বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম
সহিহ
হাদিসের আলোকে
ছিয়াম (রোজা) পালনের সহিহ নিয়ম
ছওম বা ছিয়ামঃ অর্থ বিরত থাকা। শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছুবহে ছাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ
হতে বিরত থাকাকে ‘ছওম’ বা ‘ছিয়াম’ বলা হয়।
ইমাম নাবাবী ও হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনঃ
নির্দিষ্ট শর্তের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকাকে সিয়াম
বলে।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এমন কিছু গুণ যা ইতিবাচক
এবং যা ’আমল করা জায়িয তা ব্যতিরেকে সকল নিষিদ্ধ কাজ হারাম।
আমীর ইয়ামানী বলেনঃ নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত
থাকা। আর তা হলো খাওয়া, পান করা ও সহবাস।
দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজান মাসে রোজা পালন ফরয
করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়টি রমজান সিয়াম পালন করেছেন। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ “আল- মাজমূ”(৬/২৫০)
-গ্রন্থে বলেন: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নয় বছর রমজানের রোজা পালন করেছেন।
কারণ রমজানের রোজা ২য় হিজরির শাবান মাসে ফরয করা হয়েছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ১১ হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেন।”
রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে,
যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা (তাকওয়া)
অর্জন করতে পার”। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে,
সে যেন এ মাসের রোজা রাখে”। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)।
রাসুল সাঃ বলেন,
(ক) তালহা ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত
যে, এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নিকট এলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর
কত সালাত ফরজ করেছেন? তিনি বললেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায়
কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ
করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমাযান মাসের সওম; তবে
তুমি যদি কিছু নফল সিয়াম আদায় কর তা হল স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ
আমার উপর কী পরিমাণ যাকাত ফরজ করেছেন? রাবী বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি
আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরজ করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু
বাড়াব না এবং কমাবও না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে সত্য
বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৮৯১, ৯৪৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯১)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih)।
(খ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের জন্য রমাযানের বারাকাতময় মাস এসেছে। এ মাসে সওম রাখা আল্লাহ তোমাদের
জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয়
জাহান্নামের সব দরজা। এ মাসে বিদ্রোহী শয়তানগুলোকে কয়েদ করা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে
যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো; সে অবশ্য
অবশ্যই প্রত্যেক কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত রইল। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯৬২, সুনান আননাসায়ী ২১০৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৬৭, আহমাদ ৭১৪৮, সহীহ আত্
তারগীব ৯৯৯, সহীহ আল জামি‘ ৫৫, শু‘আবূল ঈমান ৩৩২৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মাহে রমাযান (রমজান) শুরু হলে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য এক বর্ণনায়
আছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে
শিকলবন্দী করা হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৮৯৯, ৩২৭৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৩৮৫-২৩৮৭,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭৯, সুনান আননাসায়ী ২০৯৯, ২০৯৭, ২১০২, আহমাদ ৭৭৮০, মুসান্নাফ
‘আবদুর রাযযাক ৭৩৮৪, ৭৭৮১, ৯২০৪, শু‘আবূল ঈমান ৩৩২৬, সহীহ ইবনু হিববান ৩৪৩১)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন রমাযান (রমজান) মাসের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও অবাধ্য জীনদেরকে বন্দী করা
হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর একটিও খোলা রাখা হয় না। এদিকে জান্নাতের
দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আহবানকারী (মালাক বা ফেরেশতা) ঘোষণা
দেন, হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারী! আল্লাহর কাজে এগিয়ে যাও। হে অকল্যাণ ও মন্দ অনুসন্ধানী!
(অকল্যাণ কাজ হতে) থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে
মুক্ত করেন এবং এটা (রমাযান (রমজান) মাসের) প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৬০, সুনান আততিরমিযী ৬৮২, সুনান
ইবনু মাজাহ ১৬৪২, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৮৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩২, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৮৫০১, সহীহ ইবনু হিববান ৩৪৩৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৫৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
রোজা বা ছিয়ামের ফজিলত
(ক) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন
করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের
আশায় ’ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের
সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ’ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা
করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৮, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ৭৬০, সুনানে আবূ দাঊদ ১৩৭২, সুনান আননাসায়ী ২২০৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৪১,
ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৭৫, আহমাদ ৭১৭০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮৫০৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪৩২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৬৫১, ইসলামীক সেন্টার ১৬৫৮)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক ’আমল দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহ
তা’আলা বলেন, কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো সওম। কেননা, সওম আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই
এর প্রতিদান দিব। কারণ সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির তাড়না ও খাবার-দাবার
শুধু আমার জন্য পরিহার করে। সায়িমের জন্য দু’টি খুশী রয়েছে। একটি ইফতার করার সময় আর
অপরটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির
চেয়েও বেশী পবিত্র ও পছন্দনীয় এবং সিয়াম ঢাল স্বরূপ (জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কবচ)।
তাই তোমাদের যে কেউ যেদিন সায়িম হবে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে আর শোরগোল বা উচ্চবাচ্য
না করে। তাকে কেউ যদি গালি দেয় বা কটু কথা বলে অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন
বলে দেয়, ‘আমি একজন সায়িম’। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৯৫৯, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৪, ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৯৬,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫১, সুনান আননাসায়ী ২২১৭, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৩৮, ইবনু আবী
শায়বাহ্ ৮৮৯৪, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৪২৩, আহমাদ ৭৬৯৩, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৮৩৩২, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৮০)। হাদিসের মানঃ
সহিহ (Sahih।
(গ) সাহল
ইবনু সা’দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ’রইয়্যান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ
ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৫৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩২৫৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮৫২২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা’আত করবে
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা’আত করবে।
সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা
দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা’আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে
রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের
সুপারিশই কবূল করা হবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৬৩,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ২০৩৬, শু‘আবূল ঈমান ১৮৩৯, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৮২, সহীহ আত্ তারগীব
৯৭৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছিয়াম সম্পর্কিত বিভিন্ন মাসায়েল
১. ছিয়ামের নিয়তঃ নিয়ত অর্থ- মনন করা বা সংকল্প করা। অতএব
মনে মনে ছিয়ামের সংকল্প করাই যথেষ্ট। হজ্জের তালবিয়া ব্যতীত ছালাত, ছিয়াম বা অন্য কোন
ইবাদতের শুরুতে আরবী বা অন্য ভাষায় নিয়ত পড়া বিদ‘আত।
সমাজে প্রচলিত আরবি নিয়ত যা পড়া বিদআত: নাওয়াইতু
আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল
মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। আরবী ভাষার এই নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে ছিয়াম শুরু
করা বিদআত।
ছিয়ামের নিয়ত কখন করবেঃ
হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের আগে সওমের নিয়্যাত করবে
না তার সওম হবে না। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮৫,
আবূ দাঊদ ২৪৫৪, তিরমিযী ৭৩০, নাসায়ী ২৩৩৩, আহমাদ ২৬৪৫৭, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৩৩, মু‘জামুল
কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৩৫)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
২. ইফতারের দো‘আঃ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’
বলে শেষ করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৪১৯৯, সহীহ
বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৪৫৮, সুনান আবূ দাঊদ ৩৮৪৯, সুনান ইবনু মাজাহ ৩২৮৪, মুসনাদে
আহমাদ ২২২০০, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭৩৪৫, দারিমী ২০২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান
৫২১৭, শু‘আবুল ঈমান ৬০৩৮, আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৫০)।
ইফতারের দো‘আ হিসাবে প্রসিদ্ধ আল্লাহুম্মা
লাকা ছুমতু... হাদীছটি ‘যঈফ’। উক্ত দোয়াটি পড়ে ছিয়াম ভঙ্গ করা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত
নয়।
মূল হাদিসঃ
মু‘আয ইবনু যুহরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার সময় (এ দু‘আ) বলতেনঃ
‘‘আল্ল-হুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া
‘আলা- রিযকবিকা আফত্বরতু’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার জন্য সওম রেখে,
তোমার [দান] রিযক দিয়ে ইফতবার করছি)। (মিসকাতুল মাশাবিহ
মিসকাত ১৯৯৪, সুনানে আবূ দাঊদ ২৩৫৮, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৫০০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮১৩৪, য‘ঈফ আল জামি‘ ৪৩৪৯, ইরওয়া ৯১৯)। হাদিসের মান জইফ।
উক্ত হাদিসটি যেহেতু জইফ তাই
ইহার আমল গ্রহণযোগ্য নহে।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতার করার পর বলতেন,
"জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ"
অর্থ: পিপাসা চলে গেছে, (শরীরের) রগগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহর মর্জি হলে সাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। (মিসকাতুল মাশাবিহ মিসকাত ১৯৯৩, সুনানে আবূ দাঊদ ২৩৫৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৩৬, ইরওয়া ৯২০, সহীহ আল জামি‘ ৪৬৭৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১৩৩)। হাদিসের মান হাসান।
৩. ইফতার দ্রুত করা এবং সাহারী দেরীতে করাঃ
রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ) বলেন, দ্বীন চিরদিন বিজয়ী
থাকবে, যতদিন লোকেরা ইফতার দ্রুত করবে। কেননা ইহূদী-নাছারাগণ ইফতার দেরীতে করে’।
মুল হাদিসঃ
(ক) আবূ
হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ দীন সর্বদাই বিজয়ী থাকবে (ততদিন), যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কারণ ইয়াহূদী
ও খৃষ্টানরা ইফতার করতে বিলম্ব করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ১৯৯৫, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯৪৪, ইবনু
খুযায়মাহ্ ২০৬০, ইবনু হিব্বান ৩৫০৩, শু‘আবূল ঈমান ৩৯১৬, আহমাদ ৯৮১০, মুসতাদারাক লিল
হাকিম ১৫৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৮৯)। হাদিসের মানঃ হাসান
(Hasan)।
রাসুল সাঃ আরো বলেন,
(খ)
সাহল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮৪, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৪৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১০৯৮, সুনান আততিরমিযী ৬৯৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০১১, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক
৭৫৯২, ইবনু মাজাহ ১৬৯৭, আহমাদ ২২৮০৪, দারিমী ১৭৪১, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৫৯, মু‘জামুল কাবীর
লিত্ব ত্ববারানী ৫৭১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৮, শু‘আবূল ঈমান ৩৬৩০, ইবনু
হিববান ৩৫০২, ইরওয়া ৯১৭, সহীহাহ্ ২০৮১, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৯৪)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(গ) আবূ
’আত্বিয়্যাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক উভয়ে (একদিন) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর
কাছে গেলাম ও আমরা আরয করলাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
দু’জন সাথী আছেন। তাদের একজন দ্রুত ইফতার করেন, দ্রুত সালাত আদায় করেন। আর দ্বিতীয়জন
বিলম্বে ইফতার করেন ও বিলম্বে সালাত আদায় করেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তাড়াতাড়ি
করে ইফতার করেন ও সালাত আদায় করেন কে? আমরা বললাম, ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ। ’আয়িশাহ্
(রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন। আর অপর ব্যক্তি
যিনি ইফতার করতে ও সালাত আদায় করতে দেরী করতেন, তিনি ছিলেন আবূ মূসা। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯৬, মুসলিম ১০৯৯, আবূ দাঊদ ২৩৫৪,
তিরমিযী ৭০২, নাসায়ী ২১৬১, আহমাদ ২৪২১২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(ঘ) তিনি
আরো বলেন,
আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও আহলে কিতাবদের (ইয়াহূদী
ও খৃষ্টান) সওমের মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরীর। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮৩, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৪০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৯৬,
সুনান আবূ দাঊদ ২৩৪৩, সুনান আততিরমিযী ৭০৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৬০২, ইবনু আবী
শায়বাহ্ ৮৯১৫, আহমাদ ১৭৭৬২, ১৭৭৭১, ১৭৮০১, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৪০, ইবনু হিববান ৩৪৭৭,
দারিমী ১৭৩৯, আল আওসার লিত্ব ত্ববারানী ৩২০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৫, সহীহ
আত্ তারগীব ১০৬৪, সহীহ আল জামি‘ ৪২০৭, নাসায়ী ২১৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৪১৭, ইসলামীক
সেন্টার ২৪১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইফতার করার সময়ঃ
’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ওদিক থেকে রাত (পূর্বদিক হতে রাতের কালো
রেখা) নেমে আসে, আর এদিক থেকে (পশ্চিম দিকে) দিন চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখনই
সায়িম (রোযাদার) ইফতার করে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৯৮৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৫৪, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৪৮, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১১০০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯৪১, আহমাদ ১৯২, আবূ
দাঊদ ২৩৫১, তিরমিযী ৬৯৮, ইবনু খুযায়মাহ্ ২০৫৮, ইবনু হিব্বান ৩৫১৩, সুনানুল কুবরা লিল
বায়হাক্বী ৮০০৪, ইরওয়া ৯১৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৬৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৮২৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih।
রাসুল সাঃ যা দিয়ে ইফতার করতেনঃ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের আগে কিছু তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর
না পেতেন, শুকনা খেজুর দিয়ে করতেন। যদি শুকনা খেজুরও না পেতেন, কয়েক চুমুক পানি পান
করে নিতেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ। আর ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও গরীব। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯১, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৫৬, সুনান
আততিরমিযী ৬৯৬, আহমাদ ১২৬৭৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৭৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
৮১৩১, শু‘আবূল ঈমান ৩৬১৭, ইরওয়া ৯২২, সহীহ আত্ তারগীব ১০৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৪৯৯৫)। হাদিসের
মানঃ হাসান (Hasan)।
রোজাদারকে ইফতার করানোর সওয়াবঃ
যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সায়িমকে ইফতার করাবে
অথবা কোন গাযীর আসবাবপত্র ঠিক করে দেবে সে তাদের (সায়িম ও গাযীর) সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯২)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
৪. সাহারীর আযানঃ
রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও
সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্ললাহ ইবনু উম্মে
মাকতূম (রাঃ) দিতেন। রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বেলাল রাত্রে আযান দিলে তোমরা খানাপিনা
কর, যতক্ষণ না ইবনু উম্মে মাকতূম ফজরের আযান দেয়’। (সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৯২; সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১৯১৯; নায়লুল আওত্বার ২/১২০ পৃঃ, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৭৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৯৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
বুখারীর ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী
(রহঃ) বলেন, ‘বর্তমান কালে সাহারীর সময় লোক জাগানোর নামে আযান ব্যতীত যা কিছু করা হয়
সবই বিদ‘আত’। (ফাৎহুল বারী হা/৬২২-২৩-এর ব্যাখ্যা, ‘ফজরের
পূর্বে আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১২৩-২৪; নায়লুল আওত্বার ২/১১৯)।
৫. ফজরের আযান শুনতে পেলেও হাতের
বাসন রেখে না দেয়াঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সাহরী খাবার সময়) তোমাদের কেউ
ফজরের আযান শুনতে পেলে সে যেন হাতের বাসন রেখে না দেয়। বরং নিজের প্রয়োজন সেরে নেবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮৮, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৫০,
আহমাদ ৯৪৭৪, ১০৬২৯, ১০৬৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭২৯, সহীহাহ্ ১৩৯৪, সহীহ আল জামি‘
৬০৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
সাহরীতে বরকত আছেঃ
(ক) আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা ’সাহরী’ খাও। সাহরীতে অবশ্যই বারাকাত আছে। ( মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৮২, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯২৩, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৪৩৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৯৫, সুনান আততিরমিযী ৭০৮, সুনান আননাসায়ী
২১৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৯২, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৫৯৮, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৯১৩,
ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৩৭, আহমাদ ১১৯৫০, দারিমী ১৭৩৮, সহীহ আত্ তারগীব ১০৬৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ১৭৮৭,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৯৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) ইরবায
ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(একদিন) আমাকে রমাযানের সাহরী খেতে ডাকলেন এবং বললেন, বারাকাতপূর্ণ খাবার খেতে এসো।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯৭, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৪৪,
সুনান আননাসায়ী ২১৬৫, সহীহাহ্ ২৯৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৭০৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
সাহরীর উত্তম খাবারঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের জন্য সাহরীর উত্তম খাবার
হলো খেজুর। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯৮, সুনান আবূ
দাঊদ ২৩৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮১১৭, ইবনু হিব্বান ৩৪৭৫, সহীহাহ্ ৫৬২, সহীহ
আত্ তারগীব ১০৭২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
রোজা অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে বা পান করে ফেললে করনীয়ঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সওম অবস্থায় ভুলে কিছু
খেয়ে বা পান করে ফেলে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। কেননা এ খাওয়ানো ও পান করানো আল্লাহর
তরফ থেকেই হয়ে থাকে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০০৩,
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৩, ৬৬৬৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬০৬, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১১৫৫, সুনান ইবনু মাজাহ ১৬৭৩, আহমাদ ৯১৩৬, ১০৩৬৯, দারিমী ১৭৬৭, ইবনু খুযায়মাহ্
১৯৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০৭১, ইবনু হিব্বান ৩৫১৯, আবূ দাঊদ ২৩৯৮, ইরওয়া
৯৩৮, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৭৩, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৯৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮০৬)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রোজা অবস্থায় মিথ্যে কথা বললে ও তা অব্যাহত রাখলেঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (সিয়ামরত অবস্থায়)
মিথ্যা কথা বলা ও এর উপর ’আমল করা ছেড়ে না দেয়, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন
প্রয়োজন নেই। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৯৯৯, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯০৩, ৬০৫৭, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৬২, সুনান আততিরমিযী ৭০৭, সুনান ইবনু
মাজাহ ১৬৮৯, আহমাদ ১০৫৬২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৯৫, ইবনু হিব্বান ৩৪৮০, সহীহ আত্ তারগীব
১০৭৯, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৩৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৭৭৯)। হাদিসের
মানঃ সহিহ (Sahih)।
রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা ও চুমু দেয়ার বিধানঃ
(ক)
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সওমরত অবস্থায় (নিজের স্ত্রীদেরকে) চুমু খেতেন এবং (তাদেরকে) নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে
ধরতেন। কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রয়োজনে নিজেকে তোমাদের চেয়ে
অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ ছিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ
(মিশকাত) ২০০০, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯২৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২৪৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১০৬, সুনান আততিরমিযী ৭২৯, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক্ব
৭৪৪১, আহমাদ ২৪১৩০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০৭৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
সায়িম অবস্থায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করার অনুমতি দিলেন। এরপর আরো এক ব্যক্তি এসে তাঁকে এ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করেন। এ ব্যক্তিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে নিষেধ করলেন।
যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন সে ছিল বৃদ্ধ। আর যাকে নিষেধ করেছিলেন সে ছিল যুবক। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত ২০০৬, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৮৭, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০৮৩)। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
৬. তারাবীহর ছালাতের ফযীলতঃ
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রামাযানের রাত্রিতে
ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রাত্রির ছালাত আদায় করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হয়’।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে ক্বিয়ামুল লায়লের উৎসাহ দিতেন
(তারাবীহ সালাত), কিন্তু তাকিদ করে কোন নির্দেশ দিতেন না। তিনি বলতেন, যে লোক ঈমানের
সঙ্গে ও পুণ্যের জন্যে রমাযান মাসে রাত জেগে ’ইবাদাত করে তার পূর্বের সব সগীরাহ্ গুনাহ
ক্ষমা করে দেয়া হয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর ব্যাপারটি
এভাবেই থেকে গেল। (অর্থাৎ তারাবীহের জন্যে জামা’আত নির্দিষ্ট ছিল না, বরং যে চাইতো
সাওয়াব অর্জনের জন্যে আদায় করে নিত)। আবূ বকরের খিলাফাতকালেও এ অবস্থা ছিল। ’উমারের
খিলাফাতের প্রথম দিকেও এ অবস্থা ছিল। শেষের দিকে ’উমার (রাঃ) তারাবীহের সালাতের জন্যে
জামা’আতের ব্যবস্থা করেন এবং তখন থেকে লাগাতার তারাবীহের জামা’আত চলতে থাকল। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১২৯৬, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২০০৯, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৬৬৪-১৬৬৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
৭. তারাবীহর রাক‘আত সংখ্যাঃ
(ক) হযরত
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ) রামাযান বা রামাযানের বাইরে (তিন রাক‘আত বিতরসহ)
এগার রাক‘আতের বেশী রাতের নফল ছালাত আদায় করতেন না’।
মূল হাদিসঃ
আবূ সালামাহ্ ইবনু আবদুর রাহমান (রাযি.) হতে
বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন, রমাযান মাসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কেমন ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেন
না। তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তুমি সেই সালাতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে
আমাকে প্রশ্ন করো না। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে
আমাকে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত (বিতর) সালাত আদায় করতেন। ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)
বলেন, (একদা) আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতরের পূর্বে ঘুমিয়ে থাকেন?
তিনি ইরশাদ করলেনঃ আমার চোখ দু’টি ঘুমায়, কিন্তু আমার হৃদয় ঘুমায় না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ১৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৩৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১১৮৮,
আধুনিক প্রকাশনীঃ ১০৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০৮১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) হযরত
সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, ‘ওমর ফারূক (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ-দারী (রাঃ)-কে
রামাযানের রাত্রিতে লোকদেরকে সাথে নিয়ে জামা‘আত সহকারে এগারো রাক‘আত ছালাত আদায়ের নির্দেশ
দান করেন’।
মূল হাদিসঃ
সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ’উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে
নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্’আত তারাবীহের সালাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের
সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম
(কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্রের (ফজরের)
নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৩০২, মালিক ২৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
এ সময় তাঁরা প্রথম রাত্রিতে ইবাদত করতেন।
মূল হাদিসঃ
আবদুর রহমান ইবনু ’আবদুল ক্বারী (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রমাযান মাসের রাত্রে ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর সঙ্গে
আমি মসজিদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম মানুষ অমীমাংসিত বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। কেউ একা
একা নিজের সালাত আদায় করছে। আর কারো পেছনে ছোট একদল সালাত আদায় করছে এ অবস্থা দেখে
’উমার (রাঃ) বললেন, আমি যদি সকলকে একজন ইমামের পেছনে জমা করে দেই তাহলেই চমৎকার হবে।
তাই তিনি এ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে ফেললেন এবং সকলকে উবাই ইবনু কা’ব-এর পেছনে জমা করে
তাকে তারাবীহ সালাতের জন্যে লোকের ইমাম বানিয়ে দিলেন।
’আবদুর রহমান বলেন, এরপর আমি একদিন ’উমারের সঙ্গে মসজিদে গেলাম। সকল লোককে দেখলাম তারা তাদের ইমামের পেছনে (তারাবীহের) সালাত আদায় করছে। ’উমার (রাঃ) তা দেখে বললেন, ’’উত্তম বিদ্’আত’’। আর তারাবীহের এ সময়ের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) তোমাদের ঘুমিয়ে থাকার সময়ের সালাতের চেয়ে ভাল। এ কথার দ্বারা ’উমার (রাঃ) বুঝাতে চেয়েছেন শেষ রাতকে। অর্থাৎ তারাবীহের রাতের প্রথমাংশের চেয়ে শেষাংশে আদায় করাই উত্তম। ঐ সময়ের লোকেরা তারাবীহের সালাত প্রথম ভাগে আদায় করে ফেলতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৩০১, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ২০১০, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮০ শেষাংশ)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুওয়াত্ত্বায় (হা/৩৮০)
ইয়াযীদ বিন রূমান কর্তৃক যে বর্ণনাটি এসেছে যে, ‘লোকেরা ওমর ফারূক (রাঃ)-এর যামানায়
২৩ রাক‘আত তারাবীহ পড়ত’ একথাটি ‘যঈফ’। কেননা ইয়াযীদ বিন রূমান ওমর (রাঃ)-এর যামানা
পাননি। (দ্রঃ আলবানী, মিশকাত, হা/১৩০২ টীকা-২)।
অতএব ইজমায়ে ছাহাবা কর্তৃক ওমর, ওছমান ও আলীর
যামানা থেকে ২০ রাক‘আত তারাবীহ সাব্যস্ত বলে যে কথা চালু রয়েছে, তার কোন শারঈ ভিত্তি
নেই। একথাটি ‘মুদরাজ’ বা পরবর্তীকালে অনুপ্রবিষ্ট। এতদ্ব্যতীত চার খলীফার কারো থেকেই
ছহীহ সনদে ২০ রাক‘আত তারাবীহ প্রমাণিত নয়। (হাশিয়া মুওয়াত্ত্বা
পৃঃ ৭১-এর হাশিয়া-৭, ‘রামাযানে ছালাত’ অধ্যায়; দ্রঃ তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিয়ী হা/৮০৩-এর
ব্যাখ্যা ৩/৫২৬-৩২)।
বিশ রাক‘আত তারাবীহ-এর প্রমাণে বর্ণিত হাদীছটি
জাল। (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৪৪৫, ২/১৯১ পৃঃ)।
(গ) জামা‘আতের
সাথে রাতের ছালাত (তারাবীহ) আদায় করা রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত এবং দৈনিক নিয়মিত
জামা‘আতে আদায় করা ‘ইজমায়ে ছাহাবা’ হিসাবে প্রমাণিত।
মূল হাদিসঃ
সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ’উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা’ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে
নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্’আত তারাবীহের সালাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের
সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম
(কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্রের (ফজরের)
নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
১৩০২, মালিক ২৫৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
অতএব তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
উক্ত হাদিস দিয়ে এটাও প্রমাণিত হয় যে, রাসুল
সাঃ রমজান মাসে একই রাতের প্রথমাংশে তারাবিহ ও শেষ রাতে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করেছেন
বলে কোনো প্রমাণ নেই। তারাবিহর সালাত আদায় করতে করতেই শেষ রাত হয়ে যেতো। তাই রমজান
মাসে যা তারাবিহ তাই তাহাজ্জুদ।
৮. লায়লাতুল ক্বদরের দো‘আঃ
’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বলে দিন, যদি আমি ’কদর রাত’ পাই, এতে আমি কী দু’আ করব?
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বলবে,
“আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী”
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই ক্ষমাকারী। আর ক্ষমা
করাকে তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।) (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯১, সুনান আততিরমিযী ৩৫১৩, সুনান ইবনু মাজাহ ৩৮৫০, আহমাদ ২৫৩৮৪,
মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৯৪২, সহীহাহ্ ৩৩৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৩৩৯১)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
৯. ই‘তিকাফঃ
ই‘তিকাফ তাক্বওয়া অর্জন করার একটি বড় মাধ্যম।
এতে লায়লাতুল ক্বদর অনুসন্ধানের সুযোগ হয়। রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ) মসজিদে নববীতে রামাযানের
শেষ দশকে নিয়মিত ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীগণও ই‘তিকাফ করেছেন’।
মূল হাদিসঃ
নবী সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত
যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশক ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত
পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ই‘তিকাফ করতেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০৯৭, সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২০২৬, ২০৩৩, ২০৩৪, ২০৪১, ২০৪৫, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৬৭২-২৬৭৪, আন্তর্জাতিক
নাম্বারঃ ১১৭২, সুনান আবূ দাঊদ ২৪৬২, সুনান আততিরমিযী ৭৯০, আহমাদ ২৪৬১৩, দারাকুত্বনী
২৩৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৭১, ইরওয়া ৯৬৬, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৮৪, ইসলামিক
ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
নারীদের জন্য বাড়ীর নিকটস্থ মসজিদে ই‘তিকাফ
করা উত্তম। (ফাৎহুল বারী হা/২০৩৩-এর আলোচনা)।
২০শে রামাযান সূর্যাস্তের পূর্বে ই‘তিকাফ স্থলে
প্রবেশ করবে এবং ঈদের আগের দিন বাদ মাগরিব বের হবে। (সাইয়িদ
সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩৬ ‘ই‘তিকাফ স্থলে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়’ অনুচ্ছেদ)।
তবে বাধ্যগত কারণে শেষ দশদিনের সময়ে আগপিছ
করা যাবে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ই‘তিকাফকারী নিজ বাড়ীতে প্রবেশ করবে না।
মুল হাদিসঃ
নবী সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে থাকাবস্থায় আমার দিকে
মাথা বাড়িয়ে দিতেন আর আমি তা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি যখন ই‘তিকাফে থাকতেন তখন (প্রাকৃতিক)
প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ২০২৯, ২০৩৩, ২০৩৪, ২০৪১, ২০৪৫, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ
১৮৯৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১০. ফিৎরাঃ
(ক) আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ,
নারী, ছোট-বড় সকলের জন্য এক সা’ খেজুর’, অথবা এক সা’ যব সদাক্বায়ে ফিত্বর ফরয করে দিয়েছেন।
এ ’সদাক্বায়ে ফিত্বর’ ঈদুল ফিত্বরের সালাতে বের হবার আগেই আদায় করতে হুকুম দিয়েছেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৮১৫, সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ১৫০৩, ১৫০৪, ১৫০৭, ১৫০৯, ১৫১১, ১৫১২, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২১৬৮,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৮৪, সুনান আননাসায়ী ২৫০৪, ইবনু হিব্বান ৩৩০৩, দারাকুত্বনী ২০৭২,
শারহুস ১৫৯৪, ইরওয়া ৩/৮৪২)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ঈদুল ফিতরের ১ বা ২ দিন আগে বায়তুল মাল জমাকারীর
নিকট ফিৎরা জমা করা সুন্নাত, যা ঈদের পরে হকদারগণের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৫০৮-১২; ঐ দ্রঃ ফাৎহুল বারী,
৩/৪৩৬-৪১, আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪১৭)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(খ) রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ)-এর যুগে মদীনায় ‘গম’ ছিল
না। মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর যুগে সিরিয়ার গম মদীনায় আমদানী হলে উচ্চ মূল্যের বিবেচনায় তিনি
গমে অর্ধ ছা‘ ফিৎরা দিতে বলেন। কিন্তু ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরীসহ অন্যান্য ছাহাবীগণ মু‘আবিয়া
(রাঃ)-এর এই ইজতিহাদী সিদ্ধান্ত অমান্য করেন এবং রাসূলুল্ললাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ ও প্রথম
যুগের আমলের উপরেই কায়েম থাকেন। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘যারা অর্ধ ছা‘ গমের ফিৎরা দেন,
তারা মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর ‘রায়’-এর অনুসরণ করেন মাত্র’। (দ্রঃ
ফাৎহুল বারী (কায়রো : ১৪০৭ হি), ৩/৪৩৮ পৃঃ)।
(গ)
মদীনার হিসাবে এক ছা‘ এদেশের আড়াই কেজি চাউলের সমান অথবা প্রমাণ সাইজ হাতের পূর্ণ চার
অঞ্জলী চাউল। টাকা দিয়ে ফিৎরা আদায় করার কোন দলীল নেই।
১১. ঈদের তাকবীরঃ
ছালাতুল ঈদায়েনে প্রথম রাক‘আতে সাত, দ্বিতীয়
রাক‘আতে পাঁচ মোট ১২ তাকবীর দেওয়া সুন্নাত।
মূল হাদিসঃ
কাসীর তাঁর পিতা ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে, তিনি
তাঁর পিতা ’আমর ইবনু ’আওফ হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দু’ঈদের প্রথম রাক্’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাতবার ও দ্বিতীয় রাক্’আতে ক্বিরাআতের পূর্বে
পাঁচবার তাকবীর বলেছেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৪১,
সুনান আত্ তিরমিযী ৫৩৬, সুনান ইবনু মাজাহ্ ১২৭৯)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ছহীহ বা যঈফ সনদে ৬ (ছয়) তাকবীরের পক্ষে রাসূলুল্ললাহ
(ছাঃ) হতে কোন হাদীছ নেই। (আলোচনা দ্রষ্টব্য : নায়লুল
আওত্বার ৪/২৫৩-৫৬ পৃঃ; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ২০৬-১২)।
১২. মহিলাদের ঈদের জামা‘আতঃ
মহিলাগণ শারঈ পর্দা বজায় রেখে পুরুষদের ঈদের
জামাআতে শরীক হতে পারবেন।
মূল হাদিসঃ
উম্মু ’আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)কর্তৃক বর্ণিত। তিনি
বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা’আতে ও দু’আয় অংশ
নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা
হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো
(শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান
করবে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ১৪৩১, সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ৩৫১, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ১৯৩৯-১৯৪১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৯০, আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৩৮,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৪)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
১৩. ছিয়াম ভঙ্গের কারণ সমূহঃ
(ক)
ছিয়াম অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে খানাপিনা করলে ছিয়াম ভঙ্গ হয় এবং তার কাযা ওয়াজিব হয়।
(খ)
ছিয়াম অবস্থায় দিনের বেলা যৌনসম্ভোগ করলে ছিয়াম ভঙ্গ হয় এবং তার কাফফারা স্বরূপ একটানা
দু’মাস ছিয়াম পালন অথবা ৬০ (ষাট) জন মিসকীন খাওয়াতে হয়।
মূল হাদিসঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময়
এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কী হয়েছে? সে বলল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর
সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আযাদ করার
মত কোন ক্রীতদাস তুমি পাবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দু’মাস সওম
পালন করতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে
বলল, না। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন, আমরাও এ
অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক ‘আরাক পেশ করা
হল যাতে খেজুর ছিল। ‘আরাক হল ঝুড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী
কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সদাকাহ করে দাও। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্তকে সদাকাহ করব? আল্লাহর শপথ, মাদ্বীনার উভয় লাবা
অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্ত কেউ নেই। আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত (আনইয়াব) দেখা গেল। অতঃপর
তিনি বললেনঃ এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (সহীহ বুখারী
(তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৩৬, ১৯৩৭, ২৬০০, ৫৩৬৮, ৬০৮৭, ৬১৬৪, ৬৭০৯, ৬৭১০, ৬৭১১, ৬৮২১, সহীহ
মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৪৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১১১, আহমাদ ৭২৯৪, আধুনিক প্রকাশনীঃ
১৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮০৯, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৯০, সুনান আততিরমিযী ৭২৪, সুনান ইবনু
মাজাহ ১৬৭১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৯৭৮৬, আহমাদ ৭২৯০, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৯৪৪, সুনানুল কুবরা
লিল বায়হাক্বী ৮০৪০, ইরওয়া ৯৩৯)। হাদিসের মান সহিহ।
(গ) ছিয়াম
অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে ক্বাযা আদায় করতে হবে। তবে অনিচ্ছাকৃত বমি হলে, ভুলক্রমে
কিছু খেলে বা পান করলে, স্বপ্নদোষ বা সহবাসজনিত নাপাকী অবস্থায় সকাল হয়ে গেলে, চোখে
সুর্মা লাগালে বা মিসওয়াক করলে ছিয়াম ভঙ্গ হয় না। (শাওকানী,
নায়লুল আওত্বার ৫/২৭১-৭৫, ২৮৩; ১/১৬২ পৃঃ)।
মুল হাদিসঃ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সায়িম অবস্থায় (অনিচ্ছায়)
বমি হবে তার সওম কাযা করতে হবে না। আর যে ব্যক্তি গলার ভিতর আঙ্গুল বা অন্য কিছু ঢুকিয়ে
দিয়ে ইচ্ছাকৃত বমি করবে তাকে কাযা আদায় করতে হবে। (মিশকাতুল
মাসাবীহ (মিশকাত) ২০০৭, সুনান আবূ দাঊদ ২৩৮০, সুনান আততিরমিযী ৭২০, সুনান ইবনু মাজাহ
১৬৭৬, আহমাদ ১০৪৬৩, দারাকুত্বনী ২২৭৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৫৭, ইবনু হিব্বান ৩৫১৮,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮০২৭, ইরওয়া ৯৩০, সহীহ আল জামি‘ ৬২৪৩)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
১৪. ছিয়ামের অন্যান্য বিধানঃ
(ক) অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা অসুস্থ তথা যারা ছিয়াম
পালনে অক্ষম, তারা ছিয়ামের ফিদইয়া হিসাবে দৈনিক একজন করে মিসকীন খাওয়াবেন (সুরা বাক্বারাহ
২/১৮৪)। ছাহাবী আনাস (রাঃ) গোশত-রুটি বানিয়ে একদিনে ৩০ (ত্রিশ) জন মিসকীন খাইয়েছিলেন।
(ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ১৮৪ আয়াত)।
আল্লাহতায়ালা বলেন,
“এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে
কেউ অসুস্থ হলে (১) বা সফরে থাকলে (২) অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে
(৩)। আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া- একজন মিসকীনকে
খাদ্য দান করা (৪)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর।
আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে”। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
(১) বাক্যে
উল্লেখিত রুগ্ন সে ব্যক্তিকে বুঝায়, সাওম রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মকভাবে
বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
(২) সফররত
অবস্থায় সাওম না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু
আনহু বলেন, সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে যেতেন। তাদের
কেউ সাওম রাখতেন আবার কেউ রাখতেন না। উভয় দলের কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠাতেন
না। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ১৯৪৭, সহীহ মুসলিম
(হাদীস একাডেমী) ২৫০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১১৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(৩)
রুগ্ন বা মুসাফির ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় বা সফরে যে কয়টি সাওম রাখতে পারবে না, সেগুলো
অন্য সময় হিসাব করে কাযা করা ওয়াজিব। এতে বলা উদ্দেশ্য ছিল যে, রোগজনিত কারণে বা
সফরের অসুবিধায় পতিত হয়ে যে কয়টি সাওম ছাড়তে হয়েছে, সে কয়টি সাওম অন্য সময়ে
পূরণ করে নেয়া তাদের উপর ফরয।
(৪) আয়াতের
স্বাভাবিক অর্থ দাঁড়ায়, যেসব লোক রোগজনিত কারণে কিংবা সফরের দরুন নয়; বরং সাওম রাখার
পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্বেও সাওম রাখতে চায় না, তাদের জন্যও সাওম না রেখে সাওমের বদলায়
ফিদইয়া দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাথে সাথেই এতটুকু বলে দেয়া হয়েছে যে, সাওম
রাখাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর। উপরোক্ত নির্দেশটি ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের, যখন
লক্ষ্য ছিল ধীরে ধীরে লোকজনকে সাওমে অভ্যস্ত করে তোলা। এরপর নাযিলকৃত আয়াত (فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ) এর দ্বারা প্রাথমিক
এ নির্দেশ সুস্থ-সবল লোকদের ক্ষেত্রে রহিত করা হয়েছে। তবে যেসব লোক অতিরিক্ত বার্ধক্য
জনিত কারণে সাওম রাখতে অপরাগ কিংবা দীর্ঘকাল রোগ ভোগের দরুন দূর্বল হয়ে পড়েছে, অথবা
দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে একেবারেই নিরাশ হয়ে
পড়েছে, সেসব লোকের বেলায় উপরোক্ত নির্দেশটি এখনো প্রযোজ্য রয়েছে।
সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত অভিমত তাই।
সাহাবী সালামাহ ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু- বলেন, যখন (وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ) শীর্ষক আয়াতটি
নাযিল হয়, তখন আমাদেরকে এ মর্মে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল যে, যার ইচ্ছা হয় সে সাওম
রাখতে পারে এবং যে সাওম রাখতে চায় না, সে ফিদইয়া দিয়ে দেবে। এরপর যখন পরবর্তী আয়াত
(فَمَنْ
شَهِدَ
مِنْكُمُ
الشَّهْرَ
فَلْيَصُمْهُ)
নাযিল হল, তখন ফিদইয়া দেয়ার ইখতিয়ার রহিত হয়ে সুস্থ-সমর্থ লোকদের উপর শুধুমাত্র
সাওম রাখাই জরুরী সাব্যস্ত হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ
পাবলিকেশন) ৪৫০৭, সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী) ২৫৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪৫, সুনানে
আবু দাউদ: ২৩১৫, ২৩১৬, সুনান আততিরমিযী: ৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫৫২, ইসলামীক সেন্টার
২৫৫১)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
ইবনু আববাস (রাঃ) গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী
মহিলাদেরকে ছিয়ামের ফিদইয়া আদায় করতে বলতেন।
মূল হাদিসঃ
আতা (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে পড়তে শুনেছেন...অর্থাৎ
যারা সওম পালনে সক্ষম নয়। তাদের জন্য একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোই ফিদ্য়া। ইবনু ’আব্বাস
(রাঃ) বলেন, এ আয়াত রহিত হয়নি। এ হুকুম সেই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য যারা
সওম পালনে সমর্থ নয়। এরা প্রত্যেক দিনের সওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে পেট পুরে আহার
করাবে। (সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৪৫০৫, আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৪১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১৫০)। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)।
(খ) মৃত ব্যক্তির ছিয়ামের ক্বাযা তার উত্তরাধিকারীগণ
আদায় করবেন অথবা তার বিনিময়ে ফিদইয়া দিবেন। (নায়ল ৫/৩১৫-১৭
পৃঃ)।
ফিদইয়ার পরিমাণ দৈনিক এক মুদ বা সিকি ছা‘ চাউল
অথবা গম। (বায়হাক্বী হা/৮০০৫-০৬, ৪/২৫৪ পৃঃ)।
তবে বেশী দিলে বেশী নেকী পাবেন। (সুরা বাক্বারাহ ২/১৮৪)।
(গ) আত্বা
(রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি কুলি করে মুখ থেকে পানি ফেলে
দেয় আর তার মুখের থুথু বা পানির অবশিষ্টাংশ যা থেকে যায় তাতে সওমের কোন ক্ষতি হবে না।
আর কোন ব্যক্তি যেন চুইংগাম না চিবায়। যদি চিবানোর কারণে তার রস গিলে ফেলে, তাহলে তার
ক্ষেত্রে আমি বলিনি যে, সে সওম ভঙ্গ করল, বরং তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ২০১৮)। হাদিসের মানঃ সহিহ
(Sahih)।
(সমাপ্ত)
লেখক ও সংকলকঃ
মো: ইজাবুল আলম-এম.এ, সি.ইন,এড (ইসলামিক স্টাডিজ-রংপুর কারমাইকেল ইউনিভার্সিটি কলেজ, রংপুর), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক
ও লেখক।
(মহাপরিচালক-পিএমএমআরসি, এমএসএইসআরসি, গুলশান-২, ঢাকা, বাংলাদেশ।
লেখকের অন্যান্য সকল বই এক সাথে দেখতে চাইলে এর উপর ক্লিক করুন
------------------------------
Please Share On
No comments:
Post a Comment