Monday, May 18, 2020

জানাজা ও কবর জিয়ারতের সহিহ বিধিবিধান

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

জানাজা ও কবর জিয়ারতের সহিহ বিধিবিধান

ভূমিকাঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কুল্লু নাফসিন যাইক্বাতুল মাউত” প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)।

মৃত্যু অবশ্যই আসবে, একদম নির্দিষ্ট সময়ে, এক সেকেন্ড আগেও নয়, পরেও নয়। প্রাণ হরণের সময় মানুষের অবস্থা থাকে বিভিন্ন রকম। তাদের ঈমান, তাকওয়া কৃতকর্ম অনুযায়ী মৃত্যু যন্ত্রণা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

জানাযার সালাত কতো হিজরীতে চালু হয়

 জানাযার সালাত শুরু হয়েছে হিজরীর প্রথম বৎসরে, সুতরাং যারা মক্কায় মারা গেছে তাদের ওপর সালাত আদায় হয়নি।

রোগী দেখতে যাওয়ার হুকুম

(ক) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্ষুধার্থকে খাবার দিও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেও, বন্দী ব্যক্তিকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৩৭৩, ৫৬৪৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৫, আহমাদ ১৯৫১, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ৮৬১৮, ইবনু হিব্বান ৩৩২৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৭৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিমের ওপর আর এক মুসলিমের পাঁচটি হক বর্তায়। (১) সালামের জবাব দেয়া, (২) রোগ হলে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় শামিল হওয়া, (৪) দা’ওয়াত গ্রহণ করা ও (৫) হাঁচির জবাব দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৪০,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬২, আহমাদ ১০৯৬৬, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৯৯৭৮, আমলুল ইওয়ামে ওয়াল লায়লাহ্ ২২১, ইবনু হিব্বান ২৪১, সহীহ আত্ তারগীব ২১৫৬, সহীহ আল জামি‘ ৩১৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের ওপর মুসলিমের ছয়টি হক (অধিকার) আছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! এ অধিকারগুলো কি কি? জবাবে তিনি বলেন, (১) কোন মুসলিমের সাথে দেখা হলে, সালাম দেবে, (২) তোমাকে কেউ দা’ওয়াত দিলে, তা কবূল করবে, (৩) তোমার কাছে কেউ কল্যাণ কামনা করলে তাকে কল্যাণের পরামর্শ দেবে, (৪) হাঁচি দিলে তার জবাব “ইয়ারহামুকাল্ল-হ” বলবে, (৫) কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, (৬) কারো মৃত্যু ঘটলে তার জানাযায় শরীক হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬২, আহমাদ ৮৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯০৯, শু‘আবুল ঈমান ৮৭৩৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪০৫, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯৯১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৩১৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি আদেশ ও সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে আদেশ করেছেন- (১) রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, (২) জানাযায় শরীক হতে, (৩) হাঁচির আলহামদুলিল্লা-হ’র জবাবে ইয়ারহামুকাল্ল-হ  বলতে, (৪) সালামের জবাব দিতে, (৫) দা’ওয়াত দিলে তা কবূল করতে, (৬) কসম করলে তা পূর্ণ করতে, (৭) মাযলূমের সাহায্য করতে।

এভাবে তিনি আমাদেরকে (১) সোনার আংটি পরতে, (২) রেশমের পোশাক, (৩) ইস্তিবরাক [মোটা রেশম], (৪) দীবাজ [পাতলা রেশম] পরতে, (৫) লাল নরম গদীতে বসতে, (৬) ক্বাস্‌সী ও (৭) রূপার পাত্র ব্যবহার করতে। কোন কোন বর্ণনায়, রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রূপার পাত্রে পান করবে আখিরাতে সে তাতে পান করতে পারবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৫, ৫৬৫০, ৫৮৪৯, ৬২২২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫২৮২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২০৬৬, সুনান আত্ তিরযিমী ২৮০৯, সুনান আননাসায়ী ১৯৩৯, ৫৩০৯, আহমাদ ১৮৫০৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৯২৪, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ২০৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৮৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫২১৫, ইসলামিক সেন্টার ৫২২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

( ঙ)  যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমার চোখের অসুখ হলে আমাকে দেখতে আসলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৫১, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০২, আহমাদ ১৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রোগী দেখতে না গেলে কিয়ামতে আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞাসা করবেন

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন বলবেন, হে বানী আদম! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে দেখতে যাব? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব! আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমাকে কিভাবে খাবার দিতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, সে সময় যদি তুমি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বানী আদম! আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম। তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব! আমি কিভাবে তোমার পিপাসা নিবারণ করতাম? তুমি তো বিশ্বজাহানের রব। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। যদি তুমি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৯, ইবনু হিব্বান ৯৪৪, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫১৭, সহীহ আত্ তারগীব ৯৫২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৯১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩২২, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রোগী দেখতে যাওয়ার ফজিলত

(ক) সাওবান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য যখন চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৬৭, আহমাদ ২২৪৪৪, ইবনু হিব্বান ২৯৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৭৫, সহীহ আল জামি‘ ১৯৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩১৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে মুসলিম সকাল বেলায় কোন অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) দু’আ করতে থাকে। যদি সে তাকে সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তার জন্য সত্তর হাজার মালাক সকাল পর্যন্ত দু’আ করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরি হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৫০, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৬৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩০৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৪২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৭৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি রোগীকে দেখার জন্য যায়, আসমান থেকে একজন মালাক (ফেরেশতা) তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ধন্য হও তুমি, ধন্য হোক তোমার এ পথ চলা। জান্নাতে তুমি একটি মনযিল তৈরি করে নিলে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭৫, সুনান আত্ তিরমিযী ৮৬১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৪৩, আহমাদ ৮৫৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ২৫৭৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৩৮৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যখন কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য রওয়ানা হয় তখন সে আল্লাহর রহমতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকে। যে পর্যন্ত রোগীর বাড়ী গিয়ে না পৌঁছে। আর বাড়ী পৌঁছার পর রহমতের সাগরে ডুব দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৮১, আহমাদ ১৪২৬০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮৩৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৫০৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৭৭, ইবনু হিব্বান ২৯৫৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৮৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রোগী দেখতে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়া

আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন অসুস্থ বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর কোন রোগীকে দেখতে গেলে তিনি বলতেন, ’ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ’ভয় নেই, তুমি ভাল হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’ তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫২৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ইবনু হিব্বান ২৯৫৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৭১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।

রোগীর জন্য দোয়া করা

(ক)  আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কারো অসুখ হলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ দূর করে দিন। তাকে নিরাময় করে দিন। নিরাময় করার মালিক আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোন নিরাময় নেই। এমন নিরাময় যা কোন রোগকে বাকী রাখে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৯১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫২০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৪৯০, আহমাদ ২৪৭৭৬, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ৭৪৬৬, ইবনু হিব্বান ২৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৩, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫২১, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মানুষ তার দেহের কোন অংশে ব্যথা পেলে অথবা কোথাও ফোড়া কিংবা বাঘী উঠলে বা আহত হলে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ স্থানে তাঁর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন, “বিসমিল্লা-হি তুরবাতু আরযিনা- বিরীক্বাতি বা’যিনা- লিইউশফা- সাক্বীমুনা- বিইযনি রব্বিনা-’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি আমাদের কারো মুখের থুথুর সাথে মিশে আমাদের রোগীকে ভাল করবে, আমাদের মহান রবের নির্দেশে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৯৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫২১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৩৫৬৯, আবূ দাঊদ ৩৮৯৫, ইবনু হিব্বান ২৯৭৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৮২৬৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৩১, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলে “মু’আব্বিযা-ত’’ অর্থাৎ সূরাহ্ আন্ নাস ও সূরাহ্ আল ফালাক্ব পড়ে নিজের শরীরের উপর ফুঁ দিতেন এবং নিজের হাত দিয়ে শরীর মুছে ফেলতেন। তিনি মৃত্যুজনিত রোগে আক্রান্ত হলে আমি মু্বিব্বিযাত পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যেসব মু’আব্বিযাত পড়ে তিনি নিজে ফুঁ দিতেন। তবে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত দিয়েই তাঁর শরীর মুছে দিতাম।

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, তাঁর পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি “মু’আব্বিযাত’’ পড়ে তার গায়ে ফুঁ দিতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৩৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৯২, ইবনু হিব্বান ৬৫৯০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫২৬, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উসমান ইবনু আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর শরীরে অনুভূত একটি ব্যথার কথা জানালেন। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, যে জায়গায় তুমি ব্যথা অনুভব করো সেখানে তোমার হাত রাখো। তারপর তিনবার “বিসমিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে) আর সাতবার বলো, “আ’ঊযু বি’ইযযাতিল্ল-হি ওয়া কুদ্‌রাতিহী মিন্ শার্‌রি মা- আজিদু ওয়াউহা-যির’’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সম্মান ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা আমি অনুভব করছি ও আশংকা করছি তাঁর ক্ষতি হতে)।

উসমান ইবনু আবুল আস বলেন, আমি তা করলাম। ফলে আমার শরীরে যে ব্যথা-বেদনা ছিল তা আল্লাহ দূর করে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২০২, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৯১, সুনান আত্ তিরমিযী ২০৮০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫২২, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৩৫৮৩, আহমাদ ১৬২৬৮, ইবনু হিব্বান ২৯৬৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৭১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৭, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৫৩, সহীহ আল জামি‘ ৩৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৫১, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঙ) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ! জিবরীল (আঃ) বললেন, আপনাকে কষ্ট দেয় এমন সব বিষয়ে আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছি প্রত্যেক ব্যক্তির অকল্যাণ হতে। অথবা তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বিদ্বেষী চোখের অকল্যাণ হতে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৮৬, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৭২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৫২৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৭৭৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৫৫৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলিম তার এক অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গিয়ে যদি সাতবার বলে, “আস্আলুল্ল-হাল ‘আযীমা রব্বাল ‘আরশিল ’আযীমি আই ইয়াশফিয়াকা’’ (অর্থাৎ আমি মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন, যিনি মহান ’আরশের রব।)। তাহলে তাকে অবশ্যই আরোগ্য দান করা হয় যদি না তার জীবনের শেষ সময় উপস্থিত হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৫৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৬, সুনান আত্ তিরমিযী ২০৮৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৯, আহমাদ ২১৩৭, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৮২০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৪৮৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪১৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তখন সে যেন বলে, “আল্ল-হুম্মাশফি ’আবদাকা ইয়ানকাউ লাকা ’আদ্যুওয়ান আও ইয়ামশী লাকা ইলা- জানা-যাহ্’’ (অর্থা- হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। সে যাতে তোমার জন্য শত্রুকে আঘাত করতে পারে। অথবা তোমার সন্তুষ্টির জন্য জানাযায় অংশ নিতে পারে।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৫৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৭, আহমাদ ৬৬০০, ইবনু হিব্বান ২৯৭৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৭৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০৪, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৬। তবে আহমাদের সানাদটি দুর্বল কারণ তাতে ইবনুল লাহ্ইয়া রয়েছে)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন ও তার গুণাহ মাফ করে দেন

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদগ্রস্ত করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৪০, আহমাদ ৭২৩৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৬, ইবনু হিব্বান ২৯০৭, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৫, সহীহ আলজামি‘ আস্ সগীর ৬৬১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিমের ওপর এমন কোন বিপদ আসে না, কোন রোগ, কোন ভাবনা, কোন চিন্তা, কোন দুঃখ-কষ্ট হয় না, এমনকি তার গায়ে একটি কাঁটাও ফুটে না, যার দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলো মাফ না করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৫৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭২, আহমাদ ৮০২৭, ইবনু হিব্বান ২৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২১, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৪৯২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩২৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ)  আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তিনি সে সময় জ্বরে ভুগছিলেন। আমি আমার হাত দিয়ে তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার তো বেশ জ্বর! জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দু’জনে যা ভোগ করে আমি তা ভুগছি।

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, এর কারণ, আপনার জন্য দু’গুণ পুরস্কার রয়েছে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন মুসলিমের প্রতি যে কোন কষ্ট পৌঁছে থাক না কেন চাই তা রোগ হোক বা অপর কিছু হোক আল্লাহ তা’আলা তা দ্বারা তার গুনাহসমূহ ঝেড়ে দেন যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪৮, ৫৬৬০, ৫৬৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮০০, আহমাদ ৩৬১৮, দারিমী ২৮১৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৬১, ইবনু হিব্বান ২৯৩৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩৪১৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৩২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩২৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৭৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের দৃষ্টান্ত হলো, ক্ষেতের তরতাজা ও কোমল শস্য শাখার মতো, যাকে বাতাস এদিক-ওদিক ঝুঁকিয়ে ফেলে। একবার এদিকে কাত করে। আবার সোজা করে দেয়। এভাবে তার আয়ু শেষ হয়ে যায়। আর মুনাফিক্বের দৃষ্টান্ত হলো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পিপুল গাছের মতো। একেবারে ভূমিতে উপড়ে পড়ার আগে এ গাছে ঝটকা লাগে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪১, ১৫৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৪৪, ৫৬৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৯৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৪১২, আহমাদ ১৫৭৬৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২২৮৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৯৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৩৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৮৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ)  জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সায়িব (রাঃ)-এর কাছে গেলেন। তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেন? উম্মু সায়িব (রাঃ)বলল, আমার জ্বর বেড়েছে। আল্লাহ এর ভাল না করুন। তার কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর বানী আদমের গুনাহগুলো এভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে হাপর লোহার মরিচা দূর করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৩৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৩২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৮৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ রোগে অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার ’আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৯৯৬, আহমাদ ১৯৬৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৪৭, ইরওয়া ৫৬০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্বা’ঊন (মহামারী)’র কারণে মৃত্যু মুসলিমদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৩০, ৫৭৩২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৬, আহমাদ ১৩৩৩৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৯৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৯৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৯১, ইসলামীক সেন্টার ৪৭৯২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদরা পাঁচ প্রকার- (১) মহামারীতে মৃত ব্যক্তি, (২) পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (৩) পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি, (৪) দেয়াল চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৫) আল্লাহর পথে জিহাদ করে মৃত ব্যক্তি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮২৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৮৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯১৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩৩, আহমাদ ৮৩০৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৮৬, শু‘আবুল ঈমান ৯৪১২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৭৮৭, ইসলামীক সেন্টার ৪৭৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা এক রকম ’আযাব। আল্লাহ যার উপর চান এ আযাব পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৭৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঞ) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ত্বা’ঊন বা মহামারী হলো এক রকমের ’আযাব। এ ত্বা’ঊন বনী ইসরাঈলের একটি দলের ওপর নিপতিত হয়েছিল। অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর নিপতিত হয়েছিল। তাই তোমরা কোন জায়গায় ত্বা’ঊন-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে সেখানে যাবে না। আবার তোমরা যেখানে থাকো, মহামারী শুরু হয়ে গেলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৪৭৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৬৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২১৮, ২২১৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৩, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৬৫, আহমাদ ২১৭৬৩, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৮৩, ইবনু হিব্বান ২৯৫২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২২৪৮, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৫৮১, ইসলামিক সেন্টার ৫৬০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ট) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ আমি যখন আমার কোন বান্দাকে তার প্রিয় দু’টি জিনিস দিয়ে বিপদগ্রস্ত করি, আর সে এর উপর ধৈর্যধারণ করে, আমি তাকে এ দু’টি প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে জান্নাত দান করব। প্রিয় দু’টো জিনিস বলতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টো চোখ বুঝিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৫৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঠ) জাবির ইবনু আতীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে নিহত শাহীদ ছাড়াও সাত ধরনের শাহীদ রয়েছে। এরা হচ্ছে (১) মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তি, (২) পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৩) যা-তুল জান্ব রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৪) পেটের রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, (৬) কোন প্রাচীর চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং (৭) প্রসবকালে মৃত্যুবরণকারী মহিলা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬১, সুনান আবূ দাঊদ ৩১১১, সুনান আননাসায়ী ১৮৪৬, আহমাদ ২৩৭৫৩, ইবনু হিব্বান ৩১৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৯৮, সহীহ আর-জামি‘ আস্ সগীর ৩৭৩৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ড) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চাইলে আগে-ভাগে দুনিয়াতেই তাকে তার গুনাহখাতার জন্য কিছু শাস্তি দিয়ে দেন। আর কোন বান্দার অকল্যাণ চাইলে দুনিয়ায় তার পাপের শাস্তিদান হতে বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে তার পূর্ণ শাস্তি দিবেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৫, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৯৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২২০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঢ) মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ আস্ সুলামী তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাদা বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর তরফ হতে কোন মানুষের জন্য যখন কোন মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে ‘আমল দিয়ে লাভ করতে পারে না, তখন আল্লাহ তাকে তার শরীরে অথবা তার সন্তান-সন্ততির ওপর বিপদ ঘটিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করারও শক্তি দান করেন। যাতে সেরূপ মর্যাদা লাভ করতে পারে, যা আল্লাহর তরফ হতে তার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩০৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ণ) আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৯, সুনান আত্ তিরমিযী ২৪৫৬, শু‘আবুল ঈমান ১০০৯১, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮২৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ত) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একবার জ্বর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এ সময় এক লোক জ্বরকে গালি দিলো। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জ্বরকে গালি দিও না। কারণ জ্বর গুনাহ দূর করে যেভাবে (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৪৬৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(থ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক অসুস্থ লোককে দেখতে গিয়ে বললেন, সুসংবাদ! আল্লাহ তা’আলা বলেন, তা আমার আগুন। আমি দুনিয়াতে এ আগুনকে আমার মু’মিন বান্দার কাছে পাঠাই। তা এজন্যই যাতে এ আগুন কিয়ামতে তার জাহান্নামের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৮৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৩৪৭০, সুনান আত্ তিরমিযী ২০৮৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮০২, আহমাদ ৯৬৭৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৫৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(দ) ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাহীদগণ এবং যারা বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারীদের ব্যাপারে ঝগড়া করবে। শহীদগণ বলবে, ’’এরা আমাদের ভাই। কেননা আমাদেরকে যেভাবে নিহত করা হয়েছে, এভাবে এদেরকেও নিহত করা হয়েছে।’’ আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীগণ বলবে, ’’এরা আমাদের ভাই। এ লোকেরা এভাবে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যেভাবে আমরা মরেছি।’’ তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, এদের জখমগুলোকে দেখা হোক। এদের জখম যদি শহীদদের জখমের মতো হয়ে থাকে, তাহলে এরাও শহীদদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সাথে থাকবে। বস্তুত যখন জখম দেখা হবে, তখন তা’ শাহীদদের জখমের মতো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৬, সুনান আননাসায়ী ৩১৬৪, আহমাদ ১৭১৫৯, শু‘আবুল ঈমান ৯৪১৬, সহীহ আত্ তারগীব ১৪০৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮০৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ধ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে ওখান থেকে ভেগে যাওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে ভেগে যাবার মতো। প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে সেখানেই ধৈর্য ধরে অবস্থানকারী শাহীদের সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৭, আহমাদ ১৪৮৭৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১২৯৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪২৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

পেটের অসুখে মারা গেলে কবরে তার শাস্তি হবে না

সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে তার ‘পেটের অসুখ’ হত্যা করেছে, তাকে কবরে শাস্তি দেয়া হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭৩, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৬৪, সুনান আননাসায়ী ২০৫২, আহমাদ ১৮৩১১, সহীহ আত্ তারগীব ১৪১০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৪৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতী

আত্বা ইবনু আবূ রবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আব্বাস (রাঃ)আমাকে একবার বললেন, হে ’আত্বা! আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এ কালো মহিলাটিকে দেখো। এ মহিলাটি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত। রোগের ভয়াবহতার ফলে আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তার কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি চাও, সবর করতে পার। তাহলে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর তুমি চাইলে, আমি তোমার আরোগ্যের জন্য দু’আ করব। আল্লাহ যেন তোমাকে ভাল করে দেন। জবাবে মহিলাটি বলল, আমি সবর করব। পুনরায় মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উলঙ্গ হয়ে যাই। দু’আ করুন আমি যেন উলঙ্গ হয়ে না পড়ি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৪৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৪৪৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৩, সহীহ আদাবুল মুফরাদ ৫০৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৩৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দুনিয়ার ভোগবিলাসীরা কিয়ামতে আক্ষেপ করবে

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ভোগ-বিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবাতগ্রস্ত লোকদেরকে সাওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করবে। বলবে, আহা! তাদের চামড়া যদি দুনিয়াতেই কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত! (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭০, সুনান আত্ তিরমিযী ২৪০২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮১৭৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যাদের উপর বেশী বিপদ আপদ আরোপিত হয়

সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর নবী! কোন্ সব লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। দীনদারীতে যে যত বেশী মজবুত হয় তার বিপদ-মুসীবাত তত বেশী কঠিন হয়। দীনের ব্যাপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করতে থাকে। তার কোন গুনাহখাতা থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬২, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৯৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪০২৩, আহমাদ ১৬০৭, দারিমী ২৮২৫, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৭৪৩৯, ইবনু হিব্বান ২৯০১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

যার যতো বড় বিপদ তার ততো বড় পুরুস্কার

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বড় বড় বিপদ-মুসীবাতের পরিণাম বড় পুরস্কার। আল্লাহ তা’আলা কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। যারা এতে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত থাকে তাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে জাতি এতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৬, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৯৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪০৩১, শু‘আবুল ঈমান ৯৩২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩৫, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৪৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪০৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসীবাত লেগেই থাকে

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসীবাত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসীবাত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হবার আগ পর্যন্তই তা চলতে থাকে। আর আল্লাহর সাথে তার মিলিত হবার পর তার ওপর গুনাহের কোন বোঝাই থাকে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মুমিন বান্দা সুস্থ অবস্থায় যেসব আমল করতো অসুস্থ অবস্থায় সেইসব আমল করতে না পারলেও নিযুক্ত ফিরেস্তা তার আমলনামায় তা রিখতে থাকে

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যখন ’ইবাদাতের কোন সুন্দর নিয়ম-পদ্ধতি পালন করে চলতে শুরু করে এবং তারপর যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে (’ইবাদাতের ধারা বন্ধ হয়ে যায়), তখন তার ’আমলনামা লিখার জন্য নিযুক্ত মালাককে (ফেরেশতাকে) বলা হয়, এ বান্দা সুস্থ অবস্থায় যে ’আমল করত (অসুস্থ অবস্থাও) তার ’আমলনামায় তা লিখতে থাকো। যে পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করে দিই অথবা তাকে আমার কাছে ডেকে আনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৫৯, আহমাদ ৬৮৯৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৪৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪২৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিমকে শারীরিক বিপদে ফেলা হলে মালায়িকাহ্-কে (ফেরেশতাদেরকে) বলা হয়, এ বান্দা নিয়মিত যে নেক কাজ করত, তা-ই তার ’আমলনামায় লিখতে থাকো। এরপর তাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করলে গুনাহখাতা হতে ধুয়ে পাকসাফ করে নেন। আর যদি তাকে উঠিয়ে নেন, তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহমত দান করেন। এ হাদীস দু’টি শারহুস্ সুন্নাহয় বর্ণিত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৬০, আহমাদ ১২৫০৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ০৮৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৩০, ইরওয়া ২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪২২)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রোগী অবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলে তার গুণাহ মাফ হয়

শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তাঁরা দু’জন এক রোগীকে দেখতে গেলেন। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে? রোগীটি বলল, আল্লাহর রহমতে ভালই। তার কথা শুনে শাদ্দাদ বললেন, তোমার গুনাহ ও অপরাধ মাফ হবার শুভ সংবাদ! কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোন মু’মিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা হতে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ হতে পবিত্র হয়ে উঠবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দী করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭৯, আহমাদ ১৭১১৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২০০৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪২৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৩০০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

রোগীর ছালাত

পীড়িতাবস্থায় দাঁড়াতে অক্ষম হলে কিংবা রোগবৃদ্ধির আশংকা থাকলে বসে, শুয়ে বা কাত হয়ে ছালাত আদায় করবে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সালাত  দাঁড়িয়ে আদায় করবে। যদি তাতে সক্ষম না হও তাহলে বসে আদায় করবে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে (শুয়ে) কাত হয়ে আদায় করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 সিজদার জন্য সামনে বালিশ, টুল বা উঁচু কিছু নেওয়া যাবে না। যদি মাটিতে সিজদা করা অসম্ভব হয়, তাহ’লে ইশারায় ছালাত আদায় করবে। সিজদার সময় রুকূর চেয়ে মাথা কিছুটা বেশী নীচু করবে। (ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৩)।

জানা আবশ্যক যে, শারঈ ওযর ব্যতীত ‘বসা মুছল্লী দাঁড়ানো মুছল্লীর অর্ধেক নেকী পেয়ে থাকেন’।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি কোন লোকের বসে বসে (নফল) সালাত আদায় করার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি দাঁড়িয়ে পড়ত ভাল হতো। যে লোক বসে বসে নফল সালাত আদায় করবে সে দাঁড়িয়ে পড়া লোকের অর্ধেক সাওয়াব পাবে। আর যে লোক শুয়ে সালাত আদায় করবে সে বসে পড়া ব্যক্তির অর্ধেক সাওয়াব পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রোগ যন্ত্রণা যতো কঠিনই হোক না কেনো নিজের মৃত্যু কামনা করা যাবে না

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেক্কার হলে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে, (সে তওবা্ করে) আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি হাসিল করার সুযোগ পাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭২৩৩, দারিমী ২৮০০, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১৯৫৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৬৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৬১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে আর তা আসার পূর্বে তাকে যেন আহবান না জানায়, কারণ সে যখন মৃত্যুবরণ করবে তার ’আমল বন্ধ হয়ে যাবে। আর মু’মিনের হায়াত বাড়লে তার ভাল কাজই বৃদ্ধি পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮২, আহমাদ ৮১৮৯, ইবনু হিব্বান ৩০১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৬৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৬১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৭৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৬২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কোন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা করতেই হয় তাহলে যেন সে বলে,

“আল্ল-হুম্মা আহয়িনী মা- কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী ওয়াতা ওয়াফ্‌ফানী ইযা- কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার জীবন আমার জন্য যতক্ষণ কল্যাণকর হয়, আমাকে বাঁচিয়ে রেখ। আর আমাকে মৃত্যুদান করো যদি মৃত্যুই আমার জন্য কল্যাণকর হয়।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬৭১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৭০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৮০, সুনান আবূ দাঊদ ৩১০৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৭০, সুনান আননাসায়ী ১৮২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ২৯৩৪৭, আহমাদ ১১৯৭৯, ১৩০২০, ইবনু হিব্বান ৯৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬৫, শু‘আবুল ঈমান ৯৬৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৭০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৬১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হলো, যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ‘আযাব ও তার পরিণতির ‘খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা’আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫০৭, আত্ সুনান আততিরমিযী ২৩০৯, সুনান আননাসায়ী ১৮৩৬, ১৮৩৭, আহমাদ ২২৭৪৪, দারিমী ২৭৯৮, ইবনু হিব্বান ৩০০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৯৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঙ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযাহ্ বহন করা হচ্ছিল তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (জানাযাহ্ দেখে) বললেন, এ ব্যক্তি শান্তি পাবে, অথবা এর থেকে অন্যরা শান্তি পাবে। সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! শান্তি পাবে কে, অথবা ওই ব্যক্তি কে যার থেকে অন্যরা শান্তি পাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহর মু’মিন বান্দা মৃত্যুর দ্বারা দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট হতে আল্লাহর রহমতের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে সে শান্তি পায়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে তার অনিষ্ট ও ফাসাদ হতে মানুষ, শহর-বন্দর গাছ-পালা ও জন্তু-জানোয়ার সবকিছুই শান্তি লাভ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৯১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৫০, সুনান আননাসায়ী ১৯৩০, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৮০, আহমাদ ২২৫৭৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩০১২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৭৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৫৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাত দিয়ে আমার দু’কাঁধ ধরলেন। তারপর বললেন, দুনিয়ায় তুমি এমনভাবে থাকো, যেমন- তুমি একজন গরীব অথবা পথের পথিক। (এরপর থেকে) ইবনু ’উমার (রাঃ) (মানুষদেরকে) বলতেন, ’’সন্ধ্যা হলে আর সকালের অপেক্ষা করবে না। আর যখন সকাল হবে, সন্ধ্যার অপেক্ষা করবে না। নিজের সুস্থতার সুযোগ গ্রহণ করবে অসুস্থতার আগে ও জীবনের সুযোগ গ্রহণ করবে মৃত্যুর আগে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪১৬, সুনান আত্ তিরমিযী ২৩৩৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫১২, শু‘আবুল ঈমান ৯৭৬৪, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১১৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৪১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৫৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ছ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মৃত্যুর তিনদিন আগে এ কথা বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আল্লাহর ওপর ভাল ধারণা পোষণ করা ছাড়া তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩১১৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪১৬৭, ইবনু হিব্বান ৬৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৩৮৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৭৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৬৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৬৫, ইসলামিক সেন্টার ৭০২৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(জ) ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, আল্লাহর সাথে লজ্জা করার মতো লজ্জা করো। সাহাবীগণ বললেন, আমরা আল্লাহর সাথে লজ্জা করছি, হে আল্লাহর রসূল! সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লজ্জার মতো লজ্জা এটা নয় যা তোমরা বলছ। বরং প্রকৃত লজ্জা এমন যে, যখন ব্যক্তি লজ্জার হক আদায় করে সে যেন মাথা ও মাথার সাথে যা কিছু আছে তার হিফাযাত করে। পেট ও পেটের সাথে যা কিছু আছে তারও হিফাযাত করে। তার উচিত মৃত্যু ও তার হাড়গুলো পঁচে গলে যাবার কথা স্মরণ করে। যে ব্যক্তি পরকালের কল্যাণ চায়, সে যেন দুনিয়ার চাকচিক্য ও জৌলুশ ছেড়ে দেয়। অতএব, যে ব্যক্তি এসব কাজ করল, সে ব্যক্তিই আল্লাহর সাথে লজ্জার হক আদায় করল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬০৮, সুনান আত্ তিরমিযী ২৪৫৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৪৩২০, আহমাদ ৩৬৭১, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৭৯১৫, সহীহ আত্ তারগীব ১৭২৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৯৩৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঝ) বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন কপালের ঘামের সাথে মৃত্যুবরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১০, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৪২, সুনান আননাসায়ী ১৮২৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫২, আহমাদ ২২৯২৪, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৬৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঞ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক যুবকের কাছে গেলেন। যুবকটি সে সময় মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এখন তোমার মনের অবস্থা কী? যুবকটি উত্তর দিলো, আমি আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু এরপরও আমি আমার গুনাহখাতার জন্য ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ সময়ে এ যুবকের মতো যে আল্লাহর বান্দার মনে ভয় ও আশার সঞ্চার হয় আল্লাহ তা’আলা তাকে তাই দান করেন, সে গুনাহকে ভয় করে এবং আশা পোষণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১২, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৮৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৬১, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৮৩৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ট) হারিসাহ্ ইবনু মুযাররাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার খাব্বাব-এর নিকট গেলাম (সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন)। তিনি তার শরীরের সাত জায়গায় দাগ লাগিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ’তোমরা মৃত্যু কামনা করো না’ কথাটি না শুনতাম, তাহলে অবশ্যই মৃত্যু কামনা করতাম। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমার নিজেকে এরূপ পেয়েছি যে, আমি একটি দিরহামেরও মালিক ছিলাম না। আর এখন আমার ঘরের কোণেই চল্লিশ হাজার দিরহাম পড়ে আছে। হারিসাহ্ বলেন, তারপর খাব্বাবের কাছে তার কাফনের কাপড় আনা হলো (যা খুবই উত্তম দামী কাপড় ছিল) তিনি তা দেখে কাঁদতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, যদিও এ কাপড় জায়িয কিন্তু হামযাহ্ (রাঃ)-এর জন্য পুরো কাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি। শুধু একটি কালো ও সাদা পুরাতন চাদর ছিল। তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা খালি হয়ে যেত। আবার পা ঢাকলে মাথা খালি হয়ে যেত। অবশেষে এ চাদর দিয়েই মাথা ঢেকে দেয়া হয়েছিল। আর পা ঢেকে দেয়া হয়েছিল ইযখার ঘাস দিয়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৫, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৭০, আহমাদ ২১০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মৃত্যুকালীন সময়ে করণীয়

 (ক) তালক্বীন করানো: ‘তালক্বীন’ অর্থ: কথা বুঝানো বা দ্রুত মুখস্থ করে নেওয়া। মৃত্যুর আলামত দেখা গেলে রোগীর শিয়রে বসে তাকে কালেমায়ে ত্বাইয়িবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ পড়ানো উচিৎ।

হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাকে কালিমায়ে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) তালকীন দিও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৬, ৯১৭, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৭৬, সুনান আননাসায়ী ১৮২৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৪৪, ১৪৪৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৫, ইরওয়া ৬৮৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫১৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯২, ইসলামীক সেন্টার ১৯৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

যাতে সে দ্রুত মুখস্থ বা স্মরণ করে নেয়। তাওহীদের স্বীকৃতিবাচক এই কালেমাই তাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছা্ঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থ: নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত), সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’।

হাদিসঃ

 মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই) হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২১, সুনান আবূ দাঊদ ৩১১৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৯৯, ইরওয়া ৬৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৪৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তালক্বীনের অর্থ মৃত্যুমুখী ব্যক্তিকে কেবল কালেমা শুনানো নয়। বরং তাকে কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করা। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জনৈক আনছার রোগীকে দেখতে গেলেন ও বললেন, হে মামু! আপনি পড়ুন ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’। তিনি বললেন যে, আমাকে এখতিয়ার দিন, আমি নিজেই পড়ি...। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ’। (আহমাদ হা/১২৮৯৯, সনদ ছহীহ; তালখীছ ১১ পৃঃ)।

কিন্তু কালেমা পড়ানোর জন্য চাপাচাপি করা উচিৎ নয়। তাতে মুখ দিয়ে বেফাস কথা বের হয়ে যেতে পারে। একবার বলানোর পরে দ্বিতীয়বার চেষ্টা না করা উচিৎ। যাতে এই কালেমাই তার শেষ বাক্য হয়। এই সময় তাকে ক্বিবলামুখী করার জন্য উত্তর দিকে মাথা করে বিছানা ঠিক করে দেওয়া সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। খ্যাতনামা তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িবকে ক্বিবলামুখী করে বিছানা ঘুরিয়ে দিলে হুঁশ ফেরার পর তিনি পুনরায় পূর্বের ন্যায় শয়ন করেন ও বলেন, মাইয়েত কি মুসলমান নয়? (তালখীছ ১১, ৯৬ পৃঃ)।

এই সময় মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার হাদীছ ‘যঈফ’।

হাদিসঃ

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২২, সুনান আবূ দাঊদ ৩১২১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৪৮, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৮৪৬, ইবনু হিব্বান ৩০০২, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৬২০, ইরওয়া ৬৮৮, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ৫৮৬১, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ১০৭২)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী যুবক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাত করতেন। তাঁর মৃত্যুশয্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার পাশে বসে বললেন, হে অমুক! তুমি ইসলাম গ্রহণ করো। যুবকটি তার পাশে থাকা পিতার দিকে তাকাল। পিতা তাকে বলল, আবুল ক্বাসিমের কথা মেনে নাও। যুবকটি ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছ থেকে বের হয়ে এসে বললেন, আল্লাহর শুকরিয়া। তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৭৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৫৬, সুনান আননাসায়ী ৩০৯৫, আহমাদ ১৩৯৭৭, ইবনু হিব্বান ৪৮৮৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১২১৫৭, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৫৭, ইরওয়া ১২৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃত্যুর সময় নতুন ও উত্তম কাপড় পরিধান করানো

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন তিনি নতুন কাপড় আনালেন এবং তা পরিধান করলেন। তারপর বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুর্দাকে (হাশ্‌রের (হাশরের) দিন) সে কাপড়েই উঠানো হবে, যে কাপড়ে সে মৃত্যুবরণ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪০, সুনান আবূ দাঊদ ৩১১৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৬০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফেরেশ্তাগণ যেভাবে রুহ বের করে নেন

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট (ফেরেশতাগণ) আগমন করেন। যদি সে ব্যক্তি নেক ও সালিহ হয় মালাকগণ বলেন, পবিত্র দেহে অবস্থানকারী হে পবিত্র নাফস! বের হয়ে আসো। আল্লাহ ও মাখলূক্বের নিকট তুমি প্রশংসিত হয়েছ। তোমার জন্য আনন্দ ও প্রশান্তির, জান্নাতের পবিত্র রিযক্বের, আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের শুভ সংবাদ, আল্লাহ তোমার ওপরে রাগান্বিত নন। তার নিকট মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) অনবরত এ কথা বলতে থাকবেন যে পর্যন্ত রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর মালায়িকাহ্ তা নিয়ে আকাশের দিকে চলে যাবেন। আকাশের দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয়, যেখানে আল্লাহ আছেন। আর যদি লোকটি খারাপ হয় (অর্থাৎ কাফির হয়) তখন রূহ কবয করার মালাক (ফেরেশতা) বলেন, হে খবীস আত্মা যা খবীস শরীরে ছিলে, এ অবস্থায়ই শরীর হতে বের হয়ে এসো। তোমার জন্য গরম পানি, পুঁজ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট আহারের সুসংবাদ। এই মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে বার বার মালায়িকাহ্ এ কথা বলতে থাকবে, যে পর্যন্ত তার রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর তারা তার রূহকে আসমানের দিকে নিয়ে যাবে। তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি কে? জবাব দেয়া হবে, ’অমুক ব্যক্তি’। এবার বলা হবে, এ খবীস জীবনের জন্য কোন স্বাগতম নেই, যা অপবিত্র দেহে ছিল। তুমি ফিরে চলে যাও, তোমার বদনাম করা হয়েছে। তোমার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হবে না। বস্তুত তাকে আসমান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং সে কবরের মধ্যে এসে পড়বে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৪২৬২, আহমাদ ৮৭৭০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৯৬৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মু’মিনদের রূহ (তার শরীর থেকে) বের হয়, তখন দু’জন মালাক (ফেরে্শতা) তার কাছে আসেন, তাকে নিয়ে আকাশের দিকে রওনা হন। পরবর্তী রাবী হাম্মাদ বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অথবা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ঐ ব্যক্তির রূহের খুশবু ও মিসকের কথা উল্লেখ করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তখন আকাশবাসীরা বলবে, পাক-পবিত্র রূহ জমিন হতে এসেছে। তারপর তার রূহকে উদ্দেশ করে বলবে, তোমার ওপর আল্লাহ রহমত করুন এবং শরীরের প্রতি, কারণ তুমি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছ। এরপর এরা একে আল্লাহর কাছে ’আরশে ’আযীমে নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ হুকুম দেবেন, তাকে নিয়ে যাও, ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কাফির ব্যক্তির রূহ তার শরীর থেকে বের করে আনা হয়, অতঃপর তিনি তার দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ করলেন। তার প্রতি লা’নাতের উল্লেখ করলেন। তারপর বললেন, যখন তাদের রূহ আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে তখন আকাশবাসী বলেন, একটি নাপাক রূহ জমিন হতে এসেছে, তাকে নিয়ে যাও এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাদরের কোণা তার নাকের উপর টেনে দিলেন (যেন দুর্গন্ধ হতে বাঁচতে চাইলেন)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭১১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮৭২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৭০১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মু’মিনের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে আসেন এবং রূহকে বলেন, তুমি আল্লাহ তা’আলার ওপর সন্তুষ্ট, আল্লাহও তোমার ওপর সন্তুষ্ট এ অবস্থায় দেহ হতে বেরিয়ে এসো এবং আল্লাহ তা’আলার করুণা, উত্তম রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) ও পরওয়ারদিগারের দিকে চলো। তিনি তোমার ওপর রাগান্বিত নন। বস্ত্ততঃ মিসকের খুশবুর মতো রূহ দেহ হতে বেরিয়ে আসে। মালাকগণ সম্মানের সাথে তাকে হাতে হাতে নিয়ে চলে। এমনকি আসমানের দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসে। ওখানে মালাকগণ পরস্পর বলাবলি করেন, কি পবিত্র খুশবু জমিনের দিক হতে আসছে! তারপর তাকে মু’মিনদের রূহের কাছে (ইল্লীয়্যিনে) আনা হয়। ওই রূহগুলো এ রূহটিকে দেখে এভাবে খুশী হয়ে যায়, যেভাবে তোমাদের কেউ (সফর হতে ফিরে এলে তোমরা) এ সময় খুশী হও। তারপর সব রূহ এ রূহটিকে জিজ্ঞেস করে অমুক কি করে? অমুক কি করে? তারা নিজেরা আবার বলাবলি করে, এখন এ রূহকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ কিছু জিজ্ঞেস করো না।) এখন যে দুনিয়ার শোকতাপে আছে। তারপর একটু স্বস্তির পরে (সে নিজেই বলে) অমুক ব্যক্তি যার সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞেস করেছিলে, সে মরে গেছে। সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? রূহগুলো বলে, তাকে তো তার (উপযুক্ত স্থান) হাবিয়্যাহ্ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (ঠিক এভাবে কোন কাফিরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার কাছে ’আযাবের মালাক (ফেরেশতা) শক্ত চটের বিছানা নিয়ে আসেন। আর তার রূহকে বলেন, হে রূহ! আল্লাহর ’আযাবের দিকে বেরিয়ে এসো। এ অবস্থায় যে, তুমি আল্লাহর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলে, তিনিও তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট। তারপর রূহ তার (কাফির ব্যক্তির) দেহ থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসবে। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) একে জমিনের দরজার দিকে নিয়ে যাবে। সেখানে মালায়িকাহ্ বলবে, কত খারাপ এ দুর্গন্ধ! তারপর এ রূহটিকে কাফিরদের রূহের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২৯, সুনান আননাসায়ী ১৮৩৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৯০, ইবনু হিব্বান ৩০১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ঘ) বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় কবরের কাছে গেলাম। (তখনো কবর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে) লাশ কবরস্থ করা হয়নি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাঁর আশেপাশে (চুপচাপ) বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি (নিবিষ্টভাবে) মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, কবরের ’আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দু’বার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মু’মিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে (মৃত্যুর কাছাকাছি হয়) তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য।

তাঁদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ কথা শুনে মু’মিন বান্দার রূহ তার দেহ হতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হতে পানির ফোঁটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন (যাবার পথে) সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ ’পবিত্র রূহ কার’ জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার ‘আমলনামা ‘ইল্লীয়্যিনে’ লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে (কবরে) পাঠিয়ে দাও (যাতে কবরের) সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন মালাক (ফেরেশতা) (মুনকির নাকীর) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব ’আল্লাহ’। আবার তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দীন ’ইসলাম’। আবার তারা দু’ মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাঁকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি ’আল্লাহর কিতাব’ পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহবানকারী (আল্লাহ) আহবান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। (তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে)।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়া’দা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক ’আমল। মু’মিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করবে, আসমান থেকে ’আযাবের মালায়িকাহ্ নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা! আল্লাহর ’আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হতে বের হও। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হতে টেনে বের করা হয় (আর এতে পশম আটকে থাকে)।

মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে (কাফনের কাপড়ে) মিশিয়ে দেন। এ রূহ হতে মরা লাশের দুর্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দলীল হিসেবে) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, (অনুবাদ) ’’ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুঁইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করবে।’’

এবার আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তার ’আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্ত্তত কাফিরদের রূহ (নিচে) নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’(অনুবাদ) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়)। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে (উড়িয়ে নিয়ে) দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়)।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। (এ সময়) দু’জন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার রব কে? (সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে) বলবে, ‘হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করবেন, ‘তোমার দীন কি?’’ সে (কাফির ব্যক্তি) বলবে, ‘হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তারপর তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, ’’এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?’’ সে বলে, ‘হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।’’ তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী আহবান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। (তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে) জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকবে। তার কবরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, (দু’পাশ মিলে যাবার পর) তার পাঁজরের এদিকের (হাড়গুলো) ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে।

তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। এ কুৎসিত লোকটি (কবরে শায়িত লোকটিকে) বলতে থাকবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়া’দা (দুনিয়ায়) তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন (ভাল) খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, ’’আমি তোমার বদ ’আমল’’। এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার! ’’তুমি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম করো না।’’

আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার (মু’মিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহমত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তা’আলার কাছে এ মু’মিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় (যাতে এ মালাক মু’মিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারে।) আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করতে থাকেন। আসমানের দরজার বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ (আল্লাহর নিকট) আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩০, আহমাদ ১৮৫৩৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুমিনের রুহ যেখানে রাখা হয়

আবদুর রহমান ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, মু’মিনের রূহ (আলামে বারযাখে) পাখীর ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ থেকে ফল-ফলাদি খেতে থাকবে যে পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা (তাকে উঠাবার দিন) এ রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে না দেন (অর্থাৎ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন)।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩২, সুনান আননাসায়ী ২০৭৩, মালিক ৫৬৬, আহমাদ ১৫৭৯২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৩৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোখাও মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতী

আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মদীনায় মারা গেলেন, মদীনায়ই তার জন্ম হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। তারপর তিনি বললেন, হায়! এ ব্যক্তি যদি তার জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করত। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, কেন? হে আল্লাহর রসূল! তখন তিনি বললেন, কোন লোক জন্মস্থান ছাড়া অন্য কোথাও মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুস্থান ও জন্মস্থানের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৫৯৩, সুনান আননাসায়ী ১৮৩২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬১৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৩৪)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মৃত্যুর পরে দো‘আ সমূহ এবং করণীয় ও বর্জনীয়

 (১) মৃত্যু হওয়ার পরে উপস্থিত সকলে এবং যারা শুনবেন তারা প্রত্যেকে “ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জি’ঊন’’ অর্থাৎ “আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ১৫৬) পাঠ করবে এবং আল্লাহ-নির্ধারিত তাক্বদীরের উপরে ছবর করবে ও সন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর,

 

(২) মৃতের চোখ দু’টি বন্ধ করে দিবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫৪, আহমাদ ২৬৫৪৩, ইবনু হিব্বান ৭০৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৩৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৯, ইসলামীক সেন্টার ২০০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সারা দেহ ও মুখমণ্ডল কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে।

হাদিসঃ

উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৮১৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬১২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৫১, ইসলামীক সেন্টার ২০৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তবে (হজ্জ বা ওমরাহ কালে) ‘মুহরিম’ ব্যক্তির মুখ ও মাথা খোলা থাকবে। কেননা তিনি ক্বিয়ামতের দিন ‘তালবিয়া’ পাঠ করতে করতে উঠবেন।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেক না। কারণ তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ‘লাব্বায়ক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৭৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২০৬, সুনান আননাসায়ী ২৮৫৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৬২৫২, আহমাদ ১৮৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৮০, ইরওয়া ৬৯৪, সহীহ আত্ তারগীব ১১১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৭৫৮, ইসলামীক সেন্টার ২৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 (৩) এই সময় মাইয়েতের নিকটতম ব্যক্তি এই দো‘আ পড়বে : ‘আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুছীবাতী ওয়া আখলিফ্লী খায়রাম মিনহা’ (অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের পারিতোষিক দান কর এবং আমাকে এর উত্তম প্রতিদান দাও’)।

হাদিসঃ

উম্মুল মু’মিনীন সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম (কোন ছোট-বড়) বিপদে পতিত হয় এবং আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা হলে এ কথাগুলো বলে, “ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলায়হি র-জি’ঊন’’ [অর্থাৎ “আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন’’- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২: ১৫৬)]। “আল্ল-হুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়া ওয়াখলিফলী খয়রাম মিনহা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার বিপদের জন্য আমাকে সাওয়াব দাও। আর [এ বিপদে] যা আমি হারিয়েছি তার জন্য উত্তম বিনিময় আমাকে দান করো)। আল্লাহ তা’আলা তাকে এ জিনিসের উত্তম বিনিময় দান করেন।

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, যখন আবূ সালামাহ্ (অর্থাৎ তাঁর স্বামী) মারা গেলেন, আমি বললাম, ‘আবূ সালামাহ্ (রাঃ) হতে উত্তম কোন মুসলিম হতে পারে? এ আবূ সালামাহ্, যিনি সকলের আগে সপরিবারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হিজরত করেছেন। তারপর আমি উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়েছিলাম। বস্ত্তত আল্লাহ তা’আলা আমাকে আবূ সালামার স্থলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দান করেছেন (অর্থাৎ তাঁর সাথে উম্মু সালামার বিয়ে হয়েছে)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৮,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী ২০১১, ২০১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৩, ইরওয়া ১৮১৯, সহীহ আল জামি‘আস্ সগীর ৫৭৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৫, ইসলামীক সেন্টার ২০০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৪) এসময় মৃতের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া যেতে পারে। যা আবু সালামাহ (রাঃ)-এর জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাঠ করেছিলেন,

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়ীনা ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীনা, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রববাল ‘আ-লামীন; ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাওভির লাহু ফীহি।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং সুপথপ্রাপ্তদের মধ্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। পিছনে যাদেরকে তিনি ছেড়ে গেলেন, তাদের মধ্যে আপনিই তার প্রতিনিধি হউন। হে বিশ্ব চরাচরের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে ও তাকে ক্ষমা করুন। আপনি তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং সেটিকে তার জন্য আলোকিত করে দিন’।

হাদিসঃ

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামার কাছে আসলেন যখন তাঁর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রূহ কবয করা হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। আবূ সালামার পরিবার (এ কথা শুনে বুঝল, আবূ সালামাহ্ ইন্তিকাল করেছেন) কাঁদতে ও চিল্লাতে লাগল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের মাইয়্যিতের জন্য কল্যাণের দু’আ করো। কারণ তোমরা ভাল মন্দ যে দু’আই করো (তা’ শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ বলে। তারপর তিনি এ দু’আ পাঠ করলেন,

“আল্ল-হুম্মাগফির লিআবী সালামাহ্, ওয়ারফা’ দারাজাতাহূ ফিল মাহদীয়্যিন, ওয়াখলুফহু ফী ’আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগফির লানা- ওয়ালাহূ ইয়া- রব্বাল ’আ-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী কবরিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবূ সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য কবরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫৪, আহমাদ ২৬৫৪৩, ইবনু হিব্বান ৭০৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৬৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃতের মাগফেরাতের জন্য দো‘আ করা ও তার প্রশংসা করা

(৫) এই সময় মৃতের মাগফেরাতের জন্য দো‘আ করা ও তার সদগুণাবলী বর্ণনা করা উচিৎ। কেননা তাতে ফেরেশতাগণ ‘আমীন’ বলেন ও তার জন্য ওগুলি ওয়াজিব হয়ে যায়’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়’।

হাদিসঃ

(ক) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে কিংবা কোন মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তোমরা তখন যা বলো, (তা শুনে) মালাকগণ (ফেরেশতারা) ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬১৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯১৯, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩১১৫, সুনান আননাসায়ী ১৮২৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৪৭, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৬০৬৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৮৪৭, আহমাদ ২৬৪৯৭, ইবনু হিব্বান ৩০০৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৬৭৫৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৮৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৯১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৯৯৮, ইসলামীক সেন্টার ২০০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

একটি বর্ণনায় এসেছে যে, ৪, ৩ এমনকি ২ জন নেককার মুমিন ব্যক্তিও যদি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম সাক্ষ্য দেয়, তাতেই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।

হাদিসঃ

(খ)  উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তির ভাল হবার ব্যাপারে চারজন লোক সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা আরয করলাম, যদি তিনজন (সাক্ষ্য দেয়)। তিনি বললেন, তিনজন দিলেও। আমরা (আবার) আরয করলাম, যদি দু’জন সাক্ষ্য দেয়? তিনি বললেন, দু’জন সাক্ষ্য দিলেও। তারপর আমরা আর একজনের (সাক্ষ্যের) ব্যাপারে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬৮, আহমাদ ১৩৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

(গ) ‘কোন মুসলমান মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের চারজন যদি তার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত কিছুই জানে না, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষ্য কবুল করলাম এবং আমি তার ঐসব গোনাহ মাফ করে দিলাম, যেগুলি তোমরা জানো না’। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, ছহীহ ইবনু হিব্বান, ছহীহুত তারগীব হা/৩৫১৫; তালখীছ ২৬ পৃঃ)।

(ঘ)  ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইবনু আব্বাস-এর এক ছেলে (মক্কার নিকটবর্তী) ‘কুদায়দ’ অথবা ’উসফান’ নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসেবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে সালাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার সালাত আদায় করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবূল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৭০, আহমাদ ২৫০৯, ইবনু হিব্বান ৩০৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬২১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৫, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৭০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৬৭, ইসলামীক সেন্টার ২০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সালাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা’আত (মাগফিরাত কামনা) করবে। তাহলে তার জন্য তাদের এ শাফা’আত (কবূল) হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৭, সুনান আননাসায়ী ১৯৯১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৬২২, আহমাদ ১৩৮০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯০৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৪, আত্ তিরমিযী ১০২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৬৬, ইসলামীক সেন্টার ২০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(চ) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও আলী ইবনু হুজুর (রহঃ), আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি জানাযাহ বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা প্রশংসা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে। (আরেকবার) একটা জানাযাহ বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কিন্তু লোকেরা তার দুর্নাম করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে (তিনবার) বললেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার ওপর আমার মা-বাপ উৎসর্গ হোক! একটা জানাযাহ অতিক্রম করলে তার প্রতি ভাল মন্তব্য করা হলে আপনি ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে- বললেন! আর একটা জানাযাহ অতিক্রমকালে তার প্রতি খারাপ মন্তব্য করা হলে আপনি ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব হয়েছে- বললেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমরা যার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর তোমরা যার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমর জমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬৭, ২৬৪২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৯, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৫৮, সুনান আননাসায়ী ১৯৩২, আহমাদ ১২৯৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫১৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৯৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৬৮, ইসলামীক সেন্টার ২০৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, জানাযার সময় মাইয়েত সম্পর্কে উপস্থিত সকলের সমস্বরে ‘ভাল’ বলে সাক্ষ্য দেওয়ার রেওয়াজটি নিন্দনীয় বিদ‘আত। (তালখীছ পৃঃ ২৬)।

(৬) দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৮১, সুনান আত্ তিরমিযী ১০১৫, সুনান আননাসায়ী ১৯১০, ১৯১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৭৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১২৬৩, আহমাদ ৭২৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৯৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৫৪, ইসলামীক সেন্টার ২০৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃত্যুর পর মুমিন ব্যক্তিকে চুমু  দেয়া

(ক) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মায্’ঊন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন, এমনকি তাঁর চোখের পানি ’উসমানের চেহারায় টপকে পড়েছে। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৬৩, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৮৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭০, আহমাদ ২৩৬৪৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর তাঁকে (চেহারা মুবারাকে) চুমু খেয়েছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬২৪, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৮৯, সুনান আননাসায়ী ১৮৪০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৪৫৫, ৫৭০৯, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৬৬, আহমাদ ২০২৬, ইবনু হিব্বান ৩০২৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭১, শামায়েল ৩২৭, ইরওয়া ৬৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মৃত ব্যক্তির জন্য নীরবে কাঁদা

(ক)  আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আবূ সায়ফ কর্মকারের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীমের ধাত্রীর স্বামী। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীমকে কোলে তুলে নিলেন, চুমু খেলেন ও শুঁকলেন। এরপর আমরা আবার একদিন আবূ সায়ফ-এর ঘরে গেলাম। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তনয় মৃত্যু শয্যায়। (তার এ অবস্থা দেখে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অবস্থা দেখে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কাঁদছেন! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ইবনু ‘আওফ! এটা আল্লাহর রহমত। তারপরও তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ চোখ পানি বহাচ্ছে, হৃদয় শোকাহত। কিন্তু এরপরও আমাদের মুখ দিয়ে এমন শব্দ বেরুচ্ছে যার জন্য আমাদের পরওয়ারদিগার আমাদের ওপর সন্তুষ্ট। হে ইব্রাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে খুবই শোকাহত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩০৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৯১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩১৫, শু‘আবুল ঈমান ৯৬৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৮১৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৮৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাব) কাউকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, তাঁর ছেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে আসেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সালাম পাঠালেন আর বললেন, যে জিনিস (অর্থাৎ সন্তান) আল্লাহ নিয়ে নেন তা তাঁরই। আর যে জিনিস তিনি দিয়ে রেখেছেন তাও তাঁরই। প্রতিটি জিনিসই তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অতএব অপরিসীম ধৈর্য ও ইহতিসাবের সাথে থাকতে হবে (শোকে দুঃখে বিহ্বল না হওয়া উচিত)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা আবার তাঁকে কসম দিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। এবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্, মা’আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত সহ কিছু লোককে সাথে নিয়ে ওখানে গেলেন। বাচ্চাটিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোলে তুলে দেয়া হলো। তখন তার শ্বাস ওঠানামা করছে। বাচ্চার এ অবস্থা দেখে রসূলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। সা’দ রসূলের চোখে পানি দেখে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা রহমত, যা আল্লাহ বান্দার মনে সৃষ্টি করে দেন আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাগণের প্রতি দয়া করেন।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০০৪, ইসলামীক সেন্টার ২০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস ও ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ। তিনি ওখানে প্রবেশ করে সা’দ ইবনু ’উবাদাহকে বেহুঁশ অবস্থায় পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মারা গেছে? সাহাবী জবাব দিলেন, জ্বী না, হে আল্লাহর রসূল! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাঁদতে দেখে সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাবধান তোমরা শুনে রাখো অশ্রু বিসর্জন ও মনের শোকের কারণে আল্লাহ তা’আলা কাউকে শাস্তি দেবেন না। তিনি তার মুখের দিকে ইশারা করে বললেন, অবশ্য আল্লাহ এজন্য ’আযাবও দেন আবার রহমতও করেন। আর মৃতকে তার পরিবার-পরিজনের বিলাপের কারণে ’আযাব দেয়া হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩০৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০২২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৫২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৬৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০০৬, ইসলামীক সেন্টার ২০১৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃত্যুর পর ধৈর্য্যধারণ করার পুরুস্কার

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের কিছু সংখ্যক মহিলাকে উদ্দেশ করে বলেন, তোমাদের যে কারো তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করবে, আর সে (এজন্য) ধৈর্যধারণ করে সাওয়াবের প্রত্যাশা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (এ কথা শুনে) তাদের একজন বলল, যদি দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, হ্যাঁ। দু’জন করলেও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১০২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩২, আহমাদ ৭৭২১, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৫৭, ইসলামিক সেন্টার ৬৫০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি যখন আমার কোন মু’মিন বান্দার প্রিয় জিনিসকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেই আর বান্দা এজন্য সবর অবলম্বন করে সাওয়াবের প্রত্যাশী হয়, তাহলে আমার কাছে তার জন্য জান্নাতের চেয়ে উত্তম কোন পুরস্কার নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৪২৪, আহমাদ ৯৩৯৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮১৩৯)।হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের কাজ বড় বিস্ময়কর। সে সুখের সময় যেমন আল্লাহর প্রশংসা ও শুকর করে, আবার বিপদেও তেমনি আল্লাহর প্রশংসা ও ধৈর্যধারণ করে। মু’মিনকে প্রতিটি কাজের জন্যই প্রতিদান দেয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীর মুখে খাবারের লোকমা তুলে দেয়ার সময়েও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩৩, আহমাদ ১৪৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৫৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ তা’আলা মালাকগণকে (ফেরেশতাদেরকে) বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের রূহ কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর তিনি বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের ফলকে কবয করেছ? তারা বলেন, জ্বি হ্যাঁ, করেছি। তারপর আল্লাহ বলেন, (এ ঘটনায়) আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলেন, সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ইস্তিরজা’ (ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি র-জিউন) পড়েছে। এবার আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করো এবং এ ঘরটির নাম রাখো ’বায়তুল হাম্দ’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৩৬, সুনান আততিরমিযীর ১০২১, ইবনু হিব্বান ২৯৪৮, রিয়াযুস সলেহীন ৯২৭, সহীহ আত্ তারগীব ২০১২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৭৯৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঙ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে, যার জন্য আমি শোকাহত। আপনি কি আপনার বন্ধু (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এমন কোন কথা শুনেছেন যা আমাদের হৃদয়কে খুশী করতে পারে? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মুসলিমদের শিশুরা জান্নাতে সাগরের মাছের মতো সাঁতার কাটতে থাকবে। যখন তারা তাদের পিতাকে পাবে তখন পিতার কাপড়ের কোণা টেনে ধরবে। পিতাকে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত ছাড়বে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৬৫৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৬৩৫, আহমাদ ১০৩৩২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৪৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৩১, সহীহ আত্ তারগীব ১৯৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৪৬২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

(চ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে একজন মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ আপনার বাণী শুনে উপকৃত হচ্ছে, (এ অবস্থায়) আপনি আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার খিদমাতে উপস্থিত হব। আপনি আমাদেরকে ওসব কথা শুনাবেন, যা আল্লাহ আপনাকে বলেছেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দিন ও স্থান নির্ধারণ করে উপস্থিত থাকতে বললেন। সে মতে মহিলাগণ সেখানে একত্রিত হলো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ওসব কথাই শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান তার আগে মৃত্যুবরণ করেছে, সে তার ও জাহান্নামের মধ্যে আড়াল হবে। এ কথা শুনে তাদের একজন জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! যদি আগে দু’ সন্তান মৃত্যুবরণ করে এবং সে কথাটি দু’বার পুনরাবৃত্তি করল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- যদি দু’জনও হয়, দু’জন হয়, দু’জন হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৭৩১০, শু‘আবুল ঈমান ৯২৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৮০৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(ছ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দু’জন মুসলিম ব্যক্তির অর্থাৎ মাতা-পিতার তিনটি সন্তান (তাদের আগে) মারা যাবে, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর বিশেষ রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দু’জন মারা গেলেও কী? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দু’জন মারা গেলেও। সাহাবীগণ আবারো বললেন, একজন মারা গেলেও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়ে যায় সেই মা ধৈর্য ধরে সাওয়াবের আশা করে, তাহলে সে সন্তানও তার নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৪, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬০৯, সহীহ আত্ তারগীব ২০০৮, আহমাদ ২২০৯০, য‘ঈফ আত্ তারগীব ১২৩৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৩৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]।

(জ) কুররাহ্ আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার ছেলেকে সঙ্গে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে বেশী ভালবাসো? সে ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে ভালবাসেন যেমনভাবে আমি তাকে ভালবাসি। (কিছু দিন পর একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে তার পিতার সাথে দেখতে পেলেন না।) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুক ব্যক্তির সন্তানের কি হলো? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তার ছেলেটি মারা গেছে। (এরপর ওই ব্যক্তি উপস্থিত হলে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথা পছন্দ করো না যে, তুমি (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) জান্নাতের যে দরজাতেই যাবে, সেখানেই তোমার সন্তানকে তোমার জন্য অপেক্ষারত দেখবে? এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! এ শুভসংবাদ কি শুধু এ ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট, না সকলের জন্য? তিনি বললেন, সকলের জন্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৬, সুনান আননাসায়ী ১৮৭০, আহমাদ ১৫৫৯৫, সহীহ আত্ তারগীব ২০০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঝ) আবূ উমামাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’আলা (মানুষকে উদ্দেশ করে) বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যদি বিপদের প্রথম সময়ে ধৈর্যধারণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা পোষণ করো, তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্য কোন সাওয়াবে সন্তুষ্ট হব না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৯৭)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

মৃত্যুর পরে বর্জনীয়

(১) উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা যাবে না। (তালখীছ, পৃঃ ১৮)।

হাদিসঃ

(ক) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহ্ মৃত্যুবরণ করলে আমি বললাম, আবূ সালামাহ্ মুসাফির ছিলেন, মুসাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন। অর্থাৎ মক্কার লোক মদীনায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমি তাঁর জন্য এমনভাবে কাঁদব যে, আমার কান্নাকাটি সম্পর্কে লোকেরা আলোচনা করবে। আমি কান্নাকাটি করার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা এসে আমার সাথে কাঁদতে চাইল। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন। তিনি বললেন, এই ঘর হতে আল্লাহ দু’বার শায়ত্বন (শয়তান) কে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা তাকে পুনরায় এখানে আনতে চাও? উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, তাঁর এ হুঁশিয়ারী শুনে আমি (কান্নাকাটি) করা হতে চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আমি আর কাঁদিনি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২২, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০০৩, ইসলামীক সেন্টার ২০১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মূতার যুদ্ধে) ইবনু হারিসাহ্, জা’ফার ও ইবনু রাওয়াহার শাহাদাতের খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে পৌঁছালে তিনি (মসজিদে নাবাবীতে) বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোক-দুঃখের ছায়া পরিস্ফুট হয়ে উঠল। আমি দরজার ফোকর দিয়ে তাঁর অবস্থা দেখছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর খিদমাতে বলতে লাগল, জা’ফারের পরিবারের মেয়েরা এরূপ এরূপ করছে (অর্থাৎ তাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করল)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ওদের কাছে গিয়ে কাঁদতে নিষেধ করার হুকুম দিলেন। লোকটি চলে গেল। (কিছুক্ষণ পর) দ্বিতীয়বার এসে বলল, মহিলারা কোন কথা মানছে না। আবারও তিনি তাদেরকে কাঁদতে নিষেধ করে তাকে পাঠালেন। লোকটি চলে গেল। তাদেরকে নিষেধ করল। (কিছুক্ষণ পর) সে তৃতীয়বার ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমার ওপর বিজয়ী হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমার কথা মানছে না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা হলো, এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ তাদের মুখে মাটি ঢেলে দাও। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি মনে মনে (ওই ব্যক্তিকে) বললাম, তোমার মুখে ছাই পড়ুক, তুমি কেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হুকুম দিচ্ছেন তা পালন করলে না? আর তুমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুঃখ দেয়া হতে বিরত হচ্ছ না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৯৯,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩৫, ইবনু হিব্বান ৩১৪৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৮৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০২৯, ইসলামীক সেন্টার ২০৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় এবং তার আপন ক্রন্দনকারীরা এ কথা বলে কাঁদে, হে আমার পাহাড়তুল্য অমুক! হে সরদার! ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন আল্লাহ তা’আলা ঐ মৃত ব্যক্তির নিকট দু’জন মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করেন, যারা তার বুকে হাত দিয়ে ধাক্কা মারে আর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি এমনই ছিলে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪৬, সুনান আত্ তিরমিযী ১০০৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭৮৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(ঘ) ইমাম বুখারী সানাদবিহীন তা’লীক্ব পদ্ধতিতে উল্লেখ করেন যে, যখন হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) এর ছেলে (ইমাম) হাসান মারা যান, তখন তাঁর স্ত্রী তাঁর কবরের উপর এক বছর পর্যন্ত তাঁবু খাটিয়ে রেখেছিলেন। তাঁবু ভাঙার পর অদৃশ্য হতে শুনতে পেলেন, “এ তাঁবু খাটিয়ে কি তারা হারানো ধন ফিরে পেলো?’’ এ কথার জবাবে আবার (অদৃশ্য হতেই) অন্য একজন বলল, না! বরং নিরাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সে জানাযায় শরীক হতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন যে জানাযার সাথে মাতমকারী মহিলা থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৫১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৮৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৮১০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(২) বাজারে, মিনারে (মাইকে) ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা নাজায়েয। (তালখীছ, পৃঃ ১৯, ৯৮)।

হাদিসঃ

বিলাল ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। হুযাইফা (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে কেউ মারা গেলে তিনি বলতেন, তার (মৃত্যু) সম্পর্কে তোমরা কাউকে খবর দিয়ো না। কেননা আমি তার জন্য বিলাপের আশঙ্কা করছি। আমি আমার এই দু’ কানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিলাপ করতে নিষেধ করতে শুনেছি। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪৭৬,  সুনান আততিরমিযী ৯৮৬, আহমাদ ২২৯৪৫ আহকাম ৩১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

ছাহাবী হোযায়ফা (রাঃ) অছিয়ত করে বলেন, আমি মারা যাওয়ার পরে কাউকে সংবাদ দিয়ো না। আমার ভয় হয় এটা না‘ঈ বা শোক সংবাদ হবে কি-না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ থেকে নিষেধ করেছেন’। অন্যান্য ছাহাবী থেকেও এধরনের অছিয়ত বহু রয়েছে।

সেকারণ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রত্যেকের উচিৎ এভাবে অছিয়ত করে যাওয়া, যেন তার মৃত্যুর পরে কোন প্রকার বিদ‘আত না করা হয়। (তালখীছ, পৃঃ ১০)।

(৩) অতিরঞ্জিত শোক প্রকাশ ও বিলাপধ্বনি করা। মুখ ও বুক চাপড়ানো। মেয়েদের মাথার কাপড় ফেলা ও বুকের কাপড় ছেঁড়া ইত্যাদি করা যাবে না।

হাদিসঃ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত ব্যক্তির শোকে) নিজের মুখাবয়বে আঘাত করে, জামার গলা ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়্যাতের যুগের মতো হা-হুতাশ করে বিলাপ করে, সে আমাদের দলের মধ্যে গণ্য নয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬২৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৯৭, ১২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ১৮৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৩, সুনান আননাসায়ী ১৮৬০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৮৪, আহমাদ ৪২১৫, ইবনু হিব্বান ৩১৪৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১১৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৩৩, ইরওয়া ৩/৭৭০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) হতে বর্ণিত। একবার আমার পিতা আবূ মূসা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। এতে (আমার বিমাতা) তাঁর স্ত্রী ’আবদুল্লাহর মা বিলাপ করতে লাগল। অতঃপর তিনি সংজ্ঞা লাভ করলেন এবং ’আবদুল্লাহর মাকে বললেন, তুমি কি জানো না? তারপর তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তার সাথে সম্পর্কহীন যে মাথার চুল ছিঁড়ে, উচ্চস্বরে বিলাপ করে এবং জামার গলা ফাঁড়ে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৬, বুখারী তা‘লীক সূত্রে ১/৪৩৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৪, সুনান আননাসায়ী ১৮৬৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলা ও  উচ্চস্বরে বিলাপ করার শাস্তি

(গ) আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়্যাত যুগের চারটি বিষয় রয়ে গেছে যা তারা ছাড়ছে না, (১) নিজের গুণের গর্ব, (২) কারো বংশের নিন্দা, (৩) গ্রহ-নক্ষত্র যোগে বৃষ্টি চাওয়া এবং (৪) বিলাপ করা। অতঃপর তিনি বলেন, বিলাপকারিণী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তওবা্ না করে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে উঠানো হবে- তখন তার গায়ে থাকবে আলকাতরার জামা ও ক্ষতের পিরান। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩৪, আহমাদ ২২৯০৩, ইবনু হিব্বান ৩১৪৩, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪১৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৭৩৪, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০২৮, ইসলামীক সেন্টার ২০৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করলে সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হয়

(ক) মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৯১,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৪৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩৩, সুনান আত্ তিরমিযী ১০০০, আহমাদ ১৮২৩৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০২৫, ইসলামীক সেন্টার ২০৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আমরাহ্ বিনতু ’আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তাকে বলা হল যে, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আবূ ’আবদুর রহমানকে (ইবনু ’উমারের উপনাম নাম) মাফ করুন। তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করেছেন। (ব্যাপার হলো) একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ইয়াহূদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তার কবরের পাশে লোকজন কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার কবরে ’আযাব দেয়া হচ্ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩২, সুনান আত্ তিরমিযী ১০০৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৩, আহমাদ ২৪৭৫৮, ইবনু হিব্বান ৩১২৩, সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৯৯৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০২৪, ইসলামীক সেন্টার ২০৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৪) মৃতের জন্য তিনদিন পর্যন্ত শোক প্রকাশের অনুমতি রয়েছে, তার বেশী নয়।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা’ফারের সন্তানদেরকে (জা’ফার -এর শাহাদাতের জন্য) শোক প্রকাশের তিনদিন সময় দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ আজকের পর হতে তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করবে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার ভাইয়ের সন্তানদেরকে আমার কাছে ডেকে আনো। সে মতে আমাদেরকে আনা হলো। যেন আমরা কতকগুলো পাখির ছানা। অতঃপর বললেনঃ নাপিত ডেকে আনো। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, সে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৬৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪১৯২, সুনান আননাসায়ী ৫২২৭, আহমাদ ১৭৫০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৫) দাফনে দেরী করা এবং জানাযা করে বা না করে নিকটাত্মীয় আসার অপেক্ষায় লাশ বরফ দিয়ে রেখে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে সুন্নাত বিরোধী কাজ।

(৬) মৃত্যুর পরপরই বাড়ীতে এবং জানাযাকালে ও কবরস্থানে ছাদাক্বা বিতরণ করা নাজায়েয। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০৮)।

মৃত্যু পরবর্তী করণীয় সমূহ

মৃত্যুর পর পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। যথা গোসল, কাফন, জানাযা, জানাযা বহন ও দাফন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহ’লে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও’।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৮১, সুনান আত্ তিরমিযী ১০১৫, সুনান আননাসায়ী ১৯১০, ১৯১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৭৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১২৬৩, আহমাদ ৭২৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৯৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৫৪, ইসলামীক সেন্টার ২০৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাইয়েতের গোসল

(ক) গোসল ও কাফন-দাফনের ছওয়াব: গোসল ও কাফন-দাফনের কাজসমূহে যারা সহযোগিতা করবেন তাদের জন্য অশেষ ছওয়াব রয়েছে দু’টি শর্তে।

এক- যদি তিনি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করেন এবং বিনিময়ে দুনিয়াবী কিছুই গ্রহণ না করেন’। (সুরা কাহফ ১৮/১১০)।

দুই- যদি তিনি মাইয়েতের কোনো অপছন্দীয় বিষয় গোপন রাখেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখলো, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’। (বায়হাক্বী ৩/৩৯৫; ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, তালখীছ, পৃঃ ৩১)। সনদ ছহীহ।

(খ) হুকুম: মাইয়েতের দ্রুত গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া সুন্নাত।

হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাকে এগিয়ে দিচ্ছ আর যদি সে অন্য কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হতে জলদি নামিয়ে ফেলছ। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১৫, মুসলিম ১১/১৬, হাঃ ৯৪৪, আহমাদ ১০৩৩৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পূর্ণ শালীনতা ও পরহেযগারীর সাথে কুলপাতা দেওয়া পানি বা সুগন্ধি সাবান দিয়ে সুন্দরভাবে গোসল করাবে। সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন। পুরুষ পুরুষকে ও মহিলা মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিবেন। তবে মহিলাগণ শিশুকে গোসল দিতে পারবেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৮)।

স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে বিনা দ্বিধায় গোসল করাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘যদি আমার পূর্বে তুমি মারা যাও, তাহ’লে আমি তোমাকে গোসল দেব, কাফন পরাব, জানাযা পড়াব ও দাফন করব’।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকী থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যথায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বলছিলাম, হে আমার মাথা! তিনি বলেনঃ হে ’আয়িশাহ! আমিও মাথা ব্যথায় ভুগছি। হে আমার মাথা! অতঃপর তিনি বলেনঃ তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে, তাহলে তোমার কোন ক্ষতি হতো না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার জানাযার সালাত পড়তাম এবং তোমাকে দাফন করতাম। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৪৬৫, ইরওয়াহ ৭০০)।  হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এবং হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামী হযরত আলী (রাঃ) গোসল দিয়েছিলেন। (বায়হাক্বী ৩/৩৯৭; দারাকুৎনী হা/১৮৩৩)। সনদ হাসান।

ধর্মযুদ্ধে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না। (তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩৩)।

পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে’। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৭; নিসা ৪/৪৩; মায়েদাহ ৫/৬)।

(গ) গোসলের পদ্ধতিঃ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গ সমূহ প্রথমে ধৌত করবে। ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে। পূর্ণ পর্দার সাথে মাইয়েতের দেহ থেকে পরনের কাপড় খুলে নেবে। গোসলের সময় লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না বা খালি হাতে স্পর্শ করবে না। তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় সমস্ত দেহে পানি ঢালবে। গোসল শেষে কর্পূর বা কোনো সুগন্ধি লাগাবে। মাইয়েত মহিলা হ’লে চুল খুলে দেবে। অতঃপর বেণী করে তিনটি ভাগে পিছন দিকে ছড়িয়ে দেবে। (তালখীছ, পৃঃ ২৮-৩০)।

গোসলের সময় করণীয়

(ক) উম্মু আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাবকে) গোসল করাচ্ছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমরা তিনবার, পাঁচবার, প্রয়োজন বোধ করলে এর চেয়ে বেশী বার; পানি ও বরই পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও। আর শেষ বার দিকে ‘কাফূর’। অথবা বলেছেন, কাফূরের কিছু অংশ পানিতে ঢেলে দিবে, গোসল করাবার পর আমাকে খবর দিবে। তাঁকে গোসল করাবার পর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খবর দিলাম। তিনি এসে তহবন্দ বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, এ তহবন্দটি তাঁর শরীরের সাথে লাগিয়ে দাও। আর এক বর্ণনার ভাষা হলো, তাকে বেজোড় তিন অথবা পাঁচ অথবা সাতবার (পানি ঢেলে) গোসল দাও। আর গোসল ডানদিক থেকে উযূর জায়গাগুলো দিয়ে শুরু করবে। তিনি (উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্) বলেন, আমরা তার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে পেছনের দিকে ছেড়ে দিলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৫৩, ১২৫৪, ১২৫৮, ১২৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৬০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৪২, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৯০, সুনান আননাসায়ী ১৮৮১, ১৮৮৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৫৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১০৯০১, আহমাদ ২০৭৯০, ইবনু হিব্বান ৩০৩২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৩৬৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭২, ইরওয়া ১২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৩৯, ইসলামীক সেন্টার ২০৪৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি (হাজ্জের সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। তার উটটি (তাকে পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে) তার ঘাড় ভেঙে দিলো। তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। এ অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও। আর তাকে তার দু’টি কাপড় দিয়ে কাফন দাও। তার গায়ে কোন সুগন্ধি লাগিও না, তার মাথাও ঢেক না। কারণ তাকে কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ‘লাব্বায়ক’ বলা অবস্থায় উঠানো হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৭৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১২০৬, সুনান আননাসায়ী ২৮৫৩, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩৬২৫২, আহমাদ ১৮৫০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৮০, ইরওয়া ৬৯৪, সহীহ আত্ তারগীব ১১১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৭৫৮, ইসলামীক সেন্টার ২৭৫৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাফন

সাদা, সুতী ও সাধারণ মানের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া কর্তব্য। তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে। কেননা জীবিত মানুষ নতুন কাপড়ের অধিক মুখাপেক্ষী। পুরুষ ও মহিলা সকল মাইয়েতের জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি মাথা হতে পা ঢাকার মত বড় চাদর ও দু’টি ছোট কাপড়। অর্থাৎ একটি লেফাফা বা বড় চাদর। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা। বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে। শহীদকে তার পরিহিত পোষাকে এবং মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে। কাফনের কাপড়ের অভাব ঘটলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে। কাফনের পরে তিনবার সুগন্ধি ছিটাবে। তবে মুহরিমের কাফনে সুগন্ধি ছিটানো যাবে না। (তালখীছ, পৃঃ ৩৪-৩৭; বায়হাক্বী ৪/৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত ৫/৩৪৩-৪৫)।

তিন কাপড়ে কাফন দেয়া

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিন কাপড়ে কাফন দেয়া হয়েছিল। যা সাহূলিয়্যাহ্ সাদা সূতি কাপড় সাদা ইয়ামানী। এতে কোন সেলাই করা কুর্তা ছিল না, পাগড়ীও ছিল না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৬৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪১, সুনানন আননাসায়ী ১৮৯৮, ইবনু হিব্বান ১৪৬৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৩, আহমাদ ২৫৬৮০, ইবনু হিব্বান ৩০৩৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৭১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৪৭, ইসলামীক সেন্টার ২০৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উত্তম কাফন দেয়া

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন তোমাদের কোন ভাইকে কাফন দিবে তখন উচিত হবে উত্তম কাফন দেয়া। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৪৮, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৯৫, সুনান আননাসায়ী ১৮৯৫, আহমাদ ১৪১৪৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬৯৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সাদা কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করবে, কারণ সাদা কাপড়ই সবচেয়ে ভাল। আর মুর্দাকে সাদা কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। তোমাদের জন্য সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ কারণ এ সুরমা ব্যবহারে তোমাদের চোখের পাপড়ি নতুন করে গজায় ও চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪০৬১, সুনান আত্ তিরমিযী ৯৯৪, সুনান আননাসায়ী ৫৩২২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৬২০০, আহমাদ ৩৪২৬, ইবনু হিব্বান ৫৪২৩, শু‘আবুল ঈমান ৫৯০৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭৭, সহীহ আত্ তারগীব ২০২৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১২৩৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ না থাকলে কিংবা তাতে কাফনের ব্যবস্থা না হ’লে কেউ দান করবে অথবা বায়তুল মাল থেকে বা সরকারী তহবিল থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭০)।

মহিলাদের জন্য প্রচলিত পাঁচটি কাপড়ের হাদীছ ‘যঈফ’।

হাদিসঃ

গাক্বীফ গোত্রের কাফিনের কন্যা লায়লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা উম্মু কুলসুম (রাঃ) মারা গেলে যে মহিলা তাকে গোসল দেয় তার সাথে ‘আমিও ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (কাফনের জন্য) প্রথমে তহবন্দ, তারপর কামীস, তারপর ওড়না, তারপর চাদর এবং অন্য একটি কাপড় দিলেন। যা দিয়ে লাশ পেচিয়ে দেয়া হলো। লায়লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফনের কাপড়সহ দরজার পাশেই বসা ছিলেন। তিনি সেখান থেকে একটি একটি করে কাপড়গুলো আমাদেরকে প্রদান করেন। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩১৫৭)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

জানাযা

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর মসজিদের বাইরের নির্দিষ্ট স্থানে অধিকাংশ সময় জানাযা পড়াতেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮২)।

তবে প্রয়োজনে মসজিদেও জায়েয আছে। সুহায়েল বিন বায়যা (রাঃ) ও তার ভাইয়ের জানাযা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মসজিদের মধ্যে পড়েছিলেন।

হাদিসঃ

আবূ সালামাহ্ ইবনু ’আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে (তাঁর লাশ বাড়ী হতে দাফনের জন্য আনার পর) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তার জানাযাহ্ মসজিদে আনো, তাহলে আমিও জানাযাহ্ আদায় করতে পারব। লোকেরা (জানাযাহ্ মসজিদে আনতে) অস্বীকার করলেন (কারণ তারা ভাবলেন, মসজিদে জানাযার সালাত কিভাবে আদায় করা যেতে পারে)। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বায়যা’ নাম্নী মহিলার দু’ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার সালাত মসজিদে আদায় করিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৬, মুসলিম ৯৭৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৯০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৩৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর জানাযা মসজিদের মধ্যে হয়েছিল। (বায়হাক্বী ৪/৫২)।

মেয়েরাও পর্দার মধ্যে জানাযায় শরীক হতে পারেন। আয়েশা (রাঃ) ও অন্যান্য উম্মাহাতুল মুমিনীন (রাঃ) মসজিদে নববীর মধ্যে সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)-এর লাশ আনিয়ে নিজেরা জানাযা পড়েছিলেন।

হাদিসঃ

মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ)....আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। যখন সা’দ ইবনু আব ওয়াক্কাস (রাযিঃ) ইনতিকাল করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ তার লাশ মসজিদে নিয়ে আসার জন্য বলে পাঠালেন যাতে তারাও তার জানাযাহ আদায় করতে পারেন। উপস্থিত লোকেরা তাই করল। তাকে উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ঘরের সামনে রাখা হল এবং তারা তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তাকে বাবুল জানায়িয (জানাযাহ বের করার দরজা) দিয়ে যা মাকাইদ এর দিকে ছিল, বের করা হল। লোকেরা এ খবর জানতে পেয়ে বলল, কি ব্যাপার! জানাযাহ মসজিদে ঢুকানো হয়েছে? আয়িশাহ (রাযিঃ) এর নিকট এ সংবাদ পৌছলে তিনি বললেন, লোকেরা কেন এত শীঘ্র সমালোচনায় প্রবৃত্ত হল, যে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই? মসজিদে জানাযাহ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লোকেরা সমালোচনা করল, অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনু বায়যা এর সালাতে জানাযাহ মসজিদের ভিতরেই আদায় করেছেন। ইমাম মুসলিম বলেন, সুহায়ল বিন ওয়াদা বায়যা এর পুত্র। তার মায়ের নাম বায়যা। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৯০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৩৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২২, ইসলামীক সেন্টার ২১২৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

মহিলাগণ একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন। গোরস্থানের মধ্যে জানাযা না করা উচিৎ।

হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া দুনিয়ার আর সব জায়গায়ই মাসজিদ। কাজেই সব জায়গায়ই সালাত  আদায় করা যায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৩৭, সুনান আবূ দাঊদ ৪৯২, সুনান তিরমিযী ৩১৭, আহকামুল জানায়িয ৮৭ পৃঃ, দারিমী ১৪৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

সেখানে কোনো মসজিদও নির্মাণ করা যাবে না। (তালখীছ ৫৩ পৃঃ)।

তবে কেউ জানাযা না পেলে পরে যেকোন দিন গিয়ে কবরে একাকী বা জামা‘আত সহকারে জানাযা পড়তে পারেন।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক কবরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার সালাত আদায় করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩২১, মুসলিম ৯৫৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

উল্লেখ্য যে, লাশ পচে গেলে এবং দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়ানো সম্ভব না হ’লে দাফন করার পরে কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া যাবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮১)।

একই ব্যক্তি বিশেষ কারণে একাধিক বার জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন বা ইমামতি করতে পারেন।

জ্ঞাতব্য: (ক) বর্তমান যুগে অনেকে দাফনের পরপরই পুনরায় হাত তুলে দলবদ্ধভাবে দো‘আ করেন। কেউ একই দিনে বা দু’একদিন পরে আত্মীয়-স্বজন ডেকে এনে মৃতের বাড়ীতে দো‘আর অনুষ্ঠান করেন। এগুলি নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। জানা আবশ্যক যে, জানাযার ছালাতই হ’ল মৃতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এটা ব্যতীত মুসলিম মাইয়েতের জন্য পৃথক কোন দো‘আর অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতে নেই।

(খ) জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুণ সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয়, সবটাই বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে মৃতের উপর বিলাপধ্বনি করা হয়, কবরে ও ক্বিয়ামতের দিন এজন্য তাকে আযাব দেওয়া হবে’।

হাদিসঃ

(ক) মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করা হয় কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে মৃতকে এ মাতমের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৯১, মুসলিম ৯৩৩, সুনান আত্ তিরমিযী ১০০০, আহমাদ ১৮২৩৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১২০৯৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১১৫, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আমরাহ্ বিনতু ’আবদুর রহমান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তাকে বলা হল যে, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহ আবূ ’আবদুর রহমানকে (ইবনু ’উমারের উপনাম নাম) মাফ করুন। তিনি মিথ্যা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন অথবা ইজতিহাদী ভুল করেছেন। (ব্যাপার হলো) একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ইয়াহূদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তার কবরের পাশে লোকজন কাঁদছে। এ দৃশ্য দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর আত্মীয়-স্বজনরা তার জন্য কাঁদছে, আর এ মহিলাকে তার কবরে ’আযাব দেয়া হচ্ছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৩২, আত্ তিরমিযী ১০০৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৮০৩, আহমাদ ২৪৭৫৮, ইবনু হিব্বান ৩১২৩, সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১৯৯৫; শব্দ বিন্যাস মুসলিমের)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু ’আফফান-এর কন্যা মক্কায় মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জানাযাহ্ ও দাফনের কাজে যোগ দিতে মক্কায় এলাম। ইবনু ’উমার (রাঃ) ও ইবনু ’আব্বাসও এখানে আসলেন। আমি এ দু’জনের মধ্যে বসেছিলাম। এমন সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ), ‘আমর ইবনু ’উসমান (রাঃ) কে বললেন, আর তিনি তখন তাঁর মুখোমুখি বসেছিলেন। তুমি (পরিবারের লোকজনকে আওয়াজ করে) কান্নাকাটি করতে কেন নিষেধ করছ না? অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য ’আযাব দেয়া হয়। তখন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ’উমার (রাঃ) এ ধরনের কথা বলতেন। তারপর তিনি ঘটনা বর্ণনা করলেন, ’’আমি যখন ’উমার (রাঃ)-এর সাথে মক্কা হতে ফেরার পথে ’বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, হঠাৎ করে ’উমার (রাঃ) একটি কাঁকর গাছের ছায়ার নীচে এক কাফেলা দেখতে পেলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি ওখানে গিয়ে দেখো কাফেলায় কে কে আছে। আমি সুহায়বকে দেখতে পাই। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি ফিরে এসে ’উমার (রাঃ) কে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ডেকে আনো।

আমি আবার সুহায়ব-এর নিকট গেলাম। তাকে বললাম, ’চলুন, আমীরুল মু’মিনীন ’উমারের সাথে দেখা করুন।’ এরপর যখন মদীনায় ’উমার (রাঃ) কে আহত করা হলো, সুহায়ব কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে এলেন এবং বলতে থাকলেন, হায় আমার ভাই, হায় আমার বন্ধু! (এটা কি হলো!) সে অবস্থায়ই ’উমার (রাঃ) বললেন, সুহায়ব! তুমি আমার জন্য কাঁদছ অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির দরুন’আযাব দেয়া হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন ’উমার (রাঃ) ইন্তিকাল করলেন, আমি এ কথা ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে বললাম। তিনি শুনে বলতে লাগলেন, আল্লাহ তা’আলা ’উমারের উপর দয়া করুন। কথা এটা নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে, পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য মৃত ব্যক্তিকে ’আযাব দেয়া হয়। বরং আল্লাহ তা’আলা পরিবার-পরিজনের কান্নাকাটির জন্য কাফিরের ’আযাব বাড়িয়ে দেন। তারপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, কুরআনের এ আয়াতই দলীল হিসেবে তোমাদের জন্য যথেষ্ট, অর্থাৎ “কোন ব্যক্তি অন্য কারো বোঝা বহন করবে না’’- (সূরাহ্ ইসরা ১৭: ১৫)। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের মর্মবাণীও প্রায় এ রকমই, অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাই হাসান ও কাঁদান। ইবনু আবূ মুলায়কাহ্ বলেন, ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) এসব কথা শুনার পর কিছুই বললেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৪২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮৬, ১২৮৭, ১২৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২৮, ৯২৯, ৯৩০, মুসনাদুশ্ শাফি‘ঈ ৫৫৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০১৭. ইসলামীক সেন্টার ২০২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জানাযার সাথে চলা

জানাজার সাথে মাতম করা রমনী ও আগুন নেয়া নিষেধ

’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) মৃত্যুর সময় তাঁর ছেলে ’আবদুল্লাহ (রাঃ) কে ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন যে, যখন আমি মারা যাব তখন আমার জানাযার সাথে যেন মাতম করার জন্য কোন রমণী না থাকে। আর না থাকে কোন আগুন। আমাকে দাফন করার সময় আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ঢালবে। দাফনের পরে দু’আ ও মাগফিরাতের জন্য এতটা সময় (আমার কবরের কাছে) অপেক্ষা করবে, যতটা সময় একটি উট যাবাহ করে তার মাংস বণ্টন করতে লাগে। তাহলে আমি তোমাদের সাথে একটু পরিচিত থাকবো এবং (নির্ভয়ে) জেনে নেব, আমি আমার রবের মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) নিকট কি জবাব দিবো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১৬, মুসলিম ১২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

জানাযা বহন

জানাযা কাঁধে বহন করা সুন্নাত।

হাদিসঃ

(ক) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযার কার্যক্রম সালাত তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ মৃত ব্যক্তি যদি নেক মানুষ হয় তাহলে তার জন্য কল্যাণ। কাজেই তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সে এরূপ না হলে খারাপ হবে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি নিজেদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৮১, সুনান আত্ তিরমিযী ১০১৫, সুনান আননাসায়ী ১৯১০, ১৯১১, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৭৭, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১২৬৩, আহমাদ ৭২৬৮, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৯, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৯৬৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জানাযাহ্ খাটিয়ায় রাখার পর লোকেরা যখন তাকে কাঁধে নেয় সে জানাযাহ্ যদি নেক লোকের হয় তাহলে সে বলে আমাকে (আমার মঞ্জীলের দিকে) তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো। আর যদি বদ লোকের হয়, সে (তার নিজ লোকদেরকে) বলে, হায়! হায়! আমাকে কোথায় নিয়ে চলছ। মুর্দারের কথার এ আওয়াজ মানুষ ছাড়া সবাই শুনে। যদি মানুষ এ আওয়াজ শুনত তাহলে বেহুশ হয়ে পড়ে যেত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১৪-১৩১৬, সুনান আননাসায়ী ১৯০৯, আহমাদ ১১৩৭২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৮৪৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ সময় মাথা সম্মুখ দিকে রাখবে। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ১৭/১৬৬ পৃঃ)।

মৃতের পরিবারের লোকেরা ও নিকটাত্মীয়গণ এর প্রথম হকদার। এ দায়িত্ব কেবল পুরুষদের, মেয়েদের নয়। জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়। এই সময় সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। ধূপ-ধুনা ইত্যাদি অগ্নিযুক্ত সুগন্ধি বহন করা যাবে না। সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়েতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে। চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না।

হাদিসঃ

উল্লেখিত রাবী (আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন লাশ দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। যারা জানাযার সাথে থাকে তারা যেন (জানাযাহ্ লোকদের কাঁধ থেকে মাটিতে অথবা কবরে) রাখার আগে না বসে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৫৯, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৭২, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৪২, সুনান আননাসায়ী ১৯১৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৯০৫, আহমাদ ১১১৯৫, ইবনু হিব্বান ৩০৫১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৮৭২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৮৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৬৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাইয়েতের পিছনে কাছাকাছি চলাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে সম্মুখে ও ডাইনে-বামে চলা যাবে। কেউ গাড়ীতে গেলে তাকে পিছে পিছেই যেতে হবে।

হাদিসঃ

মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী চলবে জানাযার পশ্চাতে এবং পায়ে হাঁটা ব্যক্তিরা চলবে জানাযার সামনে পেছনে ডানে-বামে জানাযার কাছ ঘেষে। আর অকালে ভূমিষ্ট বাচ্চার সালাত আদায় করবে, তাদের মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দু’আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৮০, আহমাদ ১৮১৮, ১৮১৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৮৬৬, সহীহ আল জামিআস্ সগীর ৩৫২৫, আত্ তিরমিযী ১০৩১, নাসায়ী ১৯৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১২৫৩, ইবনু মাজাহ্ ১৪৮১, ইবনু হিব্বান ৩০৪৯, ইরওয়া ৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কোন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি বা মুরববী আলেম জানাযায় যোগদানে সক্ষম না হলে মাইয়েতকে তাঁর সামনে এনে রাখা যাবে। যাতে তিনি একাকী হলেও জানাযা পড়তে পারেন। যারা জানাযার পিছনে চলবেন, তাদের ওযূ অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব। তবে আবশ্যিক নয়।

বর্তমান যুগে কোন কোন স্থানে জানাযার জন্য গাড়ীতে করে লাশ বহন করতে দেখা যায়। এটি সুন্নাত বিরোধী কাজ। নিতান্ত বাধ্য না হ’লে একাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কেননা এটা ইহুদী-নাছারাদের অনুকরণ মাত্র। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা রোগীর সেবা কর এবং জানাযার অনুগমন কর। তা তোমাদের আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেবে’। (আহমাদ হা/১১২৮৮; বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে‘ হা/৪১০৯; তালখীছ, পৃঃ ৩৮-৪৩) ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জানাযার সাথে ফেরেশতাগণ পায়ে হেঁটে চলেন এবং জানাযা শেষে তারা চলে যান। একারণে আমি বাহনে সওয়ার হইনি। এখন তাঁরা চলে গেছেন বিধায় সওয়ার হ’লাম’।

হাদিসঃ

সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একদিন) এক ব্যক্তির জানাযাহ্ সালাতের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। তিনি কিছু লোককে আরোহী অবস্থায় দেখে বললেন, তোমাদের কি লজ্জাবোধ হচ্ছে না? আল্লাহর মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) নিজেদের পায়ে হেঁটে চলেছেন, আর তোমরা পশুর পিঠে বসে যাচ্ছ? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৭২, সুনান আত্ তিরমিযী ১০১২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩১৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৮৫৬, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ২১৭৭, ইবনু মাজাহ্ ১৪৮০)।

জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে যাওয়া

(ক) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি জানাযাহ্ যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তার সাথে দাঁড়ালাম। তারপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো এক ইয়াহূদী মহিলার জানাযা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মৃত্যু একটি ভীতিকর বিষয়। অতএব যখনই তোমরা জানাযাহ্ দেখবে দাঁড়িয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৪৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩১১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১১১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬০, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৭৪, আহমাদ ১৪৪২৭, সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ী ২০৬০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ১৯৬৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৯০, ইসলামীক সেন্টার ২০৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাযাহ্ দেখে দাঁড়াতে দেখলাম। আমরাও তার সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি বসলে আমরাও বসলাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬২, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন.২০৯৮, ইসলামীক সেন্টার ২১০২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাফন

মুসলিম মাইয়েতকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করতে হবে, ইহুদী-নাছারা ও কাফের-মুশরিকদের সাথে নয়। যাতে তারা মুসলিম যিয়ারতকারীদের দো‘আ লাভে উপকৃত হন। শিরক ও বিদ‘আতপন্থী ব্যক্তির পাশে ছহীহ হাদীছপন্থী মুসলমানের কবর দেওয়া উচিৎ নয়। হযরত জাবের (রাঃ) তাঁর পিতার লাশ অন্য মুসলিমের পাশ থেকে যাকে তিনি অপছন্দ করতেন, ৬ মাস পরে উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করেছিলেন। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৫২, ১৩৫১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৭০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর শয়ন কক্ষে দাফন করা হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাছাড়া তাঁর পাশে তাঁর দুই মহান সাথীকে কবর দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ পৃথকভাবে তাঁর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করতে না পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমানগণ যেখানে শহীদ হবেন, সেখানেই কবরস্থ হবেন।

হাদিসঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন আমার ফুফু আমার পিতার (’আবদুল্লাহর) লাশ আমাদের কবরস্থানে দাফন করার জন্য নিয়ে আসলেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরফ থেকে একজন আহবানকারী জানালেন, শাহীদদেরকে তাঁদের শাহাদাতের জায়গায় পৌঁছিয়ে দাও। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৬৫, সুনান আত্ তিরমিযী ১৭১৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫১৬, আহমাদ ১৪১৬৯, ইবনু হিব্বান ৩১৮৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৫০৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

যুদ্ধের ময়দানে শহীদদের এক-একটি কবরে দু’ দু’, তিন তিন জন করে দাফন করা জায়েজ

হিশাম ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের যুদ্ধের দিন বলেছেন, কবর খনন কর, কবরকে প্রশস্ত কর, বেশ গভীর করে খনন কর এবং এগুলোকে ভালো করে কর, অর্থাৎ মাটি এবং ধূলিকণা থেকে পরিষ্কার কর। এক-একটি কবরে দু’ দু’, তিন তিন জন করে দাফন করো। আর তাদের মধ্যে যার বেশী করে কুরআন হিফয আছে তাকে কবরে আগে রাখো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩২১৫, সুনান আত্ তিরমিযী ১৭১৩, সুনান আননাসায়ী ২০১৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৬০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব ৬৫০১, আহমাদ ১৬২৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯২৯, ইরওয়া ৭৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মুসলমান যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানকার মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা উচিৎ। তবে সঙ্গত কারণে অন্যত্র নেওয়া যাবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০৩)।

কবর উত্তর-দক্ষিণে লম্বা, গভীর, প্রশস্ত, সুন্দর ও মধ্যস্থলে বিঘত খানেক উঁচু করে দু’দিকে ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক উঁচু করা নাজায়েয। ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবর জায়েয আছে। যাকে এদেশে যথাক্রমে ‘পাশখুলি’ ও ‘বাক্স কবর’ বলা হয়। তবে ‘লাহদ’ উত্তম।

হাদিসঃ

(ক)  উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদীনায় দু’ ব্যক্তি ছিলেন (তারা কবর খুড়তেন)। তাদের একজন (আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী) লাহদী (বুগলী) কবর খুঁড়তেন আর দ্বিতীয়জন (আবূ ’উবায়দাহ্ ইবনুল জাররাহ্) লাহদী কবর খুঁড়তেন না (বরং সিন্ধুকী কবর খুড়তেন)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকাল হলে সাহাবীগণ (সম্মিলিতভাবে বললেন), এ দু’ ব্যক্তির যিনি আগে আসবেন তিনিই তার মতো করে কবর খনন করবেন। পরিশেষে তিনিই আগে আসলেন যিনি লাহদী কবর খুঁড়তেন (অর্থাৎ আবূ ত্বলহাহ্ আল আনসারী।) তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য লাহদী কবর খুঁড়লেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০০, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৬০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক্ব ৬৩৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১০)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) আমির ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বক্বাস (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্বক্বাস (রাঃ) মৃত্যুশয্যায় রোগাক্রান্ত অবস্থায় বলেন, আমাকে দাফন করার জন্য লাহদ (বগলী) কবর তৈরি করবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাফন করার জন্য যেভাবে কবর খোঁড়া হয়েছিল সেভাবে আমার উপরেও কাঁচা ইট দাঁড় করিয়ে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬৬, সুনান আননাসায়ী ২০০৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৫৬, আহমাদ ১৪৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬১৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১০৯, ইসলামীক সেন্টার ২১১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লাহদী কবর আমাদের জন্য। আর শাক্ক্ (সিন্ধুকী) কবর আমাদের অপরদের জন্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০১, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৪, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৪৫, সুনান আননাসায়ী ২০০৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৫৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭১৮, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৪৮৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরে নামার আগে পবিত্র হওয়া

মাইয়েতকে কবরে নামানোর দায়িত্ব পুরুষদের। মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তীগণ ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিগণ এই দায়িত্ব পালন করবেন, যিনি পূর্বরাতে (বা দাফনের পূর্বে) স্ত্রী সহবাস করেননি।

হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (উম্মু কুলসুমের) দাফনের সময় উপস্থিত ছিলাম। আর যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের পাশে বসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ এমন আছে, যে গত রাতে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়নি? আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছি, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, (মাইয়্যিতকে কবরে রাখার জন্য) তুমিই কবরে নামো। তখন তিনি কবরে নামলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৪২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

পায়ের দিক দিয়ে মোর্দা কবরে নামাবে (অসুবিধা হলে যেভাবে সুবিধা সেভাবে নামাবে)। মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে। এই সময় কাফনের কাপড়ের গিরাগুলি খুলে দেবে। (মির‘আত ৫/৪২৮-২৯; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯০)।

মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় দোয়া পাঠ

কবরে শোয়ানোর সময় ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ (অর্থ: ‘আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের দ্বীনের উপরে’) বলবে। ‘মিল্লাতে’-এর স্থলে ‘সুন্নাতে’ বলা যাবে। এই সময় কোন সুগন্ধি বা গোলাপ পানি ছিটানো বিদ‘আত।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখতেন, বলতেন, “বিসমিল্লা-হ, ওয়াবিল্লা-হি ওয়া আলা- মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ’’। অন্য এক বর্ণনায় আছে, “ওয়া ’আলা- সুন্না-তি রসূলিল্লা-হ’’ (অর্থাৎ আল্লাহর নামে ও আল্লাহর হুকুম মুতাবিক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর মিল্লাতের উপর কবরে নামাচ্ছি)। অন্য বর্ণনায় ’মিল্লাতি রসূলিল্লা-হ’-এর জায়গায় ‘সুন্নাতি রসূলিল্লা-হ’ বর্ণিত হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩২১৩, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৫০, আহকামুল জানায়েয ১৫২ নং পৃঃ, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৬৯৬, আহমাদ ৪৮১২, ইবনু হিব্বান ৩১১০, আমলুল ইয়াম ওয়াল লা- ইলা-হা ১০৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭০৫৮, ইরওয়া ৩য় খন্ড, হাঃ ৭৪৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৮৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেয়া

কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে (বিসমিল্লাহ বলে) তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেবে।

হাদিসঃ

(ক) ইমাম জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের দু’ হাতের মুষ্টি ভরে মাটি নিয়ে মাইয়্যিতের কবরের উপর তিনবার দিয়েছেন। তিনি তার পুত্র ইব্রাহীমের কবরে পানি ছিটিয়েছেন এবং (চিহ্ন রাখার জন্য) কবরের উপর কংকর দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০৮, তালখীছ, পৃঃ ৫৮-৬৫, ৬৯; মির‘আত ‘মাইয়েতের দাফন’ অনুচ্ছেদ, ৫/৪২৬-৫৭, মুসনাদ আশ্ শাফি‘ঈ ৬০১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৫, ইরওয়া ৭৫৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি জানাযার সালাত আদায় করালেন। তারপর তিনি তার কবরের কাছে এলেন এবং কবরে তার মাথা বরাবর তিন মুষ্টি মাটি রাখলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৬৫, ইরওয়া ৩/৭৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ পড়া যাবে কি

এ সময় ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’। (ত্বোয়াহা ২০/৫৫) পড়ার কোন ছহীহ দলীল নেই। (আহমাদ হা/২২২৪১, সনদ যঈফ; তালখীছ পৃঃ ১০২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয, টীকা দ্রঃ, মাসআলা নং ১০৬ দ্রঃ)।

অনুরূপভাবে আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বা-নি ওয়া মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরে... পড়ার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫৫৩, সনদ যঈফ)।

দাফন চলাকালীন সময়ে কবরের নিকটে বসে কবর আযাব, জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন ও জান্নাতের সুসংবাদের উপরে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে আলোচনা করবে। এই সময় প্রত্যেকে দু’তিনবার করে পড়বে-

“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি”

(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে কবরের আযাব হতে পানাহ চাই)। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৩০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

দাফনের পরে মাইয়েতের ‘তাছবীত’ অর্থাৎ মুনকার ও নাকীর (দু’জন অপরিচিত ফেরেশতা)-এর সওয়ালের জওয়াব দানের সময় যেন তিনি দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে সকলের দো‘আ করা উচিৎ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,  ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’।

হাদিসঃ

উসমান (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাইয়্যিতের দাফন সম্পন্ন করে অবসর গ্রহণকালে কবরের নিকট দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য (আল্লাহ তা’আলার নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা কর ও দু’আ কর, যেন তাকে এখন (মালায়িকার প্রশ্নোত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকার শক্তি-সামর্থ্য দেন। কেননা এখনই তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩২২১, সহীহুল জামি‘ ৪৭৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব এ সময় প্রত্যেকের নিম্নোক্ত ভাবে দো‘আ করা উচিৎ। যেমন,

(১)  “আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়া ছাবিবতহু” (অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন ও তাকে দৃঢ় রাখুন’)। (আবুদাঊদ, হাকেম, হিছনুল মুসলিম, দো‘আ নং ১৬৪)।

অথবা

(২) “আল্লা-হুম্মা ছাব্বিতহু বিল ক্বাউলিছ ছা-বিত” (হে আল্লাহ! আপনি তাকে কালেমা শাহাদাত দ্বারা সুদৃঢ় রাখুন)। এই সময় ঐ ব্যক্তি দো‘আর ভিখারী। আর জীবিত মুমিনের দো‘আ মৃত মুমিনের জন্য খুবই উপকারী। এই সময় মাইয়েতের তালক্বীনের উদ্দেশ্যে সকলের “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ”  পাঠের কোন দলীল নেই। যেটা শাফেঈ মাযহাবে ব্যাপকভাবে চালু আছে। (মিরক্বাত ১/২০৯; মির‘আত ১/২৩০)।

(৩) পূর্বে বর্ণিত জানাযার ২ নং দো‘আটি এবং ৩ নং দো‘আটির শেষাংশটুকুও (আল্লা-হুম্মাগফিরলাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম) পড়া যায়। কিন্তু দাফনের পরে একজনের নেতৃত্বে সকলে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দো‘আ করা ও সকলের সমস্বরে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই।

কবর চিহ্নিত করে রাখা জায়েজ

মুত্ত্বালিব ইবনু আবী ওয়াদা’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ’উসমান ইবনু মায্’ঊন (রাঃ)-এর মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার লাশ বের করা হয় এবং তা দাফন করা হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কবরের চিহ্ন রাখার জন্য এক ব্যক্তিকে হুকুম দিলেন একটি বড়) পাথর আনার জন্য। লোকটি পাথর উঠিয়ে আনতে পারলেন না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা উঠিয়ে আনার জন্য উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের দু’ হাতের আস্তিন গুটিয়ে নিলেন। হাদীসের রাবী বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে রসূলের এ হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি বলতেন, যখন তিনি হাতা গুটাচ্ছিলেন- মনে হচ্ছে এখনো আমি রসূলের পবিত্র বাহুদ্বয়ের শুভ্রতার চমক অনুভব করছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাথরটি উঠিয়ে এনে ’উসমানের কবরের মাথার দিকে রেখে দিলেন এবং বললেন, আমি এ পাথর দেখে আমার ভাইয়ের কবর চিনতে পারব। এখন আমার পরিবারের যে মারা যাবে তাকে এর পাশে দাফন করব।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১১, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৬, আহকামুল জানায়িয পৃঃ ৬৫)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

জানাযার ছালাত

হুকুম: প্রত্যেক মুসলিম আহলে ক্বিবলার উপর জানাযার ছালাত ‘ফরযে কেফায়াহ’। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫২৬, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭১, ২৭৯-৮০।

অর্থাৎ মুসলমানদের কেউ জানাযা পড়লে উক্ত ফরয আদায় হয়ে যাবে। না পড়লে সবাই দায়ী হবে। ছালাত হিসাবে অন্যান্য ছালাতের ন্যায় ওযূ, ক্বিবলা, সতর ঢাকা ইত্যাদি ছালাতে জানাযার শর্তাবলীর অন্তর্ভুক্ত। তবে পার্থক্য এই যে, জানাযার ছালাতে কোন রুকূ-সিজদা বা বৈঠক নেই এবং এ ছালাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ওয়াক্ত নেই। তবে তিন সময়ে  মৃতদের জানাযা পড়তে এবং তাদেরক কবরস্থ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

হাদিসঃ

উকবা ইবনু আমের আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিন সময়ে আমাদের মৃতদের জানাযা পড়তে এবং তাদেরক কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেনঃ সূর্য সুস্পষ্টভাবে উদয়কালে, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুপুরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়, যতক্ষণ না তা অন্তমিত হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫১৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৮১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৩১, সুনান আততিরমিযী ১০৩০, সুনান আননাসায়ী ৫৬০, ৫৬৫, ২০১৩, সুনান আবূ দাউদ ৩১৯২, আহমাদ ১৬৯২৬, দারেমী ১৪৩২ ইরওয়াহ ৪৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭৯৯, ইসলামীক সেন্টার ১৮০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানাযার ছালাতের ওয়াজিব সমূহ : ছয়টি :

 (১) দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা (২) চার তাকবীর দেওয়া (৩) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করা (৪) দরূদ পাঠ করা (৫) মাইয়েতের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করা (৬) সালাম ফিরানো।

জানাযার ছালাতের সুন্নাত সমূহ : পাঁচটি

 (১) জামা‘আত সহকারে ছালাত আদায় করা (২)

কমপক্ষে তিনটি কাতার হওয়া (৩) ইমাম বা একাকী মুছল্লীর জন্য পুরুষের মাথা ও মেয়েদের কোমর বরাবর দাঁড়ানো (৪) ফাতিহা ব্যতীত অন্য একটি সূরা এবং হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করা (৫) ছালাত শেষে জানাযা উঠানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা।  (ইবনুন নাজ্জার আল-ফুতূহী, শারহুল মুনতাহা (বৈরূত : দার খিযর ১৪১৯/১৯৯৮) ৩/৫৫-৬৭; নাসাঈ হা/১৯৮৭, ৮৯)।

বাকী সবই ‘মুস্তাহাব’। যদি ভুলক্রমে তিন তাকবীর হয়ে যায়, তবে পুনরায় ইমাম চতুর্থ তাকবীর দিবেন। যদি মুক্তাদীর কোন তাকবীর ছুটে যায়, তবে শেষে তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে। আর যদি না দেয় তাতেও দোষ নেই। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭৭)।

জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করার ফজিলত

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের জানাযায় ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে অংশগ্রহণ করে, এমনকি তার জানাযার সালাত  আদায় করে কবরে দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে। এমন ব্যক্তি দু’ ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ঘরে ফেরে। প্রত্যেক ক্বীরাত্ব উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার সালাত আদায় করে দাফন করার আগে ফিরে সে এক ক্বীরাত্ব সাওয়াব নিয়ে ফিরে এলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৫, সুনান আননাসায়ী ৫০৩২, আহমাদ ৯৫৫১, ইবনু হিব্বান ৩০৮০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫০১, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৫৭, ইসলামীক সেন্টার ২০৬২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কাতার দাঁড়ানো

ইমামের পিছনে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে কাতার দিবে।

হাদিসঃ

 আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সাহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৩৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৭, ইবনু হিব্বান ৩০৬৮, ইরওয়া ৭২৯, মুসলিম ৯৫১, সুনান আননাসায়ী ১৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর লাশ তাঁর শয়ন কক্ষেই রাখা হয়েছিল। সম্ভবত: তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হেতু কেউ ইমাম হননি। বরং সেখানেই পৃথক পৃথক ভাবে সকলে জানাযা পড়েছিলেন। প্রথমে পুরুষগণ, পরে মহিলাগণ এবং শেষে বালকেরা’। (শারহুল মুনতাহা ৩/৫৫; সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৬৬৪ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১৬২৮, ‘জানায়েয’ অধ্যায়- ৬, অনুচ্ছেদ-৬৫)।

এ সময় জামার হাতাগুলো খুলে দিবে ও টাখনুর উপরে কাপড় রাখবে।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ টাখনুর নিচে ইযারের যে অংশ থাকবে তা জাহান্নামে। (অর্থাৎ- কিয়দংশের জন্য সারা শরীরই আগুনে প্রজ্জ্বলিত হবে।) (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৩১৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৭৮৭, মুসনাদে আহমাদ ৯৩১৯, সুনান আননাসায়ী ৫৩৩১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২০২৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২০৩৭, মুসান্নাফ ইবনু আবী শারবাহ্ ২৪৮২৪, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২৭২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জুতা-স্যান্ডেল খোলার প্রয়োজন নেই। যদি তাতে নাপাকী থাকে, তবে তা মাটিতে ঘষে নিলেই যথেষ্ট হবে।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নিজের জুতা দিয়ে অপবিত্র জিনিস মাড়ায়, তখন মাটিই এর জন্য পবিত্রকারী। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ৫৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

এ সময় জুতা-স্যান্ডেল থেকে পা বের করে তার উপরে দাঁড়ানো স্রেফ বোকামি। মাইয়েতকে উত্তর মাথা করে ক্বিবলার দিকে সামনে রাখবে।

যদি মাইয়েত পুরুষ হোন, তবে ইমাম মাইয়েতের মাথা বরাবর দাঁড়াবেন। আর যদি মহিলা হন, তবে মাইয়েতের কোমর বরাবর দাঁড়াবেন।

হাদিসঃ

নাফি’ আবূ গালিব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সাথে এক জানাযায় (আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)-এর) সালাত আদায় করেছি। তিনি [আনাস (রাঃ)] (জানাযার) মাথার বরাবর দাঁড়ালেন। এরপর লোকেরা কুরায়শ বংশের এক মহিলার লাশ নিয়ে এলেন এবং বললেন, হে আবূ হামযাহ্ (এটা আনাসের ডাক নাম) এর জানাযার সালাত আদায় করে দিন। (এ কথা শুনে) আনাস (রাঃ) খাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জানাযার সালাত আদায় করে দিলেন। এটা দেখে ’আলা ইবনু যিয়াদ বললেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে দাঁড়িয়ে সালাতে জানাযাহ্ আদায় করতে দেখেছেন, যেভাবে আপনি এ মহিলার সালাত মাঝখানে দাঁড়িয়ে ও পুরুষটির জানাযাহ্ মাথার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ালেন? আনাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৭৯, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

মাইয়েত একত্রে একাধিক হলে এবং পুরুষ ও নারী হলে পুরুষের লাশ ইমামের কাছাকাছি সম্মুখে রাখবে। অতঃপর মহিলার লাশ থাকবে। যদি শিশু ও মহিলা হয়, তাহলে শিশুর লাশ প্রথমে ও মহিলার লাশ পরে থাকবে।

ইমামের পিছনে তিনটি কাতার দেওয়া মুস্তাহাব।

হাদিসঃ

মালিক ইবনু হুবায়রাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিমের মৃত্যু ঘটলে তিন সারি বিশিষ্ট জামা’আত দ্বারা জানাযার সালাত আদায় সম্পন্ন করা গেলে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য (জান্নাত ও মাগফিরাত) ওয়াজিব করে দেন। এ কারণে মালিক ইবনু হুবায়রাহ্ জানাযার সালাতে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা কম দেখলে এ হাদীস অনুযায়ী তাদেরকে তিন সারিতে দাঁড় করাতেন।

আর ইমাম তিরমিযীর একক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, মালিক ইবনু হুবায়রাহ্ যখন জানাযার সালাত আদায় করতেন, আর (উপস্থিত) মানুষের সংখ্যা কম দেখতেন, তখন তাদের তিন কাতারে বিন্যস্ত করে দিতেন। আর বলতেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির জানাযার সালাত তিন সারি লোকে পড়ে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন। ইবনু মাজাহও এরূপ বর্ণনা করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৮৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

১ম কাতারে ইমামের কাছাকাছি মাইয়েতের উত্তরাধিকারীগণ ও দ্বীনদার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ দাঁড়াবেন। চারজন হলে ইমামের পিছনে দু’জন দু’জন করে দাঁড়াবেন।

হাদিসঃ

আবূ মাস্’ঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের সময় আমাদের কাঁধে হাত রেখে বলতেনঃ সোজা হয়ে দাঁড়াও, সামনে পিছনে হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি হবে। আর তোমাদের যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী, তারা আমার নিকট দাঁড়াবে। তারপর সমস্ত লোক যারা তাদের নিকটবর্তী (মানের), তারপর ঐসব লোক যারা তাদের নিকটবর্তী হবে। আবূ মাস্’ঊদ (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, আজকাল তোমাদের মাঝে বড় মতভেদ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১০৮৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৮৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৮৫৪, ইসলামিক সেন্টারঃ ৮৬৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম ব্যতীত একজন পুরুষ ও একজন মহিলা মুক্তাদী হ’লে ইমামের পিছনে পুরুষ ও তার পিছনে মহিলা দাঁড়াবেন। মুক্তাদী একজন হ’লে তিনি ইমামের পিছনে দাঁড়াবেন। কোন লোক না পেলে একাকী জানাযা পড়বেন। (হাকেম ১/৩৬৫, বায়হাক্বী ৪/৩০-৩১; তালখীছ ৫০-৫১ পৃঃ)।

তবে শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও আমল মুক্ত দ্বীনদার মুছল্লীর সংখ্যা জানাযায় যত বেশী হবে, মাইয়েতের জন্য তা তত বেশী উপকারী হবে এবং তাদের দো‘আ কবুল করা হবে’।

হাদিসঃ

(ক) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদ করা গোলাম কুরায়ব ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। ইবনু ’আব্বাস-এর এক ছেলে (মক্কার নিকটবর্তী) ’কুদায়দ’ অথবা ’উসফান’ নামক স্থানে মারা গিয়েছিল। তিনি আমাকে বললেন, হে কুরায়ব! জানাযার জন্য কেমন লোক জমা হয়েছে দেখো। কুরায়ব বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম, জানাযার জন্য কিছু লোক একত্রিত হয়েছে। অতঃপর তাকে আমি এ খবর জানালাম। তিনি বললেন, তোমার হিসেবে তারা কি চল্লিশজন হবে? আমি জবাব দিলাম, হ্যাঁ। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) তখন বললেন, তাহলে সালাতের জন্য তাকে বের করে আনো। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন যদি তার জানাযার সালাত  আদায় করে তাহলে আল্লাহ তা’আলা এ মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবূল করেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬০, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৮৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৭০, আহমাদ ২৫০৯, ইবনু হিব্বান ৩০৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬২১, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৫, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫৭০৮, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৬৭, ইসলামীক সেন্টার ২০৭২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ)  আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সালাতে জানাযায় একশতজন মুসলিমের দল হাযির থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই তার জন্য শাফা’আত (মাগফিরাত কামনা) করবে। তাহলে তার জন্য তাদের এ শাফা’আত (কবূল) হয়ে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৪৭, সুনান আননাসায়ী ১৯৯১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৬২২, আহমাদ ১৩৮০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯০৩, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫০৪, আত্ তিরমিযী ১০২৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৬৬, ইসলামীক সেন্টার ২০৭১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমামত: মাইয়েত কোন ন্যায়নিষ্ঠ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে অছিয়ত করে গেলে তিনিই জানাযা পড়াবেন। নইলে ‘আমীর’ বা তাঁর প্রতিনিধি অথবা মাইয়েতের কোন যোগ্য নিকটাত্মীয়, নতুবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা অন্য কোন মুত্তাক্বী আলেম জানাযায় ইমামতি করবেন। মৃত ব্যক্তি দু’জন ব্যক্তির নামেও অছিয়ত করে যেতে পারেন। (শারহুল মুনতাহা ৩/৫৬-৫৭; বায়হাক্বী ৪/২৮-২৯)।

সমতল জায়গায় ইমামতি করা

আবূ মাস্’ঊদ আল্ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমামকে কোন কিছুর উপর (একা) ও মুক্তাদীগণ নীচে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯২, সুনান আবূ দাঊদ ৫৯৭, দারিমী ১৮৮২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৮৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানাযার ছালাতের বিবরণ

জানাযার ছালাতে চার তাকবীর দিবে। পাঁচ থেকে নয় তাকবীর পর্যন্ত প্রমাণিত আছে। তবে চার তাকবীরের হাদীছ সমূহ অধিকতর ছহীহ ও সংখ্যায় অধিক। মুক্তাদী ইমামের পিছে পিছে তাকবীর বলবে।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সাহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৩৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৭, ইবনু হিব্বান ৩০৬৮, ইরওয়া ৭২৯, মুসলিম ৯৫১, সুনান আননাসায়ী ১৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩১)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) সালাতুল জানাযায় চার তাকবীর বলতেন। এক জানাযায় তিনি পাঁচ তাকবীরও বললেন। আমরা তখন তাঁকে (এর কারণ) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ তাকবীরও দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৫৭,  সুনান আবূ দাঊদ ৩১৯৭, সুনান আত্ তিরমিযী ১০২৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫০৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৪৪৮, আহমাদ ১৯৩২০, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৮৪, ইসলামীক সেন্টার ২০৮৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানাযার ছালাত আদায়ের নিয়ম

প্রথমে মনে মনে জানাযার নিয়ত করে সরবে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে। এ সময় ‘ছানা’ পড়বে না। (শারহুল মুনতাহা ৩/৬০; তালখীছ পৃঃ ১০১)।

নাভির নীচে হাত বাঁধার হাদীছ সর্বসম্মতভাবে ‘যঈফ’। (তালখীছ ৫৪ পৃঃ; ছিফাতু ছালা-তিন্নবী পৃঃ ৬৯ টীকা দ্রষ্টব্য)।

আনাস, ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ সকল তাকবীরেই হাত উঠাতেন। (নায়লুল আওত্বার ৫/৭০-৭১)।

অতঃপর আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে।

হাদিসঃ

ত্বলহাহ্ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সালাত আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৪,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৩৫,  সুনান আননাসায়ী ১৯৮৭, ইবনু হিব্বান ৩০৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তারপর ২য় তাকবীর দিবে ও দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করবে, যা আত্তাহিইয়াতু-র পরে পড়া হয়। তারপর ৩য় তাকবীর দিবে ও নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পড়বে। দো‘আ পাঠ শেষে ৪র্থ তাকবীর দিয়ে প্রথমে ডাইনে ও পরে বামে সালাম ফিরাবে। ডাইনে একবার মাত্র সালাম ফিরানোও জায়েয আছে।  (তালখীছ, ৪৪-৫৭ পৃঃ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ইরওয়া হা/৭৩৪, ৩/১৮১)।

জানাযার ছালাত সরবে ও নীরবে পড়া যায়।

হাদিসঃ

(ক) ত্বলহাহ্ ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাস-এর পেছনে এক জানাযার সালাত আদায় করেছি। তিনি এতে সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়েছেন এবং বলেছেন, আমি (স্বরবে) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ এজন্য পড়েছি, যেন তোমরা জানতে পারো সূরাহ্ আল্ ফা-তিহাহ্ পড়া সুন্নাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৪,  সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৩৫,  সুনান আননাসায়ী ১৯৮৭, ১৯৮৯, ১৯৯,  ইবনু হিব্বান ৩০৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৫৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম সরবে পড়লে মুক্তাদীগণ আ‘ঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ কেবল সূরায়ে ফাতিহা চুপে চুপে পড়বে এবং পরে দরূদ ও অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়বে। তবে ইমাম নীরবে পড়লে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা এবং অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়বে।

জানাযার পূর্বে করণীয়

মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে

মৃতের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তার সমস্ত মাল দিয়েও হয়। কিছু না থাকলে বা কেউ না থাকলে বা ঋণ মাফ না করলে সমাজ বা রাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ যাবত না তা পরিশোধ করা হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ ২৪১৩, সুনান আততিরমিযী ১০৭৮, ১০৭৯, আহমাদ ৯৩৮৭, ৯৮০০, ১০২২১, দারেমী ২৫৯১, বায়হাকী ফিস সুনান ৬/৭৬, ৯/২৫, বায়হাকী ফিশ শুআব ৫৫৪৪, আল হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ২/২৬, ৩৩, ইবনু হিব্বান ৩০৬১, মিশকাত ২৯১৫, আল-আহকাম ১৫, বুলুগুল মারাম ৫৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানাযা বিষয়ে সতর্কতা

মহাপাপী কোন মুসলিম যেমন কোন ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, চোর-দস্যু-সন্ত্রাসী, আত্মঘাতি, জারজ সন্তান, কবর ও মূর্তি পূজারী, মুশরিক ও বিদ‘আতী যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে কুফরী ঘোষণা করে, আমানতের খেয়ানতকারী প্রভৃতি লোকদের জানাযা কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও পরহেযগার আলেমগণ পড়বেন না। তবে সাধারণ লোকেরা পড়বেন।

ঋণগ্রস্ত, আত্মহত্যাকারী ও বায়তুল মাল বা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারীর জানাযা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে পড়েননি, বরং অন্যকে পড়তে বলেন।

হাদিসঃ

সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একটি জানাযা উপস্থিত করা হলো। লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানাযার সালাত আদায়ের অনুরোধ করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত লোকের ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তারা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জানাযার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর অপর একটি জানাযা আনা হলো। সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির ওপর কোনো ঋণ আছে কি? তখন বলা হলো, হ্যাঁ, আছে। জিজ্ঞেস করলেন, (ঋণ পরিশোধে) কোনো কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, হ্যাঁ, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা রেখে গেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ জানাযার সালাত আদায় করলেন।

অতঃপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হলে সেটির ব্যাপারেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তার ওপর কোনো ঋণ আছে কি? লোকেরা বলল, তিনটি স্বর্ণমুদ্রা তার ওপর ঋণ আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কিছু রেখে গেছে কি? লোকেরা বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযার সালাত আদায় করে নাও। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ লোকের জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিন, আমি তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব নিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করিয়ে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯০৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২২৮৯, আহমাদ ১৬৫১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

‘এটি ছিল তাঁর পক্ষ থেকে অন্যকে আদব শিখানোর জন্য’।

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী আহত হন। এর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি তার তীরের ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত পড়েননি। রাবী বলেন, তা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় (শাস্তিস্বরূপ)। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫২৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৮, সুনান আততিরমিযী ১০৬৮, সুনান আননাসায়ী ১৯৬৪, আহমাদ ২০২৯২, ২০৩৩৭, ২০৩৭০, ২০৩৯৮, ২০৪০৪, ২০৪৭০, ২০৫২৫ ইরওয়াহ ৩/১৮৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১৩১, ইসলামীক সেন্টার ২১৩৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অন্যান্য হাদিসসমূহঃ

 (১) সাহল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুশ্রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধ লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্রিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে, তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্র মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত ‘আমল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত ‘আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’ (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৮৯৮, ৪২০৩, ৪২০৭, ৬৪৯৩, ৬৬০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১২, আহমাদ ২২৮৯৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়াবান’। (সুরা নিসা ৪/২৯)।

(২) ইয়াযীদ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী খায়বারের যুদ্ধের দিন মৃত্যুবরণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের সহযোদ্ধার জানাযা আদায় করে নাও। এ নির্দেশ শুনে উপস্থিত লোকজনের মুখমণ্ডল বিবর্ণ আকার ধারণ করল। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথে (গনীমাতের মাল) খিয়ানাত করেছে। (বর্ণনাকারী বলেন) অতঃপর আমরা তার আসবাবপত্র তল্লাশি করলাম, তখন তাতে ইয়াহূদীদের একটি হার পেলাম, যার মূল্য দুই দিরহামের মূল্যমানও ছিল না।  (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০১১, সুনান আবূ দাঊদ ২৭১০, সুনান আননাসায়ী ১৯৫৯, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪৮, ইরওয়া ৭২৬, আহমাদ ১৭০৩১, মালিক ১০১০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

 (৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি (বানী দুবার গোত্রীয়) মিদ্’আম নামক একটি গোলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাদিয়া স্বরূপ দেন। এক যুদ্ধে সে সওয়ারীর উপর হতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাওদা বা গদি নামাচ্ছিল। অকস্মাৎ কোথা থেকে একটি অজ্ঞাত তীর এসে তার গায়ে বিধঁল এবং এটাই তাকে হত্যা করে ফেলল; তখন লোকেরা বলে উঠল, তার জন্য জান্নাত মুবারক হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কক্ষনো না। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ। খায়বার যুদ্ধে গনীমাতের মাল হতে বণ্টন ব্যতিরেকে যে চাদরটি সে আত্মসাৎ করেছে, তা তার উপর অগ্নিরূপে দগ্ধ করবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তির জুতার একটি কিংবা দু’টি ফিতা যা অন্যের অগোচরে লুকিয়ে রেখেছিল, তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এনে পেশ করল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই একটি ফিতা বা দু’টি ফিতার কারণেও জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুন হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৭০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২১০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৭১১, সুনান আননাসায়ী ৩৮২৭, সহীহ আল জামি‘ ৭০৬৫, (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১১, ইসলামিক সেন্টারঃ ২১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কারকারাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসবাবপত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে (যুদ্ধে) নিহত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী। এটা শুনে লোকেরা তার মাল-সামানের সন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পেল যে, সে গনীমাতের মাল হতে একটি জুববা (পোশাক) খিয়ানাত করেছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৯৯৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩০৭৪, সুনান ইবনু মাজাহ ২৮৪৯, আহমাদ ৬৪৯৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৫) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার(রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, খায়বার যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী এসে নিহত মুসলিমদের বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, অমুক অমুক শহীদ হয়েছে। পরিশেষে তারা আরো একজন সম্পর্কেও বললেন, অমুকও শহীদ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কক্ষনো না। গনীমাতের মাল হতে একটি কম্বল অথবা বলেছেন একটি জুববা খিয়ানাতের দায়ে আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হতে দেখছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ইবনুল খত্ত্বাব! যাও, লোকেদেরকে তিনবার ঘোষণা শুনিয়ে দাও, মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। ’উমার বলেনঃ আমিও এ ঘোষণা তিনবার প্রচার করলাম যে, মু’মিন ছাড়া কেউ জান্নাতের অধিকারী হবে না (জান্নাতে প্রবেশ করবে না)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪০৩৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ২০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪, আহমাদ ২০৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৩৪৬, দারিমী ২৫৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২১০, ইসলামিক সেন্টারঃ ২১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(৬) সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ জমিন জোরজবরদস্তি দখল করেছে, কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক হতে ঐ পরিমাণ জমিন বেড়িরূপে পরিয়ে দেয়া হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৩৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩১৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪০২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬১০,আহমাদ ১৬৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৯৮৭, ইসলামিক সেন্টার ৩৯৮৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

ইয়া’লা ইবনু মুররাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো কোনো জমিন নিয়ে নিয়েছে, তাকে তার মাটি হাশরের মাঠে নিতে বাধ্য করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৫৯, আহমাদ ১৭৫৫৮, সহীহাহ্ ২৪২, সহীহ আত্ তারগীব ১৮৬৮)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

উপরোক্ত ব্যক্তিগণ কবীরা গোনাহগার। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী ব্যক্তিকে হাদীছে ‘কাফির’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হাদিসঃ

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত পরিত্যাগ করা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৪৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, সুনান আননাসায়ী ৪৬৪, সুনান আততিরমিযী ২৬২০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১০৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৯, ইসলামিক সেন্টারঃ ১৫৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাহলে কিভাবে তার জানাযা পড়া যেতে পারে?

জানাযার দো‘আ

অনেকগুলি দো‘আর মধ্যে নিম্নের দো‘আটি সুপরিচিত।-

(১)  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাযার সালাত আদায় করতেন, তখন বলতেন,

“আল্ল-হুম্মাগ ফিরলি হাইয়্যিনা-, ওয়া মাইয়্যিতিনা-, ওয়া শা-হিদিনা-, ওয়া গ-য়িবিনা-, ওয়া সগীরিনা-, ওয়া কাবীরিনা-, ওয়া যাকারিনা-, ওয়া উনসা-না-, আল্ল-হুম্মা মান আহ্ ইয়াইতাহু মিন্না- ফা আহয়িহী ’আলাল ইসলা-ম, ওয়ামান তাওয়াফ্ ফায়তাহূ মিন্না- ফাতা ওয়াফফাহূ ’আলাল ঈ-মান, আল্ল-হুম্মা লা- তাহরিমনা- আজরাহূ, ওয়ালা- তাফতিন্না বা’দাহ্’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত-অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নর-নারীগণকে ক্ষমা করো। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাদেরকে তুমি জীবিত রাখবে তাদেরকে তুমি ইসলাম ধর্মের উপর জীবিত রাখ। আর যাদের মৃত্যুদান করবে তাদের ঈমানের উপর মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির সাওয়াব হতে বঞ্চিত করো না এবং এরপর আমাদেরকে বিপদাপন্ন করো না।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৭৫, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০১, সুনান আত্ তিরমিযী ১০২৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৮, ইবনু হিব্বান ৩০৭০, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩২৬, আহমাদ ২২০৪৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)। (২) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দো‘আ যা প্রথমটির সাথে যোগ করে পড়া যায় বিশেষভাবে মাইয়েতের উদ্দেশ্যে। যেমন-

আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক জানাযার সালাত  আদায় করলেন। জানাযায় যেসব দু’আ তিনি পড়েছেন তা আমি মুখস্থ করে রেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন,

“আল্ল-হুম্মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু ওয়া ’আ-ফিহী ওয়া’ফু ’আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহূ ওয়া ওয়াসসি’ মুদখলাহূ ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াসসালজি ওয়াল বারাদি ওয়ানাক্কিহী মিনাল খত্বা-ইয়া- কামা- নাক্কায়সাস্ সাওবাল আব্ইয়াযা মিনাদ্ দানাসি ওয়া আবদিলহু দা-রান খয়রাম্ মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খয়রাম্ মিন আহলিহী ওয়া যাওজান খয়রাম্ মিন যাওজিহী ওয়া আদখিলহুল ওয়াআ ’ইযহু মিন ’আযা-বিল কবরি ওয়ামিন ’আযা-বান্ না-র’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহম করো, তাকে নিরাপদে রাখো। তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করো, তাকে উত্তম মেহমানদারী করো (জান্নাতে), তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তাকে পানি, বরফ ও ঠান্ডা (পানি) দিয়ে গোসল করাও। গুনাহখাতা হতে তাকে পবিত্র করো, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করো। তাকে (দুনিয়ার) তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর (জান্নাতে) দান করো, তার পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবারও দান করো। (দুনিয়ার) স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী (আখিরাতে) তাকে দিও। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, তাকে কবরের ’আযাব এবং জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো।’’)।

অপর এক বর্ণনার ভাষায়- “ওয়াক্বিহী ফিতনাতাল কবরি ওয়া ’আযা-বান্ না-র’’ (অর্থাৎ কবরের ফিতনাহ্ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে বাঁচাও)। এ দু’আ শুনার পর আমার বাসনা জাগলো, এ মৃত ব্যক্তি যদি আমি হতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১২১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১০০, ইসলামীক সেন্টার ২১০৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে একজন মুসলিম ব্যক্তির জানাযাহ্ সালাতে ইমামাত করলেন। আমরা তাঁকে (এ সালাতে) পড়তে শুনেছি,

“আল্ল-হুম্মা ইন্না ফুলা-ন ইবনু ফুলা-ন ফী যিম্‌মাতিকা, ওয়া হাবলি জাওয়া-রিকা ফাক্বিহী মিন ফিতনাতিল কবরি ওয়া ’আযা-বিন্না-র, ওয়া আনতা আহলুল ওফা-য়ি ওয়াল হাক্কি, আল্ল-হুম্মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! অমুকের ছেলে অমুককে তোমার যিম্মায় ও তোমার প্রতিবেশীসুলভ নিরাপত্তায় সোপর্দ করলাম। অতএব তুমি তাকে কবরের ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও জাহান্নামের ’আযাব থেকে রক্ষা করো। তুমি ওয়া’দা রক্ষাকারী ও সত্যের অধিকারী। হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাফ করে দাও, তার উপর রহমত বর্ষণ করো, তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াময়।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০২, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৯, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৬৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sah।

 (৪) উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ‘আব্দুকা ওয়া ইবনু আমাতিকা, ইহতা-জা ইলা রহমাতিকা ওয়া আনতা গানিইয়ুন ‘আন ‘আযা-বিহী। ইন কা-না মুহসিনান ফাযিদ ফী হাসানা-তিহী; ওয়া ইন কা-না মুসীআন, ফাতাজা-ওয়ায ‘আনহু”।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! মাইয়েত আপনার বান্দা এবং সে আপনার এক বান্দীর সন্তান। সে আপনার রহমতের ভিখারী। আপনি তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য নন। অতএব যদি সে সৎকর্মশীল হয়, তাহ’লে তার নেকী বাড়িয়ে দিন। আর যদি অন্যায়কারী হয়, তাহ’লে তাকে আপনি ক্ষমা করে দিন’। (হাকেম ১/৩৫৯, সনদ ছহীহ; তালখীছ ৫৬)।

(৫) মাইয়েত শিশু হলে সূরা ফাতিহা, দরূদ ও জানাযার ১ম দো‘আটি পাঠের পর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে-

 ইমাম বুখারী (রহঃ) তা’লীক্ব পদ্ধতিতে (অর্থাৎ সহীহুল বুখারীর তরজমাতুল বাবে সানাদ ছাড়া, এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন), হাসান (রহঃ) বাচ্চার জানাযার সালাতে (প্রথম তাকবীরের পর) সূরাহ্ আল ফা-তিহাহ্ পড়তেন। (আর তৃতীয় তাকবীরে) এ দু’আ পড়তেন,

“আল্ল-হুম্মাজ্ ’আলহু লানা- সালাফান ওয়া ফারাত্বান ওয়া যুখরান ওয়া আজরান’’

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ ছেলেটিকে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক, রক্ষিত ভান্ডার ও সাওয়াবের কারণ বানাও)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জানাযার দো‘আর আদব

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা জানাযার ছালাত আদায় করবে, তখন মাইয়তের জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করবে’।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জানাযার সালাত  আদায়ের সময় মৃত ব্যক্তির জন্য খালেস অন্তরে দু’আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৭৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩১৯৯, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৯৭, ইবনু হিব্বান ৩০৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৬৪, ইরওয়া ৩য় খন্ড, হাঃ ৭৩২, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬৬৯)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর পেছনে এমন একটি বালকের জানাযার সালাত আদায় করলাম, যে কক্ষনো কোন গুনাহের কাজ করেনি। আমি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে তার জন্য দু’আ করতে শুনলাম, ‘আল্ল-হুম্মা আ’ইযহু মিন ’আযা-বিল কবরি’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি এ ছেলেটিকে কবর ’আযাব থেকে রক্ষা করো)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৮৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ৭৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অতএব মাইয়েত ভাল-মন্দ যাই-ই হৌক না কেন, তার জন্য খোলা মনে দো‘আ করতে হবে। কবুল করা বা না করার মালিক আল্লাহ। ছাহেবে ‘আওন বলেন, অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মৃতের জন্য নির্দিষ্ট কোন দো‘আ নেই। বরং যেকোন প্রার্থনা করা যেতে পারে। শাওকানীও সেকথা বলেন। তবে তিনি বলেন যে, হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহ পাঠ করাই উত্তম। এই সময় সর্বনাম সমূহ পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। কেননা ‘মাইয়েত’ এখানে উদ্দেশ্য। ‘মাইয়েত’ আরবী শব্দ, যা স্ত্রী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গে ব্যবহৃত হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ হা/৩১৮৪-এর ভাষ্য ৮/৪৯৬; নায়ল ৫/৭২, ৭৪)।

গায়েবানা জানাযা

গায়েবানা জানাযা জায়েয আছে।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাবশার বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর মৃত্যুর দিনই মানুষদেরকে জানিয়েছেন (অথচ তিনি মারা গিয়েছিলেন সুদূর হাবশায়)। তিনি সাহাবা (সাহাবা) কিরামকে নিয়ে ঈদগায় গেলেন। সেখানে সকলকে জানাযার সালাতের জন্য কাতারবদ্ধ করলেন এবং চার তাকবীর বললেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৩৩, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৪, মুয়াত্ত্বা মালিক ২৫৭, ইবনু হিব্বান ৩০৬৮, ইরওয়া ৭২৯, মুসলিম ৯৫১, সুনান আননাসায়ী ১৯৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৯৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তবে সকলের জন্য ঢালাওভাবে এটা জায়েয নয় বলে ইমাম খাত্ত্বাবী, ইবনু আব্দিল বার্র, হাফেয যায়লাঈ, ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, শায়খ আলবানী প্রমুখ বিদ্বানগণ মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য সমূহ সংক্ষেপে নিম্নরূপ :

গায়েবানা জানাযার জন্য হাবশার (আবিসিনিয়া) বাদশাহ আছহামা নাজ্জাশীর গায়েবানা জানাযা আদায়ের ঘটনাই হ’ল একমাত্র বিশুদ্ধ দলীল, যিনি ৯ম হিজরী সনে মারা যান। নাজ্জাশী খৃষ্টানদের বাদশাহ ছিলেন। কিন্তু নিজে মুসলমান ছিলেন। সেকারণ তার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবীদের নিয়ে জামা‘আত সহকারে গায়েবানা জানাযা আদায় করেন এবং বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জানাযা পড়। যিনি তোমাদের দেশ ব্যতীত অন্য দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন’।

হাদিসঃ

হুযাইফাহ ইবনু উসাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সাথে নিয়ে বের হয়ে বলেনঃ অন্য দেশে মৃত্যুবরণকারী তোমাদের এক ভাইয়ের জানাযার সালাত পড়ো। তারা বলেনঃ তিনি কে? তিনি বলেনঃ নাজাশী। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫৩৭, আহমাদ ১৫৭১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ইমাম আবুদাঊদ নাজ্জাশী বিষয়ক হাদীছের বর্ণনায় অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এভাবে, ‘মুশরিক দেশে মৃত্যুবরণকারী মুসলিমের জানাযা’ অনুচ্ছেদ। এতে বুঝা যায় যে, মুশরিক বা অমুসলিম দেশে মুত্যু হওয়ার কারণে যদি কোন মুসলমানের জানাযা হয়নি বলে নিশ্চিত ধারণা হয়, তাহ’লে সেক্ষেত্রে ঐ মুসলমান ভাই বা বোনের জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে।

এ সম্পর্কে দ্বিতীয় দলীল হিসাবে মু‘আবিয়া বিন মু‘আবিয়া লায়ছী আল-মুযানী (রাঃ)-এর গায়েবানা জানাযা পড়ার কথা বলা হয়। মদ্বীনায় তাঁর মৃত্যু হ’লে তাবূকের যুদ্ধে অবস্থানকালে জিব্রীল মারফত এই সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর গায়েবানা জানাযা পড়েন। (বায়হাক্বী ৪/৫০)।

ইবনু আব্দিল বার্র ও ইবনু হাজার প্রমুখ বলেন যে, হাদীছটি ‘ছহীহ’ নয়। দ্বিতীয়ত : এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, জিব্রীল (আঃ) স্বীয় পাখার ঝাপটায় সব পর্দা উঠিয়ে দেন ও জানাযা উঁচু করে ধরেন। তাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জানাযা দেখতে পান ও ছালাত আদায় করেন। ফলে সেটা আর গায়েবানা থাকে না। সেকারণ ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন যে, এই হাদীছ দ্বারা গায়েবানা জানাযার দলীল গ্রহণ বাতিল যোগ্য’।

ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, যদি গায়েবানা জানাযা জায়েয হ’ত, তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিশ্চয়ই নিজের ছাহাবীদের গায়েবানা জানাযা আদায় করতেন (যাদের জানাযায় তিনি শরীক হ’তে পারেননি)। অনুরূপ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মুসলমানেরা তাদের প্রিয় চার খলীফার গায়েবানা জানাযা পড়ত। কিন্তু এরূপ কথা কারু থেকে কখনো বর্ণিত হয়নি’। (আল-জাওহারুন নাক্বী শরহ সুনানুল বায়হাক্বী ৪/৫১)।

পরিশেষে বলা যায় যে, গায়েবানা জানাযা নিঃসন্দেহে জায়েয ঐসব ক্ষেত্রে, যাদের জানাযা হয়নি বলে জানা যায়। কিন্তু যাদের জানাযা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা না পড়ায় কোন দোষ নেই। বিশেষ করে আজকাল যেখানে গায়েবানা জানাযা নোংরা রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরও বেশী হুঁশিয়ার হওয়া কর্তব্য।

দ্বিতীয়বার জানাজা করা জায়েজ

(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক কবরের কাছ দিয়ে গেলেন, যাতে রাতের বেলা কাউকে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বললেন, একে কখন দাফন করা হয়েছে? সাহাবীগণ জবাব দিলেন গত রাতে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে খবর দাওনি কেন? সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাকে অন্ধকার রাতে দাফন করেছি, তাই আপনাকে ঘুম থেকে জাগানো ভাল মনে করিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জানাযার সালাত  আদায় করলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩২১, সহিহ মুসলিম ৯৫৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

(খ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন কালো মহিলা অথবা একটি যুবক (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মসজিদে নাবাবী ঝাড়ু দিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। তিনি সে মহিলা অথবা যুবকটির খোঁজ নিলেন। লোকেরা বলল, সে ইন্তিকাল করেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানালে না কেন? (তাহলে আমিও জানাযায় শরীক থাকতাম।) বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা এ মহিলা বা যুবকের বিষয়টিকে ছোট বা তুচ্ছ ভেবেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে আমাকে দেখাও। তারা তাঁকে তার কবর দেখিয়ে দিল। তখন তিনি তার (কাছে গেলেন ও) কবরে জানাযার সালাত  আদায় করালেন, তারপর বললেন, এ কবরগুলো এর অধিবাসীদের জন্য ঘন অন্ধকারে ভরা ছিল। আর আমার সালাত  আদায়ের ফলে আল্লাহ তা’আলা এগুলোকে আলোকিত করে দিয়েছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৫৬, ইরওয়া ৩য় খন্ড হাঃ ২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০৮৩, ইসলামীক সেন্টার ২০৮৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

কবর যিয়ারত

 কবর যিয়ারত করার হুকুমঃ

বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (কিন্তু এখন) তোমাদেরকে কবর যিয়ারতের অনুমতি দিচ্ছি। (ঠিক) এভাবে আমি তোমাদেরকে কুরবানীর মাংস তিন দিনের বেশী জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যতদিন খুশী তা রাখতে পারো। আর আমি তোমাদেরকে ’নবীয (নামক শরাব) মশক ছাড়া অন্য কোন পাত্রে রেখে পান করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা তা যে কোন পাত্রে রেখে পান করতে পার। তবে সাবধান! নেশা এনে দেয় এমন কোন দ্রব্য কখনো পান করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৫০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ৩৬৯৮, সুনান আননাসায়ী ২০৩২, আহমাদ ২২৯৫৮, ইবনু হিব্বান ৫৪০০, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৪৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২৯, ইসলামীক সেন্টার ২১৩২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। কবর আযাবের ভীতি সঞ্চারিত হয়। হৃদয় বিগলিত হয়। চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়। অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরকালীন মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত উদ্দেশ্যেই কেবল কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নইলে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। নারী-পুরুষ সবার জন্য এই অনুমতি রয়েছে। তবে ঐসব নারীদের জন্য লা‘নত করা হয়েছে, যারা কবর যিয়ারতের সময় সরবে কান্নাকাটি ও বিলাপ ধ্বনি করে।

যিয়ারতের সময় এমন কাজ করা যাবে না, যা করলে আল্লাহ নাখোশ হন। যেমন : লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা দুনিয়াবী স্বার্থে যিয়ারত করা, সেখানে ফুল দেওয়া, কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা, সেখানে বসা, ছালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-ছাদাক্বা ও মানত করা, গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি ‘হাজত’ দেওয়া বা কুরবানী করা প্রভৃতি।

সকল প্রকারের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আমল থেকে মুক্ত মন নিয়ে কেবল মৃতের জন্য দো‘আ এবং আখেরাতকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করতে হবে। নইলে ঐ যিয়ারত গোনাহের কারণ হবে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ও নেকী হাছিলের জন্য কা‘বা গৃহ, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে নববী ব্যতীত অন্যত্র সফর করতে নিষেধ করেছেন।

হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যায় নাঃ (১) মসজিদে হারাম, (২) মসজিদে আক্বসা (আকসা) ও (৩) আমার এই মাসজিদ (মসজিদে নাবাবী)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৭, সুনান আততিরমিযী ৩২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬১৭, ইরওয়া ৭৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৩৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭, ইসলামীক সেন্টার ৩১২৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

তাই শুধুমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদ্বীনায় যাওয়া নাজায়েয। তবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে কেউ মদ্বীনায় গেলে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারত করতে পারেন। অতএব হজ্জের সময় যারা মদ্বীনা হয়ে মক্কায় যান, তাদের নিয়ত হ’তে হবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের অশেষ নেকী হাছিল করা।

বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ও পীরদের কবর যেয়ারত করা হচ্ছে এবং মৃত পীরের অসীলায় ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির আশায় মানুষ যেভাবে বার্ষিক ওরস ও অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন মাযারে ছুটছে, তাদের সাবধান হওয়া উচিৎ যে, এর মাধ্যমে তারা দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই হারাচ্ছেন। কেননা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশের বিরোধিতা করলে কেবল আল্লাহর ক্রোধ লাভ হয় ও তাঁর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়।

যিয়ারতের আদব: এই সময় নিজের মৃত্যু ও আখেরাতকে স্মরণ করবে এবং কবরবাসীদের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে খালেছ মনে নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। দো‘আর সময় একাকী দু’হাত উঠানো যাবে। বাক্বী‘ গারক্বাদ গোরস্থানে দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী তিন বার হাত উঠিয়েছিলেন।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে দিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসতেন, সেদিন শেষ রাতে উঠে তিনি বাক্বী’তে (মদীনার কবরস্থান) চলে যেতেন। (ও স্থানে) তিনি বলতেন,

“আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম দা-রা ক্বওমিন মু’মিনীন, ওয়া আতা-কুম মা- তূ’ইদূনা গাদান মুআজ্জালূনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগফির লিআহলি বাক্বী’ইল গারক্বদ’’

(অর্থাৎ হে মু’মিনের দল! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদেরকে আগামীকালের (কিয়ামতের (কিয়ামতের)) যে প্রতিশ্রুতি (সাওয়াব অথবা শাস্তি) দেয়া হয়েছিল তা তোমরা কি পেয়ে গেছ? যে ব্যাপারে তোমাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল (ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত)। আর নিশ্চয়ই আমরাও আল্লাহ চাইলে তোমাদের সাথে মিলিত হবই। হে আল্লাহ! বাক্বী’ গারক্বদ্বাসীদেরকে মাফ করে দিন!)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৬,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৪, সুনান আননাসায়ী ২০৩৯, ইবনু হিব্বান ৩১৭২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২৪, ইসলামীক সেন্টার ২১২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

এই সময় স্রেফ দো‘আ ব্যতীত ছালাত, তেলাওয়াত, যিকর-আযকার, দান-ছাদাক্বা কিছুই করা জায়েয নয়।

১ম দো‘আ :

এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন।

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কবর যিয়ারতে আমি কি বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে,

“আস্‌সালা-মু ’আলা- আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ারহামুল্ল-হুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না- ওয়াল মুস্‌তা’খিরীনা, ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূন’’

(অর্থাৎ সালাম বর্ষিত হোক মু’মিন মুসলিমের বাসস্থানের অধিবাসীদের প্রতি! আর আল্লাহ আমাদের রহম করুন যারা প্রথমে চলে গেছে আর যারা পরে আসবে তাদের উপর, ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৪, ৯৭৪, সুনান আননাসায়ী ২০৩৭, ইবনু হিব্বান ৭১১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১১, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪২১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

২য় দো‘আ :

 এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।–

বুরায়দাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলে এ দু’আ পড়তে শিখিয়েছেনঃ

“আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইনশা-আল্ল-হু বিকুম লালা-হিকূনা নাসআলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল ’আ-ফিয়াহ্’’

(অর্থাৎ হে কবরবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৫, সুনান আননাসায়ী ২০৪০, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৪৭, আহমাদ ২২৯৮৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১২, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৫১, ইরওয়া ৭৭৬, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২৬, ইসলামীক সেন্টার ২১২৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

৩য় দো‘আ :

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে (অর্থাৎ- মদীনার বাকী’তে) উপস্থিত হলেন এবং সেখানে (মৃতদের উদ্দেশে) বললেনঃ

“আসসালামু ‘আলায়কুম দা-রা ক্বাওমিন মু’মিনীনা, ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হেকূনা; আল্লা-হুম্মাগফিরলাহুম”

অর্থঃ মুমিন  কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি। হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও”।

সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি (পরে আসবে)। সাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখনো আসেনি, তাদের আপনি কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকবো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৪৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

তিরমিযীতে বর্ণিত ‘আসসালামু ‘আলায়কুম ইয়া আহলাল কুবূরে! ইয়াগফিরুল্লা-হু লানা ওয়া লাকুম’ বলে প্রসিদ্ধ হাদীছটি ‘যঈফ’।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) মদীনার কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি কবরস্থানের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, “আস্‌সালা-মু ’আলায়কুম ইয়া- আহলাল কুবূরি, ইয়াগফিরুল্ল-হু লানা- ওয়ালাকুম, আন্‌তুম সালাফুনা- ওয়ানাহনু বিল আসার’’ (অর্থাৎ হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর সালাম পেশ করছি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্ববর্তী আর আমরা তোমাদের পশ্চাৎগামী)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৫, আত্ তিরমিযী ১০৫৩, রিয়াযুস সলিহীন ৫৮৯, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৩৭২)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f।

প্রত্যেক জুমায় নিজ পিতা মাতার জন্য কবর যিয়ারত করার হাদিসটি জাল,

মুহাম্মাদ ইবনু নু’মান (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ হাদীসের সানাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমু’আতে নিজ মাতা-পিতা অথবা তাদের দু’জনের বা একজনের কবর যিয়ারত করবে (সেখানে দু’আয়ে মাগফিরাত করবে) তাদের মাফ করে দেয়া হবে। (যিয়ারতকারী মাতা-পিতার সাথে) সদাচরণকারী হিসেবে গণ্য করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৮, শু‘আবুল ঈমান ৭৫২২, সিলসিলাহ্ আয্ য‘ঈফাহ্ ৪৯, ত্ববারানী ফিল আওসাত্ব ১৯৯ পৃঃ)। হাদিসের মানঃ জাল (Fake)।

মহিলাদের কবর যিয়ারত করা নিষেধ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিনি আরো বলেছেন, কোন কোন ’আলিমের ধারণা এ হাদীসটি কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ সময়ের। কিন্তু কবর যিয়ারতের অনুমতি দেবার পর পুরুষ মহিলা সকলেই এর মধ্যে গণ্য হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে কোন কোন ’আলিমের মতে, মহিলারা অপেক্ষাকৃত অধৈর্য, অসহিষ্ণু ও কোমলমতি বলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সেখানে যাওয়া অপছন্দ করেছেন। তাই কবর যিয়ারতে যাওয়া মহিলাদের জন্য এখনো নিষিদ্ধ। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৭০, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৫৬, আহমাদ ৮৪৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৪৫, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৭৬, ইবনু হিব্বান ৩১৭৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

জ্ঞাতব্যঃ

কাফির-মুশরিক বাপ-মায়ের কবর যিয়ারত করা যাবে। ক্রন্দন করা যাবে। কেননা এর মাধ্যমে মৃত্যুকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সালাম করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য অতটুকুই মাত্র অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশেপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তারপর বললেন, আমি আমার মায়ের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবরের কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তাই তোমরা কবরের কাছে যাবে। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭৬৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭৬, সুনান আবূ দাঊদ ৩২৩৪, সুনান আননাসায়ী ২০৩৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৭২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১২৮, ইসলামীক সেন্টার ২১৩১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরে নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ

 (১) কবর এক বিঘতের বেশী উঁচু করা, পাকা ও চুনকাম করা, সমাধি সৌধ নির্মাণ করা, গায়ে নাম লেখা, কবরের উপরে বসা, কবরের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করা।

হাদিসঃ

(ক) আমর ইবনু হাযম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বললেন, তুমি এ কবরবাসীকে কষ্ট দিও না। অথবা বললেন, তুমি একে কষ্ট দিও না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২১, আহমাদ ২৪০০৯/৩৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৬৬)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(খ) জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে সিমেন্ট চুন দিয়ে কোন কাজ করতে, তার উপর কিছু লিখতে অথবা খোদাই করে কিছু করতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭০৯, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৫২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো অঙ্গারের উপর বসা, আর এ অঙ্গারে (পরনের) কাপড়-চোপড় পুড়ে শরীরে পৌঁছে যাওয়া তার জন্য উত্তম হবে কবরের উর বসা হতে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭১, সুনান আবূ দাঊদ ৩২২৮, সুনান আননাসায়ী ২০৪৪, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৫৬৬, আহমাদ ৮১০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭২১৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫১৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৬৩, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৫০৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৭, ইসলামীক সেন্টার ২১২০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) আবূ মারসাদ আল গানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৭২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৯. ইসলামীক সেন্টার ২১২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 (ঙ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে চুনকাম করতে, এর উপর ঘর বানাতে এবং বসতে নিষেধ করেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৭, মুসলিম ৯৭০, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১৭৬৪, ইরওয়া ৭৫৭, মুসান্নাফ ইবনু ‘আবদুর রাযযাক্ব ৬৪৮৮)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(চ) আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ’’আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাব না, যে কাজের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো যখন তোমার চোখে কোন মূর্তি পড়বে তা একেবারে নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না। আর উঁচু কোন কবর দেখলে তা সমতল না করে রাখবে না।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬৯, আহমাদ ৭৪১, ইরওয়া ৭৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৫৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭২৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১২, ইসলামীক সেন্টার ২১১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(২) ধুয়ে-মুছে সুন্দর করা, কবরে মসজিদ নির্মাণ করা, সেখানে মেলা বসানো, ওরস করা ও কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করা।

হাদিসঃ

জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি‘ ২৪৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৩) কবরের নিকটে গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি যবেহ করা। জাহেলী যুগে দানশীল ও নেককার ব্যক্তিদের কবরের পাশে এগুলি করা হ’ত।

হাদিসঃ

আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে কোনো বলিদান নেই। ’আব্দুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, জাহিলী যুগে লোকেরা কবরের কাছে গরু ছাগল বলি দিতো। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৩২২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(৪) কবরে ফুল দেওয়া, গেলাফ চড়ানো, শামিয়ানা টাঙ্গানো ইত্যাদি। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯৫)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে ইট, পাথর ও মাটি ইত্যাদিকে কাপড় পরিধান করাতে নির্দেশ দেননি’।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে রওয়ানা হয়ে গিয়েছেন। আর আমি (তাঁর অবর্তমানে) একখানা কাপড় নিয়ে পর্দাস্বরূপ ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। যখন তিনি সফর শেষে ফিরে এলেন এবং পর্দাটি দেখলেন, তখন এটা নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এ আদেশ করেননি যে, আমরা ইট ও পাথরকেও যেন কাপড়-চোপড় পরিধান করাই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৪১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১০৭, আস্ সুনানুস্ সুগরা ২৭১৪, শু‘আবুল ঈমান ৬৫৭৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৪৯৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৪১, ইসলামিক সেন্টার ৫৩৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

এগুলি স্পষ্টভাবে কবরপূজার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,

‘তুমি কোন মূর্তিকে ছেড় না নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত এবং কোন উঁচু কবরকে ছেড় না মাটি সমান না করা পর্যন্ত’।

হাদিসঃ

আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ’’আমি কি তোমাকে এমন একটি কাজের জন্য পাঠাব না, যে কাজের জন্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো যখন তোমার চোখে কোন মূর্তি পড়বে তা একেবারে নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না। আর উঁচু কোন কবর দেখলে তা সমতল না করে রাখবে না।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৩৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৬৯, আহমাদ ৭৪১, ইরওয়া ৭৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৫৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭২৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১২, ইসলামীক সেন্টার ২১১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রার্থনা করেছেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ইবাদতের স্থানে পরিণত করো না। আল্লাহর গযব কঠোরতর হয় ঐ জাতির উপরে, যারা তাদের নবীর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করে।

হাদিসঃ

আত্বা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ করলেনঃ ’’হে আল্লাহ! তুমি আমার কবরকে ভূত বানিও না যা লোকেরা পূজা করবে। আল্লাহর কঠিন রোষাণলে পতিত হবে সেই জাতি যারা তাদের নবীর কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৫০, মালিক ৪১৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(খ) আজকাল কবরকে ‘মাযার’ বলা হচ্ছে। যার অর্থ: পবিত্র সফরের স্থান। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে গেছেন, ‘(নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে) তিনটি স্থান ব্যতীত সফর করা যাবে না, মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ’।

হাদিসঃ

আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে সফর করা যায় নাঃ (১) মসজিদে হারাম, (২) মসজিদে আক্বসা (আকসা) ও (৩) আমার এই মাসজিদ (মসজিদে নাবাবী)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৯৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৩১৫২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৭, সুনান আততিরমিযী ৩২৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬১৭, ইরওয়া ৭৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৩৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩১২৭, ইসলামীক সেন্টার ৩১২৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা আমার কবরকে তীর্থস্থানে পরিণত করো না’।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তোমাদের ঘরকে কবরস্থান বানিও না, আর আমার কবরকেও উৎসবস্থলে পরিণত করো না। আমার প্রতি তোমরা দরূদ পাঠ করবে। তোমাদের দরূদ নিশ্চয়ই আমার কাছে পৌঁছে, তোমরা যেখানেই থাক না কেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৯২৬, সুনান আবূ দাঊদ ২০৪২, সহীহ আল জামি‘ ৭২২৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(গ) মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তিনি উম্মতকে সাবধান করে বলেন, ‘সাবধান! তোমরা কবর সমূহকে সিজদার স্থানে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করে যাচ্ছি’।

হাদিসঃ

জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সাবধান! তোমাদের আগে যারা ছিল তারা তাদের নবী ও বুজুর্গ লোকেদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করো না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ হতে নিশ্চিতভাবে নিষেধ করছি। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭১৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১০৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩২, ইরওয়া ২৮৬, সহীহ আল জামি‘ ২৪৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১০৬৯, ইসলামীক সেন্টার ১০৭৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঘ) কবরে মসজিদ নির্মাণকারী ও সেখানে মৃতব্যক্তির ছবি, মূর্তি ও প্রতিকৃতি স্থাপনকারীদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকটে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসাবে গণ্য হবে’।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অসুস্থতার সময় তাঁর এক সহধর্মিণী হাবাশা দেশে তাঁর দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটি গীর্জার কথা বললেন। উম্মু সালামাহ এবং উম্মু হাবীবাহ (রাযি.) হাবাশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা দু’জন ঐ গীর্জাটির সৌন্দর্য এবং তার ভিতরের চিত্রকর্মের বিবরণ দিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথা তুলে বললেনঃ সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন নেক্কার ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর কবরে মাসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে ঐ সব চিত্রকর্ম অংকণ করত। তারা হলো, আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্ট সৃষ্টি। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৪১, ৪২৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৬০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

(ঙ) কবরের বদলে কোন গৃহে বা রাস্তার ধারে বা কোন বিশেষ স্থানে মৃতের পূর্ণদেহী বা আবক্ষ প্রতিকৃতি নির্মাণ করে বা স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা ও নীরবে দাঁড়িয়ে থাকা পরিষ্কারভাবে মূর্তিপূজার শামিল। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

উল্লেখ্য যে, মাথাসহ আবক্ষ ছবি ও মূর্তি পুরা মূর্তির শামিল, যা সর্বদা নিষিদ্ধ।

হাদিসঃ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমার নিকট এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিলো। ঘরের মধ্যে ছিলো ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরের ভিতরে ছিলো কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে।

আর পর্দাটি কেটে দু’টি বালিশের ভিতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেয়ার হুকুম দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ মতো কাজ করলেন। কুকুরটি ছিলো হাসান বা হুসাইনের এবং তা তাদের খাটের নীচে শুয়ে ছিলো। তিনি সেটাকেও বের করে দেয়ার আদেশ দেন এবং তা বের করে দেয়া হলো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আন-নাযাদ হচ্ছে কাপড় রাখার বস্তু, গদি সদৃশ। (সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪১২৫৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

কবরে প্রচলিত শিরক সমূহঃ

(১) কবরে সিজদা করা

(২) সেদিকে ফিরে ছালাত আদায় করা

(৩) সেখানে বসা ও আল্লাহর কাছে সুফারিশের জন্য তার নিকট প্রার্থনা করা

(৪) সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা

(৫) কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা

(৬) তার অসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা

(৭) তাকে খুশী করার জন্য কবরে নযর-নেয়ায ও টাকা-পয়সা দেওয়া

(৮) সেখানে মানত করা

(৯) ছাগল-মোরগ ইত্যাদি হাজত দেওয়া

(১০) সেখানে বার্ষিক ওরস ইত্যাদি করা

(১১) মাযারে নযর-নেয়ায না দিলে মৃত পীরের বদ দো‘আয় ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ধারণা পোষণ করা

(১২) সেখানে নযর-মানত করলে পরীক্ষায় বা মামলায় বা কোন বিপদে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করা

(১৩) খুশীর কোন কাজে মৃত পীরের মাযারে শুকরিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা না দিলে পীরের বদ দো‘আ লাগবে, এমন ধারণা করা

(১৪) নদী ও সাগরের মালিকানা খিযির (আঃ)-এর মনে করে তাকে খুশী করার জন্য সাগরে বা নদীতে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা নিক্ষেপ করা

(১৫) মৃত পীরের পোষা কুমীর, কচ্ছপ, গজাল মাছ, কবুতর ইত্যাদিকে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও ক্ষমতাশালী মনে করা

(১৬) এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত পীর কবরে জীবিত আছেন ও ভক্তদের ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন

(১৭) তিনি ভক্তের ডাক শোনেন এবং তার জন্য আল্লাহর নিকট সুফারিশ করেন

(১৮) বিপদে কবরস্থ পীরকে ডাকা ও তার কবরে গিয়ে কান্নাকাটি করা

(১৯) খুশীতে ও নাখুশীতে পীরের কবরে পয়সা দেওয়া

(২০) কবরস্থ ব্যক্তি খুশী হবেন ভেবে তার কবরে সৌধ নির্মাণ করা, তার সৌন্দর্য বর্ধন করা ও সেখানে সর্বদা আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করা

(২১) কবর আযাব মাফ হবে মনে করে পীরের কবরের কাছাকাছি কবরস্থ হওয়া

(২২) কবরস্থানের পাশ দিয়ে কোন মুত্তাক্বী আলেম হেঁটে গেলে ঐ কবরবাসীদের চল্লিশ দিনের গোর আযাব মাফ হয় বলে বিশ্বাস রাখা

(২৩) কবরে বা ছবি ও প্রতিকৃতিতে বা স্মৃতিসৌধে বা বিশেষ কোন স্থানে ফুলের মালা দিয়ে বা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে বা স্যালুট জানিয়ে মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা অথবা একই উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে মীলাদ ও কুরআনখানী করা ইত্যাদি।

জানা আবশ্যক যে, মানুষকে জাহান্নামে নেওয়ার জন্য শয়তান সর্বদা পিছনে লেগে থাকে। এজন্য সে অনেক সময় নিজেই মানুষের রূপ ধারণ করে অথবা অন্য মানুষের মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য হাছিল করে। যেমন হঠাৎ করে শুনা যায় অমুক স্থানে স্বপ্নে পাওয়া শিকড়ে বা তাবীযে মানুষের সব রোগ ভাল হয়ে যাচ্ছে। অমুক দুধের বাচ্চা কিংবা পুরুষ বা মহিলার ফুঁক দানের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধি ভাল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে চোখের সামনে চিকিৎসা শেষে তখনই সুস্থ হয়ে রোগী বাড়ী ফিরছে। অতঃপর দু’পাঁচ মাস দৈনিক লাখো মানুষের ভিড় জমিয়ে মানুষের ঈমান হরণ করে কথিত ঐ অলৌকিক চিকিৎসক হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এগুলি সবই শয়তানী কারসাজি। সাময়িকভাবে এরূপ করার ক্ষমতা আল্লাহ ইবলীসকে দিয়েছেন।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ)....আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীগণের কোন একজনের সাথে ছিলেন, সে সময় তার নিকট দিয়ে এক লোক যাচ্ছিল। তিনি তাকে ডাকলেন। সে (কাছে) আসলে তিনি বললেন, ওহে! এটা আমার অমুক স্ত্রী। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! অপর কারো সম্বন্ধে আমি মন্দ ধারণা করলেও হয়ত করতাম, কিন্তু আপনার সম্বন্ধে তো মন্দ ধারণা করতাম না। সে সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শাইতান মানুষের রক্ত সঞ্চারণের শিরায় শিরায় চলাফেরা করে থাকে। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৫৫৭১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৬৮, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০৩৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৭১৯, আহমাদ ১২১৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৯১, ইসলামিক সেন্টার ৫৫১৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তবে জীবিত শয়তানের ধোঁকার জাল ছিন্ন হ’লেও মৃত পীর পূজার শয়তানী ধোঁকার জাল বিস্তৃত থাকে যুগের পর যুগ ধরে। যেখান থেকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই কেবল কদাচিৎ বেরিয়ে আসতে পারেন।

আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান তাদের মিথ্যা ওয়াদা দেয় ও আশার বাণী শুনায়। অথচ শয়তান তাদেরকে প্রতারণা ব্যতীত কোনই প্রতিশ্রুতি দেয় না’। (সুরা নিসা ৪/১২০)। কিন্তু শত প্রতারণার জাল বিছিয়েও শয়তান আল্লাহর কোন মুখলেছ বান্দাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। (সুরা হিজর ১৫/৪০)।

পৃথিবীর প্রাচীনতম শিরক হ’ল মৃত মানুষের পূজা। যা নূহ (আঃ)-এর যুগে শুরু হয়। অথচ তাওহীদের মূল শিক্ষা ছিল মানুষকে মানুষের পূজা হতে মুক্ত করে সরাসরি আল্লাহর দাসত্বের অধীনে স্বাধীন মানুষে পরিণত করা। কিন্তু মৃত সৎ লোকের অসীলায় আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা ও পরকালে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার ভিত্তিহীন ধারণার উপর ভর করে শয়তানের কুমন্ত্রণায় নূহ (আঃ)-এর সমাজে প্রথম শিরকের সূচনা হয়। যা মুর্তিপূজা, কবরপূজা, স্থানপূজা, ছবি ও প্রতিকৃতি পূজা ইত্যাদি আকারে যুগে যুগে মানব সমাজে চালু রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে ছেড়ে এরা নারীদের আহবান করে। বরং এরা বিদ্রোহী শয়তানকে আহবান করে’। (সুরা নিসা ৪/১১৭)।

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’। (আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নিসা ৪/১১৭)।

মক্কা বিজয়ের পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশে খালেদ ইবনু ওয়ালীদ বিখ্যাত ‘উয্যা’ মূর্তি ধ্বংস করার সময় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা ঘোর কৃষ্ণবর্ণ বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট একটা নগ্ন নারী জিনকে দ্বিখন্ডিত করেন। (নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; তাবাক্বাত ইবনু সা‘দ ২/১৪৫-৪৬)।

এরা অলক্ষ্যে থেকে মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে এবং তাদেরকে মূর্তিপূজা, কবরপূজা, স্থানপূজা ও সৃষ্টি পূজার প্রতি প্রলুব্ধ করে। অথচ এই শিরক থেকে তওবা না করার কারণেই নূহ (আঃ)-এর কওমকে আল্লাহ সমূলে ধ্বংস করেছিলেন। এ যুগেও যদি আমরা এই মহাপাপ থেকে তওবা না করি, তাহ’লে আমরাও আল্লাহর গযবে ধ্বংস হয়ে যাব। আল্লাহ বলেন,

‘তারা কি দেখে না যে, তাদের পূর্বের কত সম্প্রদায়কে আমরা ধ্বংস করেছি, যারা তাদের নিকটে আর ফিরে আসবে না’। ‘আর অবশ্যই তাদের সকলকে আমাদের নিকট উপস্থিত করা হবে’। (সুরা ইয়াসীন ৩৬/৩১-৩২)।

অন্যত্র তিনি বলেন

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করল, আল্লাহ তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর সেখানে মুশরিকদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না’। (সুরা মায়েদাহ ৫/৭২)।

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ কখনোই শিরকের গোনাহ মাফ করেন না। এতদ্ব্যতীত বান্দার যেকোন গোনাহ তিনি মাফ করে থাকেন, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন’। (সুরা নিসা ৪/৪৮, ১১৬)।

মৃত্যুর পরে প্রচলিত বিদ‘আত সমূহঃ

 (১) মৃত্যুর আগে বা পরে মাইয়েতকে ক্বিবলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া

(২) মাইয়েতের শিয়রে বসে সূরা ইয়াসীন বা কুরআন তেলাওয়াত করা (তালখীছ ৯৬, ৯৭)।

(৩) মাইয়েতের নখ কাটা ও গুপ্তাঙ্গের লোম ছাফ করা (তালখীছ ৯৭)।

(৪) কাঠি দিয়ে (বা নির্দিষ্ট সংখ্যক নিম কাঠি দিয়ে) দাঁত খিলাল করানো

(৫) নাক-কান-গুপ্তাঙ্গ প্রভৃতি স্থানে তুলা ভরা (তালখীছ ৯৭)।

(৬) দাফন না করা পর্যন্ত পরিবারের লোকদের না খেয়ে থাকা (তালখীছ ৯৭)।

(৭) বাড়ীতে বা কবরস্থানে এই সময় ছাদাক্বা বিলি করা (তালখীছ ৯৯, ১০৩)।

(৮) চীৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কাপড় ছেঁড়া, মাথা ন্যাড়া করা, দাড়ি-গোঁফ না মুন্ডানো ইত্যাদি (তালখীছ ১৮, ৯৭)।

(৯) তিন দিনের অধিক (সপ্তাহ, মাস, ছয় মাস ব্যাপী) শোক পালন করা (তালখীছ ১৫, ৭৩) কেবল স্ত্রী ব্যতীত। কেননা তিনি ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবেন

(১০) কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের জন্য দো‘আ করা (তালখীছ ৪৮)।

(১১) শোক দিবস (শোকের মাস ইত্যাদি) পালন করা, শোকসভা করা ও এজন্য খানাপিনার বা (কাঙ্গালী ভোজের) আয়োজন করা ইত্যাদি (তালখীছ ৭৩-৭৪)।

(১২) মসজিদের মিনারে বা বাজারে মাইকে অলি-গলিতে ‘শোক সংবাদ’ প্রচার করা (তালখীছ ১৯, ৯৮)।

(১৩) কবরের উপরে খাদ্য ও পানীয় রেখে দেওয়া। যাতে লোকেরা তা নিয়ে যায় (তালখীছ ১০৩)।

(১৪) মৃতের কক্ষে তিন রাত, সাত রাত (বা ৪০ রাত) ব্যাপী আলো জ্বেলে রাখা (তালখীছ ৯৮)।

(১৫) কাফনের কাপড়ের উপরে কুরআনের আয়াত ও দো‘আ-কালেমা ইত্যাদি লেখা (তালখীছ ৯৯)।

(১৬) এই ধারণা করা যে, মাইয়েত জান্নাতী হ’লে ওযনে হালকা হয় ও দ্রুত কবরের দিকে যেতে চায় (তালখীছ ৯৯)।

(১৭) মাইয়েতকে দূরবর্তী নেককার লোকদের গোরস্থানে নিয়ে দাফন করা (তালখীছ ৯৯)।

(১৮) জানাযার পিছে পিছে উচ্চৈঃস্বরে যিকর ও তেলাওয়াত করতে থাকা (তালখীছ ১০০)।

(১৯) জানাযা শুরুর প্রাক্কালে মাইয়েত কেমন ছিলেন বলে লোকদের কাছ থেকে সমস্বরে সাক্ষ্য নেওয়া (তালখীছ ১০১)।

(২০) জানাযার ছালাতের আগে বা দাফনের পরে তার শোকগাথা বর্ণনা করা (তালখীছ ১০০)।

(২১) জুতা পাক থাকা সত্ত্বেও জানাযার ছালাতে জুতা খুলে দাঁড়ানো (তালখীছ ১০১)।

(২২) কবরে মাইয়েতের উপরে গোলাপ পানি ছিটানো (তালখীছ ১০২)।

(২৩) কবরের উপরে মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ও পায়ের দিক থেকে মাথার দিকে পানি ছিটানো। অতঃপর অবশিষ্ট পানিটুকু কবরের মাঝখানে ঢালা (তালখীছ ১০৩)।

(২৪) তিন মুঠি মাটি দেওয়ার সময় প্রথম মুঠিতে ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম’ দ্বিতীয় মুঠিতে ‘ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম’ এবং তৃতীয় মুঠিতে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তা-রাতান উখরা’ বলা (ত্বোয়াহা ৫৫; ১০২) ।

(২৫) অথবা ‘আল্লা-হুম্মা আজিরহা মিনাশ শায়ত্বান’.... পাঠ করা। (সুনান ইবনু মাজাহ ১৫৫৩, সুনান আততিরমিযী ১০৪৬, সুনান আবূ দাউদ ৩২১৩, আহমাদ ৪৭৯৭, ৪৯৭০, ৫২১১, ৫৩৪৭, ৬০৭৬)। হাদিসের মান জঈফ।

 (২৬) কবরে মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে ফাতিহা ও পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাক্বারাহর শুরুর অংশ পড়া (তালখীছ ১০২)।

(২৭) সূরায়ে ফাতিহা, ক্বদর, কাফেরূণ, নছর, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই সাতটি সূরা পাঠ করে দাফনের সময় বিশেষ দো‘আ পড়া (তালখীছ ১০২)।

(২৮) কবরের কাছে বসে কুরআন তেলাওয়াত ও খতম করা (তালখীছ ১০৪)।

(২৯) কবরের উপরে শামিয়ানা টাঙ্গানো (তালখীছ ১০৪)।

(৩০) নির্দিষ্ট ভাবে প্রতি জুম‘আয় কিংবা সোম ও বৃহস্পতিবারে পিতা-মাতার কবর যেয়ারত করা (তালখীছ ১০৫) ।

(৩১) এতদ্ব্যতীত আশূরা, শবে মে‘রাজ, শবেবরাত, রামাযান ও দুই ঈদে বিশেষভাবে কবর যেয়ারত করা ।

(৩২) কবরের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ানো ও সূরায়ে ফাতিহা ১ বার, ইখলাছ ১১ বার কিংবা সূরা ইয়াসীন ১ বার পড়া (তালখীছ ১০৫)।

(৩৩) কুরআন পাঠকারীকে উত্তম খানা-পিনা ও টাকা-পয়সা দেওয়া বা এ বিষয়ে অছিয়ত করে যাওয়া (তালখীছ ১০৪, ১০৬)।

(৩৪) কবরকে সুন্দর করা (তালখীছ ১০৭)।

(৩৫) কবরে রুমাল, কাপড় ইত্যাদি বরকত মনে করে নিক্ষেপ করা (তালখীছ ১০৮) ।

(৩৬) কবরে চুম্বন করা (তালখীছ ১০৮)।

(৩৭) কবরের গায়ে মৃতের নাম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা (তালখীছ ১০৯)।

(৩৮) কবরের গায়ে বরকত মনে করে হাত লাগানো এবং পেট ও পিঠ ঠেকানো (তালখীছ ১০৮)।

(৩৯) ত্রিশ পারা কুরআন (বা সূরা ইয়াসীন) পড়ে এর ছওয়াব সমূহ মৃতের নামে বখশে দেয়া (তালখীছ ১০৬)। যাকে এদেশে ‘কুরআনখানী’ বলে।

(৪০) কাফেরূণ, ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস এই চারটি ‘কুল’ সূরার প্রতিটি ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কুলখানী’ বলে।

(৪১) কালেমা ত্বাইয়িবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’  ১ লক্ষ বার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া, যাকে এদেশে ‘কালেমাখানী’ বলে।

(৪২) ১ম, ৩য়, ৭ম (বা ১০ম দিনে) বা ৪০ দিনে চেহলাম বা চল্লিশার অনুষ্ঠান করা

(৪৩) ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা (তালখীছ ১০৩)।

(৪৪) যারা কবর খনন করে ও দাফনের কাজে সাহায্য করে, তাদেরকে মৃতের বাড়ী দাওয়াত দিয়ে বিশেষ খানার ব্যবস্থা করা। যাকে এদেশে ‘হাত ধোয়া খানা’ বলা হয়

(৪৫) আযান শুনে নেকী পাবে বা গোর আযাব মাফ হবে ভেবে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া।

(৪৬) কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ‘ফাতিহা’ পাঠ করা (তালখীছ ২০)।

(৪৭) কাফন-দাফনের কাজকে নেকীর কাজ না ভেবে পয়সার বিনিময়ে কাজ করা

(৪৮) মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে আলো জ্বেলে ও মাইক লাগিয়ে রাত্রি ব্যাপী উচ্চৈঃস্বরে কুরআন খতম করা।

(৪৯) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা (তালখীছ ১০৪, ১০৬)।

(৫০) ছালাত, ক্বিরাআত ও অন্যান্য দৈহিক ইবাদত সমূহের নেকী মৃতদের জন্য হাদিয়া দেওয়া (তালখীছ ১০৬)। যাকে এদেশে ‘ছওয়াব রেসানী’ বলা হয়।

(৫১) আমল সমূহের ছওয়াব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে (বা অন্যান্য নেককার মৃত ব্যক্তিদের নামে) বখশে দেওয়া (তালখীছ ১০৬)। যাকে এদেশে ‘ঈছালে ছওয়াব’ বলা হয়

(৫২) নেককার লোকদের কবরে গিয়ে দো‘আ করলে তা কবুল হয়, এই ধারণা করা (তালখীছ ১০৮)।

(৫৩) মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় বলে ধারণা করা।

(৫৪) জানাযার সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহরানা মাফ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা।

(৫৫) ঐ সময় মৃতের ক্বাযা ছালাত সমূহের বা উমরী ক্বাযার কাফফারা স্বরূপ টাকা আদায় করা।

(৫৬) মৃত্যুর পরপরই ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে চাউল ও টাকা-পয়সা বিতরণ করা।

(৫৭) দাফনের পরে কবরস্থানে মহিষ বা গবাদি-পশু যবহ করে গরীবদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা।

(৫৮) লাশ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনবার নামানো।

(৫৯) কবরে মাথার কাছে ‘মক্কার মাটি’ নামক আরবীতে ‘আল্লাহ’ লেখা মাটির ঢেলা রাখা।

(৬০) মাইয়েতের মুখে ও কপালে আতর দিয়ে ‘আল্লাহ’ লেখা।

(৬১) কবরে মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেওয়া।

(৬২) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের সময় বদনায় পানি দিয়ে যাওয়া এই নিয়তে যে, মৃতের রূহ এসে ওযূ করে ছালাত আদায় করে যাবে।

(৬৩) মৃতের ঘরে ৪০ দিন যাবৎ বিশেষ লৌহজাত দ্রব্য রাখা।

(৬৪) মৃত্যুর ২০দিন পর রুটি বিলি করা ও ৪০ দিন পর বড় ধরনের ‘খানা’র অনুষ্ঠান করা।

(৬৫) মৃতের বিছানা ও খাট ইত্যাদি ৭দিন পর্যন্ত একইভাবে রাখা।

(৬৬) মৃতের পরকালীন মুক্তির জন্য তার বাড়ীতে মীলাদ বা ওয়ায মাহফিল করা।

(৬৭) নববর্ষ, শবেবরাত ইত্যাদিতে কোন বুযর্গ ব্যক্তিকে ডেকে মৃতের কবর যিয়ারত করিয়ে নেওয়া ও তাকে বিশেষ সম্মানী প্রদান করা।

(৬৮) শবেবরাতে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মৃত স্বামীর রূহের আগমন অপেক্ষায় তার পরিত্যক্ত কক্ষে বা অন্যত্রে সারা রাত জেগে বসে থাকা ও ইবাদত-বন্দেগী করা।

(৬৯) ঈছালে ছওয়াবের অনুষ্ঠান করা।

(৭০) নিজের কোন একটি বা একাধিক সমস্যা সমাধানের নিয়তে কবরের গায়ে বা পাশের কোন গাছের ডালে বিশেষ ধরনের সুতা বা ইটখন্ড ঝুলিয়ে রাখা।

(৭১) মাযার থেকে ফিরে আসার সময় কবরের দিকে মুখ করে বেরিয়ে আসা

(৭২) মৃত্যুর আগেই কবর তৈরী করা (তালখীছ ১০৪)।

(৭৩) কবরে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্ত্ত সমূহ রাখা এই ধারণায় যে, সেগুলি তার কাজে আসবে।

(৭৪) কবরে কা‘বা গৃহের কিংবা কোন পীরের কবরের গেলাফের অংশ কিংবা তাবীয লিখে দাফন করা এই ধারণায় যে, এগুলি তাকে কবর আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবে।

(৭৫) কবরে ‘ওরস’ উপলক্ষে বা অন্য সময়ে রান্না করা খিচুড়ী বা তৈরী করা রুটি বা মিষ্টি ‘তাবাররুক’ নাম দিয়ে বরকতের খাদ্য মনে করে ভক্ষণ করা।

(৭৬) আজমীরে খাজাবাবার কবরে টাকা পাঠানো বা অন্য কোন পীর বাবার কবরে গরু-ছাগল, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য হাদিয়া পাঠানো।

(৭৭) কবরের মধ্যবর্তী স্থানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে মৃতের জন্য দো‘আ পড়া।

(৭৮) কবরের উপরে একটি বা চার কোণে চারটি কাঁচা খেজুরের ডাল পোতা বা কোন গাছ লাগানো এই ধারণা করে যে, এর প্রভাবে কবর আযাব হালকা হবে।

(৭৯) খাটিয়া ও মাইয়েত ঢাকার কাপড় খুব সুন্দর করা (তালখীছ ৯৯)।

(৮০) কালেমা ও পবিত্র কুরআনের আয়াত লিখিত কালো কাপড় দিয়ে খাটিয়া ঢাকা।

(৮১) মৃতের প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় পৃথক পৃথক দো‘আ পড়া (তালখীছ ৯৮)।

(৮২) জানাযা বহনের সাথে সাথে ছাদাক্বা বিতরণ করা এবং লোকদের কোল্ড ড্রিংকস পান করানো (তালখীছ ৯৯)।

(৮৩) লাশের নিকট ভিড় করা (তালখীছ ৯৯)।

(৮৪) মৃতের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বা অন্য কোন উপলক্ষে দিনভর উচ্চৈঃস্বরে তার বক্তৃতা বা কুরআনের ক্যাসেট বাজানো।

(৮৫) বিশেষ কোন নেককার ব্যক্তির কবর থাকার কারণে জনপদের লোকেরা রূযিপ্রাপ্ত হয় ও আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয় বলে ধারণা পোষণ করা (তালখীছ ১০৬)।

(৮৬) জানাযা শুরুর পূর্বে ইমামের পক্ষ থেকে মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃস্বরে ‘নিয়ত’ বলে দেওয়া।

(৮৭) ইমাম ও মুক্তাদীর ‘ছানা’ পড়া (তালখীছ ১০১)।

(৮৮) সূরা ফাতিহা ও একটি সূরা ছাড়াই জানাযার ছালাত আদায় করা (তালখীছ ১০১)।

(৮৯) জানাযা শেষ হবার পরেই সেখানে দাঁড়িয়ে অথবা দাফন শেষে একজনের নেতৃত্বে সকলেদু’হাত তুলে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করা।

(৯০) জানাযার সময়ে সকলকে মৃতের বাড়ীতে কুলখানির অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া।

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলি ছাড়াও মৃত ব্যক্তি ও কবরকে কেন্দ্র করে হাযারো রকমের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ উপমহাদেশে মুসলিম সমাজে চালু আছে। অতএব প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হবে এসকল শিরক ও বিদ‘আতী কর্মকান্ড হ’তে দূরে থাকা।

জানা আবশ্যক যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি কবরের উপরে যে খেজুরের দু’টি কাঁচা চেরা ডাল পুঁতেছিলেন, সেটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাঁর বা কোন ছাহাবীর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে এমন কোন আমল করার নযীর নেই বুরাইদা আসলামী (রাঃ) ব্যতীত। কেননা তিনি এটার জন্য অছিয়ত করেছিলেন।

হাদিসঃ

ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দু’টির বাসিন্দাদের আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এদের দু’ জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন গুনাহর জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে না (যা হতে বিরত থাকা) দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করত না, আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি খেজুরের একটি তাজা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগে বিভক্ত করলেন, অতঃপর প্রতিটি কবরে একটি করে পুঁতে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বললেনঃ ডাল দু’টি না শুকানো পর্যন্ত আশা করি তাদের আযাব হাল্কা করা হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৩৬১, ২১৬, ২১৮,  মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩৩৮, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)  ৫৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৬৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৫৮৪)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অতএব এটা স্পষ্ট যে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নেক আমলের কারণেই কবর আযাব মাফ হ’তে পারে। ফুল দেওয়া বা কাঁচা ডাল পোতার কারণে নয়। কেননা এসবের কোন প্রভাব মাইয়েতের উপর পড়ে না। যেমন আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর কবরের উপর তাঁবু খাটানো দেখে ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ওটাকে হটিয়ে ফেল হে বৎস! কেননা ওটা তার আমলের উপরে ছায়া করছে বা বাধা সৃষ্টি করছে।

কবরে আলোকসজ্জা করা

কবরে বাতি দেওয়া নিষেধের হাদীছটি যঈফ।

হাদিসঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐ সকল স্ত্রী লোককে যারা (ঘন ঘন) কবর যিয়ারত করতে যায় এবং ঐ সব লোককেও অভিশাপ দিয়েছেন যারা কবরের উপর মাসজিদ নির্মাণ করে বা তাতে বাতি জ্বালায়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৭৪০, সুনান আবুদাঊদ ৩২৩৬, সুনান আততিরমিযী ৩২০, সুনান আননাসায়ী ২০৪৩, য‘ঈফ আত্ তারগীব ২০৭৫, তামামুল মিন্নাহ ২৯৮)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

তবে এটি কয়েকটি কারণে নিকৃষ্টতম বিদ‘আত।

(১) এটি নবাবিষ্কৃত বিষয়, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল না।

(২) এটি অগ্নি উপাসক মজূসীদের অনুকরণ।

(৩) এতে স্রেফ মালের অপচয় হয়, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ

(৪) একে আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের মাধ্যম বলে ধারণা করা হয়। (তালখীছ ৯০ পৃঃ)।

যা ভিত্তিহীন ও ইসলাম বিরোধী আক্বীদা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’। (নাসাঈ হা/১৫৭৯; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৭৮৫)।

আল্লাহ বলেন,

‘আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়েছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমল করে যাচ্ছে’। (সুরা কাহ্ফ ১৮/১০৩-৪)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪৩৮৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭১৮, সুনান আবূ দাঊদ ৪৬০৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪, আহমাদ ২৬০৩৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৬, ইরওয়া ৮৮, সহীহ আল জামি‘ ৫৯৭০, সহীহাহ্ ২৩০২, সহীহ আত্ তারগীব ৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে সকল বস্ত্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণের সময়ে দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিল না, এ যুগে তা দ্বীন হিসাবে গণ্য হবে না’। (আবু বকর জাবের আল-জাযায়েরী, আল-ইনছাফ (মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, তাবি) পৃঃ ৩২)।

জানাযা বিষয়ে অন্যান্য জ্ঞাতব্য সমূহ

 (১) কবর ও লাশ বিষয়েঃ

 (ক) সাগরবক্ষে মৃত্যুবরণ করলে এবং স্থলভাগ না পাওয়া গেলে গোসল, কাফন ও জানাযা শেষে কবরে শোয়ানোর দো‘আ পড়ে লাশ সাগরে ভাসিয়ে দিবে। (বায়হাক্বী ৪/৭)।

(খ) কবরে যতদিন মুমিনের লাশের কোন অংশ বাকী থাকবে, ততদিন তাকে সম্মান করতে হবে। সেখানে পুনরায় কবর দেওয়া যাবে না। যদি লাশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ও মাটি হয়ে যায়, তাহ’লে সেখানে পুনরায় দাফন করা যাবে ও সাধারণ মাটির ন্যায় সেখানে সবকিছু করা যাবে। কিন্তু তাই বলে কোন সাধারণ অজুহাতে কবরের সম্মান হানিকর কোন কিছু নির্মাণ করা যাবে না। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১; তালখীছ, পৃঃ ৯১)।

(গ) কবর খুঁড়তে গিয়ে যদি প্রথম দিকেই মৃত ব্যক্তির হাড় পাওয়া যায়, তাহ’লে কবর খনন বন্ধ করবে। কিন্তু যদি খনন শেষে পাওয়া যায়, তবে হাড়টিকে কবরের একপাশে রেখেই সেখানে নতুন লাশের কবর দিবে। কেননা এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করা জায়েয আছে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১)।

(ঘ) যদি বিনা জানাযায় কারু দাফন হয়ে যায় অথবা জানাযা করে দাফন হ’লেও যদি কেউ পরে জানাযা পড়তে চান, তাহ’লে কবরকে সামনে করে জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮১-৮২)।

(ঙ) যদি কোন গর্ভবতী মহিলা মারা যান এবং তার পেটে জীবিত বাচ্চা আছে বলে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চিত হন, তাহ’লে পেট কেটে বাচ্চা বের করে আনা জায়েয আছে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০০)।

(চ) শারঈ ওযর বশতঃ যরূরী কারণে কবর পুনঃখনন, লাশ উত্তোলন ও স্থানান্তর করা জায়েয আছে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১-২)।

(২) মৃতের ক্বাযা ছালাত ও ছিয়ামঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, একজনের ছিয়াম ও ছালাত অন্যজনে করতে পারেনা।

হাদিসঃ

মালিক (রহঃ) হতে বর্ণিত। তাঁর পর্যন্ত এ বর্ণনাটি পৌঁছেছে যে, ইবনু ’উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হত, কোন ব্যক্তি কি অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে সওম আদায় করে দিতে পারে, কিংবা সালাত আদায় করে দিতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে ইবনু ’উমার বলতেন, কোন লোকের পক্ষ থেকে কেউ না সালাত আদায় করতে পারে আর না কেউ সওম রাখতে পারে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৩৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০৬৯)। হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)।

কারণ এগুলি দৈহিক ইবাদত, যা নিজেকেই করতে হয়। এগুলি জীবদ্দশায় যেমন অন্যের দ্বারা সম্ভব নয়, মৃতের পরেও তেমনি সম্ভব নয় এবং এগুলির ছওয়াবও অন্যকে দেওয়া যায় না কেবলমাত্র দো‘আ, ছাদাক্বা ও হজ্জ ব্যতীত।

হাদিসঃ

’আমর ইবনু শু’আয়ব তাঁর পিতা ও দাদা পরম্পরায় বর্ণনা করেন যে, ’আস্ ইবনু ওয়ায়িল (প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হওয়ায়) ওয়াসিয়্যাত করে যান যে, তার পক্ষ হতে যেন একশত ক্রীতদাস মুক্ত করা হয়। তদনুসারে তার পুত্র হিশাম পঞ্চাশটি ক্রীতদাস মুক্ত করেন। অতঃপর তাঁর পুত্র ’আমর বাকি পঞ্চাশটি স্বাধীন করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তবে বললেন, আমি স্বাধীন করব না যতক্ষণ না এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করব। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা তার পক্ষ হতে একশত ক্রীতদাস মুক্ত করার ওয়াসিয়্যাত করে গেছেন আর বাকী রয়েছে পঞ্চাশটি; আমি কি তার পক্ষ হতে তা মুক্ত করব? এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি মুসলিম হতো, আর তোমরা তার পক্ষ হতে তা মুক্ত করতে অথবা দান-সাদাকা করতে বা হজ্জ/হজ করতে, তাহলে তার নিকট তার সাওয়াব পৌঁছত। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৩০৭৭, সুনান আবূ দাঊদ ২৮৮৩, সহীহ আল জামি ৫২৯১)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে’। (সুরা নাজম ৫৩/৩৯)।

অবশ্য মানতের ছিয়াম থাকলে উত্তরাধিকারীগণ তা রাখতে পারেন।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ তার সওম অনাদায়ী ছিল, এ ক্ষেত্রে তার ওয়ারিসগণ সওমের কাযা আদায় করে দেবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৩৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮২২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৫৬৯, রিয়াযুস্ সলিহীন ১৮৬৭, সহীহ আল জামি ৬৫৪৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

অথবা প্রতি ছিয়ামের বদলে একজন মিসকীন খাওয়াবেন কিংবা এক মুদ (৬২৫ গ্রাম) গম (বা চাউল) মিসকীনকে দিবেন। (বায়হাক্বী ৪/২৫৪; যঈফাহ হা/৪৫৫৭-এর আলোচনা শেষে দ্রষ্টব্য ১০ (১)/৬২)।

যদি তা মাইয়েতের রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশে সংকুলান হয়। নইলে তা পূরণ করা ওয়ারিছের জন্য ওয়াজিব নয়। (মির‘আত ৭/৩২, হা/২০৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)।

জানাযাকালে মৃতের ক্বাযা ছালাতের কাফফারা স্বরূপ টাকা-পয়সা দান করা সম্পূর্ণরূপে একটি বিদ‘আতী প্রথা মাত্র।

(৩) গর্ভচ্যুত শিশুর জানাযাঃ

(ক) বাচ্চা যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে ক্রন্দন করে বা হাঁচি দেয় বা এমন আচরণ করে যাতে তার জীবন ছিল বলে বুঝা যায়, অতঃপর মারা যায়। তবে তার জানাযা পড়তে হবে। ‘এসময় তার মুসলিম বাপ-মায়ের প্রতি ক্ষমা ও অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে হবে’।

হাদিসঃ

মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী চলবে জানাযার পশ্চাতে এবং পায়ে হাঁটা ব্যক্তিরা চলবে জানাযার সামনে পেছনে ডানে-বামে জানাযার কাছ ঘেষে। আর অকালে ভূমিষ্ট বাচ্চার সালাত আদায় করবে, তাদের মাতা-পিতার জন্য মাগফিরাত ও রহমতের দু’আ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৬৭. সুনান আবূ দাঊদ ৩১৮০, আহমাদ ১৮১৮, ১৮১৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৮৬৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৫২৫, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৩১, সুনান আননাসায়ী ১৯৪২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১১২৫৩, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৪৮১, ইবনু হিব্বান ৩০৪৯, ইরওয়া ৭৪০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

অর্থাৎ সূরা ফাতিহা, দরূদ ও জানাযার ১ম দো‘আটি পাঠের পর শিশুর জন্য বর্ণিত ৫ম দো‘আটি পাঠ শেষে বলবে, ‘আল্লা-হুম্মাগফির লি আবাওয়াইহে ওয়ারহামহুম’ (হে আল্লাহ! তুমি তার পিতামাতাকে ক্ষমা কর এবং তাদের উপর রহম কর)।

(খ) যদি বাচ্চা চার মাসের আগেই গর্ভচ্যুত হয়, তাহলে তাকে গোসল বা জানাযা কিছুই করতে হবে না। বরং কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করবে।

(গ) চার মাসের পরের কোন সন্তান যদি মৃত ভূমিষ্ঠ হয়, তবে তারও জানাযা করার প্রয়োজন নেই। কেননা হাদীছে বাচ্চার ‘চীৎকার করার’ কথা এসেছে।

হাদিসঃ

জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (অপূর্ণাঙ্গ) বাচ্চাদের জন্য না জানাযার সালাত আদায় করতে হবে, না তাকে কারো ওয়ারিস বানানো যাবে। আর না তার কোন ওয়ারিস হবে। যদি সে জন্মের সময় কোন শব্দ করে না থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৬৯১, সুনান আত্ তিরমিযী ১০৩২, ইবনু মাজাহ্ ২৭৫১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

ভিত্তিতে একদল বিদ্বান গর্ভচ্যুত মৃত সন্তানের জানাযা করার জন্য বলেন। জবাবে শাওকানী বলেন, মায়ের গর্ভে চার মাস অতিক্রম করাটাই শিশুর জীবনের প্রমাণ নয়, বরং ভূমিষ্ট হওয়ার পর কান্নাটাই তার জীবনের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হবে। ইমাম মালেক, শাফেঈ, আওযাঈ ও জমহূর বিদ্বানগণ সেকথা বলেন। (নায়ল ৫/৪৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭৭; মির‘আত ৫/৪০৩-০৪, ৪২৪-২৫)।

(৪) মৃতের প্রতি আদবঃ

(ক) মৃতের প্রতি সাধ্যমত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। হাদীছে মৃতের হাড্ডি ভাঙ্গাকে জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিতকালে তার হাড় ভাঙারই মতো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭১৪, সুনান আবূ দাঊদ ৩২০৭, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১৬১৬, সহীহ আত্ তারগীব ৩৫৬৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪৭৮, ইরওয়া ৩/৭৬৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

অতএব যরূরী রাষ্ট্রীয় নির্দেশ ব্যতীত মৃতদেহ কাটাছেঁড়া বা পোষ্ট মর্টেম করা গুরুতর অন্যায়। আজকাল পোষ্ট মর্টেম-এর বিষয়টি অনেকটা সস্তা হয়ে যাচ্ছে। তারপরেও লাশের প্রতি সেখানে অসম্মান করা হয় বলে শোনা যায়। যা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবশ্যই বিরত থাকা কর্তব্য।

(খ) মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘তোমরা মৃতদের গালি দিয়ো না। কেননা তারা তাদের অগ্রিম পেশকৃত অর্জনের প্রতি ধাবিত হয়েছে’।

হাদিসঃ

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। কারণ তারা তাদের কৃতকর্মের (পরিণাম ফল) পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১৬, ১৩৯৩, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahi।

তবে ঐ ব্যক্তি যদি ফাসিক ও বিদ‘আতী হয়, তবে তা থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে সামান্য আলোচনা করা যেতে পারে। নতুবা বিরত থাকতে হবে। কেননা সুন্দর মুসলমানের পরিচয় হ’ল অনর্থক বিষয় সমূহ হতে বিরত থাকা।

হাদিসঃ

আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য এই যে, সে অনর্থক কথা ও কাজ পরিত্যাগ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৮৩৯, মালিক ৩৩৫২, আহমাদ ১৭৩৭, সুনান আততিরমিযী ২৩১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৯৭৩, সহীহুল জামি‘ ৫৯১১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৮৮১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০৬১৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ২২৯, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৮৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৮/২৪৯, আল মু‘জামুস্ সগীর ৮৮১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ২৮১৭, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৩৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তাছাড়া ‘সন্দেহযুক্ত বিষয়াবলী থেকে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার’ জন্য হাদীছে নির্দেশ এসেছে।

হাদিসঃ

হাসান ইবনু ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীটি মুখস্থ করে রেখেছি যে, যে কাজে মনে সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে, সে কাজ পরিহার করে সংশয়-সন্দেহহীন কাজ করো। সত্য ও ন্যায়ের মধ্যে প্রশান্তি আছে, আর মিথ্যা ও অন্যায়ের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭৩, সুনান আননাসায়ী ৫৭১১, সুনান আততিরমিযী ২৫১৮, আহমাদ ১৭২৭, দারিমী ২৫৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৩৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ১৭৩৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

 (৫) প্রতিবেশীদের কর্তব্যঃ

মৃত্যুর পরে মৃতের প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয়দের কর্তব্য হ’ল, মৃতের পরিবারের লোকদেরকে (কমপক্ষে) একটি দিন ও রাত পেট ভরে খাওয়ানো। জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব (রাঃ) শহীদ হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার প্রতিবেশীদেরকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতদ্ব্যতীত বন্ধু-বান্ধব ও সকল হিতাকাংখীর কর্তব্য হ’ল মৃতের উত্তরাধিকারীদের সান্ত্বনা প্রদান করা ও তার বাচ্চাদের মাথায় সহানুভূতির হাত বুলানো। (তালখীছ পৃঃ ৭৪)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে তিন দিনের বেশী কান্নাকাটি করতে নিষেধ করেন।

হাদিসঃ

’আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জা’ফারের সন্তানদেরকে (জা’ফার -এর শাহাদাতের জন্য) শোক প্রকাশের তিনদিন সময় দিলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ আজকের পর হতে তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করবে না। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার ভাইয়ের সন্তানদেরকে আমার কাছে ডেকে আনো। সে মতে আমাদেরকে আনা হলো। যেন আমরা কতকগুলো পাখির ছানা। অতঃপর বললেনঃ নাপিত ডেকে আনো। তিনি তাকে নির্দেশ দিলেন, সে আমাদের মাথা মুড়িয়ে দিলো। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪৪৬৩, সুনান আবূ দাঊদ ৪১৯২, সুনান আননাসায়ী ৫২২৭, আহমাদ ১৭৫০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৪৪৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৫৫২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃতের বাড়ীতে গিয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিতেন। নিজের সন্তানহারা কন্যা যয়নব (রাঃ)-কে দেওয়া সর্বোত্তম সান্ত্বনা বাক্য হিসাবে বর্ণিত হাদীছটি নিম্নরূপ :

উচ্চারণ: “ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা ওয়া লিল্লা-হি মা আ‘ত্বা; ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইনদাহূ ইলা আজালিম মুসাম্মা; ফালতাছবির ওয়াল তাহতাসিব”

অনুবাদ: ‘নিশ্চয়ই সেটা আল্লাহর জন্য, যেটা তিনি নিয়েছেন এবং সেটাও আল্লাহর জন্য যেটা তিনি দিয়েছেন। প্রত্যেক বস্ত্ত তাঁর নিকটে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য। অতএব তুমি ছবর কর ও ছওয়াবের আকাংখা কর’।

হাদিসঃ

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা (যায়নাব) কাউকে দিয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠালেন যে, তাঁর ছেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে, তাই তিনি যেন তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে আসেন। (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সালাম পাঠালেন আর বললেন, যে জিনিস (অর্থাৎ সন্তান) আল্লাহ নিয়ে নেন তা তাঁরই। আর যে জিনিস তিনি দিয়ে রেখেছেন তাও তাঁরই। প্রতিটি জিনিসই তার কাছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অতএব অপরিসীম ধৈর্য ও ইহতিসাবের সাথে থাকতে হবে (শোকে দুঃখে বিহ্বল না হওয়া উচিত)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা আবার তাঁকে কসম দিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যাবার জন্য খবর পাঠালেন। এবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্, মা’আয ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত সহ কিছু লোককে সাথে নিয়ে ওখানে গেলেন। বাচ্চাটিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোলে তুলে দেয়া হলো। তখন তার শ্বাস ওঠানামা করছে। বাচ্চার এ অবস্থা দেখে রসূলের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল। সা’দ রসূলের চোখে পানি দেখে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা রহমত, যা আল্লাহ বান্দার মনে সৃষ্টি করে দেন আর আল্লাহ তাঁর দয়াশীল বান্দাগণের প্রতি দয়া করেন।’’ (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৭২৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১২৮৪,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২০২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯২৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০০৭, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২০০৪, ইসলামীক সেন্টার ২০১১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

ফযীলত: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোন মুমিন ভাইয়ের বিপদে সান্ত্বনা প্রদান করল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সবুজ রেশমের ঈর্ষণীয় জোড়া পরিধান করাবেন’। (তালখীছ পৃঃ ৭০; বায়হাক্বী, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হাদীছ হাসান; ইরওয়া হা/৭৬৪)।

(৬) মৃতের জন্য করণীয়ঃ

১. আল্লাহ বলেন, ‘আমরা মৃতকে জীবিত করি এবং লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে ও যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমরা প্রত্যেক বস্ত্ত স্পষ্ট কিতাবে (অর্থাৎ স্ব স্ব আমলনামায়) সংরক্ষিত রাখি’। (সুরা ইয়াসীন ৩৬/১২)।

২. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, কেবল তিনটি আমল ব্যতীত: (ক) ছাদাক্বায়ে জারিয়া (খ) এমন ইল্ম যা থেকে কল্যাণ লাভ হয় এবং (গ) নেককার সন্তান, যে তার জন্য দো‘আ করে’। (আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যখন মারা যায় তখন তার ’আমল বন্ধ (নিঃশেষ) হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি ’আমলের সাওয়াব (অব্যাহত থাকে): (১) সদাক্বায়ি জারিয়াহ্, (২) জ্ঞান- যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে এবং (৩) সুসন্তান- যে তার (পিতা-মাতার) জন্য দু’আ করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৩,  সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৪১১৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪০৭৭, ইসলামিক সেন্টার ৪০৭৬))। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বান্দা বলে আমার মাল, আমার মাল। অথচ তার মাল তিনটি: (ক) যেটা সে খায় অতঃপর শেষ হয়ে যায় (খ) যেটা সে পরিধান করে অতঃপর তা জীর্ণ হয়ে যায় (গ) যেটা সে ছাদাক্বা দেয় বা দান করে সেটা তার জন্য সঞ্চিত থাকে। বাকী সবকিছু চলে যায় এবং লোকদের জন্য সে ছেড়ে যায়’।

হাদিসঃ

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: বান্দা (গর্ব : করে) বলে আমার সম্পদ, আমার সম্পদ; প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদ হতে তার (উপকারে আসে) মাত্র তিনটি যা খেয়ে সে শেষ করে দিয়েছে বা পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছে অথবা দান করে (পরকালের জন্য) সংরক্ষণ করেছে। এতদ্ভিন্ন যা আছে তা তার কাজে আসবে না এবং সে মানুষের (ওয়ারিসদের) জন্য ছেড়ে চলে যাবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৬, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৫৯, মুসনাদে আহমাদ ৮৭৯৯, সহীহুল জামি ৮১৩৩, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৮৬০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩২৪৪, শুআবুল ঈমান ৩৩৩৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৭৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৫৪, ইসলামিক সেন্টার ৭২০৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

৪. তিনি আরও বলেন, ‘মাইয়েতের সঙ্গে তিনজন যায়। দু’জন ফিরে আসে ও একজন থেকে যায়। তার পরিবার ও মাল ফিরে আসে। কেবল ‘আমল’ তার সাথে থেকে যায়’।

হাদিসঃ

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তিনটি জিনিস মৃত লাশের সাথে যায়। দুটি ফিরে আসে এবং একটি তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে গমন করে আত্মীয়স্বজন, মাল-সম্পদ এবং তার ’আমল। পরে জাতি-গোষ্ঠী ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং থেকে যায় তার ’আমল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৬৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৬৫১৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৬০, সুনান আননাসায়ী ১৯৩৭, সহীহুল জামি' ৮০১৭, সুনান আততিরমিযী ২৩৭৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩১০৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ২০৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৭২০৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sa।

৫. তিনি আরও বলেন, ‘আখেরাতের সুখণ্ডসম্পদের তুলনায় দুনিয়া একটি মরা ছাগলের বাচ্চার চাইতেও তুচ্ছ’।

হাদিসঃ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ).....জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আলিয়াহ অঞ্চল থেকে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে যেতে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিতে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ছোট ছোট। আর এখন তো সেটা মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! এ তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশি নগণ্য। (সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৯৫৭, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৫৭, সুনান আবু দাউদ ১৮১, মুসনাদে আহমাদ ১৪৯৭২, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩২৩৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৪৮২, শুআবুল ঈমান ১০৪৬৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৫০, ইসলামিক সেন্টার ৭২০২)।  হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।

৬. আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন সুখ সম্ভার প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি, কোন হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি’।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কক্ষনো কোন হৃদয় চিন্তাও করেনি।’ (তিনি বললেন) এর সত্যতা প্রমাণে তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করতে পার। এছাড়াও তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী আনন্দদায়ক যে সকল সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে কোন প্রাণীরই তার খবর নেই”(সূরাহ্ আস্ সিজদাহ্ ৩২: ১৭)। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ৭০২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮২৪, সুনান আততিরমিযী ৩১৯৭, ইবনু মাজাহ ৪৩২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ১৯৭৮, সহীহুল জামি ৪৩০৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৭২৮, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২০৮৭৪, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৩৩৯৭৪, মুসনাদে আবদ ইবনু হুমায়দ ১১৩৩, মুসনাদে আহমাদ ৮১২৮, আবূ ইয়া'লা ৬২৭৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬৯, শু’আবূল ঈমান ৩৮২, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১০৮৫, দারিমী ২৮২৮, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০২, আল মু'জামুস্ সগীর লিত্ব তবারানী ৫১, আল মু'জামুল আওসাত্ব ১৬৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮৭১, ইসলামিক সেন্টার ৬৯২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

৭. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘জান্নাতের একটি চাবুক রাখার মত ক্ষুদ্রতম স্থান, সমস্ত পৃথিবী ও তার মধ্যকার সম্পদরাজি অপেক্ষা উত্তম’।

হাদিসঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি চাবুক রাখা পরিমাণ স্থান গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫৬১৩, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৫০, সুনান আততিরমিযী ৩০১৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৪৩৩০, সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৯৭৮, সহীহুল জামি ৬৬৩৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩৭৬৮, মুসনাদে ‘আবদ ইবনু হুমায়দ ৯৩০, মুসনাদে আহমাদ ১৫৬০২, আবূ ইয়ালা ৭৫১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪১৭, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ৫৬২১, আল মুসতাদরাক লিল হাকিম ৩১৭০, আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৮৯৬১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

তিনটি ছাদাক্বাঃ

(১) ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ: ছাদাক্বার মধ্যে ঐ ছাদাক্বা উত্তম, যা ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ বা চলমান উপঢৌকন। যা সর্বদা জারি থাকে ও স্থায়ী নেকী দান করে। যেমন মসজিদ, মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ ও পরিচালনা, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ, অনাবাদী জমিকে আবাদ করণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করণ, দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা ইত্যাদি।

(২) ইলম: ঐ ইল্ম উত্তম যা মানুষকে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর কল্যাণ পথ দেখায় এবং যাবতীয় শিরক ও বিদ‘আত হতে বিরত রাখে। উক্ত উদ্দেশ্যে উচ্চতর ইসলামী গবেষণা খাতে সহযোগিতা প্রদান, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা। বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল সম্পন্ন বই ছাপানো ও বিতরণ করা এবং এজন্য অন্যান্য স্থায়ী প্রচার মাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।

(৩) নেককার সন্তান : সন্তান পিতা-মাতার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিসঃ

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিজের উপার্জনের আহার সর্বোত্তম আহার। তোমাদের সন্তানদের উর্পাজনও তোমাদের উপার্জনের মধ্যে গণ্য। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৭৭০, সুনান আবূ দাঊদ ৩৫২৮, সুনান আননাসায়ী ৪৪৪৯, সুনান আততিরমিযী ১৩৫৮, সুনান ইবনু মাজাহ ২২৯০, আহমাদ ২৫২৯৬, ইরওয়া ১৬২৬, সহীহ আল জামি ১৫৬৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sa।

নেককার সন্তানের সকল নেক আমলের ছওয়াব তার পিতা-মাতা পাবেন, যদি তারা কাফের-মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ না করে থাকেন। মৃতের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া হ’ল তার ইস্তেগফারের জন্য দো‘আ করা, তার জন্য ছাদাক্বা করা ও তার পক্ষ হ’তে হজ্জ করা। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১০; তালখীছ ৭৬)।

তবে এজন্য উত্তরাধিকারীকে প্রথমে নিজের ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে।

হাদিসঃ

আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, আমি শুব্রম্নমাহ্’র পক্ষ হতে (হজ্জ/হজ পালনের উদ্দেশে) উপস্থিত হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, শুব্রম্নমাহ্ কে? সে বললো, আমার ভাই অথবা বললো, আমার নিকটাত্মীয়। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজের হজ্জ/হজ করেছো কি? সে বললো, জি না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে (প্রথমে) নিজের হজ্জ/হজ করো। পরে শুবরুমাহ্’র পক্ষ হতে হজ্জ/হজ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২৫২৯, সুনান আবূ দাঊদ ১৮১১, সুনান ইবনু মাজাহ ২৯০৩, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ৩০৩৯, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১২৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৯৮৮, ইরওয়া ৯৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।

জানা আবশ্যক যে, ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ দু’ভাবে হতে পারে। এক- মৃত ব্যক্তি স্বীয় জীবদ্দশায় এটা করে যাবেন। এটি নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম। কারণ মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে। (সুরা নাজম ৫৩/৩৯)।

দুই- মৃত্যুর পরে তার জন্য তার উত্তরাধিকারীগণ বা অন্যেরা যেটা করেন। সাইয়িদ রশীদ রিযা বলেন, দো‘আ, ছাদাক্বা (ও হজ্জ)-এর নেকী মৃত ব্যক্তি পাবে, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ সকলে একমত। কেননা উক্ত বিষয়ে শরী‘আতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। (মির‘আত ৫/৪৫৩)।

আরেকটি বিষয় মনে রাখা আবশ্যক যে, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহর ধরন পরিবর্তন হয়ে থাকে। অতএব যেখানে বা যাকে এটা দেওয়া হবে, তার গুরুত্ব ও স্থায়ী কল্যাণ বুঝে এটা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকতে হবে, যেন উক্ত ছাদাক্বা ধর্মের নামে কোন শিরক ও বিদ‘আতের পুষ্টি সাধনে ব্যয়িত না হয়। যা স্থায়ী নেকীর বদলে স্থায়ী গোনাহের কারণ হবে। ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে তার আয় ও ব্যয় দু’টিরই হিসাব দিতে হবে।

হাদিসঃ

ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ১. তার বয়স সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ব্যয় করেছে? ২. তার যৌবন সম্পর্কে, সে তা কী কাজে ক্ষয় করেছে? ৩. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা হতে অর্জন করেছে? ৪. আর তা কোথায় ব্যয় করেছে? এবং ৫. যে জ্ঞানার্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কী ’আমাল করেছে? (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫১৯৭,সুনান আততিরমিযী ২৪১৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ৯৪৬, সহীহুল জামি ৭২৯৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ১২৮, সিলসিলাতুস সহীহাহ্ ৯৪৬, ইয়া'লা ৫২৭১, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৯৬৫৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।

(সমাপ্ত)

লেখক ও সংকলকঃ

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।

(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, বিবিসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।

.................................................................

কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে PMMRC এর উপর ক্লিক করুন।

(PMMRC)

Please Share On

No comments:

Post a Comment

আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার গুরুত্ব ও ফজিলত ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ...