বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের
আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)
প্রচারে-PMMRC
( ষষ্ঠ পর্ব)
ভূমিকাঃ বাংলাদেশে হাজার হাজার মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম, মুয়াজ্জিন,
মাদ্রাসার শিক্ষক (আলিম ও কওমী), কোরআনের হাফেজ, হাদিসের হাফেজ, পির-অলি,
ওযাজকারী, তাবলীগ জামায়াত, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ
অসংখ্য ইসলামী সংগঠন আছে। এরা প্রত্যেকেই ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেন। তারা নিজেরা
আমল করেন ও সেই আমল তাদের অনুসারীদেরকেও শিখিয়ে দেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে
দাওয়াতী কাজ। কিন্তু দেখা যায়, তাদের আমলের বা দাওয়াতী কাজের ৯৫%-ই
জাল ও জঈফ হাদিস ভিত্তিক। একজন মসজিদের ইমাম, তিনি একজন কোরআনের হাফেজ
আবার মুফতি কিংবা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক। এই ইমাম সাহেব যখন বাংলা খোতবা দেন আর
যখন জাল ও জঈফ হাদিসগুলো বর্ণনা করেন তখন মনে হয় এরা কোনো পড়াশোনাই করেননি। আর
পড়াশোনা করলেও তাদের পাঠ্য পুস্তকগুলোই জাল ও জঈফ হাদিসে ভরপুর। তাদের ওস্তাদগণও
একই শিক্ষায় শিক্ষিত। যার ফলে তাদের সাগরেদরা ঐ ওস্তাদদের শুধুই অন্ধ অনুকরন করেই
চলছে। একবারও তারা চিন্তা করে দেখা না যে, তাদের শিক্ষা বিদআতী শিক্ষা কিনা। যাই
হোক যারা বিদআতী শিক্ষায় শিক্ষিত তাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্যই জাল
ও জঈফ হাদিসগুলো দেয়া হলো। আপনারা পড়বেন আর অন্যদেরকে নতুন করে শিখিয়ে দিবেন।
এতোদিন যে ভুলের উপর আমল করে আসছেন তা কিন্তু আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি। তাই তওবা
করে সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসবেন এই অনুরোধ সকলের প্রতি রইল। এবার আওয়াজ তুলুন:-
সহীহ হাদিসের আগমন, বিদআত পলায়ন।
(পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস )
হাদিস নম্বরঃ ৩৭০ | 370
৩৭০। মানুষের মূল্যায়ন তার জ্ঞানে। যার জ্ঞান নেই তার কোন ধর্মও নেই।
হাদীসটি জাল।
এটিকে সুয়ূতী তার “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ. ৬) উল্লেখ
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৩/৭৯৬), ইবনুন
নাজ্জার “যায়লু তারীখে বাগদাদ” গ্রন্থে (১০/কাফ ২/১০৯) এবং রাফেঈ "আখবারু কাযবীন"
গ্রন্থে (৪/৯০) হারিস হতে, তিনি দাউদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
সনদটির কারণ স্পষ্ট হওয়ায় সুয়ূতী চুপ থেকেছেন। কেননা এ দাউদ হচ্ছেন
ইবনুল মুহাব্বার, 'আকল' নামক গ্রন্থের রচনাকারী। যাহাবী বলেনঃ সম্ভবত তিনি এটি রচনা
করেননি।
দারাকুতনী বলেন, 'আকল' গ্রন্থটি তৈরি করেছেন মায়সারা ইবনু আব্দি রাব্বিহি।
অতঃপর তার থেকে দাউদ ইবনুল মুহাব্বার তা চুরি করে মায়সারার সনদ বাদ দিয়ে অন্য সনদের
সাথে হাদীসগুলোকে জড়িয়ে দেন।
সুয়ূতী বলেনঃ বাইহাকী হামেদ ইবনু আদাম সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ
হামেদ এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি মিথ্যার দোষে দোষী ছিলেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ুতী বাইহাকীর বর্ণনায় "জামেউস
সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। বাইহাকী কর্তৃক হামেদ সম্পর্কে মন্তব্যটি উল্লেখ
না করেই।
এ জন্য মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ কিন্তু তিনি যদি বাইহাকী কর্তৃক
বর্ণিত হাদীসটির সমস্যার কথাটি উহ্য না করে উল্লেখ করতেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭১ | 371 | ۳۷۱
৩৭১। তোমাদের জন্য প্রান্তসমূহের বিজয় সাধিত করা হবে এবং অচিরেই তোমাদের
জন্য একটি শহরকে মুক্ত করে দেয়া হবে, যাকে বলা হয় কাযবীন। যে ব্যক্তি সেখানে চল্লিশ
দিন অথবা চল্লিশ রাত পাহারাদার হিসাবে নিয়োজিত থাকবে, তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের
একটি স্তম্ভ হবে। যার উপর সবুজ রঙের যাবারজাদ পাথর থাকবে এবং তার উপর লাল বর্ণের ইয়াকুত
পাথরের কুব্বা থাকবে। তার সত্তর হাজার স্বর্ণের দরজা থাকবে। প্রতিটি দরজায় একটি করে
হুরিয়ীনদের থেকে স্ত্রী থাকবে।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু মাজাহ্ (২/১৭৯), রাফে'ঈ “আখবারু কাযবীন" গ্রন্থে (১/৬-৭)
এবং মিযযী “তাহযীবুল কামাল” গ্রন্থে (৮/৪৪৮) দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সূত্রে রাবী' ইবনু
সাবীহ হতে, তিনি ইয়াযীদ ইবনু আবান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/৫৫) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
এটি বানোয়াট। দাউদ জালকারী তিনিই এ হাদীসটির ব্যাপারে মিথ্যার দোষে দোষী। আর বর্ণনাকারী
রাবী’ হচ্ছেন দুর্বল এবং ইয়াযীদ মাতরূক।
মিযযী “আত-তাহযীব” গ্রন্থে বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। দাউদের বর্ণনা ছাড়া
অন্য কারো মাধ্যমে এটিকে চেনা যায় না।
সুয়ূতী তার এ বক্তব্যকে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৪৬৩) সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী দাউদের জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীসটি
উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইবনু মাজাহ তার “সুনান” গ্রন্থে বানোয়াট হাদীসটির প্রবেশ ঘটিয়ে
সুনানকে দোষী করেছেন। জাল হওয়া সত্ত্বেও হাদীসটি উল্লেখ করার পর রাফে'ঈ যে কথা
বলেছেন, তাতে তার কথার মূল্যায়ন কতটুকু তা জানা যায়।
তিনি বলেছেনঃ হাদীসটি মাশহুর, দাউদ হতে কতিপয় ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন,
ইমাম ইবনু মাজাহ্ তার “সুনান” গ্রন্থে হেফাযাত করেছেন এবং তার গ্রন্থকে হাফিযগণ তুলনা
করেছেন সহীহাইন এবং আবু দাউদের সাথে...।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭২ | 372 | ۳۷۲
৩৭২। কোন বান্দা তার পরিবারের নিকট সেই দু' রাকায়াত হতে উত্তম কিছু
ছেড়ে যায় না, যে দু' রাকায়াত যখন সে সফরের ইচ্ছা করে তখন তাদের (পরিবারের) নিকট
আদায় করে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আবী শায়বাহ "আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে (১/১০৫/১) মুত'ঈম
ইবনুল মিকদাম হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি খাতীব বাগদাদী “মুয়াযযিহ”
গ্রন্থে (২/২২০-২২১) এবং ইবনু আসাকিরও তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১৬/২৯৭/২) উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরযোগ্য,
কিন্তু এটি মুরসাল। কারণ মুতঈম তাবেঈ তিনি সাহাবী নন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩ | 373 | ۳۷۳
৩৭৩। যখন ধর্মের নেতৃত্ব দিবে তার উপযুক্ত ব্যক্তি তোমরা তখন তার জন্য
কাঁদবে না। কিন্তু যখন তার নেতৃত্ব দিবে অনুপযুক্ত ব্যক্তি তখন তোমরা তার জন্য কাঁদো।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি আহমাদ (৫/৪২২) এবং হাকিম (৪/৫১৫) আব্দুল মালেক ইবনু আমর আকাদী সূত্রে
কাসীর ইবনু যায়েদ হতে, তিনি দাউদ ইবন আবু সালেহ হতে বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি
সহীহ। যাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন।
এটি তাদের দু'জনের ধারণা মাত্র। কারণ যাহাবী নিজে এ দাউদের জীবনীতে
বলেছেনঃ তিনি হেজাজী, তাকে চেনা যায় না। হাফিয ইবনু হাজার যাহাবীর এ কথাকে “তাহযীবুত
তাহযীব” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। অতএব কীভাবে এটি সহীহ? হায়সামী "আল-মাজমা"
গ্রন্থে (৫/২৪৫) বলেছেনঃ হাদীসটি ইমাম আহমাদ এবং তাবারানী “মুজামুল কাবীর” ও “মুজামুল
আওসাত” গ্রন্থে একই সনদে বর্ণনা করেছেন। তাতে কাসীর ইবনু যায়েদ রয়েছেন, আহমাদ এবং
অন্যরা তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। আর নাসাঈ ও অন্যরা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
কিন্তু এ সনদে রয়েছেন আহমাদ ইবনু রুশদীন মিসরী। তিনি মিথ্যার দোষে
দোষী। যেরূপভাবে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ৪৭ নং হাদীসে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৪ | 374 | ۳۷٤
৩৭৪। তিনি পুরুষ ব্যক্তিকে তাঁর দু' উটের মাঝে চলে (হেঁটে) উট দু'টিকে
পরিচালনা করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হাকিম (৪/২৮০) মুহাম্মাদ ইবনু সাবেত বুনানী সূত্রে তার পিতা হতে
... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ মুহাম্মাদকে
নাসাঈ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেনঃ তিনি
দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৫ | 375 | ۳۷۵
৩৭৫। তিনি পুরুষ ব্যক্তিকে দু' মহিলার মাঝে চলতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু দাউদ (২/৩৫২), উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (১২৬), হাকিম
(৪/২৮০), খাল্লাল “আমর বিল মা’রূফ” গ্রন্থে (২/২২) এবং ইবনু আদী (৩/৯৫৫) দাউদ ইবনু
আবী সালেহ সূত্রে নাফে হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী
তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ দাউদ ইবনু আবী সালেহ সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি জাল
হাদীস বর্ণনাকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে এমনটিই বলেছেন, অতঃপর এ
হাদীসটি উল্লেখ করেছন। মুনযের “মুখতাসারুস সুনান” গ্রন্থে (৮/১১৮) বলেনঃ ইবনু হিব্বান
বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের থেকে জাল হাদীস বর্ণনাকারী। এমনকি তিনি তা যেন ইচ্ছাকৃতই
করতেন। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আবু যুরীয়াহ বলেনঃ তাকে একমাত্র এ হাদীসের মাধ্যমেই চিনি। তিনি মুনকার।
বুখারী তার “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে (১৮৭) এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ
তার হাদীসের অনুসরণ করা যায় না। অনুরূপ কথা উকায়লীও বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তাকে
একমাত্র এ হাদীসের মাধ্যমেই চেনা যায়। আব্দুল হক "আল-আহকাম" গ্রন্থে (১/২০৫)
তার অনুকরণ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ হাদীসটির অন্য ভাষা রয়েছে ...। যেটি উল্লেখ করেছেন
আবু আহমাদ ইবনু আদী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি ইউসুফ ইবনু গারাক সূত্রে দাউদ হতে বর্ণিত
হয়েছে। এ ইউসুফ মিথ্যুক, যেমনভাবে তার সম্পর্কে ১৯৩ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৬ | 376 | ۳۷٦
৩৭৬। নিকটজনরা উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার।
এ বাক্যে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেমনভাবে সে দিকে সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে (পৃ. ৩৪) ইঙ্গিত
করেছেন। তাদের কেউ ধারণা করেছেন যে, এটি আয়াত! কিন্তু কুরআনে আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ
অর্থঃ “আপনি বলে দিন তোমরা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য উত্তম
যা খরচ করবে” (সূরা বাকারাঃ ২১৫)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭ | 377 | ۳۷۷
৩৭৭। জুহাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি সব শেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাকে
বলা হবেঃ জুহাইনা। অতঃপর তাকে জান্নাতীরা জিজ্ঞাসা করবেঃ আর কেউ কী অবশিষ্ট রয়েছে
যাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? সে (উত্তরে) বলবেঃ না। অতঃপর তারা (জান্নাতীরা) বলবেঃ জুহাইনার
নিকট সত্য সংবাদ।
হাদীসটি জাল।
এটি মুহাম্মাদ ইবনু মুজাফফার “গারায়েবে মালেক” গ্রন্থে (২/৭৬) এবং
দারাকুতনী “আল-গারায়েব” গ্রন্থে জামি' ইবনু সাওয়াদা সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
দারাকুতনী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল, জামি দুর্বল। আরেক বর্ণনাকারী আব্দুল
মালেক ইবনুল হাকামও অনুরূপ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ূতী “যায়লুল মাওযুআহ” গ্রন্থে দারাকুতনী সূত্রে
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। ইবনু আররাকও তার অনুসরণ (২/৩৯৯) করেছেন। তা সত্ত্বেও সুয়ূতী
“জামেউস সাগীর” গ্রন্থে আল-খাতীবের বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন! অথচ আল-খাতীব
এবং দারাকুতনী উভয়ের সূত্র এক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮ | 378 | ۳۷۸
৩৭৮। তোমরা আলেমদের অনুসরণ কর, কারণ তারা হচ্ছে দুনিয়ার চেরাগ এবং
আখেরাতের প্রদীপ।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (১/৩৯) কাসিম ইবনু ইবরাহীম মালতী
সূত্রে লুওয়াইন আল-মাসীসী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী হাদীসটিকে “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ. ৩৯) উল্লেখ
করা সত্ত্বেও “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে দাইলামীর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ
করেছেন যে, কাসেম ইবনু ইব্রাহীম মালতি সম্পর্কে দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক। আল-খাতীব
বলেনঃ তিনি (কাসিম) লুওয়াইন হতে এবং তিনি মালেক হতে আশ্চর্যজনক বাতিল হাদীসগুলো বর্ণনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৯ | 379 | ۳۷۹
৩৭৯। যদি আমার নিকট এমন কোন দিন আসে যে দিনে এরূপ জ্ঞান বৃদ্ধি করতে
পারলাম না যা আমাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিত। তাহলে সে দিনের সূর্যোদয় হতে আমাকে
কোন বরকত দেয়া হলো না।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু রাহওয়াই তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৪/২৪/২), ইবনু আদী “আল-কামিল”
গ্রন্থে (কাফ ২/১৬১), আবুল হাসান ইবনুস সালত ইবনু আবদিল আযীয হাশেমী’ হতে বর্ণিত তার
“হাদীস” গ্রন্থে (১/২), আবু নুমাইম “আল-হিলইয়াহ” গ্রন্থে (৮/১৮৮), আল-খাতীব তার “আত-তারীখ”
গ্রন্থে (৬/১০০), ইবনু আদিল বার (১/৬১) এবং তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/১১৫/১/৬৭৮০)
বিভিন্ন সূত্রে হাকাম ইবনু আব্দিল্লাহ হতে, তিনি যুহরী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আবু নুমাইম বলেনঃ হাদীসটি যুহরী হতে গরীব। হাকম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাকাম ইবনু আদিল্লাহ ইবনে খাত্তাফ (কেউ কেউ বলেছেনঃ
ইবনু সাদ) আবু সালমা আল-হিমসী। তিনি মিথ্যুক যেমনভাবে আবু হাতিম বলেছেন। ইবনুল জাওয়ী
“আল-মাওষু'আত” গ্রন্থে (১/২৩৩) হাদীসটি আল-খাতীবের সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ সূরী
বলেনঃ এটি মুনকার, এটির কোন ভিত্তি নেই, হাকাম ছাড়া অন্য কেউ যুহরী হতে বর্ণনা করেননি।
হাকাম সম্পর্কে আবু হাতিম বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের
উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন। সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২০৯) বলেনঃ দারাকুতনী
বলেছেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। তিনি যুহরীর মাধ্যমে ইবনুল মুসায়য়্যাব হতে পঞ্চাশটির
মত হাদীস বর্ণনা করেছেন যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। অতঃপর সুয়ূতী বলেছেনঃ আবু ‘আলী হুসাইন
ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন মাকরী হাদীসটি তার “জুযউ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যে সনদটি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটির মধ্যেও রয়েছেন
হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ। তিনিই হচ্ছেন আবু সালমা আল-হিমসী। সুয়ূতী হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
এ কথা স্বীকার করার পরেও “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন!
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮০ | 380 | ۳۸۰
৩৮০। যদি আমার নিকট এমন কোন দিন আসে যে দিনে কল্যাণময় কিছু বৃদ্ধি
করতে পারলাম না, তাহলে তাতে আমাকে বরকত দেয়া হলো না।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী ও ইবনু হিব্বান "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১/৩৩৫)
সুলায়মান ইবনু বাশশার সূত্রে সুফিয়ান হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি জাল।
যাহাবী বলেনঃ সুলায়মান ইবনু বাশশার হাদীস জাল করার দোষে দোষী। ইবনু
হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে অগণিত হাদীস জাল করেছেন। তাকে ইবনু আদী
খুবই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। অতঃপর তার কতিপয় ওয়াহিয়াত (নিতান্তই দুর্বল হাদীস)
উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি।
ইবনু আদী সুলায়মান ইবনু বাশশারের জীবনীতে মুয়াল্লাক হিসাবে এ হাদীসটি
(২/১৬১) উল্লেখ করেছেন। যার সনদে হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ আয়লী রয়েছেন। এ হাকামই পূর্বের
হাদীসের হাকাম এবং তিনি মিথ্যুক। বলা হয়েছে যে, তিনি অন্য হাকাম, হিমসী নন। অন্য হাকাম
হলেও এ আয়লীও মিথ্যুক, যেমনভাবে "লিসানুল মীযান" গ্রন্থে বলা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮১ | 381 | ۳۸۱
৩৮১। জ্ঞান অনুসন্ধান করার মধ্য ছাড়া মুমিনের চরিত্রের মধ্যে হিংসা
ও তোষামোদী থাকতে পারে না।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (২/৮৪) এবং সিলাফী "মুনতাখাব মিন উসুলিস সিরাজিল
লুগাবী" গ্রন্থে (১/৯৭/২) হাসান ইবনু ওয়াসিল হতে, তিনি খুসায়েব ইবনু যাহদার
হতে ... বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী বলেনঃ খুসায়েব হচ্ছেন হাদীসটির কেন্দ্রবিন্দু।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বুখারী “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে (১৯৭) বলেন তিনি
মিথ্যুক।
নাসাঈ "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১১) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য
নন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার থেকে বর্ণনাকারী হাসান ইবনু ওয়াসিলও তার ন্যায়।
তাকে বলা হয় হাসান ইবনু দীনার। তাকে আহমাদ, ইয়াহইয়া, আবু হাতিম প্রমুখ মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন। তার জীবনীতে যাহাবী এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি ইবনুল জাওয়ী তার
“আল-মাওয়ূ"আত” গ্রন্থে (১/২১৯) ইবনু আদীর সূত্রেই উল্লেখ করেছেন। অতঃপর ইবনুল
জাওয়ী বলেছেনঃ এটির সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন খুসাইব; তাকে শু'বা, কাত্তান, ইবনু
মাঈন মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। আর ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে
জাল হাদীস বর্ণনাকারী। তার এ বক্তব্যকে সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৯৭) সমর্থন
করেছেন, তা সত্ত্বেও তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে বাইহাকীর সূত্রে হাদীসটি এ মিথ্যুক
খুসায়েব থেকেই উল্লেখ করেছেন।
এ হাদীসটির আরো একটি সূত্র রয়েছে। ইবনু আদী (২/২৪০) ফেহের ইবনু বিশর
হতে, তিনি উমর ইবনু মূসা ওয়াজীহি হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ উমার ইবনু
মূসা ওয়াজীহি হাদীসের ভাষা এবং সনদ জলকারীদের অন্যতম।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ফেহের ইবনু বিশরকে চেনা যায় না, যেমনভাবে ইবনু
কাত্তান বলেছেন এবং হাফিয “আল-লিসান” গ্রন্থে তা স্বীকার করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮২ | 382 | ۳۸۲
৩৮২। জ্ঞান অনুসন্ধান করার মধ্য ছাড়া হিংসা এবং তোষামোদী থাকতে পারে
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (১/৩৬৫), আল-খাতীব (১৩/২৭৫) আমর ইবনুল হুসাইন কিলাবী সূত্রে
ইবনু আলাসা হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ এটি মুনকার, আওযাঈ থেকে
ইবনু আলাসা ছাড়া অন্য কেউ এটি বর্ণনা করেছেন বলে জানি না। ইবনুল জাওয়ী তার
"আল-মাওযু"আত" গ্রন্থে (১/২১৯) ইবনু আদীর বর্ণনা হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
ইবনু আলাসা হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আলাসা। তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা
যায় না। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৯৭-১৯৮) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইবনু আলাসাকে ইবনু
মাঈন ও অন্যরা নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
এ হাদীসের সমস্যা হচ্ছে আমর ইবনুল হুসাইন। কারণ তিনি হচ্ছেন মিথ্যুক,
যেমনভাবে খাতীব বাগদাদী বলেছেন। যখন মিথ্যুক হতে সনদটি খালী নয়, তখন এ সমালোচনার কোন
উপকারিতা নেই। সুয়ূতী হাদীসটির একটি শাহেদ উল্লেখ করেছেন। যার সনদের উপর কথা বলেননি।
অথচ তাতে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যাকে চেনা যায় না। (সেটি হচ্ছে নিম্নের (৩৮৩ নং) হাদীসটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৩ | 383 | ۳۸۳
৩৮৩। যে ব্যক্তি তার উঁচু স্বর আলেমদের নিকট নীচু করবে, সে ব্যক্তি
কিয়ামতের দিন আমার সাথীদের মধ্য হতে ঐ সব ব্যক্তিদের সাথে থাকবে যাদেরকে পরহেজগারিতার
জন্য আল্লাহ নির্বাচিত করে নিয়েছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য বা জ্ঞান অনুসন্ধান
করার মধ্য ছাড়া তোষামোদী ও নম্রতার কোনই কল্যাণ নেই।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থে ইবনুস সুন্নীর সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন। যার একজন আরেক জনের উর্ধ্বে।
বর্ণনাকারী কাত্তানের পরে আমের ইবনু সায়য়ার ছাড়া অন্য কাউকে চিনি না। ইবনু আবী হাতিম
(৩/১/৩২২) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এটি মাজহুল।
হাদীসটির সনদে যে বলা হয়েছে ইবনুস সাবাহ, তিনি হচ্ছেন মুসান্না ইয়ামানী।
তিনিই যদি হন, তাহলে তিনি দুর্বল। তার শেষ জীবনে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল যেমনভাবে
"আত-তাকরীব" গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবনুস সাবাহ
ভুল। সঠিক হচ্ছে আবুস সাবাহ যেমনভাবে ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে (৫/১৯৬৬) এসেছে।
তিনি হচ্ছেন আব্দুল গফুর ইবনু আবদিল আযীয আবুস সাবাহ ওয়াসেতী। তার জীবনীর শেষাংশে
তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তার হাদীসে দুর্বলতা স্পষ্ট এবং তিনি মুনকারুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে তিনিই। বিশেষ করে বুখারী
“তারীধুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/২/১২৭) বলেছেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে গ্রহণ করেননি (পরিত্যাগ
করেছেন)। তিনি মুনকারুল হাদীস। একই অর্থে “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ১৯৪) বলেছেনঃ
মুহাদ্দিসগণ তার ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৪ | 384 | ۳۸٤
৩৮৪। জুম'আর দিবসে আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে ক্ষমা না করে ছাড়েন না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবুল কাসিম শাহারযুরী “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/১৮০) এবং খাতীব বাগদাদী
(৫/১৮০) আহমাদ ইবনু নাসর ইবনে হাম্মাদ ইবনে আজলান সূত্রে তার পিতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি খাতীব বাগদাদী এ আহমাদের জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। অথচ তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ
কিছুই উল্লেখ করেননি। যাহাবী তার জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ
তিনি নিতান্তই মুনকার খবর (হাদীস) নিয়ে এসেছেন। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
যেন তিনি তাকে এ হাদীসটির ব্যাপারে মিথ্যুকের দোষে দোষী করছেন।
হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
তাতে আমার নিকট বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। কারণ তার পিতা নাসর ইবনু হাম্মাদ সম্পর্কে ইবনু
মাঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক ।
তার কথাটি উল্লেখ করাই উত্তম। এর পরেও হাদীসটি "জামেউস সাগীর"
গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। আনাস (রাঃ) হতে হাদীসটির আরেকটি সূত্র রয়েছে। সেটিও বানোয়াট,
যেরূপভাবে ২৯৭ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৫ | 385 | ۳۸۵
৩৮৫। হারাম কখনও হালালকে (বস্তুকে) হারাম বানাতে পারে না।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু মাজাহ (১/২২৬), দারাকুতনী (১৪২), বাইহাকী (৭/১৬৮) এবং খাতীব
বাগদাদী (৭/১৮২) আব্দুল্লাহ ইবনু উমার সূত্রে নাফে' হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল, আব্দুল্লাহ ইবনু উমারের কারণে।
তিনি হচ্ছেন উমারী আল-মুকাব্বার, তিনি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৬ | 386 | ۳۸٦
৩৮৬। আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াকে বললেনঃ হে দুনিয়া! তুমি আমার বন্ধুদের
জন্য তিতা হও। তুমি তাদের জন্য মিঠা হয়ে তাদেরকে ফেতনায় ফেলো না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু আবদির রহমান সুলামী “তাবাকাতুস সূফিয়া” গ্রন্থে (পৃ. ৮-৯)
বর্ণনা করেছেন এবং তার থেকে দাইলামী (৪/২১৮) বর্ণনা করেছেন। যার সনদে বর্ণনাকারী আবু
জাফার আর-রাযী এবং হুসাইন ইবনু দাউদ আল-বালখী রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি বানোয়াট। আবু জাফার আর-রাযী সম্পর্কে যাহাবী
বলেনঃ আমি তাকে চিনি না। কিন্তু তিনি বাতিল খবর নিয়ে এসেছেন। তিনিই হাদীসটির সমস্যা।
হুসাইন ইবনু দাউদ বালখীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে খাতীব বাগদাদী “আত-তারীখ” গ্রন্থে
(৮/৪৪) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন না। তিনি একটি কপি ইয়াযীদ ইবনু হারূণ হতে, তিনি
হুমায়েদ হতে, তিনি আনাস হতে বর্ণনা করেছেন। যার অধিকাংশই বানোয়াট। অতঃপর তার অন্য
একটি হাদীস এ সনদে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি হুসাইন ফুযায়েল হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
সেটি হচ্ছে জাল। তার সূত্রেই কাযাঈ এ হাদীসটি “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (২/১১৭) বর্ণনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৭ | 387 | ۳۸۷
৩৮৭। হালাল এবং হারাম একত্রিত হয় না, তবে হলে হারামই প্রাধান্য বিস্তার
করে।
এটির কোন ভিত্তি নেই।
হাফিয ইরাকী "তাখরীজুল মিনহাজ" গ্রন্থে বলেন, এটির কোন ভিত্তি
নেই। হাদীসটিকে মানাবী “ফায়যুল কাদীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে তা সমর্থন করেছেন। হানাফী
ফকীহগণ এ হাদীস দ্বারা যেনার মাধ্যমে ভূমিষ্ট মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
হারাম হওয়ার দলীল দিয়েছেন। যুক্তির দিক দিয়ে যদিও সিদ্ধান্তটি সঠিক, কিন্তু এরূপ
বাতিল হাদীস দ্বারা তার জন্য দলীল গ্রহণ করা জায়েয নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৮ | 388 | ۳۸۸
৩৮৮। হারাম পন্থা হারাম করতে পারে না, কিন্তু হালাল বিবাহের মাধ্যমে
যা হয় তা হারাম করে দেয়।
হাদীসটি বাতিল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১৭৩/২), ইবনু আদী “আল-কামিল”
গ্রন্থে (২/২৮৭), ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (২/৯৯), দারাকুতনী (পৃ. ৪০২) এবং
বাইহাকী (৭/২৬৯) মুগীরা ইবনু ইসমাঈল ইবনে আইউব ইবনে সালামা সূত্রে উসমান ইবনু আবদির
রহমান যুহরী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী বলেনঃ উসমান ইবনু আবদির রহমান ওকাসী এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন, তিনি দুর্বল। কথাটি ইবনু মাঈন এবং অন্যান্য হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ
তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু মাঈন তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
আব্দুল হক “আল-আহকাম” গ্রন্থে (কাফ ২/১৩৮) এবং হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে
(৪/২৬৯) বলেছেনঃ তিনি মাতরূক। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে অনুরূপ কথাই বলেছেন।
তিনি আরো বলেছেনঃ ইবনু মাঈন তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার থেকে বর্ণনাকারী মুগীরা ইবনু ইসমাঈল মাজহুল;
যেমনভাবে যাহাবী বলেছেন। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (১/৪১৮) মুগীরা ইবনু ইসমাঈল
সূত্রে উমার ইবনু মুহাম্মাদ যুহরী হতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ আমার পিতা বলেছেনঃ
এ হাদীসটি বাতিল। মুগীরা এবং এ উমার তারা উভয়েই মাজহুল। শাফেয়ীগণ এ হাদীস দ্বারা
যেনার মাধ্যমে ভূমিষ্ট মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয, এ মর্মে দলীল দিয়েছেন, অথচ হাদীসটি
বাতিল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৮৯ | 389 | ۳۸۹
৩৮৯। যদি জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তা'আলা ব্যবসা করার অনুমতি দিতেন; তাহলে
তারা সুতী কাপড়ের এবং আতরের ব্যবসা করত।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (২২৯), তাবারানী “মুজামুস
সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ১৪৫) এবং “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১৩৫/১), আবু নুমাইম
"আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (১০/৩৬৫), আবু আবদির রহমান সুলামী “তাবাকাতুস সুফিয়া”
গ্রন্থে (পৃ. ৪১০), আবু উসমান আন-নুজায়রী "আল-ফাওয়াইদ" গ্রন্থে (২/৩/১),
মাক্কী আল-মুয়াযযিন তার “আল-হাদীস” গ্রন্থে (২/২৩০) এবং ইবনু আসাকির (১৪/৩৩৭/১) আব্দুর
রহমান ইবনু আইউব সাকুনী আল-হিমসী সূত্রে আত্তাফ ইবনু খালিদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর তাবারানী বলেনঃ ইবনু আইউব এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ এর দ্বারা দলীল
গ্রহণ করা না জায়েয। হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তা স্বীকার করেছেন।
উকায়লী হাদীসটির শেষে বলেনঃ তার অনুসরণ করা যায় না। অতঃপর বলেছেনঃ
এটি নাফে হতে মাহফুজ নয়, মাজহুল সনদে এটি বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯০ | 390 | ۳۹۰
৩৯০। জান্নাতীরা যদি ব্যবসা-বাণিজ্য করত, তাহলে তারা সূতী কাপড়ের ব্যবসা
করত, কিন্তু তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি উকায়লী (২২৯) এবং অনুরূপভাবে আবু ইয়ালা (১/১০৪/১১১) ইসমাঈল ইবনু
নূহ হতে, তিনি এক ব্যক্তি হতে ... বর্ণনা করেছেন।
উকায়লী বলেনঃ হাদীসটির সনদ মাজহুল, এর কোন সহীহ সনদ নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইসমাঈল ইবনু নূহ মাতরূক; যেমনভাবে আযদী বলেছেন এবং
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে তার অনুসরণ (১০/৪১৬) করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯১ | 391 | ۳۹۱
৩৯১। এ হাতকে আগুন স্পর্শ করবে না। (সাদ ইবনু আবূ মুয়ায আনসারীর হাতকে
চুমু খেয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথাটি বলেন)
হাদীসটি দুর্বল।
এটি খাতীব বাগদাদী (৭/৩৪২) মুহাম্মাদ ইবনু তামীম আল-ফিরইয়াবী সূত্রে
হাসান হতে ... বর্ণনা করেছেন। (এটি তাবুক যুদ্ধের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত)। আল-খাতীব বলেনঃ
এ হাদীসটি বাতিল। কারণ সা'দ ইবনু মুয়ায তাবূক যুদ্ধের সময় জীবিত ছিলেন না। তিনি বানু
কুরাইযার যুদ্ধের পর মারা যান। মুহাম্মাদ ইবনু তামীম আল-ফিরইয়াবী হচ্ছেন মিথ্যুক, তিনি
হাদিস জালকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আল-খাতীব বলেছেন, সা'দ হচ্ছেন ইবনু মুয়ায, আওস
গোত্রের সর্দার বিশিষ্ট সাহাবী। ইবনু হাজার তার বিরোধিতা করে "আল-ইসাবার"
মধ্যে বলেছেনঃ তিনি অন্য কেউ। অতঃপর বলেছেনঃ হাদীসটি আল-খাতীব “আল-মুত্তাফাক” গ্রন্থে
দুর্বল সনদে এবং আবু মূসা “আয-যায়ল” গ্রন্থে হাসান হতে মাজহুল সনদে বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/২৫১) খাতীব বাগদাদীর
কথার উপর নির্ভর করে উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৫৪) ইবনু হাজারের
বক্তব্য উল্লেখ করে তার সমালোচনা করেছেন।
আব্দুল হাই কাত্তানী “তারাতীবুল ইদারিয়া” গ্রন্থে (২/৪২-৪৩) বলেছেনঃ
ঘটনাটি আশ্চর্যজনক, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীর হাতে চুমু দিয়েছেন...।
যে ঘটনা সাব্যস্তই হয়নি, সে ঘটনায় আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯২ | 392 | ۳۹۲
৩৯২। জান্নাতে একটি দরজা আছে, তাকে বলা হয় যুহা। যখন কিয়ামত দিবস
সংঘটিত হবে, তখন একজন আহবানকারী ডাক দিয়ে বলবেঃ কারা সে সব ব্যক্তিরা যারা সলাতু্য
যুহা সর্বদা আদায় করেছিলে? এটি আপনাদের দরজা। অতএব আল্লাহর রহমতে আপনারা এ দরজা দিয়ে
প্রবেশ করুন।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৫৯/১), আবু হাফস সাইরাকী তার
“আল-হাদীস” গ্রন্থে (১/২৬৩), অনুরূপভাবে ইবনু লাল তার “আল-হাদীস” গ্রন্থে (১/১১৬) এবং
নাসর আল-মাকদেসী “আল-মাজলিস (১২১) মিনাল আমালী” গ্রন্থে (২/২) সুলায়মান ইবনু দাউদ
ইয়ামামী হতে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ ইয়াহইয়া হতে সুলায়মান ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। কারণ এ ইয়ামামী মাতরূক।
তার সূত্র হতে হাকিম তার "সলাতুয যুহা অংশে" বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে
"যাদুল মায়াদ" গ্রন্থে (১/১২৯-১৩৪) এসেছে। হাদীসটির আরেকটি সমস্যা আছে।
সেটি হচ্ছে ইবনু আবী কাসীর হতে আন্ আন্ শব্দে বর্ণিত হয়েছে, কারণ তিনি তাদলীস করতেন।
মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে’ (১/২৩৭) হাদীসটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৩ | 393 | ۳۹۳
৩৯৩। জান্নাতে একটি দরজা আছে, তাকে বলা হয় যুহা। যে ব্যক্তি সলাতুয
যুহা পড়বে, সলাতু্য যুহা তার নিকটবর্তী হয়ে আসবে, যেরূপভাবে শিশু তার মায়ের নিকটবর্তী
হয়। এমনকি সে (সলাত) তাকে অভিনন্দন জানিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবে।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী (১৪/৩০৬-৩০৭) ইয়াহইয়া ইবনু শাবীব ইয়ামানী সূত্রে
... বর্ণনা করেছেন। আল-খাতীব ইবনু শাবীবের জীবনীতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি
বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তার তিনটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৪ | 394 | ۳۹٤
৩৯৪। জান্নাতে একটি দরজা আছে, তাকে বলা হয় যুহা। সেটি দিয়ে প্রবেশ
করবে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি যে সলাতু্য যুহাকে সর্বদা হেফাযাত করেছে।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী পূর্বের হাদীসটির সনদেই বর্ণনা করেছেন। ইবনু আসাকির
উভয়টিকে একই হাদীসের মধ্যে মিলিয়ে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে সুয়ূতীর
“আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে (১/৫৮) এসেছে। অতঃপর চুপ থেকেছেন!
সলাতুয যুহার ফযীলত সম্পর্কে সহীহ্ হাদীস এসেছে, যা আমাদেরকে এরূপ বাতিল
হাদীস হতে মুক্ত রাখতে পারে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৫ | 395 | ۳۹۵
৩৯৫। জুম'আর দিবসে জামে মসজিদগুলোর গেটে আল্লাহর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ
থাকেন। তারা সাদা পাগড়ীধারীদের জন্য ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে থাকেন।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী উপরের হাদীস দুটোর সনদেই বর্ণনা করেছেন। আমি অবহিত
হয়েছি যে, এটি ইয়াহইয়া ইবনু শাবীব ইয়ামামী কর্তৃক তৈরিকৃত। খাতীব বাগদাদীর সূত্র
হতে ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযূ'আত” গ্রন্থে (২/১০৬) উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইয়াহইয়া
হুমায়েদ এবং অন্যদের থেকে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৭) তার কথাকে শক্তি যুগিয়েছেন একথা
বলে যে, “আল-মীযান” গ্রন্থে যাহাবী বলেছেনঃ এটি সে সবের একটি যেটিকে ইয়াহইয়া হুমায়েদের
উদ্ধৃতিতে তৈরি করেছেন।
তার এ কথাকে ইবনু আররাক (২/২৩৬) সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির আরেকটি সূত্র আমি পেয়েছি; যেটি আবু আলী কুশাইরী
হারানী "তারীখুর রিক্কা" গ্রন্থে (কাফ ২/৩৮) আবু ইউসুফ মুহাম্মাদ বর্ণনা
করেছেন। তিনি আব্বাসের জীবনীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন অথচ তিনি তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ
কিছুই বলেননি। আবু ইউসুফ সাইদালানীর জীবনী কে রচনা করেছেন পাচ্ছি না। তিনি অথবা তার
শাইখ এ সূত্রটির সমস্যা।
পাগড়ী সংক্রান্ত বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ী
পরেছেন এতটুকু ছাড়া অন্য কিছুই সহীহ নয়। ১২৭ এবং ১২৯ নম্বরে পাগড়ীর হাদীস সম্পর্কে
আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬ | 396 | ۳۹٦
৩৯৬। কুরআন বহনকারীর ফযীলত (প্রাধান্য) তাকে বহন নাকারীর উপর এমনই,
যেমন সৃষ্টিকর্তার প্রাধান্য সৃষ্টির উপরে।
হাদীসটি মিথ্যা।
এটি দাইলামী (২/১৭৮/১-২) মুহাম্মাদ ইবনু তামীম আল-ফিরইয়াবী সূত্রে
... বর্ণনা করেছেন।
সুয়ুতী হাদীসটি উল্লেখ করেছেন "আয-যাইল" গ্রন্থে (পৃ. ৩২),
অতঃপর বলেছেনঃ হাফিয ইবনু হাজার “যাহরুল ফিরদাউস” গ্রন্থে বলেছেনঃ এটি মিথ্যা। আমি
(সুয়ূতী) বলছিঃ এটির সমস্যা হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনু তামীম।
আমি (আলবানী) বলছিঃ অতঃপর সুয়ুতী এ কথাটি ভুলে গেছেন, যার ফলে তিনি
“জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এ মুহাম্মাদ ইবনু তামীম সম্পর্কে আল-খাতীব
বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, হাদীস জালকারী। হাকিম বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, খাবীস। আবু নুমাইম বলেনঃ
তিনি মিথ্যুক, জালকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৭ | 397 | ۳۹۷
৩৯৭। যখন তারকারাজী উদিত হয়, তখন অসিদ্ধতা প্রতিটি দেশবাসীর নিকট হতে
উঠিয়ে নেয়া হয়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান "কিতাবুল আসার" গ্রন্থে
(পৃ. ১৫৯) বর্ণনা করে বলেছেনঃ আমাদেরকে এ হাদীসটি আবু হানীফা (রহঃ) শুনিয়েছেন...।
আবু হানীফা (রহঃ)-এর সূত্র হতেই সাকাকী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (৩/১২/১)
বর্ণনা করেছেন, অনুরূপভাবে তাবারানী “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ২০) এবং “মুজামুল
আওসাত” গ্রন্থে (১/১৪০/২) এবং তার থেকে আবু নুমাইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (১/১২১)
বর্ণনা করেছেন। একমাত্র আবু হানীফা (রহঃ) ছাড়া হাদীসটির সনদের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ
নির্ভরযোগ্য। তাকে হেফযের দিক দিয়ে দুর্বল বলেছেন ইমাম বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনু
আদী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ। এ কারণেই ইবনু হাজার “আত-তাকরীব" গ্রন্থে তার জীবনীতে
শুধুমাত্র বলেছেনঃ তিনি প্রসিদ্ধ ফাকীহ।
হ্যাঁ, তার মুতাবায়াত করেছেন ইসল ইবনু সুফিয়ান আতা হতে, কিন্তু সেটিও
দুর্বল। ভাষাতেও পার্থক্য রয়েছে। إذا طلع النجم ذا صباح، رفعت العاهة 'যখন ভোরের তারকা উদিত হয়, তখন অসিদ্ধতা উঠিয়ে নেয়া হয়।' এটি ইমাম
আহমাদ (২/৩৪১-৩৮৮), তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (৩/৯২), তাবারানী “মুজামুল আওসাত”
গ্রন্থে এবং উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (৩৪৭) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ
ইসল ইবনু সুফিয়ানের হাদীসে সন্দেহ আছে। বুখারী বলেনঃ তার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে।
হাদীস দুটির ভাষায় পার্থক্য থাকার কারণে একটি অন্যটিকে শক্তি যোগাতে পারছে না, এছাড়া
উভয়টিই দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৮ | 398 | ۳۹۸
৩৯৮। তোমরা কুরাইশদের গালী দিও না, কারণ তাদের আলেম যমীনকে জ্ঞান দ্বারা
পরিপূর্ণ করে দেয়। হে আল্লাহ! তুমি তাদের প্রথমাংশকে শাস্তি বা বিপদের স্বাদ গ্রহণ
করিয়েছ, অতএব তাদের শেষাংশকে বখশীশের স্বাদ গ্রহণ করাও।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তায়ালিসী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/১৯৯) বর্ণনা করেছেন। তায়ালিসীর
সূত্র হতে আবু নুমাইম “আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৬/২৯৫, ৯/৬৫) এবং তার থেকে আল-খাতীব
তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (২/৬০-৬১), ইবনু আসাকির (১৪/৪০৯/২) এবং হাফিয ইরাকী “মহাজ্জাতিল
কুরবি ইলা মাহাব্বাতিল আরাব” গ্রন্থে (পৃ. ১৮৪) বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি অত্যন্ত দুর্বল। বর্ণনাকারী নাযর ইবনু
হুমায়েদ সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (৪/৪৭৭/১) বলেনঃ
আমি আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।
বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। আরেক বর্ণনাকারী জারূদকে আমি চিনি না। "কাশফুল
খাফা" গ্রন্থে (২/৫৩) [তার আসল] “আল-মাকসিদ” গ্রন্থের অনুসরণ করে (২৮১/৬৭৫) এসেছেঃ
তিনি মাজহুল। এছাড়া হাদীসটি আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই সহীহ
নয়। এমনকি মিথ্যুক বর্ণনাকারীও রয়েছে।
তবে হাদীসটির শেষাংশ اللهم إنك أذقت أولها عذابا أو وبالا، فأذق آخرها نوالا এ অংশটুকু সহীহ। এ অংশটুকু তিরমিয়ী, আহমাদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন।
অন্য সূত্রের বর্ণনাকারী ফাহাদ ইবনু আউফ সম্পর্কে ইবনুল মাদীনী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
মুসলিম এবং ফাল্লাস তাকে পরিত্যাগ করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৯৯ | 399 | ۳۹۹
৩৯৯। হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের হেদায়েত দান কর, কারণ তাদের একজন আলেমের
জ্ঞান যমীনের স্তরগুলোকে ঘিরে ফেলে। হে আল্লাহ তুমি তাদের প্রথমাংশকে বিপদের স্বাদ
গ্রহণ করিয়েছ, অতএব তাদের শেষাংশকে বখশীশের স্বাদ গ্রহণ করাও।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৮/২) এবং আবু নুআইম (৯৬৫) ইসমাঈল
ইবনু মুসলিম সূত্রে আতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আল-খাতীব (২/৬০-৬১) এবং তার থেকে ইরাকী “মাহাজ্জাতুল কুরবি” গ্রন্থে
ইবনু আইয়াশ সূত্রে আব্দুল আযীয ইবনু ওবাইদিল্লাহ হতে, তিনি ওয়াহাব ইবনু কায়সান হতে
... বর্ণনা করেছেন। এ সনদ দুটি খুবই দুর্বল। ইসমাঈল ইবনু মুসলিম এবং আব্দুল আযীয ইবনু
ওবাইদিল্লাহ হিমসী তারা উভয়েই মাতরূক। “আল-কাশফ” গ্রন্থে বলা হয়েছে (২/৫৩)- হাদীসটি
ইমাম আহমাদ এবং তিরমিয়ী ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এটি ধারণা মাত্র। কারণ
তারা শুধুমাত্র দ্বিতীয় অংশটুকু বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে পূর্বের হাদীসে বলা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০০ | 400 | ٤۰۰
৪০০। খন্দকের দিবসে আমর ইবনু আবদে উদ্দের সাথে আলী ইবনু আবী তালেবের
লড়াই (তাকে হত্যা করার জন্য) কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমার উম্মাতের কর্মগুলো হতেও অতি
উত্তম ।
হাদীসটি মিথ্যা।
এটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (৩/২৩) আহমাদ ইবনু ঈসা খাশশাব সূত্রে
... বর্ণনা করেছেন। হাকিম তার সম্পর্কে কিছু না বলে চুপ থেকেছেন! যাহাবী “আত-তালখীস”
গ্রন্থে বলেছেনঃ আল্লাহ সেই রাফেয়ীর অমঙ্গল করুন, যিনি হাদীসটি তৈরি করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ খাশ্শাব। কারণ তিনি মিথ্যুক,
যেরূপ ইবনু তাহের প্রমুখ বলেছেন। সম্ভবত তিনি তার মত মিথ্যুকের নিকট হতেই চুরি করেছেন।
খাতীব বাগদাদী হাদীসটি (১৩/১৯) ইসহাক ইবনু বিশর কুরাশী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এ
ইসহাক হচ্ছে কাহেলী কুফী, তিনিও মিথ্যুক। তার কয়েকটি জাল হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
যেমন (৩১০, ৩১১, ৩২৯, ৩৫১)।
আলী (রাঃ)-এর আমর ইবনু উদ্দের সাথে লড়াই এবং তাকে হত্যার ঘটনাটি ইতিহাস
গ্রন্থগুলোর একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা। যদিও ঘটনাটির কোন সহীহ সূত্র সম্পর্কে আমি অবহিত নই।
ঘটনাটি মুরসাল এবং মু'যাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। দেখুনঃ “সিরাত ইবনু হিশাম” (৩/২৪০-২৪৩),
বাইহাকীর "দালায়েলুল নাবুয়াহ" ৩/৪৩৫-৪৩৯ এবং “সিরাত ইবনু কাসীর” ৯৩/২০৩-২০৫)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০১ | 401 | ٤۰۱
৪০১। তোমরা যখন সওম রাখবে; তখন ভোরবেলা মেসওয়াক করবে, সন্ধ্যায় মেসওয়াক
করবে না। কারণ কোন সওম পালনকারী ব্যক্তির দু'ঠোট সন্ধ্যার সময় শুকনা থাকলে কিয়ামত
দিবসে তার দু'চোখের মাঝে তা হবে নূর স্বরূপ।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী (১/১৮৪/২), দারাকুতনী (পৃ. ২৪৯) এবং বাইহাকী (৪/২৭৪) কায়সান
আবী উমার আল-কাস্সার সূত্রে ইয়াযীদ ইবনু বিলালের মাধ্যমে ‘আলী (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে
বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তারা একই সূত্রে আমর ইবনু আবদির রহমান হতে, তিনি খাব্বাব হতে
মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে দারাকুতনী এবং বাইহাকী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
অতঃপর তারা উভয়ে বলেনঃ কায়সান আবু উমার শক্তিশালী নন। তার এবং ‘আলীর মাঝের বর্ণনাকারী
(ইয়াযীদ ইবনু বিলাল) পরিচিত নয়। তাদের দু'জনের বক্তব্যকে ইবনুল মুলাক্লিন “খুলাসাতুল
বাদরিল মুনীর” গ্রন্থে (কাফ ২/৬৯) সমর্থন করেছেন।
“আল-মাজমা" গ্রন্থে বলা (৩/১৬৪-১৬৫) হয়েছেঃ কায়সান আবু উমারকে
ইবনু হিব্বান নির্ভরশীল বলেছেন অথচ অন্যরা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেনঃ হাদীসটি
নিতান্তই দুর্বল। "তাখরাজুল হিদায়াহ" গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে কায়সান
আল-কুয়াব রয়েছেন; তিনি নিতান্তই দুর্বল। ইবনু হাজার বলেনঃ তার মধ্যে কায়সান রয়েছেন;
তিনি তাদের নিকট দুর্বল। আযীযী “শারহু জামেউস সাগীর” গ্রন্থে (১/১২৯) বলেছেনঃ হাদীসটি
দুর্বল, কিন্তু তা মোচনযোগ্য! এটি তার ধারণা মাত্র, এটির দুর্বলতা মোচনযোগ্য নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০২ | 402 | ٤۰۲
৪০২। সওম অবস্থায় তিনি দিনের শেষ প্রহরে মিসওয়াক করতেন।
হাদীসটি বাতিল।
এটি ইবনু হিব্বান “কিতাবুয যুয়াফা" গ্রন্থে (১/১৪৪) আহমাদ ইবনু
আবদিল্লাহ ইবনে মায়সারা হাররানী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু হিব্বান এটির সমস্যা হিসাবে ইবনু মায়সারাকে চিহ্নিত করে বলেছেনঃ
তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। এটি মারফু হিসাবে বাতিল। তবে ইবনু উমার (রাঃ)-এর
কর্ম হিসাবে এটি সহীহ।
যায়লাঈ "নাসবুর রায়া" গ্রন্থে (২/৪০৬) তার কথাকে সমর্থন
করেছেন।
এ হাদীসটির প্রয়োজনীয়তা হতে আমাদেরকে মুক্ত রাখে সওম পালনকারীর জন্য
দিবসের যে কোন সময় মিসওয়াক করা শারীয়াত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপক ভিত্তিক এ ভাষ্যঃ لولا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة “আমি যদি আমার উম্মতের উপর মুশকিল মনে না করতাম, তাহলে প্রতিটি সলাতের
সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার জন্য নির্দেশ দিতাম" (বুখারী ও মুসলিম)। এটির তাখরীজ
করা হয়েছে “ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থে (নং ৭০)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৩ | 403 | ٤۰۳
৪০৩। আদম (আঃ) হিন্দুস্থানে অবতরণ করার সময় স্থানটিকে ভয়াবহ মনে করলেন,
তখন জিবরীল অবতরণ করে আযানের মাধ্যমে ডাকলেনঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশহাদু
আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (দু’বার) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ (দু’বার)। আদম
বললেনঃ মুহাম্মাদ কে? তিনি (জিবরীল) বললেনঃ তিনি নাবীকূলের মধ্য হতে আপনার শেষ সন্তান।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আসাকির (২/৩২৩/২) মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে সুলায়মান
হতে, তিনি আলী ইবনু বাহরাম কুফী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। আলী ইবনু বাহরামকে আমি চিনি
না। মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে সুলায়মান নামে দু’জন বর্ণনাকারী আছেন। একজন কুফী,
ইবনু মান্দা তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাজহুল। আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন খুরাসানী; যাহাবী
তাকে হাদীস জাল করার দোষে দোষী করেছেন। বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, এখানে আছেন প্রথমজন।
এ হাদীসটি দুর্বল তা সত্ত্বেও ২৫ নাম্বারে বর্ণিত জাল হাদীসের চেয়ে
শক্তিশালী। কারণ সে হাদীসটি প্রমাণ করে যে আদম (আঃ) দুনিয়াতে অবতরণ করার পূর্বে জান্নাতেই
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চিনেছেন। অথচ এটি প্রমাণ করছে যে, তিনি মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুনিয়াতে অবতরণের পরেও চিনেননি। এ দুর্বল হাদীস
পূর্বের জাল হাদীসটি বাতিল তার প্রমাণও বহন করছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৪ | 404 | ٤۰٤
৪০৪। তিনি আরাফার দিবসে আরাফায় সওম রাখতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইমাম বুখারী “তারীখুল কাবীর” গ্রন্থে (৭/৪২৫), আবু দাউদ (১/৩৮২),
ইবনু মাজাহ (১/৫২৮), তাহাবী “মুশকিলুল আসার” গ্রন্থে (৪/১১২), উকায়লী "আয-যুয়াফা"
গ্রন্থে (১০৬), হারবী “গারীবুল হাদীস” গ্রন্থে (৫/৩৮/২), হাকিম (১/৪৩৪) ও বাইহাকী
(৪/২৮৪) হাওশাব ইবনু আকীল সূত্রে মাহদী আল-হাজারী হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম
বলেছেনঃ বুখারীর শর্তানুযায়ী এটি সহীহ। যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন!
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি তাদের উভয়ের অশোভনীয় ধারণা মাত্র। কারণ হাওশাব
ইবনু আকীল এবং তার শাইখ মাহদী আল-হাজারী তাদের দু’জন হতে বুখারী হাদীস বর্ণনা করেননি।
হাজারী মাজহুল; যেমনভাবে ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/১৮) বলেছেন। তাকে সমর্থন
করেছেন যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে। আবু হাতিম হতেও অনুরূপ কথা উল্লেখ করেছেন। “আত-তাহযীব”
গ্রন্থে ইবনু মাঈন হতেও অনুরূপ কথা এসেছে। অতএব কীভাবে এ হাদীসটি সহীহ হতে পারে যাতে
এ মাজহুল ব্যক্তি রয়েছেন?
এ কারণেই ইবনু হাযম হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ এরূপ
ব্যক্তির দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। ইবনুল কাইয়্যিমও "যাদুল মায়াদ"
গ্রন্থে (১/১৬,২৩৭) দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
ইবনু হিব্বান কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলা গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে বহুবার
সতর্ক করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ইবনু খুযাইমা কর্তৃক হাদীসটিকে সহীহ বলাও গ্রহণযোগ্য
নয়, কারণ তিনিও তাতে শিথিলতার পথ গ্রহণ করেছেন। এজন্য হাফিয ইবনু হাজার তাদের দু'জনের
সহীহ বলার উপর নির্ভর করেননি। যদি বলা হয় অনুরূপ হাদীস তাবারানী আয়েশা (রাঃ) হতে
বর্ণনা করেছেন। তা কী হাদীসটিকে শক্তিশালী পর্যায়ে পৌছে দেয় না?
আমি (আলবানী) বলছিঃ না পৌছাই না। কারণ তার সনদে ইব্রাহীম ইবনু মুহাম্মাদ
আসলামী নামে এক বর্ণনাকারী আছেন, তিনি নিতান্তই দুর্বল। "আত-তাকরীব" গ্রন্থে
এসেছে তিনি মাতরূক। সনদের আরেক ব্যক্তি ইবনু শারুসকে চিনি না, তিনি মাজহুল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৫ | 405 | ٤۰۵
৪০৫। যে ব্যক্তি সকালের সলাত আদায় করবে। অতঃপর কোন কথা বলার পূর্বেই
একশত বার কুল-হু-আল্লাহু আহদ পাঠ করবে, সে যখনই কুল-হু-আল্লাহ আহাদ পাঠ করবে তখনই তার
এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (২২/৯৬/২৩২), অনুরূপভাবে হাকিম (৩/৫৭০) এবং ইবনু আসাকির
(১৯/১৯৬/২) মুহাম্মাদ ইবনু আবদির রহমান আল-কুশায়রী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাকিম হাদীসটি সম্পর্কে কিছু না বলে চুপ থেকেছেন।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১০৯) বলেছেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ ইবনু
আবদির রহমান কুশায়রী রয়েছেন; তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক; যেমনভাবে আযদী বলেছেন। ইবনু আবী হাতিম
(৩/২/৩২৫) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ তিনি
মাতরূকুল হাদীস, মিথ্যা বলতেন এবং হাদীস জাল করতেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৬ | 406 | ٤۰٦
৪০৬। সমুদ্রের ধারে যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের সময় একবার উঁচু স্বরে তাকবীর
বলবে, আল্লাহ তাকে সমুদ্রের প্রতিটি পানির ফোটার সংখ্যায় করে সাওয়াৰ দিবেন, দশটি
করে পাপ মোচন করে দিবেন এবং তার দশগুন মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। প্রতি দু'মর্যাদার
মধ্যের দূরত্ব দ্রুতগামী ঘোড়ার একশত বছরের চলার পথ।
হাদীসটি জাল।
এটি উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (পৃঃ ১২২), আবু নুয়াইম
(৩/১২৫) এবং হাকিম (৩/৫৮৭) ইবরাহীম ইবনু যাকারিয়া আল-আন্দাসী সূত্রে ফুদায়েক ইবনু
সুলায়মান হতে, তিনি খালীফাহ ইবনু হুমায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আবু নুয়াইম বলেনঃ ইয়াসের হাদীস হতে এটি গারীব। তার থেকে খালীফা ব্যতীত
অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। ফুদায়েকও খালীফা হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাকিম হাদীসটি সম্পর্কে কিছু না বলে চুপ থেকেছেন। যাহাবী “আত-তালখীস”
গ্রন্থে বলেনঃ এটি নিতান্তই মুনকার, খালীফা কে জানা যায় না। তার নিকট পর্যন্ত পৌছতে
সনদে এমন ব্যক্তি আছেন যাকে মিথ্যার দোষে দোষী করা হয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি ইঙ্গিত করছেন এ আবদাসীর দিকে। তার সম্পর্কে
ইবনু আদী বলেনঃ তিনি বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি মালেকের উদ্ধৃতিতে
বানোয়াট হাদীস নিয়ে এসেছেন। যাহাবী খালীফার জীবনীতে বলেনঃ তার ব্যাপারে জাহালাত
(অজ্ঞতা) রয়েছে এবং তার খবর হচ্ছে সাকেত (নিক্ষিপ্ত)। অতঃপর এ হাদীসটি উকায়লীর বর্ণনা
হতে উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার যাহাবীর কথা “আল-লিসান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
অতঃপর তিনি তা সমর্থন করেছেন। ইবনু আররাক "তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে হাদীসটি
উল্লেখ করে (২/২৮৮) ঠিকই করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৭ | 407 | ٤۰۷
৪০৭। যে ব্যক্তির তিনটি মেয়ে সন্তান হবে, অতঃপর তাদের বাসস্থান দানে
(আশ্রয় দানে), তাদের দুঃসময়ে এবং সুসময়ে ধৈর্য ধারণ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে খাস
করে তাদের প্রতি দয়া করার ফীলতের বিনিময়ে জান্নাত দিবেন। এক ব্যক্তি বললঃ যদি দু'টি
মেয়ে হয় হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেনঃ দুটি হলেও। এক ব্যক্তি বললঃ একটি মেয়ে হলে
হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেনঃ একটি মেয়ে হলেও।
হাদীসটি এ বাক্যে দুর্বল।
এটি হাকিম (৪/১৭৭) এবং আহমাদ (২/৩৩৫) ইবনু যুরায়েজ সূত্রে আবুয যুবায়ের
হতে, তিনি উমার ইবনু নাহবান হতে ... বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী
তাকে সমর্থন করেছেন। মুনযেরীও "আত-তারগীব" গ্রন্থে (৩/৮৫) তা সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কখনও নয়। কারণ ইবনু যুরায়েজ এবং আবুষ যুবায়ের
দু’জনই মুদল্লিস। তারা আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন এবং উমর ইবনু নাহবানের ব্যাপারে
জাহালাত (অজ্ঞতা) রয়েছে, যেমনভাবে যাহাবী নিজে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেন, কীভাবে
এটি সহীহ?
আমি (আলবানী) বলছিঃ জাবের (রাঃ)-এর সহীহ্ হাদীস আমাদেরকে এ দুর্বল সনদের
হাদীসের প্রয়োজনীয়তা হতে মুক্ত রাখে। জাবের (রাঃ)-এর হাদীসে বলা হয়েছে; যার তিনটি
মেয়ে সন্তান হবে, অতঃপর সে তাদেরকে আশ্রয় দিবে, তাদের প্রয়োজনীয়তা মিটাবে এবং তাদের
উপর দয়া করবে; তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। কোন এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর
রাল যদি দু’জন হয়? তিনি বললেনঃ যদি দু’জন হয় তবুও।” হাদীসটি বুখারী “আদাবুল মুফরাদ”
গ্রন্থে (পৃ. ১৪) এবং আবু নুয়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/১৪) দু'টি সূত্রে
মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদীর হতে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৮ | 408 | ٤۰۸
৪০৮। আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নাম সেটি যেটির দ্বারা তার
দাসত্ব করা হয়।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/৫৯/২) এবং "মুজামুল আওসাত"
গ্রন্থে (১/৪০/১) মুয়াল্লাল ইবনু নুফায়েল হাররানী হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনু মেহসান
হতে, তিনি সুফিয়ান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ সুফিয়ান হতে মুহাম্মাদ ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/৫১) বলেনঃ সনদটির মধ্যে মুহাম্মদ
ইবনু মেহসান উকাশী রয়েছেন, তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক; যেমনভাবে ইবনু মাঈন বলেছেন, আর দারাকুতনী
বলেছেনঃ তিনি হাদীস জালকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪০৯ | 409 | ٤۰۹
৪০৯। যে (কোন ব্যক্তিকে) ভালবেসে তা গোপন রাখল এবং পবিত্র থাকল। অতঃপর
এ অবস্থায় তার মৃত্যু হল, সে শহীদ।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু হিব্বান "আল-মাজরুহীন" গ্রন্থে (১/৩৪৯), আল-খাতীব
তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৫/১৫৬, ২৬২, ৬/৫০-৫১, ৭/২৯৮, ১৩/১৮৪), সায়ালাবী তার হাদীস
গ্রন্থে (১/১২৯), আবু বাকর কালাবায়ী "মিফতাহুল মায়ানী" গ্রন্থে (২/২৮১),
সিলাফী “আত-তায়ূরিয়াত” গ্রন্থে (২/২৪), ইবনু আসাকির “তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে (১২/২৬৩/২)
এবং ইবনুল জাওয়ী তার “আল-মাশীখা" গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে সুওয়ায়েদ ইবনু সাঈদ
হাদাসানী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ দুটি কারণে হাদীসটির সনদ দুর্বলঃ
১। বর্ণনাকারী আবু ইয়াহইয়া আল-কাত্তাত; তার নাম যাযান, তার নামের
ব্যাপারে অন্য কথাও বলা হয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি লাইয়েনুল
হাদীস (হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল)।
২। সুওয়ায়েদ ইবনু সাঈদ দুর্বল। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি নিজে
সত্যবাদী, কিন্তু তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে তিনি সে সব হাদীসকে গ্রহণ করেছেন
যেগুলো তার হাদীস নয়। ইবনু মাঈন তার সম্পর্কে মন্দ কথা বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু মাঈন এ হাদীসটির কারণে তার সমালোচনা করেছেন;
যেরূপ সামনে আসবে। ইমামগণ হাদীসটি দুর্বল হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইবনু মুলাক্কান
"আল-খুলাসা" গ্রন্থে (২/৫৪) বলেনঃ ইমামগণ হাদীসটির ক্রটি বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আদী, হাকিম, বাইহাকী, ইবনু তাহের ও অন্যান্য ইমামগণ বলেছেনঃ উক্ত হাদীসটি এমন
একটি হাদীস যা সুওয়ায়েদের উপর ইনকার করা হয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন বলেনঃ আমার
যদি ঘোড়া আর বর্ষা থাকত তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করতাম। এ জন্য হাফিয ইবনু হাজার “বাযবুল
মাউন” গ্রন্থে (২/৪৫) বলেছেনঃ হাদীসটির সনদে সমালোচনা রয়েছে। হাদীসটি অন্য একটি সূত্রেও
বর্ণিত হয়েছে। তাতে ইয়াকুব ইবনু ঈসা (খারায়েতীর শাইখ) রয়েছেন, তিনি দুর্বল। ইমাম
আহমাদ তাকে দুর্বল বলেছেন। এছাড়া এটির বর্ণনাতে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম
বলেনঃ ইসলাম ধর্মের হাফিযগণের কথাই এ হাদীসটি মুনকার হওয়ার জন্য মাপকাঠি। এটির ব্যাপারে
তাদের নিকটেই ফিরে যেতে হবে। তারা কেউ হাদীসটিকে সহীহ বা হাসানও বলেননি। যারা অভ্যাসগত
ভাবে সহীহ বলার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করে থাকেন, তারাও কেউ এটিকে সহীহ বলেননি।
ইবনু তাহের যিনি সূফীদের হাদীসগুলোকে সহীহ বলার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারী,
তিনিও এ হাদীসটিকে ইনকার করেছেন এবং এটি বাতিল হওয়ার ব্যাপারে "তাযকিরাতুল মাওযুআত"
(পৃ. ৯১) গ্রন্থে সাক্ষী দিয়েছেন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেটিও সুওয়ায়েদ
হতেই বর্ণিত হয়েছে। অতএব এটিও সহীহ্ নয়।
মোটকথা হাদীসটি উভয় সূত্রেই দুর্বল। ইবনুল কাইয়্যিম এটির অর্থকেও
ইনকার অস্বীকার করে বানোয়াট হিসাবে হুকুম লাগিয়েছেন। তিনি "যাদুল মায়াদ"
গ্রন্থে (৩/৩০৬-৩০৭) বলেছেনঃ এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর তৈরিকৃত
হাদীস। এ হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ নয় এবং এটি তার কথা
এরূপ হওয়াটাই জায়েয না।
ভালবাসার মধ্যে হালাল হারাম উভয়টিই আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক আশেককেই শহীদ হিসাবে আখ্যা দিবেন এটি কীভাবে ধারণা করা যায়? আপনারা
কী দেখছেন না যে, কেউ ভালবাসে নারীকে, কেউ ভালবাসে কিশোরকে আবার কেউ ভালবাসে ব্যভিচারীকে।
তারা কী তার এরূপ ভালবাসা দ্বারা শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারবে?
এক কথায় হাদীসটির সনদ দুর্বল এবং মতন (ভাষা) বানোয়াট; যেরূপ ইবনুল
কাইয়্যিম "যাদুল মায়াদ" (৩/৩০৬-৩০৭) এবং “আদ-দা ওয়াত দাওয়া” গ্রন্থে
(পৃ. ৩৫৩) দৃঢ়তার সাথে বলেছেন। অনুরূপভাবে "রিসালাতুল মানার" গ্রন্থে (পৃ.
৬৩) এবং “রাওযাতুল মুহিব্বীন” গ্রন্থেও (পৃ: ১৮০) বলেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১০ | 410 | ٤۱۰
৪১০। মাটি হচ্ছে বাচ্চাদের বসন্তকালীন বৃষ্টি (ঘাস)।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৫৭৭৫) এবং ইবনু আদী (১৩১১) মুহাম্মাদ
ইবনু মিখলাদ হিমসী হতে ... বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী বলেনঃ এ সনদে হাদীসটি মনুকার, মুহাম্মাদ
ইবনু মিখলাদ মালেক ও অন্যদের থেকে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী এ হাদীসটিকে বাতিল হিসাবে গণ্য করেছেন এবং
তার অন্য একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সুস্পষ্ট মিথ্যা। সেটির বিবরণ (১২৫২ নং)
হাদীসে আসবে ইনশাআল্লাহ। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/১৫৯) বলেনঃ এটির
সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মিখলাদ রয়েছেন। এ হাদীসসহ অন্যান্য হাদীস দ্বারা তিনি মিথ্যার
দোষে দোষী ।
হাদীসটি অন্য একটি সূত্রে কাযাঈ বর্ণনা করেছেন। সেটির সনদে আবুল কাসেম
ইয়াহইয়া ইবনু আহমাদ ইবনে আলী ইবনিল হুসাইন রয়েছেন। তিনি তার দাদা আলী ইবনুল হুসাইন
ইবনে বুন্দার হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবুল কাসেম এবং তার দাদা আলী ইবনুল হুসাইন ইবনে
বুদারের জীবনী পাচ্ছি না। “আল-মীযান” এবং “আল-লিসান” গ্রন্থে যার জীবনী এসেছে, তিনি
হচ্ছেন আলী ইবনুল হাসান ইবনে বুন্দার ইসতিরাবায়ী। তাকে ইবনু তাহের মিথ্যার দোষে দোষী
করেছেন। সম্ভবত এ আলী ইবনুল হাসানই হচ্ছেন আলী ইবনুল হুসাইন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১১ | 411 | ٤۱۱
৪১১। আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নাম হচ্ছে সেটি যাতে তাঁর
দাসত্ব করা হয়েছে এবং তার প্রশংসা করা হয়েছে।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেমনটি স্পষ্টভাবে সুয়ূতী ও অন্যরা বলেছেন। দেখুনঃ "কাশফুল খাফা"
(১/৩৯০,৫১)। মুনযের হাদীসটি “আত-তারগীব” গ্রন্থে উল্লেখ করে (৩/৮৫) ভুল করেছেন। কারণ
তিনি বলেছেনঃ ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস হতে এ ভাষায় মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিয়ী ও
ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন। তারা ঠিকই বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাদের হাদীসের ভাষা হচ্ছেঃ
أحب الأسماء إلى الله عبد الله وعبد الرحمن "আল্লাহ্র নিকট
সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান।" দেখুন সহীহ মুসলিম
(৬/১৬৯), আবু দাউদ (২/৩০৭), তিরমিযী (৪/২৯) ও ইবনু মাজাহ (২/৪০৪)। অনুরূপভাবে বর্ণনা
করেছেন দারেমী, আহমাদ, হাকিম এবং খাতীব বাগদাদী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১২ | 412 | ٤۱۲
৪১২। যে ব্যক্তি আরাফার দিবসে সওম রাখবে; তা তার জন্য দু’বছরের কাফফারা
হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি মুহাররাম মাসে একদিন সওম রাখবে; তার জন্য তার প্রতিদিন ত্রিশ
দিনের সমান হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবরানী “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ২০০) হায়সাম ইবনু হাবীব
সূত্রে সুলাইম হতে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ হায়সাম ইবনু হাবীব এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী তাকে বাতিল খবর (হাদীস) বর্ণনাকারী হিসাবে
দোষারোপ করেছেন। ইবনু হিব্বান তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ হায়সাম
ইবনু হাবীব তার “আস-সিকাত” (৭/৫৭৬) গ্রন্থে উল্লেখকৃত ব্যক্তি নন। যাকে উল্লেখ করা
হয়েছে তিনি হচ্ছেন হায়সাম ইবনু হাবীব আস-সায়রাফী। তিনি একজন তাবে তাবেঈ নির্ভরযোগ্য।
সালাম আত-তাবীল মিথ্যার দোষে দোষী। এছাড়া ইবনু আবী সুলাইম দুর্বল।
হায়সামী শুধুমাত্র এ হায়সামকে হাদীসটির সমস্যা হিসাবে (৩/১৯০) উল্লেখ করেছেন।
মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (১/৭৮) বলেছেনঃ ‘এটি গরীব তার সনদটিতে
কোন সমস্যা নেই’। এ কথাটি সঠিক নয়। এ সালামুত তাবীল সম্পর্কে ইবনু খাররাস বলেনঃ তিনি
মিথ্যুক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করতেন। হাকিম বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাবারানী
হাদীসটি “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থেও (১/১০৯) বর্ণনা করেছেন, তবে প্রথমাংশটুকু সহীহ্।
কারণ তার বহু শাহেদ এসেছে।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি আরাফার দিবসে সওম রাখবে
তার এক বছর পরের এবং এক বছর পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৩ | 413 | ٤۱۳
৪১৩। যে ব্যক্তি মুহাররাম মাসে এক দিন সওম রাখবে; তার জন্য তার প্রতি
দিনে ত্রিশটি সৎকর্ম হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৯/১) বর্ণনা করেছেন। যার
সনদে হায়সাম ইবনু হাবীব, সালাম আত-তাবীল ও লায়স রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি তিনটি কারণে জাল, যা পূর্বের হাদীসে আলোচনা
করা হয়েছে। যদিও পূর্বেরটি এবং এটির সনদ একই তবুও ভাষায় পার্থক্য রয়েছে।
হায়সামী পূর্বের হাদীসটির ন্যায় এ হাদীসটিকে শুধুমাত্র দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন! তিনি বলেছেনঃ যাহাবী হায়সামকে দুর্বল বলেছেন। মানাবী “শারহু জামেউস সাগীর”
গ্রন্থে তার অনুসরণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৪ | 414 | ٤۱٤
৪১৪। যে সম্প্রদায়কেই তর্কশাস্ত্র দেয়া হয়েছে, তাদেরকে কর্ম (এবাদাত)
হতে বিরত করে দেয়া হয়েছে।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেমনভাবে হাফিয ইরাকী “তাখরিজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৩৭) এবং সুবকী
"তাবাকাতুশ শাফেঈয়াহ" গ্রন্থে (৪/১৪৫) জানিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৫ | 415 | ٤۱۵
৪১৫। যে ব্যক্তি জুম'আর দিবসে সেই সূরা পাঠ করবে যাতে আলে ইমরানের উল্লেখ
করা হয়েছে, আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার উপর দয়া ও মাগফিরাত করতে
থাকবেন।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৫/২) এবং “মুজামুল আওসাত”
গ্রন্থে (২/৮০/২/৬২৯৩) আহমাদ ইবনু মাহান ইবনে আবী হানীফা সূত্রে তার পিতা হতে, তার
পিতা তালহা ইবনু যায়েদ হতে, তিনি ইয়াযীদ ইবনু সিনান হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর
বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু মাহান এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ বানোয়াট। ইবনু আবী হাতিম (১/১/৭৩)
তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ মুহাম্মাদ ইবনু মাহান মাজহুল। তালহা ইবনু যায়েদ জাল
করার দোষে দোষী। ইয়াযীদ ইবনু সিনান হচ্ছেন আবু ফরওয়া রাহাবী, তিনি দুর্বল। হাফিয
ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশশাফ” গ্রন্থে (৩/৭৩) বলেনঃ এটির সনদটি দুর্বল। সুয়ূতী এ ব্যাপারে
“দুররুল মানসূর” গ্রন্থে (২/২) হাফিযের তাকলীদ করেছেন। অথচ হাফিয নিজেই “আত-তাকরীব”
গ্রন্থে এ তালহা সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাতরূক। ইমাম আহমাদ, আলী ও আবু দাউদ তার সম্পর্কে
বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
হায়সামী “আল-মাজমা” গ্রন্থে (২/১৬৮) তালহাকে শুধু বলেছেনঃ তিনি দুর্বল।
এটি তার ক্রটি। কিন্তু মানাবী “শারহু জামেউস সাগীর” গ্রন্থে তার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ
তিনি নিতান্তই দুর্বল। সম্ভবত কপিকারকদের থেকে “جدا” (নিতান্তই) শব্দটি মুছে গেছে।
অতঃপর মানাবী ইবনু হাজারের উদ্ধৃতিতে বলেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল। ইমাম
আহমাদ এবং আবু দাউদ তাকে জাল করার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। অতঃপর মানাবী বলেছেনঃ সুয়ুতীর
উচিত ছিল হাদীসটি উল্লেখ না করা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৬ | 416 | ٤۱٦
৪১৬। চীন দেশে গিয়ে হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর।
হাদীসটি বাতিল।
এটি ইবনু আদী (২/২০৭), আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/১০৬),
ইবনু আল্লিক নাইসাপুরী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/২৪১), আবুল কাসেম কুশায়রী "আল-আরবায়ীন"
গ্রন্থে (২/১৫১), আল-খাতীব “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৯/৩৬৪) এবং “কিতাবুর রেহলা” গ্রন্থে
(১/২), বাইহাকী “আল-মাদখাল” গ্রন্থে (২৪১/৩২৪), ইবনু আদিল বার “জামেউ বায়ানিল ইলম”
গ্রন্থে (১/৭-৮) এবং যিয়া মাকদেসী “আল-মুনতাকা....” গ্রন্থে (১/২৮) বর্ণনা করেছেন।
তারা সকলে হাসান ইবনু আতিয়া সূত্রে আবূ আতিকা তুরায়ীফ ইবনু সুলায়মান হতে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আদী বলেনঃ “ولو بالصين’’ ‘চীন দেশে গিয়ে হলেও এ কথাটি হাসান ইবনু আতিয়া ছাড়া অন্য কেউ
বর্ণনা করেছেন বলে জানি না। এমনটিই বলেছেন আল-খাতীব ও হাকিম।
এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ আবু আতিকা। তিনি সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। উকায়লী
তার সম্পর্কে বলেছেনঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল। বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। নাসাঈ
বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আবু হাতিম বলেনঃ তিনি যাহেবুল হাদীস, যেমনভাবে তিনি তার
পিতা হতে (২/১/৪৯৪) বর্ণনা করেছেন। করেছেন। ইবনু কুদামাহ “আল-মুনতাখাব” গ্রন্থে (১০/১৯৯/১)
দাওরী হতে নকল করে বলেছেন, তিনি বলেনঃ আমি ইয়াহইয়া ইবনু মা'ঈনকে আবু আতিকা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি তাকে চিনেননি।
ইমাম আহমাদ এ হাদীসটিকে কঠোর ভাষায় ইনকার করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/২১৫) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ
ইবনু হিব্বান বলেনঃ হাদীসটি বাতিল, এটির কোন ভিত্তি নেই। সাখাবী “মাকাসীদুল হাসানা”
গ্রন্থে তা সমর্থন (পৃ. ৬৩) করেছেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/১৯৩) তার সমালোচনা করে যা বলেছেন, তার
সার সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, হাদীসটির আরো দুটি সূত্র রয়েছেঃ
১। একটির সনদে রয়েছেন ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম আসকালানী
... । যেটি ইবনু আবদিল বার বর্ণনা করেছেন। এ ইয়াকুব সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
২। দ্বিতীয়টি আহমাদ ইবনু আবদিল্লাহ যুওয়াইবারীর সূত্র হতে...। সুয়ূতী
নিজে বলেছেনঃ যুওয়াইবার (হাদীস) জলিকারী। অতএব তার সমালোচনা করার কোন যৌক্তিকতা নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৭ | 417 | ٤۱۷
৪১৭। কোন কোন আবজাদ অক্ষরের শিক্ষক হয় নক্ষত্র গণনাকারী। যার জন্য
কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট কোন অংশই নেই।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৩/১০৫/১) খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ খালেদকে আবু হাতিম ও ইয়াহইয়া মিথ্যুক আখ্যা
দিয়েছেন। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৫/১১৭) বলেনঃ এ সনদে খালেদ ইবনু ইয়াযীদ উমারী রয়েছেন;
তিনি মিথ্যুক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও তার হাদীসটিকে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মানাবী হায়সামীর ভাষ্য উল্লেখ করে তার সমালোচনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৮ | 418 | ٤۱۸
৪১৮। গমের সাথে গোশত নাবীগণের ঝোল।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি সুলামী “তাবাকাতুস সুফিয়াহ গ্রন্থে (পৃ. ৪৯৭-৪৯৮) বর্ণনা করেছেন।
যার সনদে আহমাদ ইবনু আতা রুযবারী, হাসান ইবনু সাদ, মুহাম্মাদ ইবনু আবী উমায়ের এবং
হিশাম ইবনু সালেম রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি নিতান্তই দুর্বল। আহমাদ ইবনু আতা সম্পর্কে
আল-খাতীব (৪/৩৩৬) বলেনঃ তিনি কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন, যাতে তিনি সন্দেহের মধ্যে
পড়েছেন। তিনি বাস্তবেই ভুল করেছেন। আমি আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আলী আস-সুরীকে
বলতে শুনেছিঃ আমাদেরকে রুযবারী কতিপয় হাদীস ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ আস-সাফফার হতে শুনিয়েছেন
এবং তিনি হাসান ইবনু আরাফা হতে শুনিয়েছেন। তিনি সেগুলো সাফফার ইবনু আরাফা হতে বর্ণনা
করেননি। সুরী বলেনঃ আমি তার সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করিনা যে, যারা ইচ্ছাকৃত মিথ্যা
বলেছেন তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তার নিকট হাদীসগুলো গোলমাল হয়ে গেছে।
হাসান ইবনু সা'দ এবং তার উপরের দু' বৰ্ণনাকারীর কাউকেই আমি চিনি না।
হাদিসটি সুয়ূতী "জামে'উস সাগীর" গ্রন্থে ইবনুন নাজ্জারের বর্ণনা হতে উল্লেখ
করেছেন। এটির ব্যাপারে মানাবী কোন কথা বলেননি। সম্ভবত সনদটির অবস্থা সম্পর্কে তিনি
অবহিত হননি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪১৯ | 419 | ٤۱۹
৪১৯। আলেম এবং শিক্ষার্থী যখন কোন গ্রামকে অতিক্রম করে, তখন আল্লাহ
সেই গ্রামের কবরস্থান হতে চল্লিশ দিনের জন্য শাস্তি উঠিয়ে নেন।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেরূপ সুয়ূতী “তাখরাজু আহাদীসে শারহিল আকায়েদ” গ্রন্থে (পৃঃ ৬) বলেছেন।
আল্লামা কারী “ফারায়েদুল কালায়েদ আলী আহাদীসে শারহিল আকায়েদ” গ্রন্থে (১/২৫) তা
সমর্থন করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২০ | 420 | ٤۲۰
৪২০। তোমরা এমন যুগে আছ যাতে তোমাদেরকে আমল শিক্ষা দেয়া হয়েছে। অচিরেই
এমন একটি সম্প্রদায় আসবে যাদেরকে ঝগড়া শিক্ষা দেয়া হবে।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যেমনভাবে হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৩৭) এবং সুবকী
"তাবাকাতুশ শাফিঈয়াহ" গ্রন্থে (৪/১৪৫) বলেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২১ | 421 | ٤۲۱
৪২১। যে ব্যক্তি কবিতা দ্বারা উদাহরণ দিবে, তার জন্য আল্লাহর নিকট কোন
অংশই থাকবে না।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী (৩/১০৫/১) হাজ্জাজ ইবনু নুসায়ের হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাজ্জাজের কারণে সনদটি দুর্বল। তার সম্পর্কে হাফিয
ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি দুর্বল। তিনি বিশুদ্ধকরণ ইঙ্গিত গ্রহণ করতেন।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/২১২) বলেনঃ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা
করেছেন, যাতে হাজ্জাজ ইবনু নুসায়ের রয়েছেন। তাকে জামহুর দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু
হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি ভুল করতেন। তিনি ছাড়া
অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২২ | 422 | ٤۲۲
৪২২। যে ব্যক্তি কিছু জেনে সে মাফিক আমল করল, আল্লাহ তাকে অধিকারী বানাবেন
সেই জ্ঞানের যে জ্ঞান সে লাভ করেনি।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম (১০/১৪-১৫) আহমাদ ইবনু হাম্বাল সূত্রে ইয়াযীদ ইবনু
হারূণ হতে, তিনি হুমায়েদ আত-তাবীল হতে ... বর্ণনা করেছেন। আহমাদ ইবনু হাম্বাল এ কথাটি
কোন তাবেঈর সূত্রে ঈসা ইবনু মারইয়াম হতে উল্লেখ করেছেন। কোন এক বর্ণনাকারী সন্দেহ
বশত সেটিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন,
এ সনদটি তার উপর তৈরি করার মাধ্যমে। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ হতে এ সনদের মাধ্যমে হওয়ার
সম্ভবনা নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে একদল বর্ণনাকারী রয়েছেন
যাদেরকে আমি চিনি না। জানিনা তাদের মধ্য হতে কে এটি জাল করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৩ | 423 | ٤۲۳
৪২৩। ব্যক্তি কর্তৃক তার তায়াম্মুম দ্বারা শুধুমাত্র এক (ওয়াক্ত)
সলাত আদায় করা সুন্নত। অতঃপর দ্বিতীয় (ওয়াক্ত) সলাতের জন্য পুনরায় তায়াম্মুম করবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৩/১০৭/২) হাসান ইবনু আম্মারা সূত্রে হাকাম ইবনু উতায়বা
হতে ... বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে দারাকুতনী (পৃ. ৬৮) এবং বাইহাকী তার সূত্রে (১/৩৩১-৩৩২)
বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ হাসান ইবনু আম্মারা দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি তার চাইতেও মন্দ। তার সম্পর্কে শুবা বলেনঃ
তিনি মিথ্যা বলতেন। ইবনুল মাদীনী বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। আহমাদ বলেনঃ তার হাদীসগুলো
বানোয়াট।
শু'বা আরো বলেনঃ তিনি কতিপয় হাদীস হাকাম হতে বর্ণনা করেছেন। আমরা হাকামকে
সেই হাদীসগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ আমি এসবের কিছুই শুনিনি।
সাহাবীর পক্ষ হতে যদি বলা হয়ঃ সুন্নাতের মধ্যে এরূপ আছে..., তাহলে
তা আলেমদের নিকট মারফুর হুকুমে। এ জন্যই হাদীসটি এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাইহাকী হাদীসটি (১/২২২) হাসান ইবনু আম্মারা সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ)
হতে মারফু' হিসাবে এ ভাষায় বর্ণনা করেছেনঃ "কেউ তায়াম্মুম দ্বারা এক সলাতের
বেশী আদায় করবে না।"
যেহেতু সনদ একই অতএব ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মওকুফ এবং মারফু হিসাবে
কোনটিই সঠিক নয়। হাদীসটি জাল (বানোয়াট)।
ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (২/১৩২) ইবনু আব্বাস হতে এর বিপরীত
কথা বর্ণনা করেছেন। তায়াম্মুমকারী এক তায়াম্মুম দ্বারা ইচ্ছা মাফিক ফরয-নফল যত ওয়াক্ত
পড়া সম্ভব তা পড়তে পারবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তার তায়াম্মুম নষ্টকারী বস্তু দ্বারা অথবা
পানি পাওয়ার দ্বারা নষ্ট না হবে। এ মাসআলাতে এটিই সঠিক; দেখুন "রাওযাতুন নাদিয়া"
(১/১৫৯)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৪ | 424 | ٤۲٤
৪২৪। কোন ব্যক্তি দাসীকে ক্রয় করার ইচ্ছায় তার লজ্জাস্থান ব্যতীত
উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলে এবং তার দিকে দৃষ্টি দিলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তার লজ্জাস্থান
হচ্ছে দু' হাঁটু ও তার লুঙ্গির বাঁধনের মধ্যবর্তী স্থানটি।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/কাফ ৯৭/২) হাফস ইবনু উমার
আল-কিন্দী সূত্রে সালেহ ইবনু হাসসান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবনী) বলছিঃ এটি বানোয়াট। হাফস ইবনু উমার হালাবের কাযী। তার
সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হালাল নয়।
আর সালেহ্ ইবনু হাসসান সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। বরং তার সম্পর্কে ইবনু
হিব্বান (১/৩৬৭-৩৬৮) বলেন তিনি গায়িকা-নর্তকীর মালিক ও গীতিকার ছিলেন। তিনি সেই দলের
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (২/৫৩) বলেনঃ হাদীসটি তাবারানী
“মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যাতে সালেহ ইবনু হাসসান রয়েছেন; তিনি দুর্বল।
তাকে ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার একথায় দুটি ধরার বিষয় রয়েছেঃ
১। তিনি শুধুমাত্র সালেহকেই হাদীসটির সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
অথচ এটির সনদে তার থেকে বর্ণনাকারী তার মতই বা তার চেয়েও বেশী দুর্বল।
২। এ সালেহকে ইবনু হিব্বান “আত-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। তিনি
সালেহ ইবনু আবী হাসসানকে “আত-সিকাত” গ্রন্থে (৬/৪৫৬) উল্লেখ করেছেন। তারা উভয়েই একই
যুগের। হায়সামীর নিকট তা উলট পালট হয়ে গেছে। আর আপনারা অবগত হয়েছেন যে, এ ইবনু হাসসানকে
ইবনু হিব্বান নিজেই জাল করার দোষে দোষী করেছেন।
সুন্নাতের মধ্যে দাসী এবং স্বাধীন রমণীদের মাঝে লজ্জাস্থানের দিক দিয়ে
কোন পার্থক্য নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৫ | 425 | ٤۲۵
৪২৫। গরীবের বিদেশে অবস্থানকারীর মৃত্যু হচ্ছে শাহাদাত। যখন মৃত্যুকে
তার নিকট উপস্থিত করা হবে, তখন সে তার দৃষ্টি ডানে এবং বামে নিক্ষেপ করবে। তাতে সে
গরীব বিদেশী ছাড়া অন্য কাউকে দেখবে না। এমতাবস্থায় সে তার পরিবার এবং সন্তানদের স্মরণ
করবে এবং নিশ্বাস নিবে। সে যে নিশ্বাস নিবে তার জন্য প্রত্যেক নিশ্বাসের দ্বারা আল্লাহ
তার থেকে বিশ লাখ গুনাহ মুছে ফেলবেন এবং বিশ লাখ সৎকর্মের সাওয়াব তার জন্য লিখে দিবেন।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৩/১০৭/১) আমর ইবনুল হুসাইন উকায়লী সূত্রে মুহাম্মাদ
ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আলাসা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি বানোয়াট। আমর ইবনুল হুসাইন মিথ্যুক। তার বহু
হাদীস পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
ইবনু আলাসা দুর্বল। তাকে কেউ কেউ মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন।
হায়সামী (২/৩১৭) আমর ইবনুল হুসাইনকে মাতরূক বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির প্রথমাংশ ইবনুল জওয়ী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে
(২/২২১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৩২-১৩৩) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির
আরো সূত্র এবং শাহেদ রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সেগুলোর সবগুলোতেই সমস্যা রয়েছে। যার কোন কোনটি
অপরটির চেয়ে বেশী দুর্বল। সেগুলো হতে দুর্বলতা ছাড়া আর কোন উপকার পাওয়া যাবে না।
কিন্তু পূরো হাদীসটি বানোয়াট। এর কোন শাহেদ নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৬ | 426 | ٤۲٦
৪২৬। রুকুনটি (হাযরে আসওয়াদটি) যদি জাহেলিয়াতের অপবিত্রতা, তার নাপাকী,
অত্যাচারী ও গুনাহগার হতে হেফাযতে থাকত, তাহলে অবশ্যই তার দ্বারা প্রত্যেক রোগ হতে
আরোগ্য পাওয়া যেত এবং আজকে তাকে পেতাম আল্লাহ তা'আলা যেদিন তাকে সৃষ্টি করেছেন সেই
আকৃতিতে। আল্লাহ তা’আলা তাকে কাল রং দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যাতে করে দুনিয়াবাসী
জান্নাতের অলংকারের দিকে দৃষ্টি না দেয় এবং তার দিকে ধাবিত না হয়। সেটি হচ্ছে জান্নাতের
ইয়াকুতের সাদা রঙের ইয়াকূত। আল্লাহ তা'আলা আদম (আঃ)-কে যখন দুনিয়াতে নামিয়ে দেন
তখন কাবাকে সৃষ্টির পূর্বে কা'বার স্থলে পাথরটিকে রেখে দেন। তখন যমীন পবিত্র ছিল, তাতে
কোন গুনাহ করা হত না। তাতে এমন কোন অধিবাসী ছিল না, যারা তাকে অপবিত্র করবে। তার জন্য
এক কাতার (দল) ফেরেশতা হারামের চার পার্শ্বে যমীনের অধিবাসীদের থেকে পাহারা দেয়ার
জন্যে রেখে দেয়া হয়েছিল। সে সময় যমীনের অধিবাসী ছিল জিন সম্প্রদায়। তাদের জন্য
বৈধ ছিল না যে, তারা তার দিকে দৃষ্টি দিবে। কারণ সেটি ছিল জান্নাতেরই অংশ। যে ব্যক্তি
জান্নাতের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে, সেই প্রবেশ করেছে। একারণে যার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে গেছে এরূপ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য তার দিকে দৃষ্টি দেয়া বৈধ ছিল না। ফেরেশতাগণ
তার (হাযরে আসওয়াদ) থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতেন এমতাবস্থায় যে, তার হারামের চারি
দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা তাকে প্রতিটি দিক থেকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। এ জন্যই
হারাম নামকরণ করা হয়েছে। কারণ তারা তাদেরকে তার (হাযরে আসওয়াদ) এবং নিজেদের মাঝে
প্রাচীর হিসাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
হাদীসটি মুনকার।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১০৭/১) আউফ ইবনু গায়লান ইবনে
মুনাব্বেহ হতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান হতে, তিনি ইদরীস ইবনু বিনতে ওয়াহাব
ইবনে মুনাব্বেহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বেহের নিচের
বর্ণনাকারীগণ মাজহুল হওয়ার কারণে। তাদেরকে কে উল্লেখ করেছেন আমি পাচ্ছি না। তাছাড়া
হাদীসের ভাষায় সুস্পষ্ট মুনকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (২/২৬৬) হাদীসটি গাউস ইবনু গায়লান সূত্রে
সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু সাফওয়ানের জীবনী বর্ণনা করতে
গিয়ে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হিশাম ইবনু ইউসুফ হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি (উকায়লী)
বলেনঃ তিনি (আব্দুল্লাহ) দুর্বল ছিলেন, হাদীস হেফয করতেন না। এ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে,
আব্দুল্লাহ হতে বর্ণনাকারী আউফ নয় বরং গাউস। এটিই সঠিক, যা “মুজামুল কাবীর”-এর ছাপানো
গ্রন্থে এসেছে। যদিও হাতের লিখায় আউফ রয়েছে। তাকে ইবনু হিব্বান “আত-সিকাত” গ্রন্থে
(৭/৩১৩, ৯/২) উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাঈন বলেনঃ তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আর ইদরীসকে
ইবনু আদী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনিই হচ্ছেন এ হাদীসটির সমস্যা।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৭ | 427 | ٤۲۷
৪২৭। যে ব্যক্তি সব কিছুর পূর্বে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং সব কিছুর
পরে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইউবকী ওয়া ইউফনী কুল্লা শাইয়ীন বলবে,
তাকে চিন্তা-ভাবনা হতে নিরাপদে রাখা হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/কাফ ৯৩/১) আব্বাস ইবনু বাক্কার
যব্বী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। অতঃপর যাহাবী তার দুটি হাদীস উল্লেখ
করে বলেছেনঃ হাদীস দুটি বাতিল। দু'টির একটি ২৬৮৮ নাম্বারে আসবে। হাফিয ইবনু হাজার তাকে
মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১৩৭) এসেছে তাবারানী হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। তাতে আব্বাস ইবনু বাক্কার রয়েছেন, তিনি দুর্বল। ইবনু হিব্বান তাকে
নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং হাফিয ইবনু হাজার
“আল-লিসান” গ্রন্থে ইবনু হিব্বান কর্তৃক নির্ভরযোগ্য বলা কথাটি উল্লেখ করেননি। যদি
তার কথা সঠিকই হয় তাহলে ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে নির্দোষের পূর্বে।
ইবনু হিব্বান তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে (৮/৫১২) উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি
গরীব বর্ণনা করেছেন। নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে তার হাদীসে অসুবিধা নেই। ইবনু হিব্বান
আব্বাসকে "আয-যুয়াফা" গ্রন্থেও (২/১৯০) উল্লেখ করেছেন! তার শাইখ আবু হিলাল
যার নাম মুহাম্মাদ ইবনু সুলাইম রাসেবী, তার মধ্যেও দুর্বলতা রয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৮ | 428 | ٤۲۸
৪২৮। আমার মেয়ে ফাতেমা মাটির পরী। সে হায়েযাও হয় না এবং নেফাসধারীও
হয় না। তার নাম রাখা হয়েছে ফাতেমা, কারণ আল্লাহ তা'আলা তাকে এবং তাকে যে ভালবাসে
তাকেও জাহান্নামের আগুন হতে পৃথক করে দিয়েছেন।
হাদীসটি জাল।
এটি আল-খাতীব (১২/৩৩১) তার সনদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করে বলেছেনঃ
হাদীসটির সনদে একাধিক মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন। হাদীসটি সাব্যস্ত হয়নি। তার সূত্রেই
ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/৪২১) উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে
(১/৪০০) তাকে সমর্থন করেছেন। তার সনদে হাদীসটি উম্মে সুলায়েম হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
لم ير لفاطمة دم في حيض ولا نفاس 'ফাতিমার হয়েয ও নিফাসের
মধ্যে রক্ত দেখা যায়নি'। এটি আব্বাস কর্তৃক জালকৃত।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪২৯ | 429 | ٤۲۹
৪২৯। তিনি চিন্তাশীলদের সাথে মুহরেমের কোন সমস্যা দেখতেন না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/৯৯/১) ইউসুফ ইবনু খালেদ সামতী
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সামতী মিথ্যুক, যেমনভাবে ইবনু মা'ঈন বলেছেন। অপর
বর্ণনাকারী সালেহ্ দুর্বল। সঠিক হচ্ছে, হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে
বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে বাইহাকী তার “সুনান” গ্রন্থে (৫/৬৯) সাঈদ ইবনু যুবায়ের
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। যার সনদে শুরায়েক আল কাযী রয়েছেন। তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩০ | 430 | ٤۳۰
৪৩০। তোমরা মহিলদের সাথে পরামর্শ কর এবং তাদের বিরোধিতা কর।
হাদীসটির মারফু হিসাবে কোন ভিত্তি নেই।
যেমনিভাবে সাখাবী ও মানাবী (৪/২৬৩) অবহিত করেছেন। সম্ভবত এ বাক্যটির
ভিত্তি হচ্ছে আসকারী যা “আল-আমসাল” গ্রন্থে উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন সেটি। তিনি
বলেন, خالفوا النساء فإن في خلافهن البركة "তোমরা মহিলাদের
বিরোধিতা কর, কারণ তাদের বিরোধিতায় বরকত রয়েছে।"
মওকুফ হিসাবে উমার (রাঃ) হতে যে সনদে বর্ণিত হয়েছে, সেটি আলী ইবনু
যায়াদ জাওহারী তার “আল-হাদীস” গ্রন্থে (১২/১৭৭/১) আবু আকীল সূত্রে হাফস ইবনু উসমান
ইবনে ওবায়দিল্লাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি দু'টি কারণে দুর্বলঃ
১। হাফস মাজহুল। ইবনু আবী হাতিম তাকে (১/২/১৮৪) ইবনু আকীলের একমাত্র
বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই উল্লেখ করেননি।
২। আবু আকীল-এর নাম হচ্ছে ইয়াহইয়া ইবনু মুতাওয়াক্কিল উমারী। “আত-তাকরীব”
গ্রন্থে এসেছে তিনি দুর্বল। ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি এমন এক সম্প্রদায় হতে বর্ণনা করেছেন
যাদেরকে চিনি না।
এছাড়া হাদীসটির অর্থও সহীহ নয়। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন তার সাথীদের সম্মুখে উম্মে সালমার পরামর্শে যাবহ করেন। তিনি
তার বিরোধিতা করেননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩১ | 431 | ٤۳۱
৪৩১। তোমরা উত্তম অসিয়ত গ্রহণ কর ছাগল দ্বারা। কারণ তা হচ্ছে সাথের
সম্পদ এবং সেটি জান্নাতে রয়েছে। আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা ভালবাসার সম্পদ হচ্ছে মেষ,
তবে তোমরা সাদাটি গ্রহণ করবে। কারণ আল্লাহ জান্নাতকে সাদা করেই সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের
জীবিতরা যেন তাই পরিধান করে এবং তোমাদের মৃত্যুদের তাতেই কাফন দিবে। কারণ দুটি কাল
ছাগলের রক্ত থেকে একটি সাদা ছাগলের রক্ত আল্লাহর নিকট বেশী মর্যাদাপূর্ণ।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৩/১১৩/১-২) এবং ইবনু আদী (২/৩৭৮) আবু শিহাব সূত্রে হামযা
নাসীবী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি বানোয়াট। কারণ হামযা নাসীবী সম্পর্কে ইবনু
আদী বলেনঃ তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন বা তার বর্ণনাকৃত অধিকাংশ হাদীস বানোয়াট। ইবনু
হিব্বান (১/২৭০) বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে
(৪/৬৬) বলেনঃ হামযা নাসীবী মাতরূক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩২ | 432 | ٤۳۲
৪৩২। তিনি (স্বামী-স্ত্রীকে) আমোদ প্রমোদ করার পূর্বে একে অপরে সরাসরি
সঙ্গম করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী (১৩/২২০-২২১) এবং তার থেকে ইবনু আসাকির (১৬/২৯৯/২)
ও আবু উসমান আন-নুজায়রেমী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২৪) খালাফ ইবনু মুহাম্মাদ খিয়াম
সূত্রে আবুয যুবায়ের হতে ... বর্ণনা করেছেন।
যাহাবী এ খিয়ামের জীবনীতে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেন, হাকিম বলেছেনঃ
তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করার কারণে তার হাদীস পতিত (অগ্রহণযোগ্য) হয়ে গেছে। খালীলী
বলেনঃ তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল, তিনি নিতান্তই দুর্বল। তিনি এমন সব বিষয় বর্ণনা
করেছেন যা চেনা যায় না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবুয যুবায়ের মুদাল্লিস তিনি আন আন শব্দে হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩ | 433 | ٤۳۳
৪৩৩। কিয়ামতের দিন লোকদেরকে ডাকা হবে তাদের মায়েদের পরিচয়ে, আল্লাহর
পক্ষ হতে তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (২/১৭) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম তাবারী হতে ... বর্ণনা করেছেন,
অতঃপর বলেছেনঃ এ সনদে হাদীসটির ভাষা মুনকার। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুনকারুল হাদীস। ইবনু
হিব্বান বলেনঃ তিনি ইবনু ওয়াইনা এবং ফুযায়েল ইবনু আইয়াশ হতে নিতান্তই মুনকার হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস নিয়ে এসেছেন। আশ্চর্য হবার
উদ্দেশ্য ছাড়া তার হাদীস লিখাই হালাল নয়। হাকিম বলেনঃ তিনি ফুযায়েল এবং ইবনু ওয়াইনা
হতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (৩/২৪৮) ইবনু আদীর সূত্রে
উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়, ইসহাক মুনকারুল হাদীস। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে
(২/৪৪৯) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ তাবারানীর নিকট তার অন্য সূত্র আছে। কিন্তু এটির
ভাষা হচ্ছে 'بأمهاتهم' আর তার (তাবারানীর)
ভাষা হচ্ছে 'بأسمائهم' দুটির মধ্যে পার্থক্য
সুস্পষ্ট। ইবনু আররাক তার প্রতিবাদ করে বলেছেন (২/৩৮১)- এটি আবু হুযাইফা ইসহাক ইবনু
বিশর সুত্রে বর্ণিত, শাহেদ হিসাবে সঠিক হবে না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ শাহেদ হওয়ার শর্ত হচ্ছে, দুর্বলতা যেন বেশী
শক্তিশালী না হয়। কিন্তু এটি এরূপ নয়। কারণ ইসহাক ইবনু বিশরকে হাদীস জালকারীদের মধ্যে
গণ্য করা হয়। যেমনটি ২২৩ নং হাদীসের আলোচনায় গেছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪ | 434 | ٤۳٤
৪৩৪। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা'আলা লোকদেরকে তাদের নাম ধরে ডাকবেন,
তার পক্ষ হতে বান্দাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য। পুলসিরাতের নিকট আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক
মুমিন, মুমিনা এবং মুনাফেককে নূর দান করবেন। যখন তারা পুলসিরাতে আরোহন করবেন, তখন আল্লাহ
তা'আলা মুনাফেক নারী পুরুষদের নূরকে ছিনিয়ে নিবেন। অতঃপর মুনাফেকরা বলবেঃ (আমাদের
দিকে একটু দৃষ্টি দাও তোমাদের আলো হতে কিছু গ্রহন করি) [সূরা হাদীদঃ ১৩] মুমিনরা বলবেঃ
(হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের নূরকে পরিপূর্ণ করে দাও) [আত-তাহরীমঃ ৮]। তখন কেউ কাউকেই
স্মরণ করবে না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৩/১১৫/১) ইসমাঈল ইবনু ঈসা আত্তার সূত্রে ইসহাক ইবনু বিশর
আবু হুযাইফা হতে ... বর্ণনা করেছেন। আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ইসহাক মিথ্যুক। হায়সামী
"আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/৩৫৯) তাবারানীর বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেনঃ
তিনি মাতরূক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫ | 435 | ٤۳۵
৪৩৫। নারীর আনুগত্য করা হচ্ছে লজ্জিত হওয়ার নামান্তর।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (কাফ ৩০৮/১) উসমান ইবনু আবদির রহমান তারায়েফী তিনি (ইবনু
আদী) আম্বাসার জীবনীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার উল্লেখিত হাদীসটি ছাড়াও আরো
হাদীস রয়েছে। তিনি হচ্ছেন মুনকারুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছি, আবু হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। তবে উসমান
ইবনু আবদির রহমান সম্পর্কে ইবনু আদী (২/২৯০) বলেনঃ তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু
তিনি একদল মাজহুল বর্ণনাকারী হতে আশ্চর্যজনক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার সে সব আশ্চর্যগুলো
মাজহুল বর্ণনাকারীদের পক্ষ হতে। এ কারণেই তাকে কোন কোন পণ্ডিত ব্যক্তি দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন। ইবনুল জাওয়ী হাদীসটিকে তার “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/২৭২) ইবনু আদীর বর্ণনা
হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। আম্বাসা কিছুই না আর উসমান দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা যায় না।
আয়েশা (রাঃ) হতে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে এ ভাষায়ঃ طاعة النساء ندامة 'নারীর আনুগত্য করা
হচ্ছে লজ্জিত হওয়ার নামান্তর।' এটি উকায়লী (পৃ. ৩৮১), ইবনু আদী (কাফ ১/১৫৬), কাযাঈ
(কাফ ১২/২), বাতেরকানী তার “আল-হাদীস” গ্রন্থে (১/৬৮) এবং ইবনু আসাকির (১৫/২০০/২) মুহাম্মাদ
ইবনু সুলায়মান ইবনে আবী কারমা হতে, তিনি হিশাম ইবনু উরওয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর উকায়লী বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু সুলায়মান হিশাম হতে এমন সব বাতিল
হাদীস বর্ণনা করেছেন যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। এটি সেগুলোর একটি।
ইবনু আদী বলেনঃ এ হাদীসটি হিশাম হতে দুর্বল ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ
বর্ণনা করেননি। এ হাদীসটি হিশাম হতে খালেদ ইবনু ওয়ালীদ মাখযুমী বর্ণনা করেছেন। তিনি
ইবনু আবী কারমা হতেও বেশী দুর্বল।
সুয়ূতী অভ্যাসগতভাবে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭৪) তার (ইবনুল জাওয়ীর)
সমালোচনা করে বলেছেনঃ হিশাম হতে এটির আরো দুটি সূত্র রয়েছে এবং আবু বাকরার হাদীস হতে
একটি শাহেদ আছে।
কিন্তু একটি সূত্রে খালাফ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল রয়েছেন। তিনি
সাকেতুল হাদীস (তার হাদীস নিক্ষিপ্ত)। যেরূপ হাকিম হতে ৪২২ নং হাদীসে এসেছে। অন্যটিতে
আইউব বুখতারী রয়েছেন। তার নাম ওয়াহাব ইবনু ওয়াহাব যিনি প্রসিদ্ধ জালকারী।
আর শাহেদটি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও আলোচ্য হাদীসটির ভাষা বিরোধী। সেটি
আগত হাদীসটি। এছাড়া আরো একটি শাহেদ তার নিকট হতে ছুটে গেছে। যেটিকে ইবনু আসাকির (৫/৩২৭/২)
জাবের (রাঃ)-এর হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে একদল অপরিচিত বর্ণনাকারী রয়েছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬ | 436 | ٤۳٦
৪৩৬। পুরুষরা যখন মহিলাদের অনুসরণ করবে, তখন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আদী (১/৩৮), আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪),
ইবনু মাসী “যুজউল আনসারী” গ্রন্থের শেষে (১/১১), হাকিম (৪/২৯১) এবং আহমাদ (৫/৪৫) আবু
বাকরার সূত্রে বাক্কার ইবনু আবদিল আযীয ইবনে আবী বাকরা তার পিতা হতে, তার পিতা আবু
বাকরা হতে বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। আর যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি যাহাবীর একটি ভুল। তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে
এ বাক্কারের জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইবনু আদী বলেনঃ
তিনি সেই সব দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত যাদের হাদীস লিখা যায়। তিনি “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে
বলেছেনঃ তিনি দুর্বল। তাকে ইবনু আদী চালিয়ে দিয়েছেন।
এ হাদীসটির একটি আসল আছে, তবে এ ভাষায়ঃ لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة “সেই জাতি পরিত্রাণ
পাবে না যারা তাদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছে নারীকে।” এটি ইমাম বুখারী, হাকিম ও আহমাদ
বর্ণনা করেছেন। এটিই হচ্ছে আসল হাদীস ।
কিন্তু আলোচ্য হাদীসটি যে ভাষায় এসেছে সেটি দুর্বল। তার বর্ণনাকারী
দুর্বল হওয়ার কারণে। তার অর্থও আমভাবে সহীহ নয়। কারণ হিসাবে হুদায়বিয়ার সন্ধির
সময়ের ঘটনা দ্রষ্টব্য।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭ | 437 | ٤۳۷
৪৩৭। যে ব্যক্তির তিনটি সস্তান ভূমিষ্ট হলো অতঃপর সে তাদের একজনেরও
মুহাম্মাদ নামে নাম রাখল না, সে মূর্খ হয়ে গেছে (বা অত্যাচার করেছে)।
হাদীসটি জাল।
তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (১০৮-১০৯) বলেনঃ আমাদের নিকট হাদীসটি
আহমাদ ইবনু নাযর আসকারী বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু খায়সামা মুসআব ইবনু সাঈদ হতে
... বর্ণনা করেছেন। এ মুস'আবের সূত্রে হাদীসটি হারিস ইবনু আবী উসামা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে
(১৯৯-২০০) এবং ইবনু আদী (২/২৮০) বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। এ মুসআব সম্পর্কে ইবনু
আদী বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের সূত্রে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি (ইবনু আদী) সেগুলো
হতে তার তিনটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।
যাহাবী সেগুলো সম্পর্কে পরক্ষণেই বলেছেনঃ এগুলো কতিপয় মুনকার এবং বিপদ
।
অতঃপর ইবনু আদী বলেনঃ তার বর্ণনাগুলোতে দুর্বলতা সুস্পষ্ট। সালেহ যাযারা
বলেনঃ মুসআব অন্ধ শাইখ, কি বলেন তিনি তা জানেন না। এটির সনদে লায়স ইবনু আবু সুলায়েম
রয়েছেন। তিনি সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। ইবনু আবী হাতিম (৩/২/১৭৮) বলেনঃ তার মস্তিষ্ক
বিকৃতি ঘটেছিল।
হাদীসটি ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (১/১৫৪) ইবনু আদীর বর্ণনা
হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি মূসা লাইস হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। লাইসকে আহমাদ
ও অন্যরা মাতরূক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তার শেষ বয়সে মস্তিষ্ক
বিকৃতি ঘটেছিল। তিনি সনদকে পাল্টিয়ে ফেলতেন এবং মুরসালগুলোকে মারফু করে ফেলতেন। সুয়ূতী
লাইস সম্পর্কে "আল-লাআলী" গ্রন্থে (১/১০১-১০২) যা বলেছেন তা সঠিক নয়। কারণ
তার দুর্বল হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। সেটি হচ্ছে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটা।
হাদীসটির মুতাবায়াত ওয়ালীদ ইবনু আবদিল মালেক ইবনে মেসরাহ হাররানী
হতে এসেছে। কে তার জীবনী রচনা করেছেন তা পাচ্ছি না । কিন্তু তার থেকে বর্ণনাকারী আবু
বাদর আহমাদ ইবনু খালেদ ইবনে মেসরাহ হাররানী সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি কিছুই না।
যার কারণে এ মুতাবায়াতের কোনই মূল্য নেই। এছাড়া আরো যে সব সনদে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে
সেগুলো মিথ্যার দোষে দোষী বর্ণনাকারী হতে মুক্ত নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮ | 438 | ٤۳۸
৪৩৮। আমার সাহাবীগণ হচ্ছে নক্ষত্রের ন্যায়। যে ব্যক্তি তাদের থেকে
কোন কিছুর অনুসরণ করবে সে হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি কাযাঈ (২/১০৯) জাফার ইবনু আবদিল ওয়াহেদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কোন মুহাদ্দিস টীকায় লিখেছেন, আমার ধারণা তিনি
হচ্ছেন ইবনুল মুহিব অথবা যাহাবী, এ হাদীসটি সহীহ নয়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর দ্বারা বুঝিয়েছেন এটি বানোয়াট। তার সমস্যা
হচ্ছে এ জাফার। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। আবূ যুর'আহ বলেনঃ
তিনি কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। যাহাবী তার কতিপয় হাদীস
উল্লেখ করে সেগুলোর দ্বারা তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। এটি সেগুলোর একটি এবং বলেছেন
তিনিই হচ্ছেন হাদীসটির সমস্যা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯ | 439 | ٤۳۹
৪৩৯। হে মক্কাবাসী! মক্কা হতে উসফান পর্যন্ত চার বুরুদ-এর কম দূরত্বে
তোমরা সলাত কসর করো না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১১২/১), দারাকুতনী তার
"সুনান" গ্রন্থে (পৃ. ১৪৮) এবং তার সূত্র হতে বাইহাকী (৩/১৩৭-১৩৮) ইসমাঈল
ইবনু আইয়াশ হতে, তিনি আব্দুল ওয়াহাব ইবনু মুজাহিদ ... হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি বানোয়াট। কারণ আব্দুল ওয়াহাব ইবনু মুজাহিদকে
সুফিয়ান সাওরী মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। হাকিম বলেছেনঃ তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী বলেনঃ সকলেই তার হাদীসকে পরিত্যাগ করতে ঐকমত্য হয়েছেন।
শামীদের ছাড়া অন্যদের থেকে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশের বর্ণনা দুর্বল। আর এটি সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
কারণ তিনি হচ্ছেন ইবনু মুজাহিদ হিজাজী।
বাইহাকী বলেনঃ এ হাদীসটি দুর্বল। ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা যায় না এবং আব্দুল ওয়াহাব ইবনু মুজাহিদ একেবারে দুর্বল। সঠিক হচ্ছে এটি ইবনু
আব্বাস (রাঃ)-এর কথা। বাইহাকী আমর ইবনু দীনার সূত্রে আতা হতে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ)
হতে মওকুফ হিসাবে হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু তাইমিয়া তার “আহকামুস সাফার” গ্রন্থে (২/৬-৭) বলেছেনঃ এটি ইবনু
আব্বাস (রাঃ)-এর বাণী। ইবনু খুযায়মা ও অন্যদের থেকে যে মারফু হিসাবে বর্ণিত হয়েছে
তা নিঃসন্দেহে হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণের নিকট বাতিল। কীভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের সম্বোধন করবেন কসরের সীমা রেখা নির্ধারণের ব্যাপারে, যেখানে
তিনি হিজরতের পরে সামান্য সময় ছিলেন। অথচ মদিনাবাসীদের জন্য কোন সীমা রেখা নির্ধারণ
করলেন না যেভাবে মক্কাবাসীদের জন্য নির্ধারণ করলেন। অথচ তিনি সেখানেই বাকী জীবন কাটিয়েছেন।
আর কিই বা কারণ আছে যে, অন্যদের বাদ দিয়ে সীমা নির্ধারণ হবে মক্কাবাসীদের জন্য?
সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে (যা বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেছেন)
যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে আরাফায়, মুযদালফায় এবং মিনার
দিনগুলোতে মিনায় সলাত কসর করে আদায় করেছেন। অনুরূপভাবে আবু বাকর (রাঃ) এবং উমারও
(রাঃ) তার পরে সলাত কসর করে আদায় করেছেন এবং তাদের পিছনে মক্কাবাসীরাও সলাত আদায়
করেছেন। অথচ তারা তাদেরকে সলাত পূর্ণ করার নির্দেশ দেননি। এটি প্রমাণ করছে যে, সেটি
ছিল মক্কাবাসীদের জন্যও সফর। অথচ মক্কা এবং আরাফার মধ্যের দূরত্ব ছিল মাত্র এক বারিদ
যা পায়ে হেঁটে এবং উটে চড়ে অর্ধ দিবসের রাস্তা। [(বিঃ দ্রঃ) এক বারিদ হচ্ছে বার
(১২) মাইল।] হক হচ্ছে এই যে, সফরের কোন নির্দিষ্ট সীমা শরীয়তে নেই। যেটাকে লোকেরা
সাধারণত সফর বুঝে সেটিই সফর।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪০ | 440 | ٤٤۰
৪৪০। সচ্চরিত্র গুনাহগুলোকে গলিয়ে ফেলে যেমনভাবে সূর্য বরফকে গলিয়ে
ফেলে এবং খারাপ চরিত্র আমলকে নষ্ট করে দেয় যেমনভাবে সেরকা মধুকে নষ্ট করে দেয়।
হাদিসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু আদী (২/৩০৪) ঈসা ইবনু মায়মূন হতে ... তার জীবনী সম্পর্কে
আলোচনা করার সময় বর্ণনা করে বলেছেনঃ তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন কেউ তার অনুসরণ করেননি।
তিনি ইবনু মাঈনের উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তিনি কিছুই না। বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারের অধিকারী।
নাসাঈ বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি কতিপয় হাদীস বর্ণনা
করেছেন সেগুলোর সবই বানোয়াট। এ কারণেই সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ
করে ভাল কাজ করেন নি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪১ | 441 | ٤٤۱
৪৪১। সচ্চরিত্র গুনাহগুলোকে গলিয়ে ফেলে যেমননিভাবে
পানি বরফকে গলিয়ে ফেলে এবং খারাপ চরিত্র আমলকে নষ্ট করে দেয় যেমনভাবে সেরকা মধুকে
নষ্ট করে দেয়।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটির দুটি সূত্র রয়েছেঃ
১। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে হাদীসটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে
(৩/৯৮/১) এবং “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৪৮/১/৮৩৮) এবং আবু মুহাম্মাদ কারী তার “আল-হাদীস”
গ্রন্থে (২/২০৩/১) ঈসা ইবনু মায়মূন হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি নিতান্তই দুর্বল। এ ঈসা হচ্ছেন মাদানী,
ওয়াসেতী নামে প্রসিদ্ধ। তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম (৩/১/২৮৭) তার পিতার উদ্ধৃতিতে
বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস যার হাদীস অগ্রহণযোগ্য। হায়সামী "আল-মাজমা"
গ্রন্থে (৮/২৪) তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
২। আনাস (রাঃ) হতে; এ হাদীসটি তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/৫৩)
বর্ণনা করেছেন। এটির সনদে রাওহ ইবনু আবদিল ওয়াহেদ ও তার শাইখ খালীদ ইবনু দালাজ রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। খালীদ ইবনু দালাজ সম্পর্কে
নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
দারাকুতনী তাকে মাতরূকদের [অগ্রহণযোগ্যদের] অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাওহ
ইবনু আবদিল ওয়াহেদ সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। তিনি বিতর্কিত হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪২ | 442 | ٤٤۲
৪৪২। সচ্চরিত্র গুনাহকে গলিয়ে ফেলে যেরূপ সূর্য বরফকে গলিয়ে [মোচন
করে] ফেলে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
হাদীসটি খারায়েতী “মাকারেমুল আখলাক” গ্রন্থে (পৃ. ৭) বাকিয়া ইবনুল
ওয়ালীদ সূত্রে আবু সাঈদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি নিতান্তই দুর্বল। এ আবু সাঈদ বাকিয়ার
মাজহুল শাইখদের একজন, যাদের থেকে তিনি তাদলীস করতেন। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ
বাকিয়া যখন তার শায়খের নাম নিবে না এবং তার কুনিয়াত বলবে না, তখন জানতে হবে যে,
তিনি কোন কিছুর সমকক্ষ নন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩ | 443 | ٤٤۳
৪৪৩। সাবধান! মাছির সাদৃশ ছাড়া দুনিয়ার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না
যা দুনিয়ার ফাঁকা স্থানে ধূলোবালুর ন্যায় উড়তে থাকবে। আল্লাহ! আল্লাহ! তোমাদের ভাই
কবরবাসীদের মধ্য হতে। কারণ তোমাদের কর্মগুলো পেশ করা হবে তাদের উপর।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হাকিম (৪/৩০৭) আবু ইসমাঈল সাকূনী সূত্রে মালেক ইবনু আদা হতে বর্ণনা
করেছেন ...। অতঃপর বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ সনদটিতে দু'জন
মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তারা দু’জন হচ্ছেন সাকূনী এবং ইবনু আদ্দা যেরূপভাবে
তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে স্পষ্ট করেই বলেছেন। কিন্তু বলেছেনঃ নির্ভরযোগ্য বলা হয়েছে।
তিনি এর দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন যে, ইবনু হিব্বান কর্তৃক তারা দু’জনকে নির্ভরযোগ্য বলাকে
(৫/৩৮৮, ৭/৬৫৬) গ্রহণ করা যায় না। কারণ তিনি মাজহুল বর্ণনাকারীদেরকে নির্ভরযোগ্য বলার
ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪ | 444 | ٤٤٤
৪৪৪। সর্ব প্রথম ইবলিস ক্রন্দন করে এবং সর্ব প্রথম সেই গান করে।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
এটি গাযালী (২/২৫১) জাবের (রাঃ)-এর হাদীস হতে মারফু হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়া” গ্রন্থে বলেনঃ জাবের (রাঃ)-এর হাদীস হতে আমি এটির কোন
ভিত্তি পাচ্ছি না। হাদীসটি “মুসনাদুল ফিরদাউস” গ্রন্থের লেখক আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-এর
হাদীস হতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার পুত্র সেটিকে তার “মুসনাদ” গ্রন্থে উল্লেখ করেননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৫ | 445 | ٤٤۵
৪৪৫। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে যা আছে তা চাইবে, আসমান তার জন্য ছায়া
স্বরূপ হবে এবং যমীন হবে বিছানা স্বরূপ। সে দুনিয়ার ব্যাপারে কিছু গুরুত্ব দিবে না,
সে চাষ করবে না অথচ সে রুটি খাবে এবং সে গাছ লাগাবে না অথচ সে ফল খাবে, আল্লাহর উপর
ভরসা করে তার সম্ভষ্টি লাভের জন্য। আল্লাহ সাত আসমান এবং সাত যমীনে তার রিকের জন্য
যামিন হয়ে যাবেন। তারা (লোকেরা) তাতে কষ্ট করবে এবং হালাল অর্জন করবে। অথচ সে তার
রিযক আল্লাহর নিকট হতে বিনা হিসাবে পূর্ণ করবে মৃত্যু আসা পর্যন্ত।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (১/১১২) এর চেয়ে দীর্ঘ হাদীসে
এবং হাকিম (৪/৩১০) ইব্রাহীম ইবনু আমর সাকসাকী সূত্রে তার পিতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর (হাকিম) বলেছেনঃ সনদটি সহীহ।
যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ বরং মুনকার এবং জাল (বানোয়াট)। কারণ
আমর ইবনু বাকর (পিতা) ইবনু হিব্বানের নিকট মিথ্যার দোষে দোষী। তার ছেলে ইবরাহীম সম্পর্কে
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী ইবরাহীমের জীবনীতে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ
ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি তার পিতা হতে বানোয়াট বহু কিছু বর্ণনা করেছেন।
তার পিতা কিছুই না। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বানের পূরো বক্তব্য হচ্ছে, ইবরাহীম ইবনু
আমর এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তার হাতই হাদীসটি তৈরি করেছে। কারণ এটি রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা নয়, ইবনু উমার (রাঃ)-এর কথা নয়, নাফে'রও কথা
নয়। বরং এটি হাসানের কথা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৬ | 446 | ٤٤٦
৪৪৬। আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দিব না সর্বোত্তম ফেরেশতা সম্পর্কে তিনি
হচ্ছেন জিবরীল (আঃ)। সর্বোত্তম নাবী সম্পর্কে তিনি হচ্ছেন আদম (আঃ)। সর্বোত্তম দিবস
সম্পর্কে সেটি হচ্ছে জুম'আর দিবস। সর্বোত্তম মাস সম্পর্কে সেটি হচ্ছে রমযান মাস। সর্বোত্তম
রাত সম্পর্কে সেটি হচ্ছে লায়লাতুল কাদরের রাত এবং সর্বোত্তম নারী সম্পর্কে তিনি হচ্ছেন
মারইয়াম বিনতু ইমরান।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (১১৩৬১) নাফে আবু হুরমুয সূত্রে আতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি বানোয়াট। নাফে আবু হুরমুযকে ইবনু মা'ঈন মিথ্যুক
আখ্যা দিয়েছেন। নাসাঈ বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী হচ্ছেন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম। সহীহ হাদীসের দলীল দ্বারা তা প্রমাণিত। তিনি বলেনঃ “আমি কিয়ামত দিবসে
লোকদের সর্দার...।” হাদীসটি ইমাম মুসলিম (১/১২৭) বর্ণনা করেছেন। এটি প্রমাণ করছে যে,
আলোচ্য হাদীসটি বানোয়াট। তা সত্ত্বেও "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করা
হয়েছে।
হাদীসটি হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/১৯৮) উল্লেখ করেছেন এবং
সেটিকে নাফে'র কারণে দুর্বল বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি মাতরূক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৭ | 447 | ٤٤۷
৪৪৭। শেষ যামানায় জাহেল আবেদ এবং ফাসেক কারীদের সমারোহ ঘটবে।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু হিব্বান "আল-মাজরুহীন" গ্রন্থে (৩/১৩৫), হাকিম
(৪/৩১৫), আবু নুয়াইম (২/৩৩১-৩৩২) এবং তার থেকে দাইলামী (৪/৩১৯) এবং আবু বাকর আজুরী
"আখলাকুল ওলামা" গ্রন্থে (পৃ. ৬২) ইউসুফ ইবনু আতিয়া সূত্রে সাবেত হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আবু নুয়াইম বলেনঃ এটি গারীব। এটিকে আমরা একমাত্র ইউসুফ ইবনু আতিয়া
হতে লিখেছি। তার হাদীসের মধ্যে মুনকার রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান তাকে জাল করার দোষে দোষী করেছেন। হাকিম
চুপ থেকেছেন। যার জন্য যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইউসুফ হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)।
বুখারী বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। তা সত্ত্বেও সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮ | 448 | ٤٤۸
৪৪৮। এ উম্মাত (অথবা বলেনঃ আমার উম্মাত) সর্বদা কল্যাণের মধ্যেই থাকবে
যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের মসজিদগুলোতে নাসারাদের মেহরাবের ন্যায় মেহরাব তৈরি না করবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আবী শায়বা “আল-মুসান্নাফ” গ্রন্থে (১/১০৭/১) বর্ণনা করেছেন।
যার সনদে বর্ণনাকারী আবু ইসরাঈল ও তার শাইখ মূসা আল-জুহানী রয়েছেন। তিনি বলেন যে,
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ...।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদটি দুটি কারণে দুর্বলঃ
১। এটি মু'জাল। কারণ মূসা জুহানী হচ্ছেন ইবনু আবদিল্লাহ। তিনি সাহাবী
হতে তাবেঈর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। অতএব তিনি তাবে তাবেঈ । সুয়ূতী যে বলেছেনঃ হাদীসটি
মুরসাল, তার এ কথা সুচিন্তিত নয়। কারণ মুরসাল হচ্ছে তাবেঈর কথা। তিনি বলছেনঃ রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ... অথচ এটি সেরূপ নয়।
২। আবু ইসরাঈল দুর্বল। তার নাম হচ্ছে ইসমাঈল ইবনু খালীফা আল-আবাসী।
হাফিয “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার হেফযে ক্রটি ছিল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯ | 449 | ٤٤۹
৪৪৯। মসজিদের নিকটে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাঁড়ালেন
তখন আমি তার নিকট উপস্থিত হলাম। অতঃপর তিনি মেহরাবে (অর্থাৎ মেহরাবের স্থলে) প্রবেশ
করলেন। তারপর তিনি তাকবীর সহ তার দু'হাত উত্তোলন করলেন। অতঃপর তার ডান হাতকে বাম হাতের
উপরে দিয়ে বুকের উপর রাখলেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি বাইহাকী (২/৩০) মুহাম্মাদ ইবনু হাজার হাযরামী হতে এবং তিনি সাঈদ
ইবনু আব্দিল জাব্বার ইবনে ওয়ায়েল হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রেই বাযযার হাদীসটি
তার “আয-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (২৬৮) এবং তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (২২/৪৯/১১৮)
উল্লেখ করেছেন। হায়সামী “আল-মাজমা” গ্রন্থে (১/২৩২, ২/১৩৪-১৩৫) বলেনঃ তার সনদে সাঈদ
ইবনু আব্দিল জাব্বার রয়েছেন। তার সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। ইবনু হিব্বান
তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু হাজার দুর্বল বর্ণনাকারী।
তিনি অন্য স্থানে বলেনঃ তাতে মুহাম্মাদ ইবনু হাজার রয়েছেন। তার সম্পর্কে বুখারী বলেনঃ
তার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। যাহাবী বলেনঃ তার কতিপয় মুনকার রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনুত তুরকুমানী “জাওহারুন নাকী” গ্রন্থে একই সমস্যার
কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ বর্ণনাকারীনী উম্মু আব্দিল জাব্বার হচ্ছেন উম্মু ইয়াহইয়া।
আমি তার অবস্থা সম্পর্কে জানি না এবং তার নাম সম্পর্কেও জানি না। আলেমদের ভাষ্য হতে
স্পষ্ট হয়েছে যে, এ হাদীসটির সনদে তিনটি সমস্যা রয়েছেঃ ১। মুহাম্মাদ ইবনু হাজার।
২। সাঈদ ইবনু আব্দিল জাব্বার। ৩। উম্মু আব্দিল জাব্বার।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
(সমাপ্ত)
জাল-জইফ হাদিসের অন্যান্য পর্ব দেখতে এদের উপর ক্লিক করুন।
১। প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
জাল-জইফ হাদিসের অন্যান্য পর্ব দেখতে এদের উপর ক্লিক করুন।
১। প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook,
Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে
শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের
(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ
থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর
কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ
মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি
আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
Please Share On
No comments:
Post a Comment