম করে তবে এর প্রতিদান স্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকী আল্লাহ তা‘আলা আখেরাতের জন্য জমা রাখেন এবং আনুগত্যের পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা প্রদান করে থাকেন’ (মুসলিম হা/২৮০৮)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগে আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আন বড় অতিথিবৎসল ছিল। সে মযলূমকে সাহায্য করত এবং অভুক্তকে খাদ্য দান করত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ব্যক্তির সৎকর্ম তার পরকালে কোন ফায়েদা দিবে কি? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। কেননা ঐ ব্যক্তি একদিনের জন্যেও বলেনি, ‘হে আমার পালনকর্তা! শেষ বিচারের দিন তুমি আমার গোনাহ সমূহ ক্ষমা কর’ (মুসলিম হা/২১৪)। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কাফের যখন মুসলিম হয়, তখন তার জাহেলী যুগের সৎকর্ম তার উপকারে আসে। কিন্তু যদি কুফরী হালতে মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে সেগুলি তার কোন কাজে আসে না। বরং কুফরীর কারণে সবই বিফলে যায় (ছহীহাহ হা/২৪৯-এর আলোচনা)। আনাস (রাঃ)বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন কাফেরকে হাযির করে বলা হবে, যদি তোমার কাছে যমীন ভর্তি স্বর্ণ থাকে, তবে তুমি কি তার বিনিময়ে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করবে? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন তাকে বলা হবে, হ্যাঁ, তার চাইতে খুব সহজ বস্ত্ত তোমার কাছে চাওয়া হয়েছিল (তথা ঈমান)। কিন্তু তুমি তা গ্রহণ করনি (বুখারী হা/৬৫৩৮; মুসলিম হা/২৮০৫)। অতএব অমুসলিম ব্যক্তির সৎকর্ম পরকালে কোন কাজে আসবে না।

প্রশ্ন (২৮০) : আমাদের মসজিদে কাতারের মধ্যে পিলার আছে। এমতাবস্থায় পিলার সহ কাতার করা যাবে কি? বিশেষত বাধ্যগত অবস্থায় কাতার করলে ছালাত হবে কি?

উত্তর : সাধারণ অবস্থায় পিলারসহ কাতার করা যাবে না। কুর্রা (রাঃ) বলেন, আমাদেরকে খুঁটি সমূহের মধ্যবর্তী জায়গায় ছালাত পড়তে নিষেধ করা হ’ত। এমনকি সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হ’ত’ (ইবনু মাজাহ হা/১০০২; ছহীহাহ হা/৩৩৫; তামামুল মিন্নাহ ২৯৬ পৃ.)। তবে লোক সমাগম বেশী হওয়ার কারণে স্থান সংকুলান না হ’লে বাধ্যগত অবস্থায় দাঁড়ানো জায়েয (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৯৫; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৩৪)। আব্দুল্লাহ হামীদ ইবনু মাহমূদ (রহঃ) বলেন, আমরা আনাস (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা জনৈক আমীরের সঙ্গে ছালাত আদায় করছিলাম। তারা আমাদের পেছনে সরিয়ে দিল। তারপর আমরা দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করলাম। আনাস (রাঃ) পিছিয়ে যেতে থাকলেন এবং বললেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে আমরা এটা (দুই স্তম্ভের মধ্যে দাঁড়ানো) পরিহার করতাম (আবুদাউদ হা/৬৭৩; তিরমিযী হা/২২৯; আহমাদ হা/১২৩৬১, সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য, পিলারের মাঝে কেউ একাকী ছালাত আদায় করলে অথবা ইমাম একা দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করলে কোন দোষ নেই (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২২০ পৃ.)।

প্রশ্ন (২৮১) : রামাযানে ছিয়াম রাখতে না পারলে সারা মাসের ছিয়ামের ফিদ্ইয়াস্বরূপ হোটেলে এক বেলা ৩০ জন মিসকীনকে খাইয়ে দিলে যথেষ্ট হবে কি? ফিদ্ইয়া কি রামাযানের মধ্যে না রামাযানের পর আদায় করলেও চলবে?

উত্তর : অতিবৃদ্ধ, গর্ভবতী, দুগ্ধদায়িনী মা বা চিররোগী ব্যক্তি ফিদ্ইয়া হিসাবে দৈনিক সিকি ছা‘ (৬২৫ গ্রাম) চাউল বা গম মিসকীনকে প্রদান করবে। অথবা একদিনে ৩০ জন মিসকীনকে খাওয়াবে। চাই সেটা বাড়িতে খাবার বানিয়ে হৌক বা হোটেলে হৌক। আনাস (রাঃ) বার্ধক্যজনিত কারণে ছিয়াম রাখতে না পারলে রামাযানের শেষ দিনে ত্রিশ জন মিসকীনকে গোশত-রুটি খাইয়েছিলেন (ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ১৮৪ আয়াত)। এই ফিদইয়া রামাযান মাসের মধ্যে আদায় করা মুস্তাহাব। তবে সঙ্গত কারণে পরে দেওয়াতেও কোন বাধা নেই। অতএব কেউ রামাযানের পরে আদায় করলেও জায়েয হবে (যাকারিয়া আনছারী, আসনাল মাত্বালিব ১/৪৩০)। ফিদইয়া বেশী দেওয়াতেও কোন বাধা নেই। বরং উত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘যদি কেউ স্বেচ্ছায় বেশী দেয়, তবে সেটা তার জন্য উত্তম হবে’  (বাক্বারাহ ১৮৪)।

প্রশ্ন (২৮২) : বিবাহে স্বর্ণ উপহার দিলে পুরুষের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি?

উত্তর : বিবাহের কেউ স্বর্ণ উপহার দিলে তা গ্রহণ করা যাবে। তবে নিজে ব্যবহার না করে স্ত্রীসহ যেকোন মহিলা আত্মীয়কে হাদিয়া প্রদান করবে বা বিক্রয় করে দিবে। রাসূল (ছাঃ)-কে রেশমের পোষাক উপহার দেওয়া হ’লে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং অন্যকে হাদিয়া দিয়ে দেন (বুখারী হা/২১০৪; মুসলিম হা/২০৬৮)।

প্রশ্নকারী : মুরাদুযযামান, ফুলকোচা, সিরাজগঞ্জ।

প্রশ্ন (২৮৩) : ঘুমানোর সকল দো‘আ পাঠ করি। তারপরেও রাতে একাকী ঘুমালে আমার উপর জিন ভর করে চেপে ধরে। এদিকে আমার বিবাহের জন্য বহু প্রচেষ্টা চললেও বারবার তা ভেঙ্গে যায়। এজন্য কেউ কেউ জিন লাগার কথা বলছে। এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

উত্তর : দো‘আ পাঠে অবহেলার কারণে অথবা মানসিক কারণে এমনটি হ’তে পারে। তবে কেউ জাদু-টোনা করে থাকলে তা নষ্ট করে দিতে হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে যাদু করা হ’লে ততক্ষণ তিনি সুস্থ হ’তে পারেননি, যতক্ষণ না জাদুকৃত বস্ত্ত দূর করা হয় (বুখারী হা/৩২৬৮; মুসলিম হা/২১৮৯)। এর পর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত শেষে সূরা নাস, ফালাক্ব, ইখলাছ ও আয়াতুল কুরসী একবার করে পাঠ করবে এবং মাগরিব ও ফজর ছালাত শেষে নিয়মিত তিনবার করে পাঠ করবেন (আবুদাউদ হা/৫০৮২; মিশকাত হা/২১৬৩, ৯৬৯; ছহীহুত তারগীব হা/৬৪৯)। পাশাপাশি ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করে বিছানায় তিনবার করে নাস, ফালাক্ব ইখলাছ পাঠ করে সারা শরীরে হাত বুলাবেন (বুখারী হা/৬৩১৯)। অতঃপর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করার পর ঘুমাবেন (আহমাদ হা/২৬৫৯৩; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৭০৩৭)। ইনশাআল্লাহ জিন বা শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর বিবাহের ব্যাপারটি ভাগ্যের বিষয়। বেশী বেশী ছালাতুল হাজত আদায় করে এ ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন।

প্রশ্ন (২৮৪) : ইবনু ছাইয়াদকে রাসূল (ছাঃ) দাজ্জাল বলে সন্দেহ করার কারণ কি? তাহ’লে দাজ্জাল কি পূর্ব থেকেই জীবিত না কি শেষ যামানায় জন্ম লাভ করবে?

উত্তর : দাজ্জাল পূর্ব থেকেই জীবিত রয়েছে এবং বিখ্যাত ছাহাবী তামীম দারী (রাঃ) ও তার ত্রিশজন সাথী সাগরে পথ হারিয়ে এক দ্বীপে গিয়ে ওঠেন। সেখানে পানির খোঁজে বের হ’লে একজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। যে তার চুল টেনে নিয়ে চলছিল। অতঃপর তিনি দাজ্জালের কাহিনী বর্ণনা করেন। যেখানে দাজ্জালের বক্তব্য এসেছে এভাবে যে, যদি আমাকে এখান থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহ’লে আমি পুরা পৃথিবী ধ্বংস করে দেব মদীনা ব্যতীত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) লোকদের মাঝে নিয়ে এলেন এবং সে তাদেরকে পূর্ণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করে শুনাল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এ শহরটি হ’ল ত্বাইবাহ (মদীনা)। আর সে হ’ল দাজ্জাল’ (মুসলিম হা/২৯৪২ (১২১)। অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) বলেন, দাজ্জাল শেষ যামানায় খোরাসান থেকে বের হবে’ (তিরমিযী হা/২২৩৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৭২)।

অপর বর্ণনায় ফাতেমা বিনতে ক্বায়েস (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, একদিন রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাতে দেরীতে এলেন ও বললেন, তামীম দারী আমাকে এমন কিছু ঘটনা বলেছে, যা আমাকে আটকে রেখেছিল। সে বলল, সাগরের কোন এক দ্বীপে তার সাথে এক নারীর সাক্ষাৎ হয়। যার মাথার চুল এত লম্বা যে, তা যমীনে হিঁচড়িয়ে চলে। তামীম দারী তাকে বলল, তুমি কে? সে বলল, আমি গুপ্তচর। অতঃপর সে বলল, ঐ প্রাসাদে প্রবেশ করুন। তখন আমি সেখানে গেলাম ও লোহার শিকলে বাঁধা লম্বা চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তিকে দেখলাম। সে আসমান যমীনের মাঝখানে ছটফট করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে? সে বলল, আমি দাজ্জাল। সে বলল, নিরক্ষরদের নবীর আবির্ভাব ঘটেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, লোকেরা তাঁকে মান্য করছে নাকি অমান্য করছে? আমি বললাম, মান্য করছে। সে বলল, এটাই তাদের জন্য কল্যাণকর’ (আবুদাঊদ হা/৪৩২৫; মিশকাত হা/৫৪৮৪)।

উক্ত হাদীছদ্বয়ে বুঝা যায় যে, দাজ্জাল পূর্ব থেকেই জীবিত রয়েছে এবং শেষ যামানায় ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে বের হবে। এক্ষণে ইবনু ছাইয়াদকে দাজ্জাল হিসাবে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের সন্দেহের কারণ হ’ল, রাসূল (ছাঃ)-কে দাজ্জালের আগমনের সময় সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। সেকারণ তাঁর ও ছাহাবীগণের মনে সন্দেহ ছিল। তবে এই সন্দেহ দূর হয়ে যায় যখন ইবনু ছাইয়াদ হজ্জ সম্পাদন করে। যেমন হাদীছে এসেছে যে, হজ্জের সফরে ইবনু ছাইয়াদ আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে আপ্যায়ন করতে চাইলে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন। এই অবস্থা দেখে ইবনু ছাইয়াদ বলল, হে আবু সাঈদ! লোকেরা আমার ব্যাপারে যেসব কথা বলে তাতে আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি একটি রশি নিয়ে সেটা গাছে লটকিয়ে ফাঁসি দিয়ে মরে যাই এবং এ থেকে পরিত্রাণ পাই। তারপর সে বলল, হে আবু সাঈদ! তোমাদের আনছারদের নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর কোন হাদীছ গোপন নেই। তুমি কি রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ সম্বন্ধে সবচেয়ে বেশী জ্ঞাত নও? রাসূল (ছাঃ) কি বলেননি যে, সে ব্যক্তি (দাজ্জাল) কাফির হবে? অথচ আমি মুসলিম। তিনি কি বলেননি যে, দাজ্জাল নিঃসন্তান হবে। অথচ মদীনায় আমি আমার সন্তান রেখে এসেছি। রাসূল (ছাঃ) কি বলেননি যে, দাজ্জাল মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। অথচ আমি মদীনা থেকে এসেছি। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তার কথায় আমি তাকে বিশ্বাস করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। অতঃপর ইবনু ছাইয়াদ বলল, আল্লাহর কসম! আমি তাকে (দাজ্জালকে) চিনি, তার জন্মস্থান চিনি এবং এখন সে কোথায় আছে, তাও আমি জানি। এ কথা শুনে আমি বললাম, তোমার সারাটা দিন ধ্বংস হোক’ (মুসলিম হা/২৯২৭ (৯১)।

উক্ত হাদীছের শেষাংশে ইবনু ছাইয়াদ সন্দেহের তীর ছুঁড়েছে। সেজন্য হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) এই সংক্রান্ত হাদীছগুলির সমন্বয় করে বলেন, তামীম দারী (রাঃ) যে দাজ্জালকে দেখে এসেছেন সে-ই প্রকৃত দাজ্জাল। আর শয়তান ইবনু ছাইয়াদের রূপ ধারণ করে দাজ্জালী কর্মকান্ড ঘটিয়ে রাসূল (ছাঃ) সহ ছাহাবায়ে কেরামকে সন্দেহে নিক্ষেপ করেতে চেয়েছিল। সেজন্য সে হাররার দিন ইছফাহানের দিকে রওয়ানা দিয়ে হারিয়ে যায়। যাকে পরবর্তীতে কোথাও দেখা যায়নি (ফাৎহুল বারী ১৩/৩৮০)। ‘হাররার দিন’ অর্থ ইয়াযীদের সেনাবাহিনী কর্তৃক মদীনা অবরোধের দিন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে কোন কোন ব্যক্তি বা দল ইহূদী-খৃষ্টান জগৎ, এমনকি যালেম শাসক, অনৈসলামী মিডিয়া প্রভৃতিকে ‘দাজ্জাল’ আখ্যায়িত করে থাকে। ইসলামী শরী‘আতে যার কোন ভিত্তি নেই।

প্রশ্ন (২৮৫) : রামাযান মাসে বা জুম‘আর দিনে মৃত্যুবরণ করলে এর বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিনে বা রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হ’তে রক্ষা করেন’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৭৩)। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা এ দিনের বরকতে মুমিন ব্যক্তিদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে কবরের ফিৎনা তথা আযাব থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ (মির‘আতুল মাফাতীহ ৪/৪৪০)। উক্ত হাদীছটি শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ‘হাসান’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তবে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব ও হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, হাদীছটির শাহেদ থাকলেও সেগুলো এমন শক্তিশালী নয়, যা হাদীছের সনদকে ছহীহ বা হাসানের পর্যায়ে উন্নীত করবে। অতএব হাদীছটি যঈফ (তাহকীক মুসনাদে আহমাদ হা/৬৫৮২; তাহকীক মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৪১১৩)। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহকে যঈফ বলেছেন (ফাৎহুল বারী ৩/১৯৬, ২৫৩)। এছাড়া কোন ছাহাবী শুক্রবারে মৃত্যুর জন্য আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন বলেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর দিন তথা সোমবারে মৃত্যুর জন্য আকাঙ্ক্ষা করেছেন (বুখারী হা/১৩৮৭)। মোদ্দাকথা এরূপ গায়েবের বিষয় ত্রুটিপূর্ণ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত না করাই উত্তম হবে। অনুরূপভাবে রামাযানে মারা গেলে বিশেষ কোন মর্যাদার ব্যাপারে কোন দলীল নেই। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যেকোন মাসে ছিয়ামরত অবস্থায় মারা গেলে রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতী বলে আখ্যায়িত করেছেন (আহমাদ হা/২৩৩৭২; ছহীহুত তারগীব হা/৯৮৫)।

প্রশ্ন (২৮৬) : ওযূ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়া ওয়াজিব কি? এছাড়া ওযূ করার সময় প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার দো‘আ আছে কি?

উত্তর : ওযূ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়াকে অধিকাংশ বিদ্বান মুস্তাহাব বলেছেন (নববী, আল-মাজমূ‘ ১/৪৬৫; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ১/১২৫; ইবনুল মুফলেহ, আল-ফুরূ‘ ১/১৫২)। কিন্তু মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং মুছল্লী যে দিকে মুখ করে ওযূ করতে স্বাছন্দ্য বোধ করবে সেদিকে মুখ করে ওযূ করবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২)।

প্রশ্ন (২৮৭) : আলেমদেরকে ‘মাওলানা’ বলা যাবে কী?

উত্তর : উপমহাদেশে সম্মানসূচক সম্বোধন হিসাবে ‘মাওলানা’ (আমাদের বন্ধু/অভিভাবক) বলা হয়ে থাকে (ফীরোযুল লুগাত)। ‘মাওলানা’ এমন একটি শব্দ যা আল্লাহ এবং বান্দা উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দাস তার মালিককে যেন আমার মাওলা না বলে। কারণ তোমাদের সকলের মাওলা আল্লাহ রববুল আলামীন (মুসলিম হা/২২৪৯; মিশকাত হা/৪৭৬০)। উক্ত হাদীছে মাওলা অর্থ প্রভু তথা আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। সেজন্য উক্ত শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, আর গোলামও নিজের মনীবকে প্রভু বলবে না, বরং সে যেন ‘আমার সর্দার’ ও ‘আমার মাওলা’ বলে (মুসলিম হা/২২৪৯; মিশকাত হা/৪৭৬০)। ছাহাবীগণ তাদের মনিবদের ক্ষেত্রে ‘মাওলা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন (মুসলিম হা/১০২৫; মিশকাত হা/১৯৫৩)। যা প্রমাণ করে যে, আলেম ও বিজ্ঞজনদের ‘মাওলানা’ বলে সম্বোধন করা যাবে (নববী, আল-আযকার ৩৬২-৬৩, ৫৭৫; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১/১৯১; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯২৭)।

প্রশ্ন (২৮৮) : আমি পরিবহন সেক্টরে কাজ করি। আমার অধিকাংশ ছালাত সফর অবস্থায় হয়ে থাকে। সারাজীবন এভাবেই কি আমি ক্বছর ছালাত আদায় করতে পারব?

উত্তর : যারা দূরপাল্লার পরিবহনে কাজ করে, তাদের জন্য ছালাত ক্বছর করাতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) আযারবাইজান সফরে গেলে পুরো বরফের মৌসুম সেখানে আটকে যান ও ছয় মাস যাবৎ ক্বছর করেন (বায়হাক্বী ৩/১৫২ পৃঃ; ইরওয়া হা/৫৭৭, সনদ ছহীহ)। অনুরূপভাবে হযরত আনাস (রাঃ) শাম বা সিরিয়া সফরে গিয়ে দু’বছর সেখানে থাকেন ও ক্বছর করেন (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৩-১৪ পৃঃ; মিরক্বাত ৩/২১১ পৃঃ)। সুতরাং স্থায়ী মুসাফির যেমন জাহায, বিমান, ট্রেন, বাস ইত্যাদির চালক ও কর্মচারীগণ সফর অবস্থায় সর্বদা ছালাতে ক্বছর করতে পারেন (ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৭ পৃঃ)।

প্রশ্ন (২৮৯) : স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে কাগজের টাকা ব্যবহার করা কি শরী‘আত সম্মত?

উত্তর : কাগজের টাকা স্বর্ণ বা রৌপ্যের মূল্যমান যা প্রথমে তাম্র মুদ্রা হিসাবে তাবেঈগণের যুগে চালু হয়ে পরবর্তীতে টাকার রূপ ধারণ করে অদ্যাবধি চলমান। উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান (৬৫-৮৬ হি.) প্রথমবারের মত মুসলিম বিশ্বে আরবীতে লেখা দীনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) ও ফাল্স (তাম্র মুদ্রা) প্রচলন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় মুদ্রার প্রচলন হয়। এভাবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যমান ধরে অন্যান্য মুদ্রার প্রচলন ঘটে। ইমাম মালেক (রহঃ)-কে ফাল্স বা তাম্রমুদ্রার সূদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি একে স্বর্ণ বা রৌপ্যের সাথে তুলনা করে সূদ হওয়ার বিষয়টি আলোচনা করেন (আল-মুদাউওয়ানাহ ৩/৫, ৩/২৯)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ ও তার ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) স্বর্ণ ও রৌপ্যে সূদের বিষয়টি এর মূল্যমানের সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন, ওযনের সাথে নয়। তারা মূল্যমানের সাথে সমন্বয় করাকে বিশুদ্ধ বলেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৯/৪৭১-৭২; ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ২/১৫৬)।

উপরোক্ত আলোচনা প্রমাণ করে যে, কাগজের টাকা স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যমান হিসাবে ব্যবহার করা জায়েয। শায়েখ বিন বায (রহঃ) বলেন, কাগজের টাকা একটি আরেকটির বিনিময়ে ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বর্ণের ও রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৫৮)। এছাড়া রাবেতায়ে ‘আলমে ইসলামী ও হাইআতু কিবারিল ওলামা তথা সঊদী আরবের ‘সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ’ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, কাগজের টাকা স্বর্ণ ও রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত, যা ব্যবহার করা জায়েয।

বস্ত্ততঃ কাগজের নোটই বর্তমানে মূল্য হিসাবে প্রচলিত এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বর্ণ ও রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত। এর উপরেই সকল প্রকার লেনদেন চলমান। নিছক কাগজ হিসেবে এর কোন মূল্য নেই। কিন্তু এটি বাণিজ্য ও লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর এটিই এর মূল্যের রহস্য।

দ্বিতীয়তঃ সোনা-রূপা ও অন্যান্য মুদ্রার মত কাগজের নোটও স্বতন্ত্র মুদ্রা হিসাবে গণ্য। আবার দেশ ও অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে কাগজের নোটও মানগতভাবে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। অর্থাৎ সঊদী রিয়ালের মান আর আমেরিকান ডলারের মান এক নয়। এভাবে প্রত্যেক দেশের কাগজী নোট স্বতন্ত্র মুদ্রা হিসাবে গণ্য। সে অনুযায়ী সোনা-রূপা ও অন্যান্য মূল্যের মতো কাগজের মুদ্রা বা নোটের উপরও সূদের বিধান কার্যকর হবে। মোটকথা কাগজের মুদ্রা স্বর্ণ বা রৌপ্যের স্থলাভিষিক্ত, যা ব্যবহারে শরী‘আতে কোন বাধা নেই (আবহাছু হাইআতি কিবারিল ওলামা ১/৮৫)।

প্রশ্ন (২৯০) : ছালাতে ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করার ব্যাপারে শারঈ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?

উত্তর : ছালাতরত অবস্থায় ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করা সিদ্ধ নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে থুথু ফেলে ক্বিয়ামতের দিন তার ঐ থুথু দু’চোখের মধ্যখানে পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে’ (আবুদাউদ হা/৩৮২৪; ছহীহাহ হা/২২২)। তিনি আরো বলেন, ক্বিবলার দিকে যে কফ ফেলে তার চেহারায় ঐ কফ থাকা অবস্থায় সে ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে (ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩১৩; ছহীহাহ হা/২২৩)। তিনি আরো বলেন, মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গুনাহ ও তা দাফন করা ছওয়াবের কাজ (ছহীহুত তারগীব হা/২৮৭)। ছালাতের মধ্যে থুথু বা কফ ফেলার আদব সম্পর্কে হাদীছে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, (একবার) রাসূল (ছাঃ) মসজিদে ক্বিবলার দিকে শ্লেষ্মা দেখতে পেলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তোমাদের একজন তো প্রভুর দিকে মুখ করে ছালাতে দাঁড়ায়, তারপর সে সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করতে থাকে। তোমাদের কেউ কি এটা পসন্দ করবে যে, কেউ তার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে অতঃপর তার মুখের উপর থুথু নিক্ষেপ করবে? যখন তোমাদের কারো থুথু এসে পড়ে, তখন বামদিকে পায়ের নিচে ফেলবে। যদি জায়গা না থাকে, তবে এরূপ করবে। রাবী কাসেম এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিজ কাপড়ে থুথু ফেললেন এবং এক প্রান্তকে আরেক প্রান্ত দিয়ে ঘষে ফেললেন (মুসলিম হা/৫৫০)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি সেখানে যাফরানের সুগন্ধি ছড়িয়ে দিলেন (ছহীহুত তারগীব হা/২৮০)।

জনৈক ইমাম মসজিদে ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলে পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ) তাকে ইমামতি করতে দেননি (আবুদাউদ হা/৪৮১; মিশকাত হা/৭৪৭; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৮)।

প্রশ্ন (২৯১) : নারীদের জন্য নকশাযুক্ত সুন্দর রংয়ের বোরকা ও স্কার্ফ পরিধান করা শরী‘আতসম্মত কি?

উত্তর : সাধারণ নকশাদার কাপড় পরিধান করা নারীদের জন্য নাজায়েয নয়। তবে এমন নকশাদার কাপড় পরিধান করা যাবে না, যা পরপুরুষদের নযর কাড়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আর তারা যে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত (নূর ২৪/৩১)। সুতরাং নারীদের জন্য এমন কাপড় পরিধান করে বাইরে বের হওয়া জায়েয নয়, যা পর্দার মূল উদ্দেশ্য বিরোধী (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/১০০)।

প্রশ্ন (২৯২) : ছালাতরত অবস্থায় কোন কারণে ছালাতের স্থান থেকে ডানে-বামে সরে যাওয়া যাবে কি?

উত্তর : কাতার সোজা করা, কাতারের শূন্যস্থান পূরণ করা বা ডান বাম থেকে কোন মুছল্লী সরে যাওয়ার কারণে ফাঁকা স্থান পূরণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে ডানে বা বামে সরে যাওয়া মুস্তাহাব (উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/৫০৩)। ইবনু আববাস (রাঃ) ছালাতে রাসূল (ছাঃ)-এর বামে দাঁড়ালে তিনি তার মাথা ধরে তাঁর ডানে দাঁড় করান (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৯৫)। অনুরূপভাবে প্রয়োজনে স্বল্পপরিসরে নড়াচড়া করা মুবাহ। যেমন মসজিদে ছালাত আদায়ের সময় রাসূল (ছাঃ) ছালাতে তার নাতনী উমামা বিনতে যয়নবকে কোলে ও পিঠে নিয়ে ছালাত আদায় করেছিলেন (বুখারী হা/৫১৬; মুসলিম হা/৫৪৩)। অতএব ছালাতের জন্য পরিপুরক কোন কাজে ডানে বা বামে সরে যাওয়ায় বাধা নেই।

প্রশ্ন (২৯৩) : ছিয়াম শেষে ইফতারের সময় আমরা পুরো পরিবার একত্রিত হই এবং জামা‘আতবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করি। আমার দাদু দো‘আ পড়েন। আর আমরা আমীন বলি। এরূপ করা জায়েয কি?

উত্তর : ইফতারের পূর্বে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দো‘আ করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। নির্দিষ্টভাবে ইফতারের সময় দো‘আ কবুল হয় মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৩; মিশকাত হা/২২৪৯; যঈফুল জামে‘ হা/১৯৬৫)। তবে ছিয়াম পালনকারীর দো‘আ কবুল করা হয় মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ছহীহ (ইবনু মাজাহ হা/১৭৫২)। এমনকি মুসলমানের দো‘আ দিন-রাত সর্বাবস্থায় কবুল হয় (ছহীহুত তারগীব হা/১০০২)। সুতরাং বিশেষভাবে ইফতারের সময় নয়, বরং ছিয়াম অবস্থায় যেকোন সময় দো‘আ করার বিষয়টিই প্রমাণিত।

প্রশ্ন (২৯৪) : জনৈক ব্যক্তি আমাকে একটি চাকুরীর জন্য সহযোগিতা করেছেন। তাকে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু উপহার হিসাবে দেই। এটা কি ঘুষ হবে?

উত্তর : এটা ঘুষ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, সুফারিশ করার দরুণ যে ব্যক্তি সুফারিশকারীকে উপহার দেয় এবং (তার থেকে) সে ঐ উপহার গ্রহণ করে তাহ’লে সে ব্যক্তি সূদের দ্বারসমূহের মধ্য থেকে একটি বৃহৎ দ্বারে উপনীত হবে (আবুদাউদ হা/৩৫৪৭; ছহীহাহ হা/৩৪৬৫)। তবে কাউকে চাকুরী পেতে সহায়তা করলে সে অশেষ ছওয়াবের অংশীদার হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা সুফারিশ কর, বিনিময়ে তোমরা ছওয়াব পাবে (বুখারী হা/১৪৩২)। তিনি আরো বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম, সে যেন তা করে (মুসলিম হা/২১৯৯)। আর সাধারণভাবে কেউ কাউকে কোন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য শুকরিয়া স্বরূপ কিছু হাদিয়া প্রদান করা বা খাওয়ানো গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তাতে প্রার্থীর কামনা থাকা যাবে না (আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/১৮০-১৮১)।

প্রশ্ন (২৯৫) : ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল হকের উপর অটল থাকবে। কেউ তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না- এ হাদীছের ব্যাখ্যায় ছহীহ বুখারীতে এসেছে যে, এ দলটি কি সিরিয়ায় অবস্থান করবে? এক্ষণে নাজাতপ্রাপ্ত দলটি কেবল সিরিয়ার অধিবাসী হবে?

উত্তর : নাজাতপ্রাপ্ত দলটি কেবল শামের অধিবাসী বা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী হবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (যঈফাহ হা/৬৩৯০)। উক্ত বর্ণনাগুলোকে ছহীহ ধরা হ’লেও নাজাতপ্রাপ্ত দলের শামে অবস্থান করাকে আবশ্যক করে না। বরং এই দলটি একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান করবে। যেমন ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর আমলে হকপন্থী দলটি শামে অবস্থান করছিল। আবার আব্দুল ওয়াহহাব নাজদীর আমলে তারা সঊদী আরবে অবস্থান করছিল। আবার তারা একই সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করতে পারে। যেমন বিভিন্ন দেশের সালাফী মানহাজের লোকেরা (হামূদ তুয়াইজেরী, ইত্তিহাফুল জামা‘আত ১/৩৩২)। কারণ বিভিন্ন হাদীছে হকপন্থী দলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, পশ্চিম দেশীয়রা (আরববাসীরা/শামবাসীরা) বরাবর হকের উপর বিজয়ী থাকবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত (মুসলিম হা/১৯২৫)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, বায়তুল মুক্বাদ্দাস বা শামে অবস্থান দ্বারা উদ্দেশ্য সে সকল লোক যারা দাজ্জাল দ্বারা অবরুদ্ধ হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরণ করে দাজ্জালকে হত্যা করবেন (ফাৎহুল বারী ১৩/২৯৪-৯৫)। অতএব নাজাতপ্রাপ্ত দলের সীমানা শাম বা সিরিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকবে।

প্রশ্ন (২৯৬) : অবাধ্য সন্তানদের মীরাছের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী?

উত্তর : পিতা-মাতার অবাধ্য হ’লে ছেলে-মেয়ে কবীরা গোনাহগার হয়। কিন্তু মীরাছ হ’তে বঞ্চিত হয় না। কারণ মীরাছ হয় বংশীয় কারণে, সদাচরণের জন্য নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৫/২৮১)। তাই সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র করা বা সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা নিষিদ্ধ। বরং পিতা-মাতা একাজ করলে সন্তানের হক নষ্ট করা হবে, যা পরকালে নিজের নেকী থেকে তাকে পরিশোধ করতে হবে (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)। তবে সন্তান ‘মুরতাদ’ হ’লে কিংবা অন্যায়ভাবে পিতা বা মাতাকে হত্যা করলে সে তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে (বুখারী হা/৬৭৬৪; মুসলিম হা/১৬১৪; মিশকাত হা/৩০৪৩; আবুদাঊদ হা/৪৫৬৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩৫০০)। এক্ষেত্রে অবাধ্য ছেলে-মেয়েকে পিতা-মাতার কাছে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। কেননা পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯) এবং মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত (নাসাঈ হা/৩১০৪)। এখানে উভয়পক্ষকে নমনীয় হ’তে হবে। কেননা ‘রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২)। 

প্রশ্ন (২৯৭) : অবাধ্য সন্তানদের মীরাছের ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী?

উত্তর : পিতা-মাতার অবাধ্য হ’লে ছেলে-মেয়ে কবীরা গোনাহগার হয়। কিন্তু মীরাছ হ’তে বঞ্চিত হয় না। কারণ মীরাছ হয় বংশীয় কারণে, সদাচরণের জন্য নয় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৫/২৮১)। তাই সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র করা বা সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা নিষিদ্ধ। বরং পিতা-মাতা একাজ করলে সন্তানের হক নষ্ট করা হবে, যা পরকালে নিজের নেকী থেকে তাকে পরিশোধ করতে হবে (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)। তবে সন্তান ‘মুরতাদ’ হ’লে কিংবা অন্যায়ভাবে পিতা বা মাতাকে হত্যা করলে সে তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে (বুখারী হা/৬৭৬৪; মুসলিম হা/১৬১৪; মিশকাত হা/৩০৪৩; আবুদাঊদ হা/৪৫৬৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩৫০০)। এক্ষেত্রে অবাধ্য ছেলে-মেয়েকে পিতা-মাতার কাছে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে হবে। কেননা পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি’ (তিরমিযী হা/১৮৯৯) এবং মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত (নাসাঈ হা/৩১০৪)। এখানে উভয়পক্ষকে নমনীয় হ’তে হবে। কেননা ‘রক্তসম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী হা/৫৯৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২)। 

প্রশ্ন (২৯৮) : সূরা ত্বোয়াহা ১৩২ আয়াতের তাফসীর জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত আয়াতের অনুবাদ- ‘আর তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক। আমরা তোমার নিকট রূযী চাই না। আমরাই তোমাকে রূযী দিয়ে থাকি। আর (জান্নাতের) শুভ পরিণাম তো কেবল মুত্তাক্বীদের জন্যই’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)। এর তাফসীরে হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ যখন তুমি ছালাত আদায় করবে, তোমার নিকটে এমন স্থান থেকে রিযিক আসবে যা তুমি কল্পনাও করনি। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তাকে তিনি তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন’ (তালাক ৬৫/২-৩)। অর্থাৎ যদি কেউ আল্লাহর ইবাদত করে তাহ’লে আল্লাহ তাকে রিযিক প্রদান করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। আমি তোমার হৃদয়কে স্বচ্ছলতা দ্বারা ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। আর যদি তুমি তা না কর, তাহ’লে আমি তোমার হাতকে ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না’ (ইবনু মাজাহ হা/৪১০৭; মিশকাত হা/২৪৬৬; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৬৬)। অতএব ইবাদতের সাথে রিযিকের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

প্রশ্ন (২৯৯) : হাজারে আসওয়াদে মুখ রেখে ক্রন্দন করা সংক্রান্ত হাদীছটি কি ছহীহ?

উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই যঈফ (ইরওয়াউল গালীল হা/১১১, ৪/৩০৮ পৃঃ)। ইমাম নাসাঈ বলেন, হাদীছটি পরিত্যক্ত। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি ‘মুনকার’ বা অগ্রহণযোগ্য (ইরওয়া, ঐ)। বরং স্পর্শ করত চুম্বন করা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী, মিশকাত হা/২৫৬৭)। 

প্রশ্ন (৩০০) : মি‘রাজে গমনের সময় বায়তুল মুক্বাদ্দাসে সকল নবী-রাসূল কি সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন? তারা কি কবর থেকে উত্থিত হয়েছিলেন? এ ব্যাপারে সবিস্তারে জানতে চাই।

উত্তর : মি‘রাজ রজনীতে নবী-রাসূলগণ স্ব স্ব আকৃতিতে বায়তুল মুক্বাদ্দাসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ইমামতিতে দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় করেছিলেন। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) তাদের চিনতে পেরেছিলেন। তবে তারা কিভাবে এসেছেলেন সে বিষয়ে কিছু বর্ণিত হয়নি। এটি সম্পূর্ণ গায়েবী বিষয়। যার প্রতি ঈমান আনা অপরিহার্য। তবে ঈসা ও ইদ্রীস (আঃ)-এর বিষয়টি স্বতন্ত্র (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩২৮, ৫/৫২৬-২৭)।

প্রশ্ন (৩০১) : দুই সিজদার মাঝে পঠিতব্য আল্লাহুম্মাগফিরলী.. দো‘আটি ছহীহ কি? এটি ছাড়া এসময় পঠিতব্য আর কোন দো‘আ আছে কি?

উত্তর : উক্ত দো‘আটি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (তিরমিযী হা/২৮৪; মিশকাত হা/৯০০)। দুই সিজদার মাঝে প্রচলিত দো‘আটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন কোন কোন হাদীছে কেবল ‘রবিবগ ফিরলী, রবিবগ ফিরলী’ (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর) অংশটুকু এসেছে (আবুদাউদ হা/৮৫০, ৮৭৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১২০০)। অন্য হাদীছে এসেছে, আল্ল-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ার্ঝুক্বনী (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার উপরে রহম কর, আমার অবস্থার সংশোধন কর, আমাকে সুপথ প্রদর্শন কর, আমাকে সুস্থতা দান কর ও আমাকে রূযী দান কর’) (তিরমিযী হা/২৮৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৯০০)। উক্ত হাদীছে ৬টি বিষয়ে প্রার্থনা এসেছে। কোন কোন হাদীছে এছাড়াও এসেছে, অরফা‘নী (আমাকে উচ্চ সম্মানিত কর) (ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮)।

প্রশ্ন (৩০২) : জনৈক ব্যক্তি সবসময় মায়ের সেবা করে এসেছে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মা তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু শেষ সময়ে মায়ের সাথে উচ্চবাক্য বিনিময় করায় তিনি কষ্ট পান এবং দু’দিন পরেই মারা যান। কিন্তু সন্তান তার নিকট থেকে মাফ নিতে পারেনি। এক্ষণে তার জন্য ক্ষমা পাওয়ার কোন সুযোগ আছে কি?

উত্তর : পিতা-মাতা এমন দু’ব্যক্তি যাদেরকে উহ্ শব্দ দ্বারাও কষ্ট দেয়া যাবে না। এক্ষণে খারাপ আচরণের কারণে ক্ষমা নিতে না পারলে করণীয় হ’ল নিজে তওবা করা, মায়ের  জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তার জন্য দান করা ইত্যাদি। হাদীছে এসেছে, বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে। (১) তাদের জন্য দো‘আ করা (২) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা (৩) তাদের প্রতিশ্রুতি সমূহ পূর্ণ করা এবং (৪) তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, যারা তাদের মাধ্যমে তোমার আত্মীয় (৫) তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা’ (আবুদাঊদ হা/৫১৪২; মিশকাত হা/৪৯৩৬; ইবনু হিববান হা/৪১৮, ইবনু হিববান, হাকেম, যাহাবী, হুসাইন সুলাইম আসাদ এর সনদকে ছহীহ ও জাইয়েদ বলেছেন (হাকেম হা/৭২৬০; মাওয়ারিদুয যাম’আন হা/২০৩০। তবে শায়খ আলবানী ও শু‘আইব আরনাউত্ব যঈফ বলেছেন। এর সনদ যঈফ হ’লেও মর্ম ছহীহ)। তিনি আরো বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ এই যে, ব্যক্তি তার পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে’(আহমাদ হা/৫৬১২; ছহীহুল জামে‘ হা/১৫২৫)। অতএব মায়ের মৃত্যুর পরে মায়ের জন্য অধিকহারে দো‘আ করবে এবং মায়ের সঙ্গী-সাথীদের সাথে ভালো আচরণ করবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন (৩০৩) : ঈদগাহে শরীর চর্চার জন্য খেলা-ধূলা করা যাবে কি?

উত্তর : মসজিদ ও ঈদগাহের মত পবিত্র স্থানের সম্মান ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বিনষ্ট হয়, এমন কোন খেলা-ধুলা জায়েয নয়। তবে সাধারণ খেলা-ধূলা বা শরীরচর্চা যা ছালাতের সময় নষ্ট করে না, সেগুলি জায়েয। রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় হাবশী যোদ্ধারা মসজিদে শরীর চর্চা করেছিলেন (বুখারী হা/৪৫৪; মুসলিম হা/৮৯২)। রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে নিষেধ করেননি। যা প্রমাণ করে যে, সাময়িকভাবে মসজিদসহ যেকোন স্থানে বৈধ শরীর চর্চা করা জায়েয (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/৩০৯)।

প্রশ্ন (৩০৪) : নিফাসের সময়সীমা ৪০ দিন পূর্ণ করা আবশ্যক কি? এর পূর্বে রক্তের চিহ্ন দূরীভূত হ’লে ছালাত-ছিয়াম আদায় করা আবশ্যক কি?

উত্তর : নিফাসের সময়সীমা চল্লিশ দিন পূর্ণ করা আবশ্যক নয়। বরং যখনই নিফাস বন্ধ হবে, তখনই পবিত্র হয়ে ছালাত ও ছিয়াম আদায় করবে। কারণ নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন ও রাত হ’লেও সর্বনিম্ন সময়সীমা নির্ধারিত নেই (আবুদাউদ হা/৩১১; ইরওয়া হা/২১১; নববী, আল-মাজমূ‘ ২/১৬৯; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/২৫১)।

প্রশ্ন (৩০৫) : একাকী ছালাতরত অবস্থায় অর্ধেক ছালাত আদায় করার পর ওযূ ভেঙ্গে গেলে ওযূ করে এসে অবশিষ্ট রাক‘আত না পুরো ছালাত নতুনভাবে আদায় করতে হবে?

উত্তর : ছালাত অবস্থায় ওযূ ভেঙ্গে গেলে ছালাত ছেড়ে দিবে এবং ওযূ করে নতুনভাবে ছালাত শুরু করবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছালাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন নিঃশব্দে বাতাস বের করে, সে যেন ফিরে গিয়ে ওযূ করে এসে পুনরায় ছালাত আদায় করে নেয় (আবুদাউদ হা/২০৫; মিশকাত হা/১০০৬, সনদ হাসান, তারাজু‘আতে আলবানী হা/২৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৪৩৮; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/১৫৯)।

প্রশ্ন (৩০৬) : আমাদের এলাকায় হাত তুলে মুনাজাতের পূর্বে একবার সূরা ফাতিহা ও তিনবার সূরা ইখলাছ পড়া হয়। এটা সঠিক হবে কি?

উত্তর : জামা‘আতবদ্ধভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা বিদ‘আত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২৪/১৯০)। এর সাথে আবার সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাছ পাঠের বিধান যুক্ত করা আরেক বিদ‘আত। বরং মুনাজাতের সুন্নাতী তরীকা হ’ল একাকী হাত তুলে মুনাজাত করা (আবুদাউদ হা/১৪৮৮; মিশকাত হা/২২৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৩৫)। আর দো‘আর পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা (আবুদাউদ হা/১৪৮১; নাসাঈ হা/১২৮৪)। এছাড়া সিজদা ও ছালাতের শেষ বৈঠক মুনাজাতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় (বুখারী হা/৮৩৫; মুসলিম হা/৪৮২; মিশকাত হা/৯০৯, ৮৯৪)।

প্রশ্ন (৩০৭) : একজন নারীর সামনে অপর নারীর পর্দার বিধান কি? একে অপরের সামনে শরীরের কতটুকু অংশ খোলা রাখতে পারবে? দলীল ভিত্তিক জানতে চাই?

উত্তর : একজন নারী থেকে আরেকজন নারীর পর্দা হ’ল  মাহরাম পুরুষদের থেকে পর্দার ন্যায় (নূর ২৪/৩১)। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন নারী যেন অপর নারীর লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়। একইভাবে কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায় (ইবনু মাজাহ হা/৬৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮০০)। অর্থাৎ কোন কারণে গোপন স্থান প্রকাশ পেয়ে গেলে সেদিকে তাকাবে না। আর এই আমলই রাসূল (ছাঃ)-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি মুসলিম নারীদের মাঝে প্রচলিত আছে। অর্থাৎ মুসলিম নারীরা অপর নারীদের থেকে তাদের হাত, পা ও মাথা ছাড়া দেহের অন্যান্য অংশ ঢেকে রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/২৯২)।

প্রশ্ন (৩০৮) : দুধ বোন দুধ ভাইয়ের সামনে কি পরিমাণ পর্দা করবে? নিজ ভাই ও দুধ ভাইয়ের মধ্যে পর্দা করার ক্ষেত্রে ভিন্ন কোন বিধান আছে কি?

উত্তর : দুধ ভাই ও বোন থেকে ততটুকু পর্দা করবে যতটুকু নিজ ভাই ও বোন থেকে করা আবশ্যক। অর্থাৎ দুধ ভাই দুধ বোনের হাত, পা, মাথা, মুখমন্ডল ও চুল দেখতে পারে যেমন অন্যান্য মাহরামরা দেখতে পারে। আল্লাহ বলেন, তোমাদের জন্য হারাম করা হ’ল- তোমাদের মা, মেয়ে, ফুফু, খালা, ভাতিজী, ভাগিনেয়ী, দুধ-মা, দুধ-বোন’ (নিসা ৪/২৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘বংশীয় সূত্রে যে সকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম, দুগ্ধপান সূত্রেও সেসকল মহিলাকে বিবাহ করা হারাম’ (বুখারী হা/২৬৪৫; মুসলিম হা/১৪৪৫-৪৭; মিশকাত হা/৩১৬১)।

প্রশ্ন (৩০৯) : শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় নিয়মিতভাবে নফল ছিয়াম রাখতে চাই। সেক্ষেত্রে আগে-পরে মিলিয়ে ছিয়াম পালন করা যাবে কি?

উত্তর : এককভাবে শুক্রবারে ছিয়াম পালন নিষিদ্ধ। তবে আগে বা পরে মিলালে তাতে কোন দোষ নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই কেউ যেন স্রেফ জুম‘আর দিনে ছিয়াম না রাখে। তবে যদি তার একদিন আগে কিংবা পরে রাখে তাহ’লে তাতে ক্ষতি নেই (বুখারী হা/১৯৮৫)। অর্থাৎ শুক্রবারের সাথে বৃহস্পতিবার কিংবা শনিবার ছিয়াম রাখলে কোন দোষ নেই। তিনি আরো বলেন, ‘আর দিনগুলোর মধ্যে শুধু জুম‘আর দিনকে ছিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়ো না। তবে যদি তোমাদের কেউ সর্বদা (নফল) ছিয়াম পালন করে আর এ ছিয়ামের (ধারাবাহিকতার) মধ্যে জুম‘আর দিন এসে যায়, তাহ’লে ভিন্ন কথা (মুসলিম হা/১১৪৪; মিশকাত হা/২০৫২)। উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়াহ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর দিন তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি ছিয়াম অবস্থায় ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি গতকাল ছিয়াম রেখেছিলে? তিনি বললেন, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি আগামীকাল ছিয়াম পালনের ইচ্ছা আছে? তিনি বললেন, না। তিনি বললেন, তাহ’লে ছিয়াম ভঙ্গ কর (বুখারী হা/১৯৮৬)। অতএব কেবল শুক্রবারে ছিয়াম পালন করা সমীচীন নয়।

প্রশ্ন (৩১০) : জেনে বা না জেনে চুরিকৃত জিনিস ক্রয় করা যায় কি?

উত্তর : জানার পরে চোরাই মাল ক্রয় করা নিষিদ্ধ। তবে অজ্ঞাত অবস্থার কথা ভিন্ন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পাপ এবং অন্যায়ের কাজে তোমরা একে অপরের সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ২)।

প্রশ্ন (৩১১) : আমাদের মসজিদের ইমাম দীর্ঘক্ষণ মুছল্লীদের দিকে ফিরে বসে থাকেন। ফলে মুছল্লীগণ বিরক্ত বোধ করেন। এক্ষণে ফরয ছালাত শেষ হওয়ার পর ইমাম কোন মুখী হয়ে বসবেন?

উত্তর : ছালাতের সালাম শেষে ইমাম ডাইনে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবেন (বুখারী হা/৮৫২; মুসলিম হা/৭০৭; মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬)। আর ইমামের ঘুরে থাকাতে মুছল্লীর বিরক্তির কোন কারণ নেই। তবে ইমামের কোন কথার বলার প্রয়োজন না থাকলে এবং মুছল্লীরা সুন্নাত শুরু করলে ইমাম ডানে বা বামে ঘুরে গিয়ে অবশিষ্ট যিকির-আযকার পাঠ করবেন (মির‘আতুল মাফাতীহ ৩/৩০৩)।

প্রশ্ন (৩১২) : ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে ছাহাবীকে অনুমতি দিয়েছিলেন সেটা তার জন্য খাছ ছিল (ইরওয়া ৪/৩৫৭ পৃঃ)।

প্রশ্ন (৩১৩) : দাফন শেষে কবরের পার্শ্বে একাকী বা সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা যাবে কি?

উত্তর : দাফন শেষে মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হযরত ওছমান (রাঃ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে দাফন শেষে নবী কারীম (ছাঃ) সেখানে দাঁড়াতেন এবং উপস্থিত লোকদেরকে বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ঈমানের উপর দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ কর। কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে’ (আবুদাঊদ হা/৩২২১; মিশকাত হা/১৩৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩৫১১)। সেজন্য বিদ্বানগণ বলেন, দাফনের পর মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নাত। তারা বলবে, ‘আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়া ছাবিবতহু’ (হে আল্লাহ তুমি তাকে ক্ষমা কর ও দৃঢ় রাখ)। এক্ষণে দাফনের পর হাত তুলে জামা‘আতবদ্ধ মুনাজাতের ব্যাপারে কোন হাদীছ বা আছার বর্ণিত হয়নি। তাই মাইয়েতের মাগফিরাতের জন্য প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে দো‘আ পাঠ করবে। কেউ একাকী হাত তুলে প্রার্থনা করলেও দোষ নেই। তবে এটিও নিয়মিত করা যাবে না। কারণ নিয়মিত করলে সেটি বিদ‘আত হিসাবে গণ্য হবে এবং বড় বিদ‘আতের দুয়ার উন্মুক্ত করবে (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৪/১১০ পৃ.)।

প্রশ্ন (৩১৪) : মসজিদের কিছু জমি সরকার অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। উক্ত টাকা কি জমি ওয়াকফকারী না মসজিদ কর্তৃপক্ষ পাবে? এটা দিয়ে মসজিদের উন্নয়ন বা ইমাম-মুওয়াযযিনের বেতন দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : সরকার মসজিদের জমি অধিগ্রহণ করেছে এর ক্ষতি পূরণ মসজিদই পাবে, দাতা নন। কারণ জমিদাতা শর্তহীনভাবে তার জমি মসজিদে ওয়াকফ করেছেন। বর্তমানে উক্ত জমির মালিক মসজিদ। এক্ষণে মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদ সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজে উক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারেন। প্রয়োজনে মসজিদের ইমাম বা মুওয়াযযিনের বেতনও দিতে পারেন (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৭/৩১; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ১০/৫৫)।

প্রশ্ন (৩১৫) : ওযূ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়া কি ওয়াজিব? এছাড়া ওযূ করার সময় প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার কোন দো‘আ আছে কি?

উত্তর : ওযূ করার সময় ক্বিবলামুখী হওয়াকে অধিকাংশ বিদ্বান মুস্তাহাব বলেছেন, ওয়াজিব বলেননি (নববী, আল মাজমূ‘ ১/৪৬৫)। কিন্তু মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন হাদীছ বা আছার পাওয়া যায় না। সুতরাং মুছল্লী যে দিকে মুখ করে ওযূ করতে স্বাছন্দ্য বোধ করবে, সেদিকে মুখ করে ওযূ করবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৭/২)।

প্রশ্ন (৩১৬) : দাজ্জাল আসবে ক্বিয়ামতের পূর্বে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক দাজ্জালের ফিৎনা থেকে পানাহ চাওয়ার কারণ কি ছিল?

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) নিজে সর্বদা দাজ্জালের ফিৎনা থেকে পানাহ চেয়েছেন। তিনি স্বীয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার দো‘আ শিখিয়েছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৫৯ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়)। কেবল আমাদের নবীই নন বরং সকল নবীই স্ব স্ব উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সাবধান করে গেছেন (আবুদাউদ হা/৪৩১৬)। কারণ দাজ্জাল ক্বিয়ামতের পূর্বে আসলেও ক্বিয়ামত কখন হবে, সে ব্যাপারে কারু জানা নেই। আল্লাহ বলেন, তারা একে দূরে মনে করে। অথচ আমরা একে নিকটে মনে করি’ (মা‘আরেজ ৭০/৬-৭)। রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সর্বদা ভীত থাকতেন বলেই দাজ্জালের ফিৎনা থেকে পানাহ চাইতেন। সুতরাং আমাদেরকেও সর্বদা দাজ্জালের ফিৎনা থেকে পানাহ চাইতে হবে এবং ক্বিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিবস আসন্ন বিবেচনা করে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে হবে।

প্রশ্ন (৩১৭) : বর্তমানে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে নার্সিং পেশায় পূর্ণ পর্দা রক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু নারীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পর্দানশীন নারীরা নার্সকেই খুঁজে নেন। এক্ষণে নার্সিং পেশা গ্রহণ করার ব্যাপারে করণীয় কি?

উত্তর : চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদা সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই একান্ত প্রয়োজন। সেকারণ নারীদের জন্য নারী এবং পুরুষদের জন্য পুরুষ চিকিৎসক ও নার্স থাকা এবং হাসপাতালগুলিতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক বিভাগ থাকা আবশ্যক। এরূপ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নারীদের নার্স বা চিকিৎসকের দায়িত্বপালনে শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে এরূপ ব্যবস্থা না থাকলে সার্বক্ষণিক পর্দার মধ্যে থাকা এবং পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সাপেক্ষে নারীরা নার্সিং বা চিকিৎসা পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারে (শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৯/৪২৫)।

প্রশ্ন (৩১৮) : কারো প্রতিকৃতি নির্মাণ ও তাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা কী ধরনের অপরাধ?

উত্তর : কোন প্রাণীর প্রতিকৃতি নির্মাণ করা এবং তাতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (আম্বিয়া ৫২)। এটা বিধর্মীদের অনুকরণ যা শরী‘আতে হারাম (মায়েদাহ ৫১)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে অন্যদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব তোমরা ইহূদী এবং খৃষ্টানদের অনুসরণ করো না’ (তিরমিযী হা/২৬৯৫, ছহীহাহ হা/২১৯৪)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

অন্যান্য পর্বসমূহ দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(১)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০১

(২)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০২

(৩)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৩

(৪)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৪

(৫)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৫

(৬)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর-পর্ব-০৬

(৭)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৭)

(৮)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৮)

(৯)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০৯)

(১০)কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১০)

(১১)  কোরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নোত্তর (পর্ব-১১)

১৩তম পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন----

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

====================================================

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...