Friday, July 9, 2021

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক যিলহজ্জ মাসের ফজিলত, আমল,, হজ্জ ও কুরবানির সহিহ বিধান

بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক যিলহজ্জ মাসের ফজিলত, আমল, হজ্জ ও কুরবানির সহিহ বিধান

আল্লাহ তা‘আলা কিছু মাস, দিন ও রাতকে ফযীলতপূর্ণ করেছেন। যেমন রামাযান মাসকে অন্য সকল মাসের উপর মহিমান্বিত করেছেন। আরাফাতের দিন ও ঈদের দিনকে অন্য দিনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। ক্বদরের রাতকে অন্যান্য রাতের চেয়ে মর্যাদামন্ডিত করেছেন। যিলহজ্জ মাস অনুরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মাস। যে মাসে হজ্জ ও কুরবানী করা হয়ে থাকে। এই মাসের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বিস্তর আলোচনা এসেছে। আলোচ্য প্রবন্ধে যিলহজ্জ মাসের ফযীলত, আমল ও কুরবানী সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করা হ’লঃ

যিলহজ্জ মাসের ফযীলত :

উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়স ষাট থেকে সত্তর বছর। এত্থেকে অধিক বয়স কম লোকেরই হয়। (তিরমিযী হা/৩৫৫০; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৯৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার উম্মাতের (গড়) আয়ু ষাট থেকে সত্তর বছর। তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই এ বয়স অতিক্রম করবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৪২৩৬, তিরমিযী ২৩৩১, ৩৫৫০, মিশকাত ৫২৮০, সহীহাহ ৭৫৭)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাই অল্প সময়ে অধিক নেকী উপার্জনের জন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন মাস ও দিবসকে ফযীলতপূর্ণ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের”। (সূরা ফাজর, আয়াত: ১-২)।

 ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ মাসের দশ দিন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। (সূরা হজ, আয়াত: ২৮)।

এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে কোনো দিনগুলোকে বুঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে ইমাম বুখারি রহ. বলেন,

“ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন”। বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোনো আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৬৯, তিরমিযি: ৭৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট কোনো দিন অধিক প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দিনের তুলনায়। সুতরাং, তাতে তোমরা বেশি করে তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর। (তাবরানী ফীল মুজামিল কাবীর)।

ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: যিলহজ মাসের দশ দিনের ফযিলতের তাৎপর্যের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদতগুলোর সমন্বয় ঘটছে। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, সদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না। (ফাতহুল বারী ১/২৬৩)।

উলামায়ে কেরাম বলেছেন: যিলহজ মাসের ১ম দশ দিন সর্বোত্তম দিন, আর রমযান মাসের শেষ দশ রাত, সবচেয়ে উত্তম রাত।

যিলহজ্জ মাসের গুরুত্বঃ

(১) এটা হারাম মাস :

চারটি হারাম তথা সম্মানিত মাসের মধ্যে অন্যতম হ’ল যিলহজ্জ মাস। মহান আল্লাহ বলেন, মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (তওবা ৯/৩৬)।

আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হ’তে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পর পর রয়েছে। আর একটি মাস হ’ল রজব-ই মুযার, (আরবের মুযার সম্প্রদায় অন্যান্য সম্প্রদায় অপেক্ষা রজব মাসকে অধিক সম্মান করত। তাই এ মাসটিকে তাদের দিকে সম্বন্ধিত করে হাদীছে ‘রজবে-মুযার’ বলা হয়েছে)।

যা জুমাদা ও শা‘বান মাসের মাঝে অবস্থিত’। (বুখারী হা/৩১৯৭; মুসলিম হা/১৬৭৯; আবুদাঊদহা/১৯৪৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বাকরাহ সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিদায় হজের (হজ্জের) ভাষণে বলেনঃ মহান আল্লাহ যেদিন আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে কালচক্র একইভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এ চারটি মাসের মধ্যে যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জা ও মুহাররাম এ তিনটি মাস পরপর রয়েছে। চতুর্থ মাসটি হলো রজবে মুদার, যা জুমাদা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৯৪৭, বুখারী হা/৩১৯৭, মুসলিম হা/১৬৭৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) এটা হজ্জের মাস :

ওমরার জন্য সারা বছর সুযোগ থাকলেও হজ্জের জন্য শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত মাস রয়েছে। হজ্জের মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,‘হজ্জ হয় সুবিদিত মাসগুলিতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলিতে হজ্জ করা স্থির করে সে হজ্জের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, হজ্জের সুবিদিত মাসগুলি হ’ল শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ। আল্লাহ এ মাসগুলি হজ্জের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর ওমরা সারা বছর আদায় করা যায়। এ মাসগুলি ব্যতীত হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে হজ্জ হবে না। (তাফসীরে তাবারী, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতে তাফসীর দ্রঃ)।

(৩) এটা কুরবানীর মাস :

কুরবানীর একমাত্র মাস হ’ল যিলহজ্জ মাস। এই মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট চারদিন কুরবানী করার সময়। প্রথম দিন তথা ১০ই যিলহজ্জ ছালাতুল ঈদের পর কুরবানী করতে হবে। ঈদের ছালাতের আগে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছালাতের পূর্বে যবহ করেছে, সে যেন তদস্থলে আরেকটি যবহ করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের ছালাত আদায় করা পর্যন্ত যবহ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবহ্ করে’। (বুখারী হা/৫৫০০; নাসাঈ হা/৪৪১০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জুনদুব ইবনু সুফ্ইয়ান বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কুরবানী পালন করলাম। তখন কতক লোক সালাতের পূর্বেই তাদের কুরবানীর পশুগুলো যবহ্ করে নিয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত থেকে ফিরে যখন দেখলেন, তখন সালাতের পূর্বেই যবহ্ করে ফেলেছে, তখন তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবহ্ করেছে, সে যেন তার বদলে আরেকটি যবহ্ করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত যবহ্ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবহ্ করে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫০০, ৯৮৫, আধুনিক প্রকাশনী ৫০৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৯১)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত

যিলহজ্জ মাস পুরোটাই ফযীলতপূর্ণ হ’লেও প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। যেমন-

(এক)  আল্লাহ এই দিনগুলির কসম করেছেন :

মহান আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ের কসম করেছেন। যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের কসম করে আল্লাহ বলেন, ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/১-৩)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘দশম হ’ল ঈদুল আযহার দিন, বেজোড় হ’ল আরাফার দিন আর জোড় হ’ল কুরবানী দিন’। (আহমাদ হা/১৪১০২; বাযযার হা/২২৮৬। হাকিম হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আইব আরনাঊত এটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্র. আহমাদ হা/১৪৫১১; আলবানী (রহঃ) একে যঈফ বলেছেন। দ্র. যঈফুল জামে‘ হা/১৫০৮)।

(দুই) বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন :

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুনিয়ার দিন সমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন’। (ছহীহুল জামে‘ হা/১১৩৩; ছহীহুত তারগীব হা/১১৫০)।

(তিন)  এই দিনগুলির আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় :

 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা বেশি প্রিয়। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, জিহাদও নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটি নিয়েই আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন। (বুখারী হা/৯৬৯; তিরমিযী হা/৭৫৭; মিশকাত হা/১৪৬০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই, যে দিনের ‘আমল এ দশদিনের ‘আমল অপেক্ষা অধিক প্রিয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে। আর তা হতে কোন কিছু নিয়ে ফিরেনি।(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৬০, সহীহ বুখারী ৯৬৯, আবূ দাঊদ ২৪৩৮, আত্ তিরমিযী ৭৫৭, ইবনু মাজাহ্ ১৭২৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৯৫৪০, আহমাদ ১৯৬৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৮৬৫, ইবনু হিব্বান ৩২৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৩৯২, ইরওয়া ৮৯০, সহীহ আত্ তারগীব ১২৪৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যেসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জ মাসের দশদিনের আমল তার অনুরূপ’। (ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১৪৮; ইরওয়া ৩/৩৯৮)।

(চার) এই দশ দিনে সকল মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয় :

এই দশদিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রায় সকল ইবাদত একত্রিত হয়, যা অন্য কোন সময়ে একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন হজ্জ, কুরবানী, ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাসহ সকল ইবাদত এই দশ দিন একত্রিত করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ; যেহেতু ঐ দিনগুলিতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। যেমন ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ এবং হজ্জ, যা অন্যান্য দিনগুলিতে এভাবে একত্রিত হয় না’। (তহুল বারী ২/৪৬০)।

(পাঁচ) দ্বীনের নিদর্শনসমূহের সম্মানের সময় :

এই দশ দিনে যেহেতু ইসলামের মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয়, সেহেতু আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন সমূহও সম্মান করা সহজ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,‘এটাই হ’ল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাক্বওয়া থেকেই’ (হজ্জ ২২/৩২)।

আল্লাহর শি‘আর বা নিদর্শন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে (কুরতুবী)। এগুলি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি, যেমন হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড (কুরতুবী; সা‘দী)। হাদীর জন্য হাজীদের সঙ্গে নেয়া উট ইত্যাদি (ইবনে কাছীর)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন সম্মান করার দ্বারা হাদীর জন্তুটি মোটাতাযা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাছীর)। (কুরআনুল কারীম (সঊদী আরব: বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স ১৪৪০ হিঃ) ২/১৭৬৭-১৭৬৮)।

আরাফার দিনের ফযীলত

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হ’ল আরাফার দিন। এ দিনেরও বিশেষ ফযীলত রয়েছে।-

(ক)  আল্লাহর দ্বীন ও নে‘মত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন :

মহানবী (ছাঃ)-এর নবুঅতের শেষদিকে বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবার আল্লাহ ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন,‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ইহূদী তাঁকে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন। তা যদি আমাদের ইহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হ’ত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বলল, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।

ওমর (রাঃ) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুম‘আর দিন’। (বুখারী হা/৪৫; মুসলিম হা/৩০১৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযি.) হতে বর্ণিত। জনৈক ইয়াহূদী তাঁকে বললঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন্ আয়াত? সে বললঃ ‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম’’- (সূরাহ্ মায়িদাহ্ ৫/৩)। ‘উমার (রাযি.) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন ‘আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমু‘আহর দিন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৫, ৪৪০৭, ৪৬০৬, ৭২৬৮; মুসলিম ৪৩/১ হাঃ ৩০১৭, আধুনিক প্রকাশনী ৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  কুরআন ও হাদীছকে চূড়ান্ত সংবিধান ঘোষণার দিন :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে বিদায় হজ্জের ভাষণে ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আগত সকল মানুষের সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে একমাত্র কুরআন ও হাদীছের কথা ঘোষণা করেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা আঁকড়ে ধরো, তবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর কখনো বিপথগামী হবে না, তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব’।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৫৫৫, সহীহ মুসলিম ১২১৮, আবূ দাঊদ ১৯০৫, নাসায়ী ২৭৬১, ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৪৭০৫, দারিমী ১৮৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’। (মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/১৫৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হা/১৮৬)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(গ)  আল্লাহ এই দিনের কসম করেছেন :

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল-ইয়াউমুল মাও‘ঊদ’ (বুরূজ ৮৫/২)  অর্থ-ক্বিয়ামতের দিন; ‘আল-ইয়াউমুল মাশ্হূদ’ (হূদ ১১/১০৩)  অর্থ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ’ (বুরূজ ৮৫/৩) অর্থ-জুম‘আর দিন’। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত) হা/৩৩৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৮২০১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আল্লাহ বলেন, ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘বেজোড়-এর অর্থ আরাফা দিবস এবং জোড়-এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (কুরবানী দিন)’। (আহমাদ হা/১৪৫৫১; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ফজর ৩ আয়াত)।

(ঘ)  আরাফাত ময়দানের সন্নিকটে আল্লাহ মানব জাতি থেকে ওয়াদা নিয়েছেন :

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আরাফার ময়দানের সন্নিকটে না‘মান নামক স্থানে আদম (আঃ)-এর মেরুদন্ড হ’তে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ নিয়েছিলেন। তাদেরকে পিঁপড়ার মত আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের সম্মুখে কথা বলেছিলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম। যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী (পিতৃ-পুরুষ)-গণ যা করেছে সে আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’ (আ‘রাফ ৭/১৭২-১৭৩)। (আহমাদ হা/২৪৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭০১; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত),হা/১২১, মুসনাদে আহমাদ ১/২৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ)  এই দিন সবচেয়ে বেশী মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় :

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ তারা যা চায় আমি তাই দেব)। (মুসলিম হা/১৩৪৮; সুনান ইবনু মাজাহ ৩০১৪; ছহীহাহ হা/২৫৫১, নাসায়ী ৩০০৩, সহীহাহ ২৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ)  এই দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে তাঁর বান্দাদের নিয়ে গর্ব করেন :

নবী করীম (ছাঃ) বলেন,‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন বিকেলে আরাফায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে লক্ষ্য কর, তারা আমার কাছে এসেছে মাথায় এলোমেলো চুল নিয়ে ধুলি মলিন অবস্থায়’। (আহমাদ হা/৮০৩৩; ছহীহুত তারগীব হা/১১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৬৮)।

(ছ)  এই দিন মুসলমান (হাজী)দের ঈদ :

এই মর্যাদাপূর্ণ দিন প্রত্যেক বছর মুসলমানদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন। ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাহর দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরীকের দিনগুলো হচ্ছে আমাদের মুসলিমদের ঈদের দিন, এগুলো পানাহারের দিন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হা/২৪১৯; তিরমিযী হা/৭৭৩; নাসাঈ হা/২০০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আরাফার দো‘আ সবচেয়ে উত্তম দো‘আ :

‘আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতা শু‘আয়ব হতে, তিনি তাঁর দাদা [‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল দু‘আর শ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো ‘আরাফার দিনের দু‘আ আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ্ (যিকির) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হলো, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সকল শক্তির আঁধার।)। (তিরমিযী হা/৩৫৮৫; ছহীহাহ হা/১৫০৩; মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হা/২৫৯৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৩৬, সহীহ আল জামি‘ ৩২৭৪)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঝ)  এই দিনের ছিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা :

কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন, ‘আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আমি আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হবে’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২০৪৪, মুসলিম হা/১১৬২; আবুদাঊদহা/২৪২৫; তিরমিযী ৭৫২, ইবনু মাজাহ ১৭৩৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৮৭, শু‘আবূল ঈমান ৩৮৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৩২, ইরওয়া ৯২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১০১৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’। (ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১০১২)।

(ঞ)  হজ্জের মূল কাজ হ’ল আরাফায় অবস্থান করা :

হজ্জের অন্যতম ফরয হ’ল আরাফায় ময়দানে অবস্থান করা। সুতরাং ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বেই আরাফায় পৌঁছে গেল সে হজ্জ পেয়ে গেল। (তিরমিযী হা/২৯৭৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮৯২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 আবদুর রাহমান ইবনু ইয়ামার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃহাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান,হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান, হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। “কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে তবে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হবে না”— (সূরা আল-বাকারাহ ২০৩)। ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফাতে পৌছে যায়, সে হাজ্জ পেয়ে গেল। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ২৯৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে আরাফায় অবস্থান করল না, তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গেল। (তিরমিযী হা/৮৯০। ত্বাবারাণী)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

পূর্বোক্ত হাদীসের মতই ইবনু আবী উমার সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা হতে, তিনি সুফিয়ান সাওরী হতে, তিনি বুকাইর ইবনু আতা হতে তিনি আবদুর রাহমান ইবনু ইয়ামুর (রাঃ) হতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন।

সুফিয়ান ইবনু উআইনা বলেন, এটি একটি উত্তম হাদীস যা সুফিয়ান সাওরী বর্ণনা করেছেন। আবু ঈসা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিম আবদুর রাহমান ইবনু ইয়ামুরের হাদীস অনুসারে আমল করেন।

তারা বলেন, (৯ যিলহাজ্জ দিবাগত রাতে) কোন লোক যদি ফজর উদয়ের পূর্বে আরাফাতে হাযির হতে ব্যর্থ হয় তবে তার হাজ্জ ছুটে গেল। ফজর উদয়ের পর হাযির হলে তা ধর্তব্য হবে না। সে উমরা করবে এবং পরবর্তী বছর হাজ্জ আদায় করবে। এই মত প্রকাশ করেছেন সুফিয়ান সাওরী, সাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। অাৰু ঈসা বলেনঃ শুবা বুকাইর ইবনু আতা হতে সাওরীর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি ওয়াকী বর্ণনা করে বলেছেন, হজ্জ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মূল হচ্ছে এই হাদীসটি। (সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), ৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)।

ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফায় পৌঁছে যায়, সে হজ্জ পেয়ে গেল’। (তিরমিযী হা/২৯৭৫; নাসাঈ হা/৩০৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৩০১৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

বুকাইর ইবনে আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি আবদুর রহমান ইবনে ইয়ামুর আদ-দায়লী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরাফাতে উপস্থিতকালে তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। নাজদ এলাকার কতক লোক তাঁর নিকট হাযির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কিভাবে সম্পন্ন হয়? তিনি বলেনঃ ‘‘আরাফাতে অবস্থান হচ্ছে হজ্জ’’। অতএব যে ব্যক্তি মুজদালিফার রাতে ফজর নামাযের পূর্বেই আরাফাতে এসে পৌঁছলো তার হজ্জ পূর্ণ হলো। মিনায় তিন দিন (১১, ১২ ও ১৩ যুলহিজ্জা) অবস্থান করতে হয়। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি দু’ দিন অবস্থানের পর চলে আসে, তবে তাতে কোন গুনাহ নেই। অতঃপর তিনি কোন ব্যক্তিকে নিজ বাহনের পেছনে উঠিয়ে নিলেন এবং সে উচ্চস্বরে একথা ঘোষণা করতে থাকলো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০১৫, তিরমিযী ৮৮৯, নাসায়ী ৩০৪৪,আবূ দাউদ ১৯৪৯, আহমাদ ১৮২৯৬, ১৮২৯৮, ১৮৪৭৫, দারেমী ১৮৮৭, ইরওয়া ১০৬৪, মিশকাত ২৭১৪, সহীহ আবু দাউদ ১৭০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানীর দিনের ফযীলত

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের শেষ দিন হ’ল ইয়ামুন নাহার বা কুরবানীর দিন। এই দিনের বিশেষ ফযীলত ও গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-

(ক)  এটা হজ্জের বড় দিন :

ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (যিলহজ্জের ১০ তারিখ) নহরের দিন তিনটি জামরার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, এটি কোন দিন? লোকেরা বলল, আজ কুরবানীর দিন। তিনি বললেন, আজ হজ্জের বড় দিন’। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) হা/১৯৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৮, সনদ ছহীহ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  এটি আল্লাহর নিকট মহান দিন :

নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন। তারপর মেহেমানদারীর দিন। ছাওর বলেন, তা কুরবানীর দ্বিতীয় দিন’। (আবুদাঊদ হা/১৭৬৫; আহমাদ হা/১৯০৭৫; ইরওয়া হা/১৯৫৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আব্দুল্লাহ ইবনু কুরাত (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন দিন হলো কুরবানীর দিন, তারপর মেহেমানদারীর দিন, সেটি হলো দ্বিতীয় দিন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর পাঁচটি বা ছয়টি কুরবানীর পশু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আনা হলো। যে পশুকে তাঁর কাছে আনা হতো তিনি প্রথমে সেটি যাবাহ করলেন। এভাবে যাবাহ শেষ হলো। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি হালকা একটি কথা বলেছেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। পরে আমি আমার (কাছের ব্যক্তিকে) জিজ্ঞেস করলে সে বললো, তিনি বলেছেনঃ ‘কারো ইচ্ছে হলে এখান থেকে গোশত কেটে নিতে পারবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১৭৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে এই দশক উত্তম নাকি রামাযানের শেষ দশক উত্তম। এই প্রশ্নের জবাবে ইবনু তায়মিয়া (৬৬১-৭২৮ হিঃ) (রহঃ) বলেন, ‘যিলহজ্জের প্রথম দশকের দিনগুলি রামাযানের শেষ দশকের দিনগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর রামাযানের শেষ দশকের রাতগুলি যিলহজ্জের প্রথম দশকের রাতগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’। (মাজমূ‘উল ফাতাওয়া (মদীনা: সঊদী আরব, বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স, ১৪২৫ হিঃ/২০০৪ খ্রিঃ) ২৫/২৮৭)।

ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)-এর উক্তি প্রসঙ্গে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘এ উত্তর নিয়ে যদি কোন যোগ্য ও জ্ঞানী ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহ’লে তা সন্তোষজনক ও যথেষ্টরূপে পাবেন। যেহেতু দশ দিন ছাড়া অন্য কোন দিন নেই যার মধ্যে কৃত নেক আমল আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় হ’তে পারে। তাছাড়া এতে রয়েছে আরাফার দিন, কুরবানী ও তারবিয়া (৮ই যিলহজ্জে)র দিন। পক্ষান্তরে রামাযানের শেষ দশকের রাত্রিগুলি হ’ল জাগরণের রাত্রি। যে রাত্রিগুলিতে রাসূল (ছাঃ) রাত জেগে ইবাদত করতেন। আর তাতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাযার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’। (যা-দুল মা‘আদ ১/৫৭)।

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমল

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমলগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

প্রথমতঃ আম বা সাধারণ ইবাদত। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় সকল নেক আমল করা। যেমন ছালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাহ, তাসবীহ-তাহলীল, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, পাপ থেকে তওবা করা, কারো হক নষ্ট হ’লে তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি মুনকার বা নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত থাকা।

দ্বিতীয়তঃ খাছ বা বিশেষ ইবাদত। যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। যেমন-

(১) তাওবা:

তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানি থেকে ফিরে আসা, আল্লাহর হুকুমের পাবন্দি করার উপর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং অতীতের কৃত কর্মের উপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানি না করা ও তার হুকুমের অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। এ দিন গুলোতে তাওবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‘হে মোমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর—বিশুদ্ধ তওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দেবেন না নবীকে এবং তার মোমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও দক্ষিণ পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা তাহরীম, আয়াত: ৮)।

(২) ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা:

অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। ফরয সালাতগুলো সময় মত সম্পাদন করা, বেশি বেশি করে নফল সালাত আদায় করা। যেহেতু এগুলোই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার সর্বোত্তম মাধ্যম। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তুমি বেশি বেশি সেজদা কর, কারণ তুমি এমন যে কোনো সেজদাই কর না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করবেন। [মুসলিম] এটা সব সময়রে জন্য প্রযোজ্য। নিয়মিত ফরয ও ওয়াজিবসমূহ আদায়ে যতœবান হওয়া- অর্থাৎ, ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। হাদিসে এসেছে—

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি।’ (সূরা তাহরীম, আয়াত: ৮)।

(৩) হজ্জ পালন করা:

সামর্থ্যবান সকল মুসলিমের উপর হজ্জ ফরয (আলে ইমরান ৩/৯৭)। হজ্জ পালনের জন্য প্রস্ত্ততি মূলক কয়েকটি মাস থাকলেও একমাত্র হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় যিলহজ্জ মাসে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হজ্জের মাস ছাড়া কারো হজ্জের ইহরাম বাঁধা উচিত নয়’। (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)।

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘হজ্জের মাসগুলি ছাড়া ইহরাম বাঁধা উচিত নয়। কারণ হজ্জের মাসগুলিতে ইহরাম বাঁধা হজ্জের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ ইবনু খুযাইমা হা/২৫৯৬; তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে। অতএব এই মাসসমূহে যে হজ্জ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজ্জের সময় অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হাজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হাজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৫২১, ১৮১৯, ১৮২০, সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৯, আধুনিক প্রকাশনী ১৪২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪২৮, মুসলিম ১৩৫০, তিরমিযী ৮১১, নাসায়ী ২৬২৭, আহমাদ ৭০৯৬, ৭৩৩৪, ৯০৫৬, ৯৯০৪, ১০০৩৭, দারেমী ১৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে আরও এসেছেঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ‘উমরাহ’র পর আর এক ‘উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের প্রতিদান। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭৭৩, মুসলিম ১৫/৭৯, হাঃ ১৩৪৯, আহমাদ ৯৯৫৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৬৪৭. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৫৫ )। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে ফাদল (রাঃ) এর সূত্রে (অথবা পরস্পরের সূত্রে) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৩, আবূ দাউদ ১৭৩২ আহমাদ ১৮৩৬, ১৯৭৪, ২৯৬৬, ৩৩৩০, দারেমী ১৭৮৪, মিশকাত ৯৯০, ইরওয়া ৯৯০, সহিহ আবু দাউদ ১৫২২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হজ্জ ফরয হওয়ার বিবরণ

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছরই কি হজ্জ ফরয? তিনি বলেনঃ আমি যদি বলি হাঁ, তবে তা অবশ্যই ওয়াজিব (ফরয) হতো। আর যদি তা ওয়াজিব হতো তবে তোমরা তা আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়তে। আর তোমরা যদি তা আদায় করতে না পারতে তবে তোমাদের শাস্তি দেয়া হতো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৫, ২৮৮৬, ইরওয়া ৪/১৫১, মিশকাত ২৫২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হজ্জ ও ‘উমরার ফযীলাত

(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হজ ও ‘উমরা সাথে সাথে করো। কারণ এ দু’টি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। কবূলযোগ্য হজের সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৫২৪, সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৭, আহমাদ ১৬৮, সহীহাহ ১২০০, নাসায়ী ২৬৩১, তিরমিযী ৮১০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২৬৩৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫১২, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৪০৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১১০৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক উমরা থেকে অপর উমরা মাঝখানের সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ এবং জান্নাতই হলো মবরূর (ক্রটিমুক্ত) হজ্জের প্রতিদান। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৮, সহীহুল বুখারী ১৭৭৩, মুসলিম ১৩৪৯, তিরমিযী ৯৩৩, নাসায়ী ২৬২২, ২৬২৩, ২৬২৯, আহমাদ ৭৩০৭, ৯৬২৪, ৯৬৩২, মুয়াত্তা মালেক ৭৭৬, দারেমী ১৭৯৫, সহীহাহ ৩/১৯৭, ১৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ্জ করেছে এবং তাতে অশালীন কথাবার্তা বা আচরণ করেনি, সে এমন অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে যেমন তার মা তাকে (নিষ্পাপ) প্রসব করেছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৮৯, সহীহুল বুখারী ১৫২১, মুসলিম ১৩৫০, তিরমিযী ৮১১, নাসায়ী ২৬২৭, আহমাদ ৭০৯৬, ৭৩৩৪, ৯০৫৬, ৯৯০৪, ১০০৩৭, দারেমী ১৭৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হজ্জীগণের দোয়ার ফযীলাত

(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর পথের সৈনিক, হজ্জযাত্রী ও উমরা যাত্রীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাদের দান করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৯৩, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০৮, সহীহাহ ১৮২০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) সাফওয়ান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আবূ দারদা (রাঃ) এর কন্যা তার বিবাহ বন্ধনে ছিল। তিনি তার নিকট এলেন এবং সেখানে উম্ম দারদা (রাঃ) কেও উপস্থিত পেলেন, কিন্তু আবূ দারদা (রাঃ) কে পাননি। উম্মু দারদা (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ বছর হজ্জ করতে চাও? সাফওয়ান (রাঃ) বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, তাহলে তুমি আমাদের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর নিকট দোয়া করো। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ কোন ব্যক্তি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা তার দোয়ার সময় আমীন বলতে থাকেন। যখনই সে তার কল্যাণ কামনা করে দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আমীন, তোমার জন্যও অনুরূপ কল্যাণ। রাবী বলেন, অতঃপর আমি বাজারের দিকে গেলাম এবং আবূ দারাদা (রাঃ) -র সাক্ষাত পেলাম। তিনিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৮৯৫, সহীহাহ ১৩৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যারা হজ্জ পালন করবেন তাদের জন্য এই মাসে নিম্নের কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।

(ক) ইহরাম বাঁধা ও ওমরা পালন :

 হজ্জ ও ওমরার প্রথম কাজ হ’ল সঠিক নিয়মে ইহরাম বাঁধা। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন হজ্জ বা ওমরাকারী যখনই মক্কায় প্রবেশ করবেন তখনই মীকাত হ’তে ইহরাম বাঁধবেন। হজ্জের মাস সমূহের মধ্যে যদি কোন মুসলিম হজ্জ করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহ’লে প্রথমে ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করে ওমরাহ আদায় করে তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হালাল হয়ে যাবেন। আর ক্বিরান হজ্জ পালনকারীগণ ইহরামসহ থাকবেন এবং ৮ই যিলহজ্জের জন্য অপেক্ষা করবেন। এ সময় তারা কা‘বা ঘর তাওয়াফ, বায়তুল্লায় ছালাত আদায়, বেশী বেশী দো‘আ, যিকর, তাসবীহ-তাহলীল ও অন্যান্য ভাল কাজ করতে থাকবেন।

ইহরাম বাঁধা সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদিঃ

বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মীকাতঃ

(১) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মদীনাবাসীগণ যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়ার অধিবাসীগণ আল-জুহ্ফা থেকে, নাজ্দবাসীগণ ‘কারন’ নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এই তিনটি মীকাতের বর্ণনা আমি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি। আমি আরও জানতে পেরেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৪, সহীহুল বুখারী ১৩৩. ১৫২২, ১৫২৫, ১৫২৮, ৭৩৪৪, মুসলিম ১১৮২, তিরমিযী ৮৩১, নাসায়ী ২৬৫১, ২৬৫২, ২৬৫৫, আবূ দাউদ ১৭৩৭, আহমাদ ৪৪৪১, ৪৫৫১, ৪৫৭০, ৫০৫০, ৫০৬৮, ৫১৫০, ৫৩০১, ৫৫১৭, ৬১০৫, ৬৩৫৪, মুয়াত্তা মালেক ৭৩২, ৭৩৪, দারেমী ১৭৯০, সহীহ আবু দাউদ ১৫২৬, ইরওয়া ৪/১৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেনঃ মদীনাবাসীগণের মীকাত যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের মীকাত আল-জুহ্ফা, ইয়ামানবাসীদের মীকাত ইয়ালামলাম, নাজ্দবাসীদের মীকাত ‘কারন’, প্রাচ্যের লোকেদের মীকাত যাতু ইরক। অতঃপর তিনি দিগন্তের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ! তাদের অন্তরসমূহ ঈমানের দিকে ধাবিত করুন।  (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৫, মুসলিম ১১৮৩, ইরওয়া ৪/১৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইহরাম বাঁধা

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন স্বীয় পদদ্বয় বাহনের পাদানিতে রাখেন এবং তাঁর জন্তুযান তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তখন তিনি যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকটে ইহরাম বাঁধেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৬, সহীহুল বুখারী ১৬৬, ৪৯২, ১৫১৪, ১৫৩২, ১৫৩৩, ১৫৩৬, ১৫৫৩, ১৫৫৪, ২৩৩২, ২৩৩৬, ২৭৬৫, মুসলিম ১১৮৬, ১১৮৭, ১১৮৮, ১২২৭, ১২৫৭, ১৩৪৬, তিরমিযী ৮১৮, নাসায়ী ১১৮, ২৬৫৯, ২৬৬০, ২৬৬১, ২৭৫৭, ২৭৫৮, ২৭৫৯, ২৭৬০, আবূ দাউদ ১৬৭১, ১৬৭২, ২০৪৪, আহমাদ ৪৪৪১, ৪৮০৪, ৪৮২৭, ৪৯২৭, ৫৩১৫, ৫৫৬৯, ৫৮৫৮, ৫৮৮৬, ৫৯৬৮, ৬১৭০, ৬১৯৬, ৬২২১, মুয়াত্তা মালেক ৭৪০, ৭৪১, ৯২৩, দারেমী ১৯২৯, ইরওয়া ৪/২১৬, রাওদুন নাদীর ৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত মহিলারা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে

(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাজারা (যুল-হুলায়ফা) নামক স্থানে উমায়স কন্যা আসমা (রাঃ) এর নিফাস হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর (রাঃ) -কে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১১, মুসলিম ১২১৯, আবূ দাউদ ১৭৪৩, দারেমী ১৮০৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জাবির (রাঃ)…আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তাঁর সাথে (তাঁর স্ত্রী) উমাইস-কন্যা আসমা (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি শাজারা নামক স্থানে মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বাকর-কে প্রসব করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করার পর হজ্জের ইহরাম বাঁধার এবং লোকেদের অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালনের নির্দেশ দেন, কিন্তু সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১২, ২৯১৩, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, হুজ্জাতুন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৫১।নাসায়ী ২৬৬৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইহরাম বস্ত্র পরিধানের সময়  সুগন্ধি ব্যবহার

(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ইহরাম বাঁধার প্রাক্কালে সুগন্ধি লাগিয়ে দেই এবং ইহরাম খোলার সময় তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি লাগিয়ে দেই। সুফিয়ানের বর্ণনায় ‘‘আমার এই দু’ হাত দিয়ে’’ কথাটুকুও উল্লেখ আছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২৬, সহীহুল বুখারী ২৬৭, ২৭০, ২৭১, ১৫৩৮, ১৫৩৯, ১৭৫৪, ৫৯১৮, ৫৯২২, ৫৯২৩, ৫৯২৮, ৫৯৩০, মুসলিম ১১৮৯, ১১৯০, ১১৯১, ১১৯২, তিরমিযী ৯১৭, নাসায়ী ৪১৭, ৪৩১, ২৬৮৪, ২৬৮৫, ২৬৮৬, ২৬৮৭, ২৬৮৮, ২৬৮৯, ২৬৯০, ২৬৯১, ২৬৯২, ২৬৯৩, ২৬৯৪, ২৬৯৫, ২৬৯৬, ২৬৯৭, ২৬৯৮, ২৬৯৯, ২৭০০, ২৭০৫, আবূ দাউদ ১৭৪৫, ১৭৪৬, আহমাদ ২৩৫৯১, ২৩৬১৪, ২৪২৪০, ২৪১৩, ২৪৪৪৫, ২৪৪৬২, ২৪৭৫৯, ২৪৮৭৪, ২৪৮৯৩, ২৪৯৪৮, ২৪৯৯৫, ২৫০৫৮, ২৫০৭৪, ২৫১১৩, ২৫১৯৫, ২৫২২৪, ২৫২৪৭, ২৭৬৫৬, ২৫২৮৯, ২৫৩৪৬, ২৫৪০৬, ২৫৪০২, ২৫৪৭৫, ২৫৪৮৬, ২৫৫৪৭, ২৫৫৪৯, ২৫৫৯৮, ২৫৬৩০, ২৬৮৮, ২৫৭৪০, ২৫৭৭১, ২৫৮৬৪, মুয়াত্তা মালেক ৭২৭, দারেমী ১৮০১, ১৮০২, ১৮০৩, ইরওয়া ১০৪৭, রাওদুন নাদীর ৭৬৮, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিঁথিতে সুগন্ধির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি, তখন তিনি তালবিয়া উচ্চারণ করছিলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২৭, ২৯২৮, সহীহুল বুখারী ২৬৭, ২৭০, ২৭১, ১৫৩৮, ১৫৩৯, ১৭৫৪, ৫৯১৮, ৫৯২২, ৫৯২৩, ৫৯২৮, ৫৯৩০, মুসলিম ১১৮৯, ১১৯০, ১১৯১, ১১৯২, তিরমিযী ৯১৭, নাসায়ী ৪১৭, ৪৩১, ২৬৮৪, ২৬৮৫, ২৬৮৬, ২৬৮৭, ২৬৮৮, ২৬৮৯, ২৬৯০, ২৬৯১, ২৬৯২, ২৬৯৩, ২৬৯৪, ২৬৯৫, ২৬৯৬, ২৬৯৭, ২৬৯৮, ২৬৯৯, ২৭০০, ২৭০৫, আবূ দাউদ ১৭৪৫, ১৭৪৬, আহমাদ ২৩৫৯১, ২৩৬১৪, ২৪২৪০, ২৪১৩, ২৪৪৪৫, ২৪৪৬২, ২৪৭৫৯, ২৪৮৭৪, ২৪৮৯৩, ২৪৯৪৮, ২৪৯৯৫, ২৫০৫৮, ২৫০৭৪, ২৫১১৩, ২৫১৯৫, ২৫২২৪, ২৫২৪৭, ২৭৬৫৬, ২৫২৮৯, ২৫৩৪৬, ২৫৪০৬, ২৫৪০২, ২৫৪৭৫, ২৫৪৮৬, ২৫৫৪৭, ২৫৫৪৯, ২৫৫৯৮, ২৫৬৩০, ২৬৮৮, ২৫৭৪০, ২৫৭৭১, ২৫৮৬৪, মুয়াত্তা মালেক ৭২৭, দারেমী ১৮০১, ১৮০২, ১৮০৩, আস-সহীহ ১৫৩৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইহরাম অবস্থায় যেরূপ কাপড় পরিধান করবে

(১) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলো, ইহরামধারী ব্যক্তি কিরূপ কাপড় পরিধান করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে জামা পরবে না, পাগড়ী পরবে না, পাজামা পরবে না, টুপি পরবে না এবং মোজা পরবে না। কিন্তু তার জুতা না থাকলে সে মোজা পরতে পারবে, তবে পায়ের গোছা বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলবে। সে জাফরান অথবা সুগন্ধি ঘাস দ্বারা রঞ্জিত কাপড়ও পরিধান করবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২৯, সহীহুল বুখারী ১৩৪, ৩৬৬, ১৫৪২, ১৮৩৮, ১৮৪২, ৫৭৯৪, ৫৮০৩, ৫৮০৫, ৫৮০৬, ৫৮৪৭, ৫৮৫২, ১১৭৭, তিরমিযী ১১৩৩, নাসায়ী ২৬৬৬,২৬৭৭, ২৬৬৯, ২৬৭০, ২৬৭৩, ২৬৭৪, ২৬৭৫, ২৬৭৬, ২৬৭৭, ২৬৭৮, ২৬৮০, ২৬৮১, আবূ দাউদ ১৮২৩, আহমাদ ৪৪৬৮, ৪৫২৬, ৪৮২০, ৪৮৫৩, ৪৮৮১, ৫০৫৫, ৫০৮৭, ৫২৮৬, ৫৩০৩, ৫৩১৪, ৫৪০৪, ৫৪০৮, ৫৪৪৯, ৫৫০৩, ৫৮৭১, ৫৯৬৭, ৬২০৮, মুয়াত্তা মালেক ৭১৬, ৭১৭, দারেমী ১৭৯৮, ১৮০০, ইরওয়া ১০১২, সহীহ আবু দাউদ ১৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামধারী ব্যক্তিকে কুম কুম অথবা ওয়ারস ঘাস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৩০, সহীহুল বুখারী ১৩৪, ৩৬৬, ১৫৪২, ১৮৩৮, ১৮৪২, ৫৭৯৪, ৫৮০৩, ৫৮০৫, ৫৮০৬, ৫৮৪৭, ৫৮৫২, ১১৭৭, তিরমিযী ১১৩৩, নাসায়ী ২৬৬৬,২৬৭৭, ২৬৬৯, ২৬৭০, ২৬৭৩, ২৬৭৪, ২৬৭৫, ২৬৭৬, ২৬৭৭, ২৬৭৮, ২৬৮০, ২৬৮১, আবূ দাউদ ১৮২৩, আহমাদ ৪৪৬৮, ৪৫২৬, ৪৮২০, ৪৮৫৩, ৪৮৮১, ৫০৫৫, ৫০৮৭, ৫২৮৬, ৫৩০৩, ৫৩১৪, ৫৪০৪, ৫৪০৮, ৫৪৪৯, ৫৫০৩, ৫৮৭১, ৫৯৬৭, ৬২০৮, মুয়াত্তা মালেক ৭১৬, ৭১৭, দারেমী ১৭৯৮, ১৮০০, ইরওয়া ১০১২, সহীহ আবু দাউদ ১৬০০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাপড় ও জুতা না থাকলে মুহরিম ব্যক্তি পাজামা ও মোজা পরিধান করবে

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে বলতে শুনেছিঃ যে (মুহরিম) ব্যক্তি কাপড় সংগ্রহ করতে পারেনি সে পাজামা পরতে পারে এবং যে ব্যক্তি জুতা সংগ্রহ করতে পারেনি সে মোজা পরতে পারে। হিশামের বর্ণনায় আছেঃ ‘কাপড় না পেলে সে পাজামা পরিধান করবে’। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৩১, ২৯৩২, সহীহুল বুখারী ১৭৪০, ১৮৪১, ১৮৪৩, ৫৮০৪, ৫৮৫৩, মুসলিম ১১৭৮, তিরমিযী ৮৩৪, নাসায়ী ২৬৭১, ২৬৭২, আবূ দাউদ ১৮২৯, আহমাদ ১৮৯১, ১৯২০, ২০১৬, ২৫২২, ২৫৭৮, ৩১০৫, দারেমী ১৭৯৯, ইরওয়া ১০১৩, সহীহ আবু দাউদ ১৬০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইহরাম অবস্থায় যেসব আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত

আবূ বাকর (রাঃ) এর কন্যা আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে রওয়ানা হলাম। আল-আরজ নামক স্থানে পৌঁছে আমরা যাত্রাবিরতি করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আয়েশা (রাঃ) তাঁর পাশে বসলেন এবং আমি আবূ বাকর (রাঃ) -র পাশে বসলাম। ইত্যবসরে গোলাম আসলো কিন্তু তার সাথে উট ছিলো না। আবূ বাকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উট কোথায়? সে বললো, গত রাতে তা হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তোমার সাথে একটি মাত্র উট ছিল, তাও তুমি হারিয়ে ফেললে? রাবী বলেন, তিনি তাকে মারতে শুরু করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দেখো! এই ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কী করছে? (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৩৩, আবূ দাউদ ১৮১৮, সহীহ আবু দাউদ ১৫৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ইহরামধারী ব্যক্তি মাথা ধৌত করতে পারে

ইবরাহীম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে হুনায়েন (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং আল-মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাঃ) আল-আবওয়া নামক স্থানে একটি বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত হলেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইহরামধারী ব্যক্তি নিজ মাথা ধৌত করতে পারবে। আর আল-মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, সে নিজ মাথা ধৌত করতে পারবে না। অতএব ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ)-র নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠান। আমি গন্তব্যে পৌঁছে দেখি যে, তিনি দু’টি খুঁটির মাঝখানে কাপড় দ্বারা পর্দা টেনে গোসল করছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে?

আমি বললাম, আমি আবদুল্লাহ ইবনে হুনায়েন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে আপনার নিকট জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় কিভাবে তাঁর মাধা ধৌত করতেন? রাবী বলেন, আবূ আইউব (রাঃ) তার হস্তদ্বয় পর্দার কাপড়ের উপর রেখে তা মাথা পর্যন্ত উত্তোলন করলেন এবং আমি তার মাথা দেখতে পেলাম। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, পানি ঢালো। লোকটি তার গোসলে সাহায্য করছিল। সে তার মাথায় পানি ঢেলে দিলো। তিনি স্বহস্তে তার গোটা মাথা মর্দন করলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এভাবে (মাথা ধৌত) করতে দেখেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৩৪, সহীহুল বুখারী ১৮৪০, মুসলিম ১২০৫, নাসায়ী ২৬৬৫, আবূ দাউদ ১৮৪০, আহমাদ ২৩০১৮, ২৩০৩২, ২৩০৬৬, মুয়াত্তা মালেক ৭১২, দারেমী ১৮৯৩, ইরওয়া ১০১৯, সহীহ আবু দাউদ ১৬১৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে ব্যক্তি একই ইহরামে হজ্জ ও ‘উমরা (কিরান হজ্জ) আদায় করে

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ ‘‘আমি ‘উমরা ও হজ্জের উদ্দেশে হাজির’’। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৬৮, ২৯৬৯, ২৯৭০, সহীহুল বুখারী ১৫৫১, ১৫৫৮, ১৭১৫, ৪৩৫৪, ১২৩২, ১২৫১, তিরমিযী ৮২১, ৯৫৬, নাসায়ী ২৭২৯, ২৭৩০, ২৭৩১, আবূ দাউদ ১৭৯৫, ১৭৯২, আহমাদ ১৩৩৯৫, ১৩৪১৯, দারেমী ১৯২৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৭৫, ১৫৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করা

(১) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কেবল হজ্জের নিয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ইহরাম বাঁধলাম, এর সাথে উমরার নিয়াত করিনি। যিলহজ্জ মাসের চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা মক্কায় উপনীত হলাম। আমরা বাইতুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ সমাপ্ত করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইহরাম (ভঙ্গ করে) উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন এবং স্ত্রীদের সাথে মেলামেশার অনুমতি দেন। আমরা আরয করলাম, আমাদের লজ্জাস্থান থেকে বীর্য নির্গত হওয়ার পরপরই আরাফাতের দিকে অগ্রসর হবো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সৎকর্মশীল ও সর্বাধিক সত্যবাদী। আমার সাথে কোরবানীর পশু না থাকলে আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম। সুরাকা ইবনে মালিক (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, এ সুযোগ কি আমাদের এ বছরের জন্য, না চিরকালের জন্য? তিনি বলেনঃ না, বরং চিরকালের জন্য। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৮০, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, সহিহ আবু দাউদ ১৫৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিলকাদ মাসের পাঁচ দিন বাকি থাকতে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওয়ানা হলাম। হজ্জ করাই ছিল আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমরা গন্তব্যে (মক্কায়) বা তার কাছাকাছি পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দেনঃ যার সাথে কোরবানীর পশু নেই সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। অতএব যাদের সাথে কোরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেলেন। কোরবানীর দিন আমাদের জন্য গরুর গোশত নিয়ে আসা হলো এবং বলা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৮১, সহীহুল বুখারী ২৯৪, ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১৬৩৮, ১৬৪৩, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৬২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৩১৭, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০৮, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৭২২৯, ১২১১, ১২১২, ১২২৮, ১২৭৭, তিরমিযী ৯৩৪, ৯৪৫, ২৯৬৫, নাসায়ী ২৪২, ২৯০, ২৪৮, ২৬৫০, ২৭১৭, ২৭১৮, ২৭৪১, ২৭৬৩, ২৭৬৪, ২৮০৩, ২৮০৪, ২৯৯০, ২৯৯১, আবূ দাউদ ৭৫০, ১৭৭৮, ১৭৭৯, ১৭৮১, ১৭৮২, আহমাদ ২৩৫৫৬, ২৩৫৭৩, ২৩৫৮৯, ২৪০৪৪, ২৪৩৫৫, ২৪৩৮৫, ২৪৭৭৯, ২৪৭৮৮, ২৪৯১৩, ২৫০৫০, ২৫৩১০, ২৫৫৩৪, ২৫৫৫৪, ২৭৬৫৪, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক ৭৪৬, ৮৯৬, ৯৪০, ৯৪১, দারেমী ১৪৬, ১৯০৪, ইরওয়া ১১৫৯, সহিহ আবু দাউদ ১৫৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ ইহরাম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ইহরামধারী ব্যক্তিকে তার জন্তুযান নিতে ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে সে মারা যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার পরনের বস্ত্রদ্বয় দিয়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মুখমন্ডল ও মাথা ঢেকো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০৮৪, সহীহুল বুখারী ১২৬৫, ১২৬৬, ১২৬৭, ১২৬৮, মুসলিম ১২০৬, তিরমিযী ৯৫১, নাসায়ী ১৯০৪, ২৮৫৪, ২৮৫৫, ২৮৫৬, ২৮৫৭, ২৮৫৮, আবূ দাউদ ৩২৩৮, ৩২৪১, আহমাদ ১৮৫৩, ১৯১৭, ২৩৯০, ২৫৮৬, ৩০২২, ৩০৩৬, ৩২২০, দারেমী ১৮৫২, ইরওয়া ১০১৬, আহকামুল জানাইয ১২, ১৩, রাওদুন নাদীর ৩৯১, ৩৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কেউ ইহরাম অবস্থায় শিকার করলে তার কাফ্ফারা

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামধারী ব্যক্তি কর্তৃক হায়েনা শিকারের কাফফারা একটি ভেড়া নির্ধারণ করেছেন এবং হায়েনাকেও শিকারের অন্তুর্ভুক্ত করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৮৫, তিরমিযী ৮৫১, ১৭৯১, নাসায়ী ২৮৩৬, ৪৩২৩, আবূ দাউদ ২৮০১, আহমাদ ১৩৭৫১, ১৪০১৬, ১৪০৪০, দারেমী ১৯৪১, ১৯৪২, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ২২৪৮, ইরওয়া ১০৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইহরামধারী ব্যক্তি যে সব প্রাণী হত্যা করতে পারে

(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পাঁচটি অনিষ্টকর প্রাণী আছে যা হারামের বাইরে ও ভেতরে হত্যা করা বৈধঃ সাপ, বুকে বা পিঠে সাদা চিহ্নযুক্ত কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৮৭, সহীহুল বুখারী ১৭২৯, ৩৩১৪, ১১৯৮, তিরমিযী ৮৩৭, নাসায়ী ২৮২৯, ২৮৮১, ২৮৮২, ২৮৮৭, ২৮৮৮, ২৮৯০, ২৮৯১,আহমাদ ২৩৫৩২, ২৪০৪৮, ২৪১৪০, ২৪৩৯০, ২৪৭৮২, ২৫১৫০, ২৫২২৫, ২৫৪১৫, ২৫৬০১, ২৫৬৯১, ২৫৭১২, দারেমী ১৮১৭, ইরওয়া ৪/২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন পাঁচটি প্রাণী আছে যা কোন ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় হত্যা করলে তার কোন দোষ হবে নাঃ বিছা, কাক, চিল, ইঁদুর ও পাগলা কুকুর। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩০৮৮, সহীহুল বুখারী ১৮২৮, ৩৩১৫, মুসলিম ১১৯৯, নাসায়ী ২৮২৮, ২৮৩০, ২৮৩২, ২৮৩৩, ২৮৩৪, ২৮৩৫, ২৮৯০, আবূ দাউদ ২৮৪৬, আহমাদ ৪৫২৯, ৪৮৬১, ৪৯১৮, ৫০৭২, ২৭৭৯০, ৫১১১, ৫১৩৮, ৫৩০২, ৫৪৫২, ৫৫১৬, ৬১৯৩, মুয়াত্তা মালেক ৭৯৮, ৭৯৯, ৮০০, দারেমী ১৮১৬, ইরওয়া ৪/২২৩, সহীহ আবু দাউদ ১৬১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ৮ই যিল হজ্জের আমল :

৮ই যিলহজ্জ থেকেই মূলতঃ হজ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। এই দিন তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের নিয়তে ওযূ-গোসল করে সুগন্ধি মেখে (মুসলিম হা/১২৩২, ১২৫১) ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে নিজ আবাসস্থল থেকে কা‘বা ঘরের ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সকল হজ্জ পালনকারীগণ যোহরের পূর্বে মিনায় পৌঁছে সেখানে রাত্রি যাপন করবেন ও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত তথা যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা যথা সময়ে ক্বছর করে জমা না করে শুধু ফরয ছালাত আদায় করবেন। (বুখারী হা/১০৮২-৮৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর এবং ‘উমার (রাযি.)-এর সঙ্গে মিনায় দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেছি। উসমান (রাযি.)-এর সঙ্গেও তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু‘রাক‘আত আদায় করেছি। অতঃপর তিনি পূর্ণ সালাত আদায় করতে লাগলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১০৮২-১০৮৩, ১৬৫৫; মুসলিম ৬/২, হাঃ ৬৯৪, আহমাদ ৪৫৩৩, ৬৩৬০, আধুনিক প্রকাশনী ১০১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১০২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত, বিতর ছালাত ও সম্ভব হ’লে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করবে। (বুখারী হা/১০০০, ১১৫৯; মুসলিম হা/১৫৯৩; মিশকাত হা/১৩৪০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সা‘ঈদ ইবনু ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.)-এর সঙ্গে মক্কার পথে সফর করছিলাম। সা‘ঈদ (রহ.) বলেন, আমি যখন ফজর হয়ে যাবার ভয় করলাম, তখন সওয়ারী হতে নেমে পড়লাম এবং বিতরের সালাত আদায় করলাম। অতঃপর তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ভোর হয়ে যাবার ভয়ে নেমে বিতর আদায় করেছি। তখন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে কি তোমার জন্য উত্তম আদর্শ নেই? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের পিঠে বিতরের সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৯৯, ১০০০, ১০৯৫, ১০৯৬, ১০৯৮, ১১০৫; মুসলিম ৬/৪, হাঃ ৭০০ আহমাদ ৫২০৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ৯ই যিলহজ্জের আমল :

এই দিন হজ্জ পালনকারীগণ সূর্য উদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনা থেকে ১৪.৪ কিলোমিটার দূরে আরাফা ময়দানের দিকে রওয়ানা হবেন। (বুখারী হা/৯৭০; মুসলিম হা/১২১৮, ১২৮৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর সাক্বাফী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা হতে যখন ‘আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)-এর নিকট তালবিয়াহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়াহ পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৭০, ১৬৫৯; মুসলিম ১৫/৪৬, হাঃ ১২৮৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর সেখানে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং যোহরের সময় এক আযানে দুই ইক্বামতে যোহর ও আছর ছালাত ক্বছর ও জমা করে আদায় করবেন। (বুখারী হা/১৬৬২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সালিম (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ইবনু যুবাইরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সে বছর তিনি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরাফার দিনে উকূফের সময় আমরা কিরূপে কাজ করব? সালিম (রহ.) বললেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসরণ করতে চান তাহলে ‘আরাফার দিনে দুপুরে সালাত আদায় করবেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, সালিম ঠিক বলেছে। সুন্নাত মুতাবিক সাহাবীগণ যুহর ও ‘আসর এক সাথেই আদায় করতেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও কি এরূপ করেছেন? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তোমরা কি আল্লাহর রাসূল (স)-এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো অনুসরণ করবে? (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৬২, ১৬৬০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ অনুচ্ছেদ ৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ পরিচ্ছেদ ১০৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

সূর্যাস্তের পর হজ্জ পালনকারীগণ আরাফার ময়দানে মাগরিব ছালাত আদায় না করে ৯ কিলোমিটার দূরে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হবেন ও সেখানে মাগরিব ও এশার ছালাত জমা ও ক্বছর করে আদায় করবেন এবং রাত্রি যাপন করবেন। (বুখারী হা/১৬৭৩; মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫, ২৬০৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশা এক সাথে আদায় করেন। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা ইক্বামাত দেয়া  হয়। তবে  উভয়ের  মধ্যে বা পরে তিনি কোন নফল সালাত আদায় করেননি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৭৩, ১০৯১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) ১০ই যিলহজ্জের আমল :

এই দিন সকালে মুদালিফায় ফজরের ছালাত আদায় করে ৫ কিলোমিটার দূরে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন এবং বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। (বুখারী হা/১৬৮৬; আবুদাঊদ হা/১৯৪০; মিশকাত হা/২৬১৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ‘আরাফা হতে মুযদালিফা আসার পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সওয়ারীর পেছনে উসামাহ (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হতে মিনার পথে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযলকে সওয়ারীর পেছনে বসালেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারা উভয়েই বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায়ে ‘আকাবাতে কঙ্কর না মারা পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৮৬-৮৭, ১৫৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কঙ্কর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন এবং স্ত্রী সহবাস ব্যতীত প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যাবেন। (বুখারী হা/১৬৮৫; নাসাঈ হা/৩০৮৪; মিশকাত হা/২৬৭৫)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ)-কে তাঁর সওয়ারীর পেছনে বসিয়েছিলেন। সেই ফাযল (রাঃ) বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পৌঁছে কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)১৬৮৫, ১৫৪৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৫৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৫৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জামারাতুল ‘আক্বাবায় (১০ তারিখে) পাথর মারার পর স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য সকল কাজ তার জন্যে হালাল হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৭৪-৭৫, সহীহ আবূ দাঊদ ১৯৭৮, দারাকুত্বনী ২৬৮৬, সহীহ আল জামি ৫৭৮, সহীহাহ্ ২৩৯, সহীহ নাসায়ী ৩০৮৪, আহমাদ ২০৯০, ইবনু মাজাহ ৩০৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর কুরবানী করবেন এবং পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন। আর মহিলাগণ চুলের আগা থেকে একটু ছেটে ফেলবেন। (বুখারী হা/১৭২৭, ৪৪১০; আবুদাঊদ হা/১৯৮৪; মিশকাত হা/২৬৪৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা মাথার চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের প্রতি রহম করুন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। এবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা চুল ছোট করেছে তাদের প্রতিও। লায়স (রহ.) বলেন, আমাকে নাফি‘ (রহ.) বলেছেন, আল্লাহ মাথা মুন্ডনকারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, এ কথাটি তিনি একবার অথবা দু’বার বলেছেন। রাবী বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহ.) নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, চতুর্থবার বলেছেনঃ চুল যারা ছোট করেছে তাদের প্রতিও। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭২৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৪৮, মুসলিম ১৫/৫৫, হাঃ ১৩০২, আহমাদ ৭১৬১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬০৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬১৬, ইবনু মাজাহ ৩০৪৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৮৪, আবূ দাঊদ ১৯৭৯, আহমাদ ৫৫০৭, ইরওয়া ১০৮৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৮৮০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৩৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর ফরয তাওয়াফ বা তাওয়াফে ইফাযা ও ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করে পূর্ণ হালাল হয়ে যাবেন এবং মিনায় গিয়ে রাত্রি যাপন করবেন। (আবুদাঊদ হা/১৯৭৩; মিশকাত হা/২৬৭৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

রাবী [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায়ে পর দিনের শেষ বেলায় তাওয়াফে ইফাযাহ্ সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবার মিনায় ফিরে এলেন এবং সেখানেই আইয়্যামে তাশরীক্বের দিনগুলো অবস্থান করলেন। এ দিনগুলোতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূর্যাস্তের পর জামারায় সাতটি করে পাথর মারতেন। প্রত্যেক পাথর মারার সাথে সাথে ‘আল্লা-হু আকবার’  বলতেন। আর প্রথম ও দ্বিতীয় জামারার নিকট দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন ও আল্লাহর কাছে (অনুনয়-বিনয় করে) প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তৃতীয় জামারায় (পূর্বের ন্যায় পাথর মারার পর) অপেক্ষা করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) , ২৬৭৬, সহীহ  তবে (حين صلى الظهر) অংশটুকু ব্যতীত। আবূ দাঊদ ১৯৭৩, আহমাদ ২৪৯২, ইরওয়া ১০৮২)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(ঙ) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জের আমল :

এই তিন দিন হজ্জ পালনকারীগণ মিনায় অবস্থান করবেন এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামারায় (বুখারী হা/১৭৪৬; মুসলিম হা/১২৯৯; মিশকাত হা/২৬২০)।

হাদিসটি নিম্নরুপ:

ওয়াবারা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কখন কঙ্কর নিক্ষেপ করব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কঙ্কর নিক্ষেপ করবে, তখন তুমিও নিক্ষেপ করবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কঙ্কর নিক্ষেপ করতাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬২৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৩২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহু আকবার বলে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। (বুখারী ১৭৫২, ১৭৫৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিকটবর্তী জামরায় সাতটি কঙ্কর মারতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে সমতল ভূমিতে এসে ক্বিবলা  মুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় অনুরূপভাবে কঙ্কর মারতেন। এরপর বাঁ দিক হয়ে সমতল ভূমিতে এসে ক্বিবলা মুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করতেন। অতঃপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে ‘আকাবায় কঙ্কর মারতেন এবং এর কাছে তিনি দেরী করতেন না। তিনি বলতেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি অনুরূপ করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭৫২, ১৭৫১, ১৭৫৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬৩০. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা

(১) আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল-উসায়লিহ্ অর্থাৎ উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে দেখলাম যে, তিনি হাজরে আসওয়াদে চুমা দিচ্ছেন আর বলছেন, আমি অবশ্যি তোমাকে চুম্বন করছি। আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র, তুমি ক্ষতিও করতে পারো না এবং উপকারও করতে পারো না। আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুমা দিতে না দেখতাম তাহলে আমিও তোমায় চুমা দিতাম না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৪৩, সহীহুল বুখারী ১৫৯৭, ১৬০৫, ১৬১০, মুসলিম ১২৭০, ১২৭১, তিরমিযী ৮৬০, নাসায়ী ১৫৫৮, ২৯৩৬, ২৯৩৭, ২৯৩৮, আবূ দাউদ ১৮৭৩, আহমাদ ১০০, ১৩২, ১৭৭, ২২৭, ২৫৫, ২৭৬, ৩২৭, ৩৬৩, ৩৮২, ৩৮৩, মুয়াত্তা মালেক ১৮৬৪, ১৮৬৫, রাওদুন নাদীর ৭২৩, সহীহ আবু দাউদ ১৬৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দু‘টি চোখ থাকবে, তা দিয়ে সে দেখবে, যবান থাকবে তা দিয়ে সে কথা বলবে এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে যে তাকে সত্যতার সাথে চুমা দিয়েছে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৪৪, তিরমিযী ৯৬১, আহমাদ ২২১৬, ২৩৯৪, ২৬৩৮, ২৭৯৩, ৩৫০১, দারেমী ১৮৩৯, মিশকাত ২৫৭৮, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ২৭৩৫, ২৭৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে তার পিতা সূত্রে বর্ণিত। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহর কোন রুকনে চুমা খেতেন না, কেবলমাত্র রুকনুল আসওয়াদ (কালো পাথর) এবং এর নিকটের জুমাহ গোত্রের দিককার কোণে (রুকনে ইয়ামানীতে) চুমা খেতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৪৬, সহীহুল বুখারী ৩৯৬, ১২০৩, মুসলিম ১২২৭, ১২৬১, ১২৬৭, ১২৬৮, নাসায়ী ২৭৩২, ২৯৪২, ২৯৪৬, ২৯৪৮, ২৯৫১, আবূ দাউদ ১৮০৫, ১৮৭৬, ১৮৯১, আহমাদ ৪৯৬৩, ৫২১৬, ৫৭২৬, ৫৯০৭, ৬০১১, ৬৩৯৭, ৬৪২৭, ৮১৭, দারেমী ১৮৪২, সহীহ আবু দাউদ ১৬৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) শায়বা-র কন্যা সাফিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর যখন নিশ্চিত (নিরাপদ) হলেন তখন তিনি স্বীয় উটে উরোহণ করে (বাইতুল্লাহ) তাওয়াফ করেন এবং নিজের হাতের লাঠির সাহায্যে রুকন (হাজরে আসওয়াদ)-কে চুমা দেন। অতঃপর তিনি কাবার অভ্যন্তরভাবে প্রবেশ করেন এবং তথায় কাঠের তৈরী একটি কবুতর দেখতে পান। তিনি তা ভেঙ্গে ফেলেন, অতঃপর তিনি কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে তা বাইরে নিক্ষেপ করেন। আমি তা দেখছিলাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৪৭, ২৯৪৮, ২৯৪৯, আবূ দাউদ ১৮৭৮, সহীহ আবু দাউদ ১৬৪৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

বাইতুল্লাহর চারপাশে তাওয়াফের সময় রমল করা

(১) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাইতুল্লাহ তাওয়াফ শুরু করতেন তখন প্রথম তিন চক্করে (তাওয়াফে) রামল করতেন (বাহু দুলিয়ে বীরদর্পে প্রদক্ষিণ করতেন) এবং চার চক্করে সাধারণ হেঁটে তাওয়াফ করতেন, হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত। ইবনে উমার (রাঃ)-ও তাই করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫০, সহীহুল বুখারী ১৬৬, ৩৯৬, ৪৯২, ১৫৪১, ১৫৭৩, ১৫৭৪, ১৬০৩, ১৬০৪, ১৬১৬, ১৬১৭, ১৬২৪, ১৬৪৪, ১৬৪৬, ১৬৪৭, ১৬৯২, ১৭৯৪, ২৭০২, মুসলিম ১১৮৬, ১১৮৭, ১২২৭, ১২২৮, ১২৩৪, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬১, ১২৬৮, ১২৫৭, তিরমিযী ৮১৮, ৮২৪, ৮৬১, ৮৬৪, নাসায়ী ২৭৩২, ২৭৫৭, ২৭৫৮, ২৯৩০, ২৯৪০, ২৯৪১, ২৯৪২, ২৯৪৩, ২৯৪৬, ২৯৬০, ২৯৬৬, ২৯৭৬, আবূ দাউদ ১৭৭১, ১৭৭২, ১৭০৫, ১৮৬৫, ১৮৯১, ১৮৯৩, ১৯০৪, ৪০৬৪, ৪২১০, আহমাদ ৪৪৪৮, ৪৫৭১, ৪৬০৪, ৪৬১৪, ৪৮২৯, ৪৮৭২, ৪৯৬৩, ৫১৭৯, ৫২১৬, ৫৩৭৮, ৫৪২১, ৫৭০৩, ৫৭২৬, ৫৮৬০, ৫৯০৭, ৬০১১, ৬২০২, ৬৩৯৭, ৬৪২৭, মুয়াত্তা মালেক ৭১৪, ৭৪০, ৭৪২, ৮১৭, ৯২৩, দারেমী ১৮৩৮, ১৮৪২, ১৯২৭, ১৯৩১, সহীহ আবু দাউদ ১৬৫২, ১৬৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তিনবার রামল করতেন এবং চারবার সাধারণগতিতে তাওয়াফ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫১, ২৯৫২, ২৯৫৩, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, রাওদুন নাদীর ২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইযতিবা (বিশেষ পদ্ধতিতে চাদর পরিধান)

ইয়ালা ইবনে উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান কাঁধ খোলা রেখে এবং বাম কাঁধের উপর চাদরের উভয় কোণ একত্রে লটকিয়ে তাওয়াফ করেন। কাবীসা (রাঃ) তার বর্ণনায় বলেন, তাঁর পরিধানে ছিল একটি চাদর। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫৪, তিরমিযী ৮৫৯, আবূ দাউদ ১৮৮৩, আহমাদ ১৭৪৯২, ১৭৪৯৫, ১৭৫০৪, দারেমী ১৮৪৩, সহীহ আবু দাউদ ১৬৪৫)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হাতীমও তাওয়াফের অন্তর্ভুক্ত

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হিজর (হাতীম) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেনঃ তা বাইতুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। আমি বললাম, তাকে কা‘বার অন্তর্ভুক্ত করতে কোন্ জিনিস তাদের বাধা দিলো? তিনি বলেনঃ অর্থাভাব তাদের অপারগ করে দিয়েছিল। আমি বললাম, তার দরজা এতো উঁচুতে স্থাপিত হওয়ার কারণ কী যে, তাতে সিঁড়ি ব্যতীত উঠা যায় না? তিনি বলেনঃ তা তোমার সম্প্রদায়ের কান্ড। তাদের মর্জি হলে কেউ তাতে প্রবেশ করতে পারতো, আর যাদেরকে ইচ্ছা তাতে প্রবেশে বাধা দিতো। তোমার সম্প্রদায়ের কুফরী ত্যাগের যুগ যদি অতি নিকট না হতো এবং (কাবা ঘর ভাংগার কারণে) তাদের মধ্যে বিতৃষ্ণার উদ্রেক হওয়ার আশঙ্কা না থাকতো, তাহলে তুমি দেখতে পেতে, আমি কিভাবে তা পরিবর্তন করতাম! তা থেকে যা বাদ দেয়া হয়েছিল আমি পুনরায় তা এর অন্তর্ভুক্ত করতাম এবং তার দরজা ভূমি বরাবর স্থাপন করতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫৫, সহীহুল বুখারী ১২৬, ১৫৮৩, ১৫৮৪, ১৫৮৫, ১৫৮৬, ৩৩৬৮, ৪৪৮৪, ৭২৪৩, মুসলিম ১৩৩৩, তিরমিযী ৮৭৫. ৮৭৬, নাসায়ী ২৯০০, ২৯০১, ২৯০২, ২৯০৩, ২৯১০, ২৯১২, আবূ দাউদ ২০২৮, আহমাদ ৩৭৭৬, ২৪১৮৮, ২৪৩০৬, ২৪৯১০, ২৪৯৩৫, ২৪৪৯৮, ২৫৫৬৯, ২৫৬২০, ২৫৭২৪, মুয়াত্তা মালেক ৮১৩, দারেমী ১৮৬৮, ১৮৬৯, ইরওয়া ১১০৬, সহীহাহ ৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কিরান হজ্জ পালনকারীর তাওয়াফ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ, ইবনে উমার ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ মক্কায় পৌঁছে হজ্জ ও উমরা উভয়ের জন্য একবার (সাত চক্র) মাত্র তাওয়াফ করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৭২, ২৯৭৩, ২৯৭৪, ২৯৭৫, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, সহীহ আবু দাউদ ১৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

তাওয়াফের ফযীলাত

আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ লোকেদের করলো এবং দু’ রাক‘আত নামায পড়লো, তা একটি ক্রীতদাসকে দাসত্বমুক্ত করার সমতুল্য। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫৬, তিরমিযী ৯৫৯, সহীহাহ ২৭৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাওয়াফ শেষে দু’ রাক‘আত নামায পড়া

(ক) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) পৌঁছে সাতবার বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন, অতঃপর দু’ রাক‘আত নামায পড়েন (ওয়াকী‘ বলেন, অর্থাৎ মাকামে ইবরাহীমের নিকটে), অতঃপর সাফা পর্বতের দিকে রওয়ানা হন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৫৯, বুখারী ১৬৬, ৩৯৬, ৪৯২, ১৫৪১, ১৫৭৩, ১৫৭৪, ১৬০৩, ১৬০৪, ১৬১৬, ১৬১৭, ১৬২৪, ১৬২৭, ১৬৪৪, ১৬৪৬, ১৬৪৭, ১৬৯২, ১৭৯৪, ২৭০২, মুসলিম ২০৩৩, ২০৩৭, ২১৫৯, ২১৬০, ২১৭২, ২২০৬, ২২০৭, ২২০৯, ২২১০, ২২১২, ২২২৫, ২৩৯৭, তিরমিযি ৮১৮, ৮২৪, ৮৬১, ৮৬৪, নাসাঈ ২৭৩২, ২৭৫৭, ২৭৫৮, ২৯৩০, ২৯৪০, ২৯৪১, ২৯৪২, ২৯৪৩, ২৯৪৬, ২৯৬০, ২৯৬৬, ২৯৭৬, আবু দাউদ ১৭৭১, ১৭৭২, ১৮০৫, ১৮৬৫, ১৮৯১, ১৮৯৩, ১৯০৪, ৪০৬৪, ৪২১০, আহমাদ ৪৪৪৮, ৪৫৭১, ৪৬০৪, ৪৬১৪, ৪৮২৯, ৪৮৭২, ৪৯৬৩, ৫১৭৯, ৫২১৬, ৫৩৭৮, ৫৪২১, ৫৭০৩, ৫৭২৬, ৫৮৬০, ৫৯০৭, ৬০১১, ৬২০২, ৬৩৯৭, ৬৪২৭, মালিক ৭১৪, ৭৪০, ৭৪২, ৮১৭, ৯২৩, দারিমী ১৮৩৮, ১৮৪১, ১৮৪২, ১৯২৭, ১৯৩১, রাওদুন নাদীর ৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহ তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমে এলেন। তখন উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো আমাদের পিতা (পুর্ব পুরুষ) ইবরাহীম (আ)-এর স্থান, যে সম্পর্কে মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করো’’ (সূরা বাকারাঃ ১২৫)। ওলীদ (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম মালেক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এভাবে পাঠ করেছেনঃ ‘‘ওয়াত্তাখিযূ মিম-মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা’’? তিনি বলেন, হ্যাঁ।

(সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৬০, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবী কতটি উমরা করেছেন ?

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার উমরা করেছেনঃ হুদায়বিয়ার উমরা, পরবর্তী বছরের কাযা উমরা, তৃতীয়টি জি’রানা থেকে এবং চতুর্থটি তার বিদায় হজ্জের সাথে উমর। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০০৩, তিরমিযী ৮১৬, আহমাদ ১৯৯৩, ২২১২, ২৯৪৯, দারেমী ২৮৫৮, সহীহ আবু দাউদ ১৭৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) ছিয়াম পালন করা :

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ আমল হ’ল ছিয়াম পালন করা।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ২৮৪০, মুসলিম ১৩/৩১ হাঃ ১১৫৩, আহমাদ ১১৭৯০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

নবী করীম (ছাঃ)-এর কোন স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে, ‘রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশূরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন, মাসের দুই সোমবার এবং বৃহস্পতিবার ছিয়াম পালন করতেন’ । (নাসাঈ হা/২৪১৭, হাদীছ ছহীহ)।

যিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন ছিয়াম পালন করার গুরুত্ব থাকলেও আরাফাতের দিন ছিয়াম পালনের আলাদা ফযীলত রয়েছেন। আর তা হ’ল বিগত ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা। (মুসলিম হা/২৮০৩; আবুদাউদ হা/২৪২৫; মিশকাত হা/২০৪৪)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে হাযির হয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি কিভাবে সওম রাখেন? তার কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। ‘উমার তাঁর রাগ দেখে বলে উঠলেন,

‘‘রযীনা- বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা। না‘ঊযুবিল্লা-হি মিন গযাবিল্লা-হি ওয়া গযাবি রসূলিহী’’

(অর্থাৎ- আমরা রব হিসেবে আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট। দীন হিসেবে ইসলামের ওপর সন্তুষ্ট। আর নবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের গযব হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।)

‘উমার এ বাক্যগুলো বার বার আওড়াতে থাকেন। এমনকি এ সময় রসূলের রাগ প্রশমিত হলো।

এরপর ‘উমার জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ওই ব্যক্তির ব্যাপারে কি হুকুম যে, একদিন সওম রাখে আর দু’দিন রাখে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি এটা পছন্দ করি যে, এতটুকু শক্তি আমার সংগ্রহ হোক। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এক রমাযান (রমজান) থেকে আর এক রমাযান (রমজান) পর্যন্ত প্রতি মাসের তিনটি সওম একাধারে রাখার সমান। ‘আরাফার দিনের সওমের ব্যাপারে আমি আশা করি আল্লাহ এর আগের ও পরের বছরের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর ‘আশূরার দিনের সওমের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমার প্রত্যাশা, আল্লাহ এর দ্বারা আগের বছরের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২০৪৪, সহীহ মুসলিম ১১৬২, আবূ দাঊদ ২৪২৫, তিরমিযী ৭৫২, ইবনু মাজাহ ১৭৩৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৮৭, শু‘আবূল ঈমান ৩৮৮৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৩২, ইরওয়া ৯২৫, সহীহ আত্ তারগীব ১০১৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’। (ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; ছহীহুত তারগীব হা/১০১২)।

হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল: আশুরার সওম, যিল হজের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ২৪১৮, ইরওয়া ৯৫৪)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

(৫) যিকর করা: এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল আল্লাহর বেশী বেশী যিকর করা তথা তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা। মহান আল্লাহ বলেন,لِ ‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হ’তে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে’ (হজ্জ ২২/২৮)।

অধিকাংশ আলেম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা করেন, তার পবিত্রতা বর্ণনা করেন, তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।

হাদিসে আছে চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।

 ১-সুবহানাল্লাহ,

২-আলহামদু লিল্লাহ,

৩-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু,

৪-আল্লাহু আকবর। এ দিনগুলোতে এ যিকিরগুলো করা যেতে পারে।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এ দশ দিনে [নেক] আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অধিক প্রিয় ও মহান আর কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] তাকবীর [আল্লাহু আকবার] তাহমীদ [আল-হামদুলিল্লাহ] বেশি করে আদায় কর। (আহমাদ হা/৫৪৪৬; ছহীহুত তারগীব হা/১২৪৮)।

যারা হজ্জে থাকবে তাদেরকেও আল্লাহ এই দিনগুলিতে যিকরের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে আরাফার ময়দান থেকে ফিরে আসার পর। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং যখন তোমরা আরাফাত হ’তে ফিরে আসবে, তখন মাশ‘আরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৯৮)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হজ্জের অবস্থা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সকালে মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা হই। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করেছেন এবং কেউ তাকবীর পাঠ করেছেন’। (মুসলিম হা/১২৮৪; সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হা/১৮১৬; নাসাঈ হা/২৯৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হজ্জের কাজ শেষ করার পর আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করবে যেভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করে থাক, অথবা তারচেয়েও অধিক’ (বাক্বারাহ ২/২০০)।

(৬) চুল ও নখ কর্তন না করা :

যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আরেকটি আমল হ’ল যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী পর্যন্ত চুল ও নখ কর্তন না করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

‘তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু স্পর্শ না করে (না কাটে)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ না ধরে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়ত করবে, সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলি না কাটে। (মুসলিম হা/১৯৭৭; নাসাঈ হা/৪৩৬৪; মিশকাত হা/১৪৫৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু না ধরে অর্থাৎ না কাটে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ স্পর্শ না করে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহাজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়্যাত করবে সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলো কর্তন না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৫৯, সহীহ মুসলিম ১৯৭৭, নাসায়ী ৪৩৬৪, ইবনু মাজাহ্ ৩১৪৯, আহমাদ ২৬৪৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯০৪৩, শু‘আবুল ঈমান ৬৯৪৮, ইরওয়া ১১৬৩, সহীহ আল জামি‘ ৫২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঈদের ছালাতের পর কুরবানী করে নখ ও চুল কাটতে পারবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (মুসলিম হা/১৯৭৭; আবু দাউদ হা/২৭৯১; তিরমিযী হা/১৫২৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২৭৯১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাছের সাথে এ আমল করে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর দিনকে এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে পরিগণিত করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ! আমি যদি দুগ্ধবতী ছাগল ছাড়া অন্য কোন পশু না পাই তবে কি তা দিয়েই কুরবানী করব? তিনি বললেন, ‘না, তবে তুমি এ দিন তোমার চুল ও নখ কাটবে। তোমার গোঁফ কাটবে। নাভির নিচের পশম কাটবে। এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পরিপূর্ণ কুরবানী’। (আবুদাঊদ হা/২৭৮৯; নাসাঈ ৪৩৬৫। আলবানী একে যঈফ বলছেন। হাকেম একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আয়েব আরনাঊত্ব ‘হাসান’ বলেছেন। আর এটাই অগ্রাধিকারযোগ্য। সম্ভবতঃ শায়েখ আলবানী রাবী ঈসা বিন হেলাল সম্পর্কে ইয়াকূব আল-সাখাভীর ‘তাওছীক্ব’ লক্ষ্য করেননি। এছাড়াও তিনি হাদীছটির মতনে যে অসংগতির কথা বলেছেন সেটি কোন মৌলিক ত্রুটি নয়। দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা ১৬ পৃ.; মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০১৭, প্রশ্নোত্তর ১৯/৯৯)।

যদি বিশেষ কোন সমস্যার কারণে নখকুনি উঠা, নখের চারপাশে ব্যথা করা, আঘাত জনিত কারণে নখ উপড়ে যাওয়া, নখের প্রান্ত ফেটে যাওয়া অথবা শরীরে ক্ষত সৃষ্ট হওয়ার কারণে বা কেটে যাওয়া বা আঘাতের কারণে চামড়ার কিছু অংশ উঠে যাওয়ার ফলে কষ্ট হয় বা চলাফেরায় অসুবিধা হয় তাহলে এগুলো কাটতে শরিয়তে কোন বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।

অনুরূপভাবে মাথা ফেটে যাওয়ার ফলে মাথায় ব্যান্ডেজ করা, মাথার রোগের রোগের চিকিৎসা কিংবা মাথায় খুশকি বা উকুনের উপদ্রব থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে মাথার কিয়দংশ বা পূরোটা মুণ্ডন করার বা চুল ছোট করায়ও কোন আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।

কেননা, ইসলামের একটি স্বতঃসিদ্ধ মূলনীতি হল, "জরুরি প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়।"

আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা: ২৮৬)।

তিনি আরও বলেন, “অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যে কুলায়। (সূরা তাগাবুন: ১৬)।

 শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,

"কারো যদি চুল, নখ ও চামড়া কাটার দরকার হয় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন: আহত হওয়ার কারণে মাথার চুল কাটা বা নখ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কষ্ট হলে তা কেটে ফেলার দরকার হলে অথবা চামড়ার কোন অংশ ঝুলে পড়ে কষ্ট দিলে তা কেটে ফেলা। এগুলোতে কোন অসুবিধা নাই।" (মাজমু ফতোয়া ইবনে উসাইমিন ২৫/১৬১)।

(৭) ঈদায়নের তাকবীর ধ্বনি: 

প্রথমতঃ ৯ই যিলহজ্জ ফজর থেকে ১৩ই যিলহজ্জ আইয়ামে তাশরীক্ব-এর শেষ দিন আছর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত ছালাত শেষে দুই বা তিন বার করে ও অন্যান্য সময়ে উচ্চকণ্ঠে তাকবীর ধ্বনি করা সুন্নাত (নায়েল ৪/২৭৮)।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা গণনাকৃত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)।

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ (বাক্বারাহ ২/২০৩) দ্বারা (যিলহজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং والأَيَّامٍ المَعْدُودَات দ্বারা ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বুঝায়। ইবনু ওমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) এই দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ) নফল ছালাতের পরেও তাকবীর বলতেন। (বুখারী হা/৯৬৯-এর অনুচ্ছেদ দ্র.)।

হাদিসগুলো লক্ষ্য করিঃ

(ক) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৬৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর সাক্বাফী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা হতে যখন ‘আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)-এর নিকট তালবিয়াহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কিরূপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়াহ পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৭০, ১৬৫৯; মুসলিম ১৫/৪৬, হাঃ ১২৮৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদের বের হবার আদেশ দেয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহল হতে বের করতাম এবং ঋতুমতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু‘আর সাথে দু‘আ করত- সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা তারা আশা করত। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৭১, ৩২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।।

দ্বিতীয়তঃ নির্দিষ্ট দিনে তাকবীর: যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয ছালাতের শেষ তাকবীর বলবে। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২২০)।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) আরাফার দিন ফজর থেকে কুরবানীর দিন আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। (শু‘আয়েব আরনাঊত্ব, যাদুল মা‘আদ ২/৩৬০)।

তাকবীরের শব্দাবলী নিম্নরূপ-

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আক্বার আল্লাহু আক্বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার আল্লাহু আক্বার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। (দারাকুৎণী হা/১৭৫৬; ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫ হা/৬৫৪)।

হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পর তাকবীর দিবেন। তবে হজ্জের দিনগুলি তথা ৮-১২ ই যিলহজ্জ বেশী বেশী নিম্নোক্ত তালবিয়া পাঠ করবেন।

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ-

‘আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫৪০, ১৫৪৯; মুসলিম হা/১১৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১২, আধুনিক প্রকাশনী ১৪৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এই দিনগুলিতে তাকবীর উচ্চস্বরে পাঠ করবেনঃ

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) খাল্লাদ ইবনুস সাইব (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন আমার সাহাবীগণকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠের আদেশ দেই। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২২, ২৯২৩, ২৯২৪, তিরমিযী ৮২৯, নাসায়ী ২৭৫৩, আবূ দাউদ ১৮১৪, আহমাদ ১৬১২২, ১৬১৩১, মুয়াত্তা মালেক ৮৪৪, দারেমী ১৮০৯, মিশকাত ২৫৪৯, সহীহ আবু দাউদ ১৫৯২)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত মাদ্বীনায় চার রাক‘আত আদায় করলেন এবং ‘আসরের সালাত যুল-হুলাইফায় দু’ রাক‘আত আদায় করেন। আমি শুনতে পেলাম তাঁরা সকলে উচ্চস্বরে হাজ্জ ও ‘উমরাহ’র তালবিয়া পাঠ করছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৫৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তালবিয়া শিখেছি। তিনি বলেনঃ ‘‘লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়কা লাব্বায়কা, লা শারীকা লাকা লাব্বায়কা। ইন্নাল-হাম্দা ওয়ান-নিয়‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা লাকা (‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপস্থিত আছি, তোমার নিকট উপস্থিত আছি, তোমার দরবারে হাযির হয়েছি। তোমার কোন শরীক নেই, আমি তোমার নিকট হাযির হয়েছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শরীক নাই’’)।

রাবী (রহঃ) বলেন, ইবনে উমার (রাঃ) এর সাথে যোগ করতেনঃ ‘‘লাব্বায়াকা লাব্বায়কা লাব্বায়কা ওয়া সা’দায়কা ওয়াল-খায়রু ফী ইয়াদায়কা, লাব্বায়কা ওয়ার-রাগবাউ ইলায়কা ওয়াল-আমলু’’ (‘‘তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি, তোমার নিকট হাযির হয়েছি, তোমার নিকট হাযির আছি, তোমার খেদমতে সৌভাগ্য লাভ করেছি। সমস্ত কল্যাণ তোমার হাতে, আমি তোমার সমীপে উপস্থিত হয়েছি। সমস্ত আকর্ষণ তোমার প্রতি এবং সকল কাজ তোমারই নির্দেশে’’)। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৮, সহীহুল বুখারী ১৫৪০, ১৫৪৯, ৫৯১৫, মুসলিম ১১৮৪, তিরমিযী ৮২৫, ৮২৬, নাসায়ী ২৭৪৭, ২৭৪৯, ২৭৫০, আবূ দাউদ ১৮১২, আহমাদ ৪৪৪৩, ৪৮০৬, ৪৮৭৭, ৪৯৭৭, ৪৯৯৯, ৫০৫১, ৫০৬৭, ৫১৩২, ৫৪৫১, ৫৪৮৪, ৫৯৮৫, ৬১১১, মুয়াত্তা মালেক ৭৩৮, দারেমী ১৮০৪, রাওদুন নাদীর ৫৪০, সহীহ আবু দাউদ ১৫৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তালবিয়া ছিল নিম্নরূপঃ ‘‘লাব্বায়কা আল্লাহুম্মা লাব্বায়কা, লাব্বায়কা লা শারীকা লাকা লাব্বায়কা ইন্নাল-হাম্দা ওয়ান-নিয়‘মাতা লাকা ওয়াল-মুলকা লা শারীকা লাকা’’। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৯, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, সহীহ আবু দাউদ ১৫৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তালবিয়ায় বলেনঃ ‘‘লাব্বায়কা ইলাহাল্-হাক্ক লাব্বায়কা’’। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২০, নাসায়ী ২৭৫২, রাওদুন নাদীর ৫৪০, সহীহাহ ২১৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তালবিয়া পাঠের ফজিলত

সাহল ইবনে সাদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তিই তালবিয়া পাঠ করে, সাথে সাথে তার ডান ও বাঁ দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটি, এমনকি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের সবকিছু তালবিয়া পাঠ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯২১, তিরমিযী ৮২৮, মিশকাত ২৫৫০, রাওদুন নাদীর ২/১১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হজ্জ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি-১

 যে মহিলা সাথে অভিভাবক ব্যতীত হজ্জ করেঃ-

(ক) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সাথে তার পিতা, ভাই, ছেলে, স্বামী অথবা কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তিন দিন বা তার অধিক দূরত্বের পথ সফর না করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৯৮, মুসলিম ৮২৭, ১৩৪০, তিরমিযী ১১৬৯, আ১৭২৬, আহমাদ ২৭৬৩৭, ২৭৬৪২, ১১১২৩, ১১১৯৮, ২৭৯৫০, ১১২৩২, ১১২৮৪, ২৭৯৪৮, দারেমী ২৬৭৮, রাওদুন নাদীর ৬৬৮, সহীহ আবু দাউদ ১৫১৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(খ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে মহিলা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তার জন্য এক দিনের পরিমাণ দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৯৯, সহীহুল বুখারী ১০৮৮, মুসলিম ১৩৩৯, তিরমিযী ১১৭০, আবূ দাউদ ১৭২৩, আহমাদ ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৭২৮৪, ৯১৮৫, ৯৩৪৭, ৯৪৪৮, ১০০২৯, ১০১৯৭, মুয়াত্তা মালেক ১৮৩৩, সহীহ আবু দাউদ ১৫১৬, ১৫১৭, ইরওয়া ৫৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, অমুক অমুক যুদ্ধে যোগদানের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং আমার স্ত্রী হজ্জে যাওয়ার সংকল্প করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তার সাথে হজ্জে যাও। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০০, সহীহুল বুখারী ১৮৬২, মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৫, ৩২২১, ইরওয়া ৯৮১, মিশকাত ২৫৩৪, রাওদুন নাদীর ১০১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহিলাদের জিহাদ হলো হজ্জ

(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের জন্য কি জিহাদ বাধ্যতামূলক? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তাদের উপরও জিহাদ ফরয, তবে তাতে অস্ত্রবাজি নাই। তা হচ্ছে হজ্জ ও উমরা। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০১, সহীহুল বুখারী ১৫২০, ২৮৭৫, নাসায়ী ২৬২৮, মিশকাত ২৫৩৪, ইরওয়া ৯৮১, রাওদুন নাদীর ১০১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন দুর্বল ব্যক্তির জিহাদ হলো হজ্জ। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০২, আহমাদ ২৬০৪৫, ২৬১৩৪, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০৭, যইফাহ ৩৫১৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ করা

(ক) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেনঃ ‘‘শুবরুমার পক্ষ থেকে আমি তোমার দরবারে হাযির হয়েছি’’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেনঃ শুবরুমা কে? সে বললো, আমার এক নিকটাত্মীয়। তিনি বলেনঃ তুমি কি কখনও হজ্জ করেছো? সে বললো, না। তিনি বলেনঃ তাহলে এই হজ্জ তোমার নিজের পক্ষ থেকে করো, অত:পর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্জ করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৩, আবূ দাউদ ১৮১১, ইরওয়া ৯৯৪, মিশকাত ২৫২৯, রাওদুন নাদীর ৪১৮, সহীহ আবু দাউদ ১৫৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, আমি কি আমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারি? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ করো। তুমি যদি তার জন্য কল্যাণ ও নেকী বৃদ্ধি করতে না পারো, তবে অন্তত তার জন্য অকল্যাণ ও পাপ বৃদ্ধি করো না। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জীবিত ব্যক্তি হজ্জ করতে অপারগ হলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা

(ক) আবূ রাযীন আল-উকায়লী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি হজ্জ অথবা উমরা করতে বা বাহনে উপবিষ্ট থাকতে অক্ষম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় করো। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৬, তিরমিযী ৯৩০, নাসায়ী ২৬৩৭, আবূ দাউদ ১৮১০, আহমাদ ১৫৭৫১, ১৫৭৫৭, ১৫৭৬৬, সহীহ আবু দাউদ ১৫৮৮, মিশকাত ২৫২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। খাছআম গোত্রের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতিশয় বৃদ্ধ এবং অচল হয়ে পড়েছেন। বান্দাদের উপর আল্লাহর ফরযকৃত হজ্জ তার উপরও ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি তা আদায় করতে সক্ষম নন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করি, তবে তা কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হ্যাঁ। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৭, ২৯০৯, সহীহুল বুখারী ১৫১৩, ১৮৫৪, ১৮৫৫, ৪৩৯৯, ৬২২৮, মুসলিম ১৩৩৪, ১৩৩৫, তিরমিযী ২৯৮, নাসায়ী ২৬৩৪, ২৬৩৫, ২৬৪১, ২৬৪২, আহমাদ ১৮১৫, ১৮২৫, ১৮৯৩, ২২৬৬, ৩০৩৩, ৩২২৮, ৩৩৬৫, মুয়াত্তা মালেক ৮০৬, দারেমী ১৮৩১, ১৮৩২, ১৮৩৩, ১৮৩৫)।হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

শিশুদের হজ্জ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজ্জের সময় এক মহিলা তার শিশু সন্তানকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে উঁচিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! এই শিশুর জন্যও কি হজ্জ? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তবে সওয়াব হবে তোমার। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৯১০, তিরমিযী ২৯৪, হুজ্জাতুন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৯৪, ইরওয়া ৯৮৫, সহীহ আবু দাউদ ১৫২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত মহিলারা হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে

(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শাজারা (যুল-হুলায়ফা) নামক স্থানে উমায়স কন্যা আসমা (রাঃ) এর নিফাস হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর (রাঃ) -কে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন।

(সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১১, মুসলিম ১২১৯, আবূ দাউদ ১৭৪৩, দারেমী ১৮০৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তাঁর সাথে (তাঁর স্ত্রী) উমাইস-কন্যা আসমা (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি শাজারা নামক স্থানে মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বাকর-কে প্রসব করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তাকে গোসল করার পর হজ্জের ইহরাম বাঁধার এবং লোকেদের অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালনের নির্দেশ দেন, কিন্তু সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১২, নাসায়ী ২৬৬৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনে আবূ বাকরকে প্রসব করলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বিধান জিজ্ঞেস করার জন্য লোক পাঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন গোসল করে একটি কাপড় জড়িয়ে নেন ও ইহরাম বাঁধেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯১৩, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯, হুজ্জাতুন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঋতুবতী মহিলা তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের অবশিষ্ট অনুষ্ঠানাদি পালন করবে

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল হজ্জ আদায় করা। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে অথবা তার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছলাম, তখন আমার মাসিক ঋতু শুরু হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার কী হয়েছে, তুমি কি ঋতুগ্রস্ত হয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলা আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। তুমি হজ্জের সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করো, শুধুমাত্র বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করো না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ থেকে একটি গরু কোরবানী করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ২৯৬৩, সহীহুল বুখারী ২৯৪, ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১৬৩৮, ১৬৪৩, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৬২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৩১৭, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০৮, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৭২২৯, ১২১১, ১২১২, ১২২৮, ১২৭৭, তিরমিযী ৯৩৪, ৯৪৫, ২৯৬৫, নাসায়ী ২৪২, ২৯০, ২৪৮, ২৬৫০, ২৭১৭, ২৭১৮, ২৭৪১, ২৭৬৩, ২৭৬৪, ২৮০৩, ২৮০৪, ২৯৯০, ২৯৯১, আবূ দাউদ ৭৫০, ১৭৭৮, ১৭৭৯, ১৭৮১, ১৭৮২, আহমাদ ২৩৫৫৬, ২৩৫৭৩, ২৩৫৮৯, ২৪০৪৪, ২৪৩৫৫, ২৪৩৮৫, ২৪৭৭৯, ২৪৭৮৮, ২৪৯১৩, ২৫০৫০, ২৫৩১০, ২৫৫৩৪, ২৫৫৫৪, ২৭৬৫৪, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক ৭৪৬, ৮৯৬, ৯৪০, ৯৪১, দারেমী ১৪৬, ১৯০৪, ইরওয়া ১৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঋতুবতী স্ত্রীলোক বিদায়ী তাওয়াফ না করে প্রস্থান করতে পারে

(ক) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাওয়াফে ইফাযা করার পর সাফিয়্যা বিনতে হুয়ায়্যি (রাঃ) ঋতুবতী হলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি বলেন, সে কি আমাদের আটকে রাখব? আমি বললাম, তিনি তাওয়াফে ইফাযা করেছেন, অতঃপর ঋতুবতী হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে রওয়ানা হতে পারো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০৭২, সহীহুল বুখারী ৩২৮, ১৫৬১, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭২, ৪৪০১, ৫৩২৯, ৬১৫৭, ৭২২৯, মুসলিম ১২১১, তিরমিযী ৯৪৩, নাসায়ী ৩৯১, আবূ দাউদ ২০০৩, আহমাদ ২৩৫৮১, ২৩৫৮৯, ২৪০০৪, ২৪০৩৭, ২৪১৫৩, ২৪৩৮৫, ২৪৭৮১, ২৪৮৯৭, ২৪৯১৪, ২৪৯৯১, ২৫০৭৫, ২৫১৩৪, ২৫১৯৩, ২৫২৪৯, ২৫৩৪৭,২৫৪১৩, ২৫৬২৮, মুয়াত্তা মালেক ৯৪৩, ৯৪৫, দারেমী ৯৪২, ১৯১৭, সহীহ আবু দাউদ ১৭৪৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ) সম্পর্কে জানতে চাইলে আমরা বললাম, সে ঋতুবতী হয়েছে। তিনি বলেনঃ বন্ধ্যা, ন্যাড়া, সে তো আমাদের আটকে ফেলেছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি কোরবানীর দিন তাওয়াফ করেছেন। তিনি বলেনঃ তাহলে অসুবিধা নেই। তোমরা তাকে রওনা হতে বলো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০৭৩, সহীহুল বুখারী ৩২৮, ১৫৬১, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭২, ৪৪০১, ৫৩২৯, ৬১৫৭, ৭২২৯, মুসলিম ১২১১, তিরমিযী ৯৪৩, নাসায়ী ৩৯১, আবূ দাউদ ২০০৩, আহমাদ ২৩৫৮১, ২৩৫৮৯, ২৪০০৪, ২৪০৩৭, ২৪১৫৩, ২৪৩৮৫, ২৪৭৮১, ২৪৮৯৭, ২৪৯১৪, ২৪৯৯১, ২৫০৭৫, ২৫১৩৪, ২৫১৯৩, ২৫২৪৯, ২৫৩৪৭,২৫৪১৩, ২৫৬২৮, মুয়াত্তা মালেক ৯৪৩, ৯৪৫, দারেমী ৯৪২, ১৯১৭, ইরওয়া ৪/২৬১। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হজ্জ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি-২

(১) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কি হজ করা আবশ্যক?

উত্তর: মানুষের ওপর যদি এমন ঋণ থাকে যা পরিশোধ করার জন্য তার সমস্ত সম্পদ দরকার, তবে তার ওপর হজ ফরয নয়। কেননা আল্লাহ তো শুধুমাত্র সামর্থবান মানুষের ওপর হজ ফরয করেছেন। তিনি বলেন,

”মানুষের ওপর আল্লাহর অধিকার এই যে, যারা এ ঘর পর্যন্ত আসার সামর্থ্য রাখে তারা এর হজ পালন করবে।[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]

সুতরাং ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি তো সামর্থবান নয়। অতএব, প্রথমে সে ঋণ পরিশোধ করবে তারপর সম্ভব হলে হজ আদায় করবে।

কিন্তু ঋণ যদি কম হয় এবং ঋণ পরিশোধ করে হজে গিয়ে প্রত্যাবর্তন করার সমান খরচ বিদ্যমান থাকে, তবে হজ করবে। হজ চাই ফরয হোক বা নফল। কিন্তু ফরয হজ আদায় করার ব্যাপারে বিলম্ব করা উচিৎ নয়। আর নফল হজ তো ইচ্ছাধীন। মন চাইলে করবে মন চাইলে করবে না, কোনো গুনাহ হবে না।

(২) জনৈক ব্যক্তি মীকাত থেকে হজের ইহরাম বেঁধেছে। কিন্তু মক্কা পৌঁছে সে প্রশাসন (ডিউটি পুলিশ) কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। কেননা সে হজের অনুমতি পত্র নেয় নি। এখন তার করণীয় কী?

 উত্তর: এ অবস্থায় মক্কা প্রবেশ করতে না পারলে সে ‘মুহছারবা বাধাগ্রস্ত বলে বিবেচিত হবে। তখন বাধাপ্রাপ্ত স্থানে হাদঈ যবেহ করে সে ইহরাম খুলে ফেলবে। যদি ইহা তার প্রথম ফরয হজ হয়ে থাকে তবে পরবর্তী বছর তা আদায় করবে। আর ফরয না হয়ে থাকলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী পরবর্তী বছর তা আদায় করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার বছরে বাধাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তী বছর তা কাযা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন নি। অতএব, আল্লাহর কিতাবে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে বাধাপ্রাপ্ত হজ বা উমরা কাযা আদায় করার বাধ্যবাধকতা নেই।

আল্লাহ বলেন,

”যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য কুরবানী করবে। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৬]

এখানে হাদঈ যবেহ করা ছাড়া অন্য কিছু উল্লেখ করা হয় নি। আর পরবর্তী বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উমরা আদায়কে কাযা উমরা এজন্যই বলা হয়েছে যে, তিনি কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে পরবর্তী বছর উমরা আদায় করবেন। এ কারণে নয় যে, ছুটে যাওয়া কাজের পূর্ণতার জন্য কাযা আদায় করেছিলেন। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন।)

(৩) হজের ইচ্ছা করার পর যদি তাকে নিষেধ করে দেওয়া হয়, তবে তার করণীয় কী?

উত্তর: যদি সে ইহরাম না করে থাকে তবে কোনো অসুবিধা নেই। কোনো কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কেননা কোনো লোক ইহরামে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত ইচ্ছা করলে সম্মুখে অগ্রসর হতে পারে, ইচ্ছা করলে নিজ ঠিকানায় ফেরত আসতে পারে। কিন্তু হজ ফরয হলে, যতদ্রুত সম্ভব আদায় করে নেওয়া ভালো।

আর ইহরামে প্রবেশ করার পর বাধাগ্রস্ত হলে যদি ইহরাম বাধার সময় শর্ত করে থাকে এ বলে, “আল্লাহুম্মা ইন্ হাবাসানী হাবেস্, ফা মাহেল্লী হায়ছু হাবাস্তানী”, তবে বাধাপ্রাপ্ত স্থানে ইহরাম খুলে ফেলবে। কোনো কিছু তার উপর আবশ্যক হবে না। কিন্তু যদি শর্ত করার জন্য এরূপ দোআ পাঠ না করে থাকে, তবে উক্ত বাধা অচিরেই বিদূরিত হওয়ার আশা থাকলে অপেক্ষা করবে এবং হজ পূর্ণ করবে। ‘আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে যদি বাধামুক্ত হয়, তবে ‘আরাফাতে অবস্থান করে হজ পূর্ণ করবে। কিন্তু ‘আরাফাতে অবস্থানের পর বাধা মুক্ত হলে, হজ ছুটে গেল। তখন উমরা আদায় করে ইহরাম খুলে ফেলবে। ফরয হজ হয়ে থাকলে পরবর্তী বছর তা কাযা আদায় করবে। কিন্তু অচিরেই বাধা মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে এবং শর্ত না করে থাকলে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং হাদঈ যবাই করবে। কেননা আল্লাহ বলেন,

”তোমরা আল্লাহর জন্য হজ-উমরা পূর্ণ করবে। যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে সহজসাধ্য হাদঈ প্রদান করবে।”  [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৬]

(৪) হজ করতে এসে পাপের কাজে লিপ্ত হলে কি হজের সাওয়াব কমে যাবে?

উত্তর: সাধারণভাবে সব ধরনের পাপকাজ হজের সাওয়াব হ্রাস করে দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন,

”যে ব্যক্তি ঐ মাসগুলোর মধ্যে হজের সংকল্প করবে, সে স্ত্রী সহবাস, গর্হিত কাজ ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে পারবে না।[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৭]

বরং বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেছেন, হজ অবস্থায় পাপ কাজ করলে হজ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্বানদের নিকট প্রসিদ্ধ মূলনীতি হচ্ছে: “হারাম কাজটি যদি ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়, তবে তার কারণে ইবাদত বাতিল হবে না। সাধারণ পাপসমূহ হজের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কেননা তা হজের সময় যেমন হারাম অন্য সময়ও হারাম। এটাই বিশুদ্ধ মত। এ সমস্ত পাপকাজ হজ্জকে বাতিল করে দিবে না। কিন্তু তার সাওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।

(৫) মিথ্যা পাসপোর্ট বানিয়ে হজ করলে হজ হবে কী?

উত্তর: তার হজ হয়ে যাবে। হজ বিশুদ্ধ হবে। কেননা পাসপোর্ট নকল করা হজের কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা হজের বাইরের কাজ। কিন্তু এ কাজের কারণে সে গুনাহগার হবে। তাকে তাওবা করা উচিৎ। কেননা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা প্রশাসনকে ধোঁকা দেওয়া একটি মারাত্মক অপরাধ ও বড় গোনাহের কাজ।

জেনে রাখা উচিৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে দিবেন, তাকে ধারণাতীত রিযিক দান করবেন, তার সকল কাজ সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, সত্য কথা বলবে এবং সৎ পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ তার কর্ম সংশোধন করে দিবেন এবং তার গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন।

হজ্জ সংক্রান্ত বানোয়াট কথা

(ক) বিবাহের আগে হজ্জ পালনের প্রয়োজনীয়তাঃ

আমাদের দেশে ‘হজ্জ রাখতে পারবে কিনা, ‘হজ্জের আগে ছেলেমেয়ে বিবাহ দিতে হবে, ‘হজ্জের আগে পিতামাতার হজ্জ করাতে হবে, বা ‘পিতামাতার অনুমতি লাগবে... ইত্যাদি কিছু ভিত্তিহীন ধারণা ও কুসংস্কারের কারণে সাধারণত মুসলিমগণ বার্ধক্যের আগে হজ্জ করেন না, যদিও হজ্জ ফরয হওয়ার পরে দেরি করা মোটেও উচিত নয়। ইন্দোনেশিয়ায় বিষয়টি উল্টো। যৌবনের শুরুতে, বিবাহের পূর্বে হজ্জ আদায় না করলে মনে হয় হজ্জ হলো না। একটি জাল হাদীস এর কারণ। এই জাল হাদীসটিতে বলা হয়েছে:

”যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের আগে বিবাহ করল, সে পাপ দিয়ে শুরু করল।”

মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ কথাটি জাল। (ইবনু আদী, আল-কামিল ১/৩৬৪; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত ২/১২৪; যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল ১/৪৫৮; তারতীবুল মাউদূআত, পৃ. ১৮৫; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১২০; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/১৬৭; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ৭৩; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/১৩৮)।

(খ) হজ্জের কারণে বান্দার হক্ক ক্ষমা হওয়াঃ

হজ্জ বিষয়ক প্রচলিত কিছু হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ () বিদায় হজ্জের সময় হাজীদের সকল পাপের মার্জনার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। মহান আল্লাহ প্রথমে জানান যে বান্দার হক ছাড়া হাজীর সকল পাপ ক্ষমা করা হবে। বারংবার দোয়ার পর আল্লাহ জানান যে, হাজীর সকল পাপ, এমনকি বান্দার হক্ক বিষয়ক পাপও ক্ষমা করা হবে ...।

এ মর্মে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেকটি হাদীসের সনদই অত্যন্ত দুর্বল। প্রত্যেক সনদেই মিথ্যাবাদী অথবা অত্যন্ত দুর্বল রাবী অথবা অজ্ঞাতনামা ও অজ্ঞাত পরিচয় রাবী রয়েছে। কোনো কোনো মুহাদ্দিস একাধিক সনদের কারণে সেগুলোকে ”দুর্বল” হলেও সরাসরি ‘জাল নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। পক্ষান্তরে কোনো কোনো মুহাদ্দিস এ অর্থের সকল হাদীসই জাল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য করেছেন। কারণ প্রত্যেক সনদেই মিথ্যাবাদী বা পরিত্যক্ত রাবী রয়েছে। এছাড়া তা বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সত্যের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে। বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার বা প্রাপ্য সংশ্লিষ্ট বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। এমনকি জিহাদ ও শাহাদতের দ্বারাও তার ক্ষমা হয় না। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত ২/১২৪-১২৭; যাহাবী, তারতীবুল মাউদূআত, পৃ. ১৮৫; আল-মুনযিরী, আত-তারগীব ২/১২৯-১৩১; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১২০-১২৪; আন-নুকাতুল বাদীআত, পৃ. ১৩১-১৩৪; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/১৬৯-১৭০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/১৩৯-১৪১)।

ঈদের সালাত অধ্যায়

(৮) ঈদের ছালাত আদায় করা :

এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করা। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

‘রাসূল (ছাঃ) ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ করতেন তাহ’ল ছালাত আদায়। আর ছালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নছীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারী করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন’। (বুখারী হা/৯৫৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ঈদুল ফিত্র ও ‘ঈদুল আযহার দিন ‘ঈদমাঠে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নাসীহাত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সা‘ঈদ (রাযি.) বলেন, লোকেরা বরাবর এ নিয়মই অনুসরণ করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদিনার ‘আমীর হলেন, তখন ‘ঈদুল আযহা বা ‘ঈদুল ফিত্রের উদ্দেশে আমি তাঁর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ‘ঈদমাঠে পৌঁছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনু সাল্ত (রাযি.) তৈরি করেছিলেন। মারওয়ান সালাত আদায়ের পূর্বেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তাঁর কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু তিনি কাপড় ছাড়িয়ে খুৎবাহ দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসূলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সা‘ঈদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গেছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানি না। সে তখন বলল, লোকজন সালাতের পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই ওটা সালাতের আগেই করেছি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৫৬, ৩০৪, আধুনিক প্রকাশনী ৯০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৯) ঈদায়নের সময়কাল :

ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে ছয় হাত উপরে (মির‘আত ৫/৬২) উঠার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। অতএব ঈদুল আযহার ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত শুরু করা উচিত।

(১০) ঈদুল ফিৎরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন সকালে খাওয়ার বিধানঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎরের দিন সকালে বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা অন্য কিছু না খেয়ে ঈদগাহে বের হ’তেন না এবং ঈদুল আযহার দিন ছালাত শেষে ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। (মিশকাত হা/১৪৩৩; তিরমিযী হা/৫৪২; ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৬; মিশকাত হা/১৪৪০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন আহার না করে (ঈদের মাঠে) রওয়ানা হতেন না এবং কুরবাণীর দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আহার করতেন না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১৭৫৬, তিরমিযী ৫৪২, আহমাদ ২২৪৭৪, ২২৫৩৩, দারেমী ১৬০০, মিশকাত ১৪৪০, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৪২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৫৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১০৪, ইবনু হিব্বান ২৮১২, সহীহ আল জামি‘ ৪৮৪৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি স্বীয় কুরবানীর গোশত দ্বারা ইফতার করতেন (আহমাদ হা/২৩০৩৪)। বায়হাক্বীর বর্ণনায় নির্দিষ্টভাবে ‘কলিজা’র কথা এসেছে, তবে তা যঈফ। (বায়হাক্বী ৩/২৮৩; সুবুলুস সালাম হা/৪৫৪-এর আলোচনা)। যঈফ হাদিস আমলযোগ্য নয়।

(১১) মহিলাদের ঈদের ছালাত:

(ক) ঈদায়নের জামা‘আতে পুরুষদের পিছনে পর্দার মধ্যে মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে যোগদান করবেন। উম্মে ‘আত্বিইয়া (রাঃ) বলেন, ‘আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হ’ল, যেন আমরা ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে দুই ঈদের দিন বের করে নিয়ে যাই। যেন তারা মুসলমানদের জামা‘আতে ও দো‘আয় শরীক হ’তে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলারা একদিকে সরে বসবেন। জনৈকা মহিলা বললেন, আমাদের অনেকের বড় চাদর নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার সাথী তাকে নিজের চাদর দ্বারা আবৃত করে নিয়ে যাবে’। (বুখারী হা/৯৮১; মুসলিম হা/৮৯০; মিশকাত হা/১৪৩১)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৩১, সহীহ  বুখারী ৩৫১, ৯৮১, মুসলিম ৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সেখানে ঋতুবতীরা ছালাত ব্যতীত সবকিছুতে শরীক হবেন

অত্র হাদীস দ্বারা নারীদের ‘ঈদের মাঠে গমনের উপর কী পরিমাণ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা স্পষ্ট প্রমাণিত।

(খ) পুরুষদের জামা‘আতে শরীক হওয়া অসম্ভব বিবেচিত হ’লে মহিলাগণ ঘরে একাকী বা নিজেদের ইমামতিতে জামা‘আত সহকারে ঈদের ছালাত আদায় করায় কোন বাধা নেই। বরং তারা এতে অধিক ছওয়াবের অধিকারী হবেন। (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ক্রমিক ১৯৯, ৩০/২৭৭ পৃ.)।

(১২) সম্মিলিত দো‘আ নয়:  মিশকাতের আরবী ভাষ্যকার ছাহেবে মির‘আত বলেন, হাদীছের শেষে বর্ণিত ‘ওয়া দা‘ওয়াতাল মুসলিমীন’ অর্থাৎ মুসলমানদের দো‘আয় শরীক হওয়া কথাটি ‘আম। এর দ্বারা ইমামের খুৎবা, যিকর ও নছীহত শ্রবণে শরীক হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। কেননা ঈদায়নের ছালাত শেষে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দো‘আ করার পক্ষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই। (মিশকাত হা/১৪৩১; মির‘আত হা/১৪৪৫-এর আলোচনা, ৫/৩১ পৃ.)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৩১, সহীহ  বুখারী ৩৫১, ৯৮১, মুসলিম ৮৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(১৩) ঈদায়নের ছালাতে অতিরিক্ত তাকবীর:

ঈদের তাকবীর কতটি এ মর্মে ওলামাদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল, তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত সাত তাকবীর (মতান্তরে ৬ তাকবীর) এবং দ্বিতীয় রাকাতে ১ম রাকআত থেকে উঠার তাকবীর ছাড়া পাঁচ তাকবীর দেয়া অধিক হাদিস সম্মত।

এ ব্যাপারে হাদিসের কিতাবগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

তন্মধ্যে একটি হাদিস নিম্নরূপ:

 ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাক‘আতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাচঁবার তাকবীর বলতেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১১৪৯, ইবনু মাজাহ ১২৮০, আহমাদ (৬/৭০)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আরেকটি হাদিস:

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈদুল ফিত্বরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাক‘আতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচটি এবং উভয় রাক‘আতেই তাকবীরের পর ক্বিরাআত পড়তে হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ১১৫১, ইবনু মাজাহ ১২৭৮, আহমাদ (২/১৮০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আরেকটি হাদিস:

আমর ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু ঈদের সালাতে প্রথম রাকআতে সাত তাকবীর এবং শেষের রাকআতে পাঁচ তাকবীর দিতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১২৭৯, তিরমিযী ৫৩৬, মিশকাত ১০৪১, তা'লীক ইবনু খুযাইমাহ ১৪৩৮, ১৪৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ মর্মে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান।

ইরাকী বলেন: এটি অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও ইমামদের অভিমত।

ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: দুই ঈদের নামাযের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ‘হাসান’ সনদে বহু রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়েছেন। কিন্তু, সাহাবায়ে কেরাম এ নিয়ে তীব্র মতানৈক্য করেছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়ীগণ এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। [তামহীদ (১৬/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]

ছয় তাকবীরের দুর্বলতাঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘ছয় তাকবীরে’ ঈদের ছালাত আদায় করেছেন- মর্মে ছহীহ বা যঈফ কোন স্পষ্ট মরফূ হাদীছ নেই। ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায় চার তাকবীর’ বলে মিশকাতে। (আবুদাঊদ হা/১১৫৩; মিশকাত হা/১৪৪৩, এবং ঐ তাখরীজ-আলবানী, হেদায়াতুর রুওয়াত হা/১৩৮৮, ২/১২১ পৃ., হাদীছ যঈফ)।

এবং ৫+৪ ‘নয় তাকবীর’ বলে মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাকে (হা/৫৬৮৫, ৫৬৮৯) ও মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাতে (হা/৫৭৪৬-৪৭) ইবনু আববাস, মুগীরা বিন শো‘বাহ ও ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে যে আছারগুলি এসেছে সবই যঈফ। (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী ‘ঈদায়নের তাকবীর’ অনুচ্ছেদ হা/৫৩৪-এর আলোচনা, ৩/৮০-৮৮ পৃ.)।

এ বিষয়ে ইমাম বায়হাক্বী বলেন, ‘এটি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর ‘ব্যক্তিগত রায়’ মাত্র। অতএব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত মরফূ হাদীছ, যার উপরে মুসলমানদের আমল জারী আছে (অর্থাৎ বারো তাকবীর) তার উপরে আমল করাই উত্তম’। (বায়হাক্বী ৩/২৯১; মির‘আত ৫/৫১)।

ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ) বলেন, ‘জানাযার চার তাকবীরের ন্যায়’ মর্মের বর্ণনাটি যদি ‘ছহীহ’ বলে ধরে নেওয়া হয় (আবু দাঊদ হা/১১৫৩; মিশকাত হা/১৪৪৩; ছহীহাহ হা/২৯৯৭) তথাপি এর মধ্যে ছয় তাকবীরের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণ সেখানে ১ম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে চার ও ২য় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পরে চার তাকবীর দিতে হবে বলে কোন কথা নেই। বরং এটাই স্পষ্ট যে, দুই রাক‘আতেই জানাযার ছালাতের ন্যায় চারটি করে (আটটি অতিরিক্ত) তাকবীর দিতে হবে’। (ইবনু হায্ম, মুহাল্লা মাসআলা ক্রমিক: ৫৪৩, ৫/৮৪-৮৫ পৃ.)।

৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়া কি বৈধ?

প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাতের আগে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর ৩ তাকবীর। এটি একদল সাহাবী, ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মুসা (রাঃ) ও আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে এবং এটি ইমাম সাওরী (রহঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমত…[নাইলুল আওতার (৩/৩৫৫) থেকে সমাপ্ত]

মোটকথা, ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়া হোক অথবা ৬ তাকবীরে উভয়টি সহীহ। তবে ১২ তাকবীরের হাদিস সংখ্যা প্রচুর এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া এটি অধিক উত্তম। (যেমনটি শাইখ আলবানী বলেছেন)।

আরেকটি বিষয় হল, এই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো সুন্নত; রোকন বা ওয়াজিব নয়।

সুতরাং ইমাম ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ুক অথবা ১২ তাকবীরে পড়ুন সকল অবস্থায় তার পেছনে সালাত পড়া জায়েয। কেবল তাকবীরের সংখ্যাকে কেন্দ্র করে ঈদের মাঠে ঝগড়া-মারামারি করা বা ঈদের মাঠ ভাগ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।

(১৪) ঈদায়নের ছালাত আদায়ের পদ্ধতি :

ওযূ সহ ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে বাম হাতের উপরে ডান হাত বুকের উপরে বাঁধবে। অতঃপর ‘ছানা’ পড়বে। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ পরপর সাতটি তাকবীর দিবে। প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে, অতঃপর পূর্বের ন্যায় বুকে বাঁধবে। তাকবীর শেষ হ’লে প্রথম রাক‘আতে আ‘ঊযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পূর্ণভাবে পড়ে ইমাম হ’লে সরবে সূরা ফাতেহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। মুক্তাদী হ’লে নীরবে কেবল সূরা ফাতেহা ইমামের পিছে পিছে পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত শুনবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে পূর্বের নিয়মে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ পরপর পাঁচটি তাকবীর দিবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ অন্তে সূরা ফাতেহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে।

ঈদায়নের ছালাতে ১ম ও ২য় রাক‘আতে যথাক্রমে সূরা আ‘লা ও গাশিয়াহ অথবা সূরা ক্বাফ ও ক্বামার পড়া সুন্নাত। ঈদায়নের জন্য প্রথমে ছালাত ও পরে খুৎবা প্রদান করতে হয়। এর আগে পিছে কোন ছালাত নেই, আযান বা এক্বামত নেই। ঈদগাহে বের হবার সময় উচ্চকণ্ঠে তাকবীর এবং পৌঁছার পরেও তাকবীর ধ্বনি ব্যতীত কাউকে জলদি আসার জন্য আহবান করাও ঠিক নয়।

খুতবা অধ্যায়

(১৫) একটি খুৎবাই সুন্নাত :

ছহীহ হাদীছ সমূহের বর্ণনা মতে ঈদায়নের খুৎবা মাত্র একটি। (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১৪২৬, ১৪২৯)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আবূ সা‘ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঘর থেকে) বের হয়ে ঈদগাহের ময়দানে গমন করতেন। প্রথমে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে গিয়ে সালাত আদায় করাতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষের দিকে মুখ ফিরে দাঁড়াতেন। মানুষরা সে সময় নিজ নিজ সারিতে বসে থাকতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে ভাষণ শুনাতেন, উপদেশ দিতেন। আর যদি কোন দিকে কোন সেনাবাহিনী পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তাদেরকে নির্বাচন করতেন। অথবা কাউকে কোন নির্দেশ দেয়ার থাকলে তা দিতেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) [ঈদগাহ] হতে ফিরে প্রত্যাবর্তন করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪২৬, সহীহ বুখারী ৯৫৬, মুসলিম ৮৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬১৩৪, ইরওয়া ৬৩০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ছিলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতের জন্য ঈদগাহে এসেছেন। (প্রথমে) সালাত  আদায় করেছেন, তারপর খুতবাহ্  প্রদান করেছেন। তবে তিনি আযান ও ইক্বামাত এর কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাদের নিকট এসেছেন। তাদের ওয়াজ নাসীহাত করেছেন। দান সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। অতঃপর আমি দেখলাম মহিলাগণ নিজ নিজ কান ও গলার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। গহনা খুলে খুলে বিলালের নিকট দিতে লাগলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও বিলাল বাড়ীর দিকে চলে গেলেন।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪২৯, সহীহ  বুখারী ২৫৪৯, মুসলিম ৮৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন বের হতেন এবং লোকেদের নিয়ে দু রাকআত সালাত আদায় করতেন, তারপর সালাম ফিরাতেন। এরপর তিনি তাঁর উভয় পায়ের উপর দাঁড়িয়ে উপবিষ্ট লোকেদের দিকে মুখ করে বলতেনঃ তোমরা দান-খয়রাত করো, তোমরা দান-খয়রাত করো। দান-খয়রাতকারীদের অধিকাংশই ছিল মহিলা। তারা কানবালা, আংটি ও অন্যান্য জিনিস দান করে। তিনি যদি কোথাও সামরিক বাহিনী প্রেরণ করা জরুরী মনে করতেন, তাহলে তাদের উদ্দেশে সে সম্পর্কে আলোচনা করতেন, অন্যথায় ফিরে আসতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১২৮৮, বুখারী ৩০৪, ১৪৬২; মুসলিম ৮০, ৮৮৯; নাসায়ী ১৫৭৬, ইরওয়াহ ৬৩০, ৬৩৫; সহীহহা ২৯৬৮)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাঝখানে বসে দু’টি খুৎবা প্রদান সম্পর্কে ইবনু মাজাহ (হা/১২৮৯) ও বাযযারে (হা/১১১৬) কয়েকটি ‘মুনকার/যঈফ’ হাদীছ এসেছে, যা ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন অথবা ঈদুল আযহার দিন বের হলেন। অতঃপর তিনি (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দেন, তারপর কিছুক্ষণ বসার পর পুনরায় দাঁড়িয়ে খুতবাহ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১২৮৯)। হাদিসের মানঃ মুনকার (সর্বদা পরিত্যক্ত)।

ছাহেবে সুবুলুস সালাম ও ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। এটি রাসূল (ছাঃ)-এর ‘আমল’ দ্বারা এবং কোন নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়’। (সুবুলুস সালাম ১/১৪০; মির‘আত ৫/২৭)।

ছালাতের পর খুৎবা শোনা সুন্নাত। যারা কারণ ছাড়াই খুৎবা না শুনে চলে যান, তারা খুৎবা শোনার ছওয়াব ও বরকত থেকে মাহরূম হন।

ঈদের সালাতের আগে ও পরে (নফল) সালাত পড়া

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে লোকেদের সাথে সালাত পড়েন। তিনি ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে (নফল) সালাত পড়েননি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ১২৯১, ১২৯২, ১২৯৩, বুখারী ৯৮, ৮৬৩, ৯৫৯-৬০, ৯৬২, ৯৬৪, ৯৭৫, ৯৭৭, ১৪৪৯, ৪৮৯৫, ৫২৪৯, ৫৮৮০-৮১, ৭৩২৫; মুসলিম ৮৮১-৩, ৮৮৬; নাসায়ী ১৫৬৯, ১৫৮৬; আবূ দাঊদ ১১৪২, ১১৪৬, ১১৫৯; আহমাদ ১৬০৩-৪, ১৬১০, ১৯০৫, ১৯৮৪, ২০৬৩, ২১৭০, ২৫২৯, ২৫৬৯, ২৫৮৮, ৩০৫৪, ৩০৯৫, ৩২১৫, ৩২১৭, ৩৩০৫, ৩৪৭৭; ইবনু মাজাহ ১২৭৩, ইরওয়াহ ৬৩১, সহীহ আবী দাউদ ১০৫১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানী অধ্যায়

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর কোন্ পুত্রকে কুরবানী করতে চেয়েছিলেন?

আল্লাহ তাঁর বান্দা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে বলেন,

“আর সে বলল (আগুন থেকে তার উদ্ধার হওয়ার পরে): নিশ্চয় আমি আমার রবের কাছে যাচ্ছি। তিনিই আমাকে দিকনির্দেশনা দেবেন। হে আমার রব! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। সুতরাং আমরা তাকে সহনশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিলাম এবং যখন সে (ছেলেটি) তার সাথে হাঁটার মতো বড় হলো, তখন সে বললো, হে আমার পুত্র! আমি একটা স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে তুমি কি মনে কর! সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল এবং সে তাকে তার কপালের উপর সাজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল (অথবা কাত করে পাশের উপর শুইয়ে দিল)। আমরা তাকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো! নিশ্চয় এভাবেই আমরা মুহসিন (সৎকর্মশীল) বান্দাদের পুরস্কৃত করি। নিশ্চয় ওটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা এবং আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে (অর্থাৎ একটা ভেড়া দিয়ে) মুক্ত করেছি এবং এটা আমরা পরবর্তী প্রজন্মগুলোর স্মরণে রেখেছি। ইবরাহীমের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবেই আমরা মুহসিন বান্দাদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় সে আমাদের বিশ্বাসী বান্দাদের একজন ছিল এবং আমরা তাকে ইসহাকের ব্যাপারে সুসংবাদ দিলাম সৎকর্মশীলদের মাঝে থেকে একজন নবী হিসেবে। আমরা তাকে এবং ইসহাককে বরকত দান করলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের মধ্যে স্পষ্ট যুলুমকারী। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ৯৯-১১৩]

আয়াতসমূহের তাফসীরে ইমাম ইবন কাসীর বলেন: আল্লাহ আমাদের বলেন যে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার পিতৃভূমি থেকে হিজরত করলেন, তখন তিনি তার রবের কাছে চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন। তাই আল্লাহ তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ইসমাঈল আলাইহিস সালামের ব্যাপারে। কেননা তিনি ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঔরসে জন্ম নেওয়া প্রথম সন্তান। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দীনের (ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও মুসলিম) অনুসারীদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই যে, ইবরাহীমের ঘরে ইসমাঈলই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

“এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মতো বড় হলো” এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়েছিল এবং তার বাবার মতোই নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারত। মুজাহিদ রহ. বলেন, “এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মতো বড় হলো” এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়ে উঠেছিল এবং বাহনে চড়তে পারত, হাঁটতে পারত এবং তার বাবার মতো কাজ করতে পারত। এরকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে তার ছেলেকে কুরবানী করার আদেশ দেওয়া হচ্ছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক মারফূ‘ হাদীসে এসেছে,

“নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী”। (তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮৯)

সুতরাং আল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে, তার প্রিয়পুত্রকে কুরবানী করার আদেশ দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন, যে পুত্রকে তিনি তার বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং তারপর শিশু অবস্থায় তাকে এবং তার মাকে মরুভূমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়েছিলেন, এমন একটা উপত্যকায় যেখানে কোনো জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোনো মানুষজন, কোনো বৃক্ষরাজি এবং কোনো পশু-পাখিও ছিল না। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশ পালন করলেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদেরকে সেখানে রেখে আসলেন। আর আল্লাহ তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও তার ঘরে প্রথম জন্ম নেওয়া ও তার একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ করা হলো, তিনি তখন তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিলেন এবং তার রবের আদেশ মেনে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা করতে উদ্যত হলেন। তাই তিনি তার পুত্রকে ব্যাপারটা সম্বন্ধে বললেন যেন সে শান্ত থাকে এবং জোর করে তাকে কুরবানী করতে না হয়। তিনি বললেন, “হে আমার পুত্র! আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর!”

ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল: “সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন”। সে সবচেয়ে উত্তম জবাবটিই দিয়েছিল তার পিতার প্রতি এবং মানবকুলের রবের প্রতি বাধ্যতার তা এক উদাহরণ। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: “তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার কপালের উপর সাজদারত অবস্থায় শুইয়ে দিল (অথবা তার কপালের পাশের উপর শুইয়ে দিল)”

এখানে বলা হয়েছে, “যখন তারা উভয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করল” এর অর্থ হচ্ছে তারা দু’জনে যখন নিজেদের আল্লাহর আদেশের কাছে সমর্পণ করল। “এবং সে তাকে শুইয়ে দিল” এর অর্থ হচ্ছে তিনি, তাকে (ছেলেকে) মাটির দিকে মুখ করে রাখলেন। এখানে বলা হল যে, তিনি তাকে পেছন থেকে যবেহ করতে চাইলেন, যেন তিনি যবেহ করার সময় তার মুখটা দেখতে না পান। এটা ছিল ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবায়ের, কাতাদা এবং আদ-দাহহাক রহ.-এর মত।

“তারা উভয়ে নিজেদের সমর্পণ করল” এর অর্থ হচ্ছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এবং “আল্লাহু আকবার” আর ছেলেটি বললো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” কেননা সে মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছিল। আস-সুদ্দী এবং অন্যান্যরা বলেন যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ছেলেটির গলদেশে ছুরি চালান, কিন্তু তা তাকে কাটে নি। এটা বলা হয়ে থাকে যে, একটা তামার পাত ছুরি ও তার গলার মাঝখানে রাখা হয়েছিল, আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

আর তখনই আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন, “হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো!” এর অর্থ হচ্ছে, উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, তোমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তোমার রব তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা পালন করার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছা ও আনুগত্য প্রমাণিত হয়েছে। তোমার পুত্রের পরিবর্তে বিকল্প কুরবানীর ব্যবস্থা করা হবে -যেমনভাবে তুমি তোমার নিজের শরীরকে আগুনের শিখায় সমর্পণ করেছিলে এবং তোমার অতিথিদের সম্মান জানাতে তোমার সম্পদ খরচ করেছিলে, তা স্মরণ রেখে। তাই আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয় এটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা” অর্থাৎ এটা যে একটা পরীক্ষা ছিল তা একদম পরিষ্কার।

আর আল্লাহর বাণী “আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে মুক্ত করলাম” এর অর্থ হচ্ছে আমরা তার ছেলের মুক্তিপণের ব্যবস্থা করলাম, তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য বিকল্প হিসেবে যা সহজ তিনি করেছিলেন। বেশিরভাগ স্কলারের মতে এটা ছিল শিং বিশিষ্ট খুব সুন্দর সাদা একটা ভেড়া। আস-সাওরী আব্দুল্লাহ ইবন উসমান ইবন খাইসাম, সাঈদ ইবন জুবায়ের হয়ে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, “এটা ছিল এমন একটা ভেড়া যা চল্লিশ বছর ধরে জান্নাতে বেড়িয়েছে।”

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এরকম বর্ণনাও এসেছে যে ঐ ভেড়ার শুকনো মাথাটা এখন কা‘বা শরীফের ছাদের (পানি নির্গমনের) পাইপ থেকে ঝুলে রয়েছে। কেবল এটা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল, তিনি ছিলেন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। কেননা তিনি মক্কায় বসবাস করতেন এবং আমরা এমন কখনো শুনি নি যে ইসহাক আলাইহিস সালাম তার ছেলেবেলায় কখনো মক্কায় এসেছিলেন, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

(দেখুন: ইবন কাসীরের আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ১/১৫৭-১৫৮)

সুতরাং স্পষ্ট হলো যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল তিনি ইসহাক নন বরং তিনি ছিলেন ইসমা‘ঈল, তার কারণগুলো আমরা উপরে বর্ণনা করেছি। ইবন কাসীর তার তাফসীরে এই সকল আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করেন, যা প্রমাণ করে যে, ইসমাঈল আলাইহিস সালামেরই কুরবানী হওয়ার কথা ছিল। সেই পয়েন্টগুলো এরকম:

ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ছিলেন তার প্রথম সন্তান, যার ব্যাপারে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল। মুসলিম ও আহলে কিতাবগণের ইজমা (ঐক্যমত্য) অনুসারে তিনি হলেন ইসহাক আলাইহিস সালামের চেয়ে বড়। আহলে কিতাবগণের কিতাবসমূহে এটা বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে তার একমাত্র পুত্র কুরবানী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন এবং কোনো কোনো কপিতে আছে যে, তাকে তার প্রথম জন্ম নেওয়া ছেলেকে কুরবানী দিতে বলা হয়েছিল।

সাধারণতঃ প্রথম ছেলে অন্যদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে থাকে, আর তাই তাকে কুরবানী করার আদেশ পরীক্ষার জন্য অধিকতর উপযোগী।

এটা উল্লেখ রয়েছে যে, এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল এবং তাকেই কুরবানী করার কথা ছিল। এর পরে একই অধ্যায়ে বলা হয়েছে: “এবং আমরা তাকে ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম...”যখন ফিরিশতারা ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের কাছে ইসহাকের সুসংবাদ নিয়ে আসলেন, তারা বললেন,

আমরা আপনাকে একটি জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৫৩]

আল্লাহ আরো বলেন: “কিন্তু আমরা তাকে (সারাকে) ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম এবং তার পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। [সূরা হূদ, আয়াত: ৭১] এর অর্থ হচ্ছে, ইয়াকূব বলে একজন শিশুর জন্ম হবে তাদের (সারা এবং ইসহাকের) জীবদ্দশায় এবং তার থেকে অনেক বংশ বিস্তার লাভ করবে এবং এটা সঠিক শোনায় না যে, ইবরাহীমকে সেই ইসহাককেই কুরবানী করতে বলা হবে যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন। কেননা আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন যে তার অনেক বংশধর থাকবে।

এখানে সূরা আস-সাফফাতে ইসমাঈলকে ধৈর্যশীল বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা কিনা এই পটভূমিতে যথার্থ। (তাফসীর ইবন কাসীর ৪/১৫) আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

প্রচলিত ভিত্তিহীন কিছু কথা

সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: (৯৯-১১৩) এ সুস্পষ্টভাবে ইব্রাহিম আঃ কর্তৃক ইসমাইল আঃ কে কুরবানি দেয়ার বিষয়টি বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক মিথ্যে ও কুরআন-হাদীসের বর্ণনার বিপরীত কথা হাদীস ও তাফসীর হিসাবে প্রচলিত। এখানে কয়েকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

(ক) কুরআনে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবরাহীম আঃ  তাঁর পুত্রকে জবাই করতে স্বপ্নে দেখেছিলেন। আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যে, ইবরাহীম আঃ স্বপ্নে দেখেন যে, তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কুরবানী করো। 'কথাটি ভিত্তিহীন; কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে এরূপ কথা বর্ণিত হয়নি।

(খ) কুরআনে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবরাহীম আঃ তাঁর পুত্রকে জানান যে, তিনি তাঁকে জবাই করার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু প্রচলিত আছে যে, ইবরাহীম তাঁর স্ত্রীকে ও পুত্রকে দাওয়াত খাওয়া ... ইত্যাদি মিথ্যে কথা বলে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান।... সর্বশেষ তিনি পুত্রকে সত্য কথাটি জানান।

এ সকল কথা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণিত হয়নি । এ ছাড়া এই কথাগুলো নবীগণের মর্যাদার খেলাফ। আল্লাহর খলীল তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে কেনো মিথ্যে কথা বলবেন?

(গ) প্রচলিত আছে যে, ইবরাহীম আঃ পুত্র ইসমাঈলকে (আঃ) দড়ি দিয়ে ভাল করে বাঁধেন। এরপর শুইয়ে তাঁর গলায় বারংবার ছুরি চালান....। এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। কুরআনে তো সুস্পষ্টই বলা হচ্ছে যে, জবাই করার প্রস্তুতি নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্বান এসে যায়। কোনো ছুরি চালানোর ঘটনা ঘটেনি। হাদীস শরীফেও বর্ণিত হয়েছে যে, জবাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে বিকল্প জানোয়ার প্রদান করা হয়।  (ইবনু কাসীর,তাফসির ৪/১৬)।

এ বিষয়ে ত্রয়োদশ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ সিরিয় মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনুস সাইয়িদ দরবেশ হূত (১২৭৬ হি) বলেন,

 ইবরাহীম (আ)-এর বিষয়ে যে গল্প প্রচলিত আছে যে, তিনি তাঁর পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন, কিন্তু কাটে নি... এ গল্পটি জাল, মিথ্যা এবং যিন্দীকদের বানানো...। (দরবেশ হূত,আসনাল মাতালিব,পৃষ্ঠাঃ২৮৩-২৮৪)।

অতএব প্রচলিত ওয়াজ আর বাজারের চটি বই পড়ে নবি-রাসুলগণ সম্পর্কে ভিত্তিহীন কথা বিশ্বাস করে ইমানহারা হওয়া যাবে না। 

(১৬) কুরবানী:  যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের বিশেষ আরেকটি আমল হ’ল কুরবানী করা।

কুরবানি কাকে বলে?

কুরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষে যবেহ করা।

পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলমান চাই সে হজ্জ পালনকারী হন বা হজ্জের বাইরে থাকুন সকলেই এই দিনে কুরবানী করে আল্লাহর আদেশ পালন করেন। হজ্জে তামাত্তু ও হজ্জে ক্বিরানকারীগণ মিনা ও তার আশপাশ হারাম এলাকায় আর হজ্জের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মুসলমানরা তাদের স্ব স্ব অবস্থানস্থলে কুরবানী করেন।

প্রথম মত: কুরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয় মত: কুরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটি অধিকাংশ আলেমের মত এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন: সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কুরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোনো জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কুরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কুরবানি হল ইসলামের একটি শি‘য়ার বা মহান নিদর্শন।

যারা কুরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিলঃ

(ক) কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (কাওছার ১০৮/২)। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব।

(খ) ‘বল, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোনো শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ (সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৬২, ১৬৩)।

(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’। (ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪৯০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১২৩, আহমাদ ৮০৭৪, তাখরিজুল মুশকিলাতুল ফিকর ১০২, আত-তালীকুর রাগীব ২/১০৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যারা কুরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কুরবানি ওয়াজিব।

(ঘ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কুরবানি দেয়া। (ইবনু মাজাহ: ৩১২৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মিখনাফ ইবনে সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের ময়দানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অবস্থানরত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ হে জনগণ! প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানী ও একটি আতীরা রয়েছে। তোমরা কি জানো আতীরা কী? তা হলো, যাকে তোমরা রাজাবিয়া বলো। (সুনান ইবনু মাজাহ,৩১২৫, তিরমিযী ১৫১৮, নাসায়ী ৪২২৪, আবূ দাউদ ২৭৮৮, আহমাদ ১৭৪৩২, সহীহ আবু দাউদ ২৪৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আর যারা কুরবানি দেওয়া সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ বলেন তাদের দলিল হচ্ছেঃ

(ক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করার ইচ্ছা করে, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোনো চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৫০১৩)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ).....উম্মু সালামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের (নতুন চাঁদ দেখতে পাও) আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল না ছাটে ও নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫০১৩-১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৭, সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৯, তিরমিযী ১৫২৩, নাসায়ী ৪৩৬১, ৪৩৬২, ৪৩৬৪, আবূ দাউদ ২৭৯১, আহমাদ ২৫৯৩৫, দারেমী ১৯৪৭, ১৯৪৮, ইরওয়া ১১৬৩, সহীহ আবু দাউদ ২৪৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘যে কুরবানি করার ইচ্ছা করে,  কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।

(খ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কুরবানি ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আবুবকর ছিদ্দীক, ওমর ফারূক, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, বেলাল, আবূ মাসঊদ আনছারী (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ কখনো কখনো কুরবানী করতেন না। (বায়হাক্বী ৯/২৬৪ পৃ. হা/১৯৫০৬; ইরওয়া হা/১১৩৯, ৪/৩৫৪; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১০। গৃহীত: মুহাম্মাদ আসাদুললাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী, পৃ: ১১)।

শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক।

সারকথা হল যারা কুরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই। (মাজমূ ফাতাওয়া ৩২/১৬২-১৬৪)।

আর বর্তমান কালের শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ উসাইমীন এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

কোরবানীর পশুর গলায় মালা পরানো

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে (মক্কায়) কোরবানীর পশু পাঠাতেন। আমি তাঁর কোরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরি করে দিতাম। অতঃপর তিনি এমন কোন জিনিস বর্জন করতেন না, যা ইহরামধারী ব্যক্তি বর্জন করে থাকে। (ইবনু মাজাহ ৩০৯৪, ৩০৯৫, সহীহুল বুখারী ১৬৯৬, ১৬৯৭, ১৬৯৯, ১৭০০, ১৭০১, ১৭০২, ১৭০৩, ১৭০৪, ১৭০৫, ২৩১৭, ৫৫৬৬, মুসলিম ১৩২১, তিরমিযী ৯০৮, ৯০৯, নাসায়ী ২৭৭৫, ২৭৭৬, ২৭৭৭, ২৭৭৮, ২৭৭৯, ২৭৮০, ২৭৮৩, ২৭৮৪, ২৭৮৫, ২৭৮৬, ২৭৮৭, ২৭৮৮, ২৭৮৯, ২৭৯০, ২৭৯৩, ২৭৯৪, ২৭৯৫, ২৭৯৬, ২৭৯৭, আবূ দাউদ ১৭৫৫, ১৭৫৭, ১৭৫৮,১৭৫৯, আহমাদ ২৩৫৪৮, ২৩৫৬৪, ২৩৯৭১, ২৪০০৩,২৪০৩৬, ২৪০৮২, ২৪১৮৯, ২৪২৬০, ২৪৪৩৫, ২৪৮৮৩, ২৪৯৩৭, ২৪৯৭০, ২৪৯৮৯, ২৫০৩৭, ২৫০৪৯, ২৫১১৩, ২৫২০৮, ২৫২৪৭, ২৫২৮৯, ২৫৩০৪, ২৫৩৪৪, ২৫৩৪৬, ২৫৩৫৯, ২৫৪৬০, ২৫৪৭৮, ২৫৬২৩, ২৫৭২৭, মুয়াত্তা মালেক ৭৬২, দারেমী ১৯১১, ১৯৩৫, ১৯৩৬, সহীহ আবু দাউদ ১৫৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মেষ-বকরীর গলায় মালা পরানো

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানীর উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ্য় মেষ-বকরী পাঠান এবং তার গলায় মালা পরান। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০৯৬, সহীহুল বুখারী ১৬৯৬, ১৬৯৭, ১৬৯৯, ১৭০০, ১৭০১, ১৭০২, ১৭০৩, ১৭০৪, ১৭০৫, ২৩১৭, ৫৫৬৬, মুসলিম ১৩২১, তিরমিযী ৯০৮, ৯০৯, নাসায়ী ২৭৭৫, ২৭৭৬, ২৭৭৭, ২৭৭৮, ২৭৭৯, ২৭৮০, ২৭৮৩, ২৭৮৪, ২৭৮৫, ২৭৮৬, ২৭৮৭, ২৭৮৮, ২৭৮৯, ২৭৯০, ২৭৯৩, ২৭৯৪, ২৭৯৫, ২৭৯৬, ২৭৯৭, আবূ দাউদ ১৭৫৫, ১৭৫৭, ১৭৫৮,১৭৫৯, আহমাদ ২৩৫৪৮, ২৩৫৬৪, ২৩৯৭১, ২৪০০৩,২৪০৩৬, ২৪০৮২, ২৪১৮৯, ২৪২৬০, ২৪৪৩৫, ২৪৮৮৩, ২৪৯৩৭, ২৪৯৭০, ২৪৯৮৯, ২৫০৩৭, ২৫০৪৯, ২৫১১৩, ২৫২০৮, ২৫২৪৭, ২৫২৮৯, ২৫৩০৪, ২৫৩৪৪, ২৫৩৪৬, ২৫৩৫৯, ২৫৪৬০, ২৫৪৭৮, ২৫৬২৩, ২৫৭২৭, মুয়াত্তা মালেক ৭৬২, দারেমী ১৯১১, ১৯৩৫, ১৯৩৬, সহীহ আবু দাউদ ১৫৪০)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোরবানীর পশুকে কাপড়ের ঝুল পরানো

‘আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দেন, আমি যেন তাঁর কোরবানীর পশু দেখাশুনা করি, ঝুল ও চামড়া (দরিদ্রদের মধ্যে) বণ্টন করি এবং কসাইকে যেন তা থেকে (পারিশ্রমিক বাবদ) কিছু না দেই। তিনি বলেনঃ তাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে দিবো। (ইবনু মাজাহ ৩০৯৯, ৩১৫৭, সহীহুল বুখারী ১৭০৭, ১৭১৬, ১৭১৭, ১৭১৮, ২২৯৯, মুসলিম ১৩১৭, আবূ দাউদ ১৭৬৯, আহমাদ ১২১৩, ১৩২৭, দারেমী ১৯৪০, ইরওয়া ১১৬১, সহীহ আবু দাউদ ১৫৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানীর উটের পিঠে আরোহণ করা

আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আর উটকে আমি করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন, তোমাদের জন্য এতে রয়েছে মঙ্গল। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো অবস্থায় তাদের উপর  তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর; তারপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং সাহায্য কর ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে এবং যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্তকেও। আমি এভাবে ঐ পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যেন তোমরা শোকর কর। আর আল্লাহ্র কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত এবং না এগুলোর রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যেন তোমরা আল্লাহ্র মহত্ব ঘোষণা কর, যেহেতু তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মশীলদেরকে।’’ (আল-হাজ্জঃ ৩৬-৩৭)।

হাদিসে এসেছে,

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিতে দেখে বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, এ তো কুরবানীর উট। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে সওয়ার হয়ে চল। এবারও লোকটি বলল, এ-তো কুরবানীর উট। এরপরও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার সর্বনাশ! এ কথাটি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৬৮৯, ১৬৯০, ১৭০৬, ২৭৫৫, ৬১৬০, সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১০৩, ৩১০৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৬৩৩, মুসলিম ১৫/৬৫, হাঃ ১৩২২, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৮০, নাসায়ী ২৭৯৯, আবূ দাউদ ১৭৬০, আহমাদ ৭৩০৩, ৭৪০৪, ৭৬৭৯, ২৭৩৩৯, ৯৬৬৩, ৯৭৭৭, ৯৮৩৬, ৯৮৭৩, ৯৯৪২, ১০১৮৮, ১০৩১৯, মুয়াত্তা মালেক ৮৪৮, সহীহ আবু দাউদ ১৫৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানির ফযিলত

(ক) কুরবানি দাতা নবী ইবরাহিম আ. ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন মুহসিনদেরকে।’ (সূরা হজ, আয়াত: ৩৭)।

(গ) তবে তাক্বওয়া সহকারে (হজ্জ ২২/৩৭) যে যত বেশী করবে তার তত ছওয়াব হবে। (বুখারী হা/১৭১৪, মুসলিম হা/১৩১৯)।

(ঘ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কুরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানি আদায় হবে না।

 (১৭) কুরবানীর সময়কালঃ

কুরবানি নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত একটি ইবাদত। এ সময়ের পূর্বে যেমন কুরবানি আদায় হবে না তেমনি পরে করলেও আদায় হবে না।

ঈদুল আযহার ছালাত ও খুৎবা শেষ হওয়ার পূর্বে কুরবানী করা নিষিদ্ধ। করলে তাকে তদস্থলে আরেকটি কুরবানী দিতে হবে। (বুখারী হা/৫৫৬২; মুসলিম হা/১৯৬০; মিশকাত হা/১৪৭২)।

হাদিসগুলো নিম্নরুপঃ

(ক) আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি কোরবানীর দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানী করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনর্বার কোরবানী করার নির্দেশ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ,৩১৫১, সহীহুল বুখারী ৯৮৪, ৫৫৪৬, ৫৫৪৯, ৫৫৬১, মুসলিম ১৯৬২ নাসায়ী ৪৩৯৬, আহমাদ ১১৭১০, ১১৭৬১, ইরওয়া ১১৫৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জুনদুব আল-বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আসওয়াদ ইবনে কায়েস (রাঃ) তাকে বলতে শুনেছেন, আমি ঈদুল আযহায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। কতক লোক ঈদের নামাযের পূর্বেই কোরবানী করলো। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানী করেছে সে যেন পুনর্বার কোরবানী করে। আর যে ব্যক্তি এখনও কোরবানী করেনি সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৫২, সহীহুল বুখারী ৯৮৫, ৫৫০০, ৫৫৬২, ৬৬৭৪, ৭৪০০, মুসলিম ১৯৬০, নাসায়ী ৪৩৬৮, ৪৩৯৮, আহমাদ ১৮৩২১, ১৮৩২৮, ইরওয়া ৪/৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) উআইমির ইবনে আশকার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ঈদের নামাযের পূর্বে যবেহ করেন। তিনি বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তুমি পুনরায় কোরবানী করো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৫৩, আহমাদ ১৫৩৩৫, ১৮৫২২, মুয়াত্তা মালেক ১০৪৫, ইরওয়া ৪/৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবু যায়েদ আল-আনসারী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর ঘরের নিকট দিয়ে যেতে ভূনা গোশতের ঘ্রাণ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কোন্ ব্যক্তি কোরবানী করেছে? আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বেরিয়ে এসে বলেন, আমি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার পরিবার ও প্রতিবেশীদের গোশত খাওয়ানোর জন্য ঈদের নামায পড়ার পূর্বেই কোরবানী করেছি। তিনি তাকে পুনর্বার (নামাযের পর) কোরবানী করার নির্দেশ দেন। সে বললো, না, আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই! আমার নিকট ছয় মাস বয়সের একটি ভেড়ার বাচ্চা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি বলেনঃ সেটিই (নামাযের পর) যবেহ করো। কিন্তু তোমার পরে আর কারো জন্য ছয় মাসের বাচ্চা যথেষ্ট হবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৫৪, আহমাদ ২০২১০, ২২৩৭৯, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর কুরবানির সময় শেষ হবে যিলহজ মাসের তেরো তারিখের সূর্যাস্তের সাথে সাথে। অতএব কুরবানির পশু যবেহ করার সময় হল চার দিন। যিলহজ মাসের দশ, এগারো, বার ও তেরো তারিখ। এটাই উলামায়ে কেরামের নিকট সর্বোত্তম মত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ:

(এক) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত: ২৮)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারি রহ. বলেন: ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে বুঝায় কুরবানির দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’

অতএব এ দিনগুলো আল্লাহ তা‘আলা কুরবানির পশু যবেহ করার জন্য নির্ধারণ করেছেন।

(দুই) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‘আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন যবেহ করা যায়।’ (বর্ণনায় আহমদ, হাদিস: ৪/৮২)।

আইয়ামে তাশরীক বলতে কুরবানির পরবর্তী তিন দিনকে বুঝায়।

(তিন) কুরবানির পরবর্তী তিন দিনে সওম পালন জায়েয নয়। এ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে এ তিন দিনে কুরবানি করা যাবে।

(চার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আইয়ামে তাশরীক হল খাওয়া, পান করা ও আল্লাহর জিকির করার দিন।’

এ দ্বারা বুঝে নিতে পারি যে, যে দিনগুলো আল্লাহ খাওয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন সে দিনগুলোতে কুরবানির পশু যবেহ করা যেতে পারে।

(পাঁচ) সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কুরবানির পরবর্তী তিনদিন কুরবানির পশু যবেহ করা যায়।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন: আলী ইবনে আবি তালেব রা. বলেছেন: ‘কুরবানির দিন হল ঈদুল আজহার দিন ও তার পরবর্তী তিন দিন।’ অধিকাংশ ইমাম ও আলেমদের এটাই মত। যারা বলেন, কুরবানির দিন হল মোট তিন দিন; যিলহজ মাসের দশ, এগারো ও বার তারিখ, বার তারিখের পর যবেহ করলে কুরবানি হবে না, তাদের কথার সমর্থনে কোনো প্রমাণ নেই ও মুসলিমদের ঐক্যমত্য [ইজমা] প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

কুরবানির শর্তাবলি

(১৮) কুরবানির শর্তাবলিঃ

কুরবানী ও আকীকাহ আট প্রকার পশুর দ্বারাই করতে হবে, যা সূরা আনআমে বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য জন্তু দিয়ে কুরবানী করার কথা প্রমাণিত নেই। এই আট প্রকার জন্তুর কথা কুরআনের চারটি আয়াতের মধ্যে উল্লেখ আছে।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

‘‘তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে’’। (সূরা মায়েদা-৫:১)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন-

‘‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ্ করার সময়’’। (সূরা হাজ্জ-২২:২৮) আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-

‘‘তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে (ছোট আকৃতির জানোয়ার)। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে অবশ্যই তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা আনআম-৬:১৪২)।

আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন-

‘‘তোমাদের মধ্যে যে জেনে শুনে শিকার হত্যা করবে, তার উপর বিনিময় ওয়াজিব হবে, যা সমান হবে ঐ জন্তুর, যাকে সে বধ করেছে। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা করবে- বিনিময়ের জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে কাবায় পৌছাতে হবে’’। (সূরা মায়েদা-৫:৯৫)।

 এ থেকে জানা গেল যে, এই আট প্রকার জন্তুই কাবা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এই আয়াত থেকে আলী বিন আবু তালেব এভাবেই দলীল গ্রহণ করেছেন।

ইবাদতের জন্য যে সমস্ত যবেহ করা হয়, তা তিন প্রকারঃ

(১) হাজীগণের কুরবানী (হাদী),

(২) ঈদুল আযহার কুরবানী এবং

(৩) আকীকাহ।

অর্থাৎ (নর-মাদী চার) জোড়ায় আট প্রকার, মেষের দু’টি, ছাগলের দু’টি। বল, তিনি কি নর দু’টি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি কিংবা মাদী দু’টির গর্ভে যা আছে তা? এ সম্পর্কিত জ্ঞানের ভিত্তিতে জবাব দাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। আর উটের দু’টি, আর গরুর দু’টি। বল, এদের নর দু’টি কি তিনি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি অথবা মাদী দু’টির গর্ভে যা আছে তা? তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে যখন আল্লাহ এ রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন? (সূরা আনআম-৬:১৪৩-১৪৪)।

সুতরাং মেষ, ছাগল, উট ও গরু এই চার প্রকার প্রাণী দিয়েই কুরবানী করতে হবে। অনেকে মেষ, ছাগল, দুম্বা ও ভেড়াকে এক জাতীয় প্রাণী মনে করে তিন প্রকার প্রাণীকে কুরবানীর পশু হিসেবে গণ্য করেন।

মর্দা ও মাদী উভয়  ধরনের পশুই কোরবানী দেয়া যায়

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানীর জন্য যে পশু পাঠান তার মধ্যে আবূ জাহলের একটি উটও ছিল এবং এর নাসারন্ধ্রের দড়ি ছিল রূপার তৈরী। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১০০, ৩১০১, আবূ দাউদ ১৭৪৯, আহমাদ ২০৮০, ২৩৫৮, ২৪৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

আল্লাহ বলেন: ‘আমরা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সূরা হজ, আয়াত: ৩৪)।

ছাগল, গরু ও উট কুরবানী পশু হওয়ার দলিল

(ক) ‘উকবা ইবনে ‘আমের আল-জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এক পাল বকরী দিলেন এবং তিনি সেগুলো কোরবানীর জন্য তার সংগীদের মধ্যে বণ্টন করলেন। এক বছর বয়সের একটি ছাগল (বণ্টনের পর) অবশিষ্ট থাকলে তিনি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান। তিনি বলেনঃ এটা তুমি কোরবানী করো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৮, সহীহুল বুখারী ২৩০০, ২৫০০, ৫৫৪৭, ৫৫৫৫, মুসলিম ১৯৬৫, তিরমিযী ১৫০০, নাসায়ী ৪৩৭৯, ৪৩৮০, ৪৩৮১, আহমাদ ১৬৮৫৩, ১৬৮৯৫, ১৬৯২৯, ১৬৯৮১, দারেমী ১৯৫৩, ১৯৫৪, ইরওয়া ৪/৩৫৭, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আসেম ইবনে কুলাইব (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সুলাইম গোত্রের মুজাশে (রাঃ) নামক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবীর সাথে ছিলাম। মেষ-বকরীর স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি একজন ঘোষককে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী সে ঘোষণা করলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ এক বছর বয়সের বকরী দ্বারা যে কাজ হয় (কোরবানীর ক্ষেত্রে), ছয় মাস বয়সের মেষ দ্বারাও তা হতে পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪০, নাসায়ী ৪৩৮৩, ৪৩৮৪, আবূ দাউদ ২৭৯৯, যইফাহ ১/৯০, ইরওয়া ১১৪৬, মিশকাত ১১৬৭, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

                                        গরু কুরবানী করার দলিল

(গ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার উটের স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি লোকেদেরকে গরু কোরবানী করার নির্দেশ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৪০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে একটি মাত্র গরু কোরবানী করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৫, সহীহুল বুখারী ২৯৪, ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১৬৩৮, ১৬৪৩, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৬২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৩১৭, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০৮, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৭২২৯, ১২১১, ১২১২, ১২২৮, ১২৭৭, তিরমিযী ৯৩৪, ৯৪৫, ২৯৬৫, নাসায়ী ২৪২, ২৯০, ২৪৮, ২৬৫০, ২৭১৭, ২৭১৮, ২৭৪১, ২৭৬৩, ২৭৬৪, ২৮০৩, ২৮০৪, ২৯৯০, ২৯৯১, আবূ দাউদ ৭৫০, ১৭৭৮, ১৭৭৯, ১৭৮১, ১৭৮২, আহমাদ ২৩৫৫৬, ২৩৫৭৩, ২৩৫৮৯, ২৪০৪৪, ২৪৩৫৫, ২৪৩৮৫, ২৪৭৭৯, ২৪৭৮৮, ২৪৯১৩, ২৫০৫০, ২৫৩১০, ২৫৫৩৪, ২৫৫৫৪, ২৭৬৫৪, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক ৭৪৬, ৮৯৬, ৯৪০, ৯৪১, দারেমী ১৪৬, ১৯০৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....উকবাহ ইবনু আমির আল-জুহানী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে কুরবানীর জন্তু ভাগ করলে আমার ভাগে একটি ছ'মাসের বাচ্চা ছাগল পড়ে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ছ'মাসের একটি বাচ্চা (ছাগল) পেয়েছি। তিনি বললেন তা-ই তুমি কুরবানী করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৭৯, ৪৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯২৫, ইসলামিক সেন্টার ৪৯২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কুরবানি করেননি ও কুরবানি করতেও বলেননি। তাই কুরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কুরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিং ওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের দুম্বা কুরবানি করেছেন বলে বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ).....আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু' শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো ধূসর রংয়ের দুটি দুম্বা স্বহস্তে যাবাহ করেন। (যাবাহ করার সময়) তিনি বিসমিল্লাহ-হ' ও 'আল্লা-হু আকবার’* বলেন এবং (যবাহকালে) তার একখানা পা দুম্বা দুটির ঘাড়ের পাশে রাখেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯২৭, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মহিষ দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি?

সূরা হজ্জের ৩৪ ও ৩৬ নং আয়াতে البدنالأنعام শব্দদ্বয় উল্লিখিত হয়েছে, যা উট, গরু বা গরু জাতীয় পশুকে বুঝায়। আর মহিষ ও গরু যে একই জাতীয় পশু এ ব্যাপারে সকল বিদ্বান একমত। হাসান বাছরী বলেন, ‘মহিষ গরুর স্থলাভিষিক্ত’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/১০৮৪৮; মির‘আত ৫/৮১ ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ)। অতএব মহিষ কুরবানী দেওয়াতে কোন দোষ নেই (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওছায়মীন ২৫/৩৪, ‘কুরবানী’ অধ্যায়)।

পশুর পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় ঐ পশু কুরবাণী করা যাবে কি?

পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় পশু কুরবাণী করায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। এছাড়া উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে। এমনকি রুচি হ’লে পেটের বাচ্চাও খেতে পারে।

পশু যবেহ করার পর যদি পেটের বাচ্চাটি জীবিত থাকে তাহলে সেটাকেও কুরবাণী দিতে হবে। রুচি হলে এর গোস্ত খাওয়া যাবে। আর পশু যবেহ করার পর যদি পেটের বাচ্চাটি মৃত পাওয়া যায় তাহলে রুচি হলে এর গোস্ত খাওয়া যাবে।

(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মায়ের যাবাহ পেটের ভিতরের বাচ্চারও যাবাহ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪০৯১, আবূ দাঊদ ২৮২৮, তিরমিযী ১৪৭৬, দারিমী ১৯৭৯, ইবনু মাজাহ ৩১৯৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৮৮৯, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৯৪৪, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৮৬৪৯, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৬১৫০, মুসনাদে আহমাদ ১১৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যবাহকৃত পশুর পেটের বাচ্চা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমাদের ইচ্ছে হলে তাও খেতে পারো। মুসাদ্দাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘আমরা বলি, হে আল্লাহ রাসূল! ‘আমরা উষ্ট্রী, গাভী ও বকরী যবাহ করার পর কখনো এর পেটে ভ্রূণ পেয়ে থাকি। ‘আমরা এ ভ্রূণ ফেলে দিবো নাকি খাবো? তিনি বললেনঃ ইচ্ছা হলে খেতে পারো। কেননা মাকে যবাহ করাই এর যবাহের অন্তর্ভুক্ত। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২৮২৭, সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৯৯, তিরমিযী ১৪৭৬, রাওদুন নাদীর ৫১৪, ৫১৫, সহীহ আবু দাউদ ২৫১৬, ইরওয়া ২৫৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যেসব পশু কুরবানী করা নাজায়েয

কুরবানীর পশু সুঠাম, সুন্দর ও নিখুঁৎ হ’তে হবে। চার ধরনের পশু কুরবানী করা নাজায়েয। (১) স্পষ্ট খোঁড়া, (২) স্পষ্ট কানা, (৩) স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ এবং (৪) অর্ধেক কান কাটা বা ছিদ্র করা ও অর্ধেক শিং ভাঙ্গা। (তিরমিযী হা/১৪৯৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৬৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

উবাইদ ইবনে ফাইরূয (রাঃ) বলেন, আমি বারাআ ইবনে আযিব (রাঃ) কে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ধরনের পশু কোরবানী করতে অপছন্দ অথবা নিষেধ করেছেন সেই সম্পর্কে আমাদের বলুন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতের ইশারায় বলেন, এরূপ, আর আমার হাত তাঁর হাতের চেয়ে ক্ষুদ্র। চার প্রকারের পশু কোরবানী করলে তা যথেষ্ট হবে না। অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, খোঁড়া পশু যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট এবং কৃশকায় দুর্বল পশু যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে। উবাইদ (রাঃ) বলেন, আমি ক্রটিযুক্ত কানবিশিষ্ট পশু কোরবানী করা অপছন্দ করি। বারাআ (রাঃ) বলেন, যে ধরনের পশু তুমি নিজে অপছন্দ করো তা পরিহার করো, কিন্তু অন্যদের জন্য তা হারাম করো না। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৪, তিরমিযী ১৪৯৭, নাসায়ী ৪৩৬৯, ৪৩৭০, ৪৩৭১, আবূ দাউদ ২৮০২, আহমাদ ১৮০৩৯, ১৮০৭১, ১৮১৯২, ১৮২০০, মুয়াত্তা মালেক ১০৪১, দারেমী ১৯৪৯, ১৯৫০, ইরওয়া ১১৪৮, মিশকাত ১৪৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (কোরবানীর পশুর) চোখ ও কান উত্তমরূপে পরীক্ষা করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৩, তিরমিযী ১৪৯৮, ১৫০৩, ১৫০৪, নাসায়ী ৪৩৭২, ৪৩৭৩, ৪৩৭৪, ৪৩৭৫, ৪৩৭৬,আবূ দাউদ ২৮০৪, আহমাদ ৭৩৪, ৮২৮, ৮৫৩, ১০২৪, ১০৬৪, ১১০৯, ১২৭৮, ১৩১১, দারেমী ১৯৫১, ইরওয়া ৪/৩৬৩, মিশকাত ১/৪৬০, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ২৯১৫, তাখরীজুল মুখতার ৩৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

তবে নিখুঁৎ পশু ক্রয়ের পর যদি নতুন করে খুঁৎ হয় বা পুরানো কোন দোষ বেরিয়ে আসে, তাহ’লে ঐ পশু দ্বারাই কুরবানী বৈধ হবে’ (মির‘আত ৫/৯৯)।

উল্লেখ্য যে, খাসি করা কোন খুঁৎ নয়। বরং এতে পাঁঠা ছাগলের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং গোশত রুচিকর হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে দু’টি মোটাতাজা খাসি দিয়ে কুরবানী করেছেন। (ইবনু মাজাহ হা/৩১২২; ইরওয়া হা/১১৩৮, ৪/৩৫১ পৃ.; মিশকাত হা/১৪৬১; মির‘আত হা/১৪৭৬, ৫/৯১-৯২ পৃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আয়েশা (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১২২, আহমাদ ২৫৩১৫, ২৫৩৫৮, ইরওয়া ১১৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিং-বিশিষ্ট হৃষ্টপুষ্ট এবং মুখমন্ডল, চোখ ও পা কালো বর্ণের একটি মেষ কোরবানী করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১২৮, তিরমিযী ১৪৯৬, নাসায়ী ৪৩৯০, আবূ দাউদ ২৭৯৬, মিশকাত ১৭৬৬, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যে পশুটি কুরবানি করা হবে তার উপর কুরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কুরবানি আদায় হবে না।

(১৯) ‘মুসিন্নাহ’ পশু দ্বারা কুরবানীঃ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ব্যতীত যবহ করো না। তবে কষ্টকর হ’লে এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া (দুম্বা বা ছাগল) কুরবানী করতে পার’। (মুসলিম হা/১৯৬৩; মিশকাত হা/১৪৫৫)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুসিন্নাহ্ (দুধ দাঁত পড়ে গেছে এমন পশু) ছাড়া কুরবানী করবে না। তবে এটা তোমাদের জন্য কষ্টকর মনে হলে তোমরা ছ'মাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৩, আবূ দাঊদ ২৭৯৭, নাসায়ী ৪৩৭৮, ইবনু মাজাহ্ ৩১৪১, আহমাদ ১৪৩৪৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২৯১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৫৩, ইরওয়া ১১৪৫)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাদিসে বলা হয়েছে যে, এক বছর পূর্ণকারী ভেড়া বা দুম্বা বা ছাগল সমান হবে ছয় মাসের মেষ শাবক।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আসেম ইবনে কুলাইব (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সুলাইম গোত্রের মুজাশে (রাঃ) নামক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবীর সাথে ছিলাম। মেষ-বকরীর স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি একজন ঘোষককে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী সে ঘোষণা করলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ এক বছর বয়সের বকরী দ্বারা যে কাজ হয় (কোরবানীর ক্ষেত্রে), ছয় মাস বয়সের মেষ দ্বারাও তা হতে পারে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪০, নাসায়ী ৪৩৮৩, ৪৩৮৪, আবূ দাউদ ২৭৯৯, যইফাহ ১/৯০, ইরওয়া ১১৪৬, মিশকাত ১১৬৭, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯৪)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জমহূর বিদ্বানগণ অন্যান্য হাদীছের আলোকে এই হাদীছে নির্দেশিত ‘মুসিন্নাহ’ পশুকে কুরবানীর জন্য ‘উত্তম’ বলেছেন (মির‘আত ৫/৮০ পৃ.)।

‘মুসিন্নাহ’ পশু ষষ্ঠ বছরে পদার্পণকারী উট এবং তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী গরু বা দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী ছাগল-ভেড়া-দুম্বাকে বলা হয় (মির‘আত ৫/৭৮-৭৯ পৃ.)।

কেননা এই বয়সে সাধারণতঃ এই সব পশুর দুধে দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত উঠে থাকে। তবে অনেক পশুর বয়স বেশী ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ে দাঁত ওঠে না। এসব পশু দ্বারা কুরবানী করা ইনশাআল্লাহ কোন দোষের হবে না।

ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যাবে কি?

ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে ছাহাবীকে অনুমতি দিয়েছিলেন সেটা তার জন্য খাছ ছিল (ইরওয়া ৪/৩৫৭ পৃঃ)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ).....উকবাহ ইবনু আমির আল-জুহানী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে কুরবানীর জন্তু ভাগ করলে আমার ভাগে একটি ছ'মাসের বাচ্চা ছাগল পড়ে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ছ'মাসের একটি বাচ্চা (ছাগল) পেয়েছি। তিনি বললেন তা-ই তুমি কুরবানী করো। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৭৯, ৪৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯২৫, ইসলামিক সেন্টার ৪৯২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এখানে ছয় মাসের ভেড়া বা ছাগল কুরবানীর কথা বলা হলেও এটা সেই সময় ঐ সাহাবীর জন্যে খাছ ছিল।

নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে কতোটি পশু  কুরবানী করা যাবে?

(২০) নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশু যথেষ্টঃ

প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর একটি পশু দ্বারা কুরবানী করাই যথেষ্ট। (আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

মিখনাফ ইবনু সুলায়ম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থানরত ছিলাম। আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, হে লোকেরা! প্রত্যেক পরিবারের জন্য প্রতি বছরই একটি ‘কুরবানী’ ও একটি ‘আতীরাহ্ রয়েছে। তোমরা কি জানো ‘আতীরাহ্ কি? তা হলো যাকে তোমরা ‘রজাবিয়্যাহ্’ বলে থাকো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৭৮, আবূ দাঊদ ২৭৮৮, আত্ তিরমিযী ১৫১৮, নাসায়ী ৪২২৪, ইবনু মাজাহ্ ৩১২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৩৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ক) মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন, ...অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়লেন, -‘আল্লাহর নামে (কুরবানী করছি), হে আল্লাহ! তুমি এটি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’। এরপর উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করলেন’। (মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; মির‘আত ১/৭৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংওয়ালা দুম্বা আনতে বললেন যা কালোতে হাঁটে। কালোতে শোয়। কালোতে দেখে অর্থাৎ যে দুম্বার পা কালো, পেট কালো ও চোখ কালো। কুরবানী করার জন্য ঠিক এমনি একটি দুম্বা আনা হলো। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আয়িশাকে বললেন, হে ‘আয়িশাহ্! একটি ছুরি লও। এটিকে পাথরে ধাঁর করাও। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি তাই করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছুরিটি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে ধরলেন। অতঃপর এটাকে পাঁজরের উপর শোয়ালেন এবং যাবাহ করতে করতে বললেন, ‘‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি এ কুরবানীকে মুহাম্মাদ, মুহাম্মাদের পরিবার এবং মুহাম্মাদের উম্মাতের পক্ষ হতে গ্রহণ করো।’’ এরপর তিনি এ কুরবানী দ্বারা লোকদের সকালের খাবার খাইয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ১৪৫৪, সহীহ মুসলিম ১৯৬৭, আবূ দাঊদ ২৭৯২, আহমাদ ২৪৪৯১, শারহু মা‘আনির আসার ৬২২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯০৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আলবানী বলেন, ‘এর অর্থ কুরবানীর ছওয়াবে উম্মতকে শরীক করা। কেননা সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে একটি ছাগল একটি পরিবারের বেশী অন্যদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নয়’। (মিশকাত হা/১৪৫৪-এর টীকা)।

(খ)  আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় কুরবানীর রীতি কি ছিল? জওয়াবে তিনি বলেন, ছাহাবীগণ নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি বকরী কুরবানী দিতেন। অতঃপর নিজেরা খেতেন ও অন্যদের খাওয়াতেন। এমনকি লোকেরা বড়াই করত। সেই রীতি চলছে যেমন তুমি দেখছ।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আতা ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) -র নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আপনাদের কোরবানী কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কোন ব্যক্তি নিজের ও স্বীয় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বকরী কোরবানী করতো। তা থেকে তারাও আহার করতো এবং (অন্যদেরও) আহার করাতো। পরবর্তী কালে লোকেরা কোরবানীকে অহমিকা প্রকাশের বিষয়ে পরিণত করে এবং এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা তো দেখতেই পাচ্ছ। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৭, তিরমিযী ১৫০৫, ইরওয়া ১১৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, সুন্নাত জানার পর লোকেরা পরিবারপিছু একটি বা দু’টি করে বকরী কুরবানী দিত। অথচ এখন প্রতিবেশীরা আমাদের কৃপণ বলছে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৮)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ সারীহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এতো দিন যে সুন্নাতের উপর আমল করে আসছিলাম, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে তার বিপরীত করতে বাধ্য করলো। অবস্থা এই ছিল যে, কোন পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বা দু’টি বকরী কোরবানী করা হতো। এখন আমরা তদ্রূপ করলে আমাদের প্রতিবেশীরা আমাদের কৃপণ বলে। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিন সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে কুরবানী ও আতীরাহ’। আবুদাঊদ (রহঃ) বলেন, রজব মাসের ‘আতীরাহ’ প্রদানের হুকুম পরে রহিত করা হয়। (তিরমিযী হা/১৫১৮; আবুদাঊদ হা/২৭৮৮ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৭৮; মির‘আত ৫/১১৪-১৫),  নাসায়ী ৪২২৪, ইবনু মাজাহ্ ৩১২৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৩৪৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে একটি মাত্র গরু কোরবানী করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৫, সহীহুল বুখারী ২৯৪, ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১৬৩৮, ১৬৪৩, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৬২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৩১৭, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০৮, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৭২২৯, ১২১১, ১২১২, ১২২৮, ১২৭৭, তিরমিযী ৯৩৪, ৯৪৫, ২৯৬৫, নাসায়ী ২৪২, ২৯০, ২৪৮, ২৬৫০, ২৭১৭, ২৭১৮, ২৭৪১, ২৭৬৩, ২৭৬৪, ২৮০৩, ২৮০৪, ২৯৯০, ২৯৯১, আবূ দাউদ ৭৫০, ১৭৭৮, ১৭৭৯, ১৭৮১, ১৭৮২, আহমাদ ২৩৫৫৬, ২৩৫৭৩, ২৩৫৮৯, ২৪০৪৪, ২৪৩৫৫, ২৪৩৮৫, ২৪৭৭৯, ২৪৭৮৮, ২৪৯১৩, ২৫০৫০, ২৫৩১০, ২৫৫৩৪, ২৫৫৫৪, ২৭৬৫৪, ২৫৮১২, মুয়াত্তা মালেক ৭৪৬, ৮৯৬, ৯৪০, ৯৪১, দারেমী ১৪৬, ১৯০৪, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আর ‘কুরবানী’ অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ঈদুল আযহার দিন যে পশু যবহ করা হয়। (মির‘আত ৫/৭১; হজ্জ ২২/৩৪)।

অতএব একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হৌক না কেন, সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট। এক পিতার সন্তান হ’লেও পৃথকান্ন হ’লে তারা পৃথক পরিবার হিসাবে গণ্য হবেন। তবে তারা পৃথক কুরবানীর জন্য পিতাকে অর্থ সাহায্য করতে পারেন।

(২১) মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানিঃ

মূলত কুরবানির প্রচলন জীবিত ব্যক্তিদের জন্য। যেমন আমরা দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিগণ নিজেদের পক্ষে কুরবানি করেছেন। অনেকের ধারণা কুরবানি শুধু মৃত ব্যক্তিদের জন্য করা হবে। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। তবে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরবানি করা জায়েয ও একটি সওয়াবের কাজ। কুরবানি একটি সদকা। আর মৃত ব্যক্তির নামে যেমন সদকা করা যায় তেমনি তার নামে কুরবানিও দেয়া যায়।

যেমন মৃত ব্যক্তির জন্য সদকার বিষয়ে হাদিসে এসেছে,

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল—হে রাসূল! আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয় তিনি কোনো কথা বলতে পারলে অসিয়ত করে যেতেন। আমি যদি এখন তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাতে কি তার সওয়াব হবে ? তিনি উত্তর দিলেন: হ্যাঁ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৭৬০, মুসলিম: ১০৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মৃত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সদকা ও কল্যাণমূলক কাজের যেমন যথেষ্ট প্রয়োজন ও তেমনি তা তাঁর জন্য উপকারী।

এমনিভাবে একাধিক মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে একটি কুরবানি করা জায়েয আছে। অবশ্য যদি কোনো কারণে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য পূর্ণ একটি কুরবানি করতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তি নিজেকে বাদ দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানি করেন। এটা মোটেই ঠিক নয়। ভাল কাজ নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হয় তারপর অন্যান্য জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্য করা যেতে পারে। যেমন হাদিসে এসেছে

আয়েশা রা. ও আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরবানি দিতে ইচ্ছা করলেন তখন দুটো দুম্বা ক্রয় করলেন। যা ছিল বড়, হৃষ্টপুষ্ট, শিং ওয়ালা, সাদা-কালো বর্ণের এবং খাসি। একটি তিনি তার ঐ সকল উম্মতের জন্য কুরবানি করলেন; যারা আল্লাহর একত্ববাদ ও তার রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে, অন্যটি তার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য কুরবানি করেছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১২২, আহমাদ ২৫৩১৫, ২৫৩৫৮, ইরওয়া ১১৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃত ব্যক্তি যদি তার সম্পদ থেকে কুরবানি করার অসিয়ত করে যান তবে তার জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।

কুরবানীতে শরীক হওয়া

(২২) কুরবানীতে শরীক হওয়াঃ যাকে ‘শরীকে কুরবানি দেয়া’ বলা হয়।

ভেড়া, দুম্বা, ছাগল দ্বারা এক ব্যক্তি একটা কুরবানি করতে পারবেন। আর উট, গরু, মহিষ দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে সাতটি কুরবানি করা যাবে।

(ক) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল। তখন আমরা সাত জনে একটি গরু ও দশ জনে একটি উটে শরীক হ’লাম। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩১, তিরমিযী হা/৯০৫; নাসাঈ হা/৪৩৯২ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৬৯; মির‘আত হা/১৪৮৪, ৫/১০১-২ পৃ.), রাওদুন নাদীর ৬১৩)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হুদাইবিয়া নামক স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানী করেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৩৬, মুসলিম ১৩১৮, তিরমিযী ৯০৪, ১৫০২, নাসায়ী ৪৩৮৩, আবূ দাউদ ২৮০৭, ২৮০৮, ২৮০৯, আহমাদ ১৩৭১৩, ১৩৯৮৯, ১৪৩৯৪, ১৪৪৯৮,১৪৫০৬, ১৪৬২১, ১৪৮৩৫, মুয়াত্তা মালেক ১০৪৯, দারেমী ১৯৫৫, ১৯৫৬, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯৮-২৫০০, তিরমিযী ৯০৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৯০১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০০৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৭৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সকল স্ত্রী উমরা (অর্থাৎ তামাত্তো হজ্জ) করেন, তিনি তাদের সকলের পক্ষ থেকে একটি গাভী কোরবানী করেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৩, আবূ দাউদ ১৭৫১, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার উটের স্বল্পতা দেখা দিলে তিনি লোকেদেরকে গরু কোরবানী করার নির্দেশ দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উপরোক্ত হাদীছ সমূহে বুঝা যায় যে, সফরে সাতজনে মিলে একটি উট বা গরু কুরবানী করা যায়। যাতে এইসব বড় পশু যবহ ও কুটাবাছা এবং গোশত বিতরণ সহজ হয়। এটি উম্মতের জন্য রহমত স্বরূপ। সেকারণ লায়েছ বিন সা‘দ (রহঃ) উট বা গরুতে শরীকানা কুরবানীর বিষয়টি সফরের সাথে ‘খাছ’ বলেছেন। (মুহাল্লা, মাসআলা ক্রমিক : ৯৮৪, ৬/৪৫)।

যদিও জমহূর ওলামায়ে কেরাম হজ্জের সময় উট বা গরুতে শরীকানা কুরবানীর উপর ক্বিয়াস করে বাড়ীতে ও সফরে সর্বাবস্থায় শরীকানা কুরবানী জায়েয বলেছেন। কিন্তু ইমাম মালেক (রহঃ) একে নাজায়েয বলেছেন (মির‘আত ৫/৮৫)। কেননা জাবের (রাঃ) বর্ণিত ‘একটি গরু বা উট সাত জনের পক্ষ হ’তে’। (আবুদাঊদ হা/২৮০৮; মিশকাত হা/১৪৫৮)।

হাদীছটি মুৎলাক্ব। যেখানে বাড়ীতে বা সফরে বলে কোন ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু একই রাবীর বর্ণিত আবুদাঊদ ২৮০৭ ও ২৮০৯ নম্বর হাদীছে এটি হজ্জ ও হোদায়বিয়ার সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে ব্যাখ্যা এসেছে। অতএব দলীলের ক্ষেত্রে একই রাবীর বর্ণিত ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছের স্থলে ব্যাখ্যা সম্বলিত হাদীছ গ্রহণ করাই মুহাদ্দিছগণের সর্ববাদী সম্মত রীতি।

অনেকে ৭-এর বদলে ৩, ৫, ১০ ভাগে কুরবানী করেন, যা প্রমাণহীন। অনেকে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেন, আবার একটি গরুর ভাগা নেন। অনেকে বকরী বা খাসী না দিয়ে বড় গরুতে ভাগী হন, মূলতঃ গোশত বেশী পাবার জন্য। ‘নিয়ত’ যখন গোশত খাওয়া, তখন কুরবানীর নেকী তিনি কিভাবে পাবেন? অথচ প্রতি বছর ঈদুল আযহাতে একটি পশু কুরবানী করাই হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর সাধারণ নির্দেশনা। (আবুদাঊদ হা/২৭৮৮ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১৪৭৮; মির‘আত হা/১৪৯২, ৫/১১৪ পৃ.)।

অতএব মুক্বীম অবস্থায় প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই উত্তম।

প্রশ্নঃ সাত পরিবারের পক্ষ থেকে সাত ভাগে গরু বা উট কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তরঃ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে সাত ভাগে কুরবানী করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে জনগণ! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (আবুদাউদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় সর্বদা নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বা দু’টি দুম্বা কুরবানী করেছেন’ (বুখারী হা/৫৫৬৪-৬৫; মুসলিম হা/১৯৬৭, মিশকাত হা/১৪৫৩-৫৪)। ছাহাবীগণের মধ্যেও সর্বদা একই প্রচলন ছিল। প্রখ্যাত ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে লোকেরা নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে একটি করে বকরী কুরবানী দিত (তিরমিযী হা/১৫০৫, সনদ ছহীহ)। ধনাঢ্য ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, সুন্নাত জানার পর লোকেরা পরিবারপিছু একটি বা দু’টি করে বকরী কুরবানী দিত। অথচ এখন প্রতিবেশীরা আমাদের বখীল বলছে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩১৪৮, সনদ ছহীহ)। অতএব পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই সুন্নাত।

উল্লেখ্য যে, সাত পরিবার নয় বরং সাতজন ব্যক্তি মিলে একটি গরু বা উট কুরবানী করার বিধান রয়েছে সফর অবস্থায়। যেমন জাবের (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হোদায়বিয়া এবং হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন তিনি আমাদেরকে একটি উটে ও গরুতে সাতজন করে শরীক হবার নির্দেশ দিলেন (মুসলিম হা/১৩১৮ (৩৫০-৫১)। একই বাক্যে বর্ণিত মুসলিম ও আবুদাঊদের উক্ত হাদীছটি সংক্ষেপে এসেছে মিশকাতে (হা/১৪৫৮)। যেখানে বলা হয়েছে, গরু ও উট সাতজনের পক্ষ হ’তে। এটি সফরের অবস্থায়। যা একই রাবীর অন্য বর্ণনায় এসেছে। যেমন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে একটি সফরে ছিলাম। এমন সময় ঈদুল আযহা উপস্থিত হয়। তখন আমরা একটি গরুতে সাতজন ও একটি উটে দশজন করে শরীক হই’ (তিরমিযী হা/৯০৯; ইবনু মাজাহ হা/৩১৩১; মিশকাত হা/১৪৬৯)।

উপস্থাপিত দলীলাদি পর্যালোচনা করলে আমাদের সামনে তিনটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তা হলে:

(১) সফর ও মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কোরবানি করার ব্যাপারে উভয় পক্ষই একমত।

(২)  ভাগে কোরবানি জায়েয।

(৩) সফর ও মুক্বীম অবস্থায় সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ভাগে একটি পশু কোরবানি করা যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু কথা না বললেই নয়, তা হলো- হাদিসে বলা হয়েছে, সাতজনের পক্ষ থেকে (মুসলিম, মিশকাত, হা/১৪৫৮), কিন্তু আমাদের সমাজে কোরবানি করা হচ্ছে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে। বলা যায়, সফর অবস্থাতেও সাত পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই। আরো স্পষ্ট হলো, সাত জনের প্রেক্ষাপট কেবল সফর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। মুক্বীম অবস্থায় কোরবানি পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন- রাসূল (সা.) করতেন। মূলত, এক্ষেত্রে সফরের হাদিসগুলোকে আম হিসেবে ধরা যাচ্ছে না। কারণ, এ হাদিসগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবীগণ (রা.) মুক্বীম অবস্থায় যে ভাগা কোরবানি করতেন, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন হাদিস নেই। রাসূল (সা.) প্রতি বছর দুটি করে খাসি কোরবানি করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/১৪৫৩) অথচ, দঃখের বিষয় বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের বর্তমানে কেবল সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নয়; বরং মুক্বীম অবস্থায় সাত পরিবারের ৭-এর অধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি গরু কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। আজকাল পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কোরবানির সাথে একটি গরুর ভাগা নেওয়া হচ্ছে মূলত গোশত বেশী পাবার স্বার্থে। নিয়ত যখন গোশত খাওয়া, তখন কোরবানির উদ্দেশ্য কিভাবে হাছিল হবে? কোরবানি হলো পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত, যা তিনি পুত্র ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে করেছিলেন। আর তা ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো একটি পশুর জীবন অর্থাৎ দুম্বা। অতএব ইবরাহীম ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে আল্লাহর রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কোরবানি দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়। পরিশেষে, মনে রাখতে হবে কোরবানি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত ও আল্লাহ রাববুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়। তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরীয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ বা শুধু সদকা (দান) নয়।। কোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়। কোরবানির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ রাববুল আলামীনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা।

কতোটি বকরী একটি উটের সমান হতে পারে?

রাফে ইবনে খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তিহামার যুল-হুলাইফায় ছিলাম। আমরা (যুদ্ধে) উট ও মেষ-বকরী লাভ করি। লোকেরা (তা বণ্টনে) তাড়াহুড়া করছিল এবং তা বণ্টনের পূর্বেই আমরা চুলায় (গোশতের) হাঁড়ি তুলে দিয়েছিলাম। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং গোশতের হাঁড়িগুলো সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তদনুযায়ী তা উল্টে ফেলে দেয়া হয় (কারণ বণ্টনের পূর্বে গনীমতের সম্পদ ব্যবহার অবৈধ)। অতঃপর একটি উট দশটি মেষের সমান ধরা হলো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৩৭, সহীহুল বুখারী ২৪৮৮, ২৫০৭, ৩০৭৫, ৪৪৯৮, ৫৫৪৩, মুসলিম ১৯৬৮, নাসায়ী ৪২৯৭, আবূ দাউদ ২৮২১, আহমাদ ১৫৩৮৬, ১৬৮১০, সহীহ আবু দাউদ ২৫১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন

(২৩) কুরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেনঃ

যখন কেউ কুরবানি পেশ করার ইচ্ছা করে আর যিলহজ মাস প্রবেশ করে। তার জন্য চুল, নখ অথবা চামড়ার কোনো অংশ কাটা থেকে বিরত থাকবে, যতক্ষণ না কুরবানি করবে।

হাদিসে এসেছে,

উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন (যিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশক শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কোরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে (না কাটে)। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৪৯, ৩১৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫০১২, ৫০১৩, ৫০১৫,  আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৭, তিরমিযী ১৫২৩, নাসায়ী ৪৩৬১, ৪৩৬২, ৪৩৬৪, আবূ দাউদ ২৭৯১, আহমাদ ২৫৯৩৫, দারেমী ১৯৪৭, ১৯৪৮, ইরওয়া ১১৬৩, সহীহ আবু দাউদ ২৪৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানি দাতার পরিবারের লোক জনের নখ, চুল ইত্যাদি কাঁটাতে কোনো সমস্যা নেই।

কোন কুরবানি দাতা যদি তার চুল, নখ অথবা চামড়ার কোনো অংশ কেটে ফেলে তার জন্য উচিৎ তাওবা করা, পুনরাবৃত্তি না করা, তবে এ জন্য কোনো কাফফারা নেই এবং এ জন্য কুরবানিতে কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি ভুলে, অথবা না জানার কারণে অথবা অনিচ্ছাসত্বে কোনো চুল পড়ে যায়, তার কোনো গুনাহ হবে না। আর যদি সে কোনো কারণে তা করতে বাধ্য হয়, তাও তার জন্য জায়েয, এ জন্য তার কোনো কিছু প্রদান করতে হবে না। যেমন নখ ভেঙ্গে গেল, ভাঙ্গা নখ তাকে কষ্ট দিচ্ছে সে তা কর্তন করতে পারবে, তদ্রূপ কারো চুল লম্বা হয়ে চোখের উপর চলে আসছে সেও চুল কাটতে পারবে অথবা কোনো চিকিৎসার জন্যও চুল ফেলতে পারবে।

কুরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন: কুরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন।

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন: ‘কুরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কুরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি [ত্যাগ] করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কুরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কুরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কুরবানির পশু যবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।

যদি বিশেষ কোন সমস্যার কারণে নখকুনি উঠা, নখের চারপাশে ব্যথা করা, আঘাত জনিত কারণে নখ উপড়ে যাওয়া, নখের প্রান্ত ফেটে যাওয়া অথবা শরীরে ক্ষত সৃষ্ট হওয়ার কারণে বা কেটে যাওয়া বা আঘাতের কারণে চামড়ার কিছু অংশ উঠে যাওয়ার ফলে কষ্ট হয় বা চলাফেরায় অসুবিধা হয় তাহলে এগুলো কাটতে শরিয়তে কোন বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।

অনুরূপভাবে মাথা ফেটে যাওয়ার ফলে মাথায় ব্যান্ডেজ করা, মাথার রোগের রোগের চিকিৎসা কিংবা মাথায় খুশকি বা উকুনের উপদ্রব থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে মাথার কিয়দংশ বা পূরোটা মুণ্ডন করার বা চুল ছোট করায়ও কোন আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।

কেননা, ইসলামের একটি স্বতঃসিদ্ধ মূলনীতি হল, "জরুরি প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়।"

আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা: ২৮৬)।

তিনি আরও বলেন, “অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যে কুলায়। (সূরা তাগাবুন: ১৬)।

 শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,

"কারো যদি চুল, নখ ও চামড়া কাটার দরকার হয় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন: আহত হওয়ার কারণে মাথার চুল কাটা বা নখ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কষ্ট হলে তা কেটে ফেলার দরকার হলে অথবা চামড়ার কোন অংশ ঝুলে পড়ে কষ্ট দিলে তা কেটে ফেলা। এগুলোতে কোন অসুবিধা নাই।" (মাজমু ফতোয়া ইবনে উসাইমিন ২৫/১৬১)।

(২৪) কুরবানীর সাথে আক্বীক্বাঃ

‘দু’টিরই উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা’ এই (ইসতিহসানের) যুক্তি দেখিয়ে কোন কোন হানাফী বিদ্বান কুরবানীর গরু বা উটে এক বা একাধিক সন্তানের আক্বীক্বা সিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন (যা এদেশে অনেকের মধ্যে চালু আছে)। (হেদায়া ৪/৪৩৩; বেহেশতী জেওর ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ১/৩০০ পৃ.)।

হানাফী মাযহাবের স্তম্ভ বলে খ্যাত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এই মতের বিরোধিতা করেন। ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর ঘোর প্রতিবাদ করে বলেন, এটি শরী‘আত, এখানে সুনির্দিষ্ট দলীল ব্যতীত কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়। (নায়লুল আওত্বার, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ৬/২৬৮ পৃ.)।

 আকীকা সংক্রান্ত বিধিবিধান

আকীকা কাকে বলে?

আকীকা শব্দের অর্থ কাটা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যে প্রাণীকে জবাই করা হয় তাকে আকীকা বলে। চাই তা ছেলে হোক বা মেয়ে। কেননা, এ প্রাণীর হলক তথা গলা কাটা করা হয়।

প্রাক-ইসলামী যুগে আকীকাঃ

আকীকার প্রথা জাহেলী যুগ থেকেই চালু ছিল। মাওয়ারদী বলেন, ‘আকীকা বলা হয় ওই ছাগলকে ইসলাম পূর্বযুগে আরবা যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে জবাই করত।’

অলীউল্লাহ দেহলভী রহ. বলেন, ‘জেনে রাখুন, আরবরা তাদের সন্তানের আকীকা করতো। আকীকা তাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয় এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছিল। এতে ছিল ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই তা অব্যাহত রাখেন এবং মানুষকে এতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর প্রমাণ আমরা দেখতে আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণিত হাদীসে। আব্দুল্লাহ ইবন বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমার বাবা বুরাইদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

‘জাহেলী যুগে আমাদের নিয়ম ছিল, যখন আমাদের কারো পুত্র সন্তান জন্ম নিতো, সে একটি ছাগল জবাই করতো এবং এর রক্ত তার মাথায় লাগিয়ে দিতো। কিন্তু আল্লাহ যখন ইসলাম নিয়ে আসলেন, তখন আমরা একটি ছাগল জবাই করতাম এবং তার মাথা নেড়ে করতাম আর তার তাকে জাফরান দিয়ে মাখিয়ে দিতাম।’ (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৪৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫৮, মুস্তাদরাক  ৭৫৯৪, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৭৬৬, ইরওয়া ৪/৩৮৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৬/৪১৩, ২৯১৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আকীকা সংক্রান্ত যে হাদীস বর্ণনা করেন, তা থেকেও এমনটি প্রতিভাত হয়। তিনি বলেন,

‘জাহেলী যুগের লোকেরা আকীকার রক্তে তুলা ভেজাতো এবং তা শিশুর মাথায় রাখতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন তুলার স্থলে জাফরান তথা সুগন্ধি রাখা হয়।’ (বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬৭।

আল্লামা সুয়ূতী রহ. উল্লেখ করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আকীকা করেন। তিনি বলেন, ‘ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে ইবন আসাকির বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুবলেন,

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জন্মগ্রহণ করেন, আব্দুল মুত্তালিব তার আকীকা করেন এবং তার নাম রাখেন মুহাম্মদ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো কিসে আপনাকে তাঁর নাম বাবা-দাদার নামের সঙ্গে না মিলিয়ে রেখে মুহাম্মদ রাখতে? তিনি বললেন, আমি চেয়েছি যাতে তার প্রশংসা আল্লাহ করেন আসমানে আর মানুষে করে যমীনে।’ [শাহরহুয যারকানী আলা মুয়াত্তা মালেক, পৃ. ৫৫৮; ইবন আব্দিল বার, আল-ইস্তিয়াব।]

তেমনি মূসা আলাইহিমুস সালামের শরীয়তেও আকীকার প্রচলন ছিল। হাদীসে যেমন বর্ণিত হয়েছে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

‘ইহুদীরা পুত্র সন্তানের আকীকা করতো কিন্তু কন্যা সন্তান হলে তার আকীকা করতো না। অতএব তোমরা পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকীকা করো।’ (বাইহাকী, সুনান আল-কুবরা : ১৯৭৬০; মুসনাদ বাযযার : ৮৮৫৭)।

ইসলামে আকীকার হুকুম

(ক) সালমান ইবনু ‘আমির আয্ যব্বী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, শিশুর জন্মের সাথে ‘আক্বীকাহ্ (অঙ্গাঅঙ্গিভাবে) জড়িত। সুতরাং তার পক্ষ হতে তোমরা রক্ত প্রবাহিত (যাবাহ) করো। আর তার শরীর হতে কষ্ট দূর করে দাও (মাথার চুল কামিয়ে দাও)।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৪৯, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৩৯, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২১৫,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪৭১, ৫৪৭২, তিরমিযী ১৫১৫, সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৬৪, সহীহুল জামি‘ ৫৮৭৭, ইরওয়া ৪/৩৯৬, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাক্বী ৫৮৯৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৭৯৫৮, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪২৩৯, দারিমী ১৯৬৭, আস্ সুনানুন কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৭৩৫, আহমাদ ১৭৮৭৫, ২৭৫৪২, ১৫৭৯৭, ১৭৪১৫, ১৭৪২৯, ইরওয়া ১১৭১,  আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হাসান বাসরী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলতেন, কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা দ্বারা মাথা মুন্ডানোকে বুঝানো হয়েছে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নবজাতক শিশুদেরকে আনা হত, তিনি তাদের কল্যাণের জন্য দু‘আ করতেন এবং তাদেরকে তাহ্নিক করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫০, মুসলিম (২৮৬)-১০১, (২১৪৭)-২৭; মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়রাহ্ ৯(৪), ২৩৪৮৪, আবূ দাঊদ ৫১০৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী লিল বায়হাক্বী ৪৩২২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৮২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৩৭২, সহীহুল জামি‘ ৪৮৭৬, মুসনাদে আহমাদ ২৫৭৭১, শু‘আবুল ঈমান ১১০১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি মক্কাতেই ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়রকে গর্ভে ধারণ করেন। তিনি আরো বলেন, ক্বুবা অবস্থানকালেই তিনি ভূমিষ্ঠ হন। অতঃপর আমি তাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে এসে তার কোলে তুলে দিলাম। তিনি খেজুর চেয়ে নিলেন এবং তা চিবিয়ে তার (বাচ্চাটির) মুখে রাখলেন এবং তার তালুতে লাগালেন। অতঃপর তার জন্য বারাকাতের দু‘আ করলেন, (মদীনায়) মুসলিমদের মধ্যে সে-ই প্রথম জন্মগ্রহণকারী শিশু। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫১, বুখারী ৩৬৯৮, ৫১৫২; মুসলিম (২১৪৬)-২৬, মুসনাদে আহমাদ ২৬৯৩৮, আস্ সুনানুল কুবারা লিল বায়হাক্বী ১২৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) ইয়াযীদ ইবনে আবদ আল-মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শিশুর পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করতে হবে (আকীকা করতে হবে) এবং তার মাথা পশুর রক্তে রঞ্জিত করা যাবে না। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৬৬, ইরওয়া ৪/৩৮৮, ৩৮৯, সহীহাহ ২৪৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সন্তান জন্ম গ্রহণের সপ্তম দিনে আকীকার বিধান

(ক) সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক শিশু তার আকীকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৬৫, সহীহুল বুখারী ৫৪৭২, তিরমিযী ১৫৪৪, নাসায়ী ৪২২০, সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৩৭, ২৮৩৮, আহমাদ ১৯৫৭৯, ২৭৭০৯, ১৯৬৭৬, ১৯৭৪৩, দারেমী ১৯৬৯, ইরওয়া ১১৬৫, মিশকাত ৪১৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমর ইবন আলী ও মুহাম্মাদ ইবন আবদুল-আ'লা (রহঃ) ... সামুরা ইবন জুনদুব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক শিশু তার আক্বীকাহর বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীকাহ করতে হয়, মাথার চুল ফেলতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। আবূ দাঊদ বলেন, ‘ইউদমা’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইউসাম্মা’ শব্দটি অধিক সঠিক। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২৮৩৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫৩, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২২১, ইবন মাজাহ ৩১৬৫, সহীহ আল জামি ৪১৮৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

পুত্রের জন্য  দু’টি এবং কন্যার জন্য একটি বকরী ‘আক্বীকাহ করার হুকুম

(ক) উম্মু কুরয আল-কা।‘বিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ পুত্রের জন্য একই ধরণের দু’টি এবং কন্যার জন্য একটি বকরী ‘আক্বীকাহ করতে হয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ‘মুতাকাফিয়ান অর্থ হলো সমবয়স্ক বা এর কাছাকাছি। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৩৪, ২৮৩৫, ২৮৩৬,  সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২১৬, ৪২১৭, ইবন মাজাহ ৩১৬২)তিরমিযী ১৫১৬, দারেমী ১৯৬৬, ইরওয়া ৪/৩৯০, ৩৯১। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(খ) উম্মু কুরয (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা পাখিকে তার বাসায় নিরাপদে থাকতে দিবে। আমি তাঁকে এও বলতে শুনেছিঃ ‘আক্বীকাহ্ ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী যবাহ করবে। আক্বীকাহ্ খাসী বা বকরী দ্বারা দেয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৩৫, ২৮৩৬, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪১৫২, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২১৮, ৪২১৯, তিরমিযী ১৫১৬, সহীহুল জামি‘ ৭৫৫৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৭২০, আল মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার ৫৮৯৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়রাহ্ ৩৬৩০৪, আহমাদ ২৭৩৭৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩১২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৯১৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

(গ) ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতার ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আক্বীকাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ কষ্ট পছন্দ করেন না। হয় তো সেজন্যই তিনি আক্বীকাহকে কষ্ট নামকরণ করেছেন। তিনি বলেনঃ যার কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার পক্ষ থেকে আক্বীকাহ করে। সে যেন ছেলের পক্ষ থেকে সমবয়স্ক দু’টি বকরী এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী যবাহ করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ২৮৪২, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৫৬, সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২১৩, সহীহাহ ১৬৫৫, ইরওয়া ৪/৩৬২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৬৫৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৮৩৮, মুসনাদে আহমাদ ৬৭১৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৭৫২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৯০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৩১০, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়রাহ্ ২-(৪))।  হাদিসের মানঃ আবু দাউদে সহিহ (Sahih) বলা হয়েছে, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ও নাসায়ী গ্রন্থে হাসান বলা হয়েছে।

(ঘ) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পুত্র সন্তানের পক্ষ থেকে দু’টি ÿকরী এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি বকরী দিয়ে আকীকা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৬৩, তিরমিযী ১৫১৩, ইরওয়া ১১৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাথা মন্ডনের পর চুলের সমপরিমান রুপা দান করা

মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী ইবনু হুসায়ন (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত যে, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এর পক্ষ হতে একটি বকরী দ্বারা ‘আক্বীকাহ্ করলেন এবং বললেনঃ হে ফাতিমা! তার মাথাটি মুড়িয়ে দাও আর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সাদাকা করো। (‘আলী (রাঃ) বলেনঃ) আমরা তার চুলগুলো ওজন করলাম। তার ওজন এক দিরহাম বা তার চেয়ে কিছু কম ছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ৪১৫৪, ৪১৫৫,  তিরমিযী ১৫১৯, ইরওয়া ১১৭৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়রাহ্ ২৪২৩৪, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৭৭৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ১৮(৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উক্ত হাদিসে একটি বকরীর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু নাসায়ীর বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘‘দু’টি দু’টি করে’’- এটাই অধিক সঠিক।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আহমদ ইবন হাফস ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসায়নের আকীকায় দু'টি করে বকরী যবেহ করেন। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৪২২০, ইরওয়া ১১৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

হারূন ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) ... হাবীব ইবন শাহীদ (রহঃ) বলেন, আমাকে মুহাম্মদ ইবন সীরীন (রহঃ) বললেন, তুমি হাসান (রহঃ)-এর নিকট আকীকার হাদীস সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর যে, তিনি তা কার নিকট শুনেছেন? আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি তা সামুরা (রাঃ) থেকে শুনেছি। (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৪২২২, ইরওয়া ৪/৩৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখিত দলিলের ভিত্তিতে জানা যায় যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর একজন অভিভাবক চারটি বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকে। যথাঃ

(ক) সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকীকা দিতে হবে।

(খ) ছেলের জন্যে দুইটি বকরী ও মেয়ের জন্যে একটি বকরী আকীকা দিতে হবে।

(গ) সন্তানের নাম রাখতে হবে।

(ঘ) মাথা মন্ডনের পর চুলের সমপরিমান ওজনে রুপা দান করতে হবে।

আকীকা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

(১) প্রশ্নঃ সপ্তম দিনে আকীকা করতে না পারলে কতো দিন পরে করা যায়?

উত্তরঃ

সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকীকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আকীকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯।

অবশ্য একুশ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তীতেও তা আদায় করা যাবে।

সন্তানের আকীকা করার দায়িত্ব তার পিতার। অবশ্য অন্য কেউ বা নিজেও নিজের আকীকা করা জায়েয আছে।

আকীকার গোশত সন্তানের পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন সকলেই খেতে পারবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আকীকার গোশত নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে বলতে শুনেছি, ... আকীকার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে। ... আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি সদকা করে দিতে হবে? তিনি বললেন, না,তুমি চাইলে খেতে পার এবং হাদিয়াও দিতে পার।... (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৯৬৯, ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/৩৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ৩০/২৭৬; তুহফাতুল মাওদূদ বিআহকামিল মাওলূদ ৭৮।

(২) প্রশ্নঃ আকীকা করা মূলত কার দায়িত্ব? বাবার বর্তমানে দাদা, নানা বা অন্য কেউ যদি আকীকা করে তাহলে কি আকীকা আদায় হবে?

ছোটবেলায় কারো যদি আকীকা না হয়ে থাকে তাহলে বড় হয়ে সে কি নিজের আকীকা নিজে করতে পারবে?

উত্তরঃ

সন্তানের আকীকার দায়িত্ব বাবার। বাবার সামর্থ্য না থাকলে যদি মা সামর্থ্যবান হন তবে মা সন্তানের আকীকা করবেন। অবশ্য বাবা-মা সামর্থ্যবান হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় তাদের সম্মতিতে দাদা, নানা বা যে কেউ আকীকা করলে আকীকা সহীহ হয়ে যাবে।

আকীকা সপ্তম দিনে করা উত্তম, তা না পারলে চৌদ্দতম দিনে বা একুশতম দিনে করবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আর তা (আকীকা) যেন সপ্তম দিনে করা হয়, যদি সপ্তম দিনে করা না হয় তবে চৌদ্দতম দিনে এবং চৌদ্দতম দিনে করা না হলে একুশতম দিনে করবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯।

আর এ সময়ের ভেতর যদি আকীকা করা না হয় তাহলে পরেও করা যাবে।

কারো যদি ছোটবেলায় আকীকা করা না হয়ে থাকে এবং সে বড় হয়ে নিজের আকীকা নিজে করতে চায় তাহলে সেটারও সুযোগ আছে। বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. বলেন, আমি যদি জানতাম যে, আমার আকীকা করা হয়নি তাহলে আমি নিজেই আমার আকীকা করতাম। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭১), জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২;; ফয়যুল বারী ৪/৩৩৭; তুহফাতুল মুহতাজ ১২/২৯৩; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৬১-৬২।

(৩) প্রশ্নঃ আমরা জানি, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সপ্তম দিন চুল কাটা, আকীকা এবং নাম রাখতে হয়। আমার জানার বিষয় হল, এ তিনটির মধ্যে কোনটি আগে আর কোনটি পরে করতে হয়। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কোনো নিয়ম শরীয়তে আছে কি?

উত্তরঃ

এই তিনটি কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি নয়। আগে পরে যেভাবেই করা হোক তা আদায় হয়ে যায়। তবে সন্তানের মাথার চুল কাটার আগে আকীকা করা মুস্তাহাব। হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, বাচ্চার মাথার চুল কাটার পূর্বে যবাই করবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩০)।

আর আকীকার আগে বা পরে এমনকি সপ্তম দিনের আগেও সন্তানের নাম রাখা যায়। তবে আকীকা করার আগেই নাম রেখে নেওয়া উত্তম।

তাবেয়ী কাতাদাহ রাহ. বলেন, প্রথমে বাচ্চার নাম রাখা হবে। অতপর সপ্তম দিন (পশু) যবাই করা হবে এবং এরপর মাথা মুন্ডানো হবে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩৩; কিতাবুল মাজমূ’ ৪/৪০৭, ৮/৪১৫; আলমুফাসসাল ফী আহকামিল আকীকাহ; তুহফাতুল মাওদূদ বিআহকামিল মাওলূদ ৮৬, ৯৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৭।

(৪) প্রশ্নঃ নবজাতক বাচ্চার চুল ৭ম দিন কাটা কী? ৭ম দিনের আগে বা পরে কাটা যাবে কি না? চুলের ওজন পরিমাণ রূপা-সোনা সদকা করার বিধান কী? আর এর মধ্যে কোনো হিকমত আছে কি? যদি এক বছর পরে আকীকা করা হয় তাহলে ঐ সময়ও কি চুল কেটে তার সমান রূপা-সোনা সদকা করতে হবে?

এই চুল কাটা এবং আকীকা উভয়টি একসাথে করতে হবে নাকি আগে পিছে করলেও হবে। অর্থাৎ ৭ম দিনে চুল কাটা হল আর ১ বছর পর আকীকা করা হল। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তরঃ

সন্তান জন্মের ৭ম দিনে অভিভাবকের দায়িত্ব হল, সন্তানের আকীকা করা, মাথার চুল মুণ্ডন করা এবং তার সুন্দর নাম রাখা।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকীকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু জবাই করবে, নাম রাখবে ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২।

সপ্তম দিনে আকীকা করা, মাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে এ তিনটির কোনোটি অপরটি সাথে শর্তযুক্ত নয়। তাই কারো আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে সে যদি ৭ম দিনে আকীকা করতে না পারে তাহলেও ঐ দিন সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দিবে এবং নামও রাখবে। আকীকা করতে বিলম্ব হলেও এসব কাজে বিলম্ব করবে না।

আর হাদীস শরীফে যেহেতু সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করতে বলা হয়েছে তাই সপ্তম দিনের আগে মুণ্ডন না করাই উচিত।

মাথা মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা.-এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা রা.-কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৯

অপর এক হাদীসে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার কথাও এসেছে। -আলমুজামুল আওসাত, হাদীস ৫৫৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৬২০৪; ইলাউস সুনান ১৭/১১৯।

রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার হেকমত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হল, উক্ত সদকার হেকমত সম্পর্কে হাদীস শরীফে যেহেতু কিছু বলা হয়নি তাই এর রহস্য বা হেকমত অনুসন্ধানের পিছনে না পড়াই ভালো। বান্দার কাজ হল, বিধি-বিধানের হেকমতের পিছনে না পড়ে শরীয়তের হুকুম পালন করে যাওয়া।

অবশ্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ.-এর একটি কারণ এই লিখেছেন যে, সন্তান যে চুলসহ ভূমিষ্ট হয়েছিল তা কেটে ফেলার মাধ্যমে সন্তান একটি অবস্থানে পদার্পণ করে। তাই এর শুকরিয়াস্বরূপ ঐ চুলের বিনিময়ে সদকা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/১৪৫)। আর কোনো কারণবশত বাচ্চার চুল যদি সপ্তম দিনে কাটা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সপ্তম দিনের চুলের ওযন অনুমানে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করে দিবে।

(৫) প্রশ্নঃ আমার ছেলের বয়স ৫ বছর। এখন তার আকীকা করতে চাচ্ছি। আকীকার হুকুম কী? অর্থাৎ কী দিয়ে আকীকা করতে হবে এবং এর বণ্টন বিধি কী? আকীকার গোশত কে কে খেতে পারবে? বাবা-মাও কি সে গোশত খেতে পারবে? আর আকীকা কি কুরবানীর সাথে দেওয়া যাবে? যদি যায় তাহলে কীভাবে ?

উত্তরঃ

আকীকা করা মুস্তাহাব। পুত্রসন্তানের জন্য দুটি ছাগল আর কন্যার জন্য একটি ছাগল।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৩।

আর কুরবানীর পশুতে আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আকীকা ও কুরবানীর কোনো অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম না হয়।

আকীকার গোশত সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনী-গরীব সকলেই খেতে পারবে। আকীকার গোশতের বণ্টন ও ব্যবহার কুরবানীর মতোই। কিছু গোশত নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু গোশত গরীবদেরকে সদকা করা উত্তম।

-আততালীকুল মুমাজজাদ ২৮৯, ২৯০; ইলাউস সুনান ১৭/১১৮; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আলমুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদীস : ৭৬৬৯।

(৬) প্রশ্নঃ আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্য একটি গরু দিয়ে আকীকা করতে চাচ্ছি। পরিবারে অনেকে সংশয় প্রকাশ করে বলছে, গরু দিয়ে আকীকা শুদ্ধ হবে কি না? আমার জানার বিষয় হল, গরু দিয়ে কি আকীকা করা জায়েয আছে? বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তরঃ

হ্যাঁ। গরু, মহিষ ও উট দ্বারাও আকীকা করা জায়েয আছে। হযরত আনাস রা. উট দ্বারা সন্তানদের আকীকা করেছেন। -তবারানী, কাবীর, হাদীস ৬৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৯৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭৫৫

বাকি থাকলো যে, প্রত্যেক সন্তানের জন্য একেকটি পশু দ্বারা আকীকা করা হবে, না কয়েকজনের জন্য একটি গরু-মহিষ দ্বারা আকীকা করলেও তা আদায় হয়ে যাবে এটি একটি ইজতেহাদী মাসআলা। কোন কোন আলেমের মতে কুরবানীর মত আকীকাও কয়েকজনের জন্য একটি গরু বা মহীষ দ্বারা করা যাবে।

উল্লেখ্য, গরু-মহিষ দ্বারা আকীকা করা জায়েয হলেও ছাগল দ্বারা আকীকা করা উত্তম। কেননা ছাগল দিয়ে আকীকা করার কথা হাদীস শরীফে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।

উম্মে কুরয ও আবু কুরয থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর এর বংশের এক মহিলা এই বলেছিলেন যে, আবদুর রহমানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে আমরা একটি উট যবাই করব। তখন আয়েশা রা. বললেন, না; বরং সুন্নাহর অনুসরণ উত্তম। ছেলের জন্য উপযুক্ত দুটি ছাগল আর মেয়ের জন্য একটি ছাগল। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯।

হযরত উম্মে কুরয রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যা সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবাই করবে। (জামে তিরমিযী ১/১৮৩)।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭২৫; ইলাউস সুনান ১৭/১১৭; ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৪৩১।

(৭) প্রশ্নঃ আমার একটি ছেলেসন্তান হয়েছে। জন্মের কিছুদিন পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আমি মান্নত করেছিলাম, ছেলে সুস্থ হলে একটি খাশি আকীকা করব। আল্লাহর মেহেরবানিতে ছেলে সুস্থ হয়ে গেছে। এখন আমার প্রশ্ন হল, ছেলের আকীকা করতেই হবে কি না? না করার কোনো সুযোগ আছে কি? আকীকা করতে হলে খাশিই করতে হবে কি না?

উত্তরঃ

আকীকা করা মুস্তাহাব। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ছেলে সুস্থ হলে আকীকা করব-এ কথা বলার দ্বারা আপনার জন্য আকীকা করা জরুরি হয়ে যায়নি। তবে মুস্তাহাব হুকুম পালনের অঙ্গীকার করার দ্বারা এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে। তাই সামর্থ্য থাকলে আল্লাহ তাআলার সাথে কৃত এই ওয়াদা পূরণ করাই বাঞ্ছনীয়।

একবছর বয়সী যেকোনো ছাগল দ্বারা আকীকা করা যাবে।

ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল আকীকা করা উত্তম। বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা.-এর পক্ষ থেকে দুটি করে দুম্বা আকীকা করেছেন। (সুনানে নাসায়ী ২/১৬৭)

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নে আকীকার অঙ্গীকারকে আমি মান্নত করেছিলাম বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে বলার দ্বারাও তা মান্নত হবে না। কারণ শরীয়তে যে সমস্ত ইবাদত ফরয বা ওয়াজিব যেমন, নামায-রোযা, সদকা, কুরবানী কেবল এ ধরনের ইবাদতের মান্নত করা সহীহ। এছাড়া অন্যান্য ইবাদতের মান্নত করলেও তা মান্নত হয় না।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৪৭২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৩৫; সুনানে নাসায়ী ২/১৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৩৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ২২৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৬, ৩/৭৩৫; আলমুগনী ১৩/৩৯৩; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৭৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; ইলাউস সুনান ১৭/১১৪।

(৮) প্রশ্নঃ আমি ২১ দিনের মধ্যেই আমার ছেলেসন্তানের আকীকা করতে মনস্থ করেছি। কিন্তু আমার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় কোনো অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আকীকার নিয়তে আমি কোনো এতিমখানায় দুটি ছাগল দিতে চাই। আমার পিতামাতা ও শ্বশুর-শাশুড়িও এতে একমত হয়েছেন। তাই জানার বিষয় হল, এভাবে ছাগল দিলে কি আকীকা আদায় হবে? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণের আলোকে জানাবেন।

উত্তরঃ

আকীকার পশু কোনো প্রতিষ্ঠানে দিলে এবং আকীকার জন্য তা যবাই করা হলে আকীকা আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, আকীকার জন্য অনুষ্ঠান করা জরুরি নয়; বরং আকীকার উদ্দেশ্যে পশু যবাই করলেই তা আদায় হয়ে যায়। আর আকীকার গোশতের ব্যবহার ও বণ্টনের নিয়ম কুরবানীর গোশতের মতোই।

(৯) প্রশ্নঃ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার মেয়ের স্বামী আমার নাতির আকীকা করেনি। অদূর ভবিষ্যতে আকীকা করার সম্ভাবনাও কম। নানা হিসেবে আমি নিজ টাকায় নাতির আকীকা করলে আকীকা হবে কি না এবং তা জায়েয কি না? আমি আমার বাড়িতে নাতির আকীকা করতে চাই, আমার বাড়িতে আকীকা করলে হবে কি না? গরু বা ছাগল কোন্ পশু দিয়ে আকীকা করা উত্তম? নাতি জন্মের পর পরই আমার মেয়ের শ্বাশুড়ি আকীকা করার গরু নানা বাড়ি থেকে দিতে হয় বলে আমার মেয়ের নিকট গরু দাবী করেছে। এ প্রসঙ্গে ফতোয়া কী? মেয়ের শ্বাশুড়ির দাবির প্রেক্ষিতে আমি আমার নাতির আকীকা করার জন্য গরু বা ছাগল দিলে তা কি যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে? আমার মেয়ের স্বামী সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আকীকা করছে না। এতে শরীয়তের বিধান কী? আকীকার গোশত নাতির দাদার বাড়িতে না পাঠালে আকীকা কবুল হবে কি না? তাছাড়া আকীকার পশু জবাই করে গোশত কোনো আত্মীয়স্বজনকে না দিয়ে সব গোশত এতিমখানায় দিয়ে দিলে আকীকা হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তরঃ

আকীকা করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে আকীকা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সন্তানের আকীকা করা পিতার দায়িত্ব; নানার দায়িত্ব নয়। কেননা সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যার উপর শরীয়ত তাকেই আকীকা করার নির্দেশ দিয়েছে। অবশ্য পিতার অনুমতিক্রমে নানা নাতির আকীকা করলে তা সহীহ হবে। কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্র হাসান-হুসাইনের আকীকা করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৩৪)।

আর এক্ষেত্রে নানা চাইলে তার নিজ বাড়িতেও আকীকা করতে পারবেন।

ছেলের আকীকার জন্য দুটি ছাগল দেওয়া উত্তম। কেননা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১৩)।

প্রকাশ থাকে যে, মেয়ের শ্বাশুড়ির ঐ কথা ঠিক নয়। শ্বাশুড়ির জন্য পুত্রবধুর কাছে আকীকার গরু দাবি করা জায়েয হয়নি। এটি যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত।

আর আকীকার পুরো গোশত এতিমখানায় দিয়ে দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

তবে উত্তম হলো তিন ভাগ করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা, একভাগ প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া এবং একভাগ ফকীর-মিসকীনকে দেওয়া। আর আত্মীয়দের অংশ থেকে সন্তানের দাদা ও অন্যান্য আত্মীয়দেরকেও দেওয়া উচিত।

-আলমওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ৩০।

(১০) প্রশ্নঃ আমার একটি ছেলে জন্মের সতের দিন পরে মারা গেছে। এখন আমি তার আকীকা করতে চাই। এতে শরীয়তের কোনো বাধা আছে কি না?

উত্তরঃ

আকীকা মূলত জীবিত সন্তানের জন্য করা মুস্তাহাব। অবশ্য কোনো কোনো ফকীহ মৃত সন্তানের জন্য করার কথাও বলেছেন তাই আপনি চাইলে আপনার মৃত সন্তানের আকীকা করতে পারবেন। তবে সন্তান মারা যাওয়ার পর তার আকীকার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব থাকে না।

-আলমাজমূ ৮/৪১২; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুয়াইতিয়্যাহ ৩০/২৭৭; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৬২।

(১১) প্রশ্নঃ আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করার দুই দিন পর ইন্তিকাল করেছে। তার আকীকা করিনি। কেউ কেউ আকীকা করার পরামর্শ দিচ্ছে। প্রশ্ন হল, এই সন্তানেরও কি আকীকা করা সুন্নত?

উত্তরঃ

ঐ সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করা লাগবে না। কারণ সন্তানের বয়স ৭ দিন পূর্ণ হলে আকীকার সময় হয়। এর আগে নয়। অবশ্য অভিভাবক চাইলে এমন সন্তানেরও আকীকা করতে পারেন।

জামে তিরমিযী ১/২৭৮; আলইসতিযকার ১৫/৩৭৫; ফাতহুল বারী ৯/৫০৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৯৭; ইরশাদুস সারী ১২/২২৫।

(১২) একটি অসতর্কতা : আকীকার দিন গুনতে ভুল করাঃ

আকীকার ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

নবজাতকের পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবেহ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১৬৫)

শরীয়তের যেসমস্ত মাসআলা দিন-তারিখ, মাস-বছরের সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো চাঁদের হিসাবে গণনা করতে হয়। সুতরাং এ সাত দিন গণনা করতে হবে চাঁদের হিসাবে। আর আমাদের জানা আছে যে, চাঁদের ক্ষেত্রে দিন/তারিখ শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে। এখন কোনো সন্তান যদি শনিবার সূর্যাস্তের পর জন্ম নিল তার অর্থ সে রবিবারে জন্ম নিল। সেক্ষেত্রে তার সাত দিন গণনা শুরু হবে রবিবার থেকে, শনিবার থেকে নয়। সে হিসাবে সপ্তম দিন হবে পরের শনিবার। কিন্তু যদি সাধারণ ধারণার ভিত্তিতে শনিবারকে প্রথম দিন ধরে গণনা করা হয় তাহলে সপ্তম দিন হবে জুমাবার; যা ভুল।

হাঁ, যদি শনিবার সূর্যাস্তের আগে জন্ম নেয় তখন দিন গণনা শুরু হবে শনিবার থেকে। আল্লাহ আমাদের সব বিষয়ে সঠিক বিষয়টি জানার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। সাথে সাথে হিজরী তারিখের ব্যাপারে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন।

(১৩) একটি ভুল মাসআলা : নাম বদলালে কি আকীকা দোহরাতে হয়?

কারো ভুল নাম রাখা হলে তা পরিবর্তন করে সঠিক নাম রাখা জরুরি। কিন্তু নাম বদলালে নতুন করে আকীকাও করতে হয়-এই ধারণা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে প্রথম আকীকাই যথেষ্ট। নতুন আকীকা জরুরি নয়, মুস্তাহাবও নয়।

(১৪) একটি ভুল মাসআলা : সন্তানের আকীকার গোস্ত কি মা-বাবা খেতে পারবে না?

আকীকার গোস্ত বণ্টন নিয়ে কোথাও কোথাও বিভ্রান্তি দেখা যায়। অনেকের ধারণা, সন্তানের আকীকার গোস্ত মা-বাবা খেতে পারবে না। বরং আশেপাশের ঘর-বাড়ি এবং গরীব-মিসকীনের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।

এ ধারণা ঠিক নয়। আকীকার গোস্ত সন্তানের মা-বাবা,পরিবার পরিজন,আত্নীয় স্বজন,প্রতিবেশী বা মিসকীন যে কেউ খেতে পারবে।

(দ্র.সুনানে বায়হাকী, খ.৯ পৃ. ৩০২;মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ২৪৭৩৯,২৪৭৪৯; ইলাউস সুনান, খ.১৭ পৃ.১২৬; তুহফাতুল মাওদূদ পৃ. ৭৮)।

(১৫) যদি কুরবানী ও আকীকা একত্রে পড়ে এবং কোন ব্যক্তি যদি ঈদের দিন তার সন্তানের আকীকা দিতে চান বা তাশরিকের দিনগুলোতে আকীকা দিতে চান তাহলে কোরবানীর পশু কি আকীকা হিসেবে যথেষ্ট হবে?

উত্তরঃ কুরবানীর পশু আকীকা হিসেবে জায়েয হবে না। আকীকা ও কুরবানী উভয়টি সত্তাগতভাবে উদ্দিষ্ট। এ কারণে একটি অপরটির পক্ষ থেকে জায়েয হবে না। তাছাড়া যেহেতু প্রত্যেকটির বিশেষ কারণ রয়েছে, যে কারণদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন। তাই একটি অপরটির স্থলাভিষিক্ত হবে না। যেভাবে ফিদিয়া-র দম (পশু) তামাত্তু-এর দম (পশু) এর স্থলাভিষিক্ত হয় না।

হাইতামি 'তুহফাতুল মুহতাজ শারহুল মিনহাজ' গ্রন্থে (৯/৩৭১) বলেন: "আমাদের মাযহাবের আলেমগণের উক্তির বাহ্যিক মর্ম হল, যদি একটি ভেড়া দিয়ে কোরবানী ও আকীকার নিয়ত করা হয় তাহলে দুইটার কোনটা আদায় হবে না। এটি সুস্পষ্ট বিষয়। যেহেতু এ দুটোর প্রত্যেকটি উদ্দিষ্ট সুন্নত।" [সমাপ্ত]

আল-হাত্তাব (রহঃ) 'মাওয়াহিবুল জালিল' গ্রন্থে (৩/২৫৯) বলেন: "কেউ যদি তার কুরবানীর পশু কুরবানী হিসেবে ও আকীকা হিসেবে জবাই করে কিংবা ভোজ হিসেবে খাইয়ে দেয়: 'যাখিরা' গ্রন্থে বলা হয়েছে: 'আল-কাবাস' গ্রন্থাকার বলেন: আমাদের শাইখ আবু বকর আল-ফিহরি বলেন: যদি তার কুরবানীর পশুকে কুরবানী ও আকীকা হিসেবে জবাই করে তাহলে জায়েয হবে না। আর যদি ভোজ হিসেবে খাইয়ে দেয় তাহলে জায়েয হবে। এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য হল¬¬¬¬¬: প্রথম দুইটির ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে রক্তপাত করা। তাই দুইটি পশুর রক্তপাতের বদলে একটি পশুর রক্তপাত জায়েয হবে না। আর ভোজের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হচ্ছে খাওয়ানো। এটি রক্তপাতের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই দুটো নিয়ত একত্রিত হওয়া সম্ভব।" [সমাপ্ত]

যেহেতু কুরবানী ও আকীকা দুইটি আলাদা বিষয় আর নবি সা. ও সাহাবীগণ একই পশুতে কুরবানী ও আকীকা দেননি আর যেহেতু এসংক্রান্ত কোনো দলিল নেই তাই কুরবানী ও আকীকা একই পশুতে না করে ভিন্ন ভিন্ন পশুতেই করতে হবে। 

কুরবানী করার পদ্ধতি

(২৫) কুরবানী করার পদ্ধতিঃ

 (ক)  যা যবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তাকে আরাম দিতে হবে। যাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে,

আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)..শাদ্দাদ ইবনু আওস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি দুটি কথা স্মরণ রেখেছি, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ইহসান (যথাসাধ্য সুন্দর রূপে সম্পাদন করা) অত্যাবশ্যক করেছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থার সাথে হত্যা করবে; আর যখন যবেহ করবে তখন উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং তার যবেহকৃত জন্তুকে শাস্তি প্রদান না করে (অহেতুক কষ্ট না দেয়)। (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৪৮৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী, ৪৯৪৯-(৫৭/১৯৫৫), সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ২৮০৫, (সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ৪৪০৬, ৪৪১৩, ৪৪১৪, ৪৪১৫,  ইবন মাজাহ ৩১৭০, ইরওয়া ২২৩১, মুসলিম ১৯৫৫, তিরমিযী ১৪০৯, নাসায়ী ৪৪০৫, ৪৪১১, ৪৪১২, ৪৪১৩, ৪৪১৪, আবূ দাউদ ২৮১৫, আহমাদ ১৬৬৬৪, ১৬৬৭৯, ১৬৬৮৯, দারেমী ১৯৭০, ইরওয়া ২২৩১, রাওদুন নাদীর ৩৫৫, সহীহ আবু দাউদ ২৫০৬, সুনান আদ-দারেমী, ২০০৮,  বুলুগুল মারাম, ১৩৪২, হাদীস সম্ভার ৩৪৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) যদি উট যবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবে। নহর হল উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবে। তার বুকে ছুরি চালানো হবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:

‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর।’ (সূরা হজ, আয়াত: ৩৬)।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন: এর অর্থ হল তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে।

উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবে। ডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবে। বাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবে। মোস্তাহাব হল যবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবে। যেমন ইতিপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বুখারির হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।

ইসলামিক পদ্ধতিতে গরু জবাইয়ের সময়, গরু কি ব্যাথা অনুভব করে?

আপনার কি মনে হয় ইসলামিক পশু জবাই পদ্ধতিটি খুব নিষ্ঠুর?

আসুন দেখা যাক, বিজ্ঞান কি বলেঃ

Western World এ পশু জবাইয়ের প্রচলিত নিয়ম (Captive Bolt Pistol -CPB Method):

Captive Bolt Pistol (CPB ) নামের এক ধরনের যন্ত্র দ্বারা পশুর কপালে প্রচন্ড আঘাত করা হয়, ধারনা করা হয় এতে পশু Unconscious হয়ে পড়ে এবং জবাইয়ের পর ব্যথা অনুভব করে না।

গবেষণাঃ

জার্মানির Hanover University এর প্রফেসর Wilhelm Schulze এবং তার সহযোগী Dr. Hazim এর নেতৃত্বে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষনার বিষয়বস্তু ছিল,

 ১. Western World এ প্রচলিত নিয়মে (CPB Method) এবং

২. ইসলামিক নিয়মে পশু জবাইয়ে পশুর যন্ত্রণা এবং চেতনাকে চিহ্নিত করা।

Experimental Setup:

Brain এর Surface কে Touch করে পশুর মাথার খুলির বিভিন্ন জায়গায় Surgically কিছু Electrode ঢুকিয়ে দেয়া হয়, এরপর পশুকে সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু সময় দেয়া হয়। তারপর পশুগুলোকে জবাই করা হয়। কিছু পশুকে ইসলামিক নিয়মে আর কিছু পশুকে Western World এর নিয়মে জবাই করার সময়।

Electroencephalograph (EEG) এবং Electrocardiogram (ECG) করে পশুগুলোর Brain এবং Heart এর Condition দেখা হয়।

Result:

ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাইয়ের ফলাফলঃ

(১) জবাইয়ের প্রথম ৩ সেকেন্ড EEG Graph এ কোন Change দেখা যায় না। তারমানে পশু উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যথা অনুভব করে না।

(২) পরের ৩ সেকেন্ডের EEG Record এ দেখা যায় , পশু গভীর ঘুম এ নিমগ্ন থাকার মত অচেতন অবস্থায় থাকে।  হঠাৎ প্রচুর পরিমানে রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে যাবার কারনে Brain এর Vital Center গুলোতে রক্তসরবরাহ হয়না। ফলে এই অচেতন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

(৩) উপরোল্লিখিত ৬ সেকেন্ড এর পর EEG Graph এ Zero Level দেখায়। তারমানে পশু কোন ব্যথাই অনুভব করেনা।

(৪) যদিও Brain থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না , তবুও Heart স্পন্দিত হচ্ছিল এবং তীব্র খিঁচুনি হচ্ছিল (Spinal Cord এর একটা Reflex Action) । এভাবে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছিল এবং এর ফলে ভোক্তার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত মাংস নিশ্চিত হচ্ছিল ।

Western World এ প্রচলিত পদ্ধতিতে(CPB Method) জবাইয়ের ফলাফলঃ

(১) মাথায় প্রচন্ড আঘাত করার পরের মুহূর্তে পশুটিকে দৃশ্যত অচেতন মনে হচ্ছিল।

(২) কিন্তু EEG এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল পশুটি খুব কষ্ট পাচ্ছে ।

(৩) ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর তুলনায় CBP দিয়ে আঘাত করা পশুটির Heart স্পন্দন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে পশুটির শরীর থেকে সব রক্ত বের হতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে, পশুটির মাংস ভোক্তার জন্য অস্বাস্থ্যকর হয়ে যাচ্ছিল ।

Western World এর পদ্ধতি (CPB Method) এবং MAD COW রোগঃ

Texas A & M University এবং Canada এর Food Inspection Agency একটা পদ্ধতি (Pneumatic Stunning) আবিষ্কার করেছে যেটাতে একটা Metal Bolt পশুর Brain এ Fire করা হয় এবং এর ফলে Brain এর টিস্যু পশুর সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। Brain Tissue এবং Spinal Cord হলো Mad Cow আক্রান্ত গরুর সবচেয়ে সংক্রামক অংশ ।

এছাড়াও Brain এবং Heart এ Electric Shock এর মাধ্যমে পশুকে অচেতন করেও কিছু কিছু জায়গায় পশু জবাই করা হয় যেটা মাংসের Quality এর উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে ।

ভারতীয় পদ্ধতিঃ

ভারতে পশুর মাথা এক কোপে আলাদা করে ফেলা হয় । এতে করে ঐচ্ছিক পেশীগুলো হঠাৎ করে সংকোচিত হয়ে পরে, যা অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ তরল বের করে দেয় এবং Heart হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীর থেকে রক্ত বের হতে পারে না, যা বের হওয়া স্বাস্থ্যকর মাংসের জন্য দরকার। এছাড়া ইসলামে Spinal Cord না কেটে শ্বাসনালী, এবং Jugular Vein দুটো কাটার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। এর ফলে রক্ত দ্রুত শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। Spinal Cord কাটলে Cardiac Arrest এর সম্ভাবনা থাকে যার ফলে রক্ত শরীরে আটকে যাবে, যা রোগজীবানু এর উৎস। এখানে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর একটি হাদীস মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছিঃ "আল্লাহ সবাইকে দয়া করার হুকুম দেন। তাই যখন জবাই করো তখন দয়া করো। জবাই করার পূর্বে ছুরিতে ধার দিয়ে নাও যাতে পশুর কষ্ট কম হয়। তিনি পশুর সামনে ছুরিতে শান দিতে বা এক পশুর সামনে আরেক পশুকে জবাই করতেও নিষেধ করেছেন। এই বিষয়টি কুরবানীর সময় আমরা ভুলে যাই ।

বিভিন্ন ধর্মে পশু যবাই করার বিভিন্ন পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণধর্মী থেকে এটাই প্রমাণিত যে, ইসলামিক পদ্ধতিতে পশু যবাই করলে তা জীবানুমুক্ত ও ১০০% হালাল হিসেবে গণ্য।

উটের কুঁজ ফেড়ে দেয়া

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানীর উটের কুঁজ ডান পাশ দিয়ে ফেড়ে দেন এবং তা থেকে রক্ত পরিষ্কার করেন। ‘আলী (রাঃ) তার বর্ণনায় বলেন, এটা যুল-হুলাইফা নামক স্থানে। আর তিনি একজোড়া জুতার মালা পরিয়ে দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩০৯৭, ৩০৯৮, সহীহুল বুখারী ১৫৪৫, মুসলিম ১২৪৩, তিরমিযী ৯০৬, নাসায়ী ২৭৭৩, ২৭৭৪, ২৭৮২, ২৭৯১, আবূ দাউদ ১৭৫২, আহমাদ ১৮৫৮, ২২৯৬, ২৫২৪, ৩১৩৯, ৩১৯৬, ৩২৩৪, ৩৫১৫, দারেমী ১৯১২, সহীহ আবু দাউদ ১৫৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ধারালো ছুরি দিয়ে যবেহ করা বৈধ, তবে দাত-নখ ও সকল হাড় ব্যতীত

(ক) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না আনায়ী (রহঃ)....রাফি ইবনু খাদীজ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি কিংবা ভালভাবে দেখে নিখুঁতভাবে যাবাহ করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে, যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয় (তা দিয়ে যাবাহকৃত জন্তু) খাও। তবে তা যেন দাঁত ও নখ না হয়। আমি তোমাদের কাছে এর কারণ বর্ণনা করছি। কেননা দাঁত হলো হাড় বিশেষ, আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। রাবী বলেন, আমরা গনীমাতের কিছু উট ও বকরী পেলাম। সেখান থেকে একটি উট ছুটে গেলে এক লোক তীর মেরে সেটাকে আটকিয়ে ফেললো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসব উটের মধ্যেও বন্য প্রাণীর মতো আচরণ রয়েছে। অতএব এগুলোর মাঝে কোন একটি যদি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায় তবে তার সঙ্গে এরূপ ব্যবহারই করবে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বার ১৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৪৯৩২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৩৬)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইবনু আবূ উমার (রহঃ)....রাফি ইবনু খাদীজ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। (ধারালো) বাশের খোলস দ্বারা কি যাবাহ করবো? রাবী ইসমাঈল পুরো ঘটনাসহ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি [রাফি (রাযিঃ)] আরও বলেন, উক্ত উটগুলোর মধ্য হতে একটি উট ছুটে গেলে আমরা তীর ছুড়ে সেটাকে পাকড়াও করলাম। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৮৮, ৪৯৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৩৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৩৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

বাঁধা অবস্থায় উট কুরবানী করা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার তিনি এক ব্যক্তির কাছে আসলেন। দেখলেন যে, সে তার উটকে কুরবানী করার জন্য বসিয়েছে। (এ দৃশ্য দেখে) তখন তিনি তাকে বললেন, উটকে দাঁড় করাও এবং পা বেঁধে যাবাহ করো। এটাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৩, মুসলিম ১৩২০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯০৩, ইরওয়া ১১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উটকে দাঁড় করিয়ে কুরবানী করা

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা্তে যোহর চার রাক‘আত এবং যুল হুলাইফাতে ‘আসর দু’রাক‘আত আদায় করলেন এবং এখানেই রাত যাপন করলেন। ভোর হলে তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করে তাহ্লীল ও তাসবীহ পাঠ করতে লাগলেন। এরপর বায়দায় যাওয়ার পর তিনি হাজ্জ ও ‘উমরাহ উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন এবং মক্কা্য় প্রবেশ করে তিনি সহাবাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। আর (সে হাজ্জে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতটি উট দাঁড় করিয়ে নিজ হাতে কুরবানী করেন আর মদ্বীনাহ্তে হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি ভেড়া কুরবানী দেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৪, ১০৮৫, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কুরবানীর পশু স্বহস্তে যবেহ করা উত্তম

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে সাতটি উট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কুরবানী করেন এবং মদ্বীনাতেও হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট সুন্দর দু’টি দুম্বা তিনি কুরবানী করেছেন। এখানে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১২, ১৫৫১, ৫৫৪৯, ৫৫৫৩, ৫৫৫৪, ৫৫৫৮, ৫৫৬১, ৫৫৬৪, ৫৫৬৫, ৭৩৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৫৫, মুসলিম ১৯৬২, ১৯৬৬, তিরমিযী ১৪৯৪, নাসায়ী ৪৩৮৫, ৪৩৮৬, ৪৩৮৭, ৪৩৮৮, ৪৪১৫, ৪৪১৬, ৪৪১৭, ৪৪১৮, আবূ দাউদ ২৭৯৩, ২৭৯৪, আহমাদ ১১৫৭৩, ১১৭৩৭, ১১৭৬১, ১২৩২৫, ১২৪১৯, ১২৪৮২, ১২৫৫৬, ১২৭৯০, ১২৮২২, ১২৯১০, ১৩২৬৯, ১৩৩০২, ১৩৪১৯, ১৩৪৬৪, ১৩৫৬০, ১৩৫৮৩, দারেমী ১৯৪৫। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ঈদের মাঠে কুরবানী করা

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের মাঠে কোরবানীর পশু যবেহ করতেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৬১, সহীহুল বুখারী ৯৮২, ১৭১০, ৫৫৫১, ৫৫৫২, নাসায়ী ১৫৮৯, ৪৩৬৬, আবূ দাউদ ২৮১১, আহমাদ ৫৮৪২, সহীহ আবু দাউদ ২৫০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যবেহ করার দোয়া

(২৬) যবেহকালীন যা বলতে হবেঃ

যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

‘যার উপর আল্লাহর নাম [বিসমিল্লাহ] উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর।’ (সূরা আনআম, আয়াত: ১১৮)।

যবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেমন হাদিসে এসেছে:

জাবের রা. থেকে বর্ণিত... একটি দুম্বা আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে যবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ ! এটা আমার পক্ষ থেকে। এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে।’

অন্য হাদিসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি শিং ওয়ালা ভেড়া যবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ শিংবিশিষ্ট দু’টি ধুসর বর্ণের মেষ কোরবানী করেছিলেন। তিনি (যবেহ করার সময়) বিসমিল্লাহ ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলেছিলেন। আমি তাঁকে নিজের পা সেটির পাঁজরের উপর রেখে চেপে ধরে স্বহস্তে তা কোরবানী করতে দেখেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১২০, সহীহুল বুখারী ১৫৫১, ১৭১২, ৫৫৪৯, ৫৫৫৩, ৫৫৫৪, ৫৫৫৮, ৫৫৬১, ৫৫৬৪, ৫৫৬৫, ৭৩৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৮১,  ৪৯৮২, ৪৯৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৬, তিরমিযী ১৪৯৪, নাসায়ী ৪৩৮৫, ৪৩৮৬, ৪৩৮৭, ৪৩৮৮, ৪৪১৫, ৪৪১৬, ৪৪১৭, ৪৪১৮, আবূ দাউদ ২৭৯৩, ২৭৯৪, আহমাদ ১১৫৭৩, ১১৭৩৭, ১১৭৬১, ১২৩২৫, ১২৪১৯, ১২৪৮২, ১২৫৫৬, ১২৭৯০, ১২৮২২, ১২৯১০, ১৩২৬৯, ১৩৩০২, ১৩৪১৯, ১৩৪৬৪, ১৩৫৬০, ১৩৫৮৩, দারেমী ১৯৪৫, ইরওয়া ১১৩৭, ২৫৩৬, সহীহ আবু দাউদ ২৪৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর—اللّهُمَّ هَذَا مِنْكَ وَلَكَ—[হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য] বলা যেতে পারে। যার পক্ষ থেকে কুরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েয আছে। এ ভাবে বলা—‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও।’

যেমন হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দুম্বা যবেহ করার সময় বললেন:

‘আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন।’

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

হারূন ইবনু মা’রূফ (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য শিংওয়ালা দুম্বাটি আনতে নির্দেশ দেন-যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ- পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে শুইতো (অর্থাৎ- পেটের নিচের অংশ কালো ছিল) এবং কালোর মধ্য দিয়ে দেখতে (অর্থাৎ- চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বললেন, ছোরাটি নিয়ে এসো। অতঃপর বলেন, ওটা পাথরে ধার দাও। তিনি তা ধার দিলেন। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। তারপর সেটা জবাহ করলেন এবং বললেন, بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ "আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ হতে এটা কুবুল করে নাও।" তারপর এটা কুরবানী করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৩১, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর নামে যাবাহ করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে

যুহায়র ইবনু হারব ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ)....আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তার নিকট এসে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ'আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫০১৮, ৫০১৯, ৫০২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৬২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

কুরবানীর গোশত আহার করা ও বন্টন এর নিয়ম

(২৭) কোরবানীর গোশত আহার করা ও বন্টনঃ

কুরবানির গোশত কুরবানি দাতা নিজে খাবেন, ফকির মিসকিনকে দান করবেন এবং আত্মীয় স্বজনদের উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। প্রয়োজনে উক্ত বণ্টনে কমবেশী করায় কোন দোষ নেই (মির‘আত ৫/১২০)।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবগুলো (কোরবানীর) উটের কিছু অংশ একত্র করে তা একটি হাঁড়িতে পাকানোর নির্দেশ দেন। লোকেরা এই গোশত ও ঝোল আহার করে। (সুনান ইবনু মাজাহ ৩১৫৮, বুখারী ১৫৫৭, ১৫৬৮, ১৫৭০, ১৬৫১, ১৭৮৫, ২৫০৬, ৪৩৫২, ৭২৩০, ৭৩৬৭, মুসলীম ১২১৩, ১২১৫, ১২১৬/১-৫, ১২১৮/১-৩, ১২৬৩/১-২, ১২৭৩, ১২৭৯, ১২৯৯, তিরমিযি ৮১৭, ৮৫৬-৫৭, ৮৬২, ৮৬৯, ৮৮৬, ৮৯৭, ৯৪৭, ২৯৬৭, ৩৭৮৬, নাসাঈ ২১৪, ২৯১, ৩৯২, ৪২৯, ৬০৪, ২৭১২, ২৭৪০, ২৭৪৩-৪৪, ২৭৫৬, ২৭৬১-৬৩, ২৭৯৮, ২৮০৫, ২৮৭২, ২৯৩৯, ২৯৪৪, ২৯৬১, ২৯৬২-৬৩, ২৯৬৯-৭৫, ২৯৮১-৮৫, ২৯৯৪, ৩০২১-২২, ৩০৫৩-৫৪, ৩০৭৪-৭৬, ৪১১৯, আবু দাউদ ১৭৮৫, ১৭৮৭-৮৯, ১৮১২, ১৮৮০, ১৮৯৫, ১৯০৫-৭, ১৯৪৪, ৩৯৬৯, আহমাদ ১৩৭০২, ১৩৮০১, ১৩৮২৬, ১৩৮৬৭, ১৪০০৯, ১৪০৩১, ১৪১৬১, ১৪২৫০, ১৪৪৮৪, ১৪৫২৫, ১৪৫৮৯, ১৪৬২১, ১৪৬৬৭, ১৪৭৩৫, ১৪৮২১, ১৪৮৫১, মুয়াত্তা মালিক ৮১৬, ৮৩৫-৩৬, ৮৪০, দারিমী ১৮০৫, ১৮৪০, ১৮৫০, ১৮৯৯)হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

‘অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ (সূরা হজ, আয়াত: ২৮)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন:

‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ (বুখারি: ৫৫৬৯)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে লোক কুরবানী করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানীর গোশ্ত কিছু থেকে যায়। পরবর্তী বছর আসলে, সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ, কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা কর। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৬৯, মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্তকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি। তাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন: কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।

অমুসলিম দরিদ্র প্রতিবেশীকেও দেওয়া যায় (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১২৮)।

কুরবানীর গোশত সংরক্ষণ এর নিয়ম

(২৮) গোস্ত সংরক্ষণঃ

কুরবানীর গোশত যত দিন খুশী রেখে খাওয়া যায়।

হাদিসে এসেছে,

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্ত মিনা’র তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৯, ২৯৮০, ৫৪২৪, ৫৫৬৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৩৯, মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭২, আহমাদ ১৪৪১২, ১৪৪১৯, আধুনিক প্রকাশনী ১৬০১. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০৮, নাসায়ী ৪৪২৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯২০৮, ইরওয়া ১১৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৯২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুর্ভিক্ষজনিত কারণে লোকেদেরকে কোরবানীর গোশত জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলেন এবং পরে আবার জমা করে রাখার অনুমতি দেন। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৫৯, মুসলিম ১৯৭১, তিরমিযী ১৫১১, নাসায়ী ৪৪৩১, ৪৪৩২, ৪৪৩৩, আবূ দাউদ ২৮১২, আহমাদ ২৩৭২৮, ২৪৪৪১, ২৪৬৯২, ২৫২২৩, মুয়াত্তা মালেক ১০৪৭, দারেমী ১৯৫৯, সহীহ আবু দাউদ ২৫০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তিন দিনের বেশী গোস্ত সংরক্ষণ করা যাবে না

আবদুল জাববার ইবনু 'আলা (রহঃ)...আবূ উবায়দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার আগে সালাত আদায় করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিনদিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে বারণ করেছেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৯১, ৪৯৯২, ৪৯৯৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৯, ১৯৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৪১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 ‘কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’—বলে উক্ত হাদিসটির  হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

(ক) নুবাইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদেরকে কোরবানীর গোশত তিন দিনের অধিকা আহার করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা আহার করো এবং জমা করে রাখো। (সুনান ইবনু মাজাহ, ৩১৬০, নাসায়ী ৪২৩০, আবূ দাউদ ২৮১৩, আহমাদ ২০১৯৮, ২০২০২, দারেমী ১৯৫৮, সহীহ আবু দাউদ ২৫০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ).....আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াকিদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশত খেতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) বলেন, আমি বিষয়টি আমরাহ (রাযিঃ) এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ইবনু ওয়াকিদ সত্যই বলেছেন। আমি আয়িশাহ্ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় ঈদুল আযহার সময় বেদুঈনদের কিছু পরিবার শহরে আগমন করে, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তিনদিনের পরিমাণ জমা রেখে বাকী গোশতগুলো সাদাকাহ করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! মানুষেরা তো কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে পাত্র প্রস্তুত করছে এবং তার মাঝে চর্বি গলাচ্ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাতে কি হয়েছে? তারা বলল, আপনিই তো তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশত খাওয়া হতে বারণ করেছেন। তিনি বললেনঃ আমি তো বেদুঈনদের আগমনের কারণে এ কথা বলেছিলাম। অতঃপর এখন তোমরা খেতে পার, জমা করে রাখতে পার এবং সাদাকাহ করতে পার। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৯৭, ৪৯৯৮, ৪৯৯৯, ৫০০০, ৫০০২, ৫০০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৪২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ)  আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ)...বুরাইদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কবর যিয়ারাত হতে তোমাদের বারণ করেছিলাম, এখন তোমরা যিয়ারাত করতে পার। আর আমি তোমাদের তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা নিজেদের প্রয়োজন অনুপাতে জমা করে রাখতে পার। আমি আরো তোমাদের নিষেধ করেছিলাম চর্ম দ্বারা নির্মিত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সকল পাত্রে তৈরি নবীয (খেজুর ভেজানো পানি) পান করতে, এখন তোমরা যে কোন পাত্র থেকেই পান করতে পারো। তবে যা কিছু নেশা সৃষ্টি করে তা পান করো না। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৫০০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৫২, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কুরবানী করে, তৃতীয় দিনের পর সকালেও যেন তার ঘরে কুরবানীর গোশতের কিয়দংশও অবশিষ্ট না থাকে। রাবী (সালামাহ্) বলেন, পরবর্তী বছর আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা গত বছর যা করেছি এ বছরও কি সেভাবে করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; তোমরা খাও, অন্যদরকেও খাওয়াও এবং (যদি ইচ্ছা কর তবে) জমা করে রেখো। কারণ গত বছর তো মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে ছিল। আর তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাদের সাহায্য করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৪৪, বুখারী ৫৫৬৯, মুসলিম ১৯৪৭, ইরওয়া ১১৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হল দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েয হবে না। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কুরবানি দাতা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন। তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।

কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়

(২৯) কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানির গোশত দেয়া জায়েয নয়ঃ

 কুরবানীর পশু যবহ করা কিংবা কুটা-বাছা বাবদ কুরবানীর গোশত বা চামড়ার পয়সা হ’তে কোনরূপ মজুরী দেওয়া যাবে না। ছাহাবীগণ নিজ নিজ পকেট থেকে এই মজুরী দিতেন।

অবশ্য ঐ ব্যক্তি দরিদ্র হ’লে হাদিয়া স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়ায় দোষ নেই। (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২৬৩৮; মির‘আত হা/২৬৬২-এর আলোচনা, ৯/২৩০ পৃ.)।

হাদিসে এসেছে,

(ক) ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠালেন, আমি কুরবানীর জানোয়ারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, অতঃপর তিনি আমাকে আদেশ করলেন। আমি ওগুলোর গোশ্ত বণ্টন করে দিলাম। এরপর তিনি আমাকে আদেশ করলেন। আমি এর পিঠের আবরণ এবং চামড়াগুলোও বিতরণ করে দিলাম।

‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করলেন কুরবানীর জানোয়ারের পাশে দাঁড়াতে এবং এর হতে পারিশ্রমিক হিসেবে কসাইকে কিছু না দিতে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৬, ১৭০৭, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৯৮ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০৫ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (বিদায় হজে) কুরবানীর উটগুলো দেখাশুনা করতে, তার গোশত (গোসত/গোশত), চামড়া ও ঝুল (গরীবদের মাঝে) বণ্টন করে দিতে এবং কসাইকে কিছু না দিতে আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আমাদের নিজের কাছ থেকে তার (কসাইয়ের) পারিশ্রমিক দিবো।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৭, ১৭০৭, মুসলিম ১৩১৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯২৩২, আধুনিক প্রকাশনী ১৫৯৯. ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৩০) কুরবানীর পশুর পিঠের চামড়া সদাকাহ করাঃ

‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর একশ’ উট পাঠান এবং আমাকে গোশত সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। আমি তা বণ্টন করে দিলাম। এরপর তিনি তার পিঠের আবরণ সম্বন্ধে আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বণ্টন করে দিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে চামড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন, আমি তা বণ্টন করে দিলাম। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ১৭১৮, ১৭০৭, ১৭১৬, ১৭১৭, ২২৯৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৬০০. ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৬০৭, মুসলিম ১৩১৭, আবূ দাউদ ১৭৬৯, আহমাদ ১২১৩, ১৩২৭, দারেমী ১৯৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩১) কুরবানীর গোশত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধঃ

কুরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোনো কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কুরবানীর গোশত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। (আহমাদ হা/১৬২৫৫-৫৬; মির‘আত ৫/১২১)।

তবে তার চামড়া বিক্রি করে শরী‘আত নির্দেশিত ছাদাক্বার খাত সমূহে দান করবে। (মির‘আত ৫/১২১; তওবা ৯/৬০)।

অনেকে কুরবানীর গোশত ফ্রিজে জমা করে পরবর্তীতে সাধারণ গোশত হিসাবে বিক্রি করেন। এগুলি প্রতারণা মাত্র। বরং তা ছওয়াবের আশায় অন্যদের মধ্যে ছাদাক্বা বা হাদিয়া হিসাবে বিতরণ করে দিতে হবে। অথবা নিজে রেখে যতদিন খুশী খাবে। তবে এলাকায় অভাব থাকলে তিনদিন পর সবটুকু বিতরণ করে দিবে। (বুখারী হা/৫৫৬৯; মুসলিম হা/১৯৭৪; মিশকাত হা/২৬৪৪ )।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কুরবানী করে, তৃতীয় দিনের পর সকালেও যেন তার ঘরে কুরবানীর গোশতের কিয়দংশও অবশিষ্ট না থাকে। রাবী (সালামাহ্) বলেন, পরবর্তী বছর আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা গত বছর যা করেছি এ বছরও কি সেভাবে করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না; তোমরা খাও, অন্যদরকেও খাওয়াও এবং (যদি ইচ্ছা কর তবে) জমা করে রেখো। কারণ গত বছর তো মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে ছিল। আর তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাদের সাহায্য করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৬৪৪, বুখারী ৫৫৬৯, মুসলিম ১৯৪৭, ইরওয়া ১১৫৬)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব সরকার, সংস্থা বা সামর্থ্যবানদের উচিত বন্যাদুর্গত বা দুর্ভিক্ষ এলাকায় বেশী বেশী কুরবানী বিতরণ করা। যাতে তারা কুরবানীর আনন্দে শরীক হ’তে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের সময় ১০০ উট কুরবানী করে বিতরণ করেছিলেন।  এই ১০০টি উটের মধ্যে রাসুল সা. নিজ হাতে ৬৩টি উট কুরবানী করেন আর বাকিগুলো আলী রা.কে দিলে তিনি সেগুলো কুরবানী করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), ২৫৫৫, মুসলিম ১২১৮, আবূ দাঊদ ১৯০৫, নাসায়ী ২৭৬১, ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৪৭০৫, দারিমী ১৮৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এছাড়া অন্য সময় তিনি ছাহাবীদের মধ্যে কুরবানীর পশু বণ্টন করতেন। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), ৪৯৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯২৪, ইসলামিক সেন্টার ৪৯২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩২) কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করা নাজায়েযঃ

কেননা আল্লাহর রাহে রক্ত প্রবাহিত করাই এখানে মূল ইবাদত। এটা না করলে তিনি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ পরিত্যাগের প্রতি ধাবিত হবেন (মির‘আত ৫/৭৩)। যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন।

ঈদ উল আজহার ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিছু আদব ও আহকাম

(ক) তাকবীর: আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরীকের দিনের শেষ পর্যন্ত, তথা যিলহজ মাসের তেরো তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর বলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে।” (বাকারা: ২০৩)।

তাকবীর বলার পদ্ধতিঃ

আল্লাহর যিকির বুলন্দ ও সর্বত্র ব্যাপক করার নিয়তে পুরুষদের জন্য মসজিদ, বাজার, বাড়িতে ও সালাতের পশ্চাতে উচ্চ স্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত।

(খ) পুরুষদের জন্য গোসল করা ও সুগন্ধি মাখা: সুন্দর কাপড় পরিধান করা, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান না করা, কাপড়ের ক্ষেত্রে অপচয় না করা। দাঁড়ি না মুণ্ডানো, কেননা এটা হারাম। নারীদের জন্য ঈদগাহে যাওয়া বৈধ, তবে আতর ও সৌন্দর্য প্রদর্শন পরিহার করবে। মুসলিম নারীদের জন্য কখনো শোভা পায় না যে সে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তাঁরই গুনাহতে লিপ্ত হয়ে ধর্মীয় কোনো ইবাদতে অংশ গ্রহণ করবে। যেমন, সৌন্দর্য প্রদর্শন, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।

বস্তুত ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা মোস্তাহাব। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। যে কারণে জুমার দিন গোসল করা মোস্তাহাব সে কারণেই ঈদের দিন ঈদের সালাতের পূর্বে গোসল করাও মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে,

ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা মালেক: ১/১৭৭)।

সায়ীদ ইবনে মুসাইয়াব রহ. বলেন: ঈদুল ফিতরের সুন্নত তিনটি: ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ঈদগাহের দিকে রওয়ানার পূর্বে কিছু খাওয়া, গোসল করা। এমনি ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার ও উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। (এরওয়ায়ুল গালীল: ২/১০৪)।

(গ) কুরবানির গোস্ত ভক্ষণ করাঃ ঈদুল আজহার দিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা খেতেন না, যতক্ষণ না তিনি ঈদগাহ থেকে ফিরে আসতেন, অতঃপর তিনি কুরবানি গোস্ত থেকে ভক্ষণ করতেন।

তাই সুন্নত হল ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা। আর ঈদুল আযহা-তে ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে,

বুরাই-দা রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন। (সহীহ ইবনে মাজাহ: হাদিস: ১৪২২)।

(ঘ) সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ ঈদগাহতেই সালাত আদায় করা সুন্নত। তবে বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে মসজিদে পড়া বৈধ, যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পড়েছেন।

ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ। যাতে ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী স্থানে বসা যায় ও ভাল কাজ অতি তাড়াতাড়ি করার সওয়াব অর্জন করা যায়, সাথে সাথে সালাতের অপেক্ষায় থাকার সওয়াব পাওয়া যাবে। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হল মোস্তাহাব। হাদিসে এসেছে,

আলী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: সুন্নত হল ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ইমাম তিরমিযি হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন হাদিসটি হাসান। তিনি আরও বলেন: অধিকাংশ আলেম এ অনুযায়ী আমল করেন। এবং তাদের মত হল পুরুষ ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাবে, এটা মোস্তাহাব। আর গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া যানবাহনে আরোহণ করবে না। (তিরমিযি: ৪৩৭)

(ঙ) মুসলিমদের সাথে সালাত আদায় করা এবং খুতবায় অংশ গ্রহণ করাঃ উলামায়ে কেরামদের প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, ঈদের সালাত ওয়াজিব। এটাই ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর”। (কাউসার: ২)।

উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়া ঈদের সালাতের ওয়াজিব রহিত হবে না। মুসলিমদের সাথে নারীরাও ঈদের সালাতে হাজির হবে। এমনকি ঋতুমতী নারী ও যুবতী মেয়েরাও। তবে ঋতুমতী নারীরা ঈদগাহ থেকে দূরে অবস্থান করবে।

(চ) রাস্তা পরিবর্তন করাঃ এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া ও অপর রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফেরা মোস্তাহাব। যেহেতু তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম করেছেন।

আর একটি সুন্নত হল যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। যেমন হাদিসে এসেছে,

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন। (বুখারি: ৯৮৬)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

জাবির (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইবনু মুহাম্মাদ (রহ.) আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহ্ইয়া (রহ.) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাযি.) হতে হাদীসটি অধিকতর বিশুদ্ধ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৯৮৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন।

(ছ) ঈদের শুভেচ্ছা জানানোঃ মুসলিমদের জাতীয় জীবনে অনাবিল আনন্দের বার্তাবাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল ঈদ। ঈদ আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা ও কৃতজ্ঞতার মাধ্যম। মানব জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে নতুন ভাবে পথ চলার অনুপ্রেরণা। দূরকে কাছে করার এবং সম্পর্কগুলোতে নতুনত্ব দেয়ারে এক চমৎকার সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ছোট একটি শুভেচ্ছা বার্তা, একটি বাক্য বা মেসেজই বিরাট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এ জন্য কোন বাক্যটি ব্যবহার করা উচিৎ আর কোনটি উচিৎ নয়-এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মাঝে একটা দ্বিধা বা সংশয় কাজ করে। তাই বিষয়টি পরিষ্কার উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি তুলে ধরা হল:

ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং শরিয়তে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ঈদ উৎসব উপলক্ষে মুসলিমদের একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানো বৈধ। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে নির্দেশনামূলক কোন (মারফু) হাদিস আসে নি। বরং সাহাবি ও তাবেঈ প্রমুখ সালাফ (পূর্বসূরীদের) থেকে সহিহ সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঈদের দিন একে অপরের সাথে সাক্ষাত হলে তারা বলতেন: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (সৎকর্মগুলো) কবুল করুন। যেমন:

মুহাম্মদ বিন যিয়াদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু উমামা আল বাহেলী রা. এবং অন্যান্য সাহাবিদের সাথে ছিলাম। তারা ঈদ থেকে ফিরে এসে একে অপরকে বলতেন, “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।[ইবনুত তুরকুমানী হাদিসটি ‘আল জাওহারাতুন নাকী হাশিয়াতুল বায়হাকী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমদ বলেন, : إسناده جيد এর সনদ ভালো।

আরও বর্ণিত হয়েছে:

ইসমাইল বিন মুহাম্মদ ইস্পাহানী (মৃত্যু: ৫৩৫) তার বিখ্যাত ‘তারগিব ওয়াত তারহিব গ্রন্থে (১/২৫১) সাফওয়ান বিন আমর আস সিকসিকী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর, আব্দুর রাহমান বিন আয়িয, জুবাইর বিন নুফাইর এবং খালিদ বিন মাদানকে বলতে শুনেছি, তাদেরকে ঈদের দিন বলা হত: “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।”  আর তারাও অন্যদেরকে তা বলতেন। এ সনদেও কোন সমস্যা নেই।

সুতরাং ঈদের দিন একে অপরকে এভাবে দুআ ও শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে তা শরিয়তের আবশ্য পালনীয় ও ইবাদতের কোন বিষয় নয়। এটি সওয়াব ও ইবাদতের বিষয় হলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যেতেন। তখন তা পালন করা উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াত এবং হাদিসে ব্যবহৃত শব্দ ছাড়া অন্য শব্দ ব্যবহারে আপত্তি আসতো। যেমন: মুসলিমদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম সালামের গুরুত্ব এবং সালামে ব্যবহৃত বাক্যাবালী সম্পর্কে বহু সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সে কারণে সালাম দেয়া যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সওয়াবের কাজ তেমনি সালামের জন্য হাদিসের বাক্য বাদ দিয়ে নতুন কোন বাক্য প্রবর্তন করা জায়েজ নয়।

মোটকথা, ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামে জায়েজ হলেও এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা বা বিশেষ কোন বাক্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আসে নি। তবে কেউ যদি সালাফদের অনুসরণে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে তাহলে নি:সন্দেহে ভালো।

জ্ঞাতব্য, এ দুআটি কেবল ঈদের সাথেই সম্পৃক্ত নয় বরং হজ্জ, উমরা ইত্যাদি যে কোন নেক আমল করার পর তা বলা জায়েজ।

”ঈদ মোবারক” বা ‘ঈদের শুভেচ্ছা/কনগ্রাচুলেশন” ইত্যাদি বলা কি বিদআত বা গুনাহের?

আল্লামা ‍মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহঃ কে প্রশ্ন করা হয়, ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি এবং এর জন্য কি বিশেষ কোন বাক্য আছে?

তিনি উত্তরে বলেন,

”ঈদের শুভেচ্ছা জানানো জায়েজ। তবে এর জন্য বিশেষ কোন শুভেচ্ছা বাক্য নেই। বরং মানুষ যে সব বাক্য বলে অভ্যস্ত সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ যদি তাতে গুনাহ না থাকে।

তিনি আরও বলেন,

ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে তারা বলতেন, ”তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” কিন্তু শরিয়তে এ বিষয়ে বিশেষ কোনও বাক্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। অতএব লোকসমাজে যে সকল বাক্য ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে সেগুলো যদি শরিয়তে নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার করা জায়েজ। কেননা শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি মানুষের রীতি-নীতির সাথে সম্পৃক্ত। এটা শরিয়তের কোন বিষয় নয়। বরং তা রীতিনীতি ও আভ্যাসগত বিষয়ের অন্তর্গত যা মানুষ নিজেদের মধ্যে প্রচলন করে নিয়েছে।

সুতরাং মানুষ যদি ”তাকাব্বালাল্লাহ” অথবা ‘দুআ করি আল্লাহ তোমার ঈদকে বরকত মণ্ডিত করুন” বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়-যেগুলো বললে পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি পায় এবং নিজেদের মাঝে দূরত্ব দূর হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ এগুলো সাধারণ রীতিনীতির বিষয়।”  (শাইখের লেকচার থেকে অনুদিত। উৎস: ইউটিউব চ্যানেল আল ওয়াহদাহ আল ইসলামিয়া আল ঊলা)।

এছাড়াও আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. সহ বড় আলেমগণ ঈদ মোবারক (ঈদ বরকতময় হোক) বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কোন আপত্তি করে নি।

পরিশেষে বলব, ঈদের শুভেচ্ছা ও দুআ সম্বলিত বাক্য ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আামদেরও আপনাদের সৎকর্মগুলো কবুল করুন) ব্যবহার করা নি:সন্দেহে উত্তম। কিন্তু ”ঈদ মোবারক” (বরকতময় ঈদ), ‘ঈদের শুভেচ্ছা, ‘কনগ্রাচুলেশন, বা এ জাতীয় শব্দ/বাক্য ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই-যতক্ষণ না তাতে শরিয়াপরিন্থী বা খারাপ অর্থবোধক কিছু থাকে। এ সব বাক্য ব্যবহার করাকে বিদআত, শরিয়া বিরোধী..গুনাহের বিষয় ইত্যাদি বলা হল দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ির শামিল ও অজ্ঞতার প্রমাণ।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং বাড়াবাড়ি থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহু আলাম।

এ দিনগুলোতে সাধারণ ঘটে যাওয়া কিছু বিদআত ও ভুল ভ্রান্তি থেকে সকলের সতর্ক থাকা জরুরী:

যেমন

(১) সম্মিলিত তাকবীর বলা:

এক আওয়াজে অথবা একজনের বলার পর সকলে সমস্বরে বলা থেকে বিরত থাকা।

(২) ঈদের দিন হারাম-নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হওয়া:

গান শোনা, ফিল্ম দেখা, বেগানা নারী-পুরুষের সাথে মেলামেশা করা ইত্যাদি পরিত্যাগ করা।

(৩) কুরবানির পশু যবেহ করার পূর্বে চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন করা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানি দাতাকে যিলহজ মাসের আরম্ভ থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

(৪) ঈদের দিনে কবর যিয়ারত করা:

কবর যিয়ারত করা শরিয়ত সমর্থিত একটি নেক আমল। কিন্তু ঈদের দিনে কবর জিয়ারত করার কোনো বিশেষত্ব নেই। ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাতে বিশেষ সাওয়াব আছে বলে বিশ্বাস করা বা ঈদের দিনে কবর যিয়ারতকে অভ্যাসে পরিণত করা বা একটা প্রথা বানিয়ে নেয়া শরিয়তসম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“তোমরা আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না...”। (আবু দাউদ: ২০৪২)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার কবরে ঈদ উদযাপন করবে না বা ঈদের স্থান বানাবে না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ২০৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) গান-বাদ্য:

ঈদের দিনে এ গুনাহের কাজটাও বেশি হতে দেখা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্র যে শরিয়তে নিষিদ্ধ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আবার যদি হয় অশ্লীল গান তাহলে তো তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত নেই। হাদিসে এসেছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল [বৈধ] মনে করবে। (বুখারি: ৫৫৯০)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

‘আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৫৫৯০, আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৬) পুরুষ কর্তৃক মহিলার বেশ-ধারণ করা ও মহিলা কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ:

পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ ও মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদিসে এসেছে,

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং ঐ সকল পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা মহিলার বেশ ধারণ করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭)।

হাদিসটি নিম্নরুপঃ

 ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন যেসব নারী পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের বেশ ধারণ করে। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), ৪০৯৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৭) অপচয় ও সীমালঙ্ঘন করা: এমন খরচ করা, যার পিছনে কোনো উদ্দেশ্য নেই, যার কোনো ফায়দা নেই, আর না আছে যার কোনো উপকার। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

“আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।” (সূরা আনআম, আয়াত: ১৪১)।

যুলহাজ্জ মাস বিষয়ক কিছু বানোয়াট কথা

এ সকল সহীহ ও যয়ীফ হাদীসের পাশাপাশি এই মাসের ফযীলতে অনেক জাল হাদীস সমাজে প্রচালিত রয়েছে। এ সকল জাল হাদীসে এ মাসের জন্য বিশেষ বিশেষ সালাত ও সিয়ামের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এ মাসের ১ম দশ দিনের ফযীলতের বিষয়েও অনেক জাল কথা তারা বানিয়েছে।

(১) যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দিনঃ

যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের অংশ হিসেবে এ দিনটির ফযীলত রয়েছে। কিন্তু জালিয়াতগণ অন্য ফযীলত প্রচার করেছে:

‘‘যুলহাজ্জ মাসের প্রথম তারিখে ইবরাহীম (আ) জন্মগ্রহণ করেন। কাজেই যে ব্যক্তি এ দিনে সিয়াম পালন করবে সে ৭০ বছর সিয়াম পালনের সাওয়াব পাবে... তার ৮০ বছরের পাপের মার্জনা হবে...। (সুয়ূতী, যাইল, পৃ. ১১৯; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/১৬৫; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ১১৯)।

(২) যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখ, ইয়াওমুত তারবিয়াঃ

যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখকে ‘ইয়াওমুত তারবিয়া’ বলা হয়। এ দিনে হজ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। হাজীগণ এ দিনে হজ্জের জন্য মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। হাজী ছাড়া অন্যদের জন্য এ দিনের বিশেষ কোনো আমল নেই। যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের অংশ হিসেবে এর মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু জালিয়াতগণ এ তারিখের দিনের ও রাতের জন্য বিশেষ সালাত ও সিয়ামের কাহিনী রচনা করেছে। ইতোপূর্বে শবে বরাত বিষয়ক জাল হাদীস আলোচনার সময় ‘তারবিয়ার’ রাত বা যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকার বিষয়ে কয়েকটি জাল বা অত্যন্ত দুর্বল হাদীস আমরা দেখতে পেয়েছি।

আরেকটি জাল হাদীসে বলা হয়েছে:

‘‘যে ব্যক্তি তারবিয়ার দিনে (যিলহাজ্জের ৮ তারিখে) সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তাকে সে পরিমাণ সাওয়াব প্রদান করবেন, যে পরিমাণ সাওয়াব আইয়ূব (আ) তার বালা-মুসিবতের কারণে লাভ করেছিলেন। (সুয়ূতী, যাইল, পৃ. ১২১; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/১৬৫; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ১২১)।

(৩) যুলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ: আরাফার দিনঃ

আরাফার দিনে সিয়াম পালনের ফযীলত আমরা জানতে পেরেছি। হাজীগণ ব্যতীত অন্য মুসলিমের জন্য এ তারিখের দিনে বা রাতে আর কোনো বিশেষ সালাত, দোয়া, যিকির বা অন্য কোনো নেক আমলের নির্ধারিত বিধান বা পদ্ধতি কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। জালিয়াতগণ এ দিনের সালাত, যিক্র, দোয়া ইত্যাদির বিষয়েও অনেক জাল কথা প্রচার করেছে।

(৪) যুলহাজ্জ মাসের বানোয়াট সালাতঃ

আমরা দেখেছি যে, যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন ও রাত অত্যন্ত গুরুত্ব পুর্ণ। এ সময়ে নফল সালাত, সিয়াম, যিক্র, দোয়া, দান ইত্যাদি সকল প্রকার ইবাদত বন্দেগি যথাসাধ্য বেশি বেশি করে পালন করা দরকার। যে যতটুকু করতে পারবেন ততটুকুর সাওয়াব পাবেন। এসকল দিনে বা যুলহাজ্জ মাসের কোনো দিন বা রাতের জন্য কোনোরূপ বিশেষ সালাত বা সালাতের বিশেষ পদ্ধতি কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই বানোয়াট। যেমন:

(ক) যুলহাজ্জ মাসের প্রথম রাত্রির সালাত: ২ রাক‘আত বা বেশি রাক‘আত ... সালাত, অমুক অমুক সূরা দ্বারা ... ইত্যাদি।

(খ) যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখ ‘ইয়াওমুত তারবিয়ার’ রাতের সালাত: ২/৪ ... ইত্যাদি রাক‘আত সালাত, অমুক অমুক সূরা দিয়ে...।

(গ) যুলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখ ‘ইয়াওমুত তারবিয়ার’ দিনের সালাত: ৬/৮ ...ইত্যাদি রাক‘আত সালাত, অমুক অমুক সূরা দিয়ে...।

(ঘ) আরাফার রাতের সালাত, ১০০ রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে অমুক সূরা... অত বার ... ইত্যাদি।

(ঙ) আরাফার দিনের সালাত, ২/৪... ইত্যাদি রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে অমুক সূরা... অত বার ... ইত্যাদি।

(চ) ঈদুল আযহার বা কুরবানীর দিনের রাতের সালাত, ১২/... ইত্যাদি রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে অমুক সূরা অত বার....।

(ছ) কুরবানীর দিন বা ঈদুল আযহার দিনের সালাত, ঈদুল আযহার পরে ২ রাক‘আত সালাত, প্রত্যেক রাক‘আতে অমুক সূরা অত বার...।

(জ) যুলহাজ্জ মাসের শেষ দিনের সালাত, দুই রাক‘আত, প্রত্যেক রাক‘আতে অমুক সূরা ও অমুক আয়াত অত বার ...।

এ সকল বানোয়াট সালাতের মধ্যে বা শেষে কিছু দোয়া বা যিক্র-এর কথাও উল্লেখ করেছে জালিয়াতগণ। তারা এ সকল সালাতের জন্য আকর্ষণীয় ও আজগুবি অনেক সাওয়াব ও ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছে। (আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ৮৭-৮৯, ১১৫-১১৭)।

৫. যুলহাজ্জ মাসের বানোয়াট সিয়ামঃ

যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন এবং বিশেষত আরাফার দিনে সিয়াম পালনের বিশেষ সাওয়াব ও মর্যাদার কথা সহীহ ও যয়ীফ হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু জালিয়াতগণ ভাবে যে, এ সকল সাওয়াবে মুসলমানদের তৃপ্তি হবে না, এজন্য উদ্ভট সব ফযীলতের বর্ণনা দিয়ে এ সকল দিনে ও অন্যান্য দিনে সিয়াম পালনের বিষয়ে অনেক জাল হাদীস বানিয়েছে।

(৬) যুলহাজ্জের শেষ দিন ও মুহার্রামের প্রথম দিনের সিয়ামঃ

একটি জাল হাদীসে বলা হয়েছে:

‘‘যে ব্যক্তি যুলহাজ্জ মাসের শেষ দিন এবং মুহার্রাম মাসের প্রথম দিন সিয়াম পালন করল, সে ব্যক্তি তার বিগত বছরকে সিয়াম দ্বারা সমাপ্ত করলো এবং আগত বছরকে সিয়াম দ্বারা স্বাগত জানালো। কাজেই আল্লাহ তার ৫০ বছরের কাফফারা বা পাপ মার্জনা করবেন।’’  (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ২/১১২; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১৯৯; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/১৪৮; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ১১৮; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/১২৯)।

এরূপ আরো অনেক আজগুবি সনদহীন বানোয়াট ও মিথ্যা কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়। (মুফতী ছামদানী, বার চান্দের ফযীলত ৪৬-৫০। অধ্যাপিকা দুলাল, নেক কানুন ৩২২-৩২৭)।

উপরের দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, জালিয়াতদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি দেখানোর একটি বড় ক্ষেত্র হলো সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক বিভিন্ন প্রকারের নেক আমলের ফযীলতের বিষয়ে জাল হাদীস তৈরি করা। এর বড় কারণ হলো, এ ধরনের জাল কথা সহজেই সরলপ্রাণ মুসলমানদের মন আকৃষ্ট করে এবং এগুলো দিয়ে সহজেই সরলপ্রাণ বুযুর্গ ও লেখকগণকে ধোকা দেওয়া যায়। তাঁরা আমল ভালবাসেন এবং আমলের ফযীলত বিষয়ক হাদীসগুলো সরল মনে গ্রহণ করেন।

এ জাতীয় জাল কথা প্রচলিত হওয়ার কারণও এটাই। অন্যান্য জাল কথার চেয়ে আমলের ফযীলত বিষয়ক জাল কথা প্রসিদ্ধি লাভের কারণ হলো, অনেক বুযুর্গ ওয়ায়িয, দরবেশ বা লেখক এগুলোর মধ্যে ফযীলতের আধিক্য দেখে সরল মনে এগুলোকে গ্রহণ করেছেন এবং সাধারণ মানুষদের আকৃষ্ট করার জন্য এগুলি মুখে বলেছেন বা বইয়ে লিখেছেন। আর, একবার একজন লিখলে সাধারণত পরবর্তী লেখকগণ সেগুলো থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করতে থাকেন। অনেকেই যাচাই বাছাই করার সময় পান না। অনেকে ভাবেন, যাই হোক, এর দ্বারা তো কিছু মানুষ আমল করছে। ভালই তো!!

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, অনেক বুযুর্গ এগুলোর উপর আমল করেছেন, অনেকে ফল ও প্রভাব লাভ করেছেন। অনেকে এগুলো তাদের ওয়াযে বলেছেন বা বইয়ে লিখেছেন- তাঁরা কি সবাই গোনাহগার হবেন?

এখানে আমাদের বুঝতে হবে যে, এ সকল জাল হাদীসে সাধারণত, সালাত, সিয়াম, যিক্র, দোয়া, দান ইত্যাদি শরীয়ত সম্মত নেক আমলের উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। মুমিনের দায়িত্ব হলো, নফল সালাত, সিয়াম, যিক্র, দোয়া ইত্যাদি সকল প্রকার দৈনন্দিন, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক নেক আমল নিয়মিত পালন করা। এ হলো রাসূলুল্লাহ () ও তাঁর সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসারী সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি তাবিয়ী ও বুযুর্গগণের রীতি ও তরী‘কা। এরপর সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মর্যাদাময় দিন ও রাতগুলিতে অতিরিক্ত ইবাদতের চেষ্টা করা। এ সকল মিথ্যা ও জাল হাদীস সাধারণত মুমিনকে সহীহ সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত ইবাদত থেকে দূরে নিয়ে যায়, অকারণ পরিশ্রম ও কষ্টের মধ্যে নিপতিত করে এবং সুন্নাত বিরোধী বিভিন্ন রীতি পদ্ধতির মধ্যে নিমজ্জিত করে। এ ছাড়া যে কোনো কথা শুনে বা পড়েই তাকে হাদীস বলে মেনে নেয়া, হাদীসের কোন্ গ্রন্থে সংকলিত আছে তা অন্তত যাচাই করার চেষ্টা না করা রাসূলুল্লাহ () এর নির্দেশনার বিরোধী ও দীনের বিষয়ে অবহেলার শামিল। এরপরও যারা অসাবধানতা, সরলতা বা অজ্ঞতা বশত এগুলোকে সঠিক মনে করে এগুলোর উপর আমল করেছেন, তারা এ সকল জাল হাদীসে বর্ণিত জাল ও বানোয়াট সাওয়াব পাবেন না, তবে মূল নেক আমালের সাধারণ সাওয়াব লাভ করবেন বলে আশা করা যায়।

কিন্তু যদি কেউ এগুলোকে জাল বলে জানার বা শোনার পরেও এগুলো বলেন, লিখেন বা পালন করেন, এ বিষয়ে কোনো তাহকীক বা যাচাই করতে আগ্রহী না হন, তবে অবশ্যই তিনি রাসূলুল্লাহ ()-এর নামে মিথ্যা বলার অপরাধে অপরাধী হবেন।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

==============================================

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...