Search This Blog

Saturday, May 2, 2020

ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যা: ৬ না কি ১২? দ্বন্দ্ব নিরসন।


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যা: ৬ না কি ১২? দ্বন্দ্ব নিরসন।

প্রশ্ন: সহীহ হাদিসের আলোকে কয় তাকবীরে ঈদের সালাত পড়তে হয়? ৬ তাকবীর না কি ১২ তাকবীর? ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ায় এমন ঈমামের পেছনে কি ঈদের সালাত পড়া বৈধ হবে?
উত্তর:
ঈদের তাকবীর কতটি এ মর্মে ওলামাদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল, তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত সাত তাকবীর (মতান্তরে ৬ তাকবীর) এবং দ্বিতীয় রাকাতে ১ম রাকআত থেকে উঠার তাকবীর ছাড়া পাঁচ তাকবীর দেয়া অধিক হাদিস সম্মত।
এ ব্যাপারে হাদিসের কিতাবগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
তন্মধ্যে একটি হাদিস নিম্নরূপ:
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى فِي الأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا .
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাকআতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৪৯, সনদ সহিহ)
আরেকটি হাদিস:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التَّكْبِيرُ فِي الْفِطْرِ سَبْعٌ فِي الأُولَى وَخَمْسٌ فِي الآخِرَةِ وَالْقِرَاءَةُ بَعْدَهُمَا كِلْتَيْهِمَا
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ঈদুল ফিতরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাকআতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি এবং উভয় রাকআতেই তাকবীরের পর কিরাত পড়তে হবে।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৫১, সনদ সহিহ)
এ মর্মে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান।
ইরাকী বলেন: এটি অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও ইমামদের অভিমত।
ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: দুই ঈদের নামাযের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ‘হাসান’ সনদে বহু রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়েছেন। কিন্তু, সাহাবায়ে কেরাম এ নিয়ে তীব্র মতানৈক্য করেছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়ীগণ এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। [তামহীদ (১৬/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]
৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়া কি বৈধ?
প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাতের আগে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর ৩ তাকবীর। এটি একদল সাহাবী, ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মুসা (রাঃ) ও আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে এবং এটি ইমাম সাওরী (রহঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমত…[নাইলুল আওতার (৩/৩৫৫) থেকে সমাপ্ত]
মোটকথা, ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়া হোক অথবা ৬ তাকবীরে উভয়টি সহীহ। তবে ১২ তাকবীরের হাদিস সংখ্যা প্রচুর এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া এটি অধিক উত্তম। (যেমনটি শাইখ আলবানী বলেছেন)।
আরেকটি বিষয় হল, এই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো সুন্নত; রোকন বা ওয়াজিব নয়।
সুতরাং ইমাম ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ুক অথবা ১২ তাকবীরে পড়ুন সকল অবস্থায় তার পেছনে সালাত পড়া জায়েয। কেবল তাকবীরের সংখ্যাকে কেন্দ্র করে ঈদের মাঠে ঝগড়া-মারামারি করা বা ঈদের মাঠ ভাগ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।
ঈদ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ঈদ অর্থ কী?
ঈদ অর্থ আনন্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘বারবার ফিরে আসা’ (عَادَ-يَعُوْدُ-عِيْدًا) এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঈদ। আল্লাহ তা‘আলা এদিনে তার বান্দাকে নি‘আমাত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করে থাকেন, বারবার ইহসান করেন। রমযানের পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ফিত্রা প্রদান ও গ্রহণ, হজ পালন ও কুরবানীর গোশত ভক্ষণ ইত্যাদি নি‘আমাত বছর ঘুরিয়ে তিনি বারবার বান্দাদেরকে ফিরিয়ে দেন। এতে মানুষের প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এসব কারণে এ দিবসের নামকরণ হয়েছে ঈদ।
ঈদ কোন হিজরীতে শুরু হয়?
প্রথম হিজরীতেই ঈদ শুরু হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগের নাবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না।
ঈদের প্রচলন কীভাবে শুরু হয়?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাক্কা থেকে মাদ্বীনায় হিজরত করলেন তখন মাদ্বীনাবাসীদের মধ্যে বিশেষ দু’টি দিবস ছিল, সে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু’টি দিনের তাৎপর্য কী? মাদ্বীনাবাসীরা উত্তর দিল আমরা জাহেলী যুগ থেকে এ দু’দিনে খেলাধুলা করে আসছি। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللهُ خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمُ الأَضَحٰى وَيَوْمُ الْفِطْرِ
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দু’টি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু’টি হল : ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবূ দাউদ : ১১৩৪; নাসাঈ : ১৫৫৬)
ঈদের সালাতের হুকুম কী?
ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, ঈদের সালাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ একই মত পোষণ করেন।
ঈদের সালাতের আগে আমাদের করণীয় কী কী?
নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করা সুন্নাত/মুস্তাহাব।
(১) গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব।
(২) ঈদুল ফিতরের দিন খাবার খেয়ে ঈদের সালাতে যাওয়া, আর ঈদুল আযহার দিন না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। তাছাড়া ঈদুল আযহার সালাত শেষে কুরবানীর গোশত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত।
(৩) ঈদগাহে পায়ে হেটে যাওয়া মুস্তাহাব। আর একপথে যাবে এবং ভিন্ন পথ দিয়ে আবার পায়ে হেটেই আসা সুন্নাত।
(৪) তাকবীর পড়া এবং তা বেশি বেশি ও উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত তাকবীর দিতে দিতে যেতেন। [১]
উল্লেখ্য যে, ফজরের সালাতের পর ঈদের সালাতের পূর্বে অন্য কোন নফল সালাত নেই।
[১] ঈদগাহের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে তাকবীর পাঠ শুরু করবে এবং ইমাম সাহেব সালাত শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতে থাকবে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেছেন, ঈদুল ফিতরের তাকবীর শুরু করবে ঈদের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকেই। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর পাঠ করতেন।
ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ধরনের পোশাক পরতেন?
আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ যাদুল মা‘আদে লিখেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তাঁর এক জোড়া পোশাক ছিল যা দু’ ঈদ ও জুমু‘আর দিন পরিধান করতেন। অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
إِنَّ اللهَ تَعَالٰى يُحِبُّ أَنْ يَرى أَثَرَ نِعْمَتِهِ عَلٰى عَبْدِهِ
আল্লাহ রাববুল আলামীন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নি‘আমাতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। (তিরমিযী : ২৮১৯)
কোন পুরুষ লোক যদি রেশমী কাপড় পরে তাহলে এর হুকুম কি?
পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় পরা হারাম। আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার বাজার থেকে একটি রেশমী কাপড়ের জুব্বা নিয়ে এলেন এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা দিয়ে বললেন : (হে আল্লাহর রাসূল) আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় ও আগত গণ্যমান্য অতিথিদের সাথে সাক্ষাতের সময় এটা পরিধান করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
إِنَّمَا هٰذِهِ لِبَاسٌ مَنْ لاَخَلاَقَ لَهُ
‘এটা ঐ ব্যক্তির পোশাক যে আখিরাতে আল্লাহর কাছে কিছুই পাবে না।’ তাছাড়া বর্তমান সিল্ক হিসেবে যেসব কাপড় পাওয়া যায় সেগুলোও রেশমী কাপড়। (বুখারী : ৯৪৮)
ঈদের দিন খাবার গ্রহণ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাত কী ছিল?
(১) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে ঘরে থেকে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন ঈদের সালাত আদায় না করে কোন কিছু খেতেন না।
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- لاَ يَغْدُوْ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتّٰى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ
(২) ঈদুল ফিতরের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে রওয়ানা হতেন না। আনাস বলেন, আর খেজুর খেতেন বেজোড় সংখ্যায় (অর্থাৎ তিনটি, পাঁচটি বা সাতটি এভাবে)। (বুখারী : ৯৫৩)
ঈদগাহে কখন যাওয়া উত্তম?
ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ যাতে ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসা যায়, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা যায়। তাছাড়া সালাতের জন্য অপেক্ষা করা এসব অতীব সওয়াবের কাজ।
ঈদের সালাতে যাওয়া-আসায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি পথ ব্যবহার করতেন। একপথে যেতেন, ভিন্ন আর এক পথে বাড়ী ফিরতেন। এর হিকমত কী?
উলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে বিভিন্ন হিকমাত বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন :
(১) পথ ভিন্ন ভিন্ন হলে উভয় পথের লোকদের সালাম দেয়া যায় এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।
(২) মুসলিমদের অবস্থা ও শান শওকত পর্যবেক্ষণ করতে পারা যায়।
(৩) গাছপালা তরুলতা ও মাটি মুসল্লীদের পক্ষে স্বাক্ষী হয়ে থাকতে পারে।
ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাকবীর পড়তে পড়তে যেতেন সেটি কোন তাকবীর?
তাকবীরটি হল :
اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ
اَللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَللهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ অতিমহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোন মা‘বুদ নেই। আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য।
তাকবীর কীভাবে পড়ব?
তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। আর তা বেশি বেশি পড়াও সুন্নাত।
তাকবীর পাঠ কখন শুরু ও শেষ করব?
ঈদগাহের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে তাকবীর পাঠ শুরু করবে এবং ইমাম সাহেব সালাত শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতে থাকবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেছেন, ঈদুল ফিতরের তাকবীর শুরু করবে ঈদের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকেই। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর পাঠ করতেন।
মেয়েদের কি ঈদের সালাতে যাওয়া জায়েয আছে?
হ্যা, অবশ্যই। উলামায়ে কিরাম এটাকে জরুরী বলেছেন। তারা যাবে।
পাঁচওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আর জামাতে শরীক হওয়ার জন্য মেয়েদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিয়েছেন। আর ঈদের সালাতের যাওয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে আছে যে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ نُخْرِجَ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى الْعَوَائِقَ وَالْحَيْضَ وَذَوَاتِ الْخُدُرِ فَأَمَّا الْحَيْض فَيَعْتَزِلن الصَّلاَةَ وَيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةِ الْمُسْلِمِيْنَقَالَتْ يَارَسُوْلَ اللهِ إِحْدَانَا لاَ يَكُوْنُ لَهَا حِلْبَابَ قَالَ لتلبسَهَا أُخْتِهَا
‘‘উম্মে আতীয়াহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহিনীসহ সকল মহিলাকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে শরীক হওয়ার জন্য ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাই। এমনকি মাসিক হায়েয চলাকালীন মেয়েরাও (ঈদগাহে হাজির হবে। তবে তারা) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু ঈদের কল্যাণকর অবস্থা তারা প্রত্যক্ষ করবে এবং মুসলিমদের সাথে দু‘আয় ঋতুবতী মহিলারাও শরীক হবে।
বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কারো কারো উড়না নেই (বড় চাদর নাই যা পরিধান করে ঈদগাহে যেতে পারে)। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ওড়না নেই সে তার অন্য বোন থেকে (ধার করে) ওড়না নিয়ে তা পরিধান করে ঈদগাহে যাবে। (মুসলিম : ৮৯০)
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত এ হাদীসে যে ঋতুবতী মহিলার উপর সালাত আদায় ফরজ নয় তাকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যার উড়না নেই তাকেও একটা উড়না ধার করে নিয়ে ঈদের সালাতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ হাদীস দ্বারা অনেক বিজ্ঞ উলামায়ে কিরাম মেয়েদের ঈদের সালাতে যাওয়া ওয়াজিব বলেছেন।
 যেসব লোক একথা বলেন যে, বর্তমান যুগ ফিতনার যুগ, মেয়েদের নিরাপত্তা নেই এসব কথা বলে মেয়েদেরকে ঈদের সালাত থেকে বঞ্চিত রাখছেন। তাদের এ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা যেন প্রকারান্তরে এ হাদীসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। শেষ যামানার ফিতনা বাড়বে একথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের চেয়ে বেশি অবগত থাকার পরও মহিলাদেরকে ঈদের সালাতে যেতে হুকুম দিয়েছেন। আর এ হুকুম সুন্নাত নয়, বরং ওয়াজিব।
মেয়েরা ঈদের সালাতে গেলে পথিমধ্যে তাকবীর বলা, সালাতে শরীক হওয়া, বয়ান ও ওয়াজ নসীহত শোনার সৌভাগ্য তাদের হয়ে থাকে। কাজেই ক্ষতির যে আশংকা করা হয় এর চেয়ে তাদের উপকারের দিকই বেশি।
তাই সম্মানিত ঈদগাহ কর্তৃপক্ষের উচিৎ তারা যেন মেয়েদের জন্য পৃথক প্যান্ডেল তৈরীকরে দেন আর মেয়েরাও যেন সম্পূর্ণ শরয়ী পর্দা করে অত্যন্ত শালীনভাবে পথ চলেন, ঈদগাহে যাওয়া আসা করেন। কাউকে ডিস্টার্ব না করেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ হাদীস আমল করার ও হক পথে থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন!
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা- এর কোনটি আওয়াল ওয়াক্তে (অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে) পড়ব?
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন,
নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের সালাত একটু দেরী করে আদায় করতেন। আর ঈদুল আযহার সালাত প্রথম ওয়াক্তে তাড়াতাড়ি আদায় করতেন। (যাদুল মা‘আদ)
এ বিষয়ক সকল হাদীস বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, সূর্যোদয়ের পর থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ঈদুল আযহা এবং আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঈদুল ফিতর পড়া উত্তম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের সালাত ঈদুল আযহার সালাতের চেয়ে একটু দেরী করে পড়তেন কেন?
তুলনামূলক ভাবে ঈদুল ফিতরের সালাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু দেরী করে পড়তেন এ কারণে যাতে লোকেরা সাদাকাতুল ফিতর (অর্থাৎ ফিত্রা) প্রদানের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিয়ে ঈদগাহে যেতে পারে।
আর ঈদুল আযহা তাড়াতাড়ি প্রথম ওয়াক্তে আদায় করতেন যাতে করে সালাত শেষ করে কুরবানীর পশু জবাইয়ের কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
ঈদের সালাত কোথায় আদায় করা সুন্নাত?
কোন একটা মাঠে ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় ঈদের সালাত আদায় করতেন?
যাদুল মা‘আদ কিতাবে ইবনুল কায়্যিম (রহ.) লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করেছেন।
হাদীসে আছে যে,
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাত আদায়ের জন্য ঈদগাহে যেতেন। (বুখারী : ৯৫৬)
বৃষ্টি, ঝড়-তুফান ও নিরাপত্তহীনতা ইত্যাদি অবস্থায় মাসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা কি জায়েয হবে?
হা, জায়েয আছে।
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার বৃষ্টি হওয়ায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে মাসজিদে ঈদের সালাত আদায় করেছিলেন। (আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ মিশকাত)
(অবশ্য নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী (রহ.) এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন)
ঈদের সালাতে কোন আযান ও ইকামাত নেই এ বিষয়ে দলীল আছে কি?
হাঁ, দলীল আছে।
(১) ইবনে আব্বাস ও জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তারা বলেন,
لَمْ يَكُنْ يُؤَذِّنْ يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الأَضْحٰى
(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র যামানায়) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে আযান দেয়া হতো না। (বুখারী : ৯৬০)
(২) জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- الْعِيْدَيْنِ غَيْرَ مَرَّةٍ وَلاَ مَرَّتَيْنِ بِغَيْرِ آذَانٍ وَلاَ إِقَامَةٍ
আমি বহুবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে দু’ ঈদের সালাত আদায় করেছি কোন আযান ও ইকামাত ছাড়াই। (মুসলিম : ৮৮৭)
ঈদের সালাত কত রাকআত?
দুই রাকা‘আত।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
صَلاَةُ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْفِطْرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الأَضْحَى رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ السَّفَرِ رَكْعَتَانِ
জুমু‘আর সালাত দু’ রাক‘আত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু’ রাক‘আত, ঈদুল আজহার সালাত দু’ রাক‘আত এবং সফর অবস্থায় (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয) সালাত দুই রাক‘আত। (নাসাঈ : ১৪২০)
এ দু’ রাক‘আত ঈদের সালাতের আগে পরে কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল সুন্নাত সালাত পড়তেন?
না, ঈদের সালাতের সাথে এর আগে পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল সুন্নাত সালাত আদায় করেননি। (মুসনাদে আহমাদ)
ঈদের সালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বাধার পর ‘‘আল্লাহু আকবার বলে অতিরিক্ত যে কিছু তাকবীর দেয়া হয় এর মোট সংখ্যা কত?
এ বিষয়ে প্রধানতঃ দু’টি মত রয়েছে :
(ক) প্রথম মতঃ
 ১ম ও ২য় রাক‘আতে অতিরিক্ত ৩ + ৩ = মোট ৬ তাকবীর। এটি হানাফী মাযহাবের ইমাম আবূ হানিফার (রহ.) মত।
(খ) দ্বিতীয় মত হলঃ
১ম ও ২য় রাক‘আতে যথাক্রমে অতিরিক্ত ৭ + ৫ = মোট ১২ তাকবীর। এটি বাকী ৩ মাযহাবের মত।
যারা অতিরিক্ত ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় করেন তাদের দলীল কি?
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে ৪ তাকবীরে ঈদের নামাযের স্বপক্ষে একটি হাদীস পাওয়া যায়। একদল ফকীহ এ ৪ তাকবীরকে প্রথম রাকাতে তাকবীরে উলার সাথে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর তাকবীর সহ ৩ তাকবীর-এভাবে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুহাদ্দিস আল্লামা নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী (রহঃ) এটাকে দুর্বল হাদীস বলেছেন।
প্রথম রাকআতে অতিরিক্ত ৭ এবং দ্বিতীয় রাকআতে অতিরিক্ত ৫ তাকবীরে (অর্থাৎ অতিরিক্ত মোট ১২ তাকবীরে) যারা ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন তাদের দলীল কি?
(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأضْحٰى فِي الأُوْلٰى سَبْعَ تَكْبِيْرَات وَفِيْ الثَّانِيَةِ خَمْسًا
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে ১ম রাকআতে (অতিরিক্ত) ৭টি তাকবীর ও ২য় রাকআতে (অতিরিক্ত) ৫টি তাকবীর পাঠ করতেন। (আবূ দাউদ : ১০১৮)
[২] হাদীসে আরো এসেছে :
ابنُ عباس كَبَّرَ فِي العِيْدِ اثْنَتَى عَشَرَةَ تَكْبِيْرَةً سَبْعًا فِي الأُوْلَى وَخَمْسًا فِي الآخِرَةِ
(প্রখ্যাত সাহাবী) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ঈদের সালাতে অতিরিক্ত) ১২ তাকবীর বলেছেন। প্রথম রাকআতে ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকআতে ৫টি। (বায়হাকী ৩/৪০৭)
অতিরিক্ত ৬ তাকবীর ও ১২ তাকবীরের মধ্যে দলীল হিসেবে কোনটি বেশি শক্তিশালী?
অধিকাংশ আলেম ১২ তাকবীরের মাসআলাকে বেশি শক্তিশালী বলেছেন। তাছাড়া এ মাসআলার উপর আমল করেছেন একই মাযহাবের ইমাম আবূ হানীফার অনুসারী তার দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.)। মালিকী, শাফিঈ‘, হাম্বলী মাযহাব ও আহলে হাদীসের লোকেরা এবং মাক্কা ও মাদ্বীনার ইমামগণ এভাবে অতিরিক্ত ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন। (রাদ্দুল মুহতার ৬৬৪ পৃঃ)
আমরা যারা হানাফী মাযহাবের অনুসারী তারা কি অতিরিক্ত ১২ তাকবীরের মাসআলাটি আমল করতে পারি?
হ্যাঁ, তা আমল করা জায়েয আছে। বিখ্যাত হানাফী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম আবু হানীফা (র.) বলেছেন, কোন মাসআলায় সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তাঁর অনুসারীরা তা আমল করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে এটাও তাঁরই মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। তিনি বলেছেন :
إذا صَحَّ الْحَدِيْثُ فَهُوَ مَذْهَبِيْ
‘‘ছহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব বলে গণ্য হবে।’’
আল্লাহু আকবার বলে যে অতিরিক্ত তাকবীর দেয়া হয় এর হুকুম কি?
হানাফী ও মালেকী মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা ওয়াজিব। এটা ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে।
পক্ষান্তরে অন্যান্য মাযহাবে বাড়তি তাকবীর বলা সুন্নাত।
বাড়তি তাকবীর বলার সময় প্রত্যেক তাকবীরেই কি হাত উঠাতে হবে?
হ্যাঁ। দ্বিতীয় খলীফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু জানাযা ও ঈদের সালাতে প্রত্যেক তাকবীরে দু’হাত তুলতেন। (বায়হাকী)
প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় কোন পর্যন্ত হাত তুলতে হয়?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলার সয়ম দু’ হাত তাঁর কাঁধ বা কান পর্যন্ত তুলতেন।
অতিরিক্ত তাকবীরগুলো কখন বলতে হয়?
এ প্রশ্নেও মতবিরোধ রয়েছে।
[ক] প্রথম মত ৬ তাকবীরের মাসআলা :
সালাতে দাড়িয়ে নিয়ত করে তাকবীরের তাহরীমা বাঁধার পর অতিরিক্ত আরো ৩ তাকবীর দিবে এবং ২য় রাক‘আতে কিরা‘আত শেষ হলে রুকুর পূর্বে বাড়তি আরো ৩ তাকবীর দেবে। অবশেষে ৪র্থ তাকবীর দিয়ে রুকুতে চলে যাবে।
[খ] দ্বিতীয় মত ১২ তাকবীরের মাসআলা :
প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলার পর অতিরিক্ত আরো ৭ বার তাকবীর বলবে এবং দ্বিতীয় রাক‘আতের শুরুতেও সূরা ফাতেহা পড়ার আগেই অতিরিক্ত আরো ৫ বার তাকবীর বলবে।
সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
شَهِدْتُ الأَضْحَى وَالْفِطْرَ مَعَ أَبِيْ هُرَيْرَةَ فَكَبَّرَ فِي الرَّكْعَةِ الأُوْلَى سَبْعَ تَكْبِيْرَات قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَفِي الآخِرَةِ خَمْسَ تَكْبِيْرَاتٍ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ
আমি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাত (সাহাবী) আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু’র সাথে আদায় করেছি। তাতে তিনি প্রথম রাকাআতে কিরআত পাঠ (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা শুরু) করার আগেই ৭ (সাত) তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে (একই নিয়মে) কিরাআত পাঠ করার পূর্বেই ৫ (পাঁচ) তাকবীর বলতেন। (বায়হাকী : ৩/৪০৬)
ইমাম বায়হাকী বলেছেন, এটাই সুন্নাতী নিয়ম।
অতিরিক্ত তাকবীর বলার ক্ষেত্রে প্রতি দু’ তাকবীরের মাঝখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন কিছু পড়তেন?
না, তখন তিনি চুপ থাকতেন।
অতিরিক্ত তাকবীর বলার সময় হাত বাঁধবে নাকি ছেড়ে দেবে?
হাত বেঁধে ফেলবেন।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে ঈদের সালাত আদায় করব?
(ক) প্রথম নিয়ম :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে ঈদগাহে যাওয়ার সময় একটি লাঠি বা বল্লম বয়ে নিয়ে যাওয়া হত এবং সালাত শুরুর আগেই সেটা তার সমনে ‘সুতরা’ হিসেবে মাটিতে গেড়ে দেয়া হত। (বুখারী পৃঃ ১৩৩)
অতঃপর তিনি (নিয়ত করে) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা.........’’ পড়তেন। (ইবনে খুযাইমা)
তারপর সূরা ফাতিহা পড়ার পূর্বেই তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একের পর এক মোট ৭ বার তাকবীর দিতেন (অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলতেন)। প্রতি দু’ তাকবীরের মাঝখানে তিনি একটুখানি চুপ থাকতেন। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সুন্নাত অনুসরণের অধিক পাবন্দি হওয়ার কারণে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে দু’ হাত তুলতেন এবং প্রত্যেক তাকবীরের পর আবার হাত বেঁধে ফেলতেন। (বায়হাকী)
এভাবে ৭টি তাকবীর বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ফাতিহা পড়তেন। এরপর তিনি আরেকটি সুরা মিলিয়ে পড়তেন। এরপর তিনি রুকুও সিজদা করতেন।
এভাবে প্রথম রাক‘আত শেষ করার পর সাজদাহ থেকে উঠে (সূরা ফাতিহা শুরুর পূর্বেই) তিনি (২য় রাকাতে) পরপর ৫টি তাকবীর দিতেন। তারপর সূরা ফাতিহা পড়ে আরেকটি সূরা পড়তেন। এরপর তিনি রুকু ও সাজদাহ করে দু’ রাক‘আত ঈদের সালাত শেষ করতেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি একটি তীরের উপর ভর দিয়ে যমীনে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। তখন ঈদগাহে কোন মিম্বর নেয়া হত না। তারপর দু’আ করে শেষ করে দিতেন। (যাদুল মা‘আত ১ম খণ্ড)
(খ) দ্বিতীয় নিয়ম :
দ্বিতীয় নিয়মটি প্রথমটির মতই। শুধু পার্থক্য হল ১ম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমার পর অতিরিক্ত ৩ তাকবীর বলবে এবং এর প্রথম দু’ তাকবীরে হাত ছেড়ে দেবে এবং শেষ তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলবে।
আর দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা শেষে রুকুর পূর্বে অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দেবে এবং প্রত্যেক তাকবীরেই হাত ছেড়ে দেবে। অতঃপর ৪র্থ তাকবীর বলে রুকুতে চলে যাবে। আর বাকী সব নিয়মকানুন একই।
সলাতুল ঈদে সূরা ফাতিহা পড়ার পর কোন সূরা পড়া মুসতাহাব?
প্রথম রাক‘আতে সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়াহ পড়া। অথবা প্রথম রাক‘আতে সূরা কাফ এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা কামার পড়া। (মুসলিম : ৮৯১) এভাবে পড়া মুস্তাহাব। না পারলে যেকোন সূরা দিয়ে পড়া জায়েয আছে। এতে কোন ক্ষতি নেই।
ঈদের খুৎবা কখন দিতে হয়?
সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর (আর জুমু‘আর খুৎবা দিতে হয় সালাতের আগে)। (মুসলিম)
ঈদের খুৎবা শ্রবণ ফরয, ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব?
মুস্তাহাব। আর জুমু‘আর খুৎবা শোনা ওয়াজিব। তবে যারা ঈদের খুৎবা না শুনে চলে যাবে তাদের গোনাহ না হলেও তারা ঈদের গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ ও ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে।
কি শব্দ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা শুরু করতেন?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত খুৎবাই ‘‘আলহামদু লিল্লাহ’’ বাক্য দ্বারা শুরু করতেন।
ঈদের খুৎবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলতেন?
প্রথমে তিনি সালাত শেষে মুসুল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। অতঃপর খুৎবা দেয়া শুরু করতেন। খুৎবাতে তিনি ওয়াজ-নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং বিভিন্ন নির্দেশও দিতেন। আর এ অবস্থায় মানুষেরা তাদের কাতারে বসে থাকত। (বুখারী)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ঈদুল ফিতরে খুৎবায় ফিত্রা এবং ঈদুল আযহার খুৎবায় কুরবানী মাসআলা-মাসায়েল আলোচনা করা উচিৎ।
খুৎবা কি একটি ধরাবাধা গদ? যা ইমাম সাহেব ঈদগাহে পড়বেন?
না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগের চাহিদা অনুসারে সময়োপযোগী বক্তৃতা করতেন। ঐ বৃক্তৃতাই ছিল খুৎবা। আমাদেরও তাই করা উচিৎ। এজন্য সুন্নাত হলো খুৎবা দেয়া, খুৎবা দেখে দেখে পড়া নয়।
খুৎবা কি বাংলায় দেয়া জায়েয হবে?
হা, তা জায়েয আছে।
হারামাইন শরীফাইনের ইমাম শেখ আবদুল্লাহ সুবাইল বলেছেন, প্রত্যেক জাতি তার নিজের ভাষায় খুৎবা দিবে। যাতে খুৎবায় যে উপদেশ দেয়া হয় তা যেন মুসল্লীরা বুঝতে পারে, উপকৃত হতে পারে।
টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক দেশ বরেণ্য আলেম অধ্যক্ষ সাইয়্যেদ কামালুদ্দ্বীন জাফরী ঢাকাস্থ উত্তরার আযমপুরস্থ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মাসজিদে বাংলায় খুৎবা দিয়ে থাকেন।
তাছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন কিছু কিছু মাসজিদে বাংলায় খুৎবা দেয়া শুরু হয়েছে।
ঈদের খুৎবা শেষে দু‘আ কি ইমাম সাহেবের সাথে জামাতবদ্ধভাবে নাকি একাকী-কোনটি সুন্নাত তরীকা?
সুন্নাত হলো একাকী মুনাজাত করা। ফরয, জুমু‘আ ও ঈদের সালাতের পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো ইমামের সাথ জামাতবদ্ধভাবে দু‘আ করেননি। তবে বৃষ্টির সালাত, কুনূতে নাযিলা ও বিতরের সালাতের শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম ও মুক্তাদীরা জামাতবদ্ধ হয়ে দু‘আ মুনাজাত করেছেন।
আর ফরয সালাতের পর যেহেতু দু‘আ কবূল হয় সেহেতু আমাদেরও উচিৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত তারীকায় একাকী মুনাজাত করা। আর হৃদয়ের সমস্ত আবেদন নিবেদন ও হাজত সে মুহূর্তে আল্লাহর কাছে পেশ করা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী কওমী মাদরাসা, টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা, নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা, একই জেলার রায়পুরাস্থ সিরাজ নগর উম্মুল কুরা মাদরাসা, ও মাক্কা-মদ্বীনায় ইমাম-মুক্তাদীগণ ফরয সালাতের শেষে সম্মিলিত দু‘আ করেন না। প্রত্যেকে একাকী দু‘আ করে থাকেন। আর এটাই হল সুন্নাত তরীকা।
ঈদের জামাআত না পেলে কি করব? কাযা আদায় করতে হবে কি?
অনেক বিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের মতে দু’ রাকআত কাযা আদায় করতে হবে।
অপরদিকে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, ঈদের সালাত ধরতে না পারলে ইচ্ছা করলে কাযা আদায় করতে পারে। আর না করলেও কোন অসুবিধা নেই। যদি আদায় করে তবে চার রাক‘আতও আদায় করতে পারে, আবার দু’ রাক‘আতও পারে।
যে ব্যক্তি জামাত পাবে না সে একাও পড়তে পারে, আবার দু’ তিনজন পুরুষ বা নারী হোক তাদেরকে নিয়ে জামাতেও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে খুৎবা দেয়া প্রয়োজন নেই।
একবার আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ঈদের জামাআত না পেয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দু’রাক‘আতে সালাত আদায় করেছিলেন।  (বুখারী)
জামা‘আতে যদি এক রাক‘আত কম পায় তাহলে বাকী এক রাক‘আত নিজে নিজে পড়ে নিবে।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের নির্দিষ্ট কোন পরিভাষা আছে কি?
হাঁ, সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময়ে একে অপরকে বলতেন :
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ
‘‘আল্লহ তা‘আলা আমাদের ও আপনার ভাল কাজ কবূল করুন।’’ (ফতহুল বারী)
এছাড়াও বলা যেতে পারে :
كُلَّ عَام وَأَنْتُمْ بِخَيْرٍ
প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন।
অথবাঃ
(عِيْدٌ سَعِيْدٌ) عِيْدٌ مُبَارَكٌ
ঈদ মোবারক (আপনাকে বরকতময় ঈদের শুভেচ্ছা)।
ঈদের সালাত থেকে বাড়ী ফিরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কোন কাজটি করতেন?
দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করতেন। সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,
أَنَّهُ كَانَ لاَ يُصَلِّىْ قَبْلَ الْعِيْدِ شَيْئًا فَإِذَا رَجَعَ إِلَى مَنْزِلِهِ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঈদের দিন ফজরের সালাতের পর থেকে) ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে কোন প্রকার সুন্নাত নফল সালাত পড়েন নি। (ঈদগাহ থেকে) বাড়ী ফিরেই তিনি প্রথমে দু’রাক‘আত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন। (ইবন মাজাহ : ১২৯৩)
উল্লেখ্য যে, ঈদের সময় আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, তাদের খোঁজ খবর নেয়া, তাদেরকে দাওয়াত দেয়া এগুলো উত্তম ইবাদত।
পবিত্র ঈদের কল্যাণ হাসিলের জন্য কী ধরণের কাজ থেকে সতর্ক থাকা উচিত?
নিম্নবর্ণিত পাপাচার থেকে দূরে থাকা ফরয :
(১) অমুসলিমদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা ও আচার-আচরণ করা।
(২) ছেলেরা মেয়েদের এবং মেয়েরা ছেলেদের বেশ ধারণ।
(৩) বেগানা নারী পুরুষ একত্রে দেখা সাক্ষাৎ করা।
(৪) মহিলাদের বেপর্দা ও খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাট ও বাজার বন্দরে চলাফেলা করা।
(৫) গানবাদ্য করা ও সিনেমা-নাটক দেখা।
কারো পোশাক যদি অন্য ধর্মীয় লোকদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে এর হুকুম কি?
এটা হারাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
‘‘যে কেউ অন্য জাতির অনুসরণ করবে সে সে ঐ কওমের (বা ধর্মের) লোক বলে বিবেচিত হবে।’’ (আবূ দাউদ : ৪০৩১)
পোশাক-আশাক, চুলটাকা ও চালচলনে মেয়েরা ছেলেদের এবং ছেলেরা মেয়েদের অনুসরণ করলে এর হুকুম কি?
এ ধরনের ছেলে ও মেয়েদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী ৫৮৮৪)
যেসব মেয়ে বেপর্দা অবস্থায় দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে বের হয় তাদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন?
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سَيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُؤْوْسُهُنَّ كَأَسْنمَة الْبَخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَإِنَّ رِيْحَهَا لَيُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةٍ كَذَا وَكَذَا
দু’ ধরনের লোক দুনিয়ায় আসবে যাদেরকে আমি এখনো দেখতে পাইনি (আমার যুগের পরে তাদের আগমন) এদের একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করতে থাকবে। আর একদল লোক হবে এমন মেয়েলোক যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত থাকবে, অন্য পুরুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করবে, অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েও যাবে, তাদের মাথার চুলের অবস্থা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মত। ঐসব মেয়েরা জান্নাতেতো প্রবেশ করবেই না, এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও তারা পাবে না যদিও জান্নাতের সুগন্ধী বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম : ২১২৮)
দেবরেরা কি ভাবীর সাথে দেখা করতে পারবে?
না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اَلْحَمْوُ الْمَوْتُ ‘‘দেবর-ভাসুর মৃত্যু সমতুল্য ভয়ানক বিষয়।’’ অর্থাৎ মৃত্যু যেমন জীবনের জন্য ভয়ানক, অনুরূপভাবে চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাইবোন ও দেবর ভাবী ও শালিকা -দুলাভাইয়ের সাক্ষাত ঈমান আমলের জন্য তদ্রূপ ভয়ানক।
ইসলামে গান বাদ্যের হুকুম কি? যাতে ঈদের সময় মানুষকে আরো বেশি লিপ্ত হতে দেখা যায়?
গান ও বাদ্যযন্ত্র শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এটা সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لِيَكُوْنَ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِيْ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَّ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোক থাকবে যারা যেনা-ব্যভিচার, রেশমী পোশাক পরিধান, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (বুখারী : ৫৫৯০)


(সমাপ্ত)

রমজান ও সিয়াম সম্পর্কে আরো অধিক তথ্য জানতে এদের উপর ক্লিক করুনঃ
 
===============================================

মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিলফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা- আলিয়াঢাকাবাংলাদেশ।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Twitter, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Addressসহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন।
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
 “যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না।” [মুসলিম (২৬৭৪)]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইস্রাঈল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদীস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিল।” 
(বুখারী ৩৪৬১,হাদিস  সম্ভার, হাদিস নং ১৫৪৮,  রিয়াদুস  সলেহিন,  হাদিস নং  ১৩৮৮।)

===============================================
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি  কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উপদেষ্টা-
মোঃ আনোয়ার হোসাইন আকন্দ (কামিলফার্স্ট ক্লাশ-আল হাদিস)
সরকারি মাদ্রাসা- আলিয়াঢাকাবাংলাদেশ।
-----------------------------------------------------------------
(1) BCSসহ যেকোনো সরকারি বেসরকারি চাকরি সহজে পেতে এখানে ক্লিক করুন
(2) মজার মজার ইসলামিক গজল অন্যান্য বিষয়ের ভিডিও দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন

-------------------------------------------------------------------
Please Share On

No comments:

Post a Comment

দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত

    বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দান-ছাদাক্বা করার গুরুত্ব ও ফজিলত   আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস...