বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সহিহ হাদিস ভিত্তিক
সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম
তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ)
কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতের সহিহ বিধিবিধান
ভূমিকাঃ ফরয সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য এক শর্ত হল, তা
যথা সময়ে আদায় করা। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ভিন্ন সময়ে সালাত হয় না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
বলেন,
অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে
সালাত পড়া মু’মিনদের কর্তব্য। (কুরআন মাজীদ ৪/১০৩)।
কুরআন মাজীদে কতিপয় আয়াতে
সালাতের ৫টি ওয়াক্তের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে; যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর সালাত কায়েম
কর দিনের দু’ প্রান্তভাগে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরেবের সময়) ও রাতের প্রথমাংশে (অর্থাৎ এশার
সময়)। (কুরআন মাজীদ ১১/১১৪)।
“সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে
রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত (অর্থাৎ যোহ্র, আসর, মাগরেব ও এশার) সালাত কায়েম কর, আর কায়েম
কর ফজরের সালাত ।” (কুরআন মাজীদ ১৭/৭৮)।
“আর সূর্যোদয়ের পূর্বে
(ফজরে) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসরে) তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা
কর এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর রাত্রির কিছু সময়ে (এশায়) এবং দিনের প্রান্তভাগগুলিতে
(ফজর, যোহ্র ও মাগরেবে), যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।” (কুরআন
মাজীদ ২০/১৩০)।
পাঁচ ওয়াক্তকে নির্দিষ্ট
করতে আল্লাহর তরফ হতে স্বয়ং জিবরীল এসে ইমাম হয়ে রসূল (সাঃ)কে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায়
করেন।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে
ক্বা‘বার কাছে দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত
আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ।
‘আসরের সালাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার
করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ‘শাফাক্ব অস্তমিত হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায়
করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।
দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি
আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ‘আসরের সালাত আদায়
করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা)
যখন ইফত্বার করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর
তিনি ফাজর (ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে
মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের
ওয়াক্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৩, আবূ দাঊদ ৩৯৩,
তিরমিযী ১৪৯, সহীহুল জামি‘ ১৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শেষ ওয়াক্তে সালাত যদিও শুদ্ধ,
তবুও প্রথম (আওয়াল) ওয়াক্তে সালাত পড়া হল শ্রেষ্ঠ
আমল।
উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন
কাজ (‘আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার
প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭,
আবূ দাঊদ ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুনিয়া হতে
উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সালাত কে
এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ৬০৮, তিরমিযী ১৭৪, হাকিম ১/১৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে
পারলাম যে, আল্লাহ তায়ালা সালাতের জন্যে সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। রাসুল সা.
সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ করে আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের অনেক গুরুত্ব ও তাগিদ
দিয়েছেন।
এতদসত্বেও কোনো কারণবশতঃ
নির্দিষ্ট সময়ে যদি কেহ সালাত আদায় করতে না পারে বা ঘুমিয়ে ছিল, সালাতের সময়ে জাগ্রত
হতে পারেনি অথবা ভয়ানক বিপদ বা যুদ্ধের ময়দানে সালাত আদায় করা সম্ভব হয়নি, সেই ছুটে
যাওয়া সালাত বা সালাতসমূহ পরবর্তীতে মনে পড়ার সাথে সাথে বা সময় করে নিয়ে পড়তে হয়। এরুপ
ছুটে যাওয়া সালাতকে কাযা সালাত বলে। কাযা সালাত আদায়ের নির্দিষ্ট কোনো ওয়াক্ত নেই বা
সময় নেই। রাসুল সা. ও সাহাবীগণেরও ওয়াক্তিয়া সালাত ছুটে যেতো এবং তাঁরা তা পরবর্তী
সময়ে আদায় করতেন। তবে এই কাযা সালাত কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর আগের নয়।
খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ও ছাহাবীগণ মাগরিবের পরে যোহর থেকে এশা পর্যন্ত চার ওয়াক্তের ক্বাযা ছালাত এক
আযান ও চারটি পৃথক এক্বামতে পরপর জামা‘আত সহকারে আদায় করেন।
অতএব, বুঝা গেল কাযা সালাতগুলো
ছিল ঐ দিনের। উক্ত দলিল দিয়ে এক শ্রেণির আলেম ২০/৩০ বছরের (বা কম-বেশী) কাযা সালাতগুলো
বর্তমানে এসে প্রতি ওয়াক্তে আদায় করার ফতোয়া দিয়ে থাকেন এবং সেই ফতোয়া মোতাবেক তাদের
অনুসারীগণ অদ্যবধি কাযা সালাতগুলো আদায় করতেই আছেন।অথচ পূর্বের সেই জমানো কাযা সালাতগুলো
এভাবে আদায় করার কোনো বিধান কুরআনে হাদিসের কোথাও নেই।
আমরা সহিহ হাদিস ভিত্তিক
সাবজেক্ট এর প্রতিটি অংশ আলোচনার মাধ্যমে সহিহভাবে জানবো ইনশাআল্লাহ।
ক্বাযা ছালাত দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে এক্বামতসহ আদায় করতে হয়
ক্বাযা ছালাত আদায় করতে দেরী
করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে ক্বাযা ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে যে ধারণা সমাজে চালু আছে
তা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। বরং যখনই স্মরণ হবে কিংবা ঘুম থেকে জাগ্রত হবে তখনই ধারাবাহিকভাবে
ক্বাযা ছালাত আদায় করে নিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কেউ ভুলে গেলে কিংবা ঘুমিয়ে
গেলে তার কাফফারা হল, ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণ হলে সাথে সাথে ক্বাযা ছালাত আদায় করা’।
ক্বাযা ছালাত দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবে
এক্বামতসহ আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া
আত তুজায়বী (রহঃ).....আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ শেষে ফিরে আসার সময় রাতে সফররত ছিলেন। এক সময় রাতের
শেষভাগে তাকে তন্দ্রায় পেয়ে বসলে তিনি সেখানেই অবতরণ করলেন। আর বিলালকে বললেনঃ “তুমি
আজ রাতে আমাদের পাহারার কাজ করো। সুতরাং বিলাল যতটা সম্ভব রাতের বেলায় সালাত আদায়
করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ ঘুমিয়ে পড়লেন।
কিন্তু ফজরের সময় ঘনিয়ে আসলে বিলাল পূর্ব দিকে মুখ করে তার উটের সাথে হেলান দিলেন।
এ সময় ঘুমে বিলালের দু'চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
বিলাল কিংবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের কারোরই নিদ্রা
ভঙ্গ হলো না। এ অবস্থায় তাদের গায়ে সূর্যের আলো এসে পড়ল। প্রথমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তিনি জেগে উঠে বিলালকে ডাকলেন, হে বিলাল!
বিলাল বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি যে কারণে
জাগতে পারেননি আমিও ঐ একই কারণে জগতে পারিনি।
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দিলেন তাড়াতাড়ি যাত্রা করো। সুতরাং সবাই উটগুলো হাকিয়ে
কিছু দূরে নিয়ে গেলে এবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং
বিলালকে সালাতের জন্য আদেশ করলেন। বিলাল সালাতের ইকামাত দিলে তিনি তাদের সবাইকে সাথে
নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যখনই স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে। কেননা
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন- “আমার স্মরণের জন্য সালাত আদায় করো"- (সূরাহ ত্ব-হা- ২০:১৪)।
ইউনুস বলেছেনঃ ইবনু শিহাব لِذِكْرِي (লিযিক্রী)-এর স্থানে لِلذِّكْرَى
(লিযযক্রা) আদায় করলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৪৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৩১, ইসলামীক সেন্টার ১৪৪০)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ও ছাহাবীগণ মাগরিবের পরে যোহর থেকে এশা পর্যন্ত চার ওয়াক্তের ক্বাযা ছালাত এক
আযান ও চারটি পৃথক এক্বামতে পরপর জামা‘আত সহকারে আদায় করেন। (নাসাঈ হা/৬৬২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ পৃঃ; নায়ল ২/৯০ পৃঃ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... আবূ
সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধের দিন মুশরিকরা আমাদেরকে যোহরের
সালাত থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত বিরত রেখেছিল। এটা যুদ্ধের সময় সালাতুল খওফ সম্পর্কিত
আয়াত অবর্তীর্ণ হওয়ার পূর্বের ঘটনা। তারপর আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবর্তীর্ন করেনঃ وَكَفَى
اللَّهُ
الْمُؤْمِنِينَ
الْقِتَالَ
অর্থাৎ “যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” (৩৩ : ২৫)
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-কে ইকামত দেওয়ার আদেশ করেন। তিনি যোহরের সালাতের ইকামত
দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের আসল ওয়াক্তে; আদায় করার ন্যায় যোহরের
কাযা সালাত আদায় করেন। পরে আসরের জন্য ইকামত বলা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তখন সালাতের আসল ওয়াক্তে আদায় করার ন্যায় আসরের কাযা সালাত আদায় করেন। তারপর মাগরিবের
আযান দেয়া হয় এবং তা নির্ধারিত সময়ে আদায় করার ন্যায় আদায়-করেন। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৬২, ইরউয়াউল গালীল ১/২৫৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
‘কেউ ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে গেলে তার কাফফারা হ’ল ঘুম ভাঙলে অথবা স্মরণে আসার সাথে
সাথে ক্বাযা ছালাত আদায় করা’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
হা/৫৯৭, ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, ৬৮৪, মিশকাত হা/৬০৩, ৬০৪, ৬৮৪, ৬৮৭,
মিশকাত হা/৬৩৬, আহমাদ ১৩৫৫০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৭০, ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৮২, ২০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত আদায় করতে ভুলে যায় অথবা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে,
তার কাফ্ফারাহ্ হলো যখনই তা স্মরণ হবে সালাত আদায় করে নিবে। (মুসলিম ৬৮৪)।
অন্য বর্ণনায় আছে, ঐ সালাত
আদায় করে নেয়া ছাড়া তার কোন প্রতিকারই নেই। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৭, মুসলিম ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪২, নাসায়ী ৬১৩, তিরমিযী
১৭৮, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৬, আহমাদ ১৩৫৫০, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৫৬, ইরওয়া ২৬৩)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সালাত আদায়
করতে না পারলে তা দোষ নেই। দোষ হলো জেগে থেকেও সালাত আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ সালাত মাজ) আদায়
করতে ভুলে গেলে অথবা সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে
নিবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আমার স্মরণে সালাত আদায় কর’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা-
২০: ১৪)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬০৪, মুসলিম ৬৮১,
৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪১, নাসায়ী ৬১৫, তিরমিযী ১৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অন্য হাদীছে
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের
কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক সাজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত
পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে
যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৫৬, ৫৭৯, ৫৮০; মুসলিম ৫/৩০, হাঃ ৬০৮, আহমাদ ৯৯৬১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৩, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
অতএব স্পষ্ট হলো যে, ক্বাযা
ছালাতের জন্য কোন নিষিদ্ধ ওয়াক্ত নেই। (আলবানী, মিশকাত
হা/৬০২-এর টীকা দ্রঃ ১ম খন্ড, পৃঃ ১৯১)।
আর মূল ওয়াক্তে যেভাবে ছালাত
আদায় করা হয় ঠিক ঐ নিয়মেই ছালাত আদায় করবে। যেমন খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ছাহাবীদেরকে নিয়ে মাগরিবের পর যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা এই চার ওয়াক্ত ছালাত এক
আযান ও চারটি পৃথক ইক্বামতে পরপর জামা‘আতের সাথে আদায় করেন। উক্ত ছালাতগুলো স্ব স্ব
ওয়াক্তে যেভাবে আদায় করতেন ঐ নিয়মেই আদায় করেন।
হাদিসগুলো
নিম্নরুপঃ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্
(রাযি.) হতে বর্ণিত যে, খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযি.)
এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভৎর্সনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি
এখনও ‘আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহর শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের
দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সালাতের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য
ডুবে গেলে ‘আসরের সালাত আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের সালাত আদায় করেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৬, ৫৯৮, ৬৪১, ৯৪৫, ৪১১২;
মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৬৯, সুনান আন-নাসায়ী
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৬২, ইরউয়াউল গালীল ১/২৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে না পড়া
ক্বাযা ছালাত জাম‘আত করে
না পড়ার প্রথাই সমাজে চালু আছে। অথচ একাধিক ব্যক্তির ছালাত ক্বাযা হলে সেই ছালাত জামা‘আত
সহকারে আদায় করাই সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছাঃ) ক্বাযা ছালাত ছাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে
আদায় করেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৯৬, ৫৯৮,
৬৪১, ৯৪৫, ৪১১২; মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
৫৬৯, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৬২, ইরউয়াউল গালীল ১/২৫৭)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
উমরী ক্বাযা’ আদায় করা
‘উমরী ক্বাযা’ অর্থাৎ যারা
পূর্বে ছালাত আদায় করত না তারা ছালাত শুরু করার পর অতীতের বকেয়া ছালাতসমূহ ফরয ছালাতের
পর আদায় করে থাকে। অথচ উক্ত আমলের পক্ষে কোন দলীল নেই। মূলতঃ এটি একটি বিদ‘আতী প্রথা’।
রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের
স্বর্ণযুগে উক্ত প্রথার অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং পূর্বের ছুটে যাওয়া ছালাতের জন্য আল্লাহর
কাছে বেশী বেশী ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ চাইলে পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিতে
পারেন এবং তা নেকীতে পরিণত করতে পারেন। (ফুরক্বান ৭০-৭১;
যুমার ৫৩)।
আল্লাহ বলেন,
(ক) তবে যারা তওবা করে, বিশ্বাস ও সৎকাজ করে[1]
আল্লাহ তাদের পাপকর্মগুলিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু। (ফুরক্বান ৭০)।
এখান হতে বুঝা যায় যে, বিশুদ্ধ
তওবা দ্বারা পৃথিবীতে সমস্ত পাপ মোচন হতে পারে; তাতে তা যত বড়ই হোক না কেন। আর সূরা
নিসার ৯৩ আয়াতে মু’মিন হত্যার শাস্তি যে জাহান্নাম বলা হয়েছে, তা ঐ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে
বুঝতে হবে, যখন সে তওবা করবে না; বরং বিনা তওবায় মৃত্যু বরণ করবে। কারণ হাদীসে আছে
যে, একশত লোক হত্যাকারীকেও তওবার কারণে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (মুসলিম ৬৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না
ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ).....আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার লোকেদের মধ্যে এক লোক ছিল।
সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। তারপর জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান
লোক কে? তাকে এক আলিম দেখিয়ে দেয়া হয়। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরাব্বই লোককে
হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য কি তওবা আছে? আলিম বলল, না। তখন সে আলিমকেও হত্যা
করে ফেলল। সুতরাং সে আলিমকে হত্যা করে একশ’ সম্পূর্ণ করল। অতঃপর সে পুনরায় জিজ্ঞেস
করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তখন তাকে জনৈক ‘আলিম লোকের সন্ধান দেয়া হলো।
সে ‘আলিমকে বলল যে, সে একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তওবা্ আছে? আলিম লোক
বললেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে ব্যক্তি তার মাঝে ও তার তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি
করবে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন আছে। তুমিও তাদের
সাথে আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হও। নিজের ভূমিতে আর কক্ষনো প্রত্যাবর্তন করো না। কেননা
এ দেশটি ভয়ঙ্কর খারাপ।
তারপর সে চলতে লাগল। এমনকি
যখন সে মাঝপথে পৌছে তখন তার মৃত্যু আসলো। এবার রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে
তার ব্যাপারে বাক-বিতণ্ডা দেখা গেল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাওবার উদ্দেশে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বললেন, সে তো কক্ষনো
কোন সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে এক ফেরেশতা আসলেন। তারা তাকে তাদের
মাঝে মধ্যস্থতা বানালেন। তিনি উভয়কে বললেন, তোমরা উভয় স্থান পরিমাপ কর (নিজ ভূখণ্ড
ও যাত্রাকৃত ভূখণ্ড)। এ দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে যা সন্নিকটবর্তী হবে সে অনুযায়ী তার ফায়সালা
হবে। তারপর উভয়ে পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ ভূখণ্ডেরই বেশি নিকটবর্তী যেখানে পৌছার
জন্যে সংকল্প করেছে। অতঃপর রহমতের ফেরেশতা তার রূহ কবয করে নিলেন। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন,
হাসান (রহঃ) বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এলো, তখন সে
বুকের উপর ভর দিয়ে কিছু এগিয়ে গেল। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী), ৬৯০১-৬৯০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৫২, ইসলামিক
সেন্টার ৬৮০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকাজ করে, সে সম্পূর্ণরূপে
আল্লাহ অভিমুখী হয়। (ফুরক্বান ৭১)।
প্রথম তওবার সম্পর্ক কুফর
ও শিরকের সাথে। আর এই তওবার সম্পর্ক অন্যান্য সমস্ত পাপ ও ত্রুটির সাথে।
(গ) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের
প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ
ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (যুমার
৫৩)।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুমা বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায় হত্যা করেছিল এবং অনেক করেছিল। আরও কিছু লোক
ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরজ করল: আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম, কিন্তু
চিন্তার বিষয় হল এই যে, আমরা অনেক জঘন্য গোনাহ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি,
তবে আমাদের তওবা কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় ৷ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৮১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২২, আধুনিক প্রকাশনী
৪৪৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তাছাড়া ইসলাম তার পূর্বেকার
সবকিছুকে ধসিয়ে দেয়।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে
বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার দিকে আপনার হাত প্রসারিত করে দিন আমি আপনার কাছে ইসলাম
গ্রহণের বায়‘আত করব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত প্রসারিত করে
দিলেন, কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
(অবাক হয়ে) বললেন, তোমার কি হলো হে ‘আমর! আমি বললাম, আমার কিছু শর্ত আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কি শর্ত? আমি বললাম, আমি চাই আমার (পূর্বের কৃত) গুনাহ যেন
মাফ করে দেয়া হয়। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমর! তুমি কি
জান না ‘ইসলাম গ্রহণ’ পূর্বেকার সকল গুনাহ বিনাশ করে দেয়। হিজরত সে সকল গুনাহ মাফ করে
দেয় যা হিজরতের পূর্বে করা হয়েছে। এমনিভাবে হাজ্জ ও তার পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়?
(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ২২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
১২১, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫১৫, সহীহ আল জামি‘ ১৩২৯,
সহীহ আত্ তারগীব ১০৯৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৯৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
পরবর্তী সৎকর্ম পূর্ববর্তী
গুণাগসমূকে দূর করে দেয়।
আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমূহকে
দূর করে দেয়।” (সূরা হুদ ১১:১১৪)।
(ক) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ ও আবু কামিল ফুযায়ল ইবনু
হুসায়ন আল জাহদারী (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন)
এক লোক কোন মহিলাকে চুম্বন করে। তারপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
এসে এ বিষয়টি বর্ণনা করল। রাবী বলেন, তখন আয়াত নাযিল হলোঃ "সালাত প্রতিষ্ঠা
করবে দিনের দু' প্রান্তে এবং রাতের কিয়দংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমূহকে দূর করে
দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ"- (সূরা হুদ ১১: ১১৪)। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর লোকটি বলল,
হে আল্লাহর রসূল! এ বিধান কি একমাত্র আমার জন্য? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের যে কেউ
এ ‘আমল করবে তার জন্যও (এ বিধান)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ৬৮৯৪-৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৪৫, ইসলামিক সেন্টার
৬৮০১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ)....আনাস
(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি হদ যোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। অতএব আপনি আমার উপর তা প্রয়োগ
করুন। রাবী বলেন, তখন সালাতের সময় হলো এবং লোকটি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে সালাত আদায় করল। সালাত আদায় হয়ে গেলে লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি 'হদ' যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। তাই আপনি আল-কুরআনের বিধানানুসারে
আমার উপর হদ কার্যকর করুন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
কি আমাদের সাথে সালাত আদায় করছিলে? লোকটি বলল, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাকে মাফ করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ৬৮৯৯-৬৯০০ আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৬৪-২৭৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৫০,
ইসলামিক সেন্টার ৬৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সম্ভবতঃ একাধিক ছালাত ক্বাযা
হওয়ার কারণেই মহিলাদের মাসিক অবস্থার ছালাত পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়নি; বরং ছিয়াম
ক্বাযা করার কথা বলা হয়েছে।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মু‘আযাহ্ আল ‘আদাবিয়্যাহ্
(রহঃ) (কুনিয়াত উম্মুস্ সুহবা) থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মুল মু’মিনীনাহ্ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করলেন, ঋতুবতী মহিলাদের সওম কাযা করতে হয়, অথচ সালাত কাযা করতে হয় না, কারণ
কী? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায়
আমাদের যখন মাসিক হত, তখন সওম কাযা করার হুকুম দেয়া হত। কিন্তু সালাত কাযা করার হুকুম
দেয়া হত না। (
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২০৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩৩৫, সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ২৬৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ১২৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১২,
ইরওয়া ২০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
উল্লেখ্য যে, রামাযানের শেষ
জুম‘আয় পূর্বের ক্বাযা হওয়া ছালাত আদায় করার যে ফযীলত বর্ণনা করা হয়, তা মিথ্যে।
সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করার বিধান
সফরের ছালাতঃ
সফর অথবা ভীতির সময়ে ছালাতে
‘ক্বছর’ করার অনুমতি রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন-
অর্থ : ‘যখন তোমরা সফর কর,
তখন তোমাদের ছালাতে ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে
উত্যক্ত করবে। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (নিসা
৪/১০১)।
‘ক্বছর’ অর্থ কমানো। পারিভাষিক
অর্থে : চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাত দু’রাক‘আত করে পড়াকে ‘ক্বছর’ বলে।
সফর অবস্থায় ছালাত ক্বছর করার হুকুম
(ক) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ..... নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
বাড়ীতে কিংবা সফরে যে কোন অবস্থায় প্রথমে সালাত দু' দু' রাকাআত করে ফারয করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে সফরের সালাত দু' রাকাআত ঠিক রাখা হলেও বাড়ীতে অবস্থানকালীন সালাতের
রাকাআত সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৪৫৫-১৪৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৪০, ইসলামীক
সেন্টার ১৪৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মানসূর,
আবুর রাবি ও কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... 'আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের নবীর জবানীতে আল্লাহ তা'আলা বাড়ীতে অবস্থানকালীন সালাত
চার রাকাআত, সফরের সালাত দু' রাকাআত এবং ভীতিকর অবস্থানকালীন সালাত এক রাকাআত ফারয
(ফরয) করেছেন। ( সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪৬০-১৪৬১,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৪৫, ইসলামীক সেন্টার ১৪৫৫)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
মক্কা বিজয়ের সফরে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ক্বছরের সাথে ছালাত আদায় করেন। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ,
মিশকাত হা/১৩৩৬ ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪১)।
হাদিসটি নিমন্নরুপঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমরা (বিদায় হাজ্জের সময়) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে
মদীনাহ্ হতে মক্কায় গমন করেছিলাম। সেখানে তিনি মদীনায় ফেরত না আসা পর্যন্ত চার রাক্‘আত
ফরয সালাতের স্থলে দু’ রাক্‘আত আদায় করেছেন। আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনারা
কি মক্কায় কয়েক দিন অবস্থান করেছিলেন? জবাবে আনাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, আমরা মক্কায়
দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),
১৩৩৬, বুখারী ১০৮১, মুসলিম ৬৯৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৯৯৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০২৭, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৩৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ক্বছর করা আল্লাহর পক্ষ থেকে
ছাদাক্বাহ বা রহমত।
শান্তিপূর্ণ সফরে ক্বছর করতে
হবে কি-না এ সম্পর্কে ওমর ফারূক (রাঃ)-এর এক প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
صَدَقَةٌ
تَصَدَّقَ
اللهُ
بِهَا
عَلَيْكُمْ
فَاقْبَلُوْا
صَدَقَتَهُ-‘আল্লাহ
এটিকে তোমাদের জন্য ছাদাক্বা (উপঢৌকন) হিসাবে প্রদান করেছেন। অতএব তোমরা তা গ্রহণ কর’।
(মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৩৫ ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইয়া‘লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘উমারের কাছে নিবেদন করলাম, আল্লাহ তা‘আলার বাণী হলো, ‘‘তোমরা
সালাত কম আদায় করো, অর্থাৎ ক্বসর করো, যদি অমুসলিমরা তোমাদেরকে বিপদে ফেলবে বলে আশংকা
করো’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০১)। এখন তো লোকেরা নিরাপদ। তাহলে ক্বসরের সালাত আদায়ের প্রয়োজনটা কি? ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ
ব্যাপারে যেমন বিস্মিত হচ্ছো, আমিও এরূপ আশ্চর্য হয়েছিলাম। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ব্যাপারটি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতে ক্বসর করাটা আল্লাহর একটা সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা দান, যা
তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। অতএব তোমরা তাঁর এ দান গ্রহণ করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩৩৫, মুসলিম ৬৮৬, আবূ দাঊদ ১১৯৯,
আত্ তিরমিযী ৩০৩৪, নাসায়ী ১৪৩৩, ইবনু মাজাহ্ ১০৬৫, আহমাদ ১৭৪, দারিমী ১৫৪৬, ইবনু খুযায়মাহ্
৯৪৫, ইবনু হিব্বান ২৭৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৩৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০২৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সফর অবশ্যই আল্লাহর প্রতি
আনুগত্যের সফর হ’তে হবে, গোনাহের সফর নয়’। (মির‘আত ৪/৩৮১)।
‘জমা’ অর্থ একত্রিত করা।
যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশার ছালাত এক সঙ্গে আদায় করা। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীছ থাকলেও
অধিকাংশ মুছল্লী অতি পরহেযগারিতা দেখাতে গিয়ে এই সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং
পূর্ণ ছালাত আদায় করতে গিয়ে গাড়ী ধরার ব্যস্ততায় ছালাতকে তাড়াহুড়ায় পরিণত করে। সফর
অবস্থায় ছালাত ক্বছর ও জমা করার যে হিকমত, তা অনেকেই বুঝতে চায় না। সময়ের ঘাটতি, স্থান
পাওয়া, পবিত্রতা হাছিলের জন্য সুযোগ মত পানি পাওয়া, ছালাতের চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা,
প্রশান্তির সাথে ছালাত আদায় করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তারা কখনো চিন্তা করে না। আল্লাহ
তা‘আলা বলেন,
‘যখন তোমরা সফর কর, তখন তোমাদের
ছালাতে ‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত
করবে। নিশ্চয়ই কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (নিসা
৪/১০১)।
ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ)
বলেন, আমি একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে নিম্নের আয়াত পড়ে বললাম, ‘তোমাদের ছালাত
‘ক্বছর’ করায় কোন দোষ নেই। যদি তোমরা আশংকা কর যে, কাফেররা তোমাদেরকে উত্যক্ত করবে’।
মানুষ এখন নিরাপদ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হয়েছ আমিও তেমনি এতে আশ্চর্য
হয়েছিলাম। অতঃপর আমি রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ‘এটা ছাদাক্বাহ।
আল্লাহ তোমাদের প্রতি ছাদাক্বাহ করেছেন। তোমরা তার ছাদাক্বাহ গ্রহণ কর’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩৩৫, মুসলিম ৬৮৬, আবূ দাঊদ ১১৯৯,
আত্ তিরমিযী ৩০৩৪, নাসায়ী ১৪৩৩, ইবনু মাজাহ্ ১০৬৫, আহমাদ ১৭৪, দারিমী ১৫৪৬, ইবনু খুযায়মাহ্
৯৪৫, ইবনু হিব্বান ২৭৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৩৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০২৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) তাবূক যুদ্ধে অবস্থান করছিলেন। সওয়ার হওয়ার পূর্বে যদি সূর্য ঢুলে
পড়ত, তখন তিনি যোহর ও আছর জমা করতেন। আর যদি সূর্য ঢুলে পড়ার পূর্বে সওয়ার হতেন, তখন
যোহরকে দেরী করতেন আছর পর্যন্ত। অনুরূপ করতেন মাগরিবের ছালাতের ক্ষেত্রে। সওয়ার হওয়ার
পূর্বে যদি সূর্য ডুবে যেত, তাহলে মাগরিব ও এশা জমা করতেন। আর সূর্য ডুবার পূর্বে যদি
সওয়ার হতেন, তখন মাগরিবকে দেরী করতেন এবং এশার ছালাতের জন্য নেমে পড়তেন। অতঃপর মাগরিব
ও এশা জমা করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪৪, হ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৫১৬-১৫১৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭০৬, আবূ দাঊদ ১২০৮, দারাকুত্বনী
১৪৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫২৭, আত্ তিরমিযী ৫৫৩, ইরওয়া ৫৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
রাসূল (ছাঃ) যখন সফর অবস্থায় থাকতেন, তখন যোহর ও আছর জমা করতেন। অনুরূপ মাগরিব ও এশাও
জমা করে আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩৯,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১০৭, আধুনিক প্রকাশনী ১০৩৮ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছালাত ক্বছর করে পড়ার নিয়মাবলী
সফরে থাকা অবস্থায় যোহর-আছর
(২+২=৪ রাক‘আত) ও মাগরিব-এশা (৩+২=৫ রাক‘আত) পৃথক এক্বামতের মাধ্যমে সুন্নাত ও নফল
ছাড়াই জমা ও ক্বছর করে তাক্বদীম ও তাখীর দু’ভাবে পড়ার নিয়ম রয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪৪, আবূ দাঊদ ১২০৮, দারাকুত্বনী
১৪৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫২৭, আত্ তিরমিযী ৫৫৩, ইরওয়া ৫৭৮)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
অর্থাৎ শেষের ওয়াক্তের ছালাত
আগের ওয়াক্তের সাথে ‘তাক্বদীম’ করে অথবা আগের ওয়াক্তের ছালাত শেষের ওয়াক্তের সাথে
‘তাখীর’ করে একত্রে পড়বে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৫)।
সফরে দু' ওয়াক্তের সালাত একত্রে (এক ওয়াক্তে) আদায় জায়িয
(ক) কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....আনাস ইবনু
মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পূর্বেই যদি তিনি
সফরে রওয়ানা হতেন তাহলে আসরের সালাতের সময় পর্যন্ত দেরী করতেন এবং তারপর কোথাও থেমে
যুহর ও আসরের সালাত একসাথে আদায় করতেন। কিন্তু রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই যদি সূর্য ঢলে
পড়ত তাহলে তিনি যুহরের সালাত আদায় করে তারপর যাত্রা করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫১০-১৫১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭০৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৯৫, ইসলামীক সেন্টার ১৫০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ)...নাফি (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। কোন সফরে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) কে দ্রুত পথ চলতে হলে সূর্যাস্তের
পর পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর তিনি মাগরিব এবং ইশার সালাত একত্র করে আদায়
করতেন। এ ব্যাপারে তিনি বলতেনঃ সফরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
যখন দ্রুত চলতে হত তখন তিনি মাগরিব এবং ইশার সালাত একসাথে আদায় করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫০৬-১৫০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭০৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৯২ ইসলামীক সেন্টার ১৫০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আবাসে দু' ওয়াক্তের সালাত একত্রে আদায়
(ক) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)…..আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ভীতিকর অবস্থা কিংবা সফররত অবস্থা ছাড়াই যুহর এবং আসরের সালাত একসাথে এবং মাগরিব ও
ইশার সালাত একসাথে আদায় করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৫১৩, ১৫১৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭০৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৯৮, ইসলামীক সেন্টার
১৫০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ‘আওন ইবনু সাল্লাম (রহঃ)....আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সফররত বা ভীতিকর অবস্থা ছাড়াই রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় অবস্থানকালে যুহর এবং ‘আসরের সালাত একসাথে
আদায় করেছেন।
আবূয যুবায়র বলেছেনঃ (এ
হাদীস শুনে) আমি সাঈদ ইবনু যুবায়রকে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরূপ করেছেন? তিনি বললেনঃ তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমিও তেমনি আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ)-কে (বিষয়টি) জিজ্ঞেস করেছিলাম। জবাবে তিনি আমাকে বলেছিলেন, এ
দ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইচ্ছা ছিল তার উম্মাতের মনে যেন
কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না থাকে।* (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৫১৪-১৫১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭০৫,
ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৯৯, ইসলামীক সেন্টার ১৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
* এ মর্মে
দুটি উল্লেখযোগ্য মত হলো-
(১) এ হাদীস অসুস্থতাজনিত অবস্থার উপর প্রযোজ্য-এটা আহমাদ বিন হাম্বাল ও কাজী হুসায়ন (রহঃ)-এর অভিমত।
(২) ইবনু সীরীন এবং কতক মালিকী ও শাফি’ঈ বিদ্বানের
মতে অভ্যাসে পরিণত না করে একান্ত প্রয়োজনে যুহর, আসর একত্রে এবং মাগরিব ইশা একত্রে
আদায় করা এ হাদীস অনুপাতে জায়িয।
ভীতি ও ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও অন্য
কোন বিশেষ শারঈ ওযর বশতঃ মুক্বীম অবস্থায়ও দু’ওয়াক্তের ছালাত ক্বছর ও সুন্নাত ছাড়াই
একত্রে জমা করে পড়া যায়। যেমন যোহর ও আছর পৃথক এক্বামতের মাধ্যমে ৪+৪=৮ (ثَمَانِيًا)
এবং মাগরিব ও এশা অনুরূপভাবে ৩+৪=৭ (سَبْعًا) রাক‘আত। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করা হ’ল, এটা কেন? তিনি বললেন, যাতে উম্মতের কষ্ট না হয়’। (বুখারী হা/১১৭৪, নায়লুল আওত্বার ৪/১৩৬; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৮)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আট
রাক‘আত একত্রে (যুহর ও ‘আসরের) এবং সাত রাক‘আত একত্রে (মাগরিব-‘ইশার) সালাত আদায় করেছি।
(সে ক্ষেত্রে সুন্নাত আদায় করা হয়নি।) ‘আমর (রহ.) বলেন, আমি বললাম, হে আবুশ্ শা’সা!
আমার ধারণা, তিনি যুহর শেষ ওয়াক্তে এবং আসর প্রথম ওয়াক্তে আর ‘ইশা প্রথম ওয়াক্তে ও
মাগরিব শেষ ওয়াক্তে আদায় করেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমিও তাই মনে করি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১১৭৪, ৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৫১৯-১৫২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ
৭০৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইস্তেহাযা বা প্রদর রোগগ্রস্ত
মহিলা ও বহুমূত্রের রোগী বা অন্যান্য কঠিন রোগী, বাবুর্চী এবং কর্মব্যস্ত ভাই-বোনেরা
মাঝে-মধ্যে বিশেষ ওযর বশতঃ সাময়িকভাবে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। (নায়লুল আওত্বার ৪/১৩৬-৪০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৭-১৮)।
হজ্জের সফরে আরাফাতের ময়দানে
কোনরূপ সুন্নাত-নফল ছাড়াই যোহর ও আছর একত্রে (২+২) যোহরের আউয়াল ওয়াক্তে পৃথক এক্বামতে
‘জমা তাক্বদীম’ করে এবং মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে (৩+২) এশার সময় পৃথক এক্বামতে
‘জমা তাখীর’ করে জামা‘আতের সাথে অথবা একাকী পড়তে হয়। (মিশকাত
হা/২৬১৭, ২৬০৭, নায়ল ৪/১৪০)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমাকে সালিম (রহঃ) (‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর পুত্র) বলেছেন, যে
বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র-এর বিরুদ্ধে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মক্কায়
পৌঁছেন, (আমার পিতা) ‘আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরাফার দিনে ‘আরাফার ময়দানে আমরা
হজের কাজ কিভাবে সম্পন্ন করবো? সালিমই (তাৎক্ষণিক) বলেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসারী
হয়ে করতে চান, তাহলে ‘আরাফার দিন সকালে শীঘ্র সালাত আদায় করবেন (যুহর ও ‘আসর এক সাথে
তথা যুহরের প্রথম সময়ে)। তখন (আমার পিতা) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, সে
(সালিম) সঠিক বলেছে, কেননা সাহাবীগণ সুন্নাত অনুসারে যুহর ও ‘আসর একত্রে সালাত আদায় করতেন।
রাবী ইবনু শিহাব বলেন, আমি
সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এটা করেছেন
(অর্থাৎ- যুহর ও ‘আসর একত্রে আদায় করেছেন)? তখন সালিম (রহঃ) বললেন, তাঁরা কি রসূলের
সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছুর অনুসরণ করতেন? অর্থাৎ- করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬১৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৬৬২, ১৬৬০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ ৮৮, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ পরিচ্ছেদ ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সফরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সুন্নাতসমূহ
পড়তেন না। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৩৮ ‘সফরের
ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
(ক) হাফস ইবনু ‘আসিম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একবার মক্কা-মদীনার পথে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের সাথে থাকার আমার সৌভাগ্য ঘটেছে। (যুহরের
সালাতের সময় হলে) তিনি আমাদেরকে দু’ রাক্‘আত সালাত (জামা‘আতে) আদায় করালেন। এখান থেকে
তাঁবুতে ফিরে গিয়ে তিনি দেখলেন, লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা এটা
কি করছে? আমি বললাম, তারা নফল সালাত আদায় করছে। তিনি বললেন, আমাকে যদি নফল সালাতই আদায়
করতে হয়, তাহলে ফরয সালাতই তো পরিপূর্ণভাবে আদায় করা বেশী ভাল ছিল। কিন্তু যখন সহজ
করার জন্য ফরয সালাত ক্বসর আদায়ের হুকুম হয়েছে, তখন তো নফল সালাত ছেড়ে দেয়াই উত্তম।
আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকার সৌভাগ্যও পেয়েছি। তিনি
সফরের অবস্থায় দু’ রাক্‘আতের বেশী (ফরয) সালাত আদায় করতেন না। আবূ বাকর, ‘উমার, ‘উসমান
(রাঃ)-এর সাথে চলারও সুযোগ আমার হয়েছে। তারাও এভাবে দু’ রাক্‘আতের বেশী আদায় করতেন
না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১১০১, ১১০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৯,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫০৭, আবূ দাঊদ ১২২৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৩৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১০৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)....হাফস্ ইবনু আসিম
থেকে (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি সাংঘাতিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লাম।
'আবদুল্লাহ ইবনু উমার আমাকে দেখতে আসলেন। সে সময় আমি তাকে সফরে সুন্নাত সালাত আদায়
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন- আমি সফরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সঙ্গী হয়েছি। কিন্তু কখনো তাকে নফল সালাত আদায় করতে দেখিনি। আর আমি যদি সফরে সুন্নাত
সালাত আদায় করতাম তাহলে ফারয (ফরয) সালাতও পূর্ণ করে আদায় করতাম। কেননা আল্লাহ তা'আলা
বলেছেনঃ "আল্লাহর রসূলের জীবনে তোমাদের অনুসরণের জন্য উত্তম নীতিমালা রয়েছে"–
(সূরাহ আল আহযাব ৩৩: ২১)। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৫০, ইসলামীক সেন্টার ১৪৫৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
হয় যে, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে চিরকালই কস্র করেন,
কখনো পূর্ণ সালাত আদায় করেননি। তাই একদল আলিমের মতে সফরে কাসর করতেই হবে। পূর্ণ পড়লে
চলবে না। ইবনু ‘উমর বলেন, সফরের সালাত দু’রাক’আত। যে ব্যক্তি এ সুন্নাত ত্যাগ করবে
সে কুফরী করে- (মুহাল্লা ৪র্থ খণ্ড ২৬৬ পৃষ্ঠা)।
ইবনু ‘আব্বাস বলেন, যে ব্যক্তি
সফরে চার রাক’আত পড়ে, সে যেন ঘরে দু’রাক’আত পড়ে। (ঐ ২৭০
পৃষ্ঠা)
ইমাম ইবনু কাইয়ূম বলেন, নবী
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে ৪ রাক’আত বিশিষ্ট সালাত গুলো ৪ রাক’আতই আদায়
করেছেন এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর ‘‘আয়িশা (রাঃ)-এর হাদীসে আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাস্র এবং পূর্ণ দু’রকমই আদায় করেছেন-সে হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম
ইবনু তাইমিয়া বলেন, হাদীসটি সহীহ্ নয়, বরং এটা আল্লাহ্র রসূলের উপরে একটা মিথ্যা অপবাদ।
(যাদুল মা’আদ ১ম খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠা)।
অবশ্য বিতর, তাহাজ্জুদ ও
ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ছাড়তেন না। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ ৩/৪৫৭ পৃঃ)।
তবে সাধারণ নফল ছালাত যেমন
তাহিইয়াতুল ওযূ, তাহিইয়াতুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায়ে তিনি কাউকে নিষেধ করতেন না। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৪০; বুখারী হা/১১৫৯; নায়ল
৪/১৪২; যা-দুল মা‘আদ ১/৪৫৬)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণে গেলে রাতের বেলায় ফরয
সালাত ছাড়া (অন্য সালাত) সওয়ারীর উপর বসেই ইশারা করে আদায় করতেন। সওয়ারীর মুখ যেদিকে
থাকত তাঁর মুখও সে দিকে থাকত। এমনিভাবে বিতরের সালাত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সওয়ারীর
উপরই আদায় করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪০, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৯৯, ১০০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪৯৫-১৫০৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭০০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৩৬, মুসলিম ৭০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সফরের দূরত্ব ও সময়
সফরের দূরত্বের ব্যাপারে
বিদ্বানগণের মধ্যে এক মাইল হ’তে ৪৮ মাইলের বিশ প্রকার বক্তব্য রয়েছে। (শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ৪/১২২ পৃঃ; আলোচনা দ্রষ্টব্য, সিলসিলা
ছহীহাহ হা/১৬৩)।
তবে হাদীছে কোন নির্দিষ্ট
দূরত্বের কথা উল্লেখ নেই। এক হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) তিন মাইল কিংবা তিন ফারসাখ
বা ৯ মাইল যাওয়ার পর দুই রাক‘আত পড়তেন।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ
ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ).....ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল হুনায়ী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) কে সফররত অবস্থায় সালাতে কসর করা সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তিন মাইল
অথবা তিন ফারসাখ দূরত্বে সফরে বের হতেন তখনই দু' রাকাআত সালাত আদায় করতেন। ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াযীদ আল হুনায়ী তিন মাইল দূরত্বের কথা বলেছেন, না তিন ফারসাখ দূরত্বের কথা
বলেছেন তাতে শু'বার সন্দেহ রয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী), ১৪৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৫৩, ইসলামীক সেন্টার
১৪৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
পবিত্র কুরআনেও দূরত্বের
কোন ব্যাখ্যা নেই। কেবল সফরের কথা আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকেও এর কোন সীমা নির্দেশ
করা হয়নি। (ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ (বৈরুত: ১৪১৬/১৯৯৬)
১/৪৬৩ পৃঃ)।
শুরাহবীল ইবনু সামত ১৭ বা
১৮ মাইল পর পড়তেন। (মুসলিম হা/১৬১৬, ১/২৪২ পৃঃ)।
যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ
ইবনু বাশশার (রহঃ)....জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুরাহবীল
ইবনু আস সিমত্ব (রাযিঃ) এর সাথে সতের বা আঠার মাইল দূরবর্তী এক গ্রামে গেলাম। তিনি
সেখানে (চার রাকাআতের পরিবর্তে) দু' রাকাআত সালাত আদায় করলেন। আমি তাকে কারণ জিজ্ঞেস
করলাম। তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা করতে দেখেছি
তাই করে থাকি। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪৬৯-১৪৭০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৫৪, ইসলামীক সেন্টার ১৪৬৩)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু ওমর ও ইবনু আব্বাস
(রাঃ) চার বুরদ বা ১৬ ফারসাখ অর্থাৎ ৪৮ মাইল অতিক্রম করলে ক্বছর করতেন। (বুখারী ‘ক্বছর ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪, ১/১৪৭ পৃঃ)।
এক দিন ও এক রাতের সফরকে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস
(রাযি.) চার ‘বুর্দ’ অর্থাৎ ষোল ফারসাখ(১) দূরত্বে কসর করতেন এবং সওম পালন করতেন না।
ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারীই যেন মাহরামকে (২) সঙ্গে না নিয়ে
তিন দিনের সফর না করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০৮৬, ১০৮৭; মুসলিম ১৫/৭৪ হাঃ ১৩৩৮, আহমাদ ৪৬১৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১০২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
[১] এক ফারসাখ হলো- তিন মাইল। - আইনী
[২] ইসলামের দৃষ্টিতে যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হওয়া হারাম এমন পুরুষ ব্যক্তি।
নির্দিষ্ট কিছু বর্ণিত হয়নি।
অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হ’লে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর
গেলেই ‘ক্বছর’ করা যায়। কোন কোন বিদ্বানের নিকটে সফরের নিয়ত করলে ঘর থেকেই ‘ক্বছর’
শুরু করা যায়। তবে ইবনুল মুনযির বলেন যে, সফরের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদ্বীনা
শহর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার পূর্বে ‘ক্বছর’ করেছেন বলে আমি জানতে পারিনি’। তিনি বলেন,
বিদ্বানগণ একমত হয়েছেন যে, সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ গ্রাম (বা মহল্লার) বাড়ীসমূহ অতিক্রম
করলেই তিনি ক্বছর করতে পারেন। (নায়লুল আওত্বার ৪/১২৪;
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৩)।
আমরা মনে করি যে, মতভেদ এড়ানোর
জন্য ঘর থেকেই দু’ওয়াক্তের ফরয ছালাত ক্বছর ও সুন্নাত ছাড়াই পৃথক দুই এক্বামতের মাধ্যমে
জমা করে সফরে বের হওয়া ভাল। তাবূকের অভিযানে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ এটা করেছিলেন।
(মিশকাত হা/১৩৪৪ ‘সফরের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪১)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকের যুদ্ধ চলাকালে যুহরের
সময় সূর্য ঢলে গেলে যুহর ও ‘আসরের সালাত দেরী করতেন এবং ‘আসরের সালাতের জন্য মঞ্জীলে
নামতেন। অর্থাৎ যুহর ও ‘আসরের সালাত একসাথে আদায় করতেন। মাগরিবের সালাতের সময়ও তিনি
এরূপ করতেন। সূর্য তাঁর ফিরে আসার আগে ডুবে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন। আর সূর্য অস্ত যাবার আগে চলে এলে তিনি মাগরিবের
সালাতে দেরী করতেন। ‘ইশার সালাতের জন্য নামতেন, তখন দু’সালাতকে একত্রে আদায় করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১২০৮, দারাকুত্বনী ১৪৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫২৭, আত্ তিরমিযী ৫৫৩, ইরওয়া
৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে
মদিনা্য় যুহরের সালাত চার রাক‘আত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় আসরের সালাত দু’ রাক‘আত
আদায় করেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১০৮৯, ১৫৪৬,
১৫৪৭, ১৫৪৮, ১৫৫১, ১৭১২, ১৭১৩, ১৭১৫, ২৯৫১, ২৯৮৬; মুসলিম ৬/১, হাঃ ৬৯০, আহমাদ ২৩৭০৩)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভ্রমণে গিয়ে ঊনিশ
দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দু’ রাক্‘আত করে ফরয সালাত আদায় করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমরাও মক্কা
মদীনার মধ্যে কোথাও গেলে সেখানে ঊনিশ দিন অবস্থান করলে, আমরা দু’ রাক্‘আত করে সালাত
আদায় করতাম। এর চেয়ে বেশী দিন অবস্থান করলে চার রাক্‘আত করে সালাত ক্বায়িম করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০৮০, ৪২৯৮, ৪২৯৯, আত্ তিরমিযী ৫৪৯, ইবনু মাজাহ্ ১০৭৫, ১০৭৬, আহমাদ ১৯৫৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ৯৫৫, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১০২৮, তিরমিযী ৫৪৯, আবূ দাঊদ ১২৩০, ইরওয়াহ ৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রাসূল (ছাঃ) একটানা ১৯ দিন
‘ক্বছর’ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩৭, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৮০, ৪২৯৮, ৪২৯৯, আত্ তিরমিযী ৫৪৯, ইবনু মাজাহ্ ১০৭৫, ১০৭৬, আহমাদ ১৯৫৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ৯৫৫, শারহুস্
সুন্নাহ্ ১০২৮, তিরমিযী ৫৪৯, আবূ দাঊদ ১২৩০, ইরওয়াহ ৫৭৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১০১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় ১৯
দিনের বেশী হ’লেও ‘ক্বছর’ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূক অভিযানের সময় সেখানে ২০
দিন যাবৎ ‘ক্বছর’ করেন।
অর্থাৎ যত দিন তিনি অবস্থান
করেছেন, ততদিন ক্বছর করেছেন। তাই স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত ছালাত ক্বছর ও জমা করে পড়া
যাবে।
অনেক ছাহাবী দীর্ঘ দিন সফরে
থাকলেও ক্বছর করতেন। (মিরক্বাত ৩/২২১; ফিক্বহুস সুন্নাহ
১/২১৩-১৪)।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
আযারবাইজান সফরে গেলে পুরা বরফের মৌসুমে সেখানে আটকে যান ও ছ’মাস যাবৎ ক্বছরের সাথে
ছালাত আদায় করেন। অনুরূপভাবে হযরত আনাস (রাঃ) শাম বা সিরিয়া সফরে এসে দু’বছর সেখানে
থাকেন ও ক্বছর করেন। (মিরক্বাত ৩/২২১; ফিক্বহুস সুন্নাহ
১/২১৩-১৪)।
ছাহাবীগণ সফরে থাকা অবস্থায়
ক্বছর করাকেই অগ্রাধিকার দিতেন। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উ
ফাতাওয়া ২৪/৯৮; মিশকাত হা/১৩৪৭-৪৮ )।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় (চার রাক্‘আত
বিশিষ্ট সালাত) দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন। তাঁরপর আবূ বাকরও দু’ রাক্‘আত সালাত
আদায় করেছেন। অতঃপর ‘উমার (রাঃ)ও দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন। ‘উসমান (রাঃ) তার
খিলাফাতকালের প্রথম দিকে দু’ রাক্‘আতই সালাত আদায় করতেন। কিন্তু পরে তিনি চার রাক্‘আত
আদায় করতে শুরু করেন।
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর ব্যাপারে
বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন ইমামের (উসমান (রাঃ)-এর) সাথে সালাত আদায় করতেন, তখন চার রাক্‘আত
আদায় করতেন। আর একাকী হলে (সফরে) দু’ রাক্‘আত আদায় করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৫৫,
১০৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৭৫-১৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৪, ইবনু আবী
শায়বাহ্ ১৩৯৭৮, আহমাদ ৪৫৩৩, ৬৩৬০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব স্থায়ী মুসাফির যেমন
জাহায, বিমান, ট্রেন, বাস ইত্যাদির চালক ও কর্মচারীগণ সফর অবস্থায় সর্বদা ছালাতে ক্বছর
করতে পারেন এবং তারা দু’ওয়াক্তের ছালাত জমা ও ক্বছর করতে পারেন।
মোটকথা ভীতি ও সফর অবস্থায়
‘ক্বছর’ করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সফরে সর্বদা ক্বছর করতেন। হযরত ওমর, আলী, ইবনু
মাসঊদ, ইবনু আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ সফরে ক্বছর করাকেই অগ্রাধিকার দিতেন। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১২)।
হযরত ওছমান ও হযরত আয়েশা
(রাঃ) প্রথম দিকে ক্বছর করতেন ও পরে পুরা পড়তেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) জামা‘আতে
পুরা পড়তেন ও একাকী ক্বছর করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৩৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৫৫, ১০৮২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৭৫-১৪৮০,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৩৯৭৮, আহমাদ ৪৫৩৩, ৬৩৬০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
কেননা আল্লাহ বলেন, ‘সফর
অবস্থায় ছালাতে ‘ক্বছর’ করলে তোমাদের জন্য কোন গোনাহ নেই’ (নিসা ৪/ ১০১)।
অতএব সফরে ছালাতকে ক্বছর
ও জমা করার সুন্নাতকে অবজ্ঞা করা যাবে না।
হজ্জের সফরে ছালাত ক্বছর না করা সুন্নাত বিরোধী
হজ্জের সফরে ক্বছর ও জমা
ছালাতের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করা অন্যায়। কিছু জাল ও যঈফ হাদীছের কারণে উক্ত সুন্নাতকে
অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। (দারাকুৎনী হা/১৪৬৩; আবুদাঊদ হা/১২২৯;
সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৩৯)।
জঈফ হাদিসটি নিম্নরুপঃ
‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং
মক্কাহ বিজয়ের দিনেও তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি মক্কায় আঠার দিন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি
(ফারয) সালাত দু’ রাক্‘আত আদায় করেন এবং বলেনঃ হে শহরবাসী! তোমরা চার রাক‘আত সালাত
আদায় করবে। কেননা আমরা মুসাফির সম্প্রদায় (তাই চার রাক‘আতের স্থলে দু’ রাকআত আদায় করেছি)।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২২৯, তিরমিযী (অধ্যায় : সালাত,
অনুঃ সালাত ক্বাসর করা, হাঃ ৫৪৫), আহমাদ (৪/৪৩০), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ১৬৪৩) সকলে ‘আলী
ইবনু ইয়াযীদ ইবনু জাদ‘আন হতে। এর সানাদ দুর্বল। সনদে ‘আলী ইবনু ইয়াযীদ ইবনু জাদ‘আন
দুর্বল)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।
কারণ হাদীছে সরাসরি রাসূল
(ছাঃ) ও ছাহাবীগণের আমল বর্ণিত হয়েছে।
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল
(ছাঃ)-এর সাথে মদ্বীনা থেকে মক্কার দিকে বের হয়েছিলাম। পুনরায় মদ্বীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত
তিনি দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করেছিলেন। (ছহীহ
বুখারী হা/১০৮১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৭ (ইফাবা হা/১০২০, ২/২৭৯ পৃঃ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মদিনা ফিরে আসা পর্যন্ত
তিনি দু’রাক‘আত, দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। (রাবী বলেন) আমি (আনাস (রাযি.)-কে বললাম,
আপনারা (হাজ্জকালীন সময়) মক্কা্য় কয় দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, সেখানে আমরা
দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন),
১০৮১, ৪২৯৭; মুসলিম ৬/১ হাঃ ৬৯৩, আহমাদ ১২৯৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১০২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অন্য হাদীছে এসেছে,
কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)
..... আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান মিনাতে অবস্থানকালে
আমাদের সাথে নিয়ে ফারয (ফরয) সালাত চার রাকাআত আদায় করলেন। বিষয়টি 'আবদুল্লাহ ইবনু
মাসউদকে অবহিত করা হলে তিনি "ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাই-হি র-জিউন” পড়লেন।
পরে তিনি বললেনঃ আমি মিনাতে অবস্থানকালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাথে দু' রাকাআত সালাত আদায় করেছি। আবূ বাকর সিদ্দীকের সাথেও দু' রাকাআত সালাত
আদায় করেছি। আমি মিনাতে অবস্থানকালে উমার ইবনুল খাত্ত্বাবের সাথেও দু' রাকাআত সালাত
আদায় করেছি। চার রাকাআতের পরিবর্তে দু' রাকাআত সালাতই যদি আমার জন্য মাকবুল হ’ত তাহলে
কতই না ভাল হ’ত। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ১৪৮১-৮৪,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১০৮৪, ১৬৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী) ১৪৮১-১৪৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৬৬, ইসলামীক সেন্টার
১৪৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
আরো কয়েকটি হাদিসে
এসেছে,
(ক) খালাফ ইবনু হিশাম, আবূর রাবি আয যাহরানী ও
কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ).....আনাস ইবনু
মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। বিদায় হাজ্জের সফরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদীনাহ থেকে যুহরের সালাত চার রাকাআত আদায় করে রওয়ানা হয়েছিলেন এবং যুলহুলায়ফাতে
পৌছে আসরের সালাত দু' রাকাআত আদায় করেছিলেন। (সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী), ১৪৬৬-১৪৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৫১, ইসলামীক
সেন্টার ১৪৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ)
... আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সফরে) আমরা রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনাহ থেকে মক্কার দিকে বের হলাম। (এ সফরে)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ওয়াক্তের সালাতই দু' রাকাআত করে আদায়
করেছেন এবং মদীনায় ফিরে এসেছেন। বর্ণনাকারী ইসহাক ইবনু ইয়াহইয়া বর্ণনা করেছেন- আমি
আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি মক্কায় ক'দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। জবাবে
আনাস ইবনু মালিক বললেনঃ দশদিন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী),
১৪৭১-১৪৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৫৬, ইসলামীক সেন্টার ১৪৬৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (বহঃ) ..... সালিম
ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমার এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ মর্মে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মিনা এবং অন্যান্য স্থানে মুসাফিরের
মতো দু' রাকাআত করে সালাত আদায় করেছিলেন। আর আবূ বাকর, উমার তাদের খিলাফাত যুগে এবং
উসমান তার খিলাফাতের প্রথম দিকে সফরকালের সালাত দু' রাকাআত করে আদায় করেছেন এবং পরবর্তী
সময়ে পূর্ণ চার রাক’আত আদায় করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস
একাডেমী), ১৪৭৫-১৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৬০, ইসলামীক সেন্টার
১৪৬৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে
নির্দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। প্রথমে দুই রাক‘আত যোহরের ছালাত অতঃপর আছরের দুই রাক‘আত
পড়বে পৃথক পৃথক ইক্বামতে। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশা এক সঙ্গে আদায় করবে। প্রথমে ইক্বামত
দিয়ে মাগরিব তিন রাক‘আত পড়বে অতঃপর পৃথক ইক্বামতে এশা দুই রাক‘আত আদায় করবে।
নিশ্চয় ছাহাবীগণ সুন্নাতের
অনুসরণে যোহর ও আছর ছালাত জমা করে আদায় করতেন। রাবী বলেন, আমি সালেমকে বললাম, রাসূল
(ছাঃ) কি এটা করেছেন? তিনি উত্তরে বললেন, এ বিষয়ে তোমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ছাড়া
অন্য কারো অনুসরণ করবে কি? (বুখারী হা/১৬৬২, ১ম খন্ড,
পৃঃ ২২৫, (ইফাবা হা/১৫৫৬), ‘হজ্জ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৯; মিশকাত হা/২৬১৭, পৃঃ ২৩০,
‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘আরাফা ও মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন’ অনুচ্ছেদ)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
সালিম (রহ.) সূত্রে বর্ণনা
করেন যে, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ইবনু যুবাইরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সে
বছর তিনি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরাফার দিনে উকূফের সময় আমরা কিরূপে
কাজ করব? সালিম (রহ.) বললেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তাহলে ‘আরাফার দিনে
দুপুরে সালাত আদায় করবেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, সালিম ঠিক বলেছে। সুন্নাত
মুতাবিক সাহাবীগণ যুহর ও ‘আসর এক সাথেই আদায় করতেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে
জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও কি এরূপ করেছেন? তিনি
বললেন, এ ব্যাপারে তোমরা কি আল্লাহর রাসূল (স)-এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ
করবে? (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৬২, ১৬৬০)
(আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ ৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ পরিচ্ছেদ ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল
(ছাঃ) মাগরিব এবং এশার ছালাত জমা করতেন। উভয়ের জন্য পৃথক ইক্বামত দেয়া হত। (বুখারী হা/১৬৭৩, মিশকাত হা/২৬০৭)।
হাদিসটি নিম্নরুপঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা এক সাথে আদায়
করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইক্বামাত দেয়া
হয়। তবে উভয়ের মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত আদায় করেননি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৭৩, ১০৯১, মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২৬০৭, নাসায়ী ৩০২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৫৯,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
জ্ঞতব্য :
(ক) সফরে সুন্নাত পড়ার প্রয়োজন নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১১০১, ১১০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৬৪-১৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৯, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৫০৭, আবূ দাঊদ ১২২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
তবে বিতর, তাহাজ্জুদ ও ফজরের
দু’রাক‘আত সুন্নাত পড়বে। রাসূল (ছাঃ) এগুলো কখনো
ছাড়তেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৩৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০০০, ৯৯৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৯৫-১৫০৩, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭০০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম ইমামের পিছনে ছালাত
আদায় করলে ৪ রাক‘আত পড়বে। মুসাফির একাকী ছালাত আদায় করলে দু’রাক‘আত পড়বে। মুসাফির ইমামতি
করলেও দু’রাক‘আত পড়তে পারে। (আহমাদ হা/১৮৫২; সিলসিলা ছহীহাহ
হা/২৬৭৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৫৭১, সনদ ছহীহ)।
আবু মেযলাজ বলেন, আমি ইবনু
ওমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম মুছল্লীর সাথে দু’রাক‘আত ছালাত
পেলে ঐ দু’রাক‘আতই কি তার জন্য যথেষ্ট হবে, না তাকে ৪ রাক‘আতই পড়তে হবে? তিনি হেসে
উঠে বললেন, মুসাফির তাদের সমান ছালাত আদায় করবে। (ইরওয়া
৩/২২ পৃঃ, সনদ ছহীহ)।
(গ) মুক্বীম অবস্থায় বৃষ্টির কারণে ক্বছর ছাড়াই
দু’ওয়াক্তের ছালাত এক সাথে আদায় করা যায়। (সুনান আবূ দাউদ
(তাহকিককৃত) ১২১০-১২১১, ইরওয়া হা/৫৮৩, ৩/৪১ পৃঃ; আহমাদ (১/২৮৩), ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ৯৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সুপ্রিয় মুসলমান
ভাইয়েরাঃ
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা কাযা সালাত, উমরী কাযা
সালাত এবং সফর অবস্থায় সালাত কছর করে পড়ার সহিহ বিধান জানতে পারলাম। অনেক বিদ্বান তাদের
লেখনীতে জাল-জঈফ হাদিসের আলোকে ভিন্ন কিছু মতবাদ ব্যক্ত করেছেন যা পরিত্যাজ্য। এখানে
প্রমাণ সাপেক্ষে সহিহ হাদিস ভিত্তিক প্রতিটি বিষয় সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে।আশা
করি, সকলেই খুব সহজেই বুঝবেন এবং সুন্নতের অনুসরণ করে চলবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে
বুঝার তৌফিক দিন। আমিন।
(সমাপ্ত)
অন্যান্য বিষয়গুলো
জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
(ক) “সালাত কবুল হওয়ার সহিহনিয়ম”-প্রথমখন্ড।
(খ) “সালাতের ভিতর যা করাবৈধ-অবৈধ এবং সালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি”-দ্বিতীয় খন্ড।
(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোরপর পঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।
(ঘ) জামাআতে সালাত আদায় এরগুরুত্ব,ফজিলত ও সহিহ নিয়মাবলী (তৃতীয় খন্ড-প্রথম অংশ)।
(ঙ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং যোগ্য ইমামের গুণাবলী(তৃতীয় খন্ড-দ্বিতীয় অংশ)।
======================================
(চ) “জামায়াত সংক্রান্ত সহিহ মাসলা মাসায়েল” জানতে এর উপর ক্লিক করুন। -অপেক্ষা করুন।
======================================
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল
আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি,
এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে
PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।
Please Share On
No comments:
Post a Comment