Search This Blog

Friday, July 10, 2020

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের সঠিক সময় (কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক)


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের সঠিক সময়

(কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক)

ভূমিকাঃ ফরয সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য এক শর্ত হল, তা যথা সময়ে আদায় করা। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ভিন্ন সময়ে সালাত হয় না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

إنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَاباً مَّوْقُوْتاً

অর্থাৎ, নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সালাত পড়া মু’মিনদের কর্তব্য। (সুরা আন-নিসা , আয়াত ১০৩)।

কুরআন মাজীদে কতিপয় আয়াতে সালাতের  ৫টি ওয়াক্তের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে; যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর সালাত কায়েম কর দিনের দু’ প্রান্তভাগে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরেবের সময়) ও রাতের প্রথমাংশে (অর্থাৎ এশার সময়)। (সুরা হুদ ১১, আয়াত ১১৪)।

“সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত (অর্থাৎ যোহ্র, আসর, মাগরেব ও এশার) সালাত কায়েম কর, আর কায়েম কর ফজরের সালাত ।” (সুরা আল ইসরা (বনি ইসরাইল ১৭, আয়াত ৭৮)।

“আর সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরে) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসরে) তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর রাত্রির কিছু সময়ে (এশায়) এবং দিনের প্রান্তভাগগুলিতে (ফজর, যোহ্র ও মাগরেবে), যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।” (সুরা ত্বহা  ২০, আয়াত ১৩০)।

পাঁচ ওয়াক্তকে নির্দিষ্ট করতে আল্লাহর তরফ হতে স্বয়ং জিবরীল এসে ইমাম হয়ে রসূল (সাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করেন।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা‘বার কাছে দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ‘আসরের সালাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত  আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ‘শাফাক্ব অস্তমিত হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।

দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ‘আসরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর (ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের ওয়াক্ত।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৪৯, সহীহুল জামি ১৪০২, আহমাদ (১/৩৩৩), হাকিম (১/১৯৩), ইরওয়া (২৪৯), ইবনু খুযাইমাহ (১, ১৬৮, ৩২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

শেষ ওয়াক্তে  সালাত যদিও শুদ্ধ, তবুও প্রথম (আওয়াল) ওয়াক্তে সালাত  পড়া হল শ্রেষ্ঠ আমল।

উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (‘আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কোন সালাতকে এর শেষ ওয়াক্তে দু’বারও আদায় করেননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৮, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭৪, হাকিম ১/১৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফজর ছালাতের ওয়াক্ত

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ একই ছালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই স্থানে একই ছালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে। কোন স্থানে একাধিক মসজিদ থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না; বরং ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতে ছালাত আদায় করার যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা একেবারে ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা। উল্লেখ্য যে, অনেক মসজিদে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই আযান দেয়া হয়। এটা অতিরিক্ত পরহেযগারিতা ও বাড়াবাড়ি। উক্ত অভ্যাস বর্জন করতে হবে।

ফজর ছালাতের ওয়াক্ত শুরু

ছুবহে ছাদিকের পর হতে ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। অতঃপর মু’মিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেন, অন্ধকারের জন্য তাদের চেনা যেতনা অথবা বলেছেন, অন্ধকারের জন্য তাঁরা একে অপরকে চিনতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭২, ৩৭২, ৫৭৮, ৮৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৪৩-১৩৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৬৯,  তিরমিযী ১৫৩, নাসায়ী ৫৪৫-৪৬, ১৩৬২; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৩, আহমাদ ২৩৫৩১, ২৩৫৭৬, ২৪৯২৬, ২৫৫৭৯, ২৫৬৯০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪, দারিমী ১২১৬, সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৮৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২৩, ইরওয়াহ ২৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে ফজর সালাতের ওয়াক্ত সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক সাজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৬, ৫৭৯, ৫৮০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০১,  নাসায়ী ৫১৭, তিরমিযী ১৮৬, মালিক ৫/৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৮৩, ইরওয়া ২৫৩, সহীহ আল জামি ৫৯৯২, আহমাদ ৯৯৬১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম হিসাবে রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে ফজরের ছালাত আদায় করতেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (‘আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৪৩৪), দারাকুতনী (১/১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ দলীল নেই। মূলতঃ ছহীহ হাদীছের মনগড়া অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে দেরী করে ছালাত আদায় করা হয়। অনেক মসজিদে ফর্সা হলে ছালাত শুরু করা হয় এবং বিদ্যুৎ বা আলো বন্ধ করে কৃত্রিম অন্ধকার তৈরি করে ছালাত আদায় করা হয়। এটা শরী‘আতের সাথে প্রতারণা করার শামিল। নিম্নের জাল বর্ণনাটি লক্ষণীয়-

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন। তিনি বলে দিলেন, হে মু‘আয! যখন শীতকাল আসবে তখন ফজর ছালাত অন্ধকারে পড়বে এবং মানুষের সাধ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে ক্বিরাআত লম্বা করবে। তাদের উপর কঠিন করো না। আর যখন গ্রীষ্মকাল আসবে, তখন ফজরের ছালাত ফর্সা করবে। তখনকার রাত যেহেতু ছোট, আর মানুষ যেহেতু ঘুমায় সেহেতু তাদেরকে অবকাশ দিবে, যেন তারা ছালাত পায়। (শারহুস সুন্নাহ ১/৯৫ পৃঃ)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। এর সনদে মিনহাল ইবনুল জার্রাহ নামক একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও মুসলিম বলেছেন, সে অস্বীকৃত রাবী। ইবনু হিববান বলেছেন, সে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করত এবং মদ পান করত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫৫, ২/৩৭১ এবং হা/৫৪৪০, ১১/৭৪৬ পৃঃ)।

অতএব উক্ত হাদীছের আলোকে ফজরের ছালাত দেরী করে পড়ার কোন সুযোগ নেই। যেহেতু বর্ণনাটি জাল।

ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা :

রাফি‘ ইবনু খদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ফজরের (ফজরের) সালাত ফর্সা আলোতে আদায় কর। কারণ ফর্সা আলোতে সালাত আদায় করলে অনেক বেশী সাওয়াব পাওয়া যায়।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬১৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৭২, নাসায়ী ৫৪৮-৪৯, আহমাদ (৪/১৪০), ১৫৩৯২, ১৬৮০৬, ১৬৮২৮; দারিমী ১২১৭, তিরমিযী ১৫৪, দারিমী ১২১৭, ইরওয়া ২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, উক্ত মর্মে কিছু যঈফ হাদীছও আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯৪ ও ৩৭৬৮)।

অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বেলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন,

‘তুমি ফজর ছালাতের মাধ্যমে ফর্সা কর। যতক্ষণে লোকেরা তাদের তীর নিক্ষেপের স্থানগুলো দেখতে পায়’। (মুসনাদে ত্বায়ালীসী হা/৯১, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ)।

উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেন,

 وَهَذَا إِسْنَادٌ صَحِيْحٌ إِنْ شَاءَ اللهُ ‘ইনশাআল্লাহ এই হাদীছের সনদ ছহীহ’। (ইরওয়াউল গালীল ১/২৮৬ পৃঃ)।

উক্ত হাদীছের ভুল ব্যাখ্যা করে বলা হয় যে, ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করতে হবে। কারণ এটাই সর্বোত্তম। ‘হেদায়া’ কিতাবে প্রথম আলোচনায় সঠিক সময় উল্লেখ করা হয়েছে। (হেদায়া ১/৮০ পৃঃ)।

কিন্তু পরে পৃথক আলোচনায় বলা হয়েছে,  وَيَسْتَحِبُّ الْإِسْفَارُ بِالْفَجْرِ ‘ফর্সা করে ফজর ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব’। (হেদায়া ১/৮২ পৃঃ)।

অথচ উক্ত ব্যাখ্যা চরম বিভ্রান্তিকর এবং ছহীহ হাদীছের প্রকাশ্য বিরোধী। কারণ-

(ক)  ইমাম তিরমিযী (২০৯-২৭৯ হিঃ) উক্ত হাদীছ বর্ণনা করে বলেন,

‘ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব বলেন, ‘ইসফার’ হল, ফজর প্রকাশিত হওয়া, যাতে কোন সন্দেহ না থাকে। তারা কেউ বর্ণনা করেননি যে, ইসফার অর্থ ছালাত দেরী করে পড়া। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  ইমাম ত্বাহাবী (২৩৯-৩২১ হিঃ) বলেন,

‘(উক্ত হাদীছের অর্থ হল) অন্ধকারে ফজরের ছালাত শুরু করা এবং ফর্সা হলে শেষ করা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ থেকে বর্ণনা করেছি। আর সেটাই আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কথা’। তিনি আরো বলেন,

‘তোমরা ফজরের মাধ্যমে ফর্সা কর’ অর্থাৎ ফজরের ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা কর। এর অর্থ এটা নয় যে, তারা যেন ফর্সা হওয়ার সময় ছালাতে প্রবেশ করে। বরং ফর্সা হওয়ার সময় তারা ছালাত থেকে বের হবে’। (ত্বাহাবী হা/১০০৬)।

(গ)  আলবানী বলেন,

‘হাদীছের শব্দ সমূহ একত্রিত করলে প্রমাণিত হয় যে, এর অর্থ হবে- ফর্সা হওয়া পর্যন্ত ছালাতের ক্বিরাআত লম্বা করা। আর এভাবে ফর্সা করাই সর্বোত্তম এবং নেকীর দিক থেকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ। যেমনটি পূর্বের শব্দগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব ‘ইসফার’ অর্থ এটা নয় যে, ফর্সা করে ছালাত শুরু করতে হবে, যেমনটি হানাফীদের মাঝে প্রচলিত আছে’। (ইরওয়াউল গালীল ১ম খন্ড, পৃঃ ২৮৬)।

অতএব ছহীহ হাদীছের অপব্যাখ্যা করে দেরীতে ফজর ছালাত আদায় করা মহা অন্যায়। ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ (রহঃ)ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। দলীয় কারণে কুরআন-হাদীছের অর্থ বিকৃতি করা আরো বড় অপরাধ। তাছাড়া ছহীহ হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতে ৬০-১০০ আয়াত পাঠ করতেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বারযাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী অপরজনকে চিনতে পারতো। আর এ সালাতে তিনি ষাট হতে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়তো। তিনি ‘আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদিনার শেষ প্রান্তে পৌঁছে আবার ফিরে আসতে পারতো, তখনও সূর্য সতেজ থাকতো। রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি [আবূ বারযা (রাযি.)] কী বলেছিলেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ‘ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনোরূপ দ্বিধাবোধ করতেন না। অতঃপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করতেন না। আর মু‘আয (রহ.) বর্ণনা করেন যে, শু‘বাহ (রহ.) বলেছেন, পরে আবু মিনহাল (রহ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে অসুবিধা বোধ করতেন না।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯১৮-৯১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬১, আহমাদ ১৯৭৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যদি ফর্সা হওয়ার পর ছালাত শুরু করা হয়, আর ৬০ থেকে ১০০ টি আয়াত পাঠ করা হয়, তবে সূর্য উঠতে কতক্ষণ বাকী থাকবে?

ফজর ছালাতের সঠিক সময়

রাসূল (ছাঃ) কোন্ সময় ফজরের ছালাত আদায় করতেন, তা নিম্নের হাদীছগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।

(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মহিলারা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরে ফিরত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৬৭, ৩৭২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৩৪৩-১৩৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৩, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫৩, নাসায়ী ৫৪৫, মালিক ৪/৭, আহমাদ ২৫৪৫৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৯৮, আ.প্র, ৮১৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮২৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) মুগীছ ইবনু সুমাই (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর সাথে আবছা অন্ধকারে ফজরের সালাত পড়লাম। তিনি সালাম ফিরানোর পর আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর সামনে উপস্থিত হয়ে বললাম, এটা কোন্ ধরনের সালাত? তিনি বলেন, এটা সেই সালাত যা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর ও উমার (রাঃ) এর সাথে পড়তাম। উমার (রাঃ)-কে আহত করার পর থেকে উসমান অন্ধকার দূরীভূত হলে সালাত পড়ার ব্যবস্থা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৬৭১, ইরওয়াহ ১/২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল (ছাঃ) অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর মুমিন মহিলারা ছালাত শেষ করে চলে যেত। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না অথবা পরস্পরকে তারা চিনতে  পারত না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৮৭২, ৩৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮২৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন; মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের জামা‘আতে হাযির হতেন। অতঃপর সালাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮, ৩৭২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের দেশে অধিকাংশ মসজিদে যে সময় ফাজরের সালাত আদায় করা হয় তা আদৌ এ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করা হয় না। কারণ ফাজরের সালাত এমন অবস্থায় শেষ করা হয় যে, নিকট হতে তো দূরের কথা অনেক দূর থেকেও একে অন্যকে চিনতে পারে। শুধু তা-ই নয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, রমাযানের দিনগুলোতে যে সময় ফাজরের আযান দেয়া হয় তার থেকে রমাযান শুরুর পূর্বদিন ও ঈদের দিন থেকে তার অনেক পরে আযান দেয়া হয়। অথচ একদিনে সময়ের ব্যবধান এত হতে পারে না। যদি কেউ নফল সওমের জন্য রমাযানের সময়ের বাইরে দেয়া আযান পর্যন্ত সাহারী খেতে থাকেন তাহলে তার সওম আদৌ হবে কি? কারণ উক্ত আযানের সময় সাহারীর শেষ সময়ও পার হয়ে যায়। দলিলহীনভাবে এ রকম না করে উচিত ছিল সর্বদা রমাযানের ন্যায়ই অন্য সময়ও আযান দেয়া যেন আযানের পূর্ব পর্যন্ত সাহারী খেলে সাহারীর সময় থাকে। শুধু তাই নয় বরং শুধুমাত্র রমাযান মাসেই তারা আউয়াল ওয়াক্তে ফাজরের সালাত আদায় করে থাকেন।

(৫) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করতেন যখন সূর্য ঢুলে যেত। আর আছরের ছালাত আদায় করতেন এই দুই সময়ের মাঝখানে। যখন সূর্য ডুবে যেত তখন মাগরিবের ছালাত আদায় করতেন। আর শাফাক্ব ডুবে গেলে এশার ছালাত আদায় করতেন। ফজরের ছালাত আদায় করতেন যখন ফজর উদিত হত তখন থেকে দৃষ্টি প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত। (সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত) ৫৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৩, মুসনাদে আহমাদ ১২৩৩৩, ১২৭৪৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাসান ইবনু ‘আলী (রহ.) হতে বর্ণিত। মুহাম্মাদ ইবনু আমার (রহ.) বলেন, হাজ্জাজ (ইবনু ইউসুফ) (মদ্বীনায়) এলে আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.)-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম, (কেননা, হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ বিলম্ব করে সালাত আদায় করতেন)। তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত প্রচন্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর ‘আসরের সালাত সূর্য উজ্জ্বল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ‘ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সকলেই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফজরের সালাত তাঁরা কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬০, ৫৬৫; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৬, আহমাদ ১৪৯৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৩৩) । হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

(৭) রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাত এমন সময় পড়তেন, যখন আমাদের কেউ পার্শ্বে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত না, যাকে সে আগে থেকেই চিনে। তিনি ফজর ছালাতে ৬০ থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করতেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বারযাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী অপরজনকে চিনতে পারতো। আর এ সালাতে তিনি ষাট হতে একশ’ আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং যুহরের সালাত আদায় করতেন যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়তো। তিনি ‘আসরের সালাত আদায় করতেন এমন সময় যে, আমাদের কেউ মদিনার শেষ প্রান্তে পৌঁছে আবার ফিরে আসতে পারতো, তখনও সূর্য সতেজ থাকতো। রাবী বলেন, মাগরিব সম্পর্কে তিনি [আবূ বারযা (রাযি.)] কী বলেছিলেন, আমি তা ভুলে গেছি। আর ‘ইশার সালাত রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে তিনি কোনোরূপ দ্বিধাবোধ করতেন না। অতঃপর রাবী বলেন, রাতের অর্ধাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে নিতে অসুবিধা বোধ করতেন না। আর মু‘আয (রহ.) বর্ণনা করেন যে, শু‘বাহ (রহ.) বলেছেন, পরে আবু মিনহাল (রহ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, সে সময় তিনি বলেছেন, রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে অসুবিধা বোধ করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৯১৮-৯১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬১,  সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ৩৯৮, আহমাদ ১৯৭৮৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে,

(৮) উসামাহ ইবনু যায়িদ আল-লাইসী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সূর্য ঢলে পড়ার সাথে সাথেই যুহরের সালাত আদায় করতে দেখেছি। প্রচন্ড গরমের দিনে তিনি কখনো দেরী করেও আদায় করেছেন। আমি তাঁকে ঐ সময় ‘আসরের সালাত আদায় করতে দেখেছি যখন সূর্য উপরে উজ্জ্বল বর্ণ অবস্থায় থাকত, তখনো তাতে হলুদ রং আসেনি। কোন ব্যক্তি ‘আসরের সালাত আদায় করে সূর্য ডুবার পূর্বেই যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে যেত। তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করতেন সূর্য ডোবার পরপরই, আর ‘ইশার সালাত আদায় করতেন যখন (পশ্চিম আকাশ) কালো রঙে আচ্ছাদিত হত, অবশ্য তিনি কখনো লোকজনের একত্র হওয়ার আশায় তা বিলম্বেও আদায় করতেন। একবার তিনি ফজরের সালাত অন্ধকারে আদায় করেন, অতঃপর পরের বার আদায় করেন ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার পর। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদা ফজরের সালাত অন্ধকারেই আদায় করেন, পুনরায় আর কখনোই তিনি ভোরের আলো প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষা করেননি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অর্থাৎ তিনি ছালাত অধিক লম্বা করতেন না।

উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, একবার তিনি দীর্ঘ ক্বিরাআত করে ফর্সা করেছিলেন। যা সর্বাধিক উত্তম। এরপর থেকে অন্ধকার থাকতেই ছালাত শেষ করতেন।

সুধী পাঠক! উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ফজরের ছালাত অন্ধকারেই আদায় করতে হবে। তাই ফর্সা হওয়ার পর ফজরের ছালাত শুরু করা সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করা ছাড়া কিছু নয়। জানা আবশ্যক যে, ফজরের ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ছালাত। এই ছালাত সঠিক সময়ে আদায় করা প্রত্যেকের জন্যই অপরিহার্য। তাই আপনি একজন মুছল্লী হিসাবে আপনার করণীয় নির্ধারণ করুন। আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার প্রস্ত্ততি আপনিই গ্রহণ করুন।

যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত

সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢুলে যাওয়ার সাথে সাথে যোহরের ছালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। আর কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হলে শেষ হয়। কিন্তু যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করার কোন ছহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-

(১) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন ছায়া দেড় হাত থেকে দুই হাত হয়, তখন তোমরা যোহরের ছালাত আদায় কর। (ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ১/১৮৩; উকাইলী, আয-যু‘আফা ১/১১৮; ইবনু আদী ১/৪৩৫)।

অনেকে উক্ত বর্ণনা পেশ করে যোহরের ছালাত দেরীতে আদায় করার দাবী করেন।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব নামে একজন রাবী আছেন। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, হায়ছামীসহ প্রমুখ মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যুক বলেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯৭; যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫; তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

ইমাম হায়ছামী বলেন, ‘এর সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আছে, সে মিথ্যুক’। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩০৬; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফী আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ৩৫)।

(১) আব্দুল আযীয ইবনু রাফী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মেঘলা দিনে দিনের ছালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর এবং মাগরিব দেরীতে আদায় কর। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৬২৮৮; আবুদাঊদ, আল-মারাসীল হা/১৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি দুর্বল। আব্দুল আযীয ইবনু রাফী মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছে। (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮৫৬, ৮/৩১৭ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৪)।

যোহরের ছালাতের সঠিক সময়

(১) ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত যুহরের সালাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ‘ইশার সালাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সালাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফজরের (ফজরের) সালাতের ওয়াক্ত ফাজর (ফজর) অর্থাৎ- সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সালাত  হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্য দিয়ে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮১,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৭২-১২৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১২, আহমাদ ৬৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলে পড়ার পর যোহরের সালাত আদায় করতেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৩, ৮০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৭৮, ইসলামীক সেন্টার ১২৯১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ বারযা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে যুহরের সালাত আদায় করতেন, ‘আসরের সালাত আদায় করতেন ঐ সময় যখন আমাদের কেউ মদীনার শেষ প্রান্তে গিয়ে ফিরে আসতে পারত এবং সূর্যের প্রখরতা বিদ্যমান থাকত। মাগরিবের কথা আমি ভুলে গেছি। ‘ইশার সালাত রাতের তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে তিনি পরোয়া করতেন না, কখনো বা অর্ধরাত পর্যন্ত। ‘ইশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি অপছন্দ করতেন না। তিনি ফজরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যখন আমাদের কেউ তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারত না। ফজরের সালাতে তিনি ষাট আয়াত থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১; আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূর্য (পশ্চিমাকাশে) ঢলে পড়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত আদায় করতেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৭৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪১, ৫৪৭, ৫৯৯, ৭১১;  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৭, নাসায়ী ৪৯৫, ৫২৫, ৫৩০; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৮, আহমাদ ১৯২৬৮, ১৯২৯৪, ১৯৩১০; দারিমী ১৩০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ যোহরের ছালাত সূর্য ঢুলে পড়ার পর আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করাই শরী‘আতের নির্দেশ। কিন্তু গ্রীষ্মকালে যোহরের ছালাত একটু দেরী করে আদায় করতে বলা হয়েছে। সেই হাদীছকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মুছল্লী দেরী করে আদায় করে থাকে। এটা মূলতঃ মাযহাবী গোঁড়ামী। কারণ সারা বছর দেরী করতে বলা হয়নি।

(১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন প্রচন্ড গরম অনুভূত হবে, তখন তোমরা যোহরের সালাত ঠান্ডা করে পড়বে। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের তাপ (উত্তাপ) বিশেষ।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৭৭, ৬৭৮, ৬৭৯, ৬৮০, ৬৮১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৪, ৫৩৬, ৫৩৭; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১৪, তিরমিযী ১৫৭, ২৫৯২; নাসায়ী ৫০০, আবূ দাঊদ ৪০২, আহমাদ ৭০৯০, ৭২০৫, ৭০২৪, ৭৫৫৮, ৭৬৬৫, ৭৭৭০, ২৭৪৪৩, ৮৩৭৮, ৮৬৮৩, ৮৮৬১, ৮৮৮১, ৮৯৩৯, ২৭৪৯৪, ৯৬৩৯, ১০১২৮, ১০১৬০, ১০২১৪, ১১১০৪; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৮, ২৯; দারিমী ১২০৭, ২৮৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবূ সা‘ঈদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যুহরের সালাত গরম কমলে আদায় কর। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৮, ৩২৫৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১৫, তিরমিযী ২৫৯২, আহমাদ ৭২৪৭, দারেমী ২৮৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রভুর নিকট অভিযোগ করে বললো, হে আমার রব! আমার একাংশ অপরাংশকে গ্রাস করেছে। তখন আল্লাহ তাকে দু’বার নিঃশ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেনঃ একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। তোমরা দুনিয়াতে যে ঠান্ডা অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের হিম শীতলতা থেকে এবং যে গরম অনুভব করো তা হলো জাহান্নামের আগুনের উষ্ণতা থেকে।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩১৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৭, ৩২৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৮২-১২৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১৫, তিরমিযী ১৫৭, ২৫৯২, নাসায়ী ৫০০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত ৪০২, আহমাদ ৭০৯০, ৭২০৫, ৭৪২৪, ৭৫৫৮, ৭৬৬৫, ৭৭৭০, ২৭৪৪৩, ৮৩৭৮, ৮৬৮৩, ৮৮৬১, ৮৮৮১, ৮৯৩৯, ২৭৪৯৪, ৯৬৩৯, ১০১২৮, ১০১৬০, ১০২১৪, ১১১০৪, মুয়াত্তা মালেক ২৮২৯, দারেমী ১২০৭, ২৮৪৫, সহীহাহ ১৪৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আবূ যার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় মুয়ায্যিন যুহরের আযান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মুয়ায্যিন আযান দিতে চাইলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পুনরায়) বললেনঃ গরম কমতে দাও। এভাবে তিনি (সালাত আদায়ে) এতো বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলো ছায়া দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচন্ড হলে উত্তাপ কমার পর সালাত আদায় করো। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)   ৫৩৯, ৫৩৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১২)।   হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুধী পাঠক! হাদীছের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সারা বছর এদেশে যোহরের ছালাত দেরী করে পড়া হয়। এটা সুন্নাতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার শামিল। রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসারী হিসাবে একজন মুছল্লীর পক্ষে এভাবে যোহরের ছালাত দেরী করে আদায় করা কি উচিৎ? গ্রীষ্মকালের হাদীছের আলোকে সে কি সারা বছর দেরী করে আদায় করবে? কখনোই নয়।

আছরের ছালাতের ওয়াক্ত

আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তার ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। এর পক্ষে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে সেগুলো সবই যঈফ ও জাল।

(ক) আব্দুল ওয়াহেদ ইবনু রাফে‘ বলেন, আমি একদা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন মুওয়াযযিন আছরের আযান দিল। রাবী বলেন, তখন এক বৃদ্ধ মসজিদে বসেছিলেন। তাই মুয়াযযিন তার নিকটে আসল। তখন তিনি বললেন, আমার আব্বা আমাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আছরের ছালাত দেরী করে পড়ার নির্দেশ দিতেন। (দারাকুৎনী হা/১০০৩, ১/২৫১; ত্বাবারাণী কবীর ৪/২৬৭)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪২০ পৃঃ, হা/১৫৯; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৫)।

ইমাম দারাকুৎনী বলেন, এর সনদে আব্দুল্লাহ বিন রাফে‘ বিন খাদীজ বিন রাফে‘ নামে একজন রাবী আছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। (দারাকুৎনী ১/২৫১ পৃঃ)।

 অন্যত্র তিনি বলেন, এই হাদীছের সনদ যঈফ। ... রাফে‘ সহ অন্য কোন ছাহাবী থেকে এই হাদীছ ছহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি। (তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৫)।

(খ) খলীফাহ্ ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার শাসনকর্তাদের কাছে লিখলেন, আমার কাছে আপনাদের সকল কাজের মধ্যে সালাতই হলো সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যে এর যথাযথ হিফাযাত করেছে ও তা রক্ষা করেছে, সে তার দীনকে রক্ষা করেছে। আর যে তা বিনষ্ট করেছে সে তা ছাড়া অপরগুলোর পক্ষে আরো বেশী বিনষ্টকারী প্রমাণিত হবে। অতঃপর তিনি লিখলেন, যুহরের সালাত আদায় করবে ছায়া এক বাহু ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে ছায়া এক মিসাল হওয়া পর্যন্ত (ছায়া আসলী বাদ দিয়ে)। সূর্য উপরে পরিষ্কার সাদা থাকা অবস্থায় ‘আসরের সালাত আদায় করবে, যাতে একজন আরোহী সূর্য অদৃশ্য হবার পূর্বেই দু’ বা তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করে যেতে পারে। মাগরিবের সালাত  আদায় করবে সূর্য অস্ত যাবার পরপর। ‘ইশার সালাত আদায় করবে ‘শাফাক্ব’ দূর হয়ে যাবার পর থেকে শুরু করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। তার চোখ না ঘুমাক যে এর আগে ঘুমাবে (তিনবার বললেন)। অতঃপর ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করবে যখন তারাসমূহ পরিষ্কার হয় ও চকমক করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ যঈফ। এর সনদ বিচ্ছিন্ন। কারণ নাফে‘ ওমর (রাঃ)-এর যুগ পাননি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৫)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

মূলতঃ উক্ত হাদীছে যোহর, আছর ও মাগরিবের ছালাতের সময়কে ছহীহ হাদীছের বিরোধী হিসাবে পেশ করা হয়েছে। বিশষ করে আছরের সময়। কারণ ছহীহ হাদীছে চার মাইলের কথা এসেছে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আসরের সালাত এমন সময় আদায় করতেন যখন সূর্য উপরের আকাশে ও উজ্জ্বল অবস্থায় থাকতো। আর কেউ ‘আওয়ালীর দিকে (মদীনার উপকন্ঠে) গিয়ে পুনরায় আসার পরেও সূর্য উপরেই থাকতো। এসব ‘আওয়ালীর কোন কোনটি মদীনাহ্ হতে চার মাইল বা এর কাছাকাছি দূরত্বের ছিল।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)  ৫৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২১, নাসায়ী ৫০৭, সুনান ইবনু মাজাহ, ৬৮২, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১০-১১, দারিমী ১২০৮, আহমাদ ১৩৩৩১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫১৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ বলেন, আমরা একদা আলী (রাঃ)-এর সাথে বড় মসজিদে বসেছিলাম। কূফাতে সে সময় অনেক কুঁড়ে ঘর ছিল। অতঃপর মুওয়াযযিন এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আছরের ছালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, তুমি বস। তাই সে বসল। মুয়াযযিন পুনরায় ফিরে এসে একই কথা বলল। তখন আলী (রাঃ) বললেন, এই কুকুরটি আমাদেরকে সুন্নাত শিক্ষা দিতে চাচ্ছে! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং আমাদেরকে নিয়ে আছরের ছালাত আদায় করলেন। তারপর ছালাত থেকে ফিরে ঐ স্থানে ফিরে আসলাম যেখানে আমরা বসেছিলাম। অতঃপর সূর্য ডুবে যাওয়ার কারণে আমরা সওয়ারীর উপর হাঁটু গেড়ে বসে গেলাম। (দারাকুৎনী ১/২৫১; হাকেম হা/৬৯০, ১/১৯২)।

তাহক্বীক্বঃ সনদ যঈফ। হাকেম একে ছহীহ বলে উল্লেখ করলেও তা যঈফ। (তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬)।

ইমাম দারাকুৎনী এর ত্রুটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যিয়াদ বিন আব্দুল্লাহ নাখঈ অপরিচিত। আব্বাস বিন যুরাইহ ছাড়া অন্য কেউ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেননি। (দারাকুৎনী ১/২৫১)।

মূলতঃ আলী (রাঃ)-এর নামে উক্ত বর্ণনা পেশ করে আছরের ছালাত বিলম্ব করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়। 

(ঘ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আছরের ছালাত দেরী করে আদায় করতেন। (আব্দুর রাযযাক হা/২০৮৯; ত্বাবারাণী কাবীর ৯/২৯৬)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। সে আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ থেকে সঠিকভাবে হাদীছ বর্ণনা করেনি। (তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪১৮ পৃঃ, হা/১৫৯)।

(ঙ) ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা মদ্বীনায় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি সূর্য উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকা পর্যন্ত আছরের ছালাত দেরী করতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪০৮, ১/৫৯ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f))।

তাহক্বীক্বঃ হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ আল-ইয়ামামী ও ইয়াযীদ ইবনু আব্দুর রহমান নামে দুইজন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম নববী বলেন, বাতিল হাদীছ। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৪০৮)।

(চ) আবু আমর বলেন, ঐ সময়টা হল, যখন সূর্যের আলো যমীনে হলুদ আকারে পড়বে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৫, ১/৬০ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। ওয়ালীদ বিন মুসলিম নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছে, তার শ্রবণশক্তি ভাল ছিল না। (যঈফ আবুদাঊদ হা/৬৪)।

আছরের ছালাতের সঠিক সময়

কোন বস্ত্তর ছায়া যখন মূল ছায়ার সমপরিমাণ হবে তখন আছরের ছালাতের সময় শুরু হবে। আর দ্বিগুণ হলে শেষ হবে। তবে কোন সমস্যাজনিত কারণে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। (ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬, ১/৭৯ পৃঃ ও হা/৫৭৯; মুসলিম হা/১৪০৪; মিশকাত হা/৬০১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে ‘আসরের সালাতের এক সাজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্য উদিত হবার পূর্বে ফজরের সালাতের এক সিজদা পায়, তাহলে সে যেন সালাত পূর্ণ করে নেয়।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৬, ৫৭৯, ৫৮০; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৮, আহমাদ ৯৯৬১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আছরের ছালাত তখন পড়তেন, যখন সূর্য উঁচুতে উজ্জ্বল অবস্থায় থাকত। অতঃপর কেউ আওয়ালী বা উঁচু স্থানগুলোর দিকে যেত এবং পুনরায় তাদের নিকট ফিরে আসত, তখনও সূর্য উপরেই থাকত। আর আওয়ালীর কোন কোন স্থান মদ্বীনা হতে চার মাইল বা অনুরূপ দূরে অবস্থিত।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯২,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২১, নাসায়ী ৫০৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৬৮২, আহমাদ ১৩৩৩১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ‘আসরের সালাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তাঁর ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তাঁর ঘর হতে বেরিয়ে পড়েনি। 

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ৫৪৫, ৫২২, ৫৪৪,  ৫৪৬, ৩১০৩; সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৩, তিরমিযী ১৫৯, নাসায়ী ৫০৫, আবূ দাঊদ ৪০৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২, আহমাদ ২৬৪৩৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  রাফে‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে আছরের ছালাত আদায় করতাম। অতঃপর একটি উট যবহে করতাম। তারপর তাকে দশ ভাগে ভাগ করতাম। অতঃপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই আমরা তার পাক করা গোশত খেতাম।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬১৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন ২৪৮৫,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২৫, আহমাদ ১৭২৭৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, মুহাম্মাদ ইবনু সব্বাহ, কুতায়বাহ ও ইবনু হুজুর (রহঃ)...'আলা ইবনু 'আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি একদিন আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) এর বসরাস্থ বাড়ীতে গেলেন। আর বাড়ীটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত ছিল। তিনি (আলা ইবনু আবদুর রহমান) তখন সবেমাত্র যুহরের সালাত আদায় করছেন। আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেনঃ আমরা তার (আনাস ইবনু মালিকের) কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি আসরের সালাত আদায় করছ? আমরা জবাবে তাকে বললাম, আমরা এই মাত্র যুহরের সালাত আদায় করে আসলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ যাও আসরের সালাত আদায় করে আসো। এরপর আমরা গিয়ে আসরের সালাত আদায় করে তার কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ ঐ সালাত হলো মুনাফিকের সালাত যে বসে বসে সূর্যের প্রতি তাকাতে থাকে আর যখন তা অস্তপ্রায় হয়ে যায় তখন উঠে গিয়ে চারবার ঠোকর মেরে আসে। এভাবে সে আল্লাহকে কমই স্মরণ করতে পারে।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২২,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৯৩, নাসায়ী ৫১১, তিরমিযী ১৬০, আহমাদ ১১৯৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৮৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৮৬, ইসলামীক সেন্টার ১২৯৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা‘বার কাছে দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ‘আসরের সালাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ‘শাফাক্ব অস্তমিত হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।

দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ‘আসরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ‘ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর (ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের ওয়াক্ত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৩, তিরমিযী ১৪৯, সহীহুল জামি ১৪০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে, সর্বোত্তম আমল হল, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(চ) উম্মু ফারওয়াহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজ (‘আমল) বেশী উত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর গদীতে বসা ছিলেন, যখন তিনি মদিনার গভর্নর ছিলেন। উরওয়া ইবনুুয যুবায়র (রহঃ)-ও তার সাথে ছিলেন। উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) আসরের সালাত আদায় করতে কিছুটা বিলম্ব করলেন। উরওয়াহ (রহঃ) তাকে বলেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইমাম হিসাবে সালাত আদায় করেন। উমার তাকে বলেন, হে উরওয়া! আপনি কী বলছেন, তা ভেবে দেখুন।

তিনি বলেন, আমি বাশীর ইবনু আবূ মাসঊদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি আবূ মাসঊদ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেনঃ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাযিল হয়ে আমার ইমামতি করলেন। এরপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তাঁর সাথে সালাত পড়লাম, অতঃপর আমি তার সাথে সালাত পড়লাম। এভাবে তিনি তাঁর আঈুল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গণনা করেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৬৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১০, নাসায়ী ৪৯৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩৯৪, আহমাদ ১৬৬৪০, ২১৮৪৮; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২, দারিমী ১১৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জ্ঞাতব্যঃ জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে ছালাতের আউয়াল ও আখের দুইটি ওয়াক্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হল যে, বস্ত্তর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে আছরের ছালাতের শেষ ওয়াক্ত চলে আসে। অথচ অধিকাংশ মুছল্লী এই শেষ ওয়াক্তে আছরের ছালাত আদায় করে থাকে, যা রাসূল (ছাঃ)-এর ভাষায় গর্হিত অন্যায়।

সুধী পাঠক! উপরে ত্রুটিপূর্ণ হাদীছ এবং ছহীহ হাদীছ দুই ধরনের হাদীছই পেশ করা হল। নিঃসন্দেহে মুছল্লীর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আছর ছালাত সে কোন্ ওয়াক্তে আদায় করবে। বিশেষ করে ছাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন উদাহরণ, পদ্ধতি ও জায়গা উল্লেখ করে আছরের ছালাতের সময়টা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। অথচ কতিপয় যঈফ ও জাল হাদীছের কারণে উক্ত গুরুত্ব মূল্যহীন হয়ে গেছে। এরপরও যদি সে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে গ্রহণ না করে, তবে কবরে ও ক্বিয়ামতের মাঠে টিকতে পারবে কি? মনে রাখা আবশ্যক যে, রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের পর পূর্বের কোন নবী-রাসূলের আনুগত্য করলেও সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপস্থিতিতে যদি পূর্বে কোন নাযিলকৃত কিতাবের অনুসরণ করা হয় তবুও সে রাসূল (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বেরিয়ে যাবে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহূদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভালো মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইয়াহুদী ও নাসারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি (তোমাদের দীনের ব্যাপারে) এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭, আহমাদ ১৪৭৩৬, বায়হাক্বী ১৭৭, বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/১৭৪; ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯, ৬/৩৪ পৃঃ)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

অতএব পীর-ফকীর, ইমাম-খতীব এবং তাদের রচিত মনগড়া কল্পিত ধর্মের অনুসরণ করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে।

আসরের সালাত আদায় না করার শাস্তিঃ

(ক) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন বলেনঃ আল্লাহ তাদের ঘরসমূহ ও কবরসমূহ আগুন দিয়ে ভরে দিন। যেমন তারা আমাদের মধ্যবর্তী সালাত থেকে বিরত রেখেছে।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৩১, ৪১১১, ৪৫৩৩, ৬৩৯৬; সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ২৯৮৪, নাসায়ী ৪৭৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)  ৪০৯, আহমাদ ৫৯২, ৬১৮, ৯১৩, ৯৯৩, ১০৩৯, ১১৩৫, ১১৫৪, ১২২৫, ১২৫০, ১২৯০, ১৩০১, ১৩০৮, ১৩১৬, ১৩২৯; দারিমী ১২৩২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যার আসরের সালাত ছুটে গেল তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ যেন ধ্বংস হয়ে গেল।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫২, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭৫, মুসলিম ৬২১-২, নাসায়ী ৪৭৮, ৫১২; আহমাদ ৪৫৩১, ৪৬০৭, ৪৭৯০, ৫০৬৫, ৫১৩৯, ৫২৯১, ৫৪৩২, ৫৪৪৪, ৫৭৪৬, ৬১৪২, ৬২৮৪, ৬৩২২; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২১, দারিমী ১২৩০-৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আসরের সালাত থেকে বিরত রাখলো, এমনকি সূর্য ডুবে গেল। তখন তিনি বলেনঃ যারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত থেকে বিরত রাখলো, আল্লাহ তাদের ঘর-বাড়িগুলো ও কবরসমূহ আগুন দিয়ে ভরে দিন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২৮, তিরমিযী ১৮১, ২৯৮৫; আহমাদ ৩৭০৮, ৩৮১৯, ৪৩৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাগরিবের ওয়াক্ত

মাগরিবের ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কেও কিছু যঈফ ও জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

 (১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাগরিবের প্রথম সময় হল যখন সূর্য ডুবে যায়। আর শেষ সময় যখন শাফাক্ব ডুবে যায়। (যায়লাঈ ১/২৩০)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭)।

ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, ‘এটি গরীব। অর্থাৎ ভিত্তিহীন। (আদ-দিরায়াহ ১/১০২)।

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মাগরিবের শেষ সময় হল, দিগন্তে যখন কালো রেখা দেখা যাবে। (নাছবুর রায়াহ ১/২৩৪ পৃঃ; ইবনু হাজার আদ-দিরায়াহ ১/১০৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (তানকীহুল কালাম, পৃঃ ২৬৭)।

 ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, ‘আমি এরূপ বর্ণনা পাইনি’। (আদ-দিরায়াহ ১/১০৩ পৃঃ)।

(৩) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, শাফাক্ব হল, লালিমা। যখন লালিমা দূরীভূত হবে তখন ছালাত ওয়াজিব হবে। (বায়হাক্বী হা/১৮১৬; দারাকুৎনী ১/২৬৯)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আতীক্ব ইবনু ইয়াকুব নামে ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯)।

তাছাড়া উক্ত বর্ণনা এশার ছালাতের জন্য প্রযোজ্য, মাগরিবের জন্য নয়। মূলতঃ লালিমা দূর হওয়ার পর মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে না। কিন্তু উক্ত বর্ণনাগুলোতে দাবী করা হয়েছে।

(৪) ইবনু ওমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, শাফাক্ব হল লালিমা। (দারাকুৎনী ১/২৬১; বায়হাক্বী ১/৩৭৩)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৬)।

মাগরিব ছালাতের সঠিক সময়

সূর্য ডুবার পরেই মাগরিবের ছালাতের সময় শুরু হয়। আর সূর্যের লালিমা থাকা পর্যন্ত এর সময় অবশিষ্ট থাকে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(ক) ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত যুহরের সালাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ‘ইশার সালাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সালাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফজরের সালাতের ওয়াক্ত ফজর অর্থাৎ- সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সালাত হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্য দিয়ে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৭২-১২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১২, আহমাদ ৬৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যমানায় মাগরিবের সালাত পড়তাম, অতঃপর আমাদের কেউ ফিরে গিয়ে তার নিক্ষিপ্ত তীরের পতিত স্থান দেখতে পেত।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৭, আহমাদ ১৬৮২৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সূর্যাস্তের পরপর মাগরিবের সালাত পড়েন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৭,, তিরমিযী ১৬৪, আবূ দাঊদ ৪১৭, আহমাদ ১৬০৯৭, ১৬১১৫; দারিমী ১২০৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাত যাবত বিলম্ব না করে এবং তারকারাজি চমকানোর পূর্বে মাগরিবের সালাত পড়বে, তাবত তারা ফিতরাতের উপর স্থির থাকবে।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৮৯, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১৮, দারিমী ১২১০, ইরওয়াহ ৩৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এশার ওয়াক্ত

ফিক্বহী গ্রন্থ সমূহে এশার ছালাতের সময় সম্পর্কেও কিছু জাল ও যঈফ হাদীছ প্রচলিত আছে।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এশার ছালাতের শেষ সময় হল ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। (নাছবুর রাইয়াহ ১/১৩৪)।

তাহক্বীক্বঃ যাকারিয়া বিন গোলাম কাদের এবং শায়খ আলবানী বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫৬১, ১৪/১৩৮ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ২৬৭)।

‘হেদায়া’র ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম বলেন, ছালাতের ওয়াক্ত সংক্রান্ত হাদীছের মধ্যে কোথাও এটা পাওয়া যায় না। (ঐ, ফাৎহুল ক্বাদীর ১/১৯৬ পৃঃ)।

আল্লামা যায়লাঈ বলেন, গরীব বা ভিত্তিহীন। (নাছবুর রাইয়াহ ১/২৩৪)।

ইবনু হাজার আসক্বালানীও অনুরূপ বলেছেন। (আদ-দিরায়াহ ১/১০৩)।

কিন্তু ইমাম তাহাবী মাযহাবী মোহে এর পক্ষে মত দিয়েছেন, যা কাম্য নয়। (তাহাবী হা/৮৫৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ; তুহফাতুল আহওয়াযী ১/৪৩০ পৃঃ)।

মূলতঃ মধ্য রাত পর্যন্ত এশার ছালাতের সময় থাকে। ফজর পর্যন্ত নয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত যুহরের সালাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ‘ইশার সালাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সালাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফজরের (ফজরের) সালাতের ওয়াক্ত ফাজর (ফজর) অর্থাৎ- সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সালাত হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্য দিয়ে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৭২-১২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১২, আহমাদ ৬৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ছালাতের প্রথম ও শেষ সময় আছে। যোহরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢুলে যাবে আর তার শেষ ওয়াক্ত হল, যখন আছরের ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আছরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন উহা তার ওয়াক্তে প্রবেশ করবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন সূর্য হলুদ রং ধারণ করবে। মাগরিবের প্রথম ওয়াক্ত হল যখন সূর্য ডুবে যাবে। আর শেষ ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে। এশার প্রথম ওয়াক্ত হল যখন দিগন্তে লালিমা ডুবে যাবে আর এর শেষ সময় হল রাত্রির মধ্যভাগ। ফজরের প্রথম ওয়াক্ত হল, যখন ফজর উদিত হবে। আর শেষ সময় হল সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।

(সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৫১, ১/৩৯ পৃঃ; আহমাদ ২/২৩২; তাহাবী ১/১৪৯-১৫০, আস-সহীহাহ- ১৬৯৬)। 

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,

‘আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি যে, ছালাতের সময়ের ব্যাপারে মুজাহিদ থেকে আ‘মাশের বর্ণিত হাদীছ মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের হাদীছের চেয়ে অধিকতর ছহীহ। মুহাম্মাদ বিন ফুযাইলের হাদীছ ভুল।  সে হাদীছ বর্ণনায় ভুল করেছে। (তিরমিযী হা/১৫১, ১/৩৯ পৃঃ)।

এশার ছালাতের সঠিক সময়

মাগরিবের ছালাতের সময়ের পর থেকে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সমাস্যজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন। তাই মাগরিবের পরপরই এশার ছালাত পড়া উচিৎ নয়, যা এদেশে চালু আছে।

(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন সূর্য ঢুলে যায়, তখন যোহরের সময় শুরু হয়। কোন ব্যক্তির ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত উক্ত সময় থাকে। অর্থাৎ আছরের সময় উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত। আছরের সময় বস্ত্তর মূল ছায়ার সমপরিমাণ হওয়া থেকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সময় (সূর্যাস্ত হতে) লালিমা দূর হওয়া পর্যন্ত। আর এশার সময় রাত্রির মধ্য ভাগ পর্যন্ত। আর ফজর ছালাতের সময় ঊষার উদয় হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। যখন সূর্য উঠবে, তখন ছালাত থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্যোদয় হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৮১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৭২-১২৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬১২, আহমাদ ৬৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭১২, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) 'আমর ইবনু সাওওয়াদ আল আমির ও হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ).....নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত- যাকে আতামাহ্ বলা হত- আদায় করতে অনেক দেরী করলেন। অনেক রাত পর্যন্ত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন না। এমনকি শেষ পর্যন্ত উমার ইবনুল খাত্ত্বাব যেয়ে বললেন, মেয়ে ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং এসে মসজিদের লোকদেরকে বললেনঃ এ সালাতের জন্য (এত রাতে) তোমরা ছাড়া এ পৃথিবীবাসীদের আর কেউ-ই অপেক্ষা করছে না। এ ঘটনাটি ছিল মানুষের মধ্যে ইসলাম বিস্তার লাভ করার পূর্বের।

হারমালাহ তার বর্ণনায় এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, ইবনু শিহাব বলেছেনঃ আমার কাছে বলা হয়েছে যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেনঃ তোমাদের জন্য এটা ঠিক নয় যে, তোমরা আল্লাহর রসূলকে সালাতের জন্য তাকিদ করবে। উমর ইবনুল খাত্ত্বাব যখন উচ্চস্বরে ডাকলেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাটা বললেন।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৮, সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৩১৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩১৬, ইসলামীক সেন্টার ১৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। একদা তিনি এশার সালাত প্রায় অর্ধ-এরাত পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। সালাত শেষে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেনঃ অন্য লোক এশার সালাত পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা যখন থেকে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছো, তখন থেকে সালাতের মধ্যে আছো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন তাঁর আংটির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৬১, ৮৪৮, ৫৮৬৯; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৩৪-১৩৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪০; নাসায়ী ৫৩৯, আহমাদ ১২৪৬৯, ১২৫৫০, ১২৬৫৬, ১৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করতে অনেক রাত করলেন। এমনকি রাতের বড় একটা অংশ অতিবাহিত হয়ে গেল এবং মসজিদের লোকজনও ঘুমিয়ে পড়ল। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং সালাত আদায় করে বললেনঃ এটাই ইশার সালাতের উত্তম সময়। তারপর তিনি বললেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম (তাহলে এ সময়কে ইশার সালাতের সময় হিসেবে নির্দিষ্ট করতাম)।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৩১-১৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩১৮, ইসলামীক সেন্টার ১৩৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে মাগরিবের সালাত পড়েন, অতঃপর অর্ধ-এরাত অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাইরে আসেননি। অতঃপর তিনি বের হন এবং লোকেদের নিয়ে সালাত পড়েন, অতঃপর বলেনঃ লোকেরা সালাত পড়ে ঘুমিয়ে গেছে। আর তোমরা সালাতের জন্য যখন থেকে অপেক্ষা করছো তখন থেকে সালাতরত আছো। যদি দুর্বল ও রোগাক্রান্ত লোকেরা না থাকতো, তাহলে আমি এ সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্বিত করতাম।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৩, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২২, নাসায়ী ৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদেরকে বিলম্বে এশার সালাত পড়ার নির্দেশ দিতাম।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯০, ৬৯১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৬, নাসায়ী ৫৩৪, আহমাদ ৭২৯৪, ৯৩০৮, ১০২৪০; দারিমী ১৪৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত বিলম্বে পড়তে পছন্দ করতেন। তিনি এশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং ঐ সালাতের পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৭০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪১, ৫৪৭, ৫৬৮, ৫৯৯, ৭৭১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭৪, তিরমিযী ১৬৮, নাসায়ী ৪৯৫, ৫২৫, ৫৩০; আবূ ৩৯৮, ৪৮৪৯; আহমাদ ১৯২৬৮, ১৯২৮২, ১৯২৯৪, ১৯৩০১, ১৯৩১০; দারিমী ১৩, ১৪২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের পর আমাদের নৈশালাপ নিষেধ করতেন অর্থাৎ কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৭০৩, আহমাদ ৩৬৭৮, ৩৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জুমআর সালাতের সময়ঃ

অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন ও ইমামগণের নিকট জুমআর সময় যোহরের সময় একই। অর্থাৎ, সূর্য ঢলার পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া (আসরের আগে) পর্যন্ত।

(ক) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৪, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৫০৩, আহমাদ ১৩৩৮৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমু‘আর দিন জুমু‘আর সালাত  আদায় করার পূর্বে খাবারও গ্রহণ করতাম না, বিশ্রামও করতাম না।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০২, সুনান ইবনু মাজাহ ১০৯৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯৩৮-৩৯, ৯৪১, ২৩৪৯, ৫৪০৩, ৬২৪৮, ৬২৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫৯, সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)  ৫২৫, আবূ দাঊদ ১০৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জুমুআহর সালাত  পড়ে ফেরার সময় দেয়ালের এতটুকু ছায়াও দেখতাম না যার ছায়া আমরা গ্রহণ করতে পারি।

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪১৬৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৭৭-১৮৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৬০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১০৮৫, নাসায়ী ১৩৯১, আহমাদ ১৬০৬১, ১৬১১১; দারিমী ১৫৪৫-৪৬, ইরওয়াহ ৫৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জুমুআহর সালাত  পড়ে ফিরে আসার পর দুপুরের বিশ্রাম করতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ১১০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৫)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীতের সময় জুমু‘আর সালাত সকাল সকাল (প্রথম ওয়াক্তে) আদায় করতেন, আর প্রচন্ড গরমের সময় দেরী করে আদায় করতেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৯০৬, শারহু মা‘আনিল আসার ১১২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬৭৮, সহীহ আল জামি ৪৬৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অবশ্য সূর্য ঢলার পূর্বেও জুমুআহ পড়া বৈধ। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ২২-২৫পৃ:)।

তবে সূর্য ঢলার পরই জুমুআহর (খুতবার) আযান হওয়া উত্তম। কারণ,

প্রথমতঃ এতে অধিকাংশ উলামার সাথে সহ্‌মত প্রকাশ হয়।

দ্বিতীয়তঃ যারা জুমআয় হাজির হয় না এবং সময়ের খবর না রেখে আযান শুনে নামায পড়তে অভ্যাসী (ওযরগ্রস্ত ও মহিলারা) সময় হওয়ার পূর্বেই নামায পড়ে ফেলে না। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৫/৩৪)।

প্রকাশ থাকে যে, সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদসহ্‌ অন্যান্য নফল পড়া সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকার সময়ে হলেও তা নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৫/৩৪)।

ছালাতের সময় সম্পর্কে অন্যান্য যঈফ ও জাল হাদীছঃ

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি আর শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর ক্ষমা। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) ১৭২,  ইরওয়াউল গালীল হা/২৫৯)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (যঈফ তিরমিযী হা/১৭২; ইরওয়াউল গালীল হা/২৫৯; মিশকাত হা/৬০৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৫৮, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৭৯)।

 এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৬, তিরমিযী ১৭২, আবূ দাঊদ ৪২৬, ইরওয়া ২৫৯)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

ইবরাহীম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ছালাতের প্রথম ওয়াক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি, মধ্যম ওয়াক্ত আল্লাহর রহমত এবং শেষ ওয়াক্ত আল্লাহর ক্ষমা। (দারাকুৎনী হা/২২)।

তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। (ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০; যঈফুল জামে‘ হা/২১৩১)।

এর সনদে ইয়াকুব বিন ওয়ালীদ মাদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। (ইরওয়াউল গালীল হা/২৬০, ১/২৮৮ )।

আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (নিসা ১০৩)।

উম্মু ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন্ আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সালাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছ উপমহাদেশীয় ছাপা আবুদাঊদে নেই।

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, ‘‘কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে’’- (সূরাহ্ ক্বাফ ৫০/৩৯)। ইসমাঈল (রহ.) বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৪, ৫৭৩, ৪৮৫১, ৭৪৩৪, ৭৪৩৫,৭৪৩৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৩, আহমাদ ১৯২১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আব্দুল্লাহ ইবনু ফাদালাহ হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (শারী‘আত সম্পর্কে) শিক্ষা দেন। তন্মধ্যে তিনি আমাকে এটাও শিক্ষা দেন যে, তুমি (নির্ধারিত সময়ে) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হিফাযাত করবে। আমি বললাম, এ সময়গুলোতে আমার কর্মব্যস্ততা থাকে। অতএব আমাকে এমন একটা পরিপূর্ণ সময়ের (বা কাজের) নির্দেশ দিন যা করলে আমার পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি দুই ‘আসরের হিফাযাত করবে। আমাদের ভাষায় দুই ‘আসর শব্দটি প্রচলিত না থাকায় আমি বললাম, দুই ‘আসর কি? তিনি বললেনঃ দু’টি সালাত, একটি হচ্ছে সূর্যোদয়ের পূর্বে, অপরটি সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজর ও ‘আসর সালাত)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৮, হাকিম (১পৃঃ ২০) বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৪৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জামা‘আতের চেয়ে আউয়াল ওয়াক্ত বেশী গুরুত্বপূর্ণ

আল্লাহ তা‘আলা ছালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত ফরয করা হয়েছে’ (নিসা ১০৩)।

(ক) উম্মু ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন্ আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর আমি আমার পক্ষ হতে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে এসব সালাতের হিফাযাত করবে তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযাত করবে না তার জন্য আমার পক্ষ হতে কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩০, সুনান ইবনু মাজাহ ১৪০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ) জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, ‘‘কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে’’- (সূরাহ্ ক্বাফ ৫০/৩৯)। ইসমাঈল (রহ.) বলেন, এর অর্থ হল- এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৪, ৫৭৩, ৪৮৫১, ৭৪৩৪, ৭৪৩৫,৭৪৩৬; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৩৩, আহমাদ ১৯২১১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ফাদালাহ হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (শারী‘আত সম্পর্কে) শিক্ষা দেন। তন্মধ্যে তিনি আমাকে এটাও শিক্ষা দেন যে, তুমি (নির্ধারিত সময়ে) পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হিফাযাত করবে। আমি বললাম, এ সময়গুলোতে আমার কর্মব্যস্ততা থাকে। অতএব আমাকে এমন একটা পরিপূর্ণ সময়ের (বা কাজের) নির্দেশ দিন যা করলে আমার পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি দুই ‘আসরের হিফাযাত করবে। আমাদের ভাষায় দুই ‘আসর শব্দটি প্রচলিত না থাকায় আমি বললাম, দুই ‘আসর কি? তিনি বললেনঃ দু’টি সালাত, একটি হচ্ছে সূর্যোদয়ের পূর্বে, অপরটি সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজর ও ‘আসর সালাত)। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৮, হাকিম (১পৃঃ ২০) বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৪৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, সে সময় তুমি কী করবে যখন তোমাদের ওপর শাসকবৃন্দ এমন হবে, যারা সালাতের প্রতি অমনোযোগী হবে অথবা তা সঠিক সময় হতে পিছিয়ে দিবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কী নির্দেশ দেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময়ে তুমি তোমার সালাতকে সঠিক সময়ে আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে পাও, আবার আদায় করবে। আর এ সালাত  তোমার জন্য নফল হিসেবে গণ্য হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৫১-১৩৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৮, আবূ দাঊদ ৪৩১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১২৫৬, তিরমিযী ১৭৬, দারেমী ১২৬৪, আহমাদ ২১৩২৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ)...আবূ যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপর সজোরে হাত মেরে বললেনঃ যারা সময় মতো সালাত আদায় না করে দেরী করে আদায় করে, তোমাকে যদি এমন লোকদের মাঝে থাকতে হয় তাহলে কী করবে? বর্ণনাকারী 'আবদুল্লাহ ইবনুস সাবিত বলেন- আবূ যার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আপনি আমাকে কী আদেশ করছেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সময় মতো (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করে নাও এবং নিজের কাজে চলে যাও। তারপর যখন সালাত আদায় করা হবে তখন যদি তুমি মসজিদে উপস্থিত থাক তাহলে (তাদের সাথে জামা'আতে) সালাত আদায় করে নাও।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৪১, ইসলামীক সেন্টার ১৩৫৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আসিম ইবনুন নাযর আত তায়মী (রহঃ)....আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার তাকে বললেন- তোমরা অথবা বললেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তুমি যদি এমন লোকদের মধ্যে অবস্থান করো যারা সময় মতো সালাত আদায় না করে দেরী করে পড়ে তাহলে কী করবে? এরপর আবার নিজেই বললেন, তুমি সময়মত (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করে নিবে। তারপর জামাআতে সালাত হলে তাদের সাথেও সালাত আদায় করে নিবে। কারণ এটি তোমার জন্য বাড়তি সাওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য হবে।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৫৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৪৩, ইসলামীক সেন্টার ১৩৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ গাসসান আর মিসমাঈ (রহঃ)....আবুল আলিয়াহ আল বারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুস সামিতকে বললাম, আমি এমন সব আমীর বা নেতার পিছনে জুমুআর সালাত আদায় করি যারা দেরী করে সালাত আদায় করে থাকে। মাতার বলেনঃ এ কথা শুনে আবুল আলিয়াহ আল বাররা আমার উরুর উপরে সজোরে এমনভাবে হাত দিয়ে চাপড়ালেন যে, আমি ব্যথাই পেলাম। এবার তিনি বললেন- এ বিষয়ে আমি আবূ যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও আমার উরুর উপরে সজোরে হাত দিয়ে চাপড়িয়ে বললেন- আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এমতাবস্থায় তোমরা সময়মত (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে জামা'আতের সালাতকে নাফল হিসেবে আদায় করবে। আবদুল্লাহ ইবনুস সামিত বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে, (এ কথা বলার সময়) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও আবূ যার-এর উরুর উপর সজোরে চাপড় দিয়েছিলেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৫৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৩৪৪, ইসলামীক সেন্টার ১৩৫৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার রব সেই মেষপালক রাখালের উপর খুশী হন, যে একা পর্বত চূড়ায় দাঁড়িয়ে সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত  আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা সে সময় তার মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাগণকে) বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার দিকে তাকাও। সে আমাকে ভয় করে (এই পর্বত চূড়ায়) আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। তোমরা সাক্ষী থাক আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলাম।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২০৩, নাসায়ী ৬৬৬, ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সুধী পাঠক! উক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীছসমূহের মাধ্যমে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনকি জামা‘আতে ছালাত আদায়ের চেয়ে ওয়াক্তকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ত অনুযায়ী ছালাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকী ছালাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। অতএব দেরী করে নয়, বরং ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ছালাত আদায় করা অপরিহার্য। বিশেষ করে রাসূল (ছাঃ) ফজর ও আছর ছালাতের ব্যাপারে খুব কঠোরতা আরোপ করেছেন। অথচ ফজর ও আছর ছালাতের ক্ষেত্রেই বেশী অবহেলা করা হয়। এত ছহীহ হাদীছ থাকতে অধিকাংশ মুছল্লী কেন জাল ও যঈফ হাদীছের আলোকে ছালাত আদায় করছে? এটা কি কোন অদৃশ্যের চক্রান্ত? মুসলিম উম্মাহকে কোনদিন ঐক্যবদ্ধ হতে দিবে না- এটাই তার নীল নকশা। আমরা মুসলিম হিসাবে মাযহাবী গোঁড়ামীকে অগ্রাধিকার দেব, না রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে অগ্রাধিকার দেব এখন সেটাই দেখার বিষয়।

যে যে সময়ে সালাত আদায় নিষিদ্ধ

দিবারাত্রে পাঁচটি সময়ে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ; মহানবি () বলেন,

আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

(১) ফাজরের (ফজরের) সালাতের পর সূর্য উঠে উপরে চলে না আসা পর্যন্ত আর কোন সালাত নেই।

(২) আর ‘আসরের সালাতের পর সূর্য না ডুবা পর্যন্ত কোন সালাত নেই।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮৬, ১১৮৮, ১১৯৭, ১৮৬৪, ১৯৯২, ১৯৯৫; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৭, আহমাদ ১১০৪০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘উকবাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে ও মুর্দা দাফন করতে আমাদেরকে বারণ করেছেন।

(৩) প্রথম হলো সূর্য উদয়ের সময়, যে পর্যন্ত না তা সম্পূর্ণ উদিত হয়।

(৪) দ্বিতীয় হলো দুপুরে একবারে সূর্য ঠিক স্থির হওয়ার সময় থেকে সূর্য ঢলার আগ পর্যন্ত।

(৫) আর তৃতীয় হলো সূর্য ডুবে যাবার সময় যে পর্যন্ত না তা ডুবে যায়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৯৯, ইসলামীক সেন্টার ১৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেহেতু এই সময়গুলিতে সাধারণত: কাফেররা সূর্যের পূজা করে থাকে তাই।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় তাশরীফ আনলে আমিও মদীনায় চলে আসলাম। তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমাকে সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করো। এরপর সালাত হতে বিরত থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিরগণ (সূর্য পূজারীরা) একে সিজদা করে। তারপর সালাত পড়ো। কেননা এ সময়ে (আল্লাহর কাছে বান্দার) সালাতের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও জমিনের উপর না পড়ে (অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়), এ সময়ও সালাত হতে বিরত থাকো। এজন্য যে এ সময় জাহান্নামকে গরম করা হয়। তারপর ছায়া যখন সামান্য ঢলে যাবে তখন সালাত আদায় করো। সালাতের সময়টা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) উপস্থিতি ও সাক্ষ্য দেয়ার সময় যে পর্যন্ত তুমি ‘আসরের সালাত আদায় না করবে। তারপর আবার সালাত  হতে বিরত থাকবে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কারণ সূর্য শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়। এ মুহূর্তে সূর্য পূজক কাফিররা সূর্যকে সিজদা করে।

‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আবার আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! উযূর ব্যাপারে কিছু বয়ান করুন। তিনি বললেন, তোমাদের যে লোক উযূর পানি তুলে নিবে, কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে নেবে। তাতে তার চেহারার, মুখের ও নাকের ছিদ্রের পাপরাশি ঝরে যায়। সে যখন তার চেহারাকে আল্লাহর নির্দেশ মতো ধুয়ে নেয় তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর সে যখন তার দু’টি হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেয় তখন দু’হাতের পাপ তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে বের হয়ে পানির ফোটার সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে যখন তার মাথা মাসেহ করে তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর যখন সে তার দু’ পা গোছাদ্বয়সহ ধৌত করে তখন তার দু’ পায়ের পাপ তার আঙ্গুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে ওযু সমাপ্ত করে যখন দাঁড়ায় ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে এবং আল্লাহর উপযুক্ত প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে, আল্লাহর জন্যে নিজের মনকে নিবেদিত করে, তাহলে সালাতের শেষে তার অবস্থা তেমন (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৮০০, ইসলামীক সেন্টার ১৮০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সালাত নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে এটি হল সাধারণ নির্দেশ। কিন্তু অন্যান্য হাদীস দ্বারা কিছু সময়ে কিছু সালাতকে ব্যতিক্রম করা হয়েছে। যেমন:-

(১)  ফরয সালাত বাকী থাকলে তা আদায় করার সুযোগ হওয়া মাত্র যে কোন সময়ে সত্বর পড়ে নেওয়া জরুরী। মহানবী () বলেন,

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের আগে ফজরের (ফজরের) সালাতের এক রাক্‘আত পেল, সে ফজরের (ফজরের) সালাত  পেয়ে গেল। এভাবে যে সূর্যাস্তের পূর্বে ‘আসর সালাতের এক রাক্‘আত পেল, সে ‘আসরের সালাত  পেলো।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৯, ৫৫৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৮,১৮৬, ৫২৪, সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৯, ৭০০, ১১২২, মালিক ৫/৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৮৩, ইরওয়া ২৫৩, সহীহ আল জামি ৫৯৯২, নাসায়ী ৫১৪-১৭, ৫৫৩-৫৬; আবূ দাঊদ ৪১২, ৮৯৩, ১১২১; আহমাদ ৭১৭৫, ৭২৪২, ৭৪০৮, ৭৪৮৫, ৭৫৪০, ৭৬০৯, ৭৭০৭, ৭৭৩৯, ৭৭৯৫, ৮৩৭৯, ৮৬৬৩, ৮৯৩২, ৯৬০২, ৯৬৩৮, ৯৭৭৯, ৯৯৬৬, ৯৯৮৬, ১০৩৭২; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৫, ১৫; দারিমী ১২০, ১২২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৫২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি আরো বলেন,

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সূর্যাস্তের আগে ‘আসরের সালাতের এক সিজদা (রাক্‘আত) পেলে সে যেন (সূর্য ডুবে গেলেও) তার সালাত পূর্ণ করে। এমনিভাবে ফজরের (ফজরের) সালাত সূর্যোদয়ের আগে এক সিজদা (রাক্‘আত) পেলে সেও যেন (সূর্য উঠে গেলেও) তার সালাত পূর্ণ করে।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৫৬, ৫৮০, নাসায়ী ৫১৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৮৬, সহীহাহ্ ৬৬,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) অনুরুপ কোন ফরয নামায পড়তে ভুলে গিয়ে থাকলে তা স্মরণ হওয়া মাত্র সত্বর যে কোন সময়ে অথবা ঘুমিয়ে গিয়ে থাকলে জাগার পর উঠে সত্বর যে কোন সময়ে আদায় করা জরুরী। মহানবি () বলেন,

(ক) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুমিয়ে থাকার কারণে সালাত আদায় করতে না পারলে তা দোষ নেই। দোষ হলো জেগে থেকেও সালাত আদায় না করা। সুতরাং তোমাদের কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে অথবা সালাতের সময় ঘুমিয়ে থাকলে, যে সময়েই তার কথা স্মরণ হবে, আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আমার স্মরণে সালাত আদায় কর’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১৪)।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৪৪৮, ১৪৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮১, ৬৮৪, আবূ দাঊদ ৪৪১, নাসায়ী ৬১৫, তিরমিযী ১৭৭, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ

(Sahih)।

মুসলিমে বর্ণিত বিস্তারিত হাদিসটি নিম্নরুপঃ

(খ) শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ).....আবূ কাতাদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বক্তৃতা করলেন। তিনি বললেনঃ আজকের বিকাল থেকে সারারাত তোমাদেরকে পথ চলতে হবে এবং ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে পানির কাছে উপস্থিত হবে। সুতরাং লোকজন সেখান থেকে এভাবে যাত্রা করল যে, কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছিল না। আবূ কতাদাহ্ বলেন- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও পথ চলছিল। এক সময় রাত্রি দ্বি-প্রহর হয়ে গেল। আমি তার পাশে পাশেই চলছিলাম। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তন্দ্রায় ঝিমুচ্ছিলেন। ঘুমের প্রভাবে এক সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সওয়ারীর উপর একদিকে ঝুঁকে পড়লেন। ঠিক সে সময় আমি তার কাছে গিয়ে তাঁকে ঠেলে ধরলাম (অর্থাৎ ঠেকনা দিলাম)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওয়ারীর উপর সোজা হয়ে বসলেন, কিন্তু তাকে জাগালাম না।

এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চলতে থাকলেন এবং এ অবস্থায় রাতের বেশীর ভাগ অতিক্রান্ত হলে সওয়ারীর উপর থেকে আবার একদিকে ঝুঁকে পড়লেন। তখন আবার আমি তাকে না জাগিয়ে ঠেলে ধরলাম। এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওয়ারীর উপর সোজা হয়ে বসলেন। আবূ কতাদাহ বলেন- এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার চলতে থাকলেন। রাত ভোর হয়ে আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবার প্রথম দু'বারের চেয়েও বেশী করে একদিকে ঝুঁকে পড়লেন, এমনকি তার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তখন আমি পুনরায় ঠেস লাগিয়ে ধরলাম। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম- আবূ কতাদাহ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এভাবে তুমি আমার পাশে পাশে কতক্ষণ ধরে চলছ? আমি বললাম, আমি রাতের প্রথম থেকেই এভাবে আপনার সাথে চলছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে হিফাযাত করুন। কারণ তুমি তার নবীকে দেখাশুনা করছ।

তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি কাউকে দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ, এই তো একজন আরোহী। তারপর বললাম, এই তো আরো একজন আরোহী এসে উপস্থিত হলো। এভাবে আমরা সাতজন একত্র হলাম। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা থেকে কিছু দূরে সরে গেলেন এবং মাটিতে মাথা রাখলেন (অর্থাৎ- শুয়ে পড়লেন)। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বললেনঃ সালাতের খেয়াল রেখো। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন আর তখন সূর্যের আলো তার পিঠের উপর এসে পড়েছিল।

আবূ কতাদাহ্ বলেন- এরপর আমরা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে পড়লাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সবাই যার যার সওয়ারীতে সওয়ার হও। তাই আমরা সওয়ারীতে চেপে যাত্রা করলাম। সূর্য বেশ কিছু উপরে উঠলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারী থেকে অবতরণ করে আমার কাছে অল্প পানিসহ যে ওযুর পাত্র ছিল তা চেয়ে নিয়ে অন্য সময়ের চেয়ে সংক্ষিপ্ত করে ওযু করলেন। আবূ কতাদাহ্ বললেন- এরপরও ঐ পাত্রে কিছু পানি অবশিষ্ট থাকল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ কাতাদাহ-কে বললেনঃ পাত্রটি রেখে দাও, দেখবে পরে বিস্ময়কর কান্ড ঘটবে।

তখন বিলাল সালাতের আযান দিলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দুরাকাআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করলেন এবং তারপর প্রতিদিনের মতো করে ফজরের ফারয (ফরয) সালাত আদায় করলেন। আবূ কাতাদাহ্ বলেন। অতঃপর সওয়ারীতে আরোহণ করলে আমরাও সওয়ারীতে আরোহণ করে তার সাথে রওয়ানা হলাম। এ সময়ে আমরা পরস্পর চুপিসারে বলাবলি করছিলাম যে, আমরা সালাতের ব্যাপারে যে অবহেলা প্রদর্শন করলাম তার কাফফারাহ বা ক্ষতিপূরণ কীভাবে হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার জীবন ও কাজ-কর্ম কি তোমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ নয়?

এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার বললেনঃ ঘুমানোতে কোন দোষ বা অবহেলা নেই। অবহেলা তখনই বলা হবে যদি কোন ব্যক্তি সালাত না আদায় করে দেরী করে এবং অন্য সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যায়। কোন সময়ে কারো এরূপ হয়ে গেলে সে যখন জাগ্রত হবে তখনই যেন সালাত আদায় করে নেয়। পরদিন সকালে যেন সে সময়মত সালাত আদায় করে। পরে তিনি বললেনঃ অন্য সবাই কী করেছে তা কি জান? সকালে লোকজন যখন তাদের নবীকে দেখতে পেল না তখন আবূ বাকর ও উমার তাদেরকে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পিছনে আছেন। তিনি তোমাদেরকে পিছনে ফেলে যেতে পারেন না। কিন্তু লোকজন বললঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সামনে আছেন। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) এ ব্যাপারে তারা যদি আবূ বাকর ও উমার-এর কথা মানতো তাহলে সঠিক কাজ করত।

আবূ কতাদাহ বলেনঃ যখন বেলা বেড়ে দুপুর হলো এবং সবকিছু সূৰ্যতাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠল তখন আমরা লোকজনের কাছে গিয়ে পৌছলাম। তখন তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলছিলঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা পিপাসায় মরে গেলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, তোমরা মরবে না। এরপর তিনি বললেনঃ আমার ছোট পেয়ালাটা আনো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওযুর পাত্রটাও চেয়ে নিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালাতে পানি ঢালতে থাকলেন আর আবূ কতাদাহ পান করাতে থাকলেন। লোকজন যখন দেখল যে, পানি মাত্র একপাত্র আর এতগুলো লোক তখন তারা (পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে) ভিড় জমিয়ে তুলল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা ধীরে সুস্থে পানি পান করতে থাকো। সবাইকে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করানো যাবে। সুতরাং লোকজন তাই করল।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢালছিলেন আর আমি (আবূ কতাদাহ্) পান করাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া পানি পান করতে আর কেউ অবশিষ্ট রইল না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালার পানি ঢেলে আমাকে বললেনঃ পান করো। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি পান না করা পর্যন্ত আমি পান করব না। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যিনি পানি পান করান তিনি সবার শেষে পান করেন। আবূ কতাদাহ বলেনঃ আমি তখন পানি পান করলাম। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। পরে অবশ্য লোকজন পানি পান করার ফলে শান্ত মনে তৃপ্তি সহকারে যেতে থাকল।

হাদীসের বর্ণনাকারী সাবিত বলেছেন যে, "আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ ও এ কথা শুনে বললেনঃ তাহলে তো আপনি এ হাদীসটি সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কোন কওমের লোক? আমি বললাম, আমি আনসারদের একজন। তিনি বললেন, তাহলে বর্ণনা কর। কেননা, তুমি তোমার হাদীস সম্পর্কে নিশ্চয়ই ভালভাবে অবহিত আছ। আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ বলেন- আমি ঐ রাতে কাফিলায় শরীক ছিলাম। তবে আমি জানতাম না যে, অন্য কেউও আমার মতো হাদীসটি স্মরণ করে রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৪৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮১,,  ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৩৩, ইসলামীক সেন্টার ১৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে সারারাত ধরে পথ চলতে থাকেন। অবশেষে তিনি ঘুমে কাতর হয়ে বিশ্রামের জন্য এক স্থানে অবতরণ করেন এবং বিলাল -কে বলেনঃ তুমি আমাদের জন্য রাতের হেফাজত করবে। অতএব বিলাল তার সাধ্যমত সালাত আদায় করতে থাকেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ ঘুমিয়ে পড়েন।

ফজরের সময় নিকটবর্তী হলে বিলাল তার সওয়ারীর শিবিকার সাথে হেলান দিয়ে পূর্ব আকাশের দিকে মুখ করে বসলেন। শিবিকার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। বিলাল (রাঃ) ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কেউই ঘুম থেকে জাগতে পারেননি, যাবত না তাদের উপর সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লো। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে উঠেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলেনঃ হে বিলাল! বিলাল(রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। যেই সত্তা আপনার জান নিয়েছেন, তিনি আমার জানও নিয়েছেন।

তিনি বলেনঃ তোমরা সামনে অগ্রসর হও। অতএব তারা তাদের সওয়ারী নিয়ে অগ্রসর হন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করেন এবং বিলাল (রাঃ) কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদের নিয়ে ফজরের সালাত পড়েন। সালাত সমাপনান্তে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি সালাতের কথা ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পড়ে নেয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন: আমার স্মরণে তুমি সালাত কায়িম করো (সূরাহ তহাঃ ১৪)।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮০, তিরমিযী ৩১৬৩, নাসায়ী ৬১৮-২০, ৬২৩; আবূ দাঊদ ৪৩৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) হাদ্দাব ইবনু খালীদ (রহঃ)....আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কোন সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই যেন সে তা আদায় করে নেয়। এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন কাফফারাহ তাকে দিতে হবে না।

(সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৫২-১৪৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৩৬, ইসলামীক সেন্টার ১৪৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল যে, এক ব্যাক্তি সালাতের কথা ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেনঃ যখনই তার স্মরণে আসবে, তখনই সে ঐ সালাত আদায় করবে।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৫, ৬৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮১, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৪২, তিরমিযী ১৭৮, নাসাঈ ৬১৩-১৪,  আহমাদ ১১৫৬১, ১২৮৫০, ১৩১৩৮, ১৩৪১০, ১৩৪৩৬, ১৩৫৯৫; দারিমী ১২২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ তাদের ঘুমে বাড়াবাড়ির কথা আলোচনা করলেন। কেউ বলেন, লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, এমনকি সূর্য উঠে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঘুমে কোন বাড়াবাড়ি নেই, বাড়াবাড়ি হয় জাগ্রত অবস্থায়। সুতরাং তোমাদের কেউ সালাতের কথা ভুলে গেলে বা তা না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে সে যেন তা স্মরণে আসার সাথে সাথে পড়ে নেয় অথবা পরদিন স্ব স্ব ওয়াক্তে পড়ে নেয়।

(সুনান ইবনু মাজাহ ৬৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৯৫, ৭৪৭১; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৮১, তিরমিযী ১৭৭, নাসায়ী ৬১৫-১৭, ৪৪৬; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩৭, ৪৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নত পড়তে সময় না পেলে ফরযের পর তা পড়া যায়। আল্লাহর রসূল () একদা এক ব্যক্তিকে দেখলেন ফজরের ফরয নামাযের পর দু’ রাক্‌আত নামায পড়ল। তিনি তাকে বললেন, “ফজরের নামায তো দু’ রাকআত মাত্র!” লোকটি বলল, ‘আমি ফরযের পূর্বে দু’ রাকআত পড়তে পাই নি, এখন সেটা পড়ে নিলাম।’ এ কথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। (অর্থাৎ, মৌনসম্মতি জানালেন।)

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ক্বায়স ইবনু ‘আমর (রাঃ)থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোককে দেখলেন যে, সে ফজরের  সালাতের পর দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) বললেন, ভোরের সালাত দু’ রাক্‘আত, দু’ রাক্‘আত। সে ব্যক্তি বললো, ফজরের ফরয সালাতের পূর্বের দুই রাক্‘আত সালাত আমি আদায় করিনি। সে সালাতই এখন আদায় করেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪৪, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৬৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১১৫৪, তিরমিযী ৪২২, আহমাদ ২৩৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) কারণ-সাপেক্ষ যাবতীয় নামায যথার্থ কারণ উপস্থিত হওয়া মাত্র যে কোন সময়েই পড়া যায়। যেমন :-

(ক) কা’বা শরীফের তওয়াফের পর দু’ রাকআত নামায। তওয়াফ শেষ হওয়ার পরেই যে কোন সময়ে ঐ নামায পড়া যায়। মহানবী () বলেন,

জুবায়র ইবনু মুত্‘ইম (রাঃ)হতে বর্ণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে ‘আবদ মানাফ-এর সন্তানেরা! তোমরা কাউকে এ ঘরের (খানায়ে কাবার) তাওয়াফ করতে এবং রাত-দিনের যে সময় মনে ইচ্ছা হয় এতে সালাত আদায় করতে নিষেধ করো না (তাকে সালাত আদায় করতে দাও)।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৪৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১৮৯৪, আত্ তিরমিযী ৮৬৮, নাসায়ী ৫৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১২৫৪, সহীহ আল জামি ৭৯০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (খ) তাহিয়্যাতুল মাসজিদ (মসজিদ-সেলামী) দু’ রাকআত নামায। যে কোনও সময়ে মসজিদ প্রবেশ করে বসার ইচ্ছা করলে বসার পূর্বে এই নামায পড়তে হয়। মহানবী () বলেন,

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাক্‘আত সালাত আদায় করে নেয়।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪, নাসায়ী ৭৩০, তিরমিযী ৩১৬, ইবনু মাজাহ্ ১০১৩, আবূ দাঊদ ৪৬৭, আহমাদ ২২৫২৩, ১৫৭৮৯, ইরওয়া ৪৬৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহঃ).....রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ কাতাদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনে মধ্যে বসে আছেন। সুতরাং আমিও গিয়ে সেখানে বসে পড়লাম। এ দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ সবার আগে দু' রাকাআত সালাত আদায় করতে তোমার কী অসুবিধা ছিল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি দেখলাম আপনি বসে আছেন এবং আরো অনেক লোক বসে আছে (তাই আমিও বসে আদায় করেছি)। তিনি বললেনঃ তোমরা কেউ কোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে দু' রাকাআত সালাত আদায় না করে বসবে না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫২৫, ইসলামীক সেন্টার ১৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (গ)  সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের নামায। মহানবী () বলেন,

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, অতঃপর দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘ করেন। অতঃপর পুনরায় (সালাতে) তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকূ‘ করেন এবং এ রুকূ‘ও দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সিজদা্ করেন এবং সিজদা্ও দীর্ঘক্ষণ করেন। অতঃপর তিনি প্রথম রাকা‘আতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকা‘আতে করেন এবং যখন সূর্য প্রকাশিত হয় তখন সালাত শেষ করেন। অতঃপর তিনি লোকজনের উদ্দেশে খুৎবা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং সালাত আদায় করবে ও সদাক্বাহ প্রদান করবে। অতঃপর তিনি আরো বললেনঃ হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, আল্লাহর কোন বান্দা যিনা করলে কিংবা কোন নারী যিনা করলে, আল্লাহর চেয়ে অধিক অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম এবং বেশী করে কাঁদতে।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০৪৪, ১০৪৬, ১০৪৭, ১০৫০, ১০৫৬, ১০৫৮, ১০৬৪, ১০৬৫, ১০৬৬, ১২১২, ৩২০৩, ৪৬২৪, ৫২২১, ৬৬৫৩১; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৮৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৯৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯০১, নাসায়ী ১৪৭৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৩৯, ইবনু হিব্বান ২৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৩৫৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৫৯, ইসলামীক সেন্টার, ১৯৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (ঘ) জানাযার নামায। আসর ও ফজর নামাযের পরও জানাযার নামায পড়া যাবে। অবশ্য শেষোক্ত তিন সময়ে এই নামায বৈধ নয়। যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে এ কথা বর্ণিত হয়েছে। (আজামে ১৩০-১৩১পৃ:)।

সুতরাং সাধারণ নফল নামায উক্ত সময়গুলিতে নিষিদ্ধ। তবে আসরের পর সূর্য হ্‌লুদবর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ নয়। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৪৯ নং)।

ওয়াক্ত-বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল

(১) যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে এক রাকআত নামায পেয়ে নেবে সে ওয়াক্ত পেয়ে যাবে। অর্থাৎ, তার নামায যথা সময়ে আদায় হয়েছে এবং কাযা হয়নি বলে গণ্য হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১২৬১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬০৮, নাসায়ী ৫১৭, তিরমিযী ১৮৬, মালিক ৫/৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৮৩, ইরওয়া ২৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৯২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 বিধায় যে ব্যক্তি এক রাকআতের চেয়ে কম নামায পাবে, সে সময় পাবে না; অর্থাৎ তার নামায যথাসময়ে আদায় হবে না এবং তা কাযা বলে গণ্য হবে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওজরে শেষ সময়ে নামায পড়া বৈধ নয়।

তদনুরুপ যদি কোন ব্যক্তি এক রাকআত নামায পড়ার মত সময়ের পূর্বেই মুসলমান হয় অথবা কোন মহিলা অনুরুপ সময়ে মাসিক থেকে পবিত্রা হয় তবে ঐ ওয়াক্তের নামায তাদের জন্য কাযা করা ওয়াজেব।

যেমন কোন ব্যক্তি যদি সূর্য ওঠার পূর্বে এমন সময়ে ইসলাম গ্রহণ করে, যে সময়ের মধ্যে মাত্র এক রাকআত ফজরের নামায পড়লেই সূর্য উঠে যাবে, তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য ফজরের ঐ নামায ফরয এবং তাকে কাযা পড়তে হয়। অনুরুপ যদি কোন পাগল জ্ঞান ফিরে পায় অথবা কোন মহিলার মাসিক বন্ধ হয়, তাহলে তাদের জন্যও ঐ ফজরের নামায ফরয।

ঠিক তদ্রুপই যদি কোন মহিলা মাগরেবের নামায না পড়ে থাকে এবং এতটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তার মাসিক শুরু হয়ে যায়, যার মধ্যে এক রাকআত নামায পড়া যেত, তাহলে ঐ মহিলার জন্য ঐ মাগরেবের নামায ফরয। মাসিক থেকে পাক হওয়ার পরে তাকে ঐ নামায কাযা পড়তে হবে। (রাসাইল ফিকহিয়্যাহ্‌, ইবনে উসাইমীন ২৩-২৪পৃ:)।

(২) এশার নামায অর্ধরাত্রি পর্যন্ত দেরী করে পড়া আফযল হলেও আওয়াল অক্তে জামাআত হলে জামাআতের সাথে আওয়াল অক্তেই পড়া আফযল। কারণ, জামাআতে নামায পড়া ওয়াজেব।

(৩) ফজরের আযান হলে ২ রাকআত সুন্নাতে রাতেবাহ্‌ ছাড়া ফরয পর্যন্ত আর অন্য কোন নামায নেই। মহানবী () বলেন,

ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর মুক্তদাস ইয়াসার (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা আমাকে সুবহি সাদিকের পর সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, হে ইয়াসার! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন। ঠিক ঐ সময় আমরা এ সালাত আদায় করছিলাম। তিনি বললেনঃ অবশ্যই তোমাদের উপস্থিতরা যেন অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয় যে, সুবহি সাদিকের পর (ফজরের) দু’ রাক‘আত সুন্নাত ব্যতীত তোমরা অন্য কোন সালাত আদায় করবে না।

(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ১২৭৮, তিরমিযী ৪১৯, আহমাদ (২/১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৪) জামাআত খাড়া হলে ফরয নামায ছাড়া কোন প্রকারের নফল ও সুন্নত (অনুরুপ পৃথক ফরয) নামায পড়া বৈধ নয়।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তখন ফরয সালাত ব্যতীত অন্য কোন সালাত নেই।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫২৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭১০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৫১৪, ইসলামীক সেন্টার ১৫২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) পৃথিবীর যে স্থানে দিন বা রাত্রি অস্বাভাবিক লম্বা (যেমন ৬ মাস রাত, ৬ মাস দিন) হয়, সে স্থানে ২৪ ঘন্টা হিসাব করে রাত-দিন ধরে হিসাব মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে। যে স্থানে দিন বা রাত অস্বাভাবিক ছোট সেখানেও আন্দাজ করে সকল নামায আদায় করা জরুরী। যেমন দাজ্জাল এলে দিন ১ বছর, ১ মাস ও ১ সপ্তাহ্‌ পরিমাণ লম্বা হলে, স্বাভাবিক দিন অনুমান ও হিসাব করে নামায পড়তে বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭২৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১০৬. ইসলামিক সেন্টার ৭১৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরাঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসহ জুমাআর সালাত আদায়ের সঠিক সময় ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয় কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় প্রত্যেকটি ওয়াক্তে সালাত আদায়ের আউয়াল ও শেষ সময় বর্ণনা করা হয়েছে। তবে আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি জামাতের চেয়েও গুরুত্ব। কিন্তু আমাদের সমাজে এই গুরুত্ব কতোটুকু তা আমরা মসজিদে গেলে বুঝতে পারি।

আপনারা কি জানেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়কারী তিন শ্রেণির মুসল্লী জাহান্নামে যাবে। তার মধ্যে সময় মতো যে মুসল্লী সালাত আদায় করে না অন্যতম। এসম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলোঃ

ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। এ ইবাদত কবুল হওয়ার উপরেই অন্যান্য ইবাদত নির্ভর করে। অথচ মানুষ ছালাতের যথার্থ গুরুত্ব অনুধাবন না করে যেনতেনভাবে ছালাত আদায় করে। এ ধরনের ছালাত আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না; বরং এসব ছালাত আদায়কারীর জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।

যারা সঠিক সময়ে ছালাত আদায় করে না, তাদের ছালাত কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ঐসব মুছল্লীর জন্য, যারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’ (মাঊন ১০৭/৪-৫)। অর্থাৎ ‘যারা ছালাত থেকে উদাসীন ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত’। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আউয়াল ওয়াক্ত ছেড়ে যঈফ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করে। যারা জানা সত্ত্বেও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায় করে না। রুকূ-সিজদা, উঠা-বসা যথাযথভাবে করে না। ক্বিরাআত ও দো‘আ-দরূদ ঠিকমত পাঠ করে না। কোন কিছুর অর্থ বুঝে না বা বুঝবার চেষ্টাও করে না। আযান শোনার পরেও যারা অলসতাবশে ছালাতে দেরী করে বা জামা‘আতে হাযির হওয়া থেকে বিরত থাকে। ছালাতে দাঁড়াবার সময় বা ছালাতে দাঁড়িয়েও অমনোযোগী থাকে ইত্যাদি। (মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, পৃঃ ৫০১)।

সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, এর অর্থ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যারা অবহেলা বশে সঠিক সময় থেকে দেরীতে ছালাত আদায় করে’। (কুরতুবী হা/৬৪৮৩; বাযযার, ত্বাবারী, বায়হাক্বী। তবে বায়হাক্বী সা‘দ থেকে ‘মওকূফ’ সূত্রে বর্ণনা করার পর সেটাকেই ‘সঠিক’ বলেছেন (২/২১৪-১৫)। হায়ছামী একে ‘হাসান’ বলেছেন (১/৩২৫)।

ইবনু কাছীর বলেন, عَنْ صَلَوتِهِمْ سَاهُوْنَ ‘তারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’ অর্থ হ’ল তারা নিয়মিতভাবে বা অধিকাংশ সময়ে আউয়াল ওয়াক্তের বদলে আখেরী ওয়াক্তে ছালাত আদায় করে (ইবনু কাছীর)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ওটা মুনাফিকদের ছালাত, যারা সূর্যের প্রতীক্ষায় বসে থাকে, তারপর সূর্য অস্ত যেতে শুরু করলে শয়তান তার শিং মেলিয়ে দেয়, তখন তারা দাঁড়িয়ে মোরগের মত চারটি ঠোকর মারে। তাতে আল্লাহর স্মরণ খুব কমই হয়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৫৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১২৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২২, নাসায়ী ৫১১, তিরমিযী ১৬০, আহমাদ ১১৯৯৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৮৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৮৬, ইসলামীক সেন্টার ১২৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ ছালাত আদায়কারী মুসলিম জানেন যে, ছালাত ফরয। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করাও যে ফরয এটা অনেকেই জানে না। এ কারণেই বলা হয়েছে যে, ছালাত আদায় করেও তিন শ্রেণীর মুছল্লী জাহান্নামে যাবে। মহান আল্লাহ ছালাত ফরয করার পর বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩)।

সময়মত ছালাত আদায় করা অন্যতম উত্তম আমল। নিম্নের হাদীছটি যার প্রমাণ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন,

‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নিকট কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথাসময়ে ছালাত সম্পাদন করা। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কোনটি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।

(সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫২৭, ২৭৮২, ৫৯৭০, ৭৫৩৪; সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৫৩-১৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৫, আহমাদ ৪২২৩, আধুনিক প্রকাশনী ৪৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য হাদীছে এসেছে উম্মে ফারওয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি বললেন, আউয়াল (প্রথম) ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা’।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬০৭, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪২৬, তিরমিযী ১৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৯৯, আহমাদ ২৭১০৩, বায়হাক্বী ‘সুনানুল কুবরা’ (১/৪৩৪), দারাকুতনী (১/১৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহর নিকট প্রিয় ও শ্রেষ্ঠতর আমল হচ্ছে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের অধিকাংশ মুসলিম ছালাত আদায় করে শেষ ওয়াক্তে। উপরের দু’টি ছহীহ হাদীছ মাযহাবী আলেমগণ মুছল্লীদের সামনে পেশ করে না। তারা শুধু বড় জামা‘আতে বেশী ফযীলত এই ধোঁকা দিয়ে মানুষকে মুনাফিকদের ছালাত শিক্ষা দেয়। আর নেতারা শেষ সময় ছালাত আদায় করলে করণীয় সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন,

‘নেতারা যখন ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে দেরী করে পড়বে বা ছালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে তখন তুমি কি করবে? আমি বললাম, আপনি আমাকে কি করতে আদেশ করছেন? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ছালাতের ওয়াক্তেই ছালাত আদায় করে নিবে। অতঃপর তাদের সাথে যদি পুনরায় আদায় করতে পার তাহ’লে আদায় করবে। আর তা তোমার জন্য নফল হবে’।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬০০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৩৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৪৮, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৩১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১২৫৬, তিরমিযী ১৭৬, দারেমী ১২৬৪, আহমাদ ২১৩২৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৫৮৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

প্রকাশ থাকে যে, বড় জামা‘আতে ছালাত আদায় করার চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা উত্তম। কারণ ছালাতের শেষ ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা মুনাফিকী। অতএব দেরিতে ছালাত আদায় করলে মুনাফিক হয়ে জাহান্নামে জ্বলতে হবে। আউয়াল ওয়াক্তে একাই ছালাত আদায়কারী ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ ক্ষমা রয়েছে। উক্ববা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একাই পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং ছালাত আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম’।

(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৬৬৫, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)১২০৩, নাসায়ী ৬৬৬, ইরওয়া ২১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের একদল লোক বলে যে, ‘আসুন ভাই আসুন খুশি-খুশি জামায়াতের সহিত নামায পড়ি। বহুত ফায়দা আছে’। অথচ দেরী করে ছালাত আদায় করে আর উপরের হাদীছ প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় ফরয করেছেন। অতএব একা হ’লেও ঐ সময়ই ছালাত আদায় করতে হবে, তবুও দেরিতে ছালাত আদায় করা যাবে না। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চৌদ্দশত বছর পূর্বে জানিয়ে দিয়ে গেছেন।

 (সমাপ্ত)

অদ্য ২৪/১২/২০২১ তারিখে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের সঠিক সময়ের একটি চার্ট নিচে দেয়া হলোঃ এই চার্টের সময়, দিন ও মাস পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হবে।

ক্রঃ নং

সালাতের নাম

সালাত আদায়ের আউয়াল ওয়াক্ত

ফজর

ভোর ৫:১৫

জোহর

দুপুর ১১:৫৯

আসর

বিকাল ২:৫৮

মাগরিব

সন্ধ্যা ৫:১৮

এশা

রাত ৬:৩৮

সূর্য উদয়

ভোর ৬:৩৬


 

সালাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ

(ক) সালাত কবুল হওয়ার সহিহ নিয়ম-প্রথমখন্ড।

(খ) সালাতের ভিতর যা করা বৈধ-অবৈধএবংসালাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি-দ্বিতীয় খন্ড।

(গ) ফরজ ছালাতে ছালাম ফিরানোরপরপঠিতব্য অধিক ফজিলতপূর্ণ দোয়াসমূহ।

(ঘ) জামাআতে সালাত আদায় এর গুরুত্ব,ফজিলতওসহিহ নিয়মাবলী (তৃতীয় খন্ড-প্রথম অংশ)।

(ঙ) ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তব্যএবংযোগ্য ইমামের গুণাবলী (তৃতীয় খন্ড-দ্বিতীয় অংশ)।

(চ) কাযা, উমরি কাযা ও কসর সালাতেরসহিহবিধিবিধান-তৃতীয় খন্ড (তৃতীয় অংশ)।

(ছ) মাসজিদ ও ক্বিবলার সহিহবিধান-চতুর্থখন্ড (প্রথম অংশ)।

(জ) সালাতুল জুমআর সহিহ বিধান।

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(General Director PMMRC, MSHRC, Gulshan-2, Dhaka, Bangladesh)

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...