Search This Blog

Sunday, July 12, 2020

জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)-( সপ্তম পর্ব)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)
প্রচারে-PMMRC
( সপ্তম পর্ব)
পূর্বের পর্বগুলো দেখতে চাইলে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

  ( সপ্তম পর্ব)


জাল-জইফ হাদিসসমূহ
(পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস )

৪৫০। কোন পাথরের উপর তোমাদের কেউ যদি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে অবশ্যই তা তার উপকার করবে।
হাদীসটি জাল।
যেমনটি ইবনু তাইমিয়্যা ও অন্যরা বলেছেন।
শাইখ আলী আল-কারী তার “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (পৃ. ৬৬) বলেনঃ ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেনঃ এটি মূর্তিপূজকদের কথা। যারা পাথরের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করে। ইবনু হাজার আসকালানী বলেনঃ হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫১। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহ নিকট হতে এমন কিছু পৌঁছবে যাতে ফযীলত রয়েছে। অতঃপর সে তাকে ঈমানের সাথে সাওয়াব অর্জনের আশায় গ্রহণ করবে, আল্লাহ তাকে তাই দান করবেন। যদিও সেটি সেরূপ নাও হয়।
হাদীসটি জাল।
এটি হাসান ইবনু আরাফা তার “জুযউ” গ্রন্থে (১/১০০), ইবনুল আবার তার "আল-মুজাম" গ্রন্থে (পৃ. ২৮১), আবু মুহাম্মদ খাল্লাল “ফাযলু রাজাব” গ্রন্থে (১৫/১-২), আল-খাতীব (৮/২৯৬) এবং মুহাম্মাদ ইবনু তুলুন “আল-আরবাউন” গ্রন্থে (২/১৫) ফুরাত ইবনু সালমান এবং ঈসা ইবনু কাসীর সূত্রে আবু রাজা হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রেই ইবনুল জাওয়ী তার “মাওযু'আত” গ্রন্থে (১/২৫৮) উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। আবু রাজা মিথ্যুক। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২১৪) তা সমর্থন করেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ আমি এ আবু রাজাকে চিনি না। হাফিয সাখাবীও “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে (পৃ. ১৯১) স্পষ্ট করে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায় না। তার "আল-কাওলুল বাদী" গ্রন্থেও (পৃ. ১৯৭) তিনি অনুরূপ কথাই বলেছেন।
ঐতিহাসিক ইবনু তুলুন বলেছেনঃ সনদটি ভাল। আবু রাজা হচ্ছেন মুহরেয ইবনু আবদিল্লাহ জাযারী হিশামের দাস, তিনি নির্ভরযোগ্য। এছাড়া হাদীসটির বিভিন্ন সূত্র এবং শাহেদ রয়েছে।
তার এ বক্তব্য এ বিদ্যার নীতি হতে খুবই দূরবর্তী কথা। কারণ যদি ধরে নেয়া হয় যিনি মুহরেয তিনিই আবু রাজা, তাহলে তিনি মুদাল্লিস যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন। কারণ তিনি আন আন করে বর্ণনা করেছেন। কীভাবে সনদটি ভাল? [মুদাল্লিসের ব্যাখ্যা দেখুন (৫৭) পৃষ্ঠায়]।
আবু রাজাই যে মুহরেয এটি দূরবর্তী কথা বিভিন্ন কারণে। যার একটি হচ্ছে এই যে, তারা তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন তার শায়খের মধ্যে একজন হচ্ছেন ফুরাত ইবনু সালমান। বাস্তবে এ সনদে তার উল্টা। ফুরাত হচ্ছেন তার (আবৃ রাজা) থেকে হাদীসটি বর্ণনাকারী।
হাদিসটি হাফিয কাসেম ইবনু হাফিয ইবনে আসাকির "আল-আরবাউন" গ্রন্থে (১১/১) আবু রাজা হতেই দুটি সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটিতে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। আমি আমার পিতা হতে শুনেছি তিনি তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনুল জাওয়ী দারাকুতনীর বর্ণনায় ইবনু উমার (রাঃ) হতে উল্লেখ করেছেন যার সনদে ইসমাঈল ইবনু ইয়াহইয়া রয়েছেন। অতঃপর তাকে ইবনুল জাওষী মিথ্যুক বলেছেন।
তিনি "আল-মাজরুহীন" গ্রন্থে (১/১৯৯) ইবনু হিব্বানের বর্ণনা থেকেও বাযী' আবীল খালীল সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াসে এবং সাবেত ইবনু আবান থেকে আনাস (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আমি সাবেত ইবনু আবানকে চিনি না। ইবনুল জওয়ী বলেনঃ বাযী মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী তার জীবনীতে বলেছেনঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে কতিপয় বানোয়াট হাদীস এনেছেন, তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন। তিনি "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মতারূক। হাফিয ইবনু হাজারের "লিসানুল মীযান" গ্রন্থে এসেছে, দারাকুতনী বলেনঃ তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন তা বাতিল। হাকিম বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী ইবনুল জাওয়ীর সমালোচনা করেছেন। অতঃপর আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের অন্য একটি সূত্র উল্লেখ করেছেন। যার সনদে মিথ্যার দোষে দোষী বর্ণনাকারী রয়েছে। অনুরূপভাবে ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীসের আরো একটি সূত্র ওয়ালীদ ইবনু মারওয়ানের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। এ ওয়ালীদ মাজহুল, যেমনভাবে ইবনু আবী হাতিম (৪/২/১৮) বলেছেন। যাহাবী এবং আসকালানীও একই কথা বলেছেন। এছাড়া তার সনদের মধ্যে রয়েছে ইনকিতা' (বিচ্ছিন্নতা)।
সুয়ূতী স্বপ্নের মাধ্যমে এ হাদীসটি সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেনঃ এটি আমার থেকেই, আমিই এটি বলেছি। আলেমদের নিকট স্বপ্ন দ্বারা শারীয়াতের কোন হুকুম সাব্যস্ত হয় না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসও সাব্যস্ত হয় না। মোটকথা হাদীসটিকে কোন সূত্র দ্বারাই দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায় না । কারণ এটির একটি অন্যটির চেয়ে বেশী দুর্বল।
ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে উল্লেখ করে ঠিকই করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার তার অনুসরণ করে বলেছেনঃ এটির ভিত্তি নেই। শাওকানীও তাকে সমর্থন করেছেন। কোন কোন আলেম বলেছেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়ে বলেছেনঃمن حدث عني بحديث يرى أنه كذب فهو أحد الكذابين "যে আমার থেকে হাদীস বর্ণনা করবে অথচ দেখা যাচ্ছে যে, সেটি মিথ্যা, তাহলে সে মিথ্যুকদের একজন।" হাদীসে আরো এসেছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে তার বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” যেখানে বর্ণনাকারী এবং মিথ্যারোপকারী সম্পর্কে এ সতর্কবাণী, সেখানে আমলকারীর কী হতে পারে? দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার ক্ষেত্রে চাই সেটি আহকামের মধ্যে হোক বা ফাযায়েলের মধ্যেই হোক, কোন পার্থক্য নেই। সবই শারীয়াত।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫২। যার কাছে আল্লাহর নিকট হতে ফীলতের কোন কিছু পৌঁছল। অতঃপর যে ফযীলত তার নিকট পৌঁছেছে সে তা গ্রহণ করল, আল্লাহ তাকে তাই দান করবেন যা তার নিকট পৌঁছেছে, যদিও সে হাদীস বর্ণনাকারী মিথ্যুক হয়।
হাদীসটি জাল।
এটি বাগাবী “হাদীসু কামিল ইবনু তালহা” গ্রন্থে (৪/১), ইবনু আব্দিল বার “জামেউ বায়ানিল ইলম” গ্রন্থে (১/২২), আবু ইসমাঈল সামরিকান্দী "মা কারুবা সানাদুহু" গ্রন্থে (২/১) এবং ইবনু আসাকির “আত-তাজরীদ” গ্রন্থে (৪/২/১) আব্বাদ ইবনু আবদিস সামাদ সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আব্বাদ মিথ্যার দোষে দোষী। যাহাবী বলেনঃ ইবনু হিব্বান তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি আনাস (রাঃ) হতে একটি বানোয়াট কপি বর্ণনা করেছেন। যাহাবী তার হাদীসের অংশ বিশেষ উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি লম্বা হাদীস উল্লেখ করেছেন যা গল্পবাজদের জাল ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অতঃপর আরেকটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ।
ইবনু আব্দিল বার বলেছেনঃ বিদ্বানগণের এক জামা'আত ফাযায়েলের ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন এবং তারা আহকামের হাদীসের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রদর্শন করেছেন। এ কথার সমালোচনা করে শাওকানী “আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূ‘আহ” গ্রন্থে (পৃ. ১০০) বলেছেনঃ শারীয়াতের আহকামগুলো সবই সমান। সেগুলোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যা দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়নি তা প্রচার করা কারো জন্য হালাল নয়। তা করলে আল্লাহ যা বলেননি তা বলার অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তাতে রয়েছে তার জন্য শাস্তি ...। (সূরা আল-হাক্কার ৪৩ ও ৪৭ নাম্বার আয়াত দ্রষ্টব্য)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৩। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে কোন ফযীলত পৌঁছল, অতঃপর সে তা বিশ্বাস করল না, সে তা পাবে না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু ইয়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৬/১৬৩) এবং ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (কাফ ৪০/২) বাযী আবুল খালীল খাসসাফ সূত্রে সাবেত হতে এবং তিনি আনাস (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ জানি না বাষী ছাড়া অন্য কেউ এটি বর্ণনা করেছেন কিনা।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হাদীসটি জাল করার দোষে দোষী। একটি হাদীস পূর্বে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হাদীসটি হায়সামী “আল-মাজমা” গ্রন্থে (১/১৪৯) উল্লেখ করে বলেছেনঃ বাযী দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং তিনি মিথ্যার দোষে দোষী; যেমনভাবে যাহাবী বলেছেন। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান এবং অন্যদের উক্তিও একটি হাদীসের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৪। তোমরা যখন সলাত আদায় করবে, তখন তোমরা বলঃ সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার, আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দশবার। তোমরা অবশ্যই তা দ্বারা পেয়ে যাবে তাদেরকে যারা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে এবং তোমাদের পরবর্তীদের চেয়ে তোমরা অগ্রগামী হয়ে যাবে।
হাদীসটি এ বর্ণনাভঙ্গিতে দুর্বল।
এটি নাসাঈ (১/১৯৯) ও তিরমিয়ী (২/২৬৪-২৬৫) আত্তাব ইবনু বাশীর সূত্রে খুসায়েফ হতে ... বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। খুসায়েফ হচ্ছেন ইবনু আবদির রহমান জাযারী। তিনি সত্যবাদী, কিন্তু তার হেফযে ক্রটি ছিল। শেষ বয়সে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। আত্তাবও সত্যবাদী কিন্তু ভুল করতেন। হাদীসটির ভাষায়ঃ و لا إله إلا الله عشرا অংশটুকু মুনকার। এটি আবৃ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সহীহ্ হাদীস বিরোধী। তাতে রয়েছেঃ لا إله إلا الله وحده لا شريك له এক বার বলার কথা। তার সনদটি সহীহ; যেমনভাবে আমি "সাহীহা"র মধ্যে (নং ১০০) বর্ণনা করেছি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৫। সৎ ব্যক্তি সুসংবাদ নিয়ে আসে আর মন্দ ব্যক্তি দুঃসংবাদ নিয়ে আসে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/৯০) এবং ইবনু আসাকির (১৩/১৮৫/২) মুহাম্মাদ ইবনুল কাসেম তাইকানী সূত্রে উমর ইবনু হারূণ ... হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ হাদীসটি গারীব। আমরা এটি একমাত্র মুহাম্মাদ ইবনুল কাসেমের হাদীস হতে লিখেছি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি জলকারী। তার শাইখ উমর ইবনু হারণ মিথ্যুক। সুয়ুতীর নিকট এ তথ্য লুক্কায়িত ছিল, এজন্য “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে আবু নুয়াইম এবং ইবনু আসাকিরের বর্ণনায় আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবীও কোন কথা বলেননি। শুধু বলেছেনঃ তার থেকে দাইলামী বর্ণনা করেছেন। আমি হাদীসটির অন্য একটি সূত্র পেয়েছি। হাদীসটি আবু বাকর আযদী তার হাদীস গ্রন্থে (৫/১) ইয়াহইয়া ইবনু আব্দুবিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। কারণ ইবনু মা'ঈন তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। আর আহমাদ তার প্রশংসা করেছেন! আবু মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাবকে আমি চিনি না। তার নাম আব্দুল মালেক।
হাদীসটির একটি শাহেদ এসেছে যেটির এক পয়সাও মূল্য নেই। আবুশ শাইখ "আল-আমসাল" গ্রন্থে (৬৬) দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সূত্রে আম্বাসা ইবনু আবদির রহমান কুরাশী হতে উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আম্বাসা এবং দাউদ উভয়েই জলিকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৬। ফাতিমা তার লজ্জাস্থানকে পবিত্র রেখেছে, ফলে আল্লাহ তার সন্তানদেরকে জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী (১/২৫৭/১), উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (পৃঃ ২৮৬), ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (কাফ ২৪৯/১), ইবনু শাহীন "ফাযায়েলে ফাতিমা" গ্রন্থে (পাতা ৩/১), তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/৬১), ইবনু মান্দা “আল-মা'রিফাত” গ্রন্থে (২/২৯৩/১) এবং ইবনু আসাকির (৫/২৩/১,১৭/৩৮৬/১) মুয়াবিয়া ইবনু হিশাম সূত্রে উমার ইবনু গিয়াস হাযরামী হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু শাহীন এবং আবুল কাসেম মেহরানী “আল-ফাওয়ায়েদুল মুন্তাখাবা” গ্রন্থে (২/১১/২) হাফস ইবনু উমার উবুল্লী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইবনু শাহীন মুহাম্মাদ ইবনু ওবায়েদ ইবনে উতবাহ সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক বালখী হতে এবং তিনি তালীদ হতে ...বর্ণনা করেছেন।
এ তিনটি সূত্রই আসেম হতে। সবগুলোই নিতান্তই দুর্বল। একটি অন্যটির চেয়ে বেশী দুর্বল। প্রথমটির সনদে উমার ইবনু গিয়াস রয়েছেন। উকায়লী বলেনঃ বুখারী বলেছেনঃ তার হাদীসে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। উকায়লী বলেনঃ সে হাদীসটি হচ্ছে এটিই। বুখারী “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি যে আসেম হতে শুনেছেন তা উল্লেখ করা হয়নি, হাদীসটি মু'যাল। ইবনু হিব্বান তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি আসেম হতে যা তার হাদীস নয় তা বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (৩/১/১২৮) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। তার থেকে বর্ণনাকারী মুয়াবিয়া ইবনু হিশামের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। ইবনু আদী কর্তৃক বর্ণিত সূত্রগুলো হতেই ইবনুল জাওয়ী তার “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (১/৪২২) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটির সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমর ইবনু গিয়াস (তাকে বলা হয় উমার)। তাকে দারাকুতনী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি আসেম হতে এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যা তার হাদীস নয়। হাকিম হাদীসটির সনদ সম্পর্কে বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ বরং দুর্বল।
মুয়াবিয়া এককভাবে (তাকেও দুর্বল বলা হয়েছে) ইবনু গিয়াস হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি একেবারেই দুর্বল। উকায়লী ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মওকুফই উত্তম।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মওকুফ হিসাবেও সহীহ নয়।
দ্বিতীয় সূত্র; তাতে রয়েছেন হাফস ইবনু উমার উবুল্লি। তিনি মিথ্যুক।
তৃতীয় সূত্র; তাতে রয়েছেন তালীদ। ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, উসমানকে (রাঃ) গালী দিতেন। আবু দাউদ বলেনঃ তিনি রাফেয়ী, আবু বাকর ও উমারকে (রাঃ) গালী দিতেন। অন্য ভাষায় বলেছেনঃ তিনি খাবীস।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৭। অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে [অর্থাৎ ফাতিমা (রাঃ) কে] শাস্তি দিবেন না এবং তার সন্তানকেও নয়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী (৩/১৩১/২) বর্ণনা করেছেন। তার সূত্রে ইসমাঈল ইবনু মূসা, মুহাম্মাদ ইবনু মারযুক এবং ঈযাজী রয়েছেন। সুয়ূতী "আল-লাআলী" গ্রন্থে (১/৪০২) হাদীসটিকে পূর্বের হাদীসের শাহেদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং চুপ থেকেছেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৯/২০২) বলেছেনঃ তার (তাবারানীর) বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। ইবনু আররাক "তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (১/৪১৭) তা সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটিতে বহুবিধ সমস্যা রয়েছেঃ
১। ইসমাঈলকে ইবনু হিব্বান ছাড়া অন্য কেউ নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার নির্ভরযোগ্য বলা গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে যখন অন্যরা তার বিরোধিতা করেছেন, যেমনভাবে এখানে ইবনু আবী হাতিম তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তিনি মাজহুল (অপরিচিত)।
২। মুহাম্মাদ ইবনু মারযুক; যদিও ইমাম মুসলিম তার থেকে বর্ণনা করেছেন তবুও তার মধ্যে লাইয়েনুন (দুর্বলতা) রয়েছে; যেমনভাবে ইবনু আদী বলেছেন।
৩। ঈযাজী; সাম'আনী তাকে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলেননি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৮। যিম্মীর দিয়াত হচ্ছে মুসলিম ব্যক্তির দিয়াত।
হাদীসটি মুনকার।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৪৫-৪৬/৭৮০), দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃ. ৩৪৩, ৩৪৯) এবং বাইহাকী (৮/১০২) আবু কুরয আল কুরাশী সূত্রে নাফে হতে ... বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন এ ভাষায়ঃ হাদীসটি নাফে' হতে আবু কুরয ছাড়া অন্য কেউ মারফু হিসাবে বর্ণনা করেননি। তিনি মাতরূক। তার নাম আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দিল মালেক ফেহরী। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার জীবনীর মধ্যে বলেছেনঃ তার এ হাদীসটি সর্বাপেক্ষা বেশী মুনকার। অতঃপর দারাকুতনী হাদীসটি উসামা ইবনু যায়েদ হতে বর্ণনা করেছেন। তার সমস্যা হিসাবে বলেছেনঃ তাতে উসমান ইবনু আবদির রহমান ওক্কাসী রয়েছেন; তিনি মাতরূকুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। অতঃপর হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বাইহাকী বর্ণনা করেছেন এবং তার সমস্যা হিসাবে বলেছেনঃ তাতে হাসান ইবনু আম্মারা রয়েছেন; তিনি মাতরূক। তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। তিনি আরো একটি সূত্র হতে বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে আবু সাঈদ বাক্কাল রয়েছেন। বাইহাকী বলেনঃ তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। যায়লাঈ (৪/৩৩৬) বলেনঃ তার মধ্যে লাইয়েনুন (দুর্বলতা) রয়েছে।
হাদীসটি রাফেয়ী তার “হাদীস” গ্রন্থে (২/১৯) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এ সনদে বারাকা ইবনু মুহাম্মাদ আনসারী রয়েছেন, তিনি হালাবী। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
অতঃপর বাইহাকী যুহরীর হাদীস হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মুরসাল হওয়ার কারণে শাফেয়ী হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ যুহরীর মুরসাল মন্দ।
ইমাম মুহাম্মাদ “কিতাবুল আসার” গ্রন্থে (পৃ. ১০৪) বর্ণনা করে বলেছেনঃ আমাদেরকে আবু হানীফা (রহঃ) খবরটি হায়সাম হতে মারফূ হিসাবে শুনিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মু'যাল। কারণ এ হায়সাম হচ্ছেন ইবনু হাবীব সায়রাফী কুফী। তিনি তাবে তাবেঈ। তিনি ইকরিমা এবং আসেম ইবনু যামুরা হতে বর্ণনা করেছেন।
আবু হানীফা (রহঃ) এর হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, যেমনটি তার বিবরণ গেছে ৩৯৭ নং হাদীসে।
তাকে হেফযের দিক দিয়ে বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনু আদী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
তার সম্পর্কে ইমামগণের সেই সব ভাষ্যগুলো উল্লেখ করছি যেগুলো সহীহ বর্ণনায় তাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। যাতে করে পাঠকবৃন্দের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় এবং কেউ এরূপ ধারণা ও দাবী না করে যে, আমরা ইজতিহাদ করে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলছি। যা কিছু উল্লেখ করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র জ্ঞানীজন ও বিশেষজ্ঞদের অনুসরণার্থেই করা হচ্ছে।
১। ইমাম বুখারী “তারীখুল কাবীর” গ্রন্থে (৪/২/৮১০) বলেনঃ سكتوا عنه সাকাতু আনহু।
[(হাফিয ইবনু কাসীর “মুখতাসারু উলুমিল হাদীস” গ্রছে (পৃ. ১১৮) বলেনঃ ইমাম বুখারী যখন কোন ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ সাকাতু আনহু অথবা বলেনঃ ফীহে নাযরুন (তার মধ্যে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে)। তখন জানতে হবে যে, তার স্তরটি তার নিকট অত্যন্ত নীচু এবং নিম্ন মানের।
হাফিষ ইরাকী বলেনঃ এরূপ বাক্য ইমাম বুখারী সেই ব্যক্তি সম্পর্কেই বলেছেন, যার হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ পরিত্যাগ করেছেন তথা গ্রহণ করেননি। দেখুনঃ “আর-রাফউ ওয়াত তাকমীল” (পৃ: ১৮২-১৮৩)। “মাসায়েলুল ইমামে আহমাদ” গ্রছে (পৃঃ ২১৭) মারওয়াযী বলেনঃ আমি বললাম, কখন কোন ব্যক্তির হাদীসকে পরিত্যাগ করা হয়? তিনি উত্তরে বললেনঃ যখন তার বেশী ভুল সংঘটিত হয়।)]
২। ইমাম মুসলিম “আল-কুনা ওয়াল আসমা” গ্রন্থে (কাফ ৩১/১) বলেনঃمضطرب الحديث ليس له كبير حديث صحيح "তিনি মুযতারিবুল হাদীস তার বেশী পরিমাণে সহীহ হাদীস নেই।"
৩। ইমাম নাসাঈ তার "আয-যুয়াফা ওয়াল মাতরূকীন" গ্রন্থের শেষে (পৃ. ৫৭) বলেনঃليس بالقوي في الحديث، وهو كثير الغلط على قلة روايته "তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নন। তার বর্ণনা কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেশী ভুলকারী।"
৪ । ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/৪০৩) বলেনঃ
له أحاديث صالحة، وعامة ما يرويه غلط وتصاحيف وزيادات في أسانيدها ومتونها، وتصاحيف في الرجال، وعامة ما يرويه كذلك، ولم يصح له في جميع ما يرويه، إلا بضعة عشر حديثا، وقد روى من الحديث لعله أرجح من ثلاثمائة حديث، من مشاهير وغرائب، وكله على هذه الصورة، لأنه ليس هو من أهل الحديث، ولا يحمل عمن يكون هذه صورته في الحديث
তার বর্ণিত কতিপয় সহীহ হাদীস রয়েছে, তবে তার অধিকাংশ বর্ণনাই ভুল। পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। সেগুলোর সনদ এবং মতনে (ভাষায়) অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে পড়তে ও লিখতে ভুল করা হয়েছে। তার অধিকাংশ বর্ণনাগুলো সেরূপই। তিনি যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে ১৩ হতে ১৯টি হাদীস ছাড়া বাকীগুলো সহীহ নয়। তিনি মশহুর ও গারীব মিলে একই ধাচের প্রায় তিনশতটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি মুহাদ্দিসদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে যার অবস্থা এই, তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা হয় না।
৫। ইবনু সা'দ “আত-তাবাকাত” গ্রন্থে (৬/২৫৬) বলেনঃ كان ضعيفا في الحديث তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন।
৬। উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (পৃ. ৪৩২) বলেনঃحدثنا عبد الله بن أحمد قال سمعت أبي يقول: حديث أبي حنيفة ضعيف "আমাদের নিকট আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমার পিতাকে বলতে শুনেছিঃ আবু হানীফা (রহঃ) এর হাদীস দুর্বল।"
৭। ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তাব্দীল” গ্রন্থে (৪/১/৪৫০) বলেন, হাজ্জাজ ইবনু হামযা আমাদেরকে বলেছেন, আমাদেরকে আব্দান ইবনু উসমান বলেছেনঃسمعت ابن المبارك يقول: كان أبو حنيفة مسكينا في الحديث "তিনি ইবনু মুবারাককে বলতে শুনেছেনঃ আবু হানীফা (রহঃ) ছিলেন হাদীসের ক্ষেত্রে মিসকীন।" (এ সনদ দুটো সহীহ)।
৮। আবু হাফস ইবনু শাহীন বলেনঃ আবু হানীফা (রহঃ) এর ফিকহের জ্ঞানের ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু তিনি হাদীসের বিষয়ে সন্তোষজনক ছিলেন না। কারণ সনদগুলোর জন্য রয়েছেন সমালোচক। যার জন্য তিনি কি লিখেছেন তার সনদ সম্পর্কে জানতেন না। তবে তাকে মিথ্যুক বলা হয়নি। তাকে দুর্বল আখ্যা দেয়া হয়েছে। অনুরূপ কথা এসেছে “তারিখু জুরজন” গ্রন্থের শেষ কপিতে (পৃ. ৫১০-৫১১)।
৯। ইবনু হিব্বান বলেনঃ
وكان رجلا جدلا ظاهر الورع لم الحديث صناعته حدث بمئة وثلاثين حديثا مسانيد ما له حديث في الدنيا غيرها أخطأ منها في مئة وعشرين حديثا إما أن يكون أقلب إسناده أو غير متنه من حيث لا يعلم فلما غلب خطؤه على صوابه استحق ترك الاحتجاج به في الأخبار
"তিনি ছিলেন একজন তার্কিক, বাহ্যিকতায় ছিল পরহেজগারিতা, হাদীস তার কর্মের মধ্যে ছিল না। তিনি একশত ত্রিশটি মুসনাদ হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেগুলো ছাড়া দুনিয়াতে তার আর কোন হাদীস নেই। যার মধ্যে একশত বিশটিতেই তিনি ভুল করেছেন। হয় সনদ উল্টিয়ে ফেলেছেন, না হয় তার অজান্তেই মতন (ভাষা) পরিবর্তন করে ফেলেছেন। অতএব যখন তার সঠিকের চেয়ে ভুলগুলোই বেশী, তখন হাদীসের ক্ষেত্রে তাকে গ্রহণ করার চেয়ে তাকে পরিত্যাগ করাই উপযোগী।"
১০। দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃ. ১২৩) বলেনঃ আবু হানীফা (রহঃ) মূসা ইবনু আবী আয়েশা হতে ... [জাবের (রাঃ)]-এর এ হাদীসটি মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেনঃمن كان له إمام فقراءة الإمام له قراءة "যার ইমাম রয়েছে ইমামের কিরাআত তার (মুক্তাদির) জন্য যথেষ্ট। অথচ আবু হানীফা (রহঃ) এবং হাসান ইবনু আম্মারা ছাড়া অন্য কেউ এ হাদীসটিকে মুসনাদ হিসাবে বর্ণনা করেননি। আবু হানীফা (রহঃ) এবং হাসান ইবনু আম্মারা; তারা উভয়েই দুর্বল।
১১। হাকিম “মারিফাতু উল্মিল হাদীস” গ্রন্থে তাকে [আবু হানীফা (রহঃ)] তাবে তাবেঈন এবং তাদের পরবর্তীদের মধ্য হতে সেই সব বর্ণনাকারীদের দলে উল্লেখ করেছেন যাদের হাদীস দ্বারা সহীহার মধ্যে দলীল গ্রহণ করেননি। অতঃপর তার বক্তব্য (পৃ. ২৫৬) শেষ করেছেন নিম্নের ভাষায়ঃ
"যে সব ব্যক্তিদের উল্লেখ করেছি তারা বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ। কিন্তু তাদেরকে নির্ভরযোগ্য হাফিযদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।"
১২। হাফিয আব্দুল হক ইশীলী "আল-আহকাম" গ্রন্থে (কাফ ১৭/২) খালেদ ইবনু আলকামা সূত্রে আব্দু খায়ের হতে উল্লেখ করেছেন, তিনি আলী (রাঃ) হতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওযু সম্পর্কে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি তার মাথা মাসাহ করেছেন একবার।" অতঃপর বলেছেনঃ অনুরূপভাবেই খালেদ হতে হাফিযগণ বর্ণনা করেছেন। অথচ আবু হানীফা (রহঃ) খালেদ হতে বর্ণনা করেছেন এ ভাষায়ঃ তিনি বলেনঃ তিনি তার মাথা মাসাহ করেছেন তিনবার।
لا يحتج بأبي حنيفة لضعفه في الحديثহানীফার (রহঃ) দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না, হাদিসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল হওয়ার কারণে।
১৩। ইবনুল জাওয়ী তাকে তার "আয-যুয়াফা ওয়া মাতরূকীন" গ্রন্থে (৩/১৬৩) উল্লেখ করেছেন এবং তার দুর্বল হওয়ার বিষয়টি নাসাঈ এবং অন্যদের থেকে বর্ণনা করেছেন। সাওরী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। নাযর ইবনু শুমায়েল বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।
১৪। যাহাবী “দীওয়ানুয যুয়াফা” গ্রন্থে (কাফ ২১৫/১-২) বলেনঃ নুমান [ইমাম (রহঃ)] সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তার অধিকাংশ বর্ণনাই ভুল। পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। সেগুলোর সনদ এবং মতনে (ভাষায়) অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে তার কতিপয় সহীহ হাদীস রয়েছে। নাসাঈ বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নন। তার বর্ণনা কম হওয়া সত্ত্বেও বেশী ভুল করেছেন। ইবনু মা'ঈন বলেনঃ তার হাদীস লিখা যাবে না। দেখুনঃ "আর-রাফউ ওয়াত তাকমীল" (পৃ. ১০২)।
ইবনু মাঈন হতুে আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে একাধিক মতামত এসেছে। একবার বলেছেনঃ তিনি নির্ভরশীল, আবার বলেছেনঃ তিনি দুর্বল, আবার বলেছেনঃ তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই, তিনি মিথ্যা বলেননি। আবার বলেছেনঃ আবু হানিফা আমাদের নিকট সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করা হয় নি।
এতে কোন সন্দেহ নেই আবু হানীফা (রহ:) সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তার হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে আয়ত্ব ও স্মৃতি শক্তির সংযোগ না ঘটবে। কিন্তু তা তার ক্ষেত্রে সাব্যস্ত হয়নি বরং উল্লেখিত ইমামগণের সাক্ষ্য দ্বারা উল্টাটি সাব্যস্ত হয়েছে। তারা এমন এক জামা'আত যাদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং বক্তব্যের অনুসরণ কারার কারণে কেউ পথভ্রষ্ট হয় না। আর তার সম্পর্কে তাদের উক্ত সাক্ষ্য ও উক্তি ইমাম সাহেবের দীনদারী, সংযমশীলতা ও ফিকহের ক্ষেত্রে মানহানিকরও নয়। যেমনটি তার পরবর্তী কিছু অন্ধভক্ত ধারণা করে থাকে। বহু ফাকীহ, কাযী ও নেককার সম্পর্কেই হাদীস শাস্ত্রের ইমামগণ তাদের মুখস্থ এবং আয়ত্ব শক্তিতে ক্রটি থাকার কারণে সমালোচনা করেছেন। তথাপিও তা তাদের দীন ও ন্যায়পরায়নতার ক্ষেত্রে ক্রটিযুক্ত করেছে বলে ধরা হয় না। যেমন সুলায়মান আল-ফাকীহ, শুরায়েক ইবনু আবদিল্লাহ আল-কাযী এবং আব্বাদ ইবনু কাসীর ও আরো অনেকে। এমনকি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ কাত্তান বলেনঃ 'আমরা সালেহীনদের (সৎ কর্মশীলদের) চেয়ে হাদীসের ক্ষেত্রে বেশী মিথ্যুক দেখি না। এটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম তার সহীহার মুকাদ্দিমাতে (১/১৩), অতঃপর এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ তাদের মুখে মিথ্যা প্রবাহিত হয়েছে, অথচ তার ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলেননি।
তিনি (ইমাম মুসলিম) আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারাক হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমি সুফিয়ান সাওরীকে বললামঃ আব্বাদ ইবনু কাসীরের সততা ও পরহেজগারিতার অবস্থা সম্পর্কে আপনি জানেন। কিন্তু তিনি যখনই হাদীস বর্ণনা করেছেন, মহা সমস্যা নিয়ে এসেছেন। অতঃপর আপনি মতামত দিয়েছেন যে, আমি যেন লোকদেরকে বলি তোমরা তার থেকে গ্রহণ করো না? সুফিয়ান বললেনঃ হ্যাঁ। আব্দুল্লাহ বললেনঃ আমি যখন কোন মজলিসে থাকতাম এবং সেখানে আব্বাদ সম্পর্কে আলোচনা হতো, তখন তার ধাৰ্মিকতার বিষয়ে প্রশংসা করতাম এবং বলতাম তার থেকে তোমরা গ্রহণ করো না।
আমি (আলাবনী) বলছিঃ এটিই হচ্ছে হক ও ইনসাফ ভিত্তিক কথা। এর উপরই আসমান ও যমীন প্রতিষ্ঠিত। ফিকহের পাণ্ডিত্য এক জিনিস আর হাদীস বহন ও তার হেফয করা হচ্ছে অন্য জিনিস। প্রতিটি বিষয়ের জন্যেই রয়েছে বিশেষ বিশেষ পণ্ডিতগণ। কোন সন্দেহ নেই ফিকহের বিদ্যায় এবং তার বুঝের ক্ষেত্রে তার (আবু হানীফার) মর্যাদা সুউচ্চ। এ কারণেই ইমাম শাফে'ঈ বলেছেনঃ ফিকহের ক্ষেত্রে মানুষ আবু হানীফার মুখাপেক্ষী। তবে তার কোন কোন গোড়া ভক্তদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। যারা ইমাম দারাকুতনীকে আক্রমণ করে থাকেন, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল এ কথা বলার কারণে। কারণ তিনি এরূপ মন্তব্যকারী একা নন। তার সাথে রয়েছেন বড় বড় বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণও যেমনভাবে আপনারা জেনেছেন।
আলোচ্য হাদীসটি ইবনুল জাওয়ী তার “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (৩/১২৭) প্রথম সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেন, দারাকুতনী বলেনঃ হাদীসটি বাতিল, এটির কোন ভিত্তি নেই। আবু কুরয হচ্ছেন আব্দুল্লাহ ইবনু কুরয; তিনি মাতরূক। সুয়ুতী “আল লাআলী” গ্রন্থে (২/১৮৯) তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। সম্ভবত সহীহ্ হাদীসের সাথে এ হাদীসটির বিরোধ হওয়ার কারণে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "আহলে কিতাবদ্বয়ের দিয়াত মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক, তারা হচ্ছে ইয়াহুদ ও নাসারা। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (নং ৬৬৯২-৫৭১৬), ইবনু আবী শায়বা "আল মুসান্নাফ" গ্রন্থে (১১/২৬/২) এবং সুনানের রচয়িতাগণ বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী এবং বাইহাকীও বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে তিরমিযী হাসান আখ্যা দিয়েছেন এবং ইবনু খুযায়মা বলেছেনঃ সহীহ; যেমনিভাবে হাফিয ইবনু হাজার "বুলুগুল মারাম" গ্রন্থে (৩/৩৪২-সুবুলুস সলাম সহ) বলেছেন। আমার নিকটেও এ হাদীসটির সনদ হাসান। আর এ কারণেই সুয়ুতীর উচিত ছিল আলোচ্য হাদীসটিকে "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ না করা।
আবু দাউদেও এরূপ হাদীস এসেছে। যার শাহেদও ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস হতে “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১৮৮/১) এসেছে। আমি আলোচ্য হাদীসের বিপরীতে এ হাসান হাদীসটির “ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থে (২২৫১) তাখরীজ করেছি।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৫৯ (ঈদুল) ফিতর এবং যুহার (কুরবানী) দিন বাদ দিয়ে নূহ (আঃ) সারা বছর ধরে সওম পালন করেছেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু মাজাহ (১/৫২৪) ইবনু লাহী'য়াহ সূত্রে জাফার ইবনু রাবীয়াহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
বুসয়র “আয-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ১০৮/২) বলেনঃ ইবনু লাহীয়াহ দুর্বল হওয়ার কারণে সনদটি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।
মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/৮২) আবু ফারাসকে চেনা যায় না হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তা ঠিক নয়, কারণ তার নাম হচ্ছে ইয়াযীদ ইবনু রাবাহ আস-সাহমী মিসরী। আজালী তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে (নং ১৫৭২) উল্লেখ করেছেন। তিনি তাবেঈ নির্ভরযোগ্য। তিনি ইমাম মুসলিমের বর্ণনাকরী।
এছাড়া যদি হাদীসটি সহীহও হয়; তবুও তার উপর আমল করা জায়েয হবে না। কারণ এটি ছিল আমাদের পূর্ববর্তীদের শারীয়াতে। সেটি আমাদের শারীয়াত নয়। কারণ আমাদেরকে সিয়ামুদ দাহার হতে নিষেধ করা হয়েছে, যা নাসাঈ (১/৩২৪) সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬০। যে তার যিম্মাদারিত্ব পূর্ণ করে তাদের মধ্যে আমি উত্তম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটি সেই সময়ে বলেছিলেন যখন তিনি যিম্মীদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করার দায়ে এক মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ দেন।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু আবী শায়বা (১১/২৭/১), আব্দুর রাযযাক (১৮৫১৪), আবু দাউদ "আল-মারাসীল" গ্রন্থে (২০৭/২৫০), তাহাবী (২/১১১), দারাকুতনী (পৃ. ৩৪৫) ও বাইহাকী (৮/২০-২১) রাবীয়াহ ইবনু আবী আবদির রহমান সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনু বায়লামানী হতে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম তাহাবী মুরসাল বলে এটির সমস্যা বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী এবং বাইহাকী এটিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত আম্মার ইবনু মাতার সূত্রে পৌছিয়েছেন। যার সনদে ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ আসলামী এবং ইবনু বায়লামানী রয়েছেন। দারাকুতনী বলেনঃ এটিকে ইবরাহীম ছাড়া অন্য কেউ মুসনাদ হিসাবে বর্ণনা করেননি। তিনি মাতরূকুল হাদীস। সঠিক হচ্ছে রাবীয়াহ ইবনুল বায়লামানীর মধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল বায়লামান দুর্বল। যখন তিনি মওসুল হিসাবে বর্ণনা করেন, তখন তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। অতএব কীভাবে তার মুরসালকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায়?
হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথাকে "ফাতহুল বারী" গ্রন্থে (১২/২২১) সমর্থন করেছেন। বাইহাকী সালেহ ইবনু মুহাম্মাদের উদ্ধৃতিতে বলেনঃ হাদীসটি মুরসাল মুনকার।
আমি (আলবানী) বলছিঃ অন্য দুটি সূত্রে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
১। একটির সনদে ইয়াহইয়া ইবনু সলাম রয়েছেন। তিনি তার শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আবী হুমায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটি তাহাবী বর্ণনা করেছেন। এটি মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও নিতান্তই দুর্বল। ইয়াহইয়াকে দারাকুতনী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন আর মুহাম্মাদ ইবনু আবী হুমায়েদ নিতান্তই দুর্বল। বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
২। এ সনদটিতে আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াকুব রয়েছেন। তিনি তার শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দিল আযীয ইবনে সালেহ হাযরামী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটি আবু দাউদ তার “আল-মারাসীল” গ্রন্থে (২০৮/২৫১) বর্ণনা করেছেন। যায়লাঈ “নাসবুর রায়া” গ্রন্থে (৪/৩৩৬) বলেন, ইবনুল কাত্তান তার কিতাবে বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াকুব এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দিল আযীয তারা উভয়েই মাজহুল। তাদের দু'জনের জীবনী পাচ্ছি না। অতঃপর তিনি (যায়লাঈ) তা স্বীকার করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সূত্রগুলো খুবই দুর্বল। এসব দ্বারা আলোচ্য হাদীসটি শক্তিশালী হয় না। এছাড়া সহীহ হাদীস তার বিপরীতে থাকার কারণে হাদীসটির দুর্বলতাকে আরো বৃদ্ধি করছে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃلا يقتل مسلم بكافر “কাফিরকে হত্যার দায়ে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।’ হাদীসটি বুখারী (১২/২২০) ও অন্যরা আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। এটিই হচ্ছে জামহুরে ওলামার মত। কিন্তু হানাকী আলেমগণ সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে আলোচ্য দুর্বল ও মুনকার হাদীসটি গ্রহণ করেছেন। অবশ্য তাদের কেউ কেউ সহীহ হাদীসের দিকে ফিরে এসে ইনসাফ করেছেন। যেমন বাইহাকী এবং খাতীব বাগদাদীর "আল-ফাকীহ" গ্রন্থের (২/৫৭) মধ্যে এসেছে আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু যিয়াদের সাথে আলোচনার পর ইমাম যুফার প্রত্যাবর্তন করেন। আবু ওবায়দাও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এটির সনদটি সহীহ যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার বলেছেন।
উসতাদ মওদূদী তার “হুকুকুল আম্মা লি আহলিয যিম্মা” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ
১। “যিম্মীর দিয়াত হচ্ছে মুসলমানের দিয়াত।” এ হাদীসটির অবস্থা সম্পর্কে ৪৫৮ নং হাদীসের মধ্যে অবহিত হয়েছেন।
২। “যিম্মীর খুন মুসলিম ব্যক্তির খুনের ন্যায়। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন যিম্মীকে হত্যা করে, তাহলে তার থেকে তার জন্য কিসাস নেয়া হবে, যেমনভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে কিসাস নেয়া হতো।” এ হাদীসটি দারাকুতনীর বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন। যেটির সনদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দারাকুতনী নিজেই এটিকে দুর্বল বলেছেন। অতঃপর তিনি কতিপয় আসার তিন খালীফা হতে বর্ণনা করেছেন; উমার, উসমান ও আলী (রাঃ) থেকে।
উমার (রাঃ) হতে ইব্রাহীম নাখ'ঈর বর্ণনায় একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, বানু বাকরের এক ব্যক্তি কর্তৃক এক যিম্মীকে হত্যার দায়ে কাতিলকে উমার (রাঃ) মাকতুলের অভিভাবকদের নিকট তুলে দিতে বলেছিলেন এবং তাই করা হয়েছিল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি সহীহ নয়। কারণ ইবরাহীম নাখ'ঈ উমার (রাঃ)-এর যুগকে পাননি। এটি আব্দুর রাযযাক তার "আল-মুসান্নাফ" গ্রন্থে সংক্ষেপে (১০/১০১/১৮৫১৫) এবং বাইহাকী “আল-মারিফাত” গ্রন্থে পূরোটাই বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে “নাসবুর রায়া” গ্রন্থে (৪/৩৩৭) এসেছে। বাইহাকীর সনদে আবু হানীফা (রহঃ) রয়েছেন। তার অবস্থা সম্পর্কে আপনারা একটি হাদীস পূর্বে অবহিত হয়েছেন।
এটি মওসূল হিসাবে অন্য সূত্র হতে এসেছে। তবে ভাষায় কিছু বেশী আছে যা দলীল গ্রহণ করাকে নষ্ট করে দেয়, যদি সেটি সহীহ্ হত। কারণ তাতে বলা হয়েছেঃ উমার (রাঃ) দিয়াত দিতে বলেছেন। হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। এটি তাহাবী (২/১১২) বর্ণনা করেছেন। উসমান (রাঃ)-এর আসার দীর্ঘ ঘটনার সার সংক্ষেপ হচ্ছে এই যে, উমার (রাঃ)-কে হত্যাকারী আবু লুলুওয়াকে হত্যার জন্য তাঁর ছেলে ওবায়দুল্লাহ আবু লুলুওয়ার ছোট মেয়ের নিকট যান। সে ছিল ইসলামের দাবীদার। অতঃপর তিনি তাকে হত্যা করেন এবং তার সাথে হুরমুযান ও যুফায়নাকে (সে নাসরানী ছিল) হত্যা করেন। ঘটনা উসমান (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি এ বিষয়ে সকলের সাথে পরামর্শ করেন। যাতে তারা সকলে তাকে কিসাস হিসাবে হত্যার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু লোকদের মাঝে বেশী হট্টগোল দেখা দিলে, তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। যার ফলে দু’ব্যক্তি এবং এক মেয়ের দিয়াত দেয়া হয়।
এটি তাহাবী “শারহু মায়ানীল আসার” গ্রন্থে (২/১১১) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব হতে বর্ণনা করেছেন। যার সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ রয়েছেন। তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু ইবনু সা'দ “আত-তাবাকাত” গ্রন্থে (৩/১/২৫৬-২৫৮) অন্য সূত্রে সহীহ সনদে সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। যার বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, এটি মুরসাল। কারণ উমার (রাঃ) কে হত্যা করার সময় সে (সাঈদ) ছিল ছোট। তার বয়স তখন নয় বছরেরও কম। যার বয়স এত কম সে কীভাবে এরূপ সংবাদ শিক্ষা নিতে পারে? যাই হোক যিম্মী হত্যার দায়ে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঘটনাটি এমন নয়। কারণ তিনি যুফায়না নাসরানীর সাথে আরো দু’জন মুসলমানকে হত্যা করেন। আবু লুলুয়ার মেয়ে এবং হুরমুযানকে। হুরমুযান ছিল একজন মুসলিম, যেমনভাবে বাইহাকীর বর্ণনায় এসেছে। অতএব তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দু’জন মুসলিমকে হত্যার জন্যে। সেই নাসরানীকে হত্যার দায়ে নয়।
আলী (রাঃ) হতে যে আসারটি এসেছে; সেটি উমার (রাঃ)-এর আসারের ন্যায়। তাতে মাকতুলের [নিহতের] ভাই হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন...। এটির সনদটি দুর্বল। যায়লাঈ (৪/৩৩৭) এবং অন্যরা এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তার আসারটির সমস্যায় বলেছেনঃ তাতে হুসাইন ইবনু মায়মুন রয়েছেন। তার সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে শক্তশালী নন। বুখারী তাকে দুর্বলদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। এটির সনদে আরো রয়েছেন কায়স ইবনু রাবী', তিনিও দুর্বল। তার পরেও এটি সহীহ হাদীস বিরোধী, যেটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬১। নারীরা হচ্ছে খেলনার পাত্র, অতএব তোমরা তাদের বাছাই করে নাও।
হাদীসটি মুনকার।
এটি হাকিম তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে এবং তার থেকে দাইলামী মুয়াল্লাক হিসাবে (৩/১১০) ইবনু লাহীয়ার সূত্রে আহওয়াস ইবনু হাকীম হতে ... মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সুয়ূতী "আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/১৮৯) হাদীসটি অনুরূপ অর্থে আলী (রাঃ) এর হাদীসের শাহেদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
ইবনুল জাওষী বলেনঃ এটি সহীহ নয়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ূতী অভ্যাসগতভাবে এ শাহেদটির ব্যাপারে চুপ থেকেছেন, অথচ সেটি নিতান্তই দুর্বল। তাতে তিনটি সমস্যা রয়েছেঃ ইবনু লাহীয়াহ দুর্বলতায় প্রসিদ্ধ। আহওয়াস; তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন এবং ইবনুল মাদীনী বলেনঃ তিনি কিছুই না। তার পরেও এটি হচ্ছে মুনকাতি। আহওয়াস এবং আমরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এ জন্যে ইবনু আররাক (২/২২৬) বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। হাদীসটি দুর্বল ও মুনকার হওয়ার প্রমাণ বহন করছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত এ হাদীসটি “إنما النساء شقائق الرجال” নারীরা হচ্ছে পুরুষদের সহোদর। সহীহ্ আবৃ দাউদঃ (২৩৪)।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬২। মেয়েরা হচ্ছে খেলনার পাত্র। অতএব যে ব্যক্তি খেলনা গ্রহণ করবে, সে তার সাথে উত্তম আচরণ করবে অথবা তাকে ভালভাবে গ্রহণ করবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হারিস ইবনু আবু উসামা তার "মুসনাদ" গ্রন্থে (পৃ. ১১৬) বর্ণনা করেছেন। যার সনদে আহমাদ ইবনু ইয়াযীদ এবং যুহায়ের ইবনু মুহাম্মাদ রয়েছেন...৷
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি তিনটি কারণে দুর্বলঃ এটি মুরসাল; কারণ আবু বাকর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাযম আনসারী একজন তাবেঈ। তিনি ১২০ সালে মারা যান। যুহায়ের ইবনু মুহাম্মাদ খুরাসানী শামী; তিনি দুর্বল। এছাড়া বর্ণনাকারী আহমাদ ইবনু ইয়াযীদকে চিনি না। তিনি যদি ইবনু ওয়ারতানীস মিসরী হন, তাহলে তিনি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৩। আসমান যে যমীনে পানি (বৃষ্টি) দিবে তাতে উৎপন্ন শষ্যে দশমাংশ, আর যে যমীনে সেচের মাধ্যমে (উট ব্যবহারের দ্বারা) বা বালতি দিয়ে পানি দেয়া হয়েছে তাতে উৎপন্ন শষ্যে বিশমাংশ যাকাত দিতে হবে। উৎপন্ন শষ্য কম হোক আর বেশী হোক কোন পার্থক্য নেই।
হাদীসটি এ বর্ধিত অংশের কারণে في قليله وكثيره জাল।
এটি আবু মুতী আল-বালখী আবু হানীফা (রহঃ) হতে, তিনি আবান হতে, তিনি আবু আইয়াশ হতে, তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এক ব্যক্তির মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি বানোয়াট। আবু মতী' বালখীর নাম হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ, তিনি আবু হানীফার (রহঃ) সাথী। তার সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি ছিলেন মিথ্যুক। জুযজানী বলেনঃ তিনি ছিলেন মুরজিয়া সম্প্রদায়ের হাদীস জলিকারী নেতাদের একজন। তাকে ইমামগণ দুর্বল বলেছেন। যাহাবী তাকে হাদীস জাল করার দোষে দোষী করেছেন। আবান ইবনু আবী আইয়াশও মিথ্যার দোষে দোষী।
যায়লাঈ হাদীসটি “নাসবুর রায়া” গ্রন্থের মধ্যে (২/৩৮৫) উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ ইবনুল জাওয়ী “আত-তাহকীক” গ্রন্থে বলেনঃ হানাফীরা আবু হানীফা (রহঃ) হতে যে সব হাদীস আবু মুতী বালখী বর্ণনা করেছেন তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এ সনদটি কোন বস্তুরই সমতুল্য নয়। আবু মুতী সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। আহমাদ বলেনঃ তার থেকে বর্ণনা করা উচিত নয়। আবু দাউদ বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তার হাদীসকে পরিত্যাগ করেছেন। আবানও নিতান্তই দুর্বল। তাকে শু’বা দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে শু’বা তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ইমাম বুখারী যে হাদীসটি তার সহীহার মধ্যে ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস হতে উৎপন্ন শষ্য কম হোক আর বেশী হোক কোন পার্থক্য নেই এ অংশটুকু বাদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, সেটি আলোচ্য হাদীসটি মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ বহন করছে। অনুরূপভাবে মুসলিম জাবের (রাঃ) হতে এবং তিরমিযী আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। “ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থে (৭৯৯) আমি এটির তাখরীজ করেছি।
এ বর্ধিত অংশটুকু যে বাতিল তাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। এ বাতিল হওয়াকে আরো শক্তিশালী করছে বুখারী এবং মুসলিমে বর্ণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীঃليس فيما دون خمسة أوسق صدقة "পাঁচ আসাকের নিচে কোন সাদাকা (যাকাত) নেই।" এটিরও "ইরওয়াউল গালীল" গ্রন্থে (৮০০) তাখরীজ করেছি। ইমাম মুহাম্মাদ এ সহীহ হাদীস গ্রহণ করে তার শাইখ আবু হানীফা (রহঃ) এর বিরোধিতা করেছেন। যেমনটি তিনি “কিতাবুল আসার” গ্রন্থে (পৃ. ৫২) এবং "মুওয়াত্তার” মধ্যে (পৃ. ১৬৯) স্পষ্টভাবে বলেছেন।
যা বান্দাদের উপর ওয়াজিব নয় তা ওয়াজিব করে দেয়া হচ্ছে দুর্বল হাদীসের একটি মন্দ দিক। এ হাদীসটি তারও প্রমাণ বহন করছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৪। ঈমান অন্তরে স্থায়ী পর্বতমালার ন্যায় প্রতিষ্ঠিত। তার বৃদ্ধি হওয়া ও কমে যাওয়া কুফরী।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (২/১০৩) উসমান ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আমর উমুবীর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান এবং (তার অনুসরণ করে) যাহাবী বলেনঃ এ হাদীসটি আবু মুতী হাম্মাদের উপর জাল করেছেন এবং তার থেকে চুরি করেছেন এ শাইখ (উসমান ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমান)। তিনি খুরাসানে এসেছিলেন, অতঃপর তাদের নিকট লায়স এবং মালেক হতে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি তাদের উপর হাদীস জাল করতেন। সাবধানতা অবলম্বনের উদ্দেশ্য ছাড়া তার হাদীস লিখাই হালাল নয়। হাফিয ইবনু হাজার তার এ বক্তব্যকে "আল-লিসান" গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
এ আবু মুতী হচ্ছেন সেই বালখী যিনি আবু হানীফা (রহঃ)-এর সাথী। পূর্বের হাদীসে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (১/১৩১) হাকিমের বর্ণনায় আবু মুতীর সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি বানোয়াট। আবু মুতী হচ্ছেন হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ, তিনি মিথ্যুক। আবূ মুহাযেমও একই রকম। তার থেকে চুরি করেছেন উসমান ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উসমান ইবনে আফফান, তিনিও জালকারী মিথ্যুক। হাকিম বলেনঃ সনদটিতে বহু অন্ধকার রয়েছে এবং হাদীসটি বাতিল। এর জন্য দায়ী আবু মুতী। তার থেকে চুরি করেছেন উসমান, অতঃপর হাম্মাদ হতে বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৩৮) তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি ঈমান বাড়ার বিষয়ে বহু সুস্পষ্ট আয়াত বিরোধী । যেমন সূরা ফাতাহের ৪ নং আয়াত এবং সূরা আনফালের ২ নং আয়াত।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৫। ইসমাঈলের ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেছিল। আমার নিকট জিবরীল তা নিয়ে আসেন, অতঃপর আমি তা হেফয করি।
হাদিসটি দুর্বল।
এটি হাকিম “মারিফাতু উলুমিল হাদীস” গ্রন্থে (পৃ. ১১৬) আলী ইবনু খাসরাম সূত্রে ‘আলী ইবনু হুসাইন হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সমস্যা হচ্ছে সনদে বিচ্ছিন্নতা আলী ইবনু হুসাইন এবং উমার (রাঃ)-এর মধ্যে।
হাদীসটিকে হাকিম এবং অনুরূপভাবে গাতরীফ মওসূল হিসাবে তার “জুযউ” গ্রন্থে (পৃঃ ৪/২) হামেদ (এর স্থলে জুযউ গাতরীফ গ্রন্থেঃ হাম্মাদ এসেছে) ইবনু আবী হামযা সাকারীর সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হামেদ অথবা হাম্মাদের জীবনী পাচ্ছি না। তার পিতা আবু হামযা প্রসিদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য। তার নাম মুহাম্মাদ ইবনু মায়মূন। তার জীবনী রচয়িতাগণ তার থেকে বর্ণনাকারী হিসাবে তার ছেলের নাম উল্লেখ করেননি।
ইবনু আসাকির বলেনঃ হাদীসটি গারীব রোগাক্রান্ত।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৬। আমার উম্মাতের আলেমগণ বানি ইসরাইলের নাবীগণের ন্যায়।
সকল আলেমের ঐক্যমতে এটির কোন ভিত্তি নেই।
পথভ্রষ্ট কাদিয়ানী সম্প্রদায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরে নবুয়াত অবশিষ্ট থাকার প্রমাণ হিসাবে এটির দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছে। যদি সহীহ্ হত তাহলে তাদের বিপক্ষে এটি দলীল হত। যেমনটি একটু চিন্তা করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ
৪৬৭। যে ব্যক্তি মাগরীব এবং এশার মধ্যে বিশ রাকায়াত সলাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু মাজাহ (১/৪১৪) এবং ইবনু শাহীন “আত-তারগীব ওয়াত তারহীব” গ্রন্থে (কাফ ১৭২/১, ২৭৭-২৭৮) ইয়াকুব ইবনু ওয়ালীদ মাদীনীর সূত্রে হিশাম ইবনু উরওয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
বুসয়র “আয-যাওয়াইদ” গ্রন্থে (কাফ ৮৫/১) বলেনঃ এটির সনদে ইয়াকুব ইবনুল ওয়ালীদ রয়েছেন। তিনি দুর্বল এ ব্যাপারে সকলেই একমত। তার সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি বড় বড় মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হাদীস জাল করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু মাঈন এবং আবু হাতিমও তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সুয়ূতী তার এ হাদীসটিকে "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। জেনে রাখুনঃ মাগরীব এবং এশার মধ্যে রাকা'য়াতের সংখ্যা উল্লেখ করে সলাত আদায়ে উৎসাহিত করে যে সব হাদীস এসেছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ নয়। বরং একটি অন্যটির চেয়ে বেশী দুর্বল। এ সময়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকায়াতের সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সলাত আদায় করেছেন তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে
তার বাণী হিসাবে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা নিতান্তই দুর্বল। তার উপর আমল করা জায়েয হবে না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৮। যে ব্যক্তি মাগরীবের পরে কথা বলার পূর্বেই ছয় রাকায়াত সলাত আদায় করবে; তা দ্বারা তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু নাসর “কিয়ামুল্লাইল” গ্রন্থে (পৃ. ৩৩) মুহাম্মাদ ইবনু গাযুওয়ান দামেস্কী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম তার “আল-ইলাল” গ্রন্থে এ সূত্রেই (১/৭৮) উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ আবু যুরয়াহ বলেনঃ তোমরা এ হাদীসটিকে প্রহার কর। কারণ এটি বানোয়াট হাদিসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মুহাম্মাদ ইবনু গাযওয়ান দামেশকী মুনকারুল হাদিস।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৬৯। যে ব্যক্তি মাগরীবের পরে ছয় রাকায়াত সলাত আদায় করবে এমতাবস্থায় যে, সে তার মাঝে কোন মন্দ কথা বলবে না। এ সলাত তার জন্য বার বছরের ইবাদাতের সমতুল্য হয়ে যাবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইমাম তিরমিয়ী (২/২৯৯), ইবনু মাজাহ (১/৩৫৫, ৪১৫) এবং ইবনু নাসর (পৃঃ ৩৩), ইবনু শাহীন “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/২৭২), মুখাল্লেস “আল ফাওয়ায়েদুল মুন্তাকাত” গ্রন্থে (৮/৩৪/১), আসকারী “মুসনাদু আবী হুরাইরাহ” গ্রন্থে (১/৭১) এবং ইবনু সামউন ওয়ায়েয "আল-আমালী" গ্রন্থে (১/৬১/২) উমর ইবনু আবী খায়সাম সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তিরমিয়ী বলেনঃ হাদীসটি গারীব। এটিকে উমার ইবনু আবী খাসয়াম ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে চিনি না। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারীকে বলতে শুনেছিঃ উমর ইবনু আবী খাসয়াম মুনকারুল হাদীস। তাকে তিনি নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। যাহাবী তার জীবনীতে বলেছেনঃ তার দুটি মুনকার হাদীস রয়েছে, সে দু’টোর এটি একটি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭০। প্রত্যেক প্রবাহিত খুনেই (রক্তেই) ওযু করতে হবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃ. ১৫৭) বাকিয়া সূত্রে ইয়াযীদ ইবনু হতে এবং তিনি তামীমুদ দারেমী হতে ... বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী তার দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ উমার ইবনু আব্দিল আযীয তামীমুদ দারেমী হতে শুনেননি এবং তিনি তাকে দেখেনও নি। এ দুই ইয়াযীদ মাজহূল।
যায়লা'ঈ "নাসাবুর রায়" গ্রন্থে (১/৩৭) তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বাকিয়া মুদাল্লিস আন্‌ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। এটি আরেকটি দোষ। আব্দুল হক “আল-আহকাম” গ্রন্থে (কাফ (১৩/২) বলেনঃ এটির সনদ মুনকাতি (বিচ্ছিন্ন)।
হাদিসটি ইবনু আদী আহমাদ ইবনু ফারাজের জীবনীতে বাকিয়া ... হতে বর্ণনা করেছেন। যায়লা'ঈ বলেনঃ ইবনু আদী বলেছেনঃ আহমাদ ছাড়া হাদীসটি অন্য কারো মাধ্যমে চিনি না। আর তিনি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত যাদের হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না, কিন্তু লিখা যায়। কারণ লোকদের নিকট সে দুর্বল হলেও তার হাদীস হাদীস হিসাবে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে বলেনঃ আহমাদ ইবনু ফারাজ থেকে আমরা লিখেছি, আমাদের নিকট তার অবস্থান সত্যবাদী হিসাবে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আহমাদ ইবনু ফারাজ হচ্ছেন হিমসী। হিজাজী হচ্ছে তার উপাধী। তাকে মুহাম্মাদ ইবনু আউফ নিতান্তই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তিনিও হিমসী, অতএব তিনি তার সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশী জানেন। তিনি তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মিথ্যুক তার নিকট বাকিয়ার হাদীসের কোন ভিত্তি নেই এবং তাতে তিনি আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে বেশী মিথ্যুক,
অতঃপর তিনি তাকে তার ভাষায় মদ পান করার দোষে দোষী করেছেন। যা খাতীব বাগদাদী (৪/২৪১) বর্ণনা করেছেন এবং তার শেষে বলেছেনঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি মিথ্যুক।
অনুরূপভাবে তার সম্পর্কে যারা জানেন তারাও তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। অতএব কীভাবে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়। ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (কাফ ৪৪/১) বলেছেনঃ ... এ হাদীসটি (বাকিয়া সূত্রে) শু’বা হতে বাতিল।
হক কথা এই যে, রক্ত বের হলে ওযু ওয়াজিব হয় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসগুলো সহীহ নয়। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, যা বর্ণিত হয়নি তা হতে বেঁচে চলা ও মুক্ত থাকাই হচ্ছে আসল। যেমনভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন শাওকানী ও অন্যরা। রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হয় না এটিই হিজাজীদের এবং মদীনার সাত ফাকীহগণের এবং তাদের পূর্ববর্তীদেরও সিদ্ধান্ত।
ইবনু আবী শায়বা “আল-মুসান্নাফ” গ্রন্থে (১/৯২) এবং বাইহাকী (১/১৪১) সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেনঃ ইবনু উমার তার চেহারার ব্রন (ছোট ফোঁড়া) টিপ দিলে কিছু রক্ত বের হয়ে যায়। তিনি তা তার দুই আংগুলের মধ্যে ঘষে ফেলেন। অতঃপর ওযু না করে সলাত আদায় করেন।
ইবনু আবী শায়বা আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) হতে সহীহ বর্ণনায় এসেছে, তিনি তার সলাতের মধ্যে রক্ত থুথু ফেলেন তার পরেও সলাত অব্যাহত রাখেন। দেখুনঃ “সহীহুল বুখারী ফতহুল বারী সহ” (১/২২২-২২৪) এবং “মুখতাসার বুখারীর” (১/৫৭) উপর আমার টীকায়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
পরিচ্ছেদঃ
৪৭১। আল্লাহ তা'আলা তার মুমিন বান্দার শরীরে বিপদের উদ্দেশ্যে কোন বাদশাকে নিয়োগ দিয়েছেন তা অস্বীকার করেছেন।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার “মুসনাদ" গ্রন্থে (১/৭৯-৮০) কাসেম ইবনু ইবরাহীম ইবনে আহমাদ মালাতী সূত্রে আবূ উমাইয়া মুবারাক ইবনু আব্দিল্লাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
সুয়ুতী দাইলামীর বর্ণনায় "জামে'উস সাগীর" গ্রন্থে আনাস (রাঃ) হতে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবী বলেনঃ তাতে কাসেম ইবনু ইবরাহীম মালতী রয়েছেন; তিনি মিথ্যুক। তার সম্পর্কে “আল-লিসান” গ্রন্থে হাফিয বলেনঃ বাতিল হাদীস হতে তার আজব আজব কথা রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ুতী দাবী করেছেন যে, তার এ কিতাবকে তিনি জালকারী এবং মিথ্যুক হতে হেফাযাত করেছেন, তা সত্ত্বেও হাদীসটি “আল-জামে” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন?
বিশেষ করে এ হাদীসটি বাতিল হওয়াটা সুস্পষ্ট। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত হয়েছে তিনি বলেনঃ "লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠিন বিপদ হচ্ছে নাবীদের বিপদ, তার পর যারা তাদের ন্যায় এবং মুমিনদের পরীক্ষা করা হবে তাদের দ্বীনদারিত্বের পরিমাপে।" দেখুন “সহীহাহ" ১৪৩ নম্বর হাদীস।
আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, সুয়ূতী দাইলামীর বর্ণনায় তার “যায়লুল মাওযু'আত” গ্রন্থে (পৃ. ১৮৯) নিজে হাদীসটি জাল হিসাবে হুকুম লাগিয়েছেন। অতঃপর বলেছেনঃ আল-খাতীব মালাতী সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি মিথ্যুক হাদীস জালকারী। তিনি আবু উমাইয়াহ হতে মালেকের উদ্ধৃতিতে আজব আজব বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যরা বলেছেনঃ আবু উমাইয়াহ মুবারাক মাজহুলদের একজন। তার পরেও তিনি তার "জামে" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭২। ঋণ হচ্ছে ধর্মের অপমান স্বরূপ।
হাদীসটি জাল।
এটি কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে (৪/১) আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীব ... হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু শাবীবকে ইবনু খাররাস মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন এ বলে যে, তিনি মিথ্যুকদের থেকে বানোয়াট হাদীস চুরি করেছেন। এ হাদীসটি সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত, তাতে আমি কোন প্রকার সন্দেহ করছি না। কারণ সহীহ্ সুন্নাতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার স্ত্রী ও অন্যরা একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করেছেন। হাদীসটি সুয়ুতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে আবু নুয়াইম কর্তৃক “আল-মারিফাত” গ্রন্থের বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন।
মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেন যে, প্রথম সনদটি মুরসাল। যাতে আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীব রিবাঈ রয়েছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি প্রসিদ্ধ খবর বর্ণনাকারী, কিন্তু দুর্বল। হাকিম বলেনঃ তিনি যাহেবুল হাদীস। তিনি আরো বলেছেনঃ তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হালাল। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি খবরগুলো উল্টা পাল্টা করে ফেলতেন। অতঃপর তিনি তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
মানাবী বলেনঃ কাযাঈর সনদে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ রয়েছেন। যাহাবী তাকে "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, তিনি বিতর্কিত ব্যক্তি, শক্তিশালী নন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার কথা হতে মনে হতে পারে যে, কাযাঈর “মুসনাদ” গ্রন্থে ইবনু শাবীব নেই, এমনটি নয়। সতর্কতা অবলম্বন করুন। অর্থাৎ তিনিও আছেন।
ইমাম আহমাদ “আয-যুহুদ” গ্রন্থে (১৩/১১/১) সহীহ সনদে মুয়ায (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতএব হাদীসটি মারফু হিসাবে বাতিল। কারণ মারফু হিসাবে আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীব এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি হচ্ছেন মিথ্যার দোষে দোষী। আবু কাতাদা তার মুতাবায়াত করেছেন। কিন্তু মুয়াযকে (রাঃ) উল্লেখ করেননি, যার জন্য সেটি মুরসাল। এ আবু কাতাদার নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াকেদ; তিনি মাতরূক। যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন। অতএব এ মুতাবা'য়াতের কোন মূল্য নেই। অন্য একটি সূত্রে হাদীসটির মুতাবায়াত করা হয়েছে কিন্তু সেটির সনদে রয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আবু মাসউদ আসকারী, তিনি মাজহুল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৩। ঋণ হচ্ছে যমীনের মধ্যে আল্লাহর ঝাণ্ডা। যখন আল্লাহ কাউকে বেইজ্জত করার ইচ্ছা করেন তখন তার কাধে তা (ঋণ) চাপিয়ে দেন।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু বাকর আশ-শাফেঈ "আল-ফাওয়ায়েদুল মুনতাকাত" গ্রন্থে (১৩/৯৩/২), হাকিম (২/২৪) এবং দাইলামী (২/১৫০) বিশর ইবনু ওবায়েদ আদ দারেসী সূত্রে হাম্মাদ ইবনু সালামাহ্ হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর (হাকিম) বলেনঃ মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি সুস্পষ্ট ভুল। কারণ বিশর মুসলিমের বর্ণনাকারী নন। ছয়টি হাদীস গ্রন্থের কেউ তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেননি। তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। এ জন্য মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (৩/৩২) এবং যাহাবী “আত-তালখীস” গ্রন্থে তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ বিশর ইবনু ওবায়েদ দারেসী খুবই দুর্বল। মানাবী বলেনঃ সহীহ কোথা হতে? যার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেছেনঃ তিনি ইমামদের নিকট মুনকারুল হাদীস এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে খুবই দুর্বল। যাহাবী তার কতিপয় হাদীস “আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ সেগুলো সহীহ নয়। অতঃপর তার অন্য একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি জাল।
আমি (আলবানী) এ হাদীসটি জাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ করছি না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৪। ঋণ ধর্ম ও বংশ মর্যাদাতে ক্রটি আনয়ন করে।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী (২/১৫২) আবুশ শায়খের সূত্রে হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ উবুল্লী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
দাইলামীর উদ্ধৃতিতে “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ সনদে হাকাম ইবনু আবদিল্লাহ উবুল্লী রয়েছেন। যাহাবী তার সম্পর্কে “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি মাতরূক, জাল করার দোষে দোষী
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৫। বাদশা হচ্ছে আল্লাহর যমীনে তার ছায়া। যে তাকে নসীহত করবে, সে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। আর যে তার সাথে প্রতারণা করবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম "ফাযীলাতুল আদেলীন" গ্রন্থে (পাতা ২২৬/১-৬০ হতে) ইয়াহইয়া ইবনু মায়মুন সূত্রে ... আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সূত্রে ... আনাস (রাঃ) হতেও মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদ দুটি বানোয়াটঃ
১। প্রথমটিতে মুহাম্মাদ ইবনু মায়মূন রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ইবনু আতা বাসরী। দারাকুতনী এবং অন্যরা তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মাতরূক। ফাল্লাস ও অন্যরা বলেনঃ তিনি মিথ্যুক ছিলেন।
২। দ্বিতীয়টিতে দাউদ ইবনু মুহাব্বার রয়েছেন। তিনিও মিথ্যার দোষে দোষী। তার সূত্রেই উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (৩৫৮) হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ (সনদের এক বর্ণনাকারী) উকবা বর্ণনা কারার ক্ষেত্রে মাজহুল। তার হাদীস মুনকার, মাহফু্য নয়। তাকে এ হাদীসের মাধ্যমেই চেনা যায়। তার মত দুর্বল ব্যক্তি ছাড়া কেউ তার মুতাবায়াত করেননি।
বাইহান্ধীর “আশ-শুয়াব” গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে সুয়ুতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে আনাস (রাঃ) হতে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ তাতে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস কুরাশী রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন কুদায়মী। তাকে ইবনু আদী হাদীস জাল করার দোষে দোষী করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন। যাহাবী “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে বলেছেনঃ আমার নিকট তার অবস্থা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৬। যে ব্যক্তি এক চতুর্থাংশ কুরআন পাঠ করবে, তাকে এক চতুর্থাংশ নবুওয়াত দেয়া হবে। যে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠ করবে, তাকে এক তৃতীয়াংশ নবুওয়াত দেয়া হবে। যে দুই তৃতীয়াংশ কুরআন পাঠ করবে, তাকে দুই তৃতীয়াংশ নবুওয়াত দেয়া হবে এবং যে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করবে, তাকে সম্পূর্ণ নবুওয়াত দেয়া হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু বাকর আজুরী "আদাবু হামালাতীল কুরআন" গ্রন্থে (পৃঃ ১৩৫) মাসলামা ইবনু আলী সূত্রে যায়েদ ইবনু ওয়াকেদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। মাসলামা ইবনু আলী মিথ্যার দোষে দোষী।
ইবনুল জাওয়ী হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত” (১/২৫২) গ্রন্থে এক চতুর্থাংশ বাক্যটি বাদ দিয়ে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। বর্ণনাকারী বিশর ইবনু নুমায়ের মাতরূক। ইয়াহইয়া ইবনু মা'ঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৩৪৩) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি ইবনুল আম্বারী “কিতাবুল ওয়াকফ ওয়াল ইবতিদা” গ্রন্থে এবং বাইহাকী “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এ বিশর হচ্ছেন ইবনু মাজাহর বর্ণনাকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু মাজাহ্ তার কিতাবে মিথ্যুকদের হাদীস বর্ণনাকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। কিছু পূর্বেই তার এরূপ একটি হাদীস আলোচিত হয়েছে। যার একজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ মিথ্যুকদের একজন।
সুয়ূতী ইবনু উমারের হাদীস হতেও একটি শাহেদ উল্লেখ করেছেন। যাতে কাসেম ইবনু ইবরাহীম মালাতী রয়েছেন। সুয়ূতী নিজেই বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাহলে হাদীসটি উল্লেখ করে কী লাভ হলো? তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
যাহাবী বলেনঃ তিনি এমন এক সমস্যা নিয়ে এসেছেন যা বহনযোগ্য নয়।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাতে তার প্রতিপালককে দেখেছেন, দেখেছেন সব কিছু এমনকি তার তাজও! ...। পূর্বের হাদীসটি বর্ণনা করার পর যাহাবী এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটি বাতিল, এটির ভ্রষ্টতা পূর্বেরটির ন্যায়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি এবং এটির ন্যায় অন্য হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, হাদীস শাস্ত্রে সুয়ুতী এবং যাহাবীর মাঝে পার্থক্য কতটুকু।
সুয়ুতী আরেকটি শাহেদ তাম্মাম ইবনু নামীহ সূত্রে হাসান হতে মারফু হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর তিনি চুপ থেকেছেন। এ সূত্রটি মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও তাতে তাম্মাম রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে বানোয়াট বহু কিছু বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৭। বেশী বেশী হজ্জ ও উমরাহ্ পালন পরিবারকে নিষিদ্ধ করে দেয়।
হাদীসটি জাল।
এটি মাহামেলী “আল-আমালীর” ষষ্ট খন্ডে (পাতা ২৭৮/১/৬৩) আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীব সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তার সনদে আরো রয়েছে খালিদ ইবনু ইয়াস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবদুল্লাহ ইবনু শাবীব মিথ্যার দোষে দোষী, যেমনভাবে পূর্বে গেছে।
খালিদ ইবনু ইয়াসও অনুরূপ। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (১/২৭৯) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমনটি হৃদয়ে অগ্রণী হবে যে, তিনি নিজেই তার জালকারী। তার হাদীস আশ্চর্য হওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া লিখা যাবে না। হাকিম বলেনঃ তিনি ইবনুল মুনকাদীর, হিশাম ইবনু উরওয়া এবং মাকবুরী হতে কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু সাঈদ নাক্কাশ অনুরূপ কথাই বলেছেন। এছাড়া সকল ইমাম তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করে ভুল করেছেন। এ জন্যে আমি যা উল্লেখ করেছি তা দ্বারা মানাবী তার সমালোচনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৮৷ হজ্জ অথবা উমরাকারী অথবা আল্লাহর পথের যুদ্ধকারী ছাড়া কেউ সমুদ্রে ভ্রমণ করবে না। কারণ সমুদ্রের নিচে রয়েছে আগুন আর আগুনের নিচে রয়েছে সমুদ্র।
হাদীসটি মুনকার।
এটি আবু দাউদ (১/৩৮৯), আল-খাতীব “আত-তালখীস” গ্রন্থে (১/৭৮) এবং তার থেকে বাইহাকী (৪/৩৩৪) বিশর আবু আবদিল্লাহ সূত্রে বাশীর ইবনু মুসলিম হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর আল-খাতীব বলেনঃ আহমাদ বলেছেনঃ হাদীসটি গারীব।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল। তাতে জাহালাত [অপরিচিত বর্ণনাকারী] রয়েছে এবং ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে।
যাহালাত; হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব" গ্রন্থে বিশর এবং বাশীরের জীবনীতে বলেছেনঃ তারা দু’জন মাজহুল অপরিচিত। অনুরূপ এসেছে “আল-মীযান" গ্রন্থেও৷ বিশরের মুতাবা'আত করেছেন মাতরাফ ইবনু তুরাইফ বাশীর ইবনু মুসলিম হতে। যেটি বুখারী "আত-তারীখ" গ্রন্থে (১/২/১০৪) এবং আবূ উসমান আন নুজায়রেমী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/৫/১) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বাশীর জাহালাত হতে নিরাপদ হননি। যার জন্য ইমাম বুখারী পরক্ষণেই বলেছেনঃ তার হাদীসটি সহীহ নয়।
ইযতিরাব; সেটি মুনযেরী “মুখতাসারুস সুনান” গ্রন্থে (৩/৩৫৯) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ হাদীসটিতে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। ইমাম বুখারী তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে তাকে (মাতরাফকে) উল্লেখ করে তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তার ইযতিরাবও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন তার হাদীসটি সহীহ নয়। খাত্তাবী বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসটির সনদকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু মুলাক্কান "আল-খুলাসা" গ্রন্থে (১/৭৩) বলেনঃ হাদীসটি ইমামদের ঐক্যমতে দুর্বল। বুখারী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। আহমাদ বলেনঃ হাদীসটি গারীব। আবু দাউদ বলেনঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীগণ মাজহুল। খাত্তাবী বলেনঃ হাদীসটির সনদকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বলেছেন। আব্দুল হক (২/২০৭) বলেনঃ আবু দাউদ বলেছেনঃ এ হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। বিশর এবং বাশীর দু’জনই মাজহুল।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৭৯। যোদ্ধা বা হজ্জ বা উমরাকারী ছাড়া কেউ সমুদ্র ভ্রমণ করবে না।
হাদীসটি মুনকার।
এটি হারিস ইবনু আবী উমামাহ (পৃ. ৯০) খালীল ইবনু জাকারিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসটিকে শক্তি যোগায় না। কারণ হাদীসটির সনদ এ খালীলের কারণে নিতান্তই দুর্বল।
ইবনুস সাকান বলেনঃ তিনি ইবনু আউন এবং হাবীব ইবনুশ শহীদ হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা বর্ণনা করেননি।
উকায়লী বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের থেকে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তিনি মাতরূক।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮০।যে ব্যক্তি বুধ ও বৃহস্পতিবারে সওম পালন করবে, তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি আবু ইয়ালা ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং মুনযেরী হাদীসটিকে “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/৮২) দুর্বল বলেছেন। হায়সামী তার কারণ উল্লেখ করে বলেছেন (৩/১৯৮) এটির সনদে আবু বকর ইবনু আবী মারইয়াম রয়েছেন, তিনি দুর্বল।
অতঃপর আমি (আলবানী) তার সনদটি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি, তাতে তিনটি রোগ পেয়েছিঃ অন্য এক বর্ণনাকারীও দুর্বল। এটি বাকিয়া কর্তৃক আন আন শব্দে বর্ণিত। তিনি হচ্ছেন মুদাল্লিস। ইবনু আবী মারইয়ামের ইযতিরাব তার সনদে রয়েছে। যার বিস্তারিত বিবরণ শীঘ্রই আসবে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮১। উদ্ভিত বিশেষ খাওয়া নিরাপত্তা দেয় কূলোন্‌জ রোগ হতে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম আসবাহানী “আত-তিব্ব” গ্রন্থে (কাফ ১৩৯/১) আবু নাসর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ সূত্রে মূসা ইবনু ইব্রাহীম হতে এবং তিনি ইবরাহীম ইবনু আবী ইয়াহইয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি জাল। কারণ ইবরাহীম ইবনু আবী ইয়াহইয়া হচ্ছেন আসলামী, তিনি মিথ্যুক। তাকে একদল ইমাম স্পষ্টভাবে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমন ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, ইবনু মাঈন, ইবনুল মাদীনী, ইবনু হিব্বান ও আরো অনেকে। তা সত্ত্বেও ইমাম শাফেঈ তার থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। ইসহাক ইবনু রাহওয়াই তা ইনকার করেছেন, যেমনভাবে ইবনু আবী হাতিম “আদাবুশ শাফেঈ” গ্রন্থে (পৃ. ১৭৮) বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবী হাতিম অন্য একস্থানে বলেন (২২৩) শাফে'ঈর নিকট স্পষ্ট হয়নি যে, তিনি মিথ্যা বলতেন।
বাযযার বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। তার জন্য মাসআলা জাল করা হত আর তিনি তার জন্য সনদ জাল করতেন। তিনি ছিলেন কাদরিয়া...।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার নিচের দু' বৰ্ণনাকারীকে আমি চিনি না এবং সালেহ মাওলা তুয়ামা দুর্বল। অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, হতে পারে মূসা ইবনু ইবরাহীম হচ্ছেন আবু ইমরান মারওয়ায়ী। তা যদি হয় তাহলে তিনিও মিথ্যার দোষে দোষী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮২। বাথরুম হতে বের হওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে দু' পা ধৌত করলে মাথা ব্যাথা হতে নিরাপদ থাকা যায়।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নুয়াইম “আত-তিব্ব” গ্রন্থে আবু নাসর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ সূত্রে পূর্বের উল্লেখিত হাদীসটির সনদে বর্ণনা করেছেন। যেটি সম্পর্কে আপনারা অবহিত হয়েছেন যে, সেটি জাল। এটি এবং পূর্বেরটিকে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে গ্রন্থটিকে কালিমালিপ্ত করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবী হাদীস দুটি সম্পর্কে কিছুই বলেননি। সম্ভবত সনদটি সম্পর্কে অবহিত হননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৩। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক চিন্তিত হৃদয়কে ভালবাসেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু আবিদ-দুনিয়া “কিতাবুল হাম্মে ওয়াল হুযনে” গ্রন্থে, ইবনু আদী (২/৩৭), কাযাঈ (২/৮৯) এবং ইবনু আসাকির (১৩/২০৫/২) আবু বাকর ইবনু আবী মারইয়াম সূত্রে যামারা ইবনু হাবীব হতে ... আবুদ দারাদা হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এ মাধ্যমেই আবু মুহাম্মাদ মাখলাদী “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/৩০৩), হাকিম (৪/৩১৫) ও আবু নুয়াইম (৬/৯০) তাবারানীর সূত্র হতে বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ আবু বাকর দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সনদটি মনুকাতি'। অর্থাৎ যামারা এবং আবুদ-দারদা (রাঃ)-এর মাঝে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কারণ তাদের উভয়ের মৃত্যুর মাঝে একশত বছরের ব্যবধান। এছাড়া আবু বাকর ইবনু আবী মারইয়াম নিতান্তই দুর্বল। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, "আল-মাজমা" গ্রন্থে হায়সামীর উক্তি (১০/৩০৯-৩১০) ‘হাদীসটি বাযযার এবং তাবারানী বর্ণনা করেছেন এবং তাদের সনদ হাসান। এরূপ বলাটা সুন্দর হয়নি। কারণ তাবারানীর নিকট হাদীসটির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন এ আবু বাকর। যার সম্পর্কে অবহিত হলেন এবং বাযযারের নিকটেও সেই একই ব্যক্তি।
হায়সামী নিজে অন্য হাদীসে তাকে দুর্বল বলেছেন, যেমনটি ৪৮০ নং হাদীসে গেছে।
হাদীসটি মা'য়াফী ইবনু ইমরান “আয-যুহুদ” গ্রন্থে (২/২৫৮) ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি মুযাল, নিতান্তই দুর্বল।
অতঃপর “কাশফুল আসতার” গ্রন্থে (৪/২৪০/৩৬২৪) স্পষ্ট হয়েছে, হাদীসটি বাযযার আব্দুল্লাহ ইবনু সালেহ সূত্রে মুয়াবিয়া ইবনু সালেহ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদেও বিচ্ছিন্নতা রয়েছে এবং ইবনু সালেহের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৪। কোন ব্যক্তি হেঁটে হজ্জ পালন করার নযর মানলে তা মুসলার অন্তর্ভুক্ত। আর যে ব্যক্তি পায়ে হেঁটে হজ্জ করার জন্য নযর মানবে, সে একটি হাদী (কুরবানীর জন্তু) প্রদান করবে এবং (হজ্জের জন্যে) আরোহন করবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হাকিম (৪/৩০৫) এবং আহমাদ (৪/৪২৯) সালেহ্ ইবনু রুস্তুম আবী ’আমের খাযযায সূত্রে কাসীর ইবনু সানবীর হতে এবং তিনি হাসান হতে ... বর্ণনা করেছেন। হাকিম বলেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তা সমর্থন করেছেন। অতঃপর যায়লাঈ “নাসবুর রায়া” গ্রন্থে (৩/৩০৫) এবং হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী “আদ-দিরায়া” গ্রন্থে (২৪২) তা সমর্থন করেছেন।
এটিই আমাকে উৎসাহিত করেছে হাদীসটি সম্পর্কে আলোচনা করার জন্যে। যাতে করে যার এ বিষয়ে জ্ঞান নেই, সে ধোকায় না পড়ে। কারণ হাদীসটির দুটি সমস্যা রয়েছেঃ
১। এ আবু আমের দুর্বল। হাফিয তার সম্পর্কে “আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেনঃ সত্যবাদী, বহু ভুল করতেন।
২। হাসান কর্তৃক আন আন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তিনি হচ্ছেন বাসরী, মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। ইমাম আহমাদ ও অন্যরা বিভিন্ন সূত্রে হাসান হতে ... মুসলা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তাতে আবু আমের যা বর্ণনা করেছেন তা নেই। এটিই প্রমাণ করছে যে, এ হাদীসটি দুর্বল। এছাড়া নযরের মাধ্যমে হেঁটে হজ্জ করার বিষয়ে বহু হাদীস এসেছে...। তার কোনটিতেই নযরের মাধ্যমে হেঁটে হজ্জ করাকে মুসলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দেখুনঃ “নায়লুল আওতার (৮/২০৪-২০৭)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ  
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৫। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার থেকে সব কিছুকেই ভয় পাইয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করল না, আল্লাহ তাকে সব কিছু হতে ভয় পাইয়ে দিবেন।
হাদীসটি মুনকার।
এটি কাযাঈ (২/৩৬) আমের ইবনুল মুবারাক আল-আল্লাফ সূত্রে সুলায়মান ইবনু আমর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। সুলায়মান ইবনু আমর ছাড়া সনদটির অন্য কোন বর্ণনাকারীকে চিনি না। আমার ধারণা তিনি হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু আবী সুলায়মান, তার নাম ফিরোয। তাকে বলা হয় আমর আবু ইসহাক শায়বানী, তিনি নির্ভরযোগ্য।
অতঃপর আমার নিকট “তাহযীবুল কামাল" এবং “আল-লিসান” গ্রন্থ দেখার পর যখন স্পষ্ট হয়েছে যে, এ সুলায়মান হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু ওয়াহাব আন-নাখ'ঈ, তখনই আমার অন্তরে উদয় হয়েছে যে, এ সুলায়মান ইবনু আমরই হচ্ছেন হাদীসটির সমস্যা। ইবনু তাহের বলেনঃ তার দাদা হচ্ছেন ওয়াহাব আর তিনি হচ্ছেন সুলায়মান ইবনু আমর। ফলে আমার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে যে, এ সুলায়মান হচ্ছেন মিথ্যুকু, প্রসিদ্ধ জালকারী। তার কয়েকটি হাদীস পূর্বেও আলোচিত হয়েছে।
হাদীসটি মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (৪/১৪১) আবুশ শায়খের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেছেনঃ হাদীসটি মারফু হিসাবে মুনকার। অনুরূপভাবে হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১২৮) উল্লেখ করে বলেছেনঃ উকায়লীর "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে অনুরূপভাবে আবু হুরাইরাহ (রাঃ)-এর হাদীসেও এসেছে। কিন্তু দুটি হাদীসই মুনকার।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার কথার মধ্যে শিথিলতা স্পষ্ট কারণ এটির সনদেও মিথ্যুক বর্ণনাকারী রয়েছেন যার সম্পর্কে ৪৫৪৪ নং হাদীসের আলোচনায় আসবে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৬। আহলে বাইতের কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পরে তারা তার পক্ষ হতে সাদাকা করলে অবশ্যই জিবরীল (আঃ) তা তাকে নূরের পাত্রে দান করবেন। অতঃপর গভীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলবেন হে কবরবাসী! এ তোমার হাদিয়া তোমার জন্য তোমার পরিবার দান করেছে। অতএব তুমি তা গ্রহণ কর। সে তাতে প্রবেশ করবে এবং তার দ্বারা আনন্দিত হবে, সুসংবাদ গ্রহণ করবে। কিন্তু তার প্রতিবেশীরা চিন্তিত হবে তাদের নিকট কোন হাদিয়া প্রেরিত না হওয়ায়।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৯৫/২) বর্ণনা করেছেন। যার সনদে মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু আবু ফুদায়েক রয়েছেন। তিনি আবু মুহাম্মাদ শামী হতে ... শুনেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (মুহাম্মদ) হচ্ছেন সত্যবাদী শাইখায়নের বর্ণনাকারী। এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে তার শাইখ আবু মুহাম্মাদ শামী। যাহাবী বলেনঃ তিনি কোন কোন তাবেঈ হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। আযদী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। অনুরূপ কথা “লিসানুল মীযান” গ্রন্থেও এসেছে।
সম্ভবত তারা দু'জনে মুনকার হাদীস দ্বারা এ হাদীসটিকেই বুঝিয়েছেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৩/১৩৯) বলেনঃ ... হাদীসটির সনদে আবু মুহাম্মাদ আশ-শামী রয়েছেন। তার সম্পর্কে আযদী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৭। তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম পিতা মাতার পক্ষ হতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নফল সাদাকা করার ইচ্ছা করে, তখন তার সাওয়াবটা তার পিতা মাতার জন্য হয়ে যায় এবং তার জন্য তাদের দু'জনের সাওয়াবের ন্যায় সাওয়াব হয়। তাদের দু'জনের সাওয়াবে কোন প্রকার কমতি না করেই।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু সামাউন ওয়ায়েয “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/৫৪/১), মুহাম্মাদ সুলায়মান রাবাঈ তার “হাদীস” গ্রন্থে (২/২১২) এবং ইবনু আসাকির “হাদীসু আবিল ফতূহি আব্দিল খালাক” গ্রন্থে (পৃঃ ২৩৬/১/৯২) আব্দুল হামীদ ইবনু হাবীব সূত্রে আওযাঈ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি দুর্বল। আব্দুল হামীদ তিনি হচ্ছেন আওযাঈর কাতিব। বুখারী ও অন্যরা তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন।
হাদীসটি ইবনু মুখাল্লাদ “মুনতাকা মিন আহাদীস” গ্রন্থে (২/৮৮/১-২) আব্বাদ ইবনু কাসীর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ আব্বাদ মিথ্যার দোষে দোষী। তার এ মুতাবায়াতের কোন মূল্য নেই।
হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৯৩) বলেছেনঃ তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে হাদীসটিإذا كانا مسلمين এ অংশটুকু ছাড়া দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। হায়সামী তাবারানীর সনদে (৩/১৩৯) উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার সনদে খারেজা ইবনু মুসয়াব আয-যব্বী রয়েছেন। তিনি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৮। তোমরা তোমাদের প্রজাদেরকে উৎসাহ প্ৰদান কর। আল্লাহ তোমাদেরকে বরকত দান করবেন।
হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া “আল-ফাতাওয়া” গ্রন্থে (২/১৯৬) বলেনঃ এটি তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৮৯। যখন ক্ষুধার রোগ প্রচন্ড রূপ নিবে, তখন তুমি এক টুকরো রুটি গ্রহণ করবে, কুপের পানি হতে একটু পানি উঠিয়ে নিবে এবং বলবে দুনিয়া ও দুনিয়ার অধিবাসীদের উপর আমার নিকট হতে বিনাশ সাধিত হোক।
হাদীসটি জাল।
সুয়ুতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আদী এবং বাইহাকী “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ হাদীসটির সনদে হুসাইন ইবনু আব্দিল গাফফার রয়েছেন। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক। যাহাবী বলেনঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। আরেক বর্ণনাকারী আবু ইয়াহইয়া আল-অক্কার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আবু ইয়াহইয়ার নাম যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া। ইবনু আদী তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে “আল-কামিল” গ্রন্থে (১/১৪৮) বলেনঃ তিনি হাদীস জালকারী। আমাদের কোন সাথী সালেহ যাযারা হতে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি বলেনঃ আবু ইয়াহইয়া আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রসিদ্ধ মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর ইবনু আদী বলেনঃ তার কতিপয় বানোয়াট হাদীস রয়েছে। সেগুলো জাল করার দায়ে অক্কারকে দোষী করা হয়েছে ...। তিনি হুসাইন ইবনু আব্দিল গাফফারের জীবনীতে (৯৮) বলেনঃ তিনি কতিপয় মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। মানাবী দ্বন্দ্বে ভুগেছেন, “আল-ফায়েয” গ্রন্থে হাদীসটির সমস্যা হিসাবে যা বলেছি তাই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু “আত-তায়সীর” গ্রন্থে বলেছেনঃ সনদটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯০। হে আবু হুরাইরাহু যখন ক্ষুধা প্রচন্ড রূপ নিবে, তখন তুমি এক টুকরো রুটি এবং ছোট এক পাত্রে পানি গ্রহণ করবে। দুনিয়া ও দুনিয়াবাসীদের বিনাশ সাধিত হোক।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (পাতা ১৪/১/৮২ হতে) এবং আবু বাকর ইবনুস সুনী “কিতাবুল কানা'আহ” গ্রন্থে (পাতা ২৩৭/১) কাসীর-ইবনু ওয়াকিদ সূত্রে (আবু বকর বলেনঃ ঈসা ইবনু ওয়াকিদ বাসরী সূত্রে) মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর ইবনু ওয়াকিদ বা ঈসা ইবনু ওয়াকিদকে কে উল্লেখ করেছেন পাচ্ছি না।
হাদীসটি দাইলামী (৪/২৬৬) তার থেকেই বর্ণনা করেছেন। তার নাম বলেছেন ঈসা ইবনু মূসা তাকেও চিনি না।
মাযী ইবনু মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ ইবনু আমর হতে তার মুতাবায়াত করেছেন। যেটি ইবনুস সুন্নী এবং ইবনু আদী এ মায়ীর জীবনীতে (৬/২৫/২০৪) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ তিনি (মাযী) মিসরী, মুনকারুল হাদীস। তার অধিকাংশ বর্ণনাই অনুসরণযোগ্য নয়। তার থেকে ইবনু ওয়াহাব ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
ইবনু আবী হাতিম (৪/১/৪৪২) তার পিতা হতে বর্ণনা করে বলেছেনঃ আমি তাকে (মাযীকে) চিনি না এবং তিনি যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সেটি বাতিল ।
তিনি মুনকারুল হাদীস যেমনটি ইবনু আদী বলেছেন।
হাদীসটি অন্য ভাষায় জাল সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেটি পূর্বের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯১। তিনি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে শর্ত করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
শাইখুল ইসলাম “মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া” গ্রন্থে (১৮৬৩) বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল। মুসলমানদের কোন কিতাবে নেই। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা হতে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেছেন (২৯/১৩২, ৩/৩২৬) আবু হানীফা (রহঃ), ইবনু আবী লায়লা ও শুরায়েক হতে বর্ণিত কোন এক ঘটনার মধ্যে এটি বর্ণিত হয়েছে। একদল ফিকহের রচয়িতা তাদের ফিকহ গ্রন্থে এটিকে উল্লেখ করেছেন। হাদীসের কোন গ্রন্থে এটি পাওয়া যায় না। এটিকে ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য আলেমগণও অস্বীকার করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে, এটিকে চেনা যায় না এবং এটি সহীহ হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক।
আলেমগণ একমত পোষণ করেছেন যে, শর্ত করা পণ্যের মধ্যের একটি গুণাবলী। যেমন শর্ত করা হলো যে, দাসকে লেখক বা কর্মকার হতে হবে বা লম্বা কাপড় হতে হবে বা যমীনের পরিমাণ ... ইত্যাদি সহীহ শর্ত।
এটি মদীনা মুনাওয়ারাতে কোন কোন ছাত্রের কাছে মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। সে উল্লেখ করে যে, হাকিম “উলুমুল হাদীস” গ্রন্থে (পৃ. ১২৮) তার সনদে আব্দুল্লাহ হতে এবং তিনি আব্দুল ওয়ারেস ইবনু সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি মক্কায় আসলাম, সেখানে আবু হানীফা (রহঃ), ইবনু আবী লায়লা এবং ইবনু শাবরুমাকে পেলাম।
আমি আবু হানীফাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেন যে কিছু বিক্রয় করল এবং তার সাথে কোন শর্ত করল? উত্তরে বললেনঃ ক্রয়-বিক্রয় বাতিল এবং শর্তটিও বাতিল।
অতঃপর ইবনু আবী লায়লার নিকট আসলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ, শর্তটি বাতিল।
অতঃপর ইবনু শাবরুমার নিকট আসলাম এবং তাকেও জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ, শর্তও বৈধ।
আমি বললামঃ সুবহানাল্লাহ ইরাকের তিন ফোকাহা একই মাসআলাতে মতভেদ করলেন!
তারপর আবু হানীফা (রহঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম। তিনি বললেনঃ জানিনা তারা দু'জন কি বলেছেন। আমাকে আমর ইবনু শুয়ায়েব আন আবীহে আন জাদ্দেহি হাদীসটি শুনিয়েছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে শর্ত নিষিদ্ধ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয় বাতিল এবং শর্তও বাতিল।
অতঃপর ইবনু আবী লায়লার নিকট আসলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম। তিনি বললেনঃ জানিনা তারা দু'জন কি বলেছেন। আমাকে হিশাম ইবনু উরউয়া তার পিতা হতে হাদীস শুনিয়েছেন আর তিনি বর্ণনা করেছেন আয়েশা (রাঃ) হতে। তিনি বলেনঃ আমাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যেন, আমি বারীরাকে ক্রয় করি, অতঃপর তাকে স্বাধীন (মুক্ত) করে দেই। ক্রয়-বিক্রয় বৈধ, তবে শর্তটি বাতিল।
অতঃপর ইবনু শাবরুমার নিকট আসলাম, তাকে সংবাদ দিলাম। তিনি বললেনঃ জানিনা তারা দু'জন কি বলেছেন। আমাকে মিসায়ার ইবনু কিদাম মুহারিব ইবনু দিসার হতে হাদীস শুনিয়েছেন এবং তিনি জাবের (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। জাবের বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি উট বিক্রয় করলাম। তিনি শর্ত করলেন সেটিকে যেন আমি মদীনা পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়। ক্রয় বিক্রয় বৈধ, শর্তও বৈধ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এতে কোন প্রশ্ন নেই, কারণ তার সনদের [আলোচ্য হাদীসের] কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন ইবনু যাযান, তিনি খুবই দুর্বল। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক। তার শাইখ যুহালীকে আমরা চিনি না। এ মাধ্যমেই তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/২৬৪/৪৫২১) উল্লেখ করেছেন।
তার পরেও যদি হাদীসটির সনদ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) পর্যন্ত সহীহ হয়। তবুও তার হাদীসটি সহীহ নয়, হাদীসের ক্ষেত্রে আবু হানীফার অবস্থা নাজুক হওয়ার কারণে। যেমনটি তার অবস্থা সম্পর্কে ৪৫৮ নং হাদীসের আলোচনায় জেনেছেন।
ইবনু হাজার "বুলুগুল মারাম" (৩/২০) গ্রন্থে তার এ হাদীসটিকে এ কারণেই গারীব মনে করেছেন, নাবাবীও গারীব মনে করেছেন।
হাদীসটি বিভিন্ন সূত্রে আমর ইবনু শুয়ায়েব আন আবীহে আন যাদ্দেহি হতে নিম্নের শব্দে নিরাপদঃ
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن شرطين في بيع
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেচা-কেনার মধ্যে দু' শর্তকে নিষিদ্ধ করেছেন।
এটি বর্ণনা করেছেন সুনান রচয়িতাগণ, তাহাবী ও অন্যরা। এটির তাখরীজ করা হয়েছে “ইরউয়াউল গালীল” গ্রন্থে (১৩০৫)।
এটিই হচ্ছে আসল হাদীস। আবু হানীফা (রহঃ) তার বর্ণনাতে সন্দেহ করেছেন যদি তার থেকে মাহফু্য হয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯২। তোমরা আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। কারণ আল্লাহ তা'আলা চাওয়াকে ভালবাসেন। সর্বোত্তম এবাদাত হচ্ছে প্রশস্ততার অপেক্ষা করা।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তিরমিযী (৪/২৭৯), ইবনু আবিদ-দুনিয়া “কানাআত ওয়াত-তায়াফফুফ” গ্রন্থে (১/১০৬/১ ৯০ হতে) এবং আব্দুল গনি মাকদেসী "তারগীব ফিদ দু'আ" গ্রন্থে (২/৮৯) হাম্মাদ ইবনু ওয়াকিদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি ইসরাঈল ইবনু ইউনুস হতে শুনেছি, তিনি আবু ইসহাক হামাদানী হতে ... বর্ণনা করেছেন। তিরমিয়ী বলেনঃ হাদীসটি এভাবেই হাম্মাদ ইবনু ওয়াকিদ বর্ণনা করেছেন। হাম্মাদ হাফিয নন। আবু নুয়াইম এ হাদীসটি ইসরাঈলের মাধ্যমে হাকীম ইবনু যুবায়ের থেকে এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেছেন। আবু নুয়াইমের হাদীসটি সহীহ হওয়ার সাথে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু ওয়াকিদ থেকে হাকীম ইবনু যুবায়ের বেশী দুর্বল। তাকে ইবনুল জুযজানী মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। যদি বেশী সহীহটাই তার হাদীস হয়, তাহলে সেটি নিতান্তই দুর্বল।
হাদীসটির শেষাংশ বাযযার, বাইহাকী “আশ-শুয়াব” গ্রন্থে এবং কাযাঈ আনাস (রাঃ)-এর হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১৪৭) বলেছেনঃ তাতে এমন ব্যক্তি রয়েছেন যাকে আমি চিনি না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ কারণটি সংক্ষিপ্ত। কারণ তাতে রয়েছে বাকিয়ার আন্‌ আন্ করে বর্ণনা এবং সুলায়মান ইবনু সালামাহ্। তিনি হচ্ছেন খাবায়েরী, তিনি মিথ্যুক। তার সূত্র হতে কাযাঈ (১২৮৩) ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৩। তিনি তিনজন করে পশুর (পিঠে) উপর আরোহন করতে নিষেধ করেছেন।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি জাবের (রাঃ)-এর হাদীস হতে বর্ণিত হয়েছে। হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/১০৯) বলেনঃ হাদীসটি তাবরানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে সুলায়মান ইবনু দাউদ শাযকূনী রয়েছেন। তিনি মাতরুক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কারণ তিনি মিথ্যা বলতেন। যেমনটি তার সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা হয়েছে। তাবারানী তার পরক্ষণেই (১/১১৪/৭৬৬৩) বলেছেনঃ শাযকুনী হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার শাইখ আবু উমাইয়া ইবনু ইয়ালাকে দারাকুতনী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু আবী শায়বা “কিতাবুল আদাব” গ্রন্থে (১/১৫৩/১) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যার সনদে ইসমাঈল ইবনু মুসলিম বাসরী মাক্কী রয়েছেন। তিনি দুর্বল।
ইবনু আবী শায়বা সহীহ সনদে যাযান হতে মুরসাল হাদীসে বর্ণনা করেছেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনজনের তৃতীয় জনকে অভিশাপ দিয়েছেন। এ যাযান হচ্ছেন আবু আবদিল্লাহ আল-কিন্দী। তিনি নির্ভরশীল, ইমাম মুসলিমের বর্ণনাকারী।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ সূত্রে পশুর উপর তিনজন আরোহন করেছেন তা সাব্যস্ত হয়েছে। তার সামনে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনু জাফার, পিছনে হাসান অথবা হুসাইন। এটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। "সহীহ আবু দাউদ" গ্রন্থে (২৩১২) এটির তাখরীজ করা হয়েছে। যদি নিষেধটি সঠিক হয়, তাহলে যে পশু বোঝা নিতে সক্ষম নয় তার ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৪। বহু আবেদ আছে যারা অজ্ঞ, বহু আলেম আছে যারা পাপাচারী। অতএব তোমরা অজ্ঞ আবেদদের এবং পাপাচারী আলেমদের থেকে বেঁচে চল। কারণ তারাই হচ্ছে ফিতনাবাজদের ফিতনা।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী "আল-কামিল" গ্রন্থে (পৃঃ ৩৩-৩৪ নং ৩৬৪) এবং তার সূত্রে ইবনু আসাকির “যাম্মু মান লা ই'য়ামালু বি ইলমেহি” গ্রন্থের চতুর্দশ মজলিসে (পাতা ৫৬/ ১-২ / ৭৭ হতে) এবং "আত-তারীখ" গ্রন্থে (৩/১৫৪/২) বিশর ইবনু ইবরাহীম সূত্রে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর ইবনু আসাকির বলেছেনঃ বিশর এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি জালকারী।
ইবনু আদী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য ইমামদের নিকট হতে বর্ণনাকারী হিসাবে তিনি মুনকারুল হাদীস ।
অতঃপর তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এগুলো বাতিল। এগুলো বিশর জাল করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি সেগুলোর একটি।
অতঃপর (ইবনু আদী) বলেনঃ তিনি আমার নিকট যারা নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
তারপর ইবনু আদী (১/৪০০) মাহফু্য ইবনু বাহারের জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার সূত্রে উমর ইবনু মূসা হতে এবং তিনি খালিদ ইবনু মি’দান হতে হাদীসটি "فإن أولئك" এ অংশটুকু বাদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ খালিদ ইবনু মি’দান হতে এটি মুনকার। তার থেকে বর্ণনাকারী উমার ইবনু মূসাকে বলা হয় ইবনু ওয়াজীহ। তিনি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হচ্ছেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত যারা হাদীস জাল করতেন। এ মাহফু্য সম্পর্কে আবু আরুবা বলেছেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। কিন্তু ইবনু আদী তার পরেই বলেনঃ এটি মাহফুযের পক্ষ হতে নয়। তিনি যেন ইঙ্গিত করছেন যে, এ হাদীসটির ব্যাপারে দোষী হচ্ছেন ইবনু ওয়াজীহ এবং বিশর ইবনু ইবরাহীম।
এ হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আদীর বর্ণনা হতেই উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি (ইবনু আদী) সেটিকে এ জালকারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সুয়ূতী চুপ থেকেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৫। যে ব্যক্তি মক্কা হতে পায়ে হেঁটে হজ্জ করবে মক্কা ফিরে আসা পর্যন্ত। আল্লাহ তার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য সাতশতটি সৎকর্ম লিখে দিবেন। প্রতিটি সৎকর্ম হারামের সৎ কর্মগুলোর ন্যায়। বলা হলোঃ হারামের সৎ কর্মগুলো কী? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক সৎকর্মের বিনিময়ে এক লক্ষ সৎকর্ম।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১৬৯/১) এবং “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১১২/২), দুলাবী “আল-কুনা” গন্থে (২/১৩), হাকিম (১/৪৬১) এবং বাইহাকী (১০/৭৮) ঈসা ইবনু সুওয়াদা সূত্রে ইসমাঈল ইবনু আবী খালিদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাবারানী বলেছেনঃ ইসমাঈল হতে ঈসা ছাড়া অন্য কেউ হাদীসটি বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। হাকিম বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ সহীহ্ নয়। আমি ভয় করছি মিথ্যা হওয়ার। ঈসা সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তাদীল” গ্রন্থে (৩/১/২৭৭) বলেনঃ তিনি দুর্বল। তিনি ইসমাঈল ইবনু আবী খালিদ হতে এবং তিনি যাযান হতে ... মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুনযেরী হাদীসটি “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/১০৮) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটিকে ইবনু খুযায়মা তার “সহীহ” গ্রন্থে এবং হাকিম বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। ইবনু খুযায়মা বলেছেনঃ যদি সহীহ হয় তাহলে ঈসা ইবনু সুওয়াদার অন্তরে কিছু ছিল। হাফিয মুনযেরী বলেনঃ বুখারী বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বুখারীর এ কথা ইঙ্গিত করছে তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করার দিকে এবং তার থেকে বর্ণনা করাও হালাল নয়। তার সম্পর্কে ইবনু মা'ঈন স্পষ্টতই বলেছেনঃ তাকে আমি মিথ্যুক হিসাবে দেখেছি।
আমি তার হাদীসটির একটি মুতাবায়াত পেয়েছি “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২/৯) সুলায়মান ইবনুল ফাযল ইবনু জিবরল হতে ... । কিন্তু এ সনদটি দুর্বল। সুলায়মানের জীবনী পাচ্ছি না। সম্ভবত তার কথাই ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থে (১/১৬১) এসেছেঃ তিনি বলেনঃ তিনি হাদীসের ব্যাপারে সঠিক ছিলেন না।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৬। নিশ্চয় আরোহন করে আগত হাজীর বাহনের প্রতিটি পদক্ষেপ সত্তরটি সৎকর্ম তুল্য এবং পায়ে হেঁটে আগত হাজীর প্রতিটি পদক্ষেপ সাতশত সৎকর্মের সমতুল্য।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১৬৫/২) এবং যিয়া “আল মুখতারা” গ্রন্থে (২/২০৪) ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়েম সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম তায়েফী হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু উমাইয়া হতে, তিনি সাঈদ ইবনু যুবায়ের হতে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়েম এবং মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম উভয়কেই ইমাম আহমাদ ও অন্যরা দুর্বল বলেছেন। তাদের কোন একজন তার সনদে ইযতিরাব ঘটিয়েছেন। একবার বলেছেন এরূপ, অন্যবার “ইসমাঈল ইবনু উমাইয়ার” পরিবর্তে বলেছেন ইবরাহীম ইবনু মায়সারা। এটি আযরূকী "আখবারু মাক্কা" গ্রন্থে (পৃ. ২৫৪), অনুরূপভাবে যিয়া তাবরানী সূত্রে এবং আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৫৪) বর্ণনা করেছেন। আরেকবার বলেছেনঃ ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম। এটি বাযযার (১১২১) বর্ণনা করেছেন। আরেকবার তাকে রাখেনইনি। বলেছেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম বর্ণনা করেছেন সাঈদ ইবনু যুবায়ের হতে। এটি মুরসাল।
এ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে ইবনু সীশ হতে। তিনি একজন মাজহুল ব্যক্তি। এ হাদীসটি সহীহ নয়। ইবনু আদী (কাফ ২২৬/১) আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ কুদামী সূত্রেও বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ তার অধিকাংশ হাদীস মাহফু্য (নিরাপদ) নয় এবং তিনি দুর্বল। মোটকথাঃ হাদীসটি দুর্বল। বর্ণনাকারী দুর্বল হওয়ার কারণে এবং তার সনদটিতে ইযতিরাব সংঘটিত হওয়ার কারণে।
কীভাবে সহীহ্ হয় যেখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আরোহীর মাধ্যমে (মক্কা গিয়ে) হজ্জ করেছেন। যদি হেঁটে হজ্জ করা উত্তম হত, তাহলে আল্লাহ তার নাবীর জন্য সেটিই পছন্দ করতেন। এ কারণেই জামহুরে ওলামা আরোহীর মাধ্যমে (মক্কা গিয়ে) হজ্জ করাকে উত্তম বলেছেন। যেমনটি নাবাবী “শারহু মুসলিম”-এর মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৭। পায়ে হেঁটে আগত হজ্জকারীর জন্য সত্তরটি হজ্জের সাওয়াৰ। আর আরোহন করে হজ্জে আগত ব্যক্তির সাওয়াব ত্রিশটি হজ্জের সমান।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১১১-১১২) মুহাম্মাদ ইবনু মেহসান ওকাশী হতে এবং তিনি ইবরাহীম ইবনু আবী উবলা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর তাবরানী বলেছেনঃ ইবরাহীম হতে মুহাম্মাদ ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনে ইবরাহীম। তাকে তার দাদার দিকে নেসবাত করা হয়েছে। তিনি মিথ্যুক। তার সম্পর্কে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। হায়সামী (৩/২০৯) বলেনঃ তিনি মাতরুক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৮। যে ব্যক্তি সফরে রমযান মাসে সওম রাখে সে মুকিম অবস্থায় ইফতার কারীর (যে সওম রাখে না) ন্যায়।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু মাজাহ্ (১/৫১১), হায়সাম ইবনু কুলায়েব “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/২২) এবং যিয়া “আল-মুখতারা” গ্রন্থে (১/৩০৫) উসামা ইবনু যায়েদ সূত্রে ইবনু শিহাব হতে, তিনি আবু সালমা ইবনু আবদির রহমান হতে, তিনি তার পিতা আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি দুর্বল দুটি কারণেঃ
১। ইনকিতা (সনদে বিচ্ছিন্নতা)। কারণ আবু সালমা তার পিতা হতে শুনেননি, যেমনভাবে "ফাতহুল বারীর" মধ্যে এসেছে।
২। উসামা ইবনু যায়েদের হেফযে দুর্বলতা ছিল। নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী তার বিরোধিতা করেছেন। তিনি হচ্ছেন ইবনু আবী যি’ব। তিনি এটিকে ইবনু শিহাব হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এটি নাসাঈ (১/৩১৬) এবং ফিরইয়াবী “আস-সিয়াম” গ্রন্থে (৪/৭০/১) তার থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। যার জন্য বাইহাকী “সুনান” গ্রন্থে (৪/২৪৪) বলেনঃ হাদীসটি মওকুফ। তার সনদটিতে ইনকিতা সংঘটিত হয়েছে এবং মারফু হিসাবে যেটি বর্ণনা করা হয়েছে, সেটির সনদটি দুর্বল।
হ্যাঁ; আবু কাতাদ আব্দুল্লাহ ইবনু ওয়াকিদ হাররানী হাদীসটি মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ আবু কাতাদা মাতরুক। আর তার সূত্রে আরেক বর্ণনাকারী আছেন, তিনিও দুর্বল।
এটি আল-খাতীব (১১/৩৮৩) উল্লেখ করেছেন।
নাসাঈ ইবনু আবী যি’ব সূত্রে মওকুফ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। তার সনদটি সহীহ। এটি এ সিদ্ধান্তকেই সুদৃঢ় করছে যে, আব্দুর রহমান ইবনু আউফ হতে মারফু হিসাবে হাদীসটি ভুল।
যিয়া উল্লেখ করেছেন যে, দারাকুতনী হাদীসটিকে আব্দুর রহমান হতে মওকুফ হিসাবে সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
যঈফ ও জাল হাদিস
৪৯৯। ধৈর্য হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক। আর বিশ্বাস হচ্ছে পুরো ঈমান।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনুল আরাবী তার "আল-মুজাম" গ্রন্থে (২/৫৬), তাম্মাম আর-রাযী (৯/১৩৮/১), আবুল হাসান আযদী "পাঁচটি মজলিসের প্রথমটিতে" (১৬-১৭), আবু নুয়াইম “আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৫/৩৪), আল-খাতীব তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১৩/২২৬), তার থেকে ইবনুল জাওয়ী "ইলালুল মুতানাহিয়া" গ্রন্থে (১৩৬৪) এবং কাযাঈ তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৬ বা /২) ইয়াকুব ইবনু হুমায়েদ ইবনে কাসেব সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ মাখযুমী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আবু নুয়াইম এবং আল-খাতীব বলেছেনঃ মাখযুমী সুফিয়ান হতে এ সনদে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওয়ী বলেনঃ তিনি মাজরুহ (সমালোচিত)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ এ মতনটি (ভাষাটি) ইমাম বুখারী “কিতাবুল ঈমান”-এর মধ্যে মুয়াল্লাক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেননি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ আবু আলী নাইসাপূরী বলেছেনঃ এ হাদিসটি মুনকার। যুবায়েদ এবং সাওরীর হাদীস হতে তার কোন ভিত্তি নেই।
ইবনু হাজার “ফাতহুল বারী" গ্রন্থে (১/৪১) বলেছেনঃ الصبر نصف الإيمان এ অংশটুকু আবু নুয়াইম ও বাইহাকী “আয-যুহুদ” গ্রন্থে ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। মারফু' হিসাবে সাব্যস্ত হয়নি।
বাইহাকী আল-আদাব” গ্রন্থে (পৃ.৪০৪) বলেনঃ মওকুফ হিসাবেই সহীহ।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
 যঈফ ও জাল হাদিস
৫০০। তোমাদের মধ্যে সে উত্তম ব্যক্তি নয় যে তার আখেরাতের জন্যে দুনিয়াকে ছেড়ে দিয়েছে এবং সেও নয় যে তার দুনিয়ার জন্য আখেরাতকে ছেড়ে দিয়েছে, দুটাে হতেই গ্রহণ না করা পর্যন্ত। কারণ দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের পয়গাম-সংবাদ স্বরূপ।
হাদীসটি বাতিল।
এটি আল-খাতীব “তালখীসুল মুতাশাবিহ ফির রাসম” গ্রন্থে (১৩/১৩৬/১) মুহাম্মাদ ইবনু হাশিম বা'আলাবাক্কী সূত্রে আবু হাশিম ইবনু সাঈদ হতে, তিনি ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ বাসরী হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ মাধ্যমে ইবনু আসাকির তার "আত-তারীখ" গ্রন্থে (১৮/১৪৩/১) উল্লেখ করেছেন। তবে শেষে কিছু বেশী বলেছেনঃ ولا تكونوا كلا على الناس ‘তোমরা মানুষের উপর বোঝা হয়ে যেও না।’
ইবনু আসাকিরের সূত্রে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার কিতাব “আল-হাবী লিল-ফাতাওয়া” গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি দাইলামীও একই মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। এটির সমস্যা হচ্ছে এ ইয়াযীদ। তিনি হচ্ছেন দামেস্কী। তাকে বলা হয় ইবনু আবী যিয়াদ। তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। আবু হাতিমও অনুরূপ কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল, যেন তার হাদীস জাল। আবু হাতিম ইয়াযীদের অন্য একটি হাদীসের ব্যাপারে দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, হাদীসটি বানোয়াট। সে হাদীসটি দুটি হাদীসের পরেই আসবে।
ইমাম বুখারী হতে প্রচারিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ আমি যাদের সম্পর্কে বলেছি মুনকারুল হাদীস, তার থেকে বর্ণনা করাই হালাল নয়। এটি যাহাবী “আল মীযান” গ্রন্থে (১/৫) উল্লেখ করেছেন। অতএব হাদীসটি এ সনদে নিতান্তই দুর্বল।
শাইখ আব্দুল হাই কাত্তানী “তারাতিবুল ইদারিয়া” গ্রন্থে (১/১০) উল্লেখ করেছেন যে, সুয়ুতী ইবনু আসাকিরের হাদীসটিকে "আল-হাবী" গ্রন্থে সহীহ বলেছেন। একথাটি ভুল। কারণ তিনি কোথাও সহীহ্ বলেননি। হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/১২৪-১২৫) ওহাযির সূত্রে উক্ত ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেন, আমার পিতা বলেছেনঃ এ হাদীসটি বাতিল । আমি ইয়াযীদের মুতাবায়াত পেয়েছি। আবু নুয়াইম “আখবারু আসবাহান" গ্রন্থে (২/১৯৭) বলেনঃ আমাকে হাদীসটি আমার পিতা, তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে ইয়াযীদ হতে, তিনি আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা হতে বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটির বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে ইয়াযীদ হচ্ছেন সুলামী। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি হাদীস চোর। তার শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা তার মতই। তিনি হচ্ছেন তারতুসী। তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি ঐসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা হাদীস চুরি করেন। তিনি যা বর্ণনা করেছেন তারা তার অধিকাংশেরই অনুসরণ করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি অথবা সুলামী এ সনদটির সমস্যা। এ মুতাবা'য়াত পেয়ে খুশি হওয়ার কিছু নেই। হাদীসটি নুবায়েত ইবনু শারীকের জাল কপিতে ২২ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসটি মওকুফ হিসাবেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনু শাহীন “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (পৃঃ ১/২) এবং ইবনু আসাকির (৪/১৫৫/১) শামর ইবনু আতিয়্যা সূত্রে হুযাইফা (রাঃ) হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি মুনকাতি', শামর এবং হুযাইফার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কারণ শামর আবু ওয়ায়েল ও তার ন্যায় তাবেঈ হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি মা'য়াফী ইবনু ইমরান “আয-যুহুদ” গ্রন্থে (কাফ ২৫৫/১), কাসেম সারকাসতী “গারীবুল হাদীস” গ্রন্থে (২/৫৯/১) এবং ইবনু আসাকির মুহাম্মাদ ইবনু কায়েস হতে আমর ইবনু মুররা থেকে ... বর্ণনা করেছেন।
প্রকাশ পাচ্ছে যে, আমর এবং হ্যাইফার মধ্যে এটির সনদটিও মুনকাতি। এ মওকুফটি দুর্বল হলেও মারফু হতে উত্তম। কারণ মারফুটির সনদ খুবই দুর্বল। আবু হাতিম সেটি সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদীসটি বাতিল। এ হাদীসটির অন্য জাল সূত্রও রয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
 পুনঃনিরীক্ষণঃ
  যঈফ ও জাল হাদিস
৫০১। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার দুনিয়ার স্বার্থের কারণে আখেরাতকে ছেড়ে দেয়নি এবং তার আখেরাতের কারণে দুনিয়াকে ছেড়ে দেয়নি। আর মানুষের উপর সে বোঝা হয়ে যায়নি।
হাদীছটি জাল।
এটি আবু বাকর আল-আযদী তার "হাদীছ" (১/৫) গ্রন্থে, আবু মুহাম্মাদ আয-যুরাব "যাম্মুর রিয়া" (১/২৯৩) গ্রন্থে এবং আল-খাতীব "তারীখু বাগদাদ" (৪/২২১) গ্রন্থে নোয়াইম ইবনু সালেম ইবনে কুম্বার সূত্রে আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি জাল। নোয়াইম ইবনু সালেমকে হাফিয ইবনু হাজার এভাবেই "আল-লিসান গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইবনু কাত্তান বলেনঃ তাকে চেনা যায় না।
আমি আলবানী বলছিঃ তার নামে রদ-বদল করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দুর্বলতার ক্ষেত্রে তিনি প্রসিদ্ধ, মাতরূকুল হাদীছ। তার নাম ইয়াগনাম ইবনু সালেম। আবু হাতিম বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি আনাস (রাঃ)-এর উপর হাদীছ জাল করতেন। ইবনু ইউনুস বলেনঃ তিনি আনাস (রাঃ) হতে হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং মিথ্যা বলেছেন।
তার সূত্রে হাদীছটি দাইলামীও বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে সুয়ুতীর "আল-হাবী" (২/২০২) এবং মানাবীর “ফাইয়ুল কাদীর গ্রন্থে এসেছে।
হাদীছটি অন্য একটি জাল সনদে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে ৫০০ নম্বরে বর্ণিত হাদীছটি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০২। নাসীহাতের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট, অমুখাপেক্ষীতার জন্য দৃঢ় বিশ্বাসই যথেষ্ট এবং ব্যতিব্যস্ততার জন্য ইবাদাতই যথেষ্ট।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী তার “মু'জাম" (১/৯৭) গ্রন্থে, ইবনু বিশরান “আল-আমালী (২/২০৮) গ্রন্থে, আবুল ফাতহ আল-আযদী "আল-মাওয়ায়েয" (১/৭) গ্রন্থে, কাযাঈ (১/১১৪) এবং কাসেম ইবনু আসাকির "তাযিয়াতুল মুসলিম" (২/২১৬/২) গ্রন্থে, অনুরূপভাবে আবু নোয়াইম "ফী হাদীছিল কুদ্দায়মী" (২/৩৫) আম্মার (রাঃ) হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি নিতান্তই দুর্বল। রাবী' ইবনুবাদর মাতরুক।
মওকুফ হিসাবেও বর্ণিত হয়েছে। এটিকে ইমাম আহমাদ “আয-যুহুদ (১৭৬) গ্রন্থে এবং ইবনু আবিদ-দুনিয়া "কিতাবুল ইয়াকীন" গ্রন্থে (নং ৩১) জাফর ইবনু সুলায়মান সূত্রে ... আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ ভাবে নোয়াইম ইবনু হাম্মাদ “যাওয়ায়েদু যুহদি ইবনিল মুবারাক (নং ১৪৮) গ্রন্থে ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটিই সঠিক ইনশাআল্লাহ।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৩। যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যার ব্যাপারে অর্ধ শব্দ দ্বারা সাহায্য করবে, তার দুই চোখের মধ্যখানে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ লিখা অবস্থায় সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে।
হাদীছটি দুর্বল।
এটিকে ইবনু মাজাহ (২/১৩৪), উকায়লী “আয-যোয়াফা" (৪৫৭) গ্রন্থে এবং বাইহাকী (৮/২২) ইয়াযীদ ইবনু যিয়াদ আশ-শামী সূত্রে যুহরী হতে তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব হতে তিনি আবৃ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। উকায়লী বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু হারূণ সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ, তার মত ব্যক্তি ছাড়া কেউ তার অনুসরণ করেননি। ইমাম বাইহাকীও বলেছেনঃ ইয়াযীদ মুনকারুল হাদীছ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম বুখারী তার উপরোক্ত কথা দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, তার থেকে বর্ণনা করাই হালাল নয়। তিনি তার নিকট মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। ইমাম যাহাবী তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে আবু হাতিম হতে নকল করেছেন, তিনি বলেনঃ এ হাদীছটি বাতিল ও বানোয়াট। যাহাবী তার কথাকে স্বীকার করেছেন এবং ইবনুল জাওয়ী "আল-মাওযূ'আত" (২/১০৪) গ্রন্থে আবু হুরাইরাহ, উমার ও আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর হাদীছ হতে উল্লেখ করে সূত্রগুলোর ক্রটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ বলেনঃ এ হাদীছটি সহীহ নয়। ইবনু হিব্বান বলেনঃ এ হাদীছটি বনোয়াট, নির্ভরযোগ্যদের হাদীছ হতে তার কোন ভিত্তি নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম সুুূয়ূতী “আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/১৮৭-১৮৮) কতিপয় শাহেদ উল্লেখ পূর্বক তার সমালোচনা করেছেন। সেগুলো প্রমাণ করে যে, জাল নয় বরং য'ঈফ। সেগুলোর একটি ইবনু লুলু "আল-ফাওয়ায়েদুল মুনতাকাত" (২/৩১৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এটি মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও দুর্বল। কারণ আহওয়াস ইবনু হাকীম মুখস্থ বিদ্যায় দুর্বল ছিলেন।
আবু নোয়াঈম হাদীছটি “আখবার আসফাহান (১/১৫২,২৬৪) গ্রন্থে দাউদ ইবনুল মুহাব্বার সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। এই ইবনুল মুহাব্বার মিথ্যুক। তবে ইবনু আসাকির (২/৩৮২/২),অনুরূপ ভাবে বাইহাকী "আশ-শু'আব" গ্রন্থে "আল-লাআলী" গ্রন্থের ন্যায় দুটি সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। যার সনদের বর্ণনাকারী ইবনু হাফস ব্যতীত সকলেই নির্ভরযোগ্য। কারণ তার জীবনী পাওয়া যাচ্ছে না।
আবু নোয়াইম "আল-হিলইয়াহ" (৫/৭৪) গ্রন্থে হাদীছটি হাকীম ইবনু নাফে সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটির সনদও দুর্বল।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৪। সর্বোত্তম খাদ্য হচ্ছে কিশমিশ, সে মাংসপেশীকে শক্তিশালী করে, অলসতাকে দূর করে, ক্রোধকে মিটিয়ে ফেলে, মুখের গন্ধকে সুগন্ধিযুক্ত করে, কফকে বিতাড়িত করে, রঙকে উজ্জ্বল করে। তিনি দশটির মত গুণাবলী উল্লেখ করেছেন কিন্তু বর্ণনাকারী সেগুলো মুখস্থ করতে পারেনি।
হাদীছটি জাল।
হাদীছটিকে ইবনু হিব্বান “কিতাবুল মাজরুহীন" যা “আয-যোয়াফা নামে প্রসিদ্ধ (১/৩২৪ হিন্দী ছাপা), আবু নোয়াইম “আত-তিব্ব (৯/১) গ্রন্থে, আল-খাতীব “আত-তালখীস" (২/৩৬) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির (৭/১১৫/১) সাঈদ ইবনু যাইয়্যাদ ইবনে ফায়েদ সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীছটি বানোয়াট। এ সাঈদ সম্পর্কে আল-আযদী বলেনঃ তিনি মাতরুক।
ইবনু ছিব্বান পরক্ষণেই বলেনঃ জানিনা সমস্যা কার নিকট হতে? সাঈদ হতে নাকি তার পিতা অথবা তার দাদা হতে? কারণ আবু সাঈদের বর্ণনা ছাড়া তাদের দু'জনের কোন বর্ণনা আছে বলে জানা যায় না। আর শাইখ হতে যদি কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বর্ণনা না করে, তাহলে সেই শাইখ মাজহুল, তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। কারণ দুর্বল বর্ণনাকারীর বর্ণনা যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ নয় তাকে মাজহুলদের দল হতে বের করে ন্যায়পরায়ণদের দলভুক্ত করতে পারে না। কারণ দুর্বল ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণনা করা আর না করা হুকুম-এর দিক দিয়ে উভয়ই সমান।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার এ বক্তব্য শক্তিশালী ইঙ্গিত যোগাচ্ছে একথার যে, তার মাযহাব ছিল দুর্বল হাদীছের উপর আমল করাই জায়েয না। কারণ হুকুমের দিক দিয়ে দুর্বল বর্ণনাকারী, বর্ণনা না কারীর ন্যায়।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৫। আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার ফয়সালায় সম্ভষ্ট হবে না এবং আমার বিপদাপদের সময় ধৈর্যধারণ করবে না, সে যেন আমাকে ছাড়া অন্য কোন প্রতিপালক তালাশ করে।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনুহিব্বান "আল-মাজরুহীন" (১/৩২৪) গ্রন্থে, তাবরানী "আল-মুজামুল কাবীর" গ্রন্থে, আবু বাকর আল-কালাবাযী "মিফতাহুল মা'আনী" (১/৩৭৬) গ্রন্থে, আল-খাতীব “আত-তালখীস" (২/৩৯) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির সাঈদ ইবনু যাইয়্যাদ ইবনে ফায়েদ সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হায়ছামী "আল-মাজমা" (৭/২০৭) গ্রন্থে বলেনঃ এই সাঈদ মাতরূক। হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়্যা" (৩/২৯৬) গ্রন্থে বলেনঃ তার সনদটি য'ঈফ। এটি তার শিথিলতা মূলক সিদ্ধান্ত অথবা সম্ভবত "তাখরীজুল ইহইয়্যা" গ্রন্থের আমাদের কপি হতে নিতান্তই শব্দটি ছুটে গেছে। কারণ মানাবী তার থেকে নকল করে বলেছেনঃ এটি নিতান্তই দুর্বল আর এটিই সঠিকের নিকটবর্তী।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৬। যে ব্যক্তি আল্লাহর ফয়সালায় সম্ভষ্ট হবে না এবং আল্লাহর কুদরতের উপর ঈমান আনবে না, সে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন মাবুদকে তালাশ করে।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী "আল-মুজামুস সাগীর" (পৃঃ ১৮৭) গ্রন্থে, অনুরূপভাবে “আল-মুজামুল আওসাত গ্রন্থে, আর তার সূত্রে আবু নোয়াঈম “আখবারু আসবাহান" (২/২২৮) গ্রন্থে এবং আল-খাতীব “তারীখু বাগদাদ" (২/২২৭) গ্রন্থে সুহায়েল ইবনু আদিল্লাহ সূত্রে. আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ খালিদ হতে সুহায়েল ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাকে বলা হয় সুহায়েল ইবনু আবী হাযম। তিনি জামহুর ওলামার নিকট দুর্বল। ইবনু হিব্বান (১/৩৪৯) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে এককভাবে এমন হাদীছ বর্ণনা করতেন যা নির্ভরশীলদের হাদীছের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল না।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৭। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা'আলা আমার উম্মাতের একটি দলকে পাখা বিশিষ্ট করে দিবেন। তারা তাদের কবরগুলো হতে উঠে জান্নাতগুলোতে উড়ে বেড়াবে। তাতে তারা সাতার কাটবে এবং ইচ্ছা মাফিক নিয়ামাতরাজী উপভোগ করবে। ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা কি হিসাব-কিতাব দেখেছ? তারা উত্তরে বলবেঃ আমরা হিসাব কিতাব দেখিনি। ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা কি পুল-সিরাত অতিক্রম করেছ? তারা বলবে আমরা পুল-সিরাত দেখিনি। তারা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা কি জাহান্নাম দেখেছ? তারা উত্তরে বলবেঃ না আমরা কিছুই দেখিনি। ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা কার উম্মত? তারা বলবেঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত। ফেরেশতারা বলবেঃ আমরা তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, তোমাদের দুনিয়ার আমলগুলো আমাদের সামনে বর্ণনা কর? তারা বলবেঃ এমন দু'টি খাসলত আমাদের মাঝে ছিল যে, আল্লাহর রহমতের ফযীলতে আমরা এ স্তরে পৌছেছি। তারা (ফেরেশতারা) বলবেঃ সে দুটি কী? তারা উত্তরে বলবেঃ যখন আমরা নির্জনতায় যেতাম তখন আমরা তার (আল্লাহর) নাফারমানী করতে লজ্জা করতাম এবং আমাদের জন্য তাঁর বন্টনকৃত অল্প বস্তুতেই আমরা সম্ভষ্ট থাকতাম। এর পর ফেরেশতারা বলবেঃ এরূপই তোমাদের প্রাপ্য।
হাদীছটি জাল।
ইমাম গাযালী “আল-ইহইয়্যা (৩/২৯৫) গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তার হাদীছটি ইবনু হিব্বান "আয-যোয়াফা" গ্রন্থে এবং আবু আব্দীর রহমান আস-সুলামী আনাস (রাঃ)-এর হাদীছ হতে ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করেছেন। যার সনদে হুমায়েদ ইবনু আলী আল-কায়সী রয়েছেন তিনি সাকেত (নিক্ষিপ্ত) ও হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)। এ ছাড়া কুরআন ও সহীহ হাদীছ বিরোধী হওয়ার কারণে হাদীছটি মুনকার।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু হিব্বান (১/২৫৯) তাকে তার কতিপয় হাদীছ দ্বারা মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন। এটি সেগুলোর একটি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৮। অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তার ছাড় দেয়া বস্তু গ্রহণ করাকে পছন্দ করেন বান্দা যেরূপ তার প্রভুর ক্ষমা করাকে পছন্দ করে।
হাদীছটি এ বাক্যে বাতিল।
এটি তাবারানী "আল-মুজামুল আওসাত" (১/১০৪/১-২) যাওয়ায়েদুল মুজামায়েন) গ্রন্থে ফাযল ইবনুল আব্বাস হতে তিনি ইসমাঈল ইবনু ঈসা আল-আত্তার হতে তিনি আমর ইবনু আবদিল জাব্বার হতে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ ইবনে আদাম হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাবারানী বলেছেনঃ উক্ত চার ব্যক্তি হতে এ সনদ ব্যতীত ভিন্ন কোন সনদে বর্ণনা করা হয়নি। হাদীছটি ইসমাঈল এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (ইসমাঈল) নির্ভরযোগ্য যেরূপ আল-খাতীব বলেছেন। সমস্যা হচ্ছে তার শাইখ আমর ইবনু আবদিল জাব্বার থেকে। ইবনু আদী তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি তার চাচা হতে মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছেন। অথবা হাদীছটির সমস্যা হচ্ছে তার (ইসমাঈলের) শাইখের শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ হতে। বরং সমস্যার দায়ভারটি এর উপরে দেয়াই শ্রেয় হবে। কারণ ইমাম আহমাদ তার সম্পর্কে বলেনঃ তার হাদীছগুলো বানোয়াট। জুযজানী বলেনঃ তার হাদীছগুলো মুনকার। যেরূপ ইমাম যাহাবীর “আল-মীযান গ্রন্থে এসেছে।
তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। তাকে আল-আযদী ও অন্য বিদ্বানগণ পরিত্যাগ করেছেন। তিনি আজব আজব বিষয় বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তাদীল (২/২/১৯৭) গ্রন্থে তার অন্য একটি হাদীছ উল্লেখ করে বলেছেনঃ আমি আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম? তিনি বলেনঃ আমি তাকে চিনি না। তার এ হাদীছটি বাতিল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আলোচ্য হাদীছটিও উল্লেখিত বাক্যে বাতিল। তবে নিম্নের বাক্যে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যার কোন কোনটি সহীহঃ
إن الله يحب أن تؤتى رخصه، كما يكره أن تؤتى معصيته وفي رواية ... كما يحب أن تؤتى عزائمه
অর্থঃ 'আল্লাহ তার ছাড় দেয়া বস্তু গ্রহণ করাকে ভালবাসেন, যেরূপভাবে তার অবাধ্য হওয়াকে অপছন্দ করেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ যেরূপ তিনি তার দৃঢ় নির্দেশগুলো গ্রহণ করাকে পছন্দ করেন।' এটি একদল সাহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে। তাদের হাদীছগুলোকে আমি “আল-ইরওয়া (৫৫৭) গ্রন্থে তাখরীজ করেছি।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫০৯। কাঁচগুলোকে গ্রহণ কর, কারণ এমন কোন দিন নেই যে তার উপর জান্নাতের পানির ফেঁটা পড়ছে না।
হাদীছটি জাল।
এটি আবু নোয়াইম “আত-তিব্ব গ্রন্থে তার পিতা হতে তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াহইয়া হতে তিনি সালেহ ইবনু সাহাল হতে তিনি মূসা ইবনু মুয়ায হতে তিনি উমার ইবনু ইয়াহইয়া হতে তিনি উম্মু কুলসূম বিনতু আবী সালামা হতে তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি খুবই দুর্বল। মূসা এবং উমার উভয়কেই দারাকুতনী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। এই উমার আমার ধারণা তিনি একটি হাদীছের পরের হাদীছের সনদেও আছেন। তার সম্পর্কে আবু নোয়াইম বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীছ, যেমনটি সেখানে আসবে।
আর তাদের নীচের দু'জনকে আমি চিনি না। একারণেই সুয়ূতী “আল-লাআলী" গ্রন্থে বলেছেনঃ পূরো সনদটিই ধ্বংসপ্রাপ্ত।
তিনি এটিকে আনাস (রাঃ)-এর হাদীছ হতেও উল্লেখ করে বলেছেনঃ সনদটি পূর্বেরটির ন্যায়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ূতী ভুলে গিয়ে অথবা শিথিলতা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীছটি “আল-জামেউল সাগীর গ্রন্থে আবু নোয়াইমের বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবী বলেছেনঃ তার সনদে আমর ইবনু আবী সালামা রয়েছেন তাকে ইবনু মাঈন ও অন্য বিদ্বানগণ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি তার ধারণা মাত্র, এ সনদে আমর নেই। হাদীছটিকে ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযু'আত" (২/২৯৮) গ্রন্থে হুসাইন (রাঃ) এর হাদীছ হতে উল্লেখ করেছেন। আর সাহমী "তারীখু জুরজান" (পৃঃ ৬৪) গ্রন্থে হুসাইন ইবনু উলওয়ান সূত্রে আবান ইবনু আবী আইয়াশ হতে তিনি আনাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এই আবান মাতরূক, মিথ্যার দোষে দোষী। আর ইবনু উলওয়ান মিথ্যুক ও জালকারী।
ইবনুল কাইয়্যিম দৃঢ়তার সাথে বলেছেন হাদীছটি বানোয়াট। যেমনটি তার থেকে শাইখ আলী আল-কারী তার "মাওযুআত" (পৃঃ ১০৭, ১২৬) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তা স্বীকার করেছেন।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১০। তোমরা কদু গ্রহণ কর (খাবে)। কারণ তা মস্তিষ্ক (বুদ্ধি) বৃদ্ধি করে। তোমরা ডাল গ্রহণ কর (খাবে), কারণ সত্তরজন নাবীর মুখে তার প্রশংসা করা হয়েছে।
হাদীছটি জাল।
এটি আবু মূসা আল-মাদীনী "আল-আমালী" গ্রন্থের জুযউ-এর মধ্যে (১/৬৩) এবং আবু নোয়াইম “আত-তীব্ব গ্রন্থে আমর ইবনুল হুসায়েন সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আদিল্লাহ ইবনে আলাছাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি বানোয়াট। আমর ইবনু হুসায়েন মিথ্যুক আর তার শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু আলাছাহ দুর্বল। যেমনটি পূর্বে একাধিকবার গেছে, সর্বশেষ এ (৪২৫) হাদীছে। এ সূত্রেই তাবারানী "আল-মুজামুল কাবীর" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি “আল-মাজমা" (৫/৪৪) গ্রন্থে এসেছে। সুয়ূতী তার বর্ণনা হতেই "আল-জামেউল সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এ হাদীছটিই (৪০) নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানের উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্বিতীয় ভাষাটি উল্লেখ করা, সেটি হচ্ছেঃعليكم بالقرع، فإنه يزيد في العقل، ويكثر الدماغ অর্থঃ তোমরা কদু খাবে কারণ তা বুদ্ধি বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ক বাড়ায়।
হাফিয সুয়ূতী বলেছেনঃ বাইহাকী মুরসাল হিসাবে আতা হতে বর্ণনা করেছেন। মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ হাফিয ইবনু হাজার মিখলাদ ইবনু কুরাইশকে "আল-লিসান" গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, ইবনু হিব্বান "আস-সিকাত" গ্রন্থে বলেনঃ তিনি ভুল করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সূত্রে যদি মুরসাল হওয়া ছাড়া অন্য কিছু নাও থাকে তবুও সেটি দুর্বল। যদিও হৃদয় ধাবিত হচ্ছে এদিকেই যে এটির মতনও (ভাষা) বানোয়াট। অতঃপর আমি বাইহাকীর নিকট “শু'আবুল ঈমান" (২/১৯৮/২) গ্রন্থে হাদীছটির সনদ সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। মুরসাল হওয়া ছাড়াও তাতে আরেকটি সমস্যা রয়েছে। সেটি হচ্ছে সনদের বর্ণনাকারী আব্দুর রহমান ইবনু দুলহুমের জীবনী আমার নিকট আসমায়ে রিজালের যে সব গ্রন্থ আছে সেগুলোর মধ্যে পাচ্ছি না।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১১ । আদম সম্ভানদের হৃদয়গুলো শীতকালে নরম হয়ে যায়। কারণ আল্লাহ তা'আলা আদমকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন আর মাটি শীতকালে নরম হয়ে যায়।
হাদীছটি জাল।
এটি আবু নোয়াইম "আল-হিলইয়্যাহ" (৫/২১৬) গ্রন্থে উমর ইবনু ইয়াহইয়া সূত্রে শুবা হতে তিনি ছাওর ইবনু ইয়াযীদ হতে ... মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ উমার ইবনু ইয়াহইয়া মারফূ হিসাবে এককভাবে বর্ণনা করেছেন, তিনি মাতরুকূল হাদীছ। সহীহ হচ্ছে এই যে, এটি খালেদ ইবনু মিদানের কথা। ইমাম যাহাবী তার জীবনীতে বলেছেনঃ তিনি বানোয়াট হাদীছের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তার এ হাদীছটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ শু'বার ছাওর হতে কোন বর্ণনা সম্পর্কে আমার জানা নেই।
তিনি “তাবাকাতুল হুফফায গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীছটি সহীহ নয়। শু'বার সাথে হাদীছটি জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উমারকে আমি চিনি না। তাকে আবু নোয়াইম পরিত্যাগ করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ আমার ধারণা উমার ইবনু ইয়াহইয়াকে দারাকুতনী দুর্বল বলেছেন। অনুরূপ কথা ইবনু ইরাকের “তানীহুশ শারীয়াতিল মারফুয়াহ আনিল আখবারিশ শানী'য়াতিল মাওযূ'আহ" (১/৬৯) গ্রন্থেও এসেছে।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১২। তোমরা তেল ভক্ষণ কর এবং তা শরীরে মালিশ কর। কারণ তা সত্তরটি রোগের আরোগ্যদানকারী। যার একটি হচ্ছে কুষ্ঠ রোগ।
হাদীছটি মুনকার।
এটি আবু নোয়াইম “আত-তিব্ব গ্রন্থে তাবারানী সূত্রে তিনি ইয়াহইয়া ইবনু আদিল বাকী হতে তিনি আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে আবী বাযযাহ হতে তিনি আলী ইবনু মুহাম্মাদ আর-রিহাল হতে তিনি আওযাঈ হতে তিনি আবু মালেক হতে তিনি আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীছটি মুনকার, ইয়াহইয়া ইবনু আবদিল বাকী হচ্ছেন আল-উযানী। তার থেকে তাবারানী আরেকটি হাদীছ “আল-মুজামুস সাগীর (পৃঃ ২৪৪) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তার কুনিয়াত হচ্ছে আবুল কাসেম, কিন্তু কে তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন তা পাচ্ছি না। ইবনু আবী বাযযাহ হচ্ছেন আহমাদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে কাসেম ইবনে আবী বাযযাহ আল-মাক্কী। আবু হাতিম তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বল। তার থেকে আমি হাদীছ বর্ণনা করি না। কারণ তিনি এটি ছাড়াও মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছেন। উকায়লী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ। এ ছাড়া আলী ইবনু মুহাম্মাদ আর-রিহালের জীবনী পাচ্ছি না।
আবু মালেক; বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, তাকেই “আল-মীযান এবং “আল-লিসান গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি হচ্ছেন আবু মালেক দেমাস্কী। তাকে তাবেঈনদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনিই হাদীছটিকে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আর তার থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু দীনার বর্ণনা করেছেন, তিনি মাজহুল।
 হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৩। পাত্র ধৈত করা এবং আঙ্গিণা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা স্বাবলম্বী করে।
হাদীছটি জাল।
এটি আল-খাতীব (১২/৯২) ও আস-সিলাফী "আত-তাউরিয়াত" (২/১০৫) গ্রন্থে আলী ইবনু মুহাম্মদ আয-যুহরী সূত্রে ... আনাস (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আল-খাতীব বলেনঃ হাদীছটি একমাত্র আলী যুহরী হতেই লিখেছি। তিনি ছিলেন মিথ্যুক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ জন্যই ইবনুল জাওযী “আল-মাওযূ'আত (২/৭৭) গ্রন্থে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী (৪২) গ্রন্থে তার মতকে সমর্থন করেছেন। ইবনু ইরাকও "তানযীহুশ শারীয়াহ" (১/২২৮) গ্রন্থে তার অনুসরণ করে বলেছেনঃ “আল-মীযান গ্রন্থে বলা হয়েছে এ হাদীছটি আলী ইবনু মুহাম্মাদ আয-যুহরী আবু ইয়ালার উপর জাল করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার "আল-লিসান" গ্রন্থে তাকে সমর্থন করেছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, সুয়ূতী হাদীছটিকে জাল হিসাবে স্বীকার করার পরেও কিভাবে “আল-জামেউস সাগীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৪। প্রজারা ধ্বংস হবে না তারা নিকৃষ্ট ধরনের অত্যাচারী হলেও যদি নেতারা হেদায়াত প্রাপ্ত হয়। প্রজারা ধ্বংস হবে না তারা হেদায়াত প্রাপ্ত হলে যদিও তাদের নেতারা নিকৃষ্ট ধরনের অত্যাচারী হয়।
হাদীছটি দুর্বল।
এটি আবু নোয়াইম "ফায়ীলাতুল আদেলীন" (পৃঃ ২২৭/১ নং ৬৩) গ্রন্থে তিনি ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি দুর্বল, অধিকাংশ ইমাম আস-সামতীকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তবে কেউ কেউ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য দুর্বলদের থেকে হাদীছ বর্ণনা করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীছে তার শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ দুর্বল। তাকে আল-আযদী স্পষ্টভাবেই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। যেমনটি “আল-মীযান" ও “আল-লিসান গ্রন্থে এসেছে।
আল-খাতীব "তারীখু বাগদাদ" (৯/৪৫৯) গ্রন্থে তার জীবনী বর্ণনা করে তার দুটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। এটি সে দুটির একটি। তিনি তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই বলেননি। যদি দুর্বল না হয় তিনি আমার নিকট মাজহুল।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৫। তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করো যাতে করে মুনাফিকরা বলে যে, তোমরা দেখানোর জন্য তা করছ।
হাদীছটি নিতান্তই দুর্বল।
হাদীছটি তাবারানী (৩/৭৭/১) এবং তার থেকে আবু নোয়াইম “আল-হিলইয়্যাহ" (৩/৮০-৮১) গ্রন্থে স্বীয় সনদে সাঈদ ইবনু সুফিয়ান আল-জাহদারী হতে তিনি আল-হাসান ইবনু আবী জাফর হতে ... তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ হাদীছটি গারীব। আল-হাসান হতে সাঈদ ছাড়া অন্য কেউ মওসূল সনদে বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এই হাসান খুবই দুর্বল। ইমাম যাহাবী তার কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করে সেগুলো সম্পর্কে বলেছেনঃ এগুলো তার সমস্যাগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
ইবনু হিব্বান সাঈদ সম্পর্কে বলেনঃ তিনি ভুলকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সম্ভবত তিনিই ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মুত্তাসিল হিসাবে বর্ণনা করতে গিয়ে ভুল করেছেন। কারণ বাইহাকী আবুল জাওযা হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, শাইখ আল-হাসান বেশী দুর্বল হওয়ার কারণে ভুলটি তার থেকেই ঘটেছে।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস
৫১৬। তোমরা আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ কর। যাতে করে মুনাফিকরা বলে যে, তোমরা দেখানোর জন্য তা করছ।
হাদীছটি দুর্বল।
এটিকে ইবনুল মুবারাক “আয-যুহুদ (১/২০৪/১০২২) গ্রন্থে এবং আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ "যাওয়ায়েদুয যুহুদ" (পৃঃ ১০৮) গ্রন্থে সাঈদ ইবনু যায়েদ সূত্রে আমর ইবনু মালেক হতে তিনি আবুয জাওযা হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি দুর্বল। মুরসাল এবং সাঈদ ইবনু যায়েদ দুর্বল হওয়ার কারণে ।
আবুয জাওযা সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু মুত্তাসিল হিসাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তার সনদটি খুবই দুর্বল। সেটি পূর্বের আলোচিত হাদীছটি। সেটির ন্যায় নিম্নোক্ত (৫১৭ নং) হাদীছটিও।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৭। তোমরা আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ কর। যাতে করে তারা (মুনাফিকরা) বলে যে, তোমরা পাগল।
হাদীছটি দুর্বল।
এটি হাকিম (১/৪৯৯), ইমাম আহমাদ (৩/৬৮), আবু ইবনু হুমাইদ "আল-মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ" (১/১০২) গ্রন্থে, আছ-ছালাবী “আত-তাফসীর (৩/১১৭-১১৮) গ্রন্থে, অনুরূপভাবে আল-ওয়াহেদী "আল-ওয়াসীত" (৩/২৩০/২) গ্রন্থে এবং ইবনু আসাকির (৬/২৯/২) দাররাজ আবুস সামহে সূত্রে আবুল হায়ছম হতে তিনি আবু সাঈদ খুদরী হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ সনদটি সহীহ।
যাহাবী তার সমালোচনা করেছেন, নাকি তাকে সমর্থন করেছেন, তা আমার নিকট স্পষ্ট হয়নি। তবে তিনি দুর্বল বলেছেন এরূপই তার কথায় মিলছে দুটি কারণেঃ
১। এই দাররাজের এ হাদিসটি ছাড়া অন্য হাদীছগুলোর ক্ষেত্রে যখন হাকিম সহীহ বলেছেন, তখন তিনি দাররাজকে উল্লেখ করে তার (হাকিমের) সমালোচনা করে বলেছেন যে, তার বহু মুনকার হাদীছ রয়েছে। (২৯৪) নম্বরে একটি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
২। তার সম্পর্কে তিনি “আল-মীযান" গ্রন্থে বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ তার হাদীছগুলো মুনকার এবং দুর্বল। ইয়াহইয়া বলেনঃ তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। তার থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছেঃ তিনি নির্ভরযোগ্য। নাসাঈ বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীছ। আবু হাতিম বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু আদী তার কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করে বলেছেনঃ তার অধিকাংশ হাদীছ অনুসরণ যোগ্য নয়।
ইমাম যাহাবী তার কতিপয় মুনকার হাদীছ উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। এ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, হাফিয কর্তৃক হাদীছটিকে হাসান বলা সঠিক হয়নি। যেমনটি তার থেকে মানাবী নকল করেছেন।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৮। যে ব্যক্তি রামায়ান মাসে দশদিন ইতিকাফ করবে তা তার জন্য দুটি হজ্জ এবং দুটি উমরাহ করার সমতুল্য হয়ে যাবে।
হাদীছটি জাল।
এটি বাইহাকী "আশ-শু'আব" গ্রন্থে হুসাইন ইবনু আলী (রাঃ)-এর হাদীছ হতে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ সনদটি দুর্বল। মুহাম্মাদ ইবনু যাযান মাতরুক। ভার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার হাদীছ লিখা যাবে না। তাতে আম্বাসা ইবনু আবদির রহমানও রয়েছেন তার সম্পর্কেও ইমাম বুখারী বলেনঃ মুহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম যাহাবী “আয-যোয়াফা" গ্রন্থে বলেছেনঃ তিনি মাতরুক, তাকে জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে। "ফায়যুল কাদীর" গ্রন্থে এরূপই এসেছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আম্বাসা সম্পর্কেই আবু হাতিম বলেছেনঃ তিনি হাদীছ জাল করতেন। ষেমনটি ইমাম যাহাবীর “আল-মীযান গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর তিনি তার কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। তার সূত্রেই হাদীছটি তাবারানী "আল-মুজামুল কাবীর" (১/২৯২/১) গ্রন্থে এবং আবু তাহের আল-আম্বারী "আল-মাশীখাহ" (কাফ ১৬২/১-২) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান (২/১৬৮) বলেনঃ তিনি বহু বানোয়ট ও ভিত্তিহীন হাদীছের অধিকারী।
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫১৯। এই দুই নারী হালাল বস্তু পানাহার করা হতে সওম পালন করেছে। আর আল্লাহ তাদের উপর যা কিছু হারাম করেছেন তা দ্বার তারা ইফতার করেছে। একজন আরেকজনের নিকটে বসেছে এবং তারা দু'জনে মানুষের গোশত খাওয়া শুরু করেছে।
হাদীছটি দুর্বল।
এটি ইমাম আহমাদ (৫/৪৩১) এক ব্যক্তি হতে ... বর্ণনা করেছেন। নাম না নেয়া ব্যক্তির কারণে এটির সনদটি দুর্বল। হাফিয ইরাকী বলেনঃ তিনি মাজহুল। হাদীছটি তায়ালিসী আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে আর-রাবী' ইবনু সুবাইহ ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি খুবই দুর্বল। রাবী' ইবনু সুবাইহ দুর্বল আর তার শাইখ ইয়াযীদ ইবনু আবান আর-রুকাশী হচ্ছেন মাতরূক।
 হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
৫২০। যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার রাতে (ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে, সে ব্যক্তির হৃদয় ঐদিন মৃত্যু বরণ করবে না যেদিন অন্য হৃদয়গুলো মৃত্যু বরণ করবে।
হাদীছটি জাল।
হায়ছামী "আল-মাজমা" (২/১৯৮) গ্রন্থে বলেছেনঃ হাদীছটি তাবারানী "আল-মুজামুল কাবীর" এবং “আল-আওসাত গ্রন্থে ওবাদাহ ইবনু সামেত হতে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদে উমার ইবনু হারুণ রয়েছেন, তিনি দুর্বল। ইবনু মাহদী ও অন্য বিদ্বানগণ তার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তাকে অধিকাংশরাই দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু মাহদী হতে উল্টা মন্তব্যও এসেছে। যার জন্য তার উক্তির আমার নিকট কোন মূল্য নেই। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন এবং সালেহ জাযারাহ বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক। ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযু'আত (২/১৪২) গ্রন্থে অনুরূপ কথাই বলেছেন। অতঃপর তার একটি হাদীছ উল্লেখ করে তাকে জাল করার দোষে দোষী করেছেন।
আর ইবনু হিব্বান (২/৯১) বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে মু'যাল হাদীছ বর্ণনা করতেন এবং তাদেরকে নিজের শাইখ হিসাবে দাবী করতেন অথচ তিনি তাদেরকে দেখেননি। এ ব্যক্তি মিথ্যার দোষে দোষী। পূর্বেও তার কতিপয় হাদীছ গেছে যেমন (২৪০, ২৮৮ ও ৪৫৫)। আলোচ্য হাদীছটি অন্য সূত্রে নিম্নের বাক্যে বর্ণিত হয়েছে (দেখুন পরের হাদীস)
 হাদিসের মানঃ জাল (Fake)  পুনঃনিরীক্ষণঃ   যঈফ ও জাল হাদিস 
(সমাপ্ত)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:     
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)

ইসলামের অন্যান্য সকল  বিষয় সহিহভাবে জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...