Search This Blog

Thursday, July 22, 2021

ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সহিহ হাদিস ভিত্তিক

সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম

তৃতীয় খন্ড (দ্বিতীয় অংশ)

ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী

 ভূমিকাঃ ইসলামের সর্বাঙ্গ সুন্দর  সুষ্ঠু  এক বিধান হলো একক ইমাম বা নেতার নেতৃত্বে জামাআতবদ্ধ হয়ে থাকা। সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু জীবন-যাপন করার জন্য নেতার একান্ত দরকার । যিনি হবেন মুসলিম সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা মসজিদের ইমাম এবং তিনিই হবেন ইসলামি-শরীয়ত ব্যাখ্যা দাতা তথা নির্দেশ প্রদানকারী। তাঁর মুগ্ধকারী আখলাক-চরিত্র ও  আচার-ব্যবহার হবে সমাজের জন্য দিক-নির্ণয়ক। তিনি সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি মাননীয় ও অনুসরণীয়। তিনি সমাজ-সংস্কারক, সুপরামর্শদাতা, কল্যাণকামী ও শুভানুধ্যায়ী। তিনি ইসলামের বিশাল ইবাদত নামাযের নেতা, তিনিই জিহাদের ময়দানে প্রধান সেনাপতি। রাষ্ট্রীয় দিক থেকে তিনিই হবেন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের  ‍মুসলিম সমাজের রাষ্ট্র নেতা।

আরবি ‘ইমাম’ শব্দের অর্থ নেতা। আর এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Leader. ইংরেজি একটি প্রবাদ বাক্যে Leader. বা নেতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, He is the Leader, Who knows the way, who go’s the way and who show’s the way. অর্থাৎ ‘যিনি সঠিক পথ সম্পর্কে জানেন, সেই পথে চলেন এবং মানুষকে পথ দেখান তিনিই নেতা।’ অর্থাৎ নেতাকে জানতে হবে জীবন চলার সঠিক পথ সম্পর্কে; শুধু জানলেই হবে না বরং তাঁকে অনুসরণ করতে হবে সেই পথ এবং একইসাথে তিনি অনুসারীদেরকে সেই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাশালী ব্যক্তি। ইমাম শব্দটি কুরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘নেতা’ বলে উল্লেখ  করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন ইবরাহিমকে তার রব কিছু বিষয়ে আনুগত্যের পরীক্ষা নিলেন, অতঃপর তিনি তা পুরোপুরি পূরণ করলেন, আল্লাহ বললেন, হে ইবরাহিম, আমি তোমাকে জাতির জন্য নেতা বানাতে চাই।’

সুরা হুদের ১৭ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘পথপ্রদর্শক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন ‘আর পূর্ববর্তী মুসার কিতাব যা ছিল পথপ্রদর্শক ও রহমত।’

ইমাম এবং ইমামতি বিষয়টা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইমামত দুই ধরনের হতে পারে,

প্রথমতঃ ‘ইমামতে কুবরা’—বড় ইমামতি যা জনগণের সার্বিক কল্যাণে রাসূল (স)-এর প্রতিনিধি বা খলিফ হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনাকে বোঝানো হয়ে থাকে। অবশ্য ইসলামি শরিয়ায় এর অনেক শর্ত রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ ‘ইমামতে সুগরা’—ছোট ইমামতি নামাজের ইমামত ও মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা। আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স) নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন, তিনি নামাজের ইমামতিও করেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোনো পেশা নয়, বরং এটা হচ্ছে একটি মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নবি করিম (স) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য এই বলে দোয়া করেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার। ‘হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।’

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম হচ্ছেন যিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন (ওয়াক্তের) আমানাতদার। ‘হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।’

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫১৭, তিরমিযী ২০৭, আহমাদ (২/২৩২/২৮৪), ইবনু খুযাইমাহ (১৫২৮), ইবনু হিববান (৩৬৩), বায়হাক্বী (১/৪৩০), ত্বাবারানী ‘সাগীর’ (১/২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইমাম প্রধানতঃ আলেম বা দ্বীনী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিগণই হয়ে থাকেন। সে হিসেবে তাঁরা ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ অর্থাৎ নবী-রসূলগণের ওয়ারিশ।  নবী-রসূলগণ কোন বৈষয়িক সম্পত্তি রেখে যাননি। তাঁরা রেখে গেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তার আলোকে পরিচালিতব্য মিশন। পৃথিবীতে আর কখনও নবী-রসূল (আ.)-এর আগমন ঘটবে না। কেননা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-ই সর্বশেষ রসূল। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যে মিশন নিয়ে দুনিয়ায় এসেছেন সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-

আর  আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (৩৪ সাবা-২৮)।

আল্লাহ আরো বলেন, “আর আমার প্রতি এ কুরআন অহীর সাহায্যে পাঠানো হয়েছে যাতে এর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে এবং যার কাছে এ বাণী পৌঁছে যায় তাকেই সতর্ক করে দেই।” (সূরা আল আন’আম: ১৯৭)।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “বড়ই বরকতসম্পন্ন তিনি যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান নাযিল করেছেন যাতে তিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারীতে পরিণত হন।” (সূরা আল-ফুরকান: ১)।

মহানবী (স.) নিষ্ঠার সাথেই আল্লাহ প্রদত্ত ওই দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালন করেছেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন একজন মানুষ। সুতরাং এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তাঁকে বিদায় নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাঁর তীরোভাবের পর ইসলামের এই কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন করা যাবে সে সম্পর্কে তিনি পরিকল্পনা পেশ করেছেন। বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে এ প্রসঙ্গে তিনি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন যে, তিনি আল্লাহর কুরআন ও তাঁর হাদীস রেখে যাচ্ছেন, যা পরবর্তীতে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে। সুতরাং যারা এ দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে তারাই সফল হবে। এর ব্যতিক্রম হলে মানুষের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য লাভ করা সম্ভব হবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭২৬৯, হাদীস সম্ভার-১৫০০, হাকেম ৩১৯)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসুল সা. আরো বলেন,

তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। অবশ্যই তোমরা বিদআত কাজ পরিহার করবে। কারণ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। (সুনান ইবনু মাজাহ ৪২, তিরমিযী ২৬৭৬, আবূ দাঊদ ৪৬০৭, আহমাদ ১৬৬৯২, দারিমী ৯৫, ইরওয়াহ ২৪৫৫, মিশকাত ১৬৫, ফিলাল ২৪-২৬, সালাতুত তারাবীহ ৮৮-৮৯।

ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে মহানবী (স.) প্রদত্ত  দায়িত্ব আঞ্জাম দিবেন বর্তমান আলেম সমাজ। বিশেষ করে দেশের মসজিদে নিয়োজিত সম্মানিত ইমামগণ এটাই ইসলামের দাবি। যুগ যুগ ধরে দেশের আলেম সমাজের ওপর অর্পিত রয়েছে এই দ্বীনী দায়িত্ব।

রাসুল সা. বলেন,

কাসীর ইবনু ক্বায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেন, আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিস। আর নবীগণ দ্বীনার ও দিরহাম (নগদ অর্থ) ওয়ারিসী স্বত্ব হিসাবে রেখে যাননি, বরং তাঁরা ওয়ারিসী স্বত্বরূপে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। যে ব্যাক্তি তা গ্রহণ করলো, সে যেন একটি পূর্ণ অংশ লাভ করলো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২২৩, তিরমিযী ২৬৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামগণ সমাজে নবীগণের ওয়ারিস হিসেবে যে  দায়িত্ব পালন করার কথা  তা পুরোপুরি পালন করতে না পারলেও মসজিদের ইমাম হিসেবে সালাতের ইমামতি অন্তত করছেন। কিন্তু সু-সমন্বিতভাবে ও সঠিক উপায়ে ইমামতির দায়িত্ব পালনে তাঁরা সক্ষম হলে এ সমাজ তথা দেশের চিত্র পাল্টে যেতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। আর একারণেই দেশের উন্নয়নে তাঁদেরকে সম্পৃক্ত করার প্রশ্নটি বিভিন্ন মহল থেকে বেশ গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। ইমামগণ কি আসলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোনো অবদান রাখছেন? বা তাঁরা কি তা রাখতে সক্ষম? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গভীর গবেষণার প্রয়োজন। তেমন কোনো গভীর গবেষণার অভাবে ইমামদের কর্মকান্ড সমাজ তথা জাতির সামনে অনেকটা অলক্ষেই রয়ে গেছে। দেশের ইমাম সমাজের কর্মকান্ড ও তাঁদের সমস্যা-সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করলে প্রকৃত চিত্র সামনে চলে আসবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করে। ওই প্রজ্ঞাপনে একজন ইমামের দায়িত্ব-কর্তব্য কি হবে সে সম্পর্কে এর ২৪ (৩) (ক) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ইমাম-

(অ)  মসজিদের আমানতদার হিসেবে কাজ করিবেন;

(আ)  মসজিদের সাধারণ মুসুল্লী ও এলাকাবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বভাব, চরিত্র, আমল আখলাক উন্নয়নে সাধ্যানুযায়ী অবদান রাখিবেন;

এখানে উপ-অনুচ্ছেদ (অ)-তে ‘মসজিদের আমানতদার হিসেবে কাজ করবেন’ বলতে ধর্মীয় দৃষ্টিতে একজন ইমামের যে দায়িত্ব রয়েছে তা নিষ্ঠার সাথে পালনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে,  আর উপ-অনুচ্ছেদ (অ)-তে তাঁর সামাজিক দায়-দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্মীয় ও রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত এসকল দায়িত্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায়, ইমাম শুধুমাত্র নামায পড়ানোর মধ্যেই তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখবেন না; বরং তাকে সামাজিক নেতৃত্বের আসনে আসীন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আজকের সমাজে নানা ধরনের অনাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন চলছে। বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ সব ধরনের অনাচার থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। চারিদিকে যখন এসব অনাচার চলছে, তখন ইমামগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। কিন্তু ধর্মীয় ইমামগণ রাজনৈতিক ইমামদের কারনে সেই গুরু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

আজকের ফিৎনাপূর্ণ ও দুর্যোগময় সময়ে পৃথিবীর অবস্থা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। মানবতা আহাজারি করছে। ভয়-ভীতির এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে, জাতি চরমপন্থীদের থেকে বহু দূর-দূরান্তে আত্মরক্ষায় বাধ্য হচ্ছে। অন্যায়-অত্যাচার এবং চরমপন্থার সীমা এতদূর ছাড়িয়ে গেছে যে, ধর্ম ও রাজনীতি চরমপন্থার বলির পাঠা হচ্ছে। পৃথিবীতে যে জাতি নিরপরাধ, তাদেরকে রক্তপিপাসু ও অত্যাচারী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আর যারা অত্যাচারী ও ত্রাস সৃষ্টিকারী তারা নিজেদেরকে নিষ্পাপ এবং নিজেদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসাবে বিশ্বাস করাতে সদা তৎপর রয়েছে। সমগ্র পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও ভয়-ভীতির এক আশ্চর্য পরিবেশ বিরাজমান। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া সব জায়গায় অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষতঃ মুসলিম বিশ্বে (সিরিয়া ও ইরাক) ইসলামের নামে হিংস্র খেলা চলছে। কোথাও আইএস বা ইসলামিক স্টেটের অন্তরালে যুলুম-নির্যাতন ও বর্বরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আবার কোথাও শী‘আ ইযমের প্রসারের জন্য আলেমদেরকে হত্যা, মসজিদগুলিকে ধ্বংস এবং মন্দির ও গীর্জাগুলিকে আবাদ করা হচ্ছে। এই দুই ধারার বিপরীতে ইউরোপ ও আমেরিকা আরেক রকম চরমপন্থার মহোৎসব চালাচ্ছে। এদের সকলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইসলামকে ধ্বংস করা এবং মুসলমানদেরকে খতম করা।

 

বর্তমান যুগে মুসলমানরা যেমন বৈদেশিক বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন, তেমনি অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও অগণিত সামাজিক অনাচারে নিমজ্জিত ও পরিবেষ্টিত রয়েছে। মদ্যপান, জুয়াখেলা, অশ্লীলতা, বিলাসিতা, ব্যভিচার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিয়ে-শাদীতে তিলক ও যৌতুকের মত হিন্দুয়ানী প্রথাকে লজ্জাজনক মনে করা হয় না। শিরক-বিদ‘আত ও কুসংস্কারের বন্যা প্রবাহকে থামানোর নাম নেয় না। মোটকথা মুসলিম জাতি সবদিক থেকেই মুছীবত, দুঃখ ও বিপদের সম্মুখীন। তাদেরকে এসব ফিৎনা থেকে মুক্তি দেয়া অত্যন্ত যরূরী। শুধুমাত্র আলেম, সম্মানিত ইমাম ও মহান সংস্কারকগণই এই প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর জাতির সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করে তাদেরকে বড় মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছেন এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা ও তাদের আনুগত্য করাকে আবশ্যক করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ  ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও তোমাদের মধ্যকার আমীরের আনুগত্য কর’ (নিসা ৪/৫৯)।

প্রকাশ থাকে যে, শারঈ বিষয়ে হকপন্থী আলেম-ওলামা, ফকীহ ও সম্মানিত ইমামদের অনুসরণ করতে হয়। তারা সৎ কাজ করার ও তা প্রচারের এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার যে আদেশ দিবেন, তার অনুসরণ ও আনুগত্য করতে হবে। ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনে যে পদক্ষেপই তারা গ্রহণ করবেন তার অনুসরণ আবশ্যক হবে। কেননা এটা তাদের অধিকার। তবে হ্যাঁ, তারা যদি আল্লাহর অবাধ্যতার হুকুম দেন তাহ’লে তাদের অনুসরণ করা যাবে না। কেননা আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের আনুগত্যের অধিকারই আল্লাহ দেননি। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ طَاعَةَ فِى مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ ‘পাপের কাজে কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল ভাল কাজে’। (বুখারী হা/৭২৫৭; মুসলিম হা/১৮৪০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র সেনাদল পাঠালেন এবং এক ব্যক্তিকে তাঁদের ‘আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তিনি (‘আমীর) আগুন জ্বালালেন এবং বললেন, তোমরা এতে প্রবেশ কর। কতক লোক তাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। তখন অন্যরা বলল, আমরা তো (মুসলিম হয়ে) আগুন থেকে পালাতে চেয়েছি। অতঃপর তারা এ ঘটনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জানাল। তখন যাঁরা আগুনে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করত তাহলে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্তই সেখানে থাকত। আর অন্যদেরকে বললেনঃ আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবলমাত্র ন্যায়সঙ্গত কাজে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭২৫৭, ৪৩৪০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে, সমাজ সংস্কারে আলেম-ওলামা এবং মসজিদের ইমামগণ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। প্রত্যেক যুগে ধর্ম ও জাতির সংস্কারকগণ সমাজকে দুঃখ-বেদনা ও বিপদ থেকে মুক্ত করে তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

বর্তমান অবস্থা যখন ওলট-পালট ও অস্থির, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হত্যা ও হামলা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, হররোজ বোমা বিস্ফোরণ ও আত্মঘাতী হামলা চলছে, এসব বিস্ফোরণের ফলে নিরাপরাধ মানুষ নিহত হচ্ছে, সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, সরকারী ও বেসরকারী ধন-সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে, গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা ও অসহিষ্ণুতার বিষাক্ত পরিবেশ বিরাজ করেছে সর্বত্র। এমন নাযুক পরিস্থিতিতে আলেম-ওলামা, ইমাম, ধর্ম ও জাতির সংস্কারকদের দায়িত্ব হ’ল- জাতি ও সমাজ সংশোধনের কাজ আজ থেকেই শুরু করা। সেজন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা গ্রহণ করা। কেননা শান্তি ও নিরাপত্তা ছাড়া সুখী সমাজ গঠন অসম্ভব। যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করবে, সেখানে জান, মাল, মান-সম্মান নিরাপদে থাকবে। আর যেখানে বিশৃঙ্খলা, প্রোপাগান্ডা, অনিয়ম ও ভয়-ভীতি বিদ্যমান থাকবে সেখানে ফরয ও হক আদায়ও নিয়মানুযায়ী সম্পাদিত হবে না। বরং সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি স্বীয় জান-মাল ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকবে। নিরাপত্তার গুরুত্ব, বড়ত্ব ও উপকারিতার প্রেক্ষাপটে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এই সারগর্ভ দো‘আ করেছিলেন- رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آمِنًا ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি এই স্থানকে শান্তির নগরীতে পরিণত করে দিন’ (বাক্বারাহ ২/১২৬)।

আল্লাহ তা‘আলা এই শহরে এমন শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, আজ গোটা পৃথিবীতে সঊদী শাসন ব্যবস্থাকে উদাহরণ হিসাবে পেশ করা হয়ে থাকে।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মুসলমানদের আমলগত ত্রুটি, উশৃঙ্খল চিন্তা-ভাবনা এবং নৈতিক দেওলিয়াপনা দূর করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী। এজন্য মসজিদের ইমাম এবং দ্বীন ও ঈমানের পাহারাদারদেরকে কর্মসূচী নির্ধারণ করে সামনে অগ্রসর হ’তে হবে এবং তদনুযায়ী আক্বীদা ও আমল সংশোধন করতে হবে। নিম্নে কতগুলি পয়েন্ট উল্লেখ করা হচ্ছে, যার আলোকে ইমামগণ বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ ও নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

(১) ব্যক্তি ও সমাজের আমল ও আক্বীদা সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সবদিক থেকেই জোরালো প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, দাওয়াত ও তাবলীগ, জুম‘আর খুৎবা, দরসে কুরআন, দরসে হাদীছ, মাসিক, পাক্ষিক অথবা সাপ্তাহিক দাওয়াতী কর্মসূচীর মাধ্যমে লোকজনকে সংশোধন করতে হবে। নেশা বন্দের আন্দোলন চালিয়ে মানুষদেরকে নেশার কুফল ও ধ্বংসকারিতা সম্পর্কে জানাতে হবে। যৌতুক ও তিলকের মত রসম-রেওয়াজকে নির্মূল করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং বলতে হবে যে, ইসলামে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া হারাম। নবীর সুন্নাত, রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ এবং ছাহাবায়ে কেরামের কর্মপদ্ধতিতে কোথাও এর কোন প্রমাণ নেই।

(২) নেশাখোর, যৌতুক লোভী এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য সমাজের মন্ডল ও সরদারদের সাথে সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হ’তে হবে যে, এমন লোকদের বিবাহ-শাদী, বিপদ-মুছীবতে আমরা সহযোগিতা করতে পারব না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)।

যখন অপরাধীদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে তখন তারা সংশোধন হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সমাজপতিরা যদি তাদের সাথে এরূপ আচরণ না করে বরং তাদের সাথে একাকার হয়ে যায়, তাহ’লে নিম্নোক্ত হাদীছটি পুনরায় পড়া এবং চিন্তা-ভাবনা করা উচিত যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ রাববুল আলামীনের সামনে তারা কি জবাব দিবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الإِمَامُ رَاعٍ وَمَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ ‘নেতা বা প্রধান হচ্ছেন দায়িত্বশীল। (ক্বিয়ামতের দিন) তিনি স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন’। (বুখারী হা/৮৯৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। লায়স ইবনু সা‘দ (রাযি.) আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস (রহ.) বলেছেন, আমি একদা ইবনু শিহাব (রহ.)-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক (ইবনু হুকায়ম (রহ.) ইবনু শিহাব (রহ.)-এর নিকট লিখলেন, আপনি কী মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুমু‘আহর সালাত আদায় করব? রুযায়ক (রহ.) তখন সেখানে তাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযায়ক (রহ.) সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইবনু শিহাব (রহ.) তাঁকে জুমু‘আহ কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম (রহ.) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে। ইমাম* একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবার বর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদিম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫৬০০, ৭১৩৮, আধুনিক প্রকাশনী ৮৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

* ইমাম’ শব্দ রাষ্ট্রের কর্ণধার, যে কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক ও সালাতের ইমাম অর্থে ব্যবহৃত হয়।

(৩) মসজিদের ইমামগণ যেমন জাতির আমলগত সংস্কারের যিম্মাদার, তেমনি আক্বীদাগত সংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করারও পুরাপুরি দায়িত্বশীল। বাতিল আক্বীদা ও মতবাদকে খন্ডন করা এবং ভ্রান্ত চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা তাদের প্রধান দায়িত্ব। যদি আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ পরিপন্থী কোন আওয়ায উঠে অথবা রাসূল (ছাঃ)-এর রিসালাতের অবমাননা করা হয়, ছাহাবায়ে কেরামকে গালি দেয়া হয়, তাহলে এই ধরনের ভ্রান্ত চিন্তাধারা সম্পর্কে জাতিকে অবগত করা ইমামদের কর্তব্য।

রাষ্ট্রীয় ইমাম থেকে মসজিদের ইমাম

রাসুল সা. মুসলমানদের একক ইমাম বা নেতা। তিনি ছিলেন যেমন ধর্ম প্রচারক তেমনি ছিলেন রাষ্ট্র নায়ক। রাসুল সা. একই সাথে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার যেমন নেতৃত্ব দিতেন তেমনি তিনি মসজিদে সাহাবীদের নিয়ে সালাতের ইমামতিও করতেন। সেই অর্থে ইমামের দুইটি কাজ। যেমন,

(১) সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়া।

(২) সালাতের ইমামতি করা।

এই দায়িত্ব দুইটি রাসুল সা. এর পরবর্তী রেখে যাওয়া প্রতিনিধি সাহাবীগণ পালন করতেন। এভাবে দায়িত্ব পালন করতে করতে ইমামগণ পরবর্তীতে এসে ১ নং দায়িত্ব থেকে ছিটকে পড়ে বর্তমানে শুধু সালাতের ইমামতির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছেন।

পৃথিবীতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মুসলমানদের মধ্যে এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক দল উপদল সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক দলের একজন করে প্রধান ইমাম বা নেতা আছেন। মুসলিম রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। যথাঃ

(১) ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। এই দলের ইমামগণ ইসলামি হুকুমত বা খেলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবরচিত আইন বাতিল করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

(২) ইসলামি মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল। এই দলের ইমামগণ ইসলামি আইনের বাস্তবায়ন চায় না তবে ইসলামি অন্যান্য কর্মকান্ড কিংবা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডকে সমর্থন করে। এই দলের ইমামগণ সরাসরি ইসলামের বিরোধীতা করে না।

(৩) ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দল। এই দলের ইমামগণ ইসলামি আইনের ঘোরবিরোধী। তারা Secularism এ বিশ্বাসী।

ইসলামে যে উদ্দেশ্যে ইমাম শব্দটির উৎপত্তি সেই ইমাম এখন মসজিদের ভিতর বন্দী। তবে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের ইমামগণ যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের ক্ষেত্রেই ইমাম শব্দটি যথার্থ হবে। তারা একদিকে যেমন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাজে ইমামত বা নেতৃত্ব দিবেন তেমনি অন্যদিকে মসজিদের ইমামতিও করবেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় ৯০%  ‍ইমামগণ আজ ইসলামকে দাঁড়ি টুপির মধ্যে রেখে নামে মাত্র মুসলমান সেজে  ইসলামি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে ইহদি, খৃস্টান আর হিন্দুত্ববাদী আদর্শ বাস্তবায়নে ব্যস্ত।

কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা কাউকে ছাড় দিবেন না। প্রত্যেক অভিভাবক বা ইমামকে জিজ্ঞাসা করা হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

(১)তারপর সেই দিনের কথা মনে কর যেদিন আমি মানুষের প্রত্যেক দলকে তাদের নেতা সহকারে ডাক। সেদিন যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেওয়া হবে তারা নিজেদের কার্যকলাপ পাঠ করবে এবং তাদের ওপর সামান্যতম জুলুমও করা হবে না। (সূরা বনী ইসরাইল ৭১ নম্বর আয়াত)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৪৬১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮২৯,  তিরমিযি ১৭০৫,  আবু দাউদ ২৯২৮,  আহমদ ৪৪৮১, ৫১৪৮, ৫৮৩৫, ৫৮৬৭, ৫৯৯০, আল লুলু ওয়াল মারজান-১১৯৯। হাদিসের মানঃসহিহ হাদিস।

মূলত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মুসলিম রাষ্ট্রীয় ইমাম বা নেতাগণই ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকতে বিদেশী প্রভুদের খুশী রাখতে প্রকৃত ইসলামি ইমামদের উপর অপহরন, খুন, গুম, নির্যাতন ও কারাবন্দী করতে করতে ইমামগণ ইসলামি অনুশাসনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে আজ তারা মসজিদে বন্দী।

বর্তমান সমাজের ইমামগণ তাদের দায়িত্ব পালনে অসহায় কেনো?

যে ইমামদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ইসলামি আইনে সমাজ শাসন করার কথা সেই ইমামগণ আজ সমাজের আলোচিত সুদখোর, মদখোর, ঘুষখোর, দৃর্নীতিবাজ, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, যেনাকারী ও দাইউস সমাজপতির অধীনে যৎসামান্য বেতনে মসজিদের ইমামতি করে দিন অতিবাহিত করছেন।

ইমামগণ নবি-রাসুলগণের ওয়ারিশ হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দায়িত্ব থেকে তারা আজ বঞ্চিত। এর মূল কারণ হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন, অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আদর্শ ও নীতি গ্রহণ, ইসলামি শাসন ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকা ও মুনাফিক মুসলিম রাষ্ট্রীয় নেতা তৈরী হওয়া। বর্তমান সময়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মুনাফিক মুসলিম রাষ্ট্রীয় নেতাগণই ধর্মীয় ইমামদের রাষ্ট্রীয় শাসন কার্য থেকে বঞ্চিত করে মসজিদ কেন্দ্রিক ইমামে পরিনত করেছে।

আমাদের সমাজের মসজিদগুলো এখন রাজনৈতিক মসজিদে পরিনত হয়েছে। তথা যে পাড়ায় যে রাজনৈতিক দলের লোকের সংখ্যা বেশী সেই মসজিদে তাদের মতাদর্শের ইমাম নিয়োগ দিয়ে থাকে। যার ফলে দেখা যায়, একজন উচ্চ শিক্ষিত আলেম যিনি কুরআন বা হাদিসে হাফেজ, মুফতি বা মুহাদ্দিস কিংবা কোনো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়েও নিজেস্ব ক্ষমতায় ইসলামের কথা বলতে পারেন না। আমাদের দেশে প্রচলিত বাংলা খুৎবায়  ইমামগণ অনেকটা বাধ্য হয়েই ক্ষমতাশীনদের গুণগান গায়। এখানে ইমামদের নিজেস্ব কোনো স্বকীয়তা থাকে না।

মসজিদ কমিটিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি হয় মদখোর, না হয় সুদখোর, ঘুষখোর, যেনাকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এদের অধিকাংশই অনৈসলামিক দলের সমর্থক বা নেতা-কর্মী। অতএব সমাজের এইসব চরিত্রের সমাজপতি থাকতে সামান্য একজন বেতনভুক্ত ইমামের শাসন কাজ কিভাবে এরা মেনে নিবে?

রাসুল সা. ও সাহাবীগণের যুগে যে অর্থে ইমাম শব্দটির উৎপত্তি সেই অর্থ প্রয়োগ করতে হলে আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগ ইমামদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্পন করতে হবে। তাহলেই মসজিদ পর্যায়ের ইমামগণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ইমামদের পক্ষে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।

অন্যান্য ইমাম

আমরা একথা জানি যে, চার মাজহাবের চার ইমাম, আবার তাদের যারা ছাত্র তারাও ইমাম। কিয়ামতের পূর্বে আসবেন ইমাম মাহদী, তিনিও ইমাম। রাসুল সা. বলেছেন, কুরাইশ বংশ থেকে বারোজন ইমাম আসবেন, তারাও ইমাম।

আমাদের দেশে ভন্ড কিছু পির আছে, তারাও নাকি ইমাম। যাই হোক, প্রত্যেক দলেরই ইমাম আছে। আর এইসব ইমামগণ কিয়ামতে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্যে জিজ্ঞাসিত হবেন।

আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ‘ইমামতে সুগরা’

সালাতের ইমামতি করার সর্বাধিক বেশী যোগ্য কে?

ইমামতির সবচেয়ে বেশী যোগ্য তিনি, যিনি কুরআনের হাফেয; যিনি (তাজবীদসহ) ভালো কুরআন পড়তে পারেন। তাজবীদ ছাড়া হাফেয ইমামতির যোগ্য নয়। পূর্ণ হাফেয না হলেও যাঁর পড়া ভালো এবং বেশী কুরআন মুখস্থ আছে তিনিই ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “তিন ব্যক্তি হলে ওদের মধ্যে একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির বেশী হকদার সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে।” (মুসলিম, মিশকাত ১১১৮নং)

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা যখন তিনজন হবে; সালাত  আদায় করার জন্যে একজনকে ইমাম বানাবে এবং ইমামতির জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত যে কুরআন সবচেয়ে ভাল পড়তে পারেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১১৮, সহীহ মুসলিম ৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন, “লোকেদের ইমাম সেই ব্যক্তি হবে যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে। পড়াতে সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যে বেশী সুন্নাহ্‌ জানে, সুন্নাহর জ্ঞান সকলের সমান থাকলে ওদের মধ্যে যে সবার আগে হিজরত করেছে, হিজরতেও সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমাম হবে। আর কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং না কেউ কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে বসে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত ১১১৭নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ জাতির ইমামতি এমন লোক করবেন, যিনি আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে উত্তম পড়তে পারেন। উপস্থিতদের মাঝে যদি সকলেই উত্তম ক্বারী হন তাহলে ইমামতি করবেন ঐ লোক যিনি সুন্নাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জানেন। যদি সুন্নাতের ব্যাপারে সকলে সমপর্যায়ের জ্ঞানী হন তবে যে সবার আগে হিজরত করেছেন। হিজরত করায়ও যদি সবাই এক সমান হন। তাহলে ইমামাত করবেন যিনি বয়সে সকলের চেয়ে বড়। আর কোন লোক অন্য লোকের ক্ষমতাসীন এলাকায় গিয়ে ইমামতি করবে না এবং কেউ কোন বাড়ী গিয়ে যেন অনুমতি ছাড়া বাড়ীওয়ালার আসনে না বসে। (মুসলিম; তাঁর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘আর কোন লোক অন্য লোকের গৃহে গিয়ে [অনুমতি ব্যতীত] ইমামতি করবে না।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১১৭, সহীহ মুসলিম ৬৭৩, আবূ দাঊদ ৫৮২, আত্ তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, ইবনু মাজাহ্ ৯৮০, আহমাদ ১৭০৬৩, সহীহ আল জামি ৩১০৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, সাধারণ নামাযীর মত ইমামতির জন্যও সুন্নতী লেবাস উত্তম। তবে মাথায় পাগড়ী, রুমাল বা টুপী হওয়া কিংবা মাথা ঢাকা ইমামতির জন্য শর্ত, ফরয বা জরুরী নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৮৬, ৩৮৯) ।

সুতরাং যার মাথা ঢাকা আছে তার থেকে যার মাথা ঢাকা নেই, সে ভালো কুরআন পড়তে পারলে সেই ইমামতির হ্‌কদার।

যাদের ইমামতি বৈধ ও শুদ্ধ

এমন কতক লোক আছে যাদেরকে আপাত:দৃষ্টিতে ইমামতির অযোগ্য মনে হলেও প্রকৃতদৃষ্টিতে তাদের ইমামতি বৈধ ও শুদ্ধ। অবশ্য শুরুতে একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি মনে রাখলে এ প্রসঙ্গে অনেক ভুল বুঝাবুঝি দূর হয়ে যাবে। যে ব্যক্তির নামায শুদ্ধ, তার ইমামতিও শুদ্ধ এবং তার পিছনে মুক্তাদীর নামাযও শুদ্ধ। আর যার নামায শুদ্ধ নয়, তার ইমামতিও শুদ্ধ নয় এবং তার পিছনে মুক্তাদীর নামাযও শুদ্ধ নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/৩১৬-৩১৭)।

যারা ইমাম হওয়ার যোগ্য নয় বলে ধারণা হতে পারে অথচ ইমামতির গুণাবলী তার মধ্যে থাকলে তারা ইমামতি করার যোগ্য হবেনঃ

(১)  অন্ধঃ

অন্ধ মানুষের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সন্দেহ্‌ থাকলেও সব অন্ধ সমান নয়। সুতরাং যোগ্যতা থাকলে সে ইমাম হতে পারে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উম্মে মাকতূমকে দু-দু বার মদ্বীনার ইমাম বানিয়েছিলেন এবং তিনি লোকেদের নামাযের ইমামতি করেছেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, মিশকাত ১১২১নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাক্‌তুমকে সালাত  আদায়ের জন্যে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১২১, সহীহ  আবূ দাঊদ ৫৯৫, সুনানুস্ সুগরা লিল বায়হাক্বী ৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(২)  ক্রীতদাসঃ

ক্রীতদাস, যুদ্ধবন্দী দাস, মুক্তদাস, সাধারণ দাস, ভৃত্য, চাকর, বা রাখাল যোগ্য হলে তার ইমামতি শুদ্ধ এবং এমন আতরাফদের পশ্চাতে আশরাফদেরও নামায শুদ্ধ। মহানবী (সাঃ) যখন মদ্বীনায় প্রথম প্রথম হিজরত করে এলেন, তখন মুহাজেরীনরা কুবার নিকটবর্তী উসবাহ্‌ নামক এক জায়গায় অবস্থান শুরু করলেন। সেখানে আবূ হুযাইফা (রাঃ)-এর মুক্ত করা দাস সালেম (রাঃ) লোকেদের ইমামতি করতেন। তাঁর সবার চাইতে বেশী কুরআন মুখস্থ ছিল। অথচ তাঁর পশ্চাতে মুক্তাদীদের মধ্যে হযরত উমার এবং আবূ সালামাও ছিলেন। (বুখারী, ৬৯২, আবূদাঊদ, সুনান ৫৮৮নং, মিশকাত ১১২৭নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় প্রথম গমনকারী মুহাজিরগণ যখন আসলেন, আবূ হুযায়ফার আযাদ গোলাম সালিম তাদের সালাতের ইমামতি করতেন। মুকতাদীদের মাঝে ‘উমার (রাঃ) আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুল আসাদও শামিল থাকতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১২৭, সহীহ  বুখারী ৬৯২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তদনুরুপ হযরত আয়েশা (রাঃ) এর মুক্ত করা দাস আবূ আম্‌র নামাযের ইমামতি করতেন। (মুসনাদ ইমাম শাফেয়ী) তাঁর যাকওয়ান নামক আর এক মুক্ত করা দাসও ইমামতি করতেন। (মালেক, মুঅত্তা, ইবনে আবী শাইবা ৭২১৫, ৭২১৬, ৭২১৭ নং)।

(৩) মুসাফিরঃ

মুসাফিরের জন্য সফরে নামায জমা ও কসর করা সুন্নত হলেও এবং সে ইমামতি করার সময় নামায কসর করে পড়লেও তার পিছনে গৃহ্‌বাসীদের নামায শুদ্ধ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে গৃহ্‌বাসীরা ঐ মুসাফির ইমামের সালাম ফিরার পর উঠে বাকী নামায পূরণ করে নেবে। অর্থাৎ, ইমাম ও মুক্তাদী মিলে ২ রাকআত হয়ে গেলে মুক্তাদীরা ইমামের সালাম ফিরার পর উঠে একা একা আরো বাকী ২ রাকআত পড়ে নেবে। আর সে নামায জমা করে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা তা করবে না।

(৪)  দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তিঃ

দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তির ইমামতি শুদ্ধ। তবে মুক্তাদীরাও (দাঁড়ানোর সময়) বসে নামায পড়বে। মহানবী (সাঃ) বলেন, “ইমাম এ জন্যই বানানো হয়েছে যে, তার অনুসরণ করা হবে। সুতরাং --- সে যখন দাঁড়িয়ে নামায পড়বে, তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে নামায পড় এবং যখন বসে নামায পড়বে তখন তোমরাও বসে নামায পড়। আর সে বসে থাকলে তোমরা দাঁড়াও না; যেমন পারস্যর লোকেরা তাদের সম্মানার্হ ব্যক্তিদের জন্য করে থাকে।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, জামে ২৩৫৬নং)।

কিন্তু পরবর্তীতে তিনি বসে নামায পড়লে তাঁর পশ্চাতে সাহাবীগণ দাঁড়িয়েই নামায পড়েছেন। এর ফলে উলামাগণ বলেন যে, ইমাম সাময়িক অসুবিধার কারণে বসে নামায পড়লে মুক্তাদীরাও বসে নামায পড়বে। নচেৎ, শেষ জীবনে বার্ধক্যজনিত কারণে বসে নামায পড়লে মুক্তাদীরা (দাঁড়ানোর সময়) দাঁড়িয়েই নামায পড়বে।

বলা বাহুল্য, তাঁর পূর্বেকার আমল মনসূখ নয়। কারণ, তাঁর আমল দ্বারা তাঁর আদেশ মনসূখ হয় না। তাছাড়া তাঁর পরবর্তীতে সাহাবাগণও ইমাম বসে নামায পড়লে বসেই নামায পড়েছেন। অবশ্য ঐ ক্ষেত্রে বসে নামায পড়া ওয়াজেব না বলে মুস্তাহাব বলা যেতে পারে। (মিশকাত ১১৩৯নং, ১/৩৫৭ আলবানীর টীকা সহ্‌ দ্র:)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ভ্রমণের সময় ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনি নীচে পড়ে গেলেন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরের চামড়া উঠে গিয়ে চরম ব্যথা পেলেন (দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারছিলেন না)। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে বসে আমাদেরকে (পাঁচ বেলা সালাতের) কোন এক বেলা সালাত  আদায় করালেন। আমরাও তার পেছনে বসে বসেই সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ করে তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ইমাম এ জন্যেই নির্ধারিত করা হয়েছে যেন তোমরা তাঁর অনুকরণ করো। তাই ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করালে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। ইমাম যখন রুকূ‘ করবে, তোমরাও রুকূ‘ করবে। ইমাম রুকূ‘ হতে উঠলে তোমরাও রুকূ‘ হতে উঠবে। ইমাম ‘সামি‘আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ বললে, তোমরা ‘রব্বানা- লাকাল হামদু’ বলবে। আর যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করাবে, তোমরা সব মুক্তাদী বসে সালাত আদায় করবে।

ইমাম হুমায়দী (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম বসে সালাত আদায় করালে’ তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ নির্দেশ, তার প্রথম অসুস্থের সময়ের নির্দেশ ছিল। পরে মৃত্যুশয্যায় (ইন্তিকালের একদিন আগে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করিয়েছেন। মুক্তাদীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন। তিনি তাদেরকে বসে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেননি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ শেষ ‘আমলের ওপরই ‘আমল করা হয়। এগুলো হলো বুখারীর ভাষা। এর ওপর ইমাম মুসলিম একমত পোষণ করেছেন। মুসলিমে আরো একটু বেশী বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইমামের বিপরীত কোন ‘আমল করো না। ইমাম সিজদা্ করলে তোমরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৩৯, সহীহ  বুখারী ৬৮৯, ৭৩৩, মুসলিম ৪১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৫) তায়াম্মুমকারীঃ

যে ব্যক্তি ওযূ করতে না পেরে তায়াম্মুম করে নামায পড়ে তার ইমামতি এবং তার পশ্চাতে যারা ওযূ করে নামায পড়ে তাদের নামায শুদ্ধ।

হযরত আম্‌র বিন আস (রাঃ) বলেন, যাতুস সালাসিল যুদ্ধ-সফরে এক শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হল। আমার ভয় হল যে, যদি গোসল করি তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করে সঙ্গীদেরকে নিয়ে (ইমাম হয়ে) ফজরের নামায পড়লাম। আমার সঙ্গীরা একথা নবী (সাঃ)-র নিকটে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, “হে আম্‌র! তুমি নাপাক অবস্থায় তোমার সঙ্গীদের ইমামতি করেছ?” আমি গোসল না করার কারণ তাঁকে বললাম। আরো বললাম যে, আল্লাহ তাআলার এ বাণীও আমি শুনেছি, তিনি বলেন, “তোমরা আত্মহ্‌ত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড় দয়াশীল।” (কুরআন মাজীদ ৪/২৯)।

একথা শুনে তিনি হাসলেন এবং আর কিছুই বললেন না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৩৩৪, আহমাদ (৪/২০৩, ২০৪), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/২৫৫), হাকিম (১/১৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬)  কেবল মহিলাদের জন্য মহিলাঃ

মহিলা মহিলা নামাযীদের ইমামতি করতে পারে। উম্মে অরাকাহ্‌ বিন নাওফাল (রাঃ) মহানবী (সাঃ)-এর নির্দেশমতে তাঁর পরিবারের মহিলাদের ইমামতি করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৫৯১-৫৯২নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু ওয়ারক্বাহ বিনতু নাওফাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বদরের যুদ্ধে গেলেন তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমি পীড়িত-আহতদের সেবা করব। হয়তো মহান আল্লাহ আমাকেও শাহাদাতের মর্যাদা দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান কর। মহান আল্লাহ তোমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন। বর্ণনাকারী বলেন, ঐদিন থেকে উক্ত মহিলার নাম হয়ে গেল শাহীদাহ্। তিনি কুরআন মাজীদ ভাল পড়তেন।

সেজন্য তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তার ঘরে একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগের অনুমতি দিলেন। তিনি একটি দাস ও একটি বোবা দাসীকে তার মৃত্যুর পর আযাদ করে দেয়ার চুক্তি করেছিলেন। তারা (দাস ও দাসী) দু’জন রাতে উঠে তার নিকট গিয়ে তাঁর চাদর দিয়ে তাকে চেপে ধরে হত্যা করে উভয়ে পালিয়ে যায়। প্রত্যুষে এটা ‘উমার (রাঃ) জানতে পেরে লোকদের জানিয়ে দিলেন, এ দু’টি গোলাম-বাঁদী সম্পর্কে কারো জানা থাকলে বা তাদেরকে কেউ দেখে থাকলে, তাদের যেন (ধরে) নিয়ে আসে। (তারা গ্রেফতার হলে) তাদেরকে নির্দেশ মোতাবেক শূলে চড়ানো হয়। মদীনাতে তাদের দু’জনকেই সর্বপ্রথম শূলে চড়ানো হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৯১-৯২, আহমাদ (৬/৪০৫), বায়হাক্বী ‘দালায়িলিন নবুয়্যাহ’ (৬/৩৮২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অবশ্য এ ক্ষেত্রে মহিলা ইমাম মহিলাদের কাতার ছেড়ে পুরুষের মত সামনে একাকিনী দাঁড়াবে না। বরং কাতারের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবে। (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, মুহাল্লা ৩/১৭১-১৭৩)।

আশেপাশে বেগানা পুরুষ না থাকলে সশব্দে তকবীর ও কিরাআত পড়বে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩০/১১৩)।

(৭)  কেবল মহিলাদের জন্য পুরুষঃ

কোন পুরুষ কেবল মহিলা জামাআতের ইমামতি করতে পারে। তবে শর্ত হল, মহিলা যেন এগানা হয়, নচেৎ বেগানা হলে যেন একা না হয়, পরিপূর্ণ পর্দার সাথে একাধিক থাকে এবং কোন প্রকার ফিতনার ভয় না থাকে অথবা তার সঙ্গে যেন কোন এগানা মহিলা বা অন্য পুরুষ থাকে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৫২)।

একদা ক্বারী সাহাবী হযরত উবাই বিন কা’ব (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর কাছে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! গতরাত্রে আমি একটি (অস্বাভাবিক) কাজ করেছি।’ তিনি বললেন, “সেটা কি?” উবাই বললেন, ‘কিছু মহিলা আমার ঘরে জমা হয়ে বলল, আপনি (ভালো ও বেশী) কুরআন পড়তে পারেন, আমরা পারি না। অতএব আপনি আজ আমাদের ইমামতি করেন। তাদের এই অনুরোধে আমি তাদেরকে নিয়ে ৮ রাকআত এবং বিতর পড়েছি।’ এ কথা শুনে মহানবী (সাঃ) চুপ থাকলেন। অর্থাৎ তাঁর এই নীরব থাকা এ ব্যাপারে তাঁর মৌনসম্মতি হয়ে গেল। (ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, আবূ য়্যা’লা)।

(৮) নাবালক কিশোরঃ

জ্ঞানসম্পন্ন নাবালক কিশোরের জন্য যদিও নামায ফরয নয়, তবুও বড়দের জন্য ফরয-নফল সব নামাযেই তার ইমামতি শুদ্ধ।

আম্‌র বিন সালামাহ্‌ ৬-৭ বছর বয়সে লোকেদের ইমামতি করেছেন। আর তিনি ছিলেন সকলের মধ্যে বেশী কুরআনের হাফেয। (বুখারী ৪৩০২, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ৫৮৫নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আমর ইবনু সালামাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। আইয়ুব (রহ.) বলেছেন, আবূ কিলাবাহ আমাকে বললেন, তুমি ‘আমর ইবনু সালামাহ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস কর না কেন? আবূ কিলাবাহ (রহ.) বলেন, অতঃপর আমি ‘আমর ইবনু সালামাহর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে (তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমরা লোকজনের চলার পথের পাশে একটি ঝরণার কাছে বাস করতাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা চলাচল করত। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করতাম, (মক্কার) লোকজনের অবস্থা কী? মক্কার লোকজনের অবস্থা কী? আর ঐ লোকটির কী অবস্থা? তারা বলত, ঐ ব্যক্তি দাবী করে যে, আল্লাহ তাঁকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন, তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন। (কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বলত) তাঁর কাছে আল্লাহ এ রকম ওয়াহী অবতীর্ণ করেছেন। (‘আমর ইবনু সালামা’হ বলেন) তখন আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে নিতাম যেন তা আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকত। সমগ্র আরব ইসলাম গ্রহণের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাঁকে তার নিজ গোত্রের লোকেদের সঙ্গে (আগে) বোঝাপড়া করতে দাও। অতঃপর তিনি যদি তাদের উপর বিজয়ী হন তবে তিনি সত্য নবী। এরপর মক্কা বিজয়ের ঘটনা ঘটল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি সত্য নবীর নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমরা অমুক সালাত এবং অমুক সময় অমুক সালাত আদায় করবে। এভাবে সালাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুরআন অধিক জানে সে সালাতের ইমামাত করবে। সবাই এ রকম একজন লোক খুঁজলেন। কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন জানা একজনকেও পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের থেকে কুরআন শিখেছিলাম। কাজেই সকলে আমাকেই তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয় কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাদর ছিল, যখন আমি সিজদা্য় যেতাম তখন চাদরটি আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। তখন গোত্রের জনৈকা মহিলা বলল, তোমরা আমাদের দৃষ্টি থেকে তোমাদের ক্বারীর নিতম্ব আবৃত করে দাও না কেন? তারা কাপড় খরিদ করে আমাকে একটি জামা তৈরি করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত খুশি হয়েছিলাম যে, আর কিছুতে এত খুশি হইনি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৩০২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১২৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৯) জারজঃ

ব্যভিচারজাত সন্তানের কোন দোষ নেই। তার মা-বাপের দোষ তার ঘাড়ে আসতে পারে না। সুতরাং অন্যান্য দিকে যোগ্যতা থাকলে তার ইমামতি এবং তার পশ্চাতে নামায শুদ্ধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৪৭-১৪৮)।

(১০)  যে নফল বা ভিন্ন ফরয নামায পড়ছেঃ

যে নফল নামায পড়ছে তার পিছনে ফরয নামায শুদ্ধ; যেমন তারাবীহ্‌র জামাআতে এশার নামায, অথবা আসরের জামাআতে যোহরের কাযা নামায অথবা কাযা নামায আদায়কারীর পিছনে ফরয নামায আদায় করা শুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন হলেও তা কোন দোষের নয়। যেহেতু জরুরী হল বাহ্যিক কর্মাবলীতে ইমামের অনুসরণ করা।

হযরত মুআয বিন জাবাল মহানবী (সাঃ)-এর সাথে এশার নামায পড়তেন। অতঃপর ফিরে গিয়ে নিজের গোত্রের লোকেদের ঐ নামাযই পড়াতেন। এক বর্ণনায় আছে যে, এ নামায তাঁর নফল হত এবং লোকেদের হত ফরয। (বুখারী, মুসলিম, শাফেয়ী, দারাক্বুত্বনী, সুনান, বায়হাকী ৩/৮৬, মিশকাত ১১৫০-১১৫১নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত  আদায় করতেন। এরপর নিজের গোত্রে এসে তাদের সালাত আদায় করাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৫০, সহীহ  বুখারী ৭১১, মুসলিম ৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১)  সম্মানিত থাকতে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানিত লোকের ইমামতিঃ

সম্মানিত থাকতে অপেক্ষাকৃত কম সম্মানিত ব্যক্তির ইমামতি বৈধ। একদা আব্দুর রহ্‌মান বিন আওফের পশ্চাতে মহানবী (সাঃ) নামায পড়েছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ..... মুগীরাহ ইবনু শু'বাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুগীরাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের সালাতের আগে পায়খানায় গেলেন এবং আমি তার সাথে পানির পাত্র নিয়ে গেলাম, তিনি যখন পায়খানা থেকে ফিরে আমার কাছে আসলেন, আমি তার উভয় হাতে পাত্র থেকে পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি তার উভয় হাত তিনবার ধুলেন। অতঃপর তিনি মুখমণ্ডল ধুলেন। অতঃপর জুব্বার হাতা উপরের দিকে উঠিয়ে তার মধ্য থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু জুব্বার হাতা অপ্রশস্ত থাকায় তা সম্ভব হলো না। তিনি নিজের উভয় হাত জুব্বার ভিতরে টেনে নিয়ে তা জুব্বার নীচের দিক দিয়ে বাইরে বের করলেন। অতঃপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। অতঃপর মোজার উপর মাসাহ করলেন। অতঃপর তিনি রওনা হলেন।

মুগীরাহ (রাযিঃ) বলেন, আমিও তার সাথে সাথে অগ্রসর হলাম। আমরা পৌছে দেখলাম, লোকেরা আবদুর রহমান ইবনু আওফকে সামনে দিয়ে (তাকে ইমাম বানিয়ে) সালাত আদায় করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাকাআত পেলেন। তা তিনি তাদের সাথে জামাআতে আদায় করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাযিঃ) সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। এতে মুসলিমরা ভয় পেয়ে গেলেন। তারা অত্যধিক পরিমাণে তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম শেষ করে তাদের দিকে মুখ করে বললেনঃ তোমরা সঠিক কাজ করেছ। তিনি খুশীর সাথে বললেনঃ তোমরা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৩৮, ৮৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যাদের ইমামতি শুদ্ধ নয়

(১) পুরুষের জন্য মহিলাঃ

পুরুষের জন্য মহিলার ইমামতি বৈধ ও শুদ্ধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সে জাতি কোন দিন সফল হবে না, যে জাতি তাদের কর্মভার একজন মহিলাকে সমর্পণ করবে।”

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা দিয়ে আল্লাহ্ জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (তা হল) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭০৯৯, ৪৪২৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২২৬২, ইরওয়া ২৪৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬১৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বলা বাহুল্য, মহিলা যত বড়ই যোগ্য হোক, মুক্তাদী নিজের ছেলে হোক অথবা অন্য কেউ হোক, স্বামী জাহেল এবং স্ত্রী কুরআনের হাফেয হোক তবুও কোন ক্ষেত্রেই মহিলা পুরুষের ইমামতি করতে পারে না। এটি পুরুষের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৮২)।

আল্লাহ বলেন, পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল। (সুরা নিসাঃ আয়াত- ৩৪)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ১১৫৯, ইবনু মাজাহ ১৮৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতএব নারীরা কখনই পুরুষের উপর কর্তৃত্বশীল হবে না। তারা নামাজ থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় যেকোনো বিষয়ে পুরুষের ইমাম বা নেতা হতে পারবে না।

(২) মুশরিক ও বিদআতীঃ

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন ইবাদতে অন্য কোন সৃষ্টিকে শরীক করে, যেমন মাযার পূজা করে, মাযারে গিয়ে সিজদা, নযর-নিয়ায, মানত, কুরবানী, তওয়াফ প্রভৃতি নিবেদন করে, সেখানে সুখণ্ডসমৃদ্ধি বা সন্তান চায়, সাহায্য প্রার্থনা করে, যে ব্যক্তি গায়বী (অদৃশ্যের খবর জানার) দাবী করে ও লোকেরহাত বা ভাগ্য-ভবিষ্যৎ বলে দেয়, যে (কোন পশু বা পাখীর চামড়া, হাড়, লোম বা পালক দিয়ে, কোন গাছপালার শিকড় বা ফুল-পাতা দিয়ে, কারো কাপড়ের কোন অংশ দিয়ে, ফিরিশ্তা , জিন, নবী, সাহাবী, ওলী বা শয়তানের নাম লিখে অথবা বিভিন্ন সংখ্যার নকশা বানিয়ে, অথবা তেলেসমাতি বিভিন্ন কারসাজি করে, নোংরা ও নাপাক কোন জিনিস দিয়ে) শির্কী তাবীয লিখে, যে ব্যক্তি দুই জনের মাঝে (বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে) প্রেম বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য তাবীয করে, যোগ বা যাদু করে, এ শ্রেণীর ইমামের নামায শুদ্ধ নয়, ইমামতি শুদ্ধ নয় এবং তার পশ্চাতে নামাযও শুদ্ধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৯, ২২/৮২, ২৪/৭৮, ৮৯, ২৬/৯৭, ২৮/৫৫)।

তদনুরুপ বিদআতী যদি বিদআতে মুকাফফিরাহ্‌ বা এমন বিদআত করে যাতে মানুষ কাফের হয়ে যায়, তাহলে সে বিদআতীর পিছনে নামায শুদ্ধ নয়।

(৩) ফাসেকঃ

ফাসেক হল সেই ব্যক্তি, যে অবৈধ, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ফরয বা ওয়াজেব কাজ ত্যাগ করে; অর্থাৎ কাবীরা গুনাহ করে। যেমন, ধূমপান করে, বিড়ি-সিগারেট, জর্দা-তামাক প্রভৃতি মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে, অথবা সূদ বা ঘুস খায়, অথবা মিথ্যা বলে, অথবা (অবৈধ প্রেম) ব্যভিচার করে, অথবা দাড়ি চাঁছে বা (এক মুঠির কম) ছেঁটে ফেলে, অথবা মুশরিকদের যবেহ্‌ (হালাল মনে না করে) খায়, (হালাল মনে করে খেলে তার পিছনে নামায হবে না।) অথবা স্ত্রী-কন্যাকে বেপর্দা রেখে তাদের ব্যাপারে ঈর্ষাহীন হয়, অথবা মা-বাপকে দেখে না বা তাদেরকে ভাত দেয় না ইত্যাদি।

উক্ত সকল ব্যক্তি এবং তাদের অনুরুপ অন্যান্য ব্যক্তির পিছনে নামায মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। বিধায় তাকে ইমামরুপে নির্বাচন ও নিয়োগ করা বৈধ ও উচিৎ নয়।

কিন্তু যদি কোন কারণে বা চাপে পড়ে বাধ্য হয়েই তার পিছনে নামায পড়তেই হয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯০, ৩০০, ৬/২৫১, ১৫/৮০, ১৮/৯০, ১১১, ১৯/১৫২, ২২/৭৫, ৭৭, ৯২, ২৪/৭৮)।

সাহাবাগণের যামানায় সাহাবাগণ ফাসেকের পিছনে নামায পড়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হাজ্জাজের পিছনে নামায পড়েছেন। (বুখারী)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মারওয়ানের পিছনে নামায পড়েছেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান)

আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহ.) ‘উবাইদুল্লাহ্ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাযি.) অবরুদ্ধ থাকার সময় তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আসলে আপনিই জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ কী তা নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামাত করছে বিদ্রোহীদের নেতা। ফলে আমরা গুনাহগার হবার ভয় করছি। তিনি বললেন, মানুষের ‘আমলের মধ্যে সালাতই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে অংশ নিবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মন্দ কাজ হতে বেঁচে থাকবে।

যুবাইদী (রহ.) বর্ণনা করেন যে, যুহরী (রহ.) বলেছেন, যারা ইচ্ছে করে হিজড়া সাজে, তাদের পিছনে বিশেষ জরুরী ছাড়া সালাত আদায় করা উচিত বলে মনে করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪)  ইমামতির বিনিময়ে অর্থগ্রহণকারী ব্যক্তিঃ

ইমামতিকে যে অর্থকরী পেশা মনে করে ইমামতি করে; অর্থাৎ, কেবল পয়সার ধান্দায় ইমামতি করে, এমন ইমামের পশ্চাতে নামায মাকরুহ।

আবূ দাঊদ বলেন, (ইমাম) আহমাদ এমন ইমামের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন, যে বলে, ‘আমি এত এত (টাকার) বিনিময়ে রমযানে তোমাদের ইমামতি করব।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই। কে এর পেছনে নামায পড়বে?’ (মারা: ৯৯পৃ:)।

প্রকাশ থাকে যে, ইমামতির জন্য সৌজন্য সহকারে ইমামকে বেতন, ভাতা বা বিনিময় দেওয়া মুক্তাদীদের কর্তব্য। ইমামের উচিৎ, কোন চুক্তি না করা; বরং মুক্তাদীদের বিবেকের উপর যা পায় তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ইমামতির দায়িত্ব পালন করা। পক্ষান্তরে জামাআতের উচিৎ, ইমামের এই দ্বীনদারীকে সস্তার সুযোগরুপে ব্যবহার না করা। বরং বিবেক, ন্যায্য ও উচিৎ মত তাঁর কালাতিপাতের ব্যবস্থা করে দেওয়া। যেমন উচিৎ নয় এবং আদৌ উচিৎ নয়, ইমাম সাহেবকে জামাআতের ‘কেনা গোলাম’ মনে করা।

(৫)  ক্বিরাআত ভুল যারঃ

যে কুরআন পড়তে এমন ভুল পড়ে, যাতে মানে বদলে যায়, তার ইমামতি ও তার পিছনে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে তার নামায শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৬৯, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২০/১৪৮)।

বলা বাহুল্য, ভুল ক্বিরাআতকারীর পিছনে ক্বারীর নামায শুদ্ধ নয়। তবে অক্বারীর নামায হয়ে যাবে। অবশ্য যদি কোন ক্বারী ভুল ক্বিরাআতকারীর পিছনে অজান্তে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে নেয়, তাহলে তার নামায হয়ে যাবে। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১২১পৃ:)।

সুতরাং যে সকল মসজিদে সস্তা দরে অক্বারী ইমাম রাখা হয়, সে সকল গ্রাম শহরের ক্বারীদের (যারা ইমাম অপেক্ষা ভালো কুরআন পড়তে পারে তাদের) নামাযের অবস্থা কি হবে তা মসজিদের মতওয়াল্লীদেরকে ভেবে দেখা দরকার।

(৬) যাকে মুক্তাদীরা অপছন্দ করেঃ

চরিত্রগত বা শিক্ষাগত কোন কারণে মুক্তাদীরা ইমামকে অপছন্দ করলে ইমামের নামায আল্লাহর দরবারে কবুল নয়। সুতরাং জেনেশুনে তার ইমামতি করা বৈধ নয়।

মহানবী (সাঃ) বলেন, আমর ইবনুল হারিস ইবনু মুস্তালিক (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কথিত আছে, দুই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে ভয়াবহ শাস্তি হবেঃ যে নারী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করে এবং কোন গোত্রের ইমাম যাকে তারা অপছন্দ করে। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির নামায তাদের কান ডিঙ্গায় না (কবুল হয় না)। পলায়নকারী দাস যে পর্যন্ত তার মালিকের নিকটে ফিরে না আসে; যে মহিলা তার স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ইমামকে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১২২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৬০,  সহীহ আত্ তারগীব ৪৮৭, সহীহ আল জামি ৩০৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য ব্যক্তিগত কোন কারণে কেউ কেউ ইমামকে অপছন্দ করলে, দোষ নেই অথচ তাকে খামাখা কেউ অপছন্দ করলে অথবা বেশী সংখ্যক লোক পছন্দ এবং অল্প সংখ্যক লোক অপছন্দ করলে কারো কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য ক্ষতি তার হয়, যে একজন নির্দোষ মানুষকে খামাখা অপছন্দ করে। তবুও জ্ঞানী ইমামের উচিৎ, যে জামাআতের অধিকাংশ লোক তাকে অপছন্দ করে, সে জামাআতের ইমামতি ত্যাগ করা এবং তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি না করা।

(৭) সুন্নাহ্‌ত্যাগীঃ

যে মানুষ সুন্নাহর পাবন্দ নয়; সুন্নত নামায-রোযা ইত্যাদি ত্যাগ করে, নিশ্চয় সে মানুষ পরহেযগার ও ভালো লোক নয়। তবে সে যে পাপী তা কেউবলতে পারে না। অতএব তার পিছনে নামায পড়তে কোন দোষ নেই। তদনুরুপ কোন বিতর্ক থাকার ফলে বা কোন সন্দেহের কারণে কেউ কোন সুন্নাহ্‌ ত্যাগ করলে; যেমন বুকের উপরহাত না বাঁধলে, রুকূর আগে-পরে রফ্‌য়ে ইয়াদাইন না করলে বা জোরে আমীন না বললেও তার পিছনে নামায পড়তে কোন দোষ নেই। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২৫/৪৬)।

(৮)  পেশাব-ঝরা রোগীঃ

যে ব্যক্তির সর্বদা পেশাব ঝরার রোগ আছে সে ব্যক্তির ইমামতি শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৯৭)।

(৯) বোবাঃ

বোবার পিছনে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ। কিন্তু তাকে ইমাম করা যাবে না। যেহেতু সে তকবীর শুনাতে ও জেহরী নামাযে ক্বিরাআত করতে অক্ষম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩২০)।

(১০)  জলদিবাজঃ

যে ব্যক্তি ঠকাঠক কাকের দানা খাওয়ার মত নামায পড়ে এবং পশ্চাতে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করতে সক্ষম হয় না, রুকূ ও সিজদা থেকে উঠে পিঠ সোজা করে না, তার নামায এবং তার পশ্চাতে মুক্তাদীদেরও নামায হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৭)।

(১১) বেওযূ ব্যক্তিঃ

কোন ইমাম নাপাক বা বেওযূ অবস্থায় নামায পড়লে এবং সালাম ফিরার পর তা জানতে পারলে কেবল তার নামায বাতিল হবে এবং মুক্তাদীদের নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। কেবল ইমামই ঐ নামায পুনরায় পড়বে, মুক্তাদীরা নয়। (আহ্‌কামুল ইমামাতি অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্‌সিন আল-মুনীফ ১৪৭পৃ:)।

জেনেশুনে কোন বেওযূর পিছনে নামায হবে না।

(১২) রেডিও-টিভি কিংবা কোনো মসজিদে মাইকে ইমামতি করার শব্দ শুনে তার অনুসরন করা বৈধ নয়ঃ

কোন পুরুষ অথবা মহিলা, সুস্থ অথবা অসুস্থ, ওজরে অথবা বিনা ওজরে রেডিও বা টিভির পিছনে দাঁড়িয়ে সম্প্রচারিত কোন মসজিদের ফরয অথবা নফল, জুমুআহ অথবা অন্য যে কোন নামাযে তার ইমামের অনুসরণ করা বৈধ নয়। যদিও তাদের বাসা উক্ত মসজিদের পাশে হোক অথবা সামনে, উপরে হোক অথবা পিছনে। কোন অবস্থাতেই মসজিদে হাজির না হয়ে দূর থেকে কেবল শব্দ অথবা শব্দ ও ছবির অনুকরণ করে জামাআত পাওয়া যায় না। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১৭৩পৃ:)।

ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান ও নিয়ম

মুক্তাদীর সংখ্যা হিসাবে ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়ানোর নিয়ম-পদ্ধতি বিভিন্ন রকম।

(১) ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী (পুরুষ বা শিশু) হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বাঁয়ে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পিছনে আগাপিছা হয়ে দাঁড়াবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে মহানবী (সাঃ) নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। (বুখারী ৬৯৭নং) ।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাযি.)-এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ১১৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্য যে, একক মুক্তাদীর ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে নামায শেষ করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭৫, সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১১১পৃ:)।

(২) মুক্তাদী ২ জন বা তার বেশী (পুরুষ) হলে ইমামের পশ্চাতে কাতার বাঁধবে।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার জন্যে দাঁড়ালেন। আমি এসে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পেছন দিয়ে আমার ডান হাত ধরলেন। (পেছন দিয়ে টেনে এনেই) আমাকে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তারপর জাব্বার ইবনু সাখর আসলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দু’জনের হাত একসাথে ধরলেন। আমাদেরকে (নিজ নিজ স্থান হতে) সরিয়ে এনে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে দিলেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৭, সহীহ মুসলিম ৩০১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, দুই জন মুক্তাদী যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭০) নামায হয়ে যাবে, কারণ ইবনে মাসঊদ আলক্বামাহ্‌ ও আসওয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন এবং তিনি নবী (সাঃ)-কে ঐরুপ দাঁড়াতে দেখেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৫৩৮নং)।

 অবশ্য মহানবী (সাঃ)-এর সাধারণ সুন্নাহ্‌ হল, তিন জন হলে একজন সামনে ইমাম এবং দুই জনের পিছনে কাতার বাঁধা। পক্ষান্তরে আগে-পিছে জায়গা না থাকলে তো এক সারিতে দাঁড়াতে বাধ্যই হবে।

(৩) মুক্তাদী একজন মহিলা হলে (সে নিজের স্ত্রী হলেও) ইমাম (স্বামীর) পাশাপাশি বরাবর না দাঁড়িয়ে তার পিছনে দাঁড়াবে। (আদাবুয যিফাফ, আলবানী ৯৬পৃ: দ্র:)।

(৪) একজন পুরুষ ইমাম, একজন পুরুষ মুক্তাদি ও একজন মহিলা মুক্তাদি হলে-আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাঁর ও তাদের মধ্যকার একজন মহিলার ইমামতি করলেন। তিনি তাঁকে তাঁর ডান পাশে এবং ঐ মহিলাকে পেছনে দাঁড় করালেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ।

(৫) একজন পুরুষ ইমাম, একজন পুরুষ মুক্তাদি ও ততোধিক মহিলা মুক্তাদি হলে-

আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে, তার মা ও খালাসহ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি বলেন আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৯, সহীহ মুসলিম ৬৬০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ হলে এবং একজন  বা ততোধিক মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা কাতার বাঁধবে এবং মহিলাগণ সবশেষে দাঁড়াবে।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর নানী মুলায়কাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তৈরি করা খাদ্য খাওয়ার জন্য তাঁকে দা‘ওয়াত করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার করার পর বললেনঃ তোমরা দাঁড়াও। আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস বলেন, আমি উঠলাম এবং দীর্ঘ দিন ব্যবহারে কালো হয়ে যাওয়া আমাদের মাদুরটির উপর পানি ঢেলে তা পরিস্কার করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটির উপর দাঁড়ালেন। আমি ও ইয়াতীম (ছোট ভাই) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। আর বৃদ্ধা নানী আমাদের পেছনে দাঁড়ালেন। তিনি আমাদের নিয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে চলে গেলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬১২,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) মুক্তাদী একজন শিশু ও একজন বা একাধিক পুরুষ হলে শিশুও পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে দাঁড়াবে।

(৮) মুক্তাদী দুই বা দুয়ের অধিক পুরুষ, শিশু ও মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা, অতঃপর শিশুরা এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” মিশকাত ১০৯২নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতে পুরুষদের জন্যে সবচেয়ে ভাল হলো প্রথম সারি এবং নিকৃষ্টতম হলো পেছনের সারি। আর মহিলাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হলো পেছনের কাতার এবং সবচেয়ে খারাপ হলো প্রথম কাতার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৯২, সহীহ  মুসলিম ৪৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, শিশু ছেলেদের পৃথক কাতার করার কোন সহীহ দলীল নেই। তাই শিশু ছেলেরাও পুরুষদের সঙ্গে কাতার করতে পারে। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৮৪পৃ:)।

(৯) ইমামের সামনে কাতার বেঁধে নামায হয় না। অবশ্য ভিড়ের সময় ইমামের সামনে ছাড়া কোন দিকে জায়গা না থাকলে নিরুপায় অবস্থায় নামায হয়ে যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭২-৩৭৩)।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, জুমুআহ ও ঈদের নামাযের জামাআতে যদি এত ভিঁড় হয় যে সিজদার জন্য জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে সামনের মুসল্লীর পিঠে সিজদা করে নামায সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জায়গা নেই বলে অপেক্ষা করে দ্বিতীয় জামাআত কায়েম করা যাবে না। একদা হযরত উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) খুতবায় বলেন, ‘ভিঁড় বেশী হলে তোমাদের একজন যেন অপরজনের পিঠে সিজদা করে।’ (আহমাদ, মুসনাদ ১/৩২, বায়হাকী ৩/১৮২-১৮৩, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ৫৪৬৫, ৫৪৬৯নং, তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ৩৪১পৃ:)।

(১০) ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়াবে জ্ঞানী লোকেরা। যাতে তাঁরা ইমামের কোন ভুল চট করে ধরে দিতে পারেন এবং ইমাম নামায পড়াতে পড়াতে কোন কারণে নামায ছাড়তে বাধ্য হলে তাঁদের কেউ জামাআতের বাকী কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। বলা বাহুল্য, সাধারণ মূর্খ মানুষদের ইমামের সরাসরি পশ্চাতে দাঁড়ানো উচিৎ নয়। জ্ঞানী (আলেম-হাফেয-ক্বারী) মানুষদের জন্য ইমামের পার্শ্ববর্তী জায়গা ছেড়ে রাখা উচিৎ।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “সেই লোকদেরকে আমার নিকটবর্তী দাঁড়ানো উচিৎ, যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোক। অতঃপর তারা যারা তাদের চেয়ে কম জ্ঞানের। অতঃপর তারা যারা তাদের থেকে কম জ্ঞানের। আর তোমরা বাজারের ফালতু কথা (হৈচৈ) থেকে দূরে থাক।” (মিশকাত ১০৮৯নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (সালাতে) আমার নিকট দিয়ে দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চস্বরে বললেন। আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৯, সহীহ মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১১) সামনের কাতারে জায়গা থাকতে পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে নামায পড়লে নামায হয় না।

এক ব্যক্তি কাতারের পিছনে একা দাঁড়িয়ে নামায পড়লে মহানবী (সাঃ) তাকে নামায ফিরিয়ে পড়তে বললেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৮২নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ওয়াবিসাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কাতারের পিছনে একাকী দাড়িঁয়ে সালাত আদায় করতে দেখে তাকে পুনরায় সালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৮২, তিরমিযী ২৩১, ১০০৪, দারিমী ১২৮৬, আহমাদ (৪/২২৮), আবূ দাঊদ (৬৮২), তিরমিযী (১/৪৪৮), ত্বাহাভী ‘শমারহু মা‘আনী’ (১/২২৯), বায়হাক্বী (৩/১০৪), আহমাদ (৪/২২৮), ইবনু আবূ শায়বাহ (২/১৩/১),ইবনু আসাকির (১৭/৩৪৯)২), ইরওয়াউল গালীল ২/৩২৩-৩২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 

তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি কাতারের পিছে একা নামায পড়ে, সে যেন নামায ফিরিয়ে পড়ে।” (ইবনে হিব্বান, সহীহ)।

অতএব যদি কোন ব্যক্তি জামাআতে এসে দেখে যে, কাতার পরিপূর্ণ, তাহলে সে কাতারে কোথাও ফাঁক থাকলে সেখানে প্রবেশ করবে। নচেৎ সামান্যক্ষণ কারো অপেক্ষা করে কেউ এলে তার সঙ্গে কাতার বাঁধা উচিৎ। সে আশা না থাকলে বা জামাআত ছুটার ভয় থাকলে (মিহ্‌রাব ছাড়া বাইরে নামায পড়ার সময়) যদি ইমামের পাশে জায়গা থাকে এবং সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়, তাহলে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং এ সব উপায় থাকতে পিছনে একা দাঁড়াবে না।

পরন্তু কাতার বাঁধার জন্য সামনের কাতার থেকে কাউকে টেনে নেওয়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে যে হাদীস এসেছে তা সহীহ ও শুদ্ধ নয়। (যইফ জামে ২২৬১নং)।

তাছাড়া এ কাজে একাধিক ক্ষতিও রয়েছে। যেমন; যে মুসল্লীকে টানা হবে তার নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হবে, প্রথম কাতারের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে, কাতারের মাঝে ফাঁক হয়ে যাবে, সেই ফাঁক বন্ধ করার জন্য পাশের মুসল্লী সরে আসতে বাধ্য হবে, ফলে তার জায়গা ফাঁক হবে এবং শেষ পর্যন্ত প্রথম বা সামনের কাতারের ডান অথবা বাম দিককার সকল মুসল্লীকে নড়তে-সরতে হবে। আর এতে তাদের সকলের একাগ্রতা নষ্ট হবে। অবশ্য হাদীস সহীহ হলে এত ক্ষতি স্বীকার করতে বাধা ছিল না।

তদনুরুপ ইমামের পাশে যেতেও যদি অনুরুপ ক্ষতির শিকার হতে হয়, তাহলে তাও করা যাবে না।

ঠিক তদ্রুপই জায়গা না থাকলেও কাতারের মুসল্লীদেরকে এক এক করে ঠেলে অথবা সরে যেতে ইঙ্গিত করে জায়গা করে নেওয়াতেও ঐ মুসল্লীদের নামাযের একাগ্রতায় বড় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। সুতরাং এ কাজও বৈধ নয়।

বলা বাহুল্য, এ ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা এই যে, সামনে কাতারে জায়গা না পেলে পিছনে একা দাঁড়িয়েই নামায হয়ে যাবে। কারণ, সে নিরুপায়। আর মহান আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে ভার দেন না। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ২২৭পৃ:)।

প্রকাশ থাকে যে, মহিলা জামাআতের মহিলা কাতারে জায়গা থাকতে যে মহিলা পিছনে একা দাঁড়িয়ে নামায পড়বে তারও নামায পুরুষের মতই হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৮৭)।

 

 পক্ষান্তরে পুরুষদের পিছনে একা দাঁড়িয়ে মহিলার নামায হয়ে যাবে।

(১২) ইমাম মুক্তাদী থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারে না। কারণ, মহানবী (সাঃ) কর্তৃক এরুপ দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 আবূ মাস্‘ঊদ আল্ আনসারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামকে কোন কিছুর উপর (একা) ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৬৯২, সহীহ আবূ দাঊদ ৫৯৭, দারিমী ১৮৮২, সহীহ আল জামি  আস্ সগীর ৬৮৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একদা হুযাইফা (রাঃ) মাদায়েনে একটি উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে লোকেদের ইমামতি করতে লাগলেন। তা দেখে আবূ মাসঊদ (রাঃ) তাঁর জামা ধরে টেনে তাঁকে নিচে নামিয়ে দিলেন। নামাযের সালাম ফেরার পর তিনি হুযাইফাকে বললেন, ‘আপনি কি জানেন না যে, এরুপ দাঁড়ানো নিষিদ্ধ?’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ, যখনই আপনি আমাকে টান দিলেন, তখনই আমার মনে পড়ে গেল।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৯৭, ইবনু খুযাইমাহ (১৫২৩), বায়হাক্বী (৩/১০৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 অবশ্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়ানো যায়। যেমন নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) মিম্বরের উপর খাড়া হয়ে নামায পড়ে সাহাবাদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (বুখারী ৩৭৭নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হাযিম (রহ.) হতে বর্ণিত যে, লোকেরা সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করল (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) মিম্বার কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জ্ঞাত আর কেউ নেই। তা ছিল গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি। অমুক মহিলার আযাদকৃত দাস অমুক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্যে তা তৈরি করেছিল। তা পুরোপুরি তৈরি ও স্থাপিত হবার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়িয়ে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হর দিকে মুখ করে তাকবীর বললেন। লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি কিরাআত পড়লেন ও রুকূতে গেলেন। সকলেই তাঁর পেছনে রুকূতে গেলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করলেন। পুনরায় মিম্বারে ফিরে আসলেন এবং কিরাআত পড়ে রুকূতে গেলেন। অতঃপর তাঁর মাথা তুললেন এবং পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করলেন। এ হলো মিম্বারের ইতিহাস। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেনঃ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ(রহ.) বলেছেন যে, আমাকে আহমদ ইবনু হাম্বাল (রহ.) এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আমার ধারণা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে উঁচু স্থানে ছিলেন। সুতরাং ইমামের মুক্তাদীদের চেয়ে উঁচু স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ.) বলেনঃ আমি আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ.)-কে বললামঃ সুফইয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ (রহ.)-কে এ বিষয়ে বহুবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনি তাঁর নিকট এ বিষয়ে কিছু শোনেননি? তিনি জবাব দিলেনঃ না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৭৭, ৪৪৮, ৯১৭, ২০৯৪, ২৫৬৯; মুসলিম ৫/১০, হাঃ ৫৪৪, আহমাদ ২২৯৩৪, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর এই হাদীসকে ভিত্তি করেই উলামাগণ বলেন, মিম্বরের এক সিড়ি পরিমাণ (প্রায় একহাত) মত উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে ইমামতি করলে দোষাবহ্ নয়। (মাজমূআতু রাসাইল ফিস স্বালাহ্‌ ১০০পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৪২৪-৪২৬)।

পক্ষান্তরে মুক্তাদী ইমাম থেকে উঁচু জায়গায় দাঁড়াতে পারে। হযরত আবূ হুরাইরা নিচের ইমামের ইক্তেদা করে মসজিদের ছাদের উপর জামাআতে নামায পড়েছেন। (শাফেয়ী, বায়হাকী, বুখারী তা’লীক)।

প্রথম কাতার পূর্ণ করা, সোজা করা ও ফজিলত

(১৩) প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার পৃথক মাহাত্ম আছে। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন, “লোকেরা যদি আযান ও প্রথম কাতারে নিহিত মাহাত্ম জানত, তাহলে তা অর্জন করার জন্য লটারি করা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় না পেলে তারা লটারিই করত।” (বুখারী ৬১৫নং, মুসলিম, সহীহ ৪৩৭নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফাযীলাত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা জানত, কুরআহর মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই তারা কুরআহর মাধ্যমে ফায়সালা করত। যুহরের সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী (ফাযীলাত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ‘ইশা ও ফজরের সালাত (জামা‘আতে) আদায়ের কী ফাযীলাত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা হাজির হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৬৮৯,  সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৮, মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৭, আহমাদ ৭২৩০) (আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা পূর্বে প্রথম কাতার সম্পূর্ণ করো, এরপর পরবর্তী কাতার পুরা করবে। কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকলে সেটা হবে একেবারে শেষের কাতার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭১, সহীহ আল জামি ১২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির ইবনু সামুরা আস-সুওয়াঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা এমনভাবে কাতারবন্দী হও যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের প্রভুর নিকট কাতারবন্দী হন। রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ফেরেশতারা তাদের প্রভুর সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হন? তিনি বলেনঃ তারা প্রথম সারিগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং সারিতে গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯২, মুসলিম ৪৩০, নাসায়ী ৭৩৮, ৮১৬; আবূ দাঊদ ৬৬১, আহমাদ ২০৪৫০, ২০৫১৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) নুমান বিন বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ প্রথম কাতার ও সামনের কাতারসমূহের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশুাগণ তাদের জন্য দুআ করে থাকেন।” (হাদিস সম্ভার-৭০৩, আহমাদ ১৮৩৬৪, সহীহ তারগীব ৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

(ঙ) বারা’আ ইবনু আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করো, তাহলে তোমাদের অন্তরসমূহ বিক্ষিপ্ত হবে না। ”তিনি বলেন, তিনি আরও বলতেন: “আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ প্রথম কাতার অথবা, প্রথম কাতারসমূহের উপর রহমত বর্ষণ করেন”। (সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৯৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৪, সহীহ ইবনু হিব্বান  ২১৫৭, ২১৬১; মাওয়ারিদুয যাম’আন ৩৮৬, নাসায়ী ৮১১, আহমাদ ১৮০৪৫, ১৮১৪২, ১৮১৪৭, ১৮১৬৬, ১৮১৭২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ইরবাদ ইবনু সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম কাতারের লোকের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকের জন্য একবার। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৬, সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৭, ১২৯৮, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২১৫৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৩৯৫, নাসায়ী ৮১৭, আহমাদ ১৬৬৯১, ১৬৬৯৮, ১৬৭০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের মাঝে প্রথম সারিতে এগিয়ে আসতে গড়িমসি লক্ষ্য করে তাদেরকে বললেন, সামনে এগিয়ে আসো। আমার অনুকরণ করো। তাহলে যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা তোমাদের অনুকরণ করবে। এরপর তিনি বললেন, একদল লোক সর্বদাই প্রথম কাতারে দাঁড়াতে দেরী করতে থাকে। পরিণামে আল্লাহ তা‘আলাও তাদের পেছনে ফেলে রাখবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৯০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৮০, মুসলিম ৪৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিছু লোক সব সময়ই সালাতে প্রথম কাতার থেকে পেছনে থাকে, এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৯, সহীহ আল জামি ৭৬৯৯,ইবনু খুযাইমাহ (১৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৪) প্রথম কাতারে ডান দিকের জায়গা অপেক্ষাকৃত উত্তম। সাহাবী বারা’ বিন আযেব বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর ডান দিকে দাঁড়াবার চেষ্টা করতাম। যাতে তিনি আমাদের দিকে মুখ করে ফিরে বসেন।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬১৫, মুসলিম, সহীহ ৭০৯, আহমাদ (৪/৩০৪) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় কাতারের ডান দিকের (মুসল্লী¬দের) উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং মালায়িকাহ (ফিরিশতাগণ) দু‘আ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৬, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৫, ইবনু মাজাহ ১০০৫, বায়হাক্বী (৩/১০৩), ইবনু হিব্বান (৩৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(১৫) ইমামের ডানে-বামে লোক যেন সমান-সমান হয়। অতএব কাতার বাঁধার সময় তা খেয়াল রাখা সুন্নত। যেহেতু ২ জন মুক্তাদী হলে এবং আগে-পিছে জায়গা না থাকলে একজন ইমামের ডানে ও অপরজন বামে দাঁড়াতে হয়। তাছাড়া ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ানোরও ফযীলত আছে। সুতরাং সাধারণভাবে ইমামের ডান দিকে দাঁড়ানো উত্তম নয়। যেমন ইমামের বাম দিকে লোক কম থাকলে ডান দিকে দাঁড়ানো থেকে বাম দিকে দাঁড়ানো উত্তম। কারণ তখন বাম দিকটা ইমামের অধিক কাছাকাছি। পক্ষান্তরে ডানে-বামে যদি লোক সমান সমান থাকে, তাহলে বামের থেকে ডান দিক অবশ্যই উত্তম। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৯)।

(১৬) (বিরল মাসআলায়) যদি কোন স্থান-কালে কোন জামাআতের দেহে সতর ঢাকার মত লেবাস না থাকে তাহলে ইমাম সামনে না দাঁড়িয়ে কাতারের মাঝে দাঁড়াবে। অবশ্য ঘন অন্ধকার অথবা মুক্তাদীরা অন্ধ হলে বিবস্ত্র ইমাম সামনে দাঁড়াবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৮৯)।

সালাতের জন্য ক্ষতিকর দিক

 ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন লোকও আছে (যারা সালাত আদায় করা সত্ত্বেও সালাতের রুকন ও শর্তগুলো সঠিকভাবে আদায় না করায় এবং সালাতে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও খুশুখুযু না থাকায় তারা সালাতের পরিপূর্ণ সাওয়াব পায় না)। বরং তারা দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের একভাগ বা অর্ধাংশ সাওয়াব প্রাপ্ত হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯৬, আহমাদ (৪/৩২১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সালাত আদায়কালীন ইমামের কর্তব্যঃ

ইমাম সহিহভাবে সালাত আদায় না করলে মুছল্লীদের সব দায় তার উপর বর্তাবে

(ক) আবূ আলী আল-হামদানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নৌ-ভ্রমণে বের হন, তাতে উকবা ইবনু আমের আল-জুহানী (রাঃ)ও ছিলেন। কোন এক সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হলে আমরা তাকে আমাদের ইমামতি করতে অনুরোধ করলাম এবং তাকে বললাম, নিশ্চয় আমাদের মধ্যে আপনই এর যোগ্য। আপনি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী। কিন্তু তিনি (ইমামতি করতে) অস্বীকার করেন এবং বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যাক্তি লোকেদের ইমামতি করলো এবং সঠিকভাবে সালাত পড়লো, তাতে তার ও মোক্তাদীদের সালাত হয়ে গেলো। কিন্তু যে ব্যাক্তি তাতে কোন ত্রুটি করলো, তার দায় তার উপর বর্তাবে, তাদের উপর নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৩, আবূ দাঊদ ৫৮০, আহমাদ ১৬৮৫৪, ১৬৮৭২, ১৬৯৪৮, ১৭৩৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদেরকে ইমাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাবেন। বস্তুতঃ যদি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভালভাবে পড়ায় তবে তোমাদের জন্যে সফলতা আছে (তার জন্যেও আছে)। আর সে যদি কোন ভুল করে ফেলে তাহলে তোমরা সাওয়াব পাবে। তার জন্যে সে পাপী হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৩৩, বুখারী ৬৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত আদায়কালীন ইমামের কাজগুলো নিম্নরুপ

(১) ইমামতির নিয়তঃ

সাধারণভাবে ইমামতির নিয়ত (সংকল্প) জরুরী। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭০) অবশ্য একাকী নামায পড়া অবস্থায় কেউ জামাআতের নিয়তে তার সাথে শামিল হলে জামাআত হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নামায পড়তে পড়তে ইমামতির সংকল্প করে নেওয়া যথেষ্ট হবে। নামায শুরু করার আগে থেকে ইমামতির নিয়ত জরুরী নয়। (ঐ ১৭/৫৯)।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রে ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে তাঁর হাত দ্বারা আমার হাত ধরে পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৬, বুখারী ৬৯৯, মুসলিম ৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবী সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে একজন একাকী সালাত আদায় করছে। তখন তিনি বললেন: “এমন কেউ কি নেই, যে এ লোকটিকে সাদাকা করবে, তথা এর সাথে সালাত আদায় করবে? (সুনান আদ-দারেমী, ১৪০৫, ১৪০৫,  সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১০৫৭, ২৩৯৮, ২৩৯৯  ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬, ৪৩৭, ৪৩৮, আহমাদ ৩/৬৪; বাইহাকী ৩/৬৯; আবু দাউদ ৫৭৪; হাকিম ১/২০৯; হাকিম একে সহীহ বলেছেন আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন।; তিরমিযী ২২০, মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) কাতার সোজা করতে বলাঃ

রাসুল (সাঃ) নামাযে ইমামতির জায়গায় দাঁড়িয়ে মুক্তাদীদের দিকে মুখ করে তাদেরকে বিভিন্ন নির্দেশ দিতেন। (বুখারী ৭১৯নং) যেমন, “তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও।” “কাতার সোজা করো।” “কাতার পূর্ণ করো।” “ঘন হয়ে দাঁড়াও।” “সামনে এসো।” “ঘাড় ও কাঁধসমূহকে সমপর্যায়ে সোজা করো।” “প্রথম কাতারকে আগে পূর্ণ করো, তারপর তার পরের কাতারকে। অপূর্ণ থাকলে যেনো শেষের কাতার থাকে।” “কাতারের ফাঁক বন্ধ করো।” “বাজারের মত হৈ-চৈ করা থেকে দূরে থাক।” ইত্যাদি।

কাতারে কেউ আগে-পিছে সরে থাকলে তাকে বরাবর হতে বলা এমন কি নিজে কাছে গিয়ে কাতার সোজা করা ইমামের কর্তব্য। আর যতক্ষণ পর্যন্ত না কাতার পূর্ণরুপে সোজা হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত নামায শুরু করা উচিৎ নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৬)।

বরং কাতার সোজা ও ঠিক হওয়ার আগে ইমামের নামায শুরু করা বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ৭৪পৃ:)।

কাতার সোজা করার হুকুম ও ফজিলত সংক্রান্ত দলীলসমূহ

(ক) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন, আর বলতেনঃ তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেনঃ নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি মহান আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) দু‘আ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৪, নাসায়ী ৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(খ) আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৮, মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (বুখারী; বুখারী ও মুসলিমের মিলিত বর্ণনা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের কাতারগুলোকে পূর্ণ করো। আমি আমার পেছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭১৭, ৭১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬২, আহমাদ (৪/২৭৬), ইবনু খুযাইমাহ (১৬০) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ)  সিমাক ইবনু হারব সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কাতারবদ্ধ করতেন এমন সোজা করে যেরূপ তীরের ফলা সোজা করা হয়। এমনকি তিনি যখন বুঝতে পারলেন, আমরা এ সম্পর্কে তাঁর তা‘লীম আত্মস্থ করেছি ও বুঝেছি, তখন একদা তিনি (আমাদের দিকে) ঘুরে দেখতে পেলেন, একজনের বুক সামনে দিকে এগিয়ে আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের চেহারায় বৈপরিত্য সৃষ্টি করে দিবেন।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৫,  সুনান ইবনু মাজাহ ৯৯৪,  মুসলিম ২২৭, নাসায়ী ৮০৯, ইবনু মাজাহ ৯৯৪, বুখারী ৭১৭,  তিরমিযী ২২৭, নাসায়ী ৮১০, আহমাদ (৪/২৭৫), ১৭৯১৮, ১৭৯৩৩, ১৭৯৫৯, ১৭৯৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) সিমাক সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা সালাতের জন্য দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দিতেন। অতঃপর আমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তাকবীর বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সালাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর রহমতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার রহমত থেকে কেটে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৬, নাসায়ী ৮১৮, আহমাদ ৫৭২৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৯,  সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৫, আহমাদ ৫৭২৪, সহীহাহ্ ৭৪৩, সহীহ আল জামি ১১৮৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ)  আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (সালাতের) কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে। এক কাতারকে অপর কাতারের নিকটে রাখবে। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি (ফাঁকা) জায়গাতে শয়তান যেন একটি বকরীর বাচ্চা ন্যায় প্রবেশ করছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৯৩, নাসায়ী ৮১৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৫, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাতারসমূহ সোজা করবে। কারণ কাতারসমূহ সোজা করার দ্বারাই সালাত পূর্ণতা পায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৩, বুখারী  ৭১৮, ৭২৩; মুসলিম ৪৩৩, নাসায়ী ৮১৪-১৫, ৮৪৫, আহমাদ ১১৬০০, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৭৩, ১৩২৫২, ১৩৩৬৬, ১৩৪৮৩, ১৩৫৫৭, ১৩৬৮২; দারিমী ১২৬৩।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করতেনঃ তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে, তোমরা সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আমার জীবন যার হাতে নিহিত তাঁর কসম করে বলছি, আমি তোমাদেরকে সামনে যেমন দেখতে পাই পেছনেও তদ্রূপ দেখতে পাই।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১০০, নাসায়ী ৮১৩, আহমাদ ১৩৮৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ট) ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাতে আরো রয়েছেঃ ‘‘তোমরা আগ-পিছ হয়ে দাঁড়াবে না। তাহলে তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। সাবধান! তোমরা মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল করবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৫, মুসলিম ২২৮, নাসায়ী ৮০৬, ইবনু মাজাহ ৯৭৬), আহমাদ (১/৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্ তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯২, মুসলিম ৯৯২, আহমাদ (৫/১০১), ২০৪৫০, ২০৫১৯, নাসায়ী ৭৩৮, ৮১৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব ইকামাতের পর ইমাম মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াবে এবং প্রতিটি কাঁতার তীরের মতো সোজা হয়েছে কিনা, পায়ের সাথে পা, কাঁধের সাধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো হয়েছে কিনা ইত্যাদি সব দেখার পর সালাত শুরু করবে। কিন্তু মসজিদগুলোতে দেখা যায়, ইমাম দায় সাড়াভাবে শুধু বলেন যে, কাঁতার সোজা করি, মোবাইল ফোন বন্ধ করি। এরপরই সালাত শুরু করে দেন কিন্তু ততোক্ষণে মুছল্লীগণ সোরগোল করছে এবং নিজেরা কাঁতার সোজা করা নিয়ে ব্যস্ত। এভাবে সালাত আদায় করলে সালাত শুদ্ধ হবে না।

(৩) মুক্তাদীদের খেয়াল করে নামায হাল্কা/সংক্ষিপ্ত করে পড়াঃ

জামাআতে বিভিন্ন ধরনের লোক নামায পড়ে থাকে। ইমামের উচিৎ, নিজের ইচ্ছামত নামায না পড়া; বরং তাদের খেয়াল রেখে ক্বিরাআত ইত্যাদি লম্বা করা। অবশ্য কারো ইচ্ছা অনুসারে নামায এমন হাল্কা করা উচিৎ নয়, যাতে নামাযের বিনয়, ধীরতা-স্থিরতা, পরিপূর্ণরুপে রুক্‌ন-ওয়াজেব-সুন্নত আদি আদায় ব্যাহত হয়। বলা বাহুল্য, যাতে উভয় দিক বজায় থাকে তার খেয়াল অবশ্যই রাখতে হবে।

হাদিসগুলো লক্ষ্য করি,

(ক) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি ফজরের সালাতের জামাআতে অমুকের কারণে দেরীতে উপস্থিত হই। কারণ তিনি আমাদের সালাতে দীর্ঘ কিরাআত পড়েন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে দিনের চাইতে আর কোন দিন অধিক রাগান্বিত হয়ে খুতবাহ দিতে দেখিনিঃ হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে লোকেদের ঘৃণা উদ্রেককারী ব্যাক্তিও আছে। অতএব তোমাদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত পড়ে তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত কিরাআত পড়ে। কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকও রয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৩২, বুখারী ৯০, ৭০২, ৭০৪, ৬১১০, ৭১৫৯; মুসলিম ৪৬৬, আহমাদ ১৬৬১৭, ১৬৬২৯; দারিমী ১২৫৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে অথচ পূর্ণরূপে সালাত আদায় করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৫, বুখারী ৭০৬, ৭০৮-১০; মুসলিম ৪৬৯১-৩, ৪৭০, ৪৭৩; তিরমিযী ২৭৩, ৩৭৬; নাসায়ী ৮২৪, আবূ দাঊদ ৮৫৩, আহমাদ ১১৫৭৯, ১১৬৫৬, ১২২৪২, ১২৩২৩, ১২৩৬২, ১২৪৩১, ১২৪৬৬, ১২৭১৩, ১২৭৩৮, ১৩০০১, ১৩০৩৬, ১৩৩৪৭, ১৩৫১৫, ১৩৫৩৩, ১৩৫৫৩, ১৩৫৯৭; দারিমী ১২৬০, মাজাহ ৯৮৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয ইবনু জাবাল আল-আনসারী (রাঃ) তার সাথীদের নিয়ে এশার সালাত পড়লেন। তিনি তাদের সালাত দীর্ঘ করলেন। ফলে আমাদের মধ্যকার এক ব্যাক্তি (সালাত থেকে) পৃথক হয়ে একাকী সালাত পড়ে। মুআয (রাঃ) কে তার সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি বলে, নিশ্চয় সে মোনাফিক। লোকটি তা জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সম্পর্কে মুআয (রাঃ) এর মন্তব্য তাঁকে অবহিত করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মুআয! তুমি কি বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হতে চাও? তুমি যখন লোকেদের নিয়ে সালাত পড়বে, তখন সূরাহ আস-শামসি ওয়া যুহাহা, সূরাহ আল-আলা, সূরাহ ওয়াল-লাইল ও সূরাহ ইকরা বিসমি রব্বিকা পাঠ করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৬, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৯০, বুখারী ৭০১, ৭০৫, ৬১০৬; মুসলিম ৪৩১-২, নাসায়ী ৮৩১, ৮৩৫, ৯৮৪, ৯৯৭-৯৮; আহমাদ ১৩৭৭৮, ১৩৮৯৫, ১৪৫৪৩; দারিমী ১২৯৬, সহীহ ইবনু মুয়াঈমাছ ১৬৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনুস শিখখীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তায়েফের আমীর নিয়োগ করাকালে আমার থেকে সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে বলেনঃ হে উসমান! তুমি সালাত সংক্ষেপ করবে এবং লোকেদের মধ্যকার দুর্বলদের সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। কেননা তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, নাবালেগ, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তি, দূরের পথের পথিক এবং কর্মব্যস্ত লোক আছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৭, মুসলিম ৪৬৮, নাসায়ী ৬৭২, আবূ দাঊদ ৫৩১, আহমাদ ১৫৮৩৬, ১৭৪৪২, ১৭৪৪৮, ১৭৪৫৫; মাজাহ ৯৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ আমাকে যা বলেছেন তা হলঃ যখন তুমি লোকেদের ইমামতি করবে, তখন তাদের সালাত সংক্ষেপ করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৮, মুসলিম ৪৬৮, নাসায়ী ৬৭২, আবূ দাঊদ ৫৩১, আহমাদ ১৫৮৩৬, ১৭৪৪২, ১৭৪৪৮, ১৭৪৫৫; মাজাহ ৯৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ)  উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ইমামের সালাত সংক্ষিপ্ত করাঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)…‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ)  থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত শুরু করে তা দীর্ঘায়িত করার সংকল্প করি। কিন্তু আমি শিশুদের কান্না শুনতে পাই এবং তাতে তার মায়ের বিচলিত হওয়ার কথা চিন্তা করে আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৮৯, ৯৯০, ৯৯১,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১২৯, ১১৩০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৭৮৯, বুখারী ৭০৬, ৭০৮-১০; মুসলিম ৪৬৯১-৩, ৪৭০, ৪৭৩; তিরমিযী ২৭৩, ৩৭৬; নাসায়ী ৮২৪, আহমাদ ১১৫৭৯, ১১৬৫৬, ১২২৪২, ১২৩২৩, ১২৩৬২, ১২৪৩১, ১২৪৬৬, ১২৭১৩, ১২৭৩৮, ১৩০০১, ১৩০৩৬, ১৩৩৪৭, ১৩৫১৫, ১৩৫৩৩, ১৩৫৫৩, ১৩৫৯৭; দারিমী ১২৬০, মাজাহ ৯৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের যারা মানুষের সালাত আদায় করায় সে যেন সালাত সংক্ষেপ করে। কারণ (তার পেছনে) মুক্তাদীদের মধ্যে রোগী, দুর্বল, বুড়োও থাকে (তাদের প্রতি খেয়াল রাখাও দরকার)। আর তোমাদের কেউ যখন একা একা সালাত আদায় করবে সে যত ইচ্ছা সালাত দীর্ঘ করতে পারে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৩১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯৪, ৭৯৫, বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হালকা করে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে যখন সালাত আদায় করাতেন সাফফাত সূরাহ্ দিয়ে সালাত আদায় করাতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৫, নাসায়ী ৮২৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬০৬, ত্ববারানী তার কাবীরে ১৩১৯৪, আহমাদ ৪৭৯৬, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫২৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব ইমাম যখন সালাত আদায় করবেন তখন সালাত সহিহ, পূর্ণাঙ্গ অথচ সংক্ষিপ্ত করবেন।কিন্তু একাকী সালাত আদায়কালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যার যতো খুশি দীর্ঘায়িত করতে পারেন।

 (৪) দ্বিতীয় রাকআতের তুলনায় প্রথম রাকআত দীর্ঘ করাঃ

প্রথম রাকআতকে একটু লম্বা করে পড়া উত্তম। যাতে পিছে থেকে যাওয়া মুসল্লীরা প্রথম রাকআতেই এসে শামিল হতে পারে।

 (ক) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের ধারণা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক‘আত হয়ত এজন্যই দীর্ঘ করতেন যাতে লোকেরা প্রথম রাক‘আত থেকেই জামা‘আতে শরীক হওয়ার সুযোগ পান। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮০০, ইবনু খুযাইমাহ (১৫৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যুহর ও ‘আসর সালাতের প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা ও অন্য দু’টি সূরাহ পাঠ করতেন। তিনি কোন কোন সময়ে আমাদেরকে শুনিয়ে আয়াত পড়তেন। তিনি যুহর সালাতের প্রথম রাক‘আত কিছুটা দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক‘আত সংক্ষেপ করতেন। তিনি ফজর সালাতেও অনুরূপ করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯৮, ৭৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৮১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫১ , বুখারী ৭৫৯, ৭৭৬, ৭৭৮, ৭৭৯; নাসায়ী ৯৭৪-৭৮, দারিমী ১২৯১, ১২৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ‘উমার (রাঃ) সা‘দ (রাঃ)-কে বলেন, লোকেরা আপনার প্রতিটি বিষয়ে অভিযোগ করেছে, এমনকি আপনার সালাত সম্পর্কেও। সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমি সালাতের প্রথম দু‘ রাক‘আতে কিরাত দীর্ঘ করি এবং শেষের দু‘ রাক‘আতে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করি। তিনি আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে যেভাবে সালাত আদায় করেছি- তার কোন ব্যতিক্রম করিনি। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আপনার ব্যাপারে আমার ধারণাও তা-ই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯০৩, ৯০৪, ৯০৫, ৯০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও ‘আসর সালাতে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমরা তা নির্ণয় করেছি। আমরা নির্ণয় করি যে, তিনি যুহর সালাতে প্রথম দু‘ রাক‘আতে ত্রিশ আয়াত পড়ার পরিমান দাঁড়াতেন- যেমন সূরাহ ‘‘আলিফ লাম মীম আস্-সিজদা্’’ ইত্যাদি এবং শেষের দু‘ রাক‘আতে তিনি প্রথম দু‘ রাক‘আতের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। তিনি যুহরের শেষ দু‘ রাক‘আতে যতক্ষণ দাঁড়াতেন ‘আসরের প্রথম দু‘ রাক‘আতেও ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি ‘আসরের শেষ দু‘ রাক‘আতে তার প্রথম দু‘ রাক‘আতে চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৮০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯০১, ৯০২,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ).....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুহরের সালাত শুরু হয়ে যেত। অতঃপর কোন ব্যক্তি প্রয়োজন (প্ৰস্ৰাব-পায়খানা) পূরণের জন্য বাকী নামক স্থানে যেত। সে নিজের প্রয়োজন সেরে ওযু করে এসে দেখত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনো প্রথম রাকাআতেই আছেন। তিনি সালাত এতটা লম্বা করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৯০৭, ৯০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ, ৮২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯০২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৯১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের সাথে অমুকের সালাতের চাইতে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ আর কারো সালাত দেখিনি। রাবী বলেন, তিনি যোহরের প্রথম দু রাকআত দীর্ঘ করতেন এবং পরবর্তী দু রাকআত সংক্ষেপ করতেন এবং আসরের সালাত সংক্ষেপ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৮২৭, নাসায়ী ৯৮২, আহমাদ ৮১৬৬, মিশকাত ৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিরআত সংক্রান্ত আরো জ্ঞাতব্য বিষয়

 (ক) ফজরের সালাতের কিরাআতঃ

আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮১৮, বুখারী ৫৪১, মুসলিম ৪৬১, নাসায়ী ৪৯৫, ৫২৫, ৫৩০, ৯৪৮, আবূ দাঊদ ৩৯৮, আহমাদ ১৯২৬৫, ১৯৩৬৮, ১৯২৯৪, ১৯৩০১, ১৯০১০; দারিমী ১৩০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  জুমু‘আহর দিন ফজরের সালাতের কিরাআতঃ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর দিন ফজরের সালাতে সূরাহ আলিফ-লাম-মীম তানযীল আস-সাজদা এবং ওয়াহাল আতা আলাল ইনসানে (সূরাহ আদ-দাহর) তিলাওয়াত করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮২১, ৮২২, ৮২৩, ৮২৪,  মুসলিম ৮৭৯, তিরমিযী ৫২০, সা ৯৫৬, ১৪২১; আবূ দাঊদ ১০৭৪, আহমাদ ১৯৯৪, ২৪৫২, ২৭৯৬, ৩০৩১, ৩০৮৬, ৩১৫০, ৩৩১৫, ইরওয়াহ ৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) যোহর ও আসর সালাতের কিরাআতঃ

(১) আবূ মামার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যোহর ও আসর সালাতের কিরাআত কিসের মাধ্যমে বুঝতেন? তিনি বলেন, তাঁর দাড়ি নড়াচড়ার মাধ্যমে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮২৬, বুখারী ৭৪৬, ৭৬০-৬১, ৭৭৭; আবূ দাঊদ ৮০১, আহমাদ ২০৫৫২, ২০৫৭৩, ২৬৬৭৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরসহ যোহরের সালাত পড়াকালে প্রথম দু রাকআতে কখনো কখনো আমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮২৯, বুখারী ৭৬২, ৭৭৬, ৭৭৮-৭৯; মুসলিম ৪৫১-২, নাসায়ী ৯৭৪-৭৬, আবূ দাঊদ ৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) মাগরিবের সালাতের কিরাআতঃ

(১) লুবাবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাতে ওয়াল মুরসালাতে উরফান সূরাহ থেকে তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৩১, বুখারী ৭৬৩, ৪৪২৯; মুসলিম ৪৬২, তিরমিযী ৩০৮, নাসায়ী ৯৮৫-৮৬, আবূ দাঊদ ৮১০, আহমাদ ২৬৩২৭, ২৬৩৪০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৭৩, দারিমী ১২৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর ইবনু মুতইম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাগরিবের সালাতে সূরাহ তূর থেকে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। জুবাইর অন্য হাদীসে বলেন, আমি যখন তাঁকে তিলাওয়াত করতে শুনলাম (অনুবাদ) তারা কি সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই সৃষ্টিকর্তা? তাহলে তাদের সেই শ্রোতা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করুক (সূরাহ তূরঃ ৩৫-৩৮), তখন আমার অন্তর উড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৩২, বুখারী ৭৬৫, ৩০৫০, ৪০২৩, ৪৮৫৪; মুসলিম ৪৬৩, নাসায়ী ৯৮৭, আবূ দাঊদ ৮১১, আহমাদ ১৬২৯৩, ১৬৩২১, ১৬৩৩২, ২৭৫৯৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৭২, দারিমী ১২৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) এশার সালাতের কিরাআতঃ

(১) বারাআ ইবনু আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এশার সালাতে পড়েন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে সূরাহ ওয়াত-তীন ওয়ায-যাইতূন পড়তে শুনেছি।

বারাআ (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি তাঁর চাইতে উত্তম ও সুমধুর কন্ঠে তিলাওয়াত আর কোন মানুষের নিকট শুনিনি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৩৪, ৮৩৫, বুখারী ৭৬৭, ৭৬৯, ৪৯৫২, ৭৫৪৬; মুসলিম ৪৬১-৩, তিরমিযী ৩১০, নাসায়ী ১০০০-১, আবূ দাঊদ ১২২১, আহমাদ ১৮০৩৩, ১৮০৫৬, ১৮২০৬, ১৮২২৩, ১৮২৩৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৭৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মুআয ইবনু জাবাল তার সংগীদের নিয়ে এশার সালাত পড়লেন এবং তাদের সালাত দীর্ঘায়িত করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি সূরাহ ওয়াশ-শামস, সূরাহ আলা, সূরাহ লাইল ও সূরাহ আলাক ইত্যাদি (ক্ষুদ্র সূরা) পাঠ করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৩৬, বুখারী ৭০১, ৭০৫, ৬১০৬; মুসলিম ৪৬৫, নাসায়ী ৮৩৫, আবূ দাঊদ ৭৯০, আহমাদ ১৩৮৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) সালাম ফিরে মুক্তাদীদের দিকে ফিরে বসাঃ

অতঃপর ইমাম ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সামুরাহ্ ইবনু জুনদুর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় শেষে আমাদের দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৪, সহীহ বুখারী ৮৪৫, মুসলিম ২২৭৫, তিরমিযী ২২৯৪, আহমাদ ২০১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ডানে ঘুরে বসার দলিল

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত  আদায় শেষে ডান দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৫, সহীহ মুসলিম ৭০৮, নাসায়ী ১৩৫৯, আহমাদ ১২৮৪৬, দারেমী ১৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরো দেখুন,

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৬, সহীহ বুখারী ৮৫২, মুসলিম ৭০৭, দারেমী ১৩৯০, ইবনু মাজাহ্ ৯৩০, আহমাদ ৩৬৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 ডান দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো পড়েছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’ (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত  আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম। তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বর্ণনাকারী (বারা) বলেন, একদিন আমি শুনলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’। অর্থাৎ-‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার ‘আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের (হাশরের) ময়দানে উঠাবে অথবা একত্র করবে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৭, সহীহ  মুসলিম ৭০৯, তিরমিযী ৩৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বামে ঘুরে বসার দলিল

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য নিজেদের সালাতের কোন অংশ নির্দিষ্ট না করে এ কথা ভেবে যে, শুধু ডান দিকে ঘুরে বসাই তার জন্য নির্দিষ্ট। আমি নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনেকবার বাম দিকেও ঘুরে বসতে দেখেছি।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৮৫২, মুসলিম ৭০৭, দারেমী ১৩৯০, ইবনু মাজাহ্ ৯৩০, আহমাদ ৩৬৩১, সুনান আদ-দারেমী ১৩৮৭, মুসনাদুল মাউসিলী  ১২৭, ৫১৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ডান পাশ দিয়ে ঘুরে বসার সময় পঠিতব্য দোয়া

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম। তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বর্ণনাকারী (বারা) বলেন, একদিন আমি শুনলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’। অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার ‘আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের (হাশরের) ময়দানে উঠাবে অথবা একত্র করবে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪৭-[৯], সহীহ  মুসলিম ৭০৯, তিরমিযী ৩৩৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) সালাম ফিরানোর পর যিক্‌র-আযকার করাঃ

সালাম ফিরানোর পর রাসুল সা. যেসব দোয়া পাঠ করতেন আমাদের দেশের ৯৫% ইমামদের সেই তরীকা পালন করতে দেখা যায় না। দেখা যায়, এক/দুইটি দোয়া পড়েই সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মুনাজাতে আধা ঘন্টা ধরে অঝোর নয়নে কান্নাকাটি করে। অথচ মুনাজাতে যেসব দোয়া বলা হয় সেগুলো তাশাহুদ বৈঠকে পাঠ করার কথা অথবা সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিত মুনাজাত না করে রাসুল সা. যেসব দোয়া পাঠ করতেন তা পাঠ করা। দোয়াগুলো পাঠ করার পর ইমাম একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাত করবেন এবং মুছল্লীগণের সময় থাকলে তারাও দোয়াগুলো পাঠ করে যে যার মতো করে একাকী দুই হাত তুলে মুনাজাত করবেন।

মনে রাখতে হবে, ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুল সা. কখনো সম্মিলিতভাবে দুই হাত তুলে মুনাজাত করেননি আর এখন যারা করেন এটা বিদআত। বিদআতি আমল আল্লাহর নিকট গৃহিত হয় না। সম্মিলিতভাবে না কেঁদে আপনি একাকী দুই হাত তুলে কাঁদেন, আল্লাহর নিকট মনের দুঃখ প্রকাশ করেন, আল্লাহর নিকটই চান, দেখবেন আল্লাহ আপনার কথা শুনেছেন।

ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুল সা. যেসব দোয়া পাঠ করতেন তা জানতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)

(৭) যিক্‌র-আযকারের পর জায়গা বদলে সুন্নত সুন্নত নামাজ পড়াঃ

ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুল সা. এর তরীকা মোতাবেক দোয়াগুলো পাঠ শেষে একাকী মুনাজাতের পর জায়গা বদল করে তথা ডানে বামে সামনে পিছনে সরে সুন্নত সালাত আদায় করবেন।

মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম ফরয সালাত আদায়ের স্থান হতে সরে অন্যত্র সালাত আদায় করবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬১৬, ইবনু মাজাহ ১৪২৭, বায়হাক্বী (২/১৯০), মিশকাতুল মাসাবীহ (৯৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শুধু ইমামই নয়; বরং মুক্তাদীর জন্যও জায়গা বদলে সুন্নত পড়া মুস্তাহাব।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ (ফরয) সালাত পড়ার পর একটু সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা তার ডানে বা বাঁমে সরে (নফল) সালাত আদায় করতে কি অপরাগ হবে? (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪২৭, আবূ দাঊদ ১০০৬, আহমাদ ৯২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘উমার ইবনু ‘আত্বা ইবনু আবুল খুওয়ার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাফি‘ ইবনু জুবায়ির (রহঃ) তাকে ‘উমার (রাঃ) এর ভাগ্নে আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদের নিকট এটা জানার জন্য পাঠালেন যে, আমীর মু‘আবীয়াহ সালাতে আপনাকে কী করতে দেখেছিলেন। আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, একদা আমি মু‘আবিয়াহ (রাঃ) এর সাথে মিহরাবের মধ্যে জুমু‘আহর সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরিয়ে আমি একই স্থানে দাঁড়িয়ে (সুন্নাত) সালাত আদায় করলাম। ঘরে পৌছে তিনি লোক মারফত আমাকে বললেন, তুমি (আজ) যা করেছো এরূপ আর কখনো করবে না। জুমু‘আহর সালাত আদায়ের পর কোন কথা না বলে কিংবা মাসজিদ হতে বের না হয়ে সেখানে পুনরায় সালাত আদায় করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন যে, কথা না বলা কিংবা মাসজিদ হতে বের না হওয়া পর্যন্ত এক সালাতের সাথে আরেক সালাত মিলানো যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১১২৯, মুসলিম  ১৯২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮৩, আহমাদ (৪/৯৫), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৭০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উদ্দেশ্য হল, নামাযের জায়গা বেশী করলে, কিয়ামতে ঐ সকল জায়গা আল্লাহর আনুগত্যের সাক্ষ্য দেবে। (মিশকাত ৯৫৩হাদীসের টীকা দ্র:)।

অবশ্য এ সময় খেয়াল রাখা উচিৎ, যাতে উক্ত মুস্তাহাব পালন করতে গিয়ে কোন নামাযীর সিজদার জায়গার ভিতর বেয়ে পার হয়ে গুনাহ না হয়ে বসে।

সালাত আদায়কালীন মুক্তাদীর কর্তব্য

(১) ইমামের জন্যে অপেক্ষা করাঃ

ইমাম থাকতে তাঁর জায়গায় তাঁর বিনা অনুমতিতে অন্যের ইমামতি করা অবৈধ, আর তা বড় বেপরোয়া লোকের কাজ। এ সব লোকেদের ইমামের একটু দেরী সয় না। সামান্য দেরী হলেই আর তাঁর অপেক্ষা না করে জামাআত খাড়া করে দেয়। এ ধরনের ধৈর্যহারা মানুষরা কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমান।

(ক) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত হলে আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩৭, ৬৩৮, ৯০৯; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৪, আহমাদ ২২৭১২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসার সময় হলেই সালাতের ইক্বামাত দেয়া হত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থানে আসার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস (রাঃ) বলেন, (‘ইশার) সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কোণে এক লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি সালাত শুরু করতে আসায় বিলম্ব করায় অপেক্ষমান লোকজন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৫৪৪,  মুসলিম ৭৯০, আহমাদ (৩/১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ..... আবূ মাসউদ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে বললেনঃ যে সর্বাপেক্ষা বেশী কুরআনের পাঠক ও কুরআনী জ্ঞানের অধিকারী সে-ই কওমের (লোকজনের) ইমামাত করবে। সবাই যদি কুরআনের জ্ঞানের সমপর্যায়ের হয় সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সুন্নাত সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত হবে সে-ই ইমামাত করবে। সুন্নাহর জ্ঞানেরও সবাই সমান হলে হিজরাতে যে অগ্রগামী সে ইমামাত করবে। কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিজস্ব প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামাত করবে না কিংবা তার অনুমতি ছাড়া তার বাড়ীতে তার বিছানায় বসবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪১৮, ১৪১৯, ১৪২০,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন, ১৪০৪, ইসলামীক সেন্টার ১৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) অবশ্য অস্বাভাবিক বেশী দেরী হলে মুক্তাদীদের অধিকার আছে জামাআত করার। কিন্তু ইমাম উপস্থিত হওয়ার যথাসময় পার হওয়ার পর মুক্তাদীদের কোন এক উপযুক্ত ব্যক্তি ইমামতি শুরু করলে ইতিমধ্যে যদি নিযুক্ত ইমাম এসে পড়েন, তাহলে ইমাম অগ্রসর হয়ে নিজ ইমামতি করতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে ঐ মুক্তাদী ইমাম পিছে হ্‌টে যাবেন। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৮৩) ।

যেমন দু-দুবার হযরত আবূ বাক্র (রাঃ) নামায পড়াতে শুরু করলে ইতিমধ্যে মহানবী (সাঃ) এসে উপস্থিত হন এবং আবূ বাক্‌র পিছে হ্‌টে যান ও তিনি ইমামতি করেন। (বুখারী ৬৮৪, ৭১২, মুসলিম, সহীহ)।

হাদিসটি ‍নিম্নরুপঃ

সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতোমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলে, মুয়ায্যিন আবূ বাকর (রাযি.)-এর নিকট এসে বললেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইক্বামাত  দেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আবূ বাকর (রাযি.) সালাত আরম্ভ করলেন। লোকেরা সালাতরত অবস্থাতেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন সাহাবীগণ হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবূ বাকর (রাযি.) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগণ যখন অধিক করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করলেন- নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বাকর (রাযি.) দু‘হাত উঠিয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেন। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবূ বাকর (রাযি.) বললেন, আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভনীয় নয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের এক হাতে তালি দিতে দেখলাম। কারণ কী? শোন! সালাতে কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ্ বলবে। সুবহানাল্লাহ্ বললেই তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে। আর হাতে তালি দেয়া তো মহিলাদের জন্য। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৮৪, ১২০১,১২০৪,১২১৮,১২৩৪, ২৬৯০, ২৬৯৩, ৭১৯০ মুসলিম ৪/২২, হাঃ ৪২১ আহমাদ ২২৮৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) অবশ্য ইমাম চাইলে মুক্তাদী হয়েও নামায সম্পন্ন করতে পারেন। যেমন একদা এক সফরে মহানবী (সাঃ) নিজ প্রয়োজনে দূরে গেলে আসতে দেরী হল। হযরত আব্দুর রহ্‌মান বিন আওফ (রাঃ) ইমামতি করতে শুরু করলেন। ইতিমধ্যে তিনি এসে উপস্থিত হলে আব্দুর রহ্‌মান পিছে হটতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে ইঙ্গিতে বললেন যে, তুমি ইমামতি করতে থাক। অতঃপর তিনি সেদিন মুক্তাদী হয়ে নামায পড়লেন। (মুসলিম, সহীহ ২৭৪, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১২৩৬নং)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুপস্থিত ছিলেন। আমরা সম্প্রদায়ের নিকট যখন পৌঁছলাম তখন আবদুর রহমান ইবনু আওফ(রাঃ) লোকেদের এক রাকআত পড়ানো শেষ করেছেন মাত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত অনুভব করে তিনি পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাত পড়ে শেষ করতে ইশারা করেন। (সালাত শেষে) তিনি বলেনঃ তুমি উত্তম কাজ করেছো। তুমি এমনটই করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১২৩৬, সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ১০৯, মুসলিম ২৭১-২, আহমাদ ১৭৭০৫, ১৭৭১০, বুখারী’র “জুযউল কিরাআত” ১৯৬, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ১০৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ইক্তিদার নিয়তঃ

ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় মনে মনে ইক্তিদার নিয়ত (সংকল্প) করা জরুরী। যেহেতু মুক্তাদী অবস্থায় ইমামের অনুসরণ ওয়াজেব, ইমামের পিছনে মুক্তাদী ভুল করলে সহু সিজদা করতে হয় না এবং অনেক সময় ইমামের নামায বাতিল হলে মুক্তাদীরও বাতিল; তাই এই নিয়ত জরুরী। সুতরাং নিয়ত না হলে মুক্তাদীর নামায জামাআতী নামায হবে না। (আহ্‌কামুল ইমামাতি অল-ই’তিমামি ফিস সালাত, আব্দুল মুহ্‌সিন আল-মুনীফ ২০৬পৃ:)।

জ্ঞাতব্য যে, ‘ইক্তাদাইতু বিহাযাল ইমাম’ বলে মুখে উচ্চারিতব্য নিয়ত বিদআত।

উল্লেখ্য যে, রাসুল সা.  ও সাহাবীগণ মুখে উচ্চারণ করে এরকম নিয়ত কখনো করেননি। এটা বানানো নিয়ত।

(৩) যথাসময়ে জামাআতে দাঁড়ানোঃ

ইকামত হয়ে গেলে এবং ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে মুক্তাদীর বসে থাকা অথবা তেলাওয়াত বা মুনাজাতে মশগুল থাকা অথবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকা উচিৎ নয়। বরং সত্বর উঠে ইমামের সাথে তাকবীরে-তাহ্‌রীমা দিয়ে নামায শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ।

যেমন তাকবীরে-তাহ্‌রীমা ইমামের সাথে না পাওয়া এক বড় বঞ্চনার কারণ। অতএব ইমাম তকবীর দিয়ে ফেললে কোন কথাবার্তায় অথবা মনগড়া নিয়ত আওড়ানোতে অথবা মিসওয়াকের সুন্নত পালনে ব্যস্ত হয়ে তকবীর দিতে দেরী করা মোটেই উচিৎ নয়। ইমামের সাথে তাকবীরে-তাহ্‌রীমার একটি পৃথক মর্যাদা রয়েছে শরীয়তে।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীর) সাথে জামা'আতে নামায আদায় করতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়ঃ জাহান্নাম হতে নাজাত এবং মুনাফিকী হতে মুক্তি। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৪১, তা’লীকুর রাগীব- (১/১৫১), সহীহাহ– (২৬৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মুজাহিদ বলেন, এক বদরী সাহাবী একদা তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘তুমি আমাদের সাথে জামাআত পেয়েছ?’ ছেলে বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘প্রথম তাকবীর পেয়েছ?’ ছেলে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘যা তোমার ছুটে গেছে তা এক শত কালো চক্ষুবিশিষ্ট (উৎকৃষ্ট) উটনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর!’ (আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ ২০২১নং)।

অনুরুপভাবে জামাআত শুরু হয়ে গেলে সুন্নত নামাযে মশগুল থাকাও বৈধ নয়। বৈধ নয় কোন সুন্নত শুরু করা। ফজরের সুন্নত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া চলে না।

জামাআতের ইকামত শুরু হলে অন্য কোনো সালাত না পড়ার দলিলসমূহ

(ক) আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইকামাত দেয়া হলে ফারয (ফরয) সালাত ছাড়া অন্য কোন সালাতের নিয়্যাত করা যাবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৫২৯-১৫৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১০ ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫১৪, ইসলামীক সেন্টার ১৫২৩, ইবনে হাজার ২/১৭৪, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩৫২, প্রমুখ) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সুওয়ায়দ ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইকামত বলা হয় তখন ফরয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৮৬৫-৮৬৬, ৮৬৭, ইবনু মাজাহ ১১৫১, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) ১৫২৩, মুসলিম ৭১০/১-২, তিরমিযী ৪২১, আবূ দাঊদ ১২৬৬, আহমাদ ৮১৭৯, ৮৪০৯, ৯৫৬৩, ১০৩২০, ১০৪৯৩; দারিমী ১৪৪৮।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ইয়াহ্‌য়া ইবনু হাবীব ইবনু আরাবী (রহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আগমন করল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। সে ব্যক্তি দু রাক’আত সালাত আদায় করে সালাতে শরীক হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত শেষ করে বললেনঃ হে অমুক! তোমার সালাত কোনটি, তুমি যে সালাত আমাদের সাথে আদায় করেছ সেটি, না যে সালাত একা আদায় করেছ? (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৮৬৯, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৫২, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) ১৫২৮, মুসলিম ৭১২, নাসায়ী ৮৬৮, আবূ দাঊদ ১২৬৫।)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহাইনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত এক ব্যক্তিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তখন ফজরের সালাতের ইকামত হয়ে গেছে। তিনি তাকে কী যেন বললেন যা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। সে সালাত শেষ করলে আমরা তাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছেন? লোকটি বললো, তিনি আমাকে বললেনঃ অচিরেই তোমাদের কেউ ফজরে চার রাকআত (ফরয) সহীহ্ পড়বে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১১৫৩, বুখারী ৬৬৩, মুসলিম ৭১১-২, নাসায়ী ৮৬৭, আহমাদ ২২৪১৩, ২৭৭১২; দারিমী ১৪৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) কুতায়বা (রহঃ) ... ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফজর সালাতের ইকামত বলা হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে সালাত আদায় করছে আর মুয়াযযিন ইকামত বলছে। তিনি তখন বললেন তুমি কি ফজরের সালাত চার রাক’আত আদায় করছো? (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৮৬৮, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) ১৫২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ, জামাআত খাড়া হলে ফরয বা (ঐ নামায তাকে পড়তে হলে) ঐ নামাযে শামিল হওয়া ছাড়া পৃথক করে কোন নফল বা সুন্নত নামায পড়া বৈধ নয়। অর্থাৎ ইকামতের পর আর কোন সুন্নত বা নফল নামায শুদ্ধ হবে না।। (শরহুন নওবী ৫/২২১, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৭৫, আউনুল মা’বূদ ৪/১০১)।

অবশ্য কারো সুন্নত পড়া কালে যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সে দ্বিতীয় রাকআতে থাকলে বাকীটা হাল্কা করে পড়ে পূর্ণ করে নেবে। পক্ষান্তরে প্রথম রাকআতে থাকলে নামায ছেড়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ২৪/১৪, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৪৫)।

সুন্নত ছুটে গেলে তা আদায় করার সময় দুইটি। যথাঃ

(১) ফরজের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে।

(২) সূর্যোদয়ের পর।

ফরজের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে

কায়স ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ফজরের সালাতের পর দু রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখে বলেনঃ ফজরের সালাত কি দুবার? লোকটি তাঁকে বললো, আমি ফজরের পূর্বের দু রাকআত পড়তে পারিনি, সেই দু রাকআত পড়লাম। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১১৫৪, তিরমিযী ৪২২, আবূ দাঊদ ১২৬৭, আহমাদ ২৩২৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সূর্যোদয়ের পর

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু রাকআত সুন্নাত না পড়ে ঘুমিয়ে রইলেন। তিনি সূর্যোদয়ের পর তা পড়লেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১৫৫, তিরমিযী ৪২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আগে ভাগে সালাতে উপস্থিত হলে তার ফজিলত

আহমদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুগীরা (রহঃ) ... যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান এবং আবূ আব্দুল্লাহ আগারর আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবাগ্রে সালাতে যে ব্যক্তি উপস্থিত হয় সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি উট কুরবানী করে, তারপর যে ব্যক্তি আসে সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে ব্যাক্তি আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে। পরে যে ব্যক্তি আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মুরগী আল্লাহর রাস্তায় দান করে। তারপর যে ব্যক্তি আগমন করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করে। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৮৬৫, ইবনু মাজাহ  ১০৯৪, বুখারি হাঃ ৮৮১, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১৮৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪)  যথা নিয়মে কাতার বাঁধা :

মহান আল্লাহর তা’যীম প্রকাশের উদ্দেশ্যে কাতার বাঁধার যে নিয়ম আছে সেই অনুযায়ী কাতার বাঁধা মুক্তাদীর কর্তব্য। আর তা যথাক্রমে নিম্নরুপ :-

(ক)  কাতার সোজা করা :

কাতার সোজা করা ওয়াজেব। কাতার সোজা হবে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এক অপরের কাঁধ ও পায়ের গাঁট বরাবর সোজা রেখে; যাতে একজনের কাঁধ আগে এবং অপর জনের পিছে না হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পায়ের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে আঙ্গুল মিলিয়ে কাতার সোজা হবে না। কারণ, পা ছোট-বড় থাকার ফলে কাতার বাঁকা থেকে যাবে। আর বসা অবস্থায় বাহুমূল বা কাঁধের সাথে বাহুমূল বা কাঁধ বরাবর থাকলে কাতার সোজা বলে ধরা যাবে।

যেমন মসজিদে কাতারের দাগ থাকলে দাগের মাথায় বুড়ো আঙ্গুল রেখে কাতার সোজা হয় না। কারণ, এতে যার পা লম্বা সে কাতার থেকে পিছনের দিকে এবং যার পা ছোট সে কাতারের সামনের দিকে বের হয়ে থাকবে। সুতরাং পায়ের গোড়ালিকে দাগের মাথায় রাখলে তবেই কাতার বাঞ্ছনীয় সোজা হবে।

কাতার সোজা করার ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) বলেন,

(১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাতারসমূহ সোজা করবে। কারণ কাতারসমূহ সোজা করার দ্বারাই সালাত পূর্ণতা পায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৭, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯৩, বুখারী  ৭১৮, ৭২৩; মুসলিম ৪৩৩, নাসায়ী ৮১৪-১৫, ৮৪৫, আহমাদ ১১৬০০, ১২৪০১, ১২৪২৯, ১২৪৭৩, ১৩২৫২, ১৩৩৬৬, ১৩৪৮৩, ১৩৫৫৭, ১৩৬৮২; দারিমী ১২৬৩।)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সালাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর রহমতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার রহমত থেকে কেটে দেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১০২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৬, নাসায়ী ৮১৮, আহমাদ ৫৭২৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৯,  সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৫, আহমাদ ৫৭২৪, সহীহাহ্ ৭৪৩, সহীহ আল জামি ১১৮৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন, আর বলতেনঃ তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেনঃ নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি মহান আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) দু‘আ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৪, নাসায়ী ৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(খ)  কাতার মিলিয়ে ঘন হয়ে জমে দাঁড়ানো এবং মাঝের ফাঁক বন্ধ করা :

কাতারে দাঁড়ানোর সময় ঘন হয়ে দাঁড়ানো জরুরী; যাতে মাঝে কোন ফাঁক না থাকে। পার্শ্ববর্তী নামাযীর পায়ের পাতার সাথে পায়ের পাতা (পায়ের বাইরের দিকটা সোজা কেবলামুখী করে কনিষ্ঠা আঙ্গুল থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অংশ) ও বাহুর সাথে বাহু লাগিয়ে জমে দাঁড়াতে হবে নামাযীকে। আল্লাহর এ দরবারে আমীর-গরীব, ছোট-বড় ও প্রভু-দাসের কোন ভেদাভেদ নেই, কোন বেআদবী নেই। সাহাবাগণ কাতারে পরস্পর এইভাবেই দাঁড়াতেন।

পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়ানোর আমল মহানবী (সাঃ)-এর যামানায় প্রচলিত ছিল। তিনি সাহাবাদের সে আমল দেখেও বেআদবী মনে করে বাধা দেননি। তিনি নামাযের মধ্যে যেমন সামনে দেখতেন তেমনি পিছনে। ঘন হয়ে দাঁড়ানোর ব্যাখ্যাতে সাহাবাগণের এই আমল অবশ্যই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাতে তিনি-সম্মতি প্রকাশ করেছেন। বলা বাহুল্য, এ কাজ যে সুন্নত তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

মহানবী (সাঃ) নামাযের কাতার তীরের মত সোজা করতেন। কাতার পুরোপুরি সোজা হলে যখন রাসুল সা. তা বুঝতে পাতেন তখন তিনি তাকবীরে তাহ্‌রীমা দিতেন।

(ক) সিমাক ইবনু হারব সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কাতারবদ্ধ করতেন এমন সোজা করে যেরূপ তীরের ফলা সোজা করা হয়। এমনকি তিনি যখন বুঝতে পারলেন, আমরা এ সম্পর্কে তাঁর তা‘লীম আত্মস্থ করেছি ও বুঝেছি, তখন একদা তিনি (আমাদের দিকে) ঘুরে দেখতে পেলেন, একজনের বুক সামনে দিকে এগিয়ে আছে। তিনি বললেনঃ তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের চেহারায় বৈপরিত্য সৃষ্টি করে দিবেন।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৫,  সুনান ইবনু মাজাহ ৯৯৪,  মুসলিম ২২৭, নাসায়ী ৮০৯, ইবনু মাজাহ ৯৯৪, বুখারী ৭১৭,  তিরমিযী ২২৭, নাসায়ী ৮১০, আহমাদ (৪/২৭৫), ১৭৯১৮, ১৭৯৩৩, ১৭৯৫৯, ১৭৯৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬২, আহমাদ (৪/২৭৬), ইবনু খুযাইমাহ (১৬০) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্ তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৯২, মুসলিম ৯৯২, আহমাদ (৫/১০১), ২০৪৫০, ২০৫১৯, নাসায়ী ৭৩৮, ৮১৬। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, ঘন করে দাঁড়ানোর অর্থ এই নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং এইরুপ দাঁড়ানোতে নামাযের একাগ্রতা ও বিনয় নষ্ট হতে পারে। অতএব যাতে পায়ে পা এবং বাহুতে বাহু স্বাভাবিকভাবে লেগে থাকে তারই চেষ্টা করতে হবে। আর তার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই পা ফাঁক করে দাঁড়াতে হবে।

সামনের কাতার খালি থাকলে (রাকআত বা রুকূ ছুটে যাওয়ার ভয়ে) পিছনে দাঁড়ানো বৈধ নয়। যেমন সামনের কাতারে ফাঁক দেখা দিলে তা বন্ধ করা জরুরী। সামনে কাতারে যেতে দূর হলে এবং নামাযের মধ্যে হলেও অগ্রসর হয়ে যেতে হবে কাতার মিলানোর উদ্দেশ্যে। এর জন্য রয়েছে আদেশ, পুরস্কার এবং তিরস্কারও।

(ঘ) আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে, তারপর তার পরবর্তী কাতার পূর্ণ করবে। এরপর কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকলে তা যেন শেষ কাতারে হয়।  (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭১, নাসায়ী ৮১৭, আহমাদ (৩/১৩২), বায়হাক্বী (৩/১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনু ‘উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, ‘‘তোমাদের ভাইয়ের হাতে’’ শব্দগুলো নেই। ( তিনি আরো বলেন,) শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমত হতে কর্তন করবেন।[1]

ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ শাজারার নাম হচ্ছে কাসীর ইবনু মুররাহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেন, ‘‘তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও’’ এর অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি এসে কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিই তার জন্য নিজ নিজ কাধঁ নরম করে দেবে, যেন সে সহজে কাতারে শামিল হতে পারে। [1] (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৬, নাসায়ী ৮১৮, আহমাদ (৫৭২৪), ইবনু খুযাইমাহ (১৫৪৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যাক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯৯৫, আহমাদ ২৪০৬৬, সহীহাহ ১৮৯২, ২৫৩২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ)  পাশের নামাযীর জন্য নিজের বাহুকে নরম করে দাঁড়ানো :

পাশের নামাযী যাতে মনে কষ্ট না পায় তার জন্য প্রত্যেক নামাযীর কর্তব্য নিজ নিজ বাহুকে নরম করে রাখা। এতে উভয়ের মনে বিদ্বেষ দূর হয়ে প্রীতির সঞ্চার হবে। দূর হবে ঘৃণা ও কাতারের ফাঁক।

মহানবী (সাঃ) বলেন,

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট হচ্ছে ঐসব লোক, যারা সালাতের মধ্যে নিজেদের কাঁধ বেশি নরম করে দেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭২, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৬৬, বায়হাক্বী ৩/১০১, ত্বাবারানী আওসাত্ব’(হাঃ ৫২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বলা বাহুল্য, পায়ে পা লাগাবার সময়, বাম পা-কে ডান পায়ের নিচে বের করে বসার সময়ও পাশের নামাযীর সাথে কঠেfরতার পরিচয় দেওয়া উচিৎ নয়। বরং কাতারে চাপাচাপি বা ঠসাঠসি থাকলে পা বের করে অপরকে কষ্ট দেওয়ার চাইতে পা না বের করে উক্ত সুন্নত পালন না করাই উত্তম। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ২২/৩০)।

(ঘ)  কাতারসমূহের মাঝে বেশী দূরত্ব না রাখা :

ইমাম ও প্রথম কাতার এবং অনুরুপ দ্বিতীয় ও তার পরের কাতারসমূহের মাঝে প্রয়োজনের অধিক দূরত্ব রাখা উচিৎ নয়। যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে ঘন কর, কাতারগুলোর মাঝে ব্যবধান কাছাকাছি কর এবং তোমাদের ঘাড়সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখ। সেই আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার জান আছে, নিশ্চয় আমি শয়তানকে কাল ভেঁড়ার বাচ্চার মত তোমাদের কাতারের ফাঁকে ফাঁকে প্রবেশ করতে দেখছি।” (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৭, বুখারী ৭১৮, মুসলিম, সহীহ ৪২৩, ৪৩৩, ৪৩৪, নাসায়ী ৮১৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৫, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সামনে কাতার করার মত জায়গা ফাঁক থাকলে পিছনে কাতার বেঁধে নামায হবে না। যেমন পিছনে কাতার বাঁধলে এবং সামনে ফাঁকা জায়গায় রাস্তায় লোক চলাচল করলেও নামায হবে না। মসজিদ পূর্ণ হয়ে গেলে তারপর রাস্তা পূর্ণ হবে এবং তার পরে দোকান ইত্যাদিতে কাতার বাঁধা চলবে। রাস্তা খালি থাকতে দোকানে কাতার বাঁধা বৈধ হবে না। (মাজমূউফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ ২৩/৪১০, দ্র: তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৮২পৃ:)।

(ঙ)  থামসমূহের ফাঁকে কাতার না বাঁধা :

(১) ‘আবদুল হামীদ ইবনু মাহমূদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সাথে জুম্মার সালাত আদায় করি। লোকজন বেশি হওয়ায় আমরা খুঁটি সমূহের মাঝখানে যেতে বাধ্য হই। এতে করে আমরা আগে পিছে হয়ে যাই। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমরা এভাবে (দুই খুঁটির মাঝখানে) দাঁড়ানো হতে বিরত থাকার চেষ্টা করতাম। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৩, তিরমিযী  ২২৯, নাসায়ী ৮২০), আহমাদ (৩/১৩১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) মুআবিয়াহ ইবনু কুররা (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যমানায় আমাদেরকে দু খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী হতে নিষেধ করা হতো এবং আমাদেরকে কঠোরভাবে বিরত রাখা হতো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১০০২, সহীহ আবূ দাউদ-৬৭৭, সহীহাহ ৩৩৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এর কারণ হলো এই যে, মাঝে থাম হওয়ার ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর এই জন্য ইমাম বা একাকী নামাযীর জন্য দুই থামের মাঝে দাঁড়িয়ে নামায পড়া নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। যেমন অধিক ভিড়ে মসজিদে জায়গা না থাকলে ঐ জায়গাতেও কাতার বাঁধা প্রয়োজনে বৈধ। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ২০৮-২০৯পৃ:)।

পরিশেষে ইবনুল কাইয়েম (রহঃ)-এর একটি মূল্যবান উক্তির উল্লেখ করে এ বিষয়ের ইতি টানি; তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সামনে বান্দার দুই সময় দাঁড়াতে হবে। নামাযে তাঁর সামনে দাঁড়াতে হয় এবং তাঁর সাক্ষাতের সময় (কিয়ামতে) তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি প্রথম সময়ে (নামাযে) সঠিকভাবে দাঁড়াবে, তার জন্য দ্বিতীয় সময়ে (কিয়ামতে) দাঁড়ানো সহ্‌জ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি প্রথম সময়ে দাঁড়ানোতে অবহেলা প্রদর্শন করবে এবং তার যথার্থ হক আদায় করবে না, তার জন্য দ্বিতীয় সময়ে (কিয়ামতে) দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

(৫) ইমামের অনুসরণ করা :

যথা নিয়মে ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজেব এ বং তাঁর অন্যথা আচরণ গুনাহর কাজ।

ইমামের পশ্চাতে সাধারণত: মুক্তাদীর ৪ প্রকার আচরণ হতে পারে :

(ক) অগ্রগমন : অর্থাৎ ইমামের আগে-আগে রুকূ-সিজদা করা অথবা মাথা তোলা। এমন আচরণ গুনাহর কাজ। বরং জেনেশুনে স্বেচ্ছায় করলে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে। (মিন আহ্‌কামিস স্বালাহ্‌, ইবনে উসাইমীন ৪৬পৃ:) ।

যেমন ইমামের আগে তাকবীরে তাহ্‌রীমা দিলে নামাযের বন্ধনই শুদ্ধ হবে না। ভুলে দিয়ে ফেললে পুনরায় ইমামের তাকবীর দেওয়ার পর তাকবীর দিতে হবে। (সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১৬৩পৃ:)।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “ইমাম এই জন্য বানানো হয়েছে যে, তার অনুসরণ করা হবে। সুতরাং তার বিরুদ্ধাচরণ করো না।”

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(১) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেন। ফলে তার শরীরের ডানপাশ আহত হল। আমরা তাকে দেখতে গেলাম। ইতিমধ্যে সালাতের সময় হয়ে গেল। তিনি আমাদের নিয়ে বসে বসে সালাত আদায় করলেন। আমরাও তার পিছনে বসে বসে সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাত শেষ করে বললেনঃ ইমাম এজন্যই বানানো হয় যে, তার অনুসরণ করা হবে। অতএব সে যখন আল্লাহু আকবার বলে তোমরাও "আল্লাহু আকবার" বল। সে যখন সিজদা করে, তোমরাও সিজদা কর। সে যখন হাত উচু করে দাঁড়ায় তোমরাও হাত উঁচু করে দাঁড়াও। সে যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলে, তোমরা তখন "রব্বানা- ওয়ালাকাল হামদ" বল। সে যখন বসে সালাত আদায় করে (ইমামতি করে), তোমরাও সবাই মিলে বসে সালাত আদায় কর। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮০৭-৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১১-৪১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮০৪, ইসলামিক সেন্টার ৮১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ইমাম এজন্য নিযুক্ত করা হয় যে, তার অনুসরণ করা হবে, তোমরা কখনো তার উল্টো করো না। সে যখন আল্লাহু আকবার বলে, তোমরাও "আল্লাহু আকবার বলো। সে যখন রুকু করে, তোমরাও তখন রুকূ’ করো। সে যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলে তোমরাও তখন আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। সে যখন সাজদায় যায়, তোমরাও তখন সাজদায় যাও। সে যখন বসে সালাত আদায় করে, তোমরাও সবাই মিলে বসে সালাত আদায় করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮১৬-১৯, ২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪১৪-১৫, ১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৯৬০, ৮৪৬, ১২৩৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬০৩, বুখারী ৭২২, ৭৩৪, নাসায়ী ৯২১-২২, আবূ দাঊদ ৬০৩, আহমাদ ৭১০৪, ৮২৯৭, ৮৬৭২, ৯০৭৪, ৯১৫১, ২৭২০৯, ২৭২১৫, ২৭২৭৩, ২৭৩৮৩; দারিমী ১৩১১, মিশকাত ৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১৩, ইসলামিক সেন্টার ৮২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এখন ভারী হয়ে গেছি। অতএব আমি যখন রুকূ করি, তোমরাও তখন রুকূ করো এবং আমি যখন মাথা উঠাই, তোমরাও তখন মাথা উঠাও। আমি যখন সিজদা্ করি, তোমরাও তখন সিজদা্ করো। আমি যেন কোন ব্যাক্তিকে আমার আগে রুকূ ও সাজদায় যেতে না দেখি। (সুনান ইবনু মাজাহ ৯৬২, সহীহাহ ১৭২৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪)  উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার অসুস্থ থাকার কারণে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজগৃহে সালাত আদায় করেন এবং বসে সালাত আদায় করছিলেন, একদল সাহাবী তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন যে, বসে যাও। সালাত শেষ করার পর তিনি বললেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই সে যখন রুকূ‘ করে তখন তোমরাও রুকূ‘ করবে এবং সে যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠায় তখন তোমরাও মাথা উঠাবে, আর সে যখন বসে সালাত আদায় করে, তখন তোমরা সবাই বসে সালাত আদায় করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৮৮, ১১১৩,১২৩৬,৫৬৫৮; মুসলিম ৪/১৯, ৪১২, আহমাদ ২৪৩০৪, আধুনিক প্রকাশনী ৬৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। তাই তোমরা রুকূ‘ করার সময়, সিজদা্ করার সময়, দাঁড়াবার সময় সালাম ফিরাবার সময় আমার আগে যাবে না, আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার সম্মুখ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে দেখে থাকি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৩৭, মুসলিম ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৬) ‘আলী ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন জামা‘আতের সালাতে শরীক হওয়ার জন্যে আসবে তখন ইমাম যে অবস্থায় থাকবে ও যে কাজ করবে সেও সে কাজ করবে।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৪২, আত্ তিরমিযী ৫৯১, সহীহ আল জামি ২৬১, মু‘জাম আল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০/২৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭)  আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৯১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৯৬১, মুসলিম ৪/২৫,  ৪২৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৮, তিরমিযী ৫৮২, নাসায়ী ৮২৮, আবূ দাঊদ ৬২৩, আহমাদ ৭৪৮১, ৭৬১২, ৯২১১, ৯৫৭৪, ৯৭৫৪, ১০১৬৮; দারিমী ১৩১৬, ইরওয়াহ ৫১০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) পশ্চাদগমন: অর্থাৎ ইমামের অনেক পিছনে দেরী করে রুকূ-সিজদা করা। ইমাম রুকূ বা সিজদা থেকে উঠে গেলেও মুক্তাদীর দেরী করে রুকূ বা সিজদাতে পড়ে থাকা। এমন করাও বৈধ নয়। কারণ, রসূল (সাঃ) বলেন, “যখন সে রুকূ করে তখন তোমরা রুকূ কর। যখন সে সিজদা করে, তখন তোমরা সিজদা কর।”

(গ) সহ্গমন: অর্থাৎ চটপট ইমামের সাথে সাথেই রুকূ-সিজদা ইত্যাদি করা। এরুপ করাটাও অবৈধ।

(ঘ) অনুগমন: অর্থাৎ, ইমাম রুকূ-সিজদা করলে তবেই রুকূ-সিজদা ইত্যাদি করা। আর এরুপ করাটাই ওয়াজেব।

 বারাআ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি মিথ্যাবাদী নন তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ  বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদা্য় না যেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করতেন না। তিনি সিজদা্য় যাওয়ার পর আমরা সিজদা্য় যেতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৯০, ৭৪৭, ৮১১ মুসলিম ৪/৩৯, ৪৭৪, আহমাদ ১৮৭৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামের তাকবীর বলার পর তাকবীর বলতে হবে। ইমামের ‘আমীন’-এর ‘আ-’ বলতে শুরু করার পরেই ‘আমীন’ বলতে হবে।

ইমামের দুই সালাম ফিরার আগে মুক্তাদীর সালাম ফিরা বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১২/৯১)।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। তাই তোমরা রুকূ‘ করার সময়, সিজদা্ করার সময়, দাঁড়াবার সময় সালাম ফিরাবার সময় আমার আগে যাবে না, আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার সম্মুখ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে দেখে থাকি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৩৭, মুসলিম ৪২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

আফযল হল ইমামের দুই দিকে সালাম ফিরার পরই সালাম ফিরা। অবশ্য যদি কেউ ইমামের ডান দিকে সালাম ফিরার পর ডান দিকে এবং তাঁর বাম দিকে সালাম ফিরার পর বাম দিকে সালাম ফিরে, তাহলে তা দোষের নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৬৭)।

অনেকের মতে ইমামের দুই সালাম ফিরার আগে যদি মুক্তাদী সালাম ফিরে দেয় অথবা বাকী নামায পড়ার জন্য উঠে যায়, তাহলে তার নামায নষ্ট হয়ে নফলে পরিণত হয়ে যায়। (ফাতওয়া শায়খ সা’দী ১৭৪পৃ:, মুত্বাসা ৯৭পৃ:)।

জ্ঞাতব্য যে, গুপ্ত বিষয়সমূহ ইমামের আগে-পিছে বা সাথে-সাথে হলে কোন দোষের নয়। যেমন সির্রী নামাযে সূরা ফাতিহা, কোনও নামাযে তাশাহহুদ ইমামের আগে বা সাথে সাথে পড়া হলে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। কারণ, সাধারণত: এর শুরু ও শেষ বুঝা যায় না এবং এ ব্যাপারে ইমামের অনুসরণ করতে মুক্তাদী আদিষ্ট নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৬৭-২৬৮)।

বুকে হাত বাঁধেন না এমন ইমামের পশ্চাতে বুকে হাত বেঁধে এবং রফ্‌য়ে ইয়াদাইন করেন না এমন ইমামের পশ্চাতে রফ্‌য়ে ইয়াদাইন করে মুক্তাদীর নামায পড়া ইমামের বিরুদ্ধাচরণ নয়। যেমন যে ইমাম তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতবিশিষ্ট নামাযের শেষ বৈঠকে বাম পা-কে ডান পায়ের রলার নিচে বের করে বসেন না, তাঁর পিছনে মুক্তাদী ঐরুপ বসলে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ হয় না।

ইমাম ফজরের নামাযে হাত তুলে কুনুত পড়লে মুক্তাদীর জন্য হাত তুলে আমীন বলে তাঁর অনুসরণ করা জরুরী। তবে সেই ইমামের পিছনে নামায পড়া উত্তম, যে ফজরে কুনুত পড়ে না। যেহেতু তা বিদআত। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৯৩)।

ইমাম সালাম ফিরার পর মুক্তাদীদের প্রতি ফিরে না বসা পর্যন্ত মুক্তাদীর উঠে মসজিদ ত্যাগ করা উচিৎ নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৪৩২, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৯১)।

ইমাম তাশাহ্‌হুদে দেরী করলে মুক্তাদীর চুপচাপ বসে থাকা উচিৎ নয়। বরং এ সময়ে সহীহ নববী দুআ দ্বারা মুনাজাত করে আল্লাহর কাছে বহু কিছু চেয়ে নেওয়া উচিৎ। কারণ, এটা হল দুআ কবুল হওয়ার সময়। এখানে মুনাজাত বলতে দুই হাত তুলে মুনাজাত নয়। তাশাহুদ বৈঠকে কুরআন ও হাদিস হতে যার যতো ইচ্ছে দোয়াসমূহ পাঠ করতে থাকবে।

রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া করবে” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৩৫, ৮৩১)।

এতদবিষয়ে “সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম” এর প্রথম খন্ডের দ্বিতীয় অংশে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।

সতর্কতার বিষয় যে, তাশাহহুদের বৈঠকে ইমামকে দেরী করতে দেখে অনেকে গলা ঝাড়তে শুরু করে। এমন করা তাদের ধৈর্যহীনতা ও অজ্ঞতার পরিচয়।

(৬) ইমামের পশ্চাতে ক্বিরাআত পড়াঃ

ইমাম সশব্দে ক্বিরাআত করলে মুক্তাদীকে ক্বিরাআত করতে হয় না। বিশেষ করে সশব্দে কোন সূরা পাঠ করা মুক্তাদীর জন্য বৈধ নয়। বরং ইমামের ক্বিরাআত চুপ করে শুনতে হয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে শো ন এবং চুপ থাক। (কুরআন মাজীদ ৭/২০৪)।

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেহরী সালাত  অর্থাৎ- শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া সালাত শেষ করে সালাত আদায়কারীদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করেছো? এক ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! (আমি পড়েছি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই তো, আমি সালাতে মনে মনে বলছিলাম, কি হলো, আমি ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতে আটকিয়ে যাচ্ছি কেন? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনার পর লোকেরা রসূলের পেছনে জেহরী সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৫৫, আবূ দাঊদ ৮২৬, তিরমিযী ৩১২, নাসায়ী ৯১৯, মালিক ২৮৬, আহমাদ ৮০০৭, ইবনু মাজাহ ৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....'ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যুহর অথবা আসর এর সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার পিছনে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى (সুরাহ আলা) পাঠ করেছ? এক ব্যক্তি বলল, আমি। এর মাধ্যমে কল্যাণই কামনা করেছিলাম। তিনি বললেন, আমি জানতে পেরেছি তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার কাছ থেকে কুরআন ছিনিয়ে নিচ্ছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৭৩, ৭৭৪, ৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৭০, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাদের ইমাম আছে ইমামের কিরাআতই তার কিরাআত। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৫০, আহমাদ ১৪২৩৩, ইরওযা ৮৫০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অনুসরণ করার জন্যই তো ইমাম নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো। যখন তিনি কিরাআত পড়েন তখন তোমরা নীরব থাকো। যখন তিনি গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায-যুআলীন বলেন, তখন তোমরা আমীন বলো। যখন তিনি রুকূ করেন, তখন তোমরাও রুকূ করো। আর যখন তিনি সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলেন, তখন তোমরা আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়ালাকাল হামদ বলো। যখন তিনি সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করো। তিনি বসা অবস্থায় সালাত পড়লে তোমরাও সকলে বসা অবস্থায় সালাত পড়ো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৪৬, বুখারী ৭২২, ৭৩৪; মুসলিম ৪১৪-১৭, নাসায়ী ৯২১-২২, আবূ দাঊদ ৬০৩, আহমাদ ৭১০৪, ৮২৯৭, ৮৬৭২, ৯০৭৪, ৯১৫১, ২৭২০৯, ২৭২১৫, ২৭২৭৩, ২৭৩৮৩; দারিমী ১৩১১, মাজাহ ৯৬০, ১২৩৯, মিশকাত ৮৫৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

এ হলো সাধারণ হুকুম।

নিঃশব্দে  সূরা ফাতিহা পড়া

জেহরী নামাযে সশব্দে মুক্তাদী কোন ক্বিরাআত করতে পারবে না। কিন্তু নিঃশব্দে কেবল সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। কারণ, সূরা ফাতিহার রয়েছে পৃথক বৈশিষ্ট্য।

(ক) ‘উবাদাহ ইবনু সমিত (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হলো না।* (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭৫৬, মুসলিম  ৭৬০-৭৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ, ৮৩৭, তিরমিযী ২৪৭, নাসায়ী ৯১০-১১, ৯২০; আবূ দাঊদ ৮২২-২৪, আহমাদ ২২১৬৯, ২২১৮৬, ২২২৩৭, ২২২৪০; দারিমী ১২৪২, ইরওয়াহ ৩০২, সহীহ আবী দাউদ ৭৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৭১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

* আমাদের দেশের অনেক মুছল্লী ইমামের পেছনে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করেন না, এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘আমলের বিপরীত। ইমামের পিছনে মুক্তাদীকে অবশ্যই সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে। মুক্তাদী ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা না পড়লে তার সালাত, সালাত বলে গণ্য হবে না।

(খ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল অথচ তাতে উন্মুল কুরআন (সূরাহ ফা-তিহাহ্‌) পাঠ করেনি তার সালাত ত্রুটিপূর্ণ থেকে গেল, পূর্ণাঙ্গ হল না। এ কথাটা তিনবার বলেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত আদায় করব তখন কী করব? তিনি বললেন, তোমরা চুপে চুপে তা পড়ে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ আমার এবং আমার বান্দার মাঝে আমি সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য), আল্লাহ তা'আলা তখন বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (তিনি বিচার দিনের মালিক), তখন আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে আল্লাহ আরো বলেনঃ বান্দা তার সমস্ত কাজ আমার উপর সমর্পণ করেছে। সে যখন বলে, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি) তখন আল্লাহ বলেন। এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। (এখন) আমার বান্দার জন্য রয়েছে সে যা চায়। যখন সে বলে,اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ (আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নি'আমাত দান করেছেন, তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে; তখন আল্লাহ বলেনঃ এসবই আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দার জন্যে রয়েছে সে যা চায়। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),৭৬৪-৭৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৩,  সুনান ইবনু মাজাহ ৮৩৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)৮২০-৮২২, তিরমিযী ২৯৫৩, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬, নাসায়ী ৯০৯, আহমাদ ৭২৪৯, ৭৭৭৭, ৭৮৪১, ৯২৪৫, ৯৫৮৪, ৯৬১৬, ৯৮৪২, ৯৯৪৬; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৬২, ইসলামিক সেন্টার ৭৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার উবাই ইবনু কা‘বকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি সালাতে কিভাবে কুরআন পড়ো? উত্তরে উবাই ইবনু কা‘ব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূরা আল ফাতিহাহ্ পড়ে শুনালেন। (তাঁর পড়া শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! এর মতো কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর বা ফুরকান-এ (কুরআনের অন্য কোন সূরাতেও) নাযিল হয়নি। এ সূরা হলো সাব্‘উল মাসানী (পুনরাবৃত্ত সাতটি আয়াত) ও মহান কুরআন। এটি আমাকেই দেয়া হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২১৪২, তিরমিযী ২৮৭৫, দারিমী ৩৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পক্ষান্তরে ইমাম জেহরী নামাযের শেষ এক বা দুই রাকআতে অথবা সির্রী নামাযে নিঃশব্দে ক্বিরাআত করলে অথবা তাঁর ক্বিরাআত শুনতে না পাওয়া গেলেও মুক্তাদী সূরা ফাতিহা অবশ্যই পড়বে এবং সেই সাথে অন্য সূরাও পড়তে পারে।

যে আবূ হুরাইরা বলেন, ‘এই কথা আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শোনার পর লোকেরা তাঁর সাথে জেহরী নামাযে ক্বিরাআত করা থেকে বিরত হয়ে গেল।’ সেই (সূরা ফাতিহার গুরুত্ব নিয়ে হাদীস বর্ণনাকারী) আবূ হুরাইরাকে প্রশ্ন করা হলো যে, (সূরা ফাতিহার এত গুরুত্ব হলে) ইমামের পশ্চাতে কিভাবে পড়া যাবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার মনে মনে পড়ে নাও। কারণ, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি নামায (সূরা ফাতিহা) কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি ; অর্ধেক আমার জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা তাই পায়, যা সে প্রার্থনা করে।’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮২৩, মুসলিম ৩৯৫, তিরমিযী ২৯৫৩, ইবনু মাজাহ্ ৮৩৮, আহমাদ ৭২৯১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সশব্দে আমীন

জেহরী ছালাতে ইমামের সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সরবে ‘আমীন’ বলবে। ইমামের আগে নয় বরং ইমামের ‘আমীন’ বলার সাথে সাথে মুক্তাদীর ‘আমীন’ বলা ভাল। তাতে ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদীর সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা সম্ভব হয় এবং ইমাম, মুক্তাদী ও ফেরেশতাদের ‘আমীন’ সম্মিলিতভাবে হয়। যেমন এরশাদ হয়েছে,

কুতুবে সিত্তাহ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছগুলির সারকথা হ’ল এই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, যখন ইমাম ‘আমীন’ বলে কিংবা ‘ওয়ালায্ যা-ল্লীন’ পাঠ শেষ করে, তখন তোমরা সকলে ‘আমীন’ বল। কেননা যার ‘আমীন’ আসমানে ফেরেশতাদের ‘আমীন’-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করা হবে’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮২৫, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২; মুওয়াত্ত্বা (মুলতান, পাকিস্তান ১৪০৭/১৯৮৬) হা/৪৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়, পৃঃ ৫২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে, তোমরাও ‘আমীন’ বলবে। কারণ যে ব্যক্তির ‘আমীন’ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) আমীনের সাথে মিলে যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন। (বুখারী ৭৮০, মুসলিম ৪১০, আবূ দাঊদ ৯৩৬, নাসায়ী ৯৩৮, তিরমিযী ২৫০, ইরওয়া ৩৪৪, সহীহ আল জামি ৩৯৫)।

আর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইমাম বলে, ‘‘গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’, তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। কারণ যার ‘আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র ‘আমীন’ শব্দের সাথে মিলে যায় তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর। (বুখারী ৭৮২)।

সহীহ মুসলিমের হাদীসের শব্দগুলোও এর মতই। আর সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী, অর্থাৎ- ইমাম বা অন্য কেউ ‘আমীন’ বলবে, তোমরাও সাথে সাথে ‘আমীন’ বলো। আর যে ব্যক্তির ‘আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী ৬৪০২)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৮২৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ‘গায়রিল মাগযূবে ‘আলাইহিম ওয়ালায্ যা-ল্লীন’ বলার পরে তাঁকে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতে শুনলাম’। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮৪৫, দারাকুৎনী হা/১২৫৩-৫৫, ৫৭, ৫৯; দারেমী, আবূ দাঊদ ৯৩২, তিরমিযী ২৪৮, ইবনু মাজাহ্ ৮৫৫, দারিমী ১২৮৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এক্ষণে যদি কোন ইমাম ‘আমীন’ না বলেন, কিংবা নীরবে বলেন, তবুও মুক্তাদী সরবে ‘আমীন’ বলবেন। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৫৭৫, অনুচ্ছেদ-১৩৯)।

অনুরূপভাবে যদি কেউ জেহরী ছালাতে ‘আমীন’ বলার সময় জামা‘আতে যোগদান করেন, তবে তিনি প্রথমে সরবে ‘আমীন’ বলে নিবেন ও পরে নীরবে সূরায়ে ফাতিহা পড়বেন। ইমাম ঐ সময় পরবর্তী ক্বিরাআত শুরু করা থেকে কিছু সময় বিরতি দিবেন। যাতে সূরা ফাতিহা ও পরবর্তী আমীন ও ক্বিরাআতের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায়।

উল্লেখ্য যে, এ সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং সেই সময় পরিমাণ ইমামের চুপ থাকা সংক্রান্ত দলীলটি জঈফ। (মিশকাত হা/৮১৮, মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী ৭ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা, জুলাই ২০০৪, প্রশ্নোত্তর: ৪০/৪০০, পৃঃ ৫৫-৫৬ )।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’টি নীরবতার স্থান স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা তাঁর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার পর, আর একটি নীরবতা হলো, ‘‘গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’ পাঠ করার পর।

য‘ঈফ: আবূ দাঊদ ৭৭৯, ইরওয়া ৫০৫, দারিমী ১২৭৯। কারণ এটি সামুরাহ্ (রাঃ) হতে হাসান বসরীর বর্ণনা। আর এটি সামুরাহ্ (রাঃ) হতে হাসান আল বসরীর হাদীস শ্রবণ বিষয়ক কোন প্রসিদ্ধ মতবিরোধ নয় কারণ তিনি সামুরাহ্ (রাঃ) হতে কিছু হাদীস শ্রবণ করেছেন। বরং এটি এই কারণে যে, হাসান আল বসরী (রহঃ) যদিও একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি কিন্তু মুদাল্লিস ‘আন্‘আনাহ্ সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। অতএব তার শায়খ থেকে কেবলমাত্র শ্রবণটা এক্ষেত্রে উপকারে আসবে না বরং শ্রবণের বিষয়টি স্পষ্ট করা আবশ্যক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৮১৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

‘আমীন’ শুনে কারু গোস্বা হওয়া উচিৎ নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,

‘ইহুদীরা তোমাদের সবচেয়ে বেশী হিংসা করে তোমাদের ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ -এর কারণে’। (ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/৫১২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহূদীরা তোমাদের কোন ব্যাপারে এত বেশি ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। (সুনান ইবনু মাজাহ ৮৫৬, সহীহাহ ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কারণ এই সাথে ফেরেশতারাও ‘আমীন’ বলেন। ফলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, ‘আমীন’ বলার পক্ষে ১৭টি হাদীছ এসেছে। (আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭১)।

যার মধ্যে ‘আমীন’ আস্তে বলার পক্ষে শো‘বা থেকে একটি রেওয়ায়াত আহমাদ ও দারাকুৎনীতে এসেছে أو أَخْفَي بِهَا صَوْتَهُ خَفَضَ বলে। যার অর্থ ‘আমীন’ বলার সময় রাসূল (ছাঃ)-এর আওয়ায নিম্নস্বরে হ’ত’। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ান ছাওরী থেকে এসেছে رَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ বলে। যার অর্থ- ‘তাঁর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হ’ত’। হাদীছ বিশারদ পন্ডিতগণের নিকটে শো‘বা থেকে বর্ণিত নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার হাদীছটি ‘মুযত্বারিব’ (مضطرب)। অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নাম ও শব্দগত ভুল থাকার কারণে ‘যঈফ’। পক্ষান্তরে সুফিয়ান ছওরী (রাঃ) বর্ণিত সরবে আমীন বলার হাদীছটি এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে ‘ছহীহ’। (দারাকুৎনী হা/১২৫৬-এর ভাষ্য, আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭২; নায়লুল আওত্বার ৩/৭৫)।

অতএব বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন ছহীহ হাদীছে বর্ণিত জেহরী ছালাতে সশব্দে ‘আমীন’ বলার বিশুদ্ধ সুন্নাতের উপরে আমল করাই নিরপেক্ষ মুমিনের কর্তব্য। তাছাড়া ইমামের সশব্দে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ‘ছিরাতুল মুস্তাক্বীম’-এর হেদায়াত প্রার্থনার সাথে মুক্তাদীগণের নীরবে সমর্থন দান কিছুটা বিসদৃশ বৈ-কি!

অতএব জেহরী ছালাতে ইমামের সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম-মুক্তাদী সকলে সরবে ‘আমীন’ বলবেন। যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

মুছল্লীদেরকে বিশেষ শিক্ষা প্রদান করা

(১) মসজিদে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার দোয়া শিক্ষা দেয়াঃ

মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমে রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করতে হয়। এরপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করে নিম্ন স্বরে সালাদ দিতে হয়। বাম পা দিয়ে বাহির হওয়ার সময় একইভাবে দরুদ ও সালাম, পরে বের হওয়ার দোয়া পাঠ শেষে সালাম দিয়ে বের হতে হবে। এই নিয়ম অধিকাংশ মুছল্লী জানে না। আমি যেসব মসজিদে সালাত আদায় করেছি বা করছি ইমামগণকে আজ অবধি উক্ত নিয়ম শিক্ষা দিতে দেখি নাই। তাই ইমামগণের কর্তব্য এ বিষয়টি শিক্ষা দেয়া। আসুন সহিহ নিয়ম জেনে নেই।

(১) মসজিদে ঢুকার সময় ডান পা আগে বাড়িয়ে দিবে এবং নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পড়ে নিবেঃ

(ক) আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন বলে: : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭২, দারিমী ২৬৯, ১৩৯৪, ২৬৯১, মুসলিম ৭২৮,  আহমাদ (৩/১৯৭), ইবনুস-সুন্নী ৮৮, নাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৫৬২৭, ২৩০৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) হাইওয়াহ ইবনু শুরায়িহ (রহঃ) বলেন, আমি ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুসলিমের সাথে সাক্ষাত করে বলি, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেনঃ ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, এতটুকুই? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, কেউ এ দু‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, এ লোকটি আমার (অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা) থেকে সারা দিনের জন্য বেঁচে গেল। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৬, নাসায়ী ২৯৩, ইবনু মাজাহ ৫৪০, দারিমী ১৩৭৬, আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা করুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমতিকা” (হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হতেন তখনও মুহাম্মাদের (নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা ফাদলিকা” (হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৭১, তিরমিযী ৩১৪, আহমাদ ২৫৮৭৭-৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাসজিদে প্রবেশ করার সময় আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার পর এই দোয়াটি পড়তে হবে।

“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমতিকা”

অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।

দরুদ পাঠঃ এখানে উল্লেখিত চারটি দরুদের মধ্যে যেকোনো একটি পাঠ করলেই চলবে।

(ক) ‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম ৩/১৭ হাঃ ৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনী ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ!

(আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া ‘ আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।

আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম৩/১৭ , আহমাদ ২৩৬৬১, আধুনিক প্রকাশনী ৩১১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  ب -"الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ ".

(صحيح البخاري, رقم الحديث ৬৩৫৮).

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আপনার অনুগত প্রিয়পাত্র ও রাসূল মুহাম্মাদকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীমকে সম্মানিত করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩৫৮, ৪৭৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) د - "اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ".

(سنن النسائي، رقم الحديث ১২৯২، وصححه الألباني).

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করুন”। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর সালাম পৌঁছে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আব্দুল ওয়াহাব ইবনু আব্দুল হাকাম ওয়াররাক ও মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ... আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলার কতক ফেরেশতা এমনো রয়েছে, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌছিয়ে থাকেন। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১২৮৫,মিশকাত  ৯২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর দরূদ পৌঁছে দেওয়া হয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (২) মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো শুনতে পায় এমন স্বরে তাদেরকে সালাম করবেঃ

(ক)  ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ) .....আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো-)

(১) কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে,

(২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে,

(৩) সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভাল উপদেশ দিবে,

(৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে, তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলে) রহমতের দু’আ করবে,

(৫) সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং

(৬) সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে যাবে।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মাজলিসে পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়, তবে বসে পড়বে। অতঃপর যখন প্রস্থানের উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের চেয়ে উত্তম নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৬০, তিরমিযী ২৭০৬, আবূ দাঊদ ৫২০৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৯৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭০৭, আহমাদ ৯৬৬৪, ‘নাসায়ী’র কুবরা ১০১৭৪, আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২০২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুস্ সগীর ১০৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

১ ও ২ নং হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

(ক) মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করতে হবে।

(খ) এরপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করতে হবে।

(গ) তারপর নিম্নস্বরে সালাম দিতে হবে।

(ঘ) মসজিদ থেকে প্রস্থানের সময় আবারও রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া পাঠ করতে হবে।

(২) খুতবা চলা অবস্থায় ঘাড় টপকিয়ে সামনের কাতারে আসতে না দেয়ার শিক্ষা দেয়াঃ

মুছল্লী দিয়ে মসজিদ ভরপুর। তবুও দেখা যায় পিছন থেকে এলাকার নেতা প্রকৃতির কতিপয় মুছল্লী বা সাধারণ মুছল্লীও ঘাড় টপকিয়ে সামনের কাতারে ঠেলাঠেলি করে বসে। এমনকি খুতবা চলা অবস্থাতেও এই দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু ঘাড় টপকিয়ে সামনে যাওয়ার বিষয়ে ইমামকে কথা বলতে দেখা যায় না। অথচ রাসুল সা. অনুরুপ মুছল্লীকে উক্ত কাজ করতে নিষেধ করতেন।

খুতবা চলা অবস্থায় যদি কেউ মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যেতে চায়, তবে কোন কথা না বলেই তাকে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। বসে যাওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করবে বা তার কাপড় টেনে ধরবে। তবে উত্তম হচ্ছে খতীব নিজেই একাজ করবে এবং তাকে বসিয়ে দিবে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন। তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় দেখলেন, জনৈক ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল, তিনি তাকে বললেন,

“বসে পড় তুমি মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছো।”

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) আবুল জাহেরিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জুমু‘আহর দিনে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বললেন, একদা জুমু‘আহর দিন এক ব্যক্তি লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খুত্ববাহ দিচ্ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি বসো, তুমি লোকদের কষ্ট দিয়েছো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১১১৮, নাসায়ী ১৩৯৭), আহমাদ (৪/১৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জুমুআহর দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। সে লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি বসো, তুমি (অন্যকে) কষ্ট দিয়েছ এবং অনর্থক কাজ করেছ। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১১১৫, তালীকুর রগীব ১/২৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনের জামা‘আতে যে ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে জাহান্নামের ‘পুল’ বানানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৯২, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১১১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৮৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৩১২৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ৪৩৭, য‘ঈফ আল জামি ৫৫১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)। উল্লেখ্য যে, তিরমিজী ও ইবনু মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটিকে যঈফ বলা হয়েছে।

(৩) পশ্চিম দিকে দুই পা খাড়া করে দুই হাতে (পায়ের) নলা জড়িয়ে ধরে বসে না থাকার শিক্ষা দেয়াঃ

জুমার দিন মসজিদে গেলে প্রতি কাতারেই দেখা যায, এক/দুই জন অনুরুপভাবে বসে আছেন। অথচ ইমাম তা দেখছেন কিন্তু কিছুই বলছেন না। রাসুল সা. এভাবে বসে থাকতে নিষেধ করেছেন।

সাহল ইবনু মুআয (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু'আর দিনে ইমামের খুতবা চলার সময়ে দুই হাতে (পায়ের) নলা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫১৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(৪) খুৎবা চলাকালীন কথা বার্তা না বলে চুপচাপ বসে থেকে খুৎবা শোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া ও এসময় আল্লাহর প্রশংসামূলক দোয়াসমূহ পাঠ করার শিক্ষা দেয়াঃ

মসজিদে কথা বার্তা বলা নিষেধ। এমনকি পাশের লোক কথা বলছে তাকে “চুপ করুন” এমন কথা বললেও নিজে কথা বলা হবে। তাই চুপ করুন এমন কথাও বলা যাবে না। 

(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমুআহর দিন ইমামের খুতবাহ দানকালে যখন তুমি তোমার সাথীকে বললে, চুপ করো তখন তুমি অনর্থক কাজ করলে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১০, বুখারী ৯৩৪, মুসলিম ৮৫১-২, তিরমিযী ৫১২, নাসায়ী ১৪০১-২, আবূ দাঊদ ১১১২, আহমাদ ৭২৮৮, ৭৬২৯, ৭৭০৬, ৮৮৫৭, ৮৯০২, ৯৯২৭, ১০৩৪২, ১০৫০৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৩২, দারিমী ১৫৪৮-৪৯, ইরওয়াহ ৬১৯।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআহর সালাত এ (খুতবাহ দিতে) দাঁড়িয়ে সূরাহ তাবারাকা (মুলক) পাঠ করেন এবং আমাদের উদ্দেশে আল্লাহ্‌র দিনসমূহের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আবূ দারদা অথবা আবূ যার(রাঃ) আমাকে খোঁচা মেরে বলেন, সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে? আমি তো তা এখনই শুনলাম। তিনি তার দিকে ইশারা করে বলেন, চুপ করুন। সাহাবীরা চলে গেলে তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে তা অবহিত করেননি? উবাই (রাঃ) বলেন, আজকে আপনার সালাত হয়নি, অনর্থক কাজই হয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে বর্ণনা করেন এবং উবাই যা বলেছেন, তাঁকে তাও অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উবাই ঠিকই বলেছে। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১১১, আহমাদ ২০৭৮০, তালীকুর রগীব ২৫৭, সহীদ তারগীব ৭২০, ইরওয়াহ ৮০-৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

খুৎবা চলাকালীন দোয়া কবুলের সময়ঃ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু'আ ফেরত দেয়া হয় না। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২১২,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৭১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫২১, ইরওয়া ২৪৪, আত্ তারগীব ২৬৫, আহমাদ ৩/১৫৫ ও ২২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে আজান বলতে আমাদের সমাজে প্রচলিত প্রথম আজান নয়। খুৎ’বার জন্যে যে আজান দেয়া হয় সেই আজান থেকে ইকামত দেয়া পর্যন্ত তথা খুৎবা চলাকালীন সময়।

উক্ত হাদিসে “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু'আ ফেরত দেয়া হয় না” বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা তো উক্ত সময়ে মনোযোগসহকারে শুধু খুৎবা শুনি তাহলে কোন্ দোয়ার কথা বলা হয়েছে। আসলে এসময় খুৎবা শোনার সাথে সাথে মনে মনে আল্লাহ তায়ার প্রশংসামূলক বিভিন্ন দোয়া পাঠসহ কল্যাণমূলক বিভিন্ন দোয়া পাঠ করা যেতে পারে। রাসুল সা. বলেছেন, এই সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না।

ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে, উক্ত বিষয়টি মুছল্লীদের বুঝিয়ে বলা ও আমল করার অভ্যস্ত করা।

(৫) মসজিদে বাম হাতের উপর ভর করে বসে থাকতে নিষেধ করাঃ

খুৎবা চলাকালীন বা অন্য সময় দেখা যায়, অনেক মুছল্লী বাম হাত বাম পাশে রেখে বা পিঠের পিছনে রেখে পাতার উপর ভর করে বসে থাকে। এভাবে বসে থাকা নিষেধ। অথচ এই নিষেধ বিষয়টি ইমামকে বলতে দেখা যায় না।

আমর ইবনুস শারীদ (রহঃ) থেকে তার পিতা শারীদ ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি আমার বাম হাত পিঠে নিয়ে তার পাতার উপর বসেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি তাদের মতো বসছো, যারা অভিশপ্ত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৮৪৮, আহমাদ, বায়হাক্বী)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামের কর্তব্য হবে, সামনে এমন লোক বসা অবস্থায় পেলে হাদিসটি শুনিয়ে দেয়া এবং এরুপভাবে না বসার উপদেশ দেয়া।

(৬) সহিহ হাদিস ভিত্তিক বিদআতমুক্ত সালাত আদায় করার পদ্ধতি শিক্ষা দেয়াঃ

সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম এর প্রথম খন্ড  “সালাত আদায়ের সহিহ পদ্ধতি ও সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহ” এ কিভাবে সালাত আদায় করতে তার বিশদ সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। রাসুল সা. যেভাবে তাকবীর দিতেন, কিরআত পাঠ করতেন, যেভাবে রুকু সিজদাহ করতেন ঠিক সেভাবে সালাত আদায় না করলে তার সালাত হবে না।

মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সলাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সলাত আদায় করবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হাযির হলাম। বিশদিন ও বিশ রাত আমরা তাঁর নিকট অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের পিছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর। আর তাদের (দ্বীন) শিক্ষা দাও, এবং (সৎ কাজের) নির্দেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালিক (রাযি) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামত করে। (সহিহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ৬৩১,  ৬২৮, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিযী ২০৫, ২৮৭, নাসায়ী ৬৩৪, ৬৩৫, ১১৫৩, আবূ দাউদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩, মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬, বুলগুল মারাম-৩২৭, ৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।

মসজিদে গেলে দেখা যায়, প্রায় মুছল্লীই তাড়াহুড়ো করে সালাত আদায় করে থাকেন। তথা রুকু-সিজদা সংক্ষিপ্ত করে থাকেন, কাঠ ঠোকরা পাখির মতো করে সিজদা দেন। এভাবে সালাত আদায় করলে সে চোর বলে সাব্যস্ত হবেন।

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চোরদের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম চোর হল সেই ব্যক্তি, যে নামায চুরি করে। সকলে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সে নামায কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, সে তার নামাযের রুকূ-সিজদা পূর্ণরূপে করে না। অথবা তিনি বললেন, সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা করে না। (অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে চটপট রুকু-সিজদা করে)। (আহমাদ ২২৬৪২, ত্বাবারানী ৩২০৭, ইবনে খুযাইমা ৬৬৩, হাকেম ৮৩৫, সহীহ তারগীব ৫২৪,  হাদীস সম্ভার, হাদিস নং-৮৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

 আসলে সালাতের প্রতিটি রুকনে প্রায় সমান সময় নিয়ে সালাত আদায় করতে হবে। সালাতের এইসব স্থানে যেসব দোয়া রাসুল সাঃ পাঠ করতেন মূলত সেসব দোয়া না জানার কারনে মুছল্লীগণ সালাতকে সংক্ষিপ্ত করে থাকেন।

এখন ইমামগণের দায়িত্ব হবে নিজেরা প্রথমে বিদআতমুক্ত সালাত শিক্ষা গ্রহণ করবেনঅ এরপর মুছ্ল্লীদের রাসুল সা. এর তরীকা মোতাবেক সালাত শিক্ষা দিবেন।

(সমাপ্ত)

অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) “সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম”-প্রথমখন্ড।

(খ) “সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি”-দ্বিতীয় খন্ড

(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহঃ 

(ঘ) জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব,ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী (তৃতীয় খন্ড-প্রথম অংশ)

========================================

(ঙ) “কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান” জানতে এর উপর ক্লিক করুন। -অপেক্ষা করুন।

(চ) “জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” জানতে এর উপর ক্লিক করুন। -অপেক্ষা করুন।

=========================================

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...