বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল
হাদিসের কবলে বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)-
প্রচারে-PMMRC
( পঞ্চম পর্ব)
ভূমিকাঃ বাংলাদেশে হাজার হাজার
মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক (আলিম ও কওমী), কোরআনের
হাফেজ, হাদিসের হাফেজ, পির-অলি, ওযাজকারী, তাবলীগ জামায়াত, জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অসংখ্য ইসলামী সংগঠন আছে। এরা প্রত্যেকেই
ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেন। তারা নিজেরা আমল করেন ও সেই আমল তাদের অনুসারীদেরকেও
শিখিয়ে দেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে দাওয়াতী কাজ। কিন্তু দেখা যায়, তাদের আমলের
বা দাওয়াতী কাজের ৯৫%-ই জাল ও জঈফ হাদিস ভিত্তিক। একজন মসজিদের ইমাম,
তিনি একজন কোরআনের হাফেজ আবার মুফতি কিংবা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক। এই ইমাম সাহেব
যখন বাংলা খোতবা দেন আর যখন জাল ও জঈফ হাদিসগুলো বর্ণনা করেন তখন মনে হয় এরা কোনো
পড়াশোনাই করেননি। আর পড়াশোনা করলেও তাদের পাঠ্য পুস্তকগুলোই জাল ও জঈফ হাদিসে
ভরপুর। তাদের ওস্তাদগণও একই শিক্ষায় শিক্ষিত। যার ফলে তাদের সাগরেদরা ঐ ওস্তাদদের
শুধুই অন্ধ অনুকরন করেই চলছে। একবারও তারা চিন্তা করে দেখা না যে, তাদের শিক্ষা
বিদআতী শিক্ষা কিনা। যাই হোক যারা বিদআতী শিক্ষায় শিক্ষিত তাদেরকে চোখে আঙ্গুল
দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্যই জাল ও জঈফ হাদিসগুলো দেয়া হলো। আপনারা পড়বেন আর অন্যদেরকে
নতুন করে শিখিয়ে দিবেন। এতোদিন যে ভুলের উপর আমল করে আসছেন তা কিন্তু আল্লাহর
দরবারে কবুল হয়নি। তাই তওবা করে সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসবেন এই অনুরোধ সকলের
প্রতি রইল। এবার আওয়াজ তুলুন:- সহীহ হাদিসের আগমন, বিদআত পলায়ন।
(পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
/ গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস )
২৯১। যে ব্যাক্তি সূরা আল-ওয়াকিয়াহ পাঠ করবে এবং তা শিক্ষা গ্রহন করবে,
তাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত লিখা হবে না এবং সে ও তার বাড়ীর সদস্যরা অভাবগ্রস্থ হবে
না।
হাদিসটি জাল।
এটি সুয়ূতী “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (১৭৭) আবুশ শাইখ এর
বর্ণনা হতে তার নিজ সনদে আব্দুল কুদ্দুস ইবনু হাবীব হতে ... উল্লেখ করে বলেছেনঃ আব্দুল
কুদ্দুস ইবনু হাবীব মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আব্দুর রাযযাক বলেনঃ আমি ইবনুল মুবারাককে এ আব্দুল
কুদ্দুস ব্যতীত অন্য কাউকে স্পষ্টভাবে মিথ্যুক বলতে শুনিনি। ইবনু হিব্বান স্পষ্টই বলেছেনঃ
তিনি হাদীস জাল করতেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯২ | 292 | ۲۹۲
২৯২। রাতের অন্ধকার আর দ্বীনের আলো; যখন সূর্য যমীনের নীচে চলে যায়
তখন তার কারণে রাত অন্ধকার হয়ে যায়। যখন সকাল আলোকিত হয় তখন সত্তর হাজার ফেরেশতা তার
(সূর্যের) দিকে অগ্রগামী হয়, এমতাবস্থায় তার পিছনে পড়ে যায় আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো
ইবাদত করাকে অপছন্দ করে, সূর্যোদয় হয় আলো ছাড়ানো পর্যন্ত। ফলে দিন দীর্ঘ হয় তার দীর্ঘ
অবস্থান দ্বারা এবং তার কারণে পানি গরম হয়ে যায়। যখন গ্রীষ্মকাল হয় তখন তার অবস্থানের
সময় কমে যায়, যার জন্য পানি ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
গলদা চিংড়ি; সেটি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের লৌহ বস্ত্রধারী মাছ। তাঁকে
বলা হয় ঈওয়ান (প্রাসা’দ), তাতেই সে ধ্বংস হয়ে যায়।
মেঘমালার উৎস স্থল; তা উৎপন্ন হয় পূর্ব-পশ্চিমে দুই প্রান্তের দিক থেকে
এবং দুই প্রান্তের সম্মুখ হতে। তাঁকে লাগাম লাগিয়ে দেয়া পশ্চিম এবং দক্ষিনা হাওয়া এবং
তার পিছু ধাওয়া করে উত্তরের এবং পূর্বের দিকের হাওয়া।
মেঘের গর্জন; সে এক ফেরেশতা যার হাতে রয়েছে একটি আঁচড়ানী সে দূরবর্তীকে
নিকটে আনে এবং নিকটবর্তীকে দূরে সরিয়ে দেয়। সে যখন তাঁকে উঁচু করে তখন বিদ্যুৎ চমকায়,
যখন ধমকায় তখন গর্জন করে এবং যখন প্রহার করে তখন বজ্রপাত করে।
সন্তানদের কোন কোন অংশ পুরুষের আর কোন কোন অংশ নারীর; পুরুষের হচ্ছে
হাড়, ঘাম ও মানসিক শক্তি আর নারীর হচ্ছে গোশত, রক্ত ও চুল। নিরাপদ শহর হচ্ছে মক্কা।
হাদীসটি বাতিল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/১৮৮/২/৭৮৯১) মুহাম্মাদ ইবনু
আব্দির রহমান সুলামী সূত্রে আবু ইমরান হতে ... বর্ণনা করেছেন। তাবারানী বলেনঃ ইবনু
জুরায়েজ হতে আবূ ইমরান হাররানী ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির
রহমান সুলামীও এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (মুহাম্মাদ) তার শাইখ-এর ন্যায় মাজহুল। হায়সামী
বলেনঃ যাহাবী আবু ইমরানের জীবনীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন অথচ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন
এমন কথা কোন ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এরূপ হাদীস বর্ণনা করাই তার দুর্বল হওয়ার জন্য
যথেষ্ট। যাহাবী তার জীবনীতে বলেনঃ এ খবরটি বাতিল। আবু ইমরান হতে বর্ণনাকারী মাজহুল।
তার নাম মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির রহমান সুলামী। হাফিয ইবনু হাজার তার এ বক্তব্যকে “লিসানুল
মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৩ | 293 | ۲۹۳
২৯৩। সূর্যের ব্যাপারে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে নয়জন ফেরেশতার উপর। তাঁরা
তার (সূর্যের) উপর প্রতিদিন বরফ নিক্ষেপ করেছে। যদি এরূপ না হত তাহলে সূর্য যে বস্তুর
উপরই আসত তাকেই সে পুড়িয়ে দিত।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (২/২৩০) এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী “আল-ওয়াহিয়াত” গ্রন্থে
(১/৩৪), তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৮/১৯৭/ ৭৭০৫), আবূ হাফস আল-কিনানী
"আল-আমালী" গ্রন্থে (১/৯/২) ও আরো অনেকে আফীর ইবনু মি’দান হতে, তিনি সুলায়মান
ইবনু আমের হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আল-কারী, ইবনু আদী ও ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ হাদীসটি গারীব। আকীর ছাড়া
অন্য কেউ বর্ণনা করেছেন কিনা জানি না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল, যেমনভাবে হায়সামী (৮/১৩১)
বলেছেন। হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল। হাদীসটির মতন (ভাষা) জাল হওয়ার ব্যাপারে
আমার কোন সন্দেহ নেই। কারণ এটি ইসরাইলী বর্ণনার সাথেই বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ।
এটির সনদের আরেক বর্ণনাকারী মাসলামা ইবনু আলী খুশানী সম্পর্কে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি দুর্বল, মুহাদ্দিসগণ তার হাদীসকে মাতরূক বলেছেন এবং
তার হাদীসকে ইনকার করেছেন। তার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বলেনঃ তিনি কিছুই না। নাসাঈ বলেনঃ
তিনি মাতরূক।
এছাড়া ইলমুল ফালাকের মধ্যে যা সাব্যস্ত হয়েছে তা তার বিরোধী। ইলমে
ফালাকে বলা হয়েছে সূর্য যমীন হতে বহু দূরে থাকার কারণে কিছু পুড়ে না। বলা হয়েছে
একশত পঞ্চাশ মিলিয়ন কিঃ মিঃ দূরত্বে তার অবস্থান।
আবু উমামা হতে মওকুফ হিসাবেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তবুও সেটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৪ | 294 | ۲۹٤
২৯৪। যমীন হচ্ছে পানির উপর, পানি একটি পাথরের উপর আর পাথর হচ্ছে এমন
একটি মাছের পিঠের উপর যাতে দু’চোয়াল আরশের সাথে মিলিত হয়েছে এবং মাছটি এক ফেরেশতার
স্কন্ধের উপর যার দু’পা বাতাসে।
হাদীসটি জাল।
এটি হায়সামী (৮/১৩১) ইবনু উমার (রাঃ)-এর হাদীস হতে মারফু হিসাবে উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি বাযযার তার শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনে শাবীব হতে বর্ণনা করেছেন।
তিনি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি “আল-মীযান” ও “লিসানুল মীযান” গ্রন্থ সহ
অন্য কোন গ্রন্থেও দেখছি না। বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, এটি পূর্বেরটির ন্যায় ইসরাইলী
বর্ণনা । অতঃপর আমি দেখতে পেলাম হাদীসটি ইবনু আদী (১/১৭৫) মুহাম্মাদ ইবনু হারব সূত্রে
সাঈদ ইবনু সিনান হতে, তিনি আবুয যাহেরিয়া হতে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি সাঈদ ইবনু
সিনান হিমসী কর্তৃক বর্ণিত। বিশেষ করে আবুয যাহেরিয়া হতে তার বর্ণিত হাদীস নিরাপদ
নয়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি নিতান্তই দুর্বল বরং জুরজানী তার সম্পর্কে
বলেনঃ আমার ভয় হচ্ছে যে, তার হাদীসগুলো জাল। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার হাদীসগুলো
উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। আমি অন্য একটি সূত্র পেয়েছি যেটি ইবনু মান্দা “আত-তাওহীদ”
(২/২৭) আব্দুল্লাহ ইবনু সুলায়মান আত-তাবীল হতে, তিনি দাররাজ হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ দাররাজ বহু মুনকারের অধিকারী। তার কিছু মুনকার পূর্বে
আলোচিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু সুলায়মানের মুখস্থ বিদ্যায় ক্রটি ছিল। তিনি অথবা
তার শাইখ ভুল করেছেন। যেখানে মওকুফ হবে সেখানে মারফু হিসাবে চালিয়ে দিয়েছেন। ইবনু
মান্দা ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এ সনদটি সহীহ। মওকুফ
হওয়াটাই প্রমাণ করছে যে, এটি ইসরাইলী বর্ণনা। এছাড়া আমার নিকট বাযযার কর্তৃক বর্ণিত
সনদের বাস্তবতা প্রকাশিত হয়েছে।
তাতে বাযযার বলেনঃ এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে সাঈদ ইবনু সিনান। তিনি হচ্ছেন
মিথ্যার দোষে দোষী ব্যক্তি। বর্ণনাকারী হিসাবে হায়সামী যে আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনে
শাবীবকে উল্লেখ করেছেন, প্রকৃতপক্ষে এরূপ বর্ণনাকারী পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি হচ্ছেন
আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীব। যার মুতাবা'য়াত ইবনু আদীর নিকট পাওয়া যাচ্ছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৫ | 295 | ۲۹۵
২৯৫। যে ব্যাক্তি কুল-হু আল্লাহু আহাদ সূরা দু’শত বার পাঠ করবে, তার
দু’শত বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়ে।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু যুরায়েস "ফাযায়েলুল কুরআন" গ্রন্থে (৩/১১৩/১),
খাতীব বাগদাদী (৬/১৮৭), ইবনু বিশরান (১২/৬২) ও বাইহাকী “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে (১/২/৩৫/১-২)
হাসান ইবনু আবী জাফার আল-জাফারী সূত্রে সাবেত আল-বুনানী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটির
সনদ নিতান্তই দুর্বল।
হাসান ইবনু জাফার সম্পর্কে যাহাবী বলেনঃ তাকে ইমাম আহমাদ ও নাসাঈ দুর্বল
আখ্যা দিয়েছেন। বুখারী এবং ফাল্লাস তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কিন্তু তিনি এককভাবে এটি বর্ণনা করেননি। সুয়ূতী
“আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৩৯) বলেছেনঃ বাযযার সাবেত হতে আগলাব ইবনু তামীম সূত্রে বর্ণনা
করেছেন। মুখস্থ বিদ্যায় ক্রটির দিক দিয়ে তিনি হাসানের ন্যায়। ইবনু যুরায়েস ও বাইহাকী
সাবেত হতে সালেহ্ আল-মিরর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সালেহ্ হচ্ছেন ইবনু বাশীর আয-যাহেদ। তার সম্পর্কে
ইমাম বুখারী ও ফাল্লাস বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। মোটকথা হাদীসটি তিনটি সূত্রেই অত্যন্ত
দুর্বল। একটি দ্বারা অন্যটির দুর্বলতাকে দূর করার মত নয়। অর্থটিও আমার নিকট মুনকার,
কারণ ফীলতের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৬ | 296 | ۲۹٦
২৯৬। নিশ্চয় আল্লাহ কোন মুসলিমকে রমযান মাসের প্রথম দিবসের প্রত্যূষে
ক্ষমা না করে ছাড়েন না।
হাদীসটি জাল।
এটি খাতীব বাগদাদী (৫/৯১) এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী “আলমাওযু'আত” গ্রন্থে
(২/১৯০) সালাম আত-তাবীল সূত্রে যিয়াদ ইবনু মায়মূন হতে বর্ণনা করেছেন।
এটির সনদটি মাওযু (বানোয়াট)। সালাম আত-তাবীলকে একাধিক ব্যক্তি মিথ্যুক
এবং জাল করার দোষে দোষী করেছেন। তার শাইখ যিয়াদ ইবনু মায়মুন স্বস্বীকৃত হাদীস জালকারী।
ইবনুল জাওযী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ্ নয়। সালাম মাতরূক এবং যিয়াদ মিথ্যুক।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১০১) তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির অন্য সূত্রও রয়েছে।
অতঃপর নিম্নের হাদীসটি উল্লেখ করেছেন অথচ সেটিও জাল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৭ | 297 | ۲۹۷
২৯৭। নিশ্চয় আল্লাহ কোন মুসলিমকে জুম’আর দিবসে ক্ষমা না করে ছাড়েন না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মু'জামুল আওসাত” গ্রন্থে (৪৮-৪৯) ইবনুল আরাবী তার “আল-মু'জাম"
গ্রন্থে (১৪৭) এবং ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (২৪/২৯০) মুফাযযাল ইবনু ফুযালা হতে
বর্ণনা করেছেন, তিনি আবূ উরওয়া বাসরী হতে হতে, তিনি যিয়াদ আবূ আম্মার হতে বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল আরাবী বলেছেনঃ যিয়াদ ইবনু মায়মূন হতে ...।
যিয়াদ আন-নুমায়রী হচ্ছেন ইবনু আবদিল্লাহ বাসরী। তার কুনিয়াত আবূ
আম্মার হিসাবে পাচ্ছি না। যিয়াদ ইবনু মায়মূনের কুনিয়াত আবু আম্মার হিসাচ্ছে মিলছে।
ইবনুল আরাবী স্পষ্টভাবেই বলেছেনঃ এ ব্যক্তি যিয়াদ ইবনু মায়মূন। তিনি স্বস্বীকৃত হাদীস
জালকারী। যাহাবী বলেনঃ যিয়াদ ইবনু মায়মূন আস-সাকাফীকেই বলা হয় যিয়াদ আবূ আম্মার
বাসরী এবং যিয়াদ ইবনু আবী হাস্সান। যার সম্পর্কে ইয়াযীদ ইবনু হারূন বলেনঃ তিনি ছিলেন
মিথ্যুক। অতঃপর তার কতিপয় মুনকার হাদীস উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। এছাড়া আবূ
উরওয়া বাসরী হচ্ছেন মামার অর্থাৎ ইবনু রাশেদ। তিনি আব্দুর রাযযাকের শাইখ। যদিও তার
কুনিয়াত আবু উরওয়া তবুও আমি পাচ্ছি না যে, সেই এ সনদে।
হাফিয যাহাবী এবং ইবনু হাজার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সে এ সনদে নেই। তারা
“আল-মীযান” ও “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ আবু উরওয়া যিয়াদ ইবনু ফুলান হতে মাজহুল
বর্ণনাকারী, তার শাইখও অনুরূপ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ যিয়াদ হচ্ছেন মিথ্যুক যিয়াদ ইবনু মায়মূন। তার
সম্পর্কে পূর্বের হাদীসে আলোচনা হয়েছে। ওয়াহেদী কর্তৃক তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থের
(৪/১৪৫/১) বর্ণনাতেও যিয়াদ ইবনু মায়মূনকেই সনদে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনু আসাকিরের
বর্ণনাতে যিয়াদ আল-ওয়াসেতীর কথা বলা হয়েছে। সেও এ যিয়াদ ইবনু মায়মূন। অতএব হাদীসটির
কোন সনদই এ স্বস্বীকৃত জলকারী হতে মুক্ত নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৮ | 298 | ۲۹۸
২৯৮। সুবহানআল্লাহ তোমরা কোন বস্তুকে অভ্যার্থনা জানাবে এবং কোন বস্তুকে
তোমাদের সম্মুখবর্তী করা হবে? তিনি বাক্যটি তিনবার বললেন। অতঃপর উমার (রাঃ) বললেনঃ
হে আল্লাহর রাসুল! ওহী নাযিল হয়েছে নাকি দুশমন উপস্থিত হয়েছে? তিনি বললেনঃ না, কিন্তু
আল্লাহ এ কেবলাবাসিদের সকলকে রমযান মাসের প্রথম রাতেই ক্ষমা করে দিবেন। (বর্ণনাকারী
বললেনঃ) মজলিসের একধারে এক ব্যাক্তি তার মাথা নাড়াছিলেন এবং বলছিলেনঃ যথেষ্ট হয়েছে
যথেষ্ট হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ এ কথা শুনে সম্ভবত
তোমার হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে গেছে? সে বললঃ আল্লাহর কসম তা না হে আল্লাহর রাসুল! তবে আমি
মুনাফেকদের ব্যাপারে বলছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুনাফেক হচ্ছে
কাফের আর কাফেরের জন্য তাতে কোন অংশ নেই।
হাদীসটি মুনকার।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৯৭/১), আবু তাহের আম্বারী
তার “আল-মাশীখা” গ্রন্থে (১৪৭/১-২) ও আরো অনেকে আমর ইবনু হামযা আল-কায়সী আবু উসায়েদ
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ আনাস (রাঃ) হতে শুধুমাত্র এ সনদেই হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
আমর এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী "আল-লাআলীল মাসনু'য়াহ" গ্রন্থে (২/১০১) পূর্বের
হাদীসটির শাহেদ হিসাবে এটিকে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর চুপ থেকেছেন। কারণ এ আমর ইবনু হামযাকে
দারাকুতনীসহ অন্যরা দুর্বল বলেছেন। বুখারী ও উকায়লী তার সম্পর্কে বলেনঃ তার হাদীসের
অনুসরণ করা যাবে না। অতঃপর উকায়লী তার দুটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, এটি সে দুটির একটি।
অতঃপর বলেছেনঃ এ দুটির অনুসরণ করা যায় না।
অন্য এক বর্ণনাকারী খালাফ আবূর রাবী হচ্ছেন মাজহুল (অপরিচিত)। তিনি
খালাফ ইবনু মিহরান নন। বুখারী ও ইবনু আবী হাতিম উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি
(ইবনু আবী হাতিম) খালাফ ইবনু মিহরানকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন। অতঃপর আবূর রাবী'র
জীবনী উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার সম্পর্কে ভাল মন্দ কিছুই বলেননি।
ইবনু খুযায়মা তার “সহীহাহ” গ্রন্থে এ হাদীসটিকে দুর্বল হিসাবে ইঙ্গিত
দিয়েছেন, যা মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/৬৩) উল্লেখ করেছেন। ইবনু খুযায়মা বলেনঃ
আমি খালাফ আবূর রাবী' এবং আমর ইবনু হামযাকে (ভাল না মন্দ এ হিসাবে) চিনি না।
মোটকথা এ দুই মাজহুল বর্ণনাকারী এককভাবে বর্ণনা করার কারণে হাদীসটি
আমার নিকট মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২৯৯ | 299 | ۲۹۹
২৯৯। যখন রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন হয়, তখন আল্লাহ তার সৃষ্টির
দিকে দৃষ্টি দেন। যখন আল্লাহ তার বান্দাদের দিকে দৃষ্টি দেন, তখন তাঁকে আর কখনও শাস্তি
দেন না এবং আল্লাহর উপর প্রতি রাতে দশ লক্ষ জনকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেয়া অপরিহার্য
হয়ে যায়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু ফানজুবিয়া “মাজলিসুম মিনাল আমালী ফি ফাযলে রমযান” গ্রন্থে
এবং আবুল কাসিম আসবাহানী “আত-তারগীব” গ্রন্থে (কাফ ১/১৮০) হাম্মাদ ইবনু মুদরিক হতে,
তিনি হাদীসটি উসমান ইবনু আবদিল্লাহ শামী হতে বর্ণনা করেছেন।
যিয়া মাকদেসী “আল-মুখতারা” গ্রন্থে (১০/১০০/১) বর্ণনা করে বলেছেনঃ
হাদীসটি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে উসমান ইবনু আবদিল্লাহ শামী মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনুল
জাওযীও তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি জাল। এটির সনদে একাধিক
মাজহুল ব্যক্তি রয়েছেন। উসমান মিথ্যার দোষে দোষী, জলকারী।
সুয়ূতীও "আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/১০০-১০১) তার এ কথাকে সমর্থন
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০০ | 300 | ۳۰۰
৩০০। যে ব্যাক্তি দু’শত বার কুল-হু-আল্লাহু আহাদ পাঠ করবে, যদি তার
উপর কোন ঋণ না থাকে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য এক হাজার পাঁচশত সাওয়াব লিখে দেন।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (১/৮৪৮-৮৪৯) এবং তার থেকে বাইহাকী "শুয়াবুল ঈমান"
গ্রন্থে (১/২/৩৫/২) এবং খাতীব বাগদাদী (৬/২০৪) আবুর রাবী' আয-যাহরানী সূত্রে হাতিম
ইবনু মায়মূন হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি নিতান্তই দুর্বল। এ হাতিম সম্পর্কে ইবনু
হিব্বান "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১/২৭০) বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। তিনি সাবেত
হতে এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যা তার হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কোন অবস্থাতেই তার
দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয হবে না ।
ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি ইবনুল
জাওযী তার “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে (২/২৪৪) খাতীব বাগদাদীর সূত্র হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
এটি বানোয়াট। হাতিম দ্বারা কোন অবস্থাতেই দলীল গ্রহণ করা যাবে না। হাদীসটি ইমাম তিরমিযী
এবং ইবনু নাসর “কিয়ামুল লায়ল” গ্রন্থে (পৃঃ ৬৬) হাতিম ইবনু মায়মূন হতেই বর্ণনা করেছেন,
তবে ভাষায় পার্থক্য রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দু'শত বার পাঠ করবে তার পঞ্চাশ
বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে...। তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি গারীব অর্থাৎ দুর্বল।
এ জন্য ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে বলেছেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল
।
আমি (আলাবনী) বলছিঃ পূর্বে আলোচনাকৃত হাতিম ইবনু মায়মুন দ্বারা কোন
অবস্থাতেই দলীল গ্রহণ করা হালাল হবে না, যেমনটি বলেছেনঃ ইবনু হিব্বান। ইবনুল জাওযী
তার এ হাদীসটিকে “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে পূর্বের বাক্যে একই সূত্রে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া
দারেমীও এটি (২/৪৬১) মুহাম্মাদ আল-ওতা সূত্রে উম্মে কাসীর আনসারিয়া হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাদের উভয়কেই আমি চিনি না। (অর্থাৎ তারা উভয়েই
মাজহুল)। ইবনু কাসীর বলেছেনঃ এটির সনদ দুর্বল।
এ হাদীসটিও মুনকার যেমনভাবে আলোচনা করা হয়েছে ২৯৫ নং হাদীসে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০১ | 301 | ۳۰۱
৩০১। যে ব্যাক্তি কুল-হু-আল্লাহু আহাদ আর সেই রোগের মধ্যে পাঠ করবে
যাতে তার মৃত্যু হবে, তার কবরে তাঁকে ফেতনায় (প্রশ্নত্তরে) পড়তে হবে না। সে কবরের চাপ
খাওয়া হতে নিরাপদ থাকবে এবং ফেরেশতারা কিয়ামতের দিবসে তাঁকে (হাতের) তালু দ্বারা বহন
করে পুলসিরাত অতিক্রম করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/৫৪/২/৫৯১৩) ও আবু নু’য়াইম
(২/২১৩) আবূ হারিস নাসর ইবনু হাম্মাদ আল-বালখী সূত্রে মালেক ইবনু আবদিল্লাহ আযদী হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ বানোয়াট। এ নাসর মিথ্যার দোষে দোষী। তিনি
এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে তাবারানী বলেছেন। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন
বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। তার শাইখ মালেক ইবনু আবদিল্লাহ আযদীকে আমি চিনি না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০২ | 302 | ۳۰۲
৩০২। আমি সে সময়েও নাবী ছিলাম যখন আদম পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন।
হাদীসটি জাল।
নিম্নের হাদীসটিও এটির ন্যায়ঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৩ | 303 | ۳۰۳
৩০৩। যখন আদম ছিলেন না, পানি ও মাটি ছিল না তখনও আমি নাবী ছিলাম।
হাদীসটি জাল।
এটি এবং পূর্বেরটিকে সুয়ূতী ইবনু তাইমিয়্যার উদ্ধৃতিতে “যায়লুল আহাদীসিল
মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ২০৩) উল্লেখ করেছেন এবং তিনি তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। ইবনু
তাইমিয়া “বাকরীর প্রতিবাদ” গ্রন্থের মধ্যে (পৃঃ ৯) বলেছেনঃ কুরআন ও হাদীসের মধ্যে
এমনকি সুস্থ বিবেকেও এটির কোন ভিত্তি নেই। কোন মুহাদ্দিসই এটিকে উল্লেখ করেননি। এটির
অর্থও বাতিল। কারণ আদম (আঃ) কখনও পানি এবং মাটির মাঝে ছিলেন না। কারণ তীন (طين) হচ্ছে পানি ও মাটি।
বরং তিনি ছিলেন দেহ এবং রূহের মাঝে ।
পথ ভ্ৰষ্টরা ধারণা করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে
সময় উপস্থিত ছিলেন এবং তার সত্তা সকল সত্তার পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারা মিথ্যা
হাদীস দ্বারা তার প্রমাণ উপস্থাপন করে থাকে। যেমন তাদের একটি বানোয়াট হাদীস হচ্ছে
তিনি নূর হিসাবে আরশের আশে-পাশে ছিলেন। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! আমি সেই নূর ছিলাম।
তাদের কেউ আবার দাবী করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিবরীল আসার
পূর্বেই তিনি কুরআন হেফয করেন।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ كنت نبيا وآدم بين الروح والجسد "যখন আদম (আঃ)
রূহ ও দেহের মাঝে ছিলেন, তখন আমি নাবী ছিলাম।" এ হাদীসটির সনদ সহীহ, যেমনটি আমি
সাহীহার মধ্যে (নং ১৮৫৬) বর্ণনা করেছি।
সুয়ূতী স্পষ্টভাবে “আদ-দুরার” গ্রন্থে বলেছেনঃ উপরে আলোচিত দুটি হাদীসের
কোন ভিত্তি নেই। ইবনু তাইমিয়া দুটি হাদীসকেই বাতিল বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন উভয়টিই
মিথ্যা। সুয়ূতী তার "আন-নূর" গ্রন্থেও তা স্বীকার করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৪ | 304 | ۳۰٤
৩০৪। কোন যুবক কোন বৃদ্ধকে তার বয়সের কারণে সম্মান করলে, আল্লাহ তার
জন্যও এমন এক ব্যাক্তি নির্ধারিত করে দিবেন যে তাঁকে তার বৃদ্ধ বয়সের সময় সম্মান করবে।
হাদীসটি মুনকার।
এটি তিরমিযী (৩/১৫২), আবূ বাকর আশ-শাফেঈ “রুবা'ঈয়াত” গ্রন্থে (১/১০৬/১-২)
এবং তার থেকে বাইহাকী “আল-আদাব” গ্রন্থে (৫৭/৫৩) বর্ণনা করেছেন। এছাড়া উকায়লী, আবু
নু’য়াইম, আল-খাতীব, ইবনু আসাকির ও যিয়া আল-মাকদেসীসহ আরো অনেকে ইয়াযীদ ইবনু বায়ান
আল-মুয়াল্লিম সূত্রে আবুর রিহাল হতে ... বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব।
এটিকে শুধুমাত্র ইয়াযীদ ইবনু বায়ানের হাদীস হতেই জানি। উকায়লী বলেনঃ তার অনুকরণ
করা যায় না। এটিকে তার মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে জানা যায় না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি দুর্বল। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ
দারাকুতনী বলেছেনঃ এটি দুর্বল। বুখারী বলেছেনঃ এটিতে বিরূপ মন্তব্য আছে। ইবনু আদী বলেছেনঃ
এটি মুনকার।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইয়াযীদ ইবনু বায়ানের শাইখ আবু রিহাল তার মতই।
আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন, তিনি মুনকারুল হাদীস। বুখারী বলেনঃ তার নিকট আজব
আজব বস্তু রয়েছে। ইবনুন নাকুরও তাকে দুর্বল বলে ইঙ্গিত করেছেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৫ | 305 | ۳۰۵
৩০৫। তুমি লেজ হও, তুমি মাথা হয়ো না।
আমার জানামতে এটির কোন ভিত্তি নেই।
সাখাবী তার “মাকাসিদুল হাসানা" গ্রন্থে ( পৃঃ ১৫৪) আমাদেরকে উপকৃত
করেছেন তার এ কথার মাধ্যমে যে, এটি ইবরাহীম ইবনু আদহামের কথা। তা দ্বারা তিনি তার কোন
সাথীকে উপদেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর এটিকে আমি আহমাদের “আয-যুহুদ” নামক গ্রন্থে (২০/৮০/১)
শু'য়াইব ইবনু হারবের কথা হিসাবে পেয়েছি। তিনি মারা গেছেন ১৯৭ হিঃ সনে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৬ | 306 | ۳۰٦
৩০৬। মু’মিনের গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দানকারী এবং যার দিকে দৃষ্টি
দেয়া হয়েছে তার উপরেও আল্লাহর অভিশাপ।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/১৫) ইসহাক ইবনু নাজীহ হতে এবং তিনি
আব্বাদ ইবনু রাশেদ মুনকেরী হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ এটি স্পষ্ট
যে, ইসহাক ইবনু নাজীহ দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেছেনঃ যারা হাদীস জাল করতেন
তিনি তাদেরও অন্তর্ভুক্ত। ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি মিথ্যুক এবং হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিতি
লাভকারীদের একজন। ইবনু আদী বলেনঃ এ হাদীসটি আব্বাদ ইবনু রাশেদের মাধ্যমে হাসান হতে
একটি বানোয়াট হাদীস।
সুয়ূতী এটিকে যাহাবীর “আল-মীযান” গ্রন্থের অনুকরণ করে “যায়লুল আহাদীসিল
মাওযুআহ" (পৃঃ ১৪৯) গ্রন্থে এ ইসহাকের বাতিল হাদীস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটির
অগ্রহণযোগ্যতার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীই যথেষ্টঃ তুমি
তোমার গুপ্তাঙ্গকে হেফাযাত কর। তবে তোমার স্ত্রী হতে নয়...। এটির সনদটি হাসান। আমি
“আদাবুয যুফাফ ফিস সুন্নাহ আল-মুতাহহারা” গ্রন্থে এটির (পৃঃ ৩৪-৩৫) তাখরীজ করেছি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৭ | 307 | ۳۰۷
৩০৭। আমি আমার কোন ভাইকে আল্লাহর ওয়াস্তে এক লোকমা খানা খাওয়াব অবশ্যই
এটি আমার নিকট দু’ দিরহাম সাদাকা করার চেয়ে বেশী পছন্দনীয়। আর বিশ দিরহাম সা’দকা করার
চেয়ে সেই ভাইকে দু’ দিরহাম দান করা আমার নিকট বেশী পছন্দনীয়। বিশ দিরহাম তাঁকে দান
করব তা অবশ্যই আমার নিকর একটি দাসী আযাদ (মুক্ত) করারা চেয়ে বেশী পছন্দনীয়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু বিশরান (২৬/১০৭) হাজ্জাজ সূত্রে বিশর হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি জাল। এটির সমস্যা বিশর-এর মধ্যেই। তিনি হচ্ছেন
ইবনুল হুসাইন, তিনি একজন মিথ্যুক। এটি যুবায়ের ইবনু আদীর কপিতে (২/৫৪) রয়েছে। হাদীসটি
অন্য ভাষাতেও বর্ণনা করা হয়েছে। (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৮ | 308 | ۳۰۸
৩০৮। আমি আমার কোন মুসলিম ভাইকে এক লোকমা খানা খাওয়াব অবশ্যই তা আমার
নিকট এক দিরহাম সাদাকা করার চেয়ে বেশী পছন্দনীয়। আমি আমার আল্লাহর ওয়াস্তের কোন মুসলিম
ভাইকে এক দিরহাম দান করব তা দশ দিরহাম সা’দকা করার চেয়ে আমার নিকট অবশ্যই বেশী পছন্দনীয়।
আর দশ দিরহাম তাঁকে দান করব তা একটি দাসী আযাদ (মুক্ত) করার চেয়ে অবশ্যই আমার নিকট
বেশী পছন্দনীয়।
হাদীসটি দুর্বল।
সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে বলেনঃ এটি হান্নাদ এবং বাইহাকী “শুয়াবুল
ঈমান” গ্রন্থে বুদায়েল হতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। মানাবী বলেনঃ এটির সনদে হাজ্জাজ
ইবনু ফুরাফিসা নামক এক বর্ণনাকারী আছেন, তার সম্পর্কে আবূ যুর’য়াহ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী
নন। যাহাবী তাকে "আয-যুয়াফা ওয়াল-মাতরূকীন" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও
অন্য সূত্রেও এটি বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই সহীহ নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩০৯ | 309 | ۳۰۹
৩০৯। যে ব্যাক্তি এ অবস্থায় সকাল করবে যে, তার সর্ববৃহৎ ব্যাস্ততা
(চিন্তা-ভাবনা) হচ্ছে দুনিয়া কেন্দ্রিক, সে আল্লাহর নিকট হতে কিছুই পাবে না। যে ব্যাক্তি
সাধারণ মুসলমানদের গুরুত্ব দিবে না, সে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
হাদীসটি জাল।
এটি হাকিম (৪/৩১৭) এবং খাতীব বাগদাদী তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (৯/৩৭৩)
(তবে প্রথম বাক্যটি তার থেকে) ইসহাক ইবনু বিশর সূত্রে সুফিয়ান সাওরী হতে ... বর্ণনা
করেছেন। যাহাবী বলেনঃ আমার ধারণা হাদীসটি জাল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি ইবনুল জাওযী “মাওযু'আত” গ্রন্থে (৩/১৩২)
আল-খাতীব সূত্রে উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৩১৬-৩১৭) বিভিন্ন সূত্র
এবং শাহেদ উল্লেখ পূর্বক তার সমালোচনা করেছেন। এ সূত্রগুলোর দু'টি হুযাইফা হতে এসেছেঃ
১। একটি আবান হতে বর্ণিত হয়েছে আর তিনি আবুল আলিয়া হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি শাহেদ হওয়ার যোগ্য নয়। কারণ আবান হচ্ছেন
ইবনু আবী আইয়াশ; তাকে শু'বা ও অন্যরা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
২। অপরটি আব্দুল্লাহ ইবনু সালামা হতে বর্ণিত হয়েছে আর তিনি উকবা ইবনু
শাদ্দাদ জামহী হতে বর্ণনা করেছেন। এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল; এ আব্দুল্লাহকে দারাকুতনী
দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন এবং আবু নু’য়াইম বলেছেনঃ তিনি মাতরূক।
উকবাকে চেনা যায় না, যেমনভাবে “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে। এতে আরো কয়েকজন
বর্ণনাকারী রয়েছেন যাদেরকে চিনি না।
এছাড়া শাহেদ হিসাবে যেগুলো ইবনু মাসউদ, আনাস ও আবু যার (রাঃ)-এর হাদীস
হতে এসেছে, সেগুলোর কোনটিই সহীহ নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১০ | 310 | ۳۱۰
৩১০। যে ব্যাক্তি এ অবস্থায় সকাল করবে যে, তার ব্যাস্ততা (চিন্তা-ভাবনা)
হচ্ছে দুনিয়া কেন্দ্রিক, সে আল্লাহর নিকট হতে কিছুই পাবে না। যে ব্যাক্তি মুসলমানদের
ব্যাপারে গুরুত্ব দিবে না; সে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। যে ব্যাক্তি সেচ্ছায় নিজের
জন্য অপমান বরণ করে নিয়েছে কারো প্রতারণা ব্যাতিত সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী “মু'জামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/২৯/১/৪৬৬/২) ইয়াযীদ ইবনু
রাবী'আহ সুত্রে আবূল আশ'আস সান'আনী হতে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি ইয়াযীদ এককভাবে
বর্ণনা করেছেন। এটিকে সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৩১৭) উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন!
হায়সামী “মাজমাউয যাওয়াইদ” গ্রন্থে (১০/২৪৮) বলেছেনঃ হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করেছেন।
তার সনদে ইয়াযীদ ইবনু রাবীয়াহ আর-রাহাবী রয়েছেন, তিনি মাতরূক। মুনযেরীও হাদীসটি
দুর্বল এদিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু হাতিম আবুল আশ'আস হতে ইয়াযীদের হাদীসগুলোকে
অস্বীকার করেছেন, যেমনভাবে “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (৪/২/২৬১) এসেছে। এটি সেগুলোর
অন্তর্ভুক্ত।
জুযজানী বলেনঃ আমার ভয় হচ্ছে যে, হতে পারে তার হাদীসগুলো বানোয়াট।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১১ | 311 | ۳۱۱
৩১১। যে ব্যাক্তি এ অবস্থায় সকাল করবে যে, তার চিন্তা-চেতনা হচ্ছে আল্লাহকে
বাদ দিয়ে অন্য কিছুকে নিয়ে, সে আল্লাহর নিকট হতে কিছুই পাবে না। আর যে ব্যাক্তি মুসলমানদের
ব্যাপারে গুরুত্ব দিবে না; সে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (৭/১০৫/১), (১৯/৩/২) এবং হাকিম
(৪/৩২০) ইসহাক ইবনু বিশর সূত্রে মুকাতিল ইবনু সুলায়মান হতে বর্ণনা করেছেন। এটির ব্যাপারে
হাকিম চুপ থেকেছেন। ইবনু বিশরান বলেছেনঃ হাদীসটি গারীব, ইসহাক ইবনু বিশর এককভাবে এটি
বর্ণনা করেছেন। হাফিয যাহাবী “তালখীসুল মুসতাদরাক” গ্রন্থে বলেছেনঃ ইসহাক এবং মুকাতিল
তারা উভয়েই নির্ভরযোগ্য নন, সত্যবাদীও নন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইসহাক ইবনু বিশর হচ্ছেন আবু হুযাইফা আল-বুখারী।
তাকে ইবনুল মাদীনী ও দারাকুতনী মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমনভাবে “আল-মীযান” গ্রন্থে
এসেছে। তিনি তার এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ মুকাতিলও ধ্বংসপ্রাপ্ত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ মুকাতিল ইবনু সুলায়মান হচ্ছেন বালখী। ওয়াকী’
তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। হাদীসটি অন্যান্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর
একটির সনদে বর্ণনাকারী ফারকাদ এবং ওয়াহাব ইবনু রাশেদ আর-রাকী রয়েছেন। আবূ নু’য়াইম
বলেনঃ তারা উভয়েই এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা
যায় না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুখস্থ বিদ্যায় ক্রটি থাকার কারণে ফারকাদ দুর্বল।
ওয়াহাব আর-রাকী সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (৪/২/২৭)
বলেনঃ আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস,
তিনি বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তার দ্বারা কোন অবস্থাতেই দলীল
গ্রহণ করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয় সূত্রটিতে (যেটি “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৩১৬) সুয়ূতী উল্লেখ
করেছেন) আবান ইবনু আবী আইয়াশ রয়েছেন। তাকে শু'বা ও অন্যরা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
তার হাদীস শাহেদ হওয়ার যোগ্য নয়। এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়েদ নামক এক বর্ণনাকারী
আছেন, তিনি আদেল হিসাবে পরিচিত নন।
তৃতীয় সুত্রে যিয়াদ ইবনু মায়মূন আস-সাকাফী রয়েছে, তিনি হচ্ছেন মিথ্যুক।
চতুর্থ সূত্রে মূসা ইবনু ইব্রাহীম মারওয়াযী রয়েছেন; তাকে ইয়াহইয়া
ইবনু মা'ঈন মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১২ | 312 | ۳۱۲
৩১২। যে মুসলমানদের বিষয়ে গুরুত্ব দিবে না, সে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর, তার রাসুল, তার কিতাব, তার ইমাম ও সাধারণ মুসলিমদের নসিহত
করা অবস্থায় সকাল এবং সন্ধ্যা করবে না, সে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃঃ ১৮৮) ও “মুজামুল আওসাত”
গ্রন্থে (২/১৭১/১/৭৬২৬) এবং তার থেকে আবু নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (২/২৫২)
আব্দুল্লাহ ইবনু আবী জাফার আর-রাযী সূত্রে তার পিতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদ ছাড়া অন্য কোন সনদে এ হাদীসটি হ্যাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়নি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আব্দুল্লাহ ইবনু আবী জাফার এবং তার পিতার কারণে
হাদীসটি দুর্বল। তারা উভয়েই দুর্বল।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১/৮৭) হাদীসটির সমস্যা বর্ণনা
করেছেন শুধুমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহকে দুর্বল হিসাবে উল্লেখ করে। কিন্তু এটি তার ক্রটি,
কারণ তার পিতা পুত্র হতেও বেশী দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৩ | 313 | ۳۱۳
৩১৩। দাঊদ (আঃ) এর দৃষ্টিতে ত্রুটি ছিল।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার সনদে মুজালিদ ইবনু সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। ইবনুস সালাহ
“মুশকিলুল ওয়াসীত” গ্রন্থে বলেছেনঃ এ হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
যারাকশী “তাখরীজু আহাদীসিশ শারহ” নামক গ্রন্থে বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার।
তাতে দুর্বল ও মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন এবং সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
সুয়ূতীর “যায়লুল আহাদীসিল মাওযূআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ১২২-১২৩) এবং ইবনু
আররাকের “তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (৩০৮/১-২) অনুরূপ কথাই এসেছে।
অন্য একটি সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, যেটি আবু নু’য়াইম বর্ণনা
করেছেন। সেটিও বানোয়াট। তার আলোচনা ৫৬২ নং হাদীসে আসবে। সম্ভবত এ হাদীসটির আসল ইসরাইলীদের
বর্ণনা হতে এসেছে, কোন আহলে কিতাব বর্ণনা করেছে। অতঃপর কোন মুসলিম বর্ণনাকারী সেটি
পেয়ে ধারণা বশত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মারফু হিসাবে চালিয়ে
দিয়েছেন। এক নারীর দিকে দৃষ্টি দান সম্পর্কে একটি বানোয়াট ও বাতিল কিসসা দাউদ (আঃ)-কে
কেন্দ্র করে বর্ণিত হয়েছে। কোন মুসলিম ব্যক্তিই সেটি বাতিল হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ
পোষণ করতে পারেন না। এখানে সেটি বর্ণনা করা সঙ্গত মনে করছি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৪ | 314 | ۳۱٤
৩১৪। দাঊদ (আঃ) যখন এক মহিলার দিকে দৃষ্টি দিলেন এবং তাঁকে কামনা করলেন,
তখন বানু ইসরাইলের নিকট একদল সৈন্য প্রেরণ করলেন এবং সৈন্য দলের প্রধানের নিকট নির্দেশ
দিয়ে বললেনঃ যখন শত্রুরা উপস্থিত হবে; তখন তুমি উমুক ব্যাক্তিকে নিকটবর্তী করে দাও।
তিনি তার নামও উল্লেখ করে বললেনঃ তাঁকে তাবূতের সম্মুখে উপস্থিত করে দাও। তিনি বললেনঃ
তাবূত ছিল সেই যুগে এমন এক ব্যাক্তি যার মাধ্যমে সাহায্য নেয়া হতো। যাকেই তাবূতের সম্মুখে
উপস্থিত করা হত, সেই নিহত অথবা তার সম্মুখে যে সৈন্য বাহিনী যুদ্ধ করত তাঁরা পরাজিত
হওয়া ছাড়া ফিরে আসত না। মহিলার স্বামী নিহত হল। দু’ ফেরেশতা দাঊদ (আঃ) এর নিকট অবতরণ
করলেন, অতঃপর তাঁরা তাঁকে ঘটনাটি শোনালেন।
হাদীসটি বাতিল।
এটি হাকীম আত-তিরমিযী "নাওয়াদিরুল উসূল" গ্রন্থে ইয়াযীদ
আর-রুকাশী হতে বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে “তাফসীরু কুরতুবী” গ্রন্থে (১৫/১৬৭) বর্ণিত
হয়েছে। ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/৩১) বলেনঃ হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা
করেছেন। এটির সনদ সহীহ নয়, কারণ এটি ইয়াযীদ আর-রুকাশীর বর্ণনায় এসেছে। ইয়াযীদ যদিও
সালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত, তবুও তিনি ইমামগণের নিকট হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, এটি ইসরাইলী বর্ণনা হতে
এসেছে। সেই আহলে কিতাবরা বর্ণনা করেছে যারা নাৰীগণ নিষ্পাপ এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়।
ইয়াযীদ এখানে ভুল করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মারফূ' হিসাবে উল্লেখ
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৫ | 315 | ۳۱۵
৩১৫। যে ব্যাক্তি ক্ষমাকৃত ব্যাক্তির সাথে খাবে তাঁকে ক্ষমা করে দেয়া
হবে।
হাদীসটি মিথ্যা, এটির কোন ভিত্তি নেই।
এটি কোন কোন নেককারদের থেকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। “আল-মাকাসিদ” গ্রন্থে
এসেছে; ইবনু হাজার বলেনঃ এটি মিথ্যা, বানোয়াট। তার পূর্বে ইবনুল কাইয়্যিম “আল-মানার”
গ্রন্থে (পৃঃ ৫১) এ কথাই বলেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া বলেনঃ জ্ঞানীজনদের নিকট
এটির কোন সনদই নেই। এটি মুসলিমদের কোন কিতাবেও নেই। এটির অর্থও সহীহ নয়। কারণ কখনও
কখনও মুসলিমদের সাথে কাফের মুনাফিকরাও খেয়ে থাকে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৬ | 316 | ۳۱٦
৩১৬। তুমি তোমার মাতা, তোমার পিতা, তোমার বোন ও তোমার ভাইকে সহযোগিতা
করা শুরু কর। অতঃপর যে নিকটবর্তী তাঁকে, তার পর যে নিকটবর্তী তাঁকে। আর তোমার প্রতিবেশী
এবং যে অন্যের মুখাপেক্ষী তাঁদেরকে ভুলে যেয়ো না।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (২০/১৫০/৩১১) আব্বাদ ইবনু আহমাদ
আল-আরযামী সূত্রে তার চাচা হতে এবং তার চাচা তার বাবা হতে ... বর্ণনা করেছেন। হায়সামী
"আল-মাজমা" গ্রন্থে (৩/১২০) বলেনঃ আব্বাদ দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আমাদের ভাই হামাদী সালাফী “আল-মুজাম” গ্রন্থের টীকায়
বলেছেনঃ বরং তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি ঠিকই বলেছেন। তাকে আল্লাহ উত্তম বদলা দান করুন।
কারণ দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক, তিনি নিতান্তই দুর্বল। তার চাচা আব্দুর রহমান ইবনু
মুহাম্মাদ আরযামীকে দারাকুতনী দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম বলেছেনঃ তিনি শক্তিশালী নন।
এরূপই “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে। চাচার পিতা (অর্থাৎ আব্বাদের দাদা) মুহাম্মাদ আরযামীও
মাতরূক। তার জীবনী "আত-তাহযীব" ও অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৭ | 317 | ۳۱۷
৩১৭। মূসা ইবনু ইমরান এক ব্যাক্তিকে অতিক্রম করেছিলেন এমতাবস্থায় যে,
সে ব্যাক্তি কাঁপতেছিল। তিনি দাঁড়ালেন এবং যেন তাঁকে ক্ষমা করা হয় এ দু’আ করলেন। তাঁকে
বলা হলঃ হে মূসা! আর তো এ অবস্থা হয়নি ইবলিস কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার কারণে। সে তো নিজেকে
আমার জন্য ক্ষুধার্ত করেছে। তুমিত দেখেছ সেই ব্যাক্তিকে যার দিকে আমি প্রতিদিন একাধিকবার
দৃষ্টি দিয়ে থাকি, সে যেন তোমার জন্য দু’আ করে। কারণ তার জন্য আমার নিকট প্রতিদিন গ্রহণযোগ্য
দু’আ রয়েছে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তাবারানী (৩/১৩২/১) বর্ণনা করেছেন। এটির সনদে জাবারুন ইবনু ঈসা
বর্ণনা করেছেন। তাবারানীর সূত্র হতেই আবু নু’য়াইম “আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/৩৪৫-৩৪৬)
বর্ণনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসটি গরীব, ফুযায়েল হতে শুধুমাত্র ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান
বর্ণনা করেছেন। তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইয়াহইয়া হতে বর্ণনাকারী জাবারুনকে চিনি না।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৮ | 318 | ۳۱۸
৩১৮। প্রতিটি বস্তুর যাকাত রয়েছে, আর বাড়ীর যাকাত হচ্ছে মেহমানদের জন্য
(তৈরিকৃত) ঘর।
হাদীসটি জাল।
এটিকে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যায়লুল আহাদীসিল
মাওযুআহ” গ্রন্থেও (পৃঃ ১১৪) ইবনু আবী শুরাইহ-এর বর্ণনা হতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটিকে
সাঈদ আন-নাক্কাশ “মাওযু’আত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ হাদীসটি আহমাদ ইবনু
উসমান আন-নাহরাওয়ানী অথবা তার শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু আবদিল কুদ্দুস আবু সালেহ কারখী
জাল করেছেন। । তার এ বক্তব্যকে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে (১/১১৮) সমর্থন করেছেন।
জুযকানী হাদীসটি তার "আল-আবাতীল" গ্রন্থে (২৬৪) উল্লেখ করে
বলেছেনঃ হাদীসটি মুনকার, আব্দুল্লাহ ইবনু আবদিল কুদ্দুস মাজহুল।
হাদীসটি আরো দুটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সে দুটির সনদও সমস্যা
জর্জরিত। একটির সনদে আবু তালিব ঈসা ইবনু মুহাম্মাদ বাকিল্লানী রয়েছেন। তার সম্পর্কে
ভাল-মন্দ কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। তিনিই হচ্ছেন এ সনদের সমস্যা।
অন্য সূত্রটিতে মুহাম্মাদ ইবনুল কাসিম আছেন। তার সম্পর্কেও ভাল-মন্দ
কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। আরো আছেন আলী ইবনুল হুসাইন আল-কূফী। তিনি হচ্ছেন রাফেযী এবং
আলী ইবনু আসেম দুর্বল বর্ণনাকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩১৯ | 319 | ۳۱۹
৩১৯। সাত ব্যাক্তির দিকে আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামত দিবসে তাকাবেন না। তাঁদেরকে
পবিত্রও করবেন না। তাঁদেরকে বলেবেনঃ তোমরা জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে
প্রবেশ করঃ সমকামী, যাকে করা হল, নিজ হাতকে বিবাহকারী, পশুকে বিবাহকারী, মহিলার পিছন
পথকে বিবাহকারী, মহিলা ও তার মেয়েকে বিবাহকারী, নিজ প্রতিবেশীর সাথে ব্যভিচারকারী এবং
প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী এমন ভাবে যে, সে এ কারণে তাঁকে অভিশাপ দিচ্ছে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু বিশরান (৮৬/১-২) আব্দুল্লাহ ইবনু লাহী'য়াহ সূত্রে আব্দুর
রহমান ইবনু যিয়াদ হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল ইবনু লাহী'য়াহ ও তার শাইখ ইফরিকীর
কারণে। তারা দু’জনই মুখস্থ বিদ্যার দিক থেকে দুর্বল। মুনযেরী “আত-তারগীব” গ্রন্থে
(৩/১৯৫) হাদীসটির অংশ বিশেষ উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি ইবনু আবিদ-দুনিয়া, খারায়েতী ও
অন্যরা বর্ণনা করেছেন। অতঃপর এটি যে দুর্বল সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২০ | 320 | ۳۲۰
৩২০। তোমরা যেরূপ, সেরূপ ব্যাক্তিকেই তোমাদের নেতা নিয়োগ করা হবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দাইলামী ইয়াহইয়া ইবনু হাশেম সূত্রে ইউনুস ইবনু আবী ইসহাক হতে
... মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী একই সনদে মুরসাল হিসাবে “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
এ ইয়াহইয়াকে সেই দলের মধ্যে গণ্য করা হয় যারা হাদীস জাল করতেন। কিন্তু হাদীসটির
অন্য সূত্র ইবনু জামী'র "আল-মুজাম" গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৯) এবং কাযাঈর “মুসনাদ”
গ্রন্থে (১/৪৭) আহমাদ ইবনু উসমান কিরমানী হতে, তিনি মুবারাক ইবনু ফুযালা হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
ইবনু তাহের বলেনঃ মুবারাকের ব্যাপারে যদিও কিছুটা দুর্বলতার কথা উল্লেখ
করা হয়েছে তবুও দোষটা তার থেকে বর্ণনাকারীর। কারণ তিনি (আহমাদ ইবনু
উসমান) হচ্ছেন মাজহুল অপরিচিত।
ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশশাফ” গ্রন্থে (৪/২৫) বলেনঃ মুবারাক পর্যন্ত
হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী মাজহুল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২১ | 321 | ۳۲۱
৩২১। যে ব্যাক্তির কোন সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, অতঃপর তার ডান কানে আযান
এবং বাম কানে ইকামত দেয়া হবে, বাচ্চাঁদের মা (শয়তান) তার কোন অনিষ্ঠ করতে পারবে না।
হাদীসটি জাল।
এটি আবূ ইয়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৪/১৬০২) এবং তার থেকে ইবনুস সুন্নী
"আমালুল ইওয়াম ওয়াল-লায়লাহ" গ্রন্থে (২০০/৬১৭) বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে
ইবনু আসাকির (১৬/১৮২/২) আবূ ইয়ালার সূত্র হতে, ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/৮৮)
এবং আবু তাহের কুরাশী “হাদীস ইবনু মারওয়ান আনসারী ওয়া গায়রেহি” গ্রন্থে (১/২) ইয়াহইয়া
ইবনুল আল আর-রায়ী সূত্রে মারওয়ান ইবনু সুলায়মান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ বানোয়াট। ইয়াহইয়া ইবনুল আলা এবং মারওয়ান
ইবনু সুলায়মান, তারা উভয়েই হাদীস জালকারী। ইবনুল কাইয়্যিম "তুহফাতুল মওদূদ"
গ্রন্থে (পৃ৯) বলেছেনঃ সনদটি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি নরম পন্থা অবলম্বন করেছেন। অনুরূপভাবে হায়সামী
তার "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৪/৫৯) মারওয়ান ইবনু সুলায়মানকে শুধুমাত্র মাতরুক
(অগ্রহণযোগ্য) বলেছেন। এ কারণে মানাবী তার সমালোচনা করে “শারহু জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
বলেছেনঃ ইয়াহইয়া ইবনুল আলা বাজালী সম্পর্কে যাহাবী "আয-যু'য়াফা ওয়াল মাতরূকীন"
গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক, জালকারী। তিনি “আল-মীযান” গ্রন্থে
বলেছেন, ইমাম আহমাদ বলেনঃ তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন। অতঃপর তিনি তাঁর কতিপয় হাদীস
উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি যে বানোয়াট তা অনেক লেখকের নিকটেই অপ্রকাশিত
রয়ে গেছে, যেমন ইমাম নাবাবীর নিকট।
এছাড়া ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এবং ইবনুল কাইয়্যিম-এর নিকটেও আসল তথ্যটি
লুক্কায়িতই রয়ে গেছে, যদিও তারা উভয়েই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু রাফে' হতে তিরমিযী দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন।
আবু রাফে' বলেনঃ যখন ফাতেমা (রাঃ) হাসান ইবনু আলীকে জন্ম দিলেন, তখন আমি রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসানের কানে সলাতের ন্যায় আযান দিতে দেখেছি।
মুবারাকপুরী এ হাদীসটি দুর্বল বলার পরেও এটির উপর আমল করা যাবে একথা
বলেছেন, উল্লেখিত জাল হাদীসকে (যেটিকে আবু ইয়া'লা বর্ণনা করেছেন) আবু রাফের হাদীসের
শাহেদ হিসাবে বর্ণনা করে। চিন্তা করে দেখুন কিভাবে দুর্বল হাদীসকে জাল হাদীস দ্বারা
শক্তিশালী করেছেন।
জি হ্যাঁ; আবু রাফের হাদীসকে শক্তিশালী করা যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর
হাদীস দ্বারা। যেটিকে বাইহাকী “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থে উল্লেখিত আবু রাফের হাদীসের সাথে
বর্ণনা করেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ হাদীস দুটির সনদ দুর্বল।
যদি এরূপ হয়, তাহলে আবু রাফের হাদীসে যে শুধু আযান দেয়ার কথা আছে
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসের আযানের অংশটুকুই শুধুমাত্র তার (আবু রাফের) হাদীসের শাহেদ
হতে পারে। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসে যে ইকামাতের কথা বলা হয়েছে সেটা গ্রহণযাগ্য
হবে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ হাসান পর্যায়ের হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে,
ফাতেমা (রাঃ) যখন হাসান ইবনু আলীকে জন্ম দেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
তার কানে সলাতের ন্যায় আযান দিয়েছিলেন। হাদীসটি আবু দাউদ-“সহীহ্ আবী দাউদ"
(৫১০৫), ও তিরমিযী-"সহীহ্ তিরমিযী"- (১৫১৪) বর্ণনা করেছেন, হাদীসে দু’কানে
দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি, অতএব এক কানে আযাস দিলে তাই যথেষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২২ | 322 | ۳۲۲
৩২২। আমি আমার প্রভুর কাছে চেয়েছি, যেন আমার পরিবারের মধ্য হতে কাউকে
জাহান্নামে দেয়া না হয়। তিনি তা আমাকে দিয়েছেন।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু বিশরান “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/৫৬) বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে
আবূ হামযা আস-সুমালী এবং মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটির সনদ জাল (বানোয়াট)। আবু হামযা হচ্ছেন
সাবেত ইবনু আবী সুফিয়া। তিনি নির্ভরযোগ্য নন, যেরূপভাবে নাসাঈ ও অন্যরা বলেছেন। এছাড়া
মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস হচ্ছেন কুদায়মী। তিনি জালকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। তা সত্ত্বেও
সুয়ূতী হাদীসটি তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করে ঠিক করেননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৩ | 323 | ۳۲۳
৩২৩। যখনই আল্লাহ জানতে পারেন যে, কোন বান্দা তার গুনাহের কারণে অনুতপ্ত
হয়েছে, তখনই সে ক্ষমা প্রার্থনা করার পূর্বেই তিনি ক্ষমা করে দেন।
হাদীসটি জাল।
এটি হাকিম (৪/২৫৩) হিশাম ইবনু যিয়াদ সূত্রে আবৃ্য যিনাদ হতে ... বর্ণনা
করে বলেছেনঃ এটির সনদ সহীহ। যাহাবী “আত-তালখীস” গ্রন্থে তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ হিশাম
মাতরূক। ইবনু হিব্বান (৩/৮৮) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল ও উলট পালটকৃত
হাদীস বর্ণনাকারী। এমন কি শ্রবণকারীর নিকট এটিই প্রাধান্য পেত যে, তিনি তা ইচ্ছাকৃতই
করছেন। তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করাই জায়েয নয়। এটির আরেকটি সূত্র আছে অন্য ভাষায়।
সেটিও জাল। সেটি সম্পর্কে ৭৭৭ নম্বর হাদীসে আলোচনা আসবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৪ | 324 | ۳۲٤
৩২৪। যে ব্যাক্তি কোন গুনাহ করল, অতঃপর জানতে পারল যে তার প্রতিপালক
রয়েছেন, তিনি যদি চান তাহলে তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন; তাহলেই (আল্লাহ) তাঁকে ক্ষমা করে
দিবেন। আর যদি জানে যে, তিনি যদি চান তাহলে তাঁকে শাস্তি দিবেন, তাহলে আল্লাহর উপর
তাঁকে ক্ষমা কড়া অপরিহার্য হয়ে যায়।
হাদীসটি জাল।
এটি আবুশ শাইখ তার “আল-আহাদীস” গ্রন্থে (২/১৮), তাবারানী নাসাঈ হতে
তার “হাদীস” গ্রন্থে (১/৩১৩), ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” গ্রন্থে (২/১৫০), হাকিম তার
“আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (৪/২৪২), আবু নু’য়াইম তার "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে
(৮/২৮৬) এবং মাশরিক ইবনু আবদিল্লাহ আল-ফাকীহ্ তার “হাদীস” গ্রন্থে (২/৬০) জাবের ইবনু
মারযুক আল-মাক্কী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ এটির সনদ সহীহ।
যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ আল্লাহ্র কসম তা নয়। কে এ জাবের যে,
তিনি দলীল হতে পারেন?! তিনি হচ্ছেন অপরিচিত, অজ্ঞাত এবং তার হাদীস মুনকার।
হাফিয যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে জাবেরের জীবনী আলোচনা করতে
গিয়ে বলেছেনঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। তার থেকে কুতাইবা ইবনু সাঈদ এবং ‘আলী ইবনু বাহার
এমন ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা নির্ভরযোগ্যদের হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।
এ কথাটি ইবনু হিব্বান বলেছেন। তা সত্ত্বেও সুইয়ূতী তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৫ | 325 | ۳۲۵
৩২৫। যে ব্যাক্তি কোন গুনাহ করল। অতঃপর জানতে পারল যে, আল্লাহ তা অবগত
হয়েছেন, তবেই তাঁকে ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও সে ক্ষমা প্রার্থনা না করে।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/২৭২/১/৪৬৩৩) ইব্রাহীম ইবনু
হিরাসা সূত্রে হামযা আয-যায়য়াত হতে ... বর্ণনা করেছেন। হায়সামী বলেন (১০/২১১) তাতে
ইব্রাহীম ইবনু হিরাসা রয়েছেন। তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু দাউদ ও অন্যরা তাকে মিথ্যুক বলেছেন। এ চারটি
হাদীস শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও বাতিল বলে গণ্য হয়। এভাবে শরীয়তে বলা হয়নি যে, শুধুমাত্র
অনুতপ্ত হওয়া এবং এটি জ্ঞাত হওয়া যে, গুনাহগার সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত, তাহলেই সে
নাজাত পেয়ে যাবে। বরং অপরিহার্য হচ্ছে তাকে তাওবায়ে নাসূহা করতে হবে। বুখারীতে কিতাবুত
তাওহীদ অধ্যায়ে বর্ণিত (৭৫০৭) হাদীসটি এরূপ বানোয়াট হাদীস হতে আমাদেরকে নিরাপদে রাখতে
পারে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৬ | 326 | ۳۲٦
৩২৬। আমার উম্মাতের কলহ-বিবাদের সময় যে ব্যাক্তি আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে
ধরবে, তার জন্য একশতটি শহীদানের সাওয়াব রয়েছে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/৯০) এবং ইবনু বিশরান “আল-আমালী”
গ্রন্থে (১/৯৩, ২/১৪১) হাসান ইবনু কুতাইবা হতে, তিনি আব্দুল খালেক ইবনুল মুনযির হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। এর কারণ হচ্ছে হাসান
ইবনু কুতাইবা। তার সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি হালেক (ধ্বংসপ্রাপ্ত)।
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি দুর্বল। আযদী বলেনঃ তিনি
ওয়াহীউল হাদীস (খুবই দুর্বল)। উকায়লী বলেনঃ তিনি অধিক পরিমাণে সন্দেহ প্রবণ ছিলেন।
আর তার শাইখ ইবনুল মুনযির অপরিচিত।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৭ | 327 | ۳۲۷
৩২৭। আমার উম্মাতের কলহ-বিবাদের সময় আমার সুন্নাতকে ধারণকারীর জন্য
এক শহীদের সওয়াব রয়েছে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি আবু নু’য়াইম “আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৮/২০০) তাবারানীর
"মুজামুল আওসাত" গ্রন্থের (২/৩১/৫৭৪৬) সূত্র হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর
আবু নু’য়াইম বলেছেনঃ এটি গারীব। তিনি যা বলেছেন তেমনই। তবে তাবারানী একটু বেশী বলেছেনঃ
আব্দুল আযীযের পূত্র আব্দুল মজীদ এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার ব্যাপারে মতভেত রয়েছে। “আত-তাকরীব" গ্রন্থে
এসেছেঃ তিনি সত্যবাদী, ভুল করতেন। এছাড়া সনদের আরেক বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু সালেহ
আযারীকে আমি চিনি না। হায়সামীও "আল-মাজমা" গ্রন্থে (১/১৭২) বলেছেনঃ তার
জীবনী কে রচনা করেছেন আমি তা পাচ্ছি না।
এ হাদীস হতে আমাদেরকে মুক্ত রাখতে পারে "সহীহাহ" গ্রন্থের
মধ্যে (৪৯৪) যে হাদীসটি উল্লেখ করেছি সেটিঃ “তোমাদের পরে ধৈর্য ধারণের দিন আসছে। সে
সব দিনগুলোতে আজকে তোমরা যার উপর আছ, তাকে ধারণকারীগণ তোমাদের পঞ্চাশ জনের সমান সওয়াব
পাবে...”।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৮ | 328 | ۳۲۸
৩২৮। যে ব্যাক্তি জ্ঞান অর্জন করতে করতে সকাল করল, ফেরেশতারা তার উপর
রহমত কামনা করেন এবং তার জন্য তার জীবন ধারনে বরকত ডান করা হবে। তার রিযিক কমিয়া দেয়া
হবে না এবং তা তার জন্য হবে বরকতময়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু বিশরান (২/৫৪) এবং ইবনু আবদিল বার "জামেউ বায়ানিল ইলমে
ওয়া ফাযলিহি" গ্রন্থে (১/৪৫) মুয়াল্লাক হিসাবে আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু
হাশিম সুত্রে মিস'য়ার ইবনু কিদাম হতে, তিনি আতিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি জাল। ইয়াহইয়া ইবনু হাশিমকে ইবনু মা'ঈন
ও অন্যরা মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। আতিয়া আল-আওফী দুর্বল এবং মুদাল্লিস। অতঃপর ইয়াহইয়ার
মুতাবায়াত পেয়েছি। তবে সেটি নিতান্তই দুর্বল। সেটি উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে
(পৃঃ ২৬) বর্ণনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসটি বাতিল। এটির কোন ভিত্তি নেই। সুয়ূতী তার “যায়লু
আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৪৩) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইবনুল জাওযী “ইলালুল
মাওযুআত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। (সঠিক হচ্ছে ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩২৯ | 329 | ۳۲۹
৩২৯। আমার ভাই ইউসুফকে আল্লাহ রহম করুন। তিনি যদি এ কথা না বলতেনঃ
(হে আল্লাহ) “আপনি আমকে যমীনের ভাণ্ডারগুলো দান করুন”, তাহলে সে মুহূর্তেই তা ব্যবহার
করতে পারতেন। কিন্তু উক্ত কারণেই তা এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়।
হাদীসটি জাল।
হাফিয ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশশাফ” গ্রন্থে (৪/৯০) বলেনঃ এটি সালাবী
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে ইসহাক ইবনু বিশরের বর্ণনা থেকে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি যুওয়াইবীর
হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি সাকেত (গ্রহণযোগ্য নয়)। এটি সালাবী সূত্রে ওয়াহেদী
তার “তাফসীর” গ্রন্থে (১/৯৩) বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩০ | 330 | ۳۳۰
৩৩০। আমি আল্লাহর নিকট চাইলাম যেন আমার উম্মাতের হিসাব-কিতাব আমার উপর
দিয়ে দেয়া হয়; যাতে করে আমার অন্য উম্মাতগুলোর সম্মুখে অপদস্থ না হতে হয়। তখন আল্লাহ
আমার নিকট ওহী মারফত জানালেনঃ হে মুহাম্মদ! আমি তাঁদের হিসাব গ্রহণ করব, তাঁদের মধ্য
হতে কারো যদি কোন অপদস্থতা থাকে তাহলে আমি তা আপনার নিকট হতে লুকিয়ে ফেলব, যাতে করে
আপনার নিকট আপনার উম্মাত অপদস্থ না হন।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/১০১) তার নিজ সনদে আবু বাকর নাক্কাশ
হতে, তিনি হাসান ইবনু সাকার হতে ... বর্ণনা করেছেন। সুয়ূতী "যায়লুল আহাদীসিল
মাওযুআহ" গ্রন্থে (পৃঃ ১৭৯) দাইলামীর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করে বলেছেনঃ নাক্কাশ মিথ্যার
দোষে দোষী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ কথা বলা সত্ত্বেও তিনি তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
হাদীসটি দাইলামীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবী চুপ থেকেছেন। সম্ভবত এটির
সনদ সম্পর্কে তিনি অবহিত হননি।
অতঃপর সুয়ূতী ইবনু নাজ্জারের বর্ণনা হতে আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে
বর্ণনা করেছেন। এ সনদে মুহাম্মাদ ইবনু আইউব আর-রাকী নামক এক বর্ণনাকারী আছেন। তার সম্পর্কে
ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন।
ইবনু আররাকও হাদীসটি "তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (কাফ ১/৪০০)
উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩১ | 331 | ۳۳۱
৩৩১। আমি দুই কুরবানীকৃত ব্যাক্তির সন্তান।
এ শব্দে এটির কোন অস্তিত্ব নেই।
যায়লাঈ এবং ইবনু হাজার “তাখরীজুল কাশশাফ” গ্রন্থে (৪/১৪১) বলেছেনঃ
এ শব্দে হাদীসটি পাচ্ছি না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাযলাঈ আখরাজাহু “أخرجه” শব্দটি লিখার পর সাদা
স্থান ছেড়ে রাখেন কে বর্ণনা করেছেন তা পরবর্তীতে লিখার জন্যে। কিন্তু তা পাওয়া সম্ভব
হয়নি। সম্ভবত তার ধারণা ছিল এটির আসল রয়েছে, কিন্তু পাননি।
হাকিম দীর্ঘ এক হাদীসের মধ্যে এটির ঘটনা উল্লেখ করে হুকুম লাগানো হতে
চুপ থেকেছেন। কিন্তু যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির সনদ দুর্বল। হাফিয ইবনু
কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/১৮) ইবনু জারীরের বর্ণনায় উল্লেখ করার পর বলেছেনঃ
এ হাদীসটি নিতান্তই গারীব (দুর্বল)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩২ | 332 | ۳۳۲
৩৩২। কুরবানী করা হয়েছিল ইসহাককে।
হাদিসটি দুর্বল।
সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে এ ইঙ্গিত দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, এটি
দারাকুতনী “আল-আফরাদ” গ্রন্থে ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে, বাযযার ও ইবনু মারদুবিয়া আব্বাস
ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) হতে এবং ইবনু মারদুবিয়া (একক ভাবে) আবু হুরাইরাহ (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসটি তাবারানীও বর্ণনা করেছেন।
যার সনদে মুদাল্লিস বর্ণনাকারী এবং ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে। তবে তার ভাষায় ভিন্নতা
রয়েছে। এটি হাকিমও (১/৫৫৯) মারফূ' হিসাবে বর্ণনা করে বলেছেনঃ শাইখায়নের শর্তানুযায়ী
এটি সহীহ। যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটির সনদে সুনায়েদ ইবনু দাউদ রয়েছেন।
তিনি সহীহ হাদীস বর্ণনাকারী নন। ইবনু কাসীর মওকুফ হিসাবে “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/১৭)
উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে সহীহ অর্থাৎ মওকুফ হিসাবে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সম্ভবত সুনায়েদ ছাড়া অন্য কোন সূত্রে এসেছে। আব্বাস
(রাঃ)-এর হাদীসটির সনদে রয়েছেন মুবারাক ইবনু ফুযালা, যিনি হাসান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এ সনদটি দুর্বল। হাসান মুদল্লিস এবং মুবারাকের মধ্যেও দুর্বলতা রয়েছে। হায়সামীও জামহুরের
নিকট মুবারাক দুর্বল হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তার বর্ণনায় ইযতিরাব সংঘটিত
হয়েছে। তিনি একবার মারফূ' আবার মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আবু হুরাইরাহ
(রাঃ) এবং আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) হতেও অন্য সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনটিই
সহীহ নয়। মোটকথা হাদীসটির সকল সূত্রই দুর্বল। যার একটি অন্যটিকে শক্তি যোগাতে সক্ষম
নয়। অধিকাংশ বর্ণনায় ইসরাইলী বর্ণনা যেগুলো কোন কোন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। আর দুর্বল
বর্ণনাকারী সেগুলোকে মারফু হিসাবে চালিয়ে দিয়ে ভুল করেছেন।
যারকানী ধারণা করেছেন যে, হাদীসটি হাকিম বিভিন্ন সূত্রে আব্বাস (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেছেন এবং সেটিকে শাইখায়নের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং যাহাবীও সহীহ
বলেছেন। তিনি (যারকানী) (১/৯৮) বলেনঃ একটি সূত্র অন্যটিকে শক্তি যোগাচ্ছে। অতএব হাদীসটি
হাসান বরং এটিকে হাকিম এবং যাহাবী সহীহ বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটিকে যাহাবী সহীহ বলেননি। হাকিম সন্দেহ বশত
এটিকে সহীহ বলেছেন। এটির সকল সূত্রতেই রয়েছে দুর্বলতা ও ইযতিরাব। ভাষাগুলো ইসরাইলী
হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বরং সেটি হওয়াই প্রাধান্য পায়। এসব কিছুই একটি অন্যটিকে শক্তি
যোগাচ্ছে এ কথা বলতে বাধা প্রদান করছে।
এদিকে মুহাক্কিক আলেমগণ (যেমন ইবনু তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়্যিম, ইবনু
কাসীর ও আরো অনেকে) বলেছেনঃ যাকে যাব্হ করা হয়েছিল তিনি হচ্ছেন ইসমাঈল, ইসহাক নয়।
ইবনুল কাইয়্যিম “যাদুল মায়াদ” গ্রন্থে বলেছেনঃ ইসহাককে কুরবানী করার নির্দেশ এসেছিল
এ কথাটি বাতিল। আমি শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাকে বলতে শুনেছি, এ মতটা আহলে কিতাবদের
থেকে এসেছে। অথচ তাদের কিতাবের দলীল দ্বারাই এ মতটি বাতিল। কেননা তাদের কিতাবে এসেছে
যে, ইবরাহীমকে আল্লাহ তার ছোট সন্তানকে কুরবাণী করার নির্দেশ দেন। আহলে কিতাবরা মুসলিমদের
সাথে এ মর্মে সন্দেহ পোষণ করে না যে, ইসমাঈলই তার সস্তানদের সর্বকনিষ্ট ছিলেন। অতএব
কীভাবে এ কথা বলা বৈধ হবে যে, কুরবানীর জন্য চয়ন করা হয়েছিল ইসহাককে, অথচ আল্লাহ
তা'আলা তার মাকে তার দ্বারা সুসংবাদ দিচ্ছেন এবং তার পুত্র ইয়াকুব দ্বারা।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩ | 333 | ۳۳۳
৩৩৩। আল্লাহ তা’আলা আমার অর্ধেক উম্মাতকে ক্ষমা করার অথবা আমার শাফা’য়াত
গ্রহণ করার মধ্য হতে একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা আমাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি আমার শাফা’য়াত
করারকে পছন্দ করি। আমার আশা শাফা’য়াতটি আমার উম্মাতের জন্য ব্যাপক হবে। আমার পূর্বের
নেকাকার বান্দা যদি আমার চেয়ে সেটির দিকে অগ্রণী না হতেন, তাহলে আমি তাতে আমার দাবী
নিয়ে তাড়াতাড়ি করতাম। আল্লাহ তা’আলা যখন ইসহাককে যবেহের বিপদ থেকে মুক্ত করলেন, তাঁকে
বলা হলঃ হে ইসহাক! চাও তোমাকে দেয়া হবে। তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার আত্মা তার কসম অবশ্যই
আমি তাতে তাড়াতাড়ি করব, শয়তান তা ছিনিয়ে নেয়ার পূর্বেই। হে আল্লাহ! যে ব্যাক্তি তোমার
সাথে কোন প্রকার শিরক না করে মারা যাবে, তুমি তাঁকে ক্ষমা করে দাও এবং তাঁকে জান্নাত
দিয়ে দাও।
হাদীসটি মুনকার।
ইবনু আবী হাতিম বলেছেনঃ আমার পিতা আমাদেরকে হাদীসটি শুনিয়েছেন। এটির
সনদে রয়েছেন আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম। অনুরূপভাবে “তাফসীরু ইবনে কাসীর”
গ্রন্থেও এসেছে (৪/১৬) বর্ণিত হয়েছে, তিনি (ইবনু কাসীর) বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব ও মুনকার।
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল। আমার ভয় হচ্ছে যে, হাদীসটির মধ্যে
কিছু বর্ধিত করা হয়েছে। সে বর্ধিত অংশটুকু হচ্ছেঃ إن الله لما فرغ عن إسحاق ‘আল্লাহ তা'আলা যখন
ইসহাককে যবেহের বিপদ হতে মুক্ত করলেন...।'
আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ নিতান্তই দুর্বল; হাকিম তার সম্পর্কে বলেনঃ
তিনি তার পিতা হতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হচ্ছেন আদম (আঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অসীলা ধরার হাদীসের বর্ণনাকারী। সে হাদীসটি জাল (নম্বর ২৫)।
এটি ইসরাইলী বর্ণনা হতে এসেছে। ভুল করে আব্দুর রহমান ইবনু যায়েদ মারফু
করে ফেলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির বর্ধিত অংশটুকুও ইসরাইলী বর্ণনা হতেই এসেছে।
তার প্রমাণ এই যে, কা'আব আল-আহবার বর্ধিত অংশসহ আবু হুরাইরাহ (রাঃ)-এর নিকট হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে হাকিম (২/৫৫৭) তার সনদে কা'আব পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। অতঃপর
বলেছেনঃ এ সনদটি সহীহ, এতে কোন ধূলিকণা নেই। যাহাবী তার কথাকে সমর্থন করেছেন। অথাৎ
এটি কা'আবের কথা। অতএব এটি ইসরাইলী বর্ণনা হওয়াই সঠিক।
ইসহাক যাবিহ হওয়ার হাদীসগুলো যে সূত্রে এসেছে সেগুলো সহীহ নয়।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪ | 334 | ۳۳٤
৩৩৪। লোকদের মধ্যে ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা
সন্মানিত ব্যাক্তি। তিনি যাবীহুল্লাহ।
হাদীসটি মুনকার।
এ শব্দে তাবারানী তার “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (১০২৭৮) আবূ ওবাইদার
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে বলেছেনঃ (৮/২০২) এটির
সনদে বাকিয়াহ রয়েছেন, তিনি মুদাল্লিস এবং আবূ ওবাইদা তার পিতা হতে শুনেননি। কিন্তু
বাকিয়ার মুতাবায়াত পাওয়া যায়। মুয়াবিয়া ইবনু হাফস এবং বাকিয়া উভয়ে শু'বা হতে
বর্ণনা করেছেন। এটি ইবনুল মুজাফফার “গারায়েবু শু'বাহ” গ্রন্থে (১/১৩৮) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/১৭) বলেছেনঃ এটি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে সহীহ
(অর্থাৎ মওকুফ হিসাবে)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ “إن إسحاق ذبيح الله” এ অংশটুকু বাদ দিয়ে হাদীসটি মারফু' হিসাবেও সহীহ কারণ এ বর্ধিত অংশটুকু
মুনকার। এ অংশটুকু বাদ দিয়ে বুখারী এবং মুসলিম আবু হুরাইরার (রাঃ) হাদীস হতে বর্ণনা
করেছেন।
ইসহাকই ছিলেন যাবীহ এ মর্মে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সে গুলোর সবই
দুর্বল।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৫ | 335 | ۳۳۵
৩৩৫। দাঊদ (আঃ) বলেনঃ আমি তোমার নিকট আমার পিতা ইবরাহীম, ইসহাক এবং
ইয়াকুবকে হক জানার মাধ্যমে প্রার্থনা জানাচ্ছি। অতঃপর (আল্লাহ) বললেনঃ ইবরাহীমকে আগুনে
নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সে আমার জন্যই ধৈর্য ধারন করে। সে বিপদ তোমাকে স্পর্শ করেনি। ইসহাক
নিজেকে যাবহ করার জন্য সমর্পণ করেছিল। সে আমার জন্যই ধৈর্য ধারন করে। সে বিপদ তোমাকে
স্পর্শ করেনি। ইয়াকুবের নিকট হতে ইউসুফ হারিয়ে গিয়েছিল। সে বিপদ ও তোমাকে স্পর্শ করেনি।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৮/২০২) বলেনঃ হাদীসটি বাযযার আব্বাস
(রাঃ) হতে আবু সাঈদের বর্ণনা থেকে, তিনি আলী ইবনু যায়েদ হতে বর্ণনা করেছেন। এ আবু
সাঈদকে আমি চিনি না এবং আলী ইবনু যায়েদ দুর্বল। কেউ কেউ তাকে সিকা (নির্ভরযোগ্য) আখ্যা
দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ আবু সাঈদ হচ্ছেন হাসান ইবনু দীনার। তিনি একেবারেই
দুর্বল। হাদীসটি ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৪/১৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি
সহীহ নয়। এটির সনদের বর্ণনাকারী হাসান ইবনু দীনার মাতরূক আর ‘আলী ইবনু যায়েদ ইবনু
যাদ'আন মুনকারুল হাদীস।
হাসান ইবনু দীনারের কুনিয়াত হচ্ছে আবূ সা'ঈদ, যেমনভাবে "আল-মীযান"
গ্রন্থে এসেছে। হাদীসটি ইবনু মারদুবিয়াও বর্ণনা করেছেন, যেমনটি যারকানীর “শারহুল মাওয়াহিব”
গ্রন্থে (১/৯৭) এসেছে।
ইবনু তাইমিয়া "কায়েদাতুল জালীলাহ" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
এটি ইসরাইলী বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত। এটিই বিশুদ্ধতার দিক থেকে বেশী সাদৃশ্যপূৰ্ণ। কারণ
আমাদের ধর্মের মধ্যে পিতাদের হক জানার দ্বারা অসীলা করা শরীয়ত সম্মত নয়, যেমনটি ২২-২৫
নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৬ | 336 | ۳۳٦
৩৩৬। আল্লাহর নাবী দাঊদ বললেনঃ হে প্রতিপালক! আমি লোকেদেরকে বলতে শুনেছিঃ
ইসহাকের প্রভু? উত্তরে (আল্লাহ) বললেনঃ ইসহাক আমাকে তার নিজের জীবন দিয়েছে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (২/৫৫৬) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ
এটি সহীহ লোকেরা আলী ইবনু যায়েদ ইবনু যাদ'আন হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি এটিকে এককভাবে
বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছি যাহাবী চুপ থেকেছেন। অথচ ইবনু যাদ'আন দুর্বল, মুনকারুল
হাদীস, যেমনটি ইবনু কাসীর হতে পূর্বের হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। যারকানী “শারহুল মাওয়াহিব”
গ্রন্থে (১/৯৭) হাকিম ও যাহাবী হতে যে কথা নকল করেছেন, সে সম্পর্কে পূর্বেই আলোচনা
করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৭ | 337 | ۳۳۷
৩৩৭। জিবরীল ইবরাহীমকে সাথে নিয়ে জামারাতুল আকাবার নিকট গেলেন। শয়তান
তার সম্মুখে দাঁড়াল। তিনি তাঁকে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করলেন। তাতে সে চিল্লিয়ে উঠল। অতঃপর
যখন ইবরাহীম তার সন্তান ইসহাককে যাবহ করার ইচ্ছা করলেন; তিনি তার পিতাকে বললেনঃ হে
আমার পিতা! আমাকে শক্ত করে বেঁধে ফেলুন যাতে আমি নড়াচড়া না করি। যাতে আমি আমাকে আপনি
যখন যবহ করবেন তখন আমার রক্ত আপনার উপর উপর ছিটে না পড়ে। তিনি তাঁকে শক্ত করে বাঁধলেন
এবং ছুরি দিয়ে তাঁকে যবহ করার ইচ্ছা করলেন, তখন তার পিছন হতে ডাক দেয়া হল “হে ইবরাহীম
তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ”।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইমাম আহমাদ (নং ২৭৯৫) হাম্মাদ ইবনু সালামা সূত্রে আতা ইবনুস সায়েব
হতে বর্ণনা করেছেন।
এটির সনদ দুর্বল। কারণ এ আতা ইবনুস সায়েবের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল।
হাম্মাদ তার থেকে এ অবস্থাতে এবং এর পূর্বেও শুনেছেন। যারকানী যে “শারহুল মাওয়াহিব”
গ্রন্থে (১/৯৮) বলেছেনঃ শাইখ আহমাদ শাকের মুসনাদের টীকায় বলেছেনঃ এটির সনদ সহীহ। এ
কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি প্রসিদ্ধ যে, শাইখ আহমাদ শাকের হাদীসটির সনদ সহীহ হওয়ার
পিছনে দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন যে, হাম্মাদ ইখতিলাতের (মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটার) পূর্বে
আতা হতে শুনেছেন।
এটি হচ্ছে হাফিয ইবনু হাজার “তাহযীবুত তাহযীব” গ্রন্থে কোন কোন ইমামের
উদ্ধৃতিতে যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে তার (পাশ কাটিয়ে) দ্রুত চলা। কারণ হাম্মাদ আতা
হতে ইখতিলাতের মধ্যেও শুনেছেন। অতএব সহীহ বলা সঠিক হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত স্পষ্ট না
হবে যে তিনি ইখতিলাতের পূর্বে শুনেছেন।
হাদীসটি হাকিম (১/৪৬৬) অন্য একটি সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু
হিসাবে যাব্হ করার কিস্সাটি বাদ দিয়ে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ
এ কথা বলেছেন। যাহাবীও তাকে সমর্থন করেছেন।
ইমাম আহমাদ তৃতীয় একটি সূত্রে (নং ২৭০৭) বর্ণনা করেছেন। তাতে কিসসাটি
আছে তবে ইসমাঈলকে যাবহ করার কথা বলা হয়েছে। এটিই সঠিক।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৮ | 338 | ۳۳۸
৩৩৮। আল্লাহ তা’আলা সাত আসমানকে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর তার মধ্য হতে সর্বোচ্চটিকে
পছন্দ করলেন। সেটিতে বসবাস করা শুরু করেলেন এবং তার সকল আসমানকে তার সৃষ্টির মধ্য হতে
যাকে চান তাঁদের জন্য বাসস্থান বানালেন। সাত যমীনকে সৃষ্টি করলেন। তার মধ্য থেকে সর্বোচ্চটিকে
তার সৃষ্টির মধ্য হতে যাকে চান তাঁদের জন্য বাসস্থান বানালেন। অতঃপর সকল সৃষ্টিকে সৃষ্টি
করলেন। সৃষ্টির মধ্য হতে আদম সন্তানদের তিনি চয়ন করলেন। বানু আদমদের থেকে আরবদেরকে
চয়ন করলেন। আরবদের থেকে মুযারা গোত্রকে বেছে নিলেন। মুযারা হতে কুরাইশদেরকে বেছে নিলেন।
কুরাইশদের থেকে হাশেমীদেরকে বেছে নিলেন। অতঃপর আমাকে হাশেমীদের থেকে বেছে নিলেন। আমি
উত্তমদের থেকে উত্তমদের শেষ সীমায়। অতএব যে ব্যাক্তি আরবদের ভালবাসবে, সে আমাকে ভালোবাসার
কারণেই তাঁদেরকে ভালবেসেছে এবং যে আরবদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার কারণেই
তাঁদেরকে অপছন্দ করেছে।
হাদীসটি মুনকার।
এটি তাবারানী (৩/২১০/১), উকায়লী"“আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (৪৫৮),
ইবনু আদী (৭৪/২/৩০১/২), আবূ নু’য়াইম "দালায়েলুল নুবুওয়া" গ্রন্থে (পৃঃ
১২), অনুরূপভাবে হাকিম (৪/৭৩-৭৪), ইবনু কুদামা আল-মাকদেসী “আল-উলু” গ্রন্থে (১৬৫-১৬৬)
এবং ইরাকী “মুহাজ্জাতুল কুরব ইলা মুহাব্বাতীল আরাব” গ্রন্থে (২/২০১) দু'টি সূত্রে মুহাম্মাদ
ইবনু যাকওয়ান হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। এ মুহাম্মাদ ইবনু যাকওয়ান
সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। তাকে দারাকুতনী ও অন্যরা দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
উকায়লী বলেছেনঃ তিনি অনুসরণযোগ্য নন। হাকিম অন্য একটি সূত্রে আমর ইবনু দীনার হতে বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদে আবু সুফিয়ান যিয়াদ ইবনু সুহায়েল আল-হারেসী
নামক এক বর্ণনাকারী আছেন তার জীবনী পাচ্ছি না। হাদীসটি ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে
(২/৩৬৭-৩৬৮) প্রথম সূত্রটিতে উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ হাদীসটি
মুনকার। যাহাবী ইবনু যাকুয়ানের জীবনীতে “আল-মীযান” গ্রন্থে তা সমর্থন করেছেন। তবে
হাদীসের শেষাংশ যেটুকুতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফযীলত এবং আরবদের
ফযীলত সম্পর্কে বলা হয়েছে সে অংশটুকু সহীহ্ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৩৯ | 339 | ۳۳۹
৩৩৯। ইদরীস ছিলেন মালাকুল মাওতের বন্ধু। তিনি তার নিকট জান্নাত এবং
জাহান্নাম দেখত চাইলেন। তিনি ইদরীসকে নিয়ে উপরে উঠলেন। অতঃপর তাঁকে জাহান্নাম দেখালেন।
তিনি তাতে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়লেন, এমনকি বেহুশ হওয়ার উপক্রম হলেন। মালাকুল মাওত তাঁকে
তার বাহু দ্বারা জড়িয়ে ধরলেন। মালাকুল মাওত বললেনঃ আপনি কি তা দেখেননি? তিনি বললেনঃ
হ্যাঁ, কখনও এ দিনের ন্যায় কিছু দেখিনি। অতঃপর তাঁকে নিয়ে চললেন। তাঁকে জান্নাত দেখালেন।
তাতে তিনি প্রবেশ করলেন। মালাকুল মাওত বললেনঃ আপনি চলুন তা আপনি দেখেছেন। তিনি বললেনঃ
কোথায়? মালাকুল মাওত বললেনঃ যেখানে ছিলাম। ইদরীস বললেনঃ আল্লাহর কসম না! আমি তাতে প্রবেশ
করবার পরে তা (জান্নাত) থেকে বের হবে না। মালাকুল মাওত কে বলা হলঃ আপনি কি বিশেষ ভাবে
তাঁকে প্রবেশ করিয়ে দেননি? তাতে যে কেও প্রবেশ করলে তাকে আর বের করা হয় না।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/১৭৭/১/৭৪০৬) ইবরাহীম ইবনু
আবদিল্লাহ ইবনে খালেদ মাসীসী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে
(৮/১৯৯-২০০) বলেনঃ এটির সনদে ইবরাহীম ইবনু আবদিল্লাহ রয়েছেন, তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ এ ব্যক্তি মিথ্যুক।
হাকিম তার সম্পর্কে বলেনঃ তার হাদীসগুলো মাওযু (বানোয়াট)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪০ | 340 | ۳٤۰
৩৪০। তোমরা সন্তানদের মধ্যে সমানভাবে হাদিয়া দাও। যদি কাউকে বেশী দিতাম
তাহলে নারীদেরকে বেশী দিতাম।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি আবূ বাকর আজুরী “ফাওয়াইদুল মুন্তাখাবা” গ্রন্থে (১/১০৩/১), তাবারানী
(৩/১৪২/২), হারিস ইবনু আবী উসামা “মুসনাদ” গ্রন্থে (পৃঃ ১০৬) এবং বাইহাকী (৬/১৭৭) চারটি
সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেনঃ আমাদেরকে হাদীসটি ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ সাঈদ ইবনু ইউসুফ
হতে ... শুনিয়েছেন। এটির সনদ দুর্বল। কারণ ইবনু ইউসুফ সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। ইবনু
আদী তার এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেনঃ তার এ হাদীসটির চেয়ে মুনকার হাদীস আর নেই। এ জন্য
ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে তার জীবনীতে বলেনঃ তিনি দুর্বল। তার এ কথার কারণেই
বুঝা যাচ্ছে "ফাতহুল বারী" গ্রন্থে (৫/১৬৩) যে বলেছেন সনদটি হাসান, এরূপ
বলাটা সঠিক নয়। তবে হাদীসটির প্রথম অংশটুকুর অর্থবোধক শব্দ বুখারী এবং মুসলিম সহ অন্যান্য
হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং প্রথম অংশটি সহীহ।
হাদীসটি আবু মুহাম্মাদ জাওহারী “ফাওয়াইদুল মুস্তাখাবা” গ্রন্থে (২/৭)
এবং তার থেকে ইবনু আসাকির (৭/১৮৪/২) আওযাঈর সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর হতে বর্ণনা
করেছেন। ইয়াহইয়া বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ...।
এ সনদটি মু'জাল। সাহাবী এবং তাবেঈ দু'জনকে এখানে লুকিয়ে দেয়া হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪১ | 341 | ۳٤۱
৩৪১। তিনি অন্ধকারেও দেখতেন যেরূপ আলোতে দেখতেন।
হাদীসটি জাল।
এটি তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (২০৭/১-২/নং ২২১০), ইবনু আদী (২/২২১)
এবং তার থেকে বাইহাকী “আদ-দালায়েল” গ্রন্থে (৬/৭৫), আল-খাতীব তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে
(৪/২৭২), মাক্কী আল-মুয়াযিযন তার “হাদীস” গ্রন্থে (১/২৩৬) এবং যিয়া আল-মাকদেসী “আল-মুনতাকা
...” গ্রন্থে (১/২) আব্দুল্লাহ ইবনু মুগীরা হতে, তিনি মুয়াল্লা ইবনু হিলাল হতে
... বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী বলেনঃ এ সনদটিতে দুর্বলতা রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল। এটির সমস্যা হচ্ছে
এ ইবনুল মুগীরা। তাকে বলা হয় আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনিল মুগীরা; উকায়লী বলেনঃ
তিনি এমন হাদীস বর্ণনা করতেন যার কোন ভিত্তি নেই। ইবনু ইউনুস বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
যাহাবী তার কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেছেন। এটি সেগুলোর একটি। অতঃপর বলেছেনঃ এগুলো বানোয়াট।
তা সত্ত্বেও সুয়ূতী হাদীসটি তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মুয়াল্লা
ইবনু হিলাল যে মিথ্যুক এ মর্মে সমালোচকগণ একমত পোষণ করেছেন, যেমনটি ইবনু হাজার-এর
“আত-তাকরীব" গ্রন্থে এসেছে।
ইবনু আসাকির অন্য একটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেটিতে মুহাম্মাদ ইবনু
মুগীরা রয়েছেন। তিনি অপরিচিত। সম্ভবত তার ছেলে আব্দুল্লাহর নাম কপি হতে উঠিয়ে দেয়া
হয়েছে। অতঃপর বাইহাকী বলেনঃ অন্য একটি মাধ্যমে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেটি
শক্তিশালী নয়।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। কারণ মুগীরা ইবনু মুসলিমের
নিচের বর্ণনাকারীদের জীবনী পাচ্ছি না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪২ | 342 | ۳٤۲
৩৪২। মা হাওয়া যখন গর্ভবতী হলেন, তখন ইবলীস তাঁকে নিয়ে তাওয়াফ করল।
তার (হাওয়ার) সন্তান জীবন ধারণ করত না। অতঃপর (ইবলিস) বললঃ তার নাম রাখুন আব্দুল হারেস।
তিনি তার নাম রাখলেন আব্দুল হারেস। ফলে সে জীবন ধারণ করল। এটি ছিল শয়তানের ওহী হতে
এবং তার নির্দেশে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি তিরমিযী (২/১৮১), হাকিম (২/৫৪৫), ইবনু বিশরান "আল-আমালী"
গ্রন্থে (২/১৫৮) এবং আহমাদ (৫/১১) উমর ইবনু ইবরাহীম সূত্রে কাতাদা হতে বর্ণনা করেছেন।
তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব। এটিকে কাতাদা থেকে উমার ইবনু ইবরাহীমের হাদীস ছাড়া
অন্য কোন সূত্রে চিনি না। হাকিম বলেনঃ হাদীসটির সনদ সহীহ। যাহাবীও তার কথাকে সমর্থন
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তারা যেরূপ বলেছেন তেমন নয়। কারণ (এটির সনদে) বর্ণনাকারী
হাসান, সামুরা হতে শুনেছেন কিনা তাতে মতভেদ রয়েছে। তার পরেও তিনি মুদাল্লিস। যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে হাসানের জীবনীতে বলেনঃ হাসান বেশী বেশী তাদলীস করতেন। যখন তিনি
কোন হাদীসে আন ফুলান অমুক হতে বলেন তখন তা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা দুর্বল হয়ে যায়।
ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে বলেনঃ উমার ইবনু ইবরাহীম এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেনঃ
কাতাদা হতে তার হাদীস মুযতারিব। তিনি দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও তার হাদীস লিখা যায়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩ | 343 | ۳٤۳
৩৪৩। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়া ও লিখার পূর্বে মৃত্যুবরণ
করেননি।
হাদীসটি জাল।
এটি আবুল আব্বাস আল-আসাম তার “হাদীস” গ্রন্থে (৩/নং ১৫৩) এবং তাবারানী
আবূ আকীল আস-সাকাফী সূত্রে মুজাহিদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার, আবু আকীল হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল
এবং এ কথাটি কিতাবুল্লাহ বিরোধী।
সুয়ূতী হাদিসটি "যায়লুল আহাদীসিল মাও'যূয়াহ" গ্রন্থে (পৃঃ
৫) উল্লেখ করেছেন।
বুখারীতে সুলহে হুদাইবিয়ার ঘটনায় তার নিজে লিখার সম্পর্কে যে কথা
বলা হয়েছে, সেটি এরূপ যে, “আমীর শহরটি তৈরি করেছেন” (কর্মচারীরা তৈরি করা সত্ত্বেও)।
কারণ বুখারীর অন্য বর্ণনায় এবং মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে তিনি আলী (রাঃ)-কে লিখার নির্দেশ
দেন। এ জন্যই সুহাইলী বলেছেনঃ হক হচ্ছে এটিই যে, “فكتب” অর্থাৎ তিনি আলীকে লিখার নির্দেশ দেন।' হাফিয ইবনু হাজার “ফাতহুল
বারী” গ্রন্থে (৪/৪০৬) এ ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ এটিই জামহুরে ওলামার মত।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪ | 344 | ۳٤٤
৩৪৪। কোন বান্দা দুনিয়াতে তার মর্যাদা উচ্চ হওয়াকে ভালবাসলে, সে মর্যাদাবান
হয় এবং আল্লাহ আখেরাতে তার জন্য আরও বৃহৎ ও দীর্ঘ মর্যাদা তৈরি করে দেন। অতঃপর পড়লেনঃ
(আখেরাত বড় বড় মর্যাদা আর বড় বড় সম্মান রয়েছে) [সূরা ইসরাঃ ২১]
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী (৬/২৩৪) এবং আবু নু’য়াইম (৪/২০৩-২০৪) আব্দুল গফুর ইবনু
সা’দ আনসারী সূত্রে আবু হাশেম আর-রুম্মানী হতে ... বর্ণনা করেছেন। এটির সনদ জাল (বানোয়াট),
ইবনু হিব্বান "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (২/১৪৮) বলেনঃ আব্দুল গফুর হাদীস জাল
করতেন। ইবনু মাঈন বলেনঃ তার হাদীস কিছুই না।
ইমাম বুখারী বলেনঃ তাকে মুহাদ্দিসগণ মাতরূক হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
(মিথ্যার দোষে দোষী হওয়ার কারণে পরিত্যাগ করেছেন)।
হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৭/৪৯) এ একই সমস্যা উল্লেখ
করে কারণ দশিয়েছেন। তথাপিও হাদীসটি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৫ | 345 | ۳٤۵
৩৪৫। বানু হাশেমরা ছাড়া এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির জন্য দাড়াবে। তারা
কারো জন্য দাঁড়াবে না।
হাদিসটি জাল।
এটি তাবারানী "মুজামুল কাবীর" গ্রন্থে (৮/২৮৯/৭৯৪৬) এবং আবু
জাফার রাযায "সিত্তাতু মাজালিস মীনাল আমালী" গ্রন্থে (কাফ ২/২৩২) জাফার ইবনু
যুবায়ের হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হায়সামী “আল-মাজামা” গ্রন্থে (৮/৪০) বলেনঃ এটির সনদে জাফার ইবনু যুবায়ের
রয়েছেন, তিনি মাতরূক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং তিনি মিথ্যুক, জালকারী। তার কতিপয় হাদীস পূর্বেও
গেছে, সেগুলো তিনিই তৈরি করেছেন। এ জন্য শুবা তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো
বলেছেনঃ তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর চার শত হাদীস জাল করেছেন।
এ হাদীসটির আরো একটি সূত্র পেয়েছি, যেটি ইবনু কুতাইবা “কিতাবুল আরাব...”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এটির বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু আমর ... মাকহুল হতে মারফু হিসাবে
বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল। দুটি কারণে তার দ্বারা দলীল সাব্যস্ত
হয় নাঃ
১। এটি মুরসাল; কারণ মাকহুল তাবেঈ।
২। ইবনু কুতাইবার শাইখ ইয়াযীদ ইবনু আমরকে চিনি না।
এটি অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। সেটি সম্পর্কে আলোচনা সামনে আসবে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬ | 346 | ۳٤٦
৩৪৬। যেভাবে আজমীরা (অনারবরা) দাঁড়ায় সেভাবে তোমরা দাঁড়াবে না, তাদের
একজন (দাঁড়িয়ে) অন্যজনকে সম্মান দেখায়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটির সনদটিতে ইযতিরাব, দুর্বলতা এবং জাহালাত (অজ্ঞতা) রয়েছে।
হাদীসটি আবু দাউদ (২/৩৪৬) এবং আহমাদ (৫/২৫৩) আব্দুল্লাহ ইবনু নুমায়ের
হতে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া রামহুরমুখী “আল-ফাসেল” গ্রন্থে (পৃ. ৬৪) এবং তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ”
গ্রন্থে (২/৪১) ইয়াহইয়া ইবনু হাশেম হতে বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে মিস'য়ার হতে, তিনি
আবুল আম্বাস হতে, তিনি আবুল আদাব্বাস হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইমাম আহমাদ সুফিয়ান
সূত্রে মিসয়ার হতে, তিনি আমার পিতা হতে, আমার পিতা হতে, আমার পিতা হতে এভাবে বর্ণনা
করেছেন।
আব্দুল গনী মাকদেসী “তারগীব ফিদ দু'আ" গ্রন্থে (২/৯৩) সুফিয়ান
ইবনু ওয়াইনা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি মিসায়ার ইবনু কিদাম হতে, তিনি আবী মারযুক হতে,
তিনি আবুল আম্বাস হতে, তিনি আবুল আদাব্বাস ... হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাদীসটি ইমাম
আহমাদ (৫/২৫৬) এবং রুবিয়ানী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৩০/২২৫/২) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ
হতে, তিনি মিসয়ার হতে, তিনি আবুল আম্বাস হতে, তিনি তার পিতা খালাফ হতে, তিনি আবু মারযুক
হতে ..... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজাহ (২/৪৩১) ওয়াকী সূত্রে মিসায়ার হতে, তিনি আবুল মারযুক হতে, তিনি আবু ওয়ায়েল হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজাহ (২/৪৩১) ওয়াকী সূত্রে মিসায়ার হতে, তিনি আবুল মারযুক হতে, তিনি আবু ওয়ায়েল হতে ... বর্ণনা করেছেন।
সনদের মধ্যে উল্লেখিত চরম পর্যায়ের ইযতিরাবই হাদীসটি দুর্বল হওয়ার
জন্য যথেষ্ট। মুযতারিব ও ইযতিরাব সম্পর্কে দেখুন (৫৭-৫৮) পৃষ্ঠায়। এ আবু মারযুক সম্পর্কে
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ ইবনু হিব্বান বলেছেন, তিনি এককভাবে কিছু বর্ণনা করলে
তা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা জায়েয হবে না। অতঃপর প্রথমটি এবং ইবনু মাজার সূত্র দুটি
উল্লেখ করে বলেছেনঃ আবুল আদাব্বাসের স্থলে (ইবনু মাজাহ) আবু ওয়ায়েল উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি ভুল। আবুল আদাব্বাস মাজহুল যেমনভাবে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এবং
ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেছেন।
হাফিয ইরাকী “তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (২/১৮১) হাদীসটির এ সমস্যাই
উল্লেখ করেছেন। হাদীসটিকে মুনযের হাসান বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ কিন্তু উপরে উল্লেখিত বিবরণের কারণেই তা সঠিক নয়।
তবে হ্যাঁ হাদীসটির অর্থ সহীহ। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তি
প্রবেশ করলে তার জন্য দাঁড়ানোকে অপছন্দ করতেন। এ মর্মে সহীহ হাদীস এসেছে। যা “সিলসিলাতুস
সহীহার" (৩৫৮ নং) মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।
যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের জন্য দাঁড়ানোকে
অপছন্দ করতেন, তখন অন্যের জন্য দাঁড়ানো অপছন্দ করা আরো বেশী উপযোগী।
উল্লেখ্য এখানে যে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে অন্যের
সম্মানার্থে দাঁড়ানো। প্রয়োজনের তাগিদে দাড়ালে তাতে অপছন্দের কিছু নেই।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭ | 347 | ۳٤۷
৩৪৭। এ উম্মাত শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের
মধ্যে তিনটি বস্তু প্রকাশ না পাবেঃ যতদিন তাদের মধ্য হতে জ্ঞানকে উঠিয়ে না নেয়া হবে,
তাদের মধ্যে কুসন্তানের আধিক্য না হবে এবং যতদিন সাক্কারুনরা প্রকাশিত না হবে। তারা
বললঃ সাক্কারুন কারা হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেনঃ শেষ যামানার মানুষ, যখন তারা একে
অপরে মিলিত হবে তখন তাদের অভিনন্দনের ভাষা হবে অভিশাপ।
হাদীসটি মুনকার।
এটি হাকিম (৪/৪৪৪) এবং ইমাম আহমাদ (৩/৪৩৯) যাবান ইবনু ফায়েদ হতে বর্ণনা
করেছেন এবং তিনি সাহাল হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ শাইখায়নের শর্তানুযায়ী
এটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ হাদীসটি মুনকার, শাইখাইন যাবান হতে বর্ণনা
করেননি।
ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি নেককার এবং আবেদ হওয়া সত্ত্বেও
হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৮ | 348 | ۳٤۸
৩৪৮। সে টিকটিকির বাচ্চা টিকটিকি (কাপুরুষের বাচ্চা কাপুরুষ), অভিশপ্তের
বাচ্চা অভিশপ্ত; অর্থাৎ মারওয়ান ইবনুল হাকাম।
হাদীসটি জাল।
এটিকে হাকিম (৪/৪৭৯) আব্দুর রহমান ইবনু আউফের দাস মীনা সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন। অতঃপর (হাকিম) বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার প্রতিবাদ করে বলেছেনঃ আল্লাহর
কসম তা নয়! মীনাকে আবু হাতিম মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছি ঃ ইবনু মাঈন “আত-তারীখু ওয়াল ইলাল” গ্রন্থে (২/১৩)
বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন এবং নিরাপদও নন। কখনও কখনও বলেছেনঃ কে এ মীনা আল্লাহ তাকে
দূর করুন।
ইয়াকুব ইবনু সুফিয়ান বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন এবং নিরাপদও নন। তার
হাদীস না লিখা ওয়াজিব।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৪৯ | 349 | ۳٤۹
৩৪৯। হিমইয়ারীদের আল্লাহ রহম করুন। তাদের মুখমণ্ডলগুলো শান্তি স্বরূপ
এবং হাতগুলো খাদ্য স্বরূপ। তারা নিরাপত্তা এবং ঈমানের অধিকারী।
হাদীসটি জাল।
এটি তিরমিয়ী (৪/৩৭৮), আহমাদ (২/২৭৮) এবং তার সূত্র হতে ইরাকী তার
"আল-মুজাম" গ্রন্থে (২/৪৬) আব্দুর রহমান ইবনু আউফের দাস মীনা হতে ... বর্ণনা
করেছেন। অতঃপর ইরাকী বলেছেনঃ এ হাদীসটি গারীব। এ সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্র হতে এটিকে
চিনি না। মীনা হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাকে আবু হাতিম মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমনভাবে
পূর্বের হাদীসে বলা হয়েছে। হাদীসটি সুয়ূতী তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে আহমাদ এবং
তিরমিযীর বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন। আর তার ভাষ্যকার মানাবী কোন কিছুই বলেননি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫০ | 350 | ۳۵۰
৩৫০। যে মৃত্যুবরণ করল এমতাবস্থায় যে, সে তার যুগের ইমামকে চিনল না,
সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।
এ বাক্যে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
শাইখুল হাদীস ইবনু তাইমিয়া বলেনঃ আল্লাহর কসম রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেননি। প্রসিদ্ধ হচ্ছে সেটিই যেটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। ইবনু
উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ
من خلع يدا من طاعة لقي الله يوم القيامة ولا حجة له، ومن مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية
"যে ব্যক্তি তার হাতকে আনুগত্য করা হতে মুক্ত করে নিল, সে কিয়ামতের
দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমতাবস্থায় যে, তার কোন প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি
মৃত্যুবরণ করবে এমতাবস্থায় যে, তার কাধে বাইয়াত থাকবে না; সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ
করল।"
যাহাবী ইবনু তাইমিয়্যার বক্তব্যকে "মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ"
গ্রন্থে (পৃ. ২৮) সমর্থন করেছেন এবং তাদের দু'জনের কথাই দলীল হিসাবে যথেষ্ট।
এ হাদীসটি শিয়া ও কাদিয়ানীদের কোন কোন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তারা
এর দ্বারা তাদের ইমামের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব হওয়ার দলীল দিয়ে থাকে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫১ | 351 | ۳۵۱
৩৫১। হে আলী! তুমি দুনিয়া এবং আখেরাতে আমার ভাই।
হাদীসটি জাল।
এটি তিরমিয়ী (৪/৩২৮), ইবনু আদী (১/৫৯, ১/৬৯) এবং হাকিম (৩/১৪) হাকীম
ইবনু যুবায়র সূত্রে জামী' ইবন উমায়র হতে ... বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি
হাসান গারীব। মুবারাকপুরী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ হাকীম ইবনু যুবায়ের দুর্বল, তাকে
শীয়া মতাবলম্বী দোষে দোষী করা হয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ দুটি কারণে শুধুমাত্র হাকীমকে দোষ দেয়াটা ইনসাফের
কাজ হবে নাঃ
১। তার শাইখ জামী ইবনু উমায়ের মিথ্যার দোষে দোষী; যাহাবী তার সম্পর্কে
বলেনঃ ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি রাফেয়ী, হাদীস জালকারী। ইবনু নুমায়ের বলেছেনঃ তিনি
লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যুক ছিলেন। অতঃপর তিনি তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
২। হাকীম ইবনু যুবায়ের এককভাবে বর্ণনা করেননি, সালেম ইবনু আবী হাফসা
তার মুতাবা’আত করেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। কিন্তু তার এ সনদে আরেক বর্ণনাকারী ইসহাক
ইবনু বিশ্বর আল-কাহেলী রয়েছেন; তাকে ইবনু আবী শায়বা এবং মূসা ইবনু হারূণ মিথ্যুক
আখ্যা দিয়েছেন।
দারাকুতনী তার সম্পর্কে বলেনঃ যারা হাদীস জাল করেছেন, তিনি তাদের একজন।
তার এ সূত্রে হাকিমও বর্ণনা করেছেন। যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ জামী মিথ্যার
দোষে দোষী এবং কাহেলী হালেক।
ইবনু আদী বলেনঃ এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ জামী'; তিনি যা কিছু বর্ণনা
করেছেন অন্যরা তার মুতাবা’আত করেননি। এজন্য ইবনু তাইমিয়া বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আলীর সাথে ভাইয়ের সম্বন্ধ সম্পর্কিত হাদীস মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত।
তাঁর এ বক্তব্য যাহাবী "মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ" গ্রন্থে সমর্থন করেছেন
(পৃ. ৩১৭)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫২ | 352 | ۳۵۲
৩৫২। হে আলী! জান্নাতের মধ্যে তুমি আমার ভাই, আমার সঙ্গী এবং আমার বন্ধু।
হাদীসটি জাল।
এটি আল-খাতীব (১২/২৬৮) উসমান ইবনু আদির রহমান সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি বানোয়াট। উসমান ইবনু আদির রহমান হচ্ছেন
কুরাশী। তিনি একজন মিথ্যুক, যেমনভাবে বার বার তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। শাইখুল
ইসলাম ইবনু তাইমিয়া বলেনঃ ভাইয়ের সম্বন্ধ স্থাপন সম্পর্কিত সকল হাদীস মিথ্যা। তার
এ বক্তব্য যাহাবী "মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ" গ্রন্থে সমর্থন করেছেন
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৩ | 353 | ۳۵۳
৩৫৩। আল্লাহ তা'আলা আলীর সম্পর্কে মে'রাজের রাতে তিনটি বিষয়ে আমার
নিকট অহী করেছেন; সে মুমিনদের সর্দার, ইমামুল মুত্তাকীন এবং উজ্জল চেহারার অধিকারীদের
নেতা।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃ. ২১০) মুশাজে ইবনু আমর হতে,
তিনি ঈসা ইবনু সুওয়াদা আন-নাখ'ঈ হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ মুশাজে এককভাবে
এটিকে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক এবং তার শাইখ ঈসা ইবনু সুওয়াদাও মিথ্যুক।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (৯/১২১) শুধুমাত্র ঈসার দ্বারা হাদীসটির সমস্যা বর্ণনা
করেছেন, তিনি তাতে যথার্থ কাজটি করেননি।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা বলেনঃ যে ব্যক্তির হাদীস সম্পর্কে সামান্যতম
ধারণা রয়েছে তার নিকটেও হাদীসটি বানোয়াট। এটিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
উদ্ধৃতিতে বলাই হালাল নয়। আমাদের নাবী ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে এসব গুণাবলী প্রযোজ্য
নয়। তার এ বক্তব্য যাহাবী "মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ" গ্রন্থে সমর্থন
করেছেন (প: ৪৭৩)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪ | 354 | ۳۵٤
৩৫৪। আল্লাহ তা'আলা আদমকে জাবীয়া নামক স্থানের মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন
এবং তাকে জান্নাতের পানি দিয়ে মুদিত করেছেন।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (৮/১) এবং তার থেকে হাফিয ইবনু আসাকির
“তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে (২/১১৯) ও যিয়া "আল-মাজমূ" গ্রন্থে (২/৬০) হিশাম
ইবনু আম্মার হতে, তিনি ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম হতে, তিনি ইসমাইল ইবনু রাফে' হতে ... বর্ণনা
করেছেন। এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল।
এ ইসমাঈল ইবনু রাফে সম্পর্কে দারাকুতনী ও অন্যরা বলেছেনঃ তিনি মাতরূকুল
হাদীস। ইবনু আদী বলেছেনঃ তার সকল হাদীসে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। অতঃপর তার এ হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন। তার সূত্র হতে ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযু"আত” গ্রন্থে (১/১৯০) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। ইসমাঈলকে ইয়াহইয়া ও আহমাদ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন আর ওয়ালীদ
তাদলীস করতেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ এ ইসমাঈলের হাদীস
ইমাম তিরমিয়ী বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বুখারীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য,
মুকারেবুল হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সমালোচনা সঠিক নয়। কারণ কোন ব্যক্তি নিজে নির্ভরযোগ্য
হয়েও তার মুখস্থ বিদ্যায় তিনি খারাপ হতে পারেন। কখনও কখনও তার হেফয শক্তি নিতান্তই
খারাপ হতে পারে। যার কারণে তার হাদীসে বেশী ভুলও সংঘটিত হয়। ফলে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ
করা যায় না, এ ইসমাঈল এ পর্যায় ভূক্তই। তার সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি ব্যক্তি
হিসাবে সৎ ছিলেন। কিন্তু তিনি হাদীসগুলোকে উলট পালট করে ফেলতেন। ফলে তার অধিকাংশ হাদীস
মুনকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, এজন্য ভাবা হত তিনি এটা ইচ্ছাকৃতই করতেন। এজন্যই তাকে
একদল কিছু না বলে ছেড়ে দিয়েছেন আর অন্যরা তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হতে পারে বুখারীর
নিকট তার বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। নির্দোষীতার আগে ব্যাখ্যাকৃত দোষারোপ অগ্রাধিকার পাবে,
এর ভিত্তিতে তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নন। এ কারণেই ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে
(২/২৯৭) তার পিতার উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫ | 355 | ۳۵۵
৩৫৫। তিন ব্যক্তি হচ্ছেন সত্যবাদী। হাবীবুন নাজ্জার; ইয়াসিনের পরিবারের
মুমিন ব্যক্তি যিনি বলেছিলেনঃ "হে আমার জাতি তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর",
হিযকীল; ফিরআউনের পরিবারের মুমিন ব্যক্তি যিনি বলেছিলেনঃ "তোমরা এমন এক ব্যক্তিকে
হত্যা করছ যিনি বলেন যে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ" এবং আলী ইবনু আবী তালিব, সে হচ্ছে
তাদের মধ্যে সর্বোত্তম।
হাদীসটি জাল।
এটি সুয়ূতী “জমে'উস সাগীর” গ্রন্থে আবু নুয়াইম কর্তৃক "আল-মা'রিফাত"
গ্রন্থের বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন এবং ইবনু আসাকির ইবনু আবী লায়লা হতে বর্ণনা করেছেন।
তার (জামের) ভাষ্যকার মানাবী এটিকে ইবনু মারদুবিয়া এবং দাইলামী বর্ণনা করেছেন, এ কথা
বলা ছাড়া আর কিছুই বলেননি।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেনঃ এ হাদীসটি মিথ্যা।
তাঁর এ বক্তব্যকে যাহাবী "মুখতাসারু মিনহাজিস সুন্নাহ" গ্রন্থে
(পৃ. ৩০৯) সমর্থন করেছেন। তাদের দু'জনের কথাই দলীল হিসাবে যথেষ্ট।
ইবনু তাহের শি'য়ী তার গ্রন্থে বলেছেন যে, এটি আহমাদের বর্ণনায় এসেছে।
ইবনু তাইমিয়া তার বিরোধিতা করে বলেছেনঃ ইমাম আহমাদ হাদীসটিকে তার “আল-মুসনাদ” ও “আল-ফাযায়েল”
গ্রন্থেও বর্ণনা করেননি। অন্য কোথাও বর্ণনা করেননি।
কুতাই'ঈ ইমাম আহমাদের “ফাযায়েলুস সাহাবা” গ্রন্থে (নং ১০৭২, পৃ. ৪৩১-৪৩২)
কুদায়মী সূত্রে আমর ইবনু জামী'র বর্ণনা হতে বৃদ্ধি করেছেন। হাফিয ইবনু আদী বলেনঃ এ
আমর জাল করার দোষে দোষী এবং কুদায়মী মিথ্যুক হিসাবে প্রসিদ্ধ।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৬ | 356 | ۳۵٦
৩৫৬। মুসহাফে (কুরআনে) দৃষ্টি দেয়া ইবাদাত, সন্তান কর্তৃক পিতা মাতার
দিকে দৃষ্টি দেয়া ইবাদত এবং আলী ইবনু আবী তালেবের দিকে দৃষ্টি দেয়া ইবাদাত।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনুল ফুরাতী মুহাম্মাদ ইবনু যাকারিয়া ইবনে দীনার সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন। সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৩৪৬) শাহেদ হিসাবে উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন!
অথচ এটি বানোয়াট, কারণ মুহাম্মাদ ইবনু যাকারিয়া জালকারী হিসাবে প্রসিদ্ধ। শেষ বাক্যটি
ইবনুল জাওয়ী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে একদল সাহাবী হতে উল্লেখ করেছেন এবং সবগুলোকে “আল-মাওযু"আত”
গ্রন্থে উল্লেখ করার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৩৪২-৩৪৬) বহু মুতাবায়াত এবং শাহেদ উল্লেখ
করে তার সমালোচনা করেছেন। এ জন্যই সেটিকে "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ
করেছেন। যাহাবী “তালখীসুল মুসতাদরাক” গ্রন্থে (৩/১৪১) একটি শাহেদকে সহীহ্ বলেছেন। তার
এ সহীহ বলার মধ্যে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা আসবে ৪৭০২
নং হাদীসের আলোচনায়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭ | 357 | ۳۵۷
৩৫৭। আলী হচ্ছে নেককারদের ইমাম, পাপাচারদের হত্যাকারী, যে তাকে সাহায্য
করবে সে সাহায্যপ্রাপ্ত আর যে তাকে অপমান করবে সে অপমানিত।
হাদীসটি জাল।
এটি হাকিম (৩/১২৯) এবং আল-খাতীব (৪/২১৯) আহমাদ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে
ইয়াযীদ হাররানী সূত্রে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ সনদটি সহীহ। যাহাবী তার সমালোচনা করে
বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! এটি জাল (বানোয়াট)। এ আহমাদ ইবনু আবদিল্লাহ মিথ্যুক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে, ইবনু আদী তার সম্পর্কে
বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। অতঃপর তার এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
খাতীব বাগদাদী বলেনঃ তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন এটি তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা
বেশী মুনকার।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৮ | 358 | ۳۵۸
৩৫৮। অগ্রগামী হচ্ছেন তিনজন মূসা (আঃ)-এর দিকে অগ্রগামী হচ্ছেন ইউশা
ইবনু নুন, ঈসা (আঃ)-এর দিকে অগ্রগামী হচ্ছে ইয়াসিনের সাখী এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে অগ্রগামী হচ্ছে আলী ইবনু আবী তালিব।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি তাবরানী (৩/১১/২) হুসাইন ইবনু আবিস সারী হতে, তিনি হুসাইন আশকার
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবনী) বলছিঃ যদিও জাল নয় এটির সনদ নিতান্তই দুর্বল, কারণ এ হুসাইন
আশকার হচ্ছেন ইবনুল হাসান কুকী, তিনি চরমপন্থী শীয়া। তার সম্পর্কে বুখারী বলেনঃ তিনি
খুবই দুর্বল। তিনি “তারীখুস সাগীর” গ্রন্থে (২৩০) আরো বলেছেনঃ তার নিকট মুনকার রয়েছে।
উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (৯০) বুখারী হতে নকল করেছেন।
তিনি বলেনঃ তার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে।
ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (১/৯৭) বলেছেনঃ কেউ কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য
আখ্যা দিয়েছেন। অতঃপর ইবনু আদী বলেনঃ এমনটি নয় যে, তিনি যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন
সেগুলোর সবই তার কারণে মুনকার। কখনও কখনও তার থেকে বর্ণনাকারীর পক্ষ হতেও মুনকার হয়ে
থাকতে পারে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু আদী যেন তার এ কথা দ্বারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে,
এ হাদীসটির বর্ণনাকারী হুসাইন ইবনু আবিস সারী তিনি তার মতই। বরং তার চেয়েও বেশী দুর্বল।
যাহাবী বলেনঃ তাকে আবু দাউদ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন এবং হুসাইনের ভাই মুহাম্মাদ বলেছেনঃ
আমার ভাই হতে আপনারা লিখবেন না, কারণ তিনি হচ্ছেন মিথ্যুক। তিনি আরো বলেছেনঃ আবু আরূবা
আল-হারানী আমার পিতার মামা, তিনিও মিথ্যুক। অতঃপর তিনি এ হাদীসটি তাবারানীর সূত্রে
উল্লেখ করেছেন।
হাফিয ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (৩/৫৭০) বলেছেনঃ এ হাদীসটি
মুনকার। হুসাইন আল-আশকারের সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্র হতে এটি জানা যায় না। তিনি
একজন শী’য়া মাতরূক।
অনুরূপ কথা মানাবী উকায়লীর উদ্ধৃতিতে এবং ইবনু হাজারও “তাহযবুত তাহষীব”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ইবনু উয়াইনা হতে এটির কোন ভিত্তি নেই।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৯ | 359 | ۳۵۹
৩৫৯। প্রত্যেকে তার সম্পদের ব্যাপারে তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের
চেয়ে বেশী হকদার।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (৪/২৩৫/১১২) এবং তার সূত্র হতে বাইহাকী
তার “সুনান” গ্রন্থে (১০/৩১৯) হুশাইম সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াহইয়া হতে, তিনি
হিব্বান ইবনু আবী জিবিল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন।
বাইহাকী এটির সমস্যা বর্ণনা করেছেন এ বলে যে, এটি মুরসাল, হিব্বান তাবেঈনদের
অন্তর্ভুক্ত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি নির্ভরযোগ্য, কিন্তু তার থেকে বর্ণনাকারীকে
চিনি না। অতঃপর তাকে চিনেছি "তারীখুল বুখারী" ও অন্যান্য গ্রন্থে। এ হাদীসটি
অন্য যে সব সূত্রে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ্ নয় বরং সেগুলো হয় মুনকাতি
না হয় মুরসাল।
এ হাদীস দ্বারা কেউ কেউ সন্তানদের মাঝে সমভাবে কিছু দান করা ওয়াজিব
না হওয়ার দলীল গ্রহণ করেছেন। অথচ সহীহ হাদীসে সমভাবে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যা বুখারী
এবং মুসলিম নুমান ইবনু বাশীরের হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬০ | 360 | ۳٦۰
৩৬০। হস্তগত করা ব্যতীত হিবা বৈধ হবে না।
মারফু হিসাবে হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
এটি আব্দুর রাযযাক নাখ'ঈর কথা হতে বর্ণনা করেছেন; যেরূপভাবে যায়লাঈ
"নাসবুর রায়া" গ্রন্থে (৪/১২১) উল্লেখ করেছেন।
হিবা হস্তগত করা শর্ত, হাদীসে এরূপ কোন দলীল নেই।
ইমাম বুখারী তার সহীহার মধ্যে অধ্যায় রচনা করেছেন, ‘অনুপস্থিত হিবা
জায়েষ হওয়ার বিষয়ে যিনি মতামত দিয়েছে তার অধ্যায় । দেখুন "ফাতহুল বারী"
(৫/১৬০)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬১ | 361 | ۳٦۱
৩৬১। যদি (রক্তের সম্পর্কের) আত্নীয়ের জন্য হেবা করা হয়, তাহলে তা
ফিরিয়ে নেয়া যায় না।
হাদীসটি মুনকার।
এটি দারাকুতনী (পৃঃ ৩০৭), হাকিম (২/৫২) ও বাইহাকী (৬/১৮১) হাসান সূত্রে
সামুরা ইবনু জুনদুব হতে মারফু' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ বুখারীর
শর্তানুযায়ী এটি সহীহ।
তার ছাত্র বাইহাকী তার এ কথার বিরোধিতা করে বলেছেনঃ এটির সনদ শক্তিশালী
নয়। এটিই সঠিক, কারণ সামুরা হতে হাসান কর্তৃক শ্রবণ সাব্যস্ত হয়েছে কিনা তাতে মতভেদ
রয়েছে। তারপরও তিনি মুদাল্লিস বর্ণনাকারী, কীভাবে এটি সহীহ হয়?
যায়লাঈ "নাসবুর রায়া" গ্রন্থে (৪/১১৭) আল্লামা ইবনু আবদিল
হাদী হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ এ হাদীসটির বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরশীল, কিন্তু
হাদীসটি মুনকার। হাসান সূত্রে সামুরা হতে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা
মুনকার হচ্ছে এ হাদীসটি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি সহীহ হাদীস বিরোধীঃ “একমাত্র পিতা কর্তৃক পুত্রকে
হিবাকৃত মাল ফিরিয়ে নেয়া ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে হিবাকৃত মাল ফিরিয়ে নেয়া হালাল
নয়, কারণ যে হিবাকৃত বস্তু ফিরিয়ে নেয়, সে হচ্ছে ঐ কুকুরের ন্যায় যে খেয়ে পরিতৃপ্ত
হয়ে বমি করে নিজের বমি নিজেই খায়।” হাদীসটি ইমাম আহমাদ (নং ২১১৯) সহীহ সনদে বর্ণনা
করেছেন। “সুনান” গ্রন্থের লেখকগণও বর্ণনা করেছেন। অতঃপর এটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিয়ী,
ইবনু হিব্বান ও হাকিম ইবনু উমার এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা
করেছেন।
“ইরওয়াউল গালীল” গ্রন্থের ১৬২২ নাম্বারে এটির তাখরীজ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬২ | 362 | ۳٦۲
৩৬২। যে ব্যক্তি হিবা করল, অতঃপর তা ফিরিয়ে নিল; সেই তার বেশী হকদার,
যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রতিদান দেয়া না হবে। কিন্তু সে যেন ঐ কুকুরের ন্যায় যে তার
বমিকে পুনরায় খায়।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী তার "সুনান" গ্রন্থে (৩০৭) ইবরাহীম ইবনু আবী
ইয়াহইয়া সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ওবায়দিল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন। যায়লাঈ “নাসবুর
রায়া” গ্রন্থে (৪/১২৫) বলেছেনঃ আব্দুল হক তার “আল-আহকাম” গ্রন্থে হাদীসটি দুর্বল হওয়ার
কারণ হিসাবে মুহাম্মাদ ইবনু ওবায়দিল্লাহ আরযামীকে চিহ্নিত করেছেন। ইবনু কাত্তান বলেনঃ
এটি আরযামীর নিকট মিথ্যুক ভাষার উপর ভিত্তি করেই পৌছেছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আরযামী মাতরূক; যেরূপভাবে “আত-তাকরীব” গ্রন্থে এসেছে।
কিন্তু হাদীসটি এটির চেয়ে সঠিক সনদে বর্ণিত হয়েছে; যেটি তাবারানী (১১৩১৭) ইবনু আবী
লায়লা সূত্রে আতা হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু আবী লায়লার হেফযে ক্রটি ছিল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৩ | 363 | ۳٦۳
৩৬৩। যে ব্যক্তি হিবা করল, সেই তার বেশী হকদার, যতক্ষণ পর্যন্ত
তার প্রতিদান দেয়া না হবে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী তার “সুনান” গ্রন্থে (পৃ. ৩০৭), হাকিম (২/৫২) এবং তার
থেকে বাইহাকী (৬/১৮০-১৮১) দুটি সূত্রে ওবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর
হাকিম বলেছেনঃ এটি শাইখায়নের শর্তানুযায়ী সহীহ।
মানাবী “জামেউস সাগীর"-এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ আমি যাহাবীর
"তালখীসুল মুসতাদরাক" গ্রন্থের কপিতে তার হাতে লিখিত টীকায় দেখেছি যার আকৃতি
মাওযুর মত।
ইমাম যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে এ ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে খালিদ
হাশেমীর জীবনী লিখতে গিয়ে বলেছেনঃ হাকিম তার থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তাকে মিথ্যার
দোষে দোষী করেছেন। তবে মওকুফ হিসাবে এটি সাব্যস্ত হয়েছে, যেমনভাবে দারাকুতনী বলেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
বাণী বিরোধীঃ “যে তার ঐ হিবাকে ফিরিয়ে নিল সে সেই কুকুরের ন্যায় যে তার বমিকে পুনরায়
খায়” (বুখারী ও মুসলিম)।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৪ | 364 | ۳٦٤
৩৬৪। যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ (ওয়াক্ত) সলাত আদায় করল এমনভাবে
যে, তার নিকট হতে এক (ওয়াক্ত) সলাতও ছুটল না, তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি ও শাস্তি
হতে নাজাত লিপিবদ্ধ করা হবে এবং সে মুনাফিকী হতে মুক্ত।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ইমাম আহমাদ (৩/১৫৫) এবং তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (২/৩২/২/৫৫৭৬)
আব্দুর রহমান ইবনু আবির রিজাল সূত্রে নুবাইত ইবনু উমার হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ আনাস (রাঃ) হতে শুধুমাত্র নুবাইত বর্ণনা করেছেন। ইবনু
আবির রেজালও এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল। নুবাইতকে শুধুমাত্র এ হাদীসেই
চেনা যায়। তাকে ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” গ্রন্থে (৫/৪৮৩) উল্লেখ করেছেন। কারণ মাজহুল
বর্ণনাকারীকে তার থিওরীতে নির্ভরশীল হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে।
এ কারণেই হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৪/৮) বলেছেনঃ ইমাম
আহমাদ ও তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে এটিকে বর্ণনা করেছেন। এটির বর্ণনাকারীগণ
নির্ভরশীল।
এছাড়া “আত-তারগীব” গ্রন্থে (২/১৩৬) মুনযেরী বলেনঃ এটি ইমাম আহমাদ বর্ণনা
করেছেন। তার বর্ণনাকারীগণ সহীহ্ বর্ণনাকারী।
এটি ধারণা মাত্র, কারণ নুবাইত সহীহ্ বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়
বরং ছয়টি হাদীস গ্রন্থের কোন লেখক তার থেকে বর্ণনা করেননি।
এটি দুর্বল হওয়ার কারণ এটিও যে, হাদীসটি দুটি সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণিত হয়েছে। যার একটি অন্যটিকে শক্তি যোগাচ্ছে। কিন্তু নিম্নের ভাষায় মারফু এবং
মওকুফ হিসাবে।
“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন প্রথম তাকবীর সহকারে জামা'আতের সাথে সলাত আদায়
করবে, তার জন্য দুটি মুক্তি লিখা হয়। জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি এবং মুনাফেকী হতে
মুক্তি”। এ হাদীসটি তিরমিয়ী (১/৭) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু মাজাহ্ (১/২৬৬) একটি শাহেদ উল্লেখ করেছেন, যার সনদটি দুর্বল এবং
মুনকাতি ।
এ বাক্যের হাদীসটির সূত্রগুলো সহীহার মধ্যে (২৬৫২) বিস্তারিত আলোচনা
করেছি, যা প্রমাণ করে যে, আলোচ্য হাদীসটি দুর্বল এবং মুনকার।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৫ | 365 | ۳٦۵
৩৬৫। তোমাদের সাথীকে তোমরা প্রস্তুত কর, কারণ ভীতি তার কলিজাকে টুকরো
টুকরো করে দিয়েছে।
হাদিসটি দুর্বল।
এটি হাকিম (৩/৪৯৪) এবং তার থেকে বাইহাকী “শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে (১/১/১৭৮/২)
ইবনু আবিদ দুনিয়ার সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনে হামযা বুখারী হতে, তিনি তার পিতা
হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হাকিম বলেছেনঃ সনদটি সহীহ্।
যাহাবী তার সমালোচনা করে “আত-তালখীস” গ্রন্থে বলেছেনঃ এ বুখারী এবং
তার পিতা তারা দু'জন কে তা জানা যায় না। হাদীসটি বানোয়াটের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তার
এ বক্তব্যকে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে ইসহাক ইবনু হামযার জীবনী বর্ণনা
করতে গিয়ে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইসহাক সম্পর্কে যা বলেছেন সে ব্যাপারে তিনি তার সমালোচনা
করেছেন। কারণ তাকে ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারীও তার
উপর সম্ভষ্ট এবং তার প্রশংসা করেছেন, যদিও তার থেকে বর্ণনা করেননি
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৬ | 366 | ۳٦٦
৩৬৬। জাহান্নাম দুনিয়ার দ্বারা পরিবেষ্টিত আর জান্নাত তার (জাহান্নামের)
পিছনে। সে কারণে পুলসিরাত জাহান্নামের উপর জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা স্বরূপ হয়ে গেছে।
হাদীসটি নিতান্তই মুনকার।
এটি ইবনু মিখলাদ আত্তার “আল-মুনতাকা মিন আহাদীস” গ্রন্থে (২/৮৪/২),
আবু নোয়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (৩/৯২) এবং তার সূত্র হতে দাইলামী তার “মুসনাদ”
গ্রন্থে (২/৭৯) মুহাম্মাদ ইবনু হামযা ইবনে যিয়াদ আত-তূসী হতে, তিনি তার পিতা হামযা
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আত্তারের সূত্র হতে আল-খাতীব (২/২৯১) এবং তার থেকে যাহাবী মুহাম্মাদের
জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর যাহাবী বলেছেনঃ হাদীসটি নিতান্তই মুনকার।
মুহাম্মাদ দুর্বল আর হামযা ইমাম আহমাদের নিকট মাতরূক। ইবনু মাঈন বলেনঃ তার সাথে কোন
সমস্যা নেই। মাহনা বলেছেনঃ আমি ইমাম আহমাদকে হামযা আত-তূসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
তিনি বলেনঃ এ খাবীস হতে লিখা যাবে না।
যাহাবী মুহাম্মাদের জীবনীতে বলেন, ইবনু মান্দা বলেছেনঃ তিনি মুনকার
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭ | 367 | ۳٦۷
৩৬৭। আমার উম্মাতের আলেমরা হচ্ছে সর্বোত্তম এবং আমাদের আলেমদের মধ্যে
দয়াবানরা হচ্ছে সর্বোত্তম। সাবধান! অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা জাহেলের একটি গুনাহ ক্ষমা
করার পূর্বেই আলেমের চল্লিশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সাবধান! দয়াবান আলেম কিয়ামত দিবসে
আগমন করবেন এমতাবস্থায় যে তার নূর আলোকিত করবে যেমনভাবে সাদা তারকা আলোকিত করে এবং
সে তাতে পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে চলাফিরা করবে।
হাদীসটি বাতিল।
এটি আবু নুয়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৮/১৮৮), আল-খাতীব
তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১/২৩৭-২৩৮) ও “মুয়াযযিহ” গ্রন্থে (২/৬২) এবং ইবনু আসাকির
“যাম্মু মান লা ইয়ামালু বি ইলমিহি” গ্রন্থে (২/৫৮) ও “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১৬/২৮/২)
মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক সুলামী সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আল খতীব বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মাজহুলদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আবদুল্লাহ
ইবনুল মুবারাক হতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তার মধ্যে জাহালাত (অজ্ঞতা)
রয়েছে এবং তিনি বাতিল খবর (হাদীস) নিয়ে এসেছেন। অতঃপর এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাফিয
ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে এবং সুয়ুতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৩৫) যাহাবীর
বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
এটির আরো একটি সূত্র রয়েছে। সেটিকে কাযাঈ “মুসনাদুশ শিহাব” গ্রন্থে
(কাফ ১/১০৪) উল্লেখ করেছেন। যার সনদে আহমাদ ইবনু খালিদ কুরাশী রয়েছেন। তার সম্পর্কে
যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায় না এবং হাদীসটি বাতিল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাফিয ইবনু হাজার তার এ কথাকে “আল-লিসান” গ্রন্থে
সমর্থন করেছেন।
যাহাবী, ইবনু হাজার এবং সুয়ূতী তারা তিন হাফিয হাদীসটি বাতিল এ মর্মে
একমত হওয়ার পরেও সুয়ূতী নিজেই নিজের বিরোধিতা করে হাদীসটি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
উল্লেখিত দুটি সূত্র হতেই উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৮ | 368 | ۳٦۸
৩৬৮। কুরআন বহনকারী হচ্ছে ইসলামের ঝান্ডা বহনকারী। যে তাকে সম্মান করল,
সে যেন আল্লাহকে সম্মান করল। আর যে তাকে তুচ্ছ ভেবে অবহেলা করল, তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/৮৮) নিজ সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস
কুদায়মী পর্যন্ত ... বর্ণনা করেছেন। সুয়ূতী এটিকে “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে
(পৃ. ২৩ নং ১১৬) উল্লেখ করে বলেছেনঃ কুদায়মী মিথ্যার দোষে দোষী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে এ বর্ণনাতেই
উল্লেখ করেছেন! এ কারণে মানাবী কুদায়মী জালকারী’ বলে তার সমালোচনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ৩৬৯ | 369 | ۳٦۹
৩৬৯। জ্ঞানের সাথে অল্প আমল উপকারী, অজ্ঞতার সাথে বেশী “আমল উপকারী
নয়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদিল বার “জামেউ বায়ানিল ইলমে ওয়া ফাযলিহি” গ্রন্থে (১/৪৫)
মুহাম্মাদ ইবনু রাওহ ইবনে ইমরান কুশায়রী সূত্রে মুয়াম্মিল ইবনু আদির রহমান সাকাফী
হতে, তিনি আব্বাদ ইবনু আদিস সামাদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। এ সনদটি বানোয়াট; মুহাম্মাদ
ইবনু রাওহ দুর্বল।
মুয়াম্মিল ইবনু আবদির রহমান সম্পর্কে আবু হাতিম বলেনঃ লাইয়েনুল হাদীস,
য’ঈফুল হাদীস (হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল)। ইবনু আদী বলেনঃ তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ
নয়। যাহাবী আব্বাদ ইবনু আবদিস সামাদ সম্পর্কে “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তাকে ইবনু
হিব্বান দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনি আনাস (রাঃ) হতে একটি কপি বর্ণনা
করেছেন যার সবই জাল (বানোয়াট)।
সুয়ুতী হাদীসটি “যায়লুল আহাদীসিল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃ. ৪১) দাইলামীর
বর্ণনা থেকে মুহাম্মাদ ইবনু রাওহ হতে উল্লেখ করেছেন। অতঃপর ইবনু হিব্বানের বক্তব্য
উল্লেখ করে হাদীসটির সমস্যার কথাও বলেছেন। যা সবে মাত্র উল্লেখ করলাম। তিনি আরো বলেছেনঃ
বুখারী বলেনঃ আব্বাদ ইবনু আবদিস সামাদ মুনকারূল হাদীস। “আল-মুগনী” গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ
মুয়াম্মিলকে আবু হাতিম দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ূতী হাদীসটিকে "জামেউস সাগীর"
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজেও জাল হিসাবে হুকুম লাগানোর পর কীভাবে তিনি তা করলেন!
হাফিয ইরাকী “তাখরাজুল ইহইয়া” গ্রন্থে (১/৭) বলেছেনঃ এটির সনদ দুর্বল।
তার এ কথা প্রমাণ করে না যে, এটি জাল নয়। কারণ জাল হাদীসও য’ঈফ হাদীসেরই একটি প্রকার।
অতএব কোন দ্বন্দ্ব নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
(সমাপ্ত)
জাল-জইফ হাদিসের অন্যান্য পর্ব দেখতে এদের উপর ক্লিক করুন।
১। প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
জাল-জইফ হাদিসের অন্যান্য পর্ব দেখতে এদের উপর ক্লিক করুন।
১। প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন
রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email
Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে
ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের
(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ
থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর
কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ
মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের
প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের
সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর
তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।”
[মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি
আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে
আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১, হাদিস সম্ভার, হাদিস
নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড
(ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি
চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
Please Share On
No comments:
Post a Comment