বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক
সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম
তৃতীয় খন্ড
(ক) জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী,
(খ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী,
(গ) কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান,
(ঘ) জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল।
প্রথম অংশ
জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী
ভূমিকাঃ ইসলামের প্রতিটি বিধানেই দুনিয়া ও আখিরাতের অসংখ্য কল্যাণ নিহিত
আছে। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত প্রতিটি হৃদয় সেসব কল্যাণ উপলব্ধি ও অবলোকন করে। মুমিনের
জীবনে ঈমানের পর আবশ্যকীয় একটি বিধান হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়। এর কল্যাণ বলে শেষ
করা যাবে না। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পদ্ধতিগত বিধান হচ্ছে জামাআতে আদায় করা।
ইসলাম জামাআতবদ্ধ জীবন
পছন্দ করে; অপছন্দ করে বিচ্ছিন্নতাকে। কারণ, শান্তি ও শৃংখলা রয়েছে জামাআতে। আর সালাত
একটি বিশাল ইবাদত। (শিশু, ঋতুমতী মহিলা ও পাগল ছাড়া) সালাত পড়তেও হয় মুসলিম সমাজের
সকল মুছল্লিকে। তাই সমষ্টিগতভাবে এই ইবাদতের জন্যও একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম-নীতির প্রয়োজন
ছিল। বিধিবদ্ধ হল জামাআত।
জামাআতে সালাত আদায়ের অর্থঃ
“জামাআত” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো জিনিসের আধিক্য। তেমনিভাবে
কিছু সংখ্যক মানুষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কোথাও একত্রিত হওয়াকেও “জামা‘আত” বলে আখ্যায়িত
করা হয়। শরী‘আতের পরিভাষায় “জামা‘আত” বলতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দু’ (ইমাম ও মুক্তাদি)
বা ততোধিক ব্যক্তির মসজিদ অথবা সেরূপ কোনো জায়গায় একই সময়ে একত্রিত হওয়াকে বুঝানো হয়।
জেনে রাখা দরকার যে, জামা‘আতে সালাতের বিধান কখন থেকে শুরু হয়েছে
তা নিয়ে ‘আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। ইবনু হাজার মাক্কী দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, জামা‘আতে
সালাতের বিধান মদীনাতে শুরু হয়েছে।
শায়খ রিয্ওয়ান বলেনঃ জামা‘আতে সালাতের বিধান মক্কাতেই শুরু হয়েছে।
প্রমাণ স্বরূপ তিনি বলেন যে, মি‘রাজের ঘটনার রাতের সকালে তথা ফজরে জিবরীল (আঃ) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এবং সাহাবীগণের নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করেছিলেন
এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাহ্ (রাঃ) ও ‘আলী (রাঃ)-কে নিয়ে মক্কাতে
জামা‘আতে সালাত আদায় করেছেন। তবে তা প্রকাশ পায়নি এবং নিয়মিতভাবে মদীনাতেই জামা‘আতে
সালাত আদায় করেছেন, তার আগে নয়। এজন্যই বলা হয় যে, মদীনাতে জামা‘আতের বিধান শুরু হয়েছে।
জামাআতের গুরুত্বঃ
নামাজ জামাআত সহকারে আদায় করা ওয়াজেব। বিধায় বিনা ওজরে জামাআত ত্যাগ
করা কাবীরাহ্ গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রুকূকারিগণের
সাথে রুকূ কর। (সুরা আল বাকারা, আয়াত নং-৪৩)।
জামাআতে নামায না পড়লে নামায কবুল নাও হতে পারেঃ
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া
(বিনা কারণে) জামা‘আতে সালাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) সালাত কবুল হবে না।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভয়-ভীতি
অথবা অসুস্থতা। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৫৫১, সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৩, ইরওয়াহ ৩৩৭, মুস্তাদরাক ১/২৪৫, সহিহ তারগিব ৪২২নং)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন জনপদে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রে বসবাস করা
সত্ত্বেও তারা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা না করলে তাদের উপর শয়তান আধিপত্য বিস্তার
করে। অতএব তোমরা জামা‘আতকে আকঁড়ে ধর। কারণ নেকড়ে (বাঘ) দলচ্যুত বকরীটিকেই খেয়ে থাকে।
যায়িদাহ (রহঃ) বলেন, সায়িব (রহঃ) বলেছেন, এখানে জামা‘আত বলতে সালাতের জামা‘আতকেই বোঝানো
হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৪৭, হাকিম (১/২১১), আহমাদ (৫/১৯৬, ৪৪৬),
ইবনু খুযাইমাহ (১৪৮৬)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
যারা নামাযের জামাআতে মসজিদে হাজির হয় না, মহানবী (সাঃ) তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে
দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেনঃ
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি সালাত কায়েমের নির্দেশ দেই এবং এক
ব্যাক্তিকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ করি। অতঃপর আমি লাকড়িসহ একদল লোককে নিয়ে
বেরিয়ে যাই সেইসব লোকের নিকট যারা জামাআতে উপস্থিত হয়নি, অতঃপর তাদেরসহ তাদের বসতি
আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে দেই। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯১,
বুখারী ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬৯, ১৩৭০, ১৩৭১, তিরমিযী
২১৭, নাসায়ী ৮৪৮, আবূ দাঊদ ৫৪৮-৪৯, আহমাদ ৭২৮৪, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, ৮৫৭৮, ৮৬৭৩, ৮৬৮৩,
৯১১৯, ৯১৯২, ৯৭৫০, ৯৮৬০, ১০৪২৩, ১০৪৮৯, ১০৪৫২, ১০৫৭৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯২, দারিমী
১২১২, ১২৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
কোন অন্ধ মানুষকেও মহানবী (সাঃ) জামাআতে অনুপস্থিত থেকে ঘরে নামায পড়ার
অনুমতি দেননিঃ
(ঘ) ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অন্ধ, আমার ঘরও দূরে
অবস্থিত। আমার একজন পথচালকও আছে, কিন্তু সে আমার অনুগত নয়। এমতাবস্থায় আমার জন্য ঘরে
সালাত আদায়ের অনুমতি আছে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
কি আযান শুনতে পাও? ইবনু উম্মে মাকতূম বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার জন্য
অনুমতির কোন সুযোগ দেখছি না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৫৫২, ইবনু মাজাহ ৭৯২, হাকিম (১/২৪৭), নাসায়ী ৮৫১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ ও
ইয়াকুব আদ দাওরাকী (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক অন্ধ
লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল হে আল্লাহর রসূল! আমাকে ধরে
মসজিদে নিয়ে আসার মতো কেউ নেই। অতঃপর তাকে বাড়ীতে সালাত আদায় করার অনুমতি প্রদান
করার জন্য সে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আবেদন জানাল। তিনি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বাড়ীতে সালাত আদায় করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু
যে সময় লোকটি ফিরে যেতে উদ্যত হলো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন? তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ (আমি আযান
শুনতে পাই)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তুমি মসজিদে আসবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৭২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৫৯, ইসলামীক
সেন্টার ১৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যুদ্ধের ময়দানে শত্রু দলের সম্মুখেও জামাআত মাফ নয়ঃ
(ঙ) আল্লাহ বলেন,
“আর আপনি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবেন তারপর তাদের সাথে সালাত
কায়েম করবেন(১) তখন তাদের একদল আপনার সাথে যেন দাঁড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে।
তাদের সিজদা করা হলে তারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে
শরীক হয়নি তারা আপনার সাথে যেন সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে(২)
কাফেররা কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র ও আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও
যাতে তারা তোমাদের উপর একেবারে ঝাপিয়ে পড়তে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও
বা পীড়িত থাক তবে তোমরা অস্ত্র রেখে দিলে তোমাদের কোন দোষ নেই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা
অবলম্বন করবে। আল্লাহ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন”। (সুরা আন নিসা-১০২)।
আয়াতে বর্ণিত সালাতটিকে বলা হয়, ‘সালাতুল খাওফ’ বা ভয়-ভীতিকালীন
নামায। এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ‘উসফান’ উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। কেউ বলে
বসল যে, এ সময় যদি আক্রমণ করা যেতো তবে তাদেরকে জব্দ করা যেতো। তখন তাদের একজন বলল,
এরপর তাদের আরেকটি সালাত রয়েছে, যা তাদের কাছে আরও প্রিয়। অর্থাৎ আসরের সালাত। তখন
তাদের কেউ কেউ সে সময়ে মুসলিমদের উপর আক্রমণের ইচ্ছা পোষণ করলে, আল্লাহ্ তা'আলা এ
আয়াত নাযিল করে ‘সালাতুল খাওফ’ পড়ার নিয়ম-পদ্ধতি বর্ণনা করে দেন। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ ২/৪৬৩; মুসান্নাফ আবদির রাযযাক ২/৫০৫; মুসনাদে
আহমাদ ৪/৫৯; আবু দাউদ ১২৩৬: নাসায়ী: ১৭৭; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৩০৮]
জামাআত সহকারে নামায একান্ত বাঞ্জিত ও জরুরী কর্তব্য না হলে ঐ ভীষণ
সময়ে মরণের মুখে তিনি তা মাফ করতেন।
তদনুরুপ জামাআত বাঞ্জিত বলেই প্রয়োজনে নামায জমা করে পড়া বিধিবদ্ধ
করা হয়েছে। মসজিদের পথে শত্রুর ভয় হলে, প্রচুর ঠান্ডা বা বৃষ্টি হলে অথবা সফরে থাকলে
যোহ্র-আসর এবং মাগরেব-এশাকে জমা করে পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে জামাআতের ফযীলত লাভ করার
জন্যই।
জামাআত ত্যাগ করা মুমিনের গুণ নয়; বরং তা মুনাফিকের গুণ। মহান আল্লাহ
এদের গুণ বর্ণনা করে বলেন,
অর্থাৎ, ওরা (মুনাফেকরা) নামাযে শৈথিল্যর সাথে হাজির হয় এবং অনিচ্ছাকৃত
ভাবেই দান করে থাকে। (সুরা আত তওবা, আয়াত-৫৪)।
আয়াতে মুনাফিকদের দুটি আলামত বর্ণিত হয়েছে। সালাতে অলসতা ও দান
খয়রাতে কুন্ঠাবোধ। এতে মুসলিমদের প্রতি হুশিয়ার প্রদান করা হয়েছে, যেন তারা মুনাফিকদের
এই দুপ্রকার অভ্যাস থেকে দুরে থাকে। বরং তারা যেন সালাতে অত্যন্ত তৎপরতা ও আগ্রহের
সাথে হাজির হয়, তাদের মধ্যে বিমৰ্ষভাব, অনীহা না থাকে। দানের ক্ষেত্রেও তারা যেন মন
খুলে খুশী মনে একমাত্র আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করে দান করে। কোনক্রমেই মুনাফিকদের
মত না হয়।
বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামায মুনাফেকের
জন্য অধিক ভারী।
(চ) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে
ফজরের সালাত আদায় করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বললেন,
অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
পুনরায় বললেন, অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সব সালাতের মাঝে এ দু’টি সালাত (ফাজর ও ‘ইশা) মুনাফিক্বদের
জন্যে খুবই কষ্টসাধ্য। তোমরা যদি জানতে এ দু’টি সালাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা
হাঁটুর উপর ভর করে হলেও সালাতে আসতে।
সালাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাতারের মতো (মর্যাদাপূর্ণ)।
তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌঁছার
চেষ্টা করতে। আর একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সালাত আদায়
করা অনেক সাওয়াব। আর দু’জনের সাথে মিলে সালাত আদায় করলে একজনের সাথে সালাত আদায় করার
চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা হয়, তা
আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১০৬৬, আবূ দাঊদ ৫৫৫, নাসায়ী ৮৪৩, সহীহ আত্ তারগীব ৪১১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ছ) ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও আবূ কুরায়ব [শব্দগুলো
তাদের দু'জনের] (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইশা ও ফজরের সালাত আদায় করা মুনাফিকদের সর্বাপেক্ষা
কঠিন। তারা যদি জানত যে, এ দু'টি সালাতের পুরস্কার বা সাওয়াব কত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে
বুক হেঁচড়ে হলেও তারা এ দু' ওয়াক্ত জামা'আতে উপস্থিত হত। আমি ইচ্ছা করেছি সালাত আদায়
করার আদেশ দিয়ে কাউকে ইমামতি করতে বলি। আর আমি কিছু লোককে নিয়ে জ্বালানী কাঠের বোঝাসহ
যারা সালাতের জামা'আতে আসে না তাদের কাছে যাই এবং আগুন দিয়ে তাদের ঘর-বাড়ী জালিয়ে
দেই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন. ১৩৫৫, ইসলামীক
সেন্টার ১৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের
দেখেছি জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে শুধু মুনাফিক্বরাই বিরত থাকত যাদের মুনাফিক্বী
অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল অথবা রুগ্ন লোক। তবে যে রুগ্ন লোক দু’ব্যক্তির ওপর ভর করে চলতে
পারতো সেও জামা‘আতে আসত। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের পথসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর শিখানো হিদায়াতের
পথসমূহ থেকে একটি এই যে, যে মসজিদে আযান দেয়া হয় সেটাতে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়
করা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অপর একটি বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
যে ব্যক্তি আগামীকাল আল্লাহর সাথে পূর্ণ মুসলিম হিসেবে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত হতে চায়,
সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত উপযুক্ত সময়ে আদায় করার প্রতি যত্নবান হয়ে যেখানে সালাতের
জন্যে আযান দেয়া হয় সেখানে সালাত আদায় করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের রসূলের জন্যে
‘সুনানুল হুদা’ (হিদায়াতের পথ) নির্দিষ্ট করেছেন। জামা‘আতের সাথে এ পাঁচ বেলা সালাত
আদায় করাও এ ‘সুনানুল হুদার’ মধ্যে একটি অন্যতম। তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সালাত আদায়
কর, যেভাবে এ পিছে পড়ে থাকা লোকগুলো (মুনাফিক্ব) তাদের বাড়িতে সালাত আদায় করে, তবে
তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দিলে। যদি তোমরা তোমাদের নবীর হিদায়াতসমূহ
ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।
তোমাদের মধ্যে যারা ভাল করে পাক-পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর এসব
মসজিদের কোন মসজিদে সালাত আদায় করতে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি কদমে একটি করে
নেকী দান করবেন, তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করবেন এবং তার একটি পাপ মাফ করে দেন। আমি
আমাদেরকে দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক্বরা ছাড়া অন্য কেউ সালাতের জামা‘আত থেকে পিছে
থাকতো না বরং তাদেরকে দু’জনের কাঁধে হাত দিয়ে এনে সালাতের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৭২, মুসলিম ৬৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ
(রহঃ).....আবূশ শাসা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) এর
সাথে মসজিদে বসেছিলাম। ইতোমধ্যে মুয়াজ্জিন (সালাতের জন্য) আযান দিলো। এ সময়ে জনৈক
ব্যক্তি মাসজিদ থেকে উঠে চলে যেতে থাকল। আর আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) তার প্রতি তাকিয়ে
দেখতে থাকলেন। লোকটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। এ দেখে আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) বললেন এ
ব্যক্তি তো আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নীতি ও পদ্ধতির নাফরমানী
করল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৭৫, ১৩৭৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৭৫, ইসলামী
ফাউন্ডেশন ১৩৬২. ইসলামীক সেন্টার ১৩৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঞ) উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক মসজিদে থাকা অবস্থায় আযান দেয়ার পর বিনা ওযরে বের
হলে ও আবার ফিরে আসার ইচ্ছা না থাকলে সে লোক মুনাফিক্ব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৭৬, ইবনু মাজাহ্ ৭৩৪, সহীহ আত্ তারগীব
২১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
যারা আহবানকারী মুআযযেনের আযানে সাড়া দিয়ে জামাআতে উপস্থিত হয় না,
কিয়ামতে তাদের বিশেষ অবস্থা ও শাস্তি রয়েছেঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, যেদিন পদনালী উন্মুক্ত করা হবে এবং ওদেরকে সিজদা করার জন্য
আহবান করা হবে, কিন্তু ওরা তা করতে সক্ষম হবে না। হীনতাগ্রস্ত হয়ে ওরা ওদের দৃষ্টি
অবনত করবে। অথচ যখন ওরা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল, তখন তো ওদেরকে সিজদা করতে আহবান
করা হয়েছিল। (কুরআন মাজীদ ৬৮/৪২-৪৩) ।
(ট) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি
বিকীর্ণ করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাকে সাজ্দাহ করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে
লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সাজ্দাহ করত, তারা কেবল বাকী থাকবে। তারা সিজদা করতে ইচ্ছে
করলে তাদের পিঠ একখন্ড কাঠের ন্যায় শক্ত হয়ে যাবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৯১৯, আধুনিক প্রকাশনী ৪৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৫৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
যে ব্যক্তি জামা'আতে উপস্থিত না হয়ে বাড়ীতে একাকী সালাত আদায় করে তিনি নবীর
সুন্নাত পরিত্যাগকারীঃ
(ঠ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আগামীকাল কিয়ামতের দিন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর
সাথে সাক্ষাৎ পেতে আনন্দবোধ করে, সে যেন ঐ সালাতের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যেসব সালাতের
জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা আল্লাহ তা'আলা তোমাদের নবীর জন্য হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতি
বিধিবদ্ধ করেছেন। আর এসব সালাতও হিদায়াতের পন্থা পদ্ধতি, যেমন জনৈক ব্যক্তি সালাতের
জামা'আতে উপস্থিত না হয়ে বাড়ীতে সালাত আদায় করে থাকে, অনুরূপ তোমরাও যদি তোমাদের
বাড়ীতে সালাত আদায় করো তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পন্থা-পদ্ধতি
পরিত্যাগ করলে। আর তোমরা যদি এভাবে তোমাদের নবীর সুন্নাত বা পদ্ধতি পরিত্যাগ করো তাহলে
অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলবে। কেউ যদি অতি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সালাত আদায় করার
জন্য) কোন একটি মসজিদে উপস্থিত হয় তাহলে মসজিদে যেতে সে যতবার পদক্ষেপ ফেলবে তার প্রতিটি
পদক্ষেপের পরিবর্তে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য একটি নেকী লিখে দেন, তার মর্যাদা বৃদ্ধি
করে দেন এবং একটি করে পাপ দূর করে দেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, আমরা মনে
করি যার মুনাফিকী সর্বজনবিদিত এমন মুনাফিক ছাড়া কেউ-ই জামা'আতে সালাত আদায় করা ছেড়ে
দেয় না। অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় এমন ব্যক্তি জামা'আতে
উপস্থিত হত যাকে দু’জন মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে এসে সালাতের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া
হত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৭৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৬১, ইসলামীক
সেন্টার ১৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ড) ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
যে ব্যাক্তি আযান শুনলো এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামাআতে উপস্থিত হল না, তার
সালাত নাই।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৩, আবূ
দাঊদ ৫৫১, ইরওয়াহ ৩৩৭, সহীহ আবূ দাউদ ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঢ) ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর কাঠের মিম্বারের উপর থেকে বলতে শুনেছেনঃ লোকেরা অবশ্যই যেন
জামাআত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে
দিবেন, অতঃপর তারা বিস্মৃতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৪, মুসলিম ৮৬৫, নাসায়ী ১৩৭০, আহমাদ ২১৩৩, ২২৯০,
৩০৮৯, ৫৫৩৫; দারিমী ১৫৭০, সহীহাহ ২৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তৎকালীন মক্কা মদীনার শাসনকর্তাদের ভূমিকাঃ
আব্দুল আযীয বিন মারওয়ান আদব শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর ছেলে
উমারকে মদ্বীনায় পাঠালেন। আর তার দেখাশোনা করার জন্য সালেহ্ বিন কায়সানকে চিঠি লিখলেন।
তিনি তাকে নামায পড়তে বাধ্য করতেন। একদিন সে এক নামাযে পিছে থেকে গেলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘কে তোমাকে আটকে রেখেছিল?’ উমার বলল, ‘আমার দাসী আমার চুল আঁচড়াচ্ছিল।’ তিনি
বললেন, ‘ব্যাপার এত দূর গড়িয়ে গেল যে, তোমার চুল আঁচড়ানো তোমার নামাযকে প্রভাবান্বিত
করে ফেলল?’ এরপর সে কথা জানিয়ে তিনি তার আব্বা (আব্দুল আযীয) কে চিঠি লিখলেন। তা জেনে
আব্দুল আযীয একটি দূত পাঠালেন এবং কোন কথা বলার আগেই সে দূত উমারের মাথা নেড়া করে দিল!
(সিয়ারু আ’লামুন নুবালা’, ইমাম যাহাবী ৫/১১৬)।
যে ব্যক্তি মসজিদে জামাআত সহকারে নামায পড়তে আসত না তাকে মক্কার
আমীর আত্তাব বিন উসাইদ উমাবী (রাঃ) তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার ধমকি দিতেন। (গায়াতুল মারাম, ইযযুদ্দ্বীনহাশেমী ১/১৮-১৯)।
হযরত আলী (রাঃ) প্রত্যহ্ রাস্তায় পার হওয়ার সময় ‘আস-স্বালাত, আস-স্বালাত’
বলে লোকেদেরকে ফজরের নামাযের জন্য জাগাতেন। (তারীখুল ইসলাম,
যাহাবী ৬৫০পৃ:) যেমন আজও সঊদী আরবে আযান হলেই নির্দিষ্ট অফিসের নিযুক্ত লোক ঐ একই কথা বলে নামাযের
জন্য দোকান-পাট বন্ধ করতে তাকীদ করে থাকে। তাতে মুসলিমরা সাথে সাথে দোকান বন্ধ করে
মসজিদে যায়। আর মুনাফিক ও কাফেররা যায় নিজ নিজ বাসায়। আর নামাযের সময়টুকু বন্ধ থাকে
সমস্ত দোকান-পাট।
বলাই বাহুল্য যে, তাঁদের ও আমাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে বিরাট। তাঁদের
নিকট নামাযের গুরুত্ব আমাদের তুলনায় অনেক বেশী। তাঁদের ছিল আগ্রহ্, আশা ও অধিক সওয়াব
লাভের বাসনা। পক্ষান্তরে আমাদের মাঝে আছে পার্থিব প্রেম ও দুনিয়া লাভের কামনা। তাই
আমরা নামাযের উপর দুনিয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি, আমাদের নিকট গুরুত্ব পায় পার্থিব
ভোগ-বিলাস ও তার জন্য কর্ম-ব্যস্ততা।
অবশ্য এ কথা বলা অত্যুক্তি নয় যে, আমাদের জামাআতে হাজির হয়ে নামায
না পড়া আমাদের দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর সে তা’যীমনেই, আল্লাহর
প্রতি সে প্রেম, ভক্তি ও ভয় নেই, তাঁর আদেশ ও অধিকার পালনে সে আগ্রহ্ ও উৎসাহ্ নেই,
তাই আমরা এমন শৈথিল্য প্রদর্শন করতে লজ্জাও করি না।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলতসমূহঃ
জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়ার পাশাপাশি তাতে অনেকগুলো ফযীলতও
রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
(১) একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায় বিশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছেঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত তার ঘরে বা বাজারে পড়া সালাত
অপেক্ষা বিশ গুণের অধিক মর্যাদাপূর্ণ। (সুনান ইবনু
মাজাহ, ৭৮৬, বুখারী ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৪৭১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬৫,
১৩৬৬, তিরমিযী ২১৬, নাসায়ী ৪৮৬, ৮৩৮; আবূ দাঊদ ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৮১৪৯,
৮৯০৫, ৯৫৫১, ৯৭৬২, ৯৭৯৯, ৯৯২৬, ১০১২৬, ১০৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯১, দারিমী ১২৭৬,
মাজাহ ৭৮৭। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায় সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব
রয়েছেঃ
(ক) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতের সালাত তার একাকী পড়া সালাত অপেক্ষা
সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮৯,
বুখারী ৬৪৫, মুসলিম ৬৫০/১-২, তিরমিযী ২১৫, নাসায়ী ৮৩৭, আহমাদ ৪৬৫৬, ৫৩১০, ৫৭৪৫, ৫৮৮৫,
৬৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯০, দারিমী ১২৭৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামাআতের সাথে সালাত
আদায় করা সালাত একাকী আদায় করা সালাত থেকে সাতাশগুণ অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),১৩৬৩, ১৩৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৫০, ইসলামীক
সেন্টার ১৩৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(৩) কোনো কোনো হাদীসে আবার পঁচিশ গুণ সাওয়াবের কথাও বলা হয়েছেঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জামাআতের ফযীলাত তোমাদের কারো একাকী সালাত পড়ার তুলনায় পঁচিশ গুণ
বেশি।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৮৭, বুখারী
৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৯, ২১১৯, ৪৭১৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৫৮, তিরমিযী ২১৬, নাসায়ী
৪৮৬, ৮৩৮; আবূ দাঊদ ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২, ৭৫৩০, ৭৫৫৭, ৮১৪৯, ৮৯০৫, ৯৫৫১, ৯৭৬২, ৯৭৯৯, ৯৯২৬,
১০১২৬, ১০৪১৯; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৯১, দারিমী ১২৭৬, মাজাহ ৭৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা'আতের সাথে সালাত আদায়
করা একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে পচিশগুণ বেশী উত্তম। তিনি আরো বলেছেনঃ রাতের কর্তব্যরত
মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ) এবং দিনের কর্তব্যরত মালায়িকাহ ফজরের সালাতের সময় একত্র হয়।
এ কথা বলে আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) বললেন, এক্ষেত্রে তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের আয়াতটি
পাঠ করো- وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا অর্থাৎ- "ফজরের ওয়াক্তের কুরআন পাঠে উপস্থিত থাকে"-
(সূরাহ ইসরা ১৭/৭৮)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৩৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৪৬, ইসলামীক সেন্টার ১৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ ইবনু কানাব (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ওয়াক্ত
সালাত জামা'আতের সাথে আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত একাকী সালাত আদায় করার সমান। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৬১, ১৩৬২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৪৮,
ইসলামীক সেন্টার. ১৩৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তির জামাআতের সালাত তার বাড়িতে পড়া সালাত অপেক্ষা
পঁচিশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। (সুনান ইবনু মাজাহ,৭৮৮,
বুখারী ৬৪৬, আবূ দাঊদ ৫৬০, আহমাদ ১১১২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কেউ কেউ উভয় হাদীসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করেন যে, পঁচিশ গুণের
হাদীসে শুধু একা ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকুই উল্লিখিত হয়েছে।
আর সাতাশ গুণের হাদীসে একা সালাতের সাওয়াব এবং উভয় সালাতের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকু
একত্রেই উল্লিখিত হয়েছে।
আল্লামা ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. উভয় হাদীসের
মধ্যে নিম্নে বর্ণিত তিনভাবেই সমন্বয় সাধন করেন:
(ক) উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো ধরণের বৈপরীত্য নেই। কারণ, কম সংখ্যা তো
বেশি সংখ্যার বিপরীত নয়। বরং কম সংখ্যা বেশি সংখ্যার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে।
(খ) হয়তো বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম
কমের কথা জেনেই তা নিজ উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন অতঃপর তাঁকে আবার বেশির কথাই জানানো
হলো।
(গ) হয়তো বা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়া মুসল্লীদের অবস্থার পরিবর্তন তথা
সালাতে তাদের ধীরস্থীরতা ও আন্তরিকতা, মুসল্লীদের আধিক্য ও তাদের মর্যাদা এমনকি স্থানের
মর্যাদার পার্থক্যের কারণে সাওয়াবেরও পার্থক্য হয়।
জামা‘আতে সালাত পড়া অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয় হওয়া তা ওয়াজিব না হওয়া
বুঝায় না। কারণ, শরী‘আতে ফরয কিংবা ওয়াজিব কাজ আদায়েরও বিশেষ সাওয়াব রয়েছে। তবে কেউ
কোনো ফরয সালাত একা পড়লেও তার সালাতটুকু অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে ইচ্ছাকৃত
ওয়াজিব ছাড়ার দরুন অবশ্যই গুনাহ্গার হবে। আর তাতে অন্তত পঁচিশ সাওয়াবের ঘাটতি তো আছেই।
তবে কেউ শরী‘আত সম্মত কোনো ওযরের কারণে জামা‘আতে উপস্থিত না হতে পারলে আল্লাহ তা‘আলা
তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব অবশ্যই দিবেন।
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আবূ ইসমাঈল আসসাকসাকী বলেন, আবূ বুরদাহ্-কে বলতে শুনেছি, তিনি এবং
ইয়াযিদ ইবনু আবূ কাবশা (রাঃ) সফরে ছিলেন। আর ইয়াযিদ (রাঃ) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন।
আবূ বুরদাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ)-কে একাধিকবার বলতে শুনেছি,
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দা পীড়িত
হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে আবাসে সুস্থ অবস্থায় ‘আমল করত।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২৯৯৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৭৫, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ২৭৮৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়াদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেনঃ
আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোন জনপদে বা বনজঙ্গলে তিনজন লোক একত্রে বসবাস করা
সত্ত্বেও তারা জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা না করলে তাদের উপর শয়তান আধিপত্য বিস্তার
করে। অতএব তোমরা জামা‘আতকে আকঁড়ে ধর। কারণ নেকড়ে (বাঘ) দলচ্যুত বকরীটিকেই খেয়ে থাকে।
যায়িদাহ (রহঃ) বলেন, সায়িব (রহঃ) বলেছেন, এখানে জামা‘আত বলতে সালাতের জামা‘আতকেই বোঝানো
হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৪৭, হাকিম ২১১, আহমাদ ১৯৬, ৪৪৬, ইবনু খুযাইমাহ ১৪৮৬)।হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
(৫) জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের উপস্থিতি যতোই বাড়বে ততোই সাওয়াব বেশি পাওয়া
যাবেঃ
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর বললেনঃ অমুক
হাযির আছেন কি? সাহাবীগণ বললেনঃ না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
এ দুই ওয়াক্ত (ফজর ও ‘ইশা) সালাতই মুনাফিকদের জন্য বেশি ভারী হয়ে থাকে। তোমরা যদি এই
দুই ওয়াক্ত সালাতে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা জানতে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমরা
অবশ্যই এতে শামিল হতে। জামা‘আতের প্রথম কাতার মালায়িকাহর (ফিরিশতাদের) কাতারের সমতুল্য।
তোমরা যদি এর ফাযীলাত সম্পর্কে জানতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা এজন্য প্রতিযোগিতা করতে।
নিশ্চয় দু’জনের জামা‘আত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তিনজনের জামা‘আত দু’জনের জামা‘আতের
চেয়ে উত্তম। জামা‘আতে লোক সংখ্যা যত বেশী হবে মহান আল্লাহর নিকট তা ততই বেশি পছন্দনীয়।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫৪, নাসায়ী ৮৪২ দারিমী ১২৬৯, আহমাদ
(৫/১৪০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৬) চল্লিশ দিন একান্ত নিষ্ঠা ও প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়লে
দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়ঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সন্তোষ অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার
(প্রথম তাকবীর) সাথে জামা'আতে নামায আদায় করতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া
হয়ঃ জাহান্নাম হতে নাজাত এবং মুনাফিকী হতে মুক্তি। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৪১, তা’লীকুর রাগীব- (১/১৫১), সহীহাহ–
(২৬৫২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৭) ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তা
পাওয়া যায়ঃ
নাসর ইবনু ‘আলী আল জাহ্যামী (রহঃ)....জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। রসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের সালাত
আদায় করল সে মহান আল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর আল্লাহ তোমাদের কারো
কাছে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তাদানের বিনিময়ে কোন অধিকার দাবী করেন না। যদি করেন
তাহলে তাকে এমনভাবে পাকড়াও করবেন যে, উল্টিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৭৯, ১৩৮০, ১৩৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৩৬৬, ইসলামীক সেন্টার ১৩৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদীসটির কোনো কোনো বর্ণনায় জামা‘আতের সাথে কথাটি উল্লিখিত হয়েছে।
(৮) ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার
যিকির করলে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়লে একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব পাওয়া
যায়ঃ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
যে ব্যক্তি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত জামা‘আতে
আদায় করল, অতঃপর বসে বসে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর যিকর করতে থাকল, তারপর দু’ রাক্‘আত
সালাত আদায় করল, সে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি
সম্পূর্ণ ‘উমরার সমান সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন, সম্পূর্ণ হাজ্জ ও সম্পূর্ণ ‘উমরার সাওয়াবপ্রাপ্ত
হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭১, তিরমিযী ৫৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৬৪,
হাদিস সম্ভার-৭৩০)। । হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৯) ইশা ও ফজরের সালাত অথবা শুধু
ফজরের সালাত জামা‘আতে পড়লে পুরো রাত্রি নফল সালাত আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যায়ঃ
(ক) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....আবদুর
রহমান ইবনু আবূ 'আমরাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের সালাতের পর উসমান
ইবনু আফফান মসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি
আমাকে বললেন- ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
যে ব্যক্তি জামা'আতের সাথে ইশার সালাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত সালাত আদায়
করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে সালাত
আদায় করল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৭৭, ১৩৭৮,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫৫, তিরমিযী
২২১, আহমাদ (১/৫৮, ৬৮), ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৬৪, ইসলামীক সেন্টার ১৩৭৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
(১) যত্নসহকারে ফজর এবং এশার নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার প্রতি প্রকৃত
ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে, যেমন অন্যান্য ফরজ নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার প্রতিও প্রকৃত
ইসলাম ধর্ম উৎসাহ প্রদান করে।
(২) এই হাদীসটি যত্নসহকারে ফজর এবং এশার নামাজ জামাআতের সহিত পড়ার
মহা মর্যাদার বিবরণ পেশ করে। সুতরাং যে ব্যক্তি জামাতের সহিত ফজর এবং এশার নামাজ পড়বে,
সে ব্যক্তি যেন সারা রাত ইবাদত উপাসনার মাধ্যমেই অতিবাহিত করার মত বিবেচিত হবে। আর
যে ব্যক্তি জামাতের সহিত উক্ত দুইটি নামাজের মধ্যে থেকে একটি নামাজ জামাতের সহিত পড়বে,
সে ব্যক্তি যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত ইবাদত উপাসনার মাধ্যমেই অতিবাহিত করার মত বিবেচিত
হবে।
(খ) আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি লোকেরা এশা ও ফজরের
সালাতের যে কত ফযীলাত তা জানতো, তাহলে অবশ্যই তারা এই দু সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
উপস্থিত হতো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৬, আহমাদ ২৩৯৮৫)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মোনাফিকদের জন্য সবচেয়ে ভারবহ (কষ্টকর) হচ্ছে এশা ও ফজরের
সালাত। তারা যদি এই দু সালাতের ফযীলাত সম্পর্কে অবহিত থাকতো, তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি
দিয়ে হলেও তাতে হাযির হতো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৭,
বুখারী ৬১৫, ৬৫৪, ৬৫৭, ৭২১, ২৬৮৯; মুসলিম ৪৩৭, ৬৫১; নাসায়ী ৫৪০, ৬৭১; আহমাদ ৭১৮৫, ৭৬৮০,
৭৯৬২, ৮৬৫৫, ৯২০২, ৯৭৫০, ১০৪৯৬, ২৭৩৩০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৫১, ২৯৫; দারিমী ১২৭৩, ইরওয়াহ
৪৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) দিন ও রাতের ফিরিশতাগণ আসর ও ফজরের সালাত চলাকালীন সময় সবাই একত্রিত
হোনঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালাকগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে,
একদল রাতে। ‘আসর ও ফজরের সালাতে উভয় দল একত্র হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী
দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায়
রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবত। উত্তরে তাঁরা বলেন, আমরা
তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাত আদায়রত
অবস্থায় ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৫৫৫, ৩২২৩, ৭৪২৯, ৭৪৮৬; মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩২, আহমাদ ১০৩১৩, আধুনিক প্রকাশনী ৫২২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে মহান আল্লাহ তা‘আলার দর্শন
মিলবেঃ
(খ) জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার)
চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে
তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের
এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই
করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, ‘‘কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্
পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে’’- (সূরাহ্ ক্বাফ ৫০/৩৯)। ইসমাঈল (রহ.)
বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৪, ৫৭৩, ৪৮৫১, ৭৪৩৪, ৭৪৩৫,৭৪৩৬;
মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩৩, আহমাদ ১৯২১১, আধুনিক প্রকাশনী ৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
আসর ও ফজরের সালাত যথা সময়ে আদায় করলে পরকালে জান্নাত পাওয়া যাবেঃ
(গ) আবূ বাকর ইবনু আবূ মূসা (রাযি.) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের
(ফজর ও ‘আসরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইবনু রজা‘ (রহ.) বলেন, হাম্মাম
(রহ.) আবূ জামরাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, আবূ বাকর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু কায়স
(রহ.) তাঁর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৭৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আব্দুল্লাহ্ (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে এ রকমই বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম ৫/৩৭, হাঃ ৬৩৫,
আহমাদ ১৬৭৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঠিক এরই বিপরীতে যে ব্যক্তি আসরের
সালাত যথা সময়ে আদায় করলো না তার সকল আমল পন্ড হয়ে যাবে। এমনকি সে এমন এক ক্ষতির সম্মুখীন
হবে যেন তার কাছ থেকে তার সকল পরিবারবর্গ ও ধনসম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হলো।
(ঙ) আবূ মালীহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা বুরাইদা
(রাযি.)-এর সঙ্গে ছিলাম। দিনটি ছিলো মেঘলা। তাই বুরাইদাহ (রাযি.) বলেন, শীঘ্র ‘আসরের
সালাত আদায় করে নাও। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
‘আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার ‘আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৩, ৫৯৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির ‘আসরের সালাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার
পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল।
আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, (আরবী পরিভাষায়) يَتِرَكُمْ وَتَرْتُ الرَّجُلَ বাক্যটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ
ছিনিয়ে নেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫২, মুসলিম
৫/৩৫, হাঃ ৬২৬, আহমাদ ৫৭৮৪, আধুনিক প্রকাশনী ৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জামা‘আতে সালাত পড়া দেখে বিস্মিত হোন। কারণ,
তিনি তা অত্যন্ত ভালোবাসেন। আর স্বভাবতই কেউ কোনো জিনিসকে বেশি ভালোবাসলে এবং তা সুন্দরভাবে
বাস্তবায়িত হতে দেখলে তাতে সে অধিক আনন্দিত ও বিস্মিত হয়। তবে কোনো জিনিস নিয়ে আল্লাহ
তা‘আলার বিস্মিত হওয়া তা তাঁর মতোই একান্ত অতুলনীয়ঃ
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের জামা‘আতে সালাত পড়া দেখে বিস্মিত
হোন”। (আহমদ, হাদীস নং ৪৮৬৬, ৫১১২)।
(১২) জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে ততক্ষণ নফল সালাত আদায়ের
সাওয়াব পাওয়া যায় এবং জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকলে অথবা সালাত শেষে
সালাতের জায়গায় বসে থাকলেও ফিরিশতাগণের দো‘আ পাওয়া যায়ঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে এবং যতক্ষণ সালাত তাকে
আটক রাখে, ততক্ষণ সে সালাতের মধ্যে থাকে। তোমাদের কেউ যে মজলিসে সালাত পড়েছে তাতে যতক্ষণ
সে অবস্থান করে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকেন। তারা বলেন, হে আল্লাহ্!
তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! তাকে অনুগ্রহ করুন। হে আল্লাহ্! তার তওবা কবূল করুন।
যতক্ষণ না তার উযূ ছুটে যায়, যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় (ততক্ষণ এ দুআ চলতে থাকে)।
(সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৯৯, তিরমিযী ৩৩০, ৪৯১; নাসায়ী ১৪৩০, আবূ দাঊদ ১০৪৬,
মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৪৩, সহীহ তারগীব ৪৪২, সহীহ আবূ দাউদ ৪৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মাগরিবের সালাত পড়লাম। তারপর যার চলে যাওয়ার
চলে গেলেন এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এত দ্রুতবেগে এলেন যে, তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগলো। তিনি তাঁর দু হাঁটুর উপর
ভর করে বসে বলেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আসমানের একটি দরজা খুলে
দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের নিকট তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেনঃ তোমরা আমার বান্দাদের
দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরয আদায়ের পর পরবর্তী ফরয আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৮০১, আহমাদ ৬৭১১-১২, ৬৯০৭, সহীহ তারগীব ৪৪৫, সহীহাহ
৬৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১৩) জামা‘আতের প্রথম সারিতে অথবা যে কোনো সারির ডান দিকে সালাত পড়ায় কিংবা
জামা‘আতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোয় অনেকগুলো ফযীলত রয়েছে। যা
নিম্নরূপ:
(ক) জামা‘আতের প্রথম সারি সম্মানিত
ফিরিশতাগণের সারির সাথে তুলনীয়ঃ
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর বললেনঃ অমুক
হাযির আছেন কি? সাহাবীগণ বললেনঃ না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
এ দুই ওয়াক্ত (ফজর ও ‘ইশা) সালাতই মুনাফিকদের জন্য বেশি ভারী হয়ে থাকে। তোমরা যদি এই
দুই ওয়াক্ত সালাতে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা জানতে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমরা
অবশ্যই এতে শামিল হতে। জামা‘আতের প্রথম কাতার মালায়িকাহর (ফিরিশতাদের) কাতারের সমতুল্য।
তোমরা যদি এর ফাযীলাত সম্পর্কে জানতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা এজন্য প্রতিযোগিতা করতে।
নিশ্চয় দু’জনের জামা‘আত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তিনজনের জামা‘আত দু’জনের জামা‘আতের
চেয়ে উত্তম। জামা‘আতে লোক সংখ্যা যত বেশী হবে মহান আল্লাহর নিকট তা ততই বেশি পছন্দনীয়।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫৪, নাসায়ী ৮৪২, দারিমী ১২৬৯, আহমাদ
(৫/১৪০)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের
নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্
তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার
পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে
দাঁড়ায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬১, নাসায়ী ৯৯২), আহমাদ (৫/১০১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) প্রথম সারিতে সালাত পড়ায় এতো বেশি সাওয়াব রয়েছে তা যদি সবাই জানতে
পারতো তাহলে তাতে জায়গা পাওয়ার জন্য লটারি দেওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকতো না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফাযীলাত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা
জানত, কুরআহর মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই
তারা কুরআহর মাধ্যমে ফায়সালা করত। যুহরের সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী
(ফাযীলাত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ‘ইশা ও ফজরের
সালাত (জামা‘আতে) আদায়ের কী ফাযীলাত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে
হলেও তারা হাজির হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৬৮৯; মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৭, আহমাদ ৭২৩০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) জামা‘আতের প্রথম সারি সর্বোত্তম
সারিঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“পুরুষদের কাতারের মধ্যে
সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার, আর নিকৃষ্টতম কাতার হল শেষ কাতার। আর মহিলাদের সর্বোত্তম
কাতার হল পিছনের (শেষ) কাতার এবং নিকৃষ্টতম কাতার হল প্রথম কাতার।” (হাদিস সম্ভার-৭০২, আহামদ ৭৩৬২, মুসলিম ১০১৩, সুনান আরবাআহ, মিশকাত
১০৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(ঙ) আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট জামা‘আতের প্রথম সারিগুলোতে
সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার
নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির সালাত পড়ুয়াদের ভাগটুকু
একটু বড়ো।
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারিতে সালাত
পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা
প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের
মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ
তা‘আলা নিজ ফিরিশতাগণের নিকট প্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর
ফিরিশতাগণও তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। সাহাবীগণ
বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও কি একই রকম? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ। দ্বিতীয় সারির সালাত পড়ুয়াদের মর্যাদাও
একই রকম। (আহমদ, হাদীস নং ২১২৩৩)।
(চ) বারা’আ ইবনু আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের
কাতারসমূহ সোজা করো, তাহলে তোমাদের অন্তরসমূহ বিক্ষিপ্ত হবে না।”তিনি বলেন, তিনি আরও
বলতেন: “আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ প্রথম কাতার অথবা, প্রথম কাতারসমূহের উপর রহমত বর্ষণ
করেন”। (সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ২১৫৭, ২১৬১; মাওয়ারিদুয যাম’আন ৩৮৬। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ছ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামপ্রথম সারিতে সালাত পড়ুয়াদের
জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট তিন তিন বার ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করেন। আর দ্বিতীয় সারিতে
সালাত পড়ুয়াদের জন্য শুধুমাত্র এক বার।
(জ) ইরবায ইবনু সারিয়্যাহ রাদ্বিয়াল্লাহু
আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম কাতারের জন্য
তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
(সুনান আদ-দারেমী, ১২৯৭, ১২৯৮, সহীহ ইবনু হিব্বান নং ২১৫৮; মাওয়ারিদুয
যাম’আন নং ৩৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) জামা‘আতের সারিগুলোতে একে অপরের সাথে মিলে মিলে দাঁড়ালে আল্লাহ
তা‘আলা তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক রক্ষা করবেন। আর দূরে দূরে দাঁড়ালে আল্লাহ তা‘আলা
তার সাথে তাঁর বিশেষ সুসম্পর্ক ছিন্ন করবেন।
ইবনু ‘উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ
মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও।
বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, ‘‘তোমাদের ভাইয়ের হাতে’’ শব্দগুলো নেই। ( তিনি আরো বলেন,)
শয়তানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও
তাকে তাঁর রহমত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর
রহমত হতে কর্তন করবেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৬৬, নাসায়ী ৮১৮, আহমাদ ৫৭২৪, ইবনু খুযাইমাহ ১৫৪৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
(১৪) কারোর “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে গেলে আল্লাহ তা‘আলা
তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে ভালোবাসবেনঃ
(ক) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন ইমাম সাহেব “আমীন” বলবেন তখন তোমরাও “আমীন” বলবে। কারণ, যার
“আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা
করে দেওয়া হবে”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
হাদীস নং ৭৮০, ৭৮১, ৬৪০২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১০; আবু দাউদ, ৯৩৬; তিরমিযী ২৩২,
আহমাদ ৮২৪৭, আধুনিক প্রকাশনী ৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
“যখন ইমাম সাহেব غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে।
কারণ, যার “আমীন” বলা ফিরিশতাগণের “আমীন” বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বেকার সকল গুনাহ
ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮২,
৪৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৭৩৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়ে তিনি আমাদেরকে
সালাত ও সুন্নাত শিক্ষা দিয়েছেন তিনি তাঁর খুৎবায় বলেন:
“যখন তোমরা সালাত আদায় করতে যাবে তখন তোমরা সালাতের সারিগুলো সোজা
করে নিবে অতঃপর তোমাদের মধ্যকার যে কোনো একজন ইমামতি করবেন। যখন তিনি “আল্লাহু আকবার”
বলবেন তখন তোমরাও “আল্লাহু আকবার” বলবে। আর যখন তিনি
বলবেন তখন তোমরা “আমীন” বলবে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৭২, নাসায়ী হাঃ ১০৬৩, ইবনু মাজাহ ৯০১, আহমাদ ৪/৩৯৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahi।
জামাআতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার ফজিলতঃ
(১) সর্বদা মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে নামাজ পড়তে ব্যাকুল ব্যক্তি কিয়ামতের দিন
আল্লাহ তা‘আলার আরশের নিচে ছায়া পাবেঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সে
দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক।
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে।
(৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের
সাথে থাকে।
(৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহববত রাখে, উভয়ে
একত্রিত হয় সেই মহববতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহববতের উপর।
(৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য)
আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদাকাহ করে যে, তার ডান হাত যা দান করে
বাম হাত তা জানতে পারে না।
(৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার
চোখ হতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
১৪২৩, ৬৬০, আধুনিক প্রকাশনী ১৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৩৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া মসজিদগামী ব্যক্তির মর্যাদা
বৃদ্ধি, গুনাহ মাফ ও অধিক সাওয়াব লাভের একটি বিশেষ মাধ্যমঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উযূ করার পর কেবল সালাত পড়ার উদ্দেশেই
মসজিদে আসে, আল্লাহ তার প্রতি কদমের বিনিময়ে তার একটি ধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার
একটি গুনাহ মুছে দেন যাবত না সে মসজিদে প্রবেশ করে। মসজিদে প্রবেশ করার পর সে যতক্ষণ
সালাতের জন্য সেখানে অবস্থান করে, ততক্ষণ সালাতরত হিসাবেই গণ্য হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
১৭৬, ৬৪৭, ৪৭৭; তিরমিযী ৬০৩, নাসায়ী ৭০৫, আবূ দাঊদ ৫৫৯, আহমাদ ৭৩৮২, সহীহ আবূ
দাউদ ৫৬৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে,
ইবনু আবূ উমর (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত
সালাতের পর উক্ত স্থানে বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়িকাহ এ বলে তার জন্য দু'আ করতে
থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রহমত দান করো।
আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি ততক্ষণ সালাতরত বলেই গণ্য হবে যতক্ষণ সে সালাতের জন্য
অপেক্ষামান থাকে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৩৯৪, ১৩৯৫, ১৩৯৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৮০, ইসলামীক সেন্টার ১৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ, আবূ কুরায়ব (রহঃ)....আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কোন ব্যক্তি মসজিদে জামা'আতের সাথে সালাত আদায় করলে তা তার বাড়ীতে বা বাজারে সালাত
আদায় করার চেয়ে বিশগুণেরও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন। কারণ কোন লোক যখন সালাতের জন্য ওযু
করে এবং ভালভাবে ওযু করে মসজিদে আসে তাকে সালাত ছাড়া আর কিছুই মসজিদে আনে না; আর সে
সালাত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যও পোষণ করে না। সুতরাং এ উদ্দেশে সে যখনই পদক্ষেপ করে
তখন থেকে মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তার প্রতিটি নেকীর বদলে ঐ ব্যক্তির মর্যাদা
বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে পাপ মিটিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ
সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ততক্ষণ যেন সে সালাতরত থাকে। আর তোমাদের কেউ যখন
সালাত আদায় করার পর সালাতের স্থানেই বসে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ)
তার জন্য এ বলে দু'আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল করো। এরূপ দুআ ততক্ষণ
পর্যন্ত করতে থাকে যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ওযু নষ্ট না করে।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) , ১৩৯২, ১৩৯৩, ১৩৯৭, ১৩৯৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন
১৩৭৮, ইসলামীক সেন্টার. ১৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।
(খ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের পথ দেখাবো না যার
দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দিবেন এবং পুণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন? তারা
বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বলেনঃ কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে উযূ করা, মসজিদের
দিকে ঘন ঘন যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্তের সালাত আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের সালাতের
জন্য অপেক্ষারত থাকা। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৪২৭, আহমাদ
১০৬১১, সহীহ তারগীব ১৮৮, ৩০৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে উযূ করা, মসজিদে যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্তের সালাত
আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের সালাতের জন্য অপেক্ষারত থাকা (এই তিনটি কাজ) গুনাহসমূহের
কাফফারাস্বরূপ। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৪২৮, মুসলিম
২৫১, তিরমিযী ৫১, নাসায়ী ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮, ৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১, ৭৩৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক
৩৮৬, সহীহ তারগীব ১৮৭, ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য
মসজিদে গেলে যেমনিভাবে মসজিদগামী ব্যক্তির মসজিদে যাওয়ার প্রতিটি কদম তার আমলনামায়
লেখা হবে তেমনিভাবে তার মসজিদ থেকে ঘরে ফেরার প্রতিটি কদমও তার আমলনামায় লেখা হবেঃ
(ক) আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মসজিদ হতে) যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সালাতে আসে, তার তত
অধিক পুণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার
পুণ্য সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক, যে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৩৯৯, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা মসজিদের
আশপাশের এলাকাগুলো খালি হয়ে গিয়েছিলো। তখন সালিমাহ গোত্রের লোকেরা মসজিদের পাশেই স্থানান্তরের
চিন্তা-ভাবনা করছিলো। উক্ত ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কর্ণগোচর হলে তিনি তাদেরকে বললেন:
“আমার কাছে খবর এসেছে তোমরা না কি মসজিদের আশপাশেই স্থানান্তর হতে
চাচ্ছো? তারা বললো: জি হ্যাঁ। হে আল্লাহর রাসূল আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তাই চাচ্ছিলাম।
তখন তিনি বললেন: হে সালিমাহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান করো। সেখান
থেকে কোথাও স্থানান্ততির হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি কদমই তোমাদের আমলনামায় লেখা হবে।
তোমরা নিজ স্থানেই অবস্থান করো। সেখান থেকে কোথাও স্থানান্তরিত হয়ো না। তোমাদের প্রতিটি
কদমই তোমাদের আমলনামায় লেখা হবে”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৫৬, ৬৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪০৪, ১৪০৫, ১৪০৬,
আধুনিক প্রকাশনী ৬১৬ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফজিলত
বেশীঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মসজিদে থেকে যার (বাসস্থান) যত বেশী দূরে, সে তত বেশি সাওয়াবের অধিকারী। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫৬, ইবনু মাজাহ ৭৮২, আহমাদ (২/৩৫১, ৪২৮)
‘আবদ ইবনু হুমাইদ ১৪৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....উবাই ইবনু কা'ব (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জনৈক লোক সম্পর্কে জানি যার বাড়ী অপেক্ষা কারো বাড়ী মসজিদ
থেকে অধিক দূরে ছিল বলে আমার জানা নেই। জামা'আতের সাথে কোন ওয়াক্তের সালাত আদায় করা
তিনি ছাড়তেন না। উবাই ইবনু কাব বলেনঃ তাকে বলা হলো অথবা (বর্ণনাকারী আবূ উসমান নাহদীর
সন্দেহ) আমি বললামঃ যদি তুমি একটি গাধা কিনে নাও এবং তার পিঠে আরোহণ করে রাতের অন্ধকারে
এবং রোদের মধ্যে সালাত আদায় করতে আসো তাহলে তো বেশ ভালই হয়। এ কথা শুনে সে বললঃ আমার
বাড়ী মসজিদের পাশে হোক তা আমি পছন্দ করি না। আমি চাই মসজিদে হেঁটে আসা এবং মাসজিদ
থেকে ঘরে আমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার জন্য (আমলনামায়)
লিপিবদ্ধ হোক। তার এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান
আল্লাহ তা'আলা তোমার জন্য অনুরূপ সাওয়াবই একত্রিত করে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪০০, ১৪০১, ১৪০২, ১৪০৩, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ৫৫৭, দারিমী ১২৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৮৬, ইসলামীক সেন্টার. ১৩৯৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) ভালোভাবে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে মসজিদগামী
ব্যক্তির সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়ঃ
আবূ তাহির ও ইউনুস ইবনু আবদুল আ'লা (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের জন্যে পরিপূর্ণরূপে ওযু করে
ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশে (মসজিদে) যায় এবং লোকেদের সাথে, অথবা তিনি বলছেনঃ জামা'আতের
সাথে, অথবা বলেছেন, মসজিদের মধ্যে সালাত আদায় করে, আল্লাহ তার গুনাসমূহকে মাফ করে
দিবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০, ইসলামিক
সেন্টার ৪৫৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত
আদায়ের উদ্দেশ্যে সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে আসা-যাওয়া করে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে
সকাল ও সন্ধ্যায় এক বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করবেনঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর
ব্যবস্থা করে রাখেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬৬২, মুসলিম ৫/৫১, হাঃ ৬৬৯, আহমাদ ১০৬১৩, আধুনিক প্রকাশনী ৬২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২৯)
। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) কেউ নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে
সালাতরত বলেই গণ্য করা হবে যতক্ষণ না সে আবার নিজ ঘরে ফিরে আসেঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ নিজ ঘরে অযু করে মসজিদের দিকে রওয়ানা করে তখন
তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হয় যতক্ষণ না সে আবার ঘরে ফিরে আসে। সুতরাং সে যেন হাতের
আঙ্গুলগুলোকে একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকিয়ে না দেয়”। (ইবন
খুযাইমাহ, হাদীস নং ৪৩৯, ৪৪৭; হাকিম, হাদীস নং ৭৪৪)।
(৮) কেউ নিজ ঘর থেকে পবিত্রতার্জন
করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গেলে তাকে একজন ইহরামরত হাজীর সাওয়াব দেওয়া
হবেঃ
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
ফরয সালাতের জন্য অযু করে নিজ ঘর থেকে বের হবে, সে একজন ইহরামধারী হাজ্জীর সমান সাওয়াব
পাবে। আর যে ব্যক্তি চাশতের সালাত আদায় করার জন্য বের হবে, সে একজন ‘উমরাহকারীর সমান
সাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর থেকে আরেক ওয়াক্ত সালাত আদায়ের
মধ্যবর্তী সময়ে কোন বাজে কথা বা কাজ করবে না, তাকে ইল্লি¬ন-এ লিপিবদ্ধ করা হবে (অর্থাৎ
তার মর্যাদা সুউচ্চ হবে)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৫৫৮, আহমাদ (৫/২৬৩, ২৬৮), বায়হাক্বী (৩/৬৩)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(৯) জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
নিজ ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার জিম্মায় থাকেনঃ
আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি
মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তার দায়িত্বশীল।
অতঃপর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গানীমাতসহ
তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মসজিদে যায়, আল্লাহ তার
দায়িত্বশীল। এমন কি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে
নিরাপদে তার নেকী ও গানীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের
সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ তার জিম্মাদার। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১০) জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার আমলটুকু
দ্রুত লেখা ও আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী ফিরিশতাগণ পরস্পর
প্রতিযোগিতা করে, উহার মর্যাদা ও ফযীলত নিয়ে পরস্পর কথোপকথন করে এবং তা নিয়ে তারা মানুষের
সাথে ঈর্ষা করেঃ
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজ রাতে আমার মহান ও বারাকাতময় প্ৰভু সবচেয়ে সুন্দর চেহারায়
আমার নিকট এসেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মতে তিনি বলেছেনঃ ঘুমের মধ্যে স্বপ্নযোগে।
তারপর তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে
বিবাদ করছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, না। তিনি
তার হাত আমার দুই কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। এমনকি আমি আমার দুই স্তনের বা বুকের মাঝে
এর শীতলতা অনুভব করলাম। আসমান-যামীনে যা কিছু আছে আমি তা অবগত হলাম।
তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা
কি নিয়ে বিবাদ করছে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, কাফফারাত নিয়ে বিবাদ করছে। কাফফারাত অর্থ
“নামাযের পর মসজিদে বসে থাকা, নামাযের জামা'আতে উপস্থিতির জন্য হেঁটে যাওয়া এবং কষ্টকর
সময়েও সুষ্ঠভাবে উযূ করা"। যে লোক এসব কাজ করবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে,
কল্যাণের সাথে মরবে এবং তার জন্ম দিনের মত গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা'আলা আরো বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি যখন সালাত আদায় করবে
তখন এই দুআ পড়বেঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ফি’লাল খাইরাতি ওয়া তারকাল মুনকারাতি
ওয়া হুব্বাল মাসাকীনি ওয়া ইযা আরাদতা বি-ইবাদিকা ফিতনাতান ফাকবিযনী ইলাইকা গাইরা
মাফতুনিনা” (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ভাল কাজ করার, খারাপ কাজ ত্যাগ করার এবং গারীব-নিঃস্বদের
ভালবাসার মনোস্কামনা চাই। তুমি যখন তোমার বান্দাদের কঠিন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করার ইচ্ছা
কর, তখন আমাকে এ ফিতনায় জড়িয়ে পড়ার আগেই তোমার নিকট উঠিয়ে নাও)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ দারাজাত
ও মর্যাদার স্তর বলতে বুঝায়ঃ সালামের প্রচার প্রসার ঘটানো, মানুষকে খাওয়ানো এবং রাতের
অন্ধকারে মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে তখন (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় করা। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩২৩৩, ৩২৩৪, ৩২৩৫, সহীহঃ আয যিলা-ল
(৩৮৮), তা’লীকুর রাগীব (১/৯৮, ১২৬/১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদগামী হওয়া দুনিয়া ও আখিরাতেরসমূহ
কল্যাণ প্রাপ্তির এক বিশেষ মাধ্যমঃ
উপরোক্ত হাদীসটি এর বিশেষ প্রমাণ। যাতে বলা হয়েছে,
“যে ব্যক্তি এ কাজগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করলো সে তার জীবদ্দশায়
কল্যাণকর জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যুও হবে কল্যাণকর”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“যে কোনো পুরুষ ও নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎ কাজ করে তাকে আমি নিশ্চয়
পবিত্র ও আনন্দময় জীবন দান করবো এমনকি তাদেরকে দেবো তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান”।
[সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]
(১২) নিজ ঘরে অযু করে জামা‘আতে
সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আগমনকারীকে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে সম্মানিত করেনঃ
সালমান ফার্সী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি নিজ ঘরে ভালোভাবে অযু করে (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে)
মসজিদে আসে সে আল্লাহ তা‘আলার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসি। আর যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে
তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা”। (ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস নং ৬১৩৯, ৬১৪৫; ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ১৬৪৬৫)।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“মসজিদগুলো পৃথিবীতে আল্লাহর ঘর। আর যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে
তার দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা”। ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৩৫৭৫৮।
(১৩) জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
কেউ ভালোভাবে অযু করে মসজিদে গেলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হোন যেমনিভাবে
দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়ঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কেউ সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ অযু করে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে
মসজিদে আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হোন যেমনিভাবে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত
ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়”। ইবন খুযাইমাহ,
হাদীস নং ১৪৯১।
জামাআতে সালাত আদায় করতে যাওয়ার নিয়ম কানুনঃ
(১) নিজ ঘর থেকেই ভালোভাবে অযু করে নিতে হবেঃ
অযু করে বের হওয়ার ফজিলতঃ
(ক) আবূ তাহির ও ইউনুস ইবনু আবদুল
আ'লা (রহঃ)....উসমান ইবনু আফফান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের
জন্যে পরিপূর্ণরূপে ওযু করে ফরয সালাত আদায়ের উদ্দেশে (মসজিদে) যায় এবং লোকেদের সাথে,
অথবা তিনি বলছেনঃ জামা'আতের সাথে, অথবা বলেছেন, মসজিদের মধ্যে সালাত আদায় করে, আল্লাহ
তার গুনাসমূহকে মাফ করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তির জামা‘আতের সাথে সালাতের সওয়াব, তার নিজের
ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত সালাতের সওয়াবের চেয়ে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর কারণ এই যে,
সে যখন উত্তমরূপে উযূ করলো, অতঃপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশে মসজিদে রওয়ানা করল তখন তার
প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের
পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, মালাকগণ তার জন্য এ বলে দু‘আ করতে থাকেন -
‘‘হে আল্লাহ! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’’ আর তোমাদের
কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে রত বলে গণ্য হয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৪৭, ১৭৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৪০৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের বলব না, আল্লাহ তা'আলা কি দিয়ে গুনাহ মুছে দেন এবং
মর্যাদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ (বলে দিন)। তিনি বললেনঃ
কষ্ট থাকার পরেও ভালভাবে ওযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি যাতায়াত করা এবং এক নামায
শেষ করে পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এটাই হল ‘রিবাত (প্রস্তুতি)। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৫১, ইবনু মাজাহ ৪২৮,মুসলিম ২৫১, তিরমিযী
৫১, নাসায়ী ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮, ৭৬৭২, ৭৯৩৫, ৭৯৬১, ৭৩৬১; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৮৬, সহীহ
তারগীব ১৮৭, ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
আবূ বকর ইবনু শায়বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রাহ
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে
এবং সন্ধ্যায় সালাত আদায় করতে মসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহ তা'আলা ততবারই তার
জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪১০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৯৬, ইসলামীক
সেন্টার ১৪০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) মসজিদে আসার আগে দুর্গন্ধময়
যে কোনো জিনিস (কাঁচা রসুন) খাওয়া বা ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবেঃ
(ক) ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ হতে অর্থাৎ কাঁচা রসুন খায় সে
যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদে না আসে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৫৩, ৪২১৫, ৪২১৭, ৪২১৮, ৫৫২১, ৫৫২২ মুসলিম ৫/১৭ হাঃ ৫৬, আহমাদ
৪৭১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১১) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ হতে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন,
সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। (রাবী আতা (রহ.) বলেন) আমি জাবির (রাযি.) কে জিজ্ঞেস
করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন (জাবির (রাযি.)
বলেন, আমার ধারণা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন
এবং মাখ্লাদ ইবনু ইয়াযীদ (রহ.) ইবনু জুরাইজ (রহ.) হতে দুর্গন্ধযুক্ত হবার কথা উল্লেখ
করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৫৪,৮৫৫, ৮৫৬, ৫৪৫২, ৭৩৫৯; মুসলিম
৫/১৭, হাঃ ৫৬৪, আহমাদ ১৫২৯৯, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮১২)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
(ক) মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন,
ইত্যাদি দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু খাবে, সে ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা কঠোরতার সহিত
নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাতে সে তার দুর্গন্ধের দ্বারা অন্য মুসল্লিদেরকে কষ্ট না দেয়।
কেননা যে ব্যক্তি নিজের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদেরকে কষ্ট দেয়, সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে
ফেরেশতাগণকেই কষ্ট দিয়ে থাকে।
(খ) যে ব্যক্তির শরীরের দুর্গন্ধের দ্বারা মুসল্লিদের কষ্ট হবে, সে
ব্যক্তির জন্য মাসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়। সুতরাং দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে
যে, যে ব্যক্তির শরীরের মধ্যে ধুমপান অথবা বিড়ি, সিগারেট, তামাক ইত্যাদির দুর্গন্ধ
থাকবে অথবা তার শরীরের পোশাক, জামাকাপড়, কিংবা পায়ের মোজা দুর্গন্ধযুক্ত হবে, সে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করবে না। তাই মুসল্লি
ব্যক্তি যেন মাসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে নিজের শরীর, শরীরের পোশাক, জামাকাপড় ইত্যাদি
ভালোভাবে দেখে নেয় বা পরিদর্শন নেয়। যাতে সে মাসজিদে প্রবেশ করে মুসল্লিদেরকে এবং
ফেরেশতাগণকে কষ্ট না দেয়। আর পুণ্যের বদলে পাপকারী না হয়ে যায়।
(গ) এই হাদীসটি মুসলিম ব্যক্তিকে এই বিষয়টির প্রতি উৎসাহ প্রদান করে
যে, সে যেন মাসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করার গুরুত্ব অনুভব করে এবং মাসজিদে উপস্থিত হওয়ার
সময় এবং নামাজ পড়ার সময় সুসজ্জিত হয়ে মাসজিদে প্রবেশ করে। সুতরাং সে মাসজিদে যাওয়ার
পূর্বে পবিত্রতার্জন করবে, বিশুদ্ধতা বজায় রাখবে, দরকারে যত্নসহকারে ওজু ও গোসল বা
স্নান করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, প্রসাধন করবে এবং সুসজ্জিত হয়ে পরিষ্কার ও সুন্দর
কাপড় পরিধান করবে। অতঃপর মাসজিদে প্রবেশ করবে।
(৩) সুগন্ধি ব্যবহার করে জুমায় গমনঃ
‘আমর ইবনু সুলাইম আনসারী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদরী
(রাযি.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ জুমু‘আহর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্ওয়াক করবে এবং
সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৮০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৮৪৫, আহমাদ ১১২৫০, আধুনিক
প্রকাশনী ৮২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) সাধ্য মতো সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরেই মসজিদে আসতে হবেঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে আদম সন্তানরা! তোমরা (জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) যে
কোনো মসজিদের নিকটবর্তী হতে চাইলে সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করবে”। [সূরা আল-আ‘রাফ,
আয়াত: ৩১]
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)
ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে, তার কাছে
সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করবে, তারপর জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যাবে, সেখানে
(সামনে যাওয়ার জন্য) লোকদের ঘাড় টপকাবে না এবং মহান আল্লাহর নির্ধারিত সালাত আদায় করে
ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত সময় নীরবতা অবলম্বন করবে-তাহলে
এটা তার জন্য এ জুমু‘আহ্ ও তার পূর্ববর্তী জুমুআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনহর কাফফারা হয়ে
যাবে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহেরও কাফফারা হবে। কেননা
নেক কাজের সাওয়াব (কমপক্ষে) দশ গুণ হয়। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ৩৪৩, ৩৪৭, আহমাদ (৩/৮১), ইবনু খুযাইমাহ ১৭৬২, ১৮১০) । হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
(৪) ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো
পড়ে নিতে হবে এবং শুধুমাত্র সালাতের নিয়্যাতেই ঘর থেকে বের হতে হবেঃ
ঘর থেকে বের হওয়ার দো‘আগুলো নিম্নরূপ:
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলবেঃ ‘‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা
বিল্লাহ’’ তখন তাকে বলা হয়, তুমি হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছো, রক্ষা পেয়েছো ও নিরাপত্তা লাভ করেছো।
সুতরাং শয়তানরা তার থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য এক শয়তান বলে, তুমি ঐ ব্যক্তিকে কি করতে
পারবে যাকে পথ দেখানো হয়েছে, নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এবং রক্ষা করা হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫০৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমার ঘর থেকে
বের হতেন, তখন আকাশের দিকে মাথা তুলে বলতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি
আপনার নিকট পথভ্রষ্ট হওয়া বা পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ করা বা গুনাহের দিকে ধাবিত করা, উৎপীড়ন
করা বা উৎপীড়িত হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞত প্রকাশ্যের পাত্র হওয়া থেকে আশ্রয়
চাইছি।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৫০৯৪ তিরমিযী,৩৪২৭ ইবন মাজাহ্, ৩৮৮৪, নাসায়ী ৫৪৮৬, আহমাদ ২৬০৭৬, ২৬১৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একদা আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাঁর খালা ও রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী মাইমূনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে রাত্রি
যাপন করেছেন। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘর থেকে সালাতের
উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে বের হওয়ার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পড়তে শুনেছেন:
“হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আলো দিন, আমার জিহবায় আলো দিন, আমার
শ্রবণ শক্তিতে আলো দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিতে আলো দিন, আমার পেছনে আলো দিন, আমার সামনে
আলো দিন, আমার উপরে আলো দিন, আমার নিছে আলো দিন, আমার ডানে আলো দিন, আমার বাঁয়ে আলো
দিন, আমার প্রবৃত্তিতে আলো দিন, আমার আলো আরো অনেক বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য আলো দিন,
আমাকে আলোময় বানিয়ে দিন, আমাকে আলো দিন, আমার স্নায়ুতে আলো দিন, আমার গোস্তে আলো দিন,
আমার রক্তে আলো দিন, আমার চুলে আলো দিন, এমনকি আমার শরীরের চামড়ায়ও আলো দিন”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩১৬, ১১৭; মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩,
আহমাদ ২০৮৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭১ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৪) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৫) মসজিদের দিকে যাওয়ার সময় আঙ্গুলগুলোর একটিকে অপরটিতে ঢুকিয়ে দিবে না
এমনকি সালাতেও নয়:
আবূ সুমামাহ আল-হান্নাত সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি মসজিদে
যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কা’ব ইবনু ‘উজরাহর (রাঃ) সাথে তার সাক্ষাত হয়। বর্ণনাকারী বলেন,
তিনি আমাকে আমার দু’ হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে মটকাতে দেখতে পেয়ে আমাকে
এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি আরো বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের কেউ উত্তমরূপে অযু করে মসজিদের উদ্দেশে বের হলে সে যেন তার দু’ হাতের
আঙ্গুল না মটকায়। কেননা সে তখন সালাতের মধ্যেই থাকে (অর্থাৎ ঐ অবস্থায় তাকে সালাত আদায়কারী
হিসেবেই গণ্য করা হয়)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৫৬২, তিরমিযী ৩৮৬, ইবনু মাজাহ ৯৬৭, দারিমী ১৪০৪, আহমাদ (৪/৩৪১, ৩৪২) ।হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(৬) ধীরে-সুস্থে মসজিদের দিকে রওয়ানা করবেঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে,
তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু
পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩৬, ৯০৮; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৪, আহমাদ ২২৭১২) (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৬০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৭) মসজিদে ঢুকার আগে নিজের জুতা-জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে এবং তাতে নাপাক
দেখলে মাটি দিয়ে ঘষে নিবেঃ
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে আসে তখন সে যেন তার জুতা জোড়া ভালোভাবে
দেখে নেয়। অতঃপর সে যদি তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখতে পায় তা হলে সে যেন তা কোনো কিছু
দিয়ে মুছে ফেলে এবং উক্ত জুতা পরেই সালাত পড়ে”। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫০; আহমাদ (৩/২০, ৯২), দারিমী ১৩৭৮, ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং
১০১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
(ক) জুতা পরে সালাত আদায় শারী‘আত সম্মত।
(খ) জুতায় লেগে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করলেই তা পাক হয়ে যায়।
(গ) ‘আমলে ইয়াসির বা হালকা কাজে সালাত নষ্ট হয় না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের কারোর জুতার তলায় আবর্জনা লেগে গেলে মাটিই তার আবর্জনা
বা নাপাকি দূর করার জন্য যথেষ্ট।” (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ৩৮৫, হাকিম (১/১৬৬), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩০)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৮) মসজিদে ঢুকার সময় ডান পা আগে
বাড়িয়ে দিবে এবং নিম্নোক্ত দো‘আগুলো পড়ে নিবেঃ
(ক) আবু হুমাইদ কিংবা আবু উসাইদ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠায়। অতঃপর বলে: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি
আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন। আর যখন সে মসজিদ থেকে বের হয় তখন সে যেন
বলে: : اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ যার অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট সমূহ কল্যাণ কামনা করি”।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭২, দারিমী ২৬৯,
১৩৯৪, ২৬৯১, মুসলিম ৭২৮, আহমাদ (৩/১৯৭), ইবনুস-সুন্নী
৮৮, নাসায়ী ৭২৯, আহমাদ ১৫৬২৭, ২৩০৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হাইওয়াহ ইবনু শুরায়িহ (রহঃ) বলেন, আমি ‘উক্ববাহ্ ইবনু মুসলিমের
সাথে সাক্ষাত করে বলি, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল
‘আস (রাঃ) এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করা হয়েছেঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় বলতেনঃ ‘আমি আশ্রয় প্রার্থনা
করছি, অতীব মর্যাদা ও চিরন্তন পরাক্রমশালীর অধিকারী মহান আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান
হতে। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, এতটুকুই? আমি বললাম, হ্যাঁ। ‘উক্ববাহ্ (রাঃ) বললেন, কেউ
এ দু‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে, এ লোকটি আমার (অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা) থেকে সারা দিনের জন্য
বেঁচে গেল। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৬৬, নাসায়ী
২৯৩, ইবনু মাজাহ ৫৪০, দারিমী ১৩৭৬, আহমাদ (৬/৩২৫, ৪২৬) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ হে আল্লাহ্! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে
দিন এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সালাম পেশ
করে, অতঃপর বলেঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান রক্ষা করুন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা আল-কুবরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মসজিদে ঢুকতেন তখন মুহাম্মাদের (স্বয়ং নিজের)
প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী
যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা রহমতিকা” (হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন
এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। যখন তিনি মাসজিদ হতে বের হতেন
তখনও মুহাম্মাদের (নিজের) প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ “রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী আবওয়াবা ফাদলিকা” (হে আল্লাহ্! আমার গুনাহসমূহ
ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন)। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৭৭১, তিরমিযী ৩১৪, আহমাদ ২৫৮৭৭-৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
(১) এই হাদীসটির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাসজিদে প্রবেশ করার সময় আল্লাহর
রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করার পর এই দোয়াটি
পড়তে হবে।
“রব্বিগফির লী যুনুবী ওয়াফতাহ লী
আবওয়াবা রহমতিকা”
অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমার পাপগুলি ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য
আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলি খুলে দিন”।
দরুদ পাঠঃ এখানে উল্লেখিত চারটি দরুদের মধ্যে যেকোনো একটি পাঠ করলেই চলবে।
(ক) ‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর
অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর
অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি
মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান
করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের
সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম ৩/১৭ হাঃ
৪০৬, আহমাদ ১৮১৫৬, আধুনিক প্রকাশনী ৩১২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাঃ)
হতে বর্ণিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ!
(আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউওয়া
‘ আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বা-রাক্তা ‘আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম
মাজীদ)
আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের
উপর এবং তাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম
(আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর
স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল
করেছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার
অধিকারী। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৩৩৬৯,
৬৩৬০, মুসলিম৩/১৭ , আহমাদ ২৩৬৬১, আধুনিক প্রকাশনী ৩১১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ب -"الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ ".
(صحيح البخاري, رقم الحديث ৬৩৫৮).
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আপনার অনুগত প্রিয়পাত্র ও রাসূল মুহাম্মাদকে
এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীমকে সম্মানিত করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে
ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন,
সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান
বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন”। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬৩৫৮, ৪৭৯৮, আধুনিক প্রকাশনী ৫১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) د - "اَلَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ".
(سنن النسائي، رقم الحديث ১২৯২، وصححه الألباني).
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর
অনুসরণকারীগণকে অতিশয় সম্ভ্রম বা সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করুন”। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১২৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর যে কোনো
স্থান থেকে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর
সালাম পৌঁছে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ কতকগুলি ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আব্দুল ওয়াহাব ইবনু আব্দুল হাকাম ওয়াররাক ও মাহমূদ ইবনু গায়লান
(রহঃ) ... আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলার কতক ফেরেশতা এমনো রয়েছে, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে
বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌছিয়ে থাকেন। (সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১২৮৫,মিশকাত ৯২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে
আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে সকল মুসলিম নর-নারীর দরূদ
পৌঁছে দেওয়া হয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার
কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো
না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ২০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৯) মসজিদে ঢুকে আশপাশের লোকগুলো
শুনতে পায় এমন স্বরে তাদেরকে সালাম করবেঃ
(ক) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতাইবাহ ও ইবনু হুজর (রহঃ) .....আবূ
হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রসূল! তিনি
বললেন, (সেগুলো হলো-)
(১) কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম
করবে,
(২) তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে,
(৩) সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভাল উপদেশ দিবে,
(৪) সে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে, তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্
বলে) রহমতের দু’আ করবে,
(৫) সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং
(৬) সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে যাবে।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
৫৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন
মাজলিসে পৌঁছে, সে যেন সালাম করে। অতঃপর যদি বসার প্রয়োজন হয়, তবে বসে পড়বে। অতঃপর
যখন প্রস্থানের উদ্দেশে দাঁড়াবে সালাম দেবে। কেননা প্রথমবারের সালাম দ্বিতীয়বারের সালামের
চেয়ে উত্তম নয় (অর্থাৎ- উভয় সালামই মর্যাদার দিক দিয়ে সমান)। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৪৬৬০, তিরমিযী ২৭০৬, আবূ দাঊদ ৫২০৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৮৩, সহীহ
ইবনু হিব্বান ৪৯৬, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭০৭, আহমাদ ৯৬৬৪, ‘নাসায়ী’র কুবরা
১০১৭৪, আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৬, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২০২, ‘ত্ববারানী’র আল
মু‘জামুস্ সগীর ১০৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
৮ ও ৯ নং হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
(ক) মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করতে
হবে।
(খ) এরপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করতে হবে।
(গ) তারপর নিম্নস্বরে সালাম দিতে হবে।
(ঘ) মসজিদ থেকে প্রস্থানের সময় আবারও রাসুল সা. এর উপর দরুদ ও সালাম
পেশ এবং বাহির হওয়ার দোয়া পাঠ করতে হবে।
(১০) মসজিদে ঢুকার সময়টি কোনো ফরয
সালাতের সময় না হয়ে থাকলে অন্ততপক্ষে দু’ রাকাত তাহিয়্যাতুল-মাসজিদের সালাত পড়ে নিতে
হবেঃ
(ক) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (কোন এক)
জুমু‘আহর দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। এ
সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে
বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৩০, ৯৩১, ১১৬৬; মুসলিম ৭/১৪, হাঃ ৮৭৫, আহমাদ ১৪৯১২, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৮৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১১) মসজিদে ঢুকে পায়ের জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেললে তা দু’ পায়ের মাঝখানে
কিংবা জুতা রাখার নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবেঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাত আদায়কালে জুতা খুলে যেন এমন জায়গায় না রাখে যাতে
অন্যের কষ্ট হয়। বরং জুতাজোড়া যেন দু’ পায়ের মাঝখানে রেখে দেয় অথবা তা পরেই সালাত আদায়
করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৫, ইবনু হিব্বান (৩৫৮), ইবনু খুযাইমাহ
(১০০৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), হাকিম (৯১/২৬০) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে
ও বাম পাশে না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে
পারবে)। তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৪, হাকিম (১/২৫৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল
কুবরা’ (২/৪৩২), ইবনু খুযাইমাহ (১০১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
(ক) অপর ভাইয়ের অসুবিধা হয়
এমন কাজ পরিহার করা বা এড়িয়ে চলা উচিতঃ
(খ) সাধারণতঃ আদব হচ্ছে, কষ্টদায়ক কোনো জিনিস মানুষের ডান দিকে না রাখা।
(গ) কারোর পায়ে ফিতা বিশিষ্ট কোনো জুতা কিংবা মোজো পরা থাকলে যা পা
থেকে খোলা খানিকটা কষ্টকর তা হলে তা পরেই সালাত পড়া সুন্নাত: তবে মসজিদে ঢুকার পূর্বে
নিজ জুতা জোড়া ভালোভাবে দেখে নিবে। তাতে কোনো নাপাক বা ময়লা দেখলে তা অতি সত্বর ভালোভাবে
পরিষ্কার করে নিবে। যাতে করে মসজিদের কার্পেট, পাটি ইত্যাদি নষ্ট না হয়। অতঃপর তা পরেই
সালাত পড়বে।
ই‘য়ালা ইবনু শাদ্দাদ ইবনু আওস থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত
কর। তারা জুতা এবং মোজা পরে সালাত আদায় করে না। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫২, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), হাকিম (১/২৬০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(১২) সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারিতে
বিশেষ করে ইমাম সাহেবের ডান দিকে বসার যারপরনাই চেষ্টা করতে হবে। তবে এতে করে কোনো
মুসলিমকে সামান্যটুকুও কষ্ট দেয়া যাবে নাঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আযানে ও প্রথম কাতারে কী (ফাযীলাত) রয়েছে, তা যদি লোকেরা
জানত, কুরআহর মাধ্যমে বাছাই ব্যতীত এ সুযোগ লাভ করা যদি সম্ভব না হত, তাহলে অবশ্যই
তারা কুরআহর মাধ্যমে ফায়সালা করত। যুহরের সালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করার মধ্যে কী
(ফাযীলাত) রয়েছে, যদি তারা জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর ‘ইশা ও ফজরের
সালাত (জামা‘আতে) আদায়ের কী ফাযীলাত তা যদি তারা জানত, তাহলে নিঃসন্দেহে হামাগুড়ি দিয়ে
হলেও তারা হাজির হত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬১৫, ৬৫৪, ৭২১, ২৬৮৯; মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৭, আহমাদ ৭২৩০, আধুনিক প্রকাশনী ৫৮০, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জামাআত ও কাতারে দাঁড়ানোর সংক্ষিপ্ত নিয়মঃ
দু’জন মুছল্লী হলে জামা‘আত হবে। ইমাম বামে ও মুক্তাদী ডাইনে দাঁড়াবেঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার
খালা উম্মুল মু’মিনীন মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রে ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতের জন্যে দাঁড়ালেন। আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের পেছন দিয়ে তাঁর হাত দ্বারা আমার হাত ধরে
পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৬, বুখারী ৬৯৯, মুসলিম ৭৬৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তিনজন মুছল্লী হলে ইমাম সম্মুখে এবং দু’জন মুক্তাদী পিছনে দাঁড়াবেঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করার জন্যে দাঁড়ালেন।
আমি এসে তাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের
পেছন দিয়ে আমার ডান হাত ধরলেন। (পেছন দিয়ে টেনে এনেই) আমাকে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
তারপর জাব্বার ইবনু সাখর আসলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম
পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। (এরপর) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দু’জনের
হাত একসাথে ধরলেন। আমাদেরকে (নিজ নিজ স্থান হতে) সরিয়ে এনে নিজের পেছনে দাঁড় করিয়ে
দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৭, মুসলিম ৩০১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
তবে বিশেষ কারণে ইমামের দু’পাশে দু’জন সমান্তরালভাবে দাঁড়াতে পারেন। তার
বেশী হ’লে অবশ্যই পিছনে কাতার দিবেনঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ‘আলকামাহ ও আল-আসওয়াদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন।
আমরা দীর্ঘক্ষণ তার দরজায় বসে থাকার পর জনৈক দাসী বের হয়ে আসল। অতঃপর সে (পুনরায় ঘরে
ঢুকে ‘আবদুল্লাহর নিকট) তাদের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাদের প্রবেশের অনুমতি
দিলেন। অতঃপর তিনি ‘আলকাবমাহ এবং আল-আসওয়াদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে বললেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি এরূপই করতে দেখেছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬১৩, আহমাদ (১/৪২৬, ৪৫১, ৪৫৫, ৪৫৯), নাসায়ী ৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সামনের কাতারে পুরুষগণ ও পিছনের কাতারে মহিলাগণ দাঁড়াবেনঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের কাতারগুলোর
মধ্যে (সওয়াবের দিক থেকে) উত্তম হল শেষ কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ কাতার (কম সওয়াবের)
হল তাদের প্রথম কাতার। পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল প্রথম কাতার এবং তাদের জন্য
মন্দ হল তাদের শেষ কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০০, মুসলিম
৪৪০, তিরমিযী ২২৪, নাসায়ী ৮১৯,, ৮২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৮, আহমাদ ৭৩১৫,
৮২২৩, ৮২৮১, ৮৪৩০, ৮৫৮০, ৯৯১৭; দারিমী ১২৬৮, সহীহ তারগীব ৪৮৮, সহীহ আবী দাউদ ৬৮১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হল তাদের
সামনের (প্রথম) কাতার এবং মন্দ হল তাদের পেছনের (শেষ) কাতার। মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে
উত্তম হল তাদের পেছনের (সর্বশেষ) কাতার এবং মন্দ হল তাদের সামনের কাতার। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১০০১, আহমাদ ১৩৭০৯, ১৪১৪১, ১৪৭৪১। হাদিসের মানঃ
হাসান (Hasan)।
মহিলা কখনো ইমাম হবে নাঃ
পুরুষ সকলের ইমাম হবেন। কিন্তু নারী কখনো পুরুষের ইমাম হবেন না।
নারী ও পুরুষ কখনোই পাশাপাশি দাঁড়াবেন না। দু’জন বয়স্ক পুরুষ, একটি বালক ও একজন মহিলা
মুছল্লী হ’লে বয়স্ক একজন পুরুষ ইমাম হবেন। তাঁর পিছনে উক্ত পুরুষ ও বালকটি এবং সকলের
পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। আর যদি দু’জন পুরুষ ও একজন মহিলা হন, তাহলে ইমামের ডাইনে
পুরুষ মুক্তাদী দাঁড়াবেন এবং পিছনে মহিলা একাকী দাঁড়াবেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/১১০৮, ১১০৯, অনুচ্ছেদ-২৫; আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/৩০৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও ইয়াতীম আমাদের ঘরে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ)
ছিলেন আমাদের পেছনে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১১০৮, বুখারী ৭২৭, মুসলিম ৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস (রাঃ) থেকেই বর্ণিত।
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে, তার মা ও খালাসহ সালাত আদায় করলেন।
তিনি বলেন আমাকে তিনি তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। মহিলাদেরকে দাঁড় করালেন আমাদের পেছনে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৩৮৮,
১৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হলে সামনে পুরুষ ও পিছনে মহিলা দাঁড়াবেন। এমনকি
মহিলা একজন আর পুরুষ কয়েকজন হলেও মহিলা পুরুষদের পিছনে দাঁড়াবেঃ
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমাদের ঘরে
আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত
আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাযি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৭২৭, ৩৮০, আধুনিক প্রকাশনী ৬৮৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৬৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
প্রয়োজনে ইমাম উঁচুতে ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়াতে পারেনঃ
(ক) হাদিসটি নিম্নরুপঃ
হাম্মাম সূত্রে বর্ণিত।
হুযাইফাহ্ (রাঃ) মাদায়িন নামক স্থানে একটি দোকানের উপর দাঁড়িয়ে লোকদের ইমামতি করলেন।
এ সময় আবূ মাসউদ (রাঃ) তার জামা ধরে তাকে টান দিলেন। তিনি সালাত শেষে বললেন, আপনার
কি জানা নেই যে, লোকদের এরূপ (উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে ইমামতি) করা হতে নিষেধ করা হত? তিনি
বলেন, হ্যাঁ, আপনি যখন আমাকে টান দেন তখনই আমার তা স্মরণ হয়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৯৭, ইবনু খুযাইমাহ (১৫২৩), বায়হাক্বী
(৩/১০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইমামের আওয়ায পৌঁছলে এবং ইক্তেদা সম্ভব হলে ইবনু হাজার বলেন, ইমাম
নীচে থাকুন বা উপরে থাকুন ছালাত আদায় করা জায়েয। (‘আওনুল
মা‘বূদ হা/৫৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৯-৮০)।
(গ) তবে ইমামের নীচে থাকাই উত্তম। এক ব্যক্তি দ্বিতীয়বার জামা‘আতে ইমাম
বা মুক্তাদী হিসাবে যোগদান করতে পারেন। তখন দ্বিতীয়টি তার জন্য নফল হবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭৮)।
(ঘ) ইমাম অতি দীর্ঘ করলে কিংবা অন্য কোন বাধ্যগত কারণে মুক্তাদী সালাম
ফিরিয়ে জামা‘আত ত্যাগ করে একাকী শুরু থেকে ছালাত আদায় করতে পারবেন। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৩৩ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২;
মির‘আত ৪/১৩৯)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জামা‘আতে সালাত আদায় করতেন, তারপর নিজ এলাকায়
যেতেন ও এলাকাবাসীর ইমামতি করতেন। এক রাতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সাথে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন, তারপর নিজ এলাকায় গিয়ে তাদের ইমামতি করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পাঠ করতে শুরু করলেন। এতে বিরক্ত হয়ে
এক লোক সালাম ফিরিয়ে সালাত থেকে পৃথক হয়ে গেল। একা একা সালাত আদায় করে এখান থেকে চলে
গেল। তার এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্মিত হয়ে বলল, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে?
উত্তরে সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কখনও মুনাফিক্ব হয়নি। নিশ্চয়ই আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাবো। এ বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জানাবো।
তারপর সে ব্যক্তি রসূলের কাছে এলো। বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি পানি
সেচকারী (শ্রমিক), সারাদিন সেচের কাজ করি। মু‘আয আপনার সাথে ‘ইশার সালাত আদায় করে নিজের
গোত্রের ইমামতি করতে এসে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ দিয়ে সালাত শুরু করে দিলেন। এ কথা শুনে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, হে মু‘আয! তুমি
কি ফিতনাহ্ (ফিতনা) সৃষ্টিকারী? তুমি ‘ইশার সালাতে সূরাহ্ ওয়াশ্ শামসি ওয়ায্ যুহা-হা-,
সূরাহ্ ওয়ায্ যুহা-, সূরাহ্ ওয়াল্ লায়লী ইযা- ইয়াগশা-, সূরাহ্ সাব্বিহিসমা রব্বিকাল
আ‘লা- তিলাওয়াত করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮৩৩, বুখারী ৭০৫, মুসলিম ৪৬৫, নাসায়ী ৮৩১, আহমাদ ১৪১৯০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
কাতার সোজা করার নিয়মঃ
(ক) সম্মুখের কাতারগুলি আগে পূর্ণ করতে হবে। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৯৪,
‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা পূর্বে প্রথম কাতার সম্পূর্ণ করো, এরপর পরবর্তী
কাতার পুরা করবে। কোন কাতার অসম্পূর্ণ থাকলে সেটা হবে একেবারে শেষের কাতার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৯৪, আবূ দাঊদ ৬৭১, সহীহ আল জামি ১২২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) কেননা ফেরেশতাগণ আল্লাহর সম্মুখে
এভাবেই কাতার দিয়ে থাকেন। (আবুদাঊদ হা/৬৬১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২,
অনুচ্ছেদ-৯৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) যেরূপ তাদের প্রতিপালকের
নিকট কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, মালায়িকাহ্
তাদের প্রতিপালকের নিকট কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার
পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে
দাঁড়ায়। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬১, নাসায়ী ৯৯২, আহমাদ (৫/১০১)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) কাতার সোজা করতে হবে এবং কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাতে হবে। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন, سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ‘তোমরা কাতার সোজা কর, কেননা
কাতার সোজা করা ছালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত’। (মুত্তাফাক্ব
‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
[আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সালাতের কাতার ঠিক করে নাও। কারণ সালাতের
কাতার সোজা করা সালাত ক্বায়িম করার অন্তর্ভুক্ত। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৭, বুখারী ৭২৩, মুসলিম ৪৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে
আমাদের কাঁধগুলিতে হাত দিয়ে পরস্পরে মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ ‘তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত
হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলি বিভক্ত হয়ে যাবে’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে
দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের
যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী
(মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা
করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৮, মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আনাস (রাঃ) বলেন, وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ ‘আমাদের মধ্য থেকে একজন পরস্পরের
কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দিতেন’। ছাহাবী নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) বলেন, فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَرُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَكَعْبَهُ بِكَعْبِهِ ‘অতঃপর দেখলাম যে, একজন ব্যক্তি
মুছল্লীদের পরস্পরের কাঁধে কাঁধ, হাঁটুতে হাঁটু ও গোড়ালিতে গোড়ালি মিলিয়ে দিচ্ছেন’।
(আবুদাঊদ হা/৬৬২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু
বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের
দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই
তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য
সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার
সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে
নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৬২, আহমাদ (৪/২৭৬), ইবনু খুযাইমাহ (১৬০) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) যার ভিত্তিতে ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে- بَابُ إِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصَّفِّ ‘ছালাতের কাতারে কাঁধে কাঁধ
ও পায়ে পা মিলানো অনুচ্ছেদ’। (বুখারী হা/৭২৫, ফৎহুল
বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হতেও তোমাদের দেখতে
পাই। আনাস (রাযি.) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ
এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৭২৫,৭১৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) এখানে পা মিলানো অর্থ পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দেওয়া। যাতে কোনরূপ
ফাঁক না থাকে এবং কাতারও সোজা হয়। বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَ تَرَاصُّوْا ‘তোমরা কাতার সোজা কর এবং
পরস্পরে ভালভাবে (কাঁধ ও পা) মিলাও’। (বুখারী হা/৭১৯,
‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৭২; ঐ, মিশকাত হা/১০৮৬ ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪; মির‘আত
৪/৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত)
দেয়া হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে চেহারা ফিরালেন এবং
বললেন, নিজ নিজ কাতার সোজা করো এবং পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়াও! নিশ্চয় আমি আমার
পেছনের দিক হতেও তোমাদেরকে দেখতে পাই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৬, বুখারী ৭১৮, ৭১৯,
মুসলিম ৪৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) আবুদাঊদের অন্য বর্ণনায় এসেছে, حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ... وَلاَ تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ ‘কাঁধগুলি সমান কর ও ফাঁক
বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন জায়গা খালি ছেড়োনা’। (আবুদাঊদ
হা/৬৬৬-৬৭; মিশকাত হা/১১০২, ১০৯৩, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সালাতের কাতার সোজা রাখবে। কাঁধকে
সমান করো। কাতারের খালি স্থান পুরা করো। নিজেদের ভাইদের হাতে নরম থাকবে। কাতারের মধ্যে
শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়াবার কোন খালি স্থান ছেড়ে দেবে না। যে লোক কাতার মিশিয়ে রাখবে
আল্লাহ তা‘আলা (তাঁর রহমতের সাথে) তাকে মিলিয়ে রাখবেন। আর যে লোক কাতার ভেঙ্গে দাঁড়াবে
আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার রহমত থেকে কেটে দেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০২, আবূ দাঊদ ৬৬৬, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯৫, আহমাদ ৫৭২৪, সহীহাহ্ ৭৪৩,
সহীহ আল জামি‘ ১১৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) ইবনু হাজার বলেন, নু‘মান বিন বাশীরের বর্ণনার শেষাংশে كَعْبَه بكَعْبِه ‘গোড়ালির সাথে গোড়ালি’ কথাটি
এসেছে। এর দ্বারা পায়ের পার্শ্ব বুঝানো হয়েছে, পায়ের পিছন অংশ নয়, যেমন অনেকে ধারণা
করেন’। (আবুদাঊদ হা/৬৬২; বুখারী হা/৭২৫; ফাৎহুল বারী, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, ‘কাঁধে
কাঁধ ও পায়ে পা মিলানো’ অনুচ্ছেদ-৭৬, ২/২৪৭ পৃঃ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূল কাসিম আল-জাদালী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু
বাশীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত লোকদের
দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই
তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাড়াঁও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য
সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার
সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে
নিজের গোড়ালী মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৬৬২, আহমাদ (৪/২৭৬), ইবনু খুযাইমাহ (১৬০) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দু পায়ের মাঝখানে কতোটুকু ফাঁক থাকেবে?
এখানে মুখ্য বিষয় হ’ল দু’টি: কাতার সোজা করা ও ফাঁক বন্ধ করা। অতএব
পায়ের সম্মুখভাগ সমান্তরাল রেখে পাশাপাশি মিলানোই উত্তম।
(ক) পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁক করে
দাঁড়াবেন। যাতে পায়ের মাঝখানে নিজের জুতা জোড়া রাখা যায়। (আবুদাঊদ হা/৬৫৪-৫৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯০)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়কালে জুতা খুলে তার ডান পাশে ও বাম পাশে
না রাখে। কারণ তা অন্যের ডান পাশে হবে। অবশ্য বাম পাশে কেউ না থাকলে (রাখতে পারবে)।
তবে জুতাজোড়া উভয় পায়ের মধ্যখানে রাখাই শ্রেয়। (সুনান
আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৫৪, হাকিম (১/২৫৯), বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (২/৪৩২), ইবনু
খুযাইমাহ (১০১৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(খ) দেহের ভারসাম্যের অধিক পা ফাঁক করবেন না। মহিলা মুছল্লী তার দুই
গোড়ালি একত্রিত করে দাঁড়াবেন না। এগুলি স্রেফ কুসংস্কার মাত্র। পরস্পরে কাঁধ, হাঁটু
ও গোড়ালি মিলানোর কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করে বানোয়াট যুক্তিতে নিয়মিতভাবে পরস্পরে পা
ফাঁক করে কাতার দাঁড়ানোর মধ্যে কোন নেকী নেই, স্রেফ গোনাহ রয়েছে। এই বাতিল রেওয়াজ থেকে
দ্রুত তওবা করে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভাই ভাই হয়ে কাতার দাঁড়ানো কর্তব্য।
উল্লেখ্য যে, দুই পিলারের মাঝখানে কাতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
(আবুদাঊদ হা/৬৭৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৯৫)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল হামীদ ইবনু মাহমূদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সাথে জুম্মার সালাত আদায় করি। লোকজন বেশি হওয়ায় আমরা
খুঁটি সমূহের মাঝখানে যেতে বাধ্য হই। এতে করে আমরা আগে পিছে হয়ে যাই। আনাস (রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমরা এভাবে (দুই খুঁটির মাঝখানে)
দাঁড়ানো হতে বিরত থাকার চেষ্টা করতাম। (সুনান আবূ
দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৭৩, তিরমিযী ২২৯, নাসায়ী ৮২০, আহমাদ (৩/১৩১) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
প্রথম কাতারের নেকী বেশীঃ
(ক) ১ম কাতারে নেকী বেশী। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যদি লোকেরা
জানতো ১ম কাতারে কি নেকী আছে, তাহ’লে তারা লটারী করত। (বুখারী হা/৭২১ (ফাৎহুল বারী সহ), মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৮,
‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যদি জানত আযান দেয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর
মধ্যে কী সাওয়াব রয়েছে এবং লটারী করা ছাড়া এ সুযোগ না পেত, তাহলে লটারী করতো। আর যদি
জানতো সালাত আদায় করার জন্য আগে আগে আসার সাওয়াব,
তাহলে তারা এ (যুহরের) সালাতে অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করতো। যদি জানতো ‘ইশা ও ফজরের
(ফজরের) সালাতের মধ্যে আছে, তাহলে (শক্তি না থাকলে) হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সালাতে উপস্থিত
হবার চেষ্টা করতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৬২৮, বুখারী ৬১৫, মুসলিম ৪৩৭, নাসায়ী ৫৪০, মালিক ৩, তিরমিযী ২২৫, আহমাদ ৭২২৬, সহীহ
ইবনু হিব্বান ১৬৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা
জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’। (আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়
করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর বললেন, অমুক লোক কি
হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় বললেন,
অমুক লোক কি হাযির আছে? সাহাবীগণ বললেন, না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, সব সালাতের মাঝে এ দু’টি সালাত (ফাজর ও ‘ইশা) মুনাফিক্বদের জন্যে খুবই কষ্টসাধ্য।
তোমরা যদি জানতে এ দু’টি সালাতের মাঝে কত পুণ্য, তাহলে তোমরা হাঁটুর উপর ভর করে হলেও
সালাতে আসতে।
সালাতের প্রথম কাতার মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) কাতারের মতো (মর্যাদাপূর্ণ)।
তোমরা যদি প্রথম কাতারের ফাযীলাত জানতে তবে এতে অংশগ্রহণ করার জন্য তাড়াতাড়ি পৌঁছার
চেষ্টা করতে। আর একা একা সালাত আদায় করার চেয়ে অন্য একজন লোকের সঙ্গে মিলে সালাত আদায়
করা অনেক সাওয়াব। আর দু’জনের সাথে মিলে সালাত আদায় করলে একজনের সাথে সালাত আদায় করার
চেয়ে অধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর যত বেশী মানুষের সঙ্গে মিলে সালাত আদায় করা হয়, তা
আল্লাহর নিকট তত বেশী প্রিয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১০৬৬, আবূ দাঊদ ৫৫৫, নাসায়ী ৮৪৩, সহীহ আত্ তারগীব ৪১১)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
(গ) অবশ্য ১ম কাতারে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ ইমামের নিকটবর্তী থাকবেন,
অতঃপর মর্যাদা অনুযায়ী অন্যান্যগণ। এ সময় মসজিদে বাজারের মত শোরগোল করা নিষেধ। (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৮৮-৮৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ মাস্‘ঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে
দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের
যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী
(মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্‘ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা
করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৮, মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞজন (সালাতে)
আমার নিকট দিয়ে দাঁড়াবে। তারপর দাঁড়াবে তাদের নিকটবর্তী স্তরের লোক। এ কথা তিনি তিনবার
উচ্চস্বরে বললেন। আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈ চৈ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৮৯, মুসলিম ৪৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
একাকী কাতারের পিছনে না দাঁড়ানোঃ
কাতারের পিছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তার সালাত হবে নাঃ
(ক) আলী ইবনু শায়বান (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক প্রতিনিধি দল রওয়ানা হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকটে উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকট বাইআত (ইসলাম) গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত
পড়লাম, অতঃপর তাঁর পিছনে আরো এক ওয়াক্তের সালাত পড়লাম। তিনি সালাত শেষে এক ব্যাক্তিকে
কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখলেন। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট থামলেন এবং সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে বলেন তুমি পুনরায়
সালাত পড়ো। কারণ যে ব্যাক্তি কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়ায় তার সালাত হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-১/১০০৩, আহমাদ ১৫৮৬২, ইরওয়াহ ৩২৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিয়াদ ইবনু আবূল
জাদ (রহঃ) আমার হাত ধরে আর-রাক্কা নামক স্থানে ওয়াবিসা ইবনু মাবাদ (রাঃ) নামক প্রবীণ
ব্যাক্তির নিকট নিয়ে যান। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি কাতারের পিছনে একাকী সালাত পড়লে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তা পুনর্বার পড়ার নির্দেশ দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ)-২/১০০৪, তিরমিযী ২৩০-৩১, আবূ দাঊদ ৬৮২,
আহমাদ ১৭৫৩৯, ১৭৫৪১; দারিমী ১২৮৫, ইরওয়াহ ৫৪১, মিশকাত ১১০৫, ইবনু হিব্বান ২১৯৯। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে সামনের কাতারে জায়গা না থাকলে বাধ্যগত অবস্থায় পিছনে একাকী দাঁড়ানো
জায়েয আছে। (বাক্বারাহ ২/২৮৬, তাগাবুন ৬৪/১৬; নায়ল ৪/৯২-৯৩ পৃঃ)।
একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে অন্যকে সাথে নিয়ে জামায়াত করার হুকুমঃ
আবী সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে একজন একাকী সালাত আদায় করছে। তখন তিনি বললেন:
“এমন কেউ কি নেই, যে এ লোকটিকে সাদাকা করবে, তথা এর সাথে সালাত আদায় করবে? (সুনান আদ-দারেমী, ১৪০৫, ১৪০৫,
সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১০৫৭, ২৩৯৮, ২৩৯৯
ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬, ৪৩৭, ৪৩৮, আহমাদ ৩/৬৪; বাইহাকী ৩/৬৯; আবু দাউদ
৫৭৪; হাকিম ১/২০৯; হাকিম একে সহীহ বলেছেন আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন।; তিরমিযী ২২০,
মুহাক্বিক্বের মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ৪৩৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বিব্লামুখী হয়ে বসে কুর’আন মাজীদ তিলাওয়াত কিংবা যিকির-আয্কার করতে হবেঃ
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“প্রত্যেক জিনিসেরই একটি উত্তম বা শ্রেষ্ঠ দিক রয়েছে। অতএব, বৈঠকের
মধ্যে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ বৈঠক হচ্ছে ক্বিব্লামুখী বৈঠক”। (ত্বাবারানী/আওসাত, হাদীস নং ২৩৫৪)।
কোনো ফরয সালাতের ইক্বামত দেওয়া হলে তখন শুধু উক্ত ফরয সালাতই আদায়
করতে হবে।
সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে উক্ত ফারয সালাত ছাড়া অন্য কোন সালাত আদায় করা
যাবে নাঃ
(ক) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে উক্ত ফারয সালাত ছাড়া অন্য কোন
সালাত আদায় করা যাবে না। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
১২৬৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৮, তিরমিযী ৪২১, নাসায়ী ৮৬৪), দারিমী ১৪৪৮, ইবনু মাজাহ ১১৫১, আহমাদ (২/৩৩১), ইবনু খুযাইমাহ
(হাঃ ১১২৩) ।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন
করলো। সে প্রথমে দু’ রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে সালাতে শরীক হলো। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তোমার একাকী আদায়কৃত
ঐ দু’ রাক‘আত সালাত কিসের অথবা তুমি আমাদের সঙ্গে যা আদায় করেছো? (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১২৬৫, নাসায়ী ৮৬৭, ইবনু মাজাহ ১১৫২, আহমাদ
(৫/৮২), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
যে যে কারণে জামা‘আতে সালাত পড়া ছাড়া যায়ঃ
শরী‘আতসম্মত এমন কিছু কারণ রয়েছে যার কোনো একটি পাওয়া গেলে তৎসংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির জন্য জামা‘আতে সালাত পড়া বাধ্যতামূলক নয়। যা নিম্নরূপঃ
(১) কোনো কঠিন রোগ অথবা শত্রুর মারাত্মক ভয় হলেঃ
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনেও মসজিদে না গিয়ে ঘরে সালাত পড়লো
অথচ তার নিকট মসজিদে উপস্থিত না হওয়ার শরঈ কোনো ওযর নেই তাহলে তার আদায়কৃত সালাত আল্লাহর
দরবারে কবুল হবে না। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ওযর বলতে কি ধরণের ওযর
বুঝাতে চাচ্ছেন? তিনি বললেনঃ ভয় অথবা রোগ”।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫১; বায়হাকী, হাদীস নং ৫৪৩১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২) অতি বৃষ্টি কিংবা কাদায় পা
পিছলে যাওয়ার ভয় হলেঃ
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু হারিস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার বর্ষণ
মুখর দিনে ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) আমাদের উদ্দেশে খুত্বাহ দিচ্ছিলেন। এদিকে মুআয্যিন
আযান দিতে গিয়ে যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ -এ পৌঁছল, তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ
দিলেন যে, ‘লোকেরা যেন আবাসে সালাত আদায় করে নেয়।’ এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে
লাগল। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) বললেন, তাঁর চেয়ে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তিনিই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব।
(তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করার অনুমতি আছে)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬১৬, ৬৬৮, ৯০১; মুসলিম ৬/৩, হাঃ ৬৯৯,
আধুনিক প্রকাশনী ৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮৯)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩) ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠাণ্ডা রাতে দমকা বায়ু প্রবাহিত হলেঃ
নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযি.) একদা তীব্র
শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে
সালাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- ‘‘প্রত্যেকে নিজ
নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও।’’ (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৬৬, ৬৩২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৫, আহমাদ ৪৫৮০, আধুনিক
প্রকাশনী ৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৪) খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার
প্রতি প্রচুর আগ্রহ অনুভূত হলেঃ
(ক) ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় সালাতের ইক্বামাত হয়ে
যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৭১. ৫৪৬৫, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৭, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ
৫৬০, আহমাদ ২৪২২১, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৮) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সালাতের পূর্বে
তা খেয়ে নিবে খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৭২, ৫৪৬৩; মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৭, আধুনিক প্রকাশনী ৬৩২,
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার এসে পড়ে, অপরদিকে সালাতের
ইক্বামাত হয়ে যায়। তখন পূর্বে খাবার খেয়ে নিবে। খাওয়া রেখে সালাতে তাড়াহুড়া করবে না।
[নাফি‘ (রহ.) বলেন] ইবনু ‘উমার (রাযি.)-এর জন্য খাবার পরিবেশন করা হত, সে সময় সালাতের
ইক্বামাত দেয়া হত, তিনি খাবার শেষ না করে সালাতে
আসতেন না। অথচ তিনি ইমামের কিরাআত শুনতে পেতেন। (সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৭৩, ৬৭৪, ৫৪৬৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৬, আধুনিক
প্রকাশনী ৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৫) মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ অনুভূত হলেঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ খাবার সামনে রেখে কোন সালাত নেই এবং দু’ অনিষ্ট
কাজ (পায়খানা-পেশাব) চেপে রেখেও কোন সালাত নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১০৫৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৬) কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার আশঙ্কা হলেঃ
নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, সা‘ঈদ ইবনু ‘আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ)
ছিলেন বাদর যুদ্ধে যোগদানকারী একজন সাহাবী। তিনি জুমু‘আহর দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে ইবনু
‘উমারের নিকট জুমু‘আহর দিন এ খবর পৌঁছলে তিনি সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করে তাঁকে দেখতে
গেলেন। তখন বেলা হয়ে গেছে এবং জুমু‘আহর সালাতের সময়ও ঘনিয়ে আসছে দেখে তিনি জুমু‘আহর
সালাত ছেড়ে দিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৩৯৯০, আধুনিক প্রকাশনী ৩৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত আলোচনা থেকে জানা গেলো যে,
সর্বমোট আটটি কারণে জামা‘আতের সালাত ছাড়া যায়। যা সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
কোনো এমন রোগ যা মানুষকে দ্রুত
দুর্বল ও অতি ব্যস্ত করে দেয়, জীবন, সম্পদ ও ইজ্জতের ভয়, অতি বৃষ্টি, পাঁক-কাদা, ঘোর
অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠান্ডা রাতের দমকা বায়ু, খাবার উপস্থিত ও তা খাওয়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ,
মল-মূত্র ত্যাগের প্রচুর বেগ ও কোনো নিকটতম ব্যক্তির মৃত্যু ও তার শেষ সাক্ষাৎ না পাওয়ার
আশঙ্কা।
(৭) সালাতের নিকটবর্তী সময়ে পিঁয়াজ বা রসুন জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত কোনো কিছু
খেলেঃ
ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ হতে অর্থাৎ কাঁচা রসুন খায় সে
যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদে না আসে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৮৫৩, ৪২১৫, ৪২১৭, ৪২১৮, ৫৫২১, ৫৫২২ মুসলিম ৫/১৭ হাঃ ৫৬, আহমাদ
৪৭১৫, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১১) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে প্রয়োজনে এগুলোকে ভালোভাবে সিদ্ধ
করে কিংবা পাকিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একদা জুমু‘আর খুৎবায় এক পর্যায়ে বলেন:
“হে মানব সকল! তোমরা এমন দু’টি উদ্ভিদ খাচ্ছো যা আমি নিকৃষ্ট বলেই
মনে করি। তা হলো: পিয়াজ ও রসুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
এমন কাজও করতে দেখেছি যে, তিনি মসজিদে কারো থেকে এগুলোর দুর্গন্ধ পেলে তাকে বাকী’ কবরস্থানের
দিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিতেন। সুতরাং কেউ এগুলো খেলে সে যেন তা ভালোভাবে পাকিয়ে
খায়”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪২৬)।
কতগুলো নামাযী হলে জামাআত হবে?
ইমাম ছাড়া কম পক্ষে একটি নামাযী হলে জামাআত গঠিত হবে; চাহে সে নামাযী
জ্ঞানসম্পন্ন শিশু হোক অথবা মহিলা।
মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’জন লোক
সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ তোমরা উভয়ে যখন সফরে বেরুবে (সালাতের
সময় হলে) তখন আযান দিবে, অতঃপর ইক্বামাত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে
ইমামত করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩০, ৬২৮,
৬৩১, ৬৫৮, ৬৮৫, ৮১৯, ২৮৪৮, ৬০০৮, ৭২৪৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪২৪, আহমাদ ১৫৫৯৮,
আধুনিক প্রকাশনী ৫৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নামাযের কতটুকু অংশ পেলে জামাআতের ফযীলত পাওয়া যায়?
(ক) নামাযের এক রাকআত ইমামের সাথে পেলে জামাআতের পূর্ণ ফযীলত পাওয়া
যায়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে এক রাকআত নামায পেয়ে গেল, সে নামায
পেয়ে গেল।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাক্‘আত পেল, সে যেন
পূর্ণ সালাত পেল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪১২, বুখারী ৫৮০, মুসলিম ৬০৭, আবূ দাঊদ
১২২১, নাসায়ী ৫৫৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ২০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৩৩৬৯, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ১৮১৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪০০, ইবনু হিব্বান ১৪৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৯৪,
ইরওয়া ৬২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি জুমুআহ অথবা অন্য নামাযের এক রাকআত
পেয়ে গেল, সে নামায পেয়ে গেল।”
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহর সালাতের বা অন্য সালাতের এক রাকআত পেলো,
সে (পূর্ণ) সালাত পেয়ে গেলো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১১২৩,
নাসায়ী ৫৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অবশ্য ইমামের সালাম ফিরার আগে তাকবীরে
তাহ্রীমা দিয়ে নামাযের যেটুকু অংশ পাওয়া যায় সেটুকুকে ভিত্তি করে জামাআতে শামিল হওয়া
যায়।
যেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেন,
(ক) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর
সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়ায শুনতে পেলেন। সালাত শেষে
তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কি হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে
আসছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ করবে না। যখন সালাতে
আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা
(ইমামের সালাম ফিরানোর পর) পূর্ণ করবে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৩৫, মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০৩, আহমাদ ২২৬৭১) (আ.প্র. ৫৯৯, ই.ফা. ৬০৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
যখন তোমরা ইক্বামাত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও
গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর
যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৬৩৬, ৯০৮; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৪, আহমাদ ২২৭১২) (আ.প্র. ৬০০, ই.ফা. ৬০৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ হাদিস।
উল্লেখ্য যে, জামাআত করার মত লোক থাকলেও শেষ রাকআতে রুকূর পর বা
শেষ তাশাহ্হুদে জামাআতে শামিল না হয়ে ইমামের সালাম ফিরার পর দ্বিতীয় জামাআত করা উত্তম
নয়। উত্তম হল, ইমামের সালাম ফিরার আগে পর্যন্ত জামাআতে শামিল হওয়া। (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ্ তাতাআল্লাকু বিস-স্বালাহ্, ইবনে বায ৭৬পৃ:)।
কেউ কেউ বলেন, সঙ্গে জামাআত করার মত লোক থাকলে এবং ইমাম শেষ তাশাহ্হুদে
থাকলে জামাআতে শামিল না হয়ে তাদের সালাম ফিরার পর নতুনভাবে জামাআত করে নামায পড়া উত্তম।
কেননা, মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে এক রাকআত নামায পেয়ে গেল, সে নামায
পেয়ে গেল।” আর তার মানেই হল যে এক রাকআত পেল না বরং সিজদাহ বা তাশাহহুদ পেল, সে নামায
পেল না। অতএব নতুন করে জামাআত করলে প্রথম থেকে জামাআত পাওয়া যাবে এবং পূর্ণ নামাযও
পাওয়া যাবে। আর এটাই হবে উত্তম। (ফাতাওয়া তাতাআল্লাকু বিজামাআতিল
মাসজিদ ৫০পৃ:)। অতএব আল্লাহই ভালো জানেন।
মসজিদের জামাআত ছুটে গেলেঃ
মসজিদের জামাআত ছুটে গেলে বা জামাআত শেষ হওয়ার পর মসজিদে এলে যদি
অন্য লোক থাকে তাহলে তাদের সাথে মিলে একজন ইমাম হয়ে জামাআত করে নামায পড়বে।
যদি আর কোন লোকের উপস্থিতির আশা না থাকে, তাহলে অন্য মসজিদে জামাআত
না হওয়ার ধারণা পাকা হলে সেখানে গিয়ে জামাআতে নামায পড়বে।
তা না হলে মসজিদে একাকী নামায পড়ার চাইতে বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিজের
পরিবার-পরিজনকে নিয়ে জামাআত করে নামায পড়া উত্তম। মহানবী (সাঃ) এরুপ করেছেন বলে প্রমাণ
আছে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ১৫৫পৃ:, সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা,
ডক্টর সালেহ সাদলান ৫৬পৃ:)
অবশ্য বাড়িতে জামাআত করার মত লোক না থাকলে ফরয নামায বাড়ির চেয়ে
মসজিদে পড়াই উত্তম। কারণ, নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে এবং
ফরয নামায মসজিদে পড়ার আদেশ আছে।
মসজিদে দ্বিতীয় জামাআতঃ
একই মসজিদে একই সময়ে দুটি জামাআত করা বৈধ নয়। কেননা তাতে জামাআত
না হয়ে বিচ্ছিন্নতাই প্রকাশ পায়।
অবশ্য কোন মসজিদে নির্দিষ্ট ইমাম না থাকলে সেখানে প্রথম জামাআতের
পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় জামাআত দূষণীয় নয়।
যেমন পথের ধারে বা বাজারের মসজিদে বারবার জামাআত হওয়াও দোষাবহ্
নয়। বরং যারা যখন আসবে তারা তখনই জামাআত সহকারে নামায আদায় করে নিজ নিজ কাজে বের হয়ে
যাবে।
যেমন মসজিদ ছোট হওয়ার কারণে প্রথম জামাআতে বিরাট সংখ্যক মানুষের
এক সাথে নামায পড়া সম্ভব না হলে, জামাআত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় জামাআত করাও
বৈধ।
মসজিদের নির্ধারিত ইমামের ইমামতিতে জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ার পর জামাআত
হওয়ার মত লোক মসজিদে এলে জামাআতের ফযীলত নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের দ্বিতীয় জামাআত করা
বৈধ।
একদা জামাআত হয়ে গেলে এক ব্যক্তি মসজিদে এল। মহানবী (সাঃ) বললেন,
“কে আছে যে এর জন্য সাদকাহ্ করবে? (এর সওয়াব বর্ধন করবে?)” এ কথা শুনে এক ব্যক্তি
উঠে তার সাথে নামায পড়ল।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন
এক লোক মসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত
আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কোন মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ্
(সাদাকা) দিবে তাঁর সঙ্গে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ মুহূর্তে এক লোক দাঁড়ালেন
এবং তার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত),১১৪৬, আবূ দাঊদ ৫৭৪, আহমাদ ১১৬১৩, দারিমী ১৪০৮, সহীহ আল জামি‘ ২৬৫২,
মু‘জাম আস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৬০৬, ৬৬৫, ইবনু হিব্বান ২৩৯৭, ২৩৯৮, মুসতাদরাক লিল
হাকিম ৭৫৮, সুনান আস্ সগীর লিল বায়হাক্বী ৫৫০, ইরওয়া ৫৩৫, আত্ তিরমিযী ২২০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
হযরত আনাস (রাঃ) এক মসজিদে এলেন। দেখলেন, সেখানে জামাআত হয়ে গেছে।
তিনি সেখানে আযান-ইকামত দিয়ে জামাআত সহকারে নামায আদায় করলেন। (বুখারী, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/১৫৪)
অবশ্য এই সুবাদে কেউ যেন প্রথম জামাআতে উপস্থিত হওয়াতে ঢিলেমি না
করে। কারণ, (কোন ওযর না থাকলে) আযান শোনামাত্র মসজিদে হাযির হওয়ার জন্য তৎপর হওয়া ওয়াজেব।
(ফাতাওয়া মুহিম্মাহ্ তাতাআল্লাকু বিস-স্বালাহ্, ইবনে বায ৭৪পৃ:)।
জামাআতের নামায দেরীতে হলে মুছল্লির করণীয়ঃ
রাসুল সাঃ এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী বর্তমান যুগের ইমাম, মুয়াজ্জিন
বা শাসকগণ নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় না করে দেরীতে বা বিলম্বে সালাত আদায় করছে। এমন
পরিস্থিতি এখন সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। তাহলে আমাদের এখন কর্তব্য হবে, সালাতের ওয়াক্ত
শুরু হলেই নিজে সালাত আদায় করে নেয়া। এটা হবে নিজের জন্যে ফরজ আদায়। এরপর ইমাম বা শাসকগণ
তাদের সময়ে সালাত শুরু করলে সেই জামাতেও সামিল হবেন। ঐ একই সালাত তখন হবে নফল।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! যখন
তোমার শাসকগণ সালাতকে মেরে ফেলবে বা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে?
আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত
সময়ে সালাত আদায় করবে, অতঃপর তাদেরকে ঐ ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে দেখলে তাদের সাথেও
আদায় করে নিবে। সেটা তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৩১, ইবনু মাজাহ ১২৫৬), দারিমী (১২২৮), আবূ ‘আওয়ানাহ ‘মুসনাদ’ (১/৩৪৪)
হাম্মাদ সূত্রে। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আমর ইবনু মায়মূন আল-আওদী
(রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বলেছেন, যখন তোমাদের উপর এমন শাসকদের আর্বিভাব ঘটবে যারা বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে
তখন তোমরা কি করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে আমার জন্য আপনার নির্দেশ
কি? তিনি বললেনঃ তুমি নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করবে। আর পুনরায় তাদের সাথে আদায়কৃত
সালাতকে নফল হিসেবে ধরে নিবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত),
৪৩২, ইবনু হিব্বান ৩৭৬, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (৩/১২৪), আহমাদ (৫/২৩১-২৩২), নাসায়ী
৭৭৮, ইবনু মাজাহ ১২৫৫), বায়হাক্বী (৩/১২৭-১২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদীসদ্বয় থেকে শিক্ষাঃ
(১) সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তেই অবিলম্বে আদায় করা অতি উত্তম।
(২) জামা‘আতের কারণে বিলম্ব করে এরকেবারে ওয়াক্তের শেষে সালাত আদায়
জায়িয নয়।
(৩) কারণ বশতঃ একই দিনে এক ওয়াক্তের সালাত পুনরায় আদায় করা জায়িয। আর
একই দিনে এক ওয়াক্তের দু’ বার আদায়ের যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা কোনো কারণ ব্যতীত আদায়ের
বেলায় প্রযোজ্য।
(৪) প্রথমে আদায়কৃত সালাত ফারয হিসেবে এবং পুনরায় আদায়কৃত সালাত নাফল
হিসেবে গণ্য।
(৫) অত্যাচারী শাসকের সাথেও সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তা এ
আশংকায় যে, দলে দলে বিভক্তির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাতের ঐক্যে যেন ফাটল সৃষ্টি না হয়।
তবে এশার সালাত আওয়াল-অক্তে একাকী নামায পড়ার চাইতে একটু দেরীতে
জামাআতসহ নামায পড়া উত্তম।
আওয়াল-অক্তে একাকী নামায পড়ার চাইতে একটু দেরীতে জামাআত সহ্ নামায
পড়া উত্তম। বিশেষ করে রাতের এশার নামায দেরীতে হলে একাকী আওয়াল অক্তে নামায পড়ে শুয়ে
পড়া উত্তম নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “নামাযে সবচেয়ে সওয়াব বেশী তার, যাকে (মসজিদের পথে)
হাঁটতে হয় বেশী। আর যে ব্যক্তি অপেক্ষা করে ইমাম ও জামাআতের সাথে পড়ে সে ব্যক্তির সওয়াব
তার থেকে বেশী, যে (একাকী) নামায পড়ে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।” (বুখারী ৬৫১নং)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মসজিদ হতে) যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সালাতে আসে, তার তত
অধিক পুণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার
পুণ্য সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক, যে একাকী সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৫১, মুসলিম ৫/৫০, হাঃ ৬৬২, আধুনিক
প্রকাশনী ৬১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জামাআত বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্যঃ
জামাআত আরম্ভ করার সময় মুক্তাদীদেরকে কাতার সোজা করার কথা না বলা :
(ক) অনেক মসজিদে ইক্বামত শেষ না হতেই ইমাম ছালাত শুরু করেন। অথচ ইক্বামতের
জবাব দেওয়া সুন্নাত।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল
‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা
মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর
দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ
তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা
করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে
শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র
দু‘আ করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৫৭, ৬৭০-এর টীকা দ্রঃ, মুসলিম ৩৮৪, আবূ
দাঊদ ৫২৩, নাসায়ী ৬৭৮, তিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি
৬১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) তেমনি মুক্তাদীদেরকে কাতার সোজা করতে বলা অপরিহার্য। কারণ ইমামের
উপর গুরু দায়িত্ব হল, ইক্বামত শেষ হওয়ার পর মুছল্লীদেরকে কাতার সোজা করার জন্য হুঁশিয়ার
করা। তারপর ছালাত শুরু করা।
আনাস (রাঃ) বলেন, যখন ইক্বামত দেয়া হত, তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদের
দিকে মুখ করতেন। অতঃপর বলতেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়াও।
নিশ্চয় আমি আমার পিছন থেকে তোমাদেরকে দেখতে পাই।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত)
হচ্ছে, এমন সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে
তাকালেন এবং বললেনঃ তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। কেননা, আমি আমার
পিছনে তোমাদেরকে দেখতে পাই। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৭১৯, ৭১৮, ৭২৫, মুসলিম ৪/২৮, হাঃ ৪৩৪ ১২৩৫৩, আধুনিক প্রকাশনী ৬৭৫, ৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৬৮৩, ৬৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের
বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন, আর বলতেনঃ তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের
অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেনঃ নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি মহান
আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর মালায়িকাহ্ (ফিরিশতাগণ) দু‘আ করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৬৬৪, নাসায়ী ৮১০) । হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সুধী পাঠক! রাসূল (ছাঃ) যদি উক্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তবে
কি বর্তমান যুগের ইমামগণ পারবেন না? এই সমস্ত ইমামগণ কি রাসূল (ছাঃ)-এর চেয়ে বেশী মর্যাদাবান?
(নাঊযুবিল্লাহ)। বর্তমানে ইমামগণ প্রত্যেক ওয়াক্তে মোবাইল সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন,
কিন্তু কাতার সোজা করতে বলতে পারেন না।
এখন মূল কথা হলো, মুয়াজ্জিন
ইকামত দিবেন এবং তার উত্তর দিবেন। এরপর ইমাম প্রতিটি কাতার হাদিস মোতাবেক সোজা করবেন
তারপর সালাত শুরু করবেন।
জামা‘আতে হাযির হতে বিলম্ব করার শাস্তিঃ
অনেকে ছালাত আদায় করে এবং জামা‘আতেও শরীক হয় কিন্তু অলসতা করে সর্বদা
শেষে হাযির হয়। এটা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই অভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ সমস্ত
মুছল্লীকে কঠোরভাবে ধমক দেয়া হয়েছে।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিছু লোক সব সময়ই সালাতে প্রথম কাতার থেকে পেছনে থাকে,
এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জাহান্নামের দিকে পিছিয়ে দেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১১০৪, আবূ দাঊদ ৬৭৯, সহীহ আল জামি ৭৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সুধী পাঠক! যারা ছালাত আদায় করে না তাদের জন্য এই হাদীছে উপদেশ রয়েছে। যারা
নিয়মিত ছালাত আদায় করে এবং জামা‘আতেও শরীক হয় কিন্তু পরে আসে, তাদের জন্য যদি এমন হুমকি
হয়, তাহলে যারা ছালাত আদায় করে না তাদের অবস্থা কী হতে পারে? সেই সাথে যারা জামা‘আতে
হাযির হয় না তাদের জন্যও এই হাদীছে হুঁশিয়ারী রয়েছে।
জামা‘আত হয়ে গেলে পুনরায় জামা‘আত করতে নিষেধ করা এবং ছালাত পড়ার সময় ইক্বামত
না দেয়াঃ
জামা‘আতের পরে আসা মুছল্লীরা ইক্বামত দিয়ে জামা‘আতের সাথে ছালাত
আদায় করবে। এটাই সুন্নাত।
আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন
এক লোক মসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত
আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কোন মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ্
(সাদাকা) দিবে তাঁর সঙ্গে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ মুহূর্তে এক লোক দাঁড়ালেন
এবং তার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ১১৪৬, আবূ দাঊদ ৫৭৪, আহমাদ ১১৬১৩, দারিমী ১৪০৮, সহীহ আল জামি‘ ২৬৫২,
মু‘জাম আস্ সগীর লিত্ব ত্ববারানী ৬০৬, ৬৬৫, ইবনু হিব্বান ২৩৯৭, ২৩৯৮, মুসতাদরাক লিল
হাকিম ৭৫৮, সুনান আস্ সগীর লিল বায়হাক্বী ৫৫০, ইরওয়া ৫৩৫, আত্ তিরমিযী ২২০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
মালিক ইব্নু হুওয়াইরিস
(রাযি.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে র্বর্ণিত, তিনি বলেন: সালাতের সময় হলে তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে
এবং ইক্বামাত বলবে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে অধিক বড় সে ইমামাত করবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৬৫৮, ৬২৮, আধুনিক প্রকাশনী ৬১৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৬২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাথে ফজরের সালাত আদায় করার পর বললেনঃ অমুক
হাযির আছেন কি? সাহাবীগণ বললেনঃ না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
এ দুই ওয়াক্ত (ফজর ও ‘ইশা) সালাতই মুনাফিকদের জন্য বেশি ভারী হয়ে থাকে। তোমরা যদি এই
দুই ওয়াক্ত সালাতে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা জানতে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তোমরা
অবশ্যই এতে শামিল হতে। জামা‘আতের প্রথম কাতার মালায়িকাহর (ফিরিশতাদের) কাতারের সমতুল্য।
তোমরা যদি এর ফাযীলাত সম্পর্কে জানতে, তাহলে অবশ্যই তোমরা এজন্য প্রতিযোগিতা করতে।
নিশ্চয় দু’জনের জামা‘আত একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তিনজনের জামা‘আত দু’জনের জামা‘আতের
চেয়ে উত্তম। জামা‘আতে লোক সংখ্যা যত বেশী হবে মহান আল্লাহর নিকট তা ততই বেশি পছন্দনীয়।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৫৫৪, নাসায়ী ৮৪২, দারিমী ১২৬৯, আহমাদ
(৫/১৪০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এই সময় ইক্বামত দিয়ে জামা‘আত শুরু
করতে হবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন
হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে
বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে
সালাত আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে
রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে
নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি
ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগলো।
এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই
প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত
হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত
করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী
আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উযূ করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে
বললেন, বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের
(ফজরের) সালাত আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
সালাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন,
‘‘সালাত ক্বায়িম কর আমার স্মরণে’’। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৭, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩১৬৩,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪৩৫, মুসলিম ৬৮০/১-২,
নাসায়ী ৬১৮-২০, ৬২৩; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫, ইরওয়াহ ২৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(সমাপ্ত)
অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
(ক) “সালাত কবুল হওয়ার সহিহনিয়ম”-প্রথম খন্ড।
(খ) “সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধএবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি”-দ্বিতীয় খন্ড
(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোর
পর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহঃ
====================================================
(ঘ) “ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী” জানতে এর উপর ক্লিক করুন।-অপেক্ষা করুন।
(ঙ) “কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান” জানতে এর
উপর ক্লিক করুন। -অপেক্ষা করুন।
(চ) “জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” জানতে এর উপর ক্লিক
করুন। -অপেক্ষা করুন।
====================================================
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি
কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি,
গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment