বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
স্পেনে মুসলমানদের উত্থান-পতন এবং পৃথিবীতে মহাবিপর্যয়ের কারণ
(সমসাময়িক বাস্তবভিত্তিক আলোচনা)
সূচিপত্রঃ
(১) স্পেনে মুসলমানদের উত্থান পতন আলোচনা।
(২) মুসলমানদের পরাজয় ও এপ্রিল-ফুলের নানান কথা।
(৩) স্পেনের গীর্জায় রূপান্তরিত পাঁচ মসজিদ।
(৪) মুসলমানদের ইমানি শক্তি যেভাবে নষ্ট করা হয়েছিল। (সহিহ হাদিস ভিত্তিক
আলোচনা)
(৫) আল্লাহর দরবারে নির্যাতিত মুসলমানদের কেনো দোয়া কবুল হচ্ছে না।
(৬) পৃথিবীতে মহাবিপর্যয়/ মহামারী কেনো আসে?
(৭) শেষ কথা।
স্পেনে মুসলমানদের উত্থান পতন আলোচনা
ইউরোপের সর্ব পশ্চিম উপদ্বীপ আইবেরিয়া, যা
স্পেন ও পর্তুগাল দ্বারা গঠিত। এই উপদ্বীপের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত “জিব্রাল্টার”। এই
নামের সাথেই জড়িত রহিয়াছে ইউরোপে মুসলিমদের আগমন ও ইতিহাস। “জিব্রাল্টার” নামটি আসে
মুসলিম বীর সেনাপতি তারেক বিন জায়েদ-এর নাম থেকে। মুসলিম এই বীর সেনাপতির হাত ধরেই
হয় মুসলমানদের ইউরোপ বিজয়ের সূচনা।
সাল ৭১১ খ্রিস্টাব্দে, মাত্র ৭ হাজারের এক
ছোট বাহিনী ৪ জাহাজ নিয়ে স্পেন অভিযানে বের হন। বীর সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ স্পেনের
সমুদ্র তীরে অবতরণ করেই তার সব জাহাজ পুড়িয়ে ফেলেন। তখন তিনি তার সাথীদের বললেন, এখন
আমাদের পশ্চাতে উত্তাল সমুদ্র আর সম্মুখে শত্রুরাজ। শত্রুরাজ জয় করে সম্মুখে অগ্রসর
হওয়া এবং শত্রু সৈন্যদের পিছু হটিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নেই। এ কাজ আমরা যত
দ্রুত, সাহসিকতার সাথে করবো ততই উত্তম। অলসতা, ভিরুতা ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই আনে না।
স্পেনের অবতরণের পরপরই স্পেনের রাজা রডরিকের এক সেনাপতির মোকাবিলা করতে হয়। তারিক তাকে
শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে পালাতে বাধ্য করে। পরাজয়ের সংবাদ রাজা রডরিককে জাননো হলে বিপুল
প্রস্তুতি নিয়ে তারিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।
রাজা রডারকের শাসনামল ছিল স্পেনের জন্যে এক
দুঃস্বপ্নের কাল। জনগণ ছিল রডারিক ও গথ সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের অসহায় শিকার। মরণের আগে
স্বাধীনতা ভোগের কোনো আশা তাদের ছিল না। তারেকের অভিযানের ফলে মুক্তির পথ বেরুবে, এই
ছিল সাধারণ মানুষের ভাবনা। তারা তারেক বিন জিয়াদকে আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করল ৩০ এপ্রিল,
৭১১ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার। রডারক পলায়নের সময় নিমজ্জিত হয়ে মারা যায় গুয়াডেল কুইভারের
পানিতে। এরপর জনগণের সহযোগিতায় মুসলমানরা একে একে অধিকার করলেন মালাগা, গ্রানাডা, কর্ডোভা।
অল্পদিনেই অধিকৃত হলো থিয়োডমির শাসিত সমগ্র আলজিরিয়াস। এদিকে আরেক সেনাপতি মুসা বিন
নুসাইর পূর্বদিকের সমুদ্র পথ ধরে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে আবিষ্কার করেন সেভিল ও
মেরিজ। তিনিও স্পেনের বিভিন্ন শহর অধিকার করে টলেডোতে গিয়ে মিলিত হলেন তারিকের সঙ্গে।
তারপর তারা এগিয়ে যান আরাগনের দিকে। জয় করেন সারাগোসা, টারাগোনা, বার্সেলোনা এবং পিরেনিজ
পর্বতমালা পর্যন্ত গোটা স্পেন।
তারপর মুসা বিন নুসাইর পিরিনিজ পর্বতে দাঁড়িয়ে
সমগ্র ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন আঁকছিলেন আর স্পেন থেকে বিতাড়িত গথ সম্প্রদায়ের নেতারা পিরিনিজের
ওপারে স্পেন পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা আঁটছিলেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ইউরোপের খ্রিস্টান
নেতারা। মুসলমানরা পিরেনিজ অতিক্রম করে ফ্রান্সের অনেক এলাকা জয় করেন। কিন্তু অ্যাকুইটেনের
রাজধানী টুলুর যুদ্ধে ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়ে তারা বুঝতে পারলেন যে, অসির পরিবর্তে মসির
যুদ্ধের মাধ্যমেই ইউরোপ জয় করা সহজতর। এরপর মুসলমানদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের
চর্চা ও বিস্তারে। তারা সেই যুদ্ধে সফল হন এবং প্রণিধানযোগ্য ইতিহাস তাদের বিজয়কে স্বীকৃতি
দিয়েছে। অপরদিকে খ্রিস্টীয় শক্তি পুরনো পথ ধরেই হাঁটতে থাকে। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩
মে মাসারার যুদ্ধের পর থেকে স্পেনের ওপর তাদের নানামুখী আগ্রাসন ও সন্ত্রাস চলতে থাকে।
ফলে স্পেনের নিরাপত্তা হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু স্পেনের ভেতরে পচন ধরার প্রাথমিক
সূত্রগুলো তৈরি হচ্ছিল ধীরে ধীরে। সমাজের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক বোধ ও সচেতনতা
ধীরে ধীরে হারাতে শুরু করছিল। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র বিভাজনের কাণ্ডজ্ঞান
থেকে সরে আসছিল দূরে। এদিকে ইউরোপের আকাশে ক্রুসেডের গর্জন শোনা যাচ্ছে। স্পেনের বিরুদ্ধে
যে আক্রোশ কাজ করছিল সেটাই তিনশ’ বছরে পরিপুষ্ট হয়ে ১০৯৭ সালে গোটা ইসলামী দুনিয়ার
বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে ভয়াবহ তুফানের মতো। ১০৯৮-এর জুনে এন্টিয়ক দখলের সাফল্যজনক কিন্তু
নৃশংস ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠা এ তুফান ১২৫০ সালে অষ্টম ক্রুসেডের পরিসমাপ্তির
পর স্পেনের দিকে মোড় ঘোরায়। স্পেনে তখন সামাজিক সংহতি ভঙ্গুর। খ্রিস্টান গোয়েন্দারা
ইসলাম ধর্ম শিখে আলেম লেবাসে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও করছে। তাদের কাজ ছিলো স্পেনের
সমাজ জীবনকে অস্থিতিশীল ও শতচ্ছিন্ন করে তোলা।
১৪৬৯ সালে ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা স্পেনে মুসলিম
সভ্যতার অস্তিত্বকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৪৮৩ সালে ফার্ডিনান্ড
ও ইসাবেলা একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী পাঠান মালাগা প্রদেশে। যাদের প্রতি হুকুম ছিল
শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দেয়া, জলপাই ও দ্রাক্ষা গাছ কেটে ফেলা, সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ধ্বংস
করা, গবাদিপশু তুলে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সেই সময় মৃত্যু ঘটে স্পেনের শাসক আবুল হাসান
আলীর। শাসক হন আজজাগাল। এক পর্যায়ে প্রাণরক্ষা ও নিরাপত্তার অঙ্গীকারের ওপর নগরীর লোকেরা
আত্মসমর্পণ করলেও নগরী জয় করেই ফার্ডিনান্ড চালান গণহত্যা। দাস বানিয়ে ফেলেন জীবিত
অধিবাসীদের। এরপর ফার্ডিনান্ড নতুন কোনো এলাকা বিজিত হলে বোয়াবদিলকে এর শাসক বানাবে
বলে অঙ্গীকার করে। ৪ ডিসেম্বর ১৪৮৯। আক্রান্ত হয় বেজার নগরী। আজজাগাল দৃঢ়ভাবে শত্রুদের
প্রতিহত করলেন। কিন্তু ফার্ডিনান্ডের কৌশলে খাদ্যাভাব ঘটে শহরে। ফলে শহরের অধিবাসী
নিরাপত্তা ও প্রাণরক্ষার শর্তে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু তাদের ওপর চলে নৃশংস নির্মমতা।
আজজাগাল রুখে দাঁড়ালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে করা হয় আফ্রিকায় নির্বাসিত।
ডিসেম্বর ১৪৯১-এ গ্রানাডার আত্মসমর্পণের শর্ত
নির্ধারিত হলো। বলা হলো : ‘ছোট-বড় সব মুসলমানের জীবনের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে।
তাদের মুক্তভাবে ধর্ম-কর্ম করতে দেয়া হবে। তাদের মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অক্ষত থাকবে।
তাদের আদবকায়দা, আচার-ব্যবহার, রাজনীতি, ভাষা ও পোশাক-পরিচ্ছদ অব্যাহত থাকবে। তাদের
নিজেদের আইনকানুন অনুযায়ী তাদের প্রশাসকরা তাদের শাসন করবেন ...।’ আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে
আওয়াজ তুললেন মুসা বিন আকিল। তিনি বললেন, গ্রানাডাবাসী! এটা একটা প্রতারণা। আমাদের
অঙ্গারে পরিণত করার জ্বালানি কাঠ হচ্ছে এ অঙ্গীকার। সুতরাং প্রতিরোধ! প্রতিরোধ!! কিন্তু
গ্রানাডার দিন শেষ হয়ে আসছিল। ১৪৯২ সালে গ্রানাডাবাসী আত্মসমর্পণ করলো।
রানী ইসাবেলা ও ফার্ডিনান্ডের মধ্যে শুরু হলো
চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা। চারদিকে চলছিল ভয়াবহ নির্যাতন। পাইকারি হারে হত্যা বর্বরতার
নির্মম শিকার হতে থাকলেন অসংখ্য মুসলমান। স্পেনের গ্রাম ও উপত্যকাগুলো পরিণত হয় মানুষের
কসাইখানায়। যেসব মানুষ পর্বতগুহায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরও মেরে ফেলা হলো আগুনের ধোঁয়া
দিয়ে। পহেলা এপ্রিল, ১৪৯২। ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করলেন, যেসব মুসলমান গ্রানাডার মসজিদগুলোতে
আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। লাখ লাখ মুসলমান আশ্রয় নিলেন মসজিদগুলোতে। ফার্ডিনান্ডের
লোকেরা সবগুলো মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিলো। তিনদিন পর্যন্ত চললো হত্যার উৎসব। ফার্ডিনান্ড
লাশ পোড়া গন্ধে অভিভূত হয়ে হাসলেন। বললেন, হায় মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা (এপ্রিল
ফুল)।
এই গণহত্যার পরও যেসব মুসলমান আন্দালুসিয়ায়
রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফার্ডিনান্ডের ছেলে তৃতীয় ফিলিপ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় সমুদ্রপথে
নির্বাসিত করেন। তাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখেরও বেশি। ইতিহাস বলে, তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক
লোকই জীবিত ছিলেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সমুদ্রের গহিন অতলে হারিয়ে যান চিরদিনের জন্য।
এভাবেই মুসলিম আন্দালুসিয়া আধুনিক স্পেনের জন্ম দিয়ে ইতিহাসের দুঃখ হয়ে বেঁচে আছে।
সেই বেঁচে থাকা বোয়াবদিলদের বিরুদ্ধে ধিক্কাররূপে ফার্ডিনান্ডের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদরূপে।
১৫০২ ঈসায়ীতে সমগ্র স্পেনে ইসলামি বিশ্বাসকে
বেআইনি ঘোষণা করা হয়। অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান তখন উত্তর আফ্রিকায় হিজরত করে। যারা স্পেনে
ছিলো, তারাও তাদের বিশ্বাসকে গোপন করতে বাধ্য হয়। ১৬০০ ঈসায়ীর মধ্যে স্পেন সম্পূর্ণ
রূপে মুসলিম শূন্য হয়ে পরে।
দুনিয়ার ইতিহাস কী আর কোনো আন্দালুসিয়ার নির্মম
ট্র্যাজেডির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল? সম্ভবত হয়নি এবং হতে চায় না কখনও। স্পেন হয়ে আছে
মুসলিম উম্মাহর শোকের স্মারক। পহেলা এপ্রিল আসে সেই শোকের মাতম বুকে নিয়ে। শোকের এই
হৃদয়ভাঙা প্রেক্ষাপটে মুসলিম জাহানের জনপদে জনপদে আন্দালুসিয়ার নির্মমতার কালো মেঘ
আবারও ছায়া ফেলছে। এশিয়া-আফ্রিকাসহ সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে মুসলিম নামধারী একশ্রেণির
বিশ্বাসঘাতক বোয়াবদিল এবং ক্রসেডীয় উন্মত্ততার প্রতিভূ ফার্ডিনান্ডদের যোগসাজশ। আন্দালুসিয়ার
মুসলমানদের করুণ পরিণতি যেন ধেয়ে আসতে চায় এই মানচিত্রের আকাশেও। এ জন্য পূর্ব প্রস্তুতি
হিসেবে সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপর্যয়ের প্রলয়বাদ্য চলছে।
স্পেনে মুসলিমদের হারানো “আল-হামরা”
ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-সভ্যতার অনন্য
অধ্যায় স্পেনের ‘আন্দালুস’। এ নগরীর গর্ব আল-হামরা। আরবি ‘কিলআতু আল হামরা’—অর্থাৎ
লালকেল্লা বা বহুল প্রচলিত ‘আল-হামরা প্যালেস’। সৌন্দর্য-সুষমায় আল্লাহ তাআলা ‘আল-হামরা’কে
অতুলনীয় করে রেখেছেন। বিশ্ববাসীর কাছে তা আজও অপার বিস্ময় ও সৃজনসম্ভার হিসেবে পরিচিত।
মুহাম্মদ ইবনে নাসর গ্রানাডা জয় করার পর তিনি
তার আবাসন ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে “আল-হামরা” প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী ৩০০ বছরে
বিভিন্ন মুসলিম শাসকের পরিকল্পনা ও পরিচর্যায় আল-হামরার নান্দনিকতা ও পরিব্যাপ্তি বৃদ্ধি
পেয়ে যশ-খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।
মাদ্রিদের ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে দারু নদীর
তীরে সবুজ-শ্যামল এক পাহাড়ে অবস্থিত ‘আল-হামরা’ প্যালেস। মুহাম্মদ ইবনে নাসর প্রাসাদটির
নাম দেন আল-হামরা—অর্থাৎ লাল প্রাসাদ। কেননা তিনি যখন ওই প্রাসাদে প্রবেশ করেন, তখন
তার দাড়ির রং ছিল লাল।
মুহাম্মদ ইবনে নাসর যখন বিজয়ীর বেশে গ্রানাডায়
প্রবেশ করেন, তখন তাকে স্বাগত জানিয়ে সমবেত জনতার উল্লাসধ্বনি ছিল মারহাবান লিন-নাসর—অর্থাৎ
‘আল্লাহর কৃপায় বিজয়ীকে সুস্বাগত’। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘লা গালিবা ইল্লাল্লাহ’—অর্থাৎ
‘অন্য কেউ বিজয়ী নয়, যদি না আল্লাহ চান। পরবর্তী সময়ে ‘লা গালিবা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যটি
নাসরি বংশের স্লোগান হয়ে যায়। আল-হামরার অলংকরণে এ বাক্যটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
মুহাম্মদ ইবনে নাসরের বিজয় নিয়ে দেশে দেশে
প্রচলিত হয় অসংখ্য গীতিকবিতা ও গল্পগাথা। আল-হামরার দেয়ালে দেয়ালে স্বর্ণ ও পাথরে খোদাই
করা আরবি ক্যালিগ্রাফির অনুপম শিল্পনিদর্শন অত্যন্ত বিস্ময়কর ও দৃষ্টিনন্দন। পবিত্র
কোরআন, হাদিস, আরবি কবিতা ও উপদেশাবলি আল-হামরার কক্ষ, খুঁটি, মিনার ইত্যাদিকে সুশোভিত
করেছে। এ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে শত শত মণ স্বর্ণ, মূল্যবান হীরকখণ্ড ও মণি-মুক্তা। যে
মালভূমিতে আল হামরা অবস্থিত, তার দৈর্ঘ্য ৭৪০ মিটার (দুই হাজার ৪৩০ ফুট), প্রস্থ ২০৫
মিটার (৬৭০ ফুট)। প্রাসাদটি পশ্চিমে উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্বে দক্ষিণ-পূর্বে প্রসারিত
এবং প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার (১৫ লাখ ৩০ হাজার ফুট) এলাকাজুড়ে অবস্থিত।
মধ্যযুগের আরব সাহিত্য-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শাসনের
সুদৃঢ় ভিত্তি ও সৌন্দর্যের স্মারক হিসেবে ২ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে আল হামরাকে ইউনেসকো মানবতার
সাংস্কৃতিক বিশ্ব-ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে।
প্রায় পাঁচ হাজার মিল-কারখানা ছিল শুধু কর্ডোভায়ই;
অথচ তখন ইউরোপে একটিও ছিল না। তখন ইউরোপের ৯৯ শতাংশ লোক অশিক্ষিত ছিল। পক্ষান্তরে শুধু
কর্ডোভায়ই ছিল ৮০০টি পাবলিক স্কুল।
তৎকালের ইউরোপে গোসলখানার ধারণাই ছিল না। অথচ
তখন মুসলমানরা কর্ডোভায় ৯০০ হামামখানা বা গণগোসলখানা বানিয়েছিলেন।
দশম শতকে কর্ডোভায় ছিল ৭০০ মসজিদ, ৬০ হাজার
প্রাসাদতুল্য বাড়ি। ছিল ৭০টি লাইব্রেরি, যার সবচেয়ে বড়টিতে ছিল ছয় লাখ গ্রন্থ। সে সময়
আন্দালুসিয়ায় বছরে ৬০ হাজার বইপত্র ও পুস্তিকা প্রকাশিত হতো। অথচ ইতিহাসের নির্মম সত্য
হলো, আজ স্পেনে মুসলমানদের অস্তিত্ব-সংকট বিদ্যমান।
এরপরই নেমে আসে স্পেনে মুসলিম নিধনের কালো
অধ্যায়। শর্ত দেওয়া হয়, ধর্মান্তর নয়তো মৃত্যু। ঘোষণা করা হয়, যারা মসজিদে আশ্রয় নেবে,
যারা জাহাজে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ। এতে সরল বিশ্বাসে নিরীহ মুসলমানরা মসজিদে ও জাহাজে
আশ্রয় নেন। তখনই ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলার সৈন্যরা মসজিদের চারপাশে আগুন লাগিয়ে এবং জাহাজ
ডুবিয়ে দিয়ে এক পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। আর এতে শহীদ হন নিরপরাধ অসংখ্য মুসলিম নর-নারী।
পরাজয়ের ধারায় মুসলিম শাসক আবু আবদুল্লাহ যখন
বিজয়ীদের হাতে আল হামরার চাবি তুলে দেন, তখন তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। এ কান্না দেখে আবদুল্লাহর
মা বলেছিলেন ‘পুরুষের মতো যা রক্ষা করতে পারোনি তুমি, তার জন্য নারীর মতো কাঁদতে পারো
না।’
আজকের স্পেন সব ঘটনার নীরব সাক্ষী। শুধু আল-হামরার
দেয়াল ও মসজিদের গম্বুজে আল্লাহর নাম চিত্রিত করলেই তার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না।
প্রায় ৮০০ বছরের শাসনাবসানে আজ স্পেনের বুকে জ্বলজ্বল করছে শুধু মুসলিম শাসকদের পরাজয়
ও পরাধীনতার দুর্ভাগ্যরেখা, গ্লানি ও কলঙ্কের দাগ।
হারিয়ে গেছে আল হামরার ধ্রুপদি দ্যুতি ও সম্মান-বিভা।
নেই স্পেনের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো মুসলমান। আছে শুধু স্মৃতিময় গ্রানাডা ও কর্ডোভা।
বিশ্বমানচিত্রে অঙ্কিত ইউরোপীয় দেশ স্পেন ছিল
মুসলমানদের গর্বের আন্দালুস (হারানো ‘ফিরদাউস’)। এখন যা শুধুই অতীতের স্মৃতিমেদুর দীর্ঘশ্বাস।
মুসলমানদের পরাজয় ও এপ্রিল-ফুলের নানান কথা
প্রতি বছর এপ্রিলের এক তারিখ আসলে একটা কাহিনী
ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় যে, খৃষ্টানরা মুসলমানদেরকে এপ্রিলের এক তারিখে বোকা
বানিয়ে মসজিদে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। খৃষ্টানরা মুসলমানদেরকে অনেক অন্যায় অত্যাচার
করাসহ আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল যা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। তবে এপ্রিলের ১ তারিখ কিনা
সেটা নিয়ে নানান জনে নানান তথ্য প্রদান করে। আসুন আমরা সব তথ্যগুলো একবার জেনে নেই।
থিওরি ১- ক্যালেন্ডার থিওরিঃ
এটাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাহিনী।
১৫৬৪ সালে ফ্রান্স তাদের ক্যালেন্ডার চেঞ্জ
করে। এর আগে বছর শুরু হত মার্চের শেষে। কিন্তু এটা এগিয়ে নিয়ে আসা হয় আর বছর শুরু করা
হয় ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু নতুন এই চেঞ্জ অনেকেই মানতে পারলেন না। তারা এই সিদ্ধান্তে
অটল থাকলেন যে, ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত তারা আগের মতই নববর্ষ পালন করবে। কিন্তু
যারা পরিবর্তন গ্রহণ করেছিল তারা ওদের সাথে মজা লুটতে চাইল। যারাই তখন নববর্ষ করতে
চেয়েছে তাদের পিঠে পেপার ফিশ (Paper Fish) লাগিয়ে দিয়েছে। সেই তখন থেকে ভিক্টিমদের
বলা হত Poisson d'Avril বা এপ্রিল ফিশ। এমনকি এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে এ নামেই তাদের ডাকা
হয় যারা এই দিনে বোকা বনে যায়...
আপাত দৃষ্টিতে এই কাহিনী গ্রহণযোগ্য মনে হলেও
ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এই কাহিনীর ত্রুটি ধরা পড়ে।
থিওরি ২- রোমান মিথঃ
রোমান মৃত্যু দেবতা প্লুটো যখন তাঁর
"স্ত্রী" পারসিফন-কে অপহরণ করে আনলেন, তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে অনেক
খুঁজতে চেষ্টা করেন। কিন্তু, বোকার মত অনেক খুঁজেও পেলেন না মেয়েকে। কারণ, মেয়ে তখন
আন্ডারওয়ার্ল্ডে। মাটির উপরে না। সেরিসের বোকামি স্মরণ করে ১ এপ্রিল বোকামি দিবস পালন
করা হত বলে অনেকে মনে করেন।
থিওরি ৩- বাইবেলিকাল মিথঃ
নূহ (আ) এর কাহিনী থেকে এই থিওরি এসেছে। নূহ
(আ) যখন দেখলেন পানি কমছে না, তখন তিনি একটি কবুতর পাঠান দেখার জন্য কবুতর ফিরে আসে
কিনা, ফিরে আসলে সেটা হবে ডাঙ্গা খোঁজার একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ডাঙ্গা পেলে কবুতর
ফিরবে না।কিন্তু, কবুতর ফিরে এল। নূহ (আ) "বোকা" বনে গেলেন। এটা স্মরণ করে
এপ্রিল ফুল পালন করা হত বলে কেউ কেউ বলেছেন।
থিওরি ৪- ব্রিটিশ গথাম থিওরিঃ
ব্রিটিশ লোককথা বলে, ব্রিটেনের নটিংহ্যামশায়ারের
"গথাম" শহর ছিল বোকাদের শহর। এখানে খালি বোকারা বাস করত। ১৩শ শতকের দিকে
নিয়ম ছিল, ব্রিটেনের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি।
যখন গথামের বাসীরা শুনল রাজা জন আসছেন এ শহরে, তারা বলল, তাঁকে ঢুকতে দিবে তারা না,
তারা কিছুতেই গথামকে হারাবে না। রাজা ক্ষেপে গেলেন, সৈন্য পাঠালেন।
যখন সৈন্য এল শহরে, মেইন গেইট থেকে তারা দেখল
সারা শহরে হুলস্থূল কাণ্ড। সব বাসিন্দা বোকার মত কাজ করছে। কী কী বোকামি সেগুলো লিস্ট
না করি। কিন্তু তারা ফিরে গিয়ে এমন রিপোর্ট দিল, যে, রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি
দেয়া যায় না। তাই, তিনি মাফ করে দিলেন। গথাম স্বাধীন থাকল।
গথামবাসীদের "ট্রিক" স্মরণ করা হয়
এপ্রিলের ১ তারিখ।
থিওরি ৫- জার্মান থিওরিঃ
১৫৩০ সালের ১ এপ্রিল, জার্মানির অগসবারগ শহরে
একটা আইন বিষয়ক মিটিং হবার কথা ছিল। এই মিটিং এর ফলাফল নিয়ে অনেক মানুষ অনেক টাকা বাজিকরের
কাছে জমা রাখে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ঐদিন মিটিং হয়নি। বাজিকর টাকা ফেরৎ দেয়নি। সব টাকা
গচ্চা যায়। এই বোকামি একটা উৎস হতে পারে এপ্রিল ফুলের।
থিওরি ৬- হল্যান্ডের থিওরিঃ
১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল। এদিন, হল্যান্ডের ডেন
ব্রিএল শহরটাকে লর্ড আল্ভার স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত করে ডাচ বিদ্রোহীরা। এইদিন তারা
লর্ড আল্ভাকে পুরো বোকা বানিয়ে ছাড়ে। পহেলা এপ্রিলে আল্ভার বোকামি স্মরণ করে এপ্রিল
ফুল পালন করা হয়।
মূলত, এই ঘটনার পর অনেক জায়গায় বিদ্রোহ সোচ্চার
হয় আর স্পেইনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় হল্যান্ড। পহেলা এপ্রিলের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ
স্মরণে একটি পোস্টকার্ড-
থিওরি ৭ - AntiMuslim Theory:-
উপরের ৬টা থিওরি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত। কিন্তু
এই ৭ নাম্বার থিওরি কেবল মূলত মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত। স্প্যানিশ খ্রিস্টানরা মুসলিমদের
সাথে কী জঘন্য কাজ "করেছিল" সেটা বুঝানো হয়েছে এই থিওরিতে। বিশাল এক কাহিনী
আছে এটাতে।
৭১১ খ্রীষ্টাব্দের অক্টোবরে মুসলমানরা কর্ডোভা
জয় করেন। মুসলমানরা স্পেন জয় করার পর প্রথমে সেভিল (Seville) কে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা
করে। কিন্তু সোলাইমান ইবনু আব্দিল মালিকের যুগে স্পেনের গভর্ণর সামাহ বিন মালেক খাওলানী
রাজধানী সেভিল থেকে কর্ডোভায় স্থানান্তরিত করেন। এরপর এই কর্ডোভা শতাব্দীর পর শতাব্দী
স্পেনের রাজধানী হিসাবে থেকে যায়। এভাবে পযার্য়ক্রমে বৃহত্তর স্পেন মুসলমানদের নেতৃত্বে
চলে আসে। ইসলামী শাসনের শাশ্বত সৌন্দর্য ও ন্যায় বিচারে মুগ্ধ হয়ে হাযার হাযার মানুষ
ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্প-সভ্যতার
ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হ’তে থাকে।
এদিকে ইউরোপীয় খ্রীষ্টান রাজাদের চক্ষুশূলের
কারণ হয় মুসলমানদের এই অগ্রগতি। ফলে ইউরোপীয় মাটি থেকে মুসলিম শাসনের উচ্ছেদ চিন্তায়
তারা ব্যাকুল হয়ে উঠে। অতঃপর আরগুনের ফার্ডিন্যান্ড এবং কাস্তালিয়ার পর্তুগীজ রাণী
ইসাবেলা এই দু’জনই চরম মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান নেতা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
তাঁরা সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের উপর আঘাত হানবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
তারা মুসলমানদের দুর্বলতার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এমন এক মুহূর্তে ১৪৮৩ সালে আবুল হাসানের
পুত্র আবু আব্দিল্লাহ বোয়াবদিল খ্রীষ্টান শহর লুসানা আক্রমণ করে পরাজিত ও বন্দী হন।
এবার ফার্ডিন্যান্ড বন্দী বোয়াবদিলকে গ্রানাডা ধ্বংসের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে।
একদল সৈন্য দিয়ে বোয়াবদিলকে প্রেরণ করে তাঁরই পিতৃব্য আল-জাগালের বিরুদ্ধে। বিশ্বাসঘাতক
বোয়াবদিল ফার্ডিন্যান্ডের ধূর্তামি বুঝতে পারেননি এবং নিজেদের পতন নিজেদের দ্বারাই
সংঘটিত হবে এ কথা তখন তার মনে জাগেনি। খ্রীষ্টানরাও উপযুক্ত মওকা পেয়ে তাদের লক্ষ্যবস্ত্তর
উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পরিকল্পনা কার্যকর করতে থাকে। বোয়াবদিল গ্রানাডা আক্রমণ করলে
আজ-জাগাল উপায়ন্তর না দেখে মুসলিম শক্তিকে টিকিয়ে রাখার মানসেই বোয়াবদিলকে প্রস্তাব
দেন যে, গ্রানাডা তারা যুক্তভাবে শাসন করবেন এবং সাধারণ শত্রুদের মোকাবেলার জন্য লড়াই
করতে থাকবেন। কিন্তু আজ-জাগালের দেয়া এ প্রস্তাব অযোগ্য ও হতভাগ্য বোয়াবদিল প্রত্যাখ্যান
করেন। শুরু হয় উভয়ের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
ফার্ডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের এই
আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের সুযোগ গ্রহণ করে গ্রাম-গঞ্জের নিরীহ মুসলিম নারী-পুরুষকে হত্যা
করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে দিতে ছুটে আসে শহরের দিকে। অতঃপর রাজধানী গ্রানাডা
অবরোধ করে। এতক্ষণে টনক নড়ে মুসলিম সেনাবাহিনীর। তারা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে। তাতে ভড়কে
যায় সম্মিলিত কাপুরুষ খ্রীষ্টান বাহিনী। সম্মুখ যুদ্ধে নির্ঘাত পরাজয় বুঝতে পেরে তারা
ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় শহরের বাইরের সকল শস্য খামার এবং
বিশেষ করে শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান উৎস ‘ভেগা’ উপত্যকা। ফলে অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে
আসে শহরে। খাদ্যাভাবে সেখানে হাহাকার দেখা দেয়। এই সুযোগে প্রতারক খ্রীষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড
ঘোষণা করে, ‘মুসলমানেরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে
আশ্রয় নেয়, তাহ’লে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে। আর যারা খ্রীষ্টান জাহাজগুলোতে
আশ্রয় নিবে, তাদেরকে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অন্যথা আমার হাতে তোমাদেরকে
প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে’।
দুর্ভিক্ষতাড়িত অসহায় নারী-পুরুষ ও মাছুম বাচ্চাদের
কচি মুখের দিকে তাকিয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ সেদিন খ্রীষ্টান নেতাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে
শহরের প্রধান ফটক খুলে দেন ও সবাইকে নিয়ে আল্লাহ্র ঘর মসজিদে আশ্রয় নেন। কেউবা জাহাজগুলোতে
আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু শহরে ঢুকে খ্রীষ্টান বাহিনী নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে মসজিদে
আটকিয়ে বাহির থেকে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর একযোগে সকল মসজিদে আগুন লাগিয়ে
বর্বর উল্লাসে ফেটে পড়ে নরপশুরা। আর জাহাজগুলোকে মাঝ দরিয়ায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। কেউ উইপোকার
মত আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল, কারো হ’ল সলিল সমাধি। প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধীভূত
৭ লক্ষাধিক অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের আর্তচিৎকারে গ্রানাডার আকাশ-বাতাস যখন
ভারী ও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল, তখন হিংস্রতার নগ্নমূর্তি ফার্ডিন্যান্ড আনন্দের আতিশয্যে
স্ত্রী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে ক্রূর হাসি হেসে বলতে থাকে, "Oh! Muslim! How
fool you are!"
যেদিন এই হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক
ঘটনা ঘটেছিল, সে দিনটি ছিল ১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল। সেদিন থেকেই খ্রীষ্টান জগৎ
প্রতি বছর ১লা এপ্রিল সাড়ম্বরে পালন করে আসছে April fools Day তথা ‘এপ্রিলের বোকা দিবস’
হিসাবে। মুসলমানদের বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর ধোঁকাবাজিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে
সমগ্র ইউরোপে প্রতিবছর ১লা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস হিসাবে পালিত হয়।
থিওরি ৮ - Anti-Islam Theory:-
এ থিওরি মতে, স্প্যানিশরা কিছুতেই বুঝে উঠতে
পারছিল না, কেন মুসলিমরা পরাজিত হচ্ছে না। পরে, তারা বুঝল তাদের আল্লাহ ভীতি অনেক,
তাই তারা সবসময় জয়ী। তাই তারা ট্রিক করল, তারা সিগারেট আর অ্যালকোহল পানীয় প্রেরণ করল।
সেগুলো পেয়ে আল্লাহ ভীতি ভুলে গেল মুসলিমরা। তাই ১ এপ্রিল তাদের পতন হল।
থিওরি ৯- স্পেনের শেষ মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহ
মোহাম্মদ XII (স্প্যানিশ নাম 'বোয়াব্দিল') রাণী ইসাবেলা-ফার্ডিনান্ডের কাছে আত্মসমর্পন
করেন ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি। আত্মসমর্পন পর্ব শান্তিপূর্ণ ছিল, রাণীর সহযোগী ভুবন বিখ্যাত
ক্রিস্টোফার কলম্বাস এ অনুষ্ঠানে উপস্থত ছিলেন।
এবং মোহাম্মদ XII এর সাথে রাণীর চুক্তি হয়েছিল
স্পেনে বসবাসরত মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দানের, সে চুক্তি রক্ষিত হয়নি, আত্মসমর্পন
পরবর্তী সময় থেকেই বিবিধ জুলুম প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাটাকুটি মূলত শুরু হয় ১৫০৮ সালে
যখন 'ইঙ্কুইজিশন' ঘোষণা করা হলো, মানে ইহুদী এবং মুসলমানদের হয় ক্যাথলিক হতে হবে নয়তো
স্পেন ছাড়তে হবে। জার্মানীর হিটলার আর স্পেনের ইসাবেলার পর-জাতি বিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য
কতটুকু? মানবতাবাদী হিসেবে ম্যারানোস, মরিস্কোস শব্দগুলো ভুলে গেলে তো আর চলবে না।
১৪৯৬ সালে ইসাবেলার সম্মতিতে আর্চবিশপ তালাভ্যারা
আলহামরা ডিক্রি জারি করে। এই ডিক্রি অনুসারে স্পেনের ইহুদী ও মুসলিমদের হয় ক্যাথলিক
ক্রিশ্চান ধর্মগ্রহণ নয়তো দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৫০২ সালে ইসাবেলা ইহুদী-মুসলিম
ও অন্যান্য ক্রিশ্চানদের বাধ্যতামূলক ক্যাথলিক ক্রিশ্চান ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার অথবা,
দেশত্যাগের আদেশ দিয়ে সরকারি ফরমান জারি করে।
গ্রানাডার পতনের পর প্রায় এক লক্ষ মুসলমান
মারা যায়, চার লক্ষ মুসলমান দেশত্যাগে বাধ্য হয় ও তিন লক্ষ মুসলমান ধর্মান্তরিত হতে
বাধ্য হয়। ইহুদীদের ইতিহাস তো আরো করুণ। দুই লক্ষ মারা যায়, এক লক্ষ ইহুদী ধর্মান্তরিত
হতে বাধ্য হয়, এক লক্ষ ইহুদী দেশত্যাগ করে।
(সূত্র: Spain 1469 - 1714; A Society of Conflict, লেখক: Henry
Kamen) ]
থিওরি ১০- মুসলিমপিডিয়া, জুইস এনসাইক্লোপিডিয়া ও
অন্যান্য এনসাইক্লোপিডিয়া ও ইতিহাস গ্রন্থ অনুয়ায়ী এপ্রিল ফুলঃ
ফুল (Fool) একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ বোকা।
ইংরেজি এপ্রিল ফুলের অর্থ এপ্রিলের বোকা। স্পেনের তৎকালীন খ্রিস্টানরা মুসলিমদের বোকা
বানিয়েছে বলেই নামটি এ রকম। এপ্রিল ফুল সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। পক্ষে-বিপক্ষে
নানা কথার প্রচলন থাকলেও সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
মুসলিমপিডিয়া, জুইস এনসাইক্লোপিডিয়া ও অন্যান্য
এনসাইক্লোপিডিয়া ও ইতিহাস গ্রন্থের বরাতে ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া সম্পাদিত ‘পহেলা
এপ্রিল’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, স্পেনের অত্যাচারিত মানুষদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম
বাহিনী ৯২ হিজরি মুতাবেক ৭১১ খ্রি. স্পেনে প্রবেশ করে। মুসলিমগণই ইউরোপের মানুষদের
জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা দেন। মুসলিম স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ও অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। ৭১১-১৪৯২ খ্রি. পর্যন্ত প্রায় আটশ
বছর স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগাল মুসলমানরা শাসন করেছিল। এটি ছিল মুসলমানদের জন্য স্বর্ণযুগ।
শেষ দিকে তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। মুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহ ভুলে গিয়ে
দুনিয়ার মায়ায় মত্ত হয়ে নেতার নির্দেশ অমান্য করায় পারস্পরিক শত্রুতা বেড়ে গেল। তখনই
তারা স্পেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ফলে খ্রিস্টানরা ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন অঞ্চল মুসলিমদের
থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
আজ থেকে ৫২২ বছর আগে মুসলিম অধ্যুষিত ৮৯৮ হিজরি
মোতাবেক ১৪৯২ খ্রি. রাজা ফার্দিনান্ড ও রানী ঈসাবেলার যৌথ উদ্যোগে মুসলিমদের শেষ রাজধানী
গ্রানাডা দখল করতে সক্ষম হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চিকিৎসা, রাজনীতি, স্থাপত্য,
শিল্প ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখে মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য রাজা ফার্দিনান্ড এক ভয়ঙ্কর
ফন্দি আঁটলো। মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানরা রাজা-রানীর কাছে আত্মসমর্পণ
করলেন। এমতাবস্থায় ফার্দিনান্ড ঘোষণা করেছিল, যারা মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেবে তাদের নিরাপদে
আশ্রয় দেওয়া হবে। তার ঘোষণায় চল্লিশ হাজার মুসলমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে গ্রানাডার বিভিন্ন
মসজিদে আশ্রয় নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। মসজিদের দরজাগুলো বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে
মসজিদের মেঝেতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মুসলিমদের হত্যা করেছিল রাজা ফার্দিনান্ড।
ঐতিহাসিক এক বর্ণনা মতে তিন দিন পর্যন্ত হত্যাকান্ডের উৎসব চলেছিল। মসজিদের বাহিরেও
অসংখ্য মুসলিমকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই
করে হত্যা করা হয়। অনেককে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। অথচ মুসলমানরা এ রকম একটি অবস্থার
জন্য প্রস্তুত না থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেদিন খ্রিস্টানগুরুর
আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবি পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। শুধু
মুসলিমগণ নয়, ইয়াহুদীদের উপরও খ্রিস্টানগণ একই রূপ অত্যাচার করে। এ সময়ে রাজা ফার্দিনান্ড
উপহাস করে বলেছিল, হায় মুসলমান! তোমরা হলে এপ্রিলের বোকা। মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাসের
মাধ্যমে বোকা বানানোর সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে এপ্রিল ফুল পালন করা হয়। অবশেষে খ্রিস্টানরা
কর্ডোভার সেই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করেছে। মসজিদের ভেতরে দরজা ও জানালার
ফাঁকে ফাঁকে মূর্তি স্থাপন করেছে। এভাবেই মুসলিম ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা হয়েছে। এ ঘটনা
ছাড়া আরো দুটি ঘটনার কথা উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ থাকলেও বর্ণিত ঘটনাটিই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ
বলে ঐতিহাসিকরা মত প্রকাশ করেছেন।
স্পেনের গীর্জায় রূপান্তরিত পাঁচ মসজিদ
৭১১ সালে মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবনে যিয়াদ
স্পেন বিজয় করার পর থেকে দীর্ঘ সাতশত বছর স্পেন মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। মুসলিম শাসনাধীন
আন্দালুসিয়া নামে পরিচিত থাকা এই ভূখন্ডটি ছিল তৎকালীন অন্ধকার ইউরোপের সভ্যতার বাতিঘর।
শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি সভ্যতার সর্বাঙ্গনে তৎকালীন আন্দালুসিয়া নামে পরিচিত
আজকের স্পেন ছিল ইউরোপের সমৃদ্ধতম দেশ। মূলত ইসলামী সংস্কৃতির স্পেন থেকেই আজকের ইউরোপ
সভ্যতার পাঠ গ্রহণ করেছে।
১৪৯২ সালে সম্মিলিত খ্রিস্টান শক্তির কাছে
মুসলিম গ্রানাডার পতনের পর স্পেন থেকে মুসলিম শাসনের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে। গ্রানাডা
দখলের পর খ্রিস্টান শাসকরা স্পেনীয় মুসলমানদের উপর তাদের প্রচন্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ
ঘটায়। স্পেনীয় মুসলমানরা খ্রিস্টান শাসকদের অত্যাচারের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়। মুসলমানদের
জন্য তারা তিনটি পথ খুলে দেয়, স্পেনে বসবাস করতে হলে হয় খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করতে হবে বা ধর্ম পরিবর্তনে
রাজী না হলে তাদের দেশত্যাগ করতে হবে। যারা দুইটির একটিও করতে প্রস্তুত হবেনা, তাদের
জন্য তৃতীয় পথ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এভাবে এক সময়কার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ
দেশটি মুসলমানশূন্য হয়ে পড়ে।
শুধু মুসলিম জনসাধারণের উপরই নয়, বরং মুসলিম
সংস্কৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ বিভিন্ন বস্তু ও বিষয়ও তাদের আক্রোশের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
স্পেনে অবস্থিত প্রায় সকল মসজিদই এসময় স্পেনের খ্রিস্টান শাসকরা ধ্বংস করে অথবা গীর্জায়
রূপান্তরিত করে।
এখানে স্পেনের গীর্জায় পরিণত হওয়া পাঁচটি মসজিদ
সম্পর্কে সংক্ষেপে বিবরণ দেওয়া হল।
১. কর্ডোভা জামে মসজিদঃ
স্পেনে উমাইয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকারী আমীর
প্রথম আবদুর রহমান তার রাজধানী কর্ডোভায় এই মসজিদটি ৭৮৪ ঈসায়ীতে নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে
বিভিন্ন সময় এই মসজিদটির বর্ধন ও সংস্কারকাজ করা হয়। ১৪৯২ ঈসায়ীতে খ্রিস্টীয় রাজশক্তির
হাতে কর্ডোভার পতন হলে খ্রিস্টীয় শাসকরা মসজিদটিকে গীর্জায় রূপান্তরিত করে।
গীর্জায় রুপান্তরিত করার পর মসজিদের ভিতরে
প্রতিটি কোনায় কোনায়, দরজা ও জানালার ফাঁকে ফাঁকে খৃস্টানরা তাদের বিভিন্ন দেব দেবীর
মূর্তি স্থাপন করেছে। সেখানে কোনো আজান হয় না। কোনো মুসলমান সালাত আদায় করতে চাইলে
স্প্যানিশ পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। ১৪৯২ সাল থেকে এই মসজিদে গীর্জার ঘন্টা বাজে।
কর্ডোভা মসজিদের ভিডিও চিত্র দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
২. আলমুনাসতের মসজিদঃ
স্পেনের বর্তমান আন্দালুসিয়া অঞ্চলের হুভান
প্রদেশের গ্রাম্য শহর আলমনাসতের লা রিয়েলে এই মসজিদটি অবস্থিত। স্পেনের মুসলিম সভ্যতার
গ্রামীণ স্থাপত্যের উদাহরণ হিসেবে এখন এই একটি স্থাপনাই বর্তমানে টিকে আছে। দশম শতাব্দীতে
মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। খ্রিস্টীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই মসজিদটিকে ক্যাথলিক
গীর্জায় পরিণত করা হয়।
৩. জেরাজ ডি লা ফ্রন্টেরার
আলকাজার দূর্গ মসজিদঃ
স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের কাদিজ জেলার জেরাজ
ডি লা ফ্রন্টেরা শহরের আলকাজার দূর্গে মসজিদটি অবস্থিত। একাদশ শতকে স্পেনের আলমোহাইদ
শাসক কর্তৃক এই দূর্গ ও মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ১২৬১ সালে দূর্গটি দখল করার পর খ্রিস্টানরা
মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করে এবং মসজিদের মিনারকে বেল টাওয়ারে রূপান্তরিত করে।
৪. গিরাল্ডাঃ
সেভিলে অবস্থিত এই স্থাপনাটি এক অতীত মসজিদের
স্মৃতিচিহ্ন। এটি মূলত পুরাতন একটি মসজিদের মিনার ছিল। মিনারটি লম্বায় ৩৪১.৫ ফুট (১০৪.১
মিটার) লম্বা। ১২৪৮ সালে মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করা হয় এবং মিনারটিকে গীর্জার বেল
টাওয়ারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৩৬৫ সালে সম্পূর্ণ মসজিদটি ভেঙে নতুন করে এখানে একটি গীর্জা
নির্মাণ করা হয়। গিরাল্ডা নামে পরিচিত এই মিনারটিকে বেল টাওয়ার হিসেবে অক্ষত রাখা হয়।
এটি বর্তমানেও বেল টাওয়ার হিসেবে টিকে আছে।
৫. ক্রিস্টো ডি লা লুজ মসজিদঃ
৯৯৯ ঈসায়ীতে টলেডোতে এই মসজিদটি নির্মাণ করা
হয়। তখন এটি বাব আল-মারদুম মসজিদ নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টীয় শক্তি মুসলমানদের কাছ
থেকে টলেডো কেড়ে নেওয়ার পর ১১৮৬ সালে মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করা হয়।
স্পেন থেকে মুসলিম শক্তির পতনের পর শুধু উপরের
মসজিদগুলোই নয়, আরো অধিক মসজিদ ও মুসলিম স্থাপত্য রূপান্তরিত হয়েছে। তবে রূপান্তরিত
হয়ে টিকে থাকার সুযোগ অধিকাংশ স্থাপনার হয়নি, বরং তারা মুসলমানদের প্রতি স্পেনীয় খ্রিস্টান
রাজশক্তির আক্রোশের শিকার হয়ে ধ্বংস হয়েছে।
মুসলমানদের ইমানি শক্তি যেভাবে নষ্ট করা হয়েছিল
মুসলমানদের পারমানবিক শক্তি হচ্ছে ইমানি শক্তি।
এই ইমানি শক্তির জোড়েই মুসলমানরা এক সময় সারা বিশ্ব জয় করে মুসলিম সাম্রাজ্য গঠন করেছিল।
মুসলিমদের স্পেন বিজয় তার একটি প্রমাণ। মুসলমানদের এই ইমানি শক্তি ততোক্ষণ বলবৎ থাকে
যতোক্ষণ সে পবিত্র থাকে। তথা কালিমা, সালাত, সাওম, হজ্জ ও যাকাত আদায়ের পাশাপাশি হালাল-হারাম
বিষয়গুলো মেনে চলবে। স্পেনের মুসলমানদের ইমানি শক্তির নিকট যখন খৃস্টানরা কোনো দিক
দিয়েই পেরে উঠতে পারছিলনা, তখন তারা অনুসন্ধান করতে লাগল কিভাবে মুসলমানদের ইমানি শক্তি
নষ্ট করা যায়। খৃস্টানরা আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন ও হাদিস অধ্যায়ন শুরু করল। তারা
জানতে পারল যে, হারাম জিনিস ভক্ষন করালে বা হারাম জিনিসের সহিত জড়িত করলে সে সময় তারা
মুমিন থাকে না। আর হারাম জিনিস ভক্ষনে তাদের কোনো দোয়াও কবুল হয় না।
খৃস্টানরা যেসব বিষয় খুঁজে পেল ও মুসলিম সমাজে
বাস্তবায়ন করলোঃ
(১) হারাম জিনিস ভক্ষনে দোয়া কবুল হয় নাঃ দলীল-
(ক)
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
إِنَّ
اللهَ
طَيِّبٌ
لَا
يَقْبَلُ
إِلَّا
طَيِّبًا
وَأَنَّ
اللهَ
أَمَرَ
المؤْمنيْنَ
بِمَا
أمرَ
بِهِ
المرسَليْنَ
ثُمَّ
ذَكَرَ
الرَّجُلَ
يُطِيلُ
السَّفَرَ
أَشْعَثَ
أَغْبَرَ
يَمُدُّ
يَدَيْهِ
إِلَى
السَّمَاءِ
يَا
رَبِّ
يَا
رَبِّ
وَمَطْعَمُهُ
حَرَامٌ
وَمَشْرَبُهُ
حَرَامٌ
وَمَلْبَسُهُ
حَرَامٌ
وَغُذِّيَ
بِالْحَرَامِ
فَأَنَّىْ
يُسْتَجَابُ
لِذَلِكَ؟
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। (এবং সর্বক্ষেত্রে পাক-পবিত্রতার
আদেশই তিনি করেছেন। সেই সম্পর্কে) আল্লাহ রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই
আদেশই করেছেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উল্লেখ
করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি।
এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হস্ত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু!
বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, তার জীবিকা
নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দো’আ কবুল হবে। (মুসলিম, মিশকাত
হা/২৭৬০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنِ النُّعْمَانِ
بْنِ
بَشِيرٍ
قَالَ:
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
الْحَلَالُ
بَيِّنٌ
وَالْحَرَامُ
بَيِّنٌ
وَبَيْنَهُمَا
مُشْتَبِهَاتٌ
لَا
يَعْلَمُهُنَّ
كَثِيرٌ
مِنَ
النَّاسِ
فَمَنِ
اتَّقَى
الشُّبْهَاتِ
استبرَأَ
لدِينهِ
وعِرْضِهِ
ومَنْ
وقَعَ
فِي
الشبُّهَاتِ
وَقَعَ
فِي
الْحَرَامِ
كَالرَّاعِي
يَرْعَى
حَوْلَ
الْحِمَى
يُوشِكُ
أَنْ
يَرْتَعَ
فِيهِ
أَلَا
وَإِنَّ
لِكُلِّ
مَلِكٍ
حِمًى
أَلَا
وَإِنَّ
حِمَى
اللهِ
مَحَارِمُهُ
أَلَا
وَإِنَّ
فِي
الْجَسَدِ
مُضْغَةً
إِذَا
صَلَحَتْ
صَلَحَ
الْجَسَدُ
كُلُّهُ
وَإِذَا
فَسَدَتْ
فَسَدَ
الْجَسَدُ
كُله
أَلا
وَهِيَ
الْقَلْبُ.
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘হালাল এবং হারাম সুস্পষ্ট, আর ঊভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় বা বস্তু আছে।(যেগুলি
হালালের অন্তর্ভুক্ত না হারামের অন্তর্ভুক্ত,) সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে
না। এরূপ ক্ষেত্রে যেই ব্যক্তি সন্দেহের বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং আবরু-ইজ্জত,
মান-সম্মান পাক-পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি সন্দেহের কাজে লিপ্ত হবে, সে
অচিরেই হারামেও লিপ্ত হয়ে পড়বে। (ফলে তার দ্বীন এবং মান-সম্মান কলুষিত হবে।) যেমন যেই
রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার ধারে চরাবে, খুব সম্ভব তার পশু নিষিদ্ধ এলাকার
ভিতরেও মুখ ঢুকিয়ে দিবে। তোমরা ম্মরণ রেখো প্রত্যেক বাদশাই নিজ পশুপালের চারণভুমি
(নিষিদ্ধ এলাকা) বানিয়ে রাখেন। তদ্রূপ (সকল বাদশাহর বাদশাহ) আল্লাহ তা’আলার
চারণভূমি তাঁর হারাম বস্তুসমূহকে নির্ধারিত করে রেখেছেন। ‘মনে রেখো মানুষের দেহের ভিতরে
একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সঠিক থাকলে সমস্ত দেহই সঠিক থাকে। আর সেই অংশের বিকৃতি
ঘটলে সম্পূর্ণ দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সেই গোশতের টুকরাটি হল অন্তর’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنْ جَابِرٍ
قَالَ:
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم:
لَا
يَدْخُلُ
الْجَنَّةَ
لَحْمٌ
نبَتَ
منَ
السُّحْتِ
وكلُّ
لحمٍ
نبَتَ
منَ
السُّحْتِ
كَانَتِ
النَّارُ
أَوْلَى
بِهِ.
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম মালে গঠিত
দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন’ (আহমাদ, দারেমী, বায়হাক্বী,
শু’আবুল
ঈমান, মিশকাত হা/২৭৭২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঘ)
وَعَن أَبِيْ
حُجَيْفَةَ
أَنَّ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
نَهَى
عَنْ
ثَمَنِ
الدَّمِ
وَثَمَنِ
الْكَلْبِ
وَكَسْبِ
الْبَغِيِّ
وَلَعَنَ
آكِلَ
الرِّبَا
وَمُوكِلَهُ
وَالْوَاشِمَةَ
وَالْمُسْتَوْشِمَةَ
وَالْمُصَوِّرَ.
আবু হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ
করেছেন, রক্ত বিক্রয় মূল্য হতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য হতে, ব্যভিচার বা যেনার বিনিময়
হতে এবং তিনি লা’নত করেছেন সুদ গ্রহীতার প্রতি
ও সুদদাতার প্রতি। তিনি আরও লা’নত করেছেন ঐ ব্যক্তির প্রতি
যে দেহের কোন অংশ (নাম বা চিত্র ইত্যাদি) উলকী করে এবং যে উলকী করায়। এতদ্ভিন্ন ছবি
অংকনকারীর প্রতিও লা’নত করেছেন (বুখারী, মিশকাত
হা/২৭৬৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঙ)
عنْ عَائِشَةَ
رَضِيَ
اللهُ
عَنْهَا
قَالَتْ
كَانَ
لِأَبِيْ
بَكْرٍ
غُلاَمٌ
يُخْرِجُ
لَهُ
الْخَرَاجَ
وَكَانَ
أَبُو
بَكْرٍ
يَأْكُلُ
مِنْ
خَرَاجِهِ
فَجَاءَ
يَوْمًا
بِشَيْءٍ
فَأَكَلَ
مِنْهُ
أَبُو
بَكْرٍ
فَقَالَ
لَهُ
الْغُلاَمُ
أَتَدْرِي
مَا
هَذَا
فَقَالَ
أَبُو
بَكْرٍ
وَمَا
هُوَ
قَالَ
كُنْتُ
تَكَهَّنْتُ
لِإِنْسَانٍ
فِي
الْجَاهِلِيَّةِ
وَمَا
أُحْسِنُ
الْكِهَانَةَ
إِلاَّ
أَنِّي
خَدَعْتُهُ
فَلَقِيَنِي
فَأَعْطَانِي
بِذَلِكَ
فَهَذَا
الَّذِي
أَكَلْتَ
مِنْهُ
فَأَدْخَلَ
أَبُو
بَكْرٍ
يَدَهُ
فَقَاءَ
كُلَّ
شَيْءٍ
فِي
بَطْنِهِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর একজন গোলাম ছিল।
তিনি তার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি তার রাজস্ব হতে খেতেন। একদিন সে কিছু
সম্পদ নিয়ে আসে এবং তিনি সেখান হতে কিছু খান। তখন গোলাম তাঁকে বলল, আপনি এ খাদ্য সম্পর্কে
কি জানেন? তিনি বললেন এ কেমন খাদ্য? গোলাম বলল, আমি জাহেলী যুগে গণকী করতাম। আমি মানুষকে
ধোঁকা দিতাম। ঐ সময়ের এক লোকের সাথে দেখা হলে সে আমাকে এ খাদ্য প্রদান করে। আয়েশা
(রাঃ) বলেন, তখন আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে সব বমন করে দিলেন (বুখারী,
মিশকাত হা/২৭৮৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(২) সুদ খাওয়া হারামঃ
(ক)
عَنْ
جَابِرٍ
قَالَ
لَعَنَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
آكِلَ
الرِّبَا
وَمُؤْكِلَهُ
وَكَاتِبَهُ
وَشَاهِدَيْهِ
وقَالَ
هُمْ
سَوَاءٌ.
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদ
গ্রহণকারী, প্রদানকারী ও সূদের দু’সাক্ষীর প্রতি অভিশাপ করেছেন।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অভিশাপে তারা সবাই সমান (মুসলিম, মিশকাত
হা/২৮০৭; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৬৮৩ ‘ক্রয়-বিক্রয় অধ্যায়, ‘সুদ অনুচ্ছেদ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
حَنْظَلَةَ
غَسِيْلِ
الْمَلاَئِكَةِ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
دِرْهَمُ
رِبَا
يَأْكُلُهُ
الرَّجُلُ
وَهُوَيَعْلَمُ
أَشَدُّ
مِنْ
سِتَّةِ
وَثَلاَثِيْنَ
زِنْيَةً.
আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম বা একটি মুদ্রা সুদ গ্রহণ করলে ছত্রিশবার যেনা করার
চেয়ে কঠিন হবে’
(আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮২৫; বাংলা মিশকাত হা/২৭০১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنْ أَبِيْ
أُمَامَةَ
عَنْ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
مَنْ
شَفَعَ
لِأَخِيْهِ
بِشَفَاعَةٍ
فَأَهْدَى
لَهُ
هَدِيَّةً
عَلَيْهَا
فَقَبِلَهَا
فَقَدْ
أَتَى
بَابًا
عَظِيْمًا
مِنْ
أَبْوَابِ
الرِّبَا.
আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার
দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে তাহলে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল’
(আবূদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত, হা/৩৭৫৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঘ)
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ
رَضِىَ
اللهُ
عَنْهُ
عَنِ
النَّبِىِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
اجْتَنِبُوا
السَّبْعَ
الْمُوْبِقَاتِ.
قَالُوْا
يَا
رَسُوْلَ
اللهِ،
وَمَا
هُنَّ
قَالَ
الشِّرْكُ
بِاللهِ،
وَالسِّحْرُ،
وَقَتْلُ
النَّفْسِ
الَّتِى
حَرَّمَ
اللهُ
إِلاَّ
بِالْحَقِّ،
وَأَكْلُ
الرِّبَا،
وَأَكْلُ
مَالِ
الْيَتِيْمِ،
وَالتَّوَلِّى
يَوْمَ
الزَّحْفِ،
وَقَذْفُ
الْمُحْصَنَاتِ
الْمُؤْمِنَاتِ
الْغَافِلاَتِ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে দূরে থাকবে। ছাহাবীগণ বললেন, সেগুলি কী? আল্লাহর
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (১) আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা
(২) জাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন (৪) সুদ
খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল (অন্যায়ভাবে) ভক্ষণ করা (৬) জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া
এবং (৭) সরলা নির্দোষ মুমিন মহিলাদের নামে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া’
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৩) গান বাজনার প্রচলনঃ
(ক)
عَنْ أَبِيْ
أُمَامَةَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لَا
تَبِيْعُوا
الْقَيْنَاتِ
وَلَا
تَشْتَرُوهُنَّ
وَلَا
تُعَلِّمُوْهُنَّ
وَثَمَنُهُنَّ
حَرَامٌ
وَفِيْ
مِثْلِ
هَذَا
نَزَلَتْ
(وَمِنَ
النَّاسِ
مَنْ
يَشْتَرِيْ
لَهُوَ
الحَديْثِ).
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমরা গায়িকা ক্রয়-বিক্রয় করিও না, তার মূল্য হারাম। তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। এই
শ্রেণীর কার্য যারা করে তাদের সম্পর্কেই পবিত্র কুরআনের এ আয়াত অবর্তীণ হয়েছে, ‘এক
শ্রেণীর লোক আছে যারা রং-তামাশার গাথা (তথা গান) ক্রয় করে (তাদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি
রয়েছে)’ (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنْ أَبِيْ
مَالِكِ
الأَشْعَرِىِّ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لَيَكُوْنَنَّ
مِنْ
أُمَّتِيْ
أَقْوَامٌ
يَسْتَحِلُّوْنَ
الْحِرَ
وَالْحَرِيْرَ
وَالْخَمْرَ
وَالْمَعَازِفَ.
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা
বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ
عَنْ
رَسُوْلِ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
إِنَّ
اللهَ
تَعَالَى
حَرَّمَ
الْخَمْرَ
وَالْمَيْسِرَ
والكُوْبَةَ.
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের
বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ,
মিশকাত হা/৪৫০৩; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড হা/৪৩০৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঘ)
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র
শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঙ)
عَنْ نَافِعٍ
قَالَ
سَمِعَ
ابْنُ
عُمَرَ
مِزْمَارًا
قَالَ
فَوَضَعَ
إِصْبَعَيْهِ
عَلَى
أُذُنَيْهِ
وَنَأَى
عَنْ
الطَّرِيقِ
وَقَالَ
لِي
يَا
نَافِعُ
هَلْ
تَسْمَعُ
شَيْئًا
قَالَ
فَقُلْتُ
لاَ
قَالَ
فَرَفَعَ
إِصْبَعَيْهِ
مِنْ
أُذُنَيْهِ
وَقَالَ
كُنْتُ
مَعَ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
فَسَمِعَ
مِثْلَ
هَذَا
فَصَنَعَ
مِثْلَ
هَذَا.
নাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা ইবনু ওমর (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে
পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে
বললেন, নাফে’
তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙ্গুল দুই কান হতে বের করে
বললেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে
ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন
এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম (ছহীহ আবূদাঊদ
হা/ ৪৯২৪, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে গান-বাজনা ও
বাদ্যযন্ত্রের শব্দ যেন কানে না আসে তার সম্ভবপর চেষ্টা করতে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(চ)
عَنْ اَنَسٍ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لَيَكُوْنَنَّ
فِى
هذِه
الْاُمّةِ
خَسْفٌ
وقَذْفٌ
وَمَسْخٌ
وذلِكَ
اِذَا
شَرِبُوْا
الْخُمُوْرَ
واتَّخَذُوْا
القَيْنَاتِ
وَضَرَبُوْا
بِالْمَعَازِفِ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে
এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন
এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে
দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গজবের মূল কারণ তিনটি।
(ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী
হওয়া। উপদেশ/৮৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৪) মুসলমানদের মূর্তিপূজাঃ
عَنْ ثَوْبَانَ
مَوْلى
رَسُوْلِ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
أنَّ
رسولَ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ:
وَإِنّ
مِمّا
أتَخَوَّفُ
مِنْهُ
عَلى
أمّتِىْ
أئِمّةً
مُضِلِّيْنَ،
وَسَتَعْبُدُ
قَبَاِئلُ
مِنْ
أمّتى
الْاَوْثَانَ،
وَسَتَلْحَقُ
قبائِلُ
مِنْ
أمتىْ
بِالْمُشِركِيْنَ-
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
দাস ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘আমি সবচেয়ে যাদের বেশি ভয় করি তারা হচ্ছে নেতা ও এক শ্রেণীর আলেম সমাজ। অচিরেই
আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে। আর অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক হিন্দু
বা বিজাতিদের সাথে মিশে যাবে’ (ইবনে মাজাহ হা/৩৯৫২, হাদীছ
ছহীহ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৫) মূতি ও ছবি অংকনকারীঃ
(ক)
عَنْ أَبِيْ
طَلْحَةَ
رَضِيَ
اللهُ
عَنْهُمْ
قَالَ
قَالَ
النَّبِيُّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لاَ
تَدْخُلُ
الْمَلاَئِكَةُ
بَيْتًا
فِيْهِ
كَلْبٌ
وَلاَ
تَصَاوِيْرُ-
আবু ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’
(বুখারী ২/৮৮০ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৪৮৯; বাংলা মিশকাত ৮ম খণ্ড, হা/৪২৯৮ ‘পোষাক’
অধ্যায়)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
مَسْعُوْدٍ
قَالَ
سَمِعْتُ
النَّبِيَّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
يَقُوْلُ
إِنَّ
أَشَدَّ
النَّاسِ
عَذَابًا
عِنْدَ
اللهِ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
الْمُصَوِّرُونَ-
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি ‘আল্লাহর নিকট ছবি মূর্তি অংকনকারীর সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে’
(বুখারী ৮৮০ পৃঃ, মিশকাত হা/৪৪৯৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
عُمَرَ
رَضِيَ
اللهُ
عَنْهُمَا
أَخْبَرَهُ
أَنَّ
رَسُوْلَ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
إِنَّ
الَّذِيْنَ
يَصْنَعُوْنَ
هَذِهِ
الصُّوَرَ
يُعَذَّبُوْنَ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
يُقَالُ
لَهُمْ
أَحْيُوْا
مَا
خَلَقْتُمْ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি-মূর্তি তৈরি করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
তাদের বলা হবে তোমরা যেসব ছবি-মূর্তি তৈরি করেছ তাতে আত্মা দান কর’
(বুখারী হা/৫৯৫১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৬) যেনা/ব্যভিচারের প্রচলনঃ
(ক)
عَنْ عُبَادَةَ
الصَّامِتِ
أَنَّ
النَّبِيَّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
خُذُوْا
عَنِّي
خُذُوْا
عَنِّي
قَدْ
جَعَلَ
الله
لَهُنَّ
سَبِيْلاً
البِكْرُ
بِالْبِكْرِ
جَلْدُ
مِائَةٍ
وَتَغْرِيْبُ
عَامٍ
وَالثَّيِّبُ
بِالثَّيِّبِ
جَلْدُ
مِائَةٍ
وَالرَّجْمُ.
উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
‘তোমরা আমার নিকট হতে আল্লাহর বিধান গ্রহণ কর, কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দু’বার
বললেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নির্ধারণ
করেছেন, অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের
জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে’
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৫৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪০২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
ثَلاَثَةٌ
لاَ
يُكَلِّمُهُمْ
اللهُ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
وَلاَ
يُزَكِّيهِمْ
قَالَ
أَبُوْ
مُعَاوِيَةَ
وَلاَ
يَنْظُرُ
إِلَيْهِمْ
وَلَهُمْ
عَذَابٌ
أَلِيْمٌ
شَيْخٌ
زَانٍ
وَمَلِكٌ
كَذَّابٌ
وَعَائِلٌ
مُسْتَكْبِرٌ.
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন
না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের
জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছেন (১) বৃদ্ধ যেনাকার (২) মিথ্যাবাদী শাসক
এবং (৩) অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৮৮২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنْ عَائِشَةَ
قَالَتْ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
: لاَ
يَحِلُّ
دَمُ
امْرِئٍ
مُسْلِمٍ
يَشْهَدُ
أَنْ
لاَ
إِلَهَ
إِلاَّ
اللهُ
وَأَنَّ
مُحَمَّدًا
رَسُوْلُ
اللهِ
إِلاَّ
بِإِحْدَى
ثَلاَثٍ
رَجُلٌ
زَنَى
بَعْدَ
إِحْصَانٍ
فَإِنَّهُ
يُرْجَمُ
وَرَجُلٌ
خَرَجَ
مُحَارِبًا
لِلَّهِ
وَرَسُوْلِهِ
فَإِنَّهُ
يُقْتَلُ
أَوْ
يُصْلَبُ
أَوْ
يُنْفَى
مِنَ
الأَرْضِ
أَوْ
يَقْتُلُ
نَفْسًا
فَيُقْتَلُ
بِهَا.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
এমন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ
নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তবে তিন শ্রেণীর
মানুষকে হত্যা করতে হয়। (১) এমন মানুষ যে বিবাহ করার পর যেনা করল। তাকে রজম করতে হবে।
(২) এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে অবস্থান করল, তাকে হত্যা করা
হবে, না হয় শূলী দেওয়া হবে, না হয় যমীন হতে নির্বাসন করা হবে। (৩) এমন ব্যক্তি যে কাউকে
হত্যা করল, তাকে হত্যা করা হবে’ (আবুদাঊদ হা/৪৩৫৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(৭) নেশাদার দ্রব্য/মদের প্রচলনঃ
মদ এমন একটি বস্তু যা বিবেককে আচ্ছন্ন করে
ফেলে। আর বিবেক আচ্ছন্ন হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল অশ্লীল কর্মের মূল। উল্লেখ্য যে, মদ কোন
নির্ধারিত বস্তুর নাম নয়। যেসব বস্তু বেশী পরিমাণ খেলে বিবেকের ক্ষতি হয় তার অল্প বস্তুও
মদ। আল্লাহ তা‘আলা
বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا
إِنَّمَا
الْخَمْرُ
وَالْمَيْسِرُ
وَالْأَنصَابُ
وَالْأَزْلاَمُ
رِجْسٌ
مِنْ
عَمَلِ
الشَّيْطَانِ
فَاجْتَنِبُوهُ
لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ-
إِنَّمَا
يُرِيدُ
الشَّيْطَانُ
أَنْ
يُوقِعَ
بَيْنَكُمْ
الْعَدَاوَةَ
وَالْبَغْضَاءَ
فِي
الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ
وَيَصُدَّكُمْ
عَنْ
ذِكْرِ
اللهِ
وَعَنْ
الصَّلاَةِ
فَهَلْ
أَنْتُمْ
مُنتَهُونَ-
হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং
ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব তোমরা এগুলি থেকে বেঁচে থাক। যাতে
তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। শয়তান তোমাদের মাঝে মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শত্র“তা
ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে চায় এবং আল্লাহর যিক্র ও ছালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে
চায়। তাহলে কি তোমরা বিরত থাকবে? (মায়িদাহ ৯০-৯১)G
(ক)
عَنْ عُثْمَانَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
اِجْتَنِبُوا
الْخَمْرَ
فَإنَّهاَ
أُمُّ
الْخَبَائِثِ
فَمَنْ
لَمْ
يَجْتَنِبْهَا
فَقَدْ
عَصَى
اللهَ
وَرَسُوْلَهُ
وَاسْتَحَقَّ
الْعَذَابَ
بِمَعْصِيَةِ
اللهِ
وَرَسُوْلِهِ
قال
الله
تعالى
وَمَن
يَعْصِ
اللهَ
وَرَسُوْلَهُ
وَيَتَعَدَّ
حُدُوْدَهُ
يُدْخِلْهُ
نَارًا
خَالِدًا
فِيْهَا
وَلَهُ
عَذَابٌ
مُهِيْنٌ.
ওছমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমরা নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাক। কেননা নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে অশ্লীল কর্মের মূল।
যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকে না তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী
করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করার কারণে সে শাস্তির হক্বদার হয়’।
আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তার সীমালঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে
এমন আগুনে প্রবেশ করাবেন যেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’
(নিসা ১৪; নাসাঈ, হাদীছ ছহীহ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(খ)
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
مُدْمِنُ
الخَمْرِ
كَعَابِدِ
وَثَنٍ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘সর্বদা নেশাদার দ্রব্য পান কারী মূর্তিপূজকের ন্যায় অপরাধী’
(ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭৫, হাদীছ ছহীহ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(গ)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
عَمْرٍو
عَنْ
النَّبِيِّ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
لاَ
يَدْخُلُ
الْجَنَّةَ
عَاقٌّ
وَلاَ
قَمَّارٌ
وَلاَمَنَّانٌ
وَلاَ
مُدْمِنُ
خَمْرٍ.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়া ও লটারীতে অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদানকারী এবং সর্বদা
মদপানকারী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমী, মিশকাত হা/৩৬৫৩;
বাংলা মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪৮৬ ‘শাস্তি’ অধ্যায়)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঘ)
عَنْ عَمَّارِ
بْنِ
يَاسَرٍ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
ثَلاَثَةٌ
لاَ
يَدْخُلُوْنَ
الْجَنَّةَ
أَبَدًا
اَلدَّيُوْثُ
وَالرَّجْلَةُ
مِنَ
النِّسَاءِ
وَمُدْمِنُ
الْخَمْرِ.
আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার
সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী’
(তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঙ)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ
بْنِ
عَمْرٍو
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
اللهِ
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
مَنْ
شَرِبَ
الْخَمْرَ
وَسَكِرَ
لَمْ
تُقْبَلْ
لَهُ
صَلاَةٌ
أَرْبَعِينَ
صَبَاحًا
وَإِنْ
مَاتَ
دَخَلَ
النَّارَ
فَإِنْ
تَابَ
تَابَ
اللهُ
عَلَيْهِ
وَإِنْ
عَادَ
فَشَرِبَ
فَسَكِرَ
لَمْ
تُقْبَلْ
لَهُ
صَلاَةٌ
أَرْبَعِينَ
صَبَاحًا
فَإِنْ
مَاتَ
دَخَلَ
النَّارَ
فَإِنْ
تَابَ
تَابَ
اللهُ
عَلَيْهِ
وَإِنْ
عَادَ
فَشَرِبَ
فَسَكِرَ
لَمْ
تُقْبَلْ
لَهُ
صَلاَةٌ
أَرْبَعِيْنَ
صَبَاحًا
فَإِنْ
مَاتَ
دَخَلَ
النَّارَ
فَإِنْ
تَابَ
تَابَ
اللهُ
عَلَيْهِ
وَإِنْ
عَادَ
كَانَ
حَقًّا
عَلَى
اللهِ
أَنْ
يَسْقِيَهُ
مِنْ
رَدَغَةِ
الْخَبَالِ
يَوْمَ
الْقِيَامَةِ
قَالُوا
يَا
رَسُوْلَ
اللهِ
وَمَا
رَدَغَةُ
الْخَبَالِ
قَالَ
عُصَارَةُ
أَهْلِ
النَّارِ-
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য পান করবে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ
অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে। যদি তওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার তওবা কবুল
করবেন। আবার নেশাদার দ্রব্য পান করলে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। যদি এ
অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল
করবেন। আবার যদি নেশাদার দ্রব্য পান করে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না। এ
অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। লোকটি যদি
চতুর্থবার মদ পান করে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামাতের দিন ‘রাদাগাতুল খাবাল’
পান করাবেন। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!
‘রাদাগাতু খাবাল’
কী? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আগুনের তাপে জাহান্নামীদের শরীর
হতে গলে পড়া রক্তপূজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ’ (ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/ ২৭৩৮,
হাদীছ ছহীহ)।
মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের
প্রতি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অভিশাপ করেছেন। (১) যে লোক মদের নির্যাস
বের করে (২) প্রস্তুতকারক (৩) মদপানকারী (৪) যে পান করায় (৫) আমদানীকারক (৬) যার জন্য
আমদানী করা হয় (৭) বিক্রেতা (৮) ক্রেতা (৯) সরবরাহকারী এবং (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী’
(তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৭৭৬; বঙ্গানুবাদ ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/ ২৬৫৬)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(চ)
عَنْ اَبِىْ
مَالِكِ
الْاَشْعَرِىِّ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لَيَشْرَبَنّ
نَاسُ
من
امّتِىْ
الخَمَرَ
يُسَمُّوْنَهَا
بِغَيْرِ
اِسْمِهَا
يُعْزَفُ
عَلى
رُؤوْسِهِمْ
بِالْمَعَازِفِ
وَالْمُغَنِّيَاتِ
يَخْسِفُ
اللهُ
بِهِمُ
الْاَرْضَ
ويَجْعَلُ
مِنْهُمُ
الْقِرْدَةَ
والْخَنَازِيْرَ.
আবু মালিক আশ’আরী
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘আমার কিছু উম্মত মদ পান করবে এবং তার নাম রাখবে ভিন্ন। তাদের নেতাদেরকে গায়িকা
ও বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সম্মান করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভুমিকম্পের মাধ্যমে
মাটিতেই ধসিয়ে দিবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করবেন’
(বুখারী, ইবনে মাজাহ হা/৪০২০)। এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের
নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা।
এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার
হবে শূকর ও বানরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ছ)
عَنْ مُعَاذِبْنِ
جَبَلٍ
عَنْ
رَسُوْلِ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
قَالَ
إِنَّ
هَذَا
الْاَمْرَ
بَدَأ
نُبْوَةً
وَرَحْمَةً
ثُمّ
يَكُوْنُ
خِلَافَةً
وَرَحْمَةً
ثُمَّ
مُلْكًا
عَضُوْضًا
ثم
كَائِنٌ
جَبْرِيّةً
وَعُتُوًا
وفَسَادًا
فِى
الْاَرْضِ
يَسْتَحِلُّوْنَ
الْحَرِيْرَ
والْفُرُوْجَ
والْخُمُوْرَ
يُرْزَقُوْنَ
عَلى
ذلِكَ
وَيُنْصَرُوْنَ
حتّى
يَلْقُوا
اللهَ.
মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘ইসলামের সূচনা বা রাজত্ব শুরু হয়েছে নবী ও দয়া দ্বারা। তারপর রাজত্ব আসবে খেলাফত ও
রহমত দ্বারা, তারপর আসবে অত্যাচারী শাসকদের যুগ। তারপর আসবে কঠোরতা, উচ্ছৃংখলতা, বিপর্যয়
সৃষ্টিকারীর যুগ। এসব অত্যাচারী শাসকেরা রেশমী কাপড় পরিধান করা, অবৈধভাবে নারীদের লজ্জাস্থান
উপভোগ করা এবং মদ পান করাকে হালাল মনে করবে। এরপরও তাদের প্রচুর রুযী দেয়া হবে। দুনিয়াবী
যে কোন কাজে তাদের সাহায্য করা হবে। অবশেষে এ পাপের মধ্যে লিপ্ত থেকে আল্লাহর সম্মুখে
উপস্থিত হবে’
(বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৫১৪৩, হাদীছ ছহীহ)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(জ)
عَنْ اَنَسٍ
قَالَ
سَمِعْتُ
رَسُوْلَ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
يَقُوْلُ
اِنَّ
مِنْ
اَشْرَاطِ
السّاعَةِ
اَنْ
يُرْفَعَ
الْعِلْمُ
ويَكْثُرَ
الْجَهْلُ
ويكثُر
الزِّنَا
ويكثُرَ
شرْبُ
الْخَمْرِ
ويَقِلَّ
الرِّجَالُ
ويكثُر
َالنّسَاءُ
حتىّ
يَكُوْنَ
لِخَمْسِيْنَ
اِمْرَاةً
القَيِّمُ
الْوَاحِدُ
وفى
رواية
يقلُّ
الْعِلْمُ
ويظْهَرُ
الْجَهْلُ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে (১) বিদ্যা উঠে যাবে (২) মূর্খতা
বেড়ে যাবে (৩) ব্যাভিচার বেশি হবে (৪) মদপান বৃদ্ধি পাবে (৫) পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে
(৬) নারীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে। এমনকি একজন পুরুষ ৫০ জন মহিলার পরিচালক হবে। অপর এক
বর্ণনায় রয়েছে, ‘বিদ্যা কমে যাবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে’
(বুখারী, মুসলিম মিশকাত হা/৫২০৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(ঝ)
عَنْ اَنَسٍ
قَالَ
قَالَ
رَسُوْلُ
الله
صَلَّى
اللّٰهُ
عَلَيْهِ
وَسَلَّم
لَيَكُوْنَنَّ
فِى
هَذِهِ
الْاُمّةِ
خَسْفٌ
وقَذْفٌ
وَمَسْخٌ
وَذَلِكَ
اِذَا
شَرِبُوْا
الْخُمُوْرَ
واتَّخَذُوْا
القَيْنَاتِ
وَضَرَبُوْا
بِالْمَعَازِفِ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে
এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন
এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে
দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি।
(ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী
হওয়া।
উপদেশ/৮৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
উল্লেখিত বিষয়াদি ছাড়াও কোরআন ও
হাদিসে আরো অনেক নিষিদ্ধমূলক বিষয় আছে, যেগুলো করলে মুসলমানদের ইমান থাকবে না। কাফের,মুশরেকরা
এগুলোই ইমান বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করল।
সবগুলো ইমান বিধ্বংসী অস্ত্রের মধ্যে মদকে কাফের,মুশরেকরা প্রথম বেছে
নেয় এবং তারা মুসলিম সমাজে মদের প্রচলন শুরু
করে দেয়। কারন তারা জানতে পেরেছে যে, মদ হচ্ছে সকল পাপের মূল উৎস।
ফ্রাঞ্চের জনৈক বিশিষ্ট
পন্ডিত হেনরী তাঁর গ্রন্থ “ খাওয়াতির মাওয়ানিহ ফিল
ইসলাম” এ লিখেছেন, “প্রাচ্যবাসীকে সমূলে
উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য এই মদই ছিল
অব্যর্থ তলোয়ার।” আমরা আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত
আমাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্ত আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে
প্রভাবিত হয়নি। ফলে তাদের বংশ বেড়েই চলছে। এরা যদি আমাদের এ উপঢৌকন গ্রহণ করে নিতো; যে ভাবেই তাদের একটি বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠী গ্রহণ করে নিয়েছে তাহলে তারাও
আমাদের কাছে পদানত ও অপদস্ত হয়ে যেত। আজ যাদের ঘরে আমাদের সরবরাহকৃত মদের প্রবাহ বইছে, তারা আমাদের কাছে এতই নিকৃষ্ট ও পদদলিত হয়ে গেছে যে, তারা তাদের মাথাটি পর্যন্ত তুলতে পারছে না।
জনৈক বৃটিশ আইন বিশেষজ্ঞ
লিখেছেন, “ইসলামি শরীয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এও একটি বৈশিষ্ট্য যে এতে মদপান
নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি, আফ্রিকার লোকেরা যখন এর ব্যবহার শুরু করে, তখন থেকেই তাদের মধ্যে
উন্মাদনা সংক্রমিত হতে থাকে। আর ইউরোপের লোকেরা যখনই এই বস্তুকে চুমুক দিতে শুরু করেছে
কাজেই আফ্রিকার লোকদের জন্য যেমন এর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন, তেমনি ইউরোপের লোকদের জন্যও
এর কারনে কঠিন শাস্তি বিধান করা অপরিহার্য।
(সূত্র: অপরাধ ও শাস্তি সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল। প্রকাশক-ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল- মে ২০০৬। পৃষ্ঠা নং-৪৩-৪৪।)
সুপ্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা- আপনারা
এখন সহজেই অনুধাপন করতে পারছেন যে, কাফের-মুশরিকগণ মুসলমানদের ইমান আমল ধ্বংস করার
জন্যে কি অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান
দেশগুলোতে মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সরকারি অনুমোদনে উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা ও
মদপান চলছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যদি ধরা
যায়-বাংলাদেশে ভারত থেকে ফেন্সিডিল, হিরোইন ও বিভিন্ন নামীয় মদ, মায়ানমার থেকে ইয়াবা
দেদারছে আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট সংলগ্ন ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়
প্রায় ২৯টি ফেন্সিডিলের কারখানা আছে। যেগুলো সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতের অভ্যন্তরে ১.৫
কিমি থেকে ৩ কিমির মধ্যে অবস্থিত।
২৪ মে ২০১৫ তারিখে “যুগান্তর
পত্রিকায়” প্রকাশিত এক তথ্য মতে, সারা দেশে মদের বার রয়েছে ১১৮টি। এর মধ্যে ক্লাব-বার
২৮টি। এসব ক্লাব-বারের বেশিরভাগই আবার ঢাকায়। রাজধানীতে ক্লাব বারের সংখ্যা ১৭টি। বাকিগুলো
চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশালে।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে (০৮.৫১ PM Bdst) bdnews24.com এ প্রকাশিত
এক তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকায় ৬০টি ক্যাসিনো আছে। এছাড়া অনেক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত যে, ক্যাসিনোর সংখ্যা কেউ বলছে ৬০টি, কেউ ১৫০টি, কেউ ৬০০টি। তবে র্যাবের মহাপরিচালক
এই হিসেব উড়িয়ে দেন। যাই হোক বাংলাদেশে মদের ব্যবসা করার জন্য যেমন লাইসেন্স দেয়া হয়
তেমনি মদপানের লাইসেন্সও দেয়া হয়। সৌদি আরবও বাদ নেই। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রেই ইসলামে নিষিদ্ধ এই মদের প্রচলন বিদ্যমান। আর মুসলমানদের ইমানি শক্তি ধ্বংস করার মূল অস্ত্রই হচ্ছে এই মদ।
মুসলিম সমাজে এই মদের প্রচলন, কে ঘটালো? এখন কারা অনুমোদন দিচ্ছে। কাফের-মুশরিকরা এখানে স্বার্থক যে,
পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে নিম্নোক্ত ইসলাম বিরোধী বিষয়গুলো চালু করতে পেরেছে,
তাহলোঃ-
(১) সুদের প্রচলন।
(২) মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রচলন।
(৩) নাচ গান ও বাদ্য যন্ত্রের প্রচলন।
(৪) জুয়ার প্রচলন।
(৫) ঘুষ ও দুর্নীতির প্রচলন।
(৬) যেনা/ব্যভিচার ও পতিতা বৃত্তির প্রচলন।
(৭) পর্দাহীনতা ও অশ্লীলতার প্রচলন।
উল্লেখিত বিষয়গুলো আমাদের মুসলিম সমাজে এখন
ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও বাস্তবায়িত। যারা এসবের সাথে জড়িত তারা কিন্তু মুসলমান।
স্পেনে মুসলমান শাসনের শেষ যুগে উল্লেখিত বিষয়গুলো
কাফের-মুশরিকরা সুকৌশলে প্রচলন ঘটালে মুসলমানদের নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিতে থাকে। যার
ফলে তাদের মনোবল দিন দিন নষ্ট হয়ে গেলে বিশ্বাসঘাতক মুসলমানকে দিয়েই তারা তাদের স্বার্থ
হাসিল করে।
আল্লাহর দরবারে নির্যাতিত মুসলমানদের কেনো দোয়া কবুল হচ্ছে নাঃ
স্পেনে মুসলামান নির্যাতনের ঘটনা ১৪৯২ সালে। আমরা ইতিহাস
পড়ে জানতে পারছি। চোখে দেখি নাই। কিন্তু বর্তমানে মুসলমান নির্যাতনের চাক্ষুষ প্রমাণ
আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ভারত, মায়ানমার, স্পেন, ইতালি, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও চিনের উইঘুর রাজ্যসহ আরো অনেক রাষ্ট্রে আমরা দেখছি মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ ও আমাদের শেষ নবি (সা.) কে নিয়ে তাদের নগ্ন প্রচারণা। বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি আমেরিকাকে আমরা দেখছি মুসলিম বিশ্বে যুদ্ধ বাধিয়ে রাখতে । মুসলিম দেশগুলোতে আমরা দেখছি ধর্ম বিক্রিত করতে, আমরা দেখেছি মসজিদুল হারামের ইমামকে হক কথা বলার কারনে এরেস্ট হতে, দেখছি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে আল্লাহর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে, আমরা দেখছি মজলুমের আর্তনাতের সামনে শক্তিমানদের নীরবতা।
এতোদিন দেখে আসছি হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও খৃস্টানরা মুসলমানদেরকে নির্যাতন করছে। এখন দেখা যাচ্ছে-মুসলমানই মুসলমানকে নির্যাতন করছে। কাফের মুশরিকরা এ পরিবেশটাও তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।
ভারত, মায়ানমার, স্পেন, ইতালি, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও চিনের উইঘুর রাজ্যসহ আরো অনেক রাষ্ট্রে আমরা দেখছি মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ ও আমাদের শেষ নবি (সা.) কে নিয়ে তাদের নগ্ন প্রচারণা। বর্তমান বিশ্বের পরাশক্তি আমেরিকাকে আমরা দেখছি মুসলিম বিশ্বে যুদ্ধ বাধিয়ে রাখতে । মুসলিম দেশগুলোতে আমরা দেখছি ধর্ম বিক্রিত করতে, আমরা দেখেছি মসজিদুল হারামের ইমামকে হক কথা বলার কারনে এরেস্ট হতে, দেখছি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে আল্লাহর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে, আমরা দেখছি মজলুমের আর্তনাতের সামনে শক্তিমানদের নীরবতা।
এতোদিন দেখে আসছি হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও খৃস্টানরা মুসলমানদেরকে নির্যাতন করছে। এখন দেখা যাচ্ছে-মুসলমানই মুসলমানকে নির্যাতন করছে। কাফের মুশরিকরা এ পরিবেশটাও তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।
নির্যাতিত মুসলমানরা মার খাচ্ছে, দুই হাত তুলে
দোয়া করছে, অনেকে আর্ত চিৎকার করে আকাশ বাতাস ভারী করছে। অপর দিকে বিশ্বের সব প্রান্ত
থেকে অন্য মুসলমানরা দোয়া করছে কিন্তু কোনো দোয়াই তো কবুল হচ্ছে না।
দোয়া যাতে কবুল না হয় সে বীজ অনেক আগেই কাফের
মুশরিকরা মুসলিম সমাজে বপন করে দিয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মুসলমান এখন হিন্দু,
বৌদ্ধ, ইহুদি ও খৃস্টানদের পদদলিত। ঘুমাও মুসলমান ঘুমাও। বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের মোনাফিকীকরন, মুসলিম সমাজে হারাম জিনিসের বাস্তবায়ন, অশ্লীলতার প্রচলন ও নগ্ন পদচারনার কারনে মুসলিমরা আজ অসহায়। আমাদের তওবা মাঝপথে যেনো আটকে যাচ্ছে। দোয়া বা মোনাজাত আল্লাহর দরবারে গৃহিত হচ্ছে না।
পৃথিবীতে মহাবিপর্যয়/ মহামারী কেনো আসে?
(১) আল্লাহ তাআলা
বলেন,
স্থলে ও জলে মানুষের
কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি
আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (আল–কোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত:
৪১)।
(২) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
‘তোমরা এমন ফিতনাকে ভয়
করো, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা জালিম (অত্যাচারী-অপরাধী) কেবল তাদিগকেই
ক্লিষ্ট করবে না এবং জেনে রাখো নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।’ (সুরা-৮
আনফাল, আয়াত: ২৫)।
(৩) কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন,
‘সময়ের শপথ! মানুষ
ক্ষতির মধ্যে রয়েছে; তবে তারা ছাড়া যারা ইমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং একজন
অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩)।
(৪) সুনানে ইবনে
মাজাহ-হাদিস নং-৪০১৯
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبُو أَيُّوبَ، عَنِ ابْنِ أَبِي مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ " .
আবদুল্লাহ বিন উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে
মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয়
প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে
অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া
এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন
জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন
বিপদ-মুসীবত এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত
হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের
উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে
নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর
নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে
দেন। সহীহাহ ১০৬।
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
(৫)
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ فِى هَذِهِ الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وَذَلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান
করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন
অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর
থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের
দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গযবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ)
নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া।
উপদেশ/৮৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ
হাদিস
শেষ কথা কিয়ামত অতি নিকটে। কিয়ামতের ছোট বড় যতো আলামত আছে তার কয়েকটি ব্যতীত সবগুলো
আমাদের চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। মুসলমানরা হালালকে হারাম,হারামকে হালাল মনে করছে। সত্যকে মিথ্যে
ও মিথ্যেকে সত্য বলে জানছে।
মূলত এখন বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের
মুনাফিকীকরণ এর জন্য মুসলমানরা মার খাচ্ছে। সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করলে এটাই
প্রতীয়মান যে, মুসলমান সমাজে প্রচলিত ইসলাম বিরোধী
কর্মকান্ড দূরীভুত করতে ও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে
মুসলমানদের মধ্যে শ্রেণি বিভাগ বা বিভাজন কিংবা
বিভিন্ন দল উপদল বা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে
ঐক্য হতে হবে। নচেৎ কারো একার পক্ষে বর্তমান
পরিস্থিতিতে ইসলাম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আল্লাহ
আমাদের সকলকে সকল ভেদাভেদ ভুলে দিয়ে ঐক্য
গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।”
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৩৮৮।)
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
ইসলামের অন্যান্য সকল বিষয় সহিহভাবে জানতে এর উপর ক্লিক করুনঃ
PLEASE SHARE ON
No comments:
Post a Comment