বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাল হাদিসের কবলে
বাংলাদেশের আলেম সমাজ (২০০০টি জাল ও জঈফ হাদিস)-প্রচারে-PMMRC
( তৃতীয় পর্ব)
বাংলাদেশে হাজার হাজার
মুফতি, মুহাদ্দিস, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক (আলিম ও কওমী), কোরআনের
হাফেজ, হাদিসের হাফেজ, পির-অলি, ওযাজকারী, তাবলীগ জামায়াত, জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অসংখ্য ইসলামী সংগঠন আছে। এরা প্রত্যেকেই
ইসলামের দাওয়াতী কাজ করেন। তারা নিজেরা আমল করেন ও সেই আমল তাদের অনুসারীদেরকেও
শিখিয়ে দেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলছে দাওয়াতী কাজ। কিন্তু দেখা যায়, তাদের আমলের
বা দাওয়াতী কাজের ৯৫%-ই জাল ও জঈফ হাদিস ভিত্তিক। একজন মসজিদের ইমাম,
তিনি একজন কোরআনের হাফেজ আবার মুফতি কিংবা কোনো মাদ্রাসার শিক্ষক। এই ইমাম সাহেব
যখন বাংলা খোতবা দেন আর যখন জাল ও জঈফ হাদিসগুলো বর্ণনা করেন তখন মনে হয় এরা কোনো
পড়াশোনাই করেননি। আর পড়াশোনা করলেও তাদের পাঠ্য পুস্তকগুলোই জাল ও জঈফ হাদিসে
ভরপুর। তাদের ওস্তাদগণও একই শিক্ষায় শিক্ষিত। যার ফলে তাদের সাগরেদরা ঐ ওস্তাদদের
শুধুই অন্ধ অনুকরন করেই চলছে। একবারও তারা চিন্তা করে দেখা না যে, তাদের শিক্ষা
বিদআতী শিক্ষা কিনা। যাই হোক যারা বিদআতী শিক্ষায় শিক্ষিত তাদেরকে চোখে আঙ্গুল
দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্যই জাল ও জঈফ হাদিসগুলো দেয়া হলো। আপনারা পড়বেন আর অন্যদেরকে
নতুন করে শিখিয়ে দিবেন। এতোদিন যে ভুলের উপর আমল করে আসছেন তা কিন্তু আল্লাহর
দরবারে কবুল হয়নি। তাই তওবা করে সহীহ হাদিসের পথে ফিরে আসবেন এই অনুরোধ সকলের
প্রতি রইল। এবার আওয়াজ তুলুন:- সহীহ হাদিসের আগমন, বিদআত পলায়ন।
হাদিস নম্বরঃ ১৫১ | 151
| ۱۵۱
১৫১। মাকড়সা হচ্ছে শয়তান আল্লাহ তার রূপ পরিবর্তন করে দিয়েছেন। অতএব
তোমরা তাকে হত্যা কর।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী (১/৩২০) মাসলামা ইবনু আলী আল-খুশানী সূত্রে ... বর্ণনা
করেছেন। এ মাসলামা সম্পর্কে ১৪১, ১৪৫, ১৫০ নং হাদীসে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া হাদীসটি বাতিল হওয়ার প্রমাণ এই যে, এটি সহীহ্ হাদীস বিরোধী।
সহীহ্ হাদীসে এসেছে, إن الله لم يجعل لمسخ نسلا ولا عقبا "আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক রূপ পরিবর্তনকৃত জীবের কোন বংশধর এবং পরবর্তী
প্রজন্ম রাখেননি।" হাদীসটি ইমাম মুসলিম (৮/৫৫) বর্ণনা করেছেন।
ইবনু হাযম “আল-মুহাল্লা” গ্রন্থে (৭/৪৩০) বলেনঃ বানর ও শুকর ব্যতীত
যে সব প্রাণীর রূপ পরিবর্তন মর্মে হাদীস এসেছে সেগুলো বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। সুয়ূতী
অভ্যাসগতভাবে তার বিরোধিতা করে হাদীসটি "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫২ | 152 | ۱۵۲
১৫২। তোমার সুস্থতা প্রার্থনা কর ঐ বস্তু দ্বারা যার দ্বারা আল্লাহ
তার নিজের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন সৃষ্টি কর্তৃক তার প্রশংসা করবার পূর্বেই এবং ঐ বস্তু
দ্বারা যা দিয়ে আল্লাহ তার নিজের প্রশংসা করেছেন। তথা আলহামদু লিল্লাহ্ ও কুলহু আল্লাহু
আহাদ। যে ব্যাক্তিকে কুরআন সুস্থ করতে পারে না, আল্লাহ তাকে শেফা দান করবেন না।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি আবু মুহাম্মাদ আল-খাল্লাল “ফাযায়েল কুল-হু আল্লাহু আহাদ” গ্রন্থে
(২/১৯৮) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ওয়াহিদী তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (২/১৮৫/২) ও সা'লাবী
বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে ইবনু হাজার-এর "তাখরীজ আহাদীসিল কাশশাফ" গ্রন্থে
(পৃঃ ১০৩ নং ৩০৪) এসেছে। এটির সনদে আহমাদ ইবনুল হারিস আল-গাসসানী নামক এক বর্ণনাকারী
আছেন। তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত-তা’দীল” গ্রন্থে (১/১/৪৭) বলেনঃ
আমি আমার পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেনঃ তিনি মাতরূকুল হাদীস।
নাসাঈ বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। বুখারী ও দুলাবী বলেনঃ তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য
রয়েছে। উকায়লী বলেনঃ তার বহু মুনকার রয়েছে। সেগুলোর অনুসরণ করা যায় না।
এছাড়া আরেক বর্ণনাকারী রাজা আল-গানাবীর কোন বর্ণনা সম্পর্কে জানা যায়
না। সাহাবীর সাথে তার সাক্ষাৎও ঘটেনি। যাহাবী “তারীখুস সাহাবা” গ্রন্থে এ হাদীসটি সহীহ
নয় এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
সহীহ হাদীসের মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হে
আল্লাহর বান্দারা তোমরা ঔষুধ সেবন কর, কারণ আল্লাহ তা'আলা যে রোগই নাযিল করেছেন তার
ঔষুধও নাযিল করেছেন। হাদীসটি সহীত সনদে হাকিম বর্ণনা করেছেন। "গায়াতুল মারাম"
গ্রন্থে (২৯২) এটির তাখরীজ করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৩ | 153 | ۱۵۳
১৫৩। যে ব্যাক্তি কুরআন ব্যাতিত অন্য কিছু দ্বারা সুস্থতা প্রার্থনা
করবে, আল্লাহ তাকে সুস্থ করবেন না।
হাদীসটি জাল।
সাগানী এটিকে “আল-আহাদীসুল মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ১২) উল্লেখ করেছেন।
শাইখ আজলুনীও এটিকে “আল-কাশফ” গ্রন্থে (২/৩৩২) জাল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির মূলটি পূর্বের হাদীসেই আলোচিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৪ | 154 | ۱۵٤
১৫৪। দানশীল ব্যাক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, নিকটবর্তী জান্নাতের এবং নিকটবর্তী
মানুষের আর দূরবর্তী জাহান্নামের। অপরপক্ষে কৃপণ ব্যাক্তি আল্লাহর থেকে দূরে, জান্নাত
থেকে দূরে এবং লোকেদের থেকেও দূরে আর নিকটবর্তী জাহান্নামের। অজ্ঞ দানশীল আল্লাহর নিকট
বেশী প্রিয় বখীল আবেদ থেকে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
হাদীসটি তিরমিযী (৩/১৪৩), উকায়লী "আয-যুয়াফা" গ্রন্থে
(১৫৪), ইবনু হিব্বান "রাওযাতুল ওকালা" গ্রন্থে (পৃঃ ২৪৬), ইবনু আদী (২/১৮৩)
এবং তাবারী “আত-তাহযীব” গ্রন্থে (মুসনাদু উমার ১০০/১৬৩) সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-ওররাক
সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন। তিরমিযী বলেছেনঃ এ হাদীসটি গারীব, সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ ছাড়া
অন্য কোন মাধ্যমে এটিকে চিনি না, এ কথার দ্বারা তিনি এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
এ সাঈদ সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না [তাকে মূল্যায়ন করা
হয় না]। ইবনু সায়াদ ও অন্যরা বলেনঃ তিনি দুর্বল। নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মাতরূক।
এছাড়া এটির সনদে ইযতিরাব সংঘটিত হয়েছে। একবার একজন হতে বর্ণনা করেছেন
আবার অন্যজন হতে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (২/১৮০)
উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। অতঃপর তিনি সহীহ না হওয়ার কারণ বর্ণনা করেছেন। আবু
হাতিম ওররাকের এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেনঃ হাদীসটি মুনকার। ইমাম আহমাদও অনুরূপ কথা বলেছেন।
আবু হাতিম হাদিসটির অন্য সুত্রটির সময় বলেছেনঃ এ হাদিসটি বাতিল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৫ | 155 | ۱۵۵
১৫৫। আমার উম্মতের শাক-সবজি হচ্ছে আঙুর এবং তরমুজ।
হাদীসটি জাল।
এটি দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/১৭৬-১৭৭) এবং ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু’আত”
গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মাহদী সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু যাউ ইবনে দালহামাস
হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওযী বলেন মুহাম্মদ ইবনু যাউ মিথ্যুক অসৎ চরিত্র প্রকাশকারী।
সুয়ূতী তার (ইবনুল জাওযীর) এ কথাকে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২১০) এবং ইবনু আররাক
"তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২/৩১৭) সমর্থন করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মাহদী নিতান্তই দুর্বল,
যেরূপভাবে দারাকুতনী বলেছেন। ইবনুল কাইয়্যিম হাদীসটি “আল-মাওযূ’আত” এবং “আল-মানার”
গ্রন্থে (পৃঃ ২১) উল্লেখ করেছেন। শাইখ আল-কারীও তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ১০৭-১০৮)
হাদীসটি যে জাল তা সমর্থন করেছেন। ১৬৭ নং হাদীসের শেষে সাখাবী বলেছেনঃ তরমুজের ফীলতে
বর্ণনাকৃত সকল হাদীস বাতিল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৬ | 156 | ۱۵٦
১৫৬। মন্দ ধারনা পোষণের দ্বারা তোমরা লোকেদের থেকে নিরাপদে থাক।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
হাদীসটি তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/৩৬/১/৫৯২) এবং ইবনু আদী
(৬/২৩৯৮) বাকিয়ার সূত্রে মুয়াবিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন। হায়সামী "আল-মাজমা"
গ্রন্থে (৮/৮৯) বলেনঃ বাকিয়া মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। তাছাড়া অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ
নির্ভরযোগ্য। তিনি যেমনটি বলেছেন সেরূপই। মুয়াবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া নিতান্তই দুর্বল।
তাকে কেউ নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার সম্পর্কে ১৩৬ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া
হাদীসটি ঈসা ইবনু ইবরাহীম সূত্রে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। এ ঈসা
হচ্ছেন হাশেমী, তিনি নিতান্তই দুর্বল। ।
এছাড়াও অন্য সনদে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। সেটিও দুর্বল। এটি
আবু নু’য়াইম “আখবার আসবাহান” গ্রন্থে (২/২০২) বর্ণনা করেছেন। ইবনু সা'দ এটিকে (২/১৭৭)
হাসান বাসরীর কথা হিসাবে সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আমার নিকট হাদীসটি মুনকার। এটি বহু সহীহ হাদীসের
বিপরীত হওয়ার কারণে। যেগুলোতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্দ ধারণা পোষণ
করতে নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ إياكم والظن فإن الظن أكذب الحديث "তোমরা মন্দ ধারণা পোষণ করা হতে বেঁচে থাক, কারণ মন্দ ধারণা পোষণ
সর্বাপেক্ষা বড় মিথ্যা কথা..."।
এটি ইমাম বুখারী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া খারাপ ধারণা পোষণ করে মানুষের সাথে কোন প্রকার মুয়ামালাত করাও
সম্ভব নয়। অতএব তিনি কীভাবে খারাপ ধারণা করার নির্দেশ দিতে পারেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৭ | 157 | ۱۵۷
১৫৭। খরচ করতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন হচ্ছে জীবন ধারনের অর্ধেক। লোকেদের
ভালবাসা হচ্ছে বিবেকের অর্ধেক এবং উত্তমরূপে প্রশ্ন করা হচ্ছে জ্ঞানের অর্ধেক।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে তাবারানীর “মাকারিমুল আখলাক”
এবং বাইহাকীর “আশ-শু'য়াব” গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার মানাবী
এটির উপর হুকুম লাগানো হতে চুপ থেকেছেন, অথচ এটি দুর্বল। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল”
গ্রন্থে (২/২৮৪) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে মাখীস ইবনু তামীম এবং তার শাইখ হাফস ইবনু উমার
কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেনঃ এটি বাতিল হাদীস,
মাখীস এবং হাফস তারা উভয়েই মাজহুল (অপরিচিত)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ অনুরূপ কথা যাহাবী মাখীসের জীবনীতে বলেছেন। তিনি
আরো বলেছেন যে, তার থেকে হিশাম ইবনু আম্মার মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার তার কথাকে সমর্থন
করেছেন। হাদীসটি কাযাঈ “মুসনাদুশ-শিহাব” গ্রন্থে (১/৫৫/৩৩) হাদীসটি এ সূত্রেই উল্লেখ
করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৮ | 158 | ۱۵۸
১৫৮। এক দিনারের বিনিময়ে এক গ্লাস পানি দ্বারা হলেও তোমরা জুম’আর দিবসে
গোসল কর।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইবনুল জাওযী “মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/১০৪) বর্ণনাকারী ইবনু হিব্বান
পর্যন্ত আযদীর বর্ণনায় তার সনদে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযী বলেনঃ ইবনু হিব্বান হচ্ছেন
ইবরাহীম ইবনুল বুহতারী। তিনি সাকেত (নিক্ষিপ্ত), তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম ইবনু বাররা। তার একটি জাল হাদীস
পূর্বে (নং ১১৪) আলোচিত হয়েছে। তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
সেখানে তার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৬) ইবনুল জাওযীর সমালোচনা করে বলেছেনঃ
এটির অন্য সূত্রও রয়েছে, যেটি ইবনু আদী বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ সনদে হাফস্ ইবনু উমার
রয়েছেন। তিনি একজন মিথ্যুক, যেমনটি আবু হাতিম বলেছেন। সেটিকে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি তার কতিপয় অন্য হাদীসও উল্লেখ করেছেন।
এ কারণেই ইবনু আররাক বলেন (২/২৪৮) এটি শাহেদ হবার উপযোগী নয়।
হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনু আদীর বর্ণনায় আবূ হুরাইরাহ
(রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে মওকুফ হিসাবে
ইবনু আবী শায়বাও (১১/২০/২) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটির সনদে যিয়াদ ইবনু আবদিল্লাহ
নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তিনি দুর্বল, যেমনভাবে “আত-তাকরীব” গ্রন্থে এসেছে।
মোটকথা হাদীসটি মারফূ' হিসাবে জাল (বানোয়াট) আর মওকুফ হিসাবে য'ঈফ।
যেখানে জুম'আর দিবসে গোসল করার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে নির্দেশ এসেছে, সেখানে জাল-দুর্বল
হাদীসের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৫৯ | 159 | ۱۵۹
১৫৯। নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ জুম’আর দিবসে পাগড়ী ধারীদের প্রতি
দয়া করেন।
হাদীসটি জাল।
তাবারানী "আল-মুজামুল কাবীর" গ্রন্থে এবং আবু নু’য়াইম তার
সূত্রে "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৫/১৮৯-১৯০) ‘আলী ইবনু আমর হানাফী সূত্রে আইউব
ইবনু মুদরেক হতে ... বর্ণনা করেছেন।
এটিকে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/১০৫) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
এটির কোন ভিত্তি নেই। আইউব এককভাবে এটির বর্ণনাকারী। আযদী তার সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদীসটি
তিনিই জাল করেছেন। ইয়াহইয়া তাকে মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন আর দারাকুতনী তাকে প্রত্যাখ্যান
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে
(২/১৭৬) রয়েছেন। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেছেনঃ তিনি মিথ্যুক। এ কথাটি তার থেকে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
ইবনু হাজার-এর "লিসানুল মীযান" গ্রন্থে এসেছে; উকায়লী বলেনঃ
তিনি এমন সব মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেগুলোর অনুসরণ করা যায় না। তিনি পাগড়ীর
হাদীসের ক্ষেত্রে বলেনঃ তার অনুসরণ করা যায় না।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আইউব হতে বর্ণনাকারী আলী ইবনু আমর হানাফী মিথ্যার
দোষে দোষী। ইবনু আদী অন্য একটি সনদে হাদীসটি (১/১৮) বর্ণনা করে বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬০ | 160 | ۱٦۰
১৬০। আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী। এ
তিনটি কারণে তোমরা আরবদের মুহাব্বাত কর।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি হাকিম “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থে (৪/৮৭) এবং “মারিফাতু উলুমিল
হাদীস” গ্রন্থে (পৃঃ ১৬১-১৬২), উকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (৩২৭), তাবারানী “মুজামুল
কাবীর” (৩/১২২/১) ও “আল-আওসাত” গ্রন্থে, তাম্মাম “আল-ফাওয়াইদ” গ্রন্থে (১/২২) এবং
তার সূত্রে যিয়া আল-মাকদেসী "সিফাতুল জান্নাহ" গ্রন্থে (৩/৭৯/১), বাইহাকী
“শুয়াবুল ঈমান” গ্রন্থে, ওয়াহেদী তার "আত-তাফসীর" গ্রন্থে (১/৮১) এবং ইবনু
আসাকির ও আবূ বাকর আল-আম্বারী “ইযাহুল ওয়াকফ ওয়াল ইবতিদা” গ্রন্থে ‘আলী ইবনু আমর
হানাফী সূত্রে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল-আশয়ারী হতে, তিনি ইবনু যুরায়েজ হতে ...
বর্ণনা করেছেন।
এটির সনদ তিনটি কারণে বানোয়াট।
১। 'আলা ইবনু আমর; যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার সম্পর্ক বলেনঃ তিনি
মাতরূক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ কোন অবস্থাতেই তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নয়। অতঃপর
তার এ হাদীসটি উকায়লীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেনঃ এটি বানোয়াট। আবু হাতিম বলেনঃ এটি
মিথ্যা। অতঃপর তার অন্য একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ এটিও মিথ্যা। হাফিয ইবনু হাজার
“লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেন, আযদী বলেছেনঃ তার হাদীস লিখা যাবে না। ইবনু হিব্বান
তাকে “আস-সিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। নাসাঈ বলেনঃ তিনি দুর্বল। আবু হাতিম বলেনঃ
তার নিকট হতে লিখেছি, ভাল ছাড়া তার মধ্যে অন্য কিছু দেখিনি। সম্ভবত ইবনু হিব্বান ও
আবু হাতিম কর্তৃক দু’ধরনের কথা এ কারণে এসেছে যে, তারা তার জাল হাদীস বর্ণনা করা সম্পর্কে
অবহিত হওয়ার পূর্বেই তার ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করেছিলেন। অতঃপর তার সম্পর্কে জানার
পর খারাপ মন্তব্য করেছেন।
ইবনু আবী হাতিম উক্ত হাদীসটি “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৩৭৫-৩৭৬) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ আমি আমার পিতাকে যে হাদীসটি 'আলা হানাফী বর্ণনা করেছেন সেটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম, আমি তাকে উত্তরে বলতে শুনেছিঃ এ হাদীসটি মিথ্যা। হাফিয ইবনু হাজার “আল-লিসান”
গ্রন্থে তার জীবনীতে বলেনঃ উকায়লী হাদীসটির তাখরীজ করে বলেছেনঃ এটি মুনকার, মতনটি
(ভাষাটি) দুর্বল। এর কোন ভিত্তি নেই। অতঃপর তিনি (ইবনু হাজার) তার কথাকে সমর্থন করেছেন।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/৫২) বলেনঃ 'আলা ইবনু আমর দুর্বল এ মর্মে সকলে
একমত।
২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইবনু
নুমায়ের বলেনঃ তিনি একটি খেজুরের সমতুল্যও নন। আবু যুরীয়াহ বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে বলেছেনঃ তাকে সাজী, উকায়লী ও ইবনু জারুদ দুর্বলদের
অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। তার সমালোচনা করে যাহাবী
বলেনঃ তাকে ইমাম আহমাদও দুর্বল বলেছেন। অন্য সূত্রে তার স্থলে মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল
এসেছে, তিনি মিথ্যার দোষে দোষী। আমার ধারণা হাদীসটি বানোয়াট। হাফিয ইরাকীও তার সমালোচনা
করে বলেনঃ তিনি যা বলেছেন তেমনটি নয়, বরং তিনি দুর্বল। কারণ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াযীদ
ও তার থেকে বর্ণনাকারী আলা ইবনু আম্বর তারা উভয়েই দুর্বল।
৩। ইবনু যুরায়েজ একজন মুদল্লিস বর্ণনাকারী। ইমাম আহমদ বলেনঃ এসব হাদীসগুলোর
কতিপয় হাদীসকে ইবনু যুরায়েজ মুরসাল হিসাবে উল্লেখ করতেন। সেগুলো বানোয়াট। তিনি কোথা
হতে গ্রহণ করছেন তার পরওয়া করতেন না। অনুরূপ কথা “আল-মীযান” গ্রন্থেও এসেছে। ইবনুল
জাওযী হাদীসটি "আল-মাওযুআত" গ্রন্থে (২/৪১) উকায়লীর সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেনঃ
উকায়লী বলেছেনঃ এটি মুনকার, এর কোন ভিত্তি নেই। ইবনুল জাওযী বলেনঃ ইয়াহইয়া উলট পালটকৃত
হাদীস বর্ণনা করতেন। সুয়ূতী ইবনু হিব্বান সহ অন্য যারা হাদীসটি সম্পর্কে ভাল মন্তব্য
করেছেন তা “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/৪৪২) উল্লেখ করে হাদীসটি গ্রহণযোগ্য এদিকে ইঙ্গিত
করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করেননি যে, এক ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল এবং খারাপ মন্তব্য উভয়টি
হলে খারাপ মন্তব্যটিই অগ্রাধিকার পায়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ১৬১ | 161 | ۱٦۱
১৬১। আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতিদের ভাষা আরবী।
হাদীসটি জাল।
তাবারানী "আল-মুজামুল আওসাত" গ্রন্থে হাদীসটি (২/২৮৫/১/৯৩০১)
উল্লেখ করেছেন। তার সূত্রে আব্দুল আযীয ইবনু ইমরান রয়েছেন, তিনি তার শাইখ । শিব্ল
ইবনু 'আলা হতে ... বর্ণনা করেছেন। তাবারানী বলেনঃ আব্দুল আযীয এটিকে শিবল হতে এককভাবে
বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী এটিকে পূর্বে উল্লেখিত হাদীসটির শাহেদ হিসাবে "আল-লাআলী"
(১/৪৪২) গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন, যাহাবী "আল-মুগনী" গ্রন্থে বলেছেনঃ শিবল
সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তার কতিপয় মুনকার রয়েছে। হায়সামী "আল-মাজমা"
গ্রন্থে (১০/৫২-৫৩) এটিকে উল্লেখ করে বলেছেনঃ শিবল হতে বর্ণনাকারী আব্দুল আযীয মাতরুক।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য
নন।
হাফিয ইরাকী “আল-মুহাজ্জা” (১/৫৬) গ্রন্থে বলেনঃ আব্দুল আযীয মাতরূক।
নাসাঈ ও অন্যরাও এ কথা বলেছেন। তার সম্পর্কে বুখারী বলেনঃ لا يكتب حديثه তার হাদীস লিখা যাবে না। অতএব হাদীসটি সঠিক নয়।
ইবনু আররাক “তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২০৯) উক্ত বক্তব্যকে
সমর্থন করেছেন। হাদীসটি বাতিল হওয়ার আরো প্রমাণ এই যে, এর মধ্যে রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আরবী হওয়ার অহংকার ফুটে উঠেছে। যা শরীয়াতের মধ্যে দুর্বল
বিষয়। কারণ আল্লাহ্ বলেনঃ إن أكرمكم عند الله أتقاكم যে তোমাদের মধ্যে বেশি
মুত্তাকী সেই তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি" (সূরা হুজুরাতঃ ১৩)।
এছাড়া সহীহ্ হাদীসে এসেছে, “কোন আরবের অনারবের উপর প্রাধান্য নেই
... একমাত্র তাকওয়া ব্যতীত।" এটি ইমাম আহমাদ (৫/৪১১) সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
(সিলসিলাতুস সাহীহা হাঃ নং ২৭০০)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬২ | 162 | ۱٦۲
১৬২। আল্লাহ যখন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে নিজের আলোক রশ্মি প্রকাশ করলেন,
অর্থাৎ তুর পাহাড়ের জন্য। তখন ছয়টি পাহাড় তার সম্মানার্থে উড়ে গিয়াছিল। অতঃপর তিনটি
গিয়ে পড়ে মদিনায় আর তিনটি মক্কায়। মদিনায় হচ্ছে উহুদ, ওরাকান ও রাযওয়া, আর মক্কায় হচ্ছে
হেরা, সবীর ও সাওর।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি মাহামিলী “আল-আমালী” গ্রন্থে (১/১৭২/১) বর্ণনা করেছেন এবং তার
সূত্রে খাতীব বাগদাদী “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১০/৪৪০-৪৪১), ইবনুল আরাবী তার “আল-মু'জাম"
গ্রন্থে (২/১৬৬) এবং ইবনু আবী হাতিম তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে আব্দুল আযীয ইবনু ইমরান
সূত্রে মুয়াবিয়া ইবনু আবদিল্লাহ হতে, তিনি জিলদ ইবনু আইউব হতে ... বর্ণনা করেছেন।
ইবনু কাসীর হাদীসটি সম্পর্কে তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (২/২৪৫) বলেনঃ
এটি গারীব হাদীস, বরং মুনকার ।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে আব্দুল আযীয ইবনু ইমরান,
কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। তার সম্পর্কে ১৬১ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া এটির সনদে জিলদ ইবনু আইউব রয়েছেন। তার সম্পর্কে দারাকুতনী বলেনঃ
তিনি মাতরূক ।
হাদীসটি ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/১২০) খাতীব বাগদাদীর সূত্রে
উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইবনু হিব্বান বলেনঃ এটি বানোয়াট, আব্দুল আযীয মাতরূক। তিনি প্রসিদ্ধ
বর্ণনাকারীদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৩ | 163 | ۱٦۳
১৬৩। যখন আরবদের পদস্খলন ঘটবে তখন ইসলামেরই পদস্খলন ঘটবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি আবূ নু’য়াইম “আখবার আসবাহান” গ্রন্থে (২/৩৪০) বর্ণনা করেছেন।
অনুরূপ ভাবে আবু ইয়ালা তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৩/৪০২/১৮৮১) বর্ণনা করেছেন। যার সূত্রে
মুহাম্মাদ ইবনুল খাত্তাব বাসরী ও তার শাইখ আলী ইবনু যায়েদ রয়েছেন।
ইবনু আবী হাতিমও “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৩৭৬) উল্লেখ করে বলেছেনঃ আমি
আমার পিতাকে মানসূর ইবনু আবী মাযাহিম কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
আমার পিতাকে উত্তরে বলতে শুনেছিঃ এ হাদীসটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটির সমস্যা দুটিঃ
১। মুহাম্মাদ ইবনুল খাত্তাব; তিনি মাজহুলুল হাল। তার সম্পর্কে ইবনু
আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (৩/২/২৪৬) বলেনঃ আমার পিতাকে তার সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি উত্তরে বলেনঃ আমি তাকে চিনি না। “আল-মীযান” গ্রন্থে এসেছে,
আযদী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। অতঃপর এ হাদীসটি উল্লেখ করে মুনকার হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত
করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে তার কথাকে সমর্থন করেন।
ইবনু হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বললেও তার নির্ভরযোগ্য বলা গ্রহণযােগ্য
নয়। এ মর্মে পূর্বে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে যখন তার বিরোধী মতামত
থাকবে।
২। মুহাম্মাদের শাইখ আলী ইবনু যায়েদ হচ্ছেন ইবনু জাদ'য়ান, তিনি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৪ | 164 | ۱٦٤
১৬৪। মুদাব্বার দাস (যাকে তার মালিক নিজের মৃত্যুর পর মুক্ত করার ঘোষণা
দিয়েছে) বিক্রি করা যাবে না, হেবা করাও যাবে না, এক তৃতীয়াংশ হতে সে স্বাধীন (মুক্ত)।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি দারাকুতনী (পৃঃ ৩৮৪) ও বাইহাকী (১০/৩১৪) আবীদা ইবনু হাসসান
হতে, তিনি আইউব হতে ... বর্ণনা করেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ আবীদা ছাড়া অন্য কেউ এটিকে
মুসনাদ হিসাবে বর্ণনা করেননি। আর আবীদা হচ্ছেন দুর্বল। এটি ইবনু উমার (রাঃ) হতে মওকুফ
হিসাবেও বর্ণিত হয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু হাতিম বলেনঃ আবীদা মুনকারুল হাদীস। তার সম্পর্কে
ইবনু হিব্বান (২/১৮৯) বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন।
নিঃসন্দেহে এটি সে সব জালগুলোর একটি। কারণ বুখারী (৫/২৫) এবং মুসলিম শরীফে (৫/৯৭) জাবের
(রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে মুদাব্বার দাস
বিক্রি করেছেন।
আলোচ্য হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (২/১০৪), উকায়লী, দারাকুতনী ও বাইহাকী
আলী ইবনু যিবইয়ান সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনু মাজাহ বলেছেনঃ এর কোন ভিত্তি নেই।
অর্থাৎ মারফু' হিসাবে।
উকায়লী বলেনঃ আলী ইবনু যিবইয়ান ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে এটি জানা যায়
না। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস।
ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৪৩২) বলেনঃ আবু যুরয়াহকে এ ‘আলীর হাদীস সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি বলেনঃ এ হাদীসটি বাতিল, তা পাঠ করা হতে বিরত থাক।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৫ | 165 | ۱٦۵
১৬৫। তোমরা তীন ফল (ডুমুর) খাও। আমি যদি বলি যে, জান্নাত হতে বীচি ছাড়া
একটি ফল নাযিল হয়েছে, তাহলে বলবঃ সেটি হচ্ছে তীন ফল (ডুমুর)। তা অর্শ্ব রোগকে দুরিভুত
করে এবং নুকরাস নামক রোগের জন্য উপকার করে।
হাদীসটি দুর্বল।
হাদীসটি সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ইবনুস সুন্নী এবং আবু নু’য়াইম-এর
বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। দাইলামী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৬/৪৭) আবূ যার (রাঃ) হতে বিনা
সনদে উল্লেখ করেছেন। মানাবী বলেনঃ তারা সকলে ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর-এর হাদীস হতে
একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সনদটি দুর্বল, কারণ নামহীন এ নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি
কে তা জানা যায় না। এ জন্য ইবনুল কাইয়্যিম “যাদুল মায়াদ" গ্রন্থে (৩/২১৪) বলেছেনঃ
এটি সাব্যস্ত হতে বিরূপ মন্তব্য আছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আমার বেশীর ভাগ ধারণা এ হাদীসটি জাল। শাইখ আজলুনী
“আল-কাশফ” গ্রন্থে (১/৪২৩) বলেনঃ ফাকিহা (ফল-মূল) সম্পর্কে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে
সবই জাল (বানোয়াট)। সম্ভবত তিনি বুঝিয়েছেন ফযীলত সম্পর্কে যত হাদীস হয়েছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৬ | 166 | ۱٦٦
১৬৬। আহলে বাইতের খাদ্য কমে যায়, ফলে তাদের ঘর আলোকিত হয়।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আবিদ-দুনিয়া “কিতাবুল জু” গ্রন্থে (১/৫), উকায়লী “আয-যুয়াফা”
গ্রন্থে (২২২), এবং তার নিকট হতে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু আত” গ্রন্থে (৩/৩৫), ইবনু আদী
(১/৮৯) ও তাবারানী “আল-আওসাত” গ্রন্থে (২/১৫/৫২৯৮) আব্দুল্লাহ ইবনু মুতাল্লিব আল-আজালী
সূত্রে হাসান ইবনু যাকওয়ান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মুতাল্লিব ছাড়া অন্য কেউ হাদীসটি হাসান
হতে বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ যাহাবী তাকে (আব্দুল্লাহকে) “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে
উল্লেখ করে বলেছেনঃ তাকে চেনা যায় না।
ইবনুল জাওযী বলেনঃ এটি সহীহ্ নয়। উকায়লী বলেনঃ আব্দুল্লাহ মাজহুল,
তার হাদীস মুনকার, নিরাপদ নয়। ইমাম আহমাদ বলেনঃ হাসান ইবনু যাকওয়ান এর হাদীসগুলো
বাতিল।
হাফিয সুয়ূতী তার এ কথাকে "আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/২৫৩) সমর্থন
করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি তাবারানীর বর্ণনায় "জামেউস সাগীর” গ্রন্থে এ একই সনদে
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/৫) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে
এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেনঃ এ হাদীসটি মিথ্যা আর আব্দুল্লাহ
মাজহুল।
হাফিয যাহাবী "আল-মীযান গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটি মুনকার। তার এ
কথাকে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৭ | 167 | ۱٦۷
১৬৭। খাদ্য গ্রহণের পূর্বে তরমুজ খেলে তা পেটকে ধৌত করে এবং রোগকে সমূলে
বিনাশ করে।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইবনু আসাকির “তারীখু দেমাস্ক” গ্রন্থে (২/২৮২, ১০/২৮৭) বর্ণনা
করেছেন এবং যাহাবী আহমাদ ইবনু ইয়াকুব ইবনে আবদিল জাব্বার আল-জুরজানীর জীবনী বর্ণনা
করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন।
ইবনু আসাকির বলেনঃ এটি শায, সহীহ্ নয়। মানাবী “আত-তায়সীর” গ্রন্থে
বলেনঃ আসলেই এটি সহীহ নয়। ইয়াকুব বহু মাওযু হাদীস বর্ণনা করেছেন। সে সব থেকে কিছু
বর্ণনা করা আমি বৈধ মনে করি না। এটি সেগুলোর একটি। হাকিম বলেনঃ এ আহমাদ হাদীস জালকারী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ জাল হাদীসটি “আল-মীযান” গ্রন্থ হতে নকল করা হয়েছে।
এটি জাল হওয়ার বিষয়ে তার সাথে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে ঐকমত্য পোষণ
করেছেন। সুয়ূতী নিজেও হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ১৩৬/৬৪৫) উল্লেখ করে
জাল হওয়ার কারণ দর্শিয়েছেন সেভাবে যেভাবে ইবনু আসাকির ও যাহাবী বলেছেন। তার সাথে
ইবনু আররাকও (১/৩৩১) ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে
হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
হাফিয সাখাবী “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বলেছেন (আরেক দল তার অনুসরণ
করেছেন), আবু আমর নূকানী তরমুজের ফযীলত বর্ণনা করে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। এর সবগুলোই
বাতিল ।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৮ | 168 | ۱٦۸
১৬৮। খ্যাদের বরকত হচ্ছে তার পূর্বে ও পরে ওযু করাতে।
হাদীসটি দুর্বল।
এটিকে তায়ালিসী তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (৬৫৫) উল্লেখ করেছেন। এছাড়া
আবু দাউদ (৩৭৬১) ও তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী হতে বাগাবী "শারহুস
সুন্নাহ" গ্রন্থে (৩/১৮৭/১), হাকিম (৪/১০৬-১০৭) ও ইমাম আহমাদ (৫/৪৪১) বিভিন্ন
সূত্রে কায়স ইবনু রাবী' হতে ... হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ বলেনঃ তিনি দুর্বল।
তিরমিযী বলেনঃ এ হাদীসটি শুধুমাত্র কায়স ইবনু রাবী' হতেই চিনি। এ কায়স হাদীসের ক্ষেত্রে
দুর্বল। যাহাবী বলেনঃ কায়স দুর্বল হওয়া ছাড়াও এটি মুরসাল। ইমাম আহমাদকে এ হাদীসটি
সম্পর্কে মুহান্না জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বলেনঃ এটি মুনকার। কায়স ইবনু রাবী' ব্যতীত
অন্য কেউ এটিকে বর্ণনা করেননি।
ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/১০) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে এ হাদীসটি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ এটি মুনকার হাদীস। কোন কোন সিথিলতা প্রদর্শনকারী
ব্যক্তি এটিকে হাসান বলার চেষ্টা করেছেন, যেমন মুনযেরী। কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য নয়,
সেই সব মুহাদ্দিসগণের কারণে যারা এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবার তারা সেটিকে দুর্বলও
বলেছেন। তারাই এ বিষয়ে বেশী অভিজ্ঞ।
“আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/১০) এসেছে আবূ হাতিম বলেনঃ এ হাদীসটির সাদৃশ্যতা
রয়েছে আবূ খালিদ ওয়াসেতী (আমর ইবনু খালিদ) এর হাদীসের সাথে। তার নিকট আবু হাশিম হতে
এরূপ জাল হাদীস রয়েছে। তিনি হচ্ছেন একজন মিথ্যুক। হাদীসটি যদি তার হয় তাহলে এটি বানোয়াট।
সুফিয়ান সাওরী খাবারের পূর্বে ওযু করাকে অপছন্দ করতেন। বাইহাকী বলেনঃ
মালিক ইবনু আনাস ওযু করাকে (খাবারের পূর্বে ওযু করাকে) মাকরূহ মনে করতেন। ইমাম শাফে'ঈ
ওযু ছেড়ে দেয়াকে মুস্তাহাব জানতেন। তারা তাদের সমর্থনে মুসলিম, আবু দাউদ এবং তিরমিযীতে
বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট খাবার উপস্থিত করা হলে কেউ বললঃ আপনি কী ওযু করবেন না? তখন তিনি বললেনঃ “আমি তো
(এখন) সলাত আদায় করব না যে, তার জন্য ওযু করব।" এটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম,
আবু দাউদ ও তিরমিযী।
অন্য বর্ণনায় এসেছেঃ “যখন আমি সলাতের জন্য দাঁড়াব তখন আমাকে ওযু করার
নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)। এ হাদীসটি আলোচ্য হাদীসটি যে দুর্বল তার
প্রমাণ বহন করছে।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৬৯ | 169 | ۱٦۹
১৬৯। প্রতিটি বস্তুর হৃদয় রয়েছে, আর কুরআনের হৃদয় হচ্ছে সূরা ইয়াসিন।
যে ব্যাক্তি তা পাঠ করল, সে যেন দশবার কুরআন পাঠ করল।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইমাম তিরমিযী (৪/৪৬) ও দারেমী (২/৪৫৬) হামীদ ইবনু আব্দির রহমান
সুত্রে ... হারুন আবূ মুহাম্মাদ হতে, তিনি মুকাতিল ইবনু হায়য়ান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির দুর্বলতা সুস্পষ্ট বরং এটি এ হারূণের কারণে বানোয়াট। যাহাবী
তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তিরমিযী হতে তার মাজহুল হওয়ার উক্তিটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ
আমি তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করছি সেই হাদীস দ্বারা যেটি কাযাঈ তার “মুশনাদুশ-শিহাব”
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে বলেনঃ আমি আমার পিতাকে এ হাদীসটি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেনঃ এ মুকাতিল হচ্ছেন ইবনু সুলায়মান। আমি এ হাদীসটি
সেই কিতাবের প্রথমে দেখেছি যেটি মুকাতিল ইবনু সুলায়মান জাল করেছিলেন। হাদীসটি বাতিল,
এর কোন ভিত্তি নেই।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ মুকাতিল ইবনু হায়য়ান নন বরং তিনি হচ্ছেন ইবনু
সুলায়মান, যেমনভাবে আবু হাতিম দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিরমিযী ও দারিমী কর্তৃক
মুকাতিলকে ইবনু হায়য়ান হিসাবে উল্লেখ করা সম্ভবত কোন বর্ণনাকারী হতে ভুলক্রমে সংঘটিত
হয়েছে। যেটিকে কাযাঈর বর্ণনা শক্তি যোগাচ্ছে। আবুল ফাতাহ আল-আযদী বলেনঃ এ মুকাতিল
ইবনু হায়য়ান সম্পর্কে ওয়াকী বলেনঃ তাকে মিথ্যুক বলা হয়েছে।
এছাড়া যাহাবী বলেনঃ আবুল ফাতহ এরূপই বলেছেন। আমার ধারণা তার মধ্যে
ইবনু হায়য়ান না ইবনু সুলায়মান এ দুয়ের ব্যাপারে গড়মিল সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ইবনু
হায়য়ান হচ্ছেন একজন সত্যবাদী বর্ণনাকারী। আর ওয়াকী' যাকে মিথ্যুক বলেছেন তিনি হচ্ছেন
ইবনু সুলায়মান। অতএব আমি (যাহাবী) বলছিঃ এ মুকাতিল হচ্ছেন ইবনু সুলায়মান।
আমি আলবানী বলছিঃ এটি যখন প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি ইবনু সুলায়মান তখন
বলতে হচ্ছে যে, হাদীসটি জাল।
এছাড়া বর্ণনাকারী হামীদ একজন মাজহুল, যেমনভাবে হাফিয ইবনু হাজার
"আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭০ | 170 | ۱۷۰
১৭০। আল্লাহ্ তা'আলা যখন আদম (আঃ) কে যমীনে নামিয়ে দিলেন, ফেরেশতারা
বললেনঃ হে প্রভু! আপনি যমীনে এমন লোক সৃষ্টি করবেন যারা ফ্যাসাদ করবে ও রক্তারক্তি
করবে- এমতাবস্থায় যে আমরা আপনার প্রশংসার সাথে তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা
বর্ণনা করছি। আল্লাহ্ বললেনঃ আমি যা জানি তোমরা তা জান না। তারা বললঃ হে প্রতিপালক!
আমরা আদম সন্তানদের চেয়ে তোমার জন্য বেশী আনুগত্যশীল। আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে
বললেনঃ ফেরেশতাদের মধ্য হতে দু'জন ফেরেশতাকে নিয়ে আস, তাদের দু'জনকে যমীনে প্রেরণ করা
হবে। অতঃপর আমরা দেখব তারা কেমন আমল করে। তারা বলল হে আমাদের রব! হারুত ও মারূত। অতঃপর
তাদের দু'জনকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হল।
তাদের দু'জনের সম্মুখে মানবকুলের সর্বাপেক্ষা সুন্দরী রমণী হিসাবে যুহরাকে
দাঁড় করানো হলো। সে তাদের দু'জনের নিকট আসল। অতঃপর তারা দু'জনে তার নিকট তাকে চাইল।
সে বললঃ আল্লাহ্র কসম তা হবে না যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ্র সাথে অংশীদার স্থাপনের উক্তি
না করবে। তারা দু'জনে বললঃ আল্লাহর কসম আমরা আল্লাহ্র সাথে শির্ক করতে পারব না। অতঃপর
সে তাদের দু'জনের নিকট হতে চলে গেল। তারপর একটি শিশুকে বহন করে পুনরায় আসল।
তারা দু'জনে তাকে পাবার জন্য চাইল। সে বললঃ আল্লাহ্র কসম তা হবে না
যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা দু'জনে এ শিশুটিকে হত্যা না করবে। তারা বলল আল্লাহ্র কসম আমরা
তাকে কখনও হত্যা করব না। সে চলে গেল। তারপর এক পিয়ালা মদ নিয়ে পুনরায় আসল। অতঃপর তারা
দু'জনে তাকে চাইল। কিন্তু সে বলল আল্লাহ্র কসম তা হবে না যতক্ষন পর্যন্ত এ মদ পান
না করবে। এরপর তারা দু'জনে মদ পান করে মাতাল হয়ে গেল। অতঃপর সেই রমণীর সাথে দু'জনে
যেনায় লিপ্ত হল, শিশুটিকে হত্যা করল।
অতঃপর যখন জ্ঞান ফিরে আসল, তখন রমণীটি বললঃ আল্লাহ্র কসম তোমরা দু'জনে
যখন মদ পান করে মাতাল হয়ে গেলে তখন আমার নিকট যে সব কর্ম করতে অস্বীকার করেছিলে সে
সব কর্ম করা হতে কিছুই ছাড়লে না। অতঃপর তাদের দু'জনকে দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির মধ্য
হতে একটি শাস্তি গ্রহন করার জন্য স্বাধীনতা দেয়া হল। তারা দু'জনে দুনিয়ার শাস্তি পছন্দ
করল।
মারফু' হিসাবে হাদিসটি বাতিল।
এটিকে ইবনু হিব্বান, আহমাদ, আব্দু ইবনে হামীদ, ইবনু আবিদ-দুনিয়া, বাযযার,
ইবনুস সুনী যুহায়ের ইবনু মুহাম্মাদ সূত্রে মূসা ইবনু যুবায়ের হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মওকুফ হিসাবে সহীহ, যার বিবরণ কিছু পরেই আসবে।
ইবনু কাসীর তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে (১/২৫৪) বলেনঃ মূসা ইবনু যুবায়ের হচ্ছেন আনসারী।
তাকে ইবনু আবী হাতিম "আল-জারহু ওয়াত তা’দীল" গ্রন্থে (৪/১/১৩৯) উল্লেখ করে
তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই বলেননি। তার অবস্থা অস্পষ্ট (মাসতুরুল হাল)। তিনি এককভাবে
নাফে হতে বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিব্বান তাকে "আস-সিকাত" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
কিন্তু বলেছেনঃ كان يخطيء ويخالف তিনি ভুল করতেন এবং
অন্যের বিরোধিতা করতেন।
ইবনু হিব্বান যদি কোন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে চুপ থাকেন তাহলে তার উপর
নির্ভর করা যায় না। তিনি নরমপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে। অথচ এখানে তিনি বলেছেনঃ
তিনি ভুল করতেন এবং বিরোধিতা করতেন। এছাড়া যুহায়ের ইবনু মুহাম্মাদ সহীহাইনের বর্ণনাকারী
হওয়া সত্ত্বেও তার হেফযের ব্যাপারে বহু কথা আছে। এ কারণেই তাকে একদল দুর্বল আখ্যা
দিয়েছেন। বাযযার তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি হাফিয ছিলেন না।
তার সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তা’দীল” গ্রন্থে (১/২/৫৯০)
বলেনঃ তার হেফযে ক্রটি থাকার কারণে তিনি যে হাদীস শাম দেশে বলেছেন সেটি ইরাকে অস্বীকার
করেছেন। ফলে তিনি তার কিতাব হতে যা বর্ণনা করেছেন তা সহীহ আর তার হেফয হতে যা বর্ণনা
করেছেন তাতে ভুল করেছেন।
ইবনু কাসীর বিবরণ দিয়েছেন যে, এ ঘটনাটি ইসরাইলীদের বানোয়াট ঘটনা।
মারফু হাদীস হিসাবে সাব্যস্ত হয়নি। এটি কা'য়াব আল-আহবার হতে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ একদল পূর্ববর্তী ইমাম এ হাদীসটিকে মুনকার হিসাবে
চিহ্নিত করেছেন। ইমাম আহমাদ বলেনঃ এটি মুনকার, এটি কা'য়াব হতে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
ইবনু আবী হাতিম বলেনঃ আমি আমার পিতাকে এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি
উত্তরে বলেনঃ এটি মুনকার হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মারফু’ হিসাবে বাতিল হওয়ার প্রমাণ এই যে, এটিকে
ইবনু উমার (রাঃ) হতে সাঈদ ইবনু যুবায়ের এবং মুজাহিদ মওকুফ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যেমনভাবে
সুয়ূতীর “দুররুল মানসূর” গ্রন্থে (১/৯৭-৯৮) এসেছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ১৭১ | 171 | ۱۷۱
১৭১। যে ব্যাক্তির কোন পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হল, অতঃপর তার নাম রাখল
মুহাম্মাদ তার দ্বারা বরকত নেয়ার উদ্দ্যেশে। তাহলে সেই ব্যাক্তি ও তার নবজাতক জান্নাতী
হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু বুকায়ের “ফাযলু মান ইসমুহু আহমাদ ওয়া মুহাম্মাদ” নামক (কাফ
১/৫৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং তার সূত্র হতে ইবনুল জাওযী তার "মাওযুআত"
গ্রন্থে (১/১৫৭) উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটির সনদে সমালোচিত ব্যক্তি রয়েছেন।
এটির সনদে ইবনু বুকায়ের-এর শাইখ হামেদ ইবনু হাম্মাদ ইবনুল মুবারাক
আল-আসকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি ইসহাক ইবনু
ইয়াসার আন-নাসীবী হতে বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনিই হচ্ছেন এ হাদীসটির সমস্যা।
তার এ কথাকে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন। এ কারণেই ইবনুল
কাইয়্যিম বলেছেনঃ এ হাদীসটি বাতিল।
শাইখ আল-কারী তার “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে হাদীসটি (পৃঃ১০৯) উল্লেখ করে
যাহাবীর কথাকে সমর্থন করেছেন। তা সত্ত্বেও হাদীসটিকে সুয়ূতী হাসান বলেছেন। তিনি মাকহুলকে
নির্ভলশীল বলে কারণ দর্শিয়েছেন অথচ সমস্যা তার নীচের ব্যক্তি হামেদ-এর ক্ষেত্রে।
ইবনু আররাক "তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (১/৮২) সুয়ূতীর
সমালোচনা করেছেন, যেরূপ আমি তার সমালোচনা করেছি।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭২ | 172 | ۱۷۲
১৭২। আল্লাহ তা’আলা দাঊদ (আঃ) কে বললেনঃ হে দাঊদ! আমার জন্য পৃথিবীতে
একটি ঘর বানাও। অতঃপর তাকে যে ঘর বানানোর নির্দেশ দেয়া হল সেটির পূর্বেই দাঊদ তার নিজের
জন্য একটি ঘর বানালেন। ফলে তার নিকট আল্লাহ ওহী করলেনঃ হে দাঊদ! তুমি আমার ঘর বানানোর
পূর্বেই তোমার ঘর বানালে? তিনি বললেনঃ হে প্রভু! তুমি তোমার ফয়সালাতে এমনই বলেছ; যে
ব্যাক্তি মালিক বনে যায় সে নিজের জন্য কিছু বস্তু নির্ধারিত করে নেয়। অতঃপর তিনি (দাঊদ)
মসজিদ তৈরি করা শুরু করলেন। যখন প্রাচীর এর দেয়াল সমাপ্ত হল; তখন তা পড়ে গেল! ফলে তিনি
সে বিষয়ে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করলেন। আল্লাহ তার নিকট ওহী মারফত জানালেন, তুমি আমার
জন্য যে ঘর তৈরি করবে তা সঠিকভাবে হবে না! (দাঊদ) বললেনঃ হে প্রভু কেন? (আল্লাহ) বললেনঃ
তোমার সম্মুখে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার কারণে। তিনি বললেনঃ হে প্রভু! সেটি কি তোমার ইচ্ছা
মাফিক ছিল না? (আল্লাহ) বললেনঃ হ্যাঁ। কিন্তু তারাতো আমার দাস-দাসী এবং আমিই তো তাঁদেরকে
দয়া করে থাকি। (এ কথা শোনার পর) তা তার উপর মুশকিল হয়ে গেল। ফলে আল্লাহ তার নিকট ওহী
মারফত জানালেন তুমি চিন্তা করো না, কারন আমি তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমার পুত্র
সুলায়মানের হাতে।
হাদীসটি বাতিল ও জাল।
হাদীসটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৫/১২) এবং "মুসনাদুশ
শামিয়ীন" গ্রন্থে (পৃঃ ৬২, ৯৯), ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (২/৩০০)
এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী "মাওযু'আত” গ্রন্থে (১/২০০) মুহাম্মাদ ইবনু আইউব ইবনে
সুওয়াইদ হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনুল জাওযী বলেছেনঃ হাদীসটি জাল।
ইবনু হিব্বান এ মুহাম্মাদ ইবনু আইউব সম্পর্কে বলেনঃ তিনি জাল হাদীস
বর্ণনাকারী। সুয়ূতী “আল-লাআলী” (১/১৭০) গ্রন্থে তার এ কথাকে সমর্থন করে বলেছেনঃ এটিকে
তাবারানী ও ইবনু মারদুবিয়া তার “আত-তাফসীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। “আল-মীযান” গ্রন্থের
লেখক যাহাবী হাদীসটি জাল হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আবু যুর'য়াহ বলেনঃ মুহাম্মাদ
ইবনু আইউবকে তার পিতার গ্রন্থসমূহে বানোয়াট কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটাতে দেখেছি। ইবনু হিব্বান
বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। দাউদ-এর ঘটনা সে সবেরই একটি বানোয়াট ঘটনা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৩ | 173 | ۱۷۳
১৭৩। এক ঘণ্টা গবেষণা করা ষাট বছরের ইবাদতের থেকেও অতি উত্তম।
হাদীসটি জাল।
আবুশ শাইখ এটিকে “আল-আযমাহ” গ্রন্থে (১/২৯৭/৪২) উল্লেখ করেছেন এবং তার
থেকে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” (৩/১৪৪) গ্রন্থে উসমান ইবনু আব্দিল্লাহ আল-কুরাশী সুত্রে
ইসহাক ইবনু নাজীহ আল-মালতী হতে ... বর্ণনা করে বলেছেনঃ উসমান ও তার শাইখ তারা উভয়েই
মিথ্যুক।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২২৭) তার সমালোচনা করে বলেছেন যে, ইরাকী
“তাখরীজুল ইহইয়া” গ্রন্থে হাদীসটিকে শুধুমাত্র দুর্বল আখ্যা দিয়ে বলেছেন তার শাহেদ
রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি (ইরাকী) দাইলামীর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন এবং
তিনি তার “মুসনাদ” গ্রন্থে (২/৪৬) নিজ সনদে সাঈদ ইবনু মায়সারা হতে বর্ণনা করেছেন,
সাঈদ আনাস (রাঃ) হতে শুনেছেন, তাতে আনাস (রাঃ) বলেনঃ “রাত ও দিনের বিবর্তনের মাঝে এক
ঘন্টা গবেষণা করা হাজার বছর ইবাদাত করা হতেও উত্তম।"
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মওকুফ এবং এটিও জাল। এ সাঈদ সম্পর্কে যাহাবী
বলেনঃ তার ব্যাপারটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
তার সম্পর্কে হাকিম বলেনঃ তিনি আনাস (রাঃ) হতে জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাকে ইয়াহইয়া
আল-কাত্তান মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন।
অতএব এরূপ সনদের হাদীস শাহেদ হতে পারে না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৪ | 174 | ۱۷٤
১৭৪। কোন মুসলিম ব্যাক্তি যখন ষাট বা নয় গজ বিশিষ্ট ঘর তৈরি করেবে,
তখন আসমান হতে আহবানকারী তাকে ডাক দিয়ে বলবে, কোথায় যাচ্ছ হে সর্বাপেক্ষা বড় দুষ্কর্মকারী?
হাদীসটি জাল।
এটিকে আবূ নু’য়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৩/৭৫) তাবারানীর
সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি হাসান, ইয়াহইয়া ও আওযাঈ হতে গারিব হাদীস। ওয়ালীদ
ইবনু মূসা আল-কুরাশী এটিকে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্বল। তিনি ওয়ালীদ ইবনু
মূসা আদ-দামেশকীর মত নন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ওয়ালীদ হচ্ছেন কুরাশী। তার সম্পর্কে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ দারাকুতনী বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। অন্যরা বলেছেনঃ তিনি
মাতরূক। ওকায়লী ও ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ তিনি য'ঈফ, তার বানোয়াট হাদীস রয়েছে। সম্ভবত
এ হাদীসটির দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। কারণ স্পষ্টত এটি জাল।
সুয়ূতী হাদীসটি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যকার
মানাবী বলেছেনঃ যে লেখক (মুসান্নিফ) এটি বর্ণনা করবেন তিনি সর্বাপেক্ষা বড় গাফিল।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৫ | 175 | ۱۷۵
১৭৫। যে ব্যাক্তি তার জন্য যে পরিমাণ যথেষ্ট তার চেয়ে উঁচু করে ইমারত
তৈরি করবে, কিয়ামতের দিন তার কাঁধে তা বহন করার দ্বারা তাকে কষ্ট দেয়া হবে।
হাদীসটি বাতিল।
এটিকে তাবারানী (৩/৭১/২), ইবনু আদী (৩৩৩/১-২) ও আবু নু’য়াইম (৮/২৪৬)
মুসাইয়্যাব ইবনু ওয়াযিহ সূত্রে তার শাইখ ইউসুফ ইবনু আসবাত হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আবু নু’য়াইম ও ইবনু আদী বলেনঃ সাওরী হতে হাদীসটি গারীব। এটিকে মুসাইয়্যাব
ইউসুফ হতে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি ইউসুফের কারণে দুর্বল। তার সম্পর্কে আবু
হাতিম বলেনঃ তিনি একজন আবেদ ব্যক্তি ছিলেন। তার গ্রন্থগুলো দাফন করে দিয়েছিলেন। তিনি
বহু ভুল করতেন। তবে তিনি ব্যক্তি হিসাবে সৎ ছিলেন। কিন্তু তার হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণীয়
নয়, যেমনভাবে “আল-জারহু...” গ্রন্থে (৪/২/৪১৮) এসেছে।
হাদীসটিকে সুয়ূতী “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে ও হায়সামী “আল-মাজমা” গ্রন্থে
(৪/৭০) উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি কোন সনদেই সহীহ নয়। এটির আরেকটি সমস্যা রয়েছে তা হচ্ছে
সনদে আবু ওবায়দা ও তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা। কারণ আবু
ওবায়দা ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে শ্রবণ করেননি। হাফিয ইরাকী “তাখরীজুল ইহুইয়া” গ্রন্থে
(৪/২০৪) এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
যাহাবী মুসাইয়্যাব ইবনু ওয়াযিহ-এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ
এ হাদীসটি মুনকার। ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/১১৫,১১৬) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে
সেই হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যেটি মুসাইয়্যাব ইবনু ওয়াযিহ ইউসুফ ইবনু
আসবাত হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি উত্তরে বলেনঃ এ হাদীসটি বাতিল, এ সনদে এর কোন ভিত্তি
নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৬ | 176 | ۱۷٦
১৭৬। তোমরা আমাকে মহিলার দুধ পান করিয়ো না।
হাদীসটি মুনকার।
এটি ওয়াকী “আল-যুহুদ” গ্রন্থে (৩/৪৯৪/৪০৮) উল্লেখ করেছেন । এছাড়া
ইবনু সা'দ “আত-তাবাকাত" গ্রন্থে (৬/৪৩) কায়স ইবনু রাবী' হতে অন্য দুটি সূত্রে
বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির একাধিক বর্ণনাকারীর মধ্যে সমস্যা রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল, অন্ধকারাচ্ছন্ন। বর্ণনাকারী ইবনু
আবিশ শাইখ আল-মুহারেবীকে এ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীসে চেনা যায় না। ইবনুল আসীর
প্রমুখ এ ভাবেই তাকে সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়া বর্ণনাকারী আসিম ইবনু বুহায়েরের
জীবনী পাচ্ছি না।
যাহাবী তার “আল-মীযান” গ্রন্থে আরেক বর্ণনাকরী ইমরুল কায়েস সম্পর্কে
বলেন, আযদী বলেছেনঃ তিনি মুনকার হাদীস বর্ণনা করেছেন যা সহীহ নয়। অনুরূপ কথা “লিসানুল
মীযান” গ্রন্থেও বলা হয়েছে।
বর্ণনাকারী কায়স ইবনু রাবী' সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব"
গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী । কিন্তু যখন বয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তার পরিবর্তন
সাধিত হয়। তার ছেলে যে হাদীস তার না সেটিকে তার উদ্ধৃতিতে হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ সনদের হাদীসটি তার ছেলে কর্তৃক
প্রবেশ ঘটানো হাদীসগুলোর একটি হওয়াটা অবাস্তব নয়।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৭ | 177 | ۱۷۷
১৭৭। যে ব্যাক্তি অট্টালিকা (ইমারত) তৈরি করল অত্যাচার ও সীমালংঘন না
করে বা কোন গাছ লাগাল অত্যাচার ও সীমালংঘন না করে, তার সওয়াব অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ
পর্যন্ত দয়াময় আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা’আলার সৃষ্টি থেকে একজন তা দ্বারা উপকৃত হবে।
হাদীসটি জাল।
এটি ইমাম আহমাদ (৩/৪৩৮), তাহাবী তার “আল-মুশকিল” গ্রন্থে (১/৪১৬৪১৭)
ও তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (২০/১৮৭/নং ৪১০, ৪১১) যুবান ইবনু ফায়েদ সূত্রে
... বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটি দুর্বল যুবান হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল হওয়ার কারণে, যেমনভাবে
হাফিয ইবনু হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন। তাকে ইমাম আহমাদ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ
দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আর আবু হাতিম তাকে নির্ভরযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৮ | 178 | ۱۷۸
১৭৮। যে ব্যাক্তি তার ভাইকে কোন গুনাহের কারণে ভৎসনা করবে, সে ব্যাক্তি
সে কর্ম না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না।
হাদীসটি জাল।
এটিকে ইমাম তিরমিযী (৩/৩১৮), ইবনু আবিদ-দুনিয়া “যাম্মুল গীবা” গ্রন্থে,
ইবনু আদী (২/২৯৬) ও খাতীবুল বাগদাদী (২/৩৩৯-৩৩০) মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান সূত্রে ...
বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান গারীব। এটির সনদ মুত্তাসিল নয়। খালিদ
ইবনু মি’দান মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে পাননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাহলে কীভাবে এটি হাসান। এ মুহাম্মাদ ইবনু হাসানকে
ইবনু মাঈন ও আবু দাউদ মিথ্যুক আখ্যা দিয়েছেন, যেমনটি যাহাবীর “আল-মীযান" গ্রন্থে
এসেছে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
এ কারণেই সাগানী তার "আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (পৃঃ ৬) হাদীসটি উল্লেখ
করেছেন। তার পূর্বে ইবনুল জাওযী (৩/৮২) ইবনু আবিদ-দুনিয়ার সূত্রে বর্ণনা করে বলেছেনঃ
এটি সহীহ নয়। মুহাম্মাদ ইবনু হাসান মিথ্যুক।
সুয়ূতী-“আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/২৯৩) তার সমালোচনা করে বলেছেন যে, এটি
তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি হাসান গারীব এবং তার শাহেদ রয়েছে।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার শাহেদটি মারফু নয়। তবুও এটির সনদটি দুর্বল
সালেহ্ ইবনু বাশীর আল-মুররীর কারণে। তিনি দুর্বল যেমনভাবে “আত-তাকরীব” গ্রন্থে এসেছে।
এটি শাহেদ হওয়ার যোগ্য নয় দুর্বল এবং মারফু না হওয়ার কারণে।
এছাড়া মারফূ' হিসাবেও শাহেদ এসেছে, কিন্তু সেটিও দুর্বল। দেখুন “মিশকাত”
গ্রন্থের শেষে (৩য় খন্ড)।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৭৯ | 179 | ۱۷۹
১৭৯। মু’মিনের হাতিয়ার, দ্বীনের স্তম্ভ এবং আসমান ও যমীনের আলো হচ্ছে
দো’আ।
হাদীসটি জাল।
এটিকে আবূ ইয়ালা (৪৩৯), ইবনু আদী (২/২৯৬), হাকিম (১/৪৯২) ও কাযাঈ
(৪/২/১) হাসান ইবনু হাম্মদ আয-যাবী সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু হাসান হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হাকিম বলেনঃ এটি সহীহ হাদীস। কারণ মুহাম্মাদ ইবনু হাসান হচ্ছেন আত-তাল।
তিনি কূফীদের অন্তর্ভুক্ত একজন সত্যবাদী। যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
এটি যাহাবী হতে দুটি কারণে মারাত্মক ভুলঃ
১। এটির সনদে ইনকিতা অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। যা যাহাবী নিজে তার
“আল-মীযান” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে আলী ইবনু হুসাইন ও তার দাদা ‘আলী ইবনু
আবী তালিব (রাঃ)-এর মধ্যে।
২। এ মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান হামদানী। তিনি আত-তাল নন, সত্যবাদীও নন
যেমনভাবে হাকিম বলেছেন। বরং তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ইবনু আবী ইয়াযীদ আল-হামাদানী,
তিনি মিথ্যুক। যার সম্পর্কে পূর্ববতী হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে। এর প্রমাণ হিসাবে নিম্নের
বিষয়গুলো উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
ক. যাহাবী নিজেই হাদীসটি তার (মুহাম্মাদের) জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে
উল্লেখ করেছেন, তাকে ইবনু মাঈন প্রমুখ ব্যাক্তি কর্তৃক মিথ্যুক হিসাবে আখ্যায়িত করার
পরে। অনুরূপভাবে ইবনু আদীও তার জীবনী বর্ণনা করার সময় হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। অতএব
সুয়ূতী কর্তৃক হাদীসটি "জামেউস সাগীর” গ্রন্থে - করাটা ভুল।
খ. হায়সামী হাদীসটি “আল-মাজমা" গ্রন্থে (১০/১৪৭) উল্লেখ করে বলেছেনঃ
এটিকে আবূ ইয়ালা বর্ণনা করেছেন। যার সনদে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ইবনু আবী ইয়াযীদ
রয়েছেন, তিনি মাতরূক।
গ. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আত-তাল-এর শাইখ হিসাবে জাফর ইবনু মুহাম্মাদকে
উল্লেখ করা হয়নি। তাকে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল-হামাদানীর শাইখ হিসাবে উল্লেখ করা
হয়েছে।
ঘ. এ সনদে যে বলা হয়েছে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ইবনু যুবায়ের, যুবায়ের
শব্দটি “আল-মুসতাদরাক” গ্রন্থের কোন বর্ণনাকারীর পক্ষ হতে বিকৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে।
যার কারণে হাকিম তাকে তাল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ফলে তিনি ভুল করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮০ | 180 | ۱۸۰
১৮০। তোমাদেরকে কি আমি নির্দেশনা দিব না এমন বস্তুর যা তোমাদেরকে তোমাদের
শত্রু হতে রক্ষা করবে এবং তোমাদের জন্য রিযক বর্ধিত করবে? (তা হচ্ছে) তোমরা দিনে ও
রাতে আল্লাহকে ডাকবে। কারন দো’আ হচ্ছে মুমিনের হাতিয়ার।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি আবু ইয়ালা (৩/৩৪৬/১৮১২) সাল্লাম ইবনু সুলাইম সূত্রে মুহাম্মাদ
ইবনু আবী হুমায়েদ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
হায়সামী “মাজমাউয যাওয়াইদ” গ্রন্থে (১০/১৪৭) বলেনঃ এটির সনদে মুহাম্মাদ
ইবনু আবী হুমায়েদ নামক বর্ণনাকারী আছেন। তিনি দুর্বল ।
এ হাদীসটি সহীহ না হওয়ার পিছনে আরো একটি কারণ আছে, সেটি হচ্ছে সাল্লাম
ইবনু সুলাইম। তিনি হচ্ছেন তাবিল আল-মাদানী, তিনি মাতরূক, জাল বর্ণনা করার দোষে দোষী।
তাকে উল্লেখ করে এ হাদীসের সমস্যা বর্ণনা করাই উত্তম। পূর্বে তার একটি জাল হাদীস উল্লেখ
করা হয়েছে (নং ৫৮) সেখানে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া তার আরেকটি
দুর্বল হাদীসও বর্ণনা করা হয়েছে ২৬ নাম্বারে মুতাবায়াত থাকার কারণে। তবে এটি পূর্বেরটির
ন্যায় শুধু দুর্বল নয়, বরং জালও বটে।
অতএব এ হাদীসটি কেউ সহীহ বললে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ১৮১ | 181 | ۱۸۱
১৮১। অবাধ্যতা রিযক কমিয়ে দেয় না এবং তাকে (রিযককে) সৎকর্ম বৃদ্ধিও
করে না। আর দো’আ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নাফারমানী (অবাধ্যতা)।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি তাবরানী “মুজামুস সাগীর” গ্রন্থে (পৃঃ ১৪৭) এবং ইবনু আদী “আল-কামিল”
গ্রন্থে (১১/২) ইসমাঈল ইবনু ইয়াহইয়া আত-তাইনী সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন। এ সনদটি
জাল এ ইসমাঈল মিথ্যুক হওয়ার কারণে, যেমনভাবে আবু আলী আন-নাইসাপুরী, দারাকুতনী ও হাকিম
বলেছেন। ইবনু আদী বলেনঃ তিনি যা কিছু বর্ণনা করেছেন তার সবই বাতিল। এছাড়া আতিয়া আল-আওফী
দুর্বল। তার সম্পর্কে ২৪ নং হাদীসে আলোচনা করা হয়েছে।
মানাবী “জামেউস সাগীর"-এর শারাহর মধ্যে বলেন, হায়সামী বলেছেনঃ
আওফী দুর্বল। সাখাবী বলেনঃ এটির সনদ দুর্বল। কিন্তু হাদীসটির মূল কারণ উদঘাটন করতে
তারা সকলে ভুলে গেছেন। সেটি হচ্ছে ইসমাঈলের মিথ্যুক হওয়া। এ কারণেই সম্ভবত সুয়ূতী
“জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া হাদীসটি বাতিল হওয়ার প্রমাণ বহন করছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নের সহীহ হাদীসটি। যেটিকে বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
من أحب أن يبسط له في رزقه وأن ينسأ له في أثره فليصل رحمه
অর্থঃ যে ব্যক্তি তার রিযক বৃদ্ধি করা ও তার হায়াত বৃদ্ধি পাওয়াকে
ভালবাসে, সে যেন আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮২ | 182 | ۱۸۲
১৮২। তোমাদের সেই সর্বোত্তম ব্যাক্তি যে, তার নিজ বংশের পক্ষে অন্যকে
প্রতিরোধ করে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে গুনাহ না করবে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু দাউদ (নং ৫১২০) আইউব ইবনু সুওয়াইদ সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আইউব ইবনু সুওয়াইদ-এর কারণে এটির সনদটি নিতান্তই
দুর্বল। তাকে আহমাদ, আবু দাউদ প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন।
ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (২/২৩১) বলেনঃ আমি আমার পিতাকে বলতে
শুনেছিঃ আইউব ইবনু সুওয়াইদ এর প্রথম যে বস্তুটি আমরা ইনকার করি সেটি হচ্ছে সাঈদ ইবনু
মুসাইয়াব হতে উসামা ইবনুয়ায়েদ সূত্রের এ হাদীসটি। উসামা সা'ঈদ হতে কিছু বর্ণনা করেছেন
বলে আমি জানিনা।
তিনি অন্যত্র (২/২০৯) বলেনঃ ইবনু মাঈনকে এ আইউব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা
হয়েছিল। তিনি বলেন তিনি কিছুই না। সাঈদ ইবনু মুয়াইয়্যার সুরাকা হতে কিছু বর্ণনা
করেননি। এ হাদীসটি জাল, এর দরজা হচ্ছে ওয়াকেদীর হাদিস।
মুনযেরী "মুখতাসারুস সুনান" গ্রন্থে (৮/১৮) আইউব ইবনু
সুওয়াইদকে এবং সনদের মধ্যে সাঈদ এবং সুরাকার মধ্যে ইনকিতা' (বিচ্ছিন্নতা) হওয়াকে
হাদীসটিৱ সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু মানাবী শুধুমাত্র আইউব ইবনু সুওয়াইদকে
দুর্বলতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৩ | 183 | ۱۸۳
১৮৩। মসজিদ ছাড়া মসজিদের প্রতিবেশীর সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি দারাকুতনী (পৃঃ ১৬১), হাকিম (১/২৪৬) ও বাইহাকী (৩/৫৭) সুলায়মান
ইবনু দাউদ আল-ইয়ামামী সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে এ সুলায়মান,
কারণ তিনি নিতান্তই দুর্বল। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি কিছুই না। ইমাম বুখারী
বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। যাহাবী বলেন, ইমাম বুখারী বলেছেনঃ যার সম্পর্কে আমি মুনকারুল
হাদীস বলেছি তার হাদীস বর্ণনা করা হালাল নয়।
হাদীসটি সাগানী তার “আল-মাওযুআহ” গ্রন্থে (পৃঃ ৬) এবং ইবনুল জাওযী তার
“আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (২/৯৩) উল্লেখ করেছেন।
দারাকুতনী মুহাম্মাদ ইবনু সিক্কীন আশ-শাকারী সুত্রে হাদিসটি উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু এ মুহাম্মাদের কারণে হাদীসটি দুর্বল। কেননা তার সম্পর্কে আবূ হাতিম
“আল-জারহু ওয়াত-তাদীল” গ্রন্থে (৩/২/২৮৩) বলেনঃ তিনি মাজহুল (অপরিচিত), তার হাদীসটি
মুনকার।
যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায় না, তার খবর হচ্ছে মুনকার।
দারাকুতনী তার হাদীসকে দুর্বল বলেছেন।
এছাড় হাদীসটি অন্যান্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে কিন্তু কোনটিই দুৰ্বলতার
সমস্যা হতে মুক্ত নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৪ | 184 | ۱۸٤
১৮৪। তোমরা যখন রোগীর নিকট প্রবেশ করবে, তখন তাকে তার মৃত্যুর ব্যাপারে
সান্ত্বনা দাও। কারন তা তার কিছুই প্রতিরোধ করবে না। তবে তা তার হৃদয়ে প্রশান্তি এনে
দিবে।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইমাম তিরমিযী (৩/১৭৭), ইবনু মাজাহ (১/৪৩৯) ও ইবনু আদী (২/৩২৪) মূসা
ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তাইমী সুত্রে ... বর্ণনা করেছেন। "এটি গরীব"
তিরমিযী তার এ কথা দ্বারা বুঝিয়েছেন হাদীসটি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সমস্যা ইচ্ছে ঐ মূসা ইবনুল জাওযী তার হাদিসকে
"আল-মাওযু'আত" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং সুয়ূতী তাকে সমর্থন করেছেন, যেমনভাবে
১১২ নাম্বার হাদীসে আলোচিত হয়েছে। যাহাবী তার জীবনী আলোচনা করার সময় তার মুনকারগুলো
উল্লেখ করেছেন, এটি সেগুলোর একটি।
মানাবী ইমাম নাবাবী হতে নকল করেছেন, তিনি তার “আল-আযকার” গ্রন্থে বলেনঃ
এটির সনদ দুর্বল।
ইবনুল জাওযী তার "ইলালুল মুতানাহিয়া" গ্রন্থে (২/৩৮৮) বলেনঃ
হাদিসটি সহীহ নয়। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তার সনদে দুর্বলতা রয়েছে।
ইবনু আবী হাতিম "আল-ইলাল" গ্রন্থে (২/২৪১) বলেছেনঃ আমি আমার
পিতাকে এ হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি উত্তরে বলেনঃ এটি মুনকার হাদিস,
এটি যেন বানোয়াট, মূসা নিতান্তই দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৫ | 185 | ۱۸۵
১৮৫। আল-হামদুলিল্লাহ, মেয়েদের দাফন করা সন্মানজনক কর্ম সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
হাদীসটি জাল।
এটি ইয়াকূব আল-ফাসাবী "আল-মা'রিফাহ" (৩/১৫৯) গ্রন্থে, তাবারানী
"আল-মু'জামুল কাবীর" (৩/১৪৪/২), "আল-আওসাত" গ্রন্থে (১/৭৬২) ও
"মুসনাদুশ শামেয়ীন" (২৪০৮) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বাযযার আবুল কাশিম
আল-মেহরানী, খতীব বাগদাদী, কাযা'ঈ এবং ইবনু আসাকিরও আরাক ইবনু খালিদ ইবনে ইয়াযীদ সুত্রে
উসমান ইবনু আতা হতে ... বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ সনদ ছাড়া
অন্য কোন সনদে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়নি। মেহরানী বলেনঃ এটি গারীব। উসমান ইবনু আতা
এটিকে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল জাওয হাদীসটি “আল-মাওযু আত” গ্রন্থে (৩/২৩৬) উল্লেখ
করে বলেছেনঃ এটি সহীহ নয়। উসমান দুর্বল। তার পিতা হেফযের দিক দিয়ে নিম্নমানের। আরাক
ইবনু খালিদ শক্তিশালী নন। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির রহমান আল-কুরাশী দুর্বল, তিনি হাদীস
চুরি করতেন। তিনি আরো বলেনঃ আমি আমার শাইখ আব্দুল ওয়াহাব ইবনু আনমাতী হতে শুনেছি;
তিনি আল্লাহর নামে কসম করে বলেনঃ এ সংক্রান্ত বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কখনও কিছুই বলেননি।
সুয়ূতী তার (ইবনুল জাওযীর) এ বক্তব্যকে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৪৩৮)
সমর্থন করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এ
কারণে "জামেউস সাগীর”-এর ভাষ্যকার মানাবী তার সমালোচনা করেছেন।
সাগানী হাদীসটি তার “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (পৃঃ ৮) উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৬ | 186 | ۱۸٦
১৮৬। মেয়েদের দাফন করা সন্মানজনক কর্ম সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনু আদী “আল-কামিল” গ্রন্থে (২/৮০) এবং খাতীব বাগদাদী (৭/২৯১)
হুমায়েদ ইবনু হাম্মাদ সূত্রে ... উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটির সনদ দুর্বল। হুমায়েদ ইবনু হাম্মাদ সম্পর্কে
ইবনু আদী বলেনঃ তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন। হাদীসটি নিরাপদ
নয়। আবু দাউদ বলেনঃ এটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী হাদীসটির এ কারণই বর্ণনা করেছেন। তিনি
এটিকে তার “আল-মাওযূ’আত” গ্রন্থে (৩/২৩৫) উল্লেখ করে বলেছেনঃ হুমায়েদ নির্ভরযোগ্যদের
উদ্ধৃতিতে মুনকার হাদীস বর্ণনা করতেন।
সুয়ূতী তার (ইবনুল জাওযীর) এ বক্তব্যকে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/৪৩৮)
সমর্থন করেছেন। তা সত্ত্বেও তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এ
কারণে ইবনু আদীর কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে মানাবী তার সমালোচনা করে বলেছেনঃ ইবনুল জাওযী
এটিকে জাল হিসাবে হুকুম লাগিয়েছেন। যাহাবী এবং লেখক (সুয়ূতী) তার এ কথাকে সমর্থন
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৭ | 187 | ۱۸۷
১৮৭। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা এ মসজিদের (মক্কার মসজিদ) অধিবাসীদের জন্য
প্র্যত্যেক দিনে ও রাতে একশত বিশটি রহমত নাযিল করেন। ষাটটি তাওয়াফ কারীদের জন্য, চল্লিশটি
সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারীদের জন্য আর বিশটি দৃষ্টিদান কারীদের জন্য।
হাদীসটি য’ঈফ।
এটি তাবারানী “আল-আওসাত” (১/১২৩/২) ও “আল-কাবীর” গ্রন্থে (১১৪৭৫) ইউসুফ
ইবনু ফায়েয হতে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ইবনু আসাকির (৯/৪৭৬/২) ও যিয়া “আল-মুনতাকা
মিন মাসমূ'আতিহী বিমারু” গ্রন্থে হাদীসটি আব্দুর রহমান ইবনু সাফর আদ-দামেস্ক হতে
... বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীসটি সম্পর্কে তাবারানী বলেনঃ এটি আওযাঈ হতে ইবনুস সাফর ব্যতীত
অন্য কেউ বর্ণনা করেননি।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন। ইবনু আসাকির আব্দুর
রহমান ইবনুস সাফরের জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীসটি উল্লেখ করে ইবনু মান্দার উদ্ধৃতিতে
বলেছেন যে, তিনি (আব্দুর রহমান) মাতরূক [অগ্রহণযোগ্য]। যাহাবীও তার অনুসরণ করেছেন।
ইবনুল জাওযী “ইলালুল মুতানাহিয়া” গ্রন্থে (২/৮২-৮৩) বলেছেনঃ হাদীসটি
সহীহ নয়। কারণ ইউসুফ ইবনুস সাফর এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি মাতরূক, যেমনভাবে
দারাকুতনী ও নাসাঈ বলেছেন। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি মিথ্যা বলতেন। ইবনু হিব্বান বলেনঃ
তার দ্বারা হাদীস গ্রহণ করা হালাল নয়। ইয়াহইয়া বলেনঃ তিনি কিছুই না। হায়সামীও তাকে
মাতরূক হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তাকে বলা হয় ইবনুল ফায়েয। ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা”
গ্রন্থে (৩/১৩৬-১৩৭) ও আবু নু’য়াইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে (১/১১৬, ৩০৭) এরূপ বর্ণনা
করেছেন। অতঃপর ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ ইউসুফ ইবনু ফায়েয আওযাঈ হতে বহু মুনকার হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তিনি যেন তা ইচ্ছাকৃতই করতেন।
ইবনু আবী হাতিম "আল-ইলাল" গ্রন্থে (১/২৮৭) বলেনঃ আমি আমার
পিতাকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম? তিনি বলেন এ হাদীসটি মুনকার, ইউসুফ হাদীসের
ক্ষেত্রে দুর্বল, মাতরুকের ন্যায়।
তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেন তিনি বহু বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। বাইহাকী
বলেনঃ তাকে হাদীস জলকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।
যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে বলেনঃ তিনিই হচ্ছেন আব্দুর রহমান
ইবনুস সাফর।
ইবনু হাজার "আল-লিসান" গ্রন্থে বলেনঃ কেউ কেউ তার নাম এমনই
রেখেছেন। সঠিক নাম হচ্ছে ইউসুফ ইবনুস সাফর। তিনি মাতরুক। তাকে ইমাম বুখারী উল্লেখ করে
বলেছেনঃ তিনি আবদুর রহমান ইবনুস সাফর, তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া যে সব সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো কোনটিই সহীহ নয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৮ | 188 | ۱۸۸
১৮৮। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা প্রতি দিন একশত রহমত নাযিল করেন। তার ষাটটি
বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ কারীদের জন্য, বিশটি মক্কাবাসীদের জন্য এবং বিশটি সকল মানুষের
জন্য।
হাদীসটি দুর্বল।
এটিকে ইবনু আদী (১/৩১৪), খাতীব বাগদাদী, তার; আত-তারীখ" গ্রন্থে
(৬/২৭) ও বাইহাকী (৩/৪৫৪-৪৫৫) মুহাম্মদ ইবনু মুয়াবিয়া সূত্র ... উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ ইবনু মুয়াবিয়া সম্পর্কে ইবনু মাঈন ও দারাকুতনী
বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। দারাকুতনী আরো বলেনঃ তিনি হাদীস জাল করতেন। যাহাবী তার জীবনীতে
এ হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৮৯ | 189 | ۱۸۹
১৮৯। তোমরা তোমাদেরকে সূর্যের মাঝে বসা হতে রক্ষা কর। কারন সে কাপড়কে
পুরাতন করে দেয়, বাতাসকে দুর্গন্ধযুক্ত করে দেয় এবং লুক্কায়িত রোগকে প্রকাশ করে দেয়।
হাদীসটি জাল।
এটিকে হাকিম আল-মুসতাদরাক গ্রন্থে (৪/৪১১) মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ আত-তাহান
সুত্রে উল্লেখ করেছেন। হাকিম হাদিসটির উপর হুকুম লাগানো হতে চুপ থেকেছেন। যাহাবী তার
সমালোচনা করে বলেছেনঃ এটি তাহান কর্তৃক জালকৃত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তা সত্ত্বেও সুয়ূতী হাদিসটিকে "জামে'উস সাগীর"
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে মানাবী যাহাবীর এ কথা দ্বারা তার সমালোচনা করেছেন।
অতঃপর মানাবী বলেছেনঃ লেখকের উচিত ছিল এটিকে মুছে ফেলা।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯০ | 190 | ۱۹۰
১৯০। প্রত্যেকের মাথায় কুষ্ঠ রোগের ভিত্তি রয়েছে যা (ঘুমন্তাবস্থায়)
গড় গড় শব্দ করে। অতঃপর তা যখন অস্থিরতায় ভুগে তখন তার উপর সর্দি চাপিয়ে দেন। অতএব তোমরা
তার জন্য ঔষধ ব্যাবহার করো না।
হাদীসটি জাল।
এটিকে হাকিম আল-মুসতাদরাক গ্রন্থে (৪/৪১১), অনুরূপভবে কাসিম আস-সারকাসতী
"গারীবুল হাদিস" গ্রন্থে (২/১৫৪/১) মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস কুরাশী সুত্রে বর্ণনা
করেছেন। হাকিম হাদিসটির উপর কোন প্রকার হুকিমলাগানো হতে চুপ থেকেছেন।
এ কারণে যাহাবী তার সমালোচনা করে বলেছেন, আমি বলছিঃ সম্ভবত এটি বানোয়াট।
কুদায়মী (কুরাশী) মিথ্যার দোষে দোষী।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনুল জাওযী হাদীসটিকে "আল-মাওযূ'আত"
গ্রন্থে (৩/২০৫) কুদায়মী পর্যন্ত তার সনদে উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ
ইবনু ইউনুস হচ্ছেন কুদায়মী; তিনি হাদীস জালকারী।
সুয়ূতী “আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/৪০২) তাঁর এ কথাকে সমর্থন করা সত্ত্বেও
তিনি হাদীসটি "জামেউস সাগীর" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসটি দাইলামী (৪/২২) ইবনু লাল সুত্রে বর্ণনা করেছেন। এ সনদে মুহাম্মাদ
ইবনু আহমাদ ইবনু মানসূর রয়েছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মানুসর অথবা তার শাইখ
হুসাইন ইবনু ইউসুফ আল-ফাহহাম আমার নিকট মিথ্যার দোষে দোষী। তার এ শাইখকে আমি চিনি না।
হতে পারে তিনিই সে ব্যক্তি যাকে ইবনু আসাকির মাজহুল (অপরিচিত) বলেছেন।
যাহাবী বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ আবূ হাফস ফাল্লাসের উদ্ধৃতিতে রাফেযী
এবং জাহমিয়াদের অভিশাপ করতে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। জানা যায় না তিনি কে? অনুরূপভাবে
তার থেকে বর্ণনাকারীকেও চিনি না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ১৯১ | 191 | ۱۹۱
১৯১। জুম’আহ হচ্ছে ফকীরদের হাজ্জ (হজ্জ), (অন্য ভাষায়) মিসকিনদের হাজ্জ
(হজ্জ)।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নু’য়াইম “আখবাবু আসবাহান” গ্রন্থে (২/১৯০), কাযাঈ (নং ৭৯)
ও ইবনু আসাকির (১১/১৩২) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে প্রথম শব্দে এবং ইবনু যানজুবিয়াহ ও
কাযাঈ (৭৮) দ্বিতীয় শব্দে বর্ণনা করেছেন, যেমনভাবে “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে এসেছে।
এটির সনদে ঈসা ইবনু ইবরাহীম হাশেমী ও তার শাইখ মুকাতিল রয়েছেন। হাফিয ইরাকী বলেনঃ
সনদটি দুর্বল।
যাহাবী হাদিসটি ঈসার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে "আল-মীযান" গ্রন্থে
উল্লেখ করে বলেছেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস, মাতরূক। সাখাবী বলেনঃ মুকাতিল দুর্বল, অনুরূপভাবে
তার থেকে বর্ণনাকারী ঈসাও দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুকাতিল মিথ্যুক, যেমনভাবে তার সম্পর্কে ওয়াকী'
হতে নকল করা হয়েছে এবং তার থেকে বর্ণনাকারী ঈসা ইবনু ইবরাহীম নিতান্তই দুর্বল। বুখারী
ও নাসাঈ বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। এ জন্যেই সাগানী হাদীসটিকে “আহাদীসুল মাওযুআহ”
গ্রন্থে (পৃ ৭) উল্লেখ করেছেন। ইবনুল জাওযীও “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সুয়ূতী
নিজে তা সমর্থন করেছেন, তবে নিম্নের বাক্যেঃ (দেখুন পরেরটি)
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯২ | 192 | ۱۹۲
১৯২। মোরগ হচ্ছে আমার উম্মতদের দরিদ্রদের ছাগল এবং জুম’আহ হচ্ছে আমাদের
দরিদ্রদের হাজ্জ (হজ্জ)।
হাদীসটি জাল।
ইবনু হিব্বান কর্তৃক "মাজরুহীন" গ্রন্থের (৩/৯০) বর্ণনা হতে
ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (৩/৮) হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ-মাহমাশ আন-নাইসাপুরী
সূত্রে হিশাম ইবনু ওবায়দিল্লাহ হতে ... উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ ইবনু হিব্বান
বলেনঃ এটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই। হিশাম হচ্ছেন এমন এক বর্ণনাকারী যার দ্বারা দলীল
গ্রহণ করা যায় না।
দারাকুতনী বলেনঃ হাদীসটি মিথ্যা, মাহমাশ হাদীস জাল করতেন। সয়ুতী “আল-লাআলী”
গ্রন্থে (২/২৮) তা সমর্থন করেছেন। ইবনু আররাক “তানযীহুশ শারীয়াহ" গ্রন্থে (২/২৩৬)
বলেনঃ হাফিয যাহাবী “তাবাকাতুল হুফফায” গ্রন্থে শুধুমাত্র বলেছেন হাদীসটি সহীহ নয়।
সহীহ নয় এ কথা দ্বারা হাদীসটি জাল নয় এমন কিছু বুঝানো ঠিক হবে না,
দুটি কারণেঃ
১। হাদীসটি স্পষ্টত জাল এ কারণই তার প্রমাণ বহন করছে। কারণ এটিকে একজন
জালকারী বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া দারাকুতনী স্পষ্ট করেই বলেছেনঃ এটি মিথ্যা হাদীস এবং
ইবনু হিব্বান বলেছেন বাতিল।
২ । এটি সহীহ নয়' কথাটি হাদীসটি জাল এ কথা বিরোধী নয়, বরং বহু সময়
দেখা যায় এ শব্দটি জাল শব্দের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, এখানেও সেরূপ। কারণ যাহাবী নিজেই
হিশাম ইবনু ওবায়দিল্লার জীবনীতে ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় এ হাদীসটিসহ আরেকটি হাদীস
উল্লেখ করে বলেছেনঃ উভয়টিই বাতিল।
মানাবী যাহাবী হতে নকল করেছেন (৬/১৬৩) যে, তিনি “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে
বলেছেনঃ এ দু’টাে হাদীসই বানোয়াট। অতএব ইবনু আররাক কর্তৃক এরূপ ধারণা পোষণ করা যে,
যাহাবী জাল হিসাবে উল্লেখ করেননি, সঠিক নয়।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৩ | 193 | ۱۹۳
১৯৩। পুরুষদের সৌভাগ্য রয়েছে তার হালকা পাতলা দাড়িতে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনু হিব্বান “আয-যুয়াফা" গ্রন্থে (১/৩৬০), তাবারানী
(৩/২৮২/১), ইবনু আদী (২/৩৫৮) ও খাতীব বাগদাদী তার “আত-তারীখ” গ্রন্থে (১৪/২৯৭) ইউসুফ
ইবনু গারাক সূত্রে সুকায়েন ইবনু আবী সিরাজ হতে, তিনি মুগীরা ইবনু সুওয়াইদ হতে
... বর্ণনা করেছেন।
আল-খাতীব বলেনঃ সুকায়েন মাজহুল, মুনকারুল হাদীস । মুগীরা ইবনু সুওয়াইদও
মাজহুল। এ হাদীসটি সহীহ নয়। এছাড়া ইউসুফ ইবনু গারাক মুনকারুল হাদীস।
ইবনু হিব্বান বলেনঃ সুকায়েন নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনাকারী।
হাদিসটি হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৫/১৬৪-১৬৫) উল্লেখ করে
বলেছেনঃ এটি তারারানী বর্ণনা করেছেন তার সনদে ইউসুফ ইবনু গারাক রয়েছেন। তার সম্পর্কে
আযদী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক।
হাদীসটি ইবনুল-জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (১/১৬৬) সুওয়াইদ-ইবনু সা'ঈদু
সূত্রে বাকিয়া ইবনু ওয়ালীদ হতে উল্লেখ করেছেন। এ সুওয়াইদ ইবনু সা'ঈদকে ইয়াহইয়া
দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন আর বাকিয়া হচ্ছেন মুদল্লিস। এছাড়া, তার শাইখ আবুল ফযলও দুর্বল।
ইবনু আদীৱ বৰ্ণনায় অন্য এক সূত্রের বর্ণনাকারী আবূ দাউদ আন-নাখঈ হচ্ছেন
একজন জালকারী। তার জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনু আদী বলেনঃ (২/১৫৩) এ হাদীসটি তিনিই
জাল করেছেন।
ইবনু আদীর আরো এক সূত্রের বর্ণনাকারী হচ্ছেন হুসাইন ইবনুল মুবারাক;
তার সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি বিভিন্ন সনদে মুনকার বাক্যে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
অন্য বর্ণনাকারী ওরাকা; তিনি কিছুরই সমকক্ষ নন। এ হুসাইন সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি
মিথ্যার দোষে দোষী।
যাহাবী তার দু'টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি সে দু'টোর একটি অতঃপর বলেছেনঃ
এটি মিথ্যা। তার এ কথাকে হাফিয় ইবনু হাজার "লিসানুল মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
সুয়ূতীও হাদীসটি জাল হওয়ার ব্যাপারে তার “আল-ফাতাওয়া (২/২০৫) গ্রন্থে ঐকমত্য পোষণ
করেছেন।
বাকিয়া সুত্রে বর্ণিত এ হাদিসটি সম্পর্কে আবূ হাতিমকে জিজ্ঞেস করা হলে
তিনি বলেনঃ এ হাদীসটি জাল, বাতিল।
ইবনু কুতাইবা "মুখতালাফুল হাদীস" গ্রন্থে (৯০) উল্লেখ করেছেন
যে, হাদিসবিদগণ এটি সম্পর্কে বলেছেনঃ হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৪ | 194 | ۱۹٤
১৯৪। তোমরা বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছের তেল গ্রহণ কর এবং ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার
কর, কারন তা অর্শ্ব রোগের আরোগ্যকারী।
হাদীসটি মিথ্যা।
এটিকে তাবারানী "আল-মু-জামুল কাবীর" গ্রন্থে (১৭/২৪৭/৭৭৪)
এবং তার থেকে আবূ নু’য়াইম "আত-তিব্ব" গ্রন্থে (২/৮০) উসমান ইবনু সালেহ সূত্রে
তার পিতা হতে, তার পিতা ইবনু লাহী'য়াহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু আবী হাতিম "আল-ইলাল" গ্রন্থে (২/২৭৯)
বলেনঃ আমার পিতা হতে শুনেছিঃ তিনি ইবনু লাহী'য়াহ হতে উসমান ইবনু সালেহ সুত্রে
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ এটি একটি মিথ্যা হাদিস।
যাহাবী তার "আল-মীমান" গ্রন্থে এ কথাকে সমর্থন করে এটির কারণ
সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেনঃ আবূ যুর'য়াহ বলেছেনঃ উসমান মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত
ছিলেন না। কিন্তু তিনি খালিদ ইবনু নাজীহ-এর সাথে হাদীস লিখতেন। আর এ খালিদ তাদেরকে
লিখে দিতেন সে সব কিছু যা তারা তাদের শাইখ হতে শুনেননি।
ইবনু আবী হাতিম “আল-জারহু ওয়াত তাদীল” গ্রন্থে (১/২/৩৫৫) খালিদ ইবনু
নাজীহ-এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে তার পিতা হতে নকল করে বলেছেনঃ তিনি (খালিদ) উসমান
ইবনু সালেহ মিসরী, লাইস-এর কাতিব আবু সালেহ ও ইবনু আবী মারইয়াম-এর সাথে থাকতেন। তিনি
একজন মিথ্যুক, হাদীস জাল করতেন এবং সেগুলো ইবনু আবী মারইয়াম এবং আবু সালেহ-এর গ্রন্থগুলোতে
ঢুকিয়ে দিতেন। যে হাদীসগুলো আবু সালেহ হতে ইনকার করা হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে সেগুলো
তারই জালকৃত।
আমি (আলবানী) বলছিঃ স্পষ্ট ব্যাপার এই যে, এ হাদীসটি খালেদ কর্তৃক জালকৃত।
তার পক্ষে উসমান ইবনু সালেহের মধ্যে সন্দেহ ঢুকানো সম্ভব হয়েছে যে, এটি তিনি তার শাইখ
ইবনু লাহীয়াহ হতে লিখেছেন। কিন্তু সুয়ূতীর নিকট হাদীসটির কারণ লুক্কায়িতই রয়ে গেছে।
ফলে তিনি “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এজন্য মানাবী তার সমালোচনা
করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৫ | 195 | ۱۹۵
১৯৫। তোমাদের কোন ব্যাক্তি যখন তার স্ত্রী বা তার দাসীর সাথে মিলিত
হবে; তখন যেন তাঁরা গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি না দেয়। কারণ তা অন্ধ সন্তান ভূমিষ্ঠ করায়।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু'আত” গ্রন্থে (২/২৭১) ইবনু আদীর (১/৪৪)
বর্ণনায় হিশাম ইবনু খালিদ হতে, তিনি বাকিয়া হতে ... বর্ণনা করেছেন। অতঃপর ইবনুল জাওযী
বলেন, ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ বাকিয়া মিথ্যুকদের থেকে বর্ণনা করতেন এবং তাদলীস করতেন।
তার কিছু সাথী ছিল যারা তার হাদীস হতে দুর্বল বর্ণনাকারীদেরকে সরিয়ে দিত। এ হাদীসটি
ইবনু যুরায়েজ হতে কোন দুর্বল বর্ণনাকারীর। অতঃপর তিনি তার থেকে তাদলীস করেছেন। এটি
জাল (বানোয়াট)।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে (২/১৭০) বলেছেনঃ ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল”
গ্রন্থে তার পিতা হতে অনুরূপ কথা বর্ণনা করেছেন।
ইবনু সালাহ বাকিয়া কর্তৃক ইবনু যুরায়েজ হতে শ্রবণ সাব্যস্ত করেছেন।
কিন্তু ইবনু আবী হাতিম ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বাকিয়া থেকে বর্ণনাকারী হিশাম হতে এ ভুল
সংঘটিত হয়েছে। মূলত এটি তিনি ইবনু যুরায়েজ হতে শ্রবণ করেননি। অতঃপর বলেছেন, আমার
পিতা বলেছেনঃ এ তিনটি হাদীস বানোয়াট, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। তার এ কথাকে যাহাবী
“আল-মীযান” গ্রন্থে সমর্থন করেছেন।
এছাড়া সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিও এ হাদীসটি বাতিল হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যখন
আল্লাহ তা’আলা স্ত্রীর সাথে মেলা-মেশাকে বৈধ করেছেন, তখন এটি বোধগম্য নয় যে, তিনি
তার গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করবেন।
এ দৃষ্টিভঙ্গিকেই শক্তি যোগাচ্ছে আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত নিম্নের
হাদীসটি। তিনি বলেনঃ “আমি এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের মধ্যবর্তী
স্থলে রাখা একই পাত্র হতে গোসল করতাম এবং তিনি (পানি নিতে) আমার চাইতে অগ্রণী হতেন,
তখন আমি বলতামঃ আমার জন্য ছাডুন আমার জন্য ছাডুন (বুখারী, মুসলিম)।
ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় সুলায়মান ইবনু মূসার সূত্রে এসেছে যে, কোন
ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাবে কিনা তাকে এ মর্মে
প্রশ্ন করা হয়েছিল? তিনি বলেনঃ আমি এ বিষয়ে আতাকে জিজ্ঞাসা করলে; তিনি বলেনঃ আমি
আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তখন তিনি উপরের হাদীসটি বর্ণনা করেন।
হাফিয ইবনু হাজার “ফাতহুল বারী” গ্রন্থে (১/২৯০) বলেনঃ এটি ব্যক্তি
কর্তৃক তার স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া জায়েয হওয়ার দলীল।
এটি যখন স্পষ্ট হচ্ছে, তখন গোসলের সময় এবং সঙ্গম করার সময় দৃষ্টি
দেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। অতএব হাদীসটি বাতিল হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৬ | 196 | ۱۹٦
১৯৬। তোমাদের কোন ব্যাক্তি যখন সঙ্গম করবে, তখন গুপ্তাঙ্গের দিকে দৃষ্টি
দেবে না, কারণ তা অন্ধ সন্তান ভূমিষ্ঠের কারণ এবং বেশী বেশী কথা বলবে না; কারণ তা বোবা
সন্তান ভূমিষ্ঠের কারণ।
হাদীসটি জাল।
এটি ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থে (২/২৭১) আযদীর বর্ণনা হতে
... উল্লেখ করেছেন। যার সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আব্দির রহমান আল-কুশায়রী রয়েছেন। তার
সম্পর্কে খালীলী তার “মাশিখাত” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি শামী। এ হাদীসটি তিনি এককভাবে বর্ণনা
করেছেন। তিনি মুনকার বর্ণনা করতেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনিই হচ্ছেন হাদীসটির সমস্যা। তার সম্পর্কে যাহাবী
বলেনঃ তিনি মিথ্যার দোষে দোষী, নির্ভরযোগ্য নন। আবুল ফাতাহ আল আযদী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক,
মাতরূকুল হাদীস। “লিসানুল মীযান” গ্রন্থে দারাকুতনী হতে বর্ণনা করা হয়েছে; তিনি বলেনঃ
তিনি মাতরূকুল হাদীস । উকায়লী মিসায়ার হতে তার হাদীসগুলো সম্পর্কে বলেনঃ মুনকারুল
হাদীস, তার কোন ভিত্তি নেই, তার অনুকরণও করা যায় না। কারণ তিনি (কুশায়রী) মাজহুল
(অপরিচিত)।
অনুরূপ কথা ইবনু আদীর “আল-কামিল” গ্রন্থেও (৬/২২৬১) এসেছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৭ | 197 | ۱۹۷
১৯৭। নারীদের সাথে মিলিত হবার সময় তোমরা বেশী কথা বলবে না, কারণ তা
থেকে বোবা বা ধবল রোগের সৃষ্টি হয়।
হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল।
এটি ইবনু আসাকির তার সনদে (৫/৭০০) আবুদ-দারদা হাশিম ইবনু মুহাম্মাদ
ইবনে সালেহ আল-আনসারী পর্যন্ত ... বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী "আল-লাআলী" গ্রন্থে (২/১৭০-১৭১) ইবনু আসাকির এর বর্ণনায়
হাদীসটি পূর্ববর্তী হাদীসের শাহেদ হিসাবে উল্লেখ করে চুপ থেকেছেন, অথচ (দুর্বল হওয়ার
জন্য) তার চারটি কারণ রয়েছেঃ
১ এটি মুরসাল এ কাবীসা যিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে
বর্ণনা করেছেন তিনি তাবে'ঈ সাহাবী নন।
২। যুহায়ের ইবনু মুহাম্মদ আত-তামীমী হচ্ছেন বিতর্কিত ব্যক্তি। হাফিয
ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তার থেকে শামীদের বর্ণনা সহীহ নয়। এ কারণে এ
বর্ণনাটি দুর্বল। ইমাম বুখারী ইমাম আহমাদ হতে বর্ণনা করে বলেনঃ যে যুহায়ের থেকে শামীরা
বর্ণনা করেছেন তিনি অন্যজন। আবূ হাতিম বলেনঃ তিনি শামীদের সম্মুখে হাদীস বর্ণনা করেছেন
তার হেফয হতে, ফলে তার বহু ভুল সংঘটিত হয়েছে। ইমাম বুখারীকে যুহায়ের কর্তৃক বর্ণিত
এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ আমি এ শাইখ হতে পরহেজ করি, তার হাদীস
যেন বানোয়াট, আমার নিকট এ যুহায়ের- ইবনু মুহাম্মাদ নন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসটি তার থেকে শামীদের বর্ণনায় এসেছে। অতএব
তা তার হাদীসটি দুর্বল হওয়ার প্রমাণ বহন করছে।
৩। খায়রান ইবনু 'আলা প্রসিদ্ধ নন। তাকে ইবনু হিব্বান ছাড়া অন্য কেউ
নির্ভরযোগ্য বলেননি। যাহাবী যখন তার জীবনী বর্ণনা করেছেন, তখন বলেছেনঃ তাকে নির্ভরযোগ্য
বলা হয়েছে অথচ তার মুনকার হাদীস রয়েছে।
৪। আমি আবুদ-দারদা হাশিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ্ আনসারীর জীবনী
পাচ্ছি না।
মোটকথা, হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না।
এটি মুনকার।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৮ | 198 | ۱۹۸
১৯৮। যে ব্যাক্তি তার সম্পদ বা তার শরীরে কোন বিপদ দ্বারা আক্রান্ত
হবে। অতঃপর তা গোপন রাখবে এবং তা মানুষের নিকট উপস্থাপন করবে না। আল্লাহর উপর তাকে
ক্ষমা করা অপরিহার্য হয়ে যায়।
হাদীসটি জাল।
এটি তাবারানী “মুজামুল কাবীর” গ্রন্থে (৩/১২৩/১) এবং ইবনু হিব্বান
“আল-মাজরূহীন" গ্রন্থে (১/২০২) হিশাম ইবনু খালিদ সূত্রে বাকিয়া হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
হায়সামী “আল-মাজমা" গ্রন্থে (২/৩৩১) বলেনঃ হাদীসটি তাবারানী
“আল-কাবীর” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, তাতে বাকিয়া রয়েছেন, তিনি মুদাল্লিস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ ইবনু আবী হাতিম তার “আল-ইলাল” গ্রন্থে তাবারানীর
সূত্রেই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেনঃ হাদীসটি
জাল (বানোয়াট), এটির কোন ভিত্তি নেই। যাহাবী আবু হাতিমের কথাকে সমর্থন করেছেন।
১৯৫ নং হাদীসে এ বাকিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যাহাবী “আল-মীযান”
গ্রন্থে বলেনঃ ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ এ হাদীসটি এমন এক কপি হতে আমরা লিখেছি যে কপির
সবই বানোয়াট ।
সুয়ূতী এ দুই ইমাম কর্তৃক হাদীসটিকে জাল হিসাবে হুকুম লাগানোর পরেও
সে দিকে লক্ষ্য না করে তার “জামেউস সাগীর” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ১৯৯ | 199 | ۱۹۹
১৯৯। পিতার নিকট পুত্রের প্রাপ্ত এই যে, সে তার সুন্দর নাম রাখবে এবং
তাকে উত্তম রূপে আদব শিক্ষা দিবে।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু মুহাম্মাদ জাফার ইবনু মুহাম্মাদ আস-সীরাজ আল-কারী “আলফাওয়াইদ”
গ্রন্থে (৫/৩২/১-৯৮ পর্যন্ত) এবং মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল ওয়াহিদ আল-মাকদেসী (যিয়া)
“আল-মুনতাকা মীন মাসমু'য়াত” গ্রন্থে (৪/২৬/১) মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা সূত্রে তার শাইখ
মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আল-কারী বলেনঃ এটি গারীব, মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা
করেছেন কিনা তা জানি না, তিনি নিতান্তই দুর্বল, তবে তার পিতা নির্ভরযোগ্য।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযলকে ইবনু আবী শায়বাহ মিথ্যার
দোষে দোষী করেছেন। ফাল্লাস বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার হাদীস মিথ্যুকদের
হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
অপর বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল-মাদায়েনী মাতরূক, যেমনভাবে
দারাকুতনী ও হাকিম বলেছেন।
এ হাদীসটি অন্য এক সনদে আবু বাকর আল-জাসসাস “আহকামুল কুরআন” গ্রন্থে
(৩/৫৭৪) এ মুহাম্মাদ ইবনুল ফযল হতেই জাবারার সূত্রে বর্ণনা করেছেন কিন্তু এ জাবারা
হচ্ছেন ইবনুল মুগাল্লিস। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ মিথ্যুক।
ইবনু নুমায়ের বলেনঃ তার জন্য হাদীস জাল করা হত। অতঃপর তিনি সেটি বর্ণনা
করতেন অথচ তিনি তা জানতেন না।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০০ | 200 | ۲۰۰
২০০। হাজ্জ (হজ্জ) হচ্ছে জিহাদ আর উমরা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক স্বরূপ
(নফল)।
হাদীসটি দুর্বল।
এটি ইবনু মাজাহ্ (২/২৩২) ও ইবনু আবী হাতিম “আল-ইলাল” গ্রন্থে (১/২৮৬)
হাসান ইবনু ইয়াহইয়া আল-খুশানী সূত্রে উমার ইবনু কায়েস হতে ... বর্ণনা করেছেন। এর
সনদটি দুর্বল। কারণ এ উমার ইবনু কায়েস মন্ডল হিসাবে প্রসিদ্ধ। তাকে আহমাদ, ইবনু মাঈন,
ফাল্লাস, আবূ যুরয়াহ, বুখারী, আবু হাতিম, আবু দাউদ, নাসাঈ প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন
এবং হাসানও দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং তারা উভয়েই মাতরূক। প্রথমটি সম্পর্কে আহমাদ
বলেনঃ তার হাদীসগুলো বাতিল । হাসান সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নন। দারাকুতনী
বলেনঃ তিনি মাতরূক। ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি নিতান্তই মুনকারুল হাদীস। তিনি নির্ভরযোগ্যদের
উদ্ধৃতিতে এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
অতঃপর তার একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি বানোয়াট। ইবনু আী হাতিম
বলেনঃ আমি আমার পিতাকে এ হাদীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি বলেনঃ এ হাদীসটি
বাতিল।
কিন্তু হাদীসটি অন্য সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। বাইহাকী তার “সুনান” গ্রন্থে
(৪/৩৪৮) সাঈদ ইবনু সালেম সূত্রে বর্ণনা করেছেন। মুরসাল এবং বর্ণনাকারী সাঈদ দুর্বল
হওয়ার কারণে এ সনদটি দুর্বল। এ জন্যেই বলা হয়েছে হাদীসটি দুর্বল।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদিস নম্বরঃ ২০১ | 201 | ۲۰۱
২০১। প্রত্যেক নাবীই মৃত্যুবরণ করেন, অতঃপর চল্লিশ দিন পর কবরে তার
নিকট তার আত্মাকে ফিরিয়ে দেয়া হলে তিনি দাঁড়িয়ে যান। আমি আমার মে’রাজের রাতে মূসাকে
অতিক্রম করেছিলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি তার কবরে পরিবারবর্গের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
হাদীসটি জাল।
এটি আবু নু’য়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে (৮/৩৩৩) তার শাইখ
সুলায়মান ইবনু আহমাদ তাবারানী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া এটি “মুসনাদুশ শামীয়ীন”
গ্রন্থে (পৃঃ ৬৪) এসেছে। ইবনু আসাকিরও (১৭/১৯৭/১) হাসান ইবনু ইয়াহইয়া হতে ... বর্ণনা
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাসান ইবনু ইয়াহইয়া আল-খুশানী মাতরূক, যেমনভাবে
তার সম্পর্কে পূর্বের হাদীসটিতে আলোচনা করা হয়েছে। তার সূত্রেই ইবনুল জাওযী “আল-মাওযু
আত” গ্রন্থে (৩/২৩৯) ও (১/৩০৩) ইবনু হিব্বান কর্তৃক "মাজরুহীন" গ্রন্থের
(১/২৩৫) বর্ণনা হতে উল্লেখ করেছেন। ইবনু হিব্বান বলেছেনঃ এটি বাতিল, খুশানী নিতান্তই
মুনকারুল হাদীস। তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে যেগুলোর কোন ভিত্তি নেই সেগুলো বর্ণনা
করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার ইবনু হিব্বান হতে বর্ণনা করে বলেন, তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি
বাতিল, বানোয়াট। অতঃপর তিনি তা “তাহযীবুত তাহযীব” গ্রন্থে (২/৩২৭) সমর্থন করেছেন।
যাহাবীও “আল-মীযান” গ্রন্থে এ খুশানীর জীবনী বর্ণনা করতে গিয়ে তার
থেকে অনুরূপ ভাষ্য বর্ণনা করে বলেছেনঃ তিনি এককভাবে এটি বর্ণনা করেছেন। এটিকে ইবনুল
জাওযী “আল-মাওযুআত” গ্রন্থেও উল্লেখ করে তিনিও তা সমর্থন করেছেন।
সুয়ূতী সকলের বিপরীত কথা বলে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৮৫) ইবনুল জাওযীর
সমালোচনা করে বলেছেন যে, শাহেদ থাকার কারণে হাদীসটি হাসান স্তরে পৌঁছে যায়। এ কথা
বলার পর তার সমর্থনে আরো যে সব কথা বলেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিনি বলেছেন যে,
তাকে (খুশানীকে) জালকরা বা মিথ্যার সাথে জড়িত করা হয়নি। কিন্তু ইবনু হিব্বান স্পষ্টভাবে
বলেছেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের উদ্ধৃতিতে এমন কিছু বর্ণনা করেছেন যার কোন ভিত্তি নেই।
এ কথা হতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।
আমি (আলবানী) মনে করি এ হাদিসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিম্নের সহীহ হাদীস বিরোধীঃ
ما من أحد يسلم علي إلا رد الله علي روحي حتى أرد عليه السلام
যে কেউ আমাকে সালাম প্রদান করলে আল্লাহ তা’আলা আমার আত্মাকে আমার নিকট
ফিরিয়ে দেন যাতে করে আমি তার সালামের উত্তর দিতে পারি।"
এটি আবু দাউদ (১/৩১৯), বাইহাকী (৫/২৪৫) ও আহমাদ (২/৫২৭) হাসান সনদে
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। দেখুন "সিলসিলাহ্ সহীহাহ" (২২৬৬)।
এ হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
আত্মা তার শরীরে সর্বদা স্থায়ী নয় বরং তাকে তা ফিরিয়ে দেয়া হয় যাতে করে তিনি মুসলমানদের
সালামের উত্তর দিতে পারেন। অপর পক্ষে জাল হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, মৃত্যুর চল্লিশ দিন
পর সকল নাবীর আত্মাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। যদি এটি সহীহ হয় তাহলে কীভাবে সালামের উত্তর
দেয়ার জন্য তার শরীরে তার আত্মা ফিরিয়ে দেয়া হয়? এটি বোধগম্য নয়। বরং দুটির মাঝে
দ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট। একটি পরিত্যাগ করা অপরিহার্য। অতএব যেটি মুনকার সেটিই পরিত্যাগ
করা যুক্তি সঙ্গত।
এছাড়া শাহেদ হিসাবে সুয়ূতী যে হাদীসটি (কোন নাবী তার যমীনের কবরে
চল্লিশ দিনের বেশী অবস্থান করেননি। অন্য বর্ণনায় এসেছে উঠিয়ে নেয়া হয়) বর্ণনা করেছেন
সেটিও সহীহ্ নয়, বরং মাকতু । তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। সম্ভবত সেটি ইসরাঈলীদের
বর্ণনা।
তার এ বর্ণনা অনুযায়ী চল্লিশ দিনের বেশী কবরে থাকেন না বরং উঠিয়ে
নেয়া হয়। তাহলে তাদের আত্মা ফিরিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ তাদের শরীরগুলো
তো কবরেই অবশিষ্ট নেই, কিসের নিকট তা ফিরিয়ে দেয়া হবে?
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০২ | 202 | ۲۰۲
২০২। নাবীগণকে তাঁদের কবরে চল্লিশ রজনীর পর অবশিষ্ট রাখা হয় না, তবে
তাঁরা আল্লাহর সম্মুখে শিঙ্গায় ফুঁক না দেয়া পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে
থাকবেন।
হাদীসটি জাল।
এটিকে বাইহাকী “কিতাবু হায়াতিল আম্বিয়া” গ্রন্থে (পৃঃ ৪) উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এ সনদটি জাল। কারণ এর বর্ণনাকারী আহমাদ ইবনু আলী
আল-হাসনাবী মিথ্যার দোষে দোষী। তিনি হাকিমের শাইখ, হাকিম নিজে তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেনঃ তার হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণীয় নয়। আল-খাতীব বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন
না। তার সম্পর্কে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ জুরজানী আল-কুশশী বলেনঃ তিনি মিথ্যুক। তার সম্পর্কে
আবুল আব্বাস আল-আসামও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।
সনদের আরেক বর্ণনাকারী আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাসকে চিনি
না। তার শাইখ ইসমাঈল ইবনু তালহা ইবনু ইয়াযীদের জীবনী পাচ্ছি না। এছাড়া মুহাম্মাদ
ইবনু আবী লায়লা দুর্বল। তার স্মরণশক্তি ছিল ক্রটিপূর্ণ। তিনি এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ।
সুয়ূতী হাদীসটি “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৮৫) পুর্বের হাদীসটির শাহেদ হিসাবে উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু দু দিক দিয়ে তা সঠিক নয়ঃ
১। এটি বানোয়াট, এ ব্যাপারে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।
২। এ হাদীসটিকে যার জন্য শাহেদ হিসাবে বলা হচ্ছে এটি তার বিরোধী। কারণ
এ হাদীসে বলা হচ্ছে চল্লিশ দিন পরে নাবীগণকে তাদের কবরে অবশিষ্ট রাখা হবে না (যদিও
এটি জাল) এবং পূর্বেরটিতে বলা হয়েছে তাঁর আত্মাকে কবরের মধ্যে তার নিকট ফিরিয়ে দেয়া
হবে! এটি কোথায় আর সেটি কোথায়? একটি অপরটির বিরোধী। এছাড়া এ হাদীসটি সহীহ হাদীস
বিরোধী যা এটির জাল হওয়ার প্রমাণ বহন করছে।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৩ | 203 | ۲۰۳
২০৩। যে আমার কবরের নিকট আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে; আমি তা শ্রবণ করি
এবং যে ব্যাক্তি আমার প্রতি দুর হতে দুরুদ পাঠ করবে; একজন ফেরেশতাকে তা আমার নিকট পৌঁছে
দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তা তার দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মের জন্য যথেষ্ট হয়ে
যাবে এবং আমি তার জন্য সাক্ষী বা সুপারিশকারী হয়ে যাব।
হাদীসটি এভাবে জাল।
হাদীসটি ইবনু সাম'উন “আল-আমালী” গ্রন্থে (২/১৯৩/২), খাতীব বাগদাদী তার
“আত-তারীখ” গ্রন্থে (৩/২৯১-২৯২) এবং ইবনু আসাকির (১৬/৭০/২) মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান
সূত্রে আ'মাশ হতে এবং তিনি আবু সালেহ্ হতে ... বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ মুহাম্মাদ ইবনু মারওয়ান সূত্রে ইবনুল জাওযী “আল-মাওযুআত”
গ্রন্থে (১/ ৩০৩) উকায়লীর বর্ণনা হতে হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়। মুহাম্মাদ
ইবনু মারওয়ান হচ্ছেন সুদ্দী আস-সাগীর; তিনি মিথ্যুক। উকায়লী বলেনঃ এ হাদীসটির কোন
ভিত্তি নেই। সুয়ূতী তার সমালোচনা করে “আল-লাআলী” গ্রন্থে (১/২৮৩) বলেছেনঃ এটিকে বাইহাকী
এ সূত্রেই “শুয়াবুল ঈমান" গ্রন্থে বর্ণনা করে তার শাহেদগুলোও উল্লেখ করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ সুয়ূতী যে শাহেদগুলো উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর কোন
কোনটি আবার সহীহ, যেমনঃ
إن لله ملائكة سياحين في الأرض يبلغوني عن أمتي السلام
“নিশ্চয় যমীনের মধ্যে আল্লাহর কিছু ভ্রমনকারী ফেরেশতা রয়েছেন যারা
আমার নিকট আমার উম্মাতের সালামগুলো পৌঁছে দেন।" এছাড়া আরেকটি হাদীস ২০১ নং হাদীসর
আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ হাদীসগুলো আলোচ্য হাদীসটির পূরো অংশের জন্য শাহেদ হতে
পারে না। তবে সালাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে এ অর্থ যে
উক্ত হাদীস হতে বুঝা যায় শুধুমাত্র সেটুকুর শাহেদ হতে পারে। অবশিষ্ট অংশগুলেকে বানোয়াটই
বলতে হবে।
এছাড়া মুতাবায়াত হিসাবে যেসব বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলোর কোনটিই সহীহ
সনদে বর্ণিত হয়নি। ইবনু তাইমিয়্যা “মাজমুউ ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেন (২৭/২৪১) এ হাদীসটি
বানোয়াট, এটি মারওয়ান আমাশ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি সকলের ঐক্যমতে মিথ্যুক।
মোটকথা, যে অংশটুকু প্রমাণ বহন করছে যে, সালাম দিলে তাঁর নিকট পৌঁছে
দেয়া হয়, এ অংশটুকু সহীহ, বাকী অংশগুলো সহীহ নয় বরং সেগুলো বানোয়াট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৪ | 204 | ۲۰٤
২০৪। যে ব্যাক্তি ইসলামের হাজ্জ (হজ্জ) করবে, আমার কবর যিয়ারাত করবে,
একটি যুদ্ধে লড়াই করবে এবং কুদুস নগরীতে আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে; আল্লাহ তাকে ঐ
বস্তুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন না যা তার উপর ফরয করেছেন।
হাদীসটি জাল।
এটিকে সাখাবী "আল-কাওলীল বাদী" গ্রন্থে (পৃঃ ১০২) উল্লেখ
করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি জাল, স্পষ্টতই এটি বাতিল । ইবনু আবদিল হাদী
বলেনঃ এ হাদীসটি যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বানানো হয়েছে, যাদের
হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদের তাতে কোন প্রকার সন্দেহ থাকতে পারে না। যার সামান্যতম
জ্ঞান আছে সেই জানে যে, এটি সুফিয়ানের উপর জালকৃত হাদীস।
এ হাদীসটির সনদে আবু সাহাল বাদর ইবনু আবদিল্লাহ আল-মাসীসী নামক এক বর্ণনাকারী
আছেন। যাহাবী “আল-মীযান” গ্রন্থে তার সম্পর্কে বলেনঃ তিনি হাসান ইবনু উসমান যিয়াদী
হতে বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সুয়ূতী হাদীসটি তার “যায়লুল আহাদীসিল মওযুআহ” গ্রন্থে উল্লেখ করে
(নং ৫৭১, পৃ.১২২) বলেছেনঃ যাহাবী "আল-মীযান" গ্রন্থে বলেছেনঃ এ হাদীসটি বাতিল।
তার সমস্যা হচ্ছে উক্ত বাদর।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৫ | 205 | ۲۰۵
২০৫। পূর্ব-পশ্চিমে যে কোন মুসলিম ব্যাক্তি আমার প্রতি সালাম প্রদান
করবে, আমি ও আমার প্রভুর ফেরেশতাগণ তার সালামের উত্তর প্রদান করব। অতঃপর এক ব্যাক্তি
বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! মদিনাবাসীদের অবস্থা কি হবে? (উত্তরে) তাকে বললেনঃ পাড়া-প্রতিবেশীদের
প্রতি দয়ালু ব্যাক্তি সম্পর্কে কিইবা বলার আছে, যে পাড়া-প্রতিবেশীকে হেফাযাত করার জন্য
আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন?
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি আবু নু’য়াইম "আল-হিলইয়াহ" গ্রন্থে উল্লেখ (৬/৩৪৯)
করে বলেছেনঃ মালেকের হাদীস হতে এটি গারীব, আবূ মুসয়াব এটিকে এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ আবু মুসয়াব-এর নাম হচ্ছে আহমাদ ইবনু আবী বাকর আল-কাসেম
ইবনে হারেস আয-যুহরী আল-মাদানী। তিনি ইমাম মালেক হতে "মুওয়াত্তা" গ্রন্থের
একজন বর্ণনাকারী। তিনি নির্ভরযোগ্য ফাকীহ। এ হাদীসটির সমস্যা হচ্ছে আবূ মুসয়াব হতে
বর্ণনাকারী ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী; তিনি হচ্ছেন কাযী। "আল-মীযান"
গ্রন্থে যাহাবী তার সম্পর্কে বলেছেনঃ নাসাঈ তাকে মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তার সূত্রেই হাদীসটি দারাকুতনী “গারায়েবে মালেক”
গ্রন্থে বর্ণনা করে বলেছেনঃ এটি সহীহ্ নয়। উমারী এককভাবে এটিকে বর্ণনা করেছেন, তিনি
ছিলেন দুর্বল। অনুরূপ কথা “লিসানুল মীযান” গ্রন্থেও এসেছে।
সাখাবী "আল০কাওলুল বাদী" গ্রন্থে (পৃঃ ১১৭) বলেছেনঃ হাদিসটির
সনদে ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী রয়েছেন, তাকে যাহাবী এ হাদীসটি জাল করার
দোষে দোষী করেছেন।
ইবনু আবদিল হাদী "আস-সারেমুল মানকী" গ্রন্থে (পৃঃ ১৭৬) বলেছেনঃ
হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বানানো হয়েছে। এটির কোন ভিত্তি
নেই। জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে এ শাইখ আল-উমারী আল-মাদানীকে। তার বেইজ্জতীর জন্য
এ ধরনের সনদে এ একটি হাদীসই যথেষ্ট।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৬ | 206 | ۲۰٦
২০৬। যে ব্যাক্তি নাবীগণকে গালি দিবে; (শাস্তি হিসাবে) তাকে হত্যা করা
হবে। যে ব্যাক্তি আমার সাহাবীদের গালি দিবে; তাকে বেত্রাঘাত করা হবে।
হাদীসটি জাল।
হাদীসটি তাবারানী “আল-মুজামুস সাগীর” (পৃঃ ১৩৭) এবং “আল-মুজামুল আওসাত”
(১/২৮১/৪৭৩৯) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এটিও পূর্বের হাদীসটির ন্যায় ওবায়দুল্লাহ ইবনু
মুহাম্মাদ আল-উমারী আলকাযী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তার সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “লিসানুল
মীযান” গ্রন্থে বলেনঃ উমারীকে মিথ্যা এবং জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে। হাফিয ইবনু
হাযার আরো বলেনঃ এ খবরটি তার মুনকারগুলোর একটি।
হাদীসটি হায়সামী "আল-মাজমা" গ্রন্থে (৬/২৬০) উল্লেখ করে
বলেছেনঃ এটিকে তাবারানী "আল-মুজামস সাগীর" এবং “আল-মু'জামুল আওসাত"
গ্রন্থে তার শাইখ ওবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উমারী আল-কাযী হতে বর্ণনা করেছেন।
যাকে নাসাঈ মিথ্যার দোষে দোষী করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৭ | 207 | ۲۰۷
২০৭। আরাফার দিবস যদি জুম’আর দিবসের সাথে মিলে যায় তাহলে তা সর্বোত্তম
দিবস এবং সেটি জুম’আর দিবসহীন সত্তরটি হাজ্জ (হজ্জ) এর চেয়ে ও উত্তম।
হাদীসটি বাতিল, এটির কোন ভিত্তি নেই।
যায়লাঈ "হাশীয়া ইবনু আবেদীন" গ্রন্থে যা এসেছে (২/৩৪৮)
তার উপর ভিত্তি করে বলেছেনঃ এটিকে রামীন ইবনু মুয়াবিয়া “তাজরীদুস সিহহা” গ্রন্থে
বর্ণনা করেছেন।
জেনে নিনঃ এ রায়ীনের গ্রন্থটিতে ইবনুল আসীরের "জামেউল উসূল মিন
আহাদীসির রসূল" গ্রন্থের ন্যায় ছয়টি হাদীস গ্রন্থ (বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা
মালেক, আবু দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিযী) থেকে হাদীস একত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু “কিতাবুত
তাজরীদ” গ্রন্থে এমন বহু হাদীস স্থান পেয়েছে যেগুলোর কোন ভিত্তি ছয়টি হাদীস গ্রন্থে
নেই। এ হাদীসটি সেই পর্যায়ভুক্ত যেটি ছয়টি হাদীস গ্রন্থে, এমনকি অন্য কোন প্রসিদ্ধ
গ্রন্থেও যার কোন ভিত্তি নেই।
ইবনুল কাইয়্যিম বরং স্পষ্টভাবে “যাদুল মায়াদ” গ্রন্থে (১/১৭) হাদীসটি
বাতিল হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেনঃ সাধারণ লোকদের মুখে মুখে প্রচার হয়েছে যে,
জুম'আর দিবসের সে হজ্জ বাহাত্তরটি হজ্জের সমতুল্য। এটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমনকি কোন সাহাবী বা তাবেঈ হতেও নেই। তার একথাকে মানাবী “ফায়যুল
কাদীর” গ্রন্থে (২/২৮) সমর্থন করেছেন। ইবনু আবেদীন “হাশীয়া” গ্রন্থেও সমর্থন করেছেন।
হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৮ | 208 | ۲۰۸
২০৮। যে ব্যাক্তির হাজ্জ (হজ্জ) গৃহীত হবে (কবুল হবে) তার কঙ্কর উঠিয়ে
নেয়া হয় অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপের স্থানে নিক্ষিপ্ত পাথর উঠিয়ে নেয়া হয়।
হাদীসটি দুর্বল।
“মাকাসীদুল হাসানা ফিল আহাদীসিল মুসতাহারা আলাল আলসিনা” গ্রন্থের লেখক
বলেছেনঃ এটিকে দাইলামী ইবনু উমার (রাঃ) হতে মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আদী হাদীসটি
“আল-কামিল” গ্রন্থে (৭/২৫৫৫) আব্দুল্লাহ ইবনু খাররাশ সূত্রে ওয়াসিত ইবনু হারিস হতে
বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেছেনঃ ওয়াসিত-এর হাদীসগুলোর অনুসরণ করা যায় না। যাহাবীর
“আল-মীযান” গ্রন্থে তার মুনকারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, এটি সেগুলোর একটি। হাদীসটি বাইহাকী
তার "সুনানুল কুবরা" গ্রন্থে (৫/১২৮), দারাকুতনী (পৃঃ ২৮৯), হাকিম (১/৪৭৬)
ও তাবারানী “মুজামুল আওসাত” গ্রন্থে (১/১২১/১) ইয়াযীদ ইবনু সিনান সূত্রে উল্লেখ করেছেন।
এ ইয়াযীদ ইবনু সিনানকে বাইহাকী দুর্বল বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ ইয়াযীদ হাদীসের ক্ষেত্রে
শক্তিশালী নন। কিন্তু হাকিম এ কথার বিরোধিতা করে বলেছেনঃ এটির সনদ সহীহ, ইয়াযীদ ইবনু
সিনান মাতরূক নন।
তবে হক হচ্ছে বাইহাকীর কথায়। কারণ তিনি এ বিষয়ে বেশী জ্ঞাত। হাকিম
কর্তৃক মাতরুক নয় বলা প্রমাণ করে না যে, হাদীসটি সহীহ। কারণ কখনো মাতরুক না হয়েও
দুর্বল হতে পারে, যার কারণে হাদীস দুর্বল হয়।
যাহাবী "তাখলীসুল মুসতাদরাক" গ্রন্থে হাকিমের সমালোচনা করে
বলেছেনঃ মুহাদ্দিসগণ ইয়াযীদকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। হায়সামী (৩/২৬০) বলেনঃ এটির
সনদে ইয়াযীদ ইবনু সিনান আছেন, তিনি দুর্বল।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তবে মওকুফ হিসাবে সহীহ্ সনদে আবু সাঈদ আল-খুদরী
(রাঃ) এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে সাব্যস্ত হয়েছে। সেটি আযরূকী "তারীখু মাক্কা"
গ্রন্থে (পৃঃ ৪০৩) এবং দুলাবী “আল-কুনা" গ্রন্থে (২/৫৬) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু
এটি আমার নিকট মারফু'র হুকুমে এমনটি স্পষ্ট হয়নি।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২০৯ | 209 | ۲۰۹
২০৯। একমাত্র বিদ’আতী ছাড়া আমার উম্মতের সবার জন্য আমার সুপারিশ অত্যাবশ্যকীয়
হয়ে যাবে।
হাদীসটি মুনকার।
ইবনু ওযযাহ আল-কুরতুবী “আল-বিদ'উ ওয়ান নাহীউ আনহা” গ্রন্থে (পৃঃ ৩৬)
আবু আবদিস সালাম সূত্রে বাকর ইবনু আবদিল্লাহ আল-মুযানী হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ এটি মুরসাল। এ বাকর একজন তাবেঈ। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পাননি। মুরসাল হওয়া সত্ত্বেও এটির সনদ দুর্বল। কারণ এ আবূ আবদিস
সালাম-এর নাম হচ্ছে সালেহ্ ইবনু রুস্তম আল-হাশেমী, তিনি মাজহুল; যেমনভাবে হাফিয ইবনু
হাজার "আত-তাকরীব" গ্রন্থে বলেছেন।
এছাড়াও এ দুর্বল মুরসাল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা
বিরোধী। কারণ তিনি বলেছেনঃ شفاعتي لأهل الكبائر من أمتي আমার শাফা'য়াত আমার উম্মাতের কাবীরা গুনাহকারীদের জন্য। এ হাদীসটি
সহীহ। দেখুনঃ "মিশকাত" (৫৫৯৮)।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ
তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ যঈফ ও জাল হাদিস / অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নম্বরঃ ২১০ | 210 | ۲۱۰
২১০। তোমার পরিবারের ছোট বাড়ী হতে ইহরাম বাঁধাতে হাজ্জের (হজ্জ) পূর্ণতা
নিহিত রয়েছে।
হাদীসটি মুনকার।
এটিকে বাইহাকী (৫/৩১) জাবের ইবনু নূহ সূত্রে ... বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির
সনদ দুর্বল। এটিকে বাইহাকী দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন তার এ ভাষায়ঃ فيه نظر ‘এটির মধ্যে বিরূপ মন্তব্য
রয়েছে।’
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর কারণ জাবের সকলের ঐক্যমতে দুর্বল। ইবনু আদী তার
এ হাদীসটি (২/৫০) উল্লেখ করে বলেছেনঃ এটিকে এ সনদ ছাড়া চেনা যায় না এবং এর চেয়ে
বেশী মুনকার আমি দেখছি না। অথচ শাওকানীর নিকট তা লুক্কায়িতই রয়ে গেছে। যার জন্য
“নায়লুল আওতার” গ্রন্থে (৪/২৫৪) বলেছেনঃ এটি মারফূ' হিসাবে আবু হুরাইরাহ (রাঃ) এর
হাদীস হতে সাব্যস্ত হয়েছে। ইবনু আদী এবং বাইহাকী বর্ণনা করেছেন। (কিন্তু তার এ কথা
সঠিক নয়)।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বাইহাকী এটিকে মওকুফ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু
তার সনদে আব্দুল্লাহ মুরাদী রয়েছেন। তার মুখস্ত বিদ্যা হ্রাস পেয়েছিল। তবে এটি মারফুর
চেয়ে বেশী সহীহ।
এছাড়া এটি সহীহ সুন্নাহ বিরোধী কথা। কারণ সহীহ সুন্নাহের মধ্যে নির্দিষ্ট
স্থান হতে ইহরাম বাধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উমার এবং উসমান (রাঃ) মিকাতের পূর্বে
ইহরাম বাঁধাকে মাকরূহ মনে করেছেন। এ আসারটি বাইহাকী বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
No comments:
Post a Comment