বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম
প্রথম খন্ড
সালাত আদায়ের সহিহ নিয়ম ও সালাতের ভিতর পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াসমূহ
(দ্বিতীয় অংশ)
শেষ বৈঠক (তাশাহুদ বৈঠক)
(ক) যে বৈঠকের শেষে সালাম ফিরাতে হয়, তাকে শেষ
বৈঠক বলে। ক্বাযী ‘আয়ায (৪৭৬-৫৪৪ হিঃ) বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য এবং শেষনবীর
রিসালাতের সাক্ষ্য শামিল থাকায় অন্য দো‘আসমূহের উপর প্রাধান্যের কারণে যিকরের এই বিশেষ
অনুষ্ঠানটিকে সামষ্টিক ভাবে তাশাহহুদ বলা হয়’। -মির‘আত
৩/২২৭।
এটি ফরয, যা না করলে ছালাত বাতিল হয়। তবে ১ম
বৈঠকটি ওয়াজিব, যা ভুলক্রমে না করলে সিজদায়ে সহো ওয়াজিব হয়। ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবেন।
যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯)।
(খ) আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’
পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ এবং সম্ভব হলে অন্য দো‘আ পড়বেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯; মির‘আত ১/৭০৪; ঐ, পৃঃ ৩/২৯৪-৯৫, হা/৯৪৭,
৯৪৯)।
বৈঠকে বসার নিয়মঃ
(গ) ১ম
বৈঠকে বাম পা পেতে তার উপরে বসবেন ও শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ
বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপরে বসবেন ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবেন। এই সময় ডান পায়ের
আঙ্গুলী সমূহের অগ্রভাগ ক্বিবলামুখী থাকবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮০১, ৭৯২, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩; দারিমী
১৩৯৬, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫, নায়ল ৩/১৪৩-৪৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) জোড়-বেজোড় যেকোন ছালাতের সালামের বৈঠকে নারী-পুরুষ
সকলকে এভাবেই বাম নিতম্বের উপর বসতে হয়। একে ‘তাওয়ার্রুক’ বলা হয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুহাম্মাদ
ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আত্বা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর একদল সাহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সালাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাযি.) বলেন, আমিই তোমাদের
মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে অধিক স্মরণ
রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি (শেষ অংশ, যখন দু’রাকআতের পর বসতেন তখন বাম পা-এর উপর বসতেন
আর ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাক‘আতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা
খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ),৮২৮,
আবুদাঊদ ৭৩০, মিশকাত ৭৯১, ৮০১, ছহীহ ইবনু হিববান ১৮৬২,৬৭,৭৩, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮২
, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর
প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও বিছানো থাকবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু
‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুল সাঃ যখন সালাতের মধ্যে বসতেন দু’ হাত দু’
হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধার নিকট যে আঙ্গুল রয়েছে (তর্জনী) তা উঠাতেন।
তা দিয়ে দু‘আ (ইশারা) করতেন। আর তাঁর বাম হাত বাম হাঁটুর উপর বিছানো থাকতো।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯০৭, সহীহ মুসলিম ৫৮০, নাসায়ী ১২৬৯, ইবনু মাজাহ্ ৯১৩, আহমাদ ৬৩৪৯, ইরওয়া ৩৬৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) এবং
ডান হাত ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর
উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মতো করার জন্য আঙ্গুল
বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬,৯০৮, সহীহ মুসলিম ৫৮০, ৮৭৯, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ) ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা
অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের সাথে মিলানো এবং শাহাদাত অঙ্গুলীকে
স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে
থাকবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর
উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মতো করার জন্য আঙ্গুল
বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬, সহীহ মুসলিম ৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী ১৩৭৮, মির‘আত ৩/২২৯ ।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(জ) ছাহেবে
মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৪-৯৪ খৃ:) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর
একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়। (মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ)।
(ঝ) দো‘আ
পাঠের সময় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ লোকেরা যেন সালাতে দু‘আ করার
সময় নযরকে আসমানের দিকে ক্ষেপন না করে। অন্যথায় তাদের দৃষ্টিকে ছোঁ মেরে নেয়া হবে।(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৮৩, সহীহ মুসলিম ৪২৯, নাসাঈ ১২৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঞ) ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না, যা
পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’। হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাদর পরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মতো কিছু কাজ করা ছিল। সালাতে এই কারুকার্যের দিকে
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার তাকালেন। সালাত শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবূ জাহম-এর কাছে নিয়ে যাও।
তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার ‘আম্বিজা-নিয়াহ্’ নিয়ে আসো। কারণ এই চাদরটি আমাকে
আমার সালাতে মনোযোগী হতে বিরত রেখেছে- (বুখারী ও মুসলিম)।
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, আমি সালাতে চাদরের
কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর সালাতে আমার নিবিষ্টতা বিনষ্ট
করতে পারে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৭৫৭, সহীহ বুখারী ৩৭৩, মুসলিম ৫৫৬, আবূ দাঊদ ৪০৫২, ইরওয়া ৩৭৬, আহমাদ ২৪০৮৭, সহীহ আল
জামি ৮৬৪, মির‘আত ৭৬৩, ১/৬৬৯ পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) ‘আশহাদু’ বলার সময়
আঙ্গুল উঠাবেন ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবেন’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন
ভিত্তি নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯০৬,
ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১৪০; মির‘আত ৩/২২৯), সহীহ মুসলিম ৫৮০, আহমাদ ৬১৫৩, দারেমী
১৩৭৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঠ) মুছল্লীর
নযর ইশারার বাইরে যাবে না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
নাফি‘ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
‘উমার (রাঃ) যখন সালাতে বসতেন, নিজের দু’ হাত নিজের দু’ রানের উপর রাখতেন। আর শাহাদাত
আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন এবং তার চোখের দৃষ্টি থাকতো আঙ্গুলের প্রতি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ শাহাদাত আঙ্গুল শায়ত্বনের (শয়তানের) কাছে
লোহার চেয়ে বেশি শক্ত। অর্থাৎ- শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে তাওহীদের ইশারা করা শায়ত্বনের
(শয়তানের) ওপর নেয়া নিক্ষেপ করার চেয়েও কঠিন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১৭, আহমাদ ৫৯৬৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৯৯০, নাসাঈ ১২৭৫)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
এই
সময় নিম্নোক্ত দো‘আসমূহ পড়বেন-
তাশাহহুদঃ
আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু
ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু।
অনুবাদ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয়
পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ
ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের
উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করতাম
তখন এ দু‘আ পাঠ করতাম, ‘‘আসসালা-মু ‘আলাল্ল-হি ক্ববলা ‘ইবা-দিহী,
আসসালা-মু ‘আলা- জিবরীলা, আসসালা-মু ‘আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু ‘আলা- ফুলা-নিন’’-(অর্থাৎ-আল্লাহর
ওপর সালাম তাঁর বান্দাদের ওপর পাঠাবার আগে, জিবরীলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর ওপর সালাম।
সালাম অমুকের উপর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, আমাদের
দিকে ফিরে বললেন, ‘‘আল্লাহর ওপর সালাম’’ বলো না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।
অতএব তোমাদের কেউ সালাতে বসে বলবে, ‘‘আততাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত্ব ত্বইয়্যিবা-তু
আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারহমাতুল্ল-হি ওয়াবার-কা-তুহু আসসালা-মু
‘আলায়না ওয়া‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন’’
(অর্থাৎ- সব সম্মান, ‘ইবাদাত, উপাসনা ও পবিত্রতা
আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের ওপর সালাম)।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌঁছবে।
এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রসূলুহু’’-(অর্থাৎ-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ
ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রসূল।)
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,
এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে
আকুতি মিনতি জানাবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯০৯, বুখারী ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম ৪০২, আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯, আহমাদ
৪১০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আত্তাহিয়্যাতু শিক্ষা
দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআন মাজীদের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, ‘‘আততাহিয়্যা-তুল মুবা-রাকা-তুস্
সলাওয়া-তু ওয়াততাইয়্যিবা-তু লিল্লা-হি। আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়্যুহান্ নাবিয়্যু ওয়া
রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না- ওয়া ‘আলা- ‘ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন।
আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়ারসূলুহু’’।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯১০, সহীহ মুসলিম
৪০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নীরবে তাশাহ্হুদ পাঠ করা সুন্নতঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, তাশাহহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত), ৯৮৬, তিরমিযী ২৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দরূদঃ
হাদীছে বিভিন্ন শব্দে ছহীহ সনদে ৭টি দরূদ বর্ণিত
হয়েছে (আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন্নবী, ১৬৫-১৬৮ পৃ.)। তাশাহ্হুদে এর যেকোন একটি পাঠ করলে
ছালাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করাই সর্বোত্তম (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২২/৪৫৪-৪৫৮; বিন বায, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১১/২০২-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/৩৯৯-৪০০)।
(১ নং দরুদ, দরুদে ইবরাহিম):
“আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ
ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা
ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন
কামা বা-রকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ
ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের
উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ
ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের
উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হলে তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান!
আমি কি তোমাকে একটি কথা উপহার দিব যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছি?
উত্তরে আমি বললাম, হাঁ আমাকে তা উপহার দিন। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি আমরা ‘সালাম’
কিভাবে পাঠ করবো তা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আপানার ও আপনার পরিবারে
প্রতি ‘সালাত’ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও
ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা
ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন
কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’-
(অর্থঃ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের
পরিবার-পরিজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি রহমত বর্ষণ করেছো ইবরাহীম ও ইবরাহীমের
পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বারাকাত নাযিল
কর মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেভাবে তুমি বারাকাত নাযিল করেছো
ইব্রাহীম ও ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের প্রতি। তুমি বড় প্রশংসিত ও সম্মানিত)।
কিন্তু ইমাম মুসলিম-এর বর্ণনায় ‘আলা- ইবরা-হীম’
শব্দ দু’ স্থানে উল্লিখিত হয়নি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯১৯ ‘সহীহ বুখারী ৩৩৭০, মুসলিম ৪০৬। মুসলিমে শুধুমাত্র عَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ রয়েছে। তবে বুখারী, আহমাদ,
নাসায়ী, ত্বহাবীসহ অন্যান্যরা দু’টিকে একত্রিত করে (عَلى إِبْرَاهِيمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ) বর্ণনা করেছেন। অতএব,
যারা দু’টি শব্দকে একত্রিত করণকে অস্বীকার করে যে, ‘তা কোন সহীহ হাদীসে নেই’ এটি তাদের
জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(২ নং দরুদ):
আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব? রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা বল,
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ
ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- সল্লায়তা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা ওয়াবা-রিক
‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আয্ওয়া-জিহী ওয়া যুররিইয়্যাতিহী কামা- বা-রকতা ‘আলা- আ-লি ইব্র-হীমা
ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর
পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিজনের
প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছো এবং মুহাম্মাদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও বংশধরগণের প্রতি তোমার
কল্যাণ নাযিল করো, যেভাবে তুমি ইবরাহীম (আঃ)-এর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ নাযিল
করেছো। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত),৯২০, সহীহ বুখারী ৬৩৬০, মুসলিম ৪০৭, আবূ দাঊদ ৯৭৯, নাসায়ী ১২৯৪, ইবনু মাজাহ্
৯০৫, আহমাদ ২৩৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
দরুদ বিষয়ে জ্ঞাতব্য :
প্রথমতঃ দরূদে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারকে ইবরাহীম
(আঃ) ও তাঁর পরিবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর ফলে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারের
মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে মনে হ’লেও প্রকৃত অর্থে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কেননা মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বয়ং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান
ও সর্বশেষ রাসূল। পিতা ইবরাহীমের সাথে সন্তান হিসাবে তাঁর তুলনা মোটেই অমর্যাদাকর নয়।
দ্বিতীয়ত: ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশে হাজার হাজার নবী ছিলেন।
কিন্তু মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গের মধ্যে কোন নবী না থাকা সত্ত্বেও তাঁদেরকে অগণিত
নবী-রাসূল সমৃদ্ধ মহা সম্মানিত ইবরাহীমী বংশের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-এর পরিবারের মর্যাদা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করা হয়েছে। (মির‘আত
১/৬৭৮-৬৮০; ঐ, ৩/২৫৩-৫৫)।
দরূদ পাঠের এর ফজিলতঃ
(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ
পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২১(৩), সহীহ মুসলিম ৪০৮, আবূ দাঊদ ১৫৩০, নাসায়ী ১২৯৬, তিরমিযী ৪৮৫,
আহমাদ ৮৮৫৪, দারেমী ২৮১৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে,
আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর
আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২২-(৪), সহীহ নাসায়ী ১২৯৭, হাকিম ১/৫৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ
পাঠ করবে, তারাই কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন আমার পক্ষ থেকে বেশি নিকটে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯২৩-(৫), তিরমিযী ৪৮৪, সহীহ আত্
তারগীব ১৬৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(ঘ) উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কিছু মালাক (ফেরেশতা)
আছেন যারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ান। তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার কাছে পৌঁছান।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯২৪-(৬), সহীহ: নাসায়ী ১২৮২, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৮৫৩, হাকিম ২/৪২১, দারিমী ২৮১৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ আমার ওপর সালাম পাঠ করলে, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তা‘আলা আমার কাছে আমার রূহ ফেরত দেন যাতে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯২৫-(৭), আবূ দাঊদ ২০৪১, সহীহ
আল জামি ৫৬৭৯, বায়হাক্বীর দা‘ওয়াতে কাবীর ১৭৮)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(চ) উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের
ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা
দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯২৬-(৮), আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(ছ) উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাঞ্ছিত হোক সেই ব্যক্তি,
যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হয় কিন্তু সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। লাঞ্ছিত হোক
সেই ব্যক্তি, যার কাছে রমাযান মাস আসে আবার তার গুনাহ ক্ষমার আগে সে মাস চলে যায়। লাঞ্ছিত
হোক সেই ব্যক্তি, যার নিকট তার বৃদ্ধ মা-বাপ অথবা দু’জনের একজন বেঁচে থাকে অথচ তারা
তাকে জান্নাতে পৌঁছায় না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯২৭-(৯), তিরমিযী ৩৫৪৫, সহীহ আত্ তারগীব, হাকিম ১/৫৪৯)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(জ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও উপস্থিত
ছিলেন। তাঁর কাছে ছিলেন আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ)। সালাত শেষে আমি যখন বসলাম, আল্লাহ
তা‘আলার প্রশংসা করলাম, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পাঠ করলাম।
তারপর আমি আমার নিজের জন্য দু‘আ করতে লাগলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
চাও, তোমাকে দেয়া হবে। চাও, তোমাকে দেয়া হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩১-(১৩), তিরমিযী ৫৯৩)। হাদিসের মানঃ হাসান।
(ঝ) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, দু‘আ আসমান ও জমিনের মধ্যে লটকিয়ে থাকে। এর থেকে কিছুই উপরে উঠে না যতক্ষণ
পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নবীর ওপর দরূদ না পাঠাও। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৮-(২০), সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিযী ৪৮৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৬৭৬। হাদিসের
মানঃ সহিহ।
ছালাতের মধ্যে ইমামের তেলাওয়াতে
রাসূল (ছাঃ)-এর নাম আসলে দরূদ পাঠ করার বিধানঃ
ছালাতসহ যেকোন সময়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম শুনলে
তার প্রতি দরূদ পাঠ করা জায়েয (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৬০৪১-৪২; হায়তামী, তোহফাতুল মুহতাজ
২/৬৬; আল-মুনতাক্বা শারহুল মুয়াত্তা ১/১৫৪; বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব)। কারণ
আল্লাহ তা‘আলা
আদেশ দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। (অতএব)
হে মুমিনগণ! তোমরা তার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর (আহযাব ৩৩/৫৬)। এখানে ছালাতের
মধ্যে বা ছালাতের বাইরে নির্দিষ্ট করা হয়নি। উল্লেখ্য যে, এই দরূদ সংক্ষেপে ও নীরবে
হতে হবে (আল-মুনতাক্বা শারহুল মুওয়াত্ত্বা ১/১৫৪)।
দো‘আয়ে মাছুরাহঃ
‘মাছূরাহ’
অর্থ ‘হাদীছে বর্ণিত’। সেই হিসাবে হাদীছে বর্ণিত সকল দো‘আই মাছূরাহ। কেবলমাত্র অত্র
দো‘আটি নয়। তবে এ দো‘আটিই এদেশে ‘দো‘আয়ে মাছূরাহ’ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে)।
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী
যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা
ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম”।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য
যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ
হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ বাকর আস্ সিদ্দীক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর
রসূল! আমাকে এমন একটি দু‘আ বলে দিন যা আমি সালাতে (তাশাহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুআ পড়বে,
‘‘আল্লা-হুমা ইন্নী যলামতু নাফসী
যুলমান কাসীরা। ওয়ালা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ‘ইনদিকা
ওয়ারহামনী। ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম।’’
(অর্থঃ “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের
উপর অনেক যুলম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে
মাফ করে দাও। আমার ওপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী”)। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৪২-(৪), সহীহ বুখারী ৭৩৮৮, মুসলিম ২৭০৫, নাসায়ী ১৩০২, তিরমিযী ৩৫৩১, ইবনু
মাজাহ্ ৩৮৩৫, আহমাদ ৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
সালাতের নিয়ম কানুন-এক হাদিসে
আবূ হুমায়দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে বেশি জানি। তারা বললেন,
তা আমাদেরকে বলুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি সালাতের
জন্য দাঁড়ালে দু’ হাত উঠাতেন, এমনকি তা দু’ কাঁধ বরাবর উপরে তুলতেন। তারপর তাকবীর বলতেন।
এরপর ‘ক্বিরাআত (কিরআত)’ পাঠ করতেন। এরপর রুকূ‘তে যেতেন। দু’ হাতের তালু দু’ হাঁটুর
উপর রাখতেন। পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ- মাথা নীচের দিকেও ঝুকাতেন না, আবার উপরের দিকেও
উঠাতেন না। এরপর (রুকূ‘ থেকে) মাথা উঠিয়ে বলতেন ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’। তারপর
সোজা হয়ে হাত উপরে উঠাতেন, এমনকি তা কাঁধ বরাবর করতেন এবং বলতেন, ‘আল্লা-হু আকবার’।
এরপর সিজদা্ করার জন্য জমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সাজদার মধ্যে দুই হাতকে বাহু থেকে আলাদা
করে রাখতেন। দু’ পায়ের আঙ্গুলগুলোকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে ফিরিয়ে দিতেন। তারপর
মাথা উঠাতেন। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসতেন। এরপর সোজা হয়ে থাকতেন, যাতে তাঁর সমস্ত
হাড় নিজ নিজ জায়গায় এসে যায়।
তারপর তিনি দাঁড়াতেন। দ্বিতীয় রাক্‘আতও এভাবে
আদায় করতেন। দু’ রাক্‘আত আদায় করে দাঁড়াবার পর তাকবীর বলতেন ও কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত
উঠাতেন, যেভাবে প্রথম সালাত শুরু করার সময়
করতেন। এরপর তাঁর বাকী সালাত এভাবে তিনি আদায় করতেন। শেষ রাক্‘আতের শেষ সাজদার পর,
যার পরে সালাম ফিরানো হয়, নিজের বাম পা ডান দিকে বের করে দিতেন এবং এর উপর বসতেন। তারপর
সালাম ফিরাতেন। তারা বলেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এভাবেই সালাত আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ, দারিমী, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1] আর তিরমিযী
ও ইবনু মাজাহ এ বর্ণনাটিকে এই অর্থে নকল করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান
ও সহীহ।
আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আবূ হুমায়দ-এর হাদীসে আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ‘ করলেন। দু’ হাত দিয়ে দু’ হাঁটু আঁকড়ে মজবুত করে ধরলেন। এ সময় তাঁর দু’ হাত ধনুকের মতো করে দু’ পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ)আরও বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। নাক ও কপাল মাটির সাথে ঠেকালেন। দু’ হাতকে পাঁজর হতে পৃথক রাখলেন। দু’ হাত কাঁধ সমান জমিনে রাখলেন। দু’ উরুকে রাখলেন পেট থেকে আলাদা করে। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিজদা্ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাম পা বিছিয়ে দিয়ে এর উপর বসলেন। ডান পায়ের সম্মুখ ভাগকে ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর এবং বাম হাতের তালু বাম উরুর উপর রাখলেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করলেন। আবূ দাঊদ-এর আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই রাক্‘আতের পর বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন। ডান পা রাখতেন খাড়া করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চতুর্থ রাক্‘আতে বাম নিতম্বকে জমিনে ঠেকাতেন আর পা দু’টিকে একদিক দিয়ে বের করে দিতেন (ডান দিকে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮০১, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩০, ৯৬৩; দারিমী ১৩৯৬, সহীহ আবূ দাঊদ ৭৩১-৭৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে অতিরিক্ত পঠিতব্য দোয়াসমূহঃ
তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার উল্লেখিত দো‘আসমূহের
পাঠ শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো‘আসমূহ পড়তেনঃ
তাশাহহুদের শেষে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করার
জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে -
(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের
সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল
মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয়
চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪১-[৩],
সহীহ : মুসলিম ৫৯০, আবূ দাঊদ ১৫৪২, নাসায়ী ২০৬৩, তিরমিযী ৩৪৯৪, আহমাদ ২১৬৮, সহীহ আত্
তারগীব ৩৬৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ
পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ‘আযাব।
(২) কবরের ‘আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪০-[২],
সহীহ মুসলিম ৫৮৮, আবূ দাঊদ ৯৮৩, নাসায়ী ১৩১০, ইবনু মাজাহ্ ৯০৯, আহমাদ ৭২৩৭, দারেমী
১৩৮৩, সহীহ আল জামি ৬৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) তাশাহহুদ (অর্থাৎ, আত্-তাহিয়্যাত) পড়বে,
তখন সে এ চারটি জিনিস হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে; বলবে,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন
আযা-বি জাহান্নাম, অমিন আযা-বিল ক্বাব্র, অমিন ফিতনাতিল মাহয়্যা অলমামা-ত, অমিন শার্রি
ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও
কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে
তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৩১,
সহীহুল বুখারী ১৩৭৭, মুসলিম ৫৮৮, তিরমিযী ৩৬০৪, নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৯, ৫৫১১,
৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, আবূ দাউদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ ৯০৯, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩,
৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে)
তাশাহহুদ (অর্থাৎ আত্-তাহিয়্যাত) পড়বে, তখন সে এ চারটি জিনিস হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করবে; বলবে,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন
আযা-বি জাহান্নাম, অমিন আযা-বিল ক্বাব্র, অমিন ফিতনাতিল মাহয়্যা অলমামা-ত, অমিন শার্রি
ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও
কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে
তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস নং-১৪৩১, সহীহুল বুখারী ১৩৭৭, মুসলিম ৫৮৮, তিরমিযী ৩৬০৪,
নাসায়ী ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৯, ৫৫১১, ৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, আবূ দাউদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ ৯০৯,
আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০, দারেমী
১৩৪৪। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) তাঁকে বলেছেন যে,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এ বলে দু‘আ করতেনঃ
“আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন
আযা-বিল ক্ববরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জ-লি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল
মাহ্ইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্ল-হুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাছামি ওয়াল মাগরামি।”
‘‘কবরের আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা
হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে
আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।’’
তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা
হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেনঃ
যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ
করে। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ), ৮৩২,৮৩৩, ২৩৯৭, ৬৩৬৮, ৬৩৭৫, ৬৩৭৬, ৬৩৭৭, ৭১২৯, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৬, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৭৯৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৩৯, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী
১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) ইবনু
‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে
এ দু‘আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা
বলো,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল
মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয়
চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪১, সহীহ মুসলিম ৫৯০, আবূ দাঊদ ১৫৪২, নাসায়ী ২০৬৩, তিরমিযী
৩৪৯৪, আহমাদ ২১৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৫১। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঙ) আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ
সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু
অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল
মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর,
যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি,
যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত
কেউ সত্য উপাস্য নেই।
(সূনান আত
তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন, ১১২০, ৬৩১৭, ৬৩৮৫, ৭৪৪২,
৭৪৯৯, ৭৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ, ১৩৫৫, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৩৪১৮,মুসলিম ৭৬৯,
নাসায়ী ১৬১৯, আবূ দাঊদ ৭৭১, আহমাদ ২৮১৩, ২৭০৫, ২৭৪৩, ২৮০৮, ৩৩৫৮,৩৪৫৮; মুওয়াত্ত্বা
মালিক ৫০০, দারিমী ১৪৮৬,আধুনিক প্রকাশনী ১০৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০৫৪)। হাদিসের মানঃ
সহিহ।
(চ) আবূ সালিহ (রহঃ) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি সালাতে কি দু‘আ পাঠ কর? লোকটি বলল, আমি তাশাহহুদ (তথা আত্তাহিয়্যাতু
লিল্লা¬হি..) পাঠ করি এবং বলি
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা
ওয়া আ‘উযুবিকা মিনান্ নার।’
কিন্তু আমি আপনার ও মু‘আযের অস্পষ্ট শব্দগুলো
বুঝতে পারি না ( অর্থাৎ আপনি ও মু‘আয কি দু‘আ পড়েন তা বুঝতে সক্ষম হই না)। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরাও তার আশে-পাশে ঘুরে থাকি (অর্থাৎ জান্নাত প্রার্থনা করি)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৭৯২, ৭৯৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৭-১২৮, ইবনু মাজাহ
৯১, ছহীহ ইবনু হিববান ৮৬৫, আহমাদ (৩/৪৭৪, ৫/৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ছ)
আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে
বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সালাত আদায় করে এই বলে দু‘আ করলোঃ
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বি
আন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকাল মান্না-নু, ইয়া বাদী’আস্
সামা-ওয়া-তি ওয়াল-আরদী, ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুমু, ইন্নী
আস্আলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্না-র”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই, কারণ,
সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই,
সীমাহীন অনুগ্রকারী: হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রস্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে
চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম
থেকে আশ্রয় চাই”।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
এ ব্যক্তি ইসমে আযম দ্বারা দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে তাঁর
নিকট চাওয়া হলে তিনি দান করেন।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-১৪৯৫,
তিরমিযি-৩৫৪৪, নাসায়ী ১২৯৯, আহমাদ (৩/১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
(জ) মুআয (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদা রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি
অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি
প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না,
‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা
ওয়া শুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র
(স্মরণ), শুক্র (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (রিয়াদুস সালেহীন-হাদিস-১৪৩০, আবূ দাউদ ১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ-
২১৬২১, বাংলা মিশকাত/৮৮৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪৯-[১১])। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(ঝ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে (সালাম ফিরাবার আগে) দু‘আ করতেন। বলতেন,
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা
মিন ‘আযা-বিল কবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি। ওয়া আ‘ঊযুবিকা
মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়া ফিতনাতিল মামা-তি। আল্লা-হুমা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’সামি
ওয়াল মাগরামি’’।
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ
চাচ্ছি কবরের ‘আযাব থেকে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। আমি
তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ
চাচ্ছি গুনাহ ও দেনার বোঝা হতে)।
এক ব্যক্তি বলল, হে নবী! আপনি দেনার বোঝা হতে
বড় বেশী পানাহ চেয়ে থাকেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেউ যখন দেনাদার
হয় তখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৩৯,
সহীহ বুখারী ৮৩৩, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ঞ)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
সালাতের মধ্যে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর বলতেন,
‘‘আহসানুল কালা-মি কালামুল্ল-হি
ওয়া আহসানুল হাদয়ি হাদয়ু মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’।
(অর্থাৎ-আল্লাহর ‘কালামই’ সর্বোত্তম কালাম।
আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিদায়াতই সর্বোত্তম হিদায়াত।)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৬-[১৮],
নাসায়ী ১৩১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসমূহের শেষাংশে এই দো‘আ
পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল
বুখলি অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু
বিকা মিন ফিতনাতিদ্দুন্য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাবর।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য
ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
(রিয়াযুস স্বা-লিহীন-১৪/১৪২৯,
সহীহুল বুখারী ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, তিরমিযী ৩৫৬৭, নাসায়ী ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৭৮, ৫৪৭৯,
৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ।
প্রিয় মুছল্লীঃ “সালাত কবুল হওয়ার সহিহ
নিয়ম” এর প্রথম ও দ্বিতীয় অংশে রুকু, সিজদাহ ও তাশাহুদ বৈঠকে পঠিতব্য দোয়া ছাড়াও সহিহ
হাদিস ভিত্তিক অতিরিক্তি অনেক দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত দোয়াগুলোর মধ্যে ইহকালীন
ও পরকালীন মুক্তি, অভাব অনটন, বিপদ আপদ বা বালা মসিবত হতে মুক্তিসহ যাবতীয় চাওয়া পাওয়ার
কথা উল্লেখ আছে। আমাদের সমাজে সাধারনত দেখা যায়, সালাতের মধ্যে উক্ত দোয়াগুলো পাঠ না
করে সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিত মুনাজাতে এক ঘন্টা ধরে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর নিকট আকুতি
মিনতি করে। অথচ সম্মিলিত মুনাজাতের শরঈ কোনো বিধান নেই। তাছাড়া সালাতের মধ্যে দোয়াগুলো
পাঠ করলে তা কবুল হওয়ার গ্যারান্টি থাকে। শুধুমাত্র রুকু ও সিজদায় কুরআন থেকে কোনো
দোয়া পাঠ না করে হাদিসে বর্নিত দোয়াগুলো পাঠ করবেন। আর তাশাহুদ বৈঠকে কুরআন ও হাদিসে
বর্নিত যতো দোয়া আছে সবই পাঠ করবেন। এখানে যেসব দোয়া উল্লেখ আছে, এগুলো ছাড়াও যদি আরো
কোনো দোয়া মুখস্থ থাকে সবই পাঠ করবেন।
দলীলগুলো লক্ষ্য করিঃ
”তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে
অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সুরা মোমেন : আয়াত
৬০)।
(১) রুকুর সময়:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেন, শোন!
আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যে, আমি যেনো রুকু বা সিজদাহ অবস্থায় কুরআন না পড়ি। সুতরাং রুকুতে
তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো। আর সিজদায় অধিকাধিক দুয়া করার চেষ্টা করো। কারণ তা
(আল্লাহর নিকট) গ্রহণযোগ্য।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আলী ইবনু হুজর মারওয়াযী (রহঃ) ... আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুখে ইন্তেকাল করেন,
সে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পর্দা খুললেন। তার মাথায় পট্টি বাধা ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ!
আমি পৌছিয়েছি, একথা তিনবার বললেন। বস্তুত যথার্থ স্বপ্ন ব্যতীত নবুওতের সুসংবাদ ছাড়া
আর কিছুই বাকি রইল না। বান্দা তা দেখে অথবা তাকে তা দেখানো হয়। তোমরা শুনে রেখ, আমাকে
রুকু এবং সিজদায় কিরাআত থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, যখন তোমরা রুকু করবে তখন তোমাদের
রবের তাযীম করবে। আর যখন তোমরা সিজদা করবে তখন তোমরা বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা
করবে। কেননা, এটা তোমাদের দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়।
(সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১১২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(২) সিজদার সময়:
(ক) ইবনু আব্বাস (রা;) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন,“তোমরা সিজদায়
বেশী বেশী দোয়া করো, কেননা সিজদাহ হচ্ছে দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮৭৩)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে রুকূ-সাজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা
হয়েছে। তাই তোমরা রুকূতে তোমাদের ”রবের” মহিমা বর্ণনা কর। আর সাজদায় অতি মনোযোগের সাথে
দুআ করবে। আশা করা যায়, তোমাদের দুআ ক্ববূল করা হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮৭৩, সহীহ মুসলিম ৪৭৯, নাসায়ী ১০৪৫, আহমাদ ১৯০০, দারেমী ১৩৬৫, সহীহ আল জামি ২৭৪৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষ সিজদাহ অবস্থায় তার প্রতিপালকের সবচেয়ে
বেশী নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা সিজদায় বেশী বেশী দোয়া করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৮৯৪)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়।
তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৮৯৪, সহীহ মুসলিম ৪৮২, আবূ দাঊদ ৮৭৫, নাসায়ী
১১৩৭, আহমাদ ৯৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯২৮, সহীহ আল জামি‘ ১১৭৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(৩) সলাতের মধ্যে তাশাহুদের পর:- রাসুল সা: বলেন, “তাশাহুদের পর যার যা ইচ্ছে দোয়া
করবে” (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
৮৩৫, ৮৩১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা এ ছিল যে, যখন আমরা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাতে থাকতাম, তখন আমরা বলতাম, বান্দার
পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি সালাম। সালাম অমুকের প্রতি, সালাম অমুকের প্রতি। এতে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর প্রতি সালাম, তোমরা এরূপ বল না। কারণ আল্লাহ্ নিজেই
সালাম। বরং তোমরা বল-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ
"আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত তাইয়িবা-তু
আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকুহু আসসালা-মু 'আলাইনা-
ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন"
”সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাগণের প্রতি।” তোমরা যখন তা বলবে তখন আসমান বা আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার নিকট তা পৌঁছে যাবে। (এরপর বলবে) ‘‘আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নাই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর যে দুআ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে।
(সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),৮৩৫,৮৩১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৭৮৩, আধুনিক প্রকাশনী
৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উক্ত হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে, রুকু ও সিজায় কুরআনের আয়াত ব্যতীত
হাদিসে বর্নিত যেকোনো দোয়া এবং সালাতের শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে যেকোনো ধরনের
দোয়া করা যায়। চাই তা কোরআনের আয়াত হোক বা হাদিসে বর্ণিত দোয়াই হোক।
অতএব সালাম ফিরানোর পর মুনাজাতে সময় ব্যয় না করে সেই সময় সালাতের মধ্যে
ব্যয় করা উচিৎ। মুনাজাতে যা বলবেন তার চেয়ে অধিক বিষয় সালাতের মধ্যে পঠিতব্য দোয়াগুলোতে
আছে। তবে হ্যাঁ দুই হাত তুলে একাকী মুনাজাত
করা যাবে। দুই হাত তুলে মুনাজাতে কুরআন ও হাদিসে বর্নিত দোয়াগুলো ছাড়াও বাংলা ভাষায়
যেকোনোভাবে আল্লাহর নিকট চাওয়া যাবে।
(ক)
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু‘আ ভালো লাগে সে দু‘আ পাঠ করে আল্লাহর মহান
দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),৯০৯,
সহীহ : বুখারী ৮৩৫, ৬২৩০, মুসলিম ৪০২, আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, ইবনু মাজাহ্ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১, মির‘আত
হা/৯১৫, ৩/২৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, অতঃপর যে দু‘আ তার পছন্দ হয় তা সে বেছে নিবে এবং পড়বে। (সহিহ বুখারী, ৮৩৫, আধুনিক প্রকাশনী ৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের মধ্যে একদল বলেছেন,
এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দো‘আ করা যাবে।
পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আসমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা
করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথা-বার্তা
বলা চলে না। এটি কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ মাত্র’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৭৮, সহীহ মুসলিম ৫৩৭, নাসায়ী ১২১৮, দারিমী ১৫৪৩,
সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৮৫৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে
পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো‘আ করা যাবে।
তবে ছালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী
করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়।
(গ) সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দো‘আ পাঠ করাই
উত্তম। কিন্তু যখন দো‘আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো‘আয়ে
মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু...) শেষে নিম্নের দো‘আটির ন্যায় যে কোন একটি সারগর্ভ
দো‘আ পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনকে শামিল করে।
“আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ করতেন, ‘‘আল্ল-হুম্মা আ-তিনা- ফিদ্দুন্ইয়া-
হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা- ‘আযা-বান্না-র’’। (অর্থাৎ-হে আল্লাহ!
আমাদেরকে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর জাহান্নামের ‘আযাব [শাস্তি] হতে বাঁচাও)”।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৪৮৭, বাক্বারাহ ২/২০১, সহীহ বুখারী ৪৫২২,
৬৩৮৯, মুসলিম ২৬৯০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩০২, আহমাদ ১৩১৬৩, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ২৮০,
সহীহ ইবনু হিব্বান ৯৩৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয়গুলি নিয়তের মধ্যে
শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শোনেন’। (আলে ইমরান ৩/১১৯, ৩৮; ইবরাহীম ১৪/৩৯; গাফির/মুমিন ৪০/১৯)।
দো‘আর সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না
করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভাল জানেন। (বাক্বারাহ ২/২১৬)।
প্রশ্ন হতে পারে, সালাতের মধ্যে
পঠিতব্য অতিরিক্ত দোয়াগুলো কি জামাতে সালাত আদায়কালে পড়ার সময় পাওয়া যাবে?
ইমাম সাধারনত জামাতে সালাত সংক্ষিপ্ত করে থাকেন।
তাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলোই পাঠ করবেন যাতে ইমামের অনুসরণ করে সালাতের প্রতিটি
রুকন অতিক্রম করা যায়। তবে নির্জনে একাকী সালাত আদায়কালে সালাতের প্রতিটি রুকন দোয়াগুলো
পাঠের মাধ্যমে ধীর স্থিরভাবে আদায় করবেন।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেছেন: তোমদের কেউ যখন লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেনো সে সংক্ষেপ করে। কেননা,
তাদের মধ্যে ছোট, বড়, দুর্বল ও কর্মব্যস্তরা রয়েছে। আর যদি কেউ একাকী সালাত আদায় করে,
তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে। (বুখারী ৭০৩, মুসলিম ৪৬৭,
তিরমিযী ২৩৬, নাসায়ী ৮২৩, আবূ দাঊদ ৭৯৪, আহমাদ ২৭৪৪, ৯৯৩৩, ১০১৪৪, মুওয়াত্তা মালেক
৩০৩,বুলগুলমারাম-৪১০।) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
সালামঃ
(ক) দো‘আয়ে মাছূরাহ ও অন্যান্য দো‘আ শেষে ডানে
ও বামে ‘আস্সালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ বলবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সালাতে সালাম ফিরাবার সময় ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’,
বলে ডান দিকে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার ডান পাশের উজ্জ্বলতা নজরে পড়ত। আবার
তিনি বাম দিকেও ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’,
বলে মুখ ফিরাতেন, এমনকি তাঁর চেহারার বাম পাশের উজ্জ্বলতা দৃষ্টিতে পড়ত।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫০,
সহীহ : আবূ দাঊদ ৬৬৯, তিরমিযী, নাসায়ী ১৩২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) কেবল ডানে সালামের শেষ দিকে ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’
বৃদ্ধি করা যাবে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আলকামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা
করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায়
করেছি। তিনি ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় বলতেন ‘‘আসসালামু
‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’’ এবং বাঁ দিকে সালাম ফিরানোর সময়
বলতেন ‘‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-৯৯৭)।হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(গ) দু’দিকে
নয়। (আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১৭১ পৃঃ)।
দুদিকে সালাম ফিরানোঃ
(ঘ) আবী মা’মার বলেন, আমি মক্কায় এক ব্যক্তির পিছনে
সালাত আদায় করলাম। তিনি দুই সালাম (-এর মাধ্যমে সালাত শেষ) করলেন। এ বিষয়টি যখন আমি
আব্দুল্লাহ’ (ইবনু মাসউদ)-এর নিকট উল্লেখ করলাম, তখন তিনি বললেন, সে এ (সুন্নাত) টি
কোথা থেকে পেয়েছে? আর হাকাম বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন
(তথা দু’দিকে সালাম ফিরাতেন)। (সুনান আদ-দারেমী,১৩৮৩,মুসলিম
৫৮১, মুসনাদুল মাউসিলী ৫২৪৪। ‘أنى علقها’ অর্থ: সে
এ সুন্নাতটি কোথা থেকে হাসিল ও সংরক্ষণ করেছে?! দেখুন, মুসনাদুল মাউসিলী হাদীস ৫০৫১, ৫১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাম ফিরানোর সময় মাথা কতো দূর পর্যন্ত ঘুরেবে?
(ঙ) আমর ইবনু সা’দ হতে বর্ণিত, তার পিতা বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডানদিকে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, (পাশ
থেকে) তাঁর গালের শুভ্রতা দেখা যেতো। এরপর বাম দিকে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, তাঁর
গালের শুভ্রতা দেখা যেতো।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার
পিতা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান দিকে ও বাম দিকে এভাবে সালাম ফিরাতেন যে,
আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত), ৯৪৩, সহীহ মুসলিম ৫৮২, নাসায়ী ১৩১৭, ইবনু মাজাহ্ ৯১৫, ইরওয়া ৩৬৮, সুনান আদ-দারেমী,
১৩৮২, মুসনাদুল মাউসিলী ৮০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরো দেখুন,
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯৫০, সহীহ আবূ দাঊদ ৬৬৯, তিরমিযী, নাসায়ী ১৩২৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) সালাম ফিরানোর সময় মুছল্লী স্বাভাবিকভাবে ডানে
বা বামে দৃষ্টিপাত করে সালাম ফিরাবেন। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত আদায়কারী তার
ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদান করবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)...জাবির
ইবনু সামুরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতাম তখন, 'আসসালা-মু 'আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্ল-হ' 'আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ' বলে সালাত শেষ করতাম।
তিনি (জাবির) হাত দিয়ে উভয় দিকে ইশারা করে দেখালেন। (অর্থা-সালামের সাথে সাথে হাতে
ইশারাও করা হত)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমরা (সালামের
সময়) দুষ্ট ঘোড়ার লেজ ঘুরানোর মতো দু'হাত দিয়ে ইশারা করো কেন? তোমরা উরুর উপর হাত
রেখে ডানে-বায়ে মুখ ফিরিয়ে তোমাদের ভাইদের সালাম দিবে। এরূপ করাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৮৫৬-(১২০/৪৩১), ইসলামিক
ফাউন্ডেশন ৮৫২, ইসলামিক সেন্টার ৮৬৫, ছহীহুল জামে‘ ৪০১৯ )। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(বিঃদ্রঃ আমাদের সমাজে এ কথা প্রচলিত
রয়েছে, রফউল ইয়াদাঈন করাটা ঘোড়ার লেজ নড়াবার মতো, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, ঘোড়ার লেজের উক্তিটি
সালাম ফিরানোর সাথে সম্পৃক্ত, নামাযের ভিতরে রফউল ইয়াদাঈনের সাথে নয়)।
(ছ) অতএব
সালাম ফিরানোর সময় ডানে এবং বামে থাকা ভাইদেরকে সালাম প্রদানের নিয়ত করবেন। আর যদি
একাকী ছালাত আদায় করেন, তাহলে ডানে ও বামে থাকা ফেরেশতাদের সালাম প্রদানের নিয়ত করবেন।
(নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৫৬, ৪৬২; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩২৬,
৩২৭; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/২০৮)।
(জ)
অতঃপর ডানে বামে সালাম ফিরানোর পর একবার সরবে ‘আল্লা-হু আকবার’ বলবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সালাত শেষ হওয়াটা বুঝতাম ‘আল্ল-হু আকবার’ বলার মাধ্যমে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৫৯, সহীহ বুখারী ৮৪২, মুসলিম
৫৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঝ) এরপর তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’
ও একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু,
তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে ওয়াল ইকরা-ম’ বলবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সাওবান (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘‘আস্তাগফিরুল্ল-হ’’
বলতেন, তারপর এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘আল্ল-হুম্মা আন্তাস সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রকতা
ইয়া- যালজালা-লি ওয়াল ইকর-ম’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির আঁধার। তোমার পক্ষ
থেকেই শান্তি। তুমি বারাকাতময় হে মহামহিম ও মহা সম্মানিত)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৬১, ৯৬০, সহীহ মুসলিম ৫৯১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর পঠিতব্য
অতিরিক্ত দুয়া, জিকির বা আমলসমূহঃ
ফরয সালাতের সালাম শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) অনেক
দু'আ ও যিকর করেছেন। ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ ফরয ছালাতের পর পাঠ করাই সুন্নাত।
কারণ এ ব্যাপারে যে সকল হাদীছ এসেছে তাতে ফরয ছালাতের পরের কথা বলা হয়েছে (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; মুসলিম হা/৫৯১-৫৯৬; আলবানী,
ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)-হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। তবে দো‘আ হিসাবে এগুলি পরে পাঠ করলেও তার ছওয়াব পাওয়া
যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে, তখন দাঁড়ানো,
বসা ও শোয়া সর্বাবস্থায় আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ কর’ (নিসা
৪/১০৩)।
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য দো‘আসমূহ সুন্নাত ছালাতের পর
বা যেকোন সময় পাঠ করা যাবে কি?
সুন্নাত ছালাতের পর বা যেকোন সময় দোয়াগুলো পাঠ করা যাবে। হাদীছে সকল ছালাতের জন্য আমভাবে প্রথমে আল্লাহু
আকবর একবার সরবে, অতঃপর তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ এবং
একবার ‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা
ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম’ পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৫৯-৬১; বুখারী ৮৪২; মুসলিম ৫৮৩,
৫৯১, ৫৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সুতরাং এটি সকল ছালাতের জন্য প্রযোজ্য। আর
ফরয ছালাতের পর পঠিতব্য সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, আয়াতুল কুরসী
প্রভৃতি দো‘আ ফরয ছালাতের পরে পাঠের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। অতএব সেগুলি সেখানে পাঠ
করাই উত্তম হবে (আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০২-এর আলোচনা)।
তবে সাধারণভাবে এগুলি যেকোন ছালাতের পর পড়া যায় (ফাৎহুল
বারী ১১/১৩৪; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১৬৯)।
ফরজ সালাতে সালাম ফিরানোর পর
রাসুল সা. যেসব দোয়া, আমল বা যিকির করতেন সেইসব
দোয়া জানতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
ইমাম মুক্তাদির দিকে ঘুরে বসাঃ
(ঞ) অতঃপর ইমাম ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের
দিকে ফিরে বসবেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সামুরাহ্ ইবনু জুনদুর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় শেষে আমাদের দিক মুখ ফিরিয়ে
বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৪, সহীহ বুখারী
৮৪৫, মুসলিম ২২৭৫, তিরমিযী ২২৯৪, আহমাদ ২০১৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ডানে ঘুরে বসার দলিলঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় শেষে ডান দিক
মুখ ফিরিয়ে বসতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৫, সহীহ
মুসলিম ৭০৮, নাসায়ী ১৩৫৯, আহমাদ ১২৮৪৬, দারেমী ১৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরো দেখুন,
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯৪৬, সহীহ বুখারী ৮৫২, মুসলিম ৭০৭, দারেমী ১৩৯০, ইবনু মাজাহ্ ৯৩০, আহমাদ ৩৬৩১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ট) ডান দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
কখনো পড়েছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’ (হে
আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান
ঘটাবে)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম।
তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বর্ণনাকারী (বারা)
বলেন, একদিন আমি শুনলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী
‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’। অর্থাৎ-‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে
তোমার ‘আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের (হাশরের) ময়দানে উঠাবে
অথবা একত্র করবে’’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৯৪৭,
সহীহ মুসলিম ৭০৯, তিরমিযী ৩৩৯৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
বামে ঘুরে বসার দলিলঃ
‘আবদুল্লাহ
ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য
নিজেদের সালাতের কোন অংশ নির্দিষ্ট না করে এ কথা ভেবে যে, শুধু ডান দিকে ঘুরে বসাই
তার জন্য নির্দিষ্ট। আমি নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনেকবার
বাম দিকেও ঘুরে বসতে দেখেছি।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
৯৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ)-৮৫২, মুসলিম ৭০৭, দারেমী ১৩৯০, ইবনু মাজাহ্ ৯৩০, আহমাদ ৩৬৩১,
সুনান আদ-দারেমী ১৩৮৭, মুসনাদুল মাউসিলী ১২৭,
৫১৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৯৯৭, আধুনিক প্রকাশনী ৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ডান পাশ দিয়ে ঘুরে বসার সময় পঠিতব্য দোয়াঃ
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)
আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম। তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম
আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বর্ণনাকারী (বারা) বলেন, একদিন আমি শুনলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘রব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা
তাব্‘আসু আও তাজমা‘উ ‘ইবা-দাকা’’। অর্থাৎ- ‘‘হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার
‘আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের (হাশরের) ময়দানে উঠাবে অথবা একত্র
করবে’’।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-৯৪৭-[৯],
সহীহ মুসলিম ৭০৯, তিরমিযী ৩৩৯৯)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
ইমামের ইকতেদা করাঃ
কোন অবস্থাতেই রুকু, সিজদা, উঠা বা বসাসহ কোন
কাজই ইমামের আগে আগে করা জায়েয নেই। এ ব্যাপারে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এমনকি
ইমামের সাথে সাথেও করা ঠিক নয়; বরং সঠিক হলো ইমামের তাকবীর প্রদানের আওয়াজ শেষ হওয়ার
পরই তা করা।
রাসুল সা. বলেছেন,
(ক)
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে (সালাতের) শিক্ষা দিয়ে বলতেনঃ ইমামের আগে
কোন কাজ করে না। সে যখন ‘আল্লাহু আকবার বলে, তোমরা আল্লাহু আকবার বলো। সে যখন, “ওয়ালায
যোয়া-ল্লীন বলে, তোমরাও তখন আ-মীন বলো। সে যখন রুকু’তে যায়, তোমরাও তখন রুকু’তে যাও।
সে যখন "সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলে তোমরা তখন 'আল্লাহুম্মা রব্বানা- লাকাল
হামদ’ বলো।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-৮১৮-(৮৭/৪১৫,
৪১৪-১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮১৫, ইসলামিক সেন্টার ৮২৭, সুনানে ইবনে মাজাহ-তাওহীদ, ১/৯৬০,
বুখারী ৭২২, ৭৩৪, নাসায়ী ৯২১-২২, আবূ দাঊদ ৬০৩, আহমাদ ৭১০৪, ৮২৯৭, ৮৬৭২, ৯০৭৪, ৯১৫১,
২৭২০৯, ২৭২১৫, ২৭২৭৩, ২৭৩৮৩; দারিমী ১৩১১, মাজাহ ৮৪৬, ১২৩৯, সহীহ আবী দাউদ ৬৩১-৬৩৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) কুতাইবাহ (রহঃ).....আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে (উপরের হাদীসের) অনুরূপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বর্ণনায় ইমামের ‘ওয়ালায যোয়া-ল্লীন' বলার পর
"আ-মীন' বলার কথা উল্লেখ নেই। তবে এতে আরো আছে, তোমরা ইমামের আগে হাত উঠাবে না।
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৮১৬, ইসলামিক সেন্টার ৮২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
(গ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ).....আনাস
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদের সালাত আদায় করালেন। তিনি সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে বলেনঃ
হে লোকেরা! আমি তোমাদের ইমাম। অতএব, তোমরা আমার আগে রুকু’-সাজদায়, উঠা-বসা করবে না
অতঃপর তিনি বললেনঃ সে সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! আমি যা দেখতে পাই, তোমরাও
যদি তা দেখতে পেতে তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল!
আপনি কি দেখতে পান? তিনি বললেনঃ আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখতে পাই। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-৮৪৭-(১১২/৪২৬), ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৮৪৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) খালাফ ইবনু হিশাম, আবূ রাবী' আয যাহরানী ও
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (রুকু’-সিজদা থেকে) ইমামের আগে
মাথা উঠায় তার কী (এ কাজের জন্য) ভয় হয় না যে, আল্লাহ তার মাথা গাধার মাথার মতো
করে দিবেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-৮৪৯-(১১৪/৪২৭),
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৪৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৫৮, বুখারী ৬৯১, তিরমিযী ৫৮২, নাসায়ী ৮২৮,
আবূ দাঊদ ৬২৩, আহমাদ ৭৪৮১, ৭৬১২, ৯২১১, ৯৫৭৪, ৯৭৫৪, ১০১৬৮; দারিমী ১৩১৬, ইরওয়াহ ৫১০,
সহীহ আবী দাউদ ৬৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
লুকমা দেওয়াঃ
জামাআতে নামাযে ইমাম ভুল করলে পেছন থেকে পুরুষ
মুসল্লীরা ‘সুবহানাল্লাহ'
বলবে, “আল্লাহু আকবার'
বলবে না। আল্লাহু আকবার বলে লুকমা দেওয়ার পক্ষে কোন দলীল পাওয়া যায় না। মহিলা মুসল্লীরা
ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠে মেরে তালি দিয়ে আওয়াজ করবে (বুখারী: ১২০৩ ও মুসলিম: ৪২২) নারীরা মুখে কিছুই বলবে
না।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবীহ
সুবহানাল্লাহ্ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীক’ (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে
মারা)। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১২০৩, (আধুনিক প্রকাশনীঃ
১১২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সহু সিজদাঃ
ছালাতের মধ্যে কোন ফরয রুকন যেমন রুকূ, সিজদা
বা রাক‘আত কমে গেলে এবং ওয়াক্তের মধ্যে স্মরণ হ’লে বাকী অংশ আদায় করে সহো সিজদা দিতে
হবে। পরে স্মরণ হ’লে পুরো ছালাত আদায় করতে হবে (নববী,
আল মাজমূ‘ ৪/৭৭, ৪/১২৫; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ৩/১১৪, ১/৬৯৩; শায়খ উছায়মীন, মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১৪/১৭; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৯৩৬ পৃ.)। ছালাতের কোন ফরয রুকন বেশী হয়ে গেলে যেমন রাক‘আত বেড়ে
গেলে সহো সিজদা দিতে হবে। এই সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং মসজিদের মধ্যে স্মরণ হ’লে
সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর স্মরণ হ’লে সহো সিজদা রহিত হয়ে
যাবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৮; উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘
৩/৩৯৭)। তবে যখনই স্মরণ হবে তখনই সহো সিজদা দেওয়া ভালো এবং নিরাপদ (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ইখতিয়ারাত ৯৪ পৃ.; বিন বায, ফাতাওয়া নুরুন
আলাদ-দারব)। আর ছালাতের ওয়াজিব যেমন প্রথম তাশাহুদ ইত্যাদি ছুটে যাওয়ার কারণে
ওয়াজিব হওয়া সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং মসজিদে থাকা অবস্থায় তা স্মরণ হ’লে সহো সিজদা
দিবে। আর দেরীতে স্মরণ হ’লে সহো সিজদা রহিত হয়ে যাবে (নববী,
আল মাজমূ‘ ৪/১২৫)।
সহু সিজদার বিশুদ্ধ পদ্ধতিঃ
প্রথম নিয়মঃ
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরূদ ও দুআ মাছুরাসহ অন্যান্য
দোয়া পড়া শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে দুটি সিজদা করবেন। অতঃপর ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে
সালাত শেষ করবেন। এটিই হলো বিশুদ্ধ পদ্ধতি।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু বুহাইনাহ আসাদী (রাযি.) যিনি
বানূ ‘আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তাঁর হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে (দু’রাক‘আত আদায় করার পর) না বসে দাঁড়িয়ে
গেলেন। সালাত পূর্ণ করার পর সালাম ফিরাবার পূর্বে তিনি বসা অবস্থায় ভুলে যাওয়া বৈঠকের
স্থলে দু’টি সিজদা্ সম্পূর্ণ করলেন, প্রতি সিজদা্য় তাকবীর বললেন। মুসল্লীগণও তাঁর সঙ্গে
এ দু’টি সিজদা্ করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ), ১২৩০,৮২৯,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু শিহাব (রহ.) হতে তাকবীরের কথা বর্ণনায়
ইবনু জুরাইজ (রহ.) লায়স (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।
(খ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ সালাতে এই বলে
সন্দেহ পোষণ করে যে সে তিন রাক’আত আদায় করেছে না চার রাক’আত, তবে সে যেন সন্দেহকে
পরিত্যাগ করে এবং যার প্রতি নিশ্চিত মনে হবে তার উপর ভিত্তি করে সালাত আদায় করবে।
অতঃপর শেষে সালাম ফিরার পূর্বে দু’টো সাহউ সিজদা করবে। ফলতঃ যদি সে পাঁচ রাক’আত আদায়
করে থাকে তাহলে সাহউ সিজদার ফলে তার সালাত জোড়া বানিয়ে দিবে অর্থাৎ ৬ রাক’আত পূর্ণ
হবে। আর যদি সালাত পূর্ণ হয়ে থাকে তবে সাহউ সিজদা দু’টি শয়তানের জন্য নাক ধূলায়
ধূসরিত বা অপমানের কারণ হবে
(বুলুগুল মারাম,৩৩৩,
মুসলিম ৫৭১, তিরমিযী ৩৯৬, নাসায়ী ১২৩৮, ১২৩৯, আবূ দাউদ ১০২৪, ১০২৬, ১০২৯, ইবনু মাজাহ
১২০৪, ১২১০, আহমাদ ১০৬৯৮, ১০৯২৭, ১০৯৯০, মুওয়াত্তা মালেক। ২১৪, দারেমী ১৪৯৫)।হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।=
দ্বিতীয় নিয়মঃ
সালাত পূৰ্ণ করে সালাম ফিরানোর পর সাহু বা
সহো সিজদা করবেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নবী সৃষ্টি সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সালাতের
মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন: তা কী? তাঁরা বললেন, আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত
আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে কিবলাহমুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন।
অতঃপর সালাম ফিরলেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন: যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু
হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা
যেমন ভুলে যাও, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ
করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা
করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূৰ্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা দেয়।
বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় আছে- সালাত পূৰ্ণ
করে সালাম ফিরাবে তারপর সাহউ সিজদা করবে।
মুসলিমে আছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দু’টি সাহউ সিজদা করেছেন- সালাম ও কথা বলার পরও। (বুলুগুল
মারাম,৩৩৪, বুখারী ৪০৪, ৪০১, ১২:২৬, ৬৬৭১, ৭২৪৯, মুসলিম ৫৭২, তিরমিযী ৩৯২, ৩৯৩, নাসায়ী
১২৪০, ১২:৪১, ১২৪২, ১২৫৬, আবূ দাউদ ১২১৯, ১০২০, ১০২২, ইবনু মাজাহ ১২০৩, ১২০৫, ১২১১,
আহমাদ ৩৫৫৬, ৩৫৯১, ৩৮৭৩, ৩৯৬৫, ৪০২২, দারিমী ১৪৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে কি আসলেই বিরত রাখে?
ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল সালাত।
ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক
হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন সব জিনিসের পূর্বে লোকের যে ‘আমলের হিসাব হবে,
তা হলো সালাত । যদি তার সালাত সঠিক হয় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নাজাত পাবে। আর যদি সালাত
বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে সে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতে কিছু ভুল হয়ে যায়,
তাহলে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলবেন, দেখো! আমার বান্দার নিকট সুন্নাত
ও নফল সালাত আছে কি-না? তাহলে সেখান থেকে এনে বান্দার ফরয সালাতের ত্রুটি পূরণ করে
দেয়া হবে। এরপর এ রকম বান্দার অন্যান্য হিসাব নেয়া হবে। অন্য এক বিবরণ এসেছে, তারপর
এ রকম যাকাতের হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর অবশিষ্ট সব ‘আমলের হিসাব একের পর এক এ রকম নেয়া
হবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১৩৩০, সহীহ আত্ তিরমিযী ৪১৩, নাসায়ী ৪৬৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৬৯, ৫৪০, সহীহ আল জামি‘
২০২০; আবূ দাঊদ ৮৬৪-৬৬ ৮৬৬, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হযরত উমর রা.-এর প্রসিদ্ধ বাণী-
নিশ্চয়ই আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হচ্ছে সালাত। যে ব্যক্তি সালাতের হেফাযত করল, যত্ন সহকারে তা আদায় করল, সে তার
দ্বীনকে হেফাযত করল। আর যে তাতে অবহেলা করল, (দ্বীনের) অন্যান্য বিষয়ে সে আরো বেশি
অবহেলা করবে। (মুয়াত্তা মালেক, বর্ণনা ৬; মুসান্নাফে আবদুর
রযযাক, বর্ণনা ২০৩৮)।
সালাত মূলত আল্লাহ প্রদত্ত এক মহান নিয়ামত।
আল্লাহর এক বিশেষ উপহার, যা বান্দাকে সকল প্রকার অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তিপূজা,
ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ও উন্নত এক আদর্শ জীবনের
অধিকারী বানিয়ে দেয়। বিকশিত করে তোলে তার ভেতরের সকল সুকুমারবৃত্তি। তার জন্য খুলে দেয় চিরস্থায়ী জান্নাতের সুপ্রশস্ত দুয়ার।
সালাত হচ্ছে হিকমাহপূর্ণ এক অলৌকিক তরবিয়ত-ব্যবস্থা।
সালাতের মাধ্যমেই ইখলাস, আত্মশুদ্ধি ও আত্মবিলোপের মহৎ গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে,
যা বান্দাকে পৌঁছে দেয় আল্লাহর সান্নিধ্যের স্বর্ণশিখরে।
সালাত এমন এক নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পূর্ণ যে,
খাঁটি মুসল্লী সালাতের বাইরের পরিবেশেও এমন কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষের দৃষ্টিতে
সালাতের ভাব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। অদৃশ্য থেকে মূলত সালাতই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তার
রাত-দিনের সকল গতিবিধি। শয়তানের ধোঁকায় যদি মুসল্লী কখনো কোনো অন্যায় বা অশোভনীয় কাজে
লিপ্ত হতে চায় তখন সালাতের তরবিয়তে দীক্ষিত বিবেক তাকে বলে, তুমিই বল, একটু পরে যখন
তুমি সালাতে তোমার আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে তখন কি তোমার এই ভেবে লজ্জাবোধ হবে না যে,
কেমন কালো মুখ ও কলুষিত হৃদয় নিয়ে তুমি আপন মালিকের সামনে দাঁড়াচ্ছ? যিনি অন্তর্যামী,
তোমার গোপন-প্রকাশ্য সকল বিষয়ে সম্যক অবগত। যিনি ছাড়া তোমার আর কোনো ইলাহ নেই। যিনি
তোমার একমাত্র আশ্রয়দাতা, যাঁর সামনে তোমাকে বার বার দাঁড়াতে হবে। যার কাছে তোমার সকল
চাওয়া-পাওয়া। প্রতিটি মুহূর্তে তুমি যাঁর মুখাপেক্ষী। এগুলো জানার পরও কি তুমি তাঁর
নাফরমানিতে লিপ্ত হবে? সালাত এভাবে মুসল্লিকে উপদেশ দিতে থাকে এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া
থেকে বাধা দেয়। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-
“হে নবি! তুমি পাঠ করো তোমার প্রতি যে কিতাব
ওহী করা হয়েছে তা থেকে এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে
নিষেধ করে। এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন”। (সুরা ‘আনকাবুত ২৯: ৪৫) ।
ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ
সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর
সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লীকে
বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন আল্লাহর নাফরমানী করো না, যিনি
তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন
আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর
মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর
স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।)
-রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে জানতে পারলাম যে,
সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়,
যে মুসলমান সালাত আদায় করে সেই ব্যক্তিই আবার ঘুষ, দুর্নীতি, যিনা/ব্যভিচার, মদ, জুয়াসহ
অনেক অপকর্ম তথা বিভিন্ন অশ্লীল বা মন্দ কাজের সাথে জড়িত। তাহলে সালাত তো তাকে অশ্লীল
বা মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখলো না।
সমাজে প্রচলিত ছালাতের কোন কার্যকারিতা না
থাকার মৌলিক তিনটি কারণ চিহ্নিত করা যায়।
(এক) খুলূছিয়াতে ত্রুটি রয়েছেঃ অর্থাৎ ছালাত আদায় করি কিন্তু
একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে তা পেশ করি না। অধিকাংশ মুছল্লী মসজিদেও সিজদা করে মাযারেও
সিজদা করে, রাসূল (ছাঃ)-কেও সম্মান করে পীরেরও পূজা করে, ইসলামকেও মানে অন্যান্য তরীক্বা
ও বিজাতীয় মতবাদেরও অনুসরণ করে। এই আক্বীদায় ছালাত আদায় করলে ছালাত হবে না। একনিষ্ঠচিত্তে
একমাত্র আল্লাহর জন্যই সবকিছু করতে হবে, তাঁরই আইন ও বিধান মানতে হবে। (সূরা কাহ্ফ ১১০; বাইয়েনাহ ৫; ছহীহ মুসলিম হা/৬৭০৮, ২/৩১৭ পৃঃ,
‘সৎ কাজ ও সদাচরণ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০)।
(দুই) রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করাঃ
অধিকাংশ মুছল্লীই তার ছালাত সম্পর্কে উদাসীন। তিনি যত জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানই হোন লক্ষ্য
করেন না, তার ছালাত রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় হচ্ছে কি-না। অথচ ছালাতের প্রধান শর্তই
হল, রাসূল (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই আদায় করা। (ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী, ছহীহ
বুখারী (রিয়ায: মাকতাবাতু দারিস সালাম, ১৯৯৯ খৃঃ/১৪১৭ হিঃ), হা/৬৩১; ছহীহ বুখারী (করাচী
ছাপা: ক্বাদীমী কুতুবখানা, আছাহহুল মাতাবে‘ ২য় প্রকাশ : ১৩৮১ হিঃ/১৯৮১খৃঃ), ১ম খন্ড,
পৃঃ ৮৮, (ইফাবা হা/৬০৩, ২/৫২ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, ‘মুসাফিরদের জন্য আযান যখন তারা
জামা‘আত করবে’ অনুচ্ছেদ-১৮; মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আল-খত্বীব আত-তিবরীযী, মিশকাতুল
মাছাবীহ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী,
১৯৮৫/১৪০৫), হা/৬৮৩, ১/২১৫ পৃঃ; ভারতীয় ছাপা, পৃঃ ৬৬; মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, বঙ্গানুবাদ
মিশকাত (ঢাকা : এমদাদিয় পুস্তকালয়, আগস্ট ২০০২), হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়,
‘সংশ্লিষ্ট আযান’ অনুচ্ছেদ; ছহীহ বুখারী হা/৬০০৮, ৭২৪৬)।
এ ব্যাপারে শরী‘আতের নির্দেশ অত্যন্ত কঠোর।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং দুর্ভোগ ঐ সমস্ত মুছল্লীদের জন্য, যারা ছালাতের ব্যাপারে
উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য আদায় করে’ (মাঊন ৪-৬)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে ছালাতের।
ছালাতের হিসাব শুদ্ধ হলে তার সমস্ত আমলই সঠিক হবে আর ছালাতের হিসাব ঠিক না হলে, তার
সমস্ত আমল বরবাদ হবে’। (আবুল ক্বাসেম সুলায়মান ইবনু আহমাদ
আত-ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব (কায়রো : দারুল হারামাইন, ১৪১৫), হা/১৮৫৯; মুহাম্মাদ
নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ-ছহীহাহ হা/১৩৫৮)।
জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর উপস্থিতিতে তিনবার
ছালাত আদায় করেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তিনবারই তাকে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায়
কর, তুমি ছালাত আদায় করোনি। (ছহীহ বুখারী হা/৭৫৭, ১/১০৪-১০৫,
(ইফাবা হা/৭২১, ২/১১০ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৫; মিশকাত হা/৭৯০, ৭৫; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৭৩৪, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঐ ব্যক্তি তিন তিনবার অতি সাবধানে ছালাত আদায়
করেও রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতি মোতাবেক না হওয়ায় তা ছালাত বলে গণ্য হয়নি। উক্ত হাদীছ থেকে
বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় ছালাত আদায় না করলে কা‘বা ঘরে ছালাত আদায় করেও
কোন লাভ নেই। তাঁর ছাহাবী হলেও ছালাত হবে না। অন্য হাদীছে এসেছে, হুযায়ফাহ (রাঃ) জনৈক
ব্যক্তিকে ছালাতে রুকূ-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করতে না দেখে ছালাত শেষে তাকে ডেকে বললেন,
তুমি ছালাত আদায় করনি। যদি তুমি এই অবস্থায় মারা যাও, তাহলে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে যে
ফিতরাতের উপর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেই ফিতরাতের বাইরে মারা যাবে। (ছহীহ বুখারী হা/৭৯১, ১/১০৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৫৫, ২/১২৫ পৃঃ),
‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১৯; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৯৪; মিশকাত হা/৮৮৪, পৃঃ ৮৩; বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/৮২৪, ২/২৯৫ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হুযায়ফা (রাঃ) তাকে প্রশ্ন
করলে বলে, সে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। তখন তিনি উক্ত মন্তব্য করেন। (ছহীহ সুনানে নাসাঈ, তাহক্বীক্ব: মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী,
(রিয়ায: মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, তাবি), হা/১৩১২, ১/১৪৭ পৃঃ; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৯৪,
সনদ ছহীহ)।
অতএব বছরের পর বছর ছালাত আদায় করেও কোন লাভ
হবে না, যদি তা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতি মোতাবেক না হয়।
(তিন) হারাম উপার্জনঃ ‘হালাল রূযী ইবাদত কবুলের
পূর্বশর্ত’ কথাটি সমাজে প্রচলিত থাকলেও এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রত্যেককে লক্ষ্য
করা উচিৎ তার খাদ্য, পানীয়, পোশাক, আসবাবপত্র হালাল না হারাম। কারণ হারাম মিশ্রিত কোন
ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র।
তিনি পবিত্র বস্ত্ত ছাড়া কবুল করেন না’। কারো খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম হলে তার প্রার্থনা
গ্রহণযোগ্য হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৭৬০,
সহীহ মুসলিম ১০১৫, ২৩৯৩, তিরমিযী ২৯৮৯, আহমাদ
৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আল্লাহ বলেন,
(ক) হে মানবগণ! পৃথিবীর মধ্যে যা বৈধ-পবিত্র, তা
হতে ভক্ষণ কর এবং শয়তানের পদঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(বাক্বারাহ ২/১৬৮)।
(খ) হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ
দান করেছি তা হতে পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর
যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো (বাক্বারাহ ২/১৭২)।
(গ) হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার
করুন ও সৎকর্ম করুন; আপনারা যা করেন সে সম্বন্ধে আমি অবগত (মুমিনূন ৫১)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ঘ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা পুত-পবিত্র, তিনি
পুত-পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা যে কাজ করতে রসূলদের প্রতি নির্দেশ
করেছেন তদ্রূপ এই একই কাজের নির্দেশ মু’মিনদেরকেও করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
‘‘হে রসূলগণ! পাক-পবিত্র হালাল রুযী খাও এবং নেক আ‘মাল কর’’- (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ৫১)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ
‘‘হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পাক-পবিত্র বস্তুসমূহ
ভক্ষণ কর’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ১৭২)।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দৃষ্টান্ত হিসেবে এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করে বলেন যে, এ ব্যক্তি দূর-দূরান্তের
সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’ হাত
আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে ডাকছে, হে রব্! হে রব্! কিন্তু তার খাবার হারাম,
পানীয় হারাম, পরনের পোশাক হারাম। আর এ হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এমন ব্যক্তির
দু‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৭৬০, সহীহ মুসলিম ১০১৫, তিরমিযী
২৯৮৯, আহমাদ ৮৩৪৮, দারিমী ২৭১৭, সহীহ আল জামি‘ ২৭৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৭১৭)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(চ) নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। আর এ উভয়ের মধ্যে এমন অনেক সন্দেহভাজন বিষয় বা বস্ত্ত আছে, যে ব্যাপারে অনেক মানুষই এগুলো হালাল, কি হারাম- এ বিষয়ে অবগত নয়। এক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় হতে বিরত থাকবে, তার দীন ও মান-মর্যাদা পুত-পবিত্র থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহে পতিত থাকবে, সে সহসাই হারামে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি সেই রাখালের ন্যায়, যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার কাছাকাছি নিয়ে চরালো, তার পাল অজান্তেই নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাবধান! প্রত্যেক দায়িত্বশীলেরই (প্রশাসন বা
সরকারেরই) চারণভূমি (নিষিদ্ধ এলাকা) আছে, আর আল্লাহ তা‘আলার নিষিদ্ধ চারণভূমি হারামসমূহকে
নির্ধারিত করেছেন। মনে রাখতে হবে, মানব দেহের ভিতরে একটি গোশতপিন্ড আছে, যা ভালো থাকলে
গোটা শরীরই ভালো থাকে। আর এটি নষ্ট হয়ে গেলে বা বিকৃতি ঘটলে সমস্ত শরীরটাই নষ্ট হয়ে
যায়। সেই গোশতপিন্ডটিই হলো ‘কলব’ (অন্তঃকরণ)।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৮৬২, সহীহ বুখারী ৫২, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিযী
১২০৫, আবূ দাঊদ ৩৩৩০, আহমাদ ১৮৩৭৪, দারিমী ২৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(ছ) আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে,
সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
২৭৮৭, হাসান সহীহাহ্ ২৬০৯, শু‘আবুল ঈমান ৫৭৫৯)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
(জ) ‘আয়িশাহ্
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বাকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি
তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে
এলে আবূ বাকর (রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত
হয়েছে? আবূ বাকর(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো,
জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো
করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা
হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন,
(এ কথা শুনামাত্র) আবূ বাকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে
ফেলে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৭৮৬,
সহীহ বুখারী ৩৮৪২, সহীহ আত্
তারগীব ১৭৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাই দুর্নীতি, আত্মসাৎ, প্রতারণার মাধ্যমে
অর্জিত সম্পদ এবং সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী ও অবৈধ পন্থায় প্রাপ্ত অর্থ ভক্ষণ করে ইবাদত
করলে কোন লাভ হবে না।
মুছল্লী উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার
কারণে ছালাত যেমন পরিশুদ্ধ হয় না, তেমনি মুছল্লীর মাঝে একাগ্রতা ও মনোযোগ আসে না। ফলে
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ছালাতের কার্যকর কোন প্রভাবও পড়ে না। আর ব্যক্তি জীবনে ছালাতের
কার্যকারিতা না থাকায় মুসলমান একই সাথে ছালাতও আদায় করে আবার বিভিন্ন অপকর্ম বা অশ্লীল
কাজও করে। আমাদের সমাজে এই জাতীয় মুছল্লীর সংখ্যা প্রায় ৯৫%। ছালাত আদায়ের দিক থেকে
এ জাতীয় মুসলমানগণ এক প্রকার মুনাফিক।
আল্লাহ বলেন,‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা
দেয়। আর (আল্লাহ) তিনি তাদের ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে
দাঁড়ায়, তারা লোকদের দেখায় এবং তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)।
আল্লাহ আরো বলেন ‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক
নারীরা একে অপরের অংশ, তারা মন্দ কাজের আদেশ দেয় আর ভালো কাজ থেকে নিষেধ করে, তারা
নিজেদের হাতগুলোকে সংকুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে; ফলে তিনিও তাদের ছেড়ে
দিয়েছেন। নিশ্চয়ই মুনাফিকরা হচ্ছে ফাসিক।’ (সুরা তাওবা,
আয়াত : ৬৭)।
অতএব আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে এমন ছালাত
আদায় করতে চাইলে ছালাতকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং একমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো
পদ্ধতিতেই আদায় করতে হবে। অন্য সব পদ্ধতি বর্জন করতে হবে। কারণ অন্য কোন তরীক্বায় ছালাত
আদায় করলে কখনোই একাগ্রতা ও খুশূ-খুযূ সৃষ্টি হবে না। আর আল্লাহভীতি ও একনিষ্ঠতা স্থান
না পেলে মুছল্লী পাপাচার থেকে মুক্ত হতে পারবে না (সূরা বাক্বারাহ ২৩৮; মুমিনূন ২)।
মনে রাখতে হবে যে, এই ছালাত যদি দুনিয়াবী জীবনে কোন প্রভাব না ফেলে, তাহলে পরকালীন
জীবনে কখনোই প্রভাব ফেলতে পারবে না। তাই দলীয় গোঁড়ামী, মাযহাবী ভেদাভেদ, তরীক্বার বিভক্তিকে
পিছনে ফেলে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের পদ্ধতি আঁকড়ে ধরতে হবে। ফলে সকল মুছল্লী একই নীতিতে
ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছালাত আদায়ের সুযোগ পাবে। পুনরায় মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ছালাতের
মাধ্যমেই সমাজ দুর্নীতি মুক্ত হবে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে শান্তির ফল্গুধারা
প্রবাহিত হবে।
আপনি কোন্ তরীকা মানবেন? বা আমাদের
মুক্তির পথ কোনটি?
আল্লাহ (সুব:) কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান অনুযায়ী
মানব জাতির মুক্তির পথ কেবল মাত্র একটি। আল্লাহ (সুব:) বলেন:
অর্থ: “আর এটিই আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা
তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন
করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।”
(সুরা আনআ’ম ৬:১৫৩)।
এই আয়াতে আল্লাহ (সুব:) একটি তরীকাকেই অনুসরণ
করতে বলেছেন।
আল্লাহ (সুব:) আরো বলেন:
অর্থ: “আর সঠিক পথ বাতলে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব,
এবং পথের মধ্যে কিছু আছে বক্র। আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে হিদায়াত
করতেন।” (সুরা নহল ১৬:৯)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) থেকে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’
সর্ম্পকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে)
একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে
আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শায়ত্বন (শয়তান)
দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহবান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ
স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের
অনুসরণ করে চলো ....’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬: ১৬৩)
আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৬৬,
নাসায়ী তাঁর ‘কুবরা’ গ্রন্থে ১১১৭৪, দারিমী ২০২, মুসনাদে আহমদ ৪১৩১, ৪১৪২; নাসায়ী
১১১৭৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন:
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)
ইরশাদ করেছেন; আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করল (সে ব্যতীত)।
সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অস্বীকার করল কে? রাসূল (সাঃ) বললেন,
যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার আনুগত্য করল না সেই
অস্বীকার করল (ফলে সে জাহান্নামে যাবে)। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ), ৭২৮০, আধুনিক প্রকাশনী-৬৭৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রাসুল সাঃ বলেন, তোমাদের নিকট দু’টি বস্তু
ছেড়ে যাচ্ছি; যতদিন তোমরা ঐ দু’টি বস্তুকে মযবূতভাবে ধরে থাকবে, ততদিন (তোমরা) পথভ্রষ্ট
হবে না। সে দু’টি বস্তু হ’ল আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের
মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ
পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৮৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম যে, আমাদের
মুক্তির পথ একটাই তাহলো রাসুল সাঃ এর তরীকা মোতাবেক চলা। এই তরীকার মূল গাইড লাইন হচ্ছে
কুরআন ও রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ। কোনো পির-মাশায়েখ বা সুফিদের তরীকা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের
তরীকা মোতাবেক চললে জাহান্নামে যেতে হবে।
অতএব সার্বিক পর্যালোচনান্তে এটাই প্রমাণিত
যে, পিরতন্ত্র বা সুফিবাদ ইসলামে নেই। এটা তাদের সম্পূর্ণ বানানো একটি নতুন তরীকা।
পির বা সুফিগণ যেসব ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করে তা কুরআন-হাদিসের কোথাও নেই। এগুলো হচ্ছে
কুরআন-হাদিসের বিকৃতরুপ। প্রশ্ন হলো এসব এরা পায় কোথায়? এর উত্তর উপরে আলোচানা করা
হয়েছে যে, শয়তান হচ্ছে এদের প্রভু। এদের দরবারে যেসব কার্যকলাপ হয় তা দ্বিতীয় পর্বে
আলোচনা করা হয়েছে। তাই জেনে শুনে আমরা শয়তানের তরিকায় চলতে পারি না। আমাদের ইসলামের
কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে আমাদের আশে পাশে অনেক বিজ্ঞ আলেম ব্যক্তি আছেন, তাদের নিকট
যাবেন, বুঝে নিবেন।
আল্লাহ তাঁর বান্দার শুধুই অন্তর ও আমল দেখেন,
কারো দেহ এবং আকৃতি দেখেন নাঃ
আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনু
সাখর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি
তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন”।
(সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬,
মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিযী ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ী ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবূ দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩,
৪৯১৭, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪, আহমাদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, মালিক ১৩৯১, ১৬৮৪)। হাদিসের
মানঃ সহিহ হাদিস।
সম্মানিত মুছল্লীবৃন্দঃ রাসুল সা. যেভাবে সালাত
আদায় করতেন তথা যেভাবে সালাত আদায় করলে আল্লাহ কবুল করবেন তা এখানে সহিহ হাদিস ভিত্তিক
বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখিত আলোচনায় কোনো মাজহাবের অন্ধ অনুসরণ অনুকরণ করা
হয়নি। তবে কিছু ফতোয়া গ্রন্থ থেকে কিছু দলিল গ্রহণ করা হয়েছে সেইগুলো যেগুলো কুরআন
ও হাদিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমার নিজেস্ব বা অন্য কারো মনগড়া কথা এখানে আলোচনা করা
হয়নি। সরাসরি কুরআন ও সহিহ হাদিস হতে সকল দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে।
আর এটাই হচ্ছে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রাসুল
সা. এর তরিকা। এই তরিকা মোতাবেক যারা সালাত আদায় করবে না তাদের সালাত কবুল হবে না।
তাই সকল পথ মত পরিহার করে একমাত্র রাসুল সা. এর তরিকা মোতাবেক আমল করে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
প্রথম খন্ডের প্রথম অংশ দেখতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
(প্রথম খন্ডের দ্বিতীয় অংশ সমাপ্ত)
The Saheeh Rules of Accepting Salat (সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম)-First Volume (প্রথম খন্ড-দ্বিতীয় অংশ) এর ইংরেজি ভারসন দেখতে চাইলে ENGLISH VERSION এর উপর ক্লিক করুন। (ENGLISH VERSION)
...........................................................................................
দ্বিতীয় খন্ড “সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি” দেখতে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (প্রথম অংশ) “জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব, ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-1)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (দ্বিতীয় অংশ) “ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-2)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ) “কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-3)
...........................................................................................
তৃতীয় খন্ড (চতুর্থ অংশ) “জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC-4)
...........................................................................................
চতুর্থ খন্ড “মসজিদ ও জুমার সালাত” দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন। (PMMRC)
...........................................................................................
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
সহায়ক গ্রন্থসমূহঃ
(১) সহীহ বুখারী (তাওহীদ) -তাওহীদ
পাবলিকেশন।
(২) সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)-ইসলামিক
ফাউন্ডেশন।
(৩) সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)-হাদিস
একাডেমি।
(৪) সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)-ইসলামিক
ফাউন্ডেশন।
(৫) সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-আল্লামা
আলবানী একাডেমী।
(৬) সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)-ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
(৭) সূনান আত তিরমিজী -হুসাইন
আল-মাদানী।
(৮) সূনান তিরমিজী (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন)-ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
(৯) সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)-ইসলামিক
ফাউন্ডেশন।
(১০) রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস
সালেহীন) -তাওহীদ পাবলিকেশন।
(১১) সুনানে ইবনে মাজাহ -তাওহীদ
পাবলিকেশন।
(১২) মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)-হাদিস
একাডেমি।
(১৩) সুনান আদ-দারেমী -হাদিসবিডি।
(১৪) আল-লুলু ওয়াল মারজান -তাওহীদ
পাবলিকেশন।
(১৫) হাদীস সম্ভার -ওয়াহীদিয়া
ইসলামিয়া লাইব্রেরী।
(১৬) বুলুগুল মারাম-তাওহীদ পাবলিকেশন।
(১৭) আল-আদাবুল মুফরাদ-আহসান
পাবলিকেশন।
(১৮) মুসনাদে আহমাদ-বাংলাদেশ
ইসলামিক সেন্টার।
(১৯) মুয়াত্তা মালিক -ইসলামিক
ফাউন্ডেশন।
(২০) সুনান আদ-দারাকুতনী-ইসলামিক
ফাউন্ডেশন।
(২১) ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
(২২)জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর ছালাত মুযাফফর বিন মুহসিন।
(২৩)স্বালাতে মুবাশ্শির আবদুল হামীদ ফাইযী।
(২৪) উপদেশ -আব্দুর রাযযাক বিন
ইউসুফ।
(২৫) হাদীসের নামে জালিয়াতি-ড.
আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)।
(২৬) ছহীহ ইবনে হিববান।
(২৭) মুসান্নাফে আবদুর রযযাক।
(২৮) ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব।
(২৯) আল মাজমূ।
(৩০) ইবনু তায়মিয়াহ, আল ইখতিয়ারাত।
(৩১) ইবনু কুদামা, আল-মুগনী।
(৩২) মুসনাদুল মাউসিলী ।
(৩৩) তুহফাতুল আহওয়াযী।
(৩৪) উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে।
(৩৫ ) ইরওয়া।
(৩৬) ইবনু আবী শায়বাহ্।
(৩৭)আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর।
(৩৮)সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্।
(৩৯) হাকিম।
(৪০) সহীহ আল জামি।
(৪১) সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্।
(৪২) মির‘আত।
(৪৩) নায়লসহ আরো অনেক গ্রন্থ।
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে
এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ
অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের
আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে।
তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)।
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে
নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার
অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে
না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত,
তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল
থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি
মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” (বুখারী ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস
সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
কুরআন
ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক
করুন। (PMMRC)
Please Share On
No comments:
Post a Comment